আমীরে মুয়াবিয়া (রা.) সিফাত
আমীরে মুয়াবিয়া (রাঃ) সিফাত
সিফাত সুলতান আলিফ
আহলুস সুন্নাহের দৃষ্টিতে খতায়ে ইজতেহাদি
____________________________
হক প্রচার এবং প্রসার করা তথাপি তা নিজেদের জীবনে প্রতিফলিত করার শিক্ষা আমরা যাদের কাছ থেকে পেয়েছি ওনারা হলেন পবিত্র আহলে বায়েত আলাইহিসালাম। আহলে বায়েত আলাইহিসালামের শিক্ষাই ছিলো সদাসর্বদা সত্যকে গ্রহণ করা তথাপি বরন করা সর্বোচ্চ দিয়ে। যেমনটা সাইয়্যিদুশ শোহাদা ইমামে আলী মকাম আলাইহিসালাম শাহাদাতকে কবুল করার মধ্যে করেছেন। যে কারবালা কূফাতে সংঘটিত হয়েছে, সে কারবালা পৃথিবীর আর কোথাও সংঘটিত হয়নি, কেয়ামত তক হবেওনা। ইসলামের জন্য যার বা যাদের অবদান অস্বীকার করা মোটেই কাম্য নই তিনিই ইমাম হোসাঈন আলাইহিসালাম এবং সম্মানিত আহলে বায়েত আলাইহিসালাম। অতএব ওনাদের সম্মান মর্যাদা মানাকেব খাছায়েছ অবশ্যই উম্মতে মুহাম্মদীর উপর জিকির তথা চর্চা করা বরংচ তাদের অনুসরণ, অনুকরণ করা ফরজ। তদ্রূপ দ্বীন প্রতিষ্ঠা এবং দ্বীনি আহকাম প্রচার, প্রসারের ক্ষেত্রে রাসূলুল্লাহ সালল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামার পবিত্র নবুয়াতের আলো চারিদিকে প্রজ্বলিত করতে যারা অবদান বেশুমার তাঁরা হলেন আসহাবে আজমাঈন রাযি:। মূলত আমার এই লিখাটি প্রকাশ করার মূল উদ্দেশ্য ঐ'সব ব্যক্তির বিবেকে আঘাত করা যাদের রাসূলুল্লাহ সালল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লামার শিখিয়ে দেয়া নীতি আদর্শ, আহলে বায়েত আলাইহিসালাম এবং আসহাবে আজমাঈন রাযি: দের, সলফে সলেহীন এক কথায় আহলুস সুন্নাহের মানহাজ তথা পথ ও মত হতে বিচ্যুতি ঘটেছে। তাদের কর্মকাণ্ড নিয়েই আজকের লিখা। বর্তমান সময়ে এমন কিছু ব্যক্তিবাদের আবির্ভাব ঘটেছে যারা অনলাইন, অফলাইনে খুব জোরেশোরে সাহাবা বিদ্বেষী বক্তব্য প্রচারকার্যে ব্যস্ত। ওদের দিকে গভীর দৃষ্টিদান করলে দু'রকমের বিষয় পরিলক্ষিত হয়।
প্রথমত, ওরা জোরেশোরে আহলে বায়েত শান, শওকত মানাকেব খাছায়েছ মানুষের মাঝে প্রচারিত করার সুবাদে মানুষের মাঝে তাদের একটা গ্রহণযোগ্য অবস্থান সৃষ্টি করতে পেরেছে।
দ্বিতীয়ত, আহলে বায়েত দের সাথে অন্যান্য আসহাবে আজমাঈ দের মাঝে সংঘটিত এ'খতেলাফাত তথা খা'তায়ে ইজতেহাদী নিয়ে ইতিহাসের কিছু বক্তব্য কর্তন করে তা বিকৃতরূপে মানুষের সামনে উপস্থাপন করে ঐ'সব সাহাবাদের কট্টর সমালোচনা এবং গালাগাল দেয়ার রীতি সহজেই মানুষের মাঝে চালু করে দিয়েছে। ওরা সফলও হয়েছে অনেকাংশে। মূলত এটি শিয়া, মুতা'জিলাদের লক্ষণ। যেমন, ইবনে কাসীর রহঃ লিখেছেন -
وقول المعتزلة: الصحابة عدول إلا من قاتل علياً -: قول باطل مرذول ومردود.
আর মু’তাজিলাদের কথা যে, সাহাবায়ে কেরামগণ ন্যায়নিষ্ঠ তবে যারা হযরত আলী রাঃ এর সাথে যারা যুদ্ধ করেছেন তারা ন্যায়নিষ্ঠ নন: তাদের এ দাবীটি বাতিল, ঘৃণিত এবং অগ্রহণীয়। [আলবায়িছুল হাছীছ ইলা ইখতিছারি উলুমিল হাদীস, ইবনে কাছীরকৃত-১৮২, ১৮১]
কোন আসহাবে আজমাঈন রাযি:কে সমালোচনা করা যাবেনা হাদীসে ঘোষনার পরও কারা সেই নাফরমান.! যারা হাদীসকে পেছনে লুকিয়ে ভ্রান্ত বিকৃত ইতিহাসকে দলিল বানিয়ে আসহাব রাযি: দের সমালোচনা করছে। ওরা এতটা মায়াকান্না করে যে শিয়া, রাফেদ্বী, মুতা'জিলাদের মত হাই হোসেন হাই হোসেন জিকির করে করে আসহাব রাযি:দের গালি দেয়। শিয়া, রাফেদ্বী, মুতা'জিলা সম্প্রদায় যেমন আহলে বায়েত আলাইহিসালামদের মহব্বত করে তেমন সুন্নিরাও করে। কিন্তু ওদের মহব্বত আর আমাদের মহব্বতে পার্থক্য শুধু এক জায়গায় তা হলো ওরা মহব্বত করে সাথে আসহাব আজমাঈন রাযি: দের গালিগালাজ বা কট্টর সমালোচনা করে।
ইবনে আছীর তাদের সম্পর্কে লিখেন -
وكل هذا جُرأة على السلف تخالف السنة، فإن ما جرى بينهم كان مبنيًا على الاجتهاد، وكل مجتهد مصيب، والمصيب واحد مثاب، والمخطئ معذور، لا تردُّ شهادته.
এসব পুরোটাই সালাফের বিপরীত স্পর্ধা প্রদর্শন এবং সুন্নাহ বিরোধী কাজ। কেননা, তাদের মাঝে যা কিছু সংঘটিত হয়েছে তা ছিল ইজতিহাদ নির্ভর। আর প্রতিটি মুজতাহিদই সওয়াব পায়। যিনি সঠিক সিদ্ধান্তে উপনিত হতে পারেন, তিনি সওয়াব পান, আর যিনি ভুল করেন, তারাও এতে মাজূর। তাদের সাক্ষ্য অগ্রহণীয় নয়। [জামেউল উসূল ফী আহাদিসির রাসূল, ইবনুল আছীর জাযারীকৃত-১/১৩৩, ১/৭৪]
কিন্তু আমরা আহলে বায়েত আলাইহিসালামদের যেমন ভালোবাসি তেমন আসহাব আজমাঈন রাযি: দের শ্রদ্ধা করি সম্মান করি, তাদের ইজ্জত, আবরুর দিকে আল্লাহকে ভয় করি। কিন্তু আহলে বায়েত আলাইহিসালামকে মহব্বত দেখিয়ে আসহাব আজমাঈনদের গালি দেয়া, সমালোচনা করা এটা বর্তমানে খুব গতানুগতিকভাবে আমাদের জাম'আতে বেড়ে গিয়েছে তা কিন্তু স্বীকার করতে হবে।
বর্তমান সময়ে প্রসঙ্গ একটাই আমীরে মুয়াবীয়া রাযি। কারো নিকট স্বীকৃত আবার কারো নিকট বিকৃত। আসুন জেনে নেই কাদের নিকট আমীরে মুয়াবীয়া সহ অন্যান্য উঁচুমাপের সাহাবাগণ বিকৃত....
وذهب جمهور المعتزلة إلى أن عائشة وطلحة والزبير ومعاوية. وجميع أهل العراق والشام فُسَّاق بقتالهم الإمام الحق
জমহুর মু’তাজিলারা হযরত আয়শা রাঃ, হযরত তালহা রাঃ, হযরত যুবায়ের রাঃ, হযরত মুয়াবিয়া রাঃ এবং ইরাক ও শামবাসীকে হযরত আলী রাঃ এর সাথে যুদ্ধ করার কারণে ফাসিক হিসেবে আখ্যায়িত করে। [জামেউল উসুল ফী আহাদিসির রাসূল, ইবনুল আছীর জাযারীকৃত-১/১৩৩, ১/৭৩]
ইবন আছীর রহ: বক্তব্যে স্পষ্টতর প্রতীয়মান হয় যে,
(১) মুতা'জিলা সম্প্রদায় ইজতেহাদী খা'তাকে হাতিয়ার বানিয়ে উম্মুল মুমীনিন আলাইহিসালাম, হজরতে তালহা রাযি:, হজরতে জুবাঈর রাযি: এবং আমীরে মুয়াবীয়া রাযি: এর কট্টর সমালোচনা, গালাগাল করে।
(২) ওদের এসব কর্মকাণ্ড وكل هذا جُرأة على السلف تخالف السنة " সালাফের বিপরীত স্পর্ধা প্রদর্শন এবং সুন্নাহ বিরোধী কাজ।
( ৩) সাহাবাদের মাঝে সংঘটিত ইখতেলাফ " فإن ما جرى بينهم كان مبنيًا على الاجتهاد، وكل مجتهد مصيب، والمصيب واحد مثاب، والمخطئ معذور، لا تردُّ شهادته "
অর্থাৎ তাদের মাঝে যা কিছু সংঘটিত হয়েছে তা ছিল ইজতিহাদ নির্ভর। আর প্রতিটি মুজতাহিদই সওয়াব পায়। যিনি সঠিক সিদ্ধান্তে উপনিত হতে পারেন, তিনি সওয়াব পান, আর যিনি ভুল করেন, তারাও এতে মাজূর। তাদের সাক্ষ্য অগ্রহণীয় নয়। [জামেউল উসূল ফী আহাদিসির রাসূল, ইবনুল আছীর জাযারীকৃত-১/১৩৩, ১/৭৪]
অনেককেই বলতে শুনেছি কিছু ইতিহাস আছে যা বলা যায় না, না আলোচনা করা যায়।
আমি ওদের এই বলার উপর আপত্তি রাখি। আমীরে মুয়াবীয়া রাযি:এর এমন ইতিহাস নেই যে যারা কারণে তিনি দোষী সাব্যস্ত হবেন বা তাকে দুশমনে আহলে বায়ত আ: এর ইলজাম দেয়া যাবে। কিতাব দেখলে স্পষ্টতর হবে মুহাক্কীকগণ ইমাম মাত্র জঙ্গে সিফ্ফিনে খাতায়ে ইজতিহাদীতে আমীরে মুয়াবীয়া রাযি: ব্যাপারে চুপ থাকতে বলেছেন যেমন ইবনে আছীর রহ: বক্তব্য হতে পাওয়া যায়। কারণ স্বাভাবিকতা তিনি ইবনে আব্বাস রাযি: এর মতে মুজতাহিদ, ফক্বীহ সাহাবীদের মধ্যে। এটা ওনার খাতায়ে ইজতেহাদী বলে চুপ থাকাটা উত্তম বলেছেন আইম্মাগণ। তবেঁ এর বাইরে তানার বিষয়ে আর কোন ত্রুটি কোন ইমাম, মুজতাহিদ, সলফগণ ওয়াকেফ করেননি।
আমাদের হানাফী মাজহাবের সম্মানিত ইমাম নোমান ইবনু সাবিত আল কূফী রহ: ওনার " ফিকহে আকবর " লিখেন -
نتؤلاهم حميعا ولا نز كر الصحا بة الا بخير
আমরা ( আহলে সুন্নাত) সকল সাহাবীকে ভালবাসি এবং তাদেরকে প্রশংসা সহকারে স্মরণ করি।
এর ব্যাখ্যায় শরহে ফিক্বহে আকবরে ইমাম মোল্লা আলী কারী হানাফী রহ:লিখেন -
وان صدر من بعضحم بعض ما صدر فی صورة شر فانه كان عن اجتحاد ولم يكن علی وجه فساد .
যদিওবা, কোন কোন সাহাবি থেকে এমন কিছু বিষয় প্রকাশ পেয়েছে, যা বাহ্যত দেখতে মন্দ মনে হয়,কিন্তু এগুলো ইজতিহাদের কারণে হয়েছে।ফ্যাসাদ সৃষ্টির কারণে ছিল না।
( ফিকহে আকবর - ৮৫ পৃ / শরহে ফিকহুল আকবর কৃত - মুল্লা আলী কারী রহ:)
অতএব নিজেদের সুন্নি, হানাফী, কাদেরী ইত্যাদি হকপন্থী দাবীদারগণ কোন আকলে ইজতেহাদী খা'তাকে কেন্দ্র করে আসহাবে আজমাঈ রাযি: বিশেষকরে হজরতে আমীরে মুয়াবীয়া রাযি: কে গালাগাল করছে, সমালোচনা করছে, আহলে বায়েত আলাইহিসালামের দুশমন বলছে তা অস্পষ্ট হলেও পরোক্ষভাবে বুঝা যায় ওরা শিয়া, রাফেদ্বী, মুতা'জিলাদের মুর্দা আকিদাকে ফের জিন্দা করতেই এমন আনজাম দিচ্ছে। মূলত ওরা তো সুন্নি, হানাফী, কাদেরী দূর মুসলমান কিনা সন্দেহ। এটাকে আবার অনেকেই আমার ব্যক্তিগত ফতুয়াবাজী বলে চালিয়ে দিতে পারে। তাই ইমাম কাযী আয়াজ রহ: এর একটি বক্তব্য তুলে ধরলাম - ﻗﺎﻝ ﻣﺎﻟﻚ ﺭﺣﻤﻪ ﺍﻟﻠﻪ ﻣﻦ ﺷﺘﻢ ﺃﺣﺪﺍ ﻣﻦ ﺍﺻﺤﺎﺏ ﺍﻟﻨﺒﻰ ﺃﺑﺎ ﺑﻜﺮ ﺃﻭ ﻋﻤﺮ ﺍﻭ ﻋﺜﻤﺎﻥ ﺍﻭ ﻋﻠﻰ ﺍﻭ ﻣﻌﺎﻭﻳﺔ ﺍﻭ ﻋﻤﺮ ﺑﻦ ﺍﻟﻌﺺ ﻓﺒﺎﻥ ﻗﺎﻝ : ﻛﺎﻧﻮﺍ ﻋﻠﻰ ﺿﻼﻝ ﻭ ﻛﻔﺮ
অর্থ:- হযরত মালিক রহ: বলেন, কেও যদি রাসূলুল্লাহ সাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লামার কোন সাহাবী যেমন, হযরত আবু বকর রাযি: হযরত ওমর রাযি:, হযরত ওসমান রাযি:, হযরত আলী রাযি:,হযরত মুয়াবিয়া রাযি ও হযরত ওমর বিন আস রাযি:সহ অন্যান্য সাহাবাদের মন্দ সমালোচনা, গালাগাল করে তবেঁ অবশ্যই সে পথভ্রষ্ট ও কাফের। ( শেফা শরীফ ২য় খন্ড ৪৯৩ পৃষ্ঠা)
উল্লেখ্য যে আমীরে মুয়াবীয়া রাযি: এবং মাওলা আলী আলাইহিসালামের মাঝে যে সংঘাত হয়েছিলো তা কোন ব্যক্তিগত প্রতিহিংসা বা হ্মমতার লড়াই ছিলোনা। এই ব্যাপারে বিখ্যাত মুহাদ্দীস হাফিজ ইবনে হজর আসকালানী রহ: ফাতহুল বা'রী ফীহ শরহে বুখারীতে লিখেন -
ﻋﻦ ﺃﺑﻲ ﻣﺴﻠﻢ ﺍﻟﺨﻮﻻﻧﻲ ﺃﻧﻪ ﻗﺎﻝ ﻟﻤﻌﺎﻭﻳﺔ ﺃﻧﺖ ﺗﻨﺎﺯﻉ ﻋﻠﻴﺎ ﻓﻲ ﺍﻟﺨﻼﻓﺔ ﺃﻭ ﺃﻧﺖ ﻣﺜﻠﻪ ؟ ﻗﺎﻝ : ﻻ ، ﻭﺇﻧﻲ ﻷﻋﻠﻢ ﺃﻧﻪ ﺃﻓﻀﻞ ﻣﻨﻲ ﻭﺃﺣﻖ ﺑﺎﻷﻣﺮ ، ﻭﻟﻜﻦ ﺃﻟﺴﺘﻢ ﺗﻌﻠﻤﻮﻥ ﺃﻥ ﻋﺜﻤﺎﻥ ﻗﺘﻞ ﻣﻈﻠﻮﻣﺎ ﻭﺃﻧﺎ ﺍﺑﻦ ﻋﻤﻪ ﻭﻭﻟﻴﻪ ﺃﻃﻠﺐ ﺑﺪﻣﻪ ؟ ﻓﺄﺗﻮﺍ ﻋﻠﻴﺎ ﻓﻘﻮﻟﻮﺍ ﻟﻪ ﻳﺪﻓﻊ ﻟﻨﺎ ﻗﺘﻠﺔ ﻋﺜﻤﺎﻥ ، ﻓﺄﺗﻮﻩ ﻓﻜﻠﻤﻮﻩ ﻓﻘﺎﻝ : ﻳﺪﺧﻞ ﻓﻲ ﺍﻟﺒﻴﻌﺔ ﻭﻳﺤﺎﻛﻤﻬﻢ ﺇﻟﻲ ، ﻓﺎﻣﺘﻨﻊ ﻣﻌﺎﻭﻳﺔ ﻓﺴﺎﺭ ﻋﻠﻲ ﻓﻲ ﺍﻟﺠﻴﻮﺵ ﻣﻦ ﺍﻟﻌﺮﺍﻕ ﺣﺘﻰ ﻧﺰﻝ ﺑﺼﻔﻴﻦ ، ﻭﺳﺎﺭ ﻣﻌﺎﻭﻳﺔ ﺣﺘﻰ ﻧﺰﻝ ﻫﻨﺎﻙ ﻭﺫﻟﻚ ﻓﻲ ﺫﻱ ﺍﻟﺤﺠﺔ ﺳﻨﺔ ﺳﺖ ﻭﺛﻼﺛﻴﻦ ، ﻓﺘﺮﺍﺳﻠﻮﺍ ﻓﻠﻢ ﻳﺘﻢ ﻟﻬﻢ ﺃﻣﺮ ، ﻓﻮﻗﻊ ﺍﻟﻘﺘﺎﻝ ……
তাবেঈ আবু মুসলিম খুলাঈনী রহ: হজরতে মুয়াবিয়া রাযি:কে বল্লেন, আপনি কি মাওলা আলী রাযি: হতে জোরজবরদস্তি খিলাফত ছিনিয়ে নিতে চান নাকি নিজেকে ওনার সমমর্যাদার মনে করেন? তখন উত্তরে হজরতে আমীরে মুয়াবীয়া রাযি: বল্লেন, কখনই না..! আমি বরাবরই বিশ্বাস করি যে, মাওলা আলী আলাইহিসালাম আমার থেকে অনেক অনেক শ্রেষ্ঠ এবং খিলাফতের হকদার। কিন্তু আপনি জানেন না যে, হজরতে উসমান জিন্নুরাঈন রাযি:কে কত নিষ্ঠুরতার সাথে শহীদ করা হয়েছে। আমি ওনার ভাতিজা এবং ওয়ালী হওয়ার সুবাদেই হত্যার বিচার এবং কিসাস দাবী করেছি। আপনি গিয়ে মাওলা আলী আলাইহিসালামকে বলুন...যে, হজরতে উসমান রাযি: এর হত্যাকারীদের আমার হাতে দিয়ে দিতে। তাবেঈ আবু মুসলিম খুলাঈনী রহ: গিয়ে মাওলা আলী আলাইহিসালামকে হজরতে মুয়াবীয়া রাযি: এর বার্তা শুনালেন এবং বায়াত করিয়েছেন এবং উসমান হত্যাকারীদের বিরুদ্ধেও মুকাদ্দমা শুরু করেছেন এমন কিছু ইঙ্গিত ছিলো। কিন্তু হজরতে আমীরে মুয়াবীয়া রাযি: এবং মাওলা আলী রাযি: মাঝে ইখতেলাফাত আরও বেড়ে গেলো। শেষমেশ মাওলা আলী আলাইহিসালাম ইরাক হতে সৈন্যদল নিয়ে সিফ্ফিন নামক স্থানে পৌঁছান এবং হজরতে মুয়াবীয়া রাযি:ও তথাই পৌঁছলেন। এটি হিজরি ৩৬ এর ওয়াকেয়া। তখন উভয় দলেই খুতবা আদানপ্রদান হল কিন্তু নির্দিষ্ট কোন সিদ্ধান্তে পৌঁছতে না পারায় উভয় দলই যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ে। ( ফাতহুল বারী ১৩/৮৬)
* ইমাম ইবনে হজর আসকালান রহ: এটির সনদ হাসান, সহীহ হিসেবে উল্লেখ করেন।
* উল্লেখ্য যে, অনেকেই জঙ্গে সিফ্ফিনের ঘটনাকে আমীরে মুয়াবীয়া রাযি: এর দিকে আহলে বায়েত আলাইহিসালামদের বিরুদ্ধে বলে চালিয়ে দিতে চায় কিন্তু তা শিয়া, রাফেদ্বীদের জঘন্যতম মিথ্যাচার বরং হজরতে উসমান রাযি: এর হত্যাকারীগণ মাওলা আলী আলাইহিসালামের দলে ঢুকে পড়ে কিন্তু মাওলা আলী আলাইহিসালাম পরিস্থিতি অস্থিতিশীলতার কারণে মুকাদ্দমা শুরু করতে পারেননি। তিনি চেয়েছিলেন আগে বায়াত প্রতিষ্ঠিত হোক, অতঃপর কিসাস। কিন্তু আমীরে মুয়াবীয়া রাযি: এতে অস্বীকৃতি জানায়। ( তারিখে তাবারী)
* উল্লেখ্য যে, জঙ্গে সিফ্ফিন সংঘটিত হওয়ার পেছনে যে খারেজীদের হাত ছিলো তা বহুল কিতাবাদিতে পাওয়া যায়। এবং হজরত আম্মার বিন ইয়াসীর রাযি: যে খারেজীদের হাতেই শহীদ হয় তাও উল্লেখযোগ্য কিতাবাদিতে উল্লেখ্য। ইনশাআল্লাহ্ পরবর্তী লিখনিতে আমীরে মুয়াবীয়া রাযি: এর বিরুদ্ধে শিয়া, রাফেদ্বী, মুতা'জিলাদের উপস্থাপিত দলিলের খণ্ডন করা হবে।
আল্লাহ তাআলা আমাদের শিয়া, রাফেদ্বী, মুতা'জিলাদের ভ্রান্ত মত ও আকিদা হতে হেফাজত রাখুন। আমীন।
______________________________
শরাব পানের অভিযোগ খণ্ডন
" মুয়াবীয়া রাযি: এর প্রতি মদ্যপায়ীতার অভিযোগের খণ্ডন এবং মুসনাদে আহমদের হাদীসের সত্যতা নিরুপম "
___________________________________
আহলে সুন্নাহ ওয়াল জামাত কুরআন, সুন্নাহ এবং সলফে সলেহীনদের পথ, মত এবং আদর্শের উপর প্রতিষ্ঠিত তথাপি হাদীসানুসারে নাজাতপ্রাপ্ত আহলে হক দল হিসেবে স্বীকৃত। জামেউত তিরমীজি শরীফে রাসূলুল্লাহ সালল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম উম্মাহে মুসলেমা তেহাত্তরটি দলে ফারাক হওয়ার সতর্কীকরণ বাণী ঘোষণা করেছেন। সাথে এটিও ঘোষণা করেছেন এই তেহাত্তর ফেরকা হতে মাত্র একটি ফেরকাই থাকবে হকের উপর প্রতিষ্ঠিত তথা জান্নাতি ফেরকা বাকী বাহাত্তরটি ফেরকার স্থান হবে জাহান্নামে। উপস্থিত সাহাবাগণ রাযি: প্রিয় আক্বা হুজূরপূরনুর সাললল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লামকে কৌতূহলপরবশ প্রশ্ন করে বসলেন....ইয়া রাসূলআল্লাহ..! একটু দয়া করে বলুন না..! ওই সৌভাগ্যবান দল কোনটি..? পিয়ারা নবী সালল্লাহু আলাইহে ওয়াসালল্লাম ফরমান " মা'আনা আলাইহি ওয়া আসহাবী " ঐ সৌভাগ্যবান দল তাঁরাই হবে যারা আমার সাথে সাথে তোমাদেরও অনুসরণ, অনুকরণ করবে। ( সূনান তিরমিজি)
একটু ভাবুন...! রাসূলুল্লাহ সাললাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লামার ঘোষণাটিতে মনযোগী হোন। দেখুন, রাসূলুলুল্লাহ ঐ হাদীসে " সাহাবী রাযি: দের জান্নাতি দল বলেননি বরংচ তাদের যারা অনুসরণ, অনুকরণ করবে ওদেরকে হকের উপর প্রতিষ্ঠিত দল তথা জান্নাতি দল হিসেবে ঘোষণা হয়েছে। অতএব, স্পষ্টতর বুঝা গেলো সাহাবী রাযি: গণ তো জান্নাতি বটেই বরংচ তাদের অনুসারীদেরও আহলে হক তথা জান্নাতি হিসেবে ঘোষণা দেয়া হয়েছে। ইমাম ইবনে হজর আসকালানী রহ: আহলে সুন্নাতের একজন জগতখ্যাত ইমাম তাঁর একটি বক্তব্য মনে পড়ে যায়। তিনি বলেন " আস- সাহবাতু কুল্লুহুম মিন আহলিল জান্নাতি কাত'আন " তথা আহলুস সুন্নাহের আকিদাই প্রত্যেক সাহাবাগণ জান্নাতি।
আর এর বিপরীতে যারা সাহাবাদের প্রতি বিদ্বেষ রাখে তিরমিজি শরীফের হাদীসটি বিপরীত দিকে রাখলে বুঝা যায় বাকী বাহাত্তর জাহান্নামী ফেরকা রাসূলুল্লাহ এবং সাহাবাদের বিপরীত পথ, মতে চলার কারণেই জাহান্নামী। ঐ'সব বাহাত্তর জাহান্নামী ফেরকার মাঝে উল্লেখযোগ্য ফেরকা হল শিয়া, রাফেদ্বী ফেরকা। যারা আসহাবে আজমাঈন রাযি:দের প্রতি বিদ্বেষ রাখে। মূলত, এই সাহাবী বিদ্বেষীতার কারণে তাদের জাহান্নামী ফেরকা হিসেবে সাব্যস্ত করা হয়। তাঁরা সাহাবাদের মাঝে সংঘটিত খা'তায়ে ইজতোহাদী নিয়ে সাহাবাদের মুনাফেক, কাফের, ফাসেক হিসেবে অভিহিত করে মা'আজাল্লাহ....
কিন্তু আহলে সুন্নাতের ফায়সালা হল -
فإن ما جرى بينهم كان مبنيًا على الاجتهاد، وكل مجتهد مصيب، والمصيب واحد مثاب، والمخطئ معذور، لا تردُّ شهادته "
তাদের মাঝে যা কিছু সংঘটিত হয়েছে তা ছিল ইজতিহাদ নির্ভর। আর প্রতিটি মুজতাহিদই সওয়াব পায়। যিনি সঠিক সিদ্ধান্তে উপনিত হতে পারেন, তিনি সওয়াব পান, আর যিনি ভুল করেন, তারাও এতে মাজূর। তাদের সাক্ষ্য অগ্রহণীয় নয়। [জামেউল উসূল ফী আহাদিসির রাসূল, ইবনুল আছীর জাযারীকৃত-১/১৩৩, ১/৭৪]
অতএব, আসহাবে আজমাঈন রাযি: দের ইজতেহাদী ইখতেলাফাত নিয়ে আজেবাজে মন্তব্য এবং সমালোচনা করা আহলে সুন্নাহের আদর্শের খেলাফ।
তদ্রূপ একই ইজতেহাদী খা'তাকে বলির পাঠা বানিয়ে শিয়া, রাফেদ্বীরা টার্গেট করে বসলো আমীরে মুয়াবীয়া রাযি:কে তাঁর বিরুদ্ধে একের পর আপত্তির জন্ম দিয়ে আপত্তিগুলোর পক্ষে শত শত জাল হাদীসসহ অন্যান্য হাদীসের শব্দ, বাক্য তথা মতন পরিবর্তন পর্যন্ত করেছে। সেই সুবাদে আজ আমীরে মুয়াবীয়া রাযি: এর বিরুদ্ধে তাদের উপস্থাপিত " মসনদে আহমদের " একটি হাদীসের তাহকীক আপনাদের সামনে উপস্থাপন করার প্রয়াস করেছি। আল্লাহ তাআলা আমাদের সত্য অনুধাবন করার তাওফিক দিন। আমীন।
عَبْدُ اللَّهِ بْنُ بُرَيْدَةَ قَالَ
دَخَلْتُ أَنَا وَأَبِي عَلَى مُعَاوِيَةَ فَأَجْلَسَنَا عَلَى الْفُرُشِ ثُمَّ أُتِينَا بِالطَّعَامِ فَأَكَلْنَا ثُمَّ أُتِينَا بِالشَّرَابِ فَشَرِبَ مُعَاوِيَةُ ثُمَّ نَاوَلَ أَبِي ثُمَّ قَالَ مَا شَرِبْتُهُ مُنْذُ حَرَّمَهُ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ مُعَاوِيَةُ كُنْتُ أَجْمَلَ شَبَابِ قُرَيْشٍ وَأَجْوَدَهُ ثَغْرًا وَمَا شَيْءٌ كُنْتُ أَجِدُ لَهُ لَذَّةً كَمَا كُنْتُ أَجِدُهُ وَأَنَا شَابٌّ غَيْرُ اللَّبَنِ أَوْ إِنْسَانٍ حَسَنِ الْحَدِيثِ يُحَدِّثُنِي
“আব্দুল্লাহ ইবনে বুরাইদা বর্ণনা করেছেন “আমি ও আমার আব্বা মুয়াবিয়ার কাছে গেলাম,মুয়াবিয়া আমাদের ফারসের উপর বসতে দিল এবং আমাদের জন্য খাদ্য পরিবেশন করল ও আমরা খেলাম, তারপর মুয়াবিয়া শারাব নিয়ে এল, মুয়াবিয়া পান করল ও আমার আব্বাকে দিল, আমার আব্বা বললেন, যখন থেকে রাসূল সা: এটিকে হারাম হিসেবে ঘোষণা দিয়েছেন, তখন থেকে আমি এটি পান করিনি।
(মুসনাদে আহমদ খণ্ড- ৫ পৃ- ৩৪৭)
* হাদীসটির তাহকীক : - উল্লেখ্য যে, হাদীসটি দু'কারণে অগ্রহণযোগ্য -
১/ হাদীসটির সনদ দয়ীফ।
২/ হাদীসটির মতনে হেরফের এবং হাদীসে উল্লেখিত বাক্যাংশ অর্থাৎ " ﻣَﺎ ﺷَﺮِﺑْﺘُﻪُ ﻣُﻨْﺬُ ﺣَﺮَّﻣَﻪُ ﺭَﺳُﻮﻝُ ﺍﻟﻠﻪِ ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺳَﻠَّﻢَ
" বক্তব্যটিকে হজরতে বুরাইদা রা: দিকে নিসবত করা।
( ১) হাদীসটির সনদ দয়্বীফ -
_______________________
* কারণ আব্দুল্লাহ বিন বুরাঈদা রা: থেকে হুসাঈন বিন ওয়াকেদ বর্ণনা করার কারণে মুনকার সাবিত হয়।
* ইমাম আহমদ বিন হাম্বল রহ: মুসনাদ আহমদে উল্লেখ করে স্বয়ং হাদীসকে মুনকার হিসেবে রায় দিয়ে লিখেন -
ﻋﺒﺪ ﺍﻟﻠﻪ ﺑﻦ ﺑﺮﻳﺪﺓ ﺍﻟﺬﻱ ﺭﻭﻯ ﻋﻨﻪ ﺣﺴﻴﻦ ﺑﻦ ﻭﺍﻗﺪ ﻣﺎ ﺃﻧﻜﺮﻫﺎ
আব্দুল্লাহ বিন বুরাঈদার হাদীস, যেটি হুসাঈন বিন ওয়াকেদ বর্ণনা করেছেন সেটি " মুনাকার " হিসেবে সাব্যস্ত।
( ২২ ২/ ﺍﻟﻌﻠﻞ ﻭﻣﻌﺮﻓﺔ ﺍﻟﺮﺟﺎﻝ )
* ইমাম আহমদ রহ: অন্যত্র লিখেন -
ﻣﺎ ﺃﻧﻜﺮ ﺣﺪﻳﺚ ﺣﺴﻴﻦ ﺑﻦ ﻭﺍﻗﺪ ﻭﺃﺑﻲ ﺍﻟﻤﻨﻴﺐ ﻋﻦ ﺑﻦ ﺑﺮﻳﺪﺓ
( ﺍﻟﻌﻠﻞ ﻭﻣﻌﺮﻓﺔ ﺍﻟﺮﺟﺎﻝ /1 301 )
হাদীসটি সর্বসম্মতে " মুনাকার " হিসেবে সাব্যস্ত। ভ্রান্ত মতবাদীরা এই হাদীসকে আমীরে মুয়াবীয়া রাযি:কে অপমানিত এবং ঘৃণ্য প্রমাণ করতে ব্যবহার করে থাকে।
( ২) হাদীসটির মতনে হেরফের এবং হাদীসে উল্লেখিত বাক্যাংশ অর্থাৎ " ﻣَﺎ ﺷَﺮِﺑْﺘُﻪُ ﻣُﻨْﺬُ ﺣَﺮَّﻣَﻪُ ﺭَﺳُﻮﻝُ ﺍﻟﻠﻪِ ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺳَﻠَّﻢَ
" বক্তব্যটিকে হজরতে বুরাইদা রা: দিকে নিসবত করা।
_______________________________
* শিয়া, রাফেদ্বীরা আরেকটি চালাকি করে থাকে তা হল হাদীসে উল্লেখিত বাক্যাংশ -
ﻣَﺎ ﺷَﺮِﺑْﺘُﻪُ ﻣُﻨْﺬُ ﺣَﺮَّﻣَﻪُ ﺭَﺳُﻮﻝُ ﺍﻟﻠﻪِ ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ
ﻭَﺳَﻠَّﻢَ " অর্থাৎ,
যখন থেকে রাসূলুল্লাহ সালল্লাহু আলাইহে ওয়াসাললাম এটিকে হারাম ঘোষণা করেছেন তখন থেকে কখনই আমি এটা পান করিনি " এই বাক্যাংশকে শিয়া, রাফেদ্বীরা হহরতে বুরাঈদা রাযি: এর দিকে নিসবত করে যেমনটি তাদের অপব্যখ্যাকৃত হাদীসে পরিলক্ষিত হয়। বাস্তবে এই বাক্য হজরত বুরাঈদা রা: এর নই বরং হজরতে আমীরে মুয়াবীয়া রাযি: এর ছিলো। এবং এই হাদীসের মতন মুসনাদে আহমদের ব্যাখ্যাকার আল্লামা শুআইব রহ: উল্লেখ করেছেন।
* মুসনাদে আহমদের ব্যাখ্যাকারক আব্দুল্লাহ শুআইব আরনাউত রা: হজরতে আব্দুল্লাহ বুরাঈদা রা: এর হাদীসের ব্যাখ্যাই লিখেন -
ﻭﻗﻮﻟﻪ : “ ﺛﻢ ﻗﺎﻝ : ﻣﺎ ﺷَﺮِﺑﺘُﻪ ﻣﻨﺬ ﺣﺮَّﻣَﻪ ﺭﺳﻮﻝُ ﺍﻟﻠﻪ ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺳَﻠَّﻢَ ” ﺃﻱ : ﻣﻌﺎﻭﻳﺔ ﺑﻦ ﺃﺑﻲ ﺳﻔﻴﺎﻥ، ﻭﻟﻌﻠﻪ ﻗﺎﻝ ﺫﻟﻚ ﻟِﻤﺎ ﺭﺃَﻯ ﻣﻦ ﺍﻟﻜﺮﺍﻫﺔ ﻭﺍﻹﻧﻜﺎﺭ ﻓﻲ ﻭﺟﻪ ﺑﺮﻳﺪﺓ، ﻟﻈﻨِّﻪ ﺃﻧﻪ ﺷﺮﺍﺏٌ ﻣُﺤﺮَّﻡ، ﻭﺍﻟﻠﻪ ﺃﻋﻠﻢ .
মুয়াবীয়া রাযি: এর এই বক্তব্য অর্থাৎ " আমি এখনও পর্যন্ত এটি পান করিনি যখন হতে রাসূলুল্লাহ সালল্লাহু আলাইহে ওয়াসাললাম মদকে হারাম ঘোষণা দিয়েছেন। বস্তুত, এই কথাটি আমীরে মুয়াবীয়া রাযি: তখন বলেছিলেন, যখন তিনি হজরতে বুরাঈদা রাযি: এর চেহারায় একপ্রকারের মালিন্যতা দেখতে পান। অর্থাৎ, হজরত বুরাঈদা রাযি: ভাবনায় ছিলেন যে, মুয়াবীয়া রাযি: কি আমাকে হারাম " মাশরুব " দিলেন..!
[ ﻣﺴﻨﺪ ﺃﺣﻤﺪ ﻁ ﺍﻟﺮﺳﺎﻟﺔ ( /38 26 )].
* অতএব স্পষ্টতর বুঝা গেলো, " যখন থেকে রাসূলুল্লাহ এটি হারাম ঘোষণা দিয়েছেন, তখন হতে এটি আমি পান করিনি " বক্তব্যটি হজরত বুরাঈদা রা: এর নই বরং হজরতে আমীরে মুয়াবীয়া রাযি: এর যা শরহে মুসনাদে আহমদের হাদীস হতে সহজেই পরিলক্ষিত হয়।
* এবার আসুন আরেকটি হাদীসে উল্লেখিত " ﻣﺎ ﺷَﺮِﺑﺘُﻪ " শব্দের সঠিক ব্যাখ্যা জেনে নেই। মুসনাদে আহমদের হাদীসের ব্যাখ্যা হতে স্পষ্টতর বুঝা গেলো যে, " ﻣﺎ ﺷَﺮِﺑﺘُﻪ " " শরাব " নই। শিয়া, রাফেদ্বীরা অনুবাদে পর্যন্ত মিথ্যাচার করে। অনেকেই উর্দুতে " শরাব " এর অনুবাদ করে। কিন্তু উর্দুতে যেটাকে " শরাব " বলা হয় সেটাকে আরবীতে " ﺧﻤﺮ " বলা হয়। সঠিক তাহকীক হল যে, " শরাব " এর তরজুমা " ﻣﺎ ﺷَﺮِﺑﺘُﻪ " করাই সঠিক মানে একপ্রকারের পানীয়জল। এটাকে উর্দু " শরাব " শব্দে নেয়া বোকামী।
* পরিশেষে, এই রেওয়ায়েতটি সকল সনদের ভিত্তিতে " দ্বয়ীফ " এবং " শরাব " কে হাদীসে উল্লেখিত " মাশরুব " শব্দ দ্বারা চয়ন করতে হবে অর্থাৎ কোন একপ্রকার পানীয়জল তবেঁ উর্দুতে চয়িত " শরাব " নই। অতএব, এই হাদীস দ্বারা আমীরে মুয়াবীয়া রাযি:কে " শরাব ( ﺧﻤﺮ) পান করলেওয়ালা হিসেবে সাব্যস্ত হয়না।
আল্লাহ তাআলা আমাদের শিয়া, রাফেদ্বীদের ভ্রান্ত মতবাদ হতে হেফাজত করুন। আমীন।
_________________________
বদ দোয়া দেয়ার অভিযোগ খণ্ডন
"নবীজি সালল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম কি মুয়াবীয়া রাযি:কে " বদদোয়া " দিয়েছেন?
_________________________________
শিয়া, রাফেদ্বীরা সাহাবা ﺭﺿﻲ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻨﻪ এর বিরোধীতায় এতটাই সীমা অতিক্রম করেছে যে, সাহাবাদের ফাজায়েল সম্পর্কিত হাদীসগুলোকে খুদ সাহাবাদের বিরুদ্ধে ব্যবহার করছে এবং তাদের মতানুসারে এমন একটি হাদীস সহীহ মুসলিমেও বর্ণিত হয়েছে। কষ্ট লাগে তখন, যখন দেখা যায় এসব দলিল আমাদের জাম'আতের ( আহলুস সুন্নাহ) কিছু নামধারী সুন্নি শিয়া, রাফেদ্বীদের অনুসরণ, অনুকরণে সাহাবীদের বিরুদ্ধে উপস্থাপন করছে। এবং তাঁরা এটা প্রমাণ করার ঘৃণ্য অপচেষ্টা চালায় যে, সহীহ মুসলিমের ঐ হাদীসে রাসুলুল্লাহ ﷺ ক্বাতীবে ওহী, উম্মাতের মামা সাইয়্যিদুনা আমীরে মুয়াবীয়া ﺭﺿﻲ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻨﻪ কে বদ'দোয়া তথা অভিশাপ দিয়েছেন। (মাআ'জাল্লাহ)।
এই হাদীসের অপব্যাখ্যা করে শিয়া, রাফেদ্বীরা মুহাদ্দীসদের বিরুদ্ধেও ঘৃণ্য মিথ্যাচার করেছেও বটে। যে সব ব্যক্তিরা ঐ হাদীসটি পেশ করে হজরতে মুয়াবীয়া ﺭﺿﻲ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻨﻪ এর সমালোচনা বা তাকে গালমন্দ করছে! ওদের হেদায়াত কামনা এবং যারা এটা নিয়ে ভ্রান্তিজনক পরিস্থিতির স্বীকার, তাদের ভ্রান্ততা দূর করার সুবাদে আজকের এই লিখা। আল্লাহ সুবহানা ওয়াতআ'লা আমাদের সত্য গ্রহণে কবুল করুন। আমীন।
তাদের দেয়া হাদীস এবং তাঁর অনুবাদ নিম্নরূপ -
حدثنا : محمد بن المثنى العنزي ح ، وحدثنا : إبن بشار واللفظ لإبن* المثنى قالا ، حدثنا : أمية بن خالد ، حدثنا : شعبة ، عن أبي حمزة القصاب ، عن إبن عباس ، قال : كنت ألعب مع الصبيان فجاء رسول الله صلي الله عليه و سلم فتواريت خلف باب قال : فجاء فحطأني حطأة وقال : أذهب وإدع لي معاوية قال : فجئت فقلت : هو يأكل قال : ثم قال : لي أذهب فإدع لي معاوية قال : فجئت فقلت : هو يأكل فقال : لا أشبع الله بطنه قال : إبن المثنى قلت لأمية :ما حطأني قال : قفدني قفدة ، حدثني : إسحق بن منصور ، أخبرنا : النضر بن شميل ، حدثنا : شعبة ، أخبرنا : أبو حمزة سمعت إبن عباس يقولا : كنت ألعب مع الصبيان فجاء رسول الله صلي الله عليه و سلم فإختبأت منه فذكر بمثله.
হযরত ইবনে আব্বাস রাদিআল্লাহু আনহুমা থেকে হাদিস শরীফটি বর্ণিত তিনি বলেন আমি বাচ্চাদের নিয়ে খেলছিলাম প্রিয়নবী এসে আমাকে বললেন তুমি গিয়ে মুয়াবিয়াকে ডেকে আনো তখন আমি ডাকতে গেলাম এবং বললাম প্রিয়নবী আপনাকে ডাকছেন তখন তিনি জবাব দিলেন- আমি খাচ্ছি এখন যেতে পারবোনা। প্রিয়নবীকে এটা বলাতে আবারো আমাকে পাঠালেন তখনও তিনি বললেন আমি খাচ্ছি এখন যেতে পারবোনা অবশেষে প্রিয়নবী তাকে অভিশাপ দিয়ে বললেন "আল্লাহ তার পেট কখনো ভরাবেন না"।
( সহীহ মুসলিম -২৬০৪)
* হাদীসটির তাহকীক -
_____________________
* প্রথমত, উপরের হাদীসটি সহীহ তথা যথাযোগ্য সঠিক, কিন্তু এর অনুবাদে ঘৃণ্য মিথ্যাচার করা হয়েছে।
* দ্বিতীয়ত, শিয়া, রাফেদ্বীদের মূল বক্তব্য হল যে, রাসূলুল্লাহ সালল্লাহু আলাইহে ওয়াসাললাম এই হাদীসে হজরতে আমীরে মুয়াবীয়া রাযি: কে " لا أشبع الله بطنه " বলে লা'নত তথা অভিশাপ দিয়েছেন। ( লানাতুল্লাহে আ'লাল কাযেবীন) মিথ্যাবাদীদের উপর আল্লাহর লানত।
* হাদীসটির অনুবাদে মিথ্যাচার -
________________________
শিয়া, রাফেদ্বীরা হাদীসটিকে বানোয়াট এবং নিজেদের মত করে অনুবাদের মাধ্যমে মানুষের সামনে উপস্থাপন করে। মূলত, মুসলিম শরীফের এই হাদীসটির মূল অনুবাদের সাথে শিয়া, রাফেদ্বীদের অনুবাদের আকাশ'পাতাল বিস্তর পার্থক্য। চলুন প্রকৃত অনুবাদ দেখে নিই -
ﺣَﺪَّﺛَﻨَﺎ ﻣُﺤَﻤَّﺪُ ﺑْﻦُ ﺍﻟْﻤُﺜَﻨَّﻰ ﺍﻟْﻌَﻨَﺰِﻱُّ، ﺡ ﻭَﺣَﺪَّﺛَﻨَﺎ ﺍﺑْﻦُ ﺑَﺸَّﺎﺭٍ، – ﻭَﺍﻟﻠَّﻔْﻆُ ﻻِﺑْﻦِ ﺍﻟْﻤُﺜَﻨَّﻰ – ﻗَﺎﻻَ ﺣَﺪَّﺛَﻨَﺎ ﺃُﻣَﻴَّﺔُ ﺑْﻦُ ﺧَﺎﻟِﺪٍ، ﺣَﺪَّﺛَﻨَﺎ ﺷُﻌْﺒَﺔُ، ﻋَﻦْ ﺃَﺑِﻲ ﺣَﻤْﺰَﺓَ ﺍﻟْﻘَﺼَّﺎﺏِ، ﻋَﻦِ ﺍﺑْﻦِ ﻋَﺒَّﺎﺱٍ، ﻗَﺎﻝَ ﻛُﻨْﺖُ ﺃَﻟْﻌَﺐُ ﻣَﻊَ ﺍﻟﺼِّﺒْﻴَﺎﻥِ ﻓَﺠَﺎﺀَ ﺭَﺳُﻮﻝُ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ﻓَﺘَﻮَﺍﺭَﻳْﺖُ ﺧَﻠْﻒَ ﺑَﺎﺏٍ – ﻗَﺎﻝَ – ﻓَﺠَﺎﺀَ ﻓَﺤَﻄَﺄَﻧِﻲ ﺣَﻄْﺄَﺓً ﻭَﻗَﺎﻝَ ” ﺍﺫْﻫَﺐْ ﻭَﺍﺩْﻉُ ﻟِﻲ ﻣُﻌَﺎﻭِﻳَﺔَ ” . ﻗَﺎﻝَ ﻓَﺠِﺌْﺖُ ﻓَﻘُﻠْﺖُ ﻫُﻮَ ﻳَﺄْﻛُﻞُ – ﻗَﺎﻝَ – ﺛُﻢَّ ﻗَﺎﻝَ ﻟِﻲَ ” ﺍﺫْﻫَﺐْ ﻭَﺍﺩْﻉُ ﻟِﻲ ﻣُﻌَﺎﻭِﻳَﺔَ ” . ﻗَﺎﻝَ ﻓَﺠِﺌْﺖُ ﻓَﻘُﻠْﺖُ ﻫُﻮَ ﻳَﺄْﻛُﻞُ ﻓَﻘَﺎﻝَ ” ﻻَ ﺃَﺷْﺒَﻊَ ﺍﻟﻠَّﻪُ ﺑَﻄْﻨَﻪُ ” . ﻗَﺎﻝَ ﺍﺑْﻦُ ﺍﻟْﻤُﺜَﻨَّﻰ ﻗُﻠْﺖُ ﻷُﻣَﻴَّﺔَ ﻣَﺎ ﺣَﻄَﺄَﻧِﻲ ﻗَﺎﻝَ ﻗَﻔَﺪَﻧِﻲ ﻗَﻔْﺪَﺓً
অনুবাদ -
ইবনে আব্বাস রাযি: থেকে বর্ণিত । তিনি বলেন , একবার আমি শিশুদের সাথে খেলছিলাম । এ সময় রাসূলুল্লাহ সালল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম সেখানে এসে উপস্থিত হলেন । আমি তখন দরজার আড়ালে লুকিয়ে রইলাম । অতঃপর নবীজি সালল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম এসে আমাকে স্নেহভরে চাপড় দিয়ে বললেন , যাও , মুয়াবীয়াকে আমার কাছে ডেকে নিয়ে এসো । ইবনে আব্বাস রাযি: গিয়ে দেখেন যে, মুয়াবীয়া রাযি: খাচ্ছেন। ইবনে আব্বাস রাযি: বলেন , অতঃপর আমি নবীজী সালল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম এর কাছে ফিরে এসে বললাম , তিনি ( মূয়াবীয়া রাযি:) খাচ্ছেন । তখন নবীজি সালল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম আবার আমাকে বললেন , আবার যাও, মূয়াবীয়াকে আমার কাছে ডেকে নিয়ে এসো। এবারও মুয়াবীয়া রাযি:কে তিনি খেতে দেখলেন, ইবনে আব্বাস রাযি: বলেন, এবারও আমি গিয়ে ফিরে এসে বললাম , তিনি খাচ্ছেন । এ কথা শুনে রাসূলুল্লাহ সালল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম বললেন , “আল্লাহ তাঁর পেট না ভরাক ।
( 2604 صحيح مسلم)
* হাদীসটির অনুবাদে ঘৃণ্য মিথ্যাচার -
_______________________________
উল্লেখ্য যে, এই হাদীসের ( আরবী মতনানুসারে) কোথাও লিখা নেই যে, ইবনে আব্বাস রাযি: হজরতে মুয়াবীয়া রাযি:কে এটি বলেছেন যে, আল্লাহর রাসূল আপনাকে ডাকছেন এবং এর উত্তরে মুয়াবীয়া রাযি: নাকি জবাব দিলেন যে, আমি খাচ্ছি এখন যেতে পারবোনা..! লানাতুল্লাহে আলাল কাযেবীন, মিথ্যাবাদীদের উপর আল্লাহর লানত। কতবড় মুনাফিক হলে অনুবাদে খেয়ানত করতে পারে তাঁর উপর ইবনে আব্বাস রাযি: এবং হজরতে আমীরে মুয়াবীয়া রাযি: এর উপর এতবড় তোহমৎ লাগাতে পারে। বরংচ, এই হাদীসে রাসূলুল্লাহ সালল্লাহু আলাইহে
ওয়াসাল্লাম বলেন -
ﺍﺫْﻫَﺐْ ﻭَﺍﺩْﻉُ ﻟِﻲ ﻣُﻌَﺎﻭِﻳَﺔَ ” .
ﻗَﺎﻝَ ﻓَﺠِﺌْﺖُ ﻓَﻘُﻠْﺖُ ﻫُﻮَ ﻳَﺄْﻛُﻞ "
যাও মুয়াবীয়াকে ডেকে নিয়ে আসো। ইবনে আব্বাস রাযি: গিয়ে দেখেন যে, মুয়াবীয়া রাযি: খাচ্ছেন, তাই তিনি ফিরে এসে বল্লেন যে, তিনি খাচ্ছেন। আবারও আল্লাহর রাসূল বলেন,
ﺛُﻢَّ ﻗَﺎﻝَ ﻟِﻲَ ” ﺍﺫْﻫَﺐْ ﻭَﺍﺩْﻉُ ﻟِﻲ ﻣُﻌَﺎﻭِﻳَﺔَ ” . ﻗَﺎﻝَ ﻓَﺠِﺌْﺖُ ﻓَﻘُﻠْﺖُ ﻫُﻮَ ﻳَﺄْﻛُﻞ
যাও আবারও ডেকে আসো... এবারও ইবনে আব্বাস রাযি: দেখেন যে, মুয়াবীয়া রাযি: খাচ্ছেন। তাই তিনি ফিরে এসে বল্লেন, তিনি খাচ্ছেন। অতঃপর রাসূলুল্লাহ বল্লেন, ﻓَﻘَﺎﻝَ ” ﻻَ ﺃَﺷْﺒَﻊَ ﺍﻟﻠَّﻪُ ﺑَﻄْﻨَﻪُ ” আল্লাহ তাঁর পেট না ভরাক।
অতএব, এই হাদীসে কোথাও প্রমাণ হয়না যে, হজরতে ইবনে আব্বাস রাযি: মুয়াবীয়া রাযি:কে গিয়ে এই খবর দিলেন, রাসূলুল্লাহ তাকে ডাকছেন বা এটাও প্রমাণ হয়না যে, মুয়াবীয়া রাযি: উত্তরে, " আমি খাচ্ছি, এখন যেতে পারবোনা " বলেছেন। এমন কোন বক্তব্যও হাদীসে উল্লেখ নেই। মূর্খরা হাদীস বুঝেনা ওরা এটাও দেখেনা যে, ইবনে আব্বাস রাযি: মুয়াবীয়া রাযি:কে ডাকেনি বরং তিনি হজরতে মুয়াবীয়া রাযি:কে খেতে দেখে ফিরে আসেন। যদি হজরতে মুয়াবীয়া রাযি:কে ইবনে আব্বাস রাযি: রাসূলুল্লাহ ডাকার ব্যাপারটা জানাতেন তবেঁ অবশ্যই হজরতে মুয়াবীয়া রাযি: এর বক্তব্যটাও ইমাম মুসলিম রহ: এই হাদীসে আনতেন বরং কথা হয়েছে রাসূলুল্লাহ সালল্লহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম এবং ইবনে আব্বাস রাযি: এর মাঝে। যেমনটা আমি তাহকীক করে দেখালাম।
অতএব হাদীসটিতে স্পষ্টতরভাবে বুঝা গেলো, হজরতে আমীরে মুয়াবীয়া রাযি: রাসূলুল্লাহ সালল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম তাকে ডাকার ব্যাপারটা জানতেন না। কারণ ইবনে আব্বাস রাযি: মুয়াবীয়া রাযি:কে খেতে দেখে ফিরে আসেন। এবার হয়তোবা কৌতূহলজনক প্রশ্ন জাগতে পারে আপনাদের..! যদি আমীরে মুয়াবীয়া রাযি: নাই বা জানতেন যে, রাসূলুল্লাহ সালল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম তাকে ডাকছেন! তবেঁ কেনইবা আল্লাহর রাসূল সালল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম মুয়াবীয়া রাযি:কে ” ﻻَ ﺃَﺷْﺒَﻊَ ﺍﻟﻠَّﻪُ ﺑَﻄْﻨَﻪُ ” তথা " আল্লাহ তাঁর পেট না ভরাক " বল্লেন কেন?
* হাদীসে রাসূলুল্লাহ সাললল্লাহু আলাইহে মুয়াবীয়া রাযি:কে " ” ﻻَ ﺃَﺷْﺒَﻊَ ﺍﻟﻠَّﻪُ ﺑَﻄْﻨَﻪُ ” তথা " আল্লাহ তাঁর পেট না ভরাক " বলার কারণ -
_____________________________
* ইমাম নববী রহ: এই সম্পর্কে লিখেন -
ﺃَﻥَّ ﻣَﺎ ﻭَﻗَﻊَ ﻣِﻦْ ﺳَﺒِّﻪِ ﻭَﺩُﻋَﺎﺋِﻪِ ﻭَﻧَﺤْﻮِﻩِ ﻟَﻴْﺲَ ﺑِﻤَﻘْﺼُﻮﺩٍ ﺑَﻞْ ﻫُﻮَ ﻣِﻤَّﺎ ﺟَﺮَﺕْ ﺑِﻪِ ﻋَﺎﺩَﺓُ ﺍﻟْﻌَﺮَﺏِ ﻓِﻲ ﻭَﺻْﻞِ ﻛَﻠَﺎﻣِﻬَﺎ ﺑِﻠَﺎ ﻧِﻴَّﺔٍ ﻛَﻘَﻮْﻟِﻪِ ﺗَﺮِﺑَﺖْ ﻳَﻤِﻴﻨُﻚَ ﻭﻋَﻘْﺮَﻯ ﺣَﻠْﻘَﻰ ﻭَﻓِﻲ ﻫَﺬَﺍ ﺍﻟْﺤَﺪِﻳﺚِ ﻟَﺎ ﻛَﺒِﺮَﺕْ ﺳِﻨُّﻚِ ﻭَﻓِﻲ ﺣَﺪِﻳﺚِ ﻣُﻌَﺎﻭِﻳَﺔَ ﻟَﺎ ﺃَﺷْﺒَﻊَ ﺍﻟﻠَّﻪُ ﺑﻄﻨﻪ ﻭﻧﺤﻮ ﺫﻟﻚ ﻻ ﻳﻘﺼﺪﻭﻥ ﺑﺸﺊ ﻣِﻦْ ﺫَﻟِﻚَ ﺣَﻘِﻴﻘَﺔَ ﺍﻟﺪُّﻋَﺎﺀِ
যেসব হাদীসে ( সাহাবাদের ব্যাপারে) রাসূল সালল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লামার যে " বদ'দোয়া " বুঝা যায়, মূলত সেগুলো ঐ'রকম বাক্য যা আরব লোকেরা অনর্থকতা বা রসিকতাছলে বলতো। যেমন, একটা হাদীসে কোন একজন সাহাবী রাযি:কে তালিম দিতে গিয়ে রাসূল সালল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল বল্লেন, ﺗَﺮِﺑَﺖْ ﻳَﻤِﻴﻨُﻚَ তোমার ডান হাতের অমঙ্গল হোক বা একবার উম্মুলমুমীনিনা আম্মাজান আয়েশা রাযি: এর উদ্দিশ্যে রাসূলুল্লাহ বলেন, ﻭﻋَﻘْﺮَﻯ ﺣَﻠْﻘَﻰ বা ﻟَﺎ ﻛَﺒِﺮَﺕْ ﺳِﻨُّﻚِ তোমার বয়স বেশি না হোক এবং সাইয়্যিদুনা মুয়াবীয়া রাযি: এর ব্যাপারে রাসূলুল্লাহ সাললাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাললাম বলেন “ ﻟَﺎ ﺃَﺷْﺒَﻊَ ﺍﻟﻠَّﻪُ ﺑﻄﻨﻪ অর্থাৎ আল্লাহ তাআলা তাঁর পেট না ভরাক, মূলত এসব ঐরকম পর্যায়ের যে, আহলে আরবগণ যা " বদদোয়া " হিসেবে মুরাদ নিতো না।
( শরহে সহীহ মুসলিম ১৬/১৫২)
* ইমাম নববী রহ: আরও লিখেন -
ﻭَﻗَﺪْ ﻓَﻬِﻢَ ﻣُﺴْﻠِﻢٌ ﺭَﺣِﻤَﻪُ ﺍﻟﻠَّﻪُ ﻣِﻦْ ﻫَﺬَﺍ ﺍﻟْﺤَﺪِﻳﺚِ ﺃَﻥَّ ﻣُﻌَﺎﻭِﻳَﺔَ ﻟَﻢْ ﻳَﻜُﻦْ ﻣُﺴْﺘَﺤِﻘًّﺎ ﻟِﻠﺪُّﻋَﺎﺀِ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻓَﻠِﻬَﺬَﺍ ﺃَﺩْﺧَﻠَﻪُ ﻓِﻲ ﻫَﺬَﺍ ﺍﻟﺒﺎﺏ ﻭﺟﻌﻠﻪ ﻏﻴﺮﻩ ﻣﻦ ﻣﻨﺎﻗﺐ ﻣﻌﺎﻭﻳﺔﻻﻧﻪ ﻓِﻲ ﺍﻟْﺤَﻘِﻴﻘَﺔِ ﻳَﺼِﻴﺮُ ﺩُﻋَﺎﺀً ﻟَﻪُ
ইমাম মুসলিম রহ: এই হাদীস থেকে এটাই বের করেছেন যে, হজরত মুয়াবীয়া রাযি: " বদদোয়া " এর মুখাপেক্ষী ছিলেন না। এটার একমাত্র কারণ হতে পারে যে, ইমাম মুসলিম রহ: এই হাদীসকে ঐ বা'বে উল্লেখ করেছেন। তবেঁ ইমাম মুসলিম রহ: ছাড়া অধিকাংশ আহলে ইলমগণ এই হাদীসকে মুয়াবীয়া রাযি: এর মানাকেব বা ফজিলত অধ্যায়ে অন্তর্ভুক্ত করেছেন। কারণ আল্লাহ রাসূল সালল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লামার এই বাক্যটি সত্যিকারে মুয়াবীয়া রাযি:র জন্য দোয়া হিসেবে বিবেচিত হয়েছিলো।
( শরহে সহীহ মুসলিম ১৬/১৫৬)
* আল্লামা হাাফিজ ইবনে কাছীর রহ: মুসলিম শরীফের এই হাদীসটির ব্যাপারে লিখেন -
ﻓَﺮَﻛَّﺐَ ﻣُﺴْﻠِﻢٌ ﻣِﻦَ ﺍﻟْﺤَﺪِﻳﺚِ ﺍﻟْﺄَﻭَّﻝِ ﻭَﻫَﺬَﺍ ﺍﻟْﺤَﺪِﻳﺚِ ﻓَﻀِﻴﻠَﺔً ﻟِﻤُﻌَﺎﻭِﻳَﺔَ ،
ইমাম মুসলিম রহ: এই হাদীসকে প্রথম হাদীসের তুলনায় পরে এনেছেন। এবং এই হাদীস থেকে সায়্যিদুনা মুয়াবীয়া রাযি: এর ফজিলত প্রমাণিত হয়।
( ﺍﻟﺒﺪﺍﻳﺔ ﻭﺍﻟﻨﻬﺎﻳﺔ 8/120 )
* ইবনে বাত্তাল রহ; এমন একটি রেওয়ায়েতের ব্যাখ্যার লিখেন -
ﻫﻰ ﻛﻠﻤﺔ ﻻ ﻳﺮﺍﺩ ﺑﻬﺎ ﺍﻟﺪﻋﺎﺀ، ﻭﺇﻧﻤﺎ ﺗﺴﺘﻌﻤﻞ ﻓﻰ ﺍﻟﻤﺪﺡ ﻛﻤﺎ ﻗﺎﻟﻮﺍ ﻟﻠﺸﺎﻋﺮ ﺇﺫﺍ ﺃﺟﺎﺩ : ﻗﺎﺗﻠﻪ ﺍﻟﻠﻪ ﻟﻘﺪ ﺃﺟﺎﺩ
মূলত, এসব এমন বাক্য যা দ্বারা " বদ'দোয়া " মুরাদ নই। এগুলো শুধু মাত্র সুনাম করার অর্থে ব্যবহার করা হয়। যেমন, কোন শায়ের যখন সুন্দর করে শে'র পড়ে তখন আরবীয়রা বলে যে, আল্লাহ তাকে মারুক! সে কত সুন্দর শে'র পড়লো।
( শরহে সহীহ বুখারী ৯/ ৩২৯)
* আবু মানসুর মুহাম্মদ বিন আহমদ রহ: এই সম্পর্কে লিখেন -
ﮬﺬﺍ ﻋﻠﯽ ﻣﺬﮬﺐ ﺍﻟﻌﺮﺏ ﻓﯽ ﺍﻟﺪﻋﺎ ﻋﻠﯽ ﺍﻟﺸﯽﺀ ﻣﻦ ﻏﯿﺮ ﺍﺭﺍﺩۃﻟﻮﻗﻮﻋﮧ , ﻻ ﯾﺮﺍﺩ ﺑﮧ ﺍﻟﻮﻗﻮﻉ
এমন বাক্যগুলো আরবীয়দের মাঝে এভাবে প্রচলিত যে, যেখানে তাঁরা কারো ব্যাপারে বদদোয়ার মত শব্দ করে কিন্তু এখানে সেই ইচ্ছে ( বদদোয়া) থাকতো না অর্থাৎ বদদোয়া কবুল হওয়ার চিন্তা আনতো না।
( ﺗﻬﺬﻳﺐ ﺍﻟﻠﻐﺔ ১/১৪৫ )
* লা'মাজহাবীদের শায়খুল মুহাদ্দীস জনাব আলবানী সাহেবও এই হাদীসের মূল রহস্য বুঝেছিলেন। শুধু বুঝলো না শিয়া খবিসরা। আলবানী এ সম্পর্কে লিখেন -
ﻭﻗﺪ ﻳﺴﺘﻐﻞ ﺑﻌﺾ ﺍﻟﻔﺮﻕ ﻫﺬﺍ ﺍﻟﺤﺪﻳﺚ ﻟﻴﺘﺨﺬﻭﺍ ﻣﻨﻪ ﻣﻄﻌﻨﺎ ﻓﻲ ﻣﻌﺎﻭﻳﺔ ﺭﺿﻲ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻨﻪ،ﻭﻟﻴﺲ ﻓﻴﻪ ﻣﺎ ﻳﺴﺎﻋﺪﻫﻢ ﻋﻠﻰ ﺫﻟﻚ، ﻛﻴﻒ ﻭﻓﻴﻪ ﺃﻧﻪ ﻛﺎﻥ
ﻛﺎﺗﺐ ﺍﻟﻨﺒﻲ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ
কিছু গুমরাহ ফেরকারা এই হাদীসকে ভুলভাবে উপস্থাপন করতে গিয়ে হজরত মুয়াবীয়া রাযি:র নিকৃষ্টতা প্রমাণ করার চেষ্টা করে। যদিওবা এই হাদীসে এমন কোন কথা নেই যা ওনার সমালোচনার সৃষ্টি করবে। এই হাদীস থেকে মুয়াবীয়া রাযি: এর মন্দতা কিভাবে প্রমাণিত হবে..! যেখানে এটাই উল্লেখ্য যে মুয়াবীয়া রাযি: রাসূলুল্লাহ সালল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লামার কাতীবে ওহী ছিলেন।
( ﺳﻠﺴﻠﺔ ﺍﻷﺣﺎﺩﻳﺚ ﺍﻟﺼﺤﻴﺤﺔ ﻭﺷﻲﺀ ﻣﻦ ﻓﻘﻬﻬﺎ ﻭﻓﻮﺍﺋﺪﻫﺎ পৃষ্ঠা ৮২)
* সহীহ মুসলিমের আরেকটি হাদীস দেখলে বুঝতে আরেকটু সহজ হবে -
ﺣَﺪَّﺛَﻨِﻲ ﺯُﻫَﻴْﺮُ ﺑْﻦُ ﺣَﺮْﺏٍ، ﻭَﺃَﺑُﻮ ﻣَﻌْﻦٍ ﺍﻟﺮَّﻗَﺎﺷِﻲُّ – ﻭَﺍﻟﻠَّﻔْﻆُ ﻟِﺰُﻫَﻴْﺮٍ – ﻗَﺎﻻَ ﺣَﺪَّﺛَﻨَﺎ ﻋُﻤَﺮُ، ﺑْﻦُ ﻳُﻮﻧُﺲَ ﺣَﺪَّﺛَﻨَﺎ ﻋِﻜْﺮِﻣَﺔُ ﺑْﻦُ ﻋَﻤَّﺎﺭٍ، ﺣَﺪَّﺛَﻨَﺎ ﺇِﺳْﺤَﺎﻕُ ﺑْﻦُ ﺃَﺑِﻲ ﻃَﻠْﺤَﺔَ، ﺣَﺪَّﺛَﻨِﻲ ﺃَﻧَﺲُ ﺑْﻦُ ﻣَﺎﻟِﻚٍ، ﻗَﺎﻝَ ﻛَﺎﻧَﺖْ ﻋِﻨْﺪَ ﺃُﻡِّ ﺳُﻠَﻴْﻢٍ ﻳَﺘِﻴﻤَﺔٌ ﻭَﻫِﻲَ ﺃُﻡُّ ﺃَﻧَﺲٍ ﻓَﺮَﺃَﻯ ﺭَﺳُﻮﻝُ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ﺍﻟْﻴَﺘِﻴﻤَﺔَ ﻓَﻘَﺎﻝَ ” ﺁﻧْﺖِ ﻫِﻴَﻪْ ﻟَﻘَﺪْ ﻛَﺒِﺮْﺕِ ﻻَ ﻛَﺒِﺮَ ﺳِﻨُّﻚِ ” . ﻓَﺮَﺟَﻌَﺖِ ﺍﻟْﻴَﺘِﻴﻤَﺔُ ﺇِﻟَﻰ ﺃُﻡِّ ﺳُﻠَﻴْﻢٍ ﺗَﺒْﻜِﻲ ﻓَﻘَﺎﻟَﺖْ ﺃُﻡُّ ﺳُﻠَﻴْﻢٍ ﻣَﺎ ﻟَﻚِ ﻳَﺎ ﺑُﻨَﻴَّﺔُ ﻗَﺎﻟَﺖِ ﺍﻟْﺠَﺎﺭِﻳَﺔُ ﺩَﻋَﺎ ﻋَﻠَﻰَّ ﻧَﺒِﻲُّ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ﺃَﻥْ ﻻَ ﻳَﻜْﺒَﺮَ ﺳِﻨِّﻲ ﻓَﺎﻵﻥَ ﻻَ ﻳَﻜْﺒَﺮُ ﺳِﻨِّﻲ ﺃَﺑَﺪًﺍ – ﺃَﻭْ ﻗَﺎﻟَﺖْ ﻗَﺮْﻧِﻲ – ﻓَﺨَﺮَﺟَﺖْ ﺃُﻡُّ ﺳُﻠَﻴْﻢٍ ﻣُﺴْﺘَﻌْﺠِﻠَﺔً ﺗَﻠُﻮﺙُ ﺧِﻤَﺎﺭَﻫَﺎ ﺣَﺘَّﻰ ﻟَﻘِﻴَﺖْ ﺭَﺳُﻮﻝَ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ﻓَﻘَﺎﻝَ ﻟَﻬَﺎ ﺭَﺳُﻮﻝُ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ” ﻣَﺎ ﻟَﻚِ ﻳَﺎ ﺃُﻡَّ ﺳُﻠَﻴْﻢٍ ” . ﻓَﻘَﺎﻟَﺖْ ﻳَﺎ ﻧَﺒِﻲَّ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﺃَﺩَﻋَﻮْﺕَ ﻋَﻠَﻰ ﻳَﺘِﻴﻤَﺘِﻲ ﻗَﺎﻝَ ” ﻭَﻣَﺎ ﺫَﺍﻙِ ﻳَﺎ ﺃُﻡَّ ﺳُﻠَﻴْﻢٍ ” . ﻗَﺎﻟَﺖْ ﺯَﻋَﻤَﺖْ ﺃَﻧَّﻚَ ﺩَﻋَﻮْﺕَ ﺃَﻥْ ﻻَ ﻳَﻜْﺒَﺮَ ﺳِﻨُّﻬَﺎ ﻭَﻻَ ﻳَﻜْﺒَﺮَ ﻗَﺮْﻧُﻬَﺎ – ﻗَﺎﻝَ – ﻓَﻀَﺤِﻚَ ﺭَﺳُﻮﻝُ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ﺛُﻢَّ ﻗَﺎﻝَ ” ﻳَﺎ ﺃُﻡَّ ﺳُﻠَﻴْﻢٍ ﺃَﻣَﺎ ﺗَﻌْﻠَﻤِﻴﻦَ ﺃَﻥَّ ﺷَﺮْﻃِﻲ ﻋَﻠَﻰ ﺭَﺑِّﻲ ﺃَﻧِّﻲ ﺍﺷْﺘَﺮَﻃْﺖُ ﻋَﻠَﻰ ﺭَﺑِّﻲ ﻓَﻘُﻠْﺖُ ﺇِﻧَّﻤَﺎ ﺃَﻧَﺎ ﺑَﺸَﺮٌ ﺃَﺭْﺿَﻰ ﻛَﻤَﺎ ﻳَﺮْﺿَﻰ ﺍﻟْﺒَﺸَﺮُ ﻭَﺃَﻏْﻀَﺐُ ﻛَﻤَﺎ ﻳَﻐْﻀَﺐُ ﺍﻟْﺒَﺸَﺮُ ﻓَﺄَﻳُّﻤَﺎ ﺃَﺣَﺪٍ ﺩَﻋَﻮْﺕُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻣِﻦْ ﺃُﻣَّﺘِﻲ ﺑِﺪَﻋْﻮَﺓٍ ﻟَﻴْﺲَ ﻟَﻬَﺎ ﺑِﺄَﻫْﻞٍ ﺃَﻥْ ﺗَﺠْﻌَﻠَﻬَﺎ ﻟَﻪُ ﻃَﻬُﻮﺭًﺍ ﻭَﺯَﻛَﺎﺓً ﻭَﻗُﺮْﺑَﺔً ﻳُﻘَﺮِّﺑُﻪُ ﺑِﻬَﺎ ﻣِﻨْﻪُ ﻳَﻮْﻡَ ﺍﻟْﻘِﻴَﺎﻣَﺔِ
সাইয়্যিদুনা আনাস রাযি: হতে বর্ণিত,
উম্মে সুলাঈম রাযি:আনহা যিনি হজরত আনাস রাযি: এর মাতা ছিলেন। ওনার ঘরে একটা মেয়ে ছিলো। রাসূল সালল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম ঐ মেয়েটাকে দেখে বল্লেন, এটাকি তুই ? তুই তো অনেক বড় হয়ে গিয়েছিস..! তোর বয়স না বাড়ুক। এটা শোনামাত্র ঐ মেয়েটি কান্না করতে করতে উম্মে সুলাঈম রাযি:আনহার কাছে গেলো। উম্মে সুলাঈম রাযি:আনহা মেয়েটিকে জিজ্ঞেস করলেন, বেটি কি হয়েছে? মেয়েটি বল্লো আমার ব্যাপারে রাসূল সাললাল্লাহু আলাইহে ওয়াসলল্লাম বদদোয়া করেছেন যে, আমার বয়স যাতে না বাড়ে..! এখন তো আমার বয়স আর কখনই বাড়বেনা। তা শুনে উম্মে সুলাঈম রাযি:আনহা তাড়াতাড়ি নিজের চাদর মাটির সাথে লাগাতে লাগাতে রাসূলুল্লাহ সালল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লামার সামনে হাজির। রাসূলুল্লাহ সালল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম জিজ্ঞেস করলেন..উম্মে সুলাঈম.! কি হলো?
উম্মে সুলাঈম রাযি:আনহা আরজ করলেন, ইয়া রাসূলআল্লাহ.! আপনি কি ঐ মেয়েটিকে বদদোয়া দিয়েছেন যে, যাতে তাঁর বয়স না বাড়ুক? তখন রাসূল সালল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম মুচকি হেঁসে উত্তর দিলেন, হে উম্মে সুলাঈম.! আপনি কি জানেন? আমি আমার আল্লাহর কাছ হতে এই অঙ্গীকারবদ্ধ হয়েছি এবং দোয়া করেছি যে, আমি একজন মানুষ এবং মানুষেরই মত খুশি হই আবার অখুশি। যদিওবা, যে কারোই জন্য বদদোয়া করবো, যেটার সে মুখাপেক্ষী নই তবেঁ ঐ বদদোয়াটি তাঁর জন্য গুনাহ মাফের ওসীলা হিসেবে সাব্যস্ত হবে।
এবং ঐ বদদোয়াটি রোজ কেয়ামতের দিন নিজেদের মুক্তি লাভের ওসীলা হিসেবেও সাব্যস্ত হবে।
( সহীহ মুসলিম / হাদীস ২৬০৩)
* সহীহ মুসলিম শরীফের আরেকটি হাদীস লক্ষ করা যায় -
ﺣَﺪَّﺛَﻨَﺎ ﺯُﻫَﻴْﺮُ ﺑْﻦُ ﺣَﺮْﺏٍ، ﺣَﺪَّﺛَﻨَﺎ ﺟَﺮِﻳﺮٌ، ﻋَﻦِ ﺍﻷَﻋْﻤَﺶِ، ﻋَﻦْ ﺃَﺑِﻲ ﺍﻟﻀُّﺤَﻰ، ﻋَﻦْ ﻣَﺴْﺮُﻭﻕٍ، ﻋَﻦْ ﻋَﺎﺋِﺸَﺔَ، ﻗَﺎﻟَﺖْ ﺩَﺧَﻞَ ﻋَﻠَﻰ ﺭَﺳُﻮﻝِ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ﺭَﺟُﻼَﻥِ ﻓَﻜَﻠَّﻤَﺎﻩُ ﺑِﺸَﻰْﺀٍ ﻻَ ﺃَﺩْﺭِﻱ ﻣَﺎ ﻫُﻮَ ﻓَﺄَﻏْﻀَﺒَﺎﻩُ ﻓَﻠَﻌَﻨَﻬُﻤَﺎ ﻭَﺳَﺒَّﻬُﻤَﺎ ﻓَﻠَﻤَّﺎ ﺧَﺮَﺟَﺎ ﻗُﻠْﺖُ ﻳَﺎ ﺭَﺳُﻮﻝَ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﻣَﻦْ ﺃَﺻَﺎﺏَ ﻣِﻦَ ﺍﻟْﺨَﻴْﺮِ ﺷَﻴْﺌًﺎ ﻣَﺎ ﺃَﺻَﺎﺑَﻪُ ﻫَﺬَﺍﻥِ ﻗَﺎﻝَ ” ﻭَﻣَﺎ ﺫَﺍﻙِ ” . ﻗَﺎﻟَﺖْ ﻗُﻠْﺖُ ﻟَﻌَﻨْﺘَﻬُﻤَﺎ ﻭَﺳَﺒَﺒْﺘَﻬُﻤَﺎ ﻗَﺎﻝَ ” ﺃَﻭَﻣَﺎ ﻋَﻠِﻤْﺖِ ﻣَﺎ ﺷَﺎﺭَﻃْﺖُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﺭَﺑِّﻲ ﻗُﻠْﺖُ ﺍﻟﻠَّﻬُﻢَّ ﺇِﻧَّﻤَﺎ ﺃَﻧَﺎ ﺑَﺸَﺮٌ ﻓَﺄَﻯُّ ﺍﻟْﻤُﺴْﻠِﻤِﻴﻦَ ﻟَﻌَﻨْﺘُﻪُ ﺃَﻭْ ﺳَﺒَﺒْﺘُﻪُ ﻓَﺎﺟْﻌَﻠْﻪُ ﻟَﻪُ ﺯَﻛَﺎﺓً ﻭَﺃَﺟْﺮًﺍ
উম্মুল মুমীনিনা হজরত আয়শা রাযি:আনহা হতে বর্ণিত যে, দু'জন ব্যক্তি রাসূল সাললাল্লাহু আলাইহে ওয়াসালল্লামের দরবারে উপস্থিত হলেন, এবং রাসূলুল্লাহ সালল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লামার সাথে কি জেন আলাপ করলেন( রাবীর মতে)। আমি ওসব কথা বুঝতে পারিনি। ঐ'দুজন ব্যক্তির কথাগুলোর কারণে রাসূলুল্লাহ সালল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লামার রাগ আসলো এবং তিনি ঐ ব্যক্তিদের বদদোয়া দিলেন। যখন ঐ দু'জন ব্যক্তি রাসূল সালল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লামার দরবার হতে চলে গেলেন তখন আমি আরজ করলাম, ইয়া রাসূলআল্লাহ..! এতটা কষ্টও কি কেও পায়, যতটা সে পেয়েছে? রাসূলুল্লাহ সালল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম বল্লেন, কি বুঝাতে চাও? আমি ( রাবী) আরজ করলাম, আপনি ওনাদের বদদোয়া করেছেন। তখন রাসূলুল্লাহ সালল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম বল্লেন, তোমার কি ঐ অঙ্গীকার মনে নেই.! যেটা আমি আমার আল্লাহর সাথে করেছি? আমি আমার আল্লাহর সাথে এই অঙ্গীকারের আবদ্ধ হয়েছি যে, হে আল্লাহ..! আমি একজন মানুষ.! যদি আমি কোন মুসলমানের জন্য বদদোয়া করি তবেঁ সেটা তাঁর জন্য গুনাহ মাফের ওসীলা হয়ে যায়।
( সহীহ মুসলিম / হাদীস ২৬০০)
* অতএব.! প্রমাণিত হল যে, যদি রাসূল সাললল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম রেগে গিয়ে কোন সাহাবীর জন্য বদদোয়া করেন তবেঁ ঐ বদদোয়াটি ঐ সাহাবীর জন্য মাঘফেরাতের ওসীলা হয়ে দাঁড়াবে। ( সুবহানআল্লাহ)
আর এটাও স্পষ্টতর যে, হজরতে মুয়াবীয়া রাযি: এর ব্যাপারে রাসূলুল্লাহ সালল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লামার রাগ বা নারাজ হওয়ার কোণ দলিলও নেই। আচ্ছা, যদি এটা কিছুক্ষণের জন্য মানাও হয় যে, রাসূলুল্লাহ সালল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম রেগে গিয়ে হজরতে মুয়াবীয়া রাযি:কে বদদোয়া করেছেন.! তবুও উপরে উল্লেখিত সহীহ হাদীসগুলোর ভিত্তিতে হজরতে মুয়াবীয়া রাযি: এর মানাকেব তথা ফজিলতও প্রমাণিত হয়।
মুসনাদে আবু দাউদ তায়ালীসিতে তেও ঐ হাদীসের বর্ণনাও ঠিক এমনই এসেছে। ( মুসনাদ ২৮৬৯ নং হাদীস)
* দেখুন মুসনাদে আবি দাউদে লিখা আছে -
ﺣَﺪَّﺛَﻨَﺎ ﻳُﻮﻧُﺲُ ﻗَﺎﻝَ : ﺣَﺪَّﺛَﻨَﺎ ﺃَﺑُﻮ ﺩَﺍﻭُﺩَ ﻗَﺎﻝَ : ﺣَﺪَّﺛَﻨَﺎ ﻫِﺸَﺎﻡٌ، ﻭَﺃَﺑُﻮ ﻋَﻮَﺍﻧَﺔَ، ﻋَﻦْ ﺃَﺑِﻲ ﺣَﻤْﺰَﺓَ ﺍﻟْﻘَﺼَّﺎﺏِ، ﻋَﻦِ ﺍﺑْﻦِ ﻋَﺒَّﺎﺱٍ، ﺃَﻥَّ ﺭَﺳُﻮﻝَ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺳَﻠَّﻢَ ﺑَﻌَﺚَ ﺇِﻟَﻰ ﻣُﻌَﺎﻭِﻳَﺔَ ﻳَﻜْﺘُﺐُ ﻟَﻪُ ………
রাসূলুল্লাহ সালল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম হজরতে মুয়াবীয়া রাযি: এর প্রতি এই বার্তা পাঠালেন যে, রাসূলুল্লাহ সালল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লামাকে যাতে মুয়াবীয়া রাযি: ওহী লিখতে সহযোগীতা করে।
( ﻣﺴﻨﺪ ﺃﺑﻲ ﺩﺍﻭﺩ ﺍﻟﻄﻴﺎﻟﺴﻲ হাদীস ২৮৬৯)
অর্থাৎ, ঐ হাদীস হতে হজরতে মুয়াবীয়া রাযি: এর " কাতীবে ওহী " হওয়া প্রমাণিত হয়। এটি ওনার জন্য একটি বড় ফজিলত বা মানাকেবের দিকে নির্দেশ করে। এজন্য....
* ইমাম ইবনে আসাকীর রহ: এই হাদীসের ব্যাপারে লিখেন -
ﻭﺃﺻﺢ ﻣﺎ ﺭﻭﻱ ﻓﻲ ﻓﻀﻞ ﻣﻌﺎﻭﻳﺔ
হজরতে মুয়াবীয়া রাযি: এর মানাকেব বা ফজিলত সম্পর্কে সবচেয়ে সহীহ হাদীস হল এটিই।
( তারিখে দামেস্ক, ইবনে আসাকীর, ৫৯/১০৬)
* পরিশেষে, মোদ্দাকথা এটাই যে, হজরতে ইবনে আব্বাস রাযি: কর্তৃক হজরতে মুয়াবীয়া রাযি:কে রাসূলুল্লাহ সালল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম ডাকার কারণ তিনি " ﻳَﻜْﺘُﺐُ ﻟَﻪُ " ওহী লিখক। এবং এই কাজের জন্যই তিনি হজরতে মুয়াবীয়া রাযি:এর খোজ নেন। এবং হাদীসে উল্লেখ্য
“ ﻟَﺎ ﺃَﺷْﺒَﻊَ ﺍﻟﻠَّﻪُ ﺑﻄﻨﻪ "
বাক্য দ্বারা আমীরে মুয়াবিয়া রাযি: এর প্রতি বদদোয়াও প্রমাণ হয়না বরং এসব এমন বাক্য যা ইমাম নববী রহ:, ইবনে বাত্তাল রহ:, ইবনে কাসীর, ইবনে আসাকীর প্রমুখ ইমামগণ এটাকে আহলে আরবদের রসিকতা বা কৌতুকপূর্ণ বাক্যের সাথে নিসবত করেছেন যেরুপ উপরে উল্লেখিত দলিলগুলোতে পরিলক্ষিত হয়। এত স্পষ্টতর প্রমাণ থাকার পরও যদি কেও এই হাদীসকে হজরতে মুয়াবীয়া রাযি:এর মানাকেব এবং ফাজায়েলের দলিল না মানে, তবেঁ তাঁর চাইতে বড় জালেম আর মূর্খ দুনিয়াতে নেই।
আল্লাহ তাআলা আমাদের শিয়া, রাফেদ্বীদের মিথ্যাচার হতে হেফাজত করুন। আমীন।
______________________
একজন মজলুম সাহাবী এবং শিয়া, রাফেদ্বীদের মিথ্যাচার
__________________________________
আহলু সুন্নাহের দৃষ্টিতে হজরতে সাইয়্যিদুনা আমীরে মুয়াবীয়া রাযি: যিনি একাধারে সাহাবীয়ে রাসূল সালল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম, কাতেবে ওহী এবং বিজ্ঞ ফক্বীহ তথা মুফতি মুজতাহিদ সাহাবীদের অন্যতম।
* বিশ্বখ্যাত আলেম একাধারে মুফাস্সীর এবং মুহাদ্দীস আল্লামা জালালুদ্দীন সুয়ুতী রহ: তাঁর সুখ্যাত " আত তারিখুল খোলাফা " ( খলিফাদের ইতিহাস) কিতাবে খলিফা হজরতে ফারুকে আজম ওমর ইবনুল খাত্তাব রাযি: এর খিলফাতকালে হজরতে আমীরে মুয়াবীয়া রাযি:কে তাঁর যোগ্যতা, বিচক্ষণতা, ন্যায়পরতা ইত্যাদি বিবেচনা করে শা'মের আমীর হিসেবে নিয়োগ দিয়েছিলেন।
* দ্বিতীয়, তিনি ছিলেন ইসলামের তৃতীয় খলিফা উমাইয়া বংশের হজরতে ওসমান বিন আফফান রাযি: এর ভাইয়ের ছেলে অর্থাৎ আমীরে মুয়াবীয়া রাযি: এর চাচা হলেন হজরতে ওসমান জিন্নুরাঈন রাযি:।
* তৃতীয়ত, সম্প্রতি নামধারী কিছু মুসলিম তথাপি শিয়া, রাফেদ্বীরা জঙ্গে সিফফিন নিয়ে অনেকে মিথ্যা বর্ণনা রঁটিয়ে মুয়াবীয়া রাযি:কে দুশমনে আহলে বায়েত আলাইহিসালাম প্রমাণ করতে ঘৃণ্য চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে কিন্তু মাথাচাড়া দিয়ে উঠা এই ফেতনার বিরুদ্ধে আমাদের সচেতনতা একদম নেই বল্লেই চলে। শরহে মুসলিমে ইবনে হজর আসকালান রহ: লিখেন যে, হজরতে ওসমান রাযি: এর হত্যার বিচার তথা কিসাস দাবীতে তিনি খা'তায়ে ইজতেহাদীর কারণে যুদ্ধে জড়িয়ে পড়েন। তবেঁ ইমামগণ এই যুদ্ধের দায় দিয়েছেন খারেজিদের উপর। কারণ রাতের আঁধারে খারেজিরা মাওলা আলী এবং মুয়াবীয়া এর তাবুর দিকে লক্ষ করে তীঁর নিক্ষেপ করে। এতে দুদলই ভাবে যে একে অপরকে হত্যার জন্য মুয়াবীয়া আলীর দিকে আলী মুয়াবীয়ার দিকে তীঁর নিক্ষেপ করে। যার দরুন আল্লাহর অদৃশ্য ইশারায় এক রক্তক্ষয়ী যুদ্ধে দু'জন জড়িয়ে পড়ে।
যাকগে....এটাতে মাওলা আলী আলাইহিসালাম হক ছিলেন এবং মুয়াবীয়া রাযি: খাতায়ে ইজতেহাদে ছিলেন।
কিন্তু আহলে বায়েত আলাইহিসালামকে গালি দেয়া বা অন্যের দিয়ে গালাগাল দেওয়ার ব্যাপারে যেসব রেওয়ায়েত পাওয়া যায় তা সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন মুনাকার, মুনকাতি এবং দ্বয়ীফ। সেটা আমি বহু জায়গায় প্রমাণ করেছি। আর কিছু হাদীসে " تَسُبَّ " দ্বারা অনেকেই গালির অনুবাদ করতে দেখছি যেটি তাঁদের ঘৃণ্য চক্রান্ত। বরং " تَسُبَّ " দ্বারা হাদীসের শরেহীনগণ গালাগাল নেইনি বরং সমালোচনা নিয়েছেন। এটা স্বাভাবিক মাওলা আলী আলাইহিসালাম ওসমান হত্যার বিচারে পরিস্থিতির স্বীকারে ব্যর্থ হচ্ছিলেন যার ফলে উম্মুল মুমিনীন আয়েশা রাযি: হজরতে তালহা রাযি: হজরতে জুবাইর রাযি: হজরতে মুয়াবীয়া রাযি: মত জান্নাতের সুসংবাদ প্রাপ্ত সাহাবগণও কিছুটা সংকোচ বোধ করেন।
এটাকে " تَسُبَّ " তথা সমালোচনা ধরে নিয়েছেন শরেহীনগণ। গালাগাল নই। যদিওবা আমীরে মুয়াবীয়া রাযি: হতে " تَسُبَّ " বিষয়টি প্রমাণিত নই। অন্যদিকে
" তানকীস " বলে যেসব হাদীস উপস্থাপন করে শিয়া রাফেদ্বীরা সেগুলোর বিন্দুমাত্র সনদ ঠিক নেই বরং এসব তাদের বানোয়াট এবং ঘৃণ্য মিথ্যাচার।
অতএব, যে বা যারা মুয়াবীয়া রাযি: খুতবায় আহলে বায়েত আলাইহিসালামকে গালাগাল দেয়া রীতি চালু করেছিলেন বলে, মুসলিম জনমনে বিভ্রান্তিকর বিশ্বাসের জন্ম দিচ্ছেন! তাদের অনুরোধ করবো ভুলত্রুটি মার্জনা হিসেবে সেসব হাদীসের সনদ, মতন যাচাইবাছই করুন। যদি সাহাবীদের প্রতি বিদ্বেষ পোষণের উদ্দেশ্যে এহেন নিকৃষ্ট পায়তারা করে থাকেন তবেঁ আমরা আপনাদের বাহাছের চ্যালেঞ্জ দিচ্ছি। মনে রাখবেন..! আমীরে মুয়াবীয়া রাযি: এর মানাকেব, ফজিলতের পক্ষে কিন্তু একাধিক সহীহ হাদীস বিদ্যমান। সহীহ হাদীস নেই তাও অস্বীকার করা সুযোগ নেই। কারণ ইমাম আবু জাফর ত্বহাবী রহ: এর আকিদাতুত ত্বহাবী থেকে যে দলিল আপনারা মুয়াবীয়া রাযি: এর শানে সহীহ হাদীস নেই বলে দাবী করে থাকেন..! খুদ ইমাম ত্বহাবী রহ: নিজেই তাঁর সনদ বর্ণনা করেননি। অতএব, আপনাদের ইতিহাস আমাদের ভালোই জানা আছে আলহামদুলিল্লাহ্। মুখোশ উন্মোচন মাত্র শুরু।
সাহাবীদের বিরুদ্ধে জাল, বানোয়াট, মওদু যেসব বর্ণনাকে পাহাড় বানিয়ে তাঁর উপর অবস্থান করছেন। এক টাঁনে পুরো পাহাড় ধসিয়ে দেওয়া হবে ইনশাআল্লাহ্।
সাহাবীদের প্রতি বিদ্বেষ মনোভাব কখনও কুরআন, সুন্নাহ সমর্থিত নই। আহলে বায়েত আলাইহিসালামের মহব্বত দেখিয়ে সাহাবাদের সমালোচনা করা আহলুস সুন্নাহের উসূলের খেলাফ। কারণ আল্লাহর রাসূল সালল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লামা বলেন,
ذِكْرُ أصْحَابِىْ فَأمْسِكُوْا .
অর্থ : সাহাবীদের আলোচনাকালে তোমরা সংযত থেকো। (মুজামুল কবীর তাবরানী ১৪১১, হিলাইয়াতুল আউলিয়া ৪/১০৮, মাযমাউয যাওয়ায়েদ ১১৮৫১)
অতএব, আমাদের পথ এবং মত দু'টোই আল্লাহর রাসূল সালল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লামার হাদীস মোতাবেক হওয়া জরুরি এ মতাদর্শের বাইরে চলার সুযোগ নেই।
আল্লাহ পাক আমাদের শিয়া, রাফেদ্বীদের ফেতনা হতে হেফাজত করুন। আমীন।
আলী (ﺭﺿﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻨﻪ) কে গালাগাল দেয়া নিয়ে শিয়াদের অপবাদ এবং জবাব (পর্ব -১)
__________________________________
সাহাবি বিদ্বেষী লোকেরা বিশেষত, সুন্নি নামধারী রাফেজিরা আমীরে মুয়াবীয়া ﺭﺿﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻨﻪ এর প্রতি আরেকটি অপবাদ দিয়ে থাকে যে, হজরত মুগিরা ﺭﺿﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻨﻪ এর প্রতি লিখা চিঠিতে আমীরে মুয়াবীয়া ﺭﺿﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻨﻪ নাকি হজরত আলী ﺭﺿﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻨﻪ কে গালিগালাজ করেছেন। মূলত এই অপবাদের উপর তাঁরা বেশকিছু রেওয়ায়েত উপস্থাপন করলেও আফসোসের সাথে বলতে হয় একটি মাত্র রেওয়ায়েত সহীহ বা হাসান পর্যায়ের পাওয়া যায়নি। আমি একটি একটি করে রেওয়ায়েতগুলো তাহকীক আপনাদের সামনে উপস্থাপন করবো ইনশাআল্লাহ্।
মূলত হজরতে মুয়াবীয়া ﺭﺿﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻨﻪ হতে এটি কাত'আন প্রমাণিত নই যে তিনি মাওলা আলী ﺭﺿﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻨﻪ কে গালাগাল করেছেন।
এটি মূলত শিয়া, রাফেদ্বী এবং কিছু নামধারী সুন্নিদের দেয়া অপবাদ এবং মিথ্যাচার। আফসোসের সহিত বলতে হচ্ছে যাদের মাঝে শহীদে মিল্লাত নুরুল ইসলাম ফারুকি রহ: এর মেজ সন্তান এবং ছোট সন্তান অন্যতম। প্রমাণসাপেক্ষে কিছু স্ক্রিনশট দেওয়া হয়েছে এবং তাদের প্রোফাইলে গেলেও দেখতে পাবেন তাঁরা আহলে সুন্নাতের অনুসারী দাবী করেও হজরত আমীরে মুয়াবীয়াসহ অন্যান্য সাহাবীদের কিভাবে কট্টর সমালোচনা করে যাচ্ছে। সুন্নিজামাতের জন্য শায়খ আল্লামা নুরুল ইসলাম ফারুকি রহ: এর অবদান চির অবিস্মরণীয় হয়ে থাকবে। কিন্তু তাঁর এ নিঃস্বার্থ অবদানকে খুদ তাঁর সন্তানরাই আজ উম্মাহের সামনে প্রশ্নবিদ্ধ করছে! শায়খ শহীদে মিল্লাত রহ: এর শাহাদাতকে কলঙ্কিত করে তুলছে। আহলুস সুন্নাহের প্লাটফর্ম ব্যবহার করে তাঁরা প্রকাশ্যে শিয়াবাদ চর্চায় মত্ত। আমাদের ওলামাগণের অসচেতনতাই তাঁরা বহুলাংশে সফলও হচ্ছে বটে।
শিয়াবাদের ইতিহাস বিবেচনা করলে বুঝা যাবে জাল, বানোয়াট এবং ভ্রান্ত ইতিহাস তথাপি আসহাব, আসলাফ, আইম্মাদের কট্টর সমালোচনা, গালাগাল নিয়েই তাদের কর্মকাণ্ড পরিচালিত হত ; যা আজ পর্যন্ত তাদের আচারব্যবহারে পরিলক্ষিত হয়।
ঐ'সব শিয়া, রাফেদ্বীদের অনুরোধ করবো যে, তাঁরা যাতে আগে মুহাদ্দিসদের উসূল তথাপি উসূলে হাদীস, আসমাউ রিজাল শিখে আসুক। আরেকটি কথা! দালায়েল হতে হবে একমাত্র সহীহ, হাসান গ্রহণযোগ্য। বিপরীতে কোন দঈফ, কাযযাব, মাজরুহ, শিয়া রাফেজি মার্কা রাবীর বর্ণনা গ্রহণযোগ্য নই।
প্রাসঙ্গিক আলোচনাই যাওয়া যাক....
সুহাইম বিন হাফস হতে বর্ণিত,
ﺣَﺪَّﺛَﻨِﻲ ﺍﻟْﻤَﺪَﺍﺋِﻨِﻲُّ ﻋَﻦْ “ ﻋَﺒْﺪِ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﺑْﻦِ ﻓَﺎﺋِﺪٍ ﻭَﺳُﺤَﻴْﻢِ ﺑْﻦِ ﺣَﻔْﺺٍ ” ﻗَﺎﻻ : ﻛَﺘَﺐَ ﻣُﻌَﺎﻭِﻳَﺔُ ﺇِﻟَﻰ ﺍﻟْﻤُﻐِﻴﺮَﺓِ ﺑْﻦِ ﺷُﻌْﺒَﺔَ : ﺃَﻇْﻬَﺮَ ﺷَﺘْﻢَ ﻋَﻠِﻲٍّ ﻭَﺗَﻨَﻘُّﺼَﻪُ، ﻓَﻜَﺘَﺐَ ﺇِﻟَﻴْﻪِ : ﻣَﺎ ﺃُﺣِﺐُّ ﻟَﻚَ ﻳَﺎ ﺃَﻣِﻴﺮَ ﺍﻟْﻤُﺆْﻣِﻨِﻴﻦَ ﺃَﻥْ ﻛُﻠَّﻤَﺎ ﻋَﺘَﺒْﺖَ ﺗَﻨَﻘَّﺼْﺖَ، ﻭَﻛُﻠَّﻤَﺎ ﻏَﻀِﺒْﺖَ ﺿَﺮَﺑْﺖَ، ﻟَﻴْﺲَ ﺑَﻴْﻨَﻚَ ﻭَﺑَﻴْﻦَ ﺫَﻟِﻚَ ﺣَﺎﺟِﺰٌ ﻣِﻦْ ﺣِﻠْﻤِﻚَ ﻭَﻻ ﺗَﺠَﺎﻭُﺯٌ ﺑِﻌَﻔْﻮِﻙَ .
মুয়াবীয়া ﺭﺿﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻨﻪ মুগিরা ﺭﺿﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻨﻪ কে একটি চিঠি লিখলেন। যেখানে আলী ﺭﺿﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻨﻪ কে বারংবার গালাগাল দেয়া হয়েছে এবং কট্টর মন্দ কথা বলা হয়েছে। চিঠির উত্তরে হজরতে মুগিরা ﺭﺿﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻨﻪ লিখলেন, হে আমীরুল মুমিনীন..! এটি আপনার শান নই যে, আপনি এভাবে কাউকে গালাগাল এবং মন্দ কথা বলবেন, রাগ করবেন এবং মারবেন। আপনার বিবেক কি আপনাকে বাঁধা দেইনা.? আপনি ধীর স্বস্তিতে কেন কাজ করেন না..!
( ﺃﻧﺴﺎﺏ ﺍﻷﺷﺮﺍﻑ ﺍﻟﺒﻼﺫﺭﻱ ৫/২৩ )
* রেওয়ায়েতটির তাহকীক - এই বর্ণনা কয়েকটি কারণে মওজু।
প্রথমত, এই ﺃﻧﺴﺎﺏ ﺍﻷﺷﺮﺍﻑ ﻟﻠﺒﻼﺫﺭﻱ কিতাবটি প্রমাণিত নই। বরং এটি ইমাম বালাজুরি ﺭﺣﻤﻪ ﺍﻟﻠﻪ দিকে মানসুব করা হয়েছে।
* যেমন, ইমাম ইবনে কাসীর ﺭﺣﻤﻪ ﺍﻟﻠﻪ বলেন,
ﺍﻟﻤﻨﺴﻮﺏ ﺇﻟﻴﻪ
এটি ইমাম বালাজুরি ﺭﺣﻤﻪ ﺍﻟﻠﻪ এর দিকে মানসুব করা হয়েছে।
( ﺍﻟﺒﺪﺍﻳﺔ ﻭﺍﻟﻨﻬﺎﻳﺔ ১১/৭৫ )
অতএব এটি গ্রহণযোগ্য নই। এছাড়াও আরও কয়েকটি কারণ দেখা যায় -
১/ আনসাব উল আশরাফ কিতাবটির মূল বা আসল সনদ নেই।
২/ বালাজুরি থেকে এই কিতাবের রাবীর নাম অজানা।
৩/ আনসাব উল আশরাফ কিতাবের বহুসংখ্যক রেওয়ায়েত সহীহ হাদীসের খেলাফ হওয়ার কারণে এটি মুনকার এবং মওজু প্রমাণিত হয়।
যদি ধরেও নেওয়া হয় যে, এই কিতাব সহীহ.! তবুও এই রেওয়ায়েত মওজু। এটার দু'টি কারণ -
১/ প্রথমত,
ﻋَﺒْﺪِ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﺑْﻦِ ﻓَﺎﺋِﺪٍ ﻭَﺳُﺤَﻴْﻢِ ﺑْﻦِ ﺣَﻔْﺺٍ
এই দুইজন মাজহুল এবং দুজনই হজরত মুয়াবীয়া ﺭﺿﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻨﻪ এর যুগ পাইনি।
২/ দ্বিতীয়ত, বালাজুরির কাছে মুয়াবীয়া রাযি: এর বিরুদ্ধে মওজু রেওয়ায়েত ছিলো। যেমন, বালাজুরি বলেন -
ﻗَﺎﻝَ ﻟﻲ ﻫﺸﺎﻡ ﺑْﻦ ﻋﻤﺎﺭ : ﻧﻈﺮﺕ ﻓِﻲ ﺃﺣﺎﺩﻳﺚ ﻣُﻌَﺎﻭِﻳَﺔ ﻋﻨﺪﻛﻢ ﻓﻮﺟﺪﺕ ﺃﻛﺜﺮﻫﺎ ﻣﺼﻨﻮﻋًﺎ .
আমাকে হিশাম বিন আম্মার বলেছেন যে, আপনার কাছে মুয়াবীয়া ﺭﺿﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻨﻪ এর বিরুদ্ধে হাদীস রয়েছে। যার মাঝে বেশিরভাগ রেওয়ায়েতই বানোয়াট।
( ﺃﻧﺴﺎﺏ ﺍﻷﺷﺮﺍﻑ ﻟﻠﺒﻼﺫﺭﻱ ৫/৭৪ )
আমরা ঐ নামধারী সুন্নি তথাপি শিয়া, রাফেদ্বী দালালদের অনুরোধ করবো যে, বেসনদ এই কিতাবটি আগে সহীহ প্রমাণিত করো অতঃপর এই দুই রাবীর সত্যতা প্রমাণিত করো। কেয়ামত পর্যন্ত সময় দেওয়া হলো।
আল্লাহ পাক আমাদের আসহাবে আজমাঈন রাযি:গণের দোষচর্চা থেকে হেফাজত রাখুন। আমীন।
আলী (ﺭﺿﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻨﻪ) কে গালাগাল দেয়া নিয়ে শিয়াদের অপবাদ এবং জবাব (পর্ব - ২)
_________________________________
শিয়া, রাফেদ্বীরা সাহাবা ﺭﺿﻲ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻨﻪ এর বিরোধীতায় এতটাই সীমা অতিক্রম করেছে যে, সাহাবাদের ফাজায়েল সম্পর্কিত হাদীসগুলোকে খুদ সাহাবাদের বিরুদ্ধে ব্যবহার করছে এবং তাদের মতানুসারে এমন একটি হাদীস সহীহ মুসলিমেও বর্ণিত হয়েছে। কষ্ট লাগে তখন, যখন দেখা যায় এসব দলিল আমাদের জাম'আতের ( আহলুস সুন্নাহ) কিছু নামধারী সুন্নিরা! শিয়া, রাফেদ্বীদের অনুসরণ, অনুকরণে সাহাবীদের বিরুদ্ধে উপস্থাপন করছে এবং তাঁরা এটা প্রমাণ করার ঘৃণ্য অপচেষ্টা চালায় যে, সহীহ মুসলিমের ঐ হাদীসে রাসুলুল্লাহ ﷺ ক্বাতীবে ওহী, উম্মাতের মামা সাইয়্যিদুনা আমীরে মুয়াবীয়া ﺭﺿﻲ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻨﻪ কে বদ'দোয়া তথা লানত দিয়েছেন। (মাআ'জাল্লাহ)।
এই হাদীসের অপব্যাখ্যা করে শিয়া, রাফেদ্বীরা মুহাদ্দীসদের বিরুদ্ধেও ঘৃণ্য মিথ্যাচার করেছেও বটে। যে সব ব্যক্তিরা ঐ হাদীসটি পেশ করে হজরতে মুয়াবীয়া ﺭﺿﻲ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻨﻪ এর সমালোচনা বা তাকে গালমন্দ করছে! ওদের হেদায়াত কামনা এবং যারা এটা নিয়ে ভ্রান্তিজনক পরিস্থিতির স্বীকার, তাদের ভ্রান্ততা দূর করার সুবাদে আজকের এই লিখা। আল্লাহ সুবহানা ওয়াতআ'লা আমাদের সত্য গ্রহণে কবুল করুন। আমীন।
তাদের দেয়া হাদীস এবং তাঁর অনুবাদ নিম্নরূপ -
حدثنا : محمد بن المثنى العنزي ح ، وحدثنا : إبن بشار واللفظ لإبن* المثنى قالا ، حدثنا : أمية بن خالد ، حدثنا : شعبة ، عن أبي حمزة القصاب ، عن إبن عباس ، قال : كنت ألعب مع الصبيان فجاء رسول الله صلي الله عليه و سلم فتواريت خلف باب قال : فجاء فحطأني حطأة وقال : أذهب وإدع لي معاوية قال : فجئت فقلت : هو يأكل قال : ثم قال : لي أذهب فإدع لي معاوية قال : فجئت فقلت : هو يأكل فقال : لا أشبع الله بطنه قال : إبن المثنى قلت لأمية :ما حطأني قال : قفدني قفدة ، حدثني : إسحق بن منصور ، أخبرنا : النضر بن شميل ، حدثنا : شعبة ، أخبرنا : أبو حمزة سمعت إبن عباس يقولا : كنت ألعب مع الصبيان فجاء رسول الله صلي الله عليه و سلم فإختبأت منه فذكر بمثله.
হযরত ইবনে আব্বাস রাদিআল্লাহু আনহুমা থেকে হাদিস শরীফটি বর্ণিত তিনি বলেন আমি বাচ্চাদের নিয়ে খেলছিলাম নবী এসে আমাকে বললেন তুমি গিয়ে মুয়াবিয়াকে ডেকে আনো তখন আমি ডাকতে গেলাম এবং বললাম প্রিয়নবী আপনাকে ডাকছেন তখন তিনি জবাব দিলেন- আমি খাচ্ছি এখন যেতে পারবোনা। প্রিয়নবীকে এটা বলাতে আবারো আমাকে পাঠালেন তখনও তিনি বললেন আমি খাচ্ছি এখন যেতে পারবোনা অবশেষে প্রিয়নবী তাকে অভিশাপ দিয়ে বললেন "আল্লাহ তার পেট কখনো ভরাবেন না"।
( সহীহ মুসলিম -২৬০৪)
* হাদীসটির তাহকীক -
_____________________
* প্রথমত, উপরের হাদীসটি সহীহ তথা যথাযোগ্য সঠিক, কিন্তু এর অনুবাদে ঘৃণ্য মিথ্যাচার করা হয়েছে।
* দ্বিতীয়ত, শিয়া, রাফেদ্বীদের মূল বক্তব্য হল যে, রাসূলুল্লাহ সালল্লাহু আলাইহে ওয়াসাললাম এই হাদীসে হজরতে আমীরে মুয়াবীয়া রাযি: কে " لا أشبع الله بطنه " বলে লা'নত তথা অভিশাপ দিয়েছেন। ( লানাতুল্লাহে আ'লাল কাযেবীন) মিথ্যাবাদীদের উপর আল্লাহর লানত।
* হাদীসটির অনুবাদে মিথ্যাচার -
________________________
শিয়া, রাফেদ্বীরা হাদীসটিকে বানোয়াট এবং নিজেদের মত করে অনুবাদের মাধ্যমে মানুষের সামনে উপস্থাপন করে। মূলত, মুসলিম শরীফের এই হাদীসটির মূল অনুবাদের সাথে শিয়া, রাফেদ্বীদের অনুবাদের আকাশ'পাতাল বিস্তর পার্থক্য। চলুন প্রকৃত অনুবাদ দেখে নিই -
ﺣَﺪَّﺛَﻨَﺎ ﻣُﺤَﻤَّﺪُ ﺑْﻦُ ﺍﻟْﻤُﺜَﻨَّﻰ ﺍﻟْﻌَﻨَﺰِﻱُّ، ﺡ ﻭَﺣَﺪَّﺛَﻨَﺎ ﺍﺑْﻦُ ﺑَﺸَّﺎﺭٍ، – ﻭَﺍﻟﻠَّﻔْﻆُ ﻻِﺑْﻦِ ﺍﻟْﻤُﺜَﻨَّﻰ – ﻗَﺎﻻَ ﺣَﺪَّﺛَﻨَﺎ ﺃُﻣَﻴَّﺔُ ﺑْﻦُ ﺧَﺎﻟِﺪٍ، ﺣَﺪَّﺛَﻨَﺎ ﺷُﻌْﺒَﺔُ، ﻋَﻦْ ﺃَﺑِﻲ ﺣَﻤْﺰَﺓَ ﺍﻟْﻘَﺼَّﺎﺏِ، ﻋَﻦِ ﺍﺑْﻦِ ﻋَﺒَّﺎﺱٍ، ﻗَﺎﻝَ ﻛُﻨْﺖُ ﺃَﻟْﻌَﺐُ ﻣَﻊَ ﺍﻟﺼِّﺒْﻴَﺎﻥِ ﻓَﺠَﺎﺀَ ﺭَﺳُﻮﻝُ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ﻓَﺘَﻮَﺍﺭَﻳْﺖُ ﺧَﻠْﻒَ ﺑَﺎﺏٍ – ﻗَﺎﻝَ – ﻓَﺠَﺎﺀَ ﻓَﺤَﻄَﺄَﻧِﻲ ﺣَﻄْﺄَﺓً ﻭَﻗَﺎﻝَ ” ﺍﺫْﻫَﺐْ ﻭَﺍﺩْﻉُ ﻟِﻲ ﻣُﻌَﺎﻭِﻳَﺔَ ” . ﻗَﺎﻝَ ﻓَﺠِﺌْﺖُ ﻓَﻘُﻠْﺖُ ﻫُﻮَ ﻳَﺄْﻛُﻞُ – ﻗَﺎﻝَ – ﺛُﻢَّ ﻗَﺎﻝَ ﻟِﻲَ ” ﺍﺫْﻫَﺐْ ﻭَﺍﺩْﻉُ ﻟِﻲ ﻣُﻌَﺎﻭِﻳَﺔَ ” . ﻗَﺎﻝَ ﻓَﺠِﺌْﺖُ ﻓَﻘُﻠْﺖُ ﻫُﻮَ ﻳَﺄْﻛُﻞُ ﻓَﻘَﺎﻝَ ” ﻻَ ﺃَﺷْﺒَﻊَ ﺍﻟﻠَّﻪُ ﺑَﻄْﻨَﻪُ ” . ﻗَﺎﻝَ ﺍﺑْﻦُ ﺍﻟْﻤُﺜَﻨَّﻰ ﻗُﻠْﺖُ ﻷُﻣَﻴَّﺔَ ﻣَﺎ ﺣَﻄَﺄَﻧِﻲ ﻗَﺎﻝَ ﻗَﻔَﺪَﻧِﻲ ﻗَﻔْﺪَﺓً
অনুবাদ -
ইবনে আব্বাস ﺭﺿﻲ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻨﻪ থেকে বর্ণিত । তিনি বলেন , একবার আমি শিশুদের সাথে খেলছিলাম । এ সময় রাসূলুল্লাহ ﷺ সেখানে এসে উপস্থিত হলেন । আমি তখন দরজার আড়ালে লুকিয়ে রইলাম । অতঃপর নবীজি ﷺ এসে আমাকে স্নেহভরে চাপড় দিয়ে বললেন , যাও , মুয়াবীয়াকে আমার কাছে ডেকে নিয়ে এসো । ইবনে আব্বাস ﺭﺿﻲ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻨﻪ গিয়ে দেখেন যে, মুয়াবীয়া ﺭﺿﻲ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻨﻪ খাচ্ছেন। ইবনে আব্বাস ﺭﺿﻲ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻨﻪ বলেন , অতঃপর আমি নবীজী ﷺ এর কাছে ফিরে এসে বললাম , তিনি ( মূয়াবীয়া ﺭﺿﻲ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻨﻪ) খাচ্ছেন । তখন নবীজি ﷺ আবার আমাকে বললেন , আবার যাও, মূয়াবীয়াকে আমার কাছে ডেকে নিয়ে এসো। এবারও মুয়াবীয়া ﺭﺿﻲ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻨﻪকে তিনি খেতে দেখলেন, ইবনে আব্বাস ﺭﺿﻲ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻨﻪ বলেন, এবারও আমি গিয়ে ফিরে এসে বললাম , তিনি খাচ্ছেন । এ কথা শুনে রাসূলুল্লাহ ﷺ বললেন , “আল্লাহ তাঁর পেট না ভরাক ।
( 2604 صحيح مسلم)
* হাদীসটির অনুবাদে ঘৃণ্য মিথ্যাচার -
_______________________________
উল্লেখ্য যে, এই হাদীসের ( আরবী মতনানুসারে) কোথাও লিখা নেই যে, ইবনে আব্বাস ﺭﺿﻲ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻨﻪ হজরতে মুয়াবীয়া ﺭﺿﻲ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻨﻪকে এটি বলেছেন যে, আল্লাহর রাসূল ﷺ আপনাকে ডাকছেন এবং এর উত্তরে মুয়াবীয়া ﺭﺿﻲ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻨﻪ এটাও বলেননি যে, আমি খাচ্ছি এখন যেতে পারবোনা..! লানাতুল্লাহে আলাল কাযেবীন, মিথ্যাবাদীদের উপর আল্লাহর লানত। কতবড় মুনাফিক হলে অনুবাদে খেয়ানত করতে পারে তাঁর উপর ইবনে আব্বাস ﺭﺿﻲ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻨﻪ এবং হজরতে আমীরে মুয়াবীয়া ﺭﺿﻲ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻨﻪ এর উপর এতবড় তোহমৎ লাগাতে পারে। বরংচ, এই হাদীসে রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেন -
ﺍﺫْﻫَﺐْ ﻭَﺍﺩْﻉُ ﻟِﻲ ﻣُﻌَﺎﻭِﻳَﺔَ ” .
ﻗَﺎﻝَ ﻓَﺠِﺌْﺖُ ﻓَﻘُﻠْﺖُ ﻫُﻮَ ﻳَﺄْﻛُﻞ "
যাও মুয়াবীয়াকে ডেকে নিয়ে আসো। ইবনে আব্বাস ﺭﺿﻲ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻨﻪ গিয়ে দেখেন যে, মুয়াবীয়া ﺭﺿﻲ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻨﻪ খাচ্ছেন, তাই তিনি ফিরে এসে বল্লেন যে, তিনি খাচ্ছেন। আবারও আল্লাহর রাসূল ﷺ বলেন,
ﺛُﻢَّ ﻗَﺎﻝَ ﻟِﻲَ ” ﺍﺫْﻫَﺐْ ﻭَﺍﺩْﻉُ ﻟِﻲ ﻣُﻌَﺎﻭِﻳَﺔَ ” . ﻗَﺎﻝَ ﻓَﺠِﺌْﺖُ ﻓَﻘُﻠْﺖُ ﻫُﻮَ ﻳَﺄْﻛُﻞ
যাও আবারও ডেকে আসো... এবারও ইবনে আব্বাস ﺭﺿﻲ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻨﻪ দেখেন যে, মুয়াবীয়া ﺭﺿﻲ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻨﻪ খাচ্ছেন। তাই তিনি ফিরে এসে বল্লেন, তিনি খাচ্ছেন। অতঃপর রাসূলুল্লাহ ﷺ বল্লেন, ﻓَﻘَﺎﻝَ ” ﻻَ ﺃَﺷْﺒَﻊَ ﺍﻟﻠَّﻪُ ﺑَﻄْﻨَﻪُ ” আল্লাহ তাঁর পেট না ভরাক।
অতএব, এই হাদীসে কোথাও প্রমাণ হয়না যে, হজরতে ইবনে আব্বাস ﺭﺿﻲ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻨﻪ মুয়াবীয়া ﺭﺿﻲ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻨﻪ কে গিয়ে এই খবর দিলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ তাকে ডাকছেন বা এটাও প্রমাণ হয়না যে, মুয়াবীয়া ﺭﺿﻲ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻨﻪ উত্তরে, " আমি খাচ্ছি, এখন যেতে পারবোনা " বলেছেন। এমন কোন বক্তব্যও হাদীসে উল্লেখ নেই। মূর্খরা হাদীস বুঝেনা ওরা এটাও দেখেনা যে, ইবনে আব্বাস ﺭﺿﻲ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻨﻪ মুয়াবীয়া ﺭﺿﻲ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻨﻪকে ডাকেনি বরং তিনি হজরতে মুয়াবীয়া ﺭﺿﻲ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻨﻪকে খেতে দেখে ফিরে আসেন। যদি হজরতে মুয়াবীয়া ﺭﺿﻲ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻨﻪকে ইবনে আব্বাস ﺭﺿﻲ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻨﻪ রাসূলুল্লাহ ﷺ ডাকার ব্যাপারটা জানাতেন তবেঁ অবশ্যই হজরতে মুয়াবীয়া ﺭﺿﻲ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻨﻪ এর বক্তব্যটাও ইমাম মুসলিম রহ: এই হাদীসে আনতেন বরং কথা হয়েছে রাসূলুল্লাহ ﷺ এবং ইবনে আব্বাস ﺭﺿﻲ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻨﻪ এর মাঝে। যেমনটা আমি তাহকীক করে দেখালাম।
অতএব হাদীসটিতে স্পষ্টতরভাবে বুঝা গেলো, হজরতে আমীরে মুয়াবীয়া ﺭﺿﻲ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻨﻪ রাসূলুল্লাহ ﷺ তাকে ডাকার ব্যাপারটা জানতেন না। কারণ ইবনে আব্বাস ﺭﺿﻲ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻨﻪ মুয়াবীয়া ﺭﺿﻲ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻨﻪকে খেতে দেখে ফিরে আসেন। এবার হয়তোবা কৌতূহলজনক প্রশ্ন জাগতে পারে আপনাদের..! যদি আমীরে মুয়াবীয়া ﺭﺿﻲ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻨﻪ নাই বা জানতেন যে, রাসূলুল্লাহ ﷺ তাকে ডাকছেন! তবেঁ কেনইবা আল্লাহর রাসূল ﷺ মুয়াবীয়া রাযি:কে ” ﻻَ ﺃَﺷْﺒَﻊَ ﺍﻟﻠَّﻪُ ﺑَﻄْﻨَﻪُ ” তথা " আল্লাহ তাঁর পেট না ভরাক " বল্লেন..?
* হাদীসে রাসূলুল্লাহ সাললল্লাহু আলাইহে মুয়াবীয়া রাযি:কে " ” ﻻَ ﺃَﺷْﺒَﻊَ ﺍﻟﻠَّﻪُ ﺑَﻄْﻨَﻪُ ” তথা " আল্লাহ তাঁর পেট না ভরাক " বলার কারণ -
_____________________________
* ইমাম নববী রহ: এই সম্পর্কে লিখেন -
ﺃَﻥَّ ﻣَﺎ ﻭَﻗَﻊَ ﻣِﻦْ ﺳَﺒِّﻪِ ﻭَﺩُﻋَﺎﺋِﻪِ ﻭَﻧَﺤْﻮِﻩِ ﻟَﻴْﺲَ ﺑِﻤَﻘْﺼُﻮﺩٍ ﺑَﻞْ ﻫُﻮَ ﻣِﻤَّﺎ ﺟَﺮَﺕْ ﺑِﻪِ ﻋَﺎﺩَﺓُ ﺍﻟْﻌَﺮَﺏِ ﻓِﻲ ﻭَﺻْﻞِ ﻛَﻠَﺎﻣِﻬَﺎ ﺑِﻠَﺎ ﻧِﻴَّﺔٍ ﻛَﻘَﻮْﻟِﻪِ ﺗَﺮِﺑَﺖْ ﻳَﻤِﻴﻨُﻚَ ﻭﻋَﻘْﺮَﻯ ﺣَﻠْﻘَﻰ ﻭَﻓِﻲ ﻫَﺬَﺍ ﺍﻟْﺤَﺪِﻳﺚِ ﻟَﺎ ﻛَﺒِﺮَﺕْ ﺳِﻨُّﻚِ ﻭَﻓِﻲ ﺣَﺪِﻳﺚِ ﻣُﻌَﺎﻭِﻳَﺔَ ﻟَﺎ ﺃَﺷْﺒَﻊَ ﺍﻟﻠَّﻪُ ﺑﻄﻨﻪ ﻭﻧﺤﻮ ﺫﻟﻚ ﻻ ﻳﻘﺼﺪﻭﻥ ﺑﺸﺊ ﻣِﻦْ ﺫَﻟِﻚَ ﺣَﻘِﻴﻘَﺔَ ﺍﻟﺪُّﻋَﺎﺀِ
যেসব হাদীসে ( সাহাবাদের ব্যাপারে) রাসূল ﷺ যে " বদ'দোয়া " বুঝা যায়, মূলত সেগুলো ঐ'রকম বাক্য যা আরব লোকেরা অনর্থকতা বা রসিকতাছলে বলতো। যেমন, একটা হাদীসে কোন একজন সাহাবী ﺭﺿﻲ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻨﻪকে তালিম দিতে গিয়ে রাসূল ﷺ বল্লেন, ﺗَﺮِﺑَﺖْ ﻳَﻤِﻴﻨُﻚَ তোমার ডান হাতের অমঙ্গল হোক বা একবার উম্মুলমুমীনিনা আম্মাজান আয়েশা রাযি: এর উদ্দিশ্যে রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেন, ﻭﻋَﻘْﺮَﻯ ﺣَﻠْﻘَﻰ বা ﻟَﺎ ﻛَﺒِﺮَﺕْ ﺳِﻨُّﻚِ তোমার বয়স না বাড়ুক এবং সাইয়্যিদুনা মুয়াবীয়া ﺭﺿﻲ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻨﻪ এর ব্যাপারে রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেন “ ﻟَﺎ ﺃَﺷْﺒَﻊَ ﺍﻟﻠَّﻪُ ﺑﻄﻨﻪ অর্থাৎ আল্লাহ তাআলা তাঁর পেট না ভরাক, মূলত এসব ঐরকম পর্যায়ের যে, আহলে আরবগণ যা " বদদোয়া " হিসেবে মুরাদ নিতেন না।
( শরহে সহীহ মুসলিম ১৬/১৫২)
এবার হয়তো শিয়া, রাফেদ্বীদের প্রশ্ন থাকতে পারে যে, তবেঁ কেন ইমাম মুসলিম রহ; এই হাদীসকে " বাবুল লানাত " তথা লানত অধ্যায়ে উল্লেখ করলেন....! সে বিষয়ে ইমাম নববী রহ: লিখেন -
ﻭَﻗَﺪْ ﻓَﻬِﻢَ ﻣُﺴْﻠِﻢٌ ﺭَﺣِﻤَﻪُ ﺍﻟﻠَّﻪُ ﻣِﻦْ ﻫَﺬَﺍ ﺍﻟْﺤَﺪِﻳﺚِ ﺃَﻥَّ ﻣُﻌَﺎﻭِﻳَﺔَ ﻟَﻢْ ﻳَﻜُﻦْ ﻣُﺴْﺘَﺤِﻘًّﺎ ﻟِﻠﺪُّﻋَﺎﺀِ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻓَﻠِﻬَﺬَﺍ ﺃَﺩْﺧَﻠَﻪُ ﻓِﻲ ﻫَﺬَﺍ ﺍﻟﺒﺎﺏ ﻭﺟﻌﻠﻪ ﻏﻴﺮﻩ ﻣﻦ ﻣﻨﺎﻗﺐ ﻣﻌﺎﻭﻳﺔﻻﻧﻪ ﻓِﻲ ﺍﻟْﺤَﻘِﻴﻘَﺔِ ﻳَﺼِﻴﺮُ ﺩُﻋَﺎﺀً ﻟَﻪُ
ইমাম মুসলিম রহ: এই হাদীস থেকে এটাই বের করেছেন যে, হজরত ﺭﺿﻲ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻨﻪ " লানত" এর মুখাপেক্ষী ছিলেন না। এটার একমাত্র কারণ হতে পারে যে, ইমাম মুসলিম রহ: এই হাদীসকে ঐ বা'বে উল্লেখ করেছেন। তবেঁ ইমাম মুসলিম রহ: ছাড়া অধিকাংশ আহলে ইলমগণ এই হাদীসকে মুয়াবীয়া ﺭﺿﻲ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻨﻪ এর মানাকেব বা ফজিলত অধ্যায়ে অন্তর্ভুক্ত করেছেন। কারণ আল্লাহ রাসূল ﷺ এই বাক্যটি সত্যিকারে মুয়াবীয়া ﺭﺿﻲ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻨﻪর জন্য দোয়া হিসেবে বিবেচিত হয়েছিলো।
( শরহে সহীহ মুসলিম ১৬/১৫৬)
* আল্লামা হাাফিজ ইবনে কাছীর রহ: মুসলিম শরীফের এই হাদীসটির ব্যাপারে লিখেন -
ﻓَﺮَﻛَّﺐَ ﻣُﺴْﻠِﻢٌ ﻣِﻦَ ﺍﻟْﺤَﺪِﻳﺚِ ﺍﻟْﺄَﻭَّﻝِ ﻭَﻫَﺬَﺍ ﺍﻟْﺤَﺪِﻳﺚِ ﻓَﻀِﻴﻠَﺔً ﻟِﻤُﻌَﺎﻭِﻳَﺔَ ،
ইমাম মুসলিম রহ: এই হাদীসকে প্রথম হাদীসের তুলনায় পরে এনেছেন। এবং এই হাদীস থেকে সায়্যিদুনা মুয়াবীয়া ﺭﺿﻲ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻨﻪ এর ফজিলত প্রমাণিত হয়।
( ﺍﻟﺒﺪﺍﻳﺔ ﻭﺍﻟﻨﻬﺎﻳﺔ 8/120 )
* ইবনে বাত্তাল রহ; এমন একটি রেওয়ায়েতের ব্যাখ্যার লিখেন -
ﻫﻰ ﻛﻠﻤﺔ ﻻ ﻳﺮﺍﺩ ﺑﻬﺎ ﺍﻟﺪﻋﺎﺀ، ﻭﺇﻧﻤﺎ ﺗﺴﺘﻌﻤﻞ ﻓﻰ ﺍﻟﻤﺪﺡ ﻛﻤﺎ ﻗﺎﻟﻮﺍ ﻟﻠﺸﺎﻋﺮ ﺇﺫﺍ ﺃﺟﺎﺩ : ﻗﺎﺗﻠﻪ ﺍﻟﻠﻪ ﻟﻘﺪ ﺃﺟﺎﺩ
মূলত, এসব এমন বাক্য যা দ্বারা " বদ'দোয়া " মুরাদ নই। এগুলো শুধু মাত্র সুনাম করার অর্থে ব্যবহার করা হয়। যেমন, কোন শায়ের যখন সুন্দর করে শে'র পড়ে তখন আরবীয়রা বলে যে, আল্লাহ তাকে মারুক! সে কত সুন্দর শে'র পড়লো।
( শরহে সহীহ বুখারী ৯/ ৩২৯)
* আবু মানসুর মুহাম্মদ বিন আহমদ রহ: এই সম্পর্কে লিখেন -
ﮬﺬﺍ ﻋﻠﯽ ﻣﺬﮬﺐ ﺍﻟﻌﺮﺏ ﻓﯽ ﺍﻟﺪﻋﺎ ﻋﻠﯽ ﺍﻟﺸﯽﺀ ﻣﻦ ﻏﯿﺮ ﺍﺭﺍﺩۃﻟﻮﻗﻮﻋﮧ , ﻻ ﯾﺮﺍﺩ ﺑﮧ ﺍﻟﻮﻗﻮﻉ
এমন বাক্যগুলো আরবীয়দের মাঝে এভাবে প্রচলিত যে, যেখানে তাঁরা কারো ব্যাপারে বদদোয়ার মত শব্দ করে কিন্তু এখানে সেই ইচ্ছে ( বদদোয়া) থাকতো না অর্থাৎ বদদোয়া কবুল হওয়ার চিন্তা আনতো না।
( ﺗﻬﺬﻳﺐ ﺍﻟﻠﻐﺔ ১/১৪৫ )
* লা'মাজহাবীদের শায়খুল মুহাদ্দীস জনাব আলবানী সাহেবও এই হাদীসের মূল রহস্য বুঝেছিলেন। শুধু বুঝলো না শিয়া খবিসরা। আলবানী এ সম্পর্কে লিখেন -
ﻭﻗﺪ ﻳﺴﺘﻐﻞ ﺑﻌﺾ ﺍﻟﻔﺮﻕ ﻫﺬﺍ ﺍﻟﺤﺪﻳﺚ ﻟﻴﺘﺨﺬﻭﺍ ﻣﻨﻪ ﻣﻄﻌﻨﺎ ﻓﻲ ﻣﻌﺎﻭﻳﺔ ﺭﺿﻲ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻨﻪ،ﻭﻟﻴﺲ ﻓﻴﻪ ﻣﺎ ﻳﺴﺎﻋﺪﻫﻢ ﻋﻠﻰ ﺫﻟﻚ، ﻛﻴﻒ ﻭﻓﻴﻪ ﺃﻧﻪ ﻛﺎﻥ
ﻛﺎﺗﺐ ﺍﻟﻨﺒﻲ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ
কিছু গুমরাহ ফেরকারা এই হাদীসকে ভুলভাবে উপস্থাপন করতে গিয়ে হজরত মুয়াবীয়া ﺭﺿﻲ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻨﻪর নিকৃষ্টতা প্রমাণ করার চেষ্টা করে। যদিওবা এই হাদীসে এমন কোন কথা নেই যা ওনার সমালোচনার সৃষ্টি করবে। এই হাদীস থেকে মুয়াবীয়া ﺭﺿﻲ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻨﻪ এর মন্দতা কিভাবে প্রমাণিত হবে..! যেখানে এটাই উল্লেখ্য যে মুয়াবীয়া ﺭﺿﻲ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻨﻪ রাসূলুল্লাহ সালল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লামার কাতীবে ওহী ছিলেন।
( ﺳﻠﺴﻠﺔ ﺍﻷﺣﺎﺩﻳﺚ ﺍﻟﺼﺤﻴﺤﺔ ﻭﺷﻲﺀ ﻣﻦ ﻓﻘﻬﻬﺎ ﻭﻓﻮﺍﺋﺪﻫﺎ পৃষ্ঠা ৮২)
* সহীহ মুসলিমের আরেকটি হাদীস দেখলে বুঝতে আরেকটু সহজ হবে -
ﺣَﺪَّﺛَﻨِﻲ ﺯُﻫَﻴْﺮُ ﺑْﻦُ ﺣَﺮْﺏٍ، ﻭَﺃَﺑُﻮ ﻣَﻌْﻦٍ ﺍﻟﺮَّﻗَﺎﺷِﻲُّ – ﻭَﺍﻟﻠَّﻔْﻆُ ﻟِﺰُﻫَﻴْﺮٍ – ﻗَﺎﻻَ ﺣَﺪَّﺛَﻨَﺎ ﻋُﻤَﺮُ، ﺑْﻦُ ﻳُﻮﻧُﺲَ ﺣَﺪَّﺛَﻨَﺎ ﻋِﻜْﺮِﻣَﺔُ ﺑْﻦُ ﻋَﻤَّﺎﺭٍ، ﺣَﺪَّﺛَﻨَﺎ ﺇِﺳْﺤَﺎﻕُ ﺑْﻦُ ﺃَﺑِﻲ ﻃَﻠْﺤَﺔَ، ﺣَﺪَّﺛَﻨِﻲ ﺃَﻧَﺲُ ﺑْﻦُ ﻣَﺎﻟِﻚٍ، ﻗَﺎﻝَ ﻛَﺎﻧَﺖْ ﻋِﻨْﺪَ ﺃُﻡِّ ﺳُﻠَﻴْﻢٍ ﻳَﺘِﻴﻤَﺔٌ ﻭَﻫِﻲَ ﺃُﻡُّ ﺃَﻧَﺲٍ ﻓَﺮَﺃَﻯ ﺭَﺳُﻮﻝُ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ﺍﻟْﻴَﺘِﻴﻤَﺔَ ﻓَﻘَﺎﻝَ ” ﺁﻧْﺖِ ﻫِﻴَﻪْ ﻟَﻘَﺪْ ﻛَﺒِﺮْﺕِ ﻻَ ﻛَﺒِﺮَ ﺳِﻨُّﻚِ ” . ﻓَﺮَﺟَﻌَﺖِ ﺍﻟْﻴَﺘِﻴﻤَﺔُ ﺇِﻟَﻰ ﺃُﻡِّ ﺳُﻠَﻴْﻢٍ ﺗَﺒْﻜِﻲ ﻓَﻘَﺎﻟَﺖْ ﺃُﻡُّ ﺳُﻠَﻴْﻢٍ ﻣَﺎ ﻟَﻚِ ﻳَﺎ ﺑُﻨَﻴَّﺔُ ﻗَﺎﻟَﺖِ ﺍﻟْﺠَﺎﺭِﻳَﺔُ ﺩَﻋَﺎ ﻋَﻠَﻰَّ ﻧَﺒِﻲُّ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ﺃَﻥْ ﻻَ ﻳَﻜْﺒَﺮَ ﺳِﻨِّﻲ ﻓَﺎﻵﻥَ ﻻَ ﻳَﻜْﺒَﺮُ ﺳِﻨِّﻲ ﺃَﺑَﺪًﺍ – ﺃَﻭْ ﻗَﺎﻟَﺖْ ﻗَﺮْﻧِﻲ – ﻓَﺨَﺮَﺟَﺖْ ﺃُﻡُّ ﺳُﻠَﻴْﻢٍ ﻣُﺴْﺘَﻌْﺠِﻠَﺔً ﺗَﻠُﻮﺙُ ﺧِﻤَﺎﺭَﻫَﺎ ﺣَﺘَّﻰ ﻟَﻘِﻴَﺖْ ﺭَﺳُﻮﻝَ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ﻓَﻘَﺎﻝَ ﻟَﻬَﺎ ﺭَﺳُﻮﻝُ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ” ﻣَﺎ ﻟَﻚِ ﻳَﺎ ﺃُﻡَّ ﺳُﻠَﻴْﻢٍ ” . ﻓَﻘَﺎﻟَﺖْ ﻳَﺎ ﻧَﺒِﻲَّ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﺃَﺩَﻋَﻮْﺕَ ﻋَﻠَﻰ ﻳَﺘِﻴﻤَﺘِﻲ ﻗَﺎﻝَ ” ﻭَﻣَﺎ ﺫَﺍﻙِ ﻳَﺎ ﺃُﻡَّ ﺳُﻠَﻴْﻢٍ ” . ﻗَﺎﻟَﺖْ ﺯَﻋَﻤَﺖْ ﺃَﻧَّﻚَ ﺩَﻋَﻮْﺕَ ﺃَﻥْ ﻻَ ﻳَﻜْﺒَﺮَ ﺳِﻨُّﻬَﺎ ﻭَﻻَ ﻳَﻜْﺒَﺮَ ﻗَﺮْﻧُﻬَﺎ – ﻗَﺎﻝَ – ﻓَﻀَﺤِﻚَ ﺭَﺳُﻮﻝُ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ﺛُﻢَّ ﻗَﺎﻝَ ” ﻳَﺎ ﺃُﻡَّ ﺳُﻠَﻴْﻢٍ ﺃَﻣَﺎ ﺗَﻌْﻠَﻤِﻴﻦَ ﺃَﻥَّ ﺷَﺮْﻃِﻲ ﻋَﻠَﻰ ﺭَﺑِّﻲ ﺃَﻧِّﻲ ﺍﺷْﺘَﺮَﻃْﺖُ ﻋَﻠَﻰ ﺭَﺑِّﻲ ﻓَﻘُﻠْﺖُ ﺇِﻧَّﻤَﺎ ﺃَﻧَﺎ ﺑَﺸَﺮٌ ﺃَﺭْﺿَﻰ ﻛَﻤَﺎ ﻳَﺮْﺿَﻰ ﺍﻟْﺒَﺸَﺮُ ﻭَﺃَﻏْﻀَﺐُ ﻛَﻤَﺎ ﻳَﻐْﻀَﺐُ ﺍﻟْﺒَﺸَﺮُ ﻓَﺄَﻳُّﻤَﺎ ﺃَﺣَﺪٍ ﺩَﻋَﻮْﺕُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻣِﻦْ ﺃُﻣَّﺘِﻲ ﺑِﺪَﻋْﻮَﺓٍ ﻟَﻴْﺲَ ﻟَﻬَﺎ ﺑِﺄَﻫْﻞٍ ﺃَﻥْ ﺗَﺠْﻌَﻠَﻬَﺎ ﻟَﻪُ ﻃَﻬُﻮﺭًﺍ ﻭَﺯَﻛَﺎﺓً ﻭَﻗُﺮْﺑَﺔً ﻳُﻘَﺮِّﺑُﻪُ ﺑِﻬَﺎ ﻣِﻨْﻪُ ﻳَﻮْﻡَ ﺍﻟْﻘِﻴَﺎﻣَﺔِ
সাইয়্যিদুনা আনাস ﺭﺿﻲ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻨﻪ হতে বর্ণিত,
উম্মে সুলাঈম রাযি:আনহা যিনি হজরত আনাস রাযি: এর মাতা ছিলেন। ওনার ঘরে একটা মেয়ে ছিলো। রাসূল ﷺ ঐ মেয়েটাকে দেখে বল্লেন, এটাকি তুই ? তুই তো অনেক বড় হয়ে গিয়েছিস..! তোর বয়স না বাড়ুক। এটা শোনামাত্র ঐ মেয়েটি কান্না করতে করতে উম্মে সুলাঈম রাযি:আনহার কাছে গেলো। উম্মে সুলাঈম রাযি:আনহা মেয়েটিকে জিজ্ঞেস করলেন, বেটি কি হয়েছে? মেয়েটি বল্লো আমার ব্যাপারে রাসূল ﷺ বদদোয়া করেছেন যে, আমার বয়স যাতে না বাড়ে..! এখন তো আমার বয়স আর কখনই বাড়বেনা। তা শুনে উম্মে সুলাঈম রাযি:আনহা তাড়াতাড়ি নিজের চাদর মাটির সাথে লাগাতে লাগাতে রাসূলুল্লাহ ﷺ এর সামনে হাজির। রাসূলুল্লাহ ﷺ জিজ্ঞেস করলেন..উম্মে সুলাঈম.! কি হলো?
উম্মে সুলাঈম রাযি:আনহা আরজ করলেন, ইয়া রাসূলআল্লাহ ﷺ আপনি কি ঐ মেয়েটিকে বদদোয়া দিয়েছেন যে, যাতে তাঁর বয়স না বাড়ুক? তখন রাসূল ﷺ মুচকি হেঁসে উত্তর দিলেন, হে উম্মে সুলাঈম.! আপনি কি জানেন? আমি আমার আল্লাহর কাছ হতে এই অঙ্গীকারবদ্ধ হয়েছি এবং দোয়া করেছি যে, আমি একজন মানুষ এবং মানুষেরই মত খুশি হই আবার অখুশি। যদিওবা, যে কারোই জন্য বদদোয়া করবো, যেটার সে মুখাপেক্ষী নই তবেঁ ঐ বদদোয়াটি তাঁর জন্য গুনাহ মাফের ওসীলা হিসেবে সাব্যস্ত হবে। ( আলহামদুলিল্লাহ্)
এবং ঐ বদদোয়াটি রোজ কেয়ামতের দিন নিজেদের মুক্তি লাভের ওসীলা হিসেবেও সাব্যস্ত হবে। ( আলহামদুলিল্লাহ্)
( সহীহ মুসলিম / হাদীস ২৬০৩)
* সহীহ মুসলিম শরীফের আরেকটি হাদীস লক্ষ করা যায় -
ﺣَﺪَّﺛَﻨَﺎ ﺯُﻫَﻴْﺮُ ﺑْﻦُ ﺣَﺮْﺏٍ، ﺣَﺪَّﺛَﻨَﺎ ﺟَﺮِﻳﺮٌ، ﻋَﻦِ ﺍﻷَﻋْﻤَﺶِ، ﻋَﻦْ ﺃَﺑِﻲ ﺍﻟﻀُّﺤَﻰ، ﻋَﻦْ ﻣَﺴْﺮُﻭﻕٍ، ﻋَﻦْ ﻋَﺎﺋِﺸَﺔَ، ﻗَﺎﻟَﺖْ ﺩَﺧَﻞَ ﻋَﻠَﻰ ﺭَﺳُﻮﻝِ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ﺭَﺟُﻼَﻥِ ﻓَﻜَﻠَّﻤَﺎﻩُ ﺑِﺸَﻰْﺀٍ ﻻَ ﺃَﺩْﺭِﻱ ﻣَﺎ ﻫُﻮَ ﻓَﺄَﻏْﻀَﺒَﺎﻩُ ﻓَﻠَﻌَﻨَﻬُﻤَﺎ ﻭَﺳَﺒَّﻬُﻤَﺎ ﻓَﻠَﻤَّﺎ ﺧَﺮَﺟَﺎ ﻗُﻠْﺖُ ﻳَﺎ ﺭَﺳُﻮﻝَ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﻣَﻦْ ﺃَﺻَﺎﺏَ ﻣِﻦَ ﺍﻟْﺨَﻴْﺮِ ﺷَﻴْﺌًﺎ ﻣَﺎ ﺃَﺻَﺎﺑَﻪُ ﻫَﺬَﺍﻥِ ﻗَﺎﻝَ ” ﻭَﻣَﺎ ﺫَﺍﻙِ ” . ﻗَﺎﻟَﺖْ ﻗُﻠْﺖُ ﻟَﻌَﻨْﺘَﻬُﻤَﺎ ﻭَﺳَﺒَﺒْﺘَﻬُﻤَﺎ ﻗَﺎﻝَ ” ﺃَﻭَﻣَﺎ ﻋَﻠِﻤْﺖِ ﻣَﺎ ﺷَﺎﺭَﻃْﺖُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﺭَﺑِّﻲ ﻗُﻠْﺖُ ﺍﻟﻠَّﻬُﻢَّ ﺇِﻧَّﻤَﺎ ﺃَﻧَﺎ ﺑَﺸَﺮٌ ﻓَﺄَﻯُّ ﺍﻟْﻤُﺴْﻠِﻤِﻴﻦَ ﻟَﻌَﻨْﺘُﻪُ ﺃَﻭْ ﺳَﺒَﺒْﺘُﻪُ ﻓَﺎﺟْﻌَﻠْﻪُ ﻟَﻪُ ﺯَﻛَﺎﺓً ﻭَﺃَﺟْﺮًﺍ
উম্মুল মুমীনিনা হজরত আয়শা রাযি:আনহা হতে বর্ণিত যে, দু'জন ব্যক্তি রাসূল ﷺ দরবারে উপস্থিত হলেন, এবং রাসূলুল্লাহ সালল্লাহু ﷺ সাথে কি জেন আলাপ করলেন( রাবীর মতে)। আমি ওসব কথা বুঝতে পারিনি। ঐ'দুজন ব্যক্তির কথাগুলোর কারণে রাসূলুল্লাহ ﷺ রাগ আসলো এবং তিনি ঐ ব্যক্তিদের বদদোয়া দিলেন। যখন ঐ দু'জন ব্যক্তি রাসূল ﷺ এর দরবার হতে চলে গেলেন তখন আমি আরজ করলাম, ইয়া রাসূলআল্লাহ ﷺ এতটা কষ্টও কি কেও পায়, যতটা সে পেয়েছে? রাসূলুল্লাহ ﷺ বল্লেন, কি বুঝাতে চাও? আমি ( রাবী) আরজ করলাম, আপনি ওনাদের বদদোয়া করেছেন। তখন রাসূলুল্লাহ ﷺ বল্লেন, তোমার কি ঐ অঙ্গীকার মনে নেই.! যেটা আমি আমার আল্লাহর সাথে করেছি? আমি আমার আল্লাহর সাথে এই অঙ্গীকারের আবদ্ধ হয়েছি যে, হে আল্লাহ..! আমি একজন মানুষ.! যদি আমি কোন মুসলমানের জন্য বদদোয়া করি তবেঁ সেটা তাঁর জন্য গুনাহ মাফের ওসীলা হয়ে যায়।
( সহীহ মুসলিম / হাদীস ২৬০০)
* অতএব.! প্রমাণিত হল যে, যদি রাসূল ﷺ রেগে গিয়ে কোন সাহাবীর জন্য বদদোয়া করেন তবেঁ ঐ বদদোয়াটি ঐ সাহাবীর জন্য মাগফিরাতের ওসীলা হয়ে দাঁড়াবে। ( সুবহানআল্লাহ)
আর এটাও স্পষ্টতর যে, হজরতে মুয়াবীয়া ﺭﺿﻲ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻨﻪ এর ব্যাপারে রাসূলুল্লাহ ﷺ রাগ বা নারাজ হওয়ার কোণ দলিলও নেই। আচ্ছা, যদি এটা কিছুক্ষণের জন্য মানাও হয় যে, রাসূলুল্লাহ ﷺ রেগে গিয়ে হজরতে মুয়াবীয়া ﺭﺿﻲ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻨﻪকে বদদোয়া করেছেন.! তবুও উপরে উল্লেখিত সহীহ হাদীসগুলোর ভিত্তিতে হজরতে মুয়াবীয়া রাযি: এর মানাকেব তথা ফজিলতও তথাপি কেয়ামতে তাঁর জন্য ওসীলা হয়ে দাঁড়াবে।
মুসনাদে আবু দাউদ তায়ালীসিতে তেও ঐ হাদীসের বর্ণনাও ঠিক এমনই এসেছে। ( মুসনাদ ২৮৬৯ নং হাদীস)
* দেখুন মুসনাদে আবি দাউদে লিখা আছে -
ﺣَﺪَّﺛَﻨَﺎ ﻳُﻮﻧُﺲُ ﻗَﺎﻝَ : ﺣَﺪَّﺛَﻨَﺎ ﺃَﺑُﻮ ﺩَﺍﻭُﺩَ ﻗَﺎﻝَ : ﺣَﺪَّﺛَﻨَﺎ ﻫِﺸَﺎﻡٌ، ﻭَﺃَﺑُﻮ ﻋَﻮَﺍﻧَﺔَ، ﻋَﻦْ ﺃَﺑِﻲ ﺣَﻤْﺰَﺓَ ﺍﻟْﻘَﺼَّﺎﺏِ، ﻋَﻦِ ﺍﺑْﻦِ ﻋَﺒَّﺎﺱٍ، ﺃَﻥَّ ﺭَﺳُﻮﻝَ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺳَﻠَّﻢَ ﺑَﻌَﺚَ ﺇِﻟَﻰ ﻣُﻌَﺎﻭِﻳَﺔَ ﻳَﻜْﺘُﺐُ ﻟَﻪُ ………
রাসূলুল্লাহ ﷺ হজরতে মুয়াবীয়া ﺭﺿﻲ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻨﻪ এর প্রতি এই বার্তা পাঠালেন যে, রাসূলুল্লাহ ﷺকে যাতে মুয়াবীয়া রাযি: ওহী লিখতে সহযোগীতা করেন।
( ﻣﺴﻨﺪ ﺃﺑﻲ ﺩﺍﻭﺩ ﺍﻟﻄﻴﺎﻟﺴﻲ হাদীস ২৮৬৯)
অর্থাৎ, ঐ হাদীস হতে হজরতে মুয়াবীয়া রাযি: এর " কাতীবে ওহী " হওয়া প্রমাণিত হয়। এটি ওনার জন্য একটি বড় ফজিলত বা মানাকেবের দিকে নির্দেশ করে। এজন্য....
* ইমাম ইবনে আসাকীর রহ: এই হাদীসের ব্যাপারে লিখেন -
ﻭﺃﺻﺢ ﻣﺎ ﺭﻭﻱ ﻓﻲ ﻓﻀﻞ ﻣﻌﺎﻭﻳﺔ
হজরতে মুয়াবীয়া ﺭﺿﻲ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻨﻪ এর মানাকেব বা ফজিলত সম্পর্কে সবচেয়ে সহীহ হাদীস হল এটিই।
( তারিখে দামেস্ক, ইবনে আসাকীর, ৫৯/১০৬)
* পরিশেষে, মোদ্দাকথা এটাই যে, হজরতে ইবনে আব্বাস রাযি: কর্তৃক হজরতে মুয়াবীয়া ﺭﺿﻲ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻨﻪকে রাসূলুল্লাহ ﷺ ডাকার কারণ তিনি " ﻳَﻜْﺘُﺐُ ﻟَﻪُ " ওহী লিখতে যাতে সহযোগীতা করেন এবং এই কাজের জন্যই তিনি হজরতে মুয়াবীয়া ﺭﺿﻲ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻨﻪএর খোজ নেন। এবং হাদীসে উল্লেখ্য
“ ﻟَﺎ ﺃَﺷْﺒَﻊَ ﺍﻟﻠَّﻪُ ﺑﻄﻨﻪ "
বাক্য দ্বারা আমীরে মুয়াবিয়া ﺭﺿﻲ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻨﻪ এর প্রতি বদদোয়াও প্রমাণ হয়না বরং এসব এমন বাক্য যা ইমাম নববী রহ:, ইবনে বাত্তাল রহ:, ইবনে কাসীর, ইবনে আসাকীর প্রমুখ ইমামগণ এটাকে আহলে আরবদের রসিকতা বা কৌতুকপূর্ণ বাক্যের সাথে নিসবত করেছেন এবং আল্লার রাসূল ﷺ নিজেই বলেছেন, যদি আমি কোন মুসলমানের জন্য বদদোয়া করি তবেঁ সেটা তাঁর জন্য গুনাহ মাফের ওসীলা হয়ে যায়।
( সহীহ মুসলিম / হাদীস ২৬০০)
যদিওবা সেটি লানত বা বদদোয়া ছিলোনা। যেরুপ উপরে উল্লেখিত দলিলগুলোতে পরিলক্ষিত হয়। এত স্পষ্টতর প্রমাণ থাকার পরও যদি কেও এই হাদীসকে হজরতে মুয়াবীয়া ﺭﺿﻲ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻨﻪ এর মানাকেব এবং ফাজায়েলের দলিল না মানে, তবেঁ তাঁর চাইতে বড় জালেম আর মূর্খ দুনিয়াতে নেই।
আল্লাহ তাআলা আমাদের শিয়া, রাফেদ্বীদের মিথ্যাচার হতে হেফাজত করুন। আমীন।
________ সমাপ্ত ________
Comments
Post a Comment