ঈমানের সঠিক বিশ্লেষণ

কিতাবঃ ঈমানের সঠিক বিশ্লেষণ

মূলঃ আ'লা হযরত ইমাম শাহ আহমদ রেযা খান বেরলভী (রহমতুল্লাহে আলাইহি)

মুহাম্মদী কুতুবখানা, আন্দরকিল্লা, চট্টগ্রাম।

প্রকাশনায়ঃ নিশান প্রকাশনী

৩৯, শাহী জামে মসজিদ শপিং কমপ্লেক্স আন্দরকিল্লা, চট্টগ্রাম।

[ সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত ]

প্রচ্ছদ চিত্রণেঃ মুহাম্মদ এনামুল হক

কম্পােজঃ আল-আমিন কম্পিউটার। ২১, জি.এ. ভবন (৪র্থ তলা) আন্দরকিল্লা, চট্টগ্রাম।

প্রথম প্রকাশ : পহেলা ফেব্রুয়ারী, নব্বই।।

দ্বিতীয় সংস্করণঃ ১লা ফেব্রুয়ারী ৯৩। পুনঃ মুদ্রণ - মার্চ ৯৫ তৃতীয় সংস্করণঃ ১১ এপ্রিল ২০০৭

মুসলিম ভাইদের প্রতি সবিনয় নিবেদন

প্রিয় ভাইসব!

আস্সালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহে ওয়া বারকাতুহু। আল্লাহ পাক আপনাদের সবাইকে এবং আপনাদের দুআয় এ অধম গুণাহগারকে যেন সঠিক ধর্মের উপর অটল রাখেন এবং তাঁর হাবীব হযরত মুহাম্মদুর রসুলুল্লাহ (ﷺ) এর সঠিক মহব্বত যেন আমাদের অন্তরে স্থান পায় এবং এ অবস্থায় যেন আমাদের পরিসমাপ্তি ঘটে, এ দুআ করবেন। আমীন, ইয়া আরহামার রাহেমীন।


নবী (ﷺ) এর তাযীমের উপর ঈমান নির্ভরশীল।

◾আল্লাহ তাআলা ইরশাদ ফরমান,

انا ارسلناك شاهدا مبشرا ونذيرا لتؤمنوا بالله و تعد-رؤة وتوقروه وتسبحوه بكرة وأصيلا

(۹ -۲۶)

"হে নবী! নিশ্চয়ই আমি আপনাকে সাক্ষী, সু-সংবাদদাতা ও সতর্ককারীরূপে প্রেরণ করেছি। যাতে (হে লােক সকল) তােমরা আল্লাহ ও তাঁর রসূলের প্রতি ঈমান আন এবং রসূলকে তাযীম ও শ্রদ্ধা কর এবং সকাল-বিকাল আল্লাহর পবিত্রতা ঘােষণা কর।"

মুসলমানগণ, লক্ষ্য করুন, উক্ত আয়াতে দ্বীনে ইসলামের আবির্ভাব ও কুরআন অবতরণের তিনটি উদ্দেশ্যই আল্লাহ তাআলা ব্যক্ত করেছেন- এক, আল্লাহ ও রসুলের প্রতি ঈমান আনা, দুই, রসূলুল্লাহ (ﷺ) এর প্রতি সম্মান করা এবং তিন, আল্লাহ তাআলার ইবাদতে নিয়ােজিত থাকা। দেখুন, এ তিনটি মহা মূল্যবান কথাকে আল্লাহ তাআলা কি সুন্দরভাবে উপস্থাপন করেছেন। সর্বপ্রথম ঈমানের কথা আর সর্বশেষ ইবাদতের কথা বলেছেন এবং মাঝখানে বলেছেন তাঁর হাবীবের সম্মানের কথা। এজন্য ঈমান ব্যতীত কেবল সম্মান কোন কাজে আসবেনা। অনেক খৃষ্টান নবী করীম (ﷺ) এর মান-সম্মান ও তাঁর প্রতি বিধর্মীদের আরােপিত বিভিন্ন অভিযােগ খন্ডন করে পুস্তক রচনা করেছে এবং বক্তৃতা বিবৃতি দিয়েছে, কিন্তু ঈমান না থাকায় কোন কাজে আসলােনা। তাঁদের এ সম্মান ছিল বাহ্যিক মাত্র। সত্যিকারভাবে যদি হুজুর (ﷺ) এর প্রতি মহব্বত থাকতাে, তাহলে নিশ্চয় ঈমান আনতাে। আর নবী (ﷺ) এর প্রতি সঠিক সম্মানবােধ না থাকলে সারা জিন্দেগী খােদার ইবাদতে নিয়ােজিত থাকলেও বৃথায় পর্যবসিত হবে। অনেক যােগী-সন্ন্যাসী দুনিয়াদারী বর্জন করে নিজেদের পদ্ধতি মত খােদার উপাসনায় জীবন কাটিয়ে দেয়। বরং তাদের মধ্যে অনেকেই “লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু’ এর জিকিরও করে থাকে। কিন্তু বিফল। কেননা নবীজির প্রতি সম্মান খােদা প্রাপ্তির পূর্ব শর্ত।

◾ আল্লাহ তাআলা তাদের প্রসঙ্গেই বলেছেন :

وقدمنا إلى ما عملوا من عمل فجعلنة هباء منشوراه

(যে সমস্ত আমল তারা করেছে, আমি সব বিনষ্ট করে দিয়েছি।)

◾তাদের সম্পর্কে আরাে বলা হয়েছেঃ

عاملة ناصبه تضلی نارا حامية

(ক্লান্তিকর সাধনা করবে আর এর পরিণামে জ্বলন্ত অগ্নিতে প্রবেশ করবে।)

মুসলমানগণ! বলুন, নবী করীম (ﷺ) এর প্রতি সম্মানের উপর ঈমান, নাজাত ও আমলসমূহ গৃহীত হওয়াটা নির্ভরশীল কি-না? বলুন, নিশ্চয়ই নির্ভরশীল।


নবী (ﷺ) এর প্রতি মা-বাবা,সন্তান-সন্ততি ও সমগ্র জগত থেকে বেশী মহব্বত পােষণ নাজাতের পূর্বশর্ত।

◾আল্লাহ তাআলা ইরশাদ ফরমানঃ

قل إن كان آباؤكم وأبناؤكم وإخوانكم وأزواجكم وعشيرتكم وأموال في اقترفتموها وتجارة تخشون كسادها ومسكن ترضونها أحب إليكم من الله ورسوله وجهاد في سبيله فتربصوا حتى يأتي الله بأمره والله لا يهدي القوم الفسقين .

 ( ۱-۹)

(হে নবী! আপনি বলে দিন-ওহে লােক সকল, তােমাদের মাতা-পিতা, সন্তান, ভাই, পত্নী, স্বগােষ্ঠী, অর্জিত সম্পদ, ব্যবসা-বাণিজ্য যার মন্দা পড়ার আশংকা কর এবং তােমাদের পছন্দনীয় বাসস্থান-এসবের কোন একটি যদি তােমাদের কাছে আল্লাহ, তাঁর রসূল এবং তাঁর পথে চলার প্রচেষ্টা থেকে অধিক প্রিয় হয়, তাহলে আল্লাহর শাস্তি আসা পর্যন্ত অপেক্ষা কর। আল্লাহ তাআলা অবাধ্যদেরকে সৎপথ প্রদর্শন করেন না।)

এ আয়াত থেকে সুস্পষ্ট বােঝা গেল, যার কাছে পৃথিবীতে কোন সম্মানিত ব্যক্তি, কোন প্রিয়জন, কোন সম্পদ বা অন্য কোন জিনিস আল্লাহ ও তাঁর রসূল (সাল্লালাহু আলাহি ওয়াসাল্লাম) থেকে বেশী প্রিয় হয়, সে আল্লাহর দরবারে মরদুদ হিসেবে বিবেচ্য, আল্লাহ তাকে সৎপথের সন্ধান দেবেন না। তাকে আল্লাহর আজাবের অপেক্ষায় থাকতে হবে।

◾(আল্লাহ থেকে পানা) আমাদের প্রিয় নবী ﷺ ইরশাদ ফরমান,

لايؤمن أحدكم حتى أكون أحب إليه من والده وولده والناس أجمعين 

"তােমাদের মধ্যে কেউ মুসলমান বলে গণ্য হবে না, যতক্ষণ পর্যন্ত আমি তার কাছে তার মা-বাপ, সন্তান-সন্ততি এবং সমস্ত মানুষ থেকে অধিক প্রিয় না হই।"

[হুযুর (ﷺ) এর এ হাদীছটি সহীহ বুখারী ও মুসলিম শরীফে হযরত আনাস ইবনে মালেক আনসারী (রাদি আল্লাহু আনহু) থেকে বর্ণিত আছে।]

এখানে পরিস্কারভাবে উল্লেখিত হয়েছে যে, যে হুজুর (ﷺ) থেকে অধিক অন্য কাউকে প্রিয় মনে করে, সে কখনও মুসলমান হতে পারেনা। মুসলমান ভাইসব! এবার বলুন, হুজুর (ﷺ) এর প্রতি সমস্ত জাহান থেকে বেশী মহব্বত পােষণ ঈমান ও নাজাতের পূর্ব শর্ত কিনা ? নিশ্চয়ই ‘হ্যাঁ’ বলবেন। এমনকি সমস্ত কালেমা পড়ুয়া মুসলমান সানন্দে বলবে-নিশ্চয় আমাদের অন্তরে মা-বাপ সন্তান সন্ততি ও সমগ্র জাহান থেকে তাঁর প্রতি বেশী মহব্বত রয়েছে। কিন্তু এতটুকু বললে যথেষ্ট হবে না,

◾আল্লাহ তাআলা কি বলছেন মনােযােগ সহকারে একটু শুনুন,

الم . أحسب الناس أن يتركوا أن يقولوا امثا وهم لايفتنون

(মানুষ কি সেই ধোঁকায় আছে যে, “আমরা ঈমান এনেছি’ এতটুকু বললেই ওদেরকে পরীক্ষা না করে অব্যাহতি দেয়া হবে ?) 

এ আয়াতে মুসলমানদেরকে হুঁশিয়ারী সংকেত দেয়া হয়েছে যে কেবল কলেমা পাঠ করলে এবং মৌখিক মুসলমান দাবী করলে রেহাই মিলবে না, কঠিন পরীক্ষার সম্মুখীন হতেই হবে। সেই পরীক্ষায় কামিয়াব হলেই সত্যিকার মুসলমান বলে বিবেচিত হবেন। প্রত্যেক কিছু পরীক্ষার বেলায় তা-ই যাচাই করে দেখা হয়, যা দাবী করা হয়, তা বাস্তবে আছে কিনা। একটু আগে কুরআন-হাদীছ দ্বারা প্রমাণ করা হয়েছে যে, সঠিক ঈমানের জন্য দুটি বিষয় প্রয়ােজন-

(১) হুযূর আলাইহি সালামের তাযীম এবং

(২) তাঁর প্রতি মহব্বতকে সমগ্র জাহানের উর্ধে স্থান দেয়া।


(১) হুযূর আলাইহি সালামের তাযীম এবং

(২) তাঁর প্রতি মহব্বতকে সমগ্র জাহানের উর্ধে স্থান দেয়া।

আল্লাহ তাআলা তাঁর পরীক্ষায় এটাই যাচাই করে দেখবেন। আপনারা যাদের সাথে সম্পর্কিত, যাদেরকে অতি সম্মান করেন, যাদের সাথে একান্ত মহব্বত রাখেন, যেমন আপনাদের মা-বাপ, শিক্ষক, পীর, সন্তান-সন্ততি, ভাই-বােন, বন্ধু-বান্ধব প্রমুখ। তারা যখনই হুযুরে পাক(ﷺ) শানে বেআদবী করে, তখন আপনাদের অন্তরে তাদের প্রতি সম্মান ও ভালবাসার নাম নিশানা পর্যন্ত থাকতে পারে না। সাথে সাথে তাদের থেকে পৃথক হয়ে যান। দুধ থেকে মাছি বের করার মত তাদেরকে অন্তর থেকে বের করে দিন। তাদের নাম-নিশানাও অন্তর থেকে মুছে ফেলুন। এরপর থেকে আপনি তাদের সাথে কোন সম্পর্ক রাখবেন না, তাদের ব্যক্তিত্ব, বুজুর্গী এবং ফজিলতের কথা চিন্তা করে ধোঁকায় পতিত হবেন না। এসব কিছু হুজুর (ﷺ) এর গােলামীর বদৌলতেই ছিল। কিন্তু হুজুর (ﷺ) এর শানে যখনই বেআদবী করলাে, তখন থেকে তাদের সাথে আর কোন সম্পর্ক থাকতে পারে না। তাদের জুব্বা, পাগড়ী দ্বারা কি হবে? অনেক ইহুদীরা জুব্বা-পাগড়ী কি পরে না? তার নাম, জ্ঞান ও বাহ্যিক ফজীলত দ্বারা কি হবে? অনেক পাদরীরাও কি দর্শন ও অন্যান্য বিষয়ে যথেষ্ট জ্ঞান রাখে না? তাতে কি আসে যায়। যদি এ রকম মনােভাব সৃষ্টি না হয়, বরং রসুলে করীমের প্রতি বেআদবীকারীর সাথে সুসম্পর্ক বজায় রাখেন বা ওকে সর্বনিকৃষ্ট মনে না করেন বা ওকে মন্দ বলতে অস্বস্তিবােধ করেন অথবা এ ধরণের বেআদবীর প্রতি আদৌ গুরুত্বারােপ না করেন, কিংবা আপনাদের অন্তরে ওর প্রতি ব্যাপক ঘৃণার উদ্বেগ না হয়, তাহলে আপনারা আল্লাহর ওয়াস্তে নিজেরাই বিবেচনা করে দেখুন, ঈমানের পরীক্ষায় কামিয়াব হয়েছেন কিনা? কুরআন-হাদীছ যেটাকে ঈমানের মূল ভিত্তি বলেছেন, সেটা থেকে কত দূরে সরে গেছেন, তা একবার ভেবে দেখেছেন কি? মুসলমানগণ! যার অন্তরে মুহাম্মদ মুস্তাফা (ﷺ) এর সম্মানবােধ রয়েছে, সে কি করে হুজুর (ﷺ) এর শানে কোন বেআদবী সহ্য করতে পারে ? যদিও বা সেই বেআদব পীর, ওস্তাদ বা বাপ হােক না কেন। যার অন্তরে হুজুর (ﷺ) এর মহব্বত সমগ্র জাহান থেকে বেশী, সে ও ধরণের বেয়াদবীর বেলায় সাথে সাথে প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করবেন। আল্লাহর ওয়াস্তে নিজের অবস্থার প্রতি দয়াশীল হােন এবং আল্লাহ পাকের কথা শুনুন। দেখুন, তিনি আপনাদেরকে তাঁর রহমতের প্রতি কিভাবে আহ্বান করতেছেন,

ا تَجِدُ قَوْمًا يُؤْمِنُونَ بِاللَّهِ وَالْيَوْمِ الْآخِرِ يُوَادُّونَ مَنْ حَادَّ اللَّهَ وَرَسُولَهُ وَلَوْ كَانُوا آبَاءَهُمْ أَوْ أَبْنَاءَهُمْ أَوْ إِخْوَانَهُمْ أَوْ عَشِيرَتَهُمْ ۚ أُولَٰئِكَ كَتَبَ فِي قُلُوبِهِمُ الْإِيمَانَ وَأَيَّدَهُم بِرُوحٍ مِّنْهُ ۖ وَيُدْخِلُهُمْ جَنَّاتٍ تَجْرِي مِن تَحْتِهَا الْأَنْهَارُ خَالِدِينَ فِيهَا ۚ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمْ وَرَضُوا عَنْهُ ۚ أُولَٰئِكَ حِزْبُ اللَّهِ ۚ أَلَا إِنَّ حِزْبَ اللَّهِ هُمُ الْمُفْلِحُونَ.

(তুমি পাবে না আল্লাহ ও আখিরাতে বিশ্বাসী এমন কোন সম্প্রদায়, যারা ভালবাসে আল্লাহ ও তাঁর রসুলের বিরুদ্ধাচারণকারীদেরকে, হােক না তারা তাদের পিতা, পুত্র, ভ্রাতা অথবা আপনজন। এরা হচ্ছে তারাই যাদের অন্তরে আল্লাহ তাআলা সুদৃঢ় করেছেন ঈমান এবং তাদেরকে তাঁর পক্ষ থেকে রূহ দ্বারা সাহায্য করেছেন। তিনি তাদেরকে নিয়ে যাবেন জান্নাতে যার পাদদেশে নদী প্রবাহিত। তারা সেথায় স্থায়ীভাবে থাকবে। আল্লাহ তাদের প্রতি প্রসন্ন এবং তারা আল্লাহর প্রতি সন্তুষ্ট। এরাই আল্লাহ ওয়ালা। জেনে রেখাে আল্লাহ ওয়ালারাই সফলকাম হবে।)

এ পবিত্র আয়াতে সুস্পষ্টভাবে বলা হয়েছে যে, আল্লাহ এবং রসূলের শানে অভদ্র আরচরণকারীদের সাথে মুসলমানেরা যেন বন্ধুত্ব না করে। যারা তাদের সাথে বন্ধুত্ব করবে, তারা মুসলমান থাকবে না।এ হুকুমটা সার্বিকভাবে প্রয়ােগের জন্য বিস্তারিতভাবে বলা হয়েছে যে বাপ, বেটা, ভাই, আত্মীয় স্বজন অর্থাৎ আপনাদের যতই আপনজন ও প্রিয় পাত্র হােক না কেন, নবীর শানে বেআদবী করার পর, তাদের সাথে। কোন সম্পর্ক রাখতে পারেন না এবং তাদের প্রতি কোনরূপ সম্মান দেখাতে পারেননা, নচেৎ মুসলমান থাকবেন না।


নবী (ﷺ) এর শানে বেআদবীকারীদের সাথে সম্পর্ক ছিন্নকরণে সাতটি সুফল

ইতােপূর্বে উল্লেখিত আয়াতে বেআদবের সাথে সম্পর্ক বর্জন করার নির্দেশটা যথেষ্ট ছিল। কিন্তু দেখুন, আল্লাহ তাআলা তাঁর বড় বড় নিয়ামতের লােভ দেখিয়ে আপনাদেরকে তাঁর প্রতি আহ্বান জানাচ্ছেন। তিনি উল্লেখিত আয়াতে ওদের জন্য, সাতটি সুফল বর্ণনা করেছেন, যারা আল্লাহ ও তাঁর রসূলের সম্মানকে অগ্রাধিকার দিয়েছে এবং তাঁদের জন্য অন্যদের সাথে সংশ্রব ত্যাগ করেছে। এ সাতটি সুফল হচ্ছে :

(১) আল্লাহ তাআলা আপনাদের অন্তরে ঈমানকে সুদৃঢ় করেন। এতে ঈমান সহকারে মৃত্যুবরণের শুভ সংবাদ রয়েছে। কেননা আল্লাহর আয়াত ব্যতিক্রম হতে পারে না।

(২) আল্লাহ তাআলা আপনাদেরকে রুহুল কুদ্ছ (জিব্রাঈল) দ্বারা সাহায্য করবেন।

(৩) আপনাদেরকে নিয়ে যাবেন চিরস্থায়ী জান্নাতে, যার পাদদেশে নদী প্রবাহিত।

(৪) আপনাদেরকে আল্লাহর দল বা আল্লাহ ওয়ালা বলা হবে।

(৫) মুখ হেলানের দ্বারা আপনাদের উদ্দেশ্য সাধিত হবে। এমন কিছু লাভ করবেন, যা আপনারা কল্পনাও করতে পারেননা।

(৬) আল্লাহ আপনাদের প্রতি প্রসন্ন হবেন এবং

(৭) আপনারা আল্লাহর প্রতি সন্তুষ্ট হবেন। আল্লাহর রেজামন্দি থেকে বড় নিয়ামত বান্দার জন্য আর কি হতে পারে?

 মুসলমাণ! খােদার শুকর গুজার করুন। কোটি কোটি প্রাণের বিনিময়ে পেলেও এসব নিয়ামত মুফত মনে হবে। তাই নবীদ্রোহীদের সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করা কত বড় গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, যার জন্য আল্লাহ তাআলা উপরােক্ত নিয়ামত সমূহের ওয়াদা করেছেন। আল্লাহর প্রতিশ্রুতির বিন্দু-বিসর্গও এদিক সেদিক হয়না। কুরআন করীমের একটি বৈশিষ্ট্য হচ্ছে প্রথমে অনন্য নিয়ামতের শুভ-সংবাদ দিয়ে সৎপথে আনয়নের চেষ্টা করা হয়। কিন্তু যে সব হতভাগা এসব নিয়ামতের প্রতি আকৃষ্ট হয় না, তাদেরকে মহাশাস্তির ভয়ের কথা স্মরণ করিয়ে দেয়া হয়। এবার সে আজাবের কথা শুনুন ।

◾আল্লাহ তাআলা ইরশাদ ফরমান,

يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا لَا تَتَّخِذُوا آبَاءَكُمْ وَإِخْوَانَكُمْ أَوْلِيَاءَ إِنِ اسْتَحَبُّوا الْكُفْرَ عَلَى الْإِيمَانِ ۚ وَمَن يَتَوَلَّهُم مِّنكُمْ فَأُولَٰئِكَ هُمُ الظَّالِمُونَ.

(হে ঈমানদারগণ! তােমাদের পিতা ও ভ্রাতা যদি ঈমান অপেক্ষা কুফরীকে শ্ৰেয় জ্ঞান করে, ওদেরকে অন্তরঙ্গরূপে গ্রহণ করাে না। তােমাদের মধ্যে যারা ওদেরকে অন্তরঙ্গরূপে গ্রহণ করে, তারা জালিম।)

◾অন্যত্র আরও ইরশাদ ফরমান,

يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا لَا تَتَّخِذُوا عَدُوِّي وَعَدُوَّكُمْ أَوْلِيَاءَ تُلْقُونَ إِلَيْهِم بِالْمَوَدَّةِ وَقَدْ كَفَرُوا بِمَا جَاءَكُم مِّنَ الْحَقِّ يُخْرِجُونَ الرَّسُولَ وَإِيَّاكُمْ ۙ أَن تُؤْمِنُوا بِاللَّهِ رَبِّكُمْ إِن كُنتُمْ خَرَجْتُمْ جِهَادًا فِي سَبِيلِي وَابْتِغَاءَ مَرْضَاتِي ۚ تُسِرُّونَ إِلَيْهِم بِالْمَوَدَّةِ وَأَنَا أَعْلَمُ بِمَا أَخْفَيْتُمْ وَمَا أَعْلَنتُمْ ۚ وَمَن يَفْعَلْهُ مِنكُمْ فَقَدْ ضَلَّ سَوَاءَ السَّبِيلِ.  إِن يَثْقَفُوكُمْ يَكُونُوا لَكُمْ أَعْدَاءً وَيَبْسُطُوا إِلَيْكُمْ أَيْدِيَهُمْ وَأَلْسِنَتَهُم بِالسُّوءِ وَوَدُّوا لَوْ تَكْفُرُونَ. لَن تَنفَعَكُمْ أَرْحَامُكُمْ وَلَا أَوْلَادُكُمْ ۚ يَوْمَ الْقِيَامَةِ يَفْصِلُ بَيْنَكُمْ ۚ وَاللَّهُ بِمَا تَعْمَلُونَ بَصِيرٌ 

(হে ঈমানদারগণ! আমার শত্রু ও তােমাদের শত্রুকে বন্ধুরূপে গ্রহণ করনা...। তােমরা ওদের সাথে গােপনে বন্ধুত্ব করতেছ। তােমরা যা গােপন কর ও প্রকাশ কর, তা আমি সম্যক অবগত। তােমাদের মধ্যে যে কেউ এরকম করে, সেতো বিচ্যুত হয় সরল পথ থেকে। তােমাদের আত্মীয়-স্বজন সন্তান-সন্ততি কিয়ামতের দিন কোন কাজে আসবে না। আল্লাহ তােমাদের মধ্যে পার্থক্য সৃষ্টি করবেন। তােমরা যা কর তিনি তা দেখেন। "

◾আল্লাহ তাআলা আরও ইরশাদ ফরমান,

وَمَن يَتَوَلَّهُم مِّنكُمْ فَإِنَّهُ مِنْهُمْ ۗ إِنَّ اللَّهَ لَا يَهْدِي الْقَوْمَ الظَّالِمِينَ.

(তােমাদের মধ্যে কেউ ওদের সাথে বন্ধুত্ব করলে, সে তাদেরই অন্তর্ভূক্ত হবে। আল্লাহ জালিমদেরকে হেদায়েত করেন না।)

প্রথম দু’আয়াতে ওদের সাথে বন্ধুত্বকারীদেরকে জালিম ও গােমরাহ বলেছেন এবং এ আয়াতে সুস্পষ্টভাবে বলে দেয়া হয়েছে যে, যারা ওদের সাথে বন্ধুত্ব রাখবে, তারা ওদের অন্তর্ভূক্ত হবে অর্থাৎ ওদের মত কাফির বিবেচ্য হবে এবং একই রশিতে বাঁধা হবে। আর এটাও স্মরণ রাখা দরকার যে তােমাদের লুকোচুরি সম্পর্কের ব্যাপারে আল্লাহ সম্যক ওয়াকিফহাল (অবগত)।

এবার সেই রশির কথা শুনুন, যেটা দ্বারা রসুলের শানে বেআদবী কারীদের বাধা হবে।

◾আল্লাহ তাআলা ইরশাদ ফরমানঃ

وَالَّذِينَ يُؤْذُونَ رَسُولَ اللَّهِ لَهُمْ عَذَابٌ أَلِيمٌ.

(যারা রাসূলুল্লাহকে কষ্ট দেয়, ওদের জন্য রয়েছে যন্ত্রনাদায়ক শাস্তি।) 

◾আরও ইরশাদ ফরমান,

إِنَّ الَّذِينَ يُؤْذُونَ اللَّهَ وَرَسُولَهُ لَعَنَهُمُ اللَّهُ فِي الدُّنْيَا وَالْآخِرَةِ وَأَعَدَّ لَهُمْ عَذَابًا مُّهِينًا.

(যারা আল্লাহ ও রসূলকে কষ্ট দেয়, তাদেরকে আল্লাহ দুনিয়া ও আখেরাতে অভিশপ্ত করেন এবং আল্লাহ তা'আলা তাদের জন্য কঠিন আজাব ঠিক করে রেখেছেন।)

আল্লাহ তাআলা পীড়া থেকে পবিত্র। তাঁকে আবার কে পীড়া দিতে পারে। তবে তাঁর হাবীব (ﷺ) এর শানে বেআদবীকে তাঁর জন্য পীড়াদায়ক বলেছেন। উপরােক্ত আয়াতসমূহে সে ব্যক্তির জন্য সাতটি পরিণামের কথা বর্ণিত হয়েছে,

আল্লাহ তাআলা পীড়া থেকে পবিত্র। তাঁকে আবার কে পীড়া দিতে পারে। তবে তাঁর হাবীব (ﷺ) এর শানে বেআদবীকে তাঁর জন্য পীড়াদায়ক বলেছেন। উপরােক্ত আয়াতসমূহে সে ব্যক্তির জন্য সাতটি পরিণামের কথা বর্ণিত হয়েছে,

◾যে রসূলুল্লাহ (ﷺ) এর শানে বেআদবীকারীদের সাথে সম্পর্ক রাখে। এ সাতটি পরিণাম হচ্ছেঃ

(১) জালিম

(২) গােমরাহ

(৩) কাফির

(৪) লাঞ্চনাদায়ক শাস্তি

(৫) পরকালে লাঞ্ছিত

(৬) সে আল্লাহকে কষ্ট দিয়েছে

(৭) তার প্রতি উভয় জাহানে খােদার লানত।

হে মুসলমান, হে জিন-ইনসানের সরদার (ﷺ) এর উম্মত! আল্লাহর ওয়াস্তে একবার বিবেচনা করে দেখুনঃ

◾রসূলের শানে বেআদবীকারীদের সাথে সম্পর্ক ছিন্নের জন্য যে সাতটি ফযীলতের কথা আগে বর্ণিত হয়েছে- অর্থাৎ,  

(১) অন্তরে ঈমানের স্থায়ীত্ব

(২) খােদার সাহায্য লাভ

(৩) বেহেশতে স্থান

(৪) আল্লাহওয়ালাদের মধ্যে অন্তর্ভূক্তি

(৫) মকসুদ হাসিল

(৬) ওর প্রতি খােদা প্রসন্ন এবং

(৭) সে খোদার প্রতি সন্তুষ্ট।

এ সাতটি কি আপনাদের কাছে পছন্দনীয় নয়? নাকি বেআদবের সাথে সুসম্পর্ক রক্ষারীদের জন্য যে পরিণামের কথা একটু আগে বর্ণিত হয়েছে, তা পছন্দনীয়? কখনই কেউ বাতে করুন এবং খালেস সাচ্চা নিতে মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ ﷺ এর অগাধ সম্মান ও উচ্চ মর্যাদা,যা আল্লাহ তাআলা তাঁকে দান করেছেন এবং তাঁর মান-সম্মানের উপর ঈমান ও ইসলামের ভিত্তি স্থাপন করেছেন, তা অন্তরে বদ্ধমূল করে ইনসাফ ও ঈমানের সাথে বলুন-যদি কেউ বলে-“শয়তানের জ্ঞানের পরিধি সুস্পষ্ট দলীল দ্বারা প্রমাণিত কিন্তু ফখরে আলম (ﷺ) এর জ্ঞানের পরিধির ব্যাপারে এমন কোন সুস্পষ্ট দলীল রয়েছে?” তাহলে কি সে রসূলে করীমের শানে বেআদবী করলােনা? সে কি অভিশপ্ত ইবলিসের জ্ঞানকে রসূলে করীম ﷺ এর পবিত্র জ্ঞান থেকে বেশী বলেনি? সে কি রসূলে করীমের জ্ঞানের বিশাল তা অস্বীকার করে শয়তানের জ্ঞানের বিশালতার উপর ঈমান আনেনি? মুসলমানগণ!

এ কটুক্তিকারীর জ্ঞানকে একবার শয়তানের জ্ঞানের সমতুল্য বলে দেখুন, এতে সে মানহানিকর মনে করে কিনা। অথচ তার জ্ঞানকে শয়তানের জ্ঞান থেকে কম বলা হয় নি বরং শয়তানের জ্ঞানের বরাবরই বলা হয়েছে। তাহলে এবার ভেবে দেখুন,শয়তানের জ্ঞান থেকে কম বলাটা মানহানিকর হলাে কিনা। আর যদি সে বাহ্যিকভাবে অবমাননাটাকে ব্যক্ত না করে (যদিওবা সে মনে মনে খুবই ক্রুদ্ধ হয়) তাহলে কোন ভদ্র লােককে এ ধরণের বলে দেখুন। তখন দেখবেন, এর প্রতিক্রিয়া কি হয়। কোর্টে গিয়ে কোন হাকিমকে সম্বােধন করে এ ধরণের শব্দ ব্যবহার করতে পারবেন কি? নিশ্চয়ই না, নিশ্চয়ই মানহানিকর মনে করা হবে। তাহলে রসূলের শানে এ ধরণের মানহানির কর শব্দ ব্যবহার করলে কি কুফরী হবেনা? যে শয়তানের জ্ঞানের বিস্তৃতিকে সুস্পষ্ট দলীল থেকে প্রমাণিত বলে দাবী করে, হুযুর (ﷺ) এর অগাধ জ্ঞানের বিশ্বাসীদেরকে বলে,“ওরা সমস্ত দলীলকে অগ্রাহ্য করে একটি শির্ককে প্রমাণিত করে এবং এটা শির্ক নয় কি ঈমানের অংশ”, সে ব্যক্তি কি অভিশাপ্ত শয়তানকে খােদার অংশীদার স্বীকার করেনি? নিশ্চয়ই স্বীকার করেছে। কারণ যে বিষয়টি মখলুকের জন্য প্রমান করা শির্ক, সেটা যার জন্য প্রমাণিত করা হােক কেন, শির্ক বলে গণ্য হবে। যখন রসুলে করীম (ﷺ) এর জ্ঞানের এ বিস্তৃতিকে স্বীকার করাটা শিরিক বলা হলাে এবং স্বীকারকারীদের কাফির ও মুশরিক বলা হলাে, তাহলে তিনি যে নিজের মুখে শয়তানের জন্য সেই জ্ঞানের বিস্তৃতি কে স্বীকার করলাে ও প্রমাণিত বলে দাবী করলাে, এতে শয়তানকে সুস্পষ্টভাবে কি খােদার অংশীদার বানানাে না? মুসলমানগণ! এধরণের উক্তি দ্বারা আল্লাহ ও রসূলের কি অবমাননা হলােনা? নিশ্চয়ই হয়েছে। আল্লাহর শানে অবমাননাতাে সুস্পষ্ট যে, তাঁর অংশীদার বানানাে হয়েছে, তাও পারে না যে শেষের সাতটি পছন্দনীয়। তবে এটা জেনে রাখা দরকার যে কেবল মৌখিক পছন্দ-অপছন্দ বললে কাজ হবে না। এর জন্য ঈমানের অগ্নি পরীক্ষার সম্মুখীন হতে হবে।

যেমন ইতােপূর্বে উল্লেখিত-

◾একটি আয়াত বর্ণিত আছে,

الم ۝ أَحَسِبَ النَّاسُ أَن يُتْرَكُوا أَن يَقُولُوا آمَنَّا وَهُمْ لَا يُفْتَنُونَ.

(মানুষ কি সেই ধোঁকায় আছে যে, “আমরা ঈমান এনেছি” এতটুকু বললেই ওদেরকে পরীক্ষা না করে অব্যাহতি দেয়া হবে।)


এখনই ঈমানের অগ্নি পরীক্ষার সময়।

এ পার্থিব জীবনটা হচ্ছে আল্লাহর পক্ষে থেকে পরীক্ষা নেয়ার সময়। দেখুন, তিনি বলেছেন- তােমাদের আত্মীয় স্বজন কিয়ামতের দিন কোন কাজে আসবেনা; আমাকে বাদ দিয়ে কার কাছে যাবে? তিনি আরও বলেছেন-আমি অলস নই,অজ্ঞ নই, তােমাদের কার্যাবলী দেখতেছি তােমাদের কথা শুনতেছি, তােমাদের অন্তরের ধারণা সম্পর্কে অবগত। তাই বেপরােয়া হয়ােনা, পাছে পরিণাম ফল বিগড়ে যায়। আল্লাহ ও রসূলের মুকাবিলায় জিদের বশবর্তী হয়ে কাজ কর না। দেখুন তিনি তােমাদেরকে তাঁর কঠিন আজাবের ভয় দেখাচ্ছেন। এ আজাব থেকে রক্ষা পাবার কোন উপায় নেই।দেখুন, তিনি তােমাদেরকে তাঁর রহমতের প্রতি আহবান করতেছেন। তাঁর রহমত বিনা কোন সাহারা নেই। আরও লক্ষ্য করুন, অন্যান্য গুণাহের দ্বারা আজাবের ভাগী হয় কিন্তু ঈমান নষ্ট হয় না। আজাব হওয়ার পর বা আল্লার রহমত ও তাঁর হাবীবের শারাফাতের বদৌলতে বিনা আজাবে রেহাই পাবে অথবা পেতে পারে। কিন্তু এখানে প্রশ্ন হচ্ছে মুহাম্মদ রসূলুল্লাহ (ﷺ) এর প্রতি সম্মান প্রদর্শনের। তাঁর প্রতি সম্মান ও মহব্বতের উপর ঈমান নির্ভরশীল। ইতােপূর্বে উল্লেখিত কুরআনের আয়াতে নিশ্চয়ই লক্ষ্য করেছেন যে, যে এ ব্যাপারে অবহেলা করবে, তাঁর জন্য উভয় জাহানে খােদার লানত। এবার ভেবে দেখুন, যখন ঈমান নষ্ট হয়ে যায়,তখন চিরদিনের আজাব থেকে রেহাই পাবার কোন উপায় থাকেনা। রসূলের শানে বেআদবীকারীদের তুমি এখানে কিছু সাহায্য সহযােগীতা করলেও কিন্তু সে ওখানে নিজেকে নিয়ে ব্যতিব্যস্ত থাকবে, তােমার সাহায্যে এগিয়ে আসবেনা আর আসলেও কিছু করতে পারবেনা। তাই এ ধরণের লােকের খাতির তওয়াজ করে নিজেকে চিরদিনের জন্য খােদার গজব ও দোযখের আগুণে নিক্ষেপ করাটা কি বুদ্ধিমানের কাজ হবে? আল্লাহর ওয়াস্তে কিছুক্ষণের জন্য আল্লাহ ও রাসূল ব্যতীত অন্যান্য সবকিছুর ধারণা ত্যাগ করে চোখ বন্ধ করুন এবং মস্তক অবনত করতঃ নিজেকে মহা পরাক্রমশালী আল্লাহর সামনে উপস্থিত মনে আবার অভিশপ্ত শয়তানকে রসূলের উর্ধে স্থান দিয়েছে এবং যে জ্ঞান শয়তানের জন্য প্রমাণ করেছে, তা রসূলের জন্য প্রমাণ করাটা শির্ক বলেছে। এবার বলুন, আল্লাহ ও তাঁর রসূলের শানে অবমাননাকারী কাফির কিনা? নিশ্চয়ই কাফির।

আর যে বলে “হুযুরের গায়বে ইলম বলতে যদি কতেক গায়বী ইলমকে বােঝানাে হয়, তাহলে এতে হুযুরের বিশেষত্ব কি? এ রকম গায়বী ইলম তো যায়েদ, আমর বরং প্রতিটি ছেলে , পাগল এমনকি চতুস্পদ জন্তুসমূহের ও রয়েছে।(হিফজুল ঈমান), 

সে কি বলেনি যে, রসূলে করীম ﷺকে অতটুকুই গায়বী ইলম দান করেছেন, যতটুকু চতুস্পদ জন্তু ও পাগলের রয়েছে ? ওহে মুসলমান! ওহে নবীজীর উম্মত। এ গালির ব্যাপারে আপনাদের কি কোন সন্দেহ থাকতে পারে? যদি এতে কোন সন্দেহ পােষন করেন, তাহলে ধরে নিতে হবে যে, আপনাদের অন্তরে রসূলে খােদা (ﷺ) এর প্রতি সম্মানবােধ বলতে কিছুই নেই, যার জন্য এ রকম কঠিন গালিকেও অবমাননাকর মনে করছেন না। যদিওবা এটা আপনাদের গায়ে লাগতেছে না,ওদেরকে একবার বলে দেখুন, ওহে অমুখ, তােমার অতটুকু জ্ঞান আছে, যতটুকু শূকরের আছে, তােমার উস্তাদের অতটুকু জ্ঞান ছিল, যতটুকু কুকুরের রয়েছে আর তােমার পীরের অতটুকু জ্ঞান ছিল, যতটুকু গা ধার আছে। এতে সে নিশ্চয়ই অবমাননা মনে করবে এবং সুযােগ পেলে প্রতিশােধ নেবে। তাহলে কি রসুলের মান-সম্মান এদের থেকেও কম? একই শব্দ ওদের বেলায় প্রয়ােগ করলে মানহানিকর হয় আর রাসুলের শানে প্রয়ােগ করলে বুঝি অবমাননাকর হয় না? আফসােস রাসূলের মান-সম্মানকে কতই নগণ্য মনে করা হচ্ছে। এরই নাম কি ঈমান? যে বলে, “প্রত্যেক ব্যক্তির কাছে এমন কোন একটি বিষয়ের জ্ঞান থাকে, যা অন্যজনের অজানা, তাহলে সবাইকে অদৃশ্য জ্ঞানী বলা যায়। এটাকে এককভাবে নবুয়াতের বৈশিষ্ট্য কিভাবে বলা যেতে পারে? যে বিষয়ে মুমিনদের এমনকি মানুষের বিশেষত্ব নেই, সেটা নবুয়াতের বৈশিষ্ট্য কিভাবে হতে পারে? আর তা যদি স্বীকার করা

হয়, তখন নবী ও গায়র নবীর পার্থক্যের কারণ বর্ণনা করা প্রয়ােজন। সে কি নবীকে গালি দিল ? রসূলে করীম, চতুস্পদজন্তু ও পাগলের মধ্যে পার্থক্য মনে না করাটা কি গালি নয়? সে কি আল্লাহ পাকের নিম্ন আয়াতগুলােকে অস্বীকার করলােনা। '

◾আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ ফরমান,

وعلمك مالم تكن تعلم . وكان فضل الله عليك  

(ওহে নবী, আল্লাহ আপনাকে শিখিয়েছেন, যা আপনি জানতেন না। আপনার উপর আল্লাহর বড় মেহেরবানী)

এখানে আল্লাহ তাআলা না জানা বিষয়সমসূহের জ্ঞানকে তাঁর হাবীবের কামালিয়াত ও প্রশংসা হিসেবে বর্ণনা করেছেন।

◾অন্যত্র ইরশাদ ফরমানঃ

وانه لذو علم لما علمناه

(নিশ্চয়ই হযরত ইয়াকুব (ﷺ) আমার প্রদত্ত জ্ঞানের দ্বারা জ্ঞানী)

◾আর এক জায়গায় ইরশাদ ফরমানঃ  

وبشروه بغلام عليم

(ফিরিশতাগণ হযরত ইব্রাহিম ﷺকে এক জ্ঞানী পুত্র সন্তানের সুস্বাদ দিল।)

◾আরও ইরশাদ ফরমানঃ

وعلمنه من لدنا علما

(আমি হযরত খিজির ﷺকে নিজের থেকে একটি জ্ঞান শিক্ষা দিয়েছি।)

উল্লেখিত আয়াতসমূহে আল্লাহ তাআলা জ্ঞানকে নবীদের কামালিয়াত হিসেবে বর্ণনা করেছেন। অথচ সেই কটুক্তিকারীর বর্ণনায় আল্লাহ কালামকে অগ্রাহ্য করা হয়েছে। যদি উপরােক্ত উক্তিতে যায়েদের স্থলে আল্লাহ নাম নেয়া হয় এবং ইলমে গায়েবের জায়গায় সাধারণ জ্ঞান বলা হয়, তাহলে (ওহাবীদের যুক্তি অনুযায়ী) ইবারতটা দাঁড়ায় নিন্মরূপঃ

“নবী করীম ﷺ ও অন্যান্য আম্বিয়া কিরামের পবিত্র সত্ত্বার উপর জ্ঞানের বিশেষণ প্রয়ােগ করাটা যদি আল্লাহর কথামত শুদ্ধ হয়, তাহলে এ বিষয়টা জানা দরকার যে, এ জ্ঞান বলতে কি কতেক জ্ঞানকে বােঝানাে হয়েছে, নাকি পূর্ণ জ্ঞানকে।যদি কতেক জ্ঞানকে বােঝানাে হয়, তাহলে এতে হুযুর ও অন্যান্য নবীদের কি বিশেষত্ব রয়েছে, এরকম জ্ঞানতাে, যায়েদ,অমর এবং প্রতিটি শিশু ও পাগল এমনকি সমস্ত প্রানী ও চতুস্পদ জন্তুর রয়েছে।

প্রত্যেক ব্যক্তির কাছে এমন কোন একটি না একটি বিষয়ে জ্ঞান থাকে, যা অন্যজনের অজানা। তাহলে তাে সবাইকে জ্ঞানী বলা যায়। যদি আল্লাহ তাআলা মেনে নেয়- হ্যাঁ আমি সবাইকে জ্ঞানী বলি, তাহলে এ জ্ঞানকে এককভাবে নবীদের কামালিয়াত কিভাবে বলা যায়? যে বিষয় মুমিন এমনকি মানুষের বিশেষত্ব নেই, সেটা কামালাতে নবুয়াত কি করে হতে পারে? আর যদি মেনে নেয়া না হয়, তাহলে নবী ও গায়র-নবীর মধ্যে পার্থক্যের কারণ বর্ণনা করা প্রয়ােজন। যদি সমস্ত জ্ঞানকে বােঝানাে হয় অর্থাৎ কোন বিষয়ই জ্ঞানের বহির্ভূত নয় বলে মনে করা হয়,তাহলে এটা বাতিল বলে নকলী ও আকলী দলিল দ্বারা প্রমানিত।” সুতরাং ওর এ যুক্তিদ্বারা আল্লাহ তাআলার উপরােক্ত আয়াতসমূহ বাতিল প্রমাণিত হলাে। লক্ষ্য করুন, এ কটুক্তিকারী কেবল নবীজীকে গালি দেয়নি, বরং আল্লাহ তাআলার কালামসমূকেও বাতিল সাব্যস্থ করেছে। মুসলমানগণ! যার সাহস এতটুকু হয়েছে যে রসূলে খােদার গায়বী ইলমকে পাগল ও  চতুষ্পদ জন্তুর জ্ঞানের সাথে তুলনা করেছে এবং যে ঈমান, ইসলাম, মানবতা ইত্যাদি থেকে চোখ বন্ধ করে পরিস্কার বলতে পারে যে নবী ও চতুস্পদজম্ভর মধ্যে কোন পার্থক্য নেই, এতে আশ্চর্য হওয়ার কিছু নেই। কারণ যে আল্লাহর কালামকে অগ্রাহ্য করে পদদলিত করতে পারে, তার জন্য রসূলকে গালি দেয়া বড় কিছু নয়। তবে ও কে জিজ্ঞাসা করা দরকার, তার এ বক্তব্য স্বয়ং তার বেলায় ও তার উস্তাদের বেলায় প্রয়ােগ হয় কিনা।যদি না বলে তাহলে কেন, আর যদি হ্যা বলে, তাহলে প্রশ্ন হচ্ছে-আপনারা যেসব বক্তব্য হুযূরের শানে রেখেছেন, তা আপনাদের বেলায় প্রয়ােগ করার অনুমতি দিবেন কি? আপনাদেরকে আলিম, ফাজিল, মােল্লা, মৌলানা কেন বলা হয়? চতুষ্পদ জন্তু যেমন, কুকুর, শূকরকে এসব শব্দ দ্বারা কেন সম্বােধন করা হয় না? এসব মর্যাদার জন্য আপনাদেরকে কেন ইজ্জত সম্মান করা হয় এবং হাত-পায়ে চুমু দেয়া হয়? কই, গরু-গাধাকে কেউতাে এভাবে সম্মান করে না। এর কারণ কি? পূর্ণ জ্ঞান তাে আপনাদেরও নেই আর আংশিক জ্ঞানে আপনাদেরই বা কি বিশেষত্ব রয়েছে। এরকম জ্ঞান পেঁচা, গাধা, কুকুর, শুকুর ইত্যাদির রয়েছে। তাহলে তাে আপনাদের মত ওদেরকেও আলিম, ফাজিল, মােল্লা- মৌলভী বলা যেতে পারে। যদি আপনারা স্বীকার করেন, হ্যা বলা যেতে পারে, তাহলে জ্ঞানকে আপনাদের কামালিয়াত হিসেবে কেন গণ্য করা হয়? এক্ষেত্রে তাে মুমিন এমনই মানুষের কোন বিশেষত্ব নেই, গাধা, গরু, কুকুর-শূকর সবার জ্ঞান রয়েছে। আর যদি স্বীকার না করেন, তাহলে আপনাদের বক্তব্য অনুসারে আপনাদের ও গাধা, কুকুর ও শূকুরের মধ্যে পার্থক্যের কারণ বর্ণনা করা প্রয়ােজন। মুসলমানগণ! এতটুকু জিজ্ঞাসা করলেই পরিস্কার বােঝা যাবে যে এসব কটুক্তিকারীরা রসুলল্লাহু (ﷺ) এর শানে কী ধরণের জঘণ্য গালি নিয়েছে এবং আল্লাহর কালামকে কিভাবে রদ ও বাতিল করেছে। মুসলমানগণ,ওসব কটুক্তিকারীদের এবং সমর্থকদের জিজ্ঞাসা করুন, তাদের স্বীকারােক্তি অনুযায়ী নিম্মবর্ণিত কালামে পাকের আয়াত সমূহ তাদের ক্ষেত্রে প্রযােজ্য কিনা?

◾আল্লাহ তাআলা ইরশাদ ফরমানঃ

ولقد ذرانا لجهنم كثيرا بين الجن والإنس (صلے ز) لهم قلوب لا يفقهون. بها ولهم أعين لايبصرون بها اولهم اذان لأيسمعون بها أولئك كالأنعام بل هم أضل . أولئك هم الغافلون .

(আমিতাে বহু জ্বিন ও মানবকে জাহান্নামের জন্য সৃষ্টি করেছি। তাদের ঐ ধরণের হৃদয় আছে, যা দ্বারা হক উপলব্ধি করেনা, তাদের চক্ষু আছে তবুও সঠিক পথ দেখেনা এবং তাদের কর্ণ আছে, তবুও হক কথা শুনেনা। তারা হচ্ছে পশুর মত বরং এর থেকেও অধম। তারা অলসতায় নিমজ্জিত।)

◾আল্লাহ তাআলা আরও ইরশাদ ফরমান -

 أرأيت من التُجذ الهه هؤة أفانت تكون عليه وكيلاً . أم تحسب أن أكثرهم يسمعون أو يعقلون ان هم إلا كالأنعام بل هم أضل سبيلا.  

(তুমি কি দেখনি তাকে, যে তার কামনা-বাসনাকে ইলাহরূপে গ্রহণ করে? তবুও কি তুমি তার কর্মবিধায়ক হবে? তুমি কি মনে কর যে, ওদের অধিকাংশ শুনে ও বুঝে? ওরাতাে পশুর মত বরং এর চেয়েও অধম)

ওসব কটুক্তিকারীরা চতুস্পদ জন্তুর জ্ঞানকে নবীদের জ্ঞানের সমতূল্য মনে করেছে। এখন তাদেরকে জিজ্ঞাসা করুন- তােমাদের জ্ঞান কি নবীদের বা স্বয়ং সায়্যিদুল আম্বিয়া (ﷺ) এর জ্ঞানের সমতুল্য? বাহ্যতঃ তারা এ দাবী করবে না। আর যদি করেই থাকে অর্থাৎ,  চতুস্পদ জন্তুর বরাবর যেখানে বলতে পেরেছে, সেখানে দু’পা বিশিষ্ট ব্যক্তির বরাবর বলতে অসুবিধা নেই, তাহলে এটা জিজ্ঞাসা করুন যে তােমাদের উস্তাদ বা পীরদের মধ্যে এমন কেউ ছিল,যে তােমাদের থেকে বেশী জ্ঞানী ছিল বা সবাই একই বরাবর ছিল? নিশ্চয়ই বেশী জ্ঞানী বলবে। তাহলে মেনে নিতে হয় যে তাদের কথামত তাদের উস্তাদ ও অন্যান্যগণ জ্ঞানের দিক দিয়ে চতুস্পদ জন্তুর সমতূল্য। আর তারা যেহেতু সাগরীদ হিসেবে কর্মজ্ঞানী, সেহেতু তারা তাদের আক্কীদা মােতাবেক চতুস্পদ জন্তর থেকেও অধম। উপরােক্ত আয়াতের বক্তব্যটাও তা-ই ছিল।

মুসলমানগণ! এ-তাে গেল ওই সমস্ত উক্তিসমূহ যেগুলােতে আম্বিয়া কিরাম বিশেষ করে হুযূর পুর নুর (ﷺ) এর শানে বেআদবী করা হয়েছে। এবার ওই সমস্ত ইবারতসমূহ দেখুন,যেগুলাে দ্বারা আল্লাহ তাআলার ইজ্জতের প্রতি আঘাত করা হয়েছে।

◾যেমন বলা হয়েছে-“আমি কখন বললাম যে আল্লাহ মিথ্যা বলতে পারেনা। অর্থাৎ সে বিশ্বাস করে যে আল্লাহ কার্যতঃ মিথ্যুক, মিথ্যা বলে। 

◾এর সমর্থনে বলা হয়েছে, “এ ধরণের ফতােয়া দানকারী যদিওবা আয়াতের তাবিল করতে গিয়ে ভূল করেছে, তবুও আমাদের পক্ষে ওকে কাফির,বিদআতী বা গােমরাহ বলা অনুচিৎ।”

◾আরও বলা হয়েছে” ওর বেলায় কঠোর ভাষা ব্যবহার ঠিক নয়।”

◾এ-ও বলা হয়েছে ‘এর ফলে পূর্ববর্তী উলামায়ে কিরামের প্রতি কুফরী আরােপ করাটা বাধ্য হয়ে পড়ে” অথচ হানাফী- শাফেয়ীর নিন্দা ও দোষারােপ করা যায় না। অর্থাৎ আল্লাহকে মিথ্যুক বলাটা পূর্ববর্তী অনেক উলামায়ে কিরামের আকীদা ছিল।

◾এ মতভেদ হানাফী-শাফেয়ী মতভেদের মত। কেউ (নামাযের সময়) নাভীর উপরে হাত রাখে এবং কেউ নাভীর নীচে হাত রাখে। ওটাকে এরকম মনে করুন।

অর্থাৎ কেউ খােদাকে সত্যবাদী বলেছেন,কেউ মিথ্যাবাদী বলেছেন।সুতরাং এরকম প্রবক্তার নিন্দা ও ঘৃনা করার থেকে বিরত থাকা উচিত। অর্থাৎ যে আল্লাহকে মিথ্যুক বলে, ওকে গােমরাহ কেন, এমনকি গুনাহগার পর্যন্ত বলাে না। এতাে বুঝা গেল আল্লাহকে মিথ্যুক আখ্যায়িতকারী সম্পর্কে অভিমত।

এবার নিজের থেকে উপরােক্ত অভিমত সমর্থন করে বলে-“মিথ্যার উপর প্রয়ােগহীন ক্ষমতা রাখাটা হচ্ছে সর্বসম্মত বিষয়। দেখুন, পরিস্কার বলে দিয়েছে যে মিথ্যা প্রকাশ পাবার অভিমতটা সঠিক অর্থাৎ-

◾আল্লাহ থেকে মিথ্যা প্রকাশ পায়। এধরণের মনােভাব পােষণকারী কি মুসলমান থাকতে পারে? এধরণের ব্যক্তিকে যে মুসলমান মনে করে, সেও কি নিজে মুসলমান থাকতে পারে? 

মুসলমানগণ! আল্লাহকে সত্যবাদী বলে বিশ্বাস করার নাম ঈমান। সত্যবাদিতার বিপরীত হচ্ছে মিথ্যাবাদিতা। তাই খােদাকে সুস্পষ্টভাবে মিথ্যুক বলার পরও যদি ঈমান বাকী থাকে, তাহলে আল্লাহই জানে,ঈমান কোন জানােয়ারের নাম। মজুসী, হিন্দু, ইহুদী, খৃষ্টান কেন কাফির হলাে, বুঝতে পারলামনা। ওদের মধ্যে কেউতাে আল্লাহকে মিথ্যুকও বলেনি, কেবল আল্লাহর হুকুমকে অমান্য করেছে।

তবে পৃথিবীর বুকে এমন কোন কট্টর কাফিরও পাওয়া যাবে না, যে খােদাকে খােদা বলে স্বীকার করে, তাঁর কালামকে কালামুল্লাহ বলে মনে করে এবং এর পর হঠাৎ বলে যে আল্লাহ মিথ্যা বলে মােট কথা হলাে ওসব কটুক্তিকারীরা যে আল্লাহু ও তার রসূলকে গাল ভরে গালি দিয়েছে, এব্যাপারে কোন সুবিবেক সম্পন্ন ব্যক্তির মনে কোন প্রকারের সন্দেহ থাকতে পারেনা। 

এটাই হচ্ছে খােদায়ী পরীক্ষার সময়। তাই আল্লাহকে ভয় করুন এবং ইতােপূর্বে উল্লেখিত আয়াত সমূহ স্মরণ রেখে আমল করুন। তখন দেখবেন, আপনাদের ঈমান আপনাদের অন্তর সমূহে সমস্ত কটুক্তকারীদের প্রতি ঘৃণায় সৃষ্টি করবে এবং কখনও আল্লাহ তাঁর রসূলের মােকাবেলায় ওদের সহায়ক হতে দেবেন না। ওদের প্রতি আপনাদের অনীহা জাগবে এবং আল্লাহ ও তাঁর রসূলের শানে গালিগালাজের সাফাই গাওয়ার কোন মনােভাব সৃষ্টি হবেনা। যদি কেউ আপনাদের মা-বাপ উস্তাদ বা পীরকে গালি দেয়, তাও আবার মৌখিক নয়, লিখিতভাবে প্রকাশ করে, তাহলে কি আপনারা ওদের সাথে সদ্ভাব বজায় রাখবেন? নাকি ওদের কথার কোন ব্যাখ্যা দিতে চেষ্টা করবেন? বা ওদের এসব কথার প্রতি কোন গুরুত্ব না দিয়ে যথারীতি সুসম্পর্ক বজায় রাখবেন? কখনই নয়, যদি মানবিক আত্মমর্যাদাবােধ ও চেতনা বলতে কিছু থাকে এবং মাতা-পিতার মান-সম্মানের প্রতি কিঞ্চিত পরিমাণও যদি শ্রদ্ধাবােধ থাকে, তাহলে সেই কটুক্তিকারীকে নিশ্চয়ই ঘৃণা করবে, ওর সাথে সংশ্রব ত্যাগ করবে, ওর নাম শুনলে ঘৃণাভরে থুথু নিক্ষেপ করবে। এবং যে ওর পক্ষে সাফাই গাইবে, তাকে শত্রু মনে করবে। কিন্তু মা-বাপের মান-সম্মানের তুলনায় অদ্বিতীয় আল্লাহ ও তাঁর হাবীবের মান ইজ্জত অনেক ঊর্ধে। সত্যিকার মুসলমান আল্লাহ ও তার রসুলের মান-ইজ্জতের সামনে মা বাপের মহব্বত ও মান-সম্মানকে তুচ্ছ জ্ঞান করে এবং নিশ্চয়ই নিশ্চয়ই ওইসব কটুক্তিকারীদের সাথে সংশ্রব ঘৃণাভরে ত্যাগ করবে। এ ধরণের লােকদের জন্যই রয়েছে সাতটি নিয়ামতের শুভ -সংবাদ, যা ইতােপূর্বে উল্লেখিত হয়েছে।

মুসলমানগণ! এ অধম মনে করে যে, মহাপরাক্রমশালী আল্লাহ তাআলার উল্লেখিত আয়াত ও সুস্পষ্ট বর্ণনার পর নতুনভাবে আর কিছু বলার প্রয়ােজন রাখে না। আপনাদের ঈমানই ওইসব কটুক্তিকারীদের প্রতি সেই পবিত্র বাণী উচ্চারণ করবে। তবুও আল্লাহ তাআলা আপনাদেরকে শিখানাের জন্য কুরআনে পাকে হযরত ইব্রাহীম (ﷺ)-এর কউমের ঘটনা উল্লেখ করেছেন। যেমন -

◾তিনি ইরশাদ ফরমানঃ

قد كانت لكم أسوة حسنة في إبراهيم والذين معه (ج) اذ قالوا لقومهم انا براء ؤ منكم وما تعبدون من دون الله كفرنا بكم

بد ابيننا وبينكم العداوة والبغضاء أيد اختى تؤمنوا بالله وحده (الى قوله تعالى) لقد كان لكم فيهم أسوة حسنة لمن كان يرجوا الله واليوم الاخرة ومن يتول فان الله هو الغني الحميد.

(তােমাদের জন্য ইব্রাহীম ও তার অনুসারীদের মধ্যে রয়েছে উত্তম আদর্শ। তারা তাদের সম্প্রদায়কে বলেছিল তােমাদের সঙ্গে এবং তােমরা আল্লাহর পরিবর্তে যাদের ইবাদত কর তাদের সঙ্গে আমাদের কোন সম্পর্ক নেই। আমরা তােমাদেরকে মানিনা। তােমাদের ও আমাদের মধ্যে সৃষ্টি হলাে চিরদিনের জন্য শত্রুতা ও বিদ্বেষ, যতক্ষণ না তােমরা এক আল্লাহর উপর ঈমান আন।...... তােমরা যারা আল্লাহ ও আখিরাতের প্রত্যাশা কর, নিশ্চয়ই তাদের জন্য রয়েছে উত্তম আদর্শ। ওদের মধ্যে কেউ মুখ ফিরিয়ে নিলে, সে জেনে রাখুক যে আল্লাহতাে অভাবমুক্ত প্রশংসার পাত্র।)

অর্থাৎ আল্লাহ তাআলা বলতেছেন যেভাবে আমার খলীল ও তার সাথীরা আমার জন্য স্বীয় সম্প্রদায়ের বিরোদ্ধে শক্ত হয়ে গিয়েছিল এবং ওদের থেকে সম্পূর্ণ আলাদা হয়ে গিয়েছিল এবং সুস্পষ্টভাবে বলে দিয়েছিল-“আমাদের সাথে তােমাদেরও কোন সম্পর্ক নেই, আমরা তােমাদের প্রতি অসন্তুষ্ট। তােমাদের অনুরূপ করা উচিত। এটা তােমাদের মঙ্গলের জন্য বলা হচ্ছে। মানলেতাে তােমাদেরই মঙ্গল আর না মানলে আমার কোন ক্ষতি নেই। আমি তােমাদের পরওয়া করিনা। যেভাবে ওরা আমার শত্রু হয়েছে, তােমরাও হতে পার। আমিতাে অভাবমুক্ত এবং সমস্ত প্রশংসায় প্রশংসীত। এতাে হচ্ছে কুরআন শরীফের আহকাম। আল্লাহ তাআলা যার প্রতি সুপ্রসন্ন, তাকে ওগুলাে মােতাবেক আমল করার তৌফিক দান করবেন। তবে এখানে দুটি ফেরকা আছে ,যারা এসব আহকামের ব্যাপারে অজুহাত পেশ করে।


প্রথম ফেরকা হচ্ছে-জ্ঞানহীন মূর্খ ।

ওদের অজুহাত দু'ধরণের- 

এক, অমুকতাে আমাদের উস্তাদ বা বুযর্গ বা বন্ধু। এ ধরণের অজুহাতের উত্তর আপনারা কুরআন শরীফের বিভিন্ন আয়াতে শুনেছেন যে, আল্লাহ তাআলা সুস্পষ্টভাবে বলে দিয়েছেন যে, তাঁর গজব থেকে বাচঁতে চাইলে, এক্ষেত্রে বাপেরও রেয়ায়েত করাে না।

দুই, কটুক্তিকারী ব্যক্তি ও তাে আলিম। তাই একজন আলিমকে কিভাবে কাফির বলা যায় বা দোষারােপ করা যায়?

◾এর জবাব স্বয়ং আল্লাহ তাআলা দিয়েছেনঃ

أقرئيت من التخذ الهه هوه وأضله الله على علم وختم على شمعه وقلبه وجعل على بصره غشوة فمن يهديه من بعد الله أفلا تذكرون .  

তুমি কি লক্ষ্য করেছ তাকে, যে তার খেয়াল-খুশীকে নিজ ইলাহ বানিয়ে নিয়ে ছে? আল্লাহ স্ব-জ্ঞানে ওকে বিভ্রান্ত করেছেন এবং তার কর্ণ ও হৃদয়ের উপর সীল করে দিয়েছেন এবং তার চক্ষুর উপর রেখেছেন আবরণ। অতএব, আল্লাহ ভিন্ন কে তাকে পথ নির্দেশ করবে? তবুও কি তােমরা শিক্ষা গ্রহণ করবেনা? 

◾আরও ইরশাদ ফরমানঃ

مثل الذين حملوا التوراة ثم لم يحملواها كمثل الحمار يحمل أسفارا ، بئس مثل القوم الذين كذبوا بآيات الله والله يهدي القوم الظالين

তাদের উপর তাওরাতের দায়িত্বভার অর্পিত হয়েছিল, তারা তা বহন করেনি, তাদের দৃষ্টান্ত পুস্তক বহনকারী গর্দভের মত। কত নিকৃষ্ট সে সম্প্রদায়ের দৃষ্টান্ত যারা আল্লাহর আয়াতকে মিথ্যা বলে। আল্লাহ জালিমদেরকে হিদায়েত করেন না। 

◾আল্লাহ পাক আরও ইরশাদ ফরমানঃ

واتل عليهم نبأ الذي اتينة أياتنا فانسلخ منها فاتبعة الشيطن فكان من الغاوين . ولو شئنا لرفعنه بها ولكنه أخلد إلى الأرض وابع هؤة فمثله كمثل الكلب ان تحمل عليه يلهث أو تتركه يلهث ذلك مثل القوم الذين كذبوا باياتتا قاقصص القصص لعلهم يتفكرون . ساء ممثلان القوم الذين كذبوا بأيتنا وانفسهم كانوا يظلمون من يهدى الله فهو المهتدي ومن يضلل فأؤليك هم الخسرون..  

(তাদেরকে সেই ব্যক্তির বৃত্তান্ত পড়ে শুনাও,যাকে আমি দিয়েছিলাম আমার নিদর্শনসমূহের জ্ঞান। সে ওগুলােকে ত্যাগ করে। তখন শয়তান তার পিছু নেয় আর সে বিপদগামীদের অন্তর্ভুক্ত হয়। আমি ইচ্ছা করলে তাকে সে জ্ঞানের বদৌলতে উচ্চ মর্যাদা দান করতাম কিন্তু সে দুনিয়ার প্রতি ঝুঁকে পড়ে এবং স্বীয় প্রবৃত্তির অনুসরণ করে। তার অবস্থা কুকুরের ন্যায়, তুমি ওকে হামলা করলে, সে জিহবা বের করে হাঁপায়। যারা আমার নিদর্শনকে প্রত্যাখ্যান করে, তাদের অবস্থাও অনুরূপ। তুমি আমার এ বর্ণনা বিবৃত কর, যাতে তারা চিন্তা করে। যারা আমার নিদর্শনকে প্রত্যাখ্যান করে এবং নিজেদের প্রতি জুলুম করে, তাদের অবস্থা কত মন্দ। আল্লাহ যাকে হেদায়েত করেন,সে হেদায়েত প্রাপ্ত হয় এবং যাদেরকে বিপথগামী করেন, তারা ক্ষতিগ্রস্ত)।

এ আয়াতসমূহ থেকে প্রতিভাত হলাে যে হিদায়েত জ্ঞানের উপর নয়, খােদার ইচ্ছার উপর নির্ভরশীল।

◾আর এমন অনেক হাদীছ রয়েছে,

যে গুলােতে বিপদগামী আলিমদের নিন্দা করা হয়েছে। 

◾এমনকি একটি হাদীছে এতটুকু পর্যন্ত উল্লেখিত আছে যে, দোযখের ফিরিশ্তাগণ মূর্তি পূজারীদের ধরার আগে ওদেরকে পাকড়াও করবে। তাদেরকে মূর্তি পূজারীদেরও আগে কেন পাকড়াও করা হবে, জিজ্ঞাসিত হলে, উত্তরে বলবে, (জ্ঞানী-অজ্ঞ এক বরাবর নয়)

ভাইসব! একজন আলেমকে সম্মান করার কারণ হলাে-তিনি নবীর উত্তরাধিকারী আর সঠিক উত্তরাধিকারী হলেন তিনি, যিনি সৎপথের উপর অটল আছে। কিন্তু যখন কেউ গােমরাহ হয়ে যায়, তখন সে আর নবীর উত্তরাধিকারী রইলাে না; তখন সে হয়ে যায় শয়তানের উত্তরাধিকারী।

আর তখন তার সম্মান করা মানে শয়তান কে সম্মান করা। যেমন বদমাযহাবের আলেমগণ কুফরী থেকে আরও জঘন্য গােমরাহে নিমজ্জিত। তাদেরকে আলেমে দ্বীন মনে করাটাও কুফরী আর সম্মান করার তাে প্রশ্নই উঠেনা। ইলম তখনই ফলদায়ক হয়, যখন দ্বীনের সাথে সংশ্লিষ্ট থাকে। দ্বীন থেকে সম্পর্কচ্যুত ইলমের কোন মূল্য নেই। পন্ডিত-পাদরীরা কি জ্ঞানী নয় ? ইবলীস কত বড়ই না আলেম ছিল। সে মােয়াল্লেমুল মলেকুত অর্থাৎ ফিরিশতাদের প্রশিক্ষক ছিল। তাই বলে কি মুসলমানেরা তাকে সম্মান করবে? কখনই না। যখন থেকে সে হুজুর (ﷺ) এর প্রতি সম্মান থেকে মুখ ফিরালাে এবং হযরত আদম (আঃ) এর ললাটে রক্ষিত হযুরের নুরকে সিজদা করলাে না, তখন থেকে ফিরিশতাগণ তার গলায় চিরস্থায়ী লানতের শৃঙ্খল পরিয়ে দিলেন। এবার দেখুন, ওর শাগরীদরা ওর সাথে কি ধরণের আচরণ করলেন, সবসময় ওর প্রতি লানত দিচ্ছেন, প্রতি রমাযান মাসে ওকে আপাদমস্তক শৃঙ্খলবেষ্টিত করেন এবং কিয়ামত দিবসে টেনে টেনে দোযখে নিয়ে যাবেন। এ বর্ণনা সে সব মুসলমান দাবীদারদের জন্য, যারা আল্লাহ ও তাঁর রসূল থেকে উস্তাদকে বেশী গুরুত্ব দেয় এবং আল্লাহ ও তাঁর রসূল অপেক্ষা ভাই, বন্ধু বা দুনিয়ার কাউকে বেশী মহব্বত করে। 

হে আল্লাহ! আমাদেরকে সঠিক ঈমান দান করুন এবং আপনার হাবীবের যথাযথ সম্মান করার তৌফিক দান করুন।
ও তাঁর রসূল থেকে উস্তাদকে বেশী গুরুত্ব দেয় এবং আল্লাহ ও তাঁর রসূল অপেক্ষা ভাই, বন্ধু বা দুনিয়ার কাউকে বেশী মহব্বত করে। 

হে আল্লাহ! আমাদেরকে সঠিক ঈমান দান করুন এবং আপনার হাবীবের যথাযথ সম্মান করার তৌফিক দান করুন।


দ্বিতীয় ফেরকা হচ্ছে : সুচতুর দ্বীনের শত্রুগণ। 

তারা নিজেরা ধর্মের প্রয়ােজনীয় বিষয়কে অস্বীকার করে এবং সুস্পষ্ট কুফরী করে, তা ধামাচাপা দেয়ার জন্য ইসলাম, কুরআন, রসুল ও ঈমান নিয়ে পরিহাস করে এবং শয়তানের মত ও ধরণের যুক্তি খাড়া করে, যাতে ধর্মীয় প্রয়ােজনীয় বিষয়াদি থেকে আস্থা উঠে যায় এবং কেবল তােতা পাখীর মত মুখে কলেমা পাঠ করাকেই ইসলাম বুঝে। ওদের মতে, কলেমা পাঠ করুন, এরপর ইচ্ছা করলে খােদাকে মিথ্বক বলুন বা রসূলকে বড় বড় গালি দিন, এতে ইসলাম যাবে না।

بل لعنهم الله بكفرهم فقليلا لما يؤمنون.

- এরা হচ্ছে মুসলমানের দুশমন ও ইসলামের শত্রু। এরা সাধারণ লােককে বিপথগামী করার জন্য ও আল্লাহর দ্বীনকে পরিবর্তন করার মানসে কয়েকটি শয়তানী ধোঁকা আলপন করে থাকে।


প্রথম ধোঁকাঃ কালেমা পাঠ করার নামই ইসলাম। 

হাদীছ শরীফে আছেঃ

من قال لا اله الا الله دجل الخنة.

 (যে লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু বলেছে, সে বেহেশতে প্রবেশ করবে।) 

তাই কোন কথা বা কাজের কারণে কিভাবে কাফির হতে পারে? মুসলমানগণ! একটু হুশিয়ার, সাবধান! এ ধোঁকার সার কথা হচ্ছে, মুখে ‘লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু’ বলা মানে যেন খােদার বেটা হয়ে যাওয়া। মানুষের সন্তান যদি বাপকে গালি দেয়, জুতা মারে বা অন্যকিছু করে, এতে ওর সন্তান সন্তানই থাকে। তদ্রুপ যে লা-ইলাহা ইল্লল্লাহু বলবে, সে চাহে আল্লাহকে মিথ্যুক বলুক, চাহে নবীকে বড় বড় গালি দিক, এতে ওর ইসলামের কোন ক্ষতি হবে না। এ ধোঁকার একটি উত্তরতাে সেই পবিত্র আয়াতে রয়েছে,

الم حسب الناس.

 যা ইতােপূর্বে উল্লেখিত হয়েছে যে মানুষ কি সেই ধোঁকায় আছে যে, (“আমরা ঈমান এনেছি’- এতটুকু বললেই ওদেরকে পরীক্ষা না করে অব্যাহতি দেয়া হবে?) 

ইসলাম যদি সত্যিই কলেমা পাঠের নাম হয়, তাহলে এ আয়াতের কি অর্থ হতে পারে ?

◾আল্লাহ তায়ালা আরও ইরশাদ ফরমানঃ

قالت الأعراب أمنا قل لم تؤمنوا ولكن قولوا أشكمنا ولما يدخل الإيمان في قلوبكم

(এ আনাড়ি লােকেরা বলে “আমরা ঈমান এনেছি। তুমি বলে দাও তােমরা ঈমান আননি বরং তােমরা বল “আমরা ইসলামের অনুগত হয়েছি। ঈমান এখনও তােমাদের অন্তরে প্রবেশ করেনি।) 

◾আল্লাহ তায়ালা আরও ইরশাদ ফরমানঃ

اذا جاءك المنفقون قالوا نشهد إنك لرسول الله . والله يعلم أنك لرسوله والله يشهد ان المنفقين لكاذبون .

(মুনাফিকগণ যখন তােমার নিকট আসে, তখন তারা বলে আমরা সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আপনি নিশ্চয়ই আল্লাহর রসুল এবং আল্লাহ ভালমতে জানেন যে আপনি নিশ্চয়ই তাঁর রসুল এবং আল্লাহ সাক্ষ্য দিচ্ছেন যে, এ মুনাফিকগণ অবশ্যই মিথ্যাবাদী)

দেখুন, কলেমা পাঠের কেমন জোরালাে বক্তব্য ও বলিষ্ট শপথের পর মুসলিম বলে গণ্য হলাে না এবং মহাপরাক্রমশালী আল্লাহ তাআলা ওদেরকে মিথ্যুক বলে সাক্ষ্য দিয়েছেন। তাহলে

من قال لا اله الا الله دجل الخنة.

এর উপরােক্ত ভাবার্থ গ্রহণ করাটা মানে সুস্পষ্ট কুরআনকে রদ করা। তবে হ্যা, যে কলেমা পাঠ করে এবং নিজেকে মুসলমান বলে, আমরা ওকে মুসলমানই মনে করবাে, যতক্ষণ না ওর থেকে কোন কথা, কোন আচরণ বা কোন কাজ ইসলাম বিরােধী প্রকাশ পায়।


দ্বিতীয় ধোঁকাঃ আহলে কিবলাকে আমরা কাফির বলি না।

◾ইমাম আযম (রাঃ) এর অভিমত হলাে -

لا نكفر احدا من أهل القبلة

(কিবলার বিশ্বাসী কাউকে আমরা কাফির বলিনা)

◾এবং হাদীছ শরীফে বর্ণিত আছে যে,

"যিনি আমাদের মত নামায পড়ে, আমাদের কিবলার দিকে মুখ করে এবং আমাদের জবেহকৃত পশু পাখী খায়, সে মুসলমান।"

মুসলমাণ! এ দ্বিতীয় ধোঁকায় ওরা কলেমা পাঠের কথা বাদ দিয়ে কিবলামুখী হওয়াকে ঈমান বলেছে। অর্থাৎ, যিনি কিবলামুখী হয়ে নামায পড়বে, তিনি মুসলমান, যদিও সে আল্লাহকে মিথ্যুক বলে এবং হুজুর (ﷺ) এর শানে গালি দেয়, কোন অবস্থাতেই ওর ঈমানের হেরফের হবে না।

প্রথমতঃ এ ধোঁকার জবাব আল্লাহর তরফ থেকে শুনুন।

◾তিনি ইরশাদ করেন,

ليس البر آن تولوا وجوهكم قبل المشرق والمغرب ولكن البر من امن بالله واليوم الآخر والملائكة والكتب والنبيين .

"পূর্ব ও পশ্চিম দিকে মুখ ফিরানােতে কোন নেকী নেই, বরং আসল নেকী হচ্ছে আল্লাহ, পরকাল, ফিরিশতাগণ, কুরআন এবং নবীগণের প্রতি ঈমান আনাতে।"

দেখুন, উপরােক্ত আয়াতে সুস্পষ্টভাবে বলে দেয়া হয়েছে যে দ্বীনের প্রয়ােজনীয় বিষয় সমূহের উপর ঈমান আনাটাই হচ্ছে আসল কাজ। এগুলােকে বাদ দিয়ে কেবল মাসের মধ্যে কিবলা মুখী হলে কোন কাজে আসবেনা।

◾আল্লাহ তাআলা আরও ইরশাদ ফরমান,

ومامنعهم أن تقبل نفقتهم إلا أنهم كفروا بالله وبرسوله ولايائون الصلوة إلا وهم كسالى ولاينفقون الا وهم كرهون .

(ওদের অর্থ সাহায্য গ্রহণ করা নিষেধ করা হয়েছে, এজন্য যে, ওরা আল্লাহ ও রসূলের সাথে কুফরী করেছে, নামাযে শৈথিল্যের সাথে উপস্থিত হয় এবং অনিচ্ছাকৃত ভাবে অর্থ সাহায্য করে)

দেখুন, ওদের নামাযের কথা বর্ণিত হয়েছে। কিন্তু সাথে সাথে ওদেরকে কাফির বলা হয়েছে। কেন, ওরা কি কিবলামুখী হয়ে নামায পড়েনি? শুধু কিবলামুখী কোন, কিবলার কিবলা সরওয়ারে আলম (ﷺ) এর পিছনে কিবলামুখী হয়ে নামায পড়তাে।

◾আল্লাহ তাআলা আরও ইরশাদ ফরমানঃ

فإن تابوا وأقاموا الصلوة وآتوا الزكوة فإخوانكم في الدين . ونقصل الأيات لقوم يعلمون . وإن نكثوا أيمانهم من بعد عهدهم واطعنوا في دينكم فقاتلوا الئمة الكفر لانهم لا أيمان لهم لعلهم ينتهون .
(অতঃপর তারা যদি তাওবা করে, নামায পড়ে এবং যাকাত দেয়, তাহলে তােমাদের দ্বীনি ভাই। জ্ঞানীদের জন্য আমি নিদর্শন স্পষ্টভাবে বিবৃত করি। যদি তারা চুক্তির পর তাদের প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করে এবং তােমাদের দ্বীন সম্পর্কে বিদ্রুপ করে, তাহলে কাফিরদের প্রধানদের সাথে যুদ্ধ কর। ওদের শপথ কিছুই না; সম্ভবত তারা নিরস্ত হতে পারে।)।

দেখুন, নামাযী ও যাকাতদাতা দ্বীনের বিদ্রুপ করলে, ওদেরকে কাফিরদের সরদার বলা হয়েছে। তাহলে আল্লাহ ও রসুলের শানে বেআদবী করাটা বিদ্রুপ নয় কি?

◾এ প্রসঙ্গে আল্লাহ তাআলা কি বলেছেন শুনুনঃ

من الذين هادوا يحرفون الكلم عن مواضعه ويقولون سمعنا وعصينا واسمع غير مسمع وراعنا ليا بألسنتهم وطعنا في الذين، ولوائهم قالوا سمعنا وأطعنا واسمع وانظرنا لكان خيرا لهم وأقوم ولكن لعنهم الله بكفرهم فلايؤمنون الا قليلا .

(ইহুদীদের মধ্যে কতক লােক কথাগুলাের অর্থ বিকৃত করে এবং বলে আমরা শ্রবণ করলাম আর অমান্য করলাম এবং শােনা না শােনার মত; আর নিজেদের মুখ বিকৃত করে এবং দ্বীনের প্রতি তাচ্ছিল্য ভাব প্রকাশ করে বলে-“রাইনা’ কিন্তু তারা যদি বলতাে শ্রবণ করলাম ও মান্য করলাম। (তারা যদি বলত) শ্রবণ করুন ও আমাদের প্রতি কৃপাদৃষ্টি করুন, তাহলে ওদের জন্য ভাল ও সংগত হত। কিন্তু তাদের কুফরীর জন্য আল্লাহ তাআলা তাদের  প্রতি লানত করেছেন। তাদের অল্প সংখ্যকই ঈমান আনয়ন করে।)

কিছু সংখ্যক ইহুদী যখন হুযুর (ﷺ) এর দরবারে আসততা এবং হুযুরের সমীপে কিছু আরয করতে চাইতাে, তখন এ রকম বলতাে-“আমাদের কিছু শুনোন, আপনাকে তাে কোন অশােভনীয় কথা শােনানাে যায়না’ এবং মনে মনে বদদুআর এ ভাবার্থ করতাে-তিনি যেন কোন কিছু শুনতে না পায়। হুজুর (ﷺ) যখন কিছু ইরশাদ করতেন, তখন ওরা না শুনার ভান করে বলতােL e ; (আমাদের প্রতি রেয়ায়েত করুন)

কিন্তু মনে মনে উক্ত শব্দের অন্য অর্থ-বধির বা রাখাল ছেলে গ্রহণ করতো। এবার চিন্তা করুন-দ্বৈত অর্থ বােধক শব্দ যদি দ্বীনের প্রতি বিদ্রুপ বােঝায়, তাহলে নবীর শানে যে বলা হয়-‘শয়তানের জ্ঞান থেকে কম বা পাগল বা চতুস্পদ জন্তুর ওনের সমতুল্য এবং আল্লাহর শানে যে বলা হয়-তিনি মিথ্যুক, তিনি মিথ্যা বলে এবং যে তাকে মিথ্যুক বলে, সে মুসলমান, সুন্নী এবং ছালেহ’ তা দ্বীনের প্রতি জঘন্যতম বিদ্রুপ নয় কি?

দ্বিতীয়তঃ আহলে কিবলার কাউকে কাফির না বলাটা ইমাম আযম (রাদি আল্লাহু তায়ালা আনহু)-এর মযহাব মনে করা, তাঁর প্রতি জঘন্য অপবাদ মাত্র। 

◾ইমাম সাহেব তাঁর আকীদার কিতাব ফিকহে আকবরে উল্লেখ করেছেন,

صفاته تعالى في الأزل غير محدثة ولا مخلوقة فمن قال انها مخلوت اومحدثة او وقف فيها او شك فيها فهو كافر بالله تعالى .

(আল্লাহ তাআলার গুণাবলী হচ্ছে অনাদি, যা সৃষ্ট নয় এবং কারাে তৈরীকৃতও নয়। তাই যে এগুলােকে সৃষ্ট বা হাদেছ বলে বা এ প্রসঙ্গে নিরপেক্ষ ভূমিকা পালন করে বা সন্দিহান থাকে সে কাফির এবং খােদাকে অস্বীকারকারী। যে খােদার কালামকে মখলুক বা সৃষ্ট বলে, সে আল্লাহ তাআলার সাথে কুফরী করলাে।) 

◾কিতাবুল ওসীয়তে ইমাম হাম্মাম (রহমতুল্লাহে আলাইহে) বলেন :

من قال بان كلام الله مخلوق فهو كافر بالله العظيم .

"যে খােদার কালামকে মখলুক বা সৃষ্ট বলে, সে আল্লাহ তাআলার সাথে কুফরী করলাে।"

◾শরহে ফিকহে আকবরে বর্ণিত আছেঃ

قال قخر الإسلام قد صح عن أبي يوسف انه قال ناظرت أبا حنيقة في مسئلة خلق القرآن فاتفق رأي رأيه على أن من قال يخلق القرآن فهو كا فر وصح هذا القول ايضا عن محمد رحمهم الله -

ইমাম ফখরুল ইসলাম (রহমতুল্লাহে আলাইহে) বলেন, ইমাম আবু ইউসুফ (রহমতুল্লাহে আলাইহে) থেকে সুস্পষ্টভাবে বর্ণিত আছে যে, তিনি বলেছেন-

“আমি ইমাম আযম আবু হানিফা (রহমতুল্লাহে আলাইহে) এর সাথে কুরআনের সৃষ্টি সম্পর্কে মুনাজেরা করেছি এবং আমরা উভয়ে একমত হয়েছি যে, যে কুরআন মজিদকে সৃষ্ট বলে, সে কাফির।"

◾এ উক্তিটা ইমাম মুহাম্মদ (রহমতুল্লাহে আলাইহে) থেকে ও সুস্পষ্টভাবে প্রমাণিত আছে অর্থাৎ আমাদের তিন ইমামের সর্বসম্মত অভিমত হচ্ছে,

"যে কুরআন আযীমকে সৃষ্ট বলে, সে কাফির।"

মুতাযিলা, কিরামিয়া ও রাফেজিয়া সম্প্রদায়, যারা কুরআনকে মখলুক বলে,তারা কি কেবলামুখী হয়ে নামায পড়েনা?

◾হানাফী মযহাবের অন্যতম ইমাম সায়্যিদুনা ইমাম আবু ইউসুফ (রহমতুল্লাহে আলাইহে) কিতাবুল খিরাজে বর্ণনা করেছেন,

ايما رجل مسلم سب رسول الله تعالى عليه وسلم او كذبه او عابده او تنقص فقد كفر بالله تعالى وبائت منه امرأته.

("যে ব্যক্তি মুসলমান হয়ে রসূলুল্লাহ (ﷺ) কে গালি দেয় বা হুযূরের প্রতি মিথ্যারােপ করে বা হুযুরের প্রতি দোষারােপ করে অথবা অন্য কোন উপায়ে হুযুরের মানহানি ঘটায়, সে নিঃসন্দেহে কাফির এবং খােদার অস্বীকারকারী হয়ে গেল এবং তার স্ত্রী তার আকদ থেকে বের হয়ে গেল(অর্থাৎ, স্ত্রী তালাক হয়ে গেল)"

দেখুন, কেমন সুস্পষ্ট বিবরণ যে হুযুরের শানে বেআদবী করার দ্বারা মুসলমান কাফির হয়ে যায় এবং তার স্ত্রীর সাথে বিবাহবন্ধনও বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। এবার বলুন, মুসলমান আহলে কিবলা বা আহলে কলেমা নয় কি? তা সত্ত্বেও হুযুরের শানে বেআদবীর ফলে তার কিবলা -কলেমা অগ্রাহ্য।

তৃতীয়তঃ আসল কথা হলাে যে, ইমামগণের পরিভাষায় আহলে কিবলা তাকেই বলা হয়, যে দ্বীনের সমস্ত প্রয়ােজনীয় বিষয়সমূহের প্রতি ঈমান রাখে। ওগুলো থেকে যে কোন একটাকে অস্বীকার করলেই নিঃসন্দেহে সর্বসম্মতিক্রমে কাফির মুরতাদ বলে বিবেচ্য। এমনকি যে ওকে কাফির মনে করবেনা, সে নিজেই কাফির।

◾ শিফা শরীফ, বাযাযিয়া, দোরর ও গােরর, ফতওয়ায়ে খায়রিয়া ইত্যাদি গ্রন্থে বর্ণিত আছেঃ

اجمع المسلمون ان شاتمة صلى الله تعالى عليه وسلم كافر ومن شك في عذابه وكفره كفر.

"সমস্ত মুসলমানের সর্বসম্মত অভিমত হচ্ছে, যে হুজুর(ﷺ) এর শানে বেআদবী করে, সে কাফির এবং যে ওর আজাব ও কাফির হওয়া সম্পর্কে যে সন্দেহ করে, সেও কাফির।

◾মুজমাউল আনহার ও দুরুল মুখতারে বর্ণিত আছেঃ

واللفظ له ألكافر بسب نبي من الأثبياء لاتقبل توبته مطلقا ومن شك في عذابه وكفره كفر

(যে ব্যক্তি নবীর শানে বেআদবী করার ফলে কাফির হয়েছে, তার তওবা কবুল হবেনা এবং যে ওর আজাব ও কুফরীর ব্যাপারে সন্দেহ করে, সে নিজেই কাফির।)

আল্লাহর শুকরিয়া, ওসব বেআদবদের কুফরীর ব্যাপারে উম্মতের সর্বসম্মত অভিমত পাওয়া গেল এবং এটাও জানা গেল যে ওদেরকে যে কাফির মনে করবেনা, সেও কাফির।

◾শরহে ফিকহে আকবরে বর্ণিত আছেঃ

في المواهب لا يكفر أهل القبلة إلا فيما فيه إنكار ما علم مجيئه بالضرورة او المجمع عليه كاستخلال المحرمات هولا يخفى أن المراد بقول علمائنا لا يجوز تكفير أهل القبلة بدنب ليست مجرد التوجه الى القبلة فان الغلاة من الروافض الذي يدعون إن جبريل عليه الصلاة والسلام اغلط في الوجي قلا الله تعالی آرسله إلى على رضى الله تعالى عنه وبعضهم قالوا إنه اله وان صلوا إلى القبلة ليسوا بمؤمنين وهذا هو المراد بقوله صلى الله تعالى عليه وسلم من صلى صلاتنا واستقبل قبلتنا واكل بينا ذبيحتنا فذلك مسلم اه مختصزا.

(মওয়াহেব গ্রন্থে বর্ণিত আছে যে আহলে কেবলাকে কাফির বলা যাবে না। কিন্তু দ্বীনের প্রয়ােজনীয় বিষয় বা সর্বসম্মত গৃহীত কোন বিষয়কে অস্বীকার করলে যেমন হারামকে হালাল জানলে (নিশ্চয় কাফির) এটা কারাে অজানা নয় যে আমাদের উলামায়ে কিরাম বলেন,

‘কোন গুণাহের কারণে আহলে কিবলাকে কাফির বলা ঠিক নয়’ এখানে আহলে কেবলা বলতে কেবল কেবলার দিকে মুখ করা নয়। রাফেজীরা বলে যে জিব্রাঈল (আঃ) ওহির ব্যাপারে ধোঁকা খেয়েছে। আল্লাহ তাআলা ওনাকে আসলে পাঠিয়েছিলেন হযরত আলীর (আঃ) এর কাছে। এবং ওদের মধ্যে কতেকতাে মওলা আলীকে খােদা বলে। এরা যদিওবা কেবলামুখী হয়ে নামায পড়ে, মুসলমান নয়। ওই হাদীছের ভাবার্থও তাই, যেখানে বলা হয়েছে, যে আমাদের মত নামায পড়ে এবং আমাদের কিবলার প্রতি মুখ করে এবং আমাদের জবেহকৃত পশু পাখী খায়, সে মুসলমান। অর্থাৎ যখন দ্বীনের সমস্ত প্রয়ােজনীয় বিষয়াদির প্রতি ঈমান রাখে এবং ঈমানের বিপরীত কোন কিছু না করে।)

◾একই কিতাবে আরও বর্ণিত আছে -

اعلم أن المراد باهل القبلة الذين اتفقوا على ماهو من ضروريات الدين كحدوث العالم وحشر الأجساد وعلم الله تعالى بالكليات والجزئيات وما اشبة ذالك من المسائل المهات فمن واظب طول عمره على الطاعات والعبارات مع إعتقاد قدم العالم أو في الحشراو نفي علمه سبحانه من اهل القبلة بالجزئيات لايكون من أهل القبلة وان المراد بعدم تكفيرا عند أهل السنة انة لا يكفر مالم يوجد شئ من آمارات الكفر وعلاماته ولم يصدر عنه شئ من موجباته -

জেনে রাখুন যে, আহলে কেবলা বলতে সেই ধরনের লােককে বােঝায়, যারা দ্বীনের প্রয়ােজনীয় বিষয় সমূহের যেমনঃ বিশ্ব সৃষ্ট হওয়া, শরীর সমূহের হাশর হওয়া, আল্লাহর জ্ঞান সব কিছুকে পরিবেষ্ঠন করা এবং এ ধরণের অন্যান্য মাসায়েলের অনুসারী। যে সারা জিন্দেগী ইবাদত বন্দেগীতে নিযােজিত আছে এবং এর সাথে এ আকীদাও রাখে যে বিশ্ব স্থায়ী বা শরীরের কোন হাশর হবে না বা আল্লাহ তাআলা খুঁটি-নাটি বিষয়ে অবহিত নয়, সে আহলে কিবলার অন্তর্ভূক্ত নয় এবং আহলে সুন্নাতের মতে আহলে কিবলার কাউকে কাফির না বলার অর্থ হলাে ওকে কাফির বলা যাবে না, যতক্ষণ ওর মধ্যে কুফরীর আলামত প্রকাশ না পায় বা কুফরী কথা ব্যক্ত না হয়।)

◾ইমাম আবদুল আজীজ ইবনে আহমদ মুহাম্মদ বুখারী হানাফী (রহমতুল্লাহে আলাইহে) “শরহে উছুলে হােচ্চামী’ নামক কিতাবে উল্লেখ করেছেনঃ

ان غلافيه (أي في هواه) حتى وجب اكفاره به لايتعبر خلافه ووفاته ايضا لعدم دخوله في مسمى الأمة المشهود لها بالعضمة وان ضلي إلى القبلة واعتقد نفسه مسلما لأن الأمة ليست عبارة من المصلين إلى القبلة بل عن المؤمنين وهو كاقر وان كان لا أدري إنه كافر۔

"বদমযহাবী যদি স্বীয় বদমযহাবে অটল থাকে, যার ফলে ওকে কাফির বলা অপরিহার্য হয়ে পড়ে, তাহলে ইজমায়ে উম্মতের মধ্যে তার পক্ষ বিপক্ষ কোনটাই বিবেচ্য হবে না। কেননা গুণাহ থেকে মাছুম হওয়ার শাহাদততো উম্মতের জন্য প্রযােজ্য। আর সেতাে উম্মতের অন্তর্ভুক্ত নয়, যদিওবা কিবলামুখী হয়ে নামায পড়ে এবং নিজেকে মুসলমান মনে করে। এজন্যে কেবলামুখী হয়ে নামায আদায়কারীর নাম মুসলমান, উম্মত নয় এবং এ ব্যক্তি কাফির যদিওবা সে নিজেকে কাফির মনে করেনা।"

দুররুল মুখতারে উল্লেখিত আছেঃ

لاخلاف في كفر المخالف في ضروريات الإسلام وإن كان من أهل القبلة المواظب طول عمره على الطاعات گما في شرح التحرير .  

(ইসলামের প্রয়ােজনীয় বিষয়সমূহের কোন একটির বিরােধীতাকারী সর্ব সম্মতিক্রমে কাফির, যদিওবা সে আহলে কিবলা হয়ে থাকে এবং সারা জিন্দেগী ইবাদতে অতিবাহিত করে। শরহে তাহরীরে ইমাম ইবনুল হাম্মাম তাই উল্লেখ করেছেন।)

আকীদা, ফিকাহ ও উসূলের কিতাবাদিতে এ প্রসঙ্গে বিস্তারিতভাবে আলােচিত হয়েছে।

চতুর্থতঃ এ মাসআলাটি মূলতঃ ভ্রান্ত। যে ব্যক্তি পাঁচ ওয়াক্ত কিবলামুখী হয়ে নামায পড়ে এবং এক বেলা মহাদেবকেও সিজদা করে, সেকি কোন জ্ঞানীর মতে মুসলমান হতে পারে? অথচ আল্লাহকে মিথ্যুক বলা বা হুযুর (ﷺ) এর শানে বেআদবী করা মহাদেবকে সিজদা করার থেকে অনেক নিকৃষ্ট, যদিওবা কুফরীর বেলায় বরাবর।

وذلك ان الكفر بعضه اخبت من بعض

◾(কুফরীর মধ্যে কোনটা কোনটার চেয়ে নিকৃষ্ট)

কারণ মূর্তিকে সিজদা করা খােদাকে অস্বীকার করার লক্ষণ। আর অস্বীকারের লক্ষণ ও সুস্পষ্ট অস্বীকার এক বরাবর হতে পারে না।

সিজদার ক্ষেত্রে এ যুক্তিটিও দাঁড় করানাে যায় যে,

সিজদা সম্মানবােধকও হতে পারে এবং ইবাদতের নাও হতে পারে আর সম্মানবোেধক সিজদা কুফরী নয়। এ জন্য যদি কোন আলেম বা আবেদকে তাযিমী সিজদা করা হয়, তাহলে গুণাহগার হবে কিন্তু কাফির হবেনা। মুর্তিকে সিজদা করাকে সাধারণতঃ কাফিরদের বিশেষ আলামত হেতু কুফরী বলা হয়েছে। কিন্তু নবী করীম (ﷺ) এর শানে বেআদবী প্রত্যক্ষভাবে কুফরী এবং সাথে সাথে ইসলাম থেকে খারিজ (বিচ্ছিন্ন হয়ে যাবে) তবে আমি এখানে স্মরণ করে দিতে চাই যে মূর্তি সিজদাকারীর তওবা গৃহীত হওয়া সম্পর্কে উম্মতের সর্বসম্মত অভিমত রয়েছে। কিন্তু রাসূলের শানে বেআদবীকারীর তওবা আমাদের ইমামদের অনেকের মতে অগ্রাহ্য। এদের মধ্যেঃ

▪ ইমাম বাযাযি, ইমাম ইবনুল হাম্মাম, আল্লামা মওলা খাসরু, ছাহেবে দর্বের ও আল্লামা জাইন বিন নজিম →আশবা ওয়াল নাযায়েরের প্রণেতা,

▪ আল্লামা উমর বিন নাজিম→নাহরুল ফায়েকের রচয়িতা,

▪ আল্লামা আবু আবদুল্লাহ মুহাম্মদ বিন আবদুল্লাহ গাজী →তনবিরুল আবসারের প্রণেতা,

▪ আল্লামা খায়রুদ্দীন →"ফতওয়ায়ে খায়রীয়ার প্রণেতা, ▪ আল্লামা শাইখ যাদ→মুযমাউল আনহারের রচয়িতা,

▪ আল্লামা মােহাক্কেক মুহাম্মদ বিন আলী হকাফী→ দুররুল মুখতারের রচয়িতা উল্লেখযােগ্য।

মােটকথা হলাে, উম্মতে মুহাম্মদী মূর্তিপূজারীকে ক্ষমা করতে রাজি কিন্তু নবীর শানে বেআদবীকারীকে কিছুতেই ক্ষমা করতে রাজি নয়। অবশ্য তওবা কবুল না হওয়াটা হচ্ছে ইসলামী শরীয়তের বাহ্যিক বিধান। অর্থাৎ নবীর শানে বেআদবীকারীকে তওবার পরও মৃত্যুদন্ড দেয়া হবে। নচেৎ আন্তরিকভাবে তওবা করলে আল্লাহর কাছে গৃহীত হয়। তবে বেআদবীকারীর তওবা কবুল হবেনা এ ধারণার বশবর্তী হয়ে তওবা থেকে যেন বিরত না থাকে। তওবার ফলে কুফরী থেকে রেহাই মিলবে এবং মুসলিম বলে গণ্য হবে এবং জাহান্নামের চিরস্থায়ী আজাব থেকে মুক্তি পাবে। রুদ্দুল মুহতার ও অন্যান্য কিতাবে তা বর্ণিত আছে।


তৃতীয় ধোঁকাঃ ৯৯টি কুফরী ও একটি ইসলামী কাজ পেলেও তাকে কাফির না বলা।

‘ফিকাহশাস্ত্রে উল্লেখিত আছে যে, যার মধ্যে ৯৯টি কুফরী কাজ ও একটি ইসলামী কাজ পাওয়া যায়, তাকে কাফির না বলা উচিত।


প্রথমতঃ 

এ ধোঁকাটি অন্যান্য ধোঁকা হতে নিকৃষ্ট ও দুর্বল। এ ধোঁকাটির সারকথা হলাে- যে ব্যক্তি দিনে একবার আযান দেয় বা দু'রাকাত নামায পড়ে নেয় এবং ৯৯বার মূর্তি পূজা করে, সিঙ্গায় ফুঁক দেয় বা ঘন্টা বাজায়, সে মুসলমান। যদিওবা ওর মধ্যে ৯৯টি কুফরী কাজ পাওয়া গেছে, কিন্তু একটি মাত্র ইসলামী কর্মই ওর যথেষ্ট। কোন জ্ঞানী ওকে মুমিনতাে দূরের কথা, মুসলমানও বলতে পারেনা।

দ্বিতীয়তঃ

ওদের দৃষ্টিতে নাস্তিক (অর্থাৎ যারা খােদার অস্তিত্বকে অস্বীকার করে) ব্যতিত সমস্ত কাফির, মুশরিক, মজুস, হিন্দু, ইহুদী, খৃষ্টান প্রমুখ মুসলমান বলে সাব্যস্ত হবে। কেননা ওরা অন্যান্য বিষয়সমূহকে অস্বীকার করলেও খােদার অস্তিত্বের প্রতি বিশ্বাসী এবং এটা হচ্ছে ইসলামের প্রধান আকীদা। অমুসলিম অনেক দার্শনিক পন্ডিত ও অন্যান্যরা। একেশ্বরবাদে বিশ্বাসী আর ইহুদী ও খৃষ্টানদেরকে তাে তাহলে উচ্চস্তরের মুসলমান মনে করতে হবে, কেননা এরাও তৌহিদের সাথে সাথে আল্লাহ তাআলার অনেক কালাম, অনেক নবী, কিয়ামত, হাশর, হিসাব-নিকাশ, পূণ্য, শাস্তি, বেহেশত, দোযখ ইত্যাদি অনেক ইসলামী আকিদার বিশ্বাসী।


তৃতীয়তঃ 

ওদের এ ধোঁকাকে রদের জন্য উপরােক্ত কুরআনের আয়াতসমূহই যথেষ্ট, যেথায় কলেমা পাঠ ও নামায পড়ার পরও মাত্র একটি কথার জন্য কাফির বলে ঘােষণা দেয়া হয়েছে। যেমনঃ-

◾كفرو بعد اسلامهم

(ওরা মুসলমান হয়ে মাত্র একটি কথার জন্য কাফির হয়ে গেছে।)

◾অন্যত্র ইরশাদ ফরমান -

لا تعتذروا قد كفرتم بعد إيمانكم

(বাহানা করতে হবেনা; তােমরা ঈমান আনয়ণের পর কাফির হয়ে গেছ।)

অথচ ওসব ধোঁকাবাজদের মতে যতক্ষণ পর্যন্ত ৯৯ থেকে অধিক কুফরী কথা প্রকাশ পাবেনা, ততক্ষণ পর্যন্ত ওদের কাফির বলা যাবে না। এ আয়াতের বেলায় হয়তাে তারা এ উত্তরই দিতে পারে যে এটা আল্লাহ তাআলার ভুল ও তাড়াহুড়ার পরিণাম। তিনি ইসলামের পরিমন্ডলকে সঙ্কুচিত করে দিয়েছেন, কলেমা পাঠকারী আহলে কিবলাদেরকে ধোঁকা দিয়ে মাত্র একটি শব্দের কারণে ইসলাম থেকে বের করে দিয়েছেন, তদুপরি জবরদস্তিমূলক আচরণ করেছেন অর্থাৎ, لاتعتذرُوا বলে আপত্তি করার অবকাশ ও আপত্তি শােনানাের সুযােগও দেননি। আফসােসের বিষয়, আল্লাহ তাআলা দারুল নদওয়ার পন্ডিত বা ওদের সমমনা কোন ইসলামী সংস্কারকের পরামর্শ নেন নি।


চতুর্থতঃ 

◾ওদের ধোকার জবাব আল্লাহ তাআলা নিজেই দিচ্ছেন,

أفتؤمنُونَ ببعض الكتب وتكمفرُونَ بِبَعْض ج فَمَا جَزَاء مَنْ يَفعَل ذَالك منكم الأخرى في الحيوةِ الدّنْيَا وَيَوم ألقيمة يُرَدُونَ إلى أشد العَذَاب . وما الله بغافل عما تعملون . أولئك الذين أشتَرَوُا الحيوة الدنيا بالاخرة فلايخفف عنهم العذاب ولاهُمْ يُنصَرُون .

(তবে কি তােমরা কিতাবের কিছু অংশ বিশ্বাস কর এবং কিছু অংশকে প্রত্যাখান কর? সুতরাং তোমাদের মধ্যে যারা এরূপ করে, তাদের একমাত্র প্রতিফল পার্থিব জীবনে হীনতা এবং কিয়ামতের দিন তারা কঠিন শাস্তির দিকে নিক্ষিপ্ত হবে। তারা যা করে, আল্লাহ সে বিষয় অনবহিত নন। তারাই পরকালের বিনিময়ে পার্থিব জীবন ক্রয় করে। সুতরাং তাদের শান্তি লাঘব করা হবেনা এবং তারা কোন সাহায্যও পাবেনা।)

কালামের মধ্যে, মনে করুন, এক হাজার কথা রয়েছে এবং প্রত্যেক কথাকে মান্য করাটাই হচ্ছে ইসলামী আকীদা। এখন যদি কেউ ৯৯৯ কথা মান্য করে এবং মাত্র একটি কথা অমান্য করে, তাহলে কুরআনে করীমের বিধান অনুসারে ৯৯৯টি মানার দ্বারা সে মুসলমান নয় বরং কেবল একটি অমান্য করার কারণে সে কাফির। দুনিয়াতে সে লাঞ্চিত হবে এবং পরকালেও কঠিন শাস্তির সম্মুখীন হবে, যা অনন্তকাল চলতে থাকবে এবং মুহুর্তের জন্যও লাঘব হবে না। ৯৯টা নয়, একটি মাত্র অমান্য করায় এ পরিণতি। একটিকে মান্য করলে যে মুসলমান গণ্য করা হবে, তা মুসলমানদের আকীদা নয় বরং কুরআনের মতে সুস্পষ্ট কুফরী।


পঞ্চমতঃ 

আসল কথা হলাে, ওরা ফকীহগণের নামে মিথ্যা অপবাদ দিয়েছে। তাঁরা কখনও এরকম বলেননি এবং ওরা ইহুদীদের মত يُحَرّفون الكلم عن مواضعه মূল কথাটা পরিবর্তন, পরিবর্ধন করে তিলকে তাল করেছে। ফকীহগণ কখনও এরকম বলেননি যে, যে ব্যক্তির মুখে ৯৯ কুফরী কথা ও একটি ইসলামের কথা রয়েছে, সে মুসলমান বরং সমস্ত উম্মতের সর্বসম্মত অভিমত হচ্ছে, যার মধ্যে ৯৯ হাজার ইসলামের কথা রয়েছে কিন্তু একটি কুফরীর দ্বারা সে নিঃসন্দেহে কাফির। ৯৯ ফোঁটা গােলাপজলের মধ্যে এক ফোঁটা মূত্র দিলে সবগুলাে মূত্র হয়ে যাবে।

কিন্তু এ অথর্ব বলে যে ৯৯ ফেঁটা মূত্রে এক ফোঁটা গােলাপজল ফেললে, সব পবিত্র হয়ে যাবে। ফকীহতাে দূরের কথা, কোন অজ্ঞ ব্যক্তিও এ ধরণের প্রলাপ বকবে না। আসলে ফকীহগণ বলেছেন যে যদি কোন মুসলমান থেকে এ ধরণের কোন শব্দ প্রকাশ পেয়েছে, যেটার একশ রকম অর্থ হতে পারে এবং ৯৯ অর্থ কুফরীমূলক এবং বাকী একটির অর্থ ইসলাম সম্মত, তাহলে যতক্ষণ পর্যন্ত প্রমাণিত না হবে যে সে কোন বিশেষ কুফরী অর্থে শব্দটি প্রয়ােগ করেছে, ততক্ষণ পর্যন্ত আমরা ওকে কাফির বলবাে না। কেননা হয়তাে ইসলামী অর্থটাও গ্রহণ করতে পারে। ফকীহগণ আরও বলেন যে, যদি বাস্তবে কুফরী অর্থই গ্রহণ করে থাকে, তাহলে আমাদের ব্যাখ্যা বিশ্লেষণে ওর কোন উপকার হবে না। সে আল্লাহর কাছে কাফির হিসেবে গণ্য হবে। এর উদাহরণ হচ্ছে যেমনঃ

যায়েদ বললাে-“উমরের নিশ্চিত অদৃশ্য জ্ঞান আছে। এ কথায় বিভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে বিভিন্ন অর্থ প্রকাশ পায়, যথাঃ

(১) ওমরের সত্ত্বাগতভাবে অদৃশ্য জ্ঞান আছে। এটা কিন্তু সুস্পষ্ট কুফরী।

قل لا يعلم من في السموات والاژض الغيب الا الله

(বলে দিন, আসমান-জমিনে যা কিছু অদৃশ্য আল্লাহ ব্যতিত কেউ জানে না)

(২) ওমর নিজেই অদৃশ্যের জ্ঞানী নয় কিন্তু জিন থেকে সে অদৃশ্যের জ্ঞান লাভ করে। কারণ জ্বিন অদৃশ্যের জ্ঞান রাখে। এ ধরণের বলাটাও কুফরী। যেমনঃ

تبينت الجن ان لو كانوا يعلمون الغيب مالبثوا في العذاب المهين

(জিনেরা বুঝতে পারলাে যে ওরা যদি অদৃশ্য বিষয়ে অবগত থাকতাে, তাহলে ওরা লাঞ্চনাদায়ক শাস্তিতে আবদ্ধ থাকতাে না।)

(৩) উমর জ্যোতিষবীদ, (৪) গণক,

(৫) হস্তরেখা বিশারদ,

(৬) কাক ইত্যাদির আওয়াজ বুঝে,

(৭) কীট-পতঙ্গ গায়ে পড়লে,

(৮) কোন বন্যজন্তু ডান দিক বা বাম দিকে দিয়ে চলে গেলে,

(৯) চোখ বা শরীরের অন্যান্য অঙ্গ কাঁপলে সে এর রহস্য বুঝে,

(১০) সে পাশা নিক্ষেপ করে,

(১১) রাশিফল দেখে,

(১২) কাউকে গাছা বানিয়ে বিভিন্ন কথা জিজ্ঞাসা করে,

(১৩) সে মেসমেরিজম জানে,

(১৪) জাদু জানে,

(১৫) রূহের জগতের সাথে সম্পর্ক রাখে,

(১৬) মনােবিজ্ঞানী,

(১৭) দূরদৃষ্টি সম্পন্ন এবং এসবের মাধ্যমে সে নিশ্চিত অদৃশ্যের জ্ঞান লাভ করে থাকে। এ ধারণাগুলাে সবই কুফরী।

◾রাসূল ﷺ ইরশাদ ফরমানঃ

من أتى عرافا أو كاهنا فصدقه بما يقول فقد كفر بما يقول فقد كفر بما انزل ا محمد صلى الله عليه ولم رواه أحمد والحاكم بسند صحيح عن أبي هريرة رضي الله عنه ولأحمد وابی داؤد عنة رضى الله عنه فقد بڑی مما نزل على محمد صلى الله عليه وسلم .

যে ব্যক্তি ভবিষ্যৎ বক্তা বা যাদুগরের কাছে যায় এবং ওর কথা বিশ্বাস করে, সে নিশ্চয়ই অস্বীকার করলাে, যা মুহাম্মদ (ﷺ) এর উপর নাযিল হয়েছে।

[বিশুদ্ধ সনদ সহকারে হযরত আবু হুরাইরার বরাত দিয়ে আহমদ ও কে কর্তৃক বর্ণিত]

(১৮) নবীদের মত ওমরের উপর ওহী নাযিল হয়, যার ফলে সে নিশ্চিত অদৃশ্য জ্ঞান লাভ করে। এটাও জঘন্য কুফরী।

ولكن رسول الله وخاتم النبيين . وكان الله بكل شي عليها .

(কিন্তু তিনি [হযরত মুহাম্মদ ﷺ] আল্লাহর রসুল এবং নবীগণের মধ্যে সর্বশেষ নবী এবং আল্লাহ সবকিছুর ব্যাপারে অবহিত।)

(১৯) ওহী আসে না, তবে ইলহামের দ্বারা সমস্ত গায়েব জেনে নেয়। এটাও সুস্পষ্ট কুফরী, কেননা এতে ওমরের জ্ঞানকে হুযুর (ﷺ) এর জ্ঞানের উপর প্রাধান্য দিয়েছে। হুযুর (ﷺ) এর অসীম জ্ঞানও আল্লাহর সমস্ত জ্ঞানকে করায়ত্ত করতে পারেননি।

(বলে দিন, জ্ঞানী ও অজ্ঞানীকে কি একই বরাবর মনে করছ?)

قل هل يستوي الذين يعلمون والذين لا يعلمون" من قال فلان أعلم منه صلى الله تعالى عليه وسلم فقل عليه فحكمه حكما لشباب" نسيم الرياض" .

(২০) উমরের জ্ঞান সমস্ত জ্ঞানকে পরিবেষ্টিত না করলেও আল্লাহ তাআলা ওকে কোন নবী, মানুষ ও ফিরিশতার মাধ্যম ব্যতীত গায়বী ইলম দান করেছেন। এটাও কুফরী।

وما كان الله ليعظلكم على الغيب ولكن الله يجتبي من رسله من يشاء

 ◾(এটা আল্লাহ তাআলার শান নয় যে সাধারণ লােকদেরকে গায়বী ইলম দান করেন, তবে তাঁর রসূলের মধ্যে যাকে ইচ্ছে দান করেন।)

عالم الغيير فلايظهر على غيبه احدا الا من ازتضی من رسل 

◾(গায়বী ইলমের অধিকারী (আল্লাহ) আপন প্রিয় রসূলগণ ব্যতিত অন্য কাউকে গায়েব সম্পর্কে অবহিত করেননা।)

(২১) ওমরকে হুযুর (ﷺ) এর মাধ্যমে আল্লাহ তাআলা কিছু গায়বী ইলম দিয়েছেন বা দেন। এটা কিন্তু ইসলাম সম্মত। তাই বিজ্ঞ ফকীহগণ এধরণের উক্তিকারীকে কাফির বলেননা, যদিওবা ওর উক্তির একুশটি দৃষ্টিকোণের মধ্যে বিশটিকে কুফরী প্রমাণিত হয় কিন্তু একটি মাত্র ইসলামী দৃষ্টিকোণ থাকার ফলে ওকে কাফির বলা থেকে বারন করা হয়েছে, যতক্ষণ না এটা প্রমাণিত হয় যে, সে কুফরী দৃষ্টিকোণ থেকে কথাটি বলেছে। 

কিন্তু আল্লাহর কালামকে অস্বীকার করা বা হুযুর (ﷺ) এর শানে বেআদবী করাকে যেথায় ব্যাখ্যা বিশ্লেষণের কোন অবকাশ নেই যদি কুফরী বলা না হয়, তাহলে কুফরীকে ইসলাম মেনে নিতে হবে, আর যে কুফরীকে ইসলাম মনে করে, সে নিজেই কাফির। ইতিপূর্বে শেফা শরীফ, বযাযিয়া, দুররে মুখতার ইত্যাদি নির্ভরযােগ্য কিতাবের বক্তব্য শুনেছেন যে, যে ব্যক্তি হুযুর (ﷺ) এর শানে বেআদবী করে, সে কাফির এবং যে ওর কুফরীর বেলায় সন্দেহ পােষণ করে, সেও কাফির। কিন্তু ইহুদী প্রকৃতির লােকেরা ফকীহ গণের উপর মাতব্বরী করতে চায় এবং ওদের কথাকে পরিবর্তন পরিবর্ধন করে।

وسيعلم الذين ظلموا أي منقلب ينقلبون .

◾"শরহে ফিকহে আকবরে বর্ণিত আছেঃ

قد ذكروا أن المسئلة المتعله بالكفر إذا كان لها تسع وتسعون احتمالا الكفرة احتمال واحد في نفيه فللاولي للمفتى والقاضى ان يعمل بالاحتمال النافي ..

◾(কুফরী সংক্রান্ত কোন মাসআলার বেলায় যদি এতে ৯৯টি দৃষ্টিকোণ থেকে কুফরীর সম্ভাবনা থাকে এবং একটি মাত্র দৃষ্টিকোণ থেকে এর বিপরীত বােঝা যায়, তখন মুফতি ও কাজীদের উচিত সেই না সূচক দৃষ্টিকোণ গ্রহণ করে)

◾ফতওয়ায়ে আলমগীরি, মুহিত ইত্যাদি কিতাবে বর্ণিত আছে,

اذا كانت في المسالة ووجوه توجب ألتكفير ووجه واحز يمنع التفكير فعلی المفتي والقاضي أن يميل الى ذالك الوجه ولايقتي بكفره تخسيئا للعلن بالمسلم تم ان كان نية القائل الوجه الذي يمنع التكفير فهو مسلم وإن لم يكن لاينفع حمل المفتي كلامه على وجه لايوجب التكفير . 

অর্থাৎ যদি এমন একটি মাসআলা, যার মধ্যে কুফরী ওয়াজিব হওয়ার অনেক কারণ এবং কুফরী ওয়াজিব না হওয়ার একটি মাত্র কারণ রয়েছে, তাহলে মুফতি ও কাজীর উচিত, একটি কারণকেই প্রাধান্য দেওয়া এবং মুসলিম মনে করে কুফরী ফতওয়া দানে বিরত থাকা, কারণ উক্তিকারীর নিয়ত যদি সেই কুফরী বিরােধী একটি কারণই হয়ে থাকে, তাহলে সে মুসলমান আর যদি তা না হয়, মুফতির ফতওয়া দ্বারা কোন উপকার না হলেও মুফতির বেলায় কুফরী প্রযােজ্য হবেনা।

◾অনুরূপ ফতওয়ায়ে বযাবিয়া, বাহারুর রায়েক, মুজমাউল আনহার, হাদিকায়ে নদিয়া, তারখানিয়া, বাহার, সেল্লুল হিমাস, তনবিয়াতুল ওলাত ইত্যাদি কিতাবে উল্লেখিতঃ

الا يكفر بالمحتمل لان الكفر نهاية في العقولة فيستدي نهاية في الجناية ومع الإحتمال لانهاية

◾বাহারুর রায়েক, তনবিরুল আবছার, হাদিকায়ে নদিয়া, তনবিয়াতুল ওলাত, সেল্লুল হিমাস ইত্যাদি কিতাবে আরও উল্লেখিত আছেঃ

والذي تحرر أنه لايفتي بكفر مسلم  أمكن حمل كلامه على محمد حسن الخ

অতএব, এটা পরিষ্কার হয়ে গেল যে, বিভিন্ন কিতাবে যা আলােচিত হয়েছে, তা হচ্ছে এক শব্দের ভাবার্থ নিয়ে, এক ব্যক্তির অনেক উক্তি নিয়ে নয় কিন্তু ইহুদী ভাবাপন্ন লােকেরা কথাকে বিকৃত করে ফেলে।


একটি ভুল ধারণার অবসান 

উপরােক্ত আলােচনা থেকে এটাও পরিষ্কার হয়ে গেল যে, কতেক ফতওয়ার কিতাব যেমনঃ

◾ ফতওয়ায়ে কাজী খাঁ ইত্যাদি কিতাবে যে উল্লেখিত আছে "ওই সমস্ত লােককে কাফির ফতওয়া দেয়া হয়েছে, যারা আল্লাহ ও রসুলকে সাক্ষ্য করে বিবাহ করে বা মাশায়েখকে হাযির নাজির মনে করে বা ফিরিশতাগণ ইলমে গায়েব জানে বলে বিশ্বাস করে অথবা নিজে ইলমে গায়েব জানে বলে দাবী করে, এর দ্বারা সেই দৃষ্টিকোণটাই বােঝানাে হয়েছে অর্থাৎ সত্ত্বাগত গায়বী ইলমের দাবীদারকে কাফির বলা হয়েছে। তা যদি না হয়, সেসব উক্তির মধ্যেতাে নিশ্চিত ইলমে গায়েবের উল্লেখ নেই বরং অনুমান ভিত্তিক ইলমে গায়েবকেও বােঝাতে পারে। তাই সে সব উক্তিতে একুশের জায়গায় বিয়াল্লিশ ধরণের দৃষ্টিকোণ হতে পারে এবং যার মধ্যে অনেকটা কুফরী নয়। যেমনঃ

অনুমান ভিত্তিক ইলমে গায়েবের দাবী করাটা কুফরী নয়।

◾বাহারুর রায়েক ও দুররুল মুখতারে বর্ণিত আছেঃ

 علم من مسائلهم هنا ان من استحل’ محرمه الله تعالى على وجه الطن لايكفرو إنما يكفر إذا اعتقد الحرام حلالا ونظيره ما ذكره القرطبي في شرح مسلم ان الظن الغيب جائز كظن والمنجم والرمال وقوع شيء في المستقبل مسلم بتجرية امر عادي فهو ظن صادق و المنسوخ ادعاء علم الغيب والظاهر أن ادعاء ظن الغيب حرام لأكف بخلاف إدعاء العلم اه . زاد في البحر الا ترى انهم قالوا في نكاح المحرم لو ظن الحل لايحد بالإجماع ويعرز كما في الظهرية وغيرها ولم يقل أحد أنه يكفر وكذا في نظائره اه. 

সুতরাং এটা কিভাবে সম্ভব যে,

যেথায় একটি ইসলামী দৃষ্টিকোণ থাকলে কুফরী ফতওয়া আরােপ করা যায়না, সে জায়গায় অনেক ইসলামী দৃষ্টিকোণ সত্ত্বেও স্বনামধন্য উলামায়ে কিরাম কিভাবে কুফরীর ফতওয়া দান করতে পারেন? নিশ্চয়ই তাঁরা কুফরী দৃষ্টিকোণ অর্থাৎ, "সত্ত্বাগত ইলমে গায়েব" ইত্যাদির দাবীদার বলে নিশ্চিত হয়ে কুফরী ফতওয়া দিয়েছেন। নচেৎ উপরােক্ত উক্তিসমূহ এমনিতেই বাতিল হয়ে যায় এবং ইমামগণের বিশ্লেষণের বিপরীত প্রতিভাত হয়ে অগ্রাহ্য হবে।

◾জামেউল ফছুলীন, রুদ্দুল মুহতার, হাশিয়ায়ে আল্লামা হাদিকায়ে নদিয়া, সিল্লুল হিচ্ছাম ইত্যাদি কিতাবে এর বিস্তারিত বিশ্লেষণ রয়েছে। এখানে কেবল হাদিকায়ে নদিয়া শরীফের নিম্নবর্ণিত ইবারতটি উদ্ধৃতি করাই যথার্থ মনে করি -

جميع ما وقع في كتب الفتاوى من كلمات صرح المصنفون فيها بالجزم بالكفر يكون الكفر فيها محمولا على إرادة قائلها معنى عللوابه الكفر وإذا لم تكن إرادة قائلها ذلك فلا كفر اه.  

ফতওয়ার কিতাব সমূহে যতগুলাে শব্দের উপর কুফরীর হুকুম দেয়া হয়েছে, তা দ্বারা ওই ধরণের শব্দকে বােঝানাে হয়েছে, যা দ্বারা উক্তিকারী কুফরী দৃষ্টিকোণই গ্রহণ করেছে, নচেৎ কখনও কুফরী নয়।

অবশ্য সে ধরণের অনুমানই গ্রহণযােগ্য যেখানে সন্দেহের যথেষ্ট অবকাশ রয়েছে। কিন্তু সুস্পষ্ট কথার ব্যাখ্যা কিছুতেই গ্রহণযােগ্য নয়। তা নাহলে কোন কথাকেই কুফরী বলা যাবে না।

যেমনঃ যায়েদ বললাে- ‘খােদা দু’টি। এখানে এটাই ব্যাখ্যা করা যেতে পারে যে সে খােদা শব্দের আগে হুকুম শব্দটা উহ্য রেখেছে অর্থাৎ সে বলতে চেয়েছে যে খােদার হুকুম দু’টি মুবাররম ও মুয়াল্লাক। যেমন-

◾ কুরআন মজিদে উল্লেখিত আছে,

الا ان ياتى الله أي أمر الله

ওমর বললাে-আমি আল্লাহর রসুল। এখানে এ ব্যাখ্যাটা প্রদান করা যেতে পারে যে, সে শাব্দিক অর্থটাই গ্রহণ করেছে অর্থাৎ সে বলতে চেয়েছে যে, সে খােদা প্রদত্ত আত্মার অধিকারী। কিন্তু এ ধরণের ব্যাখ্যা গ্রহনযােগ্য নয়।

◾শেফা শরীফে বর্ণিত আছেঃ

ادعاؤه التاويل في لفظ صراح لا يقبل..

"সুস্পষ্ট শব্দের বেলায় কোন ব্যাখ্যা গ্রহণযােগ্য নয়।"

◾শরহে শেফায় বর্ণিত আছে, "এ ধরণের দাবী শরীয়তে অগ্রাহ্য। নছিমুর রেয়াযে উল্লেখিত আছে,

لايلتفت بمثله وبذ هاذيانا.

"এ ধরণের ব্যাখ্যার প্রতি কোন ভ্রুক্ষেপ করা যাবে না।"

এগুলােকে পাগলের প্রলাপই মনে করতে হবে। ◾ফতওয়ায়ে খােলাসা, ফছুলে এমাদিয়া, জামেউল ফছুলীল, ফতওয়ায়ে হিন্দিয়া ইত্যাদি কিতাবে বর্ণিত আছে ।

واللفظ للعمادى قال أنا رسول الله أوقال بالفارسية من پیغمبرم بریده من پیغام می برم يكفر۔

যদি কোন ব্যক্তি নিজেকে আল্লাহর রাসুল বা পয়গাম্বর বলে এবং এর ভাবার্থ সংবাদ বাহক বা পিওন গ্রহণ করে, তাহলে সে কাফির হয়ে যাবে। এ ধরণের ব্যাখ্যা গ্রহণযােগ্য হবে না।


চতুর্থ ধোঁকাঃ অস্বীকার

যারা ও সমস্ত কটুক্তিপূর্ণ কিতাবাদি দেখেনি, তাদের সামনে একেবারে অস্বীকার করে যে ওরা এ ধরণের কথা কখনও বলেনি। কোন জ্ঞানী ব্যক্তি ওদের ছাপানাে কিতাব দেখিয়ে দিলে, নাক ছিটকে, মুখ বিকৃত করে চলে যায় অথবা বেহায়ার মত সামনা-সামনি বলে ফেলে যে ‘আপনি যত যুক্তি দেখান না কেন, আমি তাই বলবাে। আর আপত্তিকারী যদি কম জ্ঞানী হয়, তাহলে ওকে বলে দেয় যে, এ উক্তিসমূহের ভাবার্থ তা নয়, অন্য কিছু।

◾এর জবাবে কুরআনের সেই আয়াতই যথেষ্ট :

يخلفون بالله ماقالوا ولقد قالوا كلمة الكفر وكفر وابعد إسلامهم

ওরা খােদার নামে কসম করে বলে যে, তারা সে রকম বলেনি। অথচ তারা নিশ্চয়ই কুফরী উক্তি করেছে এবং মুসলমান হওয়ার পর কাফির হয়ে গেছে।

هوتی آئی هے که انکار کیاکرتے هیں

(প্রমাণ) ওদের ওইসব কিতাবসমূহ

▪ যেগুলােতে কুফরী উক্তিসমূহ রয়েছে, দীর্ঘদিন ধরে ওরা ওদের জীবন কালে প্রকাশ করেছে এবং কতেক কিতাব কয়েকবার ছাপানাে হয়েছে। আর দীর্ঘদিন ধরে উলামায়ে আহলে সুন্নাত এসবের প্রতিবাদ করছেন এবং সেসব উক্তি খন্ডন করে কিতাব ছাপিয়েছেন।

▪ সেই ফতওয়া, যেখানে আল্লাহকে পরিস্কারভাবে মিথ্যুক বলা হয়েছে, এর মূল কপি দস্তখত ও সীল সমেত এখনও মওজুদ আছে এবং এর ফটোকপিও রয়েছে।

▪ এর ফটোকপি মক্কা ও মদীনা শরীফের উলামায়ে কিরামকে দেখানাের জন্য পাঠানো হয়েছিল।

▪ মদীনা শরীফের সরকারী পাঠাগারেও তা মওজুদ আছে।

▪ আজ থেকে আঠারাে বছর আগে ১৩০৮ হিজরীতে মীরাটের হাদিকাতুল উলুম থেকে ‘ছেয়ানাতুন নাস’ পুস্তিকায় নাপাক ফতওয়া রদসহকারে প্রকাশিত হয়েছিল।

▪ পুনরায় ১৩১৮ হিজরীতে বােম্বে থেকে গুলজার হাসনির পক্ষ থেকে এর রদ ছাপানাে হয়েছিল।

▪ আবার ১৩২০ হিজরীতে তােহফায়ে হানাফিয়া নামে পাটনা থেকে এর রদ ছাপানাে হয়েছিল।

▪ এ অপবিত্র ফতওয়াদানকারী ১৩২৩ হিজরীতে জামাদিউল আখেরে মৃত্যুবরণ করে এবং শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করা পর্যন্ত নিশ্চুপ রয়েছিল।

▪ ওটা তার ফতওয়া নয়’ এ রকমও বলেনি। অথচ নিজের ছাপানাে কিতাবের ফতওয়াকে অস্বীকার করাটা অনেক সহজ ছিল। আর এ রকমও কিছু বলে যায়নি যে, এর ভাবার্থ তাই নয়, যা উলামায়ে আহলে সুন্নাত বলতেছেন এবং আমি এর ভাবার্থ ওটাই নিয়েছি, যা কুফরী নয়। মােট কথা হলাে সে তার কথায় অটল ছিল। যায়েদের সীলমােহর যুক্ত একটি ফতওয়া তার জীবনকালে ও জ্ঞাত অবস্থায় প্রকাশ্যভাবে প্রচারিত হলাে এবং একে সুস্পষ্ট কুফরী হিসেবে চিহ্নিত করা হলাে। অনেক বছর থেকে এটা প্রচারিত হতে থাকলাে। লােকেরা উক্ত ফতােয়াকে খন্ডন করে যায়েদকে এর পরিপ্রেক্ষিতে কাফির ঘােষণা করলাে। যায়েদ এর পরও পনের বছর জীবিত ছিল এবং সব কিছু দেখেছিল ও শুনেছিল। কিন্তু উক্ত ফতওয়া তার নয় বলে অস্বীকার করেনি এবং মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তার উপর অটল রইল। তাহলে কোন জ্ঞানী ব্যক্তি কি ধারণা করতে পারে যে উক্ত ফতওয়ার ব্যাপারে তার অস্বীকৃতি ছিল বা তার কাছে ওটার ভাবার্থ ছিল অন্য কিছু। তার সমমনাদের মধ্যে যারা আজও জীবিত আছে (আ’লা হযরতের যুগে) তারা তাদের মুদ্রিত কিতাব সমূহকে অস্বীকার করতে পারে না। ১৩২০ হিজরীতে তাদের সমস্ত কুফরী সমূহকে একত্রিত করে একটি পুস্তিকা প্রকাশ করা হয়েছিল। কতেক উৎসাহী মুসলমান সেসব কুযুক্তির আলােকে কিছু প্রশ্ন তাদের নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিদের কাছে জিজ্ঞাসা করেছিল, তখন তারা সেটাকে অস্বীকার করতে পারেনি বা এর ভাবার্থ অন্যকিছুও বলতে পারেনি বরং বলেছিল ‘আমরা বাহাস করার জন্য আসিনি, আমরা কোন বাহাস করতে চাইনা। এ ব্যাপারে আমরা অজ্ঞ এবং আমাদের মাশায়েখও অজ্ঞ। যুক্তি তর্কে পরাস্ত হলেও আমরা তাই বলে যাব। সেই প্রশ্নমালা ও ঘটনার বিশদ বিবরণ ছাপিয়ে ১৩২৩ হিজরীর জামাদিউল আখেরে যখন তাদের নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিদের হাতে পৌছানাে হলাে, তখন তারা সােজাসুজি অস্বীকার করলাে। তাও চার বছর পর। ধোঁকা এ রকমই। হয়তাে বলে দিতে পারেন যে, ‘এ ধরণের কটুক্তিকারী লোক পৃথিবীতে জন্মও নেয়নি। ওসব বানােয়াটী কথা। ওদের বেলায় কী আর বলা যায়। আল্লাহ তাদেরকে লজ্জাশরম দান করুন।

পঞ্চম ধোঁকাঃ যখন তারা অন্য কোন পন্থা খুঁজে পায়না

যখন তারা অন্য কোন পন্থা খুঁজে পায়না, ধোঁকা দেয়ার কোন রাস্তা দেখেনা, তখন তারা কুরআন করীমের আয়াত -

يصدون عن سبيل الله ويبغونها عوجا

এর ঘােষণা অনুযায়ী অজ্ঞ মুসলমানদের উত্তেজিত ও অন্ধকারে নিমগ্ন রাখার অভিপ্রায়ে বলে থাকে যে আহলে সুন্নাত ওয়াল জামায়াতের আলেমদের কুফরী ফতওয়ার কিবা গুরুত্ব আছে। ওনারাতাে কথায় কথায় ফতওয়া দিয়ে থাকে। ওনাদের ছাপাখানা থেকে সবসময় কুফরীর ফতওয়াই বের হয়।

তারাই ইসমাইল দেহলভী, মৌলভী ইসহাক, মৌলভী আবদুল হাই সাহেবকে কাফির বলে ফতওয়া দিয়েছে, শাহ ওলীউল্লাহ, হাজী ইমদাদুল্লাহ, মৌলানা শাহ ফজলুর রহমান সাহেবানকে কাফির বলেছে এবং তাদের মধ্যে যারা একেবারে নিলজ্জ তারা  মাযাআল্লাহ হযরত শেখ মুজাদ্দিদে আলফেছানী (রহমতুল্লাহ আলাইহে), মৌলানা শাহ মুহাম্মদ হুসাইন ইলাহবাদী (রহমতুল্লাহ আলাইহে) এবং হযরত সৈয়দুনা শেখ আকবর মুহিউদ্দীন ইবনে আরবীকে কাফির ফতওয়া দিয়েছে। তাঁদের অপরাধ হলাে, তাঁরা অন্ধ বিশ্বাসী হয়ে কোন কিছু করতেন না।

◾তাঁরা কুরআনের আয়াতঃ

انا جاءكم فاسق بنباء فتبينوا .

(যদি কোন ফাসিক তােমাদের কাছে কোন খবর পরিবেশন করে, তােমরা তা যাচাই করে নিও)

অনুযায়ী আমল করতেন এবং মিথ্যা উদ্ভাবনকারীদের ঘৃণা করতেন। মিথ্যুকদের প্রসঙ্গেঃ

◾আল্লাহ তাআলা ফরমান -

انما يفترى الكذب الذين لا يؤمنون

অর্থঃ যাদের ঈমান নেই, তারাতাে কেবল মিথ্যা উদ্ভাবন করে।

◾ আর ইরশাদ ফরমান -

فتجعل لعنة الله على الكاذبين .

অর্থঃ মিথ্যাবাদীদের উপর আল্লাহর লানত।

মুসলমানগণ! এ দুর্বল ধোঁকা ও হীন ফন্দির স্বরূপ উন্মােচন করা মোটেই কষ্টকর নয় তাদের থেকে যদি এর প্রমাণ তলব করা হয় অর্থাৎ (কাফির বলা হয়েছে বলে) ওরা তখন দাবী করে, তা কোন্ কিতাবে, কোন পুস্তিকায় বা ফতওয়ায় বা কোন্ ম্যাগাজিনে বলা হয়েছে, জিজ্ঞাসা করলে, কিছুই দেখাতে পারবেনা। তাই দেখুন,

◾কুরআন মাজীদ তাদেরকে মিথ্যুক বলে সাক্ষ্য দিচ্ছেঃ

فإذا لم يأتوا بالشهداء فأولئك عند الله هم الكانيون 

(ওরা যখন প্রমাণ উপস্থাপন করতে পারে নাই, সেজন্য তারা আল্লাহর কাছে মিথ্যাবাদী)

মুসলমানগণ! যাচাইকৃত ব্যক্তিদেরকে যাচাই করার কি প্রয়ােজন। অনেক বার তাঁদেরকে যাচাই করা হয়েছে। তারা এ দাবীটা জোরে শােরে করে থাকে। কিন্তু যখন কেউ প্রমাণ চায় মুখ লুকিয়ে পৃষ্ঠ প্রদর্শন করে। এমন নির্লজ্জ যে নিজেদের ভ্রান্ত ধারণার উপর অটল রয়ে আল্লাহ ও তার রসুলের শানে বেআদবী করে, ওদের মুরুব্বীরা যে কুফরী করেছে, তা ধামাচাপা দেয়ার উদ্দেশ্য বলে থাকে উলামায়ে আহলে সুন্নাত বিনা কারণে লােকদের কাফির বলে।

মুসলমানগণ! এ প্রতারকদের জিজ্ঞাসা করে দেখুন তাদের এ মনগড়া কথার কোন প্রমান আছে কি?

قل هاتوا برهانكم إن كنتم صدقین۔ 

◾অর্থঃ যদি তােমরা সত্যবাদী হও দলীল উপস্থাপন কর।"

এর থেকে বেশী কিছু বলার আমাদের প্রয়ােজন নেই। তবে খােদার মেহরবানীতে তারা যে মিথ্যুক, তা আমি সুস্পষ্ট দলিল দ্বারা প্রমাণিত করবাে, যাতে ওদের প্রতারণা মুসলমানদের কাছে দিবালােকের মত স্পষ্ট হয়ে যায়।


উলামায়ে আহলে সুন্নাত ইসমাইল দেহলভীর লিখনীর মধ্যে কুফরী উক্তি প্রমাণিত করেছেন এবং এর পরও সংযমের পরিচয় দিয়েছেন। যেমন -

(১) “সুবহানুল সবুহ’ নামক (১৩০৯ হিজরীতে প্রকাশিত) কিতাবে ইসমাইল দেহলবী ও তাঁর অনুসারীদের উপর ৭৫টি কারণে সুস্পষ্ট দলিল দ্বারা কুফরী প্রমাণিত করে ৯০ পৃষ্ঠায় বলেছেনঃ

◾সাবধানী উলামায়ে কিরাম ওদেরকে কাফির বলা থেকে বিরত রয়েছেন।

وهو الجواب وبه يفتى وعليه الفتوى وهو المذهب وعليه الاعتماد وفيه السلامة وفيه السداد .

অর্থাৎ এটাই উত্তর, এটার উপরই ফতওয়া, এটাই আমাদের মাযহাব এটার উপরই আমাদের আস্থা, এতেই নিরাপদ এবং এতেই অটলতা।

(২) আল-কাউকাবাতুশ শাহাবিয়া নামক কিতাবটি ইসমাইল দেহলভী ও তার অনুসারীদের সমালােচনায় রচিত হয়েছিল। এটা ১৩১৬ হিজরীতে আজিমাবাদে প্রথমবার প্রকাশিত হয়। এ কিতাবে কুরআন হাদীছের সুস্পষ্ট দলিল ও ইমামদের নির্ভরযােগ্য বিভিন্ন কিতাবের উদ্ধৃতি দ্বারা সত্তরেরও অধিক কারণে ইসমাইল দেহলভীর উপর কুফরী অপরিহার্য বলে প্রমাণিত করা হয়। কিন্তু পরিশেষে উক্ত কিতাবের ৬২ পৃষ্ঠায় উল্লেখিত আছে-

◾“আমাদের মতে সাবধানতা অবলম্বনের খাতিরে কাফির বলা থেকে বিরত থাকাটা সমীচিন।"

(৩) ‘সল্লুস সয়ুফ’ নামক (আজিমাবাদ থেকে ১৩৩২ হিজরীতে প্রকাশিত) কিতাবেও ইসমাইল দেহলভী ও তার সহযােগীদের উপর বিভিন্ন জোরালাে কারণে কুফরীর অভিযােগ প্রমাণিত করে ২১ ও ২২ পৃষ্ঠায় উল্লেখিত আছে-

◾“ফিকাহ শাস্ত্রীয় এ হুকুমটা কটুক্তিপূর্ণ উক্তির জন্য জারী করা হয়েছিল কিন্তু আমাদের উলামায়ে কিরামের উপর খােদার অগণিত রহমত ও অশেষ মেহেরবানী যে এতকিছু দেখা সত্ত্বেও এবং সেই দলের নেতাদের মুখে কথায় খাটি মুসলমানদের প্রতি কুফর ও শিরকের কথা শুনেও রাগের মাথায় সাবধানতার আচঁলকে হাতছাড়া করেননি এবং প্রতিশােধের কোন মনােভাবও সৃষ্টি হয়নি। তাঁরা এখনও বলেন যে, লুযুম ও ইলতিযামের মধ্যে পার্থক্য রয়েছে। উক্তিসমূহ কুফরী হওয়া আর উক্তিকারীকে কাফির বলা এক কথা নয়। দুর্বল থেকে দুর্বলতর ঈমানের লক্ষণ পেলেও আমরা কুফরীর হুকুম জারী করা থেকে বিরত থাকি।"

(৪) "ইযালাতুল আর’ নামক কিতাবের (যেটা ১৩১৭ হিজরীতে আজিমাবাদে প্রথম ছাপিয়ে ছিল) ১০ পৃষ্ঠায় উল্লেখিত আছে -

◾“আমরা এ বিষয়ে পুর্বসূরীদের উক্তি অনুসরণ করি। তাদের মধ্যে যারা দ্বীনের প্রয়ােজনীয় কোন বিষয়ের অস্বীকারকারী নয় এবং দ্বীনের প্রয়ােজনীয় কোন বিষয়ের অস্বীকারকারীকে মুসলমান মনে করে না, আমরা তাদেরকে কাফির বলিনা।"

(৫) ইসমাইল দেহলবীর কথা বাদই দিন, অন্যরা যারা অপবাদকারী হিসেবে বিবেচিত হয়েও ‘মাসআলা- ইমকানে কিযব’ এর পরিপ্রেক্ষিতে ৭৮টি কারণে কুফরী প্রমাণিত হওয়ার পরও ‘সিজনুস সবুহ’ নামক কিতাবের ৮০ পৃষ্ঠায় বর্ণিত আছে-

◾"খােদার শপথ, হাজার বার খােদার শপথ, কখনও ওদের কাফির বলা পছন্দ করিনা, ওদের নবাগত অনুসারীদেরকে এখনও মুসলমান মনে করি। যদিওবা ওদের বিদআত ও গােমরাহের ব্যাপারে কোন সন্দেহ নেই এবং এ ফেরকার নেতার (ইসমাইল দেহলবীর) কুফরীর ব্যাপারেও আমরা নিশ্চুপ। কেননা,

আমাদের নবী করীম ﷺ কলেমা পাঠকারীদেরকে কাফির বলতে বারণ করেছেন, যতক্ষণ কুফরীর কারণ সুর্যের আলাে থেকে অধিক সুস্পষ্ট না হয় এবং ইসলামের পক্ষে কোন দুর্বলতর প্রমানও বিদ্যমান না থাকে।"

মুসলমানগণ! আপনাদেরকে স্বীয় দ্বীন, ঈমান, কিয়ামত দিবস এবং আল্লাহর দরবারে উপস্থিত হওয়ার কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে জানতে চাই যে, যে বান্দা ওদের কুফর প্রমাণ করার পরও একান্ত সতর্কতা ও অধিক খােদাভীতির কারণে কাফির বলা থেকে বিরত রয়েছে, তাকে যদি কাফির বলে ফতওয়া দেয়া হয়, তা কত যে নির্লজ্জতা অবিচার ও হীনমন্যতার পরিচায়ক, তা বলার অপেক্ষা রাখে না।

◾আমাদের নবী করী ﷺ ঠিকই বলেছেন-

اذا لم يستحي فاصنع ما شئت

(তুমি লজ্জা না থাকলে, যা ইচ্ছে তাই করতে পার)

بيحيا باش و آنچه خواهی کن

(বেহায়া ব্যক্তিরা যা ইচ্ছা তাই করতে পারে)

মুসলমানগণ! উপরােক্ত উক্তিসমূহের প্রতি মনােনিবেশ করুন এবং আল্লাহ রসূলের ভয়কে সামনে রেখে ইনসাফ করুন, এ উক্তিসমূহ অপবাদকারীদের অপবাদকে কেবল রদ করনি, সুস্পষ্টভাবে প্রমাণিত করেছে যে এ মহৎ সাবধানী ব্যক্তিরা অপবাদকারীদের কখনও কাফির বলেননি, যতক্ষণ সুস্পষ্ট ও নিশ্চিতভাবে কুফরী প্রমাণিত হয়নি এবং এ ব্যাপারে কোন ব্যাখ্যার অবকাশ থাকে না। তাঁরাইতাে ওদের বেলায় সত্তরটি কারণে কুফরী প্রমাণিত করার পরও বলেছেন-

◾আমাদেরকে নবী করীম ﷺ ‘লা-ইলাহা-ইল্লাল্লাহু পাঠকারীদের কাফির বলতে নিষেধ করেছেন, যতক্ষণ কুফরীর কারণ সূর্য থেকে অধিক উজ্জ্বল না হয়, এবং ঈমানের কোন দুর্বলতর বৈশিষ্ট্যও বাকী না থাকে। এ খােদার বান্দা, যিনি সে সব অপবাদকারীদের বেলায় (যতক্ষণ পর্যন্ত তাদের অপবাদ সম্পর্ক সুনিশ্চিত হতে পারেনি) ফকীহগণের দৃষ্টিকোণ থেকে ৭৮টি কারণে কুফরী প্রমাণিত করে পরিশেষে লিখেছেন, হাজার হাজার বার আল্লাহর শপথ, আমি তাদেরকে কাফির বলাটা কখনও পছন্দ করিনি। যখন কাফির বলেছি তখন সুসম্পর্ক ছিল। এখন তা বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। তাদের জমিদারীর বেলায় আমাদের কোন হস্তক্ষেপ ছিল না। আল্লাহর শপথ, মুসলমানের নিকট শত্ৰু-মিত্র নির্ণিত হয় আল্লাহ ও রসুলের সাথে মহব্বত ও শক্রতা দ্বারা। যতক্ষণ পর্যন্ত এসব অপবাদ প্রকাশ পায়নি এবং আল্লাহ রসুলের শানে অশােভনীয় কোন কিছু দেখি ও শুনিনি, ততক্ষণ পর্যন্ত সংযম প্রদর্শন করেছি, এমনকি ফকীহগণের দৃষ্টিকোণ থেকে অনেক ক্ষেত্রে কুফরী অপরিহার্য হওয়া সত্ত্বেও সর্তকতা অবলম্বন করেছি এবং ইসলামী দার্শনিকর অনুসরনে কোন কিছু মন্তব্য করা থেকে বিরত রয়েছি। কিন্তু যখন সুস্পষ্টভাবে দ্বীনের প্রয়ােজনীয় বিয়ষকে অস্বীকার ও আল্লাহ-রসুলের শানে অপবাদ নিজ চোখে দেখা, তখন কাফির বলা ব্যতিত অন্য কোন উপায় ছিলনা।

◾কেননা দ্বীনের ইমামগণ বলেন,

من شك عذابه و كفره فقد كفر

(যে এ ধরণের ব্যক্তির আজাব ও কুফরীর ব্যাপারে সন্দেহ করে, সে নিজেই কাফির)

নিজের ও সাধারণ দ্বীনি ভাইদের ঈমান বাঁচানাে অপরিহার্য ছিল। তাই বাধ্য হয়ে কুফরীর ফতওয়া দিয়েছি এবং তা প্রকাশ করেছি।

◾আল্লাহ তাআলা ইরশাদ ফরমানঃ 

قل جاء الحق وزهق الباطل إن الباطل كان زهوقا .
(বলে দিন! সত্য সমাগত, মিথ্যা দূরীভূত হয়েছে। নিশ্চয়ই বাতিল অপসৃত হওয়ারই ছিল)

◾ আরও ইরশাদ ফরমানঃ

لا إكراه في الدين قد تبين الرشد من الغي  

(ধর্মের মধ্যে কোন জোর জবরদস্তি নেই, সত্যপথ পরিষ্কারভাবে গােমরাহী থেকে পৃথক হয়ে গেছে।)

◾এ পুস্তিকায় চারটি বিষয় প্রমাণিত হয়েছে-

(১) ওসব অপবাদকারীরা যারা কিছু লিখেছে ও প্রকাশ করেছে, তা নিশ্চয়ই আল্লাহ ও রসুলের শানে অবমাননাকর ছিল।

(২) আল্লাহ-রসূলের শানে অবমাননাকর উক্তিকারী কাফির।

(৩) যে তাদেরকে কাফির বলেনা, তাদের সাথে সংস্রব বজায় রাখে, ছাত্র-শিক্ষক সম্পর্ক, আত্মীয়তা বা বন্ধুত্বের কথা চিন্তা করে, সে তাদেরই অন্তর্ভূক্ত। তাদের মত সেও কাফির বলে বিবেচ্য। কিয়ামতের দিন তাদের একই রশিতে বাঁধা হবে।

(৪) যেসব ওজর আপত্তি বা ধোঁকার আশ্রয় নিয়েছে, সব ভিত্তিহীন প্রতিভাত হয়েছে।

খােদার ফজলে এ চারটি বিষয় সুস্পষ্ট হয়ে গেছে,যার প্রমাণ কুরআনের আয়াত দ্বারা দেয়া হয়েছে। এবার আপনাদের পছন্দ মােতাবেক হয়তাে বেহেশতের পথ অথবা দোযখের পথ অবলম্বন করুন। তবে এতটুকু জেনে রাখুন যে মুহাম্মদুর রসূলুল্লাহ (ﷺ) এর দামান ছেড়ে যায়েদ, ওমর প্রমূখের অনুসারী হলে কখনাে কামিয়াব হওয়া যাবে না। খােদার শুকরিয়া, প্রত্যেক শিক্ষিত মুসলমানের কাছে আমার বক্তব্য সানন্দে গৃহীত হয়েছে। কিন্তু সাধারণ মুসলমান ভাইদের জন্য সীলমােহরযুক্ত দলীলের প্রয়ােজন। হেরমাইন শরীফাইনের উলামায়ে কিরামের ফওয়া থেকে অন্য কোন ফতওয়া বেশী নির্ভরযােগ্য হতে পারেনা। যেখান থেকে দ্বীনের সূচনা হয়েছে এবং যেখানে শয়তানের গতিবিধি সীমিত বলে সহীহ হাদীছ দ্বারা প্রমাণিত, সেখানকার উলামায়ে কিরামের সীল মােহরযুক্ত ফতওয়া "হুসামূল হারামাইন" দেখুন। সাধারণ মুসলমান ভাইদের সুবিধার্থে ফতওয়াগুলাে সহজ ভাষায় উর্দুতে অনুবাদ করা হয়েছে।

হে আল্লাহ! মুসলমান ভাইদেরকে হক কবুল করার তৌফিক দান করুন এবং তােমার ও তােমার হাবীবের মুকাবিলায় যায়েদ, ওমর প্রমূখের অনুসারী হওয়া থেকে রক্ষা করুন-আমীন, আমীন, আমীন।

والحمد لله رب العلمين وافضل الصلوة وأكمل السلام على سيدنا

محمد واله واصحبه أجمعين .


.......... সমাপ্ত ..........

Comments

Popular posts from this blog

বালাকোট আন্দোলনের হাকীকত

সৈয়দ আহমদ বেরলভীর জম্ম ও পরিচয়

মওদুদীর ভ্রান্ত আক্বিদা ও ইসলামী আক্বিদা