মিথ্যাবাদীদের প্রকৃত স্বরূপ(১)
গ্রন্থনায়– অধ্যক্ষ মাওলানা শেখ আব্দুল করিম সিরাজনগরী
বালাকোটিদের মিথ্যাবাদীদের মুখোশ উন্মোচন নামক বইয়ের খন্ডনে মিথ্যাবাদীদের প্রকৃত স্বরূপের ১ম পর্ব।
——————————————
[ভূমিকা]
নাহমাদুহু ওয়া নুসাল্লি ওয়া নুসাল্লিমু আলা রাসূলিহিল কারীম, আল্লাহর সােকর। আমার লিখিত ইজহারে হক্ব’ পুস্তকখানা ২০১২ ইংরেজি সনের মার্চ মাসে প্রথম প্রকাশিত হয়। উক্ত পুস্তকে আমি উপমহাদেশে যারা ওহাবি মতবাদ আমদানি করেছে, তাদের পরিচয় তুলে ধরেছি প্রমাণ সহকারে। এতে সৈয়দ আহমদ বেরলভী, তারই প্রধান খলিফা ইসমাইল
দেহলভী, মাও: কেরামত আলী জৈনপুরী এবং তাদের লিখিত কিতাব ‘সিরাতে মুস্তাকিম তাকভীয়াতুল ঈমান এবং ‘যখিরায়ে কেরামত’ পুস্তকগুলাের বাতিল আকিদা ও বিভ্রান্তিকর বক্তব্যের দলিলভিত্তিক জবাবও দিয়েছি।
বলা বাহুল্য, আমাদের দেশে উপরােল্লিখিত ব্যক্তিত্রয়ের সিলসিলাভুক্ত অনেক উত্তরসূরী এখনও রয়েছেন। তারা নিজেদের ঈমান-আমলের ইসলাহ বা সংশােধন না করে
উল্টো আহলে সুন্নাত ওয়াল জামায়াতের উলামায়ে হক্বানী রাব্বানীদের প্রতি বিষােদগার করতে কোন দিক দিয়েই কার্পণ্য করেনি। বিদআতী বা পথভ্রষ্টদের তাওবা নসিব হয়’ এজন্যই দিন দিন তাদের গাত্রদাহ বাড়তেই থাকে। এরই ধারাবাহিকতায় ঠিকানাবিহীন, অজ্ঞাত, অপরিচিত সাইফুল্লাহ আল হানাফীর নামে মিথ্যাবাদীদের মুখােশ উন্মােচন ১’ নাম দিয়ে একটি বই বের হয়েছে। শুধু নামসর্বস্ব শাহ ওয়ালিউল্লাহ ফাউন্ডেশন’ নামে ঠিকানাবিহীন
প্রকাশনায় সাজিয়ে বইটি প্রকাশ দেখানাে হয়েছে। এমনকি বইটি কোন প্রেস থেকে মুদ্রিত হয়েছে তাও গােপন রাখা হয়েছে।
এরূপ নাম ঠিকানাবিহীন বইয়ের জবাব দেয়ার প্রতি প্রথমত: তেমন প্রয়ােজনবােধ করিনি। কিন্তু পরবর্তীতে দেখা যায়, সিলেটের এক বিশেষ পীর সাহেবের ভক্ত-মুরিদগণ
বইটি গােপনে গােপনে নিজ হাতে বিলি করছেন। এতে জানার বাকী রইল না যে, বইটি কোন পক্ষ থেকে লিখা ও প্রকাশ করা হয়েছে। তবে স্বাভাবিক মনে প্রশ্ন জাগে ঠিকানা দেয়ার পেছনে রহস্যটা কী? জানা আবশ্যক যে, উপমহাদেশে ওহাবি মতবাদ প্রচারক হিসেবে সৈয়দ আহমদ বেরলভী, ইসমাইল দেহলভী ও
মাও: কেরামত আলী জৈনপুরীর নাম বিশেষভাবে উল্লেখযােগ্য। সৈয়দ আহমদ বেরলভীর মলফুজাত সিরাতে মুস্তাকিম,
যা ইসমাইল দেহলভী কর্তৃক লিখিত এবং অপর পুস্তক তাকভীয়াতুল ঈমান, যা নজদী প্রণীত কিতাবুত তাওহীদের মর্মানুসারে লিখিত। উল্লেখিত দুইটি গ্রন্থের দ্বারাই উপমহাদেশে ওহাবী মতবাদ ব্যাপকভাবে প্রসার লাভ করেছে। মাও: কেরামত আলী জৈনপুরী ছিলেন তাদেরই যােগ্য প্রতিনিধি। তার লিখিত ‘জখিরায়ে কেরামত’ নামক কিতাবে উপরােল্লেখিত গ্রন্থদ্বয় তথা তাকভীয়াতুল ঈমান ও ‘সিরাতে মুস্তাকিম এর বিভ্রান্তপূর্ণ বক্তব্যের জোড়ালাে সমর্থন রয়েছে। এমনকি তার পৌত্র মাও: আব্দুল বাতেন জৈনপুরীর লিখিত মাওলানা কেরামত আলী জৈনপুরী
ছাহেবের জীবনী’ গ্রন্থেও এ বিষয়ের পুন: স্বীকৃতির উল্লেখ রয়েছে। বস্তুত: মাও: কেরামত আলী জৈনপুরী সাহেবের মাধ্যমেই তাকভীয়াতুল ঈমান ও সিরাতে মুস্তাকিমের বাতিল আকিদাগুলাে বাংলা ও আসামে ব্যাপক প্রসার লাভ করেছে।
তার খলিফাগণের দ্বারা আজও তাদের এই মিশন অব্যাহত রয়েছে। কিন্তু আমার লিখিত পুস্তক ইজহারে হকৃ’ প্রকাশ হওয়ার সাথে সাথে তাদের অব্যাহত মিশন কিছুটা বাধাগ্রস্থ
হয়। তাদের গোমরও অনেকের কাছে ফাঁস হয়ে যায় এবং তারা সুন্নি মুসলমানদের কাছে বিভিন্ন প্রশ্নের সম্মুখীন হন। ফলে তাদের গাত্রদাহ দ্বিগুণ বেড়ে যায়। বিকল্প ব্যবস্থা হিসেবে তারা আমার লেখার উপর অমূলক বিভিন্ন অভিযােগ এনে ‘মিথ্যাবাদীদের মুখােশ উন্মােচন ১’ নামে
বই লিখেছে, এ যেন তাদের গাত্রদাহ উপশমের ব্যর্থ প্রচেষ্টা।
একটা প্রবাদ আছে
হাকিকত কভি চুপতি নিহি বানাউট কি বাতুছে
খুশবু কবহি আতি নিহি কাগজো কি ফুলেছে।
অর্থাৎ বানাউট বা মিথ্যার দ্বারা হাকিকত বা প্রকৃত বিষয়কে যেমন ঢেকে রাখা যায় না, কাগজের ফুল হতে সুগন্ধি পাওয়ারও তেমনি আশা করা যায় না।
এমন একটি ঠিকানাবিহীন বই বের করে সুন্নি উলামায়ে কেরামের প্রচার-প্রসারে কোন প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করা যাবে। এটা আমাদের বিশ্বাস। তবে তাদের এই ব্যর্থ কারসাজি
সরলমনা কিছু লােকের মনে সন্দেহ সৃষ্টিরই অপপ্রয়াস মাত্র। এ সন্দেহ নিরসনে উক্ত বইয়ের কতিপয় বিষয়ের জবাব দিতে শত ব্যস্ততা থাকা সত্ত্বেও কলম হাতে নিলাম।
ইসলামের নামে যে সমস্ত বাতিল দল যুগে যুগে সুন্নি মুলমানদেরকে বিপথগামী করার জন্য আত্মপ্রকাশ করেছে, যেমন খারেজি, রাফেজি, ওহাবি, লা-মাযহাবি, মওদুদি, তবলিগি ও নব্য সালাফি ফিতনা। তারা আহলে সুন্নাত ওয়াল।
জামায়াতের পরিপন্থী আকিদা প্রচার করে মুসলমানদেরকে বিপথগামী করছে। এজন্য হক্কানী উলামায়ে কেরাম যুগে-যুগে এই সব বাতিল মতবাদের খণ্ডন করে ইসলামের
সঠিক রূপরেখা তথা আহলে সুন্নাত ওয়াল জামায়াতের আকিদাকে সুপ্রতিষ্ঠিত করেছেন লেখনির মাধ্যমে। উপমহাদেশে ওহাবি, লা-মাযহাবি প্রভৃতি বাতিল ফেরকার
ভ্রান্ত আকিদার খণ্ডনে যারা কলম ধরেছেন তন্মধ্যে আ’লা হযরত আল্লামা শাহ আহমদ রেজা খান বেরলভী আলাইহির রহমত ছিলেন অন্যতম। এজন্য সুন্নি মুসলমানগণ আ’লা হযরতকে ইমামে আহলে সুন্নাত বলেঅভিহিত করে থাকেন।
পক্ষান্তরে যারা প্রকাশ্যে কিংবা আড়ালে থেকে ওহাবি মতবাদ লালন করে, তারা স্বাভাবিক কারণেই আ’লা হযরতের প্রতি বৈরিভাব পােষণ করে থাকে। এমনকি আ’লা হযরতের পরবর্তী অনুসারীদেরকেও তাদের শত্রু হিসেবেই মনে করে। কথিত সাইফুল্লাহ হানাফীর নামে লিখিত ‘মুখােশ উন্মােচন ১’ বইটিতেও এর প্রতিফলন লক্ষ্য করা যায়। আমি উক্ত বইয়ের বিভিন্ন প্রতারণামূলক বক্তব্যের খণ্ডন ও অসারতা প্রমাণ করেছি এ ক্ষুদ্র পুস্তকে। আমার এ পুস্তক প্রণয়নে যারা সহযােগিতা করেছেন তারা হলেন-
১. সিরাজনগর ফাজিল মাদ্রাসার সহকারী অধ্যাপক মাওলানা শেখ মােহাম্মদ সিরাজুল ইসলাম আলকাদেরী,
২. অত্র মাদ্রাসার সিনিয়র আরবি প্রভাষক মাওলানা শেখ জুবাইর আহমদ রহমতাবাদী,
৩. আমার স্নেহের বড়ছেলে অত্র মাদ্রাসার ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ আলহাজ্ব মাওলানা মুফতি শেখ শিব্বির আহমদ।
৪. চুনারুঘাট হাজী আলীম উল্লাহ আলীয়া মাদ্রাসার সুযােগ্য সিনিয়র আরবি প্রভাষক মাওলানা শেখ মুশাহিদ আলী।
সুতরাং যাদের সহযােগিতায় ও দানের বদৌলতে গ্রন্থটি মুসলিমসমাজে পেশ করা ম্ভব হলাে, তাদের জন্য আল্লাহ তা’য়ালার মহান দরবারে দোয়া করছি। আল্লাহপাক যেন
সংশ্লিষ্ট সকলের দুনিয়া ও আখেরাতে কামিয়াবি নসিব করেন। আমিন।
গ্রন্থকার
মিথ্যাবাদীদের স্বভাব- চরিত্রই হলো যে, মিথ্যা কথাকে সাজিয়ে গুছিয়ে মনোমুগ্ধকর ও আকর্ষণীয় করে সমাজের সামনে পেশ করা এবং সমাজকে বিভ্রান্ত করা। কিন্তু নিজেরা এটাই বুঝাইতেই চায় না যে, শাক দিয়ে যেমন মাছ ঢেকে রাখা যায় না তেমনি সত্যকে মিথ্যা দিয়ে কখনো ঢেকে রাখা যায় না।
আমাদের দেশে একটি সম্প্রদায় দীর্ঘদিন যাবত
নিজেদের বদ আকিদা গােপন রেখে সমাজের কাছে সুন্নি বলে পরিচয় দিয়ে আসছিল। কিন্তু তাদের সিলসিলার ঊর্ধ্বতন পীর মাশায়েখের লিখিত বই-পুস্তক থেকে তাদের বদ আকিদা গুলাে মুছে ফেলা তাদের পক্ষে সম্ভব হয়নি।
ফলে আহলে সুন্নাত ওয়াল জামায়াতের অনুসারী উলামায়ে কেরামগণ যখন তাদের গােপনীয় বদ আকিদাগুলাে দলিল প্রমাণ দিয়ে প্রকাশ করে দিলেন তখন তারা দিশেহারা হয়ে
নিজেরা দ্বিধাবিভক্ত হয়ে পড়ে। কেউ কেউ বই-পুস্তক লিখে নির্লজ্জভাবে বদ আকিদার সাফাই গাইতে থাকে। আবার কেউ কেউ বিভিন্ন অজুহাত ও টালবাহানার মাধ্যমে নিজেদের মিথ্যা দাবির উপর অটল থাকার অপচেষ্টা করে। তাদের মধ্যে অন্যতম দল হলাে আমাদের দেশের সিলসিলায়ে জৈনপুরী ওয়ালারা। তারা নিজেদেরকে পরিচয় দেয় সুন্নি বলে অথচ তাদের আকিদা হলাে ওহাবি বাতিল আকিদা। তাদের পীর মাশায়েখ ও ঊর্ধ্বতন বুযুর্গদের লিখিত বই-পুস্তকই তার প্রমাণ। বিশেষ করে তাদের লিখিত প্রসিদ্ধ তিনটি কিতাবে তাদের বাতিল আকিদার পরিচয় পাওয়া যায়।
১. তাকভীয়াতুল ঈমান।
২. সিরাতে মুস্তাকিম ও
৩. যখিরায়ে কারামত।
জৈনপুরী সিলসিলার প্রবর্তক মাও: কেরামত আলী জৈনপুরী সাহেব তিনটি কিতাবের বিষয়-বস্তুর উপর বিশ্বাস ও আমল করার খুব জোর তাকিদ দিয়েছেন। সুতরাং এই তিনটি কিতাবে কী আছে এবং এ ব্যাপারে উলামায়ে আহলে
সুন্নাতের বক্তব্য কী সেটা পরিস্কার করলে জৈনপুরী ওয়ালাদের প্রকৃত স্বরূপ প্রকাশ হয়ে পড়বে।
______________
বালাকোটিদের মিথ্যাবাদীদের মুখোশ উন্মোচন নামক বইয়ের খন্ডনে মিথ্যাবাদীদের প্রকৃত স্বরূপের ২য় পর্ব।
——————————————
ইসমাইল দেহলভী ও তার প্রণীত তাকভীয়াতুল
ঈমান সম্পর্কে হারামাইন শরীফাইনের ফতােয়া
আহলে সুন্নাত ওয়াল জামায়াতের পরিপন্থি ভ্রান্ত মতবাদসমূহের মধ্যে বর্তমানে ওহাবী মতবাদ অন্যতম। আরবের মুহাম্মদ বিন আব্দুল ওহাব নজদী এ ভ্রান্ত মতবাদের প্রবর্তক। তার লিখিত কিতাবুত তাওহীদ গ্রন্থটি হলাে ওহাবী মতবাদ প্রচারের প্রধান হাতিয়ার। পাকভারত বাংলা উপমহাদেশে ওহাবী ফিতনার অনুপ্রবেশ ও এর সূত্রপাত যাদের মাধ্যমে সংঘটিত হয়েছিল তাদের মধ্যে মৌলভী ইসমাইল দেহলভী অন্যতম (নিহত ১৮৩১ইং)। সে আরবের মুহাম্মদ বিন আব্দুল ওহাব নজদীর লিখিত কিতাবুত তাওহীদ গং এর মর্মানুযায়ী উর্দু ভাষায় ‘তাকভীয়াতুল ঈমান’ নামক একটি কিতাব রচনা করে উপমহাদেশে বহুল পরিমাণে তা প্রচার করে। ফলে তাকভীয়াতুল ঈমান গ্রন্থটি পাকভারত উপমহাদেশে ওহাবী মতবাদের প্রচারপত্র হিসেবে কাজ করে। ১২৪০ হিজরি সনে গ্রন্থটি প্রথমবার দিল্লীতে প্রকাশিত হয়। মাওলানাকেরামত আলী জৈনপুরী বিতর্কিত ‘তাকভীয়াতুল ঈমান’ গ্রন্থকে সমর্থন করায় বাংলা ও আসামে এর ব্যাপক প্রসার
লাভ করে। তবে এ বিতর্কিত গ্রন্থটি প্রকাশ হওয়ার সাথে সাথে আরব-আজম বিশেষ করে উপমহাদেশের হক্বানী উলামায়ে কেরাম এর তীব্র প্রতিবাদ করেন এবং তার ভ্রান্ত মতবাদ খণ্ডনে ফতােয়া ও লেখনির মাধ্যমে সুন্নি
মুসলমানদেরকে হুশিয়ার করে দেন।
নিম্নে এ বিষয়ে হক্কানী উলামায়ে কেরাম ও মুফতিয়ানে এজামের কতিপয় ফতােয়া,মতামত ও সিদ্ধান্ত প্রদত্ত হলাে। ‘তাকভীয়াতুল ঈমান’ নামক বিতর্কিত কিতাবটির বিষয়বস্তু সম্পর্কে জ্ঞাত হয়ে হারামাঈন শরীফাইন তথা মক্কা-মদীনার তদানিন্তন শীর্ষস্থানীয় উলামায়ে কেরাম ও মুফতিয়ানে এজামগণ এ কিতাবটিকে নজদী-ওহাবী মতবাদ অবলম্বনে লিখিত বলে অভিমত ব্যক্ত করেন এবং উক্ত কিতাবের ভ্রান্ত আক্বিদা থেকে মুসলমানদের সতর্ক থাকার উপদেশ দিয়ে উক্ত কিতাবের বিরুদ্ধে ফতােয়া প্রদান করেন। যা আল্লামা কাযী ফজল আহমদ লুদিয়ানভী তদীয়
আনােয়ারে আফতাবে ছাদাকাত’ নামক কিতাবের ১ম খণ্ড ৫৩৩ পৃষ্ঠায় সংকলন করেন। যা নিম্নে হুবহু তুলে ধরা হলাে।
لا شك في بطلان منقول من تقوية الايمان بكونه موافقا للنجدية مأخوذ من كتاب التوحيد القرن الشيطان وايضاله نسبت تقوية الايمان و مولف ان هذا الدجال والكذاب استحق اللعنة من الله تعالى وملئكة واولى
العلم وسائر العالمين الخ……
অর্থাৎ নিঃসন্দেহে (মৌং ইসমাইল দেহলভী কৃত) ‘তাকভীয়াতুল ঈমান’ নামক গ্রন্থটি বাতিল। উহা শয়তানের শিং (মুহাম্মদ বিন আব্দুল ওহাব নজদীর কিতাবুত তাওহীদ
অনুকরণে লেখা হয়েছে। এ কিতাবটির রচয়িতা দাজ্জাল কাজ্জাব যা আল্লাহ ও তাঁর ফেরেশতাগণ, বিচক্ষণ উলামায়ে কেরাম এবং সমস্ত সৃষ্টিকুলের পক্ষ থেকে লা’নত বা অভিশাপ পাওয়ার যােগ্য। উক্ত ফতওয়ার মধ্যে মক্কাশরীফ ও মদিনাশরীফ এর যে সকল উলামায়ে কেরাম ও মুফতিয়ানে এজাম স্বাক্ষর
করেছিলেন তাদের নাম নিম্নে উল্লেখ করা হলাে।
১. আব্দুহু জামান শায়খ ওমর, মক্কা মুয়াজ্জমা।
২. আহমদ দাহলান, মক্কা মুয়াজ্জমা।।
৩. আব্দুহু আব্দুর রহমান, মক্কা মুয়াজ্জমা।
৪. মুফতি মােহাম্মদ আল কবী, মক্কা।
৫. সৈয়দ আল ওয়াছউদ আল হানাফী মুফতি, মদিনা মুনাওয়ারা।
৬. মােহাম্মদ বালী, খতিব মদিনা মুনাওয়ারা।
৭. সৈয়দ ইউসুফ আল আরাবী, মদিনা মুনাওয়ারা।
৮. সৈয়দ আবু মােহাম্মদ তাহির ছিদ্দেকী, মদিনা মুনাওয়ারা।
৯. মােহাম্মদ আব্দুছ ছায়াদত, খতিব মদিনা মুনাওয়ারা।
১০. আব্দুল কাদির দিতাবী, মদিনা মুনাওয়ারা।
১১. মৌলভী মােহাম্মদ আশরাফ খুরাসানী, বেলাওতী, মদিনা মুনাওয়ারা।
১২. শামছুদ্দিন বিন আব্দুর রহমান, মদিনা মুনাওয়ারা (রাদিয়াল্লাহু আনহুম) প্রমুখ। (আনােয়ারে আফতাবে ছাদাকাত ১ম খণ্ড ৫৩৩ পৃষ্ঠা)। হারামাইন শরীফাইনের উপরােক্ত ফতওয়াখানা মৌলভী ইসমাইল দেহলভীর যুগে ১৮৩১ ইংরেজী সনের পূর্বে প্রদত্ত হয়েছিল।
অনুরূপ মৌলভী ইসমাইল দেহলভীর লিখিত
‘তাকভীয়াতুল ঈমান’ নামক কিতাবে বাতিল আকিদার খণ্ডনে মােজাহিদে মিল্লাত আল্লামা ফজলে হক খায়রাবাদী (ওফাত ১৮৬১ ইং ১২৭৮ হিজরি) তিনি ১২৪০ হিজরি
রমজানশরীফের ১৮ তারিখে তাহক্বীকুল ফতওয়া’ নামক একখানা কিতাব প্রণয়ন করে মুসলিমসমাজকে সঠিক পথের সন্ধান দিয়েছেন। উক্ত ফতওয়ার মধ্যে তৎকালীন যুগশ্রেষ্ট ১৭ জন উলামায়ে কেরাম ও মুফতিয়ানে এজামের স্বাক্ষর রয়েছে।
তন্মধ্যে বিশ্ববিখ্যাত মােহাদ্দিস শাহ ওলী উল্লাহ মােহাদ্দিসে দেহলভী (আলাইহির রহমত) এর নাতী মাওলানা মাখছুছ উল্লাহ (আলাইহির রহমত) ও মাওলানা মুছা (আলাইহির রহমত) ছিলেন অন্যতম। উল্লেখ্য যে, হুসামূল হারামাইন’ নামক আরাে একখানা
ফতওয়া ১৩২৪ হিজরি সনে প্রকাশিত হয়। এ ফতওয়াখানা চতুর্দশ শতাব্দীর মােজাদ্দিদ আ’লা হযরত ইমামে আহলে সুন্নাত আল্লামা শাহ আহমদ রেজা খান বেরলভী রাদিয়াল্লাহু
আনহু কর্তৃক প্রণীত এবং তৎকালীন মক্কাশরীফ ও মদিনাশরীফের প্রখ্যাত উলামায়ে কেরাম ও মুফতিয়ানে এজাম কর্তৃক প্রশংসিত ও স্বাক্ষরিত। হারামাইন শরীফাইনের তদানিন্তন মুফতিয়ানে কেরামের প্রদত্ত ফতােয়া দ্বারা প্রমাণিত হলাে মৌলভী ইসমাইল দেহলভী কৃত তাকভীয়াতুল ঈমানই হচ্ছে উপমহাদেশের ওহাবী মতবাদের উপর লিখিত প্রথম গ্রন্থ
এবং ইসমাঈল দেহলভী হল এই মতবাদের অন্যতম প্রচারক।
_____________
বালাকোটিদের মিথ্যাবাদীদের মুখোশ উন্মোচন নামক বইয়ের খন্ডনে মিথ্যাবাদীদের প্রকৃত স্বরূপের ৩য় পর্ব।
তাকভীয়াতুল ঈমান প্রসঙ্গে
একটি ঐতিহাসিক চিঠি
__________________________________
শাহ আব্দুল আজিজ মােহাদ্দিসে দেহলভী আলাইহির রহমত এর আপন ভাতিজা শাহ মখছুছ উল্লাহ দেহলভী (আলাইহির রহমত) এর নিকট আল্লামা ফজলে রাসূল বদায়ূনী (আলাইহির রহমত) ইসমাঈল দেহলভীর লিখিত ‘তাকভীয়াতুল ঈমান গ্রন্থ প্রসঙ্গে সাতটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন সম্বলিত এক ঐতিহাসিক চিঠি প্রেরণ করেছিলেন। এর জবাবে শাহ মাখছুছ উল্লাহ দেহলভী (আলাইহির রহমত) যে বক্তব্য দিয়েছিলেন তা নিম্নে প্রদত্ত হলাে ফজলে রাসূল বদায়ুনীর লিখিত পত্র – ছালামবাদ আরজ এই যে, শাহ ইসমাঈল দেহলভী কর্তৃক প্রণীত তাকভীয়াতুল ঈমান’ প্রকাশিত ও প্রচারিত হওয়ার পর থেকে জনসাধারণের মধ্যে এ কিতাবের পক্ষে বিপক্ষে বড় ধরনের বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে। গ্রন্থের বিপক্ষে যারা অবস্থান নিয়েছেন, তারা বলছেন, এ গ্রন্থের বক্তব্য ছলফে ছালেহীন ও ছাওয়াদে আজম তথা
বড় জামায়াত এমনকি লিখকের খানদানের নীতি বা আক্বিদা ও আমলের সম্পূর্ণ বিরােধী। এ কিতাবে লিখিত ফতওয়ার দরুন তার উস্তাদগণ হতে সাহাবায়ে কেরাম পর্যন্ত কেহই তার সাজানাে কুফুর ও শিরিক হতে অব্যাহতি পাননি। আর এ গ্রন্থের স্বপক্ষে যারা অবস্থান নিয়েছেন, তারা বলছেন, এ গ্রন্থের বক্তব্য ছলফে সালেহীন ও তার খান্দানের অনুকূলে। এ ব্যাপারে আপনি যা জানেন, সম্ভবত অন্য লােকেরা তা জানেন না।
একটা প্রবাদ আছে
اهل البيت ادری ما في البيت
অর্থাৎ ঘরের লােক ঘরে কি আছে, তা অন্যের তুলনায় অধিক জ্ঞাত। এরূপ ধারণা করে আমি আপনার কাছে জানতে চাচ্ছি। আশা করি সঠিক উত্তর প্রদান করবেন।
প্রশ্ন ১. তাকভীয়াতুল ঈমান কিতাবটি আপনার খানদানের আক্বিদা ও আমলের পক্ষে না বিপক্ষে?
প্রশ্ন ২. অনেকে বলেন ‘তাকভীয়াতুল ঈমান’ কিতাবের মধ্যে আম্বিয়ায়ে কেরাম ও আউলিয়ায়ে কেরামের সাথে বে-আদবী করা হয়েছে। এর প্রকৃত অবস্থা কি?
প্রশ্ন ৩. শরিয়তের দৃষ্টিতে তাকভীয়াতুল ঈমান কিতাবের লেখকের কি হুকুম?
প্রশ্ন ৪. অনেকে বলেন আরবের মুহাম্মদ বিন আব্দুল ওহাব নজদী জন্ম নিয়ে, সে নতুন মতবাদ প্রচার করেছিল। আরবের হক্কানী উলামায়ে কেরামগণ তার উপর তাকফীর বা কুফুরি ফতওয়া প্রদান করেছেন। তাকভীয়াতুল ঈমান’ কিতাবটি ওহাবী মতবাদ অনুযায়ী লিখিত?
প্রশ্ন ৫. মুহাম্মদ ইবনে আব্দুল ওহাব নজদীর লিখিত কিতাবুত তাওহীদ’ যখন হিন্দুস্তানে পৌঁছে তখন আপনার চাচাগণ (শাহ আব্দুল আজিজ, শাহ আব্দুল কাদির, শাহ আব্দুল গণি) ও আপনার পিতা (শাহ রফী উদ্দিন) এ কিতাব দেখে কী মন্তব্য করেছিলেন?
প্রশ্ন ৫. এ কথা বিপুল প্রচারিত ও প্রসিদ্ধ যে, যখন ওহাবী মাযহাবের নতুন মতবাদ প্রচার হলাে তখন আপনি দিল্লির জামে মসজিদে তাশরীফ নিয়ে গেলেন, তখন আল্লামা রশীদুদ্দিন খান দেহলভী (ওফাত ১২৫৯ হিজরি ১৮৪৩ ইংরেজি) প্রমুখ জ্ঞানী-গুণী ব্যক্তিবর্গ আপনার সাথে ছিলেন। আপনারা খাস ও
আম সমাবেশে মৌলভী ইসমাইল দেহলভী ও
মাওলানা আব্দুল হাই সাহেবদ্বয়কে তর্কযুদ্ধে
নিরুত্তর ও পরাজিত করেছিলেন। এ কথা কতটুকু সত্য?
প্রশ্ন ৭. ঐ সময় (১২৪০ হিজরি) আপনার খান্দানের শাগরিদ ও মুরিদগণ (মাও: ইসমাঈল দেহলভী ও আব্দুল হাই উভয়ের মতবাদের) তাদের পক্ষে ছিলেন, না আপনাদের পক্ষে ছিলেন? (নিবেদক ফজলে রাসূল বদায়ূনী)।
উপরােক্ত (সাতটি প্রশ্ন সংবলিত) পত্রের জবাবে আল্লামা শাহ মাখছুছ উল্লাহ দেহলভী বিন শাহ রফী উদ্দিন দেহলভী (আলাইহির রহমত) এর লিখিত বক্তব্যের হুবহু বঙ্গানুবাদ নিম্নে পেশ করা হলাে।
_____________________
উত্তর ১. তাকভীয়াতুল ঈমান’ কিতাবের নাম আমি (শাহ মাখছুছ উল্লাহ দেহলভী) তাফবিয়াতুল ঈমান রেখেছি। অর্থাৎ এ কিতাব একীন ও বিশ্বাসের সাথে পাঠ করলে ঈমানদারের ঈমান আর থাকে না , বরং ধ্বংস হয়ে যায়। ‘তাকভীয়াতুল ঈমান কিতাবের খণ্ডনে ‘মঈদুল ঈমান’ নামক কিতাব রচনা করেছি। ইসমাঈল দেহলভীর লিখিত ‘তাকভীয়াতুল ঈমান’ নামক কিতাব শুধু আমাদের খান্দান কেন? সকল আম্বিয়া ও রাসূলগণ (আলাইহিমুস সালাম) এর তাওহীদ ও ঈমান শিক্ষার পরিপন্থী। কেননা পয়গাম্বরগণকে তাওহীদ শিখাবার জন্য এবং খােদাপ্রদত্ত ঈমান ও আক্বিদার উপর চালাবার জন্য প্রেরণ করা হয়েছিল। তাকভীয়াতুল ঈমান’ কিতাবে খােদাপ্রদত্ত তাওহীদ ও পয়গাম্বরগণের সুন্নাতের সঙ্গে কোন সম্পর্ক নেই। ইসমাঈল দেহলভী শিরিক ও বিদআতের সংজ্ঞা নিজের ব্যক্তিমতে সাজিয়ে লােকদেরকে শিখাবার অপচেষ্টা চালাচ্ছে তার লিখিত তাকভীয়াতুল ঈমান’ কিতাবের মাধ্যমে।
উত্তর ২. ইসমাইল দেহলভী নিজের ব্যক্তিমতে সাজিয়ে শিরকের যে সংজ্ঞা প্রণয়ন করে তাকভীয়াতুল ঈমান কিতাব রচনা করেছেন, তাতে ফিরিশতাগণ এমনকি স্বয়ং রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও আল্লাহর শরীক হয়ে যান। (নাউজুবিল্লাহ) ইসমাঈল দেহলভীর ব্যক্তিমতে সাজিয়ে যে শিরকের সংজ্ঞা প্রণয়ন করেছেন, এ শিরকের ফতওয়ায় যারা রাজি থাকেন তারাও আল্লাহ তায়ালার নিকট অপছন্দনীয়। ইসমাঈল দেহলভী মনগড়ামতে বিদআতের যে সংজ্ঞা সাজিয়েছে, তাতে আউলিয়ায়ে কেরাম ও সুফিয়ায়ে এজামগণ বিদআতী সাব্যস্ত হন। এটাই শক্ত বে-আদবীর লক্ষণ।
উত্তর ৩ : প্রথম দু’টি উত্তর দ্বারা দ্বীনদার, গুণী-জ্ঞানী ব্যক্তিবর্গ অতি সহজে বুঝতে সক্ষম হবেন, যে পুস্তকের দ্বারা লােকগণ সংশােধন হওয়ার পরিবর্তে উশৃঙ্খল ও বিশৃঙ্খল সৃষ্টিকারী লােক জন্ম নেয় এবং সমস্ত আম্বিয়ায়ে কেরাম ও আউলিয়ায়ে এজামগণের বিপরীত বা ব্যতিক্রম মত ও পথ প্রকাশ হতে থাকে, কষ্মিকালেও তা হেদায়তের রাস্তা হতে পারে না। তার লিখিত পুস্তক বা আমলনামা আমার নিকট মওজুদ আছে। এ কিতাব পাঠ করলে হেদায়তের পরিবর্তে ফি ফাসাদ বিশৃঙ্খলা সৃষ্টিকারী লােকের প্রভাব বৃদ্ধি হতে থাকবে। অধিকন্তু এ পুস্তিকা অশাস্তি, মূর্খতা ও বােকামীর উৎসাহ প্রদান করে। বাস্তব সত্য যে, আমাদের খানদানে ইসমাঈল নামে এমন এক ব্যক্তির জন্ম নিয়েছে, আমাদের খানদানের অন্য সব আলেমদের সঙ্গে তার কোন প্রকারের মিল নেই। আক্বিদা বা বিশ্বাস, নিছবত বা সম্বন্ধ কোন কিছুতেই মিল অবশিষ্ট রহিল না। সে আল্লাহর প্রতি উদাসীন হওয়ার দরুণ সবকিছু তা থেকে ছিনিয়ে নেয়া হয়েছে। এটা সে প্রবাদ বাক্যের মতাে: যখন যথাযত সম্মান প্রদর্শন করবে না, সেটাই বেদ্বীনি। আর তাই হলাে।
উত্তর ৪. মুহাম্মদ বিন আব্দুল ওহাব নজদীর পুস্তিকা ‘কিতাবুত তাওহীদ’ যেন মতন বা পাঠ ছিল। মৌলভী ইসমাইল দেহলভীর লিখিত কিতাব ‘তাকভীয়াতুল ঈমান যেন সেই কিতাবুত
তাওহীদেরই শরাহ বা ব্যাখ্যাগ্রন্থ হিসেবে পরিগণিত।
উত্তর ৫. বড় চাচা (শাহ আব্দুল আজিজ মােহাদ্দিসে দেহলভী আলাইহির রহমত) দৃষ্টিশক্তি হারিয়ে ফেলেছিলেন। তাঁকে বলতে শুনেছি যদি অসুস্থতার কারণে অপারগ না হতাম, তা হলে শিয়াদের বদ আক্বিদার বিরুদ্ধে যেভাবে ‘তােহফায়ে ইছনা আশারা’ কিতাব লিখেছি ঠিক তেমনিভাবে আব্দুল ওহাব নজদীর লিখিত ‘কিতাবুত তাওহীদ’ এর বাতিল আকিদার খণ্ডনে কিতাব লিখতাম। তাকে (ইসমাইল দেহলভীকে) ওহাবী মতবাদে
প্রভাবান্বিত করে বিপথগামী করেছে। আমার পিতা (রফী উদ্দিন মােহাদ্দিসে দেহলভী আলাইহির রহমত) তাকে (ইসমাঈল দেহলভীকে)দেখেননি।
বড় চাচা হযরত (শাহ আব্দুল আজিজ মােহাদ্দিসে দেহলভী আলাইহির রহমত) এ কথা বলার পর ইসমাইল দেহলভীর লিখিত ‘তাকভীয়াতুল ঈমান দ্বারা তার বদ আক্বিদা প্রকাশ হয়ে গেল। যখন তিনি তাকে গােমরাহ বলে জানতে পারলেন, তখন ‘তাকভীয়াতুল ঈমান কিতাবের খণ্ডনে লিখতে নির্দেশ দিলেন।
উত্তর ৬. প্রশ্নেবর্ণিত সব কিছুই বাস্তব সত্য। এজন্য আমি (মাখছুছ উল্লাহ দেহলভী) পরামর্শের দৃষ্টিতে তাকে (ইসমাইল দেহলভী) বলেছিলাম তুমি সকল থেকে (আমাদের খান্দানের উলামায়ে কেরামের আক্বিদা ও আমল থেকে বিচ্যুত হয়ে যে দ্বীনের গবেষণা করছ, তা তুমি লিখে কেন প্রকাশ কর না।
এভাবে আমাদের পক্ষ থেকে যত প্রকারেরই প্রশ্ন হয়ে ছিল, কোন প্রশ্নেরই উত্তর না দিয়ে, শুধুমাত্র জ্বি হ্যাঁ, জ্বি হ্যা বলতে বলতে মসজিদ থেকে সে চলে গেল।
উত্তর ৭. ১২৪০ হিজরিতে দিল্লির জামে মসজিদে প্রথম বিতর্ক সভা পর্যন্ত আমাদের খানদানের ভক্ত মুরিদগণ সবাই আমাদের মতবাদ ও নীতির উপরই বহাল ছিলেন।
অতঃপর তার অবাস্তব কথা শুনে আনাড়ী
লােকেরা তার প্রতি আকৃষ্ট হয়। আমাদের পিতার শাগরিদ ও মুরিদগণের মধ্যে অনেকেই এর থেকে বেঁচে থাকছেন। যদিও কেউ কেউ গিয়ে থাকেন তা আমাদের জানা নেই।
(উত্তরদাতা শাহ মখছুছ উল্লাহ বিন শাহ রফি উদ্দিন দেহলভী)
উল্লেখ্য যে, শাহ মাখছুছ উল্লাহ দেহলভীর পিতা ছিলেন শাহ রফী উদ্দিন দেহলভী এবং তাঁর পিতা ছিলেন শাহ ওলী উল্লাহ মােহাদ্দিসে দেহলভী (আলাইহিমুর রহমত) আল্লামা শাহ মাখছুছ উল্লাহ দেহলভী ও আল্লামা ফজলে
রাসূল বাদায়ূনী (আলাইহিমার রহমত) এর উপরােক্ত ‘পত্রালাপ’ দ্বারা স্পষ্টভাবে এ কথা প্রমাণিত হলাে, মৌলভী ইসমাঈল দেহলভীর লিখিত ‘তাকভীয়াতুল ঈমান গ্রন্থের বিভ্রান্তিমূলক বক্তব্য তার খানদানের বিশিষ্ট বুজুর্গানে দ্বীন যথাক্রমে শাহ আব্দুর রহিম মােহাদ্দিসে দেহলভী, শাহ ওলী উল্লাহ মােহাদ্দিসে দেহলভী, শাহ আব্দুল আজিজ মােহাদ্দিসে দেহলভী, শাহ আব্দুল কাদির মােহাদ্দিসে দেহলভী, শাহ রফী উদ্দিন মােহাদ্দিসে দেহলভী, শাহ আব্দুল গণি
মােহাদ্দিসে দেহলভী, শাহ মুছা দেহলভী ও শাহ মাখছুছ উল্লাহ মােহাদ্দিসে দেহলভী প্রমুখ ইসলামজগতের বিজ্ঞ মােহাদ্দিসীন, মুফাসসিরীন, উলামায়ে কেরামগণের আক্বিদা ও আদর্শের সম্পূর্ণ পরিপন্থী। কেননা তাঁরা সকলই ছিলেন আহলে সুন্নাত ওয়াল জামায়াতের পূর্ণ আক্বিদায় বিশ্বাসী।
অপর দিকে ইসমাঈল দেহলভী ছিল ওহাবী মতাদর্শের বিশ্বাসী। আর মাও: কেরামত আলী জৈনপুরী এর ঘাের সমর্থক
(জখিরায়ে কারামত)।
____________________________
Comments
Post a Comment