হাদীসে কুসতুনতুনিয়ার অপব্যাখ্যার জবাব

হাদীসে কুসতুনতুনিয়ার অপব্যাখ্যার জবাব

কৃতঃ মুহাম্মদ আখতারুজ্জামান

[নাহমাদুহু ওয়ানুসাল্লি ওয়ানুসাল্লিমু আলা হাবীবিহিল করীম ওয়ালা আলিহী ওয়া আসহাবিহী আজমায়ীন আম্মা বা’দ]

বর্তমান সময়ে প্রচলিত ফিতনা সমূহের মধ্যে একটি হল ইয়াযিদকে লা’নতি(অভিশপ্ত) না মেনে তাকে নিরাপরাধ এমনকি আল্লাহর নিকট মাকবুল এবং জান্নাতী ঘোষণা দিয়ে এর প্রচার করা। ইয়াযিদের ব্যাপারে নানা ঠুনকো বর্ণনা এবং কারবালা ও তার পরবর্তী ঘটনায় তার সরাসরি সম্পৃক্ত না থাকা দিয়ে তাকে নিষ্পাপ প্রমাণের এক নির্লজ্জ অপচেষ্টা চালানো হচ্ছে। এমনকি সহীহ আল বুখারীতে বর্ণিত একটি হাদীসকে তার শানে সম্পৃক্ত করে তার পক্ষে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে। যেখানে এই হাদিসের অনুসারেও ইয়াযিদ এর হুকুমের অংশ নয় এটাই আহলে ইলমের মত এবং এটাই সত্য। সত্যনিষ্ঠ ঐতিহাসিক বর্ণনার মাধ্যমেই ইয়াযিদ আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতের নিকট একজন পাপিষ্ঠ ও লাঞ্ছিত ব্যক্তি, তার উপর আল্লাহর লা’নত(অভিশম্পাত)। পরিতাপের বিষয়, নবীজাদা ইমাম হুসাইন রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুর শাহাদাত ও তাঁর পরবর্তীতে পবিত্র শহর মক্কা মদীনায় নৃশংস হামলার পরও এর হুকুমদাতা ইয়াযিদ কিভাবে নিরাপরাধ হয়। একজন মু’মিনের পক্ষে কিভাবে তা চিন্তা করা বা বলা সম্ভব?

হাদীসে কুসতুনতুনিয়া

حَدَّثَنِي إِسْحَاقُ بْنُ يَزِيدَ الدِّمَشْقِيُّ، حَدَّثَنَا يَحْيَى بْنُ حَمْزَةَ، قَالَ: حَدَّثَنِي ثَوْرُ بْنُ يَزِيدَ، عَنْ خَالِدِ بْنِ مَعْدَانَ، أَنَّ عُمَيْرَ بْنَ الأَسْوَدِ العَنْسِيَّ، حَدَّثَهُ – أَنَّهُ أَتَى عُبَادَةَ بْنَ الصَّامِتِ وَهُوَ نَازِلٌ فِي سَاحَةِ حِمْصَ وَهُوَ فِي بِنَاءٍ لَهُ، وَمَعَهُ أُمُّ حَرَامٍ – قَالَ: عُمَيْرٌ، فَحَدَّثَتْنَا أُمُّ حَرَامٍ: أَنَّهَا سَمِعَتِ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، يَقُولُ: أَوَّلُ جَيْشٍ مِنْ أُمَّتِي يَغْزُونَ البَحْرَ قَدْ أَوْجَبُوا، قَالَتْ أُمُّ حَرَامٍ: قُلْتُ: يَا رَسُولَ اللَّهِ أَنَا فِيهِمْ؟ قَالَ: أَنْتِ فِيهِمْ، ثُمَّ قَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: أَوَّلُ جَيْشٍ مِنْ أُمَّتِي يَغْزُونَ مَدِينَةَ قَيْصَرَ مَغْفُورٌ لَهُمْ، فَقُلْتُ: أَنَا فِيهِمْ يَا رَسُولَ اللَّهِ؟ قَالَ: لا

অর্থাৎ হযরত উমাইর ইবনে আসওয়াদ আনসী রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি উবাদা ইবনে সামিত রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুর কাছে আসলেন। তখন উবাদা রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু হিমস উপকূলে তার একটি ঘরে অবস্থান করছিলেন এবং তার সঙ্গে ছিলেন উম্মে হারাম রাদ্বিয়াল্লাহু আনহা। উমাইর রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু বলেন, উম্মে হারাম রাদ্বিয়াল্লাহু আনহা আমাদের কাছে বর্ণনা করেন, তিনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে ইরশাদ করতে শুনেছেন যে, আমার উম্মতের মধ্যে প্রথম যে দলটি নৌ যুদ্ধে অংশগ্রহণ করবে তাদের জন্য জান্নাত অনিবার্য। উম্মে হারাম রাদ্বিয়াল্লাহু আনহা আরজ করলেন, আমি কি তাদের মধ্যে হব? হুযুর পুরনূর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করলেন, তুমি তাদের মধ্যে হবে। উম্মে হারাম রাদ্বিয়াল্লাহু আনহা বলেন, তারপর নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করলেন, আমার উম্মতের প্রথম যে দলটি কায়সার [রোমক সম্রাট] এর রাজধানী [কুসতুনতুনিয়া তথা কনস্টানটিনোপোল] আক্রমণ করবে তারা ক্ষমাপ্রাপ্ত। তারপর আমি [উম্মে হারাম] বললাম ইয়া রাসূলাল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমি কি তাদের মধ্যে হব? নবী পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করলেন, না।

১. সহীহ আল বুখারী, কিতাবুল জিহাদ, ৪:৪২ হাদীস নং- ২৯২৪/২৭৬৬ , ৫ম খণ্ড ১৮৩ পৃষ্ঠা হাদীস-২৭২৩ [ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ], তাবরানী আল মু’জামুল কবীর ২৫:১৩৩ হাদীস-৩২৩ মাকতাবা ইবনে তাইয়্যিমাহ কায়রো।

ইয়াযিদ প্রেমীদের বক্তব্য হল- কুসতুনতুনিয়ায় আক্রমণকারী প্রথম সৈন্যবাহিনীকে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কর্তৃক ক্ষমা ঘোষণা করা হয়েছে। আর ইয়াযিদ এ বাহিনীতে ছিল এতে করে সে ক্ষমাপ্রাপ্ত।

কিন্তু এরূপ দাবী নিয়ে আগ্রাসনকারী ব্যক্তিরা এই হাদীসের বক্তব্যটুকু ভালভাবে পড়ে নেয়া জরুরী মনে করেননি বোধহয়। নইলে তারা ইয়াযিদকে ক্ষমাপ্রাপ্ত হিসেবে দাবী করে কিভাবে। হাদিস শরীফের বক্তব্য অনুসারে কায়সারের শহর বা কুসতুনতুনিয়ায় হামলাকারী প্রথম বাহিনীকে ক্ষমা ঘোষণা করা হয়েছে; এমন বলা হয়নি যে, এ জিহাদে অংশ নেয়া সকলেই ক্ষমাপ্রাপ্ত। এমন কথা কোথাও বর্ণিত আছে কি? এ সম্পর্কিত দলীলগুলো নিম্নে উপস্থাপন করা হল।

কায়সারের শহর

আল্লামা ইবনে হাজর আসকালানী রাহমাতুল্লাহি আলাইহ তার বুখারী শরীফের ব্যাখ্যাগ্রন্থে উল্লেখ করেন-

وَجَوَّزَ بَعْضُهُمْ أَنَّ الْمُرَادَ بِمَدِينَةِ قَيْصَرَ الْمَدِينَةُ الَّتِي كَانَ بِهَا يَوْمَ قَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ تِلْكَ الْمَقَالَةَ وَهِيَ حِمْصُ وَكَانَتْ دَارَ مَمْلَكَتِهِ إِذْ ذَاكَ

অর্থাৎ কোন কোন উলামার মতে কায়সারের শহর দ্বারা ঐ শহরকে বুঝানো হয়েছে, যা হুযুর করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সময়ে কায়সারের অধীনে ছিল আর তা ছিল হিম্‌স বা হাম্‌স আর ঐ সময়ে সেখানেই কায়সারের শাসনকার্য চলত। [২]

২. আসকালানী ফাতহুল বারী শরহে সহীহ বুখারী ৬:১০৩ দারুল মা’রেফাহ বৈরুত।

এ বিষয়ক কোন হাদীসেই কুসতুনতুনিয়া শব্দের উল্লেখ হয়নি বরং উল্লেখ হয়েছে কায়সারের শহর এর। আর কায়সার রোমের বাদশাহর উপাধি। সে যেখানে অবস্থান করত সেটাকেই মদীনায় কায়সার বলা হত। আর এ মর্মে হাম্‌স ছিল সে শহর যেখানে প্রথম বাহিনী প্রেরণ হয় ১৫ হিজরীতে হযরত উমর ফারুক রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুর শাসনামলে। যেখানে বহু শীর্ষস্থানীয় সাহাবা কেরাম অংশ নেন। আল্লামা ইবনে আসীর উল্লেখ করেন –

فَلَمَّا فَرَغَ أَبُو عُبَيْدَةَ مِنْ دِمَشْقَ سَارَ إِلَى حِمْصَ، فَسَلَكَ طَرِيقَ بَعْلَبَكَّ

অর্থাৎ হযরত আবু উবাইদাহ রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু দামেশক হতে বের বা’লাবাক্ক শহরের রাস্তা হয়ে হিমসের দিকে রওনা হলেন। [৩]

৩. ইবনে আসীর তারিখে কামিল ২:৩২২ দারুল কিতাবিল আরাবী বৈরুত।

আল্লামা হাফেজ ইবনে কাসীর বর্ণনা করেন –

لَمَّا وَصَلَ أَبُو عُبَيْدَةَ فِي اتِّبَاعِهِ الرُّومَ الْمُنْهَزِمِينَ إِلَى حِمْصَ، نَزَلَ حَوْلَهَا يُحَاصِرُهَا، وَلَحِقَهُ خَالِدُ بْنُ الْوَلِيدِ فَحَاصَرُوهَا حِصَارًا شَدِيدًا، وَذَلِكَ فِي زَمَنِ الْبَرْدِ الشَّدِيدِ

অর্থাৎ ১৫ হিজরী সনে হযরত উমর ফারূক রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু হযরত আবু উবাইদাহ রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুর নেতৃত্বে একটি বাহিনী প্রেরণ করেন, তারা রোম বিজয় করে হিম্‌সের দিকে এগিয়ে যায়, পরবর্তীতে হযরত খালিদ বিন ওয়ালিদ রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু তাতে যোগ দেন। মুসলমানরা সেখানে অবস্থান নেন এবং অবরোধ করেন। সে সময় সেখানে প্রচন্ড শীত পড়ে এবং এ অবস্থায় মুসলমানরা কঠিন ধৈর্যের পরিচয় দেন। তারা হিমস জয় করেন। [৪]

৪. ইবনে কাসীর আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া,৮:২৪৮ দারু ইহয়ায়ুত তুরাসুল আরাবী বৈরুত, ৭:৫২ দারুল ফিকর বৈরুত।

এই ঘটনা তখনের যখন পাপিষ্ঠ ইয়াযিদের জন্মই হয়নি। ইয়াযিদের জন্ম প্রসঙ্গে ইতিহাসভিত্তিক বর্ণনা –

হাফেজ ইবনে কাসীরের মতে-

وُلِدَ سَنَةَ خَمْسٍ أَوْ سِتٍّ أَوْ سَبْعٍ وَعِشْرِينَ

অর্থাৎ ইয়াযিদ বিন মুয়াবিয়ার জন্ম ২৫/২৬/২৭ হিজরী সনে। [৫]

৫. ইবনে কাসীর আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া,৮:২৪৮ দারু ইহয়ায়ুত তুরাসুল আরাবী বৈরুত, ৮:২২৬ দারুল ফিকর বৈরুত।

ইমাম জালাল উদ্দীন সুয়ূতীর মতে-

২৫/২৬ হিজরীতে , ইবনে হাজর আসকালানীর মতে উসমান রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুর শাসনামলে, ইবনে আসীরের মতে ২৬ হিজরীতে। [৬]

৬. সুয়ূতী তারিখুল খুলাফা ১৫৬ পৃঃ (ইয়াযিদ বিন মুয়াবিয়া অধ্যায়), ইবনে আসীর তারিখে কামিল ২:৪৬০ দারুল কিতাবিল আরাবী বৈরুত, তাহযীবুত তাহযীব ১১:৩৬০।

কুসতুনতুনিয়ায় ১ম হামলা

এ বর্ণনা দ্বারা উদ্দেশ্য কুসতুনতুনিয়া হলেও সে বাহিনীতে ইয়াযিদ ছিলনা। সুতরাং সে ক্ষমার সংবাদ প্রাপ্তদের অন্তর্ভুক্ত নয়।

আল্লামা হাফেজ ইবনে কাসীরের বর্ণনানুসারে –

وَفِيهَا غَزَا مُعَاوِيَةُ بِلَادَ الرُّومِ حَتَّى بَلَغَ الْمَضِيقَ مَضِيقَ الْقُسْطَنْطِينِيَّةِ وَمَعَهُ زَوْجَتُهُ عَاتِكَةُ

অর্থাৎ ৩২ হিজরী সনে হযরত আমীরে মুয়াবিয়া রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু রোমে আক্রমণ করেন এবং একের পর এক স্থান অতিক্রম করেন এমনকি তার নেতৃত্বাধীন মুসলিম বাহিনী কুসতুনতুনিয়া পর্যন্ত পৌছে যায়। তার সাথে তার স্ত্রী আতিকাহও ছিলেন। [৭]

৭. ইবনে কাসীর আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া, ৭:১৭৯ দারু ইহয়ায়ুত তুরাসুল আরাবী বৈরুত, ৭:১৫৯ দারুল ফিকর বৈরুত।

আল্লামা ইবনে আসীর বর্ণনা করেন –

قِيلَ: فِي هَذِهِ السَّنَةِ غَزَا مُعَاوِيَةُ بْنُ أَبِي سُفْيَانَ مَضِيقَ الْقُسْطَنْطِينِيَّةِ وَمَعَهُ زَوْجَتُهُ عَاتِكَةُ بِنْتُ قَرَظَةَ

অর্থাৎ বর্ণিত আছে, এ বছরই হযরত আমীর মু’আবিয়া রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু কুসতুনতুনিয়া পর্যন্ত আক্রমণ করেন এবং তার সাথে তার স্ত্রী আতিকাহ বিন্তে কারযাহ ছিল। [৮]

৮. ইবনে আসীর তারিখে কামিল ২:৫০৩ দারুল কিতাবিল আরাবী বৈরুত।

আল্লামা তাবারীর তারিখেও ৩২ হিজরীর ঘটনায় অনুরূপ উল্লেখ হয়।

এটা ছিল কুসতুনতুনিয়ায় প্রথম হামলার বর্ণনা, যা ৩২ হিজরী সনে হয়েছিল। আর ইয়াযিদের জন্ম ২৫ বা ২৬ হিজরী সনে হয়েছিল। আর এ বর্ণনায় আমীর মু’আবিয়া রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুর সাথে তার স্ত্রী ছিলেন আর কারো কথা উল্লেখ হয়নি।

কুসতুনতুনিয়ায় ২য় হামলাঃ

কুসতুনতুনিয়ায় দ্বিতীয়বার অভিযান ৪৩ হিজরী সনে হয়। হাফেজ ইবনে কাসীরের বর্ণনা-

فِيهَا غَزَا بُسْرُ بْنُ أَبِي أَرْطَاةَ بِلَادَ الرُّومِ فَوَغَلَ فِيهَا حَتَّى بَلَغَ مَدِينَةَ قُسْطَنْطِينِيَّةَ

অর্থাৎ এ বছর অর্থাৎ ৪৩ হিজরীতে বসর বিন আবী আরতাহ রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুর নেতৃত্বে অভিযান পরিচালিত হয় আর তা রোম ছড়িয়ে কুসতুনতুনিয়া পর্যন্ত পৌছে যায়। [৯]

৯. ইবনে কাসীর আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া, ৮:২৭ দারু ইহয়ায়ুত তুরাসুল আরাবী বৈরুত, ৮:২৪ দারুল ফিকর বৈরুত।

তারিখে ইবনে খালদুনে উল্লেখ হয়-

ثم دخل بسر بن أرطاة أرضهم سنة ثلاث وأربعين ومشى بها وبلغ القسطنطينيّة

অর্থাৎ অতঃপর হযরত বসর বিন আরতাহ রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুর নেতৃত্বে মুসলিম বাহিনী রোমে প্রবেশ করে এবং পরবর্তীতে তারা কুসতুনতুনিয়া পর্যন্ত পৌছে যায়। [১০]

১০. তারিখে ইবনে খালদুন ৩:১১ দারুল ফিকর বৈরুত।

ইবনে জারীর তাবারীর তারিখে ৪৩ হিজরীর বর্ণনায় এর উল্লেখ হয়।

কুসতুনতুনিয়ায় ৩য় হামলাঃ

কুসতুনতুনিয়ায় ৩য় অভিযান ৪৪ অথবা ৪৬ হিজরী সনে পরিচালিত হয়। তারিখে কামিলে ৪৪ হিজরীর বর্ণনায় উল্লেখ হয়-

فِي هَذِهِ السَّنَةِ دَخَلَ الْمُسْلِمُونَ مَعَ عَبْدِ الرَّحْمَنِ بْنِ خَالِدِ بْنِ الْوَلِيدِ بِلَادَ الرُّومِ وَشَتَوْا بِهَا، وَغَزَا بُسْرُ بْنُ أَبِي أَرْطَأَةَ فِي الْبَحْرِ

অর্থাৎ এ বছর অর্থাৎ ৪৪ হিজরীতে মুসলিম বাহিনী হযরত আব্দুর রহমান বিন খালিদ বিন ওয়ালিদ রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুর নেতৃত্বে রোমে জিহাদ পরিচালনা করে আর শীতকালীন সময়ে সেখানে অবস্থান করেন। আর হযরত বসর বিন আবী আরতাহ রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু সমুদ্রপথে সেখানে আক্রমণ পরিচালনা করেন। [১১]

১১. ইবনে আসীর তারিখে কামিল ৩:৩৮ দারুল কিতাবিল আরাবী বৈরুত।

হাফেজ ইবনে কাসীরের আল বিদায়া ওয়ান নিহায়াতেও অনুরূপ বর্ণনা পাওয়া যায়।

তারিখে কামিলে ৪৬ হিজরীর বর্ণনায় উল্লেখ হয়-

فِي هَذِهِ السَّنَةِ كَانَ مَشْتَى مَالِكِ بْنِ عَبْدِ اللَّهِ بِأَرْضِ الرُّومِ، وَقِيلَ: بَلْ كَانَ ذَلِكَ عَبْدُ الرَّحْمَنِ بْنُ خَالِدِ بْنِ الْوَلِيدِ، وَقِيلَ: بَلْ كَانَ مَالِكُ بْنُ هُبَيْرَةَ

অর্থাৎ এ বছর অর্থাৎ ৪৬ হিজরীতে হযরত মালিক বিন আব্দুল্লাহ রোমে অবস্থান করেন, আর বলা হয় যে, আব্দুর রহমান বিন খালিদ বিন ওয়ালিদ রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু সেখানে ছিলেন। আবার বলা হয়ে থাকে মালিক বিন হুবাইরাহ রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু ছিলেন। [১২]

১২. ইবনে আসীর তারিখে কামিল ৩:৫১ দারুল কিতাবিল আরাবী বৈরুত।

হাফিজ ইবনে কাসীরের বর্ননাতেও অনুরূপ উল্লেখ হয়।

হযরত আব্দুর রহমান বিন খালিদ বিন ওয়ালিদ রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুর নেতৃত্ব দানের কথা কেবল ইতিহাসের কিতাবেই নয়, হাদীসের কিতাবেও তা উল্লেখ হয়েছে। আর তা সিহাহ সিত্তাহর কিতাব সুনানে আবী দাউদে-

عَنْ أَسْلَمَ أَبِي عِمْرَانَ قَالَ : غَزَوْنَا مِنَ الْمَدِينَةِ نُرِيدُ الْقُسْطَنْطِينِيَّةَ، وَعَلَى الْجَمَاعَةِ عَبْدُ الرَّحْمَنِ بْنُ خَالِدِ بْنِ الْوَلِيدِ، وَالرُّومُ مُلْصِقُو ظُهُورِهِمْ بِحَائِطِ الْمَدِينَةِ، فَحَمَلَ رَجُلٌ عَلَى الْعَدُوِّ، فَقَالَ النَّاسُ: مَهْ مَهْ لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ، يُلْقِي بِيَدَيْهِ إِلَى التَّهْلُكَةِ، فَقَالَ أَبُو أَيُّوبَ: ” إِنَّمَا نَزَلَتْ هَذِهِ الْآيَةُ فِينَا مَعْشَرَ الْأَنْصَارِ لَمَّا نَصَرَ اللَّهُ نَبِيَّهُ، وَأَظْهَرَ الْإِسْلَامَ قُلْنَا: هَلُمَّ نُقِيمُ فِي أَمْوَالِنَا وَنُصْلِحُهَا “، فَأَنْزَلَ اللَّهُ تَعَالَى: {وَأَنْفِقُوا فِي سَبِيلِ اللَّهِ وَلَا تُلْقُوا بِأَيْدِيكُمْ إِلَى التَّهْلُكَةِ} فَالْإِلْقَاءُ بِالْأَيْدِي إِلَى التَّهْلُكَةِ أَنْ نُقِيمَ فِي أَمْوَالِنَا وَنُصْلِحَهَا وَنَدَعَ الْجِهَادَ “، قَالَ أَبُو عِمْرَانَ: فَلَمْ يَزَلْ أَبُو أَيُّوبَ يُجَاهِدُ فِي سَبِيلِ اللَّهِ حَتَّى دُفِنَ بِالْقُسْطَنْطِينِيَّةِ

অর্থাৎ আসলাম আবূ ইমরান রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমরা মদীনা মুনাওয়ারাহ হতে কুসতুনতুনিয়া ( ইস্তাস্বুল) অভিমুখে যুদ্ধ যাত্রা করলাম। আমাদের সেনাপতি ছিলেন খালিদ ইবন ওয়ালীদের পুত্র আবদুর রহমান রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু। রোমের সৈন্যদল ইস্তাম্বুল শহরের দেওয়ালে পিঠ লাগিয়ে যুদ্ধের জন্য দন্ডায়মান ছিল। এমতাবস্থায় এক ব্যক্তি শত্রু- সৈন্যের উপর আক্রমণ করে বসল। তখন আমাদের লোকজন বলে উঠল : থাম, থাম, লা ইলাহা ইল্লাহ্, সে তো নিজেই ধ্বংসের দিকে নিজেকে ঠেলে দিচ্ছে। তখন আবূ আইয়ূব আনসারী রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু বলেন, ( অনুচ্ছেদে বর্ণিত) এ আয়াত আমাদের আনসার সম্প্রদায় সম্পর্কে অবতীর্ণ হয়েছিল। যখন আল্লাহর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে আল্লাহ সাহায্য করলেন এবং ইসলামকে জয়যুক্ত করলেন, তখন আমরা বলেছিলাম, আমরা যুদ্ধে না গিয়ে ঘরে থেকে আমাদের সহায় – সম্পদ দেখাশুনা করব এবং এর সংস্কার সাধন করব। তখন আল্লাহ্ এ আয়াত নাযিল করেনঃ ‘‘ আর তোমরা আল্লাহ রাস্তায় ব্যয় কর এবং নিজেদেরকে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দিও না।’’ আমাদের ঘরে থেকে মালামালে রক্ষণাবেক্ষণ করা ও যুদ্ধে না যাওয়াই হল নিজেকে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দেয়া। আবূ ইমরান রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু বলেন , এ কারণেই আবূ আইয়ূব আনসারী রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু আ্ল্লাহর রাস্তায় সর্বদা জিহাদে লিপ্ত থাকতেন। শেষ পর্যন্ত তিনি যুদ্ধ করতে করতে শহীদ হয়ে কুসতুনতুনিয়ায় সমাহিত হলেন। [১৩]

১৩. সুনানে আবু দাউদ, কিতাবুল জিহাদ হাদীস নং-২৫১২, হাকেম আল মুস্তাদরিকু আলাস সাহিহাইন, কিতাবুল জিহাদ, হাদীস-২৪৩৪।

তারিখে কামিলে ৪৬ হিজরীর বর্ণনা অনুসারে হযরত আব্দুর রহমান বিন খালিদ বিন ওয়ালিদ রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু ৪৬ হিজরীতে হিমসে ওফাত লাভ করেন। বিদায়া নিহায়াতেও একই কথা উল্লেখ হয়।

৪৭ হিজরী সনে মালিক বিন হুবাইরা রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুর নেতৃত্বে রোম অঞ্চলে অভিযান পরিচালিত হয়। এ বর্ণনাও তারিখে কামিল ও বিদায়া নিহায়াতে উল্লেখ হয়।

উপরোক্ত আলোচনা হতে এ কথা স্পষ্ট হয় যে, কুসতুনতুনিয়াতে প্রথম দিকে যে জিহাদ পরিচালিত হয় তাতে ইয়াযিদের অংশগ্রহণ ছিল না। তাহলে হাদীসের বক্তব্য অনুসারে সে কিভাবে ক্ষমাপ্রাপ্তদের দলে অন্তর্ভুক্ত হয়?

কুসতুনতুনিয়ার জিহাদে ইয়াযিদের অন্তর্ভুক্তিঃ

কুসতুনতুনিয়ায় ইয়াযিদের অন্তর্ভুক্তির সাল নিয়ে নানা বর্ণনা উল্লেখ হয়, হাফেজ ইবনে কাসীর বলেন-

فِيهَا غَزَا يَزِيدُ بْنُ مُعَاوِيَةَ بِلَادَ الرُّومِ حتى بلغ قسطنطينية

অর্থাৎ এ বছর ইয়াযিদ বিন মু’আবিয়া রোমে আক্রমণ করে এবং এ বাহিনী কুসতুনতুনিয়া পর্যন্ত পৌছে যায়।[১৪]

১৪. ইবনে কাসীর আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া, ৮:৩৬ দারু ইহয়ায়ুত তুরাসুল আরাবী বৈরুত, ৮:৩২ দারুল ফিকর বৈরুত।

তারিখে তাবারীতেও ইবনে জারীর তাবারী একই বর্ণনা উল্লেখ করেন।

আল্লামা বদরুদ্দীন আইনী রাহমাতুল্লাহি আলাইহি তাঁর বুখারী শরীফের ব্যাখ্যাগ্রন্থ উমদাতুল কারীতে উল্লেখ করেন –

أَن يزِيد بن مُعَاوِيَة غزا القسنطينية فِي سنة اثْنَتَيْنِ وَخمسين

অর্থাৎ ইয়াযিদ বিন মুয়াবিয়া কুসতুনতুনিয়ায় অভিযানে ৫২ হিজরী সনে অংশ নেন। আল্লামা ইবনে হাজর আসকালানীও ফাতহুল বারীতে একই বর্ণনা দেন।

বর্ণিত হয়, এ সময়ে বহু সাহাবী তাতে অংশ নেন। হযরত আবু আইয়ুব আনসারী রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুর শাহাদত ও দাফন এখানেই হয়। এরূপ বর্ণনা বুখারী শরীফের হাদীস হতেও পাওয়া যায়। কিন্তু তা হতে ইয়াযিদের ক্ষমাপ্রাপ্তির অন্তর্ভুক্তি হয় না। কেননা সুনানে আবু দাউদের বর্ণনা অনুসারে কুসতুনতুনিয়ায় হামলা আব্দুর রহমান বিন খালিদ বিন ওয়ালিদের নেতৃত্বে হয়। এছাড়াও তারিখের(ইতিহাসের) কিতাবসমূহে হযরত আমীরে মুয়াবিয়া রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুর বাহিনীকে ৩২ হিজরীতে কুসতুনতুনিয়ায় অভিযানের কথা উল্লেখ হয়। আবার অন্য বর্ণনায় বসর বিন আবী আরতাহ রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুর বাহিনী ৪৩ হিজরীতে অভিযানের কথা উল্লেখ হয়। প্রথম বাহিনীতে ইয়াযিদ ছিল কই? ইয়াযিদ কুসতুনতুনিয়ায় হামলাকারী বাহিনীতে ছিল কিন্তু প্রথম আক্রমণকারী বাহিনীতে নয় আর সেটা স্পষ্ট উল্লেখিত দলীলসমূহ হতে।

ইয়াযিদ কুসতুনতুনিয়ায় আক্রমণকারী বাহিনীতে ছিল; কিন্তু তা জিহাদের উদ্দেশ্যে নয়, বরং তাকে তো সেখানে শাস্তিস্বরূপ পাঠানো হয়েছিল। আল্লামা ইবনে আসীর বর্ণনা করেন –

فِي هَذِهِ السَّنَةِ، وَقِيلَ:سَنَةَ خَمْسِينَ، سَيَّرَ مُعَاوِيَةُ جَيْشًا كَثِيفًا إِلَى بِلَادِ الرُّومِ لِلْغَزَاةِ وَجَعَلَ عَلَيْهِمْ سُفْيَانَ بْنَ عَوْفٍ وَأَمَرَ ابْنَهُ يَزِيدَ بِالْغَزَاةِ مَعَهُمْ، فَتَثَاقَلَ وَاعْتَلَّ، فَأَمْسَكَ عَنْهُ أَبُوهُ، فَأَصَابَ النَّاسُ فِي غَزَاتِهِمْ جُوعٌ وَمَرَضٌ شَدِيدٌ، فَأَنْشَأَ يَزِيدُ يَقُولُ: مَا إِنْ أُبَالِي بِمَا لَاقَتْ جُمُوعُهُمُ … بِالْغَزْقَذُونَةِ مِنْ حُمَّى وَمِنْ مُومِ

إذا اتكأت على الأنماط مرتفقاً … بدير سمعان عندي أم كلثوموَأُمُّ كُلْثُومٍ امْرَأَتُهُ، وَهِيَ ابْنَةُ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ عَامِرٍ.فَبَلَغَ مُعَاوِيَةَ شِعْرُهُ فَأَقْسَمَ عَلَيْهِ لَيَلْحَقَنَّ بِسُفْيَانَ إِلَى أَرْضِ الرُّومِ لِيُصِيبَهُ مَا أَصَابَ النَّاسَ، فَسَارَ وَمَعَهُ جَمْعٌ كَثِيرٌ أَضَافَهُمْ إِلَيْهِ أَبُوهُ

অর্থাৎ এই বছর, অর্থাৎ, ৪৯ বা ৫০ হিজরী সালে হযরত আমীরে মু’আবিয়া রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু রোমের উদ্দেশ্যে এক বিশাল বাহিনী প্রেরণ করেন। তিনি এর দায়িত্বভার অর্পণ করেন সুফিয়ান বিন আউফ রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুর প্রতি এবং তাঁর ছেলে ইয়াযিদকে ওই বাহিনীর সাথে যেতে নির্দেশ দেন। কিন্তু ইয়াযিদ অসুস্থ হওয়ার ভান করে এবং যেতে অস্বীকৃতি জানায়। এ অভিযানে মুসলিম যোদ্ধারা ক্ষুধা ও রোগ-ব্যাধিগ্রস্ত এবং নানা কঠিন পরিস্থিতির শিকার হন। ইয়াযিদের কাছে যখন এ খবর আসে, তখন সে ব্যঙ্গ করে কবিতায় বলে, ‘ফারকুদওয়ানা-এ মহা গযবে তারা পতিত হয়েছে; তাদের জ্বর বা অন্য যা-ই কিছু হোক, তাতে আমার যায় আসে না। কেননা, আমি বসে আছি উচ্চ ফরাশে (ম্যাট্রেস), আর আমার বাহুবন্ধনে আছে উম্মে কুলসুম।’ উম্মে কুলসুম ছিলেন ইয়াযিদের স্ত্রীদের একজন আব্দুল্লাহ বিন আমের রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুর কন্যা। হযরত আমীরে মু’আবিয়া রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু যখন এই কবিতার শ্লোক সম্পর্কে জানতে পারেন, তখন তিনি এয়াযীদকে শপথ গ্রহণ করতে ও কনস্টানটিনোপোলে সুফিয়ান ইবনে আউফ রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুর সাথে যোগ দিতে বাধ্য করেন, যাতে করে ’সেও ইসলামের মুজাহিদদের মোকাবেলাকৃত কঠিন পরীক্ষার অংশীদার হতে পারে’ (এটি ইয়াযিদের প্রতি শাস্তি ছিল)। এমতাবস্থায় ইয়াযিদ অসহায় হয়ে পড়ে এবং তাকে যুদ্ধে যেতে হয়; আর হযরত আমীরে মু’আবিয়া রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু তার সাথে আরেকটি বাহিনী প্রেরণ করেন। [১৫]

১৫. ইবনে আসীর তারিখে কামিল ৩:৫৬,৫৭ দারুল কিতাবিল আরাবী বৈরুত।

এ ঘটনা ইবনে খালদুনের তারিখেও উল্লেখ হয়। [১৬]

১৬. তারিখে ইবনে খালদুন ৩:১২ দারুল ফিকর বৈরুত।

এ থেকেই বুঝা যায় ইয়াযিদের মুসলিম বাহিনীতে অন্তর্ভূক্তি কিভাবে হয়েছে। সে মুসলিম সৈন্যদের নিয়ে বিদ্রুপ করার দরুন শাস্তিস্বরূপ সেখানে প্রেরিত হয়।

আল্লামা বদরুদ্দীন আইনী রাহমাতুল্লাহি আলাইহি তাঁর উমদাতুল কারীতে উল্লেখ করেন-

الْأَظْهر أَن هَؤُلَاءِ السادات من الصَّحَابَة كَانُوا مَعَ سُفْيَان هَذَا وَلم يَكُونُوا مَعَ يزِيد بن مُعَاوِيَة، لِأَنَّهُ لم يكن أَهلا أَن يكون هَؤُلَاءِ السادات فِي خدمته

অর্থাৎ অসংখ্য সাহাবী রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুম হযরত সুফিয়ান ইবনে আউফ রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুর অধীনে যুদ্ধে গিয়েছিলেন এবং ‘ইয়াযিদ ইবনে মুয়াবিয়ার নেতৃত্বে যান নি, কেননা সে তাঁদেরকে নেতৃত্বদানে অযোগ্য ছিল ‘। [১৭]

১৭. উমদাতুল ক্বারী শরহে সহীহ বুখারী, বাবু মা ক্বীলা ফি ক্বিতালির রূম, ১৪:১৯৮,১৯৯ দারু ইহয়ায়ুত তুরাসুল আরাবী বৈরুত।

এরপরেও ইয়াযিদ প্রেমীরা তাকে ক্ষমাপ্রাপ্ত বা জান্নাতী দাবী কিভাবে করতে পারে, যেখানে কায়সারের শহর বা কুসতুনতুনিয়ায় আক্রমণকারী প্রথম বাহিনীতে সে ছিলই না। হাদীসে প্রথম বাহিনীর কথা বলা হয়েছিল, সেখানে যারা জিহাদ করবে সকলের কথা বলা হয়নি। এরপরও মেনে নেয়া হল সে ছিল, এর দ্বারা তার পরবর্তী গুনাহের কাজ, অনুমোদন ইত্যাদি যে মাফ হবে তা কিভাবে হয়। হাদীস শরীফে বহু জায়গায় ক্ষমার কথা উল্লেখ আছে এমনকি ”লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ” বলার কারণে জান্নাতী হবার ঘোষণাও আছে। এর মানে এ নয় যে, এতে করে সব হিসেব নিকেশ মাফ হয়ে যাবে, এমন হলে তো আমলের প্রয়োজনই ছিল না। ক্ষমা তারই হবে যে এর উপযুক্ত থাকবে। আল্লামা বদরুদ্দীন আইনী বলেন-

فَإِن قلت: قَالَ، صلى الله عَلَيْهِ وَسلم، فِي حق هَذَا الْجَيْش: مغْفُور لَهُم. قلت: لَا يلْزم، من دُخُوله فِي ذَلِك الْعُمُوم أَن لَا يخرج بِدَلِيل خَاص، إِذْ لَا يخْتَلف أهل الْعلم أَن قَوْله، صلى الله عَلَيْهِ وَسلم: مغْفُور لَهُم، مَشْرُوط بِأَن يَكُونُوا من أهل الْمَغْفِرَة حَتَّى لَو ارْتَدَّ وَاحِد مِمَّن غَزَاهَا بعد ذَلِك لم يدْخل فِي ذَلِك الْعُمُوم، فَدلَّ على أَن المُرَاد مغْفُور لمن وجد شَرط الْمَغْفِرَة فِيهِ مِنْهُم

অর্থাৎ যদিও ইয়াযিদ এই বাহিনীর অন্তর্ভুক্ত হয়, তবুও সে এই সুসংবাদের হুকুম হতে বের হয়ে যায় তার পরবর্তী কৃতকর্মের কারণে। এ জন্যে যে, উলামা কেরামের এই মাসয়ালায় ঐকমত্য আছে যে হুযুর নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের এই ঘোষণা ‘ তাদের ক্ষমা করে দেয়া হবে’ কাজে দিবে এই শর্তে যে এর পরবর্তীতেও তারা এর উপযুক্ত থাকবে। পরে যদি কেউ ইসলাম হতে বের হয়ে যায়, ফাসিক, মুরতাদ হয়ে যায় তবে তার অন্তর্ভুক্তি হবে না। সুতরাং এ যুদ্ধে অংশ নেয়া লোকেরা ক্ষমা পাবে তখনই যখন এর উপযুক্ততা তদের মধ্যে উপস্থিত পাওয়া যাবে। [১৮]

১৮. উমদাতুল ক্বারী শরহে সহীহ বুখারী, বাবু মা ক্বীলা ফি ক্বিতালির রূম, ১৪:১৯৯।

উলামায়ে আহলে সুন্নাতের মতে ইয়াযিদ একজন পাপিষ্ঠ ও অভিশপ্ত ব্যক্তি। এতে কোন প্রকার সংশয় রাখা যাবে না। আর যে ব্যক্তির নির্দেশে আহলে বায়তের উপর নির্মমভাবে হামলা হয়, শহীদ করা হয় তাদের। শহীদ হন হযরত ইমাম হুসাইন রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু। অপদস্থ হন আহলে বায়তের পবিত্র নারীগণ, হামলা হয় পবিত্র দুই শহর মক্কা ও মদীনা শরীফে, শহীদ করা হয় সাহাবা ও তাবেয়ী রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুমদের, পবিত্রতা নষ্ট করা হয় মক্কা-মদীনা শরীফের, মসজিদে নববীর পবিত্রতা নষ্ট করা হয়, আজান বন্ধ করা হয়, কাবা ঘরের গিলাফ পোড়ানো হয়। এমনকি ইয়াযিদের মৃত্যুও হয় যখন মক্কা মুকাররামায় আগুন জ্বলছিল আর আর তার পাশে ছিল মদের পেয়ালা। একজন বিবেকবান মাত্রই বলতে ও বুঝতে সক্ষম যে, এ প্রকার ব্যক্তি ক্ষমাপ্রাপ্ত হয় কিভাবে। অথচ যে বাহিনীতে তার অন্তর্ভুক্তি নিয়ে তাকে বর্তমানে জান্নাতী বানানোর ঘৃণ্য পায়াতারা চালানো হচ্ছে, সে বাহিনীকে নিয়েই সে বিদ্রুপ করেছিল, আর তারই শাস্তি স্বরূপ সে সেখানে যেতে বাধ্য হয়। আল্লাহ আমাদের এসকল ফিতনা হতে হিফাজত করুন এবং তাঁর প্রিয় হাবীব, তাঁর আসহাব ও আহলে বাইতের পথে অটল রাখুন। আমিন, বিহুরমাতি সায়্যিদিল মুরসালীন।

হাদিসে কুসতুনতুনিয়ার অপব্যাখ্যার জবাব

বর্তমানে কিছু ইয়েজিদ প্রেমি মোল্লার আবির্ভাব হয়েছে! তারা কুখ্যাত ইয়েজিদকে জান্নাতী প্রমান করার জন্যে উঠে পড়ে লেগেছে! তারা ইয়েজিদকে জান্নাতী প্রমাণের জন্য নিচের হাদিসটি বলেন!

❏ উমাইর ইবনে আসওয়াত আনসী (رضي الله عنه) বর্নিত! তিনি মহানবী (ﷺ)-কে বলতে শুনেছেন, ‘নৌযুদ্ধে অংশগ্রহণকারী আমার উম্মতের প্রথম দলটি বেহেশতী হবে।’ মহানবী (ﷺ) এর পর বলেন, ‘আমার উম্মতের মধ্যে প্রথম বাহিনী যারা (রোমক) সিজারের শহর (কুসতুনতুনিয়া তথা কনস্টানটিনোপোল/ ইস্তাম্বুল) হামলা করবে, তাদের গুনাহ মাফ করা হবে’।” [সহীহ বুখারী,, হাদীস – ২৯২৪]

☞ উপরের হাদিসে যারা কুস্তুনতুনিয়ায় প্রথম হামলা করবে, তাদের গুণাহ মাফ করার কথা বলা হয়েছে!!

মাহমূদ (رضي الله عنه) বলেন, এক যুদ্ধ চলাকালীন সময়ে একদল লোকের নিকট বর্ণনা করলাম তাঁদের মধ্যে রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সহাবী আবূ আইয়ুব (আনসারী) (رضي الله عنه) ছিলেন। তিনি সে যুদ্ধে ওফাত পেয়েছিলেন। আর ইয়াযীদ ইবনু মু‘আবিয়া রোমানদের দেশে তাদের আমীর ছিলেন (সহীহ বুখারী - ১১৮৬)

☞ উপরের হাদিসটিকে কিছু মোল্লা সাহেব ইয়েজিদের উপর পিট করে তাকে জান্নাতী বলেছেন! কিন্তু দেখুন এটি প্রথম হামলা নয়! কারণ হযরত আবু আইয়ুব আনসারী এই যুদ্ধে শহীদ হয়! তিনি শহীদ হওয়ার আগেও কুস্তুনতুনিয়ার সকল যুদ্ধে শামিল ছিলেন, নিচের হাদিসটি প্রমান হিসাবে দেখুন!

❏ আবু দাউদের সুনানে বর্ণিত সহীহ হাদীসে বর্ণিত হয়েছে: হযরত আসলাম আবি ইমরান (رضي الله عنه) বলেন, “আমরা কনস্টানটিনোপোল জয়ের উদ্দেশ্যে মদীনা হতে বের হই। আবদুর রহমান বিন খালেদ বিন ওয়ালিদ ছিলেন এই বাহিনীর প্রধান।” হযরত আবু আইয়ুব আনসারী (رضي الله عنه) আমাদের সাথে ছিলেন, তিনি আমাদের একটি আয়াতের ব্যাখ্যা শুনিয়েছেন! এবং তিনি সমস্ত যুদ্ধে অংশ গ্রহণ করেছেন! যুদ্ধ করতে করতে তিনি কোন এক যুদ্ধে শহীদ হন, এবং কুস্তুনতুনিয়ায় সমাহিত হন! [সুনানে আবি দাউদ,, হাদীস নং ২৫১২; আলবানীও এই হাদীসকে সহীহ বলেছে তার ‘তাখরিজ’ পুস্তকে]

☞ সুতরাং প্রমাণিত হলো কুস্তুনতুনিয়ায় প্রথম হামলায় ইয়েজিদ শামিল ছিল না!

পূর্ববর্তী ইমামগণ কর্তৃক হাদিসের ব্যাখ্যাঃ

❏ ইমাম তাবারী নিজ ‘তারিখ’ গ্রন্থে বলেন:

فمما كان فيها من ذلك دخول المسلمين مع عبد الرحمن بن خالد بن الوليد بلاد الروم ومشتاهم بها وغزو.

আবদুর রহমান বিন খালেদ বিন ওয়ালিদের সেনাপতিত্বে ৪৪ হিজরী সালে মুসলমান বাহিনী রোমে (কনস্টানটিনোপোল) প্রবেশ করেন এবং সেখানে গযওয়া (ধর্মযুদ্ধ) সংঘটিত হয়। [তারিখে তাবারী: ৪৪ হিজরীর ঘটনা, ৫:২১২ পৃষ্ঠা; কায়রোর ‘দারুল মা’আরিফ’ প্রকাশনী হতে প্রকাশিত।]

অথচ এয়াযীদ আরও বহু পরে ওখানে যায়।উপরন্তু, তাকে সেখানে পাঠানো হয়েছিল শাস্তিস্বরূপ; আর সে ওই প্রথমে অংশগ্রহণকারী যোদ্ধাদের প্রতি বিদ্রূপাত্মক মন্তব্য করেছিল।

❏ ইমাম ইবনে আসীর রহমতুল্লাহি আলাইহি লিখেন:

في هذه السنة وقيل : سنة خمسين سير معاوية جيشًا كثيفًا إلى بلاد الروم للغزاة ، وجعل عليهم سفيان بن عوف ، وأَمَرَ ابنه يزيد بالغزاة معهم فتثاقل واعتلّ فأمسك عنه أبوه ، فأصاب الناس في غزاتهم جوعٌ ومرض شديد ، فأنشأ يزيد يقول :ما إن أبالي بما لاقت جموعهم بالفرقدونة من حمى ومن موم

إذا اتكأت على الأنماط مرتفقًا بدير مروان عندي أم كلثومِ

فبلغ معاوية شعره، فأقسم عليه ليلحقنّ بسفيان في أرض الروم، ليصيبه ما أصاب الناس، فسار ومعه جمع كثير أضافهم إليه أبوه.

এই বছর, অর্থাৎ, ৪৯ বা ৫০ হিজরী সালে হযরত আমীরে মোয়াবিয়া রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু রোমের (কনস্টানটিনোপোল) উদ্দেশ্যে এক বিশাল বাহিনী প্রেরণ করেন।তিনি এর দায়িত্বভার অর্পণ করেন সুফিয়ান বিন আউফের প্রতি এবং তাঁর ছেলে এয়াযীদকে ওই বাহিনীর সাথে যেতে বলেন।কিন্তু এয়াযীদ ‘অসুস্থ হওয়ার ভান করে এবং যেতে অস্বীকৃতি জানায়’। যোদ্ধারা যখন ক্ষুধা ও রোগ-ব্যাধিগ্রস্ত হন, তখন সে ব্যঙ্গ করে কবিতায় বলে, ‘ফারকুদওয়ানা-এ মহা গযবে তারা পতিত হয়েছে; তাদের জ্বর বা অন্য যা-ই কিছু হোক, তাতে আমার যায় আসে না। কেননা, আমি বসে আছি উচ্চ ফরাশে (ম্যাট্রেস); আর আমার বাহুবন্ধনে আছে উম্মে কুলসুম (এয়াযীদের স্ত্রীদের একজন)।’

❏ ‘‘হযরত আমীরে মোয়াবিয়া রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু যখন এই কবিতার শ্লোক সম্পর্কে জানতে পারেন, তখন তিনি এয়াযীদকে শপথ গ্রহণ করতে ও কনস্টানটিনোপোলে সুফিয়ান ইবনে আউফের সাথে যোগ দিতে বাধ্য করেন, যাতে করে ’সেও ইসলামের মোজাহিদদের মোকাবেলাকৃত কঠিন পরীক্ষার অংশীদার হতে পারে’ (এটি এয়াযীদের প্রতি শাস্তি ছিল)।এমতাবস্থায় এয়াযীদ অসহায় হয়ে পড়ে এবং তাকে যুদ্ধে যেতে হয়; আর হযরত আমীরে মোয়াবিয়া রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু তার সাথে আরেকটি বাহিনী প্রেরণ করেন।”

[তারিখে ইবনে আল-আসীর: ৩:১৩১ পৃ:]

❏ ২. ইমাম বদরুদ্দীন আইনী রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন:

قلت: الْأَظْهر أَن هَؤُلَاءِ السادات من الصَّحَابَة كَانُوا مَعَ سُفْيَان هَذَا وَلم يَكُونُوا مَعَ يزِيد بن مُعَاوِيَة، لِأَنَّهُ لم يكن أَهلا أَن يكون هَؤُلَاءِ السادات فِي خدمته.

আমি বলি, অসংখ্য সাহাবী রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু হযরত সুফিয়ান ইবনে আউফ রাদিয়াল্লাহু আনহুএর অধীনে যুদ্ধে গিয়েছিলেন এবং ‘এয়াযীদ ইবনে মোয়াবিয়ার নেতৃত্বে যান নি, কেননা সে তাঁদেরকে নেতৃত্বদানে অযোগ্য ছিল’।”

[উমদাতুল কারী: শরহে সহীহ আল- বোখারী, ১৪/১৯৭-১৯৮]

❏ ৩. ইমাম ইবনে হাজার ইয়াজিদের ক্ষমাপ্রাপ্ত হওয়ার ধারণাটিকে ধূলিসাৎ করেছেন: ইমাম ইবনে হাজার আসকালানী (رضي الله عنه) তাঁর তফসীরে, ইয়াজিদের ‘মাগফুর’ বা ক্ষমাপ্রাপ্ত হওয়ার ধারণাটিকে ধূলিসাৎ করেছেন এভাবে, “ইবনে মুহলাব বলেছেন যে, এই হাদীসে আমীর মুয়াবিয়ার কথা ইঙ্গিত করা হয়েছে কারন তিনি প্রথম নৌ অভিযান করেছিলেন এবং এই হাদীসে ইয়াযিদের কথাও ইঙ্গিত করা হয়েছে কারন সে প্রথম কাইসারের নগরী আক্রমন করেছিল (এই তথ্য সম্পূর্ণ মিথ্যা কারন ইয়াযিদ প্রথম যুদ্ধে অংশগ্রহন করে নি সে অনেক পরের একটি অভিযানে তার পিতা কর্তৃক শাস্তিস্বরুপ প্রেরিত হয়েছিল- লেখক)

কিন্তু, ইবনে আল তীন এবং ইবনে আল্ মূনীর এর উত্তর দিয়েছেন এবং বলেছেন যে, ইহা অপরিহার্য নয় যে, ব্যতিক্রম ব্যতিরেকে সকলেই এই ক্ষমাপ্রাপ্তির অন্তর্ভুক্ত কারন উলামায়ে ক্বিরাম তথা জ্ঞানী ব্যক্তিবর্গ সকলেই একমত যে, তারাই এই ক্ষমাপ্রাপ্তির অন্তর্ভুক্ত হবে যারা প্রকৃতই তার উপযুক্ত হবে কারন আক্রমনকারীদের মধ্যে যদি কেউ পরে মুরতাদ হয়ে যায় তাহলে সে আর ক্ষমাপ্রাপ্তগনের অন্তর্ভুক্ত বলে বিবেচিত হবে না এবং এটা প্রমান যে উক্ত হাদীসে উল্লেখিত ক্ষমাপ্রাপ্তির বিষয়টি শর্তাধীন।

[ তথ্যসূত্র : ফাতহুল বারী শারাহ সাহীহ বুখারী-ইমাম ইবনে হাজার আসকালানী– ৬ষ্ট খন্ড, পৃ: নং ২০০-২০১]

কনস্টানটিনোপোলে সেনা অভিযানের সার-সংক্ষেপ নিম্নরূপ:

❏ প্রথম আক্রমণ পরিচালিত হয় ৪২ হিজরী সালে।

❏ দ্বিতীয় দফায় আক্রমণ হয় ৪৩ হিজরীতে এবং এর সেনাপতি ছিলেন হযরত বসর বিন আবি আরকা।

❏ তৃতীয় অভিযান পরিচালনা করা হয় ৪৪ হিজরী সালে এবং এটি নেতৃত্ব দেন আবদুর রহমান বিন খালেদ বিন ওয়ালীদ।

❏ পরবর্তী অভিযান ছিল ৪৬ হিজরীতে যার সেনাপতি ছিলেন মালিক বিন আবদির্ রহমান ও আবদুর রহমান বিন খালেদ বিন ওয়ালীদ।

❏ ৪৭ হিজরীতে পরবর্তী অভিযান পরিচালনা করেন মালিক বিন হোবায়রা ও আবদুর রহমান বিন কায়েমী।

❏ ৪৯ হিজরী সালে কনস্টানটিনোপোল তিনবার আক্রমণ করা হয়।

❏ আর সর্বশেষ ৫০ হিজরীতে যে অভিযান পরিচালিত হয় তাতে এয়াযীদ যোগ দেয়।

হযরত আমীরে মোয়াবিয়া রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু এয়াযীদকে আটক করে সিজারের ওখানে পাঠান, কারণ সে মোজাহিদীনবৃন্দের প্রতি বিদ্রূপ করতো।তাই শাস্তিস্বরূপ তাকে ওখানে পাঠানো হয়েছিল, জ্বেহাদের জন্যে নয়।

অতএব, এয়াযীদ সপ্তম সেনা অভিযানে অংশগ্রহণ করেছিল, প্রথম অভিযানে নয়।আর বোখারী শরীফে উল্লেখিত হয়েছে,

أوَّلُ جَيْشٍ مِنْ أُمَّتِي يَغْزُونَ مَدِينَةَ قَيْصَر مَغْفُورٌ لَهُمْ.

আমার উম্মতের মধ্যে সিজারের নগরী আক্রমণকারী প্রথম সেনা দলের পাপ-পঙ্কিলতা মাফ করা হবে।”

রেফারেন্স:

আল-বেদায়া ওয়ান্ নেহায়া

ইবনে খালদুনের ইতিহাস

ইমাম ইবনে আসীরের ইতিহাস

উলামায়ে কেরামের মতামতঃ

১.হযরত ইবনে হাজার আসকালানী (رحمة الله) লিখেনঃ

قال يحيـى بن عبد الملك بن أبـي غنية أحد الثقات، ثنا نوفل بن أبـي عقرب ثقة قال: كنت عند عمر بن عبد العزيز فذكر رجل يزيد بن معاوية، فقال: قال أمير المؤمنين يزيد، فقال عمر: تقول أمير المؤمنين يزيد، وأمر به فضرب عشرين سوطاً “

অর্থাৎঃ ইয়াহইয়া ইবনে আব্দিল মুলক্ বিন আবি গানিয়্যা যিনি ’সিকা (নির্ভরযোগ্য) বর্ণনাকারীদের একজন’, তিনি ‘সিকা’ বর্ণনাকারী নওফল বিন আবি আকরাব থেকে শুনেছেনঃ একবার খলীফা উমর ইবনে আবদিল আযীয (২য় উমর)-এর দরবারে মানুষেরা এয়াযীদ ইবনে মু’আবিয়া সম্পর্কে আলাপ করছিলেন। ওই সময় এক লোক এয়াযীদকে ‘আমীরুল মো’মেনীন’ (ঈমানদারদের শাসক) খেতাবে সম্বোধন করে। এটি শুনে খলীফা ২য় উমর (রাগান্বিত হয়ে) তাকে বলেন,

“তুমি এয়াযীদকে আমীরুল মো’মেনীন ডেকেছ?”

অতঃপর তিনি ওই লোককে ২০টি দোররা মারার হুকুম দেন।  

[সূত্রঃ ইমাম আসকালানী ‘তাহযিবুত্ তাহযিব’ খণ্ড-৬, পৃষ্ঠা-৩১৩।]

২.এজিদকে আমীর বলার শাস্তি যাহাবী আরো লিখেছেন,

عن نوفل بن أبي الفرات ، قال : كنت عند عمر بن عبد العزيز فقال رجل : قال أمير المؤمنين يزيد ، فأمر به فضرب عشرين سوطا.

অর্থাৎঃ ‘নওফাল বিন ফুরাত বলেন, আমি উমর ইবন আবদুল আযিযের সাথে ছিলাম। তখন এক ব্যক্তি এজিদের ব্যাপারে বললো, ‘আমিরুল মুমিনিন ইয়াযিদ।’ এটি শুনে উমর ইবন আবদুল আযিয সে লোককে বিশটি চাবুক মারতে আদেশ দিলেন।’

[সূত্রঃ যাহাবী রচিত সিয়ারু আলামিন নুবালা, খ- ৪, পৃ- ৩৯।]

ইয়াজিদ এর ব্যাপারে ফতোয়া উলামায় কেরামের رای

عن وتكفير يزيد من كتب السنة

بسم الله الرحمن الرحيم

حاولت أن أجمع بعض المصادر من كتب السنة على لعن وكفر يزيد بن معاوية لعنه الله

راجيا من الله عز وجل قبول هذا العمل

ولا تنسونا من صالح الدعاء

أفتى كلّ من سبط بن الجوزي والقاضي أبو يعلى والتفتازاني والجلال السيوطي وغيرهم من أعلام السنة القدامى بكفر يزيد وجواز لعنه

قال اليافعي: وأمّا حكم من قتل الحسين، أو أمر بقتله، ممّن استحلّ ذلك فهو كافر.

شذرات من ذهب / ابن العماد الحنبلي: 1 / 68

وقال الذهبي: كان ناصبياً فظاً غليظاً، يتناول المسكر ويفعل المنكر، افتتح دولته بقتل الحسين، وختمها بوقعة الحرّة. نفس المصدر السابق

وقال ابن كثير: ان يزيد كان اماماً فاسقاً البداية: 8 / 223

قال المسعودي: ولمّا شمل الناس جور يزيد وعماله وعمّهم ظلمه وما ظهر من فسقه ومن قتله ابن بنت رسول الله (صلى الله عليه وسلم) وأنصاره وما أظهر من شرب الخمر، سيره سيرة فرعون، بل كان فرعون أعدل منه في رعيّته، وأنصف منه لخاصّته وعامّته أخرج أهل المدينة عامله عليهم، وهو عثمان بن محمّد بن أبي سفيان.مروج الذهب: 3 / 82.

وروي أنّ عبد الله بن حنظلة الغسيل قال: والله ما خرجنا على يزيد، حتى خفنا أن نرمى بالحجارة من السماء، أنّه رجل ينكح أمهات الأولاد والبنات والأخوات ويشرب الخمر ويدع الصلاة.

الكامل: 3 / 310 وتاريخ الخلفاء: 165

المنكرات التي اقترفها يزيد من قتل الحسين وحمله بنات رسول الله (ص) سبايا، وقرعه ثنايا الحصين بالعود، وإخافته أهل المدينة، وهدم الكعبة، تدل على القسوة والغلظة، والنصب، وسوء الرأي، والحقد والبغضاء والنفاق والخروج عن الايمان، فالفاسق ملعون، ومن نهى عن شتم الملعون فملعون

الجاحظ - الرسالة الحادية عشر في بني أمية - رقم الصفحة: (398)

الحق أن رضا يزيد بقتل الحسين (ع) واستبشاره به، وإهانته أهل بيت النبي (ص) مما تواتر معناه وإن كانت تفاصيله آحادا، فنحن لا نتوقف في شأنه بل في إيمانه، لعنة الله عليه وعلى أنصاره وأعوانه

العلامة سعد الدين التفتازاني الشافعي - شرح العقائد النسفية - رقم الصفحة: (181)

قال اليافعي: وأما حكم من قتل الحسين، أو أمر بقتله، ممن استحل ذلك فهو كافر.

- وقال التفتازاني في شرح العقائد النفسية: والحق أن رضا يزيد بقتل الحسين، واستبشاره بذلك، وإهانته أهل بيت الرسول مما تواتر معناه، لعنة الله عليه، وعلى أنصاره وأعوانه

إبن العماد الحنبلي - شذرات الذهب في أخبار من ذهب - الجزء: (1) - رقم الصفحة: (68)

لا لعدم تصويب فعله، بل لأنهم يرون عدم جواز إراقة الدماء، فلا يجوز نصرة يزيد بقتال الحسين، بل قتله من فعلات يزيد المؤكدة لفسقه، والحسين فيها شهيد

إبن خلدون - المقدمة - رقم الصفحة: (254)

وقد روي أن يزيد كان قد اشتهر بالمعازف وشرب الخمر والغناء والصيد واتخاذ الغلمان والقيان والكلاب والنطاح بين الكباش والدباب والقرود، وما من يوم إلا يصبح فيه مخمورا، وكان يشد القرد على فرس مسرجة بحبال ويسوق به، ويلبس القرد قلانس الذهب، وكذلك الغلمان، وكان يسابق بين الخيل، وكان إذا مات القرد حزن عليه. وقيل: إن سبب موته أنه حمل قردة وجعل ينقزها فعضته

إبن كثير - البدايه والنهايه - الجزء: (8) - رقم الصفحة: (258)

ولقد أفرط بعض أهل العلم كالكرامية ومن وافقهم في الجمود على أحاديث الباب حتى حكموا بأن الحسين السبط (ر) وأرضاه باغ على الخمير السكير الهاتك لحرم الشريعة المطهرة يزيد بن معاوية لعنهم الله، فيالله العجب من مقالات تقشعر منها الجلود ويتصدع من سماعها كل جلمود

الشوكاني - نيل الأوطار - الجزء: (7) - رقم الصفحة: (147)

قال: لعن الله قاتله - يعني حسينا (ع) - وابن زياد معه ويزيد أيضا.جلال الدين السيوطي - تاريخ الخلفاء - رقم الصفحة: (207).

٢٧١ - وَعَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ - رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ -، قَالَ: حَفِظْتُ مِنْ رَسُولِ اللَّهِ - صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ - وِعَاءَيْنِ، فَأَمَّا أَحَدُهُمَا فَبَثَثْتُهُ فِيكُمْ، وَأَمَّا الْآخَرُ فَلَوْ بَثَثْتُهُ قُطِعَ هَذَا الْبُلْعُومُ - يَعْنِي مَجْرَى الطَّعَامِ - رَوَاهُ الْبُخَارِيُّ.

٢٧١ - (وَعَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ قَالَ: حَفِظْتُ مِنْ رَسُولِ اللَّهِ) أَيْ: مِنْ كَلَامِهِ - صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ -، قَالَ الْأَبْهَرِيُّ: فِي أَكْثَرِ الرِّوَايَاتِ (عَنْ) وَفِي رِوَايَةِ الْكُشْمِيهَنِيِّ (مِنْ) بَدَلَ (عَنْ) وَهَذَا صَرِيحٌ فِي تَلَقِّيهِ مِنَ النَّبِيِّ - صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ - بِلَا وَاسِطَةٍ (وِعَاءَيْنِ) : أَيْ: نَوْعَيْنِ كَثِيرَيْنِ مِنَ الْعِلْمِ مِلْءَ ظَرْفَيْنِ مُتَسَاوِيَيْنِ (فَأَمَّا أَحَدُهُمَا) : وَهُوَ عِلْمُ الظَّاهِرِ مِنَ الْأَحْكَامِ وَالْأَخْلَاقِ (فَبَثَثْتُهُ) : أَيْ: أَظْهَرْتُهُ بِالنَّقْلِ (فِيكُمْ، وَأَمَّا الْآخَرُ) : وَهُوَ عِلْمُ الْبَاطِنِ (قُطِعَ هَذَا الْبُلْعُومُ) : بِضَمِّ الْبَاءِ أَيِ الْحُلْقُومُ، لِأَنَّ أَسْرَارَ حَقِيقَةِ التَّوْحِيدِ مِمَّا يَعْسُرُ التَّعْبِيرُ عَنْهُ عَلَى وَجْهِ الْمُرَادِ، وَلِذَا كُلُّ مَنْ نَطَقَ بِهِ وَقَعَ فِي تَوْهِيمِ الْحُلُولِ وَالْإِلْحَادِ، إِذَ فَهْمُ الْعَوَامِّ قَاصِرٌ عَنْ إِدْرَاكِ الْمَرَامِ، وَمِنْ كَلَامِ الصُّوفِيَّةِ صُدُورُ الْأَحْرَارِ قُبُورُ الْأَسْرَارِ، وَقَوْلُهُ: " قُطِعَ " يَحْتَمِلُ الْإِخْبَارَ مِمَّا يُتَوَقَّعُ، وَيَحْتَمِلُ الدُّعَاءَ مُبَالَغَةً فِي إِسْرَارِ الْأَسْرَارِ كَمَا هُوَ دَأْبُ الْخُلَّصِ مِنَ الْأَبْرَارِ، وَقِيلَ إِنَّهُ عِلْمٌ يَتَعَلَّقُ بِالْمُنَافِقِينَ بِأَعْيَانِهِمْ أَوْ بِوِلَادَةِ الْجَوْرِ مِنْ بَنِي أُمَيَّةَ أَوْ بِفِتَنٍ أُخْرَى فِي زَمَنِهِ، وَقَالَ الْأَبْهَرِيُّ: حَمَلَ الْعُلَمَاءُ الْوِعَاءَ الَّذِي لَمْ يَبُثَّهُ عَلَى الْأَحَادِيثِ الَّتِي فِيهَا يَتَبَيَّنُ أَسَامِي أُمَرَاءِ الْجَوْرِ وَأَحْوَالُهُمْ وَذَمُّهُمْ، وَكَانَ أَبُو هُرَيْرَةَ يُكَنِّي عَنْ بَعْضِهِ وَلَا يُصَرِّحُ بِهِ خَوْفًا عَلَى نَفْسِهِ مِنْهُمْ كَقَوْلِهِ: أَعُوذُ بِاللَّهِ مِنْ رَأْسِ السِّتِّينَ، وَإِمَارَةِ الصِّبْيَانِ، يُشِيرُ إِلَى خِلَافَةِ يَزِيدَ بْنِ مُعَاوِيَةَ لِأَنَّهَا كَانَتْ سَنَةَ سِتِّينَ مِنَ الْهِجْرَةِ، وَاسْتَجَابَ اللَّهُ دُعَاءَ أَبِي هُرَيْرَةَ فَمَاتَ قَبْلَهَا بِسَنَةٍ (يَعْنِي مَجْرَى الطَّعَامِ) . تَفْسِيرٌ مِنْ بَعْضِ رُوَاةِ الْحَدِيثِ (رَوَاهُ الْبُخَارِيُّ) . لَكِنْ قَالَ الْعَسْقَلَانِيُّ: زَادَ فِي رِوَايَةِ الْمُسْتَمْلِي، قَالَ أَبُو عَبْدِ اللَّهِ: الْبُلْعُومُ مَجْرَى الطَّعَامِ وَعَلَى هَذَا لَا يَخْفَى مَا فِي الْمِشْكَاةِ إِذْ يُفْهَمُ مِنْهُ أَنَّ تِلْكَ الْعِبَارَةَ مِنْ أَبِي هُرَيْرَةَ أَوْ أَحَدِ رُوَاتِهِ وَلَا يُفْهَمُ مِنْهُ أَنَّهَا لِلْبُخَارِيِّ، وَاللَّهُ أَعْلَمُ.

٥٩٥١ - وَعَنْ سَعْدِ بْنِ عَبْدِ الْعَزِيزِ، قَالَ: لَمَّا كَانَ أَيَّامُ الْحَرَّةِ لَمْ يُؤَذَّنْ فِي مَسْجِدِ النَّبِيِّ - صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ - ثَلَاثًا وَلَمْ يُقَمْ، وَلَمْ يَبْرَحْ سَعِيدُ بْنُ الْمُسَيَّبِ الْمَسْجِدَ، وَكَانَ لَا يَعْرِفُ وَقْتَ الصَّلَاةِ إِلَّا بِهَمْهَمَةٍ يَسْمَعُهَا مِنْ قَبْرِ النَّبِيِّ - صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ - رَوَاهُ الدَّارِمِيُّ.

٥٩٥١ - (وَعَنْ سَعِيدِ بْنِ عَبْدِ الْعَزِيزِ) ، قَالَ الْمُؤَلِّفُ: تَنُوخِيٌّ دِمَشْقِيٌّ، كَانَ فَقِيهَ أَهْلِ الشَّامِ فِي زَمَنِ الْأَوْزَاعِيِّ بَعْدَهُ. وَقَالَ أَحْمَدُ: لَيْسَ بِالشَّامِ أَصَحَّ حَدِيثًا مِنْهُ وَمِنَ الْأَوْزَاعِيِّ، وَهُوَ وَالْأَوْزَاعِيُّ عِنْدِي سَوَاءٌ، وَكَانَ سَعِيدٌ بَكَّاءً، فَسُئِلَ فَقَالَ: مَا قُمْتُ إِلَى الصَّلَاةِ إِلَّا مُثِّلَتْ لِي جَهَنَّمُ. (قَالَ: لَمَّا كَانَ) ، أَيْ: وَقَعَ (أَيَّامَ الْحَرَّةِ) : بِفَتْحٍ فَتَشْدِيدٍ. قَالَ الطِّيبِيُّ: هُوَ يَوْمٌ مَشْهُورٌ فِي الْإِسْلَامِ أَيَّامَ يَزِيدَ بْنِ مُعَاوِيَةَ لَمَّا نَهَبَ الْمَدِينَةَ عَسْكَرٌ مِنْ أَهْلِ الشَّامِ نَدَبَهُمْ لِقِتَالِ أَهْلِ الْمَدِينَةِ مِنَ الصَّحَابَةِ وَالتَّابِعِينَ، وَأَمَرَ مُسْلِمُ بْنُ عُيَيْنَةَ الْمُرِّيُّ فِي ذِي الْحِجَّةِ سَنَةَ ثَلَاثٍ وَسِتِّينَ، وَعَقِيبَهَا هَلَكَ يَزِيدُ، وَالْحَرَّةُ هَذِهِ أَرْضٌ بِظَاهِرِ الْمَدِينَةِ بِهَا حِجَارَةٌ سُودٌ كَثِيرَةٌ وَقَعَتْ فِيهَا هَذِهِ الْوَقْعَةُ (لَمْ يُؤَذَّنْ فِي مَسْجِدِ النَّبِيِّ - صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ -) : بِصِيغَةِ الْمَجْهُولِ. أَيْ: لَمْ يُؤَذِّنْ أَحَدٌ فِيهِ لِأَجْلِ الْفِتْنَةِ (ثَلَاثًا) ، أَيْ: ثَلَاثَ لَيَالٍ بِأَيَّامِهَا (وَلَمْ يُقَمْ) : عَلَى بِنَاءِ الْمَفْعُولِ مِنَ الْإِقَامَةِ أَيْ: وَلَمْ يُقِمْ أَحَدٌ لِلصَّلَاةِ أَيْضًا (وَلَمْ يَبْرَحْ) : بِفَتْحِ الرَّاءِ لَمْ يُفَارِقْ (سَعِيدُ بْنُ الْمُسَيَّبِ الْمَسْجِدَ) : وَكَانَ النَّاسُ يَقُولُونَ فِي حَقِّهِ: إِنَّهُ شَيْخٌ مَجْنُونٌ. قَالَ الْمُؤَلِّفُ: كَانَ سَيِّدَ التَّابِعِينَ جَمَعَ بَيْنَ الْفِقْهِ وَالْحَدِيثِ وَالزُّهْدِ وَالْوَرَعِ وَالْعِبَادَةِ لَقِيَ جَمَاعَةً كَثِيرَةً مِنَ الصَّحَابَةِ، وَرَوَى عَنْهُمْ وَعَنِ الزُّهْرِيِّ، وَكَثِيرٍ مِنَ التَّابِعِينَ وَغَيْرِهِمْ، حَجَّ أَرْبَعِينَ حَجَّةً مَاتَ سَنَةَ ثَلَاثٍ وَسَبْعِينَ. (وَكَانَ) ، أَيْ: سَعِيدٌ فِي ذَلِكَ الْوَقْتِ الشَّدِيدِ (لَا يَعْرِفُ وَقْتَ الصَّلَاةِ إِلَّا بِهَمْهَمَةٍ) ، أَيْ: بِصَوْتٍ خَفِيٍّ لَا يُفْهَمُ (يَسْمَعُهَا مِنْ قَبْرِ النَّبِيِّ - صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ -. رَوَاهُ الدَّارِمِيُّ) .

٥٣٨٨ - وَعَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ - رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ - قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ - صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: " «هَلَكَةُ أُمَّتِي عَلَى يَدَيْ غِلْمَةٍ مِنْ قُرَيْشٍ» ". رَوَاهُ الْبُخَارِيُّ.

٥٣٨٨ - (وَعَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ - صَلَّى اللَّهُ تَعَالَى عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: " هَلَكَةُ أُمَّتِي ") بِفَتْحِ الْهَاءِ وَاللَّامِ أَيْ: هَلَاكُهُمْ، وَالْمُرَادُ بِالْأُمَّةِ هُنَا الصَّحَابَةُ ; لِأَنَّهُمْ خِيَارُ الْأُمَّةِ وَأَكَابِرُ الْأَئِمَّةِ (" عَلَى يَدَيْ ") تَثْنِيَةٌ مُضَافَةٌ إِلَى (" غِلْمَةٍ مِنْ قُرَيْشٍ ") بِكَسْرِ الْغَيْنِ جَمْعُ غُلَامٍ، أَيْ: عَلَى أَيْدِي الشُّبَّانِ الَّذِينَ مَا وَصَلُوا إِلَى مَرْتَبَةِ كَمَالِ الْعَقْلِ، وَالْأَحْدَاثِ السَّنِّ، الَّذِينَ لَا مُبَالَاةَ لَهُمْ بِأَصْحَابِ الْوَقَارِ وَأَرْبَابِ النُّهَى، وَالظَّاهِرُ أَنَّ الْمُرَادَ مَا وَقَعَ بَيْنَ عُثْمَانَ - رَضِيَ اللَّهُ تَعَالَى عَنْهُ - وَقَتَلَتِهِ، وَبَيْنَ عَلِيٍّ وَالْحَسَنِ - رَضِيَ اللَّهُ تَعَالَى عَنْهُمَا - وَمَنْ قَاتَلَهُمْ. وَقَالَ الْمُظْهِرُ: لَعَلَّهُ أُرِيدَ بِهِمُ الَّذِينَ كَانُوا بَعْدَ الْخُلَفَاءِ الرَّاشِدِينَ مِثْلَ يَزِيدَ وَعَبْدِ الْمَلَكِ بْنِ مَرْوَانَ وَغَيْرِهِمَا. (رَوَاهُ الْبُخَارِيُّ) ، وَلَفْظُ الْجَامِعِ: " «هَلَاكُ أُمَّتِي عَلَى يَدَيْ غِلْمَةٍ مِنْ قُرَيْشٍ» ". رَوَاهُ أَحْمَدُ وَالْبُخَارِيُّ عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ.

٣٧١٦ - وَعَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ - صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ -: «تَعَوَّذُوا بِاللَّهِ مِنْ رَأْسِ السَّبْعِينَ وَإِمَارَةِ الصِّبْيَانِ» . رَوَى الْأَحَادِيثَ السِّتَّةَ أَحْمَدُ وَرَوَى الْبَيْهَقِيُّ حَدِيثَ مُعَاوِيَةَ فِي دَلَائِلِ النُّبُوَّةِ.

٣٧١٦ - (وَعَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ - صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ - «تَعَوَّذُوا بِاللَّهِ مِنْ رَأْسِ السَّبْعِينَ» ) ; أَيْ مِنْ فِتْنَةٍ تَنْشَأُ فِي ابْتِدَاءِ السَّبْعِينَ مِنْ تَارِيخِ الْهِجْرَةِ، أَوْ وَفَاتِهِ عَلَيْهِ الصَّلَاةُ وَالسَّلَامُ، (وَإِمَارَةِ الصِّبْيَانِ) بِكَسْرِ أَوَّلِهِ ; أَيْ وَمِنْ حُكُومَةِ الصِّغَارِ الْجُهَّالِ كَيَزِيدَ بْنِ مُعَاوِيَةَ، وَأَوْلَادِ الْحَكَمِ بْنِ مَرْوَانَ، وَأَمْثَالِهِمْ وَأَغْرَبَ الطِّيبِيُّ حَيْثُ قَالَ: قَوْلُهُ " وَإِمَارَةِ الصِّبْيَانِ " حَالٌ ; أَيْ وَالْحَالُ أَنَّ الصِّبْيَانَ أُمَرَاءُ يُدَبِّرُونَ أَمْرَ أُمَّتِي، وَهُمْ أُغَيْلِمَةٌ مِنْ قُرَيْشٍ، رَآهُمُ النَّبِيُّ - صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ - فِي مَنَامِهِ يَلْعَبُونَ عَلَى مِنْبَرِهِ عَلَيْهِ الصَّلَاةُ وَالسَّلَامُ، وَقَدْ جَاءَ فِي تَفْسِيرِ قَوْلِهِ تَعَالَى: {وَمَا جَعَلْنَا الرُّؤْيَا الَّتِي أَرَيْنَاكَ إِلَّا فِتْنَةً لِلنَّاسِ} [الإسراء: ٦٠] أَنَّهُ - صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ - رَأَى فِي الْمَنَامِ ; أَنَّ وَلَدَ الْحَكَمِ يَتَدَاوَلُونَ الْمِنْبَرَ كَمَا يَتَدَاوَلُ الصِّبْيَانُ الْكُرَةَ، (رَوَى الْأَحَادِيثَ السِّتَّةَ) ; أَيْ مِنْ أَوَّلِ الْفَصْلِ (أَحْمَدُ) وَوَافَقَهُ الطَّبَرَانِيُّ فِي الْحَدِيثِ الْأَوَّلِ، وَرَوَى الطَّبَرَانِيُّ وَالضِّيَاءُ عَنْ عَوْفِ بْنِ مَالِكٍ، وَلَفْظُهُ «إِنْ شِئْتُمْ أَنْبَأْتُكُمْ عَنِ الْإِمَارَةِ، وَمَا هِيَ ; أَوَّلُهَا مَلَامَةٌ، وَثَانِيهَا نَدَامَةٌ، وَثَالِثُهَا عَذَابُ يَوْمِ الْقِيَامَةِ، إِلَّا مَنْ عَدَلَ» . (وَرَوَى الْبَيْهَقِيُّ حَدِيثَ مُعَاوِيَةَ فِي دَلَائِلِ النُّبُوَّةِ) وَأَخْرَجَ ابْنُ عَسَاكِرَ بِسَنَدٍ وَاهٍ عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ قَالَ: «كُنْتُ عِنْدَ النَّبِيِّ - صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ - وَعِنْدَهُ أَبُو بَكْرٍ وَعُمَرُ وَعُثْمَانُ وَمُعَاوِيَةُ، إِذْ أَقْبَلَ عَلِيٌّ فَقَالَ النَّبِيُّ - صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ - لِمُعَاوِيَةَ: أَتُحِبُّ عَلِيًّا؟ قَالَ: نَعَمْ، قَالَ: إِنَّهَا سَتَكُونُ بَيْنَكُمَا هُنَيَّةٌ، قَالَ مُعَاوِيَةُ: فَمَا بَعْدَ ذَلِكَ يَا رَسُولَ اللَّهِ؟ قَالَ: عَفْوُ اللَّهِ وَرِضْوَانُهُ، قَالَ: رَضِينَا بِقَضَاءِ اللَّهِ فَنَزَلَ ; {وَلَوْ شَاءَ اللَّهُ مَا اقْتَتَلُوا وَلَكِنَّ اللَّهَ يَفْعَلُ مَا يُرِيدُ} [البقرة: ٢٥٣] » كَذَا فِي الدُّرِّ الْمَنْثُورِ فِي التَّفْسِيرِ الْمَأْثُورِ.

٣٧٠٠ - وَعَنْ كَعْبِ بْنِ عُجْرَةَ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ - صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ -: «أُعِيذُكَ بِاللَّهِ مِنْ إِمَارَةِ السُّفَهَاءِ، قَالَ: وَمَا ذَاكَ يَا رَسُولَ اللَّهِ؟ قَالَ: أُمَرَاءُ سَيَكُونُونَ مِنْ بَعْدِي، مَنْ دَخَلَ عَلَيْهِمْ فَصَدَّقَهُمْ بِكَذِبِهِمْ وَأَعَانَهُمْ عَلَى ظُلْمِهِمْ، فَلَيْسُوا مِنِّي، وَلَسْتُ مِنْهُمْ، وَلَنْ يَرِدُوا عَلَيَّ الْحَوْضَ، وَمَنْ لَمْ يَدْخُلْ عَلَيْهِمْ وَيُصَدِّقْهُمْ بِكَذِبِهِمْ وَلَمْ يُعِنْهُمْ عَلَى ظُلْمِهِمْ، فَأُولَئِكَ مِنِّي، وَأَنَا مِنْهُمْ، وَأُولَئِكَ يَرِدُونَ عَلَيَّ الْحَوْضَ» . رَوَاهُ التِّرْمِذِيُّ وَالنَّسَائِيُّ.

٣٧٠٠ - (وَعَنْ كَعْبِ بْنِ عُجْرَةَ) بِضَمٍّ فَسُكُونٍ قَالَ الْمُصَنِّفُ: نَزَلَ الْكُوفَةَ وَمَاتَ بِالْمَدِينَةِ سَنَةَ إِحْدَى وَخَمْسِينَ، وَهُوَ ابْنُ خَمْسٍ وَسَبْعِينَ سَنَةً، رَوَى عَنْهُ خَلْقٌ كَثِيرٌ مِنَ الصَّحَابَةِ وَالتَّابِعِينَ، (قَالَ: قَالَ لِي) ; أَيْ وَحْدِي، أَوْ مُخَاطِبًا لِي، (رَسُولُ اللَّهِ - صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ - أُعِيذُكَ بِاللَّهِ مِنْ إِمَارَةِ السُّفَهَاءِ) ; أَيْ مِنْ عَمَلِهِمْ، أَوْ مِنَ الدُّخُولِ عَلَيْهِمْ، أَوِ اللُّحُوقِ بِهِمْ، وَالسُّفَهَاءُ الْجُهَّالُ عِلْمًا وَعَمَلًا، وَقَالَ الطِّيبِيُّ: السُّفَهَاءُ الْخِفَافُ الْأَحْلَامِ، وَفِي النِّهَايَةِ السَّفَهُ فِي الْأَصْلِ ; الْخِفَّةُ وَالطَّيْشُ، وَسُفِّهَ فُلَانٌ رَأْيُهُ إِذَا كَانَ مُضْطَرِبًا لَا اسْتِقَامَةَ لَهُ، وَالسَّفِيهُ الْجَاهِلُ، (قَالَ) ; فِيهِ الْتِفَاتٌ، أَوْ تَجْرِيدٌ، إِذْ حَقُّهُ أَنْ يَقُولَ: قُلْتُ (وَمَا ذَاكَ يَا رَسُولَ اللَّهِ) ; أَيْ ; أَيُّ شَيْءٍ مَا ذَكَرْتَهُ مِنْ إِمَارَةِ السُّفَهَاءِ؟ وَقَالَ الطِّيبِيُّ: إِشَارَةٌ إِلَى مَعْنَى إِمَارَةِ السُّفَهَاءِ، وَهُوَ فِعْلُهُمُ الْمُسْتَفَادُ مِنْهُ مِنَ الظُّلْمِ وَالْكَذِبِ، وَمَا يُؤَدِّي إِلَيْهِ جَهْلُهُمْ وَطَيْشُهُمْ (قَالَ أُمَرَاءُ سَيَكُونُونَ مِنْ بَعْدِي) ; أَيْ سُفَهَاءُ ; مَوْصُوفُونَ بِالْكَذِبِ وَالظُّلْمِ، (مَنْ دَخَلَ عَلَيْهِمْ) ; أَيْ مِنَ الْعُلَمَاءِ وَغَيْرِهِمْ، (فَصَدَّقَهُمْ بِكَذِبِهِمْ) بِفَتْحٍ فَكَسَرٍ، وَيَجُوزُ بِكَسْرٍ فَسُكُونٍ، وَالْأَوَّلُ أَصَحُّ وَأَفْصَحُ ; لِعَدَمِ وُرُودِ غَيْرِهِ فِي الْقُرْآنِ، وَقِيلَ الْكَذِبُ: إِذَا أُخِذَ فِي مُقَابَلَةِ الصِّدْقِ كَانَ بِسُكُونِ الذَّالِ لِلْازْدِوَاجِ، وَإِذَا أُخِذَ وَحْدَهُ كَانَ بِالْكَسْرِ، (وَأَعَانَهُمْ عَلَى ظُلْمِهِمْ) ; أَيْ بِالْإِفْتَاءِ وَنَحْوِهِ، (فَلَيْسُوا مِنَّي وَلَسْتُ مِنْهُمْ) ; أَيْ بَيْنِي وَبَيْنَهُمْ بَرَاءَةٌ وَنَقْضُ ذِمَّةٍ، (وَلَنْ يَرِدُوا) وَفِي نُسْخَةٍ، وَلَمْ يَرِدُوا مِنَ الْوُرُودِ ; أَيْ لَمْ يَمُرُّوا (عَلَيَّ) بِتَشْدِيدِ الْيَاءِ بِتَضْمِينِ مَعْنَى الْعَرْضِ ; أَيْ لَنْ يَرِدُوا عَلَيَّ مَعْرُوضِينَ، (الْحَوْضَ) ; أَيْ حَوْضَ الْكَوْثَرِ فِي الْقِيَامَةِ، أَوْ فِي الْجَنَّةِ، (وَمَنْ لَمْ يَدْخُلْ عَلَيْهِمْ وَلَمْ يُصَدِّقْهُمْ بِكَذِبِهِمْ وَلَمْ يُعِنْهُمْ عَلَى ظُلْمِهِمْ ; فَأُولَئِكَ مِنِّي، وَأَنَا مِنْهُمْ، وَأُولَئِكَ يَرِدُونَ عَلَيَّ الْحَوْضَ) ، قَالَ الطِّيبِيُّ: أَدْخَلَ الْفَاءَ فِي خَبَرِ (مَنْ) لِتَضَمُّنِهِ مَعْنَى الشَّرْطِ، زَادَ فِيهِ (أُولَئِكَ) وَكَرَّرَهُ لِمَزِيدِ تَقْرِيرِ الْعِلَّةِ ; لِأَنَّ اسْمَ الْإِشَارَةِ فِي مِثْلِ هَذَا الْمَقَامِ، مُؤْذِنٌ بِأَنَّ مَا يَرِدُ عَقِيبَهُ جَدِيرٌ بِمَا قَبْلَهُ ; لِاتِّصَافِهِ بِالْخِصَالِ الْمَذْكُورَةِ كَقَوْلِهِ تَعَالَى: {أُولَئِكَ عَلَى هُدًى مِنْ رَبِّهِمْ وَأُولَئِكَ هُمُ الْمُفْلِحُونَ} [البقرة: ٥] بَعْدَ قَوْلِهِ: {الَّذِينَ يُؤْمِنُونَ بِالْغَيْبِ} [البقرة: ٣] إِلَى مَا يَتَّصِلُ بِهِ، اسْتِحْمَادًا عَلَى فِعْلِهِمْ مِنَ الِاجْتِنَابِ عَنْهُمْ، وَعَنْ تَصْدِيقِهِمْ وَمُعَاوَنَتِهِمْ، قَالَ سُفْيَانُ الثَّوْرِيُّ: لَا نُخَالِطُ السُّلْطَانَ وَلَا مَنْ يُخَالِطُهُ، وَقَالَ: صَاحِبُ الْقَلَمِ، وَصَاحِبُ الدَّوَاةِ، وَصَاحِبُ الْقِرْطَاسِ، وَصَاحِبُ اللِّيطَةِ بَعْضُهُمْ شُرَكَاءُ بَعْضُ، وَرُوِيَ أَنَّ خَيَّاطًا سَأَلَ عَبْدَ اللَّهِ بْنَ الْمُبَارَكِ عَنْ خِيَاطَتِهِ لِلْحُكَّامِ ; هَلْ أَنَا دَاخِلٌ فِي قَوْلِهِ تَعَالَى: وَلَا تَرْكَنُوا إِلَى الَّذِينَ ظَلَمُوا؟ قَالَ: بَلْ يَدْخُلُ فِيهِ مَنْ يَبِيعُكَ الْإِبْرَةَ، قَالَ ابْنُ مَسْعُودٍ: مَنْ رَضِيَ بِأَمْرِ الظَّالِمِ وَإِنْ غَابَ عَنْهُ ; كَانَ كَمَنْ شَهِدَهُ وَتَلَا الْآيَةَ (رَوَاهُ التِّرْمِذِيُّ وَالنَّسَائِيُّ) .

٣٦٩٣ - وَعَنْ أَبِي بَكْرَةَ قَالَ: «لَمَّا بَلَغَ رَسُولَ اللَّهِ - صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ - أَنَّ أَهْلَ فَارِسَ قَدْ مَلَّكُوا عَلَيْهِمْ بِنْتَ كِسْرَى قَالَ: لَنْ يُفْلِحَ قَوْمٌ وَلَّوْا أَمْرَهُمُ امْرَأَةً» . رَوَاهُ الْبُخَارِيُّ.

٣٦٩٣ - (وَعَنْ أَبِي بَكْرَةَ) بِالتَّاءِ (قَالَ لَمَّا بَلَغَ رَسُولَ اللَّهِ - صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ - أَنَّ أَهْلَ فَارِسَ) بِكَسْرِ الرَّاءِ وَفَتْحِ السِّينِ (قَدْ مَلَّكُوا) بِتَشْدِيدِ اللَّامِ ; أَيْ جَعَلُوا الْمَلِكَ (عَلَيْهِمْ بِنْتَ كِسْرَى) بِكَسْرِ الْكَافِ وَيَفْتَحُ، مَلِكُ الْفُرْسِ مُعَرَّبٌ خِسْرُوا ; أَيْ وَاسِعُ الْمُلْكِ ذَكَرَهُ فِي الْقَامُوسِ، وَفِي النِّهَايَةِ لَقَبُ مَلِكِ الْفُرْسِ، يَعْنِي كَمَا أَنَّ قَيْصَرَ لَقَبُ مَلِكِ الرُّومِ، وَفِرْعَوْنَ لَقَبُ مَلِكِ مِصْرَ، وَتُبَّعَ لِمَلِكِ الْيَمَنِ، (قَالَ لَنْ يُفْلِحَ قَوْمٌ وَلَّوْا) بِالتَّشْدِيدِ ; أَيْ فَوَّضُوا (أَمْرَهُمْ) ; أَيْ أَمْرَ مُلْكِهِمْ (امْرَأَةً) فِي شَرْحِ السُّنَّةِ ; لَا تَصْلُحُ الْمَرْأَةُ أَنْ تَكُونَ إِمَامًا، وَلَا قَاضِيًا ; لِأَنَّهُمَا مُحْتَاجَانِ إِلَى الْخُرُوجِ لِلْقِيَامِ بِأُمُورِ الْمُسْلِمِينَ، وَالْمَرْأَةُ عَوْرَةٌ لَا تَصْلُحُ لِذَلِكَ، وَلِأَنَّ الْمَرْأَةَ نَاقِصَةٌ ; وَالْقَضَاءُ مِنْ كَمَالِ الْوِلَايَاتِ ; فَلَا يَصْلُحُ لَهَا إِلَّا الْكَامِلُ مِنَ الرِّجَالِ. (رَوَاهُ الْبُخَارِيُّ) وَكَذَا أَحْمَدُ وَالتِّرْمِذِيُّ وَالنَّسَائِيُّ.

_______

❏ ৩. দেউবন্দীদের নেতা মাওলানা আশরাফ আলী থানবী বলেছেন!

ইয়াজিদ ছিল জালিম, ফাসিক ও নালায়েক (অযোগ্য)। আর ইমাম হুসাইন (আ:) ছিলেন মজলুম ও শহীদ।ইয়াজিদ বল প্রয়োগের মাধ্যমে ক্ষমতা দখলকারী। আর এ ধরনের কাজ অবৈধ বা নাজায়েজ। ইয়াজিদকে বড় করে তুলে ধরার জন্য যুদ্ধ সংক্রান্ত কোনো কোনো হাদিস বিকৃত করা হয়েছে বা বানানো হয়েছে। এইসব বিকৃত হাদিসের সঙ্গে আসলে ইয়াজিদের কোনো সম্পর্ক নেই। যেমন: মুসলমানদের মধ্যে যারা প্রথম নৌ অভিযান চালাবে তাদের বেহেশত দেয়া হবে এবং মুসলমানদের মধ্যে যারা রোমান সম্রাট সিজারের শহরে প্রথম হামলা চালাবে তাদের সব গোনাহ মাফ করা হবে বলে রাসূল (ﷺ)’র একটি হাদিসের কথা বলা হয়।

এইসব হাদিস যদি সত্য হয়েও থাকে তাহলেও বাস্তবতা হল সিজারের শহরে হামলাকারী প্রথম সেনাদলের মধ্যে ইয়াজিদ ছিল না বলে হাদিস থেকে প্রমাণিত হয়েছে।মুয়াবিয়ার শাসনামলে সেখানে মুসলমানদের প্রথম হামলা হয়েছিল ৪২ হিজরিতে।৪২ থেকে ৪৯ হিজরিতে সেখানে ছয়টি অভিযান চালায় মুসলিম যোদ্ধারা।আর ইয়াজিদকে কথিত অভিযানে পাঠানো হয় ৫০ হিজরিতে এবং তা ছিল সপ্তম অভিযান।তাকে পরবর্তীতে শাস্তি হিসেবে এক যুদ্ধে পাঠানো হয়েছিল মাত্র।ইয়াজিদ মুসলিম বাহিনীকে ব্যাঙ্গ-বিদ্রূপ করেছিল বলে শাস্তি হিসেবে মুয়াবিয়া তাকে যুদ্ধে পাঠায়।অর্থাৎ যুদ্ধ করার জন্য তাকে পাঠানো হয়নি বরং শাস্তি হিসেবে সাময়িক নির্বাসনের মধ্যে সময় কাটানোর জন্য।

❏ ৪. সহীহ বোখারী শরীফে যে হাদীস খানা বর্ণিত আছে তা ‘‘কসতুনতুনিয়া যুদ্ধে’’ অংশ গ্রহণ নিয়ে রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন-‘‘যারা সর্বপ্রথম মদিনা কায়সার তথা কসতুনতুনিয়া যুদ্ধে অংশগ্রহণ করবে তারা ক্ষমা প্রাপ্ত হবে।’’

সহীহ ও বিশুদ্ধ অভিমত অনুযায়ী সে যুদ্ধে ইয়াজিদ অংশগ্রহণ করেনি।কারণ কসতুনতুনিয়া প্রথম যুদ্ধ হয়েছে হযরত ওসমান রাদ্বিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু-এর খেলাফতের সময় ৩২ হিজরিতে আর ইয়াজিদ কসতুনতুনিয়ার যে যুদ্ধে শরীক হয়েছিল তা আরো পরে।সুতরাং ইয়াজিদ ক্ষমা প্রাপ্তির শুভ সংবাদ সক্রান্ত হাদীসে অন্তর্ভুক্ত নাই।ইয়াজিদ কসতুনতুনিয়ার যে যুদ্ধে শরীক ছিল তার পূর্বে কসতুনতুনিয়ায় মুসলিম সেনা বাহিনী ৩/৪ বার হামলা করেছিলেন। নির্ভরযোগ্য ইতিহাস দ্বারা এটাই প্রমাণিত।

[নুজহাতুলকারী শরহে সহীহ বোখারী: ৬ষ্ঠ খণ্ড, পৃষ্ঠা ১৩০ কৃত: মুফতি শরিফুল হক আমজাদী]

❏ ৫. এবার মুফতী আহমদ ইয়ার খান এর লেখনী তুলে ধরলাম:

যারা ইয়াযীদের পক্ষে উকালতী করে এবং তার সাফাই গায় তারা সহীহ্ বোখারী শরীফের নিন্মলিখিত হাদীস শরীফকে তাদের পক্ষে দলীল হিসেবে দাঁড় করাতে চায়-

قَالَ النَّبِىُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ اَوَّلُ جَيْسٍ مِّنْ اُمَّتِىْ يَغْزُوْنَ مَدِيْنَةَ قَيْصَرَ مَغْفُوْرٌ لَّهُمْ (بخارى جلد اول : كتاب الجهاد : باب ماقيل فى قتال الروم)

অর্থাৎ নবী করীম [ﷺ] এরশাদ করেছেন, আমার উম্মতের ওই সেনাবাহিনীকে ক্ষমা করা হবে, যারা রোম সম্রাট ক্বায়সারের শহর (ইস্তাম্বুল)-এর উপর সর্বপ্রথম হামলা করবে।

[বোখারী শরীফ: ১ম খন্ড: জিহাদ পর্ব: রোমের বিরুদ্ধে যুদ্ধ শীর্ষক অধ্যায়: পৃ. ৪১০]

৬. অভিশপ্ত ইয়াজিদকে নিয়ে হযরত দাতা গঞ্জে বখশ লাহোরী (رحمة الله)'র বদদো'আঃ

"এজিদের উপর আল্লাহর গযব হোক, লা'নত হোক, লাঞ্ছনা হোক, এ অভিশপ্তকে ধ্বংস করুন, তাঁর মহাসম্মানিত পিতা [সাহাবী-এ রসূল হযরত আমীরে মু'আবিয়া (رضي الله عنه)কে নয়]।"

[সূত্রঃ হযরত দাতা গঞ্জে বখশ (রহ.) রচিত বিখ্যাত গ্রন্থ কাশফুল মাহজুব এর (উর্দূ তরজমা)'র ১৮৬ পৃষ্ঠা]

যুগশ্রেষ্ঠ ওলিয়ে কামিল যাকে অভিসম্পাত করে, কোন মু'মিন কখনো এ ঘৃণ্য জালিমের প্রতি ভালো ধারণা করতে পারে না।

৭. সুনান ঈসফাহানীর মধ্যে স্পষ্ট হাদীস।

হযরত জাবের (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত। কোন মুসলমান কলেমা পড়ার পরে যদি সে আহলে বাইয়াত কে ভালো না বাসে রাসূল (ﷺ) বলেন তাকে আমিও ভালবাসবনা এবং তার উপর আল্লাহর লানত।

ইয়াজিদ বদর যুদ্ধে তার দাদাকে হত্যার প্রতিশোধ হিসাবে ইমাম হুসাইন (আঃ) কে শহীদ করলঃ

▶ইয়াজিদ লানাতুল্লাহি বলেছিল,

আজকে আমি হুসাইন (আঃ) কে কতল করে বদর যুদ্ধের প্রতিশোধ নিলাম (নাউজুবিল্লাহ) যে যুদ্ধে আমার দাদাকে রাসুলুল্লাহ (ﷺ) কতল করেছিলেন আজকে তার বদলা নিলাম (নাউজুবিল্লাহ)

[আল্লামা আলুসী বাগদাদীঃ রুহুল মাআনি ২৫ তম খন্ড]

▶শুধু তা নয় এই ইয়াজিদের হুকুমে,

মদীনা শরীফেও হামলা করেছিল। কিভাবে একজন মুসলমান তার ঈমানের উপর হামলা করতে পারে? অনেক সাহাবী শত শত হাফেজে কুরআনকে শহীদ করল। [ইমাম ইবনে কাসীরঃ আল-বেদায়া ওয়ান নেহায়া]

হাদিসের সঠিক ব্যাখ্যাঃ

❏ এ হাদীসের কোন কোন ব্যাখ্যাকারীও এ হাদীসের ব্যাখ্যায় ইয়াযীদকে ওই প্রথম যুদ্ধের সিপাহসালার ছিলো মর্মে লিখে ফেললেও এ প্রসঙ্গে সঠিক ব্যাখ্যা, অভিমত ও সিদ্ধান্ত নিম্বরূপ:

নিন্ম লিখিত প্রশ্নগুলোর জবাবেই এ প্রসঙ্গে সঠিক বিষয়টি বের হয়ে আসে:

১. ইস্তাম্বুলের উপর কতবার হামলা করা হয়েছিলো?

২. ইয়াযীদ তাতে শরীক ছিলো কিনা? শরীক থাকলেও কীভাবে? সিপাহ্সালার হিসেবে, না সাধারণ সৈন্য হিসেবে?

৩. তার এ অংশগ্রহণ কি তার ইচ্ছাকৃত ছিলো, না বাধ্য হয়ে যুদ্ধে রওনা হয়েছিলো? শরীক হলেও উক্ত হাদীস শরীফের সুসংবাদ তার বেলায় প্রযোজ্য কিনা?

উত্তরঃ প্রথম প্রশ্নের জবাবে সঠিক অভিমত হচ্ছে- ইস্তাম্বুলের উপর হামলা কয়েকবার হয়েছিলো:

৪৬ হিজরিতে হযরত আবদুর রহমান ইবনে খালিদের নেতৃত্বে, ৪৯ হিজরীতে সুফিয়ান ইবনে আউফের নেতৃত্বে, ৫২ হিজরীতে, অন্য এক বর্ণনায় ৫৫ হিজরিতে ইয়াযীদের নেতৃত্বে।উল্লেখ্য, এমন ক’টি যুদ্ধে হযরত আবূ আইয়ূব আনসারী [رضي الله عنه] শরীক ছিলেন এবং ৫২হিজরীতে তিনি সেখানে ওফাত পান এবং ওখানেই তাঁকে দাফন করা হয়।

কনস্টান্টিনিপোল (ইস্তাম্বুল) যে যুদ্ধে বিজিত হয়েছিলো, ওই যুদ্ধে ইয়াযীদ সিপাহ্সালার ছিলোনা; বরং একজন সাধারণ সৈন্য ছিলো।

[কামিল: ইবনুল আসীর]

❏ ইয়াযীদ ইস্তাম্বুল (কনস্টান্টিনিপোল)- এর যুদ্ধে সন্তুষ্টচিত্তে যায়নি; বরং তার পিতা হযরত আমীর মু‘আভিয়া [رضي الله عنه] কঠোর নির্দেশ দিয়ে এবং অন্যথায় কঠোর শাস্তি দেওয়ার ভয় দেখিয়ে তাকে যুদ্ধে পাঠিয়েছিলেন।কিন্তু সে পথিমধ্যে ‘ফারক্বাদূনা’ নামক স্থানে অসুস্থ হয়ে পড়ে এবং ওখানেই থেকে যায়।তখন সে বলেছিলো, ‘‘তখনতো আমার কোন পরোয়া নেই, যখন আমি ‘দিয়ারে সারান’-এ উঁচু কার্পেটে বসা আছি এবং আমার স্ত্রী উম্মে কালসূম আমার বগলে আছে।’’

সুতরাং ইয়াযীদ কোন মতেই ওই সুসংবাদের আওতায় আসবে না।সে ক্ষমা পাবার উপযোগী নয়।এমনকি মতান্তরে সিপাহ্সালার থাকলেও নয়।বিশেষ করে ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল [رضي الله عنه] প্রমুখ বলেছেন, ইয়াযীদ কাফির ছিলো। কাফির কোন সৎকর্মের কারণে মাগফিরাত পায় না।সুরা নিসার আয়াত নম্বর ১১ তে একথা এরশাদ হয়েছে।

[তথ্য সূত্রঃ তাহাফ্ফুযে আক্বাইﷺপৃ: ৬৬০, মিরআত শরহে মিশকাত: ৬ষ্ঠ খন্ড, বাংলা সংস্করণ, পৃ:২০৪]

পরিশেষে, ইয়াযীদ যেমন অভিশপ্ত তেমনি ইয়াযীদীরাও অভিশপ্ত, নির্লজ্জ ও অবিবেচক।অভিশাপ কাফিরকেই দেওয়া যায়।ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল [رحمه الله عليه] এজন্যই বলেছেন, ইয়াযীদ কাফির ছিলো, সে অভিশাপেরই উপযোগী।

❏ বিশ্ববিখ্যাত আক্বাইদগ্রন্থ ‘শরহে আক্বাইদ’-এ ইয়াযীদকে কাফির ও লা’নতী বলা হয়েছে।সুতরাং ইয়াযীদী তথা যারা ইয়াযীদের পক্ষে শাফাই গায় তারা ইসলামের দুশমন।

❏ সাওয়ায়েকে মুহরিকায় বর্ণিত আছে, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন,

আমার উম্মতের মধ্যে যে সর্ব প্রথম আমার সুন্নাহকে পরিবর্তন করে দিবে, সে হল বনু উমাইয়ার ইয়াজিদ।

[সূত্রঃ সাওয়ায়েকে মুহরিকা ২ / ৬৩৩]

❏ পক্ষান্তরে, হযরত ইমাম হোসাঈন [رضي الله عنه]) সত্যের উপর ছিলেন।তিনি ইয়াযীদ ও ইয়াযীদের বাতিল খিলাফতের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে শহীদ হয়ে ইসলামের গৌরবকেই অক্ষুন্ন রেখেছেন।এর পক্ষেও বহু অকাট্য প্রমাণ রয়েছে।আর হযরত আমীর মু‘আভিয়া [رضي الله عنه] একজন ন্যায়পরায়ণ সাহাবী ছিলেন।ইয়াযীদ তাঁর পুত্র ছিলো এবং তাঁর পরবর্তীতে ইসলামী রাষ্ট্রের শাসক হয়েছিলো।তা কীভাবে হলো এবং তজ্জন্য আমীর মু‘আভিয়া [رضي الله عنه]’কে দায়ী করা যাবে না এবং তাঁর বিরুদ্ধে অশালীন ও অমূলক সমালোচনা করা যাবে না।এ মর্মেও অনেক শরীয়তসম্মত ও ঐতিহাসিক প্রমাণাদি রয়েছে।

‘তাহাফ্ফুযে আক্বাইদ’, সাওয়া-ইক্বে মুহারিক্বাহ্, ‘‘হযরত আমীর মু‘আভিয়া’

[কৃত. মুফতী আহমদ ইয়ার খান]

ইয়াযীদ সম্পর্কে মহানবী (ﷺ) এর ভবিষ্যত বাণী

কারবালার হৃদয়বিদারক ঘটনার পূর্বাভাষ রাসূল ﷺ নিজেই দিয়ে গেছেন। এ ব্যাপারে অনেকগুলো সহীহ হাদিস রয়েছে। কোন কোন হাদিসে আবার সরাসরি এজিদের নামও উল্লেখ করা হয়েছে। নিচে কয়েকটি হাদিস উল্লেখ করে হলো।

১। তৃতীয় শতাব্দীর এক বিখ্যাত মুহাদ্দীস ইমাম আবু ইয়া’আল (رحمة الله) তাঁর মুসনাদ (ভলিঃ ২, পৃঃ ৭১) সহীহ সনদে উল্লেখ করেনঃ

"হযরত আবু উবায়দাহ বিন জাররাহ (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন – “মুসলিম উম্মাহর যাবতীয় কাজ কারবারে ততক্ষণ পর্যন্ত ন্যায়পরায়ণতা পরিলক্ষিত হবে যখন বনি উম্যায়াহ গোত্রের এক জন এসে দ্বীনের মধ্যে ফাটল ধরাবে। তার নাম হবে ইয়াজিদ।”

২। আরেক বিখ্যাত মুহাদ্দীস ইমাম সাহাবুদ্দীন আহমেদ বিন হাজর হায়তামী (رحمة الله) তাঁর আস-সাবাক আল-মুহরিকা গ্রন্থের ১৩২ পৃঃ ভিন্ন সনদে একই হাদীস উল্লেখ করেছেন।

"হযরত আবু দারদা (رضي الله عنه) বলেছেন, “আমি শুনেছিলাম রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন – আমার সুন্নাহকে পরিবর্তনকারী প্রথম ব্যক্তি হবে বনি উম্যায়াহ গোত্রের ইয়াজিদ”।

৩। হাফিজ ইবন কাছীর একই হাদীস উল্লেখ করেছেন তাঁর সুবিখ্যাত আল-বিদায়াহ ওয়ান-নিহ্যায়াহ গ্রন্থের ৬ষ্ঠ খণ্ডের ২৫৬ নং পৃষ্ঠায়। "হযরত আবুযার ঘিফারী (رضي الله عنه) থেকে। এই বর্ণনায় ‘যার নাম ইয়াজিদ হবে’ এই কথাটি অনুপস্থিত।

৪। হাদীসটি নিম্নোক্ত গ্রন্থেও বর্ণীত আছে।

মুসান্নাফ ইবন আবি শায়বা- খণ্ডঃ ৮, পৃঃ ৩৪১, হাদীস নং ১৪৫; দালাইল উন নবুয়্যাত লিল বায়হাকী আবওয়াব ঘাজওয়া তাবুক- হাদীস নং ২৮০২; মাতালিব আল-আলিয়্যাহ- হাদীস নং ৪৫৮৪।

৫। আমর বিন ইয়াহিয়া সায়ে’দ বিন আমর বিন সায়ে’দ তাঁর দাদার সূত্রে বর্ণনা করেন, "আমি হযরত আবু হুরায়রা (رضي الله عنه) এর সাথে মসজিদে নববীতে বসেছিলাম এবং মারওয়ান আমাদের সাথে ছিলেন। হযরত আবু হুরায়রা (رضي الله عنه) বলেছিলেনঃ “আমি শুনেছিলাম রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন, কুরাইশ বংশের কিছু যুবকদের দ্বারা আমার উম্মত ধ্বংস প্রাপ্ত হবে”। মারওয়ান বলেন, আল্লাহ এই ধরণের যুবকদের অভিশাপ দেন। হযরত আবু হুরায়রা (رضي الله عنه) বলেন, আমি বলতে পারি অমুক, অমুকের পুত্র অমুক, তমুকের পুত্র তমুক যদি আমি চাই। হযরত আমর বিন ইয়াহিয়া বলেন, আমি আমার দাদার সাথে বনী মারওয়ানে গিয়েছিলাম যখন তারা সিরিয়া নিয়ন্ত্রণ করছিল এবং এক জন যুবককে দেখতে পেলাম। আমার দাদা বললেন তারাও তাদের একজন হবে। আমরা বললাম তা আপনি ভাল বলতে পারবেন।

[সহীহ বুখারীঃ কিতাবুল ফিতনা, (আধুনিক প্রকাশনী- ৬৫৬৭, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৫৮০, তৌহিদ ফাউন্ডেশন - ৭০৫৮) ]

৬। হযরত আবু হুরায়রা (رضي الله عنه) সূত্রে বর্ণীত, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন- আল্লাহ তা’আলার সাহায্য প্রার্থনা কর ৭০ দশক হতে এবং এক যুবকের রাজত্বকাল হতে।

[মুসনাদ ইমাম আহমদ, হাদীস নং ৩৮০০]

৭। সহীহ বুখারী শারীফের ব্যাখ্যাকারী এবং ফাতহুল বারীর লেখক হাফিজ আহমদ বিন হাজর আসকলানী (رحمة الله) মুসান্নাফ ইবন আবি শায়বা সূত্রে বর্ণনা করেন, "হযরত আবু হুরায়রা (رضي الله عنه) বাজারে যাওয়ার সময় প্রার্থনা করত ‘ও আল্লাহ, আমাকে ৬০ হিজরী এবং যুবকের রাজত্বকাল পর্যন্ত বাঁচিয়ে রেখ না’

হাফিজ ইবন হাজর আসকলানী (رحمة الله) এর ব্যাখ্যা করতে গিয়ে বলেন, এই হাদীসে ৬০ হিজরীতে একজন শাসকের কথা বলা হয়েছে। হাদীস অনুসারে তাই ঘটে। ইয়াজিদ বিন মুয়্যাবিয়্যা এই বছরেই শাসনে বসেন এবং ৬৪ হিজরীতে মারা যান।

৮। সহীহ বুখারীর ব্যাখ্যাকারী ইমাম বদরুদ্দীন আইনি (رحمة الله) সুনির্দিষ্টভাবে উল্লেখ করেন, ‘প্রথম বালক যে শাসন করবে’এই কথা দ্বারা ইয়াজিদকে বুঝানো হয়েছে। [উমদাত উল কাদরী ভলি. ১৬, পেজ ৩৩৩]


________ সমাপ্ত ________

Comments

Popular posts from this blog

বালাকোট আন্দোলনের হাকীকত

সৈয়দ আহমদ বেরলভীর জম্ম ও পরিচয়

মওদুদীর ভ্রান্ত আক্বিদা ও ইসলামী আক্বিদা