নবী বংশের মর্যাদা
নবী-বংশের মর্যাদা
নবী বংশের মর্যাদা
লেখকঃ– আল্লামা জালালুদ্দিন সুয়ূতি (রহ:)
__________________
ভূমিকা ও লেখকের কথা
الحمد لله رب العالمين، والعاقبة للمتقين، ولا عدوان الا على الظالمين، والصلاة والسلام على خاتم المرسلين، وأفضل النبيين، وقائد الغر المحجلين، وعلى آله الذين جعلهم سبب لنيل شفاعة شافع الناس يوم الدين وصحابته أجمعين، ومن سار على نهجهم الى يوم الدين . أما بعد-
কুরআন ও সুন্নাহর বহু স্থানে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু তাআলা আলাইহি ওয়াসাল্লামের বংশধরদের পবিত্রতা ও মর্যাদার বর্ণনা এবং তাঁদেরকে ভালবাসার নির্দেশ এসেছ।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলাইহি ওয়াসাল্লাম’র পবিত্র জাহেরী হয়াতে এবং তার (সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলাইহি ওয়াসাল্লাম) ইন্তেকাল পরবর্তী সময়েও পুণ্যাত্মা মহান সাহাবায়ে কেরাম (রাদ্বিআল্লাহু আনহুম ওয়ারাদূ আনহুম) এই পবিত্র বংশের প্রতি অকৃত্রিম ভালবাসা ও অগাধ ভক্তি-শ্রদ্ধা প্রদর্শন করতেন। এমনকি সাহাবা পরবর্তী যুগ থেকে অদ্যবধি প্রতিটি মুসলমানের মনে নবী করীম সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলাইহি ওয়াসাল্লাম’র বংশের প্রতি অকুণ্ঠ সম্মান ও ভালবাসা প্রদর্শন করে আসছেন এবং কেয়ামত পর্যন্ত তা অব্যাহত থাকবে।
বিশ্ববিখ্যাত লেখক-গবেষক, মুফাসসির, মুহাদ্দিছ, সাহিত্যিক, আশেকে রাসূল (সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আল্লামা জালালুদ্দীন সিয়ুতী (রাহমাতুল্লাহি তা’আলা আলাইহি) রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম’র পবিত্র বংশধরদের শানে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা বহু হাদীছে নববী থেকে প্রসিদ্ধ ষাটটি হাদীছ সংকলন করে তাঁর নাম দিয়েছেন- “ইহয়াউল মায়্যিতি বিফাদায়িলি আহলিল বাইতি” তথা “রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম’র পবিত্র বংশধরদের উসিলায় মৃতকে জীবিত করা”। তাঁর এ বিখ্যাত সংকলনটি বাংলা ভাষাভাষিদের জন্য অনুবাদ করে দেয়ার সংকল্প বহুদিন ধরে আমার মনে লালিত হয়ে আসছে। সময় ও সুযােগের অভাবে দেরিতে হলেও অবশেষে কামলি ওয়ালা নবী (সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলাইহি ওয়াসাল্লাম)’র সদকায় অনুবাদের মত দুঃসাহসিক কাজটি করেই নিলাম। একেতো অনুবাদ কর্ম এমনিতেই দুর্ভেদ্য তদুপরি আমার জ্ঞানের সল্পতাসহ অন্যান্য অযােগ্যতার সব বৈশিষ্ট এ পুস্তিকায় পাঠকের কাছে ধরা দিতে পারে। সব ত্রুটি-বিচ্যুতিকে মার্জনার চোখে দেখে একমাত্র রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলাইহি ওয়াসাল্লাম’র পবিত্র বংশধরদের প্রতি অন্তরের ভালবাসা নিয়ে পুস্তকটি পাঠ করলে নিশ্চিত উপকারের আশা করা যায়। তাছাড়া মুদ্রণজনিতসহ যেকোন ক্রটি পাঠকের দৃষ্টিগােচর হলে, তা সাদরে গ্রহণ করে পরবর্তী সংস্করণে সংশােধনের ব্যবস্থা করা হবে।
বুড়িচর নিবাসী বিশিষ্ট সমাজসেবক জনাব আলহাজ্ব সেলিম জাহাঙ্গীর চৌধুরীসহ অন্যান্য যাঁরা এ পুস্তক প্রকাশে আন্তরিক পরামর্শসহ যাবতীয় সহযােগিতা করেছেন, তাঁদের সকলের কৃতজ্ঞতা প্রকাশের পাশাপাশি কিয়ামতের কঠিন মুহুর্তে তৃষার্ত হৃদয়ে প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলাইহি ওয়াসাল্লামর নূরাণী হাতে তাঁরই পবিত্র বংশধরদের সাথে হাউজে কাউছারের পানি পান করার তওফীক আল্লাহ যেন দান করেন, সেই দোয়া করি।
পরিশেষে, এ পুস্তকটি পাঠ করে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলাইহি ওয়াসাল্লাম’র পবিত্র বংশধরদের প্রতি সামান্যতম ভালবাসাও যদি পাঠকদের মনে জন্ম নেয়, তবেই শ্রম স্বার্থক হবে।
আরজ গুজার:
মুহাম্মদ জমির হােসাইন ক্বাদেরী।
পবিত্র কুরআনের আলোকে নবী-বংশের মর্যাদা।
আয়াত ১
إنما يريد الله لیذهب عنکم الرجس أهل البيت ويطهركم تطهيرا (الأحزاب)
অর্থাৎ “হে নবী-পরিবার। আল্লাহ তা’আলা তাে কেবল তােমাদের থেকে অপবিত্রতা দূর করতে চান, এবং তােমাদেরকে সম্পূর্ণরূপে পূতঃপবিত্র করতে চান।”
(সূরা আল আহযাব, আয়াত:৩৩)।
বিশ্ববিখ্যাত মুফাসসির আল্লামা ইবনু হাজর আল হাইতমী (র.) বলেন,
قال ابن حجر الهيتمي: هذه الآية منبع فضائل أهل البيت النبوى لاشتمالها على غرر من مآثرهم والاعتناء بشأنهم حيث ابتدأت ب(إنما المفيدة لحصر إرادته تعالی فی أمرهم على إذهاب الرجس الذي هو الإثم أو الشك فيما يجب الإيمان به عنهم، وتطهيرهم من سائر الأخلاق والأحوال المذمومة
অর্থাৎ, “এই আয়াতে করীমাটি নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পবিত্র বংশধরদের সম্মান ও মর্যাদার উৎস। কেননা, আয়াতে করীমাটি انما(ইন্নামা) দ্বারা শুরু হয়েছে, যা হাসর তথা সীমাবদ্ধতার উপকারিতা দেয়। এখানে আল্লাহ তায়ালার উদ্দেশ্য হচ্ছে, তাঁদের (নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পবিত্র বংশধরদের) থেকে গুণাহ ও সন্দেহসহ যেকোন ধরনের অপবিত্রতা দূর করা এবং তাদেরকে যেকোনো চারিত্রিকি ক্রটি ও মন্দ স্বভাব থেকে পবিত্র করা।”
আয়াত ২
إن الله وملايكته يصلون علی النبی یا ایها الذين آمنوا صلوا عليه وسلمو اتسلیما-
অর্থাৎ, “নিশ্চয় আল্লাহ ও ফেরেশতাগণ নবী করীম সাল্লালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের প্রতি সালাত তথা দরুদ পেশ করেন। হে ঈমানদারগণ। তোমরাও তাঁর (নবী করীম সাঃ) ওপর সালাত তথা দরুদ এবং সালাম পেশ কর।
(সূরা আল আহযাব, আয়াত:৫৬)
বুখারী শরীফে বর্ণিত হয়েছে যে,
عن کعب بن عجرة قال:(لما نزلت هذه الآية قلنا يا رسول الله: قد علمنا كيف نسلم عليك، فكيف نصلی عليك؟ فقال: قولوا اللهم صل على محمد وعلى آل محمد–
অর্থাৎ “হযরত কা’ব ইবনু আজরা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, যখন এই অায়াতে কারিমাটি নাযিল হয় তখন আমরা নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে আবেদন করলাম যে, হে আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! আমরা ইতোপূর্বে জেনেছি যে, কীভাবে আপনার ওপর সালাম পেশ করতে হবে। এখন আমরা কীভাবে আপনার ওপর সালাত বা দরুদ পেশ করব? (এর জবাবে) তখন তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাই ওয়াসাল্লাম) ইরশাদ করলেন, তােমরা বল, আল্লাহম্মা সাল্লি আলা মুহাম্মদিন, ওয়া আ’লা আ-লি মুহাম্মদিন…।
আয়াত ৩
فمن حاجك فيه من بعد ما جائك من العلم فقل تعالواندع ابنائنا وأبنائکمونسائناونسائکم وأنفسنا وأنفسكم ثم نبتهل فنجعل لعنة الله على الکلذبین-
অর্থাৎ, “(হে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম!) আপনার নিকট জ্ঞান আসার পর যে ব্যক্তি এ বিষয়ে আপনার সাথে তর্ক করে তাকে বলুন, আসো, আমরা (মুবাহালা তথা দু’পক্ষ পরস্পকে অভিশাপ দেয়ার জন্য) আহ্বান করি আমাদের পুত্রদেরকে ও তােমাদের পুত্রদেরকে, আমাদের নারীদেরকে ও তােমাদেও নারীদেরকে, আমাদের নিজেদেরকে ও তােমাদের নিজেদেরকে। অতঃপর আমরা মুবাহালা করি এবং মিথ্যাবাদীদের ওপর (আল্লাহর) অভিশাপ কামনা করি।”
(সূরা আলে ইমরান-৬১)
এই আয়াতে আহলু বাইতি রাসূলিল্লাহ তথা নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পবিত্র বংশধরদের উচ্চ মর্যাদার কথা ঘােষণা করা হয়েছে।
পবিত্র সহীহান তথা সহীহ বুখারী ও সহীহ মুসলিম শরীফে হযরত সাআদ ইবনু আবি ওয়াক্কাস রাদ্বিআল্লাহ তাআলা আনহু থেকে বর্ণিত হয়েছে, তিনি বলেন,
لما نزلت هذه الآية فقل تعالواندع أبنائنا وأبنائكم دعا رسول الله صلى الله عليه وسلم عليا وفاطمة وحسنا وحسينا فقال: اللهم هؤلاء اهلی
অর্থাৎ “রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর ওপর যখন এ আয়াত নাযিল হল যে, “বলুন, আসো, আমরা (মুবাহালা তথা দু’পক্ষ পরস্পকে অভিশাপ দেয়ার জন্য) আহ্বান করি আমাদের পুত্রদেরকে ও তােমাদের পুত্রদেরকে…’ তখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলা ওয়াসাল্লাম হযরত আলী, হযরত ফাতিমা, হযরত হাসান ও হযরত হােসাইন (রাদ্বিআল্লাহ তাআলা আনহুম) কে ডাকলেন। অতঃপর বললেন, “হে আল্লাহ! এঁরা আমার আহলে বাইত তথা বংশধর।” (সহীহ বুখারী ও সহীহ মুসলিম শরীফ)
বিশ্ববিখ্যাত মুহাদ্দিস আল্লামা ইবনু হাজার আল-হাইতামী (রাহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেছেন,
قال ابن حجر الهيتمی: فعلم أنهم المراد من الآية وأن أولاد فاطمة وذريتهم يسمون أبنائه وينسبون إليه نسبة صحيحة نافعة في الدنيا والآخرة
অর্থাৎ, “সুতরাং, জানা গেল যে, আয়াতে কারীমায় أبنائنا আমাদের পুত্রদেরকে দ্বারা তাঁরা তথা হযরত হাসান ও হযরত হােসাইন (রাদ্বিআল্লাহু তাআলা আনহুমা) উদ্দেশ্য। আর রাসুল তনয়া হযরত ফাতেমার সন্তান-সন্ততি এবং তাঁদের পরবর্তী বংশধরদেরকে তাঁর (রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) সন্তান বলে অভিহিত করা হয়েছে এবং তাঁরা তাঁর (রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) প্রকৃত এবং দুনিয়া ও পরকালে উপকারী বংশধর হিসেবে সম্বােদিত হবেন।
সাহাবায়ে কেরামের মর্যাদা কি আওলাদে রাসূলের মর্যাদার অন্তরায়?
যেমনটি শিয়ারা মনে করেঃ
বর্তমানে কিছু কিছু ক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম’র পবিত্র বংশধরদের শান-মান বৃদ্ধি এবং তাঁদেরকে মহব্বতের নামে বাড়াবাড়ির পর্যায়ে তাঁর (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) পবিত্র সাহাবায়ে কেরামের শানে মিথ্যা অপবাদ দিয়ে চরম বেয়াদবি করা হচ্ছে, যা অত্যন্ত গর্হীত। তারা সাহাবায়ে কেরামের মর্যাদাকে আওলাদে রাসূলের মর্যাদার অন্তরায় মনে করে। যেমন, ভ্রান্ত শিয়ারা মনে করে থাকে। আমাদের আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতের মতে, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর প্রত্যেক সাহাবাই সত্যের মাপকাটি। তাঁদের প্রত্যেকেই অনুসরণ ও অনুকরণযােগ্য।
কুরআনুল কারীমের বহু জায়গায় সাহাবায়ে কেরামের শান বর্ণনা করা হয়েছে। সাহাবায়ে কেরামের বর্ণিত কুরআনুল কারীমের কিছু আয়াতে করীমা নিম্নে উল্লেখ করা হল।
আয়াত ১ঃ
محمد رسولُ اللّٰه والذین معه أشداءعلی الکفاررحملء بینهم تراهم رقعا سجدا بیتغون فضلامن الله ورضوانا سيماهم في وجوههم من أثر الشجود ذلك مثلهم في التوراة ومثلهم في الإنجيل کزرع أخرج شطأه فآزره فاستغلظ فاستوى على شوقه يعجب الزراع ليغيظ بهم الكفار وعد الله الذين آمنوا وعملوا الصالحات منهم مغفرة وأجرا عظیم –
(الفتح:29)
অর্থাৎ “মুহাম্মদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আল্লাহর রাসূল। আর যারা তাঁর সাথে রয়েছেন তথা তাঁর সাহাবাগণ কাফেরদের ওপর অত্যন্ত কঠোর, নিজেদের মধ্যে পরস্পরের প্রতি খুবই সহানুভূতিশীল; আপনি তাঁদেরকে দেখবেন, তাঁরা আল্লাহ তা’আলার অনুগ্রহ ও সন্তুষ্টি কামনায় রুকু ও সিজদায় অবনত। তাঁদের লক্ষণ তাঁদের মুখমন্ডলে সিজদার প্রভাবে পরিস্ফুট থাকবে, এরকমই তাঁদের বর্ণনা রয়েছে তাওরাতে এবং এরকমই তাঁদের বর্ণনা রয়েছে ইঞ্জিলে। তাঁদের দৃষ্টান্ত একটি চারাগাছ, যা একটি কিশলয় বের করে অতঃপর ইহাকে শক্ত ও পরিপুষ্ট হয় এবং দৃঢ়ভাবে কান্ডের ওপর দাঁড়ায়, যা কৃষকের জন্য আনন্দদায়ক। এভাবে আল্লাহ তাআলা মুমিনদের সমৃদ্ধি দ্বারা কাফিরদের অন্তর্জ্বালা সৃষ্টি করেন। যারা ঈমান আনেন ও সৎকাজ করেন আল্লাহ তাঁদেরকে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন ক্ষমা ও মহাপুরস্কারের।”
[সূরা আল-ফাতহ আয়াত: ২৯]
আয়াত ২ঃ
والسابقون الأولون من المهاجرين والأنصار والذين اتبعوهم بإحسان رضى الله عنهم ورضوا عنه رأعد لهم جنات تجرى تحتها الأنهار خالدين فيها أبدا ذلك الفوزالعظیم –
(التوبة:100)
অর্থাৎ, “মুহাজির ও আনসারদের মধ্যে যারা অগ্রগামী এবং যারা নিষ্ঠার সাথে তাঁদেরকে অনুসরণ করেছে, আল্লাহ তা’আলা তাঁদের প্রতি সন্তুষ্ঠ এবং তাঁরাও আল্লাহ তা’আলার প্রতি সন্তুষ্ট। আর তিনি তাঁদের জন্য প্রস্তুত করেছেন জান্নাত, যার নিম্নদেশে ঝরণা প্রবাহিত। যেখানে তাঁরা চিরস্থায়ী হবে। এটাই মহাসফলতা।”
[সূরা আত-তাওবা; আয়াত: ১০০]
আয়াত ৩ঃ
لقد رضي الله عن المؤمنين إذ يبايعونک تحت الشجرة…
(الفتح: 18)
অর্থাৎ,”আল্লাহ তাআলা তাে মুমিনদের প্রতি সন্তুষ্ঠ হলেন, যখন তাঁরা বৃক্ষের নিচে আপনার নিকট বাইয়াত গ্রহণ করল। তাঁদের অন্তরে যা ছিল তা তিনি (আল্লাহ) অবগত ছিলেন। অতঃপর তিনি তাঁদের প্রতি প্রশান্তি অবতীর্ণ করলেন এবং তাঁদেরকে পুরস্কার হিসেবে দিলেন আসন্ন বিজয়।”
[সূরা আল-ফাতহ; আয়াত: ১৮]
হাদিস ১ঃ
রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) সাহাবায়ে কেরামের শান বর্ণনা করে ইরশাদ করেন,
عن أبی سعید الخدری رضی الله عنه قال : قال النبي صلى الله عليه وسلم: لا تسبوا أصحابي ، فلو أن أحدكم أنفق مثل أحد ذهبا ما بلغ مد أحدهم ولانصیفه۔رواهتمامه – البخری(3673),ومسلم(2540)
অর্থাৎ “হযরত আবু সাঈদ আল খুদরী রাদ্বিআল্লাহু তা’আলা আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, তােমরা আমার সাহাবায়ে কিরামকে গালি দিওনা। কেননা, তােমাদের কেউ যদি ওহুদ পাহাড় পরিমাণ স্বর্ণ (আল্লাহর রাস্তায়) ব্যয় কর, তবু তা তাঁদের (সাহাবায়ে কিরামের) এক মুদ্দ বা অর্ধমুদ্দ পরিমাণ ব্যয়ের সমান হবেনা।”
[সহীহ বুখারী ও সহীহ মুসলিম শরীফ]
উল্লেখ্য, এসব আয়াতে কারীমা ও হাদীছে সাধারণভাবে সাহাবায়ে কেরামের প্রশংসা করা হয়েছে এবং এতে আহলে বাইত তথা নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এবং প্রশংসা বিদ্যমান। কেননা, তারাও রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাহাবীদের অন্তর্ভুক্ত; বরং তাঁরা অন্যান্য সাহাবা থেকে অধিক নিকটবর্তী সাহাবী।
কাজেই কোন সাহাবার শানে বেয়াদবী করা মানে আহলে বাইতের শানে বেয়াদবি করা। যেমন, হযরত আলী রাদ্বিআল্লাহ তা’আলা আনহুকে বা হযরত হাসান-হােসাইনকে কিংবা আহলে বাইতের অন্য সদস্যকে ভালবাসার নামে হযরত মুয়াবিয়া রাদ্বিআল্লাহ তা’আলা আনহুকে দোষারােপ করা তাঁর প্রতি মিথ্যা অপবাদ দেয়া প্রকৃতপক্ষে হযরত আলী রাদ্বিআল্লাহু তা’আলা আনহু তথা আহলে বাইতকে কে দোষারােপ করার নামান্তর।
হযরত মুয়াবিয়া রাদ্বিআল্লাহু তা’আলা আনহু ছিলেন একাধারে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাহাবীদের অন্তর্ভুক্ত, একজন সম্মানিত কাতেবে অহী, কুরাইশ বংশীয় এবং অন্যান্য বহু সাহাবায়ে কিরামের শ্রদ্ধারপত্র। যদিও হযরত আলী রাদ্বিআল্লাহ তা’আলার সাথে তাঁর ইজতিহাদী মতবিরােধ ছিল, কিন্তু সাহাবায়ে কিরাম সেটার সম্মানজনক মীমাংসা করে হযরত মুয়াবিয়া রাদ্বিআল্লাহ তা’আলা আনহুকে তাঁর প্রাপ্য সম্মান দান করেছেন এবং তাঁকে কোনরুপ দোষারোপ থেকে বিরত থেকেছেন। যুগ যুগ ধরে আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতের ইমামগণ হয়রত মুয়াবিয়া রাদ্বিআল্লাহু তা’আলা আনহুর বিরুদ্ধে কোন মন্তব্য করা তাে দূরে থাক, বরং তাকে যারা দোষারােপ করে তাঁদেরকে গােমরাহ বলেছেন।
হাদিস ২ঃ
সহীহ বুখারী শরীফ প্রণেতা ইমাম বুখারী (রাদ্বিআল্লাহু তা’আলা আনহু) তাঁর ‘আত-তারীখুল কাবীর’ এ এবং অন্যান্য হাদীছগ্রন্থে হযরত মুয়াবিয়া রাদ্বিআল্লাহু তা’আলা আনহুর শানে বর্ণনা করেছেন যে,
قال عمیر بن سعد رضuی الله عنه : لا تذكروا معاوية إلا بخير فإنی سمعت رسول الله صلى الله عليه وسلم يقول: «اللهم أجعله هاديأ مهديأ وأهد به »
অর্থাৎ,“হযরত উমাইর ইবনু সা’আদ রাদ্বিআল্লাহু তা’আলা আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, তােমরা হযরত মুয়াবিয়া রাদ্বিআল্লাহু তা’আলা আনহুর ব্যাপারে ভাল ছাড়া অন্য কিছু বলনা (অর্থাৎ, তাঁর বিরুদ্ধে কোন খারাপ মন্তব্য করা থেকে দূরে থাক) । কেননা, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলাইহি ওয়াসাল্লামকে (হযরত মুয়াবিয়া রাদ্বিআল্লাহু তা’আলা আনহুর ব্যাপারে) বলতে শুনেছি যে, (তিনি তাঁর জন্য দোয়া করতেছেন) হে আল্লাহ! তুমি তাঁকে (হযরত মুয়াবিয়া রাদিআল্লাহু তা’আলা আনহুকে) হেদায়তকারী, হেদায়তপ্রাপ্ত কর। আর তাঁর দ্বারা অন্যদের ও হেদায়ত কর।
তথ্যসূত্রঃ
১. رواه البخ ری فی«التاریخ الکبیر»(240/5)
২. وأحمدفی«المسند »(17929)
৩. والترمذیفی«جامعه»(3843)
৩. والطبر انی فی«المعجم الأوسط»(656)
৪. وفی«مسند امشمین»(2198)
৫. وابن أبی عصم فی«الآحادوالمثنی»(3129)
৬. والأجری فی«الشرف یعة»(1914, 1915)
৭. والخطیب فی«تاریخه»(207/1)
৮. وأبو نعیم فی«الحلیة»(358/8)
৯. وفی«أخبرأصبهان (180/1)
১০. والخلال فی«السنة»(676)
(وهو صحیح.)
শ্রেষ্ঠত্বের দাবীদার একমাত্র নবী-বংশই
এ কথা দিবালােকের চেয়েও সত্য যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পবিত্র বংশ হচ্ছে পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ বংশ। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের বংশ ব্যতিত পৃথিবীর আর কোন বংশ পরস্পরের মধ্যে শ্রেষ্ঠত্বের দাবি করতে পারেনা। সমগ্র মানবজাতির মধ্যে নবীরাই শ্রেষ্ঠ।
যেমন, ইমাম ফখরুদ্দীন রাজী বলেন,
افضل النوع الانسان-كما قال الفخر الرازی
অর্থাৎ, হুজুর পাক সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলাইহি ওয়াসাল্লাম’র বংশ হচ্ছে, মানব জাতির শ্রেষ্ঠতম বংশ।” আবার নবীদের মধ্যে আমাদের আক্বাও মাওলা সায়্যিদুনা মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লহু আলাইহি ওয়াসাল্লামই শ্রেষ্ঠ।
আয়াত ১ঃ
আল্লাহ তা’আলা ইরশাদ করেন,
تلك الرسل فضلنا بعضهم على بعض من كم من گلم الله ورفع بعضهم درجات
অর্থাৎ, “এই সম্মানিত রাসূলগণ। তাঁদের কারাে একজনের ওপর অপরকে শ্রেষ্ঠত্ব দিয়েছি। তাঁদের মধ্যে কারাে কারাে সাথে আল্লাহ কথা বলেছেন, আবার কাওকে উচ্চ মর্যাদায় উন্নীত করেছেন।”
[সূরা বাক্বারা; আয়াত: ২৫৩]
এ আয়াত দ্বারা বুঝা যায় যে, রাসূলগণ প্রত্যেকে শ্রেষ্ঠত্বের অধিকারী। তবে তাঁদের মধ্যে, মর্যাদার স্তরবিন্যাস রয়েছে। আর এটাও বুঝা গেল যে, নবী-রাসূলদের মধ্যকার মর্যাদার স্তরবিন্যাসে সর্বোচ্চ স্তরে আমাদের প্রিয় নবী, খাতামুন্নবিয়্যীন, হুজুর পাক সাল্লাহু তা’আলা আলাইহি ওয়াসাল্লাম রয়েছেন। আর হুজুর পাক সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলাইহি ওয়াসাল্লাম যে অন্য নবী রাসূলদের চেয়ে শ্রেষ্ঠ তাঁর প্রমাণ হচ্ছে, তিনি পবিত্র মেরাজের রজনীতে সমস্ত নবী-রাসূল আলাইহিমুস সালামের নামাযে ইমামতি করেছেন, যা সহীহ বুখারী শরীফের হাদীছ দ্বারা প্রমাণিত। কেননা, শ্রেষ্ঠজনই ইমামতি করে।
হাদিস ১ঃ
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন,
حدثنا إسحاق بن نصر : حدثنا حسين ، عن زائدة، عن عبد الملك ابن عمير، قال : حدثني أبو بردة، عن أبي موسى، قال: مرض النبى صلى الله عليه وسلم ، فاشتد مرضه، فقال: مروا أبا بكر فليصل بالناس قالت عائشة: إنه رجل رقيق، إذا قام مقامک لم يستطع أن يصلى بالناس، قال: مروا أبا بگر فلیصل بالناس فعادت,فقال: مری أبا بكر فليصل بالناس، فإنکن صواحبیوسف فأتهالرسول, فصمی بالناس في حياة النبي صلى الله عليه وسلم –
এই হাদীছের ব্যাখায় বুখারী শরীফের ব্যাখ্যাকার আল্লামা ইবনু রজব হাম্বলী বলেন,
استدل البخارى بهذا الحديث على أن أهل الفضل والعلم أحق بالإمامة من غيرهم؛ فإن النبي (أمر أبا بكر من بين الصحابة كلهم بالصلاة بالناس، وروجع في ذلك مرارأ وهويابي إلا تقديمه في الصلاة على غيره من الصحابة، وإنما قدمه لعلمه وفضله؛ فأما فضله على سائر الصحابة فهو ما اجتمع عليه أهل السنة والجماعة، و أما علمه فكذلك.
অর্থাৎ, “এই হাদীছ দ্বারা ইমাম বুখারী রাহমাতুল্লাহি তা’আলা আলাইহি দলীল পেশ করেছেন যে, শ্রেষ্ঠজন এবং জ্ঞানীগণই অন্যদের চেয়ে ইমামতির জন্য অধিক উপযুক্ত। কেননা, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাহাবাদের অনেকে উপস্থিত থাকলেও হযরত আবু বকর রাদ্বিআল্লাহু তা’আলা আনহুকেই মানুষের নামাযে ইমামতি করার আদেশ করেছেন। অথচ (হযরত আবু বকর রাদ্বিআল্লাহু তা’আলা আনহুর হৃদয়ের কোমলতার কারণে) বার বার তাঁকে ইমামতির আসনে না দেয়ার অনুরােধ সত্বেও রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লহু তা’আলা আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁকে ছাড়া অন্য কোন সাহাবাকে ইমামতিতে অগ্রগামী করতে অস্বীকার করেন। আর তিনি সাল্লাল্লহু তা’আলা আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁকে (হযরত আবু বকর রাদ্বিআল্লাহ তা’আলা আনহুকে) প্রাধান্য দেয়ার কারণ হচ্ছে, তাঁর শ্রেষ্ঠত্ব ও জ্ঞান। আর সমস্ত সাহাবার ওপর হযরত আবু বকর রাদ্বিআল্লাহু তা’আলা আনহুর শ্রেষ্ঠত্ব এবং অধিক জ্ঞানের ব্যাপারে আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা’আতের ঐকমত্য প্রতিষ্ঠিত।
[ফতহুল বারী ফী শরহিল বুখারী; কৃত-ইবনু রজব আল হাম্বলী রাহমাতুল্লাহি আলাইহি]
একই হাদীছের ব্যাখায় বুখারী শরীফের ব্যাখ্যাকার আল্লামা ইবনু রজব হাম্বলী আরাে বলেন,
وقليل اللیث: یٶمهم أفضلهم وخیر هم,ثم أقر ٶهم,ثم أسنهم
অর্থাৎ,“আর ইমাম লাইছ বলেন, লােকদের ইমামতি করবে (প্রথমত) তাদের মধ্যে শ্রেষ্ঠত্বের অধিকারী এবং উত্তম ব্যক্তি, অতঃপর তাদের মধ্যে অধিক বিশুদ্ধভাবে কুরআন তিলাওয়াতকারী, অতঃপর তাদের মধ্যে অধিক বয়স্কজন।”
[ফতহুল বারী ফী শরহিল বুখারী; কৃত-ইবনু রজব আল হাম্বলী রাহমাতুল্লাহি আলাইহি]
হুজুর পাক সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলাইহি ওয়াসাল্লাম যে অনন্য সৃষ্টি, সমস্ত মানবজাতি এমনকি নবী-রাসূলদের চেয়েও শ্রেষ্ঠ।
হাদিস ২ঃ
রাসুলুল্লাহ (দ.) ইরশাদ করেন,
عن أبي هريرة رضي الله عنه قال: قال النبي صلى الله عليه وسلم: “أنا سيد ولد آدم ولا فخر، وأول من ينشق عنه القبر، وأول شافع، وأول مشفع” رواه مسلم.
অর্থাৎ, “আমি আদমসন্তানদের সায়্যিদ তথা শ্রেষ্ঠত্ব ও নেতৃত্বের আসনে অধিষ্ঠিত, আর এতে আমার কোন অহংকার নাই। আর কিয়ামতের দিন সর্ব প্রথম আমার কবরই খোলা হবে। আমিই প্রথম শাফা’আতকারী (সুপারিশকারী), আমার সুপারিশই প্রথম কবুল (গ্রহণ) করা হবে।”
[সহীহ মুসলিম শরীফ]
সহীহ মুসলিম শরীফের ব্যাখ্যাকার আল্লামা ইমাম নববী রাহমাতুল্লাহি তা’আলা আলাইহি বলেন,
وهذا الحديث دليل لتفضيله صلى الله عليه وسلم على الخلق كلهم، لأن مذهب أهل السنة أن الآدميين أفضل من الملائكة وهو صلى الله عليه وسلم أفضل الادیین وغیر هم”
অর্থাৎ, “এই হাদীছ সমগ্র সৃষ্টির ওপর নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম’র শ্রেষ্ঠত্বের দলীল। কেননা, আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা’আতের মতে, সমস্ত আদম সন্তান ফেরেস্তা থেকে উত্তম আর তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) সমস্ত আদম সন্তান ও অন্যান্য সৃষ্টির চেয়েও শ্রেষ্ঠ।”
[শরহু সহীহিল মুসলিম; কৃত, আল্লামা ইমাম নববী রাহমাতুল্লাহি তা’আলা আলাইহি]
নবী-বংশের উপাধি ‘সায়্যিদ’
প্রনিধানযােগ্য যে, নবী করীম সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলাইহি ওয়াসাল্লাম যেমন “সায়্যিদ অনুরুপ তাঁর পবিত্র বংশধরদেরকেও “সায়্যিদ” বলা হয়। স্বয়ং রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁদেরকে “সায়্যিদ” তথা শ্রেষ্ঠত্বের আসনে অধিষ্ঠিত করেছেন।
হাদিস ১ঃ
মুসনাদে ইমাম আহমদে বর্ণিত হয়েছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন,
ان الحسن والحسين سيدا شباب أهل الجنة، وان فاطمة الزهراء سيدة نساء العالمين
অর্থাৎ,“নিশ্চয় হযরত হাসান এবং হযরত হােসাইন রাদ্বিআল্লাহ তা’আলা আনহুমা হচ্ছেন জান্নাতের যুবকদের সর্দার আর হযরত ফাতেমাতুজ্ব জাহরা রাদ্বিআল্লাহু তা’আলা আনহা হচ্ছেন দুনিয়ার সমস্ত মহিলাদের সর্দার।”
[মুসনদে ইমাম আহমদ; কৃত- আল্লামা ইমাম আহমদ ইবনুল হাম্বাল রাহমাতুল্লাহি তা’আলা আলাইহি]
হাদিস ২ঃ
আমালী কিতাবে মুসনদে ইমাম আহমদের সূত্রে বর্ণিত হয়েছে যে,
عن النبي صلى الله عليه وسلم أنه قال في فاطمة (وإنهالسيدة نساء العالمين)، فقيل يا رسول الله : أهي سيدة نساء عالمها؟، فقالت تلك مريم ابنة عمران، فأما ابنتى فاطمة فهي سيدة نساء العالمين من الأولين والآخرين).
অর্থাৎ,“নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণিত যে, তিনি (সাল্লাল্লহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) হযরত ফাতিমা রাদ্বিআল্লাহ তা’আলা আনহার ব্যাপারে ইরশাদ করেন, নিশ্চয় তিনি (হযরত ফাতিমা রাদ্বিআল্লাহ তা’আলা আনহা) হচ্ছেন দুনিয়ার সমস্ত মহিলাদের সর্দার। তখন তাঁকে জিজ্ঞাসা করা হল, হে আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)! তিনি কি শুধু তাঁর যুগের সমস্ত রমনীদের সর্দার? তখন তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) ইরশাদ করলেন, (না); বরং এরকম ছিল ইমরান তনয়া মরিয়ম। আর আমার এই কন্যা ফাতিমা হচ্ছেন দুনিয়ার শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত সমস্ত মহিলাদের সর্দার।”
[আমালী; কৃত-আল্লামা —- রাহমাতুল্লাহি তা’আলা আলাইহি]
হাদিস ৩ঃ
আল মুসতাদরিক আল হাকিম এ বর্ণিত হয়েছে যে,
یا فاطمة ألا ترضين أن تكوني سيدة نساء العالمين ، وسيدة نساء هذه الأمة
অর্থাৎ,“হে ফাতিমা (রাদ্বিআল্লাহু তা’আলা আনহা) তুমি কি এতে সন্তুষ্ট নও যে, তুমি দুনিয়ার সমস্ত মহিলাদের সর্দার এবং এ উম্মতের সমস্ত রমনীদের সর্দার?
[মুসতাদরিক আল হাকিম; কৃত- আল্লামা —- রাহমাতুল্লাহি তা’আলা আলাইহি]
হাদিস ৪ঃ
وعن عمران بن حصين أن الرسول صلى الله عليه وسلم قال لفاطمة: (أما ترضين أن تكوني سيدة نساء العالمين، قالت: فأين مريم ابنة عمران، قال لها: أي بنية، تلك سيدة نساء عالمها، وأنت سيدة نساء العالمين).
অর্থাৎ, “হযরত ইমরান ইবনু হােসাইন (রাদ্বিআল্লাহ তা’আলা আনহু) থেকে বর্ণিত, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হযরত ফাতিমা রাদ্বিআল্লাহ তা’আলা আনহাকে উদ্দেশ্য করে ইরশাদ করেন, হে ফাতিমা (রাদ্বিআল্লাহু তা’আলা আনহা) তুমি কি এতে সন্তুষ্ট নও যে, তুমি দুনিয়ার সমস্ত মহিলাদের সর্দার? তখন তিনি জিজ্ঞাসা করলেন, হে আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)! তাহলে ইমরান তনয়া মরিয়মের অবস্থান কোথায়? তখন তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) ফাতিমাকে বললেন, হে প্রিয় কন্যা! মরিয়ম আলাইহাস সালাম হচ্ছেন তাঁর যুগের সমস্ত রমনীদের সর্দার। আর তুমি দুনিয়ার সমস্ত মহিলাদের সর্দার।”
[কৃত- আল্লামা —- রাহমাতুল্লাহি তা’আলা আলাইহি]
আর নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হযরত হাসান ও হােসাইন রাদ্বিআল্লাহু তা’আলা আনহুমাকে সন্তান বলেই সম্বোধন করতেন। যেমন, তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) হযরত হাসান রাদ্বিআল্লাহু তা’আলা আনহুর ব্যাপারে ইরশাদ করেন, ان ابنی هذا سید অর্থাৎ, “আমার এই সন্তান (হাসান রাদ্বিআল্লাহু তা’আলা আনহু) হচ্ছে সায়্যিদ তথা সর্দার।”
[কৃত- আল্লামা —- রাহমাতুল্লাহি তা’আলা আলাইহি]
এভাবে হযরত ফাতিমা (রাদ্বিআল্লাহ তা’আলা আনহা)’র সুত্র তাঁর দু সন্তান হযরত হাসান ও হযরত হােসাইন রাদ্বিআল্লাহ তা’আলা আনহুমার সন্তানগণ আওলাদে রাসূল বা রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)’র বংশধর হিসেবে গণ্য এবং কিয়ামত পর্যন্ত আগত রাসূলুল্লাহ (সালালাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)’র সমস্ত বংশধর সায়্যিদ। এজন্য যুগযুগ ধরে সায়্যিদ বলতেই রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)’র পবিত্র বংশধর হিসেবে বিবেচনা করা হয় এবং তাঁদের যথাযােগ্য মর্যাদায় অভিষিক্ত করা হয।
উলেখ্য, যেহেতু রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)’র তিনজন পুত্র সন্তানের কেউ জীবিত ছিলেন না, তাই তার সমস্ত বংশধর তাঁর চারজন কন্যার মাধ্যমে বিস্তার লাভ করেছেন।
রাসুলে পাকের (ﷺ) সন্তান-সন্তাতি
নিম্মে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)’র সন্তানের একটি তালিকা দেয়া হলঃ
তিন পুত্র-সন্তানঃ
১. সায়্যিদুনা হযরত সায়্যিদ কাসেম রাদ্বিআল্লাহু তা’আলা আনহু। তিনি রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)’র প্রথম স্ত্রী হযরত খাদীজা বিনতু খুওয়াইলিদ আলকারশী রাদ্বিআল্লাহু তা’আলা আনহার সন্তান। তাঁর নামেই রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)’র উপনাম আবুল কাসেম’ হয়।
২। সায়্যিদুনা হযরত সায়্যিদ আব্দুল্লাহ রাদ্বিআল্লাহু তা’আলা আনহু। তিনি ও রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)’র প্রথম স্ত্রী হযরত খাদীজা বিনতু খুওয়াইলিদ আলকারশী রাদ্বিআল্লাহু তা’আলা আনহার সন্তান। তাঁর নামেই রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)’র উপনাম ‘আত্-ত্বাহির’, ‘আত্-ত্বায়্যিব নামেও ডাকা হয়।
৩। সায়্যিদুনা হযরত সায়্যিদ ইব্রাহীম রাদ্বিআল্লাহু তা’আলা আনহু। তিনি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)’র দাসী হযরত মারিয়া আল-কিবত্বিয়্যাহ রাদ্বিআল্লাহ তা’আলা আনহার সন্তান। তাঁর ইন্তিকালের পর কাফিররা যখন রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) কে নির্বংশ দাবি করেন, তখন আল্লাহ তা’আলা ‘সূরা আল-কাউছার’ নাযিল করে কাফিরদেরকে নির্বংশ ঘােষণা করেন এবং রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)’র ওপর আল্লাহ তা’আলার বিশেষ অনুগ্রহ ‘আল-কাউছার’-এর ঘােষণা দেন।
রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)’র উপরােল্লিখিত তিনপুত্র সন্তানই ছােটকালে ইন্তিকাল করেন।
চার কন্যা-সন্তানঃ
১। সায়্যিদাতুনা হযরত সায়্যিদা জয়নাব রাদ্বিআল্লাহু তা’আলা আনহা।
২। সায়্যিদাতুনা হযরত রুকাইয়্যা জয়নাব রাদ্বিআল্লাহু তা’আলা আনহা।
৩। সায়্যিদাতুনা হযরত সায়্যিদা উম্মু কুলছুম রাদ্বিআল্লাহু তা’আলা আনহা।
৪। সায়্যিদাতুনা হযরত সায়্যিদা ফাতিমা রাদ্বিআল্লাহু তা’আলা আনহা।
রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)’র উপরােল্লিখিত চার কন্যা-সন্তানের সকলেই তাঁর প্রথম স্ত্রী হযরত খাদীজা বিনতু খুওয়াইলিদ আলকারশী রাদ্বিআল্লাহ তা’আলা আনহার সন্তান। এঁদের মধ্যে সায়্যিদাতুনা হযরত সায়্যিদা ফাতিমা রাদ্বিআল্লাহু তা’আলা আনহা রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)’র বিশেষ প্রিয় ছিলেন এবং তিনি হযরত আলী রাদ্বিআল্লাহু তা’আলা আনহুর স্ত্রী ও সায়্যিদুনা হযরত হাসান ও সায়্যিদুনা হযরত হােসাইন রাদ্বিআল্লাহু তা’আলা আনহুমার মা ছিলেন।
নবী-বংশের মিথ্যা দাবিদারদের পরিণতি
নবী করীম (সাল্লাল্লাহু অালাইহি ওয়াসাল্লাম)’র বংশধরদের সম্মান ও মর্যাদার কথা পবিত্র কোরআন ও হাদীছে স্পষ্ট ভাষায় বর্ণিত হওয়ায় মুমিন-মুসলমানদের অন্তরে তাঁদের ভালোবাসা ও শ্রদ্ধা অন্য যেকোনো মানুষ থেকে ঢের বেশি। তাদের সম্মান ও শান-শওকত দেখে কিছু মিথ্যাবাদী-স্বার্থপর নিজেদেরকে নবী বংশের দাবি করে বসে, যাতে সাধারণ মুসলমানদের কাছ থেকে সম্মান আদায় করতে পারে। বিশেষ করে দুনিয়ার লােভ তাড়িত ব্যক্তিরা মূলত এরকম মিথ্যার আশ্রয় নিয়ে থাকে। এতে করে তাঁদের স্বার্থ হাসিল হলেও তাদের স্বার্থবাদী কর্মকান্ডে নবী-বংশের পবিত্রতার ওপর কালিমাযুক্ত হয়। সাধারণ সরলমনা মুসলমানরা সত্য-মিথ্যা পার্থক্য করতে না পেরে এসব ভন্ডের কারনে সত্যিকার আওলাদে রাসুল গণের বদনাম করে, ক্ষেত্রবিশেষ বিরোধিতাও করে বসে। যা উম্মতের জন্য বড়ই পরিতাপের এবং আল্লাহর গযব নাযিল হওয়ার মাধ্যম। যারা নিজের বংশপরিচয় গোপন করে নিজেকে অন্য বংশের দাবি করে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁদের ব্যাপারে কঠিন আযাবের হুঁশিয়ারী দিয়েছে | আর সে দাবী যদি নবী করীম (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)’র বংশ নিয়ে হয়, তার পরিনাম কত কঠিণ হতে পারে?
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ ব্যাপারেও ইরশাদ করেন,
হাদিস ১ঃ
عن سعد رضی الله عنه قال سمعت النبي صلى الله عليه وسلم يقول: “من ادعی إلى غير أبيه وهو يعلم أنه غير أبيه فالجنة عليه حرام (رواه البخاری ومسلم)
অর্থাৎ,“হযরত সায়্যিদুনা সা’দ ইবনু আবি ওয়াক্কাস রাদ্বিআল্লাহ তা’আলা আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছেন, যে ব্যক্তি নিজের পিতা সম্পর্কে অবগত থাকা সত্ত্বেও অপর কাউকে পিতা বলে দাবি করে, তার জন্য জানাত হারাম (অর্থাৎ সে জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবেনা।”
(সহীহ বুখারী ও মুসলিম শরীফ)
হাদিস ২ঃ
عن أبي هريرة عن النبى صلى الله عليه وسلم قال لا ترغبوا عن آبائکم فمن رغب عن أبيه فهوکفر (رواه البخاری ومسلم)
অর্থাৎ,“হযরত আবু হুরায়রা রাদ্বিআল্লাহু তা’আলা আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণনা করেন যে, তিনি (নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, তােমরা তােমাদের পিতৃ-পুরুষদের থেকে বিমূখ হয়ােনা (তাদের বংশকে অস্বীকার করােনা)। যে ব্যক্তি তার পিতৃ-পুরুষদের থেকে বিমূখ হয় (তাদের বংশকে অস্বীকার করে), সেটা কুফরি।”
(সহীহ বুখারী ও মুসলিম শরীফ)
হাদিস ৩ঃ
عن إبراهیم التیمی عن أبیه قال خطبنا علی بن أبی طالب فقال: … ومن ادعی إلى غير أبيه أو انتمى إلى غير مواليه فعليه لعنة الله والملائكة والناس أجمعين لا يقبل الله منه يوم القيامة صرفا ولا عدلا (رواه المسلم)
অর্থাৎ,”হযরত ইবরাহীম আততাইমি রাদ্বিআল্লাহু তা’আলা আনহু তাঁর সম্মানিত পিতা থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, একদা হযরত সায়্যিদুনা আলী রাদ্বিআল্লাহু তা’আলা
আনহু আমাদের সামনে বক্তব্য রাখলেন, তিনি (হযরত সায়্যিদুনা আলী রাদ্বিয়াল্লাহ তা’আলা আনহু) বলেছেন, যে ব্যক্তি নিজের পিতা ব্যতিরেকে অপকাউকে নিজের পিতা বলে দাবি করে অথবা নিজের মুনিবকে বাদ দিয়ে অপকাউকে নিজের মুনিব বলে দাবি করে, তার ওপর আল্লাহর, ফেরেশতাদের এবং প্রত্যেক মানুষের অভিশাপ। আল্লাহ তা’আলা কিয়ামতের দিন তার থেকে কোন কিছু বিনিময়স্বরুপ গ্রহণ করবেননা।”
(সহীহ মুসলিম শরীফ)
এই হাদীছের ব্যাখ্যায় ইমাম নববী রাহমাতুল্লাহি আলাইহি তাঁর শরহে মুসলিম এ বলেন,
وأما قولی صلى الله عليه وسلم فيمن إدعى لغير أبيه وهو يعلم أنه غير أبيه، كفر
অর্থাৎ,“ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ এর অর্থ হচ্ছে, যে ব্যক্তি নিজের পিতা সম্পর্কে অবগত থাকা সত্ত্বেও অপর কাউকে পিতা বলে দাবি করে, সে কুফরি করলাে।”
(শরহে সহীহ মুসলিম শরীফ, কৃত ইমাম নববী রাহমাতুল্লাহি আলাইহি)
হাদিস ৪ঃ
وقال قوله صلى الله عليه وسلم: (إئنتان في الناس هما بهم کفر: الطعن في النسب,والنیل حةعلی المیت)
অর্থাৎ,”রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, মানুষের স্বভাবজাত কাজের মধ্যে দুটি কাজ কুফরি।
(১) বংশ অস্বীকার করা
(২) মৃত ব্যক্তির জন্য বিলাপ করা।”
(শরহে সহীহ মুসলিম শরীফ, কৃত ইমাম নববী রাহমাতুল্লঅহি আলাইহি)
উল্লেখ্য, উপরিউক্ত বর্ণনায় কুফরি করার অর্থ হল, আল্লাহর নেয়ামতের অস্বীকার করা। কেননা, বংশধারা আল্লাহর নেয়ামত এবং পিতাও পুত্রের জন্য আল্লাহর নেয়ামত বা বিশেষ অনুগ্রহ। পিতা ব্যতিত পুত্রের অস্থীত্ব কল্পনা করা যায়না। তবে এর দ্বারা ঐ কুফুরী বুঝানাে হয়নি যা দ্বারা ঈমান থেকে বের হয়ে যায়।
হাদিস ৫ঃ
عن أبی ذر أن النبي صلى الله عليه وسلم قال: ليس من رجل ادعی لغير أبيه وهو يعلمه إلا كفر، ومن ادعی قوما ليس له فيهم نسب فليتبوأ مقعده من النار.
অর্থাৎ,“হযরত আবু যর রাদ্বিআল্লাহ তা’আলা আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছেন, যে ব্যক্তি নিজের পিতা সম্পর্কে অবগত থাকা সত্ত্বেও অপর কাউকে পিতা বলে দাবি করে, সে কুফরি করলাে। আর যে নিজেকে এমন বংশের লােক বলে দাবি করে, যে বংশের সাথে তার আদৌ সম্পর্ক নাই, সে ব্যক্তি নিজের ঠিকানা জাহান্নামে তৈরি করে নিল।”
(সহীহ বুখারী মুসলিম শরীফ)
হাদিস ৬ঃ
عن أبي هريرة عن النبي صلى الله عليه وسلم قال: من كذب علی متعمدا فليتبوأ مقعده من النار
অর্থাৎ,“হযরত আবু হুরায়রা রাদ্বিআল্লাহু তা’আলা আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, যে ব্যক্তি আমার ওপর মিথ্যারোপ করে, সে যেন নিজের ঠিকানা জাহান্নামে তৈরি করে নেয়।”
(সহীহ বুখারী,মুসলিম, তিরমিজী, আবু দাউদ, ইবনু মাযাহ, মসনদে আহমদ শরীফ)।
হাদিসের আলোকে দলীল (১-১০) | নবী-বংশের মর্যাদা
হাদিস-১ঃ
أخرج سعید بن منصور في سننه عن سعید بن جبیر رضی الله عنه في قوله تعالى: (قل لآ أسئلكم عليه أجرا إلا ألمودة في القربي) قال: قربی رسول الله صلى الله عليه وسلم.
হাদীছ নং- ০১:
হযরত সাঈদ ইবনে মনসুর তাঁর সুনান এ বর্ণনা করেছেন হযরত সাঈদ ইবনে জুবাইর রাদ্বিয়াল্লাহু তাআলা আনহু হতে, তিনি আল্লাহ তা’আলার বাণী قليلة لآأسئلکم علیه أجراها إلا المودة فی القربی (টীকা) অর্থাৎ, হে রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আপনি বলে দিন, (নবুয়তি দায়িত্ব পালনে আমার পরিশ্রমের) জন্য আমি তােমাদের থেকে কোন বিনিময় চাইনা, শুধু আমার নিকটাত্মীয়দের ভালবাসা ব্যতিত। সম্পর্কে মন্তব্য করেন। তিনি (হযরত সাঈদ ইবনে জুবাইর (রাদ্বিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু) বলেন, القربی বা নৈকট্য প্রাপ্তরা হচ্ছেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট আত্মীয়।
টীকা:
সূরা আশ শূরা, আয়াত ২৩।
১.বর্ণনাসূত্র:
১. জামেউল বয়ান- তাবারী -১১:১৪৪।
২. যাখায়েরুল উকবা, মুহীব্বুত তাবারী- পৃষ্ঠা: ৩
৩. অনুরূপ দাবি করেছেন- ইবনুসসির।
৪. আদদুররুল মনছুর, লিখক- জালালুদ্দীন সুয়ুতী, ৫: ৭০১।
৫. বুখারীতেও অনুরূপ রয়েছে।
তবে তিনি তাতে আরাে বৃদ্ধি করেছেন যে,
(فقال ابن عباس رضي الله عنهما عملت إن النبيﷺ لم يكن بطن من قريش الا كان له فيهم فرابة، فقال: إلا أن تصلوا مابيني وبينكم من القرابة)
অর্থাৎ: (হযরত সাঈদ ইবনে জুবাইরের এ কথা শুনে) হযরত ইবনে আব্বাস রাদ্বিয়াল্লাহু বলেন, তুমি তাড়াতাড়ি করে ফেললে। কেননা, কুরাইশের কোন শাখা ছিলনা যেখানে নবী সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর আত্মীয়তা ছিলনা। তাই রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেছেন, আমার এবং তােমাদের মধ্যে যে আত্মীয়তার বন্ধন রয়েছে তার ভিত্তিতে তােমরা আমার সঙ্গে আত্মীয়তাসূলভ আচরণ কর। তাই আমি তােমাদের থেকে কামনা করি। আর লিখক (আল্লামা জালালুদ্দীন সুয়ুতি (রহ) আদদুররুল মনছুরে এ হাদীসের একটি অনুসন্ধানী ব্যাখ্যা দিয়েছেন। সুতরাং বিস্তারিত জানার জন্য তা দেখা যেতে পারে)।
হাদিস-২ঃ
أخرج ابن المنذر، وابن ابی حاتم وابن مردويه في تفاسيرهم، والطبراني في المعجم الكبير عن ابن عباس رضي الله عنهما، لما نزلت هذه الآية: (قل لآ أسئلكم عليه أجرا إلا المودة فی القربی) قالوا: يا رسول الله من قرابتك هؤلاء الذين وجبت مودتهم؟ قال صلى الله عليه وسلم: علی، وفاطمة، وولداهما؛
ইবনুল মুনযির, ইবনে আবি হাতিম ও ইবনে মারদাওইয়্যাহ প্রমূখ তাফসীর কারকগণ আপন আপন তাফসিরের কিতাবে এবং ইমাম তাবরানী ‘আল মু’জামুল কাবীর’-এ হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রাদ্বিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু থেকে বর্ণনা করেন, যখন (টীকা) قل لآ أسئلکم علیه أجراإلا المودةفی القربی; আয়াতটি নাযিল হয় তখন সাহাবায়ে কেরাম রাদ্বিয়াল্লাহু তা’আলা আনহুম জিজ্ঞাসা করেন, হে আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! আপনার ঐসব নিকটত্মীয় কারা, যাদেরকে ভালবাসা আমাদের ওপর আবশ্যক? তিনি (রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) উত্তরে ইরশাদ করলেন, (তারা হল) আলী, ফাতিমা এবং তাদের দু’সন্তান।
টীকা:
সূরা আশ শূরা, আয়াত ২৩। অনুবাদ ১ নং হাদীছ দ্র.।
বর্ণনাসূত্র:
১. আল জামে’ লি আহকামিল কুরআন (তাফসীরে কুরতবী)- ইমাম কুরতুবী – ৮:২১।
২. তাফসীরে কাবীর- ফকরুদ্দীন রাজী ২৭:১৬৬।
৩. আল মু’জামুল কাবীর- ইমাম তাবরানী-৩: ৪৭ (২৬৪১)/১১: ৩৫১ (১২২৫৯)।
৪. মাজমাউজ জাওয়ায়েদ আল হায়ছামী ৯:১৬৮/৭:১০৩।
৫. আদ দুররুল মনছুর- লিখক (জালালুদ্দীন সুয়ূতী) – ৫:৭০১।
হাদিস-৩ঃ
أخرج ابن ابی حاتم، عن ابن عباس رضي الله عنهما في قوله تعالى(ومن يقترف حسنة)
قال: المودةلآلمحمدﷺ.
হাদীছটি ইবনে আবি হাতেম, হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রাদ্বিয়াল্লাহু তা’আলা আনহুমা থেকে বর্ণনা করেন, তিনি (হযরত ইবনে আব্বাস রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু) আল্লাহ তা’আলার বাণী (টীকা) ومن یقتر فكانت حسنة; অর্থ এর ব্যাখ্যায় বলেন, এখানে حسنة বা কল্যাণকর কাজ অর্থ হচ্ছে, রাসূলুল্লাহ হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর পরিবারবর্গের প্রতি ভালবাসা পােষণ করা।
টীকা:
ذلك الذي يشر الله عباده الذين امنوا وعملوا الصالحات قل لا اسئلکم علیه اجرا الا المودة في القربي ومن يقترف حسنة فزاد له فيها حسنا ان الله غفور شکور
অর্থ: এরই সুসংবাদ দেন আল্লাহ তাঁর সেসব বান্দাকে, যারা ঈমান আনয়ন করে এবং সৎকাজ করে। হে রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)! আপনি বলে দিন, আমি আমার দাওয়াতের জন্য তােমাদের কাছে কোন বিনিময় চাই না, আমার নিকটতাত্মীয়দের ভালবাসা ব্যতিত। আর যে কেউ কোন ভাল কাজ করে, আমি তার জন্য তাকে সওয়াব বাড়িয়ে দেই। নিশ্চয় আল্লাহ্ ক্ষমাকারী, গুণগ্রাহী। সূরা আশ-শুরা, আয়াত : ২৩।
বর্ণনাসূত্র:
১. আল জামে’লি আহকামিল কুরআন- ইমাম কুরতুবী: ৮:২৪।
২. জাওয়াহেরুল ইকদিয়্যিন- আস সামহুদী ২:১৩
৩. আযযুররিয়্যাতুত-তাহেরা- আদ-দুলারি পৃ. ৭৪, হাদীছ নং ১২১ (হাসান ইবনে আলী (রা.) এর বর্ণনায়)।
৪, আদদুররুল মনছুর- জালালুদ্দীন সুয়ূতী – ৫:৭০১।
হাদিস-৪ঃ
أخرج أحمد، والترمذي وصححه، والنسائی، والحاکم عن المطلب بن ربيعة رضي الله عنهما قال: قال رسول الله صلى الله عليه وسلم: (والله لا يدخل قلب امریء مسلم إيمان، حتى يحبكم للهولقرابتی)
ইমাম আহমদ, ইমাম তিরমিজী (তিনি হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন) ইমাম নাসায়ী এবং হাকেম প্রমূখ হযরত মুত্তালিব ইবনে রাবীয়াহ্ (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুম) হতে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেছেন, আল্লাহর শপথ! ততক্ষণ পর্যন্ত কোন মুসলিমের ক্বলবে ঈমান প্রবেশ করবেনা, যতক্ষন সে তােমাদেরকে আল্লাহ ও আমার নিকটাত্মীয়দের কারণে (ওয়াস্তে) ভালবাসবেনা।
বর্ণনাসূত্র:
১. মুসনাদ এ ইমাম আহমদ ১:৩৪২ (১৭৮০)/৫:১৭২ (১৭০৬১)।
২. তিরমীজি- ৫: ৬১০ (৩৭৫৮)।
৩. নাসায়ী-৫:৫১ (৮১৭৫)।
৪, আল মুসতাদরিক- ৪:৮৫:৬৯৬০।
হাদিস-৫ঃ
أخرج مسلم، والترمذي، والنسائي عن زيد بن أرقم رضي الله عنه أن رسول الله صلى الله عليه وسلم قال: أذكركم الله في أهل بیتی
ইমাম মুসলিম, তিরমিজী ও নাসায়ী প্রমূখ হযরত ইয়াজিদ ইবনে আরকাম রাদ্বিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু থেকে বর্ণনা করেন যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেছেন, আমি তােমাদেরকে আমার আহলে বায়তের (হক্বের) ব্যাপারে আল্লাহর (আদেশের) কথা স্মরণ করিয়ে দিচ্ছি।
বর্ণনাসূত্র:
১. জামেউল বয়ান- তাবারী -১১:১৪৪।
২. যাবায়েরুল উকবা, মুহব্বত তাবারী- পৃষ্ঠা: ৩
৩. অনুরূপ দাবি করেছেন- ইবনুসসির।
৪. আদদুররুল মনছুর, লিখক জালালুদ্দীন সুয়তী, ৫: ৭০১।
৫. বুখারীতেও অনুরূপ রয়েছে। তবে তিনি তাতে আরাে বৃদ্ধি করেছেন যে,
لم يكن بطن من قريش الا كان له فيهم
فقال ابن عباس رضي الله عنهما عملت إن النبي فرابة، فقال: إلا أن تصلوا مابيني وبينكم من القرابة
অর্থাৎ (হযরত সাঈদ ইবনে জুবাইরের এ কথা শুনে) হযরত ইবনে আব্বাস রাদ্বিয়াল্লাহ বলেন, তুমি তাড়াতাড়ি করে ফেললে। কেননা, কুরাইশের কোন শাখা ছিলনা যেখানে নবী সাল্লাল্লাহ আহাহ ওয়াসাল্লাম এর আত্মীয়তা ছিলনা। তাই রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেছেন, আমার এবং তােমাদের মধ্যে যে আত্মীয়তার বন্ধন রয়েছে তার সিওতে তােমরা আমার সঙ্গে আত্মীয়তাসূলভ আচরণ কর। তাই আমি তােমাদের থেকে কামনা করি। আর লিখক (আল্লামা জালালুদ্দীন সুরুজ (রহ) আদদুররুল মনছুরে এ হাদীসের একটি অনুসনী ব্যাখ্যা দিয়েছেন। সুতরাং বিস্তারিত জানার জন্য তা দেখা যেতে পারে)।
হাদিস-৬ঃ
أخرجه الترمذي وحسنه، والحاكم عن زيد بن ثابت رضي الله عنه قال: قال رسول الله صلى الله عليه وسلم: إني تارك فيكم ما إن تمسكتم به بعدی لن تضلوا: کتاب الله وعترتی أهل بیتی. إنهمالن يتفرقا حتی یردا على الحوض، فانظروا كيف تخلفونی فيهما؛
ইমাম তিরমিজি (তিনি এটিকে হাসান বলেছেন) এবং হাকেম প্রমূখ হযরত যায়েদ ইবনে আরকাম রাদ্বিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু থেকে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, নিশ্চয় আমি তােমাদের জন্য এমন কিছু রেখে যাচ্ছি, যা আঁকড়ে ধরলে তােমরা আমার পরে কখনাে পথভ্রষ্ট হবেনা, (তা হচ্ছে) আল্লাহর কিতাব (কুরআন) ও আমার পরিবার পরিজন। তথা আমার আহলে বায়ত। আর নিশ্চয় এ দুটা (একে অপর থেকে) কখনাে বিচ্ছিন্ন হবেনা, যে পর্যন্ত না তারা আমার কাছে আমার হাউজে কাউছারের নিকট অবতরণ না করে। সুতরাং, আমার পরে তাদের সাথে তােমরা কী আচরণ করছ তা লক্ষ্য রেখ।
বর্ণনাসূত্র:
১. তিরমীজি- ৫:৬২২ (৩৭৮৮)। তিনি এটাকে হাসান গরীবও বলেছেন, আর তাতে لن تضلوا بعدی এর পরে রয়েছে যে, احلهمااعظم منالاخر کاب الله حبل مملود من السماء অর্থাৎ তাদের একটি আরেকটি থেকে মহান। একটি হচ্ছে কিতাবুল্লাহ অপরটি হচ্ছে, আসমান থেকে দীর্ঘ রশি।
২. মুসতাদরিক হাকেম-৩:১৬০ (৪৭১১)। আর তিনি বলেছেন, এই হাদীছটি শাইখাইন (বুখারী ও মুসলিম) এর শর্তমতে সহীহ সনদ বিশিষ্ট কিন্তু তারা (বুখারী ও মুসলিম) এটি বর্ণনা করেননি। আর এ রকম বলেছেন, ইমাম যাহাবী (রাহমাতুল্লাহি আলাইহি)।
হাদিস-৭ঃ
أخرج عبد بن حميد في مسنده عن زيد بن ثابت رضی الله عنه قال: قال رسول الله صلى الله عليه وسلم: إني تارك فيكم ما إن تمسكتم به بعدی لن تضلوا: كتاب الله و عترتی أهل بیتی. إنهما لن يتفرقا حتى يردا على الحوض –
আব্দু ইবনে হুমাইদ তার মসনদে হযরত যায়েদ ইবনে ছাবেত রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেন, “নিশ্চয় আমি তােমাদের জন্য এমন কিছু রেখে যাচ্ছি, যা আঁকড়ে ধরলে আমার পরে তােমরা কখনাে পথ ভ্রষ্ট হবেনা। তা হচ্ছে, আল্লাহর কিতাব (কুরআন) ও আমার পরিবার পরিজন তথা আহলে বায়ত। নিশ্চয় এ দুটো ততক্ষণ একে অপর থেকে বিচ্ছিন্ন হবে না। যতক্ষণ তারা (কুরআন ও আমার আহলে বায়ত) আমার নিকট হাউজে কাউছারে প্রত্যাবর্তন করবে।
বর্ণনাসূত্র:
১. আল মুন্তাখাব-১০৭:২৪০।
২. আল মুসনাদ -৬: ২৩২ (২১০৬৮)/২৪৪ (২১১৪৫)।
৩. মাজমাউজ জাওয়ায়েদ – আল হাইছামি-৯: ১৬২। এতে انی تارک فیکم خلیفتین অর্থাৎ নিশ্চয় আমি তােমাদের জন্য দুটি খলিফা বা প্রতিনিধি রেখে যাচ্ছি উল্লেখ রয়েছে।
অনুরূপভাবে বর্ণনা রয়েছে, ইবনে আবি শাইবার ‘আল মুসান্নাফ এ – ৬:৩১৩ (৩১৬৭০) এবং ইমাম ফাসভীর “মা’রেফাতুত তারিখ”-৯:৫৩৭ -এ।
হাদিস-৮ঃ
أخرج أحمد وأبو يعلى، عن أبي سعيد الخدری رضی الله عنه أن رسول الله صلى الله عليه وسلم قال: إنی أوشك أن أدعى فأجيب، وإني تارك فيكم الثقلين كتاب الله و عترتی أهل بیتی. وإن اللطيف الخبير خبرنی، أنهما لن يتفرقا حتى یردا على الحوض، فانظروا كيف تخلفونی فيهما؛
ইমাম আহমদ, আবু ই’য়ালা প্রমূখ হযরত আবু সাঈদ খুদরী রাদ্বিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু থেকে বর্ণনা করেন যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, “আমি এটা কামনা করি যে, আমাকে (আল্লাহর পক্ষ হতে) আহ্বান করা হবে আর আমিও সাড়া দেব (ইন্তিকাল করব)। আর নিশ্চয় আমি তােমাদের জন্য দুটি খুবই গুরুত্বপুর্ণ জিনিস রেখে যাচ্ছি, (তা হচ্ছে) কিতাবুল্লাহ (কুরআন) এবং আমার পরিবার পরিজন তথা আহলে বায়ত। আর সুক্ষ্ম দ্রষ্টা (আল্লাহ) আমাকে খবর দিয়েছেন যে, তারা উভয়ে (কুরআন এবং আমার আহলে বায়ত) কখনাে পৃথক হবেনা যতক্ষণ না উভয়ে আমার নিকট হাউজে কাউছারের নিকট মিলিত হয়। সুতরাং আমার পরে তােমরা তাদের সাথে কেমন ব্যবহার করছ তা লক্ষ্য রেখ।
বর্ণনাসূত্র:
১. আল মুসনাদ- ৩: ৩৯৩ (১০৭৪৭)।
২. আবু ইয়ালা-২:৬ (১০১৭)/ ৯:(১০২৩)/ ৪৭:(১১৩৫)।
হাদিস-৯ঃ
أخرج الترمذي وحسنه، والطبراني عن ابن عباس رضی الله عنهما قال: قال رسول الله صلى الله عليه وسلم: أحبوا الله لما يغذوكم به من نعمه، وأحبونی لحب الله، وأحبوا أهل بیتی لحبی۔
ইমাম তিরমিজী (তিনি হাদীছটিকে হাসান বলেছেন) ও ইমাম তাবরানী হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রাদ্বিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, “আল্লাহ তা’আলা তার নেয়ামতরাজি দ্বারা তােমাদেরকে যেভাবে পানাহার করান তার জন্য তাকে ভালবাস। আর আল্লাহর ভালবাসা পেতে আমাকে ভালবাস, আর আমার ভালবাসা পেতে আমার পরিবার-পরিজনকে ভালবাস।
বর্ণনাসূত্র:
১. তিরমীজি- ৫:৬৩৩ (৩৭৮৯), আর তিনি বলেছেন, হাদীছটি হাসান গরীব।
২. আল মুজামুল কবীর-ইমাম তাবরানী-৩:৪৬ (২৬৩৮)।
৩. আল মুসতাদরিক- ইমাম হাকেম- ৩: ১৬২ (৪৭১৬), আর তিনি বলেছেন, হাদীছটি সনদের দিক দিয়ে সহীহ, তবে তারা হাদীছটি বর্ণনা করেননি।
অনুরূপ বলেছেন, ইমাম যাহাবী এবং ইমাম বায়হাকী তার শুয়াবুল ঈমানে (২:১৩০/১৩৭৮)।
হাদিস-১০ঃ
أخرج البخاري عن ابي بكر الصديق رضي الله عنه:قال: “ارقبوا محمدا صلى الله عليه وسلم في أهل بيته .
ইমাম বুখারী রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু হযরত আবু বকর সিদ্দীক রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু এর সূত্রে বর্ণনা করেন, তিনি (হযরত আবু বকর সিদ্দীক রাদ্বিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু) বলেন, তােমরা হযরত মুহাম্মদুর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সম্মান রক্ষা করবে তার পরিবারবর্গকে সম্মান করার মাধ্যমে।
বর্ণনাসূত্র:
১. বুখারী, বাবু মানাকিবি কারাবাতি রাসূলিল্লাহি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-ইমাম আবু আব্দিল্লাহ মুহাম্মদ ইবনে ইসমাঈল বুখারী – ৩:২৫ (৩৭১৩)/ বাবু মানাক্বিবিল হাসান ওয়াল হুসাইন (রাদ্বিয়াল্লাহু তা’আলা আনহুমা) – ৩২:(৩৭৫১)।
২. ইমাম সামহুদী তার জাওয়াহেরুল ইকদিয়্যীন -২:৩১১।
৩, দারু কুত্বনী – বিভিন্ন সনদে বর্ণনা করেছেন। এর মধ্যে কোন কোন বর্ণনা হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু থেকে এসেছে। তিনি (হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু) বলেছেন, ارقبوا محمداﷺفی اهل بیته অর্থ, ‘তােমরা মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর পরিবারবর্গের মাধ্যমে তাকে সর্বোচ্চ সম্মান দেখাবে। অপর বর্ণনায় ارقبوا এর স্থলে اخفظوا (তােমরা সংরক্ষণ করবে) আছে।
হাদিসের আলোকে দলীল (১১-২০) | নবী-বংশের মর্যাদা
হাদিস-১১ঃ
أخرج الطبرانی والحاكم عن ابن عباس رضی الله عنهما قال : قال رسول الله صلى الله عليه وسلم: يابنی عبد المطلب، انی سألت الله فيكم ثلاثا: أن يثبت قلوبكم، وأن يعلم جاهلكم، ويهدی ضالكم، وسألته أن يجعلکم جوداء، نجداء، رحماء. فلو أن رجلا صفن بين الركن والمقام فصلى وصام، ثم مات وهو مبغض لأهل بيت محمد، دخل النار؛
ইমাম তাবরানী ও হাকেম হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রাদ্বিয়াল্লাহু তা’আলা আনহুমা এর সূত্রে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, হে আব্দুল মােত্তালিব(টীকা:৪) এর বংশধরগণ! নিশ্চয় আমি তােমাদের জন্য আল্লাহর কাছে তিনটি বিষয়ে প্রার্থনা করেছি যে, ১. তিনি যেন তােমাদের অন্তরকে (সত্যের ওপর) অটল রাখেন। ২. তােমাদের জাহেল (অজ্ঞ)দের যেন শিক্ষা দান করেন, ৩. এবং তােমাদের পথভ্রষ্টদের যেন সৎ পথ দেখান। আমি তার কাছে আরাে প্রার্থনা করেছি তিনি যেন তােমাদেরকে দানশীল, সাহায্যকারী (সম্মানিত), দয়াদ্র করেন। অতঃপর যদি কোন ব্যক্তি রুকন (টীকা:৪) ও মক্কামে ইব্রাহীমের মাঝখানে অবস্থান করে, অতঃপর (তাতে) নামাজ আদায় করে এবং রােজা রাখে, অতঃপর (এমতাবস্থায়) মারা গেল যে, সে মুহাম্মদুর রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর পরিবার বর্গের (আহলে বায়ত) সাথে হিংসা পােষণকারী, (তাহলে) সে জাহান্নামে প্রবেশ করল।
টীকা ৪:
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর দাদা।
টীকা ৫: রুকনে ইয়ামানী। বায়তুল্লাহর দক্ষিণ-পশ্চিম কোণকে রুকনে ইয়ামানী বলে। এ কোণে হাতে স্পর্শ করা বা চুমু দেওয়া সুন্নাত যা হাদীছ শরীফ দ্বারা সাব্যস্ত।
বর্ণনাসূত্র:
১. আল মু’জামুল কাবীর-১১: ১৪২ (১১৪১২)।
২. আল মুসতাদরেক -৩:১৬১ (৪৭১২) এবং তিনি এ হাদীসকে ইমাম মুসলিমের শর্তমতে সহীহ বলেছেন। আর ইমাম যাহাবীও এ কথার ওপর ঐকমত্য পােষণ করেছেন এবং তিনি قلوبکم শব্দের পরিবের্ত بثبت قالمکم (তােমাদের পদক্ষেপ যেন অটল থাকে) উল্লখ করেছেন। আল্লামা সুয়ুতীর কোন কোন নুসখা (সংস্করনে) ও অনুরূপ পাওয়া যায়।
হাদিস-১২ঃ
أخرج الطبراني عن ابن عباس رضي الله عنهما، أن رسول الله صلى الله عليه وسلم قال: بغض بنی هاشم والأنصار كفر, وبغض العرب نفاق.
ইমাম তাবরানী হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রাদ্বিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু) হতে বর্ণনা করেন যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, বনী হাশেমী(টীকা:৬) ও আনসারদের(টীকা:৭) ঘৃণা করা কুফরী এবং আরবদের ঘৃণা করা মুনাফেকী।
টীকা ৬:
বনী হাশেম- রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের দাদা হযরত আব্দুল মােত্তালিব এর পিতা হাশেমের বংশধর।
টীকা ৭: আনসার- মদীনার অদিবাসী। যারা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও তার সাহাবীদেরকে মক্কা থেকে মদীনায় হিজরতের পর সাহায্য করেছেন।
বর্ণনাসূত্রঃ
আল মু’জামুল কাবীর- ১১:১১৮ (১১৩১২)।
হাদিস-১৩ঃ
أخرج ابن عدي في الإكليل عن أبي سعيد الخدری رضي الله عنه قال: قال رسول اللهﷺ: من أبغضنا أهل البيت، فهو منافق ؛
ইবনে আদি ‘আল ইক্বলীল’ গ্রন্থে হযরত আবু সাঈদ খুদুরী রাদ্বিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু থেকে বর্ণনা করেন, তিনি (হযরত আবু সাঈদ খুদরী রাদ্বিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু) বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, যে ব্যক্তি আমাদের আহলে বাইতকে ঘৃণা করে সে মুনাফিক।
বর্ণনাসূত্র:
১. ‘জাওয়াহেরুল ইকদিয়্যীন- ইমাম সামহুদি-২:২৫।
২. আহমদ মুসনাদ এ ইমাম দায়লামী কর্তৃক বর্ণিত হযরত জাবের রাদ্বিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু এর এই হাদীসটির পক্ষেও স্বাক্ষ্য দেন।
ما کنا نعرفُه المنافقین الاببغضهم علیا رضی الله عنه
অর্থ: আমরা এমন কোন মুনাফিক দেখিনি যে আলী(রা.) কে ঘৃণা করতনা।
৩. হাদীসটি ইমাম আহমদ ও তিরমীজি বর্ণনা করেছেন। তবে শব্দগত বর্ণনা ইমাম আহমদের।
হাদিস-১৪ঃ
أخرج ابن حبان في صحيحه والحاكم عن أبی سعید رضی الله عنه قال: قال رسول اللهﷺ والذي نفسي بيده، لا يبغضنا أهل البيت رجل، إلأ أدخله الله النار؛
ইবনে হিব্বান তার ‘সহীহ’তে এবং ইমাম হাকেম প্রমূখ হযরত আবু সাঈদ রাদ্বিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু থেকে বর্ণনা করেন, তিনি (হযরত আবু সাঈদ খুদরি রাদ্বিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু) বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, “শপথ তার, যার হাতে আমার প্রাণ! যে ব্যক্তিই আমার পরিবারবর্গের (আহলে বাইত) প্রতি ঘৃণা পােষণ করবে তাকে আল্লাহ তা’আলা জাহান্নামে প্রবেশ করাবেন।
বর্ণনাসূত্র:
১. সহীহ ইবনে হিব্বান (আল ইহসান) ১৫:৪৩৫ (৬৯৭৮)।
২. আল মুসতাদরিক-৩:১৬২ (৪৭১৭) এবং তিনি বলেন, এই হাদিসটি ইমাম মুসলিমের শর্ত মতে সহীহ বা বিশুদ্ধ। তবে তারা উভয়ে এ হাদীছটিকে বর্ণনা করেননি। আর ইমাম যাহাবী এ হাদিছের ব্যাপারে চুপ থেকেছেন।
হাদিস-১৫ঃ
أخرج الطبراني عن الحسن ابن علی رضی الله عنهما، أنه قال لمعاوية بن حديج: يا معاوية بن حديج، إياك وبغضنا، فإن رسول الله صلى الله عليه وسلم قال: لا يبغضنا أحد، لا يحسدنا أحد، إلا ذيد يوم القيامة عن الحوض بسياط من نار؛
ইমাম তাবরানী হযরত হাসান ইবনে আলী রাদ্বিয়াল্লাহু তা’আলা আনহুমা থেকে বর্ণিত, তিনি (হযরত হাসান রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুমা) মুয়াবিয়া ইবনে হুদাইজকে বলেন, হে মুয়াবিয়া ইবনে হুদাইজ! তুমি আমাদেরকে ঘৃণা করা থেকে বিরত থাকো, কেননা, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, কেউ যেন আমাদেরকে ঘৃণা না করে, কেউ যেন আমাদেরকে হিংসা না করে। যদি করে তাহলে তাকে কিয়ামতের দিন হাউজে কাউছার থেকে আগুনের চাবুক মারতে মারতে তাড়িয়ে দেয়া হবে।
বর্ণনাসূত্র:
১. আল মু’জামুল কবীর- ৩:৮১ (২৭২৬)।
২. আল মু’জামুল আওসত- ৩:২০৩ (২৪২৬)।
হাদিস-১৬ঃ
أخرج ابن عدی، والبيهقي في شعب الأيمان عن علی رضی الله عنه قال: قال رسول اللهﷺ من لم يعرف حق عترتی، والأنصار، فهو لإحدى ثلاث: إما منافق، وإما لزنية، وإما لغير طهور، یعنی حملته أمه علی غیر طهر;
ইবনে আদি এবং ইমাম বায়হাক্বী ‘শুয়াবুল ঈমান’ এ হযরত আলী রাদ্বিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু থেকে বর্ণনা করেন, তিনি (হযরত আলী রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু) বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, যে ব্যক্তি আমার পরিবারবর্গ (বংশধর)ও আনসারদের অধিকার সম্পর্কে জানেনা (তাদের হক আদায় করেনা) সে নিশ্চয় তিনজনের একজন। ১. হয়ত সে মুনাফিক, ২. অথবা সে জারজ, ৩. অথবা সে নাপাকীর সন্তান; অর্থাৎ তার মা তাকে ঋতুকালীন (হায়েজ) অবস্থায় গর্ভধারণ করেছেন।
বর্ণনাসূত্র:
১. আল কামেল-ইবনুল আদি-৩:১০৬০।
২. শুয়াবুল ঈমান-২:২৩২ (১৬১৪)।
৩. আল ফেরদৌস-ইমাম দায়লামী ৩:৬৬২ (৫৯৫৫)।
৪. জাওয়াহিরুল ইকৃদিয়্যীন- আস সামহুদী-২: ২৪।
৫. আছ-ছাওয়াব- আবিশ শাইখ।
হাদিস-১৭ঃ
أخرج الطبراني في الأوسط عن ابن عمر رضي الله عنهما قال:أخر ماتكلم به رسول اللهﷺ اخلفوني في أهل بیتی ؛ .
ইমাম তাবরানী তাঁর ‘আল আওসাত’ কিতাবে হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর রাদ্বিয়াল্লাহু তা’আলা আনহুমা থেকে বর্ণনা করেন, তিনি (হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু) বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সর্বশেষ যে কথা বলেছেন তা হচ্ছে, আমার পরে তােমরা আমার আহলে বাইতকে (পরিবারবর্গ) আমার স্থলাভিষিক্ত (খলিফা) হিসেবে মান্য করবে।
বর্ণনাসূত্র:
মাজমাউয যাওয়ায়েদ – ইমাম হাইছামী- ৯:১৬৩।
হাদিস-১৮ঃ
أخرج الطبراني في الأوسط عن الحسن بن علی رضي الله عنهما أن رسول الله صلى الله عليه وسلم قال: الزموا مودتنا أهل البيت، فإنه من القى الله وهو يودنا، دخل الجنة بشفاعتنا. والذي نفسي بيده، لا ينفع عبدا عمل عمله، إلا بمعرفته حقنا؛
ইমাম তাবরানী ‘আল আওসাত’ এ হযরত হাসান ইবনে আলী রাদ্বিয়াল্লাহু তা’আলা আনহুমা থেকে বর্ণনা করেন যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, আমার আহলে বাইত বা পরিবারবর্গের সাথে ভালবাসাকে আবশ্যক করে নাও। কেননা, যে ব্যক্তিই আল্লাহর সাথে এ অবস্থায় সাক্ষাত করবে যে, সে আমাদেরকে ভালবাসে, সে আমাদের শাফায়াত বা সুপারিশের দ্বারা জান্নাতে প্রবেশ করবে। আল্লাহর কসম! যার হাতে আমার প্রাণ, কোন বান্দার আমল ততক্ষন কাজে আসবে না, যতক্ষন না সে আমাদের অধিকার সম্পর্কে সচেতন হবে (রক্ষা করবে)।
বর্ণনাসূত্র:
১. আর মু’জামুল আওসাত, ৩:২২ (২২৫১)।
২. কাজী আয়াজ (রাহমাতুল্লাহি তা’আলা আলাইহি) তাঁর শেফা -(৩:৪৮) কিতাবে বলেছেন, কোন কোন আলেম বলেন, معرفتهم অর্থ হচ্ছে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর মর্যাদা সম্পর্কে জানা। আর যখন তারা (উম্মত) এ সম্পর্কে জানবে তখন তারা তার (নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) কারণে তাদের (আহলে বাইতে) অধিকার ও সম্মান সম্পর্কে জানবে।
হাদিস-১৯ঃ
أخرج الطبراني في الأوسط عن جابر بن عبد الله رضي الله عنهما قال: خطبنا رسول اللهﷺ فسمعته وهو يقول: أيها الناس من أبغضنا أهل البيت، حشره الله تعالی یوم القيامة يهوديا۔
ইমাম তাবরানী ‘আল আওসাত’ এ হযরত জাবের ইবনে আব্দুল্লাহ রাদ্বিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু থেকে বর্ণনা করেন, তিনি (হযরত জাবের ইবনে আব্দুল্লাহ) বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদেরকে উদ্দেশ্য করে বক্তব্য রাখলেন, যা আমি শুনেছি। তিনি বলেছেন, হে মানবমন্ডলী, যে ব্যক্তি আমার আহলে বাইতের প্রতি ঘৃণা পােষণ করবে, আল্লাহ তা’আলা তার হাশর করবে ইহুদী হিসেবে।
বর্ণনাসূত্র:
আল মু’জামুল আওসাত- ৫:১৪ (৪০১১)।
হাদিস-২০ঃ
أخرج الطبراني في الأوسط عن عبد الله بن جعفر رضي الله عنهما قال سمعت رسول اللهﷺ يقول: يابنی هاشم، إني قد سألت الله أن يجعلكم نجداء رحماء. وسألته أن يهدي ضالكم، ويؤمن خائفكم، ويشبع جائعكم. والذي نفسي بيده، لا يؤمن أحد حتى يحبكم بحبي. أترجون أن تدخلوا الجنة بشفاعتی، ولا يرجوها بنوعبد المطلب؟
ইমাম তাবরানী ‘আল আওসাত’ এ হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে জা’ফর রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি, “হে বনী হাশেম! আমি তােমাদের জন্য আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করেছি, তিনি যেন তােমাদের কে দানশীল ও দয়াদ্র করেন। তাঁর কাছে আরাে প্রার্থনা করেছি, তিনি যেন তােমাদের পথভ্রষ্টদেরকে সঠিক পথ দান করেন, তােমাদের ভীতি গ্রস্থদের নিরাপত্তা দান করেন, তােমাদের ক্ষুধার্থদেরকে আহার করান। আল্লাহর কসম! যার হাতে আমার প্রাণ, কোন ব্যক্তি ততক্ষণ ঈমানদার হবেনা, যতক্ষণ না সে তােমাদেরকে আমার কারণে ভাল বাসবে। তােমরা কি আমার সুপারিশ দ্বারা জান্নাতে যেতে চাও? আর বনু আব্দুল মােত্তালিব তা চায় না? (অথচ তাদেরও সেটা চাওয়া উচিত)।
বর্ণনাসূত্র:
আল্ মু’জামুল আওসাত, ৮:৩৭৩ (৭৭৫৭)।
হাদিসের আলোকে দলীল (২১-৩০) | নবী-বংশের মর্যাদা
হাদিস-২১ঃ
أخرج ابن أبي شيبة، ومسدد فی مسنديهما، والحكيم الترمذي في نوادر الأصول، وأبو يعلى، والطبراني عن سلمة بن الأكوع رضي الله عنه قال: قال رسول الله ﷺ النجوم أمان لأهل السماء وأهل بیتی أمان لأمتی؛
হযরত ইবনে আবিশ শায়বা এবং মুসাদ্দাদ উভয়ে তাদের ‘মুসনাদ’-এ হাকীম তিরমিজী ‘নাওয়াদেরুল উসূল’-এ আবু ইয়ালা এবং তাবরানী প্রমূখ হযরত সালমা ইবনে আকওয়া’ রাদ্বিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, ‘তারকারজি হচ্ছে আসমানের অধিবাসীদের জন্য নিরাপত্তা আর আমার পরিবারবর্গ (আহলে বাইত) হচ্ছে, আমার উম্মতের জন্য নিরাপত্তা।
বর্ণনা সূত্র:
১. আল-মাতালিবুল আলিয়া-ইবনে হাজর আল আসকালানী – ৪:২৬২ (৩৯৭২)।
২. মুখতাসারু ইত্তিহাফুস সাদাতিল মাহরা-বুসিরী-৫:২১০ (৭৫৩৬)।
৩. নাওয়াদিরুল উসূল, ২:১৯৯।
৪. আল মু’জামুল কাবীর- তাবরানী ৭:২২ (৬২৬০)।
৫. আল মারিফাতু ওয়াত তারীখু-আল ফাসভী- ১:৫৩৮।
৬. যাবায়েরুল উকবা- আত্বাবারী, পৃষ্ঠা- ৪৯।
৭. কানযুল উম্মাল- আল মুত্তাকি আল হিন্দ-১২:১০১।
৮.আল-মসনদ-আর রুয়ানী -২:২৫৩ (১১৫২)/২৫৮(১১৬৪/১১৬৫)।
হাদিস-২২ঃ
أخرج البزار عن أبي هريرة رضي الله عنه قال: قال رسول اللهﷺ إني خلفت فيكم اثنين لن تضلوا بعدهما أبدأ: كتاب الله، ونسبی. ولن يتفرقا، حتی یردا على الحوض –
ইমাম বাযযার হযরত আবু হুরায়রা রাদ্বিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, আমি তােমাদের জন্য দুটি প্রতিনিধি রেখে যাচ্ছি, (তােমরা এদের আঁকড়ে ধরলে) এরপর তােমরা কখনাে পথভ্রষ্ট হবে না। (তা হচ্ছে) আল্লাহর কিতাব (কুরআন) এবং আমার বংশধর (আহলে বাইত)। আর আমার কাছে হাউজে কাউছারের নিকট মিলিত না হওয়া পর্যন্ত এঁরা উভয়ে (কুরআন এবং আমার বংশধর) পরস্পর বিচ্ছিন্ন হবেনা।
বর্ণনা সূত্র:
১. কাশফুল আসতার- হাইছামী, ৩:২২৩ (২৬১৭),
২. মাজমাউজ জাওয়ায়েদ-৯:১৬৩।
হাদিস-২৩ঃ
أخرج البزار عن علي رضي الله عنه قال: قال رسول اللهﷺ إنی مقبوض، وإني قد ترکت فیکم الثقلين: كتاب الله، وأهل بیتی، وإنكم لن تضلوا بعدهما۔
ইমাম বাযযার হযরত আলী রাদ্বিয়াল্লাহু তা’আলা আনহুর সূত্রে বর্ণনা করেন, তিনি (আলী রাদ্বিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু) বলেন, রাসূলুল্লাহ সালাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, “নিশ্চয় আমি ইন্তিকাল করব। আর নিশ্চয় আমি তােমাদের জন্য দু’টি খুবই গুরুত্বপূর্ণ জিনিস রেখে যাচ্ছি। (তা হচ্ছে) কিতাবুল্লাহ (কুরআন) এবং আমার পরিবারবর্গ (আহলে বাইত)। আর নিশ্চয় তােমরা এ দু’টা শক্তভাবে আঁকড়ে ধরার পর কখনাে গােমরাহ হবেনা।
বর্ণনাসূত্র:
১. কাশফুল আসতার – হাইছামী-৩:২২১ (২৬১২)।
২. মাজমাউজ জাওয়ায়েদ – ৯:১৬৩।
হাদিস-২৪ঃ
أخرج البزار عن عبد الله بن الزبیر رضی الله عنهما، أن النبيﷺ قال: مثل أهل بیتی، مثل سفينة نوح، من ركبها نجا، ومن تركها غرق ؛
ইমাম বাযযার হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে যুবাইর রাদ্বিয়াল্লাহু তা’আলা আনহুমার সূত্রে বর্ণনা করেন যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন “আমার পরিবারবর্গের (আহলে বাইত) হচ্ছে হযরত নূহ (আ.) এর নৌকার মত, যে তাতে আরােহণ করল সে মুক্তি পেল আর যে তা ছেড়ে দিল (আরােহণ করলনা) সে ডুবে গেল”।
বর্ণনাসূত্র:
১. কাশফুল আসতার-হাইছামী, ৩:২২২ (২৬২৩)।
২. মাজমাউয যাওয়ায়েদ-৯:১৬৮।
হাদিস-২৫ঃ
أخرج البزار عن ابن عباس رضي الله عنهما قال: قال رسول اللهﷺ مثل أهل بیتی مثل سفينة نوح، من ركبها نجا، ومن تركها غرق ؛
ইমাম বাযযার হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহুমা এর সূত্রে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, “আমার পরিবারবর্গ (আহলে বাইত) এর উদাহরণ হচ্ছে হযরত নূহ আলাইহিস সালাম এর নৌকার মত, যে তাতে আরােহণ করল সে মুক্তি পেল। আর যে তাকে ছেড়ে দিল (আরােহণ করলনা) সে ডুবে গেল”।
বর্ণনাসূত্র:
১. কাশফুল আসতার-হাইছামী, ৩:২২২ (২৬১৫)।
২. মাজমাউয যাওয়ায়েদ -৯:১৬৮।
৩. মু’জামুল কাবীর- তাবরানী, ৩:৪৬ (২৬৩৮)।
৪. আল-হুলিয়্যাহ- আবু নঈম, ৪:৩০৬।
হাদিস-২৬ঃ
أخرج الطبرانی عن أبی ذر رضي الله عنه سمعت رسول اللهﷺ يقول: مثل أهل بيتي فيكم كمثل سفينة نوح في قوم نوح، من ركبها نجا، ومن تخلف عنها هلك. ومثل حطة بني إسرائيل.
ইমাম তাবরানী হযরত আবু যর রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু এর সূত্রে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি, “তােমাদের মধ্যে আমার পরিবারবর্গ (আহলে বাইত) এর উদাহরণ হচ্ছে, হযরত নূহ আলাইহিস সালাম এর উম্মতের জন্য তার নৌকার মত। যে তাতে আরােহন করল সে মুক্তি পেল। আর যে তা হতে পিছন পড়ে রইল (পরিত্যাগ করল) এবং আরােহণ করলনা সে ধ্বংস হল। আর আমার আহলে বাইতের আরাে উদাহরণ হচ্ছে, বনী ইসরাঈলের ‘হিত্তাতুন’(টীকা:৮) এর মত।
টীকা ৮:
‘হিত্তাতুন (حطت) এটি বনী ইসরাইলের প্রতি আল্লাহ তা’আলার আদেশকৃত একটি শব্দ। এর অর্থ হচ্ছে, হে আমাদের প্রতিপালক! তােমার কাছে আমাদের প্রার্থনা হচ্ছে যে, তুমি আমাদের অপরাধ মার্জনা কর।’ ঘটনা হচ্ছে, যখন বনী ইসরাঈল জান্নাতী খাবার মান্না ও সালওয়া খেতে অরুচিবােধ করল, তখন তারা সে সময়ে নবী হযরত মূসা আলাইহিস সালাম এর নিকট স্বাভাবিক খাদ্যের আবেদন করল। অতঃপর হযরত মূসা আলাইহিস সালাম এর আবেদনক্রমে আল্লাহ তা’আলা স্বাভাবিক খাদ্য লাভের সুবিধার্থে তাদেরকে (বনী ইসরাঈলকে) বায়তুল মােকাদ্দাস কারাে মতে বায়তুল মােকাদ্দাসের পার্শ্ববর্তী আরীহা, কারাে মতে মিসর এ প্রবেশের নির্দেশ প্রদান করল। এবং তাদেরকে আল্লাহু তা’আলার পক্ষ থেকে এও আদেশ করা হয় যে, আল্লাহ তা’আলার মাহত্য ও মর্যাদা স্মরণ করে এ জনপদের প্রবেশদ্বারে নতশিরে ‘হিত্তাতুন’ বলতে বলতে প্রবেশ কর। কিন্তু তাদের অধিকাংশই তা না করে বুক টান করে, মাথা পশ্চাৎ দিকে হেলিয়ে ‘হিত্তাতুন’ শব্দের পরিবর্তে ‘হিনত্বতাতুন (حنطة) শব্দ বলতে বলতে তথায় প্রবেশ করে। আল্লাহ তা’আলা তদের এহেন বিদ্রুপাত্মক আচরণ ও অবাধ্য কাজের শাস্তি স্বরূপ তাদের মাঝে প্লেগ রােগ ছড়িয়ে দেন। সংক্রমিত প্লেগ অল্প কয়েকদিনে তাদের ৭০ হাজার লােকের মৃত্যু ঘটে। আর যারা আল্লাহ তা’আলার আদেশ মেনে ‘হিত্তাতুন’ বলতে বলতে প্রবেশ করেছিল, তারা রক্ষা পায়। (জালালাইন, বুখারী)।
বর্ণনাসূত্র:
১. আল-মু’জামুল আওসাত-৪:২৮৩ (৩৫০২)/৬:২৫১ ৫৫৩২)।
২. আল-মু’জামুস সাগীর, ১:১৩৯।
৩. আল মুসতারিক, ইমাম হাকেম, ২:৩৭৩ (৩৩১২)।
৪. মুখতাসারু ইত্তিহাফুল খাইর, ৫:২১১ (৭৫৪০)।
৫. কাশফুল আসতার, হইছামী, ৩:২২২ (২৬১৪)।
হাদিস-২৭ঃ
أخرج الطبراني في الأوسط عن أبي سعيد الخدری رضی الله عنه سمعت رسول اللهﷺ يقول: إنما مثل أهل بیتی كمثل سفينة نوح، من ركبها نجا، ومن تخلف عنهاغرق ؛ وإنما مثل أهل بيتي فيكم كمثل حطة بني إسرائيل، من دخل غفر له ؛
তা’আলা আনহুর সূত্রে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সালালাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি, “নিশ্চয় আমার পরিবারবর্গের (আহলে বাইত) উদাহরণ হচ্ছে, নূহ আলাইহিস সালাম এর নৌকার মত, যে তাতে আরােহন করল সে মুক্তি পেল। আর যে তা থেকে পিছিয়ে পড়ল (আরােহণ করলনা) সে ডুবে গেল। আর নিশ্চয় তােমাদের মধ্যে আমার পরিবারবর্গের (আহলে বাইত) উদাহরণ হচ্ছে, বনী ইসরায়েলের ‘হিত্তাতুন’ এর মত। যে তাতে প্রবেশ করল সে ক্ষমা প্রাপ্ত হল”।
বর্ণনাসূত্র:
১. আল-মুজামুল আওসাত-৬:৪০৬ (৮৫৬৬)।
২. আল মু’জামুস সাগীর-২:২২।
হাদিস-২৮ঃ
أخرج ابن النجار في تاريخه عن الحسن بن علی رضی الله عنهما قال: قال رسول الله ﷺ لكل شيء أساس، وأساس الإسلام حب أصحاب رسول اللهﷺ وحب أهل بيته؛
ইবনে নাজ্জার তার ‘তারীখ’-এ হযরত হাসান ইবনে আলী রাদ্বিয়াল্লাহু তা’আলা আনহুমা থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, “প্রত্যেক কিছুর একটি মূল আছে। আর ইসলামের মূল হচ্ছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাহাবাদের এবং তার পরিবারবর্গ (আহলে বাইত)’কে ভালবাসা”।
বর্ণনাসূত্র:
‘আদ-দুররুল মনসুর জালালুদ্দীন সুয়ুতী, ৬:৭।
হাদিস-২৯ঃ
أخرج الطبراني عن عمر رضي الله عنه قال:قال رسول اللهﷺ كل بني أنثى فإن عصبتهم لأبيهم، ما خلاولد فاطمة فإنی عصبتهم، فأناأبوهم;
ইমাম তাবরানী হযরত ওমর রাদ্বিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু এ সূত্রে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, “প্রত্যেক নারীর ঔরসজাত সন্তানদের বংশ পরিচয় নির্ণয় হয় তাদের পিতার দিক থেকে। শুধু (আমার কন্যা) ফাতেমার (রাদ্বিয়াল্লাহু তা’আলা আনহা)’র সন্তানগণ ব্যতিত। (অর্থাৎ, ফাতিমার সন্তানগণের বংশ পরিচয় হবে মাতার দিক দিয়ে, পিতার দিক দিয়ে নয়) কেননা, আমিই তাদের ‘আসাবা’(টীকা:৯) এবং আমিই তাদের পিতার স্থলাভিষিক্ত (অভিভাবক হিসেবে)” ।
টীকা ৯:
‘আসাবা আরবী ভাষায় ‘আসাবা’ শব্দের অর্থ ‘মাংসপেশী’, যাদের সাথে রক্ত সম্পর্ক আছে। ফরায়েজের ভাষায় যাবিল ফুরুজ নির্দিষ্ট অংশ নেয়ার পর অবশিষ্ট অংশ আসাবাদের মধ্যে বণ্টিত হয়।
বর্ণনাসূত্র:
১. আল-মু’জামুল কবীর, ৩:৪৪ (২৬৩১),
২. মাজমাউয যাওয়ায়েদ, ইমাম হাইছামী, ৪:২২৪।
হাদিস-৩০ঃ
أخرج الطبراني عن فاطمة الزهراء رضی الله عنها قالت: قال رسول اللهﷺ كل بني أم ينتمون إلى عصبتهم، إلا ولدی فاطمة، فأنا وليهما وعصبتهما ؛
ইমাম তাবরানী হযরত ফাতেমাতুজ জাহরা রাদ্বিয়াল্লাহু তা’আলা আনহা এর সূত্রে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, “প্রত্যেক মায়ের সন্তানেরই বংশীয় সম্পর্ক নির্ণীত হয় তাদের পিতার দিক দিয়ে। কিন্তু ফাতেমার সন্তানদের ব্যতিত। কেননা, আমিই তাদের অভিভাবক এবং তাদের বংশীয় উর্ধতন পুরুষ। তাই আমার দিকেই তাদের বংশীয় সম্পর্ক নির্ণীত হবে”।
বর্ণনাসূত্র:
১. আল মু’জামুল কাবীর, ৩:৪৪ (২৬৩২),
২. আবু ইয়াআলা, ৬:১৬১ (৬৭০৯),
৩. তারীখু বাগদাদ আল খতীব আল বাগদাদী, ১১:২৮৫,
৪, আল মাকাসিদুল হাসানা, ইমাম সাখাভী, পৃ. ৩৮১।
হাদিসের আলোকে দলীল (৩১-৪০) | নবী-বংশের মর্যাদা
হাদিস-৩১ঃ
أخرج الحاكم عن جابر رضی الله عنه قال: قال رسول اللهﷺ لكل بني أم عصبة ينتمون إليهم، إلا ابني فاطمة، فأنا وليهما وعصبتهما؛
তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, “প্রত্যেক মায়ের সন্তানেরই বংশীয় সম্পর্ক রয়েছে, যা তাঁদের (পিতার) দিকে সম্পর্কিত হয়। তবে ফাতেমার দুই সন্তান ব্যতিত। কেননা, আমি তাদের অভিভাবক এবং তাদের আসাবা (অর্থাৎ তাদের বংশীয় সম্পর্ক নির্ণীত হবে আমার দিকে)”।
বর্ণনাসূত্র:
আল মুসতাদরিক (তিনি এ হাদীসকে সহীহ বলেছেন), ৩:১৭৯ (৪৭৭০), ইমাম যাহাবী ও তাকে অনুসরণ করেছেন।
হাদিস-৩২ঃ
أخرج الطبراني في الأوسط عن جابر رضی الله عنه، أنه سمع عمر بن الخطاب رضي الله عنه يقول للناس حين تزوج بنت على رضي الله عنه: ألاتهنئونی! سمعت رسول اللهﷺ يقول ينقطع يوم القيامة كل سبب ونسب، إلا سببی و نسبی؛
ইমাম তাবরানী ‘আল-আওসাত’ এ হযরত জাবের রাদ্বিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু থেকে বর্ণনা করেন যে, তিনি হযরত ওমর ইবনে খাত্তাব রাদ্বিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু যখন আলী রাদ্বিয়াল্লাহু তা’আলা আনহুর কন্যাকে (উম্মে কুলসুম) বিয়ে করেন, তখন মানুষকে লক্ষ করে বলতে শুনেছেন যে, “সাবধান! তােমরা আমাকে স্বাগত জানাবেনা?, কেননা, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি, কিয়ামতের দিন সকল উপায় (উসিলা) ও বংশীয় সম্পর্ক বিচ্ছিন্ন হয়ে যাবে; কিন্তু আমার উপায় ও বংশীয় সম্পর্ক বিচ্ছিন্ন হবেনা”।
বর্ণনাসূত্র:
১. আল মু’জামুল আওসাত, ৬:২৮২ (৫৬০২)।
২. আস সুনানুল কুবরা, ইমাম বায়হাক্বী, ৭:১০১ (১৩৩৯৩)/ ৭:১৮৫ (১৩৬৬০)।
৩. আল মু’জামুল কাবীর, ইমাম তাবরানী, ৩:৪৫ (২৬৩৫)।
৪, আয যুররিয়্যাতুত তৃহিরা, আদ দুলাভী পৃ. ১১৫ হাদীছ নং- ২১৯।
হাদিস-৩৩ঃ
أخرج الطبراني عن ابن عباس رضي الله عنهما قال: قال رسول اللهﷺ كل سبب ونسب منقطع يوم القيامة، إلا سببی ونسبی۔
ইমাম তাবরানী হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রাদ্বিয়াল্লাহু তা’আলা আনহুমার সূত্রে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, “কিয়ামতের দিন প্রত্যেক উপায় ও বংশীয় সম্পর্ক বিচ্ছিন্ন হয়ে যাবে, শুধু আমার উপায় (উসিলা) ও বংশীয় সম্পর্ক ব্যতিত”।
বর্ণনাসূত্র:
১. মাজমাউয যাওয়ায়েদ, ইমাম হাইছামী, ৯:১৭৩। ২. আল মু’জামুল কাবীর, ইমাম তাবরানী, ২:২৭ (৩৩) (মসুরা ইবনে মাখমা এর সূত্রে)।
৩. আল মু’জামুল আওসাত, ৬:২৮২ (৫৬০২)।
৪. আস সুনানুল বায়হাক্বী, ৭:১০২ (২৩২৯৪)/ ১৮৫ (১৩৬৬০)।
হাদিস-৩৪ঃ
أخرج ابن عساكر في تاريخه عن ابن عمر رضي الله عنهما قال: قال رسول اللهﷺ كل نسب وصهر منقطع يوم القيامة، إلا نسبی وصهری؛
ইবনে আসাকির তার ‘তারীখ’ এ হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর রাদ্বিয়াল্লাহু তা’আলা আনহুমা এর সূত্রে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, “প্রত্যেক বংশীয় ও বৈবাহিক সূত্রের আত্মীয়তা কিয়ামতের দিন বিচ্ছিন্ন হয়ে যাবে, শুধু আমার বংশীয় ও বৈবাহিক সূত্রের আত্মীয়তা ব্যতিত। অর্থাৎ কিয়ামতের দিন আমার কোন আত্মীয়তাই নষ্ট হবেনা”।
বর্ণনাসূত্র:
১. আল মু’জামুল কাবীর, তাবরানী-৩:৪৫ (২৬৩৪)। ২. আল ফাওয়ায়েদ, তাম্মাম রাজী, ২:৩৩৩ (১৬০৩)।
৩. আস সুনানুল কুবরা, ৭:১০২ (১৩৩৯৫/১৩৩৯৬) মােসাওয়ার ইবনে মাখরামা রাদিয়াল্লাহু তা’য়ালা অানহু এর হাদিস থেকে।
হাদিস-৩৫ঃ
أخرج الحاكم عن ابن عباس رضي الله عنهما قال: قال رسول اللهﷺ النجوم أمان لأهل الأرض من الغرق، وأهل بیتی أمان لأمتي من الاختلاف، فإذا خالفتها قبيلة من العرب اختلفوا فصاروا خزب إبليس؛
হাকেম হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রাদ্বিয়াল্লাহু তা’আলা আনহুমা থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, “(আসমানের) তারকারাজি পৃথিবীবাসীর জন্য (সমুদ্রে) ডুবে যাওয়া থেকে নিরাপদ থাকার উপায়, আর আমার পরিবারবর্গ (আহলে বায়ত) আমার উম্মতের জন্য মতবিরােধ থেকে রক্ষা পাওয়ার উপায়। সুতরাং যখন আরবের কোন গােত্র তাদের (আহলে বাইতের) বিরােধীতা করেছে (অনুসরণ ছেড়ে দিয়েছে) তখনই তারা বিভক্ত হয়ে পড়েছে। ফলতঃ তারা শয়তানের দলভুক্ত হয়ে গেছে।
বর্ণনাসূত্র:
আল মুসতাদরিক, ৩:১৬২ (৪৭১৫)।
হাদিস-৩৬ঃ
أخرج الحاكم عن أنس رضي الله عنه قال: قال رسول اللهﷺ وعدنی ربی فی أهل بیتی، من أقر منهم بالتوحید، ولی بالبلاغ، أنه لايعذبهم –
হাকেম হযরত আনাস রাদ্বিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু এর সূত্রে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, “আমার প্রতিপালক (আল্লাহ) আমাকে আমার পরিবারবর্গের ব্যাপারে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। (আহলে বাইতের) যারাই আল্লাহর একত্ববাদের স্বীকৃত দিবে, তাদের ব্যাপারে আমাকে এ কথা বলতে নিযুক্ত করা হয়েছে যে, তাদেরকে আযাব দেয়া হবেনা”।
বর্ণনাসূত্র:
আল মুসতাদরিক, ৩:১৬৩ (৪৭১৮)।
হাদিস-৩৭ঃ
أخرج ابن جرير في تفسيره عن ابن عباسی رضی الله عنهما في قوله تعالى: «ولسوف يعطيك ربك فترضی» قال:من رضا محمد: أن لا يدخل أحد من أهل بيته النار؛
হযরত ইবনে জারীর তাঁর ‘তাফসীর’-এ হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রাদ্বিয়াল্লাহু তা’আলা আনহুমা এর সূত্রে বর্ণনা করেন, তিনি (হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস) আল্লাহ তা’আলার বাণী ولسوف يعطيك ربك فترضی; অর্থ: আপনার প্রতিপালক (আল্লাহ) অচিরেই আপনাকে দিবেন; যাতে আপনি সন্তষ্ট হয়ে যাবেন।’ এর তাফসীরে বলেন, “রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সন্তুষ্টি হচ্ছে যে, তার পরিবারবর্গ (আহলে বাইত) এর কেউ যেন জাহান্নামে প্রবেশ না করে”।
বর্ণনাসূত্রঃ
১. ‘জামেউল বায়ান’, ইবনে জারীর ১২:৬২৪ (৩৭১৫)।
২. আদ দুররুল মনসুর, লিখক জালালুদ্দীন সুয়ূতী, ৬:৬১০।
৩. ‘আল জামে লি আহকামিল কুরআন (তাফসীরে কুরতুবী),ইমাম কুতুবী ১০:৮৪।
৪. ‘আল ফেরদৌস’- ইমাম দায়লামী ২:৩১০ (৩৪০৩) (তিনি হযরত ইমরান ইবনে হােসাইন রাদ্বিয়াল্লাহু থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, আমি আমার মহামান্বিত প্রতিপালককে আবেদন করেছি এজন্য যে, আমার পরিবারবর্গের (আহলে বাইতের) একজনও যেন জাহান্নামে না যায়। অতঃপর, তা আমাকে দেয়া হয়েছে।
হাদিস-৩৮ঃ
أخرج البزار، وأبو يعلى، والعقیلی، والطبرانی، وابن شاهين عن ابن مسعود رضي الله عنه قال: قال رسول اللهﷺ فاطمة أحصنت فرجها، فحرم الله ذريتها على النار؛
ইমাম বাযযার, আবু ইয়ালা, উকাইলী, তাবরানী এবং ইবনে শাহীন প্রমূখ (মুহাদ্দীসীন) হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রাদ্বিয়াল্লাহু তা’আলা আনহুমা এর সূত্রে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, “নিশ্চয় ফাতেমা (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহা) নিজের লজ্জাস্থানকে পবিত্র রেখেছেন। তাই আল্লাহ তা’আলা তাঁর সন্তানদেরকে জাহান্নামের জন্য হারাম করেছেন।
বর্ণনাসূত্র:
১. কাশফুল আসতার, হাইছামী, ৩:২৩৫ (২৬৫১)।
২. আল মু’জামুল কাবীর, তাবরানী, ৩:৪১ (২৬২৫)।
৩. আল মাতালিবুল আলিয়া, ইবনুল হাজর, ৪:২৫৮ (৩৯৫৯)।
৪. আল ফাওয়ায়েদ, তাম্মাম রাজী, ১:১৫৪ (৩৫৬)/১৫৫ (৩৫৭)।
৫. মুখতাসারু ইত্তিহাফুল খাইর, বুসরী ৯:২১৭ (৭৫৬৪)।
৬. আল হুলিয়্যাহ, আবু নঈম, ৪:১৮৮।
হাদিস-৩৯ঃ
أخرج الطبرانی عن ابن عباس رضي الله عنهما قال: قال رسول اللهﷺ لفاطمة رضي الله عنها: إن الله غير معذبك ولا ولدک;
ইমাম ত্বাবরানী হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রাদ্বিয়াল্লাহু তা’আলা আনহুমার সূত্রে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হযরত ফাতেমা রাদ্বিয়াল্লাহু তা’আলা আনহাকে বলেছেন, নিশ্চয় আল্লাহ তা’আলা তােমাকে এবং তােমার সন্তানদেরকে আযাব দিবেন না।
বর্ণনাসূত্র:
আল মু’জামুল কাবীর, ১১:২১০ (১১৬৮৫)।
হাদিস-৪০ঃ
أخرج الترمذي وحسنه عن جابر رضي الله عنه قال: قال رسول اللهﷺ لا ياأيها الناس، إني تركت فيكم ما إن أخذتم به لن تضلوا: كتاب الله و عترتی؛
ইমাম তিরমিজি (তিনি হাদীসটিকে হাসান বলেছেন) হযরত জাবের রাদ্বিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু এর সূত্রে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, “হে মানব মন্ডলী! আমি তােমাদের মধ্যে দুটি জিনিস রেখে যাচ্ছি, তােমরা যতক্ষণ তা আঁকড়ে ধরবে ততক্ষণ কখনাে পথভ্রষ্ট হবে না। (তা হচ্ছে) কিতাবুল্লাহ্ (আল কুরআন) এবং আমার পরিবারবর্গ (বংশধর)।
বর্ণনাসূত্র:
১. আল জামেউস সহীহ, ইমাম তিরমিজি ৫:৬২১ (৩৭৮৬)।
২. দেখুন, হাদীছ নং ৬,৭ ও ৮ এর বর্ণন সূত্র।
হাদিসের আলোকে দলীল (৪১-৫০) | নবী-বংশের মর্যাদা
হাদিস-৪১ঃ
أخرج الخطيب في تاريخه عن علی رضی الله عنه قال: قال رسول اللهﷺ شفاعتي لأمتی، من أحب أهل بیتی؛
খতীব বাগদাদী তার ‘আত-তারীখ’-এ হযরত আলী রাদ্বিয়াল্লাহু তাআলা আনহু এর সূত্রে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, “আমার উম্মতের ঐসব লােকের জন্য আমার শাফায়াত (সুপারিশ) থাকবে একমাত্র যারা আমার পরিবারবর্গ (আহলে বাইত) কে ভালবেসেছে।
বর্ণনাসূত্র:
তারীখু বাগদাদ-২:১৪৬।
হাদিস-৪২ঃ
أخرج الطبراني عن ابن عمر رضي الله عنهما قال: قال رسول اللهﷺ أول من أشغع له من أمتي، أهل بیتی؛ .
ইমাম ত্বাবরানী হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর রাদ্বিয়াল্লাহ আনহুমার সূত্রে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, ‘আমি আমার উম্মতের যাদের জন্য সর্বপ্রথম শাফায়াত (সুপারিশ) করব, তারা হলেন, আমার পরিবারবর্গ (আহলে বাইত)।
বর্ণনাসূত্র:
১. আল মু’জামুল কাবীর, ১২:৩২১ (১৩৫৫০)।
২. মাজমাউয যাওয়ায়েদ, হাইছামী, ১:৩৮০।
৩. আল মাওদাহ, খতীব বাগদাদী ২:৪৮।
৪. আল ফেরদৌস, দায়লামী, ১:২৩ (২৯)।
৫. আল কামেল, ইবনে আদী, ২:৭৯০।
হাদিস-৪৩ঃ
أخرج الطبراني عن المطلب بن عبد الله بن حنطب، عن أبيه قال: خطبنا رسول اللهﷺ بالجحفة فقال: ألست أولى بكم من أنفسكم؟ قالوا: بلی یارسول الله، قال: فإني سائلكم عن اثنين، عن القرآن، وعترتی؛
ইমাম ত্বাবরানী হযরত মােত্তালিব ইবনে আব্দুল্লাহ ইবনে হানতাব রাদ্বিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু থেকে তিনি তার পিতা থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদেরকে উদ্দেশ্য করে যুহফাতে ভাষণ দিলেন, অতঃপর বললেন, ‘আমি কি তােমাদের জন্য তােমাদের প্রাণের চেয়েও নিকটে নই? সাহাবা সকলে বলল, অবশ্যই, হে আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)! তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তাহলে নিশ্চয় আমি তােমাদেরকে দুটি বিষয়ে দায়িত্ব দিচ্ছি, (তা হচ্ছে) কুরআনের ব্যাপারে এবং আমার পরিবারবর্গের (বংশধরদের) ব্যাপারে।
বর্ণনাসূত্র:
মাজমাউয যাওয়ায়েদ, হাইজামী ৫:১৯৫।
হাদিস-৪৪ঃ
أخرج الطبراني عن ابن عباس رضي الله عنهما قال: قال رسول اللهﷺ لا تزول قدما عبد حتى يسأل عن أربع: عن عمره فيما أفناه، وعن جسده فيما أبلاه، وعن ماله فيما أنفقه ومن أين اكتسبه وعن محبتنا أهل البيت؛
ইমাম ত্বাবরানী হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রাদ্বিয়াল্লাহু তা’আলা আনহুমা’র সূত্রে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, কোন বান্দাহ ততক্ষণ অগ্রসর হতে পারবেনা, যতক্ষণ না তাকে চারটি প্রশ্ন করা হবে। (তা হচ্ছে) ১. তার বয়সের ব্যাপারে যে, সে তা কীভাবে ব্যয় করেছে, ২. তার শরীরের ব্যাপারে যে, তা সে কীভাবে ক্ষয় করেছে। ৩, তার সম্পদের ব্যাপারে যে, সে তা কীভাবে খরচ করেছে এবং কোথায় হতে আয় করেছে। ৪. এবং আমার পরিবারবর্গের (আহলে বাইত) ভালবাসার ব্যাপারে।
বর্ণনাসূত্র:
১. আল মু’জামুল কাবীর, ১১:৮৩ (১১১৭৭)।
২. আল মু’জামুল আওসাত, ১০:১৮৫ (৯৪০২)।
৩. মাজমাউয যাওয়ায়েদ, হাইছামী ১০:৩৪৬ হযরত আবু বরযা’র বর্ণনায় অনুরূপ রয়েছে। তবে সেখানে অতিরিক্ত বর্ণনায় আছে।
হাদিস-৪৫ঃ
أخرج الديلمي عن علی رضی الله عنه سمعت رسول اللهﷺ يقول: أول من يرد على الحوض، أهل بیتی؟
ইমাম দায়লামী হযরত আলী রাদ্বিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি, “সর্ব প্রথম যারা আমার কাছে হাউজে কাউছারে অবতরণ করবে, তারা হচ্ছেন আমার পরিবারবর্গ (আহলে বাইত)। অর্থাৎ, তাদেরকে সর্ব প্রথম পান করানাে হবে।
বর্ণনাসূত্র:
১.কানযুল উম্মাল, আল মুত্তাকী আল হিন্দ, ১২:১০০ (৩৪১৭৮)।
২. ইমাম দায়লামী ও এটা সম্পৃক্ত করেছেন।
হাদিস-৪৬ঃ
أخرج الديلمي عن علي رضي الله عنه قال: قال رسول اللهﷺ أدبوا أولادكم على ثلاث خصال: حب نبيكم، وحب أهل بيته، وعلى قرأة القرآن. فإن حملة القرآن في ظل الله يوم لا ظل إلا ظله، مع أنبيائه وأصفيائه؛
ইমাম দায়লামী হযরত আলী রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, তোমার সন্তানদেরকে তিনটি বিষয়ে শিষ্টাচার শিক্ষা দাও। তা হচ্ছে, ১. তোমাদের নবীর (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) ভালবাসা, ২. তাঁর (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) পরিবারবর্গের (আহলে বাইত) ভালবাসা ৩. এবং কুরআন পড়ার শিক্ষা, কেননা কুরআন বহনকারী সেদিন (কেয়ামতের দিন) আল্লাহর (আরশের) ছায়ার নিচে তার নবীগণ এবং তার পবিত্র বান্দাদের সাথে থাকবে, যেদিন তার ছায়া (আরশের) ব্যতিত আর কোন ছায়া থাকবেনা”।
বর্ণনাসূত্র:
১. কানযুল উম্মাল, আল মুত্তাক্বী আল হিন্দ ১৬:৪৫৬ (৪৫৪০৯)।
২. কাশফুল খাফা, আল আজলূনী, ১:৭৪ (১৭৪)।
হাদিস-৪৭ঃ
أخرج الديلمي عن علي رضي الله عنه قال: قال رسول اللهﷺ أثبتكم على الصراط، أشدكم حبا لأهل بیتی وأصحابی؛
ইমাম দায়লামী হযরত আলী রাদ্বিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু এর সূত্রে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, “তােমাদের মধ্যে সিরাতের(টীকা-১০) ওপর ঐ ব্যক্তিই সবচেয়ে বেশি অটল থাকবে, যে আমার বংশধরগণ ও আমার সাহাবাগণকে বেশি বেশি ভালবাসবে”।
টীকা ১০:
“সিরাত” সিরাত হচ্ছে জাহান্নামের ওপরে স্থাপিত একটি চুলের চেয়ে সুক্ষ্ম, তরবারীর চেয়ে ধারালাে, অসংখ্য কাটাযুক্ত, অন্ধকার ও বিকট শব্দপূর্ণ দীর্ঘ সেতু বা পুল।
বর্ণনাসূত্র:
১. আল কামেল, ইবনু আদী, ৬:২৩০৪।
২. কানযুল উম্মাল, আল মুত্তাফিউল হিন্দ, ১২:৯৬ (৩৪১৫৭)।
হাদিস-৪৮ঃ
أخرج الديلمي عن علي رضي الله عنه قال: قال رسول اللهﷺ أربعة أنالهم شفيع يوم القيامة: المکرم لذريتي، والقاضي لهم حوائجهم، والساعي لهم أمورهم عندما اضطروا، والمحب الهم بقلبه ولسانه ؛
ইমাম দায়লামী হযরত আলী রাদ্বিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু এর সূত্রে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, কিয়ামতের দিন আমি চার ব্যক্তির জন্য সুপারিশকারী হব। (তারা হল) ১. আমার বংশধরদেরকে সম্মান কারী, ২. তাঁদের প্রয়ােজন পূরণকারী, ৩. তারা যখন কোন বিষয়ে সংকটে পড়বে তখন তাদেরকে সহযােগিতাকারী, এবং ৪. তাদেরকে অন্তর ও জবান (মুখ) দ্বারা (প্রকৃত) ভালবাসা পােষণকারী’।
বর্ণনাসূত্র:
১. যাখায়েরুল উক্বাবা, তাবরানী- পৃ. ৫০।
২. কানযুল উম্মাল, আল মুত্তাকিউল হিন্দ -১২:১০০ (৩৪১৮০)।
৩. ইত্তিহাফু সা-দাতিল মুত্তাক্বীন, ৮:৭৩।
৪. জাওয়াহিরুল ইক্বদিয়্যীন, আস সামহুদী, ২:৩৮৩।
হাদিস-৪৯ঃ
أخرج الديلمي عن أبی سعید رضی الله عنه قال: قال رسول اللهﷺ اشتد غضب الله على من آذانی فی عترتی۔
ইমাম দায়লামী হযরত আবু সাঈদ খুদরী রাদ্বিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু এর সূত্রে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, যে ব্যক্তি আমার পরিবারবর্গ (আহলে বাইত)’র ব্যাপারে আমাকে কষ্ট দেয় (যেহেতু আমার পরিবারবর্গকে কষ্ট দেয়া মানে আমাকে কষ্ট দেয়া তাই), আল্লাহ তা’আলা তার ওপরে ভীষণ রাগান্বিত হন।
বর্ণনাসূত্র:
১, কানযুল উম্মাল, আল মুত্তাকীউল হিন্দ, ১২:৭১৩ (৩৪১৪৩)।
২. যাখাইরুল উক্ববা, তাবারী, পৃ. ৮৩ (হযরত আলী রাদিয়াল্লাহু অানহু থেকে বর্ণিত যে, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, আল্লাহ তাঁর রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এবং তার ফেরেশতাগণ কঠোরভাবে রাগান্বিত হন সে ব্যক্তির ওপর যে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের রক্ত প্রবাহিত করে, অথবা তার পরিবার বর্গের দিক দিয়ে তাকে কষ্ট দেয়।)
হাদিস-৫০ঃ
أخرج الديلمي عن ابي هريرة رضي الله عنه قال: قال رسول اللهﷺ إن الله يبغض الأكل فوق شبعه، والغافل عن طاعة ربه، والتارك لسنة نبيه، والمخفر ذمته، والمبغض عترة نبيه، والمؤذي جيرانه –
ইমাম দায়লামী হযরত আবু হুরাইরা রাদ্বিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু’র সূত্রে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, ‘আল্লাহ তা’আলা নিন্মােক্তদের ওপর রাগান্বিত হন, ১. তৃপ্ত হওয়ার পরও খাদ্য গ্রহণকারী, ২. আপন প্রতিপালকের অনুসরণ থেকে অমনােযােগী, ৩. তাঁর নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)’র সুন্নাতকে পরিত্যাগকারী, ৪. নিজ দায়িত্বে অবহেলাকারী, ৫. নবী করীম (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)’র বংশধর (আহলে বাইত)’র প্রতি হিংসা পােষণকারী, ৬. নিজ প্রতিবেশীকে কষ্টদানকারী।
বর্ণনাসূত্র:
কানযুল উম্মাল, আল মুত্তাকিউল হিন্দ, ১৬:৮৭ (৪৪০২৯)।
হাদিসের আলোকে দলীল (৫১-৬০) | নবী-বংশের মর্যাদা
হাদিস-৫১ঃ
أخرج الديلمي عن أبی سعید رضی الله عنه قال: قال رسول اللهﷺ أهل بیتی والأنصار کرشی وعیبتی وصحابی، و موضع مسرتي، وأمانتی. فاقبلوا من محسنهم وتجاوزوا عن مسیئهم;
ইমাম দায়লামী হযরত আবু সাঈদ রাদ্বিয়াল্লাহু তা’আলা আনহুর সূত্রে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, “আমার পরিবারবর্গ (আহলে বায়ত) এবং আনসারগণ আমার ঘনিষ্ট, আমার ভরসাস্থল, আমার সাহাবা, আমার আনন্দস্থল এবং আমার নিরাপত্তা। সুতরাং তােমরা তাদের ভাল কাজ সমূহ গ্রহণ কর এবং মন্দ কাজ সমূহ এড়িয়ে চল”।
বর্ণনাসূত্র:
১. আল ফেরদৌস, দায়লামী, ১:৪০৭ (১৬৪৫)।
২. ইমাম তিরমিজি (৫:৬৭১) হযরত আবু সাঈদ রাদ্বিয়াল্লাহ তা’আলা আনহু থেকে বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন,
ألا إن عيبتي التي آوي إليها اهل بیتی، وإن کرشی الانصار، فاغفوا عن مسيئهم، واقبلوا من محسنهم
অর্থাৎ, সাবধান! নিশ্চয় আমার ভরসাস্থল, যাদের কাছে আমি ভরসা রাখতে পারি, তারা হল আমার পরিবারবর্গ (আহলে বাইত), আর নিশ্চয় আমার ঘনিষ্টজন হচ্ছে আনসারগণ। সুতরাং, তােমরা তাদের সাথে দুর্ব্যবহার থেকে বিরত থাক এবং তাদের প্রতি সদ্ব্যবহারে যত্মবান হও।”
ইমাম তিরমিজি বলেন, হাদীছটি হাসান।
হাদিস-৫২ঃ
أخرج أبو نعيم عن عثمان بن عفان رضي الله عنه قال: قال رسول اللهﷺ من أولی رجلا من بني عبد المطلب معروفا في الدنيا، فلم يقدر المطلبي على مكافأته، فأنا أكافئه عنه يوم القيامة؛
আবু নূ’আইম হযরত ওসমান ইবনে আফফান রাদ্বিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু এর সূত্রে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, যে ব্যক্তি দুনিয়ায় বনি আব্দুল মােত্তালিব (আব্দুল মােত্তালিব এর বংশ)’র কোন কারাে সাথে সদাচারণ করল, অথচ বনী মােত্তালিব তা শোধ করতে পারলনা, তাহলে কিয়ামতের দিন আমি তাকে এর পূর্ণ প্রতিদান (পারিশ্রমিক) তাদের পক্ষ থেকে দিয়ে দেব।
বর্ণনাসূত্র:
হুলিয়্যাতুল আউলিয়া, ১০:৩৬।
হাদিস-৫৩ঃ
أخرج الخطيب عن عثمان بن عفان رضی الله عنه قال: قال رسول اللهﷺ من صنع صنيعة إلى أحد من خلف عبد المطلب في الدنيا، فعلى مكافته إذا لقينی۔
খতীব বাগদাদী হযরত ওসমান ইবনে আফফান রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু’র সূত্রে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, যে ব্যক্তি দুনিয়ায় আব্দুল মুত্তালিব এর পরবর্তী বংশধরদের কোন ব্যক্তির জন্য কোন কাজ (উপকার) করে দিল, তাহলে আমার ওপর তার প্রতিদান দেয়া আবশ্যক করে নিলাম, যখন সে আমার সাথে সাক্ষাত করবে।
বর্ণনাসূত্র:
১. তারিখু বাগদাদ, খতীব বাগদাদী, ১০:১০৩।
২. আল মু’জামুল আওসাত, ইমাম তাবরানী, ২:২৬৫ (১৪৬৯)।
হাদিস-৫৪ঃ
أخرج ابن عساكر عن علي رضي الله عنه قال: قال رسول اللهﷺ من صنع إلى أحد من أهل بیتی یدا، كافأته يوم القیامة-
ইবনু আসাকির হযরত আলী রাদ্বিয়াল্লাহু তা’আলা আনহুর সূত্রে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, যে ব্যক্তি আমার পরিবারবর্গ (আহলে বাইত)’র কারাে জন্য একহাত পরিমাণ কোন কাজ করে দিবে, আমি কিয়ামতের দিন তার প্রতিদান দিব।
বর্ণনাসূত্র:
কানযুল উম্মাল, আল মুক্তাক্বী আল হিন্দ, ১২:৯৫ (৩৪১৫২)।
হাদিস-৫৫ঃ
أخرج البارودي عن أبی سعید رضی الله عنه قال: قال رسول اللهﷺ إني تارك فيكم ما إن تمسكتم به لن تضلوا: كتاب الله، سبب طرفه بيد الله، وطرفه بأيديكم، وعترتی أهل بیتی، وإنهما لن يتفرقا، حتی یردا على الحوض۔
বারুদী হযরত আবু সাঈদ রাদ্বিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু’র সূত্রে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, নিশ্চয় আমি তােমাদের মধ্যে দুটি জিনিস রেখে যাচ্ছি যতক্ষণ তােমরা তা আঁকড়ে ধরবে তােমরা কখনাে পথভ্রষ্ট হবেনা। (তার একটি হচ্ছে) কিতাবুল্লাহ (কুরআন) যার একপার্শ্ব আল্লাহর হাতে এবং অপর পার্শ্ব তােমাদের হাতে। আর (অপরটি হচ্ছে আমার পরিবারবর্গ (আহলে বাইত)। আর নিশ্চয় এরা উভয়ে (কুরআন ও আহলে বাইত) হাউজে কাউছারের নিকট আমার সাথে সাক্ষাত না করা পর্যন্ত পরস্পর বিচ্ছিন্ন হবেনা।
বর্ণনাসূত্র:
১. কিতাবুস সুন্নাহ, ইবনে আবি আসেম, ২:৬৩০ (১৫৫৪)।
২. আল মারিফাতু ওয়াত তারিখ, আল ফাসভী ১:৫৩৭।
৩. আল মু’জামুল আউসাত, তাবরানী, ৪:২৬২ (৩৪৬৩)/৩২৮ (৩৫৬৬)।
৪. আল মুসনাদ, ইমাম আহমদ ৩:৩৮৮ (১০৭২০)।
হাদিস-৫৬ঃ
أخرج أحمد، والطبرانی، عن زيد بن ثابت رضی الله عنه قال: قال رسول اللهﷺ إني تارك فيكم خليفتي: کتاب الله، حبل ممدود ما بين السماء والأرض، وعترتی أهل بیتی، و إنهمالن يتفرقا، حتی یردا على الحوض –
ইমাম আহমদ ও তাবরানী হযরত যায়েদ ইবনে ছাবেত রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহুর সূত্রে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাাম ইরশাদ করেন, “আমি তােমাদের জন্য আমার দু’টি প্রতিনিধি রেখে যাচ্ছি। (তার একটি হচ্ছে), কিতাবুল্লাহ (কুরআন) যা অাসমান ও যমীনের মধ্যখানে একটি দীর্ঘ রশি। (অপরটি হচ্ছে) আমার পবিবারবর্গ (আহলে বাইত) আর এরা উভয়ে কখনাে বিচ্ছিন্ন হবেনা, যতক্ষণ না তারা (উভয়ে) হাউজে কাউছারের নিকট আমার কাছে অবতরণ করবে।
বর্ণনাসূত্র:
১. আল মুসনাদ, ৬:২৩২ (২১০৬৮)/ ২৪৫ (২১১৫৩)।
২. আল মু’জামুল কাবীর, ৫:১৫৪ (৪৯২৩)।
হাদিস-৫৭ঃ
أخرج الترمذي، والحاكم، والبيهقي، في شعب الإيمان عن عائشة رضي الله عنها مرفوعا: ستة لعنهم الله وكل نبی مجاب: الزائد في كتاب الله، والمكذب بقدر الله، والمتسلط بالجبروت، فبعزبذلك من أذل الله، وبذل من أعز الله. والمستحل لحرم الله، والمستحل من عترتی ما حرم الله، والتارك لسنتی۔
ইমাম তিরমিজি ও হাকেম এবং বাইহাক্বী শুয়াবুল ঈমানে হযরত আয়েশা সিদ্দীকা রাদ্বিয়াল্লাহু তা’আলা আনহার সূত্রে বর্ণনা করেন, ছয় ব্যক্তিকে আল্লাহ তা’আলা লা’নত করেন। আর নবীগণ (আলাইহিমুস সালাম) প্রত্যেকের দোয়াই কবুল হয়। (ছয়জন ব্যক্তি হচ্ছে),
১. আল্লাহর কিতাব (কুরআন) এ অতিরঞ্জনকারী,
২. আল্লাহর পক্ষ হতে তাকদীরকে অস্বীকারকারী,
৩. অত্যাচারী শাসক কর্তৃক নিযুক্ত ব্যক্তি, যে ঐ ব্যক্তিকে সম্মান করে, যাকে আল্লাহ (পাপের কারণে) অপমাণিত করেছেন, আর ঐ ব্যক্তিকে অপমাণিত করে যাকে আল্লাহ সম্মানিত করেছেন,
৪. আল্লাহ কর্তৃক হারামকে হালাল করে,
৫. আর আমার পরিবারবর্গ (আহলে বাইত)’র ব্যাপারে আল্লাহ যা হারাম করেছেন তা বৈধ করে,
৬. আমার সুন্নাতকে পরিত্যাগকারী’।
বর্ণনাসূত্র:
১. তিরমিজী, ইমাম আবু ঈসা তিরমিজী ৪:৩৯৭ (২১৫৪)।
২. আল মুসতাদরিক, ১:৯১ (১০২)/২:৫৭১ (৩৯৯৪) /8:১০১ (৭০১১)।
হাদিস-৫৮ঃ
أخرج الديلمي في الأفراد والخطيب في المتفق عن علي رضي الله عنه قال: قال رسول اللهﷺ ستة لعنهم الله وكل نبی مجاب: الزائد في كتاب الله، والمكذب بقدر الله، والراغب عن سنتی إلى بدعة، والمستحل من عترتی ماحرم الله، والمتسلط على أمتی بالجبروت، ليعز من أذل الله، ويذل من أعز الله، والمرتد أعرابيا بعد هجرته.
ইমাম দায়লামী ‘আল আফরাদ’-এ এবং খতীব বাগদাদী ‘আল মুত্তাফিক’-এ হযরত আলী রাদ্বিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু’র সূত্রে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, “ছয় ব্যক্তিকে আল্লাহ অভিসম্পাত করেছেন, আর প্রত্যেক নবীর দোয়াই কবুল হয়। (ছয়জন ব্যক্তি হচ্ছে),
১. আল্লাহর কিতাব (কুরআন)-এ বৃদ্ধিকারী,
২. আল্লাহর দেয়া তক্বদীরকে (অদৃশ্য ভাগ্য) অস্বীকারকারী,
৩. সুন্নাতের চেয়ে বিদ’আতের দিকে আগ্রহী,
৪. আমার পরিবারবর্গ (আহলে বাইত)’র ব্যাপারে আল্লাহ যা হারাম করেছেন, তা হালাল জ্ঞানকারী (বৈধকারী),
৫. আমার উম্মতের ওপর অত্যাচারকারী শাসক, যাতে করে সে শাসক আল্লাহ যাকে অপমানিত করেছেন, তাকে সম্মানীত করে, আর আল্লাহ যাকে সম্মানিত করেছেন তাকে অপমানিত করে,
৬. আর যে বেদুঈন কুফরী ধর্ম ত্যাগ করার পর আবার কুফরীতে ফিরে যায়’।
বর্ণনাসূত্র:
১. আল ফিরদৌস’, দায়লামী ২:৩৩২ (৩৪৯৮) (তবে এতে সাত ব্যক্তির কথা উল্লেখ অাছে।
২. আল মুসতাদরিক, হাকেম ২:৫৭৩ (৩৯৪৫)।
৩. আল মু’জামুল কাবীর, তাবরানী ১৮:৪৩ (৮৯) তিনি হাদীছটি আমর ইবনে সা’ওয়া আল ইয়াফেয়ী থেকে বর্ণনা করেন, এবং সাত জন উল্লেখ করেন।)।
হাদিস-৫৯ঃ
أخرج الحاكم في تاريخه، والديلمي عن أبی سعید رضی الله عنه قال: قال رسول اللهﷺ ثلاث من حفظهن حفظ الله له دينه ودنياه، ومن ضيعهن، لم يحفظ الله له شيئا: حرمة الإسلام، وحرمتی، وحرمة رحمی۔
ইমাম হাকেম তাঁর তারীখ এ এবং ইমাম দায়লামী হযরত আবু সাঈদ রাদ্বিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু’র সূত্রে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, “তিনটি জিনিস যে সংরক্ষণ করবে, আল্লাহ তার দ্বীন ও দুনিয়ার বিষয়গুলি হেফাজত (সংরক্ষণ) করবেন। আর যে এ গুলিকে নষ্ট করবে (সংরক্ষণ করবেনা) আল্লাহ তা’আলা তার কোন কিছুই সংরক্ষণ করবেনা। (সে তিনটি জিনিস হচ্ছে),
১. ইসলামের সম্মান,
২. আমার সম্মান ও,
৩. আমার বংশের সম্মান।
বর্ণনাসূত্র:
১. আল মু’জামুল কাবীর, তাবরানী ৩:১২৬ (২৮৮১)।
২. আল মু’জামুল আওসাত, তবরানী ১৬২ (২০৫)।
হাদিস-৬০ঃ
أخرج الديلمي عن علي رضي الله عنه قال: قال رسول اللهﷺ خير الناس العرب، وخير العرب قريش، وخير قریش بنوهاشم.
ইমাম দায়লামী হযরত আলী রাদ্বিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু’র সূত্রে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, সর্বোত্তম মানুষ হচ্ছে আরবগণ, আর সর্বোত্তম আরব হচ্ছে কুরাইশগণ, আর সর্বোত্তম কুরাইশ বংশীয় লােক হচ্ছে বনু হাশেম।
বর্ণনাসূত্র:
আল ফেরদৌস, ২:১৭৮ (২৮৯২)।
তথ্যসূত্র/গ্রন্থপঞ্জী
১. জামেউল বয়ান ‘আন আ-য়িল কুরআন (তাফসীরে তাবারী)- মুহাম্মদ ইবনে জারীর ইবনে ইয়াযীদ ইবনে কাছীর ইবনে গালিব (ইমাম আবু জা’ফর তাবারী)। (২২৪-৩১০ হিজরী, ৮৩৯-৯২৩ খ্রিস্টাব্দ)।
২. যাখায়েরুল উকাবা ফী মানাকিবি যাবিল ক্বরবা- ইমাম হাফেজ মুহিব্বুদ্দীন আবুল আব্বাস আহমদ ইবনে আব্দুল্লাহ্ ইবনে মুহাম্মদ আত-তাবারী আল মক্কী। (৬১৫-৬৯৪ হিজরী)।
৩. হানাদ ইবনে সিররি- তিনি আবুসসিরি হানাদ ইবনুস সিররি ইবনে মুস’আব ইবনে আবু বকর শিবর ইবনে স্বা’ফুক্ব আততামীমী আদ দারেমী আল কুফী। (১৫২-২৪৩ হিজরী)।
৪. আদ দুররুল মনছুর ফী তাফসীরি বিল মাছুর- আব্দুর রহমান ইবনুল কামাল আবি বকর ইবনে মুহাম্মদ সাবিকুদ্দীন ইবনুল খাদ্বীরি আস সুয়ূতী (জালালুদ্দীন সুয়ূতী)। (৮৫৯-৯১১ হিজরী, ১৪৪৫-১৫০৫ খ্রিস্টাব্দ, কায়রাে)।
৫. সহীহ বুখারী- আবু আব্দুল্লাহ মুহাম্মদ ইবনে ইসমাঈল আল বুখারী। ১৩ শাওয়াল ১৯৪ হিজরী ১লা শাওয়াল ২৫৬ হিজরী, ২০ জুলাই ৮১০ খ্রিস্টাব্দ ১লা সেপ্টেম্বর ৮১০ খ্রিস্টাব্দ)।
৬. আল-জামে উল আহকামিল কুরআন (তাফসীরে কুরতুবী)- আবু আব্দুল্লাহ্ মুহাম্মদ ইবনু আহম ইবনু আবি বকর ইবনে ফাযাহ (শামসুদ্দীন কুরতুবী) (জন্ম: কুরতুবা, স্পেন, মৃত্যু: ৯ই শাওয়াল ৬৭১ হিজরী, মিশর)।
৭. মাফাতীহুল গাইব (তাফসীরে কাবীর)- আবু আব্দুল্লাহ মুহাম্মদ ইবনু উমর ইবনে হাসান ইবনে হুসাইন আততাইমী আর রাযী (ফখরুদ্দীন রাজী) (৫৪৪-৬০৬ হিজরী)।
৮. আল মু’জামুল কবীর- সুলাইমান ইবনে আহমদ আত্ তবারানী (২৬০-৩৬০ হিজরী/৮২১-৯১৮ খ্রীস্টাব্দ)।
৯. মাজমাউজ যাওয়ায়েদ ওয়া মানবাউল ফাওয়েদ- ইমাম হাফেজ আবুল হাসান আলী ইবনে আবি বকর ইবনে সুলাইমান আশ-শাফেয়ী (নূরুদ্দীন হাইছামী) (৭৩৫-৮০৭ হিজরী)।
১০. জওয়াহেরুল ইক্বদিয়্যান ফী ফাদ্বলিশশারফিয়্যীন- ইমাম নূরুদ্দীন আবুল হাসান আলী ইবনে আব্দুল্লাহ ইবনে আহমদ ইবনে আলী আল হাসানী আস সামহুদী। (৮৪৪-৯১১ হি.)।
১১. আয যুরবীয়্যাতুত ত্বাহিরা- আবু বিশর মুহাম্মদ ইবনে আহমদ ইবনে হাম্মাদ ইবনে সাঈদ ইবনে মুসলিম আল আনসারী আদ দুলাভী আর রাযী। (৮৩৯-৯২৩ হিজরী)।
১২. মুসনদ-এ আহমদ-আবু আব্দুল্লাহ আহমদ ইবনে মুহাম্মদ ইবনে হাম্বল আশ শাইবানী আয যুহরী। (১৬৪-২৪১ হিজরী)।
১৩. আল জামে’লিসুনানিত তিরমীজি- মুহাম্মদ ইবনে ঈসা ইবনে সাওরা ইবনে মুসা ইবনুদ দাহ্হাক্ব আস সুলামী আত্ তিরমিজী (আবু ঈসা তিরমিজী)। (২০৯-২৮৯ হিজরী)।
১৪. নাসায়ী- আহমদ ইবনে শুয়াইব আন-নাসাঈ)- আবু আব্দুর রহমান আহমদ ইবনে শুয়াইব ইবনে আলী ইবনে সুনান ইবনে বাহর ইবনে দীনার আন নাসায়ী। (৮২৯-৯১৫ খ্রিস্টাব্দ, ২১৪-৩০৩ হি.)।
১৫. আল মুসতাদরিক আলাস সহীহাইন- আবু আব্দুল্লাহ মুহাম্মদ ইবনে আব্দুল্লাহ ইবনে হামদুন/ হামদাভিয়্যঅহ ইবনে নাঈম ইবনে আল হাকেম আয যাভী আন নিসাপুরী (আল হাকেম আন্ নিসাপুরী)।
১৬. সহীহ মুসলিম- আবুল হাসান মুসলিম ইবনুল হাজ্জাজ ইবনে ওয়ারদ ইবনে ফুকাজ আল কুশাইরি আন নিসাপুরী। (২০৬-২৬১ হিজরী, ৮২২-৮৭৫ খ্রিস্টাব্দ)।
১৭. সহীহ ইবনে খুযাইমা- মুহাম্মদ ইবনে ইসহাক ইবনে খুযাইমা ইবনুল মুগীরা ইবনে সালেহ ইবনে বকর ইবনুল সুলামি আন্ নিসাপুরী আশ শাফেয়ী (ইবনে হুযাইমা)। (২২৩-৩১১ হিজরী)।
১৮. আল মুনতাখাব।
১৯. মুসান্নাফ ইবনে আবি শাইবা- আবু আব্দুল্লাহ ইবনে মুহাম্মদ ইবনে ইবরাহীম আবি শায়বা আল আবাসী। (ইন্তিকাল- ২৩৫ হিজরী)।
২০. আল মারেফাতু ওয়াত তারীখ-ইমামুল হুজ্জাত আবু ইউসূফ ইয়াকূব ইবনে সুফিয়ান ইবনে জাওয়ান আল ফারেসী আল ফুসুওভী।
২১. মুসনদ এ আবি ইয়ালা-আহমদ ইবনে আলী ইবনুল মুছান্না ইবনি ইয়াহইয়া আততামীমী আল মুসলী (আবু ইয়ালা মূসলী) (২১০-৩০৭ হিজরী)।
২২. ইমাম শামসুদ্দীন যাহাবী (৬৭৩-৭৪৮ হিজরী, ১২৭৪-১৩৪৮ হিজরী)।
২৩. শু’আবুল ঈমান- আবু বকর আহমদ ইবনে হুসাইন ইবনে আলী ইবনে মূসা | আল খুরাসানী আল বাইহাক্বী। (৩৮৪-৪৫৮ হিজরী)।
২৪. আল ই’লামুল মুতানাহিয়্যাহ ফিল আহাদীছিল ওয়াহিয়্যাহ- আবুল ফরজ আব্দুর রহমান ইবনু আবি হাসান আলী ইবনুল জাওযী (ইবনুল জাওযী) (৫১০-৫৯৭ হিজরী)।
২৫. আল মুজতাবা মিনাস সুনানি মা ছুরা আন নাবিয়্যি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ওয়াত তানভীহ ‘আলাস সাহীহি মিনহা ওয়া সাক্বীম ওয়া ইখতিলাফিন না-ক্বিলাইনি লাহা ফী আল ফাজিলা (আদদারু কুত্বনী)- আল ইমামুল হাফেজ আবুল হাসান আলী ইবনু ওমর ইবনু আহমদ ইবনু মাহদী ইবনু মাসউদ ইবনুল নুমান ইবনু দীনার ইবনু আব্দুল্লাহ আল বাগদাদী আদদারু কুত্বনী। (৩০৬-৩৮৫ হিজরী)।
২৬. ফাদায়িলুস সাহাবা (মানাক্বিবুস সাহাবা)- ইমাম আহমদ ইবনুল হাম্বল।
২৭. সহীহ ইবনে হিব্বান মুহাম্মদ ইবনে হিব্বান। (২৭০-৩৫৪হি.)।
২৮. আল মু’জামুল আওসাত- ইমাম তাবরানী।
২৯. আল কামেল ফী দু’আয়ায়ির রিজাল- আবু আহমদ আব্দুল্লাহ ইবনু আদী ইবনু আব্দুল্লাহ ইবনু মুহাম্মদ ইবনু মুবারক আল জুরজানী।
৩০. আল ফিরদৌস বিমাছুরীল খিতাব- আবু শুজা’ শীরভিয়্যাহ ইবনু শহরদার ইবনু শীরভিয়্যাহ আদদায়লামী।
৩১. আছছাওয়াব লি আবিশ শাইখ আল ইসবাহানী ফিল হাদীছ- আবু মুহাম্মদ আব্দুল্লাহ ইবনু মুহাম্মদ ইবনু জাফর ইবনু হিব্বান, আল ইসবাহানী। (আবুশ শাইখ আল ইসবাহানী)। (২৭৪-৩৬৯ হিজরী, ৮৮৭-৯৭৯ খ্রিস্টাব্দ)।
৩২. আশ্ শিফা বিতারীফি হুকুক্বীল মুস্তফা- আবুল ফদ্বল আ’য়্যাজ ইবনু মূসা ইবনু আ’য়্যাজ ইবনু ইমরান ইবনু মূসা ইবনু আয়্যাজ আস সাবতী আল ইয়াহসাবী। (কাজী আয়্যাজ) (৪৭৬-৫৪৪ হিজরী, ১০৮৩-১১৫৯ খ্রিস্টাব্দ)।
৩৩. আল মাতালিবুল আলিয়াহ বি যাওয়ায়িদিল মাযানিদিছ ছামানিয়অ আবুল ফদ্বল আহমদ ইবনু আলী ইবনু হাজর আল আসকালানী (ইবনে হাজর আসক্বালানী) (৭৭৩-৮৫২ খ্রিস্টাব্দ)।
৩৪. মুখতাসারু ইত্তিহাফুস সাফাতিল মুহরাবি যাওয়ায়িদিল মাযানী ফিল আশরা-আবুল আব্বাস আহমদ ইবনে আবি বকর ইবনে ইসমাঈল ইবনে সলীম ইবনে ক্বাইমায ইবনে উসমান আল কানানী আশ শাফিয়ী (শিহাবুদ্দীন বুসরী)। (৭৬২-৮৩৯ হিজরী)।
৩৫. নাওয়াদিরুল উসূল ফি মা’রিফাতি আহাদীছির রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)- মুহাম্মদ ইবনে আলী ইবনুল হুসাইন ইবনু বশীর আল হাকীম তিরমিজী।
৩৬. কানযুল উম্মাল ফি সুনানিল আক্বওয়াল ওয়াল আফ’আল- আলাউদ্দীন আলী ইবনু হুসামুদ্দীন ইবনু কাজী খান আল ক্বাদেরী, আশ শাজেলী আল হিন্দী আল বুরহানপুরী, আল মাদানী আল মক্কী আল হামাদী আল (মুত্তাকিউল হিন্দ)। (৮৮৫-৯৭৫ হিজরী, ১৪৮০-১৫৬৭ খ্রিস্টাব্দ)।
৩৭. মসনাদুর রুওয়ানী- আবু বকর মুহাম্মদ ইবনু হারুন আর রুওয়ানী আর রাযী- (২১০-৩০৮ হিজরী)।
৩৮. কাশফুল আসতার আন যাওয়িদুল বাযযার- নুরুদ্দীন আলী ইবনি আবি বকর হাইছামী।
৩৯. আল ম’জানুস সাগরি- আবুল কাসেম সুলাইমান ইবনু আহমদ ইবনু আইয়ুব ইবনে মাতীর আল লাখমী আশ শামী আত্ তাবরানী (ইমাম তাবরানী) (২৬০-৩৬০ হিজরী, ৮২১-৯১৮ খ্রিস্টাব্দ)।
৪০. তারীখু ইবনি নাজ্জার-মুহাম্মদ ইবনে মাহমুদ ইবনিন নাজ্জার আল বাগদাদী। (৫৭৮-৬৪৩ হিজরী)।
৪১. তারীখু বাগদাদ- আবু বকর আহমদ ইবনু আবদিল মাজদি ইবনি আলী ইবনি ছাবিত আল বাগদাদী। (৩৯২-৪৬৩ হিজরী, ১০০২-১০৭১ খ্রি.)।
৪২. আল মাক্বাসিদুল হাসানা ফী আহাদিছিল মুশতাহিরা আল আলযিনা-শামসুদ্দীন আবুল খাইর মুহাম্মদ ইবনু আব্দির রহমান ইবনি মুহাম্মদ ইবনি আবি বকর ইবনি উসমান ইবনি মুহাম্মদ আস সাখাভী (শামসুদ্দীন যাহাবী) (৮৩১-৯০২ হিজরী)।
৪৩. আয যুররিয়্যাতুত ত্বাহিরা- আবু বিশর মুহাম্মদ ইবনু আহমদ ইবনি হাম্মাদ আদ দূলাবী। (২২৪-৩১০ হিজরী, ৮৩৯-৯২৩ খ্রি.)।
৪৪. কিতাবু ফাওয়ায়িদিল ইমামি আবিল কাসিম তাম্মাম ইবনি মুহাম্মদ ইবনি জাফর আর রাযি।
৪৫. আস সুনানুল কুবরা। আহমদ ইবনুল হুসাইন ইবনু আলী ইবনু মূসা অাল খােরাসানী আল বায়হাক্বী (ইমাম বায়হাক্বী) (৩৮৪-৪৫৮ হিজরী)।
৪৬. কাশফুল খিফাই ওয়া মুযীলি আম্মা ইশতাহারা মিনাল আহাদীছি অালা অাল সিনাতিল নাস- ইসমাঈল ইবনু মুহাম্মদ ইবনি আবদিল হাদী ইবনি অাবদিল গনী আল জাররাহী (ইসমাঈল আজলূনী)।
৪৭. ইত্তিহাফুস সাফাতীল মুত্তাক্বীন বি শরহি ইহয়ায়ি উলূমিদ্দীন- মুহাম্মদ ইবনু মহাম্মদ ইবনি মুহাম্মদ ইবনি আবদির রাযযাক। (সায়্যিদ মুরতাদা অায যুবাইদি) আল ইয়ামানী আল ওরাসিতী, আল ইরাক্বী আল হানাফী। (১২০৫ হিজরী)।
৪৮. হুলিয়্যাতুল আউলিয়া ওয়া তাবাকাতুল আসফিয়া- আবু নুয়াইম আহমদ ইবনি আসহাক্ব ইবনি মূসা ইবনি মিহরান। (ঐতিহাসিক আবু নঈম ইস্পাহানী) (৩৩৮-৪৩০ হিজরী)।
৪৯. কিতাবুস সুন্নাহ ওয়া মা’য়াহু যিলালুল জান্নাত ফী তাখরীজিস সুন্নাহ-হাফেজ আহমদ ইবনু আমর ইবনিদ দাহ্হাক ইবনি আখলাদ আশ শায়বানি। (ইবনে আবি আসেম) (২০৬-২৮৭ হিজরী)।
_____________________
Comments
Post a Comment