আল্লাহর প্রিয় ওলি(বন্ধু) আউলিয়াগনের মাজার শরীফ/কবর জিয়ারত করা সুন্নাত।
আল্লাহর প্রিয় ওলি(বন্ধু) আউলিয়াগনের মাজার শরীফ/কবর জিয়ারত করা সুন্নাত।সুবহানাল্লাহ!
حَدَّثَنَا أَبُو بَكْرِ بْنُ أَبِي شَيْبَةَ، وَمُحَمَّدُ بْنُ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ نُمَيْرٍ، وَمُحَمَّدُ بْنُ الْمُثَنَّى، - وَاللَّفْظُ لأَبِي بَكْرٍ وَابْنِ نُمَيْرٍ - قَالُوا حَدَّثَنَا مُحَمَّدُ بْنُ فُضَيْلٍ، عَنْ أَبِي سِنَانٍ، - وَهُوَ ضِرَارُ بْنُ مُرَّةَ - عَنْ مُحَارِبِ بْنِ دِثَارٍ، عَنِ ابْنِ بُرَيْدَةَ، عَنْ أَبِيهِ، قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم " نَهَيْتُكُمْ عَنْ زِيَارَةِ الْقُبُورِ فَزُورُوهَا
অর্থ : হযরত বুরায়দা রদ্বিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্নিত, হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
এরশাদ করেছেন, আমি তোমাদের কবর যিয়ারত করতে নিষেধ করেছিলাম, এখন তোমরা তা করতে পারো |’
[মুসলিম শরীফ(ইফাবা),হাদীছ নং-২১৩২, ১৯৭৭,৪৯৫২,নাসায়ী শরীফ (ইফাবা), হাদীছ নং-২০৩৬,২০৩৭, আবূ দাউদ শরীফ (ইফাবা), হাদীছ নং-৩২২১,৩৬৫৬, মিশকাত শরীফ,হাদীছ নং- ১৬২৩]
অপর হাদীছ শরীফে আছে-
أَنَّ رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه وسلم صلى الله عليه وسلم قَالَ كُنْتُ نَهَيْتُكُمْ عَنْ زِيَارَةِ الْقُبُورِ فَزُورُوهَا فَإِنَّهَا تُزَهِّدُ فِي الدُّنْيَا وَتُذَكِّرُ الْآخِرَةَ
অর্থ : “নিশ্চয়ই হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এরশাদ করেছেন, আমি তোমাদের কবর যিয়ারত করতে নিষেধ করেছিলাম , এখন তোমরা তা করতে পারো | কেননা উহা দুনিয়ার আসক্তি কমায় এবং আখিরাতকে স্মরন করায় !”
[মুসলিম শরীফ, হাদীছ নং-৯৭৬,আবূ দাউদ শরীফ(ইফাবা) ,হাদীছ নং-৩৬৫৬,নাসায়ী শরীফ, হাদীছ নং-২০৩৪,ইবনে মাজাহ শরীফ (ইফাবা),হাদীছ নং-১৫৩৩,১৫৭১,১৫৭২,মিশকাত শরীফ,১/৫৫৪,হাদীছ নং- ১৭৬৯, মুসনাদে আহমদ শরীফ,হাদীছ নং-১২৩৬,৪৩০৭,৯৩৯৫, মিরকাত শরীফ, ৪/১২৫৯, হাদীছ নং-১৭৬৯]
হানাফী মাযহাবের বিখ্যাত ইমাম আল্লামা ইবনে আবেদীন শামী রহমাতুল্লাহি আলাইহি বলেন,
ندب الزيارة وان بعد محلها
অর্থ: দূরবর্তী স্থানেও (কবর) যিয়ারতের জন্য গমন করা মোস্তাহাব।”
[ফতোয়ায়ে শামী ২য় খন্ড ২৪২ পৃষ্ঠা।]
وبزيارة القبور اي لا با با ءس بهابل تندب
অর্থ- কবর যিয়ারত এতে কোন অসুবিধা নেই, বরং এটা মোস্তাহাব![ফতোয়ায়ে শামী ২/২৪২]
ইমামগন জীবনে একবার কবর যিয়ারত ওয়াজিব ফতোয়া দিয়েছেন। ইমাম ইবনে হাজম রহমাতুল্লাহি আলাইহি বলেন,-
“জীবনে একবার কবর যিয়ারত করা ওয়াজিব।”
[আইনী ৪র্থ খন্ড ৭৬ পৃষ্ঠা,ফতহুল মুলহীম ২য় খন্ড ৫১ পৃষ্ঠা,বজলুল মাজহুদ ৪ খন্ড ২১৪ পৃষ্ঠা।]
তাহলে আমরা জানতে পারলাম কবর/মাজার শরীফ জিয়ারত করা সুন্নত।সুবহানাল্লাহ!
এখন যারা এই সুন্নত মুবারক উনাকে ইহানত করবে। মাজার শরীফ/কবর জিয়ারত করাকে মাজার পূজা ,কবর পূজা বল্বে।জিয়ারতকারীকে মুশরিক বলবে তাদের কী হবে?
#প্রথমত সুন্নত মুবারক কে ইহানত করা কটাক্ষ করা কুফরী।যারা করবে তাদের কে শরীয়তের ভাষায় কাফির বলা হয়।
কেউ যদি সুন্নতকে ইহানত করে, অবজ্ঞা করে বা তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করে তাহলে সেটা কুফরী হবে।
এ প্রসঙ্গে হাদীছ শরীফে ইরশাদ হয়েছে,
لو تركتم سنة نبيكم لكفرتم.
অর্থঃ- “যদি তোমরা তোমাদের নবী হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সুন্নত মুবারককে তরক (অস্বীকার) কর তাহলে অবশ্যই তোমরা কাফির হবে।” (আবূ দাউদ শরীফ)
আরো ইরশাদ হয়েছে,
لو تركتم سنة نبيكم لضللتم.
অর্থঃ- “যদি তোমরা তোমাদের নবী হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সুন্নতকে তরক (অস্বীকার) কর তাহলে অবশ্যই তোমরা পথভ্রষ্ট হয়ে যাবে।” (সুনানে দারিমী শরীফ, মুসনাদে আহমদ শরীফ)
আকাঈদের কিতাবে উল্লেখ আছে,
اهانة السنة كفر.
অর্থঃ- “সুন্নত মুবারক উনাকে ইহানত বা অবজ্ঞা করা কুফরী।”
যদি তাই হয়, তাহলে কবর/মাজার শরীফ জিয়ারত করার সুন্নতকে পূজার সাথে তুলনা করা/ নাজায়িয বলার অর্থ হলো সুন্নত মুবারক উনাকে ইহানত করা।যা স্পষ্টত কুফরী।নাউজুবিল্লাহ!
#দ্বিতীয়ত কবর/মাজার শরীফ জিয়ারত করার সুন্নতকে পূজার সাথে তুলনা করা/ নাজায়িয বলার অর্থ হলো হালালকে হারাম বলা। আর হালালকে হারাম বলা কুফরীর অন্তর্ভুক্ত।
#তৃতীয়ত ঢালাওভাবে সকল মুসলমানদেরকে মাজার পূজারী বলে মিথ্যা অপবাদ দিয়েছে।
ﺍﻟﺤﻤﺪ ﻟﻠﻪ ﺭﺏ ﺍﻟﻌﺎﻟﻤﻴﻦ ﻭﺍﻟﺼﻼﺓ ﻭﺍﻟﺴﻼﻡ ﻋﻠﻰ ﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ ﻭﻋﻠﻰ ﺁﻟﻪ ﻭﺻﺤﺒﻪ ﺃﺟﻤﻌﻴﻦ ﺃﻣﺎ ﺑﻌﺪ
আর যে ব্যক্তি মিথ্যা আরোপ করে, সে -ই ব্যর্থ হয়। [ সূরা তাহা : ৬১]
কবর যিয়ারত বা মাজার জিয়ারত করা হচ্ছে সুন্নাত মুবারক। যারা "কবর পুজা" আখ্যা দেই তারা আসলে ধোকাবাজ মিথ্যাবাদী।
#চতুর্থত ঢালাওভাবে সকল মুসলমানদেরকে মাজার পূজারী ও মুশরিক বলে আখ্যা দিয়েছে।
একটা আমলকে "শিরক" বলে মানুষকে পথপভ্রষ্ট করছে তাদের জন্য রয়েছে কঠোর শাস্তি।অযথা কাউকে মুশরিক বা শিরক কারী বা নাস্তিক বা কাফের বলা ঝুঁকিপূর্ণ কাজ !
দেখেন সবাই তাদের জন্য কি বলা হইয়েছে
ﻗﺎﻝ ﺍﻟﻤﺴﺘﺒﺎﻥ ﻣﺎﻗﺎﻻ ﻓﻌﻠﻰ ﺍﻟﺒﺎﺩﻯ ﻣﺎﻟﻢ ﻳﻌﺘﺪ ﺍﻟﻤﻈﻠﻮﻡ
অর্থঃ যে ব্যাক্তি কাউকে কাফের বলে ডাকে অথবা আল্লাহর শত্রু বলে , অথচ ( যাকে কাফের ও আল্লাহ তাআলার শত্রু বলা হচ্ছে ) সে তা নয়, তখন তার কথা নিজের দিকে ফিরবে।(বুখারী ও মুসলিম, মিশকাতঃ৪৬০৬)
যে ব্যক্তি তার অপর কোন ভাইকে কাফের বলে , তাহলে তা উভয়ের যেকোন একজনের দিকে ফিরবে। যদি সে যেমন বলেছে বাস্তবে তা ’ই হয়, তাহলেতো ঠিক আছে , নতুবা উক্ত বিষয়টি যে বলেছে তার দিকেই ফিরে আসবে।
(সহীহ মুসলিম, হাদীস নং- ২২৫ , সহীহ ইবনে হিব্বান, হাদীস নং-২৫০ , মুসনাদে আহমাদ , হাদীস নং-৫০৩৫ , মুসনাদে আবী আওয়ানা , হাদীস নং- ৫৪, শুয়াবুল ঈমান, হাদীস নং- ৬২৩৭)
এই হাদিস বোঝা যায় যারা কাফির না তাদেরকে কাফির বললে যেমন তার উপর গুনাহ ফিরিয়ে যায় মানে সে নিজে কাফির হয়ে যায়, তেমন শিরককারী বা মুশরিক সেও কাফিরের দলভুক্ত বোঝায় , তাই কাউকে যদি "শিরককারী" "কবর পুজারী " ইত্যাদি বলে কিন্তু সে তা নয় তাহলে যে বলছে তার উপর সেটা ফিরে যাবে , তার মানে সে নিজেই "শিরককারী" "মুশরিক" হয়ে যাবে। আর শিরকের শাস্তিঃ
১ . “ নিশ্চয় আল্লাহ তাঁর সঙ্গে কেউ অংশীস্থাপন করলে তাকে ক্ষমা করবেন না এবং এর চেয়ে ছোট পাপে যাকে ইচ্ছা তিনি ক্ষমা করবেন। আর যে শিরক করল সে বড় ধরনের অপবাদ ধারণ করল। ” (সুরা নিসা : আয়াত ৪৮)
২ . “ আর যে আল্লাহর সঙ্গে শিরক করল সে বহু দূরের ভ্রষ্টতায় পতিত হলো।” (সুরা নিসা : আয়াত ১১৬ )
৩ . “ নিশ্চয় যে ব্যক্তি আল্লাহর অংশীস্থাপন করবে, আল্লাহ তার জন্য জান্নাত হারাম করে দিবেন এবং তার বাসস্থান হবে জাহান্নামে। আর এরূপ অত্যাচারীদের জন্যে কোন সাহায্যকারী থাকবে না।” (সুরা মায়েদা : আয়াত ৭২)
৪ . “ আর যে আল্লাহর সাথে শিরক করল; সে যেন আকাশ থেকে ছিটকে পড়ল, অত : পর মৃতভোজী পাখী তাকে ছোঁ মেরে নিয়ে গেল অথবাবাতাস তাকে উড়িয়ে নিয়ে কোন দূরবর্তী স্থানে নিক্ষেপ করল। ” (সুরা হজ : আয়াত ৩১)
তাই সাবধান হয়ে যান না জেনে বুঝে কাউকে "শিরক" করছে "কবর পুজা" করছে ইত্যাদি বলা থেকে বিরত থাকেন তা না হলে আপনি আল্লাহর শাস্তির অপেক্ষা করেন আপনাকে এই গুনাহর জন্য ও মিথ্যা অপবাদ দেয়ার জন্য কঠোর শাস্তি দেয়া হবেঃ
ﻭَﻳَﺪْﺭَﺃُ ﻋَﻨْﻬَﺎ ﺍﻟْﻌَﺬَﺍﺏَ ﺃَﻥْ ﺗَﺸْﻬَﺪَ ﺃَﺭْﺑَﻊَ ﺷَﻬَﺎﺩَﺍﺕٍ ﺑِﺎﻟﻠَّﻪِ ﺇِﻧَّﻪُ ﻟَﻤِﻦَ ﺍﻟْﻜَﺎﺫِﺑِﻴﻦَ
“এবং পঞ্চমবার বলবে যে, যদি সে মিথ্যাবাদী হয় তবে তার উপর নেমে আসবে আল্লাহর অভিশাপ। ” (সুরা নুর আয়াত ৭)
সুরা নূরের ১২ , ১৩ ও ১৪ নং আয়াতে বলা হয়েছে -
ﻟَﻮْﻟَﺎ ﺇِﺫْ ﺳَﻤِﻌْﺘُﻤُﻮﻩُ ﻇَﻦَّ ﺍﻟْﻤُﺆْﻣِﻨُﻮﻥَ ﻭَﺍﻟْﻤُﺆْﻣِﻨَﺎﺕُ ﺑِﺄَﻧْﻔُﺴِﻬِﻢْ ﺧَﻴْﺮًﺍ ﻭَﻗَﺎﻟُﻮﺍ ﻫَﺬَﺍ ﺇِﻓْﻚٌ ﻣُﺒِﻴﻦٌ ( 12 ) ﻟَﻮْﻟَﺎ ﺟَﺎﺀُﻭﺍ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﺑِﺄَﺭْﺑَﻌَﺔِ ﺷُﻬَﺪَﺍﺀَ ﻓَﺈِﺫْ ﻟَﻢْ ﻳَﺄْﺗُﻮﺍ ﺑِﺎﻟﺸُّﻬَﺪَﺍﺀِ ﻓَﺄُﻭﻟَﺌِﻚَ ﻋِﻨْﺪَ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﻫُﻢُ ﺍﻟْﻜَﺎﺫِﺑُﻮﻥَ ( 13 ) ﻭَﻟَﻮْﻟَﺎ ﻓَﻀْﻞُ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﻋَﻠَﻴْﻜُﻢْ ﻭَﺭَﺣْﻤَﺘُﻪُ ﻓِﻲ ﺍﻟﺪُّﻧْﻴَﺎ ﻭَﺍﻟْﺂَﺧِﺮَﺓِ ﻟَﻤَﺴَّﻜُﻢْ ﻓِﻲ ﻣَﺎ ﺃَﻓَﻀْﺘُﻢْ ﻓِﻴﻪِ ﻋَﺬَﺍﺏٌ ﻋَﻈِﻴﻢٌ ( 14 )
“তোমরা যখন একথা (অর্থাৎ অপবাদ ) শুনলে, তখন ঈমানদার পুরুষ ও নারীগণ কেন নিজেদের লোক সম্পর্কে উত্তম ধারণা করনি এবং বলেনি যে,এটা তো নির্জলা মিথ্যা অপবাদ ?তারা কেন এ ব্যাপারে চার জন সাক্ষী উপস্থিত করেনি ;অতঃপর যখন তারা সাক্ষী উপস্থিত করেনি ,তখন তারাই আল্লাহর কাছে মিথ্যাবাদী। যদি ইহকাল ও পরকালে তোমাদের প্রতি আল্লাহর অনুগ্রহ ও দয়া না থাকত ,তবে তোমরা যা চর্চা করছিলে (অর্থাৎ যে মিথ্যা অপবাদ দিয়েছিলে), সেজন্য তোমাদেরকে গুরুতর আযাব দেয়া হতো।” (সূরা নূর/১২-১৪)
তাহলে দেখা যাচ্ছে যারা ঢালাওভাবে সকল মুসলমানদেরকে মাজার পূজারী বলে তারা নিজেরা সুন্নত ইহানত কারী হিসেবে নিজেরাই কাফের ও মুশরিক ফতোয়া দেয়ার কারণে মুশরিক হয়ে যাবে। নাউজুবিল্লাহ!
এখন সাধারন মানুষ কিছু নামধারী ইলিমশূন্য গোমরাহ ভণ্ড জাহিল বেশরা মালানার কাছে এসব ভূল ভাবে জেনে ঢালাওভাবে সকল মুসলমানদেরকে মাজার পূজারী বলে থাকে।তাই বলে সাধারণ মানুষ হিসেবে তুমি বেঁচে যাবা না ।কেন তুমি যা শুনলে বলে বেড়ালে? যাচাই বাছাই করলে না?
আসুন আজ থেকে ফতোয়াবাজি করার আগে সাবধান হয়ে যাই।আল্লাহ পাক আমাদেরকে হিফাজত করুন। আমীন।
Comments
Post a Comment