পাপিষ্ঠ ইয়াজিদ

পাপিষ্ঠ ইয়াজিদ

কৃতঃ (ড. মুহাম্মদ আব্দুর রশীদ, আব্দুল্লাহ যােবায়ের)

ইয়াযিদ সম্পর্কে আলিমগণের অভিমত একটি পর্যালােচনা 

ইয়াযিদের ফাসিক হবার ব্যাপারে আলিমগণ একমত পােষণ করেছেন। অল্প কয়েকজন আলিম এক্ষেত্রে ভিন্নমত দিয়েছেন। ইয়াযিদের ব্যাপারে আলিমগণের মতপার্থক্য প্রথমত দু'ভাগে ভাগ করা যায় :

১. ইয়াযিদকে কাফির বলা প্রসঙ্গ এক্ষেত্রে আলিমগণের মতভেদ নিম্নরূপ : 

ক. ইয়াযিদ কাফির ইয়াযিদের কর্মকাণ্ডের ভিত্তিতে তাকে সরাসরি কাফের বলেছেন ইবন আকিল ও আল্লামা আলুসি (رحمة الله)।

❏ তাফসিরে রুহুল বয়ানে আল্লামা আলুসি র, উল্লেখ করেছেন, ইয়াযিদের কাছে যখন হুসাইন (رضي الله عنه)সহ শহিদগণের শিরগুলাে বর্শায় বিদ্ধ করে নিয়ে আসা হলাে, তখন সে একটি কবিতা আবৃত্তি করেছিল। যার শেষ পঙক্তি ছিল নিম্নরূপ :

نَعَبَ الغُرَابُ فَقُلتُ أَو لاَ تَقُل + فَقَدِ اقتَضَیتُ مِنَ الرَّسُولِ دُیُونِی

কাক ডাকল কা-কা করে বললাম, তুমি বলাে আর নাই বলাে, আমি তাে রসুলের কাছ থেকে আমার পাওনা আদায় করে নিয়েছি।

❏ আল্লামা আলুসি এরপর বলেন, 

يَغنِي أَنَّهُ قَتَلَ بِمَن قَتَلَهُ رَسُولُ اللّٰهِ صَلَّى اللّٰهُ تَعَالَى عَلَيهِ وَسَلَّمَ يَومَ بَذرِ کَجَدِهِ عُتبَةَ وَخَالِهِ وَلَدِ عُتبَةَ وَغَيرِهِمَا وَهَذَا كُفرُ صَرِيحُُ فَإِذَا صَحَّ عَنهُ فَقَد كَفَرَ بِهِ

“ইয়াযিদ বুঝাতে চেয়েছে, বদরের দিন রসুলুল্লাহ (ﷺ)এর সাথে যুদ্ধ করতে এসে তার বাবার নানা উতবা ও উতবার ছেলে তার বাবার] মামা ও অন্যরা নিহত হয়েছিল। তাদের হত্যার বদলায় সে এ হত্যা করেছে। এটা স্পষ্ট কুফরি। এটা সত্যি হলে সে কুফরি করেছে।

❏ তিনি আরও বলেছেনঃ

الَّذِي يَغلِبُ عَلَى ظَنِّي أَنَّ الخَبِيثَ لَم يَكُن مُصَدِّقًا بِرِسَالَةِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ تَعَالَی عَلَيهِ وَسَلَّمَ وَأَنَّ مَجمُوعَ مَا فَعَلَ مَعَ أَهلِ حَرَمٍ اللّٰهِ تَعَالَى وَأَهلِ حَرَمِ نَبِيِّهِ عَلَيهِ الصَّلاَةُ وَالسَّلاَمُ وَعِترَتِهِ الطَّيِّبِينَ الطَاهِرِينَ فِي الحَيَاةِ وَبَعدَ المَمَاتِ وَمَا صَدَرَ مِنهُ مِنَ المَخَازِي لَيسَ بِأَضعَفِ دَلاَلَةٍ عَلَى عَدَمِ تَصدِيقِهِ مِن إِلقَاءِ وَرَقَةِ مِنَ المُصحَفِ الشَّرِيفِ فِي قَذِرِ، وَلاَ أَظُنُّ أَنَّ أَمرَهُ كَانَ خَافِيَّا عَلَى أَجِلَّةِ المُسلِمِينَ إِذ ذَاكَ وَلَكِن كَانُوا مَغلُوبِينَ مَقهُورِينَ لَم يَسَعهُم إِلَّا الصَّبرُ لِيَقضِيَ اللّٰهُ أَمرًا كَانَ مَفعُولًا، وَلَو سُلِّمَ أَنَّ الخَبِيثَ کَانَ مُسلِمًا فَهُو مُسلِمُُ جَمَعَ مِنَ الكَبَائِرِ مَا لاَ يُحِيطُ بِهِ نِطَاقُ البَيَانِ، وَأَنَا أَذهَبُ إِلَى جَوَازِ لَعنِ مِثلِهِ عَلَى التَّعيِينِ وَلَو لَم يَتَصَوَّر أَن يَكُونَ لَهُ مَثَلُ مِنَ الفَاسِقِينَ، وَالظَّاهِرُ أَنَّهُ لَم يَتِبُ، وَاختِمَالُ تَوبَتِهِ أَضعَفُ مِن إِيمَانِهِ، وَيَلحَقُ بِهِ اِبنُ زِیَادِ وَاِبنُ سَعدٍ وَجَمَاعَةُُ فَلَعنَةُ اللّٰهِ عَزَّ وَجَلَّ عَلَيهِم أَجمَعِينَ، وَعَلَى أَنصَارِهِم وَأَعوَانِهِم وَشِيعَتِهِم وَمَن مَالَ إِلَيهِم إِلَى يَومِ الدِّينِ مَا دَمَعَت عَينُ عَلَی أَبِی عَبدِ اللّٰهِ الحُسَینِ

‘আমার নিশ্চিত ধারণা এই খবিস ইয়াযিদ আসলে মহানবি (ﷺ)এর রিসালাতেই বিশ্বাস করত না। আল্লাহর হারাম অর্থাৎ মক্কার এবং তার নবি (ﷺ)এর হারাম অর্থাৎ মদিনার অধিবাসীদের সাথে, মহানবি (ﷺ)এর পবিত্র ও সম্মানিত পরিবারবর্গের সাথে জীবিত ও মৃত অবস্থায় সে যে আচরণ করেছে এবং তার ভেতর থেকে যেসব অবমাননাকর কার্যকলাপ প্রকাশিত হয়েছে, এগুলাে তার ইমানহীনতার বড় প্রমাণ। [তার উদাহরণ সেই ব্যক্তির মতাে, যে পবিত্র কুরআনের পাতা আবর্জনার ভেতর ছুড়ে ফেলে। তার কর্মকাণ্ড তৎকালীন মুসলিমদের কাছে অজ্ঞাত ছিল তাও আমার মনে হয় না। কিন্তু তারা পরাভূত ও পরাক্রান্ত অবস্থায় ছিল। ধৈর্য ধরা ছাড়া তাদের আর কিছু করার সামর্থ্য ছিল না, যাতে যা হবার, আল্লাহ সেটা করে ফেলেন। এটা যদিও মেনে নেয়া হয় যে, এই খবিসটি মুসলমান ছিল, তবে বলতে হবে সে ছিল এমন মুসলমান, যার ভেতরে জায়গা করে নেয়া কবিরা গুনাহগুলাের কথা বলে শেষ করা যায় না। আমার মতে, এমন ফাসিককে নির্দিষ্ট করে লানত দেয়া জায়েয। অবশ্য এমন ফাসেক যে কেউ হতে পারে, তা কল্পনাতেও আসে না। স্পষ্টত সে তাওবা করেনি। তার তাওবার সম্ভাবনা তার ইমানের সম্ভাবনার চেয়েও ক্ষীণ। তার সাথে ইবন যিয়াদ, ইবন সাদ ও একটি দল রয়েছে। এদের সবার উপর মহান আল্লাহর লানত। যারা তাদের মদদদাতা সহায়তাকারী, যারা তাদের সমর্থক, যারা তাদের প্রতি আকৃষ্ট, কিয়ামত পর্যন্ত তাদের উপর আল্লাহর লানত, ততদিন পর্যন্ত লানত, যতদিন একটি চোখ হলেও আবু আব্দুল্লাহ আল হুসাইন (رضي الله عنه)র জন্য অশ্রু ঝরাবে।' 

(আল্লামা মাহমুদ আলুসি, রুহুল মাআনি ফি তাফসিরিল কুরআনির আযিম, বৈরুত: দারু ইহইয়াইত তুরাসিল আরাবি, তাবি, খ, ২৬, পৃ. ৭৩)

❏ তিনি অন্যত্র বলেছেন, আর শিয়াদের হেয় করার জন্য ইয়াজিদের পক্ষ নেয়া মূর্খতা। কেবল কোনাে বেদআতির পক্ষেই ইয়াযিদকে ভালােবাসা ও তাকে সম্মানিত করা সম্ভব। ইয়াযিদের চরিত্র ও বৈশিষ্ট্য এমনই যে তার ভক্তরাও ইমানহীন হতে বাধ্য। ইবন আসাকির আদ দিমাশকি এমত শর্তসাপেক্ষে গ্রহণ করেছেন। তিনি বর্ণনা করেছেন, ইয়াযিদের সামনে ইমাম হুসাইন রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুর শির মােবারক রাখার পর সে নিম্নোক্ত কবিতা আবৃত্তি করেছিল,

لَيتَ أَشيَاخِي بِبَذرِ شَهِدُوا + جَزَعَ الخَزرَجِ فِي وَقعِ الأَسَل

لعبت هاشم بالملك فلا + ملك جاء ولا وحي نزل

বদরে নিহত হওয়া আমাদের পূর্বপুরুষেরা যদি দেখত

বর্ষাবৃষ্টির সময় খাযরাজদের আতঙ্ক। হাশেমিরা রাজত্ব নিয়ে খেলাধুলা করেছে; কোন ফেরেশতা আসেনি, কোন ওহিও নাযিল হয়নি।'

❏ ইবন আসাকির এরপর বলেছেন,

فإن صحت عنه فهو كافر بلا ريبٍ

‘সে যদি সত্যিই একথা বলে থাকে, তবে সে নিঃসন্দেহে কাফির।

(ইবনুল ইমাদ আল হাম্বলি, শাযারাতুয যাহাবি ফি আখবারি মান যাহাব, বৈরুত: দারুল কুতুব আল ইলমিয়্যাহ, ২০১২ খ্রি., খ. ১, পৃ. ১৪৩)

❏ আল্লামা ইয়াফেঈ হারামকে হালাল মনে করার দিক থেকে হুসাইন রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুর হত্যাকারীকে কাফির বলার পক্ষপাতী। তিনি বলেছেন,

وأما حكم من قتل الحسين أو أمر بقتله ممن استحل ذلك فهو كافر وإن لم يستحل فهو فاسق فاجر

‘যে হুসাইন রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুকে হত্যা করেছে অথবা তাঁকে হত্যার আদেশ দিয়েছে, তার ক্ষেত্রে হুকম হলাে সে এটা হালাল মনে করলে কাফির এবং যদি হালাল মনে না করে থাকে, তবে ফাসিক ও পাপিষ্ঠ।

(ইমাম আবু মুহাম্মদ আব্দুল্লাহ ইবন আসআদ আল ইয়াফেঈ, মিরআতুল জিনান ওয়া ইবরাতুল ইয়াকজান ফি মারিফাতি মা ইউতাবারু মিন হাওয়াদিস্যি যামান, বৈরুত: দারুল কুতুব আল ইলমিয়্যাহ, ১৯৯৭ খ্রি., খ, ১, পৃ. ১১০)

খ. ইয়াযিদ কাফির নয় বেশিরভাগ আলিম এ মত পােষণ করেন। তাঁদের দলিল হলাে, কুফর সন্দেহাতীতভাবে সাব্যস্ত হবার মতাে প্রমাণাদি আমাদের হাতে নেই। তাই ইসলাম থেকে খারিজ করে দেয়, এমন বিষয় না পাওয়া পর্যন্ত তাকে মুসলিম হিসেবেই ধরতে হবে।

❏ যারা কাফির বলেন না, তাদের আরেকটি যুক্তি হলাে, উসমান রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুর হত্যাকারীকে তাে কাফির বলা হয় না। তাহলে হুসাইন রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুর হত্যাকারীকে কাফির বলা হবে কেন? কারণ নবিগণকে হত্যা করলেই কেবল তাকে কাফির বলা যায়। এর জবাবে রমাদান আফেন্দি বলেন,

تكفير قاتل الحسين ليس كقتل الصحابي بل لإهانته لإهل بيت النبي عليه الصلاة والسلام ولم يوجد ذلك في عثمان رضي الله عنه

হুসাইন রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুর হত্যাকারীকে তাকফির করার ক্ষেত্রে দেখা যায় এটা কেবল কোন সাহাবী হত্যার মতাে ঘটনা নয়। বরং এখানে মহানবি (ﷺ)এর আহলুল বায়তকে লাঞ্ছিত করার জন্যই তাকে তাকফির করা হচ্ছে, যা উসমান রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুর ঘটনায় পাওয়া যায় না।' 

(রমাদান আফেন্দি, শারহু রামাদান আফেন্দি আলা শারহিস সাদ আলাল আকাইদ আন নাসাফিয়্যাহ, তুরস্ক: মাকতাবাতু সিদা, তাবি, পৃ. ৪৯৯)।

২. ইয়াযিদকে লানত দেয়া প্রসঙ্গ

ইয়াযিদকে সরাসরি কাফির সাব্যস্ত না করে তাকে লানত দেয়া যাবে কি না, তা নিয়েও আলিমগণের মতবিরােধ আছে, যা নিম্নরূপ :

ক. লানত দেয়া জায়েয। 

এ পক্ষে অসংখ্য আলিম রয়েছেন। তাঁদের সবার নাম একত্র করাও কষ্টকর। আমরা বিশিষ্ট কয়েকজন আলিমের নাম উল্লেখ করছি :

১. ইমাম আহমদ ইবন হাম্বল (رحمة الله),

২. কাযি আবু ইয়ালা (رحمة الله),

৩. আবুল হুসাইন ইবন আবু ইয়ালা (رحمة الله),

৪. খাল্লাল (رحمة الله).

খাল্লালের শিষ্য আব্দুল আযিয (رحمة الله)

৬. ইবনুল জাওযি (رحمة الله)

আবুল মুযাফফর (সিবত্ ইবনুল জাওযি (رحمة الله)

৮, জালালুদ্দিন আস সুয়ূতি (رحمة الله)

ইবন মুহিব্রুদ্দিন আল হানাফি (رحمة الله)

১০. আল্লামা সাদুদ্দীন আত তাফতানি (رحمة الله),

১১. আল্লামা ইলকিয়া আল হাররাসি আশ শাফেঈ (رحمة الله)

১২. মুহাম্মদ ইবন আহমদ আস সাফফারিনি (رحمة الله),

১৩. আল্লামা ইবন হাজার আল আসকালানি (رحمة الله)

১৪. কাযি আবু বকর আহমদ ইবন আলি আল জাসসাস (رحمة الله) প্রমুখ। 

এ মত পােষণকারী আলিমদের মতে, আহলুল বায়তের সাথে অসদাচারণ, হুসাইন রা. এর কর্তিত শিরের অবমাননা, হুসাইন (রা.) এর হত্যাকাণ্ডে সন্তুষ্ট থাকা, হাররায় গণহত্যা চালানাে, কাবাঘর ধ্বংসে ইন্ধন দেয়া, ইবন যুবায়র (রা.) সহ প্রসিদ্ধ সাহাবিদের হত্যা করা ইত্যাদি কর্মকাণ্ডের জন্য ইয়াযিদ লানতের যােগ্য। এ প্রসঙ্গে আইশা রা. বর্ণিত নিম্নোক্ত হাদিস তাদের একটি শক্তিশালী দলিল।

❏ উক্ত হাদিসে রসুলুল্লাহ (ﷺ) বলেন,

سِتَّةُ لَعَنَتهُمُ وَلَعَنَهُمُ اللّٰهُ وَكُلُّ نَبِئِّ كَانَ الزَايِدُ فِي كِتَابِ اللّٰهِ وَالمُكَذِّبُ بِقَدَرِ اللّٰهِ وَالمُتَسَلِّطُ بِالجَبَرُوتِ لِيُعِزَّ بِذَلِكَ مَن أَذَلَّ اللّٰهُ وَيُذِلَّ مَن أَعَزَّ اللّٰهُ وَالمُستَحِلُّ لِحَرَمِ اللّٰهِ وَالمُستَحِلُّ مِن عِترَتِي مَا حَرَّمَ اللّٰهُ وَالتَّارِكُ لِسُنَّتِي

ছয় শ্রেণির লােককে আমি লানত দিয়েছি। আল্লাহ তায়ালা এবং সকল নবি তাদেরকে লানত দিয়েছেন। তারা হলাে আল্লাহর কিতাবে বিকৃতি সাধনকারী, আল্লাহর নির্ধারিত তাকদির অস্বীকারকারী, আল্লাহ যাকে লাঞ্ছিত করেছেন, তাকে সম্মানিত করতে এবং যাকে সম্মানিত করেছেন, তাকে লাঞ্ছিত করতে জোরপূর্বক ক্ষমতা দখলকারী, আল্লাহর হারামকে হালালকারী (অর্থাৎ মক্কার হারামে রক্তপাতকারী), আমার বংশধরদের ব্যাপারে আল্লাহ যা হারাম করেছেন, তা হালালকারী (অর্থাৎ তাদের রক্তপাত করা ও তাদেরকে কষ্ট দেয়া এবং আমার সুন্নাত পরিত্যাগকারী।' 

[ইমাম আবু ঈসা তিরমিযি, আস সুনান, কিতাব : আল কাদারু আন রসুলিল্লাহি (ﷺ)]

ইয়াযিদের একার ভেতরে এ ছয়টি বৈশিষ্ট্যের কতগুলাে একত্রিত হয়েছিল, তা স্বতন্ত্রভাবে গবেষণার দাবি রাখে। বইয়ের কলেবর সংক্ষিপ্ত রাখার জন্য এ বিষয়ে আলােচনা দীর্ঘ করছি না। আমরা পরবর্তীতে ইয়াযিদকে লানত দেয়ার পক্ষপাতী আলিমগণের কিছু উক্তি উল্লেখ করব। তাতে বিষয়টি আরও ভালােভাবে বুঝা যাবে।

খ. ইয়াযিদকে ভালােবাসা যাবে না, লানত দেয়াও জায়েয নয়।

এটা ইমাম গাযালি, ইবনুস সালাহ, ইবন তায়মিয়া, ইবন হাজার হায়তামিসহ জমহুরে আলেমের অভিমত। তবে ইয়াযিদকে লানত দিতে নিষেধ করার পেছনে তাঁদের কারণগুলাে ভিন্ন ভিন্ন :

১. হুসাইন (رضي الله عنه)কে ইয়াযিদ হত্যার হুকুম দেয়নি। এটা ইমাম গাযালি, ইবনুস সালাহ, ইবন হাজার হায়তামি (رحمة الله) প্রমুখের মত।

২. যতক্ষণ একথা প্রমাণিত না হবে যে, ইয়াযিদ সেইসব জালিম ও ফাসিকদের অন্তর্ভুক্ত, যাদের লানত দেয়া বৈধ এবং এই অবস্থায়ই সে মারা গিয়েছে, ততক্ষণ তাকে লানত দেয়া যাবে না। তাই সে যদি তেমন হয়, তবেই তাকে লানত দেয়া বৈধ হবে। এটা ইবন তায়মিয়ার

অভিমত। দেখা যাচ্ছে ইয়াযিদকে লানত দেয়া সম্পর্কে মতপার্থক্য সুনির্দিষ্টভাবে কোনাে ফাসিককে লানত করা বৈধ কি না, তার উপর নির্ভরশীল। জমহুরের মত হলাে কোনাে ফাসিককে নাম ধরে লানত দেয়া যাবে না। মােটকথা যারা মনে করেন, ফাসিককে নাম ধরে লানত দেয়া জায়েয, তারাই ইয়াযিদকে লানত দেয়া বৈধ বলেছেন। আবার যাদের কাছে সেটা বৈধ নয়, তারাই ইয়াযিদকে নাম ধরে লানত দিতে নিষেধ করেছেন। লানত না দেয়ার পক্ষে ইমাম গাযালি, ইবন হাজার হায়তামি প্রমুখের যুক্তিটি ধােপে টেকে না। আমরা যদি এটা মেনেও নেই যে, ইয়াযিদের প্রত্যক্ষ আদেশে ইমাম হুসাইন (رضي الله عنه)কে হত্যা করা হয়নি, তবুও তাে এটা অগ্রাহ্য করার কোনাে উপায় নেই যে, এতে সে আনন্দিত হয়েছিল, তার পবিত্র শির মােবারক তার সামনে আনা হলে লাঠি দিয়ে আঘাত করেছিল, ইবনুয যাবারির কুফরি কবিতা আবৃত্তি করেছিল (ইবনুল জাওযি এ বিষয়টি সামনে উল্লেখ করবেন)। এছাড়া হুসাইন (رضي الله عنه)র খুনিদের সে বিন্দুমাত্র শাস্তি দিয়েছে

অথবা তাদের তত্ত্বাবধায়ক ইবন যিয়াদের সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করেছে বলে কোথাও দুর্বল সনদেও কোনাে বর্ণনা নেই। হুসাইন (رضي الله عنه)র হত্যাকাণ্ড তার সবচেয়ে বড় অপকর্ম হলেও অন্যান্য অপরাধগুলােও ছােট করে দেখার সুযােগ নেই। সে মদিনাকে লুটপাট-ধর্ষণ-হত্যার জন্য বৈধ করে দিয়েছিল, যা রসুলুল্লাহ (ﷺ)এর মদিনা তাে দূরের কথা, মুশরিকদের কোনাে শহরের জন্যও বৈধ হতে পারে না। সর্বশেষ বছর মক্কা মুকাররামাতেও সে একই কাণ্ড ঘটিয়েছে। তখন কাবাঘরে গােলা বর্ষণ করা হয়েছে। অতএব সে ইমাম হুসাইন (رضي الله عنه)কে হত্যার আদেশ দেয়নি' নিছক এ কারণে তাকে লানত দেয়া না জায়েয হওয়ার মতামত আঁকড়ে থাকা নিতান্তই অবান্তর। কারবালার ঘটনা যদি কোনদিন নাও ঘটত, তবুও হাররার ঘটনাই হাদিসের আলােকে তার লানতযােগ্য হবার জন্য যথেষ্ট ছিল। একইভাবে ইবন তায়মিয়ার যুক্তিটিও টেকে না। কারণ ইয়াযিদ নিঃসন্দেহে একজন ফাসেক ছিল। এ ব্যাপারে আলিমদের ইজমাও রয়েছে।

❏ ইয়াযিদের ফাসিক হবার বিষয়টি ইবন তায়মিয়া নিজেও মিনহাজুস সুন্নাহ গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন। এখন একটা বিষয় বাকি থাকে যে- ইয়াযিদ ঐ অবস্থার উপরেই মারা গিয়েছে কি না? ইতিহাস গ্রন্থাদিতে আমরা যেমন দেখতে পাই, ইয়াযিদ যখন মারা যাচ্ছিল, তখনও তার বাহিনী মক্কায় কাবা ঘরে গােলাবর্ষণ করছে। ইয়াযিদ তাওবা করলে সেকথা বিশেষভাবে অবশ্যই ইতিহাস গ্রন্থাদিতে থাকত। অবশ্য হুসাইন (رضي الله عنه)র হত্যাকাণ্ডের পর তার অনুতপ্ত হবার বর্ণনা আছে। আবার এর বিপরীতমুখী বর্ণনাও আছে।

❏ একটি বর্ণনায় আছে, সে বলেছিল, আমি হলে হুসাইনের সাথে এমন করতাম না।' আরেক বর্ণনামতে, সে প্রথমে খুশি হলেও পরে অনুতপ্ত হয়েছিল। আরেকটি বর্ণনামতে সে হুসাইন (رضي الله عنه)কে হত্যার জন্য এবং এর মাধ্যমে মুসলিমদের সামনে নিজেকে ঘৃণিত করার জন্য ইবন যিয়াদকে লানত দিয়েছিল।

(ইবনু কাছির, আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া, খ. ৮, পৃ. ২৩২)।

কিন্তু তার অনুতপ্ত হবার হাকিকত বােঝা দুষ্কর। একজন অনুতপ্ত মানুষ কীভাবে আবার হাররার মতাে ঘটনা ঘটায়।

❏ ইবন তায়মিয়া বলেছেন, 'কিছু মানুষ ভাবে ইয়াযিদ একজন ভালাে লােক ছিল, ন্যায়পরায়ণ শাসক ছিল, মহানবি (ﷺ)এর যুগে জন্ম নেয়া সাহাবি ছিল। এগুলাে পথভ্রষ্টতা।'

(ইবন তায়মিয়া আল হাররানি, মাজমু আল ফাতাওয়া, খ.৪, পৃ. ৪৮২)

❏ আস সাওয়াইকুল মুহরিকা গ্রন্থে ইবন হাজার হাইতামি (মৃ. হি.) ইয়াযিদের ফাসিক হবার ব্যাপারে আলিমদের একমত হওয়ার কথা বলেছেন। তিনি লিখেছেন,  

ইয়াযিদ ইবন মুয়াবিয়া কাফির কি না, তা নিয়ে আহলুস সুন্নাহর আলিমগণের মাঝে মতপার্থক্য আছে।

একদল তাকে কাফের মনে করে। অপরদিকে অন্যদল বলেন, সে মুসলিম হলেও ফাসিক, ফাজির ও মদ্যপ ছিল। তার ফাসিক হওয়া নিয়ে সবার ইজমা রয়েছে। একদল আলিমের মতে তাকে নাম ধরে লানত দেয়া। যাবে। ইমাম আহমদ, ইবনুল জাওযি প্রমুখ এ মত পােষণ করেন...। উক্ত গ্রন্থে তিনি আরও লিখেছেন, উমর ইবন আব্দুল আযিয (رحمة الله) এর ব্যাপারে বর্ণিত আছে, ইয়াযিদকে যে আমিরুল মুমিনিন বলত, তিনি তাকে বিশটি দোররা মারার হুকুম জারি করতেন।

(আস সাওয়াইকুল মুহরিকা, পৃ. ২২১)

❏ ইমাম যাহাবি মুহাম্মদ ইবন আবুস সারি আল আসকালানির সূত্রে বর্ণনা করেছেন,→ ইয়াহইয়া ইবন আব্দুল মালিক ইবন আবু গানিয়্যাহ বলেন,→নওফল ইবন আবুল ফুরাত বলেন,→আমি একদিন উমর ইবন আব্দুল আযিযের কাছে ছিলাম। হঠাৎ এক লােক বলল, আমিরুল মুমিনিন ইয়াযিদ বলেন...'। তখন উমর তাকে শাস্তি দেয়ার হুকুম দিলেন। তাকে বিশ ঘা চাবুক মারা হলাে।' এছাড়াও আরও বলা উচিত, ইয়াযিদ তাে ফাসিক হলেও অন্যান্য ফাসিকের মতাে নয়। সে ইমাম হুসাইন (رضي الله عنه)কে হত্যা করেই ক্ষান্ত হয়নি, তাঁর শির মােবারককে কুফা থেকে দামেস্কে নিয়ে যাওয়ার পর সামনের দাঁতে ছড়ি দিয়ে খোঁচা দিয়েছে, আহলুল বায়তের সদস্যদের হত্যা করার পর জীবিতদের বন্দী করেছে। মদিনায় বাইয়াত অস্বীকারকারীদের হত্যা করেও ক্ষান্ত হয়নি, মদিনাকে তার সৈন্যদের জন্য বৈধ করে দিয়েছিল; তারা সেখানে যা ইচ্ছা করেছে। মক্কায় ইবন যুবায়র (رضي الله عنه)মা ও তার সঙ্গীদের অবরুদ্ধ করেও ক্ষান্ত হয়নি, কাবা শরিফের উপর গােলাবর্ষণ করেছে। তাছাড়া শাসনক্ষমতা পাওয়ার আগে থেকেই সে খেলতামাশা, মদ্যপান ইত্যাদিতে কুখ্যাত ছিল। তাই সে কীভাবে অন্যান্য ফাসিকদের মতাে হতে পারে? কেউ কেউ নিম্নোক্ত হাদিসকে প্রমাণ হিসেবে উপস্থাপন করেন,

لعن المؤمن كقتله .

‘কোনাে মুমিনকে লানত দেয়া তাকে হত্যা করার ন্যায়।' (সহিহ বুখারি, কিতাব : আল আদব, বাব : মা ইউনহা মিনাস সিবাবি ওয়াল লান)

❏ এ হাদিস তাে ঐ মুমিনের ক্ষেত্রে প্রযােজ্য, যে লানতের যােগ্য নয়। নির্দিষ্ট কোনাে মুমিনকে লানত দেয়া প্রসঙ্গে ইমাম নববি বলেছেন, ‘নির্দিষ্ট কোনাে ব্যক্তিকে লানত দেয়া, যে ইহুদি, খ্রিষ্টান, জালিম, ব্যভিচারী, চিত্রাঙ্কণকারী, চোর অথবা সুদখােরের মতাে কোনাে পাপে লিপ্ত, স্পষ্ট হাদিস অনুসারে তাকে লানত দেয়া হারাম নয়।'

(ইমাম নববি, আল আযকার মিন কালামি সাইয়্যিদিল আবরার, রিয়াদ : মাকতাবাতু নাযার মুসতফা আল বায, ১৯৯৭ খ্রি. খ, ২, পৃ. ৪২৮)

যারা প্রত্যক্ষ ও পরােক্ষভাবে ইয়াযিদকে লানত দিয়েছেন, তাদের কয়েকজনের মতামত নিম্নরূপ :

❏ আল্লামা মানাভি (رحمة الله) বলেন,

হুসাইন (رضي الله عنه)র হত্যাকাণ্ডের বিস্তারিত বর্ণনা আমাদের কলজে ছিন্নভিন্ন করে দেয়, শরীরকে গলিয়ে দেয়। যে তাঁকে হত্যা করেছে, অথবা এতে সম্ভষ্ট হয়েছে, অথবা আদেশ দিয়েছে তাদের প্রত্যেকের উপর আল্লাহর লানত; আদ জাতি যেভাবে ধ্বংস হয়েছে, তারাও সেভাবে ধ্বংস হােক।' হাফিজুদ্দিন আল কুরদি আল হানাফি তার ফতােয়ায় বলেন, ইয়াযিদকে লানত দেয়া জায়েয, তবে না দেয়াই উচিত। হাজ্জাজের ক্ষেত্রেও একই কথা।'

❏ ইমাম কাওয়ামুদ্দিন আস সাফফারি (رحمة الله) বলেন, ইয়াযিদকে লানত দিতে কোনাে দোষ নেই। তবে মুয়াবিয়া রা. কে লানত দেয়া যাবে না।'

❏ ইবনুল জাওযি (رحمة الله) কে ইয়াযিদ নিয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি জবাব দেন,

‘রসুলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন, “যে আবু সুফিয়ানের ঘরে ঢুকবে, সে নিরাপদ। আর আমরা জানি তার বাবা সেই ঘরে ঢুকেছিলেন, ফলে নিরাপদ হয়ে গেছেন। কিন্তু পুত্র তাে সেখানে ঢােকেনি।

❏ আল মাওলা ইবনুল কামাল (رحمة الله) বলেন, প্রকৃত কথা হলাে, ইয়াযিদকে তার কুফরির কুখ্যাতি, বীভৎসতা ও অপকর্মের জন্য, যেসবের বিস্তারিত বিবরণ পাওয়া যায়, তাতে তাকে লানত দেয়া জায়েয। তা না হলে কোনাে ফাসিককেও নির্দিষ্ট করে লানত দেয়া যাবে না।

❏ আল্লামা তাফতাযানি (رحمة الله) বলেছেন,

لاَ أَشُكُّ فِي إِسلَامِه بَل فِي إِيمَانِهِ فَلَعنَةُ اللّٰه عليه وعلى أَنصَارِهِ وأغوَانِه

আমি তার ইসলামের ব্যাপারে সন্দেহ করি না, তবে ইমানের ব্যাপারে করি। তার উপর, তার সহযােগী ও সহায়তাকারীদের উপর আল্লাহর লানত।

❏ একদিন ইবনুল জাওযি (رحمة الله) ওয়াজের মজলিসে চেয়ারে বসে ছিলেন। একজন জিজ্ঞেস করল, এটা বলা কীভাবে সহিহ হতে পারে যে, ইয়াযিদ হুসাইন (رضي الله عنه)কে হত্যা করেছে? সে তাে তখন দামেস্কে এবং হুসাইন রাদিয়াল্লাহু ইরাকে ছিলেন। তখন ইবনুল জাওযি নিম্নোক্ত কবিতা আবৃত্তি করলেন,

سهم أصاب وراميه بذي سلم من + بالعراق لقد أبعدت مزماي

‘ইরাকে যে আছে, তার কাছে তীর লক্ষ্যভেদ করেছে, যে তীর ছোঁড়া হয়েছে যি সালাম নামক জায়গা থেকে।

তােমার নিশানা তাে বহু দূরের।

❏ এটি শরিফ রাজির ‘ইয়া যাবিয়্যাতাল বান’ নামের একটি বিখ্যাত কবিতার লাইন। কবি এখানে প্রেমিকার সাথে তার ভালােবাসার সম্পর্ককে লক্ষ্যভেদী তীর হিসেবে। আখ্যা দিয়েছেন। এই তীর স্থানগত দূরত্ব থাকার পরও হিজাযের যি সালাম থেকে বহু দূরে ইরাকে গিয়ে লক্ষ্যভেদ করতে পারে। (আব্দুর রউফ আল মানাভি, ফাইযুল কাদির শারহুল জামিইস সাগির মিন আহাদিসিল বাশিরি ওয়ান নাযির, বৈরুত, দারুল মারেফাহ, ১৯৭২ খ্রি., খ. ১, পৃ. ২০৫)।

❏ ইয়াযিদ সম্পর্কে ইমাম যাহাবি (رحمة الله)'র ব্যক্তিগত মূল্যায়ন এখানে উল্লেখ করা প্রয়ােজন,

وَكَانَ نَاصِبِيَّا فَظَّا غَلِيظًا جِلفًا يَتَنَاوَلُ المُسكِرَ وَيَفعَلُ المُنكِرَ افتَتَحَ دَؤلَتَهُ بِمَقتَلِ الشَّهِيدِ الحُسَينِ وَاختَتَمَهَا بِوَاقِعَةٍ الحَرَّةَ فَمَقَتَهُ النَّاسُ وَلَم يُبَارَك فِي عُمرِهِ وَخَرَجَ عَلَيهِ غَيرُ وَاحِدٍ بَعدَ الحُسَينِ كَأَهلِ المَدِينَةِ قَامُوا لِلّٰهِ

“সে ছিল আহলে বায়ত বিদ্বেষী (নাসেবি), নির্দয়, কর্কশ, অত্যাচারী; সে নেশাজাতীয় দ্রব্য গ্রহণ করত, খারাপ কাজ করত। শহিদ হুসাইন (رضي الله عنه)র হত্যাকাণ্ডের মধ্য দিয়ে সে খেলাফত শুরু করেছে আর শেষ করেছে হাররার ঘটনা দিয়ে। লােকেরা তাকে ঘৃণা করত। তার বয়সেও সে বরকত পায়নি। হুসাইন (رضي الله عنه)র পর অনেকেই তার বিরুদ্ধে বিদ্রোহী হয়ে উঠেছিলেন। যেমন মদিনাবাসী তারা শুধু আল্লাহর জন্য তার বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছিলেন। ইমাম যাহাবি আরও উল্লেখ করেছেন, যিয়াদ আল হারেসি উল্লেখ করেছেন, ইয়াযিদ একবার আমাকে এমন শরাব পান করাল, তেমন স্বাদের শরাব আর কখনাে খাইনি। বললাম, আমিরুল মু'মিনিন! এমন মদ আমি কখনাে পান করিনি। তখন ইয়াযিদ বলল,

هَذَا رُمَّانُ حُلوَانَ ، بِعَسَلِ أَصبَهَانَ بِسُکَّرِ الأَهوَازِ ، بِزَبِيبِ الطَّاٸِفِ ، بِمَاءِ بَرَدَی

‘এটা মিষ্টি ডালিম, ইস্পাহানের মধু, আহওয়াযের চিনি, তায়েফের আঙ্গুর এবং বারাদার পানি দিয়ে তৈরি।

❏ ইমাম যাহাবি মুহাম্মদ ইবন আহমদ ইবন মিসমা

(رحمة الله)’র সূত্রে বর্ণনা করেছেন,

سَكِرَ يَزِيدُ فَقَامَ يَرقُصُ فَسَقَطَ عَلَى رَأسِهِ فَانشَقُُ

‘একবার ইয়াযিদ মাতাল হয়ে উঠে দাঁড়িয়ে নাচতে শুরু করল। এরপর চিৎ হয়ে পড়ে তার মাথা ফেটে গেল।' (ইমাম যাহাবি, সিয়ারু আলামিন নুবালা, বৈরুত : মুয়াসসাতুর রিসালা, খ. ৪, পৃ. ৩৭)।

❏ ইবন খাল্লিকান (রহঃ) বলেন, 

وَسُئِلَ إِلكِيَاهَرًا اسِي أَيضًا عَن يَزِيدِ بن مُعَاوِيَةَ فَقَالَ : إِنَّهُ لَم يَکُن مِنَ الصَّحَابَةِ لِأَنَّهُ وَلِدَ فِي أَيَّامِ عُمَرَ بِن الخَطَّابِ رَضِيَ اللّٰهُ عَنهُ. وأما قَولُ السَّلَف فَفِيهِ لِأَحمَد قَولاَنِ تَلوِيحِّ وَتَصرِيحُ وَلِمَالِكَ فِيهِ قَولَانِ تَلوِيحُ وَتَصرِيحُ ولأبِي حَنِيفَةَ قَولَانِ تَلوِيحُ وَتَصرِيحُ وَلَنَا قَؤلُ وَاحِدُ تَصرِيحُ دُونَ التَّلوِيح! وَکَیفَ لَا يَكُون كَذَلِكَ وَهُوَ الَّلاعِبُ بِالنُّردِ وَالمُتَصَيِّدُ بِالفُهُودِ وَمُد مِنُ الخَمرِ.

‘বিশিষ্ট শাফেঈ ফকিহ ইলকিয়া হাররাসিকে ইয়াযিদ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল। তিনি বলেছিলেন, ইয়াযিদ কোনাে সাহাবি ছিল না। সে জন্ম নিয়েছিল উমর (رضي الله عنه)'র খিলাফতকালে। তার ব্যাপারে সালাফ বা পূর্বসূরি, যেমন ইমাম আহমদ, ইমাম মালিক, ইমাম আবু হানিফা প্রমুখের পক্ষ থেকে দুটি মত রয়েছে। একটি মত তালউইহ (ইশারায় লানত দেয়া) ও আরেকটি মত তাসরিহ (স্পষ্টভাষায় লানত দেয়া)। আর আমাদের মত কেবল একটিই। তা হলাে, তাসরিহ বা সুস্পষ্টভাবে লানত দেয়া, তালউইহ নয়। আর এটা হবে নাই বা কেন? ইয়াযিদ পাশা খেলত, চিতাবাঘ দিয়ে শিকার করত, সর্বোপরি সে ছিল মদ্যপ।' 

(ইবন খালিকান, ওয়াফিয়াতুল আইয়ান ফি আনবায়ি আবনায়িয যামান, বৈরুত: দারু সাদির, ১৯৭২ খ্রি., খ. ৩, পৃ. ২৮৭)

❏ আল্লামা শাওকানি বলেছেন,

وَلَقَد أَفرَطَ بَعضُ أَهلِ العِلمِ كَالكَرَّامِیَّةِ وَمَن وَافَقَهُم فِي الجُمُودِ عَلَى أَحَادِيثِ البَابِ حَتَّی حَكُومُ بِأَنَّ الحُسَينَ السِّبطَ رَضِيَ اللّٰهُ عَنهُ وَأَرضَاهُ بَاغ عَلَى الخِمِّيرِ السِّکِّيرِ الهَتِاكِ لِحُرُمِ الشَّرِيعَةِ المُطَهَّرَةِ یَزِیدَ بنِ مُعَاوِيَةَ لَعَنَهُم اللّٰهُ ، فَيَاللّٰهِ العَجَبُ مِن مَقَالاَتِ تَقشَعِرُّ مِنهَا الجُلُودُ وَيَتَصَدَّعُ مِن سَمَاعِهَا كُلُّ جُلمُودٍ

‘কিছু আলেম যেমন কাররামিয়া ও তাদের সমমনা কিছু লােক এ অধ্যায়ের হাদিসগুলাের উপর ভিত্তি করে বাড়াবাড়ি করেছে। এমনকি এমন রায় দিয়েছে যে, মদ্যপ, মাতাল, পবিত্র শরিয়াতের পবিত্র বিধিবিধান ছিন্নকারী ইয়াযিদ ইবন মুয়াবিয়ার বিরুদ্ধে রসুলুল্লাহ (ﷺ)এর নাতি হুসাইন (আল্লাহ তাঁর উপর সন্তুষ্ট হােন এবং তাঁকে সন্তুষ্ট করুন) বিদ্রোহী হয়েছেন। আল্লাহ ঐসব লােককে লানত দিন। হায় আল্লাহ! কী বিস্ময়কর তাদের কথা! এগুলাে শুনলে শরীর শিউরে ওঠে, কঠিন প্রস্তরও কেঁপে ওঠে।' 

(ইমাম মুহাম্মদ ইবন আলি আশ শাওকানি, নাইলুল আওতার, খ. ৭, পৃ. ১৮৬)। 

❏ আল্লামা সাদুদ্দিন আত তাফতানি (رحمة الله) বলেন,

  وبعضهم أطلق اللغن عليه لما أنه حين أمر بقتل الحسين كفر رضي الله عنه واتفقوا على جواز اللعن على من قتله أو أمر به أو أجازه أو رضي به. والحق إن رضا يزيد بقتل الحسين واستبشارة بذلك وإهاننه أهل بيت رسول الله مما تواتر مغناه وإن كان تفصيله

أحادا فنحن لا تتوقف في شأنه بل في كفره وإيمانه لعنة الله عليه وعلى أنصاره وأعوانه.

উলামায়ে আহলে সুন্নাতের কেউ কেউ তাকে অর্থাৎ ইয়াযিদকে লানত দিয়েছেন। কারণ সে যখন হুসাইন (رضي الله عنه)কে হত্যার আদেশ দিয়েছিল, তখনই সে কুফরি করেছিল। এছাড়া হুসাইন (رضي الله عنه)র হত্যাকারী, হত্যায় আদেশদাতা, অনুমােদনদাতার অথবা তাতে সম্ভষ্ট ব্যক্তিকে লানত দেয়ার ক্ষেত্রে আলিমগণ একমত পােষণ করেছেন। প্রকৃত কথা হলাে, হুসাইন (رضي الله عنه)র হত্যাকাণ্ডে ইয়াযিদের সন্তুষ্টি ও আনন্দ, রসুলুল্লাহ (ﷺ) এর  আহলে বায়তকে লাঞ্ছিত করা যার বর্ণনা আলাদা আলাদাভাবে খবরে আহাদ পর্যায়ের হলেও অর্থগতভাবে মুতাওয়াতির পর্যায়ের; এসবের জন্য আমরা তার ব্যাপারে চুপ থাকব না। এমনকি সে মুমিন নাকি কাফির সে ব্যাপারেও চুপ থাকব না। আল্লাহ তায়ালার লানত তার উপর, তার সহযােগী ও সহায়তাকারীদের উপর।' (সাদুদ্দিন আত তাফতানি, শারহুল আকাইদ আন নাসাফিয়্যাহ, আস্তানা, কাজাখস্তান, ১২৭৭ হি., পৃ. ১৮০-১৮১)

❏ তিনি আরও বলেন,

فمن علماء المذهب من لم يجوز اللعن على يزيد مع علمهم بأن يستحق ما يربو على ذلك ويزيد! قلنا تحاميا عن أن يرتقي إلى الأعلى فالأعلى كما هو شعار الروافض

যদি এটা বলা হয় যে, এই মাযহাবের অনেক আলিমই জানেন, ইয়াযিদ শুধু লানত নয়, তার চেয়েও বেশি কিছুর উপযুক্ত। এসব জেনেও তারা ইয়াযিদকে লানত দেয়া জায়েয বলেন, না!' আমরা এর জবাবে বলব, লানত দেয়ার এই প্রবণতা] যাতে আরও উপরের স্তর কিংবা তারও উপরের স্তরে না যায়, সেজন্যই তারা নিষেধ করেন, সেটা রাফেযিদের নিদর্শন।'

(সাদুদ্দিন আত তাফতানি, শারহুল মাকাসিদ, বৈরুত: দারুল কুতুব আল ইলমিয়্যা, ২০১১ খ্রি., খ.৩, পৃ. ৫৩৬-৫৩৭)।  

❏ ইমাম জালালুদ্দিন সুয়ুতি (رحمة الله) বলেন,

فقتل وجيء برأسه في طست حتی وضع بين يدي ابن زیاد، لعن الله قاتله وابن زياد معه ويزيد أيضا. وكان قتله بكربلاء

এরপর ইমাম হুসাইন (رضي الله عنه)কে হত্যা করা হলাে এবং একটি থালায় তার মাথা এনে ইবন যিয়াদের সামনে রাখা হলাে। তার হত্যাকারী, ইবন যিয়াদ এবং ইয়াযিদকে আল্লাহ লানত দিন। তাঁকে কারবালায় হত্যা করা হয়েছিল।'

(ইমাম জালালুদ্দিন আস সুয়ুতি, তারিখুল খুলাফা, বৈরুত : দার ইবন হাযম, পৃ. ১৬৫)

❏ শায়খুল ইসলাম ইবন হাজার আল আসকালানি (رحمة الله) বলেন,

وأما المحبة فيه والرفع من شأنه فلا تقع إلا من مبتدع فاسد الاعتقاد فإنه كان فيه من الصفات ما يقتضي سلب الإيمان عمن يحبه لأن الحب في الله والبغض في الله من الإيمان .

‘ইয়াযিদের প্রতি মহব্বত রাখা ও তার গুণকীর্তন করা কেবল বেদয়াতি ও বাতিল আকিদাধারীর পক্ষেই সম্ভব। কারণ ইয়াযিদের ভেতর এমন কিছু বৈশিষ্ট ছিল, যেজন্য কেউ তাকে ভালােবাসলে তার বেইমান হয়ে যাওয়া আবশ্যক হয়ে যায়। কারণ শুধু আল্লাহর জন্য ভালােবাসা এবং শুধু তার জন্য ঘৃণা করা উভয়ই ইমানের অন্তর্ভুক্ত।'

(ইবন হাজার আল আসকালানি, আল ইমতা বিল আরবাঈন আল মুতাবাইনাতুস সামা, বৈরুত : দারুল কুতুব আল ইলমিয়্যাহ, ১৯৯৭ খ্রি., পৃ. ৯৬)

❏ আবু বকর মুহাম্মদ ইবনুল হুসাইন আল আজুররি (মৃ. ৩৬০ হি.) বলেন, হুসাইন ইবন আলি (رضي الله عنه)র হত্যাকারীর উপর আল্লাহর লানত এবং সমস্ত লানতদাতার লানত। একইসাথে তাকে হত্যায় যে সহযােগিতা করেছে। আলি ইবন আবু তালিব, হাসান, হুসাইন (رضي الله عنه)মকে গালি দিয়েছে অথবা ফাতিমা রাদিয়াল্লাহু আনহাকে তাঁর পুত্রদের ব্যাপারে কষ্ট দিয়েছে অথবা রসুলুল্লাহ (ﷺ) এর  আহলে বায়াতকে কষ্ট দিয়েছে, তার উপর আল্লাহর লানত ও গযব বর্ষিত হােক। মহান আল্লাহ তার জন্য কোনাে মিযান স্থাপন করবেন না, সে মহানবি (ﷺ) এর  শাফায়াতও অর্জন করতে পারবে না।'

(মানাকিবু ও ফাদাইলু আলে বাইতিন নাবি (ﷺ), পৃ. ৩০৫)

❏ আল্লামা আলুসি র, তাঁর তাফসিরে ইয়াযিদ সম্পর্কে আল্লামা ইবনুল জাওযি (رحمة الله) এর একটি উক্তি উল্লেখ করেছেন। তার সেই উক্তিটিও এখানে প্রাসঙ্গিক

 من الاعتقادات العامة التي غلبت على جماعة منتسبين إلى السنة أن يقولوا : إن يزيد كان على الصواب وإن الحسين رضي الله تعالی عنه أخطأ في الخروج عليه ولو نظروا في السير لعلموا كيف

عقدت له البيعة وألزم الناس بها ولقد فعل في ذلك كل قبيح ثم لو قدرنا صحة عقد البيعة فقد بدت منه بواد كلها وجب فسخ العقد ولا

يميل إلى ذلك إلا كل جاهل عامي المذهب يظن أنه يغيظ بذلك  الرافضة.

‘নিজেদেরকে আহলুস সুন্নাতের দিকে সম্পর্কিত করে, এমন একটি গােষ্ঠীর সাধারণ আকিদা হলাে, ইয়াযিদ সঠিক ছিল আর হুসাইন (رضي الله عنه) তার। বিরুদ্ধে বের হয়ে ভুল করেছিলেন। এরা চরিতগ্রন্থগুলাে দেখলে জানতে পারত ইয়াযিদের বাইয়াত কীভাবে সংঘটিত হয়েছিল আর সাধারণ মানুষকে সে কীভাবে তাতে বাধ্য করেছিল। এজন্য সে সবরকমের খারাপ কাজ করেছিল। এরপরও যদি ধরে নেই যে, তার বাইয়াত যথাযথভাবে হয়েছিল, তবুও তারপর তার কাছ থেকে এমন বিষয় প্রকাশ পেয়েছিল, যাতে বাইয়াত ভঙ্গ করা ওয়াজিব হয়ে পড়ে। উপরােক্ত মতের প্রতি কেবল সেই আকৃষ্ট হতে পারে, যে গণ্ডমূর্খ ও ধর্মীয় জ্ঞানহীন, যে ভাবে এমন অবস্থান নিয়ে সে রাফেযিদেরকে রাগিয়ে দিতে পারবে।'

(আল্লামা মাহমুদ আলুসি, প্রাগুক্ত, খ. ২৬, পৃ. ৭৩)।

❏ ইমাম আবু শামা বলেছেন, “ইবনুল জাওযিকে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল ইয়াযিদকে লানত দেয়া যাবে কি না? তিনি বলেছেন, ইমাম আহমদ ইবন হাম্বল তাকে লানত দেয়া জায়েয বলেছেন। আর আমরা বলি, সে আমাদের নবিজী (ﷺ) এর  কন্যার সন্তানের সাথে যা করেছে, রসুলুল্লাহ (ﷺ) এর  পরিবারকে উটের কুঁজে উঠিয়ে বন্দী হিসেবে যেভাবে সিরিয়ায় নিয়ে গিয়েছে এবং যেভাবে আল্লাহ ও তাঁর রসুলের অবাধ্য হয়েছে, সেসবের জন্য আমরা তাকে পছন্দ করি না। আমাদের এ সমন্বয়মূলক কথায় যদি তােমরা সস্তুষ্ট না হও, তবে আমরা মূল দাবিতে ফিরে যাব। তা হলাে তাকে লানত দেয়া জায়েয। ইবনুল জাওযি আরও বলেছেন, সামনের দাঁতের যে স্থানে রসুলুল্লাহ (ﷺ) চুমু খেয়েছেন, সেখানে যে লােক ছড়ি দিয়ে আঘাত করেছে, তার কথা বলে আমাদের সময়কে কলুষিত করাে।

(আবু শামা আল মাকদিসি, আয যাইলু আলার রাওদাতাইন, বৈরুত, ১৯৭৪ খ্রি., পৃ. ২৩)।

❏ মুহাম্মদ রশিদ রিদা বলেন, সেই শাসক শক্তি প্রয়ােগ করে, ছলচাতুরি করে মুসলমানদের শাসনভার নিয়েছিল। সে হলাে ইয়াযিদ ইবন মুয়াবিয়া। আল্লাহ তাকে লাঞ্ছিত করুন। কাররামিয়া ও নাসেবি(رضي الله عنه) যারা তার মদদদাতা, তাদেরকেও আল্লাহ লাঞ্ছিত করুন।

(তাফসিরুল মানার, খ. ৬, পৃ. ৩৬৭)।

❏ ফুরফুরার মুজাদ্দেদে যামান আবু বকর সিদ্দিকি ফুরফুরাভী (رحمة الله) এর ছেলে আবু জাফর সিদ্দিকি (رحمة الله) বলেন, খায়রুল কুরুনের সময় রাফজী, কারিয়া, মােতাজেলা প্রভৃতি বেদাত দলগুলির আবির্ভাব হওয়ায় তাহারা ও তাহাদের মতামতগুলি কী ভালাে হইবে? হজরত মােয়াবীয়ার পুত্র এজিদ তাবেয়ীনের কালে ছিল। কিন্তু সে হজরত হুসাইন (رضي الله عنه) কে কতল করিয়াছিল...।'

(আল্লামা আবু জাফর সিদ্দিকি, তাহকীকুল মাসায়েল, ফুরফুরা শরীফ মােজাদ্দেদ মিশন, তাবি, পৃ. ১২)

কন্সট্যান্টিনোপল অভিযান ও ইয়াযিদ

মহানবি (ﷺ) এর  একাধিক হাদিসে জানা যায়, তাঁর উম্মতের মধ্যে যারা সর্বপ্রথম নৌযুদ্ধে যাবে, তারা জান্নাতি। এছাড়া যারা সর্বপ্রথম ‘সিজারের শহর’ আক্রমণ করবে, তারাও ক্ষমাপ্রাপ্ত হবে।

◼ সহিহ বুখারিতে উম্মু হারাম থেকে বর্ণিত, তিনি রসুলুল্লাহ (ﷺ)কে একদিন বলতে শুনলেন,

أول جيش من أمتي يغزون البحر قد أوجبوا

‘আমার উম্মতের মধ্যে সর্বপ্রথম যারা নৌযুদ্ধ করবে, তাদের জন্য জান্নাত অবধারিত।' উম্ম হারাম বলেন, আমি বললাম, ইয়া রসুলাল্লাহ! আমি কী তাদের ভেতর আছি?' তিনি বললেন, হ্যা। তুমি আছ। তিনি এরপর আবার বললেন

أول جيش من أمتي يغزون مدينة قيصر مغفور لهم

আমরা উম্মতের মধ্যে যারা সর্বপ্রথম সিজারের শহর আক্রমণ করবে, তারা ক্ষমাপ্রাপ্ত। উম্ম হারাম বললেন, ইয়া রসুলাল্লাহ! আমি কী তাদের ভেতর আছি? তিনি বললেন, না।' (ইমাম বুখারি, আস সাহিহ, কিতাব : আল জিহাদ, বাব : মা কিলা ফি কিতালির রুম)।

এই হাদিসে কোথাও কুস্তুনতুনিয়া বা কন্সট্যান্টিনােপলের কথা নেই। ইয়াযিদপন্থীরা সবাই সিজারের শহর’কে কন্সট্যান্টিনােপল নাম দিয়ে ইয়াযিদকে ক্ষমাপ্রাপ্ত বলে ঘােষণা করার অপচেষ্টা চালায়।

এই হাদিসের ক্ষমার আওতায়। ইয়াযিদকে আনতে হলে দুটি বিষয় প্রমাণ করতে হয় :

১. সিজারের শহর দ্বারা উদ্দেশ্য কন্সট্যান্টিনােপল  

২. কন্সট্যান্টিনােপলের প্রথম অভিযানে ইয়াযিদের অংশগ্রহণ সিজারের শহর দ্বারা অনেকেই কন্সট্যান্টিনােপল উদ্দেশ্য করেছেন।

◼ ফতহুল বারিতে আল্লামা ইবন হাজার আল আসকালানি লিখেছেন, “সিজারের শহর দ্বারা উদ্দেশ্য কন্সট্যান্টিনােপল। ইবন তায়মিয়া এ হাদিসটি উল্লেখ করার সময় ভুলবশত ‘সিজারের শহর' এর জায়গায় কন্সট্যান্টিনােপল উল্লেখ করেছেন। এছাড়া তিনি বলেছেন, হাদিসটি ইবন উমর (رضي الله عنه) বর্ণনা করেছেন। এটাও ঠিক নয়। হাদিসটি উম্ম হারাম (رضي الله عنه) এর বর্ণনা। এছাড়া ফতহুল বারিতে ‘সিজারের শহর’ হিমস হতে পারে বলে আলিমদের একটি ইখতেলাফ উল্লেখ করা হয়েছে। হিমস উদ্দেশ্য হলে ইয়াযিদ এ হাদিসের আওতায় পড়ে না। কারণ ইয়াযিদ এখানে কোনাে অভিযান পরিচালনা করেনি।

➡ হযরত আবু উবায়দা ইবনুল জাররাহ (رضي الله عنه) শান্তিপূর্ণ উপায়ে এ শহরটি করায়ত্ত করেছিলেন।

২৬ হিজরিতে ইয়াযিদের জন্মের ১১ বছর আগে ১৫ অথবা ১৬ হিজরিতে এ অভিযান পরিচালিত হয়েছিল।

➡ বিস্তারিত জানার জন্য ইবনুল আসিরের আত তারিখুল কামিল ও বালাযুরির ফুতুহল বুলদান দেখা যেতে পারে। হাদিসে স্পষ্টভাবে বলা না হওয়ায় সিজারের শাসনাধীন যেকোনাে শহর এখানে উদ্দেশ্য হতে পারে।

রােমক বাহিনীর বিরুদ্ধে মুসলিমদের অভিযানঃ

এক নজরে দেখে নেয়া যাক : ক্রম  সময়  সেনাপতি ও যুদ্ধের বর্ণনা

◼ ১মঃ মহানবি (ﷺ) এর সময় (৮ হি./ ৬২৯খ্রি.)

মুতার যুদ্ধ নামে ইতিহাসে পরিচিত। যায়েদ ইবন হারিসা (رضي الله عنه) ছিলেন প্রথম সেনাপতি। এ যুদ্ধে যায়েদ ইবন হারিসা  (رضي الله عنه) জাফর ইবন আবু তালিব (رضي الله عنه) ও আব্দুল্লাহ ইবন রাওয়াহা

৬২৯ খ্রি.)  (رضي الله عنه) ইন্তিকাল করেন।
◼ ২য়ঃ উমর (رضي الله عنه) এর খিলাফতকালে (১৬ হি./৬৩৭ খ্রি.)

হিমস অভিযান হিসেবে প্রসিদ্ধ। আব্দুল্লাহ ইবন রাওয়াহা (رضي الله عنه) এর নেতৃত্বে এ অভিযানে খালিদ ইবন ওয়ালিদ (رضي الله عنه), বিলাল (১৬ হি./  (رضي الله عنه) প্রমুখ অংশ নিয়েছিলেন।

◼ ৩য়ঃ উসমান (رضي الله عنه) এর খিলাফতকালে(৩২ হি./৬৫২ খ্রি.)

আমির মুয়াবিয়া (رضي الله عنه) এ বছর রােম সম্রাজ্যের দেশগুলােতে যুদ্ধ করেন। তিনি যুদ্ধ করতে করতে কন্সট্যান্টিনােপলের প্রণালী পর্যন্ত পৌঁছে যান। (ইমাম ইবনুল আসির, আল  কামিল ফিত তারিখ, বৈরুত : দারুল কুতুব আল ইলমিয়্যাহ,   ১৯৮৭ খ্রি., খ, ৩, পৃ. ২৫)।

◼ ৪র্থঃ মুয়াবিয়া (رضي الله عنه)  এর শাসনামলে (৪২ হি./৬৬২ খ্রি.)

এ বছরও মুসলিমগণ আরমেনিয়ার লান প্রদেশ ও রােম এর  সম্রাজ্য আক্রমণ করেন। তাদের বহু সৈন্য ও সেনাপতি শাসনামলে  মুসলমানদের হাতে নিহত হয়। (ইবনুল আসির, প্রাগুক্ত, খ.  ৩, পৃ. ২৮৩)।

◼ ৫মঃ মুয়াবিয়া (رضي الله عنه)  এর শাসনামলে (৪৩ হি./৬৬৩ খ্রি.)

এ বছর বুসর ইবন আবি আরতাআর নেতৃত্বে মুসলমান

সৈন্যরা রােমানদের আক্রমণ করেন। আল্লামা ওয়াকেদির শাসনামলে  মতে, বুসরের বাহিনী কন্সট্যান্টিনােপল পর্যন্ত পৌঁছে গিয়েছিল। (ইবনুল আসির, প্রাগুক্ত, খ. ৩, পৃ. ২৮৭) এটাকে কন্সট্যান্টিনােপলে প্রথম আক্রমণ বলে ধরতে পারি।

◼ ৬ষ্ঠঃ মুয়াবিয়া (رضي الله عنه)  এর শাসনামলে (৪৪ হি./৬৬৪ খ্রি.)

এ বছর মুসলিমগণ আব্দুর রহমান ইবন খালিদ ইবন এর ওয়ালিদের নেতৃত্বে পুনরায় রােমের শহরগুলােতে আক্রমণ শাসনামলে  করে মুসলিমদের কর্তৃত্ব পুনঃপ্রতিষ্ঠা করেন। শীতকালটা তারা সেখানেই কাটান। এদিকে বুসর ইবন আবি আরতাআ সমুদ্রে অভিযান পরিচালনা করেন। (ইবনুল আসির, প্রাগুক্ত,

খ. ৩, পৃ. ২৯৮)

◼ ৭মঃ মুয়াবিয়া (رضي الله عنه)  এর শাসনামলে (৪৬হি./৬৬৬ খ্রি.)

এ বছর মুসলিমগণ আব্দুর রহমান ইবন খালিদ ইবন এর ওয়ালিদের নেতৃত্বে সরাসরি কন্সট্যান্টিনােপলের উদ্দেশে শাসনামলে  অভিযান অংশ নেন। আসলাম ইবন আবু ইমরান বলেন,

غزونا من المدينة تريد القسطنطينية وعلى الجماعة عبد الرحمن بن خالد بن الوليد والتروم ملصقو ظهورهم بحائط المدينة

‘আমরা মদিনা থেকে কন্সট্যান্টিনােপলের উদ্দেশে যুদ্ধে বের হলাম। আব্দুর রহমান ইবন খালিদ ইবন ওয়ালিদ ছিলেন সেনাপতি। রােমানরা শহরটির অর্থাৎ কন্সট্যান্টিনােপলের নগরপ্রাচীরে পিঠ ঠেকিয়ে যুদ্ধের জন্য দাঁড়িয়ে ছিল।

(ইমাম আবু দাউদ আস সিজিস্তানি, আস সুনান, কিতাব : আল জিহাদ, বাব : ফি কাওলিহি তায়ালা—ওয়ালা তুলকু বিআইদিকুম ইলাত তাহলুকা)।

◼ ৮মঃ মুয়াবিয়া (رضي الله عنه)  এর শাসনামলে (৪৭হি./৬৬৭ খ্রি.)

এ বছর মালিক ইবন হুবায়রার নেতৃত্বে রােমানদের এর শহরগুলােকে অভিযান পরিচালিত হয়। (ইবনুল আসির, শাসনামলে  প্রাগুক্ত, খ, ৩, পৃ. ৩১১)

◼ ৯মঃ মুয়াবিয়া (رضي الله عنه)  এর শাসনামলে (৪৯হি./৫০হি./ ৬৬৯/৬৭০ খ্রি.)

এ বছর মুয়াবিয়া (رضي الله عنه) রােমানদের বিরুদ্ধে অভিযান চালানাের জন্য বিরাট একটি বাহিনী তৈরি করেন। সুফিয়ান ইবন  শাসনামলে  আউফকে সৈন্যদলের প্রধান বানানাে হয়। এরপর মুয়াবিয়া (رضي الله عنه) এর ছেলে ইয়াযিদকেও মুসলিম বাহিনীর সাথে যেতে বলেন কিন্তু ইয়াযিদ গড়িমসি করে এবং অসুস্থতার ভান করে যুদ্ধে গেল না। মুয়াবিয়া (رضي الله عنه) আপাতত তাকে কিছু বললেন না। এদিকে যুদ্ধে যাওয়া মুসলিম সৈন্যরা রােগ ব্যাধি ও ক্ষুধার জ্বালায় অত্যন্ত কষ্টের ভেতর পড়লেন। এ খবর শুনে ইয়াযিদ আবৃত্তি করল

ما إن أبالي بما لاقت جموعهم + بالفرقدونة★

من حمى ومن موم؛

إذا اتكأت على الأنماط مرتفعة  + بدير مران★

عندي أم كلثوم؛

জ্বর আর ক্ষুধা নিয়ে ফারকদুনায় তাদের যে বিপদ,

তাতে আমার কিছু যায় আসে না,

যতক্ষণ দির-মুররানে আছি উঁচু তাকিয়ায় ঠেস দিয়ে,

আর সাথে আছে উম্মে কুলসুম।

রােমানদের এলাকায় মুসলিম সৈন্যরা যেখানে শিবির স্থাপন করেছিলেন, সে জায়গার নাম ছিল ফারকদুনা। উম্মে কুলসুম ছিল ইয়াযিদের স্ত্রী। যাই হােক, এ কবিতা শুনে মুয়াবিয়া (رضي الله عنه) কঠিন রাগ করলেন। তিনি শাস্তিস্বরূপ ইয়াযিদকে কন্সট্যান্টিনােপলে পাঠালেন। (ইবনুল আসির, প্রাগুক্ত, খ. ৩, পৃ. ৩১৪)

৫২ হিজরিতে ইয়াযিদ বাহিনীর নেতৃত্বভার গ্রহণ করেছিল বলে আমরা অনুমান করতে পারি। কারণ ঐ বছরই প্রখ্যাত সাহাবি আবু আইয়ুব আনসারী (رضي الله عنه) ইন্তিকাল করেন। সে হিসেবে কন্সট্যান্টিনােপলে প্রথম দলে তাে নয়ই, ইয়াযিদ  ছিল সর্বশেষ আগত ব্যক্তিদের একজন।

দেখা যাচ্ছে সিজারের বিভিন্ন শহরের বিরুদ্ধে যুদ্ধ স্বয়ং মহানবি (ﷺ) এর সময়েই শুরু হয়েছিল। তখন ইয়াযিদের জন্মই হয়নি। আমরা ধরে নিচ্ছি হাদিসে কন্সট্যান্টিনােপলের কথাই বলা হয়েছে। সেক্ষেত্রেও দেখা যাচ্ছে বহু বছর পরে ৪৯ মতান্তরে ৫০ হিজরিতে কন্সট্যান্টিনােপলে নবম অভিযানে ইয়াযিদ অংশ নিয়েছিল এবং সেনাপতি হয়েছিল। অবশ্য এই অভিযানেও সে ইচ্ছা করে যায়নি। আমির মুয়াবিয়া (رضي الله عنه) তাকে শাস্তিস্বরূপ সেখানে পাঠিয়েছিলেন।

এ প্রথম দলের সাথে নয়, পরবর্তীতে যাত্রা করা দলের সাথে সে কন্সট্যান্টিনােপল পৌঁছেছিল। এতকিছুর পরও আমরা যদি ইতিহাস গ্রন্থাদির সমস্ত বর্ণনা ভুল বলে ধরে নেই এবং যুক্তিবােধকে জলাঞ্জলি দিয়ে ইয়াযিদকে ‘সিজারের শহরে প্রথম আক্রমণকারী হিসেবে ক্ষমাপ্রাপ্ত বলে মেনে নেই, তবুও তাতে ইয়াযিদের নাজাত লাভের আশা করা যায় না, তাকে আল্লাহর ওলি কিংবা মাকবুল বান্দা (!) হিসেবেও স্বীকৃতি দেয়া যায় না। একইভাবে তাকে লানত দেয়া নিয়ে আলিমগণের অবস্থান পরিবর্তনের বিন্দুমাত্র প্রয়ােজন পড়ে না।

◼ এ প্রসঙ্গে শাহ ওয়ালিউল্লাহ দেহলভি (رحمة الله) এর মন্তব্য খুবই প্রাসঙ্গিক। তিনি রাজিমু আবওয়াবিল বুখারি নামক গ্রন্থে লিখেছেন

إن قوله مغفور لهم تمسك به بغض النّاس في نجاةٍ يزيد لأنه كان من جملة هذا الجيش الثاني بل كان رأسهم ورئيسهم على ما يشهد به التواريخ والصحيح أنه لا يثبت بهذا الحديث إلا كونه مغفورا له ما تقدم من ذنبه على هذا الغزوة لأن الجهاد من الكفارات وشان الكفارات إزالة آثار الذنوب السابقة عليها لا الواقعة بعدها . نعم لو كان مع هذا الكلام أنه مغفور له إلى يوم القيامة لد على نجاته وإذ ليس فليس بل أمرّة مفوض الى الله تعالى فيما ارتكبة من القبائح بعد هذه الغزوة من قتل الحسين رضي الله عنه وتخريب المدينة والإصرار على شرب الخمر إن شاء عفاً عنه وإن شاء عبه كما هو مطرد في حق سائر العصاة على أن الأحاديث الواردة في شان من استخف بالعترة الطاهرة والمُلحد في الحرم والميل للسنّة تبقي مخصصات لهذا العموم.

‘রাসুলুল্লাহ (ﷺ) এর  বাণী মাগফুরুল লাহুম’ (তারা ক্ষমাপ্রাপ্ত) কিছু লােক এটা দিয়ে ইয়াযিদের নাজাতের স্বপক্ষে দলিল দেয়। কারণ ইতিহাস গ্রন্থাদির সাক্ষ্য অনুসারে সে এই দ্বিতীয় দলের অন্তর্ভুক্ত ছিল, এমনকি সে তাদের নেতা ও সেনাপতি ছিল। আসলে এ হাদিস দ্বারা যুদ্ধের আগে করা তার অপরাধগুলাে ছাড়া অন্য কিছু মাফ হওয়া সাব্যস্ত হয় না। কারণ জিহাদ কাফফারার অন্তর্ভুক্ত। আর কাফফারার রীতি হলাে পূর্বের গুনাহ দূর করা, ভবিষ্যতে ঘটিতব্য গুনাহগুলাে নয়, হ্যাঁ! যদি হাদিসে এমন বলা হতাে যে, সে কেয়ামত পর্যন্ত ক্ষমাপ্রাপ্ত’- তাহলে তার নাজাত বুঝা যেত। তা তাে কস্মিনকালেও বলা হয়নি। তাই এ যুদ্ধের পরে হুসাইন (رضي الله عنه)কে হত্যা, মদিনাকে ধ্বংস করা, মদ্যপানের সাথে লেগে থাকা ইত্যাদি জঘন্য যেসব কাজ ইয়াযিদ করেছে, সেসব আল্লাহর কাছে ন্যস্ত থাকবে। অন্যান্য পাপীদের ব্যাপারে প্রচলিত রীতি অনুযায়ী তিনি চাইলে তাকে ক্ষমা করবেন অথবা চাইলে শাস্তি দেবেন। এরপরও পবিত্র আহলে বায়তের অবমাননাকারী, হারামে সীমালঙ্কারী, সুন্নাতের পরিবর্তনকারী সম্পর্কে বর্ণিত হাদিস উপরােক্ত আম বক্তব্যকে খাস করার জন্য তাে রয়েছেই।'

(শাহ ওয়ালিউল্লাহ মুহাদ্দিসে দেহলভি, শারহু তারাজিমি আবওয়াবিল বুখারি, করাচি : কারখানায়ে তেজারতে কুতুব, প, ৩১-৩২)

ছয় ব্যক্তিতে নবিগণের লানত দেয়া সম্পর্কিত একটি হাদিস আমরা পূর্বে উল্লেখ করেছি।

শাহ ওয়ালিউল্লাহ দেহলভি (رحمة الله) সেদিকেই ইঙ্গিত করেছেন। তাঁর মতে ক্ষমাপ্রাপ্তির হাদিস ব্যাপকার্থে অভিযানে অংশগ্রহণকারী সবার জন্য বলা হলেও যারা অন্য হাদিসের ছয়টি দোষে দুষ্ট, তারা সাধারণ ক্ষমার আওতায় পড়বে না।

◼ এ দৃষ্টিকোণ থেকে আল্লামা আব্দুর রউফ আল মানাভি বলেছেন,

ولا يلزم منه كون يزيد بن معاوية مغفورا له لكونه منهم ، إذ الغفران مشروط بكون الإنسان من أهل المغفرة ، ويزيد ليس كذلك

الخروجه بدلیل خاص

‘ঐ সৈন্যদলের অন্তর্ভুক্ত হওয়ায় ইয়াযিদের ক্ষমাপ্রাপ্ত হওয়া আবশ্যক নয়, যেহেতু ব্যক্তির ক্ষমার যােগ্য হবার উপর ক্ষমাপ্রাপ্তি নির্ভরশীল। অথচ নির্দিষ্ট দলিলের ভিত্তিতে শুধুমাত্র বের হবার জন্য ইয়াযিদ তেমন কেউ বলে গণ্য হবে না।'

(আব্দুর রউফ আল মানাভি, প্রাগুক্ত, ফায়দুল কাদির, খ. ৩, পৃ. ৮৪)।

মােটকথা আমরা বুঝতে পারলাম সহিহ বুখারির উক্ত হাদিসের ভবিষ্যদ্বাণী ইয়াযিদকে লক্ষ্য করে করা হয়নি, তার বাবা আমির মুয়াবিয়া (رضي الله عنه) এখানে উদ্দেশ্য হতে পারেন। এ হাদিস আরও অনেক অর্থের সম্ভাবনা রাখে। এখানে কন্সটান্টিনােপল বিজয়ীর কথা বলা হতে পারে। সেক্ষেত্রে অটোম্যান সুলতান মুহাম্মদ আল ফাতিহ এখানে প্রাসঙ্গিক। কারণ তার হাতে কন্সট্যান্টিনােপল মুসলমানদের করায়ত্ত হয়েছিল। এছাড়া হাদিসে কিয়ামতের আগে শহরটি বিজিত হবার কথা আছে। সেটাও এখানে উদ্দেশ্য হতে পারে। সবকিছু ছাপিয়ে রােমানদের অধীন অন্য যেকোনাে শহর উদ্দেশ্য হবার সম্ভাবনাও একেবারে উড়িয়ে দেয়া যাচ্ছে না। অতএব ইয়াযিদের মতাে ঘৃণ্য ব্যক্তিত্বকে এ হাদিসের আওতায় আনার চেষ্টা করা হাদিসের অপব্যাখ্যার শামিল। মহান আল্লাহ সবাইকে আকলে সালিম দান করুন।



_______ সমাপ্ত _______

Comments

Popular posts from this blog

বালাকোট আন্দোলনের হাকীকত

সৈয়দ আহমদ বেরলভীর জম্ম ও পরিচয়

মওদুদীর ভ্রান্ত আক্বিদা ও ইসলামী আক্বিদা