তাবলীগ জামাতের গোমর ফাঁস
"তোমরা মসজিদকে ঘুমাবার স্থান বানাইও না।" (উমদাতুল ক্বারী শরহে বুখারী)
তাবলীগ জামাতের গোমর ফাঁস
আল্লামা তরিকুল হক আনসারী
﷽
يَا أيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا قُوا أنْفُسَكُمْ وَ أهْلِيكُمْ نَارًا
হে মুমিনগণ! তোমরা নিজেদেরকে এবং তোমাদের পরিবার-পরিজনকে জাহান্নাম থেকে রক্ষা কর। (সূরা তাহরীম-৬)
তিন মসজিদ ছাড়া অন্য কোন মসজিদে সফর করা যাবে না। মসজিদে হারাম (মক্কা), মসজিদে নববী (মদীনা) এবং মসজিদে আল আকসা (বায়তুল মুকাদ্দাস)' (বুখারী ও মুসলিম)
তাবলীগ জামাতের গোঁমর ফাঁস
যারা সত্যকে জানতে চায়, সত্যকে অনুসরণ করতে চায় এবং সত্যকে ধারণ করে চিরজীবন সত্য পথে চলতে চায় তাদের উদ্দেশ্যেই এই ক্ষুদ্র গ্রন্থটির প্রকাশ এবং এই গ্রন্থটি তাদেরকেই উৎসর্গ করলাম।
আল্লামা তরিকুল হক আনসারী
প্রচলিত তাবলীগ আবিষ্কার
নবীজির যুগে তাবলীগ ছিল, সাহাবায়ে কেরামগণ তাবলীগ করেছেন এবং আউলিয়ায়ে কেরামগণও তাবলীগ করেছেন। তবে বর্তমানে আমরা যে তাবলীগ করি সেরকম ছিল না। তাঁদের তাবলীগ ছিল সম্পূর্ণ কুরআন-হাদীস অনুযায়ী। বর্তমানে প্রচলিত যে তাবলীগ অর্থাৎ ইলিয়াছি তাবলীগ, তা সম্পূর্ণ ইসলামী আকিদার বিরোধী। আমার তাবলীগ ভাইয়েরা ছয় উসুলের কথা বলে। ছয় উসুল হলো- ১) কালিমা ২) নামাজ ৩) এলেম ও জিকির ৪) ইকরামুল মুসলিমীন ৫) তাসহীহে নিয়ত (সহিহ নিয়ত) এবং ৬) নফর ফি সাবিলিল্লাহ (তাবলীগ)। উসুল আরবী শব্দ। এর অর্থ হলো ভিত্তি। উসুলের একটি আরবী প্রতিশব্দ হলো বুনিয়াদ। যার অর্থও ভিত্তি। তাবলীগ ভাইয়েরা বলে আমরা ইসলামের ছয় উসুলের দাওয়াত দেই। আমার কথা হলো আপনারা ছয় উসুল বা ভিত্তি কোথা হতে আমদানী করলেন? আল্লাহর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ইসলামের ভিত্তি হলো পাঁচটি। যথাঃ ১) কালিমা ২) নামাজ ৩) রোজা ৪) যাকাত ৫) হজ্ব। আমার তাবলীগ ভাইয়েরা ইসলামের উসুল তথা বুনিয়াদ তথা ভিত্তি হতে রোজা, হজ্ব ও যাকাত বাদ দিলেন কোন অধিকারে? এটা কি আল্লাহর নবীর সাথে বিরোধীতা করা নয়? হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হলেন শেষ নবী, তারপরে আর কোন নবী আসবে না। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর পাঁচ উসুল বাদ দিয়ে আমার তাবলীগের ভাইয়েরা ছয় উসুল আবিষ্কার করলো। যার মধ্যে রোজা, হজ্ব ও যাকাত নাই। তাই তারা ইসলামের পাঁচ উসুল বাদ দিয়ে নবীকে অস্বীকার করলো। যারা নবীজিকে অস্বীকার করলো তারা মুসলমান না কাফের- এই ফতোয়ার ভার পাঠকগণের উপর ছেড়ে দিলাম। উল্লেখ্য যে, কাফের শব্দের অর্থ হলো সত্যকে অস্বীকারকারী বা সত্য গোপনকারী। তাবলীগের ভাইয়েরা বাড়ীতে বাড়ীতে গিয়ে শুধু নামাজের দাওয়াত দেয়, চিল্লাহর দাওয়াত দেয়, তিন দিনের দাওয়াত দেয়। তাবলীগে গিয়ে দেখেছি, বিশ্ব ইজতিমায় গিয়ে দেখেছি শুধু নামাজ পড়, নামাজ পড়। 'বান্দার হক্ব নষ্ট কর না' এমন কথা জোড় দিয়ে কেউ বলে না।
ইসলামী তাবলীগের প্রবক্তা হলেন হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম। ইসলামী তাবলীগ শুরু হয়েছে হেরা গুহা হতে। কিন্তু বর্তমানে প্রচলিত যে তাবলীগ আমরা দেখতে পাই, তার উদ্ভাবক ও প্রবক্তা হলেন ভারতের মেওয়াত নামক স্থানের মৌলভী ইলিয়াছ মেওয়াতী। তার বাবা চিশতীয়া তরিকার অনুসারী ছিলেন। কিছু বর্ণনা মতে ইলিয়াছের পিতা চিশতীয়া তরিকার একজন পীর ছিলেন। তাই পীরের ছেলে হিসেবে সবাই তাকে সম্মান করতো। পিতার ইন্তেকালের পরে তিনি সুযোগ বুঝে নতুন দল তথা তাবলীগ জামাত আরম্ভ করতে থাকে। কোন লোভে বা কিসের তাড়নায় তিনি সঠিক পথ বাদ দিয়ে ভ্রান্ত পথের আবিষ্কার করলেন? নিশ্চিত ব্রিটিশদের কোন চক্রান্ত আছে। কেননা ব্রিটিশ সরকার টাকা ছিটিয়ে দুশ্চরিত্র মুহাম্মদ ইবনে আব্দুল ওহাব-কে দিয়ে ইসলামের মধ্যে ভ্রান্ত একটি দল সৃষ্টি করেছে, যা ওহাবী দল নামে পরিচিত। আর তাবলীগ দল ওহাবী দলেরই অংশ। কেননা ইলিয়াছ মেওয়াতী ওহাবী গুরু ঠাকুর রশীদ আহমদ গাঙ্গুহীর শিষ্য। ওহাবীরা তাবলীগীদের দিয়ে মুসলমানদেরকে ভেড়ার দলে পরিণত করছে। ভেড়ার দলের চলার পথে একটা যদি কোথাও লাফ দেয়, তাহলে সমস্ত ভেড়াগুলিও সেখানে লাফ দেয়। ভেড়াগুলি পর্যবেক্ষণ করে না যে, সামনে আসলেই কিছু আছে কিনা। তাবলীগের অধিকাংশ মানুষ সেই ভেড়ার দলের মত আচরণ করে। তাবলীগে গিয়ে তারা কোন অনুসন্ধান না করেই সবাই যা করে সেও তাই করে।
১৯২৫ইং সালে (বাংলা ১৩৪৫) তাবলীগ জামাতের যাত্রা শুরু হয়। ভারতের উত্তর প্রদেশের মেওয়াত অঞ্চলের মৌলভী ইলিয়াছ মেওয়াতী এই ভ্রান্ত তাবলীগ আবিষ্কার করে স্বপ্নের মাধ্যমে। স্বয়ং ইলিয়াছ মেওয়াতি বলেন, "আজকাল খাবমে মুঝপর উলুমে সহীহাকা এলকা হোতা হায়"। অর্থাৎ আজকাল স্বপ্নে আমার উপর ওহী বা ঐশী বাণীর আগমন ঘটেছে। যখন এই স্বপ্নে প্রাপ্ত তাবলীগ নিজ অঞ্চলে প্রচার করতে থাকে, তখন মেওয়াত অঞ্চলের আলেম-উলামা ও সাধারণ মানুষ ইহা প্রত্যাখ্যান করেন। মেওয়াত অঞ্চলের আলেমগণ বলেন, ইহা ইসলামের পরিপন্থী এবং ইসলাম বহির্ভূত কাজ, সে নবী দাবী করছে। উত্তরে ইলিয়াছ মেওয়াতী বলেন, তোমরা আমার স্বপ্নের কথাটুকুই অন্তত বিশ্বাস কর। 'উস তাবলীগ কা তরীকা ভি মুঝপর খাবমে মুনকাশিফ হুয়া" অর্থাৎ আমার কর্তৃক স্বপ্নযোগে একটি তাবলীগ ধারা উদঘাটিত ও বিকশিত হচ্ছে (মালফুজাত নং ৫০)। সেজন্য তিনি যাতে বেশী বেশী করে ঘুমাতে পারেন তার ব্যবস্থা করতে হবে (মালফুজাত নং ৫০)। পরবর্তীতে ইলিয়াছ মেওয়াতীকে মেওয়াত অঞ্চল হতে আলেমগণ বের করে দেয়। এজন্য ইলিয়াছ মেওয়াতী তার নিজ অঞ্চলের মানুষগণকে মুশরিক হতে অধম বলতেন (মালফুজাত নং ১৬৩)। তিনি অন্য অঞ্চলে গিয়ে তার কাজ করতে থাকেন।
স্বপ্ন শরীয়তের কোন দলিল নয়। স্বপ্ন শয়তানের পক্ষ থেকেও হয়। যেমন ইলিয়াছ মেওয়াতীর ভক্ত মাওলানা জাকারিয়া 'ফাজায়েলে হজ্ব' এর ১৫৩ পৃষ্ঠায় উল্লেখ করেন, 'রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর হুকুম বা নিষেধ যদি স্বপ্নে দেখা যায় তাহলে সেটাকে কুরআন-হাদীসের সামনে পেশ করতে হবে। যদি তা কুরআন-হাদীসের খেলাফ হয় তাহলে বুঝতে হবে যে, স্বপ্নে শয়তানী প্রভাব আছে।' যেহেতু ৬ উসুলি তাবলীগ কুরআন-হাদীসের বিরোধী, তাই মাওলানা জাকারিয়ার ভাষ্য অনুযায়ী ইলিয়াছ মেওয়াতীর স্বপ্নে শয়তানী প্রভাব রয়েছে। তাই ইলিয়াছি তাবলীগ সম্পূর্ণভাবে ইলিয়াছ মেওয়াতীর মনগড়া মতবাদ, যা নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর তাবলীগের সাথে বিরোধপূর্ণ। এর আরও প্রমাণ পাওয়া যায় মাওলানা জাকারিয়া কর্তৃক লিখিত 'ফাজায়েলে তাবলীগ' কিতাবে। উক্ত কিতাবের ১৫ পৃষ্ঠায় তিনি উল্লেখ করেন, "দ্বীন ও দ্বীনের বিধানসমূহ উপেক্ষা করিয়া নিজের মনগড়া চিন্তা ধারার মাধ্যমে দ্বীনের উন্নতি কামনা করা হইতেছে।" তাই ইলিয়াছি তাবলীগ যে মনগড়া, এতে কোন সন্দেহ নেই। মূলতঃ ইলিয়াছ মেওয়াতীর মনের ইচ্ছা তিনি একটি নতুন দল গঠন করবেন। ইলিয়াছ মেওয়াতী তার শিষ্য জহিরুল হাসানকে লক্ষ্য করে বলেন, "আমার একটি নতুন দল সৃষ্টি করতে হবে (সূত্রঃ তাবলীগী দর্পন)"
১৯৩৮ সালের ১৪ই মার্চ সৌদি আরবের তৎকালীন বাদশাহর সাথে ইলিয়াছ মেওয়াতী ৪/৫ সদস্যের একটি প্রতিনিধিদলসহ সাক্ষাত করেন। তিনি এই সাক্ষাত ও আলোচনার পর থেকে 'তাবলীগ জামাতের' কার্যক্রম ব্যাপকভাবে শুরু করেন। মূলত তাবলীগ একটি নতুন দল। এর প্রধান কার্যালয় হচ্ছে ভারতের দিল্লীর নিজামউদ্দিন আউলিয়া (রহ.) এর মাজার সংলগ্ন মসজিদ। দ্বিতীয় কেন্দ্র হচ্ছে পাকিস্তানে এবং তৃতীয় প্রচারকেন্দ্র হচ্ছে বাংলাদেশের কাকরাইল মসজিদ, যা তাবলীগীদের থাকার হোটেল নামে পরিচিত। কাকরাইল মসজিদে গেলে এটা যে মসজিদ তা বোঝার উপায় নেই। শুধু কাপড়-চোপড় টানানো এবং মাছ বাজারের মত লোকজনের চিল্লাচিল্লী। কাকরাইল মসজিদে অন্যান্য মসজিদের মত মেহরাব তথা ইমাম দাঁড়ানোর মুসাল্লা নেই। তাই সুন্নী আলেমদের মতে কাকরাইল মসজিদ প্রকৃত মসজিদ নয়।
তাবলীগ কাদের জন্য?
তাবলীগ অর্থ প্রচার করা বা দাওয়াত দেওয়া। কিসের দাওয়াত? দ্বীনের দাওয়াত অর্থাৎ সৎ কাজের আদেশ এবং অসৎ কাজের নিষেধ। এখন প্রশ্ন হতে পারে তাবলীগ কি সবাই করতে পারবে? এর উত্তর কুরআন শরীফেই আছে। তাবলীগ সকলের জন্য নয়। যেমন আল্লাহ রাব্বুল আলামীন কোরআন শরীফে সূরা আলে ইমরানের ১০৪ নং আয়াতে বলেন,
Comments
Post a Comment