আদদৌলাতুল মক্কীয়াহ বিল মাদ্দাতিল গায়বিয়াহ্।
(ইলমে গায়ব বিষয়ক অদ্বিতীয় গ্রন্থ)
মূলঃ ঈমামে আহলে সুন্নাত আ’লা হযরত ঈমাম আহমদ রেযা খান ফাযেলী বেরলভী (رحمة الله)
অনুবাদঃ আবু সাঈদ মুহাম্মদ ইউসুফ জিলানী।
উৎসর্গ
শ্রদ্ধেয়,
আব্বা-আম্মা ও উস্তাদ মহোদয়গণকে যাদের দোয়া ও অনুপ্রেরণায় এ গ্রন্থখানা অনুদিত।
অভিমত
শতাব্দীর মােজাদ্দেদ ইমামে আহলে সুন্নাত, আ'লা হযরত ইমাম আহমদ রেযা খান বেরলভীর (رحمة الله) ক্ষুরধার লেখনী সঞ্জাত সহস্রাধিক অকাট্য কিতাব সুন্নী জাহান তথা সত্য সন্ধানী মুসলিম সমাজের জন্য অমূল্য সম্পদ ও নির্ভুল দিশারী। তারই লিখিত “আদ-দৌলাতুল মক্কীয়্যাহ্ বিল মাদ্দাতিল গায়বিয়্যাহ্’ হচ্ছে ঐসব কিতাবের মধ্যে অত্যন্ত প্রসিদ্ধ ও অতি উচ্চমানের।
কিতাবটার বঙ্গানুবাদ হওয়া দীর্ঘদিনের চাহিদাই ছিলাে। উদীয়মান সাহিত্যিক, আহলে সুন্নাতের নিষ্কলুষ আদর্শ প্রচারে একান্ত উৎসুক আমার স্নেহভাজন মুহাম্মদ ইউসুফ জিলানী এ কিতাবখানার বঙ্গানুবাদ করে যুগের চাহিদা পূরণে আপ্রাণ প্রচেষ্টা চালিয়েছে।
আমি যতটুকু দেখেছি-কিতাবটার অনুবাদ সরল ও শুদ্ধ পেয়েছি। কিতাবখানা প্রকাশিত ও বহুলভাবে প্রচারিত হলে বাংলাভাষীগণ এক অতি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে সঠিক দিশার সন্ধান পাবে।
আমি আ’লা হযরতের রফ’ই দরজাত এবং অমূল্য পুস্তিকার বঙ্গানুবাদক ও প্রকাশকদের সর্বাঙ্গীন উন্নতি আর বইটি বহুল প্রচার কামনা করছি।
আমীন।
(কাজী মােহাম্মদ নূরুল ইসলাম হাশেমী)
প্রতিষ্ঠাতা আঞ্জুমানে মুহিব্বানে রসুল গাউছিয়া জিলানী কমিটি।
_____________________________________
খতীবে আহলে সুন্নাত, শাইখুল হাদীস ওয়াত তাফসীর, উসতাযুল উলামা, - হযরতুল আল্লামা অধ্যক্ষ আলহাজ্ব জালালুদ্দীন আল-কাদেরী
মাদ্দাজিলুল আলী-এর
অভিমত
ইমামে আহলে সুন্নাত, মােজাদ্দেদে দ্বীন ও মিল্লাত, আ'লা হযরত, শাহ ইমাম আহমদ রেযা খান বেরলভী (رحمة الله)-এর বিশ্ব আলােড়ন সৃষ্টিকারী অমূল্য, অদ্বিতীয় ও তুলনাহীন গ্রন্থ ‘আদদৌলাতুল মক্কীয়াহ্ বিল মাদ্দাতিল গায়বিয়াহ বাংলায় প্রকাশিত হতে দেখে আমি খুবই আনন্দিত হয়েছি। মূল আরবী ইবারতের সাথে যথাযথ সামঞ্জস্য রেখে সরল ও প্রাঞ্জল ভাষার মাধ্যমে অনুবাদক লেখকের ভাব মূর্তিকে ফুটিয়ে তুলতে সক্ষম হয়েছেন। আমি যতটুকু দেখেছি অনুবাদ বিশুদ্ধ ও সুন্দর পেয়েছি।
আহলে সুন্নাত ওয়াল জমাতের আকীদায় বিশ্বাসীদের জন্য এটা নিঃসন্দেহের সু-সংবাদ
বাংলা ভাষায় অনুদিত এ গ্রন্থটি সর্বসাধারণ মুসলিম ছাড়াও দেশের মাদ্রাসা ছাত্রদের অধ্যয়নের ব্যাপারে বিশেষভাবে উপকৃত করবে।
আমি গ্রন্থখানার বহুল প্রচার এবং অনুবাদকের দীর্ঘায়ু কামনা করি।
(মােহাম্মদ জালাল উদ্দীন আল-কাদেরী)
প্রকাশকের নিবেদন
আলহামদু লিল্লাহ ওয়াশুক্রু লিল্লাহ, আযকা সালাতী-সালামী লিরাসুল্লিাল্লাহ, আকা সালাতী- সালামী লিহাবীবিল্লাহ্। হাবিবুল্লাহ (ﷺ) কে নিজ জীবনের চেয়ে অধিক ভালবাসতে না পারলে জীবন অর্থহীন হয়ে যায়। যদি আকীদা ঠিক না থাকে তবে আমলতাে কোন কাজে আসবে না।
এ বই পড়ে হাবিবুল্লাহ (ﷺ) সম্পর্কে জানার ক্ষেত্রে কোন ভুল থাকলে তা সংশােধন হবে এবং তাঁর শান-মান সম্পর্কে উচ্চ ধারণা সৃষ্টি হবে এ আশায় এ পুস্তক প্রকাশনায় সাথে যুক্ত হয়েছি।
এর প্রকাশনায় যারা যেভাবে সাহায্য সহযােগিতা করেছেন তাদের সকলের প্রতি ধন্যবাদ এবং কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করছি। বিশেষত ইসলামী আন্দোলনের অন্যতম সংগঠক বিশিষ্ট্য ইসলামী চিন্তাবিদ গবেষক জনাব স,উ,ম আবদুস সামাদ ভাই যিনি আমার ও অনুবাদকের মাঝে সেতু হিসাবে কাজ করেছেন। এই বই বিক্রির সমুদয় অর্থ ইমামুত তরীকত মুহিউস সুন্নাহ হযরত শেখ মুহাম্মদ বােরহান উদ্দিন (رحمة الله) এর স্বপ্ন ও প্রস্তাবিত আল-ওয়াইসিয়া ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের ফান্ডে উৎসর্গ করছি। কোন প্রকার ভূল ত্রুটি সম্পর্কে জানালে আনন্দিত হব।
সালামান্তে
মুহাম্মদ সরওয়ার হােসাইন
_________________________________
সংক্ষিপ্ত লেখক পরিচিতিঃ
ভারতীয় উপমহাদেশের ইতিহাসে হাতে গােনা যে কয়জন অসাধারণ কৃতিত্বের অধিকারী, ক্ষনজন্মা কালজয়ী মহামনীষীর পদচারণা পরিলক্ষিত হয়, ত্রয়ােদশ শতাব্দীর মুজাদ্দিদ, ইমামে আহলে সুন্নাত, শাহ্ আহমদ মুহাম্মদ রেযা খান বেরলভী (رحمة الله) তন্মধ্যে অন্যতম। তদানিন্তনকালে ইসলাম বিদ্বেষী বাতিলরা যখন মুসলমানদের ধ্বংস করার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত ঠিক সেই মুহুর্তে আল্লাহ তায়ালা সত্যের আলােকবর্তিকা রূপে তাকে প্রেরণ করলেন।
তিনি একাধারে আলিম, হাফিজ, ক্বারী, মুহাদ্দিস, মােফাসসির, মুফতি, পন্ডিত, দার্শনিক, ভাষাবিদ, সাহিত্যিক, চিন্তাবিদ, শিক্ষাবিদ, গবেষক, সংস্কারক, কবি, কলম সম্রাট, অপ্রতিদ্বন্দ্বী মুনাযির, শ্রেষ্ঠতম বক্তা, বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী, সর্বোপরি তিনি হলেন জ্ঞান-বিজ্ঞানের “এনসাইক্লোপিডিয়া”। আলা হযরত ১০ই শাওয়াল ১২৭২ হিজরী, ১৪ই জুন মােতাবেক ১৮৫৬ ইংরেজী ভারতের (ইউপি) বেরলী শহরে শনিবার জোহরের সময় জন্ম গ্রহণকরেন। তিনি নিজেই আরবী সংখ্যাতাত্ত্বিক গাণিতিক সূত্রের (আবজাদ) মাধ্যমে আল্লাহ তায়ালার এ বাণী “তারা হচ্ছেন সেসব ব্যক্তি, যাদের হৃদয়ে আল্লাহ তায়ালা ঈমানের চিত্র অংকন করেছেন এবং নিজ পক্ষ থেকে রুহ' দ্বারা তাদেরকে সাহায্য করেছেন”। (সুরা মুজাদালাহ্) হতে স্বীয় জন্মসাল ১২৭২ হিজরী বের করেছেন। তাঁর পিতামহ মাওলানা রেযা আলী খান তাঁর নাম রাখেন মুহাম্মদ আহমদ রেযা খান। তার মহিয়সী মাতা পরম স্নেহের সাথে ডাকতেন “আমান মিয়া” পিতা ডাকতেন আহমদ মিঞা। রাসুল প্রেমের নিদর্শন স্বরূপ তিনি স্বীয় নামের পূর্বে আবদুল মােস্তফা সংযােজন করেছেন। তিনি ১২৭৬ হিজরী মােতাবেক ১৮৬০ সাল মাত্র ৪ বছর বয়সে পবিত্র কুরআন সমাপ্ত করেন। এরপর প্রাথমিক শিক্ষা লাভ করেন তার সম্মানিত পিতার তত্ত্বাবধানেই। এ ছাড়া তিনি যে সকল ওস্তাদগণ থেকে শিক্ষার্জন করেছেন মাওলানা আবদুল আলীম রামপুরী, মাওলানা মির্জা গােলাম বেগ প্রমুখ অন্যতম। ১২ই রবিউল আওয়াল, ১২৭৮ হিঃ পবিত্র জশনে ঈদে মীলাদুন্নবী (ﷺ) উপলক্ষে আয়ােজিত মহাসমাবেশে এক হৃদয়গ্রাহী বক্তৃতা দিয়ে সকল আলােচক ও শ্রোতাকে হতবাক করে দেন। ৮ বছর বয়সেই আরবী ব্যাকরণের বিখ্যাত গ্রন্থ হেদায়তুন্নাহু” পাঠ সমাপ্ত করেন এবং আরবীতে আরেকটি শরাহ (ব্যাখ্যা) লিখেন। এ হিসেবে এটা তাঁর সর্বপ্রথম লিখিত পুস্তক। আরাে বিস্ময়ের ব্যাপার হলাে মাত্র ১৩ বছর ১০ মাস ৪ দিনে তিনি সর্ববিষয়ের জ্ঞান লাভ করে ১২৮৬ হিঃ ১৮৬৯ সালের ১৪ ই সাবান দস্তারে ফজিলত লাভ করেন। আরাে আশ্চার্যের বিষয় যে, যেদিন তিনি শেষ বর্ষ সনদ লাভ করেন সে দিনই বালক হন। (সুবহানাল্লাহ) সে দিনই তিনি স্তন্যদান সম্পর্কিত একটি জটিল বিষয়ে ফতােয়া প্রদান করেন। তাঁর দক্ষতার পরিচয় পেয়ে তার পিতা নক্বী আলী খান তার উপর ফতােয়া প্রদানের দায়িত্বভার প্রদান করেন।'
আ’লা হযরত (رحمة الله) লিখার জগতে একজন শ্রেষ্ঠতম ও সফলতম ব্যক্তিত্ব। জ্ঞান-বিজ্ঞানের প্রায় সব বিষয়ে তিনি কলম ধরেছেন। ৭২টিরও বেশী বিষয়ের উপর প্রায় ১৫০০-এর অধিক কিতাব তিনি প্রণয়ন করেছেন। শুধুমাত্র ওহাবীদের ভ্রান্ত ধারণা খন্ডনে তিনি ২০০-এর অধিক গ্রন্থ রচনা করেন। এ মহান কলম সম্রাট ও মহান ব্যক্তিত্ব ১৩৪ হিজরী সালে ২৫শে সফর ১৯২১ খৃষ্টাব্দে রােজ জুমাবার ২টা ৩৮ মিনিটে মাওলায়ে হাকিকীর সান্নিধ্যে চলে যান। আল্লাহ তায়ালা তার কবরকে নুরে রহমত দ্বারা পরিপূর্ণ করুন।
দৌলাতুল মক্কীয়াহ রচনার প্রেক্ষাপটঃ
১৩২৩ হিজরী মােতাবেক খৃষ্টাব্দের ২০ই ফেব্রুয়ারী আছর নামাজ পড়ে আ’লা হযরত হেরম শরীফের কুতুবখখানার দিকে যাচ্ছিলেন, সিঁড়ির দিকে উঠতেই তাঁর যেন কেউ আসছে মনে হলাে। তিনি পেছনের দিকে ফিরলেন, দেখলেন রঈসুল ওলামা মৌলানা সালেহ কামাল (رحمة الله)। সালাম ও মােসাফাহা পর্ব শেষান্তে উভয়ে গ্রন্থাগারের দফতরে গিয়ে বসলেন। সেসময়ে অন্যান্য ওলামা কেরাম ছাড়াও সৈয়দ ইসমাঈল এবং তাঁর ভাই সৈয়দ মৌলানা মােস্তফা, তাঁদের পিতা মৌলানা সৈয়দ খলীল শরীফও' তাশরীফ নিয়েছিলেন। হযরত মাওলানা সালেহ কামাল পকেট থেকে এক টুকরাে কাগজ বের করলেন যাতে ইলমে গায়ব (অদৃশ্য জ্ঞান) বিষয়ক পাঁচটি প্রশ্ন ছিলাে, যার উত্তর তিনি সবেমাত্র আরম্ভ করেছিলেন। আ’লা হযরতের বক্তব্য ও তার জ্ঞানের বিশালতা দেখে তিনি সেগুলাে তাঁর নিকট হস্তান্তর করে বললেন, এ প্রশ্নগুলাে ওহাবীরা শরীফ আলী পাশার মাধ্যমে পাঠিয়েছেন, -“আপনি এগুলাের জবাব পদান করুন। আ’লা হ্যরত জবাব প্রদানের জন্য তৎক্ষণাৎ তৈরি করে গেলেন। তিনি সৈয়দ মােস্তফাকে বললেন দোয়াত-কলম দিন। মৌলানা সালেহ কামাল, মৌলানা সৈয়দ ইসমাইল ও মৌলানা সৈয়দ খলীল বললেন, আমরা এমন দ্রুত সংক্ষিপ্ত জবাবের প্রত্যাশি নই। বরং এমন জবাব চাই যদ্বারা ভ্রষ্ট ওহাবীদের স্বরূপ উন্মাচিত হয়ে যায়। আ’লা হযরত এমন জবাবের জন্য কিছু সময় চেয়ে বললেন, যেন দিনের মাত্র দু'ঘন্টা বাকী এত স্বল্প সময়ে কি করা যায়? মৌলানা সালেহ কামাল বললেন, কাল মঙ্গলবার আর পরশু বুধবার এ দু’দিনে আপনি জবাব পুর্ণ করুন। আমরা আপনার থেকে বৃহস্পতিবারই তা চাই যেন শুক্রবার শরীফ সাহেবের সামনে পেশ করতে পারি। আ’লা হযরত আল্লাহ ও রাসুলের উপর ভরসা করে তা লেখার অঙ্গীকার করেন এবং জবাব লেখা আরম্ভ করেন। এদিকে মক্কা শরীফে এ গুজব সৃষ্টি হলাে যে, ওহাবীরা ইলমে গায়বের উপর প্রশ্ন করেছেন আর আ’লা হযরত এর জবাব লিখছেন। এখনও দৌলাতুল মৃক্কীয়াহ্ প্রথম ভাগ শেষ হয়নি, দ্বিতীয় ভাগ লেখা হচ্ছে, এমতাবস্থায় হযরত শরীফ সাহেবের মাধ্যমে স্থানীয় আলিম মৌলানা আহমদ আবুল খায়র মােরদাদ-এর পয়গাম পৌছালাে যে, আমি চলাফেরা করতে অক্ষম, আপনার লিখিত দৌলাতুল মক্কীয়াহ্ শুনতে চাই। আ’লা হযরত তাঁর নিকট তশরীফ নিলেন এবং এ কিতাবের লিখিত অংশ, তাঁকে *শুনালেন। তিনি আশা প্রকাশ করেন যেন তাতে ‘পঞ্চ অদৃশ্য জ্ঞানের বিষয়ও অন্তর্ভূক্ত করা হয়। আ’লা হযরত বললেন, এ বিষয়ে কোন প্রশ্ন ছিলােনা বিধায় আমি তা সংযােজন করিনি। বিদায়ের সময় সম্মানার্থে তাঁর উরু মােবারকে হাত রাখলেন। তিনি আবেগ আপ্লোত কণ্ঠে বলে উঠলেন আনা ইক্বাবেবলু আরজুলাকুম, আনা উক্বাবেবলু নিয়া'লেকুম' অর্থাৎ আমি আপনার কদমবুচি করবাে, আপনার জুতা চুমু খাবাে। অতঃপর আ’লা হযরত সেখান থেকে নিজের অবস্থানে চলে আসলেন, আর রাত্রেই ‘পঞ্চ অদৃশ্য জ্ঞান সম্পর্কিত অধ্যায় সংযােজন করলেন।
' দ্বিতীয় দিন বুধবার তিনি যখন সকালে হেরম শরীফ থেকে নামাজ পড়ে বের হলেন, তখন মাওলানা সৈয়দ আবদুল হাই ইবনে মাওলানা সৈয়দ আবদুল কবীর-এর খাদেমের পয়গাম আসলাে যে,তিনি তাঁর সাক্ষাৎ প্রার্থী। মাওলানা আবদুল হাই সে মহান ব্যক্তিত্ব যিনি সে সময় শুধুমাত্র হাদীস বিষয়ে ৪০টি গ্রন্থ লিখেছেন যা মিশরে প্রকাশিত হয়েছিলাে। আ’লা হযরত তাঁর অঙ্গীকার এবং দৌলাতুল মক্কীয়ার বাকী কাজ সমাপ্তের কথা চিন্তা করে অপারগতা প্রকাশ করে বললেন, আমি আজ ক্ষমা চাই, আরেকদিন আমি নিজেই তার সাথে সাক্ষাৎ করবাে। খাদেম চলে গেলেন। পুনরায় এসে বললেন, মৌলানা আবদুল হাই সাহেব আজই মদীনায় চলে যাচ্ছেন। আজ জোহরের পর তিনি মদীনার দিকে রওয়ানা হবেন। অপারগ হয়ে তিনি তাকে আসার অনুমতি প্রদান করেন। তিনি এসে আ’লা হযরত থেকে ইলমে হাদীসের অনুমতি চেয়ে তা লিখে নেন। অনেক্ষণ আলাপ-আলােচনার পর তিনি মদীনায় রওয়ানা দেন। এ দিনের অধিকাংশ সময়ও এভাবেই কেটে গেলাে। কিন্তু আল্লাহর অনুগ্রহ এ দিন ঈশারের নামজের পর তিনি তা সমাপ্ত করেন। দু’দিনের ৪ ঘন্টা করে মাত্র ৮ ঘন্টায় ‘দৌলাতুল মক্কীয়াহ’ লিখে আলোড়ন সৃষ্টি করেন। ‘ইলমে গায়ব' বিষয়ক এ অদ্বিতীয় গ্রন্থ ওহাবীদের মৃত্যুডঙ্কা বাজিয়ে দিলাে, নবীর দোষমণদের মুখ চিরতরে বন্ধ করে দিলােপ্রকৃত পক্ষে এ গ্রন্থ আ’লা হযরত (رحمة الله)-এর একটি জিন্দা কারামত। মাত্র ৮ ঘন্টায় এমন বৃহৎ তথ্যনির্ভর জ্ঞান-বিজ্ঞান ও সাহিত্যে অতুলনীয় গ্রন্থ রচনা করে সমগ্র আরব-আজমের ওলামাদের নিরােত্তর করে দিলেন। তিনি তীব্র রােদের তাপে কোন কিতাবের সাহায্য ব্যতীত শুধুমাত্র স্বীয় প্রভুর সাহায্যে নির্ভর করে কুরআন, হাদীস, তাফসীর, ফিক্হ ও ওলামায়ে কেরামের কিতাবাদির মূল বক্তব্য সহকারে যে কিতাব রচনা করেন তা সত্যিই বিস্ময়কর এবং এটা আ’লা।
*হযরতের আল্লাহর প্রতি দৃঢ় বিশ্বাস রাসুলে পাক (ﷺ) এর বিশেষ অনুগ্রহের বহিঃপ্রকাশ এবং আল্লাহ তায়ালার বিশেষ জ্ঞান (ইলমে লাদুন্নী)। আমাদেরকে এ মহান ইমামের অনুসরণের তাওফীক দান করুন।
ইলমে গায়েব সম্পর্কে আল্লাহ ও রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর প্রতি আহলুস সুন্নাহর আকিদাঃ
বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম
حمد و مصلى على رسوله الكريم
- সকল প্রশংসা আল্লাহ তায়ালার জন্য, যিনি যাবতীয় গায়ব (অদৃশ্য বস্তু) সমূহ পরিপূর্ণরূপে জ্ঞাত, পাপসমূহের মার্জনাকারী, দোষ-ত্রুটিসমূহ গােপনকারী, গােপন রহস্যাদি স্বীয় পছন্দনীয় রাসুলগণের নিকট প্রকাশকারী। আর উৎকৃষ্টতম দরুদ ও সালাম তাঁর উপর, যিনি সকল পছন্দনীয়দের চাইতেও অধিকতর পছন্দনীয়, সকল প্রিয়দের চেয়ে অধিকতর প্রিয়, গায়ব সম্পর্কে অবগতকারীদের সরদার, যাঁকে তাঁর মহান প্রতিপালক ভালরূপে শিক্ষা প্রদান করেছেন। তাঁর উপর আল্লাহর করুণা অসীম! তিনি সকল গায়েবের বিশ্বস্ত রক্ষক, গায়বের সংবাদ দিতে তিনি কৃপণতা করেন না। আর না তিনি স্বীয় প্রতিপালকের ইহসান থেকে উদাসীন রয়েছেন, যার কারণে যা কিছু গত হয়েছে অথবা ভবিষ্যতে সংঘটিত হবে তা তাঁর কাছে গােপন থাকবে। সুতরাং তিনি ফেরেস্তাদের স্বচক্ষে প্রত্যক্ষকারী এবং আল্লাহ তায়ালার সত্তা ও গুণাবলীকে এমনভাবে প্রত্যক্ষকারী যে, না তাঁর চক্ষু অবনত হয়েছে, আর না সীমাতিক্রম করেছে। এতদসত্বেও কি যা কিছু তিনি দর্শন করেছেন তাতে তােমরা তাঁর সাথে ঝগড়া করবে? " আল্লাহ তায়ালা তাঁর উপর কুরআন অবতীর্ণ করেছেন, যা প্রত্যেক কিছুর বিবরণ সম্বলিত। অতএব, তিনি পূর্বাপর সকল কিছুর জ্ঞান বেষ্টন করে নিয়েছেন। আর এমন জ্ঞানও যার কোন সীমা নেই, গণনা সে পর্যন্ত পৌছতে অসমর্থ। সমগ্র জাহানে যা কেউই জানেন না! এমনকি হযরত আদম (আঃ)-এর জ্ঞানসমূহ ও সকল সৃষ্টির জ্ঞান এবং লাওহ-কলম ইত্যাদি সকল কিছুর জ্ঞান মিলে আমাদের প্রিয় নবী (ﷺ)-এর জ্ঞানের সমুদ্রের একটি বিন্দু মাত্র। কেননা, হুজুর (ﷺ) এর জ্ঞানের পরিধি ধারণার বহু উর্ধ্বে। তার উপর আল্লাহর দরুদ ও সালাম। তার জ্ঞান ঐ অসীম সমুদ্র অর্থাৎ আল্লাহ্ তায়ালার চিরস্থায়ী জ্ঞানের সবচেয়ে বড় বিচ্ছুরণ এবং মহানতর অঞ্জলি স্বরূপ।
সুতরাং হুজুর(ﷺ) স্বীয় প্রতিপালকের সাহায্য নেন, আর সমগ্র জাহান হুজুর (ﷺ) থেকে সাহায্য নেন। আর জ্ঞানীর কাছে যে জ্ঞান তা হুজুর সৈয়দে আলম(ﷺ)-এর জ্ঞান থেকেই এবং হুজুর(ﷺ) এর কারণে, তাঁর কাছ থেকে অর্জিত হয়েছে এবং তার (ﷺ) থেকেই নেয়া হয়েছে।
যেমন কসীদায়ে বােরদায় আল্লামা ইমাম শরফুদ্দীন বুসিরী (رحمة الله) কত সুন্দরভাবে ছন্দের মাধ্যমে বলেছেনঃ
نموا من البحر أو رشقا من الديم
وكلهم من رسول أله ملست وأوقفون لديه عندحدهم من نقطة العلم ومنشطة الحكم
অর্থাৎ প্রত্যেকেই রাসুলুল্লাহ (ﷺ)-এর জ্ঞান সমুদ্র থেকে এক অঞ্জলি অথবা তার রহমতের বৃষ্টি থেকে এক চুমুক (রহমত) প্রার্থী। সকলেই সরকারে রিসালত থেকে নিজ নিজ পদ মর্যাদানুযায়ী পরিস্তান অবহিত হয়, রাসুলে সৈয়দে আলম (ﷺ)-এর জ্ঞানের একটি বিন্দু অথবা তার জ্ঞান-বিজ্ঞানের স্বরচিহ্ন অর্থাৎ। রাসুলে ইলম ও হিকমত এতই ব্যাপক যে, প্রত্যেকের জ্ঞান-বিজ্ঞানের সম্পর্ক তার সম্মুখে; তাইও যে সম্পর্ক কিতাবের সাথে আরবী স্বরচিহ্ন ও জের জবরের। তার বংশধর ও ছাহাবীদের উপর বরকত সমূহ ও সম্মান প্রেরণ করুন। আমীন!
আদ-দৌলাতুল মাক্কীয়া কিতাব রচনার রহস্যঃ
সালাত ও সালামের পর, আমি পবিত্র মক্কা মােকাররমায় অবস্থানকালে আমার নিকট রাসুলে সরওয়ারে কাউনাইন(ﷺ)-এর জ্ঞান সম্পর্কিত কতেক হিন্দুস্থানীদের পক্ষ থেকে ২৫শে জিলহজ্ব ১৩২৩ হিজরী সােমবার দিবসে আসরের সময় একটি প্রশ্ন উত্থাপিত হলাে। আমার ধারণা ঐ প্রশ্ন সেসব ওহাবীদের উত্থাপিত যারা অন্তর খুলে আল্লাহ ও তাঁর রাসুলকে গালি দেয় এবং হিন্দুস্থানে তাদের কিতাবসমূহে প্রচার করে। কেননা, কোন সুন্নীর কোন মাসয়ালার প্রয়ােজন হলে তারা ওলামায়ে কেরাম থেকে জিজ্ঞেস করে নেবেন এটাতাে আল্লাহর নিরাপদ নগর, আল্লাহরই প্রশংসা যে, জ্ঞান ও জ্ঞানী দ্বারা এটা পরিপূর্ণ। যে ব্যক্তি উপচে পড়া সমুদ্রের নিকটে অবস্থান করে, সে একটি নহরের উদ্বৃত্ত অংশের নিকট কেন যাবে? এছাড়াও আমাদের সরদার মক্কা মােকাররমার আলিমবৃন্দ (আল্লাহ তাদের হেফাজত করুন) নবীয়ে করীম (ﷺ) এর জ্ঞানের মাসআলা এবং অন্যান্য যে মাসআলাসমূহে অত্যাচারী ওহাবীরা মতবিরােধ করে, দু’একবার নয়, বারংবার এগুলাে সুস্পষ্টভাবে বর্ণনা করে দিয়েছেন এবং মরীচিকা পরিষ্কার করেছেন, সৌন্দর্য প্রদান করেছেন, দোষ-ত্রুটি মিটিয়ে দিয়েছেন এবং ওহাবীদের উপর মৃত্যুঘন্টা বাজিয়েছেন।
এ নগন্য বান্দা আপন শক্তিমান ও সৌন্দর্যময় প্রতিপালকের করুণায় বাপ দাদা তথা পূর্ব-পুরুষদের প্রদর্শিত সুন্নাতের খেদমতে রয়েছি এবং ওহাবীদের উপর কিয়ামত কায়েমরত রয়েছি। (তাদের খন্ডনে) আমি দু’শতেরও বেশী গ্রন্থ রচনা করেছি। আর তাদের গুরুদের দু'-চার বার নয় বরং অনেক বার মুনাজারার দাওয়াত দিয়েছি। কিন্তু তারা কেউ প্রত্যুত্তর দেয়নি, তারা হতভম্বই রয়ে গেছে, বরং এসব ব্যক্তিরা যারা আমাদের প্রিয়নবীর শানে অপবাদ দেয়, আমাদের মহান। “প্রতিপালক মিথ্যা বলতে পারে বলে অপবাদ দেয়। সুতরাং তারা পলায়ন করেছে, ভীত সন্ত্রস্ত হয়েছে, মরে গেছে এবং ধ্বংস হয়েছে। আর যারা অবশিষ্ট আছে তারাও ইনশাআল্লাহ দেখবে যে, কিংকর্তব্যবিমূঢ়, হীন, বােবা ও অজ্ঞান অবস্থায় মৃত্যুবরণ করবে। এসব কথা তাদের ক্রোধান্বিতই করে। তারা জানেন যে, আমি মক্কা শরীফে স্বীয় কিতাবাদি থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে বায়তুল্লাহর জিয়ারতে মশগুল এবং অতিসত্তর স্বীয় মাওলা হাবীব(ﷺ)-এর শহরের দিকে যাত্রাকারী। এমন এক সময়েই তারা এ প্রশ্ন উত্থাপন করেছে। তাদের আশা হলাে, তাড়াহুড়া ও ধ্যানমগ্ন অবস্থায় এবং কিতাবাদি থেকে বিচ্ছিন্নতা তাদের উত্তরে প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি করবে, যা তাদের জন্য ঈদ ও আনন্দে পর্যবসিত হবে। আর ঐ মুসিবত যা তাদের উপর পড়েছিলাে এর এক রকম বদলাই হয়ে যাবে যে, আমিও একবার নিশ্ৰুপ থাকতে বাধ্য হবাে। যেভাবে আমি তাদের গুরুদের, হাজার বার নিশ্ৰুপ করে দিয়েছি। কিন্তু জানেনি যে, এ শক্ত দ্বীন নিরাপত্তায় রয়েছে। যে কেউ এর সাহায্যে করবে, সে সাহায্যপ্রাপ্ত ও নিরাপদ থাকবে। আল্লাহর কর্ম এমনই যে, যখন তিনি কোন কর্ম করার ইচ্ছে করেন, বলেন, হয়ে যাও, তৎক্ষণাৎ তা হয়ে যায়। সুতরাং ঐ প্রশ্ন থেকে যা আমি অনুভব করেছি তা- এটাই। সত্য ও প্রকৃত জ্ঞানতাে আল্লাহরই নিকট।
অতএব ভাল হয়, জবাবকে দুইভাগে বিভক্ত করলে। একভাগ প্রশ্নকর্তার জন্য, যে উপকারিতা হাসিল করতে চায়। আর দ্বিতীয় ভাগ হলাে সেই গোঁয়ার . আক্রমনকারীর জন্য। যেন প্রত্যেকের নিকট তাই পৌছে, যার সে উপযােগী। আর প্রত্যেককে এমন উত্তর প্রদান করা হবে, যে যার যােগ্য।
প্রথম ভাগ
• এ মাসআলায় হকের চেহারা থেকে পর্দা দুরীভূত করার বর্ণনা রয়েছে। আর এ অধ্যায়ে কয়েকটি নজর (পরিচ্ছেদ) রয়েছে যেন বুদ্ধির অধিকারীরা মূলবস্তু সহজে খুঁজে নিতে পারেন।
প্রথম নজর
স্বীকার ও অস্বীকার’ জ্ঞাপক আয়াত ব্যবহারের বর্ণনাঃ
জেনে রাখুন যে, দ্বীনের ভিত্তি এবং যার উপর মুক্তি নির্ভর, তা হলাে-পবিত্র কুরআনের সব আয়াতের উপর বিশ্বাস স্থাপন করা। অধিকাংশ ভ্ৰষ্ট সম্প্রদায় পথভ্রষ্ট হয়েছে এ কারণে যে, তারা কতেক আয়াতের উপর বিশ্বাস স্থাপন করেছে। আর কতেক আয়াতকে অস্বীকার করে বসেছে। যেমনঃ
কদরীয়া সম্প্রদায়ঃ
+তারা এ আয়াতের প্রতি ঈমান এনেছে-
انا وما ظلمنهم ولكن كانوا أنفسهم يظلمون.
আমি তাদের উপর জুলুম করিনি, বরং তারা নিজেরাই নিজেদের উপর জুলুম (অত্যাচার করেছে)।
+আর এ আয়াতকে অস্বীকার করেছে,
والله خلقكم وما تموت
(আল্লাহ তােমাদের ও তােমাদের কর্মসমূহের স্রষ্টা।)
আর জবরিয়া সম্প্রদায়ঃ
+এরা এ আয়াতে বিশ্বাস করে,
وما تشاءون إلا أن يشاء الله رب العالمين
(তােমরা কি চাও, কিন্তু আল্লাহ যা ইচ্ছে তাই করেন, যিনি সমগ্র বিশ্বের প্রতিপালক।)
+আর এ আয়াতকে অস্বীকার করে,
(এটা তাদেরকে আমি অবাধ্যতার প্রতিফল দিয়েছি, আর নিশ্চয়ই আমি সত্যবাদী)।
খারেজী সম্প্রদায়ঃ
+এরা এ আয়াত বিশ্বাস করে,
ت يصلونها يوم الدين .وان الفجار لفي جحيم .
(নিঃসন্দেহে পাপীরা কিয়ামত দিবসে জাহান্নামে নিক্ষিপ্ত হবে)।
+কিন্তু এ আয়াতকে অস্বীকার করে-
[নিশ্চয়ই আল্লাহ কুফর (গুনাহ) ক্ষমা করেন না। এতদব্যতীত অন্য সব (পাপ) তিনি যাকে ইচ্ছা ক্ষমা করে দেন।]
ভ্রষ্ট মরজিয়া সম্প্রদায়ঃ
+এ আয়াতে বিশ্বাস করে -
لاتقنطو من رحمة الله ان الله يغفر الذنوب جميعا الم.
(আল্লাহর করুণা থেকে নৈরাশ হয়াে না, নিশ্চয়ই আল্লাহ তায়ালা সকল পাপ ক্ষমা করে দিবেন, নিঃসন্দেহে তিনি ক্ষমাশীল ও দয়ালু।
+অথচ তারা এ আয়াতকে অস্বীকার করেঃ
(যে কেউ পাপ কর্ম করবে, তাকে তার প্রতিফল প্রদান করা হবে)। এ ধরনের অসংখ্য দৃষ্টান্তে কালাম শাস্ত্ৰসমূহ ভরপুর
________________________________
(ইলমে গায়ব) স্বীকার ও অস্বীকার জ্ঞাপক আয়াত ব্যবহারের বর্ণনাঃ
+পবিত্র কুরআনে করিম দ্বারা প্রমাণিত যে-
(আসমান ও জমিনে আল্লাহ তায়ালা ব্যতীত কেউ গায়ব জানেন না।)
+কুরআন করীম এটাও স্পষ্টভাবে বিবৃত করছে,
وما كان الله ليطلعكم على الغيب ولكن الله يجتبي من رسله من
(আল্লাহ তাঁর নির্বাচিত রাসুলদের ব্যতীত কারাে উপর গায়ব প্রকাশ করেন না।)
➤সূরা জ্বিন: আয়াত ২৬-২৭
+এটাও ইরশাদ করেছেন-
তিনি (মুহাম্মদ (ﷺ) গায়বের ব্যাপারে কার্পণ্য করেন না।)
➤ সূরা তাকভীর, আয়াত-২৪
+আরাে ইরশাদ হয়েছে,
(হে নবী, আপনি যা জানতেন না, আল্লাহ তা আপনাকে শিক্ষা দিয়েছেন, আপনার উপর তাঁর করুণা মহান)।
➤সূরা নিসা ১১৩
+আরাে ইরশাদ হয়েছে--
الغيب نوحية إليك وما كنت لديهم إذا جمعوا أمرهم وهم يمكرون و
(এটা গায়বের সংবাদ, যা আমি আপনার কাছে ওহী করেছি, আপনি তাদের নিকট ছিলেন না, যখন তারা স্বীয় কর্মে জড়াে হয়েছে এবং তারা প্রতারণা করেছে।)
+আল্লাহ তায়ালা আরাে বলেন-
و ما کنت لديهم اذ يلقون اقلامهم أيهم يكفل مريم وكنت لديهم إذ يختصمون.
এগুলাে গায়বের সংবাদ, যা আমি আপনার প্রতি অবতারণ করেছি, আপনি তাদের নিকট ছিলেন না, যখন তারা স্বীয় কলমগুলাে নিক্ষেপ করেছিলাে যে, তাতে কে মরিয়মকে প্রতিপালন করবে এবং আপনি তাদের নিকট ছিলেন না, যখন তারা ঝগড়া করছিলাে।)
+আল্লাহ তায়ালা আরাে ঘােষণা করেছেন-
(এগুলাে গায়বের সংবাদ, যা আমি আপনার নিকট ওহী করেছি।)
এ সম্পর্কিত আরাে অনেক আয়াত রয়েছে। সুতরাং আমাদের প্রতিপালক (আল্লাহ) যিনি (গায়ব সম্পর্কে) এমনভাবে নিষেধ করেছেন, যা অস্বীকার করা যায়না, আর প্রমাণও এমনভাবে করেছেন, যাতে কোন সন্দেহের অবকাশ থাকতে পারে না। সুতরাং স্বীকৃতি ও অস্বীকৃতি (নফী ও ইছবাত) উভয় প্রকার আয়াতই সঠিক, সবই বিশ্বাসের। যে কেউ এ উভয় প্রকার আয়াতের কোন একটিকে অস্বীকার করে সে কুরআনকেই অস্বীকার করে। অতএব, যে ব্যক্তি আল্লাহ ব্যতীত অন্যের জন্য ইলমে গায়ব (অদৃশ্য জ্ঞান) সম্পূর্ণরূপে অস্বীকার করে যে, কোন কারণেই তা স্বীকার করে না, তাহলে সে স্বীকৃতিবাচক আয়াতগুলােই অস্বীকার করেছে। আর শর্তহীনভাবে (অদৃশ্য জ্ঞান) এমনভাবেই স্বীকার করে যে, কোনভাবেই তা অস্বীকার করে না, তাহলে সে ঐ আয়াতগুলাের সাথে কুফর করে যাতে অস্বীকৃতি জ্ঞাপন করা হয়েছে। আর মুমিনগণ সব আয়াতের উপরই বিশ্বাস স্থাপন করেন। এতে তারা কখনাে। ভিন্নমত পােষণ করেন না। অথচ স্বীকৃতি-অস্বীকৃতির হুকুমতাে একত্রে বর্তায়।
এ কারণে উভয়ের জন্য ভিন্ন ভিন্ন ক্ষেত্র তালাশ করা অপরিহার্য। (এ মূলনীতির ভিত্তিতে) আমি মহান আল্লাহর উপর ভরসা করে বিশ্লেষণের ময়দানে ঝাঁপ দিচ্ছি এবং যারা প্রতারণা ও ধােকাবাজির আশ্রয় গ্রহণ করেছে, তাদের উপর দৃঢ়তার সাথে দন্ডায়মান হয়ে আমার বক্তব্য উপস্থাপন করছি।
ইলম বা জ্ঞানের কয়েকটি শ্রেণী বিভাগঃ
(টিকা ১) করা যায়। তন্মধ্যে একটি এর মাছদার তথা উৎপত্তি সূত্রের ভিত্তিতে দ্বিতীয় পদগত সম্পর্কের ‘লাম’ বর্ণের উপর জবর সহকারে এ থেকে আরাে একটি প্রকারও বের হয় যে, এর সম্পর্ক কিভাবে হয়েছে।
এ প্রথম প্রকার হলােঃ হয়তাে সত্তাগত (টিকা ২) হবে, যখন তা মূল জ্ঞানী সত্তা থেকে প্রকাশ পায় এবং তাতে না কারাে অংশ থাকবে, না তা কারাে প্রদত্ত হবে, কোন কার্যকারণগত হবে।
টিকা ১:
(১) এ প্রকারে গ্রন্থকারের প্রশংসাবলী আল্লাহর জন্য। তা অত্যন্ত সুস্পষ্ট ও খুব জ্ঞাতকারী বর্ণনায় পরিবেষ্টনকারী। যদ্বারা কোন গুবারের (ধুলােয় আচ্ছন্ন ব্যক্তি) আল্লাহর জ্ঞান ও বান্দার জ্ঞানে কলহ (মতভেদ) সৃষ্টি করার পথ অবশিষ্ট রইলােনা। আল্লাহর সাথে সমানত্বের মুখতা সুলভ বাক্যের ভিত্তিতে যে সন্দেহের সৃষ্টি হতাে তা সম্পূর্ণরূপে দুরিভূত করে দিয়েছেন। চমৎকার জৌতির্ময় বাক্য, আর কি সুন্দর সুক্ষদশী যুক্তি ও প্রমাণ। সত্যিই তাই, সত্যিই যদি এমন না হয়, তাহলে কোন কিছুই নয়। হামদান ওনাঈসী মালেকী (মুদাবৃরিস হারামে নববী শরীফ) এটা লিখেছেন। আল্লাহ তায়ালা তাঁর মাগফিরাত করুন, আমীন।
এ টীকা ঐ টীকাসমূহের মধ্যে সর্বপ্রথম যদ্বারা আমার কিতাবকে আল্লামা হামদান (আল্লাহ তায়ালা তাঁকে উত্তম প্রতিদান প্রদান করুন) মর্যাদাবান করেছেন। আর সকল প্রশংসা আল্লাহ তায়ালার জন্য, যিনি সমগ্র জাহানের প্রতিপালক।
টিকা ২:
(২) এ শ্রেণীবিন্যাস উজ্জ্বল ও সুস্পষ্ট। সম্মানিত ওলামা কিরাম বিভিন্ন স্থানে তা বর্ণনা করেছেন এবং স্বয়ং আমাদের এ অদৃশ্য জ্ঞানের মাসয়ালায় তা ব্যক্ত করেছেন। সত্বর এ সম্পর্কিত বর্ণনা শীর্ষস্থানীয় ইমাম আবু জাকারিয়া নবভী ও ইমাম ইবনে হাজর মককীর (رحمة الله) ব্যাখ্যা সহকারে উদ্ধৃত হবে যে, মাখলুক থেকে সত্ত্বাগত জ্ঞান ও সম্পূর্ণ পরিবেষ্টিত জ্ঞান নঞর্থক (অস্বীকারবােধক)। কিন্তু বিস্ময় তাদের থেকে যারা এ বিন্যাসগুলাের বিশুদ্ধতায় বিশ্বাস রাখে আবার তারাই এ গুঞ্জন করে যে, যদিও তা মূলতঃ বিশুদ্ধ কিন্তু দার্শনিকদের ঐসব সুক্ষ্ম বক্তব্য ও চিন্তার ফসল যা মহামান্য ওলামা কেরাম, বুদ্ধিজীবি ও সুস্থ বিবেক সম্পন্ন লােকেরা,
কুরআনে করীম ও রাসুলে করীম (ﷺ)-এর হাদীসের মর্মার্থের ব্যাপারে গ্রহণ করেন না। এটাও দাবী করে বসেছে যে, এটা মুসলমানদের মহান ফিতনায় নিমজ্জিত করা ও আল্লাহর দ্বীনের, শক্ত রঞ্জুকে বন্ধনমুক্ত , করে ছিন্ন ছিন্ন করে ফেলা ছাড়া আর কিছু নয়।
অতঃপর সামান্যতমই বিলম্বে স্বয়ং উক্ত বর্ণনা আল্লামা নবভী ও ইবনে হাজার প্রমুখ ইমামদ্বয়ের দিকে সম্পর্কিত করেছে। অথচ তাঁরা অস্বীকৃতি জ্ঞাপক আয়াতে জ্ঞানকে সত্ত্বাগতভাবে চিরস্থায়ী জ্ঞান এবং পরিপূর্ণরূপে পরিবেষ্টনকারী জ্ঞানের উপর প্রয়ােগ করেছেন। তাদের মতে, অবশ্যই এ ইমামদ্বয় না ওলামায়ে দ্বীনের অন্তর্ভূক্ত, না সুস্থ বিবেক সম্পন্ন, বরঞ্চ মুসলমানদের আশ্চর্যজনক ফিতনায় নিমজ্জিতকারী! আল্লাহর পানাহ!। যদি তারা দ্বীনের শক্ত রঞ্জুকে খুলে চুরমার করে দিয়েছেন (ইমামদ্বয়) এমন হন (আল্লাহ উভয়কে তা থেকে হিফাজতে রাখুন তাহলে কেন তারা তাঁদের থেকে সনদ গ্রহণ করেছেন তাঁদের ইমাম বানিয়েছেন এবং তাঁদের বাণী সনদ হিসেবে পেশ করেছেন! লা হাওলা ওয়ালা কুয়্যাতা ইল্লা বিল্লাহ।
(টিকা শেষ)________________
দ্বিতীয় প্রকার প্রদত্ত, যা কারাে প্রদানের (টিকা ১) ভিত্তিতে হয়ে থাকে।
প্রথম প্রকার (সত্তাগত গায়ব) আল্লাহ তায়ালার জন্য খাস (নির্দিষ্ট), অন্যের জন্য তা অসম্ভব। যে কেউ এ প্রকারের গায়ব কারাে জন্য সাব্যস্ত করে তা যত অল্প পরিমানই হােক না কেন, সে অকাট্যভাবে মুশরিক হয়েছে এবং নিঃসন্দেহে ধ্বংস হয়েছে।
দ্বিতীয় প্রকার তাঁর বান্দাদের জন্য নির্দিষ্ট; যা আল্লাহর জন্য অসম্ভব। এ ধরনের জ্ঞান যদি কেউ আল্লাহর জন্য সাব্যস্ত করে, সে কাফির। কেননা, সে আল্লাহর জন্য এমন বস্তু সাব্যস্ত করেছে, যা শিরকে আকবর’ থেকেও জঘণ্য ও নিন্দনীয়। কেননা, মুশরিকতাে সে ব্যক্তিই যে আল্লাহর সাথে অন্যকে খােদার সমতুল্য জানে। অধিকন্তু সে (খােদা ব্যতীত) অন্যকে খােদার চেয়ে নিকৃষ্ট জ্ঞান করেছে যে, সে নিজের জ্ঞান ও শ্রেষ্ঠত্বের ফয়েজ আল্লাহর প্রতি পৌছিয়ে দিয়েছে।
__________________
(টিকা ১) জেনে রাখুন! যে বস্তু অপরের কারণে হয়, তা অবশ্যই অপরের দানের অন্তর্ভুক্ত হবে। কেননা, অপরের কারণ শুধুমাত্র মাখলুকের জ্ঞানেরই অন্তর্ভূক্ত। আর তা সবই আল্লাহর প্রদানের মাধ্যমেই হয়। যেমন শিক্ষক ছাত্রের জ্ঞানের কারণ হয়, কিন্তু দাতা হলেন আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা। কেননা, সে চিন্তা করেনি যে, যা অপরের কারণে হয়, তা অপরের প্রদত্ত হয় না, যতক্ষণ না উভয়ের মধ্যকার মাধ্যম হয়। অতএব, তা প্রমাণিত হলাে।
দ্বিতীয় প্রকার জ্ঞান দু'প্রকারঃ
এক. মুতলাকুল ইলম বা ইলমের শর্তহীনতা।
এটা বলতে আমি ঐ শর্তহীন (জ্ঞান) বুঝিয়েছি যা উসুল শাস্ত্রের পরিভাষায় বিদ্যমান। এমন জ্ঞান প্রমাণ করার জন্য কোন একটি একক হওয়াই আবশ্যক। আর অস্বীকার করা প্রত্যেক একককেই অস্বীকার করা বুঝায়। আর এ মুতলাক’। হয় অনির্দিষ্ট একক, নতুবা প্রকৃত সত্ত্বা, যা কোন এককে পাওয়া যায়। যেমন এর বিশ্লেষণ আমার শ্রদ্ধেয় পিতা তাঁর রচিত ‘উলুমুর রাশাদ লিকময়ে মবানিয়িল ফাসাদ’ নামক গ্রন্থে বিশ্লেষণ করেছেন। সুতরাং এখানে বিষয়টির ইতিবাচকীয়তা হচ্ছে অংশতঃ। কারণ বিষয়টি সামগ্রিকতার ক্ষেত্রে ব্যাপক।
অপরদিকে, নেতিবাচকীয়তা হচ্ছে সামগ্রিক দুই ইলমে মুতলাক্ব (শর্তহীন ইলম) তা দ্বারা আমার উদ্দেশ্য হলাে ঐ জ্ঞান, যা সকল মৌলিক জ্ঞানকে শামিল করে নেয়। তা ততক্ষণ প্রমাণিত হয় না, যতক্ষণ না সকল একক (আফরাদ) বিদ্যমান হয় এবং যা কোন একটি এককের নিষেধের দ্বারা দূরিভূত হয়ে যায়। সুতরাং ইতিবাচক এখানে সামগ্রিক এবং নেতিবাচক অংশতঃ হবে।
আর এ জ্ঞানের সম্পর্ক দু’কারণের ভিত্তিতে হয়।
এক. এজমালী (সামগ্রিক),
দুই. তাফসীলী বা.বিস্তারিত, যাতে প্রত্যেক জ্ঞান পৃথক ও প্রত্যেক বােধগম্য বস্তু অন্যবস্তু থেকে আলাদা হবে।
অর্থাৎ জ্ঞানীর কাছে যত প্রকার জ্ঞান আছে, তা হয়ত সম্পূর্ণ কিংবা আংশিক। দ্বিতীয় প্রকারের ভিত্তিতে তা চার প্রকার হবে। তন্মধ্যে প্রথমটি আল্লাহ তায়ালার জন্য খাস, যা হলাে শর্তহীন বিস্তারিত জ্ঞান। এ আয়াতই এর প্রমাণ বহন করে-(আল্লাহ তায়ালা প্রত্যেক বস্তু সম্পর্কে জ্ঞাত)। কেননা, আমাদের মহান প্রতিপালক তাঁর পবিত্রতম জাত (সত্ত্বা), অসীম গুণাবলী, সব ঘটনাবলী যা সংঘটিত হয়েছে ও কিয়ামত পর্যন্ত যা সংগঠিত হতে থাকবে এবং সকল সম্ভাব্য বস্তু যা না কখনাে অস্তিত্ব লাভ করেছে না অস্তিত্ব লাভ করবে বরং সকল অসম্ভাব্যতা সম্পর্কেও জ্ঞাত আছেন। সুতরাং, সকল জ্ঞান থেকে কোন জ্ঞান আল্লাহর নিকট লুকায়িত ও তার বহির্ভূত নয়। তিনি সবকিছুর জ্ঞান বিস্তারিতভাবে জানেন-আদি থেকে অনন্তকাল পর্যন্ত।
আর আল্লাহ তায়ালার পবিত্র সত্ত্বা এবং গুণাবলীও অসীম (গায়রে মুতান্নাহিয়া) * তন্মধ্যে এক একটি গুণ এবং সংখ্যার পরম্পরাসমূহও (টিকা ১) অসীম-অশেষ। আর 'অনুরূপ অনন্তকাল দিবস (টিকা ২) ও এর সময়-মুহুর্ত এবং জান্নাতের নিমাতসমূহ, জাহান্নামের প্রতিটি শাস্তি, জান্নাত ও জাহান্নামবাসীদের শ্বাস-প্রশ্বাস, চোখের পলক, নড়াচড়া (টিকা ৩) সহ অন্যান্য সব বস্তু এমন, যার শেষ নাই অসীম-অশেষ।
এ সব কিছুর পূর্বাপর সকল জ্ঞান বিস্তারিতভাবে তিনি ‘আজল ও আবদে’ জ্ঞাত আছেন। সুতরাং আল্লাহর জ্ঞানে সীমাহীনতার পরম্পরাসমূহ বারংবারই সীমাহীন ও অসীম।
বরং (টিকা ৪) আল্লাহ তায়ালার জন্য প্রতিটি ক্ষুদ্র থেকেও ক্ষুদ্রতর বস্তু ও অনু পরমানুতে অসীম' ও স্থায়ী জ্ঞান বিদ্যমান। এ কারণে যে, প্রত্যেক অতিক্ষুদ্র থেকেও ক্ষুদ্রতর যা সংঘটিত হয়েছে বা ভবিষ্যতে হবে বা হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে অথবা যা কোন নিকটবর্তী, দূরবর্তী ও পার্শ্ববর্তীতে হবে এবং যা কালের পরিবর্তনে পরির্তিত হবে এবং এসব কিছু আল্লাহ তায়ালা সক্রিয়ভাবে জ্ঞাত আছেন। বুঝা গেলাে, আল্লাহ তায়ালার জ্ঞান অসীম থেকেও অসীমতর এবং অসীমতম। গণিত শাস্ত্রবিদদের পরিভাষায় তা অসীমিত্বের তৃতীয় পর্যায় তথা ঘনশক্তি যাকে মাকআব’ বলা হয়। সংখ্যাকে যখন তার মূলের সাথে গুণ করা হয়, তখন তা বর্গসংখ্যা হয়, আর যদি বর্গসংখ্যা, সে একই সংখ্যায় গুণ। করা হয়, তাহলে তা (মাকআব) বা ঘনসংখ্যা হয়। এসব সুস্পষ্ট বক্তব্য সে ব্যক্তিরই জন্য, ইসলামের সাথে যার সম্পর্ক রয়েছে এবং সুস্পষ্ট অংশ রয়েছে। স্মর্তব্য যে, কোন সৃষ্টি একই মুহুর্তে, একই সময়ে অসীমকে সক্রিয়ভাবে কোন ক্ষেত্রে কোন দিক থেকে পরিপূর্ণ স্বাতন্ত্রভাবে পরিবেষ্ট করতে পারে না। এ কারণে যে, স্বাতন্ত্র যখন হবে, তখন প্রত্যেক এককের পক্ষে এর বৈশিষ্টের প্রতি লক্ষ্য রাখতে হয়, আর অসীমের প্রতি লক্ষ্য রাখা এক মুহূর্তের জন্যও সম্ভব নয়। সুতরাং সৃষ্টির জ্ঞান যতই বেশী হউক এমনকি যদি আরশ (টিকা ৫) ও ফরশের মধ্যে প্রথম দিবস থেকে শেষ দিবস পর্যন্ত কোটি কোটি দৃষ্টান্তও যদি সব পরিবেষ্টিত হয়ে যায় তবুও (টিকা ৬) কার্যত সীমাবদ্ধই থাকবে।
কেননা, আরশ ও ফরশ দু'টি পরিবেষ্টিত সীমা। আর প্রথম দিবস থেকে শেষ দিবস পর্যন্ত এটারও দু'টি সীমা রয়েছে। আর যে বস্তু দু’টি সীমায় সীমাবদ্ধ হবে তা সসীম ব্যতীত হয় না। হাঁ, মাখলুকের জ্ঞান এ ভিত্তিতে অসীম হওয়া বিশুদ্ধ হতে পারে যে, ভবিষ্যতে কোন সীমার উপর যেন তা বাধাপ্রাপ্ত না হয় (সর্বাবস্থায় বৃদ্ধি পেতে থাকে)। আর এ অর্থের ভিত্তিতে আল্লাহর জ্ঞান অসীম হওয়া অসম্ভব। কেননা, তাঁর জ্ঞান ও গুণাবলী নতুন সৃষ্টি হওয়া থেকে পবিত্র ও অনেক উর্ধ্বে। সুতরাং প্রমাণিত হলাে, সক্রিয় অসীমতা আল্লাহ্ তায়ালার জ্ঞানের সাথেই খাস। আর ঐ অসীমিতুের বৃদ্ধি পাওয়া, কোন সময় বাধা প্রাপ্ত না হওয়া তাঁর বান্দাদের জ্ঞানের সাথেই নির্দিষ্ট। প্রথম প্রকারের জ্ঞান আল্লাহ তায়ালা ব্যতীত কারাে জন্য নয়।
_______________
(টিকা ১) আবদের’ (অনন্তকালীন) দিবসসমূহ ও তৎপরবর্তী বস্তু সম্পর্কে যখন আমাদের থেকে জিজ্ঞেস করা হলাে যে, আল্লাহ তায়ালা কি এর সংখ্যা সম্পর্কে জানেন? যদি না বলা হয়, তাহলে তা কতই না মন্দ অস্বীকৃতি! যদি হাঁ বলা হয়, তাহলে এ বস্তুসমূহ সসীম হওয়াই আবশ্যক হয়ে পড়বে। কেননা, স্থিরীকৃত সংখ্যা অসীম হয় না বরং সসীমই। তা দুটি সীমায় সীমাবদ্ধ। তার পূর্বে শুধুমাত্র একটি সংখ্যাই বৃদ্ধি করা যায় আর এভাবে তার পূর্বে এক পর্যন্ত আরাে বৃদ্ধি করা যায় সীমাবদ্ধতার মধ্যে সীমাবদ্ধ পর্যায়ে। সীমাবদ্ধতা এভাবেই বলা যায় যেমন ফতােয়ায়ে সিরাজিয়ায় উল্লেখ আছে- আল্লাহ তায়ালার জ্ঞান আছে, কিন্তু তাঁর জন্য কোন সংখ্যা নেই। আমি বলবাে, এটা আদবের প্রতি অনুসরণ যেমন আমি এ দিকে ইঙ্গিত করেছি। না হয় যার জন্য কোন সংখ্যা নেই তাঁর জন্য সংখ্যা নির্ধারণ করাও অজ্ঞতা। আর অজ্ঞতার অস্বীকৃতি আবশ্যক। সুতরাং যদি প্রথম মত গ্রহণ করা হয়, তাহলে তা আল্লাহর বাণীর অনুরূপই হবে- তারা বলে, এগুলাে হলাে আমাদের জন্য আল্লাহর সমীপে সাহায্যকারী, আপনি বলুন, তােমরা কি আল্লাহকে তা সম্পর্কে সংবাদ প্রদান করছে যে, তিনি জানেন না আসমান ও জমীনে যা কিছু রয়েছে? তারা যে শিরক করে তা থেকে আল্লাহ পবিত্র'।
(টিকা ২) বরং আমি বলবাে, এটা আল্লাহর অসীম থেকেও অসীমতর জ্ঞানের একটি। তাঁর অন্যান্য জ্ঞানের সমুদ্রেরতাে প্রশ্নই উঠেনা (তাতে গণনার বাইরে)। আর “সালাসিল” (পরম্পরাসমূহ) শব্দ বহুবচন বলার দ্বারা আমি এ দিকেই ইঙ্গিত করেছি। আর তা হলাে ১-২-৩ থেকে শেষ পর্যন্ত (সংখ্যা যতই নেয়া হােক তা) অসীম, আর বিজোড় সংখ্যা ১-৩-৫ থেকে শেষ পর্যন্ত নিলে তাও অসীম। আর জোড় সংখ্যা ২-৪-৬ থেকে শেষ পর্যন্ত তা অসীম। দ্রুপ ২-৫-৮-১১ শেষ পর্যন্ত নিলেও অসীম কিংবা ১ থেকে ৩টি করে বাদ দিয়ে ৫-৯-১৩শেষ পর্যন্ত অসীম অথবা ২ থেকে ৩টি করে সংখ্যা : বাদ দিয়ে ২-৬-১৯-১৪ নিলে তাও অসীম। অনুরূপ যত সংখ্যার পার্থক্যই হােক শেষ করা যাবেনা অনুরূপ প্রত্যেক সংখ্যা থেকে সেরূপ মিলিয়ে ১-২-৪-৮ শেষ পর্যন্ত গণতাতীত অথবা অনুরূপ ২টি সংখ্যা মিলিয়ে ১-৩-৯-২৭ শেষ পর্যন্তও অপরিসীম। আর এভাবে ৩ এর অনুরূপ সংখ্যা মিলিয়ে কিংবা ৪ থেকে শেষ পর্যন্ত তাও অসীম। আর যদি বিক্ষিপ্ত করে দেয়া হয় এবং কোন বিশেষ গঁৎ অনুসরণ করা না হয় তবুও অসীম থেকে অসীমতর। আর যদি পর্যায়ক্রমিকতা অনুসরন করা না হয় তখনও অসীম থেকে - অসীমতর। আর যদি বর্গসংখ্যা ১-৮-২৭-৬৪ শেষ পর্যন্ত নেয়া হয় তবুও অসীম। যদি ৩৬। (দ্রব্যসমূহ) ১-৪-৯-২৬ শেষ পর্যন্ত নেয়া হয়, তাহলে অসীম। আর (ঘনসমূহ) ১-৮-২৭-৬৪ শেষ পর্যন্ত নিলে তবুও অসীম। (দ্রব্যের দ্রব্য কিংবা(ঘন-এর দ্রব্য সমূহ) (ঘন-এর ঘন সমূহ) এর উপরের শক্তিসমূহের মধ্য থেকে অগণিত সংখ্যা পর্যন্ত নিলে সবই অসীম। আর যদি উল্লেখিত প্রত্যেক শক্তি উপরে আরােহনকারীর বিপরীত অবতীর্ণকারী শক্তিসমূহের পরম্পরা নিই যেমন ১২(বর্গমূল) কিংবা (ঘন এর অংশ) এবং (দ্রব্যের অংশ) তাও অসীম। আর ভগ্নাংশ যেমন (অর্ধেক), (এক তৃতীয়াংশ), (এক চতুর্থাংশ) পর্যন্ত অগণিত নিই, তাহলে সবই অসীম। আর এসবের পরম্পরা সবই অসীম থেকে অসীমতর এবং এ সব কিছুর জ্ঞান আল্লাহ তায়ালার জ্ঞানের অন্তর্ভুক্ত। আর আজল’ থেকে ‘আবদ' পর্যন্ত সব কিছুর জ্ঞান পরিপূর্ণ বিস্তারিতভাবে তাঁর জ্ঞানে শামিল রয়েছে। আর এটা একটি মাত্র শ্রেণী বিন্যাস ঐ অসীম শ্রেণীসমূহ থেকে। সুতরাং পবিত্রতা ঐ সত্তার যাঁকে আকল ও বুদ্ধি দ্বারা পরিবেষ্টন করা যায় না। তিনি মহান ও পবিত্র বস্তু থেকে যে, তার সম্মানিত স্থান ও রাজদরবার পর্যন্ত যেখানে কাল্পনিক-স্বাপ্নিক ধারণা এবং কারাে অনুমান (সে পর্যন্ত) পৌছবে। সুতরাং তাঁর জন্যই সকল প্রশংসা। আর তাঁর নবীর উপর অগণিত দরূদ ও সালাম।
(টিকা ৩) দেখুন! ঐ বস্তুসমূহকে আমি অসীমই গণ্য করেছি। আর আমার বিশ্লেষণসমূহ হলাে মাখলুকের জ্ঞান অসীম কর্মসমূহকে সক্রীয়ভাবে পরিবেষ্টন করতে পারে না। আপনাদের নিকট ঐ প্রতারকের মিথ্যা উক্তি সুস্পষ্ট হয়ে যাবে, যে আমার উপর এ অপবাদ রটাতে চেয়েছিলাে যে, রাসুলে পাক(ﷺ)এর জ্ঞানের পরিবেষ্টন থেকে আল্লাহ তায়ালার জাত ও সিফাত ব্যতীত কোন বস্তু বাদ নেই। তাহলে সম্ভবতঃ সংখ্যা, দিন ও ঘন্টাসমূহ,, আয়াতসমূহ, জান্নাতের নি'মাত, দোযখের শাস্তি, শ্বাস-প্রশ্বাস, মুহূর্ত ও অঙ্গীভঙ্গিসমূহ সবকিছু তার মতে আল্লাহ তায়ালার জাত ও সিফাতের অন্তর্ভূক্ত। আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করছি।
(টিকা ৪) আল্লাহ তায়ালার প্রশংসা। আমি এটা স্বীয় পক্ষ থেকে নিজ ঈমানী শক্তিবলে লিখে দিয়েছি। অতঃপর আমি তাফসীরে কবীরে' এর ব্যাখ্যা দেখেছি। তাতে এ আয়াতের ব্যাখ্যায় উল্লেখ আছে- ‘আমার শ্রদ্ধেয় পিতা মরহুম হযরত ইমাম ওমর জিয়াউদ্দিনকে বলতে শুনেছি যে, তিনি হযরত আবুল কাসেম আনসারী থেকে শুনেছেন। তিনি বলেছেন, আমি ইমামুল হারামাইন (رحمة الله) কে বলতে শুনেছি- “আল্লাহর জ্ঞান সকল ক্ষেত্রেই অসীম। এ জ্ঞানসমূহের মধ্য থেকে প্রতিটি একক সম্পর্কেও তাঁর জ্ঞান অসীম। কেননা, এককের সত্ত্বা পরিবর্তনের ভিত্তিতে অসীম বস্তুতে পাওয়া যাওয়া সম্ভব এবং তা পরিবর্তনের ভিত্তিতে অসীম গুণাবলীর সাথে প্রশংসিত হওয়াও সম্ভব। তিনি আরও বলেন- “আর অসীম জ্ঞানসমূহ একবার সৃষ্টির জ্ঞানে অর্জিত হওয়া অসম্ভব। সুতরাং এখন আল্লাহ তায়ালা প্রকাশ করা ব্যতীত ঐ জ্ঞানসমূহ অর্জিত হওয়ার কোন পন্থা নেই। তা কতেকের পর কতেক অর্জিত হতে থাকবে। এর শেষ সীমা নেই। আর না ভবিষ্যতেও তা শেষ পর্যন্ত অর্জন করা যাবে। এ কারণে আল্লাহ তায়ালা (তিনিই অধিক জ্ঞানী) ইরশাদ করেন নি; বরংঃ ইরশাদ করেছেন। বিশ্লেষকদের বাণী থেকেও তাই প্রমাণিত হয়। যেমন•(আল্লাহর দিকে সফরের সীমা রয়েছে) (কিন্তু আল্লাহর মধ্যে সফরের কোন সীমা নেই) আল্লাহ তায়ালাই সর্বাধিক জ্ঞাত।
(টিকা ৫) আল্লামা শেহাবুদ্দিন খফাযী এক আয়াত এর ব্যাখ্যায়। আল্লামা তৈয়বী (رحمة الله) থেকে উদ্ধৃত করে বলেন- আল্লাহ তায়ালার জ্ঞানসমূহ অসীম। আসমান ও জমীনের গায়কসমূহ যা তিনি প্রকাশ করেন, আর যা তিনি গােপন করেন, তাঁর জ্ঞানের এক বিন্দু মাত্র।
______________
আল্লাহর পরিপূর্ণ পরিচয় লাভ কারাে পক্ষে সম্ভব নয়ঃ
আমি বলছি-যদি আমরা উক্ত সব বর্ণনা হতে দৃষ্টি বিচ্ছিন্ন করি তবুও অকাট্য প্রমাণ হওয়ার জন্য এ আয়াতই যথেষ্টঃ
(আল্লাহ তায়ালা প্রত্যেক বস্তু পরিবেষ্টন করে আছেন)।
কেননা, আল্লাহর জাত সীমাবদ্ধ নয়, সুতরাং তাঁর সৃষ্টির কারাে পক্ষে সম্ভব নয় যে, আল্লাহ তায়ালাকে তাঁর সত্তার ন্যায় তিনি যেভাবে সেভাবে পরিপূর্ণ পরিচয় লাভ করা। তাই এটা বলা বিশুদ্ধ হবে না। এখন আল্লাহ তায়ালার পরিচয় লাভ হয়ে গেছে, যার পরে তাঁর পরিচয়। লাভের প্রয়ােজন নেই। কারণ, যদি এমন এতাে তাহলে এ জ্ঞান আল্লাহর সত্তাকে পরিবেষ্টনকারী হয়ে যেতাে, তখন আল্লাহ তায়ালা তার পরিবেষ্টনে এসে যেতো।
- তিনি এ থেকে পবিত্র যে, তাকে কোন বস্তু পরিবেষ্টন করতে পারে। বরং তিনি সব বস্তুকে পরিবেষ্টন করে রয়েছেন। আল্লাহর পরিচয় লাভকারী নবী, ওলী, সালিহ ও মুমিনগণের পরস্পর মর্যাদাগতভাবে যে পার্থক্য তা তাঁর পরিচয় লাভের ভিত্তিতেই।
যে যত বেশী আল্লাহর পরিচয় লাভ করেছেন, তিনি ততই নৈকট্যবান ও উচ্চ মর্যাদায় আসীন হয়েছেন। সুতরাং অনন্তকাল পর্যন্ত তাদের। জ্ঞান উত্তরােত্তর বৃদ্ধি পেতেই থাকবে, কিন্তু কখনাে তার জ্ঞান পরিবেষ্টনে সক্ষম ও শক্তিশালী হবেনা বরঞ্চ (টিকা ১) সীমাবদ্ধ জ্ঞানই লাভ করবে। আর সব সময় তাঁর পরিচয় লাভের ক্ষেত্রে অসীমতাই অবশিষ্ট থেকে যাবে। প্রমাণিত হলাে যে, আল্লাহ তায়ালার সকল জ্ঞান পরিপূর্ণ বিস্তারিতভাবে কোন সৃষ্টির পক্ষে পরিবেষ্টন করার দাবী যুক্তি ও শরীয়ত উভয় দৃষ্টিতে অসম্ভব। বরং সৃষ্টির আদি থেকে অন্ত পর্যন্ত সকল জ্ঞান যদি একত্রিত করা হয় তাহলে জ্ঞানসমূহের সমষ্টির সাথে আল্লাহর জ্ঞানের প্রকৃতপক্ষে কোন সম্পর্কই হবে না। এমনকি একটি বৃষ্টি ফোটাকে দশ লাখ ভাগে বিভক্ত করে তার সাথে দশ লাখ সমুদ্রের যে সম্পর্ক, তাও হতে পারে না। কেননা, বৃষ্টি ফোটার এ অংশও সীমাবদ্ধ। আর সমুদ্রের পানি নিঃশেষ হয়ে যাবে, সমুদ্র শুষ্ক হয়ে যাবে। কেননা এর পানি সীমাবদ্ধ। কিন্তু অসীম হতে সসীমের যত মহান অসীম অংশের উদাহরণই নেয়া হােক না কেন, তা সর্বাবস্থায় সসীমই থাকবে। আর তাতে সব সময় অসীমতা বাকী থেকে যাবে। সুতরাং কখনাে কোন সম্পর্ক হাসিল হতে পারে না।
টিকাঃ গায়াতল মামুলের খন্ডনঃ
এ উজ্জ্বল ব্যাখ্যাসমূহ প্রত্যক্ষ করেন। এটাও বারংবার এ অধ্যায়ে এসেছে যে, মাখলুকের জ্ঞান অসীম কর্মকে পরিবেষ্টন করতে পারে না। এখন প্রতারকদের প্রতারণার পরিমাণ অনুমান করুন, যারা আমার বিরুদ্ধে এ উক্তির অপবাদ রটিয়েছে যে, সৃষ্টির জ্ঞান অসীম জ্ঞানসমুহ পরিবেষ্টনকারী, সুতরাং যে সৃষ্টির জন্য অসীম কর্মের মধ্য থেকে একটি - জ্ঞান অর্জিত হওয়াকেও সুস্পষ্ট প্রমাণ দ্বারা খন্ডন করেছে সে কিভাবে সকল অসীম। কর্মসমূহ পরিবেষ্টনের উক্তি করবে?
হায়রে আফসােস! যদি তারা এ কথা বলতাে যে, আমার পুস্তিকায় নেই তাহলে এ মাসয়ালার 'অস্বীকৃতির জন্য প্রতিবাদ হতাে স্বীকৃতির জন্য নয়। সুতরাং ঐ সময় এর সম্পর্ক যদি হতাে, তাহলে শুধু অপবাদই হতাে। কিন্তু আমিতাে বেশ কয়েক স্থানে এর নিষেধ সম্পর্কে সুস্পষ্টভাবে বর্ণনা করেছি। সুতরাং আমার দিকে এর সম্পর্ক করা অপবাদ, হটকারিতা, একগুয়েমী ও কঠোর শত্রুতার বহিঃপ্রকাশ। কিন্তু এতে আশ্চর্য হবার কিছু নেই যে, এগুলাে ফ্যাসাদ সৃষ্টিকারী ওহাবীদের কারসাজী। কেননা, তারাতাে এ ধরণের অনেক অপবাদ রটনায় অভ্যস্ত এবং এটাই তাদের উত্তম পুঁজি। সুতরাং এ পুস্তিকা সৃষ্টির জ্ঞান কর্মের সাথে অসীম হওয়ার পরিবেষ্টন সম্পর্কে যে বক্তব্য প্রদান করেছে এর স্বরূপ উন্মোচিত হয়েছে। আর এটা দূর থেকে আহবান এবং তার ঐ অভিযােগের খন্ডন যা সে কল্পনা করেছে। বরং যার চিন্তা-ভাবনা সে নিজেই করেছে। আমরা আল্লাহর কাছে ক্ষমা ও নিরাপত্তা প্রার্থনা করি।
(টিকা ১) আশ্চর্য এ থেকে, যে এটা শুনেছে। অতঃপর রাসূলে পাক (ﷺ)-এর জ্ঞান_হাস করার জন্য হাদীসে শাফায়াত দ্বারা দলীল গ্রহণ করেছে--“অতঃপর আমি মাথা উত্তোলন করবাে এবং স্বীয় প্রতিপালকের হামদ ও গুণকীর্তন এমন প্রশংসা ও স্তুতিবন্ধনা দ্বারা করবাে, যদ্বারা আমার প্রতিপালক আমাকে অবগত করাবেন।” অতঃপর (১৬ পৃঃ) বলেন-“এটা প্রমাণিত যে, আল্লাহ তায়ালা তাঁকে তাই জ্ঞাত করবেন, যার জ্ঞান তাঁর নিকট ইতােপূর্বে ছিলােনা। আর এটা উপরােক্ত বেষ্টনীকে বাতিল করে দেয়।
_______________
আল্লাহর উপর এধরণেরই (১) আমাদের ঈমান। এদিকেই হযরত খিজির (আঃ) এক বাণীতে ইঙ্গিত করেছেন, যা তিনি হযরত মুসা (আঃ) কে বলেছিলেন, যে সময় পাখী সমুদ্র থেকে ঠোট ভরে এক বিন্দু পানি নিয়েছিলাে। যা হােক এ প্রকার জ্ঞান আল্লাহর জন্যই খাস্।
বাকী রইলাে অন্য তিন প্রকার, অর্থাৎ ইলমে মুতলাক ইজমালী (জ্ঞানের শর্তহীন সামগ্রিকতা) মুতলা ইলমে
সে নিশ্চয়ই পূর্বে আমার এ উক্তি শ্রবণ করেছে যে, আল্লাহ তায়ালার জাত সীমাহীন, তাঁর সিফাত (গুণাবলী) অসীম এবং তাঁর প্রত্যেক গুণও অসীম। সুতরাং অসীম কর্মের সাথে মাখলুকের জ্ঞানের নিঃসন্দেহে কোন সম্পর্কই নেই। অতএব, রাসূলে পাক (ﷺ) পরকালে আল্লাহ তায়ালার অন্য সিফাত সম্পর্কে জ্ঞাত হওয়া যাঁর জ্ঞান ইতিপূর্বে ছিলােনা, উল্লেখিত বেষ্টনীতে কি তিরস্কার হতে পারে? অতএব, তার এ উত্থাপিত আপত্তির জবাব এটাই দেয়া হলাে, যদি তােমার উদ্দেশ্য এই হয় যে, তিনি সে সময় এমন কালাম দ্বারা বাক্যালাপ করবেন যা আল্লাহ তায়ালার জাত ও তাঁর মুল সিফাতের প্রমাণ বহন করে তাহলে এটা বিশুদ্ধ নয় এবং এতে অহেতুক দীর্ঘালাপই করেছেন মাত্র। এটাতাে প্রমাণিত মাসয়ালা। এর ব্যাখ্যা আমি পূর্বে করেছি। আর এর দ্বারা তােমার উদ্দেশ্য যদি অন্যকিছু হয়, তাহলে উপরােক্ত বেষ্টনী বাতুলতা প্রমাণিত হয়ে যায়।
সুতরাং দেখুন ঐ ব্যক্তিকে, যার ধারণা যে, আল্লাহ তায়ালা স্বীয় সকল গুণাবলীর সাথে - যা প্রথম দিন থেকে সংঘটিত হয়েছে, আর-যা শেষ দিবস পর্যন্ত হতে থাকবে, এর মধ্যে অন্তর্ভূক্ত, সীমাবদ্ধ এবং লাওহ-ই মাহফুজে লিপিবদ্ধ রয়েছেন। আর এর বহির্ভূত জাত ও সিফাতের মৌলিকতা মাত্র। সুতরাং যখন নবীয়ে করীম (ﷺ) তাঁর হলাে জাত ও সিফাত সম্পর্কিত কোন নতুন জ্ঞান পরকালে পান, যে সম্পর্কে তিনি দুনিয়াতে জানতেন না; তাহলে তা দু’অবস্থা থেকে মুক্ত নয়। হয়তঃ তিনি আল্লাহ তায়ালার জাত ও সিফাতের রহস্য সম্পর্কে জানলেন। কেননা, তা ‘লাওহ-ই মাহফুজের বহির্ভূত অথবা তার জ্ঞান দুনিয়াতে ঐ বস্তুসমূহ পরিবেষ্টনকারী ছিলাে না, যা লাওহ-ই মাহফুজে সীমাবদ্ধ রয়েছে। আর সে এটা জ্ঞাত হয় নি যে, লাওহে সীমাবদ্ধ জ্ঞান সসীম, আর জাত ও সিফাতের সাথে সম্পর্কিত জ্ঞান অসীম। তাতে আম্বিয়ায়ে কিরামের জ্ঞানসমূহ অনন্তকাল পর্যন্ত বৃদ্ধি হতে থাকবে। আর তাঁদের কখনাে কোন অবস্থাতেই সসীম ছাড়া অসীমের জ্ঞান হাসিল হবে না। আর অসীম কখনাে সসীম হবে। সুতরাং যে সব বিষয় থেকে বিরত থাকা বাঞ্ছনীয়তার কোনটিই আবশ্যক হয়নি এবং অবােধ্যতার দরুণ চোখের উপর পর্দাই পড়েছে। আল্লাহর কাছে উভয় জাহানের নিরাপত্তা কামনা করি।
ইজমালী (সামগ্রিক শর্তহীন জ্ঞান) এবং ৮ তাফসীলী (বিস্তারিত জ্ঞান) এগুলাে আল্লাহর সাথে খাস নয়। বরং যদি আমরা সামগ্রিক জ্ঞানকে বস্তুহীন শর্তের ভিত্তিতে ধরে নিই অর্থাৎ যেখানে একটি বিষয়ের জ্ঞান অন্য বিষয় থেকে সম্পূর্ণ স্বাতন্ত্র হবে না, তখন ইজমালি জ্ঞানের উভয় প্রকার আল্লাহ তায়ালার জন্য অসম্ভব হবে এবং বান্দাদের সাথেই খাস হওয়া অপরিহার্য হয়ে যাবে।' ‘সামগ্রিক শর্তহীন জ্ঞান বান্দাদের জন্য অর্জিত হওয়া যুক্তিগত ও দ্বীনের প্রয়ােজনাদির অন্তর্ভুক্ত। এ জন্য যে, আমরা বিশ্বাস স্থাপন করেছি (আল্লাহ প্রত্যেক বস্তু সম্পর্কে জ্ঞাত) প্রত্যেক বস্তু সম্পর্কে জ্ঞাতি বলতে আমরা আল্লাহর সকল জ্ঞানই বুঝেছি এবং তা সবই সামগ্রিকভাবেই জেনে। নিয়েছি। সুতরাং যে নিজের বেলায় তা অস্বীকার করেছে সে ঈমান এবং এ আয়াতকেই অস্বীকার করেছে এবং স্বয়ং নিজের কুফরকেই মেনে নিয়েছে। আল্লাহর কাছে পানাহ্।
টিকাঃ আল্লামা শেখ আবুল হাসন বিকরীর (رحمة الله) উক্তি
‘হুজুর (ﷺ) আল্লাহ তায়ালার সকল জ্ঞানে জ্ঞানী’-এর পর্যালােচনাঃ
(১) যে ব্যক্তি পূর্বোক্ত অধ্যায়ের সব বিষয়বস্তু চিন্তা ও গবেষণার দৃষ্টিতে তাকাবে, বিশেষতঃ পেছনের বাক্যাবলীতে যে, সৃষ্টিকর্তা ও সৃষ্টির জ্ঞানে অকাট্যভাবে কোন সম্পর্ক নেই’—তিনি নিশ্চিত বুঝে নেবেন যে, আল্লাহর শপথ! মিথ্যা ও প্রতারণার উপর যারা সৃষ্টি ও স্রষ্টার জ্ঞানকে সমান বলে যার দিকে সম্পর্কিত করেছে তিনি এমন মিথ্যা দাবী থেকে নিশ্চয়ই পবিত্র এবং এটা স্থায়ী ও অস্থায়ীর পার্থক্য মাত্র। তা সত্ত্বেও আমরা এর প্রবক্তার ব্যাপারে কাফের বলা পছন্দ করি না, যেমন মওদুআত গ্রন্থে রয়েছে। কেননা, কতেক আরিফ থেকে এ প্রকারের উক্তি বর্ণিত হয়েছে। আর তারা আমাদের সরদার আবুল হাসান বিকরী (رحمة الله) ও তাঁর অনুসারী। আল্লামা শেখ উসমাভী (رحمة الله) শরহে সালাতে সৈয়দ আহমদ বদভী আল কবীর (رحمة الله)-এ উল্লেখিত হয়েছে যে, আল্লামা ওমর হালবীর কালামে রয়েছে- সৈয়দী মুহাম্মদ বিকরীর এক উক্তি সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলাে যে, নবী করীম (ﷺ) আল্লাহর সব জ্ঞানই জানতেন। সারাংশ এই যে, শেখ মুহাম্মদ বিকরীর উক্তি ইক ও বিশুদ্ধ। এজন্য সম্ভব যে, আল্লাহ তায়ালা তাঁকে নিজের সমস্ত জ্ঞান প্রদান করেছেন এবং তাঁকে সে বিষয়ে অবগত করেছেন। আর এ উক্তি দ্বারা এটা আবশ্যক হবে না যে, মুহাম্মদ (ﷺ) রাবুবিয়াতের স্থান পর্যন্ত পৌঁছে যাবেন। এ কারণে যে, উক্ত জ্ঞান আল্লাহ তায়ালার জন্য সত্তাগতভাবে প্রমাণিত। আর মুস্তাফা (ﷺ)-এর জন্য আল্লাহরই শিক্ষার মাধ্যমে। এরপর আল্লামা উসমাভী (رحمة الله) বলেন, আমাকে আমার কতেক সঙ্গী বলেছেন ‘আমরা যখন বলবাে যে, রাসূলে পাক (ﷺ) প্রত্যেক বস্তু সম্পর্কে অবগত আছেন, তাহলে তাঁর জ্ঞানতাে আল্লাহর জ্ঞানের সমান হওয়া আবশ্যকীয় হয়ে পড়বে। আমি এর উত্তরে বলেছি, এর দ্বারা এসব কিছু অপরিহার্য হয় না। কারণ, আল্লাহর জ্ঞান হলো প্রকৃত ও মৌলিক। আর নবী করীম (ﷺ)এর জ্ঞান স্বভাবগত ও প্রদত্ত। তাঁরা এ জবাবে সন্তুষ্ট হন এবং তা তাদের মনঃপুত হলাে।
১০৭ শেখ বিকরীর এ উক্তির দিকে শেখ মােহাক্কেক আবদুল হক্ মুহাদ্দেস দেহলভী (رحمة الله)। 'মাদারেজুন্নবুয়তে” ইঙ্গিত করেছেন। তিনি তা না কুফর বলেছেন, না ভ্রষ্টতা, আর না অন্য কিছু। বরং তিনি তা কতেক আরিফদের উক্তি বলে অভিমত প্রকাশ করেছেন। তিনি শুধুমাত্র এটাই বলেছেন যে, এ উক্তি দৃশ্যতঃ অধিকাংশ প্রমাণাদির বিপরীত। আল্লাহই অধিক অবগত এ উক্তির মর্মার্থ দ্বারা বক্তার উদ্দেশ্য কি? মর্মার্থ সহকারে দ্বিতীয় নজরে সুস্পষ্ট বিশ্লেষণ সত্বর বর্ণিত হচ্ছে যে, রাসূলে পাক (ﷺ) এর জ্ঞান আল্লাহ তায়ালার সকল জ্ঞানকে পরবেষ্টনকারী দাবী করা ত্রুটিপূর্ণ, পরিত্যক্ত ও ভ্রান্ত। কিন্তু এটা ত্রুটি, পাপ ও কঠোর পাপ যে, যে ব্যক্তি এসব কিছু প্রত্যক্ষ করার পরও মিথ্যাপবাদ দেয় এবং এমন সুস্পষ্ট মিথ্যার দুঃসাহস দেখায়। মহান আল্লাহ তায়ালার তাওফীক ব্যতীত সক্কর্মের শক্তি ও অসৎকর্ম থেকে রক্ষার কারাে শক্তি নেই। নিশ্চয়ই এ অপবাদ ওহাবীদের আবিস্কৃত। আল্লাহ তায়ালা তাদের অপমানিত করুন। তারাতাে আল্লাহ ও রাসুলের উপর মিথ্যাপবাদ দেয়। সুতরাং তাদের রক্ষা করার কে আছে এবং কাদের ব্যাপারে অলসতা করবাে? আল্লাহর কাছেই ক্ষমা প্রার্থী। যদি আপনারা বলেন যে, মাওদুয়াতে কি বলা হয়নি- “যে ব্যক্তি আল্লাহ তায়ালা ও রাসূলে পাক (ﷺ)-এর জ্ঞানের সমান হওয়ায় বিশ্বাস রাখে সে সকলের ঐকমত্যে কাফির যেমন তা কারাে নিকট গােপন নয়? " আমি বলবো যদি প্রত্যেক প্রকার সমান হওয়া উদ্দেশ্য হয়, তাহলে হাঁ! আল্লাহ ব্যতীত অন্য কেউ চিরস্থায়ী হওয়া এবং তা থেকে বেপরওয়া হওয়াই আবশ্যক হয়ে। পড়বে। যেমন ঐ পার্থক্যসমূহ আপনারা অবগত হয়েছেন যা আমি বর্ণনা করছি। আর এ সকল আরিফগণের বাক্যের সাথে এর কোন সম্পর্ক নেই। কেননা, তাঁদের উক্তিসমূহ আপনারা প্রত্যক্ষ করেছেন। সুতরাং এমন উক্তি কোন মুসলমান করবে না, আর না যে এমন উক্তি করবে সে মুসলমান হবে।
আর যদি সমান শুধুমাত্র পরিমাণের মধ্যে উদ্দেশ্য হয়, যেমন তা বক্তব্যে সুস্পষ্ট। কেননা, তিনি এর ভিত্তি ইবনে কাইয়ুমের ধারণার উপর রেখেছেন যে, ঐ ব্যক্তি যাদের নিজ সীমালংঘন দ্বারা সীমাতিক্রমকারী’ নাম রেখেছেন। তাঁদের মতে এ যে, রাসুলে পাক (ﷺ)-এর জ্ঞান আল্লাহ তায়ালার জ্ঞানের হুবহু অনুগামী। সুতরাং আল্লাহ তায়ালা যা কিছু জানেন তা তাঁর রাসুলও জানেন, সুতরাং কুফরীর কোন কারণ রইলােনা। কেননা, প্রকৃতপক্ষে কোন নসই বর্ণিত হয়নি। আল্লাহ তায়ালা প্রত্যেক বস্তুর উপর শক্তিমান। কোন জ্ঞান আল্লাহর জন্য সীমাবদ্ধ হওয়া তাঁর বান্দাদের প্রদান ও সাহায্যের বিপরীত নয়।
যেমন সত্বর বর্ণিত হচ্ছে। যদি এর দ্বারা কুফরী অপরিহার্য হয়, তাহলে (আল্লাহর আশ্রয়) ঐ ওলামা ও আউলিয়াদের কুফর আবশ্যক হয়ে যাবে যারা এ উক্তির প্রবক্তা যে, রাসুলে। পাক (ﷺ) কে কিয়ামতের জ্ঞান প্রদান করা হয়েছে এবং তাঁকে তা গোপন করার নির্দেশ প্রদান করা হয়েছে, যেমন এক্ষুণিই তা আপনাদের নিকট প্রকাশিত হবে। আর এটা ,। ‘মাওদুআত” গ্রন্থ থেকে বর্ণিত। স্বয়ং তিনি “রিসালাহ’-এর সমাপ্তিতে স্বীকৃতি দিয়েছেন যে, পরবর্তী ওলামা ও সুফীদের মধ্যে কতেক পক্ষ অদৃশ্য জ্ঞান প্রদানের দিকে অভিমত। প্রকাশ করেছেন। এতদসত্বেও তাঁদের ব্যাপারে কুফরী বা ভ্রষ্টতা বলেন নি।
বাকী রইলাে, তাঁর জ্ঞান পঞ্চ বিষয়ের সীমাহীন-শেষহীন হওয়া সম্পর্কে, এ মাসয়ালা হচ্ছে যুক্তিগত। এর উপর শরীয়তের কোন প্রমাণ (দলীল) নেই। আর না প্রত্যেক যুক্তিগত মাসয়ালা অস্বীকার করা কুফর, যদি তাতে দ্বীনের কোন বিষয় অন্তর্ভুক্ত। না থাকে। বরং আমি ইমামুল হাক্বায়েক সৈয়দী মুহিউদ্দীন (رحمة الله)-এর উক্তিতে তা হাসিল হওয়ার বৈধতা দেখেছি, তিনি তাতে অবশ্য জোর দেননি।
তবে আল্লাহর জ্ঞানের সুক্ষ্মতা ও যথাযথত্ব হাসিল হওয়ার বৈধতার ব্যাপারে অবশ্যই - ওলামায়ে কিরামের মধ্যে মতবিরােধ রয়েছে।
“শরহে মাওয়াক্কিফে” এর অস্বীকারকে ইমাম গাজ্জালী ও ইমামুল হারামাঙ্গনের ন্যায় কতেক সাথীদের দিকে সম্পৃক্ত করেছেন এবং বলেছেন, তন্মধ্যে কতেক ওলামা (কোন মন্তব্য করা থেকে) নিশুপ থেকেছেন। যেমন কাযী আবু বকর (رحمة الله) প্রমুখ।
আমাদের কতেক সাথী তা সংঘটিত হওয়ার প্রবক্তা। যেমন মাওয়াকিফ ও এর ব্যাখ্যা গ্রন্থে রয়েছে। তাহলে এমন একটি মাসয়ালার ব্যাপারে কুফরী ফতােয়া প্রদান কিভাবে বিশুদ্ধ হতে পারে? যদিও আমাদের জন্য নিষেধ সত্য, এমনকি আল্লাহর দর্শনের পরেও (নিষেধ)।
(আল্লাহ তায়ালা আমাদের উপকার প্রদান করুন) যদিও আল্লামা হালবী (رحمة الله) এ বিষয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন। মাওদুআত’ গ্রন্থের উক্তি= (যেমন গােপনীয় নয়) * দ্বারা প্রতীয়মান হয় যে, শুধুমাত্র তা কোথাও বর্ণিত দেখেননি, নিজ পক্ষ থেকে একটি বিষয় এ ধারণায় জুড়ে দিয়েছে যে, মাসয়ালা ঝগড়ার শক্তি রাখে না। আর ঐকমত্য এমন ধারণা দ্বারা প্রতিষ্ঠিত হয়না, যার কোন দলীল নেই। সুতরাং কিভাবে একদল অলী সম্পর্কে এমন উক্তি দ্বারা কাফির ফতােয়া দেয়া বিশুদ্ধ হতে পারে যা না যুক্তিগত, না বর্ণিত ও গ্রহণযােগ্য। সুতরাং হকের উপর প্রতিষ্ঠিত থেকো, আল্লাহরই তাওফীক।
*রদ্দুল মােখতার 'বাবু ইদরাকিল ফরীদা’-এর একটি মাসয়ালায় যা ‘বাহারে' উল্লেখিত এবং এর পেছনে (পরে) লিপিবদ্ধ ছিলাে। যার বক্তব্য হলো, “সুস্পষ্ট কথা হলাে এই যে, 'বাহারে’ (তিনি) তা স্পষ্টতঃ বার্ণিত দেখেন নি।
_________
জ্ঞাতব্য যে, ইলমে মুতলা ইজমালী’ যখন বান্দার জন্য প্রমাণিত হলাে তখন ‘মুতলাক্ব ইলমে ইজমালী' প্রমাণিত হওয়াই স্বাভাবিক। অনুরূপ মুতলাক ইলমে তাফসীলী জন্যই যে, আমরা কিয়ামত, জান্নাত, দোযখ এবং আল্লাহ ও তার গুণাবলী থেকে সাতটি মৌলিক গুণাবলীর উপর ঈমান এনেছি এবং এগুলাে গায়ব ছাড়া কিছু নয়। আর এ সবের ব্যাপারে আমরা পৃথক পৃথক ও অন্যের থেকে স্বাতন্ত্র বুঝেছি। সুতরাং বুঝা গেলাে, গায়বসমুহের ‘শর্তহীন বিস্তারিত জ্ঞান প্রত্যেক মুসলমানেরই
(১) অর্জিত হওয়া অপরিহার্য হয়েছে আম্বিয়া (আঃ) এর তাে প্রশ্নই উঠে না। কেনই বা হবে না? আল্লাহ তায়ালাতাে আমাদেরকে গায়বের উপর ঈমান আর নির্দেশ দিয়েছেন। ঈমান হলাে সত্যায়নের নাম। আর সত্যায়ন হলাে জ্ঞান। অতএব, যে গায়ব জানবে না, সে এর সত্যায়ন করবে কি করে? আর যে সত্যায়ন (স্বীকার) করবেনা, সে ঈমান কিভাবে আনবে? প্রমাণিত হলাে, যে জ্ঞান আল্লাহ তায়ালার সাথে খাস হবার যােগ্য, তা হলাে সত্ত্বাগত। জ্ঞানই।
রাসুল(ﷺ)কাছে গায়বের কোন জ্ঞান নেই, তিনি শেষ পরিণতি। সম্পর্কেও ‘অজ্ঞ' উক্তিকারী কাফিরঃ
আর শর্তহীন বিস্তারিত জ্ঞান যা আল্লাহ তায়ালার সকল মৌলিক জ্ঞান ভান্ডারের সাথে পরিবেষ্টিত হবে। অতএব, যে আয়াতসমূহে আল্লাহ ব্যতীত অন্যান্যদের জ্ঞান অস্বীকার করা হয়েছে, তাতে এ উভয় অর্থই উদ্দেশ্য হবে। আর এ কথাও প্রতীয়মান হলাে যে, যে জ্ঞান বান্দাদের জন্য প্রমাণ করা হবে তা প্রদত্ত জ্ঞান, যদিও তা মুতলকুে এজমালী হােক কিংবা মুলকু ইলমে তাফসীলী’ হােক। আর প্রশংসা এ দ্বিতীয় প্রকারের দ্বারাই হয়ে থাকে।
(১) তাফসীরে কবীরে রয়েছে এটি বলা নিষেধ নয় যে, গায়ব থেকে আমরা তাই জানি, যার উপর আমাদের জন্য দলীল রয়েছে। ইমাম কাযী আয়াজ (رحمة الله) থেকে নাসীমুর রিয়াদ শরহে শিফাতে’ বর্ণিত আছে- “আল্লাহ তায়ালা আমাদের গায়বের প্রতি, বিশ্বাস স্থাপন করা সম্পর্কে কষ্ট দিবেন না। বরং এর দ্বারা অকাট্যভাবে গায়বের দ্বার উন্মুক্ত করে দিয়েছেন। আল্লামা ইবনে জরীর আয়াতে করীমা এর ব্যাখ্যায় ইবনে জায়েদ থেকে রেওয়ায়েত করেন- ‘গায়ব’ হলাে কুরআন'। আর ইবনে যর থেকে বর্ণনা করেন-- ৫-১০ (দানীন) হলাে কৃপন, আর -- (গায়ক) হলাে কুরআন। ইমাম মােজাহিদ থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন-“তিনি সে সম্পর্কে কৃপনতা করেন না, যে সম্পর্কে তাঁর জ্ঞান রয়েছে। হযরত কাতাদাহ থেকে বর্ণিত-“নিঃসন্দেহে এ কুরআন গায়ব (অদৃশ্য বস্তু)। এটা মুহাম্মদ(ﷺ)কে প্রদান করেছেন এবং তা তাঁকে শিক্ষা দিয়েছেন।'
আর নিশ্চয় আল্লাহ তায়ালা জ্ঞান দ্বারাও বান্দাদের প্রশংসা করেছেন। যেমন ইরশাদ হয়েছে-(ফেরেশতাগণ ইব্রাহীমকে (আঃ) এক জ্ঞানী ছেলের সুসংবাদ প্রদান করেছেন)। আরাে ইরশাদ করেন-(নিশ্চয়ই ইয়াকুব আমার প্রদত্ত জ্ঞান। থেকে অবশ্যই জ্ঞানী) আরাে ইরশাদ করেন-(আমি খিযিরকে ইলমে লাদুন্নী। প্রদান করেছি।) আরাে ইরশাদ হয়েছে-(হে নবী (ﷺ) আপনি যা জানতেন না। আমি তা আপনাকে শিখিয়েছি।) আরাে অনেক আয়াতে এ প্রকারের জ্ঞানের প্রমাণ রয়েছে। যা দ্বারা বান্দাদের ‘ইলমে গায়ব (অদৃশ্য জ্ঞান) প্রদান করাই প্রমাণিত হয়। আয়াতের এটাই সঠিক মর্মার্থ। প্রকৃত পক্ষে যা থেকে না পলায়নের স্থান আছে, না অন্য কোন মর্মার্থের সম্ভাবনা। সুতরাং আপনাদের কাছে।
স্পষ্ট হয়ে গেলাে, ধর্মীয় যেসব বক্তব্য আমি এখানে বর্ণনা করেছি তা সব - (কোরআন-হাদীস) দ্বারা অবশ্যই প্রমাণিত। যে ব্যক্তি তা থেকে কোন একটিকে অস্বীকার করে সে দ্বীনকেই অস্বীকার করে, সে ইসলামী সম্প্রদায়ের বহির্ভূত। আর এটাই সে ব্যাখ্যা দ্বারা নির্ভরযােগ্য ওলামায়ে কিরাম স্বীকৃতি-অস্বিকৃতিমূলক আয়াতগুলাের মধ্যে সামঞ্জস্য বিধান করেছেন। যেমন, বিখ্যাত ইমাম আবু জাকারিয়া নবভী (رحمة الله) স্বীয় ফতােয়ায় বর্ণনা করেছেন। তারপর ইমাম ইবনে হাজর মক্কী (رحمة الله) ফতােয়ায়ে হাদীসিয়ায় এবং অন্যান্যদের গায়বের ইলমের অস্বীকৃতির অর্থ হলাে, কেউ সত্তাগতভাবে নিজ পক্ষ থেকে গায়ব জানেনা, আর কারাে জ্ঞান আল্লাহর সকল জ্ঞানকে পরিবেষ্টন করতে পারে। সুতরাং উদীয়মান সূর্য ও অতিবাহিত দিনের ন্যায় প্রতীয়মান হলো, যারা নবীর ‘শর্তহীন ইলমে গায়ব। আল্লাহ প্রদত্ত হলেও অস্বীকার করে; যেমন আমাদের দেশের ওহাবীরা, তারা পরিস্কার ভাষায় বলে যে “এমন কি নবী (ﷺ) না স্বীয় শেষ পরিণতির কথা জানেন, না উম্মতের।” এমন একজন ভ্রষ্টের প্রশ্নের হুকুম সম্পর্কিত প্রশ্ন দিল্লী থেকে রবিউল আওয়াল ১৩১৮ হিজরী সনে আমার হস্তগত হয়েছে। এর প্রত্যুত্তরে আমি ‘আম্বাউল মােস্তফা বিহালে সিররিও ওয়াআখফা’ লিখে ওহাবীদের উপর ক্বিয়ামতে কুবরা কায়েম করেছি; সুতরাং এরা এমন বস্তু অস্বীকার করছে, যা কোরআনে করীম প্রমাণ করেছে। আর তার একথা তার ঈমানকেই অস্বীকার করেছে এবং এটাই তার অনিষ্ট ও ধ্বংসের জন্য যথেষ্ট। সে তার এ কুফরী বাক্যের কারণে কাফির ও মুরতাদ। আর তার বাক্য-নবী করিম (ﷺ) না স্বীয় খাতেমার (শেষ পরিণতি) অবস্থা জানেন, না উম্মতের’ এটা দ্বিতীয় কুফর। যা অনেক সুস্পষ্ট আয়াতেরই অস্বীকার জ্ঞাপক। আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন- (আপনার জন্য দুনিয়ার চেয়ে পরকালই অতি উত্তম)(অতিসত্বর আপনার প্রতিপালক আপনাকে এমনভাবে দান করবেন যে, আপনি সন্তুষ্ট হয়ে যাবেন।)(সে দিন আল্লাহ তায়ালা নবী ও তার সাথে যারা থাকবেন, তাঁদের লজ্জিত ও অপমানিত করবেন না, তাদের ডানে ও বামে তাঁদের নুর থাকবে।) (অতিসত্ত্বর আপনার প্রতিপালক আপনাকে মাকামে মাহমুদ (প্রশংসিত স্থান) প্রদান করবেন) (হে নবীর পরিবারবর্গ, আল্লাহ। চান তােমাদের অপবিত্রতা থেকে দূরে সরিয়ে রাখতে এবং তােমাদের খুব পবিত্র করতে) - (নিশ্চয় আপনাকে আমি প্রকাশ্য বিজয় দান করেছি যেন আল্লাহ আপনার কারণে (১) পূর্ববর্তী ও পরবর্তীদের পাপ ক্ষমা করেন, স্বীয় নিমাত আপনার উপর পরিপূর্ণ করেন এবং আপনাকে তার দিকে সঠিক পথ প্রদর্শন ও সম্মানজনক সাহায্য প্রদান করেন। আল্লাহ তায়ালা এমনও পর্যন্ত ইরশাদ করেছেন-
خلدين فيها و يكفر عنهم سيأتهم وكان ذلك عند الله فوزا عظيما
" (যেন আল্লাহ ঈমানদার পুরুষ ও ঈমানদার মহিলাদের জান্নাতে প্রবেশ করান যার নিম্নদেশে নহর প্রবাহিত, তাতে তারা স্থায়ীভাবে বসবাস করবেন, তাদের থেকে তাদের পাপ মােচন করবেন আর এটাই আল্লাহর নিকট মহান সাফল্য)। আরাে ইরশাদ করেছেন-(সেই বরকতময় আল্লাহ যদি চান, তাহলে তােমাদের জন্য উত্তম করবেন জান্নাত, যার নিম্নপ্রদেশে নহরসমূহ প্রবাহমান এবং তৈরী করবেন তােমাদের জন্য উঁচু ও নীচু প্রাসাদ) - শব্দের পেশ বর্ণের সহিত যা আল্লামা ইবনে কাসীর, আমেরের ক্বিরাত এবং আসেম থেকে আবু বকরের রেওয়ায়েত হিসেবে বর্ণনা করেন। এতদ্ব্যতীত আরাে অনেক আয়াত রয়েছে। এ সম্পর্কে বহু হাদীসে মুতাওয়াতিরও রয়েছে, যা এক গভীর সমুদ্র, যার তল ও কুল পাওয়া অসম্ভব। (যারা কোরআন অস্বীকার করে বসেছে তারা) আল্লাহ ও তাঁর আয়াতের পর কোন্ হাদীসের উপর ঈমান আনবে? হে আল্লাহ! আমি আপনার কাছে প্রার্থনা করছি এবং কাফিরদের আঘাত থেকে আশ্রয় , চাচ্ছি।,
দ্বিতীয় নজর
ওহাবীরা ঐ মুশরিক যারা পূর্বাপর সবকিছুর জ্ঞান আল্লাহ ব্যতীত অন্যের জন্য শিরক সাব্যস্ত করেঃ
‘ইতােপূর্বেকার আলােচনার মাধ্যমে পরিষ্কার হয়ে গেছে যে, পূর্ণ-পরিপূর্ণ ও চরমােকর্ষিত সকল সৃষ্টিজগতের জ্ঞানের সমষ্টিকে আমাদের সমগ্র জাহানের প্রতিপালক আল্লাহর জ্ঞানের সমান হওয়ার সন্দেহ করা এতটুকুর জন্যও উপযুক্ত নয় যে, মুসলমানদের হৃদয়ে এর সামান্যতম সন্দেহও থাকতে পারে। অন্ধরা কি এটাও বুঝে না যে, আল্লাহর জ্ঞান সত্ত্বাগত আর সৃষ্টির জ্ঞান প্রদত্ত? আল্লাহর জ্ঞান তাঁর পবিত্র সত্তার জন্য ওয়াজিব আর সৃষ্টির জ্ঞান তার জন্য মুমকিন (সম্ভবপর)। আল্লাহর জ্ঞান স্থায়ী, অনন্তকালীন, কদীম ও মৌলিক আর সৃষ্টির জ্ঞান অস্থায়ী ও ধ্বংসশীল। কেননা, সকল সৃষ্টিই ধ্বংসশীল। আর সিফত (গুণ) তার মাউসুফ (গুনান্বিত) হতে অগ্রণী হতে পারে না। আর আল্লাহ তায়ালার ভয়ান
.
এটা আমাদের প্রতিপালকের রায়। তিনি কুরআনে করীমে ইরশাদ করেছেন “বাহানা করাে না, তােমরা ঈমান আনার পর কাফির হয়েছিলে।” এ আয়াতের তাফসীরে ইবনে আবী শােবা, ইবনে জরীর, ইবনে মুনজির, ইবনে আবী হাতিম ও আবু শেখ প্রমুখ মােজাহিদ থেকে বর্ণনা করেন-“কোন মুনাফিক বললাে ‘মুহাম্মদ (ﷺ) আমাদের বললেন যে, অমুকের উষ্ট্রী অমুক জঙ্গলে রয়েছে, তিনি গায়ব সম্পর্কে কি জানেন? এটা কেনইবা নবুয়তের অস্বীকার হবে না।”
আল্লামা কুলানী (رحمة الله) মাওয়াহেবে লাদুনিয়ায় উল্লেখ করেন-“নবুয়ত হলাে গায়ব, সম্পর্কে অবগত করানাে।” তিনি আরাে বলেন - নবুয়ত নাবা’ থেকে, উৎকলিত! এর অর্থ সংবাদ। অর্থাৎ আল্লাহ তায়ালা তাঁকে গায়ব সম্পর্কে অবগত করেছেন। নি (১) “লাকা এর মধ্যে লাম কারণ বুঝানাের জন্য। আর যাম্বুন (পাপ)-এর নিসবত (সম্পৰ্ক) নগন্য সম্পর্কের কারণে অর্থাৎ আল্লাহ তায়ালা আপনার কারণে এবং আপনার সাথে সম্পর্ক রাখার কারণে আপনার পরিবার বর্গের ত্রুটি ক্ষমা করুন। অর্থাৎ আপনার সম্মানিত পিতা-মাতা হযরত আবদুল্লাহ ও মহিয়সী মাতা হযরত আমিনা (رضي الله عنه) থেকে হযরত আদম ও হাওয়া (আঃ) পর্যন্ত সকলের পূর্ববর্তী পাপ ও পদস্খলন এবং আপনার পরবর্তী বংশধর তথা সন্তান-সন্ততি, পৌত্র পৌত্রের সকল আত্মিক বংশধর তথা কিয়ামত পর্যন্ত আহলে সুন্নাত ওয়াল জামায়াতের সকল অনুসারীর পাপ, পদস্খলন ও ভুল-ত্রুটি ক্ষমা করুন। এটাই আমাদের মতে উত্তম ও বিশুদ্ধ ব্যাখ্যা। আল্লাহই অধিক জ্ঞানী।
মাখলুক (সৃষ্টি) নয়, সৃষ্টির জ্ঞানই ‘সৃষ্টি’। আল্লাহ তায়ালার জ্ঞান কারাে শক্তিবলে নয়, মাখলুকের জ্ঞান তার শক্তিতেই এবং তাঁর কুদরতী হস্তেই। আল্লাহর জ্ঞান। স্থায়ী হওয়া ওয়াজিব আর মাখলুকের জ্ঞানের ধ্বংসশীলতাই স্বাভাবিক। আল্লাহর জ্ঞানের কোনরূপ পরিবর্তন হতে পারে না, সৃষ্টির জ্ঞানে পরিবর্তন হতে পারে। আর ঐ পার্থক্যসমূহ বুঝার পর, কেউ (আল্লাহ ও মাখলুকের জ্ঞান) সমান হবার। অনুমান করবে না কিন্তু যার উপর আল্লাহ তায়ালা লা'নত (অভিসম্পাত)
করেছেন এবং তাদের বধির ও অন্ধ করে দিয়েছেন। সুতরাং যদি আমরা ধরে নিই যে, কোন ধারণাকারী নবীর জ্ঞানকে আল্লাহর সকল জ্ঞানকে পরিবেষ্টনকারী জ্ঞান করে, তবে তার এ ধারণা অবশ্যই ভ্রান্ত ও তার অনুমান ভুল। আল্লাহর জ্ঞানের সাথে কোন সমতার তুলনা কিন্তু এখনও হয়নি। ঐ কঠিন পার্থক্যসমূহের কারণ যা আমি উপরে বর্ণনা করেছি যে, সৃষ্টিকর্তার জ্ঞান থেকে সৃষ্টির . জ্ঞানসমূহের জন্য আইন, লাম, মীম (১) অর্থাৎ শুধুমাত্র শরীক ব্যতীত কিছু অবশিষ্ট নেই। -
গায়াতুল মামুনের কুটিলতাপূর্ণ বক্তব্যের খণ্ডনঃ
(১) এর দ্বারা উদ্দেশ্য হলাে(নামগত সাদৃশ্য)। আর তা হচ্ছে মূল ও সত্তাগত ভিন্নতার ভিত্তিতে গুনগত পার্থক্যের ক্ষেত্রে অগ্রগণ্যতা। আর আমি তােমাদের প্রতারণকারীদের কঠোর দুর্ভাগ্যজনক লিখা সম্পর্কে অবগত করছি। আমি বলছি, এ হলাে আমাদের ঈমান আমাদের প্রতিপালকের উপর যে, তাঁর সত্তায় কোন অংশীদার নেই। জেনে রাখুন, আল্লাহ ব্যতীত কোন মাবুদ নেই। না তিনি কাউকে জন্ম দিয়েছেন,। আর না কেউ তাঁকে জন্ম দিয়েছেন, আর না কেউ তাঁর সমকক্ষ হতে পারে তাঁর গুণাবলীসমূহে। তাঁরই জন্য সকল প্রশংসা। তাঁর ন্যায় কোন বস্তু নেই, না তাঁর নামসমূহে (কেউ তাঁর ন্যায় হতে পারে)। কেউ তাঁর সমকক্ষ হতে পারে না তাঁর রাজ্যে। আল্লাহরই জন্য, যা কিছু আসমান ও জমীনে রয়েছে। আল্লাহ ব্যতীত তােমরা যাদের আহবান করাে, তারা কোন নগণ্য বস্তুরও মালিক নয়, আর না তাদের কোন মালিকানা রয়েছে তাঁর কর্মসমূহে। আল্লাহ ব্যতীত কি অন্য কোন সৃষ্টিকর্তা রয়েছে? যে একটি নাম তাঁর জন্য ব্যবহৃত হয়, তা কি অন্য কোন সৃষ্টির মধ্যে দেখা যায়? যেমন – (সর্বজ্ঞ) (প্রজ্ঞাময়), (অত্যন্ত ধৈর্যশীল), (দয়ালু),(সর্বশ্রোতা) (সর্বষ্টা), এমনি আরাে অনেক নাম রয়েছে। যাতে শুধুমাত্র শাব্দিক সাদৃশ রয়েছে, অর্থগতভাবে অংশীদার নয়। সুতরাং * ফতােয়ায়ে সিরাজিয়া, তাতারখানীয়া, মানহুল গাফফার, দুররােল মােখতার ইত্যাদিতে রয়েছে- এমন নাম রাখা যা কুরআনে কারীমে আল্লাহর জন্য ব্যবহৃত হয়েছে। যেমন আলী, কবীর, রশীদ ও বদী’ ইত্যাদি জায়েজ। কেননা, এ (একান্নভুক্ত নামসমূহ) গুলাে আল্লাহর জন্য যে অর্থে প্রযােজ্য, সে... অর্থে বান্দার জন্য প্রযােজ্য নয়। গোপন সংক।
ইমাম আবু ইউসুফ (رحمة الله) বলেন, আফআলুন ও ফয়ীলুম পদদ্বয় আল্লাহর গুণাবলীতে একই অর্থবােধক। যেমন হেদায়া গ্রন্থে রয়েছে। ইনায়ায়’ উল্লেখ আছে-‘আল্লাহর গুণাবলীতে কোন অতিরিক্ততা স্বীকার করা উদ্দেশ্য নয়। কেননা, মৌলিক মর্যাদা ও মহত্বের মধ্যে কেউ তাঁর বরাবর নয়, যদিও অতিরিক্ততার জন্য হয়। যেমন বান্দার গুণাবলীর মধ্যে হয়। সুতরাং উভয় সমান। বরং ওলামায়ে কিরাম অনেক স্থানে বলেছেন। যে, ২১ দ্বারা মূল ক্রিয়া শরীকবিহীন উদ্দেশ্য হয়, যেমন আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন-“আজ জান্নাতবাসীরা উত্তম বাসস্থান এবং উত্তম দ্রিাস্থানে রয়েছে।” তিনি। আরাে বলেন-“শ্রেষ্ঠ কে! আল্লাহ, না ওরা- যাদেরকে তারা শরীক সাব্যস্ত করে। তাঁর বাণী-- “কোন সম্প্রদায় শান্তির হকদার যদি তােমাদের জ্ঞান থাকে।” অথচ এরপর ইরশাদ করেন- “যারা ঈমান এনেছে, তারা নিজেদের ঈমানকে জুলুমের সাথে সংমিশ্রন করেনি, তারাই শান্তিতে রয়েছে এবং তারাই হিদায়তপ্রাপ্ত।” কিন্তু আশ্চর্য তাদের জন্য, যারা আমাদের বিন্যাসকৃত ও(সত্তাগত জ্ঞান)(প্রদত্ত জ্ঞান), (পরিবেষ্টনকারী) ও (পরিবেষ্টনবিহীন) জ্ঞানকে দার্শনিক বক্তব্য এবং ওলামা কিরামের নিকট অগ্রহণযােগ্য বক্তব্য বলে আখ্যায়িত করে। অথচ অধিকাংশ ওলামা কিরাম এর বিশ্লেষণ করেছেন। তাঁদের এ সকল বর্ণনা আমি স্বীয় পুস্তিকা “মালিউল হাবীব বেউলুমিল গায়বে” সন্নিবেশিত করেছি। আর যথেষ্ট সংখ্যক বর্ণনা “খালেসুল ইতেকাদ” নামক গ্রন্থে উল্লেখ করা হয়েছে যেমন উপরে বর্ণিত হয়েছে। ঐ। গ্রন্থে আল্লামা হুজ্জাতুল ইসলাম ইমাম গাজ্জালী (رحمة الله) থেকে পার্থক্য বর্ণনা করা হয়েছে। যে, আল্লাহর জ্ঞান পরিবেষ্টনকারী আর সৃষ্টির জ্ঞান পরিবেষ্টনকারী নয়। বরং তিনিই এর বিশ্লেষণ করে দিয়েছেন। যেমন সামনেই বর্ণিত হচ্ছে ইনশাআল্লাহ। কিন্তু যখন ঐ ব্যক্তি। স্বীয় প্রমাণ বাতিল হতে দেখেছে এবং স্বীয় দলীলের রাস্তা বন্ধ হতে দেখেছে, তখন অস্বীকার করে বসেছে এবং দাবী করছে যে, আল্লাহর জ্ঞান দ্বারা উদ্দেশ্য হলাে শরীয়তের আয়াতসমূহে মুতলাক ইরাক (শর্তহীন জ্ঞান) এবং শব্দের ব্যবহার আল্লাহ তায়ালার আয়াতসমূহ এবং এ বাণীতে “আল্লাহ ও রাসূল অধিক অভিজ্ঞ” দ্বারা সনদ গ্রহণ করেছেন এবং বলে দিয়েছেন যে, আরবী সাহিত্যে এর অর্থ হলাে ৯ (যাকে মর্যাদা দেয়া হয়েছে) এবং (যার উপর তাকে মর্যাদা দেয়া হয়েছে) অর্থগত দিক দিয়ে। উভয় শরীক রয়েছে। অর্থের অতিরিক্ততায় (মর্যাদা প্রাপ্তির) অংশ খাছ। এটা বলেছে কিন্তু এর পরিণাম কিছুই বুঝেনি। যদি এর শাস্তি সম্পর্কে জ্ঞাত হতাে, তাহলে অবশ্যই বলতাে আমার-তার, আর তার আমার মধ্যে দ্বন্দ্ব কিসের? কেননা, তাতে দু’টি বড় মুসিবত। পড়ে রয়েছে। প্রথম মুসিবত, তার থেকে জিজ্ঞেস করাে জ্ঞান ও এর অনুরূপ আল্লাহর প্রশংসায় যার বর্ণনা শরীয়তের প্রমাণ ও আয়াতসমূহে রয়েছে, তা আল্লাহ তায়ালার পরিপূর্ণ গুণাবলী কিনা? যদি বলে হাঁ, যা প্রত্যেক মুসলমান থেকেই আশা করা যায়। তাহলে প্রথমতঃ তাকে বলে দাও, (আল্লাহর পবিত্রতা) যে ব্যক্তি আল্লাহ ও তাঁর আয়াতসমুহে ঈমান আনে, আর তাঁর সাথে তাঁর গুণাবলীতে সৃষ্টিকে অংশীদার করে এবং চিৎকার করে, বলে যে, তাঁর গুণাবলীতে সৃষ্টির সামঞ্জস্যতা রয়েছে। হাঁ, অতিরিক্ত আল্লাহরই জন্য খাস। এ ধরনের বক্তব্যসমূহের দ্বারা এ ধারণা প্রবল হয় যে, এ পুস্তিকার যদি কোন ভিত্তি। ছিলােই, তাহলে ওহাবীদের হাতই তা পরিবর্তন করে দিয়েছে। কেননা, তারা এমন, উক্তিসমূহ আবিস্কারে সাহসকারী। যেমন, রাসুলে পাক (ﷺ)-এর জ্ঞানকে পাগল, অবুঝ, শিশু, চতুষ্পদ ও হিংস্ৰজন্তুর জ্ঞানের সাথে অংশীদার করার দুঃসাহস দেখিয়েছে। আমি সন্দেহের ভিত্তি অর্থাৎ আল্লাহর গুণাবলীতে সৃষ্টিকে শরীক করা ওহাবীদের উধ্বর্তন। পেশাওয়াদের ব্যতীত কাউকে দেখছিনা। হযরত ইব্রাহীম (আঃ) যখন নমরুদকে। বলেছিলেন “আমার প্রতিপালক হলেন তিনিই, যিনি জীবিত করেন ও মত প্রদান। করেন”। তখন নমরূদ বললাে-“আমিও মৃতকে জীবিত আর জীবিতকে মারতে পারি।”
দ্বিতীয়তঃ পুস্তিকায় যা উল্লেখ করা হয়েছে, তা ভিত্তিহীন পদ্ধতি নয়। বরং অবশ্যই
অনুসরণযােগ্য প্রমাণ যা তুলনা করার অবস্থায় পাথর ও নিশুপ হয়ে যাওয়ার নয়। না হয়। এটাই আল্লাহর সাথে মাখলুকের তাঁর মহানত্ব, সম্মান ও নির্দেশ ইত্যাদি শরীক স্থির করা বুঝাবে যাতে এর প্রয়ােগ আমাদের মহান প্রতিপালকের উপর করা হয়েছে। যেমন আমরা বলি- (আল্লাহ মহান)(সর্বশ্রেষ্ঠ) (তিনি শ্রেষ্ঠতম)তিনি অতি" মহান) ও (সর্বশ্রেষ্ঠ বিচারক)। এ ছাড়া আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন(তাঁর নির্দেশে কেউ শরীক নেই) হাদীসে কুদসীতে রয়েছে (“গর্ব আমার চাঁদর, মর্যাদা আমার ভূষণ। সুতরাং যে আমার সাথে জগড়া করবে এ দু’টোর কোন একটিতে, তাকে।
আমি আগুনে নিক্ষেপ করবাে
আরেকটি জঘন্য উক্তির খন্ডনঃ
তৃতীয়তঃ এ পুস্তিকায় আল্লাহ তায়ালার গুণাবলীকে (মূল অর্থের) উপর প্রয়ােগ করা
হয়েছে। আর মৌলিক অর্থ ধ্বংসাত্মক, অস্তিত্বহীন ও মরণশীল বিষয়ের সাথেই সম্পৃক্ত। অথচ, আল্লাহর গুণাবলী তা থেকে পবিত্র ও বহু উর্ধ্বে।
যদি ‘না’ বলে, তাহলে নিশ্চয়ই সে স্থির করেছে যে, দ্বীনী নস’ ও কুরআনের আয়াতসমূহ যেখানে আল্লাহ তায়ালার প্রশংসা ইত্যাদি দ্বারা করা হয়েছে সেগুলিতে সে, পরিপূর্ণ গুণাবলী দ্বারা তাঁর প্রশংসা করে না। বরং প্রশংসা করে ঐ সাধারণ বস্তু দ্বারা যা প্রত্যেক ভাল, মন্দ, ভদ্র, হীন, মুমিন ও কাফির নির্বিশেষে হাসিল হয়। কোন মুসলমান এ ধরনের দুঃসাহস দেখাতে পারে না। বরং তারা (মুসলমান) প্রশংসা করে মর্যাদাশীল, উচ্চ ও মহান গুণাবলী দ্বারা, যা তার পবিত্র সত্ত্বায় নব আবিষ্কৃত ত্রুটিসমূহ এবং তার নিদের্শর্নাবলী থেকে পবিত্র।
দ্বিতীয় মুসিবত এই যে, যেখানে তিনি পরিবেষ্টনের ইচ্ছেয়ও রাজী হয়নি সেখানে সত্তাগত-এর প্রশ্নই উঠে না। কেননা, উভয়কে দর্শন বলে কুরআন ও সুন্নাহর অর্থকে অগ্রহণযােগ্য করে দিয়েছে। আর উভয়কে বাহ্যিক অর্থ থেকে বহির্ভূত নসসমূহ এবং অধিকাংশ নসকে একেবারে পরিত্যক্ত আখ্যায়িত করার দিকে পথ প্রদর্শনকারী, মুসলমানদের মহা ফিতনায় নিক্ষেপকারী, দ্বীনের সুদৃঢ় ও মজবুত রঞ্জুকে পরিত্যাগকারী বলেছে এবং স্বীকৃতি দিয়েছে যে, শর্তহীন জ্ঞানই আয়াতসমূহে উদ্দেশ্য, যাতে সৃষ্টিকর্তা ও সৃষ্টি উভয় শামিল রয়েছে। সুতরাং সে আয়াতে করীমাকে পরস্পর বিরােধ ও বিপরীত (আখ্যায়িত করে ত্যাগ করেছে। আপনাদের নিকট প্রতীয়মান হলাে যে, কুরআন ও হাদীসে ইলমে গায়বের স্বীকৃতি-অস্বীকৃতি উভয় আয়াত বিদ্যমান। আর তার মতে এ গুলাের দ্বারা উদ্দেশ্য শর্তহীন জ্ঞান। অতএব, স্বীকৃতি-অস্বীকৃতি উভয় আয়াত একই অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে। আর বৈপরিত্যের নিক্তির কাঁটায় পরিমাপকারীদের রক্ত পিপাসু থাবা আল্লাহ তায়ালার আয়াতের উপর খুব জমে গিয়েছে। আর প্রত্যেক হক পরিত্যাগকারী এমনই যেন বাতিল বাতিলকেই সাহায্য করে। আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে হেফাজত করুন।
একটি কুটিলতাপূর্ণ বক্তব্যের খন্ডনঃ
অপর একটি কঠিন মুসিবত হলাে, এ অপবাদদাতার পুস্তিকার ২৩ পৃঃ রয়েছে প্রত্যেক জ্ঞানসমূহ বলতে আল্লাহ তায়ালার আলমে শাহাদাতের জ্ঞানই (উদ্দেশ্য)}
আমি বলছি, এটা কঠিন ভূল। সত্য এ ছিলাে যে, প্রত্যেক অস্তিত্বময় বস্তুসমূহ : বলা। কেননা, আল্লাহ তায়ালার জ্ঞানসমূহ এ অস্তিত্বহীনদেরকে যারা অস্তিত্বের জামা পরিধান করেনি, আর না কিয়ামত পর্যন্ত কখনাে অস্তিত্বে পৌছতে পারবে বরং সকল প্রকার অসম্ভব বস্তুসমূহেও ব্যাপৃত রয়েছে।
কোন " এর বিশ্লেষণ ‘আকৃায়েদের কিতাব সমূহে বিদ্যমান রয়েছে। আর আল্লাহ তায়ালা সম্পর্কে অসম্ভব যদি আলমে শাহাদাত থেকে হতাে, তাহলে অবশ্যই উপস্থিত, সাক্ষী, সৃষ্ট। ও বিদ্যমান হতাে। আর এ থেকে অধিক নিকৃষ্ট আর কি হতে পারে যে, আল্লাহ তায়ালা স্বীয় অংশীদার, মৃত্যু এবং দুর্বলতা ও মুখতা ইত্যাদি প্রত্যক্ষ করেন? এ ছাড়া আরাে : অনেক মুসিবত রয়েছে যা থেকে আল্লাহ মহান ও বহু উর্ধ্বে " ওলামায়ে কিরাম বিশ্লেষণ করেছেন যে, দর্শন অস্তিত্বের উপর মওকুফ ও নির্ভরশীল। আর অস্তিত্বের বস্তু আল্লাহ তায়ালাকে প্রত্যক্ষ করতে পারেনা। মতবিরােধ শুধু এতেই। রয়েছে যে, নিশ্চয়ই আল্লাহ তায়ালা অস্তিত্বময় বস্তু অস্তিত্বের সময় দেখেন অথবা আজলে প্রত্যেক ঐ বস্তুকে যা অস্তিত্বহীন থেকে অস্তিত্বে আসবে (তা) দেখেন। সুতরাং এতে সকলেই একমত যে, আল্লাহকে প্রত্যক্ষ করা অসম্ভবের সাথে সম্পর্কিত নয়। এ সম্পর্কে আমি “সুবহানুস সুলুহ আন আয়বে কিযবে মাক্বুহ" গ্রন্থে সুস্পষ্টরূপে বর্ণনা করেছি। সাবধান! সম্ভবতঃ এ ত্রুটিসমূহ এমনিই যেমন তার পুস্তিকা কতেক ইমাম সম্পর্কে উক্ত করেছে (১২ পৃঃ) যে, নিশ্চয়ই তিনি মাযহাবগতভাবে সুন্নী ছিলেন। কিন্তু এ মাসয়ালায় তাঁর ত্রুটি হয়েছে। আল্লাহর কাছেই ক্ষমাপ্রার্থী। লা হাওলা ওয়ালা কুয়াতা ইল্লা বিল্লাহিল আলীয়্যিল আজীম।
* ইমাম কাজী আয়াজ (رحمة الله) শিফা শরীফে উল্লেখ করেন-“বিশ্বাস রাখতে হবে আল্লাহ তায়ালা স্বীয় সম্মান, মহান, সালতানাত ও স্বীয় পবিত্রতম নাম ও মহান গুণাবলীতে সৃষ্টিজগতের মধ্যে না কারাে অনুরূপ, আর না তার ন্যায় অন্য কেউ রয়েছে। আর যার ব্যবহার পবিত্র শরীয়ত সৃষ্টিকর্তা ও সৃষ্টি উভয়ের উপর করেছে, এগুলােতে মৌলিক অর্থে কোন সাদৃশ্য নেই। অনুরূপ তাঁর গুণাবলীর সাথে মাখলুকের কোন তুলনাই হতে পারে না। ... অতঃপর ইমাম ওয়াসেতী (رحمة الله) থেকে বর্ণনা করেন- তাঁর পবিত্রতম সত্তার ন্যায় কোন সত্তা নেই, না - তাঁর পবিত্রতম নামের ন্যায় কোন নাম। আর তাঁর কর্মের সাদৃশ্য কোন কর্ম এবং তাঁর গুণের নায় কোন গুণও হতে পারেনা। কিন্তু শাব্দিক সাদৃশ্য থাকতে পারে। আরাে উল্লেখ করেন-“এ হলাে আহলে হক ও আহলে সুন্নাত জামাতের অভিমত। নিন , আমি বলছি, হুজ্জাতুল ইসলাম ইমাম গাজ্জালী (رحمة الله) কৃত ‘ইমলা আলাল আহইয়াহ’ গ্রন্থে হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ)-এর সূত্রে বর্ণিত ‘পরকালে মানুষের নিকট নাম ব্যতীত কোন জ্ঞান নেই। সুতরাং আল্লাহ সম্পর্কে তােমাদের কি ধারণা?
সুতরাং এ অবস্থায় সৃষ্টির পক্ষে স্রষ্টার জ্ঞান পরিবেষ্টন করা কিভাবে বিশুদ্ধ হতে পারে? অকাট্য দলীলাদি দ্বারা প্রমাণ করছি যে, সৃষ্টির পক্ষে আল্লাহ। তায়ালার জ্ঞানসমূহ বেষ্টনকারী হওয়া যুক্তিগত ও শরীয়ত উভয় দৃষ্টিতে নিশ্চিতরূপে ভ্রান্ত। ওহাবীরা যখন ইমামের অনুসারীদের কাছ থেকে শুনে যে, তারা ইমামদের অনুসরণ ও কুরআন হাদীসের অনুসরণের দ্বারা রাসুলে সৈয়দে। আলম(ﷺ)-এর জন্য প্রথম দিন থেকে শেষ দিন পর্যন্ত সকল অতীত ও বর্তমানের জ্ঞান প্রমাণ করে, তখন তারা তাদের উপর শিরক ও কুফরের হুকুম প্রয়ােগ করে এবং দাবী করে যে, এরা আল্লাহর জ্ঞান ও নবীর জ্ঞানকে সমান। করে ফেলেছে। এ হুকুম প্রয়ােগকারী মূলতঃ নিজেই ভুল ও ভ্রান্ত ধারণায় নিমজ্জিত এবং তারাই কুফর ও শিরকের গর্তে পতিত। এ কারণে যে, যখন তারা এ সীমাবদ্ধ, পরিবেষ্টিত ও অল্প সংখ্যক জ্ঞান প্রমাণ করতে আল্লাহর জ্ঞানের সাথে সাম্য স্থির করছে, তখন তারাই সাক্ষ্য দিয়েছে যে, আল্লাহ তায়ালার জ্ঞান খুবই নগণ্য, ক্ষুদ্র, ছােট, কম ও অল্প পরিমাণই। কেননা, তাদের মতে আল্লাহর জ্ঞান যদি এ পরিমাণ থেকে বেশী হতাে, তাহলে অধিক জ্ঞান অল্পের সমান কিভাবে হতে পারে? সুতরাং তারা সমতার হুকুম প্রয়ােগ করতাে না।
কিন্তু তারা যখন এ হুকুম প্রয়ােগ করছে, তবে তারা আল্লাহর জ্ঞানের সাথে বিদ্রুপই করছে, গায়ের জোরে তাঁকে অসম্পূর্ণ বলছে। আল্লাহ তাদের মৃত্যু ঘটাক। কোথায় উপুড় হয়ে যাবে! আমরা আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করছি তাদের। ফিতনা থেকে রক্ষার জন্য।
তৃতীয় নজর
‘হিফজুল ঈমান গ্রন্থকার থানবীর উপর ক্বিয়ামত কুবরা কায়েমঃ
হে আল্লাহ! তােমার ক্ষমা আমরা প্রত্যক্ষ করছি এতদসত্ত্বেও যে, সমগ্র। জগত অন্ধকারাচ্ছন্ন হয়ে যাচ্ছে, সীমাতিক্রম করছে, অনেক লােকের উপর গােমরাহ (ভ্রান্ত) মতবাদ ছেয়ে যাচ্ছে। আমি পূর্বেই আল্লাহতায়ালার সত্ত্বাগত জ্ঞান এবং শর্তহীন সীমাবদ্ধ জ্ঞান সম্পর্কে বিস্তারিত বর্ণনা উক্ত করেছে। এ জ্ঞানসমূহ এবং আল্লাহর জন্যই খাস্ বান্দার জন্য নয়। কিন্তু শর্তহীন প্রদত্ত জ্ঞান প্রত্যেক মুসলমানেরই রয়েছে, আম্বিয়ায়ে কিরামদের কথা আর কি বলবাে। কারণ যদি এ জ্ঞান না হয়, তাহলে ঈমানও বিশুদ্ধ হবে না; যেমন ইতােপূর্বে আলােচিত হয়েছে। হয়তাে এ বর্ণনা দ্বারা কোন কোন সন্দেহকারীর মনে। সন্দেহের উদ্রেক হতে পারে যে, আমাদের ও আমাদের নবীর মধ্যে কেনি। পার্থক্যই রইলাে না। সুতরাং অন্যান্য আম্বিয়ায়ে কিরামদের ব্যাপারে কি ধারণা রাখতে পারি? যেমন জ্ঞান হুজুরের (ﷺ) ও অন্যান্য নবীদের রয়েছে, অনুরূপ। আমাদেরও অর্জিত হয়েছে। আর যে শ্রেণীর জ্ঞান আমাদের অর্জিত হয়নি তা তাদেরও অর্জিত হয়নি। সুতরাং আমরা সবাই সমান হয়ে গেছি। এটা যদিও এমন বক্তব্য যা কোন জ্ঞানবান ব্যক্তিতাে দূরের কথা, কোন বুদ্ধিমানের নিকট থেকেও আশা করা যায় না, কিন্তু তী ওহাবীদের থেকে আশা করা অসম্ভব নয়। এ কারণে যে, তারা বুদ্ধিহীন সম্প্রদায় এবং তাদের কেউ সঠিক পথে নেই। আমার কি হলাে যে, আনুমানিকভাবে বলছি যা সংঘটিতই হয়ে গেছে। আপনারা . কি শুনেননি যে, ইদানিং ওয়াহাবীদের মধ্যে সাধু, শেখ ও সুফীর দাবীদার এক অহংকারী আবির্ভূত হয়েছে, যে কিনা একগুয়ে হিন্দুদের অন্তর্ভূক্ত! সে একটি . পুস্তিকা রচনা করেছে, যা চার পৃষ্ঠাও হবে না। যদ্বারা সাত আসমান ফেটে পড়ার উপক্রম হয়েছে। এর নাম দিয়েছে ‘হিফজুল ঈমান’ (ঈমান সংরক্ষণকারী)। প্রকৃত পক্ষে তা ‘হিফজুল ঈমান নয় বরং “খিফদুল ঈমান’ তথা ঈমান হরণকারী। তাতে উপরােক্ত বর্ণনাই সুস্পষ্ট করা হয়েছে, কিয়ামত দিবসকে এতটুকু ভয় করেনি। এর ভাষ্য হলাে-‘অতঃপর কথা হলাে তাঁর পবিত্র সত্তায় অদৃশ্য জ্ঞানের হুকুম প্রয়োগ করা যদি যায়েদের কথামত বিশুদ্ধ হয়, তাহলে জিজ্ঞাসার বিষয় হলাে, হয়তাে এ গায়ব দ্বারা আংশিক গায়ব উদ্দেশ্য হবে কিংবা পূর্ণ গায়ব। যদি আংশিক উলুমে গায়ব (অদৃশ্য জ্ঞান) উদ্দেশ্য হয়, তাহলে তাতে। হুজুর (ﷺ) এর বৈশিষ্ট্য কি? এমন অদৃশ্য জ্ঞানতাে জায়েদ, ওমর এমনকি প্রত্যেক শিশু ও পাগল বরং সকল চতুষ্পদ জন্তুরও রয়েছে। যদি পূর্ণ অদৃশ্য জ্ঞান উদ্দেশ্য হয়, এভাবেই যে, এর একটি এককও বহির্ভুত নয়, তাহলে এর বাতুলতা। যুক্তি ও অকাট্য দলীল দ্বারা প্রমাণিত” এ গোয়ার ও মরদুদ জানেনা যে, গায়বের মধ্যে শর্তহীন প্রদত্ত জ্ঞান প্রকৃতপক্ষে আম্বিয়ায়ে কিরামের জন্য খাস। আল্লাহ তায়ালার এ বাণী মতে,“আল্লাহ অদৃশ্য জ্ঞান সম্পর্কে জ্ঞাত, তিনি তার নির্বাচিত নবীদের ব্যতীত অন্য কারাে কাছে তা প্রকাশ করেন না।” আর তাঁর এ ইরশাদ মতে,
• “আল্লাহর কাজ এটা নয় যে, তিনি তােমাদের স্বীয় গায়ব সম্পর্কে অবহিত করবেন, কিন্তু তাঁর পছন্দনীয় রাসুলদের মধ্যে যাকে ইচ্ছে এর জন্য নির্বাচিত করেন।” সুতরাং তিনি (আল্লাহ) ব্যতীত অন্যান্যদের যে জ্ঞান হাসিল হবে তা তার ফয়েজ, সাহায্য, কৃপা ও দানের দরুণ এবং পথ প্রদর্শনের দ্বারা অর্জিত হয়। সুতরাং সমান কিসের? এটা ব্যতীত আম্বিয়ায়ে কিরামের জ্ঞানসমূহ থেকে সামান্যতম ব্যতীত অন্য কেউ জানে না। তাঁদের গায়বের জ্ঞানসমূহের যে সমুদ্র প্রবাহিত হয়, এর সম্মুখে কোন গণনা বর্ণনার আওতায় আসে না। আম্বিয়া (আঃ) আদি থেকে অনন্তকাল পর্যন্ত যা হয়েছে ও যা হবে, সব কিছুই জানেন। বরং তারা সব কিছু দেখেন ও প্রত্যক্ষ করেন। আল্লাহ তায়ালা এরশাদ করেন এভাবে আমি ইব্রাহীমকে আসমান ও পৃথিবীর সকল বাশাহী প্রত্যক্ষ করাই”।
ইমাম তাবরানী ‘মু’জামে কবীর ইবনে হাম্মাদ ‘কিতাবুল ফিতান' এবং আবু নঈম 'হুলইয়াতুল আওলিয়ায় হযরত আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (رضي الله عنه) থেকে রেওয়ায়েত করেন, নবীয়ে করিম (ﷺ) ইরশাদ করেছেন,
إن الله قد رفع لى الدنيا فانا انظر اليها و إلى ماهو كان فيها إلى يوم القيامة الم
“নিশ্চয় আল্লাহ তায়ালা আমার সম্মুখে দুনিয়া উত্তোলন করেন। আমি তা ও তাতে কিয়ামত পর্যন্ত যা কিছু সংঘটিত হবে সব এমনভাবেই দেখেছি যেভাবে এ হাতের তালুকে।”
এটা আল্লাহর পক্ষ থেকে একটি নূর, যা আল্লাহ তায়ালা স্বীয় নবীর জন্য প্রজ্জলিত করেছিলেন; যেভাবে পূর্বের নবীদের জন্য প্রজ্জলিত করেছেন। তাহলে ঐ ভ্রষ্ট যেখানে পূর্ণ ও আংশিকের ব্যবধান দেখিয়েছে তন্মধ্যে প্রথমটি বিদ্যমান নেই। আর দ্বিতীয়টিও সকলের জন্য শামিল বলে ধারণা করে হুকুম লাগিয়ে দিয়েছে। রাসুলুল্লাহ (ﷺ), যার জ্ঞানও সমগ্র বিশ্বব্যাপী প্রশস্ত, আল্লাহ তায়ালা তাঁকে তাই শিক্ষা দিয়েছেন, যা তিনি জানতেন না। আল্লাহর করুণা তার উপর। মহান। সুতরাং তিনি পূর্বাপর সকল কিছুর জ্ঞানী হয়েছেন। যা গত হয়েছে এবং ভবিষ্যতে হবে সব তিনি জেনেছেন, আর যা কিছু আসমান ও জমীনে রয়েছে। এসব ব্যাপারেও তিনি জ্ঞাত হয়েছেন। পূর্ব থেকে পশ্চিম পর্যন্ত সকল প্রকারের জ্ঞান তাঁর আয়ত্বে এসে গেছে এবং সব কিছু তার নিকট সুস্পষ্ট হয়ে গেছে। আল্লাহ তায়ালা তার জন্য প্রত্যেক বস্তু বিস্তারিতভাবে বর্ণনা করেছেন। কিন্তু ভ্রষ্ট তাঁর আল্লাহ প্রদত্ত এ জ্ঞানকে জায়েদ, ওমর বরং অবুঝ শিশু, পাগল এমনকি প্রত্যেক চতুষ্পদ জন্তুর সমান করে দিয়েছে। দুর্ভাগা জানেনি যে, আংশিকের মধ্যে বড়, ছােট, মধ্যমও রয়েছে, যাতে এক ছােট বৃষ্টির কণার পরিমাণ থেকে। আরম্ভ করে লাখাে-কোটি সমুদ্রের তরঙ্গের পরিমাণও শামিল রয়েছে, যা পরিবেষ্টন করা যায় না। না তার কোন পার্শ্ব আছে, না এর কোন শেষ রয়েছে। অতএব, এটা সম্পূর্ণ নয়, বরং আল্লাহর জ্ঞানের আংশিক এবং তা তার জ্ঞানে। বেষ্টন করে না। কিন্তু তিনি যতটুকু চান। অতএব, যদি শুধুমাত্র আংশিক সমান। ও সাম্য এবং বিশেষত্ব অস্বীকারের জন্য যথেষ্ট হতাে, যেমন এ মরদুদ ও বঞ্চিত ধারণা করেছে, তাহলে এ হুকুমও প্রয়ােগ করে দিক যে, আল্লাহ তায়ালার শক্তি। যায়েদ ও ওমর বরং প্রত্যেক অবুঝ শিশু ও পাগল এমনকি প্রতিটি চতুষ্পদ জন্তুর শক্তির (১) সমান! কেননা, সকল জন্তু কোন না কোন কর্ম ও নড়াচড়ার উপর। শক্তি রাখে, যদিও তাদের সৃষ্টি করার শক্তি নেই।
বান্দার ক্ষমতা
আমরা আহলে সুন্নাত জামাত-আল্লাহ তায়ালার প্রদানের মাধ্যমে ‘ধ্বংসশীল শক্তিই প্রমাণ করে থাকি। যদিও তা অর্জিত, সৃষ্টিকারী নয়। আর এর সম্পূর্ণ বিপরীত জাহম ইবনে সাফওয়ানের মাযহাব যেমন মাওয়াকিফ ও এর ব্যাখ্যাগ্রন্থে রয়েছে। আল্লাহ তায়ালা এরশাদ করেন-অর্থাৎ তারা প্রত্যুষে মদীনা যাওয়ার প্রতিজ্ঞা করেছে। অথচ, তাদের দান করার ও উপকার করার শক্তি ছিলাে। আল্লামা আবু মাসউদ স্বীয় তাফসীর “ইরশাদুল আকল আসসালীম” গ্রন্থে
চতুর্থ নজর
ওহাবীদের ধুর্তামীর প্রতি কঠোর হুঁশিয়ারী, ইলমে গায়ব সম্পর্কে তাদের ও আমাদের পার্থক্যঃ
কি আল্লাহ তায়ালার লাঞ্ছিত ওহাবীরা যখন সহায়হীন ও নিরাশ হয়, তখন নিজেদের মুক্তির জন্য পথ খুঁজে; কিন্তু পলায়নের স্থান কোথায়? তখন তারা বলে, হাঁ, আল্লাহ তায়ালা মুহাম্মদ (ﷺ) কে কোন কোন সময় আংশিক গায়বের জ্ঞান মুজিজাস্বরূপ প্রদান করেছেন কিন্তু তিনি ততটুকু জানেন, যতটুকু তাঁকে
শিক্ষা দেয়া হয়েছে। এটা তােমরাওতাে স্বীকার করাে। অতএব, মতবিরােধ উঠে গেছে এবং ঐকমত্য প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। তারা নিজেদের কথার মাধ্যমে মুখদের - ধােকা দিতে চায় এবং অলসদের শিকারে ফেলতে চায়। কিন্তু যারা তাদের।
প্রত্যক্ষ করেছে, তাদের গালী শ্রবণ করেছে তাদের নিকট স্পষ্ট যে, “সকল বৌয়ের মধ্যে সব চেয়ে নিকৃষ্ট বৌ হলাে, সেই যে উঁকি মেরে দেখে এবং লুকিয়ে পড়ে”। দিল্লীর ওহাবীরা কি বলেনি, মুহাম্মদ (ﷺ) কিছু জানেন না, এমন কি নিজের শেষ পরিণতির অবস্থাও? অতএব, এ হীন ও লাঞ্ছিতদের ত্যাগ করুন, তাদের ন্যায় তুচ্ছ লােকদের ধােকায় পড়বেন না।
তাদের দিল্লীর পেশাওয়া “তাকবিয়াতুল ঈমানে’ কি বলেনি যে, “যে কেউ কোন নবীর জন্য গায়েবের জ্ঞান রাখেন বলে দাবী করেন, যদিও এক বৃক্ষের পাতার সংখ্যা বরাবরও হােক তাহলে নিঃসন্দেহে, তারা আল্লাহর সাথে শিরক করেছে; চাই এটা স্বীকার করুক যে, তিনি সত্ত্বাগতভাবে জানেন কিংবা আল্লাহর জানানাের দ্বারা, উভয় দিক দিয়ে, শিরক প্রমাণিত হয়”?
তাদের বড় গাঙ্গুহী কি ‘বরাহীনে কাতেয়াতে বলেনি যে, নবী করীম (ﷺ) -এর তার দেওয়ালের পেছনের অবস্থাও জানেন না”?
আর রাসুলে করীম (ﷺ) উপর অপবাদ দিয়ে তা খােদ তারই বাণী বলেছে এবং পূর্ণ নির্লজ্জতার সাথে এ হাদীসের রেওয়ায়েত আবদুল হক্ মােহাদ্দেছ দেহলভীর (رحمه الله تعالي) দিকে সম্পর্কিত করেছে। অথচ শেখ (رحمه الله تعالي) তা সন্দেহপূর্ণভাবেই উল্লেখ করেছেন এবং এর উত্তর দিয়েছেন যে, এ হাদীস প্রমাণিত (১) নয় এবং এর রেওয়ায়েত (বর্ণনা পরম্পরা) বিশুদ্ধ নয়।
(১) এভাবে ইমাম ইবনে হাজর আসক্বালানী (رضى الله تعالي عنه) বলেছেন যে, এর কোন ভিত্তি নেই। আর ইমাম ইবনে হাজর মক্কী (رحمه الله تعالي) আফালুল কুরাতে উল্লেখ করেছেন, এর কোন সনদ জানা নেই। গ্রন্থকার রচিত 'হুসসামুল হারামাঈন’ থেকে সংকলিত ।
যেমন তিনি মাদারেজুন্নবুয়তে' বিশ্লেষণ করেছেন। সুতরাং কোথায় এ উক্তি আর কোথায় সে বাণী, যে সম্পর্কে কুরআন করীম সাক্ষী এবং যাতে নবীয়ে করীমের (ﷺ) বিশুদ্ধ হাদীসসমূহ প্রমাণ স্থির করছে? বরং পূর্ববর্তী সকল গ্রন্থাবলী এ বর্ণনা দ্বারা পরিপূর্ণ যে, রাসুলে করীম (ﷺ) সম্মুখ ও পিছনের জ্ঞান সম্পর্কে অবহিত এবং অতীত ও ভবিষ্যতের সকল জ্ঞান সম্পর্কে পূর্ণভাবে জ্ঞাত এবং প্রত্যেক কিছুর জ্ঞান তাঁর জন্য স্পষ্ট ও প্রকাশিত হয়ে গেছে; এবং তিনি সব কিছুর জ্ঞান সম্পর্কে অবহিত হয়েছেন।
ওহাবীরা মুশরিকদের চেয়েও বােকাঃ
বাকী রইলাে, তাদের কথা-‘তিনি জাননে না, কিন্তু যা আল্লাহ তায়ালা বলে দিয়েছেন’ এটা হলাে সত্যকথা কিন্তু তা দ্বারা তারা বাতিল ইচ্ছা করেছে। অনুরূপ, তাদের বক্তব্য-- কতেক গায়ব ও কোন কোন সময় সম্পর্কে। এটা আমাদের দাবী নয় যে, নবীয়ে করীম (ﷺ) আল্লাহ তায়ালার সকল জ্ঞানকে পরিবেষ্টন করে নিয়েছেন।
না এটা মাখলুকের (সৃষ্টির) জন্য অসম্ভব যেমন আমি পূর্বেই উল্লেখ করেছি। অতিসত্তর আমি আপনাদের নিকট বর্ণনা করবাে যে, আল্লাহ তায়ালা নবীয়ে করীম (ﷺ) কে শিক্ষা দেন পবিত্র কুরআনে করীমের মাধ্যমেই, আর কুরআন |
ক্রমান্বয়ে কম কম অবতীর্ণ করেছেন,প্রত্যেক সময় অবতীর্ণ করেননি। তাহলে সময় ও জ্ঞানসমূহ উভয়েই আংশিক হওয়াই প্রমাণিত হয়েছে। কিন্তু ওহাবীরা এ (আংশিক) দ্বারা ক্ষুদ্র, নগণ্য ও অবজ্ঞাই বুঝেছে যে, রাসুলে পাক (ﷺ) কে তাদের ন্যায় অসভ্য, পাপীদের সাথে কিয়াস করে বসেছে। যেমন তা মুশরিকদের প্রাচীন অভ্যাস যে, যখন তাদের নিকট রাসুলগণ আগমন করতাে তখন তারা। বলতাে, “এরাতাে আমাদের মত মানুষই”।
বরং ওহাবীরা ঐ মুশরিকদের থেকেও অতিরিক্ত বােকা ও পথভ্রষ্ট। একারণে যে, মুশরিক, যারা রাসুলদেরকে নিজেদের মত বলতাে, তা এ বক্তব্যের ভিত্তিতে যে, রহমান (দয়াময়) আল্লাহ্ । কোন কিছু অবতরণ করেননি। সুতরাং যখন তারা কিতাব অবতরণ ও রিসালত পাওয়াকে অস্বীকার করছে, তখন বশরিয়ত ব্যতীত কিছুই রইলােনা যা তাদের ধারণায় নগণ্য ছিলাে। কিন্তু এরাতাে রিসালতের দাবীদার, তবুও রাসুলদের। তাদের মর্যাদায় নিয়ে আসছে। আল্লাহর পবিত্রতা, যিনি অন্তর ও চক্ষুসমূহ পরিবর্তন করে দেন। আসলে তাদের এ রােগ এ কারণে সৃষ্টি হয়েছে যে, যা । অতিবাহিত হয়েছে আর যা সংঘটিত হবে সব কিছুর জ্ঞান হুজুর সৈয়দে আলম (ﷺ) জানেন। -এর অর্থ আমরা যা বর্ণনা করে এসেছি, তা তাদের কাছে অনেকই মনে হয়। তাদের ভ্রষ্ট আকলের অনুমানে রাসুলুল্লাহ (ﷺ) -এর জন্য তা বিশুদ্ধ হওয়া বুঝে আসে না। যেমনিভাবে অন্যান্য আম্বিয়া ও আওলিয়ায়ে কিরাম সম্পর্কে। আর এটা তাদের জন্য অনেক বড় ও কঠিন কর্ম ।
তারা আল্লাহর মর্যাদা ও পরিচয় যথাযথভাবে লাভ করেনি, তাঁর হুকুম ও শক্তির প্রশস্ততা জানেনি এবং রাসুলদের তাদের উর্বর মস্তিষ্ক দ্বারাই পরিমাপ করেছে। সুতরাং যে কথার জ্ঞান। তাদের ধারণায় আসেনি, তা অস্বীকার করে বসেছে।
পূর্বাপর সব বস্তুর জ্ঞান রাসূলে পাক (ﷺ) -এর জ্ঞানের কিয়দাংশ মাত্র رحمه الله تعالى
আর আমরা সত্যপন্থী (আল্লাহর জন্য সকল প্রশংসা) জানি, আদিকাল থেকে যা সংঘটিত হয়েছে এবং অনন্তকাল পর্যন্ত যা সংঘটিত হবে এর বিস্তারিত বর্ণনা
যা আমি উল্লেখ করেছি, তা আমাদের প্রিয় নবী (ﷺ) -এর জ্ঞানের সম্মুখে নিতান্ত নগণ্যই। আল্লাহ তায়ালার এ আয়াতই এর পক্ষে দলীল।
তিনি ইরশাদ করেন,
علمك ما لكن تعلم-وكان فضل الله.
“তিনি আপনাকে শিক্ষা দিয়েছেন, যা কিছু আপনি জানতেন না, আপনার উপর আল্লাহর মহা অনুগ্রহ রয়েছে।”
আমি বলবাে-এ আয়াতে কারীমার মাধ্যমে আল্লাহ তায়ালা স্বীয় হাবীব (ﷺ) -এর উপর ইহসান করেছেন যে, যা কিছু তিনি জানতেন না, আল্লাহ তা তাঁকে শিক্ষা দিয়েছেন। আর এ ইহসান প্রদর্শনকে (১) এমন কথা দ্বারা সমাপ্তি . করেছেন যা এ মহা অনুগ্রহের মর্যাদা এবং মহান নি’মাতের মহত্বের প্রমাণ বহন করে।
টিকাঃ (১) মুহাম্মদ (ﷺ) -এর উপর আল্লাহর এ অনুগ্রহ, এ মহান নিমাতের মর্যাদার জন্য যথেষ্ট প্রমাণ যে, প্রকৃতপক্ষে কোন বাদশাহ স্বীয় প্রধানমন্ত্রীর প্রতি মর্যাদাময় বস্তু দ্বারা ব্যতীত অনুগ্রহ করে না। তাহলে শাহেনশাহে কায়েনাত (রাব্বল আলামীন) কিভাবে তাঁর মহান, সম্মানিত, মর্যাদাময় ও স্বীয় প্রধান খলিফা (মুহাম্মদ (ﷺ) )-এর প্রতি কি ধরনের অনুগ্রহ করবেন? অতঃপর তা কেমন হবে যখন স্বীয় ইহসান ও অনুগ্রহরাজি এমন ব্যক্তির দ্বারা সমাপ্ত করবেন যা তাঁর মহানত্ব প্রকাশের সুস্পষ্ট প্রমাণ হয়?
ইরশাদ করেছেন,
وكان الله عليك عظيما.
“তােমাদের উপর আল্লাহর মহা অনুগ্রহ রয়েছে”।
জেনে রাখুন যে, (পূর্বাপর প্রত্যেক কিছুর জ্ঞান) উল্লেখিত মর্মার্থ সহকারে যার প্রতিটি একক পরিপূর্ণ ও বিস্তারিতভাবে ‘লাওহ-ই মাহফুজে বর্তমান রয়েছে। কেননা, আখিরাততাে কিয়ামতের পরেই সংঘটিত হবে। আর দুনিয়া ও আখিরাত উভয়ের বহির্ভূত হচ্ছে আল্লাহ তায়ালার পবিত্র জাত ও গুণাবলীসমূহ, যা না ‘লাওহ-ই মাহফুজে রক্ষিত, না কলমে। আর আল্লাহ তায়ালা দুনিয়া সম্পর্কে ইরশাদ করেছেন, “আপনি বলুন, দুনিয়ার পুঁজি নিতান্তই নগণ্য।”
সুতরাং যা আল্লাহ তায়ালা অতি নগণ্য বলেছেন, তা সে মহান সত্ত্বার সাথে কিভাবে সম্পর্ক রাখবে? যাকে আল্লাহ মহান বলেছেন এবং যার শান ও মাহাত্ম্য বৃদ্ধি করেছেন, সাথে সাথে তাঁর (হুজুর সৈয়দ আলম (ﷺ) ) জ্ঞানকে অনন্তকালের পরের বস্তুসমূহ পর্যন্তও বৃদ্ধি করেছেন। যেমন-হাশর, নশর, হিসাব নিকাশ এবং তথায় যে পূণ্য ও শাস্তি রয়েছে। এর বিস্তারিত এতটুকু পর্যন্ত যে, লােকেরা জান্নাত ও জাহান্নামে নিজ নিজ ঠিকানায় পৌছা এবং এর পরের অনেক | কথা যতটুকু আল্লাহ তায়ালা বলতে ইচ্ছে (সব বিষয় সম্পর্কে আল্লাহ্ তায়ালা হুজুর (ﷺ) কে অবগত করেছেন) আর হুজুর সৈয়দে আলম (ﷺ) নিশ্চয়ই জাত ও গুণাবলী সম্পর্কে ততটুকু জেনে নিয়েছেন। যার পরিমাণ সে মহান আল্লাহই অবগত আছেন যিনি তাঁর এ পুরস্কার স্বীয় মুস্তফা (ﷺ) (নির্বাচিত রাসুল)কে দান করেছেন। সুতরাং প্রমাণিত হলাে যে, সকল ভবিষ্যত ও অতীতের জ্ঞান যা ‘লওহ-ই মাহফুজে লিপিবদ্ধ রয়েছে তা হুজুর (ﷺ) -এর জ্ঞানের একটি ছােট অংশমাত্র। তাঁর জন্য তা অনেক বেশী নয় যে, তা হাসিল হওয়া অসম্ভব হবে।
এ কারণে (১) যমানার ইমাম আল্লামা বুসীরী (رحمه الله تعالي) (আল্লাহ তায়ালা তাঁর বরকতের দ্বারা আমাদের উপকারিতা দান করুন) হুজুরে সৈয়দে আলম (ﷺ) এর কাছে আরজ করেছেন, “আপনার বদান্যতার সম্মুখে দুনিয়া ও এর বস্তুসমূহ। একাংশ, আপনার জ্ঞানের সম্মুখে লওহ ও কলমের জ্ঞান এক টুকরা।”
টিকা (১) :
এবং শীর্ষ স্থানীয় আলিম, বাহরুল উলুম, আবুল আয়াশ আবদুল আলী মুহাম্মদ লকনবী (رضى الله تعالي عنه) হাশিয়া শরহে মীর জাহিদ লিরিসালাতিল কুতুবিয়াহ’ গ্রন্থের খােতবায় ‘তাসার ও তাসদীক-এর বর্ণনায় রাসুলে সৈয়দে আলম (ﷺ) -এর প্রশংসা এভাবেই করেছেন-যার বক্তব্য-“তাঁকে কতেক এমন জ্ঞান শিক্ষা দেয়া হয়েছে যা শ্রেষ্ঠতম কলম পরিবেষ্টন করতে পারে নি। আর লওহে আওফিও তা পরিবেষ্টন করতে সক্ষম নয়, আর কাল প্রথম দিবস থেকে এমনি না সৃষ্টি করতে পেরেছে, না শেষ দিবস পর্যন্ত এমনি সৃষ্টি হবে। সুতরাং আসমান ও জমীনে এর কোন জোড়া নেই।
-------------------------------
এখানে ইমাম (رضى الله تعالي عنه) (মিন) উল্লেখ করেছেন, যদ্বারা আংশিকই বুঝায় এবং প্রত্যেক রােগা অন্তরে ক্লেশ ও ক্রোদের পাহাড় নিক্ষেপ করে। তাদের বলুন যে, তােমরা স্বীয় ক্রোধে মৃত্যু বরণ করাে! আল্লাহ্ তায়ালা হৃদয়ের কথা ভাল করেই জানেন ।
আল্লামা মােল্লা আলী ক্বারী (رحمه الله تعالي) “জুবদাহ শরহে বুরদাহ' গ্রন্থে উক্ত পংক্তির ব্যাখ্যায় বলেন, এর মর্মার্থ হলাে ‘লাওহের জ্ঞান দ্বারা উদ্দেশ্য সে পবিত্র নকশা ও অদৃশ্য আকৃতিসমূহ যা তাতে প্রমাণ করা হয়েছে। আর কলমের জ্ঞান দ্বারা উদ্দেশ্য ঐ জ্ঞান যা আল্লাহ তায়ালা যেভাবে ইচ্ছে তাতে গচ্ছিত রেখেছেন। আর এ সংযােগ নগণ্য সম্বন্ধের কারণেই। আর লওহ ও কলমের জ্ঞান হুজুরে সৈয়দে আলম (ﷺ) -এর জ্ঞানের একাংশ হওয়ার কারণ এ যে, তার জ্ঞানের অনেক শ্রেণী বিভাগ রয়েছে। (সম্পূর্ণ-পরিপূর্ণ) (খন্ডিত) (মূলতাত্বিক) (সূক্ষ্ম ও রহস্যাবৃত) (জ্ঞান-বিজ্ঞান) যা আল্লাহ তায়ালার জাত ও সিফাতের সাথে সম্পর্কিত। লওহ ও কলমের জ্ঞান রাসুলে পাক (ﷺ) -এর লিপিবদ্ধ জ্ঞানের অন্তর্ভুক্ত নয়। বরং এক পংক্তি এবং হুজুরের জ্ঞানের সমুদ্রসমূহ থেকে একটি নহর (স্রোতধারা)। এতদসঙ্গে এর জ্ঞানতাে হুজুর (ﷺ) এর বরকতময় অস্তিত্বের মাধ্যমেই।
সুতরাং এখন সত্য উদ্ভাসিত হয়েছে, আর মিথ্যা দূরিভূত হয়েছে। এখানে বাতিলেরা ক্ষতিতেই রয়েছে। (সকল প্রশংসা সমগ্র জাহানের প্রতিপালকের নিমিত্তে)
পঞ্চম নজর
ইলমে গায়ব সম্পর্কে কুরআন, হাদীস ও ওলামা কিরামের বক্তব্যঃ
যদি আপনি বলেন, আল্লাহ আপনার উপর দয়া করুক, যা আপনি বর্ণনা ও ইঙ্গিত করেছেন এ দ্বারা আমি প্রকৃত ব্যাপার বুঝে নিয়েছি। আমি জ্ঞাত হয়েছি যে, এখানে না কোন শিরক এর অবকাশ রয়েছে, না পথভ্রষ্টতার স্থান। এ কারণে যে, আমরা না আল্লাহ তায়ালার জ্ঞানের সাথে সমান স্থির করি, না আল্লাহ ব্যতীত অন্য কারাে জন্য স্বেচ্ছায় তা হাসিল করা জ্ঞান করি। বরং প্রদত্ত জ্ঞানের আংশিকই আমরা প্রমাণ করি। কিন্তু এ কতেক আংশিকের মধ্যেও উজ্জল পার্থক্য রয়েছে, যেমন আসমান ও জমিনের পার্থক্য। বরং তা থেকেও মহান ও অধিক। আর আল্লাহর স্থান বহু উর্ধ্বে । ওহাবীদের কতেক (১) ও আংশিকতাে বিদ্বেষ ও অবজ্ঞারই আংশিক। আর আমাদের আংশিক ইজ্জত, সম্মান ও মহিমার আংশিক। এ আংশিক জ্ঞানের পরিমাণ কতটুকু তা কেউ জানেন না; আল্লাহ ও তিনি ব্যতীত যাকে তিনি দান করেছেন। এখন আমি কুরআন, হাদীস এবং পূর্ব ও পরবর্তী ইমামদের অভিমত থেকে কয়েকটি দলীল শুনাতে চাই। যেমন উপরােল্লিখিত বর্ণনাবলীতে আপনারা আমাকে এর প্রতি উৎসাহ প্রদান করেছেন।
টিকা (১) (অতএব, কতেক ওহাবী) অর্থাৎ ওহাবীদের কতেক (আল্লাহ তায়ালা তাদের অপমান করুন) যা তারা বলে থাকে, ঐ কতেক হলাে হীন ও অপমানকর। যা তাদের নিকট থেকে রাসুলে পাক (ﷺ) ফজিলত সমূহের শত্রুতা রাখার কারণে এবং রাসুলে পাক (ﷺ) এর শানের (কুৎসা রটনার কারণে প্রকাশ পেয়েছে। আর আমাদের কতেক। শ্ৰেষ্ঠতার, যা শ্রেষ্ঠতম, মর্যাদাময় ও মাহাত্ম্যপূর্ণ। ঐ কতেক যার পরিমাণ অনুমান করা যায়না আল্লাহ তায়ালা ব্যতীত। অতঃপর তিনিই যাকে তিনি প্রদান করেছেন তিনি ব্যতীত। কেননা, পূর্বাপর সকল কিছুর জ্ঞান এক বিন্দু মাত্র ঐ মহান শ্রেষ্ঠতম ও মর্যাদাময় কতেকের যা আমাদের প্রিয় নবী (ﷺ) থেকে প্রকাশ পেয়েছে। আল্লাহ। তায়ালার দরবারে তাঁর উঁচু মকাম প্রদানের কারণে। 'তিনি (ﷺ) উচ্চ মর্যাদায় আসীন হয়েছেন। "
আমি বলবাে, হে আমার ভাইয়েরা! আল্লাহ আমাদের ও আপনাদের প্রতি রহম করুন! আমিতাে আপনাদের ঐ বক্তব্যের প্রতি ইঙ্গিত করেছি, যা জ্ঞানবানদের জন্য যথেষ্ট। যদি আপনারা প্লাবিত সমুদ্র ও উজ্জল চাদ দেখতে চান।
তাহলে আমার গ্রন্থ “মালিউল হাবীব বেউলুমিল গায়ব” ও “আল লুলুউল মাকনুন ফি ইলমিল বশীরে মা কানা ওয়ামা ইয়াকুন” দেখুন! আর আপনাদের চোখের সম্মুখে আমার রিসালাহ “ইন্বাউল মুস্তফা বিহালে সিররি ওয়া আখফা”তাে রয়েছেই। যদি আপনাদের আকাঙ্ক্ষা পূর্ণ হওয়ার পরও অস্বীকার করেন তাহলে আমাদের জন্য বুখারী শরীফের হযরত ওমর ফারুক (رضى الله تعالي عنه) কর্তৃক বর্ণিত এ হাদীসই যথেষ্ট। তিনি বলেন-“একদা রাসুলে করীম (ﷺ) আমাদের মধ্যে খুতবা পড়ার জন্য দন্ডায়মান হলেন। তিনি আমাদের সৃষ্টির শুরু থেকে বর্ণনা করে জান্নাতী ও জাহান্নামী জাহান্নামে যাওয়া পর্যন্ত সকল বস্তুর সংবাদ প্রদান করেছেন।”
মুসলিম শরীফে হযরত ইবনে আখতাবের বর্ণিত হাদিসে রাসুলে সৈয়দে আলম (ﷺ) সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত খােবা প্রদানের কথা উল্লেখ রয়েছে। তাতে এ বাক্যটিও রয়েছে “যা কিছু দুনিয়াতে সংঘটিত হয়েছে, আর যা কিছু কিয়ামত পর্যন্ত সংঘটিত হবে, সব কিছুর সংবাদ আমাদের রাসুলে পাক (ﷺ) প্রদান করেছেন।”
বুখারী ও মুসলিম শরীফে হযরত হুজাইফা (رحمه الله تعالي) থেকে বর্ণিত হাদীসে রয়েছে, তিনি বলেন-“একদা রাসুলুল্লাহ (ﷺ) আমাদের নিকট খােতবা প্রদানের জন্য দন্ডায়মান হলেন। তিনি (ﷺ) দন্ডায়মানের প্রারম্ভে কিয়ামত পর্যন্ত যা হওয়ার ছিলাে কোন কিছুই ত্যাগ করেন নি, সবই বর্ণনা করেছেন।”
তিরমিজী শরীফে হযরত মুয়াজ বিন জাবাল থেকে বর্ণিত হয়েছে-“আমি আল্লাহ তায়ালাকে প্রত্যক্ষ করেছি। তিনি স্বীয় কুদরতী হস্ত আমার উভয় কাঁধের মধ্যখানে রাখলেন, যার শীতলতা আমি হৃদয়ে অনুভব করেছি। অতঃপর আমার নিকট সকল বস্তু আলােকিত হয়ে গেলে এবং প্রত্যেক কিছু আমি চিনতে পেরেছি।
ইমাম বুখারী, তিরমিযী,ইবনে খােজায়মা ও তাদের পরবর্তী ইমামগণ রাসুলে সৈয়দে আলম (ﷺ) -এর এ হাদীস বিশুদ্ধ বলে মত প্রকাশ করেছেন। তিরমিজী শরীফে হযরত ইবনে আব্বাসের সূত্রে বর্ণিত হাদীসে রাসুলে সৈয়দে আলম (ﷺ) এর এ ইরশাদ বর্ণিত হয়েছে-“আমি আসমান জমীনের সবকিছু অবগত হয়েছি।”
অন্য বর্ণনায় রয়েছে-“পূর্ব থেকে পশ্চিম প্রান্ত পর্যন্ত যা কিছু রয়েছে, সবই অবগত হয়েছি।”
এক হাদীস মুসনাদে ইমাম আহমদ, তাবাকাতে ইবনে সা’দ ও তাবরানীর কবীরে বিশুদ্ধ সনদে হযরত আবু যব গিফারী (رحمه الله تعالي) থেকে, অপর একটি হাদীস আবু ইয়ালা, ইবনে মুনী’ ও তাবরানীর সংকলিত হযরত আবু দারদার (رحمه الله تعالي) সূত্রে বর্ণিত। এ উভয় সাহাবী উল্লেখ করেছেন-“রাসুলুল্লাহ (ﷺ) আমাদের এমন ভাবে অবহিত করেছেন যে, কোন পাখীর পাখা নাড়ার বর্ণনা পর্যন্ত তাঁর জ্ঞান থেকে বাদ পড়েনি।”
বুখারী ও মুসলিম শরীফে সূর্য গ্রহণের হাদীসে রয়েছে-‘যে সকল বস্তু (পূর্বে) আমাদের দৃষ্টি (১) গােচর হয়নি, তা আমি স্বীয় এ স্থানেই প্রত্যক্ষ করে নিয়েছি।
যেভাবে রাসুল পাক (ﷺ) ইরশাদ করেছেন অথবা হাদীসের শব্দ যেভাবেই (১) রয়েছে।
একটি হাদীস আমি আপনাদের সম্মুখে বর্ণনা করছি, “নিশ্চয়ই আল্লাহ তায়ালা আমার জন্য দুনিয়া উত্তোলন করেছেন, আমি তা এবং কিয়ামত পর্যন্ত যা কিছু তাতে সংঘটিত হবে, সব কিছু এমন ভাবে অবলােকন করেছি, যেভাবে এ হাতের তালুকে।
টিকা (১) ইমাম কুস্তুলানী ইরশাদুসসারী শরহে বুখারীর কিতাবুল ইলমে উল্লেখ করেছেন অর্থাৎ ঐ বস্তু থেকে যা দেখা যুক্তিগত ভাবেও বিশুদ্ধ; যেমন আল্লাহ তায়ালার দর্শন। আর পরিচয়গত ভাবেও উপযােগী অর্থাৎ তাই যার সম্পর্ক দ্বীনের কর্ম ইত্যাদির সাথে হবে। যেমন তিনি (জটিল ও বিশৃঙ্খল প্রভেদসমূহের) দিকে ইঙ্গিত করেছেন। আমি বলছি, কিন্তু (পরিচয়গত বিশেষত্ব) অনুপযুক্তের সাথেই উপযােগী পরিচয়গত দর্শন। আর পরিচয়তাে প্রসিদ্ধতার মধ্যেই বিদ্যমান। বাকী রইলাে কাশাফিয়া’ এটা ইব্রাহিম খলীল (عليه السلام) এর মধ্যে পাওয়া যায়, যখন তাঁর প্রতিপালক, তাঁকে আসমান ও জমীনের সম্রাজ্য দেখিয়েছেন, তখন তিনি এক ব্যক্তিকে দেখলেন যে, সেজেনা করছে। অতঃপর দ্বিতীয় ও তৃতীয় ব্যক্তিকে এমতাবস্থায় দেখতে পেলেন। এ হাদীসটি আবদুল্লাহ ইবনে হামীদ, আবু শেখ ও ইমাম বায়হাকী ‘শুয়াবুল ঈমানে হযরত আতা থেকে আর সাঈদ ইবনে মানসুর’ ইবনে আবী শােভা, ইবনুল মুনযির ও আবু শেখ হযরত সৈয়দুনা সালমান ফারসী (رضى الله تعالي عنه) থেকে বর্ণনা করেন। অপর এক বর্ণনায় রয়েছে। “তিনি সাত ব্যক্তিকে একের পর এক ব্যভীচারীনির দিকে মুখ কাল করে) থাকতে দেখেছেন। এটা আবৃদ ইবনে হুমাইদ ও ইবনে আবী হাতিম শাহর ইবনে হুশাব থেকে বর্ণনা করেন। আল্লামা কুস্তুলানী কুসুফ সম্পর্কে ‘বাবু সালাতুন নিসা মায়ার রিজালে বর্ণনা করেন যে (তিনি (ﷺ) বলেন, বস্তু সমূহের মধ্যে কোন বস্তু) এমন নেই যা; দেখিনি, বরং এসব আমি স্বচক্ষে প্রত্যক্ষ করেছি)। সুতরাং এ শব্দকে এর ব্যাপকতার উপর ব্যবহার করা চাই-আর এটাই বিশুদ্ধ ও পঙ্কিলতা থেকে পবিত্র।
টিকা শেষ---------------------
এছাড়া আরাে অনেক হাদীস রয়েছে। এগুলাের সংখ্যা ও বিবরণী অনেক দীর্ঘ। ইমাম ও পূর্ববর্তী আলিমগণের বাণীসমূহই আপনাদের জন্য যথেষ্ট।
কাসিদায়ে বুরদার এ ছন্দ-“লওহ ও কলমের জ্ঞান আপনার জ্ঞানের এক টুকরা।” এর ব্যাখ্যাসহ আল্লামা আলী কারীর বর্ণনা (رحمه الله تعالي) গত হয়েছে।
শেখ আবদুল হক মােহাদ্দেছ দেহলভী (رضى الله تعالي عنه) মিশকাত শরীফের ব্যাখ্যা গ্রন্থে নবীয়ে করীম (ﷺ) এর এ ইরশাদ “আসমান ও জমীনে যা কিছু রয়েছে সব কিছু আমি জ্ঞাত হয়েছি”-এর ব্যাখ্যায় বলেন, “এ ইরশাদ দ্বারা পূর্ণ আংশিক সকল জ্ঞান হাসিল হওয়ার এবং তা পরিবেষ্টন করা বুঝায়।”
আল্লামা খাফাযী নসীমুর রিয়াদ শরহে শিফা আল-ইমাম কাজী আয়াজে, আল্লামা যুরক্বানী শরহে মাওয়াহেবে লুদুনিয়া ও মানহুল মুহাম্মদীয়ায় হযরত আবু যর ও আবু দারদার (رضى الله تعالي عنه) হাদীসের ব্যাখ্যায় “আসমান ও জমীনের মধ্যকার যে পাখী পাখা নাড়াচড়া করছে; রাসুলুল্লাহ (ﷺ) এ সম্পর্কেও আমাদের অবহিত করেছেন” - বলেন, এটা এ কথারই প্রকৃষ্ট প্রমাণ যে, রাসুলে পাক (ﷺ) প্রত্যেক বস্তুর সুস্পষ্ট বর্ণনা দিয়েছেন--কখনাে বিস্তারিত, আবার কখনাে সংক্ষিপ্তাকারে।
ইমাম আহমদ কাস্তুলানী (رحمه الله تعالي) মাওয়াহেবে’ বলেন-“এতে কোন সন্দেহের অবকাশ নেই যে, আল্লাহ তায়ালা হুজুর (ﷺ) কে এর চেয়েও অধিক জ্ঞান সম্পর্কে অবহিত করেছেন এবং পূর্বাপর সকল বস্তুর জ্ঞান সম্পর্কে অবহিত করেছেন।”
টিকাঃ (১) এটা আমি বৃদ্ধি করেছি। কেননা, অধম এ কিতাব মক্কা মােকাররমায় আট ঘণ্টায় ষষ্ঠ নজর ব্যতীত রচনা করেছি যা পরেই বৃদ্ধি করা হয়েছে। সে সময় আমার নিকট কোন কিতাব ছিলােনা যা আমি খােতবায় উল্লেখ করেছি। আমার এ শব্দে যা ইল্লা’ এর পূর্বে রয়েছে তা কি রায়াইতুহু', না ‘আরাইতুহু’ তাতে আমার সন্দেহ হয়েছে। এ কারণে আমি তা থেকে একটি উল্লেখ করেছি এবং বলে দিয়েছি, যেমন তিনি (ﷺ) ইরশাদ করেছেন। অতঃপর যখন আমি স্বীয় মাতৃভূমিতে ফিরে আসলাম এবং কিতাবাদী পাঠে মনােনিবেশ করলাম, তখন উভয় শব্দে নিশ্চিত হলাম। মুসলিম শরীফের দুস্থানে প্রথম শব্দ কদ’ বৃদ্ধি সহকারে অর্থাৎ এ আর বুখারী শরীফে ভিন্ন শব্দে পেয়েছি, তন্মধ্যে থেকেই কিতাবে উল্লেখ করা হয়েছে।'
___________________
ইমাম বুসীরী (رضى الله تعالي عنه) বলেন “সৃষ্টির সকল জ্ঞান ও ধৈৰ্য্য রাসুলের থেকেই।”
ইমাম ইবনে হাজর মক্কী (رحمه الله تعالي)-এর ব্যাখ্যা গ্রন্থ “আফযালুল কুরা লিকুরায়ে উম্মুল কুরায়” বর্ণনা করেন-“এটা এ কারণে যে, আল্লাহ তায়ালা হুজুরে সৈয়দে আলম (ﷺ) কে সমগ্র জাহানের জ্ঞান প্রদান করেছেন। সুতরাং তিনি পূর্বাপর সকল বস্তুর জ্ঞান যা কিছু সংঘটিত হয়েছে আর যা সংঘটিত হবে, সবই জেনে নিয়েছেন। ‘নসীমুর রিয়াদে উল্লেখ আছে-“হযরত আদম(عليه السلام)-এর জন্ম থেকে আরম্ভ করে। কিয়ামত পর্যন্ত সব সৃষ্টিকেই রাসুলে পাক (ﷺ) -এর ১ সম্মুখে পেশ করা হয়েছে। আর রাসুলে পাক (ﷺ) সে সবের জ্ঞান লাভ করেছেন। যেমন হযরত আদম (عليه السلام)কে সকল বস্তুর নাম শিক্ষা দেয়া হয়েছে।
ইমাম কাজী আয়াজ, আল্লামা মােল্লা আলী ক্বারী অতঃপর আল্লামা মানাভী (رضى الله تعالي عنه) আল্লামা সুয়ুতীর (رحمه الله تعالي) জামে সগীরের ব্যাখ্যা গ্রন্থ ‘তায়সীরে’ বলেন- ‘পবিত্র আত্মাসমূহ যখন শরীরের সম্পর্ক থেকে ছিন্ন হয়ে আলমে আ’লা তথা সর্বোচ্চ জগতের সাথে মিলে যায় এবং তার মধ্যখানে কোন পর্দা না থাকে, তখন সব কিছু এমনিভাবে প্রত্যক্ষ করেন ও শ্রবণ করেন যেমন সামনের বস্তু প্রত্যক্ষ করেন।'
ইমাম ইবনে হাজর মক্কী (رضى الله تعالي عنه) মাদখালে’ ও ইমাম কাস্তুলানী (رحمه الله تعالي) মাওয়াহেবে’ বলেছেন-“নিঃসন্দেহে আমাদের সম্মানিত ওলামায়ে কিরাম বলেন, রাসুলে পাক (ﷺ) -এর পবিত্র হায়াত ও ওফাতের কারণে এ বক্তব্যে কোন পার্থক্য নেই যে, হুজুর (ﷺ) স্বীয় উম্মতদের প্রত্যক্ষ করেছেন এবং তাদের। অবস্থাদি, নিয়ত, ইচ্ছা ও অন্তরের ত্রুটিসমূহ চিনেন। আর এগুলাে তাঁর জন্য। এমন সুস্পষ্ট, যাতে কোন গােপনীয়তা নেই।
আল্লাহ পাক রাব্দুল আলামীন ইরশাদ করেন-“হে নবী! আমি আপনাকে হাজির-নাজির করে প্রেরণ করেছি।”
‘শিফা শরীফে এ মাসয়ালা লিপিবদ্ধ করা হয়েছে যে, যখন শুন্য গৃহে প্রবেশ করাে যাতে কেউ নেই, তখন রাসুলে পাক (ﷺ) -এর উপর সালাম আরজ করাে।
টিকাঃ (১) এর প্রারম্ভ হলাে এটাই যে, আল্লামা ইরাকী শরহে মুহাজ্জবে’ উল্লেখ করেছেন যে, এর উপর সাল্লাল্লাহু আলইহে ওয়াসাল্লাম পেশ করা হয়েছে।
______________
- আল্লামা আলী কুারী এর ব্যাখ্যায় এ মাসআলার কারণ বর্ণনা করতে গিয়ে উল্লেখ করেন, “রাসুলে সৈয়দে আলম (ﷺ) -এর রুহ মােবারক সকল মুসলমানদের গৃহে তাশরীফ নেন।"
শেখ আবদুল হক্ব মােহাদ্দেছ দেহলভী (رضى الله تعالي عنه) ‘মাদারেজুন্নবুয়তে’ বলেন যে, 'দুনিয়ায় হযরত আদম (عليه السلام) থেকে আরম্ভ করে। সিঙ্গা ফুক দেয়া পর্যন্ত যা কিছু সংঘটিত হবে, আল্লাহ তায়ালা সব তাঁর প্রিয় মাহবুবকে অবগত করিয়েছেন। এমনকি আদি থেকে অন্ত পর্যন্ত সকল অবস্থাদি নবীয়ে করীম (ﷺ) জ্ঞাত হয়েছেন। তিনি সকল বস্তু সম্পর্কে জানেন; আল্লাহ তায়ালার কর্ম, আহকাম, গুণাবলী, নাম ও নির্দেশসমূহ এবং সকল জাহির বাতিন, আদি-অন্তের জ্ঞান পরিবেষ্টন করেছেন। এ আয়াতের ভিত্তিতে যে, প্রত্যেক জ্ঞানীর উপর জ্ঞানী রয়েছেন।' তাঁর উপর সবচেয়ে উত্তম দরুদ ও পরিপূর্ণ সালাম।
আমি বলছি, এ আয়াত عام (ব্যাপক) যাতে কোন বস্তুকে নির্দিষ্ট করা। হয়নি। আপনারা রাসুলে পাক (ﷺ) ব্যতীত পৃথিবীর যারই দিকে দৃষ্টিপাত করেন।
কেন, আমাদের নবী প্রত্যেক জ্ঞানী থেকে সর্বোত্তম ও মহাজ্ঞানী। যদি আপনারা হুজুরে সৈয়দে আলম (ﷺ) -এর বরকতময় সত্তার দিকে দৃষ্টি নিক্ষেপ। করেন তাহলে দেখবেন, আল্লাহই মহাজ্ঞানী-তার চেয়ে (জ্ঞানের অধিকারী) কেউ নেই। আর ذي علم(যে কোন একজন অনির্দিষ্ট জ্ঞানী) শব্দের ব্যবহার।
আল্লাহর শানে বৈধ (১) নয়। কেননা, (তানকীর) অনির্দিষ্ট বাচক শব্দ ব্যবহার . আংশিকেরই প্রমাণ বহন করে, সুতরাং নির্দিষ্ট করার কোন প্রয়ােজন নেই। শাহ ওয়ালী উল্লাহ মােহাদ্দিস দেহলভী (رحمه الله تعالي) “ফুয়জুল হারামাইন” গ্রন্থে লিখেছেন, 'প্রিয়নবীর পবিত্রতম দরবারে অবস্থানকালে আমাকে স্পষ্ট করা হয়েছে যে, কোন বান্দা কিভাবে ক্রমাগতভাবে উন্নত স্থানের উপনীত হয় । যেস্থানে তার কাছে সব বস্তু পরিষ্কার হয়ে যায়। স্বপ্নে সংঘটিত মেরাজের বিকৃত ঘটনাবলী এ উচ্চতর অবস্থান হতেই প্রদত্ত। এ সম্পর্কিত বহু আয়াত রয়েছে, আর তা থেকে,কিছু প্রমাণস্বরূপ উল্লেখ করা হয়েছে।
টিকা (১) এটা আমি তাঁকে বলেছিলাম, যা আমার বিশ্বাস আমার প্রতিপালক এটা আমাকে শিখেয়েছেন। অতঃপর আমি আল্লামা বায়হাক্বীর কিতাব আল আসমা ওয়াসসিফাতে’ দেখেছি। তিনি উল্লেখ করেছেন, উসতাদ আবু নসর আল বাগদাদী বর্ণনা করেন-নিশ্চয় আমরা আল্লাহ তায়ালাকে تنكير (অনির্দিষ্টতার) সাথে ذو علم (জ্ঞানের অধিকারী) বলবাে না, বরং ذو علم (আলিম লাম) تعريف (নির্দিষ্টতা) সহকারে ذوعلم (জ্ঞানময়)ই বলবাে। যেমন ذو جلالও (অনির্দিষ্টতার) সাথে বলবাে না। এ বিষয়ে আমি মধ্যমভাবে আলােচনা করেছি। শুধু এটিই বলেছি যে, কোথায় (تنكير)তানকীর (অনির্দিষ্ট) নিষেধ আর কোথায় নিষেধ নয়। যেমন ذو مغفرة এবং তা ব্যতীত ذو فضل على الناس বলা যাবে। কিন্তু ذو فضل বলা যাবে না। এর বর্ণনা ও কারণ আমার পুস্তিকা ‘আসমাউল্লাহুল হুসনায় উল্লেখ করেছি।
___________________
গ্রন্থকারের কুরআন পাক থেকে অকাট্য প্রমাণঃ
আমি বলছি, আল্লাহর পক্ষ থেকেই তাওফীক। আমাদের প্রতিপালকের কথা হলাে মিমাংসাকারী, ন্যায় ভিত্তিক হুকুম প্রদানকারী এবং তার বাণী সত্য।
ইরশাদ হয়েছে-“আমি আপনার উপর কুরআন অবতীর্ণ করেছি, যা প্রত্যেক বস্তুর বিবরণ সম্বলিত।”
আরও ইরশাদ করেছেন-“কুরআন মিথ্যা বাণী নয়, বরং তা পূর্ববর্তী কিতাবসমুহের সত্যায়নকারী এবং প্রত্যেক বস্তুর বিবরণ' সম্বলিত।”
আরাে ইরশাদ হয়েছে-“আমি এ কিতাবে কোন বস্তু অবশিষ্ট রাখিনি।”
সুতরাং কুরআন হচ্ছে সাক্ষী, আর এ সাক্ষী কতই মহান যে, তা প্রত্যেক বস্তুর ‘তিবিয়ান’ বা বিবরণ সম্বলিত। আর ‘তিবিয়ান’ সে প্রকাশিত ও সুস্পষ্ট বক্তব্যকে (১) বলা হয়, যা মূলতঃ কোন অস্পষ্টতা অবশিষ্ট রাখে না যে, অধিক শব্দ অধিক অর্থের উপর প্রযােজ্য হয়। আর বর্ণনার জন্যতাে একজন। বর্ণনাকারী প্রয়ােজন; আর তিনি হলেন মহান আল্লাহ তায়ালা। "
টিকা (১) সমসাময়িক কেউ কেউ বর্ণনা করেন যে, সুস্পষ্ট দ্বারা উদ্দেশ্য হলাে, বর্ণিত নির্দেশসমূহের আধিক্য। অতএব – (অতিয়ােক্তি) পরিমাণের ভিত্তিতে, অবস্থার ভিত্তিতে নয়। এর উদাহরণ তাদের বক্তব্য ‘অমুক স্বীয় গোলামের জন্য জালিম (অত্যাচারী)' এবং 'অমুক স্বীয় গােলামদের জন্য জুল্লাম (অতিশয় অত্যাচারী)। আর এর উপরই কতেক মুফাসসির আল্লাহ তায়ালার এ আয়াতকে-“আপনার প্রতিপালক স্বীয় বান্দাদের উপর বেশী অত্যাচারী নন” বুঝিয়েছেন।
আরেকটি বক্তব্যের খন্ডনঃ
আমি বলছি, তােমার প্রাণের শপথ! এটা বিশ্লেষণ নয়, বরং কঠোর পরিবর্তন। যা। কুরআনের অর্থকে পরিবর্তন করে দেয় এবং ظلام للعبيد(বান্দাদের জন্য অতিশয় জুলুমকারী) এর উপর কিয়াস পরিত্যক্ত ও অচিন্তনীয়। কেননা, ‘তিবয়ান’ এর সম্পর্ক। প্রতিটি এককের দিকে রয়েছে। যদিও খাস হওয়ার ধারণায় তা দ্বীনী আহকামের অন্তর্ভুক্ত। সুতরাং সে অধিক সম্পর্কের কারণে অধিক হাসিল করবে না। যেমন 'জুলুম' জুল্লামুন লিল আবীদ-এর মধ্যে অধিকাংশের সম্পর্কের ভিত্তিতে হাসিল করে নিয়েছে। সুতরাং ন্যায় নয়, বরং এমন বলার উদাহরণ যে, এবং এতে ঐ ধারণার অবকাশ নেই। যেমন গুপ্ত নয়। অতঃপর বর্ণনায় যখন অতিশয়ােক্তির সম্পর্ক প্রত্যেকের সাথে পৃথক পৃথকভাবে হয়েছে, তখন পরিমাণ ও অবস্থার পার্থক্যের উপকার হয়নি,কিভাবেই হবে? অথচ প্রত্যেক বস্তু অথবা প্রত্যেক হুকুম দ্বীনী যখন এর সাথে অনেক বর্ণনার সম্পর্ক হয়, তখন তার জন্য সুস্পষ্ট বক্তব্যকে আবশ্যকীয় করে দিবে এবং এটাই হলাে উদ্দেশ্য। অতঃপর এগুলাে ছাড়াও আরেকটি বিষয় ছিলাে যা তার বােধগম্য হয়নি, আর না সে তা কখনাে পছন্দ করতাে। তা এ যে, এ অবস্থায় (আল্লাহর আশ্রয়) নিঃসন্দেহে সে আল্লাহ তায়ালার উপর মিথ্যা অপবাদের দিকে ফিরে যাবে যে, তিনি। কুরআনে করীমে প্রত্যেক হুকুম বারংবার এ জন্য বর্ণনা করেছেন যেন প্রত্যেক হুকুমের বর্ণনার আধিক্যের পরিমাণ বন্ধ হয়ে যায়। আর এটা হলাে স্বচক্ষে দেখা সুস্পষ্ট ভান্তি। অতঃপর এ (মর্মার্থ) ভ্রান্তি হওয়া ছাড়াও মূলত কোন বর্ণনাই নেই। আর এ অপমানেরও। নিশ্চয়তা নেই যা নিকটবর্তীতে সৃষ্টি হয়েছে। সুতরাং আল্লাহর উদ্দেশ্য এটাই বলে হুকুম প্রয়ােগ করা হলাে তাফসীরে ‘বির রায়’ তথা মনগড়া তাফসীর, যা থেকে নিষেধ করা হয়েছে। আল্লাহর উপর তার সাক্ষী যে, তিনি এ শব্দ দ্বারা এ অর্থই নিয়েছেন, অথচ এর ভ্রান্তির উপর দলীল প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। অকাট্য দলীল ছাড়াও ধারণামূলক ভ্রান্ত দলীলের। উপর এর কোন দলীল না থাকা তাই প্রমাণ করে। সুতরাং তার উচিত যে, এর সত্যতার সাক্ষী ইমাম মাতুরীদির বাণী থেকে কঠিন ও কঠিনতর করা। কিন্তু আমরা আল্লাহ তায়ালার নিকট সকলের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করছি। (দেখুন তার পুস্তিকার ৫ পৃঃ)
- -- -- --- ---- -- --
আর অপরজন তিনি, যার জন্য বর্ণনা করা হয়। তিনি হলেন, যার উপর কুরআন অবতীর্ণ হয়েছে-আমাদের নবী রাসুলুলুল্লাহ (ﷺ) । আর আহলে সুন্নাতের মতে-‘শাই প্রত্যেক অস্তিত্বমান (বস্তু) কে বলা হয়। সুতরাং এ বাক্যে সকল (অস্তিত্বমান) বস্তুসমূহ অন্তর্ভূক্ত হয়ে গেলাে। ফরশ’ (জমীন) থেকে আরশ পর্যন্ত এবং প্রাচ্য থেকে পাশ্চাত্য পর্যন্ত সকল প্রকার অবস্থাদি ও সকল অঙ্গ-ভঙ্গি, নড়াচড়া, শ্বাস-প্রশ্বাস, মুহূর্ত এবং পলকের উঠানামা ও দৃষ্টি; অন্তরের ভয় ও ইচ্ছেসমূহ সহ যা কিছু রয়েছে সবগুলাে লওহ-ই মাহফুজে’ লিখিত রয়েছে। অতএব নিশ্চয়ই কুরআনুল করীমে এ সকল বস্তুসমূহের বর্ণনা সুস্পষ্ট পরিপূর্ণ বিস্তারিতরূপে বিধৃত হয়েছে। আর তাও আমরা হিকমতময় কুরআনে জিজ্ঞেস করাে যে, লওহ-এ কি কি লিপিবদ্ধ রয়েছে? আল্লাহ তায়ালা
ইরশাদ করেন “প্রত্যেক ছােট বড় বস্তু লিপিবদ্ধ রয়েছে।
আরাে ইরশাদ হয়েছে-“প্রত্যেক বস্তু আমি সুস্পষ্ট কিতাবে সংরক্ষিত রেখেছি।” আরাে ইরশাদ হয়েছে-“জমীনের অন্ধকারসমূহে কোন দানা নেই, আর শুষ্ক ও আদ্র এমন কোন বস্তু নেই, যা সুস্পষ্ট কিতাবে (কুরআনে করীমে) বিদ্যমান নেই।”
আর বিশুদ্ধ হাদীসসমূহ বর্ণনা করছে “প্রথম দিন থেকে শেষ দিন পর্যন্ত যা কিছু হয়েছে, আর যা কিছু হতে থাকবে, সব কিছু লাওহ-ই মাহফুজে লিখিত রয়েছে। বরং জান্নাত ও জাহান্নামীরাও স্বীয় ঠিকানায় পৌছে যাবে”।
যেমন একটি হাদীসে এসেছে, “আবদের (অনন্তকাল) সব অবস্থা তাতে লিখিত আছে”।
এর দ্বারাও তাই উদ্দেশ্য। এজন্য কখনও ‘আবদ' (অনন্তকাল) ব্যবহার করে এর দ্বারা ভবিষ্যতের দীর্ঘ সময় বুঝানাে হয়। যেমন বয়যাবীতে রয়েছে। না হয় অসীম বস্তুর বিস্তারিত (১) বর্ণনা সসীম বস্তুর পক্ষে বহন করা সম্ভব নয়, যেমন তা গােপন নয়।
গায়াতুল মামুলের খন্ডন
টিকাঃ (১) দেখুন! এটা সুস্পষ্ট বিশ্লেষণ। এ থেকেও বিশুদ্ধ যা প্রথম নজরে গত হয়েছে। আসমান ও জমীন দু’পরিবেষ্টিত সীমা, আর প্রথম দিন থেকে শেষ দিন পর্যন্ত অপর দু'টি সীমা। আর দু’পরিবেষ্টনকারী সীমায় যা পরিবেষ্টিত হবে তা সীমাবদ্ধ হবে। যদি তােমাদের আশ্চর্য হতে হয়, তাহলে তাদের উপর হােন যারা এর উপর দু’কারণে ফ্যাসাদ সৃষ্টি করেছে।
(তন্মধ্যে) প্রথমটি ১০-১১ পৃষ্ঠায়- কুরআন করীম শব্দগতভাবে সীমাবদ্ধ তা অসীমকে পরিবেষ্টনকারী হতে পারে না।
অন্য একটি উক্তির খন্ডন
আর তােমরা দেখছাে এটা একটি সন্দেহের অপনােদন, যা তারা অনুমান করেছে। বরং তা তাদের মনগড়া কল্পনা প্রসূত ধারণা। দ্বিতীয়টি হলাে, সে ধারণা করেছে যে, “যদি কুরআন করীম অসীম সক্রিয়তার উপর বিস্তারিতভাবে সুস্পষ্ট বর্ণনা উক্ত না করতাে, তাহলে তাতে ‘পঞ্চ অদৃশ্য জ্ঞানসমূহ নিশ্চিতরূপে অন্তর্ভুক্ত হতাে না।
তুমি জানাে যে, আমাদের উদ্দেশ্য পূর্ব ও পরবর্তীতে যা কিছু সংঘটিত হয়েছে আর যা। সংঘটিত হবে এর পরিবেষ্টন, যা 'লাওহে মাহফুজে লিপিবদ্ধ রয়েছে। আর তা হলাে সসীম বস্তু। এটা সসীম ও পরিবেষ্টিত হওয়ার বর্ণনা ও বিস্তারিত বিশ্লেষণ কুরআনের আয়াত দ্বারা প্রমাণিত। প্রত্যেকের জন্য তা অবতীর্ণ হওয়ার প্রেক্ষাপট নিশ্চিতভাবে এর অন্তর্ভুক্ত। সুতরাং কি জন্য এর অন্তর্ভুক্তি অসীম সক্রিয়তার (জ্ঞানের) অন্তর্ভুক্তির উপর নির্ভরশীল হবে? তা তাে স্বয়ং অসীম, অথবা আয়াতের দ্বারা অস্পষ্ট অনির্দিষ্ট বস্তুসমূহই উদ্দেশ্য, যা অসীমের অন্তর্ভুক্ত। সুতরাং জ্ঞান ততক্ষণ এর অন্তর্ভুক্ত হবে না, যতক্ষণ না
অসীমের বিস্তারিত বিবরণ ব্যক্ত হবে। আপনার সত্তার শপথ! এটা বর্ণনার প্রয়ােজন ছিলােনা। কিন্তু স্বল্পজ্ঞানীদের থেকে আল্লাহর নিকট আশ্রয়।
___________
একে (অতীত ও ভবিষ্যতের জ্ঞান) বলা হয়। নিশ্চয়ই ইলমে উসুলে বর্ণনা হয়েছে, অনির্দিষ্ট বস্তু নফীর (অস্বীকার জ্ঞাপক শব্দ) স্থলে ব্যাপক ১ হয়।
গায়াতুল মামুনের খন্ডন
টিকা(১) আমি বলছি, বিরােধ আমাদের নিকট গােপনীয় নয়, কিন্তু যখন আল্লাহ তায়ালার নহর | (সােতস্বীনি) এসেছে, তখন আকলের নহর বাতিল হয়ে গেছে। কঠিন ত্রুটি হলাে, খাস হওয়ার উপর ঐকমত্য দাবীর উল্লেখ করা। সুতরাং এটা তারই উক্তি যে একটি বিষয় স্মরণ রেখেছে আর অনেক বিষয় তার স্মৃতি ভ্রষ্ট হয়েছে। আর শীর্ষস্থানীয় ইমাম শুমীন স্বীয় তাফসীরে, অতঃপর আল্লামা জুমাল ফতুহাতে ইলাহিয়ায়’ এ আয়াতে করীমা।
এর ব্যখ্যায় বলেছেন, “কিতাবের মর্মার্থ নিয়ে ইমামদের মধ্যে মতভেদ রয়েছে। কতেক, ‘ওই-ই-মাহফুজ’ বলেছেন। তাঁর এ উক্তিতে সুস্পষ্ট ব্যাপকতা রয়েছে। কেননা, আল্লাহ তায়ালা এতে (অতীত ও ভবিষ্যতের) সবকিছুই লিপিবদ্ধ করেছেন। আবার কোন কোন মুফাসসির এর মর্মার্থ 'কুরআন' বলেছেন। সুতরাং এ উক্তিতে কি ব্যাপকতা বাকী রয়েছে? কতেক তাফসীরকারক বলেছেন- হাঁ, নিশ্চয়ই সকল বস্তু কুরআনে করীমে লিপিবদ্ধ রয়েছে তা হয়ত সুস্পষ্ট অথবা ইঙ্গিতে। কতেক ভাষ্যকারের উক্তি হলাে-এর মর্মার্থ নির্দিষ্ট ও খাস'। আর ‘শাই' দ্বারা উদ্দেশ্য সন্ধানকারীর যাই প্রয়ােজন (তা সবই কুরআনে করীমে রয়েছে।)
তাফসীরে খাজেনের বক্তব্য হলাে ‘এ কিতাব দ্বারা কুরআন করীম বুঝানাে হয়েছে অর্থাৎ এ মহান কুরআন সকল অবস্থাদির বিবরণ সম্বলিত ।
আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেছেন- প্রত্যেক বস্তুর বিবরণ সম্বলিত কিতাবে কোন প্রকার সন্দেহ নেই।
তাফসীরে জালালাইনে বলা হয়েছে-‘কিতাবের বিস্তারিত বর্ণনা অত্যন্ত সুস্পষ্ট, যা আল্লাহ তায়ালা আহকাম ও আহকামবিহীন ইত্যাদি সম্পর্কে লিপিবদ্ধ করেছেন।
জুমালে বলা হয়েছে- আল্লাহ তায়ালার বাণী অর্থাৎ লাওহ-ই-মাহফুজে।
ইবনে জরীর ও ইবনে আবী হাতিম স্বীয় তাফসীরসমূহে সৈয়দুনা হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (رضى الله تعالي عنه) থেকে বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেন, আল্লাহ তায়ালা প্রত্যেক বিষয়ের সুস্পষ্ট বিবরণ সম্বলিত এ কিতাব অবতীর্ণ করেছেন। আর আমরা অবশ্যই জেনে নিয়েছি তা থেকে কতেক যা আমাদের জন্য কুরআনে ব্যক্ত করা হয়েছে।
অতঃপর তিনি এ আয়াত তিলাওয়াত করলেন-“আমি আপনার উপর প্রত্যেক বস্তুর বর্ণনা সম্বলিত কিতাব অবতীর্ণ করেছি।” সাঈদ ইবনে মানসুর স্বীয় সুনানে ইবনে শায়বাহ স্বীয় মুসনাফে আবদুল্লাহ ইবনে ইমাম আহমদ তাঁর পিতার কিতাবুযজুহুদের পাদটীকায়, ইবনে দারলীস ‘ফজায়েলে কুরআনে,
ইবনে নাছর মারুজী তাঁর কিতাব ‘ফি কিতাবিল্লায়’ তাবরাণী মুজামে কবীর’ এবং ইমাম বায়হাক্বী ‘শুয়াবুল ঈমানে হযরত ইবনে মাসউদ (رضى الله تعالي عنه) থেকে বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেন, যে কেউ কুরআনে করীমে জ্ঞান অনুসন্ধান করবে সে তাতে অগ্র ও পশ্চাতের সব জ্ঞান পাবে। আর তাঁর ইরশাদে সে অন্ধদের জন্য খন্ডন রয়েছে যারা বলে আমরা কুরআনে করীমে কাগজে লিপিবদ্ধ পরিবেষ্টিত কিছু আয়াত ব্যতীত অন্য কিছু দেখিনি। তারা এর ما كان وما يكون বহনকারী হওয়ার উপযুক্ত কিভাবে? স্বীয় সত্তার শপথ! সে সীমাতিক্রমকারী আপত্তিকারীদের উক্তি--তেমনই যেমন তাদের পূর্ববর্তী মুশরিকদের উক্তি একজন খােদা কিভাবে সমগ্র জাহানে বিদ্যমান থাকবে? আল্লাহর প্রশংসায় আমি সন্দেহ দুরিভূত করতে ও সত্ত্বর বুঝে আসার জন্য এসব বর্ণনা “আম্বাউল হাই আন্না কালামান বিয়ানান লিকুল্লি শাই” (১৩২৬ হিঃ) পুস্তিকায় উল্লেখ করেছি । যা আপনাদের জন্য যথেষ্ট। আর ঐ উক্তি যা ইমাম মােল্লা আলী ক্বারী (رحمه الله تعالي) মিরক্কাতে বর্ণনা করেছেন, বলেছেন যে, কতেক ওলামা কিরাম উল্লেখ করেছেন। প্রত্যেক আয়াতের জন্য ষাট হাজার মর্মার্থ রয়েছে। হযরত মাওলা আলী (رضى الله تعالي عنه) থেকে বর্ণিত- 'যদি আমি ইচ্ছে করি, সত্তর উটের বােঝা কুরআনের তাফসীর দ্বারা ভর্তি করে দিই, তাহলে এমন করেই দিতে পারবাে।'
আল্লামা ইবরাহিম বাইজুরীর শরহে বুরদার’ প্রারম্ভের বক্তব্যে এই যে- প্রত্যেক আয়াতের ষাট হাজার মর্মার্থ রয়েছে। আর যে মর্মার্থগুলাে অবশিষ্ট রয়েছে তা অসীম। আর এর শব্দাবলী হযরত আমীরুল মুমেনীনের হাদীসে এভাবে রয়েছে-“যদি আমি ইচ্ছে করি তাহলে সুরা ফাতিহার তাফসীর দ্বারা সত্তর উট ভর্তি করে দিবাে।
সৈয়দুনা ইমাম আবদুল ওয়াহাব শেরানী (رحمه الله تعالي) কৃতঃ আল ইওয়াকৃীত ওয়াল জাওয়াহিরে ইমাম আজল, - আবু তুরাব নখশী (رحمه الله تعالي) থেকে বর্নিত-“কোথায় হযরত আলীর উক্তির অস্বীকারকারীরা? যদি আমি তােমাদের নিকট সুরা ফাতিহার তাফসীর বর্ণনা করি, তাহলে তােমাদের জন্য সওর উট পরিপূর্ণ করে দিবাে।”
আল্লামা উসমাবীর শরাহ সালাতু সৈয়দী আহমদ কবীর’ (رضى الله تعالي عنه)-এ রয়েছে, আমাদের সরদার আমর মিহদার থেকে বর্ণিত- 'যদি আমি ইচ্ছে করি তাহলে এর কতেক তাফসীর দ্বারা এক লক্ষ উট পরিপূর্ণ করে দিবাে, তাহলে তবুও এর তাফসীর শেষ হবেনা। তাহলে নিশ্চয়ই আমি এমন করবাে।'
খলীফা আবুল ফজলের দরবারের কতেক আওলিয়া থেকে বর্ণিত যে, “আমরা কুরআনে করীমের প্রত্যেক অক্ষরের তাফসীরে চল্লিশ হাজার অর্থ পেয়েছি এবং এর প্রত্যেক অক্ষরে এক স্থানে যে মর্মার্থসমূহ রয়েছে তা ঐ অর্থসমূহ ব্যতীত, যা অন্য স্থানে রয়েছে। আরাে বলেছেন, আমাদের সরদার আলী খাওয়াস বর্ণনা করেন, আল্লাহ তায়ালা আমাকে সুরা ফাতিহার আয়াতের অর্থ অবগত করেছেন।
অতএব, আমার জন্য তা থেকে এক লক্ষ চল্লিশ হাজার নয়শত নিরানব্বই জ্ঞান প্রকাশিত হয়েছে।
আর জুরকানীতে মাওয়াহেবে লাদুনীয়া’ থেকে, আল্লামা ইমাম গাজ্জালী (رحمة الله) স্বীয় কিতাবে’ ইলমে লাদুনী সম্পর্কে হযরত আলীর উক্তি বর্ণনা করেন- যদি আমার জন্য বিছানা করে দেয়া হয় তাহলে আমি বিছমিল্লাহর বা এর ব্যাখ্যায় সত্তর উট ভর্তি করে দেবাে। ইমাম শা'রানীর মীজানু শরীয়াতিল কুবরায়’ রয়েছে- “আমার ভাই আফযালুদ্দীন সুরা ফাতেহা থেকে দু'লাখ তেতাল্লিশ হাজার নয়শত নিরানব্বইটি জ্ঞান বের করেছেন, অতঃপর এসবগুলাে বিছমিল্লাহির দিকে প্রত্যাবর্তন করে দিয়েছেন, তৎপর বিছমিল্লাহির বা এর দিকে, অতঃপর বা এর নিচের মুকুতার দিকে। আর তিনি বলতেন-“আমাদের মতে মারিফাতের স্থান কুরআনে করীমে। পরিপূর্ণ মানুষ ততক্ষণ হওয়া যায়না, যতক্ষণ না সকল আহকাম ও সব মাযহাবের মােজতাহিদদের আরবী বর্ণমালা এর যে অক্ষরের প্রতি ইচ্ছে করবে তা থেকে মসয়ালা বের করতে পারবে। তিনি বলেছেন, এতে সৈয়দুনা হযরত আলীর ঐ বাণীর তায়ীদ রয়েছে যে, যদি আমি চাই তাহলে এ নুকৃতার জ্ঞান দ্বারা যা বিছমিল্লাহর বা এর নীচে রয়েছে এ উট পরিপূর্ণ করে দেবাে।
গায়াতুল মামুলের খণ্ডন
আমি বলছি, এ উক্তিসমূহ দ্বারা হযরত সৈয়দুনা ইবনে আব্বাস (رضي الله عنه)-এর বাণীর হাকীকত সুস্পষ্ট হয়ে যায়। তিনি বলেন- যদি আমার উটও হারিয়ে যায় তবে নিশ্চয়ই তা 'কিতাবুল্লাহ’ থেকেই পেয়ে যাবাে। এটা আবুল ফজল মুরসী তার থেকে বর্ণনা করেছেন। যেমন তাফসীরে ইতকানে রয়েছে নিঃসন্দেহে কুরআনে কারীমে তাই রয়েছে যে তা পাওয়ার পন্থা বলে দেয়। এটাই শীর্ষস্থানীয় ইমাম আল্লামা জালালুদ্দীন সুয়ুতী (رحمة الله) তাফসীরে ইতকানে’ তেতাল্লিশতম অধায়ে বর্ণনা করছেন। ইমাম আবু মুহাম্মদ মুফাসসির জুয়াইনী (রাহঃ) বলেছেন, কতেক ইমাম আল্লাহ তায়ালার বাণী الٓـمّٓ. غُلِبَتِ الرُّوۡمُ ১৩ থেকে (মাসয়ালা) বের করেছেন যে,মুসলমানরা ৫৮৩ হিজরী সনে বায়তুল মােকাদ্দাস বিজয় করবেন। তারা যাই বলেছেন, তাই হয়েছে।
আমি বলছি, ৫৮৩ হিজরী সনে বায়তুল মােকাদ্দাস বিজয় হওয়াই সুস্পষ্ট, ঐতিহাসিকগণ তাই বর্ণনা করেছেন। যেমন তারীখে কামিলে’ ইবনে আসীর (رحمة الله) বর্ণনা করেছেন। কিন্তু জুয়াইনীর মৃত্যু তা বিজয় হবার প্রায় দেড়’শ বছর পূর্বেই হয়েছে। তাহলে ঐ ইমাম যাঁর থেকে জুয়াইনী এ কাহিনী বর্ণনা করেছেন কিভাবে তিনি তা বর্ণনা করলেন? ইবনে খালকান বলেছেন, “আবু মােহাম্মদ জুয়াইনী ৩৮ হিজরী জিলহজ্জ মাসে ইন্তেকাল করেন।
আল্লামা সামনী কিতাবুজ জাইলেও অনুরূপ মত ব্যক্ত করেন। আর ‘আনসাব' নামক কিতাবে তার নিবাস নিশাপুর' বলে উল্লেখ রয়েছে।
মােট কথা, বক্তব্যের ঘটনাবলী ইমাম জুয়াইনীর বক্তব্যের ন্যায়। আল্লাহ তায়ালা উভয়কে দয়া করুক। সুতরাং পবিত্রতা ঐ ব্যক্তির জন্য যিনি তাঁর নবীর সদকায় এ মরহুম উম্মতকে সম্মান ও মর্যাদা প্রদান করেছেন। তাঁর উপর আল্লাহর দরুদ ও সালাম এবং বরকত ও সালাম তাঁর সকল উম্মতের উপর। আর স্বীয় সত্তার শপথ! যদি ঐ সকল লােকদের বলা হয়, বলাে এরা الٓـمّٓ. غُلِبَتِ الرُّوۡمُ আয়াত থেকে কিভাবে বের করেছে? তাহলে অবশ্যই। তারা হতবাক হয়ে যাবে এবং কোন জবাব দিতে পারবেনা। তাহলে আমরা কিভাবে অজ্ঞতার সাথে উম্মতের উস্তাদ, হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (رحمة الله)-এর উপর হুকুম প্রয়ােগ করবাে? যার জন্য রাসূলে করীম (ﷺ) আশীর্বাদ করেছেন- হে আল্লাহ তাঁকে কিতাবের জ্ঞান প্রদান করুন। ইবনে সুরাকাহ কিতাবুল এজাজে ইমাম আবু বকর ইবনে মুজাহিদের সূত্রে বর্ণনা করেন, সৃষ্টি জগতে এমন কোন জ্ঞান নেই যা আল্লাহর কিতাবে নেই।তাবাকৃাত’ গ্রন্থে সৈয়দ ইব্রাহীম দাসাওয়াতীর (رحمة الله) জীবন চরিত্রের বর্ণনায় রয়েছে, তিনি বলতেন ' যদি আল্লাহ তায়ালা তােমাদের হৃদয়ের তালা উন্মুক্ত করে দেন, তাহলে তােমরা কুরআনের আশ্চর্যাবলী, হিকমত ও জ্ঞানসমূহ সম্পর্কে অবহিত হয়ে যাবে। আর ব্যতীত অন্য সব কিছুতে দৃষ্টি করা থেকে বেপরােয়া হয়ে যাও যে, অস্তিত্বময় পৃষ্ঠাসমূহে যা কিছু লিপিবদ্ধ হয়েছে তা সবই এতে বিদ্যমান রয়েছে। আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন--“আমি কুরআনে করীম কোন কিছু উঠিয়ে রাখিনি। ইবনে জাবের ও ইবনে আবী হাতিম স্বীয় তাফসীরসমূহে’ হযরত আবদুর রহমান ইবনে জায়েদ ইবনে আসলাম (আমীরুল মুমেনীন হযরত ওমর ফারুক (رضي الله عنه) এর আজাদ কৃত গােলাম) থেকে আল্লাহ তায়ালার আয়াত- “আমি কুরআনে কোন কিছু বাদ দিইনি’-এর তাফসীরে বলেছেন, আমরা কুরআন থেকে অন্যমনস্ক হবাে না, কোন বস্তু এমন নেই যা তাতে উল্লেখ নেই। দায়লমী মুসনাদুল ফেরদৌসে হযরত আনাস ইবনে মালিক (رضي الله عنه)-এর সূত্রে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, রাসুলে পাক(ﷺ) ইরশাদ করেছেন-‘পূর্বাপর সকল বস্তুর জ্ঞান কুরআনে খোঁজ করলে পাওয়া যাবে। ইতিপূর্বে আমি এ হাদীস হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ-এর সূত্রে উল্লেখ করেছি। সুতরাং এ থেকে আমি আরম্ভ করেছি এবং এরই উপর সমাপ্ত করেছি। নিঃসন্দেহে আপনার নিকট তাখসিসের (খাস হওয়া) ঐকমত্যের দাবী বাতিল হওয়া প্রকাশিত হয়েছে।
সুতরাং আল্লাহ তায়ালা স্বীয় কিতাবে কোন বস্তু ত্যাগ করার ধারণা। গ্রহণযােগ্য হবেনা। শব্দততা নস (অকাট্য বক্তব্য) সমুহের অধিক নস"। (ব্যাপকতার) উপর। অতএব, স্পষ্ট ও বিস্তারিত বর্ণনা থেকে কোন বস্তু বাদ যাওয়া শুদ্ধ হতে পারে না। আর (ব্যাপক শব্দ) ১ (যে কোন একক-এর উপর প্রভাবের) ব্যাপারে নিশ্চিত ও অকাট্য। আর নসসমূহকে তার জাহির অর্থের উপর প্রতিপন্ন করা আবশ্যক যতক্ষণ এর উপর কোন বিশুদ্ধ দলীল তাকে (খাস ও বিশ্লেষণকরণ) ভিন্ন দিকে না নিয়ে যাবে এবং যতক্ষণ কোন দলীল বাধ্য না করবে। তাখসীস’ ও ‘তাভীল’ হচ্ছে বক্তব্যের পরিবর্তন করা। দলীল ছাড়া তা করা হলে শরীয়ত থেকে নিরাপত্তাই উঠে যাবে। আর হাদীসে আহাদ যত বিশুদ্ধই হােকনা কেন কুরআনের ব্যাপকতাকে নির্দিষ্ট করতে পারবে না। বরং এর সম্মুখে অস্তিত্বহীন হয়ে যাবে। সুতরাং হাদীস ব্যতীত অন্যান্য বিষয়ের আলাপ-আলােচনারতাে প্রশ্নই উঠেনা। আর যে তাখসীস আ’মকে তার অকাট্যতা থেকে পরিত্যাগ করেনা, আর যে বস্তু। তাখসীসে আকলীর কারণে আমের কায়দা থেকে বের হয়ে যায় তা সনদ বানিয়ে কোন সন্দেহজনক দলীল দ্বারা খাস করা যায় না। সুতরাং আল্লাহরই প্রশংসা যে, বিশ্লেষণ যথাযথভাবে প্রতিষ্ঠিত হলাে।
বাকী রইলাে, যদি তােমরা এর বিপরীত মত পােষণ করাে, আর যদি কোন উক্তি তােমাদের উপর পাঠ করা হয় এবং তা তােমাদের মনঃপুত না হয়, আর তা অন্যের উপর ঝুঁকে পড়তে দেখাে, তাহলে তা সর্বশেষ প্রচেষ্টায় প্রতিহত করতে চাও এবং প্রত্যেক ব্যাপকতাকে খাসের দিকে ফিরিয়ে দাও, আর ব্যাপকতা স্বীকার করে বলে দাও যে, তা খাস হওয়ার উপর ব্যবহার করা অপরিহার্য। সুতরাং নিজ কুপ্রবৃত্তির হুকুম এবং নসসমূহের সাথে স্বেচ্ছাচারিতা এবং যদি এটা বৈধ হয় তবে আম ও খাসসমূহের মধ্যে মূলত কোন বৈপরীত্য অবশিষ্ট থাকে না। যেমন তা কারাে নিকট গােপনীয় নয়। আর আল্লাহই পথ প্রদর্শনকারী। (দেখুন, তার পুস্তিকার ৭, ৮ ও ৩১ পৃষ্ঠা)
(1) বাক্যগত অকাট্যতা ও উসুলগত অকাট্যতা অর্থাৎ উসুলে ফিক্বাহ-এর মধ্যে পার্থক্য রয়েছে। তােমরা কি দেখছােনা যে, ব্যাপক অকাট্যতা হলাে গবেষণামূলক। সুতরাং বাক্যগত অকাট্যতার সম্মুখে তা কিছুই নয়। অতএব, কোন হানাফীর কুরআনের ব্যাপকতা দ্বারা প্রমাণ স্থির করা এবং তাঁর মাযহাবে এর হুকুম অকাট্য হওয়া, আল্লাহ তায়ালার মর্মার্থের উপর দৃঢ়ভাবে না কোন হুকুম প্রয়ােগ করে, আর না তাভীলের (বিশ্লেষণ) গন্ডি থেকে বহিভূত করে, যেমন বিবেকবান আলিমদের নিকট গােপনীয় নয়।
আমাদের নবী--(যা সংঘটিত হয়েছে আর যা ভবিষ্যতে হবে) সম্পর্কে জ্ঞাত আছেন (১)। আপনাদের নিকট প্রতীয়মান হলাে যে, রাসুলে পাক(ﷺ)-এর জ্ঞান কুরআন করীম থেকেই অর্জিত। আর প্রত্যেক বস্তুর স্পষ্ট বর্ণনা এবং প্রত্যেক বস্তুর বিস্তারিত হওয়া এ পবিত্র কিতাবেরই গুণ ও বৈশিষ্ট্য। বরঞ্চ এর একেকটি আয়াত কিংবা একেকটি সুরারও এ বৈশিষ্ট্য। আর কুরআন করীম একবারে নাজিল হয়নি, বরং অল্প-অল্প (প্রয়ােজনানুসারে) আনুমানিক তেইশ বছরে নাজিল হয়েছে। সুতরাং যখন নবীর উপর কোন আয়াত কিংবা সুরা নাজিল হতাে, রাসুলে পাক (ﷺ)-এর জ্ঞানের উপর জ্ঞান ততই বৃদ্ধি পেতে থাকতাে। শেষ পর্যন্ত যখন কুরআন অবতরণ পরিপূর্ণ হলাে, প্রত্যেক বস্তুর বিস্তারিত সুস্পষ্ট বর্ণনাও পূর্ণ হলাে। আল্লাহ তায়ালা আপন হাবীব (ﷺ))-এর উপর স্বীয় নিয়ামতের পূর্ণতা দান করলেন যা কুরআনে। করীমে তাঁর সাথে অঙ্গীকার করেছিলেন।
(১) মদীনা শরীফের কতেক ওলামায়ে কিরাম প্রতিবাদ স্বরূপ তাওরীতে আল্লাহ্ তায়ালার আয়াত تفصيلا لكل شيء পেশ করলেন। আমি বললাম, তাওরীতে কোন দলীল খাস হওয়ার উপর রয়েছে কিনা? দ্বিতীয়টির ভিত্তিতে অস্বীকারের কারণ কি? আর প্রথমটির ভিত্তিতে স্থায়িত্বের দলীল হযরত কলিমুল্লাহ (عليه السلام) সম্পর্কে কিভাবে হবে? মাহবুবে খােদা(ﷺ) এর সম্পর্কে স্থায়ীত্বের দলীল এবং কোন শব্দ একস্থানে দলীলসহ খাস হওয়া ও অন্যস্থানে দলীলবিহীন খাসকে আবশ্যক করে না। তখন নিশ্ৰুপতা অবলম্বন করেন এবং কোন কথা বলেননি। আমি এখন বলছি, ইবনে আবী হাতিম মুজাহিদ থেকে বর্ণনা করেছেন যে, যখন হযরত মুসা (عليه السلام) আলওয়াহ' নিক্ষেপ করেন তখন হেদায়েত ও রহমত ছাড়া অবশিষ্ট আর বিশ্লেষণ উঠে গেছে। তিনি আবু মা'বদ ও ইবনে মুনজির তাঁর থেকে রেওয়ায়েত করেন, সাঈদ ইবনে জুবায়র বলেন, তাওরীতের তখতীসমূহ যমরুদ (মূল্যবান পান্না):-এর ছিলাে। হযরত মুসা (عليه السلام) যখন তা নিক্ষেপ করেছিলেন, তখন বিশ্লেষণ উঠে গেছে আর হেদায়েত ও রহমত অবশিষ্ট রয়ে গেছে এবং তিনি এ আয়াত তেলাওয়াত করেন, (আর আমি তােমাকে পটে লিখে দিয়েছি সর্বপ্রকার উপদেশ ও বিস্তারিত সব বিষয়) আর এ আয়াত তেলাওয়াত করেন, (তারপর যখন মুসার (عليه السلام) রাগ পড়ে গেলাে, তখন তিনি তখতীগুলাে তুলে নিলেন আর যা কিছু তাতে লিখা ছিলাে, সেসমস্ত লােকের জন্য হেদায়েত ও রহমত যারা নিজেদের প্রতিপালককে ভয় করে এবং বলেন যে, এখানে বিস্তারিত বিষয়ের বর্ণনা করেন নি। অতএব, সন্দেহ দূরিভূত হয়ে গেলাে। এদিকে
এমতাবস্থায় কুরআন করীম নাজিল সমাপ্ত হওয়ার পূর্বে যদি রাসুলে পাক (ﷺ)কে লক্ষ্য করে কতেক নবীদের ব্যাপারে এ কথা হয় যে, আমি এর বর্ণনা | আপনার কাছে করিনি, অনুরূপ মুনাফিকদের ব্যাপারে যে, আপনি তাদের চিনতে
পারেন নি অথবা রাসুলে পাক (ﷺ) কোন ঘটনা কিংবা কর্মে নিরবতা পালন করেছেন, এমনকি শেষ পর্যন্ত ওহী নাজিল হয়েছে এবং জ্ঞান দেয়া হয়েছে, তাহলে এগুলাে না ঐসকল আয়াতের অস্বীকৃতি বাচক, না রাসুলে পাক (ﷺ)-এর জ্ঞানের পরিব্যাপ্তির অস্বীকার। যেমন সুবিবেচকদের নিকট গােপন নয়।
অতএব, রাসুলে পাক (ﷺ)-এর জ্ঞান অস্বীকারের ব্যাপারে যত প্রকার কাহিনী ও বর্ণনাবলী দ্বারা ওহাবীরা সনদ গ্রহণ করে, যদি এসব কাহিনীর। ইতিহাস জানা না থাকে, তাহলে এর দ্বারা সনদ গ্রহণ বােকামি ও মুখতা বৈ কিছু নয়। এ কারণে যে, হতে পারে এ সকল কাহিনী ও ঘটনাবলী কুরআন করীম নাজিল সমাপ্তির পূর্বেকার সংঘটিত হয়েছে। যদি জানা যায় যে, এর ইতিহাস নাজিল সমাপ্তির পূর্বের, তাহলে এর দ্বারা সনদ গ্রহণ কাঁটাযুক্ত বৃক্ষকে হাত দ্বারা। কোষমুক্ত করার মত যা সম্পূর্ণ পাগলামী। আর পাগলও রং বেরঙের হয়। আর যদি ইতিহাস পরের হয় এবং দাবীদারদের দাবীর পক্ষে কোন প্রমাণ না থাকে, তাহলে প্রমাণকারী আহমক এবং এর দ্বারা প্রমাণ স্থির করা অসম্ভব। আমি স্বীয় প্রতিপালকের প্রশংসা করছি এবং সব প্রশংসা সেই মহান সত্ত্বারই প্রাপ্য। নবী করিম (ﷺ) এর জ্ঞান হ্রাস করার জন্য ওহাবীরা যেসব প্রমাণ দ্বারা সনদ গ্রহণ করে তা এঅবস্থাসমূহ থেকে বাইরে নয়। যদি ভুল বলে স্বীকার ১ করে নিই যে,
এখানে এমন কোন রেওয়ায়েত পাওয়া গেলাে যার ইতিহাস জানা যায় যে, এটা। কুরআন নাজিল সমাপ্তির পরের, তাহলে তা নিশ্চিত বলে দেয় যে, সে সময় পর্যন্ত বস্তুতঃ কতেক বস্তুর কোন জ্ঞানই হাসিল হয়নি।
(১) ওহাবীদের মুখসমূহের একটি হলাে, তারা শাফায়াতের হাদীস “অতঃপর আমি স্বীয় শির উত্তোলন করবাে এবং স্বীয় প্রতিপালকের ঐ হামদ, গুণকীর্তন ও প্রশংসা করবাে, যা তিনি আমাকে শিক্ষা দিয়েছেন। এর দ্বারা প্রমাণ করতে চায় যে, রাসুলে পাক(ﷺ)-এর হামদ ও সানা (প্রশংসা ও স্তুতি বন্দনা) তাঁর সুন্দরতম প্রশংসাবলী থেকেই হবে। সুতরাং হাদীসই প্রকাশ করে দিলাে যে, হুজুর(ﷺ)-এর উপর ঐ সময়ই আল্লাহ তায়ালার ঐ গুণটি প্রকাশিত হবে, যা তিনি তখনাে পর্যন্ত জানতেন না। প্রকৃতপক্ষে তাদের এ বক্তব্যের দ্বারা। বিতর্কের কোন সুযােগ নেই। কেননা, আমরা জানিয়ে দিয়েছিলাম যে, হুজুর (ﷺ)-এর জ্ঞান আল্লাহ তায়ালার জাত ও সিফাতকে পরিবেষ্টনকারী নয়, আর না মূলতঃ তাতে কোন
অতএব, আমরা যথেষ্ট মনে করি একটি মাত্র সম্পূর্ণ, পরিপূর্ণ ও পূর্ণাঙ্গ উপকারী উত্তর যা সকল বাতুলতাকে দূরিভূত করে এবং এর মূলােৎপাটন করে বহুদূরে নিক্ষেপ করে যা সমস্ত ঘটনাবলীতে দীপ্ত ও প্রকাশমান, তা হলাে- খবরে আহাদ যখন কুরআনের আয়াতের বিপরীত হয় এবং বিশ্লেষণের কোন পন্থা অবশিষ্ট না থাকে, তখন তা কোন কাজে আসবে না, তা শ্রবণ করা যাবে না এবং তা কোন উপকারে আসবেনা। বরঞ্চ যদি এখানে উসুলের কিতাবাদি থেকে ইমামদের প্রমাণসমূহ উক্ত করি, তাহলে এর চেয়েও উত্তম ও অধিক মজবুত পছন্দের কথা এই যে, এরই সাক্ষ্য পেশ করা যা বর্তমানে হিন্দুস্থানে ওহাবীদের ইমাম রশিদ আহমদ গাঙ্গুহী স্বীয় কিতাবে তার ছাত্র খলীল আহমদ আম্বেটবীর দিকে সম্পর্কিত করেছেন। স্বয়ং তিনি এ মাসয়ালায় আল্লাহ তায়ালা কর্তৃক রাসুলে পাক (ﷺ) কে অদৃশ্য জ্ঞান প্রদান করা আকায়েদের মাসয়ালার অন্তর্ভুক্ত এবং ফজিলতের নয় বলে উল্লেখ করেছেন। যার বক্তব্য নিম্নরূপ-“আকৃায়েদের মাসয়ালা কিয়াস নয় যে, কিয়াস দ্বারা প্রমাণিত হয়ে যাবে, বরং অকাট্য, অকাট্য বক্তব্যসমূহ ‘নস’ দ্বারা প্রমাণিত হয়। এখানে কোন নস্ (কোরআন-হাদীসের সুস্পষ্ট বক্তব্য) নেই। সুতরাং এর স্বীকৃতি ঐ সময়ই ভেবে দেখার যােগ্য যখন গ্রন্থকার তা অকাট্য বক্তব্য দ্বারা প্রমাণ করবে।
বরাহীনে কাতেয়ার ৮১ পৃষ্টায় আরাে বলা হয়েছে-“আকীদার মাসআ’লাবলীতে অকাট্যতার দিকই বিবেচ্য, বিশুদ্ধ ধারণা নয়”। ৮৭ পৃষ্টায় বলা হয়েছে, “এক্ষেত্রে বিশুদ্ধ হাদীসে আহাদও গ্রহণযােগ্য নয়। উসুল শাস্ত্রে যার প্রমাণ বিদ্যমান। সুতরাং রহস্য জড় খুললাে, সত্য থেকে সন্দেহ দূরীভূত হয়ে গেলাে। গাঙ্গুহী, ওহাবী, দেওবন্দী, দেহলভী এবং প্রত্যেক বেয়াদব, অসভ্য গোঁয়ার, জঙ্গলী সব মিলে এমন একটি প্রমাণ উপস্থাপন করুক, যার দাবী অকাট্য এবং মর্মার্থ নিশ্চিত ও প্রমাণ মজবুত প্রমাণিত হয়। যেমন কুরআনের আয়াত ও মুতাওয়াতির। হাদীস, যা নিশ্চিত অকাট্য ও শক্তিশালী বর্ণনা দ্বারা প্রমাণ করবে যে, অবতরণ
বস্তুর পরিবেষ্টন হতে পারে। কেননা, সসীম অসীমকে বেষ্টন করা অসম্ভব। সুতরাং আল্লাহর জাত ও সিফাত সম্পর্কে হুজুর (ﷺ)-এর নতুন জ্ঞানসমূহ সর্বদা বৃদ্ধি পেতে থাকবে। কিন্তু তা কখনাে আল্লাহর সত্ত্বা পর্যন্ত পৌছতে পারবে না এবং কখনাে তাঁকে বেষ্টন করতে পারবেনা। বরং জ্ঞান অর্জন সব সময় সসীম এবং সব সময়ই অবশিষ্ট থেকে যাবে।
সমাপ্তির পরে কোন ঘটনা রাসুলের নিকট গােপন থেকেছে, প্রকৃত পক্ষে তিনি যা জানেনও নি। এটা নয় যে, হুজুর(ﷺ) জ্ঞাত হয়েছেন কিন্তু বলেননি। কেননা, হুজুরের নিকট এমন জ্ঞানও রয়েছে, তাঁকে গােপন করার নির্দেশ দেয়া হয়েছিলাে। অথবা জ্ঞান ছিলাে কোন সময় তাতে সাময়িক বিস্মৃতি এসেছে যে, তাঁর পবিত্র। হৃদয় কোন গুরুত্বপূর্ণ কর্মে মশগুল ছিলাে। স্মৃতিতে না আসা, জ্ঞান না থাকা নয়। বরং প্রথমে জ্ঞান থাকাই অপরিহার্য। যেমন বােধসম্পন্নদের নিকট একথা অজানা
নয়। হাঁ! হাঁ, আপনারা এমন কিছু দলীল পেশ করুন যদি সত্যবাদী হন, যদি * পেশ করতে না পারেন, আমরা বলছি পারবেনইনা। তাহলে জেনে রাখুন, আল্লাহ।
ধােকাবাজদের প্রতারণাকে সফল করেন না।
রাসুলেপাক(ﷺ)-এর মর্যাদায় গাঙ্গুহীর আক্রোশঃ
যুগের অদ্ভুত ব্যক্তি উল্লিখিত গাঙ্গুহী সাহেব রাসুলে পাক (ﷺ)-এর জ্ঞানের ফজিলত অর্জিত হওয়াকে আক্ৰায়েদের বিষয় বলে স্বীকৃতি দিয়েছেন যেন বুখারী ও মুসলিম শরীফের হাদীস সমূহ খন্ডন করতে পারেন। যেমন পূর্বে গত হয়েছে। আর যখন রাসুলে পাক (ﷺ) এর জ্ঞানের অস্বীকার এসেছে, তখন তা ফজিলতের - বিষয় আখ্যা দিয়েছেন যেখানে দুর্বল হাদীসও গ্রহণযোগ্য হয়ে যায়। এমন কি তাতে পরিত্যাক্ত রেওয়ায়েত থেকেও সনদ গ্রহণ করেছেন। যে সম্পর্কে ইমামগণ সুস্পষ্ট মতামত পেশ করেছেন যে, এগুলাে ভিত্তিহীন। যেমন এ রেওয়ায়েত-“এ দেওয়ালের পেছনের অবস্থাও আমার জানা নেই। সুতরাং প্রার্থনা, হে মুসলমানগণ! এদের উদ্দেশ্যে অন্যরূপ। তাদের অন্তর রাসুলে পাক (ﷺ)-এর ‘মর্যাদায় কঠোর ও ক্রোধান্বিত। সুতরাং তা প্রমাণের জন্য বুখারী-মুসলিমের . হাদীসও স্বীকার করেন। কিন্তু এর খন্ডনের জন্য ভিত্তিহীন, বানােয়াট, পরিত্যক্ত ও মিথ্যার আশ্রয় নিতে কসুর করেনা। ইসলাম কি এমন হতে পারে? কখনই
শপথ! এ গৃহের (কাবা শরীফ) অধিপতির এবং এটা আপনাদের স্মরণ রাখা উচিত যে, এ গ্রন্থ খলীল আহমদ আম্বেটবীর লিখিত, যিনি এ বছর হজ্জে এসেছেন। তার উস্তাদ রশিদ আহমদ গাঙ্গুহী এর উপর অভিমত দিয়েছেন এবং এর প্রত্যেকটি অক্ষর বিশুদ্ধ বলে রায় প্রদান করেছেন।
রশীদ আহমদ ও খলীল আহমদ সম্পর্কে ওলামায়ে মক্কার কুফরী ফতােয়া প্রদানঃ
আর আমাদের সরদার হারমাইন শরীফাইনের ওলামা কেরাম তা খন্ডন করেছেন। আল্লাহ তায়ালা তাঁদের সম্মান বৃদ্ধি করুক, তাদের তাওফীক দান করুন, যেন দ্বীনের পরিব্যাপ্তিকে রক্ষা করেন, পথভ্রষ্টদের শাস্তি প্রদান করেন।
হযরত মাওলানা মুহাম্মদ সালিহ ইবনে মরহুম ছিদ্দীক কামাল হানফী,
সেসময়ে তিনি হানাফী মুফতীর দায়িত্বে ছিলেন, তাকদীসুল ওয়াকীল আন
তাওহীনির রাশীদ ওয়াল খলিল’ গ্রন্থের অভিমতে যা তিনি এ দু’টির খন্ডন ও তাদের শাস্তি সম্পর্কে রচনা করেছেন তাতে বরাহীনে কাতেয়ার’ গ্রন্থকার, তার সহযােগী এবং অভিমত প্রদানকারী সবার ব্যাপারে সে হুকুম, যা জিন্দিকদের। (মুনাফিকদের) বলে মন্তব্য করেছেন। '
আমাদের সরদার শেখুল ওলামা মাওলানা মুহাম্মদ সাঈদ সাবলীল মুফতীয়ে। শাফেয়ী মক্কী বলেছেন-বরাহীনে কাতিয়ার গ্রন্থকার ও তার সহযােগীরা শয়তানের সাথে অধিক সাদৃশ্যপূর্ণ এবং পথভ্রষ্ট ও জিন্দিক; যদিও নিশ্চিত কাফির।
তদানীন্তন মালেকী মাযহাবের মুফতী মাওলানা মুহাম্মদ আবিদ ইবনে মরহুম শেখ হােসাইনী ‘বরাহীনে কৃাতেয়ার’ খন্ডনকারীদের প্রশংসা করেছেন এবং তাকে ফিতনা সৃষ্টিকারী ও ভ্রান্ত বলেছেন। হাম্বলী মাযহাবের মুফতী মাওলানা খালফ ইবনে ইব্রাহীম বলেছেন, ‘বরাহীনে কৃাতেয়ার’ গ্রন্থকার ও তার সহযােগীদের খন্ডনকারীদের জবাব বিশুদ্ধ
ও সত্য, যাতে সন্দেহের অবকাশ নেই। আর মদীনা শরীফের হানাফী মাযহাবের মুফতী মাওলানা ওসমান ইবনে। আবদুস সালাম দাগিসতানী বলেন, বরাহীনে কৃাতিয়ার খন্ডনে লিখিত কিতাবটি আমি পাঠ করেছি। তারা জনশূন্য সন্দেহপূর্ণ ময়দানে পানির ধােকা দেখছে এবং স্বীয় কটুক্তিসমূহ আবিষ্কারকদের মুখতার উপর দলীল কায়েম করছে। আমার প্রাণের শপথ বারাহীনে কাতেয়ার’ গ্রন্থকার ভ্রষ্টতার কুন্ডে ঘুরাফেরা করছে। সেব্যক্তি আল্লাহ ও ফিরিস্তা আজরাইল-এর পক্ষ থেকে শাস্তির উপযােগী। সৈয়দ জলীল মুহাম্মদ আলী ইবনে সৈয়দ জাহির বিতরী হানাফী মাদানী বলেছেন, ‘খন্ডনকারী ‘বারাহীনে কাতেয়া-র গ্রন্থকার ও তার ভ্রষ্ট সহযােগীদের থেকে যা বর্ণনা করেছেন তা সুস্পষ্ট কুফর ও বিধর্মীদের স্বভাব।
গাঙ্গুহীর কতেক ভ্রান্ত ধারনা
কেনইবা হবেনা ! ঐ কিতাবকে খলীল আহমদের দিকে সম্পৃক্ত করা হয়েছে এবং তা তিনি তার উস্তাদ রশিদ আহমদ গাঙ্গুহীর নির্দেশক্রমে লিপিবদ্ধ। করেছেন। তাতে আমাদের পবিত্রতম প্রতিপালক মিথ্যা বলতে পারেন বলে ফতােয়া দেয়া হয়েছে। (দেখুন তার কিতাবের ৩ পৃষ্ঠা) আর আমাদের প্রিয় নবী(ﷺ) সম্পর্কে বলেছেন-“তার জ্ঞান অভিশপ্ত শয়তান থেকে কম।(দেখুন ১৪৭ পৃঃ)
আর রাসুলে পাক (ﷺ)-এর মীলাদ ও বেলাদত শরীফের সময় কিয়াম করাকে এর ন্যায় বলে, যা হিন্দুস্থানের মুশরিকরা স্বীয় আবিষ্কৃত ভ্রান্ত ভগবান শ্রী কৃষ্ণের জন্য করে থাকে যে, যখন তার জন্মাষ্টমীর দিন আসে তখন একজন মহিলাকে পূর্ণ গর্ভিতার ন্যায় সজ্জিত করে, অতঃপর জন্মের মুহুর্তের অবস্থাকে হুবহু বর্ণনা করে। তখন তারা খুব বিরক্তিবােধ ও মুহুর্তে মুহুর্তে করতালী, কাতচিত ও ছটফট করতে থাকে। অতঃপর এর নীচ থেকে একটি শিশুর প্রতিমা বের করে, নাচ-গান, আনন্দ-ফুর্তি, গান-বাজনা ও তালি বাজায়। তাছাড়া আরাে নিকৃষ্ট কৌতুক করে বেড়ায় অথচ (এ সাধু) মীলাদুন্নী (ﷺ) সম্মেলনকে এর সাথে তুলনা করেছেন এবং বলেছেন- বরং এটা মুশরিকদের চেয়েও নিকৃষ্টতম কর্ম। কেননা, তারা এর জন্য একটি তারিখ নির্দিষ্ট করে। আর এরা তাও করেনা বরং যখন ইচ্ছে অশ্লীল কথন করে'।(দেখুন ১৪১ পৃঃ
আর আহলে সুন্নাত যখন তাদের সামনে ওলামায়ে হেরমাঈন শরীফাইনের উদ্ধৃতি দিলেন যে, তাঁরা নিজেরাই {মিলাদুন্নবী (ﷺ)-এর} মজলিশ করেন এবং এ মর্যাদাপূর্ণ কর্ম মুস্তাহাব হওয়া সম্পর্কে বারংবার অগণিত ফতােয়া লিখে আসছেন, তখন ঐ গ্রন্থকার তাদের দুর্নাম ও ত্রুটি বের করতে তাদের ঈমান ও বিশ্বস্ততা সম্পর্কে সমালােচনা আরম্ভ করে এবং স্বীয় নগর দেওবন্দের ওহাবীদেরকে দ্বীন ও বিশ্বস্ততায় তাদের চাইতে শ্রেয়তর বলতে শুরু করে। যেমন ১৭-১৮ পৃষ্ঠায় বলেনঃ “ওলামায়ে দেওবন্দের যা অবস্থা সবই স্পষ্ট আর সামান্যও দুরে নয়। নামাজ জমাআত সহকারে আদায় করেন, অসৎ কর্মে বাধা প্রদান যতটুকু সম্ভব করে থাকেন, আর ফতােয়া লিখার সময় ধনী-দরিদ্রের সঠিক উত্তর প্রদান করেন। তাদের ত্রুটির উপর কেউ যদি সাবধান করে দেয় তা বিনাবাক্যে মেনে নেন। এটা আল্লাহর নিকট গ্রহণযােগ্যতার নিদর্শন, যেকোন বিবেকবান মুসলমানই তা স্বচক্ষে দেখতে পারেন। অন্যদিকে মক্কা শরীফের ওলামা কেরামদের যিনি আকল ও জ্ঞান দ্বারা প্রত্যক্ষ করেছেন, তিনি খুব ভাল করেই জানেন, আর যারা যানেননি, তারা নির্ভরযােগ্য বর্ণনা দ্বারা প্রত্যক্ষ করার ন্যায়ই জানেন যে, সেখানকার অধিকাংশ আলিম (অবশ্যই সবাই নন, বহু পরহেজগারও রয়েছেন। এ অবস্থায় যে, (১) তাদের পােষাক শরীয়ত সম্মত নয়। (২) দাঁড়ি অধিকাংশের একমুষ্টি থেকে কম (৩) নামাজের প্রতি উদাসীন (৪) শক্তি থাকা সত্ত্বেও সৎ কর্মের আদেশের তাগীদ শূন্য (৫) অধিকাংশ শরীয়ত পরিপন্থী আংটি - পরিহিত (৬) বিভিন্ন ধরণের ফ্যাশনের শােভা, আর (৭) ফতােয়া দানের ক্ষেত্রে নগদ দিয়ে যা ইচ্ছা লিখে নিতে পারবেন। যদি তাদের এ ত্রুটিগুলাে কেউ দেখিয়ে দেয়, তাহলে তাকে উত্তম মধ্যম দেয়ার জন্য ওরা তৈরী হয়ে যান। স্বয়ং শেখুল ওলামা (আল্লামা সৈয়দ আহমদ যিনী দাহলান (رحمة الله), শেখুল হিন্দ মাওলানা রাহমাতুল্লাহর সাথে যে কর্ম করেছেন তা কারাে নিকট গােপন নয়। বুগদাদী রাফেযী থেকে কিছু টাকা নিয়ে আবু তালিবকে মুমিন লিখে দিয়েছেন, যা বিশুদ্ধ হাদীসসমূহের বিপরীত। সুতরাং আর কতই লিখবাে, যা অনেক দীর্ঘ। ওলামায়ে হারামাঈনের দোষত্রুটিসমূহ লিখতে লজ্জাও লাগে। কিন্তু অক্ষম হয়ে লিখতে হচ্ছে। তাদের ওলামায়ে কিরামদের মধ্যে ফ্যাসাদ ব্যাপকহারে বৃদ্ধি পেয়েছে। এর অবাধ্যতা চরম আকার ধারণ করছে। এমনকি তিনি ২০ পৃষ্ঠায় লিখেছেঃ “এ নগণ্য বান্দা মসজিদে মক্কায়। আসর নামাজের পর ওয়াজকারী এক অন্ধ আলেমের নিকট মীলাদ মাহফিলের অবস্থা সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করেছি। তিনি বললেন, বিদআত, হারাম। তখন অন্ধ বক্তাকে পছন্দ হলাে। কেননা, সে মীলাদ বর্ণনাকে হারাম বলে আখ্যায়িত করেছে।” অতএব, সে হিদায়তের পরিবর্তে অজ্ঞতা ও অন্ধতাকে পছন্দ করেছে। আমরা আল্লাহর নিকট প্রার্থনা করছি যেন তিনি আমাদের ধ্বংস থেকে রক্ষা করেন। আল্লাহ তায়ালা আমাদের নবী মুহাম্মদ (ﷺ) তার বংশধর এবং সাহাবাদের উপর দরুদ প্রেরণ করুন। আমীন।
ষষ্ঠ নজর
পঞ্চ অদৃশ্য জ্ঞান সম্পর্কিত বিশদ আলােচনাঃ
আশ্চর্যের বিষয় নয় যে, এমন কতেক লােক রয়েছে যারা নসের’ অর্থসমূহ এবং ব্যাপকতা ও নির্দিষ্টতার স্থানসমূহ জানে না, তারাও বলতে লাগলাে আপনি স্বীয় নবীয়ে করিম (ﷺ)-এর জন্য আদি থেকে অনন্তকাল পর্যন্তের সকল বর্তমান ও ভবিষ্যতের জ্ঞান স্থির করেছেন, যাতে এ পঞ্চবস্তুও অন্তর্ভূক্ত হলাে, যেগুলাের
জ্ঞান আল্লাহ তায়ালা ব্যতীত অন্য কেউ জানেন না। অতঃপর তা আল্লাহর সাথে খাস হওয়া কোথায় গেলাে?'
'এক না, আমি বলছি, হে লােক! তুমি কত শীঘ্রই ভুলে বসেছাে! আমি কি তােমার মনে মনে বলছি যে, এটি আল্লাহর জন্য (নির্ধারিত) স্বীয় সত্তাগত জ্ঞানের এবং তা আল্লাহর সকল জ্ঞানকে পরিবেষ্টন করে আছে? প্রদত্ত জ্ঞানতাে আল্লাহ। তায়ালার স্থির করা ও তাঁর ইরশাদ করার দ্বারা তাঁর বান্দার জন্য প্রমাণিত। তুমি কি জাননা যে, যা সংঘটিত হয়েছে আর যা সংঘটিত হবে-এ সবের জ্ঞান আমি রাসুলে পাক(ﷺ)-এর জন্য নিজ পক্ষ থেকে স্থির করিনি, বরং আল্লাহই তা। প্রমাণিত করেছেন এবং মুহাম্মদ (ﷺ) ও সাহাবায়ে কিরামই প্রমাণ করেছেন; এরপরের সকল ইমামই-এটা প্রমাণ করেছেন। যেমন কুরআনের অনেক আয়াত, হাদীস, সাহাবী ও ওলামায়ে কিরামের বক্তব্য আমি বর্ণনা করে এসেছি। সুতরাং ঘটনা কোন্ দিকে প্রবাহিত হচ্ছে (কোথায় ফিরে যাচ্ছে), কি হয়েছে তােমাদের! কি হুকুম প্রয়ােগ করছাে! তােমরা কি আল্লাহর আয়াতের মধ্যে কতেককে। কতেক দ্বারা খণ্ডন করছাে? অথচ তোমরা কুরআন পাঠ করাে। তােমাদের কি বােধশক্তি (আকল) নেই? তােমরা কি শুনােনি যা আমি তােমাদের শুনিয়েছি যে, আল্লাহ তায়ালা এমনভাবে নফী (অস্বীকার) করেছেন যা স্থানচ্যুত হবার নয়; আবার এমনভাবে প্রমাণ করেছেন যা অস্বীকার করা সম্ভব নয়; (বরং) উভয়ের মধ্যে সমতা বিধান অপরিহার্য হয়ে পড়েছে। অথচ তােমরা সমতার নিয়মাবলী সম্পর্কে যেন কানে অলংকার ঠেসে রেখেছাে! যেন তােমরা কান লাগিয়ে রাখছে। কিন্তু শুনছাে না। দৃষ্টি নিক্ষেপ করছাে অথচ দেখছাে না। এমন যদি তােমরা বলাে যে, আল্লাহ পাঁচটি বস্তুকে গুণে নিয়েছেন এবং নির্দিষ্টভাবে এগুলােরই বর্ণনা করেছেন, তাহলে অবশ্যই এগুলাে ব্যতীত অন্যান্যগুলি আল্লাহর সাথে খাস হওয়ার মধ্যে অতিরিক্ত হবে। আর যদি আল্লাহ তায়ালার জ্ঞান অন্যান্য অদৃশ্য জ্ঞানাবলীতেও জারী হয়, তাহলে তাতে এর খাস হওয়ার বিশেষত্ব বাতিল হয়ে। যায়। এখন এটাও অন্যান্য গায়েবের ন্যায় হয়ে গেলাে যে, বলার দ্বারা জানা হয়ে। যায়। এ আমি বলছি, প্রথমতঃ অবকাশ দাও এবং শীঘ্রই নিজকে রক্ষা করাে। কেননা, দ্রুততা অনিশ্চয়তা ও ত্রুটির দিকে টেনে নেয়। যদি মুনাজারার পদ্ধতিতে ১ আলােচনা করতে চাও, তাহলে এ দাবী তােমরা কোথায় থেকে আবিষ্কার করেছে যে, এ খাস হওয়াতে তাঁর কোন বিশেষত্ব রয়েছে।
২ আয়াতে তাে এভাবেই রয়েছে। “নিশ্চয়ই আল্লাহর নিকট কিয়ামতের জ্ঞান রয়েছে। তিনি বৃষ্টি বর্ষণ করেন, জানেন যা মাতৃগর্ভে রয়েছে এবং কেউ জানেনা সে আগামীকাল কি করবে, আর না কেউ জানে যে, সে কোথায় মৃত্যুবরণ করবে। নিঃসন্দেহে আল্লাহ জ্ঞানময় ও সংবাদদাতা। সুতরাং এ আয়াতে এর বর্ণনা কোথায় যে, এ পঞ্চজ্ঞানের সবই আল্লাহর সাথেই খাস? খাস হওয়াতে অধিকতর জোরও কোথায় রয়েছে? তুমি কি দেখছােনা যে এ পাঁচটির মধ্যে কোন বস্তু এমনও যাতে বিশিষ্টতার প্রমাণ করে। এমন কিছু নাই। যেমন আল্লাহ তায়ালার এ ইরশাদ-“তিনি বৃষ্টি বর্ষণ করেন” এবং আল্লাহর বাণী-“গর্ভাশয়ে যা কিছু রয়েছে তিনি সবই জানেন।
প্রশংসার স্থলে শর্তহীনভাবে খাস করা অপরিহার্য নয়ঃ
আমরা স্বীকার করিনা যে, শুধুমাত্র প্রশংসামূলকভাবে উল্লেখ করার দ্বারা খাস করাকে শর্তহীনভাবে আবশ্যক করে দেয়। অথচ আল্লাহ তায়ালা দৃষ্টি, কর্ণ ও জ্ঞান দ্বারা স্বীয় সত্ত্বার প্রশংসা করেছেন। আবার এগুলাে দ্বারা স্বীয় বান্দাদেরও
(১) যে ব্যক্তি আমার উক্তিকে মুনাজারার পদ্ধতিতে চিন্তা ভাবনা করেনি, সে যা ইচ্ছে চিৎকার করতে পারবে। কেননা, এটা তার বক্তব্য যা শেষ পর্যন্ত পৌঁছেনি। অতঃপর চরম দুঃসাহসিকতা তার এ মিথ্যা দাবী যে, নবী করীম (ﷺ) এ আয়াতে করীমা দ্বারা হাছর (বিশিষ্টতা) বুঝিয়েছেন কিন্তু রাসুলে পাক(ﷺ) এটা তােমাদের কবে সংবাদ দিয়েছেন এ হুকুম প্রয়ােগ করা হুজুর(ﷺ)-এর উপর বড় অত্যাচার এবং মহাভ্রান্তি। বরং হুজুরﷺ, (গায়বের চাবিকাঠি) কে এই পাঁচটি দ্বারা তাফসীর করেছেন এবং এ আয়াতে করীমা। দ্বারা এর ব্যাখ্যা করেছেন। সুতরাং এখান থেকেই হাসর (বিশিষ্টতা) এসেছে। অতঃপর বিস্ময়ের ব্যাপার হলাে, সে ধারণা করেছে যে, এ দ্বিতীয় আয়াতই لا يعلمها الا هو (তারা জানে না আল্লাহ ব্যতীত) হাদীস সম্পৃক্ত করার দ্বারা বিশিষ্টতার (হাসর) নির্দেশ করছে। সুতরাং, আল্লাহরই জন্য পবিত্রতা। ঐ (অদ্ভুত) ব্যক্তির কথাকে যথেষ্ট মনে করবেন না, যতক্ষণ না আল্লাহর বাণী لا يعلمها الا هو ‘তিনি ব্যতীত কেউ জানেন’ -এর সাথে রাসুলে পাকের হাদীস لا يعلمهن الا هو তিনি ব্যতীত তারা জানেন না। মিলিয়ে দেখেন। অতঃপর আমার উপর অপবাদ যে, আমি নাকি দাবী করেছি দ্বিতীয় আয়াতে করীমা বিশিষ্টতা নির্দেশক নয়। অথচ আমার পুস্তিকা আপনাদের চক্ষুর সম্মুখে, যাতে উল্লিখিত এ আয়াতে করীমা সম্পর্কে কোন বর্ণনা নেই। তাতে শুধুমাত্র প্রথম আয়াতের উপরই আলােচনা করেছি। আর তাও মুনাজিরার রূপে, যেমন আপনারা। দেখেছেন। আমি আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করছি।'
প্রশংসা করেছেন। যেমন ইরশাদ হয়েছে-“তিনি তােমাদের জন্য সৃষ্টি করেছেন কান, চক্ষু ও অন্তরসমূহ। হযরত মুসা (عليه السلام) এর বাণীও এ পর্যায়ের-আমার প্রতিপালক প্রতারিত হন আর নবীগণও প্রতারণা থেকে মুক্ত! হে আমার সম্প্রদায় আমার মধ্যে কোন ভ্রষ্টতা নেই। | আর আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন-“নিশ্চয়ই আল্লাহ তায়ালা অনুপরিমাণও যুলুম করেন না। আর আম্বিয়া (عليه السلام)ও যুলুম থেকে পবিত্র। আল্লাহ তায়ালা আরাে বলেন-“আমার অঙ্গীকার জালিমদের কাছে পৌছেনা”।
সংখ্যা অতিরিক্তকে অস্বীকার করে নাঃ
দ্বিতীয়তঃ ধরুন, আমি স্বীকার করে নিলাম কিন্তু তাতে পাঁচের এমন বিশেষত্ব কোথায় যে, আল্লাহ তায়ালা অবগত করার পরেও এর দিকে কোন পন্থা অবশিষ্ট নেই? কেননা, যদি এমনটি হয়, তাহলে তা মাফহুমুল লক্ব বা শিরােনাম ভিত্তিতে দলীল গ্রহণের ন্যায় হবে, (অর্থাৎ কতেক বস্তুর নাম উল্লেখ করে যে হুকুম বর্ণনা করা হয়, তা এরই প্রমাণ করা যে, ঐ হুকুম অন্য কিছুতে প্রযােজ্য হবে না।) অথচ তা বাতিল। উসুল শাস্ত্রে তা বাতিল হওয়ার উপর প্রমাণ স্থির হয়েছে। কেননা, আয়াতে ‘পাচ’ শব্দের কোন উল্লেখও নেই যা। বােধগম্য সংখ্যা ও হাদীসের দিকে প্রত্যাবর্তন করবে। সুতরাং যে অবস্থায়ই হােক। না কেন ‘পাঁচ’ শব্দের ব্যবহার এসে থাকে। যদিও তাতে মর্মার্থ তাই যা আমি বর্ণনা করেছি যে, হাদীসে আহাদ’ আক্বীদার মাসআলায় বিশ্বস্ততার ক্ষেত্রে উপকারী ও বিশুদ্ধ। আমরা স্বীকার করি না ১ যে, এমন স্থানের উদাহরণসমূহে কোন সংখ্যার উল্লেখ অতিরিক্ততাকে অস্বীকার করে।
(১) অতঃপর আমি বুখারী শরীফের ব্যাখ্যাগ্রন্থ ‘ইরশাদুসসারীর’ সুরা রা’দের তাফসীর। * দেখেছি। যার বক্তব্য হলাে- আয়াতে পচের কথাই বর্ণনা করেছেন, যদিও গায়ব অসীম।
কেননা, সংখ্যা অতিরিক্ত হওয়াকে অস্বীকার করেনা অথবা এ জন্য যে, কাফেরেরা তা জানার দৃঢ় প্রত্যয় করছিলাে। আর এর শব্দাবলী সুরা আনআমে’ এভাবে যে, তারা তাঁর জ্ঞানের (মিথ্যা) দাবী করছিলাে। আর ‘উমদাতুল কারীর বাবুল ঈমানে রয়েছে- বলা হলাে এ পাঁচটিতে সীমাবদ্ধ তার কারণ কি? অথচ আল্লাহ ছাড়া কেউ জানেনা, এমন বিষয় অনেক রয়েছে। জবাব দেয়া হলাে এ কারণে যে, কাফেররা রাসুলুল্লাহ (ﷺ) থেকে এ পাঁচটি সম্পর্কে জিজ্ঞেস করেছিলাে। তাই তাদের জবাবে এ আয়াত অবতীর্ণ হলাে অথবা
তুমি কি রাসুলুল্লাহ (ﷺ)-এর ঐ ইরশাদ শুনােনি-“আমাকে পাঁচটি এমন বিষয়ের জ্ঞান প্রদান করা হয়েছে, যা আমার পূর্বে কাউকে প্রদান করা হয়নি।”
অথচ, রাসুলে করীম(ﷺ)-এর এমন অনেক প্রদত্ত বিশেষত্ব রয়েছে যা গণনা। করা অসম্ভব। হাদীসের অন্য বর্ণনায় এভাবেই এসেছে-“আমাকে অন্যান্য নবীর উপর ছয়টি কারণে শ্রেষ্ঠত্ব প্রদান করা হয়েছে।” এমতাবস্থায় পাঁচ ছয়কে নিষেধ করবে, তখন উভয় হাদীসে দ্বন্দ্ব এসে যাবে। অতঃপর ঐ ফজিলতসমূহ গণনা। করার মধ্যে উক্ত হাদীসদ্বয় পরস্পর ভিন্ন। প্রতিটি হাদীসে ঐ উক্তিরই উল্লেখ আছে যা অন্যটির মধ্যে পাওয়া যায় না। সুতরাং যদি স্বীকার করা হয় যে, সংখ্যা দ্বারা হাছর বা বিশিষ্টতার উপর জোর বুঝানাে হয়, তাহলে বিশুদ্ধ হাদীসমূহ যা ইমামদের মতে গ্রহণযােগ্য ও সন্দেহমুক্ত সেগুলাের বিভিন্ন স্থানে একটি অপরটির বিপরীত ও পরস্পর পরস্পরকে অস্বীকার করবে। নগন্য বান্দা যে সকল হাদীস এ সম্পর্কে ব্যক্ত করেছি তা “আল-বাহসুল। ফাহিস আন তুরকে আহাদীসিল খাসায়েস” নামক পুস্তিকায় সন্নিবেশিত করেছি। ঐ হাদীসমূহে দু’থেকে দশ পর্যন্ত সংখ্যার উল্লেখ পেয়েছি, আর প্রত্যেকটিতে তাই রয়েছে যা অন্যটিতে নেই। আর বিশেষত্ব যা তাতে উল্লেখ আছে তা ত্রিশকেও অতিক্রম করেছে। সুতরাং কোথায় পাঁচ-ছয়! আর যে ‘জামে সগীর'-এর। পাদটীকা ও জামউল জাওয়ামি' গ্রন্থে তিন, চার ও পাঁচের পরিচ্ছেদ ও এর দৃষ্টান্ত সন্ধান করবে, সে নিশ্চিত হয়ে যাবে যে, এমন স্থানে (বিশেষত্বের ক্ষেত্রে) এ জন্য যে, অন্যান্য সব বিষয়সমূহ এ পাঁচটির দিকে প্রত্যাবর্ততি'। সুতরাং গবেষণা করাে। আমি বলছি, এ পাঁচটি ছাড়া অন্যান্য সব বিষয়কে এর দিকে ফিরানাের কোন অর্থ নেই। কেননা, আল্লাহ তায়ালার জাত ও সিফাতের রহস্য তিনি ব্যতীত কেউ জানেন না। তিনি এ পাঁচটি থেকে কোনটির দিকে প্রত্যাবর্তন করেননি। যেমন তিনি এদিকেই স্বীয় উক্তি ফাইফহাম’ (অতএব চিন্তা করাে) দ্বারা ইঙ্গিত করেছেন। আর এভাবে আল্লামা কুলানী (رحمة الله)-এর উক্তিতে রয়েছেঃ কাফেররা এ পাঁচটির পরিচয়ের ইতিকৃাদ রাখছিলাে এবং তারা এগুলাে জানার (মিথ্যা) দাবী করছিলাে। এতে কিয়ামত সম্পর্কে চিন্তাভাবনা করার প্রতি সুস্পষ্ট দিক নির্দেশনা রয়েছে। কেননা, তারা এর প্রতি ঈমানই আনেনি। সুতরাং পরিচয় লাভের প্রশ্নই উঠেনা। এ সম্পর্কে উপকারী জবাব। হলাে তাই, যা আল্লাহ তায়ালা স্বীয় এ অধম বান্দার নিকট ইলকা (মনে মনে স্থিরকরণ)। করেছেন। যার বর্ণনা অতিসত্তর আসছে।
এ পরি।
সংখ্যা কোথাও প্রতিবন্ধকতার হুকুম করেনা। হয়তাে তােমরা একথা বলতে
পারাে যে, এগুলাে স্পষ্ট কথা। কিন্তু এ পাঁচটিকে বিশেষভাবে উল্লেখ করার * পেছনে কোন রহস্য থাকাই চাই।
পাঁচকে নির্দিষ্ট করার রহস্যঃ
আমি আল্লাহর উপর নির্ভর করে বলছি, এতে চমত্যার রহস্য ও নিদর্শন রয়েছে, যা কতই না উন্নত, মহৎ ও সৌন্দর্যমণ্ডিত!
তন্মধ্যে একটি সুক্ষ্ম বিষয় হলাে, ওহাবীরা স্বীয় হীন বুদ্ধিতে যা বুঝেছে, এটা তাদের উপর এর বিপরীত হুকুম প্রয়ােগ করে। আপনারা মনােযােগ সহকারে শ্রবণ করুন, যা আল্লাহ তায়ালা আমাকে ইলহাম করেছেন। জেনে নাও ১ যে, এ পাঁচটি ব্যতীত আরাে অনেক গায়ব রয়েছে। গত . এমনকি এ পাঁচের সব একক একত্রিত হয়েও অন্যান্য গায়বের এক সহস্রাংশেও পৌঁছতে পারবে না। আর আল্লাহ তায়ালা হলেন ‘গায়বেরও গায়ব’ তিনি প্রত্যেক বস্তুর উপর প্রত্যক্ষদর্শী। তাঁর প্রত্যেক গুণ অদৃশ্য। আখিরাত, বেহেস্ত-দোজখ,হিসাব-নিকাশ ও আমলনামা, হাশর-নশর ফেরেস্তাগণ এবং আমাদের প্রতিপালকের সৈনিক সবই গায়ব ও অদৃশ্য।
(১) এটা হলাে রব্বানী রহস্য, আল্লাহর হিকমত এবং দয়াময়ের ফুরুজ ও প্রদত্ত বৈশিষ্ট্য যে, আল্লাহ তায়ালা এ বিখ্যাত কিতাবের গ্রন্থকারকে এ ‘পঞ্চ অদৃশ্য জ্ঞানের হিকমত বর্ণনা ছাড়াও অনেক বেশী গায়ব এবং বিশেষ বিশেষ রহস্যাদি সম্পর্কে অবগত করেছেন। আল্লাহর জন্যই সৌন্দর্য।
ইবনে মালেক স্বীয় গ্রন্থ ‘তালেয়া তাসহীলে’ বলেনঃ এবং আল্লাহর জ্ঞানসমূহ উপহার ও প্রদত্ত। এটা অসম্ভব নয় যে, আল্লাহ তায়ালা পরবর্তীদের জন্য ঐ জ্ঞান উঠিয়ে রেখেছেন যা বুঝা অনেক পূর্ববর্তীদের জন্য কঠিন হয়েছে। আর ব্যাখ্যাসমূহের অভিজ্ঞদের জন্য এ আয়াত পাঠ করা কর্তব্য- 'যে রহমত আল্লাহ তায়ালা মানুষের জন্য উন্মুক্ত করে রেখেছেন এর প্রতিবন্ধক কেউ নেই। আর এ আয়াতও (এটা আল্লাহর অনুগ্রহ তিনি যাকে ইচ্ছে প্রদান করেন, আর আল্লাহ মহাঅনুগ্রহশীল। এটা লিখেছেন, ফকীর হামদান জুযায়েরী, মদীনা হামদানীয়া। এটা ঐ দ্বিতীয় টীকা যদ্বারা আমার কিতাবে অনুগ্রহ করেছেন পাশ্চাত্যের আল্লামা মাওলানা হামদান (رحمة الله)। আল্লাহ তায়ালা তাঁর কর্মসমূহ পূর্ণ করুন, আমীন। সকল প্রশংসা বিশ্ব নিয়ন্তার নিমিত্ত।
এ ছাড়া আরাে অনেক গায়ব (অদৃশ্য বস্তু) রয়েছে, যেগুলাের প্রকার কিংবা একক পর্যন্ত আমাদের জন্য গণনা করা অসম্ভব। বুঝা গেলাে, এসব কিছু কিংবা এর অধিকাংশ গায়ব হওয়া এ পঞ্চ অদৃশ্য জ্ঞান থেকেও অনেক বেশী (অদৃশ্য)। অথচ আল্লাহ তায়ালা এ আয়াতে তা থেকে একটিরও বর্ণনা করেননি; শুধুমাত্র এ পাঁচটিই উল্লেখ করেছেন। এর সংখ্যা এ কারণে গণনা করেননি যে, এগুলাে অদৃশ্য ও গােপনীয়তার মধ্যে অধিকভাবে অন্তর্ভুক্ত। বরং ব্যাপার হলাে গণকদের সময় ছিলাে। আর কাফিরেরা তীর নিক্ষেপ, নক্ষত্র, কিয়াফাহ-আয়াফাহ, যজর। ইত্যাদি (ফাল) পাখী ও ফানুসসহ আরাে বহু ধরনের কুসংস্কারাচ্ছন্ন পাগলামী দ্বারা অদৃশ্য জ্ঞানের দাবীদার ছিলাে। আর তারা ঐ সব কারণে আমাদের উল্লিখিত তথা আল্লাহর জাত ও সিফাত (সত্ত্বা ও গুণাবলী) আখিরাত, ফেরেস্তা ইত্যাদির উপর যুক্তিসঙ্গত আলােচনারও ধার ধারতাে না। ধ্বংসের দিকে আহবানকারী সে সমস্ত বিষয়সমূহ দ্বারা সত্যিকার কোন কিছু বুঝার পন্থাও ছিলাে তারাতাে একথা বলছিলাে যে, বৃষ্টি কখন হবে, কোথায় হবে, গর্ভের বাচ্চা কন্যা না ছেলে এবং উপার্জন ও ব্যবসাসমূহের অবস্থা এবং তন্মধ্যে কার লাভ হবে আর কার লােকসান হবে; মুসাফির ঘরে ফিরে আসবে, না বিদেশে মৃত্যুবরণ করবে ইত্যাদি। সুতরাং এ চার বস্তুকে বিশেষভাবে বর্ণনা করা হয়েছে এ অর্থের ভিত্তিতে যে, এ বস্তুসমূহের জ্ঞান যা তােমরা স্বীয় বাতিল বিষয় বা পন্থাসমূহ দ্বারা দাবী করাে, সেগুলাের জ্ঞানতাে সেই মহান বাদৃশাহর নিকটই। তাঁর প্রদত্ত জ্ঞান ছাড়া তা জানার কোন পথ নেই এবং তিনি এ চতুৰ্জ্জনের সাথে কিয়ামতের জ্ঞানকেও শামিল করে নিয়েছেন। কেননা, এটাও এ প্রকার জ্ঞানেরই অন্তর্ভূক্ত, যে সম্পর্কে তারা আলােচনা করতাে আর তা হলাে মৃত্যু। কেননা, তারা মানুষের মধ্য থেকে একজনের মৃত্যু সম্পর্কে সংবাদ প্রদান করতাে আর কিয়ামত সকল পৃথিবীরবাসীরই মৃত্যু।
নিঃসন্দেহে যারা জ্যোতির্বিদ্যায় পারদর্শী তারা জ্ঞাত আছেন যে, এ বিষয়ের ধারণায় নক্ষত্রসমূহের নির্দেশনা সুনির্দিষ্টতার চেয়ে সাধারণ ঘটনাবলীর ক্ষেত্রেই অধিক অনর্থক। কেননা, কোন একটি গৃহের ক্ষতি কিংবা এক ব্যক্তির মৃত্যু সম্পর্কে বলার জন্য তাদের কাছে এমন কোন পথ নেই, যাতে তারা স্বীয় ধারণায়ও দৃঢ় বিশ্বাস করতে পারে। এ কারণে যে, নক্ষত্রের দৃষ্টি ও সংযােগ, পরস্পর সম্পর্ক এবং প্রমাণসমূহ আলাদা আলাদা বিষয় বা ব্যাপারসমূহে অধিকাংশ ক্ষেত্রে পরস্পর বিপরীত হয়। বরং কারাে জন্ম কুষ্টি অথবা বয়সসূচীতে
খুব কমই মতৈক্য হয় যে, যে নক্ষত্র কোন ঘরে বিদ্যমান হয় অথবা যা তার দিকে দেখছিলাে, তা শক্তি ও দুর্বলতার পরস্পর প্রতিবন্ধকতা থেকে শুন্য হয়।' সুতরাং যদি তা একদিক থেকে মন্দ আর অপরদিক থেকে ভালাে প্রমাণিত হয়। এবং তারা অনুমানের ঘােড়া দৌড়ায় এবং এক দিককে প্রধান্য দান করে, আর যে। দিকের দূরত্ব তাদের মতে ঝুকে পড়ে, তার উপর হুকুম প্রয়ােগ করে। কিন্তু পৃথিবীর সাধারণ পরিবর্তনের জন্য এখানে একটি স্থায়ী নিয়মই রয়েছে যা হচ্ছে কেরান আজম। অর্থাৎ উঁচু দু’টি নক্ষত্র যাহল ও মুশতারীর তিনটি অগ্নি বুরুজ হামল, আসদ ও কাউসের মধ্য থেকে কোন একটির প্রারম্ভে একত্রিত হওয়া যেমন হযরত নুহ (عليه السلام) এর মহাপ্লাবন সময় ছিলাে। বুঝা যায় যে, হিসাবের, ১ দ্বারা আসন্ন কেরান সম্পর্কে জানা যায় যে, তা কত বছর পর হবে, কি হবে এবং কক্ষের কোন্ স্থানে বরং কোন মুহুর্তে ১ হবে, কোন্ দিকে হবে এবং কতদিন থাকবে। আর এক নক্ষত্র অপরটি গােপন করে রাখবে নাকি উন্মুক্ত থাকবে ইত্যাদি। কেননা, নক্ষত্রতাে এক শক্ত হিসাবে বন্দী। এটা মহাপরাক্রমশালী, সর্বজ্ঞ আল্লাহর নিয়ন্ত্রণে।
(১) গণিত শাস্ত্রের হিসাব অনুযায়ী নিশ্চিত যে, যদি দুনিয়া বাকী থাকে তাহলে আসমানের নক্ষত্রের মহাসংযােগ (কেরানে আজম) ৫৮৪ হিজরীর পর আমাদের এ তারিখ থেকে ২৩ শে জিলক্বদ ১৮৭১ হিজরীর অর্ধরাত্রির সন্নিকটে হামলের (আসমানের প্রথম বুরুজের) তৃতীয় স্তরে সংঘটিত হবে। এ সব কিছু মধ্যবর্তী স্থানেই হবে। সুতরাং দুনিয়া যদি বাকী থাকে তবে ঐ জিলকূদের মহররম মাসের নিকটবর্তী অথবা ঐ সনের প্রথম দিকে কিয়ামত সংঘটিত হওয়া অসম্ভব নয়। কেননা, নক্ষত্রের শুরু এ দু'য়ের মধ্যেই, যখন ঐ উভয়ের মধ্যকার হামলের দুরত্ব বাকী থাকে। আর নক্ষত্রের) শেষ এর পর যখন নক্ষত্রের মধ্যেকার দূরত্বপূর্ণ হয়ে যাবে। আল্লাহই অধিক জ্ঞানী। অতঃপর আমার ধারণা জন্মালাে যে, এ শতাব্দীর শেষভাগে সৈয়দুনা ইমাম মাহদী (عليه السلام) এর আবির্ভাবের কাল। আর এটাই আমার নিকট অগ্রগণ্য। আমি লিসানুল হাকায়েক সৈয়দুল মােকাশেফীন ইমাম শেখ আকবর (رحمة الله)-এর কিতাব ‘আদদোররুল মাকনুন ওয়াল জাওয়াহিরুল মাসউনে তাঁর বাণী দেখেছি, যখন কালের দুরত্ব বিছমিল্লাহর অক্ষরের উপর হবে, তখন ইমাম মাহদীর আবির্ভাব ঘটবে এবং রােজার পরে হাতীমে কাবায় বের হবেন, আমার পক্ষ থেকে তাঁকে সালাম জানাবেন।' কিন্তু যে হাদীসে রয়েছে- “দুনিয়ার বয়স সাত হাজার বছর, আমি এর পরবর্তী বছরে। ইমাম তারাবাণী এটা মু’জামে কাবীরে রেওয়ায়েত করেছেন।
সুতরাং কিয়ামতের বর্ণনা দ্বারা সাবধান করা হয়েছে যে, যদি তাদের এ জ্ঞান সমূহের কোন হাকীকত থাকতাে যেমন তাদের ধারণা, তাহলে কোন এক ব্যক্তির মৃত্যু (সংবাদ) জানার দ্বারা তার কিয়ামতের জ্ঞান সহসা এসে যেতাে, কিন্তু তাদের সে জ্ঞান নেই। তারা কেবল অনুমানেই ঘােড়াই দৌড়ায়। অতঃপর এ পাঁচটিকে বিশেষভাবে বর্ণনা করার মধ্যে এ রহস্যই রয়েছে। আল্লাহ অধিক জ্ঞানময়, আর বিশুদ্ধ চিন্তা ভাবনায় আল্লাহরই জন্য প্রশংসা। এটা খুব দৃঢ়ভাবে। জেনে রেখাে যে, এটা ঐ সম্মানিত গৃহের (কাবাগৃহ) ফয়েজ ও দয়াল নবী (ﷺ) এর সাহায্যে এ সময় আনকোরা স্মৃতিতে ভেসে ওঠেছে।
আল্লাহর মধ্যে জ্ঞানের সীমাবদ্ধতা বান্দার জ্ঞান অস্বীকারকে অপরিহার্য করে না; অনুরূপ ঐ জ্ঞান যা বান্দাকে প্রদান করা বিশুদ্ধঃ
আর ইমাম বায়হাকী দালায়েলুননবুয়তে দোহাক ইবনে জামাল যাহনী থেকে, তিনি রাসূলে পাক(ﷺ) থেকে বর্ণনা করেন। রাসুলে পাক(ﷺ) ইরশাদ করেন- ‘আমি নিশ্চিত আশা রাখি যে, আমার উম্মত স্বীয় রবের পক্ষ থেকে বঞ্চিত হবেনা, এ থেকে যে, তাদের অর্ধ দিবসের দীর্ঘ সময় প্রদান করবেন। এ হাদিসটি ইমাম আহমদ, আবু দাউদ ও নঈম ইবনে হাম্মাদ, আবু হাতিম ও বায়হাকী বাস’গ্রন্থে, আর জিয়া জায়দ সনদ সহকারে সা'দ ইবনে আবী ওক্কাস (رضي الله عنه) থেকে রেওয়াত বর্ণনা করেন। এ হাদীসেই রয়েছে, হযরত সাদ থেকে জিজ্ঞেস করা হলাে, অর্ধ দিবসের পরিমাণ কত? ইরশাদ করলেন, পাঁচশত বছর। বাস' গ্রন্থে ইমাম বায়হাকীর রেওয়ায়েত হযরত সালাবাহ (رضي الله عنه) কর্তৃক বর্ণিত। তিনি বলেন- “আল্লাহ তায়ালা এ উম্মতের জন্য অর্ধ দিবস প্রদান ব্যতীত (কিয়ামত) সংঘটিত করবেন না। আমি বলবাে অসম্ভব নয় যে, রাসুলুল্লাহ (ﷺ) অর্ধ দিবসের অবকাশ চেয়েছেন, আর তাঁর প্রতিপালক তা পূর্ণ দিবস অথবা যা বৃদ্ধি করার ইচ্ছে প্রদান করেছেন। যেমন রাসুলে। খােদা (ﷺ) ইরশাদ করেন-“তােমাদের কখনাে যথেষ্ট করবেন না, যতক্ষণ না তােমাদের প্রতিপালক তিনহাজার অবতীর্ণ ফিরিস্তার মাধমে তােমাদের সাহায্য করবেন। আল্লাহ তায়ালা আরাে ইরশাদ করেছেন, যদি তােমরা সংযম প্রদর্শন করাে এবং মুত্তাকী হও তাহলে তােমাদের প্রতিপালক পাঁচ হাজার ফেরেস্তা দ্বারা তােমাদের সাহায্য করবেন।' সুতরাং নিশ্চয়ই হুজুর (ﷺ)-এর জন্য সময় বৃদ্ধি করেছেন। আল্লাহর জন্যই প্রশংসা।
১। যখন বিশেষত্বের (স্থানে) এসেছে, তখন জমীর (এককের) দিকে প্রত্যাবর্তন
তৃতীয়তঃ হাঁ! নবীয়ে করীম(ﷺ) ইরশাদ করেছেন-‘পাঁচটি বস্তু এমন। রয়েছে, যা আল্লাহ ব্যতীত কেউ জানেন না। আর আল্লাহ তায়ালা বলেন “আপনি বলুন, আসমান ও জমিনে কেউ অদৃশ্য জ্ঞান রাখেনা আল্লাহ ব্যতীত।” এখানে রাসুলুল্লাহ (ﷺ) বিশেষ পাঁচটি বস্তুর উল্লেখ করেছেন, আর আল্লাহ তায়ালা সাধারণভাবেই ঘােষনা দিয়েছেন। আর আমরা প্রত্যেক আয়াতেই বিশ্বাস করি। কেননা, খাস (নির্দিষ্ট) আম (ব্যাপক)কে অস্বীকার করে না। তাহলে ঐ পঞ্চন আল্লাহ ব্যতীত কেউ জানেনা।
আল্লাহ ছাড়া কোন কিছুর অস্তিত্ব নেই।
আমি বলি, বরং আল্লাহ ছাড়া আর কেউ কিছুই জানেনা। হাকীকী অস্তিত্বও আল্লাহ ছাড়া আর কারাে নেই। আর নিশ্চয়ই নবীয়ে করীম (ﷺ) লবীদের এ প্রবাদকে আরবের সর্বাধিক সত্য প্রবাদ ঘােষণা করে বলেছেন-‘শুনে নাও! প্রত্যেক বস্তু আল্লাহ ব্যতীত হাকীকতহীন। আমাদের সাধারণ লােকের মধ্যে লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ'-এর অর্থতাে এ যে, আল্লাহ ব্যতীত কোন মাবুদ নেই। কিন্তু। বিশেষ লােকদের নিকট এর অর্থ-‘আল্লাহ ব্যতীত কোন উদ্দেশ্য নেই। আর অতি বিশেষ লােকদের নিকট এর অর্থ হলাে-“আল্লাহ ছাড়া কিছুর অস্তিত্বই বিদ্যমান নেই। এ সবকটির মর্মার্থ বিশুদ্ধ। কিন্তু প্রথম অর্থেই ঈমানের নির্ভরতা, দ্বিতীয়টির উপর সংশােধনের নির্ভরতা এবং তৃতীয়টির উপর সুলুকের নির্ভরতা। আল্লাহর দিকে পৌছার নির্ভরতা হচ্ছে চতুর্থটির উপর। আল্লাহ তায়ালা
আমাদের তাঁর ইহসান ও করুণা দ্বারা ঐ সব অর্থের পরিপূর্ণ স্বাদ প্রদান করুন। * আমীন!
রাসুলের(ﷺ)শানে হযরত সাওয়াদ বিন কারিবের কবিতায় ওহাবীদের ভ্রান্ত ধারণা খন্ডনঃ
হযরত সাওয়াদ ইবনে কারিব (رضي الله عنه) নবী করিম(ﷺ)-এর সম্মুখে এ পংক্তিগুলাে পাঠ করেছেন-“আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি, নিশ্চয়ই আল্লাহ ব্যতীত কোন বস্তু নেই, আর নিঃসন্দেহে আপনি সকল অদৃশ্য জ্ঞানের রক্ষক। অবশ্যই আপনি পাক পবিত্র পিতা-মাতার সন্তান, শাফায়াতের ব্যাপারে সকল রাসুলদের থেকে নিকটতর। আপনি আমার জন্য সুপারিশকারী হয়ে যান, যেদিন আপনি ব্যতীত সওয়াদ ইবনে কারিবের জন্য কোন সুপারিশকারী উপকার করতে পারবে না”।
মুসনাদে ইমাম আহমদে আমরা এ বর্ণনা পেয়েছি- “আল্লাহ ছাড়া আর কোন বস্তু নেই। যদিও অন্য বর্ণনায় এ কথা আছে যে-“তিনি ব্যতীত কোন রব নেই'। এটাই আমি বলছি, এখানেতাে হযরত সাওয়াদ (رضي الله عنه) প্রথমতঃ আল্লাহ ছাড়া প্রত্যেক বস্তুর অস্তিত্বকেও অস্বীকার করেছেন।
দ্বিতীয়তঃ আমাদের প্রিয় হাবীব (ﷺ)-এর জন্য সমস্ত গায়ব (অদৃশ্যজ্ঞান) প্রমাণিত করছেন। এমনকি হুজুর (ﷺ)কে সকল গায়বের ‘আমীন বা রক্ষক ভূষিত করেছেন।
তৃতীয়তঃ এ কথায় বিশ্বাস করেছেন যে, আমাদের প্রিয় নবী (ﷺ) শাফায়াত প্রাপ্ত হয়েছেন। যেমন মুসলিম শরীফের হাদীস রাসুলে করীম(ﷺ) ইরশাদ। করেছেন-“আমাকে শাফায়াত প্রদান করা হয়েছে”। ওহাবীদের ন্যায় নয়, যারা - বলে, হুজুর (ﷺ)কে এখনাে শাফায়াত প্রদান করা হয়নি, কিয়ামত দিবসেই তার এটার (শাফায়াত) অনুমতি হাসিল হবে। এর দ্বারা তারা এটাই বলতে চায় যে, দুনিয়াতে রাসুল (ﷺ) থেকে ফরিয়াদ করা যাবেনা। কেননা, তিনি এখন শাফায়াতের শক্তি রাখেন না। আর আল্লাহ তায়ালার এ ইরশাদ, “আপনি আপনার নিকটাত্মীয় মুসলমান পুরুষ ও নারীদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করুন। আর আল্লাহ তায়ালার এ বাণী-“যখন তারা স্বীয় আত্মার উপর যুলুম করবে, আর আপনার দরবারে উপস্থিত হয়ে আল্লাহর নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করবে, আর রাসুল যদি তাদের জন্য শাফায়াত করেন, তাহলে নিশ্চয়ই তারা আল্লাহকে তাওবা কবুলকারী ও দয়াবানরূপে পাবেন। ওহাবীরা এ আয়াতসমূহ থেকে এমনভাবে পৃষ্ট প্রদর্শন করেছে যেন তারা কিছুই জানেনা।
চতুর্থতঃ এর উপর বিশ্বাস স্থাপন করেছেন যে, রাসুল সৈয়দে আলম(ﷺ)এর শাফায়াত সবচেয়ে নিকটবর্তী। এটা তারই বিপরীত যা তাদের পেশাওয়া ইসমাঈল দেহলভী ‘তাকৃবিয়াতুল ঈমানে’ বলেছে যে, আল্লাহ তায়ালা যখন কোন অনুতপ্ত ও তাওবাকারীর ক্ষমার জন্য ফন্দি করতে চাইবেন, তখন যাকে ইচ্ছে তাকে সুপারিশকারী নিয়ােগ করবেন। এতে কারাে বিশেষত্ব নেই। তিনি অনুতপ্ত তাওবাকারীর উল্লেখ এ জন্যই করেছেন যে, তার মতে শাফায়াত ঐ
ব্যক্তির জন্যই হবে অনুতপ্ত তাওবাকারীর সে ব্যক্তির জন্য নয়, যে তাওবা করেনি।
পঞ্চমতঃ হযরত সাওয়াদ ইবনে কারিব (رضي الله عنه) ওহাবীদের এ ধারণা খন্ডনের জন্য রাসুলের কাছে ফরিয়াদ করেছেন।
যষ্ঠতঃ প্রথমেই যে বলেছিলাম, হুজুর সৈয়দে আলম (ﷺ)-এর শাফায়াত সবচেয়ে নিকটতর। তা থেকে উন্নতি করে শাফায়াতকে হুজুরের মধ্যেই সীমাবদ্ধ করে দিয়েছেন এবং এ সত্যই অবশিষ্ট রয়েছে। আর সকল শাফায়াতকারী নবীর দরবারেই শাফায়াতের জন্য দরখাস্ত করবেন। আল্লাহর নিকট হুজুর (ﷺ) ব্যতীত কোন শাফায়াতকারী নেই। যেমন রাসুলুল্লাহ (ﷺ) ইরশাদ করেছেন ‘আমি সকল নবীদের শাফায়াতের মালিক, এটা আমার গর্ব নয়।'
সপ্তমতঃ তিনি প্রমাণ করেছেন, যে রাসুলে পাক (ﷺ)-এর সাহায্য প্রার্থী হবে, সে অবশ্যই হুজুরের সাহায্যপ্রাপ্ত হবে। এতে ওহাবীদের পেশাওয়ার - (ইসমাইল দেহলভী) উক্তির খন্ডন রয়েছে। সে এ উক্তি করেছিলাে, নবীয়ে করীম (ﷺ) স্বীয় কন্যার কল্যাণ করতেও অক্ষম। অন্যেরতাে প্রশ্নও উঠেনা।' সুতরাং এ সম্মানিত সাহাবীর এ সামান্য বাক্যের মহা কল্যাণ দেখুন! নিশ্চয়। হাদিস সাক্ষ্য যে, রাসুলে পাক (ﷺ) তাঁর এ সকল বাক্যবলী স্থায়ী করে রেখেছেন। এটাই বুঝে নিন। আর আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন-“যে দিবসে আল্লাহ তায়ালা সকল নবীদের একত্রিত করবেন এবং তাদের বলবেন তােমরা কি উত্তর দিবে? আরজ করবেন, আমাদের কিছু জানা নেই।
আমি বলছি, আম্বিয়ায়ে কিরাম প্রকৃত অবস্থার উপর বাক্যলাপ করেছেন এবং স্বীয় (সত্ত্বাগত) জ্ঞানের পরিপূর্ণভাবে অস্বীকার করেছেন। এ কারণে যে, ছায়া যখন বাস্তবের সম্মুখীন হয়, তখন সে কিছু দাবী করতে পারে না। আর ফিরিস্তারা আরজ করেছেন, আপনার পবিত্রতা আমাদের এ সম্পর্কে কোন জ্ঞান নেই, কিন্তু আপনি যা আমাদের শিক্ষা দিয়েছেন। এখানে ফিরিস্তারা প্রকৃত প্রদত্ত জ্ঞান সম্পর্কে বাক্যলাপ করেছেন। সুতরাং উভয়ের অস্বীকারকে একত্রিত করলে দেখা যায়, হযরত আম্বিয়ায়ে কিরাম শিষ্টাচারের দিক দিয়ে ফিরিস্তাদের থেকেও অনেক ঊর্ধ্বে, তা’জীমের সম্মান দিক দিয়েও তাদের সবার উপর দরুদ ও সালাম।
ফিরিস্তাদের যখন স্মরণ আসলাে, তখন তারা নিজ বাক্য পরিবর্তন করলেন এবং হাছর (বিশিষ্টতা) মুলকভাবে ইরশাদ করলেন যে, নিশ্চয়ই আপনি জ্ঞানী ও প্রজ্ঞাময় অর্থাৎ আপনি ব্যতীত কোন জ্ঞানী নেই। সারাংশ হলাে, সব আল্লাহর জন্য আর তার প্রদত্ত ব্যতীত কেউ কিছুর জ্ঞান রাখেনা। তাহলে কথার মােড় এদিকেই ঘুরলাে যা ইমামগণ বিশ্লেষণ করেছেন যে, অস্বীকার (টিকা ১) এরই যে, কেউ স্বয়ং আল্লাহ প্রদত্ত ব্যতীত সত্তাগত ভাবে জ্ঞানী নয়।
(টিকা ১) যে ব্যক্তি জেনেছে এবং দেখেছে যা প্রথম নজরে' অতিবাহিত হয়েছে? অতঃপর পারস্পরিক প্রতিকুলতার অপবাদ দিয়েছে সুস্পষ্ট আয়াত সমূহে। নিশ্চয়ই সে অলসতা করেছে ও ধােকা খেয়েছে। আমরা আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থী যেন তিনি আমাদের পূর্বাপর সকল গুনাহ ক্ষমা করেন!
আল্লাহ ব্যতীত পাঁচটি বিষয়ের জ্ঞান সম্পর্কে কেউ অবগত নয়-এর ব্যাখ্যাঃ
কতেক ব্যক্তি “রওজুন নাফীর শরহে জামেউসসগীর মিন আহাদীসীল, বাশীর” থেকে উদ্ধৃত করে বলেন-“বাকী রইলাে হুজুরে করীম (ﷺ) এর এ বাণী, আল্লাহ ব্যতীত এ পঞ্চবস্তুর জ্ঞান সম্পর্কে কেউ অবগত নয়’। এর অর্থ হলাে এ পঞ্চ অদৃশ্য জ্ঞান সত্ত্বাগতভাবে কেউ জানেন না তিনি ব্যতীত। কিন্তু কখনাে আল্লাহ প্রদত্ত জ্ঞান দ্বারা জানা যায়। কেননা, এখানে এর জ্ঞানী বিদ্যমান। এবং আমরা এর জ্ঞান অনেক ব্যক্তির কাছ থেকে জ্ঞাত হয়েছি। যেমন আমরা এক সম্প্রদায়কে দেখেছি যে, তাদের জানা ছিলাে, কখন তারা ইনতিকাল করবেন এবং পেটের সন্তান মায়ের গর্ভে আসার পূর্বেই জেনে নিয়েছেন।”
আমি বলছি, শরহুসসুদূরে’ ইমাম জালালুদ্দীন সুয়ুতী ‘বাহাজাতুল আসরারে’ ইমাম নুরুদ্দীন আবিল হাসান আলী নখয়ী শানুফী 'রাওজাতুর রায়াহীন’ ও ‘খােলাসাতুল মাফাখীরে ইমাম আসয়দ আবদুল্লাহ ইয়াফিয়ী, এছাড়া আরাে অনেক আওলিয়ায়ে কিরামের কিতাবে এ বিষয় সম্পর্কিত অনেক বর্ণনা এসেছে যা অস্বীকার করার উপায় নেই; কিন্তু বৃঞ্চিতরা। আল্লাহ আমাদেরকে তাদের বরকত থেকে বঞ্চিত না করুন। অনুরূপ ভাবে ইমাম ইবনে হাজর মক্কী (رحمة الله) শরহে হামজায়া’ গ্রন্থে অদৃশ্য *জ্ঞান প্রদত্ত হওয়ার বিশ্লেষণ করেছেন। সেখানে তিনি বলেন-
“আম্বিয়া ও আওলিয়ায়ে কিরামের জ্ঞান আল্লাহ প্রদত্ত। (কিন্তু) আল্লাহর ঐ জ্ঞান নয় যা তার সাথে খাস। আর তা আল্লাহ তায়ালার ঐ গুণাবলীর অন্তর্ভুক্ত যা ধ্বংসহীন, স্থায়ী, অনন্ত-অফুরন্ত, চিরস্থায়ী এবং পরিবর্তন-পরিবর্ধন ও ত্রুটি-বিচ্যুতি থেকে সম্পূর্ণ পাক-সাফ ও পবিত্র। এতটুকু পর্যন্ত ইরশাদ করেছেন যে, এটা অস্বীকার করা যায় না যে, আল্লাহ তাঁর কতেক নৈকট্যশীল বান্দাদের অদৃশ্য জ্ঞান প্রদান করেন। এমন কি ঐ পঞ্চ অদৃশ্য জ্ঞানও যেগুলাে সম্পর্কে রাসুলে সৈয়দে আলম (ﷺ) ইরশাদ করেছেন যে, তা আল্লাহ ব্যতীত কেউ জানেন না। এ কারণে শেখ আবদুল হক মােহাদ্দিস দেহলভী (رحمة الله) শরহে মিশকাতের ব্যাখ্যা প্রসঙ্গে উল্লেখ করেন-“এর অর্থ (টিকা ১) হলাে "পঞ্চজ্ঞান আল্লাহ প্রদত্ত ব্যতীত (টিকা ২)।"
______________
টিকা ১। লুমআতের বক্তব্য হলাে- ‘উদ্দেশ্য হচ্ছে এ যে, আপনি আল্লাহ তায়ালার তায়ালার শিক্ষা ব্যতীত জানেন না।' ইমাম কুস্তুলানী (رحمة الله) ইরশাদুসসারী’তে সুরা আনআমের তাফসীরে বলেছেন- “তিনি বৃষ্টি বর্ষণ করেন, কেউ এর অবতরণের (বর্ষণের) স্থান অগ্র পশ্চাদ ব্যতীত জানেন না। আর কোন শহরে বর্ষিত হয়ে কোন শহর অতিক্রম করবেনা তা আল্লাহ ব্যতীত কেউ জানেন না। কিন্তু যখন তিনি নির্দেশ প্রদান করেন, তখন তাঁর ফিরিস্তা ও মােয়াক্কেলগণ জেনে নেন। আর তিনিও অবগত হন যাকে আল্লাহ স্বীয় মাখলুক থেকে ইচ্ছে নির্দেশ করেন। আর যা কিছু গর্ভাশয়ে রয়েছে, তিনি ব্যতীত তা কেউ জানেন না। কিন্তু যখন তিনি নির্দেশ করেন, তখন ফেরেস্তারা এবং যাকে আল্লাহ তায়ালা ইচ্ছে স্বীয় মাখলুক থেকে জ্ঞাত হন। আল্লাহ তায়ালার এ বাণী ‘কিন্তু তাঁর নির্বাচিত রাসুলদের মধ্যে যাকে ইচ্ছে তিনি এ সম্পর্কে অবহিত করেন থেকেই তা প্রমাণ করা হয়েছে। আর ওলী হলেন রাসুলের অনুসারী। তাঁদের থেকেই নিয়ে থাকেন।
টিকা ২'।
অনুরূপ বলেছেন আল্লামা শিহাবুদ্দীন (رحمة الله) “ইনায়াতুল কাযীতে’ (তাঁর নিকট রয়েছে গায়বের চাবিকাঠি)। আল্লাহ তায়ালার সাথে এটা খাস করার কারণ এ যে, প্রারম্ভ ও মূল অবস্থায় তা যেভাবে ছিলাে, তেমনি আল্লাহ তায়ালা ব্যতীত আর কেউ জানেন না। আল্লাহর প্রশংসা! আমাদের আধিক্যের কোন প্রয়ােজন নেই। সৈয়দ মদনীই এ পুস্তিকায় যা তার দিকে সম্পর্কিত হয়েছে বলেছেন, যার বক্তব্য নিম্নরূপ- “আমরা এখানে কতেক ইমামদের অভিমত বর্ণনা করছি, বিশ্লেষণের স্থানের জন্য। সুতরাং আমরা বলছি হাফিজ ইবনে কাসীর স্বীয় তাফসীরে বলেছেন-আল্লাহ তায়ালার বাণী-(আল্লাহর নিকটই রয়েছে কিয়ামতের জ্ঞান) এটা গায়বের চাবিকাটিসমূহ যা আল্লাহ তায়ালা নিজের জন্য খাস করে। নিয়েছেন। তাঁর শিক্ষা ব্যতীত কেউ তা জানেনা। কিন্তু তাঁর শিক্ষা দেয়ার পর এ সম্পর্কে অবহিত হওয়া যায়।”..... আল্লাহর জন্য প্রশংসা, সুতরাং উদীয়মান সূর্য রশির ন্যায় প্রতীয়মান হলাে এর। অর্থ হলাে-“আল্লাহ প্রদত্ত ব্যতীত পঞ্চ জ্ঞান তাঁর জন্য খাস হওয়া। সুতরাং তিনি ব্যতীত তা কেউ জানেন না, কিন্তু তিনি যাকে জ্ঞাত করান। এ হলাে, আমাদের দাবী। সত্য সমাগত, বাতিল পরাভূত। নিশ্চয় বাতিল পরাভূত হওয়ারই ছিলাে। আল্লাহর জন্যই স্তুতি বন্দনা। সাহায্য এসেছে, কর্ম সম্পাদনা হয়েছে এবং আল্লাহর কর্ম প্রকাশিত হয়েছে, অথচ তারা তা অপছন্দই করতাে। স্বীয় আকল, জ্ঞান ও বিবেক দ্বারা কেউ জানেন না। এ কারণে যে, এ পঞ্চজ্ঞান ঐ অদৃশ্য বস্তুসমূহের অন্তর্গত, যা আল্লাহ প্রদত্ত ব্যতীত কেউ অবগত নন।” যুগের ইমাম বদরুদ্দীন আইনী (‘ওমদাদুল ক্বারী শরহে বুখারীতে উল্লেখ করেন-“ইমাম কুরতুবী (رحمة الله) বলেছেন, এ হাদীস দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, এ পঞ্চ অদৃশ্য বস্তুসমূহ অবগত হওয়াতে কারাে জন্য লােভের স্থান নেই। আর নিশ্চয়ই রাসুলুল্লাহ (ﷺ) আল্লাহ তায়ালার এ বাণী-“আল্লাহর নিকট গায়বের চাবিকাটি দ্বারা এ পঞ্চজ্ঞানের।
(২) আল্লামা আলী ক্বারী (رحمة الله) “মিরক্কাতে” হাদীসে জিবরাইলের ব্যাখ্যায় তা উল্লেখ করেছেন। অনুরূপ আল্লামা কুলানী (رحمة الله) ইরশাদুসসারী’তে বর্ণনা করেন। আমি এরা হলেন হানাফী, শাফেয়ী ও মালেকী মাযহাবের শীর্ষস্থানয়ি ওলামায়ে কিরাম।
যেমনঃ ইমাম আইনী, ইমাম কুরতুবী, ইমাম শাতনুফী, ইমাম ইয়াফী, ইমাম সুয়ুতী, ইমাম কুস্তুলানী, ইমাম ইবনে হাজর, আল্লামা কৃারী, আল্লামা শানুওয়ানী, শেখ বায়জুরী, শেখ আবদুল হক্ব মােহাদ্দেছ দেহলভী, শেহাবুদ্দিন খেফাযী (রহঃ) প্রমুখ। হে সৈয়দ সাহেব! আপনি নিজে এবং যারা জীবন চরিত ও ফজিলত সম্পর্কিত গ্রন্থ রচনা করেছেন, সকল সুফী গ্রন্থকার ও তাঁদের অনুসারী দ্বীনের আমির ও আরাকীন ওল-মায়ে কিরাম। যাদের সালের দিকে আপনি তা সম্পর্কিত করেছেন যে, তারা সবাই শুধুমাত্র স্বীয় বিরুদ্ধতার কারণে এ বস্তু যা রাসুলে পাক (ﷺ) কুরআনে করীম থেকে জ্ঞাত হয়েছেন সে সম্পর্কে মহা ভ্রান্তিতে রয়েছে এবং তারা অকাট্যভাবে দ্বীনের বিরুদ্ধোচরণ করেছে। কেননা, তারা মতভেদ ও বিবাদ করে দিয়েছে ঐ সত্য ও সুস্পষ্ট বক্তব্যে যাতে না ছিলাে কোন সন্দেহ,না কোন কঠোরতা। এটা (তার বক্তব্য) হলাে কঠিন বিপদসঙ্কুল, শক্ত নিভীকতা এবং কঠোর ত্রুটিপূর্ণ, ভ্রান্ত ও ধ্বংসাত্মক ধারণা। তােমরা নিজেদের ব্যাপারে কি বললাঃ হে নিরােত্তরকারীরা! অতঃপর এগুলােকে পরবর্তীদের থেকে সিরযিমায়ে কৃলীলা ও শীর্ষস্থানীয় কতেক সুফীদের বলে তাবীর করা দৃষ্টিয়ানুভূতি থেকে হটকারিতা এবং হকের সাথে প্রতারণা। বরং তারা হলেন বড়দল ও বৃহৎ সম্প্রদায় তাঁদের বক্তব্যসমূহকে কেউ খন্ডন করেন নি। কিন্তু যারা অন্তরে দ্বীনের ফিতনা-ফ্যাসাদ ও বিশৃঙ্খলা করতে চাই।। তাদের সৃষ্টির কোন নিশ্চয়তা নেই। যেমন মােতাজেলা, ওহাবী (আল্লাহ তাদের অপমানিত করুন)। অথবা তাদের যাদের পদস্খলন ঘটেছে যারা তাদের লিখায় সীমাতিক্রম করেছে, আল্লাহ তায়ালার কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করছি।
তাফসীর (ব্যাখ্যা) করেছেন। সুতরাং যে ব্যক্তি পঞ্চজ্ঞান কারাে জন্য দাবী করে এবং তা রাসুলুল্লাহ (ﷺ)-এর জ্ঞান দান বলবে না, সে স্বীয় দাবীতে মিথুক।”
দেখুন! শুধুমাত্র তাকে মিথুক বানিয়ে দিয়েছে, যে ঐ পঞ্চজ্ঞানকে নিজের জন্য রাসুলুল্লাহ (ﷺ)-এর মাধ্যম ছাড়া দাবী করে। অধিকন্তু জোর গলায় বলা হয়েছে-‘নবী (ﷺ) পঞ্চগায়ব সম্পর্কে জ্ঞাত আছেন এবং আউলিয়ায়ে কিরামদের যাকে ইচ্ছে বলে দেন। আল্লামা ইব্রাহীম বায়জুরী কাসীদায়ে বুরদার’ ব্যাখ্যাগ্রন্থে বিশ্লেষণ করেছেন, রাসুলুল্লাহ (ﷺ)কে আল্লাহ তায়ালা এ পঞ্চ জ্ঞান প্রদানের পূর্বে তিনি দুনিয়া হতে তশরীফ নিয়ে যাননি।
আমি বলছি, এ পঞ্চ অদৃশ্য জ্ঞান সম্পর্কে যা উপরােল্লেখিত হয়েছে তা অত্যন্ত সুস্পষ্ট গায়বের অন্তর্ভুক্ত। এর সীমা তিনিই জানেন, যিনি দান করেছেন এবং যাকে দান করেছেন [আল্লাহ তায়ালা ও রাসুলুল্লাহ (ﷺ)]। তিনি কি এমন প্রকাশ্য ঘটনাদি যা বন্টন করে আলাদা করে রাখা হয়েছে তাতে কৃপনতা। করবেন? এ বিষয়টিকে শানওয়ানী “জমীউন নিহায়া” গ্রন্থে হাদীস সহকারে বর্ণনা করেছেন যে, নিশ্চয়ই বর্ণিত হয়েছে “আল্লাহতায়ালা নবীয়ে করীম (ﷺ)কে (তার সান্নিধ্যে) নেন নি, যতক্ষণ প্রত্যেক বস্তু সম্পর্কে হুজুরকে জ্ঞান প্রদান করা হয়নি।” আমি বলছি, নিশ্চয়ই আমরা ঐ আয়াতসমূহ তেলাওয়াত করেছি যা এর মর্মার্থ স্পষ্ট করে দেয় এবং ঐ সহীহ হাদীসমূহ যা এর বিষয়কে সুস্পষ্ট করে বর্ণনা করে। তাছাড়া তাতে কতেক মুফাচ্ছেরীন থেকে এ ভাষ্য উদ্ধৃত করেছেন যে, এ পঞ্চ অদৃশ্য জ্ঞানসমূহ কেউ স্বয়ং সত্ত্বাগতভাবে মাধ্যমবিহীন আল্লাহ ব্যতীত জানেন না। এর জ্ঞান মাধ্যম সহকারে আল্লাহর সাথে খাস নয়।? * আমি বলছি বরং এখনতাে তা আল্লাহ ব্যতীত অন্যের সাথে খাস হলাে। কারণ, আল্লাহ তায়ালার জ্ঞানে মাধ্যম হওয়া অসম্ভব। '
‘ইবরিজ' নামক কিতাবে স্বীয় পীর ও মুর্শিদ আমাদের সরদার আবদুল আজীজ (رحمة الله) থেকে উক্ত করেছেন- এ আয়াতে যে পাঁচটি অদৃশ্য বস্তু উল্লেখ আছে তা থেকে নবীয়ে করীম (ﷺ)-এর উপর কোন বস্তু লুকায়িত নেই। আর পঞ্চগায়ব হুজুর (ﷺ)-এর জন্য কেনই বা লুকায়িত থাকবে? অথচ হুজুরের উম্মতের সাত কুতুবও তা সম্পর্কে জানেন; অথচ, তাঁদের স্থান গাউসের নীচে সুতরাং কোথায় গাউস আর কোথায় সৃষ্টির আদি-অন্তের সৈয়দ, যার কারণে সকল সৃষ্টির অস্তিত্ব।” * আমি বলছি, সাত কুতুব দ্বারা আবদালগণই উদ্দেশ্য, যারা সত্তর আবদালের থেকেও মর্যাদাবান এবং গাউসের দু'জন উজীর থেকে যাদের স্থান নিম্নে। এছাড়া ‘ইবরিজে’ তিনি (رحمة الله) আরাে বলেছেন “ঐপঞ্চ অদৃশ জ্ঞানের বিষয় হুজুর সৈয়দে আলম (ﷺ)-এর নিকট কিভাবে গােপনীয় হতে পারে? অথচ হুজুরের ইন্তেকাল প্রাপ্ত উম্মতগণের মধ্যে তাছাররুফের ক্ষমতাবান কেউই ততক্ষন তাছাররুফ (মৃত্যু পরবর্তী সাহায্য) করতে পারে না, যতক্ষণ ঐ পঞ্চ বিষয়ে না জানেন।” সুতরাং হে অস্বীকারকারীরা তার এ বাক্যগুলাে শ্রবণ করাে, আল্লাহর ওলীদের মিথ্যা সাব্যস্ত করােনা। তাদের মিথ্যা প্রতিপন্ন দ্বীনের ধ্বংস ডেকে আনে। অতিসতুর আল্লাহ তায়ালা প্রতারকদের থেকে প্রতিশােধ গ্রহণ করবেন। আল্লাহ তায়ালা তাঁর আরিফ বান্দাদের উসিলায় আমাদের ক্ষমা করুন, আমীন।
_______________
(১) আলহামদুলিল্লাহ! আমি এটা অস্বীকৃতি জ্ঞাপক পুস্তিকার পূর্বে লিখেছি। তাতে ঐ ব্যক্তির দিকে ইঙ্গিত রয়েছে যে আওলিয়ায়ে কিরাম ও সুফীয়ানে কিরাম থেকে পলায়ন করেছে এবং কৌশল অবলম্বন করেছে যে, শেখ আবদুল ওয়াহাব শা’রানী (رحمة الله) স্বীয় কিতাব আল ইওয়াকৃত ওয়াল জাওয়াহিরে’ বলেন- আল্লাহর কাছে ক্ষমা এ থেকে যে, আমি অধিকাংশ ইসলামী দর্শনবেত্তাদের বিরুদ্ধাচরণ করবাে এবং সে আকীদা পােষন করবাে যা কতেক গায়রে মাসুম (নিস্পাপ নন) আহলে কাশফদের উক্তির বিশুদ্ধতার বিপরীত। কেননা, আকায়েদের ক্ষেত্রে ইমাম শারানীর (رحمة الله) কালাম আহলে সুন্নাতেরই অন্তর্ভুক্ত। আল্লাহর পানাহ তা থেকে যে, আউলিয়ায়ে কিরাম তাঁর বিরুদ্ধাচরণ করেছেন। আর যে উক্তিতে তার বিপরীত ধারণা তা হয়তঃ তাদের অপবাদ ও প্রতারণা। যেমন স্বয়ং উক্ত ইমাম চার লাইন পরে এ উক্তি বর্ণনা করেছেন। নতুবা অল্পজ্ঞানের কারণে তারা এদিকে ইঙ্গিত করে এর উদ্দেশ্য পর্যন্ত পৌঁছতে পারে নি, যেমন তিনি নিজে বাক্যের প্রারম্ভেই তাঁর নিজের উক্তি বর্ণনা করেন- আমি প্রত্যেক ঐ ব্যক্তিকে উপদেশ করছি, যে আহলে কাশফের উক্তি বুঝার ক্ষমতা রাখেনা সে যেন কালাম শাস্ত্রবিদদের বাহ্যিক উক্তির উপর অগ্রসর না হয় এবং তা থেকে অতিক্রম না করে। আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন অতএব, যদি তাতে এমন মােষলধারে বৃষ্টিপাত নাও হয় তবে হাল্কা বর্ষণই যথেষ্ট। এরপর এ মহান ইমাম বর্ণনা করেন-এজন্য আমি অধিকাংশ স্থানে আহলে কাশফদের বাণীর পরে বলে দিই যে, চিন্তা-ভাবনা ও অনুসন্ধান করাে অথবা এর অনুরূপ শব্দ দ্বারা বা , তাঁদের বাক্যের মর্ম বুঝার জন্য কালাম শাস্ত্রবিদদের পরিভাষা প্রকাশ করে দিই নিশূপ থাকার জনা।
_________
পঞ্চ অদৃশ্য জ্ঞানের বিস্তারিত বিবরণঃ মােদ্দা কথা হলাে, কুরআনের কেউ খন্ডনকারী নেই, তা প্রত্যেক বস্তুর জন্য বিস্তারিত ও স্পষ্ট বর্ণনা। তিনি পৃথিবীতে কোন বস্তু উঠিয়ে রাখেন নি। সুতরাং ঐ আয়াতসমূহ এবং ইলমে গায়বের অস্বীকৃতির সমতা বিধান সুস্পষ্ট হয়ে উঠেছে। সুতরাং স্বীয় প্রতিপালকের কোন অনুগ্রহকে অস্বীকার করবে?
চতুর্থতঃ আল্লাহর শক্তি বলে ভরসা করে ময়দানে ঝাপিয়ে পড়ে আমি বলছি, যে ব্যক্তি দাবী করেছে যে, আল্লাহর জ্ঞানের সাথে খাস হবার ক্ষেত্রে অন্যান্য গায়বের তুলনা এ পঞ্চজ্ঞানের অধিক বৈশিষ্ট্য রয়েছে। তারা কি এর দ্বারা বুঝাতে চায় যে,তাতে সলবে উমুম (ব্যাপকতার অস্বীকার) আছে, যা এতদ্ব্যতীত অন্য কারাে জন্য নয়? (অর্থাৎ তার পরিবেষ্টিত জ্ঞান অন্য কারাে জন্য, নয়।) নাকি উমুমে সলব (অস্বীকারের ব্যাপকতা) (যা থেকে অন্য কেউ কিছু জানেনা)?
প্রথম বক্তব্য দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, ঐ পঞ্চজ্ঞান ব্যতীত আল্লাহর যত জ্ঞান। রয়েছে সব বলে দেয়া হয়েছে। এ ভিত্তিতে অর্থ হবে-‘আল্লাহ তায়ালা সব আম্বিয়ায়ে কিরাম অথবা বিশেষতঃ আমাদের নবীকে এ পঞ্চজ্ঞান ব্যতীত, সকলবস্তুর জ্ঞান প্রদান করেছেন যাতে কিছু অবশিষ্ট নেই।
• বাকী রইলাে পঞ্চজ্ঞান। এর আংশিক জ্ঞাত করানাে হলেও সব হুজুরকে অবগত করানাে হয়নি। আর দ্বিতীয় বক্তব্যের ভিত্তিতে এটাই হাসিল হবে যে, আল্লাহ তায়ালা জ্ঞান থেকে মূলতঃ কাউকে কোনবস্তু কখনাে জ্ঞাত করান নি। অবশিষ্ট গায়বের বিপরীত; তা থেকে যাবে ইচ্ছে অবগত করিয়েছেন। প্রথম অর্থ। নিঃসন্দেহে বাতিল; তা থেকে যাকে ইচ্ছে অবগত করিয়েছেন। প্রথম অর্থ নিঃসন্দেহে বাতিল; না হয় আবশ্যক হয়ে পড়বে যে, রাসুলে পাক (ﷺ)-এর জ্ঞান আল্লাহ রাব্বল আলামীনের সত্ত্বা ও সকল গুণাবলীকে এমন পরিপূর্ণ পরিবেষ্টনের সাথে পরিবেষ্টিত হয়, যার পূর্বে প্রকৃতপক্ষে কোন পর্দা অবশিস্ট রইলাে না। অনুরূপ, হুজুর সৈয়দে আলম (ﷺ)-এর জ্ঞান সকল অসীম পরম্পরাকে পরিবেষ্টনকারী হবে, যা অসীম থেকে অসীমতরের মধ্যে অনেক বার অর্জিত হয়েছে। যেমন পূর্বে আমি বর্ণনা করে এসেছি যে, এ সবগুলাে এ পাঁচ থেকে পৃথক। অবশ্য এর প্রবক্তা আমরা আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতও নই ওহাবীদেরতাে প্রশ্নই উঠেনা যারা রাসুল পাক (ﷺ)-এর শান ক্ষুন্ন করার জন্য কোমর বেঁধে দাঁড়িয়েছে। আর দ্বিতীয় অর্থও সুস্পষ্ট বাতিল। কেননা, এ পঞ্চ বস্তুর মধ্যে কতেকের জ্ঞান অবশ্যই প্রমাণিত রয়েছে, যাকে আল্লাহ দেয়ার ইচ্ছা করেছেন।
গর্ভাশয়ের জ্ঞানঃ
খতীব এ বাগদাদ ১ এবং আবু নাঈম ‘দালাইলুন্নবুয়তে” হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (رضي الله عنه) থেকে বর্ণনা করেন যে, আমাকে উম্মুল ফজল (رضي الله عنه) বর্ণনা করেছেন-- ‘আমি হুজুর (ﷺ) এর সামনে দিয়ে অতিক্রম করেছিলাম। হুজুর (ﷺ) ইরশাদ করলেন, তুমি সন্তান সম্ভবা, তােমার গর্ভে ছেলে রয়েছে। যখন তার জন্ম হবে। তখন আমার কাছে নিয়ে আসবে।' উম্মুল ফজল আরজ করলেন, হে আল্লাহর রাসুল! আমার গর্ভে সন্তান কোথা থেকে আসবে? অথচ কুরাইশরা কসম খেয়ে বলেছে যে, তারা স্ত্রীদের কাছেও যাবে না। ইরশাদ হলাে, আমি যা বলছি তাই হবে। উম্মুল ফজল বললেন, যখন ছেলে সন্তান প্রসব হলাে আমি হুজুরের পবিত্র খেদমতে উপস্থিত হলাম। হুজুর (ﷺ) ছেলের ডান কর্ণে আজান ও বাম কর্ণে ইকামত দিলেন এবং স্বীয় থুথু মােবারক তার মুখে দিলেন আর তার নাম রাখলেন আবদুল্লাহ। অতঃপর বললেন, নিয়ে যাও খলীফাদের পিতাকে। আমি হযরত আব্বাসের নিকট হুজুরের এ ইরশাদ বর্ণনা করলাম। তিনি হুজুরের পবিত্র খেদমতে উপস্থিত হয়ে আরজ করলেন, উম্মুল ফজল এমনি বলেছেন। ইরশাদ করলেন, কথা তাই যা আমি তাকে বলেছি। সেই খলিফাদের পিতা, এমনকি শেষ পর্যন্ত তার (বংশ) থেকে সিফাহ এবং মাহদীর আবির্ভাব হবে। (১) আমি বলছি, ইমাম তাবরানী মুজামে কবীর ও ইবনে আসীর সৈয়দুনা হযরত আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (رضي الله عنه) থেকে রেওয়াতের বর্ণনা করেন। রাসুলে পাক (ﷺ) ইব্রাহীমের মা হ্যরত মারিয়া কিবতিয়া (رحمة الله)-এর নিকট তাশরীফ নেন, যখন তিনি (হযরত ইব্রাহীম) তাঁর শেকম মােবারকে ছিলেন। আরও একটি হাদীস বর্ণনা করেন, (যাতে রয়েছে) হযরত জিব্রাইল আমার নিকট আসলেন এবং আমাকে সু-সংবাদ দিলেন যে, মারিয়ার গর্ভে আমার সন্তান রয়েছে। সে সকল মাখলুকের মধ্যে আমার সাথে অধিক সাদৃশ্যপূর্ণ হবে। তিনি আমাকে বলেছেন-আমি যেন তাঁর নাম ইব্রাহীম’ রাখি। আর জিব্রাইল আমার কুনিয়াত (ডাক নাম) আবু ইব্রাহীম তথা ইব্রাহীমের পিতা রেখেছেন। ইমাম সুয়ুতী “জামে কবীর” গ্রন্থে বলেছেন যে, এর সনদ (বর্ণনা পরম্পরা) বিশুদ্ধ।
আমি বলছি, হুজুর (ﷺ) তাই জ্ঞাত হয়েছেন, যা গর্ভাশয়ে ছিলাে। শুধু তাই নয় এর থেকে আরাে বেশী কিছু জেনেছেন। আর তাও জ্ঞাত হয়েছেন যা উদরের সন্তানের পিঠে ছিলাে। তাও জ্ঞাত হয়েছেন যা কয়েক গােত্রের পরের সন্তানের পেটের পেটে রয়েছে। এ কারণে হুজুর আকৃদাস (ﷺ) ইরশাদ করেছেন “খলীফাদের পিতাকে নিয়ে যাও” এবং ইরশাদ করেছেন-“তার থেকে এবং তার (বংশ) থেকেই সিফাহ এবং মাহদীর আবির্ভাব হবে।” মদিনার আলিম ইমাম মালেক (رحمة الله) হযরত আয়েশা (رضي الله عنه) থেকে বর্ণনা করেন যে, ছিদ্দীকে আকবর (رضي الله عنه) তাঁর বনজ সম্পদ থেকে বিশ উশক খেজুর। উম্মুল মুমিনীন (رحمة الله)কে দান করে গাছ থেকে পেড়ে নিতে বলেছিলেন। যখন তার ওফাতের সময় আসলাে তখন তিনি বললেন “হে আমার প্রিয় কন্যা, আল্লাহর শপথ! কোন ব্যক্তির ধন-সম্পদ আমার নিকট তােমাদের প্রিয় নয়। আমার পর তােমাকে কারাে মুখাপক্ষেী হওয়ার ব্যাপারে আমি চিন্তিত নই। আমি তােমাকে যে বিশ উশক খেজুর দান করেছি তা বৃক্ষ থেকে তুলে নিও। যদি তুমি তা কেটে নিজের হেফাজতে রাখতে তাহলে তা তােমারই হতাে কিন্তু আজকে তা তােমার। উত্তরাধিকারীদের সম্পদ। এর উত্তরাধিকারী তােমার দু’ভাই ও বােনেরা। সুতরাং তাদের মধ্যে তুমি তা আল্লাহর ফরায়েজ মত বন্টন করে দিবে। হযরত আয়েশা (رضي الله عنه) আরজ করলেন-আব্বাজান,আল্লাহর শপথ! যদি এমন এমন অনেক সম্পদ। থাকতাে, তবুও আমি তা আমার বােন আসমাকে দিয়ে দিতাম, কিন্তু আমার। দ্বিতীয় বােন কে? ইরশাদ করলেন, যা বিনতে খারেজার (তোমার মা) গর্ভে . রয়েছে, আমি তা কন্যা সন্তানই দেখছি।'
ইবনে সা'দ 'তাবাক্বাত' গ্রন্থে উল্লেখ করেন, ছিদ্দীকে আকবর (رضي الله عنه) বলেছেন-“তা বিনতে খারেজার গর্ভেই রয়েছে, আমার হৃদয়ে ইলহাম করা। হয়েছে যে, তা কন্যাই হবে। তুমি তার সম্পর্কে সদ্ব্যবহারে উসিয়ত কবুল করাে। তাঁর একথার ভিত্তিতে উম্মে কুলসুম জন্মগ্রহণ করেছেন।” আর নিশ্চয়ই অনেক বিশুদ্ধ হাদীস দ্বারা প্রমাণিত যে, গর্ভাশয়ের জন্য একজন ফিরিস্তা নির্ধারিত রয়েছেন। তিনি শিশুদের আকৃতি তৈরী করেন-পুরুষ। ও মহিলা, সুন্দর ও কদাকার এবং তার বয়স ও রিজক লিখে থাকেন। আর তা ভাগ্যবান নাকি দুর্ভাগা হবে-তাও তিনি জানেন--যা কিছু উদরে রয়েছে; এবং এটাও জ্ঞাত হন যে, তার উপর কি অতিবাহিত হবে।
বুখারী ও মুসলিম শরীফে সাহল ইবনে সা'দ (رحمة الله) থেকে বর্ণিত খায়বরের হাদীসে রয়েছে, নবীয়ে করীম (ﷺ) ইরশাদ করেছেন-“আল্লাহর শপথ! কাল এ ঝান্ডা ঐ ব্যক্তিকে প্রদান করবাে, যার হাতে আল্লাহ বিজয় প্রদান করবেন। সে আল্লাহ ও রাসুলকে ভালবাসে, আর আল্লাহ ও তাঁর রাসুলও তাকে ভালবাসে। অতঃপর তিনি ঐ ঝান্ডা হযরত আলীকে প্রদান করেন। হুজুর পাক (ﷺ) এ উক্তি শপথ এর স্থানে (লামে তাকীদ ও নুনে তাকীদ) দ্বারা তাকীদ ও নিশ্চয়তা সহকারে ইরশাদ করেছেন। বুঝা গেলাে, আগামীকাল কি করবেন তা নিশ্চয়ই হুজুরের জ্ঞানে ছিলাে। নিশ্চয়ই হুজুরে করীম (ﷺ) অবগত ১ ছিলেন যে, তাঁর বেছাল শরীফ মদীনায়ে তায়্যেবায় হবে, এ কারণেই তিনি আনসারদের ইরশাদ করেছেন-“আমার জীবন সেখানেই, যেখানে তােমাদের জীবন, আর আমার ইনতেকাল তথায় যেখানে তােমাদের ইনতিকাল”। এ হাদীস ইমাম মুসলিম হযরত আবু হুরাইরা (رضي الله عنه) থেকে বর্ণনা করেছেন।
(টিকা ১) এ পরিচ্ছেদ সকল পরিচ্ছেদ থেকে অধিকতর প্রশস্ত। সুতরাং প্রত্যেক ঐ বস্তু নবীয়ে করীম (ﷺ) যে সম্পর্কে সংবাদ দিয়েছেন—জিহাদ ও ফিতনাসমূহ, সৈয়দুনা হযরত মসীহ (আঃ)-এর অবতরণ, ইমাম মাহদীর আবির্ভাব, দাজ্জাল, ইয়াজুজ-মাজুজ এবং দাব্বাতুল আরদের আবির্ভাব ইত্যাদি। যা অনেক, অসীম ও অগণিত। এ সবগুলােই এ পরিচ্ছেদের অন্তর্ভুক্ত। ইমাম আইনী (رحمة الله) ওমদাতুল ক্বারী শরহে বুখারীর ‘ঈমান অধ্যায়ে বর্ণনা করেন,
ইমাম নসফী (رحمة الله) তাফসীরে 'মাদারেকে' উল্লেখ করেন-এর উদ্দেশ্য হলাে জানতে পারেনি (মারিয়া) ঐ বস্তু যা তাঁর সাথে খাস ছিলাে, যদিও তাঁর স্বীয় গর্ভের জ্ঞান হয়েছে। মানুষের কাছে কোন বস্তু তার অর্জন ও পরিমাণ থেকে অধিক বিশেষত্ব ও তাৎপর্যমন্ডিত নয়। সুতরাং যখন তার এতদুভয়ের কোন পন্থা নেই, তখন তা ব্যতীত অন্যান্য গুলির পরিচয় ও জ্ঞান লাভ অসম্ভব হবে। আমি বলছি আপনাদের জন্য যথেষ্ট যে, রাসুলে পাক (ﷺ) এ গায়বকে আল্লাহ তায়ালার এ বাণীর স্থানে তাবীর ব্যাখ্যা করেছেন,
(কোন সত্তা কি জানে সে আগামীকাল কি উপর্জন করবে) স্বীয় বাণী --- কেউ কি জানে আগামীকাল কি হবে?)
যেমন বুখারী শরীফের ইস্তিসকা’ অধায়ে বর্ণিত হয়েছে। অথবা তাঁর বাণী আল্লাহ ব্যতীত কেউ জানে না আগামীকাল কি হবে যেমন তাফসীরে লুকৃমানে বর্ণিত হয়েছে।
আর হুজুর আব্দদাস (ﷺ) যখন মুয়াজ বিন জাবালকে (رضي الله عنه) ইয়ামেনের দিকে প্রেরণ করলেন, তখন তাকে এরশাদ করলেন,-“হে মুয়ায! অতিসত্ত্বর তুমি আমার সাথে এ বছরের পর (দুনিয়াতে) সাক্ষাত পাবেনা। আশা রাখি, তুমি আমার এ মসজিদ ও মাজার দিয়ে
◾মোল্লা আলী ক্বারী (رضي الله عنه) মিরকাতে বলেছেন-“সব সংঘটিত বস্তু যা লওহে মাহফুজে রক্ষিত আছে। এতে হিকমত এ যে, ফেরেস্তা আগামী বস্তুর সম্পর্কে অবগত হন। যখন ঐ কথাগুলাে লিখিত বস্তুর মােতাবেক সংঘটিত হয়, তখন তাদের ঈমান ও তাসদীক বৃদ্ধি পায় এবং (তাঁরা) ফেরেস্তারা জেনে নেন, কে প্রশংসার উপযােগী আর কে তিরস্কারের। সুতরাং তারা প্রত্যেকের পরিচয় জেনে নেন।”
◾শাহ আবদুল আজীজ (رحمة الله) তাফসীরে “ফতহুল আজীজে”বর্ণনা করেন-“লাওহে মাহফুজ সম্পর্কে অবগত হওয়ার উদ্দেশ্য হলাে, বস্তুতঃ যেসকল কর্মসমূহ সংঘটিত হওয়ার আছে তা বাইরে সংঘটিত হওয়ার পূর্বেই এর জ্ঞান হয়ে যাওয়া, তা লওহ-এর লিখা দেখে হােক কিংবা তা ব্যতীত হােক। আর এটা আল্লাহর ওলীদেরও হাসিল হয়। এটাও বলা হয়েছে, লওহে মাহফুজ অবগত হওয়া হলাে এর নকসাসমূহ অবগত হওয়া। এটাও কতেক আউলিয়ায়ে কিরাম থেকে পরম্পরাগতভাবে বর্ণিত আছে।”
◾ইমাম সাতনুফী (رحمة الله)'র ন্যায় ইমামগণ রাসুলুল্লাহ (ﷺ)-এর অধস্তন পুরুষ যিনি জ্বিন ও মানব উভয়ের সাহায্য ও প্রার্থনা শ্রবণকারী এবং উভয় জাহানের ফরিয়াদ প্রেরণকারী, আমাদের আকা গাউছে আজম আবু মুহাম্মদ আবদুল কাদের আল হাসানী ওয়াল-হােসাইনী জিলানী (رضي الله عنه) আল্লাহ তাঁর উপর সন্তুষ্ট এবং তাকেও আমাদের উপর সন্তুষ্ট রাখুন। উভয় জাহানে আমাদের উপর তার প্রতিপালকের নুরের ফয়েজ প্রদান করুন; তাঁর নিকট হতে বিশুদ্ধ সনদে বর্ণনা করেন যে, তিনি বলে থাকতেন, ‘আমার চক্ষু লওহে মাহফুজে।
"আমি বলছি, এটাই হলাে আমাদের প্রতিপালকের বাণী তিনি বরকতময় রাত শবে বরাত সম্পর্কে বলেছেন-
◾“এ রাত্রে বন্টন করা হয় সব হিকমতময় কর্ম আমার নির্দেশে।”
আল্লাহর এ সাক্ষ্য দ্বারা প্রতীয়মান হয় যে, ঐ পঞ্চ অদৃশ্য জ্ঞানসমূহ থেকে কিয়ামতের জ্ঞান ব্যতীত অপর চারটির সকল এককসমূহ তা' সংঘটিত হবার পূর্বেই আল্লাহ তায়ালা সে ফেরেস্তাদের অবগত করেন, যারা সে কর্মের কার্য নির্বাহক।
আমি বলছি, অনুরূপভাবে হযরত ইসরাফীল
(عليه السلام) কিয়ামতের নির্দিষ্ট সময় নির্ণয় পূর্বক সংঘটিত হবার পূর্বেই তা অবগত হবেন, যদিও তা মুহূর্তের জন্য হয়! আর তা সে দিন যখন সিঙ্গা ফুঁক দেয়ার নির্দেশ প্রদান করা হবে এবং তিনি নিজের অপর পাখাও বিছিয়ে দেবেন। তাঁর একটি পাখা রাসুলে সৈয়দে আলম হুজুর পুরনূর (ﷺ)-এর শুভ পদার্পনের সময় বিছিয়ে দিয়েছিলেন। সুতরাং তিনি তা নিক্ষেপ করার সাথে সাথেই ফিরিস্তা তাঁর নীচ থেকে সিঙ্গা মুখে উঠিয়ে নেবেন।
◾রাসুলে পাক (ﷺ) ইরশাদ করেন- “আমি কিভাবে বিশ্রাম করবাে সিঙ্গা বাহকতাে সিঙ্গা মুখে নিয়ে নিয়েছেন এবং কান লাগিয়ে রয়েছেন, আর কপাল নুয়ে অপেক্ষা করছেন কখন ফুৎকারের নির্দেশ দেয়া হবে।”
এ হাদীস ইমাম তিরমিজী হযরত আবু সাঈদ খুদরী
(رضي الله عنه)থেকে বর্ণনা করেছেন।
আর ঐ ফিরিস্তা স্বীয় দু’উরুর উপর দন্ডায়মান হয়েছে, ইসরাফীলের ঐ পাখার দিকে দৃষ্টি নিক্ষেপ করে রয়েছেন যা এখনও তিনি বিস্তৃত করে রেখেছেন। সুতরাং যখন তিনি তাঁর ঐ পাখা পতিত করবেন, তখন এ সিঙ্গায় ফুঁক দিবেন। সিঙ্গা ফুৎকারের অনুমতি এবং কিয়ামত সংঘটিত হওয়ার মধ্যে তাঁর পাখা নিক্ষেপই হলাে ফয়সালা। আর এটা একটি নড়াচড়া। আর এ নড়াচড়া কালের মধ্যেই হয়, তাহলে অবশ্যই কিয়ামত সংঘটিত হওয়ার পূর্বেই তাঁর কাছে এর জ্ঞান হয়ে যাবে যদিও এক মুহূর্তের জন্য হয়। সুতরাং এ জ্ঞান যখন একজন নৈকট্যবান ফিরিস্তার জন্য প্রতীয়মান হলো, তখন সকলের চেয়ে প্রিয় হাবীব মুহাম্মদ (ﷺ)-এর জন্য অসম্ভব উক্তিকারী কে? যিনি কিয়ামত সংঘটিত হওয়ার আনুমানিক দু'হাজার বছর পূর্বেই তিনি সে সম্পর্কে জেনেছেন এবং যদিও হুজুরের কাছে নির্দেশ এসেছে তা অপরকে অবহিত না করার জন্য।
মুতাজিলারা যখন কারামাতে আউলিয়ার অস্বীকৃতিতে এ আয়াত থেকে দলীল গ্রহণ করেছেন “আল্লাহ গায়ব সম্পর্কে অবহিত, তিনি তাঁর পছন্দনীয় রাসুলদের ব্যতীত কাউকে এ সম্পর্কে অবহিত করেন না।” তখন জনৈক আল্লামা শরহুল মাকাসিদে তাদের উত্তরে বলেছেন “গায় এখানে ব্যাপক নয় বরং মুতলাক (শর্তহীন অথবা (معين) এক নির্দিষ্ট সময় অর্থাৎ কিয়ামতের সময় এবং এর জন্যই উপরােক্ত আয়াত :قرينة কারণ' (তাতে কিয়ামতের বর্ণনা রয়েছে)। আর ফিরিস্তা অথবা বশরের (মানুষের) কতেক রাসুল এ সম্পর্কে জ্ঞাত হওয়া অসম্ভব নয়।” অর্থাৎ এ প্রেক্ষিতে রাসুলগণের পৃথকীকরণ বিশুদ্ধ হয়েছে। এমতাবস্থায় আউলিয়ায়ে কিরামের জন্যই শুধু ক্বিয়ামতের জ্ঞান অস্বীকৃতি হবে। আর আল্লাহর পছন্দনীয়, রাসুলগণের জন্য এটাও প্রমাণিত হবে। পৃথকীকরণই এর পক্ষে দলীল।
◾বরং ইমাম কুস্তুলানী (رضي الله عنه) ইরশাদুস-সারী শরহে বুখারী’তে বলেছেন-
“আল্লাহ ব্যতীত কেউ জানেন না, কিয়ামত কখন সংঘটিত হবে কিন্তু তার পছন্দনীয় রাসুলগণ, তাঁদের মধ্যে আল্লাহ যাকে ইচ্ছে এ সম্পর্কে অবহিত করেন। আর আউলিয়া কিরাম হলেন, রাসুলের অনুসারী, তাঁরা তাঁর থেকেই জ্ঞান অর্জন করেন।”
◾(১) বরং শাহ আবদুল আজীজের (رحمة الله) পিতা শাহ ওয়ালী উল্লাহ (رحمة الله) “তাফহীমাতে ইলাহিয়্যায়” স্বয়ং নিজের অবস্থার বর্ণনা দিতে গিয়ে উল্লেখ করেন যে, তাঁকে বিশেষ অবস্থায় ঐ সময় বর্ণনা করা হয়েছে, যখন কিয়ামত সংঘটিত হবে এবং আসমান বিদীর্ণ হবে এবং অতঃপর যখন সংজ্ঞা ফিরে পেলেন, তখন তা সম্পূর্ণরূপে রক্ষিত থাকেনি। ঝাপসা স্বপ্নের ন্যায় হয়ে গেলো। এমন ওলীদের জন্য যখন এটা (কিয়ামতের জ্ঞান) প্রমাণিত হলাে তখন মুস্তফা (ﷺ)-এর প্রতিপালকের জন্য পবিত্রতা। সৈয়দুল আম্বিয়া (ﷺ) এর জন্য কেন তা অসম্ভব হবে? আরবাঈনে ইমাম নবীর ব্যাখ্যা গ্রন্থ “ফতুহাতে ইলাহিয়্যায়” এরূপ তাঁর দ্বিতীয় ব্যাখ্যা গ্রন্থ “ফতুহুল মুবীনের পাদটীকায় রাসুলে সৈয়দে আলম (ﷺ)-এর জন্য কিয়ামতের জ্ঞান হাসিল হওয়া সম্পর্কে উল্লেখ আছে। সত্যকথা হলাে, যেমন এক জমাত ওলামায়ে কিরাম বলেছেন যে, আল্লাহ তায়ালা আমাদের নবী (ﷺ)কে দুনিয়া থেকে উঠিয়ে নিবেন না, যতক্ষণ না হুজুরের নিকট যা কিছু গুপ্ত, রয়ে গেছে তা তাঁকে অবহিত করা হবে। হাঁ, কতেক বস্তু তাঁকে প্রকাশনা করার নির্দেশ প্রদান করা হয়েছে, আর কতেক প্রকাশের নির্দেশ দিয়েছেন। অনুরূপ উসমাবী আসসালাতুল আহমদীয়ার ব্যাখ্যায় এটাকে সঠিক বলে ব্যক্ত করেছেন আমি বলছি, এগুলাে সব আল্লাহ তায়ালার এ বাণীর নুরের এক ঝলক “আমি তােমাদের উপর কুরআন অবতীর্ণ করেছি যা প্রত্যেক বস্তুর সুস্পষ্ট বিবরণ সম্বলিত।” যেমন আল্লাহ তায়ালা তার এ তকরীর আমাকে ইলহাম করেছেন। সুতরাং হক ভেসে উঠেছে কুরআনের নুর দ্বারা, যেমন সূর্য থেকে মেঘ চলে যায়।
টিকা——————————————
(১) আমি বড় আরিফ ও প্রসিদ্ধ ওলী আমার সরদার আবদুস সালাম আসমার (আল্লাহ তায়ালা আমাদের উপর তার ফয়েজ জারী রাখুন, আল্লাহ তার উপর সন্তুষ্ট হােন এবং তাঁর উসিলায় আমাদের এভাবে করুন) কালাম দেখেছি। তার বিশ্লেষণ এ সম্পর্কে আল্লাহ তায়ালা হুজুর (ﷺ)কে কিয়ামত সংঘটিত হওয়ার সময় শতাব্দী,সাল এবং মাস সম্পর্কে জ্ঞাত করেছেন। আর তা ইহসান প্রকাশের স্থলে উল্লেখ করেন এটা আল্লাহর জন্য কঠিন কিছু নয়। এটা লিখেছেন ফকীর হামদান জুয়েরী, মদীনায়ে হামদানিয়া। এটা ঐ সর্বশেষ টীকা যদ্বারা কিতাবের প্রথমভাগকে আল্লামা হামদান সৌন্দর্যময় করেছেন। বরং আমার কিতাবের বৃহৎ ভাগের শুভ্রতাকে আরাে উজ্জ্বল করেছেন। মহান অনুগ্রহকারী আল্লাহ তাঁর প্রচেষ্টাকে প্রশংসিত করুন আমীন। আর সকল প্রশংসা মহান প্রতিপালকের জন্য।
——————————————
যদি বিশুদ্ধকারীরা নিজ শব্দাবলীতে দাবীকে প্রত্যাবর্তন করে এবং বলে যে, উত্তরদাতা তার দলীলসমূহের বিশ্লেষণ করেছেন, তাহলে তার বাক্য দ্বারা দলীলসমূহেরই স্বীকৃতি বুঝা যায়। আর সম্ভব হবে, তারা মৌলিক দাবীতে কোন শব্দ পরিবর্তন কিংবা বাক্য বৃদ্ধি করা অথবা কোন বর্ণ বিয়ােগ করা পছন্দ করেছেন, এ কারণে তা নিজেদের বক্তব্যে বর্ণনা করেছেন। এটাও সম্ভব যে, তারা দাবীর পুনরাবৃত্তি অধিক ব্যাখ্যা, তাকীদ ও বিশ্লেষণের জন্য করেছেন। সুতরাং বিশুদ্ধকারীদের উপর কোন হুকুম প্রয়ােগ করা যাবে না যে, তারা মৌলিক দাবী স্থায়ী করে রেখেছেন অথবা এর উপর কিছু আপত্তি করেছেন। আর যখন মৌলিক দাবীতে এ উক্তি রয়েছে তাহলে তােমার ঐ বহির্ভূত ও অতিরিক্ত শব্দাবলীর কি ধারণা? যেগুলাে না দলীলের সাথে সম্পর্কিত, না দাবীর সাথে। এটা তাই, যা বিজ্ঞজনিত পদ্ধতির চাহিদা। এ বক্তৃতা থেকে আপনাদের নিকট সুস্পষ্ট হয়েছে। যে, আমি অভিমত লিখার সময় অতিরিক্ত বিষয়ের প্রতি বিশেষ দৃষ্টি দিই নি। আর এ মুহুর্তে আমার এটাও স্মরণে আসছে না যে, তার আসল পান্ডুলিপিতে কি শব্দ ছিলাে, কিন্তু এ পুস্তিকায় লেখক যে আরবী অনুবাদ করেছেন তাতে শব্দ এভাবে ছিলাে, দরুদ ও সালাম প্রেরণ করছি সে সত্ত্বার প্রতি, যিনি আদি-অন্ত, প্রকাশ্য-অপ্রকাশ্য এবং প্রত্যেক বস্তু সম্পর্কে জ্ঞাত। যিনি এ আয়াতের প্রকাশস্থল-(তিন আদি, তিনি অন্ত, তিনি জাহির, তিনি বাতিন আর তিনিই সকল বিষয় সম্পর্কে অবহিত) এতে কোন সন্দেহকারীর সন্দেহের অবকাশ নেই এবং এটা কোন আশ্চর্যের বিষয় নয় যে, মুদ্রণ জনিত বিভ্রাট مظير (প্রকাশস্থল) শব্দটি من هو দ্বারা পরিবর্তিত হয়েছে। কেননা, ঐ কাতিবতাে আমার অভিমতে ‘মুহাম্মদ (ﷺ) এর স্থলে (মাজমাউন) পর্যন্ত লিখে দিয়েছিলো। দেখুন, ২৯ পৃষ্ঠার শেষে ভুলে ২৬ পৃঃ দেখানাে হয়েছে। কথা যদি এমন হয়, তাহলে তাতাে খুবই চমৎকার। যদি আমরা মেনেও নিই যে, মৌলিক বক্তব্য তাই ছিলাে যা মুদ্রিত হয়েছে, তাহলেও আমি উত্তরদাতাকে জানাচ্ছি যে, ঐ আলিম সুন্নী বিশুদ্ধ আক্বীদা সম্পন্ন এবং ভ্রান্ত মাযহাব ও কুচক্রীদের জন্য ক্ষতিকারক। আর প্রত্যেক মুসলমানের উপর ফরযে আইন যে, স্বীয় ভাইয়ের উক্তিকে যথাসম্ভব উত্তম অর্থ ও বিশ্লেষণের উপর প্রয়ােগ করা। এ থেকে যেন বঞ্চিত না হন কিন্তু যারা হৃদয়ের নিরাপত্তা থেকে বঞ্চিত থেকেছে। যেমন শ্রদ্ধেয় ইমামগণ এর উপর সুস্পষ্ট উক্তি ব্যক্ত করেছেন।
অতঃপর দ্বিতীয় জবাব হলাে আপনাদের কি হয়েছে যে, ‘মান’ শব্দ সাকিন সহকারে ইসমে মাওসুল (সম্বন্ধবাচক সর্বনাম) বানিয়ে পড়ছেন? তা মানে নুনে তাশদীদ’ ও ‘যের' সহকারে আয়াতে করীমার দিকে সম্পর্ক করে কেন পড়ছেন না? অর্থাৎ আল্লাহ তায়ালা তাঁর উপর দরুদ প্রেরণ করেন যিনি এ আয়াতের ভিত্তিতে (আমাদের জন্য) অনুগ্রহ, আর তিনি হলেন মুহাম্মদ (ﷺ) যেমন আল্লাহ তায়ালা কাফিরদের বলেন, “তারা পরিবর্তন করেছে আল্লাহর নি’মাত (অনুগ্রহ)কে"। রঈসুল মােফাসসেরীন হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (رضي الله عنه) (এ আয়াতের ব্যাখ্যায়) বলেন-‘আল্লাহর নিমাত দ্বারা উদ্দেশ্য মুহাম্মদ (ﷺ) তিনি আল্লাহর বিশেষ নি’মাত এবং কুরআনের মিন্নাত (ইহসান)। আর বিশেষ করে এ আয়াতের উল্লেখ মর্যাদার উপযুক্ততার জন্যই করা হয়েছে। কেননা, রাসুল পাক (ﷺ) হলেন সমগ্র জাহানের প্রথম সৃষ্টি। অতএব, সকল সৃষ্টিসমূহ তাঁর সৃষ্টির কারণেই সৃষ্ট। তিনি (সৃষ্টির দিক দিয়ে) সকলের মধ্যে সর্ব প্রথম, আর প্রেরণের দিক দিয়ে সর্বশেষ রাসুল। অতএব, সকল নবীর প্রতি যত, প্রকার জ্ঞান অবতীর্ণ হয়েছে, তা সবই হুজুর (ﷺ)কে প্রদান করেছেন। আর তিনি স্বীয় মুজিজাবলী দ্বারা সমুজ্জল এবং তাতে তাঁর গায়বের সংবাদও দেয়া হয়েছে। আর হুজুর (ﷺ) স্বীয় জাত সম্পর্কে অপ্রকাশ্য যে, তিনি আল্লাহ তায়ালার জাত ও তাঁর চিরস্থায়ী গুণাবলীর প্রকাশস্থল।
সুতরাং হুজুর (ﷺ) আল্লাহ তাবারাকা ওয়াতায়ালার অবগত করার মাধ্যমে প্রথম দিবস থেকে শুরু করে শেষ দিবস, পর্যন্ত যা কিছু হয়েছে, আর যা কিছু হবে সব কিছু সম্পর্কে অবগত হয়েছেন। সুতরাং আল্লাহ তায়ালা এ উজ্জ্বল পাঁচটি নাম দ্বারা তাঁর উপর ইহসান করেছেন আর তাঁকে প্রেরণের মাধ্যমে আমাদের উপর মহা অনুগ্রহ করেছেন। কেননা, তিনি এ সম্মানিত আয়াতের ভিত্তিতে নি’মাত (অনুগ্রহ বিশেষ)।
তৃতীয় জবাবঃ এতে কোন সন্দেহ নেই যে, রাসুলে পাক (ﷺ) আল্লাহ তায়ালার অনেক সুন্দরতম গুণবাচক নাম দ্বারা মহিমান্বিত হয়েছেন। আমাদের সরদার (আমার) সম্মানিত পিতা নির্ভরযােগ্য গ্রন্থ “সুরুরুল কুলুবে ফি যিকরিল মাহবুব”-এ সাতষট্টিটি নাম গণনা করেছেন। এ অধম “আল উরুসুল আসমাউল হুসনা ফিমা লিনাবিয়্যেনা মিনাল আসমায়িল হুসনা” নামক গ্রন্থে পছন্দনীয়। সংখ্যক বৃদ্ধি করেছি এবং এর গুঢ়রহস্য, মূল উৎস ও মুলতত্ত্ব বর্ণনা করেছি। প্রকাশ থাকে যে,
اَوَّل(আদি) آخر(অন্ত) ظاهر (প্রকাশ্য) باطن(গুপ্ত)। পবিত্রতম নামগুলাে আল্লাহ তায়ালা স্বীয় মাহবুব
(ﷺ)কে প্রদান করেছেন। এরপরও আমার জরুরী নয় এ পঞ্চ অদৃশ্যজ্ঞানের অংশসমূহের বিস্তারিত বর্ণনা করি, যা আওলিয়ায়ে কিরামগণ বলে গিয়েছেন। তাঁদের সরদার এবং তাদের উপর দরুদ ও সালাম এটা ঐ সমুদ্র যার সীমা জানা নেই। এ গুলাের গভীরতা পরিমাপ করতে চাইলে বাক্য শৃঙখলা থেকে বের হয়ে যাবে। আর যাকে কুরআন আরােগ্য দান করে নি, তার রােগ কোথায় গেলে আরােগ্য লাভ করবে? আমরা আল্লাহর নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করছি। প্রিয় হাবীব (ﷺ)-এর উপর দরুদ ও, সালাম।
- প্রথম খণ্ড সমাপ্তঃ
দ্বিতীয় ভাগ
আল্লাহর প্রশংসা! হক প্রকাশিত ও সত্য প্রতিভাত হয়েছে। হেদায়তের সূর্যের উপর কোন পর্দা অবশিষ্ট রইলােনা। এটা আমাদের ও মানুষের উপর আল্লাহর অনুগ্রহ। কিন্তু অনেক লােক শােকরিয়া জ্ঞাপন করেনা। আর যে ব্যক্তি এ নগন্য বান্দার বক্তব্যে এমন ব্যক্তির ন্যায় দৃষ্টিপাত করে যে গভীরভাবে চিন্তা ভাবনা, উপকারিতা হাসিল করতে চায়, প্রত্যক্ষদর্শী ও উপস্থিত হৃদয়ের সাথে শ্রবণ করে। তার নিকট মারমুখী গোয়ারের প্রত্যেক প্রশ্নের বিশুদ্ধ জবাব সুস্পষ্ট হয়ে যাবে ! কিন্তু বিশ্লেষণ অধিক উপকারী এবং বর্ণনার উপযুক্ত। সুতরাং আমরা যেন প্রতিটি প্রশ্নের উপর পৃথক পৃথক আলােচনা করি। আল্লাহর কাছেই সাহায্য প্রার্থী।
প্রথম প্রশ্নঃ
এ বক্তব্য সম্পর্কে সুশিক্ষিত ও বুদ্ধিজীবি’ যা আবুযযুকা সাহেব (আল্লাহ তায়ালা তাঁকে হেফাজত করুক) তার “আ’লামুল আযকিয়া” নামক হিন্দু স্থান থেকে সর্বশেষে প্রকাশিত পুস্তিকায় উল্লেখ করেছেন যে, আল্লাহ তায়ালা দরুদ প্রেরণ করুন তার উপর যিনি আদি অন্ত, প্রকাশ্য-অপ্রকাশ্য ও সকল বস্তু সম্পর্কে জ্ঞাত।
আমি বলছি, প্রথম জবাবঃ এ পুস্তিকার গ্রন্থকার (আল্লাহ তায়ালা তাঁকে হিফাজত করুক), আমার নিকট অভিমতের জন্য প্রেরণ করেছিলেন, আমিও তাতে অভিমত প্রদান করেছি, যা আপনাদের চক্ষুর সম্মুখে বিদ্যমান। যার বক্তব্য হলাে-“জায়েদের বক্তৃতা হক ও বিশুদ্ধ। আর বকরের ধারণা বাতিল ও পরিত্যক্ত। নিশ্চয়ই আল্লাহ তায়ালা স্বীয় হাবীব আকরাম (ﷺ)কে পূর্ব ও পরবর্তীদের সকল জ্ঞান প্রদান করেছেন। পূর্ব থেকে পশ্চিম, আরশ থেকে ফরশ পর্যন্ত সবই তাঁকে প্রত্যক্ষ করিয়েছেন, আসমান-জমিনের রাজত্বের প্রত্যক্ষদর্শী করেছেন। প্রথম দিবস থেকে শেষ দিবস পর্যন্ত সকল বর্তমান ভবিষ্যতের সব কিছুর জ্ঞান প্রদান করেছেন। যেমন বিজ্ঞ ও কামিল উত্তরদাতা প্রয়ােজনীয় প্রমাণাদী পূর্ণ বিশ্লেষণসহ সুস্পষ্টরূপে সীমা মুনিব তাঁকে হেফাজত করুন) বর্ণনা করেছেন। যদি তাও যথেষ্ট না হয়, তাহলে কুরআনে করীমই সাক্ষ্য, বিচারক। এবং হক-বাতিলের মধ্যে পার্থক্যকারী। আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন, “আমি আপনার উপর কিতাব অবতরণ করেছি, যা প্রত্যেক বস্তুর বিবরণ সম্বলিত।”
এ দলিলের শেষ পর্যন্ত যা আমি এ সম্মানিত অভিমত প্রার্থীর পক্ষে লিপিবদ্ধ ও বর্ণনা করেছি, আর সর্বসাধারণও যে হাঁটি হাঁটি পা পা করে সম্মুখে অগ্রসর হয়েছে সেও জানতে পারবে যে, আমি এ অভিমতে শুধুমাত্র এ উক্তিরই জিম্মা নিয়েছি, যে বিস্তারিত বিশ্লেষণ ও প্রয়ােজনীয় দলীলাদি উত্তরদাতা উল্লেখ করেছেন। আমি ঐ পুস্তিকার প্রতিটি বর্ণে দৃষ্টি দিইনি। এমনকি দাবীর পদ্ধতি তাতে যেভাবে বর্ণিত হয়েছে এর প্রতিও লক্ষ্য রাখা হয়নি। এ কারণে আমি নিজ বক্তব্যে দাবীর পদ্ধতি পৃথক পৃথকভাবে ব্যক্ত করেছি। আর যে ব্যক্তি জ্ঞানের খেদমত করেন অথবা বিবেক ও বিবেচনার (দৃষ্টিভঙ্গি) নিয়ে আলিমের সংস্পর্শে বসেন, তিনি অভিমত ও বিশুদ্ধকারীদের শব্দাবলীতে পার্থক্য করে নেন। কেননা, অভিমত প্রদানকারীরা যদি এটা বলে যে, আমরা এ পুস্তিকা অথবা ফতােয়া আদ্যোপান্ত চিন্তা-ভাবনা করে দেখেছি, যেমন গাঙ্গুহী সাহেব ‘বরাহীনে জ্বাতেয়ার’ অভিমতে লিপিবদ্ধ করেছেন। তাহলে তাঁরা এ পুস্তিকা কিংবা ফতােয়ায় যা কিছুর বর্ণনা রয়েছে সব বিশুদ্ধতার জিম্মা নিয়েছেন। আর সে সময় . তাতে যে সকল অর্থ ও বক্তব্য রয়েছে তা বই ঐ অভিমত দাতার, দিকে। সম্পর্কিত করা যাবে। আর যদি বলে, আমি এর সর্বত্রে দেখেছি এবং উপকার পেয়েছি, তাহলে নিঃসন্দেহে সে কিতাবের বিষয়ের সৌন্দর্য বর্ণনা করেছেন।
বাকী রইলাে, বর্ণনার পদ্ধতি, দলীলের বিশুদ্ধতা, শব্দাবলী এবং বক্তব্য; তাঁরা এগুলাে সম্পর্কে নিশ্ৰুপতা অবলম্বন করেছেন। অস্বীকার কিংবা স্বীকৃতি কোনটিই করেননি। অনুরূপ ফতােয়ার বিশুদ্ধতায় বিশুদ্ধকারীদের উক্তি যে, এর। হুকুম বিশুদ্ধ। বরং কখনাে একটি গুপ্ত দৃষ্টিতে এ দিকেই ইঙ্গিত করে যে, দলীল কিংবা শব্দাবলীতে কিছু অপছন্দনীয়তা রয়েছে তবুও শুধুমাত্র হুকুমকে বিশুদ্ধ বলেছেন অথবা মূল শব্দ বৃদ্ধি করে দিয়েছেন (যে, শব্দের হুকুম বিশুদ্ধ)। তাহলে। এটা ত্রুটির উপর অধিক দলীল হবে। দেখুন, মাওয়াহিব ও এর ব্যাখ্যাগ্রন্থ জুরক্বানী। এ চারটি নাম সম্বলিত একটি সুক্ষ্ম হাদিস ১ হযরত ইবনে আব্বাস
(رضي الله عنه) কর্তৃক বর্ণিত হয়েছছে।
(১) আল্লামা মােল্লা আলী ক্বারী (رحمة الله) শরহে শিফায়’ উল্লেখ করেন যে, তিলমাসানী হযরত ইবনে আব্বাস(رضي الله عنه) থেকে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, রাসুলে পাক (ﷺ) ইরশাদ করেন, জিব্রাইল (عليه السلام) আমার নিকট আগমন করলেন অতঃপর বললেন اسلام عليك يااول اسلام عليك آخر اسلام عليك ظاهر اسلام عليك باطن (হে আদি আপনার উপর সালাম,, হে অন্ত আপনার উপর সালাম, হে জাহির (প্রকাশ্য) আপনার উপর সালাম, হে বাতিন (অপ্রকাশ্য) আপনার উপর সালাম) আমি তা অস্বীকার করলাম এবং বললাম, এ ‘গুণ’ নিঃসন্দেহে সৃষ্টিকর্তার (আল্লাহ তায়ালার)। তখন জিব্রাঈল (عليه السلام) বললেন, হে মুহাম্মদ (ﷺ) নিঃসন্দেহে আমি আদিষ্ট হয়েছি যে, আমি আপনাকে এ গুণাবলী দ্বারা সালাম করি। তিনি (আল্লাহ তায়ালা) এ গুণাবলী দ্বারা আপনাকে মর্যাদাবান করেছেন এবং সকল নবী ও রাসুলদের থেকে এ গুণাবলী দ্বারা আপনাকে বিশেষত্ব প্রদান করেছেন। আপনার জন্য নিজের নামে নাম এবং তাঁর গুণাবলী থেকে গুণ বের করেছেন এবং আপনার নাম ‘আউয়াল' (প্রথম) রেখেছেন। কেননা, আপনি সৃষ্টিগতভাবে সকল নবী থেকে প্রথম। আর ‘আখির' (শেষ) রেখেছেন। কেননা, আপনি শেষ যুগে নবীদের শেষ এবং নবীদের সমাপ্তকারী (খাতামুল আম্বিয়া) শেষ যুগের উম্মতের জন্য। আর আপনার নাম ‘বাতিন রেখেছেন। এ জন্য যে, আল্লাহ তায়ালা আপনার নামকে তাঁর নামের সাথে উজ্জ্বল নূর দ্বারা আরশের পায়ায় আপনার পিতা আদম (عليه السلام)কে সৃষ্টি করার দু'হাজার বছর পূর্বে লিখে রেখেছেন। আমাকে আপনার উপর অসংখ্য দরুদ ও সালাম প্রেরণের নির্দেশ দিয়েছেন। অতএব, আমি আপনার উপর দরুদ প্রেরণ করছি। শেষ পর্যন্ত হাজার হাজার বছর পর আল্লাহ তায়ালা আপনাকে সু-সংবাদদাতা, ভীতি প্রদর্শনকারী এবং আল্লাহর নির্দেশে তাঁর দিকে আহবানকারী ও উজ্জল প্রদীপ হিসেবে প্রেরণ করেন।তিনি আপনার নাম জাহির’ রেখেছেন। কেননা, আপনার যুগে আপনার এ দ্বীনকে অন্যান্য সকল দ্বীনের উপর বিজয়ী করেছেন এবং আপনার শরীয়তের প্রশংসা করেছেন। সুতরাং এমন কেউ নেই যে আপনার উপর দরুদ প্রেরণ করছেন না। স্বয়ং আল্লাহও আপনার উপর দরুদ প্রেরণ করছেন। সুতরাং এ ভিত্তিতে আপনার প্রতিপালক মাহমুদ (প্রশংসিত) আর আপনি মুহাম্মদ (উচ্চ প্রশংসিত)। আপনার প্রতিপালক প্রথম, শেষ জাহির ও বাতিন। আর আপনিও প্রথম, শেষ এবং জাহির ও বাতিন। অতঃপর রাসুলে পাক (ﷺ) ইরশাদ ফরমান- ‘স মহান সত্ত্বার প্রশংসা যিনি আমাকে সকল নবীর উপর ফজীলত ও মর্যাদা প্রদান করেছেন। এমনকি আমার নাম ও গুণাবলীতেও মর্যাদা প্রদান করেছেন। দুররাতুল ফুয়াস ও আল জাওয়াহির ওয়াদ্দোরার গ্রন্থদ্বয়ে ইমাম আবদুল ওয়াহাব শেরানী (رحمة الله) তাঁর শেখ সৈয়দী আলী খাওয়াস (رحمة الله) থেকে বর্ণনা করেন।যা রাসুলে পাক (ﷺ) এর শান ও মাহাত্মে ভরপুর। তাতে উল্লেখ আছে-“তিনি আদি, তিনি অন্ত, তিনি প্রকাশ্য; তিনি অপ্রকাশ্য।
আল্লাহ তায়ালা হযরত জিব্রাইল (عليه السلام)কে রাসুলে পাক (ﷺ)-এর নিকট - প্রেরণ করলেন। তিনি তাঁকে (ﷺ) এ চারটি নাম সহকারে আহবান করলেন এবং এসব নামের প্রত্যেকের কারণও বর্ণনা করলেন। সুতরাং مَنْমানকে مَنِّ) (সম্বন্ধবাচক বলে স্বীকার করো, আর تسيقএর-(সম্বন্ধ) ওয়াল বাতিন পর্যন্ত সমাপ্ত হয়ে গেছে। বাকী রইলাে, আল্লাহ তায়ালার বাণী-‘তিনি প্রত্যেক বস্তু সম্পর্কে সম্যক জ্ঞাত আমি তােমাদের জিজ্ঞেস করছি, এ আয়াতের সম্পর্ক রাসুলে পাক (ﷺ)-এর দিকে করা বিশুদ্ধ কিনা? যদি প্রথমটি নেয়া হয়, তাহলে তা হুজুরের জন্য হতে পারে না। সুতরাং সমতা কিভাবে? আর যদি দ্বিতীয়টি বিশুদ্ধ বলেন, তাহলে (তিনি) এর সর্বনাম রাসুলের দিকে কেন বলছাে, আল্লাহর দিকে বলছাে না কেন? কেননা, এ বাক্যে আল্লাহ তায়ালার বর্ণনাই উপরে . উল্লিখিত হয়ছে। তাহলে এখন অর্থ দাঁড়ায়-‘আল্লাহ তায়ালা দরুদ প্রেরণ করছেন তার উপর যিনি প্রথম, শেষ, প্রকাশ্য ও অপ্রকাশ্য এবং আল্লাহ তায়ালা প্রত্যেক বিষয়াদি সম্পর্কে অবহিত।
এ বাক্যের উপর তা শেষ করেছেন যেভাবে আল্লাহ তায়ালা স্বীয় ইরশাদ!! ولكن رسوالله (কিন্তু তিনি আল্লাহর রাসুল এবং সর্বশেষ নবীকে তাঁর বাণীর وهو بكل شئ (তিনি সর্ববিষয়ে পরিজ্ঞাত।) মাধ্যমে সমাপ্ত করেছেন।
যদি আপনারা এটা বলেন যে, এতে সর্বনামসমূহ বিক্ষিপ্ত হবে, আমি বলতে চাই-কখনাে না। বরং কথা হলাে, পূর্বোক্ত বাক্য হুজুর (ﷺ)-এর শানের উপযােগী নয়, যেমন আপনারা ধারণা করেছেন। সুস্পষ্টতর কারণ হলাে যে, এ সর্বনাম হুজুর (ﷺ)-এর জন্য নয়। আপনারা কি আল্লাহ তায়ালার এ ইরশাদ শুনেননি--- নিশ্চয়ই আমি আপনাকে উপস্থিত, পর্যবেক্ষণকারী (হাজের-নাজের) সুসংবাদদাতা ও ভয় প্রদর্শনকারী রূপে প্রেরণ করেছি, যেন তােমরা আল্লাহ ও রাসুলের উপর বিশ্বাস স্থাপন করাে এবং রাসুলের সম্মান ও শ্রদ্ধা প্রদর্শন করো, আর সকাল সন্ধ্যা আল্লাহর উপর তাসবীহ পাঠ করো।) এখানেও এর সর্বনাম রাসুলের দিকে আর এর সর্বনাম আল্লাহর দিকে। একারণে ক্বারীগণ توقروه এর উপর থেমেছেন। অতএব, সর্বনামসমূহের বিক্ষিপ্ততা আবশ্যকীয় হয়নি। একারণে পবিত্রতা তার জন্য যিনি ব্যতীত কেউ তাসবীহ-এর উপযােগী নন। সুতরাং তা রাসুলে পাক (ﷺ)-এর জন্য হতে পারে না। স্পষ্টতর কারণ হবে যে, এ সর্বনাম আল্লাহ তায়ালার জন্য। সুতরাং তােমাদের কি হয়েছে, কি হুকুম প্রয়ােগ করবে?
চতুর্থ জবাবঃ
আমি স্বীকার করেছি যে, লেখক স্বীয় নিয়তে সকল জমীর (সর্বনাম) রাসূলে পাক (ﷺ)-এর দিকে প্রত্যাবর্তন করেছেন। অথচ, তােমাদের কারাে হৃদয়ে হুকুম প্রয়ােগের কোন অধিকার নেই। তাহলে আমাকে এখন বলাে, কিভাবে এ কারণে লেখককে ইসলাম অথবা আহলে সুন্নাতের বহির্ভূত বলে হুকুম প্রয়ােগ করা যাবে? এ কারণে যে, হুজুরে সৈয়দে আলম (ﷺ) জ্ঞানী হবার ব্যাপারে মুসলমানতাে দুরের কথা কোন কাফের তাে অস্বীকার করতে পারে না, যে ব্যক্তি হুজুর নবীয়ে আকরাম (ﷺ)-এর অবস্থাদি সম্পর্কে অভিজ্ঞতা অর্জন করতে পেরেছে।
এখন বাকী রইলাে কুলু শাঈ' (সকল বস্তু) শব্দ। আমি বলছি, এর বিভিন্ন ক্ষেত্র রয়েছে এবং এর প্রতিটি ব্যবহার কুরআনে করীমে এসেছে, আর আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন-“আল্লাহ প্রত্যেক বস্তু সম্পর্কে জ্ঞানী।” এটা কুলু’ (শব্দটি) ওয়াজিব’, মুমকিন ও মহাল সকল জ্ঞানকে অন্তর্ভুক্ত করে। আর এটা ঐ عام (ব্যাপক শব্দ) যা উসুলবিদদের এ বক্তব্য দ্বারা খাস (নির্দিষ্ট) যে, কোন ব্যাপক শব্দ এমন নেই যাতে কিছু না কিছু খাস করা হয়নি। আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেছেন-“নিশ্চয়ই আল্লাহ সকল বস্তু সম্পর্কে শক্তিমান।” এখানে সকল অসম্ভব বস্তু শামিল রয়েছে তা সৃষ্ট হােক কিংবা নাই হােক। আর অপরিহার্য ও অসম্ভবের দিকে তার কোন পন্থা নেই। যেমন সুবহানুস সুববুহু আন আইবে কিবে মাকুবুহু’ গ্রন্থে আমি এর তাহকীক ও ব্যাখ্যা করেছি। এ কারণে যে, যদি অপরিহার্যের উপর শক্তিমান হয়, তাহলে আল্লাহই অবশিষ্ট থাকে না। যেমন উপরে বর্ণিত হয়েছে। অথবা যদি অসম্ভবের উপর শক্তিমান হয় তাহলে ঐ অসম্ভব বস্তুর ধ্বংস হওয়াই স্বাভাবিক। অতএব, এর উপরও শক্তিশালী হওয়া, তা ধ্বংস হওয়ার সম্ভব্যতাকে অপরিহার্য করে দেয়। সুতরাং সে সময় তার অস্তিত্ব স্থায়ী হন। আর যিনি স্থায়ী নন তিনি খােদাই হতে পারেন না। ইরশাদ হচ্ছে-‘নিশ্চয়ই আল্লাহ তায়ালা সকল বস্তু দেখছেন”। এ বাক্যে সকল অস্তিত্বময় বস্তু শামিল রয়েছে। যাতে আল্লাহর জাত, সিফাত ও সম্ভাব্যময় সকল বস্তুই অন্তর্ভুক্ত রয়েছে, অসম্ভব ও অস্তিত্বহীন বস্তু তাতে অন্তর্ভুক্ত নয়। কেননা, অস্তিত্বহীন বস্তু প্রত্যক্ষ করার উপযােগী নয়। যেমন আকাঈদের গ্রন্থাব্দীতে আমাদের ওলামায়ে কিরাম এর ব্যাখ্যা করছেন। তন্মধ্যে সৈয়্যদী আবদুল গণী নাবলুসী “মােতালেবুল। ওয়াফিয়ায়” উল্লেখযােগ্য।
আমি বলছি, দেখছােনা যার এমন বস্তু পরিদৃষ্ট হয়, যা বস্তুতঃ বিদ্যমান। যেমন ঘুর্ণিমান অগ্নিশিখায় কারাে মাথা ঘুরার দ্বারা গৃহও ঘুরাটা বলা তাকে এটাই বলা হবে যে, তার দৃষ্টি ভুল করেছে এবং যে বস্তুসমূহ দৃষ্ট হয়েছে, তা দৃষ্টির ভুলই বলা হবে। আর আল্লাহ তায়ালা ভুল-ত্রুটি থেকে সম্পূর্ণ পবিত্র। আরাে ইরশাদ করেন“আল্লাহ প্রত্যেক বস্তুর সৃষ্টিকর্তা”। অতএব, এটা শুধুমাত্র ঐ সম্ভাব্য বস্তুকে শামিল করবে, আর না ঐ সম্ভবপর বস্তু যা না কখনাে অস্তিত্ব লাভ করেছে এবং না অনন্তকাল পর্যন্ত কখনাে অস্তিত্ব লাভ করবে সেগুলােও শামিল করে নিবে। ইরশাদ হয়েছে-“প্রত্যেক বস্তু আমি সুস্পষ্ট পূর্ববর্তী কিতাবে গণনা করেছি। এখানে শুধু ধ্বংসশীল বস্তুই অন্তর্ভূক্ত, যা আদি থেকে অন্ত পর্যন্ত। সংঘটিত হয়েছে এবং হতে থাকবে, আর না তা অসীমকে অন্তর্ভুক্ত করবে, কেননা অসীমকে সসীম দ্বারা পরিবেষ্টন করা সম্ভব নয়। যেমন এর বর্ণনা গত হয়েছে।
এখন দেখুন! পাঁচই স্থানে একই শব্দ। আর প্রত্যেক স্থানে আ’মই (ব্যাপকতাই) উদ্দেশ্য। কিন্তু প্রত্যেক বাক্য এতটুকু বস্তুকে পরিবেষ্টন করেছে যা এর সীমায় রয়েছে, ঐ বস্তু নয় যা এর বহির্ভূত এবং এর উপযুক্ততা রাখেনা। আর তাতে কোন জ্ঞানীর সন্দেহ থাকতে পারেনা। সুতরাং বিজ্ঞ লেখক (উত্তরদাতা) কিভাবে সন্দেহ করবে? আমি এর বিশ্লেষণ যথাযথরূপে প্রমাণ করে এসেছি যে, কুরআন করীম ও বিশুদ্ধ হাদীসমূহই সাক্ষী যে, আদি থেকে অনন্তকালের সকল বর্তমান ভবিষ্যতের জ্ঞান অর্থাৎ লাওহে মাহফুজে লিপিবদ্ধ সকল জ্ঞান আমাদের প্রিয় নবী
(ﷺ)-এর অর্জিত হয়েছে। ওলামায়ে কিরাম এর বিষদ ব্যাখ্যা প্রদান করেছেন। তন্মধ্যে সুপ্রসিদ্ধ আইন বিশারদ, যুগশ্রেষ্ট ইসলামী দার্শনিক, আইন গ্রন্থ প্রণেতা আল্লামা আলাউদ্দীন ‘দুররে মুখতারে উল্লেখ করেন-“যে নাম সৃষ্টিকর্তা ও সৃষ্টির মধ্যে একই অর্থবােধক, যেমন আলী, রশীদ ইত্যাদির ব্যবহার সৃষ্টির উপরও প্রযােজ্য। মাখলুকের জন্য এর অর্থ অন্যটিই নেয়া হবে, এ গুলাে ব্যতীত যা আল্লাহর উদ্দেশ্য হবে”। তাহলে এ উক্তি-“তিনি প্রত্যেক বস্তু সম্পর্কে জ্ঞানের দিকে সম্পর্ক করা যাবে। অতএব, তখন এর দ্বারা প্রথম অর্থই উদ্দেশ্য হবে। আর যদি নবী করীম (ﷺ) এর দিক নিসবত করা হয় তাহলে এর পঞ্চম অর্থ হবে। এতে না কোন মন্দ রয়েছে আর না কোন নিষেধাজ্ঞা।
পঞ্চম জবাবঃ
আমাদের সরদার, শেখ আবদুল হক মােহাদ্দেস দেহলভী বুখারী (রহঃ), যিনি শীর্ষস্থানীয় ওলামায়ে কিরামের অন্তর্ভুক্ত, সর্বত্র যিনি পরিচিত ও প্রসিদ্ধ, যার সুবাসে নগর ও ময়দান সুরভিত। নিশ্চয়ই আমাদের সরদার মক্কার ওলামায়ে কিরাম যার মর্যাদা, সম্মান ও উচ্চ মর্যাদা সম্পর্কে সচেতন, যার লিখিত গ্রন্থাবলীর সংখ্যা অনেক। দ্বীন ও শরীয়তে যাঁর গ্রন্থের উপকারীতা
অতুলনীয়। তন্মধ্যে -
(১) লুমআতুত তানকীহ শরহে মিশকাতুল মাসাবীহ
(২) আশআতুল লুমআ'ত যা চার খন্ডে বিভক্ত
(৩) জজবুল কুলুব
(৪) শরহে সাফরুস্সা'দাত যা দু’খন্ডে বিভক্ত
(৫) ফতহুল মান্নান ফি তায়ীদে মাজহাবিন নুমান
(৬) শরহে ফতহুল গায়ব। আর রাসুলে সৈয়দে আলম
(ﷺ)-এর জীবন চরিত বিষয়ক গ্রন্থ
(৭) মাদারেজুন্নবুয়ত যা দুই খন্ড
(৮) আখবারুল আখইয়ার
(৯) আদাবুচ্ছালেহীন
(১০) সংক্ষিপ্ত উসুলে হাদীস, এছাড়া আরাে অনেক গ্রন্থ রয়েছে। তাঁর ওফাতের তিনশ বছর গত হয়েছে। তাঁর মাজার দিল্লীতে অবস্থিত, যা জিয়ারত করা হয়। তা থেকে ফয়েজ ও বরকত হাসিল করা হয়।
এ মহাত্মা ‘মাদারেজুন্নবুয়তের খুতবাতে (১) এ আয়াত দ্বারা আরম্ভ করেছেন---- ----(তিনিই আদি, তিনি অন্তু, তিনি প্রকাশ্য, তিনি অপ্রকাশ্য এবং তিনিই সকলবস্তু সম্পর্কে জ্ঞাত) এবং বলেছেন, যেভাবে এ বাক্যগুলাে আল্লাহ তায়ালার প্রশংসা ও গুণকীর্তনে ভরপুর যে, আল্লাহ তায়ালা কুরআনে করীমে এ আয়াতে স্বীয় গুণকীর্তন বর্ণনা করেছেন, অনুরূপ রাসুলে করীম
(ﷺ)-এর প্রশংসা ও শান এতে বিদ্যমান। তার প্রতিপালক তাঁর এ নামগুলাে রেখেছেন এবং ঐ গুণাবলী দ্বারা তার প্রশংসা করেছেন। কুরআন মজীদ ও হাদীসে কুদসীতে আল্লাহ তায়ালার কতই সুন্দরতম নাম রয়েছে। যদ্বারা তিনি স্বীয় হাবীব (ﷺ)-এর নামও রেখেছেন। যেমন নুর, হক, হালীম, মুনির, মুহায়মিন, ওলী, হাদী, রাউফ, রাহীম।
টিকা_______________________
🔺(১) আর আমি তােমাদের জন্য আরাে একটি স্বাদ ও মিষ্টিময় বর্ণনা বৃদ্ধি করছি। আল্লামা শেখ আকবর (رحمة الله) ফতুহাতে মককীয়াহ ১ম খন্ড ১৭৭ পৃঃ দশম পরিচ্ছদে উল্লেখ : করেন 'রাসুলে পাক (ﷺ) এর প্রথম নায়েব ও খলীফা হলেন হযরত আদম (عليه السلام)। অতঃপর মানব প্রজন্ম বৃদ্ধি হতে লাগলাে এবং বংশ পরম্পরা চলতে লাগলো। প্রত্যেক যুগে খলীফা নির্ধারণ হতে লাগলাে, অবশেষে রাসুলে পাক (ﷺ) এর পবিত্র শরীর মােবারক সৃষ্টির যুগ এসে পৌছালো। তিনি উজ্জ্বল সূর্যের ন্যায় প্রকাশিত হলেন। প্রত্যেক নুর তাঁর নুরে প্রবেশ করলাে এবং প্রত্যেক নির্দেশ তার নির্দেশে উহ্য হয়ে গেলো। আর সব শরীয়ত তাঁর শরীয়তের দিকে চলে আসলো। আর তাঁর নেতৃত্ব, যা লুকায়িত ছিলাে,
টিকা_______________________
এগুলাে ছাড়াও চারটি নাম আওয়াল-আখির, জাহির-বাতিনও এর অন্তর্ভূক্ত। অতঃপর এ নামগুলাের কারণ বর্ণনা আরম্ভ করেছেন। অতঃপর বলেছেন “তিনি প্রত্যেক বস্তু সম্পর্কে জ্ঞানী।” রাসুলে সৈয়দে আলম (ﷺ) এর নিকট আল্লাহ তায়ালার সকল সত্ত্বার শান, মাহাত্ম্য, গুণাবলীর আহকাম, তাঁর নাম, কর্ম ও আসার (নিদর্শনসমূহের উদ্দেশ্য এবং সকল বস্তুর জ্ঞান রয়েছে এবং তিনি সব কিছুর আদি অন্ত, জাহির-বাতিনের জ্ঞানসমূহকে পরিবেষ্টন করে আছেন। তা এ আয়াতের ভিত্তিতে যে, “প্রত্যেক জ্ঞানীর উপর একজন জ্ঞানী রয়েছেন। তাঁর উপর সবচেয়ে উত্তম দরুদ ও পরিপূর্ণ সালাম। যদি এটা শরীয়তে পাপ হয়, তাহলে এ মহান ইমামের ১ পাপ উত্তরদাতার চেয়েও অনেক বেশী।
তা প্রকাশিত হয়ে গেলো। সুতরাং তিনি আদি, তিনি অন্ত, তিনিই প্রকাশ্য এবং তিনিই অপ্রকাশ্য এবং তিনি সকল বিষয় সম্পর্কে অবহিত। কেননা, তিনি (ﷺ) ইরশাদ করেছেন- ‘আমাকে সর্ব বিষয়ের জ্ঞান প্রদান করা হয়েছে। তিনি (ﷺ) স্বীয় রবের ইরশাদ বর্ণনা করেন-‘তিনি স্বীয় কুদরতী হস্ত আমার উভয় কাঁধের মধ্যখানে রেখেছেন অতঃপর আমি এর শীতলতা স্বীয় বক্ষে অনুভব করেছি। সুতরাং আমি পূর্বাপর সকল কিছুর জ্ঞান হাসিল করেছি'। অতএব, তার জন্য আল্লাহ তায়ালার গুণে গুণান্বিত পদ হাসিল হয়েছে। তিনি শুরু, তিনি শেষ, তিনি জাহির তিনিই বাতিন এবং তিনিই সকল বস্তু সম্পর্কে জ্ঞানী। এ আয়াত সুরা হাদীদে আরাে কঠিনতার সাথে এসেছে। আর মানুষের জন্য অসীম উপকার এ জন্য যে, হুজুর (ﷺ) তলােয়ারের সাথে প্রেরিত হয়েছেন এবং তাঁকে সমগ্র জাহানের করুণারূপে প্রেরণ করা হয়েছে।
টিকা_______________________
(১) আমি আরাে একটি তিক্ত ও কঠোর বিপদ বৃদ্ধি করেছি। আল্লামা নিজামুদ্দীন নিশাপুরী (رحمة الله) তাফসীর ‘গরায়েবুল কুরআন ওয়া রগায়েবুল ফোরকৃানে আল্লাহ তায়ালার বাণী آية الكرسی
(আয়াতুল কুরসীতে) উল্লেখিত সৰ্বর্নামসমূহ রাসুলে পাক (ﷺ)-এর দিকে বলে উল্লেখ করেছেন। (৩য় খন্ড ২৪ পৃঃ) যেখানে রয়েছে, সেখানেওاستشناء(পৃথকীকরণ)। রাসুলে পাক (ﷺ)-এর দিকে প্রত্যাবর্তিত, যেমন ইরশাদ হয়েছে কে আছে কিয়ামত দিবসে তাঁর (আল্লাহ) সমুখে শাফায়াত করবে তাঁর বান্দা মুহাম্মদ (ﷺ) ব্যতীত? তিনি শাফায়াতের ব্যাপারে অনুমতিপ্রাপ্ত। সত্য অঙ্গীকার যখন নিকটবর্তী যে, আপনার প্রতিপালক আপনাকে অতিসত্ত্বর মকামে মাহমুদ প্রদান করবেন। يعلم (তিনি জানেন। অর্থাৎ মুহাম্মদ (ﷺ) জানেন) (যা তাঁর সম্মুখে রয়েছে) মাখলুক সৃষ্টির পূর্বের প্রারম্ভিক কার্যদি। (যা তাঁর পিছনে রয়েছে) কিয়ামতের অবস্থাদি সম্পর্কে তাঁর জ্ঞান থেকে কোন বস্তু তারা পরিবেষ্টন করতে পারেনা এবং নিশ্চয়ই তিনি তাদের অবস্থাদি, জীবন চরিত, কার্যাবলী ও ঘটনাবলী সম্পর্কে জ্ঞাত আছেন। আর আপনার কাছে আমি সবই বর্ণনা করবাে নবীগণের সংবাদ। আর তিনি (নবীয়ে করিম (ﷺ)) আখেরাতের সকল কার্যাবলী, জান্নাত ও দোযখের অবস্থাদি সম্পর্কে অবগত আছেন, অথচ লােকেরা তা থেকে কিছুই জানেনা। (কিন্তু তিনি (নবী) যদি ইচ্ছে করেন) তাদের এ সম্পর্কে জ্ঞাত করান। এই (তাঁর সিংহাসন সমস্ত আসমান ও যমীনকে পরিবেষ্টন করে আছেন) আর স্বীয় মর্যাদা সহকারে একটি আকৃতির ন্যায় যা আসমান ও জমীনের মধ্যবর্তী ঝুলানাে। মুমিনের হৃদয়ের প্রশস্ততার সাথে সংযুক্ত। "(আর সেগুলােকে ধারণ করা তাঁর পক্ষে কঠিন নয়) অর্থাৎ মানুষের আত্মার পক্ষে আসমানসমূহ ও জমীনের রহস্য ধারণা করা কঠিন নয়। এবং তিনি আদমকে সকল কিছুর নাম শিখিয়েছেন। (সংক্ষেপিত) সুতরাং তাঁর উপর হুকুম প্রয়ােগ করাে, তিনি কি তােমাদের মতে কাফের অথবা সুস্পষ্ট ভাল আসে বসে ভ্রষ্টতার মধ্যে রয়েছেন?
আমি বলছি আমার অন্তরে ইলকা করা হয়েছে যে, এর উপর তাদের বর্ণনা এ যে, আল্লাহ তায়ালা এ দিকে ইঙ্গিত করেছেন যে, মুহাম্মদ (ﷺ) যিনি শাফায়াতের অনুমতি প্রাপ্ত, তিনিই এর দরজা উন্মুক্তকারী। তিনি ছাড়া কি অন্য কে। তৎপর প্রশ্নকারী উভয়কে খাস করার হিকমত সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলে উত্তর প্রদান করা হয়েছে, 'আল্লাহর দরবারে শাফায়াতকারীর অন্য শাফায়াতকৃত ব্যক্তির প্রত্যেক ঐ বিষয় যা সংঘটিত হয়েছে, আর যা সংঘটিত হবে এবং তার ঈমানী স্তর, বাহ্যিক ও অভ্যন্তরীন কর্মসমূহ সম্পর্কেও অবগত হতে হবে, যেন প্রত্যেক ব্যক্তি যারা শাফায়াত করার উপযােগী তারা ঐ ব্যক্তিকে চিনে নেয় কার জন্য শাফায়াত প্রয়ােজন এবং সে প্রকৃতপক্ষে কোন প্রকার শাফায়াতের মুখাপেক্ষী। আল্লাহর দরবারে তার জন্য কোন ধরনের শাফায়াত প্রার্থনা করা উপযুক্ত। কেননা, শাফায়াতের অনেক শ্রেণী বিভাগ রয়েছে এবং এর অনেক স্থান ও অবস্থা রয়েছে। আর যে এ সম্পর্কে জ্ঞাত হবে না সে এ কর্মের উপযােগী নয়। তিনি আরাে বলেন, আল্লাহ তায়ালার এ বাণী-“কেউ তাঁর সম্মুখে কথা বলতে পারবেনা কিন্তু দয়াময় (আল্লাহ) যাকে অনুমতি প্রদান করেন এবং তিনিই সঠিক বলবেন।” আর মুহাম্মদ (ﷺ) সমগ্র জাহানের সকল বস্তু পরিবেষ্টনকারী। নিঃসন্দেহে তিনি সমগ্র জাহান সম্পর্কে জানেন এবং ঐ সকলবস্তু যে সম্পর্কে তিনি এ মুহুর্তে জানেন।يعلم ما بين ايدهيم (তিনি জানেন যা তাঁর সমুখে বর্তমান রয়েছে) ঐ বস্তু থেকে যা সংঘটিত হবে, আর যা তার পিছনে রয়েছে ঐ বস্তু থেকে যা পরকাল পর্যন্ত ঘটতে থাকবে স্বীয় পরাক্রমশালী মহাজ্ঞানী প্রতিপালকের অবগত করানাের দ্বারা। কেননা, ما كان وما يكون পূর্বাপর সকল বস্তুর জ্ঞান সম্পর্কে অবগত করানাের পূর্বে রাসুলে পাক (ﷺ)-এর জন্য খাস ছিলো। যেমন পূর্ববতী হাদীসে গত হয়েছে। অর্থাৎ আল্লাহ তায়ালা আমার উপর (সব কিছু) প্রকাশ করে দিয়েছেন যেভাবে আমার পূর্বে সকল নবীর জন্য প্রকাশ করে দেয়া হয়েছিলো। তখন এভাবেই জবাব প্রদান করা হয়েছে যে, তাঁর শিক্ষা দেয়া ও সাহায্য ব্যতীত অবগত হননি। এগুলাে সত্ত্বেও তিনি তার অনুরূপ পরিবেষ্টন করেন নি। আর না তারা তাঁর (আল্লাহর) অনুরূপ জানতে" পেরেছে। এছাড়াও নিশ্চয়ই তাদের জন্য রয়েছে অনুগ্রহ ও পূর্ণতা।
(রাসুলে পাক (ﷺ)-এর জ্ঞান সীমা থেকে তারা কোন কিছুকেই পরিবেষ্টন করতে পারে না) (কিন্তু যতটুকু তিনি ইচ্ছা করেন)। কবি কতই চমৎকার বলেছেন- “(তিনি সম্মানের সূর্য, (আম্বিয়ায়ে কিরাম (عليه السلام)) তার নক্ষত্রসমূহ যে, অন্ধকার লােকদের জন্য স্বীয় জ্যোতিসমূহ প্রকাশ করেন)।” তিনি সৃষ্টির মূল আদি হওয়ার কারণে, আর তাতে তার উপর ভরসা, তিনিই পূর্ণ ও পরিপূর্ণ। তা তার, জন্য নিদিষ্ট, অন্য কারাে জন্য নয়। নিঃসন্দেহে বলা হয়েছে------------(যাদের জন্য সুপারিশ করা হয়েছে। এর মধ্যে সকল আদি ও অন্ত থেকে এমন বিপুল জনগােষ্ঠী রয়েছে যে, সংখ্যা তা পরিবেষ্টনে অক্ষম। মুহাম্মদ (ﷺ) যিনি একজন ব্যক্তিত্ব যাঁর হৃদয় কখনাে সংকীর্ণ হয়, তার থেকে এক ক্ষুদ্র শ্রেণী উপকৃত হয় এবং বাকীরা ধ্বংস হয়ে যায়। এর উত্তরে বলা হয়েছে যে, তাঁর হৃদয় কিভাবে সংকীর্ণ করবেন? অথচ وسع كرسيه السموت والارض(নিঃসন্দেহে তার কুরসী আসমান ও জমীনকে পরিবেষ্টন করে আছে)। তােমাদের কি ধারণা তাঁর হৃদয় মােবারক সম্পর্কে যাতে আরশের গম্বুজ মশার ন্যায়, আসমান ও জমীনের মধ্যখানে শূণ্যে উড়ছে, তখন তা যেন বলা হয়েছে হ্যা। কিন্তু আমরা ভয় করছি সম্ভবতঃ কেউ এ মহান আধিক্যকে ভুলে যাবে, যা তাদের জন্য ভুলকারী সাব্যস্ত হবে। আমি উত্তরে বলবাে, কিভাবে তাদের কেউ তা ভুলে যাবে? আর তা হলাে তাই যা তার পক্ষে ধারণ করা কঠিন নয় (উভয় আসমান ও জমীনের হেফাজত) ঐগুলাে সহ সৃষ্টিসমূহে যা ঐ দু'টিতে রয়েছে। আর অনুগ্রহ করেছেন তাদের উপর যাদের সুপারিশ করা হয়েছে। তা এমন এমনভাবে পুনরাবৃত্তি করেছেন, যা আল্লাহ ব্যতীত কেউ বেষ্টন করতে পারেন না। শেষ পর্যন্ত বক্তব্য পূর্ণ হলাে ও সন্দেহ দূরিভূত হয়ে গেলাে এবং তাদের জন্য পরিপূর্ণ আনন্দ হাসিল হলাে। তিনি ও তাঁর বংশধরদের উপর সবচেয়ে উত্তম
স্মর্তব্য যে, আমি এর দাবীদার নই যে, এটাই এ আয়াতের অর্থ, না মুফাসসির (رضي الله عنه) আয়াতের অর্থ তা নিয়েছেন। কিন্তু তা প্রকৃত পক্ষে ঐ ইঙ্গিতসমূহের অন্তর্ভুক্ত যা আহলে রাব্বানী ও আহলে বাতিনের জন্য প্রসিদ্ধ, আল্লাহ তায়ালা আমাদের এর বরকত দ্বারা উপকার করুন। যেমন তাদের বক্তব্য বিশুদ্ধ হাদীসে যে, ফিরিস্তা ঐ গৃহে প্রবেশ করেনা, যে গৃহে কুকুর রয়েছে। কেননা, হৃদয়ের গৃহ ও ফিরিস্তা আল্লাহর দুতি, আর কুকুর হলাে, কামভাব। আর তারা কখনাে প্রকাশ্য অর্থকে অপ্রকাশ্য অর্থের ন্যায় অস্বীকার করেনা। তাঁদের এ কর্ম শুধুমাত্র ঈমান ও পরিচয়ের পরিপূর্ণর্তা যেমন আল্লামা তাফতাজানী
(رحمة الله) শরহে আকায়েদ' গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন। অনেক সময় এমন অভিমত নেয়া হয়, যা : আহলে জাহিরের দৃষ্টিতে অসম্ভব ও অদ্ভুদর। অতএব, তারা তাদের উপর ত্রুটি ও মিথ্যার অপবাদ দিচ্ছে। এটা বিনা কারণে কথায় কথায় অভিশাপ দেয়া ব্যতীত অন্য কিছু, নয়। আর এক বস্তু, অপর বস্তুর সাথে বর্ণিত হয়, আর হৃদয় একটি অক্ষর দ্বারাও নসিহত হাসিল করে। আর এটা বেশী দূরে নয় যে, তাদের প্রতিভা পরিবর্তন হয়.লাইলী, সালমা, ইজ্জা এবং সবিনা ইত্যাদি স্বাপ্নিক কবিদের গজল, কথন ও শ্রবণের দ্বারা, যা তারা তাদের প্রেমিকাদের সম্পর্কে লিখেছে।
হুজুর (ﷺ) ইহসানের তাফসীরে ইরশাদ করেন-‘আল্লাহর ইবাদত (এভাবেই) করবে যেন তুমি তাঁকে দেখতে পাচ্ছাে, তুমি যদিও তাঁকে দেখতে না পাও, অবশ্যই তিনি তােমাকে দেখছেন। কতেক আরিফ দ্বিতীয় (তুমি তাঁকে দেখছাে)-এর (তাফসীরে) নিশ্ৰুপ রয়েছেন, এ অর্থের ভিত্তিতে যে, তুমি যদি স্বীয় সত্ত্বাতে ধ্বংস হতে পারাে তবে তুমি তাঁকে দেখতে পাবে এবং আল্লাহ তায়ালাকে পর্যবেক্ষনের স্থান পর্যন্ত পৌঁছে যাবে। কেননা, তােমার সত্ত্বাই তােমার এবং আল্লাহর পর্যবেক্ষণের মধ্যকার পর্দা।
এর উপর ইমাম ইবনে হাজর আসক্বালানী (رحمة الله) এ আপত্তি করেছেন যে, যদি মর্মার্থ তাই হয় যা তাঁরা বলেছেন, তাহলে এর আলিফ বিলুপ্ত সহকারে হতাে আর خانه يوك উক্তি বিলুপ্ত হয়ে যেতো। কেননা, সে সময় এর পূর্বের সাথে কোন সম্পর্ক থাকেনা। অতঃপর হাদীস রেওয়াতের শব্দাবলী পরস্পর নেয়া হলে এ বিশ্লেষণের কোন অবকাশ থাকে না। যেমন كهمس এর রেওয়ায়েত (নিঃসন্দেহে যদিও তুমি তাকে দেখছাে না, কিন্তু তিনি তােমাকে দেখছেন)।
আর এর জবাব শেখ মােহাক্কেক আবদুল হক মুহাদ্দিস দেহলভী (رحمة الله) “লুম’আতুত তানকীহ ফি শরহে মিশকাতিল মাসাবীহ” গ্রন্থে এভাবেই দিয়েছেন যে-জযম বিশিষ্ট মুদারে’তে (বর্তমান ভবিষ্যকাল জ্ঞাপক ক্রিয়াপদ) একটি প্রচলিত অভিধানে আলিফ রয়েছে। এ ভিত্তিতে ইবনে কাসীর থেকে কুমবুলের বর্ণনা আল্লাহর বাণীতে (এভাবে রয়েছে) আর আল্লাহ জায়লাির বাণী কবির উক্তি الم ياتيك এছাড়াও মাজী যখন شوط হয় তখন جواء তে জযম হওয়া আবশ্যক হয় না, যদিও অর্থ অর্থাৎ যেভাবে এখানে রয়েছে। আরخانه يوك এর মিলন দর্শনের সম্ভাব্যতা বর্ণনার জন্য,। যেমন প্রমাণ করা হয়েছে। কালাম শাস্ত্রে আল্লাহর দর্শনের সম্ভাব্যতা অর্থাৎ আমরা তাঁকে দেখা কোন দিক, স্থান ও (কিরণ বিকরিত হওয়া) ব্যতীত। দ্বিতীয় রেওয়ায়েত সমুহ روايت بالمعنی (হাদীস বর্ণনাকারীর বুঝ যা বর্ণনাকারী হাদীস দ্বারা বুঝেছেন) হওয়াও জায়েজ। এটাকে হাদীসের তাতীল (ব্যাখ্যারই) বলা যায়, মূল হাদীস নয়। বরং আরবের ওলামাদের মতে, তা (হাদীসের) মর্মার্থই। নিশ্চয় এটা একটি বস্তু যা প্রকাশ হয়ে যায় তাদের অপ্রকাশ্যতার উপর মােহনী শক্তি ও ধ্বংসের অবস্থার অগ্রগতির কারণে তাদের হৃদয়ের উপর, এটা এ বর্ণনায় এ শব্দের অন্তর্ভুক্ত নয়। আল্লামা আলী ক্বারী (رحمة الله) মিরকাতে’ এভাবেই খন্ডন করেছেন। কিন্তু প্রথম ও তৃতীয় বক্তব্যের জবাবে তিনি বিস্তারিত আলােচনা করেছেন। দ্বিতীয় জবাব সুস্পষ্টরূপে বর্ণনা করেন নি। যেখানে তিনি বলেছেন, যা বলা হয়েছে যে, আলিফের সাথে লিখন পদ্ধতি (রসমে খত) অনুকুল নয়। সুতরাং তা একটি অভিধানের ভিত্তিতে বাক্য থেকে পরিহার করা হয়েছে। অথবা হরকতের আধিক্যের অথবা (উদ্দেশ্য) বিলুপ্ত করার মাধ্যমে পরিহার করা হয়েছে। আর তা হলাে
(انت)'আনতা। আর জুমলায়ে ইসমিয়াহ جملة اسميةথেকে فا বিলুপ্ত করাও জায়েজ, যা فانه يرك এর স্থলে হয়। তিনি (আরাে) বলেছেন- তাঁর বাণী كلام سابق পূর্বের বাক্যের সাথে সম্পর্কিত। যদিও এর কিছু সম্পর্ক পরের সাথেও রয়েছে। তিনি আরাে বলেন, এ স্থানে আমি কিছু বিস্তরিত বর্ণনা কতেক ব্যাখ্যাগ্রন্থের ত্রুটি প্রকাশের জন্যই করেছি। আর তাও নিষেধ নয়, যা কতেক বর্ণনায় ব্যক্ত হয়েছে- 'যদিও তুমি তাকে না দেখ, তিনি তােমাকে দেখছেন--
فانه يركনিশ্চয়ই প্রথম উক্তিকারী হাদীসের মর্মার্থ তা হবার দাবী করেনি, যা হাদীসের (স্পষ্ট বক্তব্য দ্বারা বুঝা যায়। বরং এমন বক্তব্য উল্লেখ করেছেন, যা বাক্যের বিষয়বস্তু থেকে গৃহীত হওয়ার দিকে ইঙ্গিতবহ।
আমি বলছি, এ অধমের জন্য فانه يرك এর মধ্যে অন্যান্য কারণসমূহও প্রকাশিত হয়েছে। আশা করি যে, এটা অধিকতর স্বাদ ও সৌন্দর্যময় হবে। আর বাক্য তাতে দর্শন প্রমাণের উদ্দেশ্যে হবে, শূণ্য সম্ভাবনা নয়। প্রথম (অতএব, যদি তুমি না হও) এবং ধ্বংস হয়ে যাও ঐ শহুদের (উপস্থিত) কামনায় : تره (তখন) তুমি তাকে দেখবে) এবং গন্তব্যস্থলে পৌছে যাবে!فانه يرك (অতএব, নিঃসন্দেহে তিনি তােমাকে দেখছেন) আর তােমার থেকে এক মুহুর্তও অন্যমনস্ক নয়, যখন তিনি তােমাকে দেখেছেন, তখন তুমি তাঁর সন্ধানে স্বীয় জানকে বিলিন করে দিয়েছে। কেননা, তিনি কাউকে নৈরাশ করেন না। এ কারণে যে, ইহসানের (সৎকর্ম) স্থান পর্যন্ত . অতিবাহিত হয়ে গেছে, আর আল্লাহ তায়ালা মুহসেনীনদের (সৎকর্মশীল) বিনিময় ধ্বংস
করেন না।
দ্বিতীয়ঃ ‘অতঃপর যদি তুমি না হও তাহলে নিশ্চয়ই তাকে দেখবে’ কেননা, তুমি তাঁর মধ্যে বিলীন হয়েছে এবং তিনি অবশিষ্ট রয়েছেন। সুতরাং এখন তিনিই স্বীয় জাতের দর্শর্ন প্রার্থী। কেনইবা দেখবে না, তিনিতাে তােমাকে দেখছেন, আর তুমিওতাে তাঁর মধ্যে বিলীন হয়ে গেছো।
তৃতীয়ঃ ‘অতঃপর যদি তুমি না হও, তখন তুমি তাকে দেখবে। যেমন বুখারী শরীফে রয়েছে, -- “আর তাঁর চোখে পর্দা (অবশিষ্ট নেই। সুতরাং নিশ্চয়ই তিনি তােমাকে দেখছেন। আর তুমিতাে একটি কল্পিত বস্তুর প্রতিবিম্বের ধ্যানমগ্ন রয়েছে তখন কিভাবে তাঁকে দেখবেনা মৌলিক সৌন্দর্য ও উৎকর্ষ সহকারে? কিন্তু তাঁর উক্তি দ্বারা ঐ ঘটনার দিকে ইঙ্গিত রয়েছে যা ইমাম কাসীরী (رحمة الله) ইয়াহিয়া ইবনে রদী আলাভীর সূত্রে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, আবু সুলাইমান দামেস্কী তাওয়াফের সময় ‘ইয়া সাতারবরী আওয়াজ শুনলেন। তিনি সংজ্ঞাহীন হয়ে লুটিয়ে পড়লেন। যখন সংজ্ঞা ফিরিয়ে ফেলেন জিজ্ঞেস করা হলাে, তিনি জবাব দিলেন আমার মনে হলাে তিনি বলছেন ‘ইস তারবিরী অর্থাৎ শব্দে জের সহকারে। এর অর্থ হলাে পূণ্য ও অনুগ্রহ। যদিও তাওয়াফকারী বা শব্দে জবর সহকারে বলেছেন। আর “আলমারী ফি মুনাকেবে সৈয়দ মুহাম্মদ আশরাফী” যা তার পৌত্র আবদুল খালেক ইবনে মুহাম্মদ ইবনে আহমদ ইবনে আবদুল ক্বাদের-এর লিখিত। তাতে উল্লেখ রয়েছে-এক ব্যক্তি মিশরের গলিতে (কোন বস্তু) বিক্রি করছেন আর বলছেন ‘ইয়া সাতারবারী। তাঁর এ কথার মর্মার্থ তিন ব্যক্তি বুঝতে পারলাে-প্রথম ব্যক্তি হেদায়তপন্থী। তিনি বুঝলেন-ইসতারবারী অর্থাৎ আমার অনুসরনের চেষ্টা করাে তখন আমার কারামতের দানসমূহ দেখতে পাবে।
দ্বিতীয়ঃ মধ্যপন্থী। তিনি বুঝলেন, ইয়া সায়াতু বিররী” অর্থাৎ কতই প্রশস্থ আমার উপকার, পূণ্য এবং ইহসান সে ব্যক্তির জন্য যে আমার সাথে ভালবাসা রাখে এবং আমার অনুসরণ করে।
তৃতীয়ঃ আহলে নিহায়াহ' অর্থাৎ শেষপন্থী। তিনি বুঝলেন----- আস সায়াত তাররী বাররী” অর্থাৎ সাহায্য এসেছে। অতএব, তিনজনই সংজ্ঞাহীন হয়ে পড়লেন।
‘আহইয়া’ গ্রন্থে রয়েছে-অনারবীয় লােক কখনাে আরবী কবিতার আসক্তির কারণেও সংজ্ঞাহীন হয়ে পড়েন। কেননা, কখনাে কখনাে তাদের কতেক বর্ণ অনারবীয়দের বর্ণের ওজনেও ব্যবহৃত হয়, যদ্বারা অন্য মর্মার্থই হয়ে থাকে। যেমন কোন কবির (কবিতার একটি) পংক্তি অর্থাৎ আমি তার কাল্পনিক আকৃতির স্বপ্নে পরিদর্শন করেছি, অতএব আমি তাকে ‘আহলান-সাহলান ও মারহাবান’ বলে স্বাগতম ও শুভেচ্ছা জ্ঞাপন করেছি।' এ কথায় এক অনারবীয় সংজ্ঞাহীন হয়ে পড়লেন তাকে এর কারণ জিজ্ঞেস করা হলে বললেন অর্থাৎ; مازا رلم ‘মৃত্যু নিকটবর্তী হয়েছি। আর এটা এমনই যেমন সে বলছিলাে যে, ; (যা-রা) শব্দটি ফাসী নিকটবর্তীদের উপর ব্যবহৃত হয়। আর এর দ্বারা তার সন্দেহ হলাে যে, আমরা সবাই ধ্বংসের কাছাকাছি, আর সে এ সময় আখেরাতের ধ্বংস ও ভয়ভীতিই বুঝেছে। প্রকৃতপক্ষে, আল্লাহর প্রেমে যারা বিভাের তাঁরা তাঁদের ধারণা অনুযায়ীই সংজ্ঞাহীন হয়ে পড়েন। মােট কথা হলাে, আমাদের প্রমাণ এখানে আয়াতে করীমার তাফসীরের দ্বারা নয়। বরং মুফাসসিরদের ভীলের দ্বারা এবং এ অর্থেরই উপর তাদের বিশ্বাস। এ কারণে তারা আয়াতে করীমাকে ঐ দিকে ইঙ্গিত করা বৈধ রেখেছেন। আর তােমাদের মতে, এখন তিনিই কুফরের অধিক উপযােগী। আল্লাহর কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করছি। এ কথা বলার উদ্দেশ্য এই যে, তােমরা মুহাম্মদ (ﷺ)-এর পরিচয় লাভের মধ্যখানে পর্দা হয়ে দাঁড়িয়েছে,। এমন পরিচয়েও বিশ্বাসী নও, যতটুকু জাহির ওলামারা রাসুলে পাক (ﷺ)-এর পরিচয়ে বিশ্বাসী। আওলিয়ায়ে কিরামের ধারণাতাে বহু উর্ধে। তােমরা মুসলমানদের কাফির বলছে, অজ্ঞতাবশতঃ অস্বীকার করছে এবং অস্বীকারকে ভাল জ্ঞান করছো। যেমন আল্লাহ তায়ালার ইরশাদ-বরং তারাইতাে মিথ্যা প্রতিপন্ন করেছে, যা তারা জানেনি।' এ হলাে তাদের জ্ঞানের প্রশস্ততা। অতএব, আল্লাহ পাক যাকে নূর প্রদান করেন না, তার জন্ম নুর নেই। আমরা আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করছি।
(১) কওকাবুল আনােয়ার শরহে ইকুদুল জাওহার’ গ্রন্থে তাওকুীত থেকে উদ্ধৃত হয়েছে-- ‘আজল’ হলাে পদক্ষেপ (কদম) যার কোন শুরু নেই। আর রূপকার্থে এর ব্যবহার সে ব্যক্তির উপরও প্রযােজ্য, যার বয়স দীর্ঘ হয়। “জাওয়াহির ও দুরারে” আরিফ বিল্লাহ ইমাম আল্লামা সৈয়দী আবদুল ওয়াহাব শিরানী স্বীয় শেখ আরিফ বিল্লাহ সৈয়দী আলী খাওয়াস থেকে এ সম্পর্কে ফতােয়া নকল করেছেন। যার বক্তব্য এভাবে- তাঁকে বললাম, এ বাক্যের কি অর্থ যে,------(আল্লাহ তা লিখে নিয়েছেন আজলে) অথচ আজলের কোন বােধ শক্তি নেই। কিন্তু তা হলাে একটি কাল, আর কাল হচ্ছে মাখলুক (সৃষ্টি)। আর আল্লাহর লিখা হলাে চিরস্থায়ী। অতঃপর তিনি বলেন, 'আজলের লিখা দ্বারা উদ্দেশ্য হলাে আল্লাহ তায়ালার ঐ জ্ঞান যিনি তাতে সকল বস্তুসমূহ পরিবেষ্টন করে নিয়েছেন। কিন্তু আজল হলাে ঐ কাল যা আল্লাহর অস্তিত্ব ও বােধসম্পন্ন সৃষ্টি সমূহের অস্তিত্বের মধ্যখানে রয়েছে। এখন এতেই অস্তিত্বের অঙ্গিকার নেয়া হয়েছে। সুতরাং প্রশ্নকারী প্রকাশ করে দিয়েছেন যে, আজল অর্থ কাল নয়। বরং মাখলুক হাদিস ও গায়রে কদম (অস্থায়ী ও ধ্বংসশীল সৃষ্টি)! আর সৈয়দ আরিফ বিল্লাহ স্পষ্ট করে দিয়েছেন যে, কাল হলাে যাতে আল্লাহ তায়ালা অঙ্গিকার ব্যক্ত করেছেন।
সুতরাং সন্দেহ দূরিভূত হয়ে গেলাে এবং অদৃশ্য ত্রুটির দিকে ফিরে গেলো। ইমাম আহমদ ইবনে খতীব কুস্তুলানী (رحمة الله) মাওয়াহেবে লাদুনিয়া’ ২য় খন্ড, ৩৮০ পৃষ্ঠায় বলেন খুব চমঙ্কারই বলেছেন আল্লামা আবু মুহাম্মদ মুশাককর শুক্বরাতসী স্বীয় প্রসিদ্ধ কসীদায়- ‘সম্রাজ্য আল্লাহর জন্য, এ সম্মান ও মহামর্যাদা সে ব্যক্তির জন্য যার জন্য আজলে নবুয়ত বিধিবদ্ধ করা হয়েছে। সুতরাং যদি আজল দ্বারা কুদীম উদ্দেশ্য হয় তাহলে ঐ সময় আরশ কোথায় ছিল? তাঁর বক্তব্য শুনেছো। সুতরাং সুদৃঢ় থেকো এবং এ ধরনের ভ্রান্তিপূর্ণ বিষয়ে কর্ণপাত করােনা। ইনি হলেন উত্তরদাতার পেশওয়া, এখন তার উপর হুকুম প্রয়ােগ করাে এবং আমাকে বলাে তিনি কি তােমাদের মতে কাফির (নাউজুবিল্লাহ), অথবা গােমরাহ, পথভ্রষ্ট ও পথভ্রষ্টকারী? নাকি সুন্নী মুসলমান, মহান অলী, দ্বীনের স্তম্ভ এবং সৈয়দুল মুরছালীন (ﷺ)-এর উত্তরসুরী? শীঘ্রই জবাব দাও, আর, হামলাকারীরা নিকাবে মুখ লুকানাে থেকে পরিত্রান পাবেন।
দ্বিতীয় প্রশ্নঃ
দ্বিতীয় প্রশ্নঃ উত্তর দাতার এ উক্তি- নবী করীম (ﷺ) আজল (অনন্তকাল) থেকে আবদ (চিরকাল) পর্যন্ত (সৃষ্টি জগতে) যা কিছু সংঘটিত হয়েছে আর যা কিছু সংঘটিত হবে সর্ব বিষয়ে অবগত আছেন।'
আমি বলছি, প্রথম জবাব আপনারা উত্তরদাতার উক্তির এমন অনুবাদ করেছেন যা আপনাদের ন্যায় (কাল্পনিক ও সন্দিহানদের) সন্দেহ আরাে অধিক। বৃদ্ধির কারণ হবে। এ জন্য যে, আপনাদের বক্তব্যে চিরকাল এর সম্পর্ক يعلم (জানেন) এর সাথে হওয়ার অবকাশ রয়েছে। আর আজল’ শব্দকে যখন বাক্যের পরিভাষায় ব্যবহার করা হবে, তখন অর্থ হবে রসুলে পাক (ﷺ) এর জ্ঞান আজল (অনন্তকাল) থেকেই বিদ্যমান ছিলাে, যার কোন উৎপত্তি (সুচনা) নেই। এটা সুস্পষ্ট কুফর, যদ্বারা রাসুলে পাক (ﷺ) এর (চিরস্থায়ী) হওয়া আবশ্যকীয় হয়ে পড়বে। অথচ উত্তরদাতার উক্তিতে এমন সন্দেহের কোন অবকাশ নেই। তবে বক্তব্য নিম্নরূপ (পৃষ্টা-৭) “নিশ্চয়ই যে সব কিছু সংঘটিত হয়নি আপনি তাও জানতেন ঐ সকল অদৃশ্য জ্ঞা:সমূহে শামিল রয়েছে যা আদি থেকে সংঘটিত হয়েছে, আর অনন্তকাল পর্যন্ত যা সংঘটিত, হবে।
বাকী রইলাে, রাসুলে সৈয়দে আলম (ﷺ)-এর জ্ঞানে আদি থেকে অনন্তকাল পর্যন্ত সকল কায়েনাত শামিল হওয়া।' জেনে রাখুন! যখন ‘আজল ও ‘আবদ’ ব্যবহৃত হয় তখন এর দ্বারা উদ্দেশ্য তাই হয় যা কালাম শাস্ত্রবিদদের। পরিভাষায় অর্থাৎ তা যার অস্তিত্বের সুচনা নেই এবং তা যার বাকীর অন্ত নেই। এ ভিত্তিতে সকল বস্তুর জ্ঞান অন্তর্ভুক্ত হওয়া সম্পর্কে (এ ধরনের জ্ঞান) আমি আপনাদের ব্যক্ত করেছি যে, এগুলাে পবিত্রতম আল্লাহর সাথেই খাস। বান্দাদের জন্য আকল ও শরীয়ত উভয় দিক দিয়ে অসম্ভব। কিন্তু তবুও এ উভয় শব্দের ব্যবহার পরিলক্ষিত হয়। আর তা দ্বারা ভবিষ্যতের দীর্ঘ কালই উদ্দেশ্য হয়। যেমন ‘আবদ’ শব্দের ব্যাখ্যায় কাজী বায়দাবী (رحمة الله) স্বীয় তাফসীরে উল্লেখ করেছেন।
আর আমার সরদার, আরিফ বিল্লাহ মাওলানা নিজামী (কুঃ সিঃ) রাসুলে সৈয়দে আলম (ﷺ)-এর প্রশংসায় বলেন, অর্থাৎ আদি থেকে অনন্তকাল পর্যন্ত যা কিছু বিদ্যমান রয়েছে এ জন্য অস্তিত্ব লাভ করেছে যে, মুহাম্মদ (ﷺ) এর নামের সৌন্দর্যে পরিণত হবে অর্থাৎ তাঁর খাদেম ও অনুচরবর্গ হবে এবং হুজুরের সম্মান ও মর্যাদার জুলুসে অন্তর্ভুক্ত হবে। এখন আপনাদের কি ধারণা যে, মাওলানা এখানে ‘আজল’ দ্বারা কি বুঝিয়েছেন? যদি আপনারা তা বাক্যের পরিভাষায় ব্যবহার করেন, তাহলে (আল্লাহর পানাহ) সুস্পষ্ট কুফর হবে। তাহলে আপনাদের ভাইয়ের বাক্যকে কেন এ অর্থে ব্যবহার করছেন না, যে অর্থে আরিফ বিল্লাহর বাক্যকে ব্যবহার করছেন? আমি এ ইচ্ছে করেছিলাম এ বক্তব্যকে বিশ্লেষন করার জন্য যে, আদি থেকে অন্ত পর্যন্ত এর স্থানে সৃষ্টির প্রথম দিবস থেকে কিয়ামত পর্যন্ত লিখে দেবো। অতএব, আমি তাই লিখেছি। কিন্তু আপত্তির কৌশল তাড়াতাড়ি ফ্যাসাদের অর্থেই নিয়ে যায়।
দ্বিতীয় জবাবঃ যদি আপনি নিজেই (১৬ পৃষ্ঠায়) উত্তরদাতার বর্ণনা দেখতেন, তাহলে আজল’ ও ‘আবদ’ শব্দের মর্মার্থ জানতে পারতেন, যেমন আমরা জেনে নিয়েছি। অতঃপর তিনি বলেন-“নিঃসন্দেহে লাওহে মাহফুজে লিপিবদ্ধ ও রক্ষিত রয়েছে সেসব বস্তু যা সংঘটিত হয়েছে আর যা আদি থেকে অনন্ত কাল পর্যন্ত হবে। এর পর কেউ কি সন্দেহ পােষণ করবে যে, তারা এমন বস্তুর যার সৃষ্টির না কোন শুরু আছে, না কোন শেষ, একটি সীমাবদ্ধ ও সসীম লাওহে অঙ্কিত স্বীকার করেছে? বরং এর অর্থ তাই যা আমি বলেছি যে, প্রথম | দিবস থেকে শেষ দিবস পর্যন্ত সকলবস্তুর বর্ণনা যেভাবে বিশুদ্ধ হাদীসে রাসুলে পাক (ﷺ) থেকে বর্ণনা এসেছে যে, -আবদ’ পর্যন্ত সকল বস্তু লাওহে বিদ্যমান আছে।” আর তাতেও নিশ্চয়ই সে মর্মার্থ যা আমরা ব্যক্ত করেছি।
তৃতীয় জবাবঃ আফসুস, যদি আপনি স্বয়ং উত্তরদাতার রিসালার ১১ পৃঃ দেখতেন যেখানে তিনি তাফসীরে রুহুল বয়ান’ থেকে বক্তব্য বর্ণনা করেছেন-“হে নবী (ﷺ)! আপনি স্বীয় প্রতিপালকের অনুগ্রহ থেকে গােপনীয় নন যে, যা কিছু আজল থেকে হয়েছে এবং যা কিছু আবদ পর্যন্ত হবে, তা থেকে আপনার কিছু গােপনীয় রয়েছে। কেননা (জানুন) শব্দের অর্থ গােপনীয়। বরং আপনি জানেন যা কিছু গত হয়েছে আর সংবাদদাতা যা কিছু সংঘটিত হবে সে সম্পর্কে।
সুতরাং এ শব্দে বিজ্ঞ মুফাসির (রুহুল বয়ান গ্রন্থকার) হলেন উত্তরদাতার পেশওয়া। যদি তা পাপ হয়ে থাকে তাহলে এ তাফসীরকারের গুণাহ উত্তরদাতার চেয়েও জঘন্যতর। এ কারণে যে, উত্তরদাতাতাে তাঁর বক্তব্য স্বীয় পুস্তিকায় উদ্ধৃত করেছেন, আর মুফাসসির (رضي الله عنه)তাে আল্লাহর কালামের তাফসীরই (ব্যাখ্যা) করেছেন। সুতরাং ঐ শব্দের ভিত্তিতে (তার উপর) কুফর-পথভ্রষ্ট যেই হুকুম প্রয়ােগ করুন না কেন, সর্ব প্রথম তা ঐ মহান তাফসীরকারের উপর প্রয়ােগ করুন। অতঃপর জ্ঞানী উত্তরদাতার দিকে অগ্রসর হােন।
তৃতীয় প্রশ্নঃ
তৃতীয় প্রশ্নঃ উত্তরদাতার এ উক্তি-রাসুলে পাক (ﷺ)-এর জ্ঞানে সকল অদৃশ্য বস্তুসমূহ শামিল রয়েছে, এটা বিশুদ্ধ কিনা?
জবাবঃ (সকল) এ অর্থের ভিত্তিতে যে, আল্লাহর সকল জ্ঞান বিস্তারিত, প্রকৃত পরিবেষ্টন ও পরিব্যাপ্ত হয়ে যাওয়া তা আমি আপনাদের বলিনি, এটা কোন মাখলুকের জন্য নিশ্চিত-অকাট্যভাবে যুক্তি ও শরীয়ত উভয় দৃষ্টিকোণ থেকে সম্পূর্ণভাবে অসম্ভব। আর এ অর্থের ভিত্তিতে-যা কিছু প্রথম দিবস থেকে সংঘটিত হয়েছে এবং শেষ দিবস পর্যন্ত হতে থাকবে এ সবের পরিব্যাপ্ত হওয়া, আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের ইরশাদ শ্রবণ ও স্বীকার করার ভিত্তিতে বিশুদ্ধ ও সঠিক। হায়রে দুঃখ! আল্লাহ তায়ালা যখন ইরশাদ করেছেন প্রত্যেক বস্তুর সুস্পষ্ট বর্ণনা আরাে ইরশাদ করেন প্রত্যেক কিছুর বিস্তারিত বর্ণনা’ রাসুলে (ﷺ) ইরশাদ করেন-“প্রত্যেক বস্তু আমার উপর সুস্পষ্ট হয়ে গেছে’ ওলামা কিরাম বলেন-“রাসুলে পাক (ﷺ)-এর সকল আংশিক ও পরিপূর্ণ জ্ঞান হাসিল হয়েছে এবং সব কিছু তিনি পরিবেষ্টন করেছেন। আরাে বলেন রাসুলে পাক (ﷺ) প্রত্যেক বস্তু বর্ণনা করেছেন। আরাে বলেছেন, রাসুলের জ্ঞান সমগ্র বিশ্ব পরিব্যাপ্ত। আরাে বলা হয়েছে পূর্বাপর সকল বস্তু যা সংঘটিত হয়েছে ও হবে, সব সম্পর্কে তিনি অবগত রয়েছেন। তিনি সব কিছু এভাবেই শুনেন ও দেখেন, যেন সব তাঁর চক্ষুর সামনে। তারা আরাে বলেন ‘রাসুলে সৈয়দে আরম (ﷺ) সকল বস্তু সম্পর্কে জ্ঞাত। তিনি প্রকাশ্য-অপ্রকাশ্য আদি-অন্ত সব কিছুর জ্ঞান বেষ্টন করে নিয়েছেন।
এ কথাও পূর্বে উল্লেখ হয়েছে যে, আল্লাহর পরিচয় লাভকারীর উপর সব কিছু স্পষ্ট হয়ে যায়। (একজন আরিফের অবস্থা যদি এমন হয়) তাহলে (রাসুলে পাক (ﷺ) এর জন্য) সকল অদৃশ্য জ্ঞান বললে কি অসাধারণ উক্তি হয়ে যায়? এর ব্যাপকতা কি আল্লাহ তায়ালা ও তাঁর রাসুলের বাণী, ইমামদের উক্তি ও - ওলামায়ে কিরামের ঐ বক্তব্যের ব্যাপকতা থেকে অধিক জ্ঞান করছেন? যদি আপনারা বিবেক দ্বারা চিন্তা ভাবনা করেন তাহলে অধিকাংশ বাণী যা
অতিবাহিত হয়েছে, তা এর চেয়ে অপ্রশস্ত পাবেন। সুতরাং মর্মার্থ তাই, যা গত হয়েছে ও সাব্যস্ত হয়েছে। যদি তা কুফর, গােমরাহ, ভুল বা মুখতা হয়, তাহলে সর্বপ্রথম আল্লাহ ও রাসুলের কালাম পরিবর্তন করুন আর শীর্ষস্থানীয় আলিমদেরকেই কাফির, পথ ভ্রষ্ট এবং মুখ বলুন, তার পরেই উত্তরদাতার দিকে প্রত্যাবর্তন করুন।
চতুর্থ প্রশ্নঃ
রাসুলে করীম (ﷺ)-এর জ্ঞানের শুরু ও শেষ অন্য কোন সীমা দ্বারা সীমাবদ্ধ কিনা?
জবাবঃ শুরুতে অবশ্যই রয়েছে। এ কারণে যে, মাখলুকের জ্ঞান ধ্বংসশীল ছাড়া সম্ভব নয়। আর ‘শেষ’ এর দ্বারা যদি উদ্দেশ্য এটাই হয় যে, প্রত্যেক কালে রাসুলে পাক (ﷺ)-এর জ্ঞানের কোন সীমা রয়েছে, যা সম্পর্কে আল্লাহ তায়ালাই অধিক জ্ঞাত। যদিও কোন ব্যক্তি ও ফিরিস্তা তা গণনা করতে পারে না, তাহলে এটা নিঃসন্দেহে বিশুদ্ধ। যদি এটা উদ্দেশ্য নেয়া হয় যে, রাসুলে পাক (ﷺ)-এর জ্ঞান কোন সীমায় গিয়ে তা অতিক্রম করতে পারে না; তাহলে এমন ধারণা অবশ্যই ভ্রান্ত। আল্লাহ তায়ালা তাতে সন্তুষ্ট নন। বরং আমাদের প্রিয় মাহবুব (ﷺ) (চিরকাল পর্যন্ত) আল্লাহ তায়ালার জাত ও সিফাতের জ্ঞান সম্পর্কে উন্নতি করতে থাকবেন। এ সম্পর্কে আমি প্রথম পরিচ্ছেদে বিস্তারিত বর্ণনা করেছি।
পঞ্চম প্রশ্নঃ
পঞ্চম প্রশ্নঃ অভিমতে আমার এ উক্তি যা প্রশ্নকর্তা আরবীতে অনুবাদ করার সময় এভাবেই বলেছেন যে, রাসুলে পাক (ﷺ)-এর জ্ঞান থেকে অনু পরিমাণও অদৃশ্য হয়নি। এদ্বারা তােমাদের উদ্দেশ্য এটাই যে, আদি থেকে অন্ত পর্যন্ত কোন বস্তু অনু পরিমাণও হুজুরে সৈয়দে আলম (ﷺ)-এর জ্ঞান থেকে অদৃশ্য নয়, অথবা অন্য কিছু। " আমি বলছি, প্রথম জবাব হলাে আমার বক্তৃতার অনুবাদতাে এটা নয়ই।
বাকী রইলাে, কোন অনু যা হুজুরের জ্ঞান বহির্ভূত হয়, তাহলে তা পরিষ্কার। অস্তিত্বহীন বস্তুর দিকে দৃষ্টমান কিন্তু তা প্রশ্নকারীর অনুবাদের বিপরীত, তিনি নিজপক্ষ থেকে মিসকাল (পরিমাণ) শব্দ বৃদ্ধি করেছেন। যা আমার বক্তৃতা নয়। নিঃসন্দেহে তারা এটাই চায় যে, সে খন্ডন ও সন্দেহ যা তার বাক্যে আদি থেকে অন্ত পর্যন্ত উদ্দেশ্য অথবা অল্প। আর এটা বিশুদ্ধ হয়ে যেতাে যদি সে ‘পরিমাণ’ শব্দটি বৃদ্ধি না করতাে এবং এটা জিজ্ঞেস করার জন্য দাঁড়াতো যে, আজলের কোন বস্তু কি হুজুরের জ্ঞান থেকে অদৃশ্য রয়েছে (যদি তা স্বীকার করে) তাহলে এ কথারই প্রমাণ বহন করতাে যে, সে আজলে অণুর অস্তিত্ব স্বীকার করছে, যা পরিস্কার ভ্রষ্ট এবং কুফর।
অথচ, সে শব্দ বৃদ্ধি করে দিয়েছে, জানতে পারেনি যে, আজলে এমন কোন বস্তু নেই যা ‘পাল্লা দ্বারা পরিমাণ করা যাবে, ওখানেতাে একমাত্র আল্লাহই এবং তার মহান গুণাবলীই রয়েছে সুতরাং তার বক্তব্য পরিত্যাজা এবং কুফরের আশংকার দিকে লক্ষ্যণীয় রয়ে গিয়েছে অথবা তাতে তাই প্রকাশিত হয়েছে। এটাই তার পরিণাম যা তার ভাইয়ের জন্য খনন করেছে, অতঃপর এখানে যে কথা হচ্ছে তা আমি বারংবার তােমাদের বলছি এবং পরিষ্কার ভাষায় প্রকাশ করে দিয়েছি। আর আজল’ শব্দের উল্লেখ না আমার বক্তৃতায় আছে, না এ অর্থে যা প্রশ্নকারীর সন্দেহে হয়েছে, যা .. আমার উদ্দেশ্য।
দ্বিতীয় জবাবঃ এখানে তিনটি স্তর রয়েছে। প্রথম স্তর মুসলমান, পুণ্যাত্মা, সুস্থ ব্যক্তিদের। এমন কোন মুসলমানের সাথে খারাপ ধারণা পােষণ করা যাবে।, ভাল ধারণাই রাখতে হবে যদি তিনি এমন কোন কিছু পান, যাতে অন্য দৃষ্টিকোণ রয়েছে, তাহলে তা ব্যাখ্যা করে দোষ-ত্রুটি থেকে প্রত্যাবর্তন করে দেন। দ্বিতীয় স্তর তারা, যারাতাে এর সামর্থ রাখেনা কিন্তু তাদের এক ধরণের সুবিচার রয়েছে। তাদের দ্বীন সামান্য সংরক্ষিত আছে। তারা নিজের ভাইয়ের অন্য নিজ থেকে অসম্ভব কিছু রচনা করেনা, যেন খারাপ ধারণা ও অপবাদের জন্য শক্তি পাওয়া যায়।
তৃতীয় স্তরঃ ঐ ব্যক্তি যারা নি’মাতসমূহ থেকে বঞ্চিতের সীমায় পৌছে গেছে। কিন্তু তাদের চক্ষে সামান্য লজ্জা অবশিষ্ট রয়েছে। সুতরাং খারাপ ধারণায় সে যার অপবাদ দেয় যদি সে তার বিরােধ ব্যাখ্যা পায় তখন তা নিয়ে আর অগ্রসর হয়না। এ জন্য যে, তার চক্ষুর সামনে ঐ বস্তু বিদ্যমান যা তার অপবাদকে খন্ডন করে দেয় এবং তার মুখে লাগাম পরিয়ে দেয়। কিন্তু যে ব্যক্তি হিংসা করেছে, ধ্বংস হয়ে গেছে এবং সীমা অতিক্রম করেছে। সে দেখে এবং মুখ ফিরিয়ে নেয়, আর শুনে ও আপত্তি করে। আর আমি হামলাকারীদের সতর্ক করছি এবং তাদের মৃত্যু শয্যা থেকে রক্ষা করেছি আর এমন মাসয়ালাসমূহের সংযােজন করেছি। তাদের সম্মুখে চমৎকার মাসয়ালা ব্যক্ত করেছি যে, প্রত্যেক। নীচ থেকে নিচতর লােকও তা না মেনে পারে না। কেনইবা মানবে না, আমার বক্তব্যেতাে এটুকুও ছিলােনা যে, এ শব্দ “আজল’ থেকে শুণ্য, বরং তাতে সর্বোৎকৃষ্ট বিশ্লেষণ দ্বারা ব্যাখ্যা ছিলাে যে, এর দ্বারা তাই উদ্দেশ্য যা আদি থেকে অন্ত পর্যন্ত সংঘটিত হয়েছে ও ভবিষ্যতে হবে।
সুতরাং এ বিশ্লেষণ কি খারাপ। ধারণার রাস্তা বন্ধ করে দেয়নি? কিন্তু হিংসা একটি বিষাক্ত কাটা, যার উপর বিদ্ধ হবে সে ধ্বংস হয়ে যাবে। অতএব, ধ্বংসের স্থান থেকে বেঁচে থেকো। আল্লাহর প্রশংসা, জবাব পরিপূর্ণ হয়েছে এবং পরিস্ফুটিত হয়েছে। আর এ খন্ড যখন একটি গ্রন্থাকার ধারণ করলাে, তখন আমি এর নাম ‘আদৌওলাতুল মককীয়া বিল মাদ্দাতিল গায়বিয়াহ’ রাখি। যেন এ নামটিও হয়ে যায়, আবার মাকসুদ, রচনা ও আবজাদ হিসাবনুযায়ী রচনাকালের সনের পরিচয়ও হয়ে যায়। আলহামদুলিল্লাহ! অভিমতে আমার এ উক্তি যা প্রশ্নকর্তা আরবীতে অনুবাদ করার সময় এভাবেই বলেছেন যে, রাসুলে পাক (ﷺ)-এর জ্ঞান থেকে অনু পরিমাণও অদৃশ্য হয়নি। এদ্বারা তােমাদের উদ্দেশ্য এটাই যে, আদি থেকে অন্ত পর্যন্ত কোন বস্তু অনু পরিমাণও হুজুরে সৈয়দে আলম (ﷺ)-এর জ্ঞান থেকে অদৃশ্য নয়, অথবা অন্য কিছু। " আমি বলছি, প্রথম জবাব হলাে আমার বক্তৃতার অনুবাদতাে এটা নয়ই।
বাকী রইলাে, কোন অনু যা হুজুরের জ্ঞান বহির্ভূত হয়, তাহলে তা পরিষ্কার। অস্তিত্বহীন বস্তুর দিকে দৃষ্টমান কিন্তু তা প্রশ্নকারীর অনুবাদের বিপরীত, তিনি নিজপক্ষ থেকে মিসকাল (পরিমাণ) শব্দ বৃদ্ধি করেছেন। যা আমার বক্তৃতা নয়। নিঃসন্দেহে তারা এটাই চায় যে, সে খন্ডন ও সন্দেহ যা তার বাক্যে আদি থেকে অন্ত পর্যন্ত উদ্দেশ্য অথবা অল্প। আর এটা বিশুদ্ধ হয়ে যেতাে যদি সে ‘পরিমাণ’ শব্দটি বৃদ্ধি না করতাে এবং এটা জিজ্ঞেস করার জন্য দাঁড়াতো যে, আজলের কোন বস্তু কি হুজুরের জ্ঞান থেকে অদৃশ্য রয়েছে (যদি তা স্বীকার করে) তাহলে এ কথারই প্রমাণ বহন করতাে যে, সে আজলে অণুর অস্তিত্ব স্বীকার করছে, যা পরিস্কার ভ্রষ্ট এবং কুফর।
অথচ, সে শব্দ বৃদ্ধি করে দিয়েছে, জানতে পারেনি যে, আজলে এমন কোন বস্তু নেই যা ‘পাল্লা দ্বারা পরিমাণ করা যাবে, ওখানেতাে একমাত্র আল্লাহই এবং তার মহান গুণাবলীই রয়েছে সুতরাং তার বক্তব্য পরিত্যাজা এবং কুফরের আশংকার দিকে লক্ষ্যণীয় রয়ে গিয়েছে অথবা তাতে তাই প্রকাশিত হয়েছে। এটাই তার পরিণাম যা তার ভাইয়ের জন্য খনন করেছে, অতঃপর এখানে যে কথা হচ্ছে তা আমি বারংবার তােমাদের বলছি এবং পরিষ্কার ভাষায় প্রকাশ করে দিয়েছি। আর আজল’ শব্দের উল্লেখ না আমার বক্তৃতায় আছে, না এ অর্থে যা প্রশ্নকারীর সন্দেহে হয়েছে, যা .. আমার উদ্দেশ্য।
দ্বিতীয় জবাবঃ এখানে তিনটি স্তর রয়েছে। প্রথম স্তর মুসলমান, পুণ্যাত্মা, সুস্থ ব্যক্তিদের। এমন কোন মুসলমানের সাথে খারাপ ধারণা পােষণ করা যাবে।, ভাল ধারণাই রাখতে হবে যদি তিনি এমন কোন কিছু পান, যাতে অন্য দৃষ্টিকোণ রয়েছে, তাহলে তা ব্যাখ্যা করে দোষ-ত্রুটি থেকে প্রত্যাবর্তন করে দেন। দ্বিতীয় স্তর তারা, যারাতাে এর সামর্থ রাখেনা কিন্তু তাদের এক ধরণের সুবিচার রয়েছে। তাদের দ্বীন সামান্য সংরক্ষিত আছে। তারা নিজের ভাইয়ের অন্য নিজ থেকে অসম্ভব কিছু রচনা করেনা, যেন খারাপ ধারণা ও অপবাদের জন্য শক্তি পাওয়া যায়।
তৃতীয় স্তরঃ ঐ ব্যক্তি যারা নি’মাতসমূহ থেকে বঞ্চিতের সীমায় পৌছে গেছে। কিন্তু তাদের চক্ষে সামান্য লজ্জা অবশিষ্ট রয়েছে। সুতরাং খারাপ ধারণায় সে যার অপবাদ দেয় যদি সে তার বিরােধ ব্যাখ্যা পায় তখন তা নিয়ে আর অগ্রসর হয়না। এ জন্য যে, তার চক্ষুর সামনে ঐ বস্তু বিদ্যমান যা তার অপবাদকে খন্ডন করে দেয় এবং তার মুখে লাগাম পরিয়ে দেয়। কিন্তু যে ব্যক্তি হিংসা করেছে, ধ্বংস হয়ে গেছে এবং সীমা অতিক্রম করেছে। সে দেখে এবং মুখ ফিরিয়ে নেয়, আর শুনে ও আপত্তি করে। আর আমি হামলাকারীদের সতর্ক করছি এবং তাদের মৃত্যু শয্যা থেকে রক্ষা করেছি আর এমন মাসয়ালাসমূহের সংযােজন করেছি। তাদের সম্মুখে চমৎকার মাসয়ালা ব্যক্ত করেছি যে, প্রত্যেক। নীচ থেকে নিচতর লােকও তা না মেনে পারে না। কেনইবা মানবে না, আমার বক্তব্যেতাে এটুকুও ছিলােনা যে, এ শব্দ “আজল’ থেকে শুণ্য, বরং তাতে সর্বোৎকৃষ্ট বিশ্লেষণ দ্বারা ব্যাখ্যা ছিলাে যে, এর দ্বারা তাই উদ্দেশ্য যা আদি থেকে অন্ত পর্যন্ত সংঘটিত হয়েছে ও ভবিষ্যতে হবে।
সুতরাং এ বিশ্লেষণ কি খারাপ। ধারণার রাস্তা বন্ধ করে দেয়নি? কিন্তু হিংসা একটি বিষাক্ত কাটা, যার উপর বিদ্ধ হবে সে ধ্বংস হয়ে যাবে। অতএব, ধ্বংসের স্থান থেকে বেঁচে থেকো। আল্লাহর প্রশংসা, জবাব পরিপূর্ণ হয়েছে এবং পরিস্ফুটিত হয়েছে। আর এ খন্ড যখন একটি গ্রন্থাকার ধারণ করলাে, তখন আমি এর নাম ‘আদৌওলাতুল মককীয়া বিল মাদ্দাতিল গায়বিয়াহ’ রাখি। যেন এ নামটিও হয়ে যায়, আবার মাকসুদ, রচনা ও আবজাদ হিসাবনুযায়ী রচনাকালের সনের পরিচয়ও হয়ে যায়। আলহামদুলিল্লাহ!
________ সমাপ্ত ________
Comments
Post a Comment