বয়স্ক ব্যক্তিকে দুধপান করানো সম্পর্কিত একটি হাদীসের ব্যাখ্যা

বয়স্ক ব্যক্তিকে দুধপান করানো সম্পর্কিত একটি হাদীসের ব্যাখ্যা
বয়স্ক ব্যক্তিকে দুধপান করানো সম্পর্কিত একটি হাদীসের ব্যাখ্যা
প্রশ্ন—

_________
 عَنْ عَائِشَةَ، قَالَتْ: جَاءَتْ سَهْلَةُ بِنْتُ سُهَيْلٍ إِلَى النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، فَقَالَتْ: يَا رَسُولَ اللهِ، إِنِّي أَرَى فِي وَجْهِ أَبِي حُذَيْفَةَ مِنْ دُخُولِ سَالِمٍ وَهُوَ حَلِيفُهُ، فَقَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «أَرْضِعِيهِ»، قَالَتْ: وَكَيْفَ أُرْضِعُهُ؟ وَهُوَ رَجُلٌ كَبِيرٌ، فَتَبَسَّمَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَقَالَ: «قَدْ عَلِمْتُ أَنَّهُ رَجُلٌ كَبِيرٌ»، زَادَ عَمْرٌو فِي حَدِيثِهِ: وَكَانَ قَدْ شَهِدَ بَدْرًا، وَفِي رِوَايَةِ ابْنِ أَبِي عُمَرَ: فَضَحِكَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ

 হযরত আয়শা রাঃ থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, সুহাইলের কন্যা সাহলা নবীজী সাঃ এর নিকট হাজির হয়ে বললেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমার সাথে সালিমের দেখা সাক্ষাৎ করার কারণে আমি আবূ হুযায়ফার মুখমন্ডলে অসন্তুষ্টির আলামত দেখতে পাচ্ছি, অথচ সালিম হল তার হালীফ তথা পোষ্য পুত্র। নাবীজী সাঃ বললেন, তুমি তাকে দুধপান করিয়ে দাও। তিনি বলেন, আমি কেমন করে তাকে দুধপান করাব? অথচ সে একজন বয়স্ক পুরুষ। এতে রাসূল সাঃ মুচকি হাসলেন এবং বললেন, আমি জানি সে একজন বয়স্ক পুরুষ।

 আমর তার হাদীসে অতিরিক্ত বলেছেন, সালিম বদর যুদ্ধে অংশ গ্রহণ করেছিল। আর ইবনে উমর রাঃ এর বর্ণনায় এসেছে, রাসূল সাঃ তখন হেসে দিলেন। [সহীহ মুসলিম, হাদীস নং-১৪৫৩, ইফা-৩৪৬৯]

 এ হাদীসের ব্যাখ্যা কী?

 উত্তর
__________
 দুগ্ধপান পদ্ধতি কেমন ছিল? তা তাবকাতে ইবনে সাদে বর্ণিত রেওয়ায়েতের দ্বারা পরিস্কার।

 أَخْبَرَنَا مُحَمَّدُ بْنُ عُمَرَ. حَدَّثَنَا مُحَمَّدُ بْنُ عَبْدِ اللَّهِ ابْنِ أَخِي الزُّهْرِيِّ عَنْ أَبِيهِ قَالَ:

 كَانَ يَحْلُبُ فِي مِسْعَطٍ أَوْ إِنَاءٍ قَدْرَ رَضْعَةٍ فَيَشْرَبُهُ سَالِمٌ كُلَّ يَوْمٍ. خَمْسَةَ أَيَّامٍ. وَكَانَ بَعْدُ يَدْخُلُ عَلَيْهَا وَهِيَ حَاسِرٌ. رُخْصَةً مِنْ رَسُولِ اللَّهِ لِسَهْلَةَ بنت سهيل

 সাহলা এক পাত্রে দুগ্ধ দোহন করে রাখলেন। সেখান থেকে সালেম পাঁচদিন এসে দুধ পান করে যায়। এরপর সালেম সাহলা এর সামনে পর্দা ছাড়াই সরাসরি প্রবেশ করতো। সাহলার বিন সুহাইয়েলের সহজতার জন্য রাসূল সাঃ এ সুযোগ প্রদান করেন। [আততাবক্কাতুল কুবরা-৮/২১২, দারুল কুতুব বৈরুত, রাবী নং-৪২১৯]

 রাসূল সাঃ হেসে দিলেন কেন?

 কারণ, রাসূল সাঃ বুঝতে পেরেছিলেন যে, রাসূল সাঃ এর দুধ পান করানোর কথা শুনে সাহলা ভেবেছিল যে, রাসূল সাঃ বুঝি সালেমকে সরাসরি স্বীয় স্তন থেকে দুধ পান করাতে বলছিলেন। সাহলা এর এমন হাস্যকর সমঝ দেখে রাসূল সাঃ হেসে দিলেন।

 কারণ রাসূল সাঃ এর উদ্দেশ্য সরসরি দুধ পান করানো ছিল না, বরং কোন মাধ্যমে দুধ পান করানো ছিল। একথাটি সাহলা বুঝতে না পারার করণে রাসূল সাঃ হেসে দিলেন। [তাকমিলা ফাতহুল মুলহিম-১/৭১]

 বয়স্ক ব্যক্তি হবার পরও সাহলা রাঃ এর জন্য এ বিশেষ পদ্ধতিতে দুধ পান করানোর বিধানটি উক্ত সাহাবীর সাথেই খাস ছিল। আর কারো ক্ষেত্রে তা প্রযোজ্য করা হয়নি। তাই উক্ত হাদীসকে দলীল হিসেবে উপস্থাপন করে বয়স্ক ব্যক্তিকে দুধ পান করালে দুগ্ধপান সম্পর্কিত হুরমতের হুকুম আরোপিত হবে না।

 এ বিধান ছিল ইসলামের শুরু যুগের। পরবর্তীতে তা রহিত হয়ে গেছে। এখন শুধুমাত্র দুই বা আড়াই বছরের মাঝে দুধ পান করলেই হুরমতে রিজাআত এর বিধান আরোপিত হবে। এর চেয়ে বেশি বয়স্ক ব্যক্তি তা পান করলে এ হুকুম আরোপিত হবে না।[বিস্তারিত জানতে হলে দেখুন-তাকমিলা ফাতহুল মুলহিম, আল্লামা তাকী উসমানী দা.বা.-১/৭১-৭৩, ফাতহুল বারী, ইবনে হাজার আসকালানী রহঃ, দারুল গাদ আলজাদীদ, কাহেরা-৯/২২০-২২১]

Comments

Popular posts from this blog

বালাকোট আন্দোলনের হাকীকত

সৈয়দ আহমদ বেরলভীর জম্ম ও পরিচয়

মওদুদীর ভ্রান্ত আক্বিদা ও ইসলামী আক্বিদা