প্রমাণিত হাদিসকে জাল বানানোর স্বরূপ উন্মোচন (প্রথম খণ্ড)

প্রমাণিত হাদিসকে জাল বানানোর স্বরূপ উন্মোচন (প্রথম খণ্ড)

গ্রন্থনা ও সংকলনেঃ মাওলানা মুহাম্মদ শহিদুল্লাহ বাহাদুর

প্রকাশনায়ঃ সাকলাইন প্রকাশন, বাংলাদেশ।

সম্পাদনায় :

মুফতি কাযি আব্দুল ওয়াজেদ (মা.জি.আ)

ফকিহ্, জামেয়া আহমদিয়া সুন্নিয়া আলিয়া কামিল মাদরাসা, ষোলশহর, চট্টগ্রাম।

মুফতি মাওলানা মুহাম্মদ আলাউদ্দিন জিহাদী

মহাপরিচালক, আবতাহী মুজাদ্দেদীয়া সুন্নিয়া মাদ্রাসা, ফতুল্লা, নারায়ণগঞ্জ

টেক্সট রেডীঃ মাসুম বিল্লাহ সানি, সিরাজুম মুনির তানভির

সার্বিক তত্ত্বাবধানে :

মুফতি মুহাম্মদ আলী আকবার (মা. জি. আ.)

বহু গ্রন্থ প্রনেতা ও সভাপতি, আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাত, নারায়নগঞ্জ।

আক্ষরিক নিরক্ষণে:

মাওলানা মুফতি আবদুল আজিজ রযভী

গ্রন্থস্বত্ব : প্রকাশক কর্তৃক সংরক্ষিত।

প্রকাশনায়: সাকলাইন প্রকাশন

প্রথম প্রকাশ :

১২ রবিউল আউয়াল, ১৪৩৬ হিজরি, ৪ জানুয়ারী, ২০১৫ ইংরেজী

দ্বিতীয় প্রকাশ: ০৫.০৯.১৮ ইং

বাঁধাই: হাসান বুক বাইণ্ডিং হাউস, আন্দরকিল্লা, চট্টগ্রাম। ০১৮৩০১৩৮৭৯৯

শুভেচ্ছা হাদিয়া : ৫২০/=

যোগাযোগঃ দেশ-বিদেশের যে কোন স্থানে বিভিন্ন সার্ভিসের মাধ্যমে সংগ্রহ করতে মোবাইল: ০১৮৪২-৯৩৩৩৯৬, ০১৭২৩-৯৩৩৩৯৬

مَوْلَايَ صَلِّ وَسَلِّمْ دَائِمًا أَبَدًا

عَلىٰ حَبِيْبِكَ خَيْرِ الْخَلْقِ كُلِّهِم

مُحَمَّدٌ سَيِّدُ الْكَوْنَيْنِ وَالثَّقَلَيْنِ

وَالْفَرِيْقَيْنِ مِنْ عُرْبٍ وَّمِنْ عَجَمِ

صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَعَلٰى آلِه وَصَحْبِه وَبَارِكْ وَسَلَّمَ

যে সব পুস্তকের দাঁতভাঙ্গা জবাব

    ১। আহলে হাদীস শায়খ নাসিরুদ্দীন আলবানী’র

                    সিলসিলাতুল আহাদিসুদ্-দ্বঈফাহ সহ তার বিভিন্ন পুস্তকের।

    ২। ড.আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীর রচিত ‘হাদীসের নামে জালিয়াতি’ (৫ম সংস্করণ, এপ্রিল ২০১৭ ঈসায়ী) আস্-সুন্নাহ পাবলিকেশন্স, ঝিনাঈদহ, বাংলাদেশ।

   ৩। মাওলানা মুতীউর রহমান কৃত ‘এসব হাদীস নয়’, তত্ত্বাবধান ও নির্দেশনায় মাওলানা মুহাম্মাদ আবদুল মালেক {সাবেক নাম ‘প্রচলিত জাল হাদীস} (দ্বিতীয় প্রকাশ, অক্টোবর, ২০১৬ ঈসায়ী) মারকাযুদ দাওয়াহ আলইসলামিয়া, ঢাকা।

   ৪। মাওলানা মুহাম্মদ জাকারিয়া হাসনাবাদী লিখিত ও মাওলানা জুনায়েদ বাবুনগরী সম্পাদিত “প্রচলিত জাল হাদীস” (তৃতীয় প্রকাশ ১৭ ফেব্র“য়ারী ২০১২ ঈসায়ী) থানভী লাইব্রেরী, হাটহাজারী, চট্টগ্রাম।

উল্লেখিত গ্রন্থসমূহের আপত্তিকর বিষয়গুলি নিষ্পত্তি করা হয়েছে আমার এই গ্রন্থে।

উৎসর্গ

সিরাজুল উম্মাত, ইমাম আযম, আবূ হানিফা (رضي الله عنه),

বাণীয়ে জামেয়া শাহেনশাহ সিরিকোট সৈয়দ আহমদ শাহ সিরকোটি (رحمة الله),

মাছিয়াতা দরবার শরীফের পীরে মুকাম্মেল মুরশীদে কামেল মাওলানা শাহ সৈয়দ কুতুবুর রহমান (رحمة الله)

এবং

আমার শ্রদ্ধেয় দাদা-দাদী ও নানা-নানীর মাগফিরাতের উদ্দেশ্যে।

নাম : ........................................................
ঠিকানা : ........................................................

........................................................

কে

উপহার দিলাম

কৃতজ্ঞতায়

শাইখুল হাদিস, আল্লামা ওবাইদুল হক নঈমী (মা. জি. আ)

মুহাদ্দিস, জামেয়া আহমদিয়া সুন্নিয়া আলিয়া কামিল মাদরাসা, চট্টগ্রাম।

আল্লামা হাফেয আশরাফুজ্জামান আল-কাদেরী (মা. জি.আ)

মুহাদ্দিস, জামেয়া আহমদিয়া সুন্নিয়া আলিয়া কামিল মাদরাসা, চট্টগ্রাম।

মাওলানা আবুল আসাদ মুহাম্মদ জোবাইর রযভী (মা. জি.আ)

খতিব, জামেয়া আহমদিয়া সুন্নিয়া দায়েম নাজির জামে মসজিদ, চট্টগ্রাম।

আলহাজ্ব হাফেয মাওলানা মুহাম্মদ ওয়ালীউল্লাহ আশেকী

পীর সাহেব, খানাকায়ে কাদেরীয়া হামীদীয়া ওয়ালিয়া দরবার শরীফ, আশকোনা, আমতলা, ঢাকা-১২০৩

হাফেয ক্বারী মাওলানা মুফতি মুহাম্মদ গোলাম কিবরিয়া

প্রতিষ্ঠাতা, আল-আযীয তাহ্ফিজুল কুরআন ক্যাডেট মাদ্রাসা, অক্সিজেন, চট্টগ্রাম।

সার্বিক সহযোগিতায়

ব্রিগ্রেডিয়ার জেনারেল খুরশীদ আলম (অবঃ)

খাদেম, মকিমীয়া মোজাদ্দেদীয়া দরবার শরীফ, টানপাড়া, নিকুঞ্জ, ঢাকা।

ইঞ্জিনিয়ার সিপাহিদ খাঁন মানিক, প্রতিষ্ঠাতা, আবতাহী ফাউন্ডেশন, ঢাকা।

মুহাম্মদ আব্দুল্লাহ আল-মামুন, বন্দর, নারায়নগঞ্জ।

ইঞ্জিনিয়ার আতাউর রহমান (খোকন), নারিন্দা, ঢাকা।

মুহাম্মাদ নু‘মান হাবিবুর রহমান, ব্রাহ্মণবাড়িয়া

হাফেয মুহাম্মদ ইমরান হুসাইন

শিক্ষার্থী, কাদেরিয়া তৈয়্যবিয়া আলিয়া কামিল মাদরাসা, ঢাকা।

প্রথম সংস্করণের ভূমিকা

اَلْحَمُد لِله وَكَفَى وَالصَّلٰوةُ والسَّلاَمُ عَلَى عِبَادِهِ الَّذِيْنَ اَصْطَفٰى خُضُوْصًا عَلَى سَيِّدِنَا وَحَبِيْبِنَا وَشَفِيْعِنَا مُحَمَّدِنِ الْمُصْطَفٰى وَعَلَى اٰلِهِ وَاَصْحَابِهِ اُوْلِى الصِّدْقِ وَالصَّفَا فَاعُوْذُ بِاللَّهِ مِنَ الشَّيْطٰنِ الرَّجِيْمِ بِسْمِ اللهِ الرَّحْمَنِ الرَّحِيْمِ

আল্লাহ্ পাকের অমিয়বাণী মহাগ্রন্থ কুরআনুল কারীম মানবজাতির একমাত্র পূর্ণাঙ্গ সংবিধান। এ রকম পরিপূর্ণ কোন গ্রন্থ পৃথিবীতে আর নেই। এইগ্রন্থের প্রতিটি কথা অত্যন্ত মুল্যবান ও অতিব মর্যাদা সম্পন্ন। মহান রবের নৈকট্য অর্জনের জন্য কুরআনের উপর আমল খুবই জরুরি। মনে রাখতে হবে, কোরআন পুর্ণাঙ্গ বিধান হওয়া সত্তে¡ও তা সাধারণ ভাবে বুঝা একেবারে সহজ নয়। কেননা কিতাবুল্লাতে এমন কিছু আয়াতে কারিমা রয়েছে, যার অর্থ অস্পষ্ট। সেসব জটিলতা নিরসনের জন্য মহান রাব্বুল আলামিনের প্রিয়তম বন্ধু রাসূল(ﷺ)'র হাদিসের গুরুত্ব অপরিসীম। সহজ কথায়, কুরআন অনুধাবন করে বাস্তব জীবনে তাঁর প্রতিফলনের জন্য একমাত্র অবলম্বন পবিত্র হাদিসে নববী ।

প্রিয়নবি হযরত মুহাম্মদ মোস্তফা(ﷺ)'র পুষ্পঝরা হাদিসগুলো মূলত আল্লাহর মর্যাদা সম্পন্ন কালামের অংশবিশেষ। এ ব্যাপারে খোদ আল্লাহ তা’য়ালা ইরশাদ করছেন, وَمَا يَنْطِقُ عَنِ الْهَوَى (এবং তিনি কোন কথা নিজ প্রবৃত্তি থেকে বলেন না)।

সূরা নাজম শরীফের দুই নাম্বার আয়াতে কারিমার শাব্দিক অর্থই সুস্পষ্ট প্রমাণ করে, নবিজি(ﷺ)'র কথামালা, আচার আচরণ সবকিছু আল্লাহর মর্যাদাপূর্ণ নির্দেশনা। তাঁর কথামালা মহান প্রভুর কথামালা। হুযূর নিজ থেকে কোনো কথা বলেননি, এটার জলন্ত স্বাক্ষী কুরআনের এই আয়াতে মুকাদ্দাসা।

মহানবী(ﷺ)'র সকল ধরনের আচরণ বিধিকে ধারণ করার জন্য, তাঁর নিষিদ্ধ সবকিছু থেকে বিরত থাকতে খোদ রব তা’য়ালা আদেশ করেছেন। মহাগ্রন্থ কুরআনুল কারিমে সূরা হাশরের ৭ নাম্বার আয়াতে ইরশাদ হচ্ছে-

وَمَا آتَاكُمُ الرَّسُوْلُ فَخُذُوْهُ وَمَا نَهَاكُمْ عَنْهُ فَانْتَهُوْا

-‘‘এবং রাসূল তোমাদেরকে যা কিছু দানকরেন তা তোমরা গ্রহণ কর; আর যা থেকে নিষেধ করেন তা তোমরা বর্জন করো।’’

উল্লেখিত আয়াত প্রমাণ করে রাসূলে মাকবুল(ﷺ)'র আদেশ নিষেধ মান্য করা প্রত্যেক বান্দার জন্য ফরজ। কুরআনের পরপর যে হাদিসের গ্রহণযোগ্যতা তা এই আয়াত স্পষ্ট করে দেয়। অন্যত্রে ইরশাদ হচ্ছে-

يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا أَطِيعُوا اللَّهَ وَأَطِيعُوا الرَّسُولَ

-‘‘হে ঈমানদারগণ! তোমরা আল্লাহ্ ও রাসূলের আনুগত্য করো।’’

সূরা নিসার ৫৯ নাম্বার আয়াতে মুকাদ্দাসার এই অনুবাদও প্রমাণ করে আল্লাহর পরে রাসূল(ﷺ)'র অনুসরণ বা আনুগত্য। আনুগত্য করতে হলে নির্ঘাত হাদিসেপাকের উপর আমল অপরিহার্য। হাদিস শরিফ বাদ দিয়ে হুযূরের অনুকরণ কিছুতেই সম্ভব নয়। কেবল হাদিসেপাকের উপর নিরেট আমলের মাধ্যমে তা সম্ভব।

যারা হাদিসের অনুসরণের মাধ্যমে নবীজি(ﷺ)'র আনুগত্য করবে প্রকৃত পক্ষে তারা আল্লাহরই আনুগত্য করলো, এমর্মে সূরা নিসার ৮০ নাম্বার আয়াতে বর্ণিত হচ্ছে-

مَنْ يُطِعِ الرَّسُولَ فَقَدْ أَطَاعَ اللَّهَ

-‘‘যে রাসূলের আনুগত্য করলো, যেন সে আল্লাহর আনুগত্য করলো।’’

উল্লেখিত আয়াত ছাড়া কুরআনের অসংখ্য স্থানে রাসূলে কারিম রাউফুর রাহিম(ﷺ)'র আনুগত্যের কথা বর্ণিত হয়েছে। এসব মূলত হাদিসেপাকের সম্মান ও শৌকর্ষ প্রমাণ করে।

আয়াতগুলির বাস্তবতার নিরিখে যখন আল্লাহর পূণ্যবান বান্দারা দিনদিন ধাবিত হয়ে মহান রবের মহিমায় নির্দেশনার প্রতি শ্রদ্ধাভরা ভক্তি নিয়ে স্বর্গমুখি হচ্ছিলো; ঠিক তখন থেকে শয়তানের অনুচররা হাদিসে রাসূলের বিরুদ্ধে নানান ষড়যন্ত্রের সুচনা করলো। সেসব নরকের কীটরা মনগড়া কথা সাজিয়ে নবিজি(ﷺ)'র হাদিস আখ্যাদিয়ে চালিয়ে দিতো বহুযুগ আগ থেকে।

পরবর্তীতে অসংখ্য হযরতে বুযর্গানেদ্বীনদের গবেষণার বদান্যতায় তারা আটকে পড়ে ভ্রান্তির বেড়াজালে। এবার শুরু হলো তাদের নবপ্ররোচনা, যেখানে নবীজি(ﷺ)'র শান ও মর্যাদা সম্পর্কিত হাদিস দেখতো, সেটাকেই তারা বানোয়াট বা জাল বলে অহেতুক বিভ্রান্ত ছড়াতো। এসব বিষয় নিয়ে পূর্ববর্তী হাদিস বিশারদ ওলামায়ে কেরাম অসংখ্য কিতাবাদি রচনা করেছিলেন। তবুও তাদের তৎপরতা থামেনি মোটেই। তারা যুগেযুগে স্বীয় নাম বদলিয়ে শয়তানের সন্তুষ্টি অর্জনের নিমিত্তে তার সে খেদমত আঞ্জাম দিতো। তাদের সেই অপতৎপরতা এখনো থামেনি। আজকাল লাইব্রেরির তাকগুলি সাজানো তাদের লিখিত ছোটবড় পঁচা সব বই দিয়ে। এসমস্ত পুস্তক সমূহ অধ্যায়ন করে প্রতারিত হচ্ছে সরলমনা মানুষগুলো।

যারা হাদিসের নামে জালিয়াতি করে, যারা সহীহ হাদিসগুলোকে জাল বা বানোয়াট আখ্যায়িত করে মানুষকে ধোঁকা দেয় তাদের জন্য রচিত আমার এই কিতাব। মনেরাখা দরকার! রাসূল(ﷺ)'র নাম ব্যবহার করে হাদিস বানানো যেমন চরম মিথ্যাচার, হুযূরের সহীহ হাদিসগুলিকে জাল বা বানোয়াট বলে প্রচার করাও আরেক জঘন্য মিথ্যাচার। বুখারী ও মুসলিম শরিফ সহ অসংখ্য হাদিসের কিতাবে বর্ণিত আছে; রাসূল কারিম ইরশাদ করছেন-

مَنْ كَذَبَ عَلَيَّ مُتَعَمِّدًا، فَلْيَتَبَوَّأْ مَقْعَدَهُ مِنْ النَّارِ

-‘‘যে আমার উপর মিথ্যারোপ করে সে যেন স্বীয় ঠিকানা জাহান্নামে খুঁজে নেয়।’’ (সহীহ বুখারী, ২/৮০ পৃ. হা/১২৯১, সুনানে ইবনে মাযাহ, হা/৩০, হা/৩২)

এই গ্রন্থ রচনার পেছনে অনেক কারণ নিহিত রয়েছে। তম্মমধ্যে একটি কারণ এই, একদিন রাসূল(ﷺ)'র মহত্ব ও আভিজাত্য নিয়ে কথা বলতে বলতে একজন সাধারণ মানুষের সাথে আমার তর্ক লেগে যাই। নবিজী(ﷺ)'র সৃষ্টি নূর নাকি মাটি দ্বারা এই বিষয়ে। আমি অনেক বুঝিয়ে বললাম, কোরআন হাদিস ইজমা কিয়াস দ্বারাতো প্রমাণিত, হুযূর নূরের সৃষ্টি। এক পর্যায়ে যখন হযরত জাবের (رضي الله عنه)’র নূরের বরকতময় হাদিসটি উপস্থাপন করলাম, ভদ্রলোক ভ্র“কুচকে বিজ্ঞলোকের মতো বললো, এটিতো জাল হাদিস! আমি বললাম, আপনি একজন সাধারণ মানুষ হাদিসের জাল ভেজাল নিয়ে আপনি কী বুঝবেন। বললো, হ্যাঁ, তার প্রমাণ আছে আমার নিকট। সে আমাকে একটি গ্রন্থের তথ্যদেয়; বইটি মাওলানা মুতীউর রহমান বিরচিত আবদুল মালেক সম্পাদিত, ‘প্রচলিত জাল হাদিস’ (সাবেক নাম এখন এটির নাম রেখেছে ‘এসব হাদীস নয়’)।

পরে অনুসন্ধান করে এরকম অসংখ্য বই আমি পেয়েছি, যেগুলি সাধারণ মানুষকে বিভ্রান্ত করার চরম কৌশলমাত্র। বইগুলিতে যা দেখলাম, আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতের সমস্ত আক্বিদা ও আমল বিষয়ক হাদিসকেগুলিকে তারা জাল বা বানোয়াট বলে জঘন্য মিথ্যাচার করেছে।

নামলাম এবার গবেষণায়। দেখি! সুন্নিদের সকল আকিদা আমলের হাদিসগুলির পক্ষে অসংখ্য সহীহ বর্ণনা রয়েছে। কয়েকজন সম্মানিত শিক্ষাগুরুদের বিনয়ে বললাম, এসব মিথ্যাচারের জবাব লিখার জন্য। তাঁরা স্বস্ব ব্যস্ততা দেখিয়ে আমার জন্য দোয়া করলেন। সেই মহিমান্বিত দোয়ার বদন্যতায় আমার কাঁচা হাতে কলম ধরি। আল্লাহর মেহেরবানি ও মদিনা ওয়ালা রাসূল(ﷺ)'র ফয়েজ বরকতে আমি সকল হাদিস চুলচেরা বিশ্লেষণ করতে সক্ষম হই।

প্রত্যেকটা হাদিসের উপর গবেষণালব্ধ প্রথমদিকের লিখাগুলি নিরক্ষণ করে যাঁর চরণে তলে আমাকে ঠাঁই দিয়েছেন, আমার পরম শিক্ষাগুরু, লক্ষ লক্ষ আলেমদের বরেণ্য শিক্ষক, চট্টগ্রাম জামেয়া আহমদিয়া সুন্নিয়া আলিয়ার প্রাক্তন শায়খুল হাদিস, হযরতুলহাজ্ব আল্লামা শাহসুফি মুহাম্মদ আবদুল হক নকশেবন্দী (رحمة الله)। গ্রন্থাকারে রূপদেয়ার পর বইজুড়ে অনুপম নজর দিয়ে আমাকে চিরদিনের জন্য কৃতজ্ঞতার পাশে আবদ্ধ করে রেখেছেন, জামানার মুফতিয়ে আযম, আমার পরম শ্রদ্ধেয় উস্তাদ হযরতুলহাজ্ব আল্লামা মুফতি আবদুল ওয়াজেদ আল কাদেরী ও আল্লামা মুফতি আলী আকবর (মা. জি. আ)। গ্রন্থের বাংলা বানানাসহ সবক্ষেত্রে যার অবদান আমাকে কৃতার্থ করেছে, মাওলানা মুহাম্মদ আবদুল আজিজ রজভী। এছাড়াও আরো অনেকে ভিন্নভিন্ন আঙ্গিকে কেউবা বইটিপড়ে চমৎকার অভিমত ব্যক্তকরে কিতাবের গ্রহণ যোগ্যতা বৃদ্ধিরলক্ষ্যে আমার জন্য সহায়তার হাত প্রসারিত করেছেন, আমি সেসব মহান ব্যক্তিদের নিকটও চিরকৃতজ্ঞ।

প্রিয়পাঠক! আমার রচিত এই কিতাবের নাম দিয়েছি ‘প্রমাণিত হাদিসকে জাল বানানোর স্বরূপ উন্মোচন (১ম খণ্ড)’। গ্রন্থটিতে আমি ভিন্নমতাবলম্বিদের অনেক বইয়ে দৃষ্টি গোচর হওয়া বিষয়ের একেক করে জবাব দেয়ার অসম্ভব চেষ্টা করেছি। বিশেষকরে সাম্প্রতিক ব্যাপকহারে গজিয়ে উঠা তথাকথিত আহলে হাদিস ফেরকার ইমাম নাসিরুদ্দীন আলবানীর কিছু পুস্তকে রচিত আপত্তিকর উক্তির যথাযত উত্তর প্রদান করেছি। এছাড়া আহলে হাদিস তথা লা-মাযহাবি সহ আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাত ব্যতিত সমস্ত বাতিলদের সাথে আমাদের যেসব আকিদা নিয়ে দ্ব›দ্ব, সেসকল বিষয় নিয়ে গ্রন্থের দ্বিতীয় খণ্ডে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। তৃতীয় খণ্ডে প্রসিদ্ধ হাদিসের গ্রন্থ ‘মিশকাতুল মাসাবীহ’ এ বর্ণিত অনেক সহীহ হাসান হাদিসকে আহলে হাদিসদের জাল বলার খণ্ডন তুলে ধরা হবে। ইনশাআল্লাহ!

গ্রন্থটি রচনাকরে আমি কারো ব্যক্তিগত মানহানি অথবা শুধুমাত্র কারো বাস্তব স্বরূপ উন্মোচন করা মূখ্য উদ্দেশ্য নয়। সমাজ থেকে হারিয়ে যাওয়া বাস্তব আর নিরেট সব সত্যতার ভিত্তিকে আরো শক্তিশালী করাই আমার মূল লক্ষ্য।

বিনিত আরজ থাকবে, সম্মানিত পাঠক মহলের নিকট, কেবল দোষ অন্বেষণের উদ্দেশ্যে নয় নবিজির প্রতি হৃদয়ভরা সত্যিকার অনুরাগ নিয়ে কিতাবটি অধ্যয়ন করুন; আপনার অন্তর্চক্ষু খোলে যাবে, ইনশা আল্লাহ! সফল হবে অধমের শ্রম। পাথেয় হবে পরকালীন মুক্তির।

এ গ্রন্থে আনুমানিক একহাজার কিতাবের রেফারেন্স দেয়া হয়েছে। সে সকল গূরুত্বপূর্ণ কিতাবের একটি তালিকা গ্রন্থের শেষতকে বিজ্ঞপাঠক মহলের সুবিধার্থে দেয়া হয়েছে। আল্লাহর কাছে কৃতজ্ঞ! কোন ভুয়া তথ্য এখানে নেই। প্রায়সব কিতাব আমার ব্যক্তিগত লাইব্রেরিতে সংগ্রহ আছে। গোচরে যা নেই, তা আমি জামেয়া আহমদিয়া সুন্নিয়া আলিয়ার এবং মাওলানা মুফতি আলাউদ্দিন জিহাদীর বিখ্যাত গ্রন্থাগার থেকে নিজেই সংগ্রহ করেছি। জামেয়ার প্রসিদ্ধ বইঘরে যা পাইনি সে ক্ষেত্রে মাকতাবায়ে শামেলার সহায়তা অবশ্যয় নিয়েছি। তবু যদি কোন ক্ষেত্রে তথ্যপঞ্জি বিষয়ক কোন ত্র“টি কারো নজরে পড়ে, তাহলে বুঝবেন এটা অনিচ্ছাকৃত। তার সঠিক তথ্য যদি আপনার সংগ্রহে থাকে, আমার ই-মেইল ঠিকানায় জানিয়ে বাধিত করবেন। মহাপ্রলয়দিনে তার উত্তম প্রতিদান আপনি পাবেন।

দীর্ঘ আড়াই বছর যাবত এই কিতাবের পেছনে কঠোর শ্রম দেয়ার পরও ভাষাগত ত্র“টির কারণে বইটি বাজারজাত করণের ক্ষেত্রে আমি বারবার হিমসিম খেয়েছি। তবু ভাষাগত বহুভুল থাকতেই পারে, সবকিছু দেখে পাঠকদের নিপুন পরামর্শের ভিত্তিতে আগামি সংস্করণে নির্ভুলভাবে কিতাবটি প্রকাশ করার প্রবল বাসনাও রাখলাম মনে। হে খোদা দয়াময়! তুমি রহম করো আমাদের প্রতি, ক্ষমা করো সকল মার্জনা। আমিন বিহুরমাতি সৈয়্যদিল মুরসালিন !

অধম রচয়িতা

                                মাওলানা মুহাম্মদ শহিদুল্লাহ বাহাদুর

দ্বিতীয় সংস্করণের ভূমিকা:

আল্লাহ তা’য়ালার মহান দরবারে অসংখ্য কৃতজ্ঞতাসহ সিজদা আদায়ের পর, সৃষ্টির শ্রেষ্ঠতম উপঢৌকন মহানাবি হযরত মুহাম্মদ (ﷺ)’র পুণ্যময় চরণে লক্ষ কোটি দরুদ ও সালামের হাদিয়া পেশ করছি।

আলহামদুলিল্লাহ! আমার এ কিতাবটি প্রকাশের পর পাঠক সমাজে বেশ সাড়া জাগিয়েছে এবং বাতিল প্রাচীরে এটাম বোমের ন্যায় আক্রমন করছে বলে বিভিন্ন মহল থেকে আমার কাছে সংবাদ এসেছে।

বিশেষত: গ্রন্থটি প্রকাশের পর দেওবন্দী ধর্মের প্রবর্তক মুহাম্মদ বিন আবদুল ওহহাব নাজদীর দালাল ‘মাসিক আলকাউসার’ নামক একটি পত্রিকায় মার্চ ২০১৬ ইং সংখ্যায় গ্রন্থে বর্ণিত তথ্যবিভিত্তক গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি বিষয়ের বিরোদ্ধে ৭-৮ পৃষ্ঠার একটি পর্যালোচনাও তুলে ধরেছে। পরে লিখাটি তার তত্ত্বাবধানে প্রকাশিত ‘এসব হাদীস নয়’ গ্রন্থের ২১৫-২৩৯ পৃষ্ঠায়ও সংযোজন করেছে।

উক্ত সমালোচনার সংক্ষিপ্ত জবাবও আমি এইগ্রন্থের দ্বিতীয় খণ্ডের প্রথমদিকে উল্লেখ করেছিলাম। যেসব বিষয়ের উপর তাদের আপত্তি ছিলো, সেসব বিষয়ের বিস্তারিত দালিলিক খণ্ডনগুলো আবার এখানে সংযোগ করেছি।

এ গ্রন্থের দ্বিতীয় সংস্করণের অন্যতম কারণ এটিও যে, প্রথম সংস্করণ প্রকাশিত হওয়ার পর আরো বেশ কিছু বাতিল সম্প্রদায় ষড়যন্ত্রমূলকভাবে ধোঁকাবাজির অন্যান্য পন্থা হিসেবে কেউ কেউ তাদের মিথ্যে-বানোয়াট দলিলে ভরপুর বইয়ের নামও পরিবর্তন করে ফেলছে। যেমন- মাওলানা মুহাম্মাদ আবদুল মালেকের তত্ত্বাবধানে প্রকাশিত ‘প্রচলিত জাল হাদীস’ গ্রন্থের নাম পরিবর্তন করে নতুন নাম দিয়েছে ‘এসব হাদীস নয়’। ড. খোন্দকার আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীরের মৃত্যুর পর ‘হাদীসের নামে জালিয়াতি’ গ্রন্থের ৫ম সংস্করণ ‘আস-সুন্নাহ পাবলিকেশন্স’ থেকে প্রকাশ করে প্রায় পৃষ্ঠার নাম্বারগুলো এলোমেলো করে দেয়। যাতে মানুষ আমার বই পড়ে তাদের উল্লেখিত মিথ্যাচারগুলো বুঝতে সক্ষম না হয়। এমনকি তাদের গ্রন্থ হতে পূর্বের অনেক আপত্তিকর বক্তব্য তারা কৌশলে সরিয়ে ফেলেছে। তাদের এ ধোঁকাবাজির চিত্রও আমি এ সংস্করণের বিভিন্ন স্থানে তুলে ধরেছি।

এ গ্রন্থে কয়েকটি নতুন বিষয় সংযোজন ছাড়া, তেমন কোনো নতুন বিষয় সংযোজন করা প্রয়োজন হয়নি। তবে প্রত্যেক বিষয়ের সপক্ষে যে দলিল উপস্থাপন করা হয়েছে তার নির্ভরযোগ্যতা এবং প্রত্যেকটি হাদিসের সনদ বিশ্লেষণ প্রথম সংস্করণ থেকেও বেশি করা হয়েছে। আহলে হাদিসসহ যেসমস্ত বাতিলপন্থীগণ হাদিসের যে রাবীকে ওসিলা করে হাদিসের সনদ ‘যঈফ-জাল’ প্রমাণের সুযোগ নিয়েছে, আসমাউর রিজালের আলোকে তার যথাযথ জবাব দেয়ার চেষ্টা করেছি।

সকলের দোয়ায় এ গ্রন্থের দ্বিতীয় খণ্ড প্রকাশিত হয়েছে। আপনাদের দোয়া অব্যহত থাকলে অচিরেই প্রকাশিত হবে গ্রন্থের ৩য় খণ্ড।

অধম:

মাওলানা মুহাম্মদ শহিদুল্লাহ বাহাদুর

স ম্পা দ কী য়

আল্লাহ্ তা’য়ালার মহান দরবারে নতশিরে কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করে, অগণিত দরূদ ও সালাম জানাই নবি আকরাম (ﷺ)’র জ্যোতির্ময় চরণযুগলে। সমস্ত আহলে বাইয়েতে রাসূল (ﷺ) ও সাহাবায়ে কিরাম, মুজতাহিদ ইমাম, মুহাদ্দিসীন, সুফিয়ায়েকেরাম এবং আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতের মাশায়েখগণের প্রতিও প্রেরণ করছি দরূদ সালামের নাযরানা।

প্রিয়পাঠকবন্দ! মুসলমানদের মাঝে বিভ্রান্ত ছড়ানোর জন্য ঈমানদারের লেবাস নিয়ে তথাকথিত কিছু আলেম প্রিয়তম রাসূল (ﷺ) ও আল্লাহর প্রিয়ভাজন আউলিয়াকেরামগণের মর্যাদাকে হেয়প্রতিপন্ন করার মানসে বিভিন্নভাবে ধর্মীয় অনুভুতিতে আঘাত হানছে সর্বদা। মনে রাখবেন, তারা আদৌ মুসলমান নয়; শয়তানের অনুচর; মুসলমানদের চিরশত্র“ ইহুদিদের দুসর; এজিদের উত্তরসূরী।

সে নরাধমগণ কিছু বইপুস্তক রচনা করে সাধারণ পাঠকমহলকে প্রতারিত করছে প্রতিনিয়ত। বিশেষ করে, আহলে হাদিসদের তথাকথিত ইমাম নাসীরুদ্দীন আলবানীর ‘সিলসিলাতুল আহাদিসিদ দ্বঈফাহ’, ড. খোন্দকার আবদুল্লাহ জাহাঙ্গীরের ‘হাদীসের নামে জালিয়াতি’, মাওলানা মুহাম্মদ আবদুল মালেকের ‘এসব হাদীস নয়’, মাওলানা জুনায়েদ বাবুনগরীর সম্পাদিত ‘প্রচলিত জাল হাদীস’ এসব পঁচাপুস্তকগুলি সমাজে দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে প্রবলবেগে। সেসব পুস্তকগুলির জবাব অনেক আগ থেকে লিখার কথা ভাবছিলাম। সময়ের স্বল্পতা ও কাজের ব্যস্ততার দরুন যথাসময়ে লিখতে পারিনি।

স্নেহের ছাত্র মাওলানা মুহাম্মদ শহিদুল্লাহ বাহাদুরকে লিখার জন্যে উদ্দিপনা যোগিয়ে ছিলাম। কৃতজ্ঞ মহান রবদ্বারে ‘প্রমাণিত হাদিসকে জাল বানানোর স্বরূপ উন্মোচন’ নামে অনেক গবেষণালব্ধ একটি অনবদ্য গ্রন্থ রচনা করে মাওলানা শহিদুল্লাহ বাহাদুর আমাদের হাতে অর্পণ করে।

আশা করি, বইটি পড়ে বিজ্ঞপাঠক মহল সহজে অবগত হবেন জগতে কারা মিথ্যাবাদী, সেই সাথে নতুন করে আবারো জানবেন, সুন্নিদের যাবতিয় আমল কুরআন সুন্নাহ ইজমা ও কিয়াস ফিক্হ ভিত্তিক। শরিয়ত অসমর্থিত কোন আমল আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতের আক্বিদায় নেই। আরো জানবেন, গ্রন্থের দ্বিতীয় খণ্ডে। আমি লেখকের কাছ থেকে এমন সুন্দর খেদমত এবং তার দীর্ঘায়ু কামনা করছি।

আল্লামা মুফতি মুহাম্মদ আবদুল ওয়াজেদ

সার্বিক তত্ত্বাবধান ও নির্দেশনাকারীর বাণী

নাহমাদুহু ওয়ানুছাল্লী ওয়া নুছালি­মু আ‘লা রাসূলিহিল কারীম। আম্মা বা‘দ সমস্ত প্রশংসা ঐ মহান আল্লাহ্ রাব্বুল আলামিনের যিনি তাঁর প্রিয় হাবীব (ﷺ) কে সর্বশ্রেষ্ঠ সম্মান ও মর্যাদা দান করেছেন। অসংখ্য দরুদ ও সালাম সে মহান রাসূল (ﷺ)‘র উপর যার মুহাব্বত বা ভালবাসা ঈমানের মূল।

রাসূলে কারীম (ﷺ) সৃষ্টি না হলে আল্লাহ্ তা‘য়ালা কিছুই সৃষ্টি করতেন না। আল্লাহ্ তাঁর বন্ধুর ভালবাসাই সমস্ত কিছু সৃষ্টি করেছেন। তিনি শুধু তাঁর হাবীব (ﷺ) কে ভালবেসেই ক্ষান্ত হননি বরং আমাদেরকেও হুকুম করেছেন তাঁর বন্ধুকে ভালবাসতে। আর রাসূল (ﷺ)‘র ভালবাসার অন্যতম নিদর্শন হলো তাঁর হাদিস সমূহকে সম্মান করা এবং সে অনুযায়ী আমল করে নিজের জীবনকে সুন্দরভাবে গড়ে তোলা। রাসূল (ﷺ)‘র বাণী সবগুলো একই মর্যাদার। কিন্তু রাবী বা বর্ণনাকারীদের কারণে তার মধ্যে কোনটিই সবল আবার কোনটিই দুর্বল হিসেবে গন্য হয়। কোন হাদিসের সনদের মধ্যে কোন রুপ দুর্বলতা পাওয়া গেলই তা মওদ্বু বা জাল হাদিস হয়ে যায় না। দুর্বল হাদীস আর জাল হাদিস এ দু‘টি এক কথা নয়। এ দু‘টির মধ্যে আকাশ-পাতাল ব্যবধান। কিন্তু বড় পরিতাপের বিষয় বর্তমানে এমন কিছু কথিত আলেমের আর্ভিভাব হয়েছে, যারা তাদের আক্বিদা ও আমলের বিরোধী কোন হাদিস পেলেই তাকে মওদ্বু বা জাল হাদিস বানানোর জন্য বিভিন্ন ধরনের ষড়যন্ত্র শুরু করে। এরই ধারাবাহিকতায় ‘প্রচলিত জাল হাদিস, এসব হাদীস নয়, ‘হাদীসের নামে জালিয়াতি’ ইত্যাদি নামে কিছু বই বাজারে বের হয়। যা দ্বারা সাধারণ ব্যক্তিবর্গ বিভ্রান্তির মধ্যে পড়ে যায়। এ বিভ্রান্তি থেকে সর্বসাধারণের মুক্তি দিয়ে তাদের নিকট সঠিক বিষয়টি তুলে ধরার জন্য আমার স্নেহের ছাত্র মাওলানা মুহাম্মদ শহিদুল্লাহ বাহাদুর ঐ ধরনের কিছু বই আমার নিকট নিয়ে আসে। আমি ঐ বইগুলোতে দেখতে পেলাম আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতের স্বীকৃত অনেক আক্বিদা ও আমলের ব্যাপারে দলিল হিসেবে ব্যবহৃত হাদিস সমূহকে জাল বা বানোয়াট হাদিস হিসেবে প্রমাণ করার জন্য অনেক অপচেষ্টা ও ষড়যন্ত্র করেছে। তখন আমি তাকে এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় তথ্যাবলী সংগ্রহ করার জন্য নির্দেশ করি। অতঃপর সে অনেক পরিশ্রম ও কষ্ট স্বীকার করে ‘‘প্রমাণিত হাদিসকে জাল বানানের স্বরূপ উন্মোচন’’(১ম খণ্ড) নামে এ বিষয়ে একটি পান্ডলিপি তৈরী করে। তারপর এটি কম্পিউটার কম্পোজ করে তার কপিগুলো আমাকে দেয় যেন আমি ঐ কপিগুলো দেখে ভুলক্রটি গুলো সংশোধন করে দেই। সে নতুন লেখক এবং বড়কলবরে এ কিতাবটি তার প্রথম রচনা সে কারণে এর মধ্যে ভাষাগত তরজমাগত ও সাজানোর দিক দিয়ে কিছু ভুল ক্রটি আমার নজরে পড়ে, আমিও সেগুলো সংশোধন করে দেয়ার জন্য যথাসাধ্য চেষ্টা করেছি। কিন্তু কম্পিউটারের মাধ্যমে তার কতটুকু সংশোধন করা হয়েছে তা সময় সল্পতার কারণে পুনরায় আমার দেখার সুযোগ হয়নি। সে কারণে হয়তো কিছু ভুলক্রটি থাকা স্বাভাবিক। তা আগামী সংস্করণে সংশোধন করে দিবো। ইনশাআল্লাহ!

একজন ব্যক্তিও যদি এ কিতাবটি পড়ে সঠিক জ্ঞান অর্জন করে সে অনুযায়ী আমল করেন তাহলে আমি মনে করবো আমাদের এ ক্ষুদ্র প্রয়াস স্বার্থক হয়েছে। আল্লাহ্ পাক আগামীতে লেখককে আরো আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাত এর আক্বীদা ভিত্তিক সুন্দর সুন্দর কিতাব রচনা করার তৌফিক দান করুন।

মুফতি মুহাম্মদ আলী আকবর

অভিমত

চট্টগ্রাম জামেয়া আহমদিয়া সুন্নিয়া আলিয়ার অধ্যক্ষ ও প্রধান ফকিহ, মাসিক তরজুমান এর প্রশ্নোত্তর বিভাগের সম্মানিত উত্তরপ্রদানকারি মুনাজেরে আহলে সুন্নাত, হযরতুলহাজ্ব আল্লামা মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ অসিয়র রহমান আলকাদেরী মা.জি.আ)’র অভিমত

নাহমাদুহু ওয়ানুসালি­ আলা রাসুলিহিল কারিম। আম্মাবাদ!

আল্লাহর মনোনিত ধর্ম ইসলামের সঠিক অনুসারিদের বিভ্রান্ত করার জন্য শয়তানের অনুচররা পৃথিবী সূচনার পর থেকে নানান ষড়যন্ত্রে লিপ্ত। আল্লাহর নামে মিথ্যাচার, রাসূলের সাথে দুশমনি, মহান রবের প্রিয়ভাজন ওলিদের বিরোদ্ধে বিদ্বেষ যেন তাদের নিত্যকর্ম।

আগেকার দিনে সেসব নরাধমদের চেনা যেতো খুব সহজে, এখন চেনা যায় না। তাদের রূপ বদলে গেছে নিরলে। তারা দ্বীনের চমৎকার আকৃতি নিয়ে মুখে নিকাশকালো ঘোমটা পড়ে সমগ্রবিশ্বের সরলমনা মুসলমানদের বিভিন্নভাবে ধোঁকা দিচ্ছে। ফলে তাদের প্রতারণা বুঝতে অক্ষম হয়ে, গোটা দুনিয়ার প্রায়সব মানুষ আজ প্রতারিত।

সাম্প্রতিক তারা ইসলামের সঠিক আক্বিদাগুলিকে ভুল প্রমাণিত করার অভিনব পদ্ধতি হিসাবে, ড. খোন্দকার আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীরের ‘হাদীসের নামে জালিয়াতি’, মাওলানা জুনায়েদ বাবুনগরীর ‘প্রচলিত জাল হাদীস’, মাওলানা মুহাম্মাদ আবদুল মালেকের ‘এসব হাদীস নয়’ এবং আহলে হাদিস আলবানীর ‘সিলসিলাতুল আহাদিসিদি দ্বঈফাহ’ নামকগ্রন্থ সমূহে ইসলামের সঠিক আক্বিদার পক্ষে যেসব গ্রহণযোগ্য হাদিসরয়েছে, সবগুলিকে তারা জাল হাদিস বলে জঘণ্য মিথ্যাচার করছে।

আমার স্নেহের ছাত্র মাওলানা শহিদুল্লাহ বাহাদুর তাদের সেসব মিথ্যাচারের দাঁতভাঙা জবাব প্রদান করেছে তার রচিত ‘প্রমাণিত হাদিসকে জাল বানানোর স্বরূপ উন্মোচন’ গ্রন্থটিতে।

যারা আল্লাহ, রাসূল ও ওলিদের বিরোদ্ধে চরম লিখনির মাধ্যমে জঘণ্য মিথ্যাচার করে এদেশের মানুষকে বিভ্রান্ত করছে, সে সমস্ত মিথ্যাবাদী! নরকের কীট! নামধারী লিখকদের স্বরুপ জাতির সম্মুখে গ্রন্থটি প্রকাশের মাধ্যমে যথাযত উন্মোচন হবে, ইনশা আল্লাহ!

আমার জানামতে, এই কিতাবটি মানানসয়ী ও গ্রহণযোগ্য করার জন্য লিখক শহিদের ঘামঝরা চেষ্টার কোন ত্র“টি ছিলো না। ইলমে হাদিসের উপর গবেষণা ব্যতিত চুলছেড়া বিশ্লেষণ মূলক এরকম অনবদ্য গ্রন্থ রচনা করা কোনদিন সম্ভব না।

গ্রন্থের পাতায়পাতায় দুরাচারদের চরম আপত্তির কুরআন, হাদিস, ইজমা ও কিয়াস ভিত্তিক মনোমুগ্ধকর সমাধান দিয়েছে। কোন কিতাব থেকে নেয়া কোন বর্ণনা, সে তথ্যপঞ্জি পৃষ্ঠা নাম্বার সহকারে উল্লেখ করেছে; যা বর্তমান সচেতন পাঠক মহলকে বেশ ফায়দা দিবে।

আমি মুহাম্মদ শহিদুল্লাহ বাহাদুরের জন্য হৃদয় খুলে দোয়া ও গ্রন্থটির প্রচার প্রসারের ব্যপকতা কামনা করছি আল্লাহপাকের মহান দরবারে।

সৈয়দ মুহাম্মদ অসিয়র রহমান

অভিমত

ঢাকা মুহাম্মদপুর কাদেরিয়া তৈয়বিয়া আলিয়া ও চট্টগ্রাম জামেয়া আহমদিয়া সুন্নিয়া আলিয়ার সম্মানিত শায়খুল হাদিস, উস্তাজুল ওলামা হযরতুলহাজ্ব আল্লামা মুহাম্মদ আবদুল হক নকশবন্দি (মা. জি. আ)’র অভিমত

আমার স্নেহধন্য ছাত্র মাওলানা মুহাম্মদ শহিদুল্লাহ বাহাদুরের রচিত ‘প্রমাণিত হাদিসকে জাল বানানোর স্বরূপ উন্মোচন’ (১ম খণ্ড) গ্রন্থটি আমি দেখেছি। অনেক হাদিস সনদের তাত্তি¡ক বিশ্লেষণে আমি তাকে সাহায্যও করেছি। তার এই কিতাবটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও সময় উপযোগি এক অনবদ্য রচনা সম্ভার। বর্তমান লাইব্রেরীতে যেসব বিভ্রান্তকর পুস্তক রয়েছে এবং যেসকল বইপুস্তকে আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতের যাবতীয় আক্বিদার প্রতি মিথ্যা অপবাদ দেয়া হয়েছে সেসব বিষয়ের যথাযত জওয়াব প্রদান করা হয়েছে উক্ত গ্রন্থটিতে। শুনেছি গ্রন্থের দ্বিতীয় খণ্ডও শিঘ্রই বের হবে, তার জন্য শুভকামনা রইল। আমি মাওলানা মুহাম্মদ শহিদুল্লাহ বাহাদুরের জন্য দোয়ার পাশাপাশি তার গ্রন্থের সফল প্রচারণা কামনা করছি।

মুহাম্মদ আবদুল হক নকশবন্দি

অভিমত

চট্টগ্রাম জামেয়া আহমদিয়া সুন্নিয়া আলিয়ার সম্মানিত (সাবেক) অধ্যক্ষ, উস্তাজুল ওলামা হযরতুলহাজ্ব আল্লামা মুহাম্মদ ছগীর ওসমানী (মা.জি.আ)’র অভিমত

আল্লাহ্ তা’য়ালার মহান দরবারে লাখো কোটি শুকরিয়া জ্ঞাপন করছি, অসংখ্য দরূদ ও সালাম জানাই মানবতার মুক্তির দূত নবি রাহমাতুলি­ল আলামিন (ﷺ)’র জ্যোতির্ময় চরণে।

আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতের সকল আক্বিদা কুরআন সুন্নাহ ইজমা ও কিয়াস ভিত্তিক। যা পূর্ণাঙ্গ শরিয়ত সমর্থিত। সাম্প্রতিক সুন্নিয়তের সেসব প্রমাণিত আকায়েদের উপর মিথ্যা অপবাদ বেড়ে চলেছে প্রতিনিয়ত। তথাকথিত সালাফি, মওদুদি, ওহাবি এবং আহলে হাদিসের জঘন্য ইমাম আলবানী ও তার প্রেতাতœারা দিনদিন বেপরোয়া হয়ে লিখনির মাধ্যমে ইলমে হাদিসের উপর চরম মিথ্যাচার করে বই লিখে বাজারজাত করেছে। এ রকম কিছু আপত্তিকর গ্রন্থের যথাযথ জবাব প্রদান করে আমাদের স্নেহের ছাত্র মাওলানা মুহাম্মদ শহিদুল্লাহ বাহাদুর।

তার গ্রন্থের নাম দেয়া হয়েছে ‘প্রমাণিত হাদিসকে জাল বানানোর স্বরূপ উন্মোচন’(১ম খণ্ড) একফাঁকে বইটিতে আমি চোখ বুলিয়েছি। এখানে বানানো কোন গল্প-গুজব নেই, দুর্বল বর্ণনার কোন কথাও নেই বরং সবগুলি ইলমে হাদিসের উপর গবেষণালব্ধ আলোচনা। প্রমাণ্যপঞ্জিতে পৃষ্ঠা নাম্বার ও কিতাব প্রকাশনার নাম পর্যন্ত উল্লেখ করা হয়েছে। আশাকরি বিজ্ঞপাঠক মহল নতুন করে আবারো বুঝতে পারবেন, আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতের অনুসারিরা সত্যের পথে নির্ভীক আর তাদের সব বিরোধিতাকারি শয়তানের যোগ্য অনুসারি ও চরম মিথ্যাবাদী।

ছগীর মুহাম্মদ ওসমানী

অভিমত

চট্টগ্রাম জামেয়া আহমদিয়া সুন্নিয়া আলিয়া’র শায়খুল হাদিস, উস্তাজুল ওলামা হযরতুলহাজ্ব আল্লামা মুহাম্মদ সোলাইমান আনসারী (মা.জি.আ)‘র দোয়া ও অভিমত

পবিত্র কুরআনের পরপরই হাদিসে নববী (ﷺ)’র স্থান। যারা হাদিসের নামে মিথ্যাচার করে তারা মহান রবের নিকট জঘণ্য অপরাধি হিসাবে বিবেচিত। কেননা প্রিয়তম রাসূলে মাকবুল (ﷺ)’র জ্যোতির্ময় মুখনিসৃত প্রতিটি বাণী আল্লাহর কালামপাকের অর্ন্তভুক্ত। তাই হাদিসের সাথে প্রতারণা মানে মহান পরওয়ার দিগার আলমের সাথে প্রতারণার নামান্তর। জাহান্নামের স্থায়ী বাসিন্দা ব্যতিত খোদ রব তা’য়ালার সাথে কেউ এ ধরনের ধোঁকাবাজি ও প্রতারণা করতে পারে না।

সাম্প্রতিক দেখা যায়, কিছু পেশাদার ব্যবসায়ী লিখকসেজে ব্যবসাকে রমরমা করার প্রত্যয়ে আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতের সঠিক আক্বিদাভিত্তিক চিরসত্য ও সহীহ হাদিসগুলি নিয়ে সরলমনা মুসলমানদের সাথে প্রতিনিয়ত ধোঁকাবাজি করছে।

আমার স্নেহের ছাত্র মাওলানা মুহাম্মদ শহিদুল্লাহ বাহাদুরের রচিত ‘প্রমাণিত হাদিসকে জাল বানানোর স্বরূপ উন্মোচন’ (১ম খণ্ড) এইগ্রন্থে এমন জাহান্নামি দুরাচার লিখকদের অসংখ্য পুস্তকের খণ্ডন করা হয়েছে। যা পাঠ করলে বিজ্ঞপাঠক মহল সহজে অনুধাবন করতে সক্ষম হবেন।

আমি কিতাবটি দেখে অত্যন্ত খুশি হয়েছি। আমার ধারণা মতে, এইগ্রন্থ একটি সময় উপযোগিপ্রমাণ ভিত্তিক অনবদ্য রচনা। লিখক ও তার লিখিত বইটির সার্বিক সফতালতার জন্য মহান রব সমিপে দোয়া করছি।

মুহাম্মদ সোলাইমান আনসারী

অভিমত

চট্টগ্রাম সোবহানিয়া আলিয়া মাদরাসার সম্মানিত শায়খুল হাদিস, বিশিষ্ট লিখক ও গবেষক, পীরে তরিক্বত হযরতুলহাজ্ব আল্লামা কাযী মুহাম্মদ মুঈন উদ্দিন আশরাফী (মা.জি.আ)’র অভিমত

নাবি কারিম (ﷺ)’র নামে জাল হাদিস বানানো যেমন ভয়াবহ অপরাধ, সহীহ, হাসান, প্রমাণিত হাদিসের ব্যাপারে মিথ্যাচার করাও জঘণ্য অপরাধ। এ ধরনের চরম অপরাধগুলি একমাত্র আল্লাহ্ ও নবিদ্রোহী ব্যতিত অন্যকেউ করার দুঃসাহস করে না। ইদানিং একশ্রেণির পেশাদার তথাকথিত আলেম দেখা যায়, যারা রাসূলুল্লাহ (ﷺ)’র হাদিসের প্রেমিকবেশে সূর্যের আলোর ন্যায় পরিষ্কার অসংখ্য সহীহ, হাসান, প্রমাণিত হাদিসকে জাল বা বানোয়াট বলে বিভিন্ন মাধ্যমে সাধাসিধে মুসলিম সম্প্রদায়ের নিকট বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে।

তাদের চিন্তা কেবল একটাই, মানুষকে নবি ওলিদের প্রদর্শিত সঠিকপথ থেকে যেকোন ভাবে বিচ্যুত করা। এলক্ষ্যে ইতিমধ্যে তারা বহু সভা, সেমিনার এমনকি মিডিয়া জগতকে পুরো দখল করে বসে রয়েছে। ইহুদি নাসারাদের মদদে ছোট বড় অনেক বইপুস্তকও বাজারজাত করে সাধারণ মানুষদের ঘরে ঘরে পৌঁছিয়ে দিচ্ছে তাদের নরকিয় পয়গাম।

সেরকম কিছু বিভ্রান্তিকর পুস্তক যেমন, আলবানীর সিলসিলাতুল আহাদিসিদ দ্বঈফাহ, ড. খোন্দকার আবদুল্লাহ জাহাঙ্গিরের ‘হাদীসের নামে জালিয়াতি, মাওলানা মুহাম্মাদ আবদুল মালেকের ‘এসব হাদীস নয়’ ও মাওলানা জুনায়েদ বাবুনগরীর সম্পাদিত ‘প্রচলিত জাল হাদীস’ বই সমাজে সরলপ্রাণ মুসলমানদের বিভ্রান্ত করছে চরমভাবে।

আমি জেনে অত্যন্ত আনন্দিত হয়েছি, আমার স্নেহভাজন মাওলানা মুহাম্মদ শহিদুল্লাহ বাহাদুর ‘প্রমাণিত হাদিসকে জাল বানানোর স্বরূপ উন্মোচন’ (১ম খণ্ড) নামক গ্রন্থ রচনার মাধ্যমে উল্লেখিত সব বইগুলির দাঁতভাঙা জবাব লিখেছে। আলহামদুলিল্লাহ!

এটি খুবই প্রয়োজনীয় একটি গ্রন্থ। এধরনের কিতাব প্রত্যেক ঈমানদার মুসলমাদের অধ্যায়ন করা দরকার। ইলমে হাদিসের উপর এ ধরনের কোন কিতাব বাংলা ভাষায় ইতোপূর্বে রচিত হয়েছে বলে আমার জানা নেই।

আমি লিখকের কষ্টের ফসল ‘প্রমাণিত হাদিসকে জাল বানানোর স্বরূপ উন্মোচন’ (১ম খণ্ড) এই অনবদ্য গ্রন্থটির ধারণাতীত প্রচার প্রসার কামনা করছি। সেই সাথে স্নেহের লিখকের জন্য মহান আল্লাহর দরবারে শুভপ্রার্থনা রইল। সর্বাঙ্গীন মঙ্গল ও সাফল্য কামনা করি।

কাযী মুহাম্মদ মুঈন উদ্দিন আশরাফী

প্রথম অধ্যায়:

উসূলে হাদিসের গূরুত্বপূর্ণ কতিপয় মূলনীতি:

বিষয় নং-০১. বর্তমান আহলে হাদিসদের দৃষ্টিতে দ্বঈফ হাদিস বলতে কী বুঝায়?

বর্তমান আহলে হাদিস তথা সালাফিদের নিকট দ্বঈফ হাদিস হলো এক প্রকার জাল হাদিস হিসেবে গণ্য, যেমনটি আলবানীর অনেক পুস্তকে দৃষ্টি দিলে তা অনুধাবন করা যায়। ১

➥১. এ ব্যাপারে আপনাদের হাতের নাগালে একটি পুস্তুক পাবেন, বইটির মূল হলো লিখক শায়খ নাসিরুদ্দীন আলবানী যার অনুবাদ ও সম্পাদনা করেছেন বাংলাদেশের তথাকথিত আহলে হাদিস আবুল কালাম আযাদ। পুস্তকটির বাংলা নামকরণ করা হয়েছে ‘‘ছহীহ হাদীছের পরিচয় ও হাদীছ বর্ণনার মূলনীতি’’ যা আযাদ বুক ডিপু, ১৯, শাহী জামে মসজিদ মার্কেট, আন্দরকিল্লা, চট্টগ্রাম হতে প্রকাশিত। এ বিষয়ে বইটির ২৩ পৃ.২৫ পৃ ২৭ পৃ. দেখতে পারেন।

আহলে হাদিস শায়খ কামাল আহমদ তার লিখিত ‘যঈফ হাদীস কেন বর্জনীয়?’ (যা ওয়াহীদিয়া ইসলামিয়া লাইব্রেরী, রাণীবাজার, রাজশাহী, বাংলাদেশ হতে প্রকাশিত) গ্রন্থের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত এটি নিয়েই আলোকপাত করেছেন। আরেক আহলে হাদিস মুযাফফর বিন মুহসিন তার লিখিত ‘যঈফ ও জাল হাদীছ বর্জনের মূলনীতি’ গ্রন্থে সকল মুহাদ্দিসীনে কিরামের নীতিমালাকে উপেক্ষা করে ৩৩ পৃষ্ঠায় লিখেছেন-‘‘যার প্রতি (যঈফ হাদিসের উপর) আমল করা ঐকমত্যের ভিত্তিতে নাজায়েয।’’

তিনি যঈফ আর জাল হাদিসের হুকুমকে এক সাথে মিলিয়ে ৩৫ পৃষ্ঠায় লিখেন-‘‘অতএব শারঈ মানদণ্ডে জাল হাদীছ তো নয়ই, যঈফ হাদীছও গ্রহণযোগ্য নয়।’’

সম্মানিত পাঠকবৃন্দ! সকল মুহাদ্দেসীেেন কেরাম একমত যে, দ্বঈফ সনদের হাদিসও হাদিসের এক প্রকারের অর্ন্তভুক্ত; সনদের রাবির আদালতের ক্ষেত্রে সহীহ, হাসান, দ্বঈফ হয়ে থাকে। কিন্তু আলবানী ও তার উত্তরসূরীরা সকল ইমাম ও মুহাদ্দীসিনে কেরামের নীতিমালাকে উপেক্ষা করে, তারাই এক উসূলে হাদিসের নতুন পদ্ধতি আবিষ্কার করেছে। অথচ আজ এ আহলে হাদিসগণ পৃথিবীর সমস্ত মুহাদ্দিসদের ইজমার বিপরীতে কথা বলছেন।

❏ এ বিষয়ে বিখ্যাত হাফেযুল হাদিস, ফকীহ, ইমাম নববী আশ-শাফেয়ী (رحمة الله) বলেন-

قد اتفق العلماء على جواز العمل بالحديث الضعيف فى فضائل الاعمال:مقدمة المؤلف

-‘‘উলামায়ে কিরাম এই বিষয়ে সবাই ঐকমত্য পোষণ করেছেন দুর্বল হাদিস ফাযায়েলে আমলের জন্য গ্রহণযোগ্য।’’ ২

➥২. ইমাম নববী : আরবাঈন : ১/২০ পৃ. এবং ইমাম ইবনে দাকিকুল ঈদ, শরহে আরবাঈনুন নববিয়্যাহ, ১/২০ পৃ.

❏ বিশ্ববিখ্যাত মুফাস্সির, মুহাদ্দিস, ফকিহ, আল্লামা ইসমাঈল হাক্কী হানাফী (رحمة الله) ‘তাফসীরে রুহুল বায়ানে’ লিখেন-

لكن المحدثين اتفقوا على ان الحديث الضعيف يجوز العمل به فى الترغيب والترهيب

-‘‘তবে মুহাদ্দিসীনে কিরাম এ ব্যাপারে ঐকমত্য পোষণ করেছেন যে, আকর্ষণ সৃষ্টি ও ভীতি সঞ্চারের বেলায় দ্বঈফ হাদিস অনুযায়ী আমল করা যায়েয।’’ ৩

➥৩. আল্লামা ইসমাঈল হাক্কী : তাফসিরে রুহুল বায়ান, ২/৪১০ পৃ.

❏ এ বিষয়ে বিখ্যাত মুহাদ্দিস, ফকীহ, আল্লামা মোল্লা আলী ক্বারী হানাফী (رحمة الله) লিখেন,

وَالضَّعِيفُ يُعْمَلُ بِهِ فِي فَضَائِلِ الْأَعْمَالِ اتِّفَاقًا

-‘‘দ্বঈফ হাদিস ফাযায়েলে আমলের মধ্যে আমল করার ব্যাপারে ইমামগণের ঐকমত্য হইয়াছে।’’ ৪

➥৪. আল্লামা মোল্লা আলী ক্বারী : মওজু আতুল কাবীর : ১/৩১৫ পৃ. হা/৪৩৩

সম্মানিত পাঠকবৃন্দ! উপরের তিনজন নির্ভরযোগ্য আলেমের অভিমত থেকে জানতে পারলাম যঈফ হাদিস ফাযায়েলে আমলের জন্য গ্রহণযোগ্য সে বিষয়ে হাদিস বিজ্ঞানীদের ইজমা হয়েছে, তাহলে এ নীতি অমান্য করে আহলে হাদিসরা কি তাদের অর্ন্তভুক্ত হবেন!

কিন্তু আহলে হাদিস আলবানী সকল মুহাদ্দিসের ইজমার বিরোদ্ধে অবস্থান নিয়ে লিখেন-‘‘অনেকে এরূপ ধারণা পোষণ করেন যে, ফাযায়েলের ক্ষেত্রে দুর্বল হাদীসের উপর আমল করা যাবে এ মর্মে কোনো মতভেদ নেই। বাস্তবিক পক্ষে তা সঠিক নয়।’’ (আলবানী, য‘ঈফ ও জাল হাদীছ সিরিজ, ১ম খণ্ড, ৫০ পৃ. তাওহীদ পাবলিকেশন্স, বংশাল, ঢাকা-১১০০)

পাঠকদের কাছেই বিচারের সিদ্ধান্ত অর্পন করা হলো, আপনারা কাকে মানবেন, আলবানীকে না ইমাম নববী (رحمة الله)সহ পৃথিবী বিখ্যাত ইমামদের!

অপরদিকে দ্বঈফ হাদিস যখন একাধিক সনদে বর্ণিত হবে তা আর দ্বঈফ থাকে না। মুহাদ্দিসীনে কিরামের এ নীতিমালাটি আহলে হাদিস স¤প্রদায় নিজেদের মতের পক্ষে যখন একটি দ্বঈফ সনদের হাদিসও আসবে তখন এটিকে ‘হাসান’ বলতে একটুও চিন্তা করে না, আর নিজেদের মত ও পথের বিরোদ্ধে যখন একাধিক সনদ নয় বরং ১৭ জন সাহাবি বর্ণনা করলেও তা তাদের নিকট দ্বঈফ সনদই থেকে যায়! ৫

➥৫. এ বিষয়ে আ‘লা হযরত ইমাম আহমদ রেযা খাঁন বেরলবী (رحمة الله) এর সংকলিত ‘ফতোওয়ায়ে আফ্রিকায়’ রাসূল (ﷺ) আবূ বকর, উমর একই মাটির সৃষ্টির হাদিসের আলোচনায় দেখতে পাবেন যে একটি জাল হাদিসকেও ড. আবদুল্লাহ জাঙ্গীর তার ‘হাদীসের নামে জালিয়াতি’ বইয়ের ৩৪৮ পৃষ্ঠায় আলবানীর দলিলের ভিত্তিতে ‘হাসান’ বলতে একটুও চিন্তা বা দ্বিধাবোধ করেননি। আবার আহলে হাদিস শায়খ নাসিরুদ্দীন আলবানী আলেমের কলমের কালি শহীদের রক্তের চেয়ে পবিত্র ও যে সূরা ইখলাস তিনবার পড়বে সে যেন সর্ম্পন্ন কুরআন পড়লো এবং ‘তোমরা মু‘মিনের অন্তর দৃষ্টিকে ভয় কর, কেননা তারা আল্লাহর নূর দ্বারা দেখে’ এ হাদিসটি দ্বারা ওলীদের কাশ্ফ প্রমাণিত হয় বিধায় মোট দশজনেরও বেশী সাহাবি হতে বর্ণিত হওয়ার হওয়ার পরেও হাদিসটিকে সে দ্বঈফ বলে উড়িয়ে দিতে চেয়েছিল। অনূরুপ বহু উদাহারণ আমার এ পুস্তুকে পাবেন এবং আলবানীর এ সমস্ত বাতিল মতবাদ এবং ভুয়া তাহকীকের জবাব জানতে আমার ‘আলবানীর স্বরূপ উন্মোচন’ পড়ুন।

অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায় যে, আলবানী ও তার উত্তরসূরীদের নিকট কোনো সনদের একজন রাবী মাজহুল (অপরিচিত) থাকলে তখন সেটিকে মাওদ্বু বা জাল হাদিস বলতে দ্বিধাবোধ করেন না। আমার বিভিন্ন পুস্তুকের অনেক স্থানে আলবানী ও তার অনুসারীদের এ মনগড়া নীতির খণ্ডন করেছি, এ কিতাবের বিভিন্ন স্থানেও আলবানীর এ ভুল নীতিমালার জবাব পাবেন, ইন শা আল্লাহ!

বিষয় নং-০২. কোনো মুহাদ্দিসের উক্তি হাদিসটি ‘সহীহ নয়’ বলতে কী বুঝায়?

 অভিমত নং -০১-১০:

‘হাদীসের নামে জালিয়াতি’ গ্রন্থের ১৮৯ পৃষ্ঠায় লেখক ড. খোন্দকার আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীর কোন প্রমাণ ছাড়াই মুহাদ্দিসদের উক্তি ‘হাদিসটি সহীহ নয়’ বলতে জাল হাদিস বুঝায় বলে উল্লেখ করেছে। তার কাছে আমার প্রশ্ন যে, হাদিস শাস্ত্রের ভূয়া এই নীতিমালা কোন মুহাদ্দীসের? অবশ্যই কোন মুহাদ্দিসের নয়। তা না হলে তিনি কেন উসূল বয়ান করলেন কিন্তু নির্ভরযোগ্য উসূলে হাদিসবিদ মুহাদ্দিসদের অভিমত উল্লেখ করলেন না কেন? এটা দ্বারাই প্রমাণিত হয় যে, এটা কোন হক্কানী মুহাদ্দীসের মন্তব্য নয়; বরং তার নিজের মনগড়া বক্তব্য। অপরদিকে মাওলানা জুনায়েদ বাবুনগরী সম্পাদিত আরেকটি বিভ্রান্তিকর বই ‘প্রচলিত জাল হাদিস’’ এর ৪৯ পৃষ্ঠায় প্রমাণহীনভাবে কোন মুহাদ্দিসদের উক্তি ‘হাদিসটি সহীহ নয়’ বলতে জাল হাদিস বুঝায় বলে বুঝানোর অপচেষ্টা চালিয়েছেন। তাই আমি উক্ত হাদিসের নীতিমালার জন্য অনেক কষ্ট করে তথ্য সংগ্রহ করলাম এবং নিম্নে উপস্থাপন করলাম।

হাদিস তিন প্রকার। ১. সহীহ, ২. হাসান, ও ৩. দ্বঈফ। এগুলো হাদিসেরই অন্তর্ভূক্ত। বর্ণনার সূত্রানুসারে এভাবে হাদিস-বিশারদগণ হাদিসের প্রকারভেদ করেছেন। আমাদের দেশে বা বিভিন্ন অঞ্চলে এক শ্রেণীর নামধারী আলিম মনগড়াভাবে হাদিস শাস্ত্রের মূলনীতিকে সম্পূর্ণরুপে উপেক্ষা করে হাদিস-ই-দ্বঈফকে হাদিস বলেই স্বীকার করতে রাজি নয়।

অথবা দলীল হিসেবে এ পর্যায়ের হাদিসকে অগ্রহণযোগ্য বলার অপপ্রয়াস চালায়। অথচ হাদিস বিশারদদের মতে দ্বঈফ সনদও হাদিস হিসেবে গণ্য। সনদের দিক দিয়ে দুর্বল হবার কারণে, এ পর্যায়ের হাদিস দিয়ে কোন আমল ওয়াজিব বা সুন্নাত প্রমাণ করা না গেলেও, এমন হাদিস দ্বারা প্রমাণিত বাক্য সাওয়াবদায়ক হওয়াতে সন্দেহের কোন অবকাশ নেই। যা সামনে বিস্তারিত আলোকপাত করা হবে। অনুরূপ কোন হাদিসের ব্যাপারে যদি কোন মুহাদ্দিস এ ‘হাদিস সহীহ নয়’ বলে মন্তব্য করেন, তবে এতদভিত্তিতে ওই হাদিসকে অসত্য ও বানোয়াট হাদিস হিসেবে বিবেচনা করার সুযোগ নেই। কারণ সহীহ না হলে হাসান বা দ্বঈফ পর্যায়েরও হতে পারে।

হাদিস-ই-সহীহ হল হাদিসের বচন ও সূত্রের মধ্যে কোনরূপ ত্র“টিবিচ্যুতির উর্ধ্বে, এমন হাদিস। সুতরাং কোন হাদিস সহীহ নয় বলে মন্তব্যকে পুঁজি করে, ওই হাদিসকে মিথ্যা হাদিস (মাওদ্বু) বলার সুযোগ নেই। এ নীতিমালাটির নির্ভরযোগ্যতার প্রমাণের জন্য এবং এ নীতিমালা অপব্যাখ্যাকারীদের জবাবে আমি গ্রহণযোগ্য মুহাদ্দিসদের ভাষ্য নিম্নে তুলে ধরলাম, পাঠকবৃন্দ! পড়ে আপনারাই বিবেচনা করবেন কাদের বক্তব্য সঠিক।

✦ অভিমত নং- ১. বিশ্ববিখ্যাত মুহাদ্দিস, ইমাম, হাফেযুল হাদিস, আল্লামা ইবনে হাজার আসকালানীর (رحمة الله) রচিত “আল ক্বওলুল মুসাদ্দাদ ফিয যুব্বি আন মুসনাদি আহমদ” নামক কিতাবে উল্লেখ করেছেন যে,  

وَلا يَلْزَمُ مِنْ كَوْنِ الْحَدِيثِ لَمْ يَصِحَّ أَنْ يَكُونَ مَوْضُوعًا -الحديث السابع

-‘‘হাদিসটি ‘সহীহ নয়’ বললে সেটা মাওদ্বু বা বানোয়াট হাদিস হওয়া অপরিহার্য নয়।’’ (আল ক্বওলুল মুসাদ্দাদ ফিয যুব্বি আন মুসনাদি আহমদ, ১/৩৭ পৃষ্ঠা, মাকতাবায়ে ইবনে তাইমিয়া, কায়রু, মিশর।)

✦ অভিমত নং-২: বিশ্ববিখ্যাত মুহাদ্দিস, হাফেযুল হাদিস, আল্লামা ইমাম আবদুর রহমান জালালুদ্দীন সূয়ূতী (رحمة الله) তার লিখিত “তা‘কিবাত আলাল মাওদ্বুআত’’ গ্রন্থে বলেন-

اكثر ما حكم الذهبى على هذا الحديث انه قال متن ليس بصحيح وهذا صادق بضعفه-التعقبات على الموضوعات باب: بدء الخلق والانبياء.

-‘‘এ হাদিস সম্পর্কে ইমাম শামসুদ্দীন যাহাবী (رحمة الله) সর্বোপরি এ মন্তব্য করেছেন যে, হাদিসের বচনগুলো বা (মতন) সহীহ নয়। এ কথা দ্বারা বুঝা যায়, হাদিসটি দ্বঈফ বা দুর্বল পর্যায়ের (সূত্রের বা বচনের দিক দিয়ে)।’’৬

➥৬. ইমাম জালালুদ্দীন সুয়ূতি : তা‘কিবাত আলাল মাওদ্বূআত, পৃ-২৪৫

✦ অভিমত নং-৩: বিশ্ববিখ্যাত মুহাদ্দিস ও ফকীহ, আল্লামা মোল্লা আলী ক্বারী (رحمة الله) এ প্রসঙ্গে লিখেন-

لَا يَلْزَمُ مِنْ عَدَمِ صِحَّتِهِ نَفْيُ وُجُودِ حُسْنِهِ وَضَعْفِهِ

-‘‘এতে কোন সন্দেহের অবকাশ নেই কোনো মুহাদ্দিস ‘হাদিসটি সহীহ নয়’ বললে সেটার দ্বারা হাদিসটি বানোওয়াট হওয়া অপরিহার্য হবে।’’ ৭

➥৭. মোল্লা আলী ক্বারী, আসরারুল মারফূআত, পৃ-১/১০৮ পৃ. হাদিস:৮৫, মুয়াস্সাতুর রিসালা, বয়রুত, লেবানন।

✦ অভিমত নং-৪: উক্ত কিতাবে আল্লামা মোল্লা আলী ক্বারী (رحمة الله) তিনি আশুরার দিন সুরমা লাগানোর বিষয়ে একটি বর্ণিত হাদিস সম্পর্কে হযরত ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল (رحمة الله) এর উক্তি لَا يُصِحٌ هَذَا الْحَدِيث (এ হাদিস সহীহ নয়) বলে মন্তব্য করার পর লিখেছেন-

لَا يَلْزَمُ مِنْ عَدَمِ صِحَّتِهِ ثُبُوتُ وَضْعِهِ وَغَايَتُهُ أَنَّهُ ضَعِيفٌ

-‘‘আমার (মোল্লা আলী ক্বারী ) কথা হল, এ হাদিসটি ‘সহীহ নয়’ মানে বানোয়াট বা মাওদ্বু নয়। সর্বশেষ দ্বঈফ বলা যায় মাত্র।’’ ৮

➥৮. আল্লামা মোল্লা আলী ক্বারী : আসরারুল মারফূআত, ১/৪৭৪ পৃ. মুয়াস্সাতুর রিসালা, বয়রুত, লেবানন।

✦ অভিমত নং-৫: বিশ্ববিখ্যাত মুহাদ্দিস, ইমাম, হাফেযুল হাদিস, আল্লামা ইবনে হাজার আসকালানী (رحمة الله) লিখেন,

ان لفظ لا يثبت لا يلزم منه ان يكون موضوعات فإن الثابت يشمل الصحيح فقط والضعيف دونه كذا فى تذكرة الموضوعات –المبحث: الثانى فى اقسام الواضعين.

-‘‘কোন হাদিসের ব্যাপারে মুহাদ্দিসদের বক্তব্য (এ হাদিসটি সুদৃঢ় নয়) বললে, হাদিসটি মাওদ্বু বা বানোওয়াট বলে প্রমাণিত হয় না। কারণ সাবিত বা প্রমাণিত শব্দ দ্বারা শুধু সহীহ হাদিসই বুঝায় এর নিম্ন পর্যায়ের হাদিসের মধ্যে দ্বঈফও রয়েছে।’’ ৯

➥৯. আল্লামা তাহের পাটনী : তাযকিরাতুল মওদ্বুআত, ৭৫ পৃষ্ঠা

✦ অভিমত নং-৬-৭: শুধু তাই নয় দেওবন্দীদের শ্রদ্ধাভাজন ব্যক্তি মাওলানা আব্দুল হাই লাখনৌভি লিখেন-

لَا يلْزم من قَول أَحْمد فِي حَدِيث التَّوسعَة أَنه لَا يَصح أَن يكون بَاطِلا

-‘‘ইমাম আহমদ (رحمة الله)‘র উক্তি হাদিসটি ‘সহীহ নয়’ বলার দ্বারা হাদিসটি বাতিল বা জাল হওয়া অপরিহার্য নয়।’’ ১০

➥১০. আব্দুল হাই লাখনৌভি : আসারুল মারফু‘আ, ১০১ পৃ.

শুধু তাই নয় দেওবন্দী আলেম মাওলানা সরফরায খাঁন সফদর ‘নূর আওর বাশার’ গ্রন্থের ৫৪ পৃষ্ঠায়ও তাঁর এ ইবারতটি সংকলন করেছেন।

✦ অভিমত নং-৮: একটি হাদিস শরীফ এও রয়েছে যে,

الْبِطِّيخُ قَبْلَ الطَّعَامِ يَغْسِلُ الْبَطْنَ غَسْلًا وَيَذْهَبُ بِالدَّاءِ أَصْلًا-

-‘‘খাওয়ার পূর্বে তরমুজ খেলে তা পেটকে একেবারেই পরিষ্কার করে দেয় এবং রোগ ব্যাধিকে সমূলে দূরীভূত করে দেয়।’’ এ হাদিসের ব্যাপারে ইমাম ইবনে আসাকীর (رحمة الله) বলেছেন, شَاذٌّ لَا يَصِحُّ (এটি শায, বিরল পর্যায়ের সহীহ নয়) আল্লামা মোল্লা আলী ক্বারী (رحمة الله) আলোচ্য হাদিস সম্পর্কে উপরোক্ত মন্তব্য সম্পর্কে লিখেছেন,

وَهُوَ يُفِيدُ أَنَّهُ غَيْرُ مَوْضُوعٍ كَمَا لَا يَخْفَى–

-‘‘এ কথা স্পষ্ট যে, ইমাম ইবনে আসাকিরের উলি­খিত মন্তব্য দ্বারা হাদিসটি মাওদ্বু বা বানোওয়াট নয় বলে বুঝা যায়।’’ ১১

➥১১. আল্লামা মোল্লা আলী ক্বারী : আসরারুল মারফূআহ, : ১/৪৮৬ পৃষ্ঠা, আলামা আজলূনী : কাশফুল খাফা : ১/২৫৬ পৃ. হা/৯০৮

✦ অভিমত নং-০৯: আল্লামা মোল্লা আলী ক্বারী (رحمة الله) উল্লেখ করেন-

وَقَالَ ابْنُ الْهُمَّامِ: وَقَوْلُ مَنْ يَقُولُ فِي حَدِيثٍ أَنَّهُ لَمْ يَصِحَّ إِنْ سَلِمَ لَمْ يُقْدَحْ ; لِأَنَّ الْحُجَّةَ لَا تَتَوَقَّفُ عَلَى الصِّحَّةِ، بَلِ الْحَسَنُ كَافٍ– فصل الثانى من باب: ما يجوز من العمل فى الصلاة.

-‘‘ইমাম কামালুদ্দীন মুহাম্মদ বিন হুমাম (رحمة الله) বলেন, কোন হাদিস সম্পর্কে কোন মুহাদ্দিস বলেছেন যে এ ‘হাদিসটি সহীহ (বিশুদ্ধ) নয়’, তাদের কথা সত্য বলে মান্য করা হলেও কোন অসুবিধা নেই, যেহেতু (শরীয়তের) দলীল বা প্রমাণ হিসেবে সাব্যস্ত হওয়ার জন্য শুধু (হাদিস) সহীহ বা বিশুদ্ধ হওয়া নির্ভরশীল নয়। সনদ বা সূত্রের দিক দিয়ে ‘হাসান’ হলেও (হাদিসটি শরীয়তের দলীল হিসেবে সাব্যস্ত হওয়ার জন্য) যথেষ্ট।’’ ১২

➥১২. আল্লামা মোল্লা আলী ক্বারী : মিরকাত: ৩/৭৭ পৃ. হা/১০৮

✦ অভিমত নং-১০: আল্লামা ইবনে হাজার মক্কী (رحمة الله) বলেন-

وَقَول أَحْمد إِنَّه حَدِيث لَا يَصح أَي لذاته فَلَا يَنْفِي كَونه حسنا لغيره وَالْحسن لغيره يحْتَج بِهِ كَمَا بَين فِي علم الحَدِيث- (اَلصواعق المحرقه : خاتمة الفصل الاول من الباب: الحادى عشر:২২৮)

-‘‘ইমাম আহমদ বিন হাম্বল (رحمة الله)‘র বক্তব্য হাদিসটি لَايَصِحٌবিশুদ্ধ নয় এর অর্থ হবে সহীহ লিজাতিহী তথা জাতি বা প্রকৃত অর্থে সহীহ নয় উক্ত হাদিসটি (সনদের দিক দিয়ে) ‘হাসান লিজাতিহী’ বা অন্য সনদে ‘হাসান লিগায়রিহী’ (জাতিগত সহীহ না হওয়া; সংশ্লিষ্ট বিষয়ের সহীহ’র কারণে নিজে সহীহ হওয়া।) হওয়াকে মানা (নিষেধ) করে না। আর হাসান লিগায়রিহীও (শরিয়তের) প্রমাণ হিসেবে গ্রহণ করা যায়। যা ইলমে হাদিস তথা হাদিস শাস্ত্র হতে জানা যায়।’’ ১৩

➥১৩. ইবনে হাজার মক্কী : আস-সাওয়ায়েকুল মুহরিকা, ২য় খণ্ড, পৃ-৫৩৬, মুয়াস্সাতুর রিসালা, বয়রুত, লেবানন।

এটাও মনে রাখতে হবে হাসান হাদিসও সহীহ হাদিসেরই প্রকারের অর্ন্তভুক্ত।

❏ ইমাম ইবনে হাজার আসকালানী (رحمة الله) তার বিখ্যাত উসূলে হাদিসের কিাতবে লিখেন-

وهذا القِسمُ مِنَ الْحَسَنِ مشاركٌ للصحيح في الاحتجاج به، وإِنْ كان دُونَهُ،

-‘‘হাদিসে ‘হাসান’ শরিয়তের দলিল রূপে গ্রহণযোগ্য হওয়ার ক্ষেত্রে সহীহ হাদিসের সাদৃশ্য, যদিও মরতবায় (কিছুটা) কম। ১৪

➥১৪. ইবনে হাজার আসকালানী : নুযহাতুল নযর ফি তাওদিহে নুখবাতিল ফিকির, প্রথম খণ্ড, পৃ ৭৮, মাতবাআতে সাফির বিল রিয়াদ, সৌদি আরব।

 অভিমত নং -১১-২০:

✦ অভিমত নং- ১১: আল্লামা মোল্লা আলী ক্বারী (رحمة الله) এ নীতিমালাটিকে সুস্পষ্ট ব্যাখ্যা প্রসঙ্গে লিখেন-

قَوْلَ السَّخَاوِيِّ لَا يَصِحُّ لَا يُنَافِي الضَّعْفَ وَالْحُسْنَ

‘‘ইমাম সাখাভী (رحمة الله)‘র বক্তব্য হাদিসটি ‘সহীহ নয়’ (তিনি বলেন) তার সহীহ হওয়ার নিষেধ দ্বারা হাদিসটি ‘হাসান’ ও দ্বঈফ হওয়াকে নিষেধ করে না।’’ ১৫

➥১৫. আল্লামা মোল্লা আলী ক্বারী, আসরারূল মারফ‚আ, ১/৩৪৯ পৃ. হা/৫০২, লাখনৌভি, রাফউ ওয়া তাকমীল, ১৯৫ পৃ.

✦ অভিমত নং-১২: শায়খুল মুহাদ্দিসীন, আল্লামা আবদুল হক মুহাদ্দিস দেহলভী (رحمة الله) লিখেন,  

حکم عدم صحت کردن بحسب اصطلاح محدشن غرابت ندارد چہ صحت در حدیث چنانچہ در مقدمہ معلوم ثد در جهه اعلی ست دائرہ آن تنگ تر جمیح احاادیث کہ در کتب مذکوراست حتی دریں شش کتاب كحا انرا صحاح ستہ گویندہم باصطلاح الیشان صحیح نیست بالک۔ تسمیہ انہا صحاح باعتِبار تغلیب است (الطريق القويم شرح صراط مستقیم : ۵۰۲خاتمة الكتاب)

-‘‘মুহাদ্দিসীনের পরিভাষায় عدم صحيح বলতে হাদিস গরীব হওয়াকে বুঝায় না। বরং হাদিস সহীহ হওয়া তার উচ্চ স্তরের দরজাকে বুঝায়। যেমন আমি আমার মুকাদ্দামায় উল্লেখ করেছি এবং তাহার পরিধি অত্যন্ত সংকীর্ণ। সমস্ত হাদিসের কিতাবে উল্লেখ আছে এমনকি ছয় কিতাব যাহাকে صحاح ست (সিহাহ সিত্তাহ) নামে অভিহিত করা হইয়াছে মুহাদ্দিসিনের পরিভাষায় সহীহ নয়; বরং প্রাধান্য তার দিক দিয়ে সহীহ বলা হয়েছে। মুহাদ্দিসিনের বিস্তারিত বর্ণনায় এই কথাটি দিবালোকের মত স্পষ্ট হয়েছে এই হাদিস সহীহ নয় এই কথা বলার উদ্দেশ্য উচ্চ স্তরের সহীহ নয়।’’ ১৬

➥১৬. আল্লামা আব্দুল হক মুহাদ্দিস দেহলভী, শরহে সিরাতুম মুস্তাকিম, ৫০২ পৃ.

✦ অভিমত নং-১৩: মাওলানা আবদুল হাই লাখনৌভি ইমাম ইবনে হাজার আসকালানী (رحمة الله) সুপ্রসিদ্ধ কিতাব (بنتائج الافكار) এর উদ্ধিৃতি দিয়ে লিখেন-

لَا يلْزم من نفي الثُّبُوت ثُبُوت الضعْف لاحْتِمَال ان يُرَاد بالثبوت- الصِّحَّة فَلَا يَنْتَفِي الْحسن

-‘‘হাদিসটি ثبت নয় বা দৃঢ় নয় দ্বারা দ্বঈফ হওয়া অপরিহার্য নয়। বরং এ ধরনের শব্দ দ্বারা এর কোনো স্তরের হওয়ারও সম্ভবনা রাখে। তাই (সহীহ নয়) বলে ‘হাসান’ হওয়াকে নিষেধ করে না।’’ (সিমাউল মাওতা, পৃ.২৩৪-২৩৫, লাখনৌভি, রাফউ ওয়া তাকমীল, ১৯৭ পৃ.)

✦ অভিমত নং-১৪: আল্লামা জুরকানী (رحمة الله) তার বিখ্যাত একটি গ্রন্থে লিখেন-

نَفِي الصحة لَا يُنَافِي أَنَّهُ حَسَنٌ كَمَا علم

-‘‘কোনো হাদিসকে মুহাদ্দিসগণ সহীহ হওয়াকে নিষেধ করা দ্বারা হাসান হওয়াকে নিষেধ করে না, যেমনটি ইলমে হাদিস বা হাদিস শাস্ত্রের মূলনীতিমালার কিতাবে রয়েছে।’’ (জুরকানী, শারহুল মাওয়াহেব, ৫/৫৫ পৃ., লাখনৌভি, রাফউ ওয়া তাকমীল, ১৯৭ পৃ.)

✦ অভিমত নং-১৫:

মাওলানা আবদুল হাই লাখনৌভি উল্লেখ করেন-

وَقَالَ مُحَمَّد بن عبد الْبَاقِي الزّرْقَانِيّ فِي شرح الْمَوَاهِب اللدنية للقسطلاني عِنْد ذكر حَدِيث يطلع الله لَيْلَة النّصْف من شعْبَان فَيغْفر لجَمِيع خلقه الا لمشترك اَوْ مُشَاحِن وَنقل الْقُسْطَلَانِيّ عَن ابْن رَجَب ان ابْن حبان صَححهُ فِيهِ رد على قَول ابْن دحْيَة لم يَصح فِي لَيْلَة نصف شعْبَان شَيْء الا ان يُرِيد نفي الصِّحَّة الاصطلاحية فان حَدِيث معَاذ هَذَا حسن لَا صَحِيح

-‘‘আল্লামা মুহাম্মদ বি আবদুল বাকী জুরকানী (رحمة الله) তার শারহুল মাওয়াহিব গ্রন্থে শবে বরাত সম্পর্কিত হযরত মুয়ায ইবনে জাবাল (رضي الله عنه)-এর হাদিস যেখানে রাসূল (ﷺ) ইরশাদ করেছেন, শবে বরাতে মুশরিক এবং হিংসুক ব্যতিত সবাইকে ক্ষমা করে দেন। ......প্রসঙ্গে আল্লামা ইবনে দাহিয়াহ (رحمة الله) বলেছেন শবে বরাত সম্পর্কিত ‘কোনো হাদিসই সহীহ নয়’ (আল্লামা জুরকানী বলেন), নিশ্চয়ই সহীহ হওয়া নিষেধ দ্বারা উসূলে হাদিসের পারিভাষায় হযরত মুয়ায ইবনে জাবাল (رضي الله عنه)-এর হাদিসটি ‘হাসান’ হওয়া প্রমাণিত, তবে (সহীহ নয় শব্দ দ্বারা) সহীহ লিজাতিহী নয় (উদ্দেশ্য)।’’ (লাখনৌভি, রাফউ ওয়া তাকমীল, ১৯৭ পৃ., আল্লামা জুরকানী, শারহুল মাওয়াহেব, ১০/৫৬১ পৃ.)

আল্লামা জুরকানী (رحمة الله)-এর এ অভিমত থেকে সুস্পষ্ট বুঝা গেল যে, হাদিসটি সহীহ নয় বলতে ‘হাসান’ হওয়া বুঝায়।

✦ অভিমত নং-১৬: মাওলানা আবদুল হাই লাখনৌভি একটি হাদিসের বিষয়ে ইমাম সামহুদী (رحمة الله)-এর (جَوَاهِر الْعقْدَيْنِ فِي فضل الشرفين) কিতাবের উদ্ধিৃতি দিয়ে তাঁর বক্তব্য লিখেন-

غير صَحِيح وَهُوَ صَالح للاحتجاج بِهِ اذ الْحسن رتبه بَين الصَّحِيح والضعيف

-‘‘মুহাদ্দিসদের উক্তি এ হাদিসটি ‘সহীহ নয়’ বলা দ্বারা সনদটি সঠিক (এ ধরনের শব্দ দ্বারা মুহাদ্দিসগণ ‘হাসান’ স্তরের বুঝে থাকেন) এবং এর দ্বারা দলিল সাব্যস্ত করা যাবে, বরং তার মর্যাদা হবে ‘হাসান’ যা সহীহ এবং যঈফের মধ্যবর্তী স্থানের মর্যাদার অধিকারী।’’ (লাখনৌভি, রাফউ ওয়া তাকমীল, ১৯৫ পৃ.)

✦ অভিমত নং-১৭: আহলে হাদিসদের অন্যতম আলেম মাওলানা মুহাম্মদ শামসুল হক আযীমাবাদী (মৃত্যু ১৩২৯ হি.) বলেন,  

لا يلزم من نفى الثبوت ثبوت الضعف لاحتمال ان يراد بالثبوت الصحة فلا ينتقى الحسن وعلى التنزل لا يلزم من نفى الثبوت عن كل فرد (اى عن صحيح والحسن) تيه عن المجموع (اى الصحيح والحسن والضعيف) انتهى كلامه رسالة غنية الالمعى مع طبرانى ٢/١٥٨ مطبوعه دار الكتب العلمية بيروت-

-‘‘হাদিসটি দৃঢ় নয় বা সহীহ নয় বক্তব্য দ্বারা হাদিসটি দুর্বল হওয়া অপরিহার্য নয়। তাই হাদিসটি ثبت বা দৃঢ় এর দ্বারা সহীহ (উচ্চ পর্যায়ের বিশুদ্ধ) বুঝানো হয়েছে, তাই বলে ‘হাসান’ হওয়াকে নিষেধ করে না। তারপর আর একটু নিচে গেলেও ثبت নয় শব্দ দ্বারা একক সহীহ অথবা হাসান হওয়াকে নিষেধ করা হয় বলে, সহীহ, হাসান, দ্বঈফ (সবগুলোকে) নিষেধ করা হয় নি।’’

✦ অভিমত নং-১৮: দেওবন্দীদের শাইখুল হাদিস তকী উদ্দিন নদভী সাহবে তার ‘ফান্ন আসমাউর রিযাল’ গ্রন্থে বলেন-

جب كسى حديث كے بارے ميں "لا يصح" يا "لا يثبت" كها جاتى تو اس سے يه لازم نهيں اتا كه وه حديث موضوع هے يا ضعيف هے ، ملا على قارى رحمة الله عليه فرماتے هيں كه عدم ثبوت سے حديث كا موضوع هونا لازم نهيں اتا- حافظ ابن حجر عسقلانى رحمة الله عليه فرماتے هيں حديث كو "لا يصح" كهنے سے اس كا موضوع هونا لازم نهيں اتا- ممكن هے وه حديث حسن ياحسن لغيره هو- كذا فن اسماء الرجال- صفحة৭৬  

-‘‘কোন মুহাদ্দিসের বক্তব্য হাদিসটি ‘সহীহ নয়’ অথবা ‘দৃঢ় নয়’ বক্তব্য দ্বারা হাদিসটি মওদ্বু বা জাল অথবা দ্বঈফ হওয়া অপরিহার্য নয়। কমপক্ষে সর্বনিম্ন দুর্বল বলা যেতে পারে। আল্লামা মোল্লা আলী ক্বারী (رحمة الله) বলেন হাদিসটি সহীহ নয় (সহীহ হওয়াকে নিষেধ) বলতে মওদ্বু বা জাল হওয়া অপরিহার্য নয়। আল্লামা ইবনে হাজার আসকালানী (رحمة الله) বলেন, হাদিসটি لا يصح অর্থাৎ ‘সহীহ নয়’ কারও বক্তব্য দ্বারা মওদ্বু বা জাল হওয়া অপরিহার্য নয়। কমপক্ষে “হাসান” লিগাইরিহী হাদিস বলা যেতে পারে।’’(৭৬ পৃ.)

✦ অভিমত নং-১৯: প্রসিদ্ধ একটি হাদিস আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত।

أَنَا مَدِينَةُ الْعِلْمِ وَعَلِيٌّ بَابُهَا-

-“আমি ইলমের শহর আর আলী তার দরজা।’’

উক্ত হাদিসটি সম্পর্কে আল্লামা মোল্লা আলী ক্বারী (رحمة الله) বলেন,

وَسُئِلَ عَنْهُ الْحَافِظُ الْعَسْقَلَانِيُّ فَأَجَابَ بِأَنَّهُ حَسَنٌ لَا صَحِيحٌ كَمَا قَالَ الْحَاكِمُ وَلَا مَوْضُوعٌ-

-‘‘ইমাম ইবনে হাজার আসকালানী (رحمة الله) কে উক্ত হাদিস সম্পর্কে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, উক্ত হাদিসটি সহীহ নয়, ‘হাসান’ পর্যায়ের হাদিস। ইমাম হাকিম (رحمة الله) বলেন হাদিসটি জাল বা বানোওয়াট নয়।’’ ১৭

➥১৭. মোল্লা আলী ক্বারী : আসরারুল মারফূআহ : ১/১১৮ পৃ. হাদিস:৭১, মোবারকপুরী : তুহফাতুল আহওয়াজি : ১০/২২৬ পৃ. হা/৩৭২৩, আজলূনী : কাশফুল খাফা, ১/১৮৪-৮৫ পৃ. হা/৬১৮, ইমাম সাখাভী : মাকাসিদুল হাসানা : ১২১ পৃ. হা/১৮৯, মোল্লা আলী ক্বারী : মিরকাতুল মাফাতিহ : ১১/২৫৩, হা/৬০৯৬

তাই সুস্পষ্ট বুঝা যায় হাদিসটি সহীহ নয় বলতে “হাসান” হওয়াকে বুঝায়।

✦ অভিমত নং-২০: একটি হাদিস أَنَا مَدِينَةُ الْعِلْمِ وَعَلِيٌّ بَابُهَا- উক্ত হাদিস সম্পর্কে ইমাম আজলূনী ও মোল্লা আলী ক্বারী (رحمة الله) বর্ণনা করেন-

قَالَ فِي الدُّرر نَقْلًا وَقَالَ الْحَافِظُ أَبُو سَعِيدٍ الْعَلَائِيُّ الصَّوَابُ أَنَّهُ حَسَنٌ بِاعْتِبَارِ طُرُقِهِ لَا صَحِيحٌ وَلَا ضَعِيفٌ

-‘‘ইমাম জালালুদ্দীন সুয়ূতি (رحمة الله) তার ‘আদ-দুররুল মুনতাসিরাহ ফি আহাদিসিল মুশতাহিরাহ’ এ ইমাম আবুল সাঈদ আ’লায়ী (رحمة الله) হতে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, উক্ত হাদিসটি একাধিক তরীকায় বর্ণিত হওয়ার কারণে ‘হাসান’ হাদিস, তাই হাদিসটি সহীহও নয় এবং দ্বঈফও নয়।’’ ১৮

➥১৮. আল্লামা আজলূনী : কাশফুল খাফা : ১/২০৪ : হা/৬১৮, মোল্লা আলী ক্বারী : আসরারুল মারফূআহ : ১/১১৯ পৃ. হাদিস:৭১

দিবালোকের ন্যায় পরিষ্কার হয়ে গেল হাদিসটি ‘সহীহ নয়’ বলতে ‘হাসান’ পর্যায়ের হাদিস বুঝায়, মাওদ্বু নয়।

মোটকথা, হাদিস মাওদ্বু বা বানোয়াট বুঝানোর জন্য তারা হাদিসটি بَاطِل (বাতিল), كذب (মিথ্যা), مَوْضُوع (বানোয়াট), مُفْتَرَى (সত্যায়নযোগ্য নয় ও مُخْتَلَقٌ (মনগড়া বানানো) ইত্যাদি শব্দ বলতেন। সহীহ হওয়াকে অস্বীকার করা মানে বিশুদ্ধ সনদ হিসেবে শীর্ষ পর্যায়ের নয় বরং কিছুটা ত্র“টিপূর্ণ পন্থায় বর্ণিত হাদিস।

আলোচ্য বক্তব্য থেকে এ কথা স্পষ্ট হয়েছে, হাদিস বুঝাতে হলে শুধু বাহ্যিক শব্দ ও অনুবাদ বুঝা যথেষ্ট নয়, এক্ষেত্রে হাদিস বিশারদগণের পরিভাষা, তাঁদের উপস্থাপনা পদ্ধতি বাচনভঙ্গি, সূত্র বর্ণনার নিয়ম-কানুন, গ্রহণীয়-বর্জনীয় হওয়ার হুকুম ব্যক্তকরণ পদ্বতি ইত্যাদি বুঝাও পূর্বশর্ত। কিতাব থেকে অনুবাদ পড়ে হাদিস বুঝা আদৌ সম্ভব নয়।

শুধু অনুবাদ বুঝা নয়, হাদিসের মর্মার্থ বুঝাই হল মূল জিনিস। কোন হাদিস সহীহ নয় মানে মাথা গরম করে জাল বলা যাবে না। হাদিস সহীহ নয় মানে হাদিস বিশারদগণের পরিভাষায়, তিন প্রকারের হাদিসের মধ্যে সহীহ ছাড়া তো ‘হাসান’ ও দ্বঈফ পর্যায়ের দুটি প্রকারের মধ্যে যে কোন একটিও তো হতে পারে। ন্যূনতম দ্বঈফ বা দুর্বল সনদ বিশিষ্ট হতে পারে।

মওদ্বু বা বানোয়াট হলে সরাসরি বলা হতো هذا حديث موضوع তথা উক্ত হাদিসটি মাওদ্বু বা জাল।

মুহাদ্দিসগণের মন্তব্য কোন হাদিস প্রসঙ্গে ‘সহীহ নয়’ বললে, তার অর্থ এটা নয় যে, হাদিসটি ভুল বা বাতিল। বরং তাদের পরিভাষা মোতাবেক এর অর্থ হলো, হাদিসটি সহীহ পর্যায়ের হাদিসের মতো সনদ বিশিষ্ট নয়। কারণ “সহীহ” হাদিসের কতিপয় বৈশিষ্ট্য রয়েছে, ঐ বৈশিষ্ট্য গুলো যাতে বিদ্যমান তা-ই ‘সহীহ’। সে পর্যায়ের হাদিস খুঁজতে গেলে ‘সিহাহ সিত্তাহ’ বা হাদিসের বিখ্যাত ছয়টি হাদিসের কিতাব ইত্যাদি থেকে খুঁজতে হয়। তবে ছয়টি ব্যতীত আরো সহীহ হাদিসের অনেক কিতাব রয়েছে।

এগুলোর মধ্যেও কোন কোন গ্রন্থে কিছু কিছু হাদিসকে সহীহ বলার ক্ষেত্রে দ্বিমত দেখা যায়। কারণ, যারা বিরোধীতা করেন তারা কোন কোন হাদিসকে “হাসান” পর্যায়ের কিংবা স্থান বিশেষে দ্বঈফও বলেছেন। স্বয়ং গ্রন্থকারও ঐ মুষ্টিমেয় কিছু হাদিসকে চিহ্নিত করে দিয়েছেন। ঐ কিছু বাদ দিয়ে বাকী সব হাদিস ‘সহীহ’ হবার কারণে ঐ গ্রন্থগুলোকে ‘সহীহ’ বলা হয়। তবে এ কথা নিশ্চিত যে, ঐ সব কিতাবে কোন মওদ্বু বা বানোয়াট হাদিস নেই। তাই বলে দ্বঈফ বা দুর্বল হাদিসকে হাদিস নয় বলার কোন সুযোগ নেই। সে অনুসারে আমল করলে নিঃসন্দেহে সাওয়াব পাওয়া যাবে।

বিষয় নং-৩: দ্বঈফ সনদ বিশিষ্ট হাদিসের উপরে আমল করার হুকুম:

 অভিমত নং- ০১-১০:

দ্বঈফ বা দুর্বল হাদিস ফাযায়েল আমলের জন্য গ্রহণযোগ্য তাতে মুহাদ্দিসীনগণ একমত পোষণ করেছেন। ইলমে হাদিসের এ নীতিমালাটি এখানে এ জন্য উল্লেখ করলাম বর্তমান আহলে হাদিসগণ দ্বঈফ সনদের হাদিসের উপর আমল করা বৈধ নয় বলে উল্লেখ করেন।১৯

➥১৯. এ বিষয়ে আহলে হাদিসের ইমাম নাসিরুদ্দীন আলবানীর একটি গ্রন্থ উলে­খযোগ্য, এটি বাংলায় প্রকাশ করা হয়েছে এবং নাম রাখা হয়েছে ‘‘ছহীহ হাদীছের পরিচয় ও হাদীছ বর্ণনার মূলনীতি’’ এটি চট্টগ্রাম, আন্দরকিল্লা, আযাদ প্রকাশন থেকে প্রকাশিত। বইটির ২৩ পৃষ্ঠায় ও ২৫ পৃষ্ঠায়, এবং ২৭ পৃষ্ঠায় আলবানী লিখেছেন যে দ্বঈফ সনদের হাদিসের উপর ভিত্তি করে কোন ক্রমেই আমল করা যাবে না। নাউযুবিল্লাহ

আহলে হাদিস আলবানী সকল মুহাদ্দিসের ইজমার বিরোদ্ধে অবস্থান নিয়ে লিখেন-‘‘অনেকে এরূপ ধারণা পোষণ করেন যে, ফাযায়েলের ক্ষেত্রে দুর্বল হাদীসের উপর আমল করা যাবে এ মর্মে কোনো মতভেদ নেই। বাস্তবিক পক্ষে তা সঠিক নয়।’’ (আলবানী, য‘ঈফ ও জাল হাদীছ সিরিজ, ১ম খণ্ড, ৫০ পৃ. তাওহীদ পাবলিকেশন্স, বংশাল, ঢাকা-১১০০)

এ বিষয়ে বিখ্যাত হাফেযুল হাদিস, ফকীহ, ইমাম নববী আশ-শাফেয়ী (رحمة الله) বলেন-

قد اتفق العلماء على جواز العمل بالحديث الضعيف فى فضائل الاعمال:مقدمة المؤلف

-‘‘উলামায়ে কিরাম এই বিষয়ে সবাই ঐকমত্য পোষণ করেছেন দুর্বল হাদিস ফাযায়েলে আমলের জন্য গ্রহণযোগ্য।’’ ২০

➥২০. ইমাম নববী : আরবাঈন : ১/২০ পৃ. এবং ইমাম ইবনে দাকিকুল ঈদ, শরহে আরবাঈনুন নববিয়্যাহ, ১/২০ পৃ.

পাঠকদের কাছেই বিচারের সিদ্ধান্ত অর্পন করা হলো, আপনারা কাকে মানবেন, আলবানীকে না ইমাম নববী (رحمة الله)সহ পৃথিবী বিখ্যাত ইমামদের!

এ বিষয়ে এক নং নীতিমালার আলোচনায় কতিপয় আহলে হাদিসদের জঘন্য বক্তব্যও উল্লেখ করে এসেছি। এখন আমি এ বিষয়ের সপক্ষে আপনাদের সামনে পৃথিবী বিজ্ঞাত আলেমদের অভিমত তুলে ধরার চেষ্টা করবো, ইনশা আল্লাহ।

✦ অভিমত নং-১: দ্বঈফ হাদিস আমল যোগ্য তার ব্যাপারে হানাফী মাযহাবের অন্যতম ইমাম কামালুদ্দীন ইবনে হুমাম (رحمة الله) বলেন,  

وَرَوَى الْحَاكِمُ عَنْهُ - ﷺ - إنْ سَرَّكُمْ أَنْ تُقْبَلَ صَلَاتُكُمْ فَلْيَؤُمَّكُمْ خِيَارُكُمْ فَإِنْ صَحَّ وَإِلَّا فَالضَّعِيفُ غَيْرُ الْمَوْضُوعِ يُعْمَلُ بِهِ فِي فَضَائِلِ الْأَعْمَالِ، -

-‘‘ইমাম হাকিম (رحمة الله) স্বীয় কিতাব (আল-মুস্তাদরাক) হুযূর (ﷺ) থেকে হাদিস বর্ণনা করেছেন, ‘যদি তোমাদের অন্তর চায় যে, তোমাদের নামায কবুল করা হোক, তবে তোমাদের মধ্যে উত্তম ব্যক্তিই যেন ইমাম হন।’ আলোচ্য হাদিস সহীহ হলে তো ভাল, অন্যথায় হাদিসটি দ্বঈফ বানোয়াট নয়, আর দ্বঈফ হাদিস অনুযায়ী আমল করা যাবে, আমল বা ফযিলত প্রমাণের ক্ষেত্রে এমন হাদিস অবশ্যই দলীল।’’ ২১

➥২১. আল্লামা কামাল উদ্দীন ইবনে হুমাম : ফতহুল কাদীর, ১/৩৪৯ পৃ.

✦ অভিমত নং-২: ইমাম সৈয়দ আবু তালেব মক্কী (رحمة الله) রচিত গ্রন্থ ‘কুউয়াতুল কুলূব’ কিতাবে লিখেন,

بعض ما يضعف به رواة الحديث وتعلل به أحاديثهم لا يكون تعليلاً ولا جرحاً عند الفقهاء ولا عند العلماء بالله تعالى مثل أن يكون الراوي مجهولاً لإيثاره الخمول، وقد ندب إليه أو لقلة الأتباع له إذ لم يقم لهم الأثرة عنه -

-‘‘এমন কিছু বিষয়, যেগুলোর কারণে হাদিস বর্ণনাকারীকে দুর্বল এবং তাঁদের বর্ণিত হাদিস সমূহকে সহীহ নয় বলে ঘোষণা দেয়া হয়। সম্মানিত ফিক্বহ বিশারদগণ ও ওলামা-ই-কেরাম সেগুলোকে দ্বঈফ বলার যোগ্য কিংবা ত্র“টিযুক্ত হিসেবে বিবেচনা করেন না। যেমন বর্ণনাকারীর নাম উল্লেখ না থাকা বা অপরিচিত হওয়া। কারণ, এমনও হতে পারে যে, বর্ণনাকারী নিজেই তার নাম গোপন করেছেন। নিজেকে প্রকাশ ও প্রচারে উৎসুক না হওয়ার বিষয়ে শরীয়াতে প্রমাণিক দলীল রয়েছে। অথবা এ জন্যই তিনি অপরিচিত হয়েছেন যে, তাঁর ছাত্র সংখ্যা কিংবা অনুসারী সংখ্যা একেবারে নগন্য। ফলে ব্যাপক হারে মানুষ তাঁর থেকে হাদিস বর্ণনা করার সুযোগ পায়নি।’’ (কুউয়াতুল কুলুব, প্রথম খণ্ড, পৃ.৩০০, দারুল কুতুব ইলমিয়্যাহ, বয়রুত)

✦ অভিমত নং-৩: আল্লামা মুফতী আমীমুল ইহসান (رحمة الله) বলেন,

والضعيف غير الموضوع بانفراده يعمل عليه فى الفضائل استحبابا ولا يحتج به فى الاحكام نعم يكفى للاعتضاد الا اذا كان فيه الاحتياط-

 -‘‘দুর্বল হাদিস যদি কাল্পনিক না হয় যদিও তা একক রাবী কর্তৃক বর্ণিত হয়ে থাকে, তবু ফযীলতের বেলায় তার উপর আমল করা মুস্তাহাব। তবে শরীয়তের বিধান প্রয়োগের ক্ষেত্রে এ হাদিস কার্যকর হবে না। হ্যাঁ, তবে সতর্কতার ক্ষেত্রে অতিরিক্ত জোর প্রকাশের জন্য দুর্বল হাদিসকেও দলীল হিসেবে পেশ করা যেতে পারে।’’ ২২

➥২২. আল্লামা মুফতী আমিমুল ইহসান : মিযানুল আখবার, পৃ-১৫

✦ অভিমত নং-৪: ইমাম আযম আবু হানিফা (رحمة الله) মত সর্ম্পকে বলা হয়ে থাকে,  

وقد ذهب ابو حنيفة رضى الله تعالى عنه ان ضعيف الحديث عنده اولى من الرأى-

-‘‘ইমাম আবু হানিফা (رحمة الله) এ মত দৃঢ়ভাবে পোষণ করেছেন যে, দুর্বল হাদিস কিয়াসী রায় অর্থাৎ নিজস্ব মতামত থেকে অনেক উত্তম।’’ ২৩

➥২৩. মুফতি আমিমুল ইহসান : মিযানুল আখবার, পৃ-১৫, ইবনে হাজার মক্কী, আল খায়রাতুল হিসান, ২৭ পৃ. মিশর হতে প্রকাশিত।

❏ ইমাম যাহাবী (رحمة الله) উল্লেখ করেন-

قَالَ أَبُو مُحَمَّدِ بْنُ حَزْمٍ: جَمِيعُ الْحَنَفِيَّةِ مُجْمِعُونَ عَلَى أَنَّ مَذْهَبِ أَبِي حَنِيفَةَ أَنَّ ضَعِيفَ الْحَدِيثِ أَوْلَى عِنْدَهُ مِنَ الْقِيَاسِ وَالرَّأْيِ.

-‘‘ইমাম আবু মুহাম্মদ ইবনে হাযম (رحمة الله) বলেন, সকল হানাফীগণ এ বিষয়ে একমত কোন আলেমের নিজ কিয়াস এবং রায় হতে দ্বঈফ সনদের হাদিসের আমল করা উত্তম।’’ (যাহাবী, তারিখুল ইসলাম, ৩/৯৯০ পৃ. ক্রমিক. ৪৪৫)

✦ অভিমত নং-৫: বিশ্ববিখ্যাত ফতোয়াবিদ এবং মুহাদ্দিস ইমাম ইবনে আবেদীন শামী (رحمة الله) ফতোয়ায়ে শামীর ১ম খণ্ড بَابُ الَاذَانْ এ লিখেন-

 وَالْعَارِفِ الشَّعْرَانِيِّ عَنْ كُلٍّ مِنْ الْأَئِمَّةِ الْأَرْبَعَةِ أَنَّهُ قَالَ: إذَا صَحَّ الْحَدِيثُ فَهُوَ مَذْهَبِي، عَلَى أَنَّهُ فِي فَضَائِلِ الْأَعْمَالِ يَجُوزُ الْعَمَلُ بِالْحَدِيثِ الضَّعِيفِ كَمَا مَرَّ أَوَّلَ كِتَابِ الطَّهَارَةِ

-‘‘আরিফ কুল সম্রাট ইমাম শা’রানী (رحمة الله) বলেন, নিশ্চয় চার মাযহাবের ইমামগণ বলেছেন, সহীহ হাদিস হলো আমাদের মাযহাব। কিন্তু ফাযায়েল আমলের জন্য দ্বঈফ বা দুর্বল হাদিস আমল করা জায়েয। যা আমি এ গ্রন্থের কিতাবুত ত্বাহারাত অধ্যায়ে বিস্তারিত আলোচনা করেছি।’’ ২৪

➥২৪. ইমাম ইবনে আবেদীন শামী : ফতোয়ায়ে শামী, পৃ-১/৩৮৫ পৃ. কিতাবুল আযান

✦ অভিমত নং-৬: বিশ্ববিখ্যাত মুহাদ্দিস আল্লামা বদরুদ্দীন আইনী (رحمة الله) উমদাতুল ক্বারী শরহে বুখারীর মুকাদ্দামায় দ্বঈফ হাদিসের বর্ণনা করতে গিয়ে বলেন,

وقد جوز العلماء التساهل فى الضعيف من غير بيان ضعفه فى المواعظ والقصص وفضائل الاعمال-

-‘‘ওলামায়ে কেরামের নিকট দ্বঈফ হাদিস ওয়াজ ও কাহিনীর জন্য এবং ফাযায়েলে আমলের জন্য গ্রহণযোগ্য।’’ ২৫

➥২৫. আল্লামা বদরুদ্দীন আইনী : উমদাতুল ক্বারী, শরহে বুখারী : ১/৯ পৃ.

✦ অভিমত নং-৭: বিশ্ববিখ্যাত মুফাস্সির, মুহাদ্দিস, ফকিহ আল্লামা ইসমাঈল হাক্কী (رحمة الله) ’’তাফসীরে রুহুল বায়ানে’’ বলেন-

لكن المحدثين اتفقوا على ان الحديث الضعيف يجوز العمل به فى الترغيب والترهيب–

-‘‘তবে মুহাদ্দিসীনে কিরাম এ ব্যাপারে ঐকমত্য পোষণ করেছেন যে, আকর্ষণ সৃষ্টি ও ভীতি সঞ্চারের বেলায় দ্বঈফ হাদিস অনুযায়ী আমল করা যায়েয।’’ ২৬

➥২৬. আল্লামা ইসমাঈল হাক্কী : তাফসিরে রুহুল বায়ান, ২/৪১০ পৃ.

তিনি কিতাবের অন্যস্থানে বলেন ,

يقول الفقير قد صح عن العلماء تجويز الاخذ بالحديث الضعيف فى العمليات فكون الحديث-

-‘‘এই অধম ফকীর আরজ করছি যে, ওলামায়ে কেরাম থেকে আমলের ব্যাপারে দ্বঈফ হাদিস গ্রহণযোগ্য। ব্যাপারটি বিশুদ্ধ সূত্রে বর্ণিত আছে।’’ ২৭

➥২৭. আল্লামা ইসমাঈল হাক্কী : তাফসীরে রুহুল বায়ান, ৭/ পৃ. ২২৯

❏ তিনি তার আরেক গ্রন্থে লিখেন-

وفى كلام الحافظ السيوطي لم يثبت فى التلقين حديث صحيح او حسن بل حديثه ضعيف باتفاق جمهور المحدثين والحديث الضعيف يعمل به فى فضائل الأعمال

-‘‘ইমাম হাফেয সুয়ূতি (رحمة الله) বক্তব্য হলো কবরে তলকীনের হাদিস দৃঢ়ভাবে প্রমাণিত নয়, এ বিষয়ের হাদিসটি সহীহ বা হাসান কোন পর্যায়ের নয়, বরং এ বিষয়ক হাদিসটি দ্বঈফ; কিন্তু জমহুর মুহাদ্দিসগণ একমত যে দ্বঈফ হাদিস ফাযায়েলে আমালের জন্য গ্রহণযোগ্য।’’ (তাফসিরে রুহুল বায়ান, ৪/৪১৭ পৃ.)

❏ তিনি আরেক স্থানে লিখেন-

ان الحديث الضعيف يعمل به فى فضائل الأعمال

-‘‘নিশ্চয় হাদিসে যঈফ ফাযায়েলে আমলের জন্য গ্রহণযোগ্য।’’ (তাফসিরে রুহুল বায়ান, ৭/১৮৬ পৃ.)

✦ অভিমত নং-৮: আল্লামা ইমাম আবু তালিব মক্কী (رحمة الله) বলেন,

الاحاديث وفي فضائل الأعمال وتفضيل الأصحاب متقبلة محتملة على كل حال مقاطيعها ومراسيلها لا تعارض ولا ترد،ৃ.. كذلك كان السلف يفعلون-

-‘‘ফাযায়েলে আমল এবং সাহাবাদের বা কারও ফযীলত বর্ণনার ক্ষেত্রে মুহাদ্দিসগণ একমত এই যে, তা যে প্রকারের হোক না কেন সেটা গ্রহণযোগ্য ও গৃহীত। যদিও তা সনদ অসংযুক্ত অথবা মুরসাল হয়, তার বিরোধীতা করা বা খণ্ডন করা যাবে না। এমনকি পূর্ব যুগের ইমামগণ এরুপই করেছেন।’’ ২৮

➥২৮. আল্লামা আবু তালিব মক্কী : কুউয়াতুল কূলুব : ১/৩০১ পৃ.

✦ অভিমত নং-৯: ইমাম নববী (رحمة الله) বলেন-

قد اتفق العلماء على جواز العمل بالحديث الضعيف فى فضائل الاعمال:مقدمة المؤلف

-‘‘উলামায়ে কেরাম এই বিষয়ে সবাই ঐকমত্য পোষণ করেছেন দুর্বল হাদিস ফাযায়েলে আমলের জন্য গ্রহণযোগ্য।’’ ২৯

➥২৯. ইমাম নববী : আরবাঈন : ১/২০ পৃ. এবং ইমাম ইবনে দাকিকুল ঈদ, শরহে আরবাঈনুন নববিয়্যাহ, ১/২০ পৃ.

✦ অভিমত নং-১০: আল্লামা ইমাম জালালুদ্দীন সুয়ূতি (رحمة الله) বলেন,

(وَيَجُوزُ عِنْدَ أَهْلِ الْحَدِيثِ وَغَيْرِهِمُ التَّسَاهُلُ فِي الْأَسَانِيدِ) الضَّعِيفَةِ (وَرِوَايَةُ مَا سِوَى الْمَوْضُوعِ مِنَ الضَّعِيفِ وَالْعَمَلُ بِهِ مِنْ غَيْرِ بَيَانِ ضَعْفِهِ وَفَضَائِلِ الْأَعْمَالِ وغيرها (مِمَّا لَا تَعَلُّقَ لَهُ بِالْعَقَائِدِ وَالْأَحْكَامِ)وَمَنْ نُقِلَ عَنْهُ ذَلِكَ: ابْنُ حَنْبَلٍ، وَابْنُ مَهْدِيٍّ، وَابْنُ الْمُبَارَكِ، قَالُوا: إِذَا رُوِّينَا فِي الْحَلَالِ وَالْحَرَامِ شَدَّدْنَا، وَإِذَا رُوِّينَا فِي الْفَضَائِلِ وَنَحْوِهَا تَسَاهَلْنَا.-

-‘‘মুহাদ্দিস ও অন্যান্য ওলামাদের বক্তব্য হলো দুর্বল সনদ সম্পর্কে অথবা কিছু ছাড় দেওয়া এভাবে যে মওদ্বু বা বানোয়াট না হয়, তা ফাযায়েল আমল এবং অন্যান্য বিষয়ের মধ্যে আমল করা বৈধ আছে। যদি তা আহকাম ও আকায়েদের সাথে সম্পর্ক না হয়, যে ইমামগণ এ মত পোষণ করেছেন, তাঁদের মধ্যে ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল, ইমাম ইবনে মাহদী, ইমাম ইবনুল মোবারক সংযুক্ত আছেন। তাঁরা বলেন যে, আমরা হালাল হারামের মধ্যে হাদিস বর্ণনা করতে গিয়ে কঠিনতা অবলম্বন করেছি এবং ফাযায়েল বর্ণনার ক্ষেত্রে নম্রতা অবলম্বন করেছি।’’৩০

➥৩০. ইমাম আব্দুর রহমান জালালুদ্দীন সুয়ূতি : তাদরীবুর রাবী, ১/৩৫১ পৃ.

 অভিমত নং-১১-২০:

✦ অভিমত নং-১১: ইমাম নববী (رحمة الله) বলেন,

قال العلماءُ من المحدّثين والفقهاء وغيرهم: يجوز ويُستحبّ العمل في الفضائل والترغيب والترهيب بالحديث الضعيف ما لم يكن موضوعاً-مقدمة المؤلف:فصل فى الامر بالاخلاق

-‘‘মুহাদ্দিসীনে কেরাম ও ফুকাহায়ে কেরাম এবং অন্যান্য ওলামায়ে কেরাম বলেছেন, ফাযায়েল বা উৎসাহিত করা ও ভয়ভীতি প্রমাণ বা গ্রহণ করা হাদিসে দ্বঈফ দ্বারা জায়েজ, যদি তা জাল হাদিস না হয়।’’ ৩১

➥৩১. ইমাম নববী : কিতাবুল আযকার, ১/৮ পৃষ্ঠা, দারুল ফিকর ইলমিয়্যাহ, বয়রুত, লেবানন।

✦ অভিমত নং-১২: আল্লামা ইমাম বুরহানুদ্দিন ইবরাহিম হালবী (رحمة الله) বলেন,

يستحب ان يمسح بدنه بمنديل بعد الغسل لما روت عَنْ عَائِشَةَ، قَالَتْ: كَانَ لِرَسُولِ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ خِرْقَةٌ يُنَشِّفُ بِهَا بَعْدَ الوُضُوءِ-وراه الترمذى هو ضعيف ولكن يجوز العمل بالضعيف فى الفضائل-

-‘‘গোসল বা ওজুর পরে রুমাল দ্বারা শরীর মুছাহ মুস্তাহাব। হযরত আয়েশা (رضي الله عنه) বর্ণনা করেন, হুযূর (ﷺ) এর একটি কাপড়ের টুকরা ছিল যা দ্বারা ওযুর পরে অঙ্গ মোবারক মাসেহ করিতেন। উক্ত হাদিস ইমাম তিরমিযী (رحمة الله) দুর্বল বলেছেন। এরপরেও উহার আমল বিদ্যমান আছে।’’ ৩২

➥৩২. ইমাম ইব্রাহীম হালবী হানাফি : গুনিয়াতুল মুসল্লী, ৫২ পৃ.

✦ অভিমত নং-১৩: আল্লামা মোল্লা আলী ক্বারী (رحمة الله) বলেন,

وَالضَّعِيفُ يُعْمَلُ بِهِ فِي فَضَائِلِ الْأَعْمَالِ اتِّفَاقًا وَلَذَا قَالَ أَئِمَّتُنَا إِنَّ مَسْحَ الرَّقَبَةِ مُسْتَحَبٌّ أَوْ سُنَّةٌ-

-‘‘দ্বঈফ হাদিস ফাযায়েলে আমলের মধ্যে আমল করার ব্যাপারে ইমামগণের ঐকমত্য হইয়াছে। এই জন্য আমাদের ইমামগণ বলেছেন গর্দান মাসেহ করা মুস্তাহাব অথবা সুন্নাত প্রমাণিত হয়েছে।’’ ৩৩

➥৩৩. আল্লামা মোল্লা আলী ক্বারী : মওজু আতুল কাবীর : ১/৩১৫ পৃ. হা/৪৩৩

✦ অভিমত নং-১৪: আল্লামা মোল্লা আলী ক্বারী (رحمة الله) অন্যস্থানে বলেন-

إِنَّمَا يُعْمَلُ بِالْحَدِيثِ الضَّعِيفِ فِي فَضَائِلِ الْأَعْمَالِ

-‘‘দ্বঈফ সনদের হাদিস (মওদ্বু বা জাল নয়) ফাযায়েলে আমলের জন্য গ্রহণযোগ্য।’’ ৩৪

➥৩৪. আল্লামা মোল্লা আলী ক্বারী : মেরকাত : ২/২০৬ পৃ. হা/৫২১

✦ অভিমত নং-১৫: আল্লামা মোল্লা আলী ক্বারী (رحمة الله) অন্যত্র বলেন,

اعْلَمْ أَنَّ الْحَدِيثَ الضَّعِيفَ يُعْمَلُ بِهِ فِي فَضَائِلِ الْأَعْمَالِ

-‘‘নিশ্চয় জেনে রাখুন! দুর্বল সনদের হাদিস ফাযায়েলে আমলের জন্য গ্রহণযোগ্য।’’ ৩৫

➥৩৫. আল্লামা মোল্লা আলী ক্বারী : মেরকাত : ৩/৪৯ পৃ. কিতাবুস সালাত : হা/৯৭৪

✦ অভিমত নং-১৬: আল্লামা মোল্লা আলী ক্বারী (رحمة الله) আরও বলেন-

أَجْمَعُوا عَلَى جَوَازِ الْعَمَلِ بِالْحَدِيثِ الضَّعِيفِ فِي فَضَائِلِ الْأَعْمَالِ

-‘‘ইমাম মুহাদ্দিস ঐকমত্য পোষণ করেছেন যে, ফাযায়েলে আমলের জন্য দ্বঈফ বা দুর্বল হাদিস দ্বারা আমল করা বৈধ।’’ ৩৬

➥৩৬. আল্লামা মোল্লা আলী ক্বারী : মেরকাত : ৩/৪৯ পৃ. কিতাবুস সালাত : হা/১১৭৩

✦ অভিমত নং-১৭: আল্লামা মোল্লা আলী ক্বারী (رحمة الله) আরও বলেন-

ضَعْفُهُ يُعْمَلُ بِهِمَا فِي الْفَضَائِلِ.

-‘‘হাদিসটি দুর্বল, তবে ফাজায়েলের জন্য এবং আমলের জন্য গ্রহণযোগ্য।’’ ৩৭

➥৩৭. আল্লামা মোল্লা আলী ক্বারী : মিরকাত : ৩/৮৯৯ পৃ. কিতাবুস সালাত : হা/১১৮৪

✦ অভিমত নং-১৮: আল্লামা শায়খ আব্দুল হক মুহাদ্দিস দেহলভী (رحمة الله) বলেন,

ان الحديث الضعيف معتبر فى الفضائل الأعمال لا فى غيرها المراد مفرداته لا مجموعها لانه داخل فى الحسن لا فى الضعيف-

-“দ্বঈফ হাদিস ফাযায়েলে আমলের জন্য গ্রহণযোগ্য, তা ব্যতিত অন্য বিষয়ের জন্য নয়। এই কথার মর্ম হচ্ছে তার বর্ণনা যদি একক হয়, একাধিক সনদে বর্ণিত যে হাদিস তা হাসানের অন্তর্ভূক্ত, তা তখন দ্বঈফের অন্তর্ভূক্ত নয়।’’৩৮

➥৩৮. আল্লামা শায়খ আবদুল হক মুহাদ্দিস দেহলভী : মুকাদ্দামাতুশ্ শায়খ, ২৩ পৃ.

✦ অভিমত নং-১৯: আল্লামা মোল্লা আলী ক্বারী (رحمة الله) বলেন,

لَكِنْ يَعْمَلُ بِالْحَدِيثِ الضَّعِيفِ فِي فَضَائِلِ الْأَعْمَالِ بِاتِّفَاقِ الْعُلَمَاءِ

-‘‘সমস্ত ওলামায়ে কেরাম ঐকমত্য পোষণ করেছেন যে দ্বঈফ হাদিস ফযিলতপূর্ন আমল এর ক্ষেত্রে গ্রহণযোগ্য।’’৩৯

➥৩৯. মোল্লা আলী ক্বারী : মিরকাত, ৩/৩৪০ পৃ. বাব : সাহরী কিয়ামে রামাদ্ধান : হা/১৩২৯

❏ আল্লামা মোল্লা আলী ক্বারী (رحمة الله) অন্য জায়গায় আরো বলেন,

يَجُوزُ الْعَمَلُ بِالْخَبَرِ الضَّعِيفِ،

-‘‘দ্বঈফ হাদিসের উপর আমল করা জায়েয বা বৈধ।’’ ৪০

➥৪০. আল্লামা মোল্লা ক্বারী : মিরকাত : ৩/৩৫০ পৃ., হাদিসঃ ১৩০৮

✦ অভিমত নং-২০: আল্লামা ড. মাহমুদ আত্-ত্বহান বলেন,

اختلف العلماء في العمل بالحديث الضعيف، الذي عليه جمهور العلماء أنه يستحب العمل به في فضائل الأعمال،-

-‘‘দুর্বল হাদিসের উপর আমলের ব্যাপারে ইখতিলাফ (মত পার্থক্য) রয়েছে, তবে জমহুর (অধিকাংশ) ইমাম ও ওলামার মতে দ্বঈফ হাদিস ফাযাে লে আমলের ক্ষেত্রে আমল করা মুস্তাহাব। ’’ ৪১

➥৪১. আল্লামা ড. মাহমুদ জাহান : তাইসীরুল মাস্তালিউল হাদিস, ৪৪ পৃ

 অভিমত নং- ২১-৩০:

✦ অভিমত নং-২১: আল্লামা মোল্লা আলী ক্বারী (رحمة الله) বলেন ,

جهالة بعض الرواة لاتقتضى كون الحديث موضوعا و كذا نكارة الالفاظ فينبغى ان يحكم عليه بانه ضعيف ثم يعمل بالضعيف فى فضائل الاعمال-

-‘‘হাদিসের সনদে কোন বর্ণনাকারী অজানা বা অচেনা হওয়া অথবা হাদিসের কোথাও স্পষ্ট না হওয়া দ্বারা হাদিসটি মওদ্বু বা বানোয়াট বিবেচিত হয় না। তবে হ্যাঁ, দ্বঈফ বলা যেতে পারে। অতএব দ্বঈফ হাদিস অনুসারে ফযিলত বর্ণনার ক্ষেত্রে এবং আমল করা যাবে।’’ ৪২

➥৪২. আল্লামা মোল্লা আলী ক্বারী : ফাযায়েলে নিসফিস শা’বান : ৪৪ পৃ.

✦ অভিমত নং-২২: আল্লামা আজলূনী (رحمة الله) হযরত আবদুল্লাহ ইবনে উমর (رضي الله عنه) এর বর্ণিত ঘাড় মাসেহ এর হাদিস প্রসঙ্গে বলেন-

بِسَنَدٍ ضَعِيفٍ...... مَسْحَ الرَّقَبَةِ مُسْتَحَبٌّ أَوْ سُنَّةٌ

-‘‘উক্ত হাদিসটির সনদ দুর্বল ......... তবে হাদিসটি দ্বারা প্রমণিত হলো ঘাড় মাসেহ করা মুস্তাহাব অথবা সুন্নাত।’’৪৩

➥৪৩. আল্লামা আজলূনী : কাশফুল খাফা : ২/১৮৬ পৃ. হা/২২৯৮

✦ অভিমত নং-২৩: আল্লামা মোল্লা আলী ক্বারী (رحمة الله) বলেন-

وَهِيَ يُعْمَلُ فِيهَا بِالْحَدِيثِ الضَّعِيفِ وَالْمُرْسَلِ وَالْمُنْقَطِعِ بِالِاتِّفَاقِ، كَمَا قَالَهُ النَّوَوِيُّ

-‘‘এ হাদিসের উপর আমল করা বৈধ, কেননা হাদিসের সনদ দুর্বল, মুরসাল, মুনকাতে হলেও আমল করা বৈধ, আর এ ব্যাপারে সবাই একমত হয়েছেন, যেমনটি ইমাম নববী (رحمة الله) বলেছেন।’’ ৪৪

➥৪৪. আল্লাম মোল্লা আলী ক্বারী, মিরকাত, ২/৪৭৭ পৃ. হা/৫২১

✦ অভিমত নং-২৪: তিনি এ কিতাবে আরও উল্লেখ করেন

فِي مَذْهَبِ الشَّافِعِيِّ أَنَّ الْحَدِيثَ الضَّعِيفَ لَا يُعْمَلُ بِهِ إِلَّا فِي فَضَائِلِ الْأَعْمَالِ

-‘‘এ হাদিসটি শাফেয়ী মাযহাবের অনূকুলে, তবে হাদিসটি দ্বঈফ। তবে তা শুধু ফাযায়েলে আমালের জন্যই গ্রহণযোগ্য।’’ ৪৫

➥৪৫. আল্লাম মোল্লা আলী ক্বারী, মিরকাত, ৩/১২২৩ পৃ. হা/১৭০৮

✦ অভিমত নং-২৫: তিনি আরও বলেন-

أَنَّ الْحَدِيثَ الضَّعِيفَ يُعْمَلُ بِهِ فِي فَضَائِلِ الْأَعْمَالِ

-‘‘নিশ্চয় এ হাদিসটি দ্বঈফ, আর যা ফাযায়েলে আমালের জন্য গ্রহণযোগ্য। ’’ ৪৬

➥৪৬. আল্লাম মোল্লা আলী ক্বারী, মেরকাত, ১/২৮২ পৃ.

✦ অভিমত নং-২৬: তিনি তাঁর এ কিতাবে অন্যস্থানে তাকিদ দিয়ে বলেন

اعْلَمْ أَنَّ الْحَدِيثَ الضَّعِيفَ يُعْمَلُ بِهِ فِي فَضَائِلِ الْأَعْمَالِ

-‘জেনে রাখুন! নিশ্চয় দ্বঈফ সনদের হাদিস ফাযায়েলে আমালের জন্য গ্রহণযোগ্য। ’’ ৪৭

➥৪৭. আল্লাম মোল্লা আলী ক্বারী, মেরকাত, ২/৭৭৩ পৃ.

✦ অভিমত নং-২৭: হুবহু তিনি এ কিতাবের অন্যস্থানে বলেন এ রুপ বলেছেন। ৪৮

➥৪৮. আল্লাম মোল্লা আলী ক্বারী, মেরকাত, ৩/১২২৭ পৃ. হা/১৭১৬

✦ অভিমত নং-২৮: আল্লামা মোল্লা আলী ক্বারী (رحمة الله) এ কিতাবে আরও বলেন

أَنَّ الْحَدِيثَ الضَّعِيفَ يُعْمَلُ بِهِ فِي الْفَضَائِلِ

-‘‘যখন বুঝা গেল হাদিসটি দ্বঈফ, তাই তা শুধু ফাযায়েলে আমলের জন্য গ্রহনযোগ্য। ’’ ৪৯

➥৪৯. আল্লাম মোল্লা আলী ক্বারী, মেরকাত, ৩/১৪৮ পৃ. হা/১৭৩৩

✦ অভিমত নং-২৯: তিনি আরও বলেন

أَنَّ الْحَدِيثَ الضَّعِيفَ يُعْمَلُ بِهِ فِي فَضَائِلِ الْأَعْمَالِ اتِّفَاقًا

-‘‘সবাই এ ব্যাপারে একমত হয়েছেন যে, দ্বঈফ সনদের হাদিস ফাযায়েলে আমালের জন্য গ্রহণযোগ্য। ’’ ৫০

➥৫০. আল্লাম মোল্লা আলী ক্বারী, মেরকাত, ৪/১০৪৫ পৃ.

✦ অভিমত নং-৩০: তিনি আরও লিখেন

لِأَنَّ الْحَدِيثَ الضَّعِيفَ يُعْمَلُ بِهِ فِي الْفَضَائِلِ.

-‘‘ইমাম ইবনে হাজার মক্কী (رحمة الله) বলেন, নিশ্চয় দ্বঈফ সনদের হাদিস ফাযায়েলে আমালের জন্য গ্রহণযোগ্য।’’৫১

➥৫১. আল্লাম মোল্লা আলী ক্বারী, মেরকাত, ৪/১৬৩৭ পৃ.

 অভিমত নং-৩১-৪০:

✦ অভিমত নং-৩১: তিনি এ কিতাবে আরও বলেন

فَإِنَّ فَضَائِلَ الْأَعْمَالِ يَكْفِيهَا الْحَدِيثُ الضَّعِيفُ لِلْعَمَلِ

-‘‘ফাযায়েলে আমালের জন্য দ্বঈফ সনদের হাদিসই যথেষ্ট।’’ ৫২

➥৫২. আল্লাম মোল্লা আলী ক্বারী, মেরকাত, ৭/৩০৫৭ পৃ. হা/৪৮৭৭

✦ অভিমত নং-৩২: তিনি অন্যস্থানে বলেন-

إِنَّهُ ضَعِيفٌ لَكِنَّهُ يُعْمَلُ بِهِ فِي فَضَائِلِ الْأَعْمَالِ

-‘‘নিশ্চয় এ সনদটি দুর্বল, তবে এটি ফাযায়েলে আমালের জন্য গ্রহণযোগ্য।’’ ৫৩

➥৫৩. আল্লাম মোল্লা আলী ক্বারী, মেরকাত, ৪/১৩৮০ পৃ. হা/১৯৮২

✦ অভিমত নং-৩৩: আল্লামা ইসমাঈল হাক্কী (رحمة الله) বলেন,

حديثه ضعيف باتفاق جمهور المحدثين والحديث الضعيف يعمل به فى فضائل الأعمال

-‘‘দ্বঈফ সনদের উপর আমালের ব্যাপারে জমহুর মুহাদ্দিসগণ বলেছেন যে, দ্বঈফ হাদিস ফাযায়েলে আমালের জন্য গ্রহণযোগ্য।’’ ৫৪

➥৫৪. আল্লাম ইসমাঈল হাক্কী, তাফসীরে রুহুল বায়ান, ৪/৪৩৭ পৃ. সূরা ইবরাহিম, আয়াত, ২৭

✦ অভিমত নং-৩৪: আল্লামা ইসমাঈল হাক্কী (رحمة الله) বলেন-

ان الحديث الضعيف يعمل به فى فضائل الأعمال

-‘‘নিশ্চয় দ্বঈফ হাদিস ফাযায়েলে আমলের জন্য গ্রহণযোগ্য।’’ ৫৫

➥৫৫. আল্লাম ইসমাঈল হাক্কী, তাফসীরে রুহুল বায়ান, ৭/১৮৬ পৃ. সূরা আহযাব, আয়াত, ৪০

✦ অভিমত নং-৩৫: আল্লামা তিব্বী (رحمة الله) লিখেন-

وقد اتفق العلماء على جواز العمل بالحديث الضعيف في فضائل الأعمال.

-‘‘উলামায়ে কেরামগণ এ বিষয়ে একমত পোষণ করেছেন যে দ্বঈফ হাদিস ফাযায়েলে আমলের জন্য গ্রহণযোগ্য।’’(ইমাম তিব্বী, শরহে মিশকাত, ২/৭০৭ পৃ. হা/২৫৯)

✦ অভিমত নং-৩৬: আল্লামা সান‘আনী (رحمة الله) লিখেন-

ومعلوم عند المحدثين أن الاستدلال بالحديث الضعيف -في فضائل الأعمال

-‘‘বুঝতে হবে মুহাদ্দিসগণের নিকট দ্বঈফ হাদিস ফাযায়েলে আমালের জন্য দলিলযোগ্য।’’ (সান‘আনী, তানভীর শরহে জামেউস সগীর, ১/১২৮ পৃ. মুকাদ্দামা)

✦ অভিমত নং-৩৭: ইমাম জালালুদ্দীন সুয়ূতি (رحمة الله) তার আরেক গ্রন্থে লিখেন-

أَنهم اجْمَعُوا على جَوَاز الْعَمَل بِالْحَدِيثِ الضَّعِيف فِي فَضَائِل الْأَعْمَال

-‘‘সকলে (ফকিহ, মুহাদ্দিস, আহলে তাফসির) একমত পোষণ করেছেন যে দ্বঈফ সনদের হাদিসের উপরে আমল করা বৈধ।’’ (সুয়ূতি, শরহে সুনানে ইবনে মাযাহ, ১/৯৮ পৃ.)

❏ তিনি তার আরেক (قوت المغتذي على جامع الترمذي) গ্রন্থের ১/৫১৩ পৃষ্ঠায় হাদিসের নীতিমালা আলোচনা করতে গিয়ে লিখেন-

الرابعة: وهي من يطلق عليه: ضعيف، فيعمل به في فضائل الأعمال دون الأحكام الراجعة إلى الاعتقاد في الأصول، والحل والحرمة في الفُرُوع.

-‘‘চতুর্থতম নীতি: সাধারণ দ্বঈফ। এ ধরনের হাদিস ফাযায়েলে আমলের জন্য গ্রহণযোগ্য, যদিও তা আহকাম, ই‘তিকাদে উসূলের এবং হালাল-হারামের নির্ণয়ের জন্য গ্রহণ বৈধ নয়।’’

✦ অভিমত নং-৩৮: আল্লামা জুরকানী (رحمة الله) লিখেন-

أَنَّ الضَّعِيفَ يُعْمَلُ بِهِ فِي فَضَائِلِ الْأَعْمَالِ.

-‘‘নিশ্চয় দ্বঈফ হাদিস ফাযায়েলে আমলের জন্য গ্রহণযোগ্য।’’ (শরহে মুয়াত্তায়ে মালেক, ৪/৪৪৮ পৃ.)

✦ অভিমত নং-৩৯: আহলে হাদিসদের শায়খ উবায়দুল্লাহ মোবারকপুরী লিখেন-

قد اتفقوا على جواز العمل بالضعيف في فضائل الأعمال

-‘‘উলামায়ে কেরামগণ এ বিষয়ে একমত পোষণ করেছেন যে দ্বঈফ হাদিস ফাযায়েলে আমলের জন্য গ্রহণযোগ্য।’’ (মের‘আত, ১/৩৫০ পৃ. হা/২৬২)

✦ অভিমত নং-৪০: আল্লামা আব্দুল হাই লাখনৌভি (رحمة الله) লিখেন-

فإن الضعيف يكفي في فضائل الأعمال

-‘‘দ্বঈফ হাদিস ফাযায়েলে আমলের জন্য যথেষ্ট।’’ (আত-তালাকুল মুমাজ্জাদ আ‘লা মুয়াত্তায়ে মুহাম্মদ, ২/৬৬০ পৃ.)

✦ অভিমত নং-৪১-৫০: 

✦ অভিমত নং-৪১: আল্লামা মোল্লা আলী ক্বারী (رحمة الله) লিখেন-

رواه ابن ماجه بإسناد ضعيف لكنه قوي حيث يعمل به في فضائل الأعمال والله أعلم بالأحوال.

-‘‘এ হাদিসটি ইমাম ইবনে মাযাহ দ্বঈফ সনদে বর্ণনা করেছেন। তবে এটি ফাযায়েলে আমলের জন্য শক্তিশালী দলিল। মহান রবই এ অবস্থা সম্পর্কে অবগত।’’ (শরহে মুসনাদে আবি হানিফা, ১/২৬ পৃ.)

✦ অভিমত নং-৪২: আল্লামা নুরুদ্দীন সানাদী (رحمة الله) লিখেন-

الْحَدِيثُ ضَعِيفٌ وَالْعَمَلُ عَلَيْهِ لِمُسَامَحَتِهِمْ فِي فَضَائِلِ الْأَعْمَالِ بِالْعَمَلِ بِالْحَدِيثِ الضَّعِيفِ.

-‘‘এ হাদিসটি যঈফ, আর যঈফ হাদিস ফাযায়েলে আমলের গ্রহণযোগ্যতার বিষয়ে মুহাদ্দিসগণ নমনীয়তা প্রকাশ করেছেন।’’ (হাশীয়ায়ে সানাদী আ‘লা সুনানে ইবনে মাযাহ, ২/২২৬ পৃ.)

✦ অভিমত নং-৪৩: আল্লামা ইমাম সাফেরী (৯৫৬হি.) লিখেন-

واتفق العلماء على أن الحديث الضعيف والمرسل والموقوف يتسامح به في فضائل الأعمال ويعمل بمقتضاه.

-‘‘উলামায়ে মুহাদ্দিসীন যঈফ, মুরসাল, মাওকুফ হাদিসের ক্ষেত্রে, তা ফাযায়েলে আমলের জন্য গ্রহণযোগ্য হওয়ার বিষয়ে নর্মতা প্রকাশ করেন এ বিষয়ে উলামগণ একমত পোষণ করেছেন।’’ (শরহে বুখারী লিসাফেরী, ২/৩১৩ পৃ.)

✦ অভিমত নং-৪৪: আল্লামা আব্দুর রহমান মোবারকপুরী লিখেন-

قال بن حَجَرٍ رَوَاهُ التِّرْمِذِيُّ بِسَنَدٍ مُنْقَطِعٍ وَمَعَ ذَلِكَ يُعْمَلُ بِهِ فِي فَضَائِلِ الْأَعْمَالِ

-‘‘এ ধরনের হাদিসের উপর আমল করা জায়েয।’’ (তুহফাতুল আহওয়াজী, ২/৪০ পৃ.)

✦ অভিমত নং-৪৫: আল্লামা ইবনে হাজার আসকালানী (المطالب العالية بزوائد المسانيد الثمانية) এ একটি পরিচ্ছেদ কায়েম করেন এ শিরোনামে-

২৩ - بَابُ الْعَمَلِ بِالْحَدِيثِ الضَّعِيفِ فِي فَضَائِلِ الْأَعْمَالِ

-‘‘পরিচ্ছেদ নং-২৩: যঈফ হাদিস ফাযায়েলে আমলের জন্য গ্রহণ বৈধতা প্রসঙ্গ।’’ (মাত্তালিবুল আলিয়া, ১২/৬৫৯ পৃ.)

✦ অভিমত নং-৪৬: ইমাম সাখাভী (رحمة الله) তার বিখ্যাত গ্রন্থে লিখেন-

وقد قال ابن عبد البر: إنهم يتساهلون في الحديث إذا كان من فضائل الأعمال

-‘‘ইমাম ইবনে আবদুল র্বা (رحمة الله) বলেন, মুহাদ্দিসগণ ফাযায়েলে আমল সংক্রান্ত কোনো বিষয়ের হাদিস আসলে ন¤্রতা প্রকাশ করেন।’’ (ইমাম সাখাভী, মাকাসিদুল হাসানা, ৬৩৫ পৃ. হা/১০৯১)

✦ অভিমত নং-৪৭: ইমাম ইবনে আছির (رحمة الله) লিখেন-

وقال أَحْمَدَ بْنَ حَنْبَلٍ ,يَقُولُ: إِذَا رَوَيْنَا عَنْ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَّ فِي الْحَلَالِ وَالْحَرَامِ وَالسُّنَنِ وَالْأَحْكَامِ تَشَدَّدْنَا فِي الْأَسَانِيدِ , وَإِذَا رَوَيْنَا عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَّ فِي فَضَائِلِ الْأَعْمَالِ وَمَا لَا يَضَعُ حُكْمًا ولا يرفعه، تساهلنا في الأسانيد ، ولولا الأسانيد لقال من شاء ما شاء

-‘‘ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল (رحمة الله) বলেন, যখন রাসূল (ﷺ)-এর পক্ষ থেকে কোনো হাদিস আমাদের কাছে আসে তখন হালাল-হারাম, সুনান সম্পর্কিত হলে আমরা সনদের বিষয়ে কঠোরতা করতাম, যখন ফাযায়েলে আমল সংক্রান্ত কোনো হাদিস বর্ণিত হলে সে সনদের বিষয়ে নরমতা প্রকাশ করতাম, যদি তা জাল না হয়। যদি সনদ না থাকতো যে যা ইচ্ছে তাই বলতো।’’ (জামেউল উসূল, ১/১০৯ পৃ., ইমাম খতিবে বাগদাদী, আল-কিফায়াত ফি উলূমির রিওয়ায়েত, ১/১৩৪ পৃ., ইবনে আবি ই‘য়ালা, তবকাতুল হাম্বলীয়া, ১/৪২৫ পৃ.)

✦ অভিমত নং-৪৮-৪৯: আল্লামা ইবনুল মুলাক্কীন (رحمة الله) লিখেন-

وَهُوَ ضَعِيف لكنه من فَضَائِل الْأَعْمَال

-‘‘এ হাদিসটি যঈফ, তবে তা ফাযায়েলে আমলের জন্য গ্রহণযোগ্য।’’ (তুহফাতুল মুহতাজ ইলা আদিল্লাতিল মিনহাজ, ১/১৬৮ পৃ.)

❏ তিনি আরেক গ্রন্থে লিখেন-

وَقد اتّفق الْعلمَاء عَلَى الْعَمَل بِالْحَدِيثِ (الضَّعِيف) فِي فَضَائِل الْأَعْمَال دون الْحَلَال وَالْحرَام

-‘‘ওলামায়ে মুহাদ্দিসীন যঈফ হাদিসের উপর আমল করার উপর একমত পোষণ করেছেন, তবে তা যদি হালাল-হারাম সংক্রান্ত বিষয়ের সাথে সম্পর্কযুক্ত না হয়।’’ (ইবনুল মুলাক্কীন, বদরুল মুনীর, ৪/২০৩ পৃ.)

✦ অভিমত নং-৫০: ইমাম হাকেম নিশাপুরী (رحمة الله) লিখেন-

عَنْ عَبْدِ الرَّحْمَنِ بْنِ مَهْدِيٍّ، يَقُولُ: إِذَا رَوِينَا، عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فِي الْحَلَالِ، وَالْحَرَامِ، وَالْأَحْكَامِ، شَدَّدْنَا فِي الْأَسَانِيدِ، وَانْتَقَدْنَا الرِّجَالَ، وَإِذَا رَوِينَا فِي فَضَائِلِ الْأَعْمَالِ وَالثَّوَابِ، وَالْعِقَابِ، وَالْمُبَاحَاتِ، وَالدَّعَوَاتِ تَسَاهَلْنَا فِي الْأَسَانِيدِ

-‘‘ইমাম আব্দুর রহমান ইবনে মাহদী (رحمة الله) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, যখন রাসূল (ﷺ)-এর পক্ষ থেকে কোনো হাদিস আমাদের কাছে আসে তখন হালাল-হারাম, আহকাম সম্পর্কিত হলে আমরা সনদের বিষয়ে কঠোরতা করতাম, সনদের রাবী নিয়ে কঠোর যাচাই বাছাই করতাম। যখন ফাযায়েলে আমল, কর্মের সাওয়াব এবং দাওয়াত বিষয়ক কোনো হাদিস বর্ণিত হয়, তখন সে সনদের বিষয়ে নর্মতা প্রদর্শন করতাম (যদি তা জাল না হয়)।’’ (ইমাম হাকেম, আল-মুস্তাদরাক, ১/৬৬৬ পৃ. হা/১৮০১)

✦ অভিমত নং-৫১-৫৩: 

✦ অভিমত নং-৫১: আল্লামা মোল্লা খুসরু (رحمة الله) এর লিখিত র্দুরুল হেকাম হানাফী নির্ভরযোগ্য ফিকহের কিতাবে রয়েছে-

وَإِنْ كَانَتْ ضَعِيفَةً لِلْعَمَلِ بِالْحَدِيثِ الضَّعِيفِ فِي فَضَائِلِ الْأَعْمَالِ

-‘‘যঈফ হাদিস ফাযায়েলে আমলের ক্ষেত্রে আমল করা বৈধ।’’ (দুররুল হেকাম, ১/১২ পৃ.)

✦ অভিমত নং-৫২: ইমাম ইবনে আবেদীন শামী (رحمة الله) লিখেন-

وَالْعُلَمَاءُ يَتَسَاهَلُونَ فِي ذِكْرِ الْحَدِيثِ الضَّعِيفِ وَالْعَمَلِ بِهِ فِي فَضَائِلِ الْأَعْمَالِ

-‘‘উলামায়ে মুহাদ্দিসীনগণ যঈফ হাদিসের হুকুমের বিষয়ে বলেছেন, তা ফাযায়েলে আমলের জন্য গ্রহণযোগ্য।’’ (ইমাম ইবনে আবেদীন শামী, ফাতওয়ায়ে শামী, ১/১৩১ পৃ.)

❏ তিনি আরেক স্থানে লিখেন-

أَنَّ الضَّعِيفَ يُعْمَلُ بِهِ فِي فَضَائِلِ الْأَعْمَالِ

-‘‘নিশ্চয় যঈফ হাদিস ফাযায়েলে আমলের জন্য গ্রহণযোগ্য।’’ (ইমাম ইবনে আবেদীন শামী, ফাতওয়ায়ে শামী, ৬/৪০৫ পৃ.)

✦ অভিমত নং-৫৩: শরহে বেকায়া গ্রন্থকার আল্লামা উবায়দুল্লাহ মাসউদ (رحمة الله) লিখেন-

الاتفاق على أن الضعيف يُعمل به في فضائل الأعمال

-‘‘সকলে একমত যে দ্বঈফ হাদিস ফাযায়েলে আমালের জন্য গ্রহণযোগ্য।’’ (শরহে বেকায়া, ১/৩৪ পৃ. ঘাড় মাসেহ এর আলোচনা)।

সর্বশেষ বলতে চাই উপরের আলোচনা থেকে বুঝলাম যে সকল ইমাম ও মুহাদ্দিসগণ একমত পোষণ করেছেন দ্বঈফ হাদিস ফাযায়েলে আমালের জন্য গ্রহণীয় এবং মুস্তাহাব।

বিষয় নং-৪: দুর্বল সনদ একাধিক সূত্রে বর্ণিত হলে ‘হাসান’ স্তরে উপনীত হয়:

✦ অভিমত নং- ০১-১০: 

ইলমে হাদিসের এ নীতিমালাটি এখানে এ জন্যই উল্লেখ করলাম যে বর্তমান আহলে হাদিসগণ তথা সালাফীরা দ্বঈফ সনদের হাদিস একাধিক সনদে বর্ণিত হলেও সেটি নাকি দ্বঈফই থাকে তাদের সে মিথ্যা শ্লোগানের স্বরূপ উন্মোচনের জন্য। এটি তারা বলার পরেও বিভিন্ন সময়ে নিজেদের স্বার্থে নফসের তাড়নায় এ শ্লোগান ভুলে যান। নিজেদের স্বপক্ষে কোন অত্যন্ত দুর্বল (জাল হওয়ার নিকটবর্তী) হাদিস একাধিক সনদে বর্ণিত হলে তাকে ‘হাসান’ বলতে একটু দ্বিধাবোধ করেন না। এ উসূলে হাদিসের এ নীতিমালাটি বিভিন্ন হাদিস সম্পর্কে আলোকপাতকালে বিভিন্ন অবস্থায় অনেক প্রয়োজন পড়বে, তাই বারবার যাতে উল্লেখ করতে না হয় সেজন্য এখানে তা উল্লেখ করার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করলাম। এ প্রসঙ্গে আমি কিছু ঊসূলে হাদিসবিদ এবং পাশাপাশি ফকিহগণের অভিমতও পেশ করবো ইনশা আল্লাহ।

✦ অভিমত নং-১: দশম শতাব্দীর মুজাদ্দিদ, বিখ্যাত উসূলে হাদিসবিদ (যিনি উসূলে হাদিসের নির্ভরযোগ্য গ্রন্থ নুখবাতুল ফিকরের শরাহ করেছেন), হানাফী বিখ্যাত ফকিহ আল্লামা মোল্লা আলী ক্বারী (رحمة الله) লিখেন-

وَتَعَدُّدُ الطُّرُقِ يُبْلِغُ الْحَدِيثَ الضَّعِيفَ إِلَى حَدِّ الْحَسَنِ

-‘‘দ্বঈফ হাদিসও একাধিক সনদে বর্ণিত হলে “হাসান” হাদিস এর পর্যায়ে পৌঁছে যায়।’’ ৫৬

➥৫৬. আল্লামা মোল্লা আলী ক্বারী, মিরকাত : ৩/৭৭ পৃ. হা/১০০৮

✦ অভিমত নং-২: তিনি আরেকটি দ্বঈফ সনদ একাধিক সূত্রে বর্ণিত হওয়ার আলোচনা করতে গিয়ে লিখেন-

وَلَهُ طُرُقٌ أُخْرَى ذَكَرَهَا الطَّحَاوِيُّ وَغَيْرُهُ تَرْتَقِي إِلَى حَدِّ الْحَسَنِ

-‘‘এ হাদিসটি আরেকটি ভিন্ন সনদেও বর্ণিত আছে যা ইমাম তাহাভী (رحمة الله)সহ আরও অন্যান্য মুহাদ্দিসগণ উল্লেখ করেছেন। আর তাতে হাদিসটি ‘হাসান’ পর্যায়ে পৌঁছে গেছে।’’ (আল্লামা মোল্লা আলী ক্বারী, মিরকাত : ২/৭৫৪, হাদিস : ৯৪৩)

✦ অভিমত নং-৩: তিনি তার আরেক প্রসিদ্ধ গ্রন্থে লিখেন-

وإن ضعف بعضها، فبتعدد الطرق، يرتقي إلى حد الحسن

-‘‘আর যখন দ্বঈফ সনদ একাধিক সনদে বর্ণিত হয় তখন তার মর্যাদা ‘হাসান’ পর্যায়ে পৌঁছে যায়।’’ (আল্লামা মোল্লা আলী ক্বারী, শরহে মুসনাদে আবি হানিফা, ৫২১ পৃ.)

✦ অভিমত নং-৪: তিনি তার সুপ্রসিদ্ধ দ্বঈফ জাল নির্ণয়ের কিতাবে এক স্থানে লিখেন-

وَتَعَدُّدُ الطُّرُقِ وَلَوْ ضَعُفَتْ يُرَقِّي الْحَدِيثَ إِلَى الْحسن

-‘‘একাধিক সনদে যদিও দ্বঈফ হাদিস বর্ণিত হয় তবে বর্ণিত ঐ হাদিস “হাসান” বলে গণ্য হবে বা উপনীত হবে।’’৫৭

➥৫৭. আল্লামা মোল্লা আলী ক্বারী : আসারুল মারফ‚আহ, পৃ-৪৮১

✦ অভিমত নং-৫: হানাফী মাযহাবের বিখ্যাত ফকীহ, মুহাদ্দিস, আল্লামা কামালুদ্দীন ইবনে হুমাম (رحمة الله) বলেন-

وَلَوْ تَمَّ تَضْعِيفُ كُلِّهَا كَانَتْ حَسَنَةً لِتَعَدُّدِ الطُّرُقِ وَكَثْرَتِهَا

-‘‘হাদিসের সমস্ত রাবী দুর্বল প্রমাণিত হওয়া সত্ত্বেও বিভিন্ন তরিকায় বর্ণিত হওয়ার কারণে তা ‘হাসানে’ পরিণত হয়ে যায়।’’ ৫৮

➥৫৮. ইমাম ইবনুল হুমাম : ফতহুল কাদির : ১/৩০৬ পৃ.

✦ অভিমত নং-৬: তিনি তাঁর লিখিত উক্ত কিতাবে আরও লিখেন-

جَازَ فِي الْحَسَنِ أَنْ يَرْتَفِعَ إلَى الصِّحَّةِ إذَا كَثُرَتْ طُرُقُهُ، وَالضَّعِيفُ يَصِيرُ حُجَّةً بِذَلِكَ لِأَنَّ تَعَدُّدَهُ قَرِينَةٌ عَلَى ثُبُوتِهِ فِي نَفْسِ الْأَمْر

-‘‘যখন ‘হাসান’ হাদিস অনেক সনদ দ্বারা বর্ণিত হয়, তখন তা সহীহ পর্যন্ত উন্নীত করা জায়েজ আছে এবং দুর্বল সনদের হাদিস এই পদ্ধতিতে (একাধিক তরিকায় বর্ণিত হওয়ার দ্বারা) দলীল হওয়ার যোগ্যতা অর্জন করে। যখন বিভিন্ন সনদে হাদিস বর্ণিত হয়, তা দৃঢ় দলীল হওয়ার ও আদেশ প্রয়োগের যোগ্যতা রাখে।’’ ৫৯

➥৫৯. ইমাম ইবনুল হুমাম: ফতহুল কাদির, ১/৪৪৬ পৃ.

✦ অভিমত নং-৭: সূফিকূল সম্রাট, বিখ্যাত ফকিহ, মুহাদ্দিস, মুফাস্সির, আরিফীন দরজার ওলী ইমাম আবদুল ওয়াহ্হাব শা‘রানী (رحمة الله) তার একটি বিখ্যাত গ্রন্থে এ উসূলটি এভাবে বর্ণনা করেন-

قد احتج جمهور المحدثين بالحديث الضعيف اذا كثرت طرقه وألحقوه بالصحيح تارة وبالحسن أخرى- وهذا النوع من الضعيف يوجد كثيرا فى كتاب السنن الكبرى للبيهقى التى ألفها بقصد الاحتجاج لأقوال الأئمة وأقوال أصحابهم-

-‘‘নি:সন্দেহে জমহুর মুহাদ্দিসীনগণ দুর্বল হাদিসকে অধিক সনদে বর্ণিত হওয়ার কারণে দলীল হওয়ার যোগ্যতা রূপে মেনে নিয়েছেন এবং সেটিকে কোন সময় সহীহ আবার কোন সময় ‘হাসান’র সাথে মিলিয়েছেন। এই প্রকারের দুর্বল সনদের হাদিস সমূহ ইমাম বায়হাকী (رحمة الله) এর ‘সুনানুল কুবরা’ মধ্যে অধিক পাওয়া যায়, যাকে ইমাম মুজতাহিদীন এবং আসহাবে আইয়াম্মা দলীল হিসেবে গ্রহণের জন্য ইচ্ছাপোষণ করেন।’’ ৬০

➥৬০. ইমাম আবদুল ওয়াহ্হাব শা‘রানী, মিযানুল কোবরা, ১/৬৮ পৃ.

✦ অভিমত নং-৮: নবম শতাব্দীর মুজাদ্দিদ, বিখ্যাত হাফিযুল হাদিস (যিনি তাদরীবুর রাবী নামক উসূলে হাদিসের বিখ্যাত কিতাব লিখেছেন), শাফেয়ী মাযহাবের অন্যতম ফকিহ, মুফাস্সির, ইমাম জালালুদ্দীন সুয়ূতি (رحمة الله) লিখেন-

المتروك أو المنكر إذا تعددت طرقه ارتقى إلى درجة الضعيف الغريب بل ربما ارتقى الى الحسن-

-‘‘মাতরুক ও মুনকার হাদিস বিভিন্ন তরিকায় বর্ণিত হওয়ার কারণে দ্বঈফ হাদিসের মর্যাদায় উপনীত হয়। বরং কখনো হাদিসে “হাসানের” মর্যাদায় উপনীত হয়ে থাকে।’’৬১

➥৬১. আল্লামা জালালুদ্দীন সুয়ূতি : তাআকিবাত আলা মওজুআত : ৭৫ পৃ. : কিতাবুল মানাকিব

দেখুন এখানে তিনি সুস্পষ্ট উল্লেখ করেছেন যে মুনকার, মাতরুক সনদের হাদিসও অনেক সনদে বর্ণিত হওয়ার দ্বারা ‘হাসান’ পর্যায়ে পৌঁছে; আফসোস তাদের জন্য যারা ইমাম সুয়ূতির চেয়েও বড় হাফেযুল হাদিস সেজে বসে আছেন তাদের জন্য।

✦ অভিমত নং-৯: আল্লামা জাফর আহমদ উসমানী বলেন,

والحديث الضعيف اذا تعددت طرقه ولو طريقا واحدا اخر ارتقى بمجموع ذالك الى درجة الحسن وكان محتجا به-

-‘‘দ্বঈফ হাদিস একাধিক তরিকায় বর্ণিত হওয়ার কারণে, যদিও তা এক সনদে বর্ণিত ছিল, তা সমষ্টিগত ভাবে হাসানের দরজায় উন্নীত হয় এবং এটি দলীল হিসেবে প্রয়োগ করা যায়।’’ ৬২

➥৬২. আল্লামা জাফর আহমদ ওসমানী : কাওয়াইদুল উলূমুল হাদিস- ৭৮ পৃ.

✦ অভিমত নং-১০: আল্লামা আব্দুল হক মুহাদ্দিস দেহলভী (رحمة الله) বলেন,

والضعيف ان تعددت طرقه وانجبر ضعفه يسمى حسنا لغيره-

-‘‘আর দ্বঈফ হাদিস যদি বিভিন্ন সনদে বর্ণিত হয় এবং তার দুর্বলতা দূরীভূত হয়, তাহলে তাকে “হাসান লিগাইরিহি” নামে নামকরণ করা হয়।’’ ৬৩

➥৬৩. আল্লামা শায়খ আবদুল হক মুহাদ্দেস দেহলভী : মুকাদ্দামাতুশ্ শায়খ: পৃ. ১০

✦ অভিমত নং-১১-২০: 

✦ অভিমত নং-১১: আল্লামা মুফতী আমিমুল ইহসান (رحمة الله) বলেন,  

الضعيف ان تعددت طرقه أو تأيد بما يرجح قويه فهو حسن لغيره-

-‘‘আর দ্বঈফ হাদিস যদি বিভিন্ন সনদে বর্ণিত হয়, গ্রহণীয় হওয়ার প্রমাণ দ্বারা শক্তিশালী হয়, তবে তা ‘হাসান লিগাইরিহী’ হয়ে যাবে।’’ ৬৪

➥৬৪. মুফতি আমিমুল ইহসান : মিযানুল আখবার: ৭ পৃ.

✦ অভিমত নং-১২: আল্লামা শায়খ আব্দুল হক মুহাদ্দিস দেহলভী (رحمة الله) বলেন :

الضعيف الذى بلغ بتعدد الطرق مرتبة الحسن لغيره ايضا مجمع وَمَا اشتهرَ (مقدمۃ للشیخ : فصل العاشر : ۲۵)

-‘‘আর দ্বঈফ হাদিস যদি বিভিন্ন সনদে বর্ণিত হওয়ার দরুন “হাসান লিগাইরিহী” হওয়ার মর্যাদায় উপনীত হয়, তা দলীল হওয়া সম্পর্কে আলিমগণ একমত হয়েছেন।’’৬৫

➥৬৫. আল্লামা শায়খ আব্দুল হক মুহাদ্দিস দেহলভী : মুকাদ্দামতুশ্ শায়খ, পৃ-২৫

✦ অভিমত নং-১৩: আল্লামা বদরুদ্দিন আইনী (رحمة الله) বলেন :

وَاِذَا قَوی الضَّعِیفُ بِطَرِی اَخر أو اسانیدُ اخر حاد حَسَن لغیرہ

-‘‘যখন দ্বঈফ হাদিস অন্য কোন সনদ বা বর্ণনা দ্বারা শক্তিশালী হয় অর্থাৎ দুর্বলতা দূর হয়ে যায়, তখন তা হাসান লিগাইরিহী রূপে গৃহিত হবে। ’’ ৬৬

➥৬৬. আল্লামা বদরুদ্দীন আইনী : উমদাদুল ক্বারী শরহে বুখারী : ১/৯ পৃ.

✦ অভিমত নং-১৪: দুররুল মুখতার গ্রন্থের প্রথম খণ্ড مستحبات الوضوء শীর্ষক অধ্যায়ে ওযুর বিভিন্ন অংশের দু’আ প্রসঙ্গে বর্ণিত আছে,

وَقد رَوَاہ اِبنُ حِبَّانَ وَغَیرُہ عَنه عَلَیهِ السَّلامُ مِن طُرُفٍ

-‘‘এ হাদিসটি ইমাম ইবনে হিব্বানর প্রমুখের কয়েকটি সনদ দ্বারা মারফূ সূত্রে বর্ণিত হয়েছে।’’

✦ অভিমত নং-১৫: উক্ত রেওয়ায়েতের ব্যাখ্যায় ইমাম ইবনে আবেদীন শামী (رحمة الله) বলেন :

أَيْ يُقَوِّي بَعْضُهَا بَعْضًا فَارْتَقَى إلَى مَرْتَبَةِ الْحَسَنِ

-‘‘কতেক সনদ কতেক সনদকে শক্তি জোগায়। তাই এ হাদিস “হাসান” পর্যায়ে পৌঁছে গেছে।’’ ৬৭

➥৬৭. আল্লামা ইমাম ইবনে আবেদীন শামী : ফতোয়ায়ে শামী : ১/৪২৮

✦ অভিমত নং-১৬: আহলে হাদিসদের মুহাদ্দিস আব্দুর রহমান মোবারকপুরী লিখেন-

وَتَعَدُّدُ الطُّرُقِ يُبَلِّغُ الْحَدِيثَ الضَّعِيفَ إِلَى حَدِّ الْحَسَنِ

-‘‘যঈফ হাদিস যখন একাধিক সূত্রে বর্ণিত হয় তা ‘হাসান’ স্তরে উন্নিত হয়।’’ (তুহফাতুল আহওয়াজি, ২/৩৭২ পৃ.)

❏ তিনি তার উক্ত গ্রন্থে আরেক স্থানে লিখেন-

وَهُوَ حَدِيثٌ ضَعِيفٌ لَكِنَّهُ مَرْوِيٌّ مِنْ طُرُقٍ يُقَوِّي بَعْضُهَا بَعْضًا

-‘‘এ হাদিসটির সনদ যঈফ, তবে সনদটি যেহেতু একাধিক সূত্রে বর্ণিত হওয়ায় একটি সূত্র অপর সূত্রকে শক্তিশালী করেছে (হাসান স্তরে উপনীত হয়েছে)।’’ (তুহফাতুল আহওয়াজি, ১/২৩৭ পৃ.)

❏ ইমাম ইবনে হাজার আসকালানী (رحمة الله) লিখেন-

لأن كثرة الطرق تقوِّي.

-‘‘হাদিস যখন অধিক পদ্ধতিতে বর্ণিত হয় তা শক্তিশালী হয়।’’ (নুখবাতুল ফিকর, ৮০ পৃ.)

তাই প্রমাণিত হলো যে, দ্বঈফ হাদিসে একাধিক সূত্রে বর্ণিত হলে তা আর দ্বঈফ থাকে না; বরং হাসান হাদিস হয়ে যায়।

বিষয় নং-৫: দ্বঈফ সনদকে অবহেলা করার ভয়ংঙ্কর পরিণতি:

প্রিয় নবীর হাদিসকে দ্বঈফ হাদিস বললে ঈমান থাকবে না, তবে হ্যাঁ, রাবীর গুণাবলীর কারণে সনদ সহীহ, হাসান, দ্বঈফ হয়ে থাকে। তাই বলতে হবে সনদ দ্বঈফ; হাদিস দ্বঈফ এমনটি বলার কোন সুযোগ নেই। বর্তমান আহলে হাদিসগণ দ্বঈফ সনদের হাদিসকে হাদিস হিসেবে মানতেই রাজি নন, অথচ মুহাদ্দিসগণের নিকট দ্বঈফও রাসূল (رحمة الله) এর হাদিস। যার উপর আমল করা মুস্তাহাব। তবে রাবী শক্তিশালী, দুর্বল হওয়া নিয়ে মতানৈক্য থাকতে পারে। তাই দ্বঈফ সনদকে ‘হাদিস নয়’ বলা যাবে না। আর আমি নিম্নে দ্বঈফ সনদকে অবহেলার শাস্তির কয়েকটি ঘটনা তুলে ধরার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করায় উল্লেখ করছি।

❏ এক হাদিসে বর্ণিত আছে-

عَن سَعِيد بْن الْمسيب عَن أَبِي هُرَيْرَةَ عَن النَّبِي قَالَ: مَنِ احْتَجَمَ يَوْمَ السَّبْتِ أَوِ الأَرْبِعَاءِ فَأَصَابَهُ وَضَحٌ فَلا يَلُومَنَّ إِلا نَفْسَهُ.

-‘‘যে ব্যক্তি বুধবার কিংবা শনিবার নিজ শরীরে শিঙ্গা প্রয়োগ করে দুষিত রক্ত অপসারণ করবে, তার শরীরে কুষ্ট রোগ (সাদা রোগ) হবে। আর সে তখন নিজেকেই দোষারোপ করবে।’’ (ইমাম সুয়ূতি, আল-লাআলিল মাসনূআ, ২/৩৪২ পৃ., দারুল কুতুব ইলমিয়্যাহ, বয়রুত, লেবানন।)

একজন বিজ্ঞব্যক্তি, যার নাম মুহাম্মদ ইবনে জাফর নিশাপুরী তার শিঙ্গা প্রয়োগের প্রয়োজন হয়েছিল। সেদিন ছিল বুধবার। তিনি মনে করেছিলেন যেহেতু উল্লেখিত হাদিসটি ‘সহীহ পর্যায়ের নয়’ সেহেতু শিঙ্গা প্রয়োগে কোন দোষ নেই। ওই দিন তিনি স্বীয় দূষিত রক্ত অপসারণের কাজ সম্পন্ন করলেন কিন্তু এর সাথে সাথে কুষ্ট রোগ তার শরীরে ছড়িয়ে পড়ল যখন রাতে ঘুমালেন তখন স্বপ্নযোগে হুযূর করীম (ﷺ) দীদার লাভ করলেন। আর তিনি তাঁর নিকট রোগের ব্যাপারে আরয করলেন, তখন হুযূর (ﷺ) ইরশাদ করলেন-

إياك والاستهانة بحديثي

-‘‘সাবধান! আমার হাদিসকে হালকা (তুচ্ছ) মনে করবে না।’’

❏ ইমাম জালালুদ্দীন সুয়ূতি (رحمة الله) আরও উল্লেখ করেন-

فَقلت تبت يَا رَسُول اللَّهِ فانتبهت وَقد عافاني اللَّه وَذهب ذَلِكَ عني.

-‘‘তাৎক্ষণিকভাবে তিনি বললেন, ইয়া রাসূলুল্লাহ! (ﷺ) আমি তওবা করে নিচ্ছি এরপর জেগে ওঠে দেখেন তিনি সুস্থ হয়ে গেছেন।’’ ৬৮

➥৬৮. ইমাম ইবনে আসাকির: তারিখে দামেস্ক, ১/৭৫ পৃ., ইমাম সুয়ূতি, আল-লাআলিল মাসনূআ, ২/৩৪২ পৃ., দারুল কুতুব ইলমিয়্যাহ, বয়রুত, লেবানন।

❏ ইমাম জালালুদ্দীন সুয়ূতি (رحمة الله) একটি ঘটনা উল্লেখ করেন এভাবে-

وَأخرج ابْن عَسَاكِر فِي تَارِيخه من طَرِيق أَبِي عَليّ مِهْرَان بْن هرون الْحَافِظ الهازي قَالَ سَمِعْتُ أَبَا معِين الْحُسَيْن بْن الْحَسَن الطَّبَرِيّ يَقُولُ: أردْت الْحجامَة يَوْم السبت فَقلت للغلام: ادْع لي الْحجام فَلَمَّا وُلّي الْغُلَام ذكرت خبر النَّبِي: مَنِ احْتَجَمَ يَوْمَ السَّبْتِ وَيَوْمَ الأَرْبِعَاءِ فَأَصَابَهُ وَضَحٌ فَلا يَلُومَنَّ إِلَّا نَفسه

قَالَ: فدعوت الْغُلَام ثُمّ تفكرت فَقلت هَذَا حَدِيث فِي إِسْنَادُه بعض الضعْف فَقلت للغلام ادْع الْحجام لي فَدَعَاهُ فاحتجمت فَأَصَابَنِي البرص فَرَأَيْت رَسُول الله فِي النّوم فشكوت إِلَيْهِ حَالي فَقَالَ إياك والاستهانة بحديثي ونذرت للَّه نذرا لَئِن أذهب اللَّه مَا بِي مِنَ البرص لَمْ أتهاون فِي خبر النَّبِي صَحِيحا كَانَ أَو سقيمًا فَأذْهب اللَّه عني ذَلِكَ البرص

-‘‘ইমাম ইবনে আসাকির (رحمة الله) হাফিস রাযী আলী ইবনে মিহরান ইবনে হারুন থেকে স্বীয় ‘তারিখে দামেস্ক’ এ বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেন, আমি হযরত আবু মুঈন হুসাইন ইবনে হাসান তাবরীকে বলতে শুনেছি, তিনি বলেন, আমি একবার শনিবার শিঙ্গা লাগাতে মনস্থ করেছি। সুতরাং আমি আমার ক্রীতদাসকে হাজ্জাম (ক্ষৌরকার) কে শিঙ্গা লাগানোর জন্য ডাকতে নির্দেশ দিলাম। ক্রীতদাস তাকে ডাকতে চলে যাওয়ায় এবং বুধবার আমার মনে পড়ল নবী করীম (ﷺ) ওই হাদিস যেখানে বর্ণিত আছে ‘যে ব্যক্তি বুধবার কিংবা শনিবার নিজ শরীরে শিঙ্গা প্রয়োগ করে দুষিত রক্ত অপসারণ করবে, তার শরীরে কুষ্ট রোগ (সাদা রোগ) হবে। আর সে তখন নিজেকেই দোষারোপ করবে।’ তারপর কিছু চিন্তা ভাবনা করে বললাম, এ হাদিসের সনদে মধ্যে তো কিছু দুর্বলতা আছে। শেষ পর্যন্ত আমি শিঙ্গা প্রয়োগ করলাম। ফলে আমার শ্বেত রোগ হয়ে গেল। অত:পর স্বপ্নযোগে নাবী কারিম (ﷺ) এর সাথে স্বপ্নে সাক্ষাত হল। তখন আমি স্বীয় অবস্থা সম্পর্কে হুযূর (ﷺ) এর মহান দরবারে ফরিয়াদ করলাম। তিনি ইরশাদ করেন, সাবধান! আমার হাদিসকে তুচ্ছ জ্ঞান করবে না, অতঃপর আমি আল্লাহর ওয়াস্তে মানত করলাম, আল্লাহ্ পাক যদি আমার শ্বেত রোগ থেকে মুক্তি দেন, তবে আমি আর কখনো নাবী কারিম (ﷺ) এর হাদিসকে তুচ্ছ জ্ঞান করব না, ওই হাদিস সনদ অনুযায়ী সহীহ (বিশুদ্ধ) হোক কিংবা দ্বঈফ (দুর্বল) হোক। সুতরাং আল্লাহ্ পাক আমার শ্বেত রোগ থেকে মুক্তি দান করলেন।’’ ৬৯

➥৬৯. ইমাম ইবনে আসাকির: তারিখে দামেস্ক, ১/৭৫ পৃ., ইমাম সুয়ূতি, আল-লাআলিল মাসনূআ, ২/৩৪২ পৃ., দারুল কুতুব ইলমিয়্যাহ, বয়রুত, লেবানন।

❏ এভাবে আল্লামা শিহাবুউদ্দীন খিফ্ফাযি হানাফী (رحمة الله) এর রচিত “নাসিমুর রিয়াদ্ব শরহে শিফা’’ গ্রন্থে উল্লেখ করা হয়েছে,

قص الاظفار وتقليمها سنة وورد النهى عنه فى يوم الاربعاء وانه يورث البرص وحكى عن بعض العلماء انه فعله فنهى عنه فقال لم يثبت هذا فلحقه البرص من ساعته فراى النبى صلى الله عليه وسلم فى منامه فشكى اليه فقال له الم تسمع نهى عنه فقال لم يصح عندى فقال صلى الله عليه وسلم يكفيك انه يسمع ثم مسح بدنه بيده الشريعة فذهب ما به فتاب عن مخالفة ما سمع كذا-نسيم الريض شرح الشفا:القسم الاول فى تعظيم العلى الا على لقدر النبى صلى الله عليه وسلم-

-‘‘নখ কাটা বা ছেঁড়ে ফেলা সুন্নাত। তবে বুধবার এটা সম্পর্কে নিষেধ বলে বর্ণিত আছে এবং এটাও যে, এতে শ্বেত রোগ হয়। জনৈক আলিম সম্পর্কে কথিত আছে যে, তিনি বুধবার নখ কেটেছেন। উপস্থিত লোকেরা তাকে (হাদিসের ভিত্তিতে নিষেধ হওয়ার কারণে) নিষেধ করলেন। উত্তরে তিনি বললেন, হাদিসটি সহীহ নয়। তখনই তাঁর শ্বেত রোগ ছড়িয়ে পড়ল। একদা তিনি হুযূর (ﷺ) কে স্বপ্নে দেখলেন এবং তার নিকট স্বীয় রোগ সম্পর্কে আবেদন করলেন। হুযূর কারীম (ﷺ) তাকে উত্তরে ইরশাদ করলেন, তুমি কি শোননি যে সেটা নিষিদ্ধ ? আরয করলেন, হাদিসটি সহীহ হিসেবে আমার কাছে পৌঁছেনি তখন ইরশাদ হল, তোমার জন্য তো এতটুকুই যথেষ্ট ছিল যে, হাদিসটি আমারই নামে উদ্ধৃত হয়ে তোমার কানে পৌঁছেছে। এটা ইরশাদ করার পর হুযূর (ﷺ) স্বীয় পবিত্র হাত তার শরীরে বুলিয়ে দিলেন। তৎক্ষণাৎ তিনি সুস্থ হয়ে গেলেন এবং হাদিস শরীফ শুনে আর বিরোধ পোষণ করবেন না মর্মে তাওবা করে নিলেন।’’ ৭০

➥৭০. আল্লামা খিফ্ফাযী, নাসীমুর রিয়াদ্ব শরহে শিফা, পৃ- ১/১২০

❏ ইমাম তিরমিযী (رحمة الله) অনেক হাদিসে বলেছেন,

هَذَا حَدِيثٌ حَسَنٌ صَحِيحٌ غَرِيبٌ

 -‘‘এই হাদিসটি হাসান, সহীহ গরীবও বটে। (সুনানে তিরমিযী, ১/১২৮পৃ. হাদিস :৭২, ও ১/২৬২পৃ. হাদিস : ১৯০ এবং ১/৫৫৪পৃ. হাদিস : ৪২৮)

ইমাম তিরমিযী বক্তব্যের মর্ম হলো, এই হাদিসখানা কয়েক রকম সনদের দ্বারা বর্ণিত। এক সনদে দ্বারা হাসান আবার এক সনদ দ্বারা সহীহ আবার এক সনদ দ্বারা গরীব। তাই শুধু গরীব চিন্তা নিয়ে বসে থাকা যাবে না। দ্বঈফ সনদের হাদিসের অবহেলাকারীদের শাস্তির ব্যাপারে আ‘লা হযরত (رحمة الله) এর খলিফা আল্লামা জুফারুদ্দীন বিহারী (رحمة الله) রচিত ‘সহিহুল বিহারী’ প্রথম খন্ডে বিষদ আকারে দেখতে পারেন।

বিষয় নং-৬: কোনো সনদের ক্ষেত্রে একজন রাবীর হেফ্যে (স্মৃতিশক্তিতে) সামান্য দুর্বলতা দ্বারা হাদিস ‘হাসান’ হয়, যঈফ নয়:

হাদিস শাস্ত্রে একজন রাবী হেফ্যে সামনে ক্রুটিযুক্ত হলে তার হাদিস ‘হাসান’ স্তরে উপনীত হবে, এটাই উসূলে হাদিসের নীতি। বর্তমান আহলে হাদিসগণ ফিতনা ছড়াচ্ছে যে, রাবীর এ ধরনের সমস্যার দ্বারা হাদিস যঈফ হয়ে যাবে। এ বিষয়ে আমি কতিপয় বিজ্ঞ মুহাদ্দিসদের অভিমত পেশ করবো, ইনশাআল্লাহ।

১. হাফেজুল হাদিস ইমাম জালালুদ্দীন সুয়ূতি (رحمة الله) {ওফাত. ৯১১ হি.} বলেন-

فَإِنْ خَفَّ الضَّبْطُ فَهُوَ الْحَسَنُ لِذَاتِهِ.

-‘‘বর্ণনাকারীর সংরক্ষণ শক্তি সামান্য দুর্বল হলে সে হাদিসকে ‘‘হাসান লি জাতিহী’’ বলা হয়।’’ ৭১

➥৭১. ইমাম সুয়ূতী, তাদরীবুর রাবী, ১/১৭৩পৃ. দারু তৈয়্যব, বয়রুত, লেবানন।

২. ইমাম ইবনে হাজার আসকালানী (رحمة الله) লিখেন-

فَإِنْ خَفَّ الضَّبْطُ: فَالْحَسَنُ لِذَاتِهِ، وَبِكَثْرَةِ طُرُقِهِ يُصَحَّحُ

-‘‘বর্ণনাকারীর সংরক্ষণ শক্তি যদি সামান্য ক্রটিযুক্ত হয়, অতঃপর সে হাদিসের মান ‘হাসান লিজাতিহি’ এবং এ জাতীয় হাদিস যখন অনেক সূত্রে বর্ণিত হবে সেটিকে তখন সহীহ (লিগাইরিহী) বলা হয়।’’ ৭২

➥৭২. ইবনে হাজার আসকালানী, নুখবাতুল ফিকর, ১/৭৮ পৃ.

৩. ড. মাহমুদ আত-ত্বহান লিখেন-

فإن خف الضبط، فالحسن لذاته

-‘‘বর্ণনাকারীর সংরক্ষণ শক্তি সামান্য দুর্বল হলে সে হাদিসকে ‘‘হাসান লি জাতিহী’’ বলা হয়।’’ ৭৩

➥৭৩. ড. মাহমুদ আত্-ত্বহান, তাইসিরুল মাসতালিউল হাদিস, ৫৮ পৃ.।

৪. মাওলানা জাফর আহমদ উসমানী বলেন-

فان خف الضبط والصفات الاخرى فيه فهو الحسن-

-‘‘রাবীর যবত (সংরক্ষণগুণ) সামান্য দুর্বল হয়ে সহীহ হাদিসের সকল শর্ত বিদ্যমান থাকলে তাকে হাদিসে ‘হাসান’ বলে।’’ ৭৪

➥৭৪. কাওয়াইদ ফি উলূমিল হাদিস, ৩৪ পৃ.

৫. আল্লামা আমির সান‘আনী লিখেন-

فَإِنْ خَفَّ الضَّبْطُ (مَعَ بَقِيَّةِ الشُّرُوطِ الْمُتَقَدِّمَةِ فِي الصَّحِيحِ) (فَالْحَسَنُ لِذَاتِهِ) وَبِكَثْرَةِ الطُّرُقِ يُصَحَّحُ (فَيُسَمَّى الصَّحِيحُ لِغَيْرِهِ)

-‘‘বর্ণনাকারীর সংরক্ষণ শক্তি যদি সামান্য ক্রটিযুক্ত হয়, (এছাড়া সহীহ হওয়ার বাকি শর্তসমূহে সে সনদে রাবীর থাকে) অতঃপর সে হাদিসের মান ‘হাসান লিজাতিহি’ এবং এ জাতীয় হাদিস যখন অনেক সূত্রে বর্ণিত হয় সেটি সহীহ (সহীহ (লিগাইরিহী) বলা হয়।’’ (সান‘আনী, সবলুস সালাম, ২/৭২২ পৃ.)

বিষয় নং-৭: সনদে কোনো একজন বর্ণনাকারী মুনকার, অথবা মুদ্ত্বরাব অথবা মাতরুক থাকলে সে হাদিসকে জাল বলা হবে না:

বর্তমান আহলে হাদিসগণ খুবই ফিতনা ছড়াচ্ছে যে হাদিসের সনদে কোন রাবীর ব্যাপারে যদি মুনকার, মাতরুক ইত্যাদি শব্দ ব্যবহার করা হয় তাহলে তা তাদের দৃষ্টিতে জাল হাদিস হিসেবে গণ্য। অথচ এটি হচ্ছে তাদের মনগড়া নীতিমালা। সকল মুহাদ্দিসগণই বলেছেন সনদের একজন রাবীর প্রতি উপরের বর্ণিত দুর্বলতার ইঙ্গিত দ্বারা সনদটি দ্বঈফ হবে কিন্তু জাল নয়।

ক. (সনদ মুনকার হওয়া): এ বিষয়ে ইমাম জালালুদ্দীন সুয়ূতি (رحمة الله) বলেন-

المنكر نوع اخر غير الموضوع وهو قسم الضعيف-التعقبات:৭৩-باب :الاطعمة

-‘‘সর্বসম্মত অভিমত হলো মুনকার সনদ জাল হাদিসের প্রকার নয়, বরং দ্বঈফ হাদিসের প্রকার।’’(সুয়ূতি, তা‘আকিবাত ‘আলাল মাওদ্বুআত, ৩৭ পৃ.)

❏ ইমাম সুয়ূতি (رحمة الله) তার এ কিতাবের অন্যস্থানে বলেন

صرح ابن عدى بأن الحديث منكر فليس بموضوع-التعقبات:৬২

-‘‘এটা সুস্পষ্ট কথা ইমাম আদি (رحمة الله) বলেছেন মুনকার সনদের হাদিস জাল নয়।’’(সুয়ূতি, তা‘কিবাত, ৬২ পৃষ্ঠা)  

❏ তিনি এ কিতাবের অন্যস্থানে বলেছেন যে

المُنْكَرْ مِنْ قِسْم الضَّعِيْف وَهُوَ محتمل فى الفضائل-التعقبات:باب المناقب

-‘‘হাদিসের সনদ মুনকার হওয়া যঈফ হওয়ার অর্ন্তভুক্ত, তবে ফাযায়েলে আমলের ক্ষেত্রে তা দলিল হওয়ার সম্ভবনা রাখে।’’ (ইমাম সুয়ূতি, তা‘কিবাত, কিতাবুল মানাকিব)

❏ আল্লামা ইবনুল আররাক কেনানী (৯৬৩ হি.) এ বিষয়ে লিখেন-

وَالْمُنكر من قسم الضَّعِيف وَهُوَ مُحْتَمل فِي الْفَضَائِل.

-‘‘হাদিসের সনদ মুনকার হওয়া যঈফ হওয়ার অর্ন্তভুক্ত, তবে ফাযায়েলে আমলের ক্ষেত্রে তা দলিল হওয়ার সম্ভবনা রাখে।’’ (তানযিহুশ শরিয়াহ, ২/৫০ পৃ.)

খ. (সনদ মুদত্বরিব হওয়া): অপরদিকে মুদত্বরাব সনদ সম্পর্কে ইমাম সুয়ূতি (رحمة الله) বলেন-

الُمضْطَرِبْ مِنْ قسم الضَعِيْف لَا المَوْضُوْع :২৭: باب الجنائز

-‘‘মুদত্বরাব দ্বঈফ সনদেরই প্রকার, এটি জাল নয়।’’ (ইমাম সুয়ূতি, তা‘কিবাত, ২৭ পৃষ্ঠা)

❏ আল্লামা তাহের পাটনী (رحمة الله) একটি হাদিস সম্পর্কে আলোচনা করতে গিয়ে লিখেন-

مُضْطَرب: قلت من قسم الضَّعِيف لَا الْمَوْضُوع

-‘‘এ সনদটি মুদত্বারিব, আমি (তাহের পাটনী) বলি, মুদত্বরাব হলো দ্বঈফ সনদের প্রকার, তাই বলে এটি জাল নয়।’’ (তাযকিরাতুল মাওদ্বুআত, ২১৯ পৃ.)

গ. (সনদ মু’দাল হওয়া): ইমাম আবূ আব্দুল্লাহ বদরুদ্দীন হামাভী আশ-শাফেয়ী (ওফাত. ৭৩৩ হি.) -

والمعضل من قسم الضَّعِيف

-‘‘হাদিসের সনদ ‘মু’দাল’ হওয়া যঈফ সনদের অর্ন্তভুক্ত (জাল এর নয়)।’’ (المنهل الروي , ৪৭ পৃ.)

ঘ. (সনদ মুনকাতী‘ঈ হওয়া): আল্লামা জাযায়েরী দামেস্কী লিখেন-

والمنقطع من قسم الضَّعِيف

-‘‘সনদ মুনকাতী‘ঈ (সনদের মাঝে কোনো একজন বিচ্ছিন্ন) হওয়া যঈফ হাদিসের অর্ন্তভুক্ত (জাল নয়)।’’ (তাওজিহুন নযর ইলা উসূলিল আছার, ২/৭৩০ পৃ.)

❏ বুখারী শরীফের ব্যাখ্যাকার আল্লামা কাস্তাল্লানী (رحمة الله) লিখেন-

والْمُنْقَطِعَ مِنْ قِسْمِ الضَّعِيفِ

-‘‘সনদ মুনকাতী‘ঈ (সনদের মাঝে কোনো একজন বিচ্ছিন্ন) হওয়া যঈফ হাদিসের অর্ন্তভুক্ত (জাল নয়)।’’ (কাস্তাল্লানী, ইরশাদুস সারী, ১/২১ পৃ.)

❏ আল্লামা ইবনে হাজার আসকালানী (رحمة الله) উল্লেখ করেন-

والْمُنْقَطِعَ مِنْ قِسْمِ الضَّعِيفِ

-‘‘সনদ মুনকাতী‘ঈ (সনদের মাঝে কোনো একজন বিচ্ছিন্ন) হওয়া যঈফ হাদিসের অর্ন্তভুক্ত (জাল নয়)।’’ (ইবনে হাজার, ফতহুল বারী, ১/৩৪৭ পৃ.)

❏ আহলে হাদিসদের ইমাম শাওকানী লিখেন-

أَنَّ الْمُنْقَطِعَ مِنْ قِسْمِ الضَّعِيفِ

-‘‘নিশ্চয় সনদ মুনকাতী‘ঈ (সনদের মাঝে কোনো একজন বিচ্ছিন্ন) হওয়া যঈফ হাদিসের অর্ন্তভুক্ত (জাল নয়)।’’ (নায়লুল আউতার, ৬/৩৭৫ পৃ.)

ঙ. ইমাম ইবনে হাজার আসকালানী (رحمة الله) লিখেন-

فقد صرح بأن رواية المجهول من قسم الضعيف

-‘‘এ বিষয়টি সুস্পষ্ট যে সনদ মাজহুল হওয়া যঈফ সনদের অর্ন্তভুক্ত (জালের নয়)।’’ (ইবনে হাজার, আন-নুক্কাত, ৩৮৭ পৃ.)

তাই কোনো মুহাদ্দিসের সনদ বিষয়ে কোনো দুর্বলতা বুঝায় এমন শব্দ দ্বারা কোনো হাদিসকে জাল বলা যাবে না।

বিষয় নং-৮: সিকাহ রাবীর মুরসাল হাদিস গ্রহণযোগ্য:

✦ অভিমত নং-০১-১০: 

বর্তমান আহলে হাদিসগণের দৃষ্টিতে মুরসাল হাদিস দ্বঈফ হিসেবে গণ্য তাই তা গ্রহণযোগ্য নয়, অথচ এটি হচ্ছে তাদের মনগড়া নীতিমালা। বিশেষ করে আলবানী ও তার কতিপয় অনুসারী এ নিয়ে খুবই বেশী বাড়াবাড়ি করতে দেখা যায়। পৃথিবীর জমহুর উলামাগণের মাযহাব হলো তাবেয়ী যদি সিকাহ বা নির্ভরযোগ্য হয় তাহলে তার মুরসাল গ্রহণযোগ্য।

✦ অভিমত নং-০১: আল্লামা মোল্লা আলী ক্বারী (رحمة الله) একটি হাদিসের সনদ সম্পর্কে বলতে গিয়ে বলেন-

وَقَالَ أَبُو دَاوُدُ: هَذَا مُرْسَلٌ : أَيْ: نَوْعٌ مُرْسَلٌ وَهُوَ الْمُنْقَطِعُ لَكِنَّ الْمُرْسَلَ حُجَّةٌ عِنْدَنَا وَعِنْدَ الْجُمْهُورِ

-‘‘ইমাম আবু দাউদ বলেন সনদটি মুরসাল, আর মুরসাল হলো মুনকাতে‘ঈ এর প্রকার। তবে জমহুর মুহাদ্দিসীনে কেরামের নিকট মুরসাল হুজ্জাত বা দলিলের উপযুক্ত।’’ (মিরকাতুল মাফাতিহ, ১/৩৬৮ পৃ. হা/৩২৩, কিতাবুত ত্বহারাত)  

✦ অভিমত নং-২: আল্লামা আনোওয়ার শাহ কাশ্মীরী লিখেন-

وقال النسائي: إنه مرسل، أقول: إن المرسل حجة عند الجمهور

-‘‘ইমাম নাসাঈ (رحمة الله) বলেন, এ হাদিসটি মুরসাল, আমি বলি, তবে জমহুর মুহাদ্দিসীনে কেরামের নিকট মুরসাল হুজ্জাত বা দলিলের উপযুক্ত।’’ (আরফুয মাযী, ১/৪৩৭ পৃ.)

✦ অভিমত নং-৩: আল্লামা মোল্লা আলী ক্বারী (رحمة الله) এক স্থানে তিনি লিখেন-

قُلْتُ: الْمُرْسَلُ حُجَّةٌ عِنْدَ الْجُمْهُورِ

-‘‘আমি (মোল্লা আলী ক্বারী) বলেন, মুরসাল হাদিস জমহুর উলামায়ে কিরামের নিকট হুজ্জাত।’’ (মেরকাত, ২/৭৯৫ পৃ. হা/১০০৬)

✦ অভিমত নং-৪: তিনি তার আরেক সুপ্রসিদ্ধ পুস্তকে লিখেন-

قلت المرسل حجة عند الجمهور

-‘‘মুরসাল হাদিস জমহুর উলামায়ে কিরামের নিকট হুজ্জাত।’’ (শরহে শিফা, ১/৪৫০ পৃ.)

✦ অভিমত নং-৫: তিনি তার আরেক পুস্তকে লিখেন-

قُلْتُ الْمُرْسَلُ حُجَّةٌ عِنْدَ الْجُمْهُورِ

-‘‘মুরসাল হাদিস জমহুর উলামায়ে কিরামের নিকট হুজ্জাত।’’ (আসরারুল মারফূআ, ৩৪০ পৃ. হা/৪৮১-এর আলোচনা।)

✦ অভিমত নং-৬: তিনি আরও লিখেন-

قَالَ جُمْهُور الْعلمَاء: إِن الْمُرْسل حجَّة مُطلقًا

-‘‘অধিকাংশ আলেমগণ বলেন, সাধারণভাবে মুরসাল হাদিস নিকট হুজ্জাত।’’ (শরহে নুখবাতুল ফিকর, ৪০৩ পৃ.)

✦ অভিমত নং-৭: ইমাম জুরকানী (رحمة الله) লিখেন-

لِأَنَّ الْمُرْسَلَ حُجَّةٌ عِنْدَنَا

-‘‘নিশ্চয় মুরসাল হাদিস আমাদের (মুহাদ্দিসদের) নিকট হুজ্জাত হবার উপযোগী।’’ (জুরকানী, শারহে মুয়াত্তা, ১/৬৩ পৃ.)

✦ অভিমত নং-৮: আল্লামা বদরুদ্দীন আইনী (رحمة الله) লিখেন-

لِأَن الْمُرْسل حجَّة عندنَا.

-‘‘আমাদের (হানাফীদের) নিকট মুরসাল হাদিস হুজ্জাত।’’ (আইনী, উমদাতুল ক্বারী, ২/১৬২ পৃ. এবং ৬/২৩২ পৃ.)

✦ অভিমত নং-৯: আহলে হাদিস মোবারকপুরী লিখেন-

وَالْحَدِيثُ الْمُرْسَلُ حُجَّةٌ عِنْدَ الْإِمَامِ أَبِي حَنِيفَةَ وَمَالِكٍ وَأَحْمَدَ مُطْلَقًا

-‘‘ইমাম আযম আবূ হানিফা, ইমাম মালেক এবং ইমাম আহমদ (رحمة الله)-এর নিকট দ্ব্যর্থহীনভাবে মুরসাল হাদিস হুজ্জাত।’’ (তুহফাতুল আহওয়াজি, ২/৮১ পৃ.)

✦ অভিমত নং-১০: আল্লামা কাযি সানাউল্লাহ পানিপথী (رحمة الله) বলেন-

قلنا المرسل حجة

-‘‘আমরা (হাদিসবিজ্ঞানী) বলি, মুরসাল হাদিস হুজ্জাত।’’ (তাফসিরে মাযহারী, ১/৩১৮ পৃ.)

✦ অভিমত নং-১১-১৪:

✦ অভিমত নং-১১: ইমাম মোল্লা আলী ক্বারী (رحمة الله) তাঁর সুপ্রসিদ্ধ গ্রন্থে লিখেন-

وَأُعِلَّ بِالْإِرْسَالِ وَهُوَ لَا يَضُرُّ ; لِأَنَّ الْمُرْسَلَ حُجَّةٌ عِنْدَ الْجُمْهُورِ

-‘‘মুরসাল হাদিসের সমালোচনা ক্রটির কারণ নয়। কেননা মুরসাল অধিকাংশ মুহাদ্দিসের মতে হুজ্জাত।’’ (জামেউল ওসায়েল ফি শারহিল শামায়েল, ১/৮৮ পৃ.)

✦ অভিমত নং-১২: তিনি এ গ্রন্থের আরেক স্থানে লিখেন-

قُلْتُ: الْمُرْسَلُ حُجَّةٌ عِنْدَ الْجُمْهُورِ

-‘‘আমি (ইবনে হাজার) বলি, মুরসাল হুজ্জাত হবার বিষয়ে জমহুর উলামায়ে কিরামগণ একমত।’’ (জামেউল ওসায়েল ফি শারহিল শামায়েল, ১/১৪৯ পৃ.)

✦ অভিমত নং-১৩: তিনি অন্যত্র একটি মুরসাল হাদিস প্রসঙ্গে লিখেন-

وَهُوَ لَا يَضُرُّ، فَإِنَّ مَذْهَبَنَا وَمَذْهَبَ الْجُمْهُورِ أَنَّ الْمُرْسَلَ حُجَّةٌ

-‘‘মুরসাল হওয়াটা ক্ষতিকর নয়। যেহেতু আমাদের এবং অধিকাংশ হাদিস বিজ্ঞানীর মতে মুরসাল হাদিস হুজ্জাত।’’ (জামেউল ওসায়েল ফি শারহিল শামায়েল, ১/২৪৯ পৃ.)

❏ তিনি অন্যত্র লিখেন-

وَالْحَدِيثُ الْمُرْسَلُ حُجَّةٌ عِنْدَ الْجُمْهُورِ

-‘‘মুরসাল হাদিস জমহুর ওলামায়ে মুহাদ্দিসীনের নিকট হুজ্জাত হবার উপযোগী।’’ (জামেউল ওসায়েল ফি শারহিল শামায়েল, ১/২২৭ পৃ.)

✦ অভিমত নং-১৪: আল্লামা যারকাশী (رحمة الله) লিখেন-

فَإِن الْمُرْسل حجَّة عِنْد مَالك كَمَا نَقله ابْن عبد الْبر وَالْقَاضِي أَبُو بكر وَغَيرهمَا وَكَذَلِكَ عِنْد أَحْمد كَمَا نَقله ابْن عبد الْبر وَالْقَاضِي [أَبُو بكر]

-‘‘ইমাম মালেকের নিকট মুরসাল হাদিস হুজ্জাত, যা ইমাম ইবনে আবদুল বার (رحمة الله) এবং কাযি আবু বকর (رحمة الله)সহ অন্যান্যরা তার থেকে বর্ণনা করেছেন, এমনিভাবে এ দুই মুহাদ্দিস ইমাম আহমদ (رحمة الله)-এর মতও অনুরূপ উল্লেখ করেছেন।’’ (আন-নুক্কাত, ৪৯২ পৃ.)

উপরের আলোচনা থেকে প্রমাণিত হল যে মুরসাল হাদিস জমহুর মুহাদ্দিস, ফুকাহা, মুফাসসিরগণের নিকট হুজ্জাত, তাই আমাদের অধিকাংশদের মতের দিকেই ধাবিত হতে হবে।

বিষয় নং-৯: সহীহ হাদিস কি শুধু বুখারী মুসলিমেই সীমাবদ্ধ?

আমাদেরসাধারণ শিক্ষিত কতিপয় লোক কখনো বলে থাকেন সহীহ হাদিস শুধু সহীহ বুখারী মুসলিমেই সীমাবদ্ধ। নাউযুবিল্লাহ!

আবার তাদের কোনো হযরতগণ বলে থাকেন যে না সিহাহ সিত্তাহ (তাদের দৃষ্টিতে কুতুবে সিত্তাহ) হলো নির্ভরযোগ্য হাদিস গ্রন্থ, এছাড়া আর কোনো অনুসরণযোগ্য হাদিস গ্রন্থ নেই। হাদিস শাস্ত্রের পাণ্ডিত্য অর্জনকারীদের নিকট তাদের এ কথাগুলো হাসির খোরাক। তাদের হাসার কারণ হলো এ ধরনের বক্তব্য আহলে হাদিসদের কোনো শায়খ অর্থাৎ ইবনে তাইমিয়া, ইবনুল কাইয়্যুম, শাওকানী, আলবানী, ইবনে বায, শায়খ উছাইমীনসহ প্রমুখ কেউই প্রদান করেননি যে, বুখারী ও মুসলিমেই শুধু সহীহ হাদিস সীমাবদ্ধ বা ৬টি প্রসিদ্ধ হাদিস গ্রন্থ ব্যতিত আর কোনো সহীহ হাদিসের গ্রন্থ নেই। আলবানী পর্যন্ত ‘সুনানে আরবাআ’ প্রসিদ্ধ হাদিস গ্রন্থের বাইরে অনেক গ্রন্থের সহীহ যঈফ নির্ণয় করেছেন বা টীকা করেছেন, অথচ তাদের আলবানীর এ তাহকীককৃত কিতাবগুলো দেখলেই এ বাতিল চিন্তাভাবনা দূর হয়ে যাওয়ার কথা ছিল। কোনো হাদিস বিশেষজ্ঞ (মুহাদ্দিস) আলিমের পক্ষে পৃথিবীর সমস্ত হাদিস সংগ্রহ করা সম্ভব নয়, এটা একটা সাধারণ কথা। পৃথিবীতে যত হাফেযুদ্দুনিয়া ছিলেন তারাও এ দাবী করেনি যে, আমরা একক পৃথিবীর সকল সহীহ হাদিস সংগ্রহ করে ফেলেছি।

❏ এ সম্পর্কে আহলে হাদিসদের ইমাম ইবনে তাইমিয়া লিখেন,

 لَوْ فُرِضَ انْحِصَارُ حَدِيثِ رَسُولِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فيها, فَلَيْسَ كُلُّ مَا فِي الْكُتُبِ يَعْلَمُهُ الْعَالِمُ, وَلَا يَكَادُ ذَلِكَ يَحْصُلُ لِأَحَدِ, بَلْ قَدْ يَكُونُ عِنْدَ الرَّجُلِ الدَّوَاوِينُ الْكَثِيرَةُ وَهُوَ لَا يُحِيطُ بِمَا فِيهَا. بَلْ الَّذِينَ كَانُوا قَبْلَ جَمْعِ هَذِهِ الدَّوَاوِينِ كانوا أَعْلَمَ بِالسُّنَّةِ مِنْ الْمُتَأَخِّرِينَ بِكَثِيرِ؛ لِأَنَّ كَثِيرًا مِمَّا بَلَغَهُمْ وَصَحَّ عِنْدَهُمْ قَدْ لَا يَبْلُغُنَا إلَّا عَنْ مَجْهُولٍ؛ أَوْ بِإِسْنَادِ مُنْقَطِعٍ؛ أَوْ لَا يَبْلُغُنَا بِالْكُلِّيَّةِ فَكَانَتْ دَوَاوِينُهُمْ صُدُورَهُمْ الَّتِي تَحْوِي أَضْعَافَ مَا فِي الدَّوَاوِينِ, وَهَذَا أَمْرٌ لَا يَشُكُّ فِيهِ مَنْ عَلِمَ الْقَضِيَّةَ.

-‘‘যদি ধরে নেয়া হয় যে, রাসূল (ﷺ)-এর সমস্ত হাদীসের কিতাবসমূহে সংকলন করা হয়েছে এবং রাসূল (ﷺ)-এর হাদিস এর মাঝেই সীমাবদ্ধ, তবে কোনো আলেম হাদীসের কিতাবের সকল বিষয়ে জ্ঞান অর্জন করবে, এটি সম্ভব নয়। আর কারও পক্ষে এটি ঘটেও না। বরং কারও নিকট সংকলিত অনেক হাদীসের কিতাব থাকতে পারে, কিন্তু সে এ সমস্ত কিতাবের সকল বিষয়ে জ্ঞান অর্জন করতে সামর্থ হয় না। প্রকৃতপক্ষে এ সমস্ত কিতাব সংকলনের পূর্বে যাঁরা ছিলেন, তাঁরা সুন্নাহ সম্পর্কে অধিক জ্ঞাত ছিলেন। তাঁদের কিতাব ছিল-তাঁদের অন্তর; যাতে সংরক্ষিত ছিল এ সমস্ত সংকলিত কিতাব থেকে কয়েক গুণ বেশি হাদিস। আর এ বিষয়ে জ্ঞান রাখে, এমন কেউই বিষয়টির ব্যাপারে সন্দেহ পোষণ করবে না।’’ ৭৫

➥৭৫. ইবনে তাইমিয়া, রফউল মালাম আনিল আইয়্যামাতুল আ‘লাম, ১/১৭পৃ.

ইবনে তাইমিয়ার বক্তব্য থেকে এ ব্যাপারে কারও দ্বিমত পোষণ করার অবকাশ থাকে না যে, হাদীসের বিষয়ে কিতাবসমূহ সংকলিত হওয়ার পূর্বে একেক মুহাদ্দিস ও ফকীহ সংকলিত হাদীসের কিতাবসমূহের চেয়ে কয়েক গুণ বেশি হাদিস জানতেন। আর সমস্ত সহীহ হাদিস কোনো মুহাদ্দিসের আয়ত্ত করাও সম্ভব নয়। অপরদিকে মনে রাখতে হবে যে, ইমামগণ অনেক সহীহ হাদিস জানা সত্ত্বেও তা লিপিবদ্ধ করে যেতে পারেননি। তার মানে এই নয় যে, তারা যেসব হাদিস লিপিবদ্ধ করেছেন কেবল তাই সহীহ, দুনিয়াতে আর কোনো সহীহ হাদিস নেই। এবার আমার এ বক্তব্যের বাস্তবতা প্রমাণের জন্য কয়েকজন ইমামের দৃষ্টান্ত তুলে ধরছি।

১. ইমাম বুখারী: আল্লামা ইবনুস সালাহ (رحمة الله) (ওফাত. ৬৪৩ হি.) বর্ণনা করেন-

وَقَدْ قَالَ الْبُخَارِيُّ: أَحْفَظُ مِائَةَ أَلْفِ حَدِيثٍ صَحِيحٍ، وَمِائَتَيْ أَلْفِ حَدِيثٍ غَيْرِ صَحِيحٍ

-‘‘ইমাম বুখারী (رحمة الله) বলেন, আমি এক লক্ষ সহীহ হাদিস এবং সহীহ নয়, এমন দুই লক্ষ হাদিস জানি।’’ ৭৬

➥৭৬. মুকাদ্দামাতু ইবনিস সালাহ, পৃষ্ঠা-২০, দারুল ফিকর ইলমিয়্যাহ, বয়রুত, লেবানন, আদি, আল-কামিল, মুকাদ্দামা, ১/১২৬পৃ. খতিবে বাগদাদী, তারিখে বাগদাদী, ২/২৫পৃ.

সম্মানিত পাঠকবৃন্দ! ইমাম বুখারী (رحمة الله) সুনিশ্চিতভাবে এক লক্ষ সহীহ হাদিস মুখস্ত জানেন বলে নিজের মত প্রকাশ করেছেন, আজ দুনিয়ায় লিপিবদ্ধ আকারে হাদিসের যে কিতাবগুলো রয়েছে তাকরার হাদিস (একই হাদিস বারংবার উল্লেখ) ব্যতিত এক লক্ষ শুধু সহীহ হাদিস পাওয়া দুষ্কর; কিন্তু একপ্রকার মূর্খ-জাহেলদের জন্য পরিতাপের বিষয় হলো যে, তারা বলে বেড়ায় কেবল বুখারী-মুসলিমেই সহীহ হাদিস সীমাবদ্ধ!

২. ইমাম আহমদ: ইমাম আহমাদ ইবনে হাম্বল (رحمة الله) সাড়ে সাত লক্ষ হাদীসের হাফেয ছিলেন। (ইমাম ইবনে হাজার আসকালানী, তাহযিবুত তাহযিব, ১ম খণ্ড)। হাদিস বিশেষজ্ঞগণ জানেন যে ইমাম আবূ যারওয়া (رحمة الله) হাফেযুদ্দীনিয়ার একজন। এ বিষয়ে ইমাম যাহাবী (رحمة الله) উল্লেখ করেন-

قَالَ ابْنُ أَبِي حَاتِمٍ: قَالَ سَعِيْدُ بنُ عَمْرٍو: يَا أَبَا زُرْعَةَ، أَنتَ أَحْفَظُ، أَمْ أَحْمَدُ؟ قَالَ: بَلْ أَحْمَدُ.

-‘‘ইমাম ইবনে আবি হাতেম (رحمة الله) বলেন, মুহাদ্দিস সাঈদ ইবনে আমর (رحمة الله) হাফেযুদ্দীনিয়া ইমাম আবু যারওয়া (رحمة الله) কে লক্ষ্য করে বলেন, হে আবু যারওয়া! আপনি বড় হাফেযুল হাদিস নাকি ইমাম আহমদ (رحمة الله) বড় হাফেযুল হাদিস? তিনি বললেন, না, বরং ইমাম আহমদই সবচেয়ে বড় হাফেযুল হাদিস।’’৭৭

➥৭৭. যাহাবী, সিয়ারু আলামিন নুবালা, ১১/১৮৭ পৃ.

❏ আল্লামা ইবনুল কাইয়্যুম জাওযী লিখেন-

قَالَ أَبُو الْحُسَيْنِ: وَسَأَلْت جَدِّي مُحَمَّدَ بْنَ عُبَيْدِ اللهِ، قُلْت: فَكَمْ كَانَ يَحْفَظُ أَحْمَدُ بْنُ حَنْبَلٍ؟ قَالَ: أَخَذَ عَنْ سِتِّمِائَةِ أَلْفٍ.

-‘‘শায়খ আবুল হুসাইন তিনি তার দাদা মুহাম্মদ ইবনে উবায়দুল্লাহ জিজ্ঞেস করলাম যে ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল (رحمة الله) কত হাদিস হেফ্য করেছেন? তিনি ৬ লক্ষ হাদিস থেকে মুসনাদ সংকলন করেছেন।’’ ৭৮

➥৭৮. ইবনুল কাইয়্যুম, ইলামুল মুয়াককিন, ১/৩৬ পৃ.

উপরের আলোচনা থেকে প্রমাণিত হল যে, আল্লাহর নবী (ﷺ)’র অনেক হাদিসই লিপিবদ্ধ হয়নি, যা মুহাদ্দিসগণ মুখস্ত করেছিলেন।

৩. ইমাম মুসলিম: ইমাম যাহাবী (رحمة الله) উল্লেখ করেন-

وَقَالَ الحُسَيْنُ بنُ مُحَمَّدٍ المَاسَرْجِسِي: سَمِعْتُ أَبِي يَقُوْلُ: سَمِعْتُ مسلماً يَقُوْلُ: صنَّفْتُ هَذَا (المُسْنَد الصَّحِيْح) مِنْ ثَلاَث مائَة أَلْف حَدِيْث مَسْمُوْعَة

-‘‘মুহাদ্দিস হুসাইন বিন মুহাম্মদ মাসারজীসি (رحمة الله) বলেন, আমি আমার সম্মানিত পিতা থেকে শুনেছি, তিনি বলেছেন, আমি ইমাম মুসলিম (رحمة الله) কে বলতে শুনেছি, আমি তিন লক্ষ হাদিস থেকে (বাছাই করে) মুসলিম শরীফ সংকলন করেছি।’’ ৭৯

➥৭৯. ইমাম যাহাবী, সিয়ারু আলামিন নুবালা, ১২/৫৬৫ পৃ. ক্রমিক. ২১৭

উপরের আলোচনা থেকে প্রমাণিত হল যে আল্লাহর নবী (ﷺ)’র অনেক সহীহ হাদিসই ইমাম মুসলিম (رحمة الله) লিপিবদ্ধ করেননি, যা তাঁর হিফ্য বা মুখস্ত ছিল।

৪. ইমাম আবু দাউদ: ইমাম যাহাবী (رحمة الله) উল্লেখ করেন-

وَقَالَ أَبُو بَكْرٍ بنُ دَاسَةَ: سَمِعْتُ أَبَا دَاوُدَ يَقُوْلُ: كَتَبْتُ عَنْ رَسُوْلِ اللهِ -صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ- خَمْسَ مائَةَ أَلْفِ حَدِيْثٍ، انْتَخَبْتُ مِنْهَا مَا ضَمَّنْتُهُ هَذَا الكِتَابَ -يَعْنِي: كِتَابَ (السُّنَنِ)- جمعتُ فِيْهِ أَرْبَعَةَ آلاَفِ حَدِيْثٍ وثمَانِي مائَةِ حَدِيْثٍ، ذَكَرْتُ الصَّحِيْحَ ، وَمَا يُشْبِهُهُ وَيُقَارِبُهُ

-‘‘মুহাদ্দিস আবু বকর ইবনে দাসাহ (رحمة الله) বলেন, আমি ইমাম আবু দাউদ (رحمة الله) কে বলতে শুনেছি, তিনি বলেছেন, আমি পাঁচ লক্ষ হাদিস থেকে বাছাই করে চার হাজার আটশত হাদিস কিতাবুস-সুনানে সন্নিবেশ করেছি। আমি সহীহ, সহীহর সাথে সাদৃশ্যযুক্ত এবং তার কাছাকাছি হাদিস এতে উল্লেখ করেছি।’’ ৮০

➥৮০. ইমাম যাহাবী, সিয়ারু আলামিন নুবালা, ১৩/২১০ পৃ. ক্রমিক. ১১৭

উপরের বর্ণনা থেকে প্রমাণিত হল যে, আল্লাহর নবী (ﷺ)’র অনেক হাদিসই ইমাম আবূ দাউদ (رحمة الله)’র মুখস্ত ছিল, তিনি তা জানা সত্ত্বেও সব হাদিস লিপিবদ্ধ করা সম্ভব হয়নি বিভিন্ন কারণে।

৫. ইমাম আবু যুরআ‘: ইমাম আবু যুরআ‘ (رحمة الله) সাত লক্ষ হাদীসের হাফেয ছিলেন। এজন্য তিনি হাফেযুদ্দুনীয়ার একজন। ইমাম যাহাবী (رحمة الله) উল্লেখ করেন-

وَقَالَ مُحَمَّدُ بنُ بَشَّارٍ: حُفَّاظُ الدُّنْيَا أَرْبَعَةٌ: أَبُو زُرْعَةَ بِالرَّيِّ، وَمُسْلِمٌ بِنَيْسَابُوْرَ، وَعَبْدُ اللهِ بنُ عَبْدِ الرَّحْمَنِ بِسَمَرْقَنْدَ، وَمُحَمَّدُ بنُ إِسْمَاعِيْلَ بِبُخَارَى.

-‘‘মুহাদ্দিস মুহাম্মদ বিন বাশ্শার (رحمة الله) বলেন, পৃথিবীর মধ্যে হাফেযুদ্দুনিয়া ফিল হাদিস চারজন, ক. রায়-এ আবূ যারআ‘, খ. সমরকন্দে দারিমী, গ. বুখারায় মুহাম্মদ বিন ইসমাঈল এবং ঘ. নাইশাপুরে মুসলিম ইবনে হাজ্জাজ।’’৮১

➥৮১. ইমাম যাহাবী, সিয়ারু আলামিন নুবালা, ১২/২২৬ পৃ. ক্রমিক. ৭৮

ইসলামের ইতিহাসে অসংখ্য হাফেযে হাদিসের জন্ম হয়েছে। আমরা জানি হাফেযে হাদিস বলা হয় সেই মুহাদ্দিসকে, যিনি ন্যূনতম এক লক্ষ হাদিস সনদ ও মতনসহ হিফ্য করেছেন এবং সেটি আয়ত্তে রেখেছেন। ইমাম যাহাবীর ‘তাযকিরাতুল হুফফায’ নামক কিতাবে হাফেযে হাদিসদের জীবনী লিপিবদ্ধ করা হয়েছে। এছাড়াও আরও অনেক মুহাদ্দিস হাফেযুল হাদিসদের জীবনী নিয়ে গ্রন্থ রচনা করেছেন। এ সমস্ত হাফেযুল হাদিস লক্ষলক্ষ হাদিস মুখস্থ করা সত্ত্বেও নিজেকে স্বয়ংসম্পূর্ণ হওয়ার এবং আল্লাহর নবীর সকল সহীহ হাদিস তাঁরা সংগ্রহ করতে পেরেছেন বলে দাবি করেননি; কিন্তু পরিতাপের বিষয় হলো, বর্তমান সময়ে কতিপয় লোক বিশুদ্ধভাবে একটি হাদিসও পাঠ করার যোগ্যতা রাখে না, এ সমস্ত ব্যক্তিদের নিকট যখন সহীহ বুখারী মুসলিম ব্যতিত অন্য কোনো কিতাব থেকে কোনো হাদিস তেলাওয়াত করা হয় তখন সে মুজতাহিদ তবকার হাফেযুল হাদিসদের ন্যায় ভাব নিয়ে বলেন, হাদিসটি কি সহীহ বুখারী মুসলিমে আছে! যদি বলা হয়, না, তখন সে বলে দেন এটি সহীহ নয়। অথচ হাদিস সহীহ হওয়ার জন্য হাদিসের সনদ সহীহ হওয়া শর্ত, কোনো কিতাব নয়। আল্লাহ পাক আমাদেরকে এ সমস্ত ফিতনাবাজ লোকদের থেকে হেফাজত করুন, আমিন।

উপরের আলোচনা থেকে প্রতিয়মান হয় যে, সহীহ হাদিস নির্ধারিত কতিপয় গ্রন্থেই সীমাবদ্ধ নয়, যে লিখকের কিতাবেই হাদিস সংকলিত হোক না কেনো তিনি এবং তার সংকলিত সনদ যদি সহীহ বা নির্ভরযোগ্য হয় তাহলেই সে হাদিসকে সহীহ বলে স্বীকৃতি দিতে হবে, যদি সে নিজেক রাসূল (ﷺ)-এর উম্মত বলে দাবী করে থাকেন। পৃথিবীর সকল মুহাদ্দিস হাদিস সহীহ হওয়ার জন্য হাদিসের সনদ সহীহ হওয়া শর্তারোপ করেছেন, তাই বলে তারা শুধু মুষ্টিমেয় কতিপয় সহীহ হাদিসের কিতাবকে সহীহ হাদিসের সীমাবদ্ধতা আরোপ করেননি।

বিষয় নং-১০: শায়খ আলবানীর ধোঁকা থেকে সাবধান!

আমি আমার এ গ্রন্থে যাদের খণ্ডন করেছি তাদের মধ্যে অন্যতম একজন হলেন আহলে হাদিসের তথাকথিত ইমাম নাসিরুদ্দীন আলবানী (মৃত্যু. ১৪২০ হি.)। এ লোকটি ১৯১৪ ঈসায়ী সালে ইউরোপের একটি দেশ আলবেনিয়ায়র রাজধানী কুদরাহ্তে জন্ম গ্রহণ করেন। আলবেনিয়ায় জন্ম গ্রহণ করার কারণে তাকে আলবানী বলা হয়। তার পুরো নাম হলো আবু ‘আবদুর রাহমান মুহাম্মদ নাছির উদ্দিন আলবানী’। তার পিতার নাম নূহ নাতাজী আলবানী আল-হানাফী। তিনি ছিলেন তৎকালিন সময়ের একজন প্রসিদ্ধ হানাফী আলেম। আলবানীও প্রাথমিক যুগে হানাফী ছিলেন এবং তার সম্মানিত পিতার বন্ধু শায়খ সায়ীদ আল-বুরহানীর নিকট সে হানাফি মাযহাবের অনেক ফিক্হের গ্রন্থ অধ্যায়ন করেন। ৮২

➥৮২. যা আমি লিখলাম সেগুলো হুবহু আহলে হাদিস আবুল কালাম আযাদ আলবানীর জীবনীতে এবং তার একটি আরবী পুস্তকের বাংলা অনুবাদ ‘‘ছহীহ হাদিসের পরিচয় ও হাদীছ বর্ণনার মূলনীতি’’ বইয়ের ৭-৮ পৃষ্ঠায় তা লিখেছেন। (আযাদ প্রকাশন, আন্দরকিল্লা, চট্টগ্রাম) এ ছাড়া সৌদি আরব থেকে তাঁর আরাবীতে বিশাল জীবনী গ্রন্থ ‘‘সাবাতু মুয়ালাফাতিল আলবানী’’ (যা লিখেছেন আবদুল্লাহ ইবনে মুহাম্মদ আশ্-শামরানী) বের হয়েছে সেখানেও লিখা হয়েছে তিনি প্রথমে হানাফি মাযহাবের অনুসারী ছিলেন পরে মুজতাহিদ হয়ে গেছেন। (দেখুন-পৃ. ২ ও ১৬)

পরে সে নিজে পথভ্রষ্ট হয়ে সকল মাযহাবকেই অস্বীকার করে বসেন এবং মাযহাব মানাকে হারাম, শিরক পর্যন্ত ঘোষণা করে বসে। অথচ তার সম্মানিত পিতা ও সে নিজেও হানাফী মাযহাবের অনুসারী ছিল।

আলবানী এমন কোন হাদিস গবেষক নয়, তার অধিকাংশ সময় কেটেছে ঘড়ি মেরামত করে।  

➥৮৩. আবুল কালাম আযাদ আলবানীর জীবনীতে এবং তার একটি আরবী পুস্তকের বাংলা অনুবাদ ‘‘ছহীহ হাদিসের পরিচয় ও হাদীছ বর্ণনার মূলনীতি’’ বইয়ের ৭ পৃষ্ঠায় তা লিখেছেন। (আযাদ প্রকাশন, শাহী জামে মসজিদ, আন্দরকিল্লা, চট্টগ্রাম)

আহলে হাদিসগণ ঘড়ির ডাক্তারসহ বিভিন্ন ডাক্তারদের কথা মানতে তাদের কোন অসুবিধা হয় না, কিন্তু আমরা একজন তাবেয়ী ইমাম আবু হানিফা (رحمة الله) এর কথা মানলে তাদের এত গাঁ জ্বলা, অথচ হাদিসের পরিভাষায় উনার কথাও হাদিস।

❏ আলবানীর অনুসারীরা তার প্রশংসায় লিখেছে যে-‘‘পৃথিবীর মুসলিমদের সম্মুখে বিশুদ্ধ সুন্নাহ উপস্থাপন কারার তাওফীক যে কয়জন বান্দাকে দিয়েছেন তাদের মধ্যে হাফিয যাহাবী (رحمة الله), ও হাফিয ইবনে হাজার আসকালানী (رحمة الله)-এর পর আল্লামা মুহাম্মদ নাছির উদ্দিন (رحمة الله)-এর নাম বিশেষভাবে উল্লেখ করা যেতে পারে।’’ ৮৪

➥৮৪. আবুল কালাম আযাদ, ছহীহ হাদিসের পরিচয় ও হাদীছ বর্ণনার মূলনীতি, ৭ পৃষ্ঠা

সম্মানিত পাঠকবৃন্দ! তাদের কাছে হাফেযুল হাদিস ইমাম সুয়ূতি (رحمة الله)সহ অনেক বিজ্ঞ হাদিস বিশারদ যারা ইলমে হাদিসের জন্য নিজের জীবনকে অতিবাহিত করে দিয়েছেন সে মুহাদ্দিসদের কোন নাম তাদের মুখে আসলো না, আসলো পৃথিবীর সবচেয়ে মনগড়া তাহকীককারী আলবানী নাম। অথচ সে ইমাম যাহাবী (رحمة الله)‘র সমালোচনা করেছে, যা নিম্নে আলোচনা করা হবে।

আলবানী অসংখ্য মুতাওয়াতির পর্যায়ের হাদিসকেও দ্বঈফ ও মওদ্বু বা জাল বলে তার বিভিন্ন গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন। সেগুলো আমি এখানে দ্বিতীয় বার আলোচনা করতে চাই না, কারণ এ গ্রন্থের বিভিন্ন স্থানে বিভিন্ন হাদিসের আলোচনায় তার ভুয়া তাহক্বীকের জবাবে আলোচনা হবে।

যে কারণে আলবানীর তাহকীক অনুসরণ করা হবে না:

ক. ইমাম-মনীষীদের সমালোচনা:

ক. ইমাম-মনীষীদের সমালোচনা: এ আলবানী নামক লোকটির সমালোচনা থেকে পৃথিবীর বিজ্ঞবিজ্ঞ ইমামগণও বাঁচতে পারে নি। সে তার ‘সিলসিলাতুল আহাদিসুদ্ দ্বঈফাহ’ গ্রন্থের বিভিন্ন স্থানে ইমাম তিরমিযীর ব্যাপারে লিখেছেন, ইমাম তিরমিযী তাঁর সুনানে কত জাল হাদিসকে যে হাসান, সহীহ বলে ফেলেছেন তার কোন হিসাব নেই। ৮৫

➥৮৫. আলবানী, সিলসিলাতুল আহাদিসুদ্-দ্বঈফাহ ওয়াল মাওদ্বুআহ, ১/৮৫ পৃ. হা/২৪

আলবানী নামক এ লোকটির দৃষ্টিতে একটি হাদিস সহীহ নয়, অথচ অন্যান্য মুহাদ্দিস তাকে সহীহ বলায় তিনি হাদিসের বিখ্যাত তিন জন হাফেযুল হাদিসের তথা

❏ ইমাম হাকিম নিশাপুরী, ইমাম যাহাবী, ইমাম মুনযিরী (رحمة الله) সমালোচনায় লিখেন-

وقال الحاكم: صحيح الإسناد ! ووافقه الذهبي! وأقره المنذري في الترغيب (৩/১৬৬)! وكل ذلك من إهمال التحقيق، والاستسلام للتقليد، وإلا فكيف يمكن للمحقق أن يصحح مثل هذا الإسناد

-‘‘ইমাম হাকিম (رحمة الله) বলেছেন, হাদিসটির সনদ সহীহ। ইমাম যাহাবী (رحمة الله) তাঁর সাথে একত্মাতা পোষণ করেছেন। ইমাম মুনযিরী (رحمة الله) ‘তারগীব ও তারহীব’ নামক কিতাবে তার স্বীকৃতি দিয়েছেন। আর এটি হয়েছে, তত্ত্ব-বিশ্লেষণের প্রতি উদাসীনতা, তাক্বলীদের প্রতি আত্মসমর্পণ (অন্ধানুকরণ), নতুবা একজন বিশ্লেষণধর্মী আলেম কিভাবে একে সহীহ বলতে পারেন!।’’ (আলবানী, সিলসিলাতুল আহাদিসুদ্-দ্বঈফাহ ওয়াল মাওদ্বুআহ, ৩/৪৭৯ পৃ. হা/১২৫৯)

সম্মানিত পাঠকবৃন্দ! আলবানীর যদি একটুও লজ্জাবোধ থাকতো এমন মহান তিনজন ইমামের সমালোচনা করতে পারতেন না। অথচ এ সমস্ত আলেমদের সে ছাত্র হওয়ারও যোগ্য নন। ইমাম যাহাবী (رحمة الله)-এর লিখিত আসমাউর রিজালের গ্রন্থ পড়ে সকল মুহাদ্দিসদের হাদিসের সনদ বিশ্লেষণ করতে হয় সেই মহান ইমাম যাহাবী (رحمة الله)-এর সমালোচনা!

❏ তার এ গ্রন্থের আরেক স্থানে হাফেযুল হাদিস ইমাম জালালুদ্দীন সুয়ূতি (رحمة الله)‘র সমালোচনা করতে গিয়ে লিখেন-

فيا عجبا للسيوطى كيف لم يخجل من تسويد كتابه الجامع الصغير بهذا الحديث.....

-‘‘কী আশ্চর্য! জালালুদ্দীন সুয়ূতি (رحمة الله) তাঁর জামেউস সগীরে কিভাবে এ হাদিস উল্লেখ করতে একটু লজ্জাবোধ করলেন না! (আলবানী, সিলসিলাতুল আহাদিসুদ্-দ্বঈফা, ৩/৪৭৯পৃ. হা/১৩১৪) নাউযুবিল্লাহ!

❏ তিনি তার এ পুস্তকে ইমাম সুয়ূতি (رحمة الله)‘র গ্রহণযোগ্যতা সম্পর্কে বলেন-

وجعجع حوله السيوطى

-‘‘ইমাম জালালুদ্দীন সুয়ূতি (رحمة الله) হাকডাক (কোলাহলপূর্ন, হট্ট গোলপূর্ন) ছেড়ে থাকেন।’’ (আলবানী, সিলসিলাতুল আহাদিসুদ্-দ্বঈফা, ৪/১৮৯পৃ. হা/১৬৯৫)

দেখুন ইমাম সুয়ূতি (رحمة الله)‘র মত একজন হাফেযুল হাদিস, মুজাদ্দিদের তাহক্বীক তাঁর কাছে নাকি হট্টগোল করার মত! একজন হাদিসের খাদেম কি এ বেয়াদবি সহ্য করতে পারেন!

❏ সে তাঁর সম্পর্কে আরেক স্থানে লিখেন-

وقعقع حوله السيوطي في اللآلي؛ فلم يصنع شيئاً كغالب عادته! وقد أقره في الجامع الكبير. وتساهل بعضهم فحسنه!

-‘‘ইমাম জালালুদ্দীন সুয়ূতি (رحمة الله) এর লা-আলিল মাসনূআ এর হাওয়ালা কোলাহলপূর্ণ, .......তিনি এ (তার দৃষ্টিতে যঈফ) হাদিসকে হাসান বলার ক্ষেত্রে ঢিলেমীর পরিচয় দিয়েছেন।’’ (আলবানী, সিলসিলাতুল আহাদিসিদ দ্বঈফাহ, ১১/৬২৪ পৃ. হা/৫৩৭৩)

❏ সে ইমাম তাজুদ্দীন সুবকী (رحمة الله) যিনি ইমাম তকি উদ্দিন সুবকী (رحمة الله)‘র ছেলে এবং বিজ্ঞ হাদিস বিশারদ, হাফেযে হাদিস আলেম ছিলেন; তাঁর সমালোচনা করতে গিয়ে লিখেন-

 لكنه دافع عنه بوازع من التعصب المذهبى لا فائدة كبرى من نقل كلامه وبيان مافيه من التعصب

-‘‘মাযহাব অনুসরণের গোঁড়ামী তাকে প্ররোচিত করেছে। তাঁর কথা উল্লেখ করে এবং তাঁর গোঁড়ামির কথা আলোচনা করার মধ্যে তেমন উলে­যোগ্য কোনো উপকারিতা নেই।’’ (আলবানী, সিলসিলাতুল আহাদিসুদ্-দ্বঈফাহ, ২/২৮৫ পৃ.)

সে আরও অসংখ্য হক্কানী ইমামের সমালোচনা করেছে; তার অসংখ্য কুফুরী আক্বীদা এবং তার ভূয়া তাহক্বীকের জবাবে আমি ইনশা আল্লাহ! শীঘ্রই বিস্তারিতভাবে বই প্রকাশ করবো।

❏ আলবানী পৃথিবী বিখ্যাত দুই হাদিসের মহান ইমাম সম্পর্কে লিখেন-

فلا يفيد بعد الاطلاع على هذا أن ابن خزيمة أخرجه، لا سيما وهو معروف عند أهل المعرفة بهذا الفن أنه متساهل في التصحيح،على نحو تساهل تلميذه ابن حبان، الذي عرف عنه الإكثار من توثيق المجهولين

-‘‘ইমাম ইবনে খুজায়মা (رحمة الله) এটিকে সহীহ বলে সংকলন করার মধ্যে কোনো ফায়েদা নেই, হাদিস শাস্ত্র সম্পর্কে পূর্ণজ্ঞাত লোকজন জানেন যে, ইমাম ইবনে খুজায়মা (رحمة الله) হাদিসকে সহীহ বলার ক্ষেত্রে বেশি শিথিলতাকারী, এমনিভাবে হাদিস সহীহ বলার ক্ষেত্রে শিথিলতাকারী হলেন তাঁর ছাত্র ইমাম ইবনে হিব্বান। তাকে অধিকাংশ মুহাদ্দিস মাজহুল রাবীকে সিকাহ বলার ব্যক্তি হিসেবেই চিনেন।’’ (আলবানী, সিলসিলাতুল আহাদিসিদ দ্বঈফাহ, ৩/৪০২ পৃ. হা/১২৪৭-এর আলোচনা)

❏ বিখ্যাত হাদিসের ইমাম, ইমাম হাকেম নিশাপুরী (ওফাত. ৪০৫ হি.)-এর নিকট একজন রাবী গ্রহণযোগ্য পর্যায়ের বলে তিনি তার একটি হাদিসকে সহীহ বলেছেন, এজন্য আলবানী তাঁর সমালোচনায় লিখেন-

ولذلك فقد أخطأ الحاكم خطأ فاحشا حين قال:

" هذا حديث صحيح الإسناد ! واغتر به الفقيه الهيتمي، فصححه في كتابه أسنى المطالب في صلة الأقارب (ق ৪১/১)

-‘‘এটি হাকেমের মারাত্মক ভুল যে, তিনি কুরুচিপূর্ণ বক্তব্য করেছেনঃ এ হাদিসের সনদ সহীহ। আর ফকীহ হাইতামী তার কথার কারণে ধোঁকায় পড়ে তার ‘আসনাল মাতালিব ফি সিলাতিল আকারিব’ গ্রন্থে (ক্বাফ, ১/৪১ পৃষ্ঠায়) সহীহ বলেছেন।’’ (আলবানী, সিলসিলাতুল আহাদিসিদ দ্বঈফাহ, ৩/৪৫৮ পৃ. হা/১২৯৪)

❏ বিখ্যাত হাদিস বিশারদ আল্লামা শায়খ আব্দুল ফাত্তাহ আবু গুদ্দাহ (رحمة الله) সম্পর্কে আলবানী লিখেন-

اشل الله يدك وقطع لسانك يدعو على العلامة الشيخ عبد غدة ويقول عنه:انه غدة كغدة البعير ثم يقول مستهزئا ضاحكا:اتعرفون غدة

-‘‘আল্লাহ্ তোমার হাত অবশ করে দিক এবং তোমার জিহবাকে কর্তন করুক। (কাশফুন নিকাব, পৃষ্ঠা-৫২)

এ রকম শতশত পূর্বের ও সমসাময়িক মুহাদ্দিসের সে ব্যাপারে কঠিন মন্তব্য করেছে।

খ. রাসূল (ﷺ)-এর রওজা যিয়ারত নিয়ে জঘন্য বক্তব্য:

❏ ইবনে তাইমিয়ার এ বাতিল মতবাদকে প্রচারকারীর অন্যতম শায়খ নাসিরুদ্দীন আলবানী রাসূল (ﷺ)-এর রওজা যিয়ারত সম্পর্কে লিখেছেন-

وأحاديث زيارة قبره صلى الله عليه وسلم كلها ضعيفة لا يعتمد على شيء منها في الدين، ولهذا لم يروأهل الصحاح والسنن شيئا منها، وإنما يرويها من يروي الضعاف كالدارقطني والبزار وغيرهما.

-‘‘রাসূল (ﷺ)-এর রওজা যিয়ারত সম্পর্কিত সকল হাদিস যঈফ। দ্বীনি বিষয়ে এগুলোর কোনটির উপরেই নির্ভর করা যায় না। সে কারণেই এ বিষয়ক হাদিস নির্ভরযোগ্য সহীহ, সুনান গ্রন্থের কোনো লেখক এ সংক্রান্ত কোনো হাদিস তাদের গ্রন্থগুলোতে বর্ণনা করেননি। সেগুলো বর্ণনা করেছেন তারাই যারা দুর্বল হাদিস বর্ণনা করে থাকেন যেমন- দারাকুতনী, বায্যার আরোও অনেকে।’’ (আলবানী, সিলসিলাতুল আহাসিদ দ্বঈফাহ, ১/১২৩ পৃ. হা/৪৭)

সম্মানিত পাঠকবৃন্দ! রাসূল (ﷺ)-এর রওজা যিয়ারতের বিরোদ্ধে যত কূটকৌশলই রয়েছে সবই প্রয়োগ করছে এ ইবনে তাইমিয়ার বাতিল মতবাদ প্রচারকারী এবং টাকার কিনা এ মুফতিগণ।

গ. সহীহ বুখারী-মুসলিমের হাদিসকে যঈফ বলার দৃষ্টতা:

আহলে হাদিসদের এ ইমাম সহীহ বুখারী মুসলিমের অনেক হাদিসকে যঈফ বলে চালিয়ে দিয়েছে, আর তাঁর দৃষ্টিতে যঈফ হাদিস জাল হাদিসেরই প্রকারের অর্ন্তভুক্ত।

✦ সহীহ বুখারীতে রয়েছে-

عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ، عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: قَالَ اللَّهُ تَعَالَى: ثَلاَثَةٌ أَنَا خَصْمُهُمْ يَوْمَ القِيَامَةِ، رَجُلٌ أَعْطَى بِي ثُمَّ غَدَرَ، وَرَجُلٌ بَاعَ حُرًّا فَأَكَلَ ثَمَنَهُ، وَرَجُلٌ اسْتَأْجَرَ أَجِيرًا فَاسْتَوْفَى مِنْهُ وَلَمْ يُعْطِهِ أَجْرَهُ

-‘‘(তথ্য সূত্র: ইমাম বুখারী, আস-সহীহ, ৩/৯০ পৃ. হা/২২৭০)

✦ এ সহীহ হাদিস বিষয়ে আলবানী লিখেছেন-

رواه أحمد والبخارى عن أبي هريرة. (ضعيف)

-‘‘হাদিসটি ইমাম আহমদ (رحمة الله) ও বুখারী (رحمة الله) হযরত আবূ হুরায়রা (رضي الله عنه) হতে বর্ণনা করেছেন, হাদিসটি যঈফ।’’ (আলবানী, যঈফু জামেউস সগীর ওয়া যিয়াদাহ, ১/৫৯০ পৃ. হা/৪০৫০)

দেখুন তিনি সহীহ বুখারী হাদিসের উপর কিভাবে আঙুল তুলেছেন!

✦ অথচ আলবানী মিশকাতের তাহকীকে একে সহীহ বলেছেন! (আলবানী, তাহকীকে মিশকাত, ২/৮৯৯ পৃ. হা/২৯৮৪, কিতাবুল ইজারাহ)

সহীহ বুখারীর আরও অনেক সহীহ হাদিসকে সে এভাবে যঈফ বলেছেন। এবার আমি সহীহ মুসলিম শরীফ থেকে একটি উদাহরণ পেশ করবো।

✦ ইমাম মুসলিম (رحمة الله) সংকলন করেন-

عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، قَالَ: إِذَا قَامَ أَحَدُكُمْ مِنَ اللَّيْلِ، فَلْيَفْتَتِحْ صَلَاتَهُ بِرَكْعَتَيْنِ خَفِيفَتَيْنِ

-‘‘(তথ্য সূত্র: ইমাম মুসলিম, আস-সহীহ, ১/৫৩২ পৃ. হা/৭৬৮)

✦ এ সহীহ হাদিস বিষয়ে আলবানী লিখেছেন-

رواه الإمام أحمد ومسلم عن أبي هريرة. (ضعيف)

-‘‘হাদিসটি ইমাম আহমদ (رحمة الله) ও মুসলিম (رحمة الله) হযরত আবূ হুরায়রা (رضي الله عنه) হতে বর্ণনা করেছেন, হাদিসটি যঈফ।’’ (আলবানী, যঈফু জামেউস সগীর ওয়া যিয়াদাহ, ১/৮৯ পৃ. হা/৬১৯)

সম্মানিত পাঠকবৃন্দ! সে সহীহ বুখারী মুসলিমের এমন অনেক সহীহ হাদিসকে জাল যঈফ বলেছেন, যার বিস্তারিত আলোচনা আমার লিখিত ‘আলবানীর স্বরূপ উন্মোচন’ নামক গ্রন্থে পাবেন, ইনশা আল্লাহ।

ঘ. আলবানী নিজেই নিজেকে খণ্ডন:

আলবানী এক হাদিসকে যঈফ বলে নিজেই আবার তার অপর আরেক গ্রন্থে নিজের মতকে রদকে রদ করে সহীহ বলেন, যা কোনো নির্ভরযোগ্য আলেমের কাজ নয়। এ বিষয়ে আমি কয়েকটি উদাহরণ তুলে ধরছি।

১. খতিব তিবরিযি (رحمة الله)সহ আরও অনেকে সংকলন করেন-

وَعَنْ طَارِقِ بْنِ شِهَابٍ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: الْجُمُعَةُ حَقٌّ وَاجِبٌ عَلَى كُلِّ مُسْلِمٍ فِي جَمَاعَةٍ إِلَّا عَلَى أَرْبَعَةٍ: عَبْدٍ مَمْلُوكٍ أَوِ امْرَأَةٍ أَوْ صَبِيٍّ أَوْ مَرِيضٍ

-‘‘(তথ্য সূত্র: সুনানে আবি দাউদ, ১/২৮০ পৃ. হা/১০৬৭) এ হাদিসকে আলবানী স্ত্রী লোকদের মসজিদে গমন নিষেধ প্রমাণ হওয়ায় মিশকাতের তাহকীকে একে যঈফ বলে উড়িয়ে দিতে চেয়েছেন। (আলবানী, তাহকীকে মিশকাত, ১/৪৩৪ পৃ. হা/১৩৭৭, মাকতুবাতুল ইসলামী, বয়রুত, লেবানন, প্রকাশ. ১০৮৫ খৃ.)।

❏ অপরদিকে আলবানী এ হাদিসকে তার একাধিক গ্রন্থে সহীহ বলে তাহকীক করেছেন। (আলবানী, ইরওয়াউল গালীল, ৩/৫৪ পৃ. হা/৫৯২, সহীহ আবু দাউদ, হা/১০৬৭)

পাঠকবর্গ! আপনারাই চিন্তা করুন সে কেমন তাহকীককারী!

২. ইমাম আবু দাউদ ও খতিব তিবরিযি (رحمة الله)সহ আরও অনেকে সংকলন করেন-

عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ عَمْرٍو، عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: ্রالْجُمُعَةُ عَلَى كُلِّ مَنْ سَمِعَ النِّدَاءَ

-‘‘যে জুম‘আর আযান শুনবে তার জন্যই জুম‘আ।’’

(তথ্য সূত্র: ইমাম আবু দাউদ, আস-সুনান, ১/২৭৮ পৃ. হা/১০৫৬)

❏ অপরদিকে আলবানী এ হাদিসকে তার অন্য গ্রন্থে একে (حسن) ‘হাসান’ বলে তাহকীক করেছেন।

(আলবানী, ইরওয়াউল গালীল, ৩/৫৮ পৃ. হা/৫৯৩)

পাঠকবর্গ! আপনারাই চিন্তা করুন সে কেমন তাহকীককারী!

তার বিষয়ে এ ধরনের উদাহরণ শত শত দেয়া যেতে পারে, যার বিস্তারিত আমার লিখিত ‘আলবানীর স্বরূপ উন্মোচন’ নামক গ্রন্থে পাবেন, ইনশা আল্লাহ।

ঙ. বুখারী-মুসলিমের রাবীকে যঈফ বলা:

আহলে হাদিসদের ইমাম আলবানীর তাহকীক পর্যালোচনা করলে দেখা যায় যে সহীহ বুখারী-মুসলিমের অসংখ্য রাবীকে যঈফ বলে উড়িয়ে দিয়েছে। এ বিষয়ে আমি কয়েকটি উদাহরণ তুলে ধরছি।

১. আলবানী হযরত উমর (رضي الله عنه)-এর বর্ণিত একটি হাদিসের পর্যালোচনা করতে গিয়ে লিখেন-

وأبو مسلم الأنصاري هذا المحمر لم أعرفه.

-‘‘সনদে আবূ মুসলিম নামে একজন রাবী রয়েছেন তাকে আমি চিনি না।’’ (আলবানী, সিলসিলাতুল আহাদিসিদ দ্বঈফাহ, ৩/৪৮২ পৃ. হা/১৪৯৪)

❏ অথচ এ আবূ মুসলিম হচ্ছেন সহীহ বুখারীর রাবী, তাকে তিনি মাজহুল বানিয়ে দিতে চেয়ে ছিলেন। তাকে মুহাদ্দিসগণ আবূ মারিয়ম আনসারী হিসেবে চিনেন। ইমাম ইবনে হাজার আসকালানী (رحمة الله) তাকে সামগ্রীকভাবে সিকাহ বলেছেন।

(ইবনে হাজার, তাক্বরীবুত তাহযিব, ৬৭২ পৃ. ক্রমিক.৮৩৫৭)

❏ ইবনে কাসির (رحمة الله) এবং ইবনে হাজার (رحمة الله) লিখেন-

وقال العِجْليُّ: أبو مريم مولى أبي هريرة تابعي، ثقة.

-‘‘ইমাম ইজলী (رحمة الله) বলেন, আবূ মারিয়ম হযরত আবূ হুরায়রা (رضي الله عنه)-এর গোলাম ছিলেন, তিনি তাবেয়ী, বিশ্বস্ত ছিলেন।’’ (ইবনে কাসির, তাকমীল ফি জারহু ওয়া তা‘দীল, ৩/৪৩২ পৃ. ক্রমিক. ২৩৯৮, ইবনে হাজার, তাহযিবুত তাহযিব, ১২/২৩২ পৃ.) ইমাম যাহাবী (رحمة الله) বলেন, (ثقة) তিনি সিকাহ বা বিশ্বস্ত।’’ (যাহাবী, আল-কাশেফ, ক্রমিক. ৬৮২৮)

২. আলবানী একটি হাদিস পর্যালোচনা করতে গিয়ে লিখেন-

وإسماعيل احتج به الشيخان، وقال الحافظ: صدوق يخطىء قليلا

-‘‘এ সনদে ইসমাঈল নামক একজন রাবী রয়েছে তার হাদিস ইমাম বুখারী-মুসলিম (رحمة الله) সহীহ গ্রন্থদ্বয়ে স্থান দিয়েছেন, তবে হাফেয ইবনে হাজার (رحمة الله) বলেন, সে সত্যবাদী, হাদিসে ভুল করতেন, তা কম।’’ (আলবানী, সিলসিলাতুল আহাদিসিস সহীহা, ৩/২৬৭ পৃ. হা/১২৭২)

সম্মানিত পাঠকবৃন্দ! উক্ত রাবীর যেহেতু শাইখাইন (رحمة الله) সংকলন করেছেন সেখানে সে রাবীর সমালোচনা করার কারোও অধিকার নেই। তার বিষয়ে এ ধরনের উদাহরণ শত শত দেয়া যেতে পারে, যার বিস্তারিত আমার লিখিত ‘আলবানীর স্বরূপ উন্মোচন’ নামক গ্রন্থে পাবেন, ইনশা আল্লাহ।

চ. এক স্থানে এক রাবীকে সিকাহ বলে অন্য স্থানে যঈফ বলা:

১. আলবানী হযরত জাবের (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত হাদিস নিয়ে পর্যালোচনা করতে গিয়ে সনদে থাকা এক ‘ফুযাইল ইবনে সুলাইমান’ রাবী নিয়ে লিখেন-

وهو وإن احتج به الشيخان فقد قال الحافظ فى التقريب : صدوق , له خطأ كثير

-‘‘এ সনদের ‘ফুযাইল’ নামক একজন রাবী রয়েছে তার হাদিস ইমাম বুখারী-মুসলিম (رحمة الله) সহীহ গ্রন্থদ্বয়ে স্থান দিয়েছেন, তবে হাফেয ইবনে হাজার (رحمة الله) বলেন, সে সত্যবাদী, হাদিসে প্রচুর ভুল করতেন।’’ (আলবানী, ইরওয়াউল গালীল, ৩/২০৭ পৃ. হা/৭৫৬)

❏ অথচ অন্য এক হাদিসের আলোচনা করতে গিয়ে এ রাবী সম্পর্কে লিখেন-

قلت: وإسناده جيد رجاله رجال البخاري، وفي الفضيل كلام لا يضر

-‘‘আমি (আলবানী) বলি, এ সনদটি শক্তিশালী, সনদের সমস্ত বর্ণনাকারী সহীহ বুখারীর বর্ণনাকারী, সনদে ফুযায়েল নামক রাবী রয়েছেন, তার বিষয়ে কোনো সমালোচনা গ্রহণযোগ্য নয়।’’ (আলবানী, সিলসিলাতুল...সহীহা, ৩/২১৫ পৃ. হা/১২১৩)

২. আহলে হাদিস আলবানী একটি হাদিসের সনদ পর্যালোচনা করতে গিয়ে রাবী ‘মুহাম্মদ বিন আজলান’ সম্পর্কে লিখেন-

وابن عجلان متكلم فيه

-‘‘সনদে ইবনে আজলান রয়েছে, তার বিষয়ে সমালোচনা রয়েছে।’’ (আলবানী, তামামিল মিন্নাহ, ২১৮ পৃ.)

❏ অথচ অন্য এক হাদিসের আলোচনা করতে গিয়ে এ রাবী সম্পর্কে লিখেন-

قلت: وإسناده جيد...... وابن عجلان إنما أخرج له البخاري تعليقا ومسلم استشهادا.

-‘‘আমি (আলবানী) বলি, এ সনদটি শক্তিশালী,.....সনদে ইবনে আজলান নামক একজন রাবী রয়েছে তার হাদিস সহীহ বুখারীতে তা‘লিক সূত্রে বর্ণিত হয়েছে এবং ইমাম মুসলিম (رحمة الله) তার ‘আস-সহীহ’ গ্রন্থে তার হাদিসের সাক্ষ্য দিয়েছেন।’’(আলবানী, সিলসিলাতুল...সহীহা, ৫/২৭১ পৃ. হা/২২৩১)

সম্মানিত পাঠকবৃন্দ! এ ধরনের উদাহরণ শত শত দেয়া যেতে পারে, তিনি সহীহ বুখারী মুসলিমের রাবীকেও যঈফ বলতে পরওয়া করেন না; যার বিস্তারিত আমার লিখিত ‘আলবানীর স্বরূপ উন্মোচন’ নামক গ্রন্থে পাবেন, ইনশা আল্লাহ।

ছ. বিভিন্ন মুজতাহিদ তরিকার ইমামদের সমালোচনা:

তিনি মাযহাব বিরোধী হওয়ার কারণে পৃথিবীর মহান মহান ইমামদের সমালোচনা করতেও দ্বীধাবোধ করেননি।

১. সে হানাফী মাযহাবের প্রতিষ্ঠাতা ইমামে আযম আবু হানিফা (رحمة الله)সহ পৃথিবীর অসংখ্য মুজতাহিদ তবকার আলেমদের সমালোচনা করেছেন। আহলে হাদিসদের ইমাম আলবানী ইমাম আযমের বিরোধীগণের সেরাদের অন্যতম; সে লিখেছে-

ولا يحتج بأبي حنيفة لضعفه في الحديث

-‘‘আবু হানিফার হাদিস দলিলযোগ্য নয়; কেননা তিনি হাদিসে দুর্বল।’’ ৮৬

➥৮৬. আলবানী, সিলসিলাতুল আহাদিসুদ-দ্বঈফাহ, ১/৬৬৫ পৃ. হা/৪৫৮

❏ আলবানী তার এই মিথ্যা দাবীর পিছনে কিছু ভূয়া দলিল আর যুক্তি পেশ করেছেন। এই ধোঁকাবাজ চালাকী করে আরও লিখেছেন-

ومما لا شك فيه عندنا أن أبا حنيفة من أهل الصدق، ولكن ذلك لا يكفي ليحتج بحديثه

-‘‘এতে কোন সন্দেহ নেই যে আবু হানিফা (رحمة الله) সত্যবাদীদের অর্ন্তভুক্ত ছিলেন। কিন্তু তাঁর হাদিস দলিল দেওয়ার জন্য উপযুক্ত/যথেষ্ট নয়।’’ ৮৭

নাউযুবিল্লাহ

➥৮৭. আলবানী, সিলসিলাতুল আহাদিসুদ-দ্বঈফাহ, ১/৬৬৫ পৃ. হা/৪৫৮

২. শুধু তাই নয় সে মাযহাব বিরোধী হওয়ার কারণে ইমাম আযমের অন্যতম সহচর ইমাম কাযি আবু ইউসুফ (رحمة الله)-এর সমালোচনা করেন। সে তাঁর সম্পর্কে এ স্থানে লিখেন-

أبو يوسف فيه ضعف من قبل حفظه، قال الفلاس: صدوق كثير الخطأ

-‘‘ইমাম আবু ইউসুফ তার হেফযে দুর্বলতা রয়েছে, মুহাদ্দিস ফাল্লাস বলেন, তিনি যদিও সত্যবাদী হাদিসে তিনি প্রচুর ভুল করতেন।’’ ৮৮

➥৮৮. আলবানী, সিলসিলাতুল আহাদিসুদ-দ্বঈফাহ, ২/৩০ পৃ. হা/৫৩৫

❏ অথচ ইমাম যাহাবী (رحمة الله) ইমাম কাযি ইউসুফের জীবনীতে লিখেছেন-

هُوَ الإِمَامُ، المُجْتَهِدُ ، العَلاَّمَةُ، المُحَدِّثُ، قَاضِي القُضَاةِ، أَبُو يُوْسُفَ يَعْقُوْبُ بنُ إِبْرَاهِيْمَ بنِ حَبِيْبِ بنِ حُبَيْشِ بنِ سَعْدِ بنِ بُجَيْرِ بنِ مُعَاوِيَةَ الأَنْصَارِيُّ، الكُوْفِيُّ.

-‘‘ইমাম কাযি আবু ইউসুফ। তিনি ছিলেন একজন ইমাম, মুজতাহিদ, আল্লামা, মুহাদ্দিস, কাযিউল কুযাত,....কুফার অধিবাসি।’’ ৮৯

➥৮৯. ইমাম যাহাবী, সিয়ারু আলামিন নুবালা, ৮/৫৩৫ পৃ. ক্রমিক. ১৪১

সম্মানিত পাঠকবৃন্দ! এ ধরনের উদাহরণ শত শত দেয়া যেতে পারে, তিনি সহীহ বুখারী মুসলিমের রাবীকেও যঈফ বলতে পরওয়া করেন না; যার বিস্তারিত আমার লিখিত ‘আলবানীর স্বরূপ উন্মোচন’ নামক গ্রন্থে পাবেন, ইনশা আল্লাহ।

জ. আলবানীর দৃষ্টিতে যঈফ হাদিসের হুকুম:

পাঠকবর্গ! আমি ইতোপূর্বে উল্লেখ করেছি যে, যঈফ হাদিস ফাযায়েলে আমলের বিষয়ে গ্রহণযোগ্য এ বিষয়ে মুহাদ্দিসদের ইজমা সংঘঠিত হয়েছে।

❏ কিন্তু আহলে হাদিস আলবানী সকল মুহাদ্দিসের ইজমার বিরোদ্ধে অবস্থান নিয়ে লিখেন-‘‘অনেকে এরূপ ধারণা পোষণ করেন যে, ফাযায়েলের ক্ষেত্রে দুর্বল হাদীসের উপর আমল করা যাবে এ মর্মে কোনো মতভেদ নেই। বাস্তবিক পক্ষে তা সঠিক নয়।’’ (আলবানী, য‘ঈফ ও জাল হাদীছ সিরিজ, ১ম খণ্ড, ৫০ পৃ. তাওহীদ পাবলিকেশন্স, বংশাল, ঢাকা-১১০০)

❏ এ বিষয়ে বিখ্যাত হাফেযুল হাদিস, ফকীহ, ইমাম নববী আশ-শাফেয়ী (رحمة الله) বলেন-

قد اتفق العلماء على جواز العمل بالحديث الضعيف فى فضائل الاعمال:مقدمة المؤلف

-‘‘উলামায়ে কিরাম এই বিষয়ে সবাই ঐকমত্য পোষণ করেছেন দুর্বল হাদিস ফাযায়েলে আমলের জন্য গ্রহণযোগ্য।’’ ৯০

➥৯০. ইমাম নববী : আরবাঈন : ১/২০ পৃ. এবং ইমাম ইবনে দাকিকুল ঈদ, শরহে আরবাঈনুন নববিয়্যাহ, ১/২০ পৃ.

পাঠকদের কাছেই বিচারের সিদ্ধান্ত অর্পন করা হলো, আপনারা কাকে মানবেন, আলবানীকে না ইমাম নববী (رحمة الله)সহ পৃথিবী বিখ্যাত ইমামদের!

সম্মানিত পাঠকবৃন্দ! আলবানীর খণ্ডন নিয়ে যেহেতু আলাদা পুস্তক আমি লিপিবদ্ধ করেছি সেহেতু আলবানীর বিষয়ে এখানে বিস্তারিত আলোকপাত করতে চাই না।

দ্বিতীয় অধ্যায়: আল্লাহ সম্পর্কিত বর্ণনা

বিষয় নং ১: আমি ছিলাম গুপ্ত ভাণ্ডার

كُنْتُ كَنْزًا مَخْفِيًّا، فَأَحْبَبْتُ أَنْ أُعْرَفَ، فَخَلَقْتُ الْخَلْقَ لِأُعْرَفَ

আমি ছিলাম গুপ্ত ভাণ্ডার, ইচ্ছা হল পরিচিত হওয়ার, অত:পর আমি সমগ্র জগত সৃষ্টি করলাম। ১

১. ক্বাজী ইবনে মুহাম্মদ ইবনে মোস্তফা হানাফী: তাফছিরে আবুস সাউদ, ২/২০৫ পৃ:; ইমাম ফখরুদ্দিন রাজী: তাফছিরে কাবীর, ২৮/২১৫ পৃ:; তাফছিরে নিছাপুরী, ১/২৬৯ পৃ: ও ২/১৪৬ পৃ:; মাযহারী, তাফছিরে মাযহারী, ১০/৩০৩ পৃ:; তাফছিরে মারাগী, ২০/১৪৫ পৃ:; আল্লামা মাহমুদ আলূসী বাগদাদী আল হানাফী, তাফসিরে রুহুল মাআনী, ৭/৪৫৩ পৃ:; ইমাম মোল্লা আলী: মেরকাত শরহে মেশকাত, ১/১৯৮ পৃ: এবং ৫৮৩৫ নং হাদিসের ব্যাখ্যায়; গাউছে পাক: সিররুল আসরার, ৫৪ পৃ:; আল্লামা ইমাম ইসমাঈল হাক্কী: তাফছিরে রুহুল বয়ান, ১/১২৯ পৃ:

‘এসব হাদীস নয়’ গ্রন্থের ৭৩ পৃষ্ঠায় মাওলানা মুতীউর রহমান এবং ড. আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীর ‘হাদীসের নামে জালিয়াতি’ গ্রন্থের ২৭৮ পৃষ্ঠায় তারা এ হাদিসকে জাল বা বানোয়াট বলে উল্লেখ করেছেন। এ হাদিসটির বিষয়ে বিভিন্ন বর্ণনা রয়েছে, আমি প্রত্যেকটি বর্ণনা এবং এ হাদিসের বিষয়ে মুহাদ্দিসদের সিদ্ধান্ত আপনাদের সামনে তুলে ধরবো ইনশা আল্লাহ।

প্রথম বর্ণনা:

❏ আল্লামা আব্দুর রহমান শাফুরী শাফেয়ী (رحمة الله) তাঁর বিখ্যাত কিতাব নুযহাতুল মাযালিসের ১/৪২২ পৃষ্ঠায় হযরত কাবুল আহবার (رحمة الله) বর্ণনা করেন

لَمَّا اَرَادَ اللهُ تَعَالٰى اَنَّ يُخْلق المَخْلُوْقَاتْ بسط الارض و رفع السماء و قبض قبضة من نوره و قال لها كونى محمدا فصار عمودا من نوره فعلا حتى انتهى الى حجب العظمة فسجد و قال فى سجوده الحمد لله فقال الله سبحانه و تعالى لهذا خلقتك محمدا منك ابدأ الخلق وبك اختم الرسل  

-‘‘যখন আল্লাহ্ তা‘য়ালা বিশ্ব জগতকে সৃষ্টি করতে ইচ্ছা করলেন, তিনি যমীনকে স¤প্রসারিত করলেন ও আসমানকে বুলন্দ করলেন এবং তিনি গ্রহণ করলেন নিজ নূর হতে মুষ্টি নূর এবং এটাকে খেতাব করে বললেন, তুমি মুহাম্মদ (ﷺ) হয়ে যাও। তখন তাঁর নূরের একটি স্তম্ভ হয়ে গেল। অনন্তর তা উর্ধ্বদিকে চলল, তা আযমতের পর্দা সমূহে গিয়ে পৌঁছল। তারপর তা সিজদায় পতিত হল তা নিজ সিজদায় বললো, সমুদয় প্রশংসা আল্লাহর। তখন আল্লাহ্ সুবহানাহুও তা‘য়ালা বললেন, এজন্যই আমি তোমাকে সৃষ্টি করলাম এবং তোমার নাম রাখলাম মুহাম্মদ। তোমার হতেই আমি সৃষ্টির সূচনা করবো এবং তোমাকে দিয়ে রাসূলগণের বা রিসালাতের পরিসমাপ্তি ঘটাব।’’ ২

২. আল্লামা আব্দুর রহমান ছাফুরী শাফেয়ী : নুযহাতুল মাযালিস, ১/৪২২ পৃ.

এটির কোন সনদ আমি খুঁজে পাইনি। এটির ন্যায় আরেকটি সূত্র রয়েছে।

দ্বিতীয় বর্ণনা:

❏ নুযহাতুল মাযালিস কিতাবে উপরে উল্লেখিত হাদিসের ব্যাখ্যা করতে গিয়ে আরেকটি হাদিস উল্লেখ করেন এভাবে,

وَقَالَ ابْنِ عَبَّاسْ رَضِي الله عَنْهُمَا لَمَّا أَرَادَ اللهُ تَعَالٰى خَلَق المَخْلُوْقَات وخفض الأرض ورفع السموات قبض قبضة من نوره ثم قال لها كُوْنِي حَبِيْبِي مُحَمَّدْ فطاف نور محمد ﷺ بالعرش قَبْلَ آدَمْ بخمسمائة عَامْ وهو يقول الحمد لله فقال الله تعالى من أجل ذلك سميتك محمدا (نزهة المجالس)

-‘‘হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (رضي الله عنه) বলেছেন, আল্লাহ্ তা‘য়ালা যখন মাখলুকাতের সৃজন করতে ইচ্ছা করলেন, তখন পৃথিবীকে নিম্নে স্থাপন ও আসমান সমূহের উচ্চে স্থাপন ইচ্ছা করলেন, তখন তিনি নিজ নূর হতে এক মুষ্ঠি নূর গ্রহণ করে ঐ মুষ্টিবদ্ধ নূরকে বললেন, তুমি আমার হাবীব মুহাম্মদ (ﷺ) হয়ে যাও। অত:পর সে নূর-ই-মুহাম্মদ (ﷺ) আদম সৃষ্টির পাঁচশ বছর পূর্বে আরশ তাওয়াফ করেছিল। তাওয়াফকালে তিনি বলেছিলন الحمد لله (সমুদয় প্রশংসা আল্লাহর জন্য)। তখন আল্লাহ্ তা‘য়ালা বললেন, এ হেতু আমি তোমার নামকরণ করলাম মুহাম্মদ (ﷺ)।’’ ৩

৩. আল্লামা আব্দুর রহমান ছাফুরী শাফেয়ী : নুযহাতুল মাযালিস ২/৭৪পৃ., মাকতাবাতুল আল-কাসতালিয়্যাহ, মিশর।

তবে এ হাদিসের কোন সনদ আমি খুঁজে পাইনি।

আলোচ্য হাদিসের বিষয়ে মুহাদ্দিসগণের বক্তব্য:

❏ আল্লামা আলূসী বাগদাদী (رحمة الله) তাঁর তাফসীরে রুহুল মা‘য়ানীতে সূরা জারিয়াহ এর ৫৬ নং আয়াতের ব্যাখ্যায় লিখেছেন আল্লাহর বাণী তথা হাদিসে কুদসী হিসেবে এভাবে উল্লেখ করেছেন-

وقوله تعالى في الحديث القدسي المشهور على الألسنة المصحح من طريق الصوفية: كنت كنزا مخفيا فأحببت أن أعرف فخلقت الخلق لأعرف

-‘‘মহান রবের বাণী প্রসিদ্ধ হাদিসে কুদসী সূফীয়ানেকেরামের মাধ্যমে বিশুদ্ধভাবে বর্ণিত আছে, আমি অজ্ঞাত গুপ্তভাণ্ডার ছিলাম। আমি পরিচিত হতে পছন্দ করলাম। তখন আমি সৃষ্টি জগত সৃষ্টি করলাম যেন আমি পরিচিত হই।’’ ৪

৪. আল্লামা আলূসী : তাফসীরে রুহুল মায়ানী :৭/৪৫৩ পৃ., দারুল কুতুব ইলমিয়্যাহ, বয়রুত, লেবানন।

❏ আল্লামা আলূসী বাগদাদী (رحمة الله) উক্ত বর্ণনার পর বলেন -

إنه ثابت كشفا، وقد نص على ذلك الشيخ الأكبر قدس سره في الباب المذكور

-‘‘নিশ্চয় এই বক্তব্যটি কাশ্ফের দ্বারা দৃঢ় বা শক্তিশালীভাবে প্রমাণিত। তা স্পষ্ট করে বর্ণনা করেছেন শায়খে আকবর মহিউদ্দিন ইবনুল আরাবী (رحمة الله) তার ফতুহাতে মক্কীয়াহ গ্রন্থের এক অধ্যায়ে।’’ ৫

৫. আল্লামা আলূসী : তাফসীরে রুহুল মায়ানী :১৪/২২ পৃ.

সঠিক সিদ্ধান্ত: এ হাদিসের বিষয়ে সঠিক সমাধান হলো যে এটি শব্দগতভাবে প্রমাণিত না হলেও মা‘আনা তথা মমার্থ সঠিক।

❏ আল্লামা আজলূনী (رحمة الله) তাঁর ‘কাশফুল খাফা‘র মধ্যে আল্লামা মোল্লা আলী ক্বারী (رحمة الله)‘র নিম্নোক্ত কথা উল্লেখ করেছেন-

قال القارى لكن معناه صحيح

-‘‘আল্লামা মোল্লা আলী ক্বারী (رحمة الله) বলেন এ হাদিসটির মমার্থ সহীহ।’’ ৬

৬. আল্লামা আলূসী বাগদাদী : তাফসীরে রুহুল মায়ানী : ১৫ পারা: ৫০ পৃষ্ঠা, আজলূনী : কাশফুল খাফা : ২/১২১ পৃ. হা/২০১৪

❏ আল্লামা মোল্লা আলী ক্বারী (رحمة الله) তার প্রসিদ্ধ গ্রন্থে লিখেন-

وَهَذَا الْمَعْنَى يُصَحِّحُ مَعْنَى مَا يُنْقَلُ حَدِيثًا، وَلَمْ يَصِحَّ لَفْظًا (كُنْتُ كَنْزًا مَخْفِيًا فَأَحْبَبْتُ أَنْ أُعْرَفَ فَخَلَقْتُ الْخَلْقَ لِأَنْ أُعْرَفَ) ، وَلِذَا قَالَ ابْنُ عَبَّاسٍ فِي قَوْلِهِ تَعَالَى {وَمَا خَلَقْتُ الْجِنَّ وَالْإِنْسَ إِلَّا لِيَعْبُدُونِ} [الذاريات: ৫৬] أَيْ: لِيَعْرِفُوا

-‘‘এটির মমার্থ বিশুদ্ধ, কিন্তু শব্দগতভাবে এটি বিশুদ্ধ নয় যেমন বর্ণিত আছে: আমি ছিলাম গুপ্ত ভাণ্ডার, ইচ্ছা হল পরিচিত হওয়ার, অত:পর আমি সমগ্র জগত সৃষ্টি করলাম। রঈসুল মুফাসসিরীন হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (رضي الله عنه) আল্লাহ তা‘য়ালার বাণী, ‘আমি মানুষ এবং জীন এ দুজাতিকে আমার ইবাদতের জন্য সৃষ্টি করেছি’ এর ব্যাখ্যায় বলেন, ‘আমার পরিচয় লাভের জন্য সৃষ্টি করেছি’।”

(ইমাম মোল্লা আলী ক্বারী: মেরকাত শরহে মেশকাত, ১/১৯৯ পৃ. হা/১২২ নং হাদিসের ব্যাখ্যায়; ইমাম মোল্লা আলী ক্বারী, আসরারুল মারফুআ, ৯৩ পৃ:; আল্লামা, আজলূনী: কাশফুল খাফা, হাদিস নং ২০১৬; আল লু’উ লু’উ মারছু, হাদিস নং ৪১৬)।’’

তাহলে কোরআনের আয়াত এবং সাহাবীদের তাফসির দ্বারা বুঝা যায় যে মহান প্রতিপালক এ সৃষ্টি জগতকে তাঁর পরিচয়ের জন্য সৃষ্টি করেছেন। এ ব্যাপারে আরও কিছু বর্ণনা পাওয়া যায়।

❏ আহলে হাদিসের অন্যতম আলেম ও শ্রদ্ধাভাজন ব্যক্তিত্ব আল্লামা শাওকানী - সূরা যারিয়াত, আয়াত নং-৫৬, এর إِلَّا لِيَعْبُدُونِ ব্যাখ্যায় লিখেন-

وَقَالَ مُجَاهِدٌ: إِنَّ الْمَعْنَى: إِلَّا لِيَعْرِفُونِي. قَالَ الثَّعْلَبِيُّ: وَهَذَا قَوْلٌ حَسَنٌ

-‘‘(আমি মানুষ এবং জ্বিনকে সৃষ্টি করেছি আমার ইবাদতের জন্য) বিখ্যাত তাবেয়ী ইমাম মুজাহিদ (رحمة الله)

 إِلَّا لِيَعْبُدُونِ এর ব্যাখ্যায় বলেন, আল্লাহর পরিচয়ের জন্য সব কিছু সৃষ্টি করেছেন। বিখ্যাত মুফাস্সির ইমাম ছা’লাবী (رحمة الله) এমনটি হযরত হাসান বসরী (رحمة الله)‘র বক্তব্য আছে বলেও উল্লেখ করেছেন।’’ ৭

৭. শাওকানী : ফতহুল কাদীর : ৫/১১০ পৃ.

❏ আবার এক জামাত ইমামগণ হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (رضي الله عنه) হতে এ আয়াতের ব্যাখ্যা সংকলন করেছেন যে إِلَّا لِيَعْرِفُونِي -‘আল্লাহর তার পরিচয়ের জন্য সমস্ত কিছু সৃষ্টি করেছেন।’’ ৮

৮. ইমাম আলূসী : তাফসীরে রুহুল মা’য়ানী : ১৫/৫০ পৃ., ইমাম বগভী : তাফসীরে মা’আলিমুত তানযীল : ৪/২৩৫ পৃ., ইমাম ছা’লাভী : তাফসীরে ছা’লাভী : ৪/২১২ পৃ., ইমাম কুরতুবী : তাফসীরে আহকামুল কোরআন : ১৭/৫৫ পৃ., আল্লামা শাওকানী : ফতহুল কাদীর : ৫/৯২ পৃ.

❏ ইমাম বাগভী (رحمة الله) এবং ইমাম কুরতুবী (رحمة الله) তাদের তাফসির গ্রন্থে উল্লেখ করেন-

وَقَالَ مُجَاهِدٌ: إِلَّا لِيَعْرِفُونِي

-‘‘ইমাম মুজাহিদ বিন জাবর (رحمة الله) বলেন, মহান সৃষ্টিকর্তা সব কিছু তাঁর পরিচয় লাভের জন্য সৃষ্টি করেছেন।’’ (ইমাম বাগভী, তাফসিরে মা‘আলিমুত তানযিল, ৪/২৮৮ পৃ., ইমাম কুরতুবী, তাফসিরে কুরতুবী, ১৭/৫৫ পৃ., ইমাম আবু হাইয়্যান আন্দুলুসী, তাফসিরে বাহরে মুহিত, ৯/৫৬২পৃ.)

❏ ইমাম আবু মুহাম্মদ আন্দুলুসী কুরতুবী (ওফাত. ৪৩৭ হি.) তার তাফসির গ্রন্থে লিখেন-

وقيل معنى الآية: وما خلقت الجن والإنس إلا ليعرفوني

-‘‘কোন কোন মুফাসসির এ আয়াতের ব্যাখ্যায় বলেছেন, আমি মানব এবং জীনকে সৃষ্টি করেছি আমার পরিচয়ের জন্য।’’ (হিদায়া ইলা বুলুগুন নিহায়া, ১১/৭১০৮ পৃ.)

❏ ইমাম আলাউদ্দিন খাযেন (رحمة الله) তার তাফসির গ্রন্থে উল্লেখ করেন-

وقيل: معناه إلا ليعرفوني

-‘‘কোন কোন মুফাসসির বলেছেন, মহান রব মানব ও জীনকে সৃষ্টি করেছেন তার পরিচয়ে জন্য।’’ (ইমাম খাযেন, তাফসিরে খাযেন, ৪/১৯৭ পৃ.)

❏ ইমাম মাওয়ারিদী (رحمة الله) তার তাফসির গ্রন্থে লিখেন-

الرابع: إلا ليعرفوني , قاله الضحاك.

-‘‘এ আয়াতের চতুর্থতম ব্যাখ্যা হলো, মহান রব তার পরিচয়ের জন্য মানব এবং জীনকে সৃষ্টি করেছেন। এমনটি বিখ্যাত মুফাসসির ইমাম যাহ্হাক (رحمة الله) এর অভিমত।’’ (ইমাম মাওয়ারিদী, তাফসিরে মাওয়ারিদী, ৫/৩৭৫ পৃ.)

❏ অপরদিকে আল্লামা আবু সাউদ উমাদি (رحمة الله) উক্ত ৩আয়াতের ব্যাখ্যায় বলেন,

{وَمَا خَلَقْتُ الجن والإنس إِلاَّ لِيَعْبُدُونِ} أي ليعرفونِ كما أَعرَب عنه قولُه عليه الصَّلاة والسلام يقول الله تعالى كُنتُ كنزاً مخفياً فأحببتُ أنْ أُعْرَفَ فخلقتُ الخلقَ لأُعرف

-‘‘মহান রব ইরশাদ করেন, আমি মানুষ এবং জীনকে সৃষ্টি করেছি আমার ইবাদতের অর্থা ইবাদত দ্বারা উদ্দেশ্য পরিচিতির জন্য সৃষ্টি করেছেন। যেমন রাসূল (ﷺ) বলেন, মহান রব তা‘য়ালা ইরশাদ করেন, আমি ছিলাম গুপ্ত ভাণ্ডার, ইচ্ছা হল পরিচিত হওয়ার, অত:পর আমি সমগ্র জগত সৃষ্টি করলাম।’’ (তাফসিরে আবুস সাউদ, ২/১৩০ পৃ.)

❏ ইমাম আযমের সমসাময়িক ইমাম মুকাতিল ইবনে সুলাইমান (১৫০হি.) তার তাফসিরে লিখেন-

وقالوا: إلا ليعرفون

-‘‘মুফাসসিরানে কেরাম বলেছেন, পরিচয়ে জন্য সৃষ্টি করেছেন।’’ (তাফসিরে মুকাতিল ইবনে সুলাইমান, ৪/১৩৩ পৃ.)

❏ ইমাম আবু হাইয়্যান আন্দুলুসী (رحمة الله) তার তাফসিরে লিখেন-

قِيلَ: مَعْنَاهُ لِيَعْرِفُونِ

-‘‘কোন কোন তাফসিরকারক বলেন, এ আয়াতের ইবাদত শব্দের ব্যাখ্যায় বলেছেন পরিচয়ের জন্য।’’ (ইমাম আবু হাইয়্যান আন্দুলুসী, তাফসিরে বাহরে মুহিত, ২/১১০ পৃ.)

❏ তিনি এ কিতাবের আরেক স্থানে লিখেন-

قَالَ الْمُفَسِّرُونَ: مَعْنَاهُ لِيَعْرِفُونِ.

-‘‘মুফাসসিরানে কেরাম এ আয়াতের ব্যাখ্যায় বলেছেন, পরিচয়ের জন্য মহান প্রতিপালক মানব এবং জীনকে সৃষ্টি করেছেন।’’ (ইমাম আবু হাইয়্যান আন্দুলুসী, তাফসিরে বাহরে মুহিত, ১০/৫৬০ পৃ.)

❏ ইমাম কাযি সানাউল্লাহ পানিপনি (رحمة الله) সংকলন করেন-

قال الله تعالى وما خلقت الجن والانس الا ليعبدون اى ليعرفون

-‘‘মহান রবের বাণী, ‘আমি মানুষ এবং জ্বিনকে সৃষ্টি করেছি আমার ইবাদতের জন্য’ এর মমার্থ হলো, আমার পরিচয়ের জন্য সৃষ্টি করেছি।’’ (পানিপথি, তাফসিরে মাযহারি, ১০/৭০ পৃ.)

❏ আল্লামা ইসমাঈল হাক্কী (رحمة الله) উল্লেখ করেছেন-

إِلَّا لِيَعْبُدُونِ اى ليعرفون

-‘‘আমার ইবাদতের জন্য সৃষ্টি করেছি মানে আমার পরিচয়ের জন্য সৃষ্টি করেছি।’’ (ইসমাঈল হাক্কী, রুহুল বায়ান, ১/১১৩ পৃ. এবং ১/২৬৯ পৃ.)

তাই প্রমাণিত হয়ে গেল যে, মহান রব তা‘য়ালা তাঁর পরিচয় প্রকাশিত হওয়ার জন্যই সব কিছু সৃষ্টি করেছেন।

বিষয় নং-২: মি‘রাজে নব্বই হাজার কালাম হওয়া প্রসঙ্গ:

‘এসব হাদীস নয়’ গ্রন্থের ৭৬ পৃষ্ঠায় মাওলানা মুতীউর রহমান লিখেছেন, এটি বরং জাল বা বানোয়াট কথা।

উক্ত ভিত্তিহীন বক্তব্যের জবাব বিশ্ববিখ্যাত তাফসীর কারক ইমাম সাভী তাফসীরে সাভীতে সূরা নিসা ১১৩ নং আয়াতের তাফসীর প্রসঙ্গে বলেন, মিরাজে আল্লাহর সঙ্গে নব্বই হাজার কালামের বর্ণনা পাওয়া যায়। তন্মধ্যে ত্রিশ হাজার কালাম হাদিস আকারে সবার জন্য ত্রিশ হাজার কালাম নির্দিষ্ট লোকদের জন্য এবং অবশিষ্ট ত্রিশ হাজার সম্পূর্ন স্বীয় রাসূল (ﷺ) এর কাছে গোপন রাখার জন্য আল্লাহ্ তা‘য়ালা নির্দেশ দিয়েছিলেন। (কাসাসুল আম্বিয়া (উর্দূ), ৪৪২ পৃষ্ঠা দিল্লী হতে প্রকাশিত)

❏ মি‘রাজে নব্বই হাজার কালামের বিষয়ে প্রসিদ্ধ উসূলবিদ আল্লামা মোল্লা জিওন (رحمة الله) তাফসীরাতে আহমদিয়ায় ৩৩১ পৃষ্ঠা সূরা নজমের তাফসীর করতে গিয়ে উল্লেখ করেন-

وفى رواية تكلم معه تسعين الف حكاية اسرار و اخبارا و احكاما و قد امره الله تعالى بخمسين صلوة

-‘‘বর্ণনায় রয়েছে আল্লাহ্ তা‘য়ালা মিরাজের রজনীতে রাসূলে খোদা (ﷺ) এর সাথে ৯০ হাজার (বিষয়ে) কালাম বা কথাবার্তা বলেছেন, গোপনীয় বিষয় সংবাদ দিয়েছেন, অনেক আহকাম দিয়েছেন এবং তাঁর সাথে ৫০ ওয়াক্ত নামায ফরয করেছিলেন।’’ ৯

৯. আল্লামা মোল্লা জিওন : তাফসীরে আহমদিয়্যাহ : পৃ-৩৩১

বিষয় নং-৩: ‘মু‘মিনের কলব আল্লাহর আরশ’ হাদিসের গ্রহণযোগ্যতা:

মহান রব তা‘য়ালা স্থান কালের উর্ধ্বে। আল্লাহর কোন সৃষ্টি তাকে পরিবেষ্টন করতে অক্ষম।

❏ মহান রব তা‘য়ালা ইরশাদ করেন-

إِنَّهُ بِكُلِّ شَيْءٍ مُحِيطٌ

-‘‘নিশ্চয়ই মহান রব সব কিছুকে পরিবেষ্টন করে আছেন।’’ (সূরা ফুস্সিলাত, আয়াত ৫৪)

❏ ইমাম ত্বাহাবী (رضي الله عنه) বলেন-

مُحِيطٌ بِكُلِّ شَيْءٍ وَفَوْقَهُ وَقَدْ أَعْجَزَ عَنِ الإحاطة خلقه

-‘‘প্রত্যেক বস্তুই তাঁর পরিবেষ্টনে রয়েছে এবং তিনি সব কিছুর ঊর্ধ্বে। আর সৃষ্টিকুল তাঁকে পরিবেষ্টনে অক্ষম।’’ (ইমাম তাহাভী, আক্বিদাতুল তাহাভী, ৫৬পৃ. ক্রমিক. ৫১, মাকতুবাতুল ইসলামী, বয়রুত, লেবানন, প্রকাশ. ১৪১৪হি.)

❏ মহান রব তা‘য়ার প্রিয় ভাজন ব্যক্তিদের মুহাব্বতের বিষয়ে একটি বর্ণনা-

مَا وَسِعَنِي أَرْضِي وَلَا سَمَائِي وَلَكِنْ وَسِعَنِي قَلْبُ عَبْدِي الْمُؤْمِنِ

-‘‘আসমান ও যমীন আমাকে সংকুলান করে না, কিন্তু একমাত্র আমার মুমিন বান্দার কলব আমাকে সংকুলান করে।’’ (ইমাম গায্যালী, ইহইয়াউল উলূম, ৩/১৫ পৃ., আল্লামা মোল্লা আলী ক্বারী, আসরারুল মারফুআ, ৩১০ পৃ. হা/৪২৩)

‘এসব হাদীস নয়’ গ্রন্থে মাওলানা মুতীউর রহমান ৭৮ পৃষ্ঠায় এ বর্ণনাটিকে লোক মুখে প্রসিদ্ধ বলে উল্লেখ করেছেন। ড. আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীর লিখিত ‘হাদীসের নামে জালিয়াতি’ গ্রন্থের ২৭৮ পৃষ্ঠায় একইভাবে প্রতারণার আশ্রয় নিয়েছেন।  

এ শব্দে সনদগতভাবে হাদিসটি কোথাও সংকলিত পাওয়া না গেলেও কিন্তু এর মমার্থ সহীহ। মুহাদ্দিসীনে কিরামের বক্তব্য হলো, এ হাদিসের মমার্থ বিশুদ্ধ। এবার আমরা হাদিসটির মূল বক্তব্যে পক্ষে কোনো সনদসহ হাদিস বর্ণিত হয়েছে কীনা তা দেখবো।

প্রথম সূত্র: 

❏ ইমাম তাবরানী (رحمة الله) সংকলন করেন-

حَدَّثَنَا جَعْفَرُ الْفِرْيَابِيُّ، ثَنَا إِسْحَاقُ بْنُ رَاهَوَيْهِ، ثَنَا بَقِيَّةُ بْنُ الْوَلِيدِ، عَنْ مُحَمَّدِ بْنِ زِيَادٍ، عَنْ أَبِي عِنَبَةَ الْخَوْلَانِيِّ، يَرْفَعُهُ إِلَى النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: إِنَّ لِلَّهِ آنِيَةً مِنْ أَهْلِ الْأَرْضِ وَآنِيَةُ رَبِّكُمْ قُلُوبُ عِبَادِهِ الصَّالِحِينَ , وَأَحَبُّهَا إِلَيْهِ أَلْيَنُهَا وَأَرَقُّهَا

-‘‘বিশিষ্ট সাহাবী হযরত আবি ইনাবাতাল খাওলানী (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলে (ﷺ) ইরশাদ করেন, মহান আল্লাহ্ তা‘য়ালা বলেন, যমীনে আমি স্থান নিতে চেয়েছিলাম কিন্তু যমীন আমাকে ধারণ করতে পারেনি, আমাকে ধারণ করেছেন আমার প্রিয় পূণ্যবান বান্দাদের অন্তর বা কলব, আর তার এ ধারণ ক্ষমতাকে এবং সূক্ষ্মতাকে আমি ভালবেসেছি।’’ ১০

১০. ইমাম তাবরানী : মুসনাদিশ শামীয়্যীন : ২/১৯ পৃ. হা/৮৪০, ইমাম জালালুদ্দীন সুয়ূতি, জামেউস সগীর, ১/৩৬৪ পৃ : হা/২৩৭৫, ইমাম আবদুর রহমান সাখাভী : মাকাসিদুল হাসানা : পৃষ্ঠা নং ৩৮০, হা/৯৯০, আল্লামা আজলূনী : কাশফুল খাফা : ২/১৭৫ পৃষ্ঠা, হা/২২৫৪, আলবানী : সিলসিলাতুল আহাদিসুস সহীহা : হা/১৬৯১, সহিহুল জামে, হা/২১৬৩, আল্লামা ইমাম জালালুদ্দীন সুয়ূতি : জামেউল আহাদিস, ৯/১৯৬ পৃ. হাদিস: ৮২৩৩, শায়খ ইউসূফ নাবহানী, ফতহুল কাবীর, ১/৩৭৭ পৃ. হা/৪০৯১, নাবিল সাদুদ্দীন সালিম র্জারার, ইমাঈ ইলা যাওয়াইদ, ৬/২১১ পৃ. হা/৫৫০৩, ইবনুল ইরাকী, তাখরীজে ইহইয়া, ১/৮৯০ পৃ., মানাভী, ফয়যুল কাদীর, ২/৬২৯ পৃ. ছুয়াইব আব্দুল জাব্বার, আল-জামেউস সহীহ লিল সহীহ লিল সুনান ওয়াল মাসানীদ, ২/৭৮৬ পৃ. ও ৩/১৬২ পৃ.

সনদ পর্যালোচনা:

● এ হাদিসের সমস্ত রাবীই বিশ্বস্ত ইনশা আল্লাহ। এমনকি আহলে হাদিসদের তথাকথিত শায়খ নাসিরুদ্দীন আলবানী বলেন, হাদিসটির মান ‘হাসান’।

(আলবানী, সহীহুল জামেউস সগীর ওয়া যিয়াদা, হা/২১৬৩, সিলসিলাতুল আহাদিসুস সহীহহা, ৪/২৬৩ পৃ. হা/১৬৯১)

আমার গভীর দৃষ্টি দিলে দেখতে পাই উক্ত হাদিসটি সহীহ, যদিও আলবানী ‘হাসান’ বলেছেন। আলবানী উক্ত হাদিসের অন্যতম একজন রাবী ‘বাকীয়্যাতু বিন ওয়ালিদ বিন ছয়ীদ’ এর উপর তাদলীস করার অভিযোগ করে হাদিসটির মান ‘হাসান’ বলেছেন। আমি বলবো,

❏ এ হাদিসের উস্তাদ (মুহাম্মদ ইবনে যিয়াদ) সম্পর্কে ইমাম যাহাবী (رحمة الله) লিখেন-

 وَرَوَى عَنْ: مُحَمَّدِ بنِ زِيَادٍ الأَلْهَانِيِّ -

‘‘তিনি মুহাম্মদ ইবনে যিয়াদ হতে বর্ণনা করেছেন।’’ (যাহাবী, সিয়ারু আলামিন নুবালা, ৮/৫১৮ পৃ. ক্রমিক. ১৩৯)

বুঝা গেল যে, রাবী ‘মুহাম্মদ বিন যিয়াদ’ থেকে রাবী ‘বাকিয়্যাতুল’ শুনা প্রমাণিত।

❏ ইমাম সাখাভী (رحمة الله) লিখেন-

وفي سنده بقية بن الوليد، وهو مدلس، ولكنه صرح بالتحديث.

-‘‘এ সনদে রয়েছে ‘বাকিয়্যাত ইবনে ওয়ালিদ’ তিনি মুদাল্লিস বা তাদলিসকারী। তবে তিনি এ হাদিসে তাদলীস করেননি।’’ (সাখাভী, মাকাসিদুল হাসানা, ৫৯০ পৃ. হা/৯৯০)

❏ ইমাম যাহাবী (رحمة الله) বলেন- الحَافِظُ، العَالِمُ -‘‘তিনি ছিলেন হাফেযুল হাদিস, আলিম।’’ (যাহাবী, সিয়ারু আলামিন নুবালা, ৮/৫১৮ পৃ. ক্রমিক. ১৩৯)

আসল কথা হলো তিনি বুখারী মুসলিমের রাবী।

দ্বিতীয় সূত্র:

❏ ছয় লক্ষেরও বেশী হাদিসের হাফেয ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল (رحمة الله) এ বিষয়ের সমর্থনে আরেকটি বর্ণনা এভাবে উল্লেখ করেন-

حَدَّثَنَا عَبْدُ اللَّهِ، حَدَّثَنِي أبِي، أَخْبَرَنَا إِبْرَاهِيمُ بْنُ خَالِدٍ، حَدَّثَنِي عُمَرُ بْنُ عُبَيْدٍ، أَنَّهُ سَمِعَ وَهْبَ بْنَ مُنَبِّهٍ يَقُولُ: إِنَّ اللَّهَ عَزَّ وَجَلَّ فَتَحَ السَّماَوَاتِ لِحِزْقِيلَ حَتَّى نَظَرَ إِلَى الْعَرْشِ - أَوْ كَمَا قَالَ - فَقَالَ حِزْقِيلُ: سُبْحَانَكَ، مَا أَعْظَمَكَ، يَا رَبِّ، فَقَالَ اللَّهُ: إِنَّ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضَ لَمْ تُطِقْ أَنْ تَحْمِلَنِي، وَضِقْنَ مِنْ أَنْ تَسَعَنِي، وَسِعَنِي قَلْبُ الْمُؤْمِنِ الْوَارِعِ اللَّيِّنِ

-‘‘আসমানী ৭১ টি কিতাবের জ্ঞানী হযরত ওহাব ইবনে মুনাব্বাহ (رحمة الله) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নিশ্চয় আল্লাহ্ তা‘য়ালা হিযকিল নামক ফেরেশতার জন্য আসমান সমূহকে খুলে দিলেন। ফলে তিনি আরশ পর্যন্ত দেখতে পেলেন এবং বললেন আল্লাহ্ তুমি পাক পবিত্র, তোমার শান কত মহান। হে রব! অত:পর আল্লাহ্ তা‘য়ালা বললেন, নিশ্চয় আসমান ও যমিন আমাকে ধারণ করতে দূর্বলতা প্রকাশ করেছে, আমাকে দুনিয়াবিমুখ মু‘মিনের দিল বা অন্তর নম্রতা প্রকাশ করে আমাকে গ্রহণ করেছে।’’১১

১১. ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল : কিতাবুত যুহুদ, যুহুদে ইউসূফ (আ.) অধ্যায়, ১/৬৯ পৃ. হা/৪২৩, দারুল কুতুব ইলমিয়্যাহ, বয়রুত, লেবানন, প্রকাশ. ১৪২০ হি., আল্লামা ইমাম সাখাভী : মাকাসিদুল হাসানা : ৪২৯ পৃ. হা/৯৮৮, আল্লামা আজলূনী : কাশফুল খাফা : ২/১৯৫ পৃ., আল্লামা ইমাম মানাবী : ফয়জুল কাদীর, ১/২৮২ পৃ., আল্লামা তাহের পাটনী : তাযকিরাতুল মওযুআত : ১/১৩০ পৃ., আল্লামা আব্দুল হাই লাক্ষনৌভি : আসারুল মারফ‚‘আ : ৩১০, কিরমানী, ফাওয়াইদুল মাওদ্বুআত, ৭৮ পৃ., ইবনুল ইরাক, তানযিহুশ শরীয়াহ, ১/১৪৮ পৃ., ইমাম সুয়ূতি, লা-আলিল মাসনুআ, ২৯৩ পৃ., মোল্লা আলী ক্বারী, আসারুল মারফূআ, ৩১০ পৃ., আল্লামা মানাবী : হাদীসে কুদসী : হা/৯৯

সনদ পর্যালোচনা:

এ হাদিসের সনদে কোনো সমালোচিত রাবী নেই। উক্ত হাদিসটি সম্পর্কে ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল, সাখাভী, আজলূনী এবং মোল্লা আলী ক্বারী (رحمة الله) প্রমুখ মুহাদ্দিস নীরবতা পালন করেছেন।

তৃতীয় সূত্র:

❏ ইমাম গায্যালী (رحمة الله) একটি হাদিস সংকলন করেন-

حَدِيث ابْن عمر: قيل لرَسُول الله، يَا رَسُول الله أَيْن الله فِي الأَرْض أَو فِي السَّمَاء. قَالَ فِي قُلُوب عباده الْمُؤمنِينَ

-‘‘হযরত ইবনে উমর (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা কেউ রাসূল (ﷺ) এর দরবারে আরজ করলেন, হে আল্লাহর প্রিয়তম রাসূল! আমি জানতে চাই ‘‘আল্লাহ্ কী আসমানে না যমিনে? রাসূল (ﷺ) তাঁর নূরাণী জবানে বললেন, আল্লাহ্ মু‘মিন বান্দাদের হৃদয়ে।’’ ১২

১২. ইমাম গায্যালী, ইহ্ইয়াউল উলুমুদ্দীন, ৩/১৫ পৃ, দারুল মা‘রিফ, বয়রুত, লেবানন।

তবে এ সূত্রটির কোন সনদ আমি খুঁজে পাইনি।

তাই এ বিষয় বস্তুটি প্রমাণিত হল, আরও প্রমাণ পাওয়া গেল এ বিষয়ে সনদসহই হাদিসে পাক রয়েছে।

বিষয় নং-৪: জিবরাঈল (عليه السلام) হতে আল্লাহ তা‘য়ালার দূরত্ব ৭০ হাজার নূরের পর্দা:

‘‘হাদীসের নামে জালিয়াতি’’ গ্রন্থের ২৭৬ পৃষ্ঠায় ড. আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীর লিখেছেন যে, জিবরাঈল (عليه السلام) হতে আল্লাহ্ তা‘য়ালা পর্যন্ত ৭০ হাজার নূরের পর্দা রয়েছে অথবা ৭০টি নূরের পর্দা রয়েছে, এ মর্মে কোন সহীহ হাদিস পাওয়া যায় না। নাউযুবিল্লাহ!

তিনি এ বিষয়ে তার গ্রন্থের ২৭৭ পৃষ্ঠায় আরও লিখেন-‘‘এ অর্থের হাদিসগুলি কিছু সন্দেতীতভাবে মিথ্যা ও বানোয়াট কথা আর কিছু যয়ীফ, দুর্বল ও অনির্ভরযোগ্য কথা।’’

সম্মানিত পাঠকবৃন্দ! এখন ড. আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীরের ইলমের দৌড় কতটুকু তা দেখা যাবে।

প্রথম বর্ণনা:

❏ মিশকাত শরীফে ‘বাবে মসজিদ’ অধ্যায়ে একটি হাদিস বর্ণিত হয়েছে। হাদিসটি হল-

وَعَن أبي أُمَامَة ؓ قَالَ: إِنَّ حَبْرًا مِنَ الْيَهُودِ سَأَلَ النَّبِيَّ ﷺ : أَيُّ الْبِقَاعِ خَيْرٌ؟ فَسَكَتَ عَنْهُ وَقَالَ: أَسْكُتُ حَتَّى يَجِيءَ جِبْرِيلُ فَسَكَتَ وَجَاءَ جِبْرِيلُ عَلَيْهِ السَّلَامُ فَسَأَلَ فَقَالَ: مَا المسؤول عَنْهَا بِأَعْلَمَ مِنَ السَّائِلِ وَلَكِنْ أَسْأَلُ رَبِّيَ تَبَارَكَ وَتَعَالَى. ثُمَّ قَالَ جِبْرِيلُ: يَا مُحَمَّدُ إِنِّي دَنَوْتُ مِنَ اللَّهِ دُنُوًّا مَا دَنَوْتُ مِنْهُ قطّ. قَالَ: وَكَيف كَانَ ياجبريل؟ قَالَ: كَانَ بَيْنِي وَبَيْنَهُ سَبْعُونَ أَلْفَ حِجَابٍ مِنْ نُورٍ. فَقَالَ: شَرُّ الْبِقَاعِ أَسْوَاقُهَا وَخَيْرُ الْبِقَاع مساجدها

-‘‘হযরত আবু উমামা বাহেলী (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত। তিনি বলল, জনৈক ইয়াহুদী আলেম হুযূর পাক (ﷺ) কে জিজ্ঞাসা করলো যে, জমিনের মধ্যে উত্তম স্থান কোনটি? হুযূর (ﷺ) তাকে বললেন, তুমি জিবরাঈল (عليه السلام) এর আসা পর্যন্ত নীরব থাক। এই বলে তিনি নিজে নীরব থাকলেন এবং ঐ আলেমও নীরব থাকলেন। অতঃপর জিবরাঈল আসলেন। হুযূর (ﷺ) তখন বিষয়টি তার নিকট জিজ্ঞাসা করলেন। জিবরাঈল (عليه السلام) বললেন, প্রশ্নকারী অপেক্ষা (রাসূল (ﷺ) হতে) প্রশ্নকৃত ব্যক্তি (জিবরাঈল) অধিক জ্ঞাত নহে। তবে আপনি বললে আমি আমার প্রতিপালককে জিজ্ঞাসা করবো। অতঃপর জিবরাঈল (عليه السلام) বললেন, হে মুহাম্মদ (ﷺ)! আমি আল্লাহর এত নিকটবর্তী হয়েছিলাম, যতটা এর পূর্বে কখনও হইনি। হুযূর (ﷺ) জিজ্ঞাসা করলেন, কিভাবে এবং কত নিকটে গিয়াছিলেন? জিবরাঈল (عليه السلام) বললেন, আমার এবং আল্লাহর মাঝে মাত্র ৭০ হাজার নূরের পর্দা বাকী ছিল। তখন আল্লাহ্ পাক বললেন, যমিনের নিকৃষ্টতর স্থান হল বাজার সমূহ এবং যমিনের উকৃষ্টতার স্থান হল মসজিদ সমূহ।’’ ১৩

১৩. খতিব তিবরিযী : মিশকাতুল মাসাবীহ : ১/২৩০পৃ.: হা/৭৪১, আলবানী, বলেন সনদটি ‘হাসান’, মুত্তাকী হিন্দী, কানযুল উম্মাল, ৪/১৩৯ পৃ. হা/৯৯০৪

● এ হাদিসটির সনদ সহীহ। আহলে হাদিস আলবানী এটিকে মিশকাতের তাহকীকে এটিকে ‘হাসান’ বলেছেন।১৪

১৪. আলবানী, (তাহকীক) মিশকাতুল মাসাবীহ : ১/২৩০ পৃ. হা/৭৪১

দ্বিতীয় বর্ণনা:

❏ ‘‘হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন,

عن ابن عَبَّاسٍ ؓ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ ﷺ : إِنَّ اللَّهَ خَلَقَ إِسْرَافِيلَ مُنْذُ يَوْمَ خَلْقَهُ صَافًّا قَدَمَيْهِ لَا يَرْفَعُ بَصَرَهُ بَيْنَهُ وَبَيْنَ الرَّبِّ تَبَارَكَ وَتَعَالَى سَبْعُونَ نورا مَا مِنْهَا من نورٍ يدنو مِنْهُ إِلاّ احْتَرَقَ . رَوَاهُ التِّرْمِذِيّ وَصَححهُ

রাসূলে খোদা হুযূর পুরনূর (ﷺ) ইরশাদ করেন, আল্লাহ্ পাক হযরত ইসরাফিল ফিরিশতাকে সৃষ্টি করার দিন হতে তিনি (ইসরাফিল) নিজের দুই পায়ের উপর দাড়িয়ে রয়েছেন, তিনি চোখ তুলেও অন্যদিকে তাকান না। তার ও তার প্রতিপালকের মাঝখানে সত্তরটি নূরের পর্দা রয়েছে। তিনি যে কোন একটি পর্দার নিকটবর্তী হলে তখনই তা তাকে পুড়িয়া ফেলবেন। খতিব তিবরিযী (رحمة الله) বলেন, উক্ত হাদিসটি ইমাম তিরমিযী বর্ণনা করে বলেছেন, হাদিসটি সহীহ।’’ ১৫

১৫.

ক. খতিব তিবরিযী : মিশকাত শরীফ : ৪/৩৫২ : হা/৫৭৩১

খ. ইমাম আবু ঈসা তিরমিযী : আস্ সুনান : বাদায়িল খালক : ৪/৩৫১ পৃ.

গ.বায়হাকী, শুয়াবুল ঈমান, ১/১৭৬পৃ. হাদিসঃ ১৫৭

তৃতীয় বর্ণনা:

❏ অনুরূপ আরও হাদিস বর্ণিত হয়েছে-

عَنْ أَنَسٍ - ؓ - عَنِ النَّبِيِّ - ﷺ - قَالَ: سَأَلْتُ جِبْرِيلَ: هَلْ تَرَى رَبَّكَ؟ قَالَ: إِنَّ بَيْنِي وَبَيْنَهُ سَبْعِينَ حِجَابًا مِنْ نُورٍ، لَوْ رَأَيْتُ أَدْنَاهَا لَاحْتَرَقْتُ.

-‘‘হযরত আনাস ইবনে মালেক (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত। রাসূল (ﷺ) জিবরাঈল (عليه السلام) কে প্রশ্ন করলেন আপনি কী ‘‘আল্লাহ্ তা‘য়ালাকে দেখেছেন? জিবরাঈল (عليه السلام) উত্তরে বললেন, আমার এবং আমার প্রভুর মাঝে ৭০টি নূরের হিযাব (পর্দা) রয়েছে, সবচেয়ে কাছের পর্দার নিকটবর্তীও যদি আমি হই তাহলে আমি জ্বলে ছাই হয়ে যাবো।’’ ১৬

১৬.

ক. তাবরানী : মু‘জামুল আওসাত : ৬/২৭৮ পৃ. হাদিস নং-৬৪০৭

খ. ইবনে হাজার হায়সামী : মাযমাউয যাওয়াইদ : ১/৭৯ পৃ. হাদিসঃ২৫১

ঘ. ইমাম আবু নুয়াইম ইস্পাহানী: হিলইয়াতুল আউলিয়া : ৪/৬৩ পৃ

ঙ. ইমাম ইবনে হিব্বান : আজীমাত : ২/৬৭০ পৃ.

চ. খতিব তিবরিযী : মিশকাত : বাদয়িল খালক : ৪/৩৫১ পৃ. হা/৫৭২৯-৫৭৩০

ছ. ইমাম বগভী মাসাবীহুস সুন্নাহ, ৪/৩০ পৃ. হা/৪৪৫৭

জ. আল্লামা ইমাম যাহাবী : সিয়ারু আলামিন আন নুবালা : ৬/২৪১ পৃ.

ঝ. আল্লামা ইমাম মানাবী : ফয়জুল কাদীর : ৪/৭৮ পৃ.

● আল্লামা মোল্লা আলী ক্বারী (رحمة الله) লিখেন-

وَأَخْرَجَهُ الطَّبَرَانِيُّ مِنْ حَدِيثِ أَنَسٍ، وَأَنَّهُ حَدِيثٌ صَحِيحٌ

-‘‘ইমাম তাবরানী (رحمة الله) হযরত আনাস ইবনে মালিক (رضي الله عنه) হতে বর্ণনা করেন, নিশ্চয় এ হাদিসটি সহীহ।’’ (মেরকাত, ২/৬২০ পৃ. হা/৭৪১)

চতুর্থ বর্ণনা:

❏ হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (رضي الله عنه) এর সূত্রে ৭০টি নূরের পর্দা সম্পর্কে আরেকটি সনদ বর্ণিত আছে। ১৭

১৭.

(ক) তাবরানী, মু‘জামুল কাবীর, ১১/৩৭৯ পৃ. হাদিস, ১২০৬১,

(খ) ইবনে আবি শায়খ ইস্পাহনী, আল-আযিমাত, ২/৭০০ পৃ.

(গ) বায়হাকী, শুয়াবুল ঈমান, ১/৩১৫ পৃ. হা/১৫৫

৫ম বর্ণনাঃ

❏ তাবেয়ী ইমাম মুজাহিদ (রহ.) থেকে ৭০ হাজার পর্দার মর্মে আরেকটি সূত্র বর্ণিত আছে। ১৮

১৮. ইবনে আবি শায়খ ইস্পাহানী, আল-আযিমাত, ২/৬৯৩ পৃ.

৬ষ্ঠ বর্ণনাঃ

❏ সাহাবী হযরত আবু হুরায়রা (رضي الله عنه) থেকে ৭০ হাজার পর্দার মর্মে আরেকটি সূত্র বর্ণিত আছে। ১৯

১৯. ইবনে হাজার হাইসামী, মাযমাউয যাওয়াইদ, ১/৭৯ পৃ. হা/২৫৩

৭-৮তম বর্ণনাঃ

❏ এ বিষয়ে সাহাবী হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আমর (رضي الله عنه) ও হযরত সা‘দ (رضي الله عنه) থেকে ৭০ হাজার পর্দার মর্মে আরেকটি সূত্র বর্ণিত আছে। ২০

২০.

(ক) ইবনে হাজার হাইসামী, মাযমাউয যাওয়াইদ, ১/৭৯ পৃ. হাদিস, ২৫২

(খ) ইবনে হাজার আসকালানী, মুত্তালিবুল আলিয়া, ১২/৫৭৬ পৃ. হা/৩০১৬,

(গ) আবু ই‘য়ালা, আল-মুসনাদ, ১/৯০পৃ. হা/৮০

(ঘ) মুত্তাকী হিন্দী, কানযুল উম্মাল, ১০/৩৬৯ পৃ. হা/২৯৮৪৬ ও ২৯৮৪৭

(ঙ) তাবরানী, মু‘জামুল কাবীর, ১৩/৪১১ পৃ. হা/১৪২৪৮

(চ) ইবনে আছেম, আস্-সুন্নাহ, ২/৩৬৬ পৃ. হাদিস, ৭৮৮

(ছ) রুহাইনী, আল-মুসনাদ, ২/২১২পৃ. হা/১০৫৫

৯তম হাদিসঃ

❏ এ বিষয়ে সাহাবী হযরত আনাস (رضي الله عنه) থেকে অন্য আরেকটি সূত্রে ৭০ হাজার পর্দার মর্মে আরেকটি সূত্র বর্ণিত আছে। ২১

২১. ইবনে হাজার হাইসামী, মাযমাউয যাওয়াইদ, ১/৭৯ পৃ. হা/২৪৯

১০তম বর্ণনাঃ

❏ এ বিষয়ে সাহাবী হযরত ইবনে উমর (رضي الله عنه) থেকে অন্য আরেকটি সূত্রে ৭০ হাজার পর্দার মর্মে আরেকটি সূত্র বর্ণিত আছে। ২২

২২. মুত্তাকী হিন্দী, কানযুল উম্মাল, ১০/৩৬৯ পৃ. হাদিস, ২৯৮৪৬ ও ৪৭

১১তম বর্ণনা:

❏ ইমাম সুয়ূতি (رحمة الله) সংকলন করেন-

وَقَالَ حَدَّثَنَا الْوَلِيد حَدَّثَنَا أَبُو حاتِم حَدَّثَنَا أَبُو سَلمَة مُوسَى بْن إِسْمَاعِيل حَدَّثَنَا حَمَّاد بْن سَلمَة حَدَّثَنَا أَبُو عمرَان الْجونِي عَن زُرارة بْن أَبِي أوفى أَن النَّبِي سَأَلَ جِبْرِيل هَلْ رَأَيْت رَبك فانتفض جِبْرِيل وَقَالَ يَا مُحَمَّد إِن بيني وَبَينه سبعين حِجَابا من نور لَو دنوتُ من أدناها لاحترقت.

-‘‘হযরত যুরারাত ইবনে আউফা (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূল (ﷺ) হযরত জিবরাঈল (আ.) কে রাসূল (ﷺ) জিজ্ঞাসা করলেন যে আপনি কি মহান রবকে দেখেছেন? তখন জিবরাঈল (আ.) বললেন, আমার এবং আমার রবের মধ্যখানে ৭০ হাজার পর্দার ব্যবধান, আমি যদি প্রথম পর্দার কাছে যাই তাহলে আমি ধ্বংস হয়ে যাবে।’’ ২৩

২৩.

(ক) ইবনে আবি শায়খ ইস্পাহনী, আল-আযিমাত, ২/৬৬৯ পৃ.

(খ) তাবরানী, মু‘জামুল আওসাত, ৬/২৭৮পৃ. হা/৬৪০৭

(গ) আবু নুয়াইম ইস্পাহানী, হিলইয়াতুল আউলিয়া, ৫/৫৫ পৃ.

(ঘ) মুসলিম আনসারী দাওলাভী, আল-কূনী ওয়াল আসমা, ৩/১০০৭ পৃ. হা/১৭৬৫, ইমাম সুয়ূতি, আল-লাআলিল মাসনুআ, ১/২৩ পৃ.

●ইমাম সুয়ূতি (رحمة الله) এ সনদ প্রসঙ্গে লিখেন- هَذَا مُسْند صَحِيح الْإِسْنَاد. -‘‘এ হাদিসটির সনদ সহীহ।’’ ২৪

২৪. ইমাম সুয়ূতি, আল-লাআলিল মাসনূ, ১/২৩ পৃ.

●ইমাম সুয়ূতি (رحمة الله) এ বিষয়ের হাদিসের গ্রহণযোগ্যতা সম্পর্কে লিখেন- فَهَذِهِ الطّرق تقَوِّي الحَدِيث -‘‘এটি অনেক পদ্ধতিতে বর্ণিত হওয়ায় হাদিসটি শক্তিশালী প্রমাণিত।’’২৫

২৫. ইমাম সুয়ূতি, আল-লাআলিল মাসনূ, ১/২৩ পৃ.

সম্মানিত পাঠকবৃন্দ! সকল হাদিসের ইমামগণ একমত যে মতাওয়াতির পর্যায়ের হাদিস অস্বিকারকারী কাফির। আর এ হাদিসটিও মুতাওয়াতির প্রমাণিত।

বিষয় নং-৫: আল্লাহ্ তা‘য়ালার সাথে আমার বিশেষ মুহুর্ত:

‘এসব হাদীস নয়” গ্রন্থের ১৩৩ পৃষ্ঠায় মাওলানা মুতীউর রহমান এ গ্রহণযোগ্য হাদিসকে জাল হাদিস প্রমাণ করার হীন চেষ্টা করেছেন এবং সরলমনা মানুষকে ধোঁকা দেওয়ার চেষ্টা চালিয়েছেন, তেমনি ‘হাদীসের নামে জালিয়াতি’ গ্রন্থের ৪৬০ পৃষ্ঠায় ড. আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীর তিনি এটি একটি জাল কথা বলে উল্লেখ করেছন।

(১) আল্লামা মোল্লা আলী ক্বারী (رحمة الله) যা বর্ণনা করেছেন তা হলো-

حديث : لِي مَعَ اللَّهِ وَقْتٌ لَا يَسَعُنِي فِيهِ مَلَكٌ مُقَرَّبٌ، وَلَا نَبِيٌّ مُرْسَلٌ، يَذْكَرُهُ الصُّوفِيَّةُ كثيرا وَهُوَ رِسَالَة فِي الْقُشَيْرِيِّ لَكِنَّ بِلَفْظِ لِي وَقْتٌ لَا يَسَعُنِي فِيهِ غَيْرُ رَبِّي) قُلْتُ وَيُؤْخَذُ مِنْهُ أَنَّهُ أَرَادَ بِالْمَلَكِ الْمُقَرَّبِ جِبْرِيلَ وَبِالنَّبِيِّ الْمُرْسَلِ نَفْسَهُ الْجَلِيلِ -

-‘‘আল্লাহ্ তা‘য়ালার সাথে আমার এমন সময় নির্ধারিত আছে, তখন কোন নৈকট্যশীল ফেরেশতা বা কোন নবীয়ে মুরসাল আমার নিকট (আসার সুযোগ) পায় না। উক্ত হাদিসটি সম্পর্কে মোল্লা আলী ক্বারী (رحمة الله) বলেন, এটা সুফিয়ানে কেরাম অনেকে বর্ণনা করে থাকেন এবং ইমাম কুশাইরী (رحمة الله) তাঁর ‘‘আর-রিসালা’ গ্রন্থে এভাবে বর্ণনা করেন, আল্লাহ্ তা‘য়ালার সাথে আমার এমন একটি সময় রয়েছে, তখন ‘আল্লাহ্ ব্যতীত কেউ আমার নিকট আসতে পারে না।’’ ২৬

২৬. আল্লামা মোল্লা আলী ক্বারী: আসরারুল মারফুআ, পৃ. ১০২, আল্লামা সাখাভী: মাকাসিদুল হাসানা, ৪১০ পৃ. হা/৯২৪, আল্লামা আজলূনী : কাশফুল খাফা : ২/১৭৩-৭৪ পৃ. হা/২১৫৭

❏ তাফসীরে রুহুল বায়ানে সূরা মারিয়ামের ১ নং আয়াতের ব্যাখ্যা করতে গিয়ে আল্লামা ইসমাঈল হাক্কী (رحمة الله) বলেন, রাসূল (ﷺ) এর তিনটি সুরত :

(ক) সুরতে বাশারী : যেমন সূরা কাহাফের ১১০ নং আয়াতে বলা হয়েছে-

قُلْ إِنَّمَا أَنَا بَشَرٌ مِثْلُكُمْ يُوحَى

এ আয়াতে মানবীয় প্রকৃতির কথাই উল্লেখিত হয়েছে।

(খ) তার দ্বিতীয় সুরত হলো হযরত আবু কাতাদা (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত। রাসূল (ﷺ) বলেন

সুরতে হাক্কীঃ

قَالَ أَبُو سَلَمَةَ: قَالَ أَبُو قَتَادَةَ ؓ : قَالَ النَّبِيُّ ﷺ: مَنْ رَآنِي فَقَدْ رَأَى الحَقَّ

-‘‘যে আমাকে দেখলো সে হক তা‘য়ালাকেই দেখল।’’ ২৭

২৭. বুখারী, আস্-সহীহ, ১/৩৮ পৃ. হা/৬৯৯৬

(গ) সুরতে মালাকী : সুরতে মালাকীর প্রমাণ হলো রাসূল (ﷺ) এর যে হাদিসটি নিয়ে আলোচনা হচ্ছে সেটি, যেমন-

لِي مَعَ اللَّهِ وَقْتٌ لَا يَسَعُنِي فِيهِ مَلَكٌ مُقَرَّبٌ، وَلَا نَبِيٌّ مُرْسَلٌ،

-‘‘আল্লাহ্ তা‘য়ালার সাথে আমার এমন সময় নির্ধারিত আছে, তখন কোন নৈকট্যশীল ফেরেশতা বা কোন নবীয়ে মুরসাল আমার নিকট (আসার সুযোগ) পায় না।’’২৮

২৮. তাফসীরে রুহুল বায়ান - ৫ম খণ্ড : ৩১৫ পৃ : সূরা মারিয়াম : ১ নং আয়াত।

‘তাফসীরে রুহুল বায়ান’ গ্রন্থকার উক্ত রেওয়াতেকে হাদিস বা রাসূল (ﷺ) এর বাণী হিসেবেই উল্লেখ করেছেন।

❏ উক্ত হাদিসটি বিশ্ববিখ্যাত মুহাদ্দিস আল্লামা মানাবী (رحمة الله) তাঁর বিখ্যাত হাদিসের ব্যাখ্যা গ্রন্থ “ফয়যুল কাদীর” এ এভাবে বর্ণনা করেন-

قَالَ النَّبِيُّ ﷺ: لِي مَعَ اللَّهِ وَقْتٌ لَا يَسَعُ فِيهِ مَلَكٌ مُقَرَّبٌ وَلَا نَبِيٌّ مُرْسَلٌ

-‘‘আল্লাহ্ তা‘য়ালার সাথে আমার (ঘনিষ্ট) সময় নির্ধারণ যে, সে স্তরে পৌঁছলে আমার নিকট আল্লাহর নৈকট্য লাভে ধন্য কোন ফিরিশতা বা অন্য কোন মুরসাল নবীরও পৌঁছার সাধ্য নেই।’’ ২৯

২৯. ইমাম মানাবী : ফয়জুল কাদীর : ৪/৬ পৃষ্ঠা : হা/৪৩৭৭

❏ উক্ত হাদিসের সমর্থনে ইমাম সাখাভী (رحمة الله) এবং আল্লামা আজলূনী (رحمة الله) রাসূল (ﷺ) এর সাথে আল্লাহর একটি বিশেষ সময়ের কথা নিম্নের সহীহ হাদিস দ্বারা প্রমাণ করেছেন।

ويشبه أن يكون معنى ما للترمذي في الشمائل، ولابن راهويه في مسنده، عن علي في حديث طويل: كان صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إذا أتى منزله جزأ دخوله ثلاثة أجزاء: جزءا لله تعالى، وجزءا لأهله، وجزءا لنفسه، ثم جزأ جزأه بينه وبين الناس.

-‘‘এ হাদিসটির বিষয়ের সাথে সাদৃশ্য ইমাম তিরমিযী তার শামায়েলে তিরমিযীতে এবং ইমাম ইসহাক ইবনে রাহুয়াই (رحمة الله) তাঁর ‘মুসনাদ’ গ্রন্থে হযরত আলী (رضي الله عنه) হতে দীর্ঘ হাদিস বর্ণনা করেন, হাদিসের প্রথম অংশ হলো : রাসূল (ﷺ) যখন আপন গৃহে প্রবেশ করতেন তখন তিনি তার সময়কে কয়েকটি অংশে বন্টন করতেন, তার মধ্যে একটি নির্দিষ্ট সময় খাস আল্লাহর জন্য ও নির্দিষ্ট একটি সময়ের অংশ পরিবারের জন্য, নির্দিষ্ট একটি সময়ের অংশ নিজের জন্য এবং অতঃপর বাকী সময়ের অংশ সাহাবী ও অন্য মানুষের জন্য।’’ ৩০

৩০.

ক. আল্লামা ইমাম সাখাভী : মাকাসিদুল হাসানা : ৯২৬ পৃ : হা/৩৬৩

খ. আল্লামা আজলূনী : কাশফুল খাফা, ২/১৭৩ পৃ. হা/২১৫৭

এ হাদিসের সনদ নিয়ে উক্ত দুই মুহাদ্দিস কোনো সমালোচনা করেননি।

অতএব উক্ত হাদিস শরীফ দ্বারা প্রমাণিত হল, সহীহ হাদিস দ্বারা আল্লাহ্ তা‘য়ালার সাথে রাসূল (ﷺ) এর বিশেষ একটি মুহুর্ত রয়েছে।

তৃতীয় অধ্যায়: রাসূল (ﷺ)-এর সাথে সম্পর্কযুক্ত বিষয়সমূহ:

বিষয় নং-১: রাসূল (ﷺ) এর নাম শুনে চুমু খাওয়ার হাদিস সম্পর্কে তাত্ত্বিক দীর্ঘ আলোচনা:

ড. আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীর তার ‘হাদীসের নামে জালিয়াতি’ গ্রন্থের ৪৮২ পৃষ্ঠায় এবং মাওলানা জুনায়েদ বাবুনগরী সম্পাদিত ‘প্রচলিত জাল হাদীস’ গ্রন্থের ১১৭ পৃষ্ঠায় হযরত আবু বকর (رضي الله عنه) রাসূল (ﷺ)‘র নাম শুনে চুমু খাওয়ার হাদিসকে জাল প্রমাণ করার অনেক অপচেষ্টা চালিয়েছেন। মাওলানা মুতীউর রহমান লিখিত বিভ্রান্তিকর আরেক পুস্তক ‘এসব হাদীস নয়’ ১০৭ পৃষ্ঠায়ও বিনা প্রমাণে একে জাল বলে উল্লেখ করেছেন। ড. আহমদ আলী তার ‘বিদআত’ পুস্তুকের প্রথম খণ্ডেও জাল প্রমাণ করতে অনেক অপচেষ্টা করেছেন। এ হাদিসটির বিরোদ্ধে অপপ্রচারের জন্য বাংলা ভাষায় অনেক পুস্তক রচিত হয়েছে তাদের সকলের নাম কিতাব দীর্ঘায়িত হওয়ার আশংঙ্কায় উল্লেখ করলাম না।

আমি এ ব্যাপারে যতগুলো সূত্র বর্ণিত হয়েছে সবগুলো সূত্রই এখানে উল্লেখ করবো ইনশা আল্লাহ।

ক. এ ব্যাপারে হযরত আদম (عليه السلام) এর আমলঃ

❏ বিখ্যাত মুফাস্সির আল্লামা ইসমাঈল হাক্কী (رحمة الله) তাঁর উল্লেখযোগ্য তাফসীর তাফসীরে ‘রুহুল বায়ানে’ লিখেন,

وفى قصص الأنبياء وغيرها ان آدم عليه السلام اشتاق الى لقاء محمد صلى الله عليه وسلم حين كان فى الجنة فاوحى الله تعالى اليه هو من صلبك ويظهر فى آخر الزمان فسأل لقاء محمد صلى الله عليه وسلم حين كان فى الجنة فاوحى الله تعالى اليه فجعل الله النور المحمدي فى إصبعه المسبحة من يده اليمنى فسبح ذلك النور فلذلك سميت تلك الإصبع مسبحة كما فى الروض الفائق. او اظهر الله تعالى جمال حبيبه فى صفاء ظفرى ابهاميه مثل المرآة فقبل آدم ظفرى ابهاميه ومسح على عينيه فصار أصلا لذريته فلما اخبر جبرائيل النبي صلى الله عليه وسلم بهذه القصة قال عليه السلام (من سمع اسمى فى الاذان فقبل ظفرى ابهاميه ومسح على عينيه لم يعم ابدا

-‘‘কাসাসুল আম্বিয়া কিতাবে বর্ণিত আছে যে, হযরত আদম (عليه السلام) জান্নাতে অবস্থানকালে মহানবি হযরত মুহাম্মদ (ﷺ)‘র সাথে সাক্ষাতের জন্যে আগ্রহ প্রকাশ করেন। অত:পর আল্লাহ্ তা‘য়ালা তাঁর নিকট ওহী প্রেরণ করেন যে, হে আদম! তিনি তোমার পৃষ্ঠ হতে শেষ যামানায় প্রকাশ হবেন। তা শুনার পর তিনি জান্নাতে অবস্থানকালে আল্লাহর কাছে প্রার্থনা জানালেন। বিনিময়ে আল্লাহ্ তা‘য়ালা ওহী প্রেরণ করলেন, যে নূরে মুহাম্মদী (ﷺ) তোমার ডান হাতের শাহাদাত আঙ্গুলীর মধ্যে স্থানান্তরিত করেছি, তখন সে অঙ্গ হতে তাসবীহ পাঠ আরম্ভ হলো। এজন্যই এই আঙ্গুলকে তাসবীহ পাঠকারী আঙ্গুল বলা হয়। যেমন ‘রওযাতুল ফায়েক’ কিতাবেও বর্ণিত আছে, অথবা আরেক বর্ণনায় রয়েছে, আল্লাহ্ তা‘য়ালা আপন হাবীব (ﷺ) এর সৌন্দর্য প্রকাশ করলেন দুই বৃদ্ধাঙ্গুলীর উপর যেভাবে আয়নাতে দেখা যায়। তখন আদম (عليه السلام) দুই বৃদ্ধাঙ্গুলে চুম্বুন করে স্বীয় চোখের উপর মালিশ করলেন। এটি দলীল হিসেবে প্রমাণিত হলো যে, তাঁর সন্তানাদীর জন্য। অতঃপর জিবরাঈল (عليه السلام) এই ঘটনা হুযূর (ﷺ) কে জানালেন। হুযূর (ﷺ) বললেন, যেই ব্যক্তি আযানের মধ্যে আমার নাম মোবারক শুনে দুই বৃদ্ধাঙ্গুলী চুম্বন করবে আর চোখে মালিশ করবে, সে কখনো অন্ধ হবে না।’’ ১

১. আল্লামা ইসমাঈল হাক্কী : তাফসীরে রুহুল বয়ান : ৭/২২৯ পৃ. সূরা মায়েদা আয়াত : ৫৭ নং এর ব্যাখ্যা, আবদুর রহমান ছাফুরী, নুযাহাতুল মাযালিস, ২/৭৪ পৃ.

খ. হযরত মূসা (عليه السلام)-এর যুগে আমল:

❏ ইমাম আবু নুয়াইম ইস্পাহানী (رحمة الله) সংকলন করেন-

حَدَّثَنَا عَبْدُ اللهِ بْنُ مُحَمَّدِ بْنِ جَعْفَرٍ، ثنا أَبُو بَكْرٍ الدَّيْنُورِيُّ الْمُفَسِّرُ، ثنا مُحَمَّدُ بْنُ أَيُّوبَ الْعَطَّارُ، ثنا عَبْدُ الْمُنْعِمِ بْنُ إِدْرِيسَ، عَنْ أَبِيهِ، عَنْ جَدِّهِ وَهْبٍ قَالَ: كَانَ فِي بَنِي إِسْرَائِيلَ رَجُلٌ عَصَى اللهَ مِائَتَيْ سَنَةٍ ثُمَّ مَاتَ، فَأَخَذُوا بِرِجْلِهِ فَأَلْقُوهُ عَلَى مِزْبَلَةٍ، فَأَوْحَى اللهُ إِلَى مُوسَى عَلَيْهِ السَّلَامُ أَنِ اخْرُجْ فَصَلِّ عَلَيْهِ. قَالَ: يَا رَبِّ، بَنُو إِسْرَائِيلَ شَهِدُوا أَنَّهُ عَصَاكَ مِائَتَيْ سَنَةٍ، فَأَوْحَى اللهُ إِلَيْهِ: هَكَذَا كَانَ، إِلَّا أَنَّهُ كَانَ كُلَّمَا نَشَرَ التَّوْرَاةَ وَنَظَرَ إِلَى اسْمِ مُحَمَّدٍ ﷺ قَبَّلَهُ وَوَضَعَهُ عَلَى عَيْنَيْهِ، وَصَلَّى عَلَيْهِ، فَشَكَرْتُ ذَلِكَ لَهُ، وَغَفَرْتُ ذُنُوبَهُ، وَزَوَّجْتُهُ سَبْعِينَ حَوْرَاءَ  

-‘‘৭১টি আসমানী কিতাবের জ্ঞানী হযরত ওয়াহাব ইবনে মুনাব্বাহ (رضي الله عنه) বলেন, বনী ইসরাঈলের মধ্যে এক ব্যক্তি ছিল অত্যন্ত পাপী যে ২০০ বছর পর্যন্ত আল্লাহর নাফরমানী করেছিল, যখন সে মৃত্যুবরণ করে মানুষেরা তাকে এমন স্থানে নিক্ষেপ করল, যেখানে আবর্জনা ফেলা হতো। তখন হযরত মূসা (عليه السلام) এর প্রতি ওহী এলো যে, লোকটিকে ওখান থেকে তুলে যেন তার ভালভাবে জানাযার নামায পড়ে তাঁকে দাফন করা হয়। হযরত মূসা (عليه السلام) আরজ করলেন, হে আল্লাহ! বনী ইসরাঈল সাক্ষ্য দিচ্ছে যে, লোকটি ২০০ বছর পর্যন্ত তোমার নাফরমানী করেছিল। ইরশাদ হলো, হ্যাঁ, তবে তার একটি ভাল অভ্যাস ছিল। যখন সে তাওরাত শরীফ তেলাওয়াত করতো, যতবার আমার হাবীব হযরত মুহাম্মদ (ﷺ) এর নাম মোবারক দেখত তখন সেটা ততবার চুম্বন করে চোখের উপর রাখতো এবং তার প্রতি দুরূদ পাঠ করত। এজন্য আমি তাকে ক্ষমা করে দিয়েছি এবং সত্তর জন হুর স্ত্রী স্বরূপ তাকে দান করেছি।’’ ২

২. ইমাম আবু নুয়াইম ইস্পহানী: হিলইয়াতুল আউলিয়া : ৩/১৪২ পৃ., আল্লামা বুরহানুদ্দীন হালভী : সিরাতে হালবিয়্যাহ ১ম খণ্ড পৃষ্ঠা-৮৩, আল্লামা শফী উকাড়ভী : জিকরে জামীল : ৩৫৪ পৃষ্ঠা, ইমাম জালালুদ্দীন সুয়ূতি : খাসায়েসুল কোবরা :১/৩০ পৃ. হা/৬৮, মাকতুত-তাওফিকহিয়্যাহ, বয়রুত, আল্লামা আবদুর রহমান ছাফ‚রী : নুযহাতুল মাযালিস : ২/১৪২ পৃ., আল্লামা দিয়ার বকরী : আল খামীস ফি আহওয়ালে আনফাসে নাফীস : ১/২৮২ পৃ.

সনদ পর্যালোচনা:

এ হাদিসটিকে আমি ইমাম হাকেম নিশাপুরী (رحمة الله)-এর শর্তানুসারে ‘হাসান’ মত পোষণ করে থাকি।

✦ ইমাম হাকেম তার আল-মুস্তাদরাক’ গ্রন্থে ‘আবদুল মুনাঈম বিন ইদরীস’ যিনি এ হাদিসের বর্ণনাকারী হযরত ওহ্হাব ইবনে মুনাব্বাহ (رضي الله عنه)-এর আপন নাতী ছিলেন তার হাদিসকে সহীহ বলেছেন।

✦ উক্ত হাদিসটিকে এক দেওবন্দী আলেম মাওলানা আবদুল মালেক তার ‘এসব হাদীস নয়’ গ্রন্থের ২৩৪ পৃষ্ঠায় এটিকে জাল বলে আখ্যায়িত করেছেন। উক্ত রাবীর বিষয়ে দেওবন্দী হযরত লিখেছেন যে, তার পিতা থেকে তার হাদিস শুনা প্রমাণিত নয়; অথচ ইমাম খতিবে বাগদাদী (رحمة الله) উল্লেখ করেছেন-

حدث عن أبيه بكتاب المبتدأ

-‘‘তিনি তার পিতার কিতাব ‘মুবতাদা’ গ্রন্থ হতে বর্ণনা করতেন।’’  

✦ ইমাম আবু হাতেম (رحمة الله) উল্লেখ করেন-

روى عن ابيه عن جده وهب بن منبه

-‘‘তিনি তার পিতা থেকে এভাবে তার দাদা থেকে হাদিস বর্ণনা করতেন।’’ তাই বুঝা গেল যে তিনি তার পিতা থেকে বর্ণনা করা মানে তার পিতার পাণ্ডুলিপি থেকে বর্ণনা করা। তিনি উক্ত রাবীকে ইমাম ইবনে মাঈনের একটি মতামত উল্লেখ করে (অথচ তার থেকে উক্ত ৩ রাবী বিষয়ে আরেকটি মত রয়েছে) এবং ইমাম আহমাদের অর্ধেক ইবারত দ্বারা তিনি দাবি করেছেন যে এটি জাল। এই হাদিসটি কোন আহকাম সংক্রান্ত নন; যার কারণে মুহাদ্দিসগণ কঠোর যাচাই বাছাই করেননি। এ রাবীর বিষয়ে হুকুম হল তিনি যখন কোন যুহুদ, রিকাক সংক্রান্ত কোন হাদিস বর্ণনা করতেন তা মুহাদ্দিসগণ লিপিবদ্ধ করতেন। আর উক্ত ৪ রাবী যখন আহকাম সংক্রান্ত হাদিস বর্ণনাকারী হন সে ক্ষেত্রে তিনি সিকাহ নন; বরং যঈফ।

৩. খতিবে বাগদাদী, তারিখে বাগদাদ, ১১/১৩৩ পৃ. ক্রমিক. ৫৮২৫, ইমাম যাহাবী, তারিখুল ইসলামী, ৫/৬২৬ পৃ. ক্রমিক. ২৬৮

৪. ইমাম আবু হাতেম, র্জারাহ ওয়া তা‘দীল, ৬/৬৭ পৃ. ক্রমিক. ৩৫৩

✦ বিশ্ববিখ্যাত আসমাউর রিজালবিদ ইমাম ইবনে হাজার আসকালানী (رحمة الله) উল্লেখ করেন-

قال ابن معين: يكتب من حديثه الرقاق

-‘‘আমরা তাঁর রিকাক সংক্রান্ত হাদিসগুলো লিপিবদ্ধ করতাম।’’ ৫

৫. ইমাম ইবনে হাজার আসকালানী, তাহযিবুত-তাহযিব, ১/১৯৪ পৃ., তাহযিবুল কামাল, ২/২৯৯ পৃ.

✦ ইমাম ইবনে হাজার আসকালানী (رحمة الله) বলেন, ইবনে হিব্বান (رحمة الله) তাকে সিকাহ রাবীর তালিকায় স্থান দিয়েছেন।’’ (৬) মুনাঈম সুপ্রসিদ্ধ মুহাদ্দিস ছিলেন।

৬. ইমাম ইবনে হাজার আসকালানী, তাহযিবুত-তাহযিব, ১/১৯৪ পৃ.

✦ ইমাম যাহাবী (رحمة الله) তার জীবনীতে উল্লেখ করেন-

رَوَى عَنْهُ: أبو بكر بن أبي الدُّنيا، ومحمد بن أحمد بن البراء، وجماعة.

-‘‘তার থেকে বিখ্যাত হাদিসের ইমাম আবু বকর আবিদ্দুনীয়া (رحمة الله) ও মুহাম্মদ বিন আহমদ ইবনে বার (رحمة الله)সহ এক জামাত মুহাদ্দিগণ হাদিস বর্ণনা করেছেন।’’ (ইমাম যাহাবী, তারিখুল ইসলাম, ৫/৬২৬ পৃ.)

আহকাম সংক্রান্ত হাদিসে তিনি দুর্বল। যেমন-ইমাম আহমদ ইবনে শুয়াইব নাসাঈ (رحمة الله) বলেন-

حَدَّثَنَا أبي قال: عبد المنعم بن إدريس لَيْسَ بثقة.

-‘‘তিনি তার পিতা হতে বর্ণনা করেন, তিনি সিকাহ বা বিশ্বস্ত নয়।’’ ৭

৭. খতিবে বাগদাদী, তারিখে বাগদাদ, ১১/১৩৫ পৃ. ক্রমিক. ৫৮২৫, নাসাঈ, দ্বুআফা ওয়াল মাতরুকুন, ১/৭০ পৃ. ক্রমিক. ৩৮৭

✦ এমনটি ইমাম আলী ইবনে মাদীনী (رحمة الله)ও বলেছেন। ৮

৮. ইবনে হাজার, লিসানুল মিযান, ৫/২৯৯ পৃ.

✦ ইমাম বুখারী (رحمة الله) বলেন- لَا يكْتب حَدِيثه-‘‘তার হাদিস আমরা লিপিবদ্ধ করতাম না।’’ ৯

৯. যাহাবী, তারিখুল আওসাত, ২/১৭৯ পৃ. ক্রমিক. ২২২০

✦ তবে ইমাম হাকেমের (رحمة الله) বিখ্যাত হাদিসের গ্রন্থ ‘আল-মুস্তাদরাকে’ তার থেকে তিনি ১৬ টি হাদিস সংকলন করেন। যেমন উদাহরণ দেখুন-

أَخْبَرَنَا الْحَسَنُ بْنُ مُحَمَّدٍ الْإِسْفَرَايِينِيُّ، ثنا مُحَمَّدُ بْنُ أَحْمَدَ بْنِ الْبَرَاءِ، ثنا عَبْدُ الْمُنْعِمِ بْنُ إِدْرِيسَ، عَنْ أَبِيهِ، قَالَ: وَسُئِلَ وَهْبُ بْنُ مُنَبِّهٍ.....

৪০৬৩ - سكت عنه الذهبي في التلخيص

ইমাম হাকেম নিশাপুরী (رحمة الله) একে সহীহ বলেছেন আর যাহাবী (رحمة الله) (سكت عنه الذهبي في التلخيص) এর বিষয়ে চুপ থেকেছেন। (ইমাম হাকেম নিশাপুরী, আল-মুস্তাদরাক, হা/৪০৬৩)

✦ এমনিভাবে ইমাম হাকেমের অনেকগুলো হাদিসের বিষয়ের সাথে ইমাম যাহাবী (رحمة الله) চুপ থেকে থেকে একমত পোষণ করার ইঙ্গিত দিয়েছেন। ১০

১০.ইমাম হাকেম, আল-মুস্তাদরাক, ২/৬১৫ পৃ. হা/৪০৬৩, ২/৬২০ পৃ. হা/৪০৭৩, ২/৬৩৬ পৃ. হা/৪১১৮, ২/৬৩৯ পৃ. হা/৪১২৮, ২/৬৪০ পৃ. হা/৪১৩০

তাহলে বুঝা গেল, মাওলানা মুহাম্মদ আবদুল মালেক সাহেব তাদের থেকে বড়বিজ্ঞ। কেউ কেউ ইমাম আহমদ (رحمة الله) এর বরাত দিয়ে তাকে মিথ্যাবাদী প্রমাণ করতে চান, মূলত তিনি তাকে মিথ্যাবাদী বলার উদ্দেশ্য ছিল তিনি তার পিতা থেকে শুনা প্রসঙ্গে নিয়ে। যাই হোক এই হাদিস কখনই জাল হতে পারে না। এ ধরনের হাদিসের উপর আমল করা মুস্তাহাব হওয়ার জন্য যথেষ্ট।

✦ এই হাদিসটি ইমাম হালাবী (رحمة الله) ও ইমাম সুয়ূতি (رحمة الله) সিরাত গ্রন্থে সংকলন করেছেন। আল্লামা বুরহান উদ্দিন হালাবী (رحمة الله) তার বিখ্যাত সিরাত গ্রন্থের ভূমিকায় লিখেন-

ولا يخفى أن السير تجمع الصحيح والسقيم، والضعيف والبلاغ، والمرسل والمنقطع والمعضل دون الموضوع-

-‘‘সীরাত গ্রন্থ সমূহে সহিহ, সাক্বীম, দ্বঈফ, বালাগ, মুরসাল, মুনকাতা ও মু‘দাল হাদিস সমূহ একত্রিত করা হয়, কিন্তু মওদ্বু বা জাল হাদিস নয়।’’ ১১

১১. আল্লামা বুরহান উদ্দিন হালবী : সিরাতে হালবিয়্যাহ : ১ম খণ্ড : পৃ-৭

গ. হযরত খিযির (عليه السلام) কর্তৃক রাসূল (ﷺ)‘র নাম শুনে চুমু খাওয়ার আমল:

✦ ইমাম সাখাভী (رحمة الله) সংকলন করেন-

ما أورده أبو العباس أحمد ابن أبي بكر الرداد اليماني المتصوف في كتابه "موجبات الرحمة وعزائم المغفرة بسند فيه مجاهيل مع انقطاعه، عن الخضر عليه السلام أنه: من قال حين يسمع المؤذن يقول أشهد أن محمد رسول اللَّه: مرحبا بحبيبي وقرة عيني محمد بن عبد اللَّه ﷺ ، ثم يقبل إبهاميه ويجعلهما على عينيه لم يرمد أبدا-

-‘‘ইমাম আবু আব্বাস আহমদ বিন আবি বকর ইয়ামানী (رحمة الله) তাঁর লিখিত উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ

 موجبات الرحمة و عزائم المغفرة

এর মধ্যে হযরত খিযির (عليه السلام) থেকে বর্ণিত আছে, যে ব্যক্তি মুয়াজ্জিনের কণ্ঠে ‘আশহাদু আন্না মুহাম্মদার রাসূলূল্লাহ’ শোনে বলবে,

مرحبا بحبيبى و قرة عينى محمد بن عبد الله صلى الله عليه وسلم ) মারহাবা বি হাবিবি ওয়া কুররাতো আইনী মুহাম্মাদ ইবনে আব্দুল্লাহ (ﷺ)) অতঃপর স্বীয় বৃদ্ধাঙ্গুলীদ্বয় চুম্বন করে চোখে লাগাবে, তাহলে তার চোখে কখনও ব্যথা হবে না এবং সে কোন দিন অন্ধ হবে না।’’ ১২

১২.

(ক) আল্লামা ইমাম সাখাভী : মাকাসিদুল হাসানা : ১/৩৮৩ : হা/১০২১

(খ) আল্লামা আজলূনী : কাশফুল খাফা : ২/২৭০ : হা/২২৯৬

(গ) আল্লামা মোল্লা আলী ক্বারী : মওদ্বুআতুল কাবীর : ১০৮ পৃ

(ঘ) মুফতী আহমদ ইয়ার খাঁন নঈমী : জাআল হক : ২/২৪৬ পৃ

সনদটি ইনকিতা হওয়ার কারণে যঈফ, উসূলে হাদিসবিদগণ একমত যে ইনকিতার জন্য হাদিস যঈফ, জাল হয় না। এবার আমি হযরত আবু বকর (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত হাদিস নিয়ে পর্যালোচনা করবো।

ঘ. প্রথম খলিফা হযরত আবু বকর (رضي الله عنه)‘র আমল:

❏ ইমাম দায়লামী (رحمة الله)সহ আরও অনেকে সংকলন করেন-

حَدِيثِ أَبِي بَكْرٍ الصِّدِّيقِ أَنَّهُ لَمَّا سَمِعَ قول المؤذن أشهد أن محمد رَسُولُ اللَّه قَالَ هَذَا، وَقَبَّلَ بَاطِنَ الأُنْمُلَتَيْنِ السَّبَّابَتَيْنِ وَمَسَحَ عَيْنَيْهِ، فَقَالَ ﷺ : مَنْ فَعَلَ مِثْلَ مَا فَعَلَ خَلِيلِي فَقَدْ حَلَّتْ عَلَيْهِ شَفَاعَتِي، رواه الديلمى المسند الفردوس

-‘‘হযরত আবু বকর (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত। তিনি মুয়ায্যিনকে ‘আশহাদু আন্না মুহাম্মাদার’ রাসূলূল্লাহ বলতে শোনলেন, তখন তিনিও তা বললেন এবং বৃদ্ধাঙ্গুলীদ্বয়ে চুমু খেয়ে তা চোখে বুলিয়ে নিলেন। তা দেখে রাসূল (ﷺ) ইরশাদ করেন : যে ব্যক্তি আমার বন্ধুর ন্যায় আমল করবে, তার জন্য আমার সুপারিশ বৈধ হয়ে গেল।’’ ১৩

১৩.

ক. ইমাম আবদুর রহমান সাখাভী : মাকাসিদুল হাসানা : ৩৮৩ পৃ. : হা/১০২১

গ. আল্লামা ইমাম আজলূনী : কাশফুল খাফা : ২/২৫৯ পৃ. হা/২২৯৬

ঘ. আল্লামা মোল্লা আলী ক্বারী : আসরারুল মারফূ : ৩১২ পৃ. হা/৪৫৩

ঙ. আল্লামা ইমাম তাহতাভী : মারাকিল ফালাহ : ১৬৫ পৃ., কিতাবুল আযান

চ. শাওকানী : ফাওয়াহিদুল মাওদ্বুআত : ১/৩৯ পৃ.

ছ. আল্লামা ইসমাঈল হাক্কী : তাফসীরে রুহুল বায়ান : ৭/২২৯ পৃ.

জ. আল্লামা তাহের পাটনী : তাযকিরাতুল মওদ্বুআত : ৩৪ পৃ.

ঝ. আল্লামা জালালুদ্দীন সূয়তী : লা-আলীল মাসনূআ : ১৬৮-১৭০ পৃ.

ঞ. আল্লামা আব্দুল হাই লাখনৌভী : আসারুল মারফ‚আহ, ১৮২ পৃ.

ঠ. আলবানী : সিলসিলাতুল আহাদিসিদ দ্বঈফাহ, ১/১০২ পৃ. হা/৭৩

এ হাদিসের বিষয়ে মুহাদ্দিসগণের অভিমত:

এ হাদিসের বিষয়ে এখন গ্রহণযোগ্য মুহাদ্দিসগণের অভিমত তুলে ধরবো ইনশা আল্লাহ।

১. ইমাম সাখাভী (رحمة الله)‘র অভিমত

✦ ইমাম সাখাভী (رحمة الله) হযরত আবু বকর (رضي الله عنه) এর বর্ণিত হাদিসটি সংকলন করে বলেন, لا يصح ‘হাদিসটি সহীহ পর্যায়ভুক্ত নয়।’ ১৪

১৪. আল্লামা ইমাম সাখাভী : মাকাসিদুল হাসানা : ৩৮৪ পৃ. : হা/১০২১

সম্মানিত পাঠকবৃন্দ, দেখুন ইমাম সাখাভী (رحمة الله) কী বললেন, আর ‘এসব হাদিস নয়’ গ্রন্থের ১০৭ পৃষ্ঠায় মাওলানা মুতীউর রহমান কি লিখেছেন। তিনি লিখেছেন ইমাম সাখাভী (رحمة الله) নাকি বলেছেন, ‘এটি প্রমাণিত নয়’ বলেছেন। দেখুন ইমাম সাখাভী (رحمة الله)‘র নামে বাংলা ভাষায় কী ধরনের মিথ্যাচার করেছে। ড. আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীর তার গ্রন্থের বাংলায় কতিপয় মুহাদ্দিসদের নাম উল্লেখ করে এ হাদিসকে জাল বলে চালিয়ে দেবার অহেতুক অপচেষ্টা চালিয়েছেন।

আমি কিতাবের ভূমিকায় বিস্তারিত আলোচনা করেছি যে, কোনো মুহাদ্দিসদের বক্তব্য ‘হাদিসটি সহীহ নয়’ বললে তা দ্বারা জাল হওয়া বুঝায় না। বরং ‘হাসান’ বা কমপক্ষে যঈফ হওয়া বুঝায়।

✦ এমনকি মোল্লা আলী ক্বারী (رحمة الله) বলেন,

قَوْلَ السَّخَاوِيِّ لَا يَصِحُّ لَا يُنَافِي الضَّعْفَ وَالْحُسْنَ

-‘‘ইমাম সাখাভী (رحمة الله)-এর বক্তব্য হাদিসটি ‘সহীহ নয়’ এর দ্বারা হাদিসটি ‘হাসান’ এবং (কমপক্ষে) যঈফ হওয়াতে নিষেধ করে না।’’ ১৫

১৫. আল্লামা মোল্লা আলী ক্বারী : আসারুল মারফ‚আ, ২৩৬ পৃ.

বুঝা গেল, হাদিসটি কমপক্ষে ‘হাসান’ হাদিস যা দলীল হিসেবে দাঁড় করানোর গ্রহণযোগ্যতা রাখে। কোনো মুহাদ্দিসদের বক্তব্য হাদিসটি ‘সহীহ নয়’ বলতে কী বুঝায় এ সম্পর্কে হাদিসের নীতিমালায় কিতাবের শুরু আমি বিস্তারিত আলোচনা করে এসেছি, পাঠকবৃন্দের সেখোনে নেয়ার অনুরোধ রইলো।

২. আল্লামা মোল্লা আলী ক্বারী (رحمة الله)‘র অভিমত:

✦ আল্লামা মোল্লা আলী ক্বারী (رحمة الله) তাঁর গ্রন্থে ইমাম সাখাভী (رحمة الله)‘র রায় পেশ করে সমাধানের কথা লিখেন যে-

قُلْتُ وَإِذَا ثَبَتَ رَفْعُهُ عَلَى الصَّدِّيقِ فَيَكْفِي الْعَمَلُ بِهِ لِقَوْلِهِ عَلَيْهِ الصَّلَاةُ وَالسَّلَامُ عَلَيْكُمْ بِسُنَّتِي وَسِنَّةِ الْخُلَفَاءِ الرَّاشِدِين َمن بعدى-

-‘‘আমার কথা হলো হাদিসটির সনদ যেহেতু হযরত আবু বকর সিদ্দিক (رضي الله عنه) পর্যন্ত প্রসারিত (মাওকুফ হিসেবে প্রমাণিত), সেহেতু আমলের জন্য এতটুকুই যথেষ্ট। কেননা হুযূর (ﷺ) ইরশাদ করেছেন, তোমরা আমার পর আমার সুন্নাত ও আমার খোলাফায়ে রাশেদীনের সুন্নাতকে আকড়ে ধরো।’’ ১৬-১৭

১৬.

ক. ইমাম আবু দাউদ : আস্-সুনান : হা/৪৬০৭, হযরত উমর (رضي الله عنه) এর সূত্রে।

খ. ইমাম তিরমিযী : আস্-সুনান : হা/২৬৭৬

গ. ইমাম ইবনে মাজাহ : আস্-সুনান : হা/৪২

ঘ. ইমাম ইবনুল বার : জামিউল বায়ান ওয়াল ইলমে বি ফাদ্বলিহী : ২/৯০ পৃ

ঙ. ইমাম আহমদ : আল মুসনাদ : ৪/১২৭ পৃষ্ঠা, হযরত ইরবায বিন সারিয়া (رضي الله عنه) এর সূত্রে।

১৭.

ক. আল্লামা মোল্লা আলী ক্বারী : মওদ্বুআতুল কাবীর : ৩১৬ : হা/৪৫৩

খ. আল্লামা মোল্লা আলী ক্বারী : আসারুল মারফ‘‚আ : ২১০ : হা/৮২৯

গ. আল্লামা আজলূনী : কাশফুল খাফা : ২/২৭০ পৃ. হা/২২৯৬

দেখুন! আল্লামা মোল্লা আলী ক্বারী (رحمة الله) বলেছেন যে, এতটুকুই যথেষ্ট যেহেতু হযরত আবু বকর (رضي الله عنه) আমলটি করেছেন এবং তিনি পর্যন্ত সনদটি প্রসারিত, তাই বুঝা গেল যারা না করবে এবং আমলটিকে অস্বীকার করে তারা সাহাবীদের বিরোধী ৭২ দলের সদস্য, বাতিল ফির্কা হিসেবেই গণ্য। অপরদিকে ধোঁকাবাজ ড. আবদুল্লাহ জাহাঙ্গীর তার গ্রন্থে মোল্লা আলী ক্বারী (رحمة الله)এর বক্তব্যটিকে বিকৃত করে বর্ণনা করেছেন।

৩-৪. আল্লামা তাহের পাটনী ও শাওকানীর অভিমতঃ

✦ আহলে হাদিস মাওলানা কাযী শাওকানী তার প্রসিদ্ধ গ্রন্থ ফাওয়াহিদুল মওদ্বুআত ১/১৯ পৃষ্ঠায় হযরত আবু বকর (رضي الله عنه) বর্ণিত হাদিসটি বর্ণনার পর লিখেন,

رواه الديلمى فى مسند الفردوس عن ابى بكر مرفوعا قال ابن طاهر فى التذكرة: لا يصح

-‘‘উক্ত হাদিসটি ইমাম দায়লামী (رحمة الله) ‘মুসনাদিল ফিরদাউস’ গ্রন্থে বর্ণনা করেন মারফূ হিসেবে (যার সনদ রাসূল (ﷺ) পর্যন্ত পৌঁছেছে) উক্ত হাদিস সম্পর্কে আল্লামা তাহের পাটনী (رحمة الله) তার ‘তাযকিরাতুল মওদ্বুআত’ গ্রন্থে বলেন, হাদিসটি ‘সহীহ পর্যায়ের নয়’।’’

আর আল্লামা তাহের পাটনীর মূল বক্তব্যটি হচ্ছে তার তাযকিরাতুল মওদ্বুআত গ্রন্থের : ১/৩৪ পৃষ্ঠায়। মুহাদ্দিসদের বক্তব্য হাদিসটি ‘সহীহ নয়’ বলতে কি বুঝায় তা কিতাবের শুরুতে এবং ইতোপূর্বে আলোকপাত হয়েছে পাঠকবৃন্দের সেখানে দেখে নেয়ার অনুরোধ রইল।

৫. আল্লামা আজলূনী (رحمة الله)‘র অভিমত:

✦ আল্লামা আজলূনী (رحمة الله) হাদিসটি তার গ্রন্থে বর্ণনা করেন বলেন,

رواه الديلمى فى مسند الفردوس عن ابى بكر مرفوعا ...... قال السخاوى لا يصح

-‘‘উক্ত হাদিসটি ইমাম দায়লামী (رحمة الله) তার মুসনাদিল ফিরদাউস গ্রন্থে হযরত আবু বকর (رضي الله عنه) হতে মারফূ সূত্রে বর্ণনা করেন .........ইমাম সাখাভী (رحمة الله) হাদিসটি সম্পর্কে বলেন, হাদিসটি সহীহ পর্যায়ের নয়।’’১৮

১৮ .আল্লামা আজলূনী : কাশফুল খাফা : ২/১৮৫পৃ.হা/২২৯৪

এ ছাড়া আল্লামা আজলূনী, মোল্লা আলী ক্বারী এর বক্তব্য সহ অনেক ঘটনা বর্ণনা করেছেন যার আলোচনা সামনে আসছে। মুহাদ্দিসদের বক্তব্য হাদিসটি ‘সহীহ নয়’ বলতে কি বুঝায় তা কিতাবের শুরুতে এবং ইতোপূর্বে আলোকপাত হয়েছে পাঠকবৃন্দের সেখানে দেখে নেয়ার অনুরোধ রইল।

৬. ইমাম ইবনে আবেদীন শামী (رحمة الله)‘র অভিমত:

✦ ইমাম শামী (رحمة الله) উক্ত হাদিসটি সম্পর্কে বলেন, ইমাম ইসমাঈল জারহী (رحمة الله) বলেন-

قَالَ: وَلَمْ يَصِحَّ فِي الْمَرْفُوعِ مِنْ كُلِّ هَذَا شَيْءٌ.

-“এ ব্যাপারে মারফূ হিসেবে যে ক‘টি সনদ বর্ণিত হয়েছে সে সবগুলোর একটিও সহীহ পর্যায়ের নয়।’’ ১৯

১৯ .আল্লামা ইবনে আবেদীন শামী : রুদ্দুল মুখতার : বাবুল আযান : ১/৩৯৮ পৃ

ইমাম শামী (رحمة الله) এর বক্তব্য দ্বারা বুঝা যায় হাদিসটি “সহীহ নয়” আর মুহাদ্দিসদের বক্তব্য হাদিসটি ‘সহীহ নয়’ বলতে কি বুঝায় তা কিতাবের শুরুতে এবং ইতোপূর্বে আলোকপাত হয়েছে পাঠকবৃন্দের সেখানে দেখে নেয়ার অনুরোধ রইল।

৭.আল্লামা ইসমাঈল হাক্কী (رحمة الله)‘র অভিমত:

✦ বিশ্ব বিখ্যাত মুফাস্সির, মুহাদ্দিস, ফকিহ আল্লামা ইসমাঈল হাক্কী (رحمة الله) এর অদ্বিতীয় তাফসীর গ্রন্থ ‘রুহুল বায়ানে’ ষষ্ঠ পারার সূরা মায়েদার ৫৭ নং আয়াতের তাফসীরে লিখেন,

تقبيل ظفرى ابهاميه مع مسبحتيه والمسح على عينيه عند قوله محمد رسول الله لانه لم يثبت فى الحديث المرفوع لكن المحدثين اتفقوا على ان الحديث الضعيف يجوز العمل به فى الترغيب والترهيب

-‘‘আযানে ‘মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ’ বলার সময় নিজের শাহাদাতের আঙ্গুলসহ বৃদ্ধাঙ্গুলীদ্বয়ের নখে চুমু দেয়ার বিধানটিতে কিছুটা দুর্বলতা বিদ্যমান। কেননা এ বিধানটা মারফূ হাদিস দ্বারা প্রমাণিত নয়। কিন্তু মুহাদ্দিসীনে কেরাম এ ব্যাপারে একমত যে আকর্ষণ সৃষ্টি ও ভীতি সঞ্চারের বেলায় দ্বঈফ সনদের হাদিসের উপর আমল করা জায়েয।’’ (আল্লামা ইসমাঈল হাক্কী, তাফসিরে রুহুল বয়ান, ২/৪১০ পৃ.)

✦ তিনি অন্যত্র লিখেন-

قال الامام السخاوي فى المقاصد الحسنة ان هذا الحديث لم يصح فى المرفوع والمرفوع من الحديث هو ما اخبر الصحابي عن قول رسول الله عليه السلام

-‘‘ইমাম সাখাভী (رحمة الله) তার আল ‘মাকাসিদুল হাসানা’ কিতাবে বলেছেন, উক্ত হাদিসটি মারফূ হিসেবে সহীহ পর্যায়ের অন্তর্ভূক্ত নয়। আর মারফূ বলা হয় ঐ হাদিসকে যা সাহাবী রাসূলে পাক (ﷺ) থেকে বর্ণনা করেন।’’ ২০

২০. আল্লামা ইসমাঈল হাক্কী, তাফসীরে রুহুল বায়ান, ৭/২২৯ পৃ. দারূল ফিকর ইলমিয়্যাহ, বয়রুত, লেবানন।

✦ আল্লামা ইসমাঈল হাক্কী (رحمة الله) তার এ গ্রন্থে আরও বলেন যে,

يقول الفقير قد صح عن العلماء تجويز الاخذ بالحديث الضعيف فى العمليات فكون الحديث المذكور غير مرفوع لا يستلزم ترك العمل بمضمونه وقد أصاب القهستاني فى القول باستحبابه وكفانا كلام الامام المكي فى كتابه فانه قد شهد الشيخ السهروردي فى عوارف المعارف بوفور علمه وكثرة حفظه وقوة حاله وقبل جميع ما أورده فى كتابه قوت القلوب ولله در ارباب الحال فى بيان الحق وترك الجدال

-‘‘এই অধম আরজ করেছি যে, ওলামায়ে কেরাম থেকে বিশুদ্ধ ভাবে বর্ণিত আছে, আমলের ব্যাপারে দ্বঈফ সনদের হাদিস গ্রহণযোগ্য। এ ব্যাপারটি সহীহ সূত্রে বর্ণিত আছে। অতএব হাদিস টি মারফূ না হওয়ার দ্বারা এটা আবশ্যক হয় না যে ঐ হাদিসের মর্মানুসারে আমল করা যাবে না। সুতরাং আল্লামা কুহিস্তানী যে এটাকে মুস্তাহাব বলেছেন তাই সঠিক। ‘কুউয়াতুল কুলুব’ কিতাবে ইমাম আবু তালিব মক্কী (رحمة الله)-এর বর্ণনাই আমাদের জন্য যথেষ্ট। তার হিফ্য, ইলমের ব্যাপারে আল্লামা শায়খ সোহরাওয়ার্দী সাক্ষ্য দিয়েছেন ‘আওয়ারিফুল মা’আরিফ’ গ্রন্থে এবং কূউয়াতুল কুলুব কিতাবের বর্ণিত সকল মাস‘আলা তিনি গ্রহণ করেছেন।’’ ২১

২১. আল্লামা ইসমাঈল হাক্কী, তাফসিরে রুহুল বায়ান, ৭/২২৯ পৃ.

ঙ. ফকিহগণের দৃষ্টিতে এ হাদিসের ব্যাপারে আমল:

✦ বিশ্ব বিখ্যাত ফকিহ ইমাম ইবনে আবেদীন শামী (رحمة الله) তাঁর ফতোয়ার কিতাব ফতোয়ায়ে শামীতে باب الاذان লিখেন-

يُسْتَحَبُّ أَنْ يُقَالَ عِنْدَ سَمَاعِ الْأُولَى مِنْ الشَّهَادَةِ: صَلَّى اللَّهُ عَلَيْك يَا رَسُولَ اللَّهِ، وَعِنْدَ الثَّانِيَةِ مِنْهَا: قَرَّتْ عَيْنِي بِك يَا رَسُولَ اللَّهِ، ثُمَّ يَقُولُ: اللَّهُمَّ مَتِّعْنِي بِالسَّمْعِ وَالْبَصَرِ بَعْدَ وَضْعِ ظُفْرَيْ الْإِبْهَامَيْنِ عَلَى الْعَيْنَيْنِ فَإِنَّهُ - عَلَيْهِ السَّلَامُ - يَكُونُ قَائِدًا لَهُ إلَى الْجَنَّةِ، كَذَا فِي كَنْزِ الْعِبَادِ. اهـ. قُهُسْتَانِيٌّ، وَنَحْوُهُ فِي الْفَتَاوَى الصُّوفِيَّةِ. وَفِي كِتَابِ الْفِرْدَوْسِ مَنْ قَبَّلَ ظُفْرَيْ إبْهَامِهِ عِنْدَ سَمَاعِ أَشْهَدُ أَنَّ مُحَمَّدًا رَسُولُ اللَّهِ فِي الْأَذَانِ أَنَا قَائِدُهُ وَمُدْخِلُهُ فِي صُفُوفِ الْجَنَّةِ وَتَمَامُهُ فِي حَوَاشِي الْبَحْرِ لِلرَّمْلِيِّ عَنْ الْمَقَاصِدِ الْحَسَنَةِ لِلسَّخَاوِيّ-

-‘‘মুস্তাহাব হলো আযানের সময় শাহাদাত বলার মধ্যে صلى الله عليك يا رسول الله বলা এবং দ্বিতীয় শাহাদাত বলার সময় বলবে قرة عينى بك يا رسول الله। অতঃপর নিজের বৃদ্ধাঙ্গুলীদ্বয়ের নখে চুমু খেয়ে স্বীয় চোখদ্বয়ের উপর রাখবে এবং এই দোয়াটি اللهم متعنى بالسمع و البصر পড়বে এর ফলে হুযূর (ﷺ) তাকে নিজের পিছনে পিছনে টেনে বেহেশতে নিয়ে যাবেন। অনুরূপ কানযুল উব্বাদ ও কুহস্থানী গ্রন্থে বর্ণিত আছে। ফাতাওয়ায়ে সূফিয়াও তদ্রুপ উল্লেখিত আছে। কিতাবুল ফিরদাউসে বর্ণিত আছে, যে ব্যক্তি আযানে আশহাদু আন্না মুহাম্মাদার রাসূলুল্লাহ শুনে স্বীয় বৃদ্ধাঙ্গুলীদ্বয়ের নখ চুম্বুন করে, আমি তাকে আমার পিছনে পিছনে টেনে বেহেশতে নিয়ে যাব এবং তাকে বেহেশতদের কাতারে অন্তর্ভূক্ত করবো। এর পরিপূর্ণ আলোচনা বাহারুর রায়েক এর টীকায় ফতোয়ায়ে রমলীতে আছে।’’ ২২

২২.

ক. ইমাম ইবনে আবেদীন শামী : ফতোয়ায়ে শামী ১/৩৯৮ পৃষ্ঠা কিতাবুল আযান অধ্যায়

খ. মুফতী আমিমুল ইহসান মুজাদ্দেদী : কাওয়াইদুল ফিক্হ : ১/২৩৩ পৃ.

গ. ইমাম আহমদ রেযা খাঁন : আহকামে শরীয়ত : ১/১৭২ পৃ.

ঘ. ইমাম আহমদ রেযা : ফতোয়ায়ে আফ্রিকা : ৭৮ পৃ.

ঙ. মুফতী আহমদ ইয়ার খাঁন নঈমী : জা‘আল হক্ব : ২/২৪৬ পৃ.

চ. আল্লামা ইসমাঈল হাক্কী : তাফসীরে রুহুল বায়ান : ৭/২২৯ পৃ.

‘এসব হাদীস নয়’ গ্রন্থের ১০৮ পৃষ্ঠায় মাওলানা মুতীউর রহমান মাওলানা আব্দুল হাই লাখনৌভী এর বক্তব্য উল্লেখ করেছেন অথচ তার আসল অভিমত কী এ আমলের বিষয়ে তা তিনি ব্যক্ত করেননি, অথচ দেখুন তিনি নিজেই এই হাদিসের উপর আমল করতেন এবং তাঁর উপর ফতোয়া দিয়েছেন। যেমনঃ

✦ তার গ্রন্থ “মাজমুআয়ে ফতোয়ায়ে আব্দুল হাই”-এ লিখেন-

اعلم انه يستحب ان يقال عند سماع الاول من الشهادة صلى الله عليك يا رسول الله و عند سماع الثانية قرة عينى بك يا رسول الله ثم قال اللهم متعنى بالسمع و البصر" بعد وضع ظفر اليدين على العينين فانه صلى الله عليه و سلم يكون قائدا له الى الجنة كذا فى كنز العباد-  

-‘‘জেনে রাখুন! নিশ্চয় মুস্তাহাব হলো আযানে যখন প্রথম শাহাদাত বাক্য বলবে, তখন শ্রোতারা বলবে صلى الله عليك يا رسول الله তারপর যখন দ্বিতীয় শাহাদাত বাক্য বলবে তখন শ্রোতারা বলবে যে قرة عينى بك يا رسول الله অতঃপর বলবে যে, اللهم متعنى بالسمع والبصر তারপর দুই বৃদ্ধাঙ্গুলী দ্বয়ের নখের পৃষ্ঠে চুমু দিয়ে চক্ষুদ্বয়ের উপর মুছে দেবে, যে অনুরূপ করবে নিশ্চয় রাসূল (ﷺ) তাকে বেহেশতের দিকে টেনে নিজের পিছনে নিবেন, এটা ‘কানযুল উব্বাদে’ আছে।’’ ২৩

২৩. আল্লামা আব্দুল হাই লাক্ষনৌভি : মাজমূআয়ে ফতোয়ায়ে : ১/১৮৯ : কিতাবুস সালাত অধ্যায়

প্রমাণ হয়ে গেলো, মাওলানা আব্দুল হাই লাক্ষনৌভি নিজেই এটার উপর আমল করতেন।

✦ হানাফী মাযহাবের অন্যতম প্রসিদ্ধ ফকীহ ইমাম তাহতাভী (رحمة الله) তার ফতোয়ার কিতাবে লিখেছেন,

ذكر القهستاني عن كنز العباد أنه يستحب أن يقول عند سماع الأولى من الشهادتين للنبي ﷺ صلى الله عليك يا رسول الله وعند سماع الثانية قرت عيني بك يا رسول الله اللهم متعني بالسمع والبصر بعد وضع إبهاميه على عينيه فإنه صلى الله عليه وسلم يكون قائدا له في الجنة

-‘‘ইমাম কুহিস্তানী (رحمة الله) কানযুল উব্বাদ কিতাবের উদ্ধিৃতি দিয়ে বর্ণনা করেছেন নিশ্চয় মুস্তাহাব হলো আযানে আশহাদু আন্না মুহাম্মাদার রাসূলুল্লাহ শুনবে তখন বলবে صلى الله عليك يا رسول الله আর যখন দ্বিতীয়বার শুনবে তখন বলবে قرة عينى بك يا رسول الله তারপর এই দোয়া পড়বে اللهم متعنى بالسمع و البصر পড়ার পর নিজের বৃদ্ধাঙ্গুলীদ্বয়ের নখে চুমু খেয়ে চক্ষুদ্বয়ে রাখবেন। যে এরূপ করবে তাকে হুযূর (ﷺ) নিজের পিছনে টেনে টেনে জান্নাতে নিয়ে যাবেন।’’ ২৪

২৪. ইমাম তাহতাভী : মারাকিল ফালাহ : ১/২০৬ পৃ: কিতাবুল আজান অধ্যায়, দারুল কুতুব ইলমিয়্যাহ, বয়রুত, লেবানন।

✦ আল্লামা তাহতাভী (رحمة الله) আরও একটু সামনে অগ্রসর হয়ে উল্লেখ করেন-

وكذا روي عن الخضر عليه السلام وبمثله يعمل في الفضائل

-‘‘এ ব্যাপারে হযরত খিযির (عليه السلام) থেকে অনুরূপ একটি বর্ণনা রয়েছে, এ ধরনের হাদিস ফাযায়েলে আ‘মালের জন্য অবশ্যই গ্রহণযোগ্য।’’ ২৫

২৫. ইমাম তাহতাভী : মারাকিল ফালাহ : ১/২০৬ পৃ: কিতাবুল আযান অধ্যায়, দারুল কুতুব ইলমিয়্যাহ , বয়রুত, লেবানন।

✦ প্রসিদ্ধ কিতাব সালাতে মসউদী কিতাবের দ্বিতীয় খণ্ড باب نماز অধ্যায়ে আছে-

روى عن النبى ﷺ انه قال من سمع اسمى فى الاذان و ودع ابهاميه على عينيه فانا طالبه فى صفوف القيامة و قائده الى الجنة-

-‘‘হুযূর (ﷺ) থেকে বর্ণিত আছে, যে ব্যক্তি আযানে আমার নাম শুনে স্বীয় বৃদ্ধাঙ্গুলীদ্বয় চোখের উপরে রাখে আমি তাকে কিয়ামতের দিন কাতার সমূহের মধ্যে খোঁজ করবো এবং নিজের পিছে পিছে টেনে বেহেশতে নিয়ে যাব।’’ ২৬

২৬. আল্লামা মুফতী আহমদ ইয়ার খাঁন নঈমী : জাআল হক : ২৪৬ পৃ.

✦ আল্লামা মোল্লা আলী ক্বারী (رحمة الله) এর লিখিত ফতোয়ার কিতাব ‘শরহে নেকায়ার’ প্রথম খণ্ডের باب الاذان অধ্যায়ে উল্লেখ আছে-

واعلم انه يستحب ان يقال عند سماع الاولى من الشهادة الثانية صلى الله عليك يا رسول الله و عند الثانية منها قرة عينى بك يا رسول الله بعد وضع ظفرى ابهامين على العينين فانه عليه السلام يكون له قائدا الى الجنة كذا فى كنز العباد-

-‘‘জানা দরকার যে, মুস্তাহাব হচ্ছে যিনি দ্বিতীয় শাহাদাতের প্রথম শব্দ শোনে বলবেন صلى الله عليك يا رسول الله দ্বিতীয় শব্দ শোনে বলবেন قرة عينى بك يا رسول الله এবং নিজের বৃদ্ধাঙ্গুলীদ্বয়ের নখে চুমু খেয়ে চক্ষুদ্বয়ে রাখবেন, তাকে হুযূর (ﷺ) (হাশরে) নিজের পিছনে পিছনে টেনে বেহেশতে নিয়ে যাবেন। অনুরূপ কানযুল উব্বাদ গ্রন্থে বর্ণিত হয়েছে।’’

الفجر الصادق কিতাবের ৮৩ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে-

قال شيخ المشائيخ رئيس المحققين سيد العلماء الحنفية بمكة المكرمة مولانا جمال بن عبد الله بن عمر المكى فى الفتوى سئلت عن تقبيل الابهامين و وضعهما على العينين عند ذكر اسمه صلى الله عليه و سلم فى الاذان هل هو جائز ام لا اجيب بما نصه نعم تقبيل الابهامين و وضع على العينين عند ذكر اسمه صلى الله عليه و سلم فى الاذان جائز بل هو مستحب صرح به مشائخنا-

-‘‘শাইখুল মাশাইখ রঈসুল মুহাক্কিকীন মক্কায়ে মোকাররমার হানাফী উলামায়ে কেরামের নেতা মাওলানা কামালুদ্দীন ইবনে আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর আল মক্কী (رحمة الله) তাঁর ফতোয়ায় বলেন, আজানের মধ্যে রাসূলে পাক (ﷺ) এর নাম শুনে বৃদ্ধাঙ্গুলী চুম্বন করে তা উভয় চোখের পাতার উপর রাখার ব্যাপারে আমাকে প্রশ্ন করা হয়েছে এটা জায়েয নাকি নাজায়েয? উত্তরে আমি বলছি, হ্যাঁ, এটা জায়েয বরং মুস্তাহাব। আমাদের মাশায়েখগণ এটা স্পষ্টভাবে উল্লেখ করেছেন।’’ ২৭

২৭. আল্লামা আবু হামিদ মারযুক : আল ফাজরুস্ সাদিক্ব, পৃষ্ঠা নং-৮৩

✦ আল্লামা মুহাদ্দিস তাহের পাটনী হানাফি (رحمة الله) তাঁর বিখ্যাত গ্রন্থ تكمله مجمع بحار الانوار (মাযমাউল বিহারুল আনওয়ার) এ আবু বকর (رضي الله عنه) এর হাদিস উল্লেখ করে ইমাম সাখাভী (رحمة الله)‘র রায় প্রকাশ করে তার পর লিখেন,

وروى تجربة ذالك عن كثيرين

-‘‘এটি পরিক্ষিত আমল হিসেবে অনেকের থেকেই বর্ণিত হয়েছে।’’

আল্লামা শামসুদ্দীন বিন আবু নসর বুখারী (رحمة الله) এর দৃষ্টিতে এ আমল

✦ হযরত ইমাম তাউস (رحمة الله) বলেন, আমি আবু নসর বুখারী (رحمة الله) কে হাদিস বর্ণনায় শুনেছি যে,

قال الطاوسي: إنه سمع من الشمس محمد ابن أبي نصر البخاري خواجه حديث: من قبل عند سماعه من المؤذن كلمة الشهادة ظفري إبهاميه ومسهما على عينيه وقال عند المس: اللَّهم احفظ حدقتي ونورهما ببركة حدقتي محمد رسول اللَّه صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ ونورهما لم يعم

-‘‘কোন ব্যক্তি মুয়ায্যিনকে আশহাদু আন্না মুহাম্মাদার রাসূলুল্লাহ বলতে শুনে বৃদ্ধাঙ্গুলীদ্বয় চুম্বন করে চোখে স্পর্শ করবে এবং এই দোয়া পাঠ করবে,

اللَّهم احفظ حدقتي ونورهما ببركة حدقتي محمد رسول اللَّه صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ

তাহলে সে কখনো অন্ধ হবে না।’’ ২৮

২৮.

ক. আল্লামা ইমাম সাখাভী : মাকাসিদুল হাসানা : ১/২৮৫ পৃ. হা/১০২১

খ. আল্লামা আজলূনী : কাশফুল খাফা : ২/২৭১ পৃ. হা/২২৯৬

গ. মুফতি আহমদ ইয়ার খাঁন নঈমী : জা’আল হক : ২/২৪৬ পৃ.

আল্লামা আবুল হাসান আলী বিন মুহাম্মদ (رحمة الله) এর দৃষ্টিতে এ আমলঃ

✦ আল্লামা আবুল হাসান আলী বিন মুহাম্মদ (ﷺ) বলেন,

من قال حين يسمع المؤذن يقول أشهد أن محمدا رسول اللَّه: مرحبا بحبيبي وقرة عيني محمد بن عبد اللَّه ﷺ ويقبل إبهاميه ويجعلهما على عينيه لم يعم ولم يرمد، -

-‘‘যে ব্যক্তি আযানে আশহাদু আন্না মুহাম্মাদার রাসূলূল্লাহ (ﷺ) শোনে যদি বলে مرحبا بحبيبى و قرة عينى محمد بن عبد الله صلى الله عليه و سلم তারপর স্বীয় বৃদ্ধাঙ্গুলীদ্বয় চুম্বন করে চোখে লাগাবে, সে কোনদিন অন্ধ হবে না এবং তার চোখ কখনও রোগাক্রান্ত হবে না।’’ ২৯

২৯.  

ক. আল্লামা ইমাম সাখাভী : মাকাসিদুল হাসানা : ৩৮৪ পৃ., হা/১০২১

খ. আল্লামা আজলূনী : কাশফুল খাফা : ২/২৭১ পৃ. হা/২২৯৬

গ. মুফতি আহমদ ইয়ার খান নঈমী : জা’আল হক, ২/২৪৬ পৃ.

আল্লামা ইমাম ফকীহ মুহাম্মদ বিন শায়বানী (رحمة الله) এর দৃষ্টিতে এ আমল:

✦ আল্লামা ইমাম ফকীহ মুহাম্মদ বিন শায়বানী (رحمة الله) হাদিস নকল করে এটার উপর আমলের ব্যাপারে বলেন,

هبت ريح فوقعت منه حصاة في عينه، فأعياه خروجها، وآلمته أشد الألم، وأنه لما سمع المؤذن يقول أشهد أن محمدا رسول اللَّه قال ذلك، فخرجت الحصاة من فوره، قال الرداد: وهذا يسير في جنب فضائل الرسول ﷺ،

-‘‘এক সময় জোরে বাতাস প্রবাহিত হচ্ছিল। তখন তার চোখে একটি পাথরের কণা পড়েছিল যা তিনি বের করতে পারেননি এবং খুবই ব্যথা অনুভব হচ্ছিল। যখন তিনি মুয়ায্যিনের কণ্ঠে আশহাদু আন্না মুহাম্মাদার রাসূলূল্লাহ শুনলেন, তখন তিনি উপরোক্ত দু‘আটি পাঠ করলেন এবং অনায়াসে চোখ থেকে পাথর বের হয়ে গেল।’’ ৩০

৩০.

ক. আল্লামা ইমাম সাখাভী : মাকাসিদুল হাসানা : ৩৮৪ পৃ. হা/১০২১

খ. আল্লামা আজলূনী : কাশফুল খাফা : ২/২৭১ পৃ., হা/২২৯৬

গ. মুফতি আহমদ ইয়ার খাঁন নঈমী : জা’আল হক, ২/২৪৯

এ বিষয়ে মিশরের পুরাতন আলেমদের আমল:

✦ ইমাম সাখাভী (رحمة الله) তাঁর গ্রন্থে আরও উল্লেখ করেন,

 وحكى الشمس محمد بن صالح المدني إمامها وخطيبها في تاريخه عن المجد أحد القدماء من المصريين أنه سمعه يقول: من صلى على النبي صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إذا سمع ذكره في الأذان وجمع أصبعيه المسبحة والإبهام وقبلهما ومسح بهما عينيه لم يرمد أبدا -  

-‘‘মসজিদে তৈয়্যবাহ আল মদিনার ইমাম ও খতিব ছিলেন হযরত শামস মুহাম্মদ বিন সালেহ আল মাদানী (رحمة الله) স্বীয় ইতিহাস গ্রন্থে লিখেন তিনি মিশরে বুজুর্গ হতে শুনেছেন যে, আযানে রাসূল (ﷺ) এর নাম মোবারক শ্রবণ করে রাসূল (ﷺ) এর প্রতি দুরূদ পড়ে তারপর বৃদ্ধাঙ্গুলীদ্বয়ে চুমু দিয়ে অতঃপর চোখে মাসেহ করবে সে কোনো দিন চোখের অসুস্থতায় ভোগবে না।’’ ৩১

৩১.  

ক. ইমাম সাখাভী : মাকাসিদুল হাসানা : ৩৮৪ : হা/১০২১

খ. আল্লামা আজলূনী : কাশফুল খাফা : ২/২৭০ : হা/২২৯৬

গ. মুফতী আহমদ ইয়ার খাঁন নঈমী : জা’আল হক : ২/২৪৯

আল্লামা ইবনে সালেহ (رحمة الله)‘র দৃষ্টিতে আমল:

✦ আল্লামা ইবনে সালেহ (رحمة الله) বর্ণনা করেন,  

وسمعت ذلك أيضا من الفقيه محمد بن الزرندي عن بعض شيوخ العراق أو العجم أنه يقول عندما يمسح عينيه: صلى اللَّه عليك يا سيدي يا رسول اللَّه يا حبيب قلبي ويا نور بصري ويا قرة عيني، وقال لي كل منهما: منذ فعلته لم ترمد عيني

-‘‘আমি ফকীহ মুহাম্মদ বিন যারানাদি (رحمة الله) হতে শ্রবণ করেছি তিনি ইরাক ও আজমের বড় শায়খ হতে বর্ণনা করেছেন, হুযূর (ﷺ) এর নাম মোবারক আযানের মধ্যে শ্রবণ করে বৃদ্ধাঙ্গুলীদ্বয়ে চুমু দিয়ে চোখে মালিশ করিবে তারপর বলবে-

صلى الله عليك يا سيدى يا رسول الله يا حبيب قلبى و يا نور بصرى و يا قرة عينى

দুজন শায়খই বলছেন, যখন থেকে আমরা এই আমল করতে লাগলাম তখন থেকে আমাদের চোখ কোনদিন অসুস্থ হয়নি।’’ ৩২

৩২.

ক. ইমাম সাখাভী : মাকাসিদুল হাসানা : ৩৮৪ পৃ. হা/১০২১

খ. আল্লামা আজলূনী : কাশফুল খাফা : ২/২৭০ পৃ. : হা/২২৯৬

গ. মুফতী আহমদ ইয়ার খাঁন নঈমী : জা’আল হক : ২/২৪৯ পৃ.

এ হাদিসের বিষয়ে আহলে হাদিস আলবানীর তাহকীক:

শুধু তা-ই নয়, আহলে হাদিসের মুহাদ্দিস নাসিরুদ্দীন আলবানী তার “সিলসিলাতুল আহাদিসুদ্-দ্বঈফাহ” গ্রন্থের ১/১০২ হাদিস নং:৭৩-এ, রাসূল (ﷺ) এর নাম মোবারক শুনে চুমু খাওয়ার হযরত আবু বকর (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত হাদিস প্রসঙ্গে বলেন, لا يصح অর্থাৎ, হাদিসটি সহীহ পর্যায়ের নয়। তাই বুঝা গেল, হাদিসটি জাল বা বানোয়াট নয়। কারণ আলবানী জাল হাদিসকে সরাসরি موضوع বা বাতিল, মুনকার ইত্যাদি বলে উল্লেখ করেন। কিন্তু এখানে সে এই শব্দ ব্যবহার করেননি। অপরদিকে তার এ বক্তব্যের পিছনে দলীল পেশ করেছে,

رواه الديلمي في مسند الفردوس عن أبي بكر رضي الله عنه مرفوعا. قال ابن طاهر في التذكرة : لا يصح، كذا في الأحاديث الموضوعة للشوكاني (ص ৯) وكذلك قال السخاوي في المقاصد

-‘‘উক্ত হাদিসটি ইমাম দায়লামী (رحمة الله) তাঁর ‘মুসনাদিল ফিরদাউস’ গ্রন্থে হযরত আবু বকর সিদ্দিক (رضي الله عنه) হতে মারফূ সূত্রে বর্ণনা করেছেন। আল্লামা তাহের পাটনী তাঁর “তাযকিরাতুল মাওদ্বুআত” গ্রন্থে বলেন, হাদিসটি ‘সহীহ নয়’, তেমনিভাবে শাওকানী তার জাল হাদিস বিষয়ক গ্রন্থ “ফাওয়াইদুল মাজমূআ ফি আহাদিসিল মাওদ্বুআহ” এর ৯ পৃষ্ঠায় এবং ইমাম সামসুদ্দীন সাখাভী (رحمة الله) তাঁর “মাকাসিদুল হাসানা” গ্রন্থে অনুরূপ বলেছেন।’’ (আলবানী, সিলসিলাতুল...দ্বঈফাহ, হা/৭৩)

আর হাদিসটি সহীহ নয় বলতে কী বুঝায় আমি এ গ্রন্থের শুরুতে বিস্তারিতভাবে উল্লেখ করে এসেছি। তাই আমরা সর্বশেষ এই সিদ্বান্তে উপনীত হতে পারি যে হযরত আবু বকর (رضي الله عنه) এর হাদিসটি ‘হাসান’ পর্যায়ের। আর হযরত মূসা (عليه السلام) এর যুগের হাদিসটির সনদ সামান্য যঈফ হলেও শাওয়াহেদ থাকায় মুটামুটি গ্রহণযোগ্য পর্যায়ের। আর খিযির (عليه السلام) এর আমলের বর্ণনাটি মুনকাতি‘য় হওয়ার দরুন কিছুটা দ্বঈফ। সব মিলিয়ে ফাযায়েলে আমলের জন্য এ ধরনের হাদিস মুস্তাহাব হিসেবে আমল করতে কোন অসুবিধা নেই। সবগুলো হাদিস মিলে এ বিষয়টির যে ভিত্তি আছে তা সুস্পষ্ট করে দেয় এবং আমল করতে শক্তি যোগায়। মহান আল্লাহ আমাদেরকে এ বিষয়ের উপর আমল করার তৌফিক দান করুন, আমিন।

বিষয় নং-২: আদম (عليه السلام) ও হাওয়া (عليه السلام) এর বিবাহের মোহরানা:

ড. আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীর তার লিখিত ‘হাদীসের নামে জালিয়াতি’ গ্রন্থের ২৮৯ পৃষ্ঠায় লিখেছেন, ‘প্রচলিত আছে যে, আদম (عليه السلام) ও হাওয়ার (عليه السلام) মধ্যে বিবাহের মোহরানা ছিল দরূদ শরীফ পাঠ ....ইতাদি এ সকল কথার কোনো ভিত্তি বা সনদ আছে বলে জানা যায় না।’’

উক্ত মূর্খ বক্তব্যের জবাব:

এখানে বলা বাহুল্য যে, আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীরের না জানাটা কোন শরীয়তের দলীল হতে পারে না, বরং এ সমস্ত বক্তব্য দ্বারা তার মূর্খতার প্রমাণই বহন করে।

✦ ইমাম ইবনে জাওযী (رحمة الله), ইমাম কাস্তালানী (رحمة الله) ও ইমাম জুরকানী (رحمة الله) ঘটনাটি বর্ণনা করেন। হাদিসটি হল :

وذكر ابن الجوزى فى كتابه سلوة الأحزان : أنه لما رام القرب منها طلبت منه المهر، فقال: يا رب، وماذا أعطيها، فقال: يا آدم صل على حبيبى محمد بن عبد الله عشرين مرة، ففعل -

-‘‘নিশ্চয়ই হযরত আদম (عليه السلام) যখন হাওয়া (عليه السلام) এর নিকটবর্তী যাওয়ার ইচ্ছা করলেন, তখন আল্লাহ্ তা‘য়ালা মহর আদায় করার জন্য বললেন। হযরত আদম (عليه السلام) বললেন, হে প্রভু! আমি তার জন্য কী মহর প্রদান করবো? তখন আল্লাহ্ তা‘য়ালা ইরশাদ ফরমান, হে আদম (عليه السلام)! তুমি আমার হাবীব মুহাম্মদ (ﷺ)-এর প্রতি বিশ বার দরূদ শরীফ পড় তাহলে তোমার মহর আদায় হয়ে যাবে। অতপর তিনি তা করলেন।’’ ৩৩

৩৩.

ক. আল্লামা ইমাম ইবনুল জাওযী : سلوة الاحزان : ১৪২ পৃ.

খ. আল্লামা ইমাম কাস্তাল্লানী : মাওয়াহেবে লাদুন্নীয়া : ১/৭৬ পৃ.

গ. আল্লামা ইমাম জুরকানী : শরহে মাওয়াহেবে লাদুন্নীয়া : ১/১০১ পৃ.

ঘ. আল্লামা শায়খ ইউসূফ বিন নাবহানী : জাওয়াহিরুল বিহার : ৩/৩৪৬ পৃ.

✦ অনুরূপ ঘটনাটি কিছুটা শব্দ পরিবর্তন করে আল্লামা শায়খ ইউসূফ বিন ইসমাঈল নাবহানী (رحمة الله) তাঁর জাওয়াহিরুল বিহার এর ৩য় খণ্ডের ৩৪৬ পৃষ্ঠায় এভাবে বর্ণনা করেছেন,

ثم دخل أدم الجنة ونوره صلى الله عليه وسلم يلمع فى جبينه ، فبينما هو فى الجنة اذا خلق الله تعالى حواء من ضلعه الا يسر فأراد أن يمد يده اليها ، فكفته الملائكة فقالت: مه يا أدم حتى تؤدى مهرها قال : وما مهرها؟ قالوا: أن تصلى على سيدنا محمد صلى الله عليه وسلم عشرين مرة-

-‘‘হযরত আদম (عليه السلام) যখন জান্নাতে প্রবেশ করলেন এবং নূরে মুহাম্মদী (ﷺ) তাঁর পেশানীতে চমকাতে ছিল, তখন আল্লাহ্ তা‘য়ালা আদম (عليه السلام) এর বাম পাঁজরের হাড় হতে হাওয়া (عليه السلام) কে সৃষ্টি করলেন। হযরত আদম (عليه السلام) হাওয়া (عليه السلام) কে হাত দ্বারা ধরতে গেলেন, এমন সময় ফেরেশতারা নিষেধ করে বললেন, আপনি (عليه السلام) মহরানা আদায় করুন। হযরত আদম (عليه السلام) ফেরেশতাদেরকে বললেন, কী মহর প্রদান করবো? তখন ফেরেশতারা বললো, হযরত মুহাম্মদ (ﷺ)-এর প্রতি ২০ বার দরূদ শরীফ পড়ুন।’’ ৩৪

৩৪.

ক. আল্লামা শায়খ ইউসূফ বিন নাবহানী: জাওয়াহিরুল বিহার : ৩/৩৪৬ পৃ.

খ. আল্লামা ইমাম কাস্তাল্লানী : মাওয়াহেবে লাদুন্নীয়া : ১/৭৬ পৃ.

গ. আল্লামা জুরকানী : শরহুল মাওয়াহেব, ১/১৭২ পৃ.

ঘ. আল্লামা শায়খ ইউসূফ বিন নাবহানী : আনোওয়ারে মুহাম্মাদিয়া : ১১ পৃ.

✦ অপরদিকে ইমাম কাস্তালানী (رحمة الله) তিন বার দরূদ শরীফ পড়ার অন্য আরেকটি রেওয়ায়েত পেশ করেছেন। যেমন, তার ভাষ্য হল নিম্নরূপ-

وعن ابن عباس: كان يوم الجمعة من وقت الزوال إلى العصر.ثم خلق الله تعالى له حواء زوجته من ضلع من أضلاعه اليسرى، وهو نائم، وسميت حواء لأنها خلقت من حى، فلما استيقظ ورآها سكن إليها، فقالت الملائكة مه يا آدم، قال: ولم وقد خلقها الله لى؟ فقالوا: حتى تؤدى مهرها، قال: وما مهرها؟ قالوا: تصلى على محمد- صلى الله عليه وسلم- ثلاث مرات -

-‘‘হযরত ইবনে আব্বাস (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত। জুম‘আর দিন জোহর থেকে আসর পর্যন্ত এ সময়ের মধ্যে আল্লাহ্ হাওয়া (عليه السلام) কে হযরত আদম (عليه السلام) এর বাম পাজর থেকে সৃষ্টি করলেন, আর তখন তিনি ঘুমায়ে ছিলেন। .....আদম (عليه السلام) যখন হাওয়া (عليه السلام) এর নিকট গেলেন তখন ফিরিশতা মহরানা আদায় করতে বললেন, তখন আদম (عليه السلام) বললেন তার মহরানা কী? তখন ফিরিশতারা বললেন, আপনি হযরত মুহাম্মদ (ﷺ)-এর উপর তিনবার দরুদ শরীফ পড়ুন।’’ ৩৫

৩৫.

ক. ইমাম কাস্তাল্লানী : মাওয়াহেবে লাদুন্নীয়া : ১/৭৬ পৃ. মাকতুবাতুল ইসলামী, বয়রুত, লেবানন।

খ. ইবনে কাসির : বেদায়া ওয়ান নেহায়া : ১/৭৪ পৃ.

গ. আল্লামা মোল্লা আলী ক্বারী : মাওয়ারিদুর-রাবি ফি মওলুদুন্নবী : পৃ. ১৫ পৃ.

ঘ. ইমাম দিয়ার বকরী, তারিখুল খামীস, ১/৪৭ পৃ.

এছাড়া আল্লামা মোল্লা আলী ক্বারী (رحمة الله), ইবনে কাসির, কাস্তালানী (رحمة الله) তাদের প্রসিদ্ধ গ্রন্থে হাদিসটি গ্রহণযোগ্য বলে উল্লেখ করেছেন। আজ পর্যন্ত কোনো মুহাদ্দিস বিষয়টিকে মিথ্যা বা বানোয়াট বলেননি।

বিষয় নং-৩: ১২ই রবিউল আউয়াল মিলাদুন্নবীই, ওফাতুন্নবী নয়:

“বিভ্রান্তির অবসান” গ্রন্থের ২২ পৃষ্ঠায় দেওবন্দী মৌলভী নূরুল ইসলাম ওলীপুরী লিখেছেন যে, ১২ই রবিউল আউয়ালে মিলাদুন্নবী (ﷺ) পালন করা হয় কিন্তু ১২ই রবিউল আউয়ালে কেন ওফাত দিবস পালন করা হয় না? তার দীবী রাসূল (ﷺ) একই দিনে ওফাত বরণ করেছিলেন। তাই আমি আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা‘আতের অনুসারীরা কেন ১২ই রবিউল আউয়াল ওফাতুন্নবী পালন করে না তার যথাযথ কারণ সমূহ উল্লেখ করার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করছি। নিম্নে সংক্ষেপে কারণগুলো উল্লেখ করা হল-

ওফাতুন্নবী পালন না করার প্রথম কারণ:

তাদের অনেকেই বিভ্রান্তিকর বিভিন্ন গ্রন্থে দাবী করেছেন ১২ই রবিউল আউয়াল রাসূল (ﷺ) এর ওফাত হয়েছিল। অথচ তাদের নির্ভরযোগ্য কোন প্রমাণ নেই এবং কিয়ামত পর্যন্ত দিতেও পারবে না, ইনশাআল্লাহ।

১২ ই রবিউল আউয়াল রাসূল (ﷺ)‘র ওফাত হওয়ার গ্রহণযোগ্যতা :

১২ই রবিউল আউয়াল রাসূল (ﷺ) এর বিলাদত শরীফ যার বর্ণনা আমি সামনে বিস্তারিত উল্লেখ করবো। কিন্তু বিশুদ্ধ বর্ণনা মতে ১২ই রবিউল আউয়াল রাসূল (ﷺ) এর ওফাতের দিন নয়, কিন্তু ভ্রান্তবাদীরা ১২ ই রবিউল আউয়াল জাল রেওয়ায়েত দিয়ে রাসূল (ﷺ) এর ওফাত শরীফ প্রমাণ করতে অপচেষ্টা চালিয়ে থাকেন। কথিত কিছু বক্তা বলে থাকেন যে, ১২ই রবিউল আউয়াল রাসূল (ﷺ)-এর ওফাত তাতে কোন সন্দেহ নেই। নাউযুবিল্লাহ

অথচ এ বিষয়ে ১২-১৩টিরও বেশি মত বর্ণিত হয়েছে।

✦ এমনকি ইমাম বদরুদ্দীন আইনী (رحمة الله) বলেন-

وروى الْبَزَّار من حَدِيث ابْن مَسْعُود، رَضِي الله تَعَالَى عَنهُ: توفّي فِي إِحْدَى وَعشْرين من رَمَضَان

-‘‘ইমাম বায্যার (رحمة الله) হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ (رضي الله عنه) হতে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, রাসূল (ﷺ) ১১ই রমযান ওফাত বরণ করেন।’’ (আইনী, উমদাতুল ক্বারী, ১৬/৯৯ পৃ.)

✦ কেউ কেউ আরও দলিল হিসেবে উল্লেখ করেন যে, ইমাম ইবনে সা‘দ (রহ.) ও ইবনে কাসির (رحمة الله) সংকলন করেন-

عَنْ عَائِشَةَ قَالَتْ: تُوُفِّيَ رَسُولُ اللَّهِ - ﷺ - يَوْمَ الاثْنَيْنِ لاثْنَتَيْ عَشْرَةَ مَضَتْ مِنْ رَبِيعٍ الأَوَّلِ.

-‘‘হযরত আয়েশা (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূল (ﷺ) রবিউল আউয়াল মাসের ১২ তারিখ ওফাত বরণ করেন।’’ ৩৬

৩৬. ইবনে সা‘দ, আত-তবকাতুল কোবরা, ২/২০৯ পৃ. দারুল কুতুব ইলমিয়্যাহ, বয়রুত, লেবানন, ওয়াক্বেদী, কিতাবুল মাগাজী, ২/২৪২ পৃ., ইবনে হাজার আসকালানী, ফতহুল বারী, ৮/১৩০ পৃ. হা/৪৪২৪, ইবনে কাসির, বেদায়া ওয়ান নিহায়া, ৫/২৫৬ পৃ.

✦ একই সনদে হযরত ইবনে আব্বাস (رضي الله عنه) হতেও আরেকটি মত বর্ণিত আছে।

সনদ পর্যালোচনা:

এখন আমি এ হাদিস দু’টির সনদ পর্যালোচনা করার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করছি।

● উক্ত হাদিসটি দুটির মধ্যে (مُحَمَّدُ بْنُ عُمَرَ) ‘মুহাম্মদ ইবনে ওমর আল ওয়াক্বেদী (ওফাত. ২০৭ হি.)’ নামক একজন বর্ণনাকারী রাবী রয়েছেন, যার ব্যাপারে মুহাদ্দিসগণ চরম সমালোচনা করেছেন। ইমাম যাহাবী (رحمة الله) লিখেন-

وقال ابن معين: ليس بثقة.

وقال - مرة: لا يكتب حديثه / وقال البخاري وأبو حاتم: متروك.

وقال أبو حاتم أيضا والنسائي: يضع الحديث.

وقال الدارقطني: فيه ضعف.

وقال ابن عدي: أحاديثه غير محفوظة والبلاء منه.

-‘‘ইমাম ইয়াহইহয়া ইবনে মাঈন (رحمة الله) বলেন, ওয়াক্বেদী সিক্বাহ নয় অর্থাৎ- নির্ভরযোগ্য নয়। তাঁর থেকে অন্য বর্ণনায় এসেছে, আমরা তাঁর হাদিস লিপিবদ্ধ করতাম না। ইমাম বুখারী (رحمة الله) ও আবু হাতেম রাযী (رحمة الله) বলেছেন, ওয়াক্বেদী মাতরুক অর্থাৎ পরিত্যক্ত রাবী। অপর বর্ণনায় এসেছে, ইমাম আবু হাতেম আল রাযী (رحمة الله) এবং ইমাম নাসাঈ (رحمة الله) সর্ব সম্মতভাবে বলেছেন, ওয়াক্বেদী নিজ থেকেই হাদিস সমূহ রচনা করতো বা জাল হাদিস বানাতো। ইমাম দারাকুতনী (رحمة الله) বলেন, তার অধিকাংশ বর্ণনাই দুর্বল। ইমাম ইবনে আদি (رحمة الله) বলেন, তার হাদিস সংরক্ষিত নয়, তার হাদিসে রয়েছে অনেক বালা মসিবত।’’ ৩৭

৩৭. ইমাম যাহাবী : মিযানুল ই‘তিদাল : ৩/৬৬৫ : রাবী: ৭৯৯৩, ইমাম ইবনে আদী : আল-কামিল : ৭/৪৮১ : রাবী: ১৭১৯

● ইমাম যাহাবী (رحمة الله) আরও উল্লেখ করেন-

وقال أبو غالب ابن بنت معاوية بن عمرو: سمعت ابن المديني يقول. الواقدي يضع الحديث.

-‘‘মুহাদ্দিস আবু গালিব বলেন, আমি হাদিসের অন্যতম ইমাম আলী ইবনে মাদীনী (رضي الله عنه) কে বলতে শুনেছি, তিনি বলেছেন, ওয়াক্বেদী জাল হাদিস রচনা করতো।’’ ৩৮

৩৮. ইমাম যাহাবী : মিযানুল ই‘তিদাল : ৩/৬৬৩ : রাবী: ৭৯৯৩

● ইমাম যাহাবী (رحمة الله) আরও উল্লেখ করেছেন-

وقال ابن راهويه: هو عندي ممن يضع الحديث.

-‘‘ইমাম ইসহাক ইবনে রাহুয়াই (رحمة الله) বলেন, আমাদের নিকট ওয়াক্বেদী জাল হাদিস রচনাকারীদের একজন।’’৩৯

৩৯. ইমাম যাহাবী : মিযানুল ই‘তিদাল : ৩/৬৬৩ : রাবী: ৭৯৯৩, ইমাম যাহাবী, তারিখুল ইসলাম, ৫/১৮২ পৃ. ক্রমিক.৩৩৪, ইমাম ইবনে আদী : আল-কামিল : ৭/৪৮১ : রাবী: ১৭১৯

● ইমাম ইবনে আদি (رحمة الله) লিখেন-

قَالَ معاوية قَال لي أحمد بْن حنبل هُوَ كذاب.

-‘‘মুহাদ্দিস মুয়াবিয়া (رحمة الله) বলেন, ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল (رحمة الله) ওয়াক্বেদী সম্পর্কে বলেছেন, ‘ওয়াক্বেদী কায্যাব অর্থাৎ মিথ্যাবাদী।’’ ৪০

৪০. ইমাম ইবনে আদী : আল-কামিল : ৭/৪৮১ পৃ. রাবী: ১৭১৯

● ইমাম যাহাবী (رحمة الله) তার আরেক পুস্তকে লিখেন-

وقال ابن نُمَيْر، ومسلم، وأبو زُرْعة: متروك الحديث.....وقال ابن أبي حاتم: حدثنا يونس قَالَ: قَالَ لي الشّافعيّ: كُتُب الواقديّ كذِب.

-‘‘ইমাম ইবনে নুমাইর, মুসলিম, আবু যারওয়া (রহ.) বলেন, ওয়াক্বেদী মাতরুক অর্থাৎ পরিত্যক্ত রাবী।.....ইমাম ইবনে আবি হাতেম (رحمة الله) বলেন, আমাকে মুহাদ্দিস ইউনুস বর্ণনা করেছেন, তিনি বলেন, ইমাম শাফেয়ী (رحمة الله) বলেছেন, ওয়াক্বেদী একজন মিথ্যাবাদী লিখক।’’ (ইমাম যাহাবী, তারিখুল ইসলাম, ৫/১৮২ পৃ. ক্রমিক.৩৩৪)

সম্মানিত পাঠকবৃন্দ! বুঝতে বাকি রইল না যে ১২ই রবিউল আউয়াল রাসূল (ﷺ)-এর ওফাত এটা জাল বর্ণনা, কেননা এটা রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর নামে জাল হাদিস রচনাকারীরই একটি রচনা।

রাসূল (ﷺ) সোমবার দিনে পৃথিবীতে এসেছেন এবং সোমবার দিনে ওফাত বরণ করেছেন তাতে কোন সন্দেহ নেই, কেননা এ বিষয়ে সহীহ হাদিস বর্ণিত হয়েছে। রাসূল (ﷺ) এর ওফাত শরীফের তারিখ ১২ই রবিউল আউয়াল নয়, এ সম্পর্কে সর্বশেষ সিদ্ধান্ত দেন -

❏ বিখ্যাত ইতিহাসবিদ আল্লামা ইমাম আবুল কাশেম আব্দুর রহমান সুহাইলী (رحمة الله)। তিনি বলেন,

وَكَيف مَا دارت الْحَال على هَذَا الْحساب فَلم يكن الثَّانِي عشر من ربيع الأول يَوْم الْإِثْنَيْنِ بِوَجْه

-‘‘এই হিসাবের উপর যে কোন অবস্থাই প্রদক্ষিণ করুক, কিন্তু (একই সাথে) ১২ই রবিউল আউয়াল সোমবার ওফাত দিবস কোন মতেই হতে পারে না।’’ (আল্লামা আইনী, উমদাতুল ক্বারী, ১৬/৯৯ পৃ.)

❏ এ বিষয়বস্তুটিই (অভিমত) অতি শক্তিশালী ভাষায় সুপ্রসিদ্ধ মুসলিম দার্শনিক ও ইতিহাস বেত্তা ইমাম মুহাম্মদ শামসুদ্দীন আল-যাহাবী (رحمة الله), ইবনে আসাকির (رحمة الله), ইবনে কাসীর (رحمة الله), ইমাম নূরুদ্দীন আলী ইবনে আহমদ আল সামহুদী (رحمة الله), আলী ইবনে বোরহান উদ্দিন আল হালাবী (رحمة الله), আল্লামা বদরুদ্দিন আইনী (رحمة الله) ও ইবনে হাজার আসকালানী (رحمة الله) প্রমুখও বর্ণনা করেছেন। ৪১

৪১.

ক. ইমাম যাহাবী : তারিখ-ই-ইসলাম, অধ্যায়: আস সীরাত আন্-নবভিয়্যাহ, পৃষ্ঠা :৩৯৯-৪০০

খ. আল্লামা ইমাম ইবনে জওজী : ওয়াফা আল ওয়াফা : ১ম খণ্ড : ৩১৮ পৃ.

গ. আল্লামা ইবনে কাসীর : বেদায়া ওয়ান নিহায়া : ৫/২৫৬ পৃ.

ঘ. ইমাম বোরহান উদ্দিন হালবী : সিরাতে হালবিয়্যাহ : ৩/৪৭৩ পৃ.

ঙ. আইনী, উমদাতুল ক্বারী, ১৩/১৯১ পৃ. হা/৩৫৩৬

চ. ইবনে হাজার আসকালানী, ফতহুল বারী, ৮/৪৮৩ পৃ. হা/৪৪২৪

মোট কথা, ১২ই রবিউল আউয়াল রাসূল (ﷺ) এর পবিত্র ওফাত দিবস হওয়া কোন মতেই প্রমাণিত হয় না, না যুক্তি-তর্কে, না কোন সুস্পষ্ট দলীলের উদ্ধৃতির ভিত্তিতে, না কোন নির্ভরযোগ্য রাবীর বর্ণনার ভিত্তিতে, না কারো চিন্তা-ভাবনা বা গবেষণার ভিত্তিতে। অবশ্যই “সোমবার” ওফাত শরীফ হওয়ার ব্যাপারে কারো দ্বিমত নেই। এর পক্ষে বুখারী, মুসলিমে প্রমাণ পাওয়া যায়। তাই বলে ১২ই রবিউল আউয়াল রাসূল (ﷺ) এর ওফাত হয়েছে এমন কোন নির্ভরযোগ্য দলীল নেই। এমনকি ড. আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীর তার বইয়ের ৫২০-৫২১ পৃষ্ঠায় তা অকপটে স্বীকার করেছেন।

❏ তবে ইমাম বদরুদ্দীন আইনী (رحمة الله) লিখেন-

وَعَن الْخَوَارِزْمِيّ: توفّي صلى الله عَلَيْهِ وَسلم فِي أول يَوْم من ربيع الأول، قَالَ: وَهَذَا أقرب إِلَى الْقيَاس

-‘‘ইমাম খাওয়ারেজমী (رحمة الله) বলেন, রাসূল (ﷺ) রবিউল আউয়াল মাসের ১ তারিখ ওফাত বরণ করেন, তিনি বলেন, এটিই (বিভিন্ন হাদিসের বর্ণনা মতে ১লা রবিউল আউয়াল হওয়াটা) যুক্তিসংঙ্গত।’’ (আল্লামা আইনী, উমদাতুল ক্বারী, ১৬/৯৯ পৃ.)

সম্মানিত পাঠকবৃন্দ! বুঝা গেল রাসূল (ﷺ)-এর ওফাত শরীফ ১২ তারিখ প্রমাণিত নয়, তাই ঐ তারিখ ওফাত দিবস পালনের কোন যুক্তিকতাই হতে পারে না।

ওফাতুন্নবী (ﷺ) পালন না করার দ্বিতীয় কারণ:

ইসলামী শরীয়তে তিন দিনের বেশী শোক প্রকাশ করা বৈধ নয়। কারণ রাসূল (ﷺ) নিষেধ করেছেন, যাতে কেউ তিন দিনের বেশী শোক পালন না করে। এর প্রমাণে অনেক প্রামাণ্য হাদিসে পাক রয়েছে।

❏ ইমাম বুখারী (رحمة الله) বর্ণনা করেন-

عَنْ حَفْصَةَ، عَنْ أُمِّ عَطِيَّةَ، عَنِ النَّبِيِّ ﷺ قَالَتْ: كُنَّا نُنْهَى أَنْ نُحِدَّ عَلَى مَيِّتٍ فَوْقَ ثَلاَثٍ، إِلَّا عَلَى زَوْجٍ أَرْبَعَةَ أَشْهُرٍ وَعَشْرًا

-‘‘হযরত হাফসা (رضي الله عنه) তিনি হযরত উম্মে আতিয়্যাহ (رضي الله عنه) হতে বর্ণনা করেন, তিনি নবী করীম (ﷺ) হতে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, আমাদেরকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে যেন আমরা কোন ওফাত প্রাপ্তের উপর তিনদিনের পর আর শোক প্রকাশ না করি, কিন্তু স্ত্রী তার স্বামীর জন্য (৪ মাস দশদিন পর্যন্ত) শোক প্রকাশ করতে পারে।’’ ৪২

৪২. ইমাম বুখারী, আস-সহীহ, ১/৬৯ পৃ. হা/৩১৩, পরিচ্ছেদ: بَابٌ: الطِّيبُ لِلْمَرْأَةِ عِنْدَ غُسْلِهَا مِنَ المَحِيضِ

বিশ্ববিখ্যাত মুহাদ্দিসীনে কেরাম (এর বিরাট জামাআত) নির্ভরযোগ্য সহীহ সনদ সহকারে এবং সাহাবায়ে কেরাম উম্মাহাতুল মুমিনীন-

১)হযরত আয়েশা সিদ্দীকাহ (رضي الله عنه) ৪৩,

২)হযরত উম্মে সালামাহ (رضي الله عنه) ৪৪,

৩)হযরত যয়নব বিনতে যাহ্শ (رضي الله عنه) ৪৫,

৪)হযরত উম্মে হাবীবাহ (رضي الله عنه) ৪৬,

৫)হযরত হাফসাহ (رضي الله عنه) ৪৭ ,

৬)অনুরূপভাবে উম্মে আতিয়াহ আল আনসারীয়্যাহ (رضي الله عنه) ৪৮ ,

৭)হযরত আবু সাঈদ আল খুদরী (رضي الله عنه)৪৯ ,

৮)হযরত আনাস ইবনে মালিক (رضي الله عنه) ৫০ থেকে সরাসরি নবী করীম (ﷺ) হতে মারফু সূত্রে প্রায় সকল বর্ণনাগুলো কাছাকাছি বচনে হাদিস বর্ণিত আছে।

৪৩. ইমাম ইবনে মাযাহ, আস-সুনান, ৩/২৩০ পৃ. হা/২০৮৫, পরিচ্ছেদ: بَابُ هَلْ تُحِدُّ الْمَرْأَةُ عَلَى غَيْرِ زَوْجِهَا , ইমাম আহমদ, আল-মুসনাদ, ৪৩/২২২ পৃ. হা/২৬১২১

৪৪. ইমাম তাবরানী, মু‘জামুল কাবীর, ২৩/৩৫৮ পৃ. হা/৮৪২

৪৫. ইমাম ইমাম বুখারী, আস-সহীহ, ২/৭৮ পৃ. হা/১২৮২, পরিচ্ছেদ: بَابُ إِحْدَادِ المَرْأَةِ عَلَى غَيْرِ زَوْجِهَا

৪৬. ইমাম ইমাম বুখারী, আস-সহীহ, ২/৭৮ পৃ. হা/১২৮০, পরিচ্ছেদ: بَابُ إِحْدَادِ المَرْأَةِ عَلَى غَيْرِ زَوْجِهَا

৪৭. ইমাম ইবনে আবি শায়বাহ, আল-মুসান্নাফ, ৪/১৯৯ পৃ. হা/১৯২৮৬, ইমাম আহমদ, আল-মুসনাদ, ৪৪/৫০ পৃ. হা/২৬৪৫২ এবং হা/২৬৪৫৪

৪৮. ইমাম বুখারী, আস-সহীহ, ১/৬৯ পৃ. হা/৩১৩, পরিচ্ছেদ: بَابٌ: الطِّيبُ لِلْمَرْأَةِ عِنْدَ غُسْلِهَا مِنَ المَحِيضِ

৪৯. ইমাম মুত্তাকী হিন্দী, কানযুল উম্মাল, ৯/৬৪৯ পৃ. হা/২৭৮১৮

৫০. ইমাম বায্যার, আল-মুসনাদ, ১৩/৩৯ পৃ. হা/৬৩৫০

ওফাতুন্নবী (ﷺ) পালন না করার তৃতীয় কারণ

আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতের আক্বিদা হল, সমস্ত নবীগণ তাদের নিজ নিজ মাজারে জীবিত এবং সেখানে তাঁরা রিযিকপ্রাপ্ত হন। শুধু তাই নয় কুরআনে সূরা বাক্বারায় শহীদগণও জীবিত থাকার কথা বলা হয়েছে।

❏ হযরত আনাস ইবনে মালিক (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূল (ﷺ) ইরশাদ করেন-

الْأَنْبِيَاءُ أَحْيَاءٌ فِي قُبُورِهِمْ يُصَلُّونَ.

-‘‘সমস্ত নবীগণ তাদের মাজারে জীবিত, সেখানে তাঁরা সালাত আদায় করেন।’’ ৫১

৫১.

ক. ইমাম আবূ ইয়ালা, আল মুসনাদ, ৬/১৪৭ পৃ. হা/৩৪২৫

খ. ইমাম বায্যার, আল-মুসনাদ, ১৩/২৯৯ পৃ. হা/৬৮৮৮

গ. ইবনে হাজার হাইসামী, মাযমাউয যাওয়াইদ, ৮/২১১ পৃ.

✦ এ সনদ প্রসঙ্গে আল্লামা ইবনে হাজার হাইসামী (رحمة الله) লিখেন-

رَوَاهُ أَبُو يَعْلَى وَالْبَزَّارُ، وَرِجَالُ أَبِي يَعْلَى ثِقَاتٌ.

-‘‘উক্ত হাদিসটি ইমাম আবূ ই‘য়ালা ও বায্যার বর্ণনা করেছেন, ইমাম আবূ ই‘য়ালার সমস্ত রাবী সিক্বাহ।’’ (ইবনে হাজার হাইসামী, মাযমাউয যাওয়াইদ, ৮/২১১ পৃ.)

সুতরাং রাসূল (ﷺ) যেহেতু হায়াতুন্নবী তাই কোনো মতেই ওফাতুন্নবী পালন করা বৈধ হতে পারে না। তাই ওফাতুন্নবী পালন করা তাদের নীতি যারা রাসূল (ﷺ)-কে হায়াতুন্নবী বিশ্বাস করেন না।

ওফাতুন্নবী (ﷺ) পালন না করার চতুর্থ কারণ:

রাসূল (ﷺ) এর ওফাতের পর থেকে আজ পর্যন্ত কেউ ওফাত দিবস পালন করেছেন তার কোন নযির নেই, পালন করার ব্যাপারে রাসূল (ﷺ) এর আদেশ আছে, তারও কোন প্রমাণ নেই।

❏ এ প্রসঙ্গে মক্কা শরীফের তৎকালীন মুফতী এনায়েত আহমদ (رحمة الله) তার প্রসিদ্ধ তাওয়ারিখে হাবীবে ইলাহ (উর্দু অনুবাদ) গ্রন্থের ১২ নং পৃষ্ঠায় বর্ণনা করেন-

اور بهى علماءے لكها ہے كہ اس محفل ميں ذكر وفات شريف كا نہ چاہے اس لئے كہ يہ محفل واسطے خوشى ميلاد شريف كے منعقد ہوتى ہے ذكر غم جانكاه اس ميں محض نازيبا ہے – حرمين شريف ميں ہرگز اجازت ذكر قصة وفات كى نہیں ہے -

-‘‘আলেম সমাজ এ কথাই লিখেছেন যে, এই মাহফিলে রাসূলের ওফাত শরীফ বা ইন্তেকালের আলোচনা করা ঠিক নয়, এ জন্য যে এ রবিউল আউয়াল মাসে অনুষ্ঠিত মাহফিল মীলাদুন্নবী (ﷺ) এর খুশি উদযাপন করার জন্য অনুষ্ঠিত হয়। বিশেষ করে মক্কা মদীনা শরীফে রাসূল (ﷺ) এর ওফাত শরীফের আলোচনা করার অনুমতি কখনোই ছিল না।’’ ৫২

৫২ .মুফতী এনায়েত আহমদ : তাওয়ারিখে হাবীবে ইলাহ : পৃ: ১২

❏ বুখারী শরীফের ব্যাখ্যাকার আল্লামা ইমাম কাস্তালানী (رحمة الله) “মাওয়াহেবুল্লা দুন্নীয়া” গ্রন্থে বলেন,

ولا زال أهل الاسلام يحتفلون بشهر مولوده صلى الله عليه وسلم ويعملون الولائم ويتصد قون فى لياليه بانواع الصدقات ويظهرون السرور ويزيدون فى المبرات ويعتنون بقرأة مولده الكريم ويظهر عليهم من بركاته كل فضل عميم –

-‘‘প্রতিটি যুগে মুসলমানগণ নবী করীম (ﷺ) এর বেলাদাত শরীফের মাসে মীলাদ মাহফিলের আয়োজন করে আসছে, উন্নত মানের খাবারের আয়োজন করেন, এর রাতগুলোতে বিভিন্ন ধরণের সাদক্বাহ খায়রাত করেন, আনন্দ প্রকাশ করতে থাকেন, পুন্যময় কাজ বেশি পরিমাণে করার প্রতি গুরুত্ব দিয়ে আসেন। ফলে আল্লাহর অসংখ্য বরকত ও ব্যাপক অনুগ্রহ প্রকাশ পায়।’’ ৫৩

৫৩. আল্লামা ইমাম জুরকানী : শরহুল মাওয়াহেব : ১ম খণ্ড : ২৬২ পৃষ্ঠা

❏ উপমহাদেশের শ্রেষ্ঠ মুহাদ্দিস আল্লামা শাহ ওয়ালী উল্লাহ মুহাদ্দিস দেহলভী (رحمة الله) ‘ফয়যুল হারামাঈন’ কিতাবে বলেন,

وكنت قبل ذلك بمكة المسظمة فى مولد النبى صلى الله عليه وسلم فى يوم ولادته والناس يصلون على النبى صلى الله عليه وسلم ويذكرون ارهاصاته التى ظهرت فى وقت ولادته ومشاهده قبل بعثته فرأيت انوارا-

-‘‘আমি এর পূর্বে মক্কা মুআয্যামায় বেলাদত শরীফের বরকতময় ঘরে বেলাদাত শরীফের তারিখে উপস্থিত ছিলাম। আর সেখানে হাজার হাজার লোকজন সমবেত হয়ে হুযূর (ﷺ) এর উপর একত্রে দরূদ শরীফ পাঠ করে তাঁর মীলাদ বা শুভাগমনের সময়ের অলৌকিক ঘটনাবলী আলোচনা করছিলেন। তারপর আমি সেখানে এক মিশ্র নূরের ঝলক প্রত্যক্ষ করছিলাম।’’ ৫৪

৫৪. আল্লামা শাহ ওয়ালীউল্লাহ মুহাদ্দিস দেহলভী : ফয়যুল হারামাঈন : ১৪২ পৃ.

অতএব বুঝা গেল, রাসূল (ﷺ) এর যামানা থেকে শাহ ওয়ালী উলাহ মুহাদ্দিস (رحمة الله) পর্যন্ত মীলাদুন্নবী পালন হতো, ওফাতুন্নবী নয়, আর মক্কা ও মদীনা শরীফের বর্তমানে ওহাবী মতবাদী সরকার সেখানে মীলাদ পাঠ বন্ধ করে দিয়েছে। তবে কিছু কিছু স্থানে এখনও হয়ে থাকে।

ওফাতুন্নবী (ﷺ) পালন না করার পঞ্চম কারণ

সর্বশেষ বলতে চাই, রাসূল (ﷺ) এর ওফাত শরীফও আমাদের জন্য নেয়ামত স্বরূপ।

❏ হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত। তিনি রাসূল (ﷺ) হতে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন,

عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ مَسْعُودٍ ؓ، .....وَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ ﷺ : حَيَاتِي خَيْرٌ لَكَمْ تُحْدِثُونَ وَيُحَدَثُ لَكَمْ، وَوَفَاتِي خَيْرٌ لَكَمْ تُعْرَضُ عَلَيَّ أَعْمَالُكُمْ، فَمَا رَأَيْتُ مِنْ خَيْرٍ حَمَدَتُ اللَّهَ عَلَيْهِ، وَمَا رَأَيْتُ مِنْ شَرٍّ اسْتَغْفَرْتُ اللَّهَ لَكَمْ-  

-‘‘আমার হায়াত তোমাদের জন্য উত্তম বা নেয়ামত স্বরূপ। কেননা আমি তোমাদের সাথে কথা বলি তোমরাও আমার সাথে কথা বলতে পারছ। এমনকি আমার ওফাতও তোমাদের জন্য উত্তম বা নেয়ামত স্বরূপ। কেননা তোমাদের আমল আমার নিকট পেশ করা হবে, ফলে যদি তোমাদের কোন ভাল আমল আমি করতে দেখবো তখন তা দেখে আল্লাহর নিকট প্রশংসা করবো, আর তোমাদের মন্দ কাজ দেখবো তখন আল্লাহর দরবারে তোমাদের জন্য গুনাহ মাফের ক্ষমা প্রার্থনা করবো।’’ ৫৫

৫৫. বায্যার, আল-মুসনাদ, ৫/৩০৮ পৃ. হা/১৯২৫, ইমাম সুয়ূতি, জামিউস সগীর, ১/২৮২ পৃ. হা/৩৭৭০-৭১, আল্লামা ইবনে কাছির, বেদায়া ওয়ান নিহায়া, ৪/২৫৭ পৃ., আল্লামা মুত্তাকী হিন্দী, কানযুল উম্মাল, ১১/৪০৭ পৃ. হা/৩১৯০৩, ইমাম ইবনে জওজী, আল-ওফা বি আহওয়ালি মোস্তফা, ২/৮০৯-৮১০ পৃ., আল্লামা ইবনে কাছির, সিরাতে নববিয়্যাহ, ৪/৪৫পৃ.

✦ উক্ত হাদিস প্রসঙ্গে ইমাম নুরুদ্দীন ইবনে হাজার হাইসামী (رحمة الله) বলেন-

رَوَاهُ الْبَزَّارُ، وَرِجَالُهُ رِجَالُ الصَّحِيحِ

-‘‘উক্ত হাদিসের সমস্ত রাবী বুখারীর বর্ণনাকারীর ন্যায়।’’ (হাইসামী, মাযমাউয-যাওয়াইদ, ৯/২৪ পৃ. হা/১৪২৫০)

তাই বুঝা গেল হাদিসটি সহীহ। ইমাম সুয়ূতি (رحمة الله) তিনি তাঁর গ্রন্থে উক্ত হাদিসটির দু‘টি সনদ উল্লেখ করে একে সহীহ বলেছেন। সর্বশেষ, আমি এ বিষয়ে দেওবন্দী এক মৌলভীর উদ্ধিৃতি দিয়ে আলোচনা ইতি টানবো ইন শা আল্লাহ। তথাকথিত কওমী আলেমদের মান্যবড় মুফতি মুহাম্মদ ইদরীস কাসেমী ওফাত দিবস পালন সম্পর্কে বলেন ‘‘ইসলামী শরীয়তে যাবতীয় জন্মবার্ষিকী, মৃত্যুবার্ষিকী পালনের কোন সম্পর্ক নেই।’’(নবী প্রেমের সমাপ্তি কিসে? পৃ.৪৪, ইদরীসিয়া ওয়েলফেয়ার ট্রাস্ট পল­বী, মিরপুর, ঢাকা, প্রকাশ ২০১২) তাই ওলীপুরীকে তার কথা থেকে শিক্ষাগ্রহণ করার জন্য অনুরোধ রইল।

বিষয় নং-৪: হযরত জাবির (رضي الله عنه)-এর দুই মৃত সন্তানদের জীবিত করার ঘটনা:

‘হাদীসের নামে জালিয়াতি’ গ্রন্থের ৩৫৭ পৃষ্ঠায় ড. আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীর বিশিষ্ট সাহাবী হযরত জাবির ইবনে আব্দুল্লাহ (رضي الله عنه) এর দুই সন্তানকে জীবিত করার ঘটনা বা মু‘জিজাটি কোন প্রমাণ ছাড়া মিথ্যা ও বানোয়াট বলার অনেক অপচেষ্টা করেছেন। তিনি তার গ্রন্থের ৩৫৭ পৃষ্ঠায় লিখেছেন-‘‘প্রচলিত একটি গল্পে বলা হয়’। শুধু তাই নয় একটু অগ্রসর হয়ে তিনি আরও ভয়ংঙ্কর কথাগুলো এভাবে লিখেন-‘‘পুরো কাহিনীটি আগাগোড়াই বানোয়াট, ভিত্তিহীন ও মিথ্যা।’’

সম্মানিত পাঠকবৃন্দ! কত বড় মিথ্যুক ধোঁকাবাজ হলে প্রমাণহীনভাবে এটা বলতে পারেন এবং আল্লাহর নবীর মুজিযাকে অস্বীকার করার দুঃসাহস দেখাতে পারে! এই ঘটনাটি অনেক দীর্ঘ বিধায় সংক্ষেপে তা উল্লেখ করা হলো। ঘটনাটি হল-

❏ হযরত জাবির (رضي الله عنه) বর্ণনা করেন যে, আমি যখন ছাগল যবেহ করি তখন আমার ছোট দুটি সন্তান সেখানে উপস্থিত ছিল, তারা স্বচক্ষে ছাগলের যবেহ হওয়া দেখছিল। যখন হযরত জাবের (رضي الله عنه) চলে যান ছেলে দুটি ছুরি নিয়ে ছাদের উপরে চলে গেল।

বড় ছেলে তার ছোট ভাইকে বললো, এসো, আমিও তোমার সাথে এরূপ করব যেমন আমাদের বাবা এই ছাগলের সাথে করেছেন। বড় ছেলে ছোট ছেলেকে বাঁধলো এবং কণ্ঠনালীর উপর ছুরি চালিয়ে দিল। আর অজ্ঞাতসারে তাকে যবেহ করে ফেললো। তার মস্তক বিচ্ছিন্ন করার পর সেটা হাতে তুললো। হযরত জাবির (رضي الله عنه) এর স্ত্রী যখন তাকে দেখলো দৌড়ে গেল তার পিছনে, তার ভয়ে সেও ছাদ থেকে পড়ে মারা যায়। হযরত জাবের (رضي الله عنه) এর স্ত্রী এ নিয়ে শোর-চিৎকার ও হায় হুতাশ করেনি, যেন হুযূর (ﷺ) চিন্তিত ও বিষন্ন না হন (এবং দাওয়াত বিষাদে পরিণত না হয়)। অত্যন্ত ধৈর্য ও অবিচলতা সহকারে উভয় সন্তানকে ভিতরে এনে তাদের উপর কাপড় দিয়ে ঢেকে দেয় এবং কাউকে তাদের অবস্থা সম্পর্কে জানায়নি এমনকি হযরত জাবেরকেও বলেনি। যদিও অন্তর রক্তের অশ্র“তে কাঁদছিল শোকে। কিন্তু তা স্বত্ত্বেও তার চেহারাকে সজীব ও আনন্দময় রেখে খাবার রান্না করলো।

রাসূল (ﷺ) তাশরীফ আনলেন এবং খাবার তাঁর সম্মুখে রাখা হয়। তখনই জিবরাঈল আমীন এসে বললেন, হে মুহাম্মদ (ﷺ)! আল্লাহ্ তা‘য়ালা বলছেন যে, আপনি জাবেরকে বলুন যেন তার সন্তানদ্বয়কে আনেন যাতে তারা আপনার সাথে আহার করার সৌভাগ্য লাভ করে। তিনি হযরত জাবের (رضي الله عنه) কে ফরমালেন, তোমার সন্তানদ্বয়কে আন। তিনি তৎক্ষণাৎ বাহিরে আসেন এবং স্ত্রীকে জিজ্ঞেস করলেন, ছেলেরা কোথায়? সে বললো, হুযূর (ﷺ) এর খেদমতে বলুন-তারা উপস্থিত নেই। হুযূর (ﷺ) ফরমালেন, আল্লাহ্ তা‘য়ালার নির্দেশ এসেছে, তাদেরকে তাড়াতাড়ি ডেকে আন। শোকের কারণে স্ত্রী কেঁদে উঠলো এবং বলল, হে জাবির! এখন আমি তাদেরকে আনতে পারবো না। হযরত জাবের (رضي الله عنه) বললেন, ব্যাপার কি? তুমি কাঁদছো কেন? স্ত্রী তাকে ভিতরে নিয়ে সমস্ত ঘটনা শুনালেন এবং কাপড় তুলে বাচ্চাদের লাশ দেখালেন তখন তিনিও কাঁদতে শুরু করেন, কারণ তিনি তাদের অবস্থা সম্পর্কে অবহিত ছিলেন না।

অতঃপর হযরত জাবের পুত্রদ্বয়কে এনে হুযূর (ﷺ) এর চড়নে রাখলেন। তখন ঘর থেকে শোর-চিৎকারের আওয়াজ, আসতে লাগল। আল্লাহ্ তা‘য়ালা জিবরাঈল আমীন কে প্রেরণ করলেন এবং ফরমালেন, হে জিবরাঈল! আমার মাহবুব (ﷺ) কে বলো, আপনি দুআ করলে আমি তাদেরকে জীবিত করে দেবো। হুযূর (ﷺ) দুআ করলেন, তারা আল্লাহর হুকুমে তখনই জীবিত হয়ে যায়।’’ ৫৬

৫৬. শায়খ আব্দুল হক মুহাদ্দিস দেহলভী : মাদারেজুন নবুয়ত প্রথম খণ্ড, ৩১১ পৃ. বিশ্ববিখ্যাত মুহাদ্দিস, মুফাস্সির, বিশ্ব আশেকে রাসূল (ﷺ) আল্লামা আব্দুর রহমান জামী (رحمة الله) উক্ত ঘটনাটি তাঁর সিরাত গ্রন্থ শাওয়াহিদুন নবুয়তের ৮৪ পৃষ্ঠায় বর্ণনা করেন। উক্ত সিরাত গ্রন্থ বাংলায় অনুবাদ করেছেন দেওবন্দী আলেম মাওলানা মহিউদ্দিন খাঁন, মদিনা পাবলিকেশন্স, ৩২/২ বাংলা বাজার হতে প্রকাশিত, এর পৃ-১০৮-১০৯ (পঞ্চম প্রকাশ-২০০৭ আগষ্ট), আল্লামা শফী উকাড়ভী : জিকরে জামীল : ২৩৪ পৃ.

সর্বশেষ তার নিকট আমার প্রশ্ন যে, তার কাছে কোন গ্রহণযোগ্য ইমাম বা মুহাদ্দিস উক্ত ঘটনাটি জাল বা বানোয়াট বলেছেন তার প্রমাণ থাকলে আমাদেরকে অবগত করুন। তিনি শায়খ দরবেশহুত এর আসনাল মাতালিব কিতাবের যে দলিল দিয়েছেন তাও মিথ্যা।

বিষয় নং-৫: রাসূল (ﷺ) এর নামে নাম রাখা ব্যক্তির জান্নাতী হওয়ার সুসংবাদ:

মাওলানা মুতীউর রহমান তার ‘এসব হাদীস নয়’ গ্রন্থের ১৫৩ পৃষ্ঠায় এ হাদিসটিকে জাল প্রমাণ কারার অনেক অপ্রচেষ্টা করেছেন, কিন্তু সর্বশেষে ব্যর্থ হয়েছেন, কারণ সে কোনো নির্ভরযোগ্য দলিল উপস্থাপন এবং জাল হবার কোনো কারণ উল্লেখ করতে পারেননি।

প্রথম সূত্র:

মূলত হাদিসটি হল এভাবে হযরত আনাস বিন মালিক (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূল (ﷺ) ইরশাদ করেন,

(ابْن بكير) حَدَّثَنَا أَحْمَد بْن عَبْد الله بْن الْفَتْح حَدَّثَنَا صَدَقَة بْن مُوسَى بْن تَميم حدَّثَنِي أَبِي عَن حُمَيْد الطَّوِيل عَن أَنَسٍ مَرْفُوعًا: يُوقَفُ عَبْدَانِ بَيْنَ يَدَيِ اللَّهِ تَعَالَى فَيَأْمُرُ بِهِمَا إِلَى الْجَنَّةِ فَيَقُولانِ رَبَّنَا بِمَ اسْتَأْهَلْنَا الْجَنَّةَ وَلَمْ نَعْمَلْ عَمَلا تُجَازِينَا بِهِ فَيَقُولُ لَهُمَا عَبْدَيَّ ادْخُلا الْجَنَّةَ فَإِنِّي آلَيْتُ عَلَى نَفْسِي أَنْ لَا أُدْخِلَ النَّارَ مَنِ اسْمُهُ أَحْمَدُ وَلا مُحَمَّدٌ.

-‘‘কিয়ামতের দিন দুধরনের ব্যক্তিদের মহান আল্লাহ্ তা‘য়ালার দরবারে উপস্থিত করা হবে। মহান রব তাদেরকে জান্নাতে নিয়ে যাওয়ার আদেশ করবেন। তারা আরজ করবেন, হে আল্লাহ্! আমরা কেনো জান্নাতের উপযোগী হলাম? আমরা তো এমন কোনো আমল করিনি যা আমাদের জন্য জান্নাতে প্রবেশে যথেষ্ট হবে? অতঃপর আল্লাহ্ তাদেরকে লক্ষ্য করে বলবেন, হে আমার বান্দা! তোমরা উভয়েই জান্নাতে প্রবেশ কর, কেননা আমি অঙ্গিকার করেছি, যে ব্যক্তি মুহাব্বাত করে আহমদ এবং মুহাম্মদ নাম রাখবে সে জাহান্নামে প্রবেশ করবে না।’’ ৫৭

৫৭. ইমাম দায়লামী : আল-মুসনাদিল ফিরদাউস : ৫/৪৮৫ পৃ. হা/৮৮৩৭ এবং ৫/৫৩৫ পৃ. হা/৯০০৬, ইমামা মানাবী : ফয়জুল কাদীর, ৫/৪৫৩ পৃ., আল্লামা বুরহান উদ্দিন হালবী : সিরাতে হালবিয়্যাহ : ১/১২১ পৃ., ইমাম সুয়ূতি, আল-লাআলিল মাসনূ, ১/৯৭ পৃ., আল্লামা শায়খ ইউসূফ নাবহানী : জাওয়াহিরুল বিহার : ৩/৩৮৫ পৃ., ইমাম দায়লামী : আল ফিরদাউস : ৫/৪৮৫ পৃ. হা/৮৮৩৭, ইমাম কাস্তাল্লানী, মাওয়াহেবুল্লাদুনিয়্যাহ, ২/৩৭৬ পৃ., ইবনে হাজার মক্কী, জামেউল ওসায়েল, ১/৫৩১ পৃ., ইমাম জুরকানী, শারহুল মাওয়াহেব, ৭/৩০৫ পৃ., ইবনে সালেহ শামী, সবলুল হুদা ওয়ার রাশাদ, ১/৪১৯ পৃ.

সনদ পর্যালোচনা:

ইমাম সুয়ূতি (رحمة الله) এ হাদিসটির সনদ দুর্বল বলেছেন কেননা সনদে (صَدَقَة بْن مُوسَى بْن تَميم) নামক যঈফ রয়েছেন। খতিবে বাগদাদী (رحمة الله) তাকে (صدقة شيخ مجهول) অজ্ঞাত মুহাদ্দিস বলেছেন। তবে আল্লামা মুগলতাঈ (رحمة الله) এবং ইবনে আবি ই‘য়ালা (رحمة الله) তার জীবনী আলোচনা করেছেন এবং বলেছেন তিনি হাম্বলী মাযহাবের অনুসারী ছিলেন। ৫৮

৫৮. ইমাম খতিবে বাগদাদী, তারিখে বাগদাদ, ৬/৩৬৬ পৃ. আল্লামা মুগলতাঈ, ইকমালু তাহযিবুল কামাল, ৬/৩৬৬ পৃ., ইবনে আবি ই‘য়ালা, তবকাতুল হাম্বলীয়া, ১/৭৮ পৃ., ইবনে হাজার, লিসানুল মিযান, ৪/৩১৪ পৃ.

তবে উসূলে হাদিসের নীতিমালা অনুসারে এ হাদিসটির আরও দুটি শাওয়াহেদ থাকায় ‘হাসান’ পর্যায়ের মর্যাদা রাখে।

দ্বিতীয় সূত্র:

ইমাম কাস্তালানী (رحمة الله) সংকলন করেন-

وروى أبو نعيم عن نبيط ابن شريط قال قال رسول الله ﷺ قَالَ اللَّهُ: وَعِزَّتِي وَجَلَالِي لَا عَذَّبْتُ أَحَدًا يُسَمَّى بِاسْمِكَ فِي النَّارِ.

-‘‘ইমাম আবু নুয়াইম ইস্পাহানী (رحمة الله) হযরত নবীত্ব বিন শারীত্ব (رضي الله عنه) হতে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, রাসূল (ﷺ) ইরশাদ করেন যে, আমাকে আল্লাহ্ রাব্বুল ইজ্জত বলেছেন, আমার জালালিয়াতের শপথ! যার নাম আপনার নামে রাখা হবে তাকে জাহান্নামের আযাব দেওয়া হবে না।’’ ৫৯

৫৯. ইমাম আবু নুঈম ইস্পাহানী, হিলইয়াতুল আউলিয়া, ইমাম কাস্তাল্লানী, মাওয়াহেবুল্লাদুনিয়্যাহ, ২/৩৭৬ পৃ., ইমাম জুরকানী, শারহুল মাওয়াহেব, ৭/৩০৫ পৃ., ইবনে সালেহ শামী, সবলুল হুদা ওয়ার রাশাদ, ১/৪১৯ পৃ. ইবনে হাজার মক্কী, জামেউল ওসায়েল, ১/৫৩১ পৃ.,

তৃতীয় সূত্র:

অনুরূপ আরেকটি বর্ণনা পাওয়া যায়-

وعن ابن عباس رضى الله عنهما انه ﷺ قال : اذا كان يوم القيامة ينادى مناد فى الموقف الا ليقم من كان اسمه محمدا ، فليدخل الجنة بكرامتى

-‘‘হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নিশ্চয় রাসূল (ﷺ) ইরশাদ ফরমান, কিয়ামতের দিন ফেরেশতারা মুহাম্মদ নামের ব্যক্তিদেরকে ডাকবেন ও খুঁজতে থাকবেন এবং তাদেরকে বলা হবে তোমরা জান্নাতে যাও, এটা আল্লাহর মহত্ব ও বড়ত্ব কী, তা দেখানোর জন্য তাদের প্রতি এ প্রত্যাদেশ হবে।’’ ৬০

৬০. আল্লামা ইউসূফ নাবহানী : জাওয়াহিরুল বিহার : ৩/৩৮৫ পৃষ্ঠা

চতুর্থ সূত্র: 

অনুরূপ হযরত আবু উমামা (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত আরেকটি হাদিস পাওয়া যায়।

انه ﷺ قال : قال الله عز وجل : و عزتى و جلالى لا اعذب احدا تسمى باسمك فى النار-

-‘‘নিশ্চয়ই আঁকা (ﷺ) ইরশাদ ফরমান, আল্লাহ্ তা‘য়ালা বলেন, হে হাবীব! আমার ইজ্জত ও জালালিয়াতের কসম যারা আপনার নামে নাম মিলেয়ে রাখবে তাদেরকে কখনো জাহান্নামের আযাব দেয়া হবে না।’’ ৬১

৬১.

আল্লামা শায়খ ইউসূফ বিন ইসামঈল নাবহানী : জাওয়াহিরুল বিহার : ৩/৩৮৪ পৃ., ইমাম বুরহান উদ্দিন হালবী : সিরাতে হালবিয়্যাহ : ১/১৩৫ পৃ.

সুতরাং প্রমাণিত হলো যে হাদিসটির মোট ৫টির বেশী সনদ রয়েছে। প্রত্যেকটি সনদ দুর্বল হলেও হাদিসটি “হাসান” হওয়াতে কোন অসুবিধা নেই বরং নিঃসন্দেহে ‘হাসান’ বলা যায়।

পঞ্চম সূত্র: 

ইমাম ইবনে আসাকীর (رحمة الله) এবং ইবনে বুকাইর (رحمة الله) সহ আরও অনেকে সংকলন করেন-

(ابْن بكير) حَدَّثَنَا حَامِد بْن حمَّاد بْن الْمُبَارك العسكري حَدَّثَنَا إِسْحَاق بْن سيَّار أَبُو يَعْقُوب النصيبي حَدَّثَنَا حجاج بْن الْمنْهَال حَدَّثَنَا حمَّاد بْن سَلمَة عَن برد بْن سِنَان عَن مَكْحُول عَن أَبِي أُمَامَة مَرْفُوعًا: مَنْ وُلِدَ لَهُ مَوْلُودٌ فَسَمَّاهُ مُحَمَّدًا تَبَرُّكًا بِهِ كَانَ هُوَ وَمَوْلُودُهُ فِي الْجَنَّةِ.

-‘‘হযরত আবু উমামাহ (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) ইরশাদ করেন, যার সন্তান জন্ম নিল সে আমার পবিত্র নাম হতে বরকত হাসিল করার নিমিত্তে তার নবজাতকের নাম মুহাম্মদ রাখবে তবে সে এবং তার সন্তান দু’জনই বেহেশতে যাবে।’’ ৬২

৬২.

ক. ইমাম ইবনে আসাকির : তারীখে দামেস্ক : ১৩/১৭৭ পৃ.

খ. ইমাম মানাবী : ফয়জুল কাদীরে ২/২৩৭ পৃষ্ঠা, হা/৯০৮৪

গ. ইবনে কাইয়্যুম : মানারুল মুনীফ : ৬১ পৃষ্ঠা

ঘ. আ’লা হযরত ইমাম আহমদ রেযা খাঁন বেরলভী : আহকামে শরীয়ত, ১/৮০ পৃষ্ঠা

ঙ. ইমাম ইবনে বুকাইর : ফযলুল মিন ইসমু আহমদ ওয়া মুহাম্মদ : ১/৫৮ পৃষ্ঠা

চ. ইমাম জালালুদ্দীন সুয়ূতি : আল লাআলীল মাসনূআ : ১/১০৬ পৃ.

ছ. শায়খ ইউসূফ নাবহানী : জাওয়াহিরুল বিহার : ৩/৩৮৫ পৃ.

জ. আল্লামা আজলূনী : কাশফুল খাফা : ২/২৫৪ পৃ. হা/২৬৪৩

ঝ. মুত্তাকী হিন্দী, কানযুল উম্মাল, ১৬/৪২২ পৃ. হা/৪৫২২৩

হাদিসটির মান: হাদিসটির মান ‘হাসান’।

✦ ইমাম সুয়ূতি (رحمة الله) এ হাদিস সংকলন করে লিখেন-

(قلتُ) هَذَا مثل حَدِيث ورد فِي الْبَاب وَإِسْنَاده حسن.

-‘‘আমি (সুয়ূতি) বলি, এর অনুরূপ আরও অসংখ্য সনদে হাদিস বর্ণিত আছে। আর এ হাদিসের সনদ ‘হাসান’।’’ (ইমাম সুয়ূতি, লা-আলিল মাসনূআ, ১/৯৭ পৃ.)

✦ উক্ত হাদিস সম্পর্কে আল্লামা আজলূনী (رحمة الله) বলেন-

رَوَاهُ ابْنُ عَسَاكِرَ عَنْ أُمَامَةَ رَفَعَهُ قَالَ السُّيُوطِيّ: هَذَا أَمْثَلُ حَدِيثٍ وَرَدَ فِي هَذَا الْبَابِ وَإِسْنَادُهُ حَسَنٌ-

-‘‘উক্ত হাদিসটি ইমাম ইবনে আসাকীর (رحمة الله) তার তারীখে দামেস্কে হযরত আবু উমামা (رحمة الله) হতে মারফূ সূত্রে বর্ণনা করেন। ইমাম জালালুদ্দীন সুয়ূতি (رحمة الله) বলেন, এর অনুরূপ আরও অসংখ্য সনদে হাদিস বর্ণিত আছে। আর এ হাদিসের সনদ ‘হাসান’।’’ (আজলূনী, কাশফুল খাফা, ২/৩৪২ পৃ. হা/২৬৪৪)

✦ আল্লামা তাহের পাটনী (رحمة الله) লিখেন-

قُلْتُ رِجَالُهُ كُلُّهُمْ ثِقَاتٌ مَعْرُوفُونَ

-‘‘আমি বলি, এ হাদিসের সমস্ত রাবী সিকাহ বা বিশ্বস্ত, সুপরিচিত।’’ (তাযকিরাতুল মাওদ্বুআত, ৮৯ পৃ.)

✦ আহলে হাদিসদের তথাকথিত ইমাম শাওকানী লিখেন-

وقال في اللآلىء: هذا أمثل حديث: أورده في الباب، وإسناده حسن

-‘‘ইমাম সুয়ূতি (رحمة الله) তাঁর আল-লাআলীল মাসনূ’ গ্রন্থে বলেন, এর অনুরূপ আরও অসংখ্য সনদে হাদিস বর্ণিত আছে। আর এ হাদিসের সনদ ‘হাসান’এ হাদিসটির সনদ সহীহ।’’ (শাওকানী, ফাওয়াইদুল মাওদ্বুআত, ৪৭১ পৃ.)

সুতরাং প্রমাণ হয়ে গেল হাদিসটি নিঃসন্দেহে ‘হাসান’ বা গ্রহণযোগ্য।

৬ষ্ঠ সূত্র:

ইমাম জাফর সাদেক (رحمة الله) তার পিতা ইমাম বাকের (رحمة الله) হতে তিনি হযরত আলী (رضي الله عنه) হতে বর্ণনা করেন-

إذَا كَانَ يَوْمَ الْقِيَامَةِ نَادَى مُنَادٍ إلَّا لِيَقُمْ مَنِ اسْمُهُ. مُحَمَّدٌ فَلْيَدْخُل الْجَنَّةَ لِكَرَامَةِ اسْمِهِ ﷺ

-‘‘কিয়ামতের ময়দানে কোনো এক আহব্বানকারী আহব্বান করবে যে, যার নাম মুহাম্মদ সে যেন জান্নাতে প্রবেশ করে। এটা শুধু আল্লাহ্ তা‘য়ালার হাবীব (ﷺ) এর মহত্ব ও বড়ত্ব দেখানোর জন্য এ মর্যাদা।’’ ৬৩

৬৩.

ক. ইমাম কাজী আয়াজ : শিফা শরীফ : ১/১৭৬ পৃ.

খ. শায়খ ইউসূফ নাবহানী : জাওয়াহিরুল বিহার : ৩/৩৮৫ পৃ.

৭ম সূত্র: 

✦ ইমাম সুয়ূতি (رحمة الله) সংকলন করেন-

وَقَالَ أَبُو المحاسن عَبْد الرَّزَّاق بْن مُحَمَّد الطبسي فِي الْأَرْبَعين أَنْبَأنَا أَبُو عَبْد مُحَمَّد بْن الْفضل الفراوي أَنْبَأنَا أَبُو سَعِيد مُحَمَّد بْن عَلِيّ بْن الخشاب الصُّوفِي أَنْبَأنَا أَبُو عُمَرو أَحْمَد بْن أَبِي القراني، سمعتُ أَبَا الْحَسَن مُحَمَّد بْن يَحْيَى بْن مُحَمَّد الْخَطِيب يَقُولُ سَمِعْتُ جدِّي مُحَمَّدَ بْنَ سَهْلِ بْنِ إِسْحَاقَ الْفَرَايِضِيِّ يَقُولُ أَخْبَرَنَا أَبِي يَرْفَعُ الْحَدِيثَ إِلَى النَّبِي أَنه قَالَ: إِذَا كَانَ يَوْمَ الْقِيَامَةِ نَادَى مُنَادٍ يَا مُحَمَّدُ قُمْ فَادْخُلِ الْجَنَّةَ بِغَيْرِ حِسَابٍ فَيَقُومُ كُلُّ مَنِ اسْمُهُ مُحَمَّدٌ فَيَتَوَهَّمُ أَنَّ النِّدَاءَ لَهُ فَلِكَرَامَةِ مُحَمَّدٍ لَا يُمْنَعُونَ.

-‘‘মুহাম্মদ বিন সাহল ইবনে ইসহাক ফারায়েদী তিনি তার সম্মানিত পিতা সাহল বিন ইসহাক ফারায়েদী (رحمة الله) হতে বর্ণনা করেন, তিনি মারফূ সূত্রে আল্লাহর নবী থেকে বর্ণনা করেন, রাসূল (ﷺ) ইরশাদ করেন, কিয়ামতের ময়দানে কোনো এক আহব্বানকারী আহব্বান করবে যে, হে মুহাম্মদ নামের অধিকারীগণ! তোমরা বিনা হিসেবে জান্নাতে প্রবেশ করো। এ ডাকে মুহাম্মদ নামের অধিকারীগণ সাড়া দেবেন (জান্নাতে প্রবেশ করবেন), এটা কেবল আল্লাহ্ তা‘য়ালার হাবীব হযরত মুহাম্মাদ (ﷺ)’র নামের মহত্ব ও সম্মান নিমিত্ত, যা অপ্রতিরোদ্ধ।’’ (ইমাম সুয়ূতি, লা-আলিল মাসনূআ, ১/৯৭ পৃ.)

সম্মানিত পাঠকবৃন্দ! উপরের আলোচনা থেকে প্রতিয়মান হয় যে, রাসূল (ﷺ)-এর নাম যদি ইখলাস এবং মুহাব্বত করে কেউ রাখে, এটা হাশরের ময়দানে তার জন্য নাযাতের উসিলা হতে পারে। এ বিষয়ে অনেক সূত্রে হাদিসে পাক বর্ণিত হয়েছে।

✦ এজন্য আল্লামা বুরহানুদ্দীন হালাবী (رحمة الله) লিখেন-

فقد جاء في أحاديث كثيرة

-‘‘এ বিষয়ে অনেক হাদিসে পাক বর্ণিত হয়েছে।’’ (বুরহানুদ্দীন হালবী, সিরাতে হালবিয়্যাহ : ১/১২১ পৃ.,)

উসূলে হাদিসের একটি নীতিমালা আমি এ গ্রন্থের শুরুতে আলোচনা করেছি যে, যঈফ হাদিসও যখন একাধিক সূত্রে বর্ণিত হবে সেটা ‘হাসান’ স্তরে পৌঁছে যাবে।

বিষয় নং-০৬: (لَوْلاكَ لَمَا خَلَقْتُ الأَفْلاكِ) ‘রাসূল (ﷺ) সৃষ্টি না হলে কিছুই সৃষ্টি হত না’ হাদিসের তাত্ত্বিক বিশ্লেষণ:

মাওলানা মুতীউর রহমান ‘এসব হাদীস নয়’ গ্রন্থের ১৬৩ পৃষ্ঠায় এ হাদিস নিয়ে লিখেছেন-‘‘এটা লোকমুখে হাদীসে কুদসী হিসেবে যথেষ্ট প্রসিদ্ধ। অথচ হাদীস বিশেষজ্ঞগণ এ ব্যাপারে একমত যে, এটা একটা ভিত্তিহীন রেওয়ায়েত। রাসূল (ﷺ)-এর হাদিসের সঙ্গে এর সামান্যতম সম্পর্কও নেই।’’

উক্ত গ্রন্থের ১৬৪ পৃষ্ঠায় আরও লিখেছেন-“আল্লাহ তা‘আলা এই দুনিয়া ও সমগ্র জগৎ কেন সৃষ্টি করলেন তা জানার একমাত্র উপায় ওহী। ওহী শুধু কুরআন ও হাদীসেই সীমাবদ্ধ। যতক্ষণ পর্যন্ত কুরআনের আয়াত বা সহীহ হাদিসের মাধ্যমে এ কথা প্রমাণিত না হবে যে, একমাত্র তাঁর খাতিরেই সবকিছু সৃষ্টি করা হয়েছে, ততক্ষণ এই আক্বীদা রাখার সুযোগ নেই।’’

অথচ উক্ত বইয়ে সে কোন মুহাদ্দিসের রায় ইবারত সহ উপস্থাপন করতে পারে নি।

অপরদিকে মাওলানা জুনায়েদ বাবুনগরী সম্পাদিত ‘প্রচলিত জাল হাদীস’ ৫৬ পৃষ্ঠায় লিখেছেন,-‘‘এ বাক্যটি হাদীসে কুদ্সী হিসেবে অনেক মহলে প্রসিদ্ধ। অথচ হাদীস শাস্ত্রের বিজ্ঞ ইমামগণ বাক্যটিকে মাওজু এবং ভিত্তিহীন রেওয়ায়েত বলে অভিহিত করেছেন।’’

তথাকথিত আরেক লেখক ড. আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীরের ঈমান বিধ্বংসীকারী পুস্তক “হাদীসের নামে জালিয়াতি” এর ৩০৪ পৃষ্ঠায় এ হাদিস উল্লেখ করার পূর্বে লিখেছেন-‘‘এ ধরনের বানোয়াট কথাগুলোর একটি।’’

তিনি আরও একটু অগ্রসর হয়ে ৩০৫ পৃষ্ঠায় তিনি লিখেন-‘‘মুহাদ্দিস একবাক্যে কথাটিকে ভিত্তিহীন বলে উল্লেখ করেছেন। কারণ এ শব্দে এ বাক্য কোনো হাদীসের গ্রন্থে কোনো প্রকার সনদে বর্ণিত হয়নি।’’

সম্মানিত পাঠকবৃন্দ! এই জালিয়াতীকারী ড. আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীর তো বললেন এ হাদিসটির কোন সনদই নেই; কিন্তু অন্যতম শীষ্য ড. মুহাম্মদ মানজুরুর রহমান তার লিখিত ‘মাউযু’ হাদীস বা প্রচলিত জাল হাদীস’ গ্রন্থের ১০৯ পৃষ্ঠায় লিখেছেন-‘‘হাদীসটির সনদ মিথ্যা, বানোয়াট, আপত্তিকর ও অত্যন্ত দুর্বল বলে সাব্যস্ত।’’

আরেক আহলে হাদিস ড. খ ম আব্দুর রাজ্জাক এর লিখা জালিয়াতী গ্রন্থ ‘প্রচলিত ভুল-ভ্রান্তি সংশোধন’ এর ৫১ পৃষ্ঠায় এ হাদিস সম্পর্কে লিখেন-‘‘হাদীস বিশারদগণ উল্লেখিত হাদীসটিকে একবাক্যে এটিকে বানোয়াট ও ভিত্তিহীন বলে উল্লেখ করেছেন।’’

আহলে হাদিসদের তথাকথিত ইমাম নাসীরুদ্দীন আলবানী তার ‘সিলসিলাতুল আহাদিসিদ-দ্বঈফাহ’ গ্রন্থে এ হাদিস প্রসঙ্গে লিখেন-

موضوع. كما قاله الصغاني في الأحاديث الموضوعة

-‘‘হাদিসটি জাল বা বানোয়াট, যেমনটি আল্লামা সাগানী তার মাওদ্বু হাদিসের গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন।’’ (আলবানী, সিলসিলাতুল আহাদিসিদ দ্বঈফাহ, ১/৪৫০ পৃ. হা/২৮২)

এবার আমরা দেখবো বিভিন্ন এখতিলাফী সমাধান সংক্রান্ত হাদিসের কিতাবসমূহে এ হাদিস সম্পর্কে মুহাদ্দিসগণ কী বলেছেন, আর বাস্তবতাই এ বিষয়টি প্রমাণিত কিনা।

ক. দেওবন্দী ও আহলে হাদিসদের শ্রদ্ধাভাজন ব্যক্তি আল্লামা আবুল হাসানাত আব্দুল হাই লাখনৌভী লিখেন-

لَكِن مَعْنَاهُ صَحِيح فقد روى الديلمي عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ مَرْفُوعًا: أَتَانِي جِبْرِيلُ فَقَالَ، قَالَ اللَّهُ يَا مُحَمَّدُ! لَوْلاكَ مَا خَلَقْتُ الْجَنَّةَ وَلَوْلاكَ مَا خَلَقْتُ النَّارَ

-‘‘তবে এ হাদিসটির মমার্থ সহীহ বা বিশুদ্ধ। কেননা, ইমাম দায়লামী (رحمة الله) হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (رضي الله عنه) হতে মারফূ সূত্রে বর্ণনা করেন, রাসূল (ﷺ) ইরশাদ করেন, আমার নিকট একদা হযরত জিবরাঈল (عليه السلام) আগমন করে বললেন, আপনার মহান রব বলেছেন, হে মুহাম্মদ! আমি যদি আপনাকে সৃজন না করতাম না বানাতাম জান্নাত, না জাহান্নাম। (লাখনৌভী, আছাররুস সুনান, ৪৪ পৃ.) বুঝা গেল ইতোপূর্বের একজন মৌলভীও এ হাদিসটির বিষয়ে মাওলানা লাখনৌভির এ অভিমত উল্লেখ করেননি, উল্লেখ না করার কারণ হলো তাদের কাজই রাসূল (ﷺ)-এর শান ও মানকে গোপন করা, আর তাদের গোপন করার পিছনে রয়েছে এক বিশাল কালো শক্তির মদদ।

খ. দশম শতাব্দীর মুজাদ্দিদ, বিশ্ববিখ্যাত মুহাদ্দিস আল্লামা মোল্লা আলী ক্বারী (رحمة الله) তাঁর লিখিত বিখ্যাত গ্রন্থ ‘মওদ্বুআতুল কাবীর’ এ উক্ত হাদিস لَوْلَاكَ لَمَا خَلَقْتُ الْأَفْلَاك সম্পর্কে বলেন,  

قَالَ الصَّغَانِيُّ إِنَّهُ مَوْضُوعٌ كَذَا فِي الْخُلَاصَةِ لَكِنَّ مَعْنَاهُ صَحِيحٌ فَقَدْ رَوَى أَتَانِي جِبْرِيلُ فَقَالَ يَا مُحَمَّدُ لَوْلَاكَ مَا خَلَقْتُ الْجَنَّةَ وَلَوْلَاكَ مَا خَلَقْتُ النَّارَ وَفِي رِوَايَةِ ابْنِ عَسَاكِرَ لَوْلَاكَ مَاخلقت الدنيا-

-‘‘আল্লামা সাগানী বলেন, لَوْلَاكَ لَمَا خَلَقْتُ الْأَفْلَاك এই হাদিসটি শব্দগতভাবে مَوْضُوعٌ বা জাল (কিন্তু অর্থের দিক দিয়ে مَوْضُوعٌ নয়), আমি (মোল্লা আলী ক্বারী ) বলি, এর মর্মার্থ বা বিষয়বস্তু সঠিক। কেননা, ইমাম দায়লামী (رحمة الله) হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (رضي الله عنه) হতে মারফূ সূত্রে বর্ণনা করেন, রাসূল (ﷺ) ইরশাদ করেন, আমার নিকট একদা হযরত জিবরাঈল (عليه السلام) আগমন করে বললেন, আপনার মহান রব বলেছেন, হে মুহাম্মদ! আমি যদি আপনাকে সৃজন না করতাম না বানাতাম জান্নাত, না জাহান্নাম। ইমাম ইবনে আসাকির (رحمة الله) এর বর্ণনায় [হযরত সালমান ফারসী (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত] এসেছে, আপনাকে সৃজন না করলে আমি দুনিয়া সৃষ্টি করতাম না।’’ ৬৪

৬৪. মোল্লা আলী ক্বারী, আসরারুল মারফুআ, ২৯৬ পৃ. হা/৩৮৫

গ. অনুরূপ আল্লামা আজলূনী আশ-শাফেয়ী (رحمة الله) বলেন,

قال الصغانى موضوع ، واقول لكن معناه صَحِيحٌ

-‘‘ইমাম সাগানী (رحمة الله) বলেন, হাদিসটি শব্দগতভাবে বানোয়াট, তবে আমি বলি উক্ত হাদিসের মর্মার্থ বা বিষয়বস্তু সহীহ বা বিশুদ্ধ (কারণ এ প্রসঙ্গে অনেক হাদিস রয়েছে)। ৬৫

৬৫. আল্লামা আজলূনী : কাশদুল খাফা : ২/১৪৮ পৃ. হা/২১২১

আল্লামা মোল্লা আলী ক্বারী (رحمة الله) লিখেন-

كما قال رسول الله ﷺ : أول ما خلق الله روحي وسائر الأرواح، إنما خلق ببركة روحه ونور وجوده كما روي لولاك لولاك لما خلقت الأفلاك فإنه صحيح

-‘‘এমনিভাবে রাসূল (ﷺ) ইরশাদ করেন, সমস্ত রূহ সমূহের মধ্যে মহান আল্লাহ আমার রূহকে প্রথমে সৃজন করেছেন। আর সবকিছু আমার রূহ এবং নূরের বরকতের পরশে সৃষ্টি ও অস্তিত্ব লাভ করেছে। যেমন বর্ণিত আছে, মহান রব ইরশাদ করেছেন, হে পিয়ারা হাবীব! আপনাকে সৃজন না করলে আমি কোনো কিছুই সৃষ্টি করতাম না। নিশ্চয়ই এ কথা বিশুদ্ধ.....।’’ (আল্লামা মোল্লা আলী ক্বারী, শরহে শিফা, ১/১৩ পৃ.)

আল্লামা আব্দুল হক মুহাদ্দিস দেহলভী (رحمة الله) ‘মাদারেজুন নবুয়ত’ নামক সিরাত গ্রন্থের হাদিস হিসেবে, لَوْلَاكَ لَمَا خَلَقْتُ الْأَفْلَاك-‘আপনাকে সৃষ্টি না করলে কোন কিছুই সৃষ্টি করতাম না’ উল্লেখ করেছেন। তিনি আরও বলেন, অধিকাংশ মুহাদ্দিসগণ الْأَفْلَاك নিয়ে মন্তব্য করেছেন। রাসূল (ﷺ) এর একটি উপাধি হল সাহেব-ই-লাওলাক। الْأَفْلَاك শব্দটি فَلَكٌ এর বহুবচন। মূলতفلك শব্দের অর্থ হল মন্ডল। গ্রীক দার্শনিকদের মতে মন্ডল বারটি। বারি মন্ডল, বায়ু মন্ডল, অগ্নিমন্ডল, সাত আসমান সাতটি মন্ডল, আরশ মন্ডল, কুরসি মন্ডল। এ সব মন্ডলকে الْأَفْلَاك বলা হয়ে থাকে।

আল্লামা মোল্লা আলী ক্বারী (رحمة الله) লিখেন-

(الأفلاك) أي انهدامها وتغيرها وانتقالها من أوضاعها بالكلية

-‘‘বস্তুর মূল উপাদান থেকে স্থানান্তরযোগ্য, পরিবর্তনশীল এবং ধ্বংসযোগ্যই হলো الْأَفْلَاك তথা মহাবিশ্ব।’’ (মোল্লা আলী ক্বারী, শরহে শিফা, ২/৫২২ পৃ.)

(الأفلاك) শব্দের ব্যাখ্যায় আনোওয়ার শাহ কাশ্মীরী লিখেন-

قال الشيخ الأكبر: إن الأفلاك إحدى عشر

-‘‘শাইখে আকবর মহিউদ্দিন ইবনে আরাবী (رحمة الله) বলেন, নিশ্চয়ই الْأَفْلَاك (মহাবিশ্ব) এর সংখ্যা ১১ টি।’’ (আনোওয়ার শাহ কাশ্মীরী, আরফযু সাযী, ৪/৫৬ পৃ. হা/২৪৩০-এর আলোচনায়)

নিম্নের আমি কতিপয় হাদিসে পাক আমি উল্লেখ করবো যেখানে সরাসরি الْأَفْلَاك শব্দটি ব্যবহার না হয়ে বার মন্ডলের কথা বিভিন্ন সূত্রে বর্ণিত হয়েছে। এজন্য মুহাদ্দিস আল্লামা সাগানী তার খুলাসা গ্রন্থে الْأَفْلَاك শব্দটি বিশুদ্ধ নয় বলেছেন। আর একমাত্র আল্লামা সাগানীই এই শব্দটি মন্তব্য করেন, আর তার এ রায়কেই অনেকে তাদের গ্রন্থে নকল করেছেন।

সম্মানিত পাঠকবৃন্দ! ইতোপূর্বে যে সমস্ত আলেমদের উদ্ধিৃতি দিয়েছে তাদের একজনও এ হাদিসটিকে শব্দগতভাবে প্রমাণিত না হলেও মমার্থ বিশুদ্ধ নয় বলেননি, আমি আশ্চর্যিত হয়ে যাই তখন যখন দেখি (মমার্থ বিশুদ্ধ বলেছে এমন মুহাদ্দিসদের) কিতাবের হাওয়ালা তাদের টীকায় দৃষ্টিগোচর হয়, এ সমস্ত ধোঁকাবাজ এ কিতাব পড়া সত্ত্বেও তারা এভাবেই সত্য গোপন করে যাচ্ছে অবিরত। তাদের লক্ষ্য উদ্দেশ্য একটি-ই, কিভাবে রাসূল (ﷺ)-এর শান-মানকে ছোট করা যায়। মহান রব যেন আমাদেরকে এ সমস্ত ধোঁকাবাজদের থেকে আমাদের ঈমান ও আমলকে হিফাযত করেন। আমিন

এবার আমি আলোচনা করবো এ হাদিসটির সমর্থনে হাদিসের কিতাবে সনদসহ বর্ণনা রয়েছে কিনা।

প্রথম হাদিস:

ইমাম হাকেম (رحمة الله)সহ আরও অনেকে সংকলন করেন-

حَدَّثَنَا أَبُو سَعِيدٍ عَمْرُو بْنُ مُحَمَّدِ بْنِ مَنْصُورٍ الْعَدْلُ، ثنا أَبُو الْحَسَنِ مُحَمَّدُ بْنُ إِسْحَاقَ بْنِ إِبْرَاهِيمَ الْحَنْظَلِيُّ، ثنا أَبُو الْحَارِثِ عَبْدُ اللَّهِ بْنُ مُسْلِمٍ الْفِهْرِيُّ، ثنا إِسْمَاعِيلُ بْنُ مَسْلَمَةَ، أَنْبَأَ عَبْدُ الرَّحْمَنِ بْنُ زَيْدِ بْنِ أَسْلَمَ، عَنْ أَبِيهِ، عَنْ جَدِّهِ، عَنْ عُمَرَ بْنِ الْخَطَّابِ ؓ ، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ ﷺ : لَمَّا اقْتَرَفَ آدَمُ الْخَطِيئَةَ قَالَ: يَا رَبِّ أَسْأَلُكَ بِحَقِّ مُحَمَّدٍ لَمَا غَفَرْتَ لِي، فَقَالَ اللَّهُ: يَا آدَمُ، وَكَيْفَ عَرَفْتَ مُحَمَّدًا وَلَمْ أَخْلُقْهُ؟ قَالَ: يَا رَبِّ، لِأَنَّكَ لَمَّا خَلَقْتَنِي بِيَدِكَ وَنَفَخْتَ فِيَّ مِنْ رُوحِكَ رَفَعْتُ رَأْسِي فَرَأَيْتُ عَلَىَ قَوَائِمِ الْعَرْشِ مَكْتُوبًا لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ مُحَمَّدٌ رَسُولُ اللَّهِ فَعَلِمْتُ أَنَّكَ لَمْ تُضِفْ إِلَى اسْمِكَ إِلَّا أَحَبَّ الْخَلْقِ إِلَيْكَ، فَقَالَ اللَّهُ: صَدَقْتَ يَا آدَمُ، إِنَّهُ لَأُحِبُّ الْخَلْقِ إِلَيَّ ادْعُنِي بِحَقِّهِ فَقَدْ غَفَرْتُ لَكَ وَلَوْلَا مُحَمَّدٌ مَا خَلَقْتُكَ -

-‘‘হযরত উমর ইবনে খাত্তাব (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূল (ﷺ) ইরশাদ ফরমান, হযরত আদম (عليه السلام) যখন অপ্রত্যাশিতভাবে (ইজতেহাদি) ভুল করলেন তখন হযরত আদম (عليه السلام) আল্লাহর দরবারে আবেদন করলেন, হে পরওয়ারদিগার! হযরত মুহাম্মদ (ﷺ) এর হকের উসিলায় আমাকে মার্জনা করুন। আল্লাহ্ রব্বুল আলামীন তাকে জিজ্ঞাসা করলেন, তুমি মুহাম্মদ (ﷺ) কে কিভাবে চিনেছ? জবাবে আদম (عليه السلام) আরজ করলেন, হে আল্লাহ! আপনি স্বীয় কুদরতি হাত দ্বারা আমাকে সৃষ্টি করে আমার দেহের অভ্যন্তরে যখন আত্মা প্রবেশ করিয়ে ছিলেন, তখন আমি মাথা তুলে আপনার আরশের পায়ায় লেখা দেখেছিলাম, ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ’ আমি বুঝতে পারলাম, আপনি আপন নামের সাথে এমন একটি নাম মিলিয়ে রেখেছেন যেটি সমগ্র সৃষ্টি জগতে আপনার নিকট সবচেয়ে প্রিয়। আল্লাহ্ পাক ইরশাদ করেন, হে আদম! তুমি সত্য বলেছো। নিশ্চয় ঐ নাম সমগ্র জাহানে আমার কাছে সবচেয়ে প্রিয়। যেহেতু তুমি সেই নাম নিয়েই আমার কাছে প্রার্থনা করেছ, সেহেতু আমি তোমাকে ক্ষমা করে দিলাম। হে আদম! যদি মুহাম্মদ (ﷺ) না হতেন, আমি তোমাকেও সৃজন করতাম না।’’ ৬৬

৬৬. ইমাম হাকেম নিশাপুরীঃ আল মুস্তাদরাকঃ ২/৬৭২ পৃ. হা/৪২২৮, ইমাম তাবরানীঃ মু’জামুল আওসাত : ৬/৩১৩ হাদিসঃ ৬৫০২, তাবরানীঃ মু’জামুস সগীর : ২/১৮২ হাদিসঃ ৯৯২, ইবনে হাজার হায়সামীঃ মাযমাউদ যাওয়াইদ : ৮/২৫৩ : পৃ., ইমাম ইবনে আসাকিরঃ- তারিখে দামেস্ক : ৭/৪৩৭, আল্লামা ইবনে কাসীর, বেদায়া ওয়ান নেহায়া, ১/১৮ পৃ., ইমাম জালালুদ্দীন সুয়ূতি, খাসায়েসুল কোবরা, ১/১২ হাদিসঃ ১২, ইমাম বুরহান উদ্দিন হালবীঃ সিরাতে হালবিয়্যাহ ১/৩৫৫ পৃ., ইমাম কাস্তাল্লানীঃ মাওয়াহেবে লাদুনীয়া, ১/৮২ পৃ., ইমাম জালালুদ্দীন সুয়ূতিঃ তাফসীরে দুররে মানসুর, ১/১৪২ পৃ., ইমাম বায়হাকীঃ দালায়েলুল নবুয়তঃ ৫/৪৮৯ পৃ., ইমাম হাকেম নিশাপুরীঃ আল মাদখালঃ ১/১৫৪ পৃ., ইমাম আবু নুয়াইম ইস্পাহানীঃ হিলইয়াতুল আউলিয়া, আল্লামা শায়খ ইউসুফ নাবহানী : শাওয়াহিদুল হক্ব : পৃ নং: ১৩৭, আল্লামা শায়খ ইউসুফ নাবহানী : আনোয়ার-ই-মুহাম্মদিয়া : পৃ নং: ৯-১০, আল্লামা শাহ আ: আজীজ মুহাদ্দিস দেহলভী : তাফসীর-ই-আযীযী : প্রথম খণ্ডঃ পৃ-১৮৩, আল্লামা শায়খ ইউসুফ নাবহানী : আফযালুস্ সালাত : পৃ-১১৭, আল্লামা ইসমাঈল হাক্কী : তাফসীরে রুহুল বায়ান: ২/৩৭০ পৃ. সূরা মায়েদা: আয়াত নং-১৫, আল্লামা ইবনে হাজার হায়সামী : শরহে শামায়েল : ১/১১৫ পৃ., আল্লামা শায়খ ইউসূফ নাবহানী : জাওয়াহিরুল বিহার : ২/১১৪ পৃ:, ইমাম জুরকানীঃ শরহে মাওয়াহেবে লাদুন্নীয়া, ১/১৭২ পৃ., শায়খ ইউসুফ নাবহানী : হুজ্জাতুল্লাহি আলাল আলামিন : ৭৯৫ পৃ. এবং ৩১ পৃ., মাকতুবাতুত- তাওফিকহিয়্যাহ্, কায়রু, মিশর। আল্লামা শফী উকাড়বীঃ যিকরে হাসীন, ৩৭ পৃষ্ঠা, মাওলানা আশরাফ আলী থানবী : নশরত্তীবঃ পৃষ্ঠা নং- ২৮

সনদ পর্যালোচনা:

✦ ইমাম হাকেম নিশাপুরী (رحمة الله) এ হাদিসটি সংকলন করেন তিনি লিখেন-

هَذَا حَدِيثٌ صَحِيحُ الْإِسْنَادِ وَهُوَ أَوَّلُ حَدِيثٍ ذَكَرْتُهُ لِعَبْدِ الرَّحْمَنِ بْنِ زَيْدِ بْنِ أَسْلَمَ فِي هَذَا الْكِتَابِ

-‘‘এ হাদিসটির সনদ সহীহ।’’ (ইমাম হাকেম নিশাপুরী, আল মুস্তাদরাক, ২/৬৭২ পৃ. হা/৪২২৮)

❏ ইমাম হাকিম (رحمة الله) এর এ অভিমতকে বহু ইমামগণও গ্রহণ করেছেন, কেউ কোনো প্রতিবাদ করেননি। এর মধ্যে রয়েছেন ইমাম জালালুদ্দীন সুয়ূতি (رحمة الله), শায়খ ইউসুফ নাবহানী (رحمة الله), শাহ্ আবদুল আযিয মুহাদ্দিসে দেহলভী (رحمة الله), কাস্তালানী (رحمة الله), জুরকানী (رحمة الله), ইসমাঈল হাক্কী (رحمة الله), ইবনে হাজার হাইসামী (رحمة الله), ইবনে কাসীর (رحمة الله), বুরহানউদ্দীন হালাবী (رحمة الله), মোল্লা আলী ক্বারী (رحمة الله), এমনকি দেওবন্দের অন্যতম আলেম আশরাফ আলী থানবীরও। ইমাম কাস্তালানী (رحمة الله) এ বিষয়ে লিখেন-

رواه الحاكم فى صحيحه أن آدم- عليه السّلام- رأى اسم محمد- صلى الله عليه وسلم- مكتوبا على العرش، وأن الله تعالى قال لآدم لولا محمد ما خلقتك

-‘‘ইমাম হাকেম নিশাপুরী (رحمة الله) সহীহ সূত্রে সংকলন করেন যে, নিশ্চয় হযরত আদম (عليه السلام) আরশের পায়ায় মুহাম্মদ (ﷺ)-এর নাম দেখতে পেয়েছিলেন এবং তখন মহান আল্লাহ হযরত আদম (عليه السلام) কে লক্ষ্য করে বলেছিলেন, হে আদম! যদি মুহাম্মদ (ﷺ) না হতেন, তাহলে আমি তোমাকেও সৃজন করতাম না।’’ (ইমাম কাস্তালানী, মাওয়াহিবুল্লাদুনিয়্যাহ, ১/৪৭ পৃ.)

❏ ইমাম কাস্তালানী (رحمة الله) এ গ্রন্থের আরেক স্থানে স্পষ্ট লিখেছেন-

وصح أن رسول الله- صلى الله عليه وسلم- قال لما اقترف آدم الخطيئة قال: يا رب

-‘‘রাসূল (ﷺ) থেকে সহীহ সনদে এসেছে যে, তিনি বলেছেন, হযরত আদম (عليه السلام) যখন অপত্যাশিত ভাবে ভুল করলেন তখন তিনি বললেন হে আমার রব.......।’’(ইমাম কাস্তালানী, মাওয়াহিবুল্লাদুনিয়্যাহ, ৩/৬০৫ পৃ.)

সম্মানিত পাঠকবৃন্দ! ড. আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীরের মত আলেমগণ ইমাম কাস্তালানীর ৫০০ শত বছর পরে এসে উনাদের তাহকীকে ভুল ধরতে এসেছেন, উনারা শতশত বছর পূর্বে হাদিসের সনদ বুঝেননি। ড. আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীর তার গ্রন্থের ৩০৭ পৃষ্ঠায় লিখেছেন-‘‘ইমাম বাইহাকী হাদীসটি অত্যন্ত দুর্বল বলে মন্তব্য করেছেন।’’ এবার আমরা তার কথার বাস্তবতা দেখবো।

❏ ইমাম বায়হাকী (رحمة الله) এটি সংকলন করেন লিখেন-

تَفَرَّدَ بِهِ عَبْدُ الرَّحْمَنِ بْنُ زَيْدِ بْنِ أَسْلَمَ مِنَ هَذَا الْوَجْهِ عَنْهُ، وَهُوَ ضَعِيفٌ، وَاللهُ أَعْلَمُ

-‘‘এ হাদিসটি একক ‘আব্দুর রহমান ইবনে যায়েদ বিন আসলাম’ বর্ণনা করেছেন। সে দুর্বল হাদিস বর্ণনাকারী, মহান রবই এ বিষয়ে অধিক জ্ঞাত।’’ (দালায়েলুন নবুয়ত, ৫/৩৭৪ পৃ:)

দেখুন কতবড় মিথ্যাচার। সম্মানিত পাঠকবৃন্দ! ড. আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীরের শ্রদ্ধাভাজন ব্যক্তিত্ব-

✦ হাফিজুল হাদিস আল্লামা ইবনে কাসির (رحمة الله) স্বয়ং ইমাম বায়হাকী (رحمة الله)-এর অভিমত এভাবে উল্লেখ করেছেন-

قَالَ الْبَيْهَقِيُّ تَفَرَّدَ بِهِ عَبْدُ الرَّحْمَنِ بْنُ زَيْدِ بْنِ أَسْلَمَ مِنْ هَذَا الْوَجْهِ وَهُوَ ضَعِيفٌ

-“ইমাম বায়হাকী (رحمة الله) বলেন, ‘আব্দুর রহমান ইবনে যায়েদ আসলাম’ হতে এটি একক বর্ণনা, আর তিনি যঈফ।” (হাফিজ ইবনে কাছির: আল বেদায়া ওয়ান নেহায়া, ২য় খণ্ড, ৬২৯ পৃ:)।

শুধু তাই নয় উক্ত রাবীকে সে জাহেল প্রমাণ করতে গিয়ে ড. আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীর তার গ্রন্থের ৩০৬ পৃষ্ঠায় লিখেছেন-‘‘আব্দুর রহমান ইবনু যাইদ ইবনু আসলাম (ওফাত. ১৮২ হি.) খুবই দুর্বল ও অনির্ভরযোগ্য বর্ণনাকারী ছিলেন। মুহাদ্দিসগণ তাঁর বর্ণিত হাদিস গ্রহণ করেন নি। কারণ তিনি কোনো হাদীস ঠিকমত বলতে পারতেন না, সব উল্টোপাল্টা বর্ণনা করতেন।’’

সম্মানিত পাঠকবৃন্দ! তার এ সামান্য বক্তব্যের মধ্যে কয়েকটি মিথ্যাচার রয়েছে। এক. রাবী আব্দুর রহমানকে কেউ অত্যন্ত দুর্বল কেউ বলেনি। যেমনটি ইতোপূর্বে বায়হাকী এবং ইবনে কাসিরের অভিমত দেখলাম। উদাহরণ স্বরূপ দেখুনঃ

✦ ইমাম যাহাবী (رحمة الله) তার জীবনীতে লিখেন-

 وَفِيْهِم لِيْنٌ -

‘ সে কিছুটা নরম অর্থাৎ সামান্য দুর্বল প্রকৃতির।’’ (ইমাম যাহাবী, সিয়ারু আলামিন নুবালা, ৮/৩৪৯ পৃ. ক্রমিক.৯৪) বুঝা গেল সামান্য দুর্বল রাবীকে জাহাঙ্গীর সাহেব ইচ্ছা করেই দুর্বলতা বাড়িয়ে দিলেন তার নিজের গুপ্ত ভাণ্ডার থেকে!

✦ দ্বিতীয়ত. তিনি বক্তব্যে বলেছেন যে, কোন মুহাদ্দিস তার হাদিস গ্রহণ করে নি, সে কতবড় জাহেল দেখুন, সুনানে ইবনে মাযাহ এবং সুনানে তিরমিযিতে তার হাদিস বর্ণিত হয়েছে।

(সুনানে ইবনে মাযাহ, হা/২৩৮, হা/৫১৯, হা/১১৮৮, হা/২৪৪৩, হা/২৭৬৬, হা/৩২১৮, হা/৩৩১৪, হা/৪০৬০, সুনানে তিরমিযি, হা/৪৬৫, হা/৪৬৬, হা/৬৩১, হা/৬৩২, হা/৭১৯, হা/৮৫২)

✦ ইমাম তিরমিযি (رحمة الله) তাঁর চেয়েও আরেকজন শক্তিশালী রাবীর সাথে তুলনা দিতে গিয়ে লিখেও ছিলেন-

وَهَذَا أَصَحُّ مِنْ حَدِيثِ عَبْدِ الرَّحْمَنِ بْنِ زَيْدِ بْنِ أَسْلَمَ.

-‘‘এ হাদিসটি ‘আব্দুর রহমান ইবনে যায়েদ বিন আসলাম’ এর বর্ণনা হতে অধিক বিশুদ্ধ।’’ (সুনানে তিরমিযি, ২/১৯ পৃ. হা/৬৩২)

বুঝা গেল, দুজনের হাদিসটই সহীহ, তবে আব্দুর রহমানের হাদিস তুলনামূলভাবে কম সহীহ।

তৃতীয়ত. জাহাঙ্গ্রীর সাহেব উক্ত রাবীর বিষয়ে দাবী করেছেন যে, হাদিস পড়ার তাঁর কোন ইলমী যোগ্যতা ছিল না,

❏ অথচ ইমাম যাহাবী (رحمة الله) তাঁর জীবনীতে লিখেন-

وَكَانَ عَبْدُ الرَّحْمَنِ صَاحِبَ قُرْآنٍ وَتَفْسِيْرٍ، جَمَعَ تَفْسِيْراً فِي مُجَلَّدٍ، وَكِتَاباً فِي النَّاسِخِ وَالمَنْسُوْخِ.

-‘‘হযরত আব্দুর রহমান (رحمة الله) তিনি কুরআনের ক্বারী এবং মুফাস্সির ছিলেন, তিনি কয়েক খণ্ডে কুরআনের তাফসিরও লিপিবদ্ধ করেছিলেন, তিনি ইসলামের গূরুত্বপূর্ণ বিষয় নাসেখ মানসুখ বিষয়ে কিতাব লিপিবদ্ধ করেছিলেন।’’(ইমাম যাহাবী, সিয়ারু আলামিন নুবালা, ৮/৩৪৯ পৃ. ক্রমিক.৯৪)

সম্মানিত পাঠকবৃন্দ! বর্তমানে উক্ত গ্রন্থের লিখক বেঁচে থাকলে আমি অবশ্যই জিজ্ঞাসা করতেন একজন রাবীর নামে মিথ্যাচার করে তার কি লাভ!

❏ ইমাম নুরুদ্দিন হায়সামী (رحمة الله) বলেন,

عَبْدُ الرَّحْمَنِ بْنُ زَيْدِ بْنِ أَسْلَمَ، وَفِيهِ كَلَامٌ، وَقَدْ وَثَّقَهُ ابْنُ عَدِيٍّ.

-“রাবী ‘আব্দুর রহমান ইবনে যায়েদ ইবনে আসলাম’ সম্পর্কে অনেক কথা রয়েছে, তবে ইমাম ইবনে আদী (رحمة الله) তাকে বিশ্বস্ত বলেছেন।” (ইমাম হায়সামী: মাযমাউয যাওয়াইদ, হা/৪৪১০)।

❏ ইমাম মিযযী (رحمة الله) বলেন,

وَقَال أَبُو أَحْمَد بْن عدي: له أحاديث حسان. وهو ممن احتمله الناس، وصدقه بعضهم. وهو ممن يكتب حديثه.

-“ইমাম আবু আহমদ ইবনে আদী (رحمة الله) বলেন, তার অনেক হাদিস ‘হাসান’ রয়েছে। সে এমন ব্যক্তি যার রেওয়াত লোকেরা গ্রহণ করেছেন এবং অনেকে তাকে সত্যবাদী বলেছেন এবং সে ব্যক্তির হাদিস লিখেছেন।” (ইমাম মিযযী: তাহজিবুল কামাল, রাবী নং ৩৮২০)

✦ ইমাম যাহাবী (رحمة الله) বলেন: وهو صاحب حَدِيثِ -“সে ছাহেবুল হাদিস অর্থাৎ মুহাদ্দিস ছিলেন।” (ইমাম যাহাবী: তারিখে ইসলামী, ৪/৯০৪ পৃ. রাবী নং ২০১)

তবে আফসোসের বিষয় হল, কাঠ মিস্ত্রী নাসিরুদ্দিন আলবানী তার ‘সিলসিলাতুল আহাদিসুদ দ্বঈফাহ’ এর (১ম খণ্ডের ৮৮ পৃষ্ঠায়) ২৫ নং হাদিসের আলোচনায় এ হাদিসকে এতজন ইমাম গ্রহণ করার পরও হাদিসটিকে জাল বলেছেন। আল্লাহ তার উপর লানত বর্ষণ করুন, যে একা সমস্ত ইমামদের বিরোদ্ধে গিয়ে নিজেকে বড় ইমাম বানাতে চেয়েছিল। আর প্রিয় নবীজি (ﷺ) এর শান-মানের ব্যাপারে ইহা অবশ্যই গ্রহণযোগ্য হাদিস।

সর্বশেষ এ হাদিসের বিষয়ে আমার বক্তব্য হলো এ হাদিসের আরেকটি সূত্র রয়েছে।

❏ ইমাম আবু সা‘দ খরকুশী নিশাপুরী (ওফাত. ৪০৭ হি.) এ হাদিসটির আরেকটি সূত্র হযরত মূসা (عليه السلام)-এর ঘটনার মাধ্যমে এভাবে উল্লেখ করেছেন-

وعن ابن عباس رضي الله عنهما....... قال موسى عليه السّلام: ومن محمد يا رب؟ قال: الذي كتبت اسمه على ساق العرش قبل أن أخلق السماوات والأرضين بألفي عام، محمد رسولي وحبيبي وخيرتي من خلقي. قال: يا رب فإن كان محمد أكرم عليك من جميع خلقك فهل في قوله: ولولا محمد ما خلقتك

-‘‘হযরত ইবনে আব্বাস (رضي الله عنه) হতে বর্ণনা করেন.......তখন মহান মূসা (عليه السلام) বললেন, হে মহান রব! মুহাম্মদ কে? মহান রব বললেন, তার নাম আমি আরশের পায়ায় লিখেছি আদম (عليه السلام) সৃজন করার হাজার বছর পূর্বে, হযরত মুহাম্মদ (ﷺ) হলেন আমার রাসূল, আমার হাবীব এবং আমার সমগ্র সৃষ্টির মধ্যে সর্বোত্তম। হযরত মূসা (عليه السلام) বললেন, হে আমার রব! মুহাম্মদ (ﷺ) হলেন আপনার সৃষ্টির মধ্যে সর্বাধিক সম্মানিত ব্যক্তি। অতঃপর মহান আল্লাহ মূসা (عليه السلام) কে লক্ষ্য করে বলেন, যদি আমি তাকে না বানাতাম (হে মূসা!) আমি তোমাকে সৃষ্টি করতাম না।’’ (আবূ সা‘দ খরকুশী, শরফুল মোস্তফা, ১/১৬৬ পৃ.)

পর্যালোচনা: 

প্রমাণিত হলো রাসূল (ﷺ) সৃষ্টি কে করা না হলে মূসা (عليه السلام) কেও সৃষ্টি করা হতো না, অপর বর্ণনায় দেখলাম হযরত আদম (عليه السلام) কথা এসেছে। সুতরাং আদম (عليه السلام) না হলে হয়তো আমাদের কোন মানবের জাতির উৎপত্তিও হত না।

❏ আল্লামা মোল্লা আলী ক্বারী (رحمة الله) লিখেন-

(ولو لاه ما خلقتك) ويقرب منه ما روي لو لاك لما خلقت الأفلاك

-‘‘(হে আদম! যদি আমি মুহাম্মদ (ﷺ) কে সৃষ্টি না করতাম তোমাকেও সৃজন করতাম না) এটি এ হাদিসের অর্থের নিকটবর্তী, যেমন বর্ণিত আছে, হে হাবিব! আপনাকে সৃজন না করলে আমি বানাতাম না কোনো কিছু।’’ (মোল্লা আলী ক্বারী, শরহে শিফা, ১/৩৮২ পৃ.)

দ্বিতীয় হাদিস:

ইমাম হাকেম নিশাপুরী (رحمة الله) সংকলন করেন-

حَدَّثَنَا عَلِيُّ بْنُ حَمْشَاذَ الْعَدْلُ، إِمْلَاءً، ثنا هَارُونُ بْنُ الْعَبَّاسِ الْهَاشِمِيُّ، ثنا جَنْدَلُ بْنُ وَالِقٍ، ثنا عَمْرُو بْنُ أَوْسٍ الْأَنْصَارِيُّ، ثنا سَعِيدُ بْنُ أَبِي عَرُوبَةَ، عَنْ قَتَادَةَ، عَنْ سَعِيدِ بْنِ الْمُسَيِّبِ، عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمَا، قَالَ: أَوْحَى اللَّهُ إِلَى عِيسَى عَلَيْهِ السَّلَامُ يَا عِيسَى آمِنْ بِمُحَمَّدٍ وَأْمُرْ مَنْ أَدْرَكَهُ مِنْ أُمَّتِكَ أَنْ يُؤْمِنُوا بِهِ فَلَوْلَا مُحَمَّدٌ مَا خَلَقْتُ آدَمَ وَلَوْلَا مُحَمَّدٌ مَا خَلَقْتُ الْجَنَّةَ وَلَا النَّارَ وَلَقَدْ خَلَقْتُ الْعَرْشَ عَلَى الْمَاءِ فَاضْطَرَبَ فَكَتَبْتُ عَلَيْهِ لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ مُحَمَّدٌ رَسُولٌ اللَّهِ فَسَكَنَ-

-‘‘হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আল্লাহ্ তা‘য়ালা হযরত ঈসা (عليه السلام) এর নিকট ওহী নাযিল করলেন, হে ঈসা! তুমি মুহাম্মদ (ﷺ) এর উপর ঈমান আন এবং তোমার উম্মতের মধ্যে যারা তাঁর যুগ পাবে তাদেরকে ঈমান আনতে বলো। কারণ যদি হযরত মুহাম্মদ (ﷺ) না হতেন, তাহলে আমি না আদমকে সৃষ্টি করতাম, না বেহেশত, না দোযখ সৃজন করতাম। আমি (আল্লাহ) যখন পানির উপর আরশ তৈরী করেছিলাম, তখন তা এদিক সেদিক কম্পন করতে লাগল। তখন আমি তার উপর কালেমা শরীফ ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ’ লিখে দিলাম অতঃপর আরশ স্থির হয়ে গেল।’’ ৬৭

৬৭. ইমাম হাকেম নিশাপুরীঃ আল মুস্তাদরাক, ২/৬৭১ পৃষ্ঠা, হাদিসঃ ৪২২৭, আল্লামা ইমাম তকিউদ্দিন সুবকী, শিফাউস সিকাম, ৪৫ পৃ., আল্লামা ইবনে হাজার মক্কী, আফজালুল র্কুরা, আল্লামা সিরাজুদ্দীন বলকীঃ ফতোয়ায়ে সিরাজিয়া, ১/১৪০ পৃ., আল্লামা মোল্লা আলী ক্বারীঃ মাওদ্বুআতুল কাবীর, ১০১ পৃ., ইমাম ইবনে সা’দঃ আত্-তবকাতুল কোবরা, ইমাম আবু নুয়াইম ইস্পাহানী, হিলইয়াতুল আউলিয়া, আল্লামা জালালুদ্দীন সুয়ূতিঃ খাসায়েসুল কোবরাঃ ১/১৪ পৃ. হাদিসঃ ২১, আল্লামা ইবনে হাজার হায়সামীঃ শরহে শামায়েলঃ ১/১৪২ পৃ., আল্লামা শায়খ ইউসূফ বিন নাবহানী, জাওয়াহিরুল বিহার, ২/১১৪ পৃ., ইমাম যাহাবীঃ মিযানুল ইতিদাল : ৫/২৯৯ পৃ. রাবী: ৬৩৩৬, আল্লামা ইবনে হাজার আসকালানীঃ লিসানুল মিযানঃ ৪/৩৫৪ পৃ., ইমাম ইবনে হাইয়্যানঃ তবকাতে মুহাদ্দিসিনে ইস্পাহানীঃ ৩/২৮৭ পৃ., আবু সা‘দ ইবরাহিম নিশাপুরী, শরহে মুস্তফা: ১/১৬৫ পৃ., জুরকানী, শরহুল মাওয়াহেব : ১২/২২০ পৃ., ইবনে কাসীর, কাসাসুল আম্বিয়া, ১/২৯ পৃ. দারুল তা‘লিফ, কায়রু, মিশর, ইবনে কাসীর, সিরাতে নববিয়্যাহ: ১/৩২০ পৃ. দারুল মা‘রিফ, বয়রুত, লেবানন, ইবনে কাসীর, মু‘জিজাতুন্নাবী: ১/৪৪১ পৃ. মাকতুবাতুল তাওফিকহিয়্যাহ, কায়রু, মিশর, ইবনে সালেহ শামী, সবলুল হুদা ওয়ার রাশাদ: ১২/৪০৩ পৃ. দারুল কুতুব ইলমিয়্যাহ, বয়রুত, লেবানন।

হাদিসটির সনদ পর্যালোচনা:

✦ ইমাম হাকেম (رحمة الله) এ হাদিসটিকে সংকলন করে লিখেন-

هَذَا حَدِيثٌ صَحِيحُ الْإِسْنَادِ وَلَمْ يُخَرِّجَاهُ

-‘‘এ হাদিসটির সনদ সহীহ, যদিওবা ইমাম বুখারী (رحمة الله) ও মুসলিম (رحمة الله) সংকলন করেননি।’’ (ইমাম হাকেম নিশাপুরী, আল-মুস্তাদরাক, ২/৬৭১ পৃষ্ঠা, হা/৪২২৭)

✦ ইমাম হাকিম (رحمة الله) এর এ সমাধানকে ইমাম সুয়ূতি (رحمة الله), ইমাম সুবকী (رحمة الله), ইবনে হাজার মক্কী (رحمة الله), মোল্লা আলী ক্বারী (رحمة الله)সহ এক জামাআত মুহাদ্দিসগণ মেনে নিয়েছেন যে হাদিসটির সনদ সহীহ বলেছেন।

ড. আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীর তার ‘হাদীসের নামে জালিয়াতি’ গ্রন্থের ৩০৮ পৃষ্ঠায় উক্ত সনদের অন্যতম রাবী ‘আমর ইবনু আউস আল-আনসারী’ সম্পর্কে লিখেন-‘‘এ লোকটি মূলত একজন অজ্ঞাত পরিচয় ব্যক্তি। তার কোনো পরিচয় পাওয়া যায় না।.........এটি ইবনু আব্বাসের নামে বানানো জাল হাদীস।’’ অথচ তিনি নির্ভরযোগ্য কোন আসমাউর রিজালের আলোকে উক্ত রাবীকে অজ্ঞাত পরিচায়ক প্রমাণ করতে পারেননি।

✦ অথচ ইমাম জালালুদ্দিন সুয়ূতি (رحمة الله) ও আল্লামা নূরুদ্দিন আলী ইবনে আহমদ ছামহুদী (رحمة الله) তদীয় কিতাবে হাদিসটি সহীহ্ হওয়ার কথা এভাবে লিখেছেন-

وَأخرج الْحَاكِم وَصَححهُ -“ইমাম হাকেম (رحمة الله) হাদিসখানা সংকলন করেছেন, সহীহ্ বলে মত প্রকাশ করেছেন।” (ইমাম সুয়ূতি: খাসায়েসুল কোবরা, ১/২৯ পৃ:; আল্লামা সামহুদী: ওফাউল ওফা, ৪/২২৪ পৃ:)

✦ বিখ্যাত আসমাউর রিজালবিদ আল্লামা মুগলতাঈ (رحمة الله) রাবী ‘আমর বিন আউস’ এর বিস্তারিত জীবনী আলোচনা করেছেন তিনি তাকে মাজহুল বলেননি। (মুগলতাঈ, ইকমালু তাহযিবুল কামাল, ১০/১৩৩ পৃ. ক্রমিক.৪০৬৩)

পর্যালোচনা:

এই হাদিস দ্বারা প্রমাণিত হয়, জান্নাত-জাহান্নাম সৃষ্টির পূর্বেই আল্লাহ পাক হযরত মুহাম্মদ (ﷺ) কে সৃষ্টি করেছেন। এ হাদিস থেকে সুস্পষ্ট প্রমাণিত হল যে রাসূল (ﷺ) কে সৃষ্টি করা না হলে না আদম (عليه السلام) কে সৃষ্টি করা হতো, না জান্নাত, না জাহান্নাম সৃষ্টি করা হতো।

তৃতীয় ও চতুর্থ হাদিস:

❏ ইমাম দায়লামী (رحمة الله)সহ একজামাত ইমামগণ সংকলন করেন, হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূল (ﷺ) ইরশাদ করেন,

عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ ؓ مَرْفُوعًا أَتَانِي جِبْرِيلُ فَقَالَ يَا مُحَمَّدُ لَوْلَاكَ مَا خَلَقْتُ الْجَنَّةَ وَلَوْلَاكَ مَا خَلَقْتُ النَّار

-“একদা আমার নিকট হযরত জিব্রাঈল (عليه السلام) এসে বললেন, মহান আল্লাহ্ ইরশাদ করেছেন, হে মুহাম্মদ ! আপনাকে সৃষ্টি না করলে আমি সৃজন করতাম না বেহেশত, আর না দোযখ।’’ ৬৮

৬৮.

ক. ইমাম ইবনে সালেহ শামী, সবলুল হুদা ওয়ার রাশাদ, ১/৭৫ পৃ.

খ. আল্লামা মোল্লা আলী ক্বারী : আসরারুল মারফুআ: ১/২৯৫ পৃ. হা/৩৮৫

গ. আল্লামা শায়খ ইউসূফ নাবহানী, জাওয়াহিরুল বিহার, ৪/১৬০ পৃ.

ঘ. ইমাম জুরকানী, শারহুল মাওয়াহেব, ১/৮৬ পৃ.

ঙ. মুত্তাকী হিন্দী, কানযুল উম্মাল, ১১/৪৩১ পৃ. হা/৩২০২৫

সনদ পর্যালোচনা:

এ হাদিসটির সনদ ‘হাসান’ পর্যায়ের।

❏ এ হাদিসটির সনদ স্বয়ং আহলে হাদিস আলবানী দায়লামী শরীফ থেকে এভাবে সংকলন করেন-

عبيد الله بن موسى القرشي حدثنا الفضيل بن جعفر بن سليمان عن عبد الصمد بن علي بن عبد الله ابن عباس عن أبيه عن ابن عباس به.

-‘‘উবাইদুল্লাহ বিন মূসা কুরশী তাকে হাদিস বর্ণনা করেছেন ফযাইল বিন জাফর বিন সুলাইমান তিনি হাদিস বর্ণনা করেছেন আব্দুস সামাদ বিন আলী বিন আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস হতে তিনি তার পিতা আলী ইবনে আব্দুল্লাহ হতে তিনি হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (رضي الله عنه) হতে বর্ণনা করেন।.....।’’ (আলবানী, সিলসিলাতুল আহাদিসিদ দ্বঈফাহ ওয়াল মাওদ্বুআহ, ১/৪৫১ পৃ. হা/২৮২)

আলবানী এই সনদটিকে জোর করে উসূলে হাদিসের নিয়মকে উপেক্ষা করে যঈফ প্রমাণের অনেক অপচেষ্টা চালিয়েছিলেন। এতে সর্বশেষে দাবী করেছেন যে,

✦ সনদের অন্যতম রাবী আব্দুস সামাদের হাদিসের বিষয়ে ইমাম উকাইলী (رحمة الله) বলেছেন-غير محفوظ ولا يعرف الا به. “তার হাদিস সংরক্ষিত নয়, তার এ সূত্র ছাড়া আর অন্য কোনো ভাবে তাকে চেনা যায় না।” ৬৯

৬৯. আলবানী, সিলসিলাতু আহাদিসুদ্-দ্বঈফাহ, ১/৪৫১ পৃ. হা/২৮২

যদি আলবানী বর্তমানে জীবিত থাকতো তাহলে আমি তাকে জিজ্ঞাসা করতাম যে, ইমাম উকায়লীর এই উক্তি কোথায় হতে নকল করেছেন!

ইমাম ইবনে হাজার আসকালানী (رحمة الله) উকাইলীর শুধু غير محفوظ অভিমত উল্লেখ করেছেন; কিন্তু আলবানী দেখুন আরেকটু তার নামে সংযোজন করে দিলেন। আমি বর্তমান আহলে হাদিসদেরকে বলবো যে, আপনারা ইমাম উকাইলীর একক উক্তি ছাড়া আর কোন মুহাদ্দিসের অভিমত পেশ করুন যে, কেউ তাকে দুর্বল বলেছেন।

✦ ইমাম সাখাভী (رحمة الله) তার একটি সনদকে এক স্থানে শুধু গরীব বলেছেন, কোন দুর্বলতা আছে বলে উল্লেখ করেননি। ৭০

৭০. ইমাম সাখাভী, মাকাসিদুল হাসানা, ১৪৪ পৃ. হা/১৫৪

✦ ইমাম আবু হাতেম (رحمة الله) তার জীবনী উল্লেখ করে কোন সমালোচনা করেননি। ৭১

৭১. ইমাম আবু হাতেম, জারহু ওয়া তা’আদীল, ৬/৫০ পৃ. ক্রমিক: ২৬৬

✦ আল্লামা ছালাহ উদ্দিন খালীল ছাফকী (ওফাত ৭৬৪ হি.) তার জীবনীতে উল্লেখ করেন- وكان كبير القدر معظمًا-‘‘তিনি ছিলেন বড় সম্মানিত, মর্যাদাবান ব্যক্তিদের একজন।’’ ৭২

৭২. ছাফকী, (ناكث الهميان) নাকসুল হামীয়ান, ১/১৭৬ পৃ.

✦ ইমাম ইবনে হাজার আসকালানী (رحمة الله) তার জীবনীতে লিখেন-

وما عبد الصمد بحجة ولعل الحفاظ

-‘‘আব্দুস সামাদ তিনি হুজ্জাত (চার লক্ষেরও বেশী হাদিসের হাফেয) পর্যায়ের রাবী নন, সম্ভবত তিনি হাফেজ (১ লক্ষ হাদিসের মুখস্তকারী) ছিলেন।’’ ৭৩

৭৩. ইমাম ইবনে হাজার আসকালানী, লিসানুল মিযান, ৫/১৮৭পৃ. ক্রমিক. ৪৭৮৭

সুবহানাল্লাহ! এটা রাবীর গ্রহণযোগ্যতার বিষয়ে এটাই অনেক কিছু।

এ বিষয়ের দ্বিতীয় বর্ণনা : 

❏ ইমাম দায়লামী (رحمة الله) আরেকটি সনদ সাহাবী আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (رضي الله عنه) হতে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, আল্লাহর রাসূল (ﷺ) ইরশাদ করেন-

يَقُول الله عز وَجل وَعِزَّتِي وَجَلَالِي لولاك مَا خلقت الْجنَّة ولولاك مَا خلقت الدُّنْيَا

-“আমার মহান আল্লাহ্ তা‘য়ালা বলেন, আমার ইজ্জত ও জালালিয়াতের শপথ! যদি আপনি না হতেন তাহলে আমি না জান্নাত সৃজন করতাম না দুনিয়া।” ৭৪

৭৪. ইমাম দায়লামী, আল-ফিরদাউস, ৫/২২৭ পৃ. হা/৮০৩১, মুসনাদিল ফিরদাউস, ২/২২ পৃ. হা/৮০৩১

এই হাদিসটির সনদ নিয়ে আলবানী থেকে শুরু করে কেহই কলম ধরার সাহস করেনি।

পঞ্চম ও ৬ষ্ঠ হাদিস:

প্রথম সূত্র: ইমাম ইবনে আসাকীর (رحمة الله) দীর্ঘ হাদিস সনদসসহ হযরত সালমান ফারসী (رضي الله عنه) হতে সংকলন করেন, হাদিসের শেষের অংশ হল-

وَلَقَدْ خَلَقْتُ الدُّنْيَا وَأَهْلَهَا لأُعَرِّفَهُمْ كَرَامَتَكَ عَلَيَّ وَمَنْزِلَتَكَ عِنْدِي وَلَوْلاكَ يَا مُحَمَّدُ مَا خَلَقْتُ الدُّنْيَا

-“আমি পৃথিবী এবং পৃথিবীবাসীকে সৃষ্টি করেছি আমার নিকট আপনার মর্যাদা ও সম্মান কতটুকু তা দেখানোর জন্য। হে আমার হাবিব! যদি আপনি না হতেন তাহলে আমি এ দুনিয়া বানাইতাম না।” ৭৫

৭৫. ইমাম ইবনে আসাকীর, তারিখে দামেস্ক, ৩/৫১৮ পৃ. ক্রমিক: ৮০১, ইমাম ইবনে জাওযী, কিতাবুল মাওদ্বুআত, ১/২৮৯ পৃ. ইমাম সুুয়ূতি, লা-আলিল মাসনূূ, ১/২৪৯ পৃ. কিতাবুল মানাকেব, আল্লামা শায়খ ইউসূফ নাবহানী : আনোয়ার-ই-মুহাম্মাদিয়া : পৃষ্ঠা নং : ১১, ইমাম ইবনে আসাকীরঃ তারীখে দামেস্ক ৩/৫১৭ পৃষ্ঠা, আল্লামা মোল্লা আলী ক্বারী হানাফী, আসরারুল মারফুআ, ১০১ পৃষ্ঠা, আল্লামা ইমাম জুরকানী, শরহে মাওয়াহেব, ১/১২১ পৃ. এবং ৭/১৮৬ পৃ., ইমাম কাস্তাল্লানী, মাওয়াহেবেল্লাদুনিয়্যাহ, ১/৫৫ পৃ., শায়খ ইউসূফ নাবহানী : জাওয়াহিরুল বিহার : ১/২৮৯ পৃষ্ঠা, ইমাম আবূ সা‘দ খরকুশী নিশাপুরী, ৪/৩৩১ পৃ., ইমাম ইবনে সালেহ শামী, সবলুল হুদাদ ওয়ার রাশাদ, ১/৭৫ পৃ., ইমাম সুয়ূতি, খাসায়েসুল কোবরা, ২/৩৩০ পৃ., ইমাম কাজী আয়াজঃ শিফা শরীফঃ ২/১০৫ পৃ.

সনদ পর্যালোচনা: আহলে হাদিস আলবানী ইমাম ইবনুল জাওযীর কট্টর ভুল সিদ্ধান্তের অনুসরণ করে হাদিসটিকে জাল বলেছেন। ৭৬

৭৬. আলবানী, সিলসিলাতু আহাদিসুদ্-দ্বঈফাহ, ১/৪৫১ পৃ. হা/২৮২

যারা ইলমে হাদিস নিয়ে গবেষণা করেন তারা অনেকেই জানেন যে, ইমাম ইবনুল জাওযী (رحمة الله) হাদিস সমালোচনায় কট্টর। উনার অভিমত যাচাই বাছাই ছাড়া গ্রহণ করা বৈধ নয়। তাই এবার দেখবো তিনি কোন দৃষ্টিকোনে এই সনদকে জাল বানোয়াট বলেছেন।

✦ ইমাম ইবনুল জাওযী (رحمة الله) এই হাদিস প্রসঙ্গে লিখেন-

هَذَا حَدِيثٌ مَوْضُوعٌ لَا شَكَّ فِيهِ، وفى إِسْنَاده مَجْهُولُونَ وضعفاء والضعفاء أَبُو السكين وَإِبْرَاهِيم من اليسع. قَالَ الدَّارَقُطْنِيُّ: أَبُو السكين ضَعِيف وَإِبْرَاهِيم وَيحيى الْبَصْرِيّ مَتْرُوكَانِ.

-“এই হাদিসটি জাল, তাতে কোন সন্দেহ নেই। এই সনদে অপ্রসিদ্ধ ও যঈফ রাবী আবুল সাকীন এবং ইবরাহিম ইবনে আল ইয়াছাঈ দুর্র্বল রাবী। ইমাম দারাকুতনী বলেন, আবুল সাকীন যঈফ রাবী। ইবরাহিম এবং ইয়াহইয়া বসরী দুজন পরিত্যাক্ত রাবী।” ৭৭

৭৭. ইমাম ইবনুল জাওযী, কিতাবুল মাওদ্বুআত, ২/২৮৯ পৃ. কিতাবুল ফাযায়েল ওয়াল মানাকিব।

সম্মানিত পাঠকবৃন্দ! তিনি যে আপত্তি এ হাদিসের সনদের বিষয়ে করেছেন তাতে এই সনদ যঈফ প্রমাণ হয় জাল নয়। এবার তিনি এই সনদের যে ৩ জন রাবীকে দোষী করেছেন আসলে আসমাউর রিজালবিদগণ তাদের বিষয়ে বা তাদের হাদিস গ্রহণযোগ্যতার বিষয়ে কী বলেছেন আমরা এখন তা গবেষণা করে দেখবো।

প্রথম আপত্তিকর রাবী: 

এই সনদের প্রথম আপত্তিকর রাবী দাবী করা হয়েছে محمد بن عيس بن حيان (মুহাম্মদ বিন ঈসা বিন হাইয়্যান) নামক রাবী যার উপনাম হল আবুল সাকীন।

✦ ইমাম যাহাবী (رحمة الله) তার জীবনীতে শুরুতেই লিখেন- المحدث المقرئ الامام -“তিনি একজন বিখ্যাত মুহাদ্দিস ছিলেন, ক্বারী ছিলেন, হাদিসের ইমাম ছিলেন।”৭৮

৭৮. ইমাম যাহাবী, সিয়ারু আলামিন নুবালা, ১৩/২১ পৃ. ক্রমিক: ১২ এবং তারিখুুল ইসলাম, ৬/৬১৭ পৃ. ক্রমিক: ৪০৫, ইবনে হাজার আসকালানী, লিসানুল মিযান, ৭/৪২৮ পৃ., ক্রমিক: ৭২৮৬

✦ তিনি আরও উল্লেখ করেন- قال البرقانى لا بأس به -‘‘ইমাম বারকানী (رحمة الله) বলেন, তার হাদিস গ্রহণ করতে কোন অসুবিধা নেই।’’ ৭৯

৭৯. ইবনে হাজার আসকালানী, লিসানুল মিযান, ৭/৪২৮ পৃ., ক্রমিক: ৭২৮৬

✦ ইমাম ইবনে হাজার আসকালানী (رحمة الله) তার জীবনীতে উল্লেখ করেন-

وكذا ذكره ابن حبان فى الثقات-

-“ইমাম ইবনে হিব্বান (رحمة الله) তাকে সিকাহ রাবীর তালিকায় স্থান দিয়েছেন।’’ ৮০

৮০. ইবনে হাজার, লিসানুল মিযান, ৭/৪২৮ পৃ. ইবনে হিব্বান, কিতাবুস-সিকাত, ৯/১৪৩ পৃ. ক্রমিক: ১৫৬৫১

✦ তিনি আরও উল্লেখ করেন, ইমাম লালকায়ী (رحمة الله) বলেন- صالح তিনি হাদিস বর্ণনায় সৎ ব্যক্তি ছিলেন। ৮১

৮১. ইবনে হাজার, লিসানুল মিযান, ৭/৪২৮ পৃ. ইবনে হিব্বান, কিতাবুস-সিকাত, ৯/১৪৩ পৃ. ক্রমিক: ১৫৬৫১

তবে তিনি কেরাতের প্রতি বেশী মনযোগের কারণে অনেকে তাকে দুর্বলতার ইঙ্গিত করেছেন যা মোটেও গ্রহণযোগ্য নয়। তাই একক ইমাম দারাকুতনীর অভিমত দিয়ে তাকে যঈফ বলা মানে অধিকাংশ মুহাদ্দিসের অভিমতকে হেয় করা।

দ্বিতীয় আপত্তিকর রাবী: 

এই সনদের দ্বিতীয় আপত্তিকর রাবী হিসেবে ইমাম ইবনুল জাওযী ابراهيم بن اليسع (ইবরাহিম বিন আল-ইয়াছঈ) যার উপনাম হল ইবনে আবি হায়াত। তার হাদিস ‘হাসান’ পর্যায়ের।

✦ ইমাম ইবনে হাজার আসকালানী (رحمة الله) তার জীবনীতে লিখেন-

ونقل عثمان بن سعيد الدارمى عن يحيى بن معين أنه قال شيخ ثقة كبير

-“উসমান বিন সাঈদ দারেমী (رحمة الله) তিনি ইমাম বুখারীর উস্তাদ ইমাম ইয়াহইয়া ইবনে মাঈন (رحمة الله) হতে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, উক্ত রাবী হাদিসের শায়খ, উঁচু মানের বিশ্বস্ত মুহাদ্দিস ছিলেন।” ৮২

৮২ ইবনে হাজার, লিসানুল মিযান, ১/২৭১ পৃ. ক্রমিক: ১১৬

✦ ইমাম মুগলতাঈ (رحمة الله) বলেন,

وفى قول المزى: ذكره ابن حبان فى كتاب الثقات

ইমাম মিয্যী (رحمة الله) তার আসমাউর রিজাল গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন যে, ইমাম ইবনে হিব্বান তাকে বিশ্বস্ত রাবীদের গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন। ৮৩

৮৩. মুগলতাঈ, ইকমালু তাহযিবুল কামাল, ১২/৩০২ পৃ. ক্রমিক: ৫১১৮, ইবনে হিব্বান, কিতাবুস্-সিকাত, ৭/৫৯৭ পৃ. ইমাম মিয্যী, তাহজিবুল কামাল, ৩১/২৮৯ পৃৃ.

✦ তবে যা তার জীবনী থেকে বুঝা যায় তা হল তিনি তাদলিস করতেন বলেই তাকে অনেকে কেউ কেউ দুর্বলতার ইঙ্গিত করেছেন। ৮৪

৮৪. মুগলতাঈ, ইকমালু তাহযিবুল কামাল, ১২/৩০২ পৃ. ক্রমিক: ৫১১৮, ইবনে হিব্বান, কিতাবুস্-সিকাত, ৭/৫৯৭ পৃ. ইমাম মিয্যী, তাহজিবুল কামাল, ৩১/২৮৯ পৃৃ.

✦ তবে ইমাম ইবনে হিব্বান বলেন-

 كان يدلس على الثقات -

‘‘তিনি সিকাহ রাবীর নামে তাদলিস করতেন।’’ ৮৫

৮৫. মুগলতাঈ, ইকমালু তাহযিবুল কামাল, ১২/৩০২ পৃ. ক্রমিক: ৫১১৮

তাই অন্যান্যের তাদলিসের ন্যায় তার তাদলীস অবস্থা নয়। যেমনঃ

✦ মুহাম্মদ ইবনে ইয়াহইয়া যুহালী তিনি ইয়াযিদ ইবনে হারুন থেকে বলতে শুনেছেন, তিনি বলেছেন

-كان صدوقا ولكن يدلس

-‘‘তিনি সত্যবাদী ছিলেন, তবে তিনি তাদলীস করতেন।’’৮৬

৮৬. ইমাম মিয্যী, তাহজিবুল কামাল, ৩১/২৮৬ পৃ. ক্রমিক: ৬৮১৭

✦ ইমাম মিয্যী (রহ.) আরও উল্লেখ করেন-

قال أبو نعيم: كان ثقة وكان يدلس

-‘‘ইমাম আবু নুয়াইম বলেন, তিনি সিকাহ রাবী, তবে তিনি তাদলীস করতেন। ৮৭

৮৭. ইমাম মিয্যী, তাহজিবুল কামাল, ৩১/২৮৬ পৃ. ক্রমিক: ৬৮১৭

✦ তিনি আরও উল্লেখ করেছেন ইমাম ইবনে মাঈন (رحمة الله) বলেন- صدوق তিনি সত্যবাদী ছিলেন। তিনি অন্য বর্ণনায় এনেছেন ليس به بأس -তার হাদিস গ্রহন করতে কোন অসুবিধা নেই।’’ ৮৮

৮৮. ইমাম মিয্যী, তাহজিবুল কামাল, ৩১/২৮৬ পৃ. ক্রমিক: ৬৮১৭

✦ ইমাম ইজলী (رحمة الله) তাকে সিকাহ রাবীর তালিকায় স্থান দিয়েছেন এবং বলেছেন, كان يدلس لا بأس به -‘‘তিনি তাদলীস করতেন। তার হাদিস গ্রহণে কোনো অসুবিধা নেই।’’ ৮৯

৮৯. ইমাম ইজলী, তারিখুস্-সিকাত, ২/৩৫০ পৃ. ক্রমিক: ১৯৭৩

তাই বুঝতে পারলাম এই রাবীকে যঈফ বলা মানে অসংখ্য ইমামদের অভিমতকে হেয় করা।

তৃতীয় আপত্তিকর রাবী: 

ইমাম ইবনুল জাওযী (رحمة الله) এই সনদের তৃতীয় আপত্তিকর রাবী হিসেবে ইয়াহইয়া বসরী রাবীকে দায়ী করেছেন। যার মূূল নাম হল (يحيى بن ميمون بن عطاء) ইয়াহইয়া ইবনে মায়মুন বিন আতা।

✦ বিখ্যাত হাদিসের ইমাম ইবনে হিব্বান তাকে সিকাহ রাবীর তালিকায় স্থান দিয়েছেন। ৯০

৯০. ইমাম ইবনে হিব্বান, কিতাবুস্-সিকাত, ৭/৬০৩ পৃ., আল্লামা মুগলতাঈ, ইকমালু তাহযিবুল কামাল, ১২/৩৭২ পৃ. ক্রমিক: ৫২০৮

তবে তাকে ইমাম আহমদ থেকে শুরু করে আরও অনেকে যঈফ রাবী বলেছেন। তাই সর্বোপরি আমরা বলতে পারি যে, উক্ত হাদিসটি ‘হাসান’ পর্যায়ের, কখনই জাল হতে পারে না। অপরদিকে উপরের আরেক সনদ দ্বারা এই হাদিস শাহেদ প্রমাণিত হওয়ায় এই হাদিস গ্রহণযোগ্য তাতে কোন সন্দেহ নেই। তাই আমাদের দেশের কাট মোল্লা যারা এই হাদিসকে জাল বলেন, বুঝতে হবে যে, তারা আসমাউর রিজাল কখনই পড়েইনি।

পর্যালোচনা:

এ হাদিস থেকে বুঝা গেল যে, আমরা যে দুনিয়ায় বসবাস করছি সে দুনিয়াও সৃষ্টি হয়েছে আল্লাহর পিয়ারা হাবীবের উসিলায়।

দ্বিতীয় সূত্র:

❏ ইমাম দায়লামী (رحمة الله) এ শব্দে হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (رضي الله عنه) হতে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, রাসূল (ﷺ) ইরশাদ করেন-

يَقُول الله عز وَجل وَعِزَّتِي وَجَلَالِي لولاك مَا خلقت الْجنَّة ولولاك مَا خلقت الدُّنْيَا

-‘‘মহান আল্লাহ বলেন, আমার ইজ্জত ও জালালিয়াতের শপথ! হে আমার পিয় হাবীব! যদি আমি আপনাকে সৃষ্টি করতাম না বানাতাম জান্নাত, না বানাতাম দুনিয়া।’’ (ইমাম দায়লামী, আল-ফিরদাউস, ৫/২২৭ পৃ. হা/৮০৩১, দারুল কুতুব ইলমিয়্যাহ, বয়রুত, লেবানন।)

পর্যালোচনা:

এ হাদিস থেকে বুঝা গেল যে, আমরা যে দুনিয়ায় বসবাস করছি সে দুনিয়া এবং যে জান্নাতের আশায় ইবাদতের মগ্ন থাকি সে জান্নাতও সৃষ্টি হয়েছে আল্লাহর পিয়ারা হাবীবের উসিলায়। রাসূল (ﷺ)-এর প্রতি যাদের প্রেম নেই এ কথা তাদের কানে বিষের চেয়েও ভয়ংকর লাগবে এটাই স্বাভাবিক।

সপ্তম হাদিস

❏ ইমাম কাস্তালানী (رحمة الله)সহ একজামাত ইমামগণ সংকলন করেন-

ويرى أنه لما خلق الله تعالى آدم، ألهمه أن قال: يا رب، لم كنيتني أبا محمد، قال الله تعالى: يا آدم ارفع رأسك، فرفع رأسه فرأى نور محمد في سرادق العرش فقال: يا رب، ما هذا النور؟ قال: هذا نور نبي من ذريتك اسمه في السماء أحمد، وفي الأرض محمد، لولاه ما خلقتك ولا خلقت سماء ولا أرضًا.

-‘‘হযরত আদম (عليه السلام) আল্লাহ্ পাকের দরবারে আবেদন করেছিলেন, হে আল্লাহ! আপনি আমাকে ‘আবূ মুহাম্মদ’ উপনামে কেন ভূষিত করেছেন? আল্লাহর পক্ষ হতে হুকুম আসলো, হে হযরত আদম (عليه السلام)! তোমার মাথা তুলে দেখ। আদম (عليه السلام) মাথা উঠিয়েই দেখতে পেলেন তাঁর চোখের সামনে আরশের পর্দায় নূরে মুহাম্মদী ভেসে ওঠল। হযরত আদম (عليه السلام) আরজ করলেন, হে আমার প্রতিপালক! এই নূর মোবারক কার? জবাবে আল্লাহ্ পাক ইরশাদ করেন, এই নূর হলো ঐ নবীর যিনি তোমার বংশধরে নবী হিসেবে আগমন করবে, আসমানে যার নাম হবে আহমদ, আর যমীনে মুহাম্মদ। যদি তিনি না হতেন, তাহলে আমি না তোমাকে সৃষ্টি করতাম, না আসমানকে, আর না যমীন কে।’’ ৯১

৯১. ইমাম শিহাবুদ্দীন কাস্তাল্লানী, মাওয়াহেবে লাদুন্নীয়া, ১/৩৩ পৃ., আল্লামা জুরকানী, শরহুল মাওয়াহেব, ১/৭৮ পৃ., আল্লামা শফী উকাড়ভী, যিকর ই হাসীন, ৩১ পৃ., আল্লামা শায়খ ইউসূফ বিন ইসমাঈল নাবহানী, জাওয়াহিরুল বিহার, ৩/৩৫২ পৃ.

পর্যালোচনা:

❏ ইমাম কাস্তালানী (رحمة الله) লিখেন-

ويشهد لهذا، ما رواه الحاكم في صحيحه أن آدم عليه الصلاة والسلام رأى اسم محمد مكتوبًا على العرش

-‘‘এ হাদিসটির শাহেদ পাওয়া যায় যা ইমাম হাকেম (رحمة الله) সহীহ সূত্রে সংকলন করেছেন, নিশ্চয়ই হযরত আদম (عليه السلام) আরশের পায়ায় হযরত মুহাম্মদ (ﷺ)-এর নাম মোবারক লিপিবদ্ধ দেখতে পেয়েছিলেন।’’(ইমাম কাস্তালানী, মাওয়াহিবুল্লাদুনিয়্যাহ, ১/৪৭ পৃ.)

❏ ইমাম জুরকানী (رحمة الله) এ হাদিস প্রসঙ্গে লিখেন-

أي: يقويه، ما رواه الحاكم في صحيحه المستدرك عن عمر رفعه

-‘‘এ হাদিসকে আরও শক্তিশালী করেছে ইমাম হাকেম (رحمة الله) এর আল-মুস্তাদরাকের সহীহ সূত্রের হযরত উমর (رضي الله عنه)-এর বর্ণনা (যা আমি ইতোপূর্বে প্রথম হাদিস হিসেবে উল্লেখ করেছি)।’’ (ইমাম জুরকানী, শারহুল মাওয়াহেব, ১/৮৬ পৃ.) বুঝা গেল এ হাদিসটি শাওয়াহেদ থাকায় শক্তিশালী বলে প্রমাণিত।

অষ্টম হাদিস

❏ ইমাম বুরহানুদ্দীন হালাবী (رحمة الله)সহ আরও অনেকে সংকলন করেন-

وذكر صاحب كتاب شفاء الصدور في مختصره عن علي بن أبي طالب ؓ عن النبي ﷺ عن الله عز وجل أنه قال: يا محمد وعزتي وجلالي لولاك ما خلقت أرضي ولا سمائي، ولا رفعت هذه الخضراء، ولا بسطت هذه الغبراء . وفي رواية عنه ولا خلقت سماء ولا أرضا ولا طولا ولا عرضا

-‘শিফাউস সুদূর কিতাবের লিখক তার ‘মুখতাসার’ কিতাবে হযরত আলী ইবনে আবী তালেব (رضي الله عنه) হতে বর্ণনা করেন। তিনি নবি করীম (ﷺ) হতে বর্ণনা করেন, মহান রব তা‘য়ালা ইরশাদ করেন, হে মুহাম্মদ (ﷺ)! আমার ইজ্জত ও জালালিয়াতের শপথ, যদি আমি আপনাকে সৃজন না করতাম, না সৃজন করতাম এ যমিন, না আসমান। আপনাকে সৃষ্টি না করলে আমি উঁচু করতাম না উর্ধ্বের ঐ নীল বর্ণের ছাদ এবং নিম্নের এ ধূসর বর্ণের পৃথিবী। উক্ত সাহাবী থেকে অপর এক বর্ণনায় এসেছে, আপনাকে সৃজন না করলে করতাম না এ আকাশ, না যমীন, না উঁচু এবং নিচু।’’ ৯২

৯২.

ক. ইমাম বুরহানুদ্দীন হালাবী, সিরাতে হালবিয়াঃ ১/৩১৭ পৃ.

গ. আল্লামা ইবনে হাজর হায়সামী : আল-ওসায়েল, ১/১১৫ পৃ.

ঘ. আল্লামা শায়খ ইউসূফ বিন ইসমাঈল নাবহানী : জাওয়াহিরুল বিহার : ২/১১৫ পৃ:

ঙ. ইমাম ইবনে সালেহ শামী, সবলুল হুদা ওয়ার রাশাদ, ১/৭৫ পৃ.

নবম হাদিস:

❏ আল্লামা আব্দুর রহমান ছাফুরী (رحمة الله) সংকলন করেন-

وعن علي ؓ قلت يا رسول الله مم خلقت قال لما أوحى إلى ربي ما أوحى قلت يا رب خلقتني قال وعزتي وجلالي لولاك ما خلقت أرضا ولا سماء

-‘‘হযরত আলী (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত। তিনি নবীকে সম্বোধন করে বললেন, ইয়া রাসূলুল্লাহ (ﷺ)! আপনাকে কি জন্য সৃষ্টি করা হয়েছে? প্রিয় নবী (ﷺ) তাঁর জবাবে ইরশাদ করলেন, আল্লাহ্ পাক আমার কাছে যখন ওহী প্রেরণ করছিলেন তখন আমি আরজ করেছিলাম, ইয়া রাব্বুল আলামীন! আপনি আমাকে কি জন্য সৃষ্টি করেছেন? তখন মহান রব তা‘য়ালা ইরশাদ করেন, আমার ইজ্জত ও জালালীয়াতের শপথ! আপনাকে যদি সৃষ্টি না করতাম, তাহলে আমি না সৃষ্টি করতাম জমিন, না আসমান।’’ ৯৩

৯৩.

ক. আল্লামা আব্দুর রহমান ছাফুরী শাফেয়ী : নুযহাতুল মাযালিস : ২য় খণ্ড ৭৪ পৃ.

খ. আল্লামা ইমাম মারযুক : শরহে কাসীদায়ে বুরদা : পৃ নং : ৭১

দশম হাদিস:

❏ আল্লামা আজলূনী (رحمة الله) একটি হাদিস সংকলন করেন-

(أَتَانِي جِبْرِيلُ فَقَالَ يَا مُحَمَّدُ لَوْلَاكَ مَا خَلَقْتُ الْجَنَّةَ وَلَوْلَاكَ مَا خَلَقْتُ النَّارَ) رواه الديلمي عن ابن عمر.

-‘‘(একদা আমার নিকট হযরত জিব্রাঈল (عليه السلام) এসে বললেন, মহান আল্লাহ্ ইরশাদ করেছেন, হে মুহাম্মদ! আপনাকে যদি আমি সৃষ্টি না করতাম বানাতাম না বেহেশত, আর না দোযখ।) এ হাদিসটি ইমাম দায়লামী (رحمة الله) হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে উমর (رضي الله عنه) হতে বর্ণনা করেছেন।’’ (আল্লামা আজলূনী, কাশফুল খাফা, ১/৫৪ পৃ. হা/৯১)

উপরের আলোচনা থেকে এ কথা সুস্পষ্ট প্রমাণিত হলো যে, শব্দগতভাবে হাদিসটি প্রমাণিত না হলেও মমার্থ বিশুদ্ধতার পক্ষে অনেক সূত্রে হাদিসে পাক বর্ণিত থাকায়, এ বিষয়ক হাদিসকে মুতাওয়াতির বলা যায়। এ ধরনের হাদিসে পাককে অস্বীকার করা কুফুরীর ন্যায়।

বিভিন্ন মুহাদ্দিস, মুফাস্সিরদের মমার্থ বর্ণনা:

এখন আমি উপরের দশটি হাদিসের মমার্থ হাদিস (لَوْلَاكَ لَمَا خَلَقْتُ الْأَفْلَاكَ) ‘আপনাকে সৃজন না করলে কিছুই সৃষ্টি করতাম না’ মমার্থ বর্ণনার স্বপক্ষে বিভিন্ন নির্ভরযোগ্য মুহাদ্দিস, ফুকাহা, মুফাসসিরগণের বক্তব্য এবং এটিকে তাদের গ্রন্থে মমার্থ হাদিস হিসেবে উল্লেখ করেছেন কিনা তার তথ্য সূত্র উল্লেখ করবো।

১. ইমাম শরফুদ্দীন বুছুরী (رحمة الله) এর লিখিত ‘কাসীদায়ে বুরদায়’ লিখেছিলেন,  

لولاه لم تخرج الدنيا من العدم

-‘‘যদি তিনি [রাসূল (ﷺ)] না হতেন দুনিয়া নাস্তির অন্ধকার হতে অস্তির আলোতে আসতো না।’’

উক্ত কাসিদার ব্যাখ্যায় আল্লামা ইমাম খরপূতী (رحمة الله) ‘শরহে কাসীদায়ে বুরদা’ নামক গ্রন্থের ৭১-৭২ পৃষ্ঠায় লিখেছেন,

فى هذا البيت تلميح الى ما نقل فى الحديث القدسى لَوْلَاكَ لَمَا خَلَقْتُ الْأَفْلَاكَ والمراد من الافلاك جميع المكنونات اطلاقا لاسم الجزء على الكل واشارة على ما وقع له صلى الله ﷺ فى ليلة الاسراء فانه عليه السلام لما سجد لله تعالى فى سدرة المنتهى قال الله تعالى له عليه الصلوة و السلام انا و انت و ما سوى ذلك خلقته لاجلك-

-‘‘এই চরণে ইঙ্গিত হল এ হাদিস-ই-কুদসীর প্রতি যা হল لَوْلَاكَ لَمَا خَلَقْتُ الْأَفْلَاكَ আর الْأَفْلَاكَ এর মমার্থ হল আল্লাহর সমগ্র জগৎ। কেননা অংশ দ্বারা সমষ্টিকে বুঝানো হয়েছে। এতে শবে-ই-মি‘রাজে সংঘটিত ঘটনার প্রতিও ইঙ্গিত বর্তমান। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) সিদরাতুল মুনতাহার নিকট আল্লাহর দরবারে সিজদায় পতিত হলেন, তখন আল্লাহ্ তাকে বললেন, এখানে আমি ও আপনি, এ ছাড়া যা কিছু আছে, সমুদয়কে আমি সৃষ্টি করেছি আপনারই নিমেত্তে।’’৯৪

৯৪.আল্লামা খরপূতি: শরহে কাসীদায়ে বুরদা, ৭১ পৃ.

২. আল্লামা আব্দুল হক মুহাদ্দিস দেহলভী (رحمة الله) ‘মাদারেজুন নবুয়ত’ সিরাত গ্রন্থে ১ম খণ্ডে উল্লেখ করেন,

مخلوق كا ظهور روح مظهر محمد كے واسط سے هے اگر روح محمدى نه هوتى خدا تعالى كو كوئى نه جانتا كيونكه كسى كا وجود هى نه هوتا- مدرج النبوة: جلد الاول

-“সৃষ্টি জগতের বিকাশ হযরত মুহাম্মদ (ﷺ) এর পবিত্র রূহ মুবারকের ওসীলায় হয়েছে। যদি রূহে মুহাম্মদী (ﷺ) না হতেন তবে আল্লাহ্ তা‘য়ালাকে কেউ জানত না। কেননা তিনি না হলে সৃষ্টির মধ্যে কারো অস্তিত্বও হত না।

৩. বিশ্ববিখ্যাত মুহাদ্দিস আল্লামা শাহ ওয়ালী উল্লাহ মুহাদ্দিস দেহলভী (رحمة الله) এর শ্রদ্ধেয় বাবা ও উস্তাদ আল্লামা শাহ আব্দুর রহিম মুহাদ্দিস দেহলভী (رحمة الله) ‘আনফাসে রহিমিয়্যা’তে উল্লেখ করেন,  

از عرش تا بفرش وملائكة علوى و جنس سفلى همہ ناشى ازاں حقيقته محمديہ صلى الله عليہ وسلم است وقول رسول مقبول اول ما خلق نورى وخلق الله من نورى وقول الله تعالى لو لاك لما خلقت الافلاك وقوله لولاك لما اظهرت الربوبيتى-

-‘‘আরশ থেকে ফরশ পর্যন্ত উর্ধ্ব জগতের সকল নূরানী ফেরেশতা, নিম্নজগতের সকল সৃষ্টি হাকিকতে মুহাম্মাদিয়্যা থেকেই সৃষ্টি করা হয়েছে। নবী করীম (ﷺ) বাণী, সর্ব প্রথম আল্লাহ্ তা‘য়ালা আমার নূরকে সৃষ্টি করেছেন এবং আমার নূর থেকেই সকল বস্তুকে সৃষ্টি করেছেন। আল্লাহ্ তা‘য়ালা প্রিয় মাহবুব (ﷺ) কে লক্ষ্য করে ইরশাদ করেছেন, (হে মাহবুব)! আপনি না হলে আমি কোনো কিছুই সৃষ্টি করতাম না এবং আপনি না হলে আমি আমার প্রভুত্ব প্রকাশ করতাম না।’’ ৯৫

৯৫. আল্লামা শাহ আব্দুর রহিম মুহাদ্দিস দেহলভী : আনফাসে রহিমিয়্যাহ-১৪০ পৃ.

অতএব এতবড় একজন সম্মানিত মুহাদ্দিস উক্ত হাদিসটিকে হাদিসে কুদ্সী হিসেবে স্বীকৃতি প্রদান করলেন। আল্লামা শাহ আব্দুর রহিম মুহাদ্দিস দেহলভী (رحمة الله) এর উপরে খ্যাতনামা মুহাদ্দিস ভারতীয় উপমহাদেশে আর হবে কী না সন্দেহ আছে। শাহ আব্দুর রহিম (رحمة الله) এর চেয়ে ড. আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীর, মাওলানা মুতীউর রহমান, মাওলানা জাকারিয়া হাসনাবাদী এবং মাওলানা জুনায়েদ বাবুনগরী সবাই কি বড় মুহাদ্দিস! হাদিস বিশারদ! বাহ্! বাহ!

৪. ইমাম আযম আবু হানিফা (رحمة الله) তাঁর বিখ্যাত কাব্য গ্রন্থ ‘কাসীদায়ে নুমানে’ একটি কাসীদা বর্ণনা করেন এভাবে-

انت الذى لولاك ما خلق امرء● كلا و لا خلق الورى لولاك-

-‘‘ইয়া রাসূলুল্লাহ (ﷺ)! আপনি না হলে কোন ব্যক্তিই সৃষ্টি হতো না কখনই এবং আপনি না হলে কোন মালূককে সৃষ্টি করা হতো না।’’ (কাসীদায়ে নু‘মান) দেখুন ইমাম আবু হানিফা (رحمة الله) একজন তাবেয়ী ও হানাফী মাযহাবের প্রতিষ্ঠাতা, তিনি নিজে নবীর রওযা মোবারকের সামনে এই কাসীদাটি সহ কাসীদায়ে নুমানের সবগুলো কাসীদা শুনিয়েছিলেন রাসূল (ﷺ) কে। আর তিনি ১৮ জন সাহাবীর দর্শন লাভ করেছেন। লক্ষ্য করুন ইমাম আযমের মত ইমামের আক্বীদা হল কি, আর তথাকথিত নামধারী আলেমদের আক্বিদা কি। তাহলে কি তারা ইমামে আযমের চেয়ে বড় ইমাম সেজে গেলেন?

৫. আল্লামা মোল্লা আলী ক্বারী (رحمة الله) উল্লেখ করেন-

كما قال تعالى: لولاك لما خلقت الافلاك

-‘‘যেমন মহান আল্লাহ্ তা‘য়ালা ইরশাদ করেন, হে হাবিব! আপনাকে সৃষ্টি না করলে কোন কিছু সৃষ্টি করতাম না।’’৯৬

৯৬. মোল্লা আলী ক্বারী, শরহে শিফা: ২/১২৭পৃ. দারুল কুতুব ইলমিয়্যাহ, বয়রুত, লেবানন।

৬. বিশ্ববিখ্যাত মুহাদ্দিস ও ফকীহ ইমাম ফার্সী (رحمة الله) তাঁর উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ ‘মাতালিউল মুর্সারাত ফি শরহে দালায়েলুল খায়রাতে’র ২৫৩ পৃষ্ঠায় লিখেন-

كذالك هو صلى الله عليه و سلم روح الاكوان و حياتها وسر وجودها ولولاه لم يكن لها نور ولا دلالة لذهبت و تلاشت ولم يكن لها وجود-

-‘‘এরূপে নূরে খোদা (ﷺ) সকল রূহ এর জীবনী শক্তি ও সকল অস্তিত্বের নিগুঢ় তত্ত্ব। তিনি যদি না হতেন বা না থাকতেন সকল সৃষ্টিই অস্তিত্বহীন হয়ে যেত।’’

৭. বিখ্যাত মুফাসসির, মুহাদ্দিস এবং ফকীহ, সূফী আল্লামা ইসমাঈল হাক্কী (رحمة الله) তাফসীরে রুহুল বয়ানে লিখেন,  

وقال حكاية عن الله (لولاك لما خلقت الكون)

-‘‘আল্লাহ্ তা‘য়ালার বাণী, আপনাকে সৃষ্টি না করলে কুল কায়েনাত সৃষ্টি করতাম না।’’ ৯৭

৯৭. আল্লামা ইসমাঈল হাক্কী : তাফসীরে রুহুল বয়ান, ৩/২৫৫ পৃ, সূরা আরাফ, আয়াত নং-১৫৬

৮. বিশ্ববিখ্যাত মুহাদ্দিস আল্লামা মোল্লা আলী ক্বারী (رحمة الله) বলেন,  

كما روى لولاك لما خلقت الافلاك فانه صحيح-

-‘‘যেমন বর্ণিত আছে আল্লাহর বাণী, রাসূল (ﷺ) কে সৃষ্টি না করলে কোন কিছুই সৃষ্টি হত না, কথাটি অবশ্যই বিশুদ্ধ।’’ ৯৮

৯৮. আল্লামা মোল্লা আলী ক্বারী : শরহে শিফা : ১/১৩ পৃ, দারুল কুতুব ইলমিয়্যাহ, বয়রুত, লেবানন, তারা কিছু লেখক মোল্লা আলী ক্বারী (রহ.) এর নামে মিথ্যা অপবাদ রটানোর চেষ্টা করেছেন। মোল্লা আলী ক্বারী নাকি জাল বলেছেন। তাই তাঁদের উক্ত হাদীসের ব্যাখ্যা দেখার জন্য অনুরোধ রইলো।

৯. আল্লামা শায়খ ইউসূফ বিন ইসমাঈল নাবহানী (رحمة الله) তাঁর কিতাবে উল্লেখ করেন,  

قوله تعالى : ولولاه لم تخلق الافلاك و لا الاملاق

-‘‘মহান ‘‘আল্লাহ্ বলেন, হে প্রিয় হাবীব! আপনাকে সৃষ্টি না করলে আমি কোন কিছুই করতাম না। এমনকি কোন রাজ্য সৃষ্টি করতাম না।’’ ৯৯

৯৯. আল্লামা শায়খ ইউসূফ বিন ইসমাঈল নাবহানী : জাওয়াহিরুল বিহার, ৩/৩৬৩ পৃ.

১০. আল্লামা ইসমাঈল হাক্কী (رحمة الله) তাফসীরে ‘রুহুল বায়ানে’ সূরা সফ এর ৬ নং আয়াতের ব্যাখ্যায় এক পর্যায়ে লিখেন,

القوله تعالى: لولاك لما خلقت الافلاك

-‘‘আল্লাহ্ তা‘য়ালা বলেন, হে হাবীব আপনাকে সৃষ্টি না করা হলো কিছুই সৃষ্টি করতাম না।’’ ১০০

১০০. আল্লামা ইসমাঈল হাক্কী : রুহুল বায়ান, :১০/৮৮০ পৃ.

১১. কুতুবে রব্বানী, ইমাম শেখ মুজাদ্দেদ আলফে সানী আহমদ ফারুক সেরহন্দী (رحمة الله) ৪৪ নং মাকতুবাতে বলেন,  

ولولاه صلى الله عليه و سلم لما خلق الله سبحانه الخلق و لما اظهر الربوبية و كان و ادم بين الماء و الطين -

-‘‘যদি হুযূর (ﷺ) কে সৃষ্টি না করা হতো তাহলো আল্লাহু সুবহানাহু ওয়া তা‘য়ালা কোন সৃষ্টিকেই সৃষ্টি করতেন না এবং তাঁর রবুবিয়্যাত প্রকাশ হতো না, আর রাসূল (ﷺ) তখনও ছিলেন যখন আদম (عليه السلام) মাটি ও পানির মাঝখানে ছিলেন।’’ ১০১

১০১. আল্লামা শায়খ ইউসূফ নাবহানী : জাওয়াহিরুল বিহার : ২/২০৮ পৃ.

১২. আল্লামা শরীফ সৈয়দ আহমদ বিন আব্দুল গণী বিন উমর দামেস্কী (رحمة الله) বলেন,  

كما قال تعالى فى الحديث القدسى لولاك ما خلقت الافلاك

-‘‘যেমন আল্লাহ্ তা‘য়ালা হাদিসে কুদসীতে বলেন, হে হাবীব! আপনাকে সৃষ্টি না করলে আমি কোনো কিছুই সৃজন করতাম না।’’ ১০২

১০২. আল্লামা শায়খ ইউসূফ বিন ইসমাঈল নাবহানী : জাওয়াহিরুল বিহার : ৩/৩৯৮ পৃ.

১৩. ইমাম আরিফ বিল্লাহ সায়্যেদ শরীফ আব্দুল্লাহ মীরগীনানী (رحمة الله) তার প্রসিদ্ধ গ্রন্থ الاسئلة النفيسة এর ৩২ তম প্রশ্নের জবাবে বলেন,  

كما صرح بذلك الحديث فى الخطاب الحضرة لادم عليه السلام، ولولاه ما خلقتك ولا خلقت سماء ولا ارضا...الخ

-‘‘হযরত আদম (عليه السلام) এর খিতাব তথা ভূষণের হাদিস দ্বারা এই কথা স্পষ্ট হয়েছে যে, আল্লাহর বাণী হে আদম! মুহাম্মদ (ﷺ) কে সৃষ্টি না করা হলে তোমাকে সৃষ্টি করতাম না, তিনি না হলে না সৃজন করতাম আসমান না যমিন।’’ ১০৩

১০৩. আল্লামা শায়খ ইউসূফ বিন নাবহানী : জাওয়াহিরুল বিহার : ৪/১১৪, পৃ.

১৪. আল্লামা ইমাম আরিফ বিল্লাহ শায়েখ আলী দুদাহ বুসূনবী (رحمة الله) তাঁর প্রসিদ্ধ গ্রন্থكتاب خلاصة الاثر এর ১৪৯ পৃষ্ঠায় লিখেন-

ان اصل الكون نبينا محمد صلى الله عليه و سلم لقوله تعالى فى الخبر القدسى: لولاك لما خلقت الافلاك، فهو اولى ان يكون اصلا-

-‘‘নিশ্চয় রাসূল (ﷺ) সকল সৃষ্টির মূল হওয়া আল্লাহ্ তা‘য়ালার এই হাদিসে কুদসীই যথেষ্ট যেমন বর্ণিত আছে, হে হাবীব (ﷺ)! আপনাকে সৃষ্টি না করলে আমি কোনো কিছুই সৃজন করতাম না। আর এটিই রাসূল (ﷺ)! এর সকল সৃষ্টির মূল হওয়ার জন্য যথেষ্ট।’’ ১০৪

১০৪. আল্লামা শায়খ ইউসূফ নাবহানী : জাওয়াহিরুল বিহার : ৪/১৯৮ পৃ.

১৫. ইমাম শায়খ আব্দুল করিম জলিলী (رحمة الله) (ওফাত ৮০৫ হি.) তাঁর প্রসিদ্ধ গ্রন্থ رسالته المسماة مدارج الوصول এ লিখেন,

وقد ورد عنه صلى الله عليه وسلم انه قال : ان الله تبارك و تعالى قال له فى ليله المعراج لولاك لما خلقت الافلاك-

-‘‘যেমন বর্ণিত আছে, নিশ্চয়ই রাসূল (ﷺ) ইরশাদ করেছেন, নিশ্চয়ই আল্লাহ্ তা‘য়ালা মিরাজের রজনীতে আমাকে বলেন, হে হাবীব! আপনাকে সৃষ্টি না করলে আমি কোনো কিছুই সৃজন করতাম না।’’ ১০৫

১০৫. আল্লামা শায়খ ইউসূফ বিন ইসমাঈল নাবহানী : জাওয়াহিরুল বিহার : ৪/২৫৮ পৃ.

১৬. আল্লামা মুহাম্মদ জামালিদ্দীন বিন মুহাম্মদ সাঈদ বিন কাসেম আল হালাক আলকাসেমী (رحمة الله) তাঁর উসূলে হাদিসের কিতাবقواعد التحديث من فنون مصلح الحديث গ্রন্থের (যা দারুল কুতুব ইলমিয়্যাহ, বয়রুত হতে প্রকাশিত) ১/১৫৫ পৃষ্ঠায় উল্লেখ করেন,

كحديث:لولاك ما خلقت الافلاك

-‘‘যেমন হাদিসে কুদসীতে রয়েছে-হে হাবিব! (ﷺ) আপনাকে সৃষ্টি না করলে কিছুই সৃষ্টি করতাম না।’’

১৭. ইমাম আবুল কাসেম আব্দুর রহমান বিন সুহাইলি (رحمة الله) (ওফাত. ৫৮১ হি.) তার কিতাব الروض الانق فى السيرة النبوية এর ১/১২ পৃষ্ঠায় উল্লেখ করেন-

ان الله قال لمحمد لولاك ما خلقت الافلاك

-‘‘আল্লাহ্ তা‘য়ালা তাঁর হাবিব (ﷺ) কে লক্ষ্য করে বলেন, আপনাকে সৃষ্টি না করা হলে কিছুই সৃষ্টি করতাম না।’’

১৮. আল্লামা মাহদী আল ফাসী (رحمة الله) (ওফাত. ১২২৪ হিজরী.) বলেন,

لولاك ما خلقت الكون

-‘‘আল্লাহ্ তা‘য়ালা তাঁর হাবিব (ﷺ) কে সৃষ্টি না করলে কোন জগতই সৃষ্টি করতেন না।’’ (মাতালিউল মার্সারাত)

১৯. আল্লামা ইসমাঈল হাক্কী (رحمة الله) তাঁর তাফসীরে উল্লেখ করেন,

ورد بلسان القدس ( لولاك لما خلقت الافلاك)

-“মহান আল্লাহর কুদরতের জবানের কথা, হে মাহবুব! আপনাকে সৃষ্টি না করলে কোন কিছুই সৃষ্টি করতাম না।’’ (তাফসীরে রূহুল বায়ান,১/২৭ পৃ. সূরা বাক্বারা,আয়াত ১)

✦ তিনি তাফসীরের অন্য স্থানে বর্ণনা করেন এভাবে-

ان الله العظيم هو فضل الله عليك ورحمته كما انك فضل الله ورحمته على العالمين ولهذا قال (لولاك لما خلقت الافلاك)  

-“দয়াময় ‘আল্লাহ্ তাঁর হাবিব সর্ম্পকে বলেন হে হাবিব! আপনাকে সৃষ্টি না করা হলে কিছুই সৃষ্টি করতাম না। (তাফসিরে রূহুল বায়ান, ২/২৮৩ পৃ. সূরা নিসা, আয়াত নং-১১৩ ও ব্যাখ্যা)

✦ আল্লামা ইসমাঈল হাক্কী তাঁর তাফসীর গ্রন্থে আরও উল্লেখ করেন-

ان اصل الكون كان النبي عليه السلام لقوله لولاك لما خلقت الكون

-“নিশ্চয় রাসূল হলেন সমস্ত সৃষ্টি জগতের মুল এজন্যই মহান ‘‘আল্লাহ্ হাদিসে কুদসীতে বলেন, হে হাবিব! আপনাকে সৃষ্টি না করা হলে কিছুই সৃষ্টি করতাম না।’’ (তাফসীরে রূহুল বায়ান, ৫/১৯৯ পৃ. সূরা বনি ইসরাইল আয়াত-৮৫)

✦ অন্যত্র তিনি বর্ণনা করেন-

كما قال عليه السلام (انا من الله والمؤمنون من فيض نورى) فهو الغاية الجليلة من ترتيب مبادى الكائنات كما قال تعالى (لولاك لما خلقت الافلاك)

-‘‘রাসূল বলেন, আমি আল্লাহ্ হতে আর মু‘মিনগণ আমার নূরের ফয়জ থেকে সৃষ্টি .....মহান আল্লাহ্ তাঁর হাবিব সর্ম্পেকে বলেন, হে হাবিব! আপনাকে সৃষ্টি না করা হলে কিছুই সৃষ্টি করতাম না।’’ (তাফেিসর রূহুল বায়ান, ৫/৫২৯ পৃ., সূরা আম্বিয়া, আয়াত নং ২১)

উক্ত তাফসীরে আরও উল্লেখ করেন,

قوله تعالى فى الحديث القدسي خطابا للنبى عليه السلام (لولاك لما خلقت الافلاك)

-‘‘মহান আল্লাহ্ হাদিসে কুদসীতে তার রাসূল (ﷺ) কে খেতাব করে বলেন, হে হাবিব! আপনাকে সৃজন না করা হলে কিছুই সৃজন করতাম না। (তাফেিসর রূহুল বায়ান, ৬/১৫৪ পৃ. সূরা নুর আয়াত-৩৫)

উক্ত তাফসীর কারক তার তাফসীরে অন্য স্থানে উল্লেখ করেন,

ذكر النبي عليه السلام والله تعالى خاطبه بقوله :لولاك يا محمد ما خلقت الكائنات

-“মহান আল্লাহ্ তাঁর রাসূল (ﷺ)‘র দিকে খেতাব করে বলেন, হে হাবিব ! আপনাকে সৃষ্টি না করা হলে আমি কুল কায়েনাত সৃষ্টি করতাম না।’’ (তাফেিসর রূহুল বায়ান, ৬/১৯২ পৃ. সূরা ফুরকান আয়াত, ৮)

২০. দেওবন্দীদের বড় মুহাদ্দিস মাওলানা হুসাইন আহমদ মাদানী ছাহেব তার প্রসিদ্ধ গ্রন্থ ‘আশ শিহাবুছ ছাকিব’ কিতাবে ২৭০ পৃষ্ঠায় উল্লেখ করেন-

غرضيكہ حقيقت محمد صلى الله عليہ وسلم التحية واسطہ جملہ كمالات عالم عالميان ہے يہ هی معنى لولاك لما خلقت الافلاك اور اول ما خلق الله نورى اور انا نبى الانبياء كے ہیں -

-‘‘মোট কথা হলো সমস্ত কায়েনাত বা আলম হাকীকতে মুহাম্মদী (নূরে মুহাম্মদী) থেকে সৃষ্ট। এর অর্থ এই, যে আল্লাহর কথা যদি আপনাকে না সৃজন করতাম তাহলে আসমান যমীন কোন কিছুই সৃজন করতাম না। রাসূলের বাণী, সর্ব প্রথম আল্লাহ্ আমার নূর মোবারক সৃষ্টি করেছেন এবং আরও বলেছেন, আমি নবীদেরও নবী।’’ তাই দেওবন্দীদেরকে বলছি নিজেদের মুরব্বীদের কথাটা একটু চিন্তা করুন তিনি উক্ত রেওয়ায়েতকে হাদিসে কুদসী বলেছেন।

২১. মাওলানা জুনায়েদ বাবুনগরী তার “প্রচলিত জাল হাদীস” গ্রন্থে উক্ত হাদিসটিকে মিথ্যুকদের বানানো কথা বলে উল্লেখ করেছেন। অথচ তার উস্তাদ ও মুরব্বীব মাওলানা আহমদ শফী তার “সুন্নাত বিদআতের সঠিক পরিচয়” নামক গ্রন্থের ১৬৪ পৃষ্ঠায় উক্ত হাদিসটিকে তাগিদ দিয়ে বর্ণনা করেছেন এবং সহীহ বলেই গ্রহণ করেছেন। তিনি লিখেন-‘‘ওহাবীগণ নবী (ﷺ) এর শানে নিতান্ত গোস্তাখি ও বেয়াদবী মূলক শব্দ ব্যবহার করেন এবং নিজেকে স্বয়ং ঐ সত্ত্বার [রাসূল (ﷺ)] এর সমকক্ষ ধারণা করেন। অথচ তিনি না হলে সমগ্র সৃষ্টি জগত অস্তিত্ব লাভ করত না।’’

সম্মানিত পাঠকবৃন্দ! আহমদ শফীর উক্ত বক্তব্য দ্বারা প্রমাণিত হয় তিনি নিজে সম্পূর্ণ বিশ্বাস নিয়েই এই কথা দৃঢ়ভাবে লিখেছেন। মহান রব তা‘য়ালা তাঁর প্রিয় হাবিবের শান-মান অস্বীকারকারীদের খপ্পর থেকে আমাদেরকে হিফাজত করুন, আমিন।

বিষয় নং-০৭: মি‘রাজের রজনীতে রাসূল (ﷺ)-এর তাশাহহুদ লাভের ঘটনা:

ড. আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীর তার ‘হাদীসের নামে জালিয়াতি গ্রন্থের ৩৫৪ পৃষ্ঠায় তাশাহুদের একটি ঘটনা বর্ণনা করেছেন, অথচ ঘটনাটিই বিশুদ্ধ উল্লেখ করতে সক্ষম হননি। সে ঘটনা বর্ণনা করে লিখেছে-‘‘এই গল্পটির কোনো ভিত্তি আছে বলে জানা যায় না।’’

উক্ত মিথ্যা বক্তব্যের জবাব:

এটা স্বাভাবিক যে, যার যতটুকু জ্ঞান সে ততটুকু জানতে পারেন। আল্লাহর সান্নিধ্যে পৌঁছার পর প্রথমে নবী করীম (ﷺ) আল্লাহর প্রশংসা করলেন এভাবে-

التَّحِيَّاتُ لِلّٰهِ وَالصَّلَوَاتُ وَالطَّيِّبَاتُ

-‘‘আমার জবান, অঙ্গ প্রত্যঙ্গ ও ধন-সম্পদ দ্বারা যাবতীয় প্রশংসা ইবাদত আল্লাহর জন্য হাদিয়া স্বরূপ পেশ করছি।’’ এর উত্তরে আল্লাহ্ তা‘য়ালা প্রিয় নবীকে সালাম দিয়ে বললেন-

السَّلَامُ عَلَيْكَ أَيُّهَا النَّبِيُّ وَرَحْمَةُ اللّٰهِ وَبَرَكَاتُهُ

অর্থ: হে আমার প্রিয় নবী, তোমার প্রতি আপনার সালাম, রহমত ও বরকত সমূহ বর্ষিত হোক।’

উক্ত সালামের জবাবে নবী করীম (ﷺ) আরজ করলেন,  

السَّلَامُ عَلَيْنَا وَعَلَى عِبَادِ اللّٰهِ الصَّالِحِينَ

অর্থ: হে আল্লাহ! তোমার সালাম আমি ও আমার গুনাহগার উম্মতের উপর এবং তোমার অন্যান্য নেককার বান্দাদের উপরও বর্ষিত হোক।’

আল্লাহ্ ও আল্লাহর রাসূলের এই সালাম বিনিময়ের কৌশলপূর্ণ উক্তি ও ভালোবাসার নমুনা এবং জিবরাঈল সহ আকাশের মোর্কারাবীন ফেরেস্তাগণ সমস্বরে বলে উঠলেন-

أَشْهَدُ أَنْ لَا إِلَهَ إِلَّا اللّٰهُ وَأَشْهَدُ أَنَّ مُحَمَّدًا عَبْدُهُ وَرَسُولُهُ

উক্ত ঘটনাটি রাসূল (ﷺ) এর সীরাত সম্পর্কিত উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ, মা‘আরিজুন নবুয়্যত” এর ৩য় খণ্ডের ১৪৯ নং পৃষ্ঠায় বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। ড. আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীরকে তা পড়ার জন্য অনুরোধ থাকবে।

❏ বিশ্ববিখ্যাত ফকীহ আল্লামা ইমাম আল্লামা আলাউদ্দিন হাসকাফী (رحمة الله) ‘দুররুল মুখতার’ গ্রন্থে প্রথম খণ্ডের كيفية الصلوة শীর্ষক অধ্যায়ে বর্ণনা করেন,

وَيَقْصِدُ بِأَلْفَاظِ التَّشَهُّدِ الْإِنْشَاءَ كَأَنَّهُ يُحَيِّي اللَّهَ تَعَالَى وَيُسَلِّمُ عَلَى نَبِيِّهِ وَعَلَى نَفْسِهِ

-“নামাযে তাশাহহুদ এর শব্দগুলি উচ্চারণ করার সময় নামাযীর এ নিয়ত থাকা চাই যে, কথাগুলো যেন তিনি নিজেই বলেছেন, তিনি নিজেই যেন আপন প্রতিপালকের প্রতি শ্রদ্ধার্য নিবেদন করেছেন ও নবী (ﷺ) প্রতি সালাম পেশ করছেন।

❏ এ ইবারতের ব্যাখ্যায় ফাতাওয়ায়ে শামীতে বলা হয়েছে-

أَيْ لَا يَقْصِدُ الْإِخْبَارَ، وَالْحِكَايَةَ عَمَّا وَقَعَ فِي الْمِعْرَاجِ مِنْهُ - ﷺ- وَمِنْ رَبِّهِ سُبْحَانَهُ وَمِنْ الْمَلَائِكَةِ عَلَيْهِمْ السَّلَامُ

-‘‘তাশাহহুদ পাঠের সময় নামাযীর যেন এ নিয়ত না হয় যে, তিনি শুধু মাত্র মি‘রাজের অলৌকিক ঘটনাটি স্মরণ করে সে সময় মহাপ্রভু আল্লাহ, হুযূর (ﷺ) ও ফিরিশতাদের মধ্যে অনুষ্ঠিত কথোপকথন এর বাক্যগুলোই আওড়িয়ে যাচ্ছেন এবং তার নিয়ত হবে কথাগুলো যেন তিনি নিজেই বলেছেন। (ফতোয়ায়ে শামী ১ম খণ্ড, ৫১০ পৃ.)।

তাই অতএব প্রমাণিত হল তাশাহুদ মিরাজের রজনীতেই লাভ হয়েছে। যা বিখ্যাত ফতোয়ার কিতাব ফতোয়ায়ে শামী ও দুররুল মুখতার গ্রন্থ দ্বারা প্রমাণ হলো।

বিষয় নং-০৮: জুতা মোবারক নিয়ে আরশে গমন ও আল্লাহ্ তা‘য়ালার দর্শন লাভ:

‘এসব হাদীস নয়’ নামক গ্রন্থের ১৫৯-১৬১ পৃষ্ঠা পর্যন্ত লিখক মাওলানা মুতীউর রহামন দাবী করেছেন যে, মি‘রাজে আল্লাহর আরশে জুতা মুবারক নিয়ে যাওয়া তো দূরের কথা রাসূল (ﷺ) আল্লাহকে দেখেছেন এবং জিবরাঈল (عليه السلام) এর সঙ্গ ত্যাগ হয়েছে তারও নাকি প্রমাণ পাওয়া যায় না। ড. আবদুল্লাহ জাহাঙ্গীর তার ‘হাদীসের নামে জালিয়াতি’ গ্রন্থের ৩৫১-৩৫৪ পৃষ্ঠা পর্যন্ত অনুরূপ বক্তব্য দিয়েছেন।

উক্ত দু‘লিখক তাদের মনগড়া এ মতের পক্ষে একক শায়খ রযী উদ্দিন আল কাযভীনী এর মতামতকে পুঁজি করেছেন। তা তারা নকল করেছেন দুটি কিতাব থেকে, ইমাম জুরকানী (رحمة الله)-এর শারহুল মাওয়াহিব এবং ইমাম ইবনে সালেহ শামী (رحمة الله)-এর ‘সবলুল হুদা ওয়ার রাশাদ’ নামক কিতাবদ্বয় থেকে, অথচ এটা একক কাযভীনীর অভিমত।

রাসূল (ﷺ) জুতা মোবারক নিয়ে আরশে গমন অসম্ভ কিছু নয়, তবে তা নিয়ে আহলে সুন্নাতের ইমামদের মতভেদ রয়েছে। মা’আরিজুন নবুয়ত সিরাত গ্রন্থে উল্লেখ আছে, রাসূল (ﷺ) এর পা মুবারকে জুতা ছিল। কিন্তু আ‘লা হযরত ইমাম আহমদ রেযা খাঁন ফাযেলে বেরলভী (رحمة الله) তাঁর আহকামে শরীয়তের দ্বিতীয় খণ্ডের ৮ নং মাসআলায় একজন প্রশ্ন করলেন রাসূল (ﷺ) জুতা মোবারক নিয়ে আরশে গমন সত্য কীনা? তিনি বলেছেন, এ ঘটনা বিশুদ্ধ নয়।

❏ তবে আল্লামা শিহাবুদ্দীন খিফ্ফাজী (ওফাত. ১০৬৯ হি.) তার বিখ্যাত গ্রন্থ ‘নাসীমুর রিয়াদ্ব শরহে শিফা’ কিতাবে লিখেন-

وفى السبعيات للهمدانى قال: ثبت فى الحديث أنه صلى الله تعالى عليه وسلم قال: هممت ليلة المعراج أن أخلع نعلى فسمعت النداء من قبل الله تعالى: يا محمد لا نخلع نعليك لتشرف السماء بهما

-‘‘আল্লামা হামদানী (ওফাত. ৯৬৬ হি.) এর সাবাঈয়্যাত নামক গ্রন্থে রয়েছে, তিনি বলেছেন, রাসূল (ﷺ) থেকে এটা দৃঢ়ভাবে প্রমাণিত যে, রাসূল (ﷺ) মি‘রাজের রজনীতে তাঁর জুতা মোবারক খুলতে চাইলেন, তখন আমি এক আহবানকারীর আওয়াজ শুনলাম মহান আল্লাহ তা‘য়ালা পক্ষ থেকে, তিনি বললেন, হে মুহাম্মদ ! আপনি জুতা মোবারক খুলবেন না, আপনি আমার আরশ কুরসীকে আপনার জুতা মোবারকের নিচের রেখে ধন্য করে যান।’’ (আল্লামা শিহাবুদ্দীন খিফ্ফাজী, নাসীমুর রিয়াদ্ব শরহে শিফা, ৩/৮৫ পৃ., দারুল কুতুব ইলমিয়্যাহ, বয়রুত, লেবানন।)

এ বিষয়ে আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা‘আতের আলেমগণের ঐকমত্য পোষণ করেছেন যে, মি‘রাজে আরশে আল্লাহর সাথে রাসূল (ﷺ) তাঁর প্রতিপালককে চর্ম চোখে দেখেছিলেন। বর্তমানে আহলে হাদিসগণ মি‘রাজে রাসূল (ﷺ) মহান রবকে দেখেছেন তা মানতে নারাজ, তাই এ বিষয়ে কিছু দলীল উপস্থাপন করার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করছি।

❏ ইমাম তাবরানীনহ আরও অনেকে সংকলন করেন-

عن ابن عباس رصى الله تعالى عنهما كَانَ يَقُولُ: إِنَّ مُحَمَّدًا ﷺ، رَأَى رَبَّهُ مَرَّتَيْنِ: مُرَّةً بِبَصَرِهِ، وَمَرَّةً بِفُؤَادِهِ

-“হযরত ইবনে আব্বাস (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূল (ﷺ) দুইবার আল্লাহ্ তা‘য়ালাকে দেখেছেন। একবার চর্মচোখে, একবার অন্তর চোখে।’’ ১০৬

১০৬.

ক. ইমাম তাবরানী : মুজামুল কাবীর : ১২/১৭ পৃ. হা/১২৫৬৪

খ. ইমাম তাবরানী : মুজামুল আওসাত : ২/৩৫৬ পৃ. হা/৫৭৫৭

গ. ইমাম কাস্তাল্লানী : মাওয়াহেবে লাদুন্নীয়া : ৩/৩৯৭ পৃ.

ঘ. আল্লামা বদরুদ্দীন আইনি, উমদাতুল ক্বারী, ১৯/১৯৯ পৃ.

ঙ.ইমাম সূয়তি, খাসায়েসুল কোবরা, ১/২৬৭ পৃ. দারুল ইলমিয়্যাহ, বয়রুত, লেবানন।

চ. মাওলানা আশরাফ আলী থানবী : নশরুত্তীব : ৫৫ পৃ.

❏ ইমাম সুয়ূতি (رحمة الله) উল্লেখ করেন-

وقد روى الامام احمد بسند صحيح عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ ﷺ : رَأَيْتُ رَبِّي تَبَارَكَ وَتَعَالَى -

-“ইমাম আহমাদ তাঁর ‘মুসনাদ’ গ্রন্থে সহীহ সনদে বর্ণনা করেছেন হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূল (ﷺ) ইরশাদ করেন, আমি আল্লাহ্ তাবারকা ওয়া তা‘য়ালাকে দেখেছি।’’ ১০৭

১০৭.

ক. আল্লামা শায়খ ইউসূফ নাবহানী : জাওয়াহিরুল বিহার : পৃ. ৩/৩২২ পৃ.

খ. আল্লামা ইমাম সুয়ূতি : জামেউস সগীর : ২/৪ পৃ. হা/৪৩৭৭

গ. আলবানী : সহীহুল জামে : হাদিস নং : ৩৪৬৬

ঘ. ইমাম আহমাদ, আল-মুসনাদ: ১/২৯০ পৃ. হাদিস: ২৬৩৪ ও ৪/৩৫১ পৃ. হাদিস: ২৫৮০

● ইমাম জালালুদ্দীন সুয়ূতি (رحمة الله) উক্ত হাদিসটি সহীহ বলেছেন, শুধু তাই নয় আহলে হাদিসের গুরু নাসিরুদ্দীন আলবানী তার ‘সহিহুল জামে’ গ্রন্থে হাদিসটিকে ‘সহীহ’ বলেছেন।

❏ ইমাম কাযি আয়্যায (رحمة الله) সংকলন করেন-

وَقَالَ ابْنُ عَبَّاس هُوَ مُقَدَّمٌ وَمُؤخَّرٌ تَدَلَّى الرَّفْرَفُ لِمُحَمَّدٍ ﷺ ليْلَةَ الْمِعْرَاجِ فَجَلَسَ عَلَيْهِ ثُمَّ رُفِعَ فَدَنَا مِنْ رَبّه قَالَ فَارَقَنِي جِبْرِيلُ وَانْقَطَعَتْ عَنَّي الْأَصْوَاتُ وَسَمِعْتُ كَلَامَ رَبّي عَزَّ وَجَلَّ

-‘‘হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (رضي الله عنه) এখানে পুর্বাপর বর্ণনা করেছেন। অর্থাৎ মি‘রাজ রাতে হযরত মুহাম্মদ (ﷺ) নিকট রফরফ আসলো। তিনি তাঁর উপর ওঠে বসলেন তারপর তাকে উপরে উঠানো হলো। এমনকি তিনি আপন প্রভুর নিকটবর্তী হলেন। হুযূর (ﷺ) বললেন, তারপর জিবরাঈল (عليه السلام) আমার নিকট থেকে বিদায় হয়ে গেলেন। সকল আওয়াজ বন্ধ হয়ে গেল। তখন আমি আমার প্রভুর কালাম বা কথা শুনলাম।’’ ১০৮

১০৮.

ক. ইমাম কাজী আয়াজ : শিফা শরীফ : ১/১১৭ পৃ.

খ. আল্লামা মোল্লা আলী ক্বারী : শরহে শিফা : ১/৪৪০ পৃ.

গ. আল্লামা শিহাবুদ্দীন খাফ্ফাজী : নাসীমুর রিয়াদ্ব : ১/৩৮০ পৃ.

এ হাদিস থেকে প্রমাণিত হল যে, মি‘রাজে রাসূল (ﷺ)-এর হযরত জিবরাঈল (আ.)-এর সঙ্গ ত্যাগ হয়েছিল।

❏ মিশকাত শরীফে মাসাজিদ সংক্রান্ত অধ্যায়ে হযরত আবদুর রহমান ইবনে আয়েশ (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত আছে, রাসূল (ﷺ) ইরশাদ ফরমান,  

رَأَيْتُ رَبِّيَ عَزَّ وَجَلَّ فِي أَحْسَنِ صُورَةٍ

-“আমি আমার মহান প্রতিপালককে সুন্দরতম আকৃতিতে (উত্তম অবস্থায়) দেখেছি।’’ ১০৯

১০৯.

ক. খতীব খতিব তিবরিযী : মিশকাতুল মাসাবিহ : ১/২২৫ পৃ : হা/৭২৫

খ. দারেমী : আস-সুনান :২/১৭০ পৃ. হাদিস: ২১৪৯

গ. আল্লামা মোল্লা আলী ক্বারী : শরহে শিফা : ১/৪২৮ পৃ.

ঙ. আল্লামা মোল্লা আলী ক্বারী : মিরকাতুল মাফাতীহ : ২/১৪০ পৃ. হা/৬৭১

❏ ইমাম কাযি আয়্যায (رحمة الله) সংকলন করেন-

وذَكَرَ النَّقَّاشُ عَنِ ابْنِ عَبَّاس ؓ فِي قِصَّةِ الْإِسْرَاءِ عَنْهُ ﷺ فِي قَوْلِهِ دَنَا فَتَدَلَّى قَالَ فَارَقَنِي جِبْرِيلُ فَانْقَطَعَتِ الْأَصْواتُ عَنّي فَسَمِعْتُ كَلَامَ رَبّي وَهُوَ يَقُولُ: لِيَهْدَأْ رَوْعُكَ يَا مُحَمَّدُ ادْنُ ادْنُ.وَفِي حَدِيث أَنَسٍ فِي الْإِسْرَاءِ نَحْوٌ مِنْهُ -

 -‘‘হযরত নাক্কাশ (رضي الله عنه) হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (رضي الله عنه)হতে বর্ণনা করেন তিনি বলেন রাসূল (ﷺ) মি‘রাজ সম্পর্কিত বর্ণনায় আল্লাহর বাণী دنا فتدلى সম্পর্কে আমাকে বলেন, যখন হযরত জিবরাঈল (عليه السلام) আমাকে একাকী রেখে চলে গেলেন। যখন সব ধরনের শব্দ বা ধ্বনি বন্ধ হয়ে গেল। তখন আমি প্রভুর বাণী শুনতে পাই যে, তিনি আমাকে বলছেন, তোমার ভয় ভীতি দূর হবার কথা। হে মুহাম্মদ (ﷺ)! আসুন আমার নিকটে আসুন। অনুরূপ শব্দে হযরত আনাস (رضي الله عنه) এর সূত্রেও বর্ণনা রয়েছে।’’ ১১০

১১০.

ক. ইমাম কাজী আয়াজ : শিফা শরীফ : ১/১১৭ পৃ.

খ. আল্লামা মোল্লা আলী ক্বারী : শরহে শিফা, ১/৪৩৮ পৃ.

গ. আল্লামা শিহাবুদ্দিন খিফ্ফাজী : নাসিমুর রিয়াদ্ব : ২/২৮০ পৃ.

এ হাদিস থেকে প্রমাণিত হল যে, মি‘রাজে রাসূল (ﷺ)-এর হযরত জিবরাঈল (আ.)-এর সঙ্গ ত্যাগ হয়েছিল।

❏ ইমাম ইবনে খুজায়মা (رحمة الله) সংকলন করেন-

حَدَّثَنَا إِبْرَاهِيمُ بْنُ عَبْدِ الْعَزِيزِ الْمُقَوِّمُ، قَالَ: ثَنَا عَبْدُ الرَّحْمَنِ بْنُ عُثْمَانَ أَبُو بَكْرٍ الْبَكْرَاوِيُّ، رَحِمَهُ اللَّهُ، قَالَ: أَخْبَرَنَا شُعْبَةُ، عَنْ قَتَادَةُ، عَنْ أَنَسٍ، أَنَّ مُحَمَّدًا، صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَدْ رَأَى رَبَّهُ

-‘‘হযরত আনাস (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, নিশ্চয়ই রাসূল (ﷺ) স্বীয় মহীয়ান গরীয়ান প্রতিপালককে দেখেছেন।’’ ১১১

১১১.

ক. ইবনে খাযাইমা : কিতাবুত তাওহীদ, ২/৮৮৯ পৃ.

খ. আল্লামা ইমাম জুরকানী : শরহে মাওয়াহেব : ৬/১১৮ পৃ.

❏ ইমাম কাযি আয়্যায (رحمة الله) সংকলন করেন-

وعَنْ أَنَسٍ فِي الصَّحِيحِ (عَرَجَ بي جِبْرِيلُ إِلَى سِدْرَةِ الْمُنْتَهَى وَدَنَا الْجَبّارُ رَبُّ الْعِزَّةِ فَتَدَلَّى حَتَّى كَانَ مِنْهُ قَابَ قَوْسَيْنِ أَوْ أَدْنَى فَأَوْحَى إليْهِ بِمَا شَاءَ وَأَوْحَى إليْهِ خَمْسِينَ صَلَاةً -

-‘‘হযরত আনাস (رضي الله عنه) থেকে সহীহ সূত্রে বর্ণনা এসেছে হযরত জিবরাঈল (عليه السلام) আমাকে সিদরাতুল মুনতাহায় নিয়ে যান। আমি আল্লাহ্ রাব্বুল ইজ্জতের নিকটবর্তী হলাম। অতঃপর তিনিও অতি নিকটবর্তী হলেন। এমনকি দুই ধনুকের মাথা তার চেয়েও অধিক নিকটবর্তী হলেন। অতঃপর তিনি যা চাইলেন আমার উপর ওহী করলেন ঐ সময় পঞ্চাশ ওয়াক্ত নামায আমার উপর ওহী করলেন।’’ ১১২

১১২.

ক. ইমাম কাজী আয়াজ : শিফা শরীফ : ১/১১৮ পৃ.

খ. আল্লামা মোল্লা আলী ক্বারী : শরহে শিফা : ১/৪৪১ পৃ.

গ. আল্লামা শিহাবুদ্দিন খিফ্ফাজী : নাসিমুর রিয়াদ্ব : ১/৩৮২ পৃ.

❏ ইমাম কাযি আয়্যায (رحمة الله) সংকলন করেন-

وَرَوَى شَرِيكٌ عَنْ أَبِي ذَرّ رَضِيَ اللَّه عَنْهُ فِي تَفْسِيرِ الآيَةِ قَالَ رَأَى النَّبِيّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وسلم رَبَّهُ

-‘হযরত তাবেয়ী শারিক (رحمة الله) হযরত আবূ যার গিফারী (رضي الله عنه) হতে বর্ণনা করেন, অত্র আয়াত (হৃদয় যা দেখেছে তা মিথ্যা নয়) প্রসঙ্গে যে, তিনি বলেন, হুযূর (ﷺ) আল্লাহ্ তা‘য়ালার দর্শন লাভ করেছেন।’’ ১১৩

১১৩.

ক. ইমাম কাজী আয়াজ : শিফা শরীফ : ১/১১৬ পৃ.

খ. আল্লামা মোল্লা আলী ক্বারী : শরহে শিফা : ১/৪২৬ পৃ.

❏ ইমাম কাযি আয়্যায (رحمة الله) সংকলন করেন-

وَرَوَى مالك ابن يُخَامِرَ عَنْ مُعَاذٍ عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ رَأَيْتُ رَبِّي وَذَكَرَ كَلِمَةً فَقَالَ يَا مُحَمَّدُ فِيمَ يَخْتَصِمُ الملأ الأعلى الحديث

-‘‘হযরত মালেক বিন য়ুখামের (رضي الله عنه) হযরত মুয়াজ (رضي الله عنه) থেকে বর্ণনা করেছেন, হুযূর (ﷺ) বলেছেন, আমি আমার প্রভুকে দেখেছি। তারপর কতিপয় বিষয়ের বর্ণনা করে বললেন আল্লাহ্ তা‘য়ালা আমাকে জিজ্ঞাসা করলেন, হে মুহাম্মদ (ﷺ)! মা’লায়ে আ’লার ফিরেশতারা কী নিয়ে ঝগড়ায় লিপ্ত আছে?।’’১১৪

১১৪. ইমাম কাজী আয়াজ : শিফা শরীফ : ১/১১৭ পৃ., আল্লামা মোল্লা আলী ক্বারী : শরহে শিফা : ১/৪২৬ পৃ., খতিব তিবরিযী : : মিশকাতুল মাসাবীহ : ৭২ পৃ.

❏ ইমাম আব্দুর রায্যাক (رحمة الله) সংকলন করেন-

عَبْدُ الرَّزَّاقِ قَالَ: أرنا ابْنُ التَّيْمِيِّ , عَنِ الْمُبَارَكِ بْنِ فَضَالَةَ , قَالَ:كَانَ الْحَسَنُ يَحْلِفُ بِاللَّهِ ثَلَاثَةً لَقَدْ رَأَى مُحَمَّدٌ رَبَّهُ

-‘‘মুবারক ইবনে ফাদ্বালাহ (رحمة الله) তিনি বিখ্যাত তাবেয়ী হযরত হাসান বসরী (رضي الله عنه) হতে বর্ণনা করেন, তিনি তিনবার কসম করে বলেছেন, নিশ্চয়ই রাসূল (ﷺ) আল্লাহ্ তা‘য়ালাকে দেখেছেন।’’ ১১৫

১১৫. ইমাম আব্দুর রায্যাক, আত-তাফসির, ৩/২৫১ পৃ. হা/৩০৩৩, ইমাম কাজী আয়াজ : শিফা শরীফ : ১/১১৫ পৃ., আল্লামা মোল্লা আলী কারী, শরহে শিফা : ১/৪২৮ পৃ.

দেখুন হযরত হাসান বসরী (رضي الله عنه) কত উচু সম্পূর্ণ আল্লাহর ওলী ও তাবেয়ী তিনি কসম করে বলেছেন, তাহলে কী তিনি মিথ্যা কসম করেছেন! নাউযুবিল্লাহ, আল্লাহ আমাদেরকে এ ধোঁকাবাজদের থেকে হেফাযত করুন।

❏ মিশকাত শরীফে হযরত মুয়ায বিন জাবাল (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত। রাসূল (ﷺ) ইরশাদ ফরমান-

رَأَيْتُ رَبِّيَ عَزَّ وَجَلَّ فِي أَحْسَنِ صُورَةٍ

-“আমি আমার রব তা‘য়ালাকে উত্তম আকৃতিতে দেখেছি।’’ ১১৬

১১৬. ইমাম তিরমিযী, আস্-সুনান: ৫/৩৪৩ পৃ. হা/৪২৩৫, খতিব তিবরিযি, মিশকাত, ১/৭১ পৃ. হাদিস: ৭৪৮

❏ ইমাম তিরমিযী (رحمة الله) হাদিসটি সংকলন করে বলেন,

قَالَ: هَذَا حَدِيثٌ حَسَنٌ صَحِيحٌ وَسَأَلْتُ مُحَمَّد ابْن إِسْمَاعِيل عَن هَذَا الحَدِيث فَقَالَ: هَذَا حَدِيث صَحِيح

-“এ হাদিসটি হাসান, সহীহ। আমি ইমাম বুখারী (رحمة الله) কে এ হাদিসের বিষয়ে জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন, এ হাদিসটি সহীহ।’’ ১১৭

১১৭. ইমাম তিরমিযী, আস্-সুনান: ৫/৩৪৩ পৃ. হাদিস: ৪২৩৫

❏ ইমাম দায়লামী (رحمة الله) হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (رضي الله عنه) হতে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, রাসূল (ﷺ) ইরশাদ করেন,

رَأَيْت رَبِّي عزوجل لَيْسَ كمثله شَيْء

-“আমি আমার রব আল্লাহ্ তা‘য়ালাকে দেখেছি, তবে তাঁর সাথে কোন সাদৃশ্য/তুলনা নেই।’’ ১১৮

১১৮. দায়লামী, আল-ফিরদাউস, ২/২৫৪ পৃ. হাদিস: ৩১৮৩

❏ ইমাম শায়বানী (رحمة الله) সংকলন করেন-

عَنِ الشَّعْبِيِّ، عَنْ عِكْرِمَةَ، عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ، قَالَ: رَأَى مُحَمَّدٌ رَبَّهُ

-“তাবেয়ী ইমাম শা‘বী (رحمة الله), হযরত ইকরামা (رحمة الله) থেকে তিনি হযরত ইবনে আব্বাস (رضي الله عنه) হতে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, হযরত মুহাম্মাদ (ﷺ) তাঁর রব তা‘য়ালাকে দেখেছেন। ১১৯

১১৯.ইমাম শায়বানী, আস্-সুন্নাহ, ১/১৮৯ পৃ. হা/৪৩৫, মাকতুবাতুল ইসলামী, বয়রুত, লেবানন।

● ইমাম আসেম (ওফাত ২৮৭ হি.) হাদিসটি বর্ণনা করে বলেছেন, হাদিসটি ইমাম বুখারীর শর্তের উপর মওকুফ সূত্রে সহীহ।

❏ ইমাম আবি আছেম (رحمة الله) আরেকটি সূত্র বর্ণনা করেছেন এভাবে,

عَنِ الْحَكَمِ بْنِ أَبَانَ، عَنْ عِكْرِمَةَ، عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ، قَالَ: رَأَى مُحَمَّدٌ رَبَّهُ

-“হাকাম বিন আবান (رحمة الله) তিনি ইকরামা (رضي الله عنه) থেকে তিনি হযরত ইবনে আব্বাস (رضي الله عنه) থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, হযরত মুহাম্মদ (ﷺ) তাঁর রবকে দেখেছেন।’’ ১২০

১২০. ইমাম আবি আছেম, আস্-সুন্নাহ, ১/১৯০ পৃ. হাদিস: ৪৩৭

❏ ইমাম তিরমিযি (رحمة الله)সহ আরও অনেকে সংকলন করেন-

-عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ، قَالَ: رَأَى مُحَمَّدٌ رَبَّهُ،

-“ইমাম ইকরামা (رحمة الله) তিনি ইবনে আব্বাস (رضي الله عنه) হতে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন হযরত মুহাম্মাদ (ﷺ) তাঁর রব তা‘য়ালাকে দেখেছেন।’’ ১২১

● ইমাম তিরমিযী (رحمة الله) তার গ্রন্থে হাদিসটিকে ‘হাসান’ বলেছেন।

১২১. তিরমিযী, আস্-সুনান, কিতাবুত-তাফাসির, সূরা নাযম, ৫/৩৯৫ পৃ. হাদিস:৩২৭৯, শায়বানী, আস্-সুন্নাহ, ১/১৮৮ পৃ. হা/৪৩৩, ইবনে কাসীর, জামিউল মাসানীদ, ৩১/৮৭৮২ পৃ. হা/২১৪৬, দারুল ফিকর, বায়হাকী, কিতাবুল আসমা ও ছিফাত, ২/১৯০ পৃ-১৯১ পৃ. মুজাহিদ, তাফসীর, ২/৬২৮ পৃ. মাকতাবায়ে মানসূরাত আল ইলমিয়্যাহ, বয়রুত, লেবানন।

❏ ইমাম সুয়ূতি (رحمة الله)সহ আরও অনেকে সংকলন করেন-

وَأخرج الطَّبَرَانِيّ فِي الاوسط بِسَنَد صَحِيح عَن ابْن عَبَّاس انه كَانَ يَقُول ان مُحَمَّدًا صلى الله عَلَيْهِ وَسلم رأى ربه مرَّتَيْنِ مرّة ببصره وَمرَّة بفؤاده-

-‘‘ইমাম সুয়ূতি (رحمة الله) তাবরানীর মু‘জামুল আওসাতের সূত্রে সহীহ সনদে ইবনে আব্বাস (رضي الله عنه) হতে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, নিশ্চয়ই হযরত মুহাম্মদ (ﷺ) তাঁর রবকে দুইবার দেখেছেন। একবার চর্ম চোখে, আরেকবার অন্তর চোখে।’’ ১২২

১২২. ইমাম সূয়তি, খাসায়েসুল কোবরা, ১/২৮৬ পৃ. হা/৯১২, হায়সামী, মাযমাউদ যাওয়াইদ, ১/৭৮ পৃ.

❏ ইমাম আহমদ (رحمة الله)সহ আরও অনেকে সংকলন করেন, হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত।

 عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ ؓ، أَنَّ النَّبِيَّ ﷺ قَالَ: أَتَانِي رَبِّي عَزَّ وَجَلَّ اللَّيْلَةَ فِي أَحْسَنِ صُورَةٍ

-“তিনি বলেন, নিশ্চয় রাসূল (ﷺ) বলেছেন, মহান রব এক রাতে উত্তম আকৃতিতে আমার নিকট আগমন করেছিলেন।’’ ১২৩

১২৩.ইমাম আহমাদ, আল-মুসনাদ, ১/৩৬৮ পৃ. হা/৩৪৮৪, ৪/৬৬ পৃ. হাদিস:২২১৬২, ৫/২৪৩ পৃ. হা/২৩২৫৮, তাবরানী, মু‘জামুল কাবীর, ৮/২৯০ পৃ. হা/৮১১৭

❏ ইমাম সুয়ূতি (رحمة الله) মুসনাদে বায্যারের সুত্রে বর্ণনা করেন-

حَدَّثنا شعبة، عَن قَتادة، عَن أَنَس ؓ؛ أَن مُحَمَّدًا ﷺ رَأَى رَبَّهُ تَبَارَكَ وَتَعَالَى-

-‘‘তাবেয়ী হযরত কাতাদা (رحمة الله) খাদেমুর রাসূল (ﷺ) হযরত আনাস বিন মালিক (رضي الله عنه) হতে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, নিশ্চয়ই রাসূল (ﷺ) তাঁর রব তাবারাকা ওয়া তা‘য়ালা কে দিখেছেন।’’ ’’১২৪

১২৪. ইমাম সুয়ূতি, খাসায়েসুল কোবরা, ১/২৫৯ পৃ. মুসনাদে বায্যার, ১৩/৪২৬ পৃ. হাদিস:৭১৬৫

❏ ইমাম বায্যার (رحمة الله) হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (رضي الله عنه) হতে এ বিষয়ে আরেকটি হাদিস সংকলন করেন এই সনদে,

حَدَّثنا سُفيان، عَن ابْنِ جُرَيج، عَن عَطَاءٍ، عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ، رَضِي اللَّهُ عَنْهُمَا، أَنَّ مُحَمَّدًا صَلَّى الله عَلَيه وَسَلَّم رَأَى رَبَّهُ

-“তিনি বলেন, নিশ্চয় হযরত মুহাম্মদ (ﷺ) তাঁর রবকে দেখেছেন।’’ ১২৫

১২৫. মুসনাদে বায্যার, ১১/৩৬১ পৃ. হা/৫১৮৫

● এ বিষয়ে অনুরূপ শব্দে হযরত আবু উমামা (رضي الله عنه) হতে এবং হযরত জাবের বিন সামুরা (رضي الله عنه) হতেও আরেকটি বর্ণনা রয়েছে। ১২৬

১২৬.তাবরানি, মু‘জামুল কাবীর, ২০/১০৯ পৃ. হাদিস:২১৬, রূহানি, আল-মুসনাদ, ২/২৯৯ পৃ. হা/২৬০৮, ইমাম আবূ ই‘য়ালা, আল-মুসনাদ, ৪/৪৭৫ পৃ. হা/২৬০৮, শায়বানী, আহাদিসুল মাসানী, ৫/৪৯ পৃ. হা/২৫৮৫, হুমায়দী, আল-মুসনাদ: ১/২২৮ পৃ. হা/৬৮২, আবি আসেম, আস্-সুন্নাহ, ১/২০৩ পৃ. হা/৪৬৫, হাকেম তিরমিযী, নাওয়াদিরুল উসূল, ৩/১২০পৃ.

❏ তাই আল্লামা মোল্লা আলী ক্বারী (رحمة الله) এ সকল হাদিসের ব্যাখ্যায় লিখেছিলেন,

كَمَا أَنَّ النَّبِيَّ - عَلَيْهِ الصَّلَاةُ وَالسَّلَامُ - رَآهُ فِي الدُّنْيَا لِانْقِلَابِهِ نُورًا

-“নবীজি (ﷺ) এই জগতেই আল্লাহ্ তা‘য়ালাকে দেখেছেন, কেননা তিনি নিজেই নূরে পরিনত হয়েছিলেন।’’ ১২৭

১২৭. মোল্লা আলী ক্বারী, মিরকাতুল মাফাতিহ, ঈমান বিল ক্বদর, ১/২৬৬ পৃ. হা/৯১

❏ ইমাম কাযি আয়্যায (رحمة الله) সংকলন করেন-

وَحَكَاهُ أَبُو عُمَرَ الطَّلَمَنْكِيُّ عَنْ عِكْرِمَةَ ● وَحَكَى بَعْضُ الْمُتَكَلِّمِينَ هَذَا الْمَذْهَبَ عَنِ ابْنِ مَسْعُودٍ  

-“আবু উমারা আত্-তালামানকি (رحمة الله), হযরত ইকরামা (رحمة الله) থেকে অনুরূপ বর্ণনা করেছেন আর একদল কালাম শাস্ত্রবিদ ও বিশিষ্ট সাহাবী হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ (رضي الله عنه) এর অভিমত হলো রাসূল (ﷺ) আল্লাহ্ তা‘য়ালাকে দেখেছেন।’’ ১২৮

১২৮.

ক. ইমাম কাজী আয়াজ : শিফা শরীফ : ১/১১৯ পৃ.

খ. আল্লামা মোল্লা আলী ক্বারী : শরহে শিফা : ১/৪৬৮ পৃ.

❏ ইমাম কাযি আয়্যায (رحمة الله) সংকলন করেন-

وَحَكَى ابْنُ إِسْحَاقَ أَنَّ مَرْوَانَ سَألَ أَبَا هُرَيْرَةَ هَلْ رَأَى مُحَمَّدٌ رَبَّهُ فَقَالَ نَعَمْ-

-“ইমাম ইবনে ইসহাক (رحمة الله) বর্ণনা করেন, মারওয়ান সে হযরত আবু হুরায়রা (رضي الله عنه) কে জিজ্ঞাসা করলেন, রাসূল (ﷺ) কী আল্লাহ্ তা‘য়ালাকে দেখেছেন? তিনি বললেন, হ্যাঁ।’’ ১২৯

১২৯.

ক. আল্লামা ইমাম কাজী আয়াজ : শিফা শরীফ : ১/১১৯ পৃ.

খ. আল্লামা মোল্লা আলী ক্বারী : শরহে শিফা : ১/৪২৮ পৃ.

❏ আল্লামা মোল্লা আলী ক্বারী (رحمة الله) সংকলন করেন-

رواه الحاكم والنسائي والطبراني أن ابن عباس قال تقوية لقوله إنه رأى ربه بعينه-

-‘‘ইমাম হাকিম (رحمة الله) তার মুস্তাদরাকে, ইমাম তাবরানী, ইমাম নাসায়ী তাদের স্ব-স্ব গ্রন্থে শক্তিশালী সনদে হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (رضي الله عنه) হতে বর্ণনা করেছেন, তিনি বলেন, রাসূল (ﷺ) আল্লাহ্ তা‘য়ালাকে স্বীয় চর্ম চোখে দেখেছেন।’’ ১৩০

১৩০.

ক. আল্লামা মোল্লা আলী ক্বারী : শরহে শিফা : ১/৪২৪ পৃ.

খ. আল্লামা শায়খ ইউসুফ নাবহানী : জাওয়াহিরুল বিহার : ৩/৩২২ পৃ.

❏ ইমাম কাযি আয়্যায (رحمة الله) সংকলন করেন-

ذَكَرَ ابْنُ إِسْحَاقَ أَنَّ ابْنَ عُمَرَ أَرْسَلَ إِلَى ابْنِ عَبَّاسٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمَا يَسْأَلُهُ هَلْ رَأَى مُحَمَّدٌ رَبَّهُ فَقَالَ نَعَمْ وَالْأشْهَرُ عَنْهُ أَنَّهُ رَأَى رَبَّهُ بِعَيْنِهِ رُوِيَ ذَلِكَ عَنْهُ مِنْ طُرُقٍ وَقَالَ إِنَّ اللَّهَ تَعَالَى اخْتَصَّ مُوسَى بِالْكَلامِ وَإبْرَاهِيمَ بِالْخُلَّةِ وَمُحَمَّدًا بِالرُّؤْيَةِ-

-“হযরত ইবনে ইসহাক (رضي الله عنه) উল্লেখ করেন, হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে উমর (رضي الله عنه) একবার কোন একজনকে হযরত ইবনে আব্বাস (رضي الله عنه) এ নিকট জানতে চেয়ে প্রেরণ করেছিলেন যে, হুযূর (ﷺ) কি আল্লাহ্ তা‘য়ালাকে দেখেছিলেন কিনা বিষয়ে। ইবনে আব্বাস (رضي الله عنه) বলেছিলেন, হ্যাঁ। তার চেয়ে অতি প্রসিদ্ধ কথা হলো যে, হুযূর (ﷺ) তার চর্ম চক্ষে প্রভুর দর্শন লাভ করেছেন। এ কথা বিভিন্ন ভাবে বর্ণিত হয়েছে। আরও বলেন, আল্লাহ্ তা‘য়ালা হযরত মূসা (عليه السلام) কে তাঁর সাথে কথা বলার মর্যাদা দান করেছেন। আর হযরত ইবরাহীম (عليه السلام) কে খলীল বানিয়েছেন। আর হযরত মুহাম্মদ (ﷺ) কে আল্লাহ্ তা‘য়ালার দর্শন লাভের মর্যাদা দান করেছেন।’’ ১৩১

১৩১.

ক. ইমাম কাজী আয়াজ : শিফা শরীফ : ১/১১৯ পৃ.

খ. আল্লামা মোল্লা আলী ক্বারী : শরহে শিফা, ১/৪২৪ পৃ.

❏ ইমাম সুয়ূতি (رحمة الله) সংকলন করেন-

إِواخرجه الْبَيْهَقِيّ فِي كتاب الرُّؤْيَة بِلَفْظ ان الله اصْطفى إِبْرَاهِيم بالخلة وَاصْطفى مُوسَى بالْكلَام وَاصْطفى مُحَمَّدًا بِالرُّؤْيَةِ

-“ইমাম বায়হাকী (رحمة الله) ‘কিতাবুল রুয়া’তে বর্ণনা করেন হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (رضي الله عنه) বলেন, আল্লাহ্ তা‘য়ালা ইবরাহীম (عليه السلام) কে বন্ধুত্ব, মূসা (عليه السلام) কে আলাপ এবং মুহাম্মদ (ﷺ) কে তাঁর দীদার দ্বারা একক মর্যাদা দান করেছেন।’’ ১৩২

১৩২.

ক. ইমাম কাজী আয়াজ : শিফা শরীফ, ২/২৭০ পৃ.

খ. ইমাম জালালুদ্দীন সূয়তী : খাসায়েসুল কোবরা, ১/১৬১ পৃ.

গ. আল্লামা ইমাম জুরকানী : শরহে মাওয়াহেব, ৫/১১৭ পৃ.

ঘ. আল্লামা মোল্লা আলী ক্বারী : শরহে শিফা, ১/৪৭০ পৃ.

এ বিষয়ে আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতের আক্বিদা:

এবার আমরা এ বিষয়ে আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতের আকায়েদবিদগণ কি বলেছেন। আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতের আকায়েদের ইমামের অভিমতঃ

❏ ইমাম কাযি আয্যায (رحمة الله) তুলে ধরেন এভাবে-

وَقَالَ أَبُو الْحَسَنِ عَلِيُّ بْنُ إِسْمَاعِيل الْأَشْعَرِي رَضِيَ اللَّه عَنْهُ وَجَمَاعَةٌ مِنْ أَصْحَابِهِ أنَّهُ رَأَى اللَّه تعالى ببصره وعيسى رَأسِهِ وَقَالَ كُلّ آيةٍ أُوتِيهَا نَبِيّ مِنَ الْأَنْبِيَاءِ عَلَيْهِمُ السَّلَامُ فَقَدْ أُوتِي مِثْلَهَا نَبِيُّنا صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَخُصَّ مِنْ بَيْنِهِمْ بِتَفْضِيلِ الرُّؤْيَةِ-

-“আহলে সুন্নাত ওয়াল জামায়াতের আকায়েদের ইমাম আবুল হাসান আলী আশ‘আরী (رحمة الله) ও তাঁর এক জামাত সঙ্গীসাথী বলেন, হুযূর (ﷺ) আল্লাহ্ তা‘য়ালাকে চর্ম চোখে অবলোকন করেছেন। তাঁরা আরও বলেন, অন্যান্য আম্বিয়ায়ে কেরামকে যত মু‘জিজা দেওয়া হয়েছে অনুরূপ মু‘যিজা হুযূর (ﷺ) কে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু হুযূর (ﷺ) কে খাস মু‘যিজা দিদারে এলাহী দিয়ে সকলের অগ্রবর্তী করেছেন।’’ ১৩৩

১৩৩.

ক. আল্লামা কাজী আয়াজ : শিফা শরীফ : ১/১১৮ পৃ.

খ. আল্লামা মোল্লা আলী ক্বারী : শরহে শিফা : ১/৪২৯ পৃ.

যারা এখন এর বিপরীত অভিমত পেশ করেন, নিঃসন্দেহে তারা আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতের বহির্ভূত।

❏ ইমাম কাযি আয়্যায (رحمة الله) বলেন-

قَالَ الْقَاضِي أَبُو الْفَضْلِ وَفَّقَهُ اللَّهُ: والحق الذي لا امتراءالحق الذى لا امتراء فيه ان فِيهِ أَنَّ رُؤْيَتَهُ تَعَالَى فِي الدُّنْيَا جَائِزَةٌ عَقْلًا. وَلَيْسَ فِي الْعَقْلِ مَا يُحِيلُهَا-

-“ইমাম কাযী আবুল ফজল আয়াজ (رحمة الله) তিনি বলেন, সত্য কথা হলো আকলের দিক থেকে এ বিষয়ে সন্দেহ পোষণ করার কোন অবকাশ নেই যে, দুনিয়াতে তিনি আল্লাহর দীদার লাভ করেছেন। আর আকলের দিক থেকে বিরূপ কোন প্রমাণও নেই যে, এরূপ হওয়া অসম্ভব।’’ ১৩৪

১৩৪.

ক. আল্লামা কাজী আয়াজ : শিফা শরীফ : ১/১১৮ পৃ.

খ. আল্লামা মোল্লা আলী ক্বারী : শরহে শিফা : ১/৪২৯ পৃ.

❏ আল্লামা মোল্লা আলী ক্বারী (رحمة الله) লিখেন-

وقال الغزالي في الإحياء والصحيح أن رسول الله صلى الله تعالى عليه وسلم رأى الله تعالى ليلة المعراج-

-“ইমাম গায্যালী (رحمة الله) ‘ইহইয়াউল উলূমে’ বলেন, বিশুদ্ধ অভিমত হলো, মি‘রাজের রজনীতে রাসূল (ﷺ) আল্লাহ্ তা‘য়ালাকে দেখেছেন।’’ ১৩৫

১৩৫. আল্লামা মোল্লা আলী ক্বারী : শরহে শিফা : ১/৪২৩ পৃ.

❏ আল্লামা জুরকানী (رحمة الله) লিখেন-

قال النووى عند اكثر العلماء انه صلى الله عليه وسلم رأى ربه بعينى رأسه ليلة المعراج الاسراء-

-“ইমাম নববী (رحمة الله) বলেন, অধিকাংশ ওলামার নিকট এই মতই প্রাধান্য পেয়েছে যে, নবী করীম (ﷺ) মি‘রাজের রজনীতে স্বীয় প্রতিপালককে তাঁর কপালের চোখ দ্বারা দেখছেন।’’ ১৩৬

১৩৬.

ক. আল্লামা ইমাম জুরকানী : শরহে মাওয়াহেব : ৬/১১৬ পৃ.

খ. আল্লামা মোল্লা আলী ক্বারী : শরহে শিফা : ১/৪২৫ পৃ.

গ. আল্লামা ইমাম নববী : শরহে মুসলিম : ১ম খণ্ড

ঘ. আল্লামা শায়খ ইউসুফ নাবহানী, জাওয়াহিরুল বিহার : ৩/৩২২ পৃ.

একটি আপত্তি ও নিষ্পত্তি:

তথাকথিত আহলে হাদিসগণ দাবী করে যে, তাবেয়ী মাসরুক (رحمة الله) হযরত আয়েশা (رضي الله عنه) কে-

هَل رَأَى مُحَمَّدٌ رَبَّهُ؟

-‘‘মুহাম্মদ (ﷺ) কি তাঁর রবকে দেখেছেন?’ এর উত্তরে মা আয়েশা (رضي الله عنه) অস্বীকার করেছিলেন।’’ ১৩৭

১৩৭. খতিব তিবরিযি, মিশকাত, হা/৫৬৬১, পরিচ্ছেদ: بَاب رؤيةالله تَعَالَى

আর তাই আহলে হাদিসগণ বলে থাকেন রাসূল (ﷺ) আল্লাহ তা‘য়ালা কে দেখেননি।

পর্যালোচনা:

আহলে সুন্নাত ওয়াল জামায়াতের ইমামগণ বলেছেন, হযরত আয়েশা (رضي الله عنه) এর নিজস্ব মতামত। আর রাসূল (ﷺ) এর মারফূ সহীহ হাদিসের মুকাবেলায় নিজস্ব সাহাবীর কিয়াস মতামত গ্রহণযোগ্য নয়।

❏ হযরত আয়েশা (رضي الله عنه) হাদিসের ব্যাখ্যায় বিশ্ববিখ্যাত মুহাদ্দিস ইমাম কাযি আয়াজ (رحمة الله) শিফা শরীফে উল্লেখ করেন,

وَكَانَتْ عَائِشَةُ فِي الْهِجْرَةِ بِنْتَ نَحْوِ ثَمَانِيَةِ أَعْوَامٍ وَقَدْ قِيلَ كَانَ الْإِسْرَاءُ لِخَمْسٍ قَبْلَ الْهِجْرَةِ وَقِيلَ قَبْلَ الْهِجْرَةِ بِعَامٍ وَالْأَشْبَهُ أَنَّهُ لِخَمْسٍ وَالْحُجَّةُ لِذَلِكَ تَطُولُ لَيْسَتْ مِنْ غَرَضِنَا فَإِذَا لَمْ تُشَاهِدْ ذَلِكَ عَائِشَةُ دَلَّ أَنَّهَا حَدَّثَتْ بِذَلِكَ عَنْ غَيْرِهَا فَلَمْ يُرَجَّحْ خَبَرُهَا عَلَى خَبَرِ غَيْرِهَا وَغَيْرُهَا يَقُولُ خِلافَهُ مِمَّا وقع نضأ فِي حَدِيثِ أُمِّ هَانِئٍ وَغَيْرِهِ -

-“হিজরতের সময় হযরত আয়েশা (رضي الله عنه) এর বয়স ছিল আট বছর। কোনো কোনো ঐতিহাসিক বলেন, হিজরতের পাঁচ বছর পূর্বে মি‘রাজ হয়েছে। আবার কেউ কেউ বলেন, একবছর পূর্বে হয়েছিল। কিন্তু নির্ভরযোগ্য বর্ণনা হলো এটা হিজরতের পাঁচ বছর পূর্বে (মি‘রাজ) সংঘঠিত হয়েছিল। আর এর বিষয়টি অতি দীর্ঘ। তাঁর উল্লেখ করা আমার উদ্দেশ্য নয়। সুতরাং এ কথা প্রমাণিত হয়েছে যে, হযরত আয়েশা (رضي الله عنه) নিজে মি‘রাজের ঘটনার সময় উপস্থিত ছিলেন না। বরং তিনি অন্য কারো নিকট থেকে শুনে বর্ণনা করেছেন, সুতরাং তাঁর বর্ণনাকে যিনি মি‘রাজের বর্ণনা নিজে হুযূর (ﷺ) এর কাছ থেকে শুনেছেন তার বর্ণনার উপর প্রাধান্য দেওয়া যাবে না, যেমন হযরত উম্মে হানী (رضي الله عنه)ও অন্যান্যদের বর্ণনা। যা তাঁর {হযরত আয়েশা (رضي الله عنه)} বর্ণনার বিপরীত।’’ ১৩৮

১৩৮.

ক. ইমাম কাজী আয়াজ : শিফা শরীফ : ১/১৩৫ : পৃ:

খ. আল্লামা মোল্লা আলী ক্বারী : শরহে শিফা : ১/৪২৮ ,

গ. আল্লামা শিহাবুদ্দিন খিফ্ফাজী : নাসীমুর রিয়াদ্ব - ১/২৪০ পৃ

❏ এ বিষয়ে সমাধান তুলে ধরেন বিখ্যাত হাদিসের ব্যাখ্যাকারী ইমাম নববী (رحمة الله) এভাবে-

فَالْحَاصِلُ أَنَّ الرَّاجِحَ عِنْدَ أَكْثَرِ الْعُلَمَاءِ إن رسول الله صلى الله عليه وسلم رَأَى رَبَّهُ بِعَيْنَيْ رَأْسِهِ لَيْلَةَ الْإِسْرَاءِ لِحَدِيثِ بن عَبَّاسٍ وَغَيْرِهِ مِمَّا تَقَدَّمَ وَإِثْبَاتُ هَذَا لَا يَأْخُذُونَهُ إِلَّا بِالسَّمَاعِ مِنْ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ

-‘‘পরিশেষে বলা যায়, অধিকাংশ উলামার নিকট এই মতই প্রাধান্য পেয়েছে যে, নাবী কারীম (ﷺ) মি‘রাজের রজনীতে স্বীয় প্রতিপালককে তাঁর কপালের চোখ দ্বারা দেখছেন। যেমনটি হযরত আব্দুল্লাহ ইবনু আব্বাস (رضي الله عنه)সহ অন্যান্যের বর্ণনা দ্বারা প্রমাণিত হয়েছে। এই বিষয়ে যারা (সাহাবীরা) রাসূল (ﷺ) হতে মি‘রাজের সময় (মি‘রাজের ঘটনা) শ্রবণ করেছেন কেবল তাদের অভিমত ছাড়া বাকি অভিমত (যেমন মা আয়েশার অভিমত; কেননা তিনি তখন খুব ছোট ছিলেন) গ্রহণ করা হবে না।’’১৩৯

১৩৯. ইমাম নববী : শরহে মুসলিম : ৩/৫ পৃ. দারু ইহ্ইয়াউত তুরাসুল আরাবী, বয়রুত, লেবানন, ইমাম জুরকানী : শরহে মাওয়াহেব : ৬/১১৬ পৃ. মোল্লা আলী ক্বারী : শরহে শিফা : ১/৪২৫ পৃ., শায়খ ইউসুফ নাবহানী, যাওয়াহিরুল বিহার : ৩/৩২২ পৃ.

সম্মানিত পাঠকবৃন্দ! মি‘রাজের বিষয়ে দুই প্রকারের হাদিসের ব্যাখায় ইমাম নববী (رحمة الله) যা বলেছেন তাই চূড়ান্ত কথা।

বিষয় নং-০৯: হযরত আয়েশা (رضي الله عنه) এর হারানো সুঁই ফিরে পাওয়া:

মাওলানা মুতীউর রহমান ‘এসব হাদীস নয়’ লিখিত কিতাবের ১৬১ পৃষ্ঠায় লিখা হয়েছে যে, ‘একবার রাসূল (ﷺ) এর সঙ্গে হযরত আয়েশা (رضي الله عنه) রাতের আঁধারে তাঁর বিছানায় ছিলেন। আম্মাজান আয়েশা (رضي الله عنه)-এর হাত থেকে একটি সুঁই পড়ে গেলে খোঁজাখুঁজির পরও তা পাচ্ছিলেন না। এমন সময় রাসূলুল্লাহ (ﷺ) হেসে উঠলে তাঁর দাঁতের নূরের ঝলকে পুরো কামরা আলোকিত হয়ে যায়। ফলে হযরত আয়েশা সিদ্দীকা (رضي الله عنه) সে নূরে তাঁর সুঁইটির সন্ধান পান।’’

সম্মানিত পাঠকবৃন্দ! এ ঘটনাটি বানানো তাতে কোনো সন্দেহ নেই, মূল কিতাবে কিরূপ আছে তা উল্লেখ করলেই বুঝতে পারবেন এখানে কি কি জালিয়াতি করা হয়েছে। এ জালিয়াতি বর্ণনা ড. আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীর তার ‘হাদীসের নামে জালিয়াতি’ গ্রন্থের ৩১৯ পৃষ্ঠায় এবং মাওলানা জুনায়েদ বাবুনগরী (সম্পাদিত) ‘প্রচলিত জাল হাদীস’ গ্রন্থের ১৬৮ পৃষ্ঠায় হুবহু সংকলন করেছে।

প্রিয় পাঠক! বিশুদ্ধ বর্ণনাগুলো উল্লেখ করলেই বুঝতে পারবেন যে, তাদের বর্ণনায় কত মিথ্যার আশ্রয় এবং শব্দ পরিবর্তন করা হয়েছে। হাদিসে আছে, রাসূল (ﷺ) আয়েশা (رضي الله عنه) এর সাথে ছিলেন না অথচ তারা লিখেছেন- مع الرسول রাসূল (ﷺ) তাঁর সাথে ছিলেন, এটা এক জঘণ্য মিথ্যাচার। অথচ যেই কিতাবের বরাত দিয়েছেন সেই ‘আছারুল মারফুআ’ নামক কিতাবে এ কথাটি নেই। অপর মিথ্যা বর্ণনাটি হল-

فَضَحِكَ النَّبِيُّ ﷺ وَخَرَجَتْ لَمْعَةُ أَسْنَانِهِ فَأَضَاءَتِ الْحُجْرَةَ

 -“রাসূল (ﷺ) এমন সময় হেসে উঠলেন তাঁর দাঁতের নূরের ঝলকে (সুই খুঁজে পেলেন) ঘর আলোকিত হয়ে গেল।” মিথ্যাবাদীর প্রতি আল্লাহর লানত! দেখুন, তারা নিজেরাই জাল হাদিস তৈরি করে আবার নিজেরাই জাল বলে বই বের করে টাকা উপার্জনের জন্য।

এবার আমরা এ বিষয়ক হাদিসটি গ্রহণযোগ্য কিতাবের আলোকে নিম্নে উপস্থাপন করার চেষ্টা করবো, ইনশা-আল্লাহ।

❏ ইমাম ইবনে আসাকীর, সুয়ূতি (رحمة الله)সহ এক জামাত ইমামগণ সংকলন করেন-

......عن محمد بن إسحاق بن يسار عن يزيد بن رومان وصالح بن كيسان عن عروة بن الزبير عن عائشة قَالَت كنت أخيط فِي السحر فَسَقَطت مني الابرة فطلبتها فَلم أقدر عَلَيْهَا فَدخل رَسُول الله ﷺ فتبينت الإبرة بشعاع نور وَجهه فَأَخْبَرته فَقَالَ يَا حميراء الويل ثمَّ الويل ثَلَاثًا لمن حرم النّظر إِلَى وَجْهي

-‘‘......বিখ্যাত সিরাতবিদ, ইমামুল মাগাজী, ইমাম মুহাম্মদ বিন ইসহাক বিন ইয়াসার (رحمة الله) তার দুই মহান উস্তাদ হযরত ইয়াযিদ ইবনে রুমান এবং ছালেহ ইবনে কায়সান (رحمة الله) হতে বর্ণনা করেন, তাঁরা হযরত উরওয়া ইবনে যুবায়ের (رضي الله عنه) হতে বর্ণনা করেন, তিনি হযরত আয়েশা (رضي الله عنه) হতে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, আমি শেষ রাতে সেহেরির সময় কাপড় সেলাই করছিলাম। হঠাৎ আমার হাত থেকে সুঁই পড়ে গেল। অনেক খোঁজাখুঁজির পরও সেটি পাওয়া গেল না। অতপর রাসূলুল্লাহ (ﷺ) আগমন করলে তাঁর মুখমন্ডলের নূরের আলোতে সেই সুঁইটি দৃষ্টিগোচর হয়। আমি রাসূল (ﷺ) কে এ সংবাদ দিলে তিনি বললেন, হে হুমায়রা! যে আমার চেহারা মুবারকের দিদার থেকে বঞ্চিত। তার জন্য আফসোস, একথাটি তিনি তিনবার বলেছিলেন।’’ ১৪০

১৪০.ইমাম জালালুদ্দীন সুয়ূতি: খাসায়েসুল কুবরা: ১/১১১ পৃ., হা/২৮৭, ইমাম ইবনে আসাকীর: তারীখে দামেস্ক: ৩/৩১০ পৃ., আল্লামা শায়খ ইউসুফ নাবহানী: হুজ্জাতুল্লাহি আলাল আলামীন: ৬৬৩ পৃ., আল্লামা ইবনে হাজার আসকালানী: লিসানুল মিযান: ৩/৩৪৪ পৃ ও ৬/৬৯০ পৃ., আবূ সা‘দ নিশাপুরী, শরফে মোস্তফা, ২/১০৩ পৃ., আবূ নুয়াইম ইস্পাহানী, দালায়েলুল নুবুয়ত, ১/১১৩ পৃ. দারূল কুতুব ইলমিয়্যাহ, বয়রুত, ইবনে সালেহ শামী, সবলুল হুদা ওয়ার রাশাদ, ২/৪০ পৃ., ইফরাকী, মুকতাসারে তারিখে দামেস্ক, ২/৭৪ পৃ. মুত্তাকী হিন্দী, কানযুল উম্মাল, ১১/৪৫৩ পৃ. হা/৩২১৩১ ও ১২/৪২৯ পৃ. হা/৩৫৪৯২

পর্যালোচনা:

সম্মানিত পাঠকবৃন্দ! সনদসহ এ ঘটনাটি তাদের চোখে পড়লো না, পড়লো নিজেদের এক মৌলভী আব্দুল হাই লাখনৌভীর বানানো ঘটনাটি।

❏ দশম শতাব্দীর মুজাদ্দিদ, বিশ্ববিখ্যাত মুহাদ্দিস আল্লামা মোল্লা আলী ক্বারী (رحمة الله) শরহে শিফায় উল্লেখ করেন-

ودليله قول عائشة رضي الله تعالى عنها كنت أدخل الخيط في الإبرة حال الظلمة لبياض رسول الله ﷺ

-‘‘এ বিষয়ে দলিল হলো হযরত আয়েশা (رضي الله عنه)-এর বক্তব্য আমি অন্ধকার রাতে হুযূর পুরনুর (ﷺ) এর নূরানী জ্যোতিতে সুঁইয়ের মধ্যে সুতা প্রবেশ করাতাম।’’ ১৪১

১৪১. মোল্লা আলী ক্বারী, শরহে শিফা : ১/১৫৯ পৃ., দারুল ফিকর ইলমিয়্যাহ, বয়রুত, লেবানন।

❏ ইমাম আবু সা‘দ খরকুশী নিশাপুরী (ওফাত. ৪০৬ হি.) এবং ইমাম ইবনে হাজার আসকালানী (رحمة الله) সংকলন করেন-

روي أن عائشة رضي الله عنها كانت تخيط ثوبا في وقت السحر، فضلّت الإبرة وطفىء السراج، فدخل عليها النبي ﷺ فأضاء البيت، ووجدت عائشة الإبرة بضوئه، فضحكت، ثم قال النبي ﷺ: ويل لمن لا يراني يوم القيامة، قالت عائشة: ومن لا يراك يا رسول الله؟ قال: البخيل، قالت: ومن البخيل؟ قال: الذي لا يصلي عليّ إذا سمع اسمي.

-‘‘উম্মুল মুমিনীন হযরত আয়েশা (رضي الله عنه) সাহরীর সময় কিছু সেলাই করছিলাম। তার সূঁইটি পড়ে গেল। চেরাগও নিভে গেল। তখন নবী করীম (ﷺ) তাশরীফ আনলেন। ঐ সময় হুযূর-ই-আনওয়ার (ﷺ)-এর চেহারা মুবারকের নূরের আলোয় পুরো ঘরটি আলোকিত হয়ে গেল। অতঃপর আমি সুঁইটি পেয়ে গেলাম। তারপর হযরত আয়েশা (رضي الله عنه) আরজ করলেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ (ﷺ)! আপনার চেহারা মোবারক কতই উজ্জ্বল। তখন হুযূর ফরমান, ধ্বংস হোক ওই ব্যক্তি যে কিয়ামতের দিন আমাকে দেখতে পাবে না। মা আয়েশা (رضي الله عنه) আরজ করলেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ (ﷺ)! সে কে? যে আপনাকে দেখতে পাবে না? হুযূর (ﷺ) ইরশাদ করলেন, কৃপণ ব্যক্তি। আরজ করলেন, কৃপণ কে? হুযূর (ﷺ) ইরশাদ করলেন, যে ব্যক্তি আমার নাম শুনলো, আর শুনার পর আমার উপর দুরূদ শরীফ পড়ল না।’’১৪২

১৪২.

(ক) ইমাম আবু সা‘দ খরকুশী, শরফুল মোস্তফা, ২/১০৩ পৃ.

(খ) আল্লামা ইবনে হাজার আসকালানী, নুযহাতুন নাযিরীন, পৃ-৪১

❏ আল্লামা মাহদী আল-ফাসী (رحمة الله) তার ‘মাতালিউল মুসাররাত ফি শরহে দালায়েলুল খায়রাত’ কিতাবের ২৫৬ পৃষ্ঠায় ইবনে সাবা (رحمة الله) হতে বর্ণনা করেন,

كان النبى ﷺ يضيئ البيت المظلم من نوره ـ

-‘‘নবী করীম (ﷺ) এর নূরে অন্ধকার ঘর আলোকিত হয়ে যেত।’’

বিষয় নং-১০: রাসূল (ﷺ)‘র চেহরা আনওয়ারের আলোতে অন্ধকার আলোকিত হওয়া:

জনাব মাওলানা মুতীউর রহমান তার ‘এসব হাদীস নয়’ লিখিত কিতাবের ১৬৩ পৃষ্ঠায় উপরের হাদিসকে মিথ্যা প্রমাণ করতে না পেরে সহীহ বুখারীর একটি হাদিসকে অপব্যাখ্যা করে তিনি লিখেছেন, ‘‘বোঝা গেল, রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর উপস্থিতিতেও বাহ্য-আঁধার দূর হওয়ার জন্য দৃশ্য-নূরের (আলোর) প্রয়োজন হত।’’

সম্মানিত পাঠকবৃন্দ! উপরের এ বক্তব্যে তিনি বুঝাতে চেয়েছেন যে, অন্ধকারে রাসূল (ﷺ)-এর সামনে আলো না থাকলে তিনি এবং তার আশে-পাশের লোকেরা কিছুই দেখতে পেতেন না। বাস্তবতা কি তাই!

এখন কোনো অনর্থক কথা নয়, এ বিষয়ের সমর্থনে অর্থাৎ রাসূল (ﷺ) এর চেহরা মোবারক হতে নূর বা আলো প্রকাশিত হতো এ প্রসঙ্গে কতিপয় হাদিসে পাক উল্লেখ করবো, ইনশা আল্লাহ।

❏ অনেক হাদিসের ইমামগণ সংকলন করেন-

عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ قَالَ: وَلَا رَأَيْتُ شَيْئًا أَحْسَنَ مِنْ رَسُولِ اللَّهِ ﷺ كَأَنَّ الشَّمْسَ تَجْرِي فِي وَجْهِهِ، وَمَا رَأَيْتُ أَحَدًا أَسْرَعَ فِي مِشْيَتِهِ مِنْ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ كَأَنَّمَا الْأَرْضُ تُطْوَى لَهُ إِنَّا لَنُجْهِدُ أَنْفُسَنَا وَإِنَّهُ لَغَيْرُ مُكْتَرِثٍ

-‘‘হযরত আবু হুরায়রা (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসূল (ﷺ) এর চেয়ে অধিক সুশ্রী ও সুন্দর কাউকে দেখিনি। মনে হতো যেমন মুখমন্ডল থেকে কিরণ বিচ্ছুরিত হচ্ছে। আমি তাঁর চেয়ে অধিক দ্রুতগতি সম্পন্নও কাউকে দেখিনি। তিনি যখন হাটতেন তখন মনে হত যেন মাটি তাঁর পিছনের দিকে সরে যাচ্ছে (অর্থাৎ খুব দ্রুত গতিতে পথ অতিক্রান্ত হচ্ছে) আমরা তার সঙ্গে হাটলে যথেষ্ট লাফাতে বা দৌঁড়াতে হতো। অথচ তিনি বেশ ধীরে হাটতেন বলে মনে হতো।’’ ১৪৩

১৪৩.

(ক) ইমাম তিরমিযী : আস-সুনান: অধ্যায় কিতাবুল মানাকিব : ৫/৬০৪ পৃ. হা/৩৬৪৮

(খ) ইমাম জালালুদ্দীন সুয়ূতি: খাসায়েসুল কোবরা : ১/১৩২পৃ. হাদিস ৩৭৬

(গ) ইমাম বায়হাকী: দালায়েলুন নবুওয়াত : ১/২৩৮ পৃ.

(ঘ) ইমাম ইবনে সাদ: আত্-তবকাতুল কোবরা: ১/২৮৭ পৃ.ও ১/৩১৮ পৃ.ও ১/৩১৯ পৃ. দারুল কুতুব ইলমিয়্যাহ, বয়রুত, লেবানন

(ঙ) তিরমিযি, শামায়েলে মুহাম্মাদিয়া, ১/৮৬পৃ. হাদিস, ১১৬, দারুল ইহইয়াউত তুরাস আল-আরাবী, বয়রুত, লেবানন

(চ) ইমাম আবু শায়খ ইস্পাহানী, আখলাকুন্নাবী, ৪/৬২ পৃ. হাদিস, ৭৮৬

(ছ) ইমাম বগভী, আল-আনওয়ার ফি শামায়েলুল নাবিয়্যিল মুখতার, ১/৩৫২ পৃ. হাদিস, ৪৬২

(জ) কাযি আয়াজ মালেকী, শিফা শরীফ, ১/১৪৯ পৃ.

(ঝ) কাস্তাল্লানী, মাওয়াহেবে ল্লাদুন্নীয়া, ২/৬ পৃ.

(ঞ) ইমাম আহমদ, আল-মুসনাদ, ২/৩৫০ পৃ. ও ৩৮০ পৃ.(ঠ) ইমাম ইবনে হিব্বান, হাদিস, ৬৩০৯

(ঠ) ইমাম ইবনে সালেহ শামী, সবলুল হুদা ওয়ার রাশাদ, ২/৬ পৃ.

(ড) মোবারকপুরী, আর-রাহিকুল মাখতুম, ১/৪৪২ পৃ. দারুল , হিলাল, বয়রুত, লেবানন।

সনদ গ্রহণযোগ্যতা:

এ হাদিসটির মোট দু‘টি সূত্রে বর্ণিত আছে। কিছু নরকের কিটরা একটি সূত্র বর্ণনা করে অপর আরেকটি গোপন করে।

● তারা ইমাম তিরমিযির যে সূত্রটির দোহাই দেয় তা হলো-

حَدَّثَنَا قُتَيْبَةُ بْنُ سَعِيدٍ قَالَ: حَدَّثَنَا ابْنُ لَهِيعَةَ، عَنْ أَبِي يُونُسَ، عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ

-‘‘এ সনদে ‘ইবনে লাহি‘আহ’ (ওফাত.১৭৪হি.) কিছুটা নরম প্রকৃতির রাবী।’’ ১৪৪

১৪৪. তিরমিযি, শামায়েলে মুহাম্মাদিয়া, ১/৮৬পৃ. হাদিস, ১১৬, দারুল ইহ্ইয়াউত তুরাস আল-আরাবী, বয়রুত, লেবানন।

তাই তাদের দাবি হলো সনদটি দুর্বল। প্রথমত. আমি বলবো এ রাবীর হাদিসের মান ‘হাসান’ পর্যায়ের, সে বিষয়ে সামনে শবেই বরাতের ৭ নং হাদিস পর্যালোচনায় বিস্তারিত আলোকপাত করা হয়েছে। দ্বিতীয়ত. আমি বলবো, এ সনদের অন্যতম রাবি তাবেয়ী আবি ইউনূস এর ছাত্রের মধ্যে ‘ইবনে লাহি‘আহ’ ছাড়াও অন্যরাও হাদিসটি তাঁর থেকে শ্রবণ করেছেন। যেমনঃ

● ইমাম বায়হাকী সংকলন করেছেন সে সনদটি হলো-

رِشْدِينُ بْنُ سَعْدٍ، قَالَ: أَخْبَرَنِي عَمْرُو بْنُ الْحَارِثِ، عَنْ أَبِي يُونُسَ، مَوْلَى أَبِي هُرَيْرَةَ، أَنَّهُ سَمِعَ أَبَا هُرَيْرَةَ،

-‘‘এ সনদে ইবনে লাহি‘আহ রাবীর পরিবর্তে রাবি ‘আমর বিন হারেস রয়েছেন; আর তিনি সিকাহ রাবি তাতে কোন সন্দেহ নেই।’’ ১৪৫

১৪৫.

(ক) বায়হাকী, দালায়েলুল নবুয়ত, , ১/২০৯ পৃ., দারুল কুতুব ইলমিয়্যাহ, বয়রুত, লেবানন

(খ) মুকরিজী, ইমতাউল আসমা, ২/১৫৬ পৃ. দারুল কুতুব ইলমিয়্যাহ, বয়রুত, লেবানন

(গ) জালালুদ্দীন সুয়ূতি, খাসায়েসুল কোবরা, ১/১২৩ পৃ. দারুল কুতুব ইলমিয়্যাহ, বয়রুত, লেবানন।

❏ ইমাম বুখারী (رحمة الله)সহ অনেকে সংকলন করেন-

عن كَعْبَ بْنَ مَالِكٍ قَالَ: وَكَانَ رَسُولُ اللَّهِ ﷺ إِذَا سُرَّ اسْتَنَارَ وَجْهُهُ، حَتَّى كَأَنَّهُ قِطْعَةُ قَمَرٍ، وَكُنَّا نَعْرِفُ ذَلِكَ مِنْهُ

-‘‘হযরত কাব বিন মালেক (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) যখন আনন্দিত হতেন তখন মুখমন্ডল এমন উজ্জল হয়ে যেত, যেন এক খণ্ড চাঁদের চেয়েও সুন্দর। তাঁর এ অভ্যাস সম্পর্কে আমাদের সবারই জানা ছিল।’’ ১৪৬

১৪৬. ইমাম বুখারী : আস-সহীহ : ৪/১৮৯পৃ. হা/৩৫৫৬, ইমাম জালালুদ্দীন সুয়ূতি : খাসায়েসুল কুবরা : ১/১৩১ পৃ. হা/৩৬৯

❏ সাহাবীদের মধ্যে বিশ্ব বিখ্যাত কবি, হযরত হাস্সান বিন সাবিত (رضي الله عنه) রাসূল (ﷺ) এর সামনে কাসীদার মাধ্যমে এভাবে তাঁর প্রশংসা করেন-

مَتَى يَبْدُ فِي الدَّاجِ الْبَهِيمِ جَبِينُهُ ۞ يَلُحْ مِثْلَ مِصْبَاحِ الدُّجَى الْمُتَوَقِّدِ

-‘‘যখন অন্ধকার রাত্রে তার কপাল প্রকাশিত হতো, তখন অন্ধকার উজ্জ্বল প্রদীপের মত আলোকিত হয়ে উঠতো।’’১৪৭

১৪৭. ইমাম জুরকানী : শরহুল মাওয়াহেব: ৫/২৭৮ পৃ. (খ) বায়হাকী, দালায়েলুল নবুয়ত, ১/২৯৮ পৃ. (গ) মুকরিজী, ইমতাউল আসমা, ২/১৪৯ পৃ. দারুল কুতুব ইলমিয়্যাহ, বয়রুত, লেবানন (ঘ) ইবনে সালেহ শামী, সবলুল হুদা ওয়ার রাশাদ, ২/২১ পৃ. ও ১২/২৮৮ পৃ.

সর্বশেষ এ বিষয়ে একটি হাদিসে পাক উল্লেখ করবো।

❏ ইমাম বায়হাকী (رحمة الله) সংকলন করেন-

عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍؓ ، قَالَ: كَانَ رَسُولُ اللهِ ﷺ يَرَى بِاللَّيْلِ فِي الظُّلْمَةِ كَمَا يَرَى بِالنَّهَارِ مِنَ الضَّوْءِ

-‘‘হযরত ইবনে আব্বাস (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূল (ﷺ) রাতের অন্ধকারে তেমন দেখতেন যেমনটি দিনের উজ্জ্বল আলোতে দেখতে পেতেন।’’ (ইমাম বায়হাকী, দালায়েলুন নবুয়ত, ৬/৭৫ পৃ.)

সম্মানিত পাঠকবৃন্দ! মহান রব তা‘য়ালা আমাদেরকে এ সমস্ত সত্য গোপনকারীদের থেকে হেফাযত করুন, আমিন।

বিষয় নং-১১: রাসূল (ﷺ)-এর সুচিতা দাঁত মোবারক থেকে জ্যোতি প্রকাশ:

‘হাদীসের নামে জালিয়াতি’ গ্রন্থের ৩২০ পৃষ্ঠায় ড. আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীর রাসূল (ﷺ) এর দাঁত মোবারক হতে নূর প্রকাশ পেতো এই বিষয়টি কৌশলে ইনকার করেছেন। এগুলো নাকি মিথ্যা কাহিনী এবং শুধুমাত্র “মা’আরিজুন নবুওয়াত” নামক গ্রন্থ ছাড়া পৃথিবীর আর কোনো গ্রন্থে পাওয়া যায় না। তারপর তিনি লিখেছেন-‘‘কাজেই এ সকল বইয়ের সব কথার উপরে শুধু ঘুমন্ত বা ক্লান্ত (অজ্ঞ বা অসচেতন) মানুষেরাই নির্ভর করতে পারে।’’ তার উক্ত জঘন্য বক্তব্যের জবাবে আমি কতিপয় দলিল উপস্থাপন করার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করছি, পাঠকগণ আমাদের দলিল দেখেই অনুধাবন করবেন বলে আশাবাদী কার বক্তব্য সঠিক।

একটি হাদিস ও পর্যালোচনা:

প্রথম সূত্র:

ইমাম দারেমী (رحمة الله) এবং ইমাম তিরমিযি (رحمة الله)সহ আরও অনেকে ইমাম সংকলন করেন-

أَخْبَرَنَا إِبْرَاهِيمُ بْنُ الْمُنْذِرِ، حَدَّثَنَا عَبْدُ الْعَزِيزِ بْنُ أَبِي ثَابِتٍ الزُّهْرِيُّ، حَدَّثَنِي إِسْمَاعِيلُ بْنُ إِبْرَاهِيمَ ابْنُ أَخِي مُوسَى، عَنْ عَمِّهِ مُوسَى بْنِ عُقْبَةَ، عَنْ كُرَيْبٍ، عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ ؓ، قَالَ: كَانَ رَسُولُ اللَّهِ ﷺ أَفْلَجَ الثَّنِيَّتَيْنِ، إِذَا تَكَلَّمَ رُئِيَ كَالنُّورِ يَخْرُجُ مِنْ بَيْنِ ثَنَايَاهُ

-‘‘হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূল (ﷺ) এর সামনের দন্ত মোবারক প্রশস্ত ছিল। যখন তিনি কথা বলতেন তখন তাঁর দন্ত সমূহ থেকে নূর (আলো) বের হতো।’’ ১৪৮

১৪৮. ইমাম বায়হাকী : দালায়েলুল নবুওয়াত : ১/২১৫ পৃ., ইমাম তিরমিযী : শামায়েলে তিরমিযী : ১২ পৃ., হা/১৪, ইমাম বাগভী : শরহে সুন্নাহ : ১৩/২২৩ পৃ. হা/৩৬৪৪, খতিব তিবরিযী : মিশকাতুল মাসাবিহ : ৪/৫১৮ পৃ. হা/৫৭৯৭, ইমাম দারেমী : আস্-সুনান : ১/২০৩পৃ. হা/৫৯, ইমাম জালাল উদ্দিন সুয়ূতি : খাসায়েসুল কোবরা : ১/১১১প, হা/২৮৪, আল্লামা শায়খ ইউসুফ নাবহানী : হুজ্জাতুল্লাহি আলাল আলামীন : ৬৬৩ পৃ., ইমাম ইবনে আসাকীর : তারীখে দামেস্ক : ২/৫৭ পৃ., ইবনে হাজার হায়সামী : মাযমাউদ যাওয়াইদ : ৮/২৭৯ পৃ., ইমাম তাবরানী : মু‘জামুল আওসাত : হা/৩৫৬৩, আল্লামা ইবনে কাসীর : বেদায়া ওয়ান নেহায়া : ৬/২৫ পৃ., ইমাম তাবরানী, মু’জামুল কাবীর : ১১/৪১৬ পৃ. হা/১২১৮১, উমর ইবনে শাবাহ (ওফাত.২৬২হি.), তারিখে মাদিনা, ২/৬১০পৃ. যিয়া মুকাদ্দাসী, আহাদিসুল মুখতার, ১৩/৪৮পৃ. হা/৭০-৭১, ইমাম কাস্তাল্লানী, মাওয়াহিবুল্লাদুনিয়্যাহ, ২/১৯ পৃ.,

সনদ পর্যালোচনা: 

● এ হাদিসটি উক্ত সাহাবি থেকে দু‘টি সূত্রে বর্ণিত আছে। তিরমিযি, দারেমী এবং তাবরানীর সংকলিত সনদ সম্পর্কে হাইসামী তাঁর মাযমাউদ যাওয়াইদ গ্রন্থে বলেন-

رَوَاهُ الطَّبَرَانِيُّ فِي الْأَوْسَطِ، وَفِيهِ عَبْدُ الْعَزِيزِ بْنُ أَبِي ثَابِتٍ وَهُوَ ضَعِيفٌ.

-‘‘হাদিসটি তাবরানী তার মু‘জামুল আওসাত নামক গ্রন্থে বর্ণনা করেছেন, আর সনদে ‘আবদুল আজিজ বিন আবি সাবিত’ রাবী রয়েছেন, আর তিনি বর্ণনাকারী হিসেবে দুর্বল।’’ ১৪৯

১৪৯. ইবনে হাজার হাইসামী : মাযমাউয যাওয়াইদ : ৮/২৭৯পৃ. হা/১৪০৩১

● ইমাম হাইসামী (رحمة الله) উক্ত রাবী সম্পর্কে আরেক স্থানে লিখেন-

وَفِيهِ عَبْدُ الْعَزِيزِ بْنُ أَبِي ثَابِتٍ، وَهُوَ مُجْمَعٌ عَلَى ضَعْفِهِ.

-‘‘এ সনদে ‘আবদুল আজিজ বিন আবি সাবিত’ রয়েছেন, আর সে দুর্বল হওয়ার বিষয়ে সবাই একমত।’’১৫০

১৫০. ইবনে হাজার হাইসামী : মাযমাউয যাওয়াইদ : ১/২৬৭ পৃ., হা/১৪৪৬

● ইমাম হাইসামী (رحمة الله) এ হাদিসটির উক্ত সনদকে সাধারণ যঈফ বলেছেন, অথচ আহলে হাদিস আলবানী এটিকে (ضعيف جداً) অত্যন্ত যঈফ বলে উড়িয়ে দিতে চেয়েছিল।

● আলবানী উক্ত রাবীর বিষয়ে অভিযোগ প্রকাশ করেছে যে-

احترقت كتبه؛ فحدث من حفظه فاشتد غلطه

-‘‘তার কিতাব পুড়ে যায়, ফলে সে হেফ্য তথা স্মরণশক্তি থেকে হাদিস বর্ণনা করতেন এবং চরমভাবে ভুল করতেন।’’ (আলবানী, সিলসিলাতুল আহাদিসিদ দ্বঈফাহ, ৯/২৩২ পৃ. হা/৪২২০)

সম্মানিত পাঠকবৃন্দ! আমি কিতাবের শুরুতে আলোকপাত করেছি যে, কোন রাবীর যদি হেফ্যে সামান্য ক্রুটি পরিলক্ষিত হয় তাহলে সে রাবীর হাদিসের মান ‘হাসান’ বলে বিবেচিত হবে। অথচ আলবানী এ নীতিমালাকে একদম ভুলে গেলেন। উক্ত রাবীর বর্ণনা ছাড়াও আরও দুটি সূত্রে হাদিসটি বর্ণিত হওয়া সত্তে¡ও আলবানী এটিকে কোন উসূলের ভিত্তিকে (ضعيف جداً) অত্যন্ত যঈফ বলে চালিয়ে দিলেন তা বোধগম্য নয়।

দ্বিতীয় সূত্র: 

❏ মহিউস সুন্নাহ ইমাম বাগভী (ওফাত. ৫১৬ হি.) রাবী ‘আবি সাবিত’ ছাড়াই আরেকটি সূত্র সংকলন করেছেন এভাবে-

وَأَخْبَرَنَا أَبُو مُحَمَّدٍ الْجُوزَجَانِيُّ أَنَا أَبُو الْقَاسِمِ الْخُزَاعِيُّ أَنَا الْهَيْثَمُ بْنُ كُلَيْبٍ نا أَبُو عِيسَى نا عَبْدُ اللَّهِ بْنُ عَبْدِ الرَّحْمَنِ أَنَا إِبْرَاهِيمُ بن أَخِي مُوسَى بْنِ عُقْبَةَ عَنْ كُرَيْبٍ عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ رَضِيَ اللَّهُ تَعَالَى عَنْهُمَا قَالَ كَانَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَفْلَجَ الثَّنِيَّتَيْنِ إِذَا تَكَلَّمَ رُؤِيَ كَالنُّورِ يَخْرُجُ مِنْ بَيْنِ ثَنَايَاهُ.

-‘‘হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূল (ﷺ) এর সামনের দন্ত মোবারক প্রশস্ত ছিল। যখন তিনি কথা বলতেন তখন তাঁর দন্ত সমূহ থেকে নূর (আলো) বের হতো।’’ ১৫১

এ সনদে আবি সাবিত নামক রাবী বিদ্যমান নেই।

১৫১. বাগভী, আনওয়ার ফি শামায়েলে নাবিয়্যিল মুখতার, ১/১৪৬ পৃ. হা/১৬২

তৃতীয় সূত্র:

❏ ইমাম উমর বিন শাবাহ (ওফাত. ২৬২ হি.) সংকলন করেন-

حَدَّثَنَا مُحَمَّدُ بْنُ يَحْيَى قَالَ: حَدَّثَنَا عَبْدُ الْعَزِيزِ بْنُ عِمْرَانَ، عَنْ إِسْمَاعِيلَ بْنِ إِبْرَاهِيمَ بْنِ عُقْبَةَ، عَنْ أَبِيهِ، عَنْ كُرَيْبٍ، عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمَا قَالَ: كَانَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَفْلَجَ الثَّنِيَّتَيْنِ وَالرُّبَاعِيَّتَيْنِ، وَإِذَا تَكَلَّمَ رُئِيَ مِنْ بَيْنِ ثَنَايَاهُ كَالْبَرْقِ

-‘‘এখানে ইসমাঈল ইবনে ইবরাহীম ইবনে উকবা (رحمة الله) তিনি তার পিতা ইবরাহিম উকবা (رحمة الله) হতে তিনি তাবেয়ী কুরাইব (رحمة الله) হতে তিনি সাহাবী আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (رضي الله عنه) হতে বর্ণনা করেছেন......।’’ (তথ্য সূত্র: উমর ইবনে শাবাহ, তারিখে মাদিনা, ২/৬১০ পৃ.)

এ সনদের ‘আবি ছাবিত’ নেই, তাই সনদ নিয়ে কোনো সমস্যাও নেই। তাই আবারও প্রমাণিত হয়ে গেল যে আলবানী ভুয়া তাহকীককারী।

এ বিষয়ের সমর্থিত বিভিন্ন হাদিসে পাক:

হাদিস নং-১

وَعَنْ أَبِي قِرْصَافَةَ قَالَ: لَمَّا بَايَعْنَا رَسُولَ اللَّهِ - ﷺ - أَنَا وَأُمِّي وَخَالَتِي وَرَجَعْنَا مِنْ عِنْدِهِ مُنْصَرِفِينَ قَالَتْ لِي أُمِّي وَخَالَتِي: يَا بُنَيَّ مَا رَأَيْنَامِثْلَ هَذَا الرَّجُلِ أَحْسَنَ مِنْهُ وَجْهًا، وَلَا أَنْقَى ثَوْبًا، وَلَا أَلْيَنَ كَلَامًا، وَرَأَيْنَا كَأَنَّ النُّورَ يَخْرُجُ مِنْ فِيهِ

-‘‘হযরত আবু কিরসাপা (رضي الله عنه) বর্ণনা করেন, আমি ও আমার মা এবং আমার খালা রাসূল (ﷺ) এর নিকট বায়াত গ্রহণ করলাম। অতঃপর আমরা যখন ফিরে আসলাম তখন আমার মা ও খালা আমাকে বললেন হে প্রিয় ছেলে! আমরা রাসূল (ﷺ) এর মত সুশ্রী, সুভাষী ও নম্রভাষী কাউকে দেখিনি। যখন তিনি কথা বলতেন তখন আমরা তাঁর পবিত্র মুখ মোবারক থেকে নূর বের হতে দেখতাম।’’ ১৫২

১৫২. ইমাম জালাল উদ্দিন সূয়তী : খাসায়েসুল কোবরা : ১/১১১ পৃ : হা/২৮৫, আল্লামা ইবনে হাজার হায়সামী : মাযমাউয-যাওয়াইদ : ৮/২৭৯ পৃ.হাদিস, ১৪০৩২, আল্লামা শায়খ ইউসূফ বিন নাবহানী : হুজ্জাতুল্লাহি আলাল আলামীন-৬৬৩ পৃ., ইমাম তাবরানী : মু‘জামুল কাবীর :৩/১৮পৃ.হাদিস, ২৫১৮

হাদিস নং-২

এছাড়াও আরও হাদিস বর্ণিত হয়েছে। হযরত আবু হুরায়রা (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন,

كَانَ إِذَا ضَحِكَ يَتَلَأْلَأُ فِي الْجُدُرِ

-‘‘নবী করীম (ﷺ) যখন হাসতেন, তখন পবিত্র দাঁত সমূহ থেকে নূর বের হতো, যা দ্বারা দেয়াল আলোকিত হয়ে যেত।’’ ১৫৩

১৫৩.

(ক) আল্লামা আব্দুর রহমান জালালুদ্দীন সূয়তী : আল খাসায়েসুল কোবরা : ১/১৩৬ পৃ., হাদিস, ৪০০

(খ) আল্লামা শফী উকাড়ভী : জিকরে জামীল : ১০৬ পৃ.

(গ) ইমাম বায়হাকী : দালায়েলুন নবুয়াত : ২/১৪৮ পৃ.

(ঘ) আল্লামা ইমাম বায্যার : আল মুসনাদ

(ঙ) আল্লামা ইবনে হাজার হায়সামী : মাযমাউয যাওয়াইদ : ৮/২৭৯ পৃ.

(ঙ) হুমায়রী হাদ্বরামী, হাদায়েকুল আনওয়ার, ১/৪২৭ পৃ. (চ) ইবনে সালেহ শামী, সবলুল হুদা ওয়ার রাশাদ, ২/৩০ পৃ. ও ৭/১২১ পৃ.

(ছ) মোল্লা আলী ক্বারী, জামিউল ওয়াসায়েল, ২/১৫ পৃ.

(জ) বুরহান উদ্দিন হালবী, সিরাতে হালবিয়্যাহ, ৩/৪৬৮ পৃ.

হাদিস নং-৩

রাসূল (ﷺ) এর দাঁত মুবারক অত্যন্ত নূরানী সুন্দর ছিল। প্রসঙ্গ আরও হাদিস বর্ণিত হয়েছে। যেমন-

عَنْ سَعِيدِ بْنِ الْمُسَيِّبِ: أَنَّهُ سَمِعَ أَبَا هُرَيْرَةَ يَصِفُ رَسُولَ اللهِ ﷺ . فَقَالَ:: كَانَ رَسُولُ اللهِ، ﷺ، أَسْوَدَ اللِّحْيَةِ، حَسَنَ الثَّغْرِ

-‘‘হযরত আবু হুরায়রা (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলে আকরাম (ﷺ) এর দাঁড়ি মোবারক কালো এবং সামনের দাঁত মোবারক অত্যন্ত আলোকময় ও সুন্দর ছিল।’’ ১৫৪

১৫৪.

(ক) ইমাম বায়হাকী: দালায়েলুন নবুয়াত : ১/২১৭পৃ.,

(খ) ইমাম জালালুদ্দীন সুয়ূতি: খাসায়েসুল কোবরা : ১/১৩৪ পৃ : হাদিসঃ ৩৮৭

(গ) ইবনে সালেহ শামী, সবলুল হুদা ওয়ার রাশাদ, ২/৩০পৃ.

(ঘ) বুরহানুদ্দীন হালবী, সিরাতে হালবিয়্যাহ, ৩/৪৬৮ পৃ.

(ঙ) বুখারী, আদাবুল মুফরাদাত, ১/৩৯৫ পৃ. হা/১১৫, এ গ্রন্থের তাহকীকে আহলে হাদিস আলবানী বলেন, সনদটি ‘হাসান লিগাইরিহী’ পর্যায়ের; আমি বলবো তার এ তাহক্বীক ভূয়া। কেননা সনদটি সহীহ।

হাদিস নং-৪

হযরত ইমাম হাসান (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন,  

 وَإِذَا غَضِبَ أَعْرَضَ وَأَشَاحَ، وَإِذَا فَرِحَ غَضَّ طَرْفَهُ، جُلُّ ضَحِكِهِ التَّبَسُّمُ، يَفْتَرُّ عَنْ مِثْلِ حَبِّ الْغَمَامِ

-‘‘রাসূল (ﷺ) যখন রাগান্বিত হতেন মুখ মোবারক ফিরিয়ে নিতেন এবং মন সংকুচিত হয়ে যেত বলে মনে হতো। আনন্দিত হলে দৃষ্টি ঝুঁকিয়ে নিতেন, তাঁর বরকতময় হাসি ছিল মুচকি হাঁসি। হাসির সময় দাঁত থেকে শিলার মত নূর বের হতো বা ঝলমল করতো।’’ ১৫৫

১৫৫.

(ক) আল্লামা জালালুদ্দীন সুয়ূতি : খাসায়েসুল কুবরা : ১/১৩৯ পৃ. হা/৪১৪

(খ) আল্লামা ইবনে হাজার হায়সামী : মাযমাউয-যাওয়াইদ : ৮/২৭৮ পৃ.

(গ) ইমাম ইবনে সাদ : আত-তবকাতুল কোবরা:

(ঘ) ইমাম তিরমিযী : শামায়েলে তিরমিযী :১/১৩৫ পৃ. হাদিস, ২১৬

(ঙ) ইমাম বায়হাকী : দালায়েলুন নবুয়াত : ১/২৮৮ পৃ.

(চ) ইমাম তাবরানী : মুজামুল কাবীর: ২২/১৫৫ পৃ. হাদিস, ৪১৪, ও ২২/১৬২ পৃ.

(ছ) ইমাম আবু নুয়াইম ইস্পাহানী : দালায়েলুন নবুয়াত :১/৬২৭পৃ.

(জ) ইমাম ইবনে সাকীন : আল মারিফাহ:

(ঝ) ইমাম ইবনে আসাকির : তারীখে দামেস্ক:

(ঞ) শায়খ ইউসূফ নাবহানী, জাওয়াহিরুল বিহার, ১/২৭৪পৃ.

(ট) দারেমী, সিরাতে-নববিয়্যাহ, ১/৪১২ পৃ.

(ঠ) আবূ-শায়খ ইস্পাহানী, আখলাকুন্নাবী, ১/৫১৫পৃ. হা/১৯৭

(ঠ) বাগভী, আনওয়ার ফি শামায়েলুল নাবিয়্যেল মুখতার, ১/৩৪৫ পৃ.

(ড) কাযী আয়ায, শিফা শরীফ, ১/১৫৮ পৃ.ও ২/৩৯৩ পৃ.

(ঢ) মুকরিজী, ইমতাউল আসমা, ২/১৭৮ পৃ.

(ন) ইবনে সালেহ শামী, সবলুল হুদা ওয়ার রাশাদ, ৭/১২৬ পৃ.

(ত) দিয়ার বকরী, তারীখুল খামীস, ১/২১০পৃ.

(থ) মোবারকপুরী, র্আ-রাহিকুল মাখতুম, ১/৪৪৬ পৃ.

(দ) বায়হাকী, শুয়াবুল ঈমান, ৩/২৪পৃ. হাদিস, ১৩৬২,

(ধ) বাগভী, শরহে সুন্নাহ, ১৩/২৭২ পৃ. ও ১৩/২৭৫ পৃ. হাদিস, ৩৭০৬, ও ১৩/২৮০ পৃ.

হাদিস নং-৫

عَنْ أَبِي إِسْحَاقَ، قَالَ: سَأَلَ رَجُلٌ البَرَاءَ: أَكَانَ وَجْهُ رَسُولِ اللهِ ﷺ مِثْلَ السَّيْفِ؟ قَالَ: لاَ مِثْلَ القَمَرِ. هَذَا حَدِيثٌ حَسَنٌ صَحِيحٌ.

-‘‘তাবেয়ী ইমাম আবু ইসহাক সাবাঈ (رحمة الله) এর সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, জনৈক ব্যক্তি বারা ইবনে আযাব (رضي الله عنه) কে জিজ্ঞাসা করেছিলেন, রাসূল (ﷺ) এর চেহারা মোবারক কি তরবারীর মত ছিল? তিনি (উক্ত সাহাবী) জবাবে বললেন, না (রাসূল (ﷺ) এর চেহারা ছিল) চাঁদের মত।’’ ১৫৬

ইমাম তিরমিযী বলেন, উক্ত হাদিসটি হাসান, সহীহ।

১৫৬.

(ক) তিরমিযি, আস্-সুনান, কিতাবুল মানাকিব, ৫/৪৬০ পৃ. হা/৩৫৮৫

(খ) সহীহ বুখারী, ৪/১৮৮ পৃ. হা/৩৫৫২

(গ) সুনানে দারেমী, ১/২০৬ পৃ. হাদিস, ৬৫

(ঘ) সহীহ ইবনে হিব্বান, ১৪/১৯৮ পৃ. হাদিস, ৬২৮৭

(ঙ) রুহাইনী, আল-মুসনাদ, ১/২২৪ পৃ. হা/৩১০

(চ) বাগভী, শরহে সুন্নাহ, ১৩/২২৫ পৃ. হাদিস, ৩৬৪৭

(ছ) তাবরানী, মু‘জামুল কাবীর, ২/৩৩৪ পৃ. হাদিস, ১৯২৬

(জ) এমনকি আলবানীও সহিহুত তিরমিযির ৫/৫৯৮ পৃ. হা/৩৬৩৬

বিষয় নং-১২: মিলাদ মাহফিলে হুযূর (ﷺ) উপস্থিত হতে পারেন বলে ধারণা রাখা:

‘‘হাদীসের নামে জালিয়াতি’’ বইয়ের ৩৭২ পৃষ্ঠায় ড. আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীর মাওলানা আব্দুল হাই লাক্ষনৌভীর ‘আসারারুল মারফূআ’ ৪৬ পৃষ্ঠার একটি বক্তব্য এভাবে উদ্ধৃতি করেন-‘‘মাওলিদের ওয়াযের মাজলিসে তাঁর মাওলিদ বা জন্মের কথা উল্লেখের সময় তিনি নিজে সেখানে উপস্থিত হন। এ কথার উপরে তারা তাঁর মাওলিদের বা জন্মের কথার সময় সম্মান ও ভক্তি প্রদর্শনের জন্য কিয়াম বা দাঁড়ানোর প্রচলন করেছে।’’

তিনি এটি উল্লেখ করে করার পূর্বে লিখেছেন-‘‘প্রচলিত আরেকটি জাল ও মিথ্যা কথা।’’ তিনি তাদের জালকৃত বর্ণনাটি উল্লেখ করার পর আরও লিখেছেন এটি সহীহ হাদিস বিরোধী কথা। ‘প্রচলিত জাল হাদীস’ (যা মাওলানা জুনায়েদ বাবুনগরী সম্পাদিত) গ্রন্থের ১৭২ পৃষ্ঠায়ও অনুরূপ বক্তব্য প্রদান করেছেন।

পর্যালোচনা:

কেবল মাওলানা আব্দুল হাই লাক্ষনৌভীর মন্তব্যে প্রমাণ হয় না যে, মিলাদ মাহফিলে অথবা যেখানে ইচ্ছা সেখানে নবিজী উপস্থিত হতে পারেন না। এমনকি তিনি তা লিখেনও নি। শুধু এতটুকুই বলেছেন যে, অনেকেই ভক্তি প্রদর্শন করে থাকে, বিশ্বাস রাখে যে কিয়ামের সময় রাসূল (ﷺ) উপস্থিত হন। তিনি লিখেননি যে, উপস্থিত হয় না, এই বিশ্বাস পোষণ করা হারাম, কুফরী, নাজায়েয বা অন্য কিছু। আর তাছাড়া উক্ত দুই গ্রন্থের লেখক ড. আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীর ও মাওলানা জুনায়েদ বাবুনগরী আর কোনো দলীল প্রমাণ পেশ করতে পারেননি। আমি এ বিষয়ে উভয়কে বলতে চাই যে আপনারা-

❏ মাওলানা আবদুল হাই লাখনৌভির এ দলিলটি চোখে পড়েছে কিন্তু উক্ত পুস্তুক ‘আল-আসরারুল মারফূ‘আ’ এর ৪২ পৃষ্ঠায় হযরত জাবের (رضي الله عنه)এর নূরের হাদিস প্রসঙ্গে যে তিনি লিখেছেন-

رِوَايَةِ عَبْدِ الرَّزَّاقِ فِي مُصَنَّفَةٍ عَنْ جَابِرٍ قَالَ: قُلْتُ يَا رَسُولَ اللَّهِ بِأَبِي أَنْتَ وَأُمِّي أَخْبِرْنِي عَنْ أَوَلَّ شَيْءٍ خَلَقَهُ اللَّهُ قَبْلَ الأَشْيَاءِ، فَقَالَ: يَا جَابِرُ! إِنَّ اللَّهَ خَلَقَ قَبْلَ الأَشْيَاءِ نُورُ نَبِيِّكَ مِنْ نُورِهِ،

-‘‘এ হাদিসটি ইমাম আবদুর রায্যাক (رحمة الله) তাঁর মুসান্নাফ গ্রন্থে বর্ণনা করেছেন......সব কিছুর পূর্বে মহান রব রাসূল (ﷺ)-এর নূরকে সৃষ্টি করেছেন।’’ তা কি আপনাদের চোখে পড়েনি!!

❏ শুধু তাই নয় তিনি আরও লিখেছেন-

قد ثَبت من رِوَايَة عبد الرَّزَّاق أولية النُّور المحمدي خلفا وسبقته على الْمَخْلُوقَات سبقا.

-‘‘ইমাম আব্দুর রায্যাক (رحمة الله)-এর বর্ণনাকৃত হাদিসে পাক দ্বারা নূরে মুহাম্মদী সর্বপ্রথম সৃষ্টি প্রমাণিত।’’ (আছারুল মারফুআ, পৃ. ৪৩)

অথচ এ কিতাবের এ হাওয়ালা তারা জানার পরেও তা আমলে নেয় না, কারণ তা তাদের মতের বিরোদ্ধে কেন গেলো। তাহলে এটি কী আপনাদের চোখে পড়েনি; না চোখে কালো চশমা লাগানো ছিল! পাঠকবর্গ! আমি এ বিষয়ে তাদের জবাবে কিছু গুরুত্বপূর্ণ দলিল উল্লেখ করার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করছি।

এ বিষয়ে সাধারণ পাঠকদের উদ্দেশ্যে আমার বক্তব্য:

পাঠকবৃন্দের যদি প্রশ্ন করা হয় রাসূল (ﷺ)-এর ক্ষমতা বেশী না অন্যান্য নবীদের; আপনারা সবাই এক বাক্যে উত্তর দিবেন যে রাসূল (ﷺ)-এর। এখন আমি বলবো, অন্যান্য নবীরা যদি ওফাতের পরেও এক সময় একাধিক স্থানে উপস্থিত হতে পারেন তাহলে আমাদের নবী ওফাতের পরে যেখানে ইচ্ছা সেখানে যেতে পারবেন না কেন! এখন হয়তো আপনাদের মনে আমাকে নিয়ে প্রশ্ন জাগতে পারে যে অন্যান্য নবীগণ যে ওফাতের পর একাধিক স্থানে উপস্থিত হয়েছেন তার কোন গ্রহণযোগ্য প্রমাণ কাছে? আমি বলবো, অবশ্যই রয়েছে। বরং সহীহ বুখারী ও মুসলিমেই রয়েছে। রাসূল (ﷺ)-এর মি‘রাজ জাগ্রত অবস্থায়ই হয়েছে তার ব্যাপারে সকল ওলামাগণই একমত পোষণ করেছেন। ১৫৭

১৫৭. এ বিষয়ে বিস্তারিত জানতে আমার লিখিত ‘আকায়েদে আহলে সুন্নাহ’ দেখতে পারেন।

সমস্ত নবীরা তাদের কবরে জিবীত। এ প্রসঙ্গে অনেক হাদিস সামনে উল্লেখ করা হবে, ইনশা আল্লাহ। তবে এখানে একটি মাত্র হাদিসই উল্লেখ করবো যা-

❏ ইমাম বায্যার (رحمة الله)সহ আরও অনেকে সংকলন করেছেন,

عَنْ أَنَسِ بْنِ مَالِكٍ ؓ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ - ﷺ -: الْأَنْبِيَاءُ أَحْيَاءٌ فِي قُبُورِهِمْ يُصَلُّونَ-

-‘‘হযরত আনাস বিন মালিক (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূল (ﷺ) ইরশাদ করেন, নিশ্চয় আম্বিয়ায়ে কিরাম (আঃ) তাদের নিজ নিজ কবরে জীবিত এবং তারা সেখানে সালাত আদায় করেন।’’১৫৮

১৫৮. ইমাম আবু ইয়ালা : আল মুসনাদ : ৬/১৪৭ পৃ: হা/৩৪২৫, ইমাম বায়হাকী : হায়াতুল আম্বিয়া : ৬৯-৭০পৃ. ইমাম হায়সামী : মাযমাউদ যাওয়াইদ : ৮/২১১পৃ. হাদিস, ১৩৮১২, ইমাম আবু নুয়াইম ইস্পাহানী : তবকাতে ইস্পাহানী : ২/৪৪ পৃ:, ইমাম আদী : আল কামিল : ২/৭৩৯ পৃ:, ইমাম জালালুদ্দীন সূয়ুতী: আল জামেউস সগীর: ১/২৩০ পৃ: হাদিস- ৩০৮৯, ইমাম জালালুদ্দীন সূয়ুতী: শরহুস সুদূর: পৃ. ২৩৭, আহলে হাদিস নাসিরুদ্দীন আলবানী: সিলসিলাতুল সহীহা: হাদিস নং- ৬২২, আহলে হাদিস নাসিরুদ্দীন আলবানী: সহীহুল জামে: হা/২৭৯০, দায়লামী, আল-ফিরদাউস, ১/১১৯পৃ. হাদিস, ৪০৩।

এ হাদিসটি সহীহ তাতে কোনো সন্দেহ নেই, বরং আহলে হাদিসের অন্যতম ইমাম নাসিরুদ্দীন আলবানীও তার দুটি গ্রন্থে হাদিসটি সহীহ বলে মত প্রকাশ করেছেন।

উপরের আলোচনা থেকে প্রমাণিত হলো যে সমস্ত নবীরা তাদের নিজ নিজ রওযা শরীফে জীবিত রয়েছেন।

❏ এ প্রসঙ্গে আমরা সহীহ মুসলিম শরীফে বর্ণিত আরেকটি হাদিস দেথকে পারি, যা আনাস (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত, যেখানে বর্ণিত হয়েছে মি‘রাজে হযরত মূসা (عليه السلام)‘র কবরের পাশ দিয়ে যেতে গিয়ে রাসূল (ﷺ) দেখেন,

مَرَرْتُ عَلَى مُوسَى وَهُوَ يُصَلِّي فِي قَبْرِهِ

-‘‘হযরত মূসা (عليه السلام) তাঁর মাযারের মাঝে দাঁড়িয়ে সালাত পড়ছেন।’’১৫৯  

১৫৯. ইমাম মুসলিম : আস সহীহ : ৪/১৮৪৫ : হা/২৩৭৫, ইমাম নাসায়ী : সুনান : ৩/১৫১ : হা/১৬৩৭, ইমাম আহমদ : মুসনাদ : ৩/১২০ পৃ:, ইমাম বাগভী : শরহে সুন্নাহ : ১৩/৩৫১ : হা/৩৭৬০, ইমাম ইবনে হিব্বান : আস সহীহ : ১/২৪১ : হা/৪৯, ইমাম আবি শায়বাহ : আল মুসান্নাফ : ১৪/৩০৮ : হা/১৮৩২৪, ইমাম নাসায়ী : সুনানে কোবরা : ১/৪১৯ : হা/১৩২৯, ইমাম আবু ই’য়ালা : আল মুসনাদ : ৭/১২৭ : হা/৪০৮৫, ইমাম মানাবী : ফয়জুল কাদীর : ৫/৫১৯ পৃ: হা/৩০৮৯, আল্লামা মুকরিজী : ইমতাঈল আসমা’আ : ১০/৩০৪ পৃ:

উপরের আলোচনা থেকে এটা স্পষ্ট হয়ে গেলো যে, সমস্ত নবীরা যে বাস্তবেই তাদের মাজারে জীবিত তার প্রধান সাক্ষী ছিলেন আমাদের নবী (ﷺ)। আমরা এখন প্রমাণ খুঁজবো যে নবীরা তাদের রওজায় শায়িত হওয়ার পরেও যেখানে ইচ্ছে সেখানে যেতে পারেন কিনা।

❏ হযরত আবু হুরায়রা (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন,

عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ ؓ، قَالَ: قَالَ رَسُولَ اللهِ ﷺ:وَقَدْ رَأَيْتُنِي فِي جَمَاعَةٍ مِنَ الْأَنْبِيَاءِ، فَإِذَا مُوسَى قَائِمٌ يُصَلِّي، فَإِذَا رَجُلٌ ضَرْبٌ، جَعْدٌ كَأَنَّهُ مِنْ رِجَالِ شَنُوءَةَ، وَإِذَا عِيسَى ابْنُ مَرْيَمَ عَلَيْهِ السَّلَامُ قَائِمٌ يُصَلِّي، أَقْرَبُ النَّاسِ بِهِ شَبَهًا عُرْوَةُ بْنُ مَسْعُودٍ الثَّقَفِيُّ، وَإِذَا إِبْرَاهِيمُ عَلَيْهِ السَّلَامُ قَائِمٌ يُصَلِّي، أَشْبَهُ النَّاسِ بِهِ صَاحِبُكُمْ - يَعْنِي نَفْسَهُ - فَحَانَتِ الصَّلَاةُ فَأَمَمْتُهُمْ-

-‘‘রাসূল (ﷺ) ইরশাদ করেন, মি‘রাজের রাত্রে আম্বিয়া (আঃ) এর এক বিরাট জামাতকে আমি দেখেছি, হযরত মূসা (عليه السلام)-কে তাঁর কবরে নামায পড়তে দেখেছি। তাকে দেখতে মধ্য আকৃতির চুল কোকরানো সানওয়া দেশের লোকের মত। আমি ঈসা (عليه السلام) কে দন্ডায়মান অবস্থায় নামায পড়তে দেখেছি, তিনি দেখতে সাহাবী হযরত ওরওয়া ইবনে মাসউদ সাকাফী (رضي الله عنه)‘র মত। তার পরে নামাযের সময় আসলো আমি সকল নবী (আঃ) এর ইমামতি করলাম।’’ ১৬০

১৬০. ইমাম মুসলিম : সহীহ : ফাযায়েলে মূসা (আ.) : ১/১৫৭ : হা/১৭৩, খতিব তিবরিযী : মিশকাতুল মাসাবীহ : ৩/২৮৭ : হা/৫৮৬৬, ইমাম বায়হাকী : দালায়েলুল নবুয়ত : ২/৩৮৭ পৃ:, ইমাম তকি উদ্দিন সুবকী, শিফাউস-সিকাম: ১৩৫-১৩৮ পৃ. ইমাম সূয়ূতী : আল-হাভীলিল ফাতওয়া :২/২৬৫ পৃ:, ইমাম সাখাভী : কওলুল বদী : ১৬৮পৃ., ইমাম মুকরিজী : ইমতাঈল - আসমা: ৮/২৪৯ পৃ:

পর্যালোচনা

এ বিশুদ্ধ হাদিস থেকে প্রমাণিত হলো, হযরত মূসা (عليه السلام) সহ সকল নবি তাঁদের নিজ নিজ রওযা শরীফে জীবিত অবস্থানরত থাকার পরও আবার বায়তুল মুকাদ্দাসে উপস্থিত হয়েছেন। তাহলে বুঝা গেল তাঁদের জীবন শুধু কবরের মধ্যেই সিমাবদ্ধ নয়; তা না হলে তারা বায়তুল মুকাদ্দাসে রাসূল (ﷺ)‘র পিছনে নামায পড়তে গেলেন কিভাবে ? আর শরীয়ত মতে নামাযের জন্য যাহেরী জিসিম বা দেহ থাকা শর্ত, কেননা রূহের কোনো ইবাদত নেই। সম্মানিত পাঠকবৃন্দ! গভীরভাবে লক্ষ্য করুন যে, বোরাকে যখন রাসূল ৬ষ্ঠ আকাশে গেলেন তখন দেখেন হযরত মূসা (عليه السلام) সেখানে উপস্থিত এবং এমনকি আমাদের আখিরী যামানার উম্মতের উপর ৫০ ওয়াক্ত নামায তারই উসিলাতে কমে ৫ ওয়াক্তে রুপান্তরিত হয়েছিল। (মিশকাতুল মাসাবীহ, মি‘রাজ অধ্যায়, বুখারী, মুসলিমের সূত্রে)

সম্মানিত পাঠকবৃন্দ! তাহলে আপনারা গভীরভাবে লক্ষ্য করুন! রাসূল (ﷺ) হযরত মূসা (عليه السلام) কে তাঁর কবরে দেখলেন, আবার তাঁর পিছনে নামায পড়তে বায়তুল মুকাদ্দাসে দেখলেন, আবার ৬ষ্ঠ আকাশে দেখলেন; তাহলে এক সময়ে মোট তিনেরও অধিক স্থানে একজন নবীকে দেখলেন। তাহলে আমি বিবেকহীন আলেম নামে কলঙ্কদের বলবো যে আমাদের নবিজীর পরের মর্যাদায় অর্থাৎ রাসূলদের মধ্যে তৃতীয় স্থান অধিকারী হযরত মূসা (আ.) যদি ওফাতের পরেও বহু স্থানে উপস্থিত হওয়ার ক্ষমতা লাভ করতে পারেন, আমাদের উম্মতে মুহাম্মাদিকে সাহায্য করতে পারেন তাহলে আমাদের নবিজী ওফাতের পরে শুধু মাত্র দুনিয়াতেই একাধিক স্থানে উপস্থিত হতে পারবেন না কেনো!!

সাধারণ পাঠকগণের উদ্দেশ্যে আমি বলবো, নবিজী অনেক নবিদের তাদের কবরে দেখেছেন, আবার বায়তুল মুকাদ্দাসেও দেখেছেন, আবার তাদেরকেই অনেককেই মি‘রাজে আসমানেও দেখেছেন; তাহলে তাঁরা ওফাতের পরেও বহু স্থানে পরিভ্রমন করতে পারেন তাহলে আমাদের নবী সর্বশ্রেষ্ঠ হওয়ার পরেও ওফাতের পরে একাধিক স্থানে পরিভ্রমন করতে পারবে না কেনো ? পাঠকবৃন্দ! তাদের বক্তব্য থেকেই ইহুদীদের দালালির টাকার গন্ধ পাওয়া যাচ্ছে বলে মনে হয়। কেননা ইহুদী ধর্মের নবীও যদি যেখানে ইচ্ছা সেখানে যেতে পারেন তাহলে আমাদের নবী সর্বশ্রেষ্ঠ হওয়ার পরেও কেন যেতে পারবেন না! একটি বিষয় আমরা সকলেই অবগত আছি, এক মুহুর্তে হাজার হাজার মানুষ মৃত্যু বরণ করেন এবং একই সময়ে বহুজনকে দাফনও করা হয়, রাসূল (ﷺ) যদি ওফাতের পরে যেখানে ইচ্ছে সেখানে পরিভ্রমন করতে না পারেন তাহলে তিনি কিভাবে সকল মানুষের কবরে উপস্থিত হবেন! এমন ফিতনার যুগ এসেছে অনেকে এখন বলেও থাকেন কবরে রাসূল (ﷺ) আসবেন না। ১৬১ নাউযুবিল্লাহ

১৬১. এ বিষয়ে বিস্তারিত জানতে আমার লিখিত ‘ফতোয়ায়ে আহলে সুন্নাহ’ গ্রন্থ দেখুন।

❏ আমি প্রথমে মাওলানা আব্দুল হাই লাক্ষনৌভীর কিতাব থেকেই দলীল পেশ করবো, সেটি হচ্ছে ধুমপানের উপরে লিখিত ছোট রিসালা, যার নাম হচ্ছে تراويح الجنان بتشريح حكم شرب الدخان তিনি উক্ত পুস্তুকে একটি ঘটনা উল্লেখ করেন-

ايک شخص نعت خواں تها اور حقہ بهى پيتا تها اس نے خواب ميں دكها نبى عليه السلام فرماتے ہيں كہ جب تم مولود شريف پڑهتے ہو تو ہم رونق افروز مجلس ہو تے ہيں مگر جب حقہ اجاتا ہے فورا مجلس سے واپس ہو جا تے ہيں –

-“জনৈক ব্যক্তি নাত পাঠ করতো এবং হুক্কাও পান করতো। সে একদিন স্বপ্নে দেখল যে, নবী করীম (ﷺ) তাকে বলছেন, যখন তুমি মীলাদ শরীফ পাঠ কর, তখন আমি মাহফিলে উপস্থিত হই। কিন্তু যখনই হুক্কা আনা হয়, তখন আমি কালবিলম্ব না করে মাহফিল থেকে ফিরে যাই।” ১৬২

১৬২. আল্লামা মুফতী আহমদ ইয়ার খাঁন নঈমী : জাআল হক, ১/১৪৭ পৃ. (উর্দু)

তাই মাওলানা আব্দুল হাই সাহেবের দলীল যেহেতু তারা শুধু এককভাবে দিয়েছেন তাই আমিও প্রথমে তার দলিলটি উপস্থাপন করলাম।

এখন আমি রাসূল (ﷺ) তার ওফাতের পরে কোথাও উপস্থিত হয়েছিলেন তার কোনো নযির পাওয়া যায় কিনা আমরা তা খুঁজে দেখবো।

❏ হযরত সালমা (رضي الله عنه) বলেন-

دَخَلْتُ عَلَى أُمِّ سَلَمَةَ، وَهِيَ تَبْكِي فَقُلْتُ: مَا يُبْكِيكِ؟ قَالَتْ: رَأَيْتُ رَسُولَ اللَّهِ ﷺ فِي الْمَنَامِ يَبْكِي وَعَلَى رَأْسِهِ وَلِحْيَتِهِ التُّرَابُ، فَقُلْتُ: مَا لَكَ يَا رَسُولَ اللَّهِ؟ قَالَ: شَهِدْتُ قَتْلَ الْحُسَيْنِ آنِفًا

-‘‘আমি উম্মাহাতুল মু‘মিনীন মা উম্মে সালামা (رضي الله عنه)‘র হুজরা শরীফে প্রবেশ করলাম এবং দেখলাম যে তিনি কাঁদছেন। আমি বললাম, আপনি কাঁদছেন কেন? তিনি বললেন, একটু আগে আমি রাসূল (ﷺ) কে স্বপ্নে দেখলাম যে তাঁর মাথা মুবারকে এবং দাঁড়ি মুবারকে ধুলা বালি লেগে আছে। অতঃপর আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! আপনার এ অবস্থা কেন? তিনি বললেন, এই মাত্র আমি হুসাইনের শাহাদাতের স্থানে উপস্থিত ছিলাম।’’ ১৬৩

১৬৩.

ইমাম হাকেম নিশাপুরী, আল-মুস্তাদরাক, ৪/২০ পৃ. হা/৬৭৭৪, পরিচ্ছেদ: ذِكْرُ أُمِّ الْمُؤْمِنِينَ أُمِّ سَلَمَةَ بِنْتِ أَبِي أُمَيَّةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهَا , তিনি একে সহীহ বলেছেন

- سكت عنه الذهبي في التلخيص

‘‘ইমাম যাহাবী (رحمة الله) তার তালখীছ গ্রন্থে এ সনদের বিষয়ে নীরব ছিলেন।’’

ইমাম তিরমিযি, আস-সুনান, ৬/১২০ পৃ. হা/৩৭৭১, পরিচ্ছেদ: بَابُ مَنَاقِبِ أَبِي مُحَمَّدٍ الْحَسَنِ بْنِ عَلِيِّ بْنِ أَبِي طَالِبٍ وَالْحُسَيْنِ بْنِ عَلِيِّ بْنِ أَبِي طَالِبٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمَا ,

ইমাম তাবরানী, মু‘জামুল কাবীর, ২৩/৩৭৩ পৃ. হা/৮৮২, খতিব তিবরিযি, মিশকাত, ৩/১৭৭৩ পৃ. হা/৬১৬৬, মোল্লা আলী ক্বারী, মেরকাত, ৯/৩৯৮০ পৃ. হা/৬১৬৬, তিনি বলেন- قَوِّي -‘‘এ হাদিসটি শক্তিশালী।’’ এবং ৯/৩৯৮৬ পৃ. হা/৬১৮০, ইমাম ইবনে আছির, জামেউল উসূল, ৯/৩৫ পৃ. হা/৬৫৬৭

আক্বিদা

এ হাদিস থেকে বুঝা গেল যে, কারবালায় কি ঘটছে তা আল্লাহর নবী (ﷺ) তাঁর আপন রওজা মোবারক থেকেই দেখতে পেয়েছেন, এজন্যই তিনি সেখানে উপস্থিত হয়েছেন। এ হাদিসের (شَهِدْتُ) এর ব্যাখ্যায় আল্লামা মোল্লা আলী ক্বারী (رحمة الله) লিখেছেন- أَيْ: حَضَرْتُ -‘‘অর্থাৎ আমি উপস্থিত ছিলাম।’’ ১৬৪

১৬৪. মোল্লা আলী ক্বারী, মেরকাত, ৯/৩৯৮০ পৃ. হা/৬১৬৬

এ হাদিস থেকে বুঝা গেল প্রথিবীর যে কোন প্রান্তে রাসূল (ﷺ)-এর উপস্থিত হওয়া তাঁর ইখতিয়ারাধীন। তারপরও যারা এ আক্বিদার বিপরীত মত পোষণ করেন তারা কখনই আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতের লোক হতে পারেন না।

❏ এ বিষয়ে আল্লামা ইমাম জালাল উদ্দিন সুয়ূতি (رحمة الله) এর প্রসিদ্ধ কিতাব [أَنْبَاءُ الْأَذْكِيَاءِ بِحَيَاةِ الْأَنْبِيَاءِ] এর ৭ পৃষ্ঠায় একটি হাদিসের ব্যাখ্যায় বলেন,  

النَّظَرِ فِي أَعْمَالِ أُمَّتِهِ وَالِاسْتِغْفَارِ لَهُمْ مِنَ السَّيِّئَاتِ، وَالدُّعَاءِ بِكَشْفِ الْبَلَاءِ عَنْهُمْ، وَالتَّرَدُّدِ فِي أَقْطَارِ الْأَرْضِ لِحُلُولِ الْبَرَكَةِ فِيهَا، وَحُضُورِ جِنَازَةِ مَنْ مَاتَ مِنْ صَالِحِ أُمَّتِهِ، فَإِنَّ هَذِهِ الْأُمُورَ مِنْ جُمْلَةِ أَشْغَالِهِ فِي الْبَرْزَخِ كَمَا وَرَدَتْ بِذَلِكَ الْأَحَادِيثُ وَالْآثَارُ، ـ

-‘‘উম্মতের বিবিধ কর্ম কান্ডের প্রতিদৃষ্টি রাখা, তাদের পাপরাশির জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করা, তাদের বালা মসিবত থেকে রক্ষা করার জন্য দুআ করা, পৃথিবীর এক প্রান্ত থেকে অপর প্রান্তে আনাগোনা করা ও বরকত দান করা এবং নিজ উম্মতের কোন নেক বান্দার ওফাত হলে তার জানাযাতে অংশগ্রহণ করা, এগুলোই হচ্ছে হুযূর (ﷺ) এর সখের কাজ। অন্যান্য হাদিস থেকেও এসব কথার সমর্থন পাওয়া যায়।’’ ১৬৫

১৬৫. সুয়ূতি, আল-হাভী লিল ফাতওয়া, ২/১৮৪-১৮৫ পৃ. দারুল ফিকর ইলমিয়্যাহ, বয়রুত, লেবানন।

❏ বিশ্ববিখ্যাত মুফাস্সির আল্লামা ইসমাঈল হাক্কী (رحمة الله) তাফসীরে রুহুল বায়ানে সূরা মূলকের ২৯নং আয়াতের ব্যাখ্যায় উল্লেখ করেন-

قال الامام الغزالي رحمه الله تعالى والرسول عليه السلام له الخيار فى طواف العوالم مع أرواح الصحابة رضى الله عنهم لقد رآه كثير من الأولياء

-‘‘সূফী কূল সম্রাট, হুজ্জাতুল ইসলাম, ইমাম গায্যালী (رحمة الله) বলেছেন, হুযূর (ﷺ) এর সাহাবায়ে কিরামের রুহ মোবারক সাথে নিয়ে জগতের বিভিন্ন স্থানে পরিভ্রমণের ইখতিয়ার আছে। তাই অনেক আওলিয়া কিরাম তাঁদেরকে দেখেছেন।’’ ১৬৬

১৬৬. আল্লামা ইসমাঈল হাক্কী : তাফসীরে রুহুল বয়ান : ১০/৯৯ পৃ.

নবীগণ ও আল্লাহর ওলীগণ এক সময়ে বহু জায়গায় উপস্থিত হয়ে থাকেন। আর রাসূল (ﷺ) এর তো কোন তুলনাই চলে না।

❏ মিশকাত শরীফের ব্যাখ্যা গ্রন্থ মিরকাতুল মাফাতীহ এর بَاب مَا يُقَال عِنْد من حَضَره الْمَوْت শীর্ষক অধ্যায়ে আল্লামা মোল্লা আলী ক্বারী (رحمة الله) বলেন-

وَلَا تَبَاعُدَ مِنَ الْأَوْلِيَاءِ حَيْثُ طُوِيَتْ لَهُمُ الْأَرْضُ، وَحَصَلَ لَهُمْ أَبْدَانٌ مُكْتَسَبَةٌ مُتَعَدِّدَةٌ، وَجَدُوهَا فِي أَمَاكِنَ مُخْتَلِفَةٍ فِي آنٍ وَاحِدٍ،

-‘‘ওলীগণ একই মুহুর্তে কয়েক জায়গায় বিচরণ করতে পারেন। একই সময়ে তারা একাধিক শরীরের অধিকারীও হতে পারেন।’’ ১৬৭

১৬৭. আল্লামা মোল্লা আলী ক্বারী : মেরকাত চতুর্থ খণ্ড, পৃ- ১০১, হাদিস নং-১৬৩২।

তাই এক সময়েই বহু জায়গায় মিলাদ মাহফিল হয় ওলীগণ যদি একাধিক শরীরে বহু জায়গায় যেতে পারেন তাহলে রাসূল (ﷺ) কি যেতে পারেন না? বরং তার সাথে কোন তুলনাই হতে পারে না ?

❏ শিফা শরীফে ইমাম কাযী আয়ায আল-মালেকী (رحمة الله) লিখেন,

قَالَ: إِنْ لَمْ يَكُنْ فِي الْبَيْتِ أَحَدٌ فَقُلْ السَّلَامُ عَلَى النَّبِيِّ وَرَحْمَةُ اللَّهِ وَبَرَكَاتُهُ، السَّلَامُ عَلَيْنَا وَعَلَى عِبَادِ اللَّهِ الصَّالِحِينَ ـ

-‘‘যে ঘরে কেউ না থাকে, সে ঘরে (প্রবেশের সময়) বলবেন, হে নবী আপনার প্রতি সালাম, আপনার উপর আল্লাহর অশেষ রহমত ও বরকত বর্ষিত হোক।’’ ১৬৮

১৬৮. ইমাম কাজী আয়াজ : শিফা তাহরিফে হুকুকে মোস্তফা : ২/৪৩ পৃ.।

❏ এর ব্যাখ্যায় আল্লামা মোল্লা আলী ক্বারী (رحمة الله) শরহে শিফা গ্রন্থে লিখেন-

أي لأن روحه عليه السلام حاضر في بيوت أهل الإسلام

-‘‘কেননা, নবী (ﷺ) এর পবিত্র রুহ মুসলমানদের ঘরে ঘরে বিদ্যমান আছেন।’’ ১৬৯

১৬৯. আল্লামা মোল্লা আলী ক্বারী শরহে শিফা : ২/১১৮ পৃ.।

❏ এ ব্যাপারে উপরের হাদিসের ন্যায় আরও একটি হাদিসে পাক রয়েছে যে

وَقَال النَّخَعِيّ إذَا لَم يَكُن فِي الْمَسْجِد أَحَد فَقُل: السَّلَام على رسول الله صلى الله عليه وَسَلَّم وَإذَا لَم يَكُن فِي البَيْت أَحَد فَقُل: السَّلَام عَلَيْنَا وَعَلَى عِبَاد اللَّه الصَّالِحِين

-‘‘বিখ্যাত তাবেয়ী হযরত ইবরাহিম নাখঈ (رحمة الله) বলেন, যখন মসজিদের মধ্যে কোন লোক থাকবে না তখন রাসূল (ﷺ) কে সালাম দিবে এবং যে ঘরে কেউ না থাকে, সে ঘরে (প্রবেশের সময়) বলবেন, হে আল্লাহর মাহবুব বান্দাগণ আপনাদের প্রতি সালাম।’’ ১৭০

১৭০. ইমাম কাযী আয়ায : শিফা তাহরিফে হুকুকে মোস্তফা : ২/৬৭ পৃ.।

❏ এ বিষয়ে আরেকটি হাদিস রয়েছে যে-

وَعَن علقمة إذَا دَخَلْت الْمَسْجِد أَقُول السَّلَام عَلَيْك أيُّهَا النَّبِيّ وَرَحْمَة اللَّه وَبَرَكَاتُه صَلّى اللَّه

-‘‘হযরত আলকামা (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, যখন তোমরা মসজিদে প্রবেশ করবে যে ঘরে কেউ না থাকে, সে ঘরে (প্রবেশের সময়) বলবেন, হে নবী আপনার প্রতি সালাম, আপনার উপর আল্লাহর অশেষ রহমত ও বরকত বর্ষিত হোক।’’ ১৭১

১৭১. ইমাম কাজী আয়াজ : শিফা তাহরিফে হুকুকে মোস্তফা : ২/৬৭ পৃ.

তাই বুঝা গেল রাসূল উপস্থিত আছেন বলেই কেউ মসজিদে না থাকলেও তাকে সালাম দিতে হবে।

❏ এ বিষয়ে আমরা আরও হাদিসে পাক দেখতে পাই-

عَمْرِو بْنِ حَزْمٍ قَالَ: كَانَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِذَا دَخَلَ الْمَسْجِدَ قَالَ: السَّلَامُ عَلَى النَّبِيِّ وَرَحْمَةُ اللَّهِ، اللَّهُمَ افْتَحْ لِي أَبْوَابَ رَحْمَتِكَ وَالْجَنَّةَ

-‘‘হযরত আমর ইবনে হাযম (رضي الله عنه) বলেন রাসূল যখন মসজিদে প্রবেশ করতেন তিনি বলতেন আল্লাহর হাবিবের উপর সালাম ও সালাম বর্ষিত হউক। তারপর প্রবেশের দোয়া বলতেন......।’’ ১৭২

১৭২. ইমাম আবদুর রায্যাক, আল-মুসান্নাফ, : ১/৪২৫ পৃ. হা/১৬৬৩।

❏ এটি তিনি আমাদের শিখানোর জন্যই বলতেন। এ বিষয়ে আরও হাদিস রয়েছে যে-

أَنَّ كَعْبًا قَالَ: لِأَبِي هُرَيْرَةَ: احْفَظْ عَلَيَّ اثْنَتَيْنِ، إِذَا دَخَلْتَ الْمَسْجِدَ سَلِّمْ عَلَى النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، وَقُلِ: اللَّهُمُ افْتَحْ لِي أَبْوَابَ رَحْمَتِكَ

-‘‘হযরত কা‘ব (رضي الله عنه) কে হযরত আবু হুরায়রা (رضي الله عنه) কে বলেছিলেন, তুমি দু‘টি জিনিসকে হিফাযত কর। যখন মসজিদে প্রবেশ করবে রাসূল (ﷺ)কে সালাম দিবে তখন ও বলবে যে.......।’’ ১৭৩

১৭৩.

(ক) মাম আবদুর রায্যাক, আল-মুসান্নাফ, ১/৪২৭ পৃ. হা/১৬৭০

(খ) নাসাঈ, আস্-সুনানিল কোবরা, ৯/৪০ পৃ. হা/৯৮৩৯

(গ) নাসাঈ, আমালুল ইউয়াম ওয়াল লাইলা, ১/১৭৮ পৃ. হাদিস, ৯১

❏ ইমাম আবদুর রায্যাক (رحمة الله) {ওফাত.২১১হি.} সংকলন করেন-

عَبْدُ الرَّزَّاقِ، عَنِ ابْنِ عُيَيْنَةَ، عَنْ مُحَمَّدِ بْنِ عَجْلَانَ، عَنْ سَعِيدِ بْنِ أَبِي سَعِيدٍ الْمَقْبُرِيِّ مِثْلَهُ

-‘‘এ বিষয়ে হযরত সাঈদ বিন আবি সাঈদ মাকবুরী (رحمة الله) এর ধারাবাহিকতায় আরেকটি সূত্রে বর্ণিত আছে।’’১৭৪

১৭৪. ইমাম আবদুর রাজ্জাক, আল-মুসান্নাফ, ১/৪২৭ পৃ. হাদিস:১৬৭১

❏ এ বিষয়ে আরেকটি সূত্র পাওয়া যায়-

عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ قَالَ: قَالَ لِي كَعْبُ بْنُ عُجْرَةَ: إِذَا دَخَلْتَ الْمَسْجِدَ فَسَلِّمْ عَلَى النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، وَقُلِ: اللَّهُمَّ افْتَحْ لِي أَبْوَابَ رَحْمَتِكَ، وَإِذَا خَرَجْتَ فَسَلِّمْ عَلَى النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، وَقُلِ: اللَّهُمَّ احْفَظْنِي مِنَ الشَّيْطَانِ

-‘‘হযরত আবু হুরায়রা (رضي الله عنه) কে হযরত কা‘ব বিন উযরাহ (رضي الله عنه) বললেন, তুমি যখন মসজিদে প্রবেশ করবে তখন রাসূল (ﷺ) কে সালাম দিবে ও (দুআ) বলবে যে.......। আর যখন মসজিদ হতে বের হবে তখনও নবি দোজাহানকে সালাম দিবে তারপর (দুআ) বলবে.....।’’১৭৫

১৭৫. ইমাম আবি শায়বাহ, আল-মুসান্নাফ, ১/২৯৮ পৃ. হাদিস: ৩৪১৫ ও ৬/৯২ পৃ. হা/২৯৭৬৭

❏ এ ব্যাপারে আরেকটি হাদিস পাওয়া যায়-

أَنَّ عَبْدَ اللَّهِ بْنَ سَلَامٍ كَانَ إِذَا دَخَلَ الْمَسْجِدَ سلَّمَ عَلَى النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، وَقَالَ: اللَّهُمَّ افْتَحْ لِي أَبْوَابَ رَحْمَتِكَ، وَإِذَا خَرَجَ سلَّمَ عَلَى النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَتَعَوَّذَ مِنَ الشَّيْطَانِ

-‘‘নিশ্চয়ই হযরত আবদুুল্লাহ বিন সালাম (رضي الله عنه) তিনি যখন কোন মসজিদে প্রবেশ করতেন প্রথমে তিনি নবিয়ে দুজাহানের প্রতি সালাতু সালাম বলতেন, তারপর প্রবেশের দোয়া বলতেন। তারপর যখন মসজিদ হতে বের হতেন তখনও নবিয়ে দুজাহানের প্রতি সালাতু সালাম বলতেন।’’ ১৭৬

১৭৬.

(ক) ইমাম আবি শায়বাহ, আল-মুসান্নাফ, : ৬/৯৭ পৃ. হাদিস: ২৯৭৬৮

(খ) ইবনে আবি উসামা ইবনে হারেস (ওফাত. ২৮২ হি.), মুসনাদে হারিস, ১/২৫৪ পৃ. হা/১৩০

❏ ইমাম আবু দাউদ (رحمة الله)সহ আরও অনেকে সংকলন করেন-

عَنْ أَبِي حُمَيْدٍ السَّاعِدِيِّ، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ ﷺ : إِذَا دَخَلَ أَحَدُكُمُ الْمَسْجِدَ، فَلْيُسَلِّمْ عَلَى النَّبِيِّ ﷺ، ثُمَّ لِيَقُلْ: اللَّهُمَّ افْتَحْ لِي أَبْوَابَ رَحْمَتِكَ

-‘‘হযরত আবু হুমাইদ সায়েদী (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূল (ﷺ) ইরশাদ করেন, যখন কোন ব্যক্তি মসজিদে প্রবেশ করবে অতঃপর সে যেন তাঁর রাসূল (ﷺ)-এর প্রতি সালাতু সালাম পেশ করে। তারপর বলবে মসজিদে প্রবেশের দোয়া বলবে।’’ ১৭৭

১৭৭.

(১) সুনানে দারেমী, ২/৮৭৬ পৃ. হাদিস, ১৪৩৪,

(২) সুনানে ইবনে মাযাহ, ১/২৫৪ পৃ. হাদিস, ৭৭২, আলবানী এ হাদিসের তাহক্বীকে সনদটিকে সহীহ বলেছেন,

(৩) বায়হাকী, আস্-সুনানিল কোবরা, ২/৬১৯ পৃ. হাদিস, ৪৩১৭ও ২/৬১৯ পৃ. হাদিস, ৪৩১৯,

(৫) আবূ দাউদ, আস্-সুনান, ১/১২৬পৃ. হাদিস, ৪৬৫

(৬) বায্যার, আল-মুসনাদ, ৯/১৬৯ পৃ. হাদিস, ৩৭২০

(৭) নাসাঈ, আস্-সুনানিল কোবরা, ১/৪০৪ পৃ. হাদিস, ৮১০

(৮) নাসাঈ, আমালুল ইউয়াম ওয়াল লাইলা, ১/২২০পৃ. হাদিস, ১৭৭

(৯) আবূ আওয়ানাহ, আল-মুসনাদ, ১/৩৫৪ পৃ. হা/১২৩৪

(১০) ইবনে হিব্বান, আস্-সহীহ, ৫/৩৯৭ পৃ. হাদিস, ২০৪৮

(১১) তাবরানী, কিতাবুদ্-দোয়া, ১/১৫০ পৃ. হা/৪২৬

(১২) ইবনে সুন্নী, আমালুল ইউয়াম ওয়াল লাইলা, ১/১৩৪ পৃ. হাদিস, ১৫৬

(১৩) নাওয়াবী, আল-মুখালি­সিয়্যাত, ২/৩৯১ পৃ. হাদিস, ১৮২৪

(১৪) বায়হাকী, দাওয়াতুল কাবীর, ১/১২৬ পৃ. হাদিস, ৬৬

❏ এ বিষয়ে আরও হাদিসে পাক রয়েছে-

عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ ؓ، أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ ﷺ قَالَ: إِذَا دَخَلَ أَحَدُكُمُ الْمَسْجِدَ، فَلْيُسَلِّمْ عَلَى النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، وَلْيَقُلْ: اللَّهُمَّ افْتَحْ لِي أَبْوَابَ رَحْمَتِكَ، وَإِذَا خَرَجَ، فَلْيُسَلِّمْ عَلَى النَّبِيِّ ﷺ

-‘‘হযরত আবু হুরায়রা (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নিশ্চয় রাসূল (ﷺ) বলেছেন, যখন কোন ব্যক্তি মসজিদে প্রবেশ করবে অতঃপর সে যেন রাসূল (ﷺ)-এর প্রতি সালাতু সালাম পেশ করে। তারপর মসজিদে প্রবেশের দোয়া বলবে এবং আর যখন মসজিদ থেকে বের হবে তখনও রাসূল (ﷺ)-এর প্রতি সালাতু সালাম বলবে।’’১৭৮

১৭৮.

(১) সুনানে ইবনে মাযাহ, ১/২৫৪ পৃ. হাদিস, ৭৭৩, আলবানী এ হাদিসের তাহক্বীকে সনদটিকে সহীহ বলেছেন,

(২) বায্যার, আল-মুসনাদ, ১৫/১৬৮ পৃ. হাদিস, ৮৫২৩

(৩) বায্যার, আল-মুসনাদ, ১৫/১৭৬ পৃ. হাদিস, ৮৫৪৩

(৪) নাসাঈ, আস্-সুনানিল কোবরা, ৯/৪০ পৃ. হাদিস, ৯৮৩৮

(৫) নাসাঈ, আস্-সুনানিল কোবরা, ৯/৪০পৃ. হাদিস, ৯৮৪০

(৬) নাসাঈ, আমালুল ইউয়াম ওয়াল লাইলা, ১/১৭৮ পৃ. হাদিস, ৯০

(৭) ইবনে খুযায়মা, আস্-সহীহ, ১/২৩১ পৃ. হাদিস, ৪৫২, আলবানী বলেন এটি মুসলিমের শর্ত অনুযায়ী সহীহ

(৮) ইবনে খুযায়মা, আস্-সহীহ, ৪/২১০পৃ. হাদিস, ২৭০৬

(৯-১০) ইবনে হিব্বান, আস্-সহীহ, ৫/৩৯৫ পৃ. হাদিস, ২০৪৭, ও ৫/৩৯৯ পৃ. হা/২০৫০

(১১) ইবনে সুন্নী, আমালুল ইয়াউম ওয়াল লাইলা, ১/৭৭ পৃ. হাদিস, ৮৬

(১২) বায়হাকী, আস্-সুনানিল কোবরা, ২/৬২০ পৃ. হা/৪৩২১

(১৩) হাইসামী, মাওয়ারিদুয্-যামান, ১/১০১পৃ. হা/৩২১

পর্যালোচনা:

সম্মানিত পাঠকবৃন্দ! রাসূল (ﷺ) যদি হাযির-নাযির না হন তাহলে কেনো মসজিদে এবং কোনো মু‘মিনের গৃহে প্রবেশ করতে হলে তাকে সালাম দিতে হবে!

❏ এর ব্যাখ্যায় আল্লামা মোল্লা আলী ক্বারী (رحمة الله) শরহে শিফা গ্রন্থে অনেক সুন্দর লিখেছেন-

أي لأن روحه عليه السلام حاضر في بيوت أهل الإسلام

-‘‘কেননা, নবী (ﷺ) এর পবিত্র রুহ মুসলমানদের ঘরে ঘরে বিদ্যমান আছেন।’’ ১৭৯

১৭৯. আল্লামা মোল্লা আলী ক্বারী শরহে শিফা: ২/১১৮ পৃ. দারুল কুতুব ইসলামিয়্যাহ, বয়রুত, লেবানন।

❏ উপমহাদেশের শ্রেষ্ঠতম মুহাদ্দিস শাহ ওয়ালী উল্লাহ মুহাদ্দিস দেহলভী (رحمة الله) ‘ফয়যুল হারামাঈন’ কিতাবে নিজের মতামত প্রকাশ করে বলেন-

 ورأيته صلى الله عليه وسلم فى اكثر الامور بيدى اى صورته الكريمة التى كان عليها مرة بعد مرة فتفطنت ان له خاصة من تقويم روحه بصورة جسده عليه السلام وانه الذى اشار اليه بقوله ان الانبياء لا يموتون وانهم يصلون فى قبورهم وهم يحجون وانهم احياء ـ

-‘‘আমি রাসূল (ﷺ) কে অধিকাংশ দ্বীনি ব্যাপারে তার নিজ আকৃতিতে আমার সম্মুখে বার বার দেখেছি। এতে আমি উপলব্ধি করলাম যে, তার রুহ মোবারকের এমন বিশেষ শক্তি রয়েছে যে, তা তার আকৃতি ধারণ করতে পারে। এটা রাসূল (ﷺ) এর ঐ উক্তির ইঙ্গিত যে, নবীগণ মরে না, তারা নিজ নিজ কবরে নামায পড়ে থাকেন, তারা হজ্জ করে থাকেন এবং তাঁরা জীবিত আছেন।’’১৮০

১৮০. আল্লামা শাহ ওয়ালী উল্লাহ মুহাদ্দেস দেহলভী : ফয়যুল হারামাঈন : ২৪৫ পৃ

❏ সূফীকুল সম্রাট ইমাম শা’রানী (رحمة الله) এর অন্যতম গ্রন্থ لواقح الانوار القدسية فى البيان العهود المحمدية এর ১২১ পৃষ্ঠায় লিখেন, আমার পীর শেখ নূরুদ্দীন শাওনী (رحمة الله) প্রতিদিন দশ হাজার বার দুরূদ পড়তেন আর (তার শায়খ) শেখ আহমদ যাওয়াভী (رحمة الله) চলি­শ বার তার অযিফা পড়তেন। তিনি একবার আমাকে (শা’রানী) বললেন-

طريقتنا ان نكثر من الصلاة على النبى صلى الله عليه وسلم حتى يصير يجالسنا يقظه ونصحبه مثل الصحابة ونسأله عن امور ديننا وعن الاحاديث التى ضعفها الحفاط عندنا ونعمل بقوله صلى الله عليه وسلم فيها وما لم يقع لنا ذلك فلسنا من لم اكثرين للصلاة عليه صلى الله عليه وسلم ـ

-‘‘আমাদের বাধা নিয়ম এই যে, আমরা নবী করীম (ﷺ) এর উপরে এত অধিক সালাত (দরূদ) পড়তাম যাতে তিনি জাগ্রত অবস্থায় আমাদের নিকট বসতেন, সাহাবাগণ যেমনিভাবে তার সাহচর্য যে রূপ লাভ করেছেন, আমরাও সেরূপ সাহচর্য লাভ করতাম, আমাদের দ্বীনি বিষয়গুলো তার নিকট ফয়সালা করে নিতাম, যে সমস্ত হাদিস মুহাদ্দিসগণ, হাফেযগণ দ্বঈফ বলেছেন, ঐ বিষয়ে জিজ্ঞাসা করে সঠিক উত্তর জেনে নিতাম এবং তাঁর নাম অনুসারে ঐ সমস্ত হাদিসের উপরে আমল করতাম। যে পর্যন্ত আমরা ঐ পর্যায়ে না পৌঁছতাম, সে পর্যন্ত আমরা নিজেদেরকে সালাত (দরূদ) স্পষ্টপাঠকারী বলে গণ্য করতাম না।’’

❏ এখন দেওবন্দীদের পীর ও গুরু এবং পীরানে পীর হাজী এমদাদুল্লাহ মুহাজিরে মক্কী (رحمة الله) থেকে মীলাদে নবীজী হাজির-নাজির হওয়া প্রসঙ্গে দলিল পেশ করছি। তিনি তার প্রসিদ্ধ গ্রন্থ “শামায়েলে এমদাদীয়া” এর মধ্যে বলেন,

البتہ وقت قيام كے اعتقاد تولد كا نہ كرنا چاہئے - اگر احتمال تشريف آورى كا كيا جا ئے مضائقہ نہیں كيوں كہ عالم خلق مقيد برزمان ومكان ہے - ليكن عالم امر دونوں سے پاك ہے – پس قدم رنجہ فرمانا ذات بابر كات كا بعيد نہیں -  

-“মীলাদ শরীফে” কিয়াম করার সময় হুযূর (ﷺ) এখন ভুমিষ্ট হচ্ছেন এ ধরনের বিশ্বাস না রাখা উচিত। আর যদি মাহফিলে তাশরীফ আনেন এমন বিশ্বাস রাখে, তাহলে অসুবিধা নেই, কারণ এ নশ্বর জগতে কাল ও স্থানের সাথে সম্পৃক্ত। আর পরকাল স্থান-কালের সম্পর্ক থেকে মুক্ত।’’ ১৮১

১৮১. হাজী এমদাদুল্লাহ মুহাজিরে মক্কী : শামায়েলে এমদাদীয়া : পৃষ্ঠা নং- ১০৩ পৃ. মাকতুবায়ে থানবী, দেওবন্দ।

অতএব হুযূর (ﷺ) মাহফিলে তাশরীফ আনয়ন করা ও উপস্থিত হওয়া অসম্ভব নয়। উক্ত গ্রন্থটি মাওলানা আশরাফ আলী থানবী সাহেব কৃত সত্যায়িত করা হয়েছিল। যা দেওবন্দ এর “মাকতুবায়ে থানবী” লাইব্রেরী থেকে প্রকাশিত।

❏ শুধু তাই নয় হাজী সাহেব আরও বলেন,

رہايہ اعتقاد كہ مجلس مولد ميں حضور پر نور صلى الله عليہ وسلم رونق افروز ہو تے ہیں اسى اعتقاد كو كفر و شرك كہنا حد سے بڑهنا كيوں كہ يہ امر ممكن عقلا ونقلا – بلكہ بعض مقامات پر اس كا وقوع بهى و ہوتاہے –

-‘‘এ আক্বীদা ও বিশ্বাস রাখা যে, মিলাদ মাহফিলে হুযূর পুরনুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উপস্থিত হন, এটা ‘কুফর’ বা ‘শিরক’ নয়, বরং এমন বলা সীমা লঙ্গন ছাড়া কিছুই নয়। কেননা এ বিষয়টি যুক্তিভিত্তিক ও শরীয়তের দলীলের আলোকে সম্ভব। এমনকি অনেকক্ষেত্রে বাস্তবে তা ঘটেও থাকে।’’ ১৮২

১৮২. আল্লামা হাজী এমদাদুল্লাহ মুহাজিরে মক্কী : কুল্লীয়াতে এমদাদীয়া, পৃ : ১০৩ মাকতুবাতে থানবী, দেওবন্দ, ভারত।

মহান রব যেন আমাদের সকলকে সঠিক আক্বিদা ধারণের তৌফিক দান করেন, আমিন।

বিষয় নং-১৩: রাসূল (ﷺ) দরূদ শুনেন এবং দরূদ পাঠকারীকে চিনেন:

‘‘হাদীসের নামে জালিয়াতি’’ গ্রন্থের ৩৭২ পৃষ্ঠায় ড. আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীর এ আক্বিদা পোষণকারী সম্পর্কে লিখেছেন-‘‘প্রচলিত জাল ও মিথ্যাগুলোর একটি।’’

তারপর সে মাওলানা আব্দুল হাই লাখনৌভী উদ্ধিৃতি দিয়ে জাল একটি বর্ণনা তুলে ধরে পুরো বিষয়টিকেই অস্বীকার করে বসেন।

ড. আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীর সে তার কান আর রাসূল (ﷺ) এর কান মোবারককে এক মনে করে ফেলেছেন, যা সম্পূর্ণ কুফুরী ও রাসূল (ﷺ) এর শানে বেয়াদবীরই শামিল এবং তাঁর একটি গুরুত্বপূর্ণ মুজিজা অস্বীকার করারই নামান্তর। রাসূল (ﷺ) এর কান মোবারক কারও কানের মত নয়, তা নবী করীম (ﷺ) নিজেই বলছেন, যা বহু হাদিসে বর্ণিত আছে।

❏ হযরত আনাস (رضي الله عنه) বলেন, একবার হুযূর (ﷺ) হযরত বেলাল (رضي الله عنه) কে বললেন-

يَا بِلَالُ هَلْ تَسْمَعُ مَا أَسْمَعُ؟ قَالَ: لَا وَاللَّهِ يَا رَسُولَ اللَّهِ مَا أَسْمَعُهُ، قَالَ: أَلَا تَسْمَعُ أَهْلَ الْقُبُورِ يُعَذَّبُونَ

-‘‘হে বেলাল! তুমি কি শুনতে পাচ্ছ যা আমি শুনতে পাচ্ছি? তিনি বললেন, না। ইয়া রাসূলাল্লাহ! আল্লাহর শপথ করে বলছি আমি কিছুই শুনতে পাচ্ছি না। হুযূর (ﷺ) ইরশাদ করলেন, তুমি শুনতে পাচ্ছ না এই কবরবাসীদের (ইয়াহুদীদের) কে আযাব দেয়া হচ্ছে।’’১৮৩

১৮৩. ইমাম হাকেম, আল-মুস্তাদরাক, ১/৯৮ পৃ. হা/১১৮, তিনি বলেন- هَذَا حَدِيثٌ صَحِيحٌ عَلَى شَرْطِ الشَّيْخَيْنِ -‘‘এ হাদিসটি সহীহ বুখারী মুসলিমের শর্তানুসারে সহীহ।’’ ইমাম যাহাবীও তার সাথে একমত পোষণ করেছেন।

এ হাদিস থেকে জানা গেল যে সাহাবায়ে কিরামগণের নিকট যেটি গায়ব ছিল কিন্তু রাসূল (ﷺ)‘র কাছে তা নয়। হযরত বেলাল (رضي الله عنه) কসম করে বলেছেন তিনি কিছুই শুনেননি; বুঝা গেল মাটির ভিতরে কবরের অবস্থা পঞ্চ ইন্দ্রের বাহিরে তাই এটি সুস্পষ্ট গায়ব। আর এটাই সাহাবায়ে কিরামদের আক্বিদা ছিল রাসূল (ﷺ) গায়বের খবর দাতা। এ হাদিস থেকে বুঝা গেল রাসূল (ﷺ) এমন অনেক কিছু শুনেন যা আমরা শুনিনা। রাসূল (ﷺ)-এর কাছে অনেক দূরের আওয়াজও নিকটেও আওয়াজের মত শুনতে পান। বিষয়টির সুস্পষ্টতার জন্য কয়েকটি উদাহরণ তুলে ধরছি।

❏ সায়্যিদুনা হযরত আবূ হুরায়রা (رضي الله عنه) বলেন, আমরা রাসূল (ﷺ)’র পবিত্র খেদমতে উপস্থিত হলাম। হঠাৎ করে একটি মৃদু শব্দ শুনলাম, নাবী (ﷺ) বললেন-

أَتُدْرُونَ مَا هَذَا؟

‘তোমরা কি জান এই মৃদু শব্দ কিসের?’

তখন আমরা বললাম-

اللَّهُ وَرَسُولُهُ أَعْلَمُ

-‘আল্লাহ এবং তাঁর রাসূলই ভাল জানেন।’ রাসূল (ﷺ) বলেন-

هَذَا حَجَرٌ رُمِيَ بِهِ فِي النَّارِ مُنْذُ سَبْعِينَ خَرِيفًا، فَهُوَ يَهْوِي فِي النَّارِ الْآنَ، حَتَّى انْتَهَى إِلَى قَعْرِهَا

-‘এটি পাথরের শব্দ, যেটি আজ থেকে ৭০ বছর পূর্বে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হয়েছিল, এখন এটি জাহান্নামের নিচে পৌঁছেছে।’ ১৮৪

১৮৪. সহীহ মুসলিম শরীফ, ৪/২১৮৪ পৃ. হা/২৮৪৪, পরিচ্ছেদ: بَابٌ فِي شِدَّةِ حَرِّ نَارِ جَهَنَّمَ وَبُعْدِ قَعْرِهَا وَمَا تَأْخُذُ مِنَ الْمُعَذَّبِينَ

নাবি পাক (ﷺ)’র শ্রবণশক্তি এত বেশি যে, দূর-নিকট এর কোন পার্থক্য নেই। সত্তর বছর ধরে নিচে পাথর পড়ছে। এটা কত কোটি মাইল দূরে তা আন্দাজ করা যায়। হুযূর পাক (ﷺ) এই পাথর জাহান্নামের নীচে যাওয়ার ফলে সৃষ্ট আওয়াজ মাদিনা শরীফে বসে শুনেছেন। অনুরূপ রাসূল (ﷺ) তাঁর উম্মাত ও গোলামদের দরুদ ও সালাম শুনেন। তারা যেখান থেকে পড়ুকনা কেন?

❏ হযরত আবু যার আল গিফারী (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন-

عَنْ أَبِي ذَرٍّ ؓ، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ ﷺ : إِنِّي أَرَى مَا لَا تَرَوْنَ، وَأَسْمَعُ مَا لَا تَسْمَعُونَ، إِنَّ السَّمَاءَ أَطَّتْ، وَحَقَّ لَهَا أَنْ تَئِطَّ، مَا فِيهَا مَوْضِعُ أَرْبَعِ أَصَابِعَ إِلَّا وَمَلَكٌ وَاضِعٌ جَبْهَتَهُ سَاجِدًا لِلَّهِ

-‘‘রাসূল (ﷺ) ইরশাদ ফরমান, আমি এমন কিছু দেখি, যা তোমরা দেখোনা, এমন কিছু শুনি, যা তোমরা শুনো না। আকাশ বোঝার কারণে চড় চড় করে, (তাও শুনি) তার ‘চড় চড়’ করাই সঙ্গত, কেননা, আকাশে চার আঙ্গুল পরিমাণ জায়গাও নেই, যেখানে কোন একজন ফেরেস্তা আল্লাহর সামনে মাথা নত করে রাখেনি।’’ ১৮৫

১৮৫.  

(ক.) ইমাম তিরমিযী: আস সুনান: কিতাবুদ যুহুদ : ৪/১৩৪ পৃ. হা/২৩১২

(খ.) ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল: আল মুসনাদ: ৫/১৭৩ পৃ.

(গ.) ইমাম ইবনে মাজাহ: আস্-সুনান: কিতাবুদ যুহুদ :২/১৪০২ পৃ. হা/৪১৯০

(ঘ.) ইমাম আবু নুয়াইম ইস্পাহানি : হিলইয়াতুল আউলিয়া :২/২৩৬ পৃ.

(ঙ) ইমাম জালালুদ্দীন সুয়ূতি: খাসায়েসুল কোবরা: ১/১১৮ পৃ. হা/৩০৬

(চ) আবু নসার মারওয়াযী, তা‘জিমে কদ্বরুল সলাত, ১/২৫৯ পৃ. হা/২৫১

(ছ) বায্যার, আল-মুসনাদ, ৯/৩৫৭ পৃ. হা/৩৯২৫

(জ) ইবনে শায়খ ইস্পাহনী, আল-আজিমাত, ৩/৯৮২ পৃ. হাদিস, ৫০৭

(ঝ) হাকিম নিশাপুরী, আল-মুস্তাদরাক, ৪/৬২৩ পৃ. হাদিস, ৮৭২৬

(ঞ) হাকিম নিশাপুরী, আল-মুস্তাদরাক, ২/৫৫৪ পৃ. হাদিস, ৩৮৮৩

(ট) বায়হাকী, শুয়াবুল ঈমান, ২/২২৬ পৃ.হাদিস, ৭৬৪

(ঠ) বায়হাকী, আস্-সুনানিল কোবরা, ৭/৮৩ পৃ. হাদিস, ১৩৩৩৭

(ড) বগভী, শরহে সুন্নাহ, ১৪/৩৭০ পৃ. হাদিস, ৪১৭২

(ঢ) আলবানী: সিলসিলাতুস সহীহাহ, হা/১৭২২, তিনি বলেন, হাদিসটি সহীহ।

উক্ত হাদিস দ্বারা বুঝা গেল, রাসূল (ﷺ) ফেরেস্তাদের দাঁড়ানো এবং তাদের ওজনে আকাশ থেকে আসার শব্দ তিনি শুনেছেন এবং তাদের অবস্থা দেখেছিলেন তারা কীভাবে দাঁড়িয়ে আছেন। অথচ সাহাবীদের কাছে তা সম্পূর্ণ অদৃশ্যই ছিল।

❏ এ ধরনের আরেকটি হাদিস ইমাম সুয়ূতি (رحمة الله) সংকলন করেন-

واخرج البيهقى والصابونى فى (المأتين) والخطيب وابن عساكر فى التاريخيهما ، عَنِ الْعَبَّاسِ بْنِ عَبْدِ الْمُطَّلِبِ قَالَ: قُلْتُ: يَا رَسُولَ اللهِ، دَعَانِي إِلَى الدُّخُولِ فِي دِينِكَ أَمَارَةٌ لِنُبُّوتِكَ، رَأَيْتُكَ فِي الْمَهْدِ تُنَاغِي الْقَمَرَ وَتُشِيرُ إِلَيْهِ بِأُصْبُعِكَ، فَحَيْثُ أَشَرْتَ إِلَيْهِ مَالَ قَالَ: إِنِّي كُنْتُ أُحَدِّثُهُ وَيُحَدِّثُنِي، وَيُلْهِينِي عَنِ الْبُكَاءِ، وَأَسْمَعُ وَجْبَتَهُ حِينَ يَسْجُدُ تَحْتَ الْعَرْشِ ----- قال البيهقى تفرد به أحمد بن ابراهيم الجبلى وهو مجهول وقال الصابونى : هذا حديث غريب الاسناد والمتن فى المعجزات حسن ـ      

-‘‘ইমাম বায়হাকী, দালায়েলুল নবুওয়াতে, সাবূনী তাঁর মাতীন গ্রন্থে, খতিব বাগদাদী তারীখে বাগদাদে এবং ইমাম ইবনে আসাকির তারীখে দামেস্কে হযরত আব্বাস (رضي الله عنه)হতে বর্ণনা করেন যে, তিনি রাসূল (ﷺ) কে বললেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ (ﷺ)! আমি আপনার নবুয়তের এ আলামত দেখে ঈমান এনেছি যে, তা হল আপনি চাঁদের সাথে শিশু অবস্থায় বাক্যলাপ করেছিলেন এবং তার দিকে আঙ্গুলে ইশারা করছিলেন, আপনি যেদিকে ইশারা করতেন, চাঁদ সেদিকেই হেলে যেত। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বললেন, আমি তখন চাঁদের সাথে কথা বলেছিলাম এবং চাঁদ আমার সাথে কথা বলছিল। সে আমার ক্রন্দনে সান্তনা দিচ্ছিল। আর চন্দ্র যখন আল্লাহর আরশের নীচে সেজদা করে, তখনও আমি তার তাসবীহ শুনতে পাই।’’১৮৬

১৮৬.

(ক) আবূ সা‘দ নিশাপুরী, শরফে মোস্তফা, ১/৩৫৮ পৃ.

(খ) জুরকানী, শরহুল মাওয়াহেব, ১/২৭৫ পৃ.  

(গ) বুরহানুদ্দীন হালবী, সিরাতে হালবিয়্যাহ, ১/১১৫ পৃ.  

(ঘ) ইবনে সালেহ শামী, সবলুল হুদা ওয়ার রাশাদ, ১/৩৪৯ পৃ.ও ১০/৪৮১ পৃ.  

(ঙ) ইবনে কাসীর, বেদায়া ওয়ান নিহায়া, ১/২১১ পৃ.  

(চ) বায়হাকী, দালায়েলুল নবুয়ত, ২/৪১ পৃ.  

(ছ) ইমাম জালাল উদ্দিন সুয়ূতি : খাসায়েসুল কোবরা : ১/৯৪ পৃ. হা/২৩৭

❏ হযরত আবু দারদা (رضي الله عنه) বলেন, হুযূর (ﷺ) ইরশাদ ফরমান,

قَالَ الطَّبَرَانِيّ حَدثنَا يحيى بن أَيُّوب العلاف حَدثنَا سعيد بن أبي مَرْيَم حَدثنَا يحيى بن أَيُّوب عَن خَالِد بن يزِيد عَن سعيد بن أبي هِلَال عَن أبي الدَّرْدَاءؓ قَالَ قَالَ رَسُول الله ﷺ أَكْثرُوا الصَّلَاة عَليّ يَوْم الْجُمُعَة فَإِنَّهُ يَوْم مشهود تشهده الْمَلَائِكَة لَيْسَ من عبد يُصَلِّي عَليّ إِلَّا بَلغنِي صَوته حَيْثُ كَانَ قُلْنَا وَبعد وفاتك قَالَ وَبعد وفاتي إِن الله حرم على الأَرْض أَن تَأْكُل أجساد الْأَنْبِيَاء ـ

-‘‘তোমরা জুম‘আর দিন আমার উপর অধিক হারে দরুদ পাঠ করো, ......যে কোন ব্যক্তি আমার প্রতি দরুদ পাঠ করে তার আওয়াজ আমার নিকট পৌঁছে থাকে সে যেখানেই থাকুক না কেন। সাহাবীগণ আরজ করলেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ (ﷺ)! এমনিভাবে কি আপনার ওফাতের পরও শুনবেন? রাসূল (ﷺ) ইরশাদ ফরমান, আমার ওফাতের পরও (নবীগণ স্বীয় কবরেও জিন্দা)। কেননা আল্লাহ্ তা‘য়ালা নবীদের শরীর ভক্ষণ করা যমীনের জন্য হারাম করে দিয়েছেন।’’ ১৮৭

১৮৭.

ক. আল্লামা ইবনে কাইয়্যুম : জিলাউল ইফহাম, ১/১২৭ পৃ. হা/১০৮

খ. আল্লামা শফী উকাড়ভী: জিকরে জামীল, ৯৯ পৃ.

সম্মানিত পাঠকবৃন্দ! ইবনুল কাইয়্যুম জাওযিয়্যাহ (ওফাত.৭৫১হি.) হলেন আহলে হাদিস ও দেওবন্দীদের ইমাম। তিনিই হাদিস সংকলন করেন যে, প্রত্যেকের দুরূদই রাসূল পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম শুনতে পান, তারপরও তারা আক্বিদা সংশোধন করছে না, সাধারণ মানুষদেরকে ভুল শিখাচ্ছে প্রতিনিয়তই।

❏ অনেক ইমাম সংকলন করেন-

عَنِ ابْنِ عُمَرَ، ؓ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ ﷺ : إِنَّ اللَّهَ رَفَعَ لِي الدُّنْيَا فَأَنَا أَنْظُرُ إِلَيْهَا وَإِلَى مَا هُوَ كَائِنٌ فِيهَا إِلَى يَوْمِ الْقِيَامَةِ كَمَا أَنْظُرُ إِلَى كَفِّي هَذِهِ، -

-‘‘হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে উমর (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূল (ﷺ) ইরশাদ করেছেন, নিশ্চয়ই আল্লাহ্ তা‘আলা আমার জন্য বিশ্বকে তুলে ধরেছেন। ফলে আমি এ দুনিয়া এবং এতে কিয়ামত পর্যন্ত যা কিছু হবে, এমনভাবে দেখতে পাচ্ছি, যেভাবে আমি আমার নিজ এই হাত দেখতে পাচ্ছি।’’ ১৮৮

১৮৮.

ক. ইমাম তাবরানী: মুজামুল কাবীর: ২/৪১২পৃ. হা/১০৮৯

খ. ইমাম আবু নুয়াইমইস্পহানি : হিলইয়াতুল আউলিয়া : ৬/১০১ পৃ. তরজুমা নং- ৩৩৮

গ. ইমাম জালাল উদ্দিন সূয়তী: খাসায়েসুল কোবরা: ২/১৯৩ : হা/২১১৭

ঘ. ইমাম সুয়ূতি: জামেউল জাওয়ামী : হা/৪৮৪৯

ঙ. ইমাম জুরকানী: শরহুল মাওয়াহেব: ৭/২০৪ পৃ.

চ. আল্লামা ইমাম কাস্তাল্লানী: মাওয়াহেবে লাদুন্নীয়া: ৩/৯৫ পৃ.

ছ. মুফতী আহমদ ইয়ার খাঁন নঈমী: জা‘আল হক: ১/১০৩ পৃ. (বাংলা সংস্করণ)

জ. আহলে হাদিস নাসির উদ্দিন আলবানী : দ্বঈফু জামেউস সগীর : হা/১৬২৪

ঝ. মুত্তাকী হিন্দী, কানযুল উম্মাল, ১১/৪২০ পৃ. হা/৩১৯৭১

ঞ. ইমাম মুনযিরী, তারগীব ওয়াত তারহীব, ২/২১১ পৃ.

ট. হাইসামী, মাযমাউদ, মাযমাউয যাওয়াইদ, ৮/২৯০ পৃ.

এ হাদিস থেকে প্রমাণিত হলো রাসূল (ﷺ) শুধু আমাদের দরুদ শুনেন তা নয়, বরং তিনি আমাদেরও দেখতে পান। এ হাদিসটির সনদ পর্যালোচনা সামনে করা হবে ইনশাআল্লাহ

❏ বিশ্ববিখ্যাত মুহাদ্দিস ইমাম আবদুর রহমান জালালুদ্দীন সুয়ূতি (رحمة الله) এর প্রসিদ্ধ গ্রন্থ ‘‘আনিসুল জালীস” এর ২২৭ পৃষ্ঠায় একটি হাদিস বর্ণনা করেন, রাসূল (ﷺ) ইরশাদ ফরমান,

 اصحابى اخوانى صلوا علىّ فى كل يوم الاثنين والجمعة بعد وفاتى فانى أسمع صلواتك بلا واسطة ـ

-‘‘প্রতি সোমবার ও শুক্রবার আমার ওফাতের পর তোমরা বেশী করে দরূদ পাঠ করবে, কেননা তোমাদের দরূদ আমি মাধ্যম ব্যতীত সরাসরি শুনি।’’

তাই উক্ত হাদিস দিয়ে প্রমাণিত হয়ে গেলো রাসূল (ﷺ) ফিরিশতাদের পৌঁছানো ব্যতীত স্বয়ং উম্মতের দুরূদ শুনেন, সে ক্ষমতা খোদ আল্লাহ্ তা‘য়ালা দান করেছেন তবে তাঁর মধ্যে বিভিন্ন স্তর রয়েছে। যেমন-

❏ বিশ্ববিখ্যাত দরূদ সম্পর্কিত গ্রন্থ “দালায়েলুল খায়রাত’’ গ্রন্থে ৫৯ পৃষ্ঠায় হযরত আবু হুরায়রা (رضي الله عنه) এর সূত্রে (শরাহ এর সূত্রে) একটি হাদিস বর্ণিত হয়েছে-

وقيل لرسول الله ارأيت صلوة المصلين عليك ممن غاب عنك ومن يأتى بعدك ما حالهما عندك؟ فقال أسمع صلوة اهل محبتى واعرفهم وتعرض علىّ صلوة غيرهم عرضا ـ

-‘‘হুযূর (ﷺ) কে জিজ্ঞাসা করা হল, আপনার কাছে দূরে অবস্থানকারী ও আপনার ওফাতের পরে আগমনকারীদের দরুদের অবস্থা কি? তখন তিনি ইরশাদ করলেন, আমি মুহাব্বত সম্পন্ন লোকদের দরূদ নিজেই স্বয়ং শুনি এবং তাদেরকে চিনি এবং মুহাব্বত ছাড়া পড়া ব্যক্তিদের দরূদ আমার নিকট (ফিরেশতাদেও মাধ্যমে) পেশ করা হয়।’’১৮৯

১৮৯. ইমাম আবু আব্দুল্লাহ জাজুলী : দালায়েলুল খায়রাত- পৃষ্ঠা নং- ৫৯, ফরিদ বুক ডিপু, দিল্লী শাহী জামে মসজিদ, ইমাম ইবনে মাহদী আল ফার্সী : মাতালিউল মুর্সারাত ফি শরহে দালায়েলুল খায়রাত , ১৫৬ পৃ., আল্লামা শায়খ ইউসূফ নাবহানী : জাওয়াহিরুল বিহার : ৩/৪৪ পৃ:, ইমাম সাভী : তাফসীরে সাভী : ৫ পারা, সূরা আহযাবের তাফসির, আল্লামা শফী উকাড়ভী : জিকরে জামিল- পৃষ্ঠা নং : ৯১

❏ আল্লামা ইমাম ইবনুল হজ্জ ‘আল-মাদখাল’ গ্রন্থে ও ইমাম শিহাবুদ্দীন কাস্তাল্লানী (رحمة الله) তার ‘মাওয়াহেবে লাদুন্নিয়া’ গ্রন্থে “বাবুল জিয়ারাতুল কুবুর শরীফ” শীর্ষক অধ্যায়ে বলেছেন-

وَقَدْ قَالَ عُلَمَاؤُنَا رَحْمَةُ إذْ لَا فَرْقَ بَيْنَ مَوْتِهِ وَحَيَاتِهِ أَعْنِي فِي مُشَاهَدَتِهِ لِأُمَّتِهِ وَمَعْرِفَتِهِ بِأَحْوَالِهِمْ وَنِيَّاتِهِمْ وَعَزَائِمِهِمْ وَخَوَاطِرِهِمْ، وَذَلِكَ عِنْدَهُ جَلِيٌّ لَا خَفَاءَ فِيهِ.

-‘‘আমাদের সুবিখ্যাত উলামায়ে কিরাম বলেন যে, হুযূর (ﷺ) এর জীবন ও ওফাতের মধ্যে কোন পার্থক্য নেই। তিনি নিজ উম্মতকে দেখেন, তাদের অবস্থা, নিয়ত, ইচ্ছা ও মনের কথা ইত্যাদি জানেন। এগুলো তার কাছে সম্পূর্ণ রূপে সুস্পষ্ট, বরং এই কথার মধ্যে কোন রূপ অস্পষ্টতা ও দুর্বোধ্যতার অবকাশ নেই।’’ ১৯০

১৯০. আল্লামা ইমাম কাস্তাল্লানী : মাওয়াহেবে লাদুন্নীয়া : দ্বিতীয় পরিচ্ছেদ : ৪/৫৮০ পৃ., আল্লামা ইবনুল হাজ্ব : আল মাদখাল : কালাম আলা যিয়ারতে সাইয়্যিদিল মুরসালীন : ১/২৫২ পৃ., আল্লামা ইমাম জুরকানী : শরহুল মাওয়াহেব : ৪/৩১২ পৃ., আল্লামা মুফতী আহমদ ইয়ার খাঁন নঈমী : জা‘আল হক, ১/২৪২ পৃ.

❏ উম্মুল মু‘মিনীন হযরত মায়মুনা (رضي الله عنه) বলেন, একরাতে হুযূর (ﷺ) আমার হুজরায় উপস্থিত ছিলেন। তিনি যথারীতি ‘তাহাজ্জুদ’ নামাযের জন্য উঠলেন এবং ওযূ করার স্থানে গমন করলেন-

فَسَمِعَتْهُ يَقُولُ فِي مُتَوَضَّئِهِ: لَبَّيْكَ لَبَّيْكَ ثَلَاثًا , نُصِرْتَ نُصِرْتَ، ثَلَاثًا , فَلَمَّا خَرَجَ قُلْتُ: يَا رَسُولَ اللَّهِ , سَمِعْتُكَ تَقُولُ فِي مُتَوَضَّئِكَ: لَبَّيْكَ لَبَّيْكَ ثَلَاثًا , نُصِرْتَ نُصِرْتَ، ثَلَاثًا , كَأَنَّكَ تُكَلِّمُ إِنْسَانًا , فَهَلْ كَانَ مَعَكَ أَحَدٌ؟ فَقَالَ: هَذَا رَاجِزُ بَنِي كَعْبٍ يَسْتَصْرِخُنِي

-‘‘অতঃপর আমি শুনতে পেলাম যে, তিনি ওযূখানায় তিনবার ‘লাব্বায়ক’ (আমি তোমার কাছে উপস্থিত) এবং তিনবার ‘নুসিরতা’ (তোমাকে সাহায্য করা হল) বললেন। যখন হুযূর (ﷺ) ওযূ করে বের হলেন, তখন আমি বললাম, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমি শুনতে পেলাম- আপনি ওযূখানায় তিনবার ‘লাব্বায়ক’ এবং তিনবার ‘নুসিরতা’ বলেছেন। যেন আপনি কোন মানুষের সাথে কথা বলছিলেন। আপনার কাছে কেউ ছিল কি? তখন হুযূর (ﷺ) ইরশাদ করেন, ইতি রাজেয, আমার কাছে ফরিয়াদ করেছে।’’১৯১

১৯১. ইমাম তাবরানী, মু‘জামুস সগীর, ২/১৬৭ পৃ. হা/৯৬৮, হাইসামী, মাযমাউয-যাওয়াইদ, ৬/১৬৩ পৃ. হা/১০২৩২, ইমাম তাবরানী, মু‘জামুল কাবীর, ২৩/৪৩৩ পৃ. হা/১০২০, দিয়ার বকরী, তারিখুল খামিস, ২/৭৭ পৃ., ইমাম বুরহান উদ্দিন হালবী, সিরাতে হালবিয়্যাহ, ৩/১০৪ পৃ. ইমাম ইসমাঈল ইস্পাহানী, দালায়েলুন নবুয়ত, ১/৩৭ পৃ. হা/৫৯, জুরকানী, শারহুল মাওয়াহেব, ৩/৩৮১ পৃ.

পর্যালোচনা:

উল্লেখ্য যে, তখন তিনি ছিলেন মক্কায় এবং হুযূর (ﷺ) ছিলেন মদিনায়। কিন্তু হুযূর (ﷺ) তার ফরিয়াদ শুনেছেন এবং তাকে সাহায্য করেছেন। ঘটনা ছিল এই- হুদায়বিয়ার সন্ধিসূত্রে বনী বকর কুরাইশের পক্ষ অবলম্বন করেছিল এবং খোযাআ গোত্র হুযূর আকরাম (ﷺ)‘র পক্ষ অবলম্বন করেছিল। আর এ পক্ষাবলম্বন সেই চুক্তির ভিত্তিতে ছিল যে, আগামী দশ বছর পারস্পরিক কোন যুদ্ধ হবে না। কিন্তু কুরাইশরা সুন্ধি ও তার শর্তাবলী ভেঙ্গে ফেলল এবং বনী বকর ইত্যাদির সাথে মিলে মুসলিম নিধনের সংকল্প করেছিল। (ইমাম ইবনে হাজার আসকালানী, ইসাবা ফি তামিযিস সাহাবা, ২/৫৩৬ পৃ.)

সেই মুহূর্তে হযরত আমর ইবনে সালেম রাজেয (رضي الله عنه) মক্কা মুর্কারমা থেকে ফরিয়াদ করলেন এবং হুযূর (ﷺ)‘র কাছে সাহায্য প্রার্থনা করলেন, যার উত্তরে নবী (ﷺ) তিনবার ‘লাব্বায়ক’ এবং তিনবার ‘নুসিরতা’ বলে তাকে সাহায্য করেছেন। বুঝা গেল রাসূল (ﷺ) দূরে কাছে সব কিছুই শুনেন এবং দেখেন।

❏ ইমাম দারাকুতনী এবং সুয়ূতি (رحمة الله)সহ আরও অনেকে সংকলন করেন-

عَن ابْن عمر ؓ قَالَ كُنَّا مَعَ رَسُول الله ﷺ فَرفع رَأسه إِلَى السَّمَاء فَقَالَ وَعَلَيْكُم السَّلَام وَرَحْمَة الله فَقَالَ النَّاس يَا رَسُول الله مَا هَذَا قَالَ مر بِي جَعْفَر بن أبي طَالب فِي مَلأ من الْمَلَائِكَة فَسلم عَليّ

-‘‘হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে উমর (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, (একদা) আমরা হুযূর পুরনুর (ﷺ) এর খেদমতে উপস্থিত ছিলাম। হঠাৎ হুযূর (ﷺ) তার মাথা মোবারক তুলে ফরমালেন, ওয়া আলাইকুমুস সালাম ওয়া রাহ্মাতুল্লাহ। অতপর উপস্থিত লোকেরা (সাহাবীরা) বলল, ইয়া রাসূলুল্লাহ (ﷺ)! আপনি কার সালামের জবাব দিলেন। তিনি বললেন, হযরত জাফর ইবনে আবু তালিব (رضي الله عنه) ফিরেশতাদের একটি দলসহ আমার নিকট দিয়ে গমন করেছিলেন, তিনি আমাকে সালাম প্রদান করেছেন। আমি তার উত্তর দিলাম।’’ ১৯২

১৯২. ইমাম জালালুদ্দীন সূয়তী : খাসায়েসুল কোবরা : ১/৪৬০-৪৬১ পৃ. হা/১৪৩৫, ১৪৩৬, ইমাম দারাকুতনী, গারায়েবু মালেক, ১/৫৫ পৃ., ইমাম বুরহানুদ্দীন হালাবী, সিরাতে হালাবিয়্যাহ, ৩/১০০ পৃ., ইমাম ইবনে সালেহ শামী, সবলুল হুদা ওয়ার রাশাদ, ১১/১০৯ পৃ., ইমাম জুরকানী, শারহুল মাওয়াহেব, ৩/৩৫২ পৃ.

উক্ত হাদিস দ্বারা প্রমাণিত হলো, সাহাবী যা শুনেন নি রাসূল (ﷺ) তা শুনতেন এবং আরো প্রমাণিত হল ওফাতের পরও সাহাবীরা যেখানে ইচ্ছা সেখানে যেতে পারেন। তাহলে রাসূল (ﷺ) এর অবস্থা কিরূপ হবে?

❏ মিশকাত শরীফের ‘বাবুল কারামাত’ অধ্যায়ে হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত আছে, হযরত উমর (رضي الله عنه) হযরত সারিয়া (رضي الله عنه) কে এক সেনাবাহিনীর অধিনায়ক নিযুক্ত করে নেহাওয়ান্দ নামক স্থানে যুদ্ধের জন্য পাঠিয়েছিলেন।

❏ এরপর একদিন হযরত উমর (رضي الله عنه) মদীনা মুনাওয়ারায় খুতবা পাঠের সময় উচ্চ স্বরে বলে উঠলেন-

فَبَيْنَمَا عُمَرُ يَخْطُبُ فَجَعَلَ يَصِيحُ: يَا أَمِيرَ الْمُؤْمِنِينَ لَقِيَنَا عَدُوُّنَا فَهَزَمُونَا فَإِذَا بِصَائِحٍ يَصِيحُ: يَا سَارِيَ الْجَبَلَ. فَأَسْنَدْنَا ظُهُورَنَا إِلَى الْجَبَلِ فَهَزَمَهُمُ اللَّهُ تَعَالَى

-‘‘হযরত উমর (رضي الله عنه) মদীনা মুনাওয়ারায় খুতবা পড়ার সময় উচ্চ স্বরে বলে উঠলেন, ওহে সারিয়া! পাহাড়ের দিকে পিঠ দাও।’’ ১৯৩

১৯৩. খতিব তিবরিজী : মিশকাতুল মাসাবীহ : ৪/৪০১ পৃ. হা/৫৯৫৪, ইমাম বায়হাকী : দালায়েলুন নবুয়ত : ৬/৩৭০ পৃ., আল্লামা ইমাম সাখাভী : মাকাসিদুল হাসানা : ৫৪১ পৃ. হা/১৩৩১, আল্লামা ইমাম আজলূনী : কাশফুল খাফা : ২/৫৩২ পৃ. হা/৩১৭১, আলবানী, সিলসিলাতুল আহাদিসুস সহীহাহ, হাদিস, ১১১০, তিনি বলেন সনদটি সহীহ, আবু নুয়াইম ইস্পাহানী, দালায়েলুল নবুয়ত, ৫১৮পৃ-৫১৯ পৃ., গায্যালী, ইহইয়াউল উলূম, ৩/২৫ পৃ., মুত্তাকী হিন্দী, কানযুল উম্মাল, ১২/৫৭১ পৃ. হা/৩৫৭৮৮, ইমাম ইবনে হাজার আসকালানী, আল-ইসাবা, ৩/৬পৃ. হাদিস, ৩৫৭৮৮, ইমাম যারীর ত্ববারী, তারীখে ত্বাবারী, ৩/২৫৪ পৃ., বায়হাকী, ই‘তিকাদ, ২০৩ পৃ., শায়খ ইউসুফ নাবহানী, হুজ্জাতুল্লাহি আ‘লাল আলামিন, ৬১২-৬১৩, আল্লামা যুবায়দী ইত্তাহাফ সাদাকাতুল মুত্তাকীন, ৮/৩৭৯পৃ.

বেশ কিছুদিন অতিবাহিত হওয়ার পর উক্ত সেনাবাহিনী থেকে কর্জ বাহক এসে জানান, আমাদিগকে শত্র“রা প্রায় পরাস্ত করে ফেলেছিল, এমন সময় কোন এক আহবানকারীর ডাক শুনতে পেলাম। উক্ত অদৃশ্য আহবানকারী বলছিলেন তার কারণে ওদেরকে فَهَزَمَهُمُ اللَّهُ تَعَالَى ‘‘আল্লাহ্ তা‘আলার কৃপায় তাদেরকে অপদস্ত করে দিলাম।

এখন, হযরত উমর (رضي الله عنه) মদীনা শরীফে খুতবা দেওয়ার সময় শত শত মাইল দূর থেকে হযরত সারিয়া (رضي الله عنه) কে দেখতে পেলেন এবং তিনি তার আওয়াজ শুনতে পেলেন, অপরদিকে তিনি খুতবাও দিচ্ছেন। সুতরাং, রাসূল (ﷺ) এর খলিফাদের যদি এ অবস্থা হয়, তাহলে রাসূল (ﷺ) এর অবস্থা কিরূপ হতে পারে?

❏ হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর (رضي الله عنه) সম্পর্কে বর্ণিত আছে,

حَدَّثَنَا أَبُو نُعَيْمٍ قَالَ: حَدَّثَنَا سُفْيَانُ، عَنْ أَبِي إِسْحَاقَ، عَنْ عَبْدِ الرَّحْمَنِ بْنِ سَعْدٍ قَالَ: خَدِرَتْ رِجْلُ ابْنِ عُمَرَ، فَقَالَ لَهُ رَجُلٌ: اذْكُرْ أَحَبَّ النَّاسِ إِلَيْكَ، فَقَالَ: يَا مُحَمَّدُ ـ

-‘‘হযরত আবদুর রাহমান বিন সা‘দ (رضي الله عنه) বলেন, হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে উমর (رضي الله عنه) এর পা অবশ হয়ে গেল। তখন এক ব্যক্তি তাঁকে বললেন, আপনি ওই ব্যক্তিকে স্মরণ করুন, যিনি আপনার কাছে সবচেয়ে প্রিয়। তখন তিনি বললেন, ইয়া মুহাম্মাদাহ!। অতঃপর তার পা ভাল হয়ে গেল।’’ ১৯৪

১৯৪. ইমাম বুখারী : আদাবুল মুফরাদ : পৃ-১৪২, হাদিস নং- ৯৬৪, হযরত আব্দুর রহমান বিন সাদ (رضي الله عنه)-এর সূত্রে, ইমাম নববী : কিতাবুল আযকার : ২৭১ পৃ., ইমাম কাজী আয়াজ : শিফা শরীফ, ২/৫৩ পৃ., ইমাম ইবনে সাদ : তাবক্বাত-ই- ইবনে সাদ, ৪/১৫৪ পৃ., ইমাম ইবনে সুন্নি : আমালুল ইয়াউমি ওয়াল লায়লাহ, পৃ-৬৭, মুহাদ্দিস ইবনে যারীর তবারী : নুরুল ঈমান ফী যিয়ারতে আসার-ই-বিহাবীবির রাহমান, পৃ-৮, আহলে হাদিস শায়েখ ওহীদুজ্জামান হায়দারাবাদী : হাদিয়াতুল মাহদি, পৃ-২৩, ইমাম ইবনে যাহদ, মুসনাদে যাহদ, ৩৬৯ পৃ., হা/২৫৩৯

❏ দেখুন হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে উমর (رضي الله عنه) এর পা অবশ হয়ে গেল আর রাসূল (ﷺ) কে ওফাতের পরও দূর থেকে ডাকলেন, তাতে তিনি রাসূল (ﷺ)-এর সাড়াও পেলেন এবং তার পা রাসূল (ﷺ) সুস্থ করে দিলেন।

❏ বিশ্ববিখ্যাত ফকীহ আল্লামা শিহাবুদ্দীন খিফ্ফাযী (رحمة الله) লিখিত গ্রন্থ ‘নাসীমুর রিয়াদ্ব’ শরহে শিফা এর ৩য় খণ্ডের শেষে উল্লেখ করেন-

الانبياء عليهم السلام من جهة الاجسام والظواهر مع البشر وبواطنهم وقواهم الروحانية ملكية ولذا ترى مشارق الارض ومغاربها تسمع اطيط السماء وتشم رائحة جبريل اذا اراد النزول اليهم ـ

-‘‘আম্বিয়ায়ে কেরাম (ﷺ) শারিরীক ও বাহ্যিক দিক থেকে মানবীয় বৈশিষ্ঠ্য সম্পন্ন,তবে আভ্যন্তরীন ও রূহানী শক্তির দিক থেকে ফিরিশতাদের বৈশিষ্ট্যমন্ডিত। এ কারণেই তারা পৃথিবীর পূর্ব ও পশ্চিম প্রান্ত সমূহ দেখতে পান, আসমানের চিড়চিড় আওয়াজ শোনেন এবং হযরত জিবরাঈল (عليه السلام) তাদের নিকট অবতরণের ইচ্ছা পোষণ করতেই তার সুঘ্রাণ পেয়ে যান।’’

❏ বিশ্ববিখ্যাত মুহাদ্দিস, মুফাস্সির, দার্শনীক ইমাম ফখরুদ্দীন রাযী (رحمة الله) বলেন-

وَكَذَلِكَ الْعَبْدُ إِذَا وَاظَبَ عَلَى الطَّاعَاتِ بَلَغَ إِلَى الْمَقَامِ الَّذِي يَقُولُ اللَّهُ كُنْتُ لَهُ سَمْعًا وَبَصَرًا فَإِذَا صَارَ نُورُ جَلَالِ اللَّهِ سَمْعًا لَهُ سَمِعَ الْقَرِيبَ وَالْبَعِيدَ وَإِذَا صَارَ ذَلِكَ النُّورُ بَصَرًا لَهُ رَأَى الْقَرِيبَ وَالْبَعِيدَ وَإِذَا صَارَ ذَلِكَ النُّورُ يَدًا لَهُ قَدَرَ عَلَى التَّصَرُّفِ فِي الصَّعْبِ وَالسَّهْلِ وَالْبَعِيدِ وَالْقَرِيبِ.

-‘‘এবং এভাবে যখন কোন বান্দা পুন্য কাজের উপর সর্বদা আমল করতে থাকে তখন সে ঐ মাকামে পৌঁছে যায়, যার সম্পর্কে আল্লাহ্ তা‘য়ালা বলেন, আমি তার কান ও চোখ হয়ে যাই। যখন আল্লাহর মহাত্মের নূর তার কান হয়ে যায়, তখন সে দূর ও নিকটের আওয়াজ সমূহ শুনেন। যখন এই নূর তার চোখ হয়ে যায়, তখন সে দূর ও নিকটের বস্তু সমূহ অবলোকন করতে পারেন এবং যখন এই মাহাত্মের নূর তার হাত হয়ে যায়, তখন সে কঠিন ও সহজ বিষয়ে, দূর ও নিকটে ক্ষমতা প্রয়োগ করতে সক্ষম হন।’’ ১৯৫

১৯৫. ইমাম ফখরুদ্দিন রাজী : তাফসীরে কাবীর: ২১/৪৩৬ পৃ. সূরা ক্বাহাফ, আয়াত.নং. ৯

দেখুন আল্লাহর ওলীদের যদি এমন শান হয় তাহলে রাসূল (ﷺ) এর কীরূপ শান হতে পারে?

❏ আল্লামা শায়খ আব্দুল হক মুহাদ্দিস দেহলভী (رحمة الله) এর উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ ‘‘মাজমাউল বারকাত’’ গ্রন্থের ১৬১ পৃষ্ঠায় বলেন,

وى عليه السلام براحوال واعمال امت مطلع است برمقر بان وخاصان درگاه خود مفيض وحاضر وناظر است ـ

-‘‘হুযূর (ﷺ) নিজ উম্মতের যাবতীয় অবস্থা ও আমল সম্পর্কে অবগত এবং তার মহান দরবারে উপস্থিত সকলকেই ফয়েয প্রদানকারী ও সকলের নিকট তিনি হাযির- নাযির।’’

কারবালার অবস্থা অবলোকন এবং সেখানে উপস্থিত হওয়া

❏ হযরত সালমা (رضي الله عنه) বলেন-

دَخَلْتُ عَلَى أُمِّ سَلَمَةَ، وَهِيَ تَبْكِي فَقُلْتُ: مَا يُبْكِيكِ؟ قَالَتْ: رَأَيْتُ رَسُولَ اللَّهِ ﷺ فِي الْمَنَامِ يَبْكِي وَعَلَى رَأْسِهِ وَلِحْيَتِهِ التُّرَابُ، فَقُلْتُ: مَا لَكَ يَا رَسُولَ اللَّهِ؟ قَالَ: شَهِدْتُ قَتْلَ الْحُسَيْنِ آنِفًا

-‘‘আমি উম্মাহাতুল মু‘মিনীন মা উম্মে সালামা (رضي الله عنه)‘র হুজরা শরীফে প্রবেশ করলাম এবং দেখলাম যে তিনি কাঁদছেন। আমি বললাম, আপনি কাঁদছেন কেন? তিনি বললেন, একটু আগে আমি রাসূল (ﷺ) কে স্বপ্নে দেখলাম যে তাঁর মাথা মুবারকে এবং দাঁড়ি মুবারকে ধুলা বালি লেগে আছে। অতঃপর আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! আপনার এ অবস্থা কেন? তিনি বললেন, এই মাত্র আমি হুসাইনের শাহাদাতের স্থানে উপস্থিত ছিলাম।’’ ১৯৬

১৯৬. ইমাম হাকেম নিশাপুরী, আল-মুস্তাদরাক, ৪/২০ পৃ. হা/৬৭৭৪, পরিচ্ছেদ: ذِكْرُ أُمِّ الْمُؤْمِنِينَ أُمِّ سَلَمَةَ بِنْتِ أَبِي أُمَيَّةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهَا ,

তিনি একে সহীহ বলেছেন- سكت عنه الذهبي في التلخيص

-‘‘ইমাম যাহাবী (رحمة الله) তার তালখীছ গ্রন্থে এ সনদের বিষয়ে নীরব ছিলেন।’’

ইমাম তিরমিযি, আস-সুনান, ৬/১২০ পৃ. হা/৩৭৭১, পরিচ্ছেদ: بَابُ مَنَاقِبِ أَبِي مُحَمَّدٍ الْحَسَنِ بْنِ عَلِيِّ بْنِ أَبِي طَالِبٍ وَالْحُسَيْنِ بْنِ عَلِيِّ بْنِ أَبِي طَالِبٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمَا ,

ইমাম তাবরানী, মু‘জামুল কাবীর, ২৩/৩৭৩ পৃ. হা/৮৮২, খতিব তিবরিযি, মিশকাত, ৩/১৭৭৩ পৃ. হা/৬১৬৬, মোল্লা আলী ক্বারী, মেরকাত, ৯/৩৯৮০ পৃ. হা/৬১৬৬, তিনি বলেন-

 قَوِّي -‘‘

এ হাদিসটি শক্তিশালী।’’ এবং ৯/৩৯৮৬ পৃ. হা/৬১৮০, ইমাম ইবনে আছির, জামেউল উসূল, ৯/৩৫ পৃ. হা/৬৫৬৭

আক্বিদা

এ হাদিস থেকে বুঝা গেল যে, কারবালায় কি ঘটছে তা আল্লাহর নবী (ﷺ) তাঁর আপন রওজা মোবারক থেকেই দেখতে পেয়েছেন, এজন্যই তিনি সেখানে উপস্থিত হয়েছেন। এ হাদিসের (شَهِدْتُ) এর ব্যাখ্যায় আল্লামা মোল্লা আলী ক্বারী (رحمة الله) লিখেছেন- أَيْ: حَضَرْتُ -‘‘অর্থাৎ আমি উপস্থিত ছিলাম।’’ ১৯৭

১৯৭. মোল্লা আলী ক্বারী, মেরকাত, ৯/৩৯৮০ পৃ. হা/৬১৬৬

এ হাদিস থেকে বুঝা গেল প্রথিবীর যে কোন প্রান্তে রাসূল (ﷺ)-এর উপস্থিত হওয়া তাঁর ইখতিয়ারাধীন। তারপরও যারা এ আক্বিদার বিপরীত মত পোষণ করেন তারা কখনই আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতের লোক হতে পারেন না।

বিষয় নং-১৪: রাসূল (ﷺ)-এর ছায়া থাকা প্রসঙ্গ:

❏ ইমাম হাকেম তিরমিযি (رحمة الله)সহ এক জামাত ইমামগণ সংকলন করেন-

اخْرُج الْحَكِيم التِّرْمِذِيّ عَن ذكْوَان ان رَسُول الله صلى الله عَلَيْهِ وَسلم لم يكن يرى لَهُ ظلّ فِي شمس وَلَا قمر

-‘‘হযরত যাকওয়ান (رضي الله عنه) বলেন, হুযূর (ﷺ) এর ছায়া চাঁদ সূর্যের আলোতে জমীনে পড়ত না।’’ ১৯৮

১৯৮. ইমাম হাকেম তিরমিযী: নাওয়াদিরুল উসূল : পৃ-১/২৯৮ পৃ:, ইমাম জালালুদ্দীন সুয়ূতি : খাসায়েসুল কোবরা : ১/১২২ পৃ:, হা/৩২৮, আল্লামা ইমাম কাস্তাল্লানী : মাওয়াহেবে লাদুন্নীয়া : ২/১২০ পৃ:, আল্লামা ইমাম জুরকানী : শরহুল মাওয়াহেব : ৪/২২০ পৃ., শায়খ সুলায়মান জুমাল : ফতোয়ায়ে আহমদিয়া শরহে হামবীয়া, পৃ-১৪৮, শায়খ আব্দুল হক মুহাদ্দেস দেহলভী : মাদারেজুন নবুওয়াত : ১/১৪২ পৃ., আল্লামা শায়খ ইউসূফ নাবহানী : হুজ্জাতুল্লাহি আলাল আলামিন : পৃ : ৬৬৮, আল্লামা শায়খ ইউসূফ নাবহানী : জাওয়াহিরুল বিহার : ৩/১৪২ পৃ., আল্লামা মাহদী আল-ফাসী, মাতালিউল মুসাররাত : পৃষ্ঠা নং : ৩৬৫, আল্লামা ইবনে সালেহ : সুবলুল হুদা ওয়ার রাশাদ : ২/৯০ পৃ:, ইমাম আহমদ রেযা : নুরুল মুস্তফা : পৃষ্ঠা, ৮২, ইমাম মুকরিযী : আল ইমতাওল আসমা : ১০/৩০৮ পৃষ্ঠা, ইমাম মুকরিযী : মাকারুম বিখাসায়েসুন্নবী, ২/২৩৫ পৃষ্ঠা, আল্লামা শফী উকাড়ভী : জিকরে জামিল : পৃ-৩২৪, আল্লামা ওমর বিন আব্দুল্লাহ সিরাজুদ্দীন : ফতোয়ায়ে সিরাজিয়া : ১/২৯৭ পৃ.

সনদ পর্যালোচনা:

এ হাদিসটির মান ‘হাসান’। এটিকে যদি আহলে হাদিস ও দেওবন্দী আলেমেরা যঈফও বলে থাকেন তারপরও এর অনেক শাওয়াহেদ সহীহ হাদিস রয়েছে। এ হাদিসটিকে মাওলানা জুনায়েদ বাবুনগরী (সম্পাদিত) ‘প্রচলিত জাল হাদীস’ এর ২২৯-২৩০ পৃষ্ঠায় জাল বলে উল্লেখ করেছেন। ড. আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীর তার ‘হাদীসের নামে জালিয়াতি’ গ্রন্থের ৩৫৭-৩৬৪ পৃষ্ঠা পর্যন্তু রাসূল (ﷺ)-এর ছায়া ছিল না প্রমাণের অনেক অপচেষ্টা করেন। তিনি তার এ মতের পক্ষে একটি যঈফ হাদিসকে ভুয়া তাহকীক করে সহীহ বলেছেন; যার আলোচনা সামনে আসবে ইন শা আল্লাহ। তিনি তার গ্রন্থের ৩৫৯-৩৬০ পর্যন্ত এটিকে জাল প্রমাণের অনেক অপচেষ্টা করেন। আরেক দেওবন্দী মাওলানা মুতীউর রহমান লিখিত ‘এসব হাদীস নয়’ গ্রন্থের ১ম খণ্ডের ১৭০ পৃষ্ঠায়ও একে জাল বলেছেন।

রাসূল (ﷺ)-এর ছায়া থাকার বিষয়ে কয়েকটি হাদিসের গ্রহণযোগ্যতা ও সঠিক ব্যাখ্যা:

হযরত আনাস বিন মালেক (رضي الله عنه) এর বর্ণিত হাদিসের জবাব:

‘এসব হাদীস নয়’ গ্রন্থের ১৭১-১৭২ পৃষ্ঠা মাওলানা মুতীউর রহমান পর্যন্ত দুটি হাদিস উল্লেখ করে প্রমাণ করতে চেয়েছেন যে রাসূল (ﷺ)-এর ছায়া জমিনে পড়তো। ড. আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীর তার ‘হাদীসের নামে জালিয়াতি’ গ্রন্থে তার দুটি প্রমাণের মধ্যে সেও একটিকে প্রমাণ হিসেবে উল্লেখ করেছেন। তাই সেগুলোর পর্যালোচনার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করছি বিধায় এখানে উল্লেখ করবো।

প্রথম হাদিস ও তার ব্যাখ্যা

মাওলানা মুতীউর রহমান এ হাদিসকে তার গ্রন্থের ১৭১ পৃষ্ঠায় রাসূল (ﷺ)-এর ছায়া থাকার পক্ষে প্রথম হাদিস হিসেবে উল্লেখ করেছেন।

نا بَحْرُ بْنُ نَصْرِ بْنِ سَابَقٍ الْخَوْلَانِيُّ، نا ابْنُ وَهْبٍ، حَدَّثَنِي مُعَاوِيَةُ بْنُ صَالِحٍ، عَنْ عِيسَى بْنِ عَاصِمٍ، عَنْ زِرِّ بْنِ حُبَيْشٍ، عَنْ أَنَسِ بْنِ مَالِكٍ قَالَ: صَلَّيْنَا مَعَ رَسُولِ اللَّهِ ﷺ صَلَاةَ الصُّبْحِ قَالَ: فَبَيْنَمَا هُوَ فِي الصَّلَاةِ مَدَّ يَدَهُ، ثُمَّ أَخَّرَهَا، فَلَمَّا فَرَغَ مِنَ الصَّلَاةِ، قُلْنَا: يَا رَسُولَ اللَّهِ، صَنَعْتَ فِي صَلَاتِكَ هَذِهِ مَا لَمْ تَصْنَعْ فِي صَلَاةٍ قَبْلَهَا قَالَ: إِنِّي رَأَيْتُ الْجَنَّةَ قَدْ عُرِضَتْ عَلَيَّ، وَرَأَيْتُ فِيهَا. . . . قُطُوفُهَا دَانِيَةٌ، حَبُّهَا كَالدُّبَّاءِ، فَأَرَدْتُ أَنْ أَتَنَاوَلَ مِنْهَا، فَأُوحِيَ إِلَيْهَا أَنِ اسْتَأْخِرِي، فَاسْتَأْخَرَتْ، ثُمَّ عُرِضَتْ عَلَيَّ النَّارُ، بَيْنِي وَبَيْنَكُمْ حَتَّى رَأَيْتُ ظِلِّيَ وَظِلَّكُمْ

-“হযরত আনাস ইবনে মালেক (رضي الله عنه)বলেন, আল্লাহর রাসূল (ﷺ) আমাদেরকে নিয়ে ফজরের নামাজ আদায় করলেন। ফলে তিনি নামাজেই সামনের দিকে হাঁত বাড়িয়ে দিলেন, অত:পর ফিড়িয়ে আনলেন। যখন নামাজ থেকে বের হলেন তখন আমরা বললাম, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আপনার হাঁত সামনের দিকে বাড়ালেন অথচ ইতোপূর্বে এরূপ করেননি। রাসূল (ﷺ) বললেন: আমি দেখলাম আল্লাহ পাক আমার সামনে জান্নাত পেশ করলেন এবং আমি ইহাতে দেখতে লাগলাম।.... জান্নাত থেকে আমি কিছু নিতে চাইলে আমার প্রতি ওহী নাজিল হল আপনি সরে দাঁড়ান। তারপর জাহান্নাম উপস্থিত করা হল যা আমার ও তোমাদের সামনেই ছিল। ফলে আমার ও তোমাদের ছায়া সেখানে দেখতে পাই।” (সহীহ্ ইবনে খুজাইমা, হাদিস নং ৮৯২)

পর্যালোচনা:

প্রিয় পাঠক! ইহা প্রিয় নবীজি (ﷺ)-এর ছায়া সম্পর্কিত হাদিস নয়, কারণ এই ঘটনা ছিল ফজরের নামাজের সময়, বলুন ফজরের সময় কি সূর্য থাকে যে ছায়া পড়বে!?

❏ ইমাম হাকেমের বর্ণনায় এসেছে-

بَيْنَمَا النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يُصَلِّي ذَاتَ لَيْلَةٍ صَلَاةً إِذْ مَدَّ يَدَهُ

-‘‘এক রাতে রাসূল (ﷺ) নামায পড়াচ্ছিলেন। তিনি সহসা সামনের দিকে হাত বাড়ান।.....।’’ (ইমাম হাকেম, আল-মুস্তাদরাক, ৪/৫০৩ পৃ. হা/৮৪০৮)

সম্মানিত পাঠকবৃন্দ! রাতে কি কোন ব্যক্তির ছায়া পতিত হয়? আর সেকালে এত আধুনিক বাতির ব্যবস্থাও ছিল না। অপরদিকে সনদ সহীহ হলেও হাদিসের মতন নিয়ে মতভেদও রয়েছে। কেননা, ইমাম হাকেমের বর্ণনায় রাতের নামায এবং ইমাম ইবনে খুজায়মার বর্ণনায় ফজরের নামাযের কথা উল্লেখ রয়েছে।

এখানে জিল্লুন শব্দের অর্থ সম্মান ও আশ্রয় হবে। সর্বোপরি এখানে ظِلِّيَ وَظِلَّكُمْ (জিল্লী ওয়া জিল্লুকুম) দ্বারা প্রিয় নবীজি (ﷺ) ও সাহাবীদের ছায়াকে উদ্দেশ্য নয়। কারণ ছায়া যদি উদ্দেশ্য হত তাহলে শুধু জাহান্নামে ছায়া পড়ল কিন্তু জান্নাতে ছায়া পড়ল না ইহার মানে হতে পারে না।

প্রিয় নবীজি (ﷺ) বললেন, জান্নাত ও জাহান্নাম পেশ করা হয়েছিল بَيْنِي وَبَيْنَكُمْ (বাইনি ওয়া বাইনাকুম) আমার ও তোমাদের মাঝে। লক্ষ্য করুন, প্রিয় নবীজি (ﷺ) হলেন ইমাম, আর সাহাবীরা হলে মুক্তাদী। জান্নাত-জাহান্নাম পেশ করা হয় উভয়ের মাঝে। অর্থাৎ নবীজির পিছনে এবং সাহাবীদের সামনে, কারণ তখন দয়াল নবীজি নামাজে ছিলেন। তাহলে একই সাথে সামনে থেকে পিছনে এবং পিছন থেকে সামনে ছায়া পড়ে কিভাবে!? কারণ ছায়া তো একই সাথে সামনে ও পিছনে পড়ে না। এখানে প্রিয় নবীজি (ﷺ) ظِلِّيَ وَظِلَّكُمْ (জিল্লী ওয়া জিল্লুকুম) ‘আমার ও তোমাদের ছায়া’ কথাটি রূপক অর্থে ব্যবহার করেছেন। কেননা এরূপ অনেক ক্ষেত্রেই রূপক অর্থে ظِلّ শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে।

❏ যেমন লক্ষ্য করুন:-

حَدَّثَنَا قُتَيْبَةُ بْنُ سَعِيدٍ، عَنْ مَالِكِ بْنِ أَنَسٍ، فِيمَا قُرِئَ عَلَيْهِ عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ عَبْدِ الرَّحْمَنِ بْنِ مَعْمَرٍ، عَنْ أَبِي الْحُبَابِ سَعِيدِ بْنِ يَسَارٍ، عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ ؓ، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ ﷺ : إِنَّ اللهَ يَقُولُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ: أَيْنَ الْمُتَحَابُّونَ بِجَلَالِي، الْيَوْمَ أُظِلُّهُمْ فِي ظِلِّي يَوْمَ لَا ظِلَّ إِلَّا ظِلِّي

-“হযরত আবু হুরায়রা (رضي الله عنه) বলেন, রাসূলে পাক (ﷺ) বলেছেন: নিশ্চয় আল্লাহ পাক কেয়ামতের দিন বলবেন, কে আমার ইজ্জতকে ভালবেসেছ, তাদের জন্য আমার ছায়া রয়েছে, যখন আমার ছায়া ব্যতীত অন্য কোন ছায়া থাকবে না।” (সহীহ্ মুসলিম, হা/৬৭১৩; মুসনাদে আহমদ, হা/৮৮৩২)

● হাদিসটি হযরত এরবাজ ইবনে সারিয়া (رضي الله عنه) থেকে ইমাম আহমদ (رحمة الله) তার মুসনাদে ছহীহ্ সনদে বর্ণনা করেছেন।

দেখুন এই হাদিসে আল্লাহর ছায়ার কথা বলা হয়েছে, কিন্তু আল্লাহর কোন ছায়া নেই কারণ আল্লাহ ছায়া থেকে পবিত্র। এখানে আল্লাহর আরশের ছায়া হল উদ্দেশ্যে।

❏ যেমন ইমাম যাহাবী (رحمة الله) উল্লেখ করেন-

جَزَاؤُهُ أَن أظلهُ فِي ظِلِّي يَوْم لَا ظل إِلَّا ظِلِّي مَعْنَاهُ ظل عَرْشِي يَوْم الْقِيَامَة

-“তার প্রতিদান হল সেদিন তার ছায়া হবে আমার ছায়ায় যেদিন আমার ছায়া ব্যতীত কোন ছায়া থাকবে না। ইহার অর্থ হল কেয়ামতের দিন আল্লাহর আরশের ছায়া।” (ইমাম যাহাবী, আল-কাবাইর, ১ম খণ্ড, ৬৮ পৃ:)

● আল্লামা মোল্লা আলী ক্বারী (رحمة الله) এখানে ظل শব্দের অর্থ আল্লাহ্ ও রাসূলের শানে করেছেন- أَيْ: رَحْمَتِهِ -‘‘তার রহমতের নিচে।’’ ১৯৯

১৯৯. আল্লামা মোল্লা আলী ক্বারী : মেরকাত : ২/৩৭৮ পৃ. হা/৭০১

❏ তিনি আরও উল্লেখ করেছেন-

وَقِيلَ: الْمُرَادُ ظِلُّ الْعَرْشِ إِذْ جَاءَ فِي بَعْضِ طُرُقِ الْحَدِيثِ فِي ظِلِّ عَرْشِهِ

-‘‘কোন কোন ব্যাখ্যাকার বলেছেন, আল্লাহর ছায়া বলতে এখানে আল্লাহর আরশের ছায়া উদ্দেশ্য, এ বিষয়ে অনেক পদ্ধতীতে হাদিস বির্ণত হয়েছে।’’ ২০০

২০০. আল্লামা মোল্লা আলী ক্বারী : মেরকাত : ২/৩৭৮ পৃ. হা/৭০১

❏ এ বিষয়ে আরো দুইটি রেওয়ায়েত উল্লেখ করা যায়,

ثنا عَبْدُ اللَّهِ بْنُ شَبِيبٍ، ثنا أَبُو بَكْرِ بْنُ أَبِي شَيْبَةَ، ثنا ابْنُ أَبِي فُدَيْكٍ، أَنَّ مُوسَى بْنَ يَعْقُوبَ، أَخْبَرَهُ عَنْ عَبْدِ الْأَعْلَى بْنِ مُوسَى بْنِ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ قَيْسِ بْنِ مَخْرَمَةَ، أَنَّ إِسْمَاعِيلَ بْنَ رَافِعٍ يُحَدِّثُهُ، عَنِ ابْنِ أَسْلَمَ، عَنْ أَبِيهِ، قَالَ: قَالَ لِي أَبُو عُبَيْدَةَ: أَشْهَدُ لَسَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ ﷺ يَقُولُ: لَا تَسُبُّوا السُّلْطَانَ؛ فَإِنَّهُ ظِلُّ اللَّهِ فِي الْأَرْضِ

-“জায়েদ ইবনে আসলাম তার পিতা থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, সাহাবী আবু উবাইদা (رضي الله عنه) আমাকে বলেছেন, আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি অবশ্যই আল্লাহর রাসূল (ﷺ) থেকে শুনেছি, তিনি বলেছেন: তোমরা সুলতানকে গালি দিয়োনা, নিশ্চয় সে জমীনে আল্লাহর ছায়া।” {ইমাম ইবনে আবী আছেম, আস-সুন্নাহ, হা/১০১৩; ইমাম বায়হাকী, শুয়াইবুল ঈমান, হা/৬৯৮৭, হযরত উমর (رضي الله عنه) থেকে}

❏ ইমাম আসেম (رحمة الله) আরও সংকলন করেন-

حَدَّثَنَا الْمُقَدَّمِيُّ، ثنا سَلْمُ بْنُ سَعِيدٍ الْخَوْلَانِيُّ، ثنا حُمَيْدُ بْنُ مِهْرَانَ، عَنْ سَعْدِ بْنِ أَوْسٍ، عَنْ زِيَادِ بْنِ كُسَيْبٍ، عَنْ أَبِي بَكْرَةَ، قَالَ: سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ ﷺ يَقُولُ: السُّلْطَانُ ظِلُّ اللَّهِ فِي الْأَرْضِ، فَمَنْ أَكْرَمَهُ أَكْرَمَ اللَّهَ، وَمَنْ أَهَانَهُ أَهَانَهُ اللَّهُ

-“হযরত আবী বাকরা (رضي الله عنه) বলেন, আমি রাসূলে পাক (ﷺ) কে বলতে শুনেছি, তিনি বলেছেন: সুলতান জমীনবাসীর জন্য ছায়া। যে তাকে সম্মান করল সে আল্লাহকে সম্মান করল আর যে তাকে অসম্মান করলো সে আল্লাহকে অসম্মান করলো।” {ইমাম ইবনে আবী আছেম: আস-সুন্নাহ, হা/১০২৪; ইমাম বায়হাকী, শুয়াইবুল ঈমান, হা/৬৯৮৪, হযরত ইবনে উমর (رضي الله عنه) থেকে}

এখানে সুলতানকে আল্লাহর ছায়া বলা হয়েছে, অথচ বাস্তবে তারা আল্লাহর ছায়া নয়। এখানে রূপক অর্থ ব্যবহার করা হয়েছে। ঠিক তেমনি সেখানে প্রিয় নবীজি (ﷺ) রূপ অর্থ ব্যবহার করা হয়েছে। মুহাদ্দিসীনে কিরাম ইহার সু-স্পষ্ট কোন ব্যাখ্যা দেননি। যেহতেু শুধু জাহান্নামে ছায়ার কথা বলা হয়েছে, জান্নাতে নয়। সেহেতু এটা প্রিয় নবীজি (ﷺ) ও সাহাবীদের সত্ত্বা অর্থ নেওয়া যাচ্ছে না, কারণ প্রিয় নবীজি (ﷺ) ও সাহাবীদের সত্ত্বা জাহান্নামে থাকবে এটা কল্পনাও করা যায় না। তবে নিশ্চয় জাহান্নামী পাপীদেরকে শাফায়াতের মাধ্যমে প্রিয় নবীজি (ﷺ) ও পরে সাহাবীরা বের করে আনবেন সেহেতু ব্যাখ্যা করা যেতে পারে যে, জাহান্নামে পাপীদের শাফায়াত করার ছায়া। আল্লাহই সর্বোজ্ঞ।

দ্বিতীয়ত. জবাব হলো আপনারাই তো বলেন নবী গায়বের সংবাদ দিতে পারে না এবং তিনি গায়েব জানেন না। আপনারাই বলেন রাসূল (ﷺ) হাযির নাযির নন। তাহলে দেখুন রাসূল (ﷺ) ও সাহাবীদের সামনেই জান্নাত জাহান্নাম উপস্থিত ছিল। কিন্তু রাসূল (ﷺ) ই শুধু দেখতে পেলেন আর সাহাবীদের কাছে তো তা গায়ব ছিল। শুধু তাই নয় জান্নাত থেকে ফল নিতেও চাইলেন, রাসূল (ﷺ) এর দৃষ্টিতে বা নিকটে জান্নাত আল্লাহ্ কত কাছে করে দিয়েছেন। এটা কী রাসূল (ﷺ) এর গায়বের খবর নয়? আর প্রমাণিত হলো যে, রাসূল (ﷺ) এর সামনে জান্নাত জাহান্নাম উপস্থিত।

উত্থাপিত দ্বিতীয় হাদিস ও তার পর্যালোচনা:

মাওলানা মুতীউর রহমান সাহেব তার লিখিত ‘এসব হাদীস নয়’ গ্রন্থের ১৭২ পৃষ্ঠায় নিম্নের হাদিসটিকে খুব জোরালোভাবে রাসূল (ﷺ)-এর ছায়া থাকার পক্ষে দলিল হিসেবে পেশ করেছেন।

ড. আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীর তার লিখিত ‘হাদীসের নামে জালিয়াতি’ গ্রন্থের ৩৬৩ পৃষ্ঠায়ও এটিকে ছায়া থাকার পক্ষে দলিল হিসেবে পেশ করেছেন। তিনি এটিকে জোরালোভাবে লিখেছেন-‘‘এভাবে আমরা দেখছি যে, হাদীসটি সহীহ।’’

আমরা দেখবো যে প্রকৃতপক্ষে হাদিসটির মান কি।

❏ ইমাম আহমদ (رحمة الله)সহ আরও অনেকে সংকলন করেন-

حَدَّثَنَا عَفَّانُ، حَدَّثَنَا حَمَّادٌ، قَالَ حَدَّثَنَا ثَابِتٌ: عَنْ سُمَيَّةَ، عَنْ عَائِشَةَ، أَنَّ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ كَانَ فِي سَفَرٍ لَهُ،... قَالَ: فَتَرَكَهَا رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ ذَا الْحِجَّةِ وَالْمُحَرَّمَ شَهْرَيْنِ، أَوْ ثَلَاثَةً، لَا يَأْتِيهَا، قَالَتْ: حَتَّى يَئِسْتُ مِنْهُ، وَحَوَّلْتُ سَرِيرِي، قَالَتْ: فَبَيْنَمَا أَنَا يَوْمًا بِنِصْفِ النَّهَارِ، إِذَا أَنَا بِظِلِّ رَسُولِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مُقْبِلٌ

-“হযরত আয়েশা (رضي الله عنه) বলেন, নিশ্চয় আল্লাহর রাসূল (ﷺ) সফরে ছিলেন।... তিনি বলেন: রাসূলে পাক (ﷺ) তাকে (যায়নবকে) রাগ করে জিলহজ্জ ও মর্হারামের দুই অথবা তিন মাস তার কাছে আসেননি। এমনকি আমরা নিরাশ হয়ে গেলাম। আমার মনের অবস্থাও পরিবর্তন হয়ে গেল। ফলে একদা আমি মধ্য বেলায় তাঁর কাছে ছিলাম। যখন আল্লাহর রাসূল (ﷺ) আগত সময়ে ছায়া দিলেন।” (মুসনাদে আহমদ, হা/২৫০০২)

এখানে ‘ছায়া দিলেন’ এর ভাবার্থ হল ‘তাকে আশ্রয় দিলেন’। কেননা পরিত্যাগ করার পর ছায়া দেওয়ার অর্থ হল আশ্রয় দেওয়া। আর ظِلّ (জিল্লুন) এর আরেকটি অর্থ হল আশ্রয় দেওয়া।

❏ মুসনাদে আহমদে আরেকটি রেওয়াতে আছে,

فَلَمَّا كَانَ شَهْرُ رَبِيعٍ الْأَوَّلِ، دَخَلَ عَلَيْهَا، فَرَأَتْ ظِلَّهُ، فَقَالَتْ: إِنَّ هَذَا لَظِلُّ رَجُلٍ، وَمَا يَدْخُلُ عَلَيَّ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، فَمَنْ هَذَا؟ فَدَخَلَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ،

-“যখন রবিউল আওয়াল মাস আসল তখন আমি রাসূল (ﷺ) এর ছায়া দেখতে পেলাম। তিনি (যায়নব) বলেন: নিশ্চয় ইহা একজন পুরুষ ব্যক্তির ছায়া, অথচ আল্লাহর নবী (ﷺ) আমার কাছে আসেনি, তাহলে এটা কে? অত:পর আল্লাহর রাসূল (ﷺ) প্রবেশ করলেন।” (মুসনাদে আহমদ, হাদিস নং ২৬৮৬৬)

❏ উল্লেখ্য যে, হাদিসের শেষের অংশটুকু অর্থাৎ

فَقَالَتْ: إِنَّ هَذَا لَظِلُّ رَجُلٍ، وَمَا يَدْخُلُ عَلَيَّ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، فَمَنْ هَذَا؟ فَدَخَلَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ،

-“তিনি (যায়নব) বলেন: নিশ্চয় ইহা একজন পুরুষ ব্যক্তির ছায়া, অথচ আল্লাহর নবী (ﷺ) আমার কাছে আসেনি, তাহলে এটা কে? অত:পর আল্লাহর রাসূল (ﷺ) প্রবেশ করলেন।”

সনদ পর্যালোচনা:

এই অংশটুকু ইমাম আহমদ (رحمة الله) এর কাছে বর্ণিত হলেও ইমাম বুখারীর উস্তাদ ইমাম ইবনে সা’দ (رحمة الله) এর ‘তাবাকাত’-এ এবং ইমাম তাবারানী (رحمة الله) এর ‘আওছাতে’ এই অংশটুকু উল্লেখ করা হয়নি। ফলে এই অংশটুকু ‘শায’ অথবা ‘মুনকার’ হলে গন্য হবে। কেননা এই অংশটুকু যদি ঐ হাদিসের অংশ হত তাহলে ইমাম ইবনে সা’দ ও ইমাম তাবারানী (رحمة الله) এর কাছেও ইহা বর্ণিত হত। এতে বুঝা যাচ্ছে এই অংশটুকু নিশ্চয় কোন রাবী বাড়িয়ে বর্ণনা করেছেন।

● ইমাম তাবারানী (رحمة الله) হাদিসটি উল্লেখ করে বলেন,

لَمْ يَرْوِ هَذَيْنِ الْحَدِيثَيْنِ عَنْ ثَابِتٍ إِلَّا حَمَّادُ بْنُ سَلَمَةَ

-“এই দুইটি রেওয়াত ছাবেত বেনানী থেকে হাম্মাদ ইবনে সালামা ব্যতীত কেউ বর্ণনা করেনি।” (ইমাম তাবারানী: মুজামুল আওছাত, হাদিস নং ২৬০৯)  

এদিকে বিবেচনা করে রেওয়াতটি গরীব বা একক বর্ণনা, যা কখনো দলিল হতে পারে না। এ হাদিসের গুরুত্বপূর্ণ বর্ণনাকারী ‘হাম্মাদ ইবনে সালামা’ যদিও কেউ কেউ তাকে সিক্বাহ বলেছেন কিন্তু মুহাদ্দিসগণ একমত তার শেষ বয়সে স্মৃতি বিকৃতি ঘটেছিল। ইমামগণ তার বর্ণনাকে ত্রুটিযুক্ত বলেছেন।

● যেমন তার সম্পর্কে ইমাম যাহাবী (رحمة الله) বলেন: وكان ثقه، له أوهام، -“সে বিশ^স্ত কিন্তু তার বর্ণিত হাদিসে ক্রুটি রয়েছে।” (ইমাম যাহাবী: মিযানুল ইতিদাল, রাবী নং ২২৫১)

● যেমন বিখ্যাত আসমউর রিজালবিদ ও হাদিসের ইমাম, ইমাম ইবনে হিব্বান (رحمة الله) ‘হাম্মাদ বিন সালামা’ -এর জীবনীতে লিখেন- كَانَ يخطىء-‘‘তিনি হাদিসে ভুল করতেন।’’ ২০১

২০১.ইমাম ইবনে হিব্বান, কিতাবুস-সিকাত, ৬/২১৬ পৃ. হা/৭৪৩৪, ইমাম মিয্যী, তাহযিবুল কামাল, ৭/২৬৭ পৃ.

তিনি আরও উল্লেখ করেন- قد كثر من تغير حفظه -‘‘তিনি স্মৃতি শক্তিতে অনেক দুর্বল ছিলেন।’’ ২০২

২০২.ইমাম ইবনে হিব্বান, কিতাবুস-সিকাত, ৬/২১৬ পৃ. হা/৭৪৩৪

● ইমাম ইবনে হাজার আসকালানী (رحمة الله) লিখেন-

وقال البيهقي هو أحد أئمة المسلمين إلا أنه لما كبر ساء حفظه فلذا تركه البخاري وأما مسلم فاجتهد

-‘‘ইমাম বায়হাকী (رحمة الله) বলেন, তিনি মুসলমানদের আইম্মাদের একজন হলেও বৃদ্ধ বয়সে তার স্মরণশক্তি ত্রুটি পাওয়া যায়। এজন্য ইমাম বুখারী (رحمة الله) তার হাদিস পরিত্যাগ করেছেন তবে ইমাম মুসলিম (رحمة الله) তার হাদিস (নেয়া যাবে কিনা) নিয়ে চিন্তাভাবনা করেছেন।’’ ২০৩

২০৩. ইবনে হাজার আসকালানী, তাহযিবুত-তাহযিব, ৩/১৪ পৃ. ক্রমিক.১৪

● ইমাম ইবনে হাজার আসকালানী (رحمة الله) আরও উল্লেখ করেন-

قال أبو دواد: وَلَمْ يَكُنْ لَهُ كِتَابٌ إِلا كِتَابَ قَيْسِ بْنِ سَعْدٍ الْمَكِّيِّ، يَعْنِي كَانَ حَافِظًا يَرْوِي مِنْ حِفْظِهِ.

-‘‘ইমাম আবু দাউদ (رحمة الله) বলেন, কায়েস ইবনে সা‘দ মাক্কী এর পান্ডুলিপি ব্যতিত তার অন্য কোন পান্ডুলিপি নেই, এর অর্থ হল তিনি ঐ পান্ডুলিপির হাফেজ ছিলেন।’’২০৪

২০৪. যাহাবী, তারিখুল ইসলাম, ৪/৩৪২ পৃ.

● ইমাম যাহাবী (رحمة الله) উল্লেখ করেছেন-

وقال يحيى القطان: حماد بن سلمة، عن زياد الاعلم. وقيس بن سعد ليس بذاك.

-‘‘ইমাম ইয়াহইয়া ইবনে কাত্তান (رحمة الله) বলেন, হাম্মাদ বিন সালামা তিনি যিয়াদ থেকে এবং কায়েস বিন সা‘দ (رحمة الله) থেকে যে হাদিসগুলো বর্ণনা করেছেন তা কিছুই নয়।’’ ২০৫

২০৫. যাহাবী, মিযানুল ই‘তিদাল, ১/৫৯২ পৃ. ক্রমিক.২২৫১

● যাহাবী তার আরেকটি গ্রন্থে লিখেছেন-

قلت هو ثقة صدوق يغلط وليس في قوة

-‘‘আমি বলি যদিও তিনি সিকাহ ও বিশ্বস্ত তবে তিনি হাদিসে ভুল করতেন এবং তিনি হাদিসে তেমন শক্তিশালী নন।’২০৬  

২০৬. যাহাবী, কাশেফ, ১/৩৪৯ পৃ. ক্রমিক/১২২০

● এজন্যই ইমাম ইবনে হাজার আসকালানী (رحمة الله) লিখেছেন- وتغير حفظه بأخرة -‘‘তার শেষ বয়সে স্মৃতি শক্তিতে দুর্বল ছিল।’’ (ইবনে হাজার, তাক্বরীবুত তাহযিব, ১৭৮ পৃ. ক্রমিক.১৪৯৯)

● এমনকি আহলে হাদিস আলবানী রাবী হাম্মাদ সম্পর্কে লিখেন-

أن حماد له أوهاما.

-‘‘নিশ্চয় হাম্মাদের বিষয়ে ক্রুটি রয়েছে।’’ (আলবানী, সিলসিলাতুল আহাদিসিদ দ্বঈফাহ, ২/৩৩ পৃ. হা/৯৩০)

উল্লেখ্য যে, এই হাদিসের বর্ণনাকারী سُمَيَّةُ ‘সুমাইয়্যা’ সম্পর্কে ইমাম শামছুদ্দিন যাহাবী (رحمة الله) বলেন: لا تعرف -“তাকে চিনিনা।” (ইমাম যাহাবী: মিযানুল ইতিদাল, রাবী নং ৩৫৫৮)

কোন কোন সূত্রে দেখা যায় سُمَيَّةُ ‘ছুমাইয়্যা’ এর স্থানে شُمَيْسَةُ ‘সুমাইছাহ’ এর নাম। মূলত হাদিসটি বর্ণিত হয়েছে ‘ছুমাইয়্যা’ এর সূত্রে।

● কেননা ইমাম আব্দুর রাজ্জাক ছানআনী (رحمة الله) স্পষ্ট করেই বলেছেন:

قَالَ عَبْدُ الرَّزَّاقِ: هُوَ فِي كِتَابِي سُمَيَّةُ، عَنْ صَفِيَّةَ بِنْتِ حُيَيٍّ،

-“ইমাম আব্দুর রাজ্জাক বলেন: ইহা আমার কিতাবে আছে ছুমাইয়্যা বর্ণনা করেছেন ‘সাফিয়া বিনতে হুয়াই’ হতে।” (মুসনাদে আহমদ, হাদিস নং ২৬৮৬৬)

❏ এ জন্যেই ইমাম আহমদ হাদিসটি বর্ণনার সময় সন্ধিহান হয়ে দু’টি নামই উল্লেখ করেছেন এভাবে: حَدَّثَتْنِي شُمَيْسَةُ، أَوْ سُمَيَّةُ

-“আমার কাছে হাদিস বর্ণনা করেছেন ‘সুমাইছাহ অথবা ছুমাইয়্যা’।” (মুসনাদে আহমদ, হাদিস নং ২৬৮৬৬)

নিশ্চয় এখানে شُمَيْسَةُ ‘সুমাইছাহ’ এর নামটি যোগ করেছেন বর্ণনাকারী ‘জাফর ইবনে সুলাইমান’।

● কারণ ‘জাফর ইবনে সুলাইমান’ এর ব্যাপারে ইমাম ইবনে সা’দ (رحمة الله) বলেন: ثِقَةٌ، فِيْهِ ضَعْفٌ. -“সে বিশ্বস্ত এবং তার মাঝে দুর্বলতা রয়েছে।” (ইমাম যাহাবী: সিয়ারে আলামিন নুবালা, রাবী নং ৩৬)

ইমাম ইয়াহইয়া কাত্তান (رحمة الله) তার থেকে কোন হাদিস বর্ণনা করতেন না এমনকি তার হাদিস লিখতেনও না।

● ইমাম বুখারী (رحمة الله) বলেছেন:

قَالَ البُخَارِيُّ: جَعْفَرُ بنُ سُلَيْمَانَ الحَرَشِيُّ يُخَالِفُ فِي بَعْضِ حَدِيْثِهِ.

-“ইমাম বুখারী বলেন: জাফর ইবনে সুলাইমান হারাশী কোন কোন হাদিসে খেলাফ বা বিরোধপূর্ণ বর্ণনা করতেন।” (ইমাম যাহাবী: সিয়ারে আলামিন নুবালা, রাবী নং ৩৬)

وَقَالَ السَّعْدِيُّ: رَوَى مَنَاكِيْر -

● “ইমাম সা’দী বলেন: সে মুনকার রেওয়াত বর্ণনা করত।” (ইমাম যাহাবী: সিয়ারু আলামিন নুবালা, রাবী নং ৩৬)

অতএব, এই হাদিস অত্যন্ত দুর্বল যা হুজ্জাত হওয়ার যোগ্য নয়। আরেকটি বিষয় লক্ষ্যণীয় যে, হযরত ছাবেত বেনানী বর্ণনা করেছেন মাজহুল বা অপরিচিত রাবী ‘ছুমাইয়্যা’ থেকে আর মাজহুল রাবী থেকে ছাবেত বেনানী (رحمة الله) এর রেওয়াত প্রতিষ্ঠিত বা নির্ভরযোগ্য নয়।

● যেমন ইমাম ইবনে আদী (رحمة الله) বলেন:

وأحاديثه مستقيمة إذا روى عنه ثقة، -

“যখন সে বিশ্বস্ত রাবী থেকে হাদিস বর্ণনা করেন তখন হাদিস গুলো প্রতিষ্ঠিত হবে।” (ইমাম মিযযী: তাহজিবুল কামাল, রাবী নং ৮১১)

এখানে আরেকটি বিষয় লক্ষ্যণীয় যে, হাদিসটি হযরত আয়েশা (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত কিনা সেটা নিয়েও সংশয় রয়েছে। কারণ প্রথম অবস্থায় ‘সুমাইছাহ’ মা আয়েশা (رضي الله عنه) এর রেফারেন্স ছাড়াই বর্ণনা করেছেন।

● যেমন লক্ষ্য করুন,

قَالَ عَفَّانُ: حَدَّثَنِيهِ حَمَّادٌ، عَنْ شُمَيْسَةَ، عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ...

-‘‘আফ্ফান হাদিস বর্ণনা করেছেন হাম্মাদ থেকে- তিনি সুমাইছাহ থেকে- তিনি নবী করিম (ﷺ) থেকে।... (মুসনাদে আহমদ, হা/২৫০০২)

এই দৃষ্টিতে হাদিসটি মুরসাল হওয়ার সম্ভবনা রয়েছে, যা অন্য সহীহ্ ও প্রসিদ্ধ হাদিসের মোকাবেলায় গ্রহণযোগ্য নয়। সুতরাং এই রেওয়াত দ্বারা রাসূলে পাক (ﷺ) এর ছায়া থাকার বিষয়টি প্রতিষ্ঠিত হবে না। কারণ রেওয়াতটি বহুল সমালোচিত ও অনির্ভরযোগ্য।
শাব্দিক পর্যালোচনা:

এখানে ছায়া শব্দটি রূপক অর্থে ব্যবহার হয়েছে। কারণ বর্ণনাকারী স্পষ্ট বলেছেন সে সময়টা ছিল نِصْف النَّهَارِ বা দিনের মধ্যবর্তী সময়। তখন সূর্য মাথার উপর থাকে। আর আমরা সবাই জানি দিনের মাঝামাঝি ছায়া সামনে বা পিছনে লম্বা হয় না। যার ফলে ছায়া দেখে দূর থেকে অনুভব করার কোন কথা সঠিক হতেই পারে না।

রাসূল (ﷺ) এর ছায়া না থাকার আরও কিছু গ্রহণযোগ্য প্রমাণ:

হাদিস নং-১:

❏ বিশ্ববিখ্যাত উসূলবিদ আল্লামা আবুল বারাকাত আন্-নাসাফী (رحمة الله) যিনি সবার নিকটই গ্রহণযোগ্য তার তাফসীর গ্রন্থে একটি হাদিস উল্লেখ করেন-

وقال عثمان إن الله ما أوقع ظلم على الأرض لئلا يضع إنسان قدمه على ذلك الظل

-‘‘আমিরুল মুমিনীন হযরত উসমান ইবনে আফ্ফান (رضي الله عنه) বলেন হুযূর(ﷺ)এর ছায়া আল্লাহ্ যমিনে ফেলেননি যাতে কোন মানুষ তার ছায়ার উপর পা রাখতে না পারে।’’ ২০৭

২০৭. ইমাম আবুল বারাকাত নাসাফী, তাফসীরে মাদারিক, ২/৪৯২ পৃ.

হাদিস নং-২-৪

❏ যুগবরণ্য ইমাম সায়্যিদুনা হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মোবারক (رحمة الله) ও বিশ্ববিখ্যাত মুহাদ্দিস ইমাম হাফেয ইবনে জাওযী (رحمة الله) হযরত সায়্যিদুনা হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (رضي الله عنه) হতে সহীহ সনদে বর্ণনা করেন-

لَمْ يَكُنْ لِرَسُولِ اللَّهِ ﷺ ظِلٌّ، وَلَمْ يَقُمْ مَعَ شَمْسٍ قَطُّ إِلَّا غَلَبَ ضَوْءُهُ ضَوْءَ الشَّمْسِ، وَلَمْ يَقُمْ مَعَ سِرَاجٍ قَطُّ إِلَّا غَلَبَ ضَوْءُهُ ضَوْءَ السِّرَاجِ

-‘‘হুযূর (ﷺ) এর ছায়া ছিল না। তিনি যখনই সূর্যের মুখোমুখি দন্ডায়মান হতেন তাঁর নূর সূর্যের আলোর উপর প্রবল থাকত এবং প্রদীপের আলোতে দন্ডায়মান হলে তাঁর নূরের দ্যুতি ওটার দীপ্তিতে ম্লান করে দিত।’’ ২০৮

২০৮.

ক. ইমাম ইবনে জাওযী, আল-ওফা বি আহওয়ালিল মুস্তফা, ৪১২ পৃ.

খ. আল্লামা জুরকানী : শরহুল মাওয়াহেব : ৪/২২০ পৃ.

গ. ইমাম মুনাদী : শরহে শামায়েল : ১/৪৭ পৃ

ঘ. আল্লামা শফী উকাড়ভী : জিকরে জামীল : ৩২৪ পৃ

ঙ. আল্লামা মোল্লা আলী ক্বারী, জামেউল ওয়াসায়িল : ১/২১৭ পৃ.

ইমাম ইবনুল জাওযী (ওফাত. ৫৯৭ হি.) সনদবিহীন হাদিস উল্লেখ পছন্দ করতেন না, তবে তিনি এ হাদিসটির কোন সনদ উল্লেখ করেননি। আমরা অনুসন্ধান করতে গিয়ে এটির দুটি সূত্র পেয়েছি। ইমাম আব্দুল্লাহ ইবনে মোবারক (رحمة الله) হতে ইবনে আব্বাস (رضي الله عنه)-এর দূরুত্ব বেশি দিনের নয়। হয়তো বা তিনি তার ছাত্রের ছাত্রদের থেকে হাদিস শুনেছেন। অনেকে হয়তো বলতে পারেন ইবনে মোবারকের কথা তো কেউ বলেনি আপনি ভুল তথ্য দিচ্ছেন কেন!

❏ আমি বলবো, ইমাম জুরকানী (رحمة الله) এ হাদিসটি উল্লেখ করার পূর্বে লিখেছেন-

روى ابن المبارك وابن الجوزي، عن ابن عباس

-‘‘ইমাম ইবনে মোবারক ও ইমাম ইবনে জাওযী (رحمة الله) হযরত ইবনে আব্বাস (رضي الله عنه) হতে বর্ণনা করেছেন।’’ (জুরকানী, শারহুল মাওয়াহেব, ৫/৫২৫ পৃ. এবং ৭/২০০ পৃ.)

দ্বিতীয় সূত্র:

❏ উক্ত হযরত ইবনে আব্বাস (رضي الله عنه) এর মতনের ও সনদের সমর্থনে অন্য একটি ধারায় এ হাদিসটি ইমাম তাকি উদ্দিন আহমদ ইবনে আলী মাকরীযী (رحمة الله) (ওফাত. ৮৪৫হি.) তিনি সনদটি বর্ণনা করেন এভাবে-

وقال أحمد بن عبد اللَّه الغدافي أخبرنا عمرو بن أبي عمرو عن محمد بن السائب عن أبي صالح عن ابن عباس رضي اللَّه عنه: لَمْ يَكُنْ لِرَسُولِ اللَّهِ ﷺ ظِلٌّ، وَلَمْ يَقُمْ مَعَ شَمْسٍ قَطُّ إِلَّا غَلَبَ ضَوْءُهُ ضَوْءَ الشَّمْسِ، وَلَمْ يَقُمْ مَعَ سِرَاجٍ قَطُّ إِلَّا غَلَبَ ضَوْءُهُ ضَوْءَ السِّرَاجِ

-‘‘আহমদ ইবনে আবদুল্লাহ গাদ্দাফী বলেন, আমাদেরকে আমর ইবনে আবি আমর হাদিস বর্ণনা করেছেন, তিনি বলেন, আমাকে মুহাম্মদ ইবনুস সায়িব হাদিস বর্ণনা করেছেন, তিনি বলেন, আমাকে (তাবেয়ী) আবু সালেহ বর্ণনা করেছেন, তিনি হযরত ইবনে আব্বাস (رضي الله عنه) হতে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, রাসূল (ﷺ) এর ছায়া ছিল না। তিনি যখনই সূর্যের মুখোমুখি দন্ডায়মান হতেন তাঁর নূর সূর্যের আলোর উপর প্রবল থাকত এবং প্রদীপের আলোতে দন্ডায়মান হলে তাঁর নূরের জ্যোতি ওটার দীপ্তিতে ম্লান করে দিত।’’ ২০৯

২০৯. আল্লামা ইমাম মাকরীযী, ইমতাউল আসমা‘আ বিমা লিন্নাবিয়্যি মিনাল আহওয়াল, ২/১৭০ পৃ., দারুল কুতুব ইলমিয়্যাহ, বয়রুত, লেবানন। এ হাদিসটির অনুবাদ একাধিক বার দেয়া হয়েছে, এ জন্য এখানে পুনরায় দেয়া হয়নি।

তৃতীয় সূত্র:

❏ ইমাম আব্দুর রায্যাক (رحمة الله) হাদিস বর্ণনা করেছেন-

عن عبد الرزاق عن ابن جريج قال : اخبرنى نافع أن ابن عباس قال : لَمْ يَكُنْ لِرَسُولِ اللَّهِ ﷺ ظِلٌّ، وَلَمْ يَقُمْ مَعَ شَمْسٍ قَطُّ إِلَّا غَلَبَ ضَوْءُهُ ضَوْءَ الشَّمْسِ، وَلَمْ يَقُمْ مَعَ سِرَاجٍ قَطُّ إِلَّا غَلَبَ ضَوْءُهُ ضَوْءَ السِّرَاجِ

-‘‘ইমাম আব্দুর রায্যাক (رحمة الله) ইবনে যুরাইজ (رحمة الله) হতে তিনি হযরত নাফে (رضي الله عنه) হতে তিনি হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (رضي الله عنه) হতে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, হুযূর (ﷺ) এর কোনো ছায়া ছিল না, তাঁর ছায়া সূর্যের আলোতে পড়তো না বরং তাঁর নূরের আলো সূর্যের আলোর উপরে প্রাধান্য বিস্তার করতো এবং কোন বাতির আলোর সামনে দাঁড়ালেও বাতির আলোর উপরে তাঁর নূরের আলো প্রাধান্য বিস্তার করতো।’’ ২১০

২১০. ইমাম আব্দুর রায্যাক : জযউল মুফকুদ মিন মুসান্নাফ আব্দুর রায্যাক : ৫৬ পৃ. হা/২৫

এ হাদিসটির সনদ নিয়ে কোন সমস্যা নেই, তবে এটি ইমাম আব্দুর রায্যাক (رحمة الله)-এর প্রকাশিত ‘মুসান্নাফ’ গ্রন্থে নেই; রয়েছে ‘জুযউল মাফকুদে’ সামনে এ কিতাবের গ্রহণযোগ্যতা আলোকপাত করা হবে।

এ বিষয়ে বিভিন্ন ইমাম, মুহাদ্দিস, ইতিহাসবিদদের অভিমত:

❏ নবম শতাব্দীর মুজাদ্দিদ, হাফেযুল হাদিস, ইমাম জালালুদ্দীন সুয়ূতি (ওফাত. ৯১১ হি.) তার ২০ বছরের শ্রম সাধনার কিতাব ‘খাসায়েসুল কোবরা’ নামক কিতাবে একটি অনুচ্ছেদ কায়েম করেন এভাবে-

بَاب الْآيَة فِي أَنه صلى الله عَلَيْهِ وَسلم لم يكن يرى لَهُ ظلّ

-‘‘অনুচ্ছেদ: রাসূল (ﷺ)-এর ছায়া যমীনে দেখা যেত না।’’ (ইমাম সুয়ূতি, খাসায়েসুল কোবরা, ১/১১৬ পৃ., দারুল কুতুব ইলমিয়্যাহ, বয়রুত, লেবানন।)

❏ মরক্কো ও স্পেনের প্রসিদ্ধ ফকীহ ও মুহাদ্দিস হলেন ইমাম কাযী আয়ায (ওফাত. ৫৪৪ হি.)। তাঁর জীবনের শ্রেষ্ঠ কিতাব হিসেবে ‘আশ শিফা বিতা‘রীফি হুকুকিল মুস্তফা ’ ধরা হয়। তিনি তাঁর উক্ত কিতাবে রাসূল (ﷺ)-এর মু‘জিযা, বৈশিষ্ট ও অলৌকিকত্ব বিষয়ক আলোচনায় বলেন,

 وَمَا ذُكِرَ من أنَّهُ كَانَ لَا ظل شخصه فِي شَمْسٍ وَلَا قَمَرٍ لِأَنَّهُ كَانَ نُورًا وَأَنَّ الذُّبَابَ كَانَ لَا يَقَعُ عَلَى جَسَدِهِ وَلَا ثِيَابِهِ-

-‘‘তাঁর নবুওয়াত ও রিসালাতের প্রমাণাদির মধ্যে এটাও উল্লেখ করা হয়েছে যে, তাঁর শরীর মোবারকের ছায়া হতো না, না সূর্যালোকে না চন্দ্রালোকে। কারণ তিনি ছিলেন নূর। তাঁর শরীর ও পোষাকে মাছি বসত না।’’ ২১১

২১১. ইমাম কাজী আয়ায : শিফা শরীফ, ১/৪৬২ পৃ. দারুল কুতুব ইলমিয়্যাহ, বয়রুত, লেবানন, ইমাম সাখাভী, মাকাসিদুল হাসানা, ৮৫ পৃ. হা/১২৬

❏ হাফেযুল হাদিস, ইমাম জালালুদ্দীন আব্দুর রহমান সুয়ূতি (رحمة الله) লিখেন-

قَالَ ابْن سبع من خَصَائِصه ان ظله كَانَ لَا يَقع على الأَرْض وَأَنه كَانَ نورا فَكَانَ إِذا مَشى فِي الشَّمْس أَو الْقَمَر لَا ينظر لَهُ ظلّ

-‘‘হযরত ইবনে সাবা (رحمة الله) বলেছেন, এটা হুযূর (ﷺ) বৈশিষ্ট্যাবলীর অন্তর্গত যে, হুযূর (ﷺ) এর ছায়া যমীনে পড়তো না এবং তিনি ছিলেন সম্পূর্ন নূর। তিনি যখন হাটতেন সূর্যালোকে অথবা চন্দ্রালোকে তাঁর ছায়া দেখা যেত না।’’ ২১২

২১২.

ক. আল্লামা ইমাম জালালুদ্দীন সূয়তী : খাসায়েসুল কোবরা : ১/১১২ পৃ. হা/৩২৮

খ. আল্লামা ইমাম জুরকানী : শরহুল মাওয়াহেব : ৪/২০২ পৃ.

গ. ইমাম আহমদ রেযা খাঁন বেরেলভী : নুরুল মোস্তফা : পৃ-৮২

ঘ. আল্লামা মাহদী আল-ফাসী : মাতালিউল মুর্সারাত, পৃ-৩৬৫

ঙ. শায়খ ইউসূফ বিন নাবহানী : হুজ্জাতুল্লাহি আলাল আলামিন, ৬৬৮ পৃ.

চ. শায়খ আব্দুল হক মুহাদ্দেস দেহলভী : মাদারেজুন নবুওয়াত : ১/১৪২ পৃ.

❏ ‘শিফা শরীফের’ সম্মানিত ব্যাখ্যাকারদের অন্যতম আল্লামা ইমাম শিহাবুদ্দিন খিফ্ফাযী মিশরী (رحمة الله) ইমাম কাযি আয্যাযের বক্তব্যের ব্যাখ্যায় বলেন, হুযূর (ﷺ) এর ছায়া মোবারক তাঁর মাহাত্ম্য ও শ্রেষ্ঠত্বের কারণে যমীনে ফেলা হয়নি। অথচ সমস্ত মানুষ তাঁর ছায়ায় বিশ্রাম করছে। অতঃপর বলেন, কুরআনুল করীমের উক্তি মতে তিনি উজ্জ্বল নূর এবং নূরের কোন ছায়া থাকে না। ২১৩

২১৩. ইমাম শিহাবুদ্দিন খিফ্ফাযী, নাসিমুর রিয়াদ্ব, ১/২৪২ পৃ. এবং ৩/২৮২ পৃ.

❏ বুখারী শরীফের বিখ্যাত ব্যাখ্যা গ্রন্থ প্রণেতাদের অন্যতম, ইমাম আহমদ ইবনে মুহাম্মদ কাস্তালানী (رحمة الله) এ বিষয়ে নিজের মত প্রকাশ করেন এভাবে,  

لَمۡ یَکُنۡ لَه ﷺ ظِلُّ فِی شَمْسٍ وَلَا قَمَرٍ

-‘‘বিশ্বকুল সরদার হুযূর (ﷺ) এর ছায়া, না সূর্যালোকে ছিল, না চন্দ্রালোকে।’’ ২১৪

২১৪.

ক. আল্লামা ইমাম কাস্তাল্লানী : মাওয়াহেবে লাদুন্নীয়া : ২/৮৫ পৃ.

খ. আল্লামা জুরকানী : শরহুল মাওয়াহিব, ৪/২২০ পৃ.

❏ আল্লামা মুহাম্মদ আবদুল বাকী যুরকানী (رحمة الله) ইমাম কাস্তালানীর বক্তব্যের ব্যাখ্যায় বলেন,

ولم يكن له -صلى الله عليه وسلم- ظل في شمس ولا قمر لِأَنَّهُ كَانَ نُورًا

-‘‘হুযূর (ﷺ) এর ছায়া, না সূর্যালোকে ছিল, না চন্দ্রালোকে। তার কারণ তিনি ছিলেন নূর।’’ ২১৫

২১৫. আল্লামা জুরকানী : শরহুল মাওয়াহেব : ৫/৫২৪ পৃ:

❏ ইমাম কাস্তালানী (رحمة الله) তাঁর বিখ্যাত গ্রন্থের অন্য স্থানে লিখেন-

رواه البيهقى، ولم يقع له ظل على الأرض، ولا رؤى له ظل فى شمس ولا قمر

-‘‘ইমাম বায়হাকী (رحمة الله) বর্ণনা করেছেন যে চাঁদ সূর্যের আলোতে রাসূল এর ছায়া দেখা যেত না।’’ ২১৬

২১৬.

ক. ইমাম কাস্তাল্লানী : মাওয়াহেবে লাদুন্নীয়া, ২/৩৪৩ পৃ.

খ. আল্লামা জুরকানী : শরহুল মাওয়াহিব, ৪/২২০ পৃ.

❏ ইমাম কাস্তালানী (رحمة الله) আরও বলেন,

فكان إذا مشى فى الشمس أو القمر لا يظهر له ظل. قال غيره: ويشهد له قوله- صلى الله عليه وسلم- فى دعائه: واجعلنى نورا

-‘‘তিনি যখন হাটতেন সূর্যালোকে অথবা চন্দ্রালোকে তাঁর ছায়া দেখা যেত না। এ কথার সাক্ষ্য দেয় রাসূল (ﷺ) এর বুখারী শরীফের এ হাদিস যে হে আল্লাহ্! তুমি আমাকে নূর বানিয়ে দাও।’’ ২১৭

২১৭.

ক. আল্লামা ইমাম জালালুদ্দীন সূয়তী : খাসায়েসুল কোবরা : ১/১১২ পৃ. হা/৩২৮

খ. আল্লামা জুরকানী : শরহুল মাওয়াহেব : ৪/২০২ পৃ.

গ. ইমাম আহমদ রেযা খাঁন বেরেলভী : নুরুল মোস্তফা : পৃ-৮২

ঘ. আল্লামা ইমাম ফার্সী : মাতালিউল মুর্সারাত শরহে দালায়েলুল খায়রাত : পৃ-৩৬৫

ঙ. শায়খ ইউসূফ বিন নাবহানী : হুজ্জাতুল্লাহি আলাল আলামিন-৬৬৮ পৃ.

চ. শায়খ আব্দুল হক মুহাদ্দিস দেহলভী : মাদারেজুন নবুওয়াত : ১/১৪২ পৃ.

❏ বিখ্যাত ঐতিহাসিক, সিরাতবিদ, আল্লামা হোসাইন ইবনে মুহাম্মদ দিয়ারবকরী (ওফাত. ৯৬৬ হি.) বলেন,

لَم یقَع ظِلُه علَی الاَرضِ وَلا راِیَ لَه ظِل فى شَمۡسٍ وَلَا قَمَرٍ

-‘‘হুযূর (ﷺ) এর ছায়া যমীনে পড়তো না, আর তার ছায়া না সূর্যালোকে দেখা যেতো, না চন্দ্রালোকে।’’ ২১৮

২১৮. আল্লামা হোসাইন ইবনে মুহাম্মদ দিয়ার বকরী : তারীখুল খামীস ফি আহওয়ালি আনফাসে নাফীস : ১/২১৯ পৃ.

❏ বিখ্যাত মুহাদ্দিস, হাফেযুল হাদিস, আল্লামা ইবনে হাজার মক্কী (رحمة الله) বলেন,

وَمِمَّا یُوَیِدُ اَنَّه ﷺ ضَاءَ نُورًا اَنَّه کَانَ اِذا مَشی فِی الشَّمسِ وَالقَمَرِ لَا یَظهرُ لَه ظِلٌّ لِاَنَّه لَایَظهرُ اِلَّا الکَشِیۡفِ وَهوَ صَلَّی اللہُ عَلَیۡه وَسَلَّمَ قَد خَلَصَه اَللہُ مِن سَائِرِ الکَثَافَاتِ الجِسمَانِیَّة وَصَیَّرَہ نُورًا صِرفًا لَایَظهرُ ظِلٌّ اَلًا

-‘‘হুযুরের সম্পূর্ণ নূর হওয়ার সমর্থন এ থেকে হয় যে, সূর্যালোকে কিংবা চন্দ্রালোকে তাঁর ছায়া হতো না। কারণ ছায়া তো হয় জড় দেহের আর হুযূর (ﷺ) কে আল্লাহ্ তা‘য়ালা সকল শারীরিক জড়তা থেকে নিখূঁত করতঃ সম্পূর্ণ নূরে পরিণত করেছিলেন। অতএব হুযূর (ﷺ) এর কোন ছায়া ছিল না।’’ ২১৯

২১৯. আল্লামা ইমাম ইবনে হাজার মক্কী : আফযালুল র্কুরা, ১৮৬ পৃ.

❏ আল্লামা সোলায়মান জামাল (رحمة الله) বলেন,  

لَم يكن له صلى الله عليه وسلم ظل يظهر فى شمس ولا قمر

-‘‘হুযূর (ﷺ) এর ছায়া না সূর্যালোকে হতো এবং না চন্দ্রালোকে।’’ ২২০

২২০. আল্লামা সোলায়মান জুমাল : ফুত‚হাতে আহমদিয়া : ৫ পৃ.

❏ বিখ্যাত সূফি, দার্শনিক, আল্লামা জালালুদ্দীন রূমী (رحمة الله) তাঁর বিখ্যাত গ্রন্থ ‘মসনবী শরীফে’ এ বিষয়ে বলেন,  

چوں فناشى از فقر پیرایہ بود

اومحمد دار بے سایہ بود

-‘‘যেহেতু খোদাপ্রেমে হযরত মুহাম্মদ (ﷺ) এর বিলীনতা দারিদ্র্যে সুশোভিত ছিল। সুতরাং তিনি ছায়া বিহীন ঘর স্বরূপ হন।’’ ২২১

২২১. মাওলানা রূমী : মসনভী শরীফ : পঞ্চশ দফতর : ৭৭ পৃ.

❏ মাওলানা বাহরুল উলূম (رحمة الله) মসনবী শরীফের ব্যাখ্যা গ্রন্থে উপরোক্ত বক্তব্যের ব্যাখ্যায় বলেন,  

درمصرع ثانی اشارہ بہ معجزہ آں سرو صلی اللہ علیہ وسلم کہ آں سرو را سایہ نہ می افتاد

-‘‘দ্বিতীয় পংক্তিতে বিশ্বকুল সরদার হুযূর (ﷺ) এর মু‘জিযার প্রতি ইঙ্গিত রয়েছে যে, হুযূরের ছায়া ছিল না।’’

❏ শায়খুল মুহাদ্দিসীন হযরত মাওলানা শাহ আব্দুল হক মুহাদ্দিস দেহলভী (رحمة الله) বলেন,

ونبود مر آں حضرت صلی اللہ علیہ وسلم را سایہ در آفتاب نہ در قمر

-‘‘নূরে মুজাস্সাম (رحمة الله) এর ছায়া না সূর্যালোকে ছিল, না চন্দ্রালোকে।’’ ২২২

২২২. শায়খ আব্দুল হক মুহাদ্দিস দেহলভী : মাদারিজুন্নবুওয়াত, ১/৪৩ পৃ.

❏ দশম শতাব্দীর মুজাদ্দিদ, হযরত ইমামে রব্বানী মুজাদ্দিদে আলফেসানী (رحمة الله) এ বিষয়ে বলেন,

ادرا صلی اللہ علیہ وسلم سایہ نبود در عالم شہادت سایہ ہر شخص از شخص لطیف ترست چون لطیف تر از وے صلی اللہ علیہ وسلم در عالم نباشد اورا سایہ چہ صورت دارد؟

-‘‘হুযূর (ﷺ) এর ছায়া ছিল না, কারণ ইহ জগতে প্রত্যেক ব্যক্তির ছায়া তাঁর চেয়েও সূ²তম হয়। যেহেতু হুযূর (ﷺ) অপেক্ষা সূ²তম কোন বস্তু জগতে নেই, অতএব হুযুরের ছায়া কিরূপে হতে পারে ?’’ ২২৩

২২৩. আল্লামা ইমাম মুজাদ্দেদে আলফেসানী : মাকত‚বাত শরীফ : তৃতীয় খণ্ড, ৯৩ পৃ.

❏ ১৩শ শতাব্দীর মুজাদ্দিদ, হযরত মাওলানা শাহ্ আব্দুল আযিয মুহাদ্দিস দেহলভী (رحمة الله) বলেন,

سایہ ایشاں بر زمین نمی افتاد

 -‘‘হুযূর (ﷺ) এর ছায়া যমীনে পড়তো না।’’ ২২৪

২২৪. শায়খ আব্দুল আজিজ মুহাদ্দিস দেহলভী : তাফসীরে আযীযী, সূরা ওয়াদ্দোহা, ৩/৩১২ পৃ.

❏ বিখ্যাত মুফাসসির, আল্লামা কাযী সানাউল্লাহ পানিপতি (رحمة الله) বলেন,

اولیاء اللہ گفتہ اند ارواحنا اجسادنا واجسادنا ارواحنا یعنی ارواح ما کار اجساد می کنند وگاہے اجساد از غایت لطافت برنگ اوراح می براید ومی گویند کہ رسول خدا را سایہ نبود صلی اللہ علیہ وسلم

-‘‘আল্লাহর অলিগণ বলেন, আমাদের আত্মাসমূহ আমাদের দেহ এবং আমাদের দেহ সমূহ আমাদের আত্মা। অর্থাৎ-কোন কোন সময় আমাদের আত্মা দেহের কাজ করে এবং কোন কোন সময় আমাদের দেহ চূড়ান্ত সূ²তা অবলম্বন করতঃ আত্মারূপে প্রকাশিত হয়। এজন্যই হুযূর (ﷺ) এর ছায়া ছিল না।’’ ২২৫

২২৫. আল্লামা কাজী সানাউল্লাহ পানীপথি : তাযকিরাতুল মাওতা ওয়াল কুবূর : পৃ-২১

❏ আল্লামা শায়খ ইউসুফ নাবহানী (رحمة الله) বর্ণনা করেন-

وكان اذا مشى فى قمر او شمس لا يظهر له ظل-

-‘‘রাসূল (ﷺ) যখন চন্দ্র ও সূর্যের আলোতে হাটতেন তখন তার ছায়া প্রকাশ পেত না।’’ ২২৬

২২৬. শায়খ ইউসুফ নাবহানী, জাওয়াহিরুল বিহার, ১/৪৫৩ পৃ.

❏ বিরুদ্ধবাদীদের সরদার দেওবন্দী আকাবীরদের অন্যতম, মাওলানা রশিদ আহমদ গাংগুহী বলেন,

حق تعالی در شان حبیب خود صلی اللہ علیہ وسلم فرمود کہ آمدہ نزد شما از طرف حق تعالی نور وکتاب مبین ومراد از نور ذات پاک حبیب خدا صلی اللہ علیہ وسلم نیز فرمود کہ اے نبی ترا شاہد مبشر و نذیر وداعی الی اللہ وسراج منیر فرستادہ ایم ومنیر روشن کنندہ ونور دہندہ را گویند پس اگر کسے را روشن کردن از انساناں محال بودے آن ذات پاک صلی اللہ علیہ وسلم را ہم ایں امر میسر نیامد کہ آ ذات پاک صلی اللہ علیہ وسلم ہم از جملہ اولاد آدم علیہ السلام اند مگر آں حضرت صلى اللہ علیہ وسلم ذات خود را چناں مطہر فرمود کہ نور خالص گشتند وحق تعالی ان جناب سلامہ علیہ را نور فرمود وبہ تواتر ثابت شد کہ آں حضرت عالی سایہ نہ داشتند ظاہر است کہ بجز نور ہمہ اجسام ظل می دارند۔

-‘‘আল্লাহ্ তা‘য়ালা তাঁর হাবীব (ﷺ) এর শানে ফরমায়েছেন, তোমাদের কাছে আল্লাহর নিকট হতে এক নূর ও স্পষ্ট কিতাব এসেছে। নূর দ্বারা হাবীবে খোদা (ﷺ) এর পবিত্র সত্তাকে বুঝানো হয়েছে। আল্লাহ্ তা‘য়ালা আরো ফরমায়েছেন, হে নবী (ﷺ)! আমি তো আপনাকে সাক্ষী, সুসংবাদদাতা ও সতর্ককারী, আল্লাহর অনুমতিক্রমে তাঁর দিকে আহবানকারী এবং উজ্জ্বল প্রদীপ (সিরাজে মুনীর) রূপে পাঠিয়েছি। আর ‘মুনীর’ উজ্জ্বলকারী ও আলোকদাতাকে বলে। সুতরাং মানুষের মধ্যে কাউকে উজ্জ্বল করা যদি অসম্ভব হতো তাহলে হযরত (ﷺ) এর পবিত্র সত্তার অন্তর্গত কিন্তু তিনি (ﷺ) তাঁর মোবারক সত্তাকে এমনভাবে পবিত্র করেছেন যে, তিনি নিখুঁত নূরে পরিণত হন এবং আল্লাহ্ তা‘য়ালা তাকে নূর ফরমায়েছেন। আর সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হয়েছে যে, রাসূল (ﷺ) এর ছায়া ছিল না এবং এটাও প্রকাশ্যমান যে, নূর ব্যতীত সমুদয় জড় দেহের ছায়া থাকে।’’ ২২৭

২২৭. মাওলানা রশিদ আহমদ গাংগুহী : ইমদাদুস সুলূক, পৃ-৮৫

❏ দেওবন্দী আকাবীরদের অন্যতম, মাওলানা আশরাফ আলী থানবী এ বিষয়ে মত প্রকাশ করে বলেন,

يہ بات مشہورہ كہ ہمارے حضور صلى الله عليه وسلم كہ سايہ نہے تہا اسلئہ كہ ہمارے حضور صلى الله عليه وسلم سرپا نور ہے نور تہے-  

-‘‘এ কথা প্রসিদ্ধ যে, আমাদের হুযুর (ﷺ) এর ছায়া ছিল না। (কারণ) আমাদের হুজুর (ﷺ) এর আপাদমস্তক নূরানী ছিলেন। হুযুর (ﷺ) -এর মধ্যে নামমাত্রও অন্ধকার ছিল না। কেননা ছায়ার জন্য অন্ধকার অপরিহার্য।’’ ২২৮

২২৮. মাওলানা আশরাফ আলী থানবী : শুক্রুন নিমাতির বিযিকরির রাহমাতি, পৃ-৩৯

বিষয় নং-১৫: রাসূল (ﷺ) এর ইলমে গায়ব সংক্রান্ত কয়েকটি হাদিস পর্যালোচনা :

‘হাদীসের নামে জালিয়াতি’ গ্রন্থের ৩৭৩ পৃষ্ঠায় তাদের বানানো একটি জাল হাদিস উল্লেখ করে তাকে জাল বলে দাবী করেছেন যে, সৃষ্টির শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত জ্ঞান রাসূল (ﷺ)-এর ছিল না। নাউযুবিল্লাহ

মাওলানা আব্দুল হাই লাখনৌভীর বরাত দিয়ে দাবী করেছেন যে, ‘‘যা কিছু অতীত হয়েছে এবং যা কিছু ভবিষ্যতে ঘটবে সবকিছুরই বিস্তারিত ও খুঁটিনাটি জ্ঞান তাঁকে দেয়া হয়েছিল।’’ এটিকে তিনি জাল ও মিথ্যা কথা বলে চালিয়ে দিতে চেয়েছেন। সহীহ হাদিস দ্বারা এই সমস্ত মানবরূপী দাজ্জালদের কথার জবাব দেয়ার চেষ্টা করবো। ইনশা আল্লাহ।

প্রথম হাদিস

❏ বুখারী শরীফের بدء الخلق ও মিশকাত শরীফের بدء الخلق وذكر الانبياء নামক অধ্যায়ে হযরত উমর (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত আছে-

وَعَن عمرؓ قَالَ: قَامَ فِينَا رَسُولُ اللَّهِ ﷺ مَقَامًا فَأَخْبَرَنَا عَنْ بَدْءِ الْخَلْقِ حَتَّى دَخَلَ أَهْلُ الْجَنَّةِ مَنَازِلَهُمْ وَأَهْلُ النَّارِ مَنَازِلَهُمْ حَفِظَ ذَلِكَ مَنْ حَفِظَهُ وَنَسِيَهُ مَنْ نسيَه . رَوَاهُ البُخَارِيّ ـ

-‘‘হযরত উমর (رضي الله عنه) বলেন, রাসূল (ﷺ) এক জায়গায় আমাদের সাথে অবস্থান করছিলেন। সেখানে তিনি আমাদেরকে সৃষ্টির সূচনা থেকে সংবাদ দিচ্ছিলেন। এমনকি বেহেস্তবাসী দোযখবাসীগণ নিজ নিজ ঠিকানায় পৌঁছে যাওয়া অবধি পরিব্যাপ্ত যাবতীয় অবস্থা ও ঘটনাবলীর বর্ণনা প্রদান করেন। যিনি ওসব বিষয় স্মরণ রাখতে পেরেছেন তিনি তা স্মরণ রেখেছেন, আর যিনি স্মরণ রাখতে পারেননি তিনি ভুলে গেছেন।’’ ২২৯

২২৯.

ক. ইমাম বুখারী : আস্ সহীহ্ :৬/২৮৬পৃ.হাদিস, ৩১৯২

খ. খতিব তিবরীযি : মিশকাতুল মাসাবিহ্ :৪/৫০৬ পৃ. হাদিস, ৫৬৯৯

গ. ইমাম আবূ দাউদ, আস্-সুনান, ৪/৪৪১ পৃ. হাদিস, ৪২৪০

ঘ. ইমাম তিরমিযী, আস্-সুনান, ৪/৪১৯ পৃ. হাদিস, ২১৯১

ঙ. ইমাম আহমদ, আল-মুসনাদ, ৫/৩৮৫ পৃ.

চ. ইমাম বুখারী, আস্-সহীহ, ১১/৪৯৪ পৃ. হাদিস, ৬৬০৪

ছ. ইমাম মুসলিম, আস্-সহীহ, ৫/২২১৭ পৃ. হা/২৮৯১ এবং ২৩

জ. ইমাম ইবনে মাযাহ, আস্-সুনান, ২/১৩৪৬পৃ. হাদিস, ৪০৫৩

ঝ. ইমাম খতিব তিবরিযী, মিশকাতুল মাসাবীহ, কিতাবুল ফিতান, ৪/২৭৮ পৃ. হাদিস, ৫৩৭৯

এখন. ড. আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীর সাহেব কি বুখারী শরীফ পড়েননি, নাকি পড়েও সত্যকে ধামা চাপা দিয়েছেন।

❏ দেখুন রাসূল (ﷺ) ইরশাদ করেন যে,

وَعَنْ كَعْبِ بْنِ مَالِكٍ ؓ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ ﷺ : مَنْ طَلَبَ الْعِلْمَ لِيُجَارِيَ بِهِ الْعُلَمَاءَ أَوْ لِيُمَارِيَ بِهِ السُّفَهَاءَ أَوْ يصرف بِهِ وُجُوه النَّاس إِلَيْهِ أَدخل الله النَّار . رَوَاهُ التِّرْمِذِيّ ورواه ابن ماجه عن ابن عمر -

-‘‘হযরত কাব ইবনে মালিক (رحمة الله) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) ইরশাদ করেছেন, যে ব্যক্তি আলিমগণের সাথে বিতর্কে জয়লাভের জন্য অথবা মূর্খদের সাথে বাক-বিতন্ডা করার জন্য কিংবা সাধারণ মানুষকে নিজের দিকে আকৃষ্ট করার জন্য ইলম অন্বেষণ করবে, আল্লাহ্ তা‘য়ালা তাকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করবেন।’’ ২৩০

২৩০.

ক. ইমাম খতিব তিবরিযী, মিশকাতুল মাসাবীহ, ১/৬৪ পৃ. হা/২২৫-২২৬

খ. ইমাম তিরমিযী, আস্-সুনান, ৫/৩২ পৃ. হাদিস, ২৬৫৪

গ. ইমাম ইবনে মাযাহ, ১/৯৩ পৃ. হা/২৫৩

তাই আমি বলতে চাই, এই সমস্ত আলেমরা সাধারণ মানুষদের বিপাকে ফেলার জন্য ঝগড়া সৃষ্টি করে ইসলামের মাঝে ফাটল ধরাতে চায়। তাই আল্লাহ্ তা‘য়ালার দরবারে এই সমস্ত নামধারী আলেমদের থেকে পানাহ চাই, যে ব্যক্তি জেনে শুনে রাসূল (ﷺ) এর সত্য হাদিসকে গোপন করে।

❏ এ প্রসঙ্গে রাসূল (ﷺ) বলেন-

وَعَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ ؓ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ ﷺ: من سُئِلَ عَنْ عِلْمٍ عَلِمَهُ ثُمَّ كَتَمَهُ أُلْجِمَ يَوْمَ الْقِيَامَةِ بِلِجَامٍ مِنْ نَارٍ . رَوَاهُ أَحْمَدُ وَأَبُو دَاوُد وَالتِّرْمِذِيّ ورواه ابن ماجه عن انس

-‘‘হযরত আবু হুরায়রা (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) ইরশাদ করেছেন, যে ব্যক্তিকে এমন ইলমের বিষয়ে জিজ্ঞাসা করা হয়, যা সে জানে। অতঃপর সে তা গোপন করে রাখে। কিয়ামতের দিন তাকে আগুনের লাগাম পরিয়ে দেয়া হবে।’’ ২৩১

২৩১.

ক. ইমাম খতিব তিবরিযী, মিশকাতুল মাসাবীহ, কিতাবুল ইলম, ১/৬৪ পৃ. হা/২২৩-২২৫

খ. ইমাম তিরমিযী, আস্-সুনান, ৫/৩২ পৃ. হা/২৬৪৯, তিনি বলেন সনদটি হাসান।

গ. ইমাম ইবনে মাযাহ, আস্-সুনান, ১/৯৬ পৃ. হা/২৬১

ঘ. ইমাম আহমদ, আল-মুসনাদ, ২/২৬৩ পৃ.

ঙ. ইমাম আবূ দাউদ, আস্-সুনান, ৫/৬৭ পৃ. হা/৩৬৫৮

চ. ইমাম ইবনে মাযাহ, আস্-সুনান, ১/৯৭ পৃ. হা/২৬৪, তিনি হযরত আনাস (رضي الله عنه)‘র সূত্রে।

তাই উক্ত গ্রন্থের লেখক ড. আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীরকে বলতে চাই যে আপনি রাসূল (ﷺ) এর ইলমে গায়বের সত্য হাদিসকে গোপন করেছেন, রাসূল (ﷺ)-এর এই শাস্তির ঘোষণা কী আপনার জানা নেই? জানা আছে, নাকি নজদীদের টাকায় সব ভুলে গেছেন ?

❏ বুখারী শরীফের উক্ত হাদিসের ব্যাখ্যায় আল্লামা বদরুদ্দীন আইনী (رحمة الله) তদীয় উমদাদুল ক্বারী শরহে বুখারীর ১৫ খণ্ডের ১১০ নং পৃষ্ঠায় বলেন-

دلَالَة على أَنه أخبر فِي الْمجْلس الْوَاحِد بِجَمِيعِ أَحْوَال الْمَخْلُوقَات من ابتدائها إِلَى انتهائها

-‘‘এ হাদিস থেকে বুঝা গেল একই অবস্থানে হুযূর (ﷺ) সৃষ্টি কুলের আদ্যাপান্ত যাবতীয় অবস্থার খবর দিয়েছিলেন।’’

দ্বিতীয় হাদিস:

❏ মিশকাত শরীফের معجزة অধ্যায়ে মুসলিম শরীফের উদ্ধৃতি দিয়ে হযরত আমর ইবনে আখতাব আনসারী (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন,

فَأَخْبَرَنَا بِمَا هُوَ كَائِنٌ إِلَى يَوْمِ الْقِيَامَةِ فَأَعْلَمُنَا أحفظنا. رَوَاهُ مُسلم ـ

-‘‘আমাদেরকে সেই সমস্ত ঘটনাবলীর খবর দিয়েছেন যেগুলো কিয়ামত পর্যন্ত ঘটতে থাকবে। আমাদের মধ্যে সবচেয়ে বড় আলেম হলেন তিনি যিনি এসব বিষয়াদী সর্বাধিক স্মরণ রাখতে পেরেছেন।’’ ২৩২

২৩২.

ক. ইমাম মুসলিম : আস্ সহীহ : ৪/২২১৭ পৃ. হাদিস নং : ২৮৯২ এবং ২৫

খ. ইমাম খতিব তিবরিযি : মিশকাতুল মাসাবীহ্ শরীফ, ৪/৩৯৭ পৃ. হা/৫৯৩৬

গ. ইমাম আহমদ : আল মুসনাদ : ৫/৩৪১ পৃ.

তৃতীয় হাদিস

❏ মিশকাত শরীফের الفتن অধ্যায়ে হযরত হুযাইফা (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত হয়েছে-

مَا تَرَكَ شَيْئًا يَكُونُ فِي مقَامه إِلَى قِيَامِ السَّاعَةِ إِلَّا حَدَّثَ بِهِ حَفِظَهُ مَنْ حَفِظَهُ وَنَسِيَهُ مَنْ نَسِيَهُ ـ

-‘‘রাসূল (ﷺ) সে স্থানে কিয়ামত পর্যন্ত যা কিছু ঘটবে সব কিছুর খবর দিয়েছেন। কোন কিছুই বাদ দেননি। যারা মনে রাখার তারা মনে রেখেছেন, যারা ভুলে যাওয়ার ভুলে গেছেন।’’ ২৩৩

২৩৩.

ক. ইমাম মুসলিম : আস্ সহীহ্ : ২/৩৯০ পৃ. হাদিস নং : ২৮৯২ এবং ২৩

খ. খতিব তিবরিযি : মিশকাত শরীফ, পৃ-৪৬১, হাদিস নং : ৫৩৭৯

গ. বুখারী : আস সহীহ : ১১/৪৯৪ পৃ. হা/৬৬০৪

চতুর্থ হাদিস

❏ হযরত আবু যার গিফারী (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন,

وَعَنْ أَبِي ذَرٍّؓ قَالَ: لَقَدْ تَرَكْنَا رَسُولَ اللَّهِ - ﷺ - وَمَا يُحَرِّكُ طَائِرٌ جَنَاحَيْهِ فِي السَّمَاءِ إِلَّا ذَكَّرَنَا مِنْهُ عِلْمًا، رَوَاهُ أَحْمَدُ، ـ

-‘‘হুযূর (ﷺ) আমাদের নিকট থেকে এ অবস্থায় বিদায় নিয়েছেন যে, কোন পাখি তার ডানা হেলানোর যার বর্ণনাও তিনি আমাদের কাছে বাদ দেননি।’’ ২৩৪

২৩৪.

ক. ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল : আল মুসনাদ : ৫/১৫৩ পৃ. হা/২১৩৯৯

খ. ইমাম তাবরানী : মু‘জামুল কাবীর : ২/১৫৩ পৃ. হা/১৬৪৭

গ. ইমাম হাজার হায়সামী: মাজমাউয যাওয়াইদ: ৮/২৬৩ পৃ. হা/১৩৯৭১

ঘ. আল্লামা শায়খ ইউসুফ নাবহানী : হুজ্জাতুল্লাহি আলাল আলামীন : ৩৩৬ পৃ.

ঙ.কাজী আযাজ, শিফা শরীফ, ১/২০৭ পৃ.

চ.জুরকানী, শরহুল মাওয়াহেব, ৭/২০৬ পৃ.

ছ.আহমদ, আল-মুসনাদ, ৫/৩৮৫ পৃ.

ঝ.আবূ ই‘য়ালা, আল-মুসনাদ, ৯/৪৬ পৃ. হাদিস, ৫১০৯

ঞ.বায্যার, আল-মুসনাদ, ৯/৩৪১ পৃ. হাদিস, ৩৮৯

ট.ইবনুল বার, আল-ইস্তিআ‘ব, ৪/১৬৫৫ পৃ.

ঠ.সুয়ূতি, খাসায়েসুল কোবরা, ২/১৮৪ পৃ.

ড.ইমাম কাস্তাল্লানী, মাওয়াহেবে লাদুন্নীয়া, ৩/৯৫ পৃ.

৫ম হাদিস:

❏ এ বিষয়ে আরেকটি বর্ণনার হাদিস রয়েছে- হযরত আবু সাঈদ খুদরী (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন,

وَعَنْ أَبِي سَعِيدٍ الْخُدْرِيِّ ؓ قَالَ: قَامَ فِينَا رَسُولُ اللَّهِ ﷺ خَطِيبًا بَعْدَ الْعَصْرِ فَلَمْ يَدَعْ شَيْئًا يَكُونُ إِلَى قِيَامِ السَّاعَةِ إِلَّا ذَكَرَهُ حَفِظَهُ مَنْ حَفِظَهُ وَنَسِيَهُ مَنْ نَسِيَهُ

-‘‘রাসূল আসরের নামাযের পর দাঁড়ালেন আর খুতবা দিতে গিয়ে কিয়ামত পর্যন্ত যা কিছু সংঘটিত হবে তা তিনি বর্ণনা করেছেন যিনি এসব বিষয় স্মরণ রাখতে পেরেছেন তিনি তা স্মরণ রেখেছেন, আর যিনি স্মরণ রাখতে পারেননি তিনি ভুলে গেছেন।’’ ২৩৫

২৩৫.

(ক) তিরমিযী, আস্-সুনান, ৪/৫৩ পৃ. হা/২১৯১, তিরমিযী বলেন, সনদটি ‘হাসান’।  

(খ). খতিব তিবরীযি, মিশকাতুল মাসাবিহ্ : ৩/১৪২৩ পৃ. হা/৫১৪৫


এ বিষয়ে আরও অনেক সাহাবীর হাদিস রয়েছে, যার দ্বারা হাদিসটি মুতাওয়াতিরের নিকটবর্তী বলে বুঝা যায়।





Comments

Popular posts from this blog

বালাকোট আন্দোলনের হাকীকত

সৈয়দ আহমদ বেরলভীর জম্ম ও পরিচয়

মওদুদীর ভ্রান্ত আক্বিদা ও ইসলামী আক্বিদা