আমীরে মুয়াবিয়া (রা.) সম্পর্কে বিতর্কের সমাধান

আমীরে মুয়াবিয়া (রা.) সম্পর্কে  বিতর্কের সমাধান

কৃতঃ আবু আইয়্যুব কাদেরী (সম্পাদিত)

শিয়া - রাফেজিরা আমীরে মুয়াবিয়াকে  নিয়ে বিভিন্নভাবে বিতর্কের সৃষ্টি করে।  অপবাদ ও অভিযোগের মাধ্যমে তাঁকে  মুনাফিক, কাফির, শরাবি, ইত্যাদি তকমা লাগিয়ে তার মান ও মর্যাদাকে আঘাত করার চেষ্টা করে । তাই আমার ঈমানী দায়িত্ব হিসাবে পর্ব ভিত্তিক আলোচনায় তাদের সমস্ত অভিযোগ বা অপবাদ ও তার সাপেক্ষে যেসব প্রমাণাদি পেশ করে সেগুলির খন্ডন করার এবং যথাযথ জবাব দেওয়ার চেষ্টা করবো ইনশাআল্লাহ যাতে বিতর্কের অবসান ঘটে এবং চিরকালের জন্য তাদের মুখ বন্ধ হয়ে যায়।

শিয়াদের প্রথম অভিযোগঃ আমীরে মুয়াবিয়া মওলা আলী বিদ্বেষী ছিলেন তাই তিনি মুনাফিক (নাউযুবিল্লাহ)

শিয়াদের অভিযোগ আমীরে মুয়াবিয়া মুনাফিক ছিলেন নাউযুবিল্লাহ কারণ তিনি মওলা আলী বিদ্বেষী ছিলেন এবং সেই বিদ্বেষে তাঁকে গালি দিতেন। এই মর্মে প্রথমে তারা সাধারণত যেসব হাদীসগুলি পেশ করে, তা নিম্নে উল্লেখ করলাম।

❏ হাদিস ১:

حَدَّثَنَا أَبُو بَكْرِ بْنُ أَبِي شَيْبَةَ، حَدَّثَنَا وَكِيعٌ، وَأَبُو مُعَاوِيَةَ عَنِ الأَعْمَشِ، وَحَدَّثَنَا يَحْيَى بْنُ يَحْيَى، - وَاللَّفْظُ لَهُ - أَخْبَرَنَا أَبُو مُعَاوِيَةَ، عَنِ الأَعْمَشِ، عَنْ عَدِيِّ بْنِ ثَابِتٍ، عَنْ زِرٍّ، قَالَ قَالَ عَلِيٌّ وَالَّذِي فَلَقَ الْحَبَّةَ وَبَرَأَ النَّسَمَةَ إِنَّهُ لَعَهْدُ النَّبِيِّ الأُمِّيِّ صلى الله عليه وسلم إِلَىَّ أَنْ لاَ يُحِبَّنِي إِلاَّ مُؤْمِنٌ وَلاَ يُبْغِضَنِي إِلاَّ مُنَافِقٌ ‏.‏

অর্থঃ তাবেয়ী জির বিন হুবাইশ হইতে বর্ণিত তিনি বলেন, হযরত আলী (رضي الله عنه) - ফরমান, সে মহান সত্তার শপথ, যিনি বীজ থেকে অংকুরোদগম করেন এবং জীবকুল সৃষ্টি করেন, আল্লাহর নবী (ﷺ) আমাকে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন যে, মুমিন ব্যক্তিই আমাকে ভালবাসবে আর মুনাফিক ব্যক্তি আমার সঙ্গে শক্রতা পোষণ করবে।

তথ্যসূত্রঃ

(১) মুসলিম শরিফ হাদীস নং-১৪৪

(২) মুসনাদে আহমাদ ইবনে হাম্বল, খন্ড-১ হাদীস নং-১০৬২

(৩) তিরমিজি শরিফ, খন্ড-৪, হাদীস নং-৩৭৩৬

(৪) ইমাম নাসায়ি, সুনান আসসুগরা, বাব- আলামাতুল মুনাফিক, হাদীস নং-৪৯৮২

(৫) নাসায়ি সুনানুল কুবরা, বাব-ফারকু বাইনাল মোমিন ওয়াল মুনাফিক হাদীস নং-৭২৫৭

(৬) ইবনে মাজাহ, বাব- ফাজায়েলুস সাহাবা, হাদীস নং-১১৪

(৭) মুসনাদে আবু ইয়ালা, হাদীস নং-৪২৫

(৮) মুসনাদে হুমাইদ, হাদীস নং-৫৮

(৯) সহি ইবনে হিব্বান, হাদীস নং- ৬৯২৪

(১০) মুসান্নাফে ইবনে আবি শাইবাহ, খন্ড-১২, হাদীস নং- ৩১৪৪৫

(১১) মুসনাদে বাজ্জার, হাদীস নং-৫১৪

(১২) ইমাম আহমাদ বিন হাম্বাল, ফাজায়েলে সাহাবা, হাদীস নং-১০৭২

(১৩) ইমাম আবু নুইয়েম, হিলইয়াতুল আউলিয়া, হাদীস নং-৫৩৪৪

(১৪) খাতিব বাগদাদি, তারিখে বাগদাদ, খন্ড-১৪, পৃষ্ঠা-৪২৬

(১৫) শারহ উসুলে এইতেকাদ, হাদীস নং-২১৬৬

(১৬) ইমাম হাকিম, মারেফাতে উলুমে হাদীস নং-৩৭২

এই হাদিস দ্বারা উদ্দেশ্য হল বদ আকিদাধারী, খারিজি মুনাফিক যারা আলী (রাঃ) এর চিরকালের শত্রু ছিল।

❏ হাদিস ২:

حَدَّثَنَا عُثْمَانُ بْنُ مُحَمَّدِ بْنِ أَبِي شَيْبَةَ وَسَمِعْتُهُ أَنَا مِنْ عُثْمَانَ بْنِ مُحَمَّدٍ قَالَ حَدَّثَنَا مُحَمَّدُ بْنُ فُضَيْلٍ عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ عَبْدِ الرَّحْمَنِ أَبِي نَصْرٍ قَالَ حَدَّثَنِي مُسَاوِرٌ الْحِمْيَرِيُّ عَنْ أُمِّهِ قَالَتْ سَمِعْتُ أُمَّ سَلَمَةَ تَقُولُ سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُولُ لِعَلِيٍّ لَا يُبْغِضُكَ مُؤْمِنٌ وَلَا يُحِبُّكَ مُنَافِقٌ

হজরতে উম্মে সালমা হইতে বর্ণিত তিনি বলেন আমি আল্লাহর রসুল (ﷺ)কে আলীকে (رضي الله عنه) উদ্দেশ্য করে বলতে শুনেছি কোন মোমিন তোমার প্রতি বিদ্বেষ রাখবে না আর কোন মুনাফিক তোমাকে মুহাব্বত করবে না।

তথ্যসূত্রঃ

[মুসনাদে আহমাদ, হাদীস নং-৬৪১৩, ইমাম আহমাদ বিন হাম্বাল, ফাজায়েলুস সাহাবা, হাদীস নং-১১৬৯]

এই হাদিস দ্বারা উদ্দেশ্য হল বদ আকিদাধারী, খারিজি মুনাফিক যারা আলী (রাঃ) এর চিরকালের শত্রু ছিল।

❏ হাদিস ৩:

حدثنا أبو جعفر أحمد بن عبيد الحافظ بهمدان ثنا الحسن بنعلي الفسوي ثنا إسحاق بن بشر الكاهلي ثنا شريك عن قيس بن مسلم عن أبي عبد الله الجدلي عن أبي ذر رضي الله عنه قال ما كنا نعرف المنافقين الا بتكذيبهم الله ورسوله والتخلف عن الصلوات والبغض لعلي بن أبي طالب رضي الله عنه

আবু জির (رضي الله عنه) হইতে বর্ণিত তিনি বলেন আমরা মুনাফিক চিনতাম শুধু আল্লাহ ও তার রসুলকে অস্বীকার করার মাধ্যমে, নামাজে গাফিলতির মাধ্যমে এবং মওলা আলীর প্রতি বিদ্বেষের মাধ্যমে।

তথ্যসূত্রঃ

[হাকিম আল মুস্তাদরাক, খন্ড-৩, হাদীস নং-৪৬৪৩]

এই হাদিস দ্বারা উদ্দেশ্য হল বদ আকিদাধারী, খারিজি মুনাফিক যারা আলী (রাঃ) এর চিরকালের শত্রু ছিল।

অভিযোগের জবাবঃ

উদ্ধৃত হাদীসগুলির মাধ্যমে বোঝা যায় মওলা আলীর প্রতি বিদ্বেষ রাখা মুনাফিকের চিহ্নের মধ্যে একটি চিহ্ন।আমীরে মুয়াবিয়াকে মুনাফিক হিসাবে চিহ্নিত করার, যে প্রথম কারণটি তারা পেশ করে তা হলো আমীরে মুয়াবিয়া বিদ্বেষ বসত মওলা আলীকে গালাগালি দিতেন। কিন্তু বিষয় হলো, তাদের এই দাবির বাস্তবতা কি এবং তাদের দাবি বা অভিযোগ প্রমাণের সাপেক্ষে যে দলিল পেশ করে তা দেখে নেওয়া দরকার। তারা তাদের দাবির সাপেক্ষে যেসব দলিল পেশ করে তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো নিম্নোক্ত হাদীস।

হযরত হাসান (رضي الله عنه) ও আমিরে মুয়াবিয়া (রা.) এর মধ্যে সমঝােতাঃ

হযরত আবু বকর (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করিম (ﷺ) এর একদিন হযরত হাসান (رضي الله عنه) কে নিয়ে বেরিয়ে এলেন এবং তাঁকেসহ মিম্বরে আরােহণ করলেন। তারপর বললেন, আমার এ ছেলেটি (নাতী) সাইয়্যেদ তথা সরদার। নিশ্চয়ই আল্লাহ তায়ালা এর মাধ্যমে বিবাদমান দু’দল মুসলমানের আপােস (সমঝােতা) করিয়ে দেবেন।

এখানে লক্ষ্যনীয় যে, স্বয়ং রাসূলুল্লাহ (দ.) দুইটি মুসলমান দল বলেছেন। তিনি কোন দলকে মুনাফিক বলে সম্বোধন করেন নি। এ হাদিস দ্বারা শিয়াদের কাফির মুনাফিক ফতোয়ার জবাব দেয়া যায়।

শিয়াদের দ্বিতীয় অভিযোগঃ আমীরে মুয়াবিয়া মওলা আলী (رضي الله عنه) কে গালি দিতেন।

❏ হাদিস ৪:

باب مِنْ فَضَائِلِ عَلِيِّ بْنِ أَبِي طَالِبٍ رضى الله عنه ‏‏

حَدَّثَنَا قُتَيْبَةُ بْنُ سَعِيدٍ، وَمُحَمَّدُ بْنُ عَبَّادٍ، - وَتَقَارَبَا فِي اللَّفْظِ - قَالاَ حَدَّثَنَا حَاتِمٌ، - وَهُوَ ابْنُ إِسْمَاعِيلَ - عَنْ بُكَيْرِ بْنِ مِسْمَارٍ، عَنْ عَامِرِ بْنِ سَعْدِ بْنِ أَبِي وَقَّاصٍ، عَنْ أَبِيهِ، قَالَ أَمَرَ مُعَاوِيَةُ بْنُ أَبِي سُفْيَانَ سَعْدًا فَقَالَ مَا مَنَعَكَ أَنْ تَسُبَّ أَبَا التُّرَابِ فَقَالَ أَمَّا مَا ذَكَرْتُ ثَلاَثًا قَالَهُنَّ لَهُ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم فَلَنْ أَسُبَّهُ لأَنْ تَكُونَ لِي وَاحِدَةٌ مِنْهُنَّ أَحَبُّ إِلَىَّ مِنْ حُمْرِ النَّعَمِ

سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم يَقُولُ لَهُ خَلَّفَهُ فِي بَعْضِ مَغَازِيهِ فَقَالَ لَهُ عَلِيٌّ يَا رَسُولَ اللَّهِ خَلَّفْتَنِي مَعَ النِّسَاءِ وَالصِّبْيَانِ فَقَالَ لَهُ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم ‏"‏ أَمَا تَرْضَى أَنْ تَكُونَ مِنِّي بِمَنْزِلَةِ هَارُونَ مِنْ مُوسَى إِلاَّ أَنَّهُ لاَ نُبُوَّةَ بَعْدِي ‏"‏ ‏.‏ وَسَمِعْتُهُ يَقُولُ يَوْمَ خَيْبَرَ ‏"‏ لأُعْطِيَنَّ الرَّايَةَ رَجُلاً يُحِبُّ اللَّهَ وَرَسُولَهُ وَيُحِبُّهُ اللَّهُ وَرَسُولُهُ ‏"‏ ‏.‏ قَالَ فَتَطَاوَلْنَا لَهَا فَقَالَ ‏"‏ ادْعُوا لِي عَلِيًّا ‏"‏ ‏.‏ فَأُتِيَ بِهِ أَرْمَدَ فَبَصَقَ فِي عَيْنِهِ وَدَفَعَ الرَّايَةَ إِلَيْهِ فَفَتَحَ اللَّهُ عَلَيْهِ وَلَمَّا نَزَلَتْ هَذِهِ الآيَةُ ‏(‏ فَقُلْ تَعَالَوْا نَدْعُ أَبْنَاءَنَا وَأَبْنَاءَكُمْ‏)‏ دَعَا رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم عَلِيًّا وَفَاطِمَةَ وَحَسَنًا وَحُسَيْنًا فَقَالَ ‏"‏ اللَّهُمَّ هَؤُلاَءِ أَهْلِي ‏"‏

আমির ইবনে সা'দ তার পিতা সা’দ ইবনে আবূ ওয়াককাস (رضي الله عنه) থেকে বর্ণনা করেন যে, আমীরে মুআবিয়া ইবনে আবূ সুফিয়ান (رضي الله عنه) সা’দ (رحمة الله) কে আমীর বানালেন এবং বললেন, (বলুন তো) আলী (رضي الله عنه) কে গালি দিতে কিসে বাধা দেয়? সা’দ বললেন, রাসুলুল্লাহ (ﷺ) তার সম্পর্কে যে তিনটি কথা বলেছেন তা মনে করে এ কারণে আমি কখনও তাকে গালি দিব না। ওসব কথার মধ্য হতে যদি একটিও আমি লাভ করতে পারতাম তাহলে তা আমার জন্য লাল উটের চেয়েও বেশি পছন্দনীয় হতো।

i) রাসুলুল্লাহ (ﷺ) কে আলী (رضي الله عنه) এর উদ্দেশ্যে বলতে শুনেছি, মওলা আলীকে কোন যুদ্ধের সময় প্রতিনিধি বানিয়ে রেখে গেলেন। তিনি বললেন, মহিলা ও শিশুদের মাঝে আমাকে রেখে যাচ্ছেন, ইয়া রাসুলাল্লাহ! তখন আল্লাহর রসুল (ﷺ) বললেন, তুমি কি এতে আনন্দবোধ কর না যে, আমার কাছে তোমার মর্যাদা মূসা (عليه السلام) এর কাছে হারুন (عليه السلام) এর মতো। তবে মনে রাখতে হবে যে, আমার পর আর কোন নবী নেই।

ii) খায়বারের যুদ্ধের দিন রাসুলুল্লাহ (ﷺ) কে আমি বলতে শুনেছি, আমি এমন এক ব্যক্তিকে পতাকা দেবো যে আল্লাহ ও তার রাসুল (ﷺ) কে ভালবাসে আর আল্লাহ ও তার রাসুলও তাকে ভালবাসেন। এ কথা শুনে আমরা অপেক্ষা করতে থাকলাম। তখন তিনি বললেন, আলীকে ডাকো। আলী আসলেন, তাঁর চোখ উঠেছিলো। রাসুলুল্লাহ (ﷺ) তাঁর চোখে লালা দিলেন এবং তাঁর হাতে পতাকা অর্পণ করলেন। পরিশেষে তাঁর হাতেই বিজয় তুলে দিলেন আল্লাহ।

iii) আর যখন এই আয়াতঃ “আমরা আমাদের সন্তান-সন্ততিকে ডাকি তোমরা তোমাদের সন্তান-সন্ততিকে ডাকো অবতীর্ণ হলো, তখন আল্লাহর রসুল (ﷺ) আলী, ফাতিমা, হাসান ও হুসায়ন (رضي الله عنه) কে ডাকলেন। অতঃপর বললেন হে আল্লাহ! এরাই আমার পরিবার।

তথ্যসূত্রঃ

(১) সহি মুসলিম কিতাবুল ফাজায়েল, হাদীস নং-৬০০২

(২)সুনানে তিরমিজি, কিতাবুল মানাকিব, হাদীস নং-৩৩৫৮

(৩) সুনানে নাসায়ি, কিতাবুল খাসায়েস হাদীস নং-৭১৬৯

(৪) হাকিম আল মুস্তাদরাক, কিতাবুল মারেফাত, হাদীস নং-৪৫৫২

প্রথম উত্তরঃ

উক্ত হাদীসের উপর আমার জবাব, উক্ত হাদীসে تَسُبَّ শব্দ যার অর্থ গালি হলেও নিন্দা বা দোষ ত্রুটি বর্ণনা করাও হয়। যেমন আরবী হইতে ইংরেজি অভিধান ম'জুমুল মাআনিতে تَسُبَّ এর শব্দের অর্থ লেখা আছে blaspheming -নিন্দা, opp(رضي الله عنه) ob(رضي الله عنه)ium - যার অর্থও নিন্দা

অর্থাৎ উক্ত অংশটির مَا مَنَعَكَ أَنْ تَسُبَّ أَبَا التُّرَابِ অর্থ হবে আবু তুরাবকে নিন্দা করতে কিসে বাধা দেয়..? দ্বিতীয় উক্ত হাদীস সম্পর্কে যদি বলা যায়, উলমায়ে কিরামদের মধ্যে অনেকেই অনেক ব্যখ্যা দিয়েছেন। কেও কেও ইতিবাচক ব্যাখ্যা দিয়েছেন আবার কেও কেও নেতিবাচক। তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেন ইমাম নববী, ইমাম কুরতুবী, আল্লামা আলুসি আরো অনেকে। আমি তাঁদের ব্যাখ্যার দিকে না গিয়ে উক্ত হাদীসের উপর যৌক্তিক ও দলিল ভিত্তিক আলোচনা করা চেষ্টা করবো ইনশাআল্লাহ। তাই কারোর যদি আমার ব্যাখ্যা খন্ডন করার হয় সে যেন যথাযথ যুক্তি ও দলিল পেশ করে। আর কেও এ যেন মনে না করে আমার বক্তব্য খন্ডন করতে উলামাদের উক্তি দিয়ে খালাস হওয়ার সুযোগ আছে কারণ যৌক্তিকতার খাতিরে উলামায়ে কিরামদের সাথে দ্বিমত করা যেতে পারে। তাই হাদীস সম্বন্ধে আমি যে যৌক্তিক আলোচনা করবো বা দলিল পেশ করবো, তাদেরকেও যুক্তি ও দলিল দিয়েই তা খন্ডন করতে হবে। যাইহোক হাদীসের বিষয়বস্তুর দিকে আসা যাক। যদি তাদের অর্থ ধরা যায় تَسُبَّ অর্থ গালি তারপরেও, তাদের অভিযোগ প্রমাণিত নয় কারণ হাদীস লক্ষ করলে বোঝা যায় আমীরে মুয়াবিয়া সা'দকে আমীর হিসাবে নিয়োজিত করে তাকে মওলা আলীকে গালি দিতে বাধা কিসের সে বিষয়ে জিজ্ঞাসা করেছিলেন মাত্র অর্থাৎ আলীকে গালি দিতে তোমার জিভে বাঁধে কিনা। যদি বাঁধে তার কারণ কি, এটাই ছিলো তাঁর উদ্দেশ্য। তাঁর জিজ্ঞাসাতে প্রমাণ হয়না তিনি সা'দকে গালি দিতে হুকুম দিয়েছিলেন বরং প্রমাণ হয় তিনি সা'দকে আমীর বানিয়ে, তার পরীক্ষা নিচ্ছিলেন যে মওলা আলী গালি দিতে বাধা কেন (ভয় ও নাকি তার মর্যাদা)? অর্থাৎ জিজ্ঞাসা করে দেখছিলেন অপর দিক থেকে উত্তর কি আসে এমন তো নয় তাদের মধ্যে বিভেদের কারণে মওলা আলীর প্রতি কোন অশালীন মন্তব্য মনের মধ্যে পুষে রেখেছেন!! আসলে উদ্দেশ্য ছিলো হজরতে সা'দের ধারণা জানা তাই যখন হজরতে সা'দের কাছ থেকে আশানুরূপ উত্তর পেলেন, তার কোন প্রতিউত্তর করলেন না। যদি গালি দেওয়ার হুকুম দিতেন তাহলে হজরতে সা'দের উত্তরের পর আমীরে মুয়াবিয়া তার প্রতি উত্তরে নিশ্চয়ই কিছু না কিছু বলতেন। তাঁর চুপ থাকা প্রমাণ করে, যে উত্তর তিনি আশা করছিলেন সেটাই পেয়েছিলেন তাই কোন প্রতিউত্তর করেননি। শিয়াদের দাবী অনুযায়ী তিনি যদি বিদ্বেষ বসত মওলা আলীকে গালি দিতেন, তাহলে তাদের কাছে আমার প্রশ্ন থাকবে, তিনি যাকে আমীর বানিয়েছেন তার কাছ থেকে মওলা আলীর প্রশংসা শুনে রাগের প্রকাশ না দেখিয়ে কিংবা তার প্রতিউত্তর না করে কিংবা তাকে চুপ করে যাওয়ার জন্য আদেশ না করে তার ফজিলত শুনতে থাকলেন!! কিছু বললেন না কেন .? মওলা আলীর ফজিলত শুনে প্রতিউত্তর না করা প্রমাণ করে শিয়াদের এই অভিযোগ অবান্তর।কারণ কেও কারোর প্রতি বিদ্বেষ রাখে আর তারই নিযুক্ত আমীরের কাছ থেকে সেই ব্যক্তির প্রশংসা শুনে চুপ থাকবেন তা হতে পারে না।

দ্বিতীয় উত্তরঃ

আপনারা জানেন যে, হাদিসের দুইটি অংশ থাকে একটি সনদ আর একটি মতন। উপরে হাদিসে যে ঘটনাটি বর্ণনা করা হয়েছে তা হচ্ছে মতন আর যার মারফত আমরা এই ঘটনা জানতে পারছি তাকে রাবি বলে এবং রাবিদের সিলসিলাকে সনদ বলে। হাদিসের উসুল সম্পর্কে যারা সামান্য জ্ঞান রাখেন তারা জানেন যে, অনেক সময় সহি হাদিসের মতন সহি নাও হতে পারে বা মতনের উপর সন্দেহ থাকতে পারে। হাদিসে অনেক প্রকার আছে, তার মধ্যে একটি হচ্ছে খবরে ওয়াহিদ। মানে যে হাদিসটি শুধুমাত্র একজন সাহাবীর বর্ণনা থেকে পাওয়া যায় তাকে খবরে ওয়াহিদ হাদিস বলে থাকে।

উপরের হাদিসটিও খবরে ওয়াহিদ হাদিস। আর খবরে ওয়াহিদ মতনে সন্দেহাতীত নয় তাতে সন্দেহ থাকে যেমনঃ

 فهو كذالك فى حق السنّة الّا انّ الشبهة فى باب الخبر فى ثبوته من رسول الله صلى الله عليه وسلم واتصاله به ولهذا المعنى صار الخبر على ثلثة اقسام صحّ من رسول اللهصلى الله عليه وسلم وثبت منه بلاشبهة وهو المتواتر وقسم فيه ضرب شبهة وهو المشهور قسم فيه ا حتمال و شبهة وهو الاحاد

❏ খবরের মধ্যে উহা নবী (ﷺ) থেকে প্রমাণিত কিনা এবং নবীর (ﷺ) পর্যন্ত বর্ণনা দ্বারা পৌছেছে কিনা তাতে সন্দেহ সৃষ্টি হয়ে থাকে এ জন্য খবর তিন প্রকার

১. যা নবী করিম (ﷺ) হইতে সন্দেহাতীতভাবে সহীহ হিসেবে প্রমাণিত হয়েছে তাহাই খবরে মুতাওয়াতির।

২. যাতে একপ্রকার সন্দেহ রয়েছে তাহা হল খবরে মাশহুর।

৩. যাতে সন্দেহ সংশয় উভয় রয়েছে তাকে খবরে আহাদ বলে ।

[উসুলে শাশীর ২৮৯ পৃষ্ঠা, ইসহাক হাকিম আল রুমিরর (৯৫০হিজরি) লিখিত শারহ ফিকহুল আকবারের ৮১ পৃষ্ঠায় এবং আলাউদ্দিন বুখারীর (৮৪১ হিজরি) লিখিত কাস্ফুল আসরারের-১৪ পৃষ্ঠা]

অতএব বলা যেতে পারে যে বর্ণনাতে সরাসরি সন্দেহ থাকে সেটাই খাবরে ওয়াহিদ। উদ্ধৃত বর্ণনায় বর্ণনাদাতা হচ্ছেন একমাত্র সা'দ বিন আবি ওয়াকাস, তার থেকে একমাত্র বর্ণনাকারী হিসাবে বর্ণনা করেছেন আমির বিন সা'দ বিন আবি ওয়াকাস। তিনি ব্যতীত হজরতে সা'দ বিন আবি ওয়াকাসের কাছ থেকে কোন সাহাবী বা তাবেয়ি এই বর্ণনা শুনেছেন বলে তার প্রমাণ নেই। তাছাড়া আমির বিন সা'দের কাছ থেকে একমাত্র শ্রোতা হলেন বুকাইর বিন মিস্মার, তিনি ছাড়া অন্য কোন রাবি পাওয়া যায়নি। যদি আরো খুলে বলা যায় হাদীসটি খবরে ওয়াহিদ তো বটেই, সনদের দিক থেকে অতিমাত্রায় গরীব প্রকৃতির।

আর যারা উসুল সম্বন্ধে জ্ঞাত, তারা জানেন উসুলে হাদীস অনুযায়ী গরীব হাদীসের মতনও গরীব হয়। যেমনঃ

❏ ইবনে স্বালেহ লেখেন,

الحديث الذي يتفرد به بعض الرواة يوصف بالغريب"، وكذلك الحديث الذي يتفرد فيه بعضهم بأمر لا يذكره فيه غيره إما في متنه وإما في إسناده .

গরিব সেই হাদীসকে বলা হয়, কতক রাবি একক যা বর্ণনা করে অনুরূপ কোন রাবি যদি হাদীসের কোন অংশ একলা বর্ণনা করে, সেক্ষেত্রে সনদ হোক আর মতনের অংশ হোক উভয় গরিব।

(উলুমে হাদীস গ্রন্থের ৪৭০ পৃষ্ঠা)

তাই কারোর উপর আরোপিত অভিযোগকে প্রমাণ করতে সন্দেহাতীত দলিল বা প্রমাণ লাগে যা একমাত্র খবরে মুতাওয়াতিরে সম্ভব। এমন খবর যার মধ্যে সন্দেহের অবকাশ আছে তার উপর ভিত্তি করে কাওকে দোষী বানানো স্বার্থপরতা ও গা জোয়ারি ছাড়া কিছু না। তাছাড়া সনদে বুকাইর বিন মিস্মার সম্বন্ধে ইমামগন সমালোচনাও করেছেন যেমন নিম্নে তার দলিল দেওয়া হলো।

হাদিসের সনদ মানঃ

بكير بن مسمار (1) أخبرنا ابن حماد قال: قال البخاري بكير بن مسمار أخو مهاجر بن مسمار روى عنه أبو بكر الحنفي في حديثه بعض النظر

❏ খবর দিলেন ইবনে হাম্মাদ তিনি বলেন ইমাম বুখারী বলেছেন বুকাইর বিন মিসমার হলো মুহাজির বিন মিসমারের ভাই, আবু বকর হানাফি তার থেকে বর্ণনা করে থাকেন তার হাদীসে সমালোচনা আছে ।

[তাহজিবুল কামাল, খন্ড-২, পৃষ্ঠা-৪২]

إسناده ضعيف ؛ لضعف بكير بن مسمار،

❏ ইহার সনদ জইফ, বুকাই বিন মিসমার জইফ হওয়ার কারণে।

[তারিখুল বাগদাদ, খন্ড-৬ পৃষ্ঠা-৩০৩]

ابن حبان بينه وبين بكير بن مسمار أخي مهاجر بن مسمار فذكر هذا في الضعفاء فقال: كان مرجئا يروي ما لا يتابع عليه وهو قليل الحديث على مناكير فيه

❏ ইবনে হিব্বান বয়ান করেন বুকাইর বিন মিসমার ছিলেন মুহাজির বিন মিসমারের ভাই এবং আরো বলেন সে জইফের অন্তর্ভুক্তদের মধ্যে ছিলো। সে যেটা অনুসরণ করতো না সেই বর্ণনা থেকে বিরত থাকতো আর এমন কিছু হাদীস ছিলো যেগুলিতে মুনকার বর্ণনাকারী ছিলো।

[লিসানুল মিজান, রাবি নং-১৬১৯]

উক্ত হাদীসের মতন শুধু সন্দেহজনক নয় বরং একজন রাবি মুনকার হাদীস বর্ণনাতে অভিযুক্ত। আর যে নিজেই অভিযুক্ত, তার সাক্ষী দ্বারা কারোর প্রতি আরোপিত অভিযোগ প্রমাণ করা সম্ভব নয়।এমতাবস্থায় হয়তো কেও বলতে পারে মুসলিম শরিফের হাদীসের উপর জেরা করেন কি করে? মুসলিম শরিফের হাদীসও অস্বীকার করবেন? এর উত্তরে আমি বলবো হ্যাঁ কারণ মুসলিম হোক আর বুখারী হোক কিংবা হাদীসের যেকোন গ্রন্থ হোক খবরে ওয়াহিদ অস্বীকার করার সুযোগ আছে, কারণ খাবরে মুতাওয়াতিরে মতন যতটা নিক্ষুত বা সন্দেহাতীত হয় খাবরে ওয়াহিদের হয় না। তাছাড়া ইমাম মুসলিম যত বড় মুহাদ্দিস হন তিনি নবী নন যে তিনি নির্ভুল! ইজতেহাদ একেবারে নিক্ষুঁত হবে এমন নয়, ভুল হতেই পারে। যেহেতু সনদে একজন রাবি বিতর্কিত তাই এমন সাক্ষ্যের মাধমে আরোপিত অভিযোগ প্রমাণ করা যাবে না। তাই বলা যায় উক্ত হাদীসের ভিত্তিতে শিয়াদের অভিযোগ প্রমাণ হয় না।

❏ হাদিস ৫:

পরের প্রমাণ হিসাবে শিয়ারা যে বর্ণনা পেশ করে, তা নিম্নে উল্লেখ করা হলোঃ

بَاب فَضْلِ عَلِيِّ بْنِ أَبِي طَالِبٍ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ

حَدَّثَنَا عَلِيُّ بْنُ مُحَمَّدٍ، حَدَّثَنَا أَبُو مُعَاوِيَةَ، حَدَّثَنَا مُوسَى بْنُ مُسْلِمٍ، عَنِ ابْنِ سَابِطٍ، - وَهُوَ عَبْدُ الرَّحْمَنِ - عَنْ سَعْدِ بْنِ أَبِي وَقَّاصٍ، قَالَ قَدِمَ مُعَاوِيَةُ فِي بَعْضِ حَجَّاتِهِ فَدَخَلَ عَلَيْهِ سَعْدٌ فَذَكَرُوا عَلِيًّا فَنَالَ مِنْهُ فَغَضِبَ سَعْدٌ وَقَالَ تَقُولُ هَذَا لِرَجُلٍ سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ ـ صلى الله عليه وسلم ـ يَقُولُ ‏"‏ مَنْ كُنْتُ مَوْلاَهُ فَعَلِيٌّ مَوْلاَهُ ‏"‏ ‏.‏ وَسَمِعْتُهُ يَقُولُ ‏"‏ أَنْتَ مِنِّي بِمَنْزِلَةِ هَارُونَ مِنْ مُوسَى إِلاَّ أَنَّهُ لاَ نَبِيَّ بَعْدِي ‏"‏ ‏.‏ وَسَمِعْتُهُ يَقُولُ ‏"‏ لأُعْطِيَنَّ الرَّايَةَ الْيَوْمَ رَجُلاً يُحِبُّ اللَّهَ وَرَسُولَهُ ‏"‏ ‏.‏

সা’দ ইবনে আবি ওয়াক্কাস (رضي الله عنه) হইতে বর্ণিত। তিনি বলেন, মুয়াবিয়া (رضي الله عنه) একবার হজ্জ করতে আসেন। সা’দ (رضي الله عنه) তার নিকট সাক্ষাত করতে এলে (رضي الله عنه) লোকেরা মওলা আলী সম্পর্কে অশোভন উক্তি করে। এতে সা’দ (رضي الله عنه) অসন্তুষ্ট হন এবং বলেন, তোমরা এমন এক ব্যাক্তি সম্পর্কে কটূক্তি করলে যার সম্পর্কে আমি রাসূলূল্লাহ্ (ﷺ) কে বলতে শুনেছিঃ আমি যার মওলা,আলী তার মওলা। আমি নাবী (ﷺ) কে আরো বলতে শুনেছি তুমি আমার কাছে ঐরূপ যেরূপ ছিলেন হারূন (عليه السلام) মূসা (عليه السلام) এর নিকট। তবে আমার পরে কোন নবী নেই। আমি তাঁকে( নবী (ﷺ) কে)বলতে শুনেছিঃ আজ (খায়বার যুদ্ধের দিন) আমি অবশ্যই এমন ব্যাক্তির হাতে (যুদ্ধের) পতাকা অর্পণ করবো, যে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলকে ভালোবাসে।

তথ্যসূত্রঃ

১.সুনানে ইবনে মাজাহ, কিতাবুল মুকাদ্দামা, হাদীস নং-১২১

২.মুসান্নাফে ইবনে আবি শাইবাহ, হাদীস নং-৩১৩৫৯

উক্ত হাদীসও তাদের দাবীর আরো একটি দলিল।তবে এর উত্তরে প্রথমে বলবো এখানে কিন্তু আমীরে মুয়াবিয়া কোন অশোভন উক্তি করেননি,না তিনি কাওকে এমন করতে আদেশ দিয়েছেন বলে উক্ত হাদীসে জানা যায়।বরং হাদীসে আছে আমীরে মুয়াবিয়া হজে এসেছিলেন সেখানে হজরতে সা'দ তাঁর সহিত সাক্ষাৎ করতে আসেন। হজে উপস্থিত লোকেরা মওলার সম্বন্ধে কিছু অশোভন উক্তি করে। বিষয় হলো হজে উপস্থিত লোকেরা যদি মওলা আলী সম্বন্ধে অশোভন উক্তি করে তার জন্য আমীরে মুয়াবিয়া দায়ী হবেন কেণ? তাছাড়া সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো হজে উপস্থিত অন্যান্যরা কেও অশোভন উক্তিগুলি শুনলো না, না কেও বর্ণনা করলো। পুর্বের ন্যায় এখানে শুধু হজরতে সা'দই মওলা আলীকে গালি দিতে শুনলেন আর তিনিই একমাত্র তা বর্ণনা করলেন, সেক্ষেত্রে বর্ণনা সম্বন্ধে একটা সন্দেহ থেকেই যায়। তৃতীয় হাদীসটি সনদের দিক থেকেও গ্রহনযোগ্য নয় তার কারণ নিম্নে উল্লেখ করলাম।

قيل ليحيى بن معين: سمع عبد الرحمن من سعد بن أبي وقاص؟ قال: لا. قيل: من أبي أمامة؟ قال: لا. قيل: من جابر؟ قال: لا؛ هو مرسل

❏ ইহাইয়া ইবনে মইনকে জিজ্ঞাসা করা হলে, বলেন আব্দুর রাহমান হজরতে সা'দের কাছ থেকে হাদীস শুনেছেন? তিনি উত্তর দিলেন, না। জিজ্ঞাসা করা হলো আবু উমামা থেকে? তিনি উত্তর দিলেন, না। জিজ্ঞাসা করা হলো হজরতে জাবির থেকে? তিনি উত্তর দিলেন, না।

তথ্যসূত্রঃ

[ত্যাহজিবুত ত্যাহজিব খন্ড-৬, পৃষ্ঠা-১৮০]

সনদ পর্যালোচনা করার পর জানা যায় উক্ত হাদীসে আব্দুর রাহমান ইবনে সাবিত কোন হাদীসই সরাসরি হজরতে সা'দ থেকে শোনেননি অতএব বলা যেতে পারে হজরতে সা'দ যে বর্ণনা করেছেন তা প্রমাণিত নয়। যেহেতু বর্ণনাটির যথাযথ সাক্ষী নেই সেক্ষেত্রে যথাযথ সাক্ষী না থাকায় ইহা গ্রহনযোগ্য হবে না এবং এই প্রমাণের দ্বারা কাওকে দোষী সাব্যস্ত করা যাবে না । এখানেও তাদের অভিযোগ প্রত্যাখ্যাত।

তাদের অভিযোগের সাপেক্ষে আরো একটি দলিল পেশ করে তা নিম্নে উল্লেখ করা হলোঃ

❏ হাদিস ৬:

وقال أبو زرعة الدمشقي: ثنا أحمد بن خالد الذهبي أبو سعيد ثنا محمد بن إسحاق عن عبد الله بن أبي نجيح عن أبيه قال: ” لما حج معاوية وأخذ بيد سعد بن أبي وقاص فقال يا أبا إسحاق إنا قوم قد أجفانا هذا الغزو عن الحج حتى كدنا أن ننسى بعض سننه فطف نطف بطوافك، قال: فما فرغ أدخله دار الندوة فأجلسه معه على سريره ثم ذكر علي بن أبي طالب فوقع فيه فقال: أدخلتني دارك وأجلستني على سريرك ثم وقعت في علي تشتمه؟

আব্দুল্লাহ ইবনে নাজিহ তাঁর পিতা হইতে বর্ণনা করেন তার পিতা বলেন যখন হজরতে আমীরে মুয়াবিয়া হজে গেলেন হজরতে সাদ বিন আবি বাকাসের হাত ধরলেন এবং বললেন হে আবু ইসহাক যুদ্ধ আমাদেরকে হজ থেকে আঁটকে রেখেছিলো সম্ভবনা ছিলো আমরা তার নিয়মগুলি ভুলে যেতাম। এখন আপনি তাওয়াফ করতে থাকুন আপনাকে তাওয়াফ করতে দেখে আমরাও তাওয়াফ করবো।যখন হজ থেকে বেরিয়ে এলেন তখন দারুল নাদওয়াতে নিয়ে গেলেন আর আমীরে মুয়াবিয়ার তার ঘরের খাটে নিজের সাথে হজরতে সা'দকে বসালেন। অতঃপর হজরতে আলীর কথা উঠলে তাঁর সম্বন্ধে উল্টোপাালটা বলতে শুরু করে দেন হজরতে সা'দ বললেন আপনি নিজের ঘরে খাঠের উপর নিজের সাথে বসিয়ে মওলা আলীকে গালি বলতে শুরু করে দিলেন?

তথ্যসূত্রঃ

[ইবনে কাসীরঃ আল বিদায়াহ ওয়ান নিহাইয়াহ, খন্ড-৭ পৃষ্ঠা-৩৭৬]

উক্ত বর্ণনাটি আমীরে মুয়াবিয়ার প্রতি শিয়ারা তাদের অভিযোগ প্রমাণার্থে যে দলিলগুলি দেয়, তার মধ্যে এটি অন্যতম।তবে এই বর্ণনার উপর আমার জবাব হলো উক্ত হাদীস ও এর পুর্বের হাদীস লক্ষ করলে, দেখা যায় , এর পুর্বের বর্ণনায় ছিলো আমীরে মুয়াবিয়া হজে এলে, হজরতে সা'দ নিজে আমীরে মুয়াবিয়ার নিকট সাক্ষাত করতে গিয়েছিলেন কিন্তু উক্ত বর্ণনায় আছে আমীরে মুয়াবিয়া হজরতে সা'দের হাত ধরে বলছেন হে আবু ইসহাক যুদ্ধ আমাদেরকে হজ থেকে আঁটকে রেখেছিলো সম্ভবনা ছিলো আমরা তার নিয়মগুলি ভুলে যেতাম। এখন আপনি তাওয়াফ করতে থাকুন আপনাকে তাওয়াফ করতে দেখে আমরাও তাওয়াফ করবো। এবং পরে হজ শেষ হলে তিনি হজরতে সা'দকে নিজের সাথে নিয়ে যান অথচ পুর্বের বর্ণনায় ছিলো হজরতে সা'দই দেখা করতে গিয়েছিলেন আমীরে মুয়াবিয়া তাকে নিয়ে যাননি। কিন্তু উক্ত বর্ণনায় সা'দ নিজে সাক্ষাৎ করতে জাননি বরং আমীরে মুয়াবিয়া হজরতে সা'দকে নিয়ে গিয়েছিলেন। তাছাড়া সবচেয়ে মজার বিষয় হলো সর্বক্ষেত্রে হজরতে সা'দই আমীরে মুয়াবিকে গালি দিতে শোনেন আর কেও গালি শুনেননি বা সে বিষয়ে বর্ণনা করেননি।তাহলে বলা যেতে পারে আমীরে মুয়াবিয়ার উপর অপবাদ দিতে বার বার হজরতে সা'দের নাম ব্যবহার করা হয়েছে মাত্র। এছাড়া উক্ত বর্ণনায় একি ঘটনায় মতনের মধ্যে সংঘর্ষ দেখা দিচ্ছে তাই এতে সন্দেহ থেকে যায় । আর এই সন্দেহকে গাড়ো করে আবু ইসহাক নামক এক বিতর্কিত রাবির উপস্থিতি।তার বিতর্কিত হওয়ার প্রমাণ নিম্নে দিলাম।

হাদিসের সনদ মানঃ

 محمد بن إسحاق بن يسار المطلبي المدني صاحب المغازي صدوق مشهور بالتدليس عن الضعفاء والمجهولين

❏ মুহাম্মাদ বিন ইসহাক বিন ইয়াসার আল মাতলাবি আল মাদানি সুদুক, আর জইফ ও মাজহুল বর্ণনাকারীদের হইতে তাদলিস করাতে পরিচিত ছিলেন।

তথ্যসূত্রঃ

[ইবনে হাজার আস্কালানি, তাবকাতুল মুদাল্লিসিন, পৃষ্ঠা-৫১]

أخبرنا محمد بن الحسين القطان ، قال: أنبأنا دعلج بن أحمد ، قال: أنبأنا أحمد بن علي الأبار قال: نبأنا إبراهيم بن زياد سبلان قال: نبأنا حسين بن عروة قال: سمعت مالك بن أنس يقول: محمد بن إسحاق كذاب    

❏ খবর দিয়েছেন মুহাম্মাদ বিন হুসাইন কাতান তিনি বলেন আমাকে খবর দিয়েছেন দালা'জ বিন আহমাদ, তিনি বলেন আমাকে খবর দিয়েছেন আহমাদ বিন আলি আল আবার তিনি বলেন আমাকে জানিয়েছেন ইবিরাহিম বিন জিয়াদ সাবলান তিনি বলেন আমাকে জানালেন হুসাইন বিন উরওয়াহ তিনি বলেন মালিক বিন আনাসকে বলতে শুনেছি মুহাম্মদ বিন ইসহাক কাজ্জাব ছিলো।

তথ্যসূত্রঃ

[তারিখে বাগদাদ খন্ড-১ পৃষ্ঠা-২২৩]

حَدَّثَنَا مُحَمد بْنُ جَعْفَرِ بْنِ يزيد، وَمُحمد بن أحمد بن حماد، قالا: حَدَّثَنا أَبُو كلابة عَبد الملك بن مُحَمد، حَدَّثني سليمان بن داود، قَال: قَال لِي يَحْيى بْنُ سَعِيد القطان أشهد أن مُحَمد بن إسحاق كذاب،

❏ মুহাম্মাদ বিন জা'ফার বিন ইয়াজিদ ও মুহাম্মদ বিন আহমাদ বিন হাম্মাদ বলেন আমাদের আবু কিলাবাহ আব্দুল মালিক বিন মুহাম্মাদ বর্ণনা করেন তিনি বলেন আমাকে সুলাইমান বিন দাউদ বলেন ইয়াহিয়া বিন সাইদ আলকাতান আমাকে বলেছেন মুহাম্মাদ বিন ইসহাক কাজ্জাব ছিলো।

তথ্যসূত্রঃ

[ইবনে আদি আল কামিল ফি জৌফাউল রিজাল]

উক্ত বর্ণনায় মুহাম্মাদ বিন ইসহাক বিন আলা মাতলবি আল মাদানি মুদাল্লিস এবং কাজ্জাব রাবি,তাই তার সাক্ষ্যতে সন্দেহ তো দুরের কথা তার সাক্ষী বা বর্ণনা গ্রহনযোগ্যই নয়। তাই বলাবাহুল্য আমীরে মুয়াবিয়ার উপর যে অভিযোগ আনে তা তাদের অপপ্রচার বৈকি।

মওলা আলী ও আমীরে মুয়াবিয়ার মধ্যে সিফফিনের যুদ্ধ নিয়ে অভিযোগ ও জবাব।

উক্ত যুদ্ধে ইরাকীদের তরফ থেকে নেতৃত্ব দিচ্ছিলেন মওলা আলী এবং প্রতিপক্ষে শাম বাসীদের তরফ থেকে নেতৃত্ব দিচ্ছিলেন আমীরে মুয়াবিয়া। এই যুদ্ধকে কেন্দ্র করে শিয়া-রাফজিদের পক্ষ থেকে আমীরে মুয়াবিয়ার উপর নানা প্রকার অভিযোগ। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো মওলা আলীর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছেন তার প্রতি বিদ্বেষ রেখে। শিয়াদের দাবি এটাই নাকি তার মুনাফিক হওয়ার চিহ্ন ছিলো। মওলা আলীর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে ইসলাম থেকে বেরিয়ে গেছেন নাউজুবিল্লাহ,এবং যুদ্ধ চলাকালীন হাজারো হাজারো সাহাবীকে নির্মমভাবে হত্যা করেছেন ইত্যাদি ইত্যাদি। যাই হোক শিয়াদের বিভিন্ন অভিযোগের উত্তর দেওয়ার পুর্বে উক্ত যুদ্ধ সম্বন্ধে রসুলের কোন ভবিষ্যতবাণী ছিলো কি ছিলোনা কিংবা ছিলো তো উক্ত বিষয়ে কি ধরণের ভবিষ্যতবাণী দিয়ে গেছেন তা জেনে নেবো। আর জানবো যুদ্ধের প্রেক্ষাপট ও পরিনতি হিসাবে তার ভয়াবহতা। প্রথমে উক্ত যুদ্ধ সম্বন্ধে রসুলের ভবিষ্যৎবানী কি তা দেখেনি।

❏ হাদিস ৭:

حَدَّثَنَا شَيْبَانُ بْنُ فَرُّوخَ، حَدَّثَنَا الْقَاسِمُ، - وَهُوَ ابْنُ الْفَضْلِ الْحُدَّانِيُّ - حَدَّثَنَا أَبُو نَضْرَةَ، عَنْ أَبِي سَعِيدٍ الْخُدْرِيِّ، قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم ‏ "‏ تَمْرُقُ مَارِقَةٌ عِنْدَ فُرْقَةٍ مِنَ الْمُسْلِمِينَ يَقْتُلُهَا أَوْلَى الطَّائِفَتَيْنِ بِالْحَقِّ ‏"‏ ‏.‏

আবূ সাঈদ আল খুদরী (رضي الله عنه) হইতে বর্ণিত তিনি বলেন, আল্লাহর রসুল (ﷺ) বলেছে যখন মুসলিমের মধ্যে (মতভেদ করে) একদল লোক বিচ্ছন্ন হয়ে ধর্মত্যাগী হয়ে যাবে এবং এ দু' দলের মধ্যে যেটি হকের অধিকতর নিকটবর্তী হবে সেটিই ঐ সম্প্রদায়কে হত্যা করবে।

তথ্যসূত্রঃ

(১)সহি মুসলিম,বাব জিকরে খাওয়ারিজ ওয়া সিফাতুহুম,হাদীস নং-২৩২৬

(২)বুখারী শরিফ, বাব -আলামাতে নবুয়াহ,হাদীস নং-৩৪৪৫

(৩)সুনানে আবু দাউদ, বাব: কিতালুল খাওয়ারিজ,হাদীস নং-৪১১০

(৪) সুনানে নাসায়ি, হাদীস নং-২৫৬২

(৫) সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদীস নং-১৬৮

(৬) মুয়াত্তা ইমাম মালিক,হাদীস নং-৪৬৮

(৭) সহি ইবনে হিব্বান, হাদীস নং-৬৮৬১

(৮) হাকিম আল মুস্তাদরাক, হাদীস নং-২৬১০

(৯)মুসনাদে আবু ইয়ালা, হাদীস নং-১১২৮

উক্ত হাদীস অনুযায়ী দুই মুসলমান দলের মতভেদের সৃষ্টি করে তৃতীয় একটি দলের উদ্ভব হবে যা মুসলমান দল থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে ধর্মত্যাগী হয়ে যাবে। যা সাধারণত খারজী দলের দিকে ইঙ্গিত করে। আমরা ইতিহাসের পাতায় দেখতে পাই সিফফিন যুদ্ধ চলাকালীন মওলা আলীর সহিত দ্বিমত করে বিচ্ছিন্ন হয়ে তৃতীয় দল হিসাবে খারজি দলের উদ্ভব হয়েছিল। মওলা আলী আমীরে মু’আবিয়ার সাথে সালিশি মেনে নিলে, খারেজী গোষ্ঠী তাঁকে অমান্য করে দল থেকে বেরিয়ে গিয়েছিলো। যেমনঃ

ইবনে হাজার আস্কালানি তার কিতাব ফাতহুল বারি শারাহুল সহি বুখারীর ৪৫৯ পৃষ্ঠায় বলেন :

 "الخوارج الذين أنكروا على علي التحكيم، وتبرؤوا منه ومن عثمان وذريته، وقاتَلوهم

খারেজি হলো তারা যারা মওলা আলীর সালিসি (সিফফিন যুদ্ধে আমীরে মুয়াবিয়ার সহিত) অস্বীকার করেছিলো এবং মওলা আলী, হজরতে উসমান ও তার আত্মীয়দের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি করেছিলো এবং তাদের সহিত যুদ্ধ করেছিলো।  

বোঝা যায় সিফফিন যুদ্ধের খারজিরা মওলা আলির সাথে দ্বিমত করে সালিসি অস্বীকার করেছিলো এবং এবং হজরতে উসমানের আত্মীয়দের সঙ্গে, যেমন -আমীরে মুয়াবিয়ার (যিনি হজরতে উসমানের চাচাতো ভাই ছিলেন) সাথে বিভেদ সৃষ্টির পিছনে তারা অন্যতম ভুমিকা নিয়েছিলো । যদি আরো খুলে বলি এরা সেই শিয়া বা মওলা আলীর অনুসারী যারা মওলা আলীর সঙ্গ দিয়েছিল আমীরে মুয়াবিয়ার বিরুদ্ধে যুদ্ধের সময়। এরা চাইতো না মওলা আলী ও আমীরে মুয়াবিয়ার মধ্যে দন্দের সমাপ্তি ঘটুক। পরবর্তীতে তারা আলাদা হয়ে খারজি বলে পরিচিত হয়। অর্থাৎ বলা যায় খারজিদের উদ্ভব শিয়া রাফজিদের থেকেই, যারা আমীরে মুয়াবিয়াকে একেবারেই সহ্য করতে পারতো না। সেই শিয়ারা আমীরে মুয়াবিকে আজও সহ্য করতে পারে না। যাইহোক উক্ত হাদীস সিফফিন যুদ্ধের দিকেই ঈঙ্গিত করে, যা যুদ্ধের পটভূমি ও ঘটনাক্রম দেখলে বোঝা যায়। তবে হাদীসে আরো একটি উল্লেখিত বিষয় হলো, যা নিয়ে আলোচনা করা অতি প্রয়োজনীয়। তা হলো আল্লাহর রসুলের ভবিষ্যতবাণী, পরস্পর বিরোোধী দুই মুসলমান দলের মধ্যে যে বেশী হকের দিকে থাকবে সেই দল ধর্মত্যাগী বা খারজি দলকে হত্যা করবে। বিষয়টি আলোচনার

কারণ হলো, অনেকে আছেন যারা মওলা আলীর সাথে আমীরে মুয়াবিয়ার তুলনা করে, বলে সিফফিন যুুদ্ধে কে হক পথে ছিলো তা মাজহাবের ইমামরাও নির্ধারণ করতে পারেনি। যারা বা যে এ ধরণের মন্তব্য করেন তাদের বা তাকে আমি বলবো মাজবাহাবের ইমামদের কথা ছেড়ে দিন। আল্লাহর রসুল নির্ধারণ করে দিয়েছেন , সিফফিন যুদ্ধে কে হক পথে ছিলো । নিম্নে তার দলিলঃ

❏ হাদিস ৮:

حدثنا ابن أبي عدي عن سليمان عن أبي نضرة عن أبي سعيد أن النبي صلى الله عليه وسلم ذكر قوما يكونون في أمته يخرجون في فرقة من الناس سيماهم التحليق هم شر الخلق أو من شر الخلق يقتلهم أدنى الطائفتين من الحق قال فضرب النبي صلى الله عليه وسلم لهم مثلا أو قال قولا الرجل يرمي الرمية أو قال الغرض فينظر في النصل فلا يرى بصيرة وينظر في النضي فلا يرى بصيرة وينظر في الفوق فلا يرى بصيرة قال قال أبو سعيد وأنتم قتلتموهم يا أهل العراق

আবু সায়িদ খুদুরি হইতে বর্ণিত তিনি বলেন, আল্লাহর রসুল (ﷺ) ফরমান একবার একদল লোক সম্বন্ধে আলোচনা করলেন, যারা হবে আমার উম্মতের মধ্যে। মানুষের মধ্যে মত বিরোধের সময় এদের উদ্ভব হবে।তাদের মাথা থাকবে কামানো । সৃষ্টির মধ্যে তারাই সবচেয়ে নিকৃষ্ট। দুই দলের মধ্যে যারা সত্যের সত্যের অধিক নিকট থাকবে তারাই তাদের হত্যা করবে। আবু সায়িদ খুদরী বলেন হে ইরাক বাসী তোমরাই তাদের হত্যা করেছো। [মুসনাদে আহমাদ, হাদীস নং-১০৬৩৫]

❏ হাদিস ৯:

عَبْدُ اللهِ بْنُ مُحَمَّدٍ حَدَّثَنَا هِشَامٌ أَخْبَرَنَا مَعْمَرٌ عَنْ الزُّهْرِيِّ عَنْ أَبِي سَلَمَةَ عَنْ أَبِي سَعِيدٍ قَالَ بَيْنَا النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم يَقْسِمُ جَاءَ عَبْدُ اللهِ بْنُ ذِي الْخُوَيْصِرَةِ التَّمِيمِيُّ فَقَالَ اعْدِلْ يَا رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه وسلم فَقَالَ وَيْلَكَ وَمَنْ يَعْدِلُ إِذَا لَمْ أَعْدِلْ قَالَ عُمَرُ بْنُ الْخَطَّابِ دَعْنِي أَضْرِبْ عُنُقَهُ قَالَ دَعْهُ فَإِنَّ لَهُ أَصْحَابًا يَحْقِرُ أَحَدُكُمْ صَلاَتَهُ مَعَ صَلاَتِهِ وَصِيَامَهُ مَعَ صِيَامِهِ يَمْرُقُونَ مِنْ الدِّينِ كَمَا يَمْرُقُ السَّهْمُ مِنْ الرَّمِيَّةِ يُنْظَرُ فِي قُذَذِهِ فَلاَ يُوجَدُ فِيهِ شَيْءٌ ثُمَّ يُنْظَرُ فِي نَصْلِهِ فَلاَ يُوجَدُ فِيهِ شَيْءٌ ثُمَّ يُنْظَرُ فِي رِصَافِهِ فَلاَ يُوجَدُ فِيهِ شَيْءٌ ثُمَّ يُنْظَرُ فِي نَضِيِّهِ فَلاَ يُوجَدُ فِيهِ شَيْءٌ قَدْ سَبَقَ الْفَرْثَ وَالدَّمَ آيَتُهُمْ رَجُلٌ إِحْدَى يَدَيْهِ أَوْ قَالَ ثَدْيَيْهِ مِثْلُ ثَدْيِ الْمَرْأَةِ أَوْ قَالَ مِثْلُ الْبَضْعَةِ تَدَرْدَرُ يَخْرُجُونَ عَلَى حِينِ فُرْقَةٍ مِنْ النَّاسِ قَالَ أَبُو سَعِيدٍ أَشْهَدُ سَمِعْتُ مِنْ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم وَأَشْهَدُ أَنَّ عَلِيًّا قَتَلَهُمْ وَأَنَا مَعَهُ جِيءَ بِالرَّجُلِ عَلَى النَّعْتِ الَّذِي نَعَتَهُ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم قَالَ فَنَزَلَتْ فِيهِ وَمِنْهُمْ مَنْ يَلْمِزُكَ فِي الصَّدَقَاتِ

আবূ সা‘ঈদ (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিতঃতিনি বলেন, নবী (সাল্লালাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কোন কিছু বণ্টন করছিলেন। ঘটনাক্রমে ‘আবদুল্লাহ্ ইব্নু যুলখুওয়ায়সিরা তামীমী এল এবং বলল, হে আল্লাহর রসূল! ইনসাফ করুন। তিনি বললেনঃ আফসোস তোমার জন্য! আমি যদি ইনসাফ না করি তা হলে আর কে ইনসাফ করবে? ‘উমর ইবনে খাত্তাব (رضي الله عنه) বললেন, আমাকে অনুমতি দিন, তার গর্দান উড়িয়ে দেই। তিনি বললেনঃ তাকে ছেড়ে দাও। তার জন্য সাথীরা আছে। যাদের সালাতের তুলনায় তোমরা তোমাদের সালাতকে তুচ্ছ মনে করবে। যাদের সিয়ামের তুলনায় তোমরা তোমাদের সিয়ামকে তুচ্ছ মনে করবে। তারা দ্বীন থেকে এমনিভাবে বেরিয়ে যাবে যেমন তীর শিকার ভেদ করে বেরিয়ে যায়। তীরের প্রতি লক্ষ্য করলে তাতে কিছু পাওয়া যায় না। তীরের মুখের বেষ্টনীর প্রতি লক্ষ্য করলেও কিছু পাওয়া যায় না। তীরের কাঠের অংশের দিকে দেখলেও তাতে কিছু পাওয়া যায় না। বরং তীর তীব্র গতিতে বেরিয়ে যাবার সময় তাতে মল ও রক্তের দাগ পর্যন্ত লাগে না। তাদের পরিচয় এই যে, তাদের একটি লোকের একটি হাত অথবা বলেছেন, একটি স্তন হবে মহিলাদের স্তনের ন্যায়। অথবা বলেছেন, অতিরিক্ত গোশতের টুকরার ন্যায়। লোকদের মধ্যে বিরোধের সময় তাদের আবির্ভাব ঘটবে। আবূ সা‘ঈদ (رضي الله عنه) বলেন, আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আমি তা নবী (সাল্লালাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে শুনেছি। এও সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, ‘আলী (رضي الله عنه) তাদেরকে হত্যা করেছেন। আমি তখন তাঁর সঙ্গে ছিলাম। তখন নবী (সাল্লালাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর দেয়া বর্ণনার সংগে মিলে এমন ব্যক্তিকে আনা হয়েছিল। তিনি বলেন, ওর সম্পর্কেই অবতীর্ণ হয়েছেঃ “ওদের মধ্যে এমন লোক আছে যে সদকা সম্পর্কে তোমাকে দোষারোপ করে”।

[সহি বুখারী, হাদিস নং -৬৪৬৪]

উক্ত হাদীসগুলির মাধ্যমে বোঝা যায় মওলা আলীই হক পথে ছিলেন,যা আল্লাহর রসুল ভবিষ্যতবাণীতে উল্লেখ করে গেছেন।আর এটাই আহলে সুন্নতের আকীদা মওলা আলী অধিক সত্যের পথে ছিলেন। তবে বলা যায় আমীরে মুয়াবিয়া কিছু একটা বুঝতে ভুল হচ্ছিলো। কি ভুল হচ্ছিলো তা পরে আলোচনা করবো ইনশাআল্লাহ। আগে সিফফিন যুদ্ধকে ইঙ্গিত করে আল্লাহর রসুল আরো যেসব ভবিষ্যতবাণী দিয়ে গেছেন তা আগে দেখে নেবো। নিম্নে তার সাপেক্ষে দলিল দেওয়া হলোঃ

❏ হাদিস ১০:

حَدَّثَنَا حَجَّاجٌ حَدَّثَنَا سُفْيَانُ حَدَّثَنَا مَنْصُورٌ عَنْ رِبْعِيٍّ عَنِ الْبَرَاءِ بْنِ نَاجِيَةَ الْكَاهِلِيِّ عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ مَسْعُودٍ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِنَّ رَحَى الْإِسْلَامِ سَتَزُولُ بِخَمْسٍ وَثَلَاثِينَ أَوْ سِتٍّ وَثَلَاثِينَ أَوْ سَبْعٍ وَثَلَاثِينَ فَإِنْ يَهْلَكْ فَكَسَبِيلِ مَنْ أُهْلِكَ وَإِنْ يَقُمْ لَهُمْ دِينُهُمْ يَقُمْ لَهُمْ سَبْعِينَ عَامًا قَالَ قَالَ عُمَرُ يَا رَسُولَ اللَّهِ أَبِمَا مَضَى أَمْ بِمَا بَقِيَ قَالَ بَلْ بِمَا بَقِيَ

হজরতে আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ হইতে বর্ণিত তিনি বলেন, আল্লাহর নবী (ﷺ) বলেন ৩৫ কিংবা, ৩৬ কিংবা ৩৭ হিজরি পর্যন্ত ইসলামের চাকা ঘুরবে তারপর মুসলমান হানাহানি করলে হানাহানির পথে চলে যাবে। আর যারা বেঁচে থাকবে তাদের দ্বিন সত্তর বছর বাকি থাকবে। হজরতে উমার জিজ্ঞাসা করলেন হে আল্লাহর রসুলে ইহার সম্পর্ক অতীতের সঙ্গে নাকি ভবিষ্যতের সঙ্গে? আল্লাহর রসুল উত্তর দিলেন বরং ভবিষ্যতে যা বাকি আছে।

তথ্যসূত্রঃ

(১)সহি ইবনে হিব্বান, হাদীস নং-৬৬৬৪

(২)মুসনাদে আহমাদ হাদীস নং -৩৭৫৮

(৩)হাকিম আল মুস্তাদরাক, হাদীস নং-৪৫৪৯, ইমাম হাকিম বলেনصحيح على شرط مسلم  

(৪)মুস্কিলুল আ'সার, হাদীস নং-১৩৮৬

উক্ত হাদীস থেকে জানা যায় ৩৫ থেকে ৩৭ হিজরির মধ্যে দুই মুসলমান দল পরস্পর হানাহানিয় লিপ্ত হবে।আর আমরা সকলেই জানি সিফফিন যুদ্ধ সংঘটি হয়েছিলো ৩৭ হিজরির দিকেই অতএব উক্ত হাদীসও সিফফিন যুদ্ধের দিকেই ইঙ্গিত করে যা সাধারণত আল্লাহর রসুল ভবিষ্যতেবানীর মাধ্যমে ইঙ্গিত দিয়ে গিয়েছিলেন।

❏ হাদিস ১১:

রসুলের তৃতীয় ভবিষ্যতবানীঃ

حدثنا الحكم ، عن نافع ، عن صفوان بن عمرو ، عن الأشياخ أن رسول الله ، صلى الله عليه وسلم دعي إلى جنازة رجل من الأنصار فقال وهو قاعد ينتظرها : " كيف أنتم إذا رأيتم خيلين في الإسلام ؟ " قالوا : أو يكون ذلك في أمة إلهها واحد ونبيها واحد ؟ قال : نعم قال أبو بكر : أفأدرك ذلك يا رسول الله ؟ قال : " لا " . قال عمر : أفأدرك ذلك يا رسول الله ؟ قال : لا . قال عثمان : أفأدرك ذلك يا رسول الله ؟ قال : نعم ! بك ينشئون الحرب .

আস শাইখ হইত বর্ণিত তিনি বলেন এক জনৈক আন্সারী ব্যক্তির জানাজার জন্য আল্লাহর রসুল (ﷺ)কে ডাকা হলো।তিনি যখন সেখানে অপেক্ষা করছিলেন তখন বললেন তোমাদের কেমন অবস্থা হবে যখন ইসলামি দুই বিশাল দল সংঘাতের সম্মুখীন হবে? তখন আবু বকর সিদ্দিক জিজ্ঞাসা করলেন, যে উম্মতের মাবুদ এক, নবী এক তাদের মধ্যেও কি এমন হবে? তিনি উত্তর দিলেন হ্যাঁ। অতঃপর আবু বকর সিদ্দিক জিজ্ঞাসা করলেন আমি কি সেই যুগ পাবো হে আল্লাহর রসুল ? তিনি উত্তর দিলেন, না।তখন হজরতে উমার জিজ্ঞাসা করলেন, আমি কি সেই যুগ পাবো হে আল্লাহর রসুল? তিনি উত্তর দিলেন, না। হজরতে উসমান জিজ্ঞাসা করলেন, তাহলে আমি কি সেই যুগ পাবো হে আল্লাহর রসুল? তিনি উত্তর দিলেন হ্যাঁ তোমাকে উপলক্ষ করে তারা যুদ্ধ করবে।

[আল বিদাইয়াহ ওয়ান নিহাইয়াহ, খন্ড-১০,পৃষ্ঠা-৫৫০]

উক্ত তিন হাদীস দ্বারা বোঝা যায় আল্লাহর রসুল সিফফিন যুদ্ধের সম্বন্ধে পুর্বেই জানতেন তাই আগে থেকে কিছু ইঙ্গিত দিয়ে গিয়েছিলেন তবে ভবিষ্যতবাণীতে পরিষ্কার যে দুটো দল পরস্পর যুদ্ধে লিপ্ত হবে উভয় দলই মুসলিম ।আর যাকে রসুল মুসলমান বলেন তার উপর ইমানের মোহর লেগে যায়। কিন্তু কিছু লোকের অস্বীকার করা অভ্যাস। আল্লাহর রসুল যাদের মুসলমান বলে দিয়ে গেছেন, তারা তাদেরকে মুনাফিক বলবে। তাদের যুক্তি এটাই তারা যেহেতু নামধারী মুসলমান তাই আল্লাহর রসুল, মুসলমান বলে উল্লেখ করেছেন। প্রকৃতপক্ষে তারা মুনাফিকই, নৈলে মওলা আলীর সাথে যুদ্ধ করতো না। যদি এই ধরণের বক্তব্য কেও দিয়ে থাকে, তাহলে তারা জানতে অজানতে আল্লাহর রসুলের উপর কুরানের বিরোধীতা করার তোহমত লাগালো নাউযুবিল্লাহ। কারণ কুরানে আল্লাহ বলেন,

وَمِنَ النَّاسِ مَن يَقُولُ آمَنَّا بِاللَّهِ وَبِالْيَوْمِ الْآخِرِ وَمَا هُم بِمُؤْمِنِينَ

আর মানুষের মধ্যে কিছু লোক এমন রয়েছে যারা বলে, আমরা আল্লাহ ও আখেরাতের প্রতি ঈমান এনেছি অথচ তারা মুসলমান বা ইমানদার নয়। (সুরা বাকারা, আয়াত-৮)

অর্থাৎ যারা মুনাফিক আল্লাহ তাদের সম্বন্ধে বলেই দিয়েছেন, তারা মুসলমান নয়। তাই আল্লাহর কালামের বিপক্ষে গিয়ে রসুলের পক্ষে তাদেরকে মুসলিম বলাও অসম্ভব। এই ধরণের মন্তব্য যে বা যারা করে বা করবে তা কুরান ও হাদীস বিরোধী,তাই তা বাতিল বা প্রত্যাখ্যাত। অতএব আল্লাহর রসুল, পরস্পর বিরোধী দুই দলকে যে মুসলমান বলেছেন, তা প্রকৃত অর্থেই বলেছেন। তাই নয়, মওলা আলীও মনে করতেন তার প্রতিপক্ষ মুসলমানই ছিলো। তাঁর বিরুদ্ধে যুদ্ধে লিপ্ত হওয়ার কারণে তার ইমান হারায়নি, যা নিম্নোক্ত হাদীসটির মাধ্যমে প্রমাণ হয়।

❏ হাদিস ১২:

حَدَّثَنَا أَبُو أُسَامَةَ ، عَنْ هِشَامِ بْنِ عُرْوَةَ ، قَالَ : أَخْبَرَنِي عَبْدُ اللَّهِ بْنُ عُرْوَةَ ، قَالَ : أَخْبَرَنِي رَجُلٌ ، شَهِدَ صِفِّينَ قَالَ : رَأَيْتُ عَلِيًّا خَرَجَ فِي بَعْضِ تِلْكَ اللَّيَالِي , فَنَظَرَ إِلَى أَهْلِ الشَّامِ فَقَالَ : اللَّهُمَّ اغْفِرْ لِي وَلَهُمْ ,

হাদীস বর্ণনা করেছেন আবু উসামাহ তিনি বলেন হিশাম বিন উরওয়াহ হইতে বর্ণিত তিনি বলেন আমাকে আব্দুল্লাহ বিন আমর বললেন আমাকে সিফফিনে উপস্থিত হওয়া এক ব্যক্তি খবর দিয়ে বল্লো আমি আলীকে দেখলাম এক রাতে বেরিয়ে শামের দিকে দৃষ্টিপাত করলেন এবং বললেন হে আল্লাহ আমার ও তাদের মাগফেরাত করে দাও।

(মুসান্নাফে ইবনে আবি শাইবাহ, হাদীস নং-৩৭১৯৮)

উক্ত হাদীস দ্বারা বোঝা যায় সিফফিন যুদ্ধে মওলা আলী তার প্রতিপক্ষকে অর্থাৎ তার বিরুদ্ধে যারা যুদ্ধ করেছেন, তাদেরকে মুসলমানই মনে করতেন নৈলে নিজের মাগফিরাতের দোয়া করার সাথে সাথে শামীয় অর্থাৎ তার প্রতিপক্ষের মাগফিরাতের দোয়া করতেন না। মওলা আলীর এই দোয়া প্রমাণ করে আমীরে মুয়াবিয়া ও তার পক্ষে থাকা সকলেই মুসলিম ছিলো।শুধু তাই নয় মওলা আলী আরো বলেন তারা মুসলিম শুধু নয়,তারা জান্নাতিও যা নিম্নের হাদীস প্রমাণ করে।

❏ হাদিস ১৩:

حَدَّثَنَا عُمَرُ بْنُ أَيُّوبَ الْمَوْصِلِيُّ ، عَنْ جَعْفَرِ بْنِ بُرْقَانَ ، عَنْ يَزِيدَ بْنِ الْأَصَمِّ ، قَالَ : سَأَلَ عَلِيٌّ عَنْ قَتْلَى ، يَوْمِ صِفِّينَ , فَقَالَ : قَتْلَانَا وَقَتْلَاهُمْ فِي الْجَنَّةِ , وَيَصِيرُ الْأَمْرُ إِلَيَّ وَإِلَى مُعَاوِيَةَ

হাদীস বর্ণনা করেছেন উমার বিন আইয়ুব মাউসিলি তিনি বলেন জাফার বিন বুরকান ইয়াজিদ বিন আসিম থেকে বর্ণনা করেন ইয়াজিদ বিন আসিম বলেন মওলা আলীকে সিফফিন যুদ্ধে নিহতদের সম্বন্ধে জিজ্ঞাসা করা হলো।তখন তিনি উত্তর দিলেন আমার পক্ষে এবং তাদের নিহতদের সবাই জান্নাতে। এবং বললেন বিষয়টা আমার আর মুয়াবিয়ার রয়ে গেছে।

তথ্যসূত্রঃ

(১)মুসান্নাফে ইবনে আবি শাইবাহ, হাদীস নং-৩৭২১৩

(২)মুসনাদে আহমাদ ইবনে হাম্বাল, হাদীস নং-২০৯২

(৩)ইমাম তাবারানি, ম'জুমুল কাবীর, বাবুল - মিম, হাদীস নং -৬৮৮

(৪)মাজমাউয যাওয়ায়েদ, কিতাবুল মানাকিব, হাদীস নং-১৫৯২৭

উক্ত হাদীস দ্বারা প্রমাণ হয় মওলা আলী সিফফিন যুদ্ধে তাঁর প্রতিপক্ষকে মুসলিম দল শুধু নয় বরং জান্নাতি দল বলে মনে করতেন। তবে এইসব প্রমাণ থাকার পরেও বিভিন্ন খোঁড়া যুক্তির মাধ্যমে শিয়ারা আমীরে মুয়াবিয়াকে মুনাফিক বলে চিহ্নিত করতে চায়। তাদের যুক্তি হলো, যেহেতু মওলা আলীর প্রতি বিদ্বেষ রাখা মুনাফিক হওয়ার চিহ্নের মধ্যে একটি চিহ্ন তাই আমীরে মুয়াবিয়া তাঁর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে প্রমাণ করেছেন তিনি মওলা আলী বিদ্বেষী ছিলেন । তাদের এই বক্তব্যের উপর আমার জবাব হলোঃ অনেক সময় বাস্তব ঘটনার মাধ্যমে প্রমাণ পাওয়া যায়, কোন বিষয়ে হঠাৎ অতিরিক্ত ক্রোধ দুই পক্ষের মধ্যে হানাহানির সৃষ্টি হয়। শুধু বিদ্বেষের কারণে যুদ্ধ হয় এমনটা নয়। বিদ্বেষই যদি যুদ্ধের কারণ হয়ে থাকে তাহলে একি যুক্তি মওলা আলীর উপরও খাটবে। কারণ আমীরে মুয়াবিয়া, মওলা আলীর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করলেও মওলা আলীও আমীরের মুয়াবিয়ার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছেন। ইহাই নয়, আমীরে মুয়াবিয়ার নেতৃত্বে, মওলা আলীর পক্ষের কোন সাহাবী বা তাবেয়ি হত্যা হয়ে থাকলে, মওলা আলীর নেতৃত্বেও হাজার হাজার সাহাবীও তাবেয়ি হত্যা হয়েছে। যেমন বর্ণনায় আছে,

. يقال: فى مائة ألف فقتل من أهل الشام خمسة وأربعون ألفا، ومن أهل العراق خمسة وعشرون ألفا، والله أعلم

বলা হয় ১ লক্ষ সৈনের মধ্যে শামপক্ষীয় নিহত হয়েছে ৪৫ হাজার এবং ইরাক পক্ষীয় নিহত হয়েছে ২৫ হাজার, আল্লাহ উত্তম জানেন।

(আন্সাবুল আসরাফ, খন্ড-২ পৃষ্ঠা- ১৮৪)


حتى قتل من الفريقين - فيما ذكره غير واحد - سبعون ألفا ; خمسة وأربعون ألفا من أهل الشام وخمسة وعشرون ألفا من أهل العراق

একাধিক বর্ণনামতে দুই দলের নিহতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছিল ৭০ হাজার তার মধ্যে শাম পক্ষীয়দের ৪৫ হাজার আর ইরাকিদের পক্ষের ২৫ হাজার।

(আল বিদাইয়াহ ওয়ান নিহাইয়াহ, খন্ড-১০,পৃষ্ঠা-৫৫০)

যেমন আমীরে মুয়াবিয়ার নেতৃত্বে তার দলের মাধ্যমে মওলা আলীর পক্ষের ২৫ হাজার সাহাবি ও তাবেয়ী হত্যা হয়েছিল তেমন মওলা আলীর নেতৃত্বে আমীরে মুয়াবিয়ার পক্ষের ৪৫ হাজার সাহাবী ও তাবেয়ি হত্যা হয়েছে। এক্ষেত্রে আমীরে মুয়াবিয়াকে বিদ্বেষি বললে মওলা আলীর উপর একি যুক্তি প্রয়োগ করতে হবে। আর হাদিসে আছে,

❏ হাদিস ১৪:

حديث أَبِي بَكْرَةَ عَنِ الأَحْنَفِ بْنِ قَيْسٍ، قَالَ: ذَهَبْتُ لأَنْصُرَ هذَا الرَّجُلَ، فَلَقِيَنِي أَبُو بَكْرَةَ، فَقَالَ: أَيْنَ تُرِيدُ قُلْتُ: أَنْصُرُ هذَا الرَّجُلَ قَالَ: ارْجِعْ فَإِنِّي سَمِعْتُ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُولُ: إِذَا الْتَقَى الْمُسْلِمَانِ بِسَيْفَيْهِمَا، فَالْقَاتِلُ وَالْمَقْتُولُ فِي النَّارِ فَقُلْتُ: يَا رَسُولَ اللهِ هذَا الْقَاتِلُ فَمَا بَالُ الْمَقْتُولِ قَالَ: إِنَّهُ كَانَ حَرِيصًا عَلَى قَتْلِ صَاحِبِهِ

আহনাফ ইবনে কায়স হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি (সিফফীনের যুদ্ধে) এ ব্যক্তিকে (আলীকে) সাহায্য করতে যাচ্ছিলাম। আবূ বাকরার (رضي الله عنه)সহিত আমার দেখা হলে তিনি বললেন, তুমি কোথায় যাচ্ছ? আমি বললাম, ‘আমি এ ব্যক্তিকে সাহায্য করতে যাচ্ছি। তিনি বললেনঃ ‘ফিরে যাও। কারণ আমি আল্লাহর রাসূল (ﷺ)কে বলতে শুনেছি যে, দু’জন মুসলিম তাদের তরবারি নিয়ে মুখোমুখি হলে হত্যাকারী এবং নিহত ব্যক্তি উভয়ে জাহান্নামে যাবে। আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! এ হত্যাকারী , কিন্তু নিহত ব্যক্তির কী অপরাধ? তিনি বললেন,সেও তার সাথীকে হত্যা করার জন্য উদগ্রীব ছিল।

তথ্যসূত্রঃ

(১)সহী বুখারী, , হাদীস নং- ২৮৮৮

(২)মুসলিম শরিফ, হাদীস নং-৫২৭২

(৩)সুনানে আবু দাউদ, হাদীস নং-৩৭৮০

(৪)সুনানে নাসায়ি, হাদীস নং-৪০৯৫

(৫)সুনানে ইবনে মাজাহ,হাদীস নং-৩৯৯২

(৬)মুসনাদে আহমাদ ইবনে হাম্বাল,হাদীস নং-২০০৯৮

(৭)ইমাম বাইহাকি, সুনানুল কুবরা,হাদীস নং-১৫৩৮৬

(৮)সহি ইবনে হিব্বান, হাদীস নং-৬০৮১

(৯)ইমাম আবু নুইয়েম,মারেফাতুস সাহাবা, হাদীস নং-৫৮১৭

(১০)ইমাম আবু নুইয়েম হিলিয়াতুল আউলিয়া, হাদীস নং-৮৮৩৭

(১১)শারাহ উসুলে এইতেকাদ, হাদীস নং-১৮৭২

(১২)ইমাম তাবারানি, ম'জুমুল আওসাত, হাদীস নং-৮৮১২

হাদীস অনুযায়ী দুই মুসলিম তলোয়ার নিয়ে মুখোমুখি হলে হত্যাকারী ও নিহত উভয় জাহান্নামী। সিফফিন যুদ্ধে আমীরে মুয়াবিয়া ও মওলা আলী একে অপরের বিরুদ্ধে অস্ত্র ধারণ করেছেন। আমীরে মুয়াবিয়া মওলা আলীর বিরুদ্ধে অস্ত্র ধারণ করলে, মওলা আলী আমীরে মুয়াবিয়া ও তার সাথিদের বিরুদ্ধে অস্ত্র ধারণ করেছেন। এই নয় যে মওলা আলীর প্রতিপক্ষ দল বেধর্মী ছিলো। বরং রসুলের বানী থেকে জানা যায় উভয় দল মুসলমান। শুধু তাই নয় মওলা আলীও স্বীকার করেছেন তার প্রতিপক্ষ দল মুসলিম বরং জান্নাতিও। তাই এখানে সুযোগ নেই প্রতিপক্ষকে কাফির বলার বা এ বলার সুযোগও নেই, মওলা আলী কাফীর বা মুনাফিকদের বিরুদ্ধে অস্ত্র ধারণ করেছেন। কিন্তু আমাদের আকীদা হলো পরস্পর হানাহানি করার পরেও আল্লাহর দর্বারে তারা ক্ষমা প্রাপ্ত হয়েছেন যার সাপেক্ষে একটি সুন্দর হাদীস।

❏ হাদিস ১৫:

حَدَّثَنَا يَزِيدُ بْنُ هَارُونَ ، عَنِ الْعَوَّامِ ، عَنْ عَمْرِو بْنِ مُرَّةَ ، عَنْ أَبِي وَائِلٍ ، قَالَ : رَأَى فِي الْمَنَامِ أَبُو مَيْسَرَةَ عَمْرَو بْنَ شُرَحْبِيلَ , وَكَانَ مِنْ أَفْضَلِ أَصْحَابِ عَبْدِ اللَّهِ , قَالَ : رَأَيْتُ كَأَنِّي أُدْخِلْتُ الْجَنَّةَ , فَرَأَيْتُ قِبَابًا مَضْرُوبَةً , فَقُلْتُ : لِمَنْ هَذِهِ ؟ فَقِيلَ : هَذِهِ لِذِي الْكَلَاعِ وَحَوْشَبٍ , وَكَانَا مِمَّنْ قُتِلَ مَعَ مُعَاوِيَةَ يَوْمَ صِفِّينَ , قَالَ : قُلْتُ : فَأَيْنَ عَمَّارٌ وَأَصْحَابُهُ ؟ قَالُوا : أَمَامَكَ ، قُلْتُ : وَكَيْفَ وَقَدْ قَتَلَ بَعْضُهُمْ بَعْضًا ؟ قَالَ : قِيلَ : إِِنَّهُمْ لَقُوا اللَّهَ فَوَجَدُوهُ وَاسِعَ الْمَغْفِرَةِ , قَالَ : فَقُلْتُ : فَمَا فَعَلَ أَهْلُ النَّهْرِ ؟ قَالَ : فَقِيلَ : لَقُوا بَرَحًا

হজরতে আবু ওয়েল হইতে বর্ণিত তিনি বলেন তিনি আবু মাইসারাহ আমর বিন সারজিলকে স্বপ্নে দর্শন করলেন এবং তিনি ছিলেন আব্দুল্লাহর সাথিদের মধ্যে একজন আফাজাল সাথি। তিনি বলেন আমি দেখলাম আমি যেন জান্নাতে প্রবেশ করেছি এবং সেখানে দেখলাম একটা সুন্দর গুম্বুজ নির্মিত প্রাসাদ আছে অতপর জিজ্ঞাসা করলাম ইহা কার? আমাকে বলা হলো ইহা আলকাই এবং হাওসাবের জন্য যারা সিফফিন যুদ্ধে আমীরে মুয়াবীয়ার মুয়াবীয়ার সঙ্গিদের দ্বারা নিহত হয়েছ। আমি জিজ্ঞাসা করলাম আম্মার ও তার সাথিরা কোথায়? আমাকে বলা হলো তোমার সম্মুখে আছে। আমি জিজ্ঞাসা করলাম তারা তো তাদের একে অপরকে হত্যা করেছিলো তাহলে কিভাবে তারা সকলে জান্নাতে? আমাকে বলা হলো যখন তারা আল্লাহর সাথে মিলিত হলেন তাকে অসীম মাগফিরাতকারী হিসাবে পেলেন। আমি জিজ্ঞাসা করলাম আহলে নাহারের সাথে কি করা হয়েছে?অতঃপর আমাকে বলা হলো তারা আল্লাহর অসন্তষ্টির মধ্যে রয়েছে ।

তথ্যসূত্রঃ

(১)মুসান্নাফে ইবনে আবি শাইবাহ,কিতাবুল জামাল ওয়া সিফফিন, ওয়াল খাওয়ারিজ,হাদীস নং-৩৭৮৪৪

(২)ইমাম বুখারী তারিখুল, কাবীর, খন্ড-২ হাদীস নং-২০৭৯

(৩)তাবকাতুল কুবরা, খন্ড-৫, পৃষ্ঠা-৫১৮

(৪)শারাহ সহি বুখারী ইবনে বাত্তাল, খন্ড-১০ পৃষ্ঠা-২৮

(৫)তারিখে দামিস্ক, খন্ড-১৭ পৃষ্ঠা-৩৯২

ইবনে হাজার আস্কালানি, আল ইসাবা, খন্ড-২ পৃষ্ঠা-৪৭৮

(৬)তাহজিবুল কামাল,খন্ড-৭, পৃষ্ঠা-২০৮

উক্ত হাদীসে স্বপ্নের মাধ্যমে হজরতে আবু ওয়েলকে আল্লাহ জানিয়ে দেন সিফফিন যুদ্ধে পরস্পর হানাহানিতে লিপ্ত হওয়া পরেও উভয়কে দলকে আল্লাহ ক্ষমা দান করে, জান্নাত নসিব করেছেন। হয়তো কারোর আপত্তি থাকতে পারে যে এটি তো একটি স্বপ্ন। বাস্তব আর স্বপ্নের মধ্যে তফাৎ আছে তাই এই হাদীসকে দলিল হিসাবে নেওয়া ঠিক নয়। যদি এমন কেও বলে সেই ক্ষেত্রে আমার উত্তর নিম্নোক্ত হাদীসের মাধ্যমে হবে।

❏ হাদিস ১৬:

بَاب رُؤْيَا الصَّالِحِينَ

حَدَّثَنَا عَبْدُ اللَّهِ بْنُ مَسْلَمَةَ، عَنْ مَالِكٍ، عَنْ إِسْحَاقَ بْنِ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ أَبِي طَلْحَةَ، عَنْ أَنَسِ بْنِ مَالِكٍ، أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم قَالَ ‏ "‏ الرُّؤْيَا الْحَسَنَةُ مِنَ الرَّجُلِ الصَّالِحِ جُزْءٌ مِنْ سِتَّةٍ وَأَرْبَعِينَ جُزْءًا مِنَ النُّبُوَّةِ ‏"‏‏.‏

আনাস ইবনে মালিক (رضي الله عنه) হইতে বর্ণিত তিনি বলেন আল্লাহর রসুল (ﷺ) বলেছেনঃ নেককার লোকের ভাল স্বপ্ন নবুয়তের ছেচল্লিশ ভাগের এক ভাগ।

(বুখারী শরিফ হাদীস নং- ৬৪৯৯)

উক্ত হাদীসের ব্যখ্যায় ইমাম কুরতুবি বলেনঃ

وَقَالَ الْقُرْطُبِيُّ الْمُسْلِمُ الصَّادِقُ الصَّالِحُ هُوَ الَّذِي يُنَاسِبُ حَالُهُ حَالَ الْأَنْبِيَاءِ فَأُكْرِمَ بِنَوْعٍ مِمَّا أُكْرِمَ بِهِ الْأَنْبِيَاءُ وَهُوَ الِاطِّلَاعُ عَلَى الْغَيْبِ.

ইমাম কুর্তবী বলেন নেক ও সত্যবাদী মুসলমান যখন তার হাল বা চলা ফেরাকে আম্বিয়াদের হাল বা চলা ফেরার অনুরুপ করে নেয় তখন তাকে সেই জিনিশ দ্বারা সম্মানিত করা হয় যার দ্বারা আম্বিয়াদের সম্মানিত করা হয়েছে আর তা হল গাইবের প্রতি অবগতি।

[ইবনে হাজার আস্কালানী, ফাতহুলবারী, খন্ড-১২ পৃষ্ঠা-৩৭৯]

অর্থাৎ উক্ত হাদীসে বোঝা যায় নেককার মোমিনের ভালো স্বপ্ন হলো নবুয়াতের ছেচল্লিসভাগের একভাগ বা নবুয়াতি ইল্মের অংশ বিশেষ অর্থাৎ যেমন নবীগন স্বপনের মাধ্যমে গাইবি ইলম অর্যন করেন বা গাইবি বিষয় জানতে পারেন, নেক মোমিনগনও ভালো স্বপ্নের মাধ্যমে অনেক সময় গাইবি বিষয়ে অবগত হন।আমরা সকলে জানি জান্নাত জাহান্নাম দেখা এগুলি গাইবি বিষয়ে অবগত হওয়ার অন্তর্গত । উক্ত বর্ণনায়ও আল্লাহ হজরতে আবু ওয়েলকে গাইবি বিষয়ে অবগত করিয়েছেন, যাতে তিনি দেখলেন সিফফিন যুদ্ধে দুই দল একে অপরের সাথে যুদ্ধ করার পরেও তাদেরকে আল্লাহ ক্ষমা করে জান্নাতে প্রবেশ করিয়ে দিয়েছেন।আর এটাই আমাদের আকীদা তারা পরস্পর হানাহানিতে লিপ্ত হলেও, তারা সকলে জান্নাতি।যাই হোক শিয়াদের অভিযোগ আমীরে মুয়াবিয়া মাওলা আলীর প্রতি বিদ্বেষের কারণে তাঁর সাথে যুদ্ধ করেছিলেন, সেই বিষয় নিয়েই কথা বলবো। তাদের অভিযোগের উপর আমি বলবো তাদের এই ধারণা ভুল , দুপক্ষের মধ্যে যুদ্ধ হওয়ার পিছনে সব সময় উভয়ের মধ্যে বিদ্বেষের কারণ নিহিত থাকে না।অনেক সময় কোন বিষয়ে অতিরিক্ত ক্রোধ তাদের মধ্যে হটকারিতা এনে দেয়, ফলস্বরুপ তারা হানাহানিতে লিপ্ত হয়। সিফফিন যুদ্ধ হওয়ার পিছনেও তেমনই একটা কারণ ছিলো যা যুদ্ধের প্রেক্ষাপট দেখলেই বোঝা যায়। তার সাপেক্ষে প্রমাণ হিসাবে নিম্নে দলিল দিলামঃ

❏ ইমাম ইবনে হাজার আসকালানী বলেন,

وقد ذكر يحيى بن سليمان الجعفي أحد شيوخ البخاري في " كتاب صفين " في تأليفه بسند جيد عن أبي مسلم الخولاني أنه قال لمعاوية : أنت تنازع عليا في أو أنت مثله ؟ قال : لا ، وإني لأعلم أنه أفضل مني وأحق بالأمر ، ولكن ألستم تعلمون أن عثمان قتل مظلوما وأنا ابن عمه ووليه أطلب بدمه ؟ فأتوا عليا فقولوا له يدفع لنا قتلة عثمان ، فأتوه فكلموه فقال : يدخل في البيعة ويحاكمهم إلي ،

ইহাইয়া বিন সুলাইমান আল জু'ফি যিনি ইমাম বুখারীর শিক্ষকের মধ্যে একজন ছিলেন, তার বই কিতাবুস সিফফিনে শক্তিশালী সনদের সাথে উল্লেখ করেছেন তিনি বলেন আবু মুসলিম আল খোলানি হইতে বর্ণিত আমীরে মুয়াবীয়াকে জিজ্ঞাসা করলেন আপনি কি মওলা আলীর খিলাফতের বিরোধীতা করেন...কিংবা আপনি কি তার সমকক্ষ? তিনি উত্তর দিলেন, না। আমি জানি তিনি আমার চেয়ে উত্তম এবং আমার চেয়ে শাসন চালনায় বেশী হকদার। কিন্তু তুমি কি জানো মাজলুম উসমানকে হত্যা করা হয়েছে.? আমি উসমানের চাচাতো ভাই এবং তার হত্যার প্রতিশোধের দাবিদার। আর তারা মওলা আলীর নিকট যাবেন এবং বলবেন উসমানের হত্যাকারীকে আমাদের সঁপে দেন।অতঃপর তারা মওলা আলীর নিকট গেলেন এবং তার সাথে আলোচনা করলেন এবং তিনি বললেন বাইয়াতের মধ্যে দাখিল হয়ে তাদের ব্যাপার আমার কাছে নিয়ে আস।

(ফাতহুল বারী খন্ড-১৩, কিতাবুল ফিতান, পৃষ্ঠা-৯২)


قَالَ الجُعْفِيُّ: حَدَّثَنَا يَعْلَى بنُ عُبَيْدٍ، عَنْ أَبِيْهِ، قَالَ:جَاءَ أَبُو مُسْلِمٍ الخَوْلاَنِيُّ وَأُنَاسٌ إِلَى مُعَاوِيَةَ، وَقَالُوا: أَنْتَ تُنَازِعُ عَلِيّاً، أَمْ أَنْتَ مِثْلُهُ؟فَقَالَ: لاَ وَاللهِ، إِنِّيْ لأَعْلَمُ أَنَّهُ أَفْضَلُ مِنِّي، وَأَحَقُّ بِالأَمْرِ مِنِّي، وَلَكِنْ أَلَسْتُم تَعْلَمُوْنَ أَنَّ عُثْمَانَ قُتِلَ مَظْلُوْماً، وَأَنَا ابْنُ عَمِّهِ، وَالطَّالِبُ بِدَمِهِ، فَائْتُوْهُ، فَقُوْلُوا لَهُ، فَلْيَدْفَعْ إِلَيَّ قَتَلَةَ عُثْمَانَ، وَأُسْلِمَ لَهُ.

فَأَتَوْا عَلِيّاً، فَكَلَّمُوْهُ بذلك ، فَلَمْ يَدْفَعْهُم إِلَيْهِ

জু'ফি বলেন আমাকে হাদীস বর্ণনা করেছেন ইয়ালা বিন উবাইদ, তিনি তার পিতা থেকে বর্ণনা করে বলেন তিনি আবু মুসলিম খুলানি আরো অন্যন্যরা আমীরে মুয়াবীয়ার নিকট এলেন এবং তাকে জিজ্ঞাসা করলেন আপনি কি মওলা আলীর খিলাফতের বিরোধীতা করেন...কিংবা আপনি কি তার সমকক্ষ? তিনি উত্তর দিলেন না। আমি জানি তিনি আমার চেয়ে উত্তম এবং আমার চেয়ে শাসন চালনায় বেশী হকদার। কিন্তু তুমি কি জানো মাজলুম উসমানকে হত্যা করা হয়েছে.? আমি উসমানের চাচাতো ভাই এবং তার হত্যার প্রতিশোধের দাবিদার। অতঃপর তারা মওলা আলীর নিকট যাবেন এবং বলবেন উসমানের হত্যাকারীকে আমাদের সঁপে দেন।অতঃপর তারা মওলা আলীর নিকট এলেন এবং তার সাথে সেই বিষয়ে আলোচনা করলেন। অতঃপর তিনি তাদেরকে সঁপে দিতে অস্বীকার করলেন।

১.যাহাবীঃ সিয়ারু আলামিন নুবালায়ে,খন্ড-৩ পৃষ্ঠা -১৪০

২.ইবনে কাসীরঃ আল বিদায়া ওয়ান নিহাইয়াহ, খন্ড-৮, পৃষ্ঠা-১২৯,

❏ ইবনে কাসীর বলেন,

رجاله ثقات.

ونا إبراهيم نا يحيى قال حدثني يعلى بن عبيد الحنفي نا أبي قال جاء أبو مسلم الخولاني وأناس معه إلى معاوية فقالوا له أنت تنازع عليا أم أنت مثله فقال معاوية لا والله إني لأعلم أن عليا أفضل مني وأنه لأحق بالأمر مني ولكن ألستم تعلمون أن عثمان قتل مظلوما وأنا ابن عمه وإنما أطلب بدم عثمان فائتوه فقولوا له فليدفع إلي قتلة عثمان وأسلم له فأتوا عليا فكلموه بذلك فلم يدفعهم إليه

আমাকে খবর দিলেন ইবরাহীম, তিনি বলেন আমাকে খবর দিলেন ইয়াহিয়া, তিনি বলেন আমাকে হাদীস বর্ণনা করেছেন ইয়ালা বিন উবাইদুল হানাফি তিনি বলেন আমাকে আমার পিতা খবর দিয়ে বলেন আবু মুসলিম খুলানি আরো অন্যন্যরা আমীরে মুয়াবীয়ার নিকট এলেন এবং তাকে জিজ্ঞাসা করলেন আপনি কি মওলা আলীর খিলাফতের বিরোধীতা করেন...কিংবা আপনি কি তার সমকক্ষ? তিনি উত্তর দিলেন না। আমি জানি তিনি আমার চেয়ে উত্তম এবং আমার চেয়ে শাসন চালনায় বেশী হকদার। কিন্তু তুমি কি জানো মাজলুম উসমানকে হত্যা করা হয়েছে.? আমি উসমানের চাচাতো ভাই এবং তার হত্যার প্রতিশোধের দাবিদার। অতঃপর তারা মওলা আলীর নিকট যাবেন এবং বলবেন উসমানের হত্যাকারীকে আমাদের হাতে তোলে দেন।অতঃপর তারা মওলা আলীর নিকট এলেন এবং তার সাথে সেই বিষয়ে আলোচনা করলেন। অতঃপর তিনি তাদেরকে সঁপে দিতে অস্বীকার করলেন।

[তারিখে দামিস্ক খন্ড-৫৯, পৃষ্ঠা-১৩২]

উপরিউক্ত বর্ণনাগুলি দেখলে বোঝা যায়, আমীরে মুয়াবিয়া হজরতে উসমানের হত্যার প্রতিশোধ চাইছিলেন। যেহেতু তিনি হজরতে উসমানের চাচাতো ভাই, তাই তার ক্রোধটাও স্বাভাবিক। তাই সেই সময়ের আমীর বা খালিফা হিসাবে হজরতে উসমানের হত্যাকারীদেরকে সঁপে দেওয়ার জন্য মওলা আলীকে অনুরোধ করলেন।কিন্তু মওলা আলী তাতে অসম্মতি জানান। সম্ভবত সেই কারণে তাঁর ধারণা যেগেছিলো হজরতে আলী, হজরতে উসমানের হত্যাকারীদের রক্ষা করতে চাইছেন আর সম্ভবত উক্ত কারণেই তাঁর রাগ মওলা আলীর উপর আছড়ে পড়ে। পরবর্তীতে যা বিরাট আকার নিয়ে সিফফিন নামক রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের আকার নেয়। এটাই ছিলো আমীরে মুয়াবিয়ার ভুল,একটি রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের সুত্রপাতের পিছনে আমীরে মুয়াবিয়ার হটকারিতা ও ভুলবোঝাবুঝি কাজ করেছিলো। যাইহোক বলাবাহুল্য উক্ত বর্ণনা দ্বারা একটি জিনিশ পরিস্কার বোঝা যায়, আমীরে মুয়াবিয়া মওলা আলী বিদ্বেষী ছিলেন না।কারণ উক্ত বর্ণনায় আছে, তিনি কি মওলা আলীর খিলাফতের বিরোধীতা করেন কিনা কিংবা নিজেকে মাওলা আলীর সমকক্ষ ভাবেন কিনা জিজ্ঞাসা করা হলে, তার উত্তরে আমীরে মুয়াবিয়া বলেন মওলা আলী তাঁর চেয়ে উত্তম ও শাসন চালনায় অধিক যোগ্য।উক্ত উত্তর শিয়াদের অভিযোগ বাতিল করে কারণ কেও যখন কারোর প্রতি বিদ্বেষ রাখে তাকে নিজের চেয়ে উত্তম বলে স্বীকার করে না বরং তার বিদ্বেষ তাকে তা স্বীকার করতে দেয়ও না।তাই এখানেও শিয়াদের দাবী অবান্তর, আমীরে মুয়াবিয়া বিদ্বেষের কারণে যুদ্ধ করেননি বরং যুদ্ধের কারণ ছিলো হজরতে উসমানের হত্যার প্রতিষোধ নিতে তার হত্যাকারীদের শাস্তি দেওয়া।

সিফফিন যুদ্ধের প্রেক্ষাপটের সাপেক্ষে আরো একটি দলিলঃ


فلما أراد علي ، رضي الله عنه ، أن يبعث إلى معاوية ، رضي الله عنه ، يدعوه إلى بيعته ، قال جرير بن عبد الله :أنا أذهب إليه يا أمير المؤمنين ، فإن بيني وبينه ودا ، فآخذ لك البيعة منه . فقال الأشتر : لا تبعثه يا أمير المؤمنين ، فإني أخشى أن يكون هواه معه . فقال علي : دعه فبعثه وكتب معه كتابا إلى معاوية يعلمه باجتماع المهاجرين والأنصار على بيعته ، ويخبره بما كان في وقعة الجمل ، ويدعوه إلى الدخول فيما دخل فيه الناس . فلما انتهى إليه جرير بن عبد الله أعطاه الكتاب وطلب معاوية عمرو بن العاص ورءوس أهل الشام فاستشارهم ، فأبوا أن يبايعوا حتى يقتل قتلة عثمان ، أو أن يسلم إليهم قتلة عثمان ، وإن لم يفعل قاتلوه ولم يبايعوه حتى يقتلهم عن آخرهم . فرجع جرير إلى علي فأخبره بما قالوا ، فقال الأشتر :

পরে মওলা আলী আমীরে মুয়াবিয়ার প্রতি বাইয়াতের আহবান জানিয়ে তাাঁর চিঠি লিখে পাঠাবার ইচ্ছা করলেন তখন জারির বিন আব্দুল্লাহ অনুরোধ করে বললেন হে আমীরুল মোমিনিন আমাকে তাঁর কাছে যেতে দিন।কারণ তার সাথে হার্দিক সম্পর্ক রয়েছে। অতএব আমি আপনার অনুকুলে বাইয়াত হওয়ার আশা রাখি। আশতার বললেন হে আমীরুল মোমিনিন তাকে পাঠাবেন না। আমি আশংকা করি যে সে (হজরতে জারির) তার (আমীরে মুয়াবিয়ার) পক্ষ অবলম্বন করবে। মওলা আলী বললেন তাঁকে যেতে দাও। অতঃপর মওলা চিঠি লিখে তার হাতে আমীরে মুয়াবিয়ার নিকট পাঠিয়ে দিলেন। চিঠিতে উল্লেখিত মুহাজির,আন্সার সাহাবী ও আমীরে মুয়াবিয়ার ব্যায়েতের কথা জানিয়ে পাঠিয়ে দিলেন। যাতে আমীরে মুয়াবিয়া ও লোকেদের ঐক্যমত হয়ে বাইয়াত হওয়ার আহব্বান জানান।জারির ইবনে আব্দুল্লাহ আমীরে মুয়াবিয়ার নিকট পৌঁছে তাঁর হাতে চিঠিটি দিলেন। আমীরে মুয়াবিয়া, আমর ইবনে আ'স, সিরিয়ার নেতৃবৃন্দদের ডেকে এই বিষয়ে পরামর্শ চাইলেন। তখন তারা হজরতে উসমানের হত্যাকারীদের সিরিয়া কর্তৃপক্ষের হাতে তুলে দেওয়া ব্যতীত বাইয়াত হতে অস্বীকৃতি জানালেন।নতুবা মওলা আলীর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করা ও উসমানের হত্যাকারীদের হত্যা করা না পর্যন্ত বাইয়াত হবেন না বলে সিদ্ধান্ত নিলেন। হজরতে জারির মওলা আলীর নিকট ফিরে এসে প্রতিপক্ষের বক্তব্য জানিয়ে দিলেন। [আল বিদায়া ওয়ান নিহাইয়াহ, খন্ড-৮ পৃষ্ঠা-৫৪৪]

উক্ত বর্ণনাতেও প্রমাণ হয় সিফফিন যুদ্ধের কারণ ছিলো হজরতে উওসমানের হত্যাকে উপলক্ষ করে। তাছাড়া হজরতে আমীরে মুয়াবিয়ারও একি স্বীকারক্তি,

❏ হাদিস ১৭:

- حَدَّثَنَا وَكِيعٌ ، عَنْ مُوسَى بْنِ قَيْسٍ ، قَالَ : حَدَّثَنِي قَيْسُ بْنُ رُمَّانَةَ ، عَنْ أَبِي بُرْدَةَ ، قَالَ : قَالَ مُعَاوِيَةُ : مَا قَاتَلْت عَلِيًّا إلاَّ فِي أَمْرِ عُثْمَانَ

হজরতে আবু বুরদা হইতে বর্ণিত তিনি বলেন আমীরে মুয়াবিয়া বলেছেন আমি আলির সাথে যুদ্ধ করেছি কেবল ওসমানের বিষয় নিয়ে।

[মুসান্নাফে ইবনে আবি শাইবাহ,খন্ড-৭ হাদীস নং-৪৪৬৪]

পুর্বে আমরা জেনেছি দুই গোষ্টি (মুসলমান) হজরতে উসমানকে উপলক্ষ করে ৩৫ থেকে ৩৭ হিজরে মধ্যবর্তী সময়ে পরস্পর হানাহানিতে লিপ্ত হবে। আর প্রেক্ষাপট বলে দিচ্ছে সিফফিন যুদ্ধ সম্বন্ধে আল্লাহর রসুল ভবিষ্যৎবানী দিয়ে গেছেন। এইবার বিষয় হলো দুই গোষ্টির মধ্যে যে যুদ্ধ হয়েছিলো উভয় দলই মুসলমান ছিলো, যার সাপেক্ষে পুর্বেই প্রমাণ পেশ করেছি।কিন্তু শিয়াদের, অস্বীকার করা যেহেতু অভ্যাসে দাঁড়িয়ে গেছে তাই তারা মানতে চায় না। শিয়া-রাফজিদের দাবী মওলা আলীর সাথে যুদ্ধ করার কারণে বিপক্ষ কাফির হয়ে গেছে। আর সেই দলের নেতৃত্ব দিচ্ছিলেন আমীরে মুয়াবিয়া তাই তার মুসল্মান হওয়ার প্রশ্ন আসে না, ইহাই শিয়াদের বক্তব্য। তাদের দাবী বা বক্তব্যের সাপেক্ষেও দলিলও দিয়ে থাকে যা নিম্নে উল্লেখ করলাম।

❏ হাদিস ১৮:

حَدَّثَنَا سُلَيْمَانُ بْنُ عَبْدِ الْجَبَّارِ الْبَغْدَادِيُّ حَدَّثَنَا عَلِيُّ بْنُ قَادِمٍ حَدَّثَنَا أَسْبَاطُ بْنُ نَصْرٍ الْهَمْدَانِيُّ عَنْ السُّدِّيِّ عَنْ صُبَيْحٍ مَوْلَى أُمِّ سَلَمَةَ عَنْ زَيْدِ بْنِ أَرْقَمَ أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ لِعَليٍّ وَفَاطِمَةَ وَالْحَسَنِ وَالْحُسَيْنِ أَنَا حَرْبٌ لِمَنْ حَارَبْتُمْ وَسِلْمٌ لِمَنْ سَالَمْتُمْ

“যায়েদ বিন আরকম (رضي الله عنه) বলেছেন ‘ আল্লাহর রসুল (ﷺ) আলী, ফাতেমা, হাসান ও হুসাইনদের সমদ্ধে বলেছেন আমি তাদের সাথে শান্তি স্থাপন করি যারা এদের সাথে শান্তি স্থাপন করে, আমি তাদের সাথে যুদ্ধরত হই যারা এদের সাথে যুদ্ধ করে”।

তথ্যসূত্রঃ

(১)সুনানে তিরমিজি, বাব ফাজায়েলে ফাতেমা,হাদীস নং-৩৯৬৫

(২)সুনানে ইবনে মাজাহ, বাব ফাজায়েলে সাহাবা,হাদীস নং-১৪৫

(৩)সহি ইবনে হিব্বান, হাদীস নং-৭৩০৪

(৪)মুসান্নাফে ইবনে আবি শাইবাহ,হাদীস নং-৩১৫৬৫

উক্ত হাদীসের ভিত্তি করে শিয়াদের বক্তব্য যেহেতু হাদীস অনুযায়ী মওলা আলীর সাথে যুদ্ধ করার অর্থ হলো রসুলের সাথে যুদ্ধে লিপ্ত হওয়া তাই যারা বা যে মওলা আলীর সাথে যুদ্ধ করে পরক্ষভাবে রসুলের সাথেই যুদ্ধ করেছেন। 

প্রথমত, ১৬নং হাদিসের ব্যাখ্যায় ব্যাপকভাবে আলোচিত হয়েছে যে, ইজতেহাদী ভুলের কারণে এই যুদ্ধের সূচনা হয়েছিল।

দ্বিতীয়ত, এমন হাদিসও বিদ্যমান যেখানে আমীরে মুয়াবিয়া (রাঃ) ইমাম হাসান (রাঃ) এর সাথে শান্তি চুক্তি করেছিলেন।

তৃতীয়ত,

উক্ত হাদীসের সনদ পর্যালচনা করা যায় তাহলে দেখা যাবে উক্ত হাদীসের সনদ ত্রুটিপুর্ণ, যার দলিল নিম্নে দেওয়া হলোঃ

❏ হাদিস ১৯:

، حَدَّثَنَا ابن حماد، حَدَّثَنا عباس سمعت يَحْيى وأبا خيثمة يقولان : " كان صبيح ينزل الخلد وكان كذَّابًا يحدث عن عثمان بن عفان وعن عائشة وكان كذَّابًا خبيثا ، قال يَحْيى : وأعمى أَيضًا ، كان في دار الرقيقي كذاب

হাম্মাদ বর্ণনা করেন তিনি বলেন আমাকে আব্বাস বলেছেন ইয়াহিয়া ইবনে মোইন ও খুইসামাহকে বলতে শুনেছি স্বাবিহকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হয়েছে এবং হজরতে উসমান বিন আফফান ও হজরতে আয়শা সম্বন্ধে অপবাদ রটিয়ে বেড়াতো। এবং খুবাইসের সম্বন্ধেও অপবাদ দিয়ে বেড়াতো। ইয়াহিয়াহ ইবনে মোইন বলেন সে খুব স্বার্থপরও ছিলো আর স্পষ্ট (প্রকাশ্যে মিথ্যা বলতো)মিথ্যাবাদীদের অন্তর্ভুক্ত ছিলো।

[মিজানুল এইতেদাল খন্ড-১পৃষ্ঠা-১৭৬]

উক্ত বর্ণনায় সুবহাই নামক রাবি কাজ্জাব এবং হজরতে উসমান ও আয়শা সম্বন্ধে অপবাদ দিতো, তাই এমন রাবির বর্ণনাকৃত হাদীস কোন মতে গ্রহনীয় নয়।

আরো একটি সনদ থেকে উক্ত হাদীস বর্ণিত হয়েছে যা নিম্নে উল্লেখ করা হলো।

❏ হাদিস ২০:

  أخبرنا أحمد بن جعفر القطيعي ، ثنا عبد الله بن أحمد بن حنبل ، حدثني أبي ، ثنا تليد بن سليمان ، ثنا أبو الجحاف ، عن أبي حازم ، عن أبي هريرة - رضي الله تعالى عنه - قال : نظر النبي - صلى الله عليه وآله وسلم - إلى علي وفاطمة والحسن والحسين فقال : " أنا حرب لمن حاربكم ، وسلم لمن سالمكم " .

“ আবু হুরাইরা বর্ণনা করেছেন “ রাসুল (ﷺ) আলী, ফাতেমা, হাসান (আঃ) হুসাইনের দিক দৃষ্টিপাত করলেন এবং বললেন ‘আমি তাদের যাতে যুদ্ধরত থাকি যারা তোমাদের সাথে যুদ্ধরত হয়, আর আমি তাদের সাথে শান্তি স্থাপন করি যারা তোমাদের সাথে শান্তি স্থাপন করে”।

তথ্যসূত্রঃ

(১)মুসনাদে আহমাদ, হাদীস নং-৯৬৯৮

(২)ফাদাইলে সাহাবা, খন্ড ২ হাদিস নং -১৩৫০, ইমাম হাম্বাল

(৩)হাকিম আল মুস্তাদ্রাক ‘আলা সাহিহাইন খন্ড-৩ হাদীস নং-৪৭৬৭

(৪)ইমাম তাবরানী, ম'জুমুল কাবীর হাদীস নং-২৬২১

প্রথমত, ১৬নং হাদিসের ব্যাখ্যায় ব্যাপকভাবে আলোচিত হয়েছে যে, ইজতেহাদী ভুলের কারণে এই যুদ্ধের সূচনা হয়েছিল।

দ্বিতীয়ত, এমন হাদিসও বিদ্যমান যেখানে আমীরে মুয়াবিয়া (রাঃ) ইমাম হাসান (রাঃ) এর সাথে শান্তি চুক্তি করেছিলেন।

তৃতীয়ত,

উক্ত হাদীসের সনদে তালিদ বিন সুলাইমান নামক রাবি বিতর্কিত, যার প্রমাণ নিম্নে দেওয়া হলো।

❏ হাদিস ২১:

حدثنا عباس بن محمد بن حاتم قال سمعت يحيى بن معين قال تليد بن سليمان كان كذابا يشتم عثمان رحمه الله حدثنا عبد الله بن محمد بن سعدويه المروزي قال حدثنا إبراهيم بن يعقوب الجوزجاني قال سمعت أحمد بن حنبل يقول حدثني تليد وهوعندي كان يكذب

বয়ান করেছেন আব্বাস বিন মুহাম্মাদ বিন হাতিম তিনি বলেন ইয়াহিয়া ইবনে মইনকে বলতে শুনেছি তালিদ বিন সুলাইমাম কাজ্জাব ছিলো, হজরতে উসমানকে গালি দিতো আল্লাহর রহম তার উপর (হজরতে উসমানের)।বয়ান করেছেন আব্দুল্লাহ বিন মুহাম্মাদ সাওয়ি আল মারুজি তিনি বলে আমাকে ইবরাহিম বিন ইয়াকুব জুরজানি বলেন আহমাদ বিন হাম্বালকে বলতে শুনেছি তালিদ বিন সুলাইমান মিথ্যা রটিয়ে বেড়াতো।

(ইবনে হিব্বান, কিতাবুল মাজরুহিন,খন্ড-১ পৃষ্ঠা-৪)

وهذا إسناد تالف ، تليد بن سليمان رافضي كذاب ، قال ابن معين : كذاب يشتم عثمان ،وقال أبو داود : رافضي يشتم أبا بكر وعمر.

এই সনদ ত্রুটিপুর্ণ, তালিদ বিন সুলাইমান রাফজি, কাজ্জাব ছিলো।ইমাম ইবনে মইন বলেন সে কাজ্জাব ছিলো, হজরতে উসমানকে গালি দিতো।ইমাম আবু দাউদ বলেন সে রাফজি ছিলো হজরতে আবু বকর ও উমারকে (রাদিআল্লাহু আনহুমা) গালি দিতো।

(মিজানুল এইতেদাল খন্ড-১ পৃষ্ঠা-৩৫৮)

❏ হাদিস ২২:

উপরি উক্ত হাদীসটি আরো একটি সনদে বর্ণিত হয়েছে যা নিম্নে উল্লেখ করলাম

 حَدَّثَنَا إِبْرَاهِيمُ قَالَ : نا مُحَمَّدُ بْنُ مَرْزُوقٍ قَالَ : حَدَّثَنِي حُسَيْنُ بْنُ الْحَسَنِ الْأَشْقَرُ ، عَنْ عُبَيْدِ اللَّهِ بْنِ مُوسَى ، عَنْ أَبِي مَضَاءٍ ، وَكَانَ رَجُلَ صَدْقٍ ، عَنْ إِبْرَاهِيمَ بْنِ عَبْدِ الرَّحْمَنِ بْنِ صُبَيْحٍ ، مَوْلَى أُمِّ سَلَمَةَ ، عَنْ جَدِّهِ صُبَيْحٍ قَالَ : كُنْتُ بِبَابِ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ ، فَجَاءَ عَلِيٌّ وَفَاطِمَةُ وَالْحَسَنُ وَالْحُسَيْنُ ، فَجَلَسُوا نَاحِيَةً ، فَخَرَجَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِلَيْنَا ، فَقَالَ : إِنَّكُمْ عَلَى خَيْرٍ وَعَلَيْهِ كِسَاءٌ خَيْبَرِيُّ ، فَجَلَّلَهُمْ بِهِ ، وَقَالَ : أَنَا حَرْبٌ لِمَنْ حَارَبَكُمْ ، سَلْمٌ لِمَنْ سَالَمَكُمْ لَا يُرْوَى هَذَا الْحَدِيثُ عَنْ صُبَيْحٍ مَوْلَى أُمِّ سَلَمَةَ عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ إِلَّا بِهَذَا الْإِسْنَادِ ، تَفَرَّدَ بِهِ حُسَيْنٌ الْأَشْقَرُ وَقَدْ رَوَاهُ السُّدِّيُّ : عَنْ صُبَيْحٍ ، عَنْ زَيْدِ بْنِ أَرْقَمَ

ইবরাহীম বিন আব্দুর রাহমান বিন সুবহাই মওলা উম্মে সালমা নিজের দাদু সুবাহাই হইতে বর্ণনা করেন, আমি আল্লাহর রসুল (ﷺ) এর দরজার পাশে ছিলাম। হজরত আলী, হজরতে ফাতিমা, ইমাম হাসান ও হুসাইন ( রাদিয়াল্লাহু আনহুম)এসে একটি কোনায় বসে গেলেন। আল্লাহর রসুল (ﷺ) আমাদের দিকে বেরিয়ে এসে বললেন, তোমরা খায়রের উপর আছো। এবং তাদের উপর খাইবারের চাদর ছিলো এবং তাদেরকে চাদর দ্বারা ঢেকে নিয়ে বললেন আমি তার সাথে যুদ্ধরত হই, যে তোমাদের সাথে যুদ্ধরত হয়।আর আমি তাদের সাথে শান্তি স্থাপন করি যারা তোমাদের সাথে শান্তি স্থাপন করে”।

(১)ম'জুমুল আওসাত,বাবুল আলিফ,হাদীস নং-২৯৬৪

(২)মাজমাউজ জাওয়ায়িদ, কিতাবুল মানাকিব, হাদীস নং-১৪৯৮৯

প্রথমত, ১৬নং হাদিসের ব্যাখ্যায় ব্যাপকভাবে আলোচিত হয়েছে যে, ইজতেহাদী ভুলের কারণে এই যুদ্ধের সূচনা হয়েছিল।

দ্বিতীয়ত, এমন হাদিসও বিদ্যমান যেখানে আমীরে মুয়াবিয়া (রাঃ) ইমাম হাসান (রাঃ) এর সাথে শান্তি চুক্তি করেছিলেন।

তৃতীয়ত,

পুর্বেই প্রমাণ করেছি সুবাইহ মওলা একজন বিতর্কিত রাবি এছাড়া উক্ত বর্ণনায় হাসান বিন হুসাইন আল আশকার সম্বন্ধে সমালোচনা রয়েছে তা নিম্নে উল্লেখ করা হলো

وهذا إسناد ضعيف جدا ، حُسَيْنُ بْنُ الْحَسَنِ الْأَشْقَرُ قال البخاري فيه نظر، وقال مرة عنده مناكير، وقال أبو زرعة منكر الحديث ، وقال أبو حاتم ليس بقوي،

অত্র হাদীসটি অতিমাত্রায় দুর্বল। ইমাম বুখারী বলেন হুসাইন আল আস্কার এর সম্বন্ধে সমালোচনা রয়েছে। ও মাররাত বলেন তার নিকট সে মুনকার।আবু জারা'হ বলেন সে মুনকারুল হাদীস ছিলো।আবু হাতিম বলেন বর্নায় শক্তিশালী ছিলো না (দুর্বল ছিলো)।

[তাহিজবুত তাহজিব, খন্ড-২ পৃষ্ঠা-৩১০]

وقال الأزدي : وضعيف، سمعت أبا يعلى قال: سمعت أبا معمر الهذلى يقول: الأشقر كذاب

আল আজাদি বলেন সে জইফ ছিলো, আমি আবু ইয়ালা থেকে শুনেছি তিনি বলেন আমি আবু মা'মার হাজলিকে বলতে শুনেছি, আল আসকার কাজ্জাব ছিলো।

তথ্যসূত্রঃ

(১)মুসনাদে আবু ইয়ালা, খন্ড-১২ পৃষ্ঠা-১৩০

(২)তাহজিবুল কামাল ফি আসমাউ রিজাল, খন্ড- ৬, পৃষ্ঠা-২৬৯

(৩)তাহজীবুত তাহজীব খন্ড-২ পৃষ্ঠা-২৯২

উপরিউক্ত আলোচনা দ্বারা বোঝা যায় , হাদীসটি বিভিন্ন সনদে বর্ণিত হলেও সমস্ত সনদে বিতর্কিত রাবিগন বিদ্যমান । প্রথম সনদে দেখা যায় সুবহাই মওলা স্পষ্ট মিথ্যাবাদী ছিলো এবং হজরতে উসমান ও আইশা সম্পর্কে অপবাদ রটিয়ে বেড়াতো। দ্বিতীয় সনদে দেখা গেলো তালিদ বিন সুলাইমান একজন রাফজি, যে হজরতে উসমান ও আবু বকর সিদ্দিককে গালি দিয়ে বেড়াতো সঙ্গে মিথ্যাবাদীও ছিলো। তৃতীয় সনদে হুসাইন আল আসকার একজন মুনকারুল হাদীস ছিলো এবং উক্ত সনদেও সুবহাই মওলা উপস্থিত আছে । আগেই দেখেছি সে একজন স্পষ্ট মিথ্যাবাদী। অতএব বলা যায় এইসব মিথ্যুক বা বিতর্কিত বর্ণনাকারী বা সাক্ষীর বর্ণনা বা সাক্ষ্য গ্রহনযোগ্য নয় বরং প্রত্যাখ্যাত। তাছাড়া সিফফিন যুদ্ধে মওলা আলী তার প্রতিপক্ষ যে শুধু মুসলমানই নয় বরং তারা জান্নাতিও বটে, তা মওলা আলী নিজে স্বীকার করেছেন। তাই তাদের কাছে আর সুযোগ নেই আমীরে মুয়াবিয়া ও তার নেতৃত্বে সৈনদলকে কাফীর বলে। আর শিয়ারা যদি মওলা আলীকে মানার দাবিদার হয়ে থাকে, আশা করি তা প্রমাণ করতে মওলা আলীর এই বানীও স্বীকার করে নেবে । যারা অস্বীকার করবে তারা সিফফিন যুদ্ধে আমীরে (মুয়াবিয়ার সাথে দ্বন্দ মেটাতে) সালিশি না মেনে মওলা আলীর যেসব শিয়া বা অনুসারীরা তার দল ত্যাগ করেছিল এবং খারজি হয়ে গিয়েছিলো, তাদেরকে সেই খারজি বলে ধরা হবে।

এখানেই শেষ নয় যেহেতু শিয়ারা আমীরে মুয়াবিয়াকে মওলা আলীর বিদ্বষী বলেই চিহ্নিত করতে চায়, কিছু বর্ণনার মাধ্যমে নিজেদের অভিযোগ প্রমাণ করার চেষ্টা করে। তার মধ্যে নিম্নোক্ত বর্ণনাটি উল্লেখযোগ্য,

❏ হাদিস ২৩:

أَخْبَرَنَا أَحْمَدُ بْنُ عُثْمَانَ بْنِ حَكِيمٍ الْأَوْدِيُّ، قَالَ: حَدَّثَنَا خَالِدُ بْنُ مَخْلَدٍ، قَالَ: حَدَّثَنَا عَلِيُّ بْنُ صَالِحٍ، عَنْ مَيْسَرَةَ بْنِ حَبِيبٍ، عَنْ الْمِنْهَالِ بْنِ عَمْرٍو، عَنْ سَعِيدِ بْنِ جُبَيْرٍ، قَالَ: كُنْتُ مَعَ ابْنِ عَبَّاسٍ، بِعَرَفَاتٍ، فَقَالَ: «مَا لِي لَا أَسْمَعُ النَّاسَ يُلَبُّونَ؟» قُلْتُ: يَخَافُونَ مِنْ مُعَاوِيَةَ، فَخَرَجَ ابْنُ عَبَّاسٍ، مِنْ فُسْطَاطِهِ، فَقَالَ: «لَبَّيْكَ اللَّهُمَّ لَبَّيْكَ، لَبَّيْكَ فَإِنَّهُمْ قَدْ تَرَكُوا السُّنَّةَ مِنْ بُغْضِ عَلِيٍّ»

সাঈদ ইবন জুবায়র (رحمة الله) হইতে বর্ণিত তিনি বলেন আমি ইবন আব্বাসের (رضي الله عنه) সঙ্গে আরাফায় ছিলাম। তিনি বললেন কী হলো লোকজনের তো তালবিয়া পাঠ করতে শুনছি না? আমি বললাম মুআবিয়ার (رضي الله عنه) ভয়ে। এরপর ইবন আব্বাস (رضي الله عنه) তাঁর হতে বের হয়ে ঘোষনা দিলেন لَبَّيْكَ اللَّهُمَّ لَبَّيْكَ، لَبَّيْكَ এবং বললেন তারা (رضي الله عنه)সুন্নতকে আলীর প্রতি ঘৃনায় ত্যাগ করেছে।

তথ্যসূত্রঃ

(১)সুনানে নাসায়ি,কিতাবুল মানাসিকিল হজ, হাদীস নং-৩০০৬

(২)ইমাম নাসায়ি,সুনানুস সুগরা,হাদীস নং-২৯৮৯

(৩)হাকিম আল মুস্তাদরাক, হাদীস নং-১৬৫৯

(৪)সহি ইবনে খুজাইমাহ, হাদীস নং-২৬১৭

❏ হাদিস ২৪:

 أَخْبَرَنَا أَبُو الْحَسَنِ مُحَمَّدُ بْنُ الْحُسَيْنِ الْعَلَوِيُّ , أنبأ عَبْدُ اللهِ بْنُ مُحَمَّدِ بْنِ الْحَسَنِ بْنِ الشَّرْقِيِّ , ثنا عَلِيُّ بْنُ سَعِيدٍ النَّسَوِيُّ , ثنا خَالِدُ بْنُ مَخْلَدٍ , ثنا عَلِيُّ بْنُ صَالِحٍ , عَنْ مَيْسَرَةَ بْنِ حَبِيبٍ النَّهْدِيِّ , عَنِ الْمِنْهَالِ بْنِ عَمْرِو , عَنْ سَعِيدِ بْنِ جُبَيْرٍ , قَالَ: كُنَّا عِنْدَ ابْنِ عَبَّاسٍ بِعَرَفَةَ , فَقَالَ: " يَا سَعِيدُ مَا لِي لَا أَسْمَعُ النَّاسَ يُلَبُّونَ؟ " فَقُلْتُ: يَخَافُونَ مُعَاوِيَةَ فَخَرَجَ ابْنُ عَبَّاسٍ مِنْ فُسْطَاطِهِ , فَقَالَ: " لَبَّيْكَ اللهُمَّ لَبَّيْكَ وَإِنْ رَغِمَ أَنْفُ مُعَاوِيَةَ اللهُمَّ الْعَنْهُمْ فَقَدْ تَرَكُوا السُّنَّةَ مِنْ بُغْضِ عَلِيٍّ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ"

“সাইদ ইবেন যুবাইর বর্ননা করেছেন যে আরাফাতে ইবনে আব্বাসের সাথে ছিলাম, তিনি বললেন যে হে সাইদ! লোকেদের তালবিয়া পড়তে শুনছিনা যে?আমি বললাম মুয়াবিয়ার ভয়ে। (লোকরা তালবিয়া পড়ছে না), ইবনে আব্বাস তাবু থেকে বার হয়ে তিনি ঘোষনা দিলেন লাব্বাইক আল্লাহ হুম্মা লাব্বাইক এবং বললেন মুয়াবিয়ার নাকের ডগায় হে আল্লাহ তাদের প্রতি লানত তারা সুন্নত কে আলির প্রতি বিদ্বেষের কারনে ত্যাগ করেছে।

(ইমাম বাইহাকি, সুনানুল কুবরা,হাদীস নং-৮৮৮০)

উপরিউক্ত বর্ণনা দুটি, শিয়াদের অভিযোগ সাপেক্ষে দলিলাদির মধ্যে একটি। ইহার উপর ভিত্তি করে শিয়াদের বক্তব্য আমীরে মুয়াবিয়া, মওলা আলী বিদ্বেষী ছিলেন।

তাদের আপত্তির জবাবঃ

উপরিউক্ত দুই হাদীস দেখলে বোঝা যায় , উভয় বর্ণনায় রাবির সিলসিলা বা সনদ একিরুপ। অর্থাৎ উক্ত বর্ণনাটি ফারদে মুতলাক বা গরিবে মুতলাক।অথচ দুটি বর্ণনায় মতনের মধ্যে কিছুটা ভিন্নতা দেখা দিচ্ছে। ইমাম বাইহাকির বর্ণনায় وَإِنْ رَغِمَ أَنْفُ مُعَاوِيَةَ اللهُمَّ الْعَنْهُمْ অর্থাৎ বললেন মুয়াবিয়ার নাকের ডগায় হে আল্লাহ তাদের প্রতি লানত উক্ত উদ্ধৃতাংশটি অতিরিক্ত আছে। যেখানে উভয় বর্ণনায় মুল বর্ণনাকারী হলেন সায়িদ ইবনে যুবাইর তিনি ছাড়া অন্য কোন সাহাবী বা বর্ণনাকারী এইধরণের বর্ণনার প্রমাণ নেই । তার থেকে একমাত্র শ্রবনকারী হলেন মিনহাল বিন আমর, তার থেকে একমাত্র শ্রবণকারী হলেন মাইসারাহ বিন হাবিব তার থেকে একমাত্র শ্রোতা হলেন আলী বিন স্বলেহ তার থেকে একমাত্র শ্রোতা হলেন খালিদ বিন মুখাল্লাদ। অতএব উক্ত বর্ণনাটি খাবরে গারীবে মুতলাকা। যেখানে হাদীসের উসুল অনুযায়ী খবরে ওয়াহিদে মতনে সরাসরি সন্দেহ থাকে। যেমনঃ

 فهو كذالك فى حق السنّة الّا انّ الشبهة فى باب الخبر فى ثبوته من رسول الله صلى الله عليه وسلم واتصاله به ولهذا المعنى صار الخبر على ثلثة اقسام صحّ من رسول اللهصلى الله عليه وسلم وثبت منه بلاشبهة وهو المتواتر وقسم فيه ضرب شبهة وهو المشهور قسم فيه ا حتمال و شبهة وهو الاحاد

খবরের মধ্যে উহা নবী (ﷺ) থেকে প্রমাণিত কিনা এবং নবীর (ﷺ) পর্যন্ত বর্ণনা দ্বারা পৌছেছে কিনা তাতে সন্দেহ সৃষ্টি হয়ে থাকে এ জন্য খবর তিন প্রকার

১. যা নবী করিম (ﷺ) হইতে সন্দেহাতীত ভাবে সহীহ হিসেবে প্রামাণিত হয়েছে তাহাই খবরে মুতাওয়াতির

২. যাতে একপ্রকার সন্দেহ রয়েছে তাহা হল খবরে মাশহুর

৩. যাতে সন্দেহ সংশয় উভয় রয়েছে তাকে খবরে আহাদ বলে ।

(উসুলে শাশীর ২৮৯ পৃষ্ঠা, ইসহাক হাকিম আল রুমিরর (৯৫০হিজরি) লিখিত শারহ ফিকহুল আকবারের ৮১ পৃষ্ঠায় এবং আলাউদ্দিন বুখারীর (৮৪১ হিজরি) লিখিত কাস্ফুল আসরারের-১৪ পৃষ্ঠা)

আর উক্ত বর্ণনাটি তো একেবারেই গরীব প্রকৃতির,তার মতন সন্দেহ মুক্ত হতে পারে না। তাছাড়া উক্ত সনদে একজন রাবির সম্বন্ধে অভিযোগ রয়েছে, তার দলিল নিম্নেঃ

وقال ابن أبي حاتم: أنا عبد الله بن أحمد بن حنبل فيما كتب إلي قال: سألت أبي عن خالد بن مخلد فقال: له أحاديث مناكير.

ইবনে আবি হাতিম বলেন, আমাকে আব্দুল্লাহ বিন আহমাদ বিন হাম্বাল খবর দিলেন যখন আমার নিকট চিঠি লিখল আমি আমার পিতাকে খালিদ বিন মুখাল্লাদ সম্বন্ধে জিজ্ঞাসা করলাম । তিনি তাকে উত্তর দিলেন সে হাদীসে মুনকার ছিলো।  

(ইবনে খালফুন, আল মুয়াল্লাম বি শাইখুল বুখারী ওয়া মুসলিম, পৃষ্ঠা-১৬৭)

وَقَالَ أَحْمَدُ بنُ حَنْبَلٍ: لَهُ أَحَادِيْثُ مَنَاكِيْرُ.

وَقَالَ مُحَمَّدُ بنُ سَعْدٍ: كَانَ مُنْكَرَ الحَدِيْثِ، مُفْرِطاً فِي التَّشَيُّعِ، وذكره ابن عدي في " كامله " فأورد له عدة أحاديث منكرة .

আহমাদ বিন হাম্বাল তার সম্পর্কে বলেন সে হাদীসের ক্ষেত্রে মুনকার ছিলো।মুহাম্মাদ বিন সা'দ (ইবনে সা'দ) বলেন সে মুনকারুল হাদীস ছিলো এবং সে চরমপন্থি শিয়িদের অন্তর্ভুক্ত ছিলো। ইবনে আদী তার কামিলে খালিদ বিন মুখললাদ সম্পর্কে উল্লেখ করেছেন তার বর্ণনায় অতিরিক্ত মুনকার হাদীস বর্তমান।

সিয়ারু আলামিন নুবালায়ি, খন্ড-১০,পৃষ্ঠা-২১৮

قال ابن سعد: كان منكر الحديث، في التشيع مفرطا،

ইবনে সা'দ বলেন সে মুনকারুল হাদিস ছিলো এবং সে চরমপন্থি শিয়াদের অন্তর্গত ছিলো।

(তাবকাত, খন্ড-৬, পৃষ্ঠা-৪০৬)

উপরিউক্ত আলোচনা দ্বারা বোঝা যায়, উক্ত হাদীসের সনদে খালিদ বিন মুখাল্লাদ নামক রাবিটি বিতর্কিত।আর তার সমর্থক বর্ণনাকারীও পাওয়া যায়নি। অতএব এমন বিতর্কিত রাবি আর তার সমর্থকহীন বর্ণনাকারী না থাকায় উক্ত বর্ণনায় কোন ভাবে আস্থা রাখা যাচ্ছে না। তাছাড়া খালিদ বিন মুখাল্লাদ একজন কট্টর শিয়া ছিলো ।তাই শিয়া হয়ে আমীরে মুয়াবিয়ার বিরুদ্ধে মিথ্যা বলবে এটাই স্বাভাবিক।

এখন সিফফিন যুদ্ধকে কেন্দ্র করে আমীরে মুয়াবিয়ার উপর শিয়াদের বিভিন্ন অভিযোগের জবাব দেওয়া হয়েছিলো, এই পর্বেও সেই আলোচনা অব্যাহত থাকবে। এই আলোচনায় সিফফিন যুদ্ধকে কেন্দ্র করে আমীরে মুয়াবিয়ার প্রতি শিয়াদের আরো কিছু অভিযোগ ও অপবাদের জবাব দেওয়ার চেষ্টা করা হবে ইনশাআল্লাহ । আলোচ্য বিষয়ানুযায়ী, দেখে নেওয়া যাক সিফফিন যুদ্ধকে কেন্দ্র করে শিয়ারা আমিরে মুয়াবিয়ার উপর আরো কি কি অভিযোগ দেয়। তার সমর্থক দলিল গুলি কি দিয়ে থাকে তাও দেখার বিষয়। তারপর আলোচনা ভিত্তিক জবাবের দিকে অগ্রসর হওয়া যাবে পইনশাআল্লাহ । সিফফিন যুদ্ধকে কেন্দ্র করে আমিরে মুয়াবিয়ার উপর শিয়াদের অন্যতম অভিযোগ, নিম্নোক্ত হাদীসের উপর ভিত্তি করে।

❏ হাদিস ২৫:

حَدَّثَنَا مُسَدَّدٌ ، قَالَ : حَدَّثَنَا عَبْدُ العَزِيزِ بْنُ مُخْتَارٍ ، قَالَ : حَدَّثَنَا خَالِدٌ الحَذَّاءُ ، عَنْ عِكْرِمَةَ ، قَالَ لِي ابْنُ عَبَّاسٍ وَلِابْنِهِ عَلِيٍّ : انْطَلِقَا إِلَى أَبِي سَعِيدٍ فَاسْمَعَا مِنْ حَدِيثِهِ ، فَانْطَلَقْنَا فَإِذَا هُوَ فِي حَائِطٍ يُصْلِحُهُ ، فَأَخَذَ رِدَاءَهُ فَاحْتَبَى ، ثُمَّ أَنْشَأَ يُحَدِّثُنَا حَتَّى أَتَى ذِكْرُ بِنَاءِ المَسْجِدِ ، فَقَالَ : كُنَّا نَحْمِلُ لَبِنَةً لَبِنَةً وَعَمَّارٌ لَبِنَتَيْنِ لَبِنَتَيْنِ ، فَرَآهُ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَيَنْفُضُ التُّرَابَ عَنْهُ ، وَيَقُولُ : وَيْحَ عَمَّارٍ ، تَقْتُلُهُ الفِئَةُ البَاغِيَةُ ، يَدْعُوهُمْ إِلَى الجَنَّةِ ، وَيَدْعُونَهُ إِلَى النَّارِ قَالَ : يَقُولُ عَمَّارٌ : أَعُوذُ بِاللَّهِ مِنَ الفِتَنِ

ইকরিমাহ হইতে বর্ণিত, তিনি বলে ইবনে ‘আব্বাস (رضي الله عنه) আমাকে ও তাঁর ছেলে ‘আলীকে বললেন, তোমরা উভয়ই আবূ সা‘ঈদের (رضي الله عنه) নিকট যাও এবং তাঁর হতে হাদীস শুনে আস। আমরা গেলাম। তখন তিনি এক বাগানে কাজ করছিলেন । তিনি আমাদেরকে দেখে চাদরে হাঁটু মুড়ি দিয়ে বসলেন এবং পরে হাদীস বর্ণনা শুরু করলেন। শেষ পর্যায়ে তিনি মসজিদে নববী নির্মাণ আলোচনায় আসলেন। তিনি বললেন আমরা একটা একটা করে কাঁচা ইট বহন করছিলাম আর ‘আম্মার (رضي الله عنه) দু’টো দুটো করে কাঁচা ইট বহন করছিলেন। আল্লাহর নবী (ﷺ) তা দেখে তাঁর দেহ হতে মাটি ঝাড়তে লাগলেন এবং বলতে লাগলেন, ‘আম্মারের জন্য আফসোস! তাকে বিদ্রোহী দল হত্যা করবে। সে তাদেরকে জান্নাতের দিকে আহব্বান করবে আর তারা তাকে জাহান্নামের দিকে আহবান করবে । হজরতে ‘আম্মার (رضي الله عنه) বললেন, আমি ফিতনাহ হইতে আল্লাহর নিকট আশ্রয় চাচ্ছি।

➥(সহিহ বুখারী, কিতাবুস সালাত, হাদীস নং-৪৩৮)

উক্ত হাদীসে লক্ষ করার বিষয় হলো, হজরতে আম্মারকে হত্যা করবে এক বিদ্রোহী দল এবং হজরতে আম্মার তাদেরকের জান্নাতের দিকে আহব্বান করবেন আর তারা হজরতে আম্মারকে জাহান্নামের দিকে আহব্বান করবে। এই দুটো বিষয়ের উপর ভিত্ত করেই শিয়াদের লাফালাফির সূত্রপাত । বিশেষ করে হজরতে আম্মারের হত্যাকারী দলটি হবে জাহান্নামের দিকে আহব্বানকারী দল, উদ্ধৃতাংশটির উপর শিয়ারা বেশী লাফালাফি করে। এবং উক্ত হাদীসের ভিত্তিতে শিয়ারা আমীরে মুয়াবিয়াকে জাহান্নামী প্রমাণ করার চেষ্টা করে থাকে। তাই প্রথমে দেখতে হবে হজরতে আম্মারের হত্যা কারা করেছে এবং তার ভিত্তিতে আদৌ তারা জাহান্নামি হবে কিনা তা দেখার প্রয়োজন আছে।হজরতে আম্মারের হত্যাকারী দলটি হলো আমীরে মুয়াবিয়ার নেতৃত্বাধীন সৈনদল, সমর্থক দলিল হিসাবে শিয়ারা নিম্নোক্ত হাদীসটি পেশ করে থাকে।

❏ হাদিস ২৬:

حَدَّثَنَا عَبْد اللَّهِ قَالَ حَدَّثَنِي أَبُو مُوسَى الْعَنَزِيُّ مُحَمَّدُ بْنُ الْمُثَنَّى قَالَ حَدَّثَنَا مُحَمَّدُ بْنُ أَبِي عَدِيٍّ عَنِ ابْنِ عَوْنٍ عَنْ كُلْثُومِ بْنِ جَبْرٍ قَالَ كُنَّا بِوَاسِطِ الْقَصَبِ عِنْدَ عَبْدِ الْأَعْلَى بْنِ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ عَامِرٍ قَالَ فَإِذَا عِنْدَهُ رَجُلٌ يُقَالُ لَهُ أَبُو الْغَادِيَةِ اسْتَسْقَى مَاءً فَأُتِيَ بِإِنَاءٍ مُفَضَّضٍ فَأَبَى أَنْ يَشْرَبَ وَذَكَرَ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَذَكَرَ هَذَا الْحَدِيثَ لَا تَرْجِعُوا بَعْدِي كُفَّارًا أَوْ ضُلَّالًا شَكَّ ابْنُ أَبِي عَدِيٍّ يَضْرِبُ بَعْضُكُمْ رِقَابَ بَعْضٍ فَإِذَا رَجُلٌ يَسُبُّ فُلَانًا فَقُلْتُ وَاللَّهِ لَئِنْ أَمْكَنَنِي اللَّهُ مِنْكَ فِي كَتِيبَةٍ فَلَمَّا كَانَ يَوْمُ صِفِّينَ إِذَا أَنَا بِهِ وَعَلَيْهِ دِرْعٌ قَالَ فَفَطِنْتُ إِلَى الْفُرْجَةِ فِي جُرُبَّانِ

الدِّرْعِ فَطَعَنْتُهُ فَقَتَلْتُهُ فَإِذَا هُوَ عَمَّارُ بْنُ يَاسِرٍ قَالَ قُلْتُ وَأَيَّ يَدٍ كَفَتَاهُ يَكْرَهُ أَنْ يَشْرَبَ فِي إِنَاءٍ مُفَضَّضٍ وَقَدْ قَتَلَ عَمَّارَ بْنَ يَاسِرٍ

কুলসুম বিন জাবির (رضي الله عنه) হইতে বর্ণিত তিনি বলেন একদা আব্দুল আ'লী বিন আমিরের নিকট আঁখ বাগানে বসেছিলো। তখনই সেখানে উপস্থিত এক ব্যক্তি যার নাম আবু গাদিয়া ছিলো তিনি পানি চাইলেন। তখনই তার জন্য একটি চাঁদির পাত্রে করে পানি নিয়ে আসা হলো কিন্তু তিনি তা পান করতে অস্বীকার করে দিলেন। আর আল্লাহর নবী (ﷺ) এর কথা উল্লেখ করতে গিয়ে একটি হাদীস বর্ণনা করে বল্লেন, আল্লাহর নবী বলেছেন আমার পরে কাফির আর গুমরাহ হয়ে যেওনা যে একেঅপরের গর্দান উড়িয়ে দাও। হঠাৎ এক ব্যক্তি আর একজনকে উল্টোপাল্টা বলতে শুরু করে দিলো। আমি বললাম যে, আল্লাহর কসম যদি আল্লাহ আমাকে লস্করের মধ্যে তোমার বিরুদ্ধে শক্তি দান করে (তাহলে হিসাব নেবো)। ঘটনাবসত সিফফিন যুদ্ধের সময় তাকে আমি সামনেই পেলাম। সে রক্ষাকবচ পরিধান করেছিলো কিন্তু আমি সেই রক্ষাকবচের খালি যায়গায় আঘাত করলাম। পরে জানা গেলো তিনি আম্মার বিন ইয়াসির ছিলেন। তখন আমি আফসোস করে বললাম এটা কোন হাত যে চাঁদির পাত্রে পানি পান করতে অস্বীকার করেছে? যদিও এই হাতই হজরতে আম্মারকে শহিদ করে দিয়েছে।

১.মুসনাদে আহমাদ, হাদীস নং-১৬২৫৭

২.ইমাম তাবারানি, ম'জুমুল কাবির, হাদীস নং -১৭৫৪১

৩.ইমাম আবু নুইয়েম, মারেফাতুস সাহাবা, হাদীস নং-৬৩২০

বিভ্রান্তির নিরসনঃ

উক্ত হাদীস দ্বারা বোঝা যায়, হজরতে আম্মারকে হত্যা করেছেন আবু গাদিয়া নামক একজন যিনি সিফফিন যুদ্ধে আমীরে মুয়াবিয়ার (رضي الله عنه) পক্ষে ছিলেন। এটাই হলো শিয়াদের মূল বক্তব্য যে, হজরতে আম্মারের হত্যাকারি বিদ্রোহী দল বলতে হজরতে আমিরে মুয়াবিয়ার দলকে বোঝানো হয়েছে। শিয়াদের উক্ত দাবি প্রমাণ হলেও উক্ত ঘটনার উপর ভিত্তি করে যেহেতু শিয়াদের দাবী আমীরে মুয়াবিয়া ও তার নেতৃত্বাধীন দলটি জাহান্নামের দিকে আহব্বানকারী দল , উদ্ধৃতাংশটির বাস্তবতা জানতে কয়েকটি ধাপের মাধ্যমে উত্তর দেওয়া দরকার।

প্রথমতঃ 

আমীরে মুয়াবিয়া (رضي الله عنه) ও তার নেত্রীত্বাধীন সৈন্য দল যদি জাহান্নামের দিকে আহব্বানকারী দল হয়, তাহলে শিয়াদের মনে রাখা দরকার মওলা আলী সেই দলের (আমীরে মুয়াবিয়া) ডাকে সাড়া দিয়ে সালিসিতে সম্মতি জানিয়েছিলেন। শিয়া নামধারী খারজিরা নিষেধ করার পরও তিনি সেই সালিসিতে সম্মতি দেন। মওলা আলী নিজের দলের লোকেদের কথা না শুনে জাহান্নামের আহব্বানকারী দলের আহব্বানে সাড়া দিয়েছিলেন। অতএব এখানে প্রশ্ন আসে নিজের দলের আহব্বানে সাড়া না দিয়ে জাহান্নামের দিকে আহব্বানকারী দলের দিকে সাড়া দিলেন কেণ,এই প্রশ্নের উত্তর শিয়াদের কাছে থাকলে যেন দেয়।

দ্বিতীয়তঃ يَدْعُوهُمْ إِلَى الجَنَّةِ ، وَيَدْعُونَهُ إِلَى النَّارِ

তিনি তাদেরকে জান্নাতের দিকে আহব্বান দেবেন তারা তাঁকে জাহান্নামের দিকে আহব্বান দেবে, এই উদ্ধৃতাংশটি ইকরামা ছাড়া অন্য কেও বর্ণনা করেনি। তাছাড়া ইকরামা কোন সাহাবি ছিলো না। তার সম্বন্ধে কিছু বলার পুর্বে, উক্ত হাদীসটি সাহাবীগনও বর্ণনা করেছেন যেখানে কোথাও উক্ত শব্দটি বর্তমান নেই। তার প্রমাণ হিসাবে নিম্নে ভিন্ন ভিন্ন সনদে উক্ত হাদীসটি উল্লেখ করলাম।

তৃতীয়তঃ

আমিরে মুয়াবিয়া (রাঃ) তাঁকে হত্যা করেন নি।

চতুর্থত, 

১৬নং হাদিসের ব্যাখ্যায় ব্যাপকভাবে আলোচিত হয়েছে যে, ইজতেহাদী ভুলের কারণে এই যুদ্ধের সূচনা হয়েছিল।

পঞ্চমত, 

এমন হাদিসও বিদ্যমান যেখানে আমীরে মুয়াবিয়া (রাঃ) ইমাম হাসান (রাঃ) এর সাথে শান্তি চুক্তি করেছিলেন।

❏ হাদিস ২৭:

হজরতে উম্মে সালমা (رضي الله عنه) বর্ণনা করেনঃ

عن ‏ ‏أم سلمة ‏ ‏قالت : ‏قال رسول الله ‏صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ ‏ :‏ تقتل ‏ ‏عماراً ‏ ‏الفئة ‏ ‏الباغية.

অর্থ উম্মে সালমা (رضي الله عنه) হইতে বর্ণিত তিনি বলেন আল্লাহর রসুল (ﷺ) বলেছেন আম্মারকে বিদ্রোহি দল হত্যা করবে।

➥(মুসলিম শরিফ, হাদিস নং-৫১৯৪)

❏ হাদিস ২৮:

হজরতে আমর বিন আ'স (رضي الله عنه) বর্ণনা করেনঃ

قَالَ عَمْرٌو سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُولُ تَقْتُلُهُ الْفِئَةُ الْبَاغِيَةُ

আব্দুল্লাহ বিন আমর বিন আ'স (رضي الله عنه) বলেন আমি আল্লাহর রসুল স্বাল্লালাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি তাকে অর্থাৎ আম্মারকে এক বিদ্রোহী দল হত্যা করবে

➥ (মুসনাদে আহমাদ, হাদীস নং-৬৬৩২)

❏ হাদিস ২৯:

হজরতে আবু হুরাইরাহ (رضي الله عنه) বর্ণনা করেনঃ

عن ‏ ‏أبي هريرة‏ ‏ ‏ ‏قال : ‏قال رسول الله ‏ صلى الله عليه وسلم :‏ ‏أبشر ‏ ‏عمار ‏ ‏تقتلك الفئة الباغية

আবু হুরাইরাহ (رضي الله عنه) হইতে বর্ণিত তিনি বলেন আল্লাহর রসুল (ﷺ) বলেছেন আম্মারকে সংবাদ দাও , তোমাকে এক বিদ্রোহী দল হত্যা করবে।

➥(তিরমিজি শরিফ, হাদীস নং-৩৭৩৬)

❏ হাদিস ৩০:

হজরতে হুজাইফা (رضي الله عنه) বর্ণনা করেনঃ

قال عمار بن ياسر : سمعت رسول الله :صلى الله عليه وسلم يقول لعمار : يا أبا اليقظان لن تموت حتى تقتلك الفئة الباغية-

হজরতে আম্মার বিন ইয়াসির (رضي الله عنه) বলেন আল্লাহর রসুলকে বলতে শুনেছি হে আবু ইয়াকজান তোমাকে এক বিদ্রোহী দল হত্যা না করা পর্যন্ত তুমি মৃত্যুবরণ করবে না।

➥হাকিম আল মুস্তাদরাক, হাদীস নং-৫৬৯৫

❏ হাদিস ৩১:

খুজাইমা ইবনে সাবিত (رضي الله عنه) বর্ণনা করেনঃ

فإني سمعت رسول الله صلى الله عليه وسلم : يقول تقتلك الفئة الباغية

সাবিত বিন খুজাইমা (رضي الله عنه) বলেন নিশ্চই আমি আল্লাহর রসুল (ﷺ)কে বলতে শুনেছি হে আম্মার তোমাকে এক বিদ্রোহী দল হত্যা করবে।

➥হাকিম আল মুস্তাদরাক, হাদীস নং-৫৬৭৬

❏ হাদিস ৩২:

আবু সাইদ খুদরী (رضي الله عنه) বর্ণনা করেন

أخبرنا سليمان أبو داود الطيالسي قال أخبرنا شعبة قال أخبرني عمرو بن دينار قال سمعت أبا هشام يحدث عن أبي سعيد الخدري أن رسول الله صلى الله عليه وسلم قال لعمار تقتلك الفئة الباغية

আমর বিন দিনার বলেন আমি আবু হিশামকে বলতে শুনেছি আবু সাইদ খুদরী (رضي الله عنه) হইতে বর্ণিত যে, আল্লাহর রসুল (ﷺ) আম্মারকে বললেন হে আম্মার তোমাকে এক বিদ্রোহী দল হত্যা করবে।

➥তাবকাতুল কুবরা,খন্ড-৩, পৃষ্ঠা-২৫২

উপরিউক্ত বর্ণনাগুলি আরো অন্যান্য বর্ণনা পর্যালোচনা করার পর জানা যায়,

 يَدْعُوهُمْ إِلَى الجَنَّةِ ، وَيَدْعُونَهُ إِلَى النَّارِ قَالَ : يَقُولُ عَمَّارٌ : أَعُوذُ بِاللَّهِ مِنَ الفِتَنِ

সে তাদেরকে জান্নাতের দিকে আহব্বান করবে আর তারা তাকে জাহান্নামের দিকে আহবান করবে ।হজরতে ‘আম্মার (رضي الله عنه) বললেন, আমি ফিতনাহ হইতে আল্লাহর নিকট আশ্রয় চাচ্ছি, এই অতিরিক্ত উদ্ধৃতাংশটি কোন সাহাবী বা তাবেয়ি বর্ণনা করেননি এক মাত্র ইকরামাহ ব্যতীত।

এইবার ইকরামার দিকে তার বর্ণনা কতটা গ্রহণযোগ্য, নিম্নে তার কিছু দলিল পেশ করলাম।

ابن سعد عن أبيه عن سعيد بن المسيب أنه كان يقول لغلامه برد يا برد لا تكذب علي كما يكذب عكرمة على بن عباس وقال إسحاق بن عيسى الطباع سألت مالك بن أنس أبلغك أن بن عمر قال لنافع لا تكذب علي كما كذب عكرمة على بن عباس

ইবনে সা'দ তার পিতা থেকে বর্ণনা করেন তার পিতা বলেন সায়িদ বিন মুসাইয়াব (رضي الله عنه) হইতে বর্ণিত তিনি তার গুলাম বুরদকে বললেন হে বুরদ আমার উপর মিথ্যা আরোপ করো না যেমন ইকরামাহ আব্বাসের উপর করতো।এবং ইসহাক বিন আইসা আলতিবায়ি বলেন, মালিক বিন আনাস বললেন আমি তোমাকে জানাবো যে ইবনে উমার নাফেকে বলেন, আমার উপর মিথ্যারোপ করো না যেমন ইকরামাহ সে ইবনে আব্বাসের উপর করতো।

(১)তাহযীবুত তাহযীব- খন্ড- ৩ পৃষ্ঠা -১৩৬

(২)লিসানুল মীযান-খন্ড- ২,পৃষ্ঠা- ২৬৯,

(৩)ইবনে সা'দ আততাক্বাতুল কুবরা-খন্ড-৫, পৃষ্ঠা- ১০৩,

(৪)তারীখে ইবনে আবী খাইসামা-খন্ড- ২ পৃষ্ঠা- ১৯৪,

وقال جرير بن عبد الحميد ، عن يزيد بن أبي زياد : دخلت على علي بن عبد الله بن عباس وعكرمة مقيد على باب الحش قال : قلت : ما لهذا قال : إنه يكذب على أبي.

জারির বিন আব্দুল হামিদ বলেন, আবু ইয়াজিদ বিন আবু জিয়াদ বর্ণনা করেন আমি আলী বিন আব্দুল্লাহ ঘরে প্রবেশ করলাম আর ইকরামাহ দরজার চৌকাঠে আটক ছিলেন আবু জিয়াদ বললেন এর কারণ কি? আলী বিন আব্দুল্লাহ উত্তর দিলেন সে আমার পিতার উপর মিথ্যারোপ করতো।

১.তাহজিবুত তাহজিব, খন্ড- ৭ পৃষ্ঠা-২৩৮

২.তাহজিবুল কামাল ফি আসমাউ রিজাল খন্ড-৭, পৃষ্ঠা-২২৯

وقال الجوزجاني : قلت لأحمد : عكرمة كان أباضياً

ইয়াকুব জুজ্জানি বলেন, ইমাম আহমাদ বিন হাম্বালকে বলতে শুনেছি ইকরামাহ ইবাজি (খারজি) ছিলো।

➥তাহজিবুত তাহজিব,খন্ড-৩ পৃষ্ঠা-১৩৬

قال إبراهيم بن يعقوب الجُوزجاني : سألت أحمد بن حنبل عن عكرمة، قال: كان يرى رأي الأباضية

ইবরাহিম বিন ইয়াকুব বিন জুজ্জানি বলেন ইমাম আহমাদ বিন হাম্বালাকে ইকরামা সম্বন্ধে জিজ্ঞাসা করলে তিনি বলেন সে ইবাজি (খারজি) মতদর্শ পোষণ করতো।

➥তাহজিবুল কামাল খন্ড-২০ পৃষ্ঠা-২৭৮

উপরোক্ত আলোচনা দ্বারা আমাদের কাছে একথা পরিস্কার যে, ইকরিমা ব্যক্তিগতভাবে বিতর্কিত।তাই উপরিউক্ত বাক্যটি সন্দিহান। তাছাড়া উপরোক্ত বাক্যটির ব্যাপারে ইকরিমার কোন সমর্থক বর্ণনাকারী পাওয়া যায়নি। তাই অভিযুক্ত রাবির সমর্থকবিহীন বর্ণনাটির উপর আস্থা রাখা যায় না। কিন্তু বিষয় হলো যেহেতু

 وَيْحَ عَمَّارٍ ، تَقْتُلُهُ الفِئَةُ البَاغِيَةُ ، يَدْعُوهُمْ إِلَى الجَنَّةِ ،  

এই উদ্ধৃতাংশটি বুখারী শরিফে বর্ণিত হয়েছে তাই কারোর কারোর আপত্তি থাকতে পারে, যে বুখারীর হাদীস অস্বীকার করেন কি করে, যেখানে সর্বসম্মত মত বুখারীতে সমস্ত হাদীস সহী?যারা এমন বলে বা বলবে তাদের এই মন্তব্যের উত্তরে বলতে চাই ইমাম বুখারী যত বড় মুজতাহিদ হোক তার সমস্ত বর্ণনা নিক্ষুঁত হতে পারে না কারণ তিনি নবী নন।এখানে ইজতেহাদের ব্যাপার আছে ভুল হতেই পারে। তাছাড়া উক্ত উদ্ধৃতাংশটি অতিরিক্ত ইমাম বুখারী আসল পান্ডুলিপিতে ছিলো না। তার দলিল হিসাবে, প্রমাণ নিচে দিলাম।

❏ ইবনে বাত্তাল বলেনঃ

ولفظه " ويح عمار تقتله الفئة الباغية يدعوهم " الحديث ، واعلم أن هذه الزيادة لم يذكرها الحميدي في الجمع وقال : إن البخاري لم يذكرها أصلا ،

এই শব্দাংশ আম্মারের জন্য আফসোস! তাকে বিদ্রোহী দল হত্যা করবে সে তাদেরকে আহব্বান জানাবে.. পুরো হাদীস.. আমি জানতে পেরেছি এই অতিরিক্ত অংশটি হামিদি জামে'তে উল্লেখ করেনি এবং বলেন ইমাম বুখারীও আসল পান্ডুলিপিতে উল্লেখে করেননি।

(১)ফাতহুল বারী খন্ড-২, পৃষ্ঠা-১৭৯

(২)ইবনে হাজার আস্কালানি, আনিসুস সারি, খন্ড-২, পৃষ্ঠা-২৭৫

(৩)ইবনে আসির আল জাযারি জামাউল উসুল ফি আহাদিসে রাসুল, খন্ড-৯ পৃষ্ঠা- ৩৭

(৪)তারিখুল ইসলাম, খন্ড-১, পৃষ্ঠা-৩৭

(৫)জামেইল বায়ান ওয়াল আহকামিল নিসিয়ান, পৃষ্ঠা-১০৬

অতএব বলা যায় বুখারী শরিফে বর্তমানে উল্লেখিত يَدْعُوهُمْ إِلَى الجَنَّةِ ، وَيَدْعُونَهُ إِلَى النَّارِ قَالَ : يَقُولُ عَمَّارٌ : أَعُوذُ بِاللَّهِ مِنَ الفِتَنِ

অংশটি ইমাম বুখারীর আসল পান্ডুলিপিতে ছিলো না, ইহা মতনে অতিরিক্ত সংযোজন। এইবার রয়ে গেলো বাগি বা বিদ্রোহী দল, বিদ্রোহী হওয়ার কারণে আমীরে মুয়াবিয়া ও তার নেতৃত্বাধীন সৈন জাহান্নামি হয়ে গেছে এমন নয় । নিজের হকের জন্য শাসক বা আমীরের বিরুদ্ধে বিদ্রোহের এমন বহু প্রমাণ পাওয়া যায়, যেমন দেশের জন্য সর্কারের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করা,যেমন আমরা দেখেছি স্বাধীনতা সৈনিকগন বা সংগ্রামীর দেশ স্বাধীনের খাতিরে ইংরেজ সর্কারের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করেছেন। কিংবা আজও দেখা যায় নিজের হকের জন্য জনতা নিজের দেশের সর্কারের বিরুদ্ধে বিদ্রোহে সরব হয়। অনুরুপ ভাবে আমীর মুয়াবিয়াও সেই সময়কার শাসক বা আমীর, মওলা আলীর কাছে হত্যাকারীদের শাস্তির দাবীতে বিদ্রোহ করেছিলেন। তিনি তার হকের দাবি করছিলেন কারণ তিনি হজরতে উসমানের চাচাত ভাই। তিনি যদি না তার চাচাতো ভাইয়ের হত্যাকারীদের শাস্তির দাবী চাইবেন, তাহলে কে চাইবে? তবে যেহেতু তিনি ভুলের উর্ধ্বে ছিলেননা তাই এই ক্ষেত্রে তার কিছুটা ভুল হয়ছিলো তাঁর জানা বা বোঝা উচিত ছিলো, হজরতে উসমানকে কারা খুন করেছে তা মওলা আলী জানতেনই না। তিনি না জেনেই আবেগে এসে হটকারিতা দেখানোর ফল হিসাবে সিফফিন নামক রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ সংঘটি হলো। যাতে দু পক্ষের হাজারো হাজারো মুসলমান নিহত হয়েছে। সামান্য ইজতেহাদের ভুলের জন্য এতবড় যুদ্ধ সংঘটিত হয়ে গেলো।

যাইহোক শিয়ারা আমীরে মুয়াবিয়া ও তার সৈনদলকে জাহান্নামী প্রমাণ করতে আরো একটি হাদীস দিয়ে থাকে, যা নিম্নে উল্লেখ করলাম।

❏ হাদিস ৩২:

حَدَّثَنَا عَفَّانُ قَالَ حَدَّثَنَا حَمَّادُ بْنُ سَلَمَةَ قَالَ أَخْبَرَنَا أَبُو حَفْصٍ وَكُلْثُومُ بْنُ جَبْرٍ عَنْ أَبِي غَادِيَةَ قَالَ قُتِلَ عَمَّارُ بْنُ يَاسِرٍ فَأُخْبِرَ عَمْرُو بْنُ الْعَاصِ قَالَ سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُولُ إِنَّ قَاتِلَهُ وَسَالِبَهُ فِي النَّارِ فَقِيلَ لِعَمْرٍو فَإِنَّكَ هُوَ ذَا تُقَاتِلُهُ قَالَ إِنَّمَا قَالَ قَاتِلَهُ وَسَالِبَهُ

হাদীস বর্ণনা করেছেন আফফান তিনি বলেন আমাকে হাদীস বর্ণনা করেছেন হাম্মাদ বিন সালমাহ তিনি বলেন আমাকে খবর দিয়েছেন আবু হাফস ও কুলসুম বিন জাবরান তারা বলেন আবু গাদিয়া বলেন যখন হজরতে আম্মার বিন ইয়াসির শহিদ হয়ে গেলেন তো হজরতে আমর বিন আ'সকে তার খবর দেওয়া হলো তখন তিনি বললেন আমি আল্লার রসুল (ﷺ)কে বলতে শুনেছি তাকে হত্যা করে তার মাল লুন্ঠনকারী জাহান্নামে যাবে। হজরতে আমর বিন আ'সকে বলা হলো আপনিও তো তার সাথে যুদ্ধ করছিলেন।তিনি বললেন মুলত আল্লাহর রসুল বলেছেন হত্যা করে তার মাল লুন্ঠনকারীর সম্বন্ধে।

(১)মুসনাদে আহমাদ, হাদীস নং- ১৭৩২২

(২)ইমাম হাইশামি, মাজমাউজ জাওয়ায়িদ,হাদীস নং-১২০৬৪

(৩)ইবনে সা'দ, তাবকাতুল কুবরা,খন্ড-৩, পৃষ্ঠা-১৯৭

(৪)আল্লামা বালজুরি, আনসাবুল আসরাফ, খন্ড-২ পৃষ্ঠা-৩১৪-৩১৫

(৫)ইবনে হাজার আস্কালানি, আল ইসাবাহ, খন্ড-৭, পৃষ্ঠা-২৫৯

(৬)ইবনে আসাকির, তারিখে দামিস্ক, হাদীস নং-৫১৫৬

উক্ত হাদীস সম্বন্ধে কিছু কথা, প্রথমে তো উক্ত হাদীসের সনদ নিয়ে কথা বলা যাক যার মুল বর্ণনাকারী আমর বিন আ'স তাঁঁর থেকে একমাত্র শ্রোতা হলেন আবু গাদিয়াহ,তার থেকে একমাত্র শ্রোতা হলেন কুলসুম বিন জাবরান ও আবু হাফস তার থেকে একমাত্র শ্রোতা হলেন হাম্মাদ বিন সালমাহ এবং তার থেকে একমাত্র শ্রোতা হলেন আফফান বিন মুসলিম বিন সাফফার।এছাড়া কোন বর্ণনা কারী পাওয়া যায়নি। অতএব বলাযায় উক্ত হাদীসটি ফারদে মুতলাক বা গারিবে মুতলাক। আর গারীবে মুতলাক বা ফারদে মুতলাক সেই হাদীসকে বলে যার সনদে মুল রাবি সর্বক্ষেত্রে একজনই থাকে। এখানে তো সমস্ত রাবির একাকিত্ব রয়েছে।অতএব এই ধরণের সমর্থকবিহীন বর্ণনা উপর সম্পুর্নরুপে আস্থা রাখা যায় না। কারণ এইধরনের গরিব হাদীসের মধ্যে মতনও গরিব হয়। তাই এতে সন্দেহ থেকে যায় তাই যেহেতু এর সত্যতা প্রমাণ করতে সমর্থক বর্ণনাকারী নেই তাই উক্ত হাদীসের মতনের উপর সম্পুর্ণরুপে আস্থা রাখা যাচ্ছে না।

তাছাড়া যদি যুক্তির খাতিরে উক্ত হাদীস কিছুক্ষনের জন্য মানা যায় তাহলে, সেক্ষেত্রে বলতে হয় আমীরে মুয়াবিয়া ও তার নেতৃত্বাধীন দলকে জাহান্নামী বলা যাবে না। কারণ হজরতে আবু গাদিয়া কিন্তু ইচ্ছাকৃত ভাবে হজরতে আম্মারকে হত্যা করেননি। হত্যা করার পর জানতে পারেন তিনি আম্মার ছিলেন। যদিও এক্ষেত্রে কেও তাকে জাহান্নামি বলে তাহলে এখানে দুটো যুক্তি পেশ করা যেতে পারে, প্রথম - যখন হজরতে আম্মার তার সামনাসামনি হলেন হজরতে গাদিয়ার কি হজরতে আম্মারের পরিচয় জানা উচিৎ ছিলো?এটা যুদ্ধক্ষেত্র নাকি আলাপচারিতার যায়গায়? যুদ্ধে কি সেই সুযোগ থাকে? দ্ব্বিতীয় যদিও জানতেন হজরতে আম্মার তরবারি নিয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছেন তার মুকাবিলা না করে নিজের গর্দন হজরতে আম্মারের কাছে দিয়ে দেবেন, আর বলবেন মারো আমাকে? আপনাকে মারলে আমি জাহান্নামী হয়ে যাবো আপনিই মেরেদিন আমাকে!!! যুদ্ধ ক্ষেত্রে তা হয়না। তাছাড়া উক্ত বর্ণনা লক্ষ করলে বোঝা যায় আম্মারকে হত্যাকরে লুন্ঠনকারী জাহান্নামি। কিন্তু আবু গাদিয়া তাকে ভুলুবসত হত্যা করে দিয়েছেন বটে মাল লুন্ঠন করেনি। তাই তাকে জাহান্নামী বলার প্রশ্ন আসে না। তাছাড়া তার হাতে, হজরতে আম্মার হত্যা হয়ে যাওয়ার পর তিনি আন্তরিক ভাবে আফসোস করেছেন। আমার হাতে একি হয়ে গেলো!! এই আফসোস তার ক্ষমাপ্রার্থনার ধাপ, যদিও যুদ্ধক্ষেত্রে অস্ত্রধারী প্রতিপক্ষের মৃত্যু ঘটাটাই স্বাভাবিক। যাইহোক আগেও প্রমাণ করেছি মওলা আলীর দল হোক বিপক্ষ দল হোক উভয় দল জান্নাতি কারণ রসুল তাদের মুসলিম বলেছেন যা আমি পুর্বেই প্রমাণ করেছি। এমনকি হজরতে আম্মারেরও স্বীকারোক্তি আমীরে মুয়াবিয়া ও তার সৈনদল মুসলিম ছিলেন নিম্নে তার প্রমাণ হিসাবে হাদীস দিলাম,

❏ হাদিস ৩৩:

حدثنا مكي بن إبراهيم حدثنا عبيد الله بن أبي زياد حدثني عبد الكريم بن أبي المخارق حدثني سعيد بن عامر القرظي قال حدثتني أم عمارة حاضنة لعمار قالت اشتكى عمار قال لا أموت في مرضي حدثني حبيبي رسول الله صلى الله عليه وسلم أني لا أموت إلا قتلا بين فئتين مؤمنتين

সাইদ বিন আলকারজি বয়ান করেন আম্মারের (رضي الله عنه) পরিসেবিকা উম্মে আম্মারা বলেন, হযরত আম্মার অসুস্থ্যতায় ভুগছিলেন । হজরতে আম্মার বললেন আমি এই অসুস্থ্যতায় মৃত্যুবরণ করবো না, আমার হাবীব আল্লাহর রাসূল (ﷺ) আমাকে বলেছেন,মোমিন দুই দলের মাঝে যুদ্ধ না হওয়া ব্যতীত আমি মৃত্যুবরণ করবো না।

(১)ইমাম বুখারী তারিখুল আওসাত, হাদীস নং-৩১২,

(২)ইবনে আসাকির, তারিখে দামিস্ক, হাদীস নং-২০০৩৬

(৩)কাঞ্জুল উম্মাল, হাদীস নং-৩৭৩৭৯

উক্ত হাদীস আবারও প্রমাণ করে আল্লাহর দুইদলকে মুসলমান বলে গেছেন। তাই তার বক্তব্যকে চ্যালেঞ্জ করা, দুঃসাহিসকাত ছাড়া কিছুনা। কারণ আল্লাহর রসুল যাকে মুসলমান বলবেন তাকে কাফীর বলার অধিকার কারোর নেই। আর তার মুসলমান হওয়ায় কোন সন্দেহ থাকেনা।

হজরতে আম্মারের স্বীকারোক্তিঃ

❏ হাদিস ৩৪:

 حَدَّثَنَا يَزِيدُ بْنُ هَارُونَ ، عَنِ الْحَسَنِ بْنِ الْحَكَمِ ، عَنْ زِيَادِ بْنِ الْحَارِثِ ، قَالَ : كُنْتُ إِلَى جَنْبِ عَمَّارِ بْنِ يَاسِرٍ بِصِفِّينَ , وَرُكْبَتِي تَمَسُّ رُكْبَتَهُ , فَقَالَ رَجُلٌ : كَفَرَ أَهْلُ الشَّامِ , فَقَالَ عَمَّارٌ : لَا تَقُولُوا ذَلِكَ نَبِيُّنَا وَنَبِيُّهُمْ وَاحِدٌ , وَقِبْلَتُنَا وَقِبْلَتُهُمْ وَاحِدَةٌ ; وَلَكِنَّهُمْ قَوْمٌ مَفْتُونُونَ جَارُوا عَنِ الْحَقِّ , فَحَقَّ عَلَيْنَا أَنْ نُقَاتِلَهُمْ حَتَّى يَرْجِعُوا إِلَيْهِ

হাদীস বর্ণনা করেছেন ইয়াজিদ বিন হারুন তিনি বলেন হাসান বিন হাকিম বর্ণনা করে বলেন জায়েদ বিন হারিস হইতে বর্ণিত, তিনি বলেন আমি সিফফিনের ময়দানে হজরত আম্মারের পাসেই ছিলাম আমার হাটু আর তার হাটু স্পর্শ করছিলো। তখন এক ব্যাক্তি বলে উঠলো শামিগন কুফর করেছে। তখন হজরত আম্মার বলেন এইভাবে বলোনা আমাদের নবী ও তাদের নবী এক আমাদের কিবলা ও তাদের কিবলা এক বরং বলো তারা অজ্ঞতা বসত সত্য থেকে সরে এসেছে। এটা আমাদের কর্তব্য যে তাদের সাথে ততক্ষন যুদ্ধ করি যতক্ষণ না তারা সত্যের দিকে ফিরে আসে।

➥(মুসান্নাফে ইবনে আবি শাইবাহ, হাদীস নং- ৩৭১৭৪)

উক্ত হাদীস দ্বয় দ্বারা বোঝা গেলো বিদ্রোহের কারণে আমীরের মুয়াবীয়া ও তার সৈনদল কাফীর হয়ে যায়নি। হজরতে আম্মারও তাদেরকে মুসলমান মনে করতেন। কারণ তিনি জানতেন আল্লাহর রসুল এই মুসলিম দলের ইঙ্গিত দিয়ে গিয়েছিলেন তা অস্বীকার করার উপায় নেই।

যাইহোক শিয়ারা যেহেতু একটা প্রতারক দল তাই তারা প্রতারণা ছাড়া কিছুই জানে না। আমি পুর্বে প্রমাণ করেছি মওলা আলী, তার প্রতিপক্ষকে মুসলমান এবং জান্নাতি মনে করতেন। উক্ত বর্ণনা গুলি তাদের হজম না হলেও নিজেদের মতলবের কিছু বর্ণনা দিয়ে, নিজেদের উদ্দেশ্য সার্থক করতে চায়। তার জন্য নানা কুকৌশল অবলম্বন করে থাকে। তার মধ্যে নিম্নোক্ত বর্ণনাটি উল্লেখ যোগ্য।

❏ হাদিস ৩৫:

حَدَّثَنَا هُشَيْمٌ ، قَالَ : أَخْبَرَنَا حُصَيْنٌ ، قَالَ : حَدَّثَنَا عَبْدُ الرَّحْمَنِ بْنُ مَعْقِلٍ ، قَالَ : صَلَّيْتُ مَعَ عَلِيٍّ صَلَاةَ الْغَدَاةِ ، قَالَ : فَقَنَتَ ، فَقَالَ فِي قُنُوتِهِ : اللَّهُمَّ عَلَيْكَ بِمُعَاوِيَةَ وَأَشْيَاعِهِ ، وَعَمْرِو بْنِ الْعَاصِ وَأَشْيَاعِهِ ، وَأَبِي السُّلَمِيِّ وَأَشْيَاعِهِ ، وَعَبْدِ اللَّهِ بْنِ قَيْسٍ وَأَشْيَاعِهِ

আব্দুর রাহমান বিন মা'কিল হইতে বর্ণিত তিনি বলেন আমি সৈয়েদানা মওলা আলী মুস্কিল কুয়াসার সাথে ফজরের নামাজ পড়লাম। তিনি কুনুতে নাজেলা পাঠ করলেন। কুনুতে নাজেলাতে বললেন হে আল্লাহ! আপনি মুয়াবিয়া তার শিয়াদের, আমর ইবনে আ'স ও তার শিয়াদের, আবুল আওয়ার ও তার শিয়াদের, এবং আব্দুল্লাহ বিন কায়েস ও,তার শিয়াদের আপনার উপর ন্যাস্ত করলাম।

➥(মুসান্নাফে ইবনে আবি শাইবাহ, হাদীস নং- ৬৯৪৭)

উপরিউক্ত বর্ণনা অনুযায়ী শিয়াদের দাবি মওলা আলী আমীরে মুয়াবিয়া ও তার সাথিদের লানত প্রদান করেছেন।কিন্তু বিষয় হলো উক্ত বর্ণনায় শিয়ারা প্রতারকের পরিচয় দিয়েছে। তারা তারজমাটা সাধারণত যে ভাবে করে তাতে বলা যায়, উক্ত হাদীসে শিয়ারা তারজমায় খিয়ানত করেছে যা আলোচনার মাধ্যমে পরিস্কার হবে ইনশাআল্লাহ। শিয়াদের কাছে আমার দাবি, তারা হাদীসে এমন কোন শব্দ দেখাক যার অর্থ তারা লানত হয়। হাদীসে এমন কোন শব্দই নেই যাতে লানত অর্থ আসে, হাদীসে আছে :

❏ হাদিস ৩৬:

 اللَّهُمَّ عَلَيْكَ بِمُعَاوِيَةَ وَأَشْيَاعِهِ ، وَعَمْرِو بْنِ الْعَاصِ وَأَشْيَاعِهِ ، وَأَبِي السُّلَمِيِّ وَأَشْيَاعِهِ ، وَعَبْدِ اللَّهِ بْنِ قَيْسٍ وَأَشْيَاعِهِ

যার অর্থ হে আল্লাহ মুয়াবিয়া ও তার শিয়া, আমর বিন আস ও তার শিয়া, আব্দুল্লাহ বিন কাইস ও তার শিয়াদের আপনার হাতে ছেড়ে দিলাম। اللَّهُمَّ عَلَيْكَ হে আল্লাহ আপনি লানত দিন অর্থ হয় না বরং অর্থ হয় হে আল্লাহ আপনার উপর ন্যাস্ত করলাম, অর্থাৎ হে আল্লাহ বিশাল বিপদ ধেয়ে আসছে আমার ও আমার সাথিদের উপর। এদের থেকে রক্ষা পেতে আপনার হাতে বিষয়টা ছেড়ে দিলাম, এটাই ছিলো মওলা আলীর উদ্দেশ্য। কারণ দুর্যোগ কালে বা বিপদ থেকে রক্ষা পেতে কুনুতে নাজেলা পাঠ করা যেতে পারে। যেমন মুয়াত্তা ইমাম মুহাম্মাদের হাসিয়ায় লেখা আছে,

فلا نِزاعَ بين الأئمَّة في مشروعية القنوت ولا في مشروعيته للنازلة، وإنما النِّزاع في بقاء مشروعيته لغير النازلة، فمالك

দুর্যোগ কালে কুনুতে নাজেলা পড়া যাবে, এই ব্যাপারে ইমামদের কোন মতবিরোধ নেই। দুর্যোগ ছাড়াও পড়া যাবে কি না তাতে মত বিরোধ রয়েছে । এখানে কুনুতে নাজেলা পড়ার উদ্দেশ্য হলো যুদ্ধ ক্ষেত্রে বিপদ বা দুর্যোগ থেকে মুক্তি পাওয়া যা মওলা আলী আল্লাহর হাতে সঁপে দিয়েছেন। তাই শিয়াদের কুনুতে নাজেলা পড়ার উদ্দেশ্যকে লানত বলে চালিয়ে দেওয়া এটা তাদের অতিরিক্ত বাড়াবাড়ি, প্রতারণা বটে। বিপদ থেকে মুক্ত থাকতে কুনুতে নাজেলা পাঠ করা যেতেই পারে । যদিও শিয়ারা নিজেদের দাবির সমর্থক দলিল হিসাবে নিম্নোক্ত হাদীসটিও দিয়ে থাকে।

❏ হাদিস ৩৭:

، فكان علي إذا صلى الغداة قنت فَقَالَ اللَّهُمَّ العن مُعَاوِيَة وعمرو وأبا الأعور، وحبيب بن مسلمة وعبد الرحمان بْن خالد بْن الوليد، والضحاك بْن قَيْس والوليد بْن عقبة

অতঃপর হজরতে আলী যখন ফজরের নামাজ আদায় করে কুনুত পাঠ করলেন এবং বললেন হে আল্লাহ মুয়াবিয়া, আমর বিন আ'স, আবু আওরা, হাবিব বিন মুসলেমা, আব্দুর রাহমান বিন খালিদ বিন ওয়ালিদ এবং দ্বাহাক বিন কায়েস এবং ওয়ালিদ ইবনে উকবাকে অভিসপ্ত করুন।

➥(আনসাবুল আসরাফ, পৃষ্ঠা-৩৮৯ হাদীস নং-৩২২)

হাদিস পর্যালোচনাঃ

উক্ত বর্ণনার উপর আমার জবাবঃ উক্ত বর্ণনাটি সনদ নিয়ে কথা বলার পুর্বে বলতে চাই আনসাবুল আসরাফ একটি বিতর্কিত কেতাব। এতে প্রচুর পরিমানে শিয়াদের বর্ণনা ও মুনকার রাবি বিদ্যমান। সেই দিকে নজর রেখে যদি উক্ত বর্ণনার সনদ পর্যালোচনা করা যায় ইহা বিস্তারিত বর্ণনার (২-৩ পাতার বর্ণনার) অংশ বিশেষ, যার সনদ এইরুপ

 وَحَدَّثَنِي عَبَّاسُ بْنُ هِشَامٍ، عَنْ أَبِيهِ، عَنْ أَبِي مِخْنَفٍ لُوطِ بْنِ يَحْيَى، وَعَنْ عَوَانَةَ

অর্থাৎ আমাকে হাদীস বর্ণনা করেছেন আব্বাস বিন হিশাম➠ তিনি তার পিতা থেকে বর্ণনা করেন তার পিতা বলেন ➠আবু মুখান্নাফ লাওত বিন ইয়াহিয়া বর্ণনা করে বলে➠ আবু আওয়ানাহ হইতে বর্ণিত। ➠উক্ত বর্ণনায় আবু মুখান্নাফ নামক একজন বিতর্কিত রাবি রয়েছে যে একজন শিয়া ইতিহাসবিদ। যার লিখিত বিভিন্ন কেতাব হলো কিতাবুস সাকিফা, কিতাবুর রিদ্বা,কিতাবুল জামাল, কিতাবুস সিফফিন, মাকতাল আল হাসান, মাকতাল আল হুসাইন ইত্যাদি । যেহেতু সে একজন শিয়া তাই আমীরে মুয়াবিয়ার বিরুদ্ধে মিথ্যা বর্ণনা করাটাও স্বাভাবিক। তাছাড়া সে একজন বিতর্কিত রাবি ছিলো বলে জানা যায়, নিম্নে তার প্রমাণ দিলাম।

قال يحيى بن معين : ليس بثقة . وقال أبو حاتم : متروك الحديث . وقال الدارقطني : أخباري ضعيف

▪ ইমাম ইবনে মঈন বলেন সে নির্ভরযোগ্য নয় এবং আবু হাতিম রাজি বলেন সে মাতরুকুল হাদীস, ইমাম দারকুতনি বলেন খবরে জইফ হিসাবে পেয়ছি।

➥সিয়ারু আলামিন নুবালায়ি, খন্ড-৭ পৃষ্ঠা-৩০২.

نا عبد الرحمن قال قرئ على العباس بن محمد الدوري قال سمعت يحيى بن معين يقول أبو مخنف ليس بثقة، نا عبد الرحمن قال سمعت أبي يقول أبو مخنف متروك الحديث.

▪আব্দুর রাহমান বর্ণনা করেন তিনি বলেন তিনি আব্বাস বিন মুহাম্মাদ সম্পর্কে পড়েছেন, তিনি বলেন আমি ইহিয়াহ ইবনে মঈনকে বলতে শুনেছি আবু মুখান্নাফ নির্ভরযোগ্য নয়। আব্দুর রাহমান আরো বলেন তার পিতা থেকে শুনেছেন আবু মুখান্নাফ মাতরুকুল হাদীস ছিলো।

➥ইবনে আবি হাতিম রাজি, আল জিরাহ ওয়াল তাদিল খন্ড-৮ পৃষ্ঠা -৫৮

উপরিউক্ত আলোচনা দ্বারা বোঝা যায়, আবু মুখান্নাফ একজন মাতরুক রাবি ছিলো তাই তার বর্ণনা নির্ভরযোগ্যতা রাখে না।মাতরুক রাবি সেই সব রাবিদের বলা হয় যাদের বর্ণনা পরিত্যক্ত। তাই এমন বর্ণনা যাকে একজন মাতরুক রাবি বর্ণনা করেছে তা গ্রহনযোগ্য নয় বরং পরিত্যক্ত বটে।

শিয়া ও সুন্নি লেবাসধারী শিয়ারা মুয়াবিয়া (رضي الله عنه) কে কাফের মুনাফেক বলেঃ

এটা প্রমান করানোর জন্য বিভিন্ন জাল, জয়ীফ বর্ননা দিয়ে থাকে। নিচের বর্ননাটি তার মধ্যে অন্যতম।

❏ হাদিস ৩৮:

حدثني إسحاق ، حدثنا عبد الرزاق ، أنبأنا معمر ، عن ابن طاووس ، عن أبيه ، عن عبدالله بن عمرو بن العاص قال : كنت جالساً عند النبي صلى الله عليه وآله وسلم فقال : (( يطلع عليكم من هذا الفج رجل يموت يوم يموت على غير ملتي )) . قال : وتركت أبي يلبس ثيابه فخشيت أن يطلع فطلع معاوية ]

সরল অনুবাদঃ"আব্দুল্লাহ ইবনে আমর ইবনুল আ'স (رضي الله عنه) বলেন- আমি রাসূলুল্লাহ(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামে)'এর নিকট বসে ছিলাম এমতাবস্তায় তিনি বললেন-" এ সংকীর্ণ উপত্যকা(বা রাস্তা) থেকে এমন একজন ব্যক্তি তোমাদের নিকট আসবে যে আমার মিল্লাত(ধর্ম)-এর উপর মৃত্যু বরণ করবে না..................( আব্দুল্লাহ ইবনে আমর ইবনুল আ'স বলছেন) অতঃপর সেখান থেকে মুয়াবিয়া(রাদিআল্লাহু আ'নহু) আসলেন!!!! (তার মানে সে মুরতাদ আর কেউই না মুয়াবিয়া!!-নাউযুবিল্লাহ মিন যালিক)

সনদ পর্যালোচনাঃ

শিয়া ও নামধারী সুন্নিদের দাবি:

এ হাদিসটি আছে বালাযুরীর "জুমালুম মিন আনসাবিল আশরাফ" ৫/১৯৭৮ কিতাবে। ইমাম বুখারী তার তারীখুল আওসাতেও এ হাদিস এনেছেন।

উনার মতে হাদিসটির সনদ মতন ২ টাই সহীহ!!! আর এ হাদীস বিভিন্ন সূত্রে বর্ণিত হয়েছে!এবং তার মতে শায়খ আহমাদ ইবনে সিদ্দীক আল গুমারী সহীহ মুসলিমের শর্তে সহীহ বলেছেন তার কিতাব"جؤنة العطار" ২/১৫৪এ।

তাহকীকঃ

মূলত এ হাদিসটি ও এ প্রসঙ্গে সকল হাদিস এবং তার সনদ গুলো বাতিল ও জাল ২টি ছাড়া তবে সেখানে মুয়াবিয়া (رضي الله عنه) এর নাম নেই। (এ বিষয়ে নিচে আলোচনা হবে)।আপত্তিকারীরা সহীহ মুসলিমের শর্তে সহীহ এ দাবী করে শায়খ আহমাদের হাওয়ালায়। আসলে তারা শায়খের কিতাব পড়ে নাই, মূলত তারা শিয়া পন্থী শায়খ হাসান ফারহান আল মালেকীর(যাকে তারা সুন্নী বলে কথিত দাবী করে!!) রেফারেন্সের উপর অন্ধ বিশ্বাস করে একে সহীহ মুসলিমের শর্তে সহীহ বলে। সহীহ মুসলিমের শর্তে সহীহ হাদিসটি এটি না বরং সেই হাদিস যেখানে মুয়াবিয়া (رضي الله عنه) এর নাম উল্লেখ নেই সেটি সহিহ মুসলিমের শর্তে সহীহ।(নিচে আলোচিত হবে ইনশা আল্লাহ)

এ হাদিসের সনদ কেউ বলেছেন মাওজু কেউ বা যঈফুন জিদ্দান।

ইবনে তাইমিয়া বলেন-

هَذَا الْحَدِيثُ مِنَ الْكَذِبِ الْمَوْضُوعِ بِاتِّفَاقِ أَهْلِ الْمَعْرِفَةِ بِالْحَدِيثِ، وَلَا يُوجَدُ فِي شَيْءٍ مِنْ دَوَاوِينِ الْحَدِيثِ الَّتِي يُرْجَعُ إِلَيْهَا فِي مَعْرِفَةِ الْحَدِيثِ، وَلَا لَهُ إِسْنَادٌ مَعْرُوفٌ

অর্থ-হাদিস শাস্ত্রে পন্ডিতদের ঐক্যমত্যে এ হাদিসটি মিথ্যাচার মূলক জাল হাদিস।......... আর এ হাদিসের সমর্থনে কোন মারুফ বা প্রসিদ্ধ হাদিসও নেই।"

➥ (মিনহাজুস সুন্নাহ ৪/৪৪৪)

ইমাম বুখারী(রহ) বলেন-

ويروى عن معمر عن بن طاوس عن أبيه عن رجل عن عبدالله بن عمرو رفعه في قصته وهذا منقطع لا يعتمد عليه

অর্থ- এর সনদ মুনকাতে' এর উপর আস্থা করা যাবে না।

➥ (তারীখুল আওসাতঃ৭১)

ইবনু জাওযী হজরত মুয়াবিয়া (رضي الله عنه) জাহান্নামী এ বিষয়ক সকল হাদিসকে অত্যন্ত যঈফ বলেছেন।

➥ (আল ইলালুল মুতানাহিয়া ফিল আহাদীসিল ওয়াহিয়া, ১/২৮০)

ইবনু আদী(রহ) এ হাদিসের সনদের রাবীর ব্যাপারে বলেন-

قال إسحاق بن إبراهيم بن عباد أبو يعقوب الدبري الصنعاني استصغرني عبدالرزاق ، أحضره أبوه عنده وهو صغير جداً فكان يقول : قرأنا على عبدالرزاق أي قرأ غيره وحضر صغيراً وحدث عنه بحديث منكر

➥ (আল কামেল ১/৩৪৪)

এ বাতিল হাদিস কখনোই আব্দুল্লাহ ইবনু আমর (رضي الله عنه) হতে পারে না কেননা তিনি হজরত মুয়াবিয়া (رضي الله عنه) এর অনেক প্রশংসা করেছেন। তার ইতায়াত (আনুগত্য) করতে বলেছেন।

[সহীহ বুখারী হাঃ ৫৬৮২; সহীহ মুসলিম হাঃ ৪২৪৮; মাজমাউয যাওয়ায়েদ (সনদ হাসান) হাঃ ১৫৯২৪]

সুতরাং তিনি কি করে মুয়াবিয়া জাহান্নামি এর পক্ষে হাদিস বর্ণনা করতে পারেন?

এছাড়াও রাসুলুল্লাহ (ﷺ) মুয়াবিয়া (رضي الله عنه) কে জাহান্নামী বা মুরতাদ বলতে পারেন না কারণ তার পাক জবান থেকে মুয়াবিয়া (رضي الله عنه) কে তিনি হিদায়াত প্রাপ্ত পথপ্রদর্শক ও জান্নাতী ঘোষণা করেছেন।

➥ সহীহ বুখারির হাদিসঃ ৬৬৯২

সহ ১ ডজন হাদিস গ্রন্থে সহীহ সনদে বর্ণিত হাদিস যেখানেঃ

❏ হাদিস ৩৮:

হজরত আলি ও মুয়াবিয়া (রাদিয়াল্লাহু আনহুমা)'র যুদ্ধের দিকে ইঙ্গিত করে রাসূলে আকরাম (ﷺ) হাসান (رضي الله عنه)-কে দেখিয়ে বলেছেন :

إن ابني هذا سيد، وسيصلح الله به بين فئتين عظيمتين من المسلمين

অর্থ-"আমার এ নাতি(হাসান) সাইয়্যেদ! তাকে দিয়ে আল্লাহ অচিরেই মুসলিমদের মাঝে বিরাট ২ টি দলের সুলাহ (মীমাংসা) করিয়ে দিবেন (মানে আলী (رضي الله عنه) ও মুয়াবিয়া (رضي الله عنه) দলের মাঝে)।"

এ হাদিসে রাসূলুল্লাহ স্পষ্ট ভাষায় বলছেন যে, ২ টি দলই মুসলিম হবে,মানে আলীর (رضي الله عنه) এর দলও মুসলিম ও মুয়াবিয়া (رضي الله عنه) এর দলও মুসলিম।

সুতরাং যদি মুয়াবিয়া (رضي الله عنه) কাফের হয় তাহলে বুখারী সহ সকল হাদিস গ্রন্থের হাদিস গুলো অস্বীকার করা হবে।

এছাড়াও মুয়াবিয়া (رضي الله عنه)-কে মুরতাদ বলার হাদিসটির সনদ ও মতন গুলোতে ইজতেরাব (পরস্পর অসামঞ্জস্যতা) আছে।

এর একটি সনদ হচ্ছে-

إنما رواه ابن طاوس ، عن أبيه ، عن عبد الله بن عمرو أو غيره

(ক) এখানে উপরে উল্লেখিত হাদিসটির মতই হুবহু সনদ তবে সনদের শেষে তাউস বলছে আব্দুল্লাহ ইবনু আমর ইবনুল আ'স "অথবা" অন্য কারো কাছ থেকে বর্ণিত!! এখানে "আও গাইরুহু (অথবা তিনি ছাড়া অন্য কেউ)" শব্দ ও বাক্য দ্বারা এ হাদিসটির রাবী সনদে সন্দেহ তৈরি হচ্ছে যার কারনে সনদেও ইজতেরাবের পাশাপাশি সন্দেহের অবকাশ রয়েছে। সুতরাং এ হাদিস কি করে সহীহ হতে পারে?

(খ) আর ইবনু তাউস কখোনই তার বাবা তাউস থেকে হাদিস সরাসরি শুনেন নাই তাহলে কিভাবে এ হাদিস ও তার সনদ কে সহীহ বলা যায়?

(গ) তাছাড়াও এ সনদে একজন রাবী সাকেত হয়েছে(বাদ পড়েছে)। অন্য একটি বর্ণনায় ইবনু তাউস "ফুরখাশ"নামক মাজহুল (অজ্ঞাত) রাবী থেকে বর্ণনা করেছে।আল্লামা খাল্লাল এ সনদটি এভাবে বর্ণনা করেন-

رواه عبد الرزاق ، عن معمر ، عن ابن طاوس قال : سمعت فُرخاش يحدث هذا الحديث عن أبي عن عبد الله بن عمرو

(আল মুন্তাখাব মিন ইলালিল খাল্লাল ১/১২৮ তরজমা-১৩৬)

সুতরাং এখান থেকেও হাদিসটির বর্ণনা সহীহ প্রমান হচ্ছে না। স্ববিরোধি ও ইজতেরাব পূর্ণ সনদ কি করে গ্রহন যোগ্য হবে? তাহলে হাদিস গুলো সব দিক থেকেই ভুলে ভরা দেখা যাচ্ছে। এটাকে সহীহ বলার কোন প্রশ্নই আসে না। যেমনঃ

❏ হাদিস ৩৯:

মাজমাউয যাওয়ায়েদের এক সহীহ রেওয়াতে আছে-

قال رسول الله صلى الله عليه وسلم: يطلع عليكم رجل من هذا الفج من أهل النار وكنت تركت أبي يتوضأ فخشيت أن يكون هو فأطلع غيره فقال رسول الله صلى الله عليه وسلم: هو هذا

এ হাদিসটিও আব্দুল্লাহ ইবনু আমর থেকেই বর্ণিত ,এবং এর রাবীগন সহীহ। তবে এ হাদিসে পূর্বের হাদিসের মত "মুয়াবিয়া (رضي الله عنه)"-এর নাম উল্লেখ নেই বরং উক্ত সাহাবীর বাবা আমর ইবনুল আ'সের বিষয়ে তার যে সন্দেহ ছিল তা নিরসনে তিনি "গাইরুহু (আমার বাবা ব্যতিত অন্য কেউ আসল)" শব্দ দ্বারা প্রকাশ করলেন। এ হাদিসটিতে হজরত মুয়াবিয়া (رضي الله عنه) এর বিন্দু মাত্র নাম ও নিশানা উল্লেখ নেই।

অন্য একটি সহীহ হাদিস যা ইমাম তবারানী তার আওসাতে বর্ণনা করেন। ,

ليطلعن عليكم رجل يبعث يوم القيامة على غير سنتي ، أو على غير ملتي "

অর্থ-"তোমাদের নিকট এমন এক ব্যক্তি আসবে যে কিয়ামতের দিন আমার সুন্নতের উপর পুনরুত্থিত হবে না।"

➥ (মাজমাউয যাওয়ায়েদ ১/১৪৭)

এখানেও নির্দিষ্ট কোন লোকের ব্যাপারে বলা হচ্ছে তা বুঝা যাচ্ছে না।

সুতরাং সহীহ হাদিসের বিপরীতে হাদীস জাল করতে গিয়ে জালিয়াতীরা সব দিক থেকেই ধরা খেয়েছে।কেনই বা ধরা খাবে না আল্লাহ যে নিজেই সাহাবা বিদ্বেষীদের দিফা করে(সূরা হজ্জ)

➥ মুসনাদে আহমাদে ১১/৭১; 

ইমাম তবারানী তার আওসাতে ইমাম বাযযার তার মুসনাদে আবার এ হাদিসের ব্যক্তির নাম ''হাকাম" বলা হয়েছে, সেখানেও মুয়াবিয়া (رضي الله عنه) এর নাম ও নিশানা নেই। হাদিসটি হচ্ছে-

عن أبي أمامة بن سهل بن حنيف عن عبد الله بن عمرو قال : كنا جلوسا عند النبي صلى الله عليه وسلم، وقد ذهب عمرو بن العاصي يلبس ثيابه ليلحقني، فقال ونحن عنده: (ليدخلن عليكم رجل لعين)، فوالله ما زلت وجلا أتشوف داخلا وخارجا حتى دخل فلان يعني الحكم).

আর এটিই হচ্ছে সহীহ মুসলিমের শর্তে সহীহ।

হজরত মুয়াবিয়া (رضي الله عنه) মুরতাদ হয়ে মারা যাবেন এবিষয়ক হাদিসটির আরেকটি সমস্যা হচ্ছে সে সনদে ইমাম আব্দুর রাযযাক আস সানআনী(রহ) রয়েছেন।১ম কথা হচ্ছে তিনি এ হাদিস কিন্তু তার কিতাবে বর্ণনা করেন নাই।২য়ত উনি একদল বড় বড় মুহাদ্দিসদের নিকট সমালোচিত আরেক দল মুহাদ্দিসদের নিকট সমালোচনার সাথে প্রশংসিত (তার তাওসিক বা জরাহ বর্ণনা এখানে উদ্দেশ্য না)।তার ব্যাপারে প্রসিদ্ধ রায় হচ্ছে উনি শেষ বয়সে ভুলে যেতেন,গুলিয়ে ফেলতেন তার অন্ধ হওয়ার পরে তার থেকে তার লিখিত কোন কিতাব ব্যতিত কোন হাদিস বর্ণিত হলে তা গ্রহনযোগ্য হবে না।

(আল কামেল ফি যুয়াফায়ির রিজাল, ইবনু আদি ৬/৫৪৫;সুয়ালাতু আবী আব্দিল্লাহ ইবনু বুকাইর ওয়া গাইরুহু,দারুকুতনী পৃঃ৩৫;আস সিকাত,ইবনু হিব্বান ৮/৪১২;শরহু ইলালুত তিরমিযী,ইবনু রাজাব আল হাম্বালী ২/৫৭৭-৫৭৮,৫৮০;মীযানুল ই'তেদাল,যাহাবী ২/৬০৯ নং-৫০৪৪;তারীখুল কাবির,বুখারি ৬/১৩০ নং-১৯৩৩; তাহযিবুল কামাল ফি আসমায়ির রিজাল কিতাবে আব্দুর রাযযাক সানানী (রহ)'র তরজমা)

যেহেতু এ হাদিসটি ইমাম আব্দুর রাযযাক(রহ) তার কোন কিতাবে বর্ণনা করেছেন বলে আমরা জানি না,আর আব্দুর রাযযাক থেকে বকর ইবনু হুশাইম আর ইসহাক নামক রাবী বর্ণনা করেছে যারা গ্রহনযোগ্য না। তাই এ হাদিস গ্রহন করা যাবে না।

আসুন জেনে নিই রাবীদ্বয়ের ব্যাপারেঃ

(ক) বকর ইবনু হুশাইম মাজহুল রাবি।তার কোন পরিচয় পাওয়া যায় না।

(খ) এ হাদিসের সনদে ইসহাক ইবনু ইবরাহিম আদ দুবুরী রয়েছে(কেউ কেউ ধারনা করে ইসহাক ইবনু ইসরাঈল বুঝেছে যেমনটি ফারহান হাসান আল মালেকী।অথচ আব্দুর রাযযাক থেকে এ রাবির কোন হাদিস বর্ণনা প্রমানিত নয়।)।

আর এ ইসহাক ইবনু ইবরাহীম আদ দুবুরী সমালোচিত রাবী। (মুকাদ্দামায়ে ইবনুস সালাহ পৃঃ৩৫৫)

সে ইমাম আব্দুর রাযযাক থেকে অনেক মুনকার হাদিস বর্ণনা করত।

ইমাম ইবনু আদি ও ইমাম যাহাবী বলেন-

قال إسحاق بن إبراهيم بن عباد أبو يعقوب الدبري الصنعاني استصغرني عبدالرزاق، أحضره أبوه عنده وهو صغير جداً فكان يقول: قرأنا على عبدالرزاق أي قرأ غيره وحضر صغيراً وحدث عنه بحديث منكر

(আল কামেল ১/৩৪৪;সিয়ারু আ'লামিন নুবালা ১৩/৪১৭)

তাছাড়া ইবরাহিম আল হাররানী বলেন-"ইসহাকের যখন ৬-৭ বছর তখন ইমাম আব্দুর রাযযাক মারা গেছেন।" (শরহু ইলালিত তিরমিযি ২/৫৮১)

যদি সে তার থেকে শুনেও থাকে তাহলে এ উক্তির দ্বারা প্রমানিত হল সে ইমামের অন্ধ হওয়ার পরে হাদিস শুনেছে।সুতরাং উপরে উল্লেখিত নীতির ভিত্তিতেও তার হাদিস গ্রহনযোগ্য নয়।

তাদের কাছে কিছু প্রশ্ন যারা একে সহীহ মনে করে-

১।এ হাদিস বলার পরেও কি করে রাসুলুল্লাহ (ﷺ) হজরত মুয়াবিয়া-কে ওহী লিখক হিসেবে নিযুক্ত রাখলেন?

২।রাসূলের সাহাবীরা কেন ব্যাপক ভাবে মুয়াবিয়া (رضي الله عنه) এর জাহান্নামি ও মুরতাদ হওয়ার প্রসঙ্গে তার বিরুদ্ধে অবস্থান করলেন না। বরং তার আমীরত্ব গ্রহন করলেন?

৩।নামধারী সুন্নিদের নিকট তো আশাকরি উমার (رضي الله عنه) কাফের বা জালেম না?যদি তাই হয় তাহলে ১০ম হিজরীতে এ হাদিস জানা সত্ত্বেও কি করে তিনি সাহাবীদের পরামর্শে মুয়াবিয়া (رضي الله عنه)কে শামের গভর্নর হিসেবে নিযুক্ত করলেন? যদি বলে জানত না, তাহলে বলব একজন সাহাবী মুরতাদ হবে এ কথার তো ব্যাপক প্রচলন থাকার কথা আর হজরত উমরের মত এত বড় সাহাবী ও অন্য সাহাবারা এটা জানবে না এটা কেমন করে হয়?

❏ হাদিস ৪০:

তাদের অভিযোগ হলো আল্লাহর রসুল আমীরের মুয়াবিয়ার প্রতি বদ্দোয়া করে গেছেন। তার সমর্থক দলিল হিসাবে নিম্নোক্ত হাদীসটি পেশ করে।

حَدَّثَنَا مُحَمَّدُ بْنُ الْمُثَنَّى الْعَنَزِيُّ، ح وَحَدَّثَنَا ابْنُ بَشَّارٍ، - وَاللَّفْظُ لاِبْنِ الْمُثَنَّى - قَالاَ حَدَّثَنَا أُمَيَّةُ بْنُ خَالِدٍ، حَدَّثَنَا شُعْبَةُ، عَنْ أَبِي حَمْزَةَ الْقَصَّابِ، عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ، قَالَ كُنْتُ أَلْعَبُ مَعَ الصِّبْيَانِ فَجَاءَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم فَتَوَارَيْتُ خَلْفَ بَابٍ - قَالَ - فَجَاءَ فَحَطَأَنِي حَطْأَةً وَقَالَ ‏"‏ اذْهَبْ وَادْعُ لِي مُعَاوِيَةَ ‏"‏ ‏.‏ قَالَ فَجِئْتُ فَقُلْتُ هُوَ يَأْكُلُ - قَالَ - ثُمَّ قَالَ لِيَ ‏"‏ اذْهَبْ وَادْعُ لِي مُعَاوِيَةَ ‏"‏ ‏.‏ قَالَ فَجِئْتُ فَقُلْتُ هُوَ يَأْكُلُ فَقَالَ ‏"‏ لاَ أَشْبَعَ اللَّهُ بَطْنَهُ ‏"‏ ‏.‏ قَالَ ابْنُ الْمُثَنَّى قُلْتُ لأُمَيَّةَ مَا حَطَأَنِي قَالَ قَفَدَنِي قَفْدَةً ‏.‏

আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা আমি বালকদের সাথে খেলায় লিপ্ত ছিলাম। তখন আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম সেখানে আসলেন। তখন আমি একটি দরজার পিছনে লুকিয়ে থাকলাম। তিনি বলেন, তিনি আমাকে তাঁর হাতকে চাপড়ে বললেন, যাও, মু’আবিয়াকে আমার কাছে ডেকে আনো। তিনি বলেন, তখন আমি তার নিকট গেলাম এবং বললাম, তিনি খাচ্ছিলেন। (আমি ফিরে আসলাম) তিনি বলেন, তারপর তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাকে বললেন, যাও , মু’আবিয়াকে আমার নিকট ডেকে নিয়ে আসো। তিনি বললেন তাকে ডেকে নিয়ে এসো, তখন আমি তার নিকট গেলাম এবং এসে বললাম, তিনি খাচ্ছেন। তখন তিনি বললেন, আল্লাহ্ তার পেটভর্তি করবে না। ইবনে মুসান্না বলেন, আমি উমায়্যাকে বললাম, حَطَأَنِي এর অর্থ কি? তিনি বললেন, قَفَدَنِي قَفْدَةً অর্থাৎ তিনি আমার পিঠ চাপড়ালেন।

সহি মুসলিম, হাদীস নং-৬৩৯০

উক্ত হাদীসের উপর ভিত্তি করে তাদের বক্তব্য , আল্লাহর রসুল আমীরে মুয়াবিকে বদ দোয়া করেছেন। আর তাদের অভিযোগ হলো মুয়াবিয়া যদি মোমিন হতেন, তাকে আল্লাহর রসুল বদদোয়া করার প্রশ্ন আসে না । তিনি মোমিন বা সাহাবী ছিলেন না, যা আল্লাহর রসুলের বদদোয়া প্রমাণ করে।এছাড়া উক্ত হাদীসের উপর ভিত্তি করে কেও কেও আবার, আল্লাহর রসুল তাঁকে লানত দিয়েছেন বলে চালিয়ে দেয়।

এইবার উক্ত অভিযোগের উপর আমার জবাবঃ প্রথমে তো উক্ত হাদীসটি খাবরে ওয়াহিদই নয় বরং গরীব প্রকৃতির। এক্ষেত্রে হজরতে ইবনে আব্বাস থেকে একমাত্র শ্রোতা হলেন আবু হামজাহ। তিনি ছাড়া আর কোন ববর্ণনাকারী পাওয়া যায়নি। আর যারা উসুলে হাদীস সম্বন্ধে সামান্য জ্ঞান আছে, তারা জানে গরীব হাদীসের মতন গারীব হয়। আমরা পুর্বেই জেনেছি খাবরে ওয়াহিদের সেই হাদীসকে বলে যাতে সরাসরি সন্দেহ থাকে। যেহেতু হাদীসটি গরীব প্রকৃতির, বলা যেতে পারে তার মতন তেমন নিক্ষুঁত নাও হতে পারে বা ক্ষুঁত থাকতে পারে । তাই উক্ত হাদীসের মতনেও ক্ষুঁত থাকতে পারে, এটা মানলে ভুল হবে না।

দ্বিতীয় জবাব শিয়ারা উক্ত হাদীসের উপর ভিত্তি করে, আল্লাহর রসুল আমীরে মুয়াবিয়াকে লানত দিয়েছেন বলে চালিয়ে দিলেও, উক্ত হাদীসে কোথাও লানত শব্দ নেই। হাদীসে আছে لا أشبع الله بطنه অর্থ আল্লাহ তার পেট ভরাবেনা। তাই এখানে লানত শব্দতো নেই বরং হাদিস দ্বারা বদ দোয়া প্রমাণ হয় না। এখানে বলা হয়েছে আল্লাহ পেট ভরাবেন না, বলা হয়নি যে আল্লাহ কখনো পেট ভরাবেন না। যদি বলতেন তাহলে  

لا أشبع الله بطنه إبدأً

এই শব্দটি উল্লেখ থাকতো। কিন্তু আল্লাহর রসুল সেটা বলেননি, বলেছেন আল্লাহ পেট ভরাবেন না। এখানে ঘটনার দিনের কথা বলা হয়েছে, যে আজ আল্লাহ তার পেট ভরাবেন না। আসলে এটা ছিলো আল্লাহর রসুলের ইয়ারকির ছলে বলা কথা, যে যতবারই পাঠাই ততবারই দেখে খাচ্ছে, সে এত খাচ্ছে!! অতএব আল্লাহ তার পেট ভরাবেনা না। আমরাও সমাজের বুকে দেখি কেও অনেক্ষন ধরে খেলে ইয়ারকির ছলে বলে থাকি আজ তার খাওয়া শেষ হবে না বা আজ তার পেট ভরবে না। কিন্তু যেহেতু আল্লাহর রসুলের স্ববাবগত চরিত্রের মধ্যে ছিলো, যেকোনো জিনিশকে আল্লাহর দিকে ফিরিয়ে দেওয়া তাই তিনি আমাদের মত পেট ভরবে না না বলে, বললেন আল্লাহ তার পেট ভরাবেন না। এটা ছিলো তার ইয়ারকির ছলে বলা একটি বাক্য মাত্র।

তৃতীয়ঃ শিয়ারা যদিও দাবি করছে আল্লাহর রসুল বদ দোয়া করেছেন, কিন্তু এখানে বোদ্দোয়ার কোন কারণই দেখা যাচ্ছে না। আর তিনি বিনা কারণে কাওকে বদ দোয়া দেবেন, সেটা হতে পারেনা। এই ধরণের কথা যারা বলে তাদের এই ধরণের মন্তব্য তার চারিত্রিক বৈশিষ্টের বিরোধীতা করেন।কারণ কাওকে এইভাবে বিনা কারণে বদ্দোয়া দিয়ে তার প্রতি প্রতিশোধ নেবেন না। যা নিম্নোক্ত হাদীস প্রমাণ করে

❏ হাদিস ৪১:

باب صِفَةِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم

حَدَّثَنَا عَبْدُ اللَّهِ بْنُ يُوسُفَ، أَخْبَرَنَا مَالِكٌ، عَنِ ابْنِ شِهَابٍ، عَنْ عُرْوَةَ بْنِ الزُّبَيْرِ، عَنْ عَائِشَةَ ـ رضى الله عنها ـ أَنَّهَا قَالَتْ مَا خُيِّرَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم بَيْنَ أَمْرَيْنِ إِلاَّ أَخَذَ أَيْسَرَهُمَا، مَا لَمْ يَكُنْ إِثْمًا، فَإِنْ كَانَ إِثْمًا كَانَ أَبْعَدَ النَّاسِ مِنْهُ، وَمَا انْتَقَمَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم لِنَفْسِهِ، إِلاَّ أَنْ تُنْتَهَكَ حُرْمَةُ اللَّهِ فَيَنْتَقِمَ لِلَّهِ بِهَا‏.‏

হজরতে আইশা (رضي الله عنه) হইত বর্ণিত, তিনি বলেন আল্লাহর রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে যখনই দু’টি জিনিসের একটি গ্রহণের ইখতিয়ার দেয়া হত, তখন তিনি সহজ সরলটি গ্রহণ করতেন যদি তা গোনাহ না হত। যদি গোনাহ হত তবে তা থেকে তিনি অনেক দূরে সরে থাকতেন। আল্লাহর রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ব্যাক্তিগত কারনে কারো থেকে কখনো প্রতিশোধ গ্রহণ করেননি। তবে আল্লাহর নির্ধারিত সীমারেখা লঙ্ঘন করা হলে আল্লাহ্কে রাযী ও সন্তুষ্ট করার মানসে প্রতিশোধ নিতেন।

বুখারী সরিফ, অধ্যায় -আহাদিসে আম্বিয়া, হাদীস নং-৩৩০৮

উক্ত হাদীস থেকে প্রমাণ হয় এক বিশেষ কারণ ছাড়া আল্লাহর রসুল কারোর উপর প্রতিশোধ নেন না। যদি কারোর প্রতি প্রতিশোধ নেন তাহলে আল্লাহর সীমা লঙ্ঘনকারীদের উপর নেন। আর এখানে আমীরে মুয়াবিয়া কোন সীমা লঙ্ঘন করেননি। তিনি যদি জানতেন আল্লাহর রসুল ডাকছেন অবশ্যই তার ডাকে সাড়া দিতেন এবং তার নিকট যেতেন।কিন্তু তিনি জানতেনই না যে, তাকে আল্লাহর রসুল ডেকেছেন। কারণ ইবনে আব্বাস তাকে বলেনই নি যে, আল্লাহর রসুল তাকে ডেকে পাঠিয়েছেন। তাই এখানে বদ দোয়া দিয়ে প্রতিশোধ নেওয়ার প্রশ্নই আসে না। তাছাড়া আল্লাহর রসুল এমন নরম স্বভাবের ছিলেন যে কাফীর বা মুশরিকদেরও বিনা কারণে বদ দোয়া করতেন না।

❏ হাদিস ৪২:

حَدَّثَنَا مُحَمَّدُ بْنُ عَبَّادٍ ، وَابْنُ أَبِي عُمَرَ ، قَالَا : حَدَّثَنَا مَرْوَانُ يَعْنِيَانِ الْفَزَارِيَّ ، عَنْ يَزِيدَ وَهُوَ ابْنُ كَيْسَانَ ، عَنْ أَبِي حَازِمٍ ، عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ ، قَالَ : قِيلَ : يَا رَسُولَ اللَّهِ ادْعُ عَلَى الْمُشْرِكِينَ قَالَ : إِنِّي لَمْ أُبْعَثْ لَعَّانًا ، وَإِنَّمَا بُعِثْتُ رَحْمَةً

আবু হুরাইরাহ (رضي الله عنه) হইতে বর্ণিত। তিনি বলেন,আল্লাহর রাসুল সাল্লালাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে কে বলা হলো, হে আল্লাহর রাসুল ! আপনি মুশরিকদের উপর বদদুআ করুন। তিনি বললেন, “আমি তো অভিসম্পাতকারীরূপে প্রেরিত হইনি; বরং আমি প্রেরিত হয়েছি রহমতস্বরূপ।”

সহি বুখারী, কিতাবুল বিররে ওয়াস্বালাত ওয়াল আদাব, হাদীস নং-৪৮৩২

উক্ত হাদীস দ্বারা বোঝা যায় আল্লাহর রসুল যখন তখন মুশরিকদেরও বদ্দোয়া করতেন না। অতএব বলা যায় শিয়ারা "‏ لاَ أَشْبَعَ اللَّهُ بَطْنَهُ এই শব্দকে নিয়ে বদ্দোয়া বলে লাফালাফি করলেও ইহা বদ্দোয়া ছিলো না,কারণ তিনি অকারণে বদ দোয়া করতেন না। তিনি ইয়ারকির ছলে অনেক সময় এধরণের শব্দ ব্যবহার করতেন, যা নিম্নোক্ত হাদীস দ্বারা বোঝা যায়।

❏ হাদিস ৪৩:

حَدَّثَنِي زُهَيْرُ بْنُ حَرْبٍ، وَأَبُو مَعْنٍ الرَّقَاشِيُّ - وَاللَّفْظُ لِزُهَيْرٍ - قَالاَ حَدَّثَنَا عُمَرُ، بْنُ يُونُسَ حَدَّثَنَا عِكْرِمَةُ بْنُ عَمَّارٍ، حَدَّثَنَا إِسْحَاقُ بْنُ أَبِي طَلْحَةَ، حَدَّثَنِي أَنَسُ بْنُ مَالِكٍ، قَالَ كَانَتْ عِنْدَ أُمِّ سُلَيْمٍ يَتِيمَةٌ وَهِيَ أُمُّ أَنَسٍ فَرَأَى رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم الْيَتِيمَةَ فَقَالَ ‏"‏ آنْتِ هِيَهْ لَقَدْ كَبِرْتِ لاَ كَبِرَ سِنُّكِ ‏"‏ ‏.‏ فَرَجَعَتِ الْيَتِيمَةُ إِلَى أُمِّ سُلَيْمٍ تَبْكِي فَقَالَتْ أُمُّ سُلَيْمٍ مَا لَكِ يَا بُنَيَّةُ قَالَتِ الْجَارِيَةُ دَعَا عَلَىَّ نَبِيُّ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم أَنْ لاَ يَكْبَرَ سِنِّي فَالآنَ لاَ يَكْبَرُ سِنِّي أَبَدًا - أَوْ قَالَتْ قَرْنِي - فَخَرَجَتْ أُمُّ سُلَيْمٍ مُسْتَعْجِلَةً تَلُوثُ خِمَارَهَا حَتَّى لَقِيَتْ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم فَقَالَ لَهَا رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم ‏"‏ مَا لَكِ يَا أُمَّ سُلَيْمٍ ‏"‏ ‏.‏ فَقَالَتْ يَا نَبِيَّ اللَّهِ أَدَعَوْتَ عَلَى يَتِيمَتِي قَالَ ‏"‏ وَمَا ذَاكِ يَا أُمَّ سُلَيْمٍ ‏"‏ ‏.‏ قَالَتْ زَعَمَتْ أَنَّكَ دَعَوْتَ أَنْ لاَ يَكْبَرَ سِنُّهَا وَلاَ يَكْبَرَ قَرْنُهَا - قَالَ - فَضَحِكَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم ثُمَّ قَالَ ‏"‏ يَا أُمَّ سُلَيْمٍ أَمَا تَعْلَمِينَ أَنَّ شَرْطِي عَلَى رَبِّي أَنِّي اشْتَرَطْتُ عَلَى رَبِّي فَقُلْتُ إِنَّمَا أَنَا بَشَرٌ أَرْضَى كَمَا يَرْضَى الْبَشَرُ وَأَغْضَبُ كَمَا يَغْضَبُ الْبَشَرُ فَأَيُّمَا أَحَدٍ دَعَوْتُ عَلَيْهِ مِنْ أُمَّتِي بِدَعْوَةٍ لَيْسَ لَهَا بِأَهْلٍ أَنْ تَجْعَلَهَا لَهُ طَهُورًا وَزَكَاةً وَقُرْبَةً يُقَرِّبُهُ بِهَا مِنْهُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ ‏"‏ ‏.‏ وَقَالَ أَبُو مَعْنٍ يُتَيِّمَةٌ ‏.‏ بِالتَّصْغِيرِ فِي الْمَوَاضِعِ الثَّلاَثَةِ مِنَ الْحَدِيثِ ‏.‏

আনাস ইবনে মালিক (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,হজরতে আনাসের (رضي الله عنه) মা উম্মু সুলায়মার নিকট এক ইয়াতীম মেয়ে ছিল। আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাকে দেখে বললেন, এ তুমি সেই মেয়ে? তুমি তো অনেক বড় হয়েছ;কিন্তু তুমি দীর্ঘায়ু হবে না। তখন ইয়াতীম মেয়েটি উম্মু সুলায়মের নিকট এসে কাঁদতে লাগল। তখন উম্মু সুলায়ম (رضي الله عنه) বললেন, তোমার কী হয়েছে? হে আমার স্নেহের মেয়ে! মেয়েটি বলল, আল্লাহর নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাকে বদ্দু’আ করেছেন।তিনি বলেছেন, আমি দীর্ঘায়ু হব না। সুতরাং এখন থেকে আমি বয়সে আর বড় হব না। অথবা সে আমার জুড়ি বলেছিলেন। এ কথা শুনে উম্মু সুলায়ম (رضي الله عنه) তাড়াতাড়ি গায়ে চাদর দিয়ে বেরিয়ে পড়েন এবং আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লামের সাথে দেখা করেন। তখন তাঁর উদ্দেশে আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, কী ব্যাপার, হে উম্মু সুলায়ম! তিনি বললেন, ইয়া রসূলাল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)! আপনি কি আমার ইয়াতীম মেয়েটিকে বদ্দু’আ করেছেন? তিনি বললেন, হে উম্মু সুলায়ম! এটা কেমন কথা! বদ্দু’আ করব কেন? উম্মু সুলায়ম বললেন, সে তো মনে করেছে যে, আপনি তাকে বদ্দু’আ করেছেন যেন তার বয়স না বাড়ে কিংবা তার সমবয়সীর বয়স বৃদ্ধি না পায়। রাবী বলেন , তখন রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মুচকি হেসে বললেন, হে উম্মু সুলায়ম! তুমি বোধহয় জান না যে, আমার রবের সাথে এ মর্মে আমি শর্ত করেছি এবং আমি বলেছি যে, আমি একজন বাশার । একজন বাশার যাতে সন্তুষ্ট থাকে আমিও তাতে সন্তুষ্ট হই। আমিও রাগান্বিত হই যেভাবে একজন বাশার রাগান্বিত হয়ে থাকে। সুতরাং আমি আমার উম্মতের কোন লোকের বিরুদ্ধে বদ্দু’আ করলে সে যদি তার যোগ্য না হয় তাহলে তা তার জন্য পবিত্রতা, আত্মশুদ্ধি ও কুরবাত সৃষ্টি করে দাও, যার দ্বারা কিয়ামাতের দিনে সে তোমার নৈকট্য অর্জন করতে পারে।

আবূ মা’ন (রহঃ) উল্লেখিত তার হাদীসে তিন জায়গায় (يتيمة এর স্থলে) يُتَيِّمَةٌ (তাসগীর) রূপে উল্লেখ করেছেন, যার অর্থ ছোট ইয়াতীম মেয়ে।

সহি মুসলিম হাদীস নং-৬৩৮৯

উক্ত হাদীস দ্বারা বোঝা যায় যখন ইয়াতিম মেয়ের মা টি আল্লাহর রসুলকে জিজ্ঞাসা করলেন আপনি আমার মেয়েকে বদ দোয়া করেছেন তিনি কিন্তু وَمَا ذَاكِ يَا أُمَّ سُلَيْمٍ এ কেমন কথা উম্মে সুলাইম? এই বলে তা অস্বীকার করেছেন।অর্থাৎ তিনি বলতে চাইলেন এ কেমন কথা বলছো কেণ বিনাকারণে বদ্দোয়া করতে যাবো?তার এই অস্বীকার প্রমাণ করে তিনি মজা করেছিলেন মাত্র। যেমন উক্ত হাদীসে لاَ يَكْبَرَ سِنِّي তার বয়েস যেন না বাড়ে উক্ত কথা দ্বারা মজা করেছিলেন অনুরূপভাবে لا أشبع الله بطنه তার পেট ভরাবে না বলে মজা করেছিলেন মাত্র। আর উক্ত হাদীস থেকে দ্বিতীয় যে বিষয়টি জানা যায়, তা হলো আল্লাহর রসুলের ওয়াদা অনুযায়ী যে বদ্দোয়ার হকদার নয় তার জন্য রয়েছে কল্যান।যদিও শিয়াদের কথা যুক্তির খাতিরে ক্ষনিকের জন্য মানা যায় যে, আল্লাহর রসুল বদ দোয়া দিয়েছিলেন সেক্ষেত্রে আল্লাহর রসুলের ওয়াদা অনুয়ায়ী আমীরে মুয়াবিয়া জন্য কল্যাণ সাধিত হয়েছে।আল্লাহর রসুলের ওয়াদা অনুযায়ী তিনি কিয়ামতের দিন পবিত্রতা অর্জন করবেন এবং আল্লাহর কুরবাত হাসিল করবেন।আমীরে মুয়াবিয়াও বদ দোয়ার হকদার ছিলেন না কারণ তিনি জানতেনই না আল্লাহর রসুল তাকে ডেকেছেন।তাই যদি যুক্তির খাতিরে মানা যায়,আল্লাহর রসুল বদদোয়া করেছিলেন তাহলে তাঁর ওয়াদা অনুযায়ী আমীরে মুয়াবিয়ার জন্য দোয়া হয়ে দাঁড়াবে। যদিও তারা আরো একটি বর্ণনা দ্বারা নিজেদের দাবি প্রমাণ করতে চায় তাই তাদের দাবির সমর্থক যে দলিলটি পেশ করে তাা দেখে নেওয়া দরকার।

❏ হাদিস ৪৪:

أخبرناه أبو عبد الله الحافظ ، حدثنا : علي بن حمشاد ، حدثنا : هشام بن علي ، حدثنا : موسى بن إسماعيل ، حدثنا : أبو عوانة ، عن أبي حمزة ، قال : سمعت إبن عباس ، قال : كنت ألعب مع الغلمان فإذا رسول الله (ص) قد جاء فقلت : ما جاء إلاّ إلي فإختبأت على باب فجاء فحطأني حطأة ، فقال : أذهب فإدع لي معاوية ، وكان يكتب الوحي ، قال : فذهبت فدعوته له فقيل : إنه يأكل ، فأتيت رسول الله (ص) فأخبرته فقال : فأذهب فادعه فأتيته فقيل : إنه يأكل ، فأتيت رسول الله (ص) فأخبرته فقال في الثالثة : لا أشبع الله بطنه ، قال : فما شبع بطنه ، قال : فما شبع بطنه إبدأً ،

হাদীস বর্ণনা করেছেন আবু আব্দুল্লাহ আল হাফিজ তিনি বলেন আমাকে হাদিস বর্ণনা করেছেন হামশাদ। তিনি বলেন আমাকে হাদিস বর্ণনা করেছেন হিশাম বিন আলী। তিনি বলেন আমাকে হাদিস বর্ণনা করেছেন মুসা বিন ইসমাইল। তিনি বলেন আমাকে হাদিস বর্ণনা করেছেন আবু আওয়ানাহ।তিনি বলেন আবু হামজা হইতে বর্ণিত তিনি বলেন আমি ইবনে আব্বাসকে বলতে শুনেছি, একদা আল্লাহর রসুলকে আসতে দেখা গেলো, তিনি আমার দিকেই আসছিলেন। অতঃপর আমি একটি দরজার পিছনে লুকিয়ে গেলাম তখন তিনি আমার পিঠে চাপড় দিয়ে বললেন যাও মুয়াবিয়াকে ডেকে নিয়ে এসো, তিনি ওহী লিখতেন।

তিনি বলেন আমীরে মুয়াবিয়াকে ডাকতে তাঁর নিকট গেলাম, বলা হলো তিনি খাচ্ছেন।আমি ফিরে এসে আল্লাহর রসুলকে বললাম তিনি খাচ্ছেন। তিনি আবার বললেন যাও তাকে আমার কাছে ডেকে নিয়ে এসো।আমি দ্বিতীয়বার তার নিকট গেলাম, তখনও বলা হলো তিনি খাচ্ছেন। পুনরায় আল্লাহর রসুল বললেন যাও তাকে আমার কাছে ডেকে নিয়ে এসো। আমি তাঁকে জানালাম তিনি খাচ্ছেন। তৃতীয়বারে তিনি বললেন আল্লাহ তার পেট ভরাবেন না। তিনি বললেন (ইবনে আব্বাস) তার পেট ভরেনি, এরপর তার পেট কখনো ভরেনি।

দালাইলু নবুয়াহ, হাদীস নং-২৫০৬

উক্ত হাদীস সম্পর্কে কয়েকটি ধাপের মাধ্যমে জবাবটি দেওয়ার চেষ্টা করবো। প্রথমতঃ فما شبع بطنه إبدأً ، এই উক্তিটি রসুলের নয়, হজরতে ইবনে আব্বাসের বলে বোঝা যাচ্ছে। যদিও উদ্ধৃতাংশটি হজরতে আব্বাস থেকেও প্রমাণিত নয়।কারণ আমরা দেখেছি উক্ত বর্ণনায় ও বুখারী সরিফ উভয় বর্ণনায় হজরতে ইবনে আব্বাস থেকে একমাত্র শ্রোতা হলেন আবু হামজা। পুর্বে বুখারী সরিফের বর্ণনায় দেখেছি আবু হামাজাহ এই অতিরিক্ত অংশটি হজরতে ইবনে আব্বাস থেকে বর্ণনা করেনি। এর থেকে বোঝা যায় অতিরিক্ত অংশটি হজরতে ইবনে আব্বাস থেকে বর্ণিত হয়নি।এর পরে হয়তো শিয়াগন বলতে পারে আবু হামজাহ হয়তো فما شبع بطنه إبدأً ،অংশটি বর্ণনা করেছিল, যা আবু আওয়ানাহ বর্ণনা করেছে। হয়তো আবু হামজাহ থেকে সাবাআ উদ্ধৃতাংশটি ছেড়ে দিয়েছে!! তাহলে এর উপর আমার উত্তর থাকবে যে আবু আওয়ানাও থেকেও উক্ত অংশটি প্রমাণিত নয় অর্থাৎ আবু আওয়ানাও আবু হামজাহ থেকে অতিরিক্ত অংশটি বর্ণনা করেননি যা নিম্নোক্ত বর্ণনাগুলি দ্বারা বোঝা যায়।

❏ হাদিস ৪৫:

حَدَّثَنَا بَكْرُ بْنُ عِيسَى أَبُو بِشْرٍ الرَّاسِبِيُّ حَدَّثَنَا أَبُو عَوَانَةَ عَنْ أَبِي حَمْزَةَ قَالَ سَمِعْتُ ابْنَ عَبَّاسٍ يَقُولُ كُنْتُ غُلَامًا أَسْعَى مَعَ الْغِلْمَانِ فَالْتَفَتُّ فَإِذَا أَنَا بِنَبِيِّ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ خَلْفِي مُقْبِلًا فَقُلْتُ مَا جَاءَ نَبِيُّ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِلَّا إِلَيَّ قَالَ فَسَعَيْتُ حَتَّى أَخْتَبِئَ وَرَاءَ بَابِ دَارٍ قَالَ فَلَمْ أَشْعُرْ حَتَّى تَنَاوَلَنِي فَأَخَذَ بِقَفَايَ فَحَطَأَنِي حَطْأَةً فَقَالَ اذْهَبْ فَادْعُ لِي مُعَاوِيَةَ قَالَ وَكَانَ كَاتِبَهُ فَسَعَيْتُ فَأَتَيْتُ مُعَاوِيَةَ فَقُلْتُ أَجِبْ نَبِيَّ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَإِنَّهُ عَلَى حَاجَةٍ

হাদিস বর্ণনা করেছেন বাকর বিন ঈসা আবু বিশর রাসবি। তিনি বলেন আমাকে হাদিস বর্ণনা করেছেন আবু আওয়ানাহ। তিনি বলেন আবু হামজাহ বর্ণনা করে বলেন আমি ইবনে আব্বাসকে বলতে শুনেছি, একদা আমি গোলামদের সহিত খেলা করছিলাম। সেই সময়বআল্লাহর রসুল সাল্লালাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমার দিকে আসছিলেন।আমি (তাকে আসতে দেখে)একটি দরজার পিছনে লুকিয়ে গেলাম। আমি বুঝতেই পারিনি তিনি আমার পিছনেই এসে গিয়েছিলেন।এমনকি তিনি আদর করে আমার পিঠে চড় মারলেন এবং বললেন যাও মুয়াবিয়কে ডেকে নিয়ে এসো, তিনি আল্লাহর রসুলের কাতিবে ওহি ছিলেন। আমি আমীরে মুয়াবিয়ার নিকট গেলাম। বললাম নবী তাকে প্রয়োজনে ডেকেছেন।

মুসনাদে আহমাদ, হাদীস নং-২৯৭৯

❏ হাদিস ৪৬:

حَدَّثَنَا يُونُسُ ، قَالَ : حَدَّثَنَا أَبُو دَاوُدَ ، قَالَ : حَدَّثَنَا هِشَامٌ ، وَأَبُو عَوَانَةَ ، عَنْ أَبِي حَمْزَةَ الْقَصَّابِ ، عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ ، أَنَّ رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه وسلم بَعَثَ إِلَى مُعَاوِيَةَ يَكْتُبُ لَهُ ، فَقَالَ : إِنَّهُ يَأْكُلُ ثُمَّ بَعَثَ إِلَيْهِ فَقَالَ : إِنَّهُ يَأْكُلُ فَقَالَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم : لاَ أَشْبَعَ اللَّهُ بَطْنَهُ

হাদীস বর্ণনা করেছেন ইউনুস। তিনি বলেন আমাকে হাদীস বর্ণনা করেছেন আবু দাউদ।তিনি বলেন আমাকে হাদীস বর্ণনা করেছেন হিসাম ও আবু আওয়ানাহ। ইবনে আব্বাস হইতে বর্ণিত তিনি বলেন, আল্লাহর রসুল সাল্লালাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে আমীরে মুয়াবিয়ার নিকট পাঠালেন,তাকে দিয়ে ওহী লেখাতে। তিনি ফিরে এসে আল্লাহর রসুলকে জানালেন তিনি খাচ্ছেন। আবার আল্লাহর রসুল তাকে আমীরে মুয়াবিয়ার নিকট পাঠালেন।তিনি ফিরে এসে বললেন তিনি খাচ্ছেন।তখন আল্লাহর রসুল বললেন আল্লাহ তার পেট ভরাবেন না।

মুসনাদে আবু দাউদ তিয়ালিসি, খন্ড - ৪ পৃষ্ঠা-৪৬৪

উক্ত বর্ণনাগুলি দ্বারা বোঝা যায় উভয় বর্ণনায় না তো আবু হামজা, হজরতে ইবনে আব্বাস থেকে বর্ণনা করেছেন না তো আবু আওয়ানাহ আবু হামজাহ থেকে অতিরিক্ত অংশটি বর্ণনা করেছেন। তাছাড়া ইমাম বাইহাকি, ইমাম আবু দাউদ তিয়ালিসি ও ইমাম আহমাদ বিন হাম্বাল থেকে অনেক পরের মুহাদ্দিস। যেখানে আবু দাউদ তিয়ালিসি ও ইমাম আহমাদ বিন হাম্বাল যথাক্রমে ২০৪ ও ২৪১ হিজরি অন্য দিকে ইমাম বাইহাকি ৪৫৮ হিজরি। তারা দুজনের উল্লেখিত হাদীসে, হজরতে ইবনে আব্বাস ও আবু হামজাহ সুত্রে আবু আওয়ানাহ থেকে অতিরিক্ত অংশটি বর্ণিত নেই। অতএব বোঝা যায় অতিরিক্ত অংশটি পরে সংযোজন হয়েছে। তাছাড়া আগেই বলেছি উক্ত বর্ণনাটি গরীব প্রকৃতির। একমাত্র আবু হামজাহ ব্যাতীত ইবনে আব্বাস থেকে অন্য কোন শ্রোতা পাওয়া যায়নি। সেক্ষেত্রে একি ব্যক্তির উদ্ধৃতির মধ্যে এমন হেরফের বা ভিন্নতা কোন মতে গ্রহনযোগ্য নয়।  

চতুর্থঃ উক্ত বর্ণনাগুলিতে একটি ইতিবাচক দিকও ফুটে ওঠে,যাতে আমীরে মুয়াবিয়ার ফজিলত প্রকাশ পায়। উক্ত বর্ণনাগুলি দ্বারা কোথাও বোঝা যায় তাকে আল্লাহর রসুল ওহী লিখতে ডাকছিলেন আবার কোথাও বোঝা যায়, কোন একটা প্রয়োজনে ডাকছিলেন। যদি ওহী লিখতে ডাকছিলেন সেক্ষেত্রে ফজিলত তো রয়েছেই আর যদি প্রয়োজনে ডাকছিলেনও ধরে নেওয়া যায়, সেক্ষেত্রে ও তার ফজিলত প্রকাশ পায়।কারণ এতে আল্লাহর রসুলের মুহাব্বতই প্রকাশ পেয়েছে। কেননা হজরতে ইবনে আব্বাস বার বার খালি হাতে ফিরে এসেছেন।আর তার এত সাহাবা থাকা সত্ত্বেও আমীরে মুয়াবিকে দিয়েই খিদমত করাবেন বলে স্থির করেছিলেন, যে কারণে হজরতে ইবনে আব্বাস খালি হাতে ফিরে এলেও বার বার তাকেই ডাকছিলেন। কাওকে আল্লাহর রসুল খিদমতের জন্য স্থির করে নেওয়া এর চেয়ে বড় ফজিলতের ব্যাপার কি হতে পারে। 


_______ সমাপ্ত ______

Comments

Popular posts from this blog

বালাকোট আন্দোলনের হাকীকত

সৈয়দ আহমদ বেরলভীর জম্ম ও পরিচয়

মওদুদীর ভ্রান্ত আক্বিদা ও ইসলামী আক্বিদা