পয়গামে হক্ব

পয়গামে হক্ব
(ইমামে আহলে সুন্নাত, আল্লামা কাযী মুহাম্মদ নূরুল ইসলাম হাশেমী (মু.জি.আ.) কর্তৃক চট্টগ্রাম জেলা পরিষদ মিলনায়তনে প্রদত্ত বক্তব্য ২০ জুলাই ২০১১ইং)

প্রকাশনায় : আঞ্জুমানে মুহিব্বানে রাসুল ﴾ﷺ﴿ গাউছিয়া জিলানী কমিটি- বাংলাদেশ
দরবারে হাশেমীয়া আলীয়া শরীফ, চট্টগ্রাম।

সহযোগিতায় : শাহজাদা মুফতি কাযী মুহাম্মদ আবুল এরফান হাশেমী

মোবাইল : ০১৮১৯৬৩১৫৮২

টেক্সট রেডীঃ মুহাম্মদ আব্দুল খালেক 

_____________________________

ভূমিকা : বিগত ১৬ই মে ২০১১ইং ঢাকা ইঞ্জিনিয়ারিং ইন্সটিটিউট-এ 'বালাকোট ডাক দিয়ে যায়' শীর্ষক অনুষ্ঠানে আমার উপস্থিতিতে সুন্নী অঙ্গনে একটি বিভ্রান্তি ছড়িয়ে পড়েছে। ইতিপূর্বে ২০১০ সালেও 'চেতনায় বালাকোট সম্মেলন স্মারক ২০১০' পুস্তকের ১১ পৃষ্ঠায় তাদের মতাদর্শের সাথে একমত হয়ে সাক্ষর দাতা ওলামা মশায়েখের তালিকায় আমার নাম লিখে দেয়া হয়েছে। এ বিষয়ে আমি আল্লামা শেখ আবদুল করীম সিরাজনগরী সাহেবের 'ইজহারে হক্ব' পুস্তকে আমার প্রদত্ত অভিমতের মধ্যে স্পষ্ট যে, ভারতবর্ষে মুহাম্মদ ইবনে আবদুল ওয়াহহাব নজদীর বাতিল আক্বীদা প্রচারের ক্ষেত্রে সৈয়দ আহমদ ব্রেলভী ও মৌং ইসমাঈল দেহলভীই মূখ্য ব্যক্তি।

ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম আসার পর কয়েক দিনের মধ্যেই আমার সাথে ঢাকা যাওয়ার বিষয়ে আলোচনা করার জন্য বেশ কিছু আলেম-ওলামা তশরীফ এনেছেন। তাঁদের মধ্যে আমার স্নেহভাজন মাওলানা মুফতী ওবাইদুল হক নঈমী, মাওলানা সৈয়দ মছিহুদ্দৌলা, মাওলানা মুহাম্মদ ইব্রাহীম আলকাদেরী, মাওলানা কাজী মঈনউদ্দীন আশরাফী, মাওলানা নূর মুহাম্মদ আলকাদেরী, মাওলানা স.উ.ম আবদুস সামাদ, মাওলানা গোলামুর রহমান আশরাফ শাহ, মাওলানা হাফেজ সৈয়দ রুহুল আমীন প্রমুখ এর নাম উল্লেখযোগ্য।
তাঁদের সাথে দীর্ঘ আলোচনায় আমি উল্লেখ করেছি, আমাকে কী ভাবে প্রতারণা করে নেয়া হয়েছে। এ বিষয়ে পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দেয়ার কথা হয়েছে। দৈনিক ইনকিলাব-এ প্রেরিত বিজ্ঞাপন ছাপাতে অপারগতা প্রকাশ করে ফেরত দেয়া হয়েছে। দৈনিক পূর্বকোণ, বীর চট্টগ্রাম মঞ্চ ও কালের কণ্ঠ পত্রিকায় বিজ্ঞাপন ছাপানো হয়েছে। উক্ত বৈঠকের সিদ্ধান্ত অনুসারেই চট্টগ্রাম জেলা পরিষদ মিলনায়তনে ২০-০৭-২০১১ইং তারিখে ওলামায়ে কেরামের মতবিনিময় সভা করা হয়েছে। উক্ত মতবিনিময় সভায় আমি সংক্ষিপ্ত মৌখিক বক্তব্য দিয়েছি এবং আমার লিখিত বক্তব্য মাওলানা মুহাম্মদ ইব্রাহীম আলকাদেরী আমারই উপস্থিতিতে পাঠ করে শুনিয়েছেন। এটাও আমার মৌখিক বক্তব্যের অংশ। জেলা পরিষদ মিলনায়তনে সংক্ষেপে আমি বলেছি, আমার পূর্বপুরুষগণ ও আমি কোন নতুন সুন্নী নই, হঠাৎ করে সুন্নী হইনি। আমি আলিম পরিবারেই জন্মগ্রহণ করেছি। আমার বাবা, দাদা, নানা সকলেই সুন্নীয়তের খেদমত আঞ্জাম দিয়েছেন। পাকিস্তান স্বাধীন হওয়ার দু'বছর পূর্বে ১৯৪৫ সালে আমার আব্বাজান হযরত আল্লামা শাহ আহসানুজ্জামান (রাহমাতুল্লাহি আলাইহি–'র নির্দেশে ওহাবীদের বাতিল আক্বীদা সম্পর্কে আল্লামা মুফতী মুহাম্মদ মুছা মুজাদ্দেদী (রাহমাতুল্লাহি আলাইহি) উর্দু ভাষায় একটি পুস্তক কাব্যাকারে লিখেছেন। আমি ছাত্র জীবনে সেটাকে বাংলা অনুবাদ সহকারে ছাপিয়ে দেই। তাতে উল্লেখ রয়েছে যে, ওহাবী মতবাদ ভারতবর্ষের প্রচারের মূলনায়ক সৈয়দ আহমদ ব্রেলভী ও মৌলভী ইসমাঈল দেহলভী দু'জনই। সৈয়দ আহমদের বাণী সম্বলিত, ইসমাঈলের লিখিত 'সিরাতে মুস্তাকীম' কিতাবটি ওহাবীদের অন্যতম মূল কিতাব। উক্ত কিতাবে তাদের অনেক বাতিল আক্বীদা লিখা হয়েছে। আমার লিখিত সংক্ষিপ্ত বক্তব্যকে সামান্য সংযোজনের মাধ্যমে পুস্তিকা আকারে প্রকাশ করার জন্য নির্দেশ দিয়েছি। সংযোজিত অংশও আমার বক্তব্য।

(আল্লামা) কাযী মুহাম্মদ নূরুল ইসলাম হাশেমী
(সভাপতি ও ইমামে আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা'আত-বাংলাদেশ)
____________________________
ভারতবর্ষে মুহাম্মদ ইবনে আবদুল ওয়াহ্হাব নজদীর মতবাদ বা ওহাবী মতবাদ প্রচার-প্রসারের মূল নায়ক সৈয়দ আহমদ ব্রেলভী ও মৌং ইসমাঈল দেহলভীর নেতৃত্বে সংঘটিত বালাকোট যুদ্ধ সম্পর্কে
ইমামে আহলে সুন্নাত
আল্লামা কাযী মুহাম্মদ নূরুল ইসলাম হাশেমী (মু.জি.আ.)'এর

বক্তব্য
পাক-ভারত উপমহাদেশে বৃটিশ শাসনামলে সংঘটিত বালাকোটের যুদ্ধ ইতিহাসে একটি প্রসিদ্ধ ঘটনা। এ যুদ্ধের মূল নায়ক হলেন, সৈয়্যেদ আহমদ ব্রেলভী ও মৌং ইসমাঈল দেহলভী। দুজনেরই আক্বীদা বাতিল। ভারতবর্ষে ওহাবী মতবাদ প্রচারের ক্ষেত্রে এ দু'জনই মূখ্য ব্যক্তি। তাদেরকে ঈমান আক্বীদার বিষয়ে ছাড় দেয়ার আদৌ সুযোগ নেই। তারা প্রথমে বৃটিশ বিরোধী আন্দোলনের দোহাই দিয়ে সাধারণ মুসলমানদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। পরবর্তীতে শিখদের বিরুদ্ধে জিহাদের বাহানা করে অসংখ্য সরলমনা মুসলমান ও কিছু সংখ্যক পীর-মশায়েখকে জড়ো করতে সক্ষম হন। যখন পীর-মশায়েখগণ দেখলেন, এ যুদ্ধ শিখদের বিরুদ্ধে নয়; বরং পাঠান সুন্নী মুসলমানদের বিরুদ্ধেই। তখন তাদের একটি অংশ যুদ্ধ থেকে সরে দাঁড়ান। সৈয়্যেদ আহমদ ও তার একান্ত সহযোগী ইসমাঈল দেহলভী নিশ্চিত পরাজয় বুঝতে পেরে পলায়ন করতে বাধ্য হন এবং তারা উভয়ই নিহত হন। বালাকোট যুদ্ধ স্মরণ করতে গেলে তারা দুজনকে বাদ দেয়ার কোন সুযোগ নেই। আবার তাদেরকে বাদ দিয়ে ভারতবর্ষে ওহাবী বলে কাউকে আখ্যায়িত করারও সুযোগ নেই।

আ'লা হযরত ইমাম আহমদ রেযা খান ব্রেলভী, সদরুল আফদ্বেল সৈয়দ নঈম উদ্দীন মুরাদ-আবাদী ও গাজীয়ে দ্বীন ও মিল্লাত আল্লামা সৈয়দ আজিজুল হক শেরে বাংলা রাহমাতুল্লাহি আলাইহিম আজমাঈনকে বাদ দিয়ে যেমন-সুন্নীয়তের দাবী সঠিক হবে না, তেমনিভাবে সৈয়্যদ আহমদ ব্রেলভী ও ইসমাঈল দেহলভীকে বাদ দিয়ে অন্যদেরকে ওহাবী বলে আখ্যায়িত করাও ঠিক হবে না। এযাবৎ যারা সৈয়্যদ আহমদ ব্রেলভীর জীবনী গ্রন্থ রচনা করেছেন-তারা সকলেই তো ওহাবী মতবাদে বিশ্বাসী। সৈয়্যেদ আহমদ ব্রেলভী ও ইসমাঈল দেহলভী উভয়ই ওহাবী মতবাদের মূল নায়ক হলেও শিখদের বিরুদ্ধে কিংবা ইংরেজদের বিরুদ্ধে যুদ্ধের বাহানা করে জড়ো করার পর, কৌশলে সকল পীর মশায়েখকে সৈয়্যেদ আহমদ তার খলিফা বলে ঘোষণা দেন। যাতে তারা সৈয়্যেদ আহমদের পক্ষে কাজ করতে উৎসাহিত হন। তাদের এ আন্দোলন মূলতঃ মুহাম্মদ ইবনে আবদুল ওহ্হাব নজদীর বাতিল আক্বীদা প্রচারের নিমিত্তে চালু করা হলেও ওই আন্দোলনের নাম দেয়া হয়েছে; 'তরীক্বায়ে মুহাম্মদীয়া'। 'তরীক্বায়ে মুহাম্মদীয়া' ও 'ওহাবী আন্দোলন' একই মতবাদকে প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে গঠিত। মানুষকে ক্বাদেরীয়া, চিশতিয়া, নকশবন্দীয়া ইত্যাদির নাম নিয়ে তরীক্বত থেকে ভিন্ন পথে পরিচালনা জন্যই একটি কৌশল হিসেবে 'তরীক্বায়ে মুহাম্মদীয়া' গঠিত। এ তরীক্বার মূল উদ্দেশ্য হলো সুন্নী মুসলমানদেরকে তরীক্বতের দোহাই দিয়ে সুন্নী আক্বীদা থেকে সরিয়ে আনা। তরীক্বায়ে মুহাম্মদীয়া আন্দোলন বা তরীক্বায়ে মুহাম্মদীয়া হলো একটি বিষযুক্ত দুধের পাত্র। এখানেই রয়েছে সুন্নী মুসলমানদের ঈমান নাশক বিষ।

তাদের ছলচাতুরী বুঝতে পেরে অনেক পীর-মশায়েখ তার পক্ষ ত্যাগ করেন। শেখ জেবুল আমীন দুলাল "চেতনার বালাকোট" পুস্তকের ২২ পৃষ্ঠায় লিখেছেন, "তৎকালীন উপমহাদেশে কাদেরীয়া, চিশতিয়া এবং নকশবন্দিয়া এই তিনটি বাইয়াত গ্রহণের তরীকা প্রচলিত ছিল। সৈয়্যদ সাহেব এসব তরীকা বাদ মুহাম্মদীয়া তরীকায় বাইয়াত গ্রহণ করাতেন। এ ব্যাপারে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, 'মুহাম্মদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) হলেন, সবচেয়ে বড় পীর।' তাঁর উপর কোন পীর নেই। তাঁর তরীকা বাদ দিয়ে অন্য কারো ত্বরীকা শ্রেষ্ঠ হতে পারে না।" উক্ত পুস্তকের ২৩ পৃষ্ঠায় লিখা হয়েছে- "সৈয়্যদ আহমদ কর্তৃক গৃহীত নীতিসমূহের ভিত্তিতে গড়ে ওঠা আন্দোলনের নাম পড়ে গেল 'ত্বরীকায়ে মুহাম্মদী আন্দোলন'।*১ এখানে লক্ষণীয় যে, সৈয়দ আহম্মদ ব্রেলভীর কৃতিত্বের উপর লিখিত পুস্তকেই লিখা হলো সৈয়দ আহমদ-কাদেরীয়া, চিশতিয়া ও নকশবন্দিয়া বাদ দিয়েই নতুন তরীকা চালু করলেন, 'তরীকায়ে মুহাম্মদীয়া' আন্দোলন। এখন তার খলিফাগণ ও তাদের খলীফাগণ বাইয়াত করার সময় কাদেরীয়া, চিশতিয়া ইত্যাদির *২ কথা বলছেন কেন? এটা প্রতারণার সামিল।

__________________________________
(*১) সৈয়দ আহমদ ব্রেলভীর তরীকায়ে মুহাম্মদী আন্দোলন ও মুহাম্মদ ইবনে আবদুল ওয়াহ্হাব নজদীর সংস্কার আন্দোলন এক মুদ্রার এপিট ওপিট। স্বয়ং সৈয়দ আহমদ সাহেবের সমর্থনে লিখিত পুস্তকেই একথার স্বীকৃতি রয়েছে। দেখুন, ..... 'এই মুহাম্মদ বিন আবদুল ওয়াহ্হাবের আন্দোলন পরিচালিত হয় প্রধানত: সাতটি মূলনীতির ভিত্তিতে। (এক) আল্লাহর প্রতি দৃঢ় বিশ্বাস স্থাপন করা। (দুই) মানুষের ও খোদার মধ্যবর্তী হওয়ার কোন অধিকার নেই। (তিন) সরাসরি কুরআনের অর্থ ও শিক্ষা গ্রহণের অধিকার মুসলমান মাত্রেরই আছে- একথা বিশ্বাস করা। (চার) মধ্যযুগে ও বর্তমানে যেসব বাহ্যিক আচার অনুষ্ঠান ইসলামে ঢুকে পড়েছে, সেগুলো সরাসরি প্রত্যাখ্যান করা। (পাঁচ) ঈমাম মেহেদীর আবির্ভাবের আশায় সর্বদা প্রস্তুত থাকা। (ছয়) কার্যকরী ভাবে কাফেরদের সাথে জিহাদ করা ফরজ, সার্বক্ষণিক সে বিষয়ে বিশ্বাস রাখা। (সাত) অকুন্ঠচিত্তে নেতার আনুগত্য করা।
সৈয়দ সাহেবের ইসলামী আন্দোলন ও মুহাম্মদ বিন আবদুল ওয়াহ্হাবের সংস্কার আন্দোলনের মূলনীতির সাথে অনেকটা সাদৃশ্য থাকার ফলে অসতর্কতাবশত: অনেকেই উপমহাদেশের এ আন্দোলনকেও ওয়াহ্হাবী আন্দোলন আখ্যা দিয়েছিল।' (চেতনার বালাকোট ৪০/৪১পৃ.)
বিচার করার দায়িত্ব পাঠকদের বিবেচনায় রইলো। উপরোল্লিখিত পুস্তকের ভাষ্য থেকে স্পষ্ট প্রতীয়মান হয় যে, সৈয়দ আহম্মদ ব্রেলভী ও মুহাম্মদ বিন আবদুল ওয়াহ্হাব নজদীর মূলনীতি অনেকটাই সাদৃশ্যপূর্ণ। সুতরাং তাদেরকে কেন ওহাবী বলা হয়, তা' ব্যাখ্যার অবকাশ রাখে না।
(*২) যেহেতু তাদের তরীকায়ে মুহাম্মদীয়ার প্রতিষ্ঠাতা ওই তরীকা প্রতিষ্ঠার সময় অন্য সব তরীকা বিলুপ্ত করে দিয়েছেন, সেহেতু তারা তরীকায়ে কাদেরীয়া, ছিশতিয়া, নক্সবন্দীয়া ইত্যাদির নাম উল্লেখ করা, প্রতারণা বৈ-কিছুই নয়। কারণ তাদেরই ইমামের ভাষায় 'মুহাম্মদিয়া তরীকার উপর অন্য কোন তরীকার প্রাধান্য হতে পারে না'। এখন তাদের কাজ ও তাদের ইমামের সিদ্ধান্ত সম্পূর্ণ বিপরীত।

____________________________________
আসলে শিখ ও ইংরেজীদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ মনে করে প্রতারণার শিকার হয়েই অনেক পীর মশায়েখ ওই যুদ্ধে অংশ গ্রহণ করেছিলেন। তাঁরাতো আদৌ সৈয়দ আহমদের মুরীদ নন।*৩ তারা এদেশে পীর হিসেবে প্রতিষ্ঠিত ছিলেন। ফলে মুরীদান-ভক্তদেরকে নিয়ে জিহাদ করতে যাওয়া তাঁদের পক্ষে সম্ভব হয়েছিলো। জেহাদের জন্য হয়ত তাঁর কাছে সরল মনে বাইয়াত হতে পারেন। তবে না তাঁরা নিজেদের পীর ছেড়ে যান, না সৈয়দ আহমদের ত্বরীকতে দীক্ষা লাভ করেছেন। সেই রেয়াজতের দীর্ঘ সময়ও বা তাঁরা পেলেন কোথায়? যুদ্ধের সংক্ষিপ্ত সময়ে বাইয়াত হয়ে, রেয়াজত করে, বুজুর্গী হাসিল করার পর খেলাফত পাওয়া পর্যন্ত দীর্ঘ দিন সেখানে অপেক্ষা করার কথা কোন ঐতিহাসিকদের কলমে আসেনি। তাঁরা পূর্ব থেকে যাঁদের কাছে মুরীদ হয়ে আধ্যাত্মিক শক্তি অর্জন করে পীর খেতাব লাভ করেছিলেন, বালাকোট থেকে ফিরে এসেও তাঁরা আপন আপন পীর ও মুর্শিদের ত্বরীকতের ধারাবাহিকতায় কাজ করেছেন। শুধু শুধু তাঁদেরকে সৈয়দ আহমদের মুরীদ হওয়া ছাড়া খলীফা বানিয়ে খাটো করার প্রয়োজন কি? কিছু সংখ্যক বাতিলপন্থী, ওহাবীয়ত গোপন করে এসব ত্বরীকতের পীর-মশায়েখের দরবারে ঢুকে সৈয়দ আহমদকে মূখ্য ও তাঁদের আসল মুর্শিদকে গোপন কিংবা গৌণ করে তুলে ধরেছে।*৪ ফলে ইতিহাস বিকৃতির বিভ্রান্তিতে সুন্নী তথা সর্বস্তরের মুসলমান প্রতারণার শিকার হয়েছেন। প্রতারণা তাদের একটা বড় অস্ত্র।*৫

____________________________________
(*৩) যেমন হযরত সূফী নূর মুহাম্মদ নিজামপুরী (রাহমাতুল্লাহি আলাইহি) আজিমপুর বড় দায়েরা শরীফের মহান মুর্শিদ হযরত শাহ্ সূফী সৈয়দ লক্বীয়তুল্লাহ্ (রাহমাতুল্লাহি আলাইহি) এর নিকট মুরীদ হয়ে, তরীকতের ওজীফা আদায় ও রিয়াজত মুজাহিদা (সাধনা) করেই তরীকতের আধ্যাত্মিক শক্তি লাভ করেন। সেখান থেকেই তিনি 'সুফী' উপাধি লাভ করেন। ওই দরবারের খলিফাদের তালিকায় তাঁর নাম উল্লেখ রয়েছে যদিও তিনি বিশিষ্ট মুরীদ হিসেবে খ্যাত। সুতরাং তিনি তো পীর হিসেবেই এখান থেকে যুদ্ধে গিয়েছিলেন। সে বাইয়াত হলো জিহাদের জন্য বাইয়াত। তরীকতের ধারায় পীর মুরীদির বাইয়াত নয়। (পরবর্তীতে আরো জানবেন) 

(*৪) এখনো যারা সৈয়দ আহমদ ব্রেলভীর পক্ষে লিখছেন ও বলছেন, তাদের মধ্যে এমন সব ব্যক্তিও রয়েছেন, যাঁরা সুন্নীদেরকে রেজাখানী আখ্যায়িত করে ঘৃণার চোখে দেখেন। আবার কেউ কেউ ইমাম আহমদ রেজার নাম ব্যঙ্গ করে আহমক রেজা বলে থাকেন। কিন্তু মোনাফেকী চরিত্রের বহিঃপ্রকাশ ঘটিয়ে 'চেতনায় বালাকোট সম্মেলন স্মারক ২০১০' পুস্তকের এক জায়গায় নিজেকে আ'লা হযরত ইমাম আহমদ রেজা খান ব্রেলভী (রাহমাতুল্লাহি আলাইহি) এর ভক্ত ও অনুসারী পরিচয় দিয়েছেন। এটাও প্রতারণা নয় কি?
এধরণের ছদ্মবেশে ঢুকে পড়া ওহাবীদের বিভ্রান্তির কারণে আমাদের দেশে বড় বড় দরবারের সরলমনা পীর সাহেবান পর্যন্ত হযরত সূফী নূর মুহাম্মদ নিজামপুরী (রাহমাতুল্লাহি আলাইহি) কে ছৈয়দ আহমদ ব্রেলভীর মত বাতিল আক্বীদা পোষণকারীর মুরীদ পরিচয় দিয়ে বেড়াচ্ছেন। আর তাঁর আসল পীরের নাম গোপন করে ফেলেছেন।

(*৫) প্রতারণা না হলে, আমাকে অন্য কথা বলে বালাকোটের আলোচনা সভায় নেয়ার কারণ কী? উক্ত সম্মেলনে যোগদানকারী বা আমন্ত্রিতদের মধ্যে আমার নাম গোপন করে পত্রিকায় সংবাদ প্রচার করা হলো কেন? আমি যাব না বুঝেই তো? এটাই তো প্রতারণা।

____________________________________
এখনো সেই প্রতারণার ধারাবাহিকতা তাদের উত্তরসূরীদের মধ্যে বিদ্যমান। ২০১০ সালে বালাকোট চেতনা উজ্জীবন পরিষদ, ফুলতলী ভবন, ১৯/এ নয়া পল্টন, ঢাকা-১০০০ এর উদ্যোগে 'চেতনায় বালাকোট সম্মেলন স্মারক ২০১০' নামক একটি পুস্তক ছাপানো হয়েছে। উক্ত পুস্তকের ১১ পৃষ্ঠায় ফর দাতা উলামা মাশায়েখ এর তালিকায় '*** ৩নং স্টার' এ আমার নাম পীর সাহেব হাশেমীয়া দরবার শরীফ, চট্টগ্রাম-হিসেবে লিখা হয়েছে। অথচ আমার স্বাক্ষর গ্রহণ তো দূরের কথা, নাম লিখার জন্য মৌখিক অনুমতিও নেয়া হয়নি। একইভাবে বিগত ১৬ইং মে ঢাকা ইঞ্জিনিয়ারিং ইন্সটিটিউট এ অনুষ্ঠিত 'বালাকোট ডাক দিয়ে যায়' শীর্ষক অনুষ্ঠানে আমাকে নেয়া হয়েছে প্রতারণা করেই।
আমাকে বলা হয়েছে, জমিয়তুল মুদার্রেসীন-এর সম্মেলন ও নারী নীতির উপর বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গের সাথে মত বিনিময়ের কথা বলে। বাতিল পন্থীদের অনুষ্ঠানে প্রতারিত হয়ে, আমার উপস্থিতি সুন্নী মুসলমানদের কত যে বিভ্রান্ত করেছে, এটা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। আফসোস, সৈয়্যদ আহমদ ব্রেলভী ও ইসমাঈল দেহলভী সম্পর্কে আমি তো আল্লামা আবদুল করিম সিরাজ নগরী (মু.জি.আ.)-এর লিখিত 'ইজাহারে হক্ব' পুস্তকে আমার অভিমত উল্লেখ করেছি। আল্লামা মুফতী ইদ্রিস রেজভী সাহেবের পুস্তকেও আমার অভিমত স্পষ্ট। এতদসত্ত্বেও আমাদের কিছু লোকজনের লাগামহীন বক্তব্য আমাকে শুধু ব্যাথিতই করেনি, তাদের আগামী দিনের কার্যকলাপের ব্যাপারে আমাকে উদ্বিগ্ন করে তুলেছে। কারণ আমার এখন প্রায় শেষ সময়। আগামীতে আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতের পক্ষে তারা কিভাবে দায়িত্ব পালন করবে? সৈয়দ আহমদ ব্রেলভীর মূল সহযোগী ছিলেন মৌং ইসমাঈল দেহলভী *৬ ও মৌং আবদুল হাই। 'চেতনায় বালাকোট সম্মেলন স্মারক ২০১০' পুস্তকে ওদেরকে গোপন করা হলো কেন? এখন এটাই মূল প্রশ্ন? উত্তর আমাদের হাতে তো দলীল প্রমাণসহ রক্ষিত আছে। এদেরকে সৈয়্যেদ আহমদ ব্রেলভীর সহযোগী হিসেবে দেখানো হলে, ভারতে মুহাম্মদ ইবনে আবদুল ওয়াহাব নজদীর আক্বীদা কার মাধ্যমে কিভাবে প্রচার-প্রসার হয়েছে, এমন কি সৈয়দ আহমদ ব্রেলভী নিজেও
___________________________________
(*৬) মৌং ইসমাঈল দেহলভী হলেন, সৈয়দ আহমদ ব্রেলভীর একান্ত সহযোগী, তার কিতাবেই মুহাম্মদ বিন আবদুল ওয়াহ্হাব নজদীর যাবতীয় আক্বীদা লিখা হয়েছে। তার লিখিত তাকবিয়াতুল ঈমান পুস্তকটি মুহাম্মদ ইবনে আবদুল ওয়াহ্হাব নজদীর লিখিত 'কিতাবুত্ তাওহীদ' এর সারসংক্ষেপ। এটাকে উর্দু ভাষায় 'কিতাবুত্ তাওহীদ' বললে অত্যুক্তি হবে না।
উক্ত তাকবিয়াতুল ঈমানের খন্ডনে উপমহাদেশের বিশিষ্ট ওলামা-মাশায়েখ কলম ধরেছেন। তাতে রয়েছে, অসংখ্য কুফরী আক্বীদা। পীরে কামেল আল্লামা মোখলেছুর রহমান মির্জাখিলী (রাহমাতুল্লাহি আলাইহি), চট্টগ্রাম সর্বপ্রথম ফার্সী ভাষায় 'শরহে সুদূর' কিতাব লিখে তাকবিয়াতুল ঈমান- কিতাবের খন্ডন করেছেন। আল্লামা ফজলে রাসূল বাদায়ূনী (রাহমাতুল্লাহি আলাইহি) লিখেছেন, তাহকীকুল ফাত্ওয়া ফী এবতালিত্ ত্বাগওয়া। আল্লামা সৈয়দ নঈমুদ্দীন মুরাদাবাদী (রাহমাতুল্লাহি আলাইহি) লিখেছেন, 'আত্ইয়াবুল বয়ান'। এছাড়া আরো অসংখ্য কিতাব লিখা হয়েছে। এ যাবত কোন সুন্নী আলেমের পক্ষে ওহাবীরা কোন কিতাব লিখেছেন বলে কোন প্রমাণ নেই। সৈয়দ আহমদ ব্রেলভী সে কেমন সুন্নী, যার বাণীগুলো লিখার জন্য একজন সর্বজন স্বীকৃত ওহাবীকে পছন্দ করে নিলেন? আর ইসমাঈল দেহলভী কেমন বোকা ওহাবী যে, একজন সুন্নী পরিচিত ব্যক্তির মতবাদ লিখার জন্য, তার সাথে যুদ্ধ করার জন্য, পুরো জীবন উৎসর্গ করলেন? আসলে তো উভয়েই একে অপরের সম্পূরক ও এক মুদ্রার এপিট ওপিট। আর তারাও কেমন নির্লজ্জ সুন্নী যারা সর্বজন স্বীকৃত ওহাবীর মদদ দাতাকে নিজেদের পীর বা পীরের পরিচয় দিতে লজ্জা বোধ করছেন না? বালাকোট স্মরণে আয়োজিত কোন সম্মেলনেই মৌং ইসমাঈল দেহলভীর কথা উল্লেখ করা হয়নি। কারণ ইসমাঈলের কথা বলতে গেলে, তাদের থলের বিড়াল বের হয়ে যাবে।
___________________________________
নবী করীম সাল্লাল্লাহু তায়ালা আলাইহি ওয়াসাল্লামের শানে কত জঘন্য বেয়াদবী ও ধৃষ্টতা দেখিয়েছেন, তার সব গোমর ফাঁস হয়ে যাবে। সৈয়দ আহমদের বাণী 'সিরাতে মুস্তাকীম' (লিখক ইসমাঈল) ও ইসমাঈলের 'তাক্বভিয়াতুল ঈমান' -এ দুটি কিতাবই তো ভারতে ওহাবীদের মূল কিতাব। তাদের ধারাবাহিকতায় অথবা তাদেরকেই রক্ষা করতে গিয়ে অন্যরা আরো গোলমাল করে ফেলেছেন। নিম্নে তাদের আক্বীদাগত কিছু বিষয় তুলে ধরেছি-
(১) সৈয়্যেদ আহমদ গং এর আক্বীদা হলো- নামাযের মধ্যে জিনা বা ব্যভিচারের চেয়ে স্ত্রী সহবাসের খেয়াল উত্তম এবং আপন পীর কিংবা অন্য কোন বুজর্গের খেয়াল এমন কি রাসূলে পাক সাল্লাল্লাহু তায়ালা আলাইহি ওয়া সাল্লামের খেয়ালও হোক না কেন, তাদেরকে খেয়াল করার চেয়ে স্বীয় গরু-গাধার খেয়াল করা উত্তম। (নাউজুবিল্লাহ্) (সিরাতে মুস্তাকীম ১৬৭ পৃ: উর্দু, ৭৮, ৭৯ পৃ: ফার্সী) এখানে নবী-অলীর খেয়ালকে গরু-গাধার সাথে মিলানো সন্দেহাতীতভাবে মানহানিকর উক্তি। সুতরাং এটা কুফর। কিতাবে আরো লিখা হয়েছে- এ ধরনের কুমন্ত্রন যুক্ত রাকাতগুলোতে এক রাকাতের পরিবর্তে চার রাকাত নফল পড়ে দেওয়া বাঞ্ছনীয়। আর ইচ্ছাকৃত খেয়াল করলে শিরক পর্যায়ে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। (সিরাতে মুস্তাকীম: ১৬৮পৃ:)
উক্ত কিতাবে আরো উল্লেখ আছে যে, আল্লাহর অলীদের মাজার জেয়ারতের উদ্দেশ্যে সফর করা বিদআত ও শিরক পর্যায়ের। (সিরাতে মুস্তাকীম: ১০২ পৃ: আরো অনেক কিছু)
মজার কথা হলো-চেতনায় বালাকোট স্মারক-২০১০ এর অন্যতম প্রবন্ধ লিখক সূফী গোলাম মহিউদ্দীন সাহেব লিখেছেন-"শুক্রবার, ১৮ই আগষ্ট ১৮৮৯ সাল। সেদিন ৮/১০ জনের এক কাফেলা ইসলামাবাদ থেকে ২৫০ কিলোমিটার পথ সফর করে, বালাকোট মাজার জেয়ারত করতে গিয়েছিলেন।" জানিনা সৈয়্যেদ আহমদ ব্রেলভীর ফাতওয়া মতে তিনি মু'মিন না মুশরিক (কাফির)?

উক্ত 'সিরাতে মুস্তাকীম' কিতাবে আরো উল্লেখ করা হয়েছে-চুরি করা ও জিনা করার সময় যেমন ঈমান থাকে না। তদ্রুপ মাজার জেয়ারতের সময়ও ঈমান থাকে না, কাফির হয়ে যায়। (সিরাতে মুস্তাকীম: ১০৫:) সূফী গোলাম মহিউদ্দীন সাহেব নিজেকে কি বলবেন? আর পীরের পীর সাহেবকে কি বলবেন? আমি মন্তব্য করতে চাই না। তবুও বলতে হয় যে, উক্ত সৈয়্যেদ আহমদ গং কে বাতিল বলা ছাড়া তার সামনে অন্য কোন পথ খোলা নেই। হ্যাঁ পীরকে বাঁচাতে গিয়ে নিজেকে বাতিল বলে স্বীকার করতে পারেন। সেটা তার বিবেচ্য। "চেতনায় বালাকোট" -২০১০ পুস্তক খানা পড়ে মনে হলো-কেউ যেন সকল লিখকদেরকে পূর্বেই সতর্ক করে দিয়েছেন যে, কোন ভাবেই যেন মৌং ইসমাঈল দেহলভীর নাম বালাকোটের ইতিহাসে লিখা না হয়। কারণ লোকটির লেখনী ও আক্বীদা আমাদের থলের বিড়াল বের করে দেবে। ধাওয়া না করলেও পালানোর পালা আসবে। উক্ত পুস্তকের ৭১ পৃষ্ঠা শুধুমাত্র 'তকবিয়াতুল ঈমান' কিতাবে লিখিত ইসমাঈল দেহলভীর লিখার জন্য সৈয়্যেদ সাহেবকে দায়ী করা যাবে না বলে দাবী করা হয়েছে।*৭

____________________________________
(*৭) এখানে স্পষ্ট করা হয়েছে যে, ইসমাঈল দেহলভীর কিতাব ও তার লিখার মধ্যে ওহাবী আক্বীদাহ্ বিদ্যমান। যার কিতাবই ওহাবী মতবাদের মূল পুস্তক। এমতাবস্থায় উক্ত প্রবন্ধের লিখক ড. এ. কে. এম মাহবুবুর রহমান সাহেব উক্ত মৌং ইসমাঈল দেহলভীকে শহীদ বলে আখ্যায়িত করলেন কীভাবে? ইসমাঈলকে শহীদ বলবে, সৈয়দ আহমদকে বুজুর্গও বলবে, আর নিজেকে সুন্নী বলবে; এমন সুন্নীয়তের দাবীদারকে আমাদের পক্ষে ওহাবী বলা ছাড়া কোন উপায় নেই। (দেখুন, ফাতওয়া-ই-রজভীয়া ২৯ খন্ড ২৩৫ পৃষ্ঠায়)
চেতনায় বালাকোট সম্মেলন স্মারক ২০১০ এর ৭১ পৃষ্ঠায় ড. মাহবুবুর রহমান সাহেবের লিখা, নিজেদের সর্বনাশ করেছেন।
____________________________________
কিন্তু 'সিরাতে মুস্তাকীম' গ্রন্থের বিষয়বস্তু ও লিখার জন্য তো সৈয়্যেদ আহমদকে ছাড় দেয়া যায় না। 'সিরাতে মোস্তাকীম' কিতাবটির লিখক কে? ভাষ্য কার? পূর্বোল্লেখিত 'চেতনায় বালাকোট' পুস্তকের ৩৪ পৃষ্ঠায় শেখ জেবুল আমীন দুলাল লিখেছেন- "এখানে উল্লেখযোগ্য যে, সিরাতে মুস্তাকীম নামক গ্রন্থখানি সৈয়্যেদ সাহেব নিজেই রচনা করেন। দিল্লী থাকাকালীন সময়ে তিনি এই গ্রন্থ রচনার কাজ শুরু করেছিলেন। এ ব্যাপারে শাহ্ ইসমাঈল ও মাওলানা আব্দুল হাই তাঁকে সহযোগিতা করেন। সৈয়্যেদ সাহেব ডিকটেট করতেন। পালাক্রমে শাহ সাহেব ও মাওলানা সাহেব ডিকটেশান অনুযায়ী লিখে পুনরায় সৈয়্যেদ সাহেবকে পড়ে শুনাতেন। মনপুত না হলে আবার বলতেন। কখনো কখনো একটি বিষয়কে কয়েকবার লিখতে হয়েছে।" (চেতনার বালাকোট ৩৪ পৃ:) উক্ত কিতাবে (সিরাতে মুস্তাকীম) ভূমিকায় একই কথা লিখা আছে। আরো অনেক বাতিল আক্বীদা লিখা হয়েছে।*৮

____________________________________
যে ঢালে বসেছেন, সে ঢালই কেটেছেন। তিনি লিখেছেন- 'ইতিহাসের আয়নায় যদি আমরা বাস্তব অবস্থা অবলোকন করি, তাহলে দেখতে পাই, ইসমাঈল শহীদের লেখা 'তাকভীয়াতুল ঈমান গ্রন্থের বক্তব্যকে তার সমসাময়িক গুটি কতক লোক ছাড়া কেউ সমর্থন করেনি। পরবর্তীতে ওহাবী আক্বীদার ধারক বাহকরাই উদোর পিন্ডি বুদোর ঘাড়ে চাপিয়ে দেওয়ার জন্য একজন মুরীদের লেখার উপর ভিত্তি করে পীরের উপর সব দোষ চাপানোর চেষ্টা করেছেন।" তাহলে ড. মাহবুবের মত যারা ইসমাঈলের 'তাকভীয়াতুল ঈমান' পুস্তকে লিখিত আক্বীদাহ্ বিশ্বাস করেনা তারাই কি ওহাবী? যদি তা হয় দেওবন্দীরা ছাড়া, যারা ইসমাঈলকে ভ্রান্ত মনে করে তারাই সুন্নী? ড. মাহবুব কোন্ দিকে? 
ড. মাহবুব যা লিখেছেন, এখানেই বিরোধ নিষ্পত্তির ব্যবস্থা রয়েছে। বলা হলো- ইসমাঈলের লিখিত তাকবীয়াতুল ঈমানের বক্তব্যকে সমসাময়িক বৃহত্তর মুসলিম জনগোষ্ঠী মেনে নেননি। গুটিকতক লোকই তার এই ভ্রান্ত আক্বীদাহ্ মেনে নিয়েছে। যারা মেনে নিয়েছে তাদের মধ্যে ছৈয়দ আহমদ ব্রেলভীও অন্যতম। না হয়, তাকে স্বীয় দরবার থেকে কিংবা দল থেকে বের করে দেননি কেন? বরং তাকে বহাল রেখে সহযোদ্ধা হিসেবেই কাজ করার সুযোগ দিয়েছেন। সুতরাং উদোর পিন্ডি উদোর ঘাড়েই আছে। বুদোর ঘাড়ে চাপানো হয়নি। আমার দাবী, কেরামত আলী লিখিত জখীরায়ে কেরামত থেকেই প্রমাণিত। কেরামত আলী জৌনপুরী সরাসরি সৈয়দ আহমদ ব্রেলভীরই খলীফা। তিনি বলেছেন- তাকভীয়াতুল ঈমান এ লিখিত আক্বীদাগুলো বিশ্বাস না করলে শিরকে লিপ্ত হবে। এটাই তো নিজেরও পীরের আক্বীদাহ্। উদো-বুদো প্রলাপ বকে লাভ কী? 

(*৮) যাকে তিনি নিজের বিশিষ্ট সহযোগী বলে কাছে রেখেছিলেন, যার কলম দ্বারা তিনি 'সিরাতে মুস্তাকীম' কিতাব রচনা করিয়েছেন। তার কুফরী আক্বীদাহর কথা তো স্বয়ং ড. মাহবুবুর রহমান সাহেবেই স্বীকার করেছেন। সুতরাং ঘরের আগুনই ঘর জ্বলার জন্য যথেষ্ট হয়েছে।
ড. মাওলানা এ. কে. এম মাহবুবুর রহমান সৈয়দ আহমদ ব্রেলভীর পক্ষে উকালতী করতে গিয়ে নিজের বেহাল অবস্থা করে দিয়েছেন- দেখুন : 'চেতনায় বালাকোট সম্মেলন স্মারক ২০১০' এর ৬৯ পৃষ্ঠা: (হযরত সৈয়দ আহমদ ব্রেলভী ও উপমহাদেশের সুন্নীয়ত) প্রবন্ধ লিখার মাধ্যমে। তিনি ৭০ পৃষ্ঠায় লিখেছেন, সৈয়দ আহমদ ব্রেলভী ও তার খলীফাদের কারো মধ্যে ওহাবী আক্বীদার সামান্যতম সাজুজ্য দেখা যায় না। পক্ষান্তরে ইসমাঈল দেহলভীর মধ্যে ওহাবী আক্বীদার কথা কুটবুদ্ধি দিয়ে স্বীকার করেছেন।

____________________________________
হাটহাজারীর ফয়জুল্লাহ্ সাহেব তার পক্ষে ওকালতী করতে গিয়ে আটকা পড়েছেন।*৯ (দেখুন, আলমনজুমাতুল মোখ্তাসরাহ-পৃষ্ঠা ৫) 'সিরাতে মোস্তাকীম' এর গ্রন্থকার সৈয়্যেদ আহমদ ব্রেলভীর বাতিল আক্বীদাকে ধামাচাপা দেওয়ার কোনই সুযোগ নেই। কারণ স্বয়ং তাঁর খলীফা মাও: কেরামত আলী জৌনপুরী 'যখীরায়ে কারামত' এর মধ্যেই স্বীকার করেছেন যে, 'সিরাতে মুস্তাকীম' কিতাবটি সৈয়্যদ আহমদেরই রচিত। ইসমাঈল দেহলভী লিখক মাত্র। মূল বক্তব্য সৈয়্যেদ সাহেবের। (যখীরায়ে কারামত: ১ম খন্ড: ২০ পৃ:) 'চেতনায় বালাকোট সম্মেলন স্মারক ২০১০' এর বিভিন্ন জায়গায় দেখা যায়, যেখানে বক্তব্য তাদের পীরের বিপক্ষে যায়, সেখানে তাদের পাশ কাটার কৌশল হলো-"এটা ডব্লিউ হান্টারের লিখা। পক্ষান্তরে 'চেতনার বালাকোট' পুস্তকের ৩১ পৃষ্ঠায় লিখা হয়েছে- (হান্টারের উদ্ধৃতি দিয়ে) "তাঁর একমাত্র শিক্ষা হলো, আল্লাহর বন্দেগী করা এবং এক মাত্র আল্লাহরই সন্তুষ্টি ভিক্ষা করা। যেখানে কোন মানবীয় আচার বা অনুষ্ঠানের মধ্যবর্তীতা একেবারেই নেই, অর্থাৎ ফেরেশতা, জীন, পরী, পীর, মুরীদ, আলেম, সাগরিদ, রাসূল বা আলী মানুষের দুঃখ-দুর্দশা দূর করার ক্ষমতা কারোরই নেই। এদ্রুব সত্য বিশ্বাস করা আর উপরোক্ত কোন সৃষ্ট জীব থেকে নিজের ইচ্ছা বা আশা-আকাঙ্ক্ষা পূরণের জন্য যে কোন রকম কার্য করণ থেকে বিরত থাকা, কারো প্রতি অনুগ্রহ করার বা বিপদ হতে রক্ষা করার ক্ষমতায় বিশ্বাস না করা, স্বার্থ সিদ্ধির আশায় কোন পয়গাম্বার, অলী, দরবেশ বা ফেরেশতার উদ্দেশ্যে কিছু দান না করা, একমাত্র আল্লাহর শক্তির নিকট নিজেকে অসহায় বিবেচনা করা।" ... সৈয়দ সাহেবের আরেকটি মূলনীতি হলো- "সত্য ও অবিকৃত ধর্ম হচ্ছে বা প্রাত্যহিক জীবনে কেবল সেই সব এবাদত প্রার্থনা করা ও আচার নীতিগুলো আঁখড়ে ধরা যা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর জীবনে প্রতিফলিত হয়েছে। বিয়ে সাদীতে বেদআতী উৎসব, মৃত্যুতে শোক উৎসব, মাজার সজ্জিতকরণ কিংবা কবরের উপর বড় বড় সৌধ নির্মাণ, পথে পথে মাতম শোভা যাত্রা ইত্যাদি পরিহার করা।" উল্লেখিত বক্তব্য পড়লে বুঝা যায়, এরা কারা? এদের মতবাদ কাদের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ। আমাদের দেশের দেওবন্দী ওহাবী বা জামাতে ইসলামীদের সাথে তাদের পুরোটাই মিল রয়েছে। সুতরাং 'চেতনার বালাকোট' পুস্তকের ৬৪ পৃ: শিরোনাম লিখা হয়েছে- সায়েদ আহমদ ব্রেলভী ও তাঁর ও তাঁর আন্দোলন সম্পর্কে সাইয়েদ আবুল আ'লা মওদুদীর পর্যালোচনা'। এখানে উল্লেখ করা হয়েছে- "সাইয়েদ আহমদ ব্রেলভী ও শাহ ইসমাঈল উভয়ই আত্মিক ও চিন্তাগত দিক থেকে একই অস্তিত্ত্বের অধিকারী ছিলেন। আর এই একক অস্তিত্ত্বকে আমি স্বতন্ত্র মুজাদ্দিদ মনে করিনা বরং শাহ্ ওয়ালিউল্লাহর তাজদীদের পরিশিষ্ট মনে করি"। 

এ থেকে বুঝা যায়, সৈয়্যদ আহমদ ব্রেলভী ও মৌং ইসমাঈল দেহলভী একই আক্বীদায় বিশ্বাসের লোক। ব্যক্তি হিসেবে মাও: মাওদুদীর নিকটও পছন্দসই। তারা সকলেই এক মুদ্রার এপিট ওপিট। মোট কথা, সৈয়্যদ আহমদ ব্রেলভী ও ইসমাঈল দেহলভী উভয়ই বাতিল আক্বীদার ধারক-বাহক।

____________________________________
এখন বিবেচ্য বিষয় হলো- কেরামত আলী জৌনপুরী 'জখীরায়ে কারামত' পুস্তকের ১ম ২০ পৃষ্ঠায় লিখা হয়েছে, 'তাকভীয়াতুল ঈমান কিতাবের মধ্যে লিখিত আক্বীদাহ্ গুলো বিশ্বাস না করলে মুশরিক হয়ে যাবে।' যদি কারামত আলীর আক্বীদাহ তাকভীয়াতুল ঈমান' এর অনুরূপ হয়, তাহলে দেওবন্দী ওহাবী ও জৌনপুরীদের মধ্যে পার্থক্য কোথায়? ড. মাহবুবুর রহমান যদি কেরামত আলীর অনুসারী ও তাকভীয়াতুল ঈমান কিতাবের বিশ্বাসী সুন্নী হন, তাহলে আমরা তো তাদেরকে অকপটে ওহাবী বলতে বাধ্য। আক্বীদাহ সংশোধন করা ছাড়া সুন্নী দাবী করার কোন পথ নেই।
(*৯) যদি হাটহাজারীর মুফতী ফয়জুল্লাহ্ ও কেরামত আলী জৌনপুরীর আক্বীদাহ্ একই হয়, তবে এমন সুন্নী দাবীদারের থেকে হাজার মাইল দূরে থাকা বাঞ্ছনীয়।

____________________________________
আন্দোলন ইত্যাদি মুসলমানদের সমর্থন লাভের লক্ষ্যেই করা হয়েছে। বৃটিশ বিরোধী বা শিখ বিরোধী যুদ্ধ ইত্যাদি নিছক প্রতারণা।
বাকী রইলো তাঁর তরীক্বতভুক্ত পীরানে তরীকত ও তাঁদের মুরীদানের বিষয় : বাংলা ও ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলে এমন অনেক পীরানে তরীকত আছেন ও ছিলেন, যাঁদের তরীকতের শাজরায় সৈয়্যদ আহমদ ব্রেলভীর নাম লিখা রয়েছে। তাঁদের কামালিয়ত ও বুজুর্গী সম্পর্কে কারো দ্বিমত নেই। এমন কিছু লোকও তাঁদের মধ্যে রয়েছেন। বিষয়টি গভীরভাবে আমরা বিবেচনায় এনেছি। এটা কীভাবে সম্ভব হলো? কিভাবে এমনটা হতে পারে? ওই সব দরবারের ইতিহাস থেকে তাঁদের আসল অবস্থার মূল্যায়ন করতে হবে বলে আমরা মনে করি।
(১) তরীকতের শাজরার মধ্যে ইতিহাসের বিভ্রান্তি জনিত কারণে সৈয়্যদ আহমদ ব্রেলভীর নাম এসেছে। আসলে ওই আল্লাহর অলী না সৈয়্যদ আহমদ ব্রেলভীর মুরীদ না তার তরীকতের খলীফা। বালাকোট যুদ্ধের সময় দেয়া গণখেলাফতের ভিত্তিতে তিনি জিহাদের খেলাফত প্রাপ্ত হতে পারেন।
(২) বালাকোট যুদ্ধে সৈয়্যদ আহমদ ব্রেলভী খেলাফত দিলেও অন্য সিলসিলায় পীর সাহেবের বরহক সিলসিলার শাজরা যুক্ত পীরের পক্ষ থেকে খেলাফতও আছে। তাদেরকেও বাতিল বলার সুযোগ নেই। কারণ যে কোন একটি তরীকতের মাধ্যমে অর্জিত বুজুর্গীই যথেষ্ট। শর্ত হলো-সৈয়দ আহমদ ও তার মুরিদদের বাতিল আক্বীদা বর্জন করতে হবে এবং তাদেরকে বাতিল হিসেবে বিশ্বাস করতে হবে।
(৩) সিলসিলার শাজরায় সৈয়্যদ আহমদ ব্রেলভী থাকলেও তার কর্ম ও বাতিল আক্বীদা সম্পর্কে অবগত নন। সরল মনে তরীক্বত ভক্তিতে অন্ধ বিশ্বাসেই কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন। তাদেরকে কামিল পীর না বললেও বাতিল বলার সুযোগ নেই। শর্ত হলো-যখনই তার ভ্রান্ত আক্বীদা সম্পর্কে অবগত হবেন তখনই বরহক সিলসিলার দিকে ফিরে যেতে হবে এবং সৈয়্যদ আহমদ গংকে বাতিল হিসেবে ঘৃণা করতে হবে।
(৪) যাদের দরবারে সৈয়দ আহমদ ব্রেলভী ছাড়া অন্য কোন বরহক সিলসিলাও নেই, তার বাতিল আক্বীদাকে সমর্থন করে অথবা অন্য সিলসিলা থাকলেও সৈয়্যেদ আহমদের বাতিল আক্বীদার উপর হঠ ধরে থাকে, তাদেরকে সন্দেহাতীতভাবে বাতিল, ওহাবী ইত্যাদি, ঘৃণ্য শব্দে খেতাব করতে হবে।

এখানে বিশেষভাবে লক্ষণীয় যে, সৈয়্যদ আহমদ ব্রেলভীকে বুজুর্গ, অলী, আমীরুল মোমেনীন, ইমামুত তরীক্বত ইত্যাদি উপাধিতে ভূষিত করার জন্য তারা যাঁর নাম বারংবার উচ্চারণ করে আসছেন, তিনি হলেন, হযরত নূর মোহাম্মদ নিজামপুরী (রহ.) । প্রকৃত অর্থে তিনি আলোচ্য সৈয়্যদ আহমদের মুরীদও নন, তরীক্বতের খলীফা হওয়া তো দূরের কথা। ছাত্র জীবনে তিনি যার হাতে বাইআত গ্রহণ করেছিলেন, তিনি হলেন- নোয়াখালীর হযরত শেখ জাহেদ রাহমাতুল্লাহি আলাইহি। কলকাতা আলীয়া মাদ্রাসায় অধ্যয়নরত অবস্থায় তিনি কলকাতার প্রসিদ্ধ বুজুর্গ হযরত হাফেজ জামাল উদ্দীন রাহমাতুল্লাহি আলাইহির নিকট মুরীদ হয়েছিলেন। পরবর্তীতে ঢাকা আজিমপুর দায়রা শরীফের মহান মুর্শিদ হযরত শাহ্ সূফী সৈয়্যদ লক্বীয়তুল্লাহ্ রাহমাতুল্লাহি আলাইহির নিকট মুরীদ হয়ে তরীক্বতে উঁচু মর্যাদার আধ্যাত্মিক শক্তি লাভ করেন। অল্প সময়ের জন্য তিনি বালাকোট যুদ্ধে গেলে, সেখানে সৈয়্যদ আহমদ সাহেবের ঘোষিত খেলাফতের কথা প্রসিদ্ধি লাভ করাতে পরবর্তীতে তার নাম (শাহ্ লক্বীয়তুল্লাহ্) শাজরাহ থেকে বাদ পড়ে যায়। (তায্কেরাতুল কেরাম, মুযদায়ে ফদ্বলে হক্ব, দর কারামাতে আউলিয়া-ই বরহক ৩৮ পৃষ্ঠা, তরীক্বায়ে কাদেরীয়া-দায়েমীয়া, ইত্যাদি গ্রন্থ দ্র:)।*১০

____________________________________
(*১০) সৈয়দ আহমদ ব্রেলবীর তরীকত ভূক্তদেরকে বিভিন্ন শ্রেণীতে বিভক্ত করার মূলনীতি আ'লা হযরত ইমামে আহলে সুন্নাত আল্লামা মুফতি আহমদ রেযা খান ব্রেলভী রাহমাতুল্লাহি আলাইহির একটি ফতওয়া থেকেই পাওয়া যায়।

_____________________________________
বিভ্রান্তির নিরসন কল্পে দেখুন 'তরীকায়ে কাদেরীয়া দায়েমীয়া, ২৬, ও ২৭ পৃষ্ঠা-খানকা ভিত্তিক দায়রা শরীফের বিভিন্ন খলীফাগণ-তাঁদের মধ্যে হযরত শাহ্ সূফী নূর মুহাম্মদ নিজামপুরী (রহ.) অন্যতম। উক্ত পুস্তকের (ত্বরীকায়ে কাদেরীয়া দায়েমীয়া) ২৬ পৃষ্ঠায় লিখা হয়েছে-'হযরত নূর মুহাম্মদ নিজামপুরী (রহ.) গজনীর বাদশাহ্ কুতুবে আলমের বংশধর ছিলেন। তিনি হযরত শাহ্ সূফী লক্বীয়তুল্লাহ্ (রহ.) এর নিকট বায়াত হন এবং তরীকতের আধ্যাত্মিক বেলায়েত শক্তি লাভ করেন। অত্রাবস্থায় সূফী নূর মুহাম্মদ নেজামপুরী (রহ.) এর প্রতি নির্দেশ হয় শিখদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে যোগদানের। তাই তিনি বালাকোটের শিখদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করিয়া গাজী লক্বব লাভ করেন। এই সময় সৈয়্যদ আহমদ বেরলভী সাহেব সূফী নূর মুহাম্মদ নিজামপুরী (রহ.) কে খিলাফত দান করেন। ইহাতে তরীকতের শাজরা শরীফে সৈয়্যদ আহমদ সাহেবের নাম নূর মুহাম্মদ নিজামপুরী (রহ.) এর পীর হিসেবে পরিচিতি লাভ করে।

____________________________________
যেখানে লিখা হয়েছে যদি কেউ সৈয়দ আহমদ ব্রেলভীর বাণী সম্বলিত কিতাব 'সিরাতে মুস্তাকীম' এর বাতিল উক্তি গুলোকে কুফরী আক্বীদাহ্ বলে বিশ্বাস করে, সৈয়দ আহমদ ব্রেলভীর প্রধান সহযোগী মৌং ইসমাঈল দেহলভীকে গোমরাহ ধর্মবিচ্যুত (কাফির) মনে করে এবং যাবতীয় ওহাবীগিরি থেকে দূরে থাকে, এ ধরনের সরলমনা ঈমানদার সরল বিশ্বাসে ওই বিতর্কিত সৈয়দ আহমদকে বুজুর্গ মনে করলে, এ ধরণের নিরাপরাধ ব্যক্তিকে ওহাবী বলা যাবে না।

এখানে পবিত্র কুরআনের একটি আয়াত উদ্ধৃত করে, আ'লা হযরত বলেন, আল্লাহ তায়ালা এরশাদ করেছেন- নিশ্চয় আমি জ্ঞানীদের জন্য আমার নিদর্শনাবলী স্পষ্ট করে দিয়েছি.... ।
উক্ত ফাতওয়াতে চারটি শর্তের ভিত্তিতে কথিত ব্যক্তিকে ওহাবী না বলার কথা বলা হয়েছে। ওই শর্তাবলী যথাক্রমে :
(১) 'সিরাতে মুস্তাকীম' পুস্তকে লিখিত বাতিল উক্তিগুলোকে যদি বাতিল বলে মেনে নেয় ও বিশ্বাস করে।
(২) উক্ত পুস্তকে লিখিত কুফরী উক্তি গুলোকে কুফর বলে বিশ্বাস করে (অর্থাৎ ওই সব উক্তির বক্তাকে কাফের মনে করে)।
(৩) ইসমাঈল দেহলভী (যার কলমে সৈয়দ আহমদ ব্রেলভীর বক্তব্য গুলোকে উল্লেখিত 'সিরাতে মুস্তাকীম' নামক পুস্তক হিসেবে রূপ দিয়েছে) কে পথভ্রষ্ট ও ধর্মবিচ্যুত বলে বিশ্বাস করে।
(৪) ওহাবীয়ত যুক্ত যাবতীয় আক্বীদাহ্ ও আমল থেকে দূরে সরে থাকে।
এখানে আ'লা হযরত এমন এক সরল মনা ব্যক্তি সম্পর্কে ফাতওয়া দিয়েছেন, যে লোকটি জানে না যে, সৈয়দ আহমদের আক্বীদাহ বাতিল, এমন কি তার মধ্যে কুফরী আক্বীদাহ্ও বিদ্যমান এবং 'সিরাতে মুস্তাকীম' পুস্তকে লিখিত উক্তি গুলো ওই ভন্ড পীরের। বর্তমানে আমাদের দেশে অনেক ভন্ড পীর দীর্ঘ দিন বুজুর্গ হিসেবে পরিচিত হবার পর হঠাৎ কোন না কোন কারণে তার আসল চেহেরা ভেসে ওঠছে। সুতরাং আ'লা হযরতের ফাতওয়া দিয়ে সৈয়দ আহমদকে বুজুর্গ কিংবা বরহক বলার সুযোগ নেই। আ'লা হযরত তো বলেই দিয়েছেন যে, সৈয়দ আহমদের পুস্তকে ঈমান বিধ্বংসী বাতিল ও কুফরী উক্তি রয়েছে। যার কলমে লিখা হয়েছে, সে গোমরাহ পথভ্রষ্ট ও বদ আক্বীদার অনুসারী। এত সহজ উর্দু বুঝার জ্ঞান যার কাছে নেই, সে নিজেকে আলেম বলে মনে করা বা কেউ তাকে আলেম হিসেবে শ্রদ্ধা করার আদৌ সুযোগ নেই।

____________________________________
যে কারণে সূফী নূর মুহাম্মদ নিজামপুরী (রহ.) এর পীর-মুর্শিদ হিসাবে সৈয়্যদ লক্বীয়তুল্লাহ্ (রহ.) এর নাম পরিচিতি লাভ করে নাই। কিন্তু সূফী নূর মুহাম্মদ নিজামপুরী (রহ.) আজিমপুর দায়রা শরীফ হইতে আধ্যাত্মিক বেলায়েত শক্তি লাভ করেন। হযরত শাহ্ সূফী নূর মুহাম্মদ নিজামপুরী (রহ.) এর খলিফা ছিলেন রাসূল নোমা আল্লামা হযরত শাহ্ সূফী সৈয়দ ফতেহ আলী ওয়াইসী (রহ.)। সূফী ফতেহ আলী ওয়াইসী (রহ.) এর ৩৫ জন খলিফা ছিলেন। তাঁদের মধ্যে কুতুবুল এরশাদ হযরত জান শরীফ (রহ.) (সুরেশ্বর)

হযরত শাহ্ সূফী আবু বকর সিদ্দিকী (রহ.) (ফুরফুরা) হযরত শাহ্ সূফী ওয়াজেদ আলী (রহ.) অধুনা এনায়েতপুরী পীর সাহেব (পাবনা) নামে পরিচিত। হযরত খাজা মুহাম্মদ ইউনুছ আলী (রহ.) এর পীর ও মুর্শিদ ছিলেন। হযরত ইউনুস আলী (রহ.) হইতে উদ্ভুত বিশ্ব জাকের মঞ্জিল, আটরিশ ও চন্দ্রপাড়া দরবার শরীফ, ফরিদপুর ছাড়াও অগণিত দরবার প্রতিষ্ঠাতা লাভ করিয়াছে।" (এ পর্যন্ত আজিমপুর দায়রা শরীফের বক্তব্য।) বর্তমান সাজ্জাদানশীল মাওলানা সৈয়্যদ আহমদ উল্লাহ্ যুবাইর সাহেবের লিখিত পুস্তকেও হযরত নূর মুহাম্মদ নিজামপুরী (রহ.) তাঁদেরই পূর্বপুরুষ হযরত শাহ্ সূফী সৈয়্যদ লক্বীয়তুল্লাহ্ (রহ.) এর বিশিষ্ট মুরীদ বলে উল্লেখ করা হয়েছে। সুতরাং এসব বুজুর্গ ব্যক্তিত্বকে সৈয়্যদ আহমদ ব্রেলভীর মত বাতিল পন্থী ও বিতর্কিত ব্যক্তির খলীফা বানিয়ে খাটো করার কোন যুক্তি নেই বরং অর্থহীন। যেহেতু ইমামে আহলে সুন্নাত, গাজীয়ে দ্বীন ও মিল্লাত, আল্লামা গাজী শাহ্ সৈয়দ আজিজুল হক্ব শেরে বাংলা রহমাতুল্লাহি আলাইহি জানতেন যে, কিছু বুজুর্গ ও আলেম কোন না কোন বরহক সিলসিলা ভুক্ত হবার কোন কারণে অকারণে সৈয়্যদ আহমদ ব্রেলভীর বেড়াজালে আটকা পড়েছেন। সৈয়্যদ আহমদ-এর এসব বাতিল আক্বীদাহ্ সম্পর্কে তাঁরা আদৌ অবগত নন; বিধায় ওই তরীকায় সরল মনে অন্ধ বিশ্বাসে রয়ে গেছেন, তাদেরকে 'দেওয়ানে আজিজ' কিতাবের মধ্যে বুজুর্গ হিসেবে স্বীকৃতি দিয়ে তাঁদের প্রশংসার 'মনকাবাত' লিখেছেন। সুতরাং তাঁদের সাথেও আমাদের কোন বিরোধ রইলো না। 'দিওয়ানে আজিজ' ছাপিয়ে আনার পর আমি জিজ্ঞেস করেছিলাম-"বাবা! এটা কী করলেন? একদিকে সৈয়্যদ আহমদ ব্রেলভী ভুক্ত সিলসিলা নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বিচ্ছিন্ন বা কাটা বলেছেন।
অপর দিকে তাদের কারো কারো প্রশংসা করেছেন?" উত্তরে তিনি বলেন-"বাবা! সেখানে আরো কথা আছে। তাঁদের অন্য ধারায় বরহক সিলসিলাও আছে। এমন সব বুজুর্গদের মধ্যে রয়েছেন-
১* হযরত শাহ্ সূফী আহসানুল্লাহ্ (রহ.) মশুরীখোলা দরবার শরীফ, ঢাকা। ২* তাঁর খলীফা হযরত আল্লামা হাফেজ বজলুর রহমান (রহ.) বেতাগী দরবার শরীফ, চট্টগ্রাম।

৩* সূফী নূর মুহাম্মদ নিজামপুরী (রহ.) চট্টগ্রাম। ৪* (সূফী নূর মুহাম্মদ নিজামপুরী (রহ.), চট্টগ্রাম-এর খলীফা) হযরত সূফী ফতেহ আলী ওয়াইসী (রহ.) মাজার শরীফ, কলকাতা। ৫* তাঁর খলীফা হযরত আবু বকর সিদ্দিকী (ফুরফুরা)। ৬* হযরত মাওলানা ইকামুদ্দীন, চট্টগ্রাম। ৭* হযরত মাওলানা নজীর আহমদ, চুনতি, চট্টগ্রাম।

_____________________________________
দিওয়ানে আযিয বাংলা সংস্করণের পৃষ্ঠা ১*১৯৫, ২*১৭৮, ৩*৩৯১, ৪* ৪০২, ৫* ৩৩৩, ৬* ১৪৭, ৭* ১৫৩পৃষ্ঠা।

_____________________________________
পরিশেষে, সৈয়্যদ আহমদ ব্রেলভী ও তার অনুসারীদেরকে ওহাবী, ভ্রান্ত ও বাতিল বলে বিশ্বাস করা, বালাকোটের আলোচনা সভায় প্রতারণার শিকার হয়ে আমার উপস্থিতির কারণে বিভ্রান্ত না হওয়া ও সব ক্ষেত্রে সুন্নীয়তের স্বার্থকে প্রাধান্য দিয়ে কাজ করার পরামর্শ দিয়ে আমার বক্তব্য শেষ করছি।
আল্লাহ্ হাফেজ।

(কাযী মুহাম্মদ নুরুল ইসলাম হাশেমী)
সভাপতি ও ইমামে আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা'আত-বাংলাদেশ।
তারিখ-২০/০৭/২০১১ইং।
স্থান - চট্টগ্রাম জেলা পরিষদ মিলনায়তন, চট্টগ্রাম।


বিভ্রান্ত না হওয়ার আহবান
গত ১৭ মে ২০১১ইং দৈনিক ইনকিলাবের শেষ পৃষ্ঠায় আমার ছবিসহ এবং ১ম, ২য় পৃষ্ঠায় এবং ২২ মে ২০১১ইং ৮ম পৃষ্ঠায় বিশেষ প্রতিবেদন 'বালাকোট ডাক দিয়ে যায়' শীর্ষক অনুষ্ঠানের নিউজ প্রকাশিত হয়। উক্ত অনুষ্ঠান সম্পর্কে আমি পূর্বে অবগত ছিলাম না, আমাকে জমিয়তুল মুদাররেসীনের অনুষ্ঠান ও নারীনীতি সম্পর্কিত বিশিষ্ট ব্যক্তিদের সাথে মতবিনিময়ের কথা বলে অনুষ্ঠানে নেওয়া হয়েছে। উক্ত অনুষ্ঠানের সাথে ও পত্রিকায় প্রকাশিত নিউজের সাথে আমি কখনো একমত ছিলাম না। আমার নামে পত্রিকায় প্রদত্ত বক্তব্যও আমার নয়। এ ব্যাপারে বিভ্রান্ত না হওয়ার জন্য সর্বস্তরের সুন্নী জনতার প্রতি আহবান জানাচ্ছি।

নিবেদক-

(ইমামে আহলে সুন্নাত আল্লামা) কাজী মুহাম্মদ নুরুল ইসলাম হাশেমী
পীর সাহেব : দরবারে হাশেমীয়া আলীয়া শরীফ, চট্টগ্রাম।

_____________________________________
উপরোল্লেখিত 'বিভ্রান্ত না হওয়ার আহবান' শীর্ষক বিজ্ঞপ্তিটি নিম্নলিখিত পত্রিকাসমূহে প্রকাশিত হয়।

দৈনিক পূর্বকোণ : ২০-০৫-১১ইং
দৈনিক কালের কণ্ঠ : ২১-০৫-১১ইং
দৈনিক বীর চট্টগ্রাম মঞ্চ : ২২-০৫-১১ইং
মাসিক ছাত্রবার্তা : জুলাই ২০১১ সংখ্যা

_____________________________________
নিচের লিঙ্কে ক্লিক করে "পয়গামে হক্ব" কিতাবটি পড়ুন অথবা ডাউনলোড করুন: 
https://drive.google.com/file/d/1_YT3wIU5Dj8FJPJVoJeZdZcqQh3wfd0z/view?usp=drivesdk

অথবা—

এই লিংকে :https://drive.google.com/file/d/1_YT3wIU5Dj8FJPJVoJeZdZcqQh3wfd0z/view?usp=drivesdk

------------------------সমাপ্ত------------------------

Comments

  1. কিতাবটি পড়ে সমাজে বিচরণ করা প্রকৃত মুখোশধারী বাতিল ফেরক্বাহ্ চিনার পথ আরো সুগম হয়ে গেল।

    ReplyDelete

Post a Comment

Popular posts from this blog

বালাকোট আন্দোলনের হাকীকত

সৈয়দ আহমদ বেরলভীর জম্ম ও পরিচয়

মওদুদীর ভ্রান্ত আক্বিদা ও ইসলামী আক্বিদা