মওদুদীর ভ্রান্ত আক্বিদা ও ইসলামী আক্বিদা

মওদুদীর ভ্রান্ত আক্বিদা ও ইসলামী আক্বিদা


জামাতে ইসলামীর প্রতিষ্ঠাতা মওদূদীর সংক্ষিপ্ত পরিচিতি: হিজরী সন ১৩২১ সালের ৩রা রজব ১৯০৩ ইং জনাব আবুল আলা মওদূদী (পাকিস্তানের) আওরঙ্গাবাদ শহরের আইন ব্যবসায়ী জনাব আহমদ হাসান মওদূদীর গৃহে জন্ম লাভ করেন। মওদূদী সাহেব নিজের ভাষায় বলেছিলেন, তার শিক্ষাগত যোগ্যতা হচ্ছে আলেম বা ইন্টারমিডিয়েট যাকে তৎকালিন মৌলভী পাশ বলা হতো। অর্থাৎ তিনি আলেম পর্যন্ত লেখা-পড়া করেছিলেন। স্বীয় পিতার আর্থিক অবস্থা ভাল না হওয়ায় উচ্চ ডিগ্রি অর্জন করতে ব্যর্থ হন তিনি। তবে বাল্যকাল থেকে লেখা-লেখি ও সাহিত্য চর্চা ছিল তার অন্যতম ভাল অভ্যাস।

কিন্তু ধীরে ধীরে এ অভ্যাসকে সে নিজের জীবিকা নির্বাহের মাধ্যম ও ছোটকালে লালিত বিতর্কিত ভ্রান্ত মতবাদ প্রকাশ করার উদ্দেশ্যে ঊনিশ শ’ আঠারো সালে বিজনৌর থেকে প্রকাশিত মদীনা নামক পত্রিকায় সংবাদিকতা শুরু করেন। দীর্ঘ চৌদ্দ বৎসর পর্যন্ত বিভিন্ন লেখা- লেখি, সাংবাদিকতা, আন্দোলন, সংগ্রামের পর ১৯৩২ সালে নিজের ভ্রান্ত মতবাদকে সর্বস্তরের মুসলমানদের মাঝে ছড়িয়ে দেওয়ার লক্ষ্যে তারজুমানুল কুরআন নামক নিয়মিত মাসিক পত্রিকা সম্পাদনা শুরু করেন। এরপর ১৯৪১ সালের ২৬ আগস্ট লাহোরে তার এ ভ্রান্ত মতবাদকে রাষ্ট্রীয়রূপ দেওয়ার দৃঢ় পরিকল্পনা নিয়ে প্রতিষ্ঠা হলো ‘জামাতে ইসলাম’ নামক একটি ধর্মীয় সংগঠন। যে সংগঠন আজ উপমহাদেশে তার ভ্রান্ত মতবাদকে প্রচার-প্রসার করে অগণিত সরল প্রাণ মুসলমানদের ঈমান আকীদাকে ধ্বংস করার অপচেষ্টায় লিপ্ত। তাই জনাব মওদূদী সাহেবের ভ্রান্ত মতবাদ সম্পর্কে এখানে সংক্ষিপ্ত আলোকপাত করছি। যাতে সরলপ্রাণ মুসলিম মিল্লাতকে তার ভ্রান্ত মতবাদ থেকে নিজের ঈমান আকীদা হেফাজত করতে পারেন।

-তথ্যসূত্রঃ মওদূদী একটি জীবন একটি ইতিহাস-

যে সব বিষয়ে মাওলানা মওদূদীর সাথে আহলে সুন্নাত ওয়াল জামায়াতের মতপার্থক্য রয়েছে, তা হলো কুরআন, হাদীস, প্রিয় নবী, ইসলাম, ফেরেশতা, সাহাবায়ে কেরাম, মুজতাহিদ, ইমাম মাহদী, ওলামায়ে কেরাম, আওলিয়ায়ে এজাম, উসূলে হাদীস, তাফসীর, ফিকহ, তাসাউফ, তাকলীদ, মাজহাব থেকে শুরু করে আরো অসংখ্য বিষয়ে। এখানে মাত্র উল্লেখযোগ্য কয়েকটি উপস্থাপন করছি। মওদূদীর ভ্রান্ত আকীদা নবীগণ নিষ্পাপ নন!

ﻋﺼﻤﺖ ﺍﻧﺒﻴﺎﺀ ﻋﻠﻴﻬﻢ ﺍﻟﺴﻼﻡ ﻛﮯ ﻟﻮﺍﺯﻡ ﺫﺍﺕ ﺳﮯ ﻧﮩﻴﻰ ﺍﻭﺭﺍﻳﻚ ﻟﻄﻴﻒ ﻧﻜﺘﮧ ﻳﺍﻟﻠﮧ ﺗﻌﺎ ﻟﮯ ﻧﮯ ﺑﺎﻻﺭﺍﺩﻩ ﮨﺮ ﻧﺒﻰ ﺳﮯ ﻛﺴﻰ ﻧﮧ ﻛﺴﻰ ﻭﻗﺖ ﺣﻔﺎﻇﺖ ﺍﭨﮭﺎ ﻛﺮ ﺍﻳﻚ ﺩﻭﻟﻐﺰ ﺷﻴﻰ ﮨﻮ ﺟﺎﻧﮯﺩﻯ ﮨﮯ

নিষ্পাপ হওয়া আম্বিয়া আলাইহিমুস সালামের জন্য আবশ্যকীয় নয়, এতে এমন একটি সূক্ষ্ণ রহস্য বিদ্যমান আছে যে, আল্লাহ তাআলা ইচ্ছাপূর্বক প্রত্যেক নবী থেকে কোন না কোন মূহুর্তে স্বীয় হেফাজত উঠিয়ে নিয়ে তাদের থেকে দু’একটি পদস্খলন পদচ্যুতি (গুনাহ) হতে দেন। নবী হওয়ার পূর্বে তো হযরত মূসা আলাইহিস সালাম কর্তৃকও একটি বিরাট গুনাহের কাজ সংঘটিত হয়ে গিয়েছিল। (রসায়েল ও মাসায়েল, পৃষ্ঠা ২৪, ১ম খন্ড। তাফহীমাত, আবুল আলা মওদূদী। ২য় খন্ড, ৬ষ্ঠ মুদ্রণ, পৃষ্ঠা: ৫৭, পাকিস্তান।) ইসলামী আকীদা ইসলামী শরীয়তের আলোকে ﻋﺼﻤﺖ বা নিষ্পাপ হওয়া নবীদের জন্য অবিচ্ছেদ্য একটি অংশ, বরং ﻋﺼﻤﺖ এর ক্ষেত্রে নবীগণ ফেরেশতা থেকেও অধিক হকদার। যেমন নিবরায কিতাবে ﻋﺼﻤﺖ সম্পর্কে ইমাম মাতুরিদী রাহমাতুল্লাহি তাআলা আলাইহি বলেন,

ﺍَﻟْﺄَﻧْﺒِﻴَﺎﺀُ ﺃَﺣَﻖُّ ﺑِﺎﻟْﻌِﺼْﻤَﺔِ ﻣِﻦَ ﺍﻟْﻤَﻠﺌِﻜَﺔِ

“নবীগণ ফিরিশতাদের তুলনায় ইসমতের অধিক হকদার।” (নিবরায। পৃষ্টা ২৮৪।) কেননা, শয়তান নবীদের থেকে অনেক দূরে থাকে।

যেমন ﻋﺼﻤﺖ সম্পর্কে নকলী দলীলঃ পবিত্র কুরআন পাকেও আল্লাহ পাক শয়তানকে উদ্দেশ্য করে বলেছেন,

ﺍِﻥَّ ﻋِﺒَﺎﺩِﻯْ ﻟَﻴْﺲَ ﻟَﻚَ ﻋَﻠَﻴْﻬِﻢْ ﺳُﻠْﻄَﺎ

"হে ইবলিস! আমার বিশিষ্ট বান্দাদের উপর তোমার কর্তৃত্ব নেই।” (সূরা আল হিজার, আয়াত : ৪১) আর শয়তানও স্বয়ং স্বীকার করেছিল,

ﻭَﻟَﺄُﻏِﻮَ ﻳﻨﻬُﻢْ ﺃَﺟْﻤﻌﻴْﻦَ – ﺍِﻟَّﺎ ﻋِﺒَﺎﺩَﻙَ ﻣِﻨْﻬُﻢ ﺍﻟْﻤُﺨْﻠِﺼِﻴْﻦَ

“হে আল্লাহ! তোমার বিশিষ্ট বান্দাগণ ব্যতীত বাকী সবাইকে বিপথগামী করবো।” (সূরা আল হিজার, আয়াত ৪১) উল্লিখিত আয়াতে নবীগণ যে নিষ্পাপ তা সুদৃঢ়ভাবে প্রমাণিত হলো। কারণ গুনাহ হয় শয়তানের ﻭﺳﻮﺳﻪ দ্বারা। আর নবী-রাসূল তথা বিশিষ্ট বান্দাগণ ﻭﺳﻮﺳﻪ থেকে পূতঃপবিত্র। মিশকাত শরীফে ﺍَﻟْﻮَﺳْﻮَﺳَﺔُ অধ্যায়ে বর্ণিতআছে প্রত্যেক মানুষের সাথে একজন শয়তান অবস্থানকরে যার নাম কারীণ। প্রিয় নবী বলেন, আমার কারীন মুসলমান হয়ে গেছে। মিশকাতের অপর হাদীসে মনাকেবে ওমর অধ্যায়ে বর্ণিত আছে, হযরত ওমর রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু যে রাস্তা দিয়ে গমন করেন তথা হতে শয়তান পালিয়ে যায়। তাহলে বুঝা গেল, যার উপর নবীর সুদৃষ্টি রয়েছে সেও শয়তান থেকে নিরাপদ থাকেন। অতএব, বর্ণিত কুরআন হাদীস থেকে প্রমাণিত হল নবী-রাসূলগণ নিষ্পাপ। তাঁদের কোন গুনাহ থাকতে পারে না।

সে জন্যই ইমাম মোল্লা আলী কারী রাহমাতুল্লাহি আলাইহি স্বীয় কিতাব মিরকাত শরহে মিশকাতে নবীগণ যে নবুয়াতের আগে ও পরে সর্বদা যাবতীয় ছোট-বড় ভুলত্রুটি গুনাহ থেকে পবিত্র নিষ্পাপ থাকেন তা এভাবে র্ব্ণনা করেছেন,

যেমন

 ﺍَﻟْﺄَﻧْﺒِﻴَﺎﺀُ ﻣَﻌْﺼُﻮْﻣُﻮْﻥَ ﻗَﺒْﻞَ ﺍﻟﻨَّﺒُﻮَّﺓِ ﻭَﺑَﻌْﺪَﻫَﺎ ﻋَﻦْ ﻛَﺒَﺎﺋِﺮِ ﺍﻟﺬُّﻧُﻮْﺏِ ﻭَﺻَﻐَﺎﺋِﺮِﻫَﺎ ﻭَ ﻟَﻮ ﺳَﻬْﻮًﺍ ﻋَﻠﻰ ﻣَﺎﻫُﻮَ ﺍﻟْﺤَﻖُّ ﻋِﻨْﺪَ ﺍﻟْﻤﺤﻘِّﻘﻴﻦ

“নবীগণ নবুয়াতের পূর্বে ও পরে কবীরা-সগীরা উভয় প্রকার গুনাহ থেকে নিষ্পাপ পবিত্র এমনকি অনিচ্ছাকৃতভাবেও । এটাই মুহাক্কিক ওলামাদের নিকট হক কথা।”(মিরকাত) কারণ নবীদের উপর থেকে যদি আল্লাহর হেফাযত উঠে গিয়ে ﻋﺼﻤﺖ নষ্ট হয়ে যায়, তাহলে তাদের নির্দেশিত শরীয়তের বিধানাবলীতে সন্দেহের অবকাশ থেকে যায়। আর যৌক্তিক দিক দিয়েও যতক্ষণ নবীগণকে নিষ্পাপ (মাসূম) মেনে নেয়া না হয়, ততক্ষণ পর্যন্ত নবী, সাধারণ দার্শনিক ও সংস্কারের মধ্যে পার্থক্য পরিলক্ষিত হয় না। তাই ইসলাম এটাকে অত্যন্ত গুরুত্ব দিয়েছে। অথচ মওদূদী নবীদের থেকে হেফাযত উঠিয়ে নিয়ে আল্লাহ কর্তৃক তাঁদের থেকে ভূলত্রুটি গুনাহ সংঘটিত করার যে মারাত্নক কুফরী আকীদা প্রকাশ করেছে তা কখনও ইসলামে গ্রহণযোগ্য নয়। বরং এটা অল্লাহর শানেও চরম বিয়াদবী বৈ কিছুই নয়। আর হযরত মূসা আলাইহিস সালাম এক মিশরীকে শাসনের উদ্দেশ্যেই শাস্তি দিয়েছিলেন। এতে ওই মিশরীর মৃত্যু ঘটে। এটা কখনও গুনাহ নয় বরং ন্যায় বিচার। অথচ মওদূদী এটিকে বড় গুনাহ বলে নবীদের শানে চরম আবমাননাকর উক্তি করলেন। দলীলসমূহ : কানযুল ঈমান, রুহুল ইরফান, নিবরায, ফিকহ আকবর, শরহে আকায়েদে নসফী, শরহে মাওয়াকিফ, মিরকাত শরহে মিশকাত।

মওদূদীর আকীদা

এ মর্মে দোয়া করুন যে, এ বিরাট কাজ (নবুয়তী দায়িত্ব) পালন করতে গিয়ে আপনি যে ভুল-ভ্রান্তি বা দোষ-ত্রুটি করেছেন, তা সব তিনি যেন মাফ করে দেন। তাফহীমুল কুরআন, ১৯ তম খন্ড, আবুল আলা মওদূদী, সূরা আন নসর, পৃষ্ঠা: ২৮৭। অনুবাদ: আবদুল মান্নান তালিব, আধুনিক প্রকাশনী, ঢাকা।

ইসলামী আকীদা

সূরা আন নসরের ﺍﺳﺘﻐﻔﺎﺭ এর মর্মার্থ হচ্ছে, আপনি তাঁর নিকট মাগফেরাত বা ক্ষমা প্রার্থনা করুন। অথচ কুরআন সুন্নাহ, ইজমা ও কিয়াসের আলোকে প্রমাণিত যে, আমাদের প্রিয় নবীসহ সকল নবী রাসূলগণ যাবতীয় ছোট-বড় গুনাহ, ভুল-ত্রুটি থেকে মুক্ত। তাহলে এ আয়াতের অর্থ অবশ্যই তাবীল করতে হবে। যেমন যুগশ্রেষ্ঠ মুফাসসিরগণ এ আয়াতের সঠিক ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে বলেছেন, এখানে প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলাইহি ওয়া সাল্লামকে নিজের গুনাহ ক্ষমা প্রার্থনা করতে বলা হয়নি, বরং উম্মতের গুনাহ মাফ চাইতে বলা হয়েছে। উদাহরণস্বরূপ ইমাম জালাল উদ্দীন সুয়ূতী রাহমাতুল্লাহি আলাইহি আল-হাবী লিল ফাতওয়া গ্রন্থের ২য় খন্ডে আম্বাউল আম্বিয়া ফি হায়াতিল আম্বিয়া অধ্যায়ে লিখেছেন।
 
ﻟﻨَّﻈْﺮُ ﻓِﻰ ﺃَﻋْﻤَﺎﻝِ ﺃُﻣَّﺘِﻪ ﻭَ ﺍﻟْﺎِﺳْﺘِﻐْﻔَﺎﺭُ ﻟَﻬُﻢْ ﻣِﻦَ ﺍﻟﺴَّﻴِّﺌَﺎﺕِ

“আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলাইহি ওয়া সাল্লাম উম্মতের আমলগুলো দেখেন এবং তাদের পক্ষ থেকে আল্লাহর দরবারে (উম্মতের) গুনাহের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করেন। এটাই প্রিয় নবীর ﺍﺳﺘﻐﻔﺎﺭ এর প্রকৃত অর্থ। অথচ মওদূদী ﺍﺳﺘﻐﻔﺎﺭ এর অপব্যাখ্যা করতে গিয়ে প্রিয় নবীকে গুনাহগার বানানোর এবং নবুয়তী দায়িত্ব পালনে অক্ষমতার যে মনগড়া অভিযোগ স্থির করতে চেয়েছেন, তা প্রিয় নবীর পবিত্র শানে মস্ত বড় জুলুম ও বেয়াদবীর শামিল। দলীলসমূহ: পবিত্র কুরআন, তাফসীরে আযীয, মাদারিজুন্নাবুয়াত, শরহে শিফা শরীফ, তাফসীরে রূহুল বয়ান, আল-আবী লিল ফতাওয়া। মওদূদীর আকীদা ১. মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইসলাম ধর্মের প্রবর্তক নন। ২. রাসূল না অতিমানব, না মানবীয় দুর্বলতা থেকে মুক্ত। তিনি যেমন খোদার ধন-ভান্ডারের মালিক নন, তেমনি খোদার অদৃশ্যের জ্ঞানেরও অধিকারী নন বলে সর্বজ্ঞ নন। ৩. তিনি পরের কল্যাণ বা অকল্যাণ সাধন তো দূরে নিজেরও কল্যাণ বা অকল্যাণ করতে অক্ষম। ৪. তিনি কোন কিছু হালাল বা হারাম করতে পারেন না।

লন্ডনের ভাষণ, পৃষ্টা: ৩-১৯, কৃত: আবুল আলা মওদূদী, অনুবাদ: আখতার ফারূক, জুলকরনাঈন প্রেস, ৩৮, বানিয়া নগর, ঢাকা।

ইসলামী আকীদা

কুরআন সুন্নাহ, ইজমা ও কিয়াসের আলোকে অবশ্যই আমাদের প্রিয় নবী ইসলাম ধর্মের প্রবর্তক ছিলেন। পবিত্র কুরআনে

ﺍﻟﻴﻮﻡ ﺃﻛﻤﻠﺖ ﻟﻜﻢ ﺩﻳﻨﻜﻢ

বলে প্রিয় নবীর মাধ্যমে ইসলামকে পরিপূর্ণতা দান করেছেন আল্লাহ তা’আলা। তাই তিনি যদি ইসলাম ধর্মের প্রবর্তক না হন, তাহলে ইসলাম ধর্মের প্রবর্তক কে? অতিমানব অর্থ অলৌকিক ক্ষমতাসম্পন্ন ব্যক্তি। সুতরাং প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলাইহি ওয়া সাল্লাম অতিমানব ছিলেন এবং মানবীয় দুর্বলতা থেকেও সম্পূর্ণ মুক্ত, পুতঃপবিত্র ছিলেন, বিধায় আজ তাঁর প্রদর্শিত দ্বীণ আমরা সঠিকভাবে পেয়েছি। তিনি খোদার ধন ভান্ডারের মালিকও ছিলেন। পবিত্র হাদীস শরীফে এরশাদ হয়েছে,

 ﺍِﻧِّﻰ ﺃُﻭْﺗِﻴْﺖُ ﻣَﻔﺎﺗﻴﺢ ﺧَﺰَﺍﺋِﻦِ ﺍﻟْﺄَﺭْﺽِ

“প্রিয় নবী স্বয়ং বলেছেন, আমাকে জমিনের খণিসমূহের চাবি দেওয়া হয়েছে বা ধন-ভান্ডারের মালিক বানানো হয়েছে। (বোখারী শরীফ, ২য় খন্ড, পৃষ্টা: ১০৪২।) হযরত আবু হোরায়রা রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু হতে এ ধরনের আরও একটি হাদীস বর্ণিত হয়েছে। এছাড়াও তাঁকে অদৃশ্যের জ্ঞান দেওয়া হয়েছে।

পবিত্র কুরআনে এরশাদ হয়েছে:

ﻋِﻠْﻢُ ﺍﻟْﻐَﻴْﺐِ ﻓَﻠَﺎ ﻳُﻈْﻬِﺮ ﻋَﻠﻰ ﻏَﻴْﺒِﻪ ﺃَﺣَﺪًﺍ – ﺍِﻟَّﺎ ﻣﻦ ﺍﺭْﺗَﻀﻰ ﻣِﻦْ ﺭَﺳﻮﻝ

“অদৃশ্যের জ্ঞাতা, আল্লাহ আপন অদৃশ্যের উপর কাউকে ক্ষমতাবান করেন না আপন মনোনীত রাসূল ব্যতীত।” ( সূরা আল জিন । আয়াত : ২৬।) এ আয়াতে প্রিয় নবীসহ আপন রাসূলদেরকে ইলমে গায়েব দেওয়ার বিষয়ে আল্লাহ তা’আলা সুস্পষ্ট ঘোষণা রয়েছে। আর তিনি স্বয়ং আল্লাহ তা’আলার পক্ষ থেকে কল্যাণদাতা হিসাবেই প্রেরিত হয়েছেন। পবিত্র কুরআন শরীফে এরশাদ হয়েছে,

ﻭَﻣَﺂ ﺃَﺭْﺳَﻠْﻨﺎﻙَ ﺍِﻟَّﺎ ﺭَﺣْﻤَﺔَ ﻟِّﻠْﻌﺎﻟَﻤِﻴْﻦَ

“হে নবী! আমি আপনাকে সমগ্র সৃষ্টি জগতের জন্য রহমত (কল্যাণ) স্বরূপ প্রেরন করেছি।” (সূরা আল আম্বিয়া, আয়াত: ১০৭।) অন্ধকারে নিমজ্জিত সমাজকে সত্য ন্যায়ের আলোতে আলোকিত করে, অসভ্য জাতিকে সভ্য করে, জাহান্নামীদেরকে জান্নাতের পথ প্রদর্শন করে তিনি কি কল্যাণ করেন নি? জামায়াতে ইসলামীর একটি সংস্থা ইসলামী সমাজ কল্যাণ পরিষদ যদি কল্যাণ করতে পারে তাহলে প্রিয় নবীর শানে কেন এত বড় বেয়াদবী?

পরিশেষে মওদূদীর আরেকটি ভ্রান্ত আকীদা হচ্ছে প্রিয়নবী কোন কিছু হালাল কিংবা হারাম করতে পারেন না। অথচ পবিত্র কুরআন ও হাদীসে অসংখ্য দলীল রয়েছে শরীয়তের বিধানাবলীতে পরিবর্তণ, পরিবর্ধণ এবং কোন কিছুকে হালাল কিংবা হারাম করার ক্ষমতাও মহান আল্লাহ পাক তাঁর হাবীবকে দান করেছেন। যেমন-

ﻗﺎﻟﺘﻠﻮﺍ ﺍﻟْﺬِﻳْﻦَ ﻟَﺎﻳُﺆْﻣِﻨُﻮْﻥَ ﺑِﺎ ﻟﻠﻪِ ﻭَﻟَﺎ ﺑِﺎﻟﻴَﻮْﻡِ ﺍﻟْﺂﺧِﺮِ ﻭَ ﻟَﺎ ﻳُﺤَﺮِّﻣُﻮﻥَ ﻣَﺎ ﺣﺮﻡ ﺍﻟﻠﻪُ ﻭَ ﺭَﺳُﻮْﻟُﻪ

যুদ্ধ কর তাদের সাথে যারা ঈমান আনে না আল্লাহ উপর কিয়ামত দিবসের উপর এবং হারাম মানে না ওই বস্তুকে, যাকে হারাম করেছেন আল্লাহ ও তাঁর রাসূল।” (সূরা আ্ত তাওবা, আয়াত: ২৯। ) এ আয়াত দ্বারা স্পষ্ট বুঝা যায় আল্লাহ পাকের পরে তাঁর প্রিয় হাবীবও কোন কিছুকে হালাল কিংবা হারাম করতে পারেন এটাকে খোদাপ্রদত্ত ক্ষমতা বলা হয়। হাদীসে পাকে অসংখ্য প্রমাণ বিদ্যমান রয়েছে যে, প্রিয় নবী অনেক কিছুকে হালাল অথবা হারাম ঘোষণা করেছেন যেমন পবিত্র মক্কা শরীফের ন্যায় মদীনা শরীফকেও প্রিয় নবী নিজে হারাম বা পবিত্র ঘোষণা করেছেন। প্রখ্যাত সাহাবী হযরত সা’দ ইবনে আবী ওয়াক্কাস রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু বর্ণনা করনে-

ﺍِﻥَّ ﺭَﺳُﻮﻝَ ﺍﻟﻠﻪِ ﺻَﻞَّ ﺍﻟﻠﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺳَﻠَّﻢَ ﺣَﺮَّﻡَ ﻫَﺬَﺍ ﺍﻟﺤﺮﺍﻡ

“নিশ্চয় রাসূল সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলাইহি ওয়া সাল্লাম এই হারাম শরীফ (মদীনাকে) হারামরূপে গণ্য করেছেন।” অন্য হাদীস শরীফে রয়েছে-

ﺍِﻥَّ ﺭَﺳُﻮﻝَ ﺍﻟﻠﻪِ ﺻَﻞَّ ﺍﻟﻠﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺳَﻠَّﻢَ ﺣَﺮَّﻡَ ﻣَﺎ ﺑَﻴْﻦَ ﻟَﺎﺑﺘﻰ ﺍﻟْﻤَﺪِﻳْﻨَﺔِ

“প্রখ্যাত সাহাবী হযরত রাফে বিন খদীজ রাদিয়াল্লাহু তাআলা আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বর্ণনা করেছেন, নিশ্চয় প্রিয় রাসূল সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলাইহি ওয়া সাল্লাম সমগ্র মদীনা মুনাওয়ারাকে পবিত্র হারামরূপে গণ্য করেছেন”। (সহীহ মুসলিম শরীফ ও তাহাভী শরীফ। ) অতএব প্রমাণিত হলো, কোন কিছুকে হালাল, হারাম করার ক্ষমতা প্রিয় নবীর রয়েছে, এটা তাঁর খোদাপ্রদত্ত অন্যতম বৈশিষ্ট্য। দলীলসমূহ: কুরআন শরীফ, বোখারী শরীফ, মুসলিম শরীফ, তাহাভী শরীফ।

মওদূদীর আকীদা

আজমীর শরীফে যেয়ারতের উদ্দেশ্যে গমন করা জেনার গুনাহের চেয়েও মারাত্নক!

ﺟﻮﻟﻮﮒ ﺣﺎﺟﺘﻴﻰ ﻃﻠﺐ ﻛﺮﻧﮯﻛﻴﻠﻴﮯ ﺍ ﺟﻤﻴﺮﻳﺎﺳﺎﻻﻳﮯ ﻣﺴﻌﻮﺩ ﻛﻰ ﻗﺒﺮﻳﺎﺍﻳﺴﮯ ﮨﯽ ﺩﻭﺳﺮﮮ ﻣﻘﺎﻣﺎﺕ ﭘﺮ ﺟﺎﺗﮯ ﮨﻲ ﻭﮦ ﺍﺗﻨﺎ ﺑﮍﺍﮔﻨﺎﮦ ﮐﺮ ﺗﮯ ﮨﻲ ﮐﮧ ﻗﺘﻞ ﺍﻭﺭ ﺯﻧﺎﮐﺎﮔﻨﺎﮦ ﺍﺱ ﺳﮯﮐﻤﺘﺮﮨﮯ

“যারা মনষ্কামনা পূর্ণ করার জন্য আজমীর অথবা সালায়ে মসউদের কবরে বা এই ধরনের অন্যান্য স্থানে যায়, তারা এত বড় গুনাহ করে যে, হত্যা ও জিনার গুনাহ তার তুলনায় কিছুই নয়।” (তাজদীদ ও ইহইয়ায়ে দীন (ইসলামী রেনেঁসা আনোদালন,) আবুল আলা মওদূদী পৃষ্ঠা: ৭২। অনুবাদ: আবদুল মান্নান তালিব। আধুনিক প্রকাশনী, ঢাকা।)

ইসলামী আকীদা

নবী-অলী তথা আল্লাহর নেক বান্দাদের রওয়াপাকে বা মাজারে তাদেরই অসীলায় মনষ্কামনা পূরণে গমন করা সম্পূর্ণ শরীয়তসম্মত। কেননা পবিত্র কুরআনে এরশাদ হয়েছে-

ﻭَﻟَﻮْ ﺃَﻧَّﻬُﻢْ ﺍِﺫْ ﻇَﻠَﻤُﻮْﺍ ﺃَﻧْﻔُﺴَﻬُﻢْ ﺟﺂﺀُﻭْﻙَ ﻓَﺎﺳْﺘَﻐْﻔِﺮُﻭﺍ ﺍﻟﻠﻪَ ﻭَﺍﻟﺴْﺘَﻐْﻔﺮ ﻟَﻬُﻢُ ﺍﻟﺮَّﺳُﻮْﻝُ ﻟَﻮَﺟَﺪُﻭﺍ ﺍﻟﻠﻪَ ﺗَﻮَّﺍﺑًﺎ ﺭَﺣِﻴْﻤًﺎ

“যদি কখনও তারা নিজেদের আত্নার প্রতি জুলুম করে হে মাহবুব আপনার দরবারে হাজির হয়। অতঃপর আল্লাহর নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করে। আর রাসুল সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাদের পক্ষে সুপারিশ করেন, তবে অবশ্যই তারা আল্লাহকে তাওবা কবুলকারী ও দয়ালু পাবে।”(সূরা আন নিসা, আয়াত ৬৪ । ) হযরত মরিয়ম আলাইহাস সালামের হুজরায় হযরত যাকারিয়া আলাইহিস সালাম আপন রবের নিকট পুত্র সন্তান লাভের আশায় এভাবে দোয়া করেছিলেন-

ﻫُﻨَﺎﻟِﻚَ ﺩَﻋَﺎ ﺯَﻛﺮﻳﺎ ﺭَﺑَّﻪ ﻗَﺎﻝَ ﺭَﺏِّ ﻫَﺐْ ﻟِﻰْ ﻣِﻦْ ﻟَّﺪُﻧْﻚَ ﺫُﺭِﻳَّﺔً ﻃَﻴِّﺒَﺔً ﺍِﻧَّﻚَ ﺳَﻤِﻴْﻊُ ﺍﻟﺪُّﻋﺎﺀِ

“এখানে প্রার্থনা করলেন হযরত যাকারিয়া আলাইহিস সালাম আপন রবের নিকট, হে আমার রব! আমাকে তোমার নিকট থেকে প্রদান কর পবিত্র সন্তান। নিশ্চয় তুমিই প্রার্থনা শ্রবণকারী।” (সূরা আলে ইমরান, আয়াত ৩৮।) এ ছাড়াও অন্য আয়াতে রয়েছে,

ﻭَﺍﻟْﺘَﻐُﻮَﺍ ﺍﻟﻴﻪ ﺍﻟْﻮَﺳﻴْﻠَﺔْ

“তোমরা তাঁরই দিকে অসীলা (মাধ্যম) তালাশ করো।” (সূরা আল মায়িদা, আয়াত (৩৫) বর্ণিত আয়াতসমূহ মহান আল্লাহর নেক বান্দাদের নিকট মনষ্কামনা পূরণের উদ্দেশ্যে যাওয়া এবং তাঁদের অসীলায় প্রার্থনা কবুল হওয়ার উৎকৃষ্ট প্রমাণ। অন্যান্য বর্ণনা দ্বারাও হাজত বা মনষ্কামনা পূরণার্থে বিভিন্ন মাজারে বা আল্লাহ মাহবুব বান্দাদের দরবারে যাওয়ার বাস্তব প্রমাণ কিতাবে রয়েছে।

যেমন – ইমাম শাফেয়ী রাহমাতুল্লাহি আলাইহি বলেন-

ﺍِﻧِّﻰ ﻟَﺄﺗَﺒَﺮَّﻙ ﺑِﺄَﺑِﻰ ﺣَﻨِﻴْﻔَﺔَ ﻭَ ﺃَﺟِﻰُ ﺍِﻟَﻰ ﻗَﺒﺮﻩ ﻓَﺎِﺫَﺍ ﻋَﺮَﺿَﺖْ ﺣَﺎﺟَﺔ ﺻَﻠَّﻴْﺖُ ﺭَﻛْﻌَﺘَﻴْﻦِ ﻭَﺳَﺌَﻠْﺖُ ﺍﻟﻠﻪَ ﺗَﻌَﺎﻟﻰ ﻋِﻨْﺪَ ﻗَﺒﺮﻩ ﻓَﺘُﻘْﻀﻰ ﺳَﺮِﻳْﻊً

“আমি ইমাম আবু হানিফা রাহমাতুল্লাহি আলাইহির দরবারে আসি এবং বরকত হাসিল করি। আমার যখন কোন হাজত হয়, তখন ইমাম আবু হানিফার মাজারে দু’রাকাত নামায পড়ে আল্লাহর দরবারে দোয়া করি। ফলে দ্রুত আমার হাজত পূর্ণ হয়ে যায়।”(রদ্দুল মুহতার, ১ম খন্ড, ইমাম ইবনে আবেদীন শামী রাহ। ) সুতরাং অসংখ্য দলীলাদির মাধমে প্রমানিত হলো মনষ্কামনা পূর্ণ করার জন্য আল্লাহর নেক বান্দাদের রওযাতে যাওয়া শুধু জায়েয নয়, বরং প্রখ্যাত ইমামদের অনুসৃত নীতিও বটে। অতএব, আজমীর শরীফ, সালায়ে মাসউদের দরবারে মনষ্কামনা পূরণার্থে যাওয়া বৈধ এবং এটাকে মওদূদী কর্তৃক জেনা ও হত্যার গুনাহর চাইতে মারাত্নক গুনাহ বলা ইসলামের উপর বড় জুলুম ছাড়া আর কিছুই নয়। দলীলসমূহ : কুরআন শরীফ, হাদীস শরীফ, রদ্দুল মুহতার, ফতোয়ায়ে আজীজিয়া, বুযুর্গ কে আকীদা।

মওদূদীর আকীদা

প্রিয় নবীর সুন্নাত ফাতেহাকে পূজার সাথে তুলনা!

ﺍﻳﻚ ﻃﺮﻑ ﻣﺸﺮﻛﺎﻧﮧ ﭘﻮﺟﺎ ﭘﺎﭦ ﻛﻰ ﺟﮕﮧ ﻓﺎ ﺗﺤﮧ ﺯﻳﺎﺭﺕ ﻧﻴﺎﺯ ﻧﺬﺭ ﻋﺮﺱ ﺳﻨﺪﻝ ﭼﮍﮬﺎ ﻳﮯ ﻧﺸﺎﻥ ﻋﻠﻢ ﺗﻌﺰﮮﺍﻭﺭ ﺍﺳﯽ ﻗﺴﻢ ﮐﮯﺩﻭ ﺳﺮﮮﻣﺬ ﮨﺒﯽ ﺍﻋﻤﺎﻝ ﮐﻰ ﻧﺊ ﺷﺮﻳﻌﺖ ﺗﺼﻨﻴﻒ ﻛﺮﻟﻰ ﮒ

“একদিকে মুশরিকদের ন্যায় পূজা আর্চনার পরিবর্তে ফাতেহাখানী, যেয়ারত, নজর-নিয়াজ, উরস, চাদর চড়ানো, তাজিয়া করা এবং এই ধরনের আরও অনেক ধর্মীয় কাজ সম্বলিত একটি নতুন শরীয়ত তৈরি করা হয়েছে।” (তাজদীদ ও ইহইয়ায়ে দ্বীন (ইসলামী রেনেঁসা আন্দোলন), আবুল আলা মওদূদী, পৃষ্ঠা: ৬, অনুবাদ: আবদুল মান্নান তালিব।।


---------- সমাপ্ত ----------


Comments

Popular posts from this blog

বালাকোট আন্দোলনের হাকীকত

সৈয়দ আহমদ বেরলভীর জম্ম ও পরিচয়