গোমরাহ জাকির নায়েক

গোমরাহ জাকির নায়েক

লেখকঃ মুফতীয়ে আ'যামে বাঙ্গাল শায়েখ গোলাম ছামদানী রেজবী

ইসলামপুর কলেজ রোড, মুর্শিদাবাদ পশ্চিমবঙ্গ, ভারত।

টেক্সট রেডীঃ মুহাম্মদ আব্দুল খালেক

প্রথমে আমার কলমের কথা

ইসলামের উপরে মাঝে মধ্যে গোমরাহী ঝড় আসিয়াই থাকে, ইহা কোনো নতুন কথা নয়। এই ঝড়ের মুকাবিলা করিয়া থাকেন উলামায় কিরামগন। হঠাৎ গোমরাহ জাকির নায়েক গোমরাহী ঝড় হইয়া মুসলিম সমাজের সামনে চলিয়া আসিয়াছে। তাহার দ্বারায় সব চাইতে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হইয়াছে শিক্ষিত সমাজ। আবার ইহারা হইল হানাফী ঘরের সন্তান। যাহারা এতদিন পর্যন্ত বিশ্ব মুসলিমদের সব চাইতে বড় সম্প্রদায় হানাফী মাযহাব অবলম্বনে ইসলামের উপরে জীবন যাপন করিয়া আসিতে ছিল, তাহারা হঠাৎ টেলিভিশনের পর্দায় জাকির নায়েককে দেখিয়া তাহার খৃষ্টানী পোশাক ও ভাবভঙ্গিমা নিজেদের সহিত যথেষ্ট মিল উপলব্ধি করিয়া তাহার দিকে আকৃষ্ট হইয়া পড়িয়াছে। ধীরে ধীরে তাহারা নিজেদের মাযহাবী মতাদর্শকে ত্যাগ করিতে আরম্ভ করিয়া দিয়াছে। ফলে হানাফী সমাজে বহু রকমের অশান্তি সৃষ্টি হইয়া গিয়াছে। পশ্চিম বাংলায় সুন্নী উলামায় কিরাম জাকির নায়েকের গোমরাহী সম্পর্কে ব্যাপক প্রচার চালাইয়া চলিয়াছেন। আমার পত্র পত্রিকায় ও বই পুস্তকে জাকির নায়েকের বিভিন্ন গোমরাহী দিক আলোচনা করিয়া দেওয়া হইয়াছে। যেখানে যেখানে আমার পত্রিকা ও পুস্তক পৌঁছিয়া গিয়াছে, সেই সমস্ত জায়গা থেকে প্রায় ফোন আসিতে থাকে যে, আমরা চরম ভুলের মধ্যে পড়িয়া গিয়াছিলাম। আল্লাহ তায়ালা হিফাজত করিয়াছেন। অনেক ভাই আমাকে অনুরোধ করিয়াছেন যে, আপনি জাকির নায়েক সম্পর্কে একটি স্বতন্ত্র পুস্তক প্রণয়ণ করিয়া দিলে মানুষ খুবই উপকৃত হইবে। আমার সেই সমস্ত ভাইদের প্রেরণায় এই পুস্তিকাটি প্রণয়ন করিয়া দিলাম। অবশ্য এই পুস্তিকার মধ্যে আমার নিজস্বলেখা কম রহিয়াছে। ঢাকা থেকে প্রকাশিত—'ডাঃ জাকির নায়েকের হাকীকত' থেকে বেশির ভাগ লেখা অবিকল নকল করিয়া দিয়াছি। এক কথায় 'ডাঃ জাকির নায়েকের পরিচয়' এখন আরম্ভ করিয়া শেষ পর্যন্ত বাংলাদেশী বই থেকে নকল করিয়া দিয়াছি। এখন আমার সুন্নী পাঠক ভাইদের নিকটে আবেদন যে, নিজেদের মাযহাব ও মিল্লাতকে বাঁচাইবার জন্য আপনাদের হাতের পুস্তিকাটি ব্যাপক থেকে ব্যাপক প্রচার করিবার দায়িত্ব নিয়া নিবেন। একার পক্ষে সম্ভব না হইলে কয়েকজন মিলিয়া কিংবা গ্রামবাসীর সঙ্গে আলোচনা করিয়া সবাই সামর্থ্যনুযায়ী সাহায্য করতঃ বইখানা ছাপাইয়া বিনা পয়সায় বিতরণ করিয়া দিন। ছাপাইয়া দিতে না পারিলে ২/১ শত ক্রয় করিয়া নিজেদের এলাকায় বিতরণ করিয়া দিন। বর্তমানে ইহা হইল একটি বড় পূণ্যের কাজ। আরো বলিতেছি, আমার লেখা সমস্ত বই পুস্তক সংগ্রহ করিবার অবশ্যই চেষ্টা করিবেন। আল্লাহ তায়ালা আমাদের সবাইকে সামর্থ্য দান করিয়া থাকেন।


গোলাম ছামদানী রেজবী


জাকির নায়েক

লোকটির নাম শুনিলে প্রথমে 'লা হাউলা অলা কুওয়াতা ইল্লা বিল্লাহ' পাঠ করা উচিত। কারণ, লোকটি ইহুদী চরিত্রের মানুষ। ইসলামের প্রতি ইহুদীদের যে মনোভাব, হানাফী মাযহাবের প্রতি লোকটির সেই মনোভাব। লোকটি না কোন মাযহাব মানিয়া থাকে, না কোন তরীকা। বরং এই জিনিসগুলির প্রতি তাহার যারপরনায় ঘৃণা। হানাফী মাযহাবের মানুষদের জন্য তাহার লেখা বই পুস্তক পাঠ করা হারাম। কারণ, লোকটি নিঃসন্দেহে একজন গোমরাহ ও গোমরাহকারী। হানাফী মাযহাবকে খতম করাই হইল তাহার পূর্ণ পরিকল্পনা। অবশ্য এই পরিকল্পনার পিছনে রহিয়াছে সৌদি সরকার। আবার এই সৌদি সরকারের পিছনে রহিয়াছে ইবলীস শয়তান। এই শয়তানের শয়তানী হইল বিশ্ব মুসলিমদের মনের মাঝ থেকে মুস্তফায়ী মুহাব্বাতকে খতম করিয়া দেওয়া, বিশ্ব মুসলিমদিগকে দ্বীনের জাতীয় সড়ক—হানাফী, শাফয়ী, হাম্বালী ও মালেকী মাযহাবগুলি থেকে সরাইয়া দেওয়া ও ইল্মে মারেফাত ও তাসাউফের পথগুলি থেকে বিমুখ করিয়া দেওয়া। শয়তানের এই শয়তানী কাজের বড় হাতিয়ার হইল সৌদি সরকার। আর সৌদি সরকারের হিন্দুস্তানী হাত হইল জাকির নায়েক— লা হাউলা অলা কুওয়াতা ইল্লা বিল্লাহ! গোমরাহীর এই নায়ক লোকটির পিছনে রহিয়াছে সৌদির কোটি কোটি রিয়াল। যে রিয়ালের জোরে ব্যক্তিগত চ্যানেলে বসিয়া বিভ্রান্ত করিতেছে শত শত মানুষকে। তবে যে সমস্ত মানুষ তাহার কথায় কান দিয়া থাকে তাহারা কিন্তু মানুষের মতো মানুষ নয়। যাহারা দ্বীন থেকে দূরে পড়িয়া গিয়াছে, কেবল নামে মাত্র মুসলমান, চব্বিশ ঘন্টা গান বাজনা রং তামাশার মধ্যে লিপ্ত থাকে, সব সময়ে টেলিভিশনের পর্দায় নজর রাখিয়া থাকে; সেই সমস্ত মানুষ গোমরাহীর নায়ক —জাকির নায়েকের ভক্ত হইয়া গিয়াছে। রা হাউলা অলা কুওয়াতা ইল্লা বিল্লাহ! আল্লাহর দরবারে হাজার হাজার শুকরিয়া যে, আজ পর্যন্ত কোন খাঁটি সুন্নী আলেম, কোন খাঁটি সুন্নী মানুষ তাহার ভক্ত হয় নাই। আবার অনেক মানুষ, যাহারা না জানিয়া গোমরাহ লোকটির প্রতি ভাল ধারণা নিয়া বসিয়াছিলো। তাহারা সুন্নী আলেমদিগের জবান থেকে যখন তাহার গোমরাহী সম্পর্কে জ্ঞাত হইয়াছে তখন তাহারা তওবা তওবা করিয়াছে। যাইহোক, এখন আমার শেষ কথা হইল যে, লোকটিকে অবশ্যই গোমরাহ বলিয়া জানিবেন।

কাহারো পিছনে চলিতে হইলে, কাহারো কথা শুনিতে হইলে ও কাহারো সম্পর্কে কিছু মন্তব্য করিতে হইলে তাহার পরিচয় জানিবার প্রয়োজন। এখন প্রশ্ন হইল যে, মে জাকির নায়েক সম্পর্কে এতো হৈ হৈ রৈ রৈ হইতেছে সেই লোকটি কে? কাহারা তাহার সম্পর্কে হৈ হৈ রৈ রৈ করিতেছে?

আমার সুন্নী পাঠকগণ! সর্ব-প্রথম আপনারা জাকির নায়েক সম্পর্কে জানিবার চেষ্টা করুন যে, লোকটির পরিচয় কি এবং তাহার পিছনে কাহারা দৌড়াইতেছে! নিশ্চয় তাহার পিছনে আলেম সমাজ নাই। সুন্নী উলামায় কিরাম তো দূরের কথা,দেওবন্দী আলেমরাও তাহার পিছনে নাই। ইহার কারণ হইল যে, তিনি শরীয়তের কোন আলেম নয়। আলেম সমাজের সহিত তাহার কোন সম্পর্ক নাই।প্রকাশ্য কোন সভা সমিতিতে তাহার কোন বক্তব্য হইয়া থাকে না। মানুষ তাহাকে টেলিভিশনের পর্দায় দেখিয়া থাকে মাত্র। এইজন্য জাকির নায়েক সর্ব প্রথম কোন আলেম উলামাদের নজরে পড়ে নাই। তাহার সর্বপ্রথম খোঁজ পাইয়াছে ডাক্তার, মাষ্টার ও সাধারণ টি.ভি. দেখা লোকেরা। যে সমস্ত মানুষ নিয়মিত চ্যানেলে চোখ রাখিয়া থাকে, আর অধিকাংশ সেই সমস্ত মানুষ, যাহারা ইসলাম সম্পর্কে উদাসীন। কেবল গান বাজনা ও রঙ তামাশাই হইল যাহাদের জীবনের প্রধান কাজ, সেই সমস্ত লোকেরা কি দেখিতে কি দেখিয়া ফেলিয়াছে! যখন টেলিভিশনের পর্দায় চলিয়া আসিয়াছে, তাহা হইলে জাকির নায়েক নিশ্চয় একজন বড় মাপের মানুষ। লোকটির মাথায় কতো সুন্দর দেওবন্দী নেট। আবার মুখে দাড়ি। কোরয়ান, হাদীস সবইতো মুখস্থ মনে হইতেছে। এইতো সবচাইতে বড় আলেম। এইগুলি হইল সাধারণ মানুষের ধারণা। আর ডাক্তার ও মাষ্টার সাহেববের কাছে তো ইসলামী পোষাকের কোন গুরুত্ব নাই। তাহারা নিজেরা যেমন তেমনটাই দেখিতে পাইতেছে জাকির নায়েক সাহেবকে—সুট,কোট ও টাই মার্কা। আর সেই সঙ্গে মুখে দাড়ি ও মাথায় চাপানো রহিয়াছে একটি জাল টুপী। তবে জাকির নায়েক বড় আলেম হইবে না কেন! ইনি তো কোরয়ান, হাদীস কম বলিতেছে না। ইহাই হইল সমাজের অবস্থা।

প্রিয় সুন্নী পাঠক! আমার এই কলম একমাত্র সুন্নীদের জন্য। যেহেতু আপনি একজন সুন্নী মুসলমান। আপনি মাযহাব মানিয়া থাকেন, মাযার মানিয়া থাকেন, তরীকা মানিয়া থাকেন; তবে আপনি কেন গোমরাহ জাকির নায়েকের পিছনে পড়িয়া গোমরাহ হইতেছেন! জাকির নায়েক তো আপনার মাযহাবের মানুষ নয়ই, বরং কোন মাযহাবের মানুষ নয়। তিনি আমাদের দেশের তথা কথিত গোমরাহ আহলে হাদীস সম্প্রদায়ের মানুষ। যে আহলে হাদীস সম্প্রদায়ের সহিত আপনাদের দ্বীন ইসলামের পার্থক্য রহিয়াছে সেই সম্প্রদায়ের মানুষের পিছনে পড়িয়া যাওয়া নিশ্চয় গোমরাহী হইবে। জাকির নায়েক আহলে হাদীস সম্প্রদায়ের মানুষ। আপনি ভাল করিয়া লক্ষ্য করিয়া দেখুন— আমাদের দেশের আহলে হাদীস সম্প্রদায়ের লোকেরা জাকির নায়েককে নিয়া বেশি মাতামাতি করিতেছে। ইহার পিছনে একমাত্র কারণ হইল নায়েক সাহেব তাহাদেরই লোক। তাহার দোহাই দিয়া হানাফীদের মধ্যে ভাঙ্গন ধরানো সহজ হইতেছে। আপনি কখনোই মনে করিবেন না যে, আমি জোর করিয়া জাকির নায়েককে আহলে হাদীস বলিতেছি। বরং তিনি নিজেকে আহলে হাদীস বলিয়া পরিচয় দিয়াছেন।

"কিছু দিন পূর্বে এক টিভি চ্যানেলে কথা বলিবার সময়ে ডক্টর শাহিদ এর এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলিয়াছেন, আহলে হাদীস ফিরকার সহিত আমার সম্পর্ক এবং আমি হইলাম ব্যক্তিগতভাবে আহলে হাদীস।" (জিউ টি.ভি. ইন্টারর্ভিউ - ২০০৮, সংগৃহিত দি ইণ্ডিয়ান মুসলিম টাইমস প্রথম পৃষ্ঠা, ২০ নভেম্বর, ২০১১) প্রিয় পাঠক! বুঝিতে পারিতেছেন - কেন আহলে হাদীসের লোকেরা নায়েককে নিয়া এতই হৈ চৈ!

 আবার দেখুন; নায়েক সাহেব কি বলিয়াছে - "কোরয়ান ও হাদিসে কোন জায়গায় এই বর্ণনা নাই যে, মহিলারা মসজিদে যাইতে পারিবেনা।"(খুতবাতে জাকির নায়েক ২৭৭ পৃষ্ঠা, সংগৃহিত মুসলিম টাইমস)

প্রিয় পাঠক! মসজিদে মহিলাদের লইয়া যাইবার পক্ষে হানাফীরা, না আহলে হাদীস রা? জাকির নায়েক সাহেবের ভাষণ কোনদিকে মানুষের মুখ ঘুরাইয়া দিতে চাহিতেছে তাহা চিন্তা করিয়া দেখুন! আপনারা আহলে হাদীসদের সহিত মাতামাতি করিতেছেন কেন!

জাকির নায়েক আরো বলিয়াছে - "ইসলামের মধ্যে ফিরকাবাজীর অবকাশ নাই।(খুতবাতে জাকির নায়েক ৩১৬ পৃষ্ঠা, সংগৃহীত মুসলিম টাইমস)

আহরে! গোমরাহ জাকির নায়েক! যদি ইসলামের মধ্যে ফিরকাবাজি নাই, তাহা হইলে কোন্ লজ্জায় নিজেকে আহলে হাদীস বলিয়া ইসলামের মধ্যে নতুন একটি ফিরকা বাড়াইয়া দেওয়া হইল। কেবল হানাফীদের দিকে ফিরকাবাজির তীর!

প্রিয় সুন্নী পাঠক! বুঝিতে পারিতেছেন তো - নায়েক সাহেব কাহাদের লোক! আর কাহারা নায়েককে নিয়া নাচানাচি করিতেছে।

প্রিয় সুন্নী পাঠক! আপনার আরো একটু সময় দিতে হইবে। দেখুন! জাকির নায়েক কি বলিয়াছে - "তিন তালাক তিন নয়, বরং এক।" (তালাক শিরোনামে সি.ডি.তে রহিয়াছে, সংগৃহীত মুসলিম টাইমস)

প্রিয় সুন্নী পাঠক! ইহার পরেও কি আপনার সন্দেহ থাকিতে পারে? আপনি অবশ্যই বিশ্বাস করিবেন যে, জাকির নায়েক হইল গোমরাহ আহলে হাদীস সম্প্রদায়ের একজন দালাল। হানাফী মাযহাবের মহাশত্রু। তবেই তো তৎপর হইয়া উঠিয়াছে এখানকার আহলে হাদীস সম্প্রদায়ের লোকেরা। আমাদের দেশে তিন তালাককে এক তালাক বলিয়া হজম করিয়া থাকে কাহারা? নিশ্চয় আপনি বলিবেন, আহলে হাদীসের লোকেরা। এইবার জাকির নায়েককে ভাল করিয়া চিনিয়া নিন। প্রকাশ থাকে যে, তিন তালাক, তিন তালাকই। ইহাতে সারা জগত একমত, ইহাতে চার মাযহাবের ইমামগণ একমত, বিশেষ করিয়া ইমাম আবু হানীফার নিকটে তিন তালাকই তিন তালাক। তবে আপনি একজন হানাফী হইয়া একজন হারামীর পিছনে পড়িয়া গিয়াছেন কেন? আপনি তো জাকির নায়েকের নিজস্ব চ্যানেলে বসিয়া তাহার গোমরাহী চেহারা দেখিয়াছেন মাত্র। এখন তাহার বেঈমানী চেহারাগুলি ভাল করিয়া দেখুন! নায়েক সাহেব হইল এযীদের লোক, আহলে বায়েতের দুশমন। কারণ, নায়েক সাহেব কারবালার লড়াইকে রাজনৈতিক লড়াই ছিল বলিয়াছে এবং এযীদের নামের পরে 'রাদীয়াল্লাহু আনহু' লিখিয়াছে। (সি.ডি., সংগৃহীত মুসলিম টাইমস)

সমস্ত জগত এযীদের অপবিত্র নাম শুনিলে ঘৃণা করিয়া থাকে। আজো কোন মুসলমান এযীদের অপরাধকে ক্ষমা করিতে পারে নাই। এযীদ যে একজন গোমরাহ, মদ্যপ, অত্যাচারী ইহাতে কারো সন্দেহ নাই। বিশ্ব মুসলিমদের একাংশ এযীদকে কাফের পর্যন্ত বলিয়া থাকে। কিন্তু নায়েক সাহেব সেই এযীদের নামে 'রাদীয়াল্লাহু আনহু' বলিয়া নিজে গোমরাহ হইয়াছে, মানুষকে গোমরাহ করিবার চেষ্টা করিয়াছে। সেই সঙ্গে তাহার কথায় হজরত ইমাম হোসাইন রাদীআল্লাহু আনহু কলঙ্কিত হইয়াছে এবং তিনি উপহাসের পাত্র হইয়াছেন। কারণ, দুনিয়া আজো কারবালার ঘটনায় চোখের পানি ফেলিয়া থাকে। কিন্তু আজ গোমরাহ জাকির নায়েকের কথানুযায়ী এযীদই ছিলো হক্ব পথের পথিক এবং হজরত ইমাম হোসাইন রাদী আল্লাহু আনহু ছিলেন একজন দুনিয়াদার রাজনৈতিক মানুষ। লা হাউলা অলা কুওয়াতা ইল্লা বিল্লাহ! শত শতবার নাউজু বিল্লাহ।

জাকির নায়েকের ধারণায় আউলিয়ায় কিরামদিগের রওযা পাকে উপস্থিতি দেওয়া, আল্লাহর দরবারে গায়রুল্লাহর অসীলা দেওয়া ও মীলাদ শরীফের অনুষ্ঠান কায়েম করা শির্ক। (সংগৃহিত দি ইণ্ডিয়ান মুসলিম টাইমস)

সুন্নী পাঠক! ভাল করিয়া মিলাইয়া দেখুন! গোমরাহীর নায়ক যে জিনিষগুলিকে শির্ক বলিয়াছে সে জিনিসগুলিকে ওহাবী সম্প্রদায় শির্ক বলিয়া থাকে কিনা? এইবার আপনি বলুন! জাকির নায়েকের ধারণায় আপনারা মুশরিক হইতেছেন কিনা? কারণ, আপনি একজন সুন্নী হইবার কারণে নিশ্চয় আউলিয়ায় কিরামদিগের মাযারগুলিতে হাজিরী দিয়া থাকেন অথবা হাজিরী দেওয়াকে জায়েজ মনে করিয়া থাকেন। অনুরূপ আউলিয়া ও আম্বিয়ায় কিরামদিগের অসীলা দিয়া দরবারে ইলাহীতে দুয়া করিয়া থাকেন। বিশেষ করিয়া হুজুর পাক﴾ﷺ﴿এর অসীলা দিয়া দরবারে ইলাহীতে দুয়া করিয়া থাকেন। বরং হুজুর পাকের﴾ﷺ﴿অসীলা ছাড়া আল্লাহর দরবারে কাহারো কিছু কবূল হইয়া থাকে না, ইহা হইল সুন্নী মুসলমানদের আকীদাহ। অনুরূপ মীলাদ শরীফ হইল ইসলামী শিক্ষা দীক্ষার একটি বড় মাধ্যম। মোটকথা, সুন্নী মুসলমানদের ইসলামী আমলগুলি ওহাবী সম্প্রদায়ের ধারণায় শির্ক ও বিদয়াত। বর্তমানে ওহাবীদের বড় প্রচার মাধ্যম হইল জাকির নায়েক। সুতরাং সুন্নীগণ! আর একবার চিন্তা করিয়া দেখুন, আপনারা কাহারা এবং জাকির নায়েক কে? আপনি তো একজন সুন্নী এবং জাকির নায়েক একজন ওহাবী! সুন্নী হইয়া ওহাবীর ইত্তেবা! লা হাউলা অলা কুওয়াতা ইল্লা বিল্লাহ।

জাকির নায়েক মুজাদ্দিদ?

কিছু মানুষ বলিতে আরম্ভ করিয়াছে, জাকির নায়েক মুজাদ্দিদ। কারণ, তিনি বহু মানুষকে মুসলমান করিয়া ফেলিতেছে। - লা হাউলা অলা কূওয়াতা ইল্লা বিল্লাহ! নাউজু বিল্লাহ, নাউজু বিল্লাহ! ইসলামের সঠিক অর্থে জাকির নায়েক মুসলমান কিনা, তাহা বিবেচনার বিষয়। যাহারা জাকির নায়েককে মুজাদ্দিদ বলিতে চাহিতেছে তাহারাও সঠিক মুসলমান নয়। 'মুজাদ্দিদ' কথাটি খুব ছোট নয়। হাদীস পাকে বর্ণিত হইয়াছে, একশত বৎসর পরে পরে আল্লাহ তায়ালা একজন করিয়া মুজাদ্দিদ প্রেরণ করিয়া থাকেন। এইবার বলুন, সেই লোকটি কেমন হইবে! যাহার মধ্যে মৌলবীয়ানা ঠাটবাট নাই সেই আবার মুজাদ্দিদ! লা হাউলা অলা কূওয়াতা ইল্লা বিল্লাহ!

জাকির নায়েক এই পর্যন্ত কয়জন মুসলমান করিয়াছে? তাহার কাছে একজন মুসলমান হইয়াছে বলিয়া আমাদের বিশ্বাস হইয়া থাকে না। আর যদি কিছু মানুষ মুসলমান হইয়াই থাকে, তাহাতে মুসলমানদের জন্য কি গৌরব রহিয়াছে? মুসলমান হাজার হাজার হিন্দু হইয়া যাইতেছে, হাজার হাজার কাদিয়ানীও খৃষ্টান হইয়া যাইতেছে, এই ক্ষেত্রে জাকির নায়েকের ভূমিকা কি রহিয়াছে? বর্তমানে কোন অমুসলিমকে মুসলমান করা বড় সওয়াবের কাজ নয়, বরং মুসলমানকে মুসলমান করিয়া রাখিবার ব্যবস্থা করাই হইল বড় সওয়াবের কাজ।যে সমস্ত তরুণ যুবক ও ডাক্তার, মাষ্টারের দল টেলিভিশনের পর্দায় চোখ রাখিয়া জাকির নায়েকের কাছে নাটকীয়ভাবে দুই একজনকে মুসলমান হইতে দেখিয়া আনন্দে আত্মহারা হইয়া যাইতেছে তাহারা বাস্তবে তাহাদের এলাকায়, গ্রামে ও মহল্লায় মুসলমানকে কাদিয়ানী, খৃষ্টান হইতে দেখিয়া কি কোন দিন দুঃখ পাইয়াছে? জাকির নায়েকের হাতে কেহ সত্যিকারে মুসলমান হইয়াছে কিনা, তাহাতে আমার সন্দেহ রহিয়াছে। কিন্তু আমার এলাকায় যে সমস্ত শিক্ষিত তরুণ যুবকেরা খৃষ্টান হইয়া গিয়াছে তাহাদের ব্যাপারে আমার কোন সন্দেহ নাই। এইবার বলুন! আমার জন্য খুশির বিষয়, না দুঃখের বিষয়? মুসলিম সমাজের জন্য গৌরবের কথা, না লজ্জার বিষয় তাহা ভাল করিয়া ভাবিয়া দেখিবেন!

জাকির নায়েক সম্পর্কে প্রশ্ন

আমরা বীরভূম মুরারই এলাকা থেকে বলিতেছি। আপনার 'সুন্নী জাগরণ' পঞ্চম সংখ্যা পাঠ করিয়াছি। জাকির নায়েক সম্পর্কে আমাদের ধারণা সম্পূর্ণ পাল্টে গিয়াছে। আপনি সঠিক তথ্য প্রকাশ করিয়া দিয়াছেন যে, লোকটি আসলে শরীয়তের কোন আলেম নয়। সৌদীর রিয়াল খোর ওহাবী। সুন্নী মুসলমানদের আকীদাহকে নষ্ট করাই তাহার কাজ। যাইহোক, জাকির নায়েক যে, একজন গোমরাহ পথভ্রষ্ট মানুষ তাহা আমাদের বুঝিতে আর বাকী নাই। এখন প্রশ্ন হইল যে, তাহাকে যদি কেহ কাফের বলিয়া থাকে, তাহা হইলে কি ভুল হইবে? এ বিষয়ে জানিবার জন্য আমরা আপনার আগামী সংখ্যার অপেক্ষায় থাকিলাম। আমরা আপনার কলমকে বেশি গুরুত্ব দিয়া থাকি। আল্লাহ আপনাকে দীর্ঘায়ু করিয়া থাকেন।

উত্তরঃহ্যাঁ, আপনাদের সিদ্ধান্ত সঠিক যে, জাকির নায়েক একজন গোমরাহ পথভ্রষ্ট মানুষ। এইবার আপনাদের প্রশ্ন যে, তাহাকে কাফের বলা যাইবে কিনা? হ্যাঁ, জাকির নায়েকের অনেক উক্তি থেকে কুফরী প্রকাশ হইয়া গিয়াছে। যেমন বিশ্ব মুসলিম জ্ঞাত রহিয়াছেন যে, ইসলামের মধ্যে কোন নারী নবী হয় নাই। দুই একজন নারী নবী হইবার দাবী করিয়াছিল। তাহারা ইসলামের নজরে কাফেরাহ বলিয়া গণ্য হইয়াছে। মোট কথা, এক লক্ষ অথবা দুই লক্ষ চব্বিশ হাজার পয়গম্বর প্রত্যেকেই পুরুষ ছিলেন। হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি অ সাল্লামের পূর্বে না কোন নারী নবী হইয়াছেন, না তাঁহার পরে কোন নারী নবী হইয়াছেন। বরং হুজুর পাক হইলেন শেষ নবী। কেহ যদি তাহার পরে কোন নবী হইবার দাবী করিয়া থাকে তাহা হইলে সে নিশ্চয় কাফের হইবে। আবার যদি কেহ কোন নারীকে নবী বলিয়া থাকে, তাহা হইলে সেও কাফের হইবে। কিন্তু জাকির নায়েক জনৈকা মহিলার এক প্রশ্নের উত্তরে কয়েকজন নারীকে নবী বলিয়া দিয়াছে।

প্রশ্ন নং–১ আসসালামু আলাইকুম, আমি সায়মা কাদরী এবং আমার প্রশ্ন ইসলাম ধর্মে নারী নবী আসেননি কেন?

উত্তরঃ– আমার বোন প্রশ্ন করেছেন, কেন ইসলামে নারী নবী আসেনি? ........... উপরে উল্লেখিত দৃষ্টিকোণ থেকে ইসলামে চারজন মহিলা নবী এসেছেন। তাঁরা হলেন - বিবি মারইয়াম (আঃ), বিবি আসিয়া (আঃ), বিবি ফাতিমা (রাঃ) ও বিবি খাদিজা (রাঃ)। (ডা. জাকির নায়েক লেকচার সমগ্র - বাংলাদেশ থেকে ছাপা ৫৬৮ পৃষ্ঠা)

জাকির নায়েক তাহার উত্তরে কয়েকটি কুফরী করিয়া ফেলিয়াছে। যথা - (ক) নারীকে নবী বলা (খ) হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি অ সাল্লামের যুগে একজন নারীকে নবী বলা (গ) হুজুর পাকের পরে একজন নারীকে নবী বলা। প্রকাশ থাকে যে, কোন দৃষ্টিকোণ থেকে কখনো কোন নারীকে নবী বলা যাইবে না। সূতরাং জাকির নায়েক যে একজন কাফের তাহাতে সন্দেহ নাই। জাকির নায়েকের আরো কিছু কুফরী কথা আমাদের দৃষ্টি গোচরে রহিয়াছে যেগুলি এই মুহূর্তে আলোচনায় আনিলাম না। প্রয়োজন বোধে আগামী সংখ্যায় বিস্তারিত আলোচনা করিয়া দিব ইনশা আল্লাহ।

ডাক্তার জাকির নায়েকের পরিচয়

ডাক্তার জাকির নায়েক ভারতের প্রসিদ্ধ মোম্বাই শহরে ১৯৬৫ সালের ১৮ই অক্টোবর জম্মগ্রহণ করেন। তিনি মোম্বাইয়ের খ্রিষ্টান মিশনারী স্কুল থেকে মেট্রিক পাস করেন। অতঃপর মোম্বাইয়ের হিন্দুদের পরিচালিত কৃষ্ণচন্দ্র চলের 'রাম কলেজ' থেকে এফ. এস.সি. পাস করেন। তারপর মোম্বাইয়ের 'ন্যাশনাল মেডিকেল কলেজ' থেকে এম.বি.এস. ডিগ্রী অর্জন করেন।

শৈশব থেকেই হিন্দুদের সাথে তার ঘনিষ্ঠতা বেশি ছিল। তিনি হিন্দুদের কলেজে পড়ে এতই প্রভাবিত হন যে, সম্রাট আকবরের নতুন ধর্ম দ্বীন-ই-ইলাহীর মতো সব ধর্মের সমন্বয় সাধনের শিক্ষা গ্রহণ করেন। জীবনের সূচনালগ্ন থেকেই হিন্দু-খ্রিষ্টানদের সাথে তার সখ্যতা থাকার কারণে তার বাস্তব জীবনে হিন্দুয়ানী ও কৃশ্চিয়ান সংস্কৃতি পরিলক্ষিত হয়। তিনি হিন্দুদের কৃষ্টিকালচার দ্বারা বেশি প্রভাবিত হন। আর তাদের সংস্পর্শে থাকার কারণে তার চিন্তাধারা ও মন-মানসিকতায় হিন্দু-খ্রীষ্টানদের প্রভাব সুষ্পষ্ট। আর তার লেবাস-পোশাক, সিরাত-সুরত এ কথার সুষ্পষ্ট প্রমাণ বহন করে।

তিনি কোন দ্বীনী মক্তব-মাদরাসা বা খানকায় লেখা-পড়ে করেন নি বা কোন হক্বানী আলিমের কাছে গিয়ে দ্বীনী ইলম চর্চা করেন নি। শৈশব থেকে যৌবন পর্যন্ত ছাত্রজীবনের লম্বা সময় অতিবাহিত হয়েছে স্কুল-কলেজে। নিজে নিজে কুরআন-হাদীসের বিভিন্ন কিতাবাদি অধ্যয়ন করে ইসলামী চিন্তাবিদ হিসেবে নিজেকে জাতির সামনে পেশ করেছেন।

এজন্য তাফসীর বির রায় তথা মনগড়া তাফসীর করা তার অভ্যাসে পরিণত হয়েছে। ইল্মে হাদীসের পরিভাষা সম্পর্কে তার ধারণা নেই বললেই চলে। গাইরে মুকাল্লিদের প্রচার-প্রসার তার মূল উদ্দেশ্য বলে মনে হয়। তিনি ইয়াযীদের ভক্ত এবং ইয়াযীদের নামের পার্শ্বে 'রহমাতুল্লাহি আলাইহি' লিখতে ভালবাসেন।

ভাবনার বিষয়

ডাক্তার জাকির নায়েক নিজেই স্বীকার করেছেন যে, তিনি আরবী তেমন ভালো জানেন না। তিনি একজন জেনারেল শিক্ষিত! ইংরেজী লেকচারই তার উপজীব্য বিষয়। ইংরেজী সাহিত্যের উপর তার গবেষণা-চর্চা। আর কুরআন-হাদীসের ইংরেজী অনুবাদ বই পড়েই তিনি বক্তব্য পেশ করে থাকেন। তিনি হাফেযে কুরআন নন। তিনি গতানুগতিকভাবে কোন দ্বীনী প্রতিষ্ঠানে কুরআন-হাদীসের শিক্ষা গ্রহণ করেন নি। কোন হক্বানী উলামায়ে সোহবাতে থেকে ইসলামী জ্ঞান অর্জন করেন নি এবং আত্মশুদ্ধিও করেন নি। তিনি লাইব্রেরী থেকে কুরআন-হাদীসের বিভিন্ন গ্রন্থ সংগ্রহ করে নিজে নিজে কুরআন-হাদীস বুঝার চেষ্টা করেছেন।

এ ব্যাপারে কোন হক্বানী আলিমের স্মরণাপন্ন হন নি। তার এই নিজস্ব শিক্ষা তাকে কতটুকু সহীহ দ্বীনী ইলম (জ্ঞান) উপহার দিয়েছে, তা বলা বড় কষ্টসাধ্য। তিনি হলেন একজন এম. বি. বি. এস. ডাক্তার। অথচ তিনি হয়ে গেছেন বর্তমানে একজন নামকরা ইসলামী স্কলার বা পণ্ডিত। তিনি নিয়মতান্ত্রিক ও প্রাতিষ্ঠানিকভাবে কুরআন-হাদীস শিক্ষা না করেই ইসলামী পণ্ডিত হিসেবে বিশেষ খ্যাতি লাভ করেছেন, এর চেয়ে বড় হাস্যকর বিষয় আর কি হতে পারে?

ডাক্তার সাহেবের চিন্তা, ধ্যান-ধারণা এবং তার নিউ ইসলামের ধারণার সূত্র যদি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি অ সাল্লাম পর্যন্ত পৌঁছে থাকে, তবে সেই সব আহলে ইলম এবং মাদ্রাসার নাম উপস্থাপন করুন যেখান থেকে তিনি দ্বীনী ইলম শিক্ষা লাভ করেছেন। দুনিয়াবী বিদ্যায় যদি কেউ কোন শিক্ষক ছাড়া সে বিষয়ে যথাযথ ব্যুৎপত্তি অর্জন করতে না পারেন, তা হলে একজন শিক্ষক ছাড়া ডা. জাকির নায়েক কিভাবে নিজে দ্বীনের ব্যাপারে একজন ইসলামী স্কলার হতে পারে?

কেউ যদি ডাক্তার হতে চায়, তা হলে তাকে কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকদের কাছে গিয়ে শ্রেণীকক্ষে একটি সুনির্দিষ্ট নিয়মে অধ্যয়ন করতে হয় এবং কোর্স শেষে যে কোন অভিজ্ঞ ডাক্তারের কাছে হাতে কলমে অনুশীলন (Interniship) করতে হয়। অন্যথায় অভিজ্ঞ ডাক্তার হওয়া যায় না। তাহলে দ্বীনী ইলম তথা কুরআন-হাদীসের শিক্ষা হাক্বানী উলামায়ে কেরামের সোহবাত ও দ্বীনী প্রতিষ্ঠান ছাড়া একজন ইসলামী চিন্তাবিদ বা পণ্ডিত হওয়া কীভাবে সম্ভব?

ঘরে বসে হাতে গনা শুধু কয়েকটি গ্রন্থ মন্থন করলেই একজন প্রকৃত আলিম হওয়া যায় না। একজন হাক্বানী আলিম হতে হলে অনেক মুজাহাদা কষ্ট স্বীকার করতে হয় ও যে কোন হাক্বানী আলিম ও দ্বীনী প্রতিষ্ঠানের তত্ত্বাবধানে থাকতে হয়। এজন্য তো উস্তাদের সামনে নিজেকে বিনয়ী করতে হয়; একজন হাক্বানী আলিমের কাছে নিজের আমিত্বকে বিলিয়ে দিতে হয় অন্যথায় তথাকথিত ইসলামী চিন্তাবিদ হওয়া যায়, কিন্তু নায়েবে নবী হওয়া যায় না। সত্যিকারের নায়েবে নবী হওয়ার জন্য একটি ভালো কোন দ্বীনী প্রতিষ্ঠানে হাক্বানী উলামায়ে কিরামের সোহবাতে থেকে দ্বীনী ইলম হাসিল করতে হয়।

ডা. জাকির নায়েক তার এক ভাষণে বলেছেন, মনে করুণ -

'কারো হার্টে সমস্যা হয়েছে। সে হৃদরোগে আক্রান্ত! এমতাবস্থায় সে কি কোন ইঞ্জিনিয়ারের সাথে পরামর্শ করবে, নাকি কোন বিজ্ঞ হার্ট স্পেশালিষ্টের স্মরণাপন্ন হবে? একথা সুস্পষ্ট যে, এ ক্ষেত্রে কোন হাতুড়ে ডাক্তার বা অনাড়ী মূর্খ ব্যক্তির কাছে না গিয়ে কোন বিশেষজ্ঞের নিকট যাবে যাতে সে ভালোভাবে তার চেক-আপ করে তাকে ভালো কোন পরামর্শ দিতে পারে।"

সুপ্রিয় পাঠকমণ্ডলী! ডা. সাহেবের ভাষণের আলোকে আপনারাই বলুন - কুরআন-হাদীসের তাফসীর তথা ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণের জন্য মানুষ একজন হাক্বানী আলেমের স্মরণাপন্ন হবে? না কি একজন এম. বি. বি. এস. ডাক্তার এ ব্যাপারে যথাযথ সমাধান দিতে পারবেন?

একজন ইংরেজী শিক্ষিত প্রফেসর যেমন ইংরেজীতে দু-চারটি বই-পুস্তক পড়ে শরীআতের মাসআলার কোন ব্যাখ্যা দিতে পারেন না, তদ্রুপ একজন ডাক্তারের জন্য কিভাবে এটা বৈধ হতে পারে যে, দ্বীনী ব্যাপারে গবেষণা-ইজতেহাদের যোগ্যতা না থাকা সত্ত্বেও সরাসরি কুরআন-হাদীস থেকে ফিকহী মাসআলার সমাধান দিবেন? এ যেন মিটার ও আর্থিং ছাড়া সরাসরি বিদ্যুতে হাত লাগানোর মত। একটি বাল্বের যদি ধারণ ক্ষমতা থাকে একশ মেগাওয়াট বিদ্যুত, আর সেখানে যদি এক হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুত সাপ্লাই দেওয়া হয়, তাহলে উপকারের পরিবর্তে ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা বেশি।

সুতরাং আসুন! আমরা জাকির নায়েক সম্পর্কে কিছু জানি, বুঝি; তার মতবাদ কতটুকু শরী'আত সম্মত, তা কুরআন-হাদীসের ইলমী দাঁড়িপাল্লায় আমরা তা পরিমাপ করি। মহান আল্লাহ তা'আলা আমাদেরকে হক্কের উপর আমল করার তাওফীক দান করুণ। আমীন!

ভারত-পাকিস্তান তথা সারাবিশ্বে প্রতিক্রিয়া

পূর্বেই বলা হয়েছে, প্রথমদিকে ডাক্তার জাকির নায়েক তার গর্হিত মতবাদগুলো গোপন রেখেছেন। তখন শুধুই বিধর্মীদের মুকাবিলায় ইসলামের সত্যতা প্রমাণে তৎপর ছিলেন এবং নিজের ভ্রান্ত মতবাদ প্রচার থেকে নীরব থাকেন। এমন কি তখন কেউ দ্বীনের কোনো ইখতিলাফী বিষয়ে প্রশ্ন করলে, তিনি উত্তর দিতেন - এটা আমার আওতার বিষয় নয়। আমার আওতার মধ্যে প্রশ্ন করুণ। তখন সবাই তাঁর এ ভূমিকাকে স্বাগত জানিয়েছিলেন। (দ্রষ্টব্য http:ZakarNaik KoChallenge)

অবশ্য তখন তার লেবাস-পোশাক বিধর্মীদের মতো হওয়া, তার কনফারেন্সে নারী-পুরুষের বেপর্দা সহাবস্থান, তার টিভি ভিত্তিক প্রচার কালচার প্রভৃতি বিষয়ে আলেমগণের আপত্তি ছিল, তবে ইসলামের পক্ষে বিধর্মীদের বিরুদ্ধে তার প্রচার তৎপরতা সীমাবদ্ধ থাকার কারণে জোরালোভাবে কেউ তার বিরুদ্ধাচরণ করেন নি। কিন্তু এভাবে জনপ্রিয়তা তুঙ্গে উঠার পর তিনি যখন তার ভ্রান্ত মতবাদ প্রচারের গোপন মিশন শুরু করেন, তখন সহীহ দ্বীন ও ঈমান রক্ষার তাগিদে চতুর্দিক থেকে দ্বীনের ধারক-বাহক উলামা-মাশায়িখ ও ইসলামী স্কলারগণ তার সম্পর্কে প্রতিবাদ করেন এবং মুসলিম জনসাধারণকে তার ভ্রষ্টতা সম্পর্কে সাবধান করেন।

পাকিস্তানের বেরেলভী আলেম আল্লামা মুহাম্মদ জাহাঙ্গীর এর ফাতওয়া

পাকিস্তানের অপর বেরেলভী আলেম আল্লামা মুহাম্মদ জাহাঙ্গীর তাঁর দ্বীনী ইদারা "দাওয়াতে কানযুল ঈমান" এর পক্ষ থেকে ডাক্তার জাকির নায়েকের গোমরাহী সম্পর্কে দলীল-প্রমাণ ভিত্তিক বিস্তারিত বর্ণনা করে "ডাক্তার জাকির নায়েক ছে জাওয়াব তালাবী" (ডাক্তার জাকির নায়েক থেকে উত্তর চাই) নামে এক ইশতিহার প্রকাশ করেছেন এবং এতে তিনি ডাক্তার জাকির নায়েকের প্রতি প্রকাশ্য বাহাছ-মুনাজারার চ্যালেঞ্জ করেছেন। উক্ত ইশতেহারটি দেখতে ইন্টারনেট ব্রাউজ করুণ -

http://www.naptseislam.com/en/Literature/Urdu/Books/ZakarNaikKoChallengeZakarZakarNaikkoChallenge.pdf

ডাক্তার জাকির নায়েক সম্পর্কে

আল্লামা নুরুল ইসলাম ওলিপুরীর অভিমত

মাওলানা ওলিপুরী সাহেব বলেন -

"বর্তমান মিডিয়া জগতে আলোড়ন সৃষ্টিকারী এক ব্যক্তির নাম ডাক্তার জাকির নায়েক। আমি যখন জানতে পেরেছিলাম তিনি একজন ডাক্তার, কিন্তু আলিম নন, তখন থেকে বলে আসছিলাম যে, তিনি আলোড়ন সৃষ্টিকারী হতে পারেন, কিন্তু হিদায়েতের দিশারী হতে পারে না। কিন্তু আমাদের এ তরুণ সমাজের একাংশ তাৎক্ষণিকভবে আমার এ মন্তব্য মানতে রাজি হয় নি।

এরপর ক্রমান্বয়ে ডাক্তার জাকির নায়েকের মুখোশ উন্মোচিত হতে লাগল। অবশেষে তার মুখোশ উন্মোচিত করে তার জন্মভূমি ভারত ও পাকিস্তান থেকে একটি গ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে, গ্রন্থটির নাম 'হাকীকতে জাকির নায়েক '। গ্রন্থটির সুযোগ্য লেখক মাওলানা খালিক সাজিদ বুখারী।

এখানে যারা ডাক্তার জাকির নায়েকের চাকচিক্যময় বাহ্যিক মুখোশের আবরণে তার আসল চেহারা দেখতে পাচ্ছেন না, তাদের জন্য এ আলোচনা ফলপ্রসূ হবে। আশা করি এতে পাঠকের চোখ কিছুটা হলেও খুলবে এবং তারা জাকির নায়েকের ছড়ানো বিভ্রান্ত থেকে মুক্তির পথ খুঁজে পাবেন। আল্লাহ আমাদের সবাইকে সুমতি দান করুণ। আমীন!

কে এই জাকির নায়েক?

জাকির নায়েকের প্রচারাভিযানের নেপথ্যে রয়েছে দুটি পুরাতন বাতিল মতবাদ; যেগুলোকে তার নতুন ভঙ্গির পর্দার আড়াল করা হয়েছে। মতবাদ দুটি হলঃ

(ক) তথাকথিত সালাফী মতবাদ,

(খ) মাওদুদী মতবাদ

ডাক্তার জাকির নায়েকের প্রতি আকৃষ্টদের অনেকেই তাকে ইসলামী ভাষ্যকার, ইসলামী পণ্ডিত উপাধিতে ভূষিত করে থাকেন। এসব ভক্তদের উদ্দেশ্যে দুটি হাদীস উল্লেখ করা হলঃ

১. হাদীস শরীফে বর্ণিত আছে, 'ইসলামের জ্ঞান বহন করবেন, সর্বযুগের একদল নিষ্ঠাবান লোক। যারা এ জ্ঞানকে অতিরঞ্জিতকারীদের বিকৃতি থেকে, বাতিলপন্থীদের মিথ্যাবাদী থেকে এবং জাহিল মুর্খদের অপব্যাখ্যা থেকে মুক্ত রাখবেন।" (মিশকাত শরীফ)

২. হাদীস শরীফে বর্ণিত আছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ ফরমান, "আল্লাহপাক ইসলামী জ্ঞান পৃথিবীর বুক থেকে ছোঁ মেরে নিয়ে যাবেন না; বরং পৃথিবীতে ইসলামী জ্ঞানশূন্য হওয়ার প্রক্রিয়া এই হবে যে, ক্রমান্বয়ে আলিমদের ইন্তেকাল হতে থাকবে। আর লোকেরা জাহিল বা মুর্খদের আনুগত্য করা শুরু করবে। তখন ইসলামী জ্ঞানশূন্যরা ভ্রান্ত সমাধান দিয়ে নিজেরাও পথভ্রষ্ট হবে, অন্যদেরকে পথভ্রষ্ট করবে। (মিশকাত শরীফ)

হাক্কানী আলেমের দায়িত্ব 

কারো দ্বারা ইসলামের কোন উপকার হতে দেখলেই তাকে আলিম হিসেবে গণ্য করে নেওয়ার কোন যুক্তি নেই। বরং হাদীস শরীফে বর্ণিত আছে, "আল্লাহ তা'আলা অনেক সময় পাপিষ্ঠদের দ্বারাও ইসলামের সেবা নিয়ে থাকেন।" যেমন- কোন বেনামাযী, মদখোর, জিনাকারও যদি ইসলামের পক্ষে ও দুশমনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদের মিছিলে অংশ গ্রহণ করে, তাহলে তা একটা সেবা হল। আর যথাস্থানে তার এ সেবার মূল্যায়ন করা হবে। সেজন্য কেউ তাকে আলিম বলবেন না। আর সে ইসলামী মিছিলে যোগদান করার কারণে সে শরী'আত নিয়ে মন্তব্য করার অধিকার রাখে না।

জাকির নায়েক আলেম নন

একজন শিক্ষিত ডাক্তার হিসেবে স্বয়ং ডা. জাকির নায়েকও একথা জানেন যে, জেমনিভাবে কোন লোক মেডিকেল কলেজের পাঠ্য বা অপাঠ্য কোন ডাক্তারী বই নিজে পড়ে ডাক্তার হতে পারে না, বরং ডাক্তার হওয়ার জন্য মেডিকেল কলেজে ডাক্তারের কাছে যথারীতি লেখা-পড়া করতে হয়, তেমনিভাবে কোন মানুষ নিজে নিজে কুরআন-হাদীস অধ্যয়ন করে আলিম হতে পারেন না। বরং কোন হাক্বানী আলিমের তত্ত্বাবধানে ভালো কোন দ্বীনী প্রতিষ্ঠানে যথারীতি অধ্যয়ন করতে হয়; আর এটা জাকির নায়েকের বেলায় প্রমাণিত নয়।

সুতরাং, তিনি যেভাবে কোন ডাক্তারের কাছে যথারীতি লেখা-পড়া না করলে ডাক্তার হতে পারতেন না, তেমনিভাবে তিনি কোন আলিমের কাছে যথারীতি লেখা-পড়া না করে আলিম হতে পারেন না।

জাকির নায়েকের আসল ব্যাপারটি কি?

হ্যাঁ! এটা অবশ্যই একটা গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। যে প্রশ্নের সুষ্ঠু সমাধান ভ্রষ্টতার হাত থেকে রক্ষা করার জন্য অতীব জরুরী।

এ পর্যায়ে গভীরভাবে লক্ষ্য করলে দেখা যায়, ডা. জাকির নায়েক বিভিন্ন ধর্মগ্রন্থ চর্চার নেপথ্যে দুটি ভ্রান্ত মতবাদের পক্ষে কাজ করে যাচ্ছেন। তম্মধ্যে একটি হচ্ছে সালাফীবাদ, অপরটি হল মাওদুদীবাদ। এ দুটি ভ্রান্ত মতবাদ যেন একই মায়ের দুই সন্তান। কারণ ইসলামী বিধানশাস্ত্রের পূর্ণাঙ্গ ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ, মাজহাব চতুষ্টয়, ইমাম ও মনীষীগণের প্রতি বিষ উদগীরণে সালাফী ও মাওদুদীবাদীরা একতাবদ্ধ। আর এ ঘৃণ্য কাজের পক্ষে অভিযান চালিয়ে যাচ্ছেন ডা. জাকির নায়েক। এর একটা মাত্র উদাহরণ হচ্ছে অনারবী ভাষায় খুতবা দেওয়ার অপচেষ্টা করা। অথচ মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ও সাহাবায়ে কেরামদের দেড় হাজার বছরের ইতিহাসে কেউই এর অনুমতি দেন নি।

ডা. জাকির নায়েক সালাফী ও মওদুদীদের বন্ধু

ডা. জাকির নায়েকের বক্তব্যের দর্শনের মধ্যে রয়েছে মওদুদী মতবাদের প্রতিচ্ছবি। আপনি লক্ষ্য করলে দেখবেন যে, জাকির নায়েকের অধিকাংশ ভক্ত-অনুরক্ত মওদুদীবাদী, না হলে ইসলামী জ্ঞান বহির্ভূত পাশ্চাত্য শিক্ষায় শিক্ষিত মুসলমান তরুণ-তরুণী। সুতরাং এ কথা খোলাসা হয়ে গেল যে, ডা. জাকির নায়েক মওদুদী ও সালাফীদের বন্ধু হিসেবে কাজ করে যাচ্ছেন। যাকে বলা যায় পুরান বধুর নতুন শাড়ী। তাই তিনি ইসলামী ভাষ্যকার সেজে মওদুদী ও সালাফীদের ভাষ্যকার সেজে কাজ করে যাচ্ছেন। তাই সত্যানুসন্ধানীদের জন্য বিষয়টা গভীরভাবে অনুধাবন করা দরকার। 

ডা জাকির নায়েকের মতবাদ পর্যালোচনা ও ভুল সংশোধন

১। জুমুআর খুতবা আরবীতে হওয়া জরুরী নয়

জুমু'আর খুতবা আরবীতে কেন পড়তে হবে এ সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলে ডাক্তার সাহেব বলেন, খুতবা আরবীতে পড়া কোন জরুরী নয়; রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের যুগে যেহেতু শ্রোতারা সব আরবী ভাষাভাষী ছিলেন, তাই আরবীতে খুতবা দেয়া হত। নতুবা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর পক্ষ থেকে অন্য কোন ভাষায় খুতবা দেওয়ার ব্যাপারে কোন নিষেধাজ্ঞা বর্ণিত হয় নি।

অথচ হাদীস এবং ফিকহের কিতাব দ্বারা এ কথা সুস্পষ্টভাবে প্রমাণিত যে, জুমু'আর খুতবা আরবীতে হওয়ার জরুরি। হযরত উমর ফারুক রাযি বলেন, নিশ্চয়ই জুমুআর খুতবাকে দুই রাকাআতের স্থলাভিষিক্ত করা হয়েছে।(মুসান্নাফ ইবনে আবী শাইবাহ্ ২/১২৮)

হযরত সাঈদ ইবনো যুবায়ের রহ, বলেন, জুমু'আর নামায চার রাকাত ছিল। অতঃপর খুতবার কারণে দুই রাকা'আত কমিয়ে দেওয়া হয়েছে।

এই ধরণের আরো হাদীস এবং ফিকহী ইবারত দ্বারা বুঝে আসে যে, খুতবা হল জিকির। সুতরাং আরবী ছাড়া অন্য কোন ভাষায় তা জায়েয নেই, এতদসত্ত্বেও ডাক্তার সাহেব বুক ফুলিয়ে বলে দিলেন যে, অন্য ভাষায় খুতবা পড়তে কোন অসুবিধা নেই।

২। তারাবীহর নামায আট রাকাত, বিশ রাকাতের কোন প্রমাণ নেই

তারাবীহর নামায সম্পর্কে ডাক্তার সাহেবকে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি অবলীলাক্রমে বলে দিলেন যে, তারাবীহর নামায আট রাকাত। এতে তিনি লামাযহাবীদের মুখপাত্র হিসেবে কাজ করলেন। অথচ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম স্বয়ং ও হাযরাত সাহাবায়ে কিরামও যে বিশ রাকাত তারাবীহ আদায় করেছেন, সে সম্পর্কে স্পষ্ট বর্ণনা বিদ্যমান এবং আজো মক্কা-মদীনা সহ সমগ্র মুসলিম বিশ্বে এই ধারা চালু হয়ে আসছে। এটা জানা সত্ত্বেও তিনি চিরাচরিত অভ্যাস অনুযায়ী এখানেও মিথ্যার আশ্রয় নিলেন।

৩। কাঁকড়া-কচ্ছপ সব হালাল

ডাক্তার সাহেবকে এক টিভি প্রোগ্রামে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল, কোন মাছ হারাম আর কোন মাছ হালাল? উত্তরে তিনি বললেন, বিষাক্ত প্রাণী ছাড়া সমুদ্রের সবকিছু হালাল। এমনকি কাঁকড়া-কচ্ছপও হালাল। অথচ আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা'আতের আকীদা অনুসারে এ ধরণের জলজ প্রাণী খাওয়া জায়েয নেই। (জাকির নায়েকের ভ্রান্ত মতবাদ)

৪। প্যাণ্ট-শার্ট টাই পরা জায়েয

ইসলামের বাহ্যিক লিবাস-পোশাকের গুরুত্ব অপরিসীম। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বিশেষভাবে পোশাকের ক্ষেত্রে কাফিরদের বেশভূষা গ্রহণ করতে নিষেধ করেছেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, যে ব্যক্তি যাদের সাদৃশ্যতা অবলম্বন করবে, সে তাদের দলভুক্ত হবে।(শু'আবুল ঈমান, হাদীস নং ১১৯৯, মুসনাদে আহমাদঃ ২/৫০)

সুতরাং একজন মুসলমানের পরিপূর্ণভাবে ইসলাম দাখিল হওয়ার পরিচায়ক হচ্ছে, তার বাহির ও ভিতর সবই রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ও সাহাবায়ে কিরামের সাথে থাকা। বাইরে কাফির ও অমুসলিমের সাথে মিল রেখে ভিতরে ইসলামের দাবি করা অযৌক্তিক। কারণ ভিতরে ঈমান-ইসলাম রক্ষার জন্য বাহ্যিক পোশাক ঢাল স্বরূপ।

অথচ এ ক্ষেত্রে ডাক্তার জাকির নায়েককে দেখা যায় না যে, তিনি সর্বদা প্যান্ট-শার্ট, টাই ইত্যাদি বিধর্মী খ্রিষ্টানদের পোশাক পরিধান করে থাকেন।

কার ভিতর কতটুকু ইসলাম আছে, তা জানা মুশকিল, কিন্তু তার বাহ্যিক লিবাস দিয়ে তা এক প্রকার আন্দায করা যায়। বিধর্মীদের পোশাকের ব্যাপারে যার সামান্যতম ঘৃণা নেই, বরং আছে সখ্যতা, তিনি নিজে তা পরে থাকে এবং তার পক্ষে উকালতী করেন, তিনি কেমন ইসলাম প্রচারক হতে পারেন তা সহজেই অনুমেয়।

সুতরাং তার কথা কিভাবে মানা যাবে এবং তাকে কি করে অনুসরণ করা যাবে? এ ক্ষেত্রে তাকে অনুসরণ করার অর্থ হল - ইসলামী পোশাক বর্জন করে খ্রিষ্টানী পোশাক প্যান্ট, শার্ট টাই পরিধান করা। তা কেমন করে ধর্মপ্রাণ মুসলমানগণ বরদাশত করতে পারেন?

৫। জাকির নায়েকের কুরআন তিলাওয়াত সহীহ নয়, অথচ তিনি ইসলামের মুখপাত্র

ইসলামের মুখপাত্র হওয়ার জন্য বুনিয়াদী শর্ত হল কুরআনুল কারীমের সহীহ শুদ্ধ তিলাওয়াতের মাহারাত অর্জন করা। (সূরা মুযযাম্মিলঃ৪)

বলতে কি যিনি সহীহ্ শুদ্ধভাবে কুরআন তিলাওয়াত করতে সক্ষম নন, তিনি কুরআনের ব্যাখ্যা-তাফসীর পেশ করার কি অধিকার রাখেন? এমন অনাড়ি ব্যক্তিকে মুসলমানদের দেশে কোন মসজিদের ইমাম তো দূরের কথা, মুআজ্জিন হিসেবেও নিয়োগ দেওয়া যায় না। কুরআন শরীফ অশুদ্ধভাবে লাহনে জলী রূপে তিলাওয়াত করা হারাম ও কবীরা গুনাহ।

এ ধরণের তিলাওয়াতে নামায নষ্ট হয়ে যায়। কিন্তু অত্যন্ত আফসোসের বিষয়, বয়ানের ফাঁকে ফাঁকে ডা. জাকির নায়েক যে কুরআনের আয়াত বলেন, তা সম্পূর্ণ অশুদ্ধ ও লাহনে জলী প্রকৃতির। যা বিভিন্ন মাধ্যমে আমাদের নিকট এসেছে। তার পাঠে কুরআন শরীফের আয়াত বিকৃত হয়ে যায়। তিনি বহু বই পুস্তক পড়ে গবেষণা করতে পারেন, অথচ সহীহ-শুদ্ধভাবে কুরআন তিলাওয়াত শিখতে পারেন না। এমন কুরআন-অজ্ঞ লোক কখনো দ্বীনের ব্যাখ্যাদাতা হতে পারেন না।

৬। মহিলাদের মসজিদে গিয়ে নামায পড়াতে কোন অসুবিধা নাই 

জাকির নায়েকের আর একটি ভ্রান্ত মতবাদ, "মহিলাদের মসজিদে গিয়ে নামায পড়াতে কোন অসুবিধা নেই।"

তাকে প্রশ্ন করা হল, মহিলাদের জন্য মসজিদে যাওয়ার অনুমতি নাই কেন? তিনি বললেন, কুরআন-হাদীসের এমন কোন বয়ান নেই যার দ্বারা মহিলাদের মসজিদে যাওয়া নিষিদ্ধ হওয়া বুঝে আসে। এরপর তিনি এ সম্পর্কে বেশ কিছু হাদীস তুলে ধরেছেন।

অথচ হাদীসের আলোকে এবং সাহাবায়ে কিরামের আমলের আলোকে মহিলাদের মসজিদে গমন যে নিষিদ্ধ, সে ব্যাপারে আইম্মায়ে কিরাম একমত। হযরত উমর রাযি. স্বীয় খিলাফাতের যুগে মহিলাদের মসজিদে যাওয়ার ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছিলেন।

হযরত আয়েশা রাযি. মন্তব্য করেছিলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যদি আজকের যুগের মহিলাদের অবস্থা দেখতেন তবে তাদের মসজিদে যাওয়া নিষিদ্ধ করে দিতেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে বর্ণিত হাদীস সাহাবায়ে কিরামই বেশি বুঝতেন। এবং সেভাবেই তারা আমল করেছেন। আজকের ডাক্তার জাকির নায়েক হযরত উমর ফারুক ও হযরত আয়েশা রাযিয়াল্লাহু আনহুমা-এর চেয়ে হাদীস বেশি বুঝবার দাবিদার বলে মনে হচ্ছে। (নাউযুবিল্লাহ)

(জাকির নায়েকের ভ্রান্ত মতবাদ)

৭। মহিলাদের চেহারা না ঢাকলেও পর্দা হয়ে যাবে

শরী'আতের হুকুম অনুযায়ী বেগানা মেয়েদের সাথে পর্দা করা ফরজ। (সূরা নূর, আয়াতঃ ৩০/ সূরা হুজুরাত, আয়াতঃ ৫৩)

বেগানা মেয়েদের সাথে বেপর্দাভাবে সামনাসামনি বসা, কথা বলা, দেখা-সাক্ষাত করা সম্পূর্ণ নাজায়িয।

কোন ইমাম সাহেব যদি শরঈ পর্দা মেনে না চলেন এবং বেগানা মেয়ে লোকের সাথে দেখা করেন, তা হলে তাকে অনুসরণ করা ও তার পিছনে ইক্তেদা করা জায়েয নয়। তার জন্য ইমামতি করাও নাজায়েয। (ফাতাওয়া শামী, ১ম খণ্ড, ৫৫৭ পৃঃ) (বিস্তারিত জানার জন্য দেখুন 'পর্দা কি ও কেন' আলকাউসার প্রকাশনী কর্তৃক প্রকাশিত এর পৃঃ ১৪৫- ১৬০)

ডাক্তার জাকির নায়েক ইসলাম প্রচার করতে গিয়েও বেগানা নারীদের সাথে পর্দা রক্ষা করে চলেন না। তিনি যে গ্যালারীতে লেকচার দেন, সেখানে নারী-পুরুষ বেপর্দাভাবে এক সাথে বসে তার লেকচার শোনেন। নারীরা বেপর্দাভাবে তার সাথে কথা বলেন। তিনিও নারীদের সাথে বেপর্দাভাবে সরাসরি কথা বলেন।

এমতাবস্থায় সারা বিশ্বের মানুষ তার কাছ থেকে পর্দার ব্যাপারে কি শিখবে? নিশ্চয়ই বেপর্দা চলাই শিখবে। এদিক দিয়ে মুসলমানদের মধ্যে থেকে সুকৌশলে পর্দাকে উঠিয়ে দেওয়ার ক্ষেত্রে তিনি একজন মডেলে পরিণত হয়েছেন। যে কারণে যারা ইসলামে পর্দার গুরুত্ব স্বীকার করতে চান না, তারা রীতিমত জাকির নায়েককে প্রমাণ হিসেবে পেশ করেন। তারা বলেন যে, ইসলামে পর্দার যদি এতই গুরুত্ব থাকত, তা হলে ডা. জাকিরও তার গুরুত্ব দিতেন। কারণ তিনিও ইসলাম সম্পর্কে ভাল জানেন। অথচ ইসলামে ইসলামে পর্দার গুরুত্ব অপরিসীম। এ ক্ষেত্রে বিন্দুমাত্র ছাড় নেই। পর্দা রক্ষার ব্যাপারে হাযরাত সাহাবায়ে কিরামের প্রতি আল্লাহু তা'আলার প্রতি কঠোর নির্দেশ নাযিল হল, "তোমরা যখন কোন নারীর নিকট থেকে কোন জিনিস চাইবে, তখন পর্দার আড়াল থেকে চাইবে।" (সূরা আহযাব, আয়াতঃ ৫৩)

এ ক্ষেত্রে ডা জাকির নায়েকের কার্যকলাপ দ্বারা ইসলামের যে ক্ষতি হচ্ছে তা বলার অপেক্ষা রাখে না।

৮। হযরত আলী রাযি. উম্মতের মধ্যে শ্রেষ্ঠ

আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাআতের একটি আক্বীদা হল, উম্মতের মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ হলেন আবূ বকর সিদ্দীক রাযি. তারপর উমর, তারপর ওসমান, তারপর আলী রাযিয়াল্লাহু আনহুমা। এরপর বিশিষ্ট সাহাবীগণ। তারা উম্মতের সকল বুযুর্গ ও আউলিয়াগণ থেকে শ্রেষ্ঠ। 

(বুখারী শরীফ হাদীস নং ৭১৩, ৩৬৫০, 

৩৬৫৫ -৫৯ / ফাতাহুল বারী ৭ঃ৬-১৮)

অথচ ডা. জাকির নায়েক উম্মতের মধ্যে চতুর্থ খলীফা হযরত আলী রাযি. কে সর্বশ্রেষ্ঠ বলে দাবি করেছেন- যা মূলতঃ ভ্রান্ত শিয়া ফিরকার আক্বীদা-বিশ্বাস। (নাউযুবিল্লাহ)

এ ক্ষেত্রে ডা জাকির নায়েক বলেছেন যে, আবু বকর সিদ্দিক রাযি. যে উম্মতের মধ্যে শ্রেষ্ঠ, এর কোন দলীল-প্রমাণ পাওয়া যায় না। তিনি হয় তো ডাক্তারী বইতে এর দলীল খুঁজেছেন। তা না হলে ইসলামী আক্বীদার সকল কিতাবেই এর দলীল রয়েছে। সর্বোপরি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যে, জীবনের শেষের কয়েক দিনের ইমামতির দায়িত্ব অন্য কাউকে না দিয়ে হযরত আবূ বকর রাযি. -কে দিলেন, এটা কি এর বড় প্রমাণ নয়।

৯। যে কেউ কুরআনের গভীর জ্ঞান অর্জন করতে পারে

ডাক্তার জাকির নায়েক বলেছেন যে, কুরআনে কারীমের গভীর জ্ঞান অর্জনের জন্য উলামায়ে কিরাম যে ১৫টি বিষয়ের শর্ত জুড়ে দিয়েছেন, তা ঠিক নয়। বরং যে কোন শিক্ষিত ব্যক্তি ইচ্ছা করলে কুরআনের গভীর জ্ঞান অর্জন করতে পারে। হুবহু এ ধরণের কথা জনাব মওদুদী সাহেবও বলেছিলেন। এতে বুঝা যায় যে, তারা উভয়ে একই সূত্রে গাঁথা এবং একই মডার্ন ইসলামের ধারক ও বাহক।

১০। জাকির নায়েকের মতে, হুর-গেলমানের তাফসীর

হুর-গিলমানের তাফসীরের সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলে ডাক্তার জাকির নায়েক বলেন, "কুরআনের কোথাও 'গেলমান' শব্দ নেই।

এটা কত বড় মূর্খতা যে, এ শব্দটি পবিত্র কুরআনে (সূরা তূরঃ ২৪) স্পষ্ট উল্লেখ আছে। এবং এর অর্থঃ ছোট ছোট বাচ্চা, যারা জান্নাতীদের খাদেম হবে। এতদসত্ত্বেও তিনি কিভাবে এ শব্দটাকে অস্বীকার করেন? কুরআন শরীফ অধ্যয়নের ব্যাপারে তার জ্ঞানের দৈন্যতা যে কত, তা এর মাধ্যমেই বুঝা যায়।

১১। কাযা নামায পড়ার দরকার নেই

ডাক্তার জাকির নায়েক কাযা নামায অস্বীকার করেছেন এবং বলেছেন যে, কাযা নামায পড়ার দরকার নেই, তওবা করে নিলেই চলবে। অথচ বহু হাদীসে কাযা নামায পড়ার ব্যাপারে নির্দেশ এসেছে এবং এ সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে।(বুখারী শরীফ হাদীস নং ৫৯৭-৫৯৮/ মুসলিম, হাদীস নং -৬৩১, ৬৮৪)

আলিম না হওয়া ও দ্বীনী জ্ঞানের স্বল্পতার দরুণ ডা. জাকির নায়েক সে পর্যন্ত পৌঁছাতে পারেন নি। তাই তার এ অজ্ঞতাপ্রসূত ভ্রষ্ঠতা সম্পর্কে সকলের হুঁশিয়ার থাকতে হবে।

১২। একই দিনে ঈদ ও জুমু'আ হলে জুমু'আর নামায পড়ার দরকার নেই

ডা জাকির নায়েক বলেন, একই দিনে ঈদ ও জুমু'আ হলে জুমু'আর নামায পড়ার দরকার নেই। অথচ চার মাযহাবে কোন মাযহাবে এবং শরঈ দলীলের কোথাও এরূপ ফাতওয়া নেই। এর দ্বারা ডা. জাকির নায়েকের মারাত্মক গোমরাহী আরো স্পষ্ট হয়ে যায়। (মাসিক আদর্শ নারী, জুন -২০১১)

১৩। ডা জাকির নায়েকের আরবী ভাষাজ্ঞান খুবই নগন্য

মহাগ্রন্থ আল-কুরআনের তাফসীরের ক্ষেত্রে ড. সাহেবের বিবেচনা ও আস্থা শুধু নিজের জ্ঞান ও উপলব্ধির উপর বা সর্বসাকুল্যে ভাষাজ্ঞানের উপর হতে পারে। আমরা তো তার কথায় প্রসিদ্ধ স্থানেও রেওযায়েতের দেখা পাই নি। সাহাবায়ে কেরামের তো প্রশ্নই আসে না। তার বক্তব্যে মারফু' ও মাশহুর সহীহ হাদীসের উল্লেখটুকুও নেই। আর তার আরবী ভাষাজ্ঞানের পরিধি এই যে, যদিও তিনি এ সম্পর্কে কিছু কথা উল্লেখ করে থাকেন, কিন্তু তার আলোচনা ও বক্তব্য দ্বারা সুস্পষ্টভাবে বুঝা যায়, আরবী ভাষাজ্ঞান তার খুবই নগন্য। কারণ তিনি তো কোনদিন মাদরাসায় গিয়ে কুরআন শিখেন নি।

১৪। ডা. জাকির নায়েকের মতে সাহাবায়ে কেরাম গুরুত্বহীন

তার নিকট সাহাবায়ে কেরাম, তাবেঈন ও আইম্মায়ে মুজতাহিদীন প্রমুখদের তেমন কোন গুরুত্ব নেই। আমরা তার লেকচার সমগ্রের পাঁচশতেরও বেশি পৃষ্ঠা পাঠ করে দেখা গেছে। তাতে পূর্ববর্তী বা অনুবর্তী কোন স্তরের কোন আলিম এবং কোন গ্রন্থের রেফারেন্স কোথাও উল্লেখ নাই। কোন কোন স্থানে উলামায়ে কেরামের কথা উল্লেখ আছে, কিন্তু কোন নাম-ধাম ছাড়াই উলামা, অধিকাংশ উলামা ইত্যাদি শব্দ বলা হয়েছে। কিন্তু তারা কে বা কারা? তা উল্লেখ করেন নি।

ডাক্তার জাকির নায়েক সম্পর্কে দারুল উলূম দেওবন্দ - এর ফাতওয়া

"এই ব্যক্তি (ডা. জাকির নায়েক) নিজে পথভ্রষ্ট এবং অপরকে পথভ্রষ্টকারী। লেকচার পদ্ধতিতে আধুনিক প্রচার মাধ্যম গ্রহণ করে যে কাজ তিনি চালিয়ে যাচ্ছেন, তার সারাংশ হল -

(ক) গোটা উম্মতকে হযরত আইম্মায়ে মুজতাহিদীন ও ইসলামের প্রসিদ্ধ চার ইমাম রহ -গণের অনুসরণ থেকে বের করে লা-মাজহাবী বানানো।

(খ) বিজ্ঞ উলামায়ে কিরামের প্রতি সাধারণ মুসলমানদের যে আস্থা ও নির্ভরতা রয়েছে, তা উঠিয়ে দেওয়া এবং এ আস্থা ও নির্ভরতাকে কলঙ্কিত করতে যত রকমের কলাকৌশল ও অস্ত্র ব্যবহার করা যায়, তা ব্যবহার করা।

(গ) ফাসিক বেদ্বীনদের চাল-চলন ও বেশ-ভূষার প্রতি সাধারণ মুসলমানদের অন্তরে যে ঘৃণা রয়েছে, তা উপড়ে ফেলা।

(ঘ) ইসলামী শরী'আতের আহকাম ও আকাইঈদ-ইবাতাদের তাহকীক্ - বিশ্লেষণ এবং আমল করার ব্যাপারে সাধারণ মুসলমানগণ যে বিজ্ঞ আলেম-উলামাগণের সাথে জুড়ে আছেন, তাদের সেই সম্পর্ককে আলেমগণ থেকে ছিন্ন করে ডাক্তার জাকির নায়েক ও তার কম্পাউণ্ডের স্কলারদের সাথে জুড়ে দেওয়া। ইত্যাদি ইত্যাদি।"

দারুল উলূম করাচী'র ফাতওয়া 

" মানুষ মনে করে, ডাক্তার জাকির নায়েক একজন অভিজ্ঞ ধর্মবেত্তা এবং ইসলাম সম্পর্কে তার যথেষ্ট জ্ঞান রয়েছে। কিন্তু বাস্তবে তা নয়। তিনি কোনো অভিজ্ঞ ইসলামিক স্কলার, আলেম বা মুফতী নন। তা ছাড়া তিনি আয়িম্মায়ে মুজতাহিদীন বা চার ইমামের অনুসরণ শুধু পরিত্যাগই করেন নি, বরং তিনি এ সকল ইমামগণের সমালোচনা করে তাদের প্রতি আস্থা নষ্ট করেছেন। সুতরাং শরী'আতের ব্যাপারে ডাক্তার জাকির নায়েকের কথা-বার্তা ক্ষতিকর প্রমাণিত হচ্ছে। তার ভিন্নমত ও চিন্তাধারা গ্রহণযোগ্য নয়।"

ফাতওয়া লিখেছেন - মুফতী খালিদ জামিল, দারুল ইফতা, দারুল করাচী, পাকিস্তান। 

কেউ উক্ত ফাতওয়া ইন্টারনেটে দেখতে চাইলে সার্চ করুণ -

www.central-mosque.com/fiqh/zakirnaik.htm

জামেয়া বিন্নুরিয়া করাচী'র ফাতওয়া

"ডাক্তার জাকির নায়েক কোনো সনদপ্রাপ্ত আলেম নন। অপরদিকে সূরত-শেকেলের দিক দিয়েও তাকে দ্বীনদার বুঝা যায় না। এ জন্য, যাচাই-বাছাই ছাড়া তার লেকচারের অনুসরণ দ্বীনী দিক দিয়ে ক্ষতির কারণ হবে। তদুপরি তার উদ্দেশ্য যদি দ্বীন প্রচারই হয়, তা হলে তার উচিত-নির্ভরযোগ্য মুসতানাদ আলেমগণের পথনির্দেশনার মধ্যে থেকে, দ্বীন-এর কাজ আনজাম দেওয়া। যেন তা তার ও তার শ্রোতাদের মঙ্গল ও কল্যাণের কারণ হয়।"

ফাতওয়া লিখেছেন - মুফতী সাইফুল্লাহ জামিল দারুল ইফতা, জামেয়া বিন্নুরিয়া করাচী।

ইন্টারনেটে এ ফাতওয়াটি দেখতে সার্চ করুণ -http/Jamia Binoria Fatwa Against Zaid Hamid [Fatwa]

Zaid Hamid Exposition

শরীয়া ইনস্টিটিউট আমেরিকা'র ফাতওয়া

"ডাক্তার জাকির নায়েকের অনেক কথাবার্তাই ভুল। তার অনেক চিন্তাধারা কুরআন ও হাদীসের দৃষ্টিতে সঠিক নয়। তা ছাড়া তিনি ইসলামের অভিজ্ঞ স্কলার নন। তাই তার অনেক রেফারেন্স যথার্থ হয় না।"

মুফতী শাহ মুহাম্মদ নাভিলুর রহমান মিফতাহী, শরীয়া ইনস্টিটিউট আমেরিকা 

ফাতওয়াটি ইন্টারনেটে দেখতে সার্চ করুণ - http://To avoid Dr Zakir Naik in Fiqh issues! - Central Mosque.Com

দারুল হাদীস দাম্মাজ ইয়েমেন-এর ফাতওয়া 

(৩০টি প্রশ্নের জবাব যেগুলো প্রমাণ করে যে, "হিন্দুস্তানী জাকির নায়েক ও তার চিন্তাধারার অনুসারীরা গোমরাহ")

উক্ত ফাতওয়ার উর্দু অনুবাদ ইন্টারনেটে প্রকাশ করা হয়েছে। অনলাইন পুস্তক আকারে তা ইন্টারনেটে দেখতে সার্চ করুণ - www.asliahlesunnet.com/files/ ...fDr Zakir.pdf 

সমাপ্ত 

__________________________







 






 


Comments

Popular posts from this blog

বালাকোট আন্দোলনের হাকীকত

সৈয়দ আহমদ বেরলভীর জম্ম ও পরিচয়

মওদুদীর ভ্রান্ত আক্বিদা ও ইসলামী আক্বিদা