অঙ্গুলী চুম্বনের বিধান

অঙ্গুলী চুম্বনের বিধান
📚انگہوٹے چومنے کا مسئلہ
বা
🗣️ আযানে প্রিয় নবীর নাম শ্রবণকালে অঙ্গুলী চুম্বন-এর বিধান

✍️মূলঃ খতীবে পাকিস্তান আলহাজ্ব মাওলানা হাফেয মুহাম্মদ শফী সাহেব উকারভী

অনুবাদঃ🖋️ হাফেয মুহাম্মদ আব্দুল করীম নায়িমী

টেক্সট রেডীঃ মুহাম্মদ আব্দুল খালেক
...................................🌱.....................................

                           ﷽

             نحمده و نصلی و نسلم على رسوله الکریم

হযরত মুহাম্মদুর রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর পবিত্র নাম আযানে শ্রবণকালে শাহাদত অঙ্গুলী 😘 চুম্বন করতঃ দুই চোখে লাগান জায়েয ও মুস্তাহাব এবং অতি বড় রহমত ও বরকতপূর্ণ কাজ। ইহার সমর্থনে অনেক দলিল মওজুদ আছে এবং নাজায়েয-এর সমর্থনে কোন নিষেধাজ্ঞা নাই।১

📓পাঠকবৃন্দের খেদমতে কতিপয় দলিল পেশ করা 
যাইতেছেঃ

১.  আল্লামা ফাযেল শায়খ ইসমাইল হক্বী রহমাতুল্লাহি আলাইহি রচিত সুবিখ্যাত তফসীরে রুহুল বয়ান-এ বলেনঃ
وَ فِیٛ قَصَصِ الٛاَنٛبِيَاءِ وَ غَيٛرِھَا اَنَّ اٰدَمَ عَلَيٛهِ السَّلاَمُ اِشٛتَاقَ اِلٰی لِقَاءِ مُحَمَّدِ (ﷺ) حِيٛنَ کَانَ فِی الٛجَنَّةِ فَاَوٛحَی اللّٰهُ تَعَالٰی اِلَيٛهِ هُوَ مِنٛ صُلٛبِکَ وَ يَظٛھَرُ فِیٛ اٰخِرِ الزَّمَانِ فَسَاَلَ لِقَاءَ مُحَمَّد (ﷺ) حِيٛنَ كَانَ فِی الٛجَنَّةِٕ فَاَوٛحَی اللّٰهُ تَعَالٰی
--------------------------------------------------------------
📖১. এতদ্বিষয়ে বিস্তারিত, বিবরণ জানিতে হইলে আ'লা হযরত মুজাদ্দিদে মিল্লাত হযরত মাওলানা শাহ আহমদ রেযাখান বেরেলভী রহমাতুল্লাহি আলাইহির রচিত পুস্তক منير العين فى تقبيل الابهامين এবং হযরত হাকীমুল উম্মত মুফতী আহমদ ইয়ার খান সাহেবের جاء الحق و زهق الباطل নামক পুস্তক দেখুন।
..............……*...................
اِلَيٛهِ فَجَعَلَ اللّٰهُ النًُوٛرَ الٛمُحَمَّدِیَّ فِیٛ اِصٛبَعِهِ الٛمُسَبَّحَةِ مِنٛ يَّدِهٖ الٛيُمٛنٰی فَسَبَّحَ ذَالِکَ النُّوٛرُ فَلِذَالِکَ سُمِّيَتٛ تِلٛکَ الٛاَصٛبَعُ مُسَبَّحَةً کَمَا فِیٛ الرَّوٛضِ الٛفَاٸِقِ اَوٛ اَظٛھَرَ اللهُ تَعَالٰی جَمَالَ حَبِيٛبَهٖ فِیٛ صِفَاءِ ظَفَرَیٛ اِبٛهَامَيٛهِ مِثٛلُ الٛمِرٛاٰةِ فَقَبَّلَ اٰدَمُ ظَفَرَیٛ اِبٛهَامَيٛهِ وَ مَسَحَ عَلٰی عَيٛنَيٛهِ فَصَارَ اَصٛلَا لِّذُرِّيَّتِهٖ فَلَمَّا اَخٛبَرَ جِبٛرِيٛلُ النَّبِیَّ(ﷺ) بِهٰذِهٖ الٛقِصَّةِ قَالَ عَلَيٛهِ السَّلَامُ مَنٛ سَمِعَ اِسٛمِیٛ فِی الٛاَذَانِ فَقَبَّلَ ظَهَرَیٛ اَبٛهَامَيٛهِ وَ مَسَحَ عَلٰی عَيٛنَيٛهِ لَمٛ يَعٛمِ اَبَدَا¤

"কাসাসুল-আম্বিয়া এবং অন্যান্য কিতাবে আছে যে, বেহেশতে থাকা কালে হযরত আদম আলাইহিস সালামের মনে হযরত মুহাম্মদ মুস্তফা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাক্ষাত লাভের আগ্রহ জন্মিল। তখন আল্লাহ (ﷻ) হযরত আদমকে অহীর মাধ্যমে জানাইয়া দিলেন যে, তিনি তাঁহার পৃষ্ঠদেশ হইতে শেষ যামানায় আবির্ভূত হইবেন। অতঃপর হযরত আদম আলাইহিস সালাম হুযুর মুহাম্মদ মুস্তফা আলাইহিস সালাতু ওয়াসাল্লামের সাক্ষাত প্রার্থনা করিলে আল্লাহ্(ﷻ)হযরত আদমের ডান হাতের কলেমার অঙ্গুলী বা তর্জনী অঙ্গুলীতে নূরে মুহাম্মদী উদ্ভাসিত করিলেন। তখন ঐ নূর আল্লাহ(ﷻ)এর তসবীহ জপিতেছিল বিধায় উহার নাম হইয়াছে মুসাব্বাহা বা কালেমার অঙ্গুলী।- (রওদুল ফায়েক) 
আল্লাহ্ (ﷻ) আপন প্রিয় হাবীবের সৌন্দর্য-শোভা হযরত আদমের উভয় বৃদ্ধাঙ্গুলীর নখে স্বচ্ছ আয়নার ন্যায় বিকশিত করিলেন, ইহা দেখিয়া হযরত আদম আলাইহিস সালাম স্বীয় উভয় বৃদ্ধাঙ্গুলীর নখ চুম্বন করতঃ উহা চোখে লাগাইলেন। অতঃপর এই সুন্নত তাঁহার বংশধরের মধ্যে প্রচলিত হইয়া গেল। হযরত জিবরাঈল আমীন আলাইহিস সালাম যখন এই ঘটনার সংবাদ দিলেন তখন হুযুর ফরমাইলেনঃ যে ব্যক্তি আযানে আমার নাম শ্রবণ করিয়া আপন বৃদ্ধাঙ্গুলীর নখ চুম্বন দিয়া চোখে লাগায় সে কখনও অন্ধ হইবে না।"- (রুহুল বয়ান ৪র্থ খন্ড ৬৪৯ পৃষ্ঠা)

২. উক্ত তফসীরে রূহুল বয়ান-এ আরও বিবৃত হইয়াছেঃ

در محیط آورده که پیغمبر(ﷺ)بمسجد در آمد و نزدیک ستون بنشست و صدیق رضی اللہ عنہ در برابر آنحضرت نشستہ بود-بلال رضی اللہ عنہ بر خواست و باذان اشتغال فرمود چوں گفت اشہد ان محمدا رسول اللہ ابو بکر رضی اللہ ھر دو ناخن ابہامین خود را بر ھر دو چشم خود نہادہ گفت قرة عينى بک یا رسول اللہ چوں بلال رضی اللہ فارغ شد حضرت رسول اللہ(ﷺ)فرمود کہ یا ابا بکر ھرکہ بکند چنین کہ تو کردی خداءے بیا مرزد گناھان جدید و قدیم او را اگر بعمد بودہ باشد اگر بخطا-

"মুহীত' কিতাবে উদ্ধৃত হইয়াছে যে, হযরত নবী করিম (ﷺ) মসজিদে তশরীফ আনিয়া একটি স্তম্বের কাছে উপবিষ্ট ছিলেন, তাঁহার পাশে হযরত আবু বকর সিদ্দীক রাদিআল্লাহু আনহু-ও বসা ছিলেন, ইত্যবসরে হযরত বিলাল রাদিআল্লাহু আনহু আযান শুরু করিয়া দিলেন। যখন  ُاَشٛهَدُ اَنَّ مُحَمَّدَا رَّسُوٛلُ اللهউচ্চারণ করিলেন তখন হযরত সিদ্দীকে আকবর আপন বৃদ্ধাঙ্গুলীদ্বয়ের নখ চুম্বন করিয়া আপন চক্ষুদ্বয়ের উপরে রাখিয়া  ِقُرَّةُ عَيٛنِیٛ بِكَ يَا رَسُوٛلَ الله (হে রাসূলুল্লাহ আপনি আমার নয়নের মণি) । বলিলেন। বিলালের আযান শেষ হওয়ার পর হুযুর পাক (ﷺ) এরশাদ করিলেনঃ হে আবুবকর! আপনি যাহা করিয়াছেন তদনুরূপ যে ব্যক্তি করিবে আল্লাহ্(ﷻ)তাহার সমুদয় গুনাহ মাফ করিয়া দিবেন।---
                                  (রূহুল বয়ান ৪র্থ খন্ড ৬৪৮ পৃষ্ঠা)

৩.  উক্ত তফসীরে আরও বর্ণিত আছেঃ
وحضرت شیخ امام ابو طالب محمد بن علی المکی رفع اللہ درجتہ در قوت القلوب روایت کردہ از ابن عینہ رحمۃ اللہ علیہ کہ حضرت پیغمبر علیہ الصلوٰۃ والسلام بمسجد در آمد در دھہء محرم و بعد از اذکہ نماز جمعہ ادا فرمودہ بود ازدیک اسطوانہ قرار گرفت و ابوبکر رضی اللہ عنہ بظہر ابہامین چشم خود را مسح کرد و گفت قرة عینی بک یا رسول اللہ و چوں بلال رضی اللہ عنہ از اذان فراغتی روءے نمود حضرت رسول اللہ(ﷺ)فرمودہ کہ اے ابابکر ھرکہ بگوید آنچہ تو گفتی از روءے شوق بلقاءے من و بکند آنچہ تو کردی خداءے در گزارد گناھاں و برا آنچہ باشد نود کہنہ خطا و عمدد نہاں و آشکارا-
"হযরত শায়খ ইমাম আবু তালিব মুহাম্মদ বিন আলী মক্কী  (আল্লাহ্(ﷻ)তাঁহাকে উচ্চমর্যাদা দান করুন) স্বীয় কিতাব  "কুতুল কুলুব"-এ ইবনে উয়াইনা হইতে বর্ণনা করেন যে, হুযুর পুর নূর (ﷺ) জুমা-নামায আদায় করিবার নিমিত্ত ১০ই মুহররম তারিখে মসজিদে নববীতে তশরীফ আনিয়া একটি খুঁটির নিকটে বসিলেন। হযরত আবুবকর রাদিআল্লাহু আনহু আযানে হুযুর(ﷺ)এর পাকনাম শ্রবণ করিয়া নিজের বৃদ্ধাঙ্গুলীদ্বয়ের নখ আপন চোখের উপরে মসেহ করিতে করিতে বলিলেনঃ   قُرَّةُ عَيٛنِیٛ بِكَ يَا رَسُوٛلَ اللهِ
হযরত বিলাল রাদিআল্লাহু আনহুর আযান শেষ হইলে হুযুর (ﷺ) ফরমাইলেনঃ হে আবুবকর! যে-কেহ আমার নাম শুনিয়া আপনার ন্যায় উভয় হস্তের অঙ্গুলী চোখের উপরে মসেহ করে এবং আপনি যাহা বলিয়াছেন তাহা বলে, তাহা হইলে আল্লাহ্ (ﷻ)তাহার নতুন-পুরাতন প্রকাশ্য-গুপ্ত যাবতীয় গুনাহ মাফ করিয়া দিবেন।"                                                   -                            ---(রূহুল বয়ান ৪র্থ খন্ড, ৬৪৮ পৃষ্ঠা)

৪.  আল্লামা ইমাম শামসুদ্দীন রহমাতুল্লাহি আলাইহি দায়লমীর বরাত দিয়া উল্লেখ করেন যে, হযরত আবুবকর সিদ্দিক রদ্বিয়াল্লাহু আনহু--

لَمَّا سَمِعَ قَوٛلَ الٛمُٶَذِّنِ اَشٛهَدُ اَنَّ مُحَمَّدَا رَّسُوٛلُ اللهِ قَالَ هٰذَا وَ قَبَّلَ بَاطِنَ الٛاَنٛمَلَتَيٛنِ السَّبَّابَتَيٛنِ وَ مَسَحَ عَلٰی عَيٛنَيٛهِ فَقَالَ (ﷺ) مَنٛ فَعَلَ مِثٛلَ مَا فَعَلَ خَلِيٛلِیٛ فَقَدٛ حَلَّتٛ لَه‘ شَفَاعَتِیٛ ¤ 

    "যখন মুয়াযযিনকে ِاَشٛهَدُ اَنَّ مُحَمَّدَا رَّسُوٛلُ الله বলিতে শুনিলেন তখন তিনিও ইহা বলিলেন এবং শাহাদত অঙ্গুলীদ্বয়ের অভ্যন্তরংশ চুম্বন করিয়া চোখে লাগাইলেন। ইহাতে হুযুর (ﷺ) ফরমাইলেনঃ যে আমার এই প্রিয়তমের কার্যের অনুরূপ কার্য করিবে তাহার জন্য আমার শাফায়াত অবধারিত হইয়া যাইবে।"
                    ---(আল-মাকাসেদুল হাসানাহ, ৩৮৪ পৃষ্ঠা)

   এই ইমাম সাখাভী হযরত আবুল আব্বাস আহমদ বিন আবী রকরী- এর রচিত কিতাব موجبات الرحمة و عزائم المغفرة হইতে উদ্ধৃত করেন যে, হযরত খিযির আলাইহিস সালাম বলেনঃ
مَنٛ قَالَ حِيٛنَ يَسٛمَعُ الٛمُؤَذِّنَ يَقُوٛلُ اَشٛهَدُ اَنَّ مُحَمَّدَا رَّسُوٛلُ اللهِ مَرٛحَباً بِحَبِيٛبِىٛ وَ قُرَّةِ عَيٛنِيٛ مُحَمَّدِ ابٛنِ عَبٛدِ اللهِ ثُمَّ يُقَبِّلُ اِبٛهَامَيٛهِ وَ يَجٛعَلُهُمَا عَلٰى عَيٛنَيٛهِ لَمٛ يَرٛمُدٛ اَبَدَا ¤

   "যে ব্যক্তি মুয়াযযিন কর্তৃক  ِاَشٛهَدُ اَنَّ مُحَمَّدَا رَّسُوٛلُ الله শ্রবণ করিয়া  ِمَرٛحَبًا بِحَبِيٛبِیٛ وَ قُرَّةِ عَيٛنِیٛ مُحَمَّدِ ابٛنِ عَبٛدِ الله বলে অতঃপর উভয় বৃদ্ধাঙ্গুলী চুম্বনের পর নয়নযুগলে মসেহ করে তাহা হইলে কোন সময় তাহার চোখ ব্যথা-বেদনায় আক্রান্ত হইবে না।
                    ---(আল-মাকাসিদুল হাসানাহ, ৩৮৪ পৃষ্ঠা)

৬.  এই ইমাম সাখাভী ফকীহ্ মুহাম্মদ বিন সাঈদ খাওলানী রহমাতুল্লাহি আলাইহি হইতে বর্ণনা করেন যে, সাইয়্যেদুনা হযরত ইমাম হাসান রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেনঃ 
مَنٛ قَالَ حِيٛنَ يَسٛمَعُ الٛمُؤَذّنَ يَقُوٛلُ اَشٛهَدُ اَنَّ مُحَمَّدَا رَّسُوٛلُ اللهِ مَرٛحَباً بِحَبِيٛبِىٛ وَ قُرَّةِ عَيٛنِيٛ مُحَمَّدِ ابٛنِ عَبٛدِ اللهِ (ﷺ) وَ يُقَبِّلُ اِبٛهَامَيٛهِ وَ يَجٛعَلُهُمَا عَلٰى عَيٛنَيٛهِ لَمٛ يَعٛمِ وَ لَمٛ يَرٛمُدٛ¤

    "মুয়াযযিনের আযান দানকালে যে কেহ  َّاَشٛهَدُ اَن ِمُحَمَّدَا رَّسُوٛلُ الله  বাক্যটি শুনিয়া 
  ِمَرٛحَبَا بِحَبِيٛبِىٛ وَ قُرَّة عَيٛنِيٛ مُحَمَّدِابٛنِ عَبٛدِ اللهِ (ﷺ)                                                                          বলে, তারপর উভয় বৃদ্ধাঙ্গুলী চুম্বন দিয়া চোখের উপরে মসেহ করে সে কখনও অন্ধ হইবে না এবং তাহার চোখও বেদনা-ক্লিষ্ট হইবে না।    ---(المقاصد الحسنه ,৩৮৪ পৃষ্ঠা)

৭.  উক্ত ইমাম সাখাভী শামসুদ্দীন-ইমাম মুহাম্মদ বিন সালাহ মাদানীর রচিত ইতিহাস হইতে উদ্ধৃত করিয়া বলেনঃ আমি হযরত মাজদ মিসরী যিনি পূণ্যাত্মা কামেল বান্দাগণের অন্যতম, তাঁহাকে বলিতে শুনিয়াছি যে,
مَنٛ صَلّٰى عَلَى النَّبِیِّ(ﷺ) اِذَا سَمِعَ ذِكٛرَه‘ فِى الٛاَذَانِ وَ جَمَعَ اِصٛبَعَيٛهِ الٛمُسَبَّحَةَ وَ الٛاِبٛهَامَ وَ قَبَّلَهُمَا وَ مَسَحَ بِهِمَا عَلَى عَيٛنَيٛهِ لَمٛ يَرٛمُدٛ اَبَدًا¤
   "যে ব্যক্তি আযানে নবী করীম(ﷺ)এর পবিত্র নাম শ্রবণ করিয়া দরুদ পাঠ করে এবং কলেমার অঙ্গুলী ও বৃদ্ধাঙ্গুলী চুম্বন করিয়া চোখের উপরে মসেহ করে কখনও তাহার চোখে যন্ত্রণা হইবে না।---( المقاصد الحسنه, ৩৮৪ পৃষ্ঠা)

৮.  ইমাম শাখাভী, ইমাম মুহাম্মদ বিন সালেহ রচিত ইতিহাস হইতে নকল করিয়া বলেনঃ ইরাকের বহু ধর্মবেত্তা হইতে বর্ণিত হইয়াছে যে, বৃদ্ধাঙ্গুলী চুম্বন করিবার সময় নিম্নোক্ত দরুদ শরীফ পড়িবেঃ
صَلَّى اللهُ عَلَيٛكَ يَا سَيِّدِىٛ يَا رَسُوٛلَ اللهِ يَا حَبِيٛبَ قَلٛبِيٛ وَ يَا نُوٛرَ بَصَرِىٛ وَ يَا قُرَّةَ عَيٛنِيٛ¤
ইহার ফলে আল্লাহ(ﷻ)এর ইচ্ছায় তাহার চোখ কখনও যন্ত্রণা-কাতর হইবে না; ইহা পরীক্ষিত। তারপর উক্ত ইমাম সাহেব বলেনঃ ইহা শুনিবার পর হইতে অদ্যবধি এই কল্যাণময় কাজ করিয়া আসিতেছি আজ পর্যন্ত আমার চোখ ব্যথা-ক্লিষ্ট হয় নাই এবং ইনশা আল্লাহ্ হইবেও না। (المقاصد الحسنة)

৯.  উক্ত ইমাম সাখাভী ইমাম তাউস হইতে বর্ণনা করেন যে, তিনি খাজায়ে হাদীস মুহাম্মদ বিন আবী নসর বুখারী হইতে নিম্নবর্ণিত হাদীসটি শুনিয়াছেনঃ 
مَنٛ قَبَّلَ عِنٛدَ سِمَاعِهٖ مِنَ الٛمُؤَذِّنِ كَلِمَةَ الشَّهَادَةِ ظَفَرَىٛ اِبٛهَامَيٛهِ وَ مَسَحَهُمَا عَلٰى عَيٛنَيٛهِ وَ قَالَ عِنٛدَ الٛمَسِّ اَللّٰهُمَّ احٛفَظٛ حَدَقَتَىَّ وَ نَوِّرٛهُمَا بِبَرَكَةِِ حَدَقَتَىٛ مُحَمَّدِ رَّسُوٛلِ اللهِ (ﷺ) وَ نُوٛرِهِمَا لَمٛ يَعٛمِ¤

   "যে ব্যক্তি মুয়াজ্জিন কর্তৃক উচ্চারিত কালেমায়ে শাহাদত শ্রবণ করিয়া স্বীয় বৃদ্ধাঙ্গুলীর নখে চুম্বন দেয় ও উহা চোখে মসেহ করে আর এই দোয়া পড়েঃ
اَللّٰهُمَّ احٛفِظٛ حَدَقَتَیَّ وَنَوِّرَهُمَا بِبَرَکَةِ حَدَقَتَىٛ مُحَمَّد (ﷺ)وَنُوٛرِهِمَا¤
তবে সে কখনও অন্ধ হইবে না"। ---(المقاصد الحسنة৩৮৫ পৃষ্ঠা)

১০.  শরহে নিকায়া কিতাবে আছেঃ
وَ اَعٛلَمٛ اَنَّه‘ يَسٛتَحِبُّ اَنٛ يُّقَالَ عِنٛدَ سِمَاعِ الٛاُوٛلٰى مِنَ الشَّهَادَةِ صَلَّى اللهُ عَلَيٛكَ يَا رَسُوٛلَ اللهِ وَ عِنٛدَ الثَّانِيَةِ مِنٛهَا قُرَّةُ عَيٛنِیٛ بِكَ يَا رَسُوٛلَ اللهِ ثُمَّ يُقَالُ اَللّٰهُمَّ مَتَّعٛنِىٛ بِالسَّمٛعِ وَ الٛبَصَرِ بَعٛدَ وَضٛعِ ظَفَرَىٛ الٛاِبٛهَامَيٛنِ عَلَى الٛعَيٛنَيٛنِ فَاِنَّه‘(ﷺ)يَكُوٛنُ لَه‘ قَائِدَا اِلٰى الٛجَنَّةِ¤
    "ইহা জানিয়া রাখ, আযানের মধ্যে প্রথমবারের কালেমায়ে শাহাদত শুনিয়া  ِصَلَّى اللهُ عَلَيٛكَ يَا رَسُوٛلَ الله এবং দ্বিতীয়বারের শাহাদত কলেমা শ্রবণ করিয়া ُقُرَّة عَيٛنِيٛ بِكَ يَا رَسُوٛلَ الله  বলা মুস্তাহাব। তারপর বৃদ্ধাঙ্গুলীর নখ চুম্বন করতঃ আপন চোখের উপর রাখিয়া বলিবে। ِاَللّٰهُمَّ مَتَّعٛنِىٛ بِالسَّمٛعِ وَ الٛبَصَر এরূপ আমলকারীকে হুযুর পাক (ﷺ) নিজের তত্ত্বাবধানে বেহেশতে লইয়া যাইবেন।"

১১.  আল্লামা শামী আলাইহির রহমত উক্ত ইবারত রদ্দুল মুহতারে লিখিয়া বলেনঃ
كَذَافِىٛ كََنٛزِالٛعُبَّادِ قَهِسٛتَانِىٛ وَ نَحٛوِهٖ فِىٛ الٛفَتَاوَىٛ الصُّوٛفِيَّةِ وَ فِىٛ كِتَابِ الٛفِرٛدَوٛسِ مَنٛ قَبَّلَ ظَفَرَىٛ اِبٛهَامَيٛهِ عِنٛدَ سِمَاعِ اَشٛهَدُ اَنَّ مُحُمَّدَا رَّسُوٛلُ اللهِ فِى الٛاَذَانِ اَنَا قَائِدُه‘ وَ مُدٛخِلُه‘ فِىٛ صُفُوٛفِ الٛجَّنةِ وَ تَمَامُه‘ فِى حَوَاشِىٛ اَلٛجَرُ للِّرَمٛلِىٛ¤
   "অনুরূপ বর্ণনা ইমাম কাহেস্তানীর কিতাব  'কানযুল ইবাদ' এবং 'ফতুয়া-ই-সুফীয়া' ও  'কিতাবুল-ফিরদাউস'- এ আছেঃ যে ব্যক্তি আযানে ِاَشٛهَدُ اَنَّ مُحَمَّدَا رَّسُوٛلُ الله শ্রবণ করিয়া আপন বৃদ্ধাঙ্গুলীর নখ চুম্বন করে তাহার সম্বন্ধে হুযুর (ﷺ) বলেনঃ আমি তাহার অগ্রনায়ক হইব এবং তাহাকে বেহেশতে দাখিল করিব। ইহার বিশদ আলোচনা বাহরুর রায়িক এর হাশিয়াঃ'রমলী' দ্রষ্টব্য---(রদ্দুল মুহতার, ১ম খন্ড, ৩৭০ পৃষ্ঠা)

১২.  হানাফী ফকীহুলের শিরোমণি আল্লামা তাহতাবী রহমাতুল্লাহি আলাইহি শরহে মারাকীল ফালাহ-এ এই ইবারত এবং দায়লমী বর্ণিত হযরত আবু বকর সিদ্দীক রাদিআল্লাহু আনহু কর্তৃক বর্ণিত হাদীস উদ্ধৃত করিয়া বলেনঃ
وَ كَذَا رُوِىَ عَنِ الٛخِضٛرِ عَلَيٛهِ السَّلَامِ وَ بِمِثٛلِهِ يَعٛمَلُ فِى الٛفَضَائِلِ¤
   "এবং হযরত খিযির আলাইহিস সালাম হইতেও অনুরূপ বর্ণনা রহিয়াছে এবং আমলের ফযীলত বা গুরুত্বের ক্ষেত্রে এই সমস্ত হাদীস গ্রহণযোগ্য"---(তাহতাবী, আল-মারাকীল ফালাহ, ১১১ পৃষ্ঠা)

১৩.  আল্লামা কাহেস্তানি  'শরহে-কবীর'-এ কানযুল ইবাদ হইতে নকল করেনঃ
اِعٛلَمٛ اَنَّه‘ يُسٛتَحَبُّ عِنٛدَ سِمَاعِ الٛاُوٛلٰى مِنَ الشَّهَادَةِ صَلَّى اللهُ عَلَيٛكَ يَا رَسُوٛلَ اللهِ وَ عِنٛدَ سِمَاعِ الثَّانِيَةِ قُرَّةُ عَيٛنِیٛ بِكَ يَا رَسُوٛلَ اللهِ ثُمَّ يُقَالُ اَللّٰهُمَّ مَتَّعٛنِىٛ بِالسَّمٛعِ وَ الٛبَصَرِ بَعٛدَ وَضٛعِ ظَفَرِ الٛاَبٛهَامَيٛنِ عَلَى الٛعَيٛنِيٛنِ فَاِنِّه‘(ﷺ)يَكُوٛنُ قَائِدَالَّه‘ اِلَى الٛجَنَّةِ¤
   "জানিয়া রাখ, যে আযানের প্রথমবারের কালেমায়ে শাহাদত শ্রবণ করিয়া صلى الله عليك يا رسول الله এবং দ্বিতীয়বারের কালেমায়ে শাহাদত শুনিয়া قرة عيني بك يا رسول الله বলা মুস্তহাব। অতঃপর আপন বৃদ্ধাঙ্গুলী চুম্বন দিয়া নিজের চোখের উপর রাখিয়া বলিবে اللهم متعنى بالسمع و البصر এরূপ আমলকারীকে হুযুর (ﷺ) নিজের পিছনে পিছনে বেহেশতে লইয়া যাইবেন।"
                     ---(তফসীরে রূহুল বয়ান, ৬৪৮ পৃষ্ঠা)

১৪ ও ১৫.  শাফেয়ী মযহাবের বিখ্যাত কিতাব اعانة الطالبين على حلّ الفاظ فتح المعين এর ২৪৭ পৃঃ এবং মালেকী মাযহাবের মশহুর কিতাব كفاية الطالب الربانى لرسالة ابن ابى زيد القيرواني এর ১৬৯ পৃষ্ঠায় বর্ণিত আছে যে, যখন আযানে হুযুর (ﷺ) এর পাক নাম শুনিবে তখন দুরূদ-শরীফ পড়িবে, তারপর
ثُمَّ يُقَبّلُ اِبٛهَامَيٛهِ وَ يَجٛعَلُهُمَا عَلٰى عَيٛنَيٛهِ لَمٛ يَعٛمِ وَ لَمٛ يُرٛمُدٛ اَبَدَا
   "বৃদ্ধাঙ্গুলী চুম্বন করিয়া চোখের উপর রাখিবে। ফলে কোন কালেও অন্ধ হইবে না এবং চোখেও রোগ হইবে না।

১৬.  মক্কা মোকাররামার হানাফী আলেমদের নেতা শায়খূল মাশায়েখ রঈসুল মোহাক্কেক্বীন মাওলানা জামাল বিন আব্দুল্লাহ বিন বিন ওমর মক্কী রহমাতুল্লাহি আলাইহি আপন ফতুয়াতে বলেনঃ 
سُئِلَتٛ عَنٛ تَقٛبِيٛلِ الٛاِبٛهَامَيٛهِ وَ وَضٛعِهِمَا عَلَى الٛعَيٛنَيٛنِ عِنٛدَ ذِكٛرِ اِسٛمِهِ(ﷺ)فِى الٛاَذَانِ هَلٛ هُوَ جَائِزٌ اَمٛ لَا؟ اَجَبٛتُ بِمَا نَصَّه‘ نَعَمٛ تَقٛبِيٛلُ الٛاِبٛهَامَيٛنِ  وَضٛعُهُمَا عَلَى الٛعَيٛنَيٛنِ عِنٛدَ ذِكٛرِ اِسٛمِهِ(ﷺ)فِى الٛاَذَانِ جَائِزٌ بَلٛ هُوَ مُسٛتَحَبٌ صَرَّحَ بِهٖ مَشَائِخُنَا-
  আমাকে প্রশ্ন করা হইল যে, আযানে হুযুর (ﷺ)এর পবিত্র নাম উচ্চারণ কালে বৃদ্ধাঙ্গুলী চুম্বন করা এবং চোখের উপর উহা মোছন করা জায়েয কিনা? আমি তদুত্তরে বলিলাম হা, আযানে হুযুর (ﷺ) এর বরকত পূর্ণ নাম শ্রবণে বৃদ্ধাঙ্গুলী 😘 চুম্বন এবং উহা চোখের উপর স্থাপন করা জায়েয বরং মোস্তাহাব। এই আমল মুস্তাহাব হওয়ার বিষয়ে আমাদের ধর্ম বেত্তাগণ সুস্পষ্ট বর্ণনা করিয়াছেন  (মুনীরুল আইন ফি তাকবীলিল ইবহামাইন, 
                                        ---আলা হযরত বেরেলভী)।

১৭.  হযরত মাওলানা আব্দুল হাই লাখনুভীর ফতুয়াঃ
ناخنهاے ھر دو دست بر چشم نہادن ھنگام شئیدن نام آں سرور کائنات(ﷺ)در آذان چہ حکم دارد؟
   "আযানে হুযুর সরওয়ারে কায়েনাত(ﷺ)এর নাম মোবারক শ্রবণ কালে দুই ✋ হাতের নখ চুম্বন করিয়া উহা চোখের উপর স্থাপন করা কি?

                                     উত্তর
بعضے فقہا مستحب ذوشتہ اذلو حدیثے ھم در این باب نقل میسازقد مگر صحیح نیست و در امر مستحب فاعل و تارک قابل و ملامت و تشنیع نیستند در جامع الرموز می آرد

اَعٛلَمٛ اَنَّه‘ يُسٛتَحَبُّ اَنٛ يُّقَالَ عِنٛدَ سِمَاعِ الٛاُوٛلٰى مِنَ الشَّهَادَةِ صَلَّى اللهُ عَلَيٛكَ يَا رَسُوٛلَ اللهِ وَ عِنٛدَ سِمَاعِ الثَّانِيَةَ قُرِّةُ عَيٛنِيٛ بِكَ يَا رَسُوٛلَ اللهِ ثُمَّ يُقَالُ اَللّٰهُمَّ مَتَّعٛنِىٛ بِالسَّمٛعِ وَ الٛبَصَرِ بَعٛدَ وَضٛعِ ظَفَرِ الٛيَدَيٛنِ عَلَى الٛعَيٛنَيٛنِ فَاِنَّه‘(ﷺ)يَكُوٛنَ قَائِدَالَهُ اِلَى الٛجَنَّةِ-

   কোন কোন ফেকাহ্ শাস্ত্রবিদ উহা মুস্তাহাব বলিয়া লিখিয়াছেন এবং এই ব্যাপারে হাদীস উদ্ধৃত করিয়াছেন কিন্তু হাদীসটি সহীহ নহে। মুস্তাহাব কাজ যে করে ও যে না করে কেহই তিরস্কৃত ও নিন্দিত নহে।  "জামেউর রমুজ" এ আছে, জানিয়া রাখ! আযানের সময় 

প্রথমবার শাহাদত বাক্য শ্রবণ করতঃ صَلَّى اللهُ عَلَيٛكَ يَا رَسُوٛلَ الله 

এবং দ্বিতীয়বার শাহাদত বাক্য শুনিয়া قُرَّةُ عَيٛنِیٛ بِكَ يَا رَسُوٛلَ الله
اَللّٰهُمَّ مَتَّعٛنِىٛ بالسَّمٛعِ وَ الٛبَصَرِ
তারপর উভয় হাতের নখ চুম্বন করিয়া চোখের উপর স্থাপন করিবে। এরূপ আমলকারীকে হুযুর (ﷺ) আপন আশ্রয়ে জান্নাতে লইয়া যাইবেন। 
                                (মজমুয়া ফতুয়া ৩য় খন্ড ৪৩ পৃষ্ঠা)

১৮.  শায়খ আল্লামা নুরুদ্দীন খোরাসানী রহমাতুল্লাহি আলাইহি বলেনঃ আমি আযানের মধ্যে হুযুর ﷺ এর বরকতময় নাম শুনিয়া বৃদ্ধাঙ্গুলী চুম্বন করিতাম। অতঃপর এই আমল বর্জন করিলাম, ফলে আবার চোখে পীড়া দেখা দিল।
فَرَايٛتَه‘(ﷺ) مَنَامًا فَقَالَ لِمَ تَرَكٛتَ مَسٛحَ عَيٛنَيكَ عِنٛدَ الٛاَذَانِ اِنٛ اَرَدٛتَ اَنٛ تَبٛرَاَ عَيٛنَاكَ فَعُدٛ اِلَى الٛمَسٛح فَاسٛتَيٛقَظٛتُ وَ مَسَحٛتُ فَيَرِءٛتُ وَ لَمٛ يُعَاوِدٛ فِىٛ مَرَضُهُمَا اِلَى الٛاٰنِ
   "অতঃপর স্বপ্ন যোগে হুযুর (ﷺ) এর সাক্ষাৎ লাভ করিলাম। হুযুর ফরমাইলেনঃ তুমি কেন আযানের সময় বৃদ্ধাঙ্গুলী চুম্বন করিয়া উহা চোখে লাগানো পরিত্যাগ করিয়াছ? যদি তোমার চোখের রোগ মুক্তির বাসনা থাকে তবে পুনরায় এ আমল শুরু কর তারপর আমি জাগ্রত হইয়া এই কাজ আরম্ভ করিয়াছি। তখন আমার চোখ ভাল হইয়া যায়; অতঃপর অদ্যবধি আমার চোখে আর কোন প্রকার পীড়া হয় নাই।
(مهج السلامة فى تقبل الابهامين فى الاقامة)

১৯.  হযরত ওহাব বিন মুনাব্বাহ্ রাদিআল্লাহু আনহু বলেন, বনী ইসরাইলের এক ব্যক্তি দুইশত বৎসর আল্লাহর নাফরমানীতে কাটাইয়া ছিল। ঐ ব্যক্তির মৃত্যুর পর জনগণ তাহাকে আস্তাকুঁড়ে নিক্ষেপ করিল। তখন আল্লাহ(ﷻ)হযরত মুসা আলাইহিস সালাম- এর প্রতি ওহী নাযিল করিলেন যে, উক্ত ব্যক্তিকে তথা হইতে উঠাইয়া তাহার জানাযার নামায পড়। হযরত মুসা আলাইহিস সালাম আরয করিলেন, ইস্রাইল বংশীয় সমস্ত লোক ঐ ব্যক্তির নাফরমানীর সাক্ষ্য দিতেছে। এরশাদ হইল ঠিক বটে;
اِلَّا اَنَّه‘ كَانَ كُلَّمَا نَشَرَ التَّوٛرَاةَ وَ نَظَرًا اِلَى اِسٛمِ مُحَمَّد (ﷺ) قَبَّلَه‘ وَ وَضَعَه‘ عَلٰى عَيٛنَيٛهِ وَ صَلّٰى عَلَيٛهِ فَشَكَرٛتُ ذٰلِكَ لَه‘ وَ غَفَرٛتُ ذُنُوٛبَه‘ وَ زَوَّجٛتُه‘ سِبٛعِيٛنَ حُوٛرَاءَ-
    "কিন্তু এই ব্যক্তির অভ্যাস ছিল, যখন সে তৌরীত গ্রন্থ খুলিত এবং হযরত মুহাম্মদ(ﷺ)এর পাক নাম দর্শন করিত তখন এই নাম চুম্বন করিয়া চোখে লাগাইত এবং দুরুদ পাঠ করিত। এই কারণে আমি এই বান্দার হক স্বীকার করিয়াছি ও তাহার গুনাহ মাফ করিয়া ৭০ জন হুর তাহার 💒 বিবাহে দিয়াছি।
(হিলইয়াতুল আউলিয়া-আবু নঈম ৪র্থ খন্ড ৪২ পৃষ্ঠা, সীরাতে হলবীয়া ১ম খন্ড ৮৫ পৃষ্ঠা)

২০.  সাইয়েদুল আরেফীন হযরত মাওলানা রূমী রহমাতুল্লাহি আলাইহি মসনভী শরীফে বলেন:
                          بود در انجیل نام مصطفی
                           آن سر پیغمبراں عمر صفا
"পূত পবিত্র জীবনের অধিকারী পয়গাম্বর কুলের সরদার হযরত মুহাম্মদ মুস্তফাﷺএর পাক নাম আসমানী কিতাব ইঞ্জিলে লিপিবদ্ধ ছিল।
                          بود ذکر حلیہ ھا او شکل او
                         بود ذکر غز و صوم و اکل او
"তদুপরি হুযুর পাকের শারীরিক গঠন ও অবয়ব স্বভাব-চরিত্র, জেহাদ, রোযা পালন এবং পানাহারেরও উল্লেখ ছিল।
                          طاءفہ نصرانیاں بہر ثواب
                    چوں رسید قدے بدان نام و خطاب
                       بوسہ دادا دے بدان نام شریف
                       رو نہادادے بداں و صف لطیف
একদল খৃষ্টান যখন পুত-পবিত্র নাম ও সম্বোধনের স্থানে উপনীত হইত তখন তাহারা পূণ্য লাভের নিমিত্ত এই পবিত্র নামকে চুম্বন দিত এবং তাঁহার পবিত্র আলোচনার প্রতি অতিশয় সম্মান প্রদর্শন করিত।
                          نسل ایشان نبزھم بسیار شد
                            اور احمد ناصر آمد یار شد
"এহেন তা'যীম প্রদর্শনের দরুন তাহাদের বংশধর বহুগুণে বৃদ্ধি পাইল এবং হযরত আহমদ মুস্তফাﷺএর নূর মোবারক প্রতিক্ষেত্রে তাহাদের সহায় ও সাথী হইল।
                           واں گروہ دیگر نصرانیاں
                         نام احمد راشتندے مستہاں
"ঐ খৃষ্টানদের অন্য একটি দল হুযুর ﷺ এর নামের অবমাননা করিত।
                      مستہاں خوار گشتند آن فریق
                   گشتہ محروم از خود و شرط طریق
অবশেষে তাহারা লাঞ্ছিত অপমানিত হইয়া নিশ্চিহ্ন হইল (অর্থাৎ হত্যাদণ্ডে দণ্ডিত হইল) এবং তাহাদের মযহাব তথা ধর্মীয় বিশ্বাস কুলষিত হইয়া গিয়াছিল।
                      نام احمد چوں چنیں باری کند
                       تاکہ نورش جوں مدگاری کند
"হযরত আহমদ মুস্তফাﷺএর মোবারক নাম যখন এমন সহায়-সাহায্যকারী তখন একটু অনুধাবন করুন মে, তাহার নূর পাক কিরূপ অভূতপূর্ব সাহায্য সহায়তা করিতে পারে।
نام احمد چوں حصاوے شد حصین
تچہ باشد ذات آں روح الامیں
"হযরত নবীﷺএর কল্যাণময় পাক নাম যখন নিরাপত্তার জন্য সুদৃঢ় 🏰 দুর্গস্বরূপ তখন ঐ রূহুল আমিন হুযুর ﷺ এর পবিত্র সত্তা কিরূপ মহিমময় হইবে? (মসনভী শরীফ ১ম দপ্তর)

                             #সন্দেহপোষণ
কোন কোন লোক বলিয়া থাকে যে, আযানে হযরতের নাম শ্রবণকালে বৃদ্ধাঙ্গুলী চুম্বন সম্বন্ধে যে সব হাদীস রহিয়াছে সবই জঈফ (দুর্বল) ; এই সম্পর্কে একটি বিশুদ্ধ মরফু হাদীসও নাই। কাজেই মোহাদ্দেসগণ এতদসম্পর্কীয় সমস্ত হাদীস লিপিবদ্ধ করিয়া বলিয়াছেন لا يصح فى المرفوع(সহী মরফু নহে) সুতরাং জঈফ হাদীস দ্বারা কিরূপে একটি শরয়ী মাসয়ালা প্রমাণিত হইতে পারে? 

                               #অপনোদন
     এই সন্দেহ অপনোদনের জন্য এতটুকু আরয করাই যথেষ্ট মনে করি যে,মোহাদ্দেসীনে কেরামের কোন হাদীস সম্পর্কে এরূপ উক্তি করা যে "সহীহ নহে" ইহার মর্ম এই নহে যে, এই হাদীস ভ্রান্তিমূলক ও বাতিল বরং ইহার মর্ম কথা এই যে, এই হাদীস বিশুদ্ধতায় সেই উচ্চতম স্তরে পৌঁছে নাই যাহাকে মোহাদ্দেসীন আপন পরিভাষায় الصحيح বা বিশুদ্ধতায় উচ্চস্তর রূপে আখ্যায়িত করিয়াছেন।
     মনে রাখিবেন, মোহাদ্দেসগণের পরিভাষায় হাদীসের উচ্চতম স্তর হইতেছে সহী এবং নিকৃষ্টতম স্তর হইল মওজু। এই দুইয়ের মাঝখানে হাদীসের বহু শ্রেণী বিভাগ রহিয়াছে যাহা পর্যায়ক্রমে  'সুবিন্যস্ত'  "সহী" এর-পর 'হাসান'এর মর্যাদা। অতএব কোন হাদীস সহী নহে বলিলে হাদীস হাসান না হওয়া প্রমাণিত হয় না অথচ-এজমায়ে উম্মতের সিদ্ধান্ত মতে হাদীস জঈফ হইলেও আমলের ফযীলতের বেলায় উহা গ্রহণযোগ্য, আর মোহাদ্দেসীনে কেরাম যে ঐ সকল হাদীস সম্বন্ধে বলিয়াছেন যে, لا يصح فى المرفوع অর্থাৎ এসকল হাদীসের সূত্র হুযুর ﷺ পর্যন্ত মরফু হিসাবে সহী প্রমাণিত হয় নাই", তাহাদের এহেন উক্তিই প্রমাণ করিতেছে যে, এইসব হাদীস মওকুফ হিসাবে সহী। যেমন

২১.  আল্লামা ইমাম মোল্লা আলী কারী রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেনঃ
قلت واذا ثبت رفعه الى الصديق رضى الله عنه فيكفى للعمل به عليه لقوله عليه الصلاة والسلام عليكم بسنتى و سنة الخلفاء الراشدين- 
  আমি বলিতেছি, হযরত আবু বকর সিদ্দীক রাদিআল্লাহু আনহু পর্যন্ত যখন এই হাদীস মরফু হওয়া প্রমাণিত হইয়াছে তখন ইহাই আমলের জন্য যথেষ্ট। যেহেতু হুযুর ﷺ এরশাদ করিয়াছেন   "আমার সুন্নাত ও খোলাফায়ে রাশেদীন- এর সুন্নত পালন করা তোমাদের জন্য লাযেম, জরুরী।
সুতরাং জানা গেল যে, মওকুফ হাদীসও সহীহ; কেননা হযরত আবু বকর সিদ্দীক রাদিআল্লাহু আনহু পর্যন্ত ঐ হাদীসের সরাসরি সম্পর্ক প্রমাণিত এবং সিদ্দীক আকবর রাদিআল্লাহু আনহুর সুন্নত মূলে হুযুর ﷺ এরই সুন্নত। যেমন বিরোধী মতাবলম্বীদের নেতাদ্বয় মৌলভী খলীল আহমদ আম্বুটী ও মৌলভী রশিদ আহমদ গাঙ্গুহী বলেনঃ 
جس کے جواز کی دلیل قردن ثلثہ میں ھو خواہ ا-کی جنس کا وجود خارج میں ھوا بالہ ھوآ ھو وہ سب سنت ھے
যাহার বৈধতার দলিল সোনালী তিন যুগের মধ্যেই পাওয়া যায় তাহা অথবা তননুরূপ কার্য ঐ যুগের মধ্যে বাস্তবায়িত হইয়া থাকুক বা না হইয়া থাকুক তাহার সবই সুন্নত।                               (বারাহীনে কাতেয়া ২৮ পৃষ্ঠা)
ইহাতে প্রতীয়মান হইল যে, গাঙ্গুহী সাহেবের দৃষ্টিতেও আযানে হুযুর পাকের পবিত্র নাম শুনিয়া বৃদ্ধাঙ্গুলী চুম্বন করা সুন্নত। কারণ মোল্লা আলী কারীর এবারত দ্বারা উহার উৎস সোনালী তিন যুগের মধ্যে প্রমাণিত হইয়াছে। এমতাবস্থায় এই কাজকে বেদাত বা নব কাজরূপে অভিহিত করা অজ্ঞানতার ও পক্ষপাত মনোবৃত্তির পরিচায়ক হইবে বৈ কি।

                  (বান্দা মুহাম্মদ শফী উকারভী)


             🕳️🕳️🕳️🌱🕳️🕳️🕳️





Comments

Popular posts from this blog

বালাকোট আন্দোলনের হাকীকত

সৈয়দ আহমদ বেরলভীর জম্ম ও পরিচয়

মওদুদীর ভ্রান্ত আক্বিদা ও ইসলামী আক্বিদা