আহকামুল মাজার ও জিয়ারাতুল কুবুর

আহকামুল মাজার ও জিয়ারাতুল কুবুর

সংকলকঃ মাসুম বিল্লাহ সানি


মাযার সম্পর্কে বিভিন্ন আকিদা ভিত্তিক প্রশ্নোত্তরের সমাধান:

আগেই এইটুকু সংক্ষেপে জানিয়ে রাখা ভাল যে হাদিসশাস্ত্রে ইমামগনের অবদান কেমন :

কুরআন মজীদে যেমন এরশাদ হয়েছে: “আল্লাহ তা (কুরআন মজীদ) দ্বারা অনেককে গোমরাহ (পথভ্রষ্ট) করেন এবং অনেককে হেদায়াত (পথপ্রদর্শন) করেন।” [আল-কুরআন, ২:২৬]

যদি কুরআন মজীদ পাঠ করে মানুষেরা গোমরাহ হতে পারে (যেমনটি হয়েছে ওহাবীরা), তাহলে একইভাবে হাদীস শরীফও যথাযথভাবে বিশেষজ্ঞদের অধীনে পাঠগ্রহণ না করে অধ্যয়নের চেষ্টা করলে তা দ্বারা মানুষজন পথভ্রষ্ট হতে পারে।

এ কারণেই মহান সালাফ আস্ সালেহীন (প্রাথমিক যুগের পুণ্যাত্মাবৃন্দ) ইমাম সুফিয়ান ইবনে উবায়না (رحمة الله) ও ইবনে ওহাব (رحمة الله) কী সুন্দর বলেছেন:

সুফিয়ান ইবনে উবায়না (رحمة الله) বলেন, “হাদীসশাস্ত্র পথভ্রষ্টতা, ফকীহমণ্ডলীর মধ্যস্থতা ব্যতিরেকে।”

ইবনে ওহাব (رحمة الله) বলেন, “হাদীসশাস্ত্র গোমরাহী, উলেমাবৃন্দের মধ্যস্থতা ব্যতিরেকে।”
[দ্বিতীয় উদ্ধৃতিটি ইমাম কাজী আয়ায কৃত ‘তারতীব আল-মাদারিব’ গ্রন্থের ২৮ পৃষ্ঠায় বিদ্যমান]

অধিকন্তু, ইমাম আবূ হানিফা (رحمة الله)-কে একবার বলা হয়, ‘অমুক মসজিদে তমুক এক দল আছে যারা ফেকাহ (ইসলাম ধর্মশাস্ত্র সম্পর্কিত সূক্ষ্ম জ্ঞান) বিষয়ে আলাপ-আলোচনা করে।’ তিনি জিজ্ঞেস করেন, ‘তাদের কি কোনো শিক্ষক আছে?’ উত্তরে বলা হয়, ‘না।’ এমতাবস্থায় হযরত ইমাম (رحمة الله) বলেন, ‘তাহলে তারা কখনোই এটি বুঝতে সক্ষম হবে না।’
রেফারেন্সঃ-
[ইবনে মুফলিহ রচিত ‘আল-আদাব আশ্ শরিয়াহ ওয়াল্ মিনাহ আল-মারিয়া’, ৩ খণ্ডে প্রকাশিত, কায়রোতে পুনর্মুদ্রিত সংস্করণ, মাকতাবা ইবনে তাইমিয়া, কায়রো, ১৩৯৮ হিজরী/১৯৭৮ খৃষ্টাব্দ, ৩:৩৭৪]


★★★ কবরের ওপর ফলকে লিখা :

ইমাম আল-হাকিম (رحمة الله), বলেন কবরের ওপরে ফলকে লেখা মুসলমানদের পরবর্তী প্রজন্ম ‘সালাফ’বৃন্দ থেকেই গ্রহণ করেছিলেন।” 
রেফারেন্সঃ-
[’মোস্তাদরাক-এ


★★★ কবরের পাশে বসা :

ইমাম মালেক (رحمة الله) নিম্নবর্ণিত শিরোনামে গোটা একখানা অধ্যায় বরাদ্দ করেছেন:

"জানাযার জন্যে থামা এবং কবরস্থানের পাশে বসা”

ওপরে উক্ত অধ্যায়ে বর্ণিত দ্বিতীয় রওয়ায়াতে বিবৃত হয়: “এয়াহইয়া (رضي الله عنه) আমার (ইমাম মালেকের) কাছে বর্ণনা করেন মালেক (رضي الله عنه) হতে, 

যিনি শুনেছিলেন এই মর্মে যে, হযরত আলী ইবনে আবি তালেব (ক:) কবরে মাথা রেখে পাশে শুয়ে থাকতেন। 

মালেক (رضي الله عنه) বলেন, ‘আমরা যা দেখেছি, কবরের ধারে পেশাব-মলত্যাগ করার ক্ষেত্রেই কেবল নিষেধ করা হয়েছে’।” 
রেফারেন্সঃ-
[’মুওয়াত্তা-এ-ইমাম মালেক’, ১৬তম বই, অধ্যায় # ১১, হাদীস # ৩৪]

মনে রাখা জরুরি, অনেক ইসলামী পণ্ডিতের মতে বোখারী শরীফ হতে ইমাম মালেক (رحمة الله)-এর ’মুওয়াত্তা’ গ্রন্থটি অধিক কর্তৃত্বসম্পন্ন।


রওজা মোবারক ও মাজার (বরকতের উদ্দেশ্যে) হাত দ্বারা স্পর্শ করে মুখে মাসেহ করা, ভালবেসে বা তাজিমার্থে চুম্বন করা সম্পর্কে

হযরত নাফে’ (رحمة الله) বলেন,
“আমি হযরত (আবদুল্লাহ) ইবনে উমর (رضي الله عنه)-কে দেখেছি এক’শ বার বা তারও বেশি সময় মহানবী (ﷺ)-এর পবিত্র রওযা শরীফ যেয়ারত করেছেন।
 তিনি সেখানে বলতেন, ‘রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর প্রতি শান্তি বর্ষিত হোক; আল্লাহতা’লা তাঁকে আশীর্বাদধন্য করুন এবং সুখ-শান্তি দিন। 

হযরত আবূ বকর (رضي الله عنه)-এর প্রতিও শান্তি বর্ষিত হোক।’ অতঃপর তিনি প্রস্থান করতেন। হযরত ইবনে উমর (رضي الله عنه)-কে রওজা মোবারক হাতে স্পর্শ করে ওই হাত মুখে (বরকত আদায় তথা আশীর্বাদ লাভের উদ্দেশ্যে) মুছতেও দেখা গিয়েছে।” 

[ইমাম কাজী আয়ায (رحمة الله) কৃত ‘শেফা শরীফ’ গ্রন্থের ৯ম অনুচ্ছেদে বর্ণিত]

হযরত দাউদ ইবনে আবি সালেহ হতে বর্ণিত; তিনি বলেন: “একদিন মারওয়ান (মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লামের রওজা মোবারকে) এসে দেখে, এক ব্যক্তি রওযা শরীফের খুব কাছাকাছি মুখ রেখে মাটিতে শুয়ে আছেন। 

মারওয়ান তাঁকে বলে, ‘জানো তুমি কী করছো?’ সে তাঁর দিকে এগিয়ে গেলে সাহাবী হযরত খালেদ বিন যাঈদ আবূ আইয়ুব আল-আনসারী (رحمة الله)-কে দেখতে পায়। 

তিনি (সাহাবী) জবাবে বলেন, ‘হ্যাঁ (আমি জানি); আমি রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর কাছে (দর্শনার্থী হতে) এসেছি, কোনো পাথরের কাছে আসি নি। আমি মহানবী (ﷺ)-এর কাছে শুনেছি, (ধর্মের) অভিভাবক যোগ্য হলে ধর্মের ব্যাপারে কাঁদতে না; তবে হ্যাঁ, অভিভাবক অযোগ্য হলে ধর্মের ব্যাপারে কেঁদো।”

রেফারেন্স/সূত্র

আল-হাকিম এই বর্ণনাকে সহীহ বলেছেন; অপরদিকে, আয্ যাহাবীও তাঁর সত্যায়নের সাথে একমত হয়েছেন। [হাকিম, আল-মোস্তাদরাক, ৪র্থ খণ্ড, হাদীস নং ৫১৫]

ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল (رحمة الله)-ও তাঁর ’মুসনাদ’ গ্রন্থের ৫ম খণ্ডে সহীহ সনদে এটি বর্ণনা করেন। [হাদীস নং ৪২২]


কবর ও মাজার জিয়ারতের শরীয়তী বিধান

ইমাম আবূ হানিফা (رحمة الله) বর্ণনা করেন ইমাম নাফে’ (رحمة الله) হতে, 

তিনি হযরত ইবনে উমর (رضي الله عنه) হতে; 

তিনি বলেন: “কেবলার দিক থেকে আসার সময় মহানবী (ﷺ)-এর রওজা-এ-আকদস যেয়ারতের সঠিক পন্থা হলো রওজার দিকে মুখ করে এবং কেবলার দিকে পিঠ দিয়ে দাঁড়াতে হবে; অতঃপর সালাম-সম্ভাষণ জানাতে হবে এই বলে - ‘হে আল্লাহর রাসূল এবং তাঁর-ই রহমত ও বরকত (ﷺ), আপনার প্রতি সালাম’।” 

রেফারেন্সঃ-
[মুসনাদে ইমামে আবি হানিফাহ, বাবে যেয়ারাতে কবর আন্ নবী (ﷺ)]

হযরত আবদুল্লাহ ইবনে উমর (رضي الله عنه) বর্ণনা করেন যে হুযূর পূর নূর (ﷺ) এরশাদ ফরমান: 

“আমার বেসালপ্রাপ্তির পরে যে ব্যক্তি আমার রওজা মোবারক যেয়ারত করে, সে যেন আমার হায়াতে জিন্দেগীর সময়েই আমার দেখা পেল।”

রেফারেন্সঃ-
আত্ তাবারানী, ২য় খণ্ড, হাদীস নং ৪০৬

ইমাম বায়হাকী প্রণীত শু’য়াবুল ঈমান, ৩য় খণ্ড, হাদীস নং ৪৮৯

জ্ঞাতব্য: 

এই হাদীসটি হযরত ইবনে উমর (رضي الله عنه) কর্তৃক বর্ণিত হলেও এর এসনাদে বর্ণনাকারীরা একেবারেই ভিন্ন;

আর তাই এ হাদীস হাসান পর্যায়ভুক্ত।

ইমাম ইবনে কুদামা (رحمة الله) বলেন, 

“মহানবী (ﷺ)-এর রওযা শরীফের যেয়ারত মোস্তাহাব (প্রশংসনীয়), যা হযরত ইবনে উমর (رضي الله عنه)-এর সূত্রে আদ্ দারাকুতনী সহীহ সনদে বর্ণনা করেছেন এই মর্মে যে

রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এরশাদ করেন, 

'যে ব্যক্তি হজ্জ্ব করে, তার উচিত আমার রওজা শরীফ য়েযারত করা; কারণ তা যেন আমার হায়াতে জিন্দেগীর সময়ে আমার-ই দর্শন লাভ হবে।’ 

তিনি আরেকটি হাদীসে এরশাদ ফরমান, ‘যে কেউ আমার রওজা যেয়ারত করলে তার জন্যে শাফায়াত (সুপারিশ) করা আমার প্রতি ওয়াজিব হয়’।”
__________
রেফারেন্সঃ-
 [ইমাম ইবনে কুদামা কৃত আল-মুগনী, ৫ম খণ্ড, ৩৮১ পৃষ্ঠা]

ইমাম আল-বাহুতী আল-হাম্বলী (رحمة الله) নিজ আল-কাশাফ আল-ক্কান্না গ্রন্থের ২য় খণ্ডের ২৯০ পৃষ্ঠায় একই কথা বলেন।

ইমাম কাজী আয়ায (رحمة الله) তাঁর সুপ্রসিদ্ধ ‘শেফা শরীফ’ পুস্তকের ‘মহানবী (ﷺ)-এর রওজা মোবারক যেয়ারতের নির্দেশ এবং কারো দ্বারা তা যেয়ারত ও সালাম (সম্ভাষণ) জানানোর ফযীলত’ শীর্ষক অধ্যায়ে বলেন, 

"এটি জ্ঞাত হওয়া উচিত যে মহানবী (ﷺ)-এর মোবারক রওজা যেয়ারত করা সকল মুসলমানের জন্যে ‘মাসনূন’ (সর্বজনবিদিত রীতি); আর এ ব্যাপারে উলেমাবৃন্দের এজমা’ হয়েছে। 

এর এমন-ই ফযীলত যা হযরত ইবনে উমর (رضي الله عنه)-এর বর্ণিত হাদীস দ্বারা আমাদের জন্যে সাব্যস্ত হয়েছে (অর্থাৎ, ’কেউ আমার রওজা যেয়ারত করলে তার জন্যে আমার শাফায়াত ওয়াজিব হবে’)।” 
________
রেফারেন্সঃ-
[ইমাম কাজী আয়ায কৃত ’শেফা শরীফ’, ২য় খণ্ড, ৫৩ পৃষ্ঠা]
________
মহিলাগন কর্তৃক মাজার জিয়ারতের হুকুম-আহকাম
→→→ উম্মুল মুমেনিন হযরত সাইয়্যেদাহ আয়েশা (رضي الله عنه) নিজে রাসুলুল্লাহ (সা) এর রওজা মোবারক জিয়ারত করতেন :-
তিনি বর্ণনা করেন:-

যে ঘরে মহানবী (ﷺ) ও আমার পিতা (আবূ বকর – রা:)-কে দাফন করা হয়, সেখানে যখন-ই আমি প্রবেশ করেছি, তখন আমার মাথা থেকে পর্দা সরিয়ে ফেলেছি এই ভেবে যে আমি যাঁদের যেয়ারতে এসেছি তাঁদের একজন আমার পিতা ও অপরজন আমার স্বামী। কিন্তু আল্লাহর নামে শপথ! যখন হযরত উমর ফারূক (رضي الله عنه) ওই ঘরে দাফন হলেন, তখন থেকে আমি আর কখনোই ওখানে পর্দা না করে প্রবেশ করি নি; আমি হযরত উমর (رضي الله عنه)-এর প্রতি লজ্জার কারণেই এ রকম করতাম।

Reference :-
মুসনাদে আহমদ ইবনে হাম্বল, ৬ষ্ঠ খণ্ড, ২০২ পৃষ্ঠা, হাদীসঃ ২৫৭০১
আল-বাছায়ের ৭৯
মোস্তাদরাক আল-হাকিম, হাদীসঃ ৩/৬৩, হাদিস ৪৪০৬
মোস্তাদরাক আল-হাকিম, হাদীসঃ ৪/৮, হাদিস ৬৭২১
যুরকাশী : আল-ইজাবাহ : হাদিস - ৬৮
হাইছমী : মাজমাউল যাওয়ায়েদ : ৮/২৬ এবং ৯/৩৭ পৃ

সনদ পর্যালোচনা :

ইমাম নূরুদ্দীন হায়তামী (رحمة الله) এই হাদীসটি সম্পর্কে বলেন:

এটি ইমাম আহমদ (رحمة الله) কর্তৃক বর্ণিত এবং এর বর্ণনাকারীরা সবাই সহীহ।
— মজমাউয্ যাওয়াইদ, ৯:৪০, হাদীসঃ১২৭০৪

ইমাম আল-হাকিম (رحمة الله) এটি বর্ণনা করার পর বলেন,

এই হাদীসটি বোখারী ও মুসলিমের শর্ত অনুযায়ী সহীহ।
— মোস্তাদরাক আল-হাকিম, হাদীসঃ ৩/৬৩, হাদিস ৪৪০৬

ইমাম হাইছমী বলেন, উক্ত হাদিসের বর্ননাকারীগন সহিহ হাদিসের রাবী।

ইমাম জরকশী বলেন, এ হাদিস বুখারী ও মুসলিম এর শর্তানুযায়ী সহিহ।

নাসিরুদ্দীন আলবানী আল-মোবতাদি আল-মাশহুর (কুখ্যাত বেদআতী) এই হাদীসকে মেশকাতুল মাসাবিহ গ্রন্থের ওপর নিজ ব্যাখ্যামূলক ‘তাখরিজ’পুস্তকে সমর্থন করেছে (# ১৭১২)।

টিকা :

জরুরি জ্ঞাতব্য: প্রথমতঃ এই হাদীসে প্রমাণিত হয় যে শুধু আম্বিয়া (আ:)-এর মাজার-রওজা নির্মাণ-ই ইসলামে বৈধ নয়, পাশাপাশি সালেহীন তথা পুণ্যবান মুসলমানদের জন্যেও তা নির্মাণ করা বৈধ। লক্ষ্য করুন যে হাদীসে ‘বায়ত’ বা ‘ঘর’ শব্দটি উল্লেখিত হয়েছে। মানে মহানবী (ﷺ)-এর রওজা শরীফের সাথে সর্ব-হযরত আবূ বকর (رضي الله عنه) ও উমর (رضي الله عنه)-এর মাজার-রওজাও ‘একটি নির্মিত ঘরের অভ্যন্তরে’ অবস্থিত ছিল।

দ্বিতীয়তঃ হযরত উমর ফারূক (رضي الله عنه)-এর উক্ত ঘরে দাফনের পরে হযরত আয়েশা সিদ্দিকা (رضي الله عنه) পূর্ণ পর্দাসহ সেখানে যেয়ারতে যেতেন। এটি এতদসংক্রান্ত বিষয়ে হযরতে সাহাবা-এ-কেরাম (رضي الله عنه)-এর আকীদা-বিশ্বাস প্রতিফলনকারী স্পষ্ট দলিল, যা’তে বোঝা যায় তাঁরা মাজারস্থদের দ্বারা যেয়ারতকারীদের চিনতে পারার ব্যাপারটিতে স্থির বিশ্বাস পোষণ করতেন। হাদীসটির স্পষ্ট বর্ণনার দিকে লক্ষ্য করুন। তাতে বলা হয়েছে ‘হায়া মিন উমর’, মানে হযরত উমর (رضي الله عنه)-এর প্রতি লজ্জার কারণে হযরত আয়েশা (رضي الله عنه) ওখানে পর্দা করতেন।

ইমাম নূরুদ্দীন হায়তামী (رحمة الله) এই হাদীসটি সম্পর্কে বলেন: “এটি ইমাম আহমদ (رحمة الله) কর্তৃক বর্ণিত এবং এর বর্ণনাকারীরা সবাই সহীহ মানব।” [মজমাউয্ যাওয়াইদ, ৯:৪০, হাদীস # ১২৭০৪]

ইমাম আল-হাকিম (رحمة الله) এটি বর্ণনা করার পর বলেন, “এই হাদীস বোখারী ও মুসলিমের শর্ত অনুযায়ী সহীহ।” [মোস্তাদরাক আল-হাকিম, হাদীস # ৪৪৫৮]

নাসিরুদ্দীন আলবানী আল-মোবতাদি আল-মাশহুর (কুখ্যাত বেদআতী) এই হাদীসকে মেশকাতুল মাসাবিহ গ্রন্থের ওপর নিজ ব্যাখ্যামূলক ‘তাখরিজ’পুস্তকে সমর্থন করেছে (# ১৭১২)।
________
সাহাবীগন কর্তৃক মাজার জিয়ারত
মাজার শুধু একটা পাথরের গম্বুজ নয় বরং আল্লাহর মহান নবীগন ও অলীগন এতে শায়িত আছেন:-
হযরত দাউদ ইবনে আবি সালেহ হতে বর্ণিত; তিনি বলেন: “......
(সাহাবী) আইয়্যুব আল-আনসারী (রা) জবাবে বলেন, ‘হ্যাঁ (আমি জানি);
আমি রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর কাছে এসেছি, কোনো পাথরের কাছে আসি নি।

রেফারেন্স/সূত্র

* আল-হাকিম এই বর্ণনাকে সহীহ বলেছেন; অপরদিকে, আয্ যাহাবীও তাঁর সত্যায়নের সাথে একমত হয়েছেন। [হাকিম, আল-মোস্তাদরাক, ৪র্থ খণ্ড, হাদীস নং ৫১৫]

* ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল (رحمة الله)-ও তাঁর ’মুসনাদ’ গ্রন্থের ৫ম খণ্ডে সহীহ সনদে এটি বর্ণনা করেন। [হাদীস নং ৪২২]

হযরত নাফে’ (رحمة الله) বলেন, “আমি হযরত (আবদুল্লাহ) ইবনে উমর (رضي الله عنه)-কে দেখেছি এক’শ বার বা তারও বেশি সময় মহানবী (ﷺ)-এর পবিত্র রওযা শরীফ যেয়ারত করেছেন।

[ইমাম কাজী আয়ায (رحمة الله) কৃত ‘শেফা শরীফ’ গ্রন্থের ৯ম অনুচ্ছেদে বর্ণিত]


মাজার উঁচু, আস্তর বা পাকা করার প্রমাণসমূহ
________
হযরত আবূ বকর বিন আইয়াশ (رضي الله عنه) বর্ণনা করেন: হযরত সুফিয়ান আত্ তাম্মার (رضي الله عنه) আমাকে জানান যে তিনি মহানবী (ﷺ)-এর রওযা মোবারককে উঁচু ও উত্তল দেখতে পেয়েছেন। 

[সহীহ বোখারী, ২য় খণ্ড, ২৩তম বই, হাদীস নং ৪৭৩]

অতএব, মাজার-রওজা ভেঙ্গে ফেলা বা গুঁড়িয়ে দেয়া ‘সালাফী’দের দ্বারা ‘নস’ বা শরয়ী দলিলের চরম অপব্যাখ্যা ছাড়া কিছুই নয়।

মহান হানাফী মুহাদ্দীস ইমাম মোহাম্মদ ইবনে হাসসান শায়বানী (رحمة الله) এতদসংক্রান্ত বিষয়ে গোটা একটি অধ্যায় বরাদ্দ করে তার শিরোনাম দেন ‘কবরের ওপর উঁচু স্তূপাকৃতির ফলক ও আস্তর’। এই অধ্যায়ে তিনি নিম্নের হাদীসটি লিপিবদ্ধ করেন:

ইমাম আবূ হানিফা (رحمة الله) আমাদের কাছে হযরত হাম্মাদ (رحمة الله)-এর কথা বর্ণনা করেন, তিনি হযরত ইবরাহীম (رضي الله عنه)-এর কথা উদ্ধৃত করেন, যিনি বলেন, কেউ একজন আমাকে জানান যে তাঁরা মহানবী (ﷺ), হযরত আবূ বকর (رضي الله عنه) ও হযরত উমর (رضي الله عنه)-এর মাজার-রওজার ওপরে ‘উঁচু স্তূপাকৃতির ফলক যা (চোখে পড়ার মতো) বাইরে প্রসারিত ছিল তা দেখতে পেয়েছিলেন এবং তাতে আরও ছিল সাদা এঁটেলমাটির টুকরো।

ইমাম মোহাম্মদ (رحمة الله) আরও বলেন, আমরা (আহনা’ফ) এই মতকেই সমর্থন করি; মাজার-রওজা বড় স্তূপাকৃতির ফলক দ্বারা চিহ্নিত করতে হবে। কিন্তু তা বর্গাকৃতির হতে পারবে না। এটি-ই হচ্ছে ’ইমাম আবূ হানিফা (رحمة الله)-এর সিদ্ধান্ত’।

[কিতাবুল আসা’র, ১৪৫ পৃষ্ঠা, Turath Publishing কর্তৃক প্রকাশিত]

হযরত আম্বিয়া (আ:)-এর মাজার-রওজা আস্তর করার বৈধতা প্রমাণকারী রওয়ায়াতটি

হযরত আবূ আইয়ুব আনসারী (رضي الله عنه) কর্তৃক বর্ণিত হয়েছে; তিনি বলেন: “আমি মহানবী (ﷺ)-এর কাছে এসেছি, পাথরের কাছে নয়” [মুসনাদে আহমদ ইবনে হাম্বল, হাদীস # ২৩৪৭৬]।

নোট : এখানে বুঝা যায় যে রওজা মোবারক পাকা ছিল। যদি পাকা করা নিষিদ্ধ হত রওজা মোবারক পাকা থাকত না।

ইমাম আল-হাকিম (رحمة الله)-ও এটি বর্ণনা করে এর সনদকে সহীহ বলেছেন; তিনি বলেন, “আয্ যাহাবীও তাঁর (ইমাম আহমদের) তাসহিহ-এর সাথে একমত হয়েছেন এবং একে সহীহ বলেছেন।” [’মোস্তাদরাক আল-হাকিম’, আয্ যাহাবীর তালখীস সহকারে, ৪:৫৬০, হাদীস # ৮৫৭১]

’কবরে আস্তর না করা, না লেখা বা বসা’ সংক্রান্ত হাদীসটি বর্ণনার পরে ইমাম তিরমিযী (رحمة الله) বলেন: “এই হাদীসটি হাসান সহীহ এবং এটি বিভিন্ন সনদ বা সূত্রে হযরত জাবের (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত হয়েছে। কিছু উলেমা (কাদা) মাটি দ্বারা কবর আস্তর করার অনুমতি দিয়েছেন; এঁদের মধ্যে রয়েছেন ইমাম হাসান আল-বসরী (আমীরুল মো’মেনেীন ফীল্ হাদীস)। অধিকন্তু, ইমাম শাফেঈ (رحمة الله) কাদামাটি দ্বারা কবর আস্তর করাতে কোনো ক্ষতি দেখতে পাননি।” [সুনানে তিরমিযী, কবর আস্তর না করার হাদীস  #১০৫২]

________
মাযারে গম্বুজ নির্মানের প্রমান আল-কোরআন ও তফসীর থেকে
কুরআন মজীদে এরশাদ হয়েছে, “এবং এভাবে আমি তাদের (আসহাবে কাহাফ) বিষয় জানিয়ে দিলাম, যাতে লোকেরা জ্ঞাত হয় যে আল্লাহর প্রতিশ্রুতি সত্য এবং কিয়ামতে কোনো সন্দেহ নেই; যখন এই সব লোক তাদের (আসহাবে কাহাফ) ব্যাপারে নিজেদের মধ্যে বিতর্ক করতে লাগলো, অতঃপর তারা বল্লো, ’তাদের গুহার ওপর কোনো ইমারত নির্মাণ করো! তাদের রব (খোদা)-ই তাদের বিষয়ে ভাল জানেন। ওই লোকদের মধ্যে যারা (এ বিষয়ে) ক্ষমতাধর ছিল তারা বল্লো, ‘শপথ রইলো, আমরা তাদের (আসহাবে কাহাফের পুণ্যময় স্থানের) ওপর মসজিদ নির্মাণ করবো’।” [সূরা কাহাফ, ২১ আয়াত] 

ইমাম ফখরুদ্দীন রাযী (رحمة الله) এই আয়াতের তাফসীরে লেখেন, “কেউ কেউ (ওদের মধ্যে) বলেন যে গুহার দরজা বন্ধ করে দেয়া হোক, যাতে আসহাবে কাহাফ আড়ালে গোপন থাকতে পারেন। আরও কিছু মানুষ বলেন, গুহার দরজায় একটি মসজিদ নির্মাণ করা হোক। তাঁদের এই বক্তব্য প্রমাণ করে যে এই মানুষগুলো ছিলেন ’আল্লাহর আরেফীন (আল্লাহ-জ্ঞানী), যাঁরা এক আল্লাহর এবাদত-বন্দেগীতে বিশ্বাস করতেন এবং নামাযও পড়তেন’।” [তাফসীরে কবীর, ৫ম খণ্ড, ৪৭৫ পৃষ্ঠা]

ইমাম রাযী (رحمة الله) আরও লেখেন: “এবং আল্লাহর কালাম - ‘(এ বিষয়ে) যারা ক্ষমতাশালী’ বলতে বোঝানো হয়ে থাকতে পারে ‘মুসলমান শাসকবৃন্দ’, অথবা আসহাবে কাহাফ (মো’মেনীন)-এর বন্ধুগণ, কিংবা শহরের নেতৃবৃন্দ। ‘আমরা নিশ্চয় তাদের স্মৃতিস্থানের ওপরে মসজিদ নির্মাণ করবো’ - এই আয়াতটিতে এ কথাই বোঝানো হয়েছে, ‘আমরা যাতে সেখানে আল্লাহর এবাদত-বন্দেগী করতে পারি এবং এই মসজিদের সুবাদে আসহাবে কাহাফ তথা গুহার সাথীদের স্মৃতিচিহ্ন সংরক্ষণ করতে পারি’।” [তাফসীরে কবীর, ৫ম খণ্ড, ৪৭৫ পৃষ্ঠা]

’তাফসীরে জালালাইন’ শিরোনামের বিশ্বখ্যাত সংক্ষিপ্ত ও সহজে বোধগম্য আল-কুরআনের ব্যাখ্যামূলক গ্রন্থে ইমাম জালালউদ্দীন সৈয়ুতী (رحمة الله) ও আল-মোহাল্লী (رحمة الله) লেখেন: ”(মানুষেরা বিতর্কে লিপ্ত হয়েছিল), অর্থাৎ, বিশ্বাসী ও অবিশ্বাসীরা (ওই) তরুণ (আসহাবে কাহাফ)-দের বিষয়ে বিতর্ক করছিল যে তাঁদের পার্শ্বে কোনো স্মৃতিচিহ্ন নির্মাণ করা যায় কি-না। এমতাবস্থায় অবিশ্বাসীরা বলে, তাঁদেরকে ঢেকে দেয়ার জন্যে ইমারত নির্মাণ করা হোক। তাঁদের প্রভু-ই তাঁদের অবস্থা সম্পর্কে অধিক জ্ঞাত। কিন্তু যে মানুষেরা ওই তরুণ আসহাবে কাহাফের বিষয়ে বেশি প্রভাবশালী ছিলেন, মানে বিশ্বাসীরা, তারা বল্লেন, আমরা তাঁদের পার্শ্বে এবাদতের উদ্দেশ্যে মসজিদ নির্মাণ করবো। আর এটি গুহার প্রবেশপথে প্রকৃতই নির্মিত হয়েছিল। [তাফসীর আল-জালালাইন, ১ম খণ্ড, ৩৮৯ পৃষ্ঠা]

ইমাম নাসাফী (رحمة الله) নিজ ‘তাফসীরে নাসাফী’ পুস্তকে লেখেন: “যারা (আসহাবে কাহাফের বিষয়ে) প্রভাবশালী ছিলেন, তারা মুসলমান এবং শাসকবর্গ; এরা বলেন যে গুহার প্রবেশপথে একটি মসজিদ নির্মাণ করে দেবেন, যাতে ‘মুসলমানবৃন্দ সেখানে এবাদত-বন্দেগী করতে পারেন এবং তা (স্মৃতিচিহ্ন) থেকে বরকত আদায় করতে সক্ষম হন’।” [তাফসীর আল-নাসাফী, ৩য় খণ্ড, ১৮ পৃষ্ঠা]

ইমাম শেহাবউদ্দীন খাফফাজী (رحمة الله) লেখেন: “(গুহামুখে মসজিদ নির্মাণ) সালেহীন তথা পুণ্যাত্মাবৃন্দের মাযার-রওযার পার্শ্বে মসজিদ নির্মাণের প্রামাণিক দলিল, যেমনটি উল্লেখিত হয়েছে ‘তাফসীরে কাশশাফ’ পুস্তকে; আর এই দালানের ভেতরে এবাদত-বন্দেগী করা ’জায়েয’ (বৈধ)।” [ইমাম খাফফাজী কৃত ‘এনায়াতুল কাদী’, ৬ষ্ঠ খণ্ড, ৮৭ পৃষ্ঠা; দারুস্ সাদির, বৈরুত, লেবানন হতে প্রকাশিত]

ইমাম মোহাম্মদ বিন হাসান শায়বানী (رحمة الله) বলেন, “হযরত ইমাম আবূ হানিফাহ (رحمة الله) আমাদের জানিয়েছেন এই বলে যে সালিম আফতাস্ আমাদের (তাঁর কাছে) বর্ণনা করেন: ‘এমন কোনো নবী নেই যিনি কা’বা শরীফে আল্লাহর এবাদত-বন্দেগী করতে নিজ জাতিকে ছেড়ে আসেন নি; আর এর আশপাশে ৩০০ জন নবী (আ:)-এর মাজার-রওজা বিদ্যমান’।” [ইমাম শায়বানীর ‘কিতাবুল আসার’; লন্ডনে Turath Publishing কর্তৃক প্রকাশিত; ১৫০ পৃষ্ঠা]

ইমাম শায়বানী (رحمة الله) আরও বলেন, “ইমাম আবূ হানিফা (رحمة الله) আমাদেরকে জানিয়েছেন এই বলে যে হযরত আতা’ বিন সায়েব (رضي الله عنه) আমাদের (তাঁর কাছে) বর্ণনা করেন, ‘আম্বিয়া সর্ব-হযরত হুদ (আ:), সালেহ (আ:) ও শোয়াইব (আ:)-এর মাজার-রওজা মসজিদে হারামে অবস্থিত’।” [প্রাগুক্ত]

ইমাম ইবনে জারির তাবারী (رحمة الله) নিজ ‘তাফসীরে তাবারী’ পুস্তকে লেখেন: “মুশরিকরা বলেছিল, আমরা গুহার পার্শ্বে একটি ইমারত নির্মাণ করবো এবং আল্লাহর উপাসনা করবো; কিন্তু মুসলমানগণ বলেন, আসহাবে কাহাফের ওপর আমাদের হক বেশি এবং নিশ্চয় আমরা ওখানে ‘মসজিদ নির্মাণ করবো’ যাতে আমরা ওতে আল্লাহর এবাদত-বন্দেগী করতে পারি।” [তাফসীরে তাবারী, ১৫:১৪৯]

মোল্লা আলী কারী ওপরে উদ্ধৃত আয়াতের সুস্পষ্ট ব্যাখ্যা দিয়ে বলেন: “যে ব্যক্তি কোনো সত্যনিষ্ঠ বোযর্গ বান্দার মাজারের সন্নিকটে মসজিদ নির্মাণ করেন, কিংবা ওই মাজারে (মাক্কবারা) এবাদত-বন্দেগী করেন, অথবা উক্ত বোযর্গের রূহ মোবারকের অসীলায় (মধ্যস্থতায়) সাহায্য প্রার্থনা করেন, বা তাঁর রেখে যাওয়া কোনো বস্তু থেকে বরকত তথা আশীর্বাদ অন্বেষণ করেন, তিনি যদি (এবাদতে) ওই বোযর্গকে তা’যিম বা তাওয়াজ্জুহ পালন না করেই এগুলো করেন, তবে এতে কোনো দোষ বা ভ্রান্তি নেই। আপনারা কি দেখেননি, মসজিদে হারামের ভেতরে হাতীম নামের জায়গায় হযরত ইসমাঈল (আ:)-এর রওযা শরীফ অবস্থিত? আর সেখানে এবাদত-বন্দেগী পালন করা অন্যান্য স্থানের চেয়েও উত্তম। তবে কবরের কাছে এবাদত-বন্দেগী পালন তখনই নিষিদ্ধ হবে, যদি মৃতের নাজাসাত (ময়লা) দ্বারা মাটি অপবিত্র হয়ে যায়। ....হাজর আল-আসওয়াদ (কালো পাথর) ও মিযা’য়াব-এর কাছে হাতীম জায়গাটিতে ’৭০জন নবী (আ:)-এর মাজার-রওজা’ বিদ্যমান।” [মিরক্কাত শরহে মিশক্কাত, ২য় খণ্ড, ২০২ পৃষ্ঠা]

ইমাম আবূ হাইয়ান আল-আনদালুসী (رحمة الله) বলেন: “তাঁদের (আসহাবে কাহাফের) পার্শ্বে ইমারত নির্মাণের কথা যে ব্যক্তি বলেছিল, সে এক অবিশ্বাসী মহিলা। সে গীর্জা নির্মাণের কথা-ই বলেছিল, যেখানে কুফরী কাজ করা যেতো। কিন্তু মো’মেন বান্দারা তাকে থামিয়ে দেন এবং ওর পরিবর্তে মসজিদ নির্মাণ করেন।” [তাফসীরে বাহর আল-মুহীত, ৭ম খণ্ড, ১৫৮ পৃষ্ঠা]

ইবনুল জাওযী, যাকে কট্টর হিসেবে বিবেচনা করা হয় এবং ‘সালাফী’রাও মানে, তিনি উক্ত আয়াতের (১৮:২১) তাফসীরে বলেন: “ইবনে কুতায়বা (رضي الله عنه) বর্ণনা করেন যে মুফাসসিরীনবৃন্দ মত প্রকাশ করেছিলেন, ওখানে যাঁরা মসজিদ নির্মাণ করেন, তাঁরা ছিলেন মুসলমান রাজা ও তাঁর মো’মেন সাথীবৃন্দ।” [তাফসীরে যা’য়াদ আল-মাসীর, ৫ম খণ্ড, ১২৪ পৃষ্ঠা]
________
মাজারে গম্বুজ নির্মান ও চাদর জড়ানো 
মহান হানাফী আলেম মোল্লা আলী কারী তাঁর চমৎকার ’মিরকাত শরহে মিশকাত’ গ্রন্থে লেখেন: “সালাফ তথা প্রাথমিক যুগের মুসলমানগণ প্রখ্যাত মাশায়েখ (পীর-বোযর্গ) ও হক্কানী উলেমাবৃন্দের মাজার-রওজা নির্মাণকে মোবাহ, অর্থাৎ, জায়েয (অনুমতিপ্রাপ্ত) বিবেচনা করেছেন, যাতে মানুষেরা তাঁদের যেয়ারত করতে পারেন এবং সেখানে (সহজে) বসতে পারেন।” [মিরকাত শরহে মিশকাত, ৪র্থ খণ্ড, ৬৯ পৃষ্ঠা]

মহান শাফেঈ আলেম ও সূফী ইমাম আব্দুল ওয়াহহাব শারানী (رحمة الله) লেখেন: “আমার শিক্ষক আলী (رحمة الله) ও ভাই আফযালউদ্দীন (رحمة الله) সাধারণ মানুষের কবরের ওপরে গুম্বজ নির্মাণ ও কফিনে মৃতদের দাফন এবং (সাধারণ মানুষের) কবরের ওপরে চাদর বিছানোকে নিষেধ করতেন। তাঁরা সব সময়-ই বলতেন, গুম্বজ ও চাদর চড়ানোর যোগ্য একমাত্র আম্বিয়া (আ:) ও মহান আউলিয়া (رحمة الله)-বৃন্দ। অথচ, আমরা মনুষ্য সমাজের প্রথার বন্ধনেই রয়েছি আবদ্ধ।” [আল-আনওয়ারুল কুদসিয়্যা, ৫৯৩ পৃষ্ঠা] 


ইসলামে মাজারের অস্তিত্ব

ইসলামে মাজারের অস্তিত্ব
বোখারী শরীফ, ২য় খণ্ড, বই নং ২৩, হাদীস নং ৪২৩

হুযূর পাক (ﷺ) এরশাদ ফরমান: “আমি যদি সেখানে থাকতাম, তাহলে আমি তোমাদেরকে মূসা (আ:)-এর মাজারটি দেখাতাম, যেটি লাল বালির পাহাড়ের সন্নিকটে পথের ধারে অবস্থিত।”

সুস্পষ্ট হাদীস শরীফ

হযরত ইবনে উমর (رضي الله عنه) বর্ণনা করেন রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর হাদীস, যিনি বলেন: “মসজিদে আল-খায়ফের মধ্যে (’ফী’) ৭০ জন নবী (আ:)-এর মাজার-রওজা (এক সাথে) বিদ্যমান।” ইমাম আল-হায়তামী (رحمة الله) বলেন যে এটি আল-বাযযার বর্ণনা করেন এবং ”এর সমস্ত রাবী (বর্ণনাকারী)-ই আস্থাভাজন”। মানে এই হাদীস সহীহ। ইমাম আল-হায়তামী (رحمة الله) নিজ ‘মজমাউয্ যাওয়াইদ’ পুস্তকের ৩য় খণ্ডে ‘বাবু ফী মসজিদিল্ খায়ফ’ অধ্যায়ে লিপিবদ্ধ #৫৭৬৯ নং হাদীসটি উদ্ধৃত করেন, যা’তে বিবৃত হয়: “মসজিদে খায়ফের মধ্যে (’ফী’) ৭০ জন আম্বিয়া (আ:)-এর মাজার-রওজা বিদ্যমান।”

হুকুম: শায়খুল ইসলাম ইমাম ইবনে হাজর আসকালানী (رحمة الله) এ প্রসঙ্গে বলেন, “এই হাদীসের সনদ সহীহ।” [মোখতাসারুল বাযযার, ১:৪৭৬]

________
ইসালে সওয়াব পাঠানো বিদআত নয় বরং সুন্নাহ দ্বারা প্রমানিত :

হাদীস শরীফ থেকে প্রমাণ

দলিল নং-০১
______________
ইমাম বোখারী ও ইমাম মুসলিম লেখেন:

"এক ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর দরবারে এসে আরয করেন, ‘(হে আল্লাহর রাসূল - দ:) আমার মা অকস্মাৎ ইন্তেকাল করেছেন এবং তিনি কোনো অসিয়ত (উইল) করে যাননি। তবে আমার মনে উদয় হয়েছে, তিনি তা চাইলে হয়তো কোনো দান-সদকা করার কথা আমাকে বলতেন। এক্ষণে আমি তাঁর পক্ষ থেকে কোনো দান-সদকাহ করলে তিনি কি এর সওয়াব পাবেন?’ মহানবী (ﷺ) জবাবে বলেন, ‘হ্যাঁ।’ এমতাবস্থায় ওই ব্যক্তি বলেন, ‘হে রাসূল (ﷺ), আমি আপনাকে আমার (খেজুর) ফলে পরিপূর্ণ বাগানটি সদকাহ হিসেবে দানের ব্যাপারে সাক্ষী করলাম’।”

আল-বোখারী, ‘অসিয়ত’ অধ্যায়, ৪র্থ খণ্ড, বই নং ৫১, হাদীস নং ১৯
মুসলিম শরীফ, ‘অসিয়ত‘ অধ্যায়, বই নং ১৩, হাদীস নং ৪০০৩

এই হাদীস থেকে স্পষ্ট বোঝা যায়, ইন্তেকালপ্রাপ্তদের পক্ষে কোনো দান-সদকাহ করা হলে তা ইন্তেকালপ্রাপ্তদের জন্যে সুফল বয়ে আনে।

দলিল নং-০২
________________
ইমাম বোখারী (رحمة الله) লেখেন: “মহানবী (ﷺ) এরশাদ ফরমান, ‘(কবর জীবনে) ইন্তেকালপ্রাপ্তের মর্যাদা উন্নীত করা হলে তিনি আল্লাহর কাছে এর কারণ জিজ্ঞেস করেন। আল্লাহতা’লা জবাবে বলেন, তোমার পুত্র তোমার জন্যে ক্ষমা চেয়ে দোয়া করেছে’।”

আল-বোখারী, আল-আদাব আল-মোফিদ, ‘পিতা-মাতার শ্রেষ্ঠত্ব/মাহাত্ম্য’ অধ্যায়

এই বিশেষ হাদীস থেকে উপলব্ধি করা যায় যে কেবল দান-সদকাহ-ই নয়, বরং দোয়া ও আর্থিক সাহায্য করাও
ইন্তেকালপ্রাপ্তদের জন্যে খোদায়ী আশীর্বাদ বয়ে আনে।

দলিল নং-০৩
__________________
নবী পাক (ﷺ) এরশাদ করেন, “এটি (সূরা এয়াসিন) ইন্তেকালপ্রাপ্ত বা ইন্তেকাল হতে যাচ্ছে এমন ব্যক্তির কাছে (’ইনদা) পাঠ করো।” [সুনানে ইবনে মাজাহ, কিতাবুল জানায়েয # ১৪৩৮]

’সুনানে ইবনে মাজাহ’ গ্রন্থের ব্যাখ্যাকারী আরও বলেন, “হুযূর পাক (ﷺ)-এর ‘ইন্তেকালপ্রাপ্ত বা ইন্তেকাল হতে যাচ্ছে এমন ব্যক্তি’ এই বাণীর উদ্দেশ্য ইন্তেকাল হতে যাচ্ছে এমন ব্যক্তি অথবা (’আও’) ইন্তেকালপ্রাপ্ত (বা’দ) ব্যক্তিও।” [শরহে সুনানে ইবনে মাজাহ আল-সনদি, প্রাগুক্ত]

‘সুনানে আবি দাউদ’ পুস্তকের ’আওন আল-মা’বুদ শরহে সুনানে আবি দাউদ’ শীর্ষক ব্যাখ্যাগ্রন্থে বিবৃত হয়: “এবং নাসাঈ (শরীফে) হযরত ইবনে আব্বাস (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত হাদীসটি (যা’তে এরশাদ হয়েছে), মহানবী (ﷺ) জানাযার নামায পড়েন এবং সূরা ফাতেহা পাঠ করেন।”
________

দলিল নং-০৪
_________________
হুযূর পূর নূর (ﷺ) এরশাদ ফরমান, “একরা’ও ‘আলা মওতাকুম এয়াসীন”, মানে ‘তোমাদের মধ্যে ইন্তেকালপ্রাপ্ত বা ইন্তেকাল হতে যাচ্ছে এমন ব্যক্তিদের কাছে সূরা এয়াসীন পাঠ করো।’

রেফারেন্স

আবূ দাউদ কৃত ‘সুনান’ (জানায়েয)
নাসাঈ প্রণীত ‘সুনান’ (’আমল আল-এয়াওম ওয়াল-লায়লাহ)
ইবনে মাজাহ রচিত ‘সুনান’ (জানায়েয)
ইবনে হিব্বান লিখিত ‘সহীহ’ (এহসান); তিনি এটিকে সহীহ বলেছেন।

দলিল নং-০৫
____________________
হযরত মা’কিল ইবনে এয়াসার আল-মুযানি বর্ণনা করেন; মহানবী (ﷺ) এরশাদ ফরমান: “কেউ যদি সূরা এয়াসীন আল্লাহর অনুগ্রহ লাভের উদ্দেশ্যে তেলাওয়াত করে, তবে তার পূর্ববর্তী গুনাহ মাফ হবে; অতএব, তোমাদের মধ্যে ইন্তেকাল হতে যাচ্ছে এমন ব্যক্তিদের কাছে তা পাঠ করো।”

ইমাম বায়হাকী (رحمة الله) এটি নিজস্ব ‘শুয়াবুল ঈমান’ গ্রন্থে বর্ণনা করেছেন।

আত্ তিরমিযী, হাদীস নং ২১৭৮

________

দলিল নং-০৬
_____________________
[ইমাম নববী (رحمة الله)]

সহীহ মুসলিম শরীফে হযরত আমর ইবনুল আস্ (رضي الله عنه)-এর কথা বর্ণিত হয়েছে; তিনি বলেন: ’তোমরা যখন আমাকে দাফন করবে, তখন আমার কবরের পাশে ততোক্ষণ দাঁড়াবে যতোক্ষণ একটি উট যবেহ করে তার গোস্ত বিতরণ করতে সময় প্রয়োজন হয়; এতে আমি তোমাদের সঙ্গ লাভের সন্তুষ্টি পাবো এবং আল্লাহর ফেরেশতাদের কী জবাব দেবো তা মনঃস্থির করতে পারবো।’

ইমাম আবূ দাউদ (رحمة الله) ও ইমাম বায়হাকী (رحمة الله) ‘হাসান’ এসনাদে হযরত উসমান (رضي الله عنه) থেকে বর্ণনা করেন; তিনি বলেন: মহানবী (ﷺ) ইন্তেকালপ্রাপ্ত কারো দাফনের পরে তার (কবরের) পাশে দাঁড়াতেন এবং বলতেন, ‘এই ইন্তেকালপ্রাপ্তের গুনাহ মাফের জন্যে দোয়া করো, যাতে সে দৃঢ় থাকে; কেননা তাকে (কবরে) প্রশ্ন করা হচ্ছে।’

ইমাম শাফেঈ (رحمة الله) ও তাঁর শিষ্যবৃন্দ বলেন, ‘(কবরে) কুরআনের অংশবিশেষ তেলাওয়াত করা ভাল; কুরআন খতম করতে পারলে আরও উত্তম।’

'হাসান’ সনদে ‘সুনানে বায়হাকী’ গ্রন্থে বর্ণনা করা হয়েছে যে হযরত ইবনে উমর (رضي الله عنه) ইন্তেকালপ্রাপ্তদের দাফনের পরে কবরের পাশে সূরা বাকারাহ’র প্রারম্ভিক ও শেষ আয়াতগুলো তেলাওয়াত করাকে মোস্তাহাব বিবেচনা করতেন। [’কিতাবুল আযকার, ২৭৮ পৃষ্ঠা]

ইমাম নববী (رحمة الله) বলেন: “যে ব্যক্তি কবর যেয়ারত করেন, তিনি সেটির অধিবাসীকে সালাম-সম্ভাষণ জানাবেন, আল-কুরআনের অংশবিশেষ তেলাওয়াত করবেন এবং ইন্তেকালপ্রাপ্তের জন্যে দোয়া করবেন।” 

ইমাম নববী রচিত ‘মিনহাজ আত্ তালেবীন’, কিতাবুল জানায়েয অধ্যায়ের শেষে।

'আল-মজমু’ শারহ আল-মুহাযযাব’ শীর্ষক গ্রন্থে ইমাম নববী (رحمة الله) আরও লেখেন: “এটি কাঙ্ক্ষিত (ইউস্তাহাব্ব) যে কবর যেয়ারতকারী তাঁর জন্যে সহজে পাঠযোগ্য কুরআনের কোনো অংশ তেলাওয়াত করবেন, যার পরে তিনি কবরস্থদের জন্যে আল্লাহর দরবারে দোয়া করবেন। ইমাম শাফেঈ (رحمة الله) এই শর্তারোপ করেন এবং তাঁর শিষ্যবৃন্দ তাঁর সাথে ঐকমত্য পোষণ করেন।” বইয়ের আরেক স্থানে তিনি বলেন: “যদি কুরআন খতম করা সম্ভব হয়, তবে তা আরও উত্তম।”

ইমাম সৈয়ুতী (رحمة الله) ওপরের দু’টি উদ্ধৃতি-ই তাঁর প্রণীত ‘শরহে সুদুর’ গ্রন্থে উল্লেখ করেন (৩১১ পৃষ্ঠা)।

"উলেমাবৃন্দ কবরের পাশে কুরআন তেলাওয়াতকে মোস্তাহাব (কাম্য) বলে ঘোষণা করেছেন।”

ইমাম নববী (رحمة الله) কৃত ‘শরহে সহীহ আল-মুসলিম’ (আল-মায়স্ সংস্করণ, ৩/৪: ২০৬)

________

দলিল নং-০৭
______________________
বর্ণিত আছে যে আল-’আলা ইবনে আল-লাজলাজ তাঁর সন্তানদেরকে বলেন, “তোমরা যখন আমাকে দাফন করবে এবং কবরের ‘লাহদ’ বা পার্শ্ববর্তী খোলা জায়গা স্থাপন করবে, তখন পাঠ করবে - বিসমিল্লাহ ওয়া ‘আলা মিল্লাতি রাসূলিল্লাহ - অর্থাৎ, মহান আল্লাহর নামে এবং মহানবী (ﷺ)-এর ধর্মীয় রীতি মোতাবেক। অতঃপর আমার ওপর মাটি চাপা দেবে এবং আমার কবরের শিয়রে সূরা বাকারা’র প্রারম্ভিক ও শেষের আয়াতগুলো তেলাওয়াত করবে; কারণ আমি দেখেছি হযরত ইবনে উমর (رضي الله عنه) তা পছন্দ করতেন।”

রেফারেন্স

ইমাম বায়হাকী, ‘আল-সুনান আল-কুবরা’ (৪:৫৬)
ইবনে কুদামা, ’আল-মুগনী’ (২:৪৭৪, ২:৫৬৭, ১৯৯৪ ইং সংস্করণের ২:৩৫৫)
আত্ তাবারানী, ‘আল-কবীর’; আর ইমাম হায়তামী নিজ ‘মজমা’ আল-যওয়াইদ’ (৩:৪৪) গ্রন্থে জানান যে এর সকল বর্ণনাকারীকেই নির্ভরযোগ্য ঘোষণা করা হয়েছে।

________

দলিল নং-০৮
_________________________
ইবনে তাইমিয়া লিখেছে:

”বিশুদ্ধ আহাদীস বা হাদীসসমূহে প্রমাণিত হয় যে ইন্তেকালপ্রাপ্ত জন তাঁর পক্ষে অন্যান্যদের পালিত সমস্ত নেক আমলের সওয়াব বা পুরস্কার লাভ করবেন। কিছু মানুষ আপত্তি উত্থাপন করে এই মর্মে যে কোনো ব্যক্তি শুধু তার নিজের কর্মের ফলেই সওয়াব অর্জন করতে সক্ষম; আর তারা এ যুক্তির পক্ষে আল-কুরআনের দলিল দিতে তৎপর হয়। এটি সঠিক নয়। প্রথমতঃ ( এ কারণে যে) কোনো মুসলমান নিজে যে নেক আমল পালন করেননি, তার সওয়াব-ও তিনি পেতে পারেন; যেমনটি আল্লাহতা’লা কুরআন মজীদে এরশাদ ফরমান যে আল্লাহর আরশের ফেরেশতারা সর্বদা তাঁর-ই প্রশংসা করেন এবং সকল মুসলমানের পক্ষে মাফ চান। আল-কুরআনে আরও পরিস্ফুট হয় যে আল্লাহ পাক তাঁর-ই প্রিয়নবী (ﷺ)-কে নিজ উম্মতের জন্যে দোয়া করতে বলেছেন, কেননা তাঁর দোয়া উম্মতের মানসিক ও আত্মিক শান্তিস্বরূপ। অনুরূপভাবে, দোয়া করা হয় জানাযার নামাযে, কবর যেয়ারতে এবং ইন্তেকালপ্রাপ্তদের জন্যে।

”দ্বিতীয়তঃ আমরা জানি, আল্লাহ পাক অন্যান্যদের নেক আমল, যা আমাদের পক্ষে তাঁরা পালন করেন, তার বদৌলতে আমাদেরকে পুরস্কৃত করে থাকেন। এর উদাহরণ হচ্ছে রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর একখানি হাদীস যা’তে তিনি এরশাদ ফরমান, “কোনো মুসলমান যখন-ই অন্যান্য মুসলমানের জন্যে দোয়া করেন, তৎক্ষণাৎ আল্লাহ পাক একজন ফেরেশতা নিয়োগ করেন ‘আমীন’ বলার জন্যে; অর্থাৎ, ওই ফেরেশতা আল্লাহর কাছে দোয়া কবুলের জন্যে ফরিয়াদ করেন। কখনো কখনো আল্লাহতা’লা জানাযার নামাযে শরিক মুসলমানদেরকে ইন্তেকালপ্রাপ্তদের পক্ষে কৃত তাঁদের প্রার্থনার জবাবে রহমত-বরকত দান করেন; আর ইন্তেকালপ্রাপ্তদেরকেও এর বিপরীতে পুরস্কৃত করেন।”

 রেফারেন্স: ইবনে তাইমিয়া রচিত ‘মজমু’ আল-ফাতাওয়া’, সউদী আরবীয় সংস্করণ, ৭ম খণ্ড, ৫০০ পৃষ্ঠা এবং ২৪ খণ্ড, ৩৬৭ পৃষ্ঠা।

________

দলিল নং-০৯
_______________________
[হাফেয ইবনে কাইয়্যেম জাওযিয়্যা]

”সুদূর অতীতের এক শ্রেণীর বোযূর্গ (এসলাফ) থেকে বর্ণিত আছে যে তাঁরা ইন্তেকালপ্রাপ্ত ব্যক্তিদের দাফনের পর তাঁদের কবরের কাছে কুরআন পাক তেলাওয়াত করতে অসিয়ত করে গিয়েছেন। এ প্রসঙ্গে হযরত আব্দুল হক (رحمة الله) বলেন, হযরত আবদুল্লাহ ইবনে উমর (رضي الله عنه) নির্দেশ দিয়েছিলেন তাঁর মাযারে যেন সূরা বাকারাহ পাঠ করা হয়। হযরত মুআল্লা ইবনে আব্দির রহমান (رحمة الله)-ও তদ্রূপ অভিমত পোষণ করতেন। ইমাম আহমদ (رحمة الله) প্রথমাবস্থায় উপরোক্ত মতের বিরোধী ছিলেন। কিন্তু পরবর্তীকালে তিনিও কবরে কুরআন শরীফ পাঠ করার পক্ষে অভিমত ব্যক্ত করেছিলেন।

"হযরত আলা ইবনে লাজলাজ (رحمة الله) থেকে বর্ণিত: তাঁর পিতা অসিয়ত করেছিলেন যে তিনি ইন্তেকাল করলে তাঁকে যেন লাহাদ ধরনের কবরে দাফন করা হয় এবং কবরে মরদেহ নামানোর সময় ‘বিসমিল্লাহি ওয়া আলা মিল্লাতি রাসূলিল্লাহ’ বাক্যটি পাঠ করা হয়। আর মাটি দেয়ার পর তাঁর শিয়রের দিক থেকে যেন সূরা বাকারাহ’র প্রথম অংশের আয়াতগুলো পাঠ করা হয়। কেননা, তিনি হযরত আবদুল্লাহ ইবনে উমর (رضي الله عنه)-কে এ রকম বলতে শুনেছিলেন।

"এই প্রসঙ্গে হযরত আদ্ দুরী (رحمة الله) বলেন, আমি একবার ইমাম আহমদ (رحمة الله)-কে জিজ্ঞেস করেছিলাম, কবরের কাছে কুরআন শরীফ পাঠ করা সম্পর্কে কোনো রওয়ায়াত আপনার স্মরণে আছে কি? তিনি তখন বলেছিলেন, ‘না’। কিন্তু হযরত ইয়াহইয়া ইবনে মুয়ীন (رحمة الله)-কে একই প্রশ্ন জিজ্ঞেস করা হলে তিনি আলা ইবনে লাজলাজ কর্তৃক উদ্ধৃত হাদীসটি বর্ণনা করেছিলেন। হযরত আলী ইবনে মূসা আল-হাদ্দাদ (رحمة الله) বলেন, আমি ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল (رحمة الله) ও হযরত মোহাম্মদ ইবনে কুদামাহ (رحمة الله)-এর সঙ্গে এক জানাযায় শরীক হয়েছিলাম। লাশ দাফনের পর জনৈক অন্ধ ব্যক্তি কবরের কাছে পবিত্র কুরআন পড়তে লাগলেন। তখন ইমাম আহমদ (رحمة الله) বল্লেন, ‘এই যে শোনো, কবরের কাছে কুরআন শরীফ পাঠ করা বেদআত।’ আমরা যখন কবরস্থান থেকে বেরিয়ে এলাম, তখন হযরত মোহাম্মদ ইবনে কুদামাহ (رحمة الله) ইমাম আহমদ (رحمة الله)-কে জিজ্ঞেস করলেন, হযরত মোবাশশির হালাবী (رحمة الله) সম্পর্কে আপনার ধারণা কী? তিনি উত্তরে বললেন, হযরত মোবাশশির হালাবী (رحمة الله) একজন বিশ্বস্ত ব্যক্তি। আমি আবার তাঁকে জিজ্ঞেস করলাম, আপনি তাঁর থেকে কোনো রওয়ায়াত লিপিবদ্ধ করেছেন কি? তিনি বল্লেন, ‘হ্যাঁ, করেছি।’ মোহাম্মদ ইবনে কুদামাহ (رحمة الله) বল্লেন, ’আমাকে হযরত মোবাশশির (رحمة الله), আর তাঁকে হযরত আবদুর রহমান ইবনে আলা ইবনে লাজলাজ (رحمة الله), আর তাঁকে তাঁর পিতা অসিয়ত করেছিলেন এই মর্মে যে তাঁর পিতার মরদেহ দাফন করার পর তাঁর শিয়রে যেন সূরা বাকারাহ’র প্রথম ও শেষ অংশ থেকে পাঠ করা হয়। তাঁর পিতা তাঁকে আরও বলেছিলেন যে তিনি হযরত আবদুল্লাহ ইবনে উমর (رضي الله عنه)-কে এই রকম করার জন্যে অসিয়ত করতে শুনেছিলেন।’ উপরোক্ত আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে ইমাম আহমদ (رحمة الله) তাঁর মত পরিবর্তন করে ইবনে কুদামা (رحمة الله)-কে বলেন, ‘ওই অন্ধ ব্যক্তিকে গিয়ে বলো, সে যেন কবরে কুরআন শরীফ পাঠ করে’।”

রেফারেন্স 

ইবনে কাইয়্যেম জাওযিয়্যা কৃত ’কিতাবুর রূহ’; বাংলা সংস্করণ ১৬-৭ পৃষ্ঠা; ১৯৯৮ ইং
ইমাম গাযযালী (رحمة الله) রচিত ‘এহইয়া’, ইন্তেকাল ও পরকালের স্মরণবিষয়ক বই; ড: আবদুল হাকিম মুরাদ অনূদিত; ক্যামব্রিজ: ইসলামিক টেক্সটস্ সোসাইটি, ১৯৮৯; ১১৭ পৃষ্ঠা।
আল-খাল্লাল এটি নিজ ‘আল-আমর বিল্ মা’রূফ’ শীর্ষক পুস্তকে বর্ণনা করেন; ১২২ পৃষ্ঠা # ২৪০-২৪১
ইবনে কুদামাহ প্রণীত ‘আল-মুগনী’ (২:৫৬৭; বৈরুত ১৯৯৪ সংস্করণের ২:৩৫৫) এবং ‘ক্কা’ল আজি-ইন ফেকাহে ইবনে উমর’ (৬১৮ পৃষ্ঠা)

”হযরত হাসান ইবনে হাইসাম (رحمة الله) বলেন, আমি আবূ বকর ইবনে আতরূশ (رحمة الله)-কে বলতে শুনেছি, এক ব্যক্তি নিজের মায়ের কবরের কাছে গিয়ে প্রতি জুমআ-বারে সূরা ইয়াসীন পাঠ করতেন। একদিন তিনি সূরা ইয়াসীন পাঠ করে আল্লাহর কাছে দোয়া চাইলেন, ‘হে আল্লাহ, এই সূরা পাঠ করলে যে সওয়াব পাওয়া যায়, তা আপনি এই কবরস্থানের সকল ইন্তেকালপ্রাপ্তের কাছে পৌঁছে দিন।’ পরের জুমআ-বারে তাঁর কাছে এক মহিলা এসে বললেন, আপনি কি অমুকের পুত্র অমুক? তিনি জবাবে বল্লেন, জ্বি হাঁ। ওই মহিলা বললেন, আমার এক মেয়ে মারা গিয়েছে। আমি তাকে স্বপ্নে দেখলাম, সে নিজের কবরের পাশে বসে আছে। আমি তাকে জিজ্ঞেস করলাম, তুমি এখানে বসে আছো কেন? সে আপনার নাম উল্লেখ করে বললো, তিনি নিজের মায়ের কবরের কাছে এসে সূরা ইয়াসীন পড়েন এবং এর সওয়াব সমস্ত ইন্তেকালপ্রাপ্তের প্রতি বখশিয়ে দেন। সেই সওয়াবের কিছু অংশ অামিও পেয়েছি এবং সে জন্যে আমাকে মাফ করে দেয়া হয়েছে। আমার ওই মেয়ে আমাকে এ ধরনের আরও কিছু কথা বলেছিল।”

রেফারেন্স: ইবনে কাইয়্যেম আল-জাওযিয়্যা লিখিত ‘কিতাবুর রূহ’ বাংলা সংস্করণ, ১৭ পৃষ্ঠা; ১৯৯৮ ইং সাল।

”কোনো মো’মেন বান্দা যখন কোনো ইন্তেকালপ্রাপ্ত ব্যক্তির উদ্দেশ্যে দোয়া, এস্তেগফার, সাদকাহ, হজ্জ্ব প্রভৃতি নেক আমল পালন করেন, তখন এ সবের সওয়াব ইন্তেকালপ্রাপ্তদের রূহে পৌঁছে যায়। ..এক শ্রেণীর বেদআতী (ভ্রান্ত মতের অনুসারী)-র দৃষ্টিতে ইন্তেকালপ্রাপ্তদের কাছে জীবিতদের নেক আমলের সওয়াব পৌঁছে না। তবে সহীহ হাদীসে প্রমাণিত হয় যে এ ধারণা ভুল।...কুরআন মজীদেই এর প্রমাণ রয়েছে (সূরা আল-হাশর, ১০ম আয়াত), যেখানে মহান আল্লাহ পাক সে সকল মুসলমানের প্রশংসা করেন যাঁরা তাঁদের (অগ্রবর্তী) মুসলমান ভাইদের জন্যে ক্ষমা প্রার্থনা করেন। ...একটি বিশুদ্ধ হাদীস প্রতীয়মান করে যে মহানবী (ﷺ) এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, কোনো ইন্তেকালপ্রাপ্তের পক্ষে পেশকৃত সাদকাহ’র সওয়াব তাঁর রূহে পৌঁছে যায় (বোখারী ও মুসলিম)। ...কতিপয় লোক সন্দেহ করে থাকে যে পূর্ববর্তী তথা প্রাথমিক যুগের মুসলমানবৃন্দ ইসালে সওয়াব (ওরস) পালন করেননি; কিন্তু এটি ওই সব লোকের অজ্ঞতা বা জ্ঞানের অভাবে ঘটেছে। প্রাথমিক যুগের মুসলমানবৃন্দ প্রদর্শনীর উদ্দেশ্যে এগুলো করতেন না। ....মহানবী (ﷺ) স্বয়ং সাদকাহ প্রদানের অনুমতি দিয়েছিলেন। অতএব, ইসালে সওয়াব সঠিক। ...আল-কুরআনের যে আয়াতটিতে ঘোষিত হয়েছে কোনো ব্যক্তি শুধু সে সওয়াবটুকুই পাবেন যা তিনি আমল করেছেন, তাতে বোঝানো হয়েছে তাঁকে সওয়াব অর্জনের মতো যোগ্যতাসম্পন্ন নেককার হতে হবে; কিন্তু আল্লাহ পাক এ ছাড়াও অন্য কারো উপহৃত নেক আমলের সওয়াব ইন্তেকালপ্রাপ্তদের রূহের প্রতি বখশে দেন।” [ইবনে কাইয়্যেম জাওযিয়্যা কৃত ‘কেতাবুর রূহ’, ১৬তম অধ্যায়]

”হযরত শায়বী (رحمة الله) বলেন, আনসার সাহাবা (رضي الله عنه)-দের কেউ ইন্তেকাল করলে তাঁরা তাঁর কবরের কাছে গিয়ে কুরআন শরীফ তেলাওয়াত করতেন। [প্রাগুক্ত ‘কেতাবুর রূহ’, ১৭ পৃষ্ঠা; বাংলা সংস্করণ]

”হযরত আল-হাসান ইবনে আস্ সাবাহ আয্ যাফরানী (رحمة الله) থেকে বর্ণিত; তিনি বলেন, কবরের পাশে কুরআন শরীফ পাঠ করা সম্পর্কে আমি ইমাম শাফেঈ (رحمة الله)-কে জিজ্ঞেস করেছিলাম। তিনি জবাবে বলেন, ’এতে আপত্তির কোনো কিছু নেই’।” [প্রাগুক্ত ’কেতাবুর রূহ’, ১৭ পৃষ্ঠা; বাংলা সংস্করণ]

________

দলিল নং-১০
________________________
[কাজী শওকানী]
”সুন্নী জামাআতের মতানুযায়ী, ইন্তেকালপ্রাপ্ত মুসলমানগণ (তাঁদের পক্ষে) অন্যদের পেশকৃত দোয়া, হজ্জ্ব, সাদকাহ ইত্যাদির বদৌলতে সওয়াব হাসেল করেন। কিন্তু মো’তাযেলা (ভ্রান্ত মতবাদী) সম্প্রদায় এ সত্য মানতে নারাজ। ইন্তেকালপ্রাপ্তদের উদ্দেশ্যে এগুলো পেশ করা যদি ভ্রান্তি-ই হতো, তবে কবরস্থানে যেয়ারত বা প্রবেশের সময় ইন্তেকালপ্রাপ্তদের প্রতি আমাদের সালাম দেয়াকেও ইসলাম ধর্ম অনুমোদন করতো না।” [কাজী শওকানী রচিত ‘নায়ল আল-আওতার’, জানায়েয অধ্যায়]

”দাফনের পরে কবরের পাশে সূরা বাকারা’র প্রারম্ভিক ও শেষের আয়াতগুলো পাঠ করা হোক। এই সিদ্ধান্ত হযরত ইবনে উমর (رضي الله عنه)-এর কথার ভিত্তিতে নেয়া হয়েছে, যা বর্ণিত হয়েছে ইমাম বায়হাকী (رحمة الله)-এর ’সুনান’ (৪:৫৬) গ্রন্থে এবং যা’তে বলা হয়েছে: ‘আমি পছন্দ করি কবরের পাশে সূরা বাকারা’র প্রারম্ভিক ও শেষাংশ পঠিত হোক।’

”ইমাম নববী (رحمة الله) ঘোষণা করেন যে (ওপরের) এই বর্ণনার এসনাদ হাসান (’হাসসানা এসনাদুহূ’); আর যদিও এটি শুধু হযরত ইবনে উমর (رضي الله عنه)-এরই বাণী, তথাপি তা স্রেফ কোনো মতামতের ভিত্তিতে উপস্থাপিত নয়। এটির সম্ভাব্য কারণ হতে পারে এই যে, তিনি সার্বিকভাবে আলোচিত এ ধরনের তেলাওয়াতের ফায়দাগুলো সম্পর্কে জেনেছিলেন, এবং এর গুণাগুণের আলোকে কবরের ধারে তা পঠিত হওয়াকে পছন্দনীয় ভেবেছিলেন এই আশায় যে এর তেলাওয়াতের দরুন ইন্তেকালপ্রাপ্ত মুসলমানবৃন্দ সওয়াব হাসেল করতে সক্ষম হবেন।” [শওকানী কৃত ‘তোহফাত আয্ যাকেরীন’, ২২৯ পৃষ্ঠা; আল-জাযুরী দামেশকী (رحمة الله)-এর প্রণীত ‘হিসনে হাসিন’ গ্রন্থেও এই উদ্ধৃতি আছে]


অলীগণের মাজারে গিয়ে নফল সালাত আদায় করা ও তাদের উসীলার মাধ্যমে আল্লাহর নিকট প্রার্থনা করা

ইমাম শাফেই (রহ.)
____________________
ইমাম আবূ হানিফা (رحمة الله)-এর মাযারে নিজের অভিজ্ঞতা বর্ণনাকালে ইমাম শাফেঈ (رحمة الله) বলেন, “আমি ইমাম আবু হানিফা (رضي الله عنه) হতে বরকত আদায় করি এবং তাঁর মাযার শরীফ প্রতিদিন যেয়ারত করি। আমি যখন কোনো সমস্যার মুখোমুখি হই, তখন-ই দুই রাকআত নফল নামায পড়ে তাঁর মাযার শরীফ যেয়ারত করি; আর (দাঁড়িয়ে) সমাধানের জন্যে আল্লাহর কাছে ফরিয়াদ করি। ওই স্থান ত্যাগ করার আগেই আমার সমস্যা সমাধান হয়ে যায়।”

রেফারেন্স

খতীব বাগদাদী সহীহ সনদে এই ঘটনা বর্ণনা করেন তাঁর কৃত ‘তারিখে বাগদাদ’ গ্রন্থে (১:১২৩)

ইবনে হাজর হায়তামী প্রণীত ‘আল-খায়রাত আল-হিসান ফী মানাক্কিবিল ইমাম আল-আ’যম আবূ হানিফা’ (৯৪ পৃষ্ঠা)

মোহাম্মদ যাহেদ কাওসারী, ‘মাক্কালাত’ (৩৮১ পৃষ্ঠা)

ইবনে আবেদীন শামী, ‘রাদ্দুল মোহতার আ’লা দুররিল মোখতার’ (১:৪১)

জ্ঞাতব্য: এটি সমর্থনকারী দালিলিক প্রমাণ হিসেবে পেশকৃত এবং এটি একটি ’হুজ্জাহ’, কেননা চার মযহাবের অনেক ফুকাহা একে দলিল হিসেবে গ্রহণ করেছেন।

এই বর্ননার একজন ""উমর ইবনে ইসহাক" কে আল-বানী অপরিচিত বলেছে তার জবাব :

Ta'nib al-khatib : pg 34, again no definitive info on this narrator ('Umar or 'Amr ibn Ishaq)

Amr ibn Ishaq ibn Ibrahim al-Himsi
who is not unknown [cf. Ibn Hajar in Nata'ij al-Afkar (2:28)]

Amr is established to narrate from --

→ his father Ishaq ibn Ibrahim ibn al-`Ala' (d. 238) and from
→ his grandfather Abu Ishaq Ibrahim ibn al- `Ala' ibn al-Dahhak (d. 235).
→ From Amr narrate Sulayman ibn Ahmad al-Tabarani (260-360) and
→ Abu Ja`far Muhammad ibn Muhammad ibn `Abd Allah al-Baghdadi (d. 346).

In al-Khatib's report, the unassessed link :-

→ (`Umar or `Amr) narrates from
→  Ali ibn Maymun (d. 246), and from the unassessed link
→  narrates Makram ibn Ahmad (d. 345).

If the link is indeed `Amr, then the chain is strong since he is muwaththaq as this also stated by -

this event is Also narrated by : এই ঘটনাটি বিভিন্ন বর্ননায় এসেছে :

Ibn Abil Wafa in his Tabaqat al-Hanafiyya (p. 519) through another chain of narrators
--
Muhammad Zihid Kawthari, Maqilit (p.381)
--
This narration is also cited by Imam Abu al-Muwaid al-Muwaffiq Ibn Ahmad al-Makki (d. 568H) in Manaqib al-Imam al-Azam Abi Hanifah 2, p. 199.

Imam Abu al-Muwaid al-MuwaffiqIbn Ahmad al-Makki (d. 568H) copied this authentic statement of Imam Shafai :

“I seek blessings from Imam Abu Hanifah and visit his grave daily. Whenever I am in need, I visit his grave after offering two rakah Prayer, and state my need before Allah. Within no time my need is met”. [Manaqib al-Imam al-Azam Abi Hanifah]

The belief of Imam ibn Hajar Makki ash-Shafi'i (radiyallahu ta'ala anhu) (d. 973 H)
Imam ibn Hajar Makki writes that it has always been the practice of the scholars and those who need to go to the shrine of Imam Abu Haneefa (radiyallahu ta'ala anhu) and seek the intermediation of the Imam to remove their difficulties. These people believed this to be a means of success and received great rewards from this practice. Imam Shafi'i, whenever he was in Baghdad , would go to the shrine of Imam Abu Haneefa and seek blessings from him. Whenever I am in need, I offer two rak'ahs of salah and then go near his grave. I pray to Allah at this place, hence, my difficulty is immediately removed.
(Al-Khairat al-Hissan, p.166)

Ibn Hajar al-Haytami mentioned in the thirty-fifth chapter (35th) of his book on Imam Abu Hanifa entitled al-Khayrat al-Hisan:

Ibn Hajar in Nata'ij al-Afkar (2:28), and the rest of al-Khatib's chain is solid."

Khatib's tarikh baghdad 1:123 and in the -
Jami' Masanid 1:120 , the author of Ta'nib al-Khatib (p 16) states that the narrators of (Khatib's) chain are each declared trustworthy (muwaththaqun) according to Khatib"

________
ইবনুল জাওযী
ইবনুল জাওযী এ বিষয়ে একখানা বই লেখেন, যেখানে তিনি আউলিয়া কেরাম (رحمة الله)-এর জীবনীর বিস্তারিত বিবরণ দেন। তিনি লেখেন:

হযরত মা’রূফ কারখী (বেসাল: ২০০ হিজরী): ”তাঁর মাযার শরীফ বাগদাদে অবস্থিত; আর তা থেকে মানুষেরা বরকত আদায় করেন। ইমাম আহমদ বিন হাম্বল (رحمة الله)-এর সাথী হাফেয ইবরাহীম আল-হারবী (বেসাল: ২৮৫ হিজরী) বলতেন, হযরত মা’রূফ কারখী (رحمة الله)-এর মাযার শরীফ হচ্ছে পরীক্ষিত আরোগ্যস্থল” (২:২১৪)।

ইবনে জাওযী আরও বলেন, “আমরা নিজেরাই ইবরাহীম আল-হারবী (رحمة الله)-এর মাযার যেয়ারত করে তা থেকে বরকত আদায় করে থাকি।” [২:৪১০]

রেফারেন্স :

হাফেয যাহাবীও হযরত ইবরাহীম আল-হারবী (رحمة الله)-এর উপরোক্ত কথা (হযরত মা’রূফ কারখী (رحمة الله)-এর মাযার শরীফ হচ্ছে পরীক্ষিত আরোগ্যস্থল) বর্ণনা করেন।  [‘সিয়্যার আ’লম আল-নুবালা’, ৯:৩৪৩]

________
ইমাম যাহাবী
ইমাম যাহাবী বর্ণনা করেন:
একবার সমরকন্দ অঞ্চলে খরা দেখা দেয়। মানুষজন যথাসাধ্য চেষ্টা করেন; কেউ কেউ সালাত আল-এস্তেসক্কা (বৃষ্টির জন্যে নামায-দোয়া) পড়েন, কিন্তু তাও বৃষ্টি নামে নি। এমতাবস্থায় সালেহ নামের এক প্রসিদ্ধ নেককার ব্যক্তি শহরের কাজী (বিচারক)-এর কাছে উপস্থিত হন এবং বলেন,

আমার মতে আপনার এবং মুসলমান সর্বসাধারণের ইমাম বোখারী (رحمة الله)-এর মাযার শরীফ যেয়ারত করা উচিত। তাঁর মাযার শরীফ খারতাংক এলাকায় অবস্থিত। ওখানে মাযারের কাছে গিয়ে বৃষ্টি চাইলে আল্লাহ হয়তো বৃষ্টি মঞ্জুর করতেও পারেন।

অতঃপর বিচারক ওই পুণ্যবান ব্যক্তির পরামর্শে সায় দেন এবং মানুষজনকে সাথে নিয়ে ইমাম সাহেব (رحمة الله)-এর মাযারে যান। সেখানে (মাযারে)

বিচারক সবাইকে সাথে নিয়ে একটি দোয়া পাঠ করেন; এ সময় মানুষেরা কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন এবং ইমাম সাহেব (رحمة الله)-কে দোয়ার মধ্যে অসীলা হিসেবে গ্রহণ করেন। আর অমনি আল্লাহতা’লা মেঘমালা পাঠিয়ে ভারি বর্ষণ অবতীর্ণ করেন। সবাই খারতাংক এলাকায় ৭ দিন যাবত অবস্থান করেন এবং তাঁদের কেউই সামারকান্দ ফিরে যেতে চাননি। অথচ এই দুটি স্থানের দূরত্ব মাত্র ৩ মাইল।

[ইমাম যাহাবী কৃত সিয়্যার আল-আ’লম ওয়ান্ নুবালাহ, ১২তম খণ্ড, ৪৬৯ পৃষ্ঠা]

________
ABDHUL HAQ MUHADDITH E DEHLOVI
About the MAZAR OF IMAM MUSA KAAZIM (RA) [7th Imam] :-

Shaykh Abdul Haq Dehlwi writes: "Imam Shafi'i said that the grave of Hadrat Musa Kaazim (radiyallahu ta'ala anhu) is a place where supplications are accepted readily" (Ashi'atul Lum'aat, vol.1 p.715)
ইমাম ইবনে হিব্বান(রহ.)
Al-Hafidh Ibn Hibban] : about the MAZAR OF ALI BIN MUSA AL-RIDHA (RA) (8th Imam)

…” (مات على بن موسى الرضا بطوس من شربة سقاه إياها المأمون فمات من ساعته وذلك في يوم السبت آخر يوم سنة ثلاث ومائتين وقبره بسناباذ خارج النوقان مشهور يزار بجنب قبر الرشيد، قد زرته مرارا كثيرة وما حلت بي شدة في وقت مقامى بطوس فزرت قبر على بن موسى الرضا صلوات الله على جده وعليه ودعوت الله إزالتها عنى إلا أستجيب لي وزالت عنى تلك الشدة وهذا شيء جربته مرارا فوجدته كذلك أماتنا الله على محبة المصطفى وأهل بيته صلى الله عليه وعليهم أجمعين)

ইমাম ইবনে হিব্বান (رحمة الله) নিজের অভিজ্ঞতা বর্ণনাকালে আল-রেযা (رحمة الله)-এর মাযারে তাঁর তাওয়াসসুলের বিবরণ লিপিবদ্ধ করেন এবং বলেন, “তুস্ নগরীতে অবস্থান করার সময় যখনই আমি কোনো সমস্যা দ্বারা পেরেশানগ্রস্ত হয়েছি, তৎক্ষণাৎ আমি হযরত আলী ইবনে মূসা রেযা (তাঁর নানা তথা হুযূর পাক ও তাঁর প্রতি আল্লাহর রহমত বর্ষিত হোক)-এর মাযার শরীফ যেয়ারত করতাম এবং আল্লাহর কাছে সমাধান চাইতাম। এতে আমার দোয়া কবুল হতো এবং পেরেশানিও দূর হতো। আমি এটি-ই করতাম এবং বহুবার এর সুফল পেয়েছি।” [ইবনে হিব্বান প্রণীত ‘কিতাবুস্ সিকাত’, ৮ম খণ্ড, ৪৫৬-৭ পৃষ্ঠা, # ১৪৪১১]

________
ইমাম সাবী(রহ.)
বাতিলদের জবাবে ইমাম সাবী (রহ) বলেন,

Imam Sawi writes: "who said that The Muslims who visit the graves of the saints are Kafir because they believe that those visitors are worshipping other than Allah is a sign of clear heresy.

To visit the saints is not worshipping other than Allah, rather it is a sign of loving those whom Allah loves [so, it is not kufur] " (Tafseer Sawi, vol.1 p.245)


রওজা মোবারক-কে ঘিরে উসীলা ও ইস্তিগাসা (সাহায্য প্রার্থনার শরয়ী বিধান)
________
নবীগন ও অলীগনের আল্লাহ প্রদত্ত রুহানী সাহায্য বিশ্বাস করা শিরিক নয় জায়েয
[ইমাম বায়হাকী]

[হাদীস নং ৩৮৭৯] আবূ এসহাক আল-কারশী (رضي الله عنه) বর্ণনা করেন, মদীনা মোনাওয়ারায় আমাদের সাথে এক ব্যক্তি ছিলেন, যিনি যখন-ই এমন কোনো খারাপ কাজ সংঘটিত হতে দেখতেন যাকে তিনি বাধা দিতে অক্ষম, তৎক্ষণাৎ তিনি মহানবী (ﷺ)-এর মোবারক রওযায় যেতেন এবং আরয করতেন, ‘হে মাযারের অধিবাসীবৃন্দ (রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম এবং শায়খাইন রাদিয়াল্লাহু আনহুমা) এবং আমাদের সাহায্যকারীমণ্ডলী! আমাদের অবস্থার দিকে কৃপাদৃষ্টি করুন।’ ....

[হাদীস নং ৩৮৮০] আবূ হারব হেলালী (رضي الله عنه) বর্ণনা করেন যে এক আরবী ব্যক্তি হজ্জ্ব সম্পন্ন করে মসজিদে নববীর দরজায় আসেন। তিনি সেখানে তাঁর উট বেঁধে মসজিদে প্রবেশ করেন এবং রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর পবিত্র রওযার সামনে চলে আসেন। তিনি হুযূর পূর নূর (ﷺ)-এর কদম মোবারকের কাছে দাঁড়িয়ে আরয করেন: ‘এয়া রাসূলাল্লাহ (ﷺ), আপনার প্রতি সালাম।’ অতঃপর তিনি হযরত আবূ বকর (رضي الله عنه) ও হযরত উমর (رضي الله عنه)-এর প্রতিও সালাম-সম্ভাষণ জানান। এরপর তিনি আবার বিশ্বনবী (ﷺ)-এর দিকে ফিরে আরয করেন: ”এয়া রাসূলাল্লাহ (ﷺ)! আপনার জন্যে আমার পিতা ও মাতা কোরবান হোন। আমি আপনার দরবারে এসেছি, কারণ আমি পাপকর্ম ও ভুলত্রুটিতে নিমজ্জিত, আর এমতাবস্থায় আপনাকে আল্লাহর কাছে যেন অসীলা করতে পারি এবং আপনিও আমার পক্ষে শাফায়াত করতে পারেন। কেননা, আল্লাহতা’লা এরশাদ ফরমান: ’

বস্তুতঃ আমি একমাত্র এই উদ্দেশ্যেই রসূল প্রেরণ করেছি, যাতে আল্লাহর নির্দেশানুযায়ী তাঁদের আদেশ-নিষেধ মান্য করা হয়। আর সেসব লোক যখন নিজেদের অনিষ্ট সাধন করেছিল, তখন যদি আপনার কাছে আসত অতঃপর আল্লাহর নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করত এবং রসূলও যদি তাদেরকে ক্ষমা করিয়ে দিতেন। অবশ্যই তারা আল্লাহকে ক্ষমাকারী, মেহেরবানরূপে পেত। [সুরা নিসা: ৬৪]

[আল-কুরআন, ৪:৬৪]” অতঃপর ওই ব্যক্তি সাহাবী (رضي الله عنه)-দের এক বড় দলের দিকে মুখ ফিরিয়ে বলতে থাকেন, ’ওহে সেরা ব্যক্তিবৃন্দ যাঁরা (মাটির) গভীরে শায়িত’; ‘যাঁদের সুগন্ধিতে মাটির অভ্যন্তরভাগ ও বহির্ভাগ মিষ্ট স্বাদ পরিগ্রহ করেছে’; ’আপনি যে মাযারে শায়িত তার জন্যে আমার জান কোরবান’; ‘আর যে মাযার-রওযায় পবিত্রতা, রহমত-বরকত ও অপরিমিত দানশীলতা পাওয়া যায়।’

[‘শুয়াবুল ঈমান, ৬ষ্ঠ খণ্ড, ৬০ পৃষ্ঠা, হাদীস নং ৩৮৭৯, ৩৮৮০]

________
রওজা মোবারকের উসীলা ও ইস্তিগাসা
বৃষ্টির জন্য ইস্তিগাসা : ঈমানদারদের মা হযরত আয়েশা  সিদ্দিকা (رضي الله عنه) হতে প্রমাণ :

ইমাম দারিমী বর্ণনা করেন হযরত আবূল জাওযা’ আউস ইবনে আব্দিল্লাহ (رضي الله عنه) হতে, ‍যিনি বলেন: মদীনাবাসীগণ একবার দুর্ভিক্ষের কবলে পড়েন। তাঁরা মা আয়েশা (رضي الله عنه)-এর কাছে এ (শোচনীয় অবস্থার) ব্যাপারে ফরিয়াদ করেন। তিনি তাঁদেরকে মহানবী (ﷺ)-এর রওযা শরীফে গিয়ে ওর ছাদে একটি ছিদ্র করতে বলেন এবং রওযা পাক ও আকাশের মাঝে কোনো বাধা না রাখতে নির্দেশ দেন। তাঁরা তা-ই করেন। অতঃপর মুষলধারে বৃষ্টি নামে। এতে সর্বত্র সবুজ ঘাস জন্মায় এবং উট হৃষ্টপুষ্ট হয়ে মনে হয় যেন চর্বিতে ফেটে পড়বে। এই বছরটিকে ‘প্রাচুর্যের বছর’ বলা হয়। [সুনানে দারিমী, ১ম খণ্ড, ২২৭ পৃষ্ঠা, হাদীস নং ৯৩]

রেফারেন্স:

* শায়খ মোহাম্মদ বিন আলাউইয়ী মালেকী (মক্কা শরীফ) বলেন, “এই রওয়ায়াতের এসনাদ ভাল; বরঞ্চ, আমার মতে, এটি সহীহ (বিশুদ্ধ)। উলেমাবৃন্দ এর নির্ভরযোগ্যতার বিষয়টি সমর্থন করেছেন এবং প্রায় সমকক্ষ বিশ্বস্ত প্রামাণিক দলিল দ্বারা এর খাঁটি হবার বিষয়টি প্রতিষ্ঠা করেছেন।” [শেফা’উল ফু’য়াদ বি-যেয়ারতে খায়রিল এ’বাদ, ১৫৩ পৃষ্ঠা]

* ইবনে আল-জাওযী, আল-ওয়াফা’ বি-আহওয়ালিল্ মোস্তফা (সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম) [২:৮০১]

* ইমাম তাকিউদ্দীন সুবকী (رحمة الله) কৃত ‘শেফাউস্ সেকাম ফী যেয়ারাতে খায়রিল আনাম’ [১২৮ পৃষ্ঠা]

* ইমাম কসতলানী (رحمة الله) প্রণীত ‘আল-মাওয়াহিবুল লাদুন্নিয়াহ’ [৪:২৭৬]; এবং ইমাম যুরকানী মালেকী (رحمة الله) ‘শরহে মাওয়াহিব’ [১১:১৫০]

সনদ: “আবূ নুয়াইম এই বর্ণনা শুনেছিলেন সাঈদ ইবনে যায়দ হতে; তিনি আ’মর ইবনে মালেক আল-নুকরী হতে; তিনি হযরত আবূল জাওযা আউস্ বিন আবদিল্লাহ (رضي الله عنه) হতে, যিনি এটি বর্ণনা করেন।

________
রাসুলুল্লাহ (সা) এর নিকট খাদ্যের জন্য প্রার্থনা

হাফেয ইবনে জাওযী কৃত ‘কিতাব আল-ওয়াফা’

আবূ বকর মিনকারী বলেন: আমি কিছুটুকু পেরেশানি অবস্থায় হাফেয আত্ তাবারানী ও আবূল শায়খের সাথে মসজিদে নববীর ভেতরে অবস্থান করছিলাম। ওই সময় আমরা ভীষণ অভুক্ত ছিলাম। ওই দিন এবং ওর আগের দিন কিছুই আমরা খাইনি। এশা’র নামাযের সময় হলে আমি রাসূলে খোদা (ﷺ)-এর রওযা পাকের সামনে অগ্রসর হই এবং আরয করি, ‘এয়া রাসূলাল্লাহ (ﷺ)! আমরা ক্ষুধার্ত, আমরা ক্ষুধার্ত (এয়া রাসূলাল্লাহ আল-জু’ আল-জু’)!’ অতঃপর আমি সরে আসি। আবূ শায়খ আমাকে বলেন, ’বসুন। হয় আমাদের জন্যে খাবারের ব্যবস্থা হবে, নয়তো এখানেই মারা যাবো।’ এমতাবস্থায় আমি ঘুমিয়ে পড়ি এবং আবূ আল-শায়খও ঘুমিয়ে পড়েন। আত্ তাবারানী জেগে থেকে কিছু একটি নিয়ে অধ্যয়ন করছিলেন। ওই সময় এক আলাউইয়ী (হযরত আলী রাদিয়াল্লাহু আনহু’র বংশধর) দরজায় এসে উপস্থিত; তাঁর সাথে ছিল দুইজন বালক, যাদের প্রত্যেকের হাতে ছিল খাবারভর্তি একখানা তাল-পাতার ঝুড়ি। আমরা উঠে বসে খাবার গ্রহণ আরম্ভ করলাম। আমরা মনে করেছিলাম, বাচ্চা দু’জন অবশিষ্ট খাবার ফেরত নিয়ে যাবে। কিন্তু তারা সবই রেখে যায়। আমাদের খাওয়া শেষ হলে ওই আলাউইয়ী বলেন, ‘ওহে মানব সকল, আপনারা কি রাসূলুল্রাহ (ﷺ)-এর কাছে আরয করেছিলেন? আমি তাঁকে স্বপ্নে দেখি, আর তিনি আমাকে আপনাদের জন্যে খাবার নিয়ে আসতে বলেন। [হাফেয ইবনে জাওযী, ‘কিতাব আল-ওয়াফা, ৮১৮ পৃষ্ঠা; # ১৫৩৬]

জ্ঞাতব্য: ইবনে জাওযী ছিলেন ’আল-জারহ ওয়াত্ তাদীল’-এর কঠোরপন্থী আলেমদের অন্যতম; আর তিনি এই বইয়ের প্রারম্ভেই উল্লেখ করেন যে তিনি বিশুদ্ধ রওয়ায়াতের সাথে মিথ্যে বিবরণগুলোর সংমিশ্রণ করেননি। (মানে তিনি শুধু বিশুদ্ধ বর্ণনাসম্বলিত ’সীরাহ’-বিষয়ক এ বইটি লিখেছেন; এতে সন্নিবেশিত হাদীসগুলো সহীহ বা হাসান পর্যায়ভুক্ত, যা সনদ কিংবা শওয়াহিদ (সাক্ষ্য)-সূত্রে ওই পর্যায়ে পৌঁছেছে)

________
ক্ষমার জন্য রওজা মোবারক উসীলা স্বরুপ
ইমাম কুরতুবী (رحمة الله) হযরত আবূ সাদেক (رضي الله عنه) থেকে বর্ণনা করেন যে ইমাম আলী (ক:) বলেন, “মহানবী (ﷺ)-এর বেসালের (পরলোকে আল্লাহর সাথে মিলিত হবার) তিন দিন পর জনৈক আরব এসে তাঁর রওযা মোবারকের ওপর পড়ে যান এবং তা থেকে মাটি নিয়ে মাথায় মাখতে থাকেন। তিনি আরয করেন, ‘এয়া রাসূলাল্লাহ (ﷺ)! আপনি বলেছিলেন আর আমরাও শুনেছিলাম, আপনি আল্লাহর কাছ থেকে জেনেছিলেন আর আমরাও আপনার কাছ থেকে জেনেছিলাম; আপনার কাছে আল্লাহর প্রেরিত দানগুলোর মধ্যে ছিল তাঁর-ই পাক কালাম - আর যদি কখনো তারা (মো’মেনগণ) নিজেদের আত্মার প্রতি যুলুম করে, তখন হে মাহবুব, তারা আপনার দরবারে হাজির হয় এবং আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করে, আর রাসূল (ﷺ)-ও তাদের পক্ষে সুপারিশ করেন, তবে অবশ্যই তারা আল্লাহকে অত্যন্ত তওবা কবুলকারী, দয়ালু হিসেবে পাবে (আল-কুরআন, ৪:৬৪)। আমি একজন পাপী, আর এক্ষণে আপনার-ই দরবারে আগত, যাতে আপনার সুপারিশ আমি পেতে পারি।’ এই আরযির পরিপ্রেক্ষিতে রওযা মোবারক থেকে জবাব এলো, ‘কোনো সন্দেহ-ই নেই তুমি ক্ষমাপ্রাপ্ত!’

[তাফসীরে কুরতুবী, আল-জামে’ লি আহকাম-ইল কুরআন, ৬ষ্ঠ খণ্ড, উক্ত আল-কুরআনের ৪:৬৪-এর তাফসীর]

                            NOTE :

হযরত আবূ হোরায়রা (رضي الله عنه) বর্ণনা করেন যে মহানবী (ﷺ) এরশাদ ফরমান, কেউ আমাকে সালাম জানালে আল্লাহ আমার রূহকে আমার কাছে ফিরিয়ে দেন এবং আমি তার সালামের প্রত্যুত্তর দেই। [আবূ দাউদ শরীফ, ৪র্থ বই, হাদীস নং ২০৩৬]

ইমাম নববী (رحمة الله) এ হাদীস সম্পর্কে বলেন, “আবূ দাউদ (رحمة الله) এটি সহীহ সনদে বর্ণনা করেছেন।” [রিয়াযুস্ সালেহীন, ১:২৫৫, হাদীস # ১৪০২]

গায়রে মুকাল্লিদীন তথা লা-মযহাবী (আহলে হাদীস/’সালাফী’) গোষ্ঠীর নেতা কাজী শওকানী এই হাদীস বর্ণনার আগে বলে, “এটি ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল (رحمة الله) ও ইমাম আবূ দাউদ (رحمة الله) সহীহ এবং মারফু’ সনদে হযরত আবূ হোরায়রা (رضي الله عنه) থেকে বর্ণনা করেন।” [নায়ল আল-আওতার, ৫:১৬৪]


নবীগণের অলীগণের মাজার ও ইস্তিগাসা সম্পর্কিত ফতোয়া
________
মাযারকে ঘিরে উসীলা ও ইস্তিগাসার বিধান সম্পর্কে ইমামগনের ভাষ্য :
হুজ্জাতুল ইসলাম (৩ লক্ষ হাদিসের হাফেজ) ইমাম গাযযালী (رحمة الله)-এর ভাষ্য
ইমাম গাযযালী (رحمة الله) বলেন :
“কারো যখন কোনো অসুবিধা (তথা পেরেশানি) হয়, তখন তার উচিত মাযারস্থ আউলিয়াবৃন্দের কাছে সাহায্য প্রার্থনা করা; এঁরা হলেন সে সকল পুণ্যাত্মা যাঁরা দুনিয়া থেকে বেসাল হয়েছেন। এ ব্যাপারে কোনো সন্দেহ-ই নেই, যে ব্যক্তি তাঁদের মাযার যেয়ারত করেন, তিনি তাঁদের কাছ থেকে রূহানী মদদ (আধ্যাত্মিক সাহায্য) লাভ করেন এবং বরকত তথা আশীর্বাদও প্রাপ্ত হন; আর বহুবার আল্লাহর দরবারে তাঁদের অসীলা পেশ হবার দরুন মসিবত বা অসুবিধা দূর হয়েছে।” [তাফসীরে রূহুল মা’আনী, ৩০তম খণ্ড, ২৪ পৃষ্ঠা]

জ্ঞাতব্য: ‘এসতেগাসাহ’ তথা আম্বিয়া (আ:) ও আউলিয়া (رحمة الله)-এর কাছে সাহায্য প্রার্থনার বিষয়টি সম্পর্কে আরও বিস্তারিত জানতে আহলুস্ সুন্নাহ’র ওয়েবসাইটের ‘ফেকাহ’ বিভাগে ‘আম্বিয়া (আ:) ও আউলিয়া (رحمة الله)-এর রূহানী মদদ’ শীর্ষক লেখাটি দেখুন।

________
শায়খুল ইসলাম হাফেয ইমাম নববী (رحمة الله) এর ভাষ্য 
ইমাম সাহেব নিজ ’কিতাবুল আযকার’ পুস্তকের ‘মহানবী (ﷺ)-এর মোবারক রওযা যেয়ারত ও সেখানে পালিত যিকর’ শীর্ষক অধ্যায়ে লেখেন: “এ কথা জ্ঞাত হওয়া উচিত, ’যে কেউ’ হজ্জ্ব পালন করলে তাকে রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর রওযা মোবারক যেয়ারত করতে হবে, ’তা তার  গন্তব্য পথের ওপর হোক বা না-ই হোক’; কারণ যেয়ারতে রাসূল (ﷺ) হলো সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এবাদতগুলোর অন্যতম, সবচেয়ে পুরস্কৃত আমল, এবং সবচেয়ে ইপ্সিত লক্ষ্য। যেয়ারতের উদ্দেশ্যে কেউ বের হলে পথে বেশি বেশি সালাত ও সালাম পড়া উচিত। আর মদীনা মোনাওয়ারার গাছ, পবিত্র স্থান ও সীমানার চিহ্ন দৃশ্যমান হওয়ামাত্র-ই সালাত-সালাম আরও বেশি বেশি পড়তে হবে তার; অধিকন্তু এই ‘যেয়ারত’ দ্বারা যাতে নিজের উপকার হয়, সে জন্যে আল্লাহর দরবারে তার ফরিয়াদ করাও উচিত; আল্লাহ যেন তাকে এই যেয়ারতের মাধ্যমে ইহ-জাগতিক ও পারলৌকিক কল্যাণ দান করেন, এই কামনা তাকে করতে হবে। তার বলা উচিত, ‘এয়া আল্লাহ! আপনার করুণার দ্বার আমার জন্যে অবারিত করুন, এবং রওযায়ে আকদস যেয়ারতের মাধ্যমে সেই আশীর্বাদ আমায় মঞ্জুর করুন, যেটি আপনি মঞ্জুর করেছেন আপনার-ই বন্ধুদের প্রতি, যাঁরা আপনাকে মানেন।
যাঁদের কাছে চাওয়া হয় তাঁদের মধ্যে ওহে সেরা সত্তা, আমায় ক্ষমা করুন এবং আমার প্রতি দয়া করুন।” [ইমাম নববী রচিত ‘কিতাবুল আযকার’, ১৭৮ পৃষ্ঠা]

________
ইমাম ইবনুল হজ্জ (রহ) : [CENTURY 1250-1336] ওনার ভাষ্য
ইমাম ইবনুল হাজ্জ্ব (رحمة الله) বলেন: সালেহীন তথা পুণ্যবানদের মাযার-রওযা হতে বরকত আদায় (আশীর্বাদ লাভ) করার লক্ষ্যে যেয়ারত করতে বলা হয়েছে। কেননা, বুযূর্গদের হায়াতে জিন্দেগীর সময় যে বরকত আদায় করা যেতো, তা তাঁদের বেসালের পরও লাভ করা যায়। উলেমাবৃন্দ ও মোহাক্কিক্কীন (খোদার নৈকট্যপ্রাপ্তজন) এই রীতি অনুসরণ করতেন যে তাঁরা আউলিয়াবৃন্দের মাযার-রওযা যেয়ারত করে তাঁদের শাফায়াত (সুপারিশ) কামনা করতেন......কারো কোনো হাজত বা প্রয়োজন থাকলে তার উচিত আউলিয়া কেরামের মাযার-রওযা যেয়ারত করে তাঁদেরকে অসীলা করা। আর এ কাজে (বাধা দিতে) এই যুক্তি দেখানো উচিত নয় যে মহানবী (ﷺ) তিনটি মসজিদ (মসজিদে হারাম, মসজিদে নববী ও মসজিদে আকসা) ছাড়া অন্য কোথাও সফর করতে নিষেধ করেছিলেন। মহান ইমাম আবূ হামীদ আল-গাযযালী (رحمة الله) নিজ ‘এহইয়া’ পুস্তকের ’আদাব আস্ সফর’ অধ্যায়ে উল্লেখ করেন যে হজ্জ্ব ও জেহাদের মতো এবাদতগুলোর ক্ষেত্রে সফর করা বাধ্যতামূলক। অতঃপর তিনি বলেন, ‘এতে অন্তর্ভুক্ত রয়েছে আম্বিয়া (আ:), সাহাবা-এ-কেরাম (رضي الله عنه), তাবেঈন (رحمة الله) ও সকল আউলিয়া ও হক্কানী উলেমাবৃন্দের মাযার-রওযা যেয়ারতের উদ্দেশ্যে সফর।
যাঁর কাছে তাঁর যাহেরী জীবদ্দশায় সাহায্য চাওয়া জায়েয ছিল, তাঁর কাছে তাঁর বেসালের পরও (যেয়ারত করে) সাহায্য চাওয়া জায়েয’। [ইমাম ইবনুল হাজ্জ্ব প্রণীত আল-মাদখাল, ১ম খণ্ড, ২১৬ পৃষ্ঠা]

ইমাম আবূ আবদিল্লাহ ইবনিল হাজ্জ্ব আল-মালেকী (رحمة الله) আউলিয়া ও সালেহীনবৃন্দের মাযার-রওযা যেয়ারত সম্পর্কে একটি সম্পূর্ণ অধ্যায় রচনা করেন। তাতে তিনি লেখেন: মুতা’লিম (শিক্ষার্থী)-দের উচিত আউলিয়া ও সালেহীনবৃন্দের সান্নিধ্যে যাওয়া; কেননা তাঁদের দেখা পাওয়াতে অন্তর জীবন লাভ করে, যেমনিভাবে বৃষ্টি দ্বারা মাটি উর্বর হয়। তাঁদের সন্দর্শন দ্বারা পাষাণ হৃদয়ও নরম বা বিগলিত হয়। কারণ তাঁরা আল্লাহ পাকেরই বরগাহে সর্বদা উপস্থিত থাকেন, যে মহাপ্রভু পরম করুণাময়। তিনি কখনােই তাঁদের এবাদত-বন্দেগী বা নিয়্যতকে প্রত্যাখ্যান করেন না, কিংবা যারা তাঁদের মাহফিলে হাজির হন ও তাঁদেরকে চিনতে পারেন এবং তাঁদেরকে ভালোবোসেন, তাদেরকেও প্রত্যাখ্যান করেন না। এটি এ কারণে যে তাঁরা হলেন আল্লাহ ও তাঁর রাসূল (ﷺ)-এর পরে রহমতস্বরূপ, যে রহমত আল্লাহ-ওয়ালাদের জন্যে অবারিত। অতএব, কেউ যদি এই গুণে গুণান্বিত হন, তাহলে সর্বসাধারণের উচিত ত্বরিত তাঁর কাছ থেকে বরকত আদায় করা। কেননা, যারা এই আল্লাহ-ওয়ালাদের দেখা পান, তারা এমন রহমত-বরকত, জ্ঞান-প্রজ্ঞা ও স্মৃতিশক্তি লাভ করেন যা ব্যাখ্যার অতীত। আপনারা দেখবেন ওই একই মা’আনী দ্বারা যে কেউ অনেক মানুষকে জ্ঞান-প্রজ্ঞা ও জযবা (ঐশী ভাব)-এর ক্ষেত্রে পূর্ণতা লাভ করতে দেখতে পাবেন। যে ব্যক্তি এই রহমত-বরকতকে শ্রদ্ধা বা সম্মান করেন, তিনি কখনোই তা থেকে দূরে থাকেন না (মানে বঞ্চিত হন না)। তবে শর্ত হলো এই যে, যাঁর সান্নিধ্য তলব করা হবে, তাঁকে অবশ্যই সুন্নাতের পায়রুবী করতে হবে এবং সুন্নাহ’কে হেফাযত তথা সমুন্নত রাখতে হবে; আর তা নিজের কর্মেও প্রতিফলিত করতে হবে। [ইবনুল হাজ্জ্ব রচিত আল-মাদখাল, ২য় খণ্ড, ১৩৯ পৃষ্ঠা]

________
MULLAH ALI QARI (REHMATULLAH ALAIH) WRITES
“Anyone who builds a mosque near the grave of an upright person or prays in the tomb, or intends to ask for help through the Ruh (soul) of that upright person or intends to seek barakah (blessing) from his leftovers, if he does all that without the intention of giving him Tazeem or doing tawajuh towards him (in prayer) then there is nothing wrong in that. Don't you see that the Grave of Hazrat Ismail (A.S) is inside the Masjid ul Haram near the Hateem, and to pray there is superior than anything else. However to pray near the graves is only forbidden when the soil becomes dirty because of Najasat of deceased. In the Hateem near Hajr al Aswad and Mizaab there are the graves of 70 Prophets.”
[Mirqat, Sharh al Mishqaat, Volume No. 2, Page No. 202]

________
THE BELIEF OF SHAH ABDUL AZEEZ DEHLAWI (D. 1239 H) WRITES
Shah Abdul Azeez writes: "It is in Sharh Maqasid that visiting graves is beneficial and the souls of the pious cause benefit. Indeed, after death the soul has a connection with the body and the grave. Hence, when someone comes to visit this shrine and turns towards the soul of the inmate, then the two souls (of the visitor and the inmate) form a connection. It is a point of contention whether the help of the living is stronger or that of the deceased. Some scholars have said that the deceased can help more and some have proved this from a narration from the dear Prophet (sallallahu 'alaihi wasallam) that when you need help in a matter, seek it from the people of the grave. The great Shaykh, Shah Abdul Haq Dehlwi (rahmatullah `alaih) has stated in Sharh Mishkat that there is nothing in the Qur'an and Sunnah nor the sayings of the Salaf which contradicts this position and forms a proof against it.
(Fatawa Aziziya, vol.2 p.108)


মাজারে শায়িত অলীগণ কি মানুষ তাকে নিয়ে প্রার্থনা করে, দোয়া-দরুদ পড়ে, তেলাওয়াত করে, ডাকে এগুলো কি শুনতে পায়?
________
এই জবাবটা ওহাবী-আহলে হাদিস দের বিখ্যাত ইমামদের থেকে দেখুন :-
ইবনে তাইমিয়া
ইবনে তাইমিয়াকে জিজ্ঞেস করা হয় ইন্তেকালপ্রাপ্ত মুসলমানবৃন্দ তাঁদের যেয়ারতকারীদেরকে চিনতে পারেন কি-না। সে জবাবে বলে: “যেয়ারতকারীদেরকে যে ইন্তেকালপ্রাপ্ত মুসলমানবৃন্দ চিনতে পারেন, এ ব্যাপারে কোনো সন্দেহ-ই নেই।” তার কথার সমর্থনে সে নিম্নের হাদীসটি পেশ করে, “ইন্তেকালপ্রাপ্তদের সচেতনতার পক্ষে প্রামাণিক দলিল হচ্ছে বোখারী ও মুসলিম শরীফে বর্ণিত একখানা হাদীস, যা’তে রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এরশাদ করেন যে কোনো ইন্তেকালপ্রাপ্ত মুসলমানকে দাফনের পরে ঘরে প্রত্যাবর্তনকারী মানুষের পায়ের জুতোর শব্দ ইন্তেকালপ্রাপ্ত ব্যক্তি শুনতে পান।” [ইবনে তাইমিয়ার ‘মজমুয়া’ আল-ফাতাওয়া’, ২৪তম খণ্ড, ৩৬২ পৃষ্ঠা]

________
ইবনে কাইয়্যেম আল-জাওযিয়্যা
(ইবনে কাইয়্যেম ‘সালাফী’দের গুরু। সে তার শিক্ষক ইবনে তাইমিয়্যার ধ্যান-ধারণার গোঁড়া সমর্থক, যার দরুন সে তার ইমামের সেরা শিষ্য হিসেবে পরিচিতি লাভ করে)

ইবনে কাইয়্যেম লেখে:

“প্রথম অধ্যায় - ইন্তেকালপ্রাপ্ত ব্যক্তিগণ তাঁদের কবর যেয়ারতকারীদেরকে চিনতে পারেন কি-না এবং তাঁদের সালামের উত্তর দিতে পারেন কি-না?     

”হযরত ইবনু আবদিল বার (رحمة الله) থেকে বর্ণিত: নবী করীম (ﷺ) এরশাদ ফরমান, কোনো মুসলমান যখন তাঁর কোনো পূর্ব-পরিচিত ভাইয়ের কবরের পাশে যান এবং তাঁকে সালাম জানান, তখন আল্লাহতা’লা ওই সালামের জবাব দেয়ার জন্যে মরহুমের রূহকে কবরে ফিরিয়ে দেন এবং তিনি সে সালামের জবাব দেন। এর দ্বারা বোঝা গেল যে ইন্তেকালপ্রাপ্ত ব্যক্তি যেয়ারতকারীকে চিনতে পারেন এবং তাঁর সালামের জবাবও দিয়ে থাকেন।

”বোখারী ও মুসলিম শরীফের বিভিন্ন সূত্রে বর্ণিত আছে, মহানবী (ﷺ) বদর যুদ্ধে নিহত কাফেরদের লাশ একটি কূপে নিক্ষেপ করার আদেশ দেন। এরপর তিনি সেই কূপের কাছে গিয়ে দাঁড়ান এবং এক এক করে তাদের নাম ধরে সম্বোধন করে বলেন, ‘হে অমুকের পুত্র তমুক, হে অমুকের পুত্র তমুক, তোমরা কি তোমাদের রবের (প্রভুর) প্রতিশ্রুতি সঠিকভাবে পেয়েছো? আমি তো আমার রবের ওয়াদা ঠিকই পেয়েছি।’ তা শুনে হযরত উমর ফারূক (رضي الله عنه) বল্লেন, ‘হে আল্লাহর রাসূল (ﷺ), আপনি কি এমন লোকদেরকে সম্বোধন করছেন যারা লাশে পরিণত হয়েছে?’ হুযূর পাক (ﷺ) বল্লেন, ‘যিনি আমাকে সত্যসহ পাঠিয়েছেন তাঁর শপথ, আমার কথাগুলো তারা তোমাদের চেয়েও অধিকতর স্পষ্টভাবে শুনতে পেয়েছে; কিন্তু তারা এর উত্তর দিতে অক্ষম।’ প্রিয়নবী (ﷺ) থেকে আরও বর্ণিত আছে, কোনো ইন্তেকালপ্রাপ্ত ব্যক্তিকে দাফন করার পর লোকেরা যখন ফিরে আসতে থাকে, তখন সেই ইন্তেকালপ্রাপ্ত ব্যক্তি তাদের জুতোর শব্দ পর্যন্ত শুনতে পান। (আল-ফাতহুল কবীর, ১ম খণ্ড, ১৬৯ পৃষ্ঠা)

”এছাড়া রাসূলে মকবূল (ﷺ) তাঁর উম্মতদেরকে এ শিক্ষাও দিয়েছেন, যখন তাঁরা কবরবাসীকে সালাম দেবেন, তখন যেন সামনে উপস্থিত মানুষদেরকে যেভাবে সালাম দেন, ঠিক সেভাবে সালাম দেবেন। তাঁরা যেন বলেন, ‘আস্ সালামু আলাইকুম দারা কাওমিম্ মু’মিনীন।’ অর্থাৎ, ‘হে কবরবাসী মু’মিনবৃন্দ, আপনাদের প্রতি শান্তি বর্ষিত হোক।’ এ ধরনের সম্বোধন তাদেরকেই করা হয় যারা শুনতে পান এবং বুঝতেও পারেন। নতুবা কবরবাসীকে এভাবে সম্বোধন করা হবে জড় পদার্থকে সম্বোধন করার-ই শামিল। [ইবনে কাইয়্যেম কৃত ’কিতাবুর রূহ’ - রূহের রহস্য, ৭-৮ পৃষ্ঠা, বাংলা সংস্করণ ১৯৯৮ খৃষ্টাব্দ, অনুবাদক - মওলানা লোকমান আহমদ আমীমী]

ইবনে কাইয়্যেম আরও লেখে:

”হযরত ফযল (رضي الله عنه) ছিলেন হযরত ইবনে উবায়না (رضي الله عنه)-এর মামাতো ভাই। তিনি বর্ণনা করেন, যখন আমার পিতার ইন্তেকাল হলো, তখন আমি তাঁর সম্পর্কে খুবই ভীত-সন্ত্রস্ত ও চিন্তিত হয়ে পড়লাম। আমি প্রত্যহ তাঁর কবর যেয়ারত করতাম। ঘটনাক্রমে আমি কিছুদিন তাঁর কবর যেয়ারত করতে যেতে পারিনি। পরে একদিন আমি তাঁর কবরের কাছে এসে বসলাম এবং ঘুমিয়ে পড়লাম। ঘুমের মধ্যে আমি দেখলাম, আমার পিতার কবরটি যেন হঠাৎ ফেটে গেলো। তিনি কবরের মধ্যে কাফনে আবৃত অবস্থায় বসে আছেন। তাঁকে দেখতে মৃতদের মতোই মনে হচ্ছিলো। এ দৃশ্য দেখে আমি কাঁদতে লাগলাম। তিনি আমাকে জিজ্ঞেস করলেন, প্রিয় বৎস, তুমি এতোদিন পরে এলে কেন? আমি বল্লাম, বাবা, আমার আসার খবর কি আপনি জানতে পারেন? তিনি বল্লেন, তুমি যখন-ই এখানে আসো, তোমার খবর আমি পেয়ে যাই। তোমার যেয়ারত ও দোয়ার বরকতে আমি শুধু উপকৃত হই না, আমার আশপাশে যাঁরা সমাহিত, তাঁরাও উল্লসিত, আনন্দিত এবং উপকৃত হন। এ স্বপ্ন দেখার পর আমি সব সময় আমার পিতার কবর যেয়ারত করতে থাকি।” [ প্রাগুক্ত, ৯-১০ পৃষ্ঠা]

ইবনে কাইয়্যেম আরও লেখে:

”অতীতকাল থেকে ইন্তেকালপ্রাপ্ত ব্যক্তিদেরকে কবরে তালকীন করার নিয়ম চলে আসছে। অর্থাৎ,কলেমা-এ-তাইয়্যেবাহ তাঁদেরকে পড়ে শোনানো হয়ে থাকে। ইন্তেকালপ্রাপ্ত ব্যক্তিগণ যে ইন্তেকালের পরে শুনতে পান, তালকীনের মাধ্যমেও তা প্রমাণিত হয়। এছাড়া তালকীনের দ্বারা ইন্তেকালপ্রাপ্ত ব্যক্তিগণ উপকৃত হন; তা না হলে তালকীন করার কোনো অর্থ-ই হয় না।

”উক্ত (তালকীনের) বিষয়ে ইমাম আহমদ হাম্বল (رحمة الله)-কে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি এই অভিমত ব্যক্ত করেন যে ইন্তেকালপ্রাপ্ত ব্যক্তিদেরকে তালকীন করা একটি নেক কাজ; মানুষের আ’মল থেকে তা প্রমাণিত হয়। তালকীন সম্পর্কে মু’জাম তাবরানী গ্রন্থের মধ্যে হযরত আবূ উমামা (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত একটি দুর্বল হাদীসও রয়েছে। হাদীসটি হলো, নূরনবী (ﷺ) এরশাদ ফরমান: ‘কোনো ইন্তেকালপ্রাপ্ত ব্যক্তিকে কবরে মাটি দেয়ার পর তোমাদের একজন তাঁর শিয়রের দিকে দাঁড়িয়ে তাঁর নাম ও তাঁর মায়ের নাম ধরে ডাক দেবে। কেননা, ইন্তেকালপ্রাপ্ত ব্যক্তি তা শুনতে পান, কিন্তু উত্তর দিতে পারেন না। দ্বিতীয়বার তাঁর নাম ধরে ডাক দিলে তিনি উঠে বসেন। আর তৃতীয়বার ডাক দিলে তিনি উত্তর দেন, কিন্তু তোমরা তা শুনতে পাও না। তোমরা তালকীনের মাধ্যমে বলবে, আল্লাহ পাক আপনার প্রতি রহম করুন, আমাদের তালকীনের দ্বারা আপনি উপকৃত হোন। তারপর বলবে, আপনি তাওহীদ ও রেসালাতের যে স্বীকৃতি দিয়ে দুনিয়া থেকে বিদায় নিয়েছেন, তা স্মরণ করুন। অর্থাৎ, লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ বাক্যটি পাঠ করুন ও তা স্মরণ রাখুন। আল্লাহ রাব্বুল আ’লামীন, দ্বীনে ইসলাম, হযরত মোহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লামের নবুয়্যত এবং কুরআন মজীদ যে আমাদের পথপ্রদর্শনকারী, এ সব বিষয়ে যে আপনি রাজি ছিলেন, তাও স্মরণ করুন।’ এই তালকীন শুনে মুনকার-নকীর ফেরেশতা দু’জন সেখান থেকে সরে যান এবং বলেন, চলো, আমরা ফিরে যাই; এর কাছে থাকার আমাদের আর কোনো প্রয়োজন নেই। এ ব্যক্তিকে তাঁর ঈমান ও আকীদা-বিশ্বাস সম্পর্কে সব কিছুই স্মরণ কয়ে দেয়া হয়েছে। আর তাই তিনি তালকীনের মাধ্যমে আল্লাহ ও তাঁর রাসূল (ﷺ) সম্পর্কে অবহিত হয়েছেন।” [প্রাগুক্ত, ২০ পৃষ্ঠা, বাংলা সংস্করণ]


নবীগণ ও অলীগণের রুহানী অবস্থা
________
ইমাম জালালউদ্দীন সৈয়ুতী (رحمة الله)
ইমাম ইবনে আল-মোবারক নিজ ‘আয্ যুহদ’ পুস্তকে, হাকীম তিরমিযী তাঁর ‘নওয়াদিরুল উসূল’ গ্রন্থে, ইবনে আবিদ্ দুনইয়া ও ইবনে মুনদাহ বর্ণনা করেন সাঈদ ইবনে মুসাইয়াব (رحمة الله) থেকে; তিনি হযরত সালমান ফারিসী (رضي الله عنه) হতে, যিনি বলেন: ”মো’মেনীনবৃন্দের রূহ (আত্মা)-সমূহ এ পৃথিবীর ’বরযখে’ অবস্থান করেন এবং তাঁরা যেখানে ইচ্ছে যেতে পারেন; পক্ষান্তরে ’কুফফার’দের আত্মাগুলো ’সিজ্জিনে’ অবস্থিত....।”

হাকীম তিরমিযী আরও অনুরূপ রওয়ায়াতসমূহ হযরত সালমান ফারিসী (رضي الله عنه) থেকে বর্ণনা করেন।

ইবনে আবিদ্ দুনইয়া হযরত মালেক ইবনে আনাস (ইমাম মালেক) থেকে বর্ণনা করেন; তিনি বলেন: “এই রওয়ায়াত আমার কাছে এসেছে এভাবে যে মো’মেনীনবৃন্দের আত্মাসমূহ মুক্ত এবং তাঁরা যেখানে চান যেতে পারেন।” [ইমাম সৈয়ুতী রচিত ‘শরহে সুদূর’, ১৬৭ পৃষ্ঠা]

অধিকন্তু, ইবনে কাইয়্যেম জাওযিয়্যা-ও নিজ ‘কিতাবুর রূহ’ বইয়ে এ বিষয়টি সপ্রমাণ করেছে [২৪৪ পৃষ্ঠা, দার-এ-ইবনে-কাসীর, দামেশ্ক, সিরিয়া হতে প্রকাশিত]


মাজার সম্পর্কিত বিতর্কের চিরনিরসণ(১)
________
এখানে যা যা পড়বেন:
১) মাযার এর উপর গম্বুজ নির্মান করা যাবে কিনা।
২) রাসুল (সা) সাহাবীদের কাদের (মুসলমানদের নাকি মুশরিকদের) উচু কবর ভেংগে দিতে পাঠিয়েছিলেন।
৩) মাযারে বসা,মাযার পাকা করা বা চুনকাম করার সম্পর্কে।
৪) নারীদের মাযার জিয়ারত কি জায়েজ?
৫) মাযারে বাতি জ্বালানো কি জায়েজ?

ওহাবী আহলে হাদিসরা এই জাতীয় কিছু হাদীসকে মাযার বিরোধী বলে অপপ্রচার চালাচ্ছে।দেখুন এর প্রকৃত ব্যাখ্যা:-
সমস্যা -০১
Problem 1 :-

প্রখ্যাত তাবেয়ী আবুল হাইয়্যাজ আল আসাদী বলেন, আমাকে আলী (রাঃ) বললেনঃ

أَلاَّ أَبْعَثُكَ عَلَى مَا بَعَثَنِى عَلَيْهِ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم أَنْ لاَ تَدَعَ تِمْثَالاً إِلاَّ طَمَسْتَهُ وَلاَ قَبْرًا مُشْرِفًا إِلاَّ سَوَّيْتَ“

তোমাকে কি আমি এমন একটি কাজ দিয়ে পাঠাবো না যে কাজ দিয়ে আমাকে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পাঠিয়েছিলেন? তা হল কোন (মুশরিকদের) প্রতিকৃতি ও মূর্তি পেলে তাকে চূর্ণ বিচূর্ণ করে ফেলবে, আর (মুশরিকদের কোন) উঁচু কবর দেখলে তা সমান করে দেবে।
” (মুসলিম).
সমাধান-০১
Sollution 1 :-

ব্যাখ্যা 1 :-
এগুলো কাফিরদের- মুশরিকদের কবর ছিল বুখারী শরীফের শ্রেষ্ঠ ব্যাখ্যাকার হাফিজুল হাদিস ইমাম হাজর আসকালানী (রহ) বলেন,”‘
নবীগনও তাদের অনুসারীগনের কবর বাদ দিয়ে মুশরিকদের কবরগুলোকে ধ্বংশ করা হয়েছিল। কেন্না এগুলো উপরে ফেলার কারন ছিল নবীজী (সা) এর মানহানী করত।
Reference :
শরহে বুখারী ফতহুল বারী ২ খন্ড ২৬ পৃষ্টা।

তাই এই হাদিস ইমানদার সাধারন মুসলমানের জন্যও ব্যবহার করা যাবে না ওলীগনের ক্ষেত্রে তো Impossible!!!

কারন ইবনে ঊমর(রা) বলেন,” খারিজি সম্প্রদায় এর এমন স্বভাব ছিল যে তারা কাফির মুশরিকদের উপর অবতীর্ন আয়াত ইমানদার দের উপর প্রয়োগ করত।তাই তারা আল্লাহর সৃষ্টির মধ্যে নিকৃষ্টতম জাতি বলে মনে করতেন।
Reference :-
বুখারী শরীফ

________
ব্যাখ্যা-০২
ব্যাখ্যা 2 :-

হযরত আলী (রা) সম্ভবত তাঁর শাসনামলে, ৩৫ থেকে ৪০ হিজরির মধ্যে তাঁর সেনাপতিকে ওই আদেশ দিয়েছিলেন। নিচে এর মতই আরেকটা হাদিস পাওয়া যায় যেখানে রাসুল(সা) মসজিদ নির্মানের জন্য কাফির মুশরিকদের মুর্তি ও কবর এর উপরের স্থাপত্য সব ভেংগে সমান করে দিয়েছিলেন। হাদিসটি নিম্নরূপ *****

মূসাদ্দাদ (রহঃ) আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মদিনায় পৌঁছে,………. তিনি মসজিদ তৈরী করার নির্দেশ দেন……… আনাস (রাঃ) বলেন: আমি তোমাদের বলছি, এখানে মুশরিকদের কবর এবং ভগ্নাবশেষ (স্থাপত্য বা নিদর্শন বা মুর্তি) ছিল। আর ছিল খেজুরের গাছ। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম (এগুলো ভেংগে দেয়ার) নির্দেশ দিলে (এগুলো ভেংগে) মুশরিকদের কবর খুড়ে ফেলা হল। তারপর (মুশরিকদের স্থাপত্য/নিদর্শন/মুর্তি) ভগ্নাবশেষ যা ছিল সমতল করে দেয়া হল, খেজুরের গাছ গুলো কেটে ফেলা হল এর দুই পাশে পাথর বসানো হল (মসজিদ নির্মানের জন্য)।
Reference :-
(সহীহ বুখারী ৪১৬ (৪২০) এবং সহীহ মুসলিম ১০৬৮)

এবার দেখুন এই হাদিসের আদেশের সাথে হযরত আলী (রা) এর শ্রবণকৃত নবীজি (সা) এর আদেশের কথা মিলে যাচ্ছে। এই আদেশের কথাই হযরত আলী (রা) তাঁর সেনাপতিকে অবহিত করেছিলেন। অন্য কোন সময়ের এরকম কোন আদেশের কথা কোথাও নেই। ফলে ইমামগণ, মুফাসসিরিনে কেরাম এবং মুজতাহিদগণ একমত ছিলেন যে হযরত আলী (রা) এর হাদিসটি!!

________
সমস্যা -০২
Problem 2 :-

জাবির (রাঃ) হতে র্বণিত; তিনি বলেন : রাসূলুল্লাহ (সঃ) কবর চুনকাম ও পাকা করতে, কবরের উপর বসতে এবং কবরের উপর গুম্বুজ তৈরী করতে নিষেধ করেছেন। (মুসলিম ১ম খন্ড ৩১২ পৃঃ, আবূ দুউদ ২য় খন্ড ৪৬০পৃঃ)
সমাধান -০২
Solution 2 :-

ব্যাখ্যা ১ :-

হযরত হাসান আল-বসরী (رحمة الله), ইমাম শাফেঈ (رحمة الله) ও ইমাম হাকিম (رحمة الله)-এর মতো সর্বোচ্চ পর্যায়ের মেধাসম্পন্ন মোহাদ্দেসীনবৃন্দ এই সব হাদীসকে আক্ষরিক অর্থে গ্রহণ করেননি।

’কবরে আস্তর না করা, না লেখা বা বসা’ সংক্রান্ত হাদীসটি বর্ণনার পরে ইমাম তিরমিযী (رحمة الله) বলেন:

এই হাদীসটি হাসান সহীহ এবং এটি বিভিন্ন সনদ বা সূত্রে হযরত জাবের (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত হয়েছে। কিছু উলেমা (কাদা) মাটি দ্বারা কবর আস্তর করার অনুমতি দিয়েছেন; এঁদের মধ্যে রয়েছেন ইমাম হাসান আল-বসরী (আমীরুল মো’মেনেীন ফীল্ হাদীস)। অধিকন্তু, ইমাম শাফেঈ (رحمة الله) কাদামাটি দ্বারা কবর আস্তর করাতে কোনো ক্ষতি দেখতে পাননি।
— সুনানে তিরমিযী, কবর আস্তর না করার হাদীস ,১০৫২

ওনাদের কাউকে ছোট করার স্পর্ধা আছে এমন কোন মুসলিম থাকতে পারে না।তাই চোখ বন্ধ করে ওনাদের বিশ্বাস করতে পারেন কারন তারা এই হাদিসটি জানতেন না এমন ধারনা করা মুর্খতা হবে।

________
ব্যাখ্যা -০২
ব্যাখ্যা ২ :-

ইমাম মালেক (رحمة الله) নিম্নবর্ণিত শিরোনামে গোটা একখানা অধ্যায় বরাদ্দ করেছেন:
”জানাযার জন্যে থামা এবং কবরস্থানের পাশে বসা” – উক্ত অধ্যায়ে বর্ণিত দ্বিতীয় রওয়ায়াতে বিবৃত হয়:

এয়াহইয়া (رضي الله عنه) আমার (ইমাম মালেকের) কাছে বর্ণনা করেন মালেক (رضي الله عنه) হতে, যিনি শুনেছিলেন এই মর্মে যে, হযরত আলী ইবনে আবি তালেব (ক:) কবরে মাথা রেখে পাশে শুয়ে থাকতেন। মালেক (رضي الله عنه) বলেন, ‘আমরা যা দেখেছি, কবরের ধারে পেশাব-মলত্যাগ করার ক্ষেত্রেই কেবল নিষেধ করা হয়েছে’।
— মুওয়াত্তা-এ-ইমাম মালেক, ১৬তম বই, অধ্যায় ১১, হাদীস ৩৪

মনে রাখা জরুরি, অনেক ইসলামী পণ্ডিতের মতে বোখারী শরীফ হতে ইমাম মালেক (رحمة الله)-এর ’মুওয়াত্তা’ গ্রন্থটি অধিক উচ্চতর ও বিশুদ্ধ।

________
সমস্যা -০৩
Problem 3 :-

হযরত মা আয়েশা (رضي الله عنه) বর্ণনা করেন রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর বাণী, যিনি বলেন: “আল্লাহ পাক ইহুদী ও খৃষ্টানদের প্রতি লা’নত (অভিসম্পাত) দিয়েছেন, কেননা তারা তাদের আম্বিয়া (আ:)-বৃন্দের মাযার-রওযাকে মসজিদসমূহ (উপাসনার স্থান) হিসেবে গ্রহণ করেছিল।” [সহীহ বোখারী ও মুসলিম]

আব্দুল্লাহ ইবনু আব্বাস (রাঃ) হতে র্বণিত;
তিনি বলেছেন : রাসূল (সঃ) কবর যিয়ারাতকারিনী মহিলাদেরকে এবং যারা কবরকে মাসজিদে (উপাসনার স্থানে) পরিনত করে আর যারা কবরে বাতি জ্বালায় তাদেরকে লা’নত করেছেন। (তিরমিযী, আবূ দাউদ ২য় খন্ড ৪৬১ পৃঃ, নাসায়ি, ইবনু মাজাহ)
আরেকটা :-
“”জেনে রাখা উচিৎ যে, তোমাদের পূর্বের লোকেরা তাদের নবীদের কবরসমূহকে মাসজিদে (উপাসনার স্থানে) পরিণত করত। সাবধান! তোমরা কবরগুলোকে মাসজিদে (উপাসনার স্থানে) পরিণত কর না। আমি তোমাদেরকে তা থেকে নিষেধ করছি।””
(মুসলিম)

________
সমাধান -০৩
Solution 3 :-

২টা হাদিসে সর্বমোট ৩ টি কথা এসেছে :

১) কবর যিয়ারাতকারিনী মহিলাদেরকে লানত
২) পুর্বে (কাফির-মুশরিক) যারা কবরকে মাসজিদে (অর্থ : সিজদার স্থানে) পরিনত করেছে তাদের লানত
৩) আর যারা কবরে বাতি জ্বালায় তাদেরকে লা’নত করেছেন।
ব্যাখ্যা -০৩
ব্যাখ্যা 1 :-

কবর যিয়ারাতকারিনী মহিলাদেরকে লানত : এর বিশাল ব্যাখ্যা:

১) উক্ত হাদিসে বলা হয়েছে আগে নিষেধ করতাম (ওহীর আদেশ পাওয়ার আগে) কিন্তু ওহীর আদেশ পেয়ে তিনি এই নিষেধ তুলে নিলেন (তখন স্বাভাবিক নিয়মে কিছু নিষেধ করা হাদিস রহিত হয়ে গেল)
২) এই হাদিসে কবর জিয়ারত করার আদেশ দিয়েছেন কিন্তু মহিলাদের এখানে কোন নিষেধও করেন নি।এই আদেশ পুরুষ মহিলা সবার জন্যই।

সুনানে ইবনে মা’জাতে ইবনে মাসউদের ভাষায়:-

اِنَّ رَسُولَ الله (ص) قال : کُنتُ نَهَيتُکُم عَن زيارة القُبورَ فَزُوُروها فَا نَّها تُزَهِّدُ في الدّتيا و تُذَ کِّرُ فِي الآخِرَة

নিশ্চয়ই রাসূনুল্লাহ (সাঃ) বলেন :- আমি (ইতিপূর্বে ) তোমাদেরকে কবর যিয়ারতে নিষেধ করেছিলাম, এখন এগুলোর যিয়ারতে যাও। কারণ কবর যিয়ারত, পৃথিবীতে সংয়ম ও আখারাতের স্মরণ আনয়ন করে।

Reference :
সহী মুসলিম, হাদীস ৯৭৭,
সুনানে নাসাঈ, খঃ৪ পৃঃ৮৯,
সূনানে ইবনে মা’জা খঃ১ পৃঃ৫০০-৫০১,
সুনানে তিরমিযি খঃ৪ পৃঃ২৭৪,
সুনানে আবি দাউদ, হাদীস ৩২৩৫,
মোয়াত্তা মালিক খঃ২ পৃঃ৪৮৫]

এখানে মুলত ওইসমস্ত নারীদের কথা বলা হয়েছে যারা বেপর্দা হয়ে কবর জিয়ারত করেন ও খুব ঘন ঘন বেপর্দা হয়ে জিয়ারত করতে যায়। আর যদি এই হাদিস দিয়ে সকল কবর জিয়ারতকারী সকল নারীদেরকে বুঝাত তাহলে হযরত মা ফাতেমা (আ) ও উম্মুল মুমেনিন হযরত আয়েশা (রা) নিজে রাসুল (সা) এর রওজা ও অনেকের মাযার জিয়ারত করেছেন।


মাজার সম্পর্কিত বিতর্কের চিরনিরসণ(২)

 মহিলাদের কবর জিয়ারত
-
A) রাসূল (সাঃ)-এর কবরের সর্বপ্রথম বিয়ারতকারী ছিলেন হযরত মা ফাতেমা (আ) :-

ইবনে জাওযী নিজ সনদে আলী (আঃ) থেকে বর্ণনা করেছেন যে বলেনঃ যখন রাসূল (সাঃ)-কে সমাহিত করা হলো তখন হযরত ফাতেমা (ছাঃ) কবরের নিকট আসলেন ; কিছু সময় দাঁড়ালেন, অতঃপর এক মুষ্ঠি মাটি কবর থেকে তুলে নিলেন ও চোখে মাখলেন এবং নিম্নলিখিত পংক্তিগুলো পাঠ করলেন।

ما ذا عَلي مَن شَمَّ تُر بَةً اَحمَدٍ أن لا يَثُمَّ مَدَي الزَّمانِ غَواالياً صُبَّت عَلَيَّ مَصَائِبٌ لو اَنَّها صُبَّت عَلَي اَلأ يّام عُزنَ لَيا لِيًا

“ আহমাদের মাটির সুগন্ধ যে করেছে আঘ্রান কি-এমন দুঃখ তার যদি দু’জাহানের সুগন্ধ না হয় আস্বাদন আমার উপর এসেছে যে মুসিবাত যদি দিবসের উপর আসতো তবে তা হয়ে যেত রাত!”
Reference :
ইবনে জাওযী উক্ত হাদিসটি বর্ননা করেন।

B) মা ফাতেমা (আ) রাসুল (সা) এর চাচা হযরত আমির হামজা (রা) এর মাযার প্রতি শুক্রবারে জুমার দিন জিয়ারত করতেন। (সেজন্য ওনি মদীনা থেকে ৩ মাইল দুরে অবস্থিত ওহুদের প্রন্তরে যেতেন)
Reference :-
ইমাম বায়হাকী (রহ) : আস-সুনুনুল কুবরা : ৪র্থ খন্ড, পৃষ্ঠা ৭৮,
হাদিস ৪৯৯৯।
ইমাম বদরুদ্দিন আইনী (রহ) : শরহে বুখারী গ্রন্থে

________

B) মা ফাতেমা (আ) রাসুল (সা) এর চাচা হযরত আমির হামজা (রা) এর মাযার প্রতি শুক্রবারে জুমার দিন জিয়ারত করতেন। (সেজন্য ওনি মদীনা থেকে ৩ মাইল দুরে অবস্থিত ওহুদের প্রন্তরে যেতেন)
Reference :-
ইমাম বায়হাকী (রহ) : আস-সুনুনুল কুবরা : ৪র্থ খন্ড, পৃষ্ঠা ৭৮,
হাদিস ৪৯৯৯।
ইমাম বদরুদ্দিন আইনী (রহ) : শরহে বুখারী গ্রন্থে

C) উম্মুল মুমেনিন হযরত আয়েশা সিদ্দিকা (রা) মক্কায় অবস্থিত তাঁর ভাই হযরত আব্দুর রাহমান বিন আবু বকর (রা) এর কবরের উপর গম্বুজ নির্মাণ করেন এবং ওনার কবর জিয়ারত করতে মদীনা থেকে ৫০০ কিলোমিটার দুরে মক্কায় যেতেন। ৫৮ হিজরি উম্মুল মুমেনিন হযরত আয়েশা (রা) এর ওফাতের আগ পর্যন্ত এই আমল ছিল।

Reference :-
মুস্তাদরেকে হাকিম ১ ম খন্ড, পৃষ্টা ৫৩২,হা: ১৩৯৪
মুন্তাকা সরহে মুয়াত্তায়ে ইমাম মালেক
বাদায়ে সানায়ে

________
D) উম্মল মুমেনিন হযরত সাইয়্যেদাহ আয়েশা (رضي الله عنه) বর্ণনা করেন:

যে ঘরে মহানবী (ﷺ) ও আমার পিতা (আবূ বকর – রা:)-কে দাফন করা হয়, সেখানে যখন-ই আমি প্রবেশ করেছি, তখন আমার মাথা থেকে পর্দা সরিয়ে ফেলেছি এই ভেবে যে আমি যাঁদের যেয়ারতে এসেছি তাঁদের একজন আমার পিতা ও অপরজন আমার স্বামী। কিন্তু আল্লাহর নামে শপথ! যখন হযরত উমর ফারূক (رضي الله عنه) ওই ঘরে দাফন হলেন, তখন থেকে আমি আর কখনোই ওখানে পর্দা না করে প্রবেশ করি নি; আমি হযরত উমর (رضي الله عنه)-এর প্রতি লজ্জার কারণেই এ রকম করতাম।
Reference :-
মুসনাদে আহমদ ইবনে হাম্বল, ৬ষ্ঠ খণ্ড, ২০২ পৃষ্ঠা, হাদীসঃ ২৫৭০১
আল-বাছায়ের ৭৯
ইমাম নূরুদ্দীন হায়তামী (رحمة الله) এই হাদীসটি সম্পর্কে বলেন:

এটি ইমাম আহমদ (رحمة الله) কর্তৃক বর্ণিত এবং এর বর্ণনাকারীরা সবাই সহীহ মানব।
— মজমাউয্ যাওয়াইদ, ৯:৪০, হাদীসঃ১২৭০৪

ইমাম আল-হাকিম (رحمة الله) এটি বর্ণনা করার পর বলেন,

এই হাদীস বোখারী ও মুসলিমের শর্ত অনুযায়ী সহীহ।
— মোস্তাদরাক আল-হাকিম, হাদীসঃ ৪৪৫৮

নাসিরুদ্দীন আলবানী আল-মোবতাদি আল-মাশহুর (কুখ্যাত বেদআতী) এই হাদীসকে মেশকাতুল মাসাবিহ গ্রন্থের ওপর নিজ ব্যাখ্যামূলক ‘তাখরিজ’পুস্তকে সমর্থন করেছে (# ১৭১২)।

________
ব্যাখ্যা -০২
২) যারা নবীগনের কবরকে মাসজিদে বা সিজদাস্তানে পরিনত করেছে তাদের লানত:-

ব্যাখ্যা 2 :-

এই হাদিস ইহুদী সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে বর্নিত হয়েছিল মুসলমানদেরকে নয় :-

মুসলমান দের জন্য এই আয়াত দেখুন :-

মহা পরাক্রমশালী আল্লাহতা’লা এরশাদ ফরমান, “যখন এই সব লোক তাদের (আসহাবে কাহাফ) ব্যাপারে নিজেদের মধ্যে বিতর্ক করতে লাগলো, অতঃপর (কেউ কেউ) বল্লো, ‘তাদের গুহার ওপর কোনো ইমারত নির্মাণ করো। তাদের রব্ব (খোদা)-ই তাদের ব্যাপারে ভাল জানেন।’ ওই লোকদের মধ্যে যারা (এ বিষয়ে) ক্ষমতাধর ছিল, তারা বল্লো, ‘শপথ রইলো, আমরা তাদের (আসহাবে কাহাফের পুণ্যময় স্থানের) ওপর মসজিদ নির্মাণ করবো’।” [সূরা কাহাফ, ২১তম আয়াত]

ইমাম আল-রাযী ‘শপথ রইলো, আমরা তাদের (আসহাবে কাহাফের পুণ্যময় স্থানের) ওপর মসজিদ নির্মাণ করবো’, এই আয়াতটির তাফসীরে বলেন যে এর মানে হলো ‘আল্লাহর এবাদত-বন্দেগী করবো এবং আসহাবে কাহাফের দেহাবশেষ (স্মৃতিচিহ্ন) তাতে সংরক্ষণ করবো।’

ইমাম আল-বায়দাবীর তাফসীরের ব্যাখ্যামূলক গ্রন্থে শেহাবউদ্দীন খাফফাজী লেখেন: ”পুণ্যবান বান্দাদের (মাযার-রওযার) পাশে মসজিদ নির্মাণের অনুমতি এই দলিলে সাব্যস্ত হয়।”

ইমাম আল-বায়দাবী (رحمة الله) বলেন: “আল্লাহতা’লা ইহুদী ও খৃষ্টানদেরকে অভিসম্পাত দিয়েছেন, কারণ তারা তাদের আম্বিয়া (আ:)-বৃন্দের মাযার-রওযাকে উপাস্য বস্তু হিসেবে গ্রহণ করেছিল এবং কিবলা বানিয়ে সেদিকে ফিরে নামায পড়তো। আল্লাহ পাক মুসলমানদেরকে তা অনুকরণ করতে নিষেধ করেছেন। তবে কোনো বোযর্গ তথা ওলী-আল্লাহ’র মাযারের পাশে মসজিদ নির্মাণ করার বেলায় কোনো আপত্তি নেই; কিংবা তাঁকে পূজা-অর্চনার লক্ষ্যবস্তু না করে তাঁর মাযারের ভেতরে বরকত আদায়ের উদ্দেশ্যে যিকির-আযকার, ধ্যান সাধনা, দোয়া ইত্যাদি করার ক্ষেত্রেও কোনো আপত্তি নেই। তোমরা কি দেখো না, পবিত্র কা’বা শরীফের অভ্যন্তরে অবস্থিত হযরত ইসমাঈল (আ:)-এর রওযা পাক এবং ’হাতিমে’ সংরক্ষিত মাযার-রওযা হলো এবাদতের সর্বশ্রেষ্ঠ স্থান? নিষেধাজ্ঞা আরোপিত হয়েছে শুধু সে সব কবরের বেলায়, যেগুলো থেকে দেহাবশেষ অপসারণ করা হয়েছে এবং তাতে মাটি-আবর্জনা অবশিষ্ট আছে।”

এই হাদীসে উদ্ধৃত ‘মসজিদসমূহ’ শব্দটি উপাসনার স্থানকে বুঝিয়েছে; মানে তারা ওই সব মাযার-রওযার দিকে আরাধনার উদ্দেশ্যে সেজদা করতো, যেমনটি করে থাকে মূর্তি পূজারী অবিশ্বাসীরা তাদের প্রতিমার উদ্দেশ্যে। এটি অপর এক সহীহ রওয়ায়াতে সুস্পষ্ট হয়েছে; ইবনে আস’আদ স্বরচিত ‘তাবাকাত-এ-কুবরা’ গ্রন্থে হযরত আবূ হোরায়রা (رضي الله عنه)-এর সূত্রে বর্ণনা করেন মহানবী (ﷺ)-এর হাদীস, যিনি এরশাদ ফরমান: “হে আল্লাহ, আপনি আমার রওযাকে পূজা-অর্চনার লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত করবেন না। যারা তাদের আম্বিয়া (আ:)-বৃন্দের মাযার-রওযাকে ‘মসজিদ’ হিসেবে গ্রহণ করেছিল, তাদের প্রতি আল্লাহ পাক লা’নত বর্ষণ করেছেন।” ‘যারা তাদের আম্বিয়া (আ:)-বৃন্দের মাযার-রওযাকে ‘মসজিদ’ হিসেবে গ্রহণ করেছিল, তাদের প্রতি আল্লাহ পাক লা’নত বর্ষণ করেছেন’, এই বাক্যটি উক্ত মাযার-রওযাকে উপাসনার স্থান হিসেবে ইঙ্গিত করে। কাজেই হাদীসটির মানে হলো, ‘হে আল্লাহ, মানুষের দ্বারা আমার রওযা শরীফকে (উপাস্য হিসেবে) অর্চনার বস্তুতে পরিণত করবেন না, যেমনটি ঘটেছিল পূর্ববর্তী আম্বিয়া (আ:)-দের মাযার-রওযা নিয়ে তাঁদের অনুসারীদের বেলায়।’ [অনুবাদকের নোট: এই হাদীসে প্রমাণিত হয় যে উম্মতে মোহাম্মদী কখনোই ’মাযার পূজা’ করবেন না। কেননা, উম্মতের জন্যে নবী (ﷺ)-এর দোয়া কবুল হয়ে থাকে। আল্লাহ তা ফিরিয়ে দেন না]

আরো স্পষ্ট বুঝে নিন :-
________
মুসলিম উম্মাহ’র বাস্তব ঐকমত্য ও উলেমাবৃন্দের সমর্থন
মুসলিম উম্মাহ’র বাস্তব ঐকমত্য ও উলেমাবৃন্দের সমর্থন

পুণ্যবান পূর্ববর্তী প্রজন্ম (মোতাকাদ্দেমীন) ও পরবর্তী প্রজন্মগুলো (মোতা’খেরীন) মসজিদে নববী এবং আম্বিয়া (আ:) ও আউলিয়া (رحمة الله)-মণ্ডলীর মাযার-রওযাবিশিষ্ট অন্যান্য মসজিদগুলোতে নামায আদায় করেছেন বিনা আপত্তিতে।

ওয়ালিদ ইবনে আব্দিল মালেক ৮৮ হিজরী সালে মদীনার তদানীন্তন শাসনকর্তা উমর ইবনে আব্দিল আযীযকে নির্দেশ দেন যেন তিনি মসজিদে নববীর চত্বরে মহানবী (ﷺ)-এর রওযা মোবারককে অন্তর্ভুক্ত করেন। মদীনা মোনাওয়ারার সাত জন নেতৃস্থানীয় আলেমের মধ্যে প্রায় সবাই এতে সম্মতি জ্ঞাপন করেন; ব্যতিক্রম ছিলেন শুধু সাঈদ ইবনে মুসাইয়েব। তিনি আপত্তি করেছিলেন যাতে মুসলমান সমাজ রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর ঘরকে নজির হিসেবে গ্রহণ করেন এবং তাঁর কৃচ্ছ্রব্রতপূর্ণ জীবনকে আদর্শ মানেন, আর দুনিয়ার ভোগ-বিলাস পরিহার করে চলেন। তাঁর এই আপত্তি মাযারবিশিষ্ট মসজিদে নামায পড়া হারাম মর্মে কোনো মতের ভিত্তিতে তিনি উত্থাপন করেননি।

১) ইহুদী-নাসারাগন তাদের নবীদের কবরকে “”কিবলা”” মনে করে নিয়ত করত ও সিজদার স্থানে পরিনত করেছিল।ইহুদীরা ওই সমস্ত পবিত্র নবীগনের ইবাদত করত এই ভেবে যে তারা খুশি হয়ে আল্লাহর কাছে তাদের ব্যপারে সুপারিশ করবে। তাই সকল কারনে তাদের উপর লানত করেছেন এবং মুসলমানদের এইসব শিরিক করা থেকে সতর্ক করেছেন।

২) আবার, মসজিদ মানে সিজদার স্থান তাই কবরের উপর ইবাদতের উদ্দেশ্যে সিজদা করা বা নামায পড়া যাবে না শরীয়তে নিষিদ্ধ। কিন্তু মাযার সংলগ্ন মসজিদ হলে কোন সমস্যা নেই তা ১০০% জায়েয।

________
ব্যাখ্যা -০৩
আর যারা কবরে বাতি জ্বালায় :-

ব্যাখ্যা 3 :-

ইসলাম কখনো অপচয়কে মেনে নেয় নি।তাই যদি কেউ এই উদ্দেশ্যে বাতি জালায় যে,””

১) এই নিয়তে যদি বাতি জ্বালায় যে রাতের অন্ধকারে রাস্তায় হেটে যাওয়া পথ চারীর সুবিধা হবে।

২) মাযারে কুরআন তেলাওয়াত ও জিকির হবে তাই তাদের সুবিধার্থে।

৩) কাউকে সতর্ক জন্য যেন সে দেখা মাত্র দুর থেকে বুঝতে পারে যে এখানে আল্লাহর ওলী শায়ীত আছেন যেন সে দুর থেকে দেখেই সতর্ক হয়ে যায় তখন সে মাযারের সাথে বিয়াদ্দবি করবে না। এসব কারন হলে জায়েয অথবা অন্য যেকোন নেক নিয়তে জায়েয। কিন্তু দিনের বেলা অপচয় করা জায়েয নহে।

তাছাড়া এই হাদিস টি দ্বয়ীফ এই সম্পর্কে আসুন মুহাদ্দিস গনের মতামত দেখে নেই :-

দ্বয়ীফ হাদিস : নাসায়ী নিজস্ব সনদে (সূত্রে) ইবনে আব্বাস হতে বর্ণনা করেছেন,মহানবী (সা.) বলেছেন,‘ আল্লাহ সে সকল নারীর উপর অভিশম্পাত বর্ষণ করুন যারা কবর জিয়ারত করে,আর তাদের উপর অভিশম্পাত করুন যারা কবরকে মসজিদ বানায় ও সেখানে আলো (প্রদীপ) জ্বালায়।’

আমাদের উত্তর হলো : উল্লিখিত হাদীসটি সনদ ও দালালাতের দৃষ্টিতে ত্রুটিপূর্ণ এবং সুস্পষ্টভাবে আল্লাহর ওলীদের কবরে (অপচয় ব্যাতীত) আলো জ্বালানোর নিষিদ্ধতার প্রমাণ তাতে নেই। কারণ

হাদীসটির সনদ বা সূত্রগত সমস্যা :

1. বিশিষ্ট ওয়াহাবী হাদীসবিদ নাসিরউদ্দীন আলবানী ইবনে আব্বাসের হাদীসটি উল্লেখের পর বলেছেন,‘ এ হাদীসটি আবু দাউদ ও অন্যরা বর্ণনা করেছেন কিন্তু সনদের দিক থেকে তা দুর্বল (অর্থাৎ তাতে কয়েকজন দুর্বল বর্ণনাকারী রয়েছেন)। যদিও পূর্ববর্তী আলেমদের অনেকেই উক্ত হাদীসের ভিত্তিতে কথা বলেছেন কিন্তু আমাদেরকে অবশ্যই সত্যকে বলতে হবে ও তার অনুসরণ করতে হবে।’

2. এ হাদীসটিকে যারা দুর্বল বলেছেন তাদের মধ্যে মুসলিমও রয়েছেন। তিনি তার‘ আত তাফসীল’ গ্রন্থে বলেছেন : হাদীসটি নির্ভরযোগ্য নয়। যেহেতু হাদীসটির সনদে আবু সালিহ বাজাম রয়েছে,হাদীসবিদগণ তা গ্রহণে আপত্তি করেছেন। ইবনে আব্বাস হতে বর্ণনাকারী রাবীর ব্যাপারেও সন্দেহ রয়েছে যে ইবনে আব্বাস হতে এ হাদীসটি শুনেছে কিনা বা শুনার সম্ভাবনা ছিল কিনা?

3. নাসিরুদ্দিন আলবানী বলেছেন : উক্ত হাদীসটি যে দুর্বল আমি আমার‘ আল আহাদিসুজ জায়িফা ওয়াল মাওজুয়া ও আসারু হাস সাইয়ি ফিল উম্মাহ’ গ্রন্থে তা প্রমাণ করেছি। হাদীস শাস্ত্রবিদদের কেউই আবু সালিহ বাজামের বর্ণিত হাদীসসমূহ হতে প্রমাণ উপস্থাপন করেন না। কারণ তাদের নিকট সে দুর্বল বর্ণনাকারী এবং কেউই তাকে বিশ্বস্ত বা নির্ভরযোগ্য বলেন নি। তবে ইবনে হাব্বান ও আজলী তাকে নির্ভরযোগ্য বললেও তারা উভয়েই অতি উদারতার দোষে দুষ্ট। অন্য কোন সূত্রে বর্ণিত কোন সমর্থক হাদীসও আমরা এক্ষেত্রে পাই না

আজিজী হাদীসটির ব্যাখ্যায় বলেছেন,‘ হাদীসটি ঐ ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য যখন আলো জ্বালানো হতে জীবিতরা কল্যাণ পায় না। কিন্তু যদি তা হতে কল্যাণ অর্জন করা যায় সেক্ষেত্রে অসুবিধা নেই।’

সিন্দী সুনানে নাসায়ীর ব্যাখ্যা গ্রন্থে বলেছেন,‘ কবরের নিকট প্রদীপ ও আলো জ্বালাতে এজন্যই নিষেধ করা হয়েছে যে,তা অর্থের অপচয় ও কোন কল্যাণই তা থেকে লাভ করা যায় না। যদি কোন ক্ষেত্রে লাভ পাওয়া যায় সেক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞার বিধান থাকবে না।’

শেখ আলী নাসেফ বলেছেন,‘ কবরের নিকট আলো জ্বালানো বৈধ (জায়েয) নয়। কারণ এটি অর্থের অপচয়। কিন্তু যদি কোন জীবিত ব্যক্তি কবরের নিকট উপস্থিত থাকে সেক্ষেত্রে আলো জ্বালিয়ে রাখাতে কোন অসুবিধা নেই।’ ২৫০

হাদীসটিকে হারাম অর্থে না নিয়ে মাকরূহ অর্থেও নেয়া সম্ভব।

মুসলমানদের চিরাচরিত রীতি ছিল এটি যে,তারা মৃত ব্যক্তিদের বিশেষত আল্লাহর ওলী ও বিশেষ ব্যক্তিদের কবরের নিকট আলো জ্বালিয়ে রাখতেন খতিব বাগদাদী স্বীয় সূত্রে ফিলিস্তিনী এক ব্যক্তি হতে বর্ণনা করেছেন যে,তিনি তুরস্কের কনস্টান্টিনোপলে একটি দেয়ালের পাদদেশে প্রজ্বলিত প্রদীপ দেখে প্রশ্ন করেন : কবরটি কার? এলাকাবাসী জবাব দেয় তা রাসূলের বিশিষ্ট সাহাবী আবু আইয়ুব আনসারীর। কবরের নিকটবর্তী হয়ে দেখতে পান কবরের উপর ছাদ হতে শিকলের সাহায্যে বাতি ঝুলানো রয়েছে।২৫১

ইবনে জাওযী বলেছেন,৩৮৬ হিজরী সালের একটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা ছিল বসরার লোকেরা দাবী করেছিল যে,একটি পুরাতন কবরের সন্ধান পেয়েছে যা জুবাইর ইবনে আওয়ামের কবর বলে জানা যায়। তখন চাটাই,প্রদীপ ও অন্যান্য সরঞ্জাম এনে তা পরিপাটি ও সজ্জিত করা হয় এবং সে স্থানের যত্ন নেয়ার জন্য এক ব্যক্তিকে নিয়োগ দান করা হয়। ঐ স্থানটিও ওয়াক্ফ করে দেয়া হয়।

সাফাদী ইমাম মূসা কাজিম (আ.)-এর কবর সম্পর্কে বলেছেন,‘ তাঁর কবর ঐ স্থানে (বাগদাদের নিকটবর্তী কাজেমাইনে) প্রসিদ্ধ এবং লোকজন সেখানে জিয়ারতের জন্য যায়। তার উপর গম্বুজ নির্মিত হয়েছে যাতে স্বর্ণ ও রৌপ্য নির্মিত আচ্ছাদনসহ প্রদীপসমূহ প্রজ্বলিত ছিল। বিভিন্ন ধরনের কার্পেট সেখানে দৃশ্যমান ছিল।২

ইবনে আব্বাস হতে বর্ণিত হাদীসটির বিপরীত হাদীসসমূহ আমাদের হাতে রয়েছে যেমন মহানবী (সা.) রাত্রিতে জান্নাতুল বাকীতে যেতেন ও তাঁর সঙ্গে এক ব্যক্তি কবরের নিকট হাতে প্রদীপ জ্বালিয়ে দাঁড়িয়ে থাকত

________
মাজার পাকা করা বা এর উপর গম্বুজ নির্মান করা জায়েয
মাজার পাকা করা বা এর উপর গম্বুজ নির্মান করা জায়েয :-,

Problem 4 :-

বিশিষ্ট সাহাবী জাবের (রাঃ) হতে বর্ণিত তিনি বলেন,
কবরের উপর বিল্ডিং নির্মান করতে নিষেধ করেছেন। (মুসলিম)

Solution 4 :- মাযারে গম্বুজ নির্মান:-

আল- কোরআন ও তফসীর থেকে :-

প্রশ্ন:- মাযার নির্মান সম্পর্কে কোন দলিল আছে কি? স্পষ্ট দলিল থাকলে বলুন।

উত্তর:-
মাযার নির্মান সম্পর্কে স্পষ্ট দলিল:-

কুরআন মজীদে এরশাদ হয়েছে,

এবং এভাবে আমি তাদের (আসহাবে কাহাফ) বিষয় জানিয়ে দিলাম, যাতে লোকেরা জ্ঞাত হয় যে আল্লাহর প্রতিশ্রুতি সত্য এবং কিয়ামতে কোনো সন্দেহ নেই; যখন এই সব লোক তাদের (আসহাবে কাহাফ) ব্যাপারে নিজেদের মধ্যে বিতর্ক করতে লাগলো, অতঃপর তারা বল্লো, ’তাদের গুহার ওপর কোনো ইমারত নির্মাণ করো! তাদের রব (খোদা)-ই তাদের বিষয়ে ভাল জানেন। ওই লোকদের মধ্যে যারা (এ বিষয়ে) ক্ষমতাধর ছিল তারা বল্লো, ‘শপথ রইলো, আমরা তাদের (আসহাবে কাহাফের পুণ্যময় স্থানের) ওপর মসজিদ নির্মাণ করবো’।”
— সূরা কাহাফ, ২১ আয়াত]

তাফসীরে কবীর
ইমাম ফখরুদ্দীন রাযী (رحمة الله) এই আয়াতের তাফসীরে লেখেন,

কেউ কেউ (ওদের মধ্যে) বলেন যে গুহার দরজা বন্ধ করে দেয়া হোক, যাতে আসহাবে কাহাফ আড়ালে গোপন থাকতে পারেন। আরও কিছু মানুষ বলেন, গুহার দরজায় একটি মসজিদ নির্মাণ করা হোক। তাঁদের এই বক্তব্য প্রমাণ করে যে এই মানুষগুলো ছিলেন ’আল্লাহর আরেফীন (আল্লাহ-জ্ঞানী), যাঁরা এক আল্লাহর এবাদত-বন্দেগীতে বিশ্বাস করতেন এবং নামাযও পড়তেন’।
— তাফসীরে কবীর, ৫ম খণ্ড, ৪৭৫ পৃষ্ঠ

ইমাম রাযী (رحمة الله) আরও লেখেন:

এবং আল্লাহর কালাম – ‘(এ বিষয়ে) যারা ক্ষমতাশালী’ বলতে বোঝানো হয়ে থাকতে পারে ‘মুসলমান শাসকবৃন্দ’, অথবা আসহাবে কাহাফ (মো’মেনীন)-এর বন্ধুগণ, কিংবা শহরের নেতৃবৃন্দ। ‘আমরা নিশ্চয় তাদের স্মৃতিস্থানের ওপরে মসজিদ নির্মাণ করবো’ – এই আয়াতটিতে এ কথাই বোঝানো হয়েছে, ‘আমরা যাতে সেখানে আল্লাহর এবাদত-বন্দেগী করতে পারি এবং এই মসজিদের সুবাদে আসহাবে কাহাফ তথা গুহার সাথীদের স্মৃতিচিহ্ন সংরক্ষণ করতে পারি’।
— তাফসীরে কবীর, ৫ম খণ্ড, ৪৭৫ পৃষ্ঠা

অতএব, যারা মাযার-রওযা ধ্বংস করে এবং আল্লাহর আউলিয়াবৃন্দের প্রতি বিদ্বেষভাব প্রদর্শন করে, তারা কুরআন মজীদের সূরা কাহাফে বর্ণিত উপরোক্ত সুস্পষ্ট আয়াতের সরাসরি বিরোধিতা করে। অথচ কুরআন মজীদ স্পষ্টভাবে ব্যক্ত করে যে আউলিয়া কেরাম (رحمة الله)-এর মাযার-রওযা নির্মাণ ও তাঁদের স্মৃতিচিহ্ন সংরক্ষণ বৈধ।

মদীনা মোনাওয়ারায় মহানবী (ﷺ) এবং সর্ব-হযরত আবূ বকর সিদ্দিক (رضي الله عنه) ও উমর ফারূক (رضي الله عنه)-এর রওযা মোবারক সবুজ গুম্বজের নিচে সুশোভিত আছে। সাহাবা-এ-কেরাম (رضي الله عنه)-ই এই রওযাগুলো নির্মাণ করেন যা শরীয়তের দলিল।

তাফসীরে জালালাইন’ শিরোনামের বিশ্বখ্যাত সংক্ষিপ্ত ও সহজে বোধগম্য আল-কুরআনের ব্যাখ্যামূলক গ্রন্থে ইমাম জালালউদ্দীন সৈয়ুতী (رحمة الله) ও আল-মোহাল্লী (رحمة الله) লেখেন:

(মানুষেরা বিতর্কে লিপ্ত হয়েছিল), অর্থাৎ, বিশ্বাসী ও অবিশ্বাসীরা (ওই) তরুণ (আসহাবে কাহাফ)-দের বিষয়ে বিতর্ক করছিল যে তাঁদের পার্শ্বে কোনো স্মৃতিচিহ্ন নির্মাণ করা যায় কি-না। এমতাবস্থায় অবিশ্বাসীরা বলে, তাঁদেরকে ঢেকে দেয়ার জন্যে ইমারত নির্মাণ করা হোক। তাঁদের প্রভু-ই তাঁদের অবস্থা সম্পর্কে অধিক জ্ঞাত। কিন্তু যে মানুষেরা ওই তরুণ আসহাবে কাহাফের বিষয়ে বেশি প্রভাবশালী ছিলেন, মানে বিশ্বাসীরা, তারা বল্লেন, আমরা তাঁদের পার্শ্বে এবাদতের উদ্দেশ্যে মসজিদ নির্মাণ করবো। আর এটি গুহার প্রবেশপথে প্রকৃতই নির্মিত হয়েছিল।
— তাফসীর আল-জালালাইন, ১ম খণ্ড, ৩৮৯ পৃষ্ঠ 

ইমাম নাসাফী (رحمة الله) নিজ 'তাফসীরে নাসাফী' পুস্তকে লেখেন:

যারা (আসহাবে কাহাফের বিষয়ে) প্রভাবশালী ছিলেন, তারা মুসলমান এবং শাসকবর্গ; এরা বলেন যে গুহার প্রবেশপথে একটি মসজিদ নির্মাণ করে দেবেন, যাতে ‘মুসলমানবৃন্দ সেখানে এবাদত-বন্দেগী করতে পারেন এবং তা (স্মৃতিচিহ্ন) থেকে বরকত আদায় করতে সক্ষম হন’।
— তাফসীর আল-নাসাফী, ৩য় খণ্ড, ১৮ পৃষ্ঠা
________
মাযার নির্মানের প্রমান
মাযার নির্মানের আরো evidance:-

ইমাম শেহাবউদ্দীন খাফফাজী (رحمة الله) লেখেন:

(গুহামুখে মসজিদ নির্মাণ) সালেহীন তথা পুণ্যাত্মাবৃন্দের মাযার-রওযার পার্শ্বে মসজিদ নির্মাণের প্রামাণিক দলিল, যেমনটি উল্লেখিত হয়েছে ‘তাফসীরে কাশশাফ’ পুস্তকে; আর এই দালানের ভেতরে এবাদত-বন্দেগী করা ’জায়েয’ (বৈধ)।”
— ইমাম খাফফাজী কৃত ‘এনায়াতুল কাদী’, ৬ষ্ঠ খণ্ড, ৮৭ পৃষ্ঠা; দারুস্ সাদির, বৈরুত, লেবানন হতে প্রকাশিত

ইমাম মোহাম্মদ বিন হাসান শায়বানী (رحمة الله) বলেন,

হযরত ইমাম আবূ হানিফাহ (رحمة الله) আমাদের জানিয়েছেন এই বলে যে সালিম আফতাস্ আমাদের (তাঁর কাছে) বর্ণনা করেন: ‘এমন কোনো নবী নেই যিনি কা’বা শরীফে আল্লাহর এবাদত-বন্দেগী করতে নিজ জাতিকে ছেড়ে আসেন নি; আর এর আশপাশে ৩০০ জন নবী (আ:)-এর মাযার-রওযা বিদ্যমান’।”
— ইমাম শায়বানীর ‘কিতাবুল আসার’; লন্ডনে Turath Publishing কর্তৃক প্রকাশিত; ১৫০ পৃষ্ঠ

ইমাম শায়বানী (رحمة الله) আরও বলেন,

ইমাম আবূ হানিফা (رحمة الله) আমাদেরকে জানিয়েছেন এই বলে যে হযরত আতা’ বিন সায়েব (رضي الله عنه) আমাদের (তাঁর কাছে) বর্ণনা করেন, ‘আম্বিয়া সর্ব-হযরত হুদ (আ:), সালেহ (আ:) ও শোয়াইব (আ:)-এর মাযার-রওযা মসজিদে হারামে অবস্থিত’।
— ইমাম শায়বানীর ‘কিতাবুল আসার’

ইমাম ইবনে জারির তাবারী (رحمة الله) নিজ ‘তাফসীরে তাবারী’ পুস্তকে লেখেন:

মুশরিকরা বলেছিল, আমরা গুহার পার্শ্বে একটি ইমারত নির্মাণ করবো এবং আল্লাহর উপাসনা করবো; কিন্তু মুসলমানগণ বলেন, আসহাবে কাহাফের ওপর আমাদের হক বেশি এবং নিশ্চয় আমরা ওখানে ‘মসজিদ নির্মাণ করবো’ যাতে আমরা ওতে আল্লাহর এবাদত-বন্দেগী করতে পারি।
— তাফসীরে তাবারী, ১৫:১৪৯

মোল্লা আলী কারী ওপরে উদ্ধৃত আয়াতের সুস্পষ্ট ব্যাখ্যা দিয়ে বলেন:

যে ব্যক্তি কোনো সত্যনিষ্ঠ বোযর্গ বান্দার মাযারের সন্নিকটে মসজিদ নির্মাণ করেন, কিংবা ওই মাযারে (মাক্কবারা) এবাদত-বন্দেগী করেন, অথবা উক্ত বোযর্গের রূহ মোবারকের অসীলায়
(মধ্যস্থতায়) সাহায্য প্রার্থনা করেন, বা তাঁর রেখে যাওয়া কোনো বস্তু থেকে বরকত তথা আশীর্বাদ অন্বেষণ করেন, তিনি যদি (এবাদতে) ওই বোযর্গকে তা’যিম বা তাওয়াজ্জুহ পালন না করেই এগুলো করেন, তবে এতে কোনো দোষ বা ভ্রান্তি নেই। আপনারা কি দেখেননি, মসজিদে হারামের ভেতরে হাতীম নামের জায়গায় হযরত ইসমাঈল (আ:)-এর রওযা শরীফ অবস্থিত? আর সেখানে এবাদত-বন্দেগী পালন করা অন্যান্য স্থানের চেয়েও উত্তম। তবে কবরের কাছে এবাদত-বন্দেগী পালন তখনই নিষিদ্ধ হবে, যদি মৃতের নাজাসাত (ময়লা) দ্বারা মাটি অপবিত্র হয়ে যায়। ….হাজর আল-আসওয়াদ (কালো পাথর) ও মিযা’য়াব-এর কাছে হাতীম জায়গাটিতে ’৭০জন নবী (আ:)-এর মাযার-রওযা’ বিদ্যমান।”
— মিরক্কাত শরহে মিশক্কাত, ২য় খণ্ড, ২০২ পৃষ্ঠা

ইমাম ইবনে জারির তাবারী (رحمة الله) নিজ ‘তাফসীরে তাবারী’ পুস্তকে লেখেন:

মুশরিকরা বলেছিল, আমরা গুহার পার্শ্বে একটি ইমারত নির্মাণ করবো এবং আল্লাহর উপাসনা করবো; কিন্তু মুসলমানগণ বলেন, আসহাবে কাহাফের ওপর আমাদের হক বেশি এবং নিশ্চয় আমরা ওখানে ‘মসজিদ নির্মাণ করবো’ যাতে আমরা ওতে আল্লাহর এবাদত-বন্দেগী করতে পারি।
— তাফসীরে তাবারী, ১৫:১৪৯

ইমাম আবূ হাইয়ান আল-আনদালুসী (رحمة الله) বলেন:

তাঁদের (আসহাবে কাহাফের) পার্শ্বে ইমারত নির্মাণের কথা যে ব্যক্তি বলেছিল, সে এক অবিশ্বাসী মহিলা। সে গীর্জা নির্মাণের কথা-ই বলেছিল, যেখানে কুফরী কাজ করা যেতো। কিন্তু মো’মেন বান্দারা তাকে থামিয়ে দেন এবং ওর পরিবর্তে মসজিদ নির্মাণ করেন।
— তাফসীরে বাহর আল-মুহীত, ৭ম খণ্ড, ১৫৮ পৃষ্ঠা

ইবনুল জাওযী, যাকে কট্টর হিসেবে বিবেচনা করা হয় এবং ‘সালাফী’রাও মানে, তিনি উক্ত আয়াতের (১৮:২১) তাফসীরে বলেন:

ইবনে কুতায়বা (رضي الله عنه) বর্ণনা করেন যে মুফাসসিরীনবৃন্দ মত প্রকাশ করেছিলেন, ওখানে যাঁরা মসজিদ নির্মাণ করেন, তাঁরা ছিলেন মুসলমান রাজা ও তাঁর মো’মেন সাথীবৃন্দ।”
— তাফসীরে যা’য়াদ আল-মাসীর, ৫ম খণ্ড, ১২৪ পৃষ্ঠা

হযরত ইবনে উমর (رضي الله عنه) বর্ণনা করেন রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর হাদীস, যিনি বলেন:

মসজিদে আল-খায়ফের মধ্যে (’ফী’) ৭০ জন নবী (আ:)-এর মাযার-রওযা (এক সাথে) বিদ্যমান।
ইমাম আল-হায়তামী (رحمة الله) বলেন যে এটি আল-বাযযার বর্ণনা করেন এবং ”এর সমস্ত রাবী (বর্ণনাকারী)-ই আস্থাভাজন”। মানের দিক থেকে এই হাদীস সহীহ। ইমাম আল-হায়তামী (رحمة الله) নিজ ‘মজমাউয্ যাওয়াইদ’ পুস্তকের ৩য় খণ্ডে ‘বাবু ফী মসজিদিল্ খায়ফ’ অধ্যায়ে লিপিবদ্ধ #৫৭৬৯ নং হাদীসটি উদ্ধৃত করেন, যা’তে বিবৃত হয়:

মসজিদে খায়ফের মধ্যে (’ফী’) ৭০ জন আম্বিয়া (আ:)-এর মাযার-রওযা বিদ্যমান।

শায়খুল ইসলাম ইমাম ইবনে হাজর আসকালানী (رحمة الله) এ প্রসঙ্গে বলেন,

এই হাদীসের সনদ সহীহ।
— মোখতাসারুল বাযযার, ১:৪৭৬

________
আল-কুরআন ও হাদীস শরীফের এই সমস্ত ‘নস’ তথা দালিলিক প্রমাণ থেকে পরিস্ফুট হয় যে আম্বিয়া (আ:) ও আউলিয়া (رحمة الله)-বৃন্দের মাযার-রওযায় ইমারত নির্মাণ করা ইসলামে বৈধ ও সওয়াবদায়ক কাজ। সীমা লঙ্ঘনকারীরা বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলমানদেরকে ’মুশরিকীন’ বা মূর্তিপূজারী বলে আখ্যা দেয় এই বলে যে মাযার-রওযাগুলো হচ্ছে ‘মূর্তির ঘর’ (নাউযুবিল্লাহ)

এবং স্মরণ করুন, যখন আমি এ ঘরকে (কা’বা শরীফকে) মানবজাতির জন্যে আশ্রয়স্থল ও নিরাপদ স্থান করেছি; আর (বল্লাম), ‘ইবরাহীমের দাঁড়াবার স্থানকে (মাকামে ইবরাহীম নামের পাথরকে যার ওপর দাঁড়িয়ে তিনি কা’বা ঘর নির্মাণ করেন) নামাযের স্থান হিসেবে গ্রহণ করো’; এবং ইবরাহীম ও ইসমাঈলকে তাকিদ দিয়েছি, ‘আমার ঘরকে পুতঃপবিত্র করো, তাওয়াফকারী, এ’তেকাফকারী এবং রুকু’ ও সেজদাকারীদের জন্যে।” (জ্ঞাতব্য: তাওয়াফের পরে দু’রাকআত নামায ওখানে পড়তে হয়)
— সূরা বাকারাহ, ১২৫ আয়াত, মুফতী আহমদ এয়ার খানের ’নূরুল এরফান’ বাংলা তাফসীর থেকে সংগৃহীত; অনুবাদক: মওলানা এম, এ, মন্নান, চট্টগ্রাম

ইব্রাহীম (আ) যেখানে দাড়িয়ে কাবা ঘর নির্মান করেছিলেন সেই পাথরকে নিদর্শন করে দিয়েছে আল-কুরআন আর যেখানে তিনি শুয়ে আছে সেই মাযারকে ওহাবী সালাফীর দল মুর্তি, বিদাত শিরিকের কথা বলে সুন্নীদের মুশরিক ফতোয়া দএয়। নাউযুবিল্লাহ।

________
আমরা এবার ‘কবরের আকার-আকৃতি’ বিষয়টির ফয়সালা করবো
আমরা এবার ‘কবরের আকার-আকৃতি’ বিষয়টির ফয়সালা করবো।

হযরত আবূ বকর বিন আইয়াশ (رضي الله عنه) বর্ণনা করেন: হযরত সুফিয়ান আত্ তাম্মার (رضي الله عنه) আমাকে জানান যে তিনি মহানবী (ﷺ)-এর রওযা মোবারককে উঁচু ও উত্তল দেখতে পেয়েছেন।
— সহীহ বোখারী, ২য় খণ্ড, ২৩তম বই, হাদীস নং ৪৭৩

অতএব, মাযার-রওযা ভেঙ্গে ফেলা বা গুঁড়িয়ে দেয়া ‘সালাফী’দের দ্বারা ‘নস’ বা শরয়ী দলিলের চরম অপব্যাখ্যা ছাড়া কিছুই নয়।

মহান হানাফী মুহাদ্দীস ইমাম মোহাম্মদ ইবনে হাসসান শায়বানী (رحمة الله) এতদসংক্রান্ত বিষয়ে গোটা একটি অধ্যায় বরাদ্দ করে তার শিরোনাম দেন ‘কবরের ওপর উঁচু স্তূপাকৃতির ফলক ও আস্তর’। এই অধ্যায়ে তিনি নিম্নের হাদীসটি লিপিবদ্ধ করেন:

ইমাম আবূ হানিফা (رحمة الله) আমাদের কাছে হযরত হাম্মাদ (رحمة الله)-এর কথা বর্ণনা করেন, তিনি হযরত ইবরাহীম (رضي الله عنه)-এর কথা উদ্ধৃত করেন, যিনি বলেন, কেউ একজন আমাকে জানান যে তাঁরা মহানবী (ﷺ), হযরত আবূ বকর (رضي الله عنه) ও হযরত উমর (رضي الله عنه)-এর মাযার-রওযার ওপরে ‘উঁচু স্তূপাকৃতির ফলক যা (চোখে পড়ার মতো) বাইরে প্রসারিত ছিল তা দেখতে পেয়েছিলেন এবং তাতে আরও ছিল সাদা এঁটেলমাটির টুকরো।
ইমাম মোহাম্মদ (رحمة الله) আরও বলেন

আমরা (আহনা’ফ) এই মতকেই সমর্থন করি; মাযার-রওযা বড় স্তূপাকৃতির ফলক দ্বারা চিহ্নিত করতে হবে। কিন্তু তা বর্গাকৃতির হতে পারবে না। এটি-ই হচ্ছে ’ইমাম আবূ হানিফা (رحمة الله)-এর সিদ্ধান্ত’।
— কিতাবুল আসা’র, ১৪৫ পৃষ্ঠা, Turath Publishing কর্তৃক প্রকাশিত

সীমা লঙ্ঘনকারীরা দাবি করে, সকল মাযার-রওযা-ই গুঁড়িয়ে দিতে বা ধ্বংস করতে হবে। এটি সরাসরি সুন্নাহর সাথে সাংঘর্ষিক। কেননা, তারা যে হাদীসটিকে এ ক্ষেত্রে অপপ্রয়োগ করে, তা মুশরিকীন (অংশীবাদী)-দের সমাধি সম্পর্কে বর্ণিত, মো’মেনীন (বিশ্বাসী মুসলমান)-দের কবর সম্পর্কে নয়। মাযার-রওযা নির্মাণ বৈধ, কারণ রাসূলুল্লাহ (ﷺ), সর্ব-হযরত আবূ বকর (رضي الله عنه) ও উমর ফারূক (رضي الله عنه) এবং অন্যান্য সাহাবা (رضي الله عنه)-দের মাযার-রওযা উঁচু স্তূপাকৃতির ফলক দ্বারা নির্মিত হয়েছিল মর্মে দলিল বিদ্যমান।

মুসলমানদের কবর ও মুশরিকীন (অংশীবাদী)-দের সমাধির মধ্যকার পার্থক্য বোঝার জন্যে খেয়াল করবেন:-

১) দেখবেন, খৃষ্টানদের সমাধি সম্পূর্ণভাবে মাটির সাথে মেশানো তথা মাটির সমান, যা ওহাবীরা আমাদের বিশ্বাস করতে বলে এই মর্মে যে, মুসলমানদের কবরও অনুরূপ হওয়া উচিত। [কিন্তু বেশ কিছু হাদীসে ইহুদী ও খৃষ্টানদের বিপরীত করতে আমরা আদিষ্ট হয়েছে, যা প্রমাণ করে যে মুসলমানদের কবর এক বিঘত পরিমান উচু রাখা সুন্নত (হাদিসে বর্নিত আছে); তবে মাযারের উপর কোনো মূর্তি নির্মাণ করা চলবে না, এমনকি নেইও এই প্রমান কেউ দিতে পারবে না]

২) দ্বিতীয়টি হল যে খৃষ্টানগণ ‘সমাধির ঠিক ওপরে মূর্তি নির্মাণ করেন’। অথচ মুসলমান সূফী-দরবেশদের মাযার-রওযাতে এগুলো করে না।

________
অন্যান্য হাদিস ও কিতাব সমুহ থেকে প্রমান
অন্যান্য হাদিস ও কিতাব সমুহ থেকে প্রমান:-

Proof 1 :-

“হযরত উরওয়া (রা) হতে বর্ণিত,””
তিনি বলেন, ওয়ালিদ ইবনে আব্দুল মালিকের শাসনামলে (৮৬ হিজরীতে) একবার রাসুলুল্লাহ (সা) এর রওযা মুবারকের এক দিকের দেয়াল ধসে গেলে সাহাবায়ে কেরাম তা মেরামত শুরু করেন। মেরামতের সময় হঠাত এক খানা পা দৃষ্টি গোচর হল। উপস্থিত লোকজন মনে করলেন হয়তোবা রাসুলুল্লাহ (সঃ) এর পা মুবারক হতে পারে। কিন্তু তথায় উপস্থিত হযরত উরওয়া রা: (হযরত আয়েশা রা: এর ভাগিনা) সমবেত লোকদের উদ্দেশ্যে বললেন, না আল্লাহর কসম, এটা নবী করীম (সা) এর পা মুবারক নয়। এটা তো হযরত উমর (রা) এর পা।” সাহাবা কেরামই সর্ব প্রথম নবী করীম (সা), হযরত আবু বক্কর (রা) ও হযরত ঊমর (রা) এর রওযা পাকা করেছিলেন।

Reference :
বোখারী

হযরত উরওয়া ইবনে আল-যুবায়র (رضي الله عنه) বর্ণনা করেন হযরত আল-মুসাওয়ের ইবনে মাখরামা (رضي الله عنه) ও মারাওয়ান ইবনে আল-হাকীম (رضي الله عنه) হতে এই মর্মে যে, আবূ বাসীর (رضي الله عنه) যখন ইন্তেকাল করেন, তখন আবূ জানদাল ইবনে সোহায়ল ইবনে আমর (رضي الله عنه) তিন’শ জন সাহাবী (رضي الله عنه)-এর উপস্থিতিতে ’সাইফ আল-বাহর’ নামের স্থানে তাঁকে দাফন করেন এবং সেখানে তাঁর মাযার-সংলগ্ন একটি মসজিদ নির্মাণ করে দেন [এই রওয়ায়াত ইমাম আবদুর রাযযাক হযরত মু’আমের (رضي الله عنه)-এর সূত্রে ও আবূ এসহাক ‘আল-সীরাহ’ পুস্তকে এবং মূসা ইবনে উকবা ‘মাগাযিয়্যাহ’ কেতাবে বর্ণনা করেন]। এই রওয়ায়াতের এসনাদ সহীহ (বিশুদ্ধ) এবং এতে অন্তর্ভুক্ত রয়েছেন আস্থাভাজন উলেমাবৃন্দ। এই কাজটি মহানবী (ﷺ)-এর আড়ালে গোপনে সংঘটিত হতে পারে না; এতদসত্ত্বেও রাসূলুল্লাহ (ﷺ) সেই মাযার অপসারণ বা (ওই সাহাবীর) দেহাবশেষ অন্যত্র স্থানান্তরের নির্দেশ দেননি।

বিশুদ্ধ রওয়ায়াতে হুযূর পূর নূর (ﷺ)-এর কথা উদ্ধৃত হয়েছে; তিনি বলেন: “আল-খায়ফ মসজিদে সত্তর জন আম্বিয়া (আ:)-এর মাযার-রওযা বিদ্যমান।” [আল-বাযযার ও আত্ তাবারানী কৃত ‘আল-মু’জাম আল-কবীর’; মোহাদ্দীস ইবনে হাজর নিজ ‘মোখতাসার যাওয়াঈদ আল-বাযযার’ গ্রন্থে এই হাদীসের সনদ ‘সহীহ’ বলেছেন]

এর দ্বারা বুঝা যায় কবর পাকা ছিল। এবং ভেংগে যাওয়ার পর আবার ঠিক করে পাকা করা হয়েছে।

Proof 2, 3, 4 :-

হযরত উমর (রা) উম্মুল মুমেনিন হযরত জয়নাব বিনতে জাহাশ (রা) এর মাজারের উপর গম্বুজ নির্মাণ করেছিলেন।

উম্মুল মুমেনিন হযরত আয়েশা সিদ্দিকা (রা) মক্কায় অবস্থিত তাঁর ভাই হযরত আব্দুর রাহমান (রা) এর কবরের উপর গম্বুজ নির্মাণ করেন এবং ওনার কবর জিয়ারত করতেন।

তায়েফে অবস্থিত হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা) এর কবরের উপর বিশিষ্ট তাবীঈ মুহাম্মাদ বিন হানফিয়া (র) গম্বুজ নির্মাণ করেছিলেন।

Reference :-
মুন্তাকা সরহে মুয়াত্তায়ে ইমাম মালেক
বাদায়ে সানায়ে

________
সমস্যা -০৪
Sollution 4:- মাযারের উপর গম্বুজ বা ইমারত এর দলিল:-

Proof 5:-
মদীনায় আল্লাহর রাসূলের (সাঃ) কবর :

‘তাবাকাতে ইবনে সা’দ’ ও ‘সিরেয়ে ইবনে হিশাম’-এ একটি রেওয়ায়েত আছে যার সারসংক্ষেপ নিম্নরূপঃ “রাসূল (সাঃ) নিজ গৃহে ঠিক যে কক্ষে তিনি নিজ প্রাণ মহান সৃষ্টিকর্তার নিকট সমর্পণ করেছিলেন, সে কক্ষেই সমাধিস্থ হয়েছেন। এরপর, হযরত আবুবকর ও হযরত ওমর-এ দু’ খলিফাকে ও একে একে সেখানে কবরস্থ করা হয়। অতঃপর এ সবুজ গম্বুজ এর উপর নির্মাণ করা হয়।

Reference :-
[তাবাকাতে ইবনে সা’দ খঃ ২ পৃঃ২৯২-২৯৪, সিরায়ে ইবনে হিশাম খঃ৪, পৃঃ৩৪৩]

Proof 6,7,8,9,10 :-

ইবনে জাওযি ‘হারাম শরীফে শায়িত মহান ব্যক্তিগন” অধ্যায়ে এবং আযরাকী “আখবারে মাক্কা”-তে একটি রেওয়ায়েত উল্লেখ করেছেন যার সারসংক্ষপ এরূপঃ সকল নবীই যাদের উম্মত ধবংশ হতো মক্কায় আসতেন এবং মুমিনদেরকে নিজের সাথে নিয়ে এবাদত করতেন মৃত্যু পর্যন্ত!

হূদ (আঃ), সালেহ (আঃ) ও শুয়াইব (আঃ) ছিলেন তাদের অর্ন্তভুক্ত। রোকন ও মাকামে ইব্রাহীম এবং যমযম ও হিজরে ইসমাঈলের মধ্যবর্তী স্থানে নিরানব্বইজন নবীর কবর আছে। আবুবকর ফকীহ মহানবী (সাঃ) থেকে বর্ণনা করেছেন যে, বলেন :
এমন কোন নবী ছিলনা যিনি নিজ গোত্র থেকে পৃথক হয়েছেন অথচ কাবায় আসেননি এবং আমৃত্যু আল্লাহর এবাদত করেননি।

হুদ (আঃ) শোয়াইব (আঃ) ও সালেহ (আঃ)-এর কবর যমযম ও মাকামে ইব্রাহীমের মধ্যবর্তী স্থানে।

হারাম (কাবা) শরীফে তিনশজন নবীর কবর আছে এবং

ইয়েমেনী রোকন ও রোকনে আমওয়াদের মধ্যে সত্তরজন নবীকে দাফন করা হয়েছে।

Reference :
[মোখতাসারু কিতাবুল বোলদান, আবুবকর ইবনে ফকীহ হামেদানী (জন্মঃ৩৪০হিঃ) তোরিল, লিদান মুদ্রিত ১৩০২পৃঃ১৭]

Proof 11,12,13,14 :-

মাকতাবে আহলে বাইত (আঃ)-এর হাদীসের কিতাব সমূহেও এগুলোর মত রেওয়ায়েত নিম্নলিখিত রূপে এসেছে :
কুলাইনী (৩২৯ হিজরীতে যার মৃত্যু) উসূলে কাফিতে এবং সাদুক (৩৮১ হিজরীতে যার মৃত্যু) মান লা’ ইয়াহজুরুহুল ফকীহ নামক কিতাবে এলালুশ শারায়া’-
তে এবং ফাইয কাশীনী (মৃত্যু (১০৮৯হি) ওয়াফিতে, মাজলিশি (মৃঃ১১১১) বিহারুল আনোয়ারে বর্ণনা করেছেন যে, (কাফি বর্ণনানুসারে)

মাতা হাজেরা ও হযরত ইসমাঈল (আ) এর মাযার হিজরে আছে
[ফুরুয়ে কাফী, কিতাবুল হাজ্জ, ইব্রাহীম ও ইসমাঈল (আঃ)-এর হজ্জ অধ্যায় হাদীস নং১৪ খঃ৪, পৃঃ২১০। মান লা ইয়াহজুরুহুল ফাকীহ, কিতাবুল হাজ্জ খঃ২, পৃঃ১২৫ ওয়াফী, কিতাবুল হাজ্জ খঃ৮, পৃঃ২৮ এবং বিহারুল আনওয়ার কিতাবুল নবুওয়াত খঃ৫, পৃঃ ১৪৩ও১৪৪।]

অনুরূপ, বর্ণনা করেছেন যে, ‘হিজরে নবীগণের (আঃ) কবর আছে।’

হিজরে তৃতীয় রোকনের সীমানায় ইসমাঈল (আঃ)-এর কন্যারা শায়িত।
[ফুরুয়ে কাফী, কিতাবুল হাজ্জ, ইব্রাহীম ও ইসমাঈল (আঃ)-এর হজ্জ অধ্যায় হাদীস নং১৪ খঃ৪, পৃঃ২১০। মান লা ইয়াহজুরুহুল ফাকীহ, কিতাবুল হাজ্জ খঃ২, পৃঃ১২৫ ওয়াফী, কিতাবুল হাজ্জ খঃ৮, পৃঃ২৮ এবং বিহারুল আনওয়ার কিতাবুল নবুওয়াত খঃ৫, পৃঃ ১৪৩ও১৪৪।]

Proof 15

ইবনে জুরাইর তার ভ্রমন কাহিনীতে ইসমাঈল (আঃ) ও তাঁর মাতা হাজারের কবরের বর্ণনা দিয়েছেনঃ

হিজর প্রাঙ্গনে নাভেদানের নাচে বাইতুল্লাহিল হারামের দেয়ালের পাশে হযরত ইসমাঈল (আঃ)-এর কবর। ঐ আলামত হলো সবুজ, মারবেল খচিত এবং মেহরাবের মত আয়াতাকার পাথর যে অন্য একটি মারবেল পাথর এর চার কিনারায় এসে সংযুক্ত হয়েছে। উভয় পাথরই বিষ্ময়কর ভাবে দর্শনীয়। ঐগুলোতে এমন ডোরা ও বিন্দু দাস আছে যে কিছুটা হলুদাভ যেন সেলাই করা ফাঁটন। এবং স্বর্ণ গলানোর পাত্রে অবশিষ্ট থাকা অুু সদৃশ। এর পার্শ্বে ইরাকীদের রোকনের নিকট তাঁর মাতা হাজেরার কবর। এর আলামত ও দেড় গজ মাপের একটি সবুজ পাথর। মানুষ হিজরের এ দু’টি স্থানে নামায আদায় করে বরকত কামনা করে এবং এটা তাদের জন্যে ন্যায়সঙ্গত। কারণ, ঐ দু’টি কবর ছিল ‘বাইতে আতিচ’ থেকে এবং দুটি পবিত্র ও সম্মানিত দেহকে ধারণ করেছে ।
যে সমস্ত কবরকে মহান আল্লাহ নূরানী করেছেন অগুলোর বরকতে ঐ স্থানে নামায আদায়কারী ও দোয়াকারীগনকে তিনি লাভবান করেন।
এ দু’টি পবিত্র কবরের দূরত্ব সাত গজ।

Reference :-
[ইবনে জুবাইর, মোহাম্মদ ইবনে যুবাইর কেনানী আন্দালোসী —৫৪০ বা ৫৩৯ হিজরীর ১০ রবিউল আউয়্যাল শুক্রবার দিবাগত রাতে জন্মগ্রহণ করেন এবং ৬২৬ হিজরীর ২৭ বা ২৯ শা’বান মঙ্গলবার দিবাগত রাতে মৃত্যুবরণ করেন।]
আব্দুর রহমান ইবনে জাওযী (মৃঃ৫৯৭হিঃ) নিজ কিতাব [‘মাসিরুল গারাম আলসাকিম ইলা আশরাফিল আমাকেন’ দারুল রায়িয়াত লিলনাশর, রিয়াদ, ১৪১৫হিঃ পৃঃ২১৮]

________
প্রমান -১৬
Proof 16:- আবু আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ ইবনে ইসহাক আলফাকেহী (মৃত্যু ২৭২হিঃ) নিজ কিতাবে [‘মিন আখাবারি মাক্কাহ ফি কাদিমিল দাহর ওয়া হাদীসা’ বৈরুত থেকে প্রকাশিত ১৪১৪ হিজরী আখবারি],

””ইসমাঈল (আঃ)-এর কন্যাদের কবরসমূহের পরিচিতি’”” নামক অধ্যায়ে লিখেনঃ বর্ণিত হয়েছে যে,

Proof 17:- ইবনে যুবাইর বলেনঃ এই অর্ধবৃত্ত যা শ্যামের রোকনে সংযুক্ত হয়েছে সেখানে ইসমাঈল (আঃ)-এর কন্যাদের কবর। এ আবি ওমর নিজের হাদীসে বলেন, রাবি, সুফিয়ান থেকে জানতে চেয়েছিলঃ এ স্থানটি কোনটি ? তিনি নিজ হাত দিয়ে পশ্চিমের রোকনের সামনাসামনি যা ইয়েমেনী রোকন ‘দারুল আজালা’র প্রতি ইঙ্গিত করেছিলেন।

Reference :-
এ বিষয়টি [মাক্কাহ পৃঃ১২৩ অনুসারে] ‘আব্দুর রাজ্জাকও তার মোসান্নাফে (খঃ৫ পৃঃ১২০) এবং ‘আযরাক্বী’ (খঃ২পৃঃ৬৬) নিজ কিতাবে উল্লেখ করেছেন।

Proof 18:- সিরাতে ইবনে হিশাম (মৃত্যুঃ ২১৮হিঃ ), তারিখে তাবারী (মৃত্যুঃ ৩১০হিঃ), তারিখে ইবনে আছির (মৃত্যুর ৬৩০হিঃ) এবং ইবনে কাছিরে (মৃত্যুঃ৭৭৪হিঃ) একটি রেওয়ায়েত আছে যে বলেনঃ

“ইসমাঈল (আঃ) তাঁর মা হাজার (রা) এর সাথে ‘হিজরে’ শায়িত আছেন।”
“ইসমাঈল (আঃ) ওয়াসিয়াত করেছিলেন যাতে তাঁর মৃত্যুর পর তাঁকে হিজরে’ তাঁর মায়ের কবরের পাশে সমাধিস্থ করা হয়।”

Proof 19:- ইবনে সা’দ তায় ‘তাবাকাতে’ বলেনঃ ইসমাঈল (আঃ)-এর বিশ বছর বয়সে তাঁর ‘হাজার’ নব্বই বছর বয়সে মৃত্যুবরণ করেন।
ইসমাঈল (আঃ)ও পিতা ইব্রাহীম (আঃ)-এর পর মৃত্যুবরণ করেন এবং মাতা হাজারের পাশে কা’বার দক্ষিণে সমাহিত হন।
অন্য এক রেওয়ায়েতে বলা হয় ঃ ইসমাঈলের (আঃ) কবর নাভেদানের নীচে রোকন ও বাইতুল্লাহর মাঝে অবস্থিত।

Reference :-
[তাবাকতে ইবনে সা’দ (ইউরোপ থেকে প্রকাশিত ) খঃ১, পৃঃ২৫, সংক্ষেপে তা বর্ণনা করা হলো।]

Proof 20:- কালায়ীর ‘আল-ইকতিফা’ কিতাবে বর্ণিত হয়েছে যে (সংক্ষেপে)ঃ
“হাজেরা , ইসমাঈল এবং তদীয় পুত্র নাবাত হিজরে সমাহিত হয়েছে।”

Reference :-
[‘আল ইকতিফা ফি মাগাযিল মোস্তফা ওয়াল সালাসাতুল খোলাফা, পৃঃ১১৯, তাসহীহ (হোনারী মাসা), মুদ্রনে (ঘুল কারিয়ূনান) আলজ্জাযায়ির ১৯৩১ খ্রীঃ]

Proof 21:-

বোযর্গানে দ্বীনের বিভিন্ন বর্ণনা থেকে জানা যায়, হযরত ইসমাঈল (আ:) ও তাঁর মাতা সাহেবানী হযরত হাজার (رضي الله عنه) উভয়-ই (মক্কার) হারাম শরীফের অন্তর্গত আল-হিজর নামের স্থানে সমাহিত হন। 

Reference :-
এই তথ্য আস্থাভাজন ইতিহাসবিদগণ উল্লেখ করেছেন এবং তা প্রসিদ্ধ ইসলামী ইতিহাসবেত্তাবৃন্দ কর্তৃক সমর্থিত হয়েছে; এঁদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ইবনে এসহাক নিজ ‘সীরাহ’ গ্রন্থে, ইবনে জারির তাবারী তাঁর ‘তারিখ’ পুস্তকে, আস্ সোহায়লী স্বরচিত ‘আল-রওদ আল-উনুফ’ কেতাবে, ইবনুল জাওযী নিজ ‘মুনতাযেম’ বইয়ে, ইবনুল আসির তাঁর ‘আল-কামেল’ পুস্তকে, আয্ যাহাবী স্বরচিত ‘তারিখ আল-ইসলাম’ গ্রন্থে এবং ইবনে কাসীর নিজ ’আল-বেদায়া ওয়ান্ নেহায়া’ কেতাবে। হুযূর পাক (ﷺ) আল-খায়ফ মসজিদে আম্বিয়া (আ:)-এর মাযার-রওযা এবং আল-হিজর স্থানে ইসমাঈল (আ:) ও তাঁর মায়ের দাফন হবার দুটি খবরেরই সত্যতা নিশ্চিত করেছেন, অথচ সে সব মাযার-রওযা সরিয়ে ফেলার নির্দেশ দেননি।


ইসলামের পবিত্র স্থাপনা সমূহ, জান্নাতুল বাকী ও অন্যান্য মাজারগুলো কারা ধ্বংস করল?
________
জান্নাতুল বাকী
Jannatul Baqi
Jannatul Baqi (Garden of Heaven) is the main cemetery of Madinah. Buried there are many members of the Prophet’s (peace and blessings of Allah be on him) close family, around ten thousand of his companions (Sahabah) and many prominent, pious personalities.

Aisha (may Allah be pleased with her) reported (that whenever it was her turn for the Prophet (peace and blessings of Allah be on him) to spend the night with her) he would go out towards the end of the night to al-Baqi and say: “Peace be upon you, abode of a people who are believers. What you were promised would come to you tomorrow, you receiving it after some delay; and God willing we shall join you. O Allah, grant forgiveness to the inhabitants of Baqi al-Gharqad.” [Muslim]

________
বাকী মানে কি?
Baqi means the land in which the roots of different trees are embedded, Gharqad is the name of a thorny tree (Boxthorn) which were abundant in Baqi. Hence the cemetery also came to be known as Baqi al-Gharqad.

The first person to be buried in al-Baqi was As’ad Bin Zararah (may Allah be pleased with him), an Ansari companion who died soon after the Prophet ‘s (peace and blessings of Allah be on him) migration to Madinah. The Prophet (peace and blessings of Allah be on him) chose the spot to be a cemetery. The first of the Muhajirun (Emigrants) to be buried there was Uthman bin Mazoun who died shortly after the Prophet (peace and blessings of Allah be on him) returned from the battle of Badr.

________
ইহুদীদের দালাল(ওহাবী)
যারা মাযার শরীফের বিরুদ্ধে কথা বলছে মূলত এরা ইহুদীদের এজেন্ট ওহাবী। এই ওহাবীদের কিছু কর্মকাণ্ড এখানে সংযুক্ত করে দেয়া হলো, যেগুলা দেখলে সহজে বুঝতে পারেন একমাত্র ইহুদী এজেন্ট ওহাবী সালাফী দেওবন্দীরাই মাযার শরীফের বিরোধীতা করে।
আসুন জেনে নেই, ইহুদী বংশোদ্ভূত সউদী সরকার ১৯২৫ সালে ক্ষমতায় বসার পর মক্কা ও মদীনা শরীফে কি কি ইসলামী ঐতিহ্য ধ্বংস করেছে:
মসজিদ
মসজিদ:
১) সাইয়্যিদুশ শুহাদা হযরত হামজা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু’র ঐতিহাসিক মসজিদ ও মাজার শরীফ।
২) হযরত ফাতিমাতুজ জাহরা রদ্বিয়াল্লাহ তায়ালা আনহা ঐতিহাসিক মসজিদ।
৩) আল মানরাতাইন মসজিদ।
৪) নবী করিম সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানিত বংশধর হযরত জাফর ইবনে ছদ্বিক রহমতুল্লাহি’র পুত্র হযরত আলী আল উরাইদি রহমতুল্লাহি মসজিদ এবং মাজার শরীফের গম্বুজ। ২০০২ সালের ১৩ আগস্ট তা ডিনামাইট দিয়ে ধ্বংস করা হয়।
৫) খন্দকের ময়দানে ৪টি ঐতিহাসিক মসজিদ।
৬) আবু রাশিদ মসজিদ
৭) হযরত সালমান ফারসী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু মসজিদ, মদীনা শরীফ।
৮) রাজত আল শামস মসজিদ, মদীনা শরীফ।

________
মাজার শরীফ
মাজার শরীফ:
১) জান্নাতুল বাক্বি, মদীনা শরীফ। যেখানে প্রায় ৭ হাজার সাহাবীর মাজার শরীফ বিদ্যামান ছিলো। ১৯২৫ সালের ৮ই শাওয়াল সউদী ওহাবীরা জান্নাতুল বাকিতে হামলা চালায়। তারা নবীজির পবিত্র বংশধর এবং সম্মানিত সাহাবীগণের পবিত্র মাজার শরীফগুলো সাথে জঘণ্যধরনের বেয়াদবি করে। (নাউযুবিল্লাহ)।
২) জান্নাতুল মুয়াল্লা, মক্কা শরীফ। সেখানে নবীজির পারিবারিক অতি ঘনিষ্টজনদের, যেমন: নবীজির সম্মানিত পূর্বপুরুষ এবং উম্মুল মু’মীনিন হযরত খাদিজাতুল কুবরা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা’র পবিত্র মাজার শরীফ ছিলো। ১৯২৫ সালে এ পবিত্রস্থান ধ্বংস করে সউদী ওহাবীরা।
৩) নবীজি সম্মানিত আব্বাজানের পবিত্র মাজার শরীফ ধ্বংস করা হয়।

৪) নবীজির সম্মানিত আম্মাজানের পবিত্র মাজার শরীফ ধ্বংস করা হয় ১৯৯৮ সালে।
৫) নবীজির সম্মানিত বংশধর হযরত মুসা কাজিম রহমতুল্লাহির সম্মানিত আম্মাজান এবং হযরত জাফর ছাদিক রহমতুল্লাহি’র সম্মানিত স্ত্রী’র পবিত্র মাজার শরীফ ধ্বংস করা হয়।
৬) উহুদের ময়দানে শহীদান সাহাবীগণের পবিত্র মাজার শরীফ ধ্বংস করা হয়।
৭) ১৯৭৫ সালে জেদ্দায় সকল মানুষের মাতা হযরত হাওয়া আলাইহাস সালামের সম্মানিত রওজা শরীফ ধ্বংস এবং সিলগালা করে দেয়া হয়।

________
ঐতিহাসিক সম্মানিত স্থান সমূহ
ঐতিহাসিক সম্মানিত স্থান সমূহ:
১) নবীজি যে পবিত্র ঘরে জন্মগ্রহণ করেছিলেন।
২) হযরত খাদিজাতুল কুবরা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহার উনার পবিত্র ঘর। যেখনে জন্ম গ্রহণ করেন সম্মানিত নবী কন্যা হযরত ফাতিমাতুজ জাহরা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা এবং সম্মানিত নবী পুত্র হযরত কাসিম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু।
৩) হিজরতের পরে নবীজি মদীনা শরীফে যে ঘরে গিয়ে অবস্থান করেছিলেন।
৪) দ্বার-ই-আরকাম, ইসলামের প্রথম শিক্ষাকেন্দ্র।
৫) সম্মানিত নবীপূত্র হযরত ইব্রাহীম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু’র পবিত্র জন্মস্থান।
৬) নবীজির সম্মানিত বংশধর হযরত জাফর ছাদিক রহমতুল্লাহির পবিত্র ঘর।
৭) হযরত আলী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু’র পবিত্র ঘর, যেখানে হযরত ইমাম হাসান রদ্বিয়াল্লাহু এবং হযরত ইমাম হুসাইন রদ্বিয়াল্লাহু জন্মগ্রহণ করেন।

উল্লেখ্য, প্রায় ১৩০০ বছর ইসলাম একভাবে চলে আসছিলো। কিন্তু ১৯২৫ সালে ব্রিটিশ সহযোগীতায় সউদী ইহুদীরা ক্ষমতায় বসার পর তাদের ফতওয়া বিভাগ থেকে অপব্যাখ্যামূলক ফতওয়া দিতে থাকে এবং এ জঘন্য অপকর্মে লিপ্ত হয়। এই জঘন্য কর্মের মাধ্যমে তারা একদিক থেকে সম্মানিত ব্যক্তিদের সাথে বেয়াদবি করে, অন্যদিকে মুসলমানদের ইতিহাস-ঐতিহ্যশূণ্য করে ফেলে।

________
কাদের কে জান্নাতুল বাকীতে দাফন করা হয়েছে
Who were buried in Jannatul Baqi (জান্নাতুল বাকিতে যারা যারা সমাধিস্থ হয়েছিলেন এক নজরেরে দেখুন):-

1) All of the wives of Muhammad, except Khadijah bint Khuwaylid, who is buried in Jannatul Mualla in Mecca
2) Ibrahim, Muhammad's son by Maria al-Qibtiyya, died in infancy
3) Roqayyah, daughter of Mohammad and Khadijah bint Khuwaylid
4) Fatima bint al-Asad, aunt of Muhammad and mother of Caliph Ali; other aunts including Safiya and Aatika
4) Fatima, the daughter of Muhammad is purportedly buried there, though the location of her grave is disputed.
5) ‘Abbas ibn ‘Abd al-Muttalib, uncle of Muhammad.
6) Fatima bint Hizam, known as Umm ul-Banin, who married Caliph Ali after the death of Fatimah; mother of four children including Abbass ibn Ali who died defending Hussain ibn Ali in the Battle of Karbala and Al-Abbas ibn Ali, Husayn ibn Ali, Uthman ibn Ali, Abdullah ibn Ali and Jafar ibn Ali.
7) Imam Hasan ibn Ali, grandson of Prophet Muhammad, son of Fatimah and Imam Ali.
8) Imam ‘Alī ibn Ḥusayn, known as Zayn al-Abidin, grandson of Fatima 
9) Zahra who is the only adult male that survived the Battle of Karbala because he was sick and could not fight. He was the fourth Imam
10) Imam Muhammad al-Baqir, son of ‘Alī ibn Ḥusayn, the fifth Imam
11) Imam Ja’far as-Sadiq, son of Muhammad al-Baqir, the sixth Imam . Teacher of Jābir ibn Hayyān, Nuʿmān ibn Thābit, 
12) Muhammad ibn Idris al-Shafi'i, Malik ibn Anas, and Abu Hanifa
13) Abdullah son of Jaffar e Tayyar, who was husband of Zainab, daughter of Ali and nephew of Ali and father of Aun and Muhammad (martyrs of Karbala).
14) Aqeel ibne abi talib elder brother of imam Ali.

________
OTHER NOTABLE FIGURES
Other notable figures:-

15) Uthman ibn Affan, companion of Muhammad and third Sunni Caliph. 16) Uthman ibn Affan was at first buried in a Jewish graveyard behind Al-Baqi', but later Muawiyah I extended Al-Baqi' to include Uthman.[citation needed]
17) Uthman Bin Mazoun, companion of Muhammad
18) Malik ibn Anas, Islamic jurist

A PARTIAL LIST OF THE DEMOLISHED GRAVES AND SHRINES

A partial list of the demolished graves and shrines

• Al-Mualla graveyard in Makkah which includes the grave of Sayyida Khadija bint Khuwailid (a), wife of the Prophet (s), the grave of Amina bint Wahab, mother of the Prophet (s), the grave of Abu Talib, father of Imam Ali (a), and the grave of Abdul Muttalib, grandfather of the Prophet (s)

• The grave of Hawa (Eve) in Jeddah

• The grave of the father of the Prophet (s) in Madina

• The house of sorrows (Bayt Al-Ahzan) of Sayyida Fatima (a) in Madina

• The Salman al-Farsi mosque in Madina

• The Raj'at ash-Shams mosque in Madina

• The house of the Prophet (s) in Madina, where he lived after migrating from Makkah

• The complex (mahhalla) of Banu Hashim in Madina

• The house of Imam Ali (a) where Imam Hasan (a) and Imam Husayn (a) were born

• The house of Hamza and the graves of the martyrs of Uhud (a)


মহিলাদের কবর জিয়ারত (VISITING GRAVES BY WOMEN)
________
এ সম্পর্কে কিছু কথা : 

১) মহিলারা পর্দা ঠিক রেখে জিয়ারত করতে পারবে।
২) পর্দা নষ্ট হওয়ার আশংকা থাকলে জিয়ারত করতে যাওয়ায় নিষেধাজ্ঞা আছে।
৩) নবীগন ও অলীগনের মাযার এবং মা-বাবা,ভাই-বোন,স্বামী, চাচা-চাচী এক কথায় নিকট আত্মীয়দের কবর ফজিলতের জন্য ও মায়া-মুহাব্বতের জন্য জিয়ারত করা যাবে।
৪) হাদিসে মহিলাদের খুব ঘন, ঘন কবর জিয়ারতে নিষেধাজ্ঞা এসেছে এবং শুধুমাত্র তাদেরই লানত করা হয়েছে।
দলিল নং-০১
Main Concept :

It is permitted for women to visit a graveyard, if there is (a) no fear of fitna and (b) no wailing or excessive lamenting. [Ibn `Abidin, Radd al-Muhtar]

→→→ 1.Those who object to the visitation of graves by women use three hadiths :

as their proof, two of these being the weak-chained narrations,

(a) "Allah curses the women who visit the graves"1 (la`ana Allahu zâ'irât al-qubûr) [weak]

________
দলিল নং-০২
Authenticity :

Narrated from Abu Hurayra by Ibn Hibban in his Sahih (7:452 #3178) with a weak chain because of `Umar ibn Abi Salama ibn `Abd al-Rahman al-Zuhri who is weak as stated by al-Arna'ut and Ma`ruf in Tahrir al-Taqrib (3:74 #4910).

Also narrated from Hassan ibn Thabit from the Prophet - Allah bless and greet him - by Ibn Abi Shayba (3:31) with a weak chain because of `Abd al-Rahman ibn Bahman who is of unknown rank as a narrator (majhûl).

The hadith itself is acceptable as "fair due to witness and corroborating chains and versions" (hasan lighayrih) as stated by al-Arna'ut in the Musnad (5:128 n. 2).

(b) "Allah curses the women who visit the graves and take them for places of worship and candles,"2 the third one being, (Weak)

Authenticity :

Abu Dawud,
al-Nasa'i

________
হাদিসের মান পর্যালোচনা
হাদীসটির সনদ বা সূত্রগত সমস্যা :

1. বিশিষ্ট ওয়াহাবী হাদীসবিদ নাসিরউদ্দীন আলবানী ইবনে আব্বাসের হাদীসটি উল্লেখের পর বলেছেন,‘ এ হাদীসটি আবু দাউদ ও অন্যরা বর্ণনা করেছেন কিন্তু সনদের দিক থেকে তা দুর্বল (অর্থাৎ তাতে কয়েকজন দুর্বল বর্ণনাকারী রয়েছেন)। যদিও পূর্ববর্তী আলেমদের অনেকেই উক্ত হাদীসের ভিত্তিতে কথা বলেছেন কিন্তু আমাদেরকে অবশ্যই সত্যকে বলতে হবে ও তার অনুসরণ করতে হবে।’

2. এ হাদীসটিকে যারা দুর্বল বলেছেন তাদের মধ্যে মুসলিমও রয়েছেন। তিনি তার‘ আত তাফসীল’ গ্রন্থে বলেছেন : হাদীসটি নির্ভরযোগ্য নয়। যেহেতু হাদীসটির সনদে আবু সালিহ বাজাম রয়েছে,হাদীসবিদগণ তা গ্রহণে আপত্তি করেছেন। ইবনে আব্বাস হতে বর্ণনাকারী রাবীর ব্যাপারেও সন্দেহ রয়েছে যে ইবনে আব্বাস হতে এ হাদীসটি শুনেছে কিনা বা শুনার সম্ভাবনা ছিল কিনা?

3. নাসিরুদ্দিন আলবানী বলেছেন : উক্ত হাদীসটি যে দুর্বল আমি আমার‘ আল আহাদিসুজ জায়িফা ওয়াল মাওজুয়া ও আসারু হাস সাইয়ি ফিল উম্মাহ’ গ্রন্থে তা প্রমাণ করেছি। হাদীস শাস্ত্রবিদদের কেউই আবু সালিহ বাজামের বর্ণিত হাদীসসমূহ হতে প্রমাণ উপস্থাপন করেন না। কারণ তাদের নিকট সে দুর্বল বর্ণনাকারী এবং কেউই তাকে বিশ্বস্ত বা নির্ভরযোগ্য বলেন নি। তবে ইবনে হাব্বান ও আজলী তাকে নির্ভরযোগ্য বললেও তারা উভয়েই অতি উদারতার দোষে দুষ্ট। অন্য কোন সূত্রে বর্ণিত কোন সমর্থক হাদীসও আমরা এক্ষেত্রে পাই না

________
→→→ Explaination of Above 2 hadiths : Actually Prophet (sm) cursed about whom?

(c) There are numerous hadith that have been narrated by Sayyiduna Abu Hurairah (RA) and Sayyiduna Hassan ibn Thabit that are authentic, but the subtle difference is in the word used for female visitors of graves. These are the hadith:

 "Allah curses the women who````` frequently````` visit the graves" (la`ana Allahu zawwârât al-qubûr). [Sahih]

So we can deduce from this that the ahadith that state زَوَّارَاتِ ‘women who frequently visit graves’ is more authentic and should be practiced upon and that the hadith that state زَائِرَاتِ ‘women who visit graves’ is weak and cannot be used as a proof for the prohibition.

Sunan al-Tirmidhî (1056) and
Sunan Ibn Mâjah (1576)] This hadîth is at least good (hasan), and it is supported by other narrations to the level of being authentic (sahîh).
Ahmad; from Ibn `Abbas by Ibn Majah with a weak chain because of Abu Salih; and from
Hassan ibn Thabit by Ibn Majah and Ahmad with a weak chain because of `Abd al-Rahman ibn Bahman. Note: Ibn Majah's versions have zuwwârât

Evidence that women should not frequent visits to the graveyard :

1. Abû Hurayrah relates that the Prophet (peace be upon him) cursed the women who are frequent visitors of the graves.” [Sunan al-Tirmidhî (1056) and Sunan Ibn Mâjah (1576)] This hadîth is at least good (hasan), and it is supported by other narrations to the level of being authentic (sahîh).

2. Hassân b. Thâbit relates: “Allah’s Messenger (peace be upon him) cursed the women who are frequent visitors of the graves. [Sunan Ibn Mâjah (1574)] Al-Albânî declares this hadîth to be acceptable (maqbûl) and sufficient for strengthening the hadîth of Abû Hurayrah to the level where it is authetic (sahîh).

________
→→→ Explaination & Clearification of these above hadiths :

the sense that the curse does not concern women who visit the graves in absolute terms, but only those women who both
(1) visit excessively and
(2) commit certain reprehensible acts during visitation as stated
by al-Tirmidhi, al-Baghawi, al-Tahawi, al-Qurtubi, and others

Reference :

al-Tirmidhi in his Sunan after narrating the hadith of zawwârât from Abu Hurayra;
al-Tahawi in Sharh Mushkil al-Athar (12:179-186);
al-Baghawi in Sharh al-Sunna (2:417, 5:464); and
al-Qurtubi in his Tafsir (20:170),
al-Shawkani in Nayl al-Awtar (chapters on burial and the rulings pertaining to graves).

On this basis, al-Albânî said: “It therefore becomes clear regarding this hadîth that the properly preserved wording is “frequent visitors”, since this is what is agreed upon in the hadîth of Abû Hurayrah and the hadîth of Hassân, as well as the narration of the majority of narrators of the hadîth of Ibn `Abbâs.”

He then says: “The word zawwârât indicates that the curse is directed only at women who visit the graves excessively and no one else. Therfore, this hadîth cannot be used to contradict the previously mentioned hadîth that indicate it is encouraged for women to visit the graveyard, because this hadîth is specific and those hadîth are general. Each hadîth, therefore, must be applied to its own context.”

He explains the reason why women should not visit the graves excessively: “This could lead them to fall into something that is contrary to Islamic teachings, like wailing, making a public display of themselves, taking the graves as places or relaxation and holiday, or wasting time in idle conversation. This is just like the situation that we see today in some Muslim countries. This is what is meant by the hadîth.”

[Refer to: al-Albânî, Ahkâm al-Janâ’iz wa Bada`uhâ (229-237)]

This Narration comes from different narration both Sahih-Hasan
________
Clearify this Hadith More :

Imam Al-Qurtubi said: "The curse mentioned in this hadith applies only to those women who visit graves frequently. The reason for this curse lies perhaps in the fact that it involves infringement of the rights of the husband, and leads to adornment and exhibition of their beauty to strangers, and shouting, yelling, and other similar things." It may be said that, "If no such harm is feared from women visiting graves, then there is no valid reason for preventing them from visiting graves, for indeed remembrance of death is something that both men and women equally need.

Sayyid al-Rifa`i, the above narrations "agreed-upon the Law" for the prohibition of women from visiting graves in Islam. But Accordingly, the majority of the Ulema concur that women are permitted to visit the graves.

________
WOMEN ARE PERMITTED TO VISIT THE GRAVES
→→→ women are permitted to visit the graves :

if there is no danger of temptation and sin.This is established by the following proofs:

এই হাদিসে কবর জিয়ারত করার আদেশ দিয়েছেন কিন্তু মহিলাদের এখানে কোন নিষেধও করেন নি।এই আদেশ পুরুষ মহিলা সবার জন্যই।

সুনানে ইবনে মা’জাতে ইবনে মাসউদের ভাষায়:-

اِنَّ رَسُولَ الله (ص) قال : کُنتُ نَهَيتُکُم عَن زيارة القُبورَ فَزُوُروها فَا نَّها تُزَهِّدُ في الدّتيا و تُذَ کِّرُ فِي الآخِرَة

নিশ্চয়ই রাসূনুল্লাহ (সাঃ) বলেন :- আমি (ইতিপূর্বে ) তোমাদেরকে কবর যিয়ারতে নিষেধ করেছিলাম, এখন এগুলোর যিয়ারতে যাও। কারণ কবর যিয়ারত, পৃথিবীতে সংয়ম ও আখারাতের স্মরণ আনয়ন করে।

Reference :
সহী মুসলিম, হাদীস ৯৭৭,
সুনানে নাসাঈ, খঃ৪ পৃঃ৮৯,
সূনানে ইবনে মা’জা খঃ১ পৃঃ৫০০-৫০১,
সুনানে তিরমিযি খঃ৪ পৃঃ২৭৪,
সুনানে আবি দাউদ, হাদীস ৩২৩৫,
মোয়াত্তা মালিক খঃ২ পৃঃ৪৮৫]

English Translation :

The Prophet - Allah bless and greet him - said: "I forbade you to visit the graves but [now] do visit them!"

Narrated as part of a longer hadith: from Burayda by Muslim, al-Tirmidhi (hasan sahîh), ★ Abu Dawud, al-Nasa'i,
Abd al-Razzaq (3:569), and others;
from Abu Sa`id al-Khudri by Ahmad with a chain of sound narrators as stated by al-Haythami (3:58),
Malik, al-Hakim (1990 ed. 1:530) who declared it sound by Muslim's criterion,
al-Bayhaqi in al-Sunan al-Kubra (4:77 #6984),
al-Bazzar with a chain of sound narrators as stated by al-Haythami (3:58); from

ibn Mas'ud by Ibn Majah,

al-Daraqutni in his Sunan (4:259),
Abd al-Razzaq (3:572-573),
Ibn Hibban (3:261),
al-Hakim (1990 ed. 1:531),
 al-Bayhaqi in al-Sunan al-Kubra (4:77 #6983) all with weak chains according to al-Arna'ut;
from Anas by Ahmad and al-Bazzar with chains containing al-Harith ibn Nabhan who is weak according to al-Haythami (4:27),
al-Hakim (1990 ed. 1:531-532), and
al-Bayhaqi in al-Sunan al-Kubra (4:77 #6984).

A'isha - Allah be well-pleased with her - said: "The Prophet - Allah bless and greet him - forbade the visitation of graves then permitted it, and I think he said: `For, truly, they remind you of the hereafter.'"

Narrated by al-Bazzar with a chain of trustworthy narrators as stated by al-Haythami (3:58).

According to the relation of Abu Hurayra, the Messenger of Allah (pbuh) stated as follows:
“Visit the graves because it reminds you of the hereafter.”

Ibn Majah, Janaiz: 47.

________
বিখ্যাত হাদীস বিশারদ, হাফিজে হাদীস আল্লামা হযরত বদরুদ্দীন আইনী রহমাতুল্লাহি আলাইহি 
→→→ বিখ্যাত হাদীস বিশারদ, হাফিজে হাদীস আল্লামা হযরত বদরুদ্দীন আইনী রহমাতুল্লাহি আলাইহি উল্লেখ করেছেন-

لان السيدة فاطمة رضي الله عنها كنت تزور قبر حمز كل جمعة و كانت عايشة رضي الله عنها تزور قبر اخيها عبد الرحمن بمكة كذا

অর্থ: হযরত সাইয়্যিদা ফাতিমাতুয যুহরা রদ্বিয়াল্লাহু আনহা প্রতি শুক্রবার হযরত হামজা রদ্বিয়াল্লাহু আনহু উনার কবর যিয়ারত করতে যেতেন, অনুরূপ ভাবে হযরত আয়েশা সিদ্দিকা রদ্বিয়াল্লাহু আনহা স্বীয় ভাই আব্দুর রহমান রদ্বিয়াল্লাহু আনহু উনার কবর যিয়ারত করার জন্য মক্কা শরীফ যেতেন।”

Reference :

উমদাতুল ক্বারী ফি শরহে বুখারী ৮ম খন্ড ২৫০ পৃষ্ঠা।

Imam Ja`far al-Sadiq narrated with his chain from al-Hasan ibn `Ali that Fatima the daughter of the Prophet (durud)- (may Allah be well-pleased with all of them)! -

used to visit the grave of her uncle Hamza ibn `Abd al-Muttalib every Jumua.1
and she used to pray and weep there.2
Another version adds that she had marked the grave with a rock in order to recognize it.3

Reference :

1 Narrated to here from Ja`far ibn Muhammad, from his father, without mention of al-Hasan by `Abd al-Razzaq (3:572) with an interrupted (munqati`) chain.

2. Narrated by al-Hakim (1990 ed. 1:533, 3:30) who declared its chain sound, al-Bayhaqi, al-Sunan al-Kubra (4:78), and Ibn `Abd al-Barr in al-Tamhid (3:234) although al-Dhahabi condemns it strenuously while al-Bayhaqi alludes to its weakness.

3. Al-Athram and Ibn `Abd al-Barr narrated it as mentioned by al-Qurtubi in his Tafsir (10:381); also `Abd al-Razzaq (3:574) with a very weak chain because of al-Asbagh ibn Nubata, who is discarded (matrûk) as a narrator.

________
অন্যান্য ইমামগনের জবাব
Al-Bayhaqi, Ibn Hajar and al-Nawawi said that the above narrations show that it is permitted for women to visit the graves in confirmation of````` `A'isha's visitation of her brother.``````

Al-Bayhaqi, al-Sunan al-Kubra (4:78),
Ibn Hajar, Fath al-Bari (1959 ed. 3:184);
al-Nawawi, Sharh Sahih Muslim (7:41-42).

Hadrat Abdallah ibn Abi Mulaikah (r.a.) is also reported to have said,

"Once Aishah (the wife of the Prophet) returned after visiting the graveyard. I asked, 'O Mother of the Believers, where have you been?'

She said: 'I went out to visit the grave of my brother Abd ar-Rahman.'

I asked her: 'Didn't the Messenger of Allah, peace be upon him, prohibit visiting graves?'

She said, 'Yes, he did forbid visiting graves during the early days, but later on he ordered us to visit them'."

Sunan Ibn Majah, 4: 439
Abd al-Razzaq (3:518) and
Ibn `Abd al-Barr in al-Tamhid (6:261).

Abu Ya`la (8:284) with a sound chain,
Mustadrak al-Hakim (1990 ed. 1:532),
al-Bayhaqi in al-Sunan al-Kubra (4:78 #6993)

Ibn Hajar, Fath al-Bari (1959 ed. 3:184);
al-Nawawi, Sharh Sahih Muslim (7:41-42).

Ibn `Abd al-Barr mentions that Imam Ahmad adduces this report as proof that women are permitted to visit the graves.
Ibn `Abd al-Barr, al-Tamhid (3:234).

A'isha visited came to Mecca after her brother's death saying, "Where is the grave of my brother?" Then she came to the grave and prayed over him, a month after his death.

(Ibn Abi Mulayka by al-Bayhaqi in al-Sunan al-Kubra 4:49).

Another version states that Ibn Abi Mulayka said: "`A'isha's brother died six miles away from Makka, so we carried him until we reached Makka and buried him there. `A'isha came to us after that and reproached us for doing so. Then she said: `Where is the grave of my brother?' We showed it to her and she alighted in her howdah and prayed at his grave."

Abd al-Razzaq (3:518) and
Abd al-Barr in al-Tamhid (6:261).

________
উম্মল মুমেনিন হযরত সাইয়্যেদাহ আয়েশা (رضي الله عنه) 
→→→ উম্মল মুমেনিন হযরত সাইয়্যেদাহ আয়েশা (رضي الله عنه) নিজে রাসুলুল্লাহ (সা) এর রওজা মোবারক জিয়ারত করতেন :-
তিনি বর্ণনা করেন:-

যে ঘরে মহানবী (ﷺ) ও আমার পিতা (আবূ বকর – রা:)-কে দাফন করা হয়, সেখানে যখন-ই আমি প্রবেশ করেছি, তখন আমার মাথা থেকে পর্দা সরিয়ে ফেলেছি এই ভেবে যে আমি যাঁদের যেয়ারতে এসেছি তাঁদের একজন আমার পিতা ও অপরজন আমার স্বামী। কিন্তু আল্লাহর নামে শপথ! যখন হযরত উমর ফারূক (رضي الله عنه) ওই ঘরে দাফন হলেন, তখন থেকে আমি আর কখনোই ওখানে পর্দা না করে প্রবেশ করি নি; আমি হযরত উমর (رضي الله عنه)-এর প্রতি লজ্জার কারণেই এ রকম করতাম।

Reference :-
মুসনাদে আহমদ ইবনে হাম্বল, ৬ষ্ঠ খণ্ড, ২০২ পৃষ্ঠা, হাদীসঃ ২৫৭০১
আল-বাছায়ের ৭৯
মোস্তাদরাক আল-হাকিম, হাদীসঃ ৩/৬৩, হাদিস ৪৪০৬
মোস্তাদরাক আল-হাকিম, হাদীসঃ ৪/৮, হাদিস ৬৭২১
যুরকাশী : আল-ইজাবাহ : হাদিস - ৬৮
হাইছমী : মাজমাউল যাওয়ায়েদ : ৮/২৬ এবং ৯/৩৭ পৃ

সনদ পর্যালোচনা :

ইমাম নূরুদ্দীন হায়তামী (رحمة الله) এই হাদীসটি সম্পর্কে বলেন:

এটি ইমাম আহমদ (رحمة الله) কর্তৃক বর্ণিত এবং এর বর্ণনাকারীরা সবাই সহীহ।
— মজমাউয্ যাওয়াইদ, ৯:৪০, হাদীসঃ১২৭০৪

ইমাম আল-হাকিম (رحمة الله) এটি বর্ণনা করার পর বলেন,

এই হাদীসটি বোখারী ও মুসলিমের শর্ত অনুযায়ী সহীহ।
— মোস্তাদরাক আল-হাকিম, হাদীসঃ ৩/৬৩, হাদিস ৪৪০৬

ইমাম হাইছমী বলেন, উক্ত হাদিসের বর্ননাকারীগন সহিহ হাদিসের রাবী।

ইমাম জরকশী বলেন, এ হাদিস বুখারী ও মুসলিম এর শর্তানুযায়ী সহিহ।

নাসিরুদ্দীন আলবানী আল-মোবতাদি আল-মাশহুর (কুখ্যাত বেদআতী) এই হাদীসকে মেশকাতুল মাসাবিহ গ্রন্থের ওপর নিজ ব্যাখ্যামূলক ‘তাখরিজ’পুস্তকে সমর্থন করেছে (# ১৭১২)।


প্রশ্নঃ মাজারে গেলে দেখা যায় কোন লোক চুম্বন করে কিংবা দাঁড়িয়ে মাজার জিয়ারত করে কেউ বসে করে কোনটি উচিত?
________
❏ প্রশ্নঃ মাযারে গেলে দেখা যায় কোন লোক দাঁড়িয়ে মাযার যিয়ারত করে কেউ বসে করে কোনটি উচিত� মাযারে গিয়ে চারিদিকে চুমু দেয়া কি জায়েয, নাকি নাজায়েয� মাযার যিয়ারত করে আসার সময় মাযার পেছনে করে আসা ঠিক না বেঠিক� বিস্তারিত জানালে উপকৃত হব। #MustShAre

✍উত্তরঃ আল্লাহর পূণ্যাত্মা বান্দা তথা অলীদের কবর শরীফ যিয়ারত করা বা যিয়ারতের উদ্দেশ্যে সফর করা জায়েয ও পূণ্যময় কাজ। যিয়ারত দাঁড়িয়ে বা বসে উভয় অবস্থায় করা যায়। তবে যিয়ারতের সময় ততটুকু দূরত্ব বজায় রেখে দাঁড়িয়ে বা বসে যিয়ারত করবে যতটুকু দূরত্ব তাঁর জীবদ্দশায় রাখা হত।

আর যিয়ারতের পর আল্লাহর অলীগণের মাযারকে সামনে নিয়ে মুহাব্বত ও ভক্তিসহকারে ধীরে-আস্তে তাঁদের মাযার শরীফ থেকে বের হওয়াটা আদব ও তাঁদের প্রতি শ্রদ্ধা ও সম্মান প্রদর্শনের নামান্তর। আর আল্লাহর পূণ্যাত্মা বান্দাদের সাথে লাগানো মাটি ইত্যাদি আল্লাহর তাজাল্লি, রহমত ও বরকত বর্ষণের স্থান। তাতে ভক্তিস্বরূপ চুম্বন করাতে কোন কোন ফকিহর দৃষ্টিতে অসুবিধা নেই। কোন কোন ফকিহ নিষেধ করেছেন যাতে চুম্বন করতে গিয়ে বেয়াদবী হয়ে না যায়। তবে মাযারের সম্মানার্থে সিজদা করা অধিকাংশ ফক্বীহ্‌গণের মতে নাজায়েয ও গুনাহ্‌।

[কিতাবুল আশবাহ্‌ ওয়ান্‌ নাজায়ের, কৃত ইমাম ইবনে নুজাইম আল্‌-মিসরি আলহানাফী রহমাতুল্লাহি আলাইহি, ১ম খণ্ড, ফন্নে আওয়াল, ইমাম আহমদ রেযা কর্তৃক রচিত আয্‌ যুবদাতুয্‌ যাকিয়্যাহ্‌ এবং রদ্দুল মুহতার কৃত ইমাম ইবনে আবেদীন আশ্‌-শামী আল্‌ হানাফী রহমাতুল্লাহি আলাইহি যিয়ারত অধ্যায় ইত্যাদি।

[সূত্র. যুগ-জিজ্ঞাসা, পৃ. ২২-২৩]
।।।
মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ অছিয়র রহমান আলকাদেরী
প্রধান ফকিহ্-জামেয়া আহমদিয়া সুন্নিয়া আলিয়া, চট্টগ্রাম।
যুগ জিজ্ঞাসা (প্রশ্ন-উত্তর)
প্রচারেঃ facebook.com/SunniAqidah
প্রকাশনায় : আনজুমান-এ রহমানিয়া আহমদিয়া সুন্নিয়া ট্রাস্ট
৩২১ দিদার মার্কেট, দেওয়ান বাজার, চট্টগ্রাম।
www.anjumantrust.org


প্রশ্নঃ আউলিয়া কেরামের কবরের পার্শ্বে শিশুদের মাথা মুন্ডানো হারাম। এ সম্পর্কে অভিমত কি?
________
❏ প্রশ্নঃ আউলিয়া কেরামের কবরের পার্শ্বে শিশুদের মাথা মুন্ডানো হারাম। এ সম্পর্কে অভিমত কি� #MustShAre

✍উত্তরঃ নবজাতক শিশুকে গোসল করানোর পর আউলিয়া কেরামের মাযারে হাজির করা হয়। এতে বরকত নিহিত রয়েছে। রাসূলের যমানায় শিশুদেরকে তাঁর নূরানী খেদমতে হাজির করা হতো। এখনো মদীনা শরীফে রাওযায়ে আকদাসে নিয়ে যাওয়া হয়। হযরত আবু নাঈম [رحمه الله عليه] 'দালায়েলুন নবুয়ত' কিতাবে হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস [رضى الله عنهما] থেকে বর্ণনা করেছেনঃ সম্মাণিতা হযরত মা আমেনা [رضي الله ﺗﻌﺎﻟﯽٰ عنها] ফরমায়েছেন যে- "রাসূল [ﷺ] জন্মগ্রহণ করলে এক টুকরা মেঘমালা; যা থেকে ঘোড়া ও পাখির আওয়াজ আসছিল। তা আমার থেকে হুযূর আকদাস [ﷺ] কে নিয়ে যায়। আমি এক আহবানকারীকে ডাক দিতে শুনলাম- [ طوفو بمحمد على موالد النبيين ] 'মুহাম্মদ [ﷺ] কে নবীগণ [عليهم السلام]'র জন্মস্থানে নিয়ে যাও'।"

চুল মুন্ডানো দ্বারা যদি আক্বীকার দিনের চুল হয় তাহলে তা কদার্য বস্তুকে দূর করা। এগুলো পবিত্র স্থান মাযারে নিয়ে যাওয়া অনর্থক। বরং চুল ঘরে মুন্ডানোর পর শিশুকে নিয়ে যাবে। তারপরও উহাকে হারাম বলা মনগড়া শরীয়ত।

কতেক মূর্খ মহিলাদের প্রথা হল তারা শিশুর মাথার উপর একেক অলীর নামে নির্দিষ্ট সময়ের জন্য ঝুঁটি রাখে। মেয়াদকাল অতিক্রম হওয়া পর্যন্ত বহুবার চুল মুন্ডালেও ঐ ঝুঁটি (অক্ষত) রাখে। মেয়াদ শেষ হলে মাযারে নিয়ে ঝুঁটিসহ চুল মুন্ডানোর প্রথা অবশ্যই দলীলবিহীন ও বিদআত। [ والله تعالى أعلم ]
।।।
[সূত্রঃ আস্ সানিয়াতুল আনীকা ফী ফাতাওয়া-ই আফ্রিকা; প্রশ্ন নং-৫৬, পৃ. ৭৩]
মূলঃ ইমামে আহলে সুন্নাত আ'লা হযরত ইমাম শাহ আহমদ রেযা খান ফাযেলে বেরলভী [رحمه الله عليه]
প্রচারেঃ facebook.com/SunniAqidah
বঙ্গানুবাদঃ মাওলানা মুহাম্মদ ইছমাইল
www.anjumantrust.org


নিয়্যত করে জিয়ারতের উদ্দেশ্যে সফর করা জায়েজ
________
ওহাবীরা মুর্খতার শেষ সীমানায় পোছে গেছে। তারা আজ-কাল প্রচার করে জিয়ারতের নিয়্যতে সফর করা নাকি হারাম। এসব প্রচার মুলত মাযার থেকে মানুষকে বিমুখ করার অপচেষ্টা ছাড়া আর কিছু নয়। আসুন একটু বিশ্লেষন করে দেখি।
তাদের কাছে আমার প্রশ্ন হল "

১) নং :- জিয়ারত করা কি জায়েয নাকি নাজায়েয? তাদের জবাব হবে জায়েয।
২) নং :- জিয়ারত করা কি সওয়াবের কাজ নাকি গুনাহের কাজ? তাদের জবাব হবে সওয়াব।
৩) নং :- যদি জায়েয হয়ে থাকে আর সওয়াবের কাজ হয়ে থাকে তাহলে প্রত্যেক নেক কাজের জন্য নিয়্যত করে নেক কাজ করা সেটা কি হাদিসে আছে নাকি নাই? তাদের জবাব হবে আছে।
৪) নং :- যদি থেকে থাকে কোন মুর্খের মত এসব প্রশ্ন করেন যে নিয়্যত করে যাওয়া যাবে না? ঠাস করে বলে দিবে এর দলিল নেই।
৫) নং :- নেক কাজের জন্য নিয়্যত করা সেটাও তো এই কাজের দলিল তাই না? আর যে আল্লাহ আপনার মৃত্যু পর্যন্ত, আখিরাত পর্যন্ত জানেন তার কাছে কি লুকিয়ে লুকিয়ে অন্য কোন কাজের জন্য বের হতে পারবেন যা নাকি আল্লাহ জানেন না? (নাউযুবিল্লাহ) এ কত বড় পথভ্রষ্টতা। তাদের জবাব: নিশ্চুপ।

________
কবর জিয়ারত জায়েয এবং উত্তম সওয়াবের কাজ
→→→ কবর জিয়ারত জায়েয এবং উত্তম সওয়াবের কাজ :

"মিশকাত শরীফে” কবর যিয়ারত প্রসঙ্গে ” যিয়ারাতুল কুবুর” বা কবর যিয়ারত নামক একটা অধ্যায় রচনা করা হয়েছে ! যেমন :-

عن بريدة رضي الله عنه قال قال رسول الله صلي الله عليه و سلم كنت نهيتكم عن زيارة القبور فزوروها 

অর্থ : হযরত বুরায়দা রদ্বিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্নিত, হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এরশাদ করেছেন, আমি তোমাদের কবর যিয়ারত করতে নিষেধ করেছিলাম, এখন তোমরা তা করতে পারো |’

দলীল-
মুসলিম শরীফ
মিশকাত শরীফ ১৬৭০।

অপর হাদিসে আছে :

كنت نهيتكم عن زيارة القبور فزوروها فا نها نزهد في الدنيا وتذكرة الاخرة 

অর্থ : হযরত ইবনে মাসুদ রদ্বিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্নিত, নিশ্চয়ই হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এরশাদ করেছেন, আমি তোমাদের কবর যিয়ারত করতে নিষেধ করেছিলাম , এখন তোমরা তা করতে পারো | কেননা উহা দুনিয়ার আসক্তি কমায় এবং আখিরাতকে স্মরন করায় !”

রেফারেন্সঃ 
ইবনে মাজাহ
মিশকাত শরীফ ১৬৭৭

________
ইমামদের জবাব
হানাফী মাযহাবের বিখ্যাত ইমাম আল্লামা ইবনে আবেদীন শামী রহমাতুল্লাহি আলাইহি বলেন,

وبزيارة القبور اي لا با با ءس بهابل تندب 

অর্থ- কবর যিয়ারত এতে কোন অসুবিধা নেই, বরং এটা মোস্তাহাব!

রেফারেন্সঃ 
ফতোয়ায়ে শামী ২/২৪২

ইমামগন জীবনে একবার কবর যিয়ারত ওয়াজিব ফতোয়া দিয়েছেন। ইমাম ইবনে হাজম রহমাতুল্লাহি আলাইহি বলেন,-

“জীবনে একবার কবর যিয়ারত করা ওয়াজিব।”

রেফারেন্সঃ

আইনী ৪র্থ খন্ড ৭৬ পৃষ্ঠা।
ফতহুল মুলহীম ২য় খন্ড ৫১ পৃষ্ঠা।
বজলুল মাজহুদ ৪ খন্ড ২১৪ পৃষ্ঠা।

________
প্রশ্ন : জিয়ারতের নিয়তের সফর করা জায়েয কিনা?
জবাব : শুধু জায়েযই নয় বরং উত্তম সওয়াবের কাজ।
জায়েয ও সওয়াবের কাজে নিয়্যত করাও সওয়াবের কাজ
→→ → জায়েয ও সওয়াবের কাজে নিয়্যত করাও সওয়াবের কাজ :

রাসূল ﷺ বলেন, إﻧﻤﺎ اﻷﻋﻤﺎل ﺑﺎﻟﻨﻴﺎ ت

প্রত্যেকটি আমল(কর্ম) নিয়তের উপর নির্ভরশীল বা সকল কাজের ফলাফল নিয়ত অনুযায়ী পাবে। (বুখারী ও মুসলিম)

হুমায়দী (রহঃ) আলকামা ইবনু ওয়াক্কাস আল-লায়সী (রহঃ) থেকে বর্ণিত, আমি উমর ইবনুল খাত্তাব (রাঃ)-কে মিম্বরের ওপর দাঁড়িয়ে বলতে শুনেছিঃ আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলতে শুনেছিঃ প্রত্যেক কাজ নিয়তের সাথে সম্পর্কিত। আর মানুষ তার নিয়ত অনুযায়ী ফল পাবে।

Reference :

গ্রন্থঃ সহীহ বুখারী (ইফাঃ)
অধ্যায়ঃ ১/ ওহীর সূচনা
হাদিস নম্বরঃ [1]

আরো একটি গুরুত্বপূর্ন সহীহ হাদীস শরীফে বর্নিত আছে-

قال رسول الله صلي الله عليه و سلم لامدينت بها قبري و بها بيتي و تربتي وحق علي كل مسلم زيارتها

অর্থ: হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, মদীনা শরীফ আমার ঘর, আর আমার কবরও মদীনা শরীফই হবে। তাই প্রত্যেক মানুষের উচিত এর যিয়ারত করা।”

রেফারেন্সঃ 
মিশকাত শরীফ।
মিরকাত শরীফ।
আশয়াতুল লুময়াত।
শরহূত ত্বীবি।

________
আল্লামা মুহম্মদ ইউসুফ বিন নূরী
এসকল হাদীস শরীফের ব্যাখ্যায় আল্লামা মুহম্মদ ইউসুফ বিন নূরী বলেন-

دهب جمرة الامة الي ان ريارة قبره صلي الله عليه و سلم اعظع القربات
والسفر اليها جاءز بل مندوب مسر وعيتها محل اجماع بلا نزاع

অর্থ: জমহুর উম্মত এর মাযহাব হল রওজা মুবারক যিয়ারত করা উত্তম ইবাদত, আর নিয়ত করে সফর করা শুধু জায়েজই নয় বরং মুস্তাহাব হওয়ার ব্যাপারে সকলেই একমত এতে কোন প্রকার অসুবিধা নেই।”

রেফারেন্সঃ
শরহে তিরমিযী ৩য় খন্ড ৩২৯ পৃষ্ঠা।
মা’আরিফুস সুনান।

________
 আল্লামা আব্দুর রহমান যাফীরী রহমাতুল্লাহি আলাইহি
এ প্রসংগে আল্লামা আব্দুর রহমান যাফীরী রহমাতুল্লাহি আলাইহি বলেন-

ولا فرق في الزيارة بين كون المقابر قريبة او بعيدة

অর্থ: কবর যিয়ারতের ক্ষেত্রে নিকট ও দূরের কোন পার্থক্য নাই।”

রেফারেন্সঃ
কিতাবুল ফিক্বাহ আলা মাযাহিবিল আরবায়া ১ম খন্ড ৫৪০ পৃষ্ঠা।

কবর মুবারক যিয়ারতের ইচ্ছা পোষণকারীর জন্য কবর যিয়ারতের সাথে সাথে মসজিদে নববী যিয়ারতের ও তাতে নামায আদায়ের নিয়্যাত রাখা উচিৎ। 

দলিল-
(শরহুয যুকরানী আ’লাল মাওয়াহিব-১২/১৮৩-১৮৪)।

________
হযরত আল্লামা ইবনে আবেদীন শামী রহমাতুল্লাহি আলাইহি
হযরত আল্লামা ইবনে আবেদীন শামী রহমাতুল্লাহি আলাইহি বলেন-

ندب الزيارة وان بعد محلها

অর্থ: দূরবর্তী স্থানেও (কবর) যিয়ারতের জন্য গমন করা মোস্তাহাব।”

রেফারেন্সঃ
শামী ২য় খন্ড ২৪২ পৃষ্ঠা।
হানাফী মাযহাবের বিখ্যাত ইমাম আল্লামা ইবনে আবেদীন শামী রহমাতুল্লাহি আলাইহি বলেন,

وبزيارة القبور اي لا با با ءس بهابل تندب 

অর্থ- কবর যিয়ারত এতে কোন অসুবিধা নেই, বরং এটা মোস্তাহাব!

রেফারেন্সঃ
ফতোয়ায়ে শামী ২/২৪২

________
বিখ্যাত হাদীস শরীফ বিশারদ, হাফিজে হাদীস আল্লামা হযরত বদরুদ্দীন আইনী রহমাতুল্লাহি আলাইহি
বিখ্যাত হাদীস শরীফ বিশারদ, হাফিজে হাদীস আল্লামা হযরত বদরুদ্দীন আইনী রহমাতুল্লাহি আলাইহি উল্লেখ করেছেন-

لان السيدة فاطمة رضي الله عنها كنت تزور قبر حمز كل جمعة و كانت عايشة رضي الله عنها تزور قبر اخيها عبد الرحمن بمكة كذا

অর্থ: হযরত সাইয়্যিদা ফাতিমাতুয যুহরা রদ্বিয়াল্লাহু আনহা প্রতি শুক্রবার হযরত হামজা রদ্বিয়াল্লাহু আনহু উনার কবর যিয়ারত করতে যেতেন, অনুরূপ ভাবে হযরত আয়েশা সিদ্দিকা রদ্বিয়াল্লাহু আনহা স্বীয় ভাই আব্দুর রহমান রদ্বিয়াল্লাহু আনহু উনার কবর যিয়ারত করার জন্য মক্কা শরীফ যেতেন।”

রেফারেন্সঃ
উমদাতুল ক্বারী ফি শরহে বুখারী ৮ম খন্ড ২৫০ পৃষ্ঠা।

________
ইমাম শাফেঈ রহমাতুল্লাহি আলাইহি
শুধু তাই নয় শাফেঈ মাযহাবের ইমাম, ইমাম শাফেঈ রহমাতুল্লাহি আলাইহি তিনি নিজে ইমাম আবু হানিফা রহমাতুল্লাহি আলাইহি উনার মাজার শরীফ যিয়ারত করার জন্য আসতেন ! যেটা ইমাম শাফেয়ী রহমাতুল্লাহি আলাইহি নিজেই বলেন — 

اني لاتبرك بابي حنيفة واجءي الي قبره فاذا عرضت لي حاجة صليت ر كعتين و ساءلت الله تعالي عند قبره فتقضي سريعا

অর্থ : নিশ্চয়ই আমি ইমাম আবু হানিফা রহমাতুল্লাহি আলাইহি হতে বরকত হাসিল করি |যখন আমার কোন সমস্যা দেখা দেয় তখন আমি উনার মাজার শরীফে এসে প্রথমে দুই রাকাত নামাজ আদায় করি | অতঃপর উনার উসীলা দিয়ে আল্লাহ পাকের নিকট সমস্যা সমাধানের জন্য প্রর্থনা করি | তা অতি তাড়াতাড়ি সমাধান হয়ে যায় |”

রেফারেন্সঃ
ফতোয়ায়ে শমী, মুকাদ্দিমা ১ম খন্ড ৫৫ পৃষ্ঠা !

________
বিখ্যাত ওলী আল্লাহ মুজাদ্দিদে আলফে সানী রহমাতুল্লাহি আলাইহি

বিখ্যাত ওলী আল্লাহ মুজাদ্দিদে আলফে সানী রহমাতুল্লাহি আলাইহি তিনি সুলত্বনুল হিন্দ হাবীবুল্লাহ খাজা মঈনুদ্দীন চিশতী আজমেরী রহমাতুল্লাহি আলাইহি উনার মাযার শরীফ যিয়ারত করতে গিয়েছিলেন। এতে যিয়ারত ভিন্ন আর অন্য কোন উদ্দেশ্যে ছিলো না।”

রেফারেন্সঃ
সিরাতে মুজাদ্দিদে আলফে সানী রহমাতুল্লাহি আলাইহি।
আশরাফ আলী থানবী ফতোয়া
আর এ প্রসংগে ওহাবীদের ইমাম আশরাফ আলী থানবী ফতোয়া দিয়েছে-

“পুরুষদের জন্য কবর যিয়ারত করা মুস্তাহাব। যিয়ারত অর্থ দেখাশুনা। সপ্তাহে অন্ততঃ একদিন কবর যিয়ারত করা উচিত। সেদিন শুক্রবার হওয়াই সবচাইতে ভালো। বুজুর্গানে দ্বীনের কবর যিয়ারত করার জন্য সফরে যাওয়াও জায়েজ আছে।”

রেফারেন্সঃ
ইমদাদুল ফতোয়া।

________
হযরত হাজী ইমদাদুল্লাহ মুহাজির মক্কী
দেওবন্দী সকল গুরুদের পীর হযরত হাজী ইমদাদুল্লাহ মুহাজির মক্কী রহমাতুল্লাহি আলাইহি উনার “যিয়াউল ক্বুলুব” কিতাবের শেষে তার অনুসারীদের জন্য “কতিপয় বিশেষ উপদেশ” অনুচ্ছেদে লিখেন-

"মাশায়েখ ও পীর আওলিয়াগনের মাজার যিয়ারত করবেন। অবসর সময় তাদের মাজারের পার্শ্বে এসে রূহানিয়াতসহ মুতাওয়াজ্জুহ হবে এবং স্বীয় পীর মুর্শিদের সরতে তাদের ধ্যান করবে ও ফয়েজ হাসিল করতে সচেষ্ট হবে। কারন তারা আল্লাহ ও রসূলেরকে লাভ করেছে। আর এসবই বরকতময় কর্ম।”


সহীহ হাদীসের আলোকে কবর জিয়ারত


হাদিস ০১-১০

হাদিস-০১
_______________
أَخْبَرَنِي مُحَمَّدُ بْنُ آدَمَ، عَنْ ابْنِ فُضَيْلٍ، عَنْ أَبِ سِنَانٍ، عَنْ مُحَارِبِ بْنِ دِثَارٍ، عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ بُرَيْدَةَ، عَنْ أَبِيهِ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «نَهَيْتُكُمْ عَنْ زِيَارَةِ الْقُبُورِ فَزُورُوهَا، وَنَهَيْتُكُمْ عَنْ لُحُومِ الْأَضَاحِيِّ فَوْقَ ثَلَاثَةِ أَيَّامٍ، فَامْسِكُوا مَا بَدَا لَكُمْ، وَنَهَيْتُكُمْ عَنِ النَّبِيذِ إِلَّا فِي سِقَاءٍ فَاشْرَبُوا فِي الْأَسْقِيَةِ كُلِّهَا وَلَا تَشْرَبُوا مُسْكِرًا»

আব্দুল্লাহ এর পিতা বুয়ায়দা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ:

তিনি বলেন রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, আমি তোমাদের কবর যিয়ারত করতে নিষেধ করেছিলাম। এখন তোমরা কবর যিয়ারত কর। আর আমি তোমাদের তিন দিনের অধিক কুরবানীর গোশত সংরক্ষন করতে বারণ করেছিলাম। এখন তোমরা যতদিন ইচ্ছা সংরক্ষণ করতে পার। আর আমি তোমাদের মশক্ ভিন্ন অন্য কোন পাত্রে নবীয (খুরমা ভিজানো পানি) রাখতে নিষেধ করেছিলাম। এখন তোমরা যে কোন পাত্রে রেখে তা পান করতে পার। হ্যাঁ নেশাদায়ক হলে পান করবে না।

সুনানে আন-নাসায়ী, হাদিস নং ২০৩২
হাদিসের মান: সহিহ হাদিস

হাদিস-০২
_______________
___أَخْبَرَنِي مُحَمَّدُ بْنُ قُدَامَةَ، قَالَ: حَدَّثَنَا جَرِيرٌ، عَنْ أَبِي فَرْوَةَ، عَنْ الْمُغِيرَةِ بْنِ سُبَيْعٍ، حَدَّثَنِي عَبْدُ اللَّهِ بْنُ بُرَيْدَةَ، عَنْ أَبِيهِ، أَنَّهُ كَانَ فِي مَجْلِسٍ فِيهِ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَقَالَ: «إِنِّي كُنْتُ نَهَيْتُكُمْ أَنْ تَأْكُلُوا لُحُومَ الْأَضَاحِيِّ إِلَّا ثَلَاثًا، فَكُلُوا وَأَطْعِمُوا وَادَّخِرُوا مَا بَدَا لَكُمْ، وَذَكَرْتُ لَكُمْ أَنْ لَا تَنْتَبِذُوا فِي الظُّرُوفِ الدُّبَّاءِ وَالْمُزَفَّتِ وَالنَّقِيرِ وَالْحَنْتَمِ انْتَبِذُوا فِيمَا رَأَيْتُمْ وَاجْتَنِبُوا كُلَّ مُسْكِرٍ، وَنَهَيْتُكُمْ عَنْ زِيَارَةِ الْقُبُورِ، فَمَنْ أَرَادَ أَنْ يَزُورَ فَلْيَزُرْ، وَلَا تَقُولُوا هُجْرًا»

আব্দুল্লাহ এর পিতা বুয়ায়দা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ:

তিনি এমন এক বৈঠকে ছিলেন যেখানে রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-ও ছিলেন। তিনি বললেন যে, আমি তোমাদের কুরবানীর গোশত তিন দিনের অধিক খেতে নিষেধ করেছিলাম, এখন তোমরা যতদিন ইচ্ছা নিজেরা খাও অপরকে খাওয়াও এবং জমা করে রাখ। আর আমি তোমাদের বলেছিলাম যে, তোমরা কদুর পাত্র, তৈলাক্ত পাত্র, কাঠের পাত্র এবং হানতাম (আল কাতরার প্রলেপযুক্ত পাত্র) জাতীয় পাত্রে নবীয বানাবে না। এখন তোমরা যাতে ইচ্ছা তাতেই বানাতে পার, হ্যাঁ প্রত্যেক নেশাদায়ক বস্তু থেকে বেঁচে থাকবে। আর তোমাদের কবর যিয়ারত করতে নিষেধ করেছিলাম। এখন যাদের ইচ্ছা তাঁরা যিয়ারত করতে পার, তবে অপ্রয়োজনীয় কথা বলবে না।
  
সুনানে আন-নাসায়ী, হাদিস নং ২০৩৩
হাদিসের মান: সহিহ হাদিস

হাদিস-০৩
______________
___أَخْبَرَنَا قُتَيْبَةُ، قَالَ: حَدَّثَنَا مُحَمَّدُ بْنُ عُبَيْدٍ، عَنْ يَزِيدَ بْنِ كَيْسَانَ، عَنْ أَبِي حَازِمٍ، عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ قَالَ: زَارَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَبْرَ أُمِّهِ، فَبَكَى وَأَبْكَى مَنْ حَوْلَهُ، وَقَالَ: «اسْتَأْذَنْتُ رَبِّي عَزَّ وَجَلَّ فِي أَنْ أَسْتَغْفِرَ لَهَا فَلَمْ يُؤْذَنْ لِي، وَاسْتَأْذَنْتُ فِي أَنْ أَزُورَ قَبْرَهَا فَأَذِنَ لِي، فَزُورُوا الْقُبُورَ فَإِنَّهَا تُذَكِّرُكُمُ الْمَوْتَ»

আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ:

তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর মাতার কবর যিয়ারত করার সময় ক্রন্দন করলেন, তাঁর আশ পাশের সবাইও ক্রন্দন করলেন। রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন যে, আমি স্বীয় প্রভুর কাছে আমার মাতার মাগফিরাতের অনুমতি চাইলাম কিন্তু আমাকে তার অনুমতি দেওয়া হয়নি। অতঃপর আমি তাঁর কবর যিয়ারতের অনুমতি চাইলে তার অনুমতি দেওয়া হয়। তাই তোমরা কবর যিয়ারত কর। কেননা, তা তোমাদের মৃত্যুর কথা স্মরণ করিয়ে দেয়।

সুনানে আন-নাসায়ী, হাদিস নং ২০৩৪
হাদিসের মান: সহিহ হাদিস

হাদিস-০৪
______________
___أَخْبَرَنَا عَمْرُو بْنُ مَنْصُورٍ قَالَ: حَدَّثَنَا عَبْدُ اللَّهِ بْنُ مُحَمَّدٍ وَهُوَ النُّفَيْلِيُّ قَالَ: حَدَّثَنَا زُهَيْرٌ، ح وَأَنْبَأَنَا مُحَمَّدُ بْنُ مَعْدَانَ بْنِ عِيسَى قَالَ: حَدَّثَنَا الْحَسَنُ بْنُ أَعْيَنَ قَالَ: حَدَّثَنَا زُهَيْرٌ قَالَ: حَدَّثَنَا زُبَيْدُ بْنُ الْحَارِثِ، عَنْ مُحَارِبِ بْنِ دِثَارٍ، عَنْ ابْنِ بُرَيْدَةَ، عَنْ أَبِيهِ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: " إِنِّي كُنْتُ نَهَيْتُكُمْ عَنْ ثَلَاثٍ: عَنْ زِيَارَةِ الْقُبُورِ فَزُورُوهَا، وَلْتَزِدْكُمْ زِيَارَتُهَا خَيْرًا، وَنَهَيْتُكُمْ عَنْ لُحُومِ الْأَضَاحِيِّ بَعْدَ ثَلَاثٍ فَكُلُوا مِنْهَا، وَأَمْسِكُوا مَا شِئْتُمْ، وَنَهَيْتُكُمْ عَنِ الْأَشْرِبَةِ فِي الْأَوْعِيَةِ فَاشْرَبُوا فِي أَيِّ وِعَاءٍ شِئْتُمْ، وَلَا تَشْرَبُوا مُسْكِرًا، وَلَمْ يَذْكُرْ مُحَمَّدٌ وَأَمْسِكُوا "

বুরায়দা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ:

তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ আমি তোমাদেরকে তিনটি কাজ থেকে নিষেধ করেছিলাম। যথাঃ কবর যিয়ারত থেকে, এখন তোমরা তা যিয়ারত কর, এর যিয়ারত তোমাদের জন্য অধিক সওয়াবের কারন হবে। আর আমি তোমাদেরকে তিন দিনের পর কুরবানীর গোশত খেতে নিষেধ করেছিলাম, এখন তোমরা তা খেতে পার এবং যত ইচ্ছা রেখে দিতে পার। আর আমি তোমাদেরকে নিষেধ করেছিলাম মদের পাত্রে পান করতে। এখন তোমরা যে কোন পাত্রে ইচ্ছা পান করতে পার। কিন্তু তোমরা নেশাযুক্ত পানীয় পান করবে না। আর রাবী মুহাম্মদ ‘রেখে দিতে পার’------ এ কথাটি উল্লেখ করেন নি।

সুনানে আন-নাসায়ী, হাদিস নং ৪৪২৯
হাদিসের মান: সহিহ হাদিস

হাদিস-০৫
_______________
___أَخْبَرَنَا الْعَبَّاسُ بْنُ عَبْدِ الْعَظِيمِ الْعَنْبَرِيُّ، عَنْ الْأَحْوَصِ بْنِ جَوَّابٍ، عَنْ عَمَّارِ بْنِ رُزَيْقٍ، عَنْ أَبِي إِسْحَاقَ، عَنْ الزُّبَيْرِ بْنِ عَدِيٍّ، عَنْ ابْنِ بُرَيْدَةَ، عَنْ أَبِيهِ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «إِنِّي كُنْتُ نَهَيْتُكُمْ عَنْ لُحُومِ الْأَضَاحِيِّ بَعْدَ ثَلَاثٍ، وَعَنِ النَّبِيذِ إِلَّا فِي سِقَاءٍ، وَعَنْ زِيَارَةِ الْقُبُورِ فَكُلُوا مِنْ لُحُومِ الْأَضَاحِيِّ مَا بَدَا لَكُمْ، وَتَزَوَّدُوا وَادَّخِرُوا، وَمَنْ أَرَادَ زِيَارَةَ الْقُبُورِ، فَإِنَّهَا تُذَكِّرُ الْآخِرَةَ، وَاشْرَبُوا، وَاتَّقُوا كُلَّ مُسْكِرٍ»

বুরায়দা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ:

তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ আমি তোমাদেরকে নিষেধ করেছিলাম তিন দিনের পর কুরবানীর গোশত খেতে; আর মশক ব্যতীত অন্য পাত্রে নবীয তৈরি করতে এবং কবর যিয়ারত করতে। এখন তোমরা কুরবানীর গোশত খেতে পার যত দিন ইচ্ছা এবং সফরে তা পাথেয় হিসেবে নিতে পার এবং তা জমা করে রাখতে পার। আর যে কবর যিয়ারত করতে ইচ্ছা করে, সে যিয়ারত করবে। কেননা তা পরকালকে স্মরণ করিয়ে দেয়। আর তোমরা (যে কোন পাত্রে) পান করবে, কিন্তু প্রত্যেক নেশা জাতীয় দ্রব্য থেকে বেঁচে থাকবে।
  
সুনানে আন-নাসায়ী, হাদিস নং ৪৪৩০
হাদিসের মান: সহিহ লিগাইরিহি

হাদিস-০৬
______________
أَخْبَرَنَا الْعَبَّاسُ بْنُ عَبْدِ الْعَظِيمِ، عَنْ الْأَحْوَصِ بْنِ جَوَّابٍ، عَنْ عَمَّارِ بْنِ رُزَيْقٍ، أَنَّهُ حَدَّثَهُمْ، عَنْ أَبِي إِسْحَقَ، عَنْ الزُّبَيْرِ بْنِ عَدِيٍّ، عَنْ ابْنِ بُرَيْدَةَ، عَنْ أَبِيهِ، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «إِنِّي كُنْتُ نَهَيْتُكُمْ عَنْ لُحُومِ الْأَضَاحِيِّ، فَتَزَوَّدُوا وَادَّخِرُوا، وَمَنْ أَرَادَ زِيَارَةَ الْقُبُورِ، فَإِنَّهَا تُذَكِّرُ الْآخِرَةَ، وَاشْرَبُوا وَاتَّقُوا كُلَّ مُسْكِرٍ»

বুরায়দা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ:

তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লালাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ আমি তোমাদেরকে কুরবানীর গোশত জমা রাখতে নিষেধ করেছিলাম, এখন তোমরা তা খাও এবং জমা করে রাখতে পার। আর যদি কেউ কবর যিয়ারত করতে মনস্থ করে, সে করতে পারে। কেননা, কবর যিয়ারত আখিরাতের কথা স্মরণ করিয়ে দেয়। আর যে কোন পাত্রে তোমরা পানীয় দ্রব্য গ্রহণ করতে পার, কিন্তু মাদকদ্রব্য হতে দূরে থাকবে।

সুনানে আন-নাসায়ী, হাদিস নং ৫৬৫১
হাদিসের মান: সহিহ হাদিস

হাদিস-০৭
_____________
___أَخْبَرَنِي مُحَمَّدُ بْنُ آدَمَ بْنِ سُلَيْمَانَ، عَنْ ابْنِ فُضَيْلٍ، عَنْ أَبِي سِنَانٍ، عَنْ مُحَارِبِ بْنِ دِثَارٍ، عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ بُرَيْدَةَ، عَنْ أَبِيهِ، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «إِنِّي كُنْتُ نَهَيْتُكُمْ عَنْ زِيَارَةِ الْقُبُورِ فَزُورُوهَا، وَنَهَيْتُكُمْ عَنْ لُحُومِ الْأَضَاحِيِّ فَوْقَ ثَلَاثَةِ أَيَّامٍ فَأَمْسِكُوا مَا بَدَا لَكُمْ، وَنَهَيْتُكُمْ عَنِ النَّبِيذِ إِلَّا فِي سِقَاءٍ فَاشْرَبُوا فِي الْأَسْقِيَةِ كُلِّهَا، وَلَا تَشْرَبُوا مُسْكِرًا»

বুরায়দা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ:

তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লালাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ আমি তোমাদেরকে কবর যিয়ারত করতে নিষেধ করেছিলাম; কিন্তু এখন তোমরা কবর যিয়ারত করতে পার। আর আমি তোমাদেরকে তিন দিনের অধিক কুরবানীর গোশত রাখতে নিষেধ করেছিলাম; এখন তোমাদের যতদিন ইচ্ছা গোশত রাখতে পার। আমি তোমাদেরকে মশক ব্যতীত অন্য পাত্রে নাবীয তৈরি করতে নিষেধ করেছিলাম, এখন তোমরা সকল পাত্রেই নাবীয তৈরি করে পান করতে পার, কিন্তু মাদকদ্রব্য পান করবে না।

সুনানে আন-নাসায়ী, হাদিস নং ৫৬৫২
হাদিসের মান: সহিহ হাদিস

হাদিস-০৮
_____________
___أَخْبَرَنَا مُحَمَّدُ بْنُ مَعْدَانَ بْنِ عِيسَى بْنِ مَعْدَانَ الْحَرَّانِيُّ، قَالَ: حَدَّثَنَا الْحَسَنُ بْنُ أَعْيَنَ، قَالَ: حَدَّثَنَا زُهَيْرٌ، قَالَ: حَدَّثَنَا زُبَيْدٌ، عَنْ مُحَارِبٍ، عَنْ ابْنِ بُرَيْدَةَ، عَنْ أَبِيهِ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: " إِنِّي كُنْتُ نَهَيْتُكُمْ عَنْ ثَلَاثٍ: زِيَارَةِ الْقُبُورِ فَزُورُوهَا، وَلْتَزِدْكُمْ زِيَارَتُهَا خَيْرًا، وَنَهَيْتُكُمْ عَنْ لُحُومِ الْأَضَاحِيِّ بَعْدَ ثَلَاثٍ فَكُلُوا مِنْهَا مَا شِئْتُمْ، وَنَهَيْتُكُمْ عَنِ الْأَشْرِبَةِ فِي الْأَوْعِيَةِ فَاشْرَبُوا فِي أَيِّ وِعَاءٍ شِئْتُمْ، وَلَا تَشْرَبُوا مُسْكِرًا "

বুরায়দা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ:

তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লালাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ আমি তোমাদেরকে তিনটি বস্তু হতে নিষেধ করেছিলাম। একটি হল, কবর যিয়ারত, এখন তোমরা কবর যিয়ারত করতে পার। কেননা এতে তোমাদের জন্য উপকার রয়েছে। আর তোমাদেরকে তিন দিনের অধিক কুরবানীর গোশত হতে নিষেধ করেছিলাম; এখন যতদিন ইচ্ছা তা খেতে পার। আমি কিছু পাত্র হতে তোমাদেরকে নিষেধ করেছিলাম, এখন তোমরা যে কোন পাত্রে পান করতে পার, কিন্তু মাদকদ্রব্য পান করবে না।

সুনানে আন-নাসায়ী, হাদিস নং ৫৬৫৩
হাদিসের মান: সহিহ হাদিস

হাদিস-০৯
________________
___حَدَّثَنَا حَامِدُ بْنُ يَحْيَى، حَدَّثَنَا مُحَمَّدُ بْنُ مَعْنٍ الْمَدِينِيُّ، أَخْبَرَنِي دَاوُدُ بْنُ خَالِدٍ، عَنْ رَبِيعَةَ بْنِ أَبِي عَبْدِ الرَّحْمَنِ، عَنْ رَبِيعَةَ، - يَعْنِي ابْنَ الْهُدَيْرِ - قَالَ مَا سَمِعْتُ طَلْحَةَ بْنَ عُبَيْدِ اللَّهِ، يُحَدِّثُ عَنْ رَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم حَدِيثًا قَطُّ غَيْرَ حَدِيثٍ وَاحِدٍ ‏.‏ قَالَ قُلْتُ وَمَا هُوَ قَالَ خَرَجْنَا مَعَ رَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم يُرِيدُ قُبُورَ الشُّهَدَاءِ حَتَّى إِذَا أَشْرَفْنَا عَلَى حَرَّةِ وَاقِمٍ فَلَمَّا تَدَلَّيْنَا مِنْهَا وَإِذَا قُبُورٌ بِمَحْنِيَّةٍ قَالَ قُلْنَا يَا رَسُولَ اللَّهِ أَقُبُورُ إِخْوَانِنَا هَذِهِ قَالَ ‏"‏ قُبُورُ أَصْحَابِنَا ‏"‏ ‏.‏ فَلَمَّا جِئْنَا قُبُورَ الشُّهَدَاءِ قَالَ ‏"‏ هَذِهِ قُبُورُ إِخْوَانِنَا ‏"‏ ‏.
রবী‘আহ ইবনু হুদাইর (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ:

তিনি বলেন, আমি ত্বালহা ইবনু উবাইদুল্লাহ (রাঃ)-কে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে একটি হাদীস ছাড়া অন্য কোন হাদীস বর্ণনা করতে শুনিনি। বর্ণনাকারী বলেন, আমি বললাম, তা কি? তিনি বললেন, আমরা রাসূলুল্লাহ্‌র (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সঙ্গে শহীদদের কবর যিয়ারতে রওয়ানা হই। শেষ পর্যন্ত আমরা ‘হাররা ওয়াকিমের’ উঁচু টিলায় উঠি। আমরা সেখান থেকে নেমে উপত্যকায় বাঁকে কিছু ক্ববর দেখলাম। ত্বালহা (রাঃ) বলেন, আমরা বললাম, হে আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)! এগুলা কি আমাদের ভাইদের ক্ববর? তিনি বললেনঃ আমাদের সাথীদের ক্ববর? অতঃপর আমরা শহীদের ক্ববরের কাছে এলে তিনি বললেনঃ এগুলা আমাদের ভাইদের ক্ববর। [২০৪৩]
  
সুনানে আবু দাউদ, হাদিস নং ২০৪৩
হাদিসের মান: সহিহ হাদিস

হাদিস-১০
______________
___حَدَّثَنَا أَحْمَدُ بْنُ يُونُسَ، حَدَّثَنَا مُعَرِّفُ بْنُ وَاصِلٍ، عَنْ مُحَارِبِ بْنِ دِثَارٍ، عَنِ ابْنِ بُرَيْدَةَ، عَنْ أَبِيهِ، قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم ‏ "‏ نَهَيْتُكُمْ عَنْ ثَلاَثٍ وَأَنَا آمُرُكُمْ بِهِنَّ نَهَيْتُكُمْ عَنْ زِيَارَةِ الْقُبُورِ فَزُورُوهَا فَإِنَّ فِي زِيَارَتِهَا تَذْكِرَةً وَنَهَيْتُكُمْ عَنِ الأَشْرِبَةِ أَنْ تَشْرَبُوا إِلاَّ فِي ظُرُوفِ الأَدَمِ فَاشْرَبُوا فِي كُلِّ وِعَاءٍ غَيْرَ أَنْ لاَ تَشْرَبُوا مُسْكِرًا وَنَهَيْتُكُمْ عَنْ لُحُومِ الأَضَاحِي أَنْ تَأْكُلُوهَا بَعْدَ ثَلاَثٍ فَكُلُوا وَاسْتَمْتِعُوا بِهَا فِي أَسْفَارِكُمْ ‏"‏ ‏.‏

ইবনু বুরাইদাহ (রহঃ) হতে তার পিতার সূত্র থেকে বর্ণিতঃ:

তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ আমি তোমাদেরকে তিনটি বিষয় হতে বিরত থাকতে বলেছিলাম। এখন আমি সেসব বিষয়ে তোমাদেরকে অনুমতি দিচ্ছি। আমি তোমাদেরকে কবর যিয়ারত করতে নিষেধ করেছিলাম। এখন তোমরা তা যিয়ারত করো। কেননা তা দর্শনে (মৃত্যুকে) স্মরণ হয়। আমি তোমাদেরকে পানপাত্র সম্পর্কে নিষেধ করেছিলাম যে, তোমরা চামড়ার পাত্রে নাবীয পান করবে। এখন তোমরা যে কোন পাত্রে পান করতে পারো। কিন্তু তোমরা কখনও মাদক দ্রব্য পান করো না। আমি তোমাদের উপর কুরবানীর গোশতের ব্যাপারে তা তিন দিনের পর না খেতে বলেছিলাম। এখন তোমরা তা (দীর্ঘদিন) খেতে পারো এবং তোমাদের সফরে তা কাজে লাগাতে পারো।

সুনানে আবু দাউদ, হাদিস নং ৩৬৯৮
হাদিসের মান: সহিহ হাদিস


হাদিস ১১-১৯

হাদিস-১১
____________
حَدَّثَنَا أَبُو بَكْرِ بْنُ أَبِي شَيْبَةَ حَدَّثَنَا مُحَمَّدُ بْنُ عُبَيْدٍ عَنْ يَزِيدَ بْنِ كَيْسَانَ عَنْ أَبِي حَازِمٍ عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم صلى الله عليه وسلم زُورُوا الْقُبُورَ فَإِنَّهَا تُذَكِّرُكُمْ الْآخِرَةَ

আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ:

তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, তোমরা কবর যিয়ারত করো। কেননা, তা তোমাদেরকে আখেরাত স্মরণ করিয়ে দেয়। [১৫৬৮]

ফুটনোটঃ
[১৫৬৮] মুসলিম ৯৭৬ ;নাসায়ী ২০৩৪; আবূ দাউদ ৩২৩৪; আহমাদ ৯৩৯৫ তাহকীক আলবানীঃ সহীহ। 

সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদিস নং ১৫৬৯
হাদিসের মান: সহিহ হাদিস

হাদিস-১২
_____________
___حَدَّثَنَا أَبُو بَكْرِ بْنُ أَبِي شَيْبَةَ حَدَّثَنَا مُحَمَّدُ بْنُ عُبَيْدٍ حَدَّثَنَا يَزِيدُ بْنُ كَيْسَانَ عَنْ أَبِي حَازِمٍ عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ قَالَ زَارَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم قَبْرَ أُمِّهِ فَبَكَى وَأَبْكَى مَنْ حَوْلَهُ فَقَالَ اسْتَأْذَنْتُ رَبِّي فِي أَنْ أَسْتَغْفِرَ لَهَا فَلَمْ يَأْذَنْ لِي وَاسْتَأْذَنْتُ رَبِّي فِي أَنْ أَزُورَ قَبْرَهَا فَأَذِنَ لِي فَزُورُوا الْقُبُورَ فَإِنَّهَا تُذَكِّرُكُمْ الْمَوْتَ

আবূ হুরায়রা (রাঃ), থেকে বর্ণিতঃ:

তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তার মায়ের কবর যিয়ারত করেন। তিনি কান্নাকাটি করেন এবং তার সাথের লোকদেরও কাঁদান। অতঃপর তিনি বলেন, আমি আমার রবের নিকট তার জন্য ক্ষমা প্রার্থনার অনুমতি চাইলে তিনি আমাকে অনুমতি দেননি। আমি আমার রবের নিকট তার কবর যিয়ারতের অনুমতি চাইলে তিনি আমাকে অনুমতি দেন। অতএব তোমরা কবর যিয়ারত করো। কেননা তা তোমাদের মৃত্যু স্মরণ করিয়ে দেয়। [১৫৭১]

ফুটনোটঃ
[১৫৭১] মুসলিম ৯৭৬ ;নাসায়ী ২০৩৪; আবূ দাউদ ৩২৩৪; আহমাদ ৯৩৯৫ ইরওয়াহ ৭৭২। তাহকীক আলবানীঃ সহীহ। 

সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদিস নং ১৫৭২
হাদিসের মান: সহিহ হাদিস

হাদিস-১৩
____________
___و حَدَّثَنِي عَنْ مَالِك عَنْ رَبِيعَةَ بْنِ أَبِي عَبْدِ الرَّحْمَنِ عَنْ أَبِي سَعِيدٍ الْخُدْرِيِّ أَنَّهُ قَدِمَ مِنْ سَفَرٍ فَقَدَّمَ إِلَيْهِ أَهْلُهُ لَحْمًا فَقَالَ انْظُرُوا أَنْ يَكُونَ هَذَا مِنْ لُحُومِ الْأَضْحَى فَقَالُوا هُوَ مِنْهَا فَقَالَ أَبُو سَعِيدٍ أَلَمْ يَكُنْ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ نَهَى عَنْهَا فَقَالُوا إِنَّهُ قَدْ كَانَ مِنْ رَسُولِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بَعْدَكَ أَمْرٌ فَخَرَجَ أَبُو سَعِيدٍ فَسَأَلَ عَنْ ذَلِكَ فَأُخْبِرَ أَنَّ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ نَهَيْتُكُمْ عَنْ لُحُومِ الْأَضْحَى بَعْدَ ثَلَاثٍ فَكُلُوا وَتَصَدَّقُوا وَادَّخِرُوا وَنَهَيْتُكُمْ عَنْ الِانْتِبَاذِ فَانْتَبِذُوا وَكُلُّ مُسْكِرٍ حَرَامٌ وَنَهَيْتُكُمْ عَنْ زِيَارَةِ الْقُبُورِ فَزُورُوهَا وَلَا تَقُولُوا هُجْرًا يَعْنِي لَا تَقُولُوا سُوْءًا.

আবূ সা’ঈদ খুদরী (রা) থেকে বর্ণিতঃ:

একবার সফর হতে ফিরবার পর পরিবারের লোকেরা তাঁর সামনে গোশত পেশ করেন। তিনি এটা দেখে বললেন : এটা কুরবানীর গোশত নয় তো? তাঁরা বললেন; হ্যাঁ কুরবানীর। আবূ সা’ঈদ (রা) বললেন : রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইহা নিষেধ করেন নাই কি? তাঁরা বললেন : আপনি যাওয়ার পর এই বিষয়ে রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অন্য হুকুম প্রদান করেছেন। আবূ সা’ঈদ খুদরী (রা) এই বিষয়টি ভাল করে অনুসন্ধান করে দেখার উদ্দেশ্যে বের হয়ে পড়েন। তখন তিনি জানতে পারেন, রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : তিন দিন পর কুরবানীর গোশত খেতে আমি তোমাদেরকে নিষেধ করেছিলাম, এখন যে কোন পাত্রে ইচ্ছা তোমরা তা বানাতে পার, তবে (মনে রেখ) সকল নেশা সৃষ্টিকারী বস্তু হারাম। কবর যিয়ারত করতে তোমাদেরকে আমি নিষেধ করেছিলাম। এখন তোমরা কবর যিয়ারত করতে যেতে পারে, তবে মুখে যেন কোন মন্দ কথা উচ্চারিত না হয়। (সহীহ, বুখারী ৩৯৯৭)

মুয়াত্তা ইমাম মালিক, হাদিস নং ১০২৬
হাদিসের মান: সহিহ হাদিস

হাদিস-১৪
____________
___عَن بُرَيْدَةَ رضي الله عنه، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم صلى الله عليه وسلم: كُنْتُ نَهَيْتُكُمْ عَن زِيَارَةِ القُبُورِ فَزُورُوهَا ». رواه مسلم . وفي رواية: فَمَنْ أرَادَ أنْ يَزُورَ القُبُورَ فَلْيَزُرْ ؛ فإنَّهَا تُذَكِّرُنَا الآخِرَةَ

বুরাইদাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ:

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘আমি তোমাদেরকে (পূর্বে) কবর যিয়ারত করা থেকে নিষেধ করেছিলাম। এখন তোমরা তা যিয়ারত কর।’’ (মুসলিম)

ফুটনোটঃ
অন্য এক বর্ণনায় আছে, ‘‘সুতরাং যে ব্যক্তি কবর যিয়ারত করতে চায়, সে যেন তা করে। কারণ তা আখেরাত স্মরণ করায়।’’ (মুসলিম ১৯৭৭, ৯৭৭, নাসায়ী ২০৩২, ২০৩৩, ৪৪২৯, ৫৬৫১, ৫৬৫২, আবূ দাউদ ৩২৩৫, ৩৬৯৮, আহমাদ ২২৪৪৯, ২২৪৯৪, ২২৫০৬, ২২৫২৯, ২২৫৪৩) 

রিয়াদুস সলেহিন, হাদিস নং ৫৮৬
হাদিসের মান: সহিহ হাদিস

হাদিস-১৫
_____________
___حَدَّثَنَا إِبْرَاهِيمُ بْنُ سَعِيدٍ الْجَوْهَرِيُّ حَدَّثَنَا رَوْحٌ حَدَّثَنَا بِسْطَامُ بْنُ مُسْلِمٍ قَالَ سَمِعْتُ أَبَا التَّيَّاحِ قَالَ سَمِعْتُ ابْنَ أَبِي مُلَيْكَةَ عَنْ عَائِشَةَ أَنَّ رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه وسلم صلى الله عليه وسلم رَخَّصَ فِي زِيَارَةِ الْقُبُورِ

আয়িশাহ্‌ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ:

রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কবর যিয়ারতের অনুমতি দিয়েছেন। [১৫৬৯]

ফুটনোটঃ
[১৫৬৯] আহকাম ১৮১। তাহকীক আলবানীঃ সহীহ। 

সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদিস নং ১৫৭০
হাদিসের মান: সহিহ হাদিস

হাদিস-১৬
_____________
وَعَنْ بُرَيْدَةَ بْنِ الْحَصِيبِ الْأَسْلَمِيِّ - رضي الله عنه - قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ - صلى الله عليه وسلم -: «نَهَيْتُكُمْ عَنْ زِيَارَةِ الْقُبُورِ فَزُورُوهَا» رَوَاهُ مُسْلِمٌ زَادَ التِّرْمِذِيُّ: «فَإِنَّهَا تُذَكِّرُ الْآخِرَةَ

বুরায়দাহ বিন্ হুসাইব আল-আসলামী থেকে বর্ণিতঃ:

তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন- আমি তোমাদের কবর যিয়ারত করতে নিষেধ করেছিলাম, এখন তোমরা তা যিয়ারত করো। তিরমিযীতে অতিরিক্ত আছে- এটা পরকালকে স্মরণ করাবে। [৬২২]

ফুটনোটঃ
[৬২২] মুসলিম ৯৭৭, ১৯৭৭, নাসায়ী ২০৩২, ২০২৩, ৪৪২৯, আবূ দাঊদ ৩৩২৫, ৩৬৯৮, আহমাদ ২২৪৪৯, ২২৪৯৪, ২২৫০৬। 

বুলুগুল মারাম, হাদিস নং ৫৮৫
হাদিসের মান: সহিহ হাদিস

হাদিস-১৭
__________
___وَعَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ - رضي الله عنه - أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ - صلى الله عليه وسلم - لَعَنَ زَائِرَاتِ الْقُبُورِ. أَخْرَجَهُ التِّرْمِذِيُّ، وَصَحَّحَهُ ابْنُ حِبَّانَ

আবূ হুরাইরা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ:

রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কবর যিয়ারতকারী নারীদের প্রতি অভিসম্পাত করেছেন। তিরমিযী, ইবনু হিব্বান একে সহীহ্ বলেছেন। [৬২৪]

ফুটনোটঃ
[৬২৪] তিরমিযী ১০৫৬, ইবনু মাজাহ ১৫৭৬, ইবনু হিব্বান ৩১৭৮ 

বুলুগুল মারাম, হাদিস নং ৫৮৭
হাদিসের মান: সহিহ হাদিস

হাদিস-১৮
_____________
___عَن بُرَيْدَةَ قَالَ : قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللّٰهُ عَلَيْهِ وَسَلَّم كُنْتُ نَهَيْتُكُمْ عَن زِيَارَةِ القُبُورِ فَزُورُوهَارواه مسلم وَفِيْ رِوَايَةٍفَمَنْ أرَادَ أنْ يَزُورَ القُبُورَ فَلْيَزُرْ فإنَّهَا تُذَكِّرُنَا الآخِرَةَ

বুরাইদাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ:

রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, আমি তোমাদেরকে (পূর্বে) কবর যিয়ারত করা থেকে নিষেধ করেছিলাম। এখন তোমরা তা যিয়ারত কর। (মুসলিম ৫২২৮)

অন্য এক বর্ণনায় আছে, সুতরাং যে ব্যক্তি কবর যিয়ারত করতে চায়, সে যেন তা করে। কারণ তা পরকাল স্মরণ করায়।

(কবরের ধারে-পাশে এবং মৃতদেরকে নিয়েই শির্ক ও মূর্তিপূজা শুরু হয়েছে বলে) আমি তোমাদেরকে কবর যিয়ারত করতে নিষেধ করেছিলাম। সুতরাং এখন তোমরা কবর যিয়ারত করতে পার। কারণ, তা তোমাদেরকে আখেরাত স্মরণ করিয়ে দেয়। (মুসলিম ২৩০৫, আবূ দাউদ ৩২৩৫, আহমাদ ৫/৩৫০-৩৫৫) 

এক বর্ণনায় আছে, তোমাদের কবর যিয়ারত যেন তোমাদের কল্যাণ বৃদ্ধি করে। (আহমাদ ৫/৩৫০-৩৫৫ প্রমুখ)

অন্য এক বর্ণনায় তিনি বলেন, সুতরাং যে ব্যক্তি যিয়ারত করার ইচ্ছা করে সে করতে পারে; তবে যেন (সেখানে) তোমরা অশ্লীল ও বাজে কথা বলো না। (নাসাঈ ২০৩২)

হাদিস সম্ভার, হাদিস নং ১৩৯৫
হাদিসের মান: সহিহ হাদিস

হাদিস-১৯
___________
___عَنْ أَنَسِ بْنِ مَالِكٍ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ كُنْتُ نَهَيْتُكُمْ عَنْ زِيَارَةِ الْقُبُوْرِ أَلَّا فَزُوْرُوْهَا فَإِنَّهُ يَرُقُّ الْقَلْبَ وَ تَدْمَعُ الْعَيْنَ وَ تُذَكِّرُ الْآخِرَةِ وَ لَا تَقُوْلُوْا هَجْرًا

আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ:

আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেন, আমি তোমাদেরকে কবর যিয়ারত করতে নিষেধ করেছিলাম। শোনো! এখন তোমরা যিয়ারত করতে পার। কারণ, কবর যিয়ারত হৃদয় নম্র করে, চক্ষু অশ্রুসিক্ত করে এবং পরকাল স্মরণ করিয়ে দেয়। তবে (যিয়ারতে গিয়ে) বাজে কথা বলো না। (হাকেম ১৩৯৩)
  
হাদিস সম্ভার, হাদিস নং ১৩৯৬
হাদিসের মান: সহিহ হাদিস


প্রশ্নঃ মৃতরা কি শোনতে পায়?

জবাবঃ

ওহাবী সালাফীরা সত্য গোপন করে একটি আয়াতের কিছু অংশ ব্যবহার করে অথচ তারা হাকিকত মানতে নারাজ।

আল্লাহ বলেন,"মৃতকে তুমি তো কথা শুনাতে পারবে না।" (সুরা নামল ৮০)

নামল ৮০ আয়াতে আসলে আল্লাহ মৃত বলতে জিবিত কাফিরদের মৃত আত্মাকে বুঝিয়েছে কারন তা হেদায়ত বঞ্চিত।

দেখুন পুরা আয়াতে কি বুঝানো হয়েছে,

আপনি তো শুনাতে পারবেন না মৃতদেরকে এবং যারা বধিরদেরকেও কারন তারা [রাসুল (ﷺ) কে দেখে] পিছনে মুখ ফিরিয়ে চলে যায়। (নামল ৮০)

“আপনি অন্ধদের কে ওদের পথভ্রষ্টতা হতে পথে আনতে পারবেন না। যারা আমার আয়াতে বিশ্বাসী শুধু তারাই আপনার কথা শুনবে। কারণ তারা মুসলমান। (সূরা নামল আয়াত ৮১)

যখন আমরা সূরা নামলের ৮০ এবং ৮১ নম্বর আয়াত এক সাথে পড়ি তখন এটা স্পষ্ট হয়ে যায় যে শব্দ ‘মৃত’ দ্বারা অবিশ্বাসীদের বুঝানো হয়েছে ,এবং তাদের বুঝানো হয়নি যারা আসলেই মারা গেছে ।

দেখুন হাদিসে আরো স্পষ্ট করে দেখি যে জীবিতদেরকেও মৃত বলা হয়েছে।

রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন,

“যারা তাদের আল্লাহকে স্মরণ করে এবং যারা করে না, তারা আসলে জীবিত ও মৃতের মত।” [মুসলিম,বুখারী,ফতহুল বারী]

আবু মুসা (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন,

“যে ঘরে আল্লাহকে স্মরণ করা হয় এবং যে ঘরে আল্লাহকে স্মরণ করা হয় না এমন যে জীবিত ও মৃত।"

[মুসলিম, ইবনে হিব্বান, আল মুসনাদ]

কবরে শায়িত মৃত ব্যক্তিরাও শোনেঃ

হযরত আনাস (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন – “বান্দাকে যখন কবরে রাখা হয় এবং তাকে পিছনে রেখে তার সাথিরা চলে যায় তখনও সে তাদের জুতার শব্দ শুনতে পায়……”

(বুখারী শরীফ, ২য় খন্ড, হাদীস নং ১২৫৭)

হাদীসে আছে, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বদরের যুদ্ধে মৃতদের উদ্দেশ্য করে বলেন ,”হে অমুক এবং অমুক, অমুকের পুত্র অমুক; এবং তুমি, অমুক এবং অমুক, অমুকের পুত্র অমুক এবং অমুক! এটা কি সহজ হতো না যদি আল্লাহ এবং রাসূলুল্লাহকে (ﷺ) মেনে নিতে? আমাদের খোদা আমাদের যে ওয়াদা করেছেন আমরা তা সত্য পেয়েছি । তোমাদের খোদা তোমাদের যে ওয়াদা করেছেন তা কি তোমরা সত্য পেয়েছ ? ”এরপর হজরত উমর (رضي الله عنه) বললেন ,”ইয়া রাসূলুল্লাহ (ﷺ)! প্রাণবিহীন এই শরীরগুলোকে আপনি কি বলছেন? তারা কি শুনতে পায়? যেখানে আল্লাহ বলেছেন নিশ্চই তুমি মৃতদের শোনাতে পারবে না। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) উত্তর দেন ,
”তার শপথ যার হাতে মুহাম্মদের (ﷺ) প্রাণ, আমি যা মাত্র বলেছি তা তুমি ওদের থেকে বেশি শুনোনি।”

[বুখারী ,মুসলিম]

মৃতরা কথাও বলে যা মানুষ ব্যাতীত সবাই শোনতে পায়ঃ

আবূ সাঈদ খুদরী রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, নবী (ﷺ) বলতেন, যখন জানাযা (খাটে) রাখা হয় এবং লোকেরা তা নিজেদের ঘাড়ে উঠিয়ে নেয়, তখন সে সৎ হলে বলে, আমাকে আগে নিয়ে চল।’ আর অসৎ হলে তার পরিবার-পরিজনদের উদ্দেশ্যে বলে, হায় আমার দুর্ভোগ! তোমরা (আমাকে) কোথায় নিয়ে যাচ্ছ?’ মানুষ ছাড়া তার এই আওয়াজ সব জিনিসই শুনতে পায়। যদি মানুষ তা শুনতো, তবে নিশ্চয় বেঁহুশ হয়ে যেত।’’

[বুখারি ১৩১৪, ১৩১৬, ১৩৮০, নাসায়ি ১৯০৯, আহমদ ১০৯৭৯, ১১১৫৮]

আসলে তারা কুরআন হাদিসের মর্ম বুঝে না। নিচের হাদিসটা পড়ে মিলিয়ে নিন এই ওহাবীদের নিয়ে ভবিষ্যৎবানীঃ

আবূ নুমান (রহঃ) আবূ সাঈদ খুদরী (رضي الله عنه) থেকে বর্নিত। নাবী (ﷺ) বলেছেনঃ পূর্বাচল থেকে একদল লোকের অভ্যুদয় ঘটবে। তারা কুরআন পাঠ করবে, তবে তাদের এ পাঠ তাদের কণ্ঠনালী অতিক্রম করবে না অর্থাৎ কলবে পোঁছাবে না। তারা দ্বীন থেকে এমনভাবে বেরিয়ে যাবে, যেভাবে শিকার (ধনূক) থেকে তীর বেরিয়ে যায়। তারা আর ফিরে আসবে না, যে পর্যন্ত তীর ধনুকের ছিলায় না আসে। বলা হল, তাদের আলামত কি? তিনি বললেনঃ তাদের আলামত হল মাথা মুণ্ডন।

হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)

গ্রন্থঃ সহীহ বুখারি (ইফা), অধ্যায়ঃ ৮৬/ তাওহীদ প্রসঙ্গ

হাদিস নাম্বার: 7052


প্রশ্নঃ কবর পাকা করা ইসলামে কোথায় আছে?

উত্তরঃ

বর্তমান সময়ে কবর পাকার বিষয় নিয়ে বহু ওলামায়ে কেরামগনের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া লক্ষ করা যাচ্ছে। কেউ কেউ বলেন জায়েজ আবার কেউ কেউ বলেন নাজায়েজ বা বিদআত ! তাই, আমরা বিতর্কে না জড়িয়ে সর্বপ্রথম আমরা আগে দেখব নূর নবীজী (ﷺ) এ ব্যাপারে কিরূপ আমল করতে নির্দেশ দিয়েছেন।

নূর নবীজী (ﷺ) এর অসংখ্য সহীহ হাদিস শরীফ সমূহ থেকে জানা যায় আল্লাহর মু`মিন বান্দাহগনের কবর পাকা করা জায়েজ ও মুস্তাহাব । বহু শক্তিশালী সনদের হাদীস শরীফ থেকে নূর নবীজী (ﷺ) এবং সাহাবায়ে কেরামগন এরূপ কবর পাকা করেছেন বলে প্রমান পাওয়া যায় । নূর নবীজী (ﷺ) ও সাহাবায়ে কেরামগনের যমানায় কবরকে সামান্য উঁচু করার প্রচলন ছিল । এমনকি সাহাবায়ে কেরামগনের যুগেই স্বয়ং নূর নবীজী (ﷺ) এর রওজা মুবারাক, হযরত আবু বকর সিদ্দীক (رضي الله عنه) ও হযরত উমার (رضي الله عنه) এর মাজার শরীফদ্বয় উঁচু ছিল।

যেমন, এ সম্পর্কে হাদীস শরীফে এসেছে –

عن القا بن محمد قل : دخلت علی عا ءشۃ: يا اماه اكشفي لي عن قبر النبي صلی ﷲ عليه وسلم وصا حبيه فكشفت لي عن ثلاثۃ قبورلا مشرفۃ ولا لاطءۃ مبطوحۃ ببطحاء العرصۃ الحمراء ,

হযরত কাশিম (رضي الله عنه) বর্ননা করেন, একদা আমি মা আয়েশা (رضي الله عنه) এর নিকট উপস্থিত হয়ে বললাম,ওহে মা ! আপনি আমার জন্য রাসূল (ﷺ) ও তার দুই সাহাবীর মাজারদ্বয় উন্মোচন করুন এবং তিনি তাই করলেন। আমি দেখি ঐ কবর শরীফগুলো বেশী উঁচুও ছিল না আবার নিচুও ছিল না। কবর গুলোর উপর ময়দানের লাল কাকর ছড়ানো ছিল।


১.সুনানে আবী দাউদ, হাদিস নং-3225,

২.মুস্তাদরাক আল হাকেম, হাদিস নং-1368,

৩.ইমাম বাগভী: শরহে সুন্নাহ, 5ম খন্ড, 402 পৃষ্ঠা,

৪.ইমাম বায়হাকী: সুনানে কুবরা, হাদিস নং-6758,

৫.মেশকাত শরীফ,149 পৃষ্ঠা হাদিস নং-1712,

৬.ইমাম মোল্লা আলী কারী; মেরকাত শরহে মেশকাত, 4র্থ খন্ড, 169 পৃষ্ঠা,

৭.আশিয়াতুল লুময়াত : ইমাম যায়লায়ী: নাছবুর রায়া, 2য় খন্ড, 304 পৃষ্ঠা।

❏ এই হাদিস সম্পর্কে ইমাম হাকেম ও ইমাম যাহাবী (رحمة الله) বলেন,

هذا حديث صحيح اءاسناد

 – এই হাদিসের সনদ সহীহ। (মুস্তাদরাকে হাকেম,হাদিস নং-1368)

❏ ইমাম বায়হাকী (رحمة الله) বলেন,

وقال البيهقي حديث القاسم بن محمد في هذا الباب اصح,

– ইমাম বায়হাকী (رحمة الله) বলেন,এ বিষয়ে কাশেম ইবনে মুহাম্মাদ (رحمة الله) এর রেওয়ায়েতটি সহীহ।

(মুহাররার ফিল হাদিস, 546 নং হাদিস)

সুতরাং, এই হাদিস সর্বসম্মতিক্রমে সহীহ। অতএব, এই হাদিস দ্বারা প্রমানিত হয়, কবরের উপর কাকর বা কংক্রিট ব্যবহার করা জায়েজ। কারন, এরূপ ময়দানের লাল কংক্রিট বা কাকর স্বয়ং নূর নবীজী (ﷺ) সহ হযরত আবু বকর(رضي الله عنه) ও হযরত উমর (رضي الله عنه)

এর মাজারত্রয়ে ব্যবহার করা হয়েছে।

❏ এ সমন্ধে আরেকটি রেওয়ায়েত লক্ষ করুন,

وعن جعفر بن محمد عن ابيه مرسلا ان النبي صلی ﷲ عليه وسلم حثا علی الميت ثلاث حثيات بيديه جمعيعا وانه رش علی قبر ابنه ابرهيم ووضع عليه حصباء,

হযরত জাফর ইবনে মুহাম্মাদ তার পিতা হতে বর্ননা করেন,নবী কারীম (ﷺ) এক কবরের উপর মুঠ করে পানি ছিটিয়েছেন এবং ঐ কবরের উপর কাকর (কংক্রিট) স্থাপন করেছেন । `

১.ইমাম বাগভী: শরহে সুন্নাহ,হা:নং-1515।

২.মুসনাদে শাফেয়ী, 1ম খন্ড, 360 পৃষ্ঠা।

৩.মেশকাত শরীফ, 148 পৃষ্ঠা।

৪.ইমাম মোল্লা আলী কারী : মেরকাত শরহে মেশকাত, 4র্থ খন্ড, 165 পৃষ্ঠা।

বর্ননাকারী তাবেঈ নির্ভরযোগ্য হলে সর্বসম্মতিক্রমে মুরছাল হাদিস হুজ্জত বা দলিল হয় । এই হাদিস দ্বারা প্রমানিত হয় যে, সম্মানিত ব্যক্তির কবরের উপর কাকর বা কাকরের কংক্রিট ব্যবহার করা স্বয়ং নূর নবীজী (ﷺ) এর সুন্নত। কারন,নূর নবীজী (ﷺ) তিনি নিজেই তার পুত্র হযরত ইব্রাহিম (رضي الله عنه)এর মাজারের উপর এরূপ কংক্রিট ব্যবহার করেছেন।

❏ আল্লামা আলাউদ্দিন কাছানী হানাফী (رحمة الله) উল্লেখ করেন,

عن سعيد بن العاص انه قل اجعلوا علی قبري اللبن والقصب , كما جعل علی قبر رسولﷲ صلیﷲعليه وسلم وقبر ابي بكر وقبر عمر

হযরত সাদ ইবনে আস (رضي الله عنه) বর্ননা করেন, নিশ্চয়ই তিনি বলেছেন,`তোমারা আমার কবরে কাঁচা ইট স্থাপন করবে, যেমনিভাবে রাসূল (ﷺ), হযরত আবু বকর ও উমর (رضي الله عنه) এর মাজারত্রয়ে দেওয়া হয়েছে।

(ইমাম কাছানী : কিতাবুল বাদাউছ ছানায়ে, 2য় খন্ড, 61 পৃষ্ঠা )

এই হাদিস দ্বারা প্রমানিত হয়, নূর নবীজী(ﷺ), হযরত আবু বকর সিদ্দীক(رضي الله عنه), হযরত উমর(رضي الله عنه) এবং হযরত সাদ ইবনে আস (رضي الله عنه) প্রমূখ সাহাবায়ে কেরামগন তাদের মাজার শরীফ পাকা করেছেন বা পাকা করার পক্ষে ছিলেন। সুতরাং, হক্কানী ব্যক্তিগনের কবর পাকা করা সাহাবায়ে কেরামগনের সুন্নত। এমনকি স্বয়ং আল্লাহর রাসূল (ﷺ) তিনি নিজে তার পুত্র হযরত ইব্রাহিম (رضي الله عنه) এর মাজারে ময়দানের কাকর স্থাপন করেছেন। তাই, ইহা নূর নবীজীর সুন্নতও বটে।

নূর নবীজী (ﷺ) এর পাশাপাশি হযরত আবু বকর সিদ্দীক (رضي الله عنه) ও হযরত উমর (رضي الله عنه) এর কবরদ্বয়ও পাকা করা ছিল এবং আজও পর্যন্ত আছে। সুতরাং, খাস ব্যক্তিগনের জন্য ইহা একটি উত্তম কাজ।



---------- সমাপ্ত ----------


Comments

Popular posts from this blog

বালাকোট আন্দোলনের হাকীকত

সৈয়দ আহমদ বেরলভীর জম্ম ও পরিচয়

মওদুদীর ভ্রান্ত আক্বিদা ও ইসলামী আক্বিদা