ইসলামী তাবলিগ বনাম বর্তমান তাবলিগ
কিতাবঃ ইসলামী তাবলিগ বনাম বর্তমান তাবলিগ
সংকলকঃ ব্রিগেডিয়ার জেনারেল খুরশীদ আলম (অবঃ)
সংকলকের কথাঃ
নাহমাদুহু ওয়াছাল্লী ওয়া নুসাল্লিমু আলা রাসূলিহিল কারীম। আম্মাবাদ। সমস্ত প্রশংসা বিশ্ব জগতের স্রষ্টা ও প্রতিপালক মহান আল্লাহ রাব্বল আলামীনের দরবারে, যিনি আমাদেরকে তার প্রিয় হাবীব (ﷺ)-এর উম্মত হওয়ার সৌভাগ্য দান করেছেন। অসংখ্য দরূদ ও সালাম উম্মতের কান্ডারী ও দরদী নবী, আল্লাহর হাবীব হযরত মুহাম্মদ মুস্তাফা (ﷺ)-এর উপর, যিনি নিজেই হলেন ঈমানের মূল এবং যার প্রতি ইক বা মহব্বত হলাে ঈমানের হাকিকত।
সত্য-মিথ্যা ও হক্ক-বাতিলের দ্বন্দ্ব পূর্বে ছিল, বর্তমানে আছে এবং ভবিষ্যতেও থাকবে। কিন্তু আমাদের মিথ্যা থেকে সত্যকে, বাতিল থেকে হককে পৃথক করতে হবে এবং কোনটি সত্য, কোনটি মিথ্যা তা বুঝতে হবে। এটা বর্তমানে খুব বেশী জরুরী। কারণ হুজুর-ই আকরাম (ﷺ) ভবিষ্যদ্বাণী করেছেন যে, শেষ জামানায় আমাদের মধ্যে দ্বীনের বিষয়ে অনেক বিভক্তি দেখা দিবে তথা উম্মতের মধ্যে অনেক দল ও উপ-দল সৃষ্টি হবে। তিনি সাল্লালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরাে বলেছেন, উম্মতের একটি দল সর্বদা ইসলামের মূল আকিদা-বিশ্বাসের ধারায় তথা হুজুর (ﷺ) ও তাঁর সাহাবা কেরামের আকিদা ও আমলের উপর প্রতিষ্ঠিত থাকবে। আর ঐ দল হলাে ‘ আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাআত বা সুন্নী জামা'আত এবং এর অনুসারীরা হবে জান্নাতী। আর বাকি দল-উপদলগুলাে হলাে বাতিল এবং ঐ সকল দলের অনুসারীরা হবে জাহান্নামী।
বর্তমানে প্রায় সকল দলের অনুসারীরাই নিজেদের আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা'আতের অনুসারী হিসাবে দাবী করে। তারা সবাই কুরআন-হাদীসের কথা বলে এবং বেশ-ভূষায়ও একই রকম। তাই আসল ও নকল চিনা মুশকিল। অথচ চিরস্থায়ী সাফল্যের জন্য অবশ্যই আমাদেরকে সঠিক সুন্নী দল নির্ণয় করে তার অনুসারী হতে হবে।
✦ হুজুর (ﷺ) বলেছেন, "আখেরী জামানার কিছু উম্মত হুজুর (ﷺ)-কে এমন এক ও মহব্বত করবে যে, হুজুর (ﷺ)-এর যিয়ারত ও দীদারের জন্য তারা পাগলের মত বেকারার থাকবে এবং জান-মাল কোরবান করার জন্য সদা প্রস্তুত থাকবে। এদের ঈমান হবে অদ্ভুত ও উত্তম ’ (মুসলিম-২ য় খন্ড, পৃ: ৩৭৯ এবং মেশকাত পৃ: ৫৫০ ও ৫৮৩)।
✦ অন্য হাদীস হতে জানা যায়, একবার হুজুর (ﷺ) তার ভাইদের সাথে তথা শেষ জামানার ঐ সকল উম্মতদের সাথে সাক্ষাত মােলাকাতের জন্য অধিক আগ্রহের কথা ব্যক্ত করেন, যারা তাকে না দেখেই খুব মহব্বত করবে (মেশকাত, পৃ: ৫৫০)।
✦ আরেক হাদীসে আছে, হুজুর (ﷺ) শুধু একবার মােবারকবাদ জানিয়েছেন তাদের জন্য যারা তাকে দেখে ঈমান এনেছে এবং মহব্বত করেছে। কিন্তু ০৭ বার মােবারকবাদ জানিয়েছেন তাদের জন্য যারা হুজুর (ﷺ)-কে না দেখে ঈমান এনেছে এবং তার সাথে ইশক ও মহব্বতের সম্পর্ক স্থাপন করেছে। (মেশকাত-৫৮৪, আহমদ, ৫ ম খন্ড ২৬৪)।
এ তিনখানা হাদীস প্রমাণ করে হুজুর (ﷺ)-এর ইশক ও মহব্বত ঈমানদারদের জন্য অতীব জরুরী একটি বিষয়।
✦ এক সকালে হুজুর (ﷺ)-এর সাথে হযরত জায়াদ বিন হারেসা (رضي الله عنه) এর সাক্ষাত হলে তার (জায়াদ) হাল সম্পর্কে জানতে চান। উত্তরে জায়াদ (رضي الله عنه) জানান যে, তিনি খুব উৎফুল ; কারণ সেদিন তাকে খুব ঈমানদার বলে মনে হয়েছে। এটা শুনে হুজুর (ﷺ) ফরমান-হে জায়াদ! তুমি কি বলছ? তুমি কি জান ঈমানের হাকিকত কি? এর অর্থ হলাে ঈমানদার হওয়া অত সহজ নয় এবং ঈমানের একটি হাকিকত আছে। (জা’আল হক, ১ ম খন্ড, হাযির-নাযির অধ্যায় এবং মসনবী শরীফ)।
✦ অন্য হাদীস হতে জানা যায় যে, ঈমানের হাকিকত হলাে ইশকে রাসূল (ﷺ)। অর্থাৎ-হুজুর (ﷺ)-কে সর্বোচ্চস্তরের মহব্বত করা। (বুখারী, রাবী-আবু হুরায়রা (رضي الله عنه), ১ ম খন্ড, পৃ: ০৭ ; মুসলিম, ১ ম খন্ড, পৃ: ৪৯)
আমরা জানি যে, মুমীনদের মহা মূল্যবান পুঁজি ও সম্পদ হলাে ঈমান। আর উপরােক্ত বর্ণনা হতে জানলাম যে, ঈমানের হাকিকত বা মূল ভিত্তি হলাে সর্বোচ্চস্তরের মহব্বত বা ইশকে রাসূল (ﷺ)।
✦ তাই তাে আল্লাহ্ বলেন, "আমার ভালবাসা পেতে হলে আমার হাবীবকে অনুসরণ কর।' (সুরা-আলে ইমরান, আয়াত নং-৩১)। আর রাসূল (ﷺ) বলেন, ' আল্লাহর ভালবাসা পাওয়ার জন্য আমাকে ভালবাস ”। (মেশকাত, পৃ: ৫৭৩, তিরমিযী-২ য় খন্ড, পৃ: ২১৭)।
আল্লাহর এ নির্দেশ প্রতিপালনের প্রেক্ষিতে বিবেকের দাবী হলাে-মনে প্রাণে তাে তাকেই অনুসরণ করা যায় যার প্রতি নিখাদ মধবত বা ইশক থাকবে। আর ঈমানদার হওয়ার জন্য যাকে জানের চাইতে বেশী মহব্বত ও ইশক করব-তাকে তাে সর্বগুণে গুণান্বিত হতেই হবে। তাই মহান রাব্বল আলামিন তাঁর হাবীব (ﷺ)-কে "উসওয়াতুন হাসানা "(উত্তম আদর্শের অধিকারী), "খুলুকুন আজিম "(উত্তম চরিত্রের অধিকারী), "রাহমাতুল্লিল আলামিন "(সমগ্র বিশ্বের জন্য রহমত) এবং আল্লাহর রঙ্গে রঞ্জিত (গুণে-গুণান্বিত) করে দুনিয়ায় পাঠিয়েছেন।
এখন বুঝে নিন, একদিকে আল্লাহ্ তাঁর হাবীব (ﷺ)-কে কেমন উন্নত শান, যান ও মর্যাদায় ভূষিত করে পৃথিবীতে আমাদের জন্য পাঠিয়েছেন, আর অপরদিকে কেমন হওয়া উচিত হুজুর (ﷺ)-এর প্রতি আমাদের আদব, মহব্বত ও সম্মান। অথচ সেই মহান সত্ত্বার, যাকে সৃষ্টি না করলে আল্লাহ্ কিছুই সৃষ্টি করতেন না এবং নিজেও প্রকাশিত হতেন, তাঁর মান-মর্যাদাকে ভূলুণ্ঠিত করে, তাকে একজন নিস্ক্রিয় ও অক্ষম ব্যক্তি এবং আমাদের মত মানুষ হিসাবে প্রমাণ করতে আজ উম্মতের কয়েকটি দল মারাত্বকভাবে সক্রিয়। আল্লাহর রাসূল (ﷺ) এর প্রতি তাদের আদব, সম্মান ও মহব্বতের মান এবং তাদের বাস্তব কর্মকান্ড ও আচার-আচরণ বিশ্লেষণ করলে ঈমানের হাকিকত তথা ইশকে রাসূল (ﷺ)-এর চরম ঘাটতি তাদের মধ্যে পরিলক্ষিত হয়। এমনকি আল্লাহ কর্তৃক তার হাবীব (ﷺ)-কে প্রদত্ত বহু শান-যান ও বিশেষ বৈশিষ্টগুলাে তারা মানতে নারাজ। অথচ আমাদের দূর্ভাগ্য যে এমন ক্যাটাগরীর লােকেরাই আজ আমাদের নতুন করে দ্বীনি শিক্ষা দিতে সক্রিয়।
কুরআন হতে জানা যায়, আল্লাহ্ হাশরে আমাদেরকে আমাদের নেতাদের (ইমামদের) সাথে ডাকবেন। হাদীস হতে জানা যায়, দুনিয়ায় যে যাকে ভালবাসবে হাশরে সে তার সাথেই থাকবে। কাজেই আজ যে সকল নেতা/ মুরুব্বি ও তাদের অনুসারীদের মধ্যে হুজুর (ﷺ)-এর প্রতি ভক্তি, তাজিম ও যন্ত্রবতের এমন প্রচন্ড ঘাটতি দেখা যায়, তাদের হাশর কেমন হবে তা আল্লাহই ভাল জানেন।
অতএব, আমাদেরকে ঈমান ও ঈমানের হাকিকতের মানদন্ডে যাচাই-বাছাই করে সঠিক দল ও সঠিক নেতা বা ইমাম মুরুব্বী নির্বাচন করতে হবে। তবেইতাে সঠিক গন্তব্যে পৌঁছতে পারবাে সফলকাম হতে পারবাে। এ কারণেই আমি এ ক্ষুদ্র পুস্তিকার মাধ্যমে একটি দল, তাবলীগ জামাতের মুরুব্বিগণ এবং তাদের অনুসারীদের ঈমান-আক্বিদা ও কর্মকান্ড, প্রাপ্ত তথ্যাদি হতে সংগ্রহ করে ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের জন্য বিশ্লেষণ পূর্বক প্রয়ােজনীয় মতামতসহকারে উপস্থাপন করলাম।
বর্তমানে মুসলিম উম্মাহর সঠিক পথ হতে বিচ্যুতি ও বহুধা বিভাজনের কারণে, আমি আমার দয়াল পীর দস্তগিরের হৃদয়ের বর্তমান বড় রক্তক্ষরণ তাে দেখিনি, তবে তাঁর চাপা ক্রন্দনের সুর শুনেছি। আর এ পুস্তিকা হলাে তাঁরই কান্নার প্রতিধ্বনি এবং তাঁর রূহানী ও ইলমি সােহবতের ফসল। আমি তার প্রতি প্রাণ ভরা কৃতজ্ঞতা জানাই। আরাে কৃতজ্ঞতা জানাই শ্রদ্ধেয় মাওলানা মুহাম্মদ আবদুল মান্নান সাহেবকে যিনি দয়া করে আমার এ পুস্তিকার পান্ডুলিপি নিরীক্ষা ও সংশােধন করেছেন এবং তার মুল্যবান অভিমত প্রদান করেছেন। শ্রদ্ধেয় মাওলানা কাযী মুহাম্মদ মঈনউদ্দীন আশরাফী সাহেবকেও কৃতজ্ঞতা জানাই তাঁর অভিমতের জন্য এবং মুফতি মুহাম্মদ আবদুল আলী কাদেরী সাহেবকে সম্পাদনার জন্য।
এ পুস্তিকার উদ্দেশ্য মােটেও কারাে অনুভূতিতে আঘাত বা কষ্ট দেয়া না। সবার কাছে আমার আকুল আবেদন, মনের জানালা খুলে নিরপেক্ষভাবে পড়ুন এবং এর মূল্যায়ণ করুন। উম্মাহর একজনও যদি ভূল রাস্তা হতে সঠিক রাস্তায় ফিরে আসে, আমি আমার প্রচেষ্টাকে সার্থক মনে করব। মহান রাব্বল আলামিন আমাদেরকে হেদায়েত নসীব করুন এবং পরকালীন সফলতা দান করুন। আমিন। বিহুরমাতি সাইয়্যিদিল মুরসালীন।
বিনীত,
ব্রিগেডিয়ার জেনারেল খুরশীদ আলম (অবঃ)
খাদেম, দরবারে মকিমীয়া মােজাদ্দেদীয়া
টানপাড়া, নিকুঞ্জ-২, খিলক্ষেত, ঢাকা-১২২৯।
দ্বীনের দাওয়াত কারা দিবে?
১। সুরা মায়িদা: ৬৭-"হে রাসূল! আপনার প্রতিপালকের পক্ষ থেকে আপনার প্রতি যা নাযিল করা হয়েছে, তা আপনি প্রচার করুন।
মন্তব্যঃ এ আদেশ শুধু হুজুর (ﷺ)-এর জন্য খাস ছিল।
২। সূরা তাহরীম। ৬-"হে ঈমানদারগণ! তােমরা তােমাদের নিজেদেরকে এবং তােমাদের পরিবারবর্গকে জাহান্নামের আগুন থেকে বাঁচাও।
মন্তব্য-এ আদেশ আল্লাহ শুধু ঈমানদার বান্দাদেরকে নিজে। এবং নিজেদের পরিবারবর্গকে জাহান্নাম থেকে বাঁচানাের কথা বলেছেন।
৩। সুরা আলে-ইমরান: ১০৪-"তােমাদের মধ্যে একদল এমন হওয়া উচিত যারা কল্যাণ ও ইসলামের দিকে লােকদেরকে আহবান করবে, সক্কাজের নির্দেশ দিবে এবং মন্দ থেকে নিষেধ করবে। আর তারাই হচ্ছে কামিয়াব বা সফলকাম।"
মন্তব্য-(তৃতীয় নম্বর সূত্রের ক্ষেত্রে) প্রথমত এ আদেশ হচ্ছে ফরজ, কিন্তু ফরজে কেফায়া। অর্থাৎ একদল করলে সকলের ফরজ হক আদায় হয়ে যাবে (তাফসিরে বায়জাভী, তাফসিরে জালালাইন ও তাফসিরে কুরতুবী সহ অনেক তাফসিরে বলা হয়েছে এটা আলিমদের জন্য প্রযােজ্য এবং ওয়াজিব)। দ্বিতীয়ত: আল্লাহ শুধু একদল লােককে দ্বীনের প্রচারের জন্য বলেছেন, সবাইকে নয়। এরা হলেন হক্কানী আলেম বা নায়েবে রাসূলগণ। আর যখন কাজটি গণহারে আম জনতা বা অনুপযুক্ত লােক দ্বারা পরিচালিত হবে, তখন হাদিস অনুসারে মনে করতে হবে এটি কেয়ামতের আলামত।
স্বপ্নে প্রাপ্ত বিষয়ের গ্রহণযোগ্যতাঃ
১। তাফসিরে রুহুল মায়ানী, প্যারা ২৩, পৃঃ১২৮-"নবীগণ আলাইহিমুস সালামের উপর নাজিলকৃত ওহী জাগ্রত অবস্থায় যেরূপ নির্ভুল, সঠিক ও সত্য, তদ্রুপ তাদের ঘুমন্ত অবস্থায় স্বপ্ন ও ওহী নির্ভুল, সঠিক ও সত্য এবং শরীয়তের দলিলরূপে পরিগণিত।"
২। তাফসিরে জালালাইন শরীফ, পৃ: ৩৭৭ "নবীগণ। আলাইহিমুস সালামের স্বপ্ন সত্য এবং তাদের কাজসমূহ আল্লাহ তা'য়ালার নির্দেশেই সম্পাদিত হয়ে থাকে।"
৩। নবীগণ ব্যতীত অন্য কারাে স্বপ্ন সবসময় সত্য নাও হতে পারে। তাই নবীগণ ব্যতীত অন্য কারাে স্বপ্ন শরীয়ত নয়। অলীগণের স্বপ্ন কুরআন হাদীস অনুযায়ী হলে নিজের জন্য গ্রহণযােগ্য হতে পারে, কিন্তু অন্যের জন্য দলিল হতে পারে না।
মন্তব্য-উপরােক্ত বর্ণনার আলােকে মৌ: ইলিয়াস মেওয়াতীর স্বপ্ন গ্রহণযােগ্য নয়, কারণ তার প্রচলিত তাবলীগের মত ও পথ হলাে ভিন্ন এবং অনেক ক্ষেত্রে কুরআন-হাদীসের পরিপন্থী। (বিশদ বর্ণনা পরবর্তীতে দেয়া হয়েছে।)
নবীওয়ালা কাজঃ
১। উম্মত কখনও নবীর মত হতে পারে না এবং নবীগণের বিশেষ দায়িত্ব উম্মত পালন করতে পারে না।
২। সাহাবীগণ বলেন-"ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমরা আপনার মত নই।"(বুখারী শরীফ-১ ম খন্ড, পৃঃ ২৫৭)
৩। অন্য হাদীস-"তােমাদের মধ্যে আমার মত কে আছে? "অর্থাৎ কেউই নেই। (বুখারী শরীফ-১ ম খন্ড, পৃ: ২৬৩)
মন্তব্য-
(১) উপরােক্ত হাদীস দ্বারা প্রমাণ হলাে উম্মত নবীর মত নয়। কাজেই, নবীর বিশেষ কাজ কিভাবে উম্মত পালন করবে? আর যদি এ উম্মতের আলেমগণ বনী ঈসরাইলের নবীগণের হন। তবে তারা হক্কানী ওলামায়েকেরাম ও নেয়ামত প্রাপ্ত বুজুর্গানে দ্বীন, যাদের মাধ্যমে নবুয়তের ধারা রহিত হওয়ার পরও বেলায়েতের ধারা চালু আছে। আর নবীর ওয়ারিশ হিসেবে তারা তাদের উপর অর্পিত দায়িত্বাবলী পালন করবেন।
(২) হাদীসে আছে, "নিশ্চয়ই আলেমগণ হলেন নবীর ওয়ারিশ।"আবার অন্য হাদীসে আছে।"ভালাের চেয়ে। ভালাে হলাে আলেম এবং খারাপের চেয়ে খারাপ হলাে। আলেম।"(মেশকাত-পৃ: ৩৭, দারেমী-১ ম খন্ড, পৃ: ১১৬, হাদীস নং ৩৭০) কাজেই দ্বীনের দাওয়াতের জন্য হক্কানী আলেম হতে হবে, আলেমে সূ (অসৎ আলেম) নয়, আম জনতা বা অনুপযুক্ত ব্যক্তিবর্গ তাে নয়ই।
মসজিদ ব্যবহারঃ
১। সুরা হাজ্জ ২৬ "আমার গৃহকে পবিত্র রাখ তাওয়াফকারীদের জন্য, নামাজে দন্ডায়মানরতদের জন্য এবং রুকু-সাজদাকারীদের জন্য।"
২। সুরা বাকারা: ১২৫-"আমি ইব্রাহিম ও ঈসমাইলকে আদেশ করলাম, তােমরা আমার গৃহকে তাওয়াফকারী, অবস্থানকারী ও রুকু-সাজদাকারীদের জন্য পবিত্র রাখ।"
৩।"তােমরা মসজিদকে ঘুমাইবার ঘর বানাইও না।"(উমদাতুল ক্বারী শরহে বুখারী)
৪।"তিন মসজিদ ব্যতিত (অধিক সওয়াবের আশায়) অন্য কোন মসজিদে সফর করা যাবে না। মসজিদে হারাম (মক্কা), মসজিদে নববী (মদিনা) এবং মসজিদে আল আকসা (বাইতুল মুকাদ্দাস)।"(বুখারী-১ ম খন্ড, পৃ: ২৫২, মুসলিম-১ ম খন্ড, পৃ: ৩১৩ ও ৩১৪ এবং মেশকাত-পৃ: ৬৮)
মন্তব্য-মসজিদ আল্লাহর ঘর, যা পবিত্র রাখার জন্য আল্লাহ্ নির্দেশ দিয়েছেন। আল্লাহর এই হুকুম পালনার্থে দেখা যায়। যে, পীর-মাশাঈখ তাদের দরবারে মসজিদ, মাহফিলের ঘর/স্থান এবং হুজরা শরীফ আলাদা-আলাদা রাখেন। অথচ আজকাল পবিত্র মসজিদকে সরাইখানা বানিয়ে সেটার পবিত্রতা নষ্ট করা হচ্ছে।
ইসলামী তাবলিগের উসুল বনাম ইলিয়াসী তাবলিগের উসুলঃ
১। ইসলামের রােকন/ উসূল হলাে ০৫ টি। যথা-
ঈমান (কলেমা), নামাজ, রােজা, হজ্জ ও যাকাত। (বুখারী-১ ম খন্ড, পৃ: ০৬, মুসলিম-১ ম খন্ড, পৃঃ ৩২ এবং মেশকাত-পৃ: ১২)
২। তাবলীগ জামাতের রােকন/ উসূল হলাে ০৬ টি। যথা-ঈমান (কলেমা), নামাজ, এলেম ও জিকির, একরামুল মুসলেমীন। (মুসলমানদের প্রতি সম্মান প্রদর্শন), তা সহীহে নিয়ত (নিয়ত শুদ্ধ করা) ও নাফর ফি সাবিলিল্লাহ (তাবলীগের জন্য বের হওয়া)। (সূত্রঃ দাওয়াতে তাবলীগ-২ য় খন্ড)
মন্তব্য (১) মুসলমানদের রােকনের প্রবর্তক হলেন আল্লাহ ও তাঁর রাসূল সাল্লালাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম। কিন্তু তাবলীগের রােকন বা উসূলের প্রবর্তক হলেন দিল্লীর মৌ: ইলিয়াস মেওয়াতী (১৩০৩ হি: ১৩৬৩ হি: তথা ১৯৪৪ সাল) যিনি তাবলীগ জামাতের প্রতিষ্ঠাতা। এই ০৬ উসূলের ভিত্তি করেই তিনি ১৩৪৪ হিঃ তে সর্বপ্রথম তাবলীগের কাজ ও গাত শুরু করেন।
মন্তব্যঃ (২) ইসলামের মৌলিক স্তম্ভ হলাে ০৫ টি। আর তাবলীগ জামাতের ০৬ টি। তাই ইসলামের মৌলিক স্তম্ভে হস্তক্ষেপ করে, অর্থাৎ ০৩ টি কােন কােন দিয়ে নতুন ৪ টির সংযােজন করে, তাবলীগ জামাতের প্রবর্তক ও অনুসারীগণ নিজেরাই ইসলামের দায়রা বা বৃত্ত হতে দৃশ্যত বেরিয়ে গেছেন। তারা যত খোঁড়া যুক্তি উপস্থাপন করুন না কেন, এটাই সত্য। আর ইসলামের মূল নীতির পরিবর্তনকারীরা কাফের। এটাই আহলে সুন্নাত ওয়াল জামায়াতের সিদ্ধান্ত।
আমাদের দ্বীন কি শুধুই শরীয়ত?
১। এলেম অর্জন ফরজ। এলেম আবার ০২ প্রকারের জাহেরী ও বাতেনী। কাজেই উভয় প্রকার এলেম অর্জনই ফরজ। (মেশকাত-পৃ: ৩৪, ইবনে মাজাহ-পৃ: ১৯)।
২। হাদীসে জিব্রাইল অনুযায়ী আমাদের দ্বীনের পুর্ণতার জন্য তিনটি বিষয় রয়েছে। যথা-ইসলাম, ঈমান ও এহসান। (বুখারী-১ ম খন্ড, পৃ: ১২, ২ য় খন্ড, পৃ: ৭০৫, মুসলিম-১ ম খন্ড, পৃ: ২৭, মেশকাত-পৃ: ১১)। ইসলাম ও ঈমান হলাে শরীয়তের বিষয় এবং এহসান হলাে তরিকত/ মারেফত বা সূফিবাদের বিষয়।
৩। ইমাম মালেক (র:) ফরমান-"যে ব্যক্তি এলমে শরীয়ত বা শরীয়তের জ্ঞান হাসিল করেছে এবং এলমে মারেফতের জ্ঞান হাসিল করেনি, সে ফাসিক। আর যে ব্যক্তি মারেফতের জ্ঞান হাসিল করেছে, কিন্তু শরীয়তের জ্ঞান হাসিল করেনি, সে জিন্দিক (কাফের)। আর যে ব্যক্তি উভয় প্রকার জ্ঞান অর্জন করেছে, সেই হচ্ছে হক্কানী আলেম বা নয়েবে রাসূল।"(মিরকাতুল মাফাতীহ শরহে মিশকাতুল মাসাবীহ, কিতাবুল ইলম, ১: ৩৩৫)
মন্তব্যঃ উপরােক্ত ০৩ টি তথ্যের আলােকে তাবলীগের অনুসারীগণ বাতেনী এলেম হাসিল, এহসান অর্জন এবং মারেফতের জ্ঞান লাভের জন্য কি উপায় বা পদ্ধতি বা নিয়ম অনুসরণ করেন, তা সরলপ্রাণ মুসলমানদের অবশ্যই জানতে ইচ্ছা করে এবং জানার অধিকারও রয়েছে। সম্ভবত কোন উত্তর পাওয়া যাবে না। কারণ মেওয়াতী সাহেব নিজেই তাবলীগের অনুসারীদের সূফীদের কিতাব পড়তে নিষেধ করেছেন। (সূত্র: মালফুজাত নং-৮০) কারণ সূফীদের কাছে। সত্য পথের ঠিকানা পাওয়া যায় এবং তাদের দ্বারস্থ হলে। মেওয়াতী সাহেবের দল ভেস্তে যাবে।
ইসলামী তাবলিগ বনাম ইলিয়াসী তাবলিগঃ
১। ইসলামী তাবলীগের প্রবর্তক হলেন স্বয়ং আল্লাহর হাবীব (ﷺ), যা শুরু হয়েছে মক্কার হেরা গুহা/ জবালে নূর হতে। আর বর্তমানে প্রচলিত তাবলীগের প্রবর্তক হলাে মৌ: ইলিয়াস মেওয়াতী, যা শুরু হয় ভারতের মেওয়াত হতে।
২। ইসলামী তাবলীগের উসূল বা ভিত্তি ০৫ টি। যথা-কালিমা, নামাজ, রােজা, হজ্জ ও যাকাত। আর তাবলীগ জামাতে হলাে ০৬ টি। যথা-কালিমা, নামাজ, এলেম ও জিকির, ইকরামুল মুসলিমীন, তা সহীহে নিয়ত এবং তাবলীগের জন্য বের হওয়া।
৩। ইসলামী তাবলীগের ০৫ টি ভিত্তি আল্লাহর রাসূল (ﷺ) ওহীর মাধমে পেয়েছেন যা আল্লাহ্ পক্ষ। থেকে নাযিল হয়। কাজেই এর মধ্যে কোন সংযােজন বা বিয়ােজনের সুযােগ নেই। আর ইলিয়াসী তাবলীগের ০৬ টি ভিত্তি মেওয়াতী সাহেব স্বপ্নে পেয়েছেন। তন্মধ্যে শুধু কলেমা ও নামাজ ইসলামী ভিত্তি হতে নেয়া হয়েছে এবং অপর তিনটি (হজ্জ, রােজা ও যাকাত) বাদ দিয়ে নতুন ০৪ টি উসূলের সংযােজন করা হয়েছে। ফলে উক্ত মতবাদের অনুসারী/ বিশ্বাসীরা ইসলাম হতে খারিজ কিনা তা পাঠক গণের বিবেচনার জন্য ছেড়ে দিলাম।
৪। ইসলামী তাবলীগের ৫ উসূল/ ভিত্তি কুরআন, হাদীস, ইজমা, কিয়াস দ্বারা প্রতিষ্ঠিত। কিন্তু তাবলীগের ৬ উসূলের দলিল তাদের নিজেদের কিতাবাদি ছাড়া অন্য কোথাও নেই। তাই তাদের কার্যকলাপ ও কর্মপদ্ধতি দৃশ্যত নাজায়েয।
৫। ইসলামী তাবলীগের উদ্দেশ্য হলাে কাফের মুশরিককে দ্বীনের দাওয়াত দেওয়া। হুজুর (ﷺ), সাহাবায়ে কেরাম ও আউলিকেরাম মুসলমানকে মুসলমান। হওয়ার দাওয়াত দেননি, কেবলমাত্র অমুসলিমকে ইসলাম কবুল করার দাওয়াত দিয়েছেন। কিন্তু ইলিয়াসী তাবলীগের লক্ষ্যস্থল হলাে মুসলমান এবং মসজিদ দখল। তারা মুসলমানদেরকে দাওয়াত দেয় তাদের আকিদায় বিশ্বাসী বানাতে যা ইসলামী আক্বিদা ও ইসলামী তাবলীগের পরিপন্থী। মােটকথা তাদের প্রচেষ্টার উদ্দেশ্য অমুসলিমকে মুসলমান বানানাে নয়, বরং মুসলমানদেরকে তাবলীগী বানিয়ে প্রকৃত ইসলাম থেকে খারিজ করে তাদের নিজেদের আক্বীদায় বিশ্বাসী বানানাে।
৬। ইলিয়াসী তাবলীগের অনুসারীরা ঘরে-ঘরে গিয়ে এবং লাইন বেঁধে গাত করে সদস্য সংগ্রহের ফাঁদ পাতে। এমন কি অনেক আলিম ও বুজুর্গ ব্যক্তিগণকেও দ্বীনের দাওয়াত দেয়ার মত বেয়াদবীপূর্ণ আচরণ তাদের মধ্যে অহরহ পরিলক্ষিত হয়।
৭। চিশতিয়া তরীকার কোন কোন বুজুর্গ আত্মশুদ্ধি ও মারেফত লাভের উদ্দেশ্যে বনে-জঙ্গলে কিংবা পাহাড়-পর্বতে একাকী গিয়ে মােরাকাবা-মােশাহেদায় লিপ্ত হতেন। এটাই তাদের চিল্লা। কিন্তু ইলিয়াসী তাবলীগের অনুসারীগণ চিল্লা করতে যান দলে দলে এবং লােকালয়ে।
৮। ইসলামী তাবলীগে হাড়ি-পাতিল, কম্বল, লােটা ইত্যাদির প্রয়ােজন নেই। ইলিয়াসী তাবলীগে এসব মােটামুটি বাধ্যতামূলক।
৯। ইসলামী তাবলীগে মসজিদকে সরাইখানা বানানাের প্রয়ােজন নেই। ইলিয়াসী তাবলীগে মসজিদ হলাে সরাইখানা। এ ক্ষেত্রে তাদের উপস্থাপিত ইতেকাফের দলিল গ্রহণযােগ্য নয়। যাদের ঈমান শুদ্ধ নয়, তাদের ইতিকাফ অকেজো।
১০। ইসলামী তাবলীগের উদ্দেশ্য হলাে অমুসলমানকে মুসলমান। বানানাে। ইলিয়াসী তাবলীগের উদ্দেশ্য হলাে মুসলমানগণকে ওহাবী আকিদার বিশ্বাসী বানানাে।
১১। ইসলামী তাবলীগের শিক্ষা হলাে উম্মত কখনাে নবীর সমতুল্য হতে পারে না। তাদের শিক্ষা হলাে তারা নবীগণের সমকক্ষ। (মালফুজাত নং-৫০) ‘ তােমাদিগকে আম্বিয়ায়ে কেরামদের মতই মানুষের উপকার করার জন্য বাহির করা হয়েছে।' (নাউযুবিল্লাহ) অথচ কোরআনের সুরা আলে ইমরানের ১১০ নং আয়াতটি উম্মতে মুহাম্মদীর জন্য প্রযােজ্য হলেও এ আয়াতে উম্মতে মুহাম্মদীকে ‘ আম্বিয়া কেরামের ' মত উল্লেখ নেই, যা ওয়াতী সাহেব উল্লেখ করেছেন।
১২। ইসলামী শিক্ষা হলাে নবীগণের কাজ আম জনতা করতে পারে না। তাদের শিক্ষা হলাে-তারা নবীওয়ালা কাজ করে। থাকে। (দেখুন-তাবলীগ জামাত প্রসঙ্গে ১৩ দফা, ১৪ পৃ:-লেখক মুহাম্মদ মুযাম্মিল হক)
১৩। ইসলামী শিক্ষা হলাে নবীগণের অন্তর কুফরী ও শিরকের দাগ হতে মুক্ত এবং তারা অন্যদের অন্তরের দাগ ও ময়লার ডিটার্জেন্ট (ময়লা পরিষ্কারকারী) হিসাবে কাজ করেন। তাদের শিক্ষা হলাে নবীজির হৃদয়ে কাফেরদের ময়লার দাগও লেগে যেত, তাই তিনি রাত্রে ইবাদত দ্বারা তা পরিস্কার করতেন। (নাউযুবিল্লাহ)। (দেখুন-মলফুজাত ৭ ম কিস্তি-১১১ নং মালফুজাত)
১৪। ইসলামী শিক্ষা হলাে আল্লাহর কাছে সবচেয়ে প্রিয় ইবাদত হলাে ফরজ ইবাদত। তন্মধ্যে যাকাতও রয়েছে। তাদের শিক্ষা হলাে ফরজ যাকাতের মর্তবা নফল হাদিয়ার চেয়ে কম। (মলফুজাত নং-৫১)
১৫। ইসলামী শিক্ষা মতে যাকাত পাবে এতিম, গরীব, মিসকিন। তাদের শিক্ষা ও তালিকামতে ৪০ জন তাবলীগ কর্মীকে যাকাত দেয়া উত্তম, কেননা তাদের মধ্যে লােভ-লালসা নেই। (মলফুজাত নং-৬২)
১৬। ইসলামী শিক্ষা হলাে নিজে এবং নিজ পরিবারকে জাহান্নাম থেকে বাঁচাতে হবে (সূরা তাহরীম ৬)। আর তাদের শিক্ষা। হালাে নিজ ঘর ও পরিবারকে বাদ দিয়ে চিল্লার নামে বাইরে চলে যাওয়া। নিজেও তার পরিবার জাহান্নাম থেকে মুক্তি পাবে কিনা তার খবর নেই, অথচ অন্যকে জান্নাতী বানাতে বেরিয়ে যায়। এটা আল্লাহর হুকুমের বিরােধিতা বৈকি।
১৭। ইসলামী শিক্ষা হলাে হাশরের দিন সমস্ত নবী আখেরী নবী (ﷺ)-এর ঝান্ডার ছায়াতলে। থাকবেন (মেশকাত-পৃ: ৫১৩)। আর তারা বলে নবীগণ নাফসী নাফসী বলে ভয়ে চিক্কার করতে থাকবেন, আর তাবলীগী মুজাহিদ বান্দাগণকে আল্লাহ সম্পূর্ণ ভয়শূন্য অবস্থায় শান্তির ছায়াতলে রাখবেন। (দাওয়াতে তাবলীগ-১ ম সংস্করণ, ১ ম খন্ড, ৫৪ পৃ:-লেখক আম্বর আলী)
১৮। ইসলামী আক্বিদা হলাে আরাফাতের জামায়েত হলাে বিশ্ব মুসলিম ইজতিমা এবং এটা কোরআন ও হাদীস দ্বারা সমর্থিত। তাদের দাবী হলাে টঙ্গীর জামায়েত বিশ্ব ইজতিমা, যা কোরআন ও হাদীসের কোথাও নেই।
১৯। ইসলামী তাবলীগ বলে আরাফাতের সমাবেশ হলাে অতুলনীয়। একক এবং ফরজ। তাদের দাবী টঙ্গী ইজতিমা দ্বিতীয় বৃহত্তম বিশ্ব ইজতিমা। (আরাফাতের সাথে তুলনা বা তার বিকল্প। মনে করা বেদ্বীনি কাজ। আজকাল মুখে মুখে তাদের মধ্যে ইহা প্রচলিত রয়েছে যে ইজতিমার সওয়াব গরীবের জন্য হজ্জের সমান।) (নাউযুবিল্লাহ)
২০। ইসলামী শিক্ষা লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ হলাে পূর্ণ কালিমা। তাদের মতে "মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ কালিমার অংশ নয়। (দেখুন-মেওয়াতী সাহেবের প্রথম কাতারের অনুসারী মৌ: হাসান আলীর ‘ চৌদা মাসায়েল)
২১। ইসলামী তাবলীগের দায়িত্ব পালন করেছেন স্বয়ং হুজুর পাক (ﷺ), সাহাবায়ে কেরাম, আউলিয়ায়ে কেরাম ও ওলামায়ে কেরামগণ। আর তাদের দাওয়াতের দায়িত্ব পালন করে-আলেম নন এমন লােকেরা।
২২। কুরআনের শিক্ষা হলাে "তােমরা সত্যবাদীদের (সিদ্দিকিন বা বুজুর্গ ব্যক্তি) সঙ্গী হও "(সুরা তওবা: ১১৯) এবং "তােমরা কিছু জানলে জ্ঞানীদের জিজ্ঞাসা কর।"(সুরা নহল: ৪৩) কিন্তু তাদের শিক্ষা হলাে হক্কানী ওলামা কেরামের নিকট তাবলীগের দাওয়াত দেয়া যাবে না, কারণ তাবলীগের আসল গুরুত্ব ভালভাবে তাদেরকে নিশ্চিত করা যাবে না যে তাদের (ওলামাদের) অপরাপর দ্বীনি কর্মকান্ডের তুলনায় এ কাজ (তাবলীগের কাজ) অধিক উপকারী। তাদের কাছে শুধু ফায়দা অর্জনের জন্য যাবে, কিন্তু তাদের চতুর্পার্শে অধিক মেহেনতের মাধ্যমে তাবলীগের কাজ করতে হবে (মালফুজাত নং-২৯)। (সম্ভবত হক্কানী ওলামা/ বুজুর্গগণের ভিত দুর্বল করে যেন তাদের দূর্গ-দখল করা যায়।)
২৩। ইসলামী তাবলীগের ক্ষেত্রে মহিলাদের তাবলীগ বা ইজতেমা নেই। কিন্তু ইলিয়াসী তাবলীগের সর্বশেষ সর্বনাশা সংযােজন হলাে মহিলা তাবলীগ ও মহিলা ইজতেমা, যা ইসলামী শিক্ষার সম্পূর্ণ পরিপন্থী। ইসলামী শিক্ষা হলাে মহিলারা তাদের ঘরের নিরব ও নিভৃত কোণে ইবাদত করবে।
মালফুজাত প্রসঙ্গঃ
১। মালফুজাত নং-২৩-নামায শেষে আল্লাহর দরবারে এক বুজুর্গের প্রার্থনা ছিল,' আল্লাহ যেন দ্বীনের সাহায্যকারীকে সাহায্য করেন এবং বেইজ্জতকারীকে বেইজ্জত করেন। অথচ ইহার ব্যখ্যায় ইলিয়াস সাহেব বলেছেন-' দ্বীনের সাহায্য যারা করে না তাদের জন্য মারাত্বক বদদোয়া রয়েছে।
মন্তব্য-আল্লাহর হুকুম আহকাম মানাই আমাদের শরীয়তের নির্দেশ। আর দ্বীনের সাহায্য', করতে পারলে ভালো, না করতে পারলে মারাত্বক বদদোয়া' রয়েছে বা অভিশাপের ভাগী হতে হবে-এমন কথা আমাদের শরীয়তে আছে কিনা সন্দেহ। দ্বীনের সাহায্য করা তাে আম ভাবে সবার পক্ষে সম্ভব নয়।
২। মালফুজাত নং-৩০-ইহাতে মৌ: ইলিয়াস সাহেব বুজুর্গানে। দ্বীনদের সম্বদ্ধে কটাক্ষ করে বলেন যে,"এসব বুজুর্গানের উপর এই কাজের (তবলীগে ইলিয়াসীর) পুরা হাকিকত এখনাে প্রকাশ পায় নাই"এবং"তারা (বুজুর্গানে দ্বীন গণ) দ্বীনের খাস খাদেম তাই শয়তান আমাদের চেয়ে তাদের বড় শত্রু"।
মন্তব্যঃ এমন উক্তি আওলিয়া কেরামদের জন্য খুবই অপমানজনক।
৩। মালফুজাত নং-৪০-আমাদের ধর্মীয় বিধানে মুসলমানদের জন্য জানমালের কোরবাণী অপরিহার্য। কারণ আল্লাহ নিজেই ফরমান যে, তিনি জান্নাত বিক্রি করে দিয়েছেন, মুমিনদের জান-মালের বিনিময়ে (সূরা-তওবা: ১১১)। এই কোরবাণীর প্রেক্ষিতে ইলিয়াস সাহেবের ব্যাখ্যা' জানের কোরবাণী হলাে আল্লাহর জন্য নিজের ঘর বাড়ী ছাড়া, আর মালের কোরবাণী হলাে তাবলিগী সফরের সময় নিজের যাবতীয় খরচ নিজেই বহন করা।
মন্তব্যঃ জান-মাল কোরবাণীর ক্ষেত্রে এ ব্যাখ্যা আমাদের শরীয়তে গ্রহনযােগ্য নয় ; বরং তার মনগড়া।
মালফুজাত নং-৪২-"মুসলমান দুই প্রকার। তৃতীয় কোন প্রকার নেই। প্রথমত: যারা আল্লাহর রাস্তায় (তাবলীগে) বের হয়ে যাবে। দ্বিতীয়ত: যারা তাদের সাহায্য করবে।"মন্তব্য-এর অর্থ দাঁড়ালাে যারা তাবলীগে যাবে এবং যারা তাদেরকে সাহায্য করবে, তারা ছাড়া অন্যরা মুসলমানই নয়। তা হলে বুঝা যায় মেওয়াতীর পিতাসহ পূর্ববর্তী সকল মেওয়াতীর তাবলীগের মুসলমান আবিস্কারের পরবর্তীতে যারা তাবলীগ করেনি তারা সবাই কাফেরে পরিনত হয়ে গেছে। (নাউযুবিল্লাহ)। এটা পরিত্র কোরআনের পরিপন্থী। কারণ, পবিত্র কোরআনে আল্লাহ এরশাদ করেছেন যে, সবাইকে একসঙ্গে জ্ঞানার্জন ইত্যাদির জন্য বের হয়ে যাওয়া সমীচিন হবে না। (সুরা তওবা: ১২২)
মালফুজাত নং-৫০-"তােমাদিগকে আম্বিয়া কেরামদের মত মানুষের উপকারের জন্য বাহির করা হয়েছে।
মন্তব্য-উম্মতকে নবীদের সাথে তুলনা করা সম্পূর্ণ কুরআন হাদীস ও ইসলাম বিরােধী। এই আক্বিদার বিশ্বাসকারীদের ঈমান থাকবে না। কারণ নবীজি (ﷺ) নিজেই বলেছেন-"আমি তােমাদের কারাে মত নই।' (বুখারী, ১ ম খন্ড, পৃ: ২৬৪, মুসলিম, ১ ম খন্ড, পৃ: ৩৫৩)
মালফুজাত নং-৫১:"যাকাতের মর্যাদা হাদিয়ার নিচে, এ কারণেই হুজুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি সাল্লাম এর জন্য সদকা হারাম ছিল, হাদিয়া হারাম ছিল না।"মন্তব্য-যাকাত হলাে ইসলামের ৫ টি রােকনের একটি এবং ইহা ফরজ। আদায় না করলে গুনাহগার হবে। পক্ষান্তরে। হাদিয়া হলাে মােস্তাহাব, না দিলে কোন গুনাহ হবে না। কিন্তু ইলিয়াস সাহেবের মতে হাদিয়ার মাধ্যমে মুসলমানদের অন্তরকে সন্তুষ্ট করা যাকাতের মাধ্যমে মালের ময়লা পরিষ্কার। করার চাইতে উত্তম। সম্ভবত এই কারণেই তিনি যাকাতকে তার ছয় উসূল থেকে বাদ দিয়েছেন। তাই যাকাতের বিষয়ে। ইলিয়াসী আকিদা ইসলাম বিরােধী। যারা যাকাতের উপর হাদিয়ার স্থান দেয়, তারা কেমন মুসলমান হবে ?
৭। মালফুজাত নং-৫৬:"তাবলীগের তরিকা হবে আমার আর তালীম হবে মৌ: আশরাফ আলী থানভীর।
মন্তব্যঃ ইসলামী তাবলীগের তরিকা ও তালীম হুজুর (ﷺ) স্বয়ং আল্লাহ্ হতে প্রাপ্ত হয়েছেন। আর ইলিয়াসী তাবলীগের তরিকা হলাে তার নিজের এবং তালীম হলাে মৌ: আশরাফ আলী থানভীর এমন উক্তির মাধ্যমে ইলিয়াস সাহেব তার দলকে ইসলামের বহির্ভূত একটি দল/ আকিদা বলে স্বীকার করে নিলেন মনে হয়। তাছাড়া, মৌঃ আশরাফ আলীর তালীম বা শিক্ষায় কুফরী পর্যন্ত পাওয়া যায়, আর ইলিয়াসী তরীকায় রয়েছে। মসজিদ অবমাননা আর ইসলাম বিরােধী বিভিন্ন পদ্ধতি।
৮। মালফুজাত নং-৯৩ ;"এই তাবলীগী সফর জিহাদের বিশেষত্ব ও বরকত নিজের মধ্যে রাখে। সেই জন্য ঐ পুরস্কারও আশা। করা যায়। যদিও ইহা যুদ্ধ নয়, এই কাজ জিহাদেরই একটি অংশ নিশ্চয়ই বটে। ইহা (তাবলীগী সফর) কোন কোন হিসাবে কাটাকাটি-রক্তারক্তি হতে যদিও নিম্নস্তরের, কিন্তু আবার কোন কোন হিসাবে উহা (জিহাদ) হতে উচ্চস্তরের।"(মৌ: সাখাওয়াতুল্লাহ কর্তৃক অনুবাদকৃত মালফুজাত নং-৯৩)
মন্তব্যঃ ইলিয়াস সাহেব আল্লাহর রাস্তায় জিহাদ করার চাইতে তার আবিস্কৃত তাবলিগী কার্যক্রম উচ্চস্তরের বলে প্রমাণের চেষ্টা করেছেন, যা ঈমান বিনষ্টকারী ও কুরআন বিরােধী। অথচ আল্লাহ ফরমান-"(যারা) নিজেদের জান ও মাল দিয়ে জিহাদ করেছে, তাদের বড় মর্যাদা রয়েছে আল্লাহর নিকট আর তারাই সফলকাম"(সূরা-তওবা: ২০)। একই সূরার ১০৭ নং আয়াতের তাফসিরে জানা যায় যে মুনাফিকরা মুসলমানদের সাথে জিহাদে অংশ গ্রহণ না করে নিজেরা মসজিদে কুবার নিকট মসজিদে দ্বিরার নির্মাণ করে হুজুর (ﷺ)-কে তা উদ্বোধন ও সালাত আদায় করার দাওয়াত দেয়। এই মসজিদ তৈরীর উদ্দেশ্য ছিল মুমিনদের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি করা-এ কথা আল্লাহ্ জানিয়ে দিলে হুজুর (ﷺ) সাহাবাদেরকে ঐ মসজিদ ভেঙ্গে ফেলার নির্দেশ দেন। তাবলীগীদের মারকাজ মসজিদ তাে দ্বিরার মসজিদেরই নব্যরূপ মনে হয়।
৯। মালফুজাত নং-১১১ ; (৭ ম কিস্তি)-"আম্বিয়া আলাইহিমুচ্ছালাম গণ যদিও মাসুম (নিষ্পাপ) তথাপিও তারা যখন তালীম ও হেদায়াতের তাবলীগের জন্য সাধারণ লােকদের সাথে মেলামেশা করতেন তখন তাদের অন্তর সমূহে সেই সাধারণ লােকদের অন্তরের ময়লা ও আবর্জনা প্রতিফলিত হত।"
মন্তব্য-নবীগণ যখন নিস্পাপ, তখন তাদের অন্তরে আবার অন্যের অন্তরের ময়লা ও আবর্জনা কেমন করে প্রতিফলিত হবে ? তারা তাে নিজেরাই অন্যের অন্তরের ময়লা দূর করার জন্য প্রেরিত হয়েছেন। এটা নবীগণের শানে জঘন্য বেয়াদবী।
১০। মালফুজাত নং-১১৩:"যাকাত ও সদকা তাে হলাে পাতিলের ময়লা ও দূষিত অংশের মত, ইহা বের করে ফেলা জরুরী। হাদিয়া হলাে তৈরী খাবারে খুশবু সুগন্ধি ঢেলে দেয়া।"
মন্তব্যঃ যাকাত ইসলামের ০৫ রােকনের একটি এবং ইহা আদায় করা ফরজ, না করলে গুনাহ। পক্ষান্তরে হাদিয়া হলাে মােস্তাহাব, না করলে গুনাহ হবে না। প্রকৃতপক্ষে যাকাত এজন্য যে, যাকাত মুসলমানের জান-মালের। ময়লা/ আবর্জনা ভস্মিভূত করে তা পরিস্কার পরিচ্ছন্ন ও হালাল করে থাকে। অথচ ইলিয়াস সাহেব যাকাতের উপর হাদিয়ার প্রাধান্য দিয়েছেন এবং তার ছয় উসূলের মধ্যে যাকাত বাদ দিয়েছেন।
১১। মালফুজাত নং-১৪০:"তাবলীগের কাজ তিন দিন দাও, পাঁচ দিন দাও অথবা সাত দিন দাও-এসব কথা ছেড়ে দাও। শুধু এ কথাই বলতে থাক যে, ইহাই একমাত্র রাস্তা, যে যত বেশী করবে, ততই বেশী পাবে। এর কোন সীমা নাই শেষ নাই।”
মন্তব্যঃ ইলিয়াস সাহেবের আবিস্কৃত রাস্তাই কি ইসলামের একমাত্র রাস্তা। তাহলে কি ইলিয়াস সাহেবের পূর্বেকার মহান বুজুর্গানে দ্বীন সহ সকল মুমিনরাই যারা ইলিয়াসী তাবলীগ করেননি বা করছেন না, তারা সবাই বিপথগামী ? (নাউযুবিল্লাহ)
১২। মালফুজাত নং-১৭৯, মৌ: ইলিয়াস সাহেব বলেন,' আমাদের এই তাবলিগী আন্দোলন দুশমনকে খােশ করে ও দোস্তকে নাখােশ করে। যার মন চায় আসিতে পারে।' অথচ ইসলামী তাবলিগী দাওয়াত ও আন্দোলন দোস্তকে (মুমিনদেরে) খােশ দুশমনকে (কাফেরদেরে) নাখােশ করে। তবে কি ইলিয়াসী তাবলীগ দুশমন তথা কাফেরদেরে খােশ করার জন্য ? ১৩। মালফুজাত নং-২০৯: দ্বীনের দাওয়াতের গুরুত্ব বর্তমান জামানায় এতই জরুরী যে, যদি কোন ব্যক্তি নফল নামাজেরত অবস্থায় দেখে যে, একজন নতুন মানুষ এসেছে এবং ফিরে যাচ্ছে, পুনরায় তাকে পাওয়ার সম্ভাবনা নেই,"তবে আমার মতে মধ্যখানে নামাজ ভেঙ্গে ঐ ব্যক্তির সাথে। দ্বীনি কথাবার্তা সেরে নেয়া উচিত।"
মন্তব্য-ইসলামী শরীয়তে কথা বলার জন্য নামাজ ভাঙ্গার অনুমতি নেই। ইলিয়াস সাহেব নিজেই বলেছেন যে,"আমার মতে"-অর্থাৎ এটা তার মনগড়া আকিদা/ আবিষ্কার। কাজেই শরীয়তের পরিপন্থী হেন আদেশ ও মতবাদ কতটুকু বিশ্বাস ও প্রতিপালন করা উচিত তা নিজেই একবার ভেবে দেখুন।
আশরাফ আলী থানভীর আকিদাঃ
১। থানভী সাহেবের এক মুরিদ তাকে লিখল যে,"আমি রাত্রি বেলায় স্বপ্ন দেখলাম যে, আমি শুদ্ধভাবে কালিমায়ে শাহাদাৎ উচ্চারণ করতে খুব চেষ্টা করছি। কিন্তু প্রত্যেকবারই এভাবে উচ্চারিত হলাে:
"লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু আশরাফ আলী রাসূলুল্লাহ"
"এহেন কুফুরী কালিমার জন্য তিনি মুরিদকে ভৎর্সনা ও তওবার কথা না বলে উত্তরে শুধু এতটুকু বলে শেষ করলেন যে,"আমার প্রতি তােমার মহব্বত খুব বেশী, এসব তারই ফল।"(তথ্যসূত্র: তাবলীগী জামাত, পৃ ; ৫৫ ও ৫৬)
উক্ত মুরিদ ঐ চিঠিতে আরাে উল্লেখ করেন যে, দরূদ পড়ার সময় নবীজি (ﷺ)-এর নামের পরিবর্তে থানভী সাহেবের নাম চলে আসে। তদুত্তরে থানভী সাহেব লিখেন,"এ ঘটনায় এ কথার সান্ত্বনা নিহিত যে, তুমি যার প্রতি মনােযােগী তিনি আল্লাহ তায়ালার সাহায্যক্রমে সুন্নতের অনুসারী।"(বেসালায় আল এমদাদ ; তথ্যসূত্র-তাবলীগ জামাত, পৃ: ৫৭, তাবলীগ দর্পণ পৃ: ৫৬)
°°°মন্তব্যঃ এমন কালিমা ও দরূদ কি কুফরী নয় ?
২। থানভী সাহেব বৃদ্ধ বয়সে প্রথম স্ত্রীর বর্তমানে এক যুবতী মুরিদনীকে বিবাহ করেন। থানভী সাহেবের ভাই পত্র মারফত
ইহার কারণ জানতে চাইলে তিনি জবাবে লিখেন যে,' কাশফ দ্বারা দেখলেন যে তার গৃহে আয়েশা (رضي الله عنه) আগমন করেছেন। ইহার আলােকে এবং নবী (ﷺ)-এর সাথে মা আয়েশা (رضي الله عنه) বিবাহের ঘটনার যুক্তি দেখিয়ে তিনি কুমারীর সাথে তার বিবাহের যথার্থতা প্রমাণ করেন।' (রেসালায় আল এমদাদ ; তথ্যসূত্র: তাবলীগ দর্পণ, পৃ: ৫৭)
°°°মন্তব্যঃ এমন ব্যাখ্যা মা আয়েশা (رضي الله عنه) এর প্রতি চরম। বেয়াদবী নয় কি ?
৩-থানভী সাহেবের মতে-"রাসূলের যে এলমে গায়েব আছে। এমন এলেমে গায়েব তাে যায়েদ, ওমর বরং সমস্ত শিশু, পাগল এবং সমস্ত জীব জানােয়ার ও চতুষ্পদ জন্তু (গরু, ছাগল, শিয়াল, কুকুর ইত্যাদি) সবার মধ্যেই আছে।"(নাউযুবিল্লাহ) (সূত্র: থানবী সাহেব রচিত হিফযুল ঈমান, পৃঃ ১৫)
°°°মন্তব্য-হুজুর (ﷺ)-এর শানে এর চাইতে বেয়াদবী মূলক মন্তব্য আর কি হতে পারে ?
৪। থানভী সাহেব তার কাছদুস সাবিল"গ্রন্থে লিখেন' আকিকা, খতনা, বিসমিল্লাহখানী, চল্লিশা, শবে বরাতের হালুয়া, মহররমের অনুষ্ঠান ইত্যাদি ছেড়ে দাও, নিজেও করাে অন্যের ঘরে হলেও যােগদান করাে না।' (তথ্য সূত্র: তাবলীগ জামাত, পৃ: ৬২)। অথচ এ আমল গুলাে জায়েয।
৫। একই কিতাবে (কাছদুস সাবিল) তিজা (কুলখানী), দশওয়া, বিশওয়া, চল্লিশা, ওরশ, বুজুর্গের উদ্দেশ্যে মানত, ফাতেহা শরীফ, গেয়ারবী শরীফ, মিলাদ শরীফ ইত্যাদি বরকতময় কাজকে তিনি নাজায়েয বলেছেন এবং এতে অংশ নিতে। বারণ করেছেন। (তথ্য সূত্র: তাবলীগী জামাত, পৃ: ৬৩)। অথচ এগুলাে বরকতময় আমল।
৬। ঈদে মিলাদুন্নবী (ﷺ) উদযাপন ও আনন্দ প্রকাশ করাকে তিনি বৈধ/ জায়েয মনে করতেন না।
(তথ্য সূত্র: তাবলীগী জামাত, পৃ: ৬১)।
অথচ আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাআতের বুযুর্গগণ ঈদে মিলাদুন্নবী উদযাপনকে শবে কদরের চাইতেও উত্তম মনে করেন।
রশিদ আহমদ গাঙ্গুহী সাহেবের আকিদাঃ
১। তিনি ছিলেন তাবলীগ জামাতের প্রতিষ্ঠাতা মৌ: ইলিয়াস সাহেবের পীর। ইলিয়াস সাহেব তাকে জামানার কুতুব ও মােজাদ্দেদ ঘােষণা দেন। (মালফুজাত নং ১৪৭)
২। আল্লাহ তাঁর হাবীব (ﷺ)-কে কুরআনে বিশ্ববাসীর জন্য রহমত স্বরূপ (রাহমাতুল্লিল। আলামীন) প্রেরণ করেছেন বলে ঘােষণা দেন। অথচ গাঙ্গুহী সাহেব বলেন"রাহমাতুল্লিল আলামীন"শুধু রাসূল (ﷺ) একা নন। আরাে অনেক নবী, অলী এবং আলেমগণ"রাহমাতুল্লিল আলামীন"হতে পারেন। (ফতােয়ায়ে রশীদ, পৃ: ১০৪)
৩। গাঙ্গুহী সাহেবের মতে কোন সাহাবী (رضي الله عنه) কে কাফের বললে ও সে এরূপ কবিরা গুনাহর জন্য সুন্নী জামাত তথা ইসলামের সঠিক দলের বহির্ভূত হবে না। (ফতােয়ায়ে রশীদিয়া, পৃ: ১৩৪)
মন্তব্য-কেউ যদি কাউকে বিনা কুফুরীতে কাফের বলে, তা হলে সে নিজেই কাফের হয়ে যায়, এটাই আমাদের শরীয়তের বিধান।
৪। তার মতে ওরশ ও মিলাদ মাহফিলে শরীয়তের পরিপন্থী কোন কাজ না হলেও তা নিষিদ্ধ তথা হারাম। (ফতােয়ায়ে। রশীদিয়া, পূ: ১১৫)
৫। ওরশের দিন আওলিয়া কেরামদের মাজার যিয়ারত করতে যাওয়া হারাম। (ফতােয়ায়ে রশীদিয়া, পৃ: ৫৫৫)
৬। তার মতে প্রচলিত ফাতেহা (সূরা ফাতেহা শরীফ, চারকুল, কয়েকবার দরূদ শরীফ পড়ে মৃত ব্যক্তির রূহের প্রতি সওয়াব পৌছান) পাঠ করা বিদআত (নিকৃষ্ট কাজ) এবং হিন্দুদের পূজার মত। (ফতােয়ায়ে রশীদিয়া পৃ: ১১৫)
৭। মিলাদ মাহফিলের অনুষ্ঠান করা সর্বদাই না-জায়েয (কিয়াম করা হউক বা না করা হউক) (ফতােয়ায়ে রশীদিয়া, পৃঃ ১৩০)
৮। কোন ওরশ বা মিলাদে শরীক হওয়া জায়েয নেই। মূলত ; কোন ওরশ শরীফ ও মিলাদ পাঠ করাই বৈধ নয়। (ফতােয়ায়ে রশীদিয়া, পৃঃ ১৩৪)
৯-আশুরা তথা মহররম মাসে ইমাম হুসাইন (رضي الله عنه) এর শাহাদাতের আলোচনা করা যদিও বিশুদ্ধ বর্ণনা দ্বারা হয় এবং এ উপলক্ষে বিনামূল্যে শরবত, দুধ ইত্যাদি পান করানাে-এ সব না-জায়েজ এবং রাফেজীদের সাথে সামঞ্জস্য থাকায় হারাম। (ফতােয়ায়ে রশীদিয়া, পূ ; ১৩৯)
গাঙ্গুহী গংদের মতে মিলাদ, ওরশ, আশুরা ইত্যাদি অনুষ্ঠানের তবাররক খাওয়া না-জায়েয হারাম এবং উহা ভক্ষণ করলে অন্তরের নূর পর্যন্ত বেরিয়ে যায় (মাসিক রহমানী পয়গাম, ৫ ম বর্ষ, ১০ ম সংখ্যা, অক্টোবর ১৯৯৯, পৃ: ৩৭)। অথচ গাঙ্গুহী সাহেব হিন্দুদের পুজার প্রসাদ খাওয়াকে জায়েয বলে ফতােয়া দিয়েছেন।
১০। কারবালার শহীদগণের স্মরণে প্রকাশিত"মরসিয়াহ"(শােক গাঁথা) কারাে কাছে থাকলে গাঙ্গুহী সাহেব তা জ্বালিয়ে ফেলতে কিংবা মাটিতে পুঁতে রাখার নির্দেশ দেন (ফতােয়ায়ে রশীদিয়া, পৃ: ৫৭৭)। অথচ তার অনুসারীগণ গাঙ্গুহী সাহেবের স্মরণে"মরসিয়ায়ে রশীদ আহমদ"নামক একটি শােক গাঁথা রচনা করে সর্বত্র বিতরণ করেছেন। তারা যে নবী-অলী বিদ্বেষী ইহা তার একটি জলন্ত প্রমাণ।
***মন্তব্য-উক্ত মরসিয়ায় মৌ: মাহমুদ হাসান সাহেব মৌ: গাঙ্গুহী সাহেবকে"কেবলায়ে হাজত", অর্থ-অন্যের প্রয়ােজন/ উদ্দেশ্য পূরণকারী বলেছেন। অথচ দেওবন্দী ও তাবলীগীদের ফতােয়া হলাে নবী অলীর নিকট হাজত পেশ বা পূরণের আবেদন করা শিরক। উপরন্ত উক্ত মারসিয়ায় শেষাংশে মুরিদগণকে বান্দা বলা হয়েছে। অথচ তাদের নিকট"আব্দুন্নবী"বলা শিরক। এহেন দ্বিমুখী নীতি কি মােনাফেকি নয় ?
১১। গাঙ্গুহী সাহেবের মতে কাকের গােস্ত খেলে নাকি সওয়াব। পাওয়া যাবে। (ফতােয়ায়ে রশীদিয়া, পৃঃ ৫৯৭)
১২। দুই ঈদের দিন কোলাকুলি করা বেদআত। (ফতােয়ায়ে রশীদিয়া, পৃ: ৬২)। অথচ ইহা সাহাবীগণের সুন্নাত।
১৩। যখন নবী আলাইহিমুস সালামদের এলমে গায়েব নেই তখন, ইয়া রাসূলাল্লাহ (ﷺ) বলা না-জায়েয। (ফতােয়ায়ে রশীদিয়া, পৃ: ৬২)। অথচ ইহা সাহাবীগণের সুন্নাত।
১৪। মিথ্যা বলা আল্লাহর ক্ষমতার অধীন, কেননা তিনি। সর্বশক্তিমান। (ফতােয়ায়ে রশীদিয়া, পৃ: ৯৭)
১৫। হিন্দুদের হােলী দেওয়ালীর প্রসাদ খাওয়া জায়েয। (ফতােয়ায়ে রশীদিয়া, ২ য় খন্ড, পৃ: ১৩২)
১৬। ভাঙ্গী চামারের ঘরের রুটি ইত্যাদির মধ্যে কোন দোষ নেই যদি পাক হয়। (ফতােয়ায়ে রশীদিয়া, ২ য় খন্ড, পৃঃ ১৩৪)
১৭। হিন্দুদের সুদী টাকার উপার্জিত অর্থে কূপ বা নল কূপের পানি পান করা জায়েয। (ফতােয়ায়ে রশীদিয়া, ৩ য় খন্ড, পৃঃ১১৩-১১৪)
মৌঃ রশীদ আহমদ গাঙ্গুহী সাহেবের উপরােক্ত অধিকাংশ মতবাদ/ আকিদা আমাদের আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাআতের আকিদার পরিপন্থি।
খলিল আহমেদ আম্বেঠবীর আকিদাঃ
১। খলীল সাহেব তার"বারাহিন-ই-কাতিয়া"নামক গ্রন্থের ৩০ নং পৃষ্ঠায় দেওবন্দ মাদ্রাসার ফজিলত বর্ণনা করতে গিয়ে লিখেন যে, তাদের কোন এক বুজুর্গ স্বপ্নে হুজুর সাল্লাল্লাহু। আলাইহি ওয়া সাল্লাম-কে বলতে শুনেছেন যে,"যখন। দেওবন্দ মাদ্রাসার আলেমদের সাথে আমার মােয়ামেলা হয় তখন (তাদের সাথে কথা বলতে বলতে) আমার উর্দু ভাষা শিখা হয়ে যায়।"(নাউযুবিল্লাহ)
মন্তব্য-অথচ হুজুর (ﷺ) এরশাদ করেছেন,"আমি শিক্ষক হিসাবে প্রেরিত হয়েছি।"(মেশকাত শরীফ, পৃ: ৩৬) হুজুর (ﷺ) হরিণ, উট, ছাগল, পাখি সহ অন্যান্য জীবজন্তুর, এমনকি গাছপালা, পাথর ইত্যাদির ভাষা জানতেন এবং বুঝতেন।
২। আম্বেঠবী সাহেব উক্ত কিতাবের ৫৫ নং পৃষ্ঠায় রাসূল (ﷺ)-এর জ্ঞানকে কটাক্ষ করে বলেন"শয়তান ও মালাকুল মওত এর ব্যাপক জ্ঞানের বিষয় দলিল দ্বারা সাব্যস্ত। কিন্তু রাসূল (ﷺ) এর জ্ঞানের প্রশস্ততার কি কোন অকাট্য দলিল আছে ? যা সমস্ত দলিলকে খন্ডন করে একটি শিরক সাব্যস্ত করে ?"
৩। মিলাদুন্নবী (ﷺ) পালন তেমনি যেমনি হিন্দুরা কানাইয়্যার জন্মদিন পালন করে। (বারাহীন-ই কৃাতিয়া, পৃ: ১৪৮)
৪। আল্লাহর নবীর নিকট নিজের পরিনতি এবং দেওয়ালের পিছনের জ্ঞানও নেই। (বারাহীন-ই-কাতিয়া, পৃ: ৫১)
***মন্তব্য-জঘন্যতম রাসূল বিদ্বেষী মতবাদ।
ইসমাঈল দেহলভীর আকিদাঃ
মৌ: ইসমাঈল দেহলভী হলেন,"তাকৃভীয়াতুল ঈমান"গ্রন্থের লেখক। এ কিতাব মারাত্বক ঈমান বিধ্বংসকারী। অথচ এ কিতাব' খুবই উত্তম' বলে, তাবলীগ জামাতের প্রতিষ্ঠাতা মৌ: ইলিয়াস। সাহেবের পীর মৌ: রশীদ আহমদ গাঙ্গুহী অভিমত দিয়েছেন এবং এ কিতাব"নিজের কাছে রাখা, পড়া ও কিতাব অনুযায়ী আমল করা প্রকৃত ইসলাম"-এমন উপদেশ দিয়েছেন। (ফতােয়ায়ে রশীদিয়া, পৃ: ৭৮)।
এখন দেখি"তাকৃভীয়াতুল ঈমান"গ্রন্থে তাদের প্রকৃত ইসলামের কিছু নমুনাঃ-
১। উক্ত কিতাবের পৃ: ২৩-"বিশ্বাস রাখাে যে, প্রত্যেক ব্যক্তি চাই সে যত বড় মানুষই হােক বা যত নৈকট্যশীল ফেরেশতাই হােক না কেন-আল্লাহর শানের মােকাবেলায় তাঁরা চামার থেকেও বেশী নিকৃষ্ট।"(নাউযুবিল্লাহ)
মন্তব্যঃ ইহা নবী অলীদের শানে অত্যন্ত বেয়াদবীপূর্ণ ও মন্তব্য: অবমাননাকর উক্তি।
২। পৃষ্ঠা: ৫১ যার নাম মুহাম্মদ অথবা আলী তাদের (শরীয়তে) কোন কথা বলার অধিকার নেই। (নাউযুবিল্লাহ)
৩। পৃষ্ঠা: ৬৯-রাসূলের চাওয়ায় কিছুই হয় না। (নাউযুবিল্লাহ)
৪। পৃষ্ঠা: ৩৫"বান্দার সাথে আল্লাহ পাক দুনিয়াতে, কবরে ও পরকালে কি ব্যবহার করবেন তা কেহ জানে না, এমনকি কোন নবী অলীও জানেন না যে, তার নিজের সাথে বা অপরের সাথে কিরূপ ব্যবহার করা হবে।"(নাউযুবিল্লাহ)।
৫। পৃষ্ঠা: ৭১ সমস্ত মানুষ পরস্পর ভাই ভাই। বড় বুযুর্গ বড় ভাই, সুতরাং তাকে বড় ভাইয়ের মত সম্মান করবে। আল্লাহর যত নৈকট্যশীল বান্দা-চাই সে নবী হােক বা অলী হােক সবই আল্লাহর অক্ষম বান্দা ছিলেন এবং আমাদের ভাই। আল্লাহ তাদেরকে বড় করেছেন। ভাই। (নাউযুবিল্লাহ)
৬। পৃষ্ঠা: ১৬-আল্লাহ তায়ালা ইচ্ছা করলে মুহাম্মদ (ﷺ)-এর সমকক্ষ কোটি কোটি পয়দা করতে পারেন।
৭। পৃষ্ঠা: ৬১-নবীর মর্যাদা উম্মতের মধ্যে গ্রামের চৌদুরী ও জমিদারের মত। (নাউযুবিল্লাহ)
৮। পৃষ্ঠা: ৭৫-কোন বুযুর্গ ব্যক্তির শান বর্ণনা করার ব্যাপারে জবান সংযত করে কথা বলতে হবে। মানুষ হিসেবে তাদের প্রশংসা কর-বরং তার চেয়েও কম কর।
৯। পৃষ্ঠা: ১৯ * সফর করে যাওয়া"কবর অথবা মাজার যিয়ারতের জন্য দূর থেকে প্রকাশ্য শিক।"
***মন্তব্যঃ-তাহলে বুঝা গেল যাৱা না গলাদের মাজার যিয়ারত করে তারা মুশরিক। (নাউযুবিল্লাহ) অথচ মাজার যিয়ারত কুরআন-হাদীসের আলােকে জায়েয। মাযার অর্থই হলাে-যিয়ারতের স্থান। কুরআনে আহসাবে কাহফনের গুহা/ মাযারের পাশে যিয়ারতকারীদের জন্য মসজিদ নির্মাণের কথা রয়েছে। (সূরা-কাহফঃ ২১)
১০। তার"সিরাতুল মুস্তাকিম"কিতাবের ১১৮ নং পৃষ্ঠায় রয়েছে-নামাজে পীর বা কোন মহিমান্বিত ব্যক্তি, এমনকি হুজুর (ﷺ)-এর প্রতি খেয়াল করা নিজের গরু-গাধার প্রতি খেয়াল করা অপেক্ষা নিকৃষ্টতর। (নাউযুবিল্লাহ)
১১। তার তাকবীয়াতুল ঈমান গ্রন্থের ৬১ নং পৃষ্ঠায় হুজুর (ﷺ)-এর প্রতি সম্পৃক্ত করে লিখেছেন"আমিও একদিন মরে মাটিতে মিশে যাব।"(নাউযুবিল্লাহ) অথচ এমন হাদীসের কোনই অস্তিত্ব নেই।
১২। উক্ত ইসমাঈল দেহলভী"রেসালা-ই এক রােযাহ, ফার্সী গ্রন্থের ১৭ নং পৃষ্ঠায়-"আল্লাহ্ তা'আলা মিথ্যা বলতে পারেন"বলে দৃঢ় অভিমত ব্যক্ত করেছেন। (নাউযুবিল্লাহ)
===উপরােক্ত বর্ণনা দ্বারা বুঝা গেলো মৌ: ইসমাঈল দেহলভী সাহেব কি পরিমাণ নবী অলী বিদ্বেষী ছিলেন।
কাসেম নানুতবীর আকিদাঃ
মৌ: কাসেম নানুতবী ছিলেন দেওবন্দ মাদ্রাসার প্রতিষ্ঠাতা এবং তাবলীগ জামাতের অনুসারীদের একজন উল্লেখযােগ্য মুরুব্বী। আসুন এবার দেখি তার আক্বিদার নমুনা।
১। তার রচিত"তাহজিরুল নাছ"কিতাবের পৃষ্ঠা নং-৭-"নবীগণ স্বীয় উম্মত হতে যদি উত্তম হন, তা হলে আমাদের জ্ঞানের দিক দিয়েই উত্তম হয়ে থাকেন। আমলের দিক দিয়ে। উম্মতগণ অনেক সময় নবীদের সমান, বরং নবীদের থেকেও বড় হয়ে যায়।"(নাউযুবিল্লাহ)
২ | একই কিতাবের পৃষ্ঠা নং ৪ ও ৫-"খাতামুন্নবী"অর্থ শেষ নবী বলা-এটা মূর্খদের ধারনা। (নাউযুবিল্লাহ)
৩। একই কিতাবের পৃষ্ঠা নং ৩৪-"যদিও এ কথা ধরে নেয়া হয়। যে, রাসূল (ﷺ)-এর জামানার পরে কোন (নতুন) নবী পয়দা হন তা হলেও রাসূল (ﷺ) খাতামুন্নবী হওয়ার ব্যাপারে কোন ক্রটি হবে না।"(নাউযুবিল্লাহ)।
তাবলীগ জামাতের মুরুব্বিদের আরাে কিছু ভ্রান্ত আক্বিদা:
১। গাঙ্গুহী সাহেবের অন্যতম শিষ্য মৌ: হােসাইন আলী। দেওবন্দী স্বীয় গ্রন্থ"বুলগাতুল হায়রান", ১৫৬ নং পৃষ্ঠায় বলেছেন-' আর মানুষ খােদ মুখতার ; ভাল করুক কিংবা নাই করুক এর পূর্বে আল্লাহর এ সম্পর্কে কোন জ্ঞানও নেই যে, তারা কি করবে ; বরং তারা (কাজ) করার পরে আল্লাহ্ জানতে পারবেন। অর্থ-মানুষ কার্য সম্পাদনের পূর্বে আল্লাহ্ কিছুই জানেন না। (নাউযুবিল্লাহ)
২। বুলগাতুল হাযরান কিতাবের ৮ নং পৃষ্ঠায়-উক্ত মৌ: হােসাইন আলী নবী করীম (ﷺ)-কে পুলসিরাত হতে পতিত হওয়া থেকে বাঁচিয়েছেন। (নাউযুবিল্লাহ)।
৩। তাবলীগ জামাত ও দেওবন্দীদের অন্যতম মুরুব্বি ও গাঙ্গুহী। সাহেবের ভক্ত মৌ: মাহমুদ হাসান দেওবন্দী, তার রচিত"আল জাহদুল মুকিল"-এর ১ ম খন্ড, ৮৩ নং পৃষ্ঠায় বলেন-"মন্দ কার্যাদি সম্পাদনে মহান আল্লাহ রাব্বল আলামিন। সক্ষম।"(নাউযুবিল্লাহ)
তিনি উক্ত কিতাবের ৪১ নং পৃষ্ঠায় বলেন, অন্যান্য মন্দ কাজের ন্যায় মিথ্যা বলাও আল্লাহর পক্ষে সম্ভব'। (নাউযুবিল্লাহ)
৪। ইসলামী শরিয়তে মক্কায় এক রাকাত নামাজে এক লক্ষ আকসায় পঁচিশ হাজার রাকাতের ল্যাবের কথা রয়েছে। অথচ তাবলীগ জামাতের মুরুব্বীদের মতে টঙ্গী ইজতেমার মাঠে এক রাকাতে উনপঞ্চাশ কোটি রাকাতের সওয়াব পাওয়া যায়। (দাওয়াতে তাবলীগ, পৃষ্ঠা-৮০, কৃত মোঃ আশরাফ আলী তালেবী)। উল্লেখ্য, তাবলীগ জামাতের অনুসারীদের মধ্যে এমন"বহুত ফায়দা"ও বেশী বেশী নেকীর অনেক মিথ্যা আশ্বাস প্রচলিত রয়েছে।
মন্তব্য-
+মহান রাব্দুল আলামীন সুরা বনি ইসরাঈলের ৭১ নং আয়াতে এরশাদ করেন-"স্মরণ কর, সে দিনকে যখন আমি প্রত্যেক সম্প্রদায়কে তাদের নেতা সহ আহবান করব।
+"আর রাসুল (ﷺ) ফরমান-"যে যাকে ভালবাসে হাশর নশর তার সাথেই হবে।"(বুখারী-৫৭০২, মুসলিম-৪৭৭৯)
+তিনি (ﷺ) আরও ফরমান-"তুমি যাকে ভালবাস তার সাথেই তুমি জান্নাতে থাকবে।"(বুখারী-৪৭৭৫, মুসলিম-৬ষ্ঠ খন্ড, নং-৬৪৭২)
এখন ভেবে দেখুন আপনি কাকে ভালবাসেন ও অনুসরণ করেন এবং কার সাথে আপনি হাশরে ও জান্নাতে থাকতে চান।
প্রসঙ্গক্রমে সম্মানিত পাঠকগণের জ্ঞাতার্থে একটি তথ্য উপস্থাপন করছি। ইমামে আহলে সুন্নাত মুজাদ্দিদে মিল্লাত ইমাম আহমদ রেজা খান বেরলভী (র:) ১৩২০ হিজরীতে আরবীতে"আল-মু'তামাদুল মুস্তানাদ"নামক একখানা পুস্তক রচনা করেন, যা হিন্দুস্থানের গােলাম আহমদ কাদিয়ানী ও উপরােল্লিখিত দেওবন্দী আলেমগণের উর্দুতে রচিত বিভিন্ন কিতাব সমূহে তাদের বর্ণিত জঘন্য আপত্তিকর মতবাদ/ আকিদার উদ্ধৃতি উল্লেখ করে তা আরবীতে অনুবাদপূর্বক মক্কা মােয়াজ্জমা ও মদিনা মােনাওয়ারার ৩৩ জন মুফতির খেদমতে পেশ করে তাদের মতামত চান। হারামাঈন শরীফাঈনের ঐ ৩৩ জন মুফতি এবারতসমূহ পর্যালােচনা করে ঐগুলাের লেখকগণকে সরাসরি কাফের ঘােষণা করেন। উক্ত ফতােয়ার নাম হয়"হুসামুল হেরমাঈন"বা মক্কা-মদিনার তীক্ষ তরবারী, যা ১৩২৪ হিজরীতে প্রকাশিত হয় (এটার বাংলা অনুবাদকৃত কপি আমার কাছে মজুদ আছে) (মাসিক সূন্নীবার্তা, নং-১৮৮)।
যদিও উলামায়ে হারামাঈন কর্তৃক (দেওবন্দী মুরুব্বীদের আকিদা সম্বন্ধে) জিজ্ঞাসিত ২৬ টি প্রশ্নের উত্তরে তৎকালীণ দেওবন্দের শিষ্য উলামায়ে কেরামের অনুরােধক্রমে মাওলানা খলীল আহমাদ সাহারানপুরী"আল মুহান্নাদ আলাল মুফান্নাদ"কিতাবের মাধ্যমে তাদের সাফাই পেশ করেন। (১৩২৫ হিজরীতে), এছাড়া জানামতে অদ্যাবধি তারা কিংবা তাদের অনুসারীগণ তাদের পােষণকৃত ভ্রান্ত কুফুরী আক্বিদা গুলাে প্রত্যাখান কিম্বা ভূল স্বীকার করেননি। উল্লেখ্য, এ ফতােয়া প্রদানের আগে তাদের ভ্রান্ত আক্বিদার বিষয়ে প্রত্যেককে আলা হযরত চিঠি লিখেন। কিন্তু দীর্ঘদিন অপেক্ষা করেও তাদের নিকট হতে কোনরূপ জবাব বা অনুশােচনার মনােভাব প্রকাশ না হওয়ায় এ ফতােয়া জারী করা হয়।
যদিও উক্ত ফতােয়ার বিষয়ে তাবলীগ জামাতের অনুসারীগণ ও দেওবন্দী আলেমগণ ঐ হাদীসের আশ্রয় নেন, যাতে বলা আছে কেউ কাউকে বিনা কুফুরীতে কাফের বললে, তার পরিণতি নিজের দিকেই ফিরে আসবে। কিন্তু এখানে যে কারনে তাদেরে কাফের ফতােয়া দেয়া হয়েছে, তার যথার্থতা পাঠককুল নিজেরাই ভেবে দেখতে পারেন।
বাতিলপন্থীদের আরও কিছু আকিদাঃ
বর্তমান জামানার বাতিলপন্থদের মধ্যে তাবলীগ জামাতও একটি। উপরােক্ত আলােচনার মাধ্যমে তাদের আকিদা/ মতবাদ সম্পর্কে প্রাপ্ত তথ্যাদির সারসংক্ষেপ নিম্নরূপঃ-
১। রাসূল (ﷺ) যে পরিমাণ ইলমে গায়েব জানেন, সে পরিমাণ ইলমে গায়েব সমস্ত শিশু, পাগল, ৯. জীব-জানােয়ার ও চতুষ্পদ জন্তুও (ভেড়া, বকরি, গরু, ছাগল। প্রভৃতি) জানে। (নাউযুবিল্লাহ)
২। রাসুলুল্লাহ (ﷺ) শুধু একাই রাহমাতুল্লিল আলামিন নন। আরাে অনেকে রাহমাতুল্লিল আলামিন হতে পারেন।
৩। কোন সাহাবী (رضي الله عنه) কে কেউ কাফের বললে সে ইসলামের সঠিক দলেই অন্তর্ভুক্ত থাকবে।
৪। ওরশ ও মিলাদ মাহফিলে শরীয়ত পরিপন্থী কোন কাজ না হলেও উহা নিষিদ্ধ ও হারাম।
৫। কিয়াম করা ব্যতিত শুধু মিলাদ শরীফ পড়াও না-জায়েজ।
৬। প্রচলিত ফাতেহা শরীফ পাঠ করা বিদআত ও হিন্দুদের পূজার মত।
৭। দূর থেকে কোন মাজার শরীফ যিয়ারতে যাওয়া এমনকি ওরশ শরীফের দিন কোন অলীর মাজার যিয়ারত করতে যাওয়া হারাম। মহররম মাসে হযরত হুসাইন (رضي الله عنه)।
৮। এর। শাহাদাতের আলােচনা-মাহফিল করা এবং এ উপলক্ষে শরবত, দুধ ও নেওয়াজ ইত্যাদি বিতরণ করা সব হারাম ও না-জায়েয।
৯। মিলাদ শরীফের নেওয়াজ, তবাররুক ইত্যাদি ভক্ষণ করা হারাম। উহা ভক্ষণ করলে অন্তরের নূর পর্যন্ত বের হয়ে যায়।
১০। হিন্দুদের হােলী, দেওয়ালী ইত্যাদি পূজা উৎসবের প্রসাদ খাওয়া বৈধ।
১১। কারবালার শহীদগণের স্মরণে প্রকাশিত মার্সিয়া (শােক গাঁথা) আগুনে জ্বালিয়ে দেয়া বা মাটিতে পুঁতে রাখা আবশ্যক।
১২। দুই ঈদের দিন কোলাকুলি করা বিদআত বা নিকৃষ্ট কাজ।
১৩। রাসূল (ﷺ)-এর ইলমে গায়েব নেই। তাই"ইয়া রাসুলাল্লাহ"বলাও না-জায়েয।
১৪। আল্লাহ তাআলা মিথ্যা কথা বলাসহ অন্যান্য মন্দ বা খারাপ কাজ সম্পাদন করতেও সক্ষম। (নাউযুবিল্লাহ)
১৫। রাসূল (ﷺ) দেওবন্দী আলেমদের সংস্পর্শে এসে উর্দু শিখেছেন।
১৬। শয়তান ও মালাকুল মউত বা আযরাইল (আঃ) এর ব্যাপক জ্ঞানের বিষয় দলীল প্রমাণ দ্বারা সাব্যস্ত, কিন্তু রাসূল। (ﷺ)-এর এমন ব্যাপক জ্ঞানের ব্যাপারে কোন দলীল প্রমাণ নেই।
১৭। যত বড় নবী, অলী বা ফেরেশতা হােক না কেন আল্লাহর নিকট তারা চামার থেকেও নিকৃষ্ট।
১৮। রাসূল (ﷺ)-এর শরীয়তের ব্যাপারে কথা বলার কোন অধিকার নেই। রাসূল (ﷺ)-এর চাওয়ায় কিছু হয় না।
১৯। বান্দার সাথে আল্লাহ পাক দুনিয়াতে, কবরে ও পরকালে কি ব্যবহার করবেন তা কেউ জানে না। এমনকি কোন নবী বা অলীও তাদের নিজেদের সাথে বা অপরের সাথে কি ব্যবহার করা হবে তা জানেন না।
২০। নামাজের মধ্যে রাসূল (ﷺ)-এর খেয়াল করা নিজের গরু-গাধার প্রতি খেয়াল করা হতেও অনেক নিকৃষ্টতর।
২১। আমলের দিক দিয়ে উম্মতগণ অনেকসময় নবীদের সমান, এমনকি নবীদের থেকেও বড় হয়ে যায়।
২২। খাতামুন্নবী অর্থ' শেষ নবী' বলা মূর্খদের ধারণা।
২৩। রাসূল (ﷺ)-এর পরে যদি কোন নতুন নবী পয়দা হয় তাহলেও রাসূল (ﷺ) খাতামুন্নবী হওয়ার ব্যাপারে ক্রটি হবে না।
২৪। আল্লাহ তাআলা কোন কাজ সংঘটিত হওয়ার পূর্বে ঐ বিষয়ে অবগত নন।
২৫। নবী করীম (ﷺ) বলেছেন, আমিও একদিন মৃত্যুবরণ করে মাটির সাথে মিশে যাব। (নাউযুবিল্লাহ)
২৬। মুহাম্মদ বিন আব্দুল ওয়াহহাব নজদী খুব ভাল লােক ছিলেন, হাদীস অনুযায়ী আমল করতেন, বিভিন্ন বিদআতী ও শিরক কাজ বন্ধ করতেন। লােকেরা তাকে ওহাবী বলে, তার আক্বিদা খুব ভাল ছিল। (ফতােয়ায়ে রশীদিয়া)
২৭। যারা তাবলীগ জামাত করে এবং তাবলীগ জামাতীদের সাহায্য করে একমাত্র তারাই মুসলমান। এছাড়া কোন মুসলমান নেই।
২৮। ১২ ই রবিউল আউয়াল ঈদে মিলাদুন্নবী পালন করা বৈধ নয়। তার বৈধতার পক্ষে কুরআন-হাদীসের কোথাও দলিল নেই।
২৯। বর্তমান তাবলীগী অনুসারীরা কোন পীরের হাতে বয়াত হয়। পীরের হাতে বয়াত হওয়াকে বেদআতী কাজ মনে করে।
৩০। রাসূল (ﷺ)-এর ইলমে গায়েব ছিল, বিশ্বাস করা স্পষ্ট শিরক।
৩১। রাসূল (ﷺ)-কে হাজির নাজির বিশ্বাস করা শিরক।
৩২। রাসূল (ﷺ) মাটির তৈরি মানুষ ছিলেন, নূরের তৈরি নয়।
৩৩। শরীয়তের দৃষ্টিতে যা বিদআত বলে প্রামণিত তার কোন প্রকার নেই। সকল বিদআতই না জায়েয ও গােমরাহী। কেউ কেউ নিজের স্বার্থ সিদ্ধির জন্য অনেক না-জায়েয কাজকে জায়েযের ভূষণ পরিধানের জন্য বিদআতকে হাসান ও সায়্যেআ বলে বিভক্ত করার অপচেষ্টা করে থাকে। (বিভ্রান্তির অবসান, পৃ: ১১০)
৩৪। ইসলামী শরীয়তের দৃষ্টিতে বিদআত কবিরা গুনাহ। বিদআতী ব্যক্তি কবিরা গুনাহকারীদের অন্তর্ভূক্ত। (প্রাগুক্তঃ ১০৯)
মন্তব্যঃ
অথচ ইসলামী সঠিক আকিদা হল সল। বিদআতই হারাম বা না-জায়েয নয়। বিদআত প্রথমত দুই প্রকার। বিদআতে হাসানা বা উত্তম বিদআত ও বিদআতে সাইয়্যেআ বা নিকৃষ্ট বিদআত। বিদআতে হাসানা আবার তিন প্রকার। ওয়াজিব বিদআত, মুস্তাহাব বিদআত ও মুবাহ বিদআত। বিদাআতে সায়্যেআ আবার দুই প্রকার। হারাম। বিদআত ও মাকরূহ বিদআত। অতএব বিদআত সর্বমােট পাঁচ প্রকার। এই পাঁচ প্রকারের মধ্যে একমাত্র হারাম বিদআতই হল নাজায়েয বা কবিরা গুনাহ। (মিরকাত ১ ম খন্ড, পৃ: ২১৬, আঈনী শরহে বুখারী, আশীয়াতুল লােমাত শরহে মেশকাত, ফতুয়ায়ে শামী ২ য় খন্ড, পৃ: ২৯৯)
৩৫। নিম্নে বর্ণিত আমলগুলাে তাদের দৃষ্টিতে বিদআত বা হারাম তথা কবিরা গুনাহঃ-
(ক) ওরশ করা।
(খ) জন্ম বার্ষিকী, মৃত্যু বার্ষিকী করা।
(গ) মৃতের কুলখানী করা।
(ঘ) মৃতের চেহলাম বা চল্লিশা করা।
(ঙ) কবরের উপর চাদর বা ফুল দেয়া
(চ) কবরের উপর গম্বুজ বানানাে।
(ছ) জানাযার নামাজে হাত তুলে দোয়া করা।
(জ) জানাযার নামাজের পর জোর আওয়াজে কালিমা পড়তে পড়তে জানাযা বহন করে নিয়ে যাওয়া।
(ঝ) ঈদের নামাযের পর ঈদগাহে মুসাফাহ মুয়ানাকা বা কোলাকুলি করা।
(ঞ) আযানের পর হাত উঠিয়ে দোয়া করা।
(ট) আযান ইকামতের সময় রাসূল (ﷺ)-এর নাম শুনে বৃদ্ধাঙ্গুলি চুমু দিয়ে চোখে লাগানাে।
(ঠ) প্রচলিত মিলাদ অনুষ্ঠান।
(ড) মিলাদ অনুষ্ঠানে কিয়াম করা।
(নারায়ণগঞ্জের দেওবন্দী অনুসারী আলেমদের সংগঠন, নারায়নগঞ্জ উলামা পরিষদ কর্তৃক প্রকাশিত গ্রন্থ"বিভ্রান্তির অবসান", পৃ: ১১০)
উপরােক্ত মতবাদ সমূহের সব কটি তাবলীগ জামাতের জন্য প্রযােজ্য না হলেও, অনেক গুলির সাথে তাদের বিশ্বাস ও কার্যকলাপের হুবহু মিল রয়েছে। অথচ এ সকল মতবাদ হলাে কুরআন, হাদীস, ইজমা ও কিয়াস দ্বারা প্রতিষ্ঠিত ও প্রচলিত আমল আক্বিদার সম্পূর্ণ পরিপন্থী। এখানে আরেকটি বিষয় বিশেষভাবে লক্ষ্যণীয় যে, তাবলীগ জামাতের মুরুব্বীও তাদের আমল-আক্বিদা দেওবন্দীদের (কওমী-হেফাজতী) মুরুব্বী ও তাদের আমল-আকিদা প্রায় এক ও অভিন্ন। দেওবন্দীদের এসব আমল আক্বিদাকেই তাবলীগ জামাত তাদের ০৬ উসূলের মাধ্যমে প্রচার ও প্রতিষ্ঠা করার জন্য তৎপর। তাই এগুলাে মুল্যায়ণ পূর্বক আমাদের সতর্কতা অবলম্বন করা ও সঠিক পথ বেছে নেয়া উচিত।
বাতিল আকিদার অনুসারীদের মতবাদ ও লক্ষণ সমূহ সম্পর্কে নবীজির ভবিষ্যদ্বাণীঃ
১। এরা হবে স্বল্পবয়স্ক ছেলেপিলে।
২। বিবেক বুদ্ধি ও মস্তিস্কের দিক থেকে এরা হবে নেহায়েতই অপরিপক্ক (Brain Washed)। (বুখারী ও মুসলিম)
৩। (এদের বাহ্যিক দ্বীনি আমলগুলি অতিরঞ্জিত হবে) এরা দাড়ি ঘন করে রাখবে। (বুখারী ও মুসলিম)
8। এরা লুঙ্গি পরবে অনেক উপরে। (বুখারী ও মুসলিম)
৫-এসব খারেজী (হেরেমদ্বয়ের) পূর্ব দিক থেকে বের হবে।
(বুখারী) এরা সর্বদা বের হতেই থাকবে। এমনকি এদের সর্বশেষ দল। দাজ্জালের সাথেই বের হবে। (নাসাঈ শরীফ)
৭। ঈমান এদের গলদেশের নিচে পৌছবে না। (বুখারী ও মুসলিম) (অর্থাৎ এদের ঈমান হবে লােক দেখানাে। কিন্তু প্রকৃত ঈমানী বৈশিষ্ট তাদের মনােভাব ও কর্মকান্ডতে প্রতিফলিত হবে না।)
৮। এরা এবাদত-বন্দেগীতে ও দ্বীন পালনে অতিশয় চরমপন্থী ও সীমাতিরিক্ত হয়ে থাকবে। (আব্দুর রায্যাক: আল মুসান্নাফ)
৯।"তােমাদের যে কেউ তাদের নামাজের সামনে নিজেদের নামাজকে তুচ্ছ মনে করবে। আর তাদের রােজার সামনে নিজেদের রােযাগুলােকে হীন জ্ঞান করবে।"(বুখারী ও মুসলিম)
১০। তাদের নামাজ তাদের গলদেশের নিচে পৌছবে না। (মুসলিম)
১১। এরা কুরআন মজীদ এমনভাবে তেলাওয়াত করবে যে, তাদের তেলাওয়াতের সামনে তােমাদের তেয়াওয়াত কিছুই নয় মনে হবে। (মুসলিম)
১২। তাদের কুরআন তেলাওয়াত তাদের গলদেশের নিচে পৌছবে না। (বুখারী ও মুসলিম) অর্থাৎ তাদের অন্তরে কুরআনের কোন সৌন্দর্য ও প্রভাব পড়বে না।
১৩। তারা এই বুকে কুরআন পড়বে যে, সম্পূর্ন কুরআন তাদেরই পক্ষে ; অথচ বাস্তবে কুরআন তাদের বিপরীতে হুজ্জত হয়ে থাকবে। (মুসলিম)
১৪। তারা (বল পূর্বক) লােকজনকে আল্লাহর কিতাবের প্রতি আহবান করবে ; অথচ কুরআনের সাথে তাদের বাস্তবিক কোন সম্পর্কই থাকবে না। (আবু দাউদ)
১৫। তারা (বাহ্যত) খুবই ভাল ভাল কথাবার্তা বলবে। (বুখারী ও মুসলিম) অর্থাৎ ইসলামী শ্লোগান দিবে ও ইসলাম প্রচার-প্রসারের দাবী। করবে।
১৬। তাদের শ্লোগানগুলাে এবং বাহ্যিক কথাবার্তা অপরাপর লােকজন থেকে উত্তম হবে এবং তা মানুষের মনে দাগ কাটবে। (তাবরানী)
১৭। কিন্তু এরা হবে অসত্বৰ্মপরায়ন, বড়ই জুলুমবাজ, রক্ত পিপাসু ও অসাধু প্রকৃতির লােক। (আবু দাউদ)।
১৮। এরা সুন্দর ও ভাল কথা বলবে এবং খারাপ কাজ করবে। (তাবরানী)।
১৯। তারা হবে সমগ্র সৃষ্টিজগতের মাঝে সর্ব নিকৃষ্ট লােক। (মুসলিম)
২০। তারা বিদ্যমান সরকার ও প্রশাসকদের বিরুদ্ধে অতিশয় গালমন্দ করবে। আর তাদের (সরকারের) বিরূদ্ধে দিবে গােমরাহীর ফতােয়া। (ইবনে আবী আসেমঃ আস সুন্নাহ)
২১। তারা তখনই জনসমক্ষে প্রতিভাত হবে, যখন লােকজনের মাঝে বিভেদ ও বৈষম্য সৃষ্টি হয়ে যাবে। (বুখারী ও মুসলিম)
২২। তারা কতল করবে মুসলমানদেরকে ; আর রেহাই দেবে মুর্তি পূজারীদেরকে। (বুখারী ও মুসলিম)
২৩। তারা অন্যায়ভাবে রক্তপাত ঘটাবে। (মুসলিম) অর্থাৎ এরা নিরপরাধ মুসলিম ও অমুসলিমকে নির্বিচারে হত্যা করা বৈধ মনে করবে।
২৪। তারা হবে ডাকাত ও ছিনতাইকারী। অন্যায়ভাবে রক্তপাত করবে এবং সংখ্যালঘু অমুসলিমদের হত্যা করা বৈধ জ্ঞান করবে। (হাকেম ; আল। মুসতাদরাক বাৰী-হযরত আয়েশা সিদ্দীকা (رضي الله عنه)।
২৫। তারা ঈমান আনবে কুরআনের মুহকাম (স্পষ্টভাবে অর্থবােধক) আয়াত সমূহে এবং ধ্বংস হয়ে যাবে মুতাশাবিহ (অস্পস্ট) আয়াত সমূহের কারনে। (তাবারী) (ইহা হযরত ইবনে আব্বাস (رضي الله عنه) এর বাণী)
২৬। তারা মুখে সত্যের বাণী উচ্চারন করবে। কিন্তু তা তাদের গলদেশের নিচে পৌছবে না। (মুসলিম) (হযরত আলী (رضي الله عنه) এর বাণী)।
২৭। কাফেরদের উদ্দেশ্যে নাযিল হওয়া আয়াতগুলােকে তারা মুসলমানদের উপর চাপিয়ে দেবে। (বুখারী) অনুরূপভাবে তারা অপনপির মুসলমানদেরকে গেমিহি, কাফের, মুশরিক ঘােষনা দেবে। যাতে করে তারা এদেরকে অবৈধভাবে হত্যা করতে পারে। (হযরত ইবনে ওমর (رضي الله عنه) এর বাণী)
২৮। তারা দ্বীন থেকে এমনভাবে বহিস্কৃত হবে, যেমন ধনুকের তীর শিকার থেকে বের হয়ে যায়। (বুখারী ও মুসলিম)
২৯। তাদের যারা হত্যা করবে তাদের মিলবে মহান প্রতিদান। (মুসলিম)
৩০। সে ব্যক্তি সর্বোত্তম মৃত (শহীদ) হবে, যাকে তারা কতল করবে। (তিরমিযী)
৩১। তারা হবে আসমানের নিচে যে-কোন মূতের মাঝে সর্ব নিকৃষ্ট। (তিরমিযী) অর্থাৎ সেই সব খারেজী সন্ত্রাসী যারা মুসলিম বাহিনীর হাতে নিহত হবে তারা হবে সর্ব নিকৃষ্ট মৃত।
৩২। এ সব (সন্ত্রাসী-খারেজী) লােক হবে জাহান্নামের কুকুর। (তিরমিযী)
৩৩। কবীরা গুনাহে অপরাধী ব্যক্তিদেরকে এরা চিরস্থায়ী জাহান্নামী মনে করবে। আর তাদের জান-মাল বৈধ ঘোষনা করবে।
৩৪। জালিম ও ফাসিক সরকারের বিরূদ্ধে সশস্ত্র বিদ্রোহ ও অসহযােগিতা ফরজ বলে ঘােষনা করবে। (ইবনে তাইমিয়া: মাজমূয়ে ফতোয়া, ১৩১)
৩৫। খারেজী সন্ত্রাসীরা কোন বিশেষ অঞ্চলকে অবরােধ করে নিজেদের সন্ত্রাসমূলক কর্মকান্ডের কেন্দ্র বানিয়ে নিবে। যেমন তারা হযরত আলী (رضي الله عنه) এর খেলাফতকালে হারুরিয়াকে তাদের কেন্দ্র বানিয়ে নিয়েছিল।
৩৬। এরা সত্য পন্থীদের সাথে সাধারনত কোনরূপ গঠনমূলক আলােচনায় বসতে রাজি হবে না।
মন্তব্য-
মহানবী (ﷺ)-এর উপরােক্ত ভবিষ্যদ্বাণী সমূহের উল্লেখযােগ্য সংখ্যক ভবিষ্যদ্বাণী বর্তমান যুগের বাতিলপন্থী ফিরকা সমূহের মুরব্বী ও তাদের অনুসারীদের বেলায় প্রজোয্য। সরল প্রাণ। মুসলমানদের জন্য বিষয়টি বিশেষভাবে চিন্তাভাবনা এবং সর্তকতা অবলম্বনের দাবী রাখে।
"(উপরােক্ত ভবিষ্যদ্বাণী সমূহ ডঃ তাহের আল কাদরী কর্তৃক সূত্র সহ রচিত' সন্ত্রাস ও খারেজী ফেতনা' নামক কিতাব হতে সংকলিত-পৃ: ৩৭০ হতে ৩৭৬)"
ইসলামী সঠিক তাবলীগের কিছু মুরুব্বীদের নামের তালিকাঃ
(১) হযরত ইমাম হুসাইন(رضي الله عنه),
(২) হযরত হাসান বসরী (رحمة الله),
(৩) হযরত রাবেয়া বসরী (رحمة الله),
(৪) ইমাম আবু হানিফা (رحمة الله) সহ চার মাযহাবের চার ইমামগণ
(৫) ইমাম বুখারী (رحمة الله) সহ সিহা সিত্তার ছয় ইমাম
(৬) হযরত আবদুল কাদের জিলানী (رحمة الله),
(৭) হযরত মঈন উদ্দিন চিশতি (رحمة الله),
(৮) হযরত বাহাউদ্দিন নকশবন্দ (رحمة الله),
(৯) হযরত শায়খ আহমদ সিরহিন্দী মােজাদ্দেদ আলফেসানী (رحمة الله),
(১০) হযরত বায়েজীদ বােস্তামী (رحمة الله),
(১১) হযরত জোনায়েদ বাগদাদী, জনুন মিসরী, নিজাম উদ্দিন আউলিয়া, শেখ ফরিদ, দাতা গঞ্জ বশ, শাহ জালাল, শাহ পরান, খান জাহান আলী, শাহ মকদুম, বু আলী কলন্দর, শাহ সুলতান কমরউদ্দিন, শাহ আলী বাগদাদী, হাজী ইমদাদ উল্লাহ মােহাজেরে মক্কী, শাহ ফাতেহ আলী, খাজা ইউনুছ আলী এনায়েতপুরী, মাওলানা মােঃ মকিম উদ্দিন আহমদ প্যারাডাইসপুরী, কাজী আয়ায, জালাল উদ্দিন সূয়ূতী, ইবনে হাজর আসকালানী, আবদুল হক মুহাদ্দেস দেহলভী, জালাল উদ্দিন রুমী, ইমাম গাজ্জালী (رحمة الله) সহ অসংখ্য হক্কানী পীর মাশাঈখ, মােহাদ্দেস, মােফাস্সের ও বুজুর্গানে দ্বীন গণ।
ইলিয়াসী তাবলীগসহ বাতিলপন্থীদের কিছু মুরুব্বিদের নামের তালিকাঃ
(১) ইবনে তাইমিয়া,
(২) আবদুল ওহাব নজদী,
(৩) আবুল আলা মওদুদী,
(৪) নাসির উদ্দিন আলবাণী,
(৫) মৌ: ইলিয়াস মেওয়াতী,
(৬) মৌ: রশীদ আহমদ গাঙ্গুহী,
(৭) মৌ: কাসেম নানুতবী,
(৮) মৌ: আশরাফ আলী থানভী,
(৯) মৌ: খলীল আহমদ আম্বেঠবী,
(১০) ডঃ জাকির নায়েক গং।
+হুজুর (ﷺ) বলেছেন-'আমার উম্মতের একটি দল কেয়ামত পর্যন্ত সর্বদা হকের উপর প্রতিষ্ঠিত থাকবে' (মেশকাত-পৃ: ৪৬৩ ও ৫৮৩)।
+অন্য হাদীসে আছে, আমার উম্মত ৭৩ ফিরকায় (দলে) বিভক্ত হবে, তন্মধ্যে মাত্র একটি দল জান্নাতে যাবে এবং বাকীরা জাহন্নামে। (বুখারী-৬৬৭৩, মুসলিম-১৮৪৭, মেশকাত পৃ: ৩০, তিরমিযী, ২ য় খন্ড, পৃঃ ৮৮/ ৮৯)।
কথিত আছে যে, শেষ জামানায় কিছু লােক দ্বীনের কাজ করবে, অথচ তারা নিজেরাই জাহান্নামের দরজায় দাড়িয়ে। তারা নিজেরাও জাহান্নামে যাবে এবং অনুসারীদেরও জাহান্নামে পাঠাবে। তারা আমাদের মতই টুপি দাড়ি লেবাসধারী হবে এবং কুরআন হাদীসের কথা বলবে। তাই তাদেরে চেনা মুশকিল হবে। এখন ইসলামী তাবলীগের এবং ইলিয়াসী তাবলীগের মুরুব্বিদের নামীয় তালিকা দুটি বিশ্লেষণ করে দেখুন, কোন দল হকের উপর প্রতিষ্ঠিত এবং কেয়ামত পর্যন্ত থাকার সম্ভাবনা রয়েছে, আর কোন দলের অনুসারীদের জান্নাতী হওয়ার সম্ভাবনা বেশী। আপনার বিশ্লেষণের ফলাফলের উপর নির্ভর করে আপনিই আপনার ফিরকা (দল) নির্বাচন করতে পারেন। আল্লাহ্ আমাদেরকে মুক্ত চিন্তার অধিকার দিয়েছেন। সঠিক পথ ও নেতা নির্বাচন আমাদেরকে জান্নাতে নিবে, আর ভূল করলে জাহান্নাম।-সিদ্ধান্তের অধিকার শুধুই আমাদের এবং এর পরিণতিও আমাদেরই ভােগ করতে হবে। আল্লাহ আমাদের সঠিক মুরুব্বি/ নেতা/ ইমাম নির্বাচনে সহায় হউন এবং বাতিলের হাত থেকে আমাদের নিজেকে এবং আপন পরিবারবর্গকে জাহান্নাম থেকে বাঁচানাের প্রচেষ্টার মাধ্যমে তার হুকুম (সূরা-তাহরীম: আয়াত-৬) বাস্তবায়ন প্রতিপালনের তৌফিক দিন। আমিন।
সহায়ক পুস্তকঃ
১-তাবলীগ জামাতের গোমর ফাঁস-মুফতী সাইফুল ইসলাম জালালী।
২। ইসলামী ভ্রান্ত দলসমূহের পরিচয় ও সঠিক আকিদার প্রমাণ-মুফতী মুহাম্মদ আলী আকবর।
৩-প্রচলিত তাবলীগ জামাতের স্বরূপ উম্মােচন-মুফতী মুহাম্মদ আলী আকবর।
৪। ইসলামের মূল ধারা ও বাতিল ফিরকা-মাওলানা কাজী মুহাম্মদ মুঈন উদ্দিন আশরাফী।
৫-সন্ত্রাস ও খারেজী ফেতনা-ডঃ তাহের আল-কাদেরী।
৬-হক্ব বাতিলের পরিচয়-মাওলানা ইকবাল হােসাইন আল-কাদেরী।
৭-তাবলীগে রাসূল বনাম তাবলীগে ইলিয়াসী-অধ্যক্ষ শেখ মােহাম্মদ আব্দুল করিম সিরাজনগরী।
৯-ওহাবীদের আসল পরিচয়-সাজ্জাদ হােসেন রনী (একজন প্রাক্তণ তাবলীগী)
১০। তাবলীগ জামাত ও বিশ্ব ইজতিমা আসলে কি ?-মাওলানা আবু মাকনূন ইসলামাবাদী।
_______ সমাপ্ত _______
Comments
Post a Comment