হযরত আমীরে মুয়াবিয়া رَضِیَ اللّٰہُ عَنْہُ’র মর্যাদা

হযরত আমীরে মুয়াবিয়া رَضِیَ اللّٰہُ عَنْہُ’র মর্যাদা

অসংখ্য শান ও মর্যাদার অধিকারী কুরাইশ বংশের অভিজাত পরিবারের সন্তান হযরত আমীরে মুয়াবিয়া رَضِیَ اللّٰہُ عَنْہُ। কিন্তু দুরাচার ইয়াজিদকে কেন্দ্র করে শিয়া আকিদা লালনকারীরা আমীরে মুয়াবিয়া رَضِیَ اللّٰہُ عَنْہُ কে ইয়াজিদের জন্মদাতা হিসাবে গালিগালাজ ও জঘন্য কুটুক্তি করে। نَعُوذُ بِاللَّهِ!

আসুন, এ মহান সাহাবী  رَضِیَ اللّٰہُ عَنْہُ সম্পর্কে কিছু বর্ণনা দেখি:

রাসুল ﷺ এর দোয়া:

রসুলুল্লাহ ﷺ আল্লাহ পাকের দরবারে আরয করলেন:

“ হে আল্লাহ তাঁকে (অর্থাৎ আমীরে মুয়াবিয়া رَضِیَ اللّٰہُ عَنْہ কে) পথ প্রদর্শক ও পথপ্রাপ্ত করে দাও এবং তাঁর মাধ্যমে মানুষকে হেদায়াত দান করো। ”
(তিরমিযী: ৫/৪০০ পৃষ্ঠা, হাদিস: ৩৮৬৮)

নবী করীম ﷺ এর ওহী লেখকদের মধ্যে হযরত যায়েদ বিন সাবেত رَضِیَ اللّٰہُ عَنْہُ সর্বাধিক হাজির থাকতেন। দ্বিতীয় স্থান ছিল হযরত মুয়াবিয়া رَضِیَ اللّٰہُ عَنْہُ-এর। দিন-রাত এ দুইজন ছায়ার মত নবীজীর সঙ্গে সঙ্গে থাকতেন। এ ছাড়া আর কোন দায়িত্ব তাঁদের ছিল না।
(জাওয়ামিউস সাহীহঃ ২৭ পৃষ্টা)

সাহাবী ও তাবেঈনদের দৃষ্টিতে আমীরে মুয়াবিয়া رَضِی َ اللّٰہُ عَنْہ:-

হযরত ইবনে আব্বাস رَضِیَ اللّٰہُ عَنْہُ বলেন:

“ শাসন ক্ষমতার জন্য হযরত মুয়াবিয়া  رَضِیَ اللّٰہُ عَنْہُ এর চেয়ে উপযুক্ত কেউ আমার নজরে পড়েনি। ” 
(মুসান্নাফে আব্দুর রাযযাক: হাদিস/২০৮৫) (আল বেদায়াঃ ৮/১৩৫ পৃষ্টা)

একবার হযরত উমর رَضِیَ اللّٰہُ عَنْہُ  উপস্থিতি হযরত  মুয়াবিয়া رَضِیَ اللّٰہُ عَنْہُ সম্পর্কে বিরূপ আলোচনা শুরু হলে সবাইকে থামিয়ে দিয়ে তিনি বলেন, যে কুরায়েশী যুবক চরম ক্রোধের মুহূর্তেও হাসতে পারে, যার হাত থেকে স্বেচ্ছায় না দিলে কিছু ছিনিয়ে আনা সম্ভব নয় এবং যার শিরস্ত্রাণ পেতে হলে পায়ে লুটিয়ে পড়া ছাড়া উপায় নেই, (অর্থাৎ, সহনশীলতা, সাহসিকতা ও আত্মসম্মানবোধে যে যুবক অতুলনীয়) তোমরা তার সমালোচনা করছ?
(আল ইসত’আবঃ ৩/৩৭৭ পৃষ্ঠা)

আল্লামা ইবনে কাসীর رَحۡمَۃُ اللّٰہ ِعَلَیہ বর্ণনা করেছেন: “ সিফফীনের যুদ্ধ থেকে ফিরে এসে আপন অনুগামীদের লক্ষ্য করে হযরত আলী رَضِیَ اللّٰہُ عَنْہُ বলেছিলেন: “ হে লোক  সকল মুয়াবিয়া  رَضِیَ اللّٰہُ عَنْہُ এর শাসনকে তোমরা অপছন্দ করো না। কেননা তাঁকে যেদিন হারাবে সেদিন দেখবে, ধড় থেকে মুন্ডগুলো হানযাল ফলের মত কেটে কেটে পড়ে যাচ্ছে। ”
(আল বিদায়াঃ ৮/১৩১ পৃষ্ঠা)

রঈসুল মুফাসসিরীন নবী ﷺ এর আপন চাচাতো ভাই হযরত ইবনে আব্বাস رَضِیَ اللّٰہُ عَنْہُ একবার ফিকাহ সংক্রান্ত বিষয়ে হযরত মুয়াবিয়া رَضِیَ اللّٰہُ عَنْہُ এর সমালোচনা কারীদের সাবধান করে বলেছিলেন, তিনি একজন ফকীহ ” (সুতরাং, তার সমালোচনা করার অধিকার কারো নেই) 
(আল বিদায়াঃ ৮/৩১ পৃষ্ঠা)

সমালোচনাকারীকে আরও বলেছিলেন, তিনি তো রাসূল (ﷺ)- এর সান্নিধ্য লাভ করেছেন। (অর্থাৎ, তিনি একজন সাহাবী তাই কোন অধিকারে তুমি তাঁর সমালোচনা করছো?)
(আল ইসাবাহঃ ৩য় খন্ড, পৃ-৪১২)

হযরত ইমাম হাসান رَضِیَ اللّٰہُ عَنْہُ কে বলা হল যে: “ হে আবু সাঈদ! একদল লোক রয়েছে যারা হযরত আমীরে মুয়াবিয়া رَضِیَ اللّٰہُ عَنْہُ  কে গালিগুলুজ করে ও অভিশাপ দেয়, তখন হযরত হাসান رَضِیَ اللّٰہُ عَنْہُ বললেন: “ যারা এরূপ করে তাদের উপর আল্লাহ'র লানাত বর্ষিত হয়। ” (ইবনে আসাকির: তারীখে দামেস্ক: ৫গ খন্ড, ২১১ পৃষ্ঠা) (কিতাবুশ শরীআ: ৫/২৪৬৭ পৃষ্ঠা)

হযরত হাসান رَضِیَ اللّٰہُ عَنْہ ও আমিরে মুয়াবিয়া رَضِیَ اللّٰہُ عَنْہ এর মধ্যে সমঝােতা:

হযরত আবু বকর رَضِیَ اللّٰہُ عَنْہ থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করিম ﷺ এর একদিন হযরত হাসান رَضِیَ اللّٰہُ عَنْہ কে নিয়ে বেরিয়ে এলেন এবং তাঁকেসহ মিম্বরে আরােহণ করলেন। তারপর বললেন: “ আমার এ ছেলেটি (নাতী) সাইয়্যেদ তথা সরদার। নিশ্চয়ই আল্লাহ তায়ালা এর মাধ্যমে বিবাদমান দু’দল মুসলমানের আপােস (সমঝােতা) করিয়ে দেবেন। ”
(বুখারীঃ হাদিস/২৭০৪) 

এখানে লক্ষ্যনীয় যে, স্বয়ং রাসূলুল্লাহ ﷺ দুইটি মুসলমান দল বলেছেন। তিনি কোন দলকে মুনাফিক বলে সম্বোধন করেন নি। এ হাদিস দ্বারা শিয়াদের কাফির মুনাফিক ফতোয়ার জবাব দেয়া যায়।

হযরত উমর বিন আব্দুল আযীয رَحۡمَۃُ اللّٰہ ِعَلَیہ কখনও কাউকে দোররা লাগাতেন না। তবে হযরত মুয়াবিয়া رَضِیَ اللّٰہُ عَنْہُ এর সমালোচনা করার অপরাধে দোররা লাগাতেন। ”
(আল বিদায়াঃ ৮/১৩৯ পৃষ্ঠা)

আরেক বর্ণনায়, ইব্রাহিম বিন মায়সারা رَحۡمَۃُ اللّٰہ ِعَلَیہِ বলেন:

“ আমি হযরত সায়্যিদুনা উমর বিন আব্দুল আযিয رَحۡمَۃُ اللّٰہ ِعَلَیہِ খেলাফতের যুগে হযরত সায়্যিদুনা আমীরে মুয়াবিয়া رَضِیَ اللّٰہُ عَنْہ সম্পর্কে কটুক্তিকারীকে ব্যতিত অন্য কাউকে চাবুক মারতে দেখিনি। ”
(তারিখে দামেস্ক: ৫৯/২১১ পৃষ্ঠা)
(শরহে উসুল ই'তিকাদ আহলে সুন্নাত, ২/১০৮৪ পৃষ্ঠা)

ওলামায়ে আহলে সুন্নাতের দৃষ্টিতে আমীরে মুয়াবিয়া رَضِیَ اللّٰہُ عَنْہ:-

হযরত আব্দুল্লাহ বিন মোবারক رَحۡمَۃُ اللّٰہ ِعَلَیہ বলেছেন:

“ আমাদের মধ্যে যদি কেউ আমীরে মুয়াবিয়া رَضِیَ اللّٰہُ عَنْہ এর দিকে বক্রভাবে তাকাই অথবা কু-কথা বলি তা হলে অব্যশই সাহাবার শানে বে আদবী করা হবে, আর সাহাবাদের শানে যারা গুস্তাখি করল তারা জাহান্নামী। ”
(তারিখে দামাস্ক: ৫৯/২১১ পৃষ্ঠা)

হুযুর গাউসে আযম, আব্দুল কাদের জিলানী رَحۡمَۃُ اللّٰہ ِعَلَیہِ  বলেন: 

“ হযরত আলীউল মুরতাজা শেরে খােদা رَضِیَ اللّٰہُ عَنْہ এবং হযরত আমীরে মুয়াবিয়া رَضِیَ اللّٰہُ عَنْہ এর মাঝে যে মতানৈক্য হয়েছে, তাতে আল্লাহ পাকের ইচ্ছা মনে করে মুখ বন্ধ রাখা উচিত। ”
(গুনিয়াতুত তালিবীন: ১ম খন্ড, ১৬১ পৃষ্ঠা)

ইমাম হযরত সায়্যিদুনা ইমাম আহমদ বিন হাম্বল رَحۡمَۃُ اللّٰہ ِعَلَیہِ এর দরবারে কেউ আরয করলাে: 

“ হে আবু আব্দুল্লাহ! আমার মামা হযরত আমীরে মুয়াবিয়া رَضِیَ اللّٰہُ عَنْہ কে মন্দ বলে এবং অনেক সময় আমার মামার সাথে খাবার খেতে হয় তবে কি করবাে? তিনি  رَحۡمَۃُ اللّٰہ ِعَلَیہِ সাথে সাথে বললেন: তার সাথে খাবার খাবে না। ” 
(আস সুন্নাত, ১ম খন্ড, ৪৪৮ পৃষ্ঠা)

হযরত ইমাম মুজাদ্দিদে আলফেসানী رَحۡمَۃُ اللّٰہ ِعَلَیہِ বলেন: 

“ হযরত সায়্যিদুনা আমীরে মুয়াবিয়া رَضِیَ اللّٰہُ عَنْہ (আল্লাহ পাকের হক) এবং বান্দার হক আদায় করার ক্ষেত্রে ন্যায় পরায়ন খলিফা ছিলেন। ”
(মাকতাবাতে ইমামে রাব্বানী, ১/৫৮ পৃষ্ঠা)

হযরত সায়্যিদুনা ইমাম শরফুদ্দীন নববী رَحۡمَۃُ اللّٰہ ِعَلَیہِ বলেন: 

“ হযরত সায়্যিদুনা আমীরে মুয়াবিয়া رَضِیَ اللّٰہُ عَنْہ ন্যায় পরায়ন কারীদের অন্তর্ভুক্ত, মর্যাদাপূর্ণ সাহাবী এবং বিশেষ গুণে গুণান্বিত সাহাবীদের অন্তর্ভুক্ত। ”
(শরহে মুসলিম লিন নববী, ৮ম খন্ড, ১৫ তম অংশ, ১৪৯ পৃষ্ঠা)

হযরত সায়্যিদুনা দাতা গঞ্জে বখশ আলি হাজবিরী رَحۡمَۃُ اللّٰہ ِعَلَیہ বলেন: 

“ হযরত সায়্যিদুনা আমীরে মুয়াবিয়া رَضِیَ اللّٰہُ عَنْہ হযরত সায়্যিদুনা ইমাম হুসাইন رَضِیَ اللّٰہُ عَنْہ এর সাথে এমন মুহাব্বাত ছিলাে যে, তাকে উন্নতমানের উপহার প্রদান করা সত্ত্বেও তাঁর থেকে ক্ষমা প্রার্থনা করে বলতেন: “ এখনাে আপনার সঠিক সেবা করতে পারিনি, ভবিষ্যতে আরাে বেশি উপহার পেশ করবাে। ” 
(কাশফুল মাহজুব, ৭৭ পৃষ্ঠা)

আরেক স্থানে তিনি رَحۡمَۃُ اللّٰہ ِعَلَیہ বলেন:

“ ইয়াযিদ যা করেছে তার প্রাপ্য লাঞ্ছনা আল্লাহ তাকে দিবেন তার পিতা (আমীরে মুয়াবিয়া رَضِیَ اللّٰہُ عَنْہ) কে নয়। ”
(কাশফুল মাহজুব: ১২০ পৃষ্ঠা)

হযরত আবি আব্দুল্লাহ رَحۡمَۃُ اللّٰہ ِعَلَیہ কে  জিজ্ঞাসা করা হল ওই সকল লোকেদের সর্ম্পকে যারা বলে ‘আমরা মুয়াবিয়া رَضِیَ اللّٰہُ عَنْہ কে কাতিবে ওহী ও মোমিনের মামা বলে মানি না,প্রত্যুত্তরে তিনি বলেনঃ

"এটা খুবই খারাপ ধারনা,এই সকল লোকেদের বিতারিত করা ও এদেরকে বয়কট অপরিহার্য।"
(আস সুন্নাহঃ২য় খন্ড, ৪৩৪, ৬৫৯ পৃষ্ঠা)

ইমাম নিসাপুরী رَحۡمَۃُ اللّٰہ ِعَلَیہ উল্লেখ করেছেন:

“ যারা আমীরে মুয়াবিয়া رَضِیَ اللّٰہُ عَنْہ  কে কটুক্তি করে  তাদের পিছুনে নামায জায়েয না তাদের প্রতি সন্মান প্রদর্শন। ”
(ফি মাসায়িলে ইবনে হানি আন নিসাপুরীঃ ১ম খন্ড, ৬০ পৃষ্ঠা)

হযরত ইমাম মালিক رَحۡمَۃُ اللّٰہ ِعَلَیہ এর মতে:

“ যদি কেহ সাহাবী’য়ে রসুলদের মধ্যে, যেমন হয রত আবুবকর,হযরত ওমর,হযরত ওসমান,হযরত আলি,হযরত মো’আবিয়া ও ওমর বিন আস প্রমুখদের গালি দেয় ,সে গোমরাহ ও কুফরের মধ্যে। ”
(আশ শিফা: ২/৪৯৩ পৃষ্টা)

আল্লামা শিহাব উদ্দীন খাফ্ফাজী رَحۡمَۃُ اللّٰہ ِعَلَیہ 'নসীমুর রিয়াজ শরহে শেফা ইমাম কাজী আয়াজ'র মধ্যে বলেন:

“ যে হযরত আমীরে মুয়াবিয়া رَضِیَ اللّٰہُ عَنْہ সমালোচনা করতঃ মন্দ বলে সে জাহান্নামের কুকুরগুলোর একটি। ” 
(আহকামে শরীয়ত: ১০১ পৃষ্টা, ২৪ নং মাস্'আলা দ্রাষ্টব্য)

Comments

Popular posts from this blog

বালাকোট আন্দোলনের হাকীকত

সৈয়দ আহমদ বেরলভীর জম্ম ও পরিচয়

মওদুদীর ভ্রান্ত আক্বিদা ও ইসলামী আক্বিদা