আহলে সুন্নাত ওয়াল জাম‘আত কারা?
আহলে সুন্নাত ওয়াল জাম‘আত কারা?
____________________
আহলে সুন্নাত ওয়াল জাম‘আত কারা?
মূল: আল্লামা আবুল হামেদ মুহাম্মদ জিয়াউল্লাহ কাদেরী আশরাফী (رحمة الله)।
ভাষান্তর:
মাওলানা হাফেয মুহাম্মদ আতিকুর রহমান
শিক্ষার্থী, জামেয়া আহমদিয়া সুন্নিয়া আলিয়া কামিল মাদরাসা, চট্টগ্রাম।
বিএ অনার্স ৪র্থ বর্ষ, ইসলামিক স্টাডিজ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়।
সম্পাদনায়, তাখরীজ, প্রকাশক:
মাওলানা মুহাম্মদ শহিদুল্লাহ বাহাদুর
প্রকাশক, সাকলাইন প্রকাশন, বাংলাদেশ।
টেক্সট রেডীঃ মাসুম বিল্লাহ সানি
প্রথম প্রকাশ: ০৭/১১/২০১৮ ইং
গ্রন্থস্বত্ব প্রকাশক কর্তৃক সংরক্ষিত।
উৎসর্গ:
গুমানমর্দ্দন পেশকারহাট ইসলামিয়া সুন্নিয়া মাদরাসার সাবেক সুপার এবং মির্জাপুর (হাটহাজারী, চট্টগ্রাম) গাউছিয়া বাকেরীয়া মহিলা দাখিল মাদরাসার সুপার আমার (অনুবাদকের) সম্মানিত পিতা মরহুম শ্রদ্ধেয় মাওলানা মুহাম্মদ বদিউল আলম জিহাদী (رحمة الله)‘র ঈসালে সাওয়াবের উদ্দেশ্যে।
শুভেচ্ছা মূল্য: ২৪০/=
প্রকাশনায়: সাকলাইন প্রকাশন, চট্টগ্রাম।
যোগাযোগ: দেশ-বিদেশের যে কোন স্থানে বিভিন্ন সার্ভিসের মাধ্যমে কিতাবটি সংগ্রহ করতে যোগাযোগ- মোবাইল: ০১৭২৩-৯৩৩৩৯৬-০১৯৭৩-৯৩৩৩৯৬
مَوْلَايَ صَلِّ وَسَلِّمْ دَائِمًا أَبَدًا
عَلىٰ حَبِيْبِكَ خَيْرِ الْخَلْقِ كُلِّهِم
مُحَمَّدٌ سَيِّدُ الْكَوْنَيْنِ وَالثَّقَلَيْنِ
وَالْفَرِيْقَيْنِ مِنْ عُرْبٍ وَّمِنْ عَجَمِ
صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَعَلٰى آلِه وَصَحْبِه وَبَارَكْ وَسَلَّمَ
অনুবাদকের কথা
____________________
অনুবাদকের কথা
সমস্ত প্রশংসা মহান আল্লাহর জন্য। দরূদ ও সালাম রাসূলে পাক (ﷺ) এর কদমে। মহান আল্লাহর মনোনীত ধর্ম ইসলাম শান্তির ধর্ম। মানব মুক্তির একমাত্র ধর্ম ইসলামের সঠিক রূপরেখা আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাত। এই সঠিক রূপরেখা থেকে বক্রতার বেড়াজালে মিশানো একদল পথভ্রষ্ট চক্র ইসলামের সূচনা থেকেই ছিল অপতৎপর। বিশেষত সরলপ্রাণ সুন্নি মুসলামানদেরকে বক্রপথে আনয়নের ষড়যন্ত্রে লিপ্ত ভ্রান্ত এই দলটি।
যুগে যুগে কুচক্রী মহলের মিথ্যার এই দেয়াল ভেঙেছেন সঠিক পথের দিশাপ্রাপ্ত অনেক মর্দে মুজাহিদ। কখনো লেখনি, কখনো বক্তব্য আবার কখনো বা সম্মুখ মোনাজারার মাধ্যমে। সংগ্রামী এসব প্রাণপুরুষদের অন্যতম ‘আল্লামা জিয়াউল্লাহ কাদেরী আশরাফী রহমাতুল্লাহি আলাইহি। “আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাত কোঁন হ্যাঁয়” অর্থাৎ আহলে সুন্নাত ওয়াল জাম‘আত কারা? তাঁর উর্দূ কিতাব। এই কিতাবের মাধ্যমে লেখক তাঁর শাণিত তরবারী দিয়ে বাতিলের সেই কল্পিত অমীমাংসীত বিষয়গুলোকে মীমাংসার চেষ্টা করেছেন। তিনি এ গ্রন্থে কোরআন সুন্নাহর এবং আকায়েদের কিতাবের আলোকে সারা পৃথিবী জোড়ে ভয়ংকর দুটি ফিতনা দেওবন্দী ও আহলে হাদিসগণ যে একমাত্র সঠিক দল আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা‘আতের অনুসারী নয় তা তুলে ধরেছেন।
মূল কিতাবটি উর্দূ ভাষায় রচিত বলে তা বাংলা ভাষায় অনূদিত হওয়ার চাহিদা ছিল অনেক। তরুণ লেখক ও গবেষক মাওলানা মুহাম্মদ শহিদুল্লাহ বাহাদুর অনুবাদের সেই গুরুদায়িত্ব আমি অধমের উপর অর্পিত করেছেন। বাহাদুর ভাই এ গ্রন্থের সম্পাদনার এবং তাখরীজের দায়িত্ব নেয়ায় অসম্ভব সুন্দর হয়েছে বলে আমি আশাবাদি। মাঝে মাঝে তিনি হাশীয়ায় যুগের চাহিদায় অতি প্রয়োজনীয় তথ্যও সংযোজন করেছেন যা পাঠকদের জন্য নেয়ামত স্বরূপ।
এ শাস্ত্রে আমি অতি কচি। এরপরেও মহান আল্লাহর উপর ভরসা এবং তাঁর প্রিয় হাবীব (ﷺ) এর উসিলা নিয়ে শুরু করলাম কাজটি। জ্ঞানের দৈন্যতা আর ভাষা জ্ঞানের সীমাবদ্ধতার দরুণ ভুল হওয়া অস্বাভাবিক নয়। পাঠক মহলের ভুল ভ্রান্তি শোধরানো এবং সুপরামর্শই হবে আগামী দিনের পাথেয়। এটিই প্রত্যাশা। সকলের দোয়া কামনায়-
অধম অনুবাদক হাফেয মুহাম্মদ আতিকুর রহমান
প্রকাশকের কথা
____________________
প্রকাশকের কথা
মহান আল্লাহ তা’য়ালার দরবারে শুকরিয়া ও সিজদা আদায়ের পর দরুদ ও সালামের অগণীত নাযরানা পেশ করছি মানবতার মুক্তির একমাত্র দূত হুযূর নাবি কারিম (ﷺ)’র বরকতময় চরণযুগলে।
সম্মানিত পাঠকবৃন্দ! সর্বপ্রথম ঈমান-আক্বিদা বিষয়ক জ্ঞান শিক্ষা করা প্রত্যেক মুসলমানের উপর ফরযে আইন। অত:পর দ্বীনের অন্যান্য জরুরী জ্ঞান শিক্ষা করা ফরয। মানুষ কতিপয় বিশ্বাসকে অন্তরে ধারণকেই আক্বিদা বলে। ইসলামে ৭৩ টি দল হবে আর তাদের মধ্যে একটি দলই কেবল নাজাত প্রাপ্ত। যেমন নবীয়ে পাক সাহেবে লাওলাক হযরত মুহাম্মদ (ﷺ) এর ফরমান-
وَإِنَّ بني إسرائيل تَفَرَّقَتْ عَلَى ثِنْتَيْنِ وَسَبْعِينَ مِلَّةً، وَتَفْتَرِقُ أُمَّتِي عَلَى ثَلاَثٍ وَسَبْعِينَ مِلَّةً، كُلُّهُمْ فِي النَّارِ إِلاَّ مِلَّةً وَاحِدَةً، قَالُوا: وَمَنْ هِيَ يَا رَسُولَ اللهِ؟ قَالَ: مَا أَنَا عَلَيْهِ وَأَصْحَابِي.
-‘‘নিশ্চয় বনী ইসরাঈল বাহাত্তর দলে বিভক্ত হয়েছে এবং আমার উম্মত তিয়াত্তার দলে বিভক্ত হবে। তাদের সকলেই জাহান্নামে যাবে তবে একটি দল ব্যতীত। তাঁকে জিজ্ঞেস করা হল, তারা কারা? রাসূল (ﷺ) উত্তর দিলেন, আমি এবং আমার সাহাবার আদর্শের ওপর যারা প্রতিষ্ঠিত থাকবে।’’ ➥1
১. খতিব তিবরিযি, মিশকাতুল মাসাবিহ, ১/৬১পৃ. কিতাবুল ই‘তিসাম বিস্-সুন্নাহ, হাদিস নং.১৬১, তিরমিযি, আস্-সুনান, ৫/২৬পৃ. হাদিস, ২৬৪১, আহলে হাদিস আলবানী সুনানে তিরমিযির তাহক্বীকে হাদিসটি ‘হাসান’ বলেছেন, তাবরানী, মু‘জামুল কাবীর, ১৩/৩০পৃ. হাদিস, ৬২, ১৪/৫২পৃ. হাদিস, ১৪৬৪৬, মাকতুবাতু ইবনে তাইমিয়া, কাহেরা, মিশর, প্রকাশ.১৪১৫ হি., ইমাম বায়হাকি, ই‘তিক্বাদ, ১/২৩৩ পৃ., ইমাম বাগভী, শরহে সুন্নাহ, ১/২১৩ পৃ. হা/১০৪
নবী পাক (ﷺ)‘র এই আলোকময় বর্ণনা সম্পর্কে প্রত্যেক মুসলমানদের জেনে রাখা প্রয়োজন। যাতে করে, সাহাবায়ে কিরামদের আক্বিদা-বিশ্বাস ও মুহাব্বতের অবিকল অনুকরণ করতে পারে।
এ হাদিসের ব্যাখ্যায় আল্লামা মোল্লা আলী ক্বারী হানাফী (رحمة الله) বলেন-
فَلَا شَكَّ وَلَا رَيْبَ أَنَّهُمْ هُمْ أَهْلُ السُّنَّةِ وَالْجَمَاعَةِ
-‘‘এতে কোন সন্দেহ নেই যে, নাজাতপ্রাপ্ত দলটিই হলো আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামা‘আত।’’ ➥2
২.মোল্লা আলী ক্বারী, মেরকাত, ১/ ২৫৯পৃ. দারুল ফিকর ইলমিয়্যাহ, বয়রুত, লেবানন, প্রথম প্রকাশ. ১৪২২হি.।
এ হাদিসের ব্যাখ্যায় শুধু তিনিই নন পৃথিবীর বিখ্যাত অসংখ্য ইমাম মণিষীগণ এবং এমনকি দেওবন্দী ও আহলে হাদিসদের বড় বড় ইমামগণও বলেছেন যে একমাত্র নাজাতপ্রাপ্ত দলটিই হলো আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামা‘আত। ➥3
৩. এ বিষয়ে বিস্তারিত জানতে আমার লিখিত ‘আকায়েদে আহলে সুন্নাহ’ গ্রন্থটি দেখনু।
শুধু তাই নয় আল্লাহ তা‘য়ালা পবিত্র কোরআনের সূরা আলে-ইমরানের ১০৬ নং আয়াতে বলেছেন-
يَوْمَ تَبْيَضُّ وُجُوهٌ وَتَسْوَدُّ وُجُوهٌ
-‘‘সেদিন (কিয়ামতের দিন) কোন কোন মুখ উজ্জ্বল হবে, আর কোন কোন মুখ হবে কালো।’’ এ আয়াতের ব্যাখ্যায় ইমাম জালালুদ্দীন সুয়ূতী (رحمة الله) (ওফাত.৯১১হি.) আরও বর্ণনা করেন-
وَأخرج الْخَطِيب فِي رُوَاة مَالك والديلمي عَن ابْن عمر عَن النَّبِي صلى الله عَلَيْهِ وَسلم فِي قَوْله تَعَالَى {يَوْم تبيض وُجُوه وَتسود وُجُوه} قَالَ: تبيض وُجُوه أهل السّنة وَتسود وُجُوه أهل الْبدع
-‘‘ইমাম খতিবে বাগদাদি (رحمة الله) তাঁর তারিখে বাগদাদে, ইমাম মালেক, ইমাম দায়লামী হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে উমর (رضي الله عنه) হতে এ আয়াতের ব্যাখ্যা স্বরূপ বর্ণনা করেন যে, কিয়ামতের দিন যাদের মুখ উজ্জ্বল হবে তারাই হলো আহলে সুন্নাহ (জামাত)। আর আহলে বিদআতী বা দ্বীন থেকে বিচ্ছিন্নতাবাদীদের মুখ কালো হবে।’➥4’
৪. ইমাম জালালুদ্দীন সুয়ূতী, তাফসীরে দুররুল মানসূর, ২/২৯১পৃ. দারুল ফিকর ইলমিয়্যাহ, বয়রুত, লেবানন, তাহের পাটনী, তাযকিরাতুল মাওদ্বুআত, ১/৮৪পৃ.
সারা পৃথিবীর ভয়ংকর দুটি ফিতনা দেওবন্দী ও আহলে হাদিসগণ নিজেদেরকে একমাত্র সঠিক দল আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা‘আতের অনুসারী বলে দাবী করে চলছে প্রতিনিয়ত।
প্রখ্যাত আলেমেদ্বীন আল্লামা যিয়াউল্লাহ কাদেরী (رحمة الله)’র দরজাত বুলন্দির লক্ষে বিনম্র চিত্তে মাওলায়ে কায়িনাতের মহান দরবারে পাকে দোয়া করছি। যিনি অত্যন্ত চিন্তা-গবেষণার মাধ্যমে “আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাত কোঁন হ্যাঁয়” অর্থাৎ আহলে সুন্নাত ওয়াল জাম‘আত কারা? নামক উর্দু কিতাবটি রচনার মাধ্যমে কোরআন সুন্নাহর এবং আকায়েদের কিতাবের আলোকে এ দুটি দল নাজাত প্রাপ্ত দলের অনুসারী নয় তা তুলে ধরেছেন।
প্রিয়পাঠক! মুসলিম মিল্লাতের জন্য সর্বযুগে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, ইসলামের সঠিক আকিদা। আকিদা ছাড়া কোনো ইবাদাত আল্লাহর কাছে কবুল হওয়ার আশা করা যায়না। তাই যুগ যুগ ধরে মুনাফিক-কাফিরদের সাথে পূণ্যবান মানুষগুলোর দ্বন্দ্ব একমাত্র আকিদা নিয়ে। ওসব বে-ইমান কাফিররা জানে যে, মুসলমানদের আকিদা যদি নষ্ট করে দিতে পারে, তাহলে তারা সব দিকে সফল। তাই এ মুনাফিকদের চিহিৃত করার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করি, কেননা সত্যকে জেনে বুঝে গোপন করাও অপরাধ।
ইমাম কুশাইরী (رحمة الله) তাঁর বিখ্যাত কিতাবে লিখেছিলেন-
سمعت الأستاذ أبا عَلِيّ الدقاق يَقُول: من سكت عَنِ الحق فَهُوَ شَيْطَان أخرس
-‘‘আমি আমার শায়খ বিখ্যাত আরিফ ইমাম আবু আলী দাক্কাক (رحمة الله) কে বলতে শুনেছি, যে ইচ্ছাকৃত সত্য গোপন করে সে হল বোবা শয়তান।’’ ➥5
৫. ইমাম কুশাইরী, রিসালায়ে কুশাইরী, ১/২৪৫ পৃ., ইমাম নববী, শরহে সহীহ মুসলিম, ২/২০ পৃ., ইমাম নববী, কিতাবুল আযকার, ১/৫৩৪ পৃ.
অসংখ্য কিতাবের সম্মানিত রচয়িতা ও পাকিস্তান, শিয়ালকোটের অধিবাসী বিজ্ঞ-আলিম আল্লামা কাদেরীর অনেক কিতাব ইতিমধ্যে বিভিন্নজনে বাংলা অনুবাদ করেছেন; তৎমধ্যে ‘ওহাবি মাযহাব কি হাকিকাত’ অন্যতম। তাঁর ‘আকাইদে সাহাবাহ’ নামক কিতাবটি ইতোপূর্বে সাকলাইন প্রকাশন থেকে ইতোপূর্বে প্রকাশিত হয়েছে।
আমার ¯স্নেহের ভাই মাওলানা হাফেয মুহাম্মদ আতিকুর রহমান কে কিতাবটি অনুবাদ করার জন্য অনুরোধ করি এবং সে শত ব্যস্ততার মধ্য দিয়েও এটির পান্ডুলিপি তৈরী করে আমাকে দেন।
গ্রন্থাকারে রূপদেয়ার পর বইজুড়ে অনুপম নজর দিয়ে আমাকে চিরদিনের জন্য কৃতজ্ঞতার পাশে আবদ্ধ করে রেখেছেন বন্ধুবর মাওলানা মুহাম্মদ আবদুল করিম।
আমি একজন প্রকাশক ও সম্পাদকের ভূমিকায় কিতাবটি নিপূণতার লক্ষে বহু-চেষ্টা করেছি। অজানা বশত: গ্রন্থের কোনো জায়গায় যদি উল্লেখযোগ্য ত্রুটি-বিচ্যুতি ধরা পড়ে তবে আমাকে সরাসরি অথবা ইমেইলে জানাবেন। আপনার জন্যে দোয়া করবো। পরবর্তী প্রকাশের সময় বিশুদ্ধ করে দেবো। ইনশাআল্লাহ!
প্রিয় পাঠক! আশা করি, নাতিদীর্ঘ এই (অনূদিত) পুস্তকটি পরোপুরি পড়ে বিবেকের আদালতে মুখোমুখি হবেন। এতে আপনি বুঝতে পারবেন কে সঠিক দলের অনুসারী আর কে গোমরাহ দলের।
আরজগুজার
মাওলানা মুহাম্মদ শহিদুল্লাহ বাহাদুর
প্রকাশক, সাকলাইন প্রকাশন।
এ গ্রন্থ রচনার কারণ
____________________
এ গ্রন্থ রচনার কারণ
الْحَمْدُ لِلّٰهِ الَّذِى كَفَى وَسَلَامٌ عَلٰى خَيْرِ الْوَرٰى عِبَادِه الَّذِيْنَ اصْطَفٰى خُصُوْصًا عَلٰى سَيِّدِ الْوَرٰى شَمْسِ الضُّحٰى بَدْرِ الدُّجٰى صَدْرِ الْعُلٰى نُوْرِ الْهُدىٰ كَهْفِ الوَرٰى دَافِعِ الْبَلَاءِ وَالْوَبَاءِ مَنْبَعِ الْجُوْدِ وَالْعَطَاءِ عَالِمِ الْاَرْضِ وَالسَّمَاءِ خَاتِمِ الْاَنْبِيَاءِ الَّذِى كَانَ نَبِيًّا وَاٰدَمُ بَيْنَ الْطِّيْنِ وَالْمَاءِ وَعَلٰى اٰلِه وَاصْحَابِه وَاَزْوَاجِه وَبَنَتِه وَذُرَّيَتِه وَاَوْلِيَاءِ اُمَّتِه ذَوِىْ الدَّرَجَاتِ وَالْعُلٰى
اَمَّا بَعْدُ
فَاعُوْذُ بِاللهِ مِنَ الشَّيْطٰانِ الرَّجِيْمِ ۞ بِسْمِ اللهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيمِ ۞ اهْدِنَا الصِّرَاطَ الْمُسْتَقِيمَ ۞ صِرَاطَ الَّذِينَ أَنْعَمْتَ عَلَيْهِمْ غَيْرِ الْمَغْضُوبِ عَلَيْهِمْ وَلَا الضَّالِّيْن
সমস্ত প্রশংসা মহান আল্লাহর জন্য যাঁর প্রশংসা যথার্থ এবং সালাম বর্ষিত হোক সর্বশ্রেষ্ঠ বান্দার উপর যাদেরকে তিনি নির্বাচিত করেছেন। বিশেষ করে সৃষ্টি জগতের সর্দার, দ্বিপ্রহরের সূর্য, পূর্ণিমার চাঁদ, সর্বোচ্চদের মহান, হেদায়তের নূর, সৃষ্টির আশ্রয়স্থল, বিপদ ও মহামারী দূরভীতকারী, দান ও বদন্যতার উৎস আসমান জমিন তথা সমস্ত সৃষ্টির জ্ঞানময়ী, খাতেমুল আম্বিয়া তথা সর্বশেষ নবী, যিনি তখনও নবী ছিলেন যখন আদম (عليه السلام) পানি ও মাটির মাঝে ছিলেন তাঁর উপর এবং আহল, তাঁর সমস্ত সাহাবী, তাঁর পবিত্র বিবিগণ, তাঁর সম্মানিত কন্যাগণ, তাঁর বংশধর এবং তাঁর উম্মতের অলিগণের উপর যাঁরা মহান মান মর্যাদার অধিকারী এরপর অভিশপ্ত শয়তান থেকে আল্লাহর নিকট আশ্রয় কামনা করছি। আল্লাহর নামেই শুরু করছি যিনি পরম দয়ালু, করুণাময়।
“আমাদেরকে সোজা পথে পরিচালিত রাখুন, তাঁদেরই পথে, যাঁদের উপর তুমি অনুগ্রহ করেছো, তাদের পথে নয় যাদের উপর গযব নিপতিত হয়েছে এবং পথভ্রষ্টদের পথেও নয়।” (সূরা ফাতেহা)
মহান আল্লাহর শোকর, যে পৃথিবীর বাদশা, সৃষ্টির গর্ব, জগৎ সৃষ্টির কারণ, বরকতের উৎস, সৃষ্টির মূল, জগতের প্রাণ, পৃথিবীর জান, সৃষ্টির প্রারম্ভ, জগত সৃষ্টির কারণ, জগতের মীরে মজলিস সাল্লাল্লাহু, ৬ষ্ঠ দিকের মুখতার, হুযুরে পুন্নূর, নুরুন আলো নূর হযরত মুহাম্মদ মুস্তফা (তাঁর উপর সর্বোত্তম দরুদ ও সালাম বর্ষিত হোক)’র উম্মত হিসেবে সৃষ্টি করেছেন।
এরপর মহান আল্লাহর অনুগ্রহ যে, তিনি ‘আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতের অন্তর্ভূক্ত করেছেন। মহান আল্লাহর কাছে প্রার্থনা তিনি রাসূলে কারিম আলাইহি ওয়াসাল্লামের উসিলায় এই মতাদর্শের উপরই ইসতাকামত রাখেন। আমিন।
বর্তমানে পৃথিবীতে অনেকগুলো ফিরকা রয়েছে। যারা দিন-রাত নিজেদের প্রচার-প্রসারের চেষ্টায় রয়েছে। এদের মধ্যে দেওবন্দী এবং লা-মাযহাবী গুরুদের ষড়যন্ত্র এবং তাদের ভ্রান্ত অনুসারীদের সংখ্যা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে।
একসময় দেওবন্দি গুরুরা লা-মাযহাবীদের দেখাও সহ্য করত না। বরং তাদেরকে নিজেদের মসজিদে নামাযও পড়তে দিত না।
দেওবন্দীদের গুরু মৌলবী কাসেম নানুতুবী, মৌলবী রশিদ আহমদ গাঙ্গুহী, মৌলবী আশরাফ আলী থানবী, মৌলবী খায়র মুহাম্মদ জান্দারী, মৌলবী হাবিবুর রহমান লাদইয়ানবী প্রমূখদের লেখাই এর প্রমাণ।
এদিকে লা-মাযহাবীরা মাযহাবীদের উপর শিরিকের ফাতওয়া জারি করতেছিল। মিয়া নযীর হোসাইন দেহলভী, নবাব সিদ্দিক হাসান ভূ-পালী, মৌলবী আব্দুল আযিয রহিমাবাদী, মৌলবী আবদুল্লাহ রহিমাবাদী, মৌলবী আবদুল্লাহ গাজীপুরী, মৌলবী সানাউল্লাহ অমৃতসরী, হাফেজ আব্দুল্লাহ রুপটী প্রমূখদের লেখা এর স্বাক্ষী।
কিন্তু কিছু বছর ধরে দেওবন্দী এবং লা-মাযহাবী আহলে হাদীস গুরুরা রাওয়ালপিন্ডি শহরে দেওবন্দী গুরু মৌলবী গোলাম খাঁর একটি মাহফিলে একটি মাযহাবী সংগঠন “ছেওয়াদে আযম আহলে সুন্নাত ওয়াল জাম’আত” গঠন করে। এবং বিভিন্ন স্থানে এই সংগঠনের অধীনে মাহফিলের সিলসিলাও শুরু হয়েছে। এই সংগঠনের প্রধান দেওবন্দী এবং সিকুরুঙ্কি হাফেজ আবদুল কাদের রুপিটি লা-মাযহাবী।
মূলত এদের এই সংগঠনটি কেবল “আহলে সুন্নাত ওয়াল জাম‘আত” এর বিপরীত। তারা সাদাসিদে মুসলমানদেরকে তাদের জালে পেচানোর জন্য তাদের এই সংগঠনের নাম ‘ছেওয়াদে আযম আহলে সুন্নাত ওয়াল জাম‘আত’ রেখেছে।
লা-মাযহাবী হযরতদের নিকট যদি প্রশ্ন করা হয় আপনারা নিজেরা নিজেদেরকে হানাফী বলে, সায়্যিদুনা হযরত ইমাম আবু হানিফা (رحمة الله)’র অনুসরণ করেন, আপনাদের নিকট বিশুদ্ধ আক্বীদার মুসলমান কী “আহলে সুন্নাত ওয়াল জামআত”? উত্তরে না সূচক জবাব আসবে। এই নতুন সংগঠনের ‘ছেওয়াদে আযম আহলে সুন্নাত ওয়াল জামআত’ হাফেজ আবদুল কাদের রূপটিকে জিজ্ঞাসা করুন, রুপটি সাহেব স্বীয় রিসালা “তানজিমে আহলে হাদীস” এর মধ্যে নিজের ফতোওয়া প্রচার করেছে।
দেওবন্দী গুরু (যারা নিজেদেরকে মুকাল্লিদ এবং হানাফী বলে থাকে) কাছে কেই যদি জিজ্ঞাসা করে, “মুকাল্লিদকে বিশুদ্ধ আক্বীদাধারী মুসলমান হিসেবে অমান্যকারীরা আপনাদের নিকট আহলে সুন্নাত ওয়াল জাম‘আত হবে? এর উত্তরেও ‘না’ সূচক জবাব আসবে।
সুতরাং তারা উভয়ে মিলে, “ছাওয়াদে আযম আহলে সুন্নাত ওয়াল জাম‘আত” সংগঠন তৈরি করা এবং এর অধীনে মজলিশ করা মূলত এই প্রকৃত অবস্থারই বহি:প্রকাশ। যে সাদাসিদে মুসলমানদেরকে এসব মৌলবীরা নিজেদের নকল জালে পেচানোর চেষ্টা করবে। এটি সরাসরি বদমাশি এবং ধোঁকাবাজী। প্রকৃতপক্ষে তাদের কেউই আহলে সুন্নাত ওয়াল জাম‘আত নয়।
প্রলেপ এবং উপাধি ধারণ করলেই কোন কাজ হবে না। প্রশ্রাবের বোতলের মধ্যে কেউ যদি গোলাপের প্রলেপ লাগিয়ে মার্কেটে নিয়ে আসে তবে তা গোলাপের রস বা আতর হবে না, বরং প্রশ্রবই থেকে যাবে।
আমরা মুর্শিদ, আমার মখদুম, সায়্যিদি, সানাফি মুরব্বি, শায়খে তরিকত, আলেমে শরীয়ত মাখযুনে ইলম ও হিকমত, মুহসিনে আহলে সুন্নাত, হযরত কিবলা আলমে পীর খাজা শফী সাহেব কাদেরী (رحمة الله), সাজ্জাদানশীন দরবারে গওহর বারে গাউছিয়া ডুডা শরীফ, গুজরাট জিলা। এসব দেওবন্দ এবং লা-মাযহাবী ওহাবী গুরুদের এই ষড়যন্ত্রকে লক্ষ্য করে আদেশ করেন, এমন একটি কিতাব রচনা কর, যেখানে কুরআন সুন্নাহর আলোকে দেওবন্দী ও লা-মাযহাবীদের ভ্রান্ত আকিদা প্রকাশ করা হবে এবং প্রমাণ করা হবে যে, দেওবন্দী ও লা-মাযহাবী ওহাবীরা “আহলে সুন্নাত ওয়াল জাম‘আত নয়”।
আমার হুযূর কিবলা (رحمة الله)’র সারা জীবনই পবিত্র শরীয়তের পাবন্দি এবং সঠিক পন্থা আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতের প্রচার, প্রকাশে অতিবাহিত হয়েছে। যেখানেই পবিত্র শরীফতের দুশমনি এবং আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতের পরিপন্থী কোন শব্দ শুনা যেত, হযরত লিখনী এবং বক্তৃতার মাধ্যমে এর দরজা বন্ধ করনে চেষ্টা চালিয়েছেন। অধম মহান আল্লাহর পবিত্র নাম এবং সারওয়ারে আলম, নূরে মুজাস্সাম (ﷺ) এর আশ্রয়ের দরবারে সাহায্য প্রার্থনা পূর্বক, গাউছুল আলামীন গাউছুল আযম শাহিনশানে আউলিয়া সায়্যিদিনা আবু মুহাম্মদ আবদুল কাদের জিলানী আল হাসানী ওয়াল হোসাইনী (رضي الله عنه)’র আদেশ পালন করার চেষ্টা শুরু করলাম।
আলহামদুলিল্লাহ, আল্লাহ তা‘য়ালা জাল্লাজালালুহু, রাসূলে মাকবুল (ﷺ) এর ফযলে করমে এবং গাউছে পাক (رضي الله عنه)’র তাসাররুফ এবং হুযুর কিবলায়ে আলম (رحمة الله)’র নযরে করমে এই কিতাব তাঁর হাতেই রয়েছে।
অদমের হাত থেকে কিতাবের দৃঢ়তা ও গাম্ভীর্যতা এমনিতেই ছুটে পড়েনি। এর প্রতিটি আক্বিদাই পবিত্র কুরআন ও হাদিসের আলোকে উল্লেখযোগ্য কিতাবের হাওলা সহকারে পেশ করা হয়েছে।
গোড়ামী এবং সংকীর্ণতা বাদ দিয়ে এই কিতাব অধ্যায়নকারী প্রত্যেক মুসলমান অবশ্যই বিচার করবেন যে, দেওবন্দী এবং লা-মাযহাবী ওয়াহাবীরা নিজেদেরকে আহলে সুন্নাত ওয়াল জাম‘আত বলা ধোঁকা এবং বোকামী বৈ কিছুই নয়।
দেওবন্দী এবং লা-মাযহাবীদের যে আক্বিদাগুলো আনা হয়েছে, এগুলো তাদের স্বীকৃত গুরুদের কিতাবেই রয়েছে। তাদের ভ্রান্ত আকিদাগুলো এবং কিতাবের নাম কেউ যদি বিস্তারিত দেখতে চায়, তবে অধমের আরেকটি কিতাব ‘ওয়াহাবী মাযহাবের হাক্বীকত’ এবং ‘আক্বাইদে ওয়াহাবীয়া’ অধ্যায়ন করার পরামর্শ রইল।
এই কিতাবের মধ্যে বর্ণিত কিতাবগুলোর হাওয়ালা অত্যন্ত সতর্কতার সাথে বর্ণনা করা হয়েছে। যদি কারো কাছে উক্ত কিতাবগুলোর হওয়ালা প্রয়োজন পড়ে তবে তা ফটোকপি করা হবে। আর এর ব্যয় পাঠকই বহন করবে।
আল্লাহর দরবারে প্রার্থনা, যেন স্বীয় হাবীব নবী করিম রাউফুর রহিম (ﷺ) এর মহত্ত্বে উসিলায় পৃথিবীর সমস্ত মুসলমানকে মযহাবী এবং সঠিক পথ আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতের উপর কায়েম থাকার তাওফিক দান করুন। আমিন
ফকীর,
আল্লামা আবুল হামেদ জিয়াউল্লাহ কাদেরী আশরাফী গুফিরালাহু
খতীব, সরকারে জামে মসজিদ আল্লামা আব্দুল হাকীম (رحمة الله)।
তাহসীল বাজার, শিয়াটকোট, পাকিস্তান।
ইমকানে কিযবে বারী তা‘য়ালা
____________________
❏ বিষয় নং-১: ইমকানে কিযবে বারী তা‘য়ালা
দেওবন্দী এবং লা-মাযহাবী আহলে হাদীস অনুসারীদের আক্বিদা হল, “আল্লাহ তা‘য়ালা মিথ্যা বলতে পারেন’’। ➥6
৬. বাতিলপন্থীদের এ ধরনের বক্তব্যের উদাহরণ দেখতে গ্রন্থাকার (رحمة الله) এর ‘ওহাবী মাযহাবের হাকিকত’ এবং আমার লিখিত ‘হেফাজতে ইসলামের স্বরূপ উন্মোচন’ দেখুন।
আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতের আকাবেরদের আক্বীদা, “আল্লাহ তা‘য়ালা মিথ্যা বলতে পারেন না।”
পবিত্র কুরআনে আল্লাহ তা‘য়ালার বাণী-
وَمَنْ أَصْدَقُ مِنَ اللَّهِ قِيلًا
-‘‘আল্লাহ তা‘য়ালা থেকে অধিক কার বাণী সত্য?”➥7
৭. সূরা নিসা, আয়াত নং-১২২
আল্লাহ তা‘য়ালার অন্যত্র ইরশাদ করেন-
وَمَنْ أَصْدَقُ مِنَ اللَّهِ حَدِيثًا
আল্লাহ তা‘য়ালা থেকে অধিক কার বাণী সত্য?” ➥8
৮. সূরা নিসা, আয়াত নং-৮৭
✦ তাফসীরে কাবীর: ইমামুল মুফাস্সিরীন আল্লামা ফখরুদ্দীন রাযী (رحمة الله) বলেন, ➥9
لِأَنَّ الْمُؤْمِنَ لَا يَجُوزُ أَنْ يَظُنَّ باللَّه الْكَذِبَ، بَلْ يَخْرُجُ بِذَلِكَ عَنِ الْإِيمَانِ
-‘‘কোন মুসলমানের জন্য এটা বৈধ নয় যে, সে আল্লাহ তা‘য়ালার ব্যাপারে মিথ্যার ধারণা করবে, বরং এমন ধারণা ঈমান থেকে বের করে দেয়।”
➥10
৯. লা-মাযহাবীদের মৌলভী ইবরাহিম শিয়ালকোটি ইমাম রাযী (رحمة الله) কে ‘মহান ইমাম’ বলেন। এটাও লিখেছেন ইমাম রাযী (رحمة الله)’র আক্বিদা ও মাযহাব আহলে সুন্নাত ছিল। (আহলে হাদিস অমৃতসর, ৫ পৃ. ২৪ জুলাই ১৯১৪ ইং) হাফেয আব্দুল্লাহ রুপটি লেখেন, ইমাম রাযী (رحمة الله)’র ইলমে আলী ও আ‘লী বিশেষ করে ইলমে তাফসিরের ব্যাপারে আলেমগণের নিকট অপ্রকাশ নয়। (দেরাইয়াতে তাফসীরী, ৯৭ পৃ.) (ফকীর কাদেরী আশরাফী গুফিরালাহু)
১০. ইমাম ফখরুদ্দীন রাজী, তাফসিরে কাবীর, ১৮/৫২১ পৃ.
তিনি আরও লিখেন-
مِنْ صِفَاتِ كَلِمَةِ اللَّهِ كَوْنُهَا صِدْقًا وَالدَّلِيلُ عَلَيْهِ أَنَّ الْكَذِبَ نَقْصٌ وَالنَّقْصُ عَلَى اللَّهِ مُحَالٌ
-“সত্য বলা আল্লাহ তা‘য়ালার অন্যতম গুণ, এর প্রমাণ হল মিথ্যা বলা আল্লাহ তা‘য়ালার স্বত্বার উপর একটি ত্রুটি, আর আল্লাহ তা‘য়ালার স্বত্বার মধ্যে কোন ধরনের ত্রুটি থাকা অসম্ভব।” ➥11
১১. ইমাম ফখরুদ্দীন রাজী, তাফসিরে কাবীর, ১৩/১২৫ পৃ.
✦ তাফসীরে বায়জাভী : উমদাতুল মুফাস্সিরীন ইমাম আবদুর রহমান বায়জাভী (رحمة الله) বলেন,
لا يتطرق الكذب إلى خبره بوجه لأنه نقص وهو على الله محال.
-“মহান আল্লাহ তা‘য়ালার সংবাদের মধ্যে মিথ্যার কোন ধরনের পথ নেই, কেননা এটা ত্রুটি। আর আল্লাহর স্বত্ত্বার মধ্যে ত্রুটি হওয়া অসম্ভব।” ➥12
১২. ইমাম বায়যাভী, তাফসিরে বায়যাভী, ২/৮৮ পৃ.
✦ তাফসীরে খাযেন : যুবদাতুল মুফাস্সিরিন আল্লামা আলী বিন মুহাম্মদ খাযেন (رحمة الله) বলেন,
لا أحد أصدق من الله فإنه لا يخلف الميعاد ولا يجوز عليه الكذب
-“আল্লাহ তা‘য়ালা থেকে অধিক সত্যবাদী কে? এর দ্বারা উদ্দেশ্য হল আল্লাহ তা‘য়ালা ওয়াদার খেলাফ করেন না, আর তাঁর মিথ্যা বলা অসম্ভব।’’ ➥13
১৩. ইমাম নাসাফী, তাফসিরে খাযেন, ১/৪০৬ পৃ.
✦ তাফসীরে কাদেরী: দেওবন্দী এবং লা-মাযহাবী আহলে হাদীসের গুরুদের পছন্দনীয় মৌলবী আবদুল কাদের সাহেব দেহলবীও লিখেন যে,
جہوٹ نقص ہے -اور حق تعالى نقص سے پاک ہے
-“মিথ্যা একটি ত্রুটি, আর আল্লাহ তা‘য়ালা ত্রুটিমুক্ত।”
(তাফসীরে কাদেরী, প্রথম পারা, ১/১৮৩ পৃষ্ঠা)
✦ তাফসীরে সিরাজুল মুনির : আল্লামা খতীব মুহাম্মদ বিন শিরবিনী (ওফাত. ৯৭৭ হি.) বলেন,
فلن يخلف الله عهده وفيه دليل على أن الخلف في خبر الله تعالى محال
-“আল্লাহ তা‘য়ালার বাণী এর মধ্যে দলীল রয়েছে যে, ওয়াদা খেলাফ আল্লাহর সংবাদে অসম্ভব।’’ ➥14
১৪. ইমাম শরবিনী, তাফসিরে সিরাজুম মুনীর, প্রথম পারা, ১ম খণ্ড, পৃষ্ঠা ৭৩
✦ তানবীরুল আবছার: আল্লামা মুহাম্মদ বিন আব্দুল্লাহ তামর তা-শী (رحمة الله) বলেন,
ولايوصف الله تعالى بِالْقُدْرَةِ عَلَى الظلم السفة والكذب لان المحال لايدخل تحت القدرة وعند المعتزلة يقدر ولا يفعل
-“বিবেক দ্বারা আল্লাহ তা‘য়ালার জুলুম এবং মিথ্যার উপর সক্ষম হওয়ার গুণে গুণান্বিত হওয়া ঠিক নয়, কেননা অসম্ভবটা সক্ষমতার অন্তর্ভূক্ত নয়, আর মুতাযিলাদের আক্বীদা হল তিনি সক্ষম, তবে করেন না।”
✦ ফাতওয়ায়ে আলমগীরী:
إذَا وَصَفَ اللَّهَ تَعَالَى بِمَا لَا يَلِيقُ بِهِ، .....أَوْ نَسَبَهُ إلَى الْجَهْلِ، أَوْ الْعَجْزِ، أَوْ النَّقْصِ وَيَكْفُرُ
-“যদি কেউ মহান আল্লাহর জন্য এমন গুণ বর্ণনা করে, যেটি আল্লাহ তা‘য়ালার শানের জন্য উপযুক্ত নয়, অথবা আল্লাহ তায়াকে অক্ষমতা বা ত্রুটির দিকে সম্পর্ক করে তবে সে কাফের হবে।”
(ফাতওয়ায়ে আলমগীরী, দ্বিতীয় খ-, ২৫৮ পৃষ্ঠা)
✦ শরহে ফিকহুল আকবার : আল্লামা মুহাম্মদ বিন আলী ক্বারী (رحمة الله) বলেন,
اَنَّهُ لَا يوصف الله تَعَالى بِالْقُدْرَةِ عَلى الظلم لَانَّ المحال لا يدخل تَحْتِ القُدْرَةِ وَعِنْدَ المُعْتَزِلَة اَنَّهُ بقدر ولايفعل
-“মহান আল্লাহ তা‘য়ালা যুলুম করার উপর সক্ষম এটা না বুঝা চাই, কেননা এটা আল্লাহ আয়ালার স্বত্ত্বার উপর অসম্ভব, আর অসম্ভবতা সক্ষমতার অধিভুক্ত নয়। কিন্তু মুতাযিলাদের দৃষ্টিতে আল্লাহ সক্ষম তবে করেন না।”
✦ মাকতুবাত শরীফ: ইমাম রব্বানী মুজাদ্দেদে আলফেসানী শায়খ আহমদ সিরহিন্দি ফারুকী (رحمة الله) বলেন,
او تعالے از جميع نقائص وسمات حدوث منزه ومبرا است
-“এ মহান স্বত্ত্বা সকল প্রকার ত্রুটি, দাগ এবং ধ্বংস হওয়া থেকে পুত:পবিত্র।” ➥15
১৫. আল-ফেসানী, মাকতুবাত শরীফ, ফার্সী, ৩১৪ পৃষ্ঠা, মাকতুবাত নং ২৬৬, প্রথম খণ্ড, কলকাতায় প্রকাশিত।
সম্মানিত পাঠকবৃন্দ! পবিত্র কুরআন নির্ভরযোগ্য মুফাস্সিরীন, মুহাদ্দিসিন এবং মুহাক্কিগণের কিতাবের হাওলা থেকে সূর্য থেকেও অধিক প্রকাশ্য যে দেওবন্দী এবং লা-মাযহাবী আহলে হাদিস গং আহলে সুন্নাত ওয়াল জাম‘আত নয়।
আল্লাহ তা‘য়ালার গায়বের ইলম স্বত্ত্বাগত
____________________
❏ বিষয় নং- ২: আল্লাহ তা‘য়ালার গায়বের ইলম স্বত্ত্বাগত:
দেওবন্দী এবং লা-মাযহাবী গুরুদের আক্বিদা হল: আল্লাহর শান হল যখন তিনি চান গায়ব অনুসন্ধান করে নেন। ➥16
১৬. বাতিলপন্থীদের এ ধরনের বক্তব্যের উদাহরণ দেখতে গ্রন্থাকার (رحمة الله) এর ‘ওহাবী মাযহাবের হাকিকত’ দেখুন।
আহলে সুন্নাত ওয়াত জামাতের আক্বিদা হল মহান আল্লাহর ইলম জাতি বা স্বত্ত্বাগত। তিনি কারো কাছ থেকে অনুসরণ করেন না।
পবিত্র কুরআনে মহান আল্লাহর ইরশাদ-
هُوَ اللَّهُ الَّذِي لَا إِلَهَ إِلَّا هُوَ عَالِمُ الْغَيْبِ وَالشَّهَادَةِ هُوَ الرَّحْمَنُ الرَّحِيمُ
-“তিনিই আল্লাহ যিনি ব্যতীত কোন মাবুদ নেই, সব ধরনের দৃশ্য ও অদৃশ্যের ব্যাপারে জানেন, তিনিই বড় দয়াবান, মেহেরবান।”(সূরা হাশর, ২৮ পারা, ৬ রুকু, আয়াত নং-২২)
عَالِمُ الْغَيْبِ وَالشَّهَادَةِ الْكَبِيرُ الْمُتَعَالِ
-“তিনি (মহান রব) প্রত্যেক দৃশ্য ও অদৃশ্যের ব্যাপারে জানেন, সর্বোচ্চ মর্যাদাবান।” (সূরা রাদ, ১৩ পারা, ৮ রুকু, আয়াত নং-৯)
إِنَّكَ أَنْتَ عَلَّامُ الْغُيُوبِ
-“নিশ্চয়ই, আপনিই সব অদৃশ্যকে ভালভাবেই জানেন।” (সূরা মায়েদা, ৭ পারা, ৫ রুকু, আয়াত নং-১০৯)
সম্মানিত পাঠক! অনুসন্ধান এমন কারো কাছ থেকে করা হয়, যাঁর কাছে স্বত্ত্বাগত জ্ঞান আছে। তিনি কারো কাছ থেকে অনুসন্ধান করেন না।
“অনুসন্ধান করেন’ দ্বারা বুঝা গেল তাঁর স্বত্ত্বাগত ইলম নেই, আল্লাহ তা‘য়ালার ইলমে গায়েবের ব্যাপারে অনুসন্ধান করার আক্বিদা স্পষ্টত কুফর। কুরআন ও হাদীসের সাথে সরাসরি দুশমনি করা।
সুতরাং প্রমাণিত হল, দেওবন্দী এবং লা-মাযহাবীরা আহলে সুন্নাত ওয়াত জাম‘আত নয়। ➥17
টিকা━━━━━━━━━━━━━━━━━━━━
১৭.
ওয়াহাবীদের ইমাম মুহাম্মদ ইসমাঈল কতীল (দেহলভী) লেখেছে-
سو اس طرح غيب كا در يافت كرنا اپنے اختيار ميں هو كہ جب چا ہےكرتيبے - يہ الله صاحب ہے كى شان ہے
-‘‘এ ধরনের ইলমে গায়বের অনুসন্ধান করা তাকে স্বীয় ইচ্ছাধীন রেখেছেন, যে যখন চাইবেন করবেন, এটি আল্লাহ সাহেবের শান।’’ (তাকবীয়াতুল ঈমান, ২০ পৃষ্ঠা)
নবী পাক (ﷺ) নূরের তৈরী
____________________
❏ বিষয় নং-৩: নবী পাক (ﷺ) নূরের তৈরী
দেওবন্দীদের গুরুরা রাসূল (ﷺ) এর নূর মুবারককে অস্বীকার করে, কেবল বাশার বাশার করে চিৎকার করে।
আহলে সুন্নাত ওয়াত জামাতের আক্বীদা হল রাসূলে পাক (ﷺ) এর পবিত্র স্বত্ত্বা নূরানী ও বাশারীও সরকারে দু’আলম (ﷺ) এর জাত মুবারক বাশারিয়াতের পূর্বেও ছিল, কিন্তু দুনিয়ার মধ্যে বাশারী ছুরতে দৃপ্তি প্রকাশ করেছেন, পোশাক পরিবর্তনের কারণে হাকিক্বত পরিবর্তন হয় না।
যেমন হযরত জিবরাইল (عليه السلام) নূরের তৈরী, কিন্তু তিনি যখন হযরত মারিয়াম (عليه السلام)’র নিকট তাশরীফ আনতেন তখন মানব আকৃতিতে আসতেন। এর বর্ণনা মহান আল্লাহ তা’য়ালা উক্ত শব্দগুলোর মাধ্যমে করেছেন। যেমন-
فَتَمَثَّلَ لَهَا بَشَرًا سَوِيًّا
-“সুতরাং তিনি তাঁর সামনে একজন সুস্থ মানুষ রূপে প্রকাশ হলেন।” (পারা ১৬, রুকু ৫ সূরা মারিয়াম, আয়াত নং ১৭)
মিশকাত শরীফের প্রথম হাদিস যেটির বর্ণনাকারী দ্বিতীয় খলিফা হযরত সায়্যিদুনা উমর (رضي الله عنه), তিনি বলেন-
نَحْنُ عِنْدَ رَسُولِ اللَّهِ ﷺ ذَاتَ يَوْمٍ إِذْ طَلَعَ عَلَيْنَا رَجُلٌ
-“একদা আমরা রাসূলে কারিম (ﷺ) এর নিকট ছিলাম, আমাদের কাছে একজন মানুষ আসলেন।”
ইমামুল আম্বিয়া (ﷺ) হযরত ফারুকে আযম (رضي الله عنه) কে জিজ্ঞাসা করেছিলেন, “এই লোকটি কে? ফারুকে আযম (رضي الله عنه) আরয করলেন, আল্লাহ তা‘য়ালা এবং তাঁর রাসূল (ﷺ) ই অধিক জানেন। সরওয়ারে (ﷺ) তখন ইরশাদ করেন,- فَإِنَّهُ جِبْرِيل -“তিনি হযরত জিবরাঈল (عليه السلام)।” ➥18
১৮. খতিব তিবরিযি, মিশকাতুল মাসাবীহ, পৃষ্ঠা ১১, হা/২, মুসনাদে আহমদ, ১/৪৩৪ পৃ. হা/৩৬৭, ইমাম নাসাঈ, আস-সুনান, ৮/৮৭ পৃ. হা/৪৯৯০, ইমাম আবু দাউদ, আস-সুনান, ৪/২২৩ পৃ. হা/৪৬৯৫, সহীহ মুসলিম, হা/৮
সম্মানিত পাঠকবৃন্দ! ‘রজুল’ বলা হয় এমন পুরুষকে যার চুল কালো, পোশাক সাদা, তার দুটি চোখ, দু’হাত, দু’পা এবং দুইটি কান রয়েছে।
সম্মানিত আলেমগণ অধিক অবগত যে, সম্মানিত মুহাদ্দিসীনে কেরাম হাদিস শরীফে এমন কোন হাদিস বর্ণনা করেছেন যেগুলোতে হযরত জিবরাঈল নবুওয়াতের দরবারে অনেকবার সাহাবী হযরত দাহিয়াতুল কালবী (رضي الله عنه)’র আকৃতিতে এসেছেন। ➥19
টিকা━━━━━━━━━━━━━━━━━━━━
১৯.
ইমাম তাবরানী (رحمة الله) তার মু‘জামুল আওসাত গ্রন্থে সংকলন করেন-
عَنْ أَنَسٍ، أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ كَانَ يَقُولُ: يَأْتِينِي جِبْرِيلُ عَلَى صُورَةِ دِحْيَةَ الْكَلْبِيِّ
-‘‘হযরত আনাস ইবনে মালেক (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূল (ﷺ) বলেছেন, নিশ্চয় জিবরাঈল (ﷺ) রাসূল (ﷺ) এর সাহাবী হযরত দাহিয়াতুল কালবী (رضي الله عنه)-এর আকৃতিতে আগমন করতেন।’’ (ইমাম তাবরানী, মু‘জামুল আওসাত, ১/৭ পৃ. হা/৭)
যেমন: দেওবন্দীদের নির্ভরযোগ্য ব্যক্তিত্ব শায়খুল ইসলাম ও ইবনে তাইমিয়া তার স্বীয় কিতাবে, ‘আল-ফুরকান বায়না আউলিয়ার রহমান ও আউলিয়াশ শায়তান’ এই বাস্তবতাটির সত্যতা নিন্মোক্ত শব্দের মধ্যে বলেছেন:
وَقَدْ أَخْبَرَ أن المَلَائِكَةَ جَاءَتْ إِبْرَاهِيْم عَلَيْهِ السَّلَام فِي صُوْرَةِ الْبَشَرِ، وَاِنَّ المَلِكَ تَمْثِلُ لِمَرْيَمَ بَشَراً سَوِيّاً، وَكَانَ جِبْرَيْل عَلَيْه الصَّلَاةُ وَالسَّلَام يَأتِي النَّبِيَّ صَلَّى اَللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فِي صُوْرَةِ دَحْيَةِ الْكَلْبِي وَفِي صُوْرَةِ أَعْرَابِي -مثل حديث تعليم الناس الإسلام والإيمان والإحسان- وَيَرَاهُمْ النَّاسُ كَذَلِكَ
-“নিশ্চয়ই আল্লাহ তা‘য়ালা এ সংবাদ দিয়েছেন যে, হযরত জিবরাঈল (عليه السلام) এর নিকট ফেরেশতা মানব আকৃতিতে আসতেন, হযরত মারিয়াম (عليه السلام)’র নিকট সুস্থ মানব আকৃতিতে এসেছেন। আর জিবরাঈল (عليه السلام) রাসূল (ﷺ) এর কাছে সাহাবী হযরত দাহিয়াতুল কালবী (رضي الله عنه) এবং বেদুইনের আকৃতিতে এসেছেন মানুষগণ তাদেরকে এভাবে দেখেছেন।’’ ➥20
২০. ইবনে তাইমিয়া, আল-ফুরকান বায়না আউলিয়ার রহমান ও আউলিয়াশ শায়তান, ৫/১৫ পৃ.
ইবনে তাইমিয়া কুরআন মাজীদে আল্লাহ তা‘য়ালা ফেরেশতাদের যেসব গুণাবলী বর্ণনা করেছেন, সেগুলো উল্লেখপূর্বক নিম্নোক্ত আয়াতগুলো লিখেছেন:
وَقَالُوا اتَّخَذَ الرَّحْمَنُ وَلَدًا سُبْحَانَهُ بَلْ عِبَادٌ مُكْرَمُونَ
-“তারা বললো, আল্লাহর সন্তান রয়েছে, আল্লাহ তা‘য়ালা এর থেকে পুত পবিত্র। যাদেরকে তারা সন্তান মনে করছে, তারা সন্তান নয়, বরং সম্মানিত বান্দা।” (সূরা আম্বিয়া, ২৬)
হযরত জিবরাঈল (عليه السلام) কে পবিত্র কুরআনে (بَشَرًا سَوِيًّا) সুস্থ মানুষ, (عبد) বান্দা বলা হয়েছে। হাদীসে পাকে (رَجُلٌ) বা পুরুষ বলা হয়েছে। হযরত দাহিয়াতুল কালবী (رضي الله عنه)’র আকৃতি ধারণ করার কথাও বলা হয়েছে, কিন্তু তিনি নূরেরই সৃষ্টি।
হযরত জিবরাঈল (عليه السلام)’র মানবীয় আকৃতি ধারণ এবং মানুষ রূপে প্রকাশ হওয়ার কারণে কী সাহাবায়ে কিরাম (رضي الله عنه) তাঁর নূরানীয়তকে অস্বীকার করেছেন? না, কোথাও এরূপ দেখা যায় নি। কোন আকৃতিই জিবরাঈল (عليه السلام)’র নূরের সৃষ্টি হওয়াকে অস্বীকার করেন নি।
রাসূল (ﷺ) এর খাদেম, গোলাম এবং উম্মত জিবরাঈল (عليه السلام) যখন নূরের সৃষ্টি হওয়া সত্ত্বেও মানবীয় রূপ ধারণ করার ফলে তাঁর নূরের মধ্যে কোন ব্যবধান থাকেনা এবং কেউই তাঁর নূরকে অস্বীকার করেনা। তাহলে সেই জিবরাঈল নয় বরং সমস্ত সৃষ্টি জগতের সর্দার হুযূর পুর নূর (ﷺ) যদি মানবীয় রূপে এই ধরায় তাশরীফ আনেন তবে তাঁর মহান নূরানীয়তের মধ্যে কেনো ব্যবধান থাকবে? এমন কোন মুসলমান আছে যে, রাসূল (ﷺ) এর নূর মোবারককে অস্বীকার করবে?
এখন আপনাদের সামনে রাসূল (ﷺ) এর নূরের ব্যাপারে সাহাবায়ে কেরাম (رضي الله عنه)’র আক্বীদা পেশ করা হবে। রাসূল (ﷺ) ইরশাদ করেন,
أَوَّلُ مَا خَلَقَ اَللهُ نُوْرِي
-“আল্লাহ সর্বপ্রথম আমার নূর সৃষ্টি করেছেন।” ➥21
টিকা━━━━━━━━━━━━━━━━━━━━
২১.
ইমাম কাস্তাল্লানী, আল-মাওয়াহিবুল্লাদুনিয়্যাহ, ১/১৮ পৃ., তাফসীরে আরাইসুল বায়ান, প্রথম খন্ড, ২৩৮ পৃষ্ঠা, তাফসীরে রুহুল বায়ান, প্রথ খণ্ড ৫৪৮ পৃষ্ঠা, জুরকানী, শারহুল মাওয়াহেব, প্রথম খণ্ড ৩৭ পৃষ্ঠা, শায়খ আব্দুল হক মুহাদ্দিসে দেহলভী, মাদারেজুন নবুয়ত, ফার্সী, দ্বিতীয় খণ্ড, ০২ পৃষ্ঠা, ইবনে জাওযী, বয়ানে মিলাদুন্নবী, ২৪ পৃষ্ঠা, মাহদী আল-ফার্সী, মাতালিউল মাসাররাত, ২৭ পৃষ্ঠা, এ হাদিসকে বর্তমানের বাতিলপন্থীগণ জাল বলে থাকেন, তাদের দাঁতভাঙা জবাব জানতে আমার লিখিত ‘প্রমাণিত হাদিসকে জাল বানানোর স্বরূপ উন্মোচন’ ১ম খণ্ডের ৫৬১-৫৮২ পৃষ্ঠা দেখুন, আশাকরি সঠিক বিষয়টি আপনাদের বুঝে আসবে।
❏ এ বিষয়ে একটি হাদিস ইমাম বায়হাকী (رحمة الله)সহ আরও অনেকে সংকলন করেন-
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: لَمَّا خَلَقَ اللهُ عَزَّ وَجَلَّ آدَمَ خَيَّرَ لِآدَمَ بَنِيهِ، فَجَعَلَ يَرَى فَضَائِلَ بَعْضِهِمْ عَلَى بَعْضٍ، قَالَ: فَرَآنِي نُورًا سَاطِعًا فِي أَسْفَلِهِمْ، فَقَالَ: يَا رَبِّ مَنْ هَذَا؟ قَالَ: هَذَا ابْنُكَ أَحْمَدُ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ هُوَ الْأَوَّلُ وَالْآخَرُ وَهُوَ أَوَّلُ شَافِعٍ
-‘‘হযরত আবু হুরায়রা (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত। রাসূল (ﷺ) ইরশাদ করেন, যখন আল্লাহ্ তা‘য়ালা হযরত আদম (عليه السلام) কে সৃষ্টি করলেন, তখন তাকে তার সন্তান-সন্ততি দেখালেন। হযরত আদম (عليه السلام) তাদের পারস্পরিক শ্রেষ্ঠত্ব নিরীক্ষা করতে থাকেন। অবশেষে তিনি একটি চমকদার নূর দেখতে পেয়ে জিজ্ঞাসা করলেন : হে পরওয়ারদিগার! এ কার নূর? তিনি ইরশাদ করলেন, এ তোমার আওলাদ আহমদ (ﷺ)। তিনি (সৃষ্টিতে) প্রথম এবং প্রেরণের দিক থেকে (সকল নবীদের) শেষে, হাশরের ময়দানে তিনিই সর্বপ্রথম শাফায়াতকারী হবেন।’’
(ইমাম বায়হাকী, দালায়েলুল নবুয়ত, ৫/৪৮৩ পৃ. দারুল কুতুব ইলমিয়্যাহ, বয়রুত, ইমাম সুয়ূতী : খাসায়েসুল কোবরা : ১/৭০ পৃ. হা/১৭৩, আল্লামা ইমাম ইবনে আসাকির : তারিখে দামেস্ক : ৭/৩৯৪-৩৯৫ পৃ. দারুল ফিকর ইলমিয়্যাহ, বয়রুত, লেবানন, ইমাম জুরকানী, শারহুল মাওয়াহেব, ১/৪৩ পৃ., দারুল ফিকর ইলমিয়্যাহ, বয়রুত, লেবানন, মুত্তাকী হিন্দী : কানযুল উম্মাল : ১১/৪৩৭ পৃ. হা/৩২০৫৬, আবূ সা‘দ খরকুশী নিশাপুরী, শরফুল মুস্তফা, ৪/২৮৫ পৃ., ইমাম কাস্তাল্লানী, মাওয়াহেবে লাদুন্নীয়া, ১/৪৯ পৃ., ইমাম দিয়ার বকরী, তারীখুল খামীস, ১/৪৫ পৃ., সার্রাজ, হাদিসাহ, হাদিস নং.২৬২৮, ইবনে হাজার আসকালানী, আল-মুখালিসিয়্যাত, ৩/২০৭ পৃ.হা/২৩৪০, সালিম জার্রার, আল-ইমা ইলা যাওয়াইদ, ৬/৪৭৮ পৃ. হা/৬০৮৩, ইবনে সালেহ শামী, সবলুল হুদা ওয়ার রাশাদ, ১/৭১ পৃ., ইফরাকী, মুখতাসারে তারীখে দামেস্ক, ২/১১১ পৃ.)
এ হাদিস থেকে স্পষ্ট প্রমাণিত হল স্বয়ং সৃষ্টিকর্তা মহান রব্বুল আ‘লামীন রাসূল (ﷺ)-এর কে সকল সৃষ্টির প্রথম বলে ঘোষণা দিয়েছেন, তারপরও যারা এর বিপরীতমুখি আক্বিদা অন্তরে ধারণ করেন তাদের আক্বিদা-ঈমান কতটুকু গ্রহণযোগ্য তার চিন্তার বিষয়, পাঠকবর্গ! যারা আল্লাহর বিপরীত কথা বলে সহজেই বুঝা যায় সৃষ্টিকর্তাকেও তারা ভয় করে না, যে আলেম দাবীদার অথচ আল্লাহকে ভয় করে না সে কি নিজেকে আলেম দাবী করতে পারে!
এ হাদিসটির সনদটি সহীহ তাতে কোনো সন্দেহ নেই।
❏ এমনকি আহলে হাদিসদের তথাকথিত ইমাম নাসিরুদ্দীন আলবানী (১৯৯৯ খৃ.) এ সনদটি প্রসঙ্গে লিখেন-
قلت: وهذا إسناد حسن؛ رجاله كلهم ثقات رجال البخاري
-‘‘আমি (আলবানী) বলছি, এই হাদিসের সনদ ‘হাসান’, এর সকল বর্ণনাকারীগণ সহীহ বুখারীর বর্ণনাকারী ন্যায়।’’ (আলবানী, সিলসিলাতুল আহাদিসুদ্ দ্বঈফাহ, হা/৬৪৮২)
❏ ইমাম আবূ সা‘দ খরকুশী নিশাপুরী (ওফাত. ৪০৭ হি.)সহ অনেক মুহাদ্দিস ইমাম আব্দুল্লাহ ইবনে মোবারক (رحمة الله)-এর কিতাব থেকে সংকলন করেন-
وروى عبد الله بن المبارك، عن سفيان الثوري، عن جعفر بن محمد الصادق، عن أبيه، عن جده، عن علي بن أبي طالب أنه قال: إن الله تبارك وتعالى خلق نور محمد صلى الله عليه وسلم قبل أن يخلق السماوات والأرض والعرش والكرسي والقلم والجنة
-‘‘বিখ্যাত হাদিসের ইমাম আব্দুল্লাহ ইবনে মোবারক (رحمة الله) হতে বর্ণিত আছে, তিনি তাঁর শায়খ সুফিয়ান সাওড়ী (رحمة الله) হতে তিনি আলে রাসূল ইমাম জাফর বিন মুহাম্মদ সাদেক (رحمة الله) হতে বর্ণনা করেন, তিনি তাঁর পিতা ইমাম বাকের (رحمة الله) হতে বর্ণনা করেন, তিনি তাঁর পিতামহ হযরত জয়নুল আবেদীন (رضي الله عنه) হতে বর্ণনা করেন, তিনি আমিরুল মু‘মিনীন হযরত আলী (رضي الله عنه) হতে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, নিশ্চয় মহান রব তা‘য়ালা আসমান, যমীন, আরশ, কুরসী, কলম, জান্নাত সৃষ্টি করার পূর্বে রাসূল (ﷺ)-এর নূর মোবারককে সৃষ্টি করেছেন।’’
(ইমাম আবূ সা‘দ খরকুশী নিশাপুরী, শরফুল মোস্তফা, ১/৩০৮ পৃ., দারুল বাশায়েরুল ইসলামিয়্যাহ, মক্কা, সৌদি আরব, প্রথম প্রকাশ. ১৪২৪ হি.)
এ হাদিসের আলোকে বুঝা যায় যে, মহান রব সব কিছু সৃষ্টির পূর্বে তাঁর হাবিবের নূর মোবারককে সৃষ্টি করেছেন।
❏ বিশ্বের অন্যতম মুহাদ্দিস, হাফেযুল হাদিস, বিখ্যাত হানাফী ফকীহ, আল্লামা মোল্লা আলী ক্বারী (رحمة الله) তাঁর সুবিখ্যাত গ্রন্থ ‘মিরকাত’ এ উলেখ করেন,
قَالَ ابْنُ حَجَرٍ: اخْتَلَفَتِ الرِّوَايَاتُ فِي أَوَّلِ الْمَخْلُوقَاتِ، وَحَاصِلُهَا كَمَا بَيَّنْتُهَا فِي شَرْحِ شَمَائِلِ التِّرْمِذِيِّ أَنَّ أَوَّلَهَا النُّورُ الَّذِي خُلِقَ مِنْهُ - عَلَيْهِ الصَّلَاةُ وَالسَّلَامُ- -، ثُمَّ الْمَاءُ، ثُمَّ الْعَرْشُ
-‘‘ইমাম ইবনে হাজার (رحمة الله) বলেন, আদি সৃষ্টি কোন বস্তু তা নিয়ে ভিন্ন ভিন্ন বর্ণনা রয়েছে, যার সার-সংক্ষেপ আমি শামায়েলে তিরমিযীর ব্যাখ্যা গ্রন্থে আলোচনা করেছি। সর্বপ্রথম সেই নূরকে মহান রব সৃষ্টি করেছেন যে নূর থেকে রাসূল (ﷺ) কে সৃষ্টি করা হয়েছে, তারপর পানি সৃষ্টি করা হয়েছে, তারপর আরশ সৃষ্টি করা হয়েছে (তারপর কলম)।’’ (আল্লামা মোল্লা আলী ক্বারী : মিরকাতুল মাফাতীহ : ১/১৪৮ পৃ. হা/৭৯)
━━━━━━━━━━━o━━━━━━━━━
রাসূলে কারিম (ﷺ) এর জালিলুল কদর সাহাবী হযরত জাবের (رضي الله عنه) রাসূল (ﷺ) এর নিকট আরজ করলেন,
يَا رَسُولَ اللَّهِ بِأَبِي أَنْتَ وَأُمِّي أَخْبِرْنِي عَنْ أَوَلَّ شَيْءٍ خَلَقَهُ اللَّهُ قَبْلَ الأَشْيَاءِ
-“হে রাসূল (ﷺ) ! আপনার কদমে আমার পিতা-মাতা উৎসর্গ হোক, আল্লাহ তা‘য়ালা সর্বপ্রথম কোন বস্তু সৃষ্টি করেন?” উত্তরে রাসূল (ﷺ) বললেন,
يَا جَابِرُ! إِنَّ اللَّهَ خَلَقَ قَبْلَ الأَشْيَاءِ نُورُ نَبِيِّكَ مِنْ نُورِهِ
-‘‘হে জাবের! আল্লাহ সর্বপ্রথম তাঁর নূর মোবারক থেকে তোমার নবীর নূর সৃষ্টি করেছেন।” ➥22
২২. ইমাম আব্দুর রায্যাক, আল-মুসান্নাফ, (জুযউল মাফকুদ) ৬৩ পৃ. হা/১৮, মাওয়াহিবুল ল্লাদুনীয়া শরীফ, প্রথম খণ্ড, ০৯ পৃষ্ঠা, যুরকানী, শারহুল মাওয়াহেব, প্রথম খণ্ড, ৪৬ পৃষ্ঠা, হালাবী, সিরাতে হালবীয়াহ, প্রথম খণ্ড, ৩৭ পৃষ্ঠা, আল্লামা মাহদী আল-ফার্সী, মাতালিউল মাসার্রাত শরহে দালাইলুল খায়রাত, ২১০ পৃষ্ঠা, শায়খ ইউসুফ নাবহানী, হুজ্জাতুল্লাহ আলাল আলামীন, ২৮০ পৃষ্ঠা এবং আনওয়ারুল মুহাম্মদীয়্যাহ, পৃষ্ঠা ০৯, আকীদাতুশ শোহদা, ১০০ পৃষ্ঠা, ফাতওয়ায়ে হাদিসিয়্যাহ, ৫১ পৃষ্ঠা, এ হাদিসকে বর্তমানের বাতিলপন্থীগণ জাল বলে থাকেন, তাদের দাঁতভাঙা জবাব জানতে আমার লিখিত ‘প্রমাণিত হাদিসকে জাল বানানোর স্বরূপ উন্মোচন’ ১ম খণ্ডের ৫৮৯-৬১০ পৃষ্ঠা দেখুন, আশাকরি সঠিক বিষয়টি আপনাদের বুঝে আসবে।
বোখারী শরীফের ব্যাখ্যাকার ইমাম আহমদ কাস্তাল্লানী (কুদ্দাসা সিররুহুল বারী) তাঁর স্বীয় কিতাব “মাওয়াহিবুল ল্লাদুনীয়্যায় ➥23 একটি বর্ণনা নকল করেছেন যে, হযরত সায়্যিদুনা ইমাম জয়নুল আবেদীন (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত, তিনি তাঁর সম্মানিত পিতা ইমামে শহীদে কারবালা হযরত ইমাম হোসাইন (رضي الله عنه) হতে এবং তিনি তাঁর পিতা শেরে খোদা মুশকিল কোশা হযরত সায়্যিদুনা আলী মরতুযা (رضي الله عنه) হতে বর্ণনা করেন যে, রাসূল কারিম (ﷺ) ইরশাদ করেন,
عن علي بن الحسين عن أبيه عن جده أن النبي ﷺ قال كنت نورا بين يدي ربي قبل خلق آدم بأربعة عشر ألف عام
-“হযরত আদম (عليه السلام) সৃষ্টি হবার ১৪ হাজার বছর পূর্বে আমি আমার রবের নিকট নূর ছিলাম।” ➥24
২৩. আল্লামা শাহ আব্দুল আজীজ মুহাদ্দিসে দেহলভী (رحمة الله) বলেন, ‘মাওয়াহিবুল্লা দুনিয়া’ স্বীয় যুগের অদ্বিতীয় কিতাব। (বুস্তানুল মুহাদ্দেসীন, ফার্সী ১১৯ পৃ.) (ফকীর আবুল হামেদ জিয়া উল্লাহ কাদেরী।)
২৪. ইমাম কাস্তাল্লানী, মাওয়াহেবুল্লাদুনীয়া, প্রথম খণ্ড, ১০০ পৃষ্ঠা, জুরকানী, শারহুল মাওয়াহেব, প্রথম খণ্ড, ৪৯ পৃষ্ঠা, শায়খ ইউসুফ নাবহানী, জাওয়াহিল বিহার, ৩/৭৭৬ পৃষ্ঠা ও আনওয়ারুল মুহাম্মদীয়া, ০৯ পৃষ্ঠা, এবং হুজ্জাতুল্লাহ আলাল আলামীন, ২৫১ পৃষ্ঠা, ইসমাঈল হাক্কী, তাফসীরে রুহুল বায়ান, ৩৭০ পৃষ্ঠা, দ্বিতীয় খণ্ড, এ হাদিসকে বর্তমানের বাতিলপন্থীগণ জাল বলে থাকেন, তাদের দাঁতভাঙা জবাব জানতে আমার লিখিত ‘প্রমাণিত হাদিসকে জাল বানানোর স্বরূপ উন্মোচন’ ১ম খণ্ডের ৬১১-৬১৬ পৃষ্ঠা দেখুন, আশাকরি সঠিক বিষয়টি আপনাদের বুঝে আসবে।
রাসূলে কারিম (ﷺ)’র এসব বাণী থেকে দিবালোকের ন্যায় স্পষ্ট যে, রাসূল (ﷺ) তাঁর উম্মতের কাছে তাঁর নূরানিয়্যতের ব্যাপারে ঘোষণা করেছেন।
সুতরাং রাসূল (ﷺ)’র নূরানিয়তের ব্যাপারে যারা অস্বীকার করবে তাদের তরীকা মূলত রাসূল (ﷺ)’র পদ্ধতির বিপরীত। কবি বলেন:
خلاف پيبر كے را گز يہ ۞ ہر گز بمنزل نہ خواہد ريہ
‘‘প্রিয় নবীর (ﷺ) বিরোধীতা করবে যারা
মনযিলে মকসুদে কখনো পৌঁছবে না তারা।’’
আপনাদের সম্মূখে এখন রাসূলে করিম (ﷺ) এর প্রাণপ্রিয় এমন সাহাবায়ে কেরামদের আক্বীদা বর্ণনা করবো, যারা আমাদের জন্য পথ প্রদর্শক। কেননা রাসূল (ﷺ) নাযাত প্রাপ্ত দলের জন্য যে মানদণ্ড এবং কষ্টিপাথর নির্ধারণ করেছেন তা হল,
مَا أَنَا عَلَيْهِ وأصحابي
-“আমি এবং আমার সাহাবাগণ যার উপর আছে।” ➥25
২৫. খতিব তিবরিযি, মিশকাতুল মাসাবিহ, ১/৬১পৃ. কিতাবুল ই‘তিসাম বিস্-সুন্নাহ, হাদিস নং.১৬১, তিরমিযি, আস্-সুনান, ৫/২৬ পৃ. হাদিস, ২৬৪১, আহলে হাদিস আলবানী সুনানে তিরমিযির তাহক্বীকে হাদিসটি ‘হাসান’ বলেছেন, তাবরানী, মু‘জামুল কাবীর, ১৩/৩০ পৃ. হাদিস, ৬২, ১৪/৫২ পৃ. হাদিস, ১৪৬৪৬, মাকতুবাতু ইবনে তাইমিয়া, কাহেরা, মিশর, প্রকাশ.১৪১৫ হি. বায়হাকি, ই‘তিক্বাদ, ১/২৩৩ পৃ. বাগভী, শরহে সুন্নাহ, ১/২১৩ পৃ. হাদিস, ১০৪
অর্থাৎ আমি এবং আমার সাহাবাগণের আক্বীদাই হল তোমাদের আক্বীদার মানদন্ড।
প্রথম খলিফা হযরত আবু বকর (رضي الله عنه)’র আক্বীদা
____________________
প্রথম খলিফা হযরত আবু বকর (رضي الله عنه)’র আক্বীদা
উম্মতে মুহাম্মদী (ﷺ)’র মহান ইমাম, মুহাদ্দেস, হযরত ইমাম বায়হাকী এবং আল্লামা শায়খ ইউসূফ নাবহানী (رحمة الله) তাদের স্বীয় কিতাবে হযরত সায়্যিদুনা সিদ্দিকে আকবার (رضي الله عنه)’র একটি আক্বীদা এনেছেন, যা তাঁর নিম্নোক্ত কবিতায় প্রস্ফূটিত হয়েছে-
أَمِينٌ مُصْطَفًى لِلْخَيْرِ يَدْعُو ... كَضَوْءِ الْبَدْرِ زَايَلَهُ الظَّلَامُ
“উত্তম কাজের প্রতি ডাকেন সারকারে মুস্তফা আমিন;
বদর সম রৌশনীতে যার দূরভীত হয় রাত গহীন।”
(ইমাম বায়হাকী, দালায়েলুন নবুয়ত, প্রথম খ- ২৯৮ পৃষ্ঠা, শায়খ ইউসুফ নাবহানী, জাওয়াহিরুল বিহার, প্রথম খ-, ৯২ পৃষ্ঠা)
সায়্যিদুনা আলী (رضي الله عنه)’র আক্বীদা
____________________
সায়্যিদুনা আলী (رضي الله عنه)’র আক্বীদা
হযরত সায়্যিদুনা আলী (رضي الله عنه) বর্ণনা করেন,
إِذَا تَكَلَّمَ رُئِيَ كَالنُّورِ يَخْرُجُ مِنْ بَيْنِ ثَنَايَاهُ
-‘‘রাসূল (ﷺ)’র যখন কথা বলেন তাঁর দাঁত মুবারক থেকে যেন নূর বের হয়।’’ ➥26
২৬. কাস্তাল্লানী, মাওয়াহেবুল্লাদ্দুনিয়া, ২/১৯ পৃষ্ঠা, শায়খ ইউসুফ নাবহানী, আনওয়ারে মুহাম্মদীয়া, ১৩২পৃ, যুরকানী, শারহুল মাওয়াহেব, ৫/২৮৭ পৃ.
সায়্যিদুনা আব্বাস (رضي الله عنه)’র আক্বীদা
____________________
সায়্যিদুনা আব্বাস (رضي الله عنه)’র আক্বীদা
তাবুক যুদ্ধের বিজয় এবং সাফল্য পেয়ে হুযূরে পুর নূর সারকারে দো আলম (ﷺ)’র যখন মদীনা শরীফে তাশরীফ আনলেন, তখন হযরত আব্বাস (رضي الله عنه) রাসূল (ﷺ)’র শানে কবিতা আবৃতির অনুমতি প্রার্থনা করেন। হুযুর (ﷺ)’র অনুমতি দান করে বললেন, চাচা! আল্লাহ আপনার মুখকে হেফাজত করুন।
হযরত আব্বাস (رضي الله عنه) উপর্যুক্ত কবিতার শেষ দুই পংক্তিতে রাসূল (ﷺ)’র নূরের আলোচনা করেছেন: এই কবিতাগুলো রাসূল (ﷺ)’র উম্মতের অনেক বড় বড় মুহাদ্দিস যেমন, ইমাম জালালুদ্দীন সুয়ূতি (رحمة الله), মুহাদ্দীস ইমাম ইবনে জাওযী (رحمة الله), আল্লামা বুরহানুদ্দীন হালবী (رحمة الله), আল্লামা দাহলান মাক্কী (رحمة الله), আল্লামা শায়খ ইউসুফ নাবহানী, আল্লামা ইবনে আবদুল র্বা (رحمة الله), আল্লামা হাকিম নিশাপুরী (رحمة الله), আল্লামা ইবনে কাসীর (رحمة الله), আল্লামা শাহাস্তাতানী (رحمة الله) প্রমূখগণ নিজেদের কিতাবে লিপিবদ্ধ করেছেন। কবি বলেন:
وَأَنْتَ لَمَّا وُلِدْتَ أَشْرَقَتِ ... الْأَرْضُ وَضَاءَتْ بِنُورِكَ الْأُفُقُ
فَنَحْنُ فِي ذَلِكَ الضِّيَاءِ وَفِي ... النُّورِ وَسُبْلِ الرَّشَادِ نَخْتَرِقُ
“আর্বিভাবের ক্ষণে তব জ্যোতিতে চমকে অন্তরীক্ষ
সেই জ্যোতিতেই পেলাম মোরা হেদায়তের প্রোজ্বলক। ➥27
২৭.
১. ইমাম ইবনে জাওযী, কিতাবুল ওয়াফা, ১/৩৫ পৃ.,
২. ইমাম সুয়ূতি, খাসায়েসুল কুবরা, প্রথম খণ্ড, ৬৭ পৃ.,
৩. ইমাম বুরহানুদ্দীন হালবী, সিরাতে হালবিয়্যাহ, ১/৮৩ পৃ.,
৪. ইবনে কাসির, সিরাতুন নববিয়্যাহ, ১/১৯৫ পৃ.
৫. শায়খ ইউসুফ নাবহানী, জাওয়াহেরুল বিহার, ৩য় খণ্ড, পৃ. ৪০,
৬. শায়খ ইউসুফ নাবহানী, আনওয়ারে মুহাম্মাদীয়া, ৪১৬ পৃষ্ঠা,
৭. শায়খ ইউসুফ নাবহানী, হুজ্জাতুল্লাহে আলাল আলামীন, ২২২ পৃ.,
৮. ইমাম কাস্তাল্লানী, মাওয়াহেবুল্লা দুনিয়্যাহ, ১/৭৯ পৃ.
৯. ইমাম ইবনে আব্দুল বার্, আল ইস্তিয়াব, ২/৪৪৭ পৃ.
১০. ইমাম হাকেম, আল-মুস্তাদরাক, ৩/৩৬৯ পৃ., হা/৫৪১৭
১১. ইবনে কাসির, আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া, দ্বিতীয় খণ্ড ২৫৮ পৃ.
১২. শাহরাস্তানী, কিতাবুল মিলাল ওয়ান নিহাল, দ্বিতীয় খণ্ড, ২৩৭ পৃ., দারুল মা‘রিফ, বয়রুত।
১৩. হাইসামী, মাজমাউয-যাওয়াইদ, ৮/২১৮ পৃ. হা/১৩৮৩০
১৪. যাহাবী, তালাখিসুল মুস্তাদরাক, ৩২৭ পৃ., তৃতীয় খণ্ড
১৫. মোল্লা আলী ক্বারী, শরহে শিফা, ১/৩৭০ পৃ.
১৬. ইমাম কাযি আয়্যায, শিফা শরীফ, ১/৩২৯ পৃ.
১৭. ইমাম বায়হাকী, দালায়েলুন নবুয়ত, ৫/২৬৮ পৃ.
১৮. ইমাম জুরকানী, শারহুল মাওয়াহেব, ১/২২০ পৃ.
১৯. ইমাম ইবনে সালেহ শামী, সবলুল হুদা ওয়ার রাশাদ, ১/৭০ পৃ.
২০. ইমাম মুকরীজী, ইমতাউল আসমা, ৩/১০৪ পৃ.
২১. ইমাম তাবরানী, মু‘জামুল কাবীর, ৪/২১৩ পৃ. হা/৪১৬৭
২২. ইমাম দিনওয়ারী, মাজালিস ওয়া জাওয়াহিরুল ইলম, ৪/৫৬ পৃ. হা/১২১৮
২৩. ইবনে কাসির, জামেউল মাসানীদ ওয়াল সুনান, ২/৪৩৪ পৃ. হা/২৮৩১
২৪. ইমাম ইবনে মানদাহ, মা‘রিফাতুস সাহাবা, ১/৫২১ পৃ.
২৫. যাহাবী, তারিখুল ইসলাম, ১/৪৯৫ পৃ. ক্রমিক. ১ এবং সিয়ারু আলামিন নুবালা, ২/১০৩ পৃ.
২৬. ইমাম ইবনে আসাকীর, তারিখে দামেস্ক, ৩/৪১০ পৃ. ক্রমিক. ৭৬১
২৭. ইমাম আবু নুয়াইম ইস্পাহানী, মা‘রিফাতুস সাহাবা, ২/৯৮৩ পৃ. হা/২৫২০
২৮. ইমাম ইবনে আছির, আসাদুল গাবাহ ফি মা‘রিফাতিস সাহাবা, ২/১৬৫ পৃ. ক্রমিক. ১৪৩৮
হযরত সায়্যিদুনা আবু হোরাইরা (رضي الله عنه)’র আক্বিদা
____________________
হযরত সায়্যিদুনা আবু হোরাইরা (رضي الله عنه)’র আক্বিদা
জলিলুল কদর সাহাবী হযরত সায়্যিদুনা আবূ হুরাইরা (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন,
وَإِذَا ضَحِكَ ﷺ يَتَلَأْلَأُ فِي الْجُدُرِ
-‘‘রাসূল (ﷺ) যখন তাবাস্সুম করতেন (মুচকি হাসতেন) তখন তাঁর নূর মোবারকে দেওয়াল চমকিত হতো।’’ ➥28
২৮.
১. ইমাম সুয়ূতি, খাসায়েসুল কুবরা, ১/১২৭ পৃ.
২. ইমাম কাস্তাল্লানী, মাওয়াহিবুল্লা দুনিয়া, ২/৬৩ পৃ.
৩. শায়খ ইউসুফ নাবহানী, আনওয়ারে মুহাম্মাদীয়া, ১৩৩ পৃ.
৪. ইমাম কাযি আয়্যায, শিফা শরীফ, ১/১৪৯ পৃ.
৫. মোল্লা আলী কারী, শরহে শিফা, ১/১৬৩ পৃ.
৬. শিহাবুদ্দীন খিফ্ফাজী, নাসিমুর রিয়াদ্ব, ১/৩৩৮ পৃ.
৭. শায়খ আব্দুল হক মুহাদ্দিসে দেহলভী, মাদারেজুন নবুয়াত (ফার্সী), ১/১২ পৃ
৮.শায়খ ইউসুফ নাবহানী, হুজ্জাতুল্লাহে আলাল আলামীন, ৬৮৯ পৃ.
৯. বায়হাকী, দালায়েলুন নবুয়ত, ১/২৭৪ পৃ.
১০. ইমাম জুরকানী, শারহুল মাওয়াহেব, ৫/৪৫০ পৃ.
১১. ইমাম মুকরীজী, ইমতাউল আসমা, ২/১৭৬ পৃ.
হযরত সায়্যিদুনা আনাস (رضي الله عنه)’র আক্বীদা
____________________
হযরত সায়্যিদুনা আনাস (رضي الله عنه)’র আক্বীদা
হযরত সায়্যিদুনা আনাস (رضي الله عنه) বর্ণনা করেন,
لَمَّا كَانَ الْيَوْمُ الَّذِي دَخَلَ فِيهِ رَسُولُ اللَّهِ ﷺ الْمَدِينَةَ أَضَاءَ مِنْهَا كُلُّ شَيْءٍ
-‘‘রাসূলে করিম (ﷺ) যে দিন মদিনা পাকে তাশরীফ আনয়ন করেন, তাঁর নূরের আলোকে প্রত্যেক বস্তু আলোকিত হয়।’’ ➥29
২৯.
১. ইমাম তিরমিযী, আস-সুনান, ৬/১৭ পৃ. হা/৩৬১৮
২. ইমাম তিরমিযি, শামায়েলে মুহাম্মাদিয়্যাহ, ১/৩৩৩ পৃ. হা/৩৯৩
৩. খতিব তিবরিযি, মিশকাতুল মাসাবীহ, (৫৪৭ পৃ. ভারতীয়) ৩/১৬৮১ পৃ., হা/৫৯৬২
৪. ইবনে মাজাহ, আস-সুনান, ২/৫৫৪ পৃ. হা/১৬৩১
৫. ইমাম ইবনে সা‘দ, আত-তবকাতুল কোবরা, ১/১৮১ পৃ.
৬. কাস্তাল্লানী, মাওয়াহেবুল্লা দুনিয়া, ১/১৮৪ পৃ.
৭. শায়খ ইউসুফ নাবহানী, আনওয়ারে মুহাম্মদীয়া, ৩৮ পৃ.,
৮. ইমাম যুরকানী, শারহুল মাওয়াহিব, ২/১৬৫ পৃ.
৯. ইমাম হালবী, সিরাতে হালবীয়্যা, ২/৭৪ পৃ.
১০. শায়খ ইউসুফ নাবহানী, জাওয়াহেরুল বিহার, ৬০ পৃ.,
১১. ইমাম সুয়ূতি, খাসায়েসুল কুবরা, ১/৩১২ পৃ.
১২. শায়খ আব্দুল হক মুহাদ্দিসে দেহলভী, মাদারেজুন নবুয়াত, ২/৮০ পৃ.
১৩. ইমাম হাকেম, আল-মুস্তাদরাক, ৩/৫৯ পৃ. হা/৪৩৮৯, তিনি বলেন, সনদটি সহীহ।
১৪. যাহাবী, তালখিসুল মুস্তাদরাক, তৃতীয় খণ্ড, ১২ পৃ.
১৫. ইমাম দিয়ার বকরী, তারিখুল খামীস, ১/৩৪১ পৃ.
১৬. ইমাম ইবনে হাজার হাইসামী, আশরাফুল ওয়াসায়েল, ১/৫৭৩ পৃ.
১৭. ইমাম বায়হাকী, দালায়েলুন নবুয়ত, ৭/২৬৫ পৃ.
১৮. বাগভী, আনওয়ার ফি শামায়েলে নাবিয়্যিল মুখতার, ১/৭৫৬ পৃ. হা/১২১০
১৯. ইমাম ইবনে সালেহ শামী, সবলুল হুদা ওয়ার রাশাদ, ২/৩৭২ পৃ.
২০. ইমাম ইবনে কাসির, সিরাতে নববিয়্যাহ, ৪/৫৪৪ পৃ.
২১. ইমাম আহমদ, আল-মুসনাদ, ২১/৩৫ পৃ. হা/১৩৩১২
২২. মুসনাদে বায্যার, ১৩/২৯১ পৃ. হা/৬৮৭১
২৩. ইমাম বাগভী, শরহে সুন্নাহ, ১৪/৫০ পৃ. হা/৩৮৩৩
২৪. ইমাম আবু নুয়াইম ইস্পাহানী, দালায়েলুন নবুয়ত, ২২৭ পৃ. হা/১৭৯
আল্লামা কুতুবুদ্দীন দেহলভী ছাহেবে ‘মাযাহেরে হক’ এই হাদীসের ব্যাখ্যায় বলেন, মদীনা মুনাওয়ারার দরজা এবং দেয়াল পর্যন্ত আলোকিত হয়। ➥30
৩০. নবাব কুতুবুদ্দীন দেহলভী, মাযাহেরে হক, ৩৩৯ পৃষ্ঠা, চতুর্থ খণ্ড
প্রিয় পাঠকবৃন্দ! উপর্যুক্ত হাদিসে পাকের মাধ্যমে প্রতিভাত হলো যে, রাসূল কারিম হুযূরে পূরনূর (ﷺ) এর সম্মানিত সাহাবাগণের নূরানী আক্বীদা দ্বারা প্রকাশ পায় যে, তারা রাসূলে কারিম (ﷺ) কে নূর জানতেন।
সুতরাং দেওবন্দীদের বড় বড় আলেম যারা কেবল হুযুর পুরনূর (ﷺ) কে মানুষই মানে এবং বাশার বাশার বলে ডাক হেঁকায় এবং সাথে সাথে এই দাবীও করে যে, আমরা আহলে সুন্নাত ওয়াত জাম‘আত।
উল্লেখিত হাদিসে পাকের আলোকে হাদীসে সুবুল পেশওয়ায়ে কুল হুযুর (ﷺ) এবং সাহাবারে কেরাম (رضي الله عنه) গণের আক্বীদাকে উপেক্ষা করত নিজেদেরকে আহলে সুন্নাত ওয়াল জাম‘আত দাবী করা মূলত ধোঁকাবাজীরই অন্তর্ভূক্ত।
আহলে সুন্নাত ওয়াল জাম‘আত তো তারাই যারা হুযুর (ﷺ) কে নূর মানে; আর এ আহলে সুন্নাত ওয়াল জাম‘আতই হল বেরলভীগণ।
দেওবন্দীরা বলে হুযূর (ﷺ)’র সম্মানিত বিবি ও আওলাদ ছিলেন এবং তিনি পানাহার করেতেন এজন্য তিনি নূর নয়।
দেওবন্দীদের আকল আর জ্ঞানের দাবী হলো রাসূল (ﷺ)’র নূর মানার জন্য তাঁর পানাহার করা, শাদী করা, আজওয়ায়ে মুতাহ্হারাত হওয়া এবং আওলাদে পাক থাকা নিষিদ্ধ।
কিন্তু সাহাবারে কেরামদের সামনে মিরাজ শরীফের দুলহান, সমস্ত সৃষ্টিকূলের আশ্রয় স্থল হুযুর পূরনূর (ﷺ) পানাহার করতেন। তাঁরাও তো জানতেন রাসূল (ﷺ)’র শাদী মুবারক, আজওয়াজে মুতাহ্হারাত এবং আওলাদে পাক রয়েছেন। তা সত্ত্বেও সাহাবায়ে কেরাম রাসূল (ﷺ) কে নূর হিসেবে মানতেন।
যেমন উম্মতে মুহাম্মদীর সকল মুফাস্রিদের সর্দার হযরত সায়্যিদুনা আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (رضي الله عنه) কুরআন পাকের নিম্নোক্ত আয়াত-
قَدْ جَاءَكُمْ مِنَ اللَّهِ نُورٌ وَكِتَابٌ مُبِينٌ
এর তাফসীরে বলেন,
{قَدْ جَآءَكُمْ مِّنَ الله نُورٌ} رَسُول يَعْنِي مُحَمَّدًا
-‘‘তোমাদের নিকট আল্লাহর পক্ষ থেকে রাসূলের নূর অর্থাৎ মুহাম্মদ (ﷺ) তাশরীফ এনেছেন।’’ ➥31
৩১. তাফসীরে ইবনে আব্বাস, ৯০ পৃ., পৃথিবীর সুবিখ্যাত ৭৬ টি তাফসিরে উপরোক্ত আয়াতের নূর দ্বারা রাসূল (ﷺ) কে উদ্দেশ্য বলে উল্লেখ করা হয়েছে, এ বিষয়ে বিস্তারিত জানতে আমার লিখিত ‘প্রমাণিত হাদিসকে জাল বানানোর স্বরূপ উন্মোচন’ ১ম খণ্ডের ৫৪০-৫৬০ পৃষ্ঠায় দেখুন।
হযরত সায়্যিদাহ হালিমা সাদিয়া (رضي الله عنه)’র আক্বিদা
____________________
হযরত সায়্যিদাহ হালিমা সাদিয়া (رضي الله عنه)’র আক্বিদা
হযরত সায়্যিদুনা হালিমা সাদিয়া (رضي الله عنه) যিনি রাসূল (ﷺ)’র দুধ মাতা, যাঁর সামনে কুল কায়েনাতের অভিভাবক রাসূল (ﷺ) পানাহার করতেন, তাঁর আক্বিদাও ছিল যে, হুযুর (ﷺ) নুর।
এ হাদীস খানা মুহাদ্দিস ইবনে জাওযী এবং আল্লামা কাযি সানাউল্লাহ পানিপথি (رحمة الله) বর্ণনা করেন-
اَذَا اَرْضَعْتُهُ فِى الْمَنْزِلَ اَسْتُغْنِى بِه عَنْ الْمِصْبَاحِ
‘রাসূল (ﷺ) যখন দুধ পান করতেন তখন আমার ঘরে চেরাগের প্রয়োজন হতো না।’
একদা আমাকে উম্মে মাওলা সাদিয়া জিজ্ঞাসা করলেন, হে হালিমা! তুমি সারা রাত কেন বাতি জ্বালিয়ে রাখো? উত্তরে তিনি বললেন,
لا والله لا أَوْقَدَ نَارًا ولكنه نور محمد ﷺ
আল্লাহর শপথ! না, আমি বাতি জালাই না, বরং এটা রাসূল (ﷺ)’র নূর মুবারক।’’ ➥32
৩২. ইমাম ইবনে জাওযী, মাওলুদুন নববী শরীফ (ﷺ), ৫৪ পৃ., কাযি সানাউল্লাহ পানিপথি, তাফসীরে মাযহারী, ইবনে সালেহ শামী, সবলুল হুদা ওয়ার রাশাদ, ১/৪২৪ পৃ.
হযরত সায়্যিদাহ উম্মে আয়মান(رضي الله عنه)'র আক্বিদা
____________________
হযরত সায়্যিদাহ উম্মে আয়মান➥33 (رضي الله عنه)'র আক্বিদা
সায়্যিদুশ শাফেয়ীন ইমামুল আউয়ালিন ওয়া আখেরীন রাসূলে কারিম (ﷺ)’র দ্বিতীয় দুগ্ধ পানকারীনীর আক্বিদাও ছিল যে, হুযুর (ﷺ) নূরই ছিলেন, যেমন রাসূল (ﷺ)’র ইন্তেকালের পর তিনি এক কবিতায় তা প্রকাশ করেন-
وَلَقَدْ كَانَ بَعْدَ ذَلِكَ نُورًا
وَسِرَاجًا يضيء في الظلماء
“ছিলেন তিনি জ্যোর্তিময় আর ছিলেন দেপ্তীময়
সেই জ্যোতিতে আঁধার তিতির দূরীভূত হয়।”
এখন রাসূলে কারিম (ﷺ)’র ফুফুদের আক্বিদার পেশ করা হবে, যাঁরা রাসূল (ﷺ)’র এর সম্মানিত বিবিগণ এবং আওলাদগণকে দেখেছেন এবং তাঁকে পানাহার করতেও দেখেছেন। ➥34
টিকা━━━━━━━━━━━━━━━━━━━━
৩৩.
❏ ওয়াহাবীদের গর্ব ইবরাহীম মীর শিয়ালকুটী হযরত উম্মে আয়মান (رضي الله عنه)ও হুযুর (ﷺ) কে দুধ পান করিয়েছেন। হযরত আয়মান ওই মহিলা যিনি রাসূল (ﷺ) কে স্বীয় পিতার পক্ষ থেকে ওয়ারিশ সূত্রে পেয়েছেন এবং যিনি তাঁর মায়ের ইন্তিকালের পর হুযুর (ﷺ) কে আবওয়া নামক স্থান থেকে মদীনা শরীফে নিয়ে এসেছেন। তাঁর নাম ছিল বরকত। হুযুর (ﷺ) তাঁকে অধিক সম্মান করতেন। হাফেজ ইবনে আবদুল বার্ (رحمة الله) বিশুদ্ধ সনদে হাদীস বর্ণনা করেছেন যে, রাসূল (ﷺ) ইরশাদ করেন, “উম্মে আয়মান আমার মায়ের পর মা।”
❏ হাফেজ ইবনে কাসীর (رحمة الله) তার বিদায়া ওয়ান নিহায়ার মধ্যে লিখেছেন যে, রাসূল (ﷺ) যখন বড় হলেন তখন উম্মে আয়মান (رضي الله عنه) কে আযাদ করে দিয়েছেন এবং আযাদকৃত গোলাম ও পোষ্যপুত্র হযরত যায়েদ বিন হারেছ (رضي الله عنه)’র সাথে তাঁকে বিবাহ দেন। অত:পর তাদের থেকে হযরত উসামা বিন যায়েদ ভূমিষ্ট হলেন। হযরত উম্মে আয়মান (رضي الله عنه)’র নাম বরকত ছিল। আর তিনি এমনিতেই বরকত ছিলেন এবং আল্লাহর দরবারে মকবুল ছিলেন।
❏ ইবনে হাজর আসকালানী (رحمة الله) ইমাম ইবনে সাদ (رحمة الله) থেকে বর্ণনা করেন, হযরত উম্মে আয়মান (رضي الله عنه) যখন মদীনা পাকে হিজরত করেন তখন তিনি রোযাদার ছিলেন। তাঁর পানির পিপাসা পেল। তখন আসমান থেকে পরিষ্কার পানি ভর্তি একটি বালতি অবতীর্ণ হল। তিনি বলেন, এর থেকে আমি তৃপ্তি সহকারে পানি পান করলাম যে, এরপর আমি আর পিপাসার্ত হয়নি। অথচ প্রচন্ড গরমেও আমি রোযা রাখতাম (সিরাতে মুস্তফা, প্রথম খণ্ড, ১১৮ পৃষ্ঠা, ইবনে হাজার আসকালানী, ইসাবা, ইবনে কাসির, বেদায়া ওয়ান নিহায়া)
৩৪.
ইমাম ইবনে সা‘দ, আত-তবকাতুল কোবরা, ২/২৫৩ পৃ. দারুল কুতুব ইলমিয়্যাহ, বয়রুত, লেবানন, ইমাম মুকরীজি, ইমতাউল আসমা, ১৪/৬০২ পৃ., ইবনে সালেহ শামী, সবলুল হুদা ওয়ার রাশাদ, ১২/২৯৪ পৃ.
━━━━━━━━━━━o━━━━━━━━━
সায়্যিদাহ ছফিয়া (رضي الله عنه)’র আক্বিদা
____________________
সায়্যিদাহ ছফিয়া (رضي الله عنه)’র আক্বিদা
হযরত আল্লামা আব্দুর রহমান জামী (رحمة الله) রেওয়ায়েত নকল করে বলেন, রাসূল করিম (ﷺ)’র ফুফী হযরত ছফিয়া (رضي الله عنه) বলেন, রাসূল (ﷺ)’র শুভাগমনের সময় আমি সেখানে উপস্থিত ছিলাম। আমি লক্ষ্য করলাম যে, তাঁর নূর মোবারক প্রদীপের আলোকে হার মানিয়েছে। ➥35
৩৫. আল্লামা জামী, শাওয়াহেদুন নবুওয়াত (ফার্সী), পৃষ্ঠা ২২
শাফায়াতের মালিক হুযুর পুর নূর (ﷺ)’র ইন্তেকালের বিরোহের বিচ্ছেদে হযরত ছফিয়া (رضي الله عنه) একটি পঙক্তি বরেছেন, এর মধ্যেও তাঁর আক্বিদা প্রস্ফূটিত হয়েছে।
لِفَقْدِ الْمُصْطَفَى بِالنُّورِ حَقًّا
“জ্যোতির্ময়ী মোস্তফারই বিরহে মোর অশ্রু ঝড়ে।” ➥36
৩৬. ইমাম ইবনে সা‘দ, আত-তাবাকাত, দ্বিতীয় খণ্ড, ২৫০ পৃ. দারুল কুতুব ইলমিয়্যাহ, বয়রুত, লেবানন, ইমাম মুকরিজী, ইমতাউল আসমা, ১৪/৬০০ পৃ., দারুল কুতুব ইলমিয়্যাহ, বয়রুত, লেবানন।
উপর্যুক্ত দুটি বর্ণনার মাধ্যমে প্রতিভাত হলো হযরত সায়্যিদা ছফিয়া (رضي الله عنه) শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত রাহমাতুললীল আলামীন (ﷺ)’র জাত মুবারকের ব্যাপারে নূরের আক্বীদাই পোষণ করতেন।
সায়্যিদাহ আতিকাহ (رضي الله عنه)’র আক্বিদা
____________________
সায়্যিদাহ আতিকাহ (رضي الله عنه)’র আক্বিদা
রাসূলে কারিম (ﷺ)’র অপর ফুফু হযরত সায়্যিদাহ আতিকাহ (رضي الله عنه)’র আকিদাও ছিল যে, ইমামুল মুরসালিন (ﷺ) নূর। রাসূল (ﷺ)’র জাহেরীভাবে আমাদের থেকে পর্দা করার পর তাঁর বিচ্ছেদের বিরোহে তিনি রাসূল (ﷺ) শান বর্ণনা করার সাথে তাঁর আকিদাও প্রকাশ করেছেন নিম্নোক্ত কবিতা দ্বারা-
يَا عَيْنِ فَاحْتَفِلِي وَسُحِّي وَاسْجُمِي
وَابْكِي عَلَى نُورِ الْبِلادِ محمد
‘‘চক্ষু হে মোর! ক্রন্দ্রন করে অশ্রু ঝেড়ে
শহরেরই জ্যোতির্ময়ী রসূল মোদের গেলেন ছেড়ে।’’
عَلَى الْمُصْطَفَى بِالْحَقِّ وَالنُّورِ وَالْهُدَى
‘‘সহ সত্যে প্রেরিত সেই মুহাম্মদী মুস্তফা
হেদায়ত আর জ্যোতিই যার উপরে ছেরপা।’’ ➥37
৩৭. ইমাম ইবনে সা‘দ, আত-তাবাকাত, দ্বিতীয় খণ্ড, ২৪৮-২৪৯ পৃ. দারুল কুতুব ইলমিয়্যাহ, বয়রুত, লেবানন, ইমাম মুকরিজী, ইমতাউল আসমা, ১৪/৫৯৬ পৃ., দারুল কুতুব ইলমিয়্যাহ, বয়রুত, লেবানন, ইমাম ইবনে সালেহ শামী, সবলুল হুদা ওয়ার রাশাদ, ১২/২৮৩ পৃ.
সায়্যিদাহ আরওয়াহ (رضي الله عنه)’র আক্বিদা
____________________
সায়্যিদাহ আরওয়াহ (رضي الله عنه)’র আক্বিদা
মাহবুবে খোদা (ﷺ)’র ইন্তেকালের পর তাঁর তৃতীয় ফুফু হযরত সৈয়্যিদাহ আরওয়াহ (رضي الله عنه) তাঁর আক্বীদা প্রকাশ করে কবিতা লিখেন, ইমাম ইবনে সাদ (رحمة الله)
➥38 তার তবকাতে তা লিপিবদ্ধ করেছেন:
عَلَى نُورِ الْبِلادِ مَعًا جَمِيعًا
رَسُولِ اللَّهِ أَحْمَدَ فَاتْرُكِينِي
‘‘সে রাসূল সমগ্র নগরজুড়ে নূরপ্রস্রবন
দাও আমায় তাঁর স্তুতিগানের ক্ষণ।’’ ➥39
টিকা━━━━━━━━━━━━━━━━━━━━
৩৮.
দেওবন্দী ও ওহাবীদের নির্ভরযোগ্য প্রসিদ্ধ মওলবী শিবলী নুমানী তবকাতে ইবনে সাদ এবং এর গ্রন্থাকার মুহাদ্দিস ইবনে সাদ (رحمة الله) সম্পর্কে লেখেন যে, ইবনে সা‘দ (رحمة الله) এক মুহাদ্দিস ছিলেন এবং তাঁর সনদ গ্রহণযোগ্য।
❏ আল্লামা খতীবে বাগদাদী (رحمة الله) তাঁর সম্পর্কে লিখেন-
قَالَ الْخَطِيب كَانَ من أهل الْعلم وَالْفضل وصنف كتابا كَبِيرا فِي طَبَقَات الصَّحَابَة وَالتَّابِعِينَ وَمن بعدهمْ إِلَى وقته فأجاد فِيهِ وَأحسن
-“তিনি ছিলেন জ্ঞানবান, মর্যাদাবান এবং সমজদার। তিনি সাহাবায়ে কেরাম এবং তাবেয়ীনদের স্তর সম্পর্কে একটি বড় কিতাব লেখেছেন। তার যুগে তিনি একই সুন্দর এ কাজটি করেন।’’
(ইমাম সুয়ূতি, তবকাতুল হুফ্ফায, ১/১৮৬ পৃ. ক্রমিক. ৪১১ এবং ইবনে হাজার আসকালানী, তাহযিবুত তাহযিব, ৯/১৮২ পৃ. ক্রমিক. ২৭৫, ইমাম মিয্যী, তাহযিবুল কামাল, ২৫/২৫৬ পৃ., ক্রমিক. ৫২৩৭, খতিবে বাগদাদী, তারিখে বাগদাদ, ২/৩৬৯ পৃ. ক্রমিক. ৮৭৬, দারুল কুতুব ইলমিয়্যাহ, বয়রুত, লেবানন, ইবনে আসাকীর, তারিখে দামেস্ক, ৫৩/৬৪ পৃ, ইবনে খাল্লিকান, ওয়াফিয়াতুল আইয়্যান, ৪/৩৫১ পৃৃ. ক্রমিক. ৬৪৫)
❏ নবাব সিদ্দিক হাসান খাঁন ভূপালী তার কিতাব “হিদায়াতুস সুলুক” এ তবকাতে ইবনে সাদের হাওলা এনেছেন।
❏ মাওলবী সুলাইমান নদভী ইমাম ইবনে সাদ (رحمة الله) কে প্রিয় নবী (ﷺ)’র জীবনী লেখকগণের মধ্যে অধিক গুরুত্বপূর্ণ বলে গণ্য করেন। (খোতবাতে মাদারেস, ৬২ পৃষ্ঠা)
৩৯. ইমাম ইবনে সা‘দ, আত-তাবাকাত, দ্বিতীয় খণ্ড, ২৪৮ পৃ. দারুল কুতুব ইলমিয়্যাহ, বয়রুত, লেবানন, ইমাম মুকরিজী, ইমতাউল আসমা, ১৪/৫৯৭ পৃ., দারুল কুতুব ইলমিয়্যাহ, বয়রুত, লেবানন, ইমাম ইবনে সালেহ শামী, সবলুল হুদা ওয়ার রাশাদ, ১২/২৮৪ পৃ.,
━━━━━━━━━━━o━━━━━━━━━
প্রিয় পাঠকবৃন্দ! রাসূলে কারিম (ﷺ)’র সম্মানিত বিবি, আওলাদে পাক এবং তাঁর পানাহারের কথা জেনেই সাহাবীরা এবং তাঁর ফুফুগণের আকিদা ছিল যে, তিনি নূর।
এখন ওই সমস্ত মহাত্মাগণের আকিদা আলোচনা করবো যাঁরা আজওয়াজে মুতাহ্হারাতের অন্তর্ভূক্ত এবং সমস্ত মুসলমানদের মাতা।
উম্মুল মু‘মিনীন হযরত আয়েশা সিদ্দিকাহ (رضي الله عنه)’র আক্বীদা
____________________
উম্মুল মু‘মিনীন হযরত আয়েশা সিদ্দিকাহ➥40 (رضي الله عنه)’র আক্বীদা
হযরত তৈয়্যিবাহ তাহেরা আবেদা ফাবেদাহ আরেফা আয়েশা সিদ্দিকাহ (رضي الله عنه) যিনি ছিলেন কোনো জটিল বিষয়কে সমাধান কল্পে শীর্ষস্থানীয়, তিনি বলেন-
وَأخرج ابْن عَسَاكِر عَن عَائِشَة قَالَت كنت أخيط فِي السحر فَسَقَطت مني الابرة فطلبتها فَلم أقدر عَلَيْهَا فَدخل رَسُول الله صلى الله عَلَيْهِ وَسلم فتبينت الإبرة بشعاع نور وَجهه
-‘‘একদা আমি সেহরীর সময় সেলাই করছিলাম, হঠাৎ আমার সুঁই পড়ে গেলে অনেক খোঁজাখুজির পর তা পেলাম না। ইত্যবস্যরে রাসূল (ﷺ) ঘরে প্রবেশ করলে তাঁর চেহরার নূর মোবারকে সুঁইটি পরিষ্কার দেখা গেল।’’ ➥41
৪০. ওয়াহাবীদের অহংকার মওলবী ইব্রাহীম শিয়ালকুটী হযরত আয়েশা সিদ্দিকাহ (رضي الله عنه)’র জ্ঞানের মর্যাদা সম্পর্কে বলেন ইলমী সমস্যার সমাধান করেন সাহাবীদের মধ্যে শীর্ষস্থানীয় ছিলেন।
৪১. সুয়ূতি, খাসায়েসুল কোবরা, প্রথম খণ্ড, ১৫৬ পৃষ্ঠা, শায়খ ইউসুফ নাবহানী, হুজ্জাতুল্লাহি আলাল আলামিন, ৬৮৮ পৃষ্ঠা, সাখাভী, আল কাওলুল বদী, ১৪৭ পৃষ্ঠা, ইইয়াদুশ শোহাদা, ১০২ পৃষ্ঠা, কাসাসুল আম্বিয়া, ফার্সী ২৬৬ পৃষ্ঠা, এ হাদিসকে বিভিন্ন বাতিল পন্থীগণ জাল বলে থাকেন তাদের জবাব জানতে আমার লিখিত “প্রমাণিত হাদিসকে জাল বানানোর স্বরূপ উন্মোচন” ১ম খণ্ডের ১৭৬-১৭৯ পৃষ্ঠায় দেখুন।
আল্লামা মোল্লা আলী ক্বারী (رحمة الله) এবং আল্লামা জালালুদ্দীন সুয়ূতি (رحمة الله) উম্মাহাতুল মু‘মিনীন আয়েশা (رضي الله عنه)-এর বক্তব্য উল্লেখ করেন-
كنت أدخل الخيط في الإبرة حال الظلمة لبياض رسول الله صلى الله تعالى عليه وسلم
-‘‘আমি অন্ধকার রাতে হুযূর পুরনুর (ﷺ)-এর নূরানী জ্যোতিতে সুঁইয়ের মধ্যে সুতা প্রবেশ করাতাম।’’ ➥42
৪২. আল্লামা মোল্লা আলী ক্বারী, শরহে শিফা, ১/১৫৯ পৃ., কাসাসুল আম্বিয়া (ফার্সী), ২৬৬ পৃ.
সম্মানিত পাঠকবৃন্দ! মুফাসসির কুল শিরমনি, রাসূলে (ﷺ)’র চাচাতো ভাই, হুযূরে পূরনূর (ﷺ)’র ঘরে যিনি আসা-যাওয়া করতেন, তিনি বলেন, রাসূল (ﷺ)’র নূর।
ইমামুল আম্বিয়া (ﷺ)’র প্রিয় চাচা হযরত আব্বাস (رضي الله عنه) অবগত যে, রাসূল (ﷺ)’র নূর। ওই সমস্ত ধাত্রীগণ, যারা রাসূল (ﷺ) কে দুধ পান করিয়েছেন, যাঁরা রাসূল (ﷺ) কে পানাহার করতে দেখেছেন এবং যাদের ঘরে স্বয়ং মাহবুবে খোদা (ﷺ) রয়েছেন, যাঁরা রাসূল (ﷺ)’র পানাহার এবং বসবাস করণ সবকিছু দেখেছেন তাঁদের আক্বিদাহও হল হুযুর (ﷺ) নূর।
রহমতে দো আলম (ﷺ)’র প্রিয় ফুফুগণ, যাঁরা আযওয়াজে মুতাহহারাত, আওলাদে পাকদেরকে দেখেছেন, বসবাস করণ পানাহার সব কিছুই তাঁদের দৃষ্টিগোচর ছিল, কিন্তু তারা তাদের আক্বিদা ছিল হুযুর (ﷺ)’র নূরই ছিলেন।
রাসূলে করিম (ﷺ)’র সম্মানিত বিবিগণ (رضي الله عنه), যাঁরা রাসূল (ﷺ)’র হেরম শরীফের মর্যাদা লাভ করেছেন, যাদেরকে আল্লাহ তা‘য়ালা সমস্ত ঈমানদারের মাতা বানিয়েছেন তাঁরাও বলেন যে, হুযুর পূর নূর (ﷺ) নূর। কেবল হেদায়তের নূর নয়, বরং নূরে হিচ্ছি তথা অনুধাবনীয় জ্যোতি।
হুযুর (ﷺ)’র পানাহার, আযওয়াজে মুতাহ্হাআত এবং আওলাদে পাক সম্পর্কে এসব মহাত্মাগণের অবগত ছিলেন তথাপি এঁদের আক্বিদা ছিল হুযুর (ﷺ) নূরই ছিলেন।
যে হযরত সায়্যিদাহ আয়েশা (رضي الله عنه) থেকে সাহাবায়ে কেরাম (رضي الله عنه) গণ জটিল কঠিন মাসআলার সমাধান নিতেন, সে আয়েশা (رضي الله عنه) হুযুর (ﷺ)’র সম্মানিত বিবি হওয়া সত্ত্বেও বলেন যে, হুযুর (ﷺ) নূর।
কিন্তু দেওবন্দীদের আকলের উপর মূর্খতার এমন আবরণ পড়েছে যে, তারা বলে যে, হুযূর (ﷺ) পানাহার করেন, তাঁর বিবি এবং আওলাদ রয়েছে সে জন্য তিনি (মাটির) মানুষ।
সায়্যিদুনা ইমাম আজম আবু হানিফা (رضي الله عنه)’র আক্বীদা
____________________
সায়্যিদুনা ইমাম আজম আবু হানিফা (رضي الله عنه)’র আক্বীদা
আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতের মহান ইমাম, গোপন রহস্য উন্মোচনকারী, ইমামুল আইম্মা সায়্যিদুনা ইমামে আজম (رضي الله عنه) রাসূল (ﷺ)’র উপর আক্বিদা নিম্নোক্ত পঙক্তির মধ্যে এভাবে ফুটে তুলেছেন-
انت الذى مِنْ نُورِكَ البدر اكتى
والشمس مشرقة بنور بهاك
“তব নূরের জ্যোতি পেয়ে পুর্ণিমা চাঁদ আলোকিত
জ্যোর্তিময়ী শশীখানা তব নূরে পুলকিত।”
(কাসিদায়ে নূমান, পৃষ্ঠা ২৩)
বিজ্ঞ পাঠকবৃন্দ! আপনাদের সামনে রাসূলে করিম (ﷺ)’র সম্মানিত সাহাবী (رضي الله عنه), পুত:পবিত্র আওলাদের আকিদাসমূহ নির্ভরযোগ্য মুহাদ্দিস গণের গ্রহণযোগ্য কিতাব হতে তুলে ধরেছি। এগুলো থেকে দিবালোকের ন্যায় প্রতিভাত হলো যে, এসব হাযারাত রাসূল (ﷺ)’র পানাহার, আযওয়াযে মুতাহহারাত এবং আওলাদে পাক সম্পর্কে জানা সত্ত্বেও তাঁদের আক্বিদা ছিল নবী (ﷺ) নূরের তৈরি। সুতরাং তাঁরাই আহলে সুন্নাত ওয়াল জাম‘আত যাঁদের আক্বীদা হল রাসূল (ﷺ) নূর।
আর যারা রাসূল (ﷺ) কে নূরে হিচ্ছি হিসেবে মানে না তারা আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতের নয়। সুতরাং বুঝা গেল দেওবন্দীরা আহলে সুন্নাত ওয়াল জাম‘আত নয়।
আ‘লা হযরত আযিমুল বরকত ইমাম আহমদ রেযা খাঁন বেরলভী (رحمة الله) বলেন-
چمک تجھ سے پا تے ہیں سب پا نے والے
ميرا دل بھى چمكا دے چمكا نے والے
ميں گدا تو باد شاه بھر دے پیالہ نور كا
نور دن دونا تيرا دے ڈال صدقہ نوركا
جوگدا ديكھو ليئے جاتا ہے توڑا نور كا
نور كى سركار ہےكيا اس ميں توڑا نور كا
“জ্যোতির উৎস তুমি, পাওয়ার যে পেয়ে যয়
বিকীর্ণ করো নূর আমারই এ আত্মায়।
আমি ভিখারি তুমি মহারাজা, দাও আধারে নূর
করুনা দাও দানপাত্রে, তিমির হবে ভোর।
যে নিংস্বে জুটে মহাদাতার, যৎকিঞ্চিত নূর
আলোকর্তার বিকিরনে, অন্ধতমস দূর।”
(কালামে রেযা, ৩৯ পৃষ্ঠা)
অতুলনীয় বাশার
____________________
❏ বিষয় নং-৪: অতুলনীয় বাশার:
দেওবন্দী ওয়াহাবীরা রাসূলে করিম (ﷺ) কে নিজেদের মত বাশার বলে। আহলে সুন্নাত ওয়াল জাম‘আত বেরলবীগণ হুযুর পূর নূর (ﷺ)’র অতুলনীয় বাশার মানেন।
আল্লাহ তা‘য়ালা কুরআন মাজীদে রাসূল (ﷺ)’র সৌভাগ্যবর্তী বিবিদেরকে দুনিয়ার সকল মহিলা থেকে অতুলনীয় বলেছেন।
যে সত্ত্বার শাদী মুবারকের সৌভাগ্য অর্জনের ফলে দুনিয়ার সকল নারী থেকে অতুলনীয় হয়েছেন, তাহলে সে স্বত্ত্বার অনুপতম সৌন্দর্যের তুলনা দুনিয়ার মধ্যে কে হবেন? (কেউ না)।
হযরত আবদুল্লাহ ইবনে উমর (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত, রাসূল (ﷺ) ইরশাদ করেন,
إِنِّي لَسْتُ مِثْلَكُمْ
-“আমি তোমাদের মত নই।” ➥43
৪৩.
ক. ইমাম বুখারী, আস-সহীহ, ৩/৩৭ পৃ. হা/১৯৬২
খ. ইমাম আবি আওয়ানাহ, মুসতাখরাজে আবি আওয়ানাহ, ২/১৮৮ পৃ. হা/২৭৯৮,
গ.মুসনাদে আহমদ, ১০/৬২ পৃ. হা/৫৭৯৫
ঘ. বায়হাকী, আস-সুনানুল কোবরা, ৪/৪৬৬ পৃ. হা/৮৩৭৪
ঙ. নাসাঈ, আস-সুনানুল কোবরা, ৩/৩৫৩ পৃ. হা/৩২৫০
চ. ইমাম ইবনে আবি শায়বাহ, আল-মুসান্নাফ, ২/৩৩০ পৃ. হা/৯৫৮৭
হযরত সায়্যিদুনা আবু সাঈদ খুদুরী (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত, ইমামুল আম্বিয়া (ﷺ) ইরশাদ করেন,
إِنِّي لَسْتُ كَهَيْئَتِكُمْ
-“আমি তোমাদের কারো মত নই।” ➥44
৪৪.
ক. ইমাম বুখারী, আস-সহীহ, ৩/৩৭ পৃ. হা/১৯৬৩,
খ. ইমাম আহমদ, আল-মুসনাদ, ১৭/১০৯ পৃ. হা/১১০৫৫
গ. ইমাম আহমদ, আল-মুসনাদ, ১৮/৩৪১ পৃ. হা/১১৮২২
ঘ. বায়হাকী, আস-সুনানুল কোবরা, ৪/৪৬৮ পৃ. হা/৮৩৭৯
হযরত আবু হুরাইরা (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত। ইমামুল আম্বিয়া (ﷺ) ইরশাদ করেন,
أَيُّكُمْ مِثْلِي
-“তোমাদের মাঝে আমার মত কে আছে?” ➥45
টিকা━━━━━━━━━━━━━━━━━━━━
৪৫. ইমাম বুখারী, আস-সহীহ, ৮/১৭৪ পৃ. হা/৬৮৫১ এবং ৯/৮৫ পৃ. হা/৭২৪২; মুস্তাখরাজে আবী আওয়ানা, ২/১৮৭ পৃ. হাদিস নং ৭২৯২,
রাসূলে করিম (ﷺ) এর সম্পর্কে সাহাবায়ে কেরামের আকিদা ছিল কেমন তা হজরত আয়েশা (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত এই হাদিসটির দিকে লক্ষ্য করুন-
قَالُوا إنَّا لسْنَا كَهْيَئتِكَ يَا رسولَ اللَّهِ
-“সাহাবীরা বলতেন: ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমরা কেহ আপনার মত না।”
(সহীহ্ বুখারী, হা/২০; আল-ঈমান লি’ইবনে মানদুহ, হা/২৮৮; জামেউস সহীহ লি সুনানিল মাসানিদ, ৩য় খণ্ড, ৪৮৫ পৃ:; আল মুখতাছারুন নাছিহ, হাদিস নং ২৪; আলবানী: সিলসিলাতুল সহীহা, হা/৩৫০২; শরহে ছাহিহুল বূখারী লি’ইবনে বাত্তাল, ১ম খণ্ড, ৭২ পৃ:; ইমাম ইবনে আব্দিল বার্: আত-তামহিদ, ৫ম খণ্ড, ১০২ পৃ:; ইবনে রজব: ফাতহুল বারী, হাদিস নং ২০; ইমাম আইনী: উমদাতুল ক্বারী, ১ম খণ্ড, ১৬৫ পৃ:; ইমাম কাস্তালানী: এরশাদুছ ছারী, ১ম খণ্ড, ১০৩ পৃ:; আল কাউকাবুদ দুরারী, ১ম খণ্ড, ১১২ পৃ:; আনওয়ার শাহ্ কাশ্মিরী: ফায়জুল বারী, ১ম খণ্ড, ১৬৯ পৃ.)
━━━━━━━━━━━o━━━━━━━━━
সাহাবায়ে কেরামগণের মধ্যে কেউ একথা বলেননি যে, হে রাসূল (ﷺ)! আপনি আমাদের মত মানুষ। রাসূল (ﷺ)’র হাত ও পা মুবারক আছে, তিনি পানাহার করেন, তাঁর আজওয়াজে মুতাহ্হারাত এবং আওলাদ পাক আছেন, এরপরেও সবাই নিশ্চুপ। রাসূল (ﷺ)’র যা বলেছেন সবাই তা মেনে নিয়েছেন। সাহাবায়ে কেরাম (ﷺ)’র কিছু বলার সাহস ছিলনা, কিন্তু দেওবন্দী দু:সাহস এতই বেড়ে গিয়েছে যে, তারা রাসূল মিম্বারে বসেই বলে যে, রাসূল (ﷺ) আমাদের মত মানুষ।
হযরত সায়্যিদুনা মাওলা আলী (رضي الله عنه) বলেন,
لَمْ أَرَ قَبْلَهُ وَلاَ بَعْدَهُ مِثْلَهُ ﷺ.
-‘‘আমি আগে পরে রাসূল (ﷺ)’র মত কাউকে দেখিনি।’’ ➥46
৪৬. ইমাম তিরমিযি, আস-সুনান, ৬/৩৪ পৃ. হা/৩৬৩৭, ইমাম হাকেম, আল-আল-মুস্তাদরাক, ২/৬৬২ পৃ. হা/৪১৯৪, ইমাম আহমদ, আল-মুসনাদ, ২/১৪৪ পৃ. হা/৭৪৬, ইমাম নাসাঈ, আস-সুনানুল কোবরা, ৮/২০৩ পৃ. হা/৫৩১৪, মুসনাদে আবি ই‘য়ালা, ১/৩০৪ পৃ. হা/৩৭০, ইমাম বাগভী, শরহে সুন্নাহ, ১৩/২২১ পৃ. হা/৩৬৪১, ইমাম খতিব তিবরিযি, মিশকাতুল মাসাবীহ, ৩/১৬১২ পৃ. হা/৫৭৯০, ইমাম বুখারী, আত-তারিখুল কাবীর, ১/৭ পৃ., ইমাম সুয়ূতি, খাসায়েসুল কুবরা, ১/১২৫ পৃ.
হযরত সায়্যিদুনা আবু হুরায়রা (رضي الله عنه)-এর বর্ণনা
____________________
হযরত সায়্যিদুনা আবু হুরায়রা (رضي الله عنه)-এর বর্ণনা:
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ ؓ، قَالَ: مَا رَأَيْتُ شَيْئًا أَحْسَنَ مِنْ رَسُولِ اللهِ ﷺ ، كَأَنَّ الشَّمْسَ تَجْرِي فِي وَجْهِهِ
হযরত সায়্যিদুনা আবু হুরাইরা (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসূল (ﷺ)’র হতে অধিক সুন্দর কাউকে দেখিনি, সূর্য যেন তাঁর চেহরা মুবারকে প্রবাহমান।’’ ➥47
৪৭. খতিব তিবরিযি, মিশকাত শরীফ, (৫১৮ পৃষ্ঠা) ৩/১৬১৪ পৃ. হা/৫৭৯৫, ইমাম আহমদ, আল-মুসনাদ, ১৪/৫০৬ পৃ. হা/৮৯৪৩, ইমাম তিরমিযি, আস-সুনান, ৬/৪২ পৃ. হা/৩৬৩৮, ইমাম ইবনে হিব্বান, আস-সহীহ, হা/৬৩০৯, ইমাম বাগভী, শরহে সুন্নাহ, ১৩/২২৬ পৃ. হা/৩৬৪৯, ইমাম সুয়ূতি, খাসায়েসুল কুবরা, ১/১২৫ পৃ.
এক সাহাবী (হযরত ইয়াযিদ বিন আসওয়াদ সুয়াই‘ঈ (رضي الله عنه)) বলেন,
فَلَمْ أَرَ شَيْئًا كَانَ أَبْرَدَ وَلَا أَطْيَبَ مِنْ يَدِ رَسُولِ اللهِ ﷺ
-‘‘আমি রাসূলে কারিম (ﷺ)’র হাত মুবারক থেকে শীতল এবং সুগন্ধময় কোন বস্তু দেখিনি।’’ ➥48
টিকা━━━━━━━━━━━━━━━━━━━━
৪৮. ইমাম তাবরানী, মু‘জামুল কাবীর, ২২/২৩৬ পৃ. হা/৬১৯, ইমাম হাইসামী, মামযমাউয-যাওয়াইদ, ৮/২৮৩ পৃ. হা/১৪০৫৭,
❏ ইমাম হায়সামী (রহ.) বলেন-
رَوَاهُ الطَّبَرَانِيُّ فِي الْأَوْسَطِ وَالْكَبِيرِ بِاخْتِصَارٍ وَإِسْنَادُهُ حَسَنٌ.
-‘‘ইমাম তাবরানী তার মুজামুল আওসাত এবং কাবীরে এটি বর্ণনা করেছেন, হাদিসটির মান ‘হাসান’।’’
হযরত সায়্যিদুনা আব্দুল্লাহ ইবনে উমর (رضي الله عنه)
____________________
হযরত সায়্যিদুনা আব্দুল্লাহ ইবনে উমর (رضي الله عنه)-এর বর্ণনা:
عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ عُمَرَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمَا، قَالَ: نَهَى رَسُولُ اللَّهِ ﷺ، عَنِ الوِصَالِ قَالُوا: إِنَّكَ تُوَاصِلُ، قَالَ: إِنِّي لَسْتُ مِثْلَكُمْ إِنِّي أُطْعَمُ وَأُسْقَى
-‘‘হযরত আবদুল্লাহ ইবনে উমর (رضي الله عنه) বর্ণনা করেন যে, রাসূল (ﷺ) সাওমে বেছাল পালন করতে নিষেধ করলে সাহাবীগণ আরয করলেন, হে রাসূল (ﷺ)! আপনি তো সাওমে বেছাল পালন করেন, তখন রাসূল (ﷺ) ইরশাদ করেন, “আমি তোমাদের মত নই, আমাকে পানাহার করানো হয়।” ➥49
৪৯.
ক. ইমাম বুখারী, আস-সহীহ, ৩/৩৭ পৃ. হা/১৯৬২
খ. ইমাম আহমদ, আল-মুসনাদ, ৮/৩৪৫ পৃ. হা/৪৭২১
গ. বায়হাকী, আস-সুনানুল কোবরা, ৪/৪৬৬ পৃ. হা/৮৩৭৪
ঘ. বায়হাকী, আস-সুনানুল কোবরা, ৭/৯৮ পৃ. হা/১৩৩৮৪
ঙ. ইমাম আবু আবি দাউদ, আস-সুনান, ২/৩০৬ পৃ. হা/২৩৬০
চ. ইমাম মুসলিম, আস-সহীহ, ২/৭৭৪ পৃ. হা/১১০২
আল্লামা আহমদ কাস্তাল্লানী (رحمة الله) বলেন-
اعلم أن من تمام الإيمان به- صلى الله عليه وسلم- الإيمان بأن الله تعالى جعل خلق بدنه الشريف على وجه لم يظهر قبله ولا بعده خلق آدمى مثله
-“জেনে রেখো, রাসূলে কারীম (ﷺ)’র পবিত্র জিসিম মুবারক এমন ভাবে সৃষ্টি করা হয়েছে যে, এর সদৃশ পূর্বেও ছিল না পরেও হবে না।” ➥50
৫০. ইমাম কাস্তাল্লানী, মাওয়াহেবে লাদুনিয়া, ২/৫ পৃ.
নূরাণী চেহরা মোবারক
____________________
নূরাণী চেহরা মোবারক:
মহান আল্লাহ তা‘য়ালা পবিত্র কুরআন মাজীদে তাঁর প্রিয় হাবীব (ﷺ)’র চেহরা মুবারকের শপথ করে ইরশাদ করেন,
وَالضُّحَى ۞وَاللَّيْلِ إِذَا سَجَى
-“চাশত (পূর্বাহ্ন) এর শপথ এবং রাতের, যখন পর্দা আবৃত করে।” (সূরা দো’হা: ১-২, কানযুল ঈমান)
আল্লামা মুহাম্মদ বিন আবদুল বাকী জুরকানী (رحمة الله) তাঁর রচিত “যুরকানী শরহে মাওয়াহেবে ল্লাদুনিয়া” গ্রন্থে বলেন-
وَفَسَّرَ بَعْضُهُمْ كَمَا حَكَاهُ الْإِمَامِ فَخَرُ الدِّيْن الضُّحٰى بِوَجْهِه صَلَّى اَللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، وَاللَّيْلِ بِشَعْرِه
-‘‘মুফাস্সিরগণের কেউ কেউ বলেন, যেমন ইমাম ফখরুদ্দিন (رحمة الله) বলেন, (الضُّحَى) হল হুযুর করিম (ﷺ)’র চেহরা মোবারক এবং (اللَّيْلِ) হল তাঁর চুল মুবারক।” ➥51
৫১. ইমাম যুরকানী, শারহুল মাওয়াহেব, ৮/৪৪৪ পৃ.
আ‘লা হযরত আজীমুল বরকত ইমামে আহলে সুন্নাত মুজাদ্দেদে দীনও মিল্লাত মাওলানা শাহ আহমদ রেযা খান বেরলভী (رحمة الله) কত সুন্দরই বলেছেন-
خامئہ قدرت كا حسن دستكارى واہ واه
كيا ہى تصورير اپنے پيار كى سنوارى واه واه
‘‘খোদার গড়ন এমন শোভন
আহ! প্রিয়’র রূপ যে অনুপম।’’
উম্মুল মু‘মিনিন হযরত আয়েশা সিদ্দিকাহ (رضي الله عنه)
____________________
উম্মুল মু‘মিনিন হযরত আয়েশা সিদ্দিকাহ (رضي الله عنه) :
➡52
উম্মুল মু‘মিনিন হযরত আয়েশা (رضي الله عنه) হুযুর পূরনূর (ﷺ)’র চেহরা মুবারক সম্পর্কে তাঁর আকিদা এভাবে বর্ণনা করেছেন-
......عن محمد بن إسحاق بن يسار عن يزيد بن رومان وصالح بن كيسان عن عروة بن الزبير عن عائشة قَالَت كنت أخيط فِي السحر فَسَقَطت مني الابرة فطلبتها فَلم أقدر عَلَيْهَا فَدخل رَسُول الله ﷺ فتبينت الإبرة بشعاع نور وَجهه فَأَخْبَرته فَقَالَ يَا حميراء الويل ثمَّ الويل ثَلَاثًا لمن حرم النّظر إِلَى وَجْهي
-‘‘......বিখ্যাত সিরাতবিদ, ইমামুল মাগাজী, ইমাম মুহাম্মদ বিন ইসহাক বিন ইয়াসার (رحمة الله) তার দুই মহান উস্তাদ হযরত ইয়াযিদ ইবনে রুমান এবং ছালেহ ইবনে কায়সান (رحمة الله) হতে বর্ণনা করেন, তাঁরা হযরত উরওয়া ইবনে যুবায়ের (رضي الله عنه) হতে বর্ণনা করেন, তিনি হযরত আয়েশা (رضي الله عنه) হতে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, আমি শেষ রাতে সেহেরির সময় কাপড় সেলাই করছিলাম। হঠাৎ আমার হাত থেকে সুঁই পড়ে গেল। অনেক খোঁজাখুঁজির পরও সেটি পাওয়া গেল না। অতপর রাসূলুল্লাহ (ﷺ) আগমন করলে তাঁর চেহরা মুবারকের নূরের আলোতে সেই সুঁইটি পরিষ্কারভাবে দেখা গেলো। আমি রাসূল (ﷺ) কে এ সংবাদ দিলে তিনি বললেন, হে হুমায়রা! যে আমার চেহরা মুবারকের দিদার থেকে বঞ্চিত তার জন্য আফসোস, একথাটি তিনি তিনবার বলেছিলেন।’’ ➥53
৫২. ওয়াহাবীদের বড় ইমাম মওলবী ইব্রাহীম মীর শিয়ালকুটী হযরত আয়েশা সিদ্দিকাহ (رضي الله عنه) সম্পর্কে বলেন, যে হযরত আয়েশা সিদ্দিকাহ (رضي الله عنه) জটিল বিষয় সমাধান কল্পে শীর্ষে ছিলেন।” (সিরাজুম মুনীরাহ, ১১৬ পৃষ্ঠা)
৫৩. ইমাম জালালুদ্দীন সুয়ূতি: খাসায়েসুল কুবরা: ১/১১১ পৃ., হা/২৮৭, ইমাম ইবনে আসাকীর: তারীখে দামেস্ক: ৩/৩১০ পৃ., আল্লামা শায়খ ইউসুফ নাবহানী: হুজ্জাতুল্লাহি আলাল আলামীন: ৬৬৩ পৃ., আল্লামা ইবনে হাজার আসকালানী: লিসানুল মিযান: ৩/৩৪৪ পৃ ও ৬/৬৯০ পৃ., আবূ সা‘দ নিশাপুরী, শরফে মোস্তফা, ২/১০৩ পৃ., আবূ নুয়াইম ইস্পাহানী, দালায়েলুল নুবুয়ত, ১/১১৩ পৃ. দারূল কুতুব ইলমিয়্যাহ, বয়রুত, ইবনে সালেহ শামী, সবলুল হুদা ওয়ার রাশাদ, ২/৪০ পৃ., ইফরাকী, মুকতাসারে তারিখে দামেস্ক, ২/৭৪ পৃ. মুত্তাকী হিন্দী, কানযুল উম্মাল, ১১/৪৫৩ পৃ. হা/৩২১৩১ ও ১২/৪২৯ পৃ. হা/৩৫৪৯২
━━━━━━━━━━━o━━━━━━━━━
কবি বলেন-
سوزن گمشده ملتى ہے تبسم سے تيرے
شام كو صبح بناتا ہے اجالا تيرا !!
‘‘হারিয়ে যাওয়া সূচ মিলে তব হাসিঘোর
অঘোর তমস প্রভাত ডাকে সুহাসিনী ভোর।’’
দশম শতাব্দীর মুজাদ্দিদ, বিশ্ববিখ্যাত মুহাদ্দিস আল্লামা মোল্লা আলী ক্বারী (رحمة الله) শরহে শিফায় হযরত সায়্যিদাহ আয়েশা সিদ্দিকাহ (رضي الله عنه)’র আক্বিদা নিম্নোক্ত শব্দের মাধ্যমে বর্ণনা করেন-
كنت أدخل الخيط في الإبرة حال الظلمة لبياض رسول الله ﷺ
-‘‘একদা আমি অন্ধকার রাতে হুযূর পুরনুর (ﷺ)’র নূরের আলোতে সুঁইয়ের মধ্যে সুতা প্রবেশ করিয়েছিলাম।’’ ➥54
৫৪. মোল্লা আলী ক্বারী, শরহে শিফা : ১/১৫৯ পৃ., দারুল ফিকর ইলমিয়্যাহ, বয়রুত, লেবানন।
হযরত আবু বকর সিদ্দিক (رضي الله عنه)’র আকীদা
____________________
হযরত আবু বকর সিদ্দিক (رضي الله عنه)’র আকীদা:
ইসলামের প্রথম খলিফা হযরত আবু বকর (رضي الله عنه) রাসূলে করিম (ﷺ)’র চেহরা মুবারক সম্পর্কে নিম্নোক্ত শব্দের মাধ্যমে তাঁর আকিদা বর্ণনা করেন-
وَأخرج أَبُو نعيم عَن أبي بكر الصّديق رَضِي الله عَنهُ قَالَ كَانَ وَجه رَسُول الله صلى الله عَلَيْهِ وَسلم كدارة الْقَمَر
-“রাসূল (ﷺ)’র চেহারা মুবারক চাঁদের ন্যায় উজ্জ্বল ছিল।” ➥55
৫৫.
ক. মুত্তাকী হিন্দী, কানযুল উম্মাল, ৭/১৬২ পৃ. হা/১৮৫২৬
খ. ইমাম ইবনে সালেহ শামী, সবলুল হুদা ওয়ার রাশাদ, ২/৪০ পৃ.
গ. ইমাম মুকরিজী, ইমতাউল আসমা, ২/১৭০ পৃ.
ঘ. ইমাম কাস্তাল্লানী, মাওয়াহিবুল্লাদুনিয়্যাহ, ২/১০ পৃ.
ঙ. ইমাম সুয়ূতি, খাসায়েসুল কোবরা, ১/১২৩ পৃ.
চ. ইমাম জুরকানী, শারহুল মাওয়াহেব, ৫/২৫৩ পৃ.
হযরত জাবের বিন সামুরা (رضي الله عنه)’র আকিদা
____________________
হযরত জাবের বিন সামুরা (رضي الله عنه)’র আকিদা:
হযরত জাবের বিন সামুরা (رضي الله عنه)’র সম্মানে কেউ একজন বললেন যে, রাসূল (ﷺ)’র চেহারা মুবারক তলোয়ারের মতো, তখন তিনি বললেন,
لَا بَلْ مِثْلُ الشَّمْسِ وَالْقَمَرِ مُسْتَدِيرًا
-‘‘না, বরং তাঁর চেহরা মুবারক সূর্যের মত উজ্জ্বল।’’ ➥56
৫৬.
১. খতিব তিবরিযি, মিশকাত শরীফ, (৫১৫ পৃষ্ঠা ভারতীয়), ৩/১৬০৯ পৃ. হা/৫৭৭৯
২. ইমাম মুসলিম, আস-সহীহ, ৪/১৮২৩ পৃ. হা/২৩৪৪
৩. বায়হাকী, শুয়াবুল ঈমান, ৩/১৫ পৃ. হা/১৩৫১
৪. তাবরানী, মু‘জামুল কাবীর, ২/২২৪ পৃ. হা/১৯২৬
৫. ইমাম আহমদ, আল-মুসনাদ, ৩৪/৫০৫ পৃ. হা/২০৯৯৮
৬. কাস্তাল্লানী, মাওয়াহিবু ল্লাদুনিয়া, ২/৭ পৃষ্ঠা
৭. ইমাম যুরকানী, শারহুল মাওয়াহেব, ৫/২৪৮ পৃ.
৮. শায়খ ইউসুফ নাবহানী, আনওয়ারে মুহাম্মদীয়া, ১২৪ পৃ.
৯. ইমাম বায়হাকী, দালায়েলুন নবুয়াত, ১/১৯৫ পৃষ্ঠা,
১০. ইমাম কাযি আয়্যায, শিফা শরীফ, ১/১৫০ পৃ.
১১. শায়খ ইউসুফ নাবহানী, হুজ্জাতুল্লাহে আলাল আলামীন, ৬৮৮ পৃ.
১২. ইমাম ইবনে আবি শায়বাহ, আল-মুসান্নাফ, ৬/৩২৮ পৃ. হা/৩১৮০৮
১৩. মুসনাদে আবি ই‘য়ালা, ১৩/৪৫১ পৃ. হা/৭৪৫৬
১৪. ইমাম ইবনে সালেহ শামী, সবলুল হুদা ওয়ার রাশাদ, ২/৩৯ পৃ.
১৫. ইমাম সুয়ূতি, খাসায়েসুল কোবরা, ১/১২২ পৃ.
১৬. মুত্তাকী হিন্দী, কানযুল উম্মাল, ৭/৩৬ পৃ. হা/১৭৮২৭
কবি কতই না সুন্দর বলেছেন-
چود هويں كا چاند ہے روئے حبيب
اور ہلال عيد ابرو ئے حبيب!
‘‘চৌদ্দদিনের পূর্ণিমার চাঁদ যাঁরই প্রতিচ্ছবি
ঈদ-নিশাকর ভ্রলতায় আমার প্রিয় নবি।’’
সায়্যিদুনা ইমাম হাসান (رضي الله عنه)’র আকিদা
____________________
সায়্যিদুনা ইমাম হাসান (رضي الله عنه)’র আকিদা:
সায়্যিদাতুন নিসা হযরত ফাতেমা (رضي الله عنه)’র নয়নের পুতলী, হযরত শেরে খোদা (رضي الله عنه)’র লখতে জিগর এবং খলিফায়ে রাশেদ ইমাম হাসান (رضي الله عنه) নিজের আকিদা নিম্নোক্ত শব্দের মাধ্যমে বর্ণনা করেন-
كَانَ رسول ﷺ فَخْماً مُفَخَّماً يَتَلأْلأُ وَجْهُهُ تَلأْلُؤَ الْقَمَرِ لَيْلَةَ الْبَدْرِ
-“রাসূল (ﷺ)’র মর্যাদা মহাবুলদ ছিল, তাঁর চেহারা মুবারক চৌদ্দ তারিখের চাঁদের মত ঝলমল করত।” ➥57
৫৭.
ক. ইমাম তিরমিযি, শামায়েলে তিরমিযি, ১৯১ পৃ. হা/৩১৯
খ. ইমাম সূয়ূতি, খাসায়েসুল কুবরা, ১/১৩০ পৃ.
গ. হাইসামী, মাযমাউয যাওয়ায়েদ, অষ্টম খণ্ড, ২৭৩ পৃষ্ঠা, হা/১৪০২৬
ঘ. কাযি আয়্যায, শিফা শরীফ, ১/৪৮৪ পৃ.
ঙ. ইমাম বায়হাকী, দালায়েলুন নবুয়ত, ১/২৯২ পৃ.
চ. আশরাফ আলী থানবী, নশরুতীব, ১৮ পৃষ্ঠা
ছ. মুত্তাকী হিন্দী, কানযুল উম্মাল, ৭/৩২ পৃ. হা/১৭৮০৭
জ. শায়খ ইউসুফ নাবহানী, ফতহুল কাবীর, ২/৩৪৬ পৃ. হা/৯২৫৩
ইমামুল মুফাস্সিরিন আল্লামা ফখরুদ্দীন রাযী (رحمة
____________________
ইমামুল মুফাস্সিরিন আল্লামা ফখরুদ্দীন রাযী (رحمة الله)’র আকিদা:
ইমাম ফখরুদ্দিন রাযী (رحمة الله) ➥58 সরওয়ারে কায়েনাত হুযুর পূর নূর (ﷺ)’র চেহরা মুবারক সম্পর্কে তাঁর আকিদা আল্লামা যুরকানী (رحمة الله)’র নিম্নোক্ত শব্দের মাধ্যমে বর্ণনা করেন:
لأن وجهه صلى الله عليه سولم كان شديد النور، بحيث يقع نوره على الجدر إذا قابلها
-“কেননা হুযুর পূর নূর (ﷺ)’র চেহারা মুবারক এমন নূরানী ছিল যে, যখন তাঁর নূর মুবারক কোন দেওয়ালে পড়ত তখন তা চমকিয়ে উঠত।” ➥59
৫৮. ওহাবীদের বরণ্য আলেম মৌলভী ইব্রাহীম শিয়ালকুটী বলেন, আমার শ্রদ্ধেয় উস্তাদ মাওলানা গোলাম হাসান সাহেব, যিনি আবলী ও নকলী জ্ঞানের অধিকারী, তিনি বলেন, ইমাম রাজী (رحمة الله) হলেন কুরআন শরীফের রহস্য বুঝার মাধ্যম। আল্লাহ তা‘য়ালা এ মহান ইমামকে তাঁর কালাম শরীফের রাজ বুঝার জন্যই সৃষ্টি করেন। (আখবারু আহলে হাদিস অমৃতসর) পৃষ্ঠা ৫, ১৪ জুলাই, ১৯১৪ ইংরেজী।
৫৯. ইমাম যুরকানী, শারহুল মাওয়াহেব, ৮/৪৪৪ পৃ.
আহলে হাদিস ইমাম মৌলবী ইব্রাহীম শিয়ালকুটী সাক্ষ্য
____________________
আহলে হাদিস ইমাম মৌলবী ইব্রাহীম শিয়ালকুটী সাক্ষ্য:
রুপট্রি পাড়ির অন্যতম ব্যক্তিত্ব মৌলবী ইব্রাহিম সাহেব মীর শিয়ালকুটীর সাক্ষ্যও উপর্যুক্ত বিষয়কে সমর্থন করে। তিনি লিখেন যে, হুযুর পুর নূর (ﷺ)’র নবুওয়াতের চেহারা মুবারকে বাস্তবিকিই চমকাতো। প্রত্যেক বিবেবানের কাছে তা প্রণিধানযোগ্য। অসংখ্য হাদিসে পাকে এসেছে যে হুযুর পূর নূর (ﷺ)’র উক্ত নূর মুবারক দর্শনে অনেক ব্যক্তি ইসলামে দীক্ষিত হন। (সিরতে মুস্তফা, প্রথম খ-, ১৩৮ পৃষ্ঠা)
হামদানের এক সাহাবীয়্যাহু (رضي الله عنه)’র আকিদা
____________________
হামদানের এক সাহাবীয়্যাহু (رضي الله عنه)’র আকিদা:
উমদাতুল মুহাদ্দেসীন ইমাম ইবনে হাজার আসকালানী (رحمة الله) তাঁর লিখিত “ফতহুল বারী’র মধ্যে হামদানের এক মহিলা সাহাবী (رضي الله عنه)’র আকিদা লিপিবদ্ধ করেন। একদা হামদানের ওই মহিলা সাহাবা রাসূলে কারিম (ﷺ)’র সাথে হজ্জ্ব করার সৌভাগ্য হল। হজ্ব সমাপনান্তে তাঁর বাড়ী ফেরা পথে আবু ইসহাক নামক এক ব্যক্তি তাকে হুযুর (ﷺ)’র হুলিয়া মুবারক সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করেন। উত্তরে তিনি বলেন,
كَالْقَمَرِ لَيْلَةَ الْبَدْرِ لَمْ أَرَ قَبْلَهُ وَلَا بَعْدَهُ مِثْلَهُ
-“তাঁর চেহারা মুবারক ১৪ তারিখের পূর্ণিমা চাঁদের মত, আমি কখনো এরূপ আর দেখিনি।” ➥60
৬০.
ক. ইবনে হাজার আসকালানী, ফতহুল বারী শরহে সহীহ বুখারী, ষষ্ঠ খণ্ড, ৫৭৩ পৃষ্ঠা,
খ. কাস্তাল্লানী, মাওয়াহেবে ল্লাদুনিয়া, ২/১০ পৃষ্ঠা,
গ. ইমাম সুয়ূতি, খাসায়েসুল কুবরা, প্রথম খণ্ড, ১২৩ পৃষ্ঠা,
ঘ. ইমাম বায়হাকী, দালায়েলুন নবুওয়াত, ১/১৯৯ পৃ.
ঙ. শায়খ ইউসুফ নাবহানী, আনওয়ারে মুহাম্মদীয়া, ১৯৬ পৃষ্ঠা,
চ. শায়খ আব্দুল হক মুহাদ্দেসে দেহলভী, মাদারেজুন নবুওয়াত, প্রথম খণ্ড, ৬ পৃষ্ঠা
ছ. ইমাম জুরকানী, শারহুল মাওয়াহেব, ৫/২৫৪ পৃ.
জ. ইমাম ইবনে সালেহ শামী, সবলুল হুদা ওয়ার রাশাদ, ২/৪০ পৃ.
ইমামে আ’লা হযরত আজিমুল বরকত শাহ আহমদ রেযা খাঁন (رحمة الله) বলেন:
خورشيد تها كسى زور پہ كيا بڑھ کے چمكا تها قمر
بے پرده جب وه رخ ہوا يہ بهى نهيں وه بھى نہيں
‘‘সদর্পে ফোটে দিবাকর
কত চমকিত নিশাকর;
যখনি তাঁর ছাড়ে চাদর
শংকিত যে রবি-শশধর।’’
থুথু মুবারক
____________________
থুথু মুবারক
আমাদের থুথু থেকে রোগ ব্যাধি ছড়িয়ে পড়ে। যেমন: হাটবাজার, গাড়ীর স্টেশন এবং বিভিন্ন হাসপাতালে লেখা থাকে “থুথু ফেলবেন না”। কোথাও কোথাও লেখা থাকে “থুথুর সাথে রোগ ছড়িয়ে পড়ে।” ইংরেজিতেও এটা লেখা থাকে: “Don’t Spit Here” “এখানে থুথু ফেলবেন না।”
কিন্তু আমাদের প্রিয় নবী (ﷺ)’র থুথু মুবারক দ্বারা রোগ নিরাময় হয়, আরোগ্য লাভ হয়, যেমন: উল্লেখযোগ্য কিতাবে আছে।
সায়্যিদুনা হযরত আলী (رضي الله عنه)’র আকিদা
____________________
সায়্যিদুনা হযরত আলী (رضي الله عنه)’র আকিদা:
হযরত সাহাল বিন সাদ (رضي الله عنه) বর্ণনা করেন যে, রাসূলে পাক (ﷺ) খায়বারের দিন ইরশাদ করেন,
لَأُعْطِيَنَّ هَذِهِ الرَّايَةَ غَدًا رَجُلًا يَفْتَحُ اللهُ عَلَى يَدَيْهِ يُحِبُّ اللهَ وَرَسُولَهُ
-“আগামী কাল আমি ওই ব্যক্তির হাতে পতাকা দেবো, যার হাতে আল্লাহ তা‘য়ালা খায়বার বিজয় করবেন এবং তাঁর উপর আল্লাহ ও তাঁর রাসূল সন্তুষ্ট।”
সকাল হওয়ার সাথে সাথে প্রত্যেক সাহাবা হুযুরা শরীফে আসলেন। আর প্রত্যেকেরই আশা ছিল যে পতাকা হয়তো আমার হাতেই দেয়া হবে। কিন্তু রাসূল (ﷺ) ইরশাদ করেন,
أَيْنَ عَلِيُّ بْنُ أَبِي طَالِبٍ؟
-“আমার আলী কোথায়?” সাহাবায়ে কেরাম আরয করলেন,
يَشْتَكِي عَيْنَيْهِ
-“তাঁর চোখে ব্যাথা পেয়েছেন।” রাসূল (ﷺ) তখন ইরশাদ করেন,
فَأَرْسِلُوا إِلَيْهِ . فَأُتِيَ بِهِ فَبَصَقَ رَسُولُ اللهِ ﷺ فِي عَيْنَيْهِ، وَدَعَا لَهُ فَبَرَأَ حَتَّى كَأَنْ لَمْ يَكُنْ بِهِ وَجَعٌ
-“তোমরা কেউ গিয়ে তাকে নিয়ে আস; তিনি আসার পর রাসূল (ﷺ) তাঁর চোখে থুথু মুবারক দিলেন, তখন তাঁর চোখ এভাবে ভাল হল যে, যেন কোন দিন রোগই হয়নি।’’ ➥61
৬১.
ক. খতিব তিবরিযি, মিশকাত, (৫৬৩ পৃষ্ঠা ভারতীয়), ৩/১৭১৯ পৃ. হা/৬০৮৯,
খ. শায়খ আব্দুল হক মুহাদ্দেসে দেহলভী, আশয়াতুল লুম‘আত, (ফার্সী চতুর্থ খণ্ড ৬৬৪ পৃষ্ঠা)
গ. ইমাম আহমদ, আল-মুসনাদ, ৩৭/৪৭৭ পৃ. হা/২২৮২১,
ঘ. ইমাম কাস্তাল্লানী, মাওয়াহেবে ল্লাদুনিয়্যাহ, ২/২৯৯ পৃষ্ঠা
ঙ. ইমাম নাসাঈ, আস-সুনানুল কোবরা, ৭/৩১১ পৃ. হা/৮০৯৩
চ. ইমাম আবু নুয়াইম ইস্পাহানী, হিলইয়াতুল আউলিয়া, ১/৬২ পৃ.
ছ. ইমাম বুখারী, আস-সহীহ, ৪/৬০ পৃ. হা/৩০০৯
জ. ইমাম মুসলিম, আস-সহীহ, ৪/১৮৭২ পৃ. হা/২৪০৬
হযরত আক্বীলী বিন হাবীব (رضي الله عنه) আকিদা
____________________
হযরত আক্বীলী বিন হাবীব (رضي الله عنه) আকিদা:
রাসূলে করিম (ﷺ)’র সাহাবা হযরত আকীলী বিন হাবিব (رضي الله عنه) বলেন যে, তাঁর পিতার দু’চোখ সাদা হয়ে যাওয়ার ফলে তিনি কিছুই দেখতে পেতেন না।
فَنَفَثَ رَسُولُ اللَّهِ ﷺ فِي عَيْنَيْهِ فَأَبْصَرَ.. فَرَأَيْتُهُ يُدْخِلُ الْخَيْطَ فِي الْإِبْرَةِ وَهُوَ ابْنُ ثَمَانِينَ
-‘তখন রাসূলে কারিম (ﷺ) তার দুচোখে থুথু মুবারক দিলেন, ফলে তাঁর দৃষ্টিশক্তি ফিরে আসল যে, আমি দেখলাম যে তিনি আশি বছর বয়সেও সুঁইয়ের মধ্যে সুতা গাঁথতেন।’’ ➥62
৬২.
ক. ইমাম কাযি আয়্যায, শিফা শরীফ, প্রথম খণ্ড, ৬২০ পৃষ্ঠা
খ. কাস্তাল্লানী, মাওয়াহেবে ল্লাদুনিয়া, ২/৩০০ পৃষ্ঠা
গ. ইমাম তাবরানী, মু‘জামুল কাবীর, ৪/২৫ পৃ. হা/৩৫৪৬
ঘ. ইমাম ইবনে আবি আসেম, আহাদ ওয়াল মাসানী, ৫/৯১ পৃ. হা/২৬৩৪,
ঙ. ইমাম ইবনে আবি শায়বাহ, আল-মুসাান্নাফ, ৫/৪৫ পৃ. হা/২৩৫৬৩
চ. আল্লামা নাবাহানী, আনওয়ারে মুহাম্মদীয়া, ২৯৭ পৃ.
ছ. ইমাম ফুরকানী, শারহুল মাওয়াহেব, ৭/৭৩ পৃ.
জ. ইমাম হালবী, সিরাতে হালবিয়্যাহ, ৩/৩৩৬ পৃ.
ঝ. ইমাম বায়হাকী, দালায়েলুন নবুয়ত, ৬/১৭৩ পৃ.
কূপের মধ্যে থুথু মুবারক দেয়ার ফলে মিশক আম্বরের ন্যায় সুগন্ধি
____________________
কূপের মধ্যে থুথু মুবারক দেয়ার ফলে মিশক আম্বরের ন্যায় সুগন্ধি বের হওয়া:
শায়খুল মুহাদ্দেসীন আল্লামা আবদুল হক মুহাদ্দীস দেহলভী (رحمة الله) আল্লামা কাস্তাল্লানী (رحمة الله) মাওয়াহেবে ল্লাদুনিয়ার মধ্যে এবং আল্লামা শায়খ ইউসূফ নাবহানী (رحمة الله) আনওয়ারে মুহাম্মদীয়ার মধ্যে বর্ণনা করেন:
مج فِي الْبِئْر ففاح مِنْهَا مثل رَائِحَة الْمسك
-‘‘রাসূলে কারিম (ﷺ) এক কূপে থুথু ফেলেন, ফলে তা হতে মিশকে আম্বরীর সুগন্ধি বের হয়।’’ ➥63
৬৩.
ক. ইমাম বায়হাকী, দালায়েলুন নবুয়ত, ১/২৫৮ পৃ.
খ. শায়খ আব্দুল হক মুহাদ্দেসে দেহলভী, মাদারেজুন নবুওয়াত, ফার্সী, প্রথম খণ্ড, ১১ পৃষ্ঠা
গ. শায়খ ইউসুফ নাবহানী, আনওয়ারে মুহাম্মদীয়া ২০০ পৃষ্ঠা,
ঘ. কাস্তাল্লানী, মাওয়াহেবে লাদুনিয়া, ২/২০ পৃ.
ঙ. ইমাম সুয়ূতি, খাসায়েসুল কোবরা, ১/১০৫ পৃ.
চ. ইমাম আহমদ, আল-মুসনাদ, ৩১/১৩৪ পৃ. হা/১৮৮৩৮
ছ. ইমাম তাবরানী, মু‘জামুল কাবীর, ২২/৫১ পৃ. হা/১১৯
হযরত আনাস (رضي الله عنه)’র আকিদা
____________________
হযরত আনাস (رضي الله عنه)’র আকিদা:
রাসূলে কারিম (ﷺ)’র প্রিয় সাহাবা হযরত আনাস (رضي الله عنه)’র বাড়ির কূপটির পানি তিতা ছিল।
وَبَزَقَ فِي بِئْرٍ كَانَتْ فِي دَارِ أَنَسٍ فَلَمْ يَكُنْ بِالْمَدِينَةِ أَعْذَبُ مِنْهَا
-‘‘রাসূলে কারিম (ﷺ)’র এই কূপের মধ্যে থুথু মুবারক দেয়ার পর কূপের পানি এতই মিষ্টি হল যে, মদিনা শরীফে এরূপ আর কোন কূপের পানিই মিষ্টি ছিল না।’’ ➥64
৬৪.
ক. ইমাম কাযি আয়্যায, শিফা শরীফ, ১/৬৩৯ পৃ.
খ. শায়খ ইউসুফ নাবহানী, আনওয়ারে মুহাম্মদীয়া, ২০০ পৃষ্ঠা
গ. ইমাম ইবনে সালেহ শামী, সবলুল হুদা ওয়ার রাশাদ, ২/৩১ পৃ.
ঘ. ইমাম কাস্তাল্লানী, মাওয়াহিবুল্লাদুনিয়্যাহ, ২/২০ পৃ.
ঙ. ইমাম সুয়ূতি, খাসায়েসুল কোবরা, ১/১০৫ পৃ.
চ. মোল্লা আলী ক্বারী, জামেউল ওসায়েল ফি শারহিল শামায়েল, ১/৩৮ পৃ.
ছ. ইবনে হাজার মক্কী, আশরাফুল ওসায়েল, ১/৬৬ পৃ.
হযরত আবু বকর সিদ্দিক (رضي الله عنه) কে গারে ছুরে সাপে দংশন করে।
فَتَفِلَ رَسُولُ اللَّهِ ﷺ على محل اللدغة فَذَهَبَ مَا يَجِدُهُ
-‘‘রাসূল (ﷺ) ক্ষতস্থানে থুথু মুবারক মালিশ করেদেন। সাথে সাথেই তা আরোগ্য লাভ করে।’’ ➥65
৬৫.
ক. ইমাম ইসমাঈল হাক্কী, তাফসিরে রুহুল বায়ান, ৩/৪৩৩ পৃ.
খ. সফিকুর রহমান মোবারকপুরী, আররাহিকুল মাখতুম, ১৪৯ পৃষ্ঠা
গ. ইমাম ইবনে সালেহ শামী, সবলুল হুদা ওয়ার রাশাদ, ৬/২৯ পৃ.
ঘ. ইমাম কাস্তাল্লানী, মাওয়াহিবুল্লাদুনিয়্যাহ, ১/১৭৪ পৃ.
ঙ. ইমাম বুরহানুদ্দীন হালবী, সিরাতে হালবিয়্যাহ, ৩/৩৯৬ পৃ.
চ. ইমাম বুরহানুদ্দীন হালবী, সিরাতে হালবিয়্যাহ, ২/৪৮ পৃ.
ছ. ইমাম খতিব তিবরিযি, মিশকাত, ৩/১৭০০ পৃ. হা/৬০৩৪
জ. ইমাম ইবনে আছির, জামেউল উসূল, ৮/৬০৫ পৃ. হা/৬৪২৬
ঝ. ইমাম মুহিবুদ্দীন তবারী, রিয়াদুন-নাদ্বরা ফি মানাকিবে আশারা, ১/১০৪ পৃ.
হযরত বিশর বিন আকরাবাহ (رضي الله عنه)’র আকিদা
____________________
হযরত বিশর বিন আকরাবাহ (رضي الله عنه)’র আকিদা:
রাসূলে কারিম (ﷺ)’র থুথু মুবারকের বরকতে তোতলামী দূর হয়ে যায়। স্বয়ং সাহাবী বর্ণনা করেন, আমার প্রিয় পিতা উহুদ যুদ্ধে শহীদ হন তখন আমি রাসূলে কারিম (ﷺ)’র দরবারে গিয়ে কাঁদতে লাগলাম। রাসূলে কারিম (ﷺ)’র আমাকে সান্তনা দিয়ে বলেন, কাঁদছো কেন, তোমার কী এটা পছন্দ নয় যে, হযরত আয়েশা (رضي الله عنه) তোমার মাতা আর আমি তোমার পিতা। অত:পর রাসূলে কারিম (ﷺ)’র তার হাত মুবারক আমরা মাথার উপর ভুলাতে লাগলেন। তাঁর হাত মুবারক আমার চুলের যেখানেই লেগে ছিল তা কালো হয়ে যায় বাকী গুলো সাদা থাকে।
وَكَانَت فِي لساني عقدَة فتفل فِيهَا فانحلت
-‘‘আর আমার তোতলানো ছিল, রাসূল (ﷺ) আমার মুখে থুথু দিলে আমার তোতলামী চলে যায়।’’ ➥66
৬৬.
ক. ইমাম সুয়ূতি, খাসায়েসুল কোবরা, দ্বিতীয় খণ্ড, ৩৯ পৃষ্ঠা
খ. ইমাম ইবনে সালেহ শামী, সবলুল হুদা ওয়ার রাশাদ, ১০/১৯ পৃ.
আ‘লা হযরত আজিমুল রবকত ইমামে আহলে সুন্নাত মুজাদ্দেদে দ্বীনও মিল্লাত মাওলানা শাহ আহমদ রেযা খাঁন ফাযেলে বেরলভী (رحمة الله) কতইনা সুন্দর বলেছেন:
رافع نافع دافع شافع
كيا كيا رحمة لاتے يہ ہيں
‘‘উন্নত-হিতকর, বিতাড়ক-অনুরোধবর
কীরূপ আশিষ ত্রানে, বড়ই দয়াধর।’’
ঘাম মুবারক
____________________
ঘাম মুবারক
আমাদের ঘাম দুর্গন্ধ। কিন্তু হুযুর পূর নূর ছরকারে দো আলম (ﷺ)’র ঘাম মুবারক হতে সুগন্ধি বের হয়। যেমন- মুহাদ্দেসীনে কেরামগণ তাঁদের কিতাবে বর্ণান করেন-
হযরত উম্মে ছলিম (رضي الله عنه)’র আকিদা:
সারওয়ারে আলম নূরে মুজাস্সাম হুযুর পূর নূর (ﷺ)’র জলিলুল মারতাবাত সাহাবা হযরত আনাস (رضي الله عنه)’র সম্মানিত মাতা হযরত উম্মে ছলিম (رضي الله عنه)’র আকিদা মুহাদ্দিসিনে কেরাম নিন্মোক্ত শব্দ দ্বারা বর্ণনা করেন। একদা হুযুর পুর নূর ছরকারে কায়েনাত (ﷺ) উম্মে ছলিম (رضي الله عنه)’র ঘরে তাশরীফ এনে কায়লুলা (দ্বিপ্রহরে বিশ্রাম) করেন। হযরত উম্মে ছলিম (رضي الله عنه) চামড়ার একটি বিছানার ব্যবস্থা করেন, হুযুর (ﷺ) তাতে বিশ্রাম নিলে তাতে ঘাম প্রবাহিত হয়।
فَكَانَتْ تَجْمَعُ عَرَقَهُ فَتَجْعَلُهُ فِي الطِّيبِ. فَقَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: يَا أُمَّ سُلَيْمٍ مَا هَذَا؟ قَالَتْ: عَرَقُكَ نَجْعَلُهُ فِي طِيبِنَا وَهُوَ مِنْ أَطْيَبِ الطِّيبِ
-‘‘হযরত উম্মে ছলিম (رضي الله عنه) ঘাম মুবারকগুলো একত্রিত করে সুগন্ধিময় বস্তুর সাথে মিশ্রিত করেন। রাসূল (ﷺ) তাঁকে জিজ্ঞাসা করলেন হে উম্মে ছলিম! এটা কী! তিনি বললেন, এগুলো আপনার ঘাম মুবারক, এগুলোকে একটি সুগন্ধিযুক্ত বস্তুর সাথে মিশ্রিত করছি, কে আপনার ঘাম মুবারক প্রত্যেক বস্তু হতে অধিক সুগন্ধিময়।’’ ➥67
৬৭.
ক. ইমাম ইবনে খুজায়মা, আস-সহীহ, ৩/৪৩৩ পৃ. হা/১৬৯৯
খ. ইমাম মুসলিম, আস-সহীহ, ৪/১৮১৫ পৃ. হা/২৩৩১
গ. ইমাম বাগভী, শরহে সুন্নাহ, ১৩/২৩৩ পৃ. হা/৩৬৬১
ঘ. ইমাম খতিব তিবরিযি, মিশকাত, ৩/১৬১১ পৃ. হা/৫৭৮৮, পরিচ্ছেদ: بَابِ أَسْمَاءِ النَّبِيِّ ﷺ وَصِفَاته
ঙ. ইমাম ইবনে আসাকীর, তারিখে দামেস্ক, ৯/৩৫৯ পৃ. হা/৬৪২৬
কবি বলেন-
ايسى خو شبو نهيں كسى پهول ميں
جيسى خو شبو نبى كى پيسنے يں ہے
‘‘এটুকু ছড়ায়নি পুষ্প সুরভিম্লান
যেটুকু ছেড়েছে নবির মোবারক ঘাম।’’
শায়খুল মুহাদ্দেসীন হযরত শায়খ আবদুল হক মুহাদ্দেস দেহলভী (رحمة الله) তাঁর মাদারেজুন নবুওয়াত গ্রন্থে (এছাড়াও আরও অন্যান্য ইমামগণ সংকলন করেন) একটি ঘটনা বর্ণনা করেন-
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، أَنَّ رَجُلًا أَتَى النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، فَقَالَ: يَا رَسُولَ اللَّهِ، إِنِّي زُوَّجْتُ ابْنَتِي، وَإِنِّي أُحِبُّ أَنْ تُعِينَنِي بِشَيْءٍ فَقَالَ: مَا عِنْدِي مِنْ شَيْءٍ، وَلَكِنْ إِذَا كَانَ غَدًا فَتَعَالَ فَجِئْنِي بِقَارُورَةٍ وَاسِعَةِ الرَّأْسِ وَعُودِ شَجَرٍ، وَآيَةٌ بَيْنِي وَبَيْنَكَ أَنْ أَجِيفَ نَاحِيَةَ الْبَابِ قَالَ: فَأَتَاهُ بِقَارُورَةٍ وَاسِعَةِ الرَّأْسِ وَعَودِ شَجَرٍ، فَجَعَلَ يَسْلُتُ الْعِرْقَ مِنْ ذِرَاعَيْهِ حَتَّى امْتَلَأَتِ الْقَارُورَةُ، فَقَالَ: خُذْ، وَأْمُرْ بِنْتَكَ إِذَا أَرَادَتْ أَنْ تَطَيَّبَ أَنْ تَغْمِسَ هَذَا الْعُودَ فِي الْقَارُورَةِ وَتطَيَّبَ بِهِ قَالَ: فَكَانَتْ إِذَا تَطَيَّبَتْ شَمَّ أَهْلُ الْمَدِينَةِ رَائِحَةَ ذَلِكَ الطِّيبِ، فَسُمُّوا بَيْتَ الْمُطَيَّبِينَ
-‘‘হযরত আবু হুরায়রা (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, এক ব্যক্তি রাসূল (ﷺ)-এর দরবারে হাযির হয়ে বললেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমি আমার কন্যার বিবাহ ঠিক করেছি। আপনি আমাকে সাহায্য করুন। তিনি বললেন, আমার কাছে তো কিছু নেই। এক কাজ কর। একটি চওড়া মুখের শিশি ও একটি কাঠি নিয়ে আমার কাছে এসো। লোকটি এগুলো নিয়ে এলো। রাসূল (ﷺ) আপন বাহু থেকে ঘাম মুছে শিশিতে ভরতে লাগলেন। শিশি ভরে গেলে তিনি তা লোকটিকে দিয়ে বললেন, তোমার কন্যাকে বলবে, সে যেন এ কাঠিটি শিশিতে ভিজিয়ে নেয় এবং সুগন্ধিরূপে ব্যবহার করে। কথিত আছে- সে এ সুগন্ধি ব্যবহার করলে পুরো মদিনা শরীফের লোকজন তার সুগন্ধির ঘ্রাণ নেয়। তারা এই ঘরকে “সুগন্ধি ঘর” হিসেবে অভিহিত করে।’’ ➥68
৬৮. ইমাম তাবরানী, মু‘জামুল আওসাত, ৩/১৯০ পৃ. হা/২৮৯৫, ইমাম আবু ই‘য়ালা, আল-মু‘জাম, ১১৭ পৃ. হা/১১৮, ইমাম ইবনে আসাকীর, তারিখে দামেস্ক, ৪/৪৮ পৃ., ইবনে হাজার মক্কী, আশরাফুল ওয়সায়েল, ১/২৯৫ পৃ., আল্লামা মোল্লা আলী ক্বারী, জামেউল ওসায়েল, ২/২ পৃ., ইমাম কাস্তাল্লানী, আল-মাওয়াহিবুল্লাদুন্নিয়া, ২/৮৮ পৃ., ইমাম সুয়ূতি, খাসায়েসুল কোবরা, ১/১১৬ পৃ., ইমাম জুরকানী, শারহুল মাওয়াহেব, ৫/৫৩৪ পৃ., শায়খ আবদুল হক মুহাদ্দিসে দেহলভী, মাদারেজুন নবুয়াত, ফার্সী, প্রথম খণ্ড, ২৯ পৃষ্ঠা, শায়খ ইউসুফ বিন ইসমাঈল নাহানী, হুজ্জাতুল্লাহে আলাল আলামীন, ৬৮৫ পৃষ্ঠা
রক্ত মুবারক
____________________
রক্ত মুবারক
আমাদের রক্ত নাপাক। কিন্তু হুযুর পূর নূর (ﷺ)’র রক্ত মুবারক পবিত্র। সাহাবায়ে কেরাম (رضي الله عنه) গণ হুযুর পূর নূর (ﷺ)’র রক্ত মুবারক পান করতেন। নির্ভরযোগ্য কিতাব সমূহে এর আলোচনা এসেছে।
ওহুদ যুদ্ধের দিন রাসূলে পাক (ﷺ) যখন আহত হলেন তখন হযরত আবু সাঈদ খুদুরী (رضي الله عنه)’র সম্মানিত পিতা হযরত মালেক বিন সিনান (رضي الله عنه) ক্ষতস্থান মুখে চুষে পরিষ্কার করেন। একটু সাদা পরিলক্ষিত হলে সবাই বললেন, রক্তগুলো ফেলে দিতে। তিনি আল্লাহর শপথ করে বললেন, মুখ থেকে এই রক্ত মুবারক আমি কখনো ফেলবো না। অত:পর তিনি রক্ত মুবারক পান করে ফেলেন।
রাসূলে কারিম (ﷺ) তখন ইরশাদ করেন,
مَنْ أَرَادَ أَنْ يَنْظُرَ إِلَى رَجُلٍ مِنْ أَهْلِ الْجَنَّةِ فَلْيَنْظُرْ إِلَى هَذَا
-‘‘কেউ জান্নাতী লোক দেখতে চাইলে যেন উনার দিকে দেখে।’’ ➥69
৬৯.
ক. ইমাম কাযি আয়্যায, শিফা শরীফ, ৪১ পৃষ্ঠা
খ. ইমাম বায়হাকী, দালায়েলুন নবুয়ত, ৩/২৬৬ পৃ.
গ. ইমাম সাঈদ বিন মানসুর, আস-সুনান, হা/,
ঘ. শায়খ আব্দুল হক মুহাদ্দেসে দেহলভী, মাদারেজুন নবুয়াত (ফার্সী), প্রথম খণ্ড, ৩০ পৃষ্ঠা,
ঙ. ইমাম কাস্তাল্লানী, মাওয়াহেবুল্লাদুনিয়া, ২/৯২ পৃ.
চ. শায়খ ইউসুফ নাবহানী, আনওয়ারে মুহাম্মদীয়া, ২১৬ পৃষ্ঠা
ছ. ইমাম জুরকানী, শারহুল মাওয়াহেব, ৫/৫৪৬ পৃ.
জ. সফিকুর রহমান মোবারকপুরী, আর-রাহিকুল মাখতুম, ২৪৭ পৃ.
ঝ. ইমাম বুরহানুদ্দীন হালবী, সিরাতে হালবিয়্যাহ, ২/৩১৯ পৃ.
ঞ. ইমাম ইবনে সালেহ শামী, সবলুল হুদা ওয়ার রাশাদ, ৪/২৪১ পৃ.
ট. ইমাম সুয়ূতি, খাসায়েসুল কোবরা, ১/৩৬১ পৃ.
সাহাবায়ে কেরাম (رضي الله عنه) পবিত্র কুরআনের নিম্নোক্ত আয়াত ভাল করেই জানতেন। আল্লাহ তা‘য়ালা ইরশাদ কেরন-
إِنَّمَا حَرَّمَ عَلَيْكُمُ الْمَيْتَةَ وَالدَّمَ وَلَحْمَ الْخِنْزِيرِ وَمَا أُهِلَّ بِهِ لِغَيْرِ اللَّهِ
-“নিশ্চয়ই আল্লাহ তা‘য়ালা তোমাদের উপর হারাম করেন মৃত প্রাণী, রক্ত, শুকরের গোশত এবং আল্লাহ ব্যতীত অন্য কারো নামে যে জন্তু জবেহ করা হয় তা।” (সূরা বাক্বারা, আয়াত নং-১৭৩)
এই আয়াতে রক্তকে হারাম করা হয়েছে কিন্তু ছাহাবায়ে কেরামগণ (رضي الله عنه) হুযুর (ﷺ)’র রক্ত পান করা মূলত এই বিষয়টিই অকাট্য ভাবে প্রমাণিত হয় যে, হুযুর (ﷺ)’র বাশারিয়ত দুনিয়ার কোন মানুষের মত নয়।
হযরত শায়খ আবদুল হক মুহাদ্দেস দেহলভী (رحمة الله) মাদারেজুন নবুয়াতে বলেন, এক হাজ্জাম (যে শিঙ্গা লাগায়) রাসূল কারিম (ﷺ) কে শিঙ্গা লাগিয়ে রক্ত বের করে তা পান করেন। রাসূল (ﷺ) তাকে জিজ্ঞাসা করলেন, রক্তগুলো কই? তখন তিনি বলেন, আমি বাইরে লুকিয়ে রাখার জন্য নিয়ে গেছি। কিন্তু আমি তা জমিনের কোথাও পুথিত না করে আমার নিজের মধ্যেই তা গোপন করেছি। (আমি তা পান করেছি)
তখন রাসূল (ﷺ) তাকে বললেন,
فرموذ بتحقيق عذر كردو دنگاه داشتى نفس خود العينى از امراض دہلا
-“তুমি একটি উপমা সৃষ্টি করেছো এবং সকল রোগ থেকে নিজেকে হেফাজত করেছ।’’ ➥70
৭০. শায়খ আবদুল হক মুহাদ্দিসে দেহলভী, মাদারেজুন নবুওয়াত শরীফ, ফার্সী, প্রথম খণ্ড, ৩০ পৃষ্ঠা
হযরত আবদুল্লাহ বিন জুবাইর (رضي الله عنه)’র আক্বিদা
____________________
হযরত আবদুল্লাহ বিন জুবাইর (رضي الله عنه)’র আকিদা:
আল্লামা মোল্লা আলী ক্বারী হানাফী (رحمة الله) শেফা শরীফের ব্যাখ্যা গ্রন্থে বলেন, হযরত জুবাইর (رضي الله عنه) যখন রাসূল (ﷺ)’র রক্ত মুবারক পান করেন, তখন কেউ একজন তাকে উক্ত রক্ত মুবারক সম্পর্কে জিজ্ঞেস করেন, তা কেমন ছিল, উত্তরে তিনি বলেন,
أما الطعم فطعم العسل وأما الرائحة فرائحة المسك
-“তা ছিল মধু থেকেও মিষ্টি এবং মিশকের চেয়েও অতি সুগন্ধ।” (আল্লামা মোল্লা আলী ক্বারী হানাফী, শরহে শিফা, ১/১৭০ পৃ.)
সম্মানিত পাঠকবৃন্দ! উপর্যুক্ত নির্ভরযোগ্য কিতাবগুলো আলোচনা অনুযায়ী সাহাবায়ে কেরাম (رضي الله عنه) গণের এই আক্বিদাই প্রমাণিত হল যে, তাঁরা রাসূল (ﷺ) কে নিজেদের মত বাশার মনে করতেন না। বরং সারা পৃথিবীর মানুষের চেয়ে উপমাহীন বাশার মনে করতেন। আল্লামা জালালুদ্দীন রুমী (رحمة الله) বলেন: ➡71
কবিতা:৪৪
ايں خود گدر ددپيرى زيں حبدا
آں خورد دد ہمہ نور حندا
اے ہزاراں جبرائيل اندر بشر
بهر حق سو تے غريباں يک نطنہ
‘‘এ খাদ্য পাক:অশুচি নিখাদ
প্রিয়তমে দানিছে:নূরানি আহাদ।
হে হাজার জিবরাঈলের ক্ষমতাধর
গরিবপানে দাও দর্শন একনজর।’’
টিকা━━━━━━━━━━━━━━━━━━━━
৭১. দেওবন্দীদের আকাবীরীনদের পীর মুরশিদ হাজী ইমদাদুল্লাহ মুহাজেরে মাক্কী (رحمة الله) আল্লামা জালালুদ্দীন রুমী (رحمة الله)’র ফাতেহা দিতেন। (শামায়েলে এমদাদিয়া) ৬৮ পৃষ্ঠা)
হাশরের ময়দানে শাফায়াত বা সুপারিশ
____________________
❏ বিষয় নং-৫: হাশরের ময়দানে শাফায়াত বা সুপারিশ
দেওবন্দী, ওহাবী, আহলে হাদিসদের আক্বিদা হল যে, কোন নবী-ওলী সুপারিশ করতে পারবে না। যারা নবী ওলীকে সুপারিশ কারী মনে করবে তারা আবু জাহেলের মতই মুশরিক। কেউ কাউকে রক্ষা করতে পারবে না। (তাকবীয়াতুল ঈমান, ৮ পৃষ্ঠা)
আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতের আক্বীদা হল, হুযুর পূর নূর (ﷺ) ময়দানে মাহশরে সুপারিশ করবেন। আল্লাহ তা‘য়ালার অনুমতিক্রমে হাশর মাঠে তিনি সুপারিশ করবেন।
মহান আল্লাহ ইরশাদ করেন:
مَنْ ذَا الَّذِي يَشْفَعُ عِنْدَهُ إِلَّا بِإِذْنِهِ يَعْلَمُ مَا بَيْنَ أَيْدِيهِمْ وَمَا خَلْفَهُمْ
-“আল্লাহর অনুমতি ছাড়া কেউ সুপারিশ করতে পারবে না। তার সামনে পেছনে সবকিছুই তিনি জানেন।” ➥72
টিকা━━━━━━━━━━━━━━━━━━━━
৭২.
❏ ইমাম আলী ইবনে ওয়াহেদী (رحمة الله) এ আয়াতের তাফসিরে লিখেন-
مقامٍ محمودٍ وهو مقام الشَّفاعة يحمده فيه الخلق
-‘‘মাকামে মাহমুদ মানে শাফায়াত করার মর্যাদা লাভ, যেখান সমস্ত সৃষ্টি সৃষ্টি কর্তার প্রশংসা করবেন।’’ (তাফসিরে ওয়াহেদী, ১/৬৪৪ পৃ.)
মহান রব আরও ইরশাদ করেন-
عَسَى أَنْ يَبْعَثَكَ رَبُّكَ مَقَامًا مَحْمُودًا
-‘‘অচিরেই তিনি আপনাকে এমন স্থান দান করবেন, যেখানে সব কিছুই আপনার প্রশংসা করবে।’’ ➥73
৭৩. ১৫তম পারা, ৯ রুকু, সূরা বনী ইসরাঈল, আয়াত নং-৭৯
তাফসীরে খাজেন ও মাদারেক
____________________
তাফসীরে খাজেন ও মাদারেক:
ইমাম খাযেন (رحمة الله) এবং ইমাম নাসাফী (رحمة الله) এই আয়াতের তাফসীরে বলেন-
{مَقَامًا مَحْمُودًا} يَحْمَدك فِيهِ الْأَوَّلُونَ وَالْآخِرُونَ وَهُوَ مَقَام الشَّفَاعَة
-“মাকামে মাহমুদ হল সুপারিশের স্থান কেননা এখানে পূর্বপর সবাই তাঁর প্রশংসা করবে।” ➥74
টিকা━━━━━━━━━━━━━━━━━━━━
৭৪.
ক. ইমাম সুয়ূতি, তাফসীরে জালালাইন, ৩৭৫ পৃষ্ঠা,
খ. ইমাম নাসাফী, তাফসীরে মাদারেক, দ্বিতীয় খণ্ড, ২৭৩ পৃষ্ঠা,
গ. ইমাম খাযেন, তাফসীরে খাযেন, দ্বিতীয় খণ্ড, ১৭৫ পৃষ্ঠা
ঘ. তাফসীরে জামেউল বয়ান, ২৪৫ পৃষ্ঠা,
ঙ. ইমাম ইসমাঈল হাক্কী, তাফসিরে রুহুল বায়ান, ৭/২২২ পৃ.
❏ আল্লামা বুরহানুদ্দীন কিরমানী (رحمة الله) এ আয়াতের তাফসিরে লিখেন-
هو عند الجمهور مقام الشفاعة. -
‘‘জমহুর মুফাসসিরদের মতে, এটা সুপারিশের স্থান উদ্দেশ্য।’’
❏ বিখ্যাত মুফাস্সির ইমাম সাম‘আনী (رحمة الله) (ওফাত. ৪৮৯ হি.) লিখেন-
أجمع الْمُفَسِّرُونَ أَن هَذَا مقَام الشَّفَاعَة
-‘‘সমস্ত মুফাসসিরানে কিরামগণ একমত পোষণ করেছেন যে, আলোচ্য আয়াতে মাকামে মাহমুদ বলতে শাফায়াত উদ্দেশ্য।’’ (ইমাম সাম‘আনী, তাফসিরে সাম‘আনী, ৩/২৬৯ পৃ.)
━━━━━━━━━━━o━━━━━━━━━
ইমাম বুখারী (رحمة الله) সহীহ বুখারী শরীফে বর্ণনা করেন যে,
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ ؓ، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ ﷺ فِي قَوْلِهِ: {عَسَى أَنْ يَبْعَثَكَ رَبُّكَ مَقَامًا مَحْمُودًا} وَسُئِلَ عَنْهَا قَالَ: هِيَ الشَّفَاعَةُ.
-‘‘হুযূর (ﷺ) কে মাকাম মাহমুদ সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলে উত্তরে তিনি বলেন,
এটা সুপারিশের স্থান।’’ ➥75
টিকা━━━━━━━━━━━━━━━━━━━━
৭৫.
ক. ইমাম তিরমিযী, আস-সুনান, ৫/১৫৪ পৃষ্ঠা, হা/৩১৩৭
খ. ইমাম বাগভী, শরহে সুন্নাহ, ১৫/১৫২ পৃ. হা/৪৩৩২,
❏ তবে ইমাম সুয়ূতি (رحمة الله) এভাবে সংকলন করেন-
وَأخرج ابْن جرير وَالْبَيْهَقِيّ فِي شعب الإِيمان عَن أبي هُرَيْرَة رَضِي الله عَنهُ أَن رَسُول الله صلى الله عَلَيْهِ وَسلم قَالَ: الْمقَام الْمَحْمُود الشَّفَاعَة
-‘‘ইমাম ইবনে জারীর আত-তবারী, বায়হাকী তার শুয়াবুল ঈমানে হযরত আবু হুরায়রা (رضي الله عنه) হতে বর্ণনা করেছেন যে, তিনি বলেন, রাসূল (ﷺ) ইরশাদ করেছেন, আলোচ্য আয়াতে মাকামে মাহমুদ বলতে শাফায়াত উদ্দেশ্য।’’ (ইমাম সুয়ূতি, তাফসিরে দুররুল মানসুর, ৫/৩২৪ পৃ.)
❏ তিনি আরও উল্লেখ করেন-
وَأخرج أَحْمد وَالتِّرْمِذِيّ وَحسنه وَابْن جرير وَابْن أبي حَاتِم وَابْن مرْدَوَيْه وَالْبَيْهَقِيّ فِي الدَّلَائِل عَن أبي هُرَيْرَة رَضِي الله عَنهُ عَن النَّبِي صلى الله عَلَيْهِ وَسلم فِي قَوْله: {عَسى أَن يَبْعَثك رَبك مقَاما مَحْمُودًا} وَسُئِلَ عَنهُ قَالَ: هُوَ الْمقَام الَّذِي أشفع فِيهِ لأمتي
-‘‘ইমাম আহমদ, তিরমিযি ‘হাসান’ সনদে, ইবনে জারীর, ইবনে আবি হাতেম, ইবনে মারদাওয়াই, বায়হাকী তার দালায়েলুন নবুয়তে বর্ণনা করেন হযরত আবু হুরায়রা (رضي الله عنه) হতে বর্ণনা করেছেন যে, তিনি বলেন, রাসূল (ﷺ) কে এ আয়াত সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বলেন, এ মাকামে মাহমুদ হল উম্মতকে সুপারিশ করার স্থান, যেখান থেকে তাদের সুপারিশ করবো।’’ (ইমাম সুয়ূতি, তাফসিরে দুররুল মানসুর, ৫/৩২৪ পৃ.)
❏ তিনি আরও উল্লেখ করেন-
وَأخرج ابْن مرْدَوَيْه عَن سعد بن أبي وَقاص رَضِي الله عَنهُ قَالَ: سُئِلَ رَسُول الله صلى الله عَلَيْهِ وَسلم عَن الْمقَام الْمَحْمُود فَقَالَ: هُوَ الشَّفَاعَة
-‘‘ইমাম ইবনে মারদাওয়াই (رحمة الله) সা‘দ বিন আবি আক্কাস (رضي الله عنه) হতে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, রাসূল (ﷺ) কে মাকামে মাহমুদ সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলে, তিনি বলেন, সেটি হচ্ছে আমার শাফায়াত করার অধিকার।’’ (ইমাম সুয়ূতি, তাফসিরে দুররুল মানসুর, ৫/৩২৫ পৃ.)
━━━━━━━━━━━o━━━━━━━━━
হুযুর পূর নূর (ﷺ)’র আকিদা
____________________
হুযুর পূর নূর (ﷺ)’র আকিদা:
ইমাম বুখারী (رحمة الله) ছহিহ বুখারী শরীফে শাফায়াতের বর্ণনা করতে গিয়ে বলেন-
ثُمَّ تَلاَ هَذِهِ الآيَةَ: {عَسَى أَنْ يَبْعَثَكَ رَبُّكَ مَقَامًا مَحْمُودًا} [الإسراء: ৭৯] قَالَ: وَهَذَا المَقَامُ المَحْمُودُ الَّذِي وُعِدَهُ نَبِيُّكُمْ ﷺ
-“অত:পর রাসূল (ﷺ) উক্ত আয়াত তেলাওয়াত করলেন এবং বললেন, আল্লাহ তা‘য়ালা তোমাদের নবীর সাথে যার অঙ্গীকার করেছেন।’’ ➥76
৭৬.
ক. সহীহ বুখারী, ৯/১৩১ পৃ. হা/৭৪৪০।
খ. খতিব তিবরিযি, মিশকাত শরীফ, ৩/১৫৪৬ পৃ. (ভারতীয় ৪৮৯ পৃষ্ঠা), হা/৫৫৭২।
গ. মোল্লা আলী ক্বারী, মিরকাত, দশম খণ্ড, ২৮২ পৃষ্ঠা।
ঘ. শায়খ আব্দুল হক মুহাদ্দিসে দেহলভী, আশয়াতুল লুমআত, তৃতীয় খণ্ড, ৩৮৭ পৃষ্ঠা।
ইমাম নাসাফী, সুয়ুতি এবং ইমাম কুরতুবী (رحمة الله)’র আকিদা
____________________
ইমাম নাসাফী, সুয়ুতি এবং ইমাম কুরতুবী (رحمة الله)’র আকিদা:
মহান আল্লাহর বাণী-
وَلَسَوْفَ يُعْطِيكَ رَبُّكَ فَتَرْضَى
-“অচিরেই আপনার রব আপনাকে এতো দান করবেন যে, আপনি সন্তুষ্ট হয়ে যাবেন।” (সূরা দ্বোহা, আয়াত নং-৫)
উপর্যুক্ত আয়াতের তাফসীরে বলেন,
لَمَّا نَزَلَتْ هَذِهِ الْآيَةُ قَالَ النَّبِيُّ ﷺ : إِذًا وَاللَّهِ لَا أَرْضَى وَوَاحِدٌ مِنْ أُمَّتِي فِي النَّارِ
-‘‘এই আয়াত যখন নাযিল হয়, রাসূল করিম (ﷺ) তখন বলেন, ততক্ষণ পর্যন্ত আমি সন্তুষ্ট হবো না, যতক্ষণ না আমার একজন উম্মতও জাহান্নামে থাকবে।’’ ➥77
টিকা━━━━━━━━━━━━━━━━━━━━
৭৭.
ক. ইমাম কুরতুবী, তাফসীরে কুরতুবী, ২০তম খণ্ড, ৯৬ পৃষ্ঠা
খ. ইমাম নাসাফী, তাফসীরে মাদারেক, ৩/৬৫৪ পৃষ্ঠা
গ. ইমাম সুয়ূতি, তাফসীরে দুররে মানসুর, ষষ্ঠ খণ্ড, ৩৬১ পৃষ্ঠা
ঘ. শাহ আব্দুল আযিয মুহাদ্দেসে দেহলভী, তাফসীরে আযিযি, চতুর্থ খণ্ড, ২১৮ পৃষ্ঠা
ঙ. ইমাম ছালাভী, তাফসিরে ছালাভী, ১০/২২৫ পৃ.
চ. ইমাম সুয়ূতি, তাফসীরে জালালাইন, ৮১২ পৃ. সূরা দ্বোহা
ছ. কাযি সানাউল্লাহ পানিপথি, তাফসিরে মাযহারী, ১০/১০ পৃ. সূরা দ্বোহা
❏ তবে ইমাম নিশাপুরী (رحمة الله) এবং ইমাম ওয়াহেদী (رحمة الله) এভাবে সংকলন করেন-
عن علي رضي الله عنه أنه قال: قال صلى الله عليه وسلم إذن لا أرضى وواحد من أمتي في النار
-‘‘হযরত আলী (رحمة الله) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূল (ﷺ) ইরশাদ করেন, আমার একটা উম্মতও জাহান্নামে থাকলে আমি সন্তুষ্ট হবে না।’’
(নিযামুদ্দীন নিশাপুরী, তাফসিরে নিশাপুরী, ৬/৫১৬ পৃ., ইমাম ওয়াহেদী, তাফসিরে ওয়াহেদী, ১/১২১০ পৃ.)
❏ ইমাম ফখরুদ্দীন রাযী (رحمة الله) এভাবে উল্লেখ করেন-
يُرْوَى أَنَّهُ عَلَيْهِ السَّلَامُ لَمَّا نَزَلَتْ هَذِهِ الْآيَةُ قَالَ: إِذًا لَا أَرْضَى وَوَاحِدٌ مِنْ أُمَّتِي فِي النَّارِ
-‘‘যখন মহান রবের এ বাণী নাযিল হল তখন রাসূল (ﷺ) বললেন, আমার একটা উম্মত জাহান্নামে থাকলে আমি সন্তুষ্ট হবে না।’’ (ইমাম রাযী, তাফসিরে কাবীর, ৩১/১৯৪ পৃ.)
━━━━━━━━━━━o━━━━━━━━━
সায়্যিদুনা আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (رضي الله عنه)’র আক্বিদা
____________________
সায়্যিদুনা আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (رضي الله عنه)’র আক্বিদা:
ইমামুল মুফাসসিরিন আলা উদ্দিন আবী বিন মুহাম্মদ বিন ইবরাহীম বাগদাদী (رحمة الله) স্বীয় তাফসীরে খাযেনে মহান আল্লাহর বাণী-
وَلَسَوْفَ يُعْطِيكَ رَبُّكَ فَتَرْضَى
-“অচিরেই আপনার রব আপনাকে এতো দান করবেন যে আপনি সন্তুষ্ট হয়ে যাবেন।” (সূরা দ্বোহা, আয়াত নং-৫)
এ আয়াতের তাফসীরে বলেন, হযরত সায়্যিদুনা আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (رضي الله عنه) ➥78 বলেন-
هُوَ الشَّفَاعَةُ فِي أُمَّتِهِ حَتَّى يَرْضَى
-‘‘এই দান দ্বারা উদ্দেশ্য হল উম্মতের জন্য সুপারিশ করা যতক্ষণ না তিনি সন্তুষ্ট হন।’’ ➥79
টিকা━━━━━━━━━━━━━━━━━━━━
৭৮.
ইমাম ইবনে জারীর তবারী (رحمة الله) উক্ত সাহাবী থেকে এভাবে উল্লেখ করেন-
عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ، قَوْلُهُ: {عَسَى أَنْ يَبْعَثَكَ، رَبُّكَ مَقَامًا مَحْمُودًا} [الإسراء: ৭৯] قَالَ: الْمَقَامُ الْمَحْمُودُ: مَقَامُ الشَّفَاعَةِ
-‘‘রঈসুল মুফাসসিরীন হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (رضي الله عنه) হতে বর্ণনা করেন, তিনি (মাকামে মাহমুদ) সম্পর্কে বলেন, মাকামে মাহমুদ হলো মাকামে শাফায়াত তথা শাফায়াত করার ক্ষমতা লাভ।’’
(ইমাম তবারী, তাফসিরে তবারী, ১৫/৪৪ পৃ. ইমাম সুয়ূতি,. তাফসিরে দুররুল মানসুর, ৫/৩২৪ পৃ.)
টিকা━━━━━━━━━━━━━━━━━━━━
৭৯.
[ইমাম খাযেন, তাফসীরে খাযেন, ৪/৪৩৮ পৃ., ইমাম ওয়াহেদী, তাফসিরে ওয়াহেদী, ৪/৪১০ পৃ., ইমাম বাগভী, তাফসীরে মাআলিমুত তানযিল, ৫/২৬৭ পৃ.]
❏ তবে ইমাম বাগভী এভাবে উল্লেখ করেছেন-
قَالَ عَطَاءٌ عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ: هُوَ الشَّفَاعَةُ فِي أُمَّتِهِ حَتَّى يَرْضَى، وَهُوَ قَوْلُ عَلَيٍّ وَالْحَسَنِ.
-‘‘তাবেয়ী কাতাদা (رحمة الله) রঈসুল মুফাসসিরীন হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (رضي الله عنه) হতে বর্ণনা করেন, তিনি (মাকামে মাহমুদ) সম্পর্কে বলেন, সেটি হচ্ছে শাফায়াত, তিনি ততক্ষণ পর্যন্ত সন্তুষ্ট হবেন না যতক্ষণ না পর্যন্ত তিনি তাঁর উম্মতকে শাফায়াত করে জান্নাতে পৌঁছাতে পারবেন। এমনটি হযরত মাওলা আলী (رضي الله عنه) এবং ইমাম হাসান বসরী (رحمة الله) বক্তব্যও।’’ (ইমাম বাগভী, তাফসীরে মাআলিমুত তানযিল, ৫/২৬৭ পৃ.)
❏ ইমাম ইবনে জাওযী (رحمة الله) তাঁর তাফসিরে লিখেন-
قال عليّ والحسن: هو الشفاعة في أمته حتى يرضى.
-‘‘হযরত মাওলা আলী (رضي الله عنه) এবং ইমাম হাসান বসরী (رحمة الله) বলেন, (মাকামে মাহমুদ) সেটি হচ্ছে শাফায়াত, তিনি ততক্ষণ পর্যন্ত সন্তুষ্ট হবেন না যতক্ষণ না পর্যন্ত তিনি তাঁর উম্মতকে শাফায়াত করে জান্নাতে পৌঁছাতে পারবেন।’’ (ইমাম ইবনে জাওযী, তাফসিরে যাদুল মাইসির ফি উলূমিত তাফসির, ৪/৪৫৭ পৃ.)
━━━━━━━━━━━o━━━━━━━━━
শাফায়াতের কান্ডার রাসূলে কারিম (ﷺ)’র আক্বিদা
____________________
শাফায়াতের কান্ডার রাসূলে কারিম (ﷺ)’র আক্বিদা:
হযরত আউফ বিন মালেক (رضي الله عنه) বর্ণনা করেন, রাসূলে কারিম (ﷺ) ইরশাদ করেন-
أَتَانِي آتٍ مِنْ عِنْدِ رَبِّي فَخَيَّرَنِي بَيْنَ أَنْ يُدْخِلَ نِصْفَ أُمَّتِي الْجَنَّةَ وَبَيْنَ الشَّفَاعَةِ فَاخْتَرْتُ الشَّفَاعَةَ وَهِيَ لِمَنْ مَاتَ لَا يُشْرِكُ بِاللَّهِ شَيْئًا
-‘‘আমার রবের পক্ষ থেকে এক ব্যক্তি এসে আমাকে আমার উম্মতের অর্ধেক জান্নাতে প্রবেশ করা এবং সুপারিশের মধ্যে ইখতিয়ার প্রদান করে। তখন আমি সুপারিশের ইখতিয়ারই নিয়েছি। আর তা হল এমন ব্যক্তির জন্য যে মুশরিক হয়ে মৃত্যুবরণ করেনি।’’ ➥80
৮০.
ক. খতিব তিবরিযি, মিশকাত শরীফ, (ভারতীয় ৪৯৪ পৃষ্ঠা), ৩/১৫৫৮ পৃ. হা/৫৬০০
খ. ইমাম তিরমিযী, আস-সুনান, ৪/২০৭ পৃষ্ঠা, হা/২৪৪১
গ. ইমাম ইবনে মাজাহ, আস-সুনান, ১/১৪৪৪ পৃষ্ঠা, হা/৪৩১৭
ঘ. শায়খ আব্দুল হক মুহাদ্দিসে দেহলভী, আশআতুল লুমআত, চতুর্থ খণ্ড, ৪ পৃষ্ঠা
ঙ. মোল্লা আলী ক্বারী, মিরকাত শরীফ, দশম খণ্ড, ৩১০ পৃষ্ঠা,
চ. ইমাম হাকেম, আল-মুস্তাদরাক, প্রথম খণ্ড, ৬০ পৃষ্ঠা, হা/৩৬
ছ. ইমাম আহমদ, আল-মুসনাদ, ৩৯/৩৯৯ পৃ. হা/২৩৯৭৭
জ. ইমাম ইবনে হিব্বান, আস-সহীহ, হা/২১১
ঝ. ইমাম ইবনে আবি শায়বাহ, আল-মুসান্নাফ, ৬/৩২০ পৃ. হা/৩১৭৫১
হযরত আলী মুরতাদা (رضي الله عنه)’র আকিদা
____________________
হযরত আলী মুরতাদা (رضي الله عنه)’র আকিদা:
সায়্যিদুনা আলী মুরতাদা (رضي الله عنه) বর্ণনা করেন, রাসূলে কারিম (ﷺ) ইরশাদ করেন-
عَنْ عَلِيٍّ أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: أَشْفَعُ لِأُمَّتِي حَتَّى يُنَادِيَنِي رَبِّي: أَرْضِيتَ يَا مُحَمَّدُ؟ فَأَقُولُ: نَعَمْ يَا رَبِّ رَضِيتُ
-‘‘আমি আমার উম্মতের সুপারিশ করতে থাকব, এই পর্যন্ত যে, আমার রব আমাকে জিজ্ঞাসা করবেন, হে হাবীব (ﷺ)! আপনি কী সন্তুষ্ট হয়েছেন? তখন আমি বলব, হ্যাঁ, আমি সন্তুষ্ট হয়েছি।’’ ➥81
৮১.
ক. ইমাম সুয়ূতি, তাফসীরে দুররে মনসুর, অষ্টম খণ্ড, ৫৪৩ পৃষ্ঠা,
খ. ইমাম কুরতুবী, তাফসীরে কুরতুবী, ২০তম খণ্ড ৯৬ পৃষ্ঠা,
গ. ইসমাঈল হাক্কী, তাফসীরে রুহুল বয়ান, তৃতীয় খণ্ড, ৪৫৫ পৃষ্ঠা
ঘ. শাওকানী, তাফসিরে ফতহুল কাদীর, ৫/৫৬০ পৃ.
সায়্যিদুনা হযরত আবু হুরাইরা (رضي الله عنه)’র আকিদা
____________________
সায়্যিদুনা হযরত আবু হুরাইরা (رضي الله عنه)’র আকিদা:
হযরত সায়্যিদুনা আবু হুরাইরা (رضي الله عنه)’র বর্ণনা করেন, রাসূলে পাক (ﷺ) ইরশাদ করেন,
لِكُلِّ نَبِيٍّ دَعْوَةٌ مُسْتَجَابَةٌ، فَتَعَجَّلَ كُلُّ نَبِيٍّ دَعْوَتَهُ، وَإِنِّي اخْتَبَأْتُ دَعْوَتِي شَفَاعَةً لِأُمَّتِي يَوْمَ الْقِيَامَةِ، فَهِيَ نَائِلَةٌ إِنْ شَاءَ اللهُ مَنْ مَاتَ مِنْ أُمَّتِي لَا يُشْرِكُ بِاللهِ شَيْئًا
-‘‘প্রত্যেক নবীরই একটি দোয়া আল্লাহর দরবারে কবুল হয়ে থাকে। সুতরাং প্রত্যেক নবীই তাদের সেই দোয়া করেছেন আর আমি আমার দোয়াটি কিয়ামত দিবসে করবো। তা হল উম্মতের জন্য সুপারিশ। আর তা করা হবে এমন ব্যক্তির জন্য যে মুশরিক অবস্থায় মৃত্যুবরন করেনি।’’ ➥82
টিকা━━━━━━━━━━━━━━━━━━━━
৮২.
ইমাম মুসলিম, আস-সহীহ, ১/১৮৯ পৃ. হা/১৯৯, পরিচ্ছেদ: بَابُ اخْتِبَاءِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ دَعْوَةَ الشَّفَاعَةِ لِأُمَّتِهِ , ইমাম ইবনে মাজাহ, আস-সুনান, ২/১৪৪০ পৃষ্ঠা, হা/৪৩০৭, খতিব তিবরিযি, মিশকাত শরীফ, (ভারতীয় ১৯৪ পৃষ্ঠা) ২/৬৯১ পৃ. হা/২২২৩, শায়খ আব্দুল হক মুহাদ্দিসে দেহলভী, আশয়াতুল লুমআত ফার্সী, দ্বিতীয় খণ্ড, ১৬৮ পৃষ্ঠা, মোল্লা আলী ক্বারী, মিরকাত শরীফ, পঞ্চম খণ্ড, ৩৩ পৃষ্ঠা, ইমাম বুখারী, আস-সহীহ, দ্বিতীয় খণ্ড, ১১৩ পৃষ্ঠা, ইবনে হাজার আসকালানী, ফাতহুল বারী ১১তম খণ্ড, ৯৬ পৃষ্ঠা, আইনী, উমদাতুল কারী, ২২ খণ্ড, ২৭৬ পৃষ্ঠা, ইমাম কাস্তালানী, ইরশাদুশ শারী, ইমাম হাকেম, আল-মুস্তাদারেক, প্রথম খণ্ড, ৬৮ পৃষ্ঠা, হা/, ইমাম তিরমিযী, আস-সুনান, ৫/৪৭২ পৃষ্ঠা, হা/৩৬০২, ইমাম সুয়ূতি, জামেউস ছগীর, প্রথম খণ্ড, ৯৭ পৃষ্ঠা, ইবনে কাসীর, আল-বেদায়া ওয়ান নিহায়া, দ্বিতীয় খণ্ড, ২০৮ পৃষ্ঠা, ইমাম দারেমী, আস-সুনান, ৩/১৮৫০ পৃ. হা/২৮৪৭, ইমাম আহমদ, আল-মুসনাদ, ১৩/১৪০ পৃ. হা/৭৭১৪, বায়হাকী, আস-সুনানুল কোবরা, ৮/৩২ পৃ. হা/১৫৮৩৭, ইমাম বাগভী, শরহে সুন্নাহ, ৫/৭ পৃ. হা/১২৩৭, মুসনাদে বায্যার, ১৪/৩৫৮ পৃ. হা/৮০৫৯,
❏ ইমাম বায্যার (رحمة الله) হাদিসটি এভাবে সংকলন করেন-
عَن أَنَسٍ ؓ، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ ﷺ : لِكُلِّ نَبِيٍّ دَعْوَةٌ دَعَا بِهَا لأُمَّتِهِ , وَإِنِّي اخْتَبَأْتُ دَعْوَتِي شَفَاعَةً لأُمَّتِي يَوْمَ الْقِيَامَةِ.
-‘‘হযরত আনাস ইবনে মালিক (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূল (ﷺ) ইরশাদ করেন, প্রত্যেক নবীই একটি দোয়া উম্মতের জন্য আল্লাহর দরবারে কবুল হয়ে থাকে। আমি এটি আমার উম্মাতের জন্য হাশরের ময়দানে চাওয়াকেই মননীত করেছি, তা হল আমার গুনাহগার উম্মতের জন্য শাফায়াত।’’ (মুসনাদে বায্যার, ১৩/৪২৮ পৃ. হা/৭১৬৯, ইমাম বাগভী, শরহে সুন্নাহ, ৫/৭ পৃ. হা/১২৩৮)
❏ ইমাম বুখারী (رحمة الله) এভাবে সংকলন করেছেন-
عَنْ أَنَسٍ ؓ، عَنِ النَّبِيِّ ﷺ قَالَ: كُلُّ نَبِيٍّ سَأَلَ سُؤْلًا أَوْ قَالَ: لِكُلِّ نَبِيٍّ دَعْوَةٌ قَدْ دَعَا بِهَا فَاسْتُجِيبَ، فَجَعَلْتُ دَعْوَتِي شَفَاعَةً لِأُمَّتِي يَوْمَ القِيَامَةِ
-‘‘হযরত আনাস ইবনে মালিক (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূল (ﷺ) ইরশাদ করেন, প্রত্যেক নবীরই একটি প্রার্থনা অথবা দোয়া আল্লাহর দরবারে কবুল হয়ে থাকে। সুতরাং প্রত্যেক নবীই তাদের সেই দোয়া করেছেন, আর আমি আমার দোয়াটি কিয়ামত দিবসে করবো। তা হল উম্মতের জন্য সুপারিশ।’’ (ইমাম বুখারী, আস-সহীহ, ৮/৬৭ পৃ. হা/৬৩০৫)
━━━━━━━━━━━o━━━━━━━━━
হযরত উবাই বিন কাব (رضي الله عنه)’র আকিদা
____________________
হযরত উবাই বিন কাব (رضي الله عنه)’র আকিদা:
হযরত উবাই বিন কাব (رضي الله عنه) বলেন, রাসূলে কারিম (ﷺ) ইরশাদ করেন-
إِذَا كَانَ يَوْمُ الْقِيَامَةِ، كُنْتُ إِمَامَ النَّبِيِّينَ وَخَطِيبَهُمْ وَصَاحِبَ شَفَاعَتِهِمْ، غَيْرَ فَخْرٍ
-‘‘কিয়ামত দিবসে আমি সকল নবীর ইমাম এবং খতীব হবো, আর তাদের সকলের সুপারিশের মালিক হবো, এতে কোন গর্ব বা অহংকার নেই।’’ ➥83
৮৩. খতিব তিবরিযি, মিশকাত শরীফ, (ভারতীয় ৫১৪ পৃষ্ঠা), ৩/১৬০৬ পৃ. হা/৫৭৬৮, ইমাম তিরমিযী, আস-সুনান, ৬/১২ পৃ. হা/৩৬১৩, ইমাম হাকেম, আল-মুস্তাদরাক, প্রথম খণ্ড, ১/১৪৩ পৃ., হা/২৪০, এবং ৪/৮৮ পৃ. হা/৬৯৬৯, যাহাবী, তালখীস, প্রথম খণ্ড, ৭১ পৃষ্ঠা, ইমাম ইবনে মাজাহ, আস-সুনান, ৫/৩৬৮ পৃ. হা/৪৩১৪, ইমাম আহমদ, আল-মুসনাদ, ৩৫/২৬৯ পৃ. হা/২১২৪৫
হযরত আনাস বিন মালেক (رضي الله عنه)’র আকিদা
____________________
হযরত আনাস বিন মালেক (رضي الله عنه)’র আকিদা:
হযরত আনাস বিন মালেক (رضي الله عنه)’র হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলে করিম (ﷺ) ইরশাদ করেন-
أَنَا أَوَّلُ النَّاسِ خُرُوجًا إِذَا بُعِثُوا وَأَنَا قَائِدُهُمْ إِذَا وَفَدُوا وَأَنَا خَطِيبُهُمْ إِذَا أَنْصَتُوا وَأَنَا مُسْتَشْفِعُهُمْ إِذَا حُبِسُوا وَأَنَا مُبَشِّرُهُمْ إِذَا أَيِسُوا الْكَرَامَةُ وَالْمَفَاتِيحُ يَوْمَئِذٍ بِيَدِي وَلِوَاءُ الْحَمْدِ يَوْمَئِذٍ بِيَدِي وَأَنَا أَكْرَمُ وَلَدِ آدَمَ عَلَى رَبِّي يَطُوفُ عَلَيَّ أَلْفُ خادمٍ كأنَّهنَّ بَيْضٌ مُكْنُونٌ أَوْ لُؤْلُؤٌ مَنْثُورٌ
-‘‘মানুষ যখন কবর হতে উঠবে আমিই সর্বপ্রথম উঠবো, আমি সকলের ইমাম হবো, যখন তারা আল্লাহর সমীপে উপস্থিত হবে। তারা যখন অনোন্যপায় হবে আমি তাদের খতীব হবো। তারা যখন ময়দানে হাশরে একত্রিত হবে আমি তাদের সুপারিশ কারী হবো, তারা যখন পেরাশান হবে আমি তাদের সুসংবাদদাতা হবো। সম্মান এবং ধনভাণ্ডারের চাবিকাঠি সেদিন আমার হাতেই হবে। আমার হাতেই থাকবে প্রশংসার পতাকা। আমার রবের নিকট আদম সন্তানাদি মধ্যে আমিই হবো সবচেয়ে সম্মানী। সহস্র খাদেম আমার চারপাশে আবর্তন করবে। তারা ডিম অথবা মনিমুক্তা দ্বারা আবৃত।’’ ৮৪
৮৪. খতিব তিবরিযি, মিশকাত শরীফ, (ভারতীয় ৫১৪ পৃষ্ঠা), ৩/১৬০৫ পৃ. হা/৫৭৬৫, ইমাম তিরমিযী, আস-সুনান, ৬/৯ পৃ. হা/৩৬১০, তিনি বলেন, হাদিসটি ‘হাসান’, মুসনাদে বায্যার, ১৩/১৩১ পৃ. হা/৬৫২৩, ইমাম ইবনে আছির, জামেউল উসূল, ৮/৫২৭ পৃ. হা/৬৩২৬, মুত্তাকী হিন্দী, কানযুল উম্মাল, হা/৩২০৪৫
সায়্যিদুনা আবু হোরাইরা (رضي الله عنه)’র আকিদা
____________________
সায়্যিদুনা আবু হোরাইরা (رضي الله عنه)’র আকিদা:
হযরত সায়্যিদুনা আবু হোরাইরা (رضي الله عنه)’র হতে বর্ণিত, তিনি বলেন রাসূলে করিম (ﷺ) ইরশাদ করেন,
أَنَا سَيِّدُ وَلَدِ آدَمَ يَوْمَ الْقِيَامَةِ وَأَوَّلُ مَنْ يَنْشَقُّ عَنْهُ الْقَبْرُ وَأَوَّلُ شَافِعٍ وَأَوَّلُ مُشَفَّعٍ
-‘‘কিয়ামতের দিন আমিই হবো সমস্ত আদম সন্তানের সর্দার, সর্বপ্রথম আমিই কবর থেকে উঠব, সর্বপ্রথম আমিই সুপারিশ করবো এবং আমার সুপারিশই সর্বপ্রথম কবুল করা হবে।’’ ৮৫
৮৫. খতিব তিবরিযি, মিশকাত শরীফ, (ভারতীয় ৫১১ পৃষ্ঠা), ৩/১৬০০ পৃ. হা/৫৭৪১, ইমাম মুসলিম, আস-সহীহ, শরীফ, দ্বিতীয় খণ্ড, ২৪৫ পৃষ্ঠা, ৪/১৭৮২ পৃ. হা/২২৭৮, ইমাম আবু দাউদ, আস-সুনান, ৪/২১৮ পৃ. হা/৪৬৭৩
হযরত জাবের ইবনে আব্দুল্লাহ (رضي الله عنه)’র আক
____________________
হযরত জাবের ইবনে আব্দুল্লাহ (رضي الله عنه)’র আকিদা:
হযরত সায়্যিদুনা জাবের (رضي الله عنه) হতে ৮৬ বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলে করিম (ﷺ) ইরশাদ করেন,
أَنَا قَائِدُ الْمُرْسَلِينَ وَلَا فَخْرَ، وَأَنَا خَاتَمُ النَّبِيِّينَ وَلَا فَخْرَ، وَأَنَا أَوَّلُ شَافِعٍ وَأَوَّلُ مُشَفَّعٍ وَلَا فَخْرَ
-‘‘আমি সমস্ত রাসূলদের সর্দার, এতে কোন অহংকার নেই, আমি সর্বশেষ নবী এতে কোন গর্ব নেই এবং আমি সর্বপ্রথম সুপারিশকারী এবং আমার সুপারিশই সর্বপ্রথম কবুল করা হবে এতেও কোন অহংকার নেই।’’ ৮৭
টিকা━━━━━━━━━━━━━━━━━━━━
৮৬.
❏ উক্ত সাহাবী থেকে আরেকটি বর্ণনা এভাবে এসেছে-
عَنْ جَابِرِ بْنِ عَبْدِ اللَّهِ ؓ: أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ ﷺ قَالَ: مَنْ قَالَ حِينَ يَسْمَعُ النِّدَاءَ: اللَّهُمَّ رَبَّ هَذِهِ الدَّعْوَةِ التَّامَّةِ، وَالصَّلاَةِ القَائِمَةِ آتِ مُحَمَّدًا الوَسِيلَةَ وَالفَضِيلَةَ، وَابْعَثْهُ مَقَامًا مَحْمُودًا الَّذِي وَعَدْتَهُ، حَلَّتْ لَهُ شَفَاعَتِي يَوْمَ القِيَامَةِ
-‘‘হযরত জাবের (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নিশ্চয় রাসূল (ﷺ) ইরশাদ করেছেন, যে ব্যক্তি আযান শুনবে অত:পর
اللَّهُمَّ رَبَّ هَذِهِ الدَّعْوَةِ التَّامَّةِ، وَالصَّلاَةِ القَائِمَةِ آتِ مُحَمَّدًا الوَسِيلَةَ وَالفَضِيلَةَ، وَابْعَثْهُ مَقَامًا مَحْمُودًا الَّذِي وَعَدْتَهُ
এ দোয়া পাঠ করবে তার জন্য আমার শাফায়াত বৈধ হয়ে গেল।’’ (ইমাম বুখারী, আস-সহীহ, ১/১২৬ পৃ. হা/৬১৪, ইমাম বাগভী, শরহে সুন্নাহ, হা/৪২০)
৮৭.
খতিব তিবরিযি, মিশকাত শরীফ, (ভারতীয় ৫১৪ পৃষ্ঠা), ৩/১৬০৫ পৃ. হা/৫৭৬৪, সুনানে দারেমী, ১/১৯৬ পৃষ্ঠা, হা/৫০, ইমাম তাবরানী, মু‘জামুল আওসাত, ১/৬১ পৃ. হা/১৭০
━━━━━━━━━━━o━━━━━━━━━
হযরত আনাস ইবনে মালিক (رضي الله عنه)’র আকিদা
____________________
হযরত আনাস ইবনে মালিক (رضي الله عنه)’র আকিদা:
রাসূলে কারিম (ﷺ)’র প্রিয় সাহাবা হযরত আনাস বিন মালেক (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত, রাসূলে করিম (ﷺ) ইরশাদ করেন, কিয়ামতের দিন যখন সকল মানুষ একত্রিত হবে তখন তারা আফসোস করে বলবে,
لَوِ اسْتَشْفَعْنَا إِلَى رَبِّنَا حَتَّى يُرِيحَنَا مِنْ مَكَانِنَا هَذَا
-‘‘হায়! আমাদের রবের নিকট যদি কোন সুপারিশকারী পেতাম, তবে তিনি আমাদের মুক্তি দিতেন।’’
তখন সবাই একত্রে হযরত আদম (عليه السلام)’র কাছে গিয়ে আবেদন জানাবে। আপনি কি মানুষের অবস্থা দেখছেন না? আল্লাহ তা‘য়ালা আপনাকে তাঁর কুদরতি হাতে সৃষ্টি করেছেন, সমস্ত ফেরেশতা আপনাকে সিজদা করেছেন, আপনাকে সব কিছুর নাম শিক্ষা দিয়েছেন।
اشْفَعْ لَنَا إِلَى رَبِّنَا حَتَّى يُرِيحَنَا مِنْ مَكَانِنَا هَذَا
-‘‘সুতরাং আপনি আমাদের রবের নিকট সুপারিশ করুন। যাতে এই স্থান হতে আমরা মুক্তি পাই।’’ প্রত্যুত্তরে হযরত আদম (عليه السلام) বললেন,
لَسْتُ هُنَاكَ
-‘‘এটা আমার কাজ নয়।’’
এরপর এক পর্যায়ে তিনি বলেন-
ائْتُوا نُوحًا، فَإِنَّهُ أَوَّلُ رَسُولٍ بَعَثَهُ اللَّهُ إِلَى أَهْلِ الأَرْضِ
-‘‘বরং তোমরা হযরত নূহ (عليه السلام)’র কাছে যাও, কেননা পৃথিবীতে তাকেই মহান আল্লাহ তা‘য়ালা সর্বপ্রথম রাসূল হিসেবে প্রেরণ করেছেন।’’
তারা হযরত নূহ (عليه السلام)’র কাছে গেলে তিনি বলবেন,
لَسْتُ هُنَاكُمْ
-‘‘এটা আমার কাজ নয়।’’
তিনি তখন এক পর্যায়ে বলবেন-
ائْتُوا إِبْرَاهِيمَ خَلِيلَ الرَّحْمَنِ
-‘‘তোমরা বরং হযরত ইব্রাহিম (عليه السلام)’র কাছে যাও। তিনি মহান আল্লাহর পরম বন্ধু।’’
তারা হযরত ইবরাহীম (عليه السلام)’র কাছে যাবে। ইবরাহীম (عليه السلام) বলবেন,
لَسْتُ هُنَاكُمْ
-‘‘এটা আমার কাজ নয়।’’ এক পর্যায়ে তিনি বলবেন-
ائْتُوا مُوسَى، عَبْدًا آتَاهُ اللَّهُ التَّوْرَاةَ، وَكَلَّمَهُ تَكْلِيمًا
-‘‘তোমরা বরং হযরত মূসা (عليه السلام)’র কাছে যাও। আল্লাহ তা‘য়ালা তাকে তাওরাত কিতাব দান করেছেন এবং তাঁর সাথে কথা বলেছেন।’’
তারা হযরত মূসা (عليه السلام)’র কাছে আসবে। হযরত মূসা (عليه السلام) বলবেন,
لَسْتُ هُنَاكُمْ
-‘‘এটা আমার কাজ নয়।’’ এক পর্যায়ে তিনি বলবেন-
ائْتُوا عِيسَى عَبْدَ اللَّهِ وَرَسُولَهُ، وَكَلِمَتَهُ وَرُوحَهُ
-‘‘তোমরা হযরত ঈসা (عليه السلام)’র কাছে যাও। তিনি আল্লাহর খাছ বান্দা। তাঁর রাসূল, তাঁর কালমা এবং রুহ।’’
তারা হযরত ঈসা (عليه السلام)’র কাছে আসবে। হযরত ঈসা (عليه السلام) বলবেন-
لَسْتُ هُنَاكُمْ
-‘‘এটা আমার কাজ নয়।’’ এক পর্যায়ে তিনি বলবেন-
وَلَكِنِ ائْتُوا مُحَمَّدًا صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، عَبْدًا غُفِرَ لَهُ مَا تَقَدَّمَ مِنْ ذَنْبهِ وَمَا تَأَخَّرَ
-‘‘তোমরা হযরত মুহাম্মদ মুস্তফা (ﷺ)’র কাছে যাও। তিনি আল্লাহর প্রিয় বান্দা, তাঁর কারণে আল্লাহ তা‘য়ালা তাঁর (উম্মতের) পূর্বের এবং পরের সকলের গুনাহ ক্ষমা করে দিয়েছেন।’’
রাসূলে করিম (ﷺ) ইরশাদ করেন, তারা সকলে আমার কাছে আসবে।
فَأَنْطَلِقُ، فَأَسْتَأْذِنُ عَلَى رَبِّي، فَيُؤْذَنُ لِي عَلَيْهِ
-‘‘আমি তাদেরকে নিয়ে যাবো এবং আমার রবের নিকট অনুমতি চাইবো, আমাকে অনুমতি দেয়া হবে।’’
আর আল্লাহর সাক্ষাতের সাথে সাথে আমি সিজদা করবো। তখন আল্লাহ বলবেন,
ارْفَعْ مُحَمَّدُ وَقُلْ يُسْمَعْ، وَسَلْ تُعْطَهْ، وَاشْفَعْ تُشَفَّعْ
-‘‘আপনার মাথা মুবারক তুলুন। আপনি বলুন শ্রবণ করা হবে। আপনি চান দেয়া হবে এবং আপনি সুপারিশ করুন সুপারিশ কবুল করা হবে।’’
সরওয়ারে আলম (ﷺ) বলেন, যে ঈমান আনবে এবং তার অন্তরে গমের দানা পরিমাণ নেক আমল থাকবে তাকে জাহান্নাম থেকে বের করা হবে। যে ঈমান আনবে তাঁর অন্তরে গুন্দম পরিমান ভাল আমল থাকবে তাকেও জাহান্নাম থেকে বের করা হবে এবং যে ঈমান আনবে তার অন্তরে জররা পরিমাণ নেক আমল থাকবে। ৮৮
৮৮. ইমাম বুখারী, আস-সহীহ, ৯/১২১ পৃ. হা/৭৪১০, খতিব তিবরিযি, মিশকাত শরীফ, (ভারতীয় ৪৮৮ পৃষ্ঠা), ৩/১৫৪৬ পৃ. হা/৫৫৭২, ইমাম আহমদ, আল-মুসনাদ, হা/১২১৫৩, বায়হাকী, কিতাবুল আসমাওয়া সিফাত, ১৪৬ পৃষ্ঠা, ইবনে কাসীর, আল-বেদায়া ওয়ান নিহায়া, দ্বিতীয় খণ্ড, ১৮৮ পৃ., নাসাঈ, আস-সুনানুল কোবরা, ১০/২১৩ পৃ. হা/১১৩৬৯, মুসনাদে আবি ই‘য়ালা, হা/২৮৯৯, সহীহ মুসলিম, হা/১৯৩
আবদুল মুস্তফা এবং গোলামে নবী নাম রাখা
____________________
বিষয় নং-৬: আবদুল মুস্তফা এবং গোলামে নবী নাম রাখা:
দেওবন্দীরা বলে, আব্দুল মুস্তফা, আবদুন নবী, গোলাম রসুল, গোলাম নবী ইত্যাদি নাম রাখা শিরক। আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতের অনুসারীগণ বলে এ নামগুলো রাখা বৈধ এবং বরকতের কারণ। কেননা আল্লাহ তা‘য়ালা কুরআনে পাকে বলেন-
قُلْ يَا عِبَادِيَ الَّذِينَ أَسْرَفُوا عَلَى أَنْفُسِهِمْ لَا تَقْنَطُوا مِنْ رَحْمَةِ اللَّهِ
-“বলুন হে রাসূল (ﷺ)! হে আমার ওই সমস্ত বান্দারা যারা নিজেদের উপর যুলুম করেছো? আল্লাহর রহমত থেকে নৈরাশ হয়ো না।” (২৭ পারা, তৃতীয় রুকু, সূরা যুমূর, আয়াত নং- ৫৩)
দেওবন্দীদের বুযুর্গ হাজী ইমদাদুল্লাহ মুহাজেরে মক্কী (رحمة الله)
____________________
দেওবন্দীদের বুযুর্গ হাজী ইমদাদুল্লাহ মুহাজেরে মক্কী (رحمة الله) এই আয়াতে কারিমা সামনে রেখে বলেন, কেননা হুযুর (ﷺ)’র হলেন আল্লাহর সাথে মিলানো ওয়ালা, সেজন্য ইমদাদুল্লাহকে ইবাদুর রাসূল বলা যায়। যেমন, আল্লাহ তা‘য়ালা ইরশাদ করেন-
قُلْ يَا عِبَادِيَ الَّذِينَ أَسْرَفُوا عَلَى أَنْفُسِهِمْ
এই আয়াতে মুতাকালিম জমিরটির মারজা বা উদ্দেশ্য হল রাসূলে কারিম (ﷺ)। (ইমদাদুল মুশতাক, ৯৩ পৃষ্ঠা)
মওলবী আশরাফ আলী থানবী
____________________
মওলবী আশরাফ আলী থানবী:
মওলবী আশরাফ আলী থানবীও এর উপর লেখেন যে, করীনাও এই অর্থের চাহিদা রাখে। পূর্বে বলা হয়েছে, তোমরা আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হয়ো না। এর মারজা যদি আল্লাহ হতেন তবে مِنْ رَحْمَتِى তথা আমার রহমত হতে বলা হত, যাতে (عِبَادِي) তথা আমার বান্দার সাথে সাদৃশ্য হয়। (ইমদাদুল মুশতাক, ১৩ পৃষ্ঠা)
আলা হযরত আজীমুল বরকত ইমাম আহমদ রেযা খান ফাজেলে বেরলভী (رحمة الله) বলেন,
يا عبادى كہ كے ہم کو شاه نے ۞ اپنا بنده كرليا پهر تجہ كو كيا
‘‘ইবাদী,তে সম্বোধনে আমাদের নবি
নিজ বান্দা করে নিলে তবে তোমার কী?’’
সায়্যিদুনা উমর ফারুক (رضي الله عنه)৮৯’র আকিদা
____________________
সায়্যিদুনা উমর ফারুক (رضي الله عنه)৮৯’র আকিদা:
ইসলামের দ্বিতীয় খলিফা হযরত উমর ফারুক (رضي الله عنه) ও নিজেকে আবদুল মুস্তফা বলেছেন, যেমন, রেওয়ায়েতে এসেছে-
عَنْ سَعِيدِ بْنِ الْمُسَيِّبِ، قَالَ: لَمَّا وَلِيَ عُمَرُ بْنُ الْخَطَّابِ ؓ، خَطَبَ النَّاسَ عَلَى مِنْبَرِ رَسُولِ اللَّهِ ﷺ ، فَحَمِدَ اللَّهَ، وَأَثْنَى عَلَيْهِ، ثُمَّ قَالَ: أَيُّهَا النَّاسُ: إِنِّي وَاللَّهِ قَدْ عَلِمْتُ أَنَّكُمْ كُنْتُمْ تُؤْنِسُونَ مِنِّي شِدَّةً وَغِلَظًا، وَذَلِكَ أَنِّي كُنْتُ مَعَ رَسُولِ اللَّهِ ﷺ، وَكُنْتُ عَبْدَهُ وَخَادِمَهُ
-‘‘হযরত উমর ( যখন খলিফা নিযুক্ত হলেন তখন তিনি রাসূলে পাক (ﷺ)’র মিম্বরে আরোহণ করে মানুষের সম্মূখে বললেন খোতবা দান করেন। আল্লাহর প্রশংসা করার পর বলেন, হে লোক সকল! আমি জেনেছি যে, আপনারা আমাকে খুব বেশি ভালবাসতেন। এটা এ জন্য যে আমি রাসূল (ﷺ)’র সাথে ছিলাম। আমি তার বান্দা এবং তার খাদেম।’’ ৯০
টিকা━━━━━━━━━━━━━━━━━━━━
৮৯.
❏ হযরত উমর (رضي الله عنه)’র শানে রাসূলে করিম (ﷺ) ইরশাদ করেন,
إِنَّ اللَّهَ جَعَلَ الحَقَّ عَلَى لِسَانِ عُمَرَ وَقَلْبِهِ.
-“হযরত উমর (رضي الله عنه)’র জবান এবং অন্তরে আল্লাহ তা‘য়ালা সত্য প্রকাশ করেছেন।’’
(ইমাম তিরমিযী, আস-সুনান, ৬/৫৮পৃষ্ঠা, হা/৩৬৮২, ইমাম আবু নুয়াইম, হিলইয়াতুল আউলিয়া, প্রথম খণ্ড, ৪২ পৃষ্ঠা, ইমাম মহিবুদ্দীন তবারী, রিয়াদুন নাযারা ফি মানাকিবে আশারা, ২/২৯৮ পৃ., ইবনুল কাইয়্যুম, ইলামুল মুয়াক্কিইন, দ্বিতীয় খণ্ড, ২৫৭ পৃষ্ঠা, মুত্তাকী হিন্দী, কানযুল উম্মাল, কানুযুল উম্মাল, ১১/৫৭৩ পৃ. হা/৩২৭১৪, ইমাম তাবরানী, মু‘জামুল আওসাত, হা/২৮৯, ইমাম হাকেম, আল-মুস্তাদরাক, ৩/৯৩ পৃ. হা/৪৫০১, তিনি বলেন, হাদিসটি সহীহ মুসলিমের শর্তানুসারে সহীহ, যাহাবী তাঁর সাথে একমত পোষণ করেছেন। ইমাম আহমদ, আল-মুসনাদ, ৯/১৪৪ পৃ. হা/৫১৪৫, ইমাম আসেম, আস-সুন্নাহ, ২/৫৮১ পৃ. হা/১২৪৭, মুসনাদে বায্যার, ১৪/১২২ পৃ. হা/৭৬২১, সহীহ ইবনে হিব্বান, হা/৬৮৮৯)
❏ রাসূলে পাক (ﷺ) আরো ইরশাদ করেন,
عُمَرُ مَعِي وَأَنَا مَعَ عُمَرَ، وَالْحَقُّ بَعْدِي مَعَ عُمَرَ حَيْثُ كَانَ
-“উমর আমার সাথে আমি ওমরের সাথে, আমার পর সত্য ওমরের সাথেই থাকবে। তিনি যেখানে থাকুক না কেন?’’
(ইমাম সুয়ূতি, জামেউস সগীর, দ্বিতীয় খণ্ড, ৬৬ পৃষ্ঠা, হা/৮২৪৪, ইবনে হাজার মক্কী, আস-সাওয়ায়িকুল মুহরিকা, ৯৭ পৃ., ইমাম তাবরানী, মু‘জামুল আওসাত, ৩/১০৪ পৃ. হা/২৬২৯, ইমাম আবু নুয়াইম ইস্পাহানী, ফাযায়েলে খুলাফায়ে রাশেদীন, ১/৩৯ পৃ. হা/১১, মুত্তাকী হিন্দী, কানযুল উম্মাল, কানুযুল উম্মাল, ১১/৫৭৭ পৃ. হা/৩২৭৩৫, ইমাম সুয়ূতি, জামেউল আহাদিস, ১৪/৩১৪ পৃ. হা/১৪৩৭৬)
❏ হযরত ইবনে উমর (رضي الله عنه)সহ আরও অনেক সাহাবী বর্ণনা করেন, রাসূল (ﷺ) ইরশাদ করেন-
عَنِ ابْنِ عُمَرَ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: عُمَرُ بْنُ الْخَطَّابِ سِرَاجُ أَهْلِ الْجَنَّةِ
-‘‘হযরত ইবনে উমর (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূল (ﷺ) ইরশাদ করেন, হযরত উমর (رضي الله عنه) জান্নাতবাসীদের প্রদীপ স্বরূপ।’’
(ইমাম আহমদ, ফাযায়েলুস সাহাবা, ১/৪২৮ পৃ. হা/৬৭৭, ইমাম আবু নুয়াইম ইস্পাহানী, ফাযায়েলে খুলাফায়ে রাশেদীন, হা/৫৭, মুত্তাকী হিন্দী, কানযুল উম্মাল, ১১/৫৭৭ পৃ. হা/৩২৭৩৪, ইমাম সুয়ূতি, জামেউল আহাদিস, ১৪/৩১৩ পৃ. হা/১৪৩৭৫)
❏ ইমাম আবু নুয়াইম ইস্পাহানী (رحمة الله) সংকলন করেন-
عَنْ مَالِكٍ، عَنِ ابْنِ شِهَابٍ، حَدَّثَنِي سَعِيدُ بْنُ الْمُسَيِّبِ، حَدَّثَنِي أَبُو هُرَيْرَةَ، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: عُمَرُ بْنُ الْخَطَّابِ سِرَاجُ أَهْلِ الْجَنَّةِ
-‘‘হযরত আবু হুরায়রা (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূল (ﷺ) ইরশাদ করেন, হযরত উমর (رضي الله عنه) জান্নাতবাসীদের প্রদীপ স্বরূপ।’’
(ইমাম আবু নুয়াইম ইস্পাহানী, হিলইয়াতুল আউলিয়া, ৬/৩৩৩ পৃ. এবং ফাযায়েলে খুলাফায়ে রাশেদীন, ৭০ পৃ. হা/৫৬, মুত্তাকী হিন্দী, কানযুল উম্মাল, ১১/৫৭৭ পৃ. হা/৩২৭৩৪, ইমাম সুয়ূতি, জামেউল আহাদিস, ১৪/৩১৩ পৃ. হা/১৪৩৭৫)
(ফক্বীর মুহাম্মদ জিয়াউল্লাহ কাদেরী)
৯০.
ক. ইমাম ইবনে আসাকীর, তারিখে দামেস্ক, ৪৪/২৬৪ পৃ. ক্রমিক. ৯৮০৭
খ. মুত্তাকী হিন্দী, কানযুল উম্মাল, কানুযুল উম্মাল, ৫/৬৮১ পৃ. হা/১৪১৮৪
গ. আল্লামা কামালুদ্দীন দামিরী, হায়াতুল হাইওয়ান, প্রথম খণ্ড, ১৮৭ পৃষ্ঠা
ঘ. আল্লামা শাহ ওয়ালী উল্লাহ, ইযালাতুল খাফা, দ্বিতীয় খণ্ড, ৬৩ পৃষ্ঠা
ঙ. ইমাম ইসমাঈল ইসমাঈল ইস্পহানী, সিরু সালফে সালেহীন, ১/১২৭ পৃ.
চ. ইমাম মহিবুদ্দীন তবারী, রিয়াদুন নাযারা ফি মানাকিবে আশারা, ২/৩১৫ পৃ.
━━━━━━━━━━━o━━━━━━━━━
সম্মানিত পাঠকবৃন্দ! আপনারা দেখলেন যে, হযরত সায়্যিদুনা উমর (رضي الله عنه)’র আকিদা, যাঁর সম্পর্কে রাসূলে কারিম (ﷺ) ইরশাদ করেন-
وفر ذلك الشيطان من ظل عمر
-“ওমরের ছায়ার কারণে শয়তান দূরীভূত হয়।” (কামালুদ্দীন ইবনে আদীম (ওফাত. ৬৬০ হি.), বাগীয়াতুল তলাব ফি তারিখে হালব, ৫/২৩৫৭ পৃ.)
এই মর্যাদাবান উমর (رضي الله عنه) কে দেওবন্দীরাও রাসূল (ﷺ) মিম্বারে বসে জুম’আর দিন স্বরণ করেন। মিম্বারে এবং মেহেরাবের সৌন্দর্য ইসলামের ইজ্জত হযরত উমর (رضي الله عنه) মিম্বারে বসে হাজার হাজার সাহাবা তাবেয়ীনদের সামনে যেখানে হযরত উসমান (رضي الله عنه) এবং হযরত আলী (رضي الله عنه) উপস্থিত ছিলেন। হামদ ও ছানা বর্ণনা করার পর নিজ খিলাফতের আদিষ্ট হয়ে বলেন, আমি রাসূল (ﷺ) বান্দা এবং খাদেম।
সাহাবায়ে কেরাম (رضي الله عنه) গণের মধ্যে কেউ এটা বলে আপত্তি করেন নি যে, হে উমর (رضي الله عنه)! আপনি শিরক করছেন। সায়্যিদুনা উমর (رضي الله عنه) সাহাবী এবং তাবেয়ীগণের উপস্থিতিতে মিম্বারে রাসূলের বসে নিজে নিজেকে আবদুল মুস্তফা এবং আবদুন নবী বলা এবং সাহাবায়ে কেরামগণ (رضي الله عنه) কোন আপত্তি না করাই প্রকৃষ্ট প্রমাণ যে, সমস্ত সাহাবায়ে কেরাম (رضي الله عنه), তাবেয়ীন এজাম (رضي الله عنه) এবং উপস্থিত সকলের আকিদাও এটা ছিল। এরূপ নাম এবং নিসবতকে তাঁরা শিরক মনে করেননি বরং এরূপ আকিদা পোষণকারীকে মুমিনে কামিল মনে করেছেন।
রাসূলে পাক (ﷺ) ইরশাদ করেন-
فَعَلَيْكُمْ بِسُنَّتِي وَسُنَّةِ الْخُلَفَاءِ الرَّاشِدِينَ الْمَهْدِيِّينَ
-“আমার সুন্নাত এবং খোলাফায়ে রাশেদীনদের সুন্নাতকে তোমরা আকড়ে ধর।” ৯১
৯১. খতিব তিবরিযি, মিশকাত শরীফ, ১/৫৮ পৃ. হা/১৬৫, তিরমিযী শরীফ, দ্বিতীয় খণ্ড, ৯২ পৃষ্ঠা, সুনানে ইবনে মাজাহ, ১/২৮ পৃষ্ঠা, হা/৪২, সুনানে আবি দাউদ, ৪/২০০ পৃ. হা/৪৬০৭, সুনানে দারেমী, ১/২২৮ পৃ. হা/৯৬, মুসনদে আহমদ, ২৮/৩৭৩ পৃষ্ঠা, হা/১৭১৪৪, ইমাম হাকেম, আল-মুস্তাদরাক, প্রথম খণ্ড, ১৭৪ পৃষ্ঠা, হা/৩২৯
সুতরাং রাসূলে পাক (ﷺ)’র উক্ত ইরশাদ এবং হযরত উমর (رضي الله عنه), হযরত উসমান (رضي الله عنه), হযরত আলী (رضي الله عنه) এবং অপরাপর সাহাবীদের সামনে নিজে নিজেকে ‘আবদুল মুস্তফা’, ‘আবদুন নবী’ স্বীকার করাকে সামনে রেখেই আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতের হাযারাতগণ আবদুল মুস্তফা এবং আবদুন নবী নাম রাখেন।
আ‘লা হযরত আজিমুল বরকত ইমামে আহলে সুন্নাত শাহ আহমদ রেযা খাঁন (رحمة الله)
____________________
আ‘লা হযরত আজিমুল বরকত ইমামে আহলে সুন্নাত শাহ আহমদ রেযা খাঁন (رحمة الله) যে, সীল ব্যবহার করতে তাতেও লেখা ছিল “আবদুল মুস্তফা মুহাম্মদ আহমদ রেযা খান বেরলভী।”
আল্লামা আবুন্নুর মুহাম্মদ বশীর সাহেব কুটলই এজন্যই বলেন-
مير سے عبد المصطفى احمد رضا تيرا القلم
دشمنان مصطفے كے واسطے شمشير ہے
‘‘মম ‘আবদুল মোস্তাফা আহমদ রেযার লেখনির্ভর
দুশমনে নববীর গ্রীবাদেশে শানিত খঞ্জর।’’
বর্তমান সময়ের আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতের অন্যতম ইমাম আল্লামা আজহারী যার মূল নাম সদরুশ শরীয়া আল্লামা আমজাদ আলী (رحمة الله), তিনি তাঁর নাম আবদুল মুস্তফা রেখেছেন। দেওবন্দীরা এই নামকে শিরক বলে। আহলে সুন্নাত ওয়াল জাম‘আত এই নাম রাখেন। হযরত উমর (رضي الله عنه) নিজে নিজেকে আবদুল মুস্তফা, আবদুন্নবী বলার কারণে দিবালোকের ন্যায় স্পষ্ট হল যে, এ নামকে যারা শিরক বলে তারা দেওবন্দী, আহলে সুন্নাত ওয়াল জাম‘আত নয়।
ইয়া রাসূলাল্লাহ (ﷺ) বলে ডাকা
____________________
বিষয় নং-৭: ইয়া রাসূলাল্লাহ (ﷺ) বলে ডাকা:
দেওবন্দীরা “ইয়া মুহাম্মদ (ﷺ), ইয়া রাসূলাল্লাহ (ﷺ) এবং ইয়া হাবীবুল্লাহ (ﷺ)” বলাকে অস্বীকার করে, এরূপ বলাকে শিরক বলে এবং যারা এরূপ বলে তাদেরকে মুশরিক বলে।
আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতের হাযারাতে ওলামায়ে কেরামগণ ইয়া রাসূলুল্লাহ (ﷺ), ইয়া হাবীবুল্লাহ (ﷺ) শব্দ দ্বারা প্রিয় রাসূল (ﷺ) কে ডাকা এবং স্মরণ করাকে জায়েয বলে, কেননা রাসূলে কারীম (ﷺ) স্বয়ং নিজ সাহাবা (رضي الله عنه) গণকে ইয়া মুহাম্মদ (ﷺ), ইয়া রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলে ডাকার জন্য অনুমতি দিয়েছেন।
রাসূল (ﷺ)’র সাহাবী হযরত উসমান বিন হানিফ (رضي الله عنه)’র আকীদা
____________________
রাসূল (ﷺ)’র সাহাবী হযরত উসমান বিন হানিফ (رضي الله عنه)’র আকীদা:
যেমন, হাদীসের কিতাব সমূহে এসেছে, হযরত উসমান বিন হানীফ (رضي الله عنه) বর্ণনা করেন, এক অন্ধ সাহাবা রাসূলে কারিম (ﷺ)’র দরবারে এসে আরয করলেন, ইয়া রাসূলুল্লাহ (ﷺ)! আল্লাহর দরবারে একটু দোয়া করুন। যাতে আল্লাহ তা‘য়ালা আমাকে দৃষ্টি শক্ত দান করেন। তখন সারকারে দোআলম (ﷺ) ইরশাদ করেন, যাও অযু করে দু’রাকাত নামায পড় এবং নিম্নোক্ত দোয়াটি পড়ে প্রার্থনা কর।
اللهُمَّ إِنِّي أَسْأَلُكَ، وَأَتَوَجَّهُ إِلَيْكَ بِنَبِيِّكَ مُحَمَّدٍ نَبِيِّ الرَّحْمَةِ، يَا مُحَمَّدُ، إِنِّي تَوَجَّهْتُ بِكَ إِلَى رَبِّي فِي حَاجَتِي هَذِهِ، فَتَقْضِي لِي، اللهُمَّ شَفِّعْهُ
-“হে আল্লাহ! আমি আপনার কাছে প্রার্থনা করছি, রহমতের নবী মুহাম্মদ (ﷺ)’র উসিলায়, আপনার নিকট মনোনিবেশ করছি। হে মুহাম্মদ (ﷺ)! আপনার উসিলা নিয়ে নিজ রবের নিকট মনোনিবেশ করছি, আমার এমন হাজতে যা পূরণীয় হে আল্লাহ! হুযুর (ﷺ)’র শাফায়াত আমার জন্য কবুল করুন।’’ ৯২
৯২. ইমাম আহমদ, আল-মুসনাদ, ২৮/৪৭৮ পৃ. হা/১৭২৪০, ইমাম নাসাঈ, আস-সুনানুল কোবরা, ৯/২৪৪ পৃ. হা/১০৪১৯, সুনানে তিরমিযী, ৫ম খণ্ড, ৪৬১ পৃষ্ঠা, হা/৩৫৭৮, খতিব তিবরিযি, মিশকাত, ২/২৬৮ পৃ. হা/২৪৯৫, সহীহ ইবনে খুযাইমা দ্বিতীয় খণ্ড, ২২৫ পৃষ্ঠা, হা/১২১৯, ইমাম হাকেম, আল-মুস্তাদরাক, প্রথম খণ্ড, ৪৫৮ পৃষ্ঠা, হা/১১৮০, সুনানে ইবনে মাযাহ, ২/৩৯৫ পৃষ্ঠা, হা/১৩৮৫, ইমাম তাবরানী, মু‘জামুল কাবীর, ৯/৩০ পৃ. হা/৮৩১০, শায়খ আব্দুল হক মুহাদ্দিসে দেহলভী, জযবুল কুলুব, ২২০ পৃষ্ঠা, ইমাম কাযি আয়্যায, শিফা শরীফ, প্রথম খণ্ড, ২৭৩ পৃষ্ঠা
এই হাদীস শরীফ থেকে বুঝা যায় যে, হুযুর (ﷺ) নিজ উম্মতকে, “ইয়া মুহাম্মদ (ﷺ), ইয়া রাসূলুল্লাহ (ﷺ) দ্বারা আহবান করার অনুমতি প্রদান করেছেন। সায়্যিদুল মুরসালিন (ﷺ), ইয়া মুহাম্মদ (ﷺ), ইয়া রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলার শিক্ষা দিয়েছেন। আর দেওবন্দীরা বলে এরূপ বলা শিরক। সুতরাং আপনারা নিজেই বিচার করুন তারা কী আহলে সুন্নাত নাকি বাগী?
উম্মতে মুহাম্মদী (ﷺ)’র মহান ব্যক্তিত্ব ইমাম তাবরানী (رحمة الله) একটি রেওয়ায়েতে এনেছেন, যা দ্বারা প্রমাণিত হয় সাহাবায়ে কিরাম (রা.) হুযুর (ﷺ)’র ইন্তেকালের পরও এই দোয়া এবং অজীফার উপর আমল করেছেন এবং এর শিক্ষা দিয়েছেন। ৯৩
৯৩. ইমাম তাবরানী, মু‘জামুস সগীর, ১/৩০৬ পৃ. হা/৫০৮, কিতাবুদ দোয়া, ১/৩২০ পৃ. হা/১০৫০, এবং মু‘জামুল কাবীর, ৯/৩০ পৃ. হা/৮৩১০
সায়্যিদুনা উসমান বিন হানিফ (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত, তৃতীয় খলিফা হযরত উসমান গণী (رضي الله عنه)’র সাথে কোন এক ব্যক্তির গুরুত্বপূর্ণ কাজ ছিল, কিন্তু তা পূর্ণ হচ্ছে না। হযরত উসমান (رضي الله عنه) তার দিকে কোন দৃষ্টিপাতই করছেন না।
তখন ওই ব্যক্তি হযরত উসমান বিন হানিফ (رضي الله عنه)’র কাছে গিয়ে ঘটনার পূর্ণ বিবরণ দিলেন। তিনি বললেন, তুমি অযু করে দু’রাকাত নামায পড়, তারপর নিম্নোক্ত দোয়া পড়বে,
اللَّهُمَّ إِنِّي أَسْأَلُكَ وَأَتَوَجَّهُ إِلَيْكَ بِنَبِيِّنَا مُحَمَّدٍ ﷺ نَبِيِّ الرَّحْمَةِ يَا مُحَمَّدُ إِنِّي أَتَوَجَّهُ بِكَ إِلَى رَبِّكَ عَزَّ وَجَلَّ فَيَقْضِي لِي حَاجَتِي
এরপর খলিফার নিকট যাবে। সুতরাং তিনি সবকিছু করে হযরত উসমান (رضي الله عنه)’র কাছে গেলেন। দারোয়ান এসে তাকে সামনে নিয়ে খলিফা হযরত উসমান (رضي الله عنه)’র কাছে নিয়ে গেলেন। হযরত উসমান (رضي الله عنه) তাকে নির্দিষ্ট স্থানে বসিয়ে তার সমস্যার কথা জিজ্ঞাসা করলেন এবং তা পূর্ণ করলেন। এরপর তাকে বললেন ভবিষ্যতে তোমরা কোন সমস্যা হলে আমার কাছে আসবে এবং আমি তা পূর্ণ করব। আবেদনকারী অত্যন্ত খুশি হয়ে হযরত উসমান বিন হানিফ (رضي الله عنه)’র কাছে গিয়ে বললেন,
جَزَاكَ اللهُ خَيْرًا
-‘‘আল্লাহ আপনাকে উত্তম প্রতিদান দান করুন।’’
আপনার কথা মত আমি দোয়া পাঠ করেছি, সেজন্য আমার কাজ সমাধা হয়েছে। অথচ ইতোপূর্বে হযরত উসমান (رضي الله عنه) আমার দিকে দৃষ্টিপাতও করেন নি।’’ ৯৪
৯৪. ইমাম তাবরানী, মু‘জামুস সগীর, ১/৩০৬ পৃ. হা/৫০৮, কিতাবুদ দোয়া, ১/৩২০ পৃ. হা/১০৫০, এবং মু‘জামুল কাবীর, ৯/৩০ পৃ. হা/৮৩১০
প্রিয় পাঠকবৃন্দ! উপর্যুক্ত আলোচনা দ্বারা দিবালোকের ন্যায় প্রতিভাত হল যে, সাহাবায়ে কিরাম (رضي الله عنه) এবং তাবেয়ীনগণ (رضي الله عنه) রাসূলে কারিম (ﷺ)’র ইন্তেকালের পরেও “ইয়া মুহাম্মদ, ইয়া রাসূলুল্লাহ (ﷺ)” বলাকে বৈধ বলে স্বীকার করেন। বরং মুশকিল এবং পেরেশানারী সময় “ইয়া মুহাম্মদ, ইয়া রাসূলুল্লাহ (ﷺ)” বলে ডাকতেন। আর এরূপ ডাকার কারণে তাদের সমস্যা দূরীভূত হত। কিন্তু বর্তমানে দেওবন্দীরা যারা ইয়া মুহাম্মদ (ﷺ), ইয়া রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলে তাদেরকে মুশরিক বলে আর নিজেদের আহলে সুন্নাত ওয়াল জাম‘আত বলে দাবী করে। লাহাওলা ওলাকুওয়্যাতা ইল্লা বিল্লাহ।
সাহাবায়ে কেরাম এবং তাবেয়ীগণের এই কার্যকরী অজীফাকে মুহাদ্দেসীনে কেরামগণ তাদের নির্ভরযোগ্য কিতাবে এনেছেন।
মুহাদ্দিস ইবনে জাযরী (رحمة الله)-এর বাণী
____________________
মুহাদ্দিস ইবনে জাযরী (رحمة الله)-এর বাণী:
এই উম্মতে মুহাম্মদীর প্রসিদ্ধ মুহাদ্দিস ইবনে জাযরী (رحمة الله) তার প্রসিদ্ধ কিতাব (৯৫) হিসনে হাসীনেও এই অজিফাকে মুশকিল, পেরেশানী এবং হাজত পূর্ণ করার জন্য পাঠ করার নিয়মে লিপিবদ্ধ করেছেন।
মুহাদ্দিস ইবনে জাযরী বর্ণনা করেন যে,
مَنْ كَانَتْ لَه ضُرُوْرَة فَلْيَتَوَضَّاءُ فَيَحْسُنُ وَضُوْءه وَيُصَلِّى رَكَعَتَيْنِ
-‘‘কেউ কোনো সমস্যায় পতিত হয় সে যেন উত্তমরূপে অযু করে দু’রাকাত নামায পড়ে উপর্যুক্ত দোয়া-
اللّٰهُمَّ إِنِّي أَسْأَلُكَ وَأَتَوَجَّهُ إِلَيْكَ بِنَبِيِّنَا مُحَمَّدٍ ﷺ نَبِيِّ الرَّحْمَةِ، يَا مُحَمَّدُ إِنِّي أَتَوَجَّهُ بِكَ إِلَى رَبِّي فَتَقْضِي لِي حَاجَتِي
পাঠ করে।’’ (হিসনে হাসীন)
৯৫. হযরত মুহাদ্দিস ইবনে জাযরী (رحمة الله) স্বীয় কিতাবে হিসনে হাসীনের ভূমিকায় লেখেন- “এই কিতাবের সংকলিত সবগুলো হাদিস সহীহ, দুর্বল হাদিস এতে স্থান পায়নি।”
সায়্যিদুনা আবদুল্লাহ বিন উমর (رضي الله عنه)’র আক্বিদা
____________________
সায়্যিদুনা আবদুল্লাহ বিন উমর (رضي الله عنه)’র আকিদা:
ইমামুল মুহাদ্দেসীন সায়্যিদুনা ইমাম বুখারী (رحمة الله)’র তার লিখিত ‘আদাবুল মুফরাদ’ এ হযরত ইবনে উমর (رضي الله عنه)’র আকিদা এভাবে বর্ণনা করেন যে,
خَدِرَتْ رِجْلُ ابْنِ عُمَرَ، فَقَالَ لَهُ رَجُلٌ: اذْكُرْ أَحَبَّ النَّاسِ إِلَيْكَ، فَقَالَ: يَا مُحَمَّدُ
-‘‘একদা হযরত আবদুল্লাহ ইবনে উমর (رضي الله عنه)’র পা অবশ হয়ে পড়ে, তখন উপস্থিত এক ব্যক্তি তাকে বললেন, আপনার সর্বাধিক প্রিয় ব্যক্তিকে স্মরণ করুন, তখন তিনি বললেন, ইয়া মুহাম্মদ (ﷺ)।’’ ৯৬
৯৬. ইমাম বুখারী, আদাবুল মুফরাদ, ৩৩৫ পৃ. হা/৯৬৪
শিফা শরীফের (৯৭) বর্ণনা
____________________
শিফা শরীফের (৯৭) বর্ণনা:
আল্লামা কাজী আয়্যায (رحمة الله) স্বীয় কিতাব শিফা শরীফে এভাবে বর্ণনা করেন-
وَرُوِيَ: أَنَّ عَبْدَ اللَّهِ بْنَ عُمَرَ خَدِرَتْ رِجْلُهُ.. فَقِيلَ لَهُ: اذْكُرْ أَحَبَّ النَّاسِ إِلَيْكَ يَزُلْ عَنْكَ.. فَصَاحَ يَا مُحَمَّدَاهْ فَانْتَشَرَتْ
-‘‘বর্ণিত আছে, হযরত আবদুল্লাহ ইবনে উমর (رضي الله عنه)’র পা অবশ হয়ে পড়লে তাকে বলা হল আপনার সর্বাধিক প্রিয়জনকে স্মরণ করুন। তখন তিনি ইয়া মুহাম্মদ (ﷺ)! বলে আহবান করেন, ফলে তাঁর পা খুলে যায়।’’ ৯৮
৯৭. ওহাবী গায়রে মুকালিদ মৌলবী ইব্রাহীম শিয়ালকুটী শেফা শরীফকে অতুলনীয় কিতাব হিসেবে আখ্যায়িত করেন। (সিরাজুম মুনীর, ৫০ পৃষ্ঠা, আহলে হাদীস অমৃতসরী)
৯৮. ইমাম কাযি আয়্যায, কিতাবুশ শিফা হুকুকুল মুস্তফা, দ্বিতীয় খণ্ড, ৫৩ পৃষ্ঠা, মোল্লা আলী ক্বারী, শরহে শেফা, দ্বিতীয় খণ্ড, ৪৩ পৃষ্ঠা, শিহাবুদ্দীন খিফ্ফাযী, নাসিমুর রিয়াদ্ব, তৃতীয় খণ্ড, ৩৯৭ পৃষ্ঠা
ইমাম নববী এবং ইবনে সুন্নী (رحمة الله)-এর বর্ণনা
____________________
ইমাম নববী এবং ইবনে সুন্নী (رحمة الله)-এর বর্ণনা:
উম্মতে মুহাম্মদীর জলিলুল ক্বদর মুহাদ্দিস আল্লামা ইবনে সুন্নী (رحمة الله) তাঁর স্বীয় কিতাব “আমালুল ইয়াওম ওয়াল লাইলাহ” এর মধ্যে কয়েক সূত্রে বর্ণনা করেছেন মুসলিম শরীফের ব্যাখ্যাকার ইমাম নববী (رحمة الله) তাঁর “কিতাবুল আযকার” ১৩৫ পৃষ্ঠায় উপরের হাদিসটি বর্ণনা করেন।
শায়খুল মুহাদ্দীসিন আল্লামা আবদুল হক মুহাদ্দেস দেহলভীর (رحمة الله) বর্ণনা: ৯৯
শায়খুল মুহাদ্দীসিন আল্লামা আবদুল হক মুহাদ্দেস দেহলভী (رحمة الله)ও তাঁর “মাদারেজুন নবুওয়াত” এ উপরোক্ত হাদিসটি বর্ণনা করেন।
টিকা━━━━━━━━━━━━━━━━━━━━
৯৯. ওহাবীদের গর্ব ইবরাহীম শিয়াল কুটি শায়খ আবদুল হক মুহাদ্দিসে দেহলভী (رحمة الله) সম্পর্কে বলেছেন, তিনি ইলমে হাদিসের খাদেম, তিনি জাহেরী বাতেনী ইলমের অধিকারী ছিলেন। (তারীখে আহলে হাদিস, ৩৯৮ পৃ.)
কাযি শাওকানী ও ওয়াহেদুজ্জামানের বর্ণনা
____________________
কাযি শাওকানী ও ওয়াহেদুজ্জামানের বর্ণনা:
গায়রে মুকাল্লীদ ওহাবীদের গুরু কাজী শাওকানী এবং ওয়াহিদুজ্জামানও তাদের কিতাব “তুহফাতুয্ যাকেরীন এর ২৩৯ পৃষ্ঠায় (যা মিশর হতে প্রকাশিত) এবং হিদায়াতুল মাহদী গ্রন্থের প্রথম খন্ডের ২৩ পৃষ্ঠায় এ রেওয়ায়েত বর্ণনা করে বলেন, উক্ত বর্ণনা সহীহ।
কিন্তু এসব মৌলবীরা অন্তরে হুযুর (ﷺ)’র এতো বেশি হিংসা রাখে যে, তাদের চেয়ে বড়দের কিতাবে এই বর্ণনা থাকা সত্ত্বেও তার প্রতি গুরুত্বারোপ করে না।
হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (رضي الله عنه)' র আক্বিদা
____________________
হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (رضي الله عنه)’র আকিদা:
বদ আক্বীদাধারীদের মুজাদ্দিদ মৌলবী নবাব সিদ্দিক হাসান খান ভূপালী এভাবে বর্ণনা করেছেন যে, শারজী বলেন, হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (رضي الله عنه)’র পা অবশ হলে, তিনি ‘ইয়া মুহাম্মদ (ﷺ)!’ বলেন, তখন তাঁর পা খুলে যায়।” (আদ-দায়ী ওয়াদ্দাওয়া, ৩৬ পৃষ্ঠা)
সাহাবায়ে কিরামগণের (رضي الله عنه) নিয়ম নীতি
____________________
সাহাবায়ে কিরামগণের (رضي الله عنه) নিয়ম নীতি:
সাহাবায়ে কেরামগণ (رضي الله عنه) অধিকাংশ যুদ্ধের মধ্যে “ইয়া রাসূলুল্লাহ (ﷺ), ইয়া নবীয়াল্লাহ (ﷺ), ইয়া মুহাম্মদ (ﷺ) বলে আহ্বান করতেন। যেমন, তারীখে ইবনে জারীরে আছে,
ان الصحابة بَعْدَ مَوْتِ رَسُولِ اللَّهِ ﷺ كان شعارهم فِي الْحُرُوبِ يَا مُحَمَّدُ
-“রাসূলে কারিম (ﷺ)’র ইন্তেকালের পর সাহাবায়ে কেরাম (رضي الله عنه) গণের অভ্যাস ছিল যুদ্ধের মধ্যে ইয়া মুহাম্মদ (ﷺ) বলা। (তারীখে ইবনে জরীর)
আবু উবাইদাহ বিন র্জারাহ (رضي الله عنه)’র মুজাহিদ দল ইয়া মুহাম্মদ (ﷺ) বলে ডাকা
____________________
আবু উবাইদাহ বিন র্জারাহ (رضي الله عنه)’র মুজাহিদ দল ইয়া মুহাম্মদ (ﷺ) বলে ডাকা:
তারিখে ফুতুহে শাম এ এসেছে যে, কনসিরে যুদ্ধ করার জন্য সায়্যিদুনা হযরত আবু উবাইদাহ বিন তারকাহ (رضي الله عنه), হযরত কাব বিন হামযা (رضي الله عنه) কে ১০০০ সৈন্য দিয়ে প্রেরণ করার ইচ্ছা করেন। হযরত কাব বিন হামযাহ (رضي الله عنه)’র যুদ্ধ হয়েছে ইউকানার সাথে। ইউকানার সৈন্য সংখ্যা ছিল ৫০০০। যুদ্ধ শুরু হলে ইউকানার ৫০০০ সৈন্য হযরত কাব বিন হামযার (رضي الله عنه) সৈন্যের উপর ঝাপিয়ে পড়ে। তখন হযরত কাব বিন হামযাহ (رضي الله عنه),
يَا مُحَمَّدُ يَا مُحَمَّدُ يَا نَصْرَ اللهِ اَنْزِلْ
ইয়া মুহাম্মদ (ﷺ), ইয়া মুহাম্মদ (ﷺ), ইয়া নাসারাল্লাহ (ﷺ) বলে আহবান করেন।’’ (ওয়াকেদী, ফুতহুশ শাম, ২৯৮ পৃষ্ঠা)
ইমাম সুয়ূতি ➡১০০ ও ইবনে জাওযী ➡১০১ (رحمة الله) বর্ণনা:
টিকা━━━━━━━━━━━━━━━━━━━━
১০০.
আল্লামা আবদুল ওহ্হাব শা‘রানী (رحمة الله) বলেন, আল্লামা জালালুদ্দীন সূয়ূতি (رحمة الله) স্বপ্নাবস্থায় হুযুর (ﷺ) কে ৭৫ বার দিদার পেয়েছেন। (মিযানুল কুবরা, ৪৪ পৃষ্ঠা, মিশর হতে প্রকাশিত) দেওবন্দীদের মৌলবী আশরাফ আলী থানবী আল্লামা ইমাম সূয়ুতী (رحمة الله) কে বড় বড় আলেমদের কাতারে স্থান দেন। (তরীকায়ে মৌলুদ, ১১ পৃষ্ঠা)
টিকা━━━━━━━━━━━━━━━━━━━━
১০১.
❏ দেওবন্দী এবং গায়রে মুকালিদদের শায়খুল ইসলাম এবং মুজাদ্দেদ ইবনে তাইমিয়া আল্লামা ইবনে জাওজী (رحمة الله) সম্পর্কে মন্তব্য করতে গিয়ে বলেন, ইমাম ইবনে জাওযী (رحمة الله) উঁচু স্তরের ফহীহ এবং অনেক বড় গ্রন্থাকার ছিলেন। অনেক বিষয়ে তাঁর রচনা বিদ্যমান। আমার গণনানুসারে এগুলোর সংখ্যা অনেক। বিশেষত হাদীস শাস্ত্রেই তাঁর রচনা দেখে অনুমান করা যায় তাঁর গ্রন্থের সংখ্যা কত? তাঁর সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ রচনা হল যাতে তিনি পূর্ববর্তীদের জীবনী লেখেছেন।
তিনি প্রসিদ্ধ ছিলেন, লেখনিতে তিনি ছিলেন সিদ্ধ হস্ত। প্রতিটি বিষয়ের লেখদের থেকেই তাঁর রচনা ছিল গ্রহণযোগ্য। (আল ইতিসাম, লাহোর, ৬ষ্ট পৃষ্ঠা, ২৯ ফেব্রুয়ারী, ১৯৫২ ইংরেজী)
❏ হাফেজ ইবনে যাহাবী (رحمة الله) তাঁর ব্যাপারে মন্তব্য করতে গিয়ে বলেন, বিভিন্ন বিষয়ে তাঁর অনেক রচনা ছিল। যেমন, তাফসীর, ফিকহ, হাদীস, ওয়াজ, দাকায়েক, তারীখ ইত্যাদি। ইলমে হাদীসের জ্ঞান এবং ছহিহ ও দুবল হাদীসের পন্ডিতদের মধ্যে তিনিই ছিলেন সর্বশেষ। তিনি অনেক হাদীস বর্ণনা করেন। প্রায় ৪০ বছর তিনি জ্ঞানার্জন করেন। (তবকাতে ইবনে বজর)
❏ আল্লামা শেখ সাদী (رحمة الله) ছিলেন তাঁর শাগরীদ। (বুস্তার হাশিয়া, ১৮০ পৃষ্ঠা) আল্লামা যাহাবী (رحمة الله) তাযকিরাতুল হুফ্ফায” চতুর্থ খণ্ডে বলেন, “তিনি (ইবনে জাওযী (رحمة الله) ছিলে দৃষ্টিবানদের অন্তর্ভূক্ত। হাদিস শাস্ত্রে তিনি হুজ্জাতের স্তরে ছিলেন। আমার জানা মতে তার চাইতে কেউ এত অধিক গ্রন্থ রচনা করেননি।” (ইমাম যাহাবী, তাযকিরাতুল হুফ্ফায, ৪/৯২ পৃ. ক্রমিক. ১০৯৮)
উলূমুল কুরআন এবং তাফসীরে শাস্ত্রে তিনি ছিলেনন অনেক উঁচু পর্যায়ের, হাদিস শাস্ত্রে ছিলেন বড় মর্যাদাবান, ফিকহের ক্ষেত্রে তিনি ছিলেন অতুলনীয়। তাঁর রচনার পরিধি এতই ব্যাপক ছিল যে, তাঁর চেয়ে এতো বেশি গ্রন্থ কেউ রচনা করেছেন তা আমার জানা নেই।
━━━━━━━━━━━o━━━━━━━━━
মুহাদ্দিস আল্লামা জালালুদ্দীন সুয়ূতি (رحمة الله) এবং ইবনে জাওযী (رحمة الله) তিনজন মুজাহিদের একটি ঘটনা নিজেদের কিতাবে লিপিবদ্ধ করেছেন।
মুহাদ্দীস আল্লামা ইবনে জারীর (رحمة الله) তার “উয়ুনুল হেকায়ত” গ্রন্থে আবু আলী সারীর (رحمة الله) থেকে বর্ণনা করেন, শাম দেশে তিন ভাই ছিলেন সে যুগের বড় বীর বাহাদুর। সর্বদা কাফেরদের সাথে তারা যুদ্ধ করতেন। এক পর্যায়ে রোমের বাদশা তাদের গ্রেফতার করে প্রস্তাব দেয় তোমরা যদি খ্রিষ্টান ধর্ম গ্রহণ কর তবে তোমাদেরকে এই রাজ্য দান করব এবং আমাদের কন্যাদের সাথে বিবাহ দেব।
فَأَبَوا وَقَالُوا يَا محمداه
তারা এই প্রস্তাব নাকচ করে দিয়ে বললেন, ইয়া মুহাম্মদাহ (ﷺ)।’’ ➡১০২
১০২. ইমাম সুয়ূতি, শরহে সুদুর, ২১২ পৃষ্ঠা
মদীনা শরীফের জনগণ কর্তৃক ইয়া মুহাম্মদ (ﷺ) ইয়া রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলে শ্লোগান দেয়া
____________________
মদীনা শরীফের জনগণ কর্তৃক ইয়া মুহাম্মদ (ﷺ) ইয়া রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলে শ্লোগান দেয়া:
ইমামুল মুহাদ্দেসীন ইমাম মুসলিম (رحمة الله) সহীহ মুসলিম শরীফের “বাবুল হিজরত”র মধ্যে হযরত বারা (رضي الله عنه) হতে বর্ণনা করেন যে, হুযুর পূর নূর (ﷺ) যখন হিজরত করে মদীনা শরীফে তাশরীফ আনেন-
فَصَعِدَ الرِّجَالُ وَالنِّسَاءُ فَوْقَ الْبُيُوتِ، وَتَفَرَّقَ الْغِلْمَانُ وَالْخَدَمُ فِي الطُّرُقِ، يُنَادُونَ: يَا مُحَمَّدُ يَا رَسُولَ اللهِ يَا مُحَمَّدُ يَا رَسُولَ اللهِ
-‘‘তখন নর-নারী সকলেই ছাদের উপর আরোহণ করেন এবং শিশু এবং খাদেমগণ রাস্তার অলি গলিতে ছড়িয়ে বলতে লাগলেন। ইয়া মুহাম্মদ (ﷺ), ইয়া রাসূলাল্লাহ (ﷺ), ইয়া মুহাম্মদ (ﷺ), ইয়া রাসূলাল্লাহ (ﷺ)।’’ ১০৩
১০৩. সহীহ মুসলিম শরীফ, চতুর্থ খণ্ড, ২৩১০ পৃষ্ঠা, হা/২০০৯
মুহাদ্দিস সাখাবী (رحمة الله) ➡১০৪-এর বর্ণনা:
মুহাদ্দিস সাখাবী (رحمة الله) তাঁর অনাবদ্য গ্রন্থ ‘আল-কাউলুল বাদী’তে ➡১০৫ একটি ঘটনা বর্ণনা করেন এভাবে যে, হযরত আবু বকর মুহাম্মদ উমর (رحمة الله) বলেন, একদা আমি হযরত আবু বকর বিন মুজাহিদ (رحمة الله)’র নিকট বসা ছিলাম। এমতাবস্থায় হযরত শিবলী (رحمة الله) তাঁর কাছে আসলে তিনি দাঁড়িয়ে তাঁর সাথে কুলাকুলি করেন এবং কপালে চুমু দেন।
আমি জিজ্ঞাসা করলাম, হে আমার সর্দার! আপনি হযরত শিবলী (رحمة الله)’র সাথে এ আচরণ কেনো করলেন? অথচ আপনি এবং বাগদাদের সকলেই জানেন যে উনি একজন মজবুব।
উত্তরে তিনি (আবু বকর বিন মুজাহিদ) বললেন, রাসূলে কারিম (ﷺ)’র তাঁর সাথে যেরূপ করতে দেখেছি আমিও তাই করেছি। একদা আমি স্বপ্নে দেখলাম হযরত শিবলী (رحمة الله) আসলেন এবং রাসূল (ﷺ) দাঁড়িয়ে তাঁর সাথে কুলাকুলি করে তাঁর কপালে চুমু খেলেন। তখন আমি জিজ্ঞাসা করলাম, হে রাসূল (ﷺ)! আপনি শিবলী (رحمة الله)’র সাথে এমনটি কেনো করলেন? রাসূল (ﷺ) ইরশাদ করলেন, তিনি প্রতি নামাযের পর নিন্মোক্ত আয়াত-
لَقَدْ جَاءَكُمْ رَسُولٌ مِنْ أَنْفُسِكُمْ عَزِيزٌ عَلَيْهِ مَا عَنِتُّمْ حَرِيصٌ عَلَيْكُمْ بِالْمُؤْمِنِينَ رَءُوفٌ رَحِيمٌ
এবং আমার উপর দরুদ শরীফ পাঠ করেন। অপর বর্ণনায় আছে, তিনি প্রত্যেক ফরয নামাযের পর উপরোক্ত আয়াত পাঠ করেন এবং তিন বার নিম্নোক্ত দোয়া-
صَلَّى اَللهُ عَلَيْكَ يَا مُحَمَّد ﷺ
পড়েন। হযরত আবু বকর বিন মুহাম্মদ (رحمة الله) বলেন, এরপর হযরত শিবলী (رحمة الله) কে এ সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলাম, তিনি আমাকে অনুরূপ উত্তর দেন। (ইমাম সাখাভী, আল কাউলুল বাদী, ১৭৩ পৃষ্ঠা)
টিকা━━━━━━━━━━━━━━━━━━━━
১০৪. মুহাদ্দিস আল্লামা সাখাবী (رحمة الله) ইমামুল মুহাদ্দিসীন আল্লামা ইবনে হাজার আসকালানী (رحمة الله)’র প্রিয় ছাত্র এবং আল্লামা জালালুদ্দিন সুয়ূতি (رحمة الله)’র উস্তাদ ছিলেন। আহলে হাদিসদের ইমাম শাওকানী ইমাম সাখাবী (رحمة الله) বড় ইমাম হিসেবে মান্য করেন। জামেউল আজহারের শিক্ষক আবদুল ওহ্হাব আবদুল লতিফ ইমাম সাখাবী (رحمة الله)’র বড় বড় লকব লেখেন। (ওয়ারেছে উলূমুল আম্বিয়া, আল ফারদুল ফরিদ, মুকাদ্দামায়ে আল-মাকাসিদুল হাসানা লিস সাখাভী)
টিকা━━━━━━━━━━━━━━━━━━━━
১০৫. ‘আল-কাউলুল বদী’ ইমাম সাখাবী (رحمة الله)’র এমন কিতাব যার অধিকাংশ রেফারেন্স টেনেছে দেওবন্দী মৌলবী যাকারিয়া সাহানপুরী তার ‘ফাযায়েলে দরুদ’ শরীফ গ্রন্থে। (ফকীর মুহাম্মদ জিয়াউল্লাহ কাদেরী)
━━━━━━━━━━━o━━━━━━━━━
ইবনুল কাইয়্যুম ও কাযি সুলাইমান মানসুরপুরী এর বর্ণনা: (➡১০৬ & ১০৭)
____________________
ইবনুল কাইয়্যুম ও কাযি সুলাইমান মানসুরপুরী এর বর্ণনা: (➡১০৬ & ১০৭)
দেওবন্দী এবং ওহাবীদের উলেখযোগ্য দুজন ব্যক্তিত্ব ইবনে কাইয়্যুম এবং কাজী সুলাইমান মানসুরপুরী তাদের স্ব স্ব কিতাবে ‘জালালুল আফহাম’ এর ২৫৮ পৃষ্ঠায় এবং ‘আসসালাতু ওয়াস সালাম’ (উর্দু) গ্রন্থের ২৫৮-২৫৯ পৃষ্ঠায় এই ঘটনা বর্ণনা করেন।
প্রিয় পাঠক! রাসূলে কারিম (ﷺ) কে যদি (يَا) শব্দ দ্বারা ডাকা শিরক হতো তবে হুযুর পূর নূর (ﷺ)’র কখনো তাঁর সাহাবীদেরকে এমন দোয়া শিক্ষা দিতেন না যার মধ্যে (يا محمد এবং يَا رَسُولَ اللهِ ) রয়েছে।
ইয়া মুহাম্মদ (ﷺ), ইয়া রাসূলাল্লাহ (ﷺ) যদি শিরক হতো তবে সায়্যিদুনা আবদুল্লাহ ইবনে উমর (رضي الله عنه), সায়্যিদুনা আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (رضي الله عنه) এবং সায়্যিদুনা উসমান বিন হানিফ (رضي الله عنه) এর মত সাহাবা (رضي الله عنه) গণ কখনো যুদ্ধের ময়দানে এবং যুদ্ধের সময় ইয়া মুহাম্মদ (ﷺ) এবং ইয়া রাসূলাল্লাহ (ﷺ) বলতেনও না, কাউকে বলার জন্য শিক্ষাও দিতেন না।
সাহাবায়ে কিরাম (رضي الله عنه) যখন ‘ইয়া মুহাম্মদ (ﷺ) এবং ইয়া রাসূলাল্লাহ(ﷺ) বলে ডাকতেন, তা যাঁরা শুনতেন তাঁরাও ছিলেন সাহাবায়ে কিরাম (رضي الله عنه)।
টিকা━━━━━━━━━━━━━━━━━━━━
১০৬. গায়রে মুকাল্লিদ ওহাবীদের অন্যতম মৌলবী মুহাম্মদ সাহেব দেহলভী ইবনে কাইয়ুমকে মুজাদ্দেদে ওয়াকত বলেন। (আখবারে মুহাম্মদী, ১৫ পৃষ্ঠা, ৫ মে, ১৯৪২ ইংরেজী)
টিকা━━━━━━━━━━━━━━━━━━━━
১০৭.
❏ ওহাবীদের অন্যতম মুফাস্সির মুহাম্মদ দেহলভী কাজী সুলাইমান মানসুরপুরীর ব্যাপারে লেখেন যে, তার লেখা মনপুত, হৃদয়গ্রাহী এবং দলির হিসেবে পরিগণিত হত। (আখবারে মুহাম্মদী, ১৫ পৃষ্ঠা, ১৫ জুলাই, ১৯৪২ ইংরেজী)
❏ মৌলবী ছানাউল্লাহ আমৃতসরী কাজী সুলাইমান মানসুরপুরীকে লেখকের উপযোগী বলে মন্তব্য করেন। (আহলে হাদীস, অমৃতসরী, দ্বিতীয় পৃষ্ঠা, নভেম্বর ১৯৪৩ ইংরেজী)
মৌলবী দাউদ গাজী বলেন, কাজী সুলাইমান মনসুর পুরীর জ্ঞান গরিমার সমপর্যায়ের কেউ নেই। (আল ইতিসাম, লাহোর, তৃতীয় পৃষ্ঠা, জুলাই, ১৯৫০ ইংরেজী)
━━━━━━━━━━━o━━━━━━━━━
হাদিস শরীফগুলো দ্বারা প্রমাণিত হয়, সাহাবায়ে কিরাম (رضي الله عنه) গণ রাসূল (ﷺ) জীবদ্দশায় এবং পর্দা করার পরেও এরূপ ডেকেছেন। কিন্তু একজন সাহাবাও তা হতে নিষেধ করেন নি। গোটা পৃথিবীর কোন দেওবন্দীই এমন একটিও হাদিস দেখাতে পারবে না যে, কোনো সাহাবায়ে কিরাম (رضي الله عنه) ইয়া মুহাম্মদ (ﷺ) এবং ইয়া রাসূলাল্লাহ (ﷺ) বলা থেকে নিষেধ করেছেন।
সুতরাং উপযুক্ত নির্ভরযোগ্য মুহাদ্দেসীনদের অতুলনীয় কিতাব থেকে প্রমাণিত হয় যে, ইমামুল আম্বিয়া, সায়্যিদুল মুরসালিন (ﷺ) এবং তাঁর সাহাবায়ে কিরাম (رضي الله عنه) গণের আকিদা ছিল ‘ইয়া মুহাম্মদ (ﷺ) এবং ইয়া রাসূলাল্লাহ (ﷺ) বলে ডাকা জায়েয।
সুতরাং যেসব দেওবন্দী এরূপ ডাকাকে শিরক বলে তারা আহলে সুন্নাত নয়, বরং তারাই আহলে সুন্নাত ওয়াল জাম‘আত যারা ‘ইয়া মুহাম্মদ (ﷺ) এবং ‘ইয়া রাসূলাল্লাহ (ﷺ) বলে এবং এরূপ বলাকে বৈধ মনে করে।
দূর এবং নিকট হতে শুনা
____________________
বিষয় নং-০৮: দূর এবং নিকট হতে শুনা:
দেওবন্দীদের আকিদা হল যে, হুযুর পুর নূর (ﷺ) কেবল মদীনা শরীফেই আমাদের আওয়াজ শুনেন। দূর দূরান্ত থেকে শুনেন না। এমন আকিদা রাখা শিরক।
আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতের আকিদা হল সরকারে কানেয়াত (ﷺ) মদিনা মুনাওয়ারা থেকে যেভাবে উম্মতের প্রার্থনা শুনেন, অনুরূপভাবে দূর দূরান্ত থেকেও শুনতে পান।
আ‘লা হযরত (رحمة الله) বলেন-
دورد نزد يک کى سننے والے وه كان
كان لعل كرامت پر لاكهوں سلام
‘‘দূর-সামীপ্য শ্রাব্য নবুওয়তি কান
কারামাতপূর্ণ ভান্ডারে লাখো সালাম।’’
শাহেনশাহে আরব ওয়া আজম (ﷺ)’র মর্যাদাবান সাহাবায়ে কেরাম (رضي الله عنه) গণ যেমনিভাবে মদিনা শরীফ হতে ডাকেন, অনুরূপভাবে দূরদূরান্ত এলাকা, এমন কী যুদ্ধের ময়দান হতেও আহ্বান সূচক হরফ (يا) দ্বারা ডাকেন। যেমন হযরত আবদুল্লাহ ইবনে উমর (رضي الله عنه)’র ইয়া মুহাম্মদ (ﷺ) বলে ডাকা, অনুরূপভাবে যুদ্ধের ময়দান থেকে ইয়া মুহাম্মদ (ﷺ) বলে ডাকাও সাহাবায়ে কিরামগণ (رضي الله عنه) অভ্যাস ছিল।
তেমনিভাবে হয়রত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (رضي الله عنه) এবং হয়রত উসমান বিন হানিফ (رضي الله عنه)ও ইয়া মুহাম্মদ (ﷺ) বলে প্রার্থনা করতেন। এসব বর্ণনা হতে প্রতীয়মান হয় যে, সাহাবায়ে কিরাম (رضي الله عنه) গণ দূর-কাছ থেকে রাসূল (ﷺ) কে ডেকে প্রার্থনা করতেন এর ফলে তাঁদের হাজতপূর্ণ হত। সাহাবায়ে কেরামগণ (رضي الله عنه) দূরদূরান্ত থেকে আহ্বান করা দ্বারা বুঝা যায়, তাঁদের আকিদা ছিল যে, রাসূল (ﷺ) দূর-কাছ থেকে সমানভাবে শুনতেন।
শাফিয়ে মহাশর, ছাকিয়ে কাউসার (ﷺ) ইরশাদ করেন,
إِنِّي أَرَى مَا لَا تَرَوْنَ، وَأَسْمَعُ مَا لَا تَسْمَعُونَ
-“আমি তাই শুনি যা তোমরা শুনোনা।’’ ১০৮
টিকা━━━━━━━━━━━━━━━━━━━━
১০৮. সুনানে ইবনে মাযাহ, ২/১৪০২ পৃ. হা/৪১৯০, তিবরিযি, মিশকাত শরীফ, ৩/১৪৬৯ পৃ. হা/৫৩৪৭, ইমাম তিরমিযি, আস-সুনান, ৪/১৩৪ পৃ. হা/২৩১২, বায়হাকী, আস-সুনানুল কোবরা, ৭/৮৩ পৃ. হা/১৩৩৩, ইমাম আহমদ, আল-মুসনাদ, ৩৫/৪০৫ পৃ. হা/২১৫২৬,
ইমাম হাকেম, আল-মুস্তাদরাক, ২/৫৫৪ পৃ. হা/৩৮৮৩, তিনি বলেন-
هَذَا حَدِيثٌ صَحِيحُ الْإِسْنَادِ وَلَمْ يُخَرِّجَاهُ -
‘‘এ হাদিসটির সনদ সহীহ, যদিওবা তাঁরা সংকলন করেননি।
━━━━━━━━━━━o━━━━━━━━━
দালায়েলুল খায়রাতের বরাত
____________________
দালায়েলুল খায়রাতের বরাত:
দেওবন্দীদের আকাবের যেমন, দেওবন্দী মাদ্রাসার প্রতিষ্ঠাতা মৌলবী কাসেম নানুতবী, মৌলবী রশীদ আহমদ গাঙ্গুহী, মৌলবী আশরাফ আলী থানবী, মওলবী খলীল আহমদ আম্বিটুবী প্রমুখগং তাদের স্বীয় পীর মুর্শিদ হাজী ইমদাদুল্লাহ মুহাজেরে মক্কী (رحمة الله) থেকে দালায়েলুল খায়রাত পাঠ করার সনদের অনুমতি প্রার্থনা করেন। যেমন: দেওবন্দীদের মৌলবী হোসাইন আহমদ সাহারানপুরী তার “আল মুহান্নাদ” নামক গ্রন্থে লেখেন-
হাজী ইমদাদুল্লাহ মুহাজেরে মক্কী (رحمة الله) দেওবন্দীদের আকাবের কাশেম নানুতবী, রশীদ আহমদ গাঙ্গুহী, আশরাফ আলী থানবী প্রমুখদের দালায়েলুল খায়রাত শরীফ পাঠ করার অনুমতি দিতেন। (আল-মুহান্নাদ, ১৩ পৃ. দেওবন্দ হতে প্রকাশিত)
শাহ ওয়ালী উল্লাহ মুহাদ্দেস দেহলবী (رحمة الله) দালায়েলুল খায়রাত শরীফ সম্পর্কে বলেন-‘দালায়েলুল খায়রাত শরীফ পাঠ করার জন্য আমরা অনুমতি পেয়েছি, শাহ ওয়ালী উল্লাহ মুহাদ্দেস দেহলবী (رحمة الله) দালায়েলুল খায়রাত শরীফ” সম্পর্কে বলেন- ‘দালায়েলুল খায়রাত শরীফ’ পাঠ করার জন্য আমরা অনুমতি পেয়েছি, আমাদের শায়খ আবু তাহের থেকে, তিনি শায়খ আহমদ নাখঈ থেকে, তিনি সায়্যিদ আবদুর রহমান উরিস থেকে যিনি মাহযুব হিসেবে প্রসিদ্ধ ছিলেন, তিনি তধীয় পিতা আহমদ হতে, তিনি তাঁর দাদা মুহাম্মদ থেকে, তিনি তাঁর দাদা আহমদ থেকে, তিনি দালায়েলুল খায়রাতের সংকলক সায়্যিদ শরীফ মুহাম্মদ বিন সুলাইমান জাযুলী১০৯ (رحمة الله) থেকে অনুমতি লাভ করেন। (আল্লামা শাহ ওয়ালী উল্লাহ উল্লাহ দেহলভী, ইনতিবাহু ফি সিলসিলাহু আউলিয়া, ১৪৩ পৃ.)
টিকা━━━━━━━━━━━━━━━━━━━━
১০৯.
❏ মৌলবী আশরাফ আলী থানবী লেখেন যে, তাঁর ইন্তেকালের ৭০ বছর পর বেলা উসুসে তাঁর কবর থেকে লাশ মুবারক পরিবর্তন করা হলে মনে হল তাকে এই মাত্র দাফন করা হল। মাটি তাঁর উপর কোন প্রভাব ফেলতে পারেনি এবং দীর্ঘ সময়ের ফলে তাঁর কোন পরিবর্তন হয়নি। এক ব্যক্তি তাঁর চেহারার উপর হাতের আঙ্গুল রাখরে সাথে সাথে জীবত ব্যক্তির ন্যায় রক্ত ঝরে। (জামেউল কারামতে আউলিয়া, ১৩৮-১৩৯ পৃ. আশরাফ আলী থানবী)
❏ তাঁর কবর মুরাকশে, তাঁর কবরের উপর অনেকবার দালায়েলুল খায়রাত পড়া হয়। এখান থেকে দৃঢ় ভাবে প্রমাণিত হয় যে, হুযুর পুর নুর (ﷺ) র উপর অধিকহারে দরুদ শরীফ পড়ার কারণে তার কবর থেকে মিশক আম্বরের খুশবু বের হয়। (জামালুল আউলিয়া. ফাযায়েলে দরুদ শরীফ, ৮৬ পৃ.)
━━━━━━━━━━━o━━━━━━━━━
মওলবী বাহাউল হক কাসেমী দেওবন্দী লেখেন যে, মওলবী ছানাউল্লাহ অমৃতসরী দেওবন্দী আলেমদের ব্যাপারে ভাল ধারণা পোষণ করতেন। তার জানা দরকার যে, দালায়েলুল খায়রাতের অজিফা দেওবন্দীদের অবগত ছিল। (দেখুন নজদী তাহরীক পর এক নযর)
এই দালায়েলুল খায়রাতের সংকলক রাসূলে আকরাম (ﷺ)’র একটি হাদীস বর্ণনা করেন, রাসূল (ﷺ) ইরশাদ করেন-
اَسْمَعُ صَلَوٰةَ اَهْلِ مُحَبَّتِى وَ اعْرِفُهُمْ
-“আমি আমার প্রিয় উম্মত গণের দরুদ শরীফ শুনি এবং তাদেরকে চিনতে পাই। (সুলাইমান জাযুলী, দালায়েলুল খায়রাত শরীফ, ২২ পৃ., আল্লামা শায়খ ইউসুফ নাবাহানী, জাওয়াহিরুল বিহার,)
সত্যিকারের ঈমানদারগণ হুযুর (ﷺ) ইরশাদ মুবারককে দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করে এবং এই আক্বিদা পোষণ করে যে, সারকারে দো আলম (ﷺ) দূর-কাছে থেকে আমাদের দরুদ শরীফ শুনেন এবং পাঠকারীকে চিনতে পারেন। রাসূলে পাক (ﷺ) এই হাদিস মুবারক দ্বারা আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতের অনন্য একটি আকিদাও প্রমাণিত হল যে, সৃষ্টি জগত রাসূলে কারিম (ﷺ)’র দৃষ্টির মধ্যেই রয়েছে তিনি সবাইকে দেখেন এবং চেনেন। কবি বলেন-
نہ خدا ہى ملا نہ وصال صنم
نہ ادهر كے رہے نہ ادهر كے رہے
‘‘না আল্লাহতে; না ভূতপ্রেতে
না একুলেতে; না আখিরাতে।’’
পাঠকবৃন্দ! দেখুন, দেওবন্দীরা রাসূলে পাক (ﷺ) র সাথে কিরূপ দুশমনি করছে। রাসূলে পাক (ﷺ)’র বলছেন, আমি শুনি এবং চিনি, অপর তারা বলে বেড়ায় শুনেন না, চিনেনও না।”
তাবরানী শরীফে রয়েছে রাসূলে পাক (ﷺ) ইরশাদ করেন-
أَكْثرُوا الصَّلَاة عَليّ يَوْم الْجُمُعَة فَإِنَّهُ يَوْم مشهود تشهده الْمَلَائِكَة لَيْسَ من عبد يُصَلِّي عَليّ إِلَّا بَلغنِي صَوته حَيْثُ كَانَ
-“জুম‘আর দিনে তোমরা অধিকহারে দরুদ শরীফ পড়, কেননা এদিন হল ফেরেশতাদের উপস্থিতি এর দিন। এদিন আমার উম্মতের যে কেউ যে কোন স্থান থেকে দরুদ পড়লে তাদের আওয়াজ আমার কাছে পৌঁছানো হয়।’’ ১১০
১১০. ইবনুল কাইয়্যুম জাওযী, জালাউল আফহাম, ১২৭ পৃ.
রাসূলে কারিম (ﷺ) র উপর্যুক্ত বাণী থেকে আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতের এই আকিদা দিবালোকের ন্যায় প্রতিভাত হলো যে, যে কোন উম্মত যেখান হোক না কেন, দূরে হোক, কাছে হোক, মদীনা শরীফে হোক অথবা পাকিস্তান তথা যে কোন দেশ থেকে হোক তার দরুদ আমার নিকট পৌঁছানো হয়।
সুতরাং বুঝা গেল দেওবন্দীরা আহলে সুন্নাত ওয়াল জাম‘আত নয় বরং তারাই আহলে সুন্নাত ওয়াল জাম‘আত যাদের আকিদা হল রাসুলে করিম (ﷺ) দূরে-কাছে থেকে উম্মতের আর্তনাদ শুনেন এবং তাদেরকে চিনেন। দেওবন্দীদের আকিদা হল রাসূলে কারিম (ﷺ) র নিকট দরুদ শরীফ পৌঁছানো হয়, তিনি যদি শুনতে পান তবে কেন পৌঁছানো হয়?
সম্মানিত পাঠকবৃন্দ! এই আকিদার শেষ তারা প্রতারণা এবং চাতুরীর পন্থা অবলম্বন করেছে! সাহাবায়ে কেরাম (رضي الله عنه)’র আকিদা কখনো এরূপ ছিল না যে, তিনি শুনেন না, এজন্য পেশ করা হয়। যে হাদীসে পেশ করার কথা আছে তা নিম্মরূপ-
এই হাদীস খানা দেওবন্দীদের মুজাদ্দিদ ইবনে কাইয়্যুম তার ‘জালালুল আফহাম’ এবং গাইয়ে মুকালিদগণের কাজী সুলাইমান মানসুরপুরী ‘‘আস-সালাত ওয়াস্সালাম” কিতাবে এভাবে এনেছেন-রাসূলে পাক (ﷺ) ইরশাদ করেন-
عَن عَائِشَة رَضِي الله عَنْهَا قَالَت قَالَ رَسُول الله صلى الله عَلَيْهِ وَسلم مَا مِنْ عَبْدٍ صَلَّى عَلَيّ صَلَاة إِلَّا عَرَجَ بِهَا مَلِكٌ حَتَّى يَجِيء بِهَا وَجْه الرَّحْمَن عَزَّ وَجَلَّ فَيَقُوْلُ رَبِّنَا تَبَارَكَ وَتَعَالَى أِذْهَبُوْا بِهَا إِلَى قَبْرِ عَبْدِي تَسْتَغْفِرُ لِصَاحِبِهَا وَتَقَرُّ بِهَا عَيْنُهُ
-“হযরত আয়েশা (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূল (ﷺ) ইরশাদ করেন, আমার উম্মতের যে কেউ যখন আমার উপর দরুদ পড়ে, একজন ফেরেশতা তাকে আল্লাহর নিকট নিয়ে যায়, আর আল্লাহ ফেরেশতাকে বলেন, তাঁকে আমার হাবীব (ﷺ) কবরে নিয়ে যাও, যাতে তিনি দরুদ পাঠকারীর জন্য ইসতিগফার কামনা করেন এবং চক্ষু শীতল করেন।’’ ১১১
১১১. ইবনুল কাইয়্যুম, জালালুল আফহাম, ১২৪ পৃ., ইমাম দায়লামী, আল-ফিরদাউস, ৪/১০ পৃ. হা/৬০২৬, ইমাম সুয়ূতি, জামেউল আহাদিস, ১৯/২২৫ পৃ. হা/২০৬২২, কাজী সুলাইমান মানসুরপুরী, আসসালাতু ওয়াস সালাম, ৫০ পৃ.
বর্ণিত হাদিস শরীফ দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, ফেরেশতা প্রথমত মহান আল্লাহর দরবারে দরুদ শরীফ নিয়ে আসেন এরপর মহান আল্লাহর নির্দেশেই রাসূল (ﷺ) দরবারে যান।
যদি শুনেন, তবে কেনো পেশ করা হয় বলে দেওবন্দীরা যে আপত্তি করে, তা দ্বারা কেবল রাসূল (ﷺ) শ্রবণ কেউ অস্বীকার করা হয় না বরং এর দ্বারা মহান আল্লাহর শ্রবণ শক্তিকে ও অস্বীকার করা হয়। কেননা ফেরেশতাগণ প্রথমে আল্লাহর দরবারেই দরুদ শরীফ নিয়ে আসেন।
দেখুন! দেওবন্দীদের আকিদা কত মারাত্মক! যা দ্বারা মহান আল্লাহর শানে আকদাসের হামলা করে। আপত্তি করার আর কোন স্থান অবশিষ্ট আছে? এসব বদ আকিদা এবং মাযহাব হতে আল্লাহ আমাদের রক্ষা করুন। আমিন!
ইমাম সাখাবী (رحمة الله) তাঁর অনবদ্য কিতাব ‘আল-কাওলুল বদী’ এর মধ্যে একটি বর্ণনা এনেছেন। দেওবন্দীরা এটিও পেশ করেছে। তা হল-
হযরত আম্মার বিন ইয়াসির (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত, রাসূলে পাক (ﷺ) ইরশাদ করেন-
إِنَّ لِلَّهِ- تَبَارَكَ وَتَعَالَى - مَلَكًا أَعْطَاهُ أَسْمَاعَ الْخَلَائِقِ فَهُوَ قَائِمٌ عَلَى قَبْرِي إِذَا مِتُّ، فَلَيْسَ أَحَدٌ يُصَلِّي عَلَيَّ صَلَاةً إِلَّا قَالَ: يَا مُحَمَّدُ، صَلَّى عَلَيْكَ فُلَانُ بْنُ فُلَانٍ. قَالَ: فَيُصَلِّي الرَّبُّ- تَبَارَكَ وَتَعَالَى- عَلَى ذَلِكَ الرَّجُلِ بِكُلِّ وَاحِدَةٍ عَشْرًا
-“নিশ্চয়ই আল্লাহ তা‘য়ালা একজন ফেরেশতাকে সমস্ত সৃষ্টি জগতের আওয়াজ শুনার শক্তি দিয়েছেন। তিনি আমার রওজার পাশে দন্ডায়মান। আমার ইন্তেকালের পর কেউ যখন আমার উপর দরুদ শরীফ পাঠ করে, তখন ফেরেশতা আমাকে বলেন, হে রাসূল (ﷺ)! অমুকের পুত্র অমুক আপনার উপর দরুদ শরীফ পাঠ করেছে। তখন রাসূল (ﷺ) বলেন, যে আমার উপর একবার দরুদ শরীফ পাঠ করে, আল্লাহ তার উপর দশবার রহমত অবর্তীণ করেন।” ➡ ১১২
টিকা━━━━━━━━━━━━━━━━━━━━
১১২. ইবনে হাজার আসকালানী, ইত্তিহাফুল খায়রাতুল মেহরাহ, ৬/৫০১ পৃ. হা/৬২৮৫, তিনি এটি ইমাম আবু শাইখ (رحمة الله)-এর সূত্রে সংকলন করেছেন। ইমাম সাখাভী, আল-কাউলুল বদী, পৃ. ১১৯, আল্লামা ইবনুল কাইয়্যুম জাওযিয়্যাহ, জালাউল আফহাম, ১০৭ পৃ., ইমাম সুয়ূতি, জামেউল আহাদিস, ২৩/৩৪২ পৃ. হা/২৬১৮৪, ইমাম হাইসামী, মাযমাউয-যাওয়াইদ, ১০/১৬২ পৃ. হা/১৭২৯২,
এ হাদিসটির সনদের মান ‘হাসান। এমনকি আহলে হাদিস আলবানীও একে ‘হাসান’ বলেছেন। (আলবানী, সিলসিলাতুল আহাসিস সহীহা, ৪/৪৪ পৃ. হা/১৫৩০)
━━━━━━━━━━━o━━━━━━━━━
আহলে হাদিস মৌলভী ওয়াহিদুজ্জামানও তার কিতাব ‘হাদীয়াতুল মাহদী’ ১ম খন্ড ২৫ পৃষ্ঠার মধ্যে এ ধরনের একটি রেওয়াত এনেছেন।
এই হাদিসগুলো থেকে রাসূলে পাক (ﷺ) র শান শওকাত বুঝা যায়। কেননা দরুদ শরীফ পাঠ কারী দূরে হোক বা কাছে হোক আরবে হোক আজমে হোক, পূর্বে হোক আর পশ্চিমে হোক বরং পৃথিবীর যেখানেই হোক না কেনো? যে ফেরেশতা খাদেম এবং গোলাম হয়ে রাসূলে পাক (ﷺ) র দরোয়ান হয়ে দন্ডায়মান। তিনি তার আওয়াজ যথার্থ ভাবে শুনান। তিনি কেবল একজনের নয়। বরং সকলেরই আওয়াজ শুনেন। যে ফেরেশতা রাসূলে পাক (ﷺ)‘র দরবারে খাদেম হয়ে তার শ্রবণ শক্তির এই অবস্থা। তাহলে সে স্বত্তার শ্রবণ শক্তির অবস্থা কী হবে যিনি সমস্ত ফেরেশতা এবং সকল রাসূলগণের সর্দার!
তাঁর শ্রবণ শক্তি নিশ্চয়ই তাঁর দরবারের খাদেমের শ্রবণ শক্তি থেকে অনেক বেশি হবে। কোন বিবেকবানই এ আকিদা গ্রহণ করবে না যে, রাসূলে পাক (ﷺ)’র গোলাম ফেরেশতা পুরো দুনিয়ার দরুদ পাঠকারীর দরুদ রওযা পাকের পাশে দাঁড়িয়ে শুনবেন আর স্বয়ং সে রওযা পাকে যিনি রয়েছেন তিনি শুনবেন না!
এই বর্ণনা থেকে আরেকটি শান প্রকাশ পায় তা হল, ফেরেশতা প্রত্যেক দরুদ পাঠকারীর নাম এবং তার পিতার নাম জানেন। কেননা হাদীসের মধ্যে রয়েছে ফেরেশতা আরজ করেন, অমুকের পুত্র অমুক দরুদ পাঠ করেছেন। এটা প্রকাশ পায় যে, দরুদ পাঠ কারী দরুদ শরীফ পাঠ করার পূর্বে নিজের নাম এবং তার পিতার নাম বলেনি যে, আমি অমুকের পুত্র অমুক। এরপরেও ফেরেশতা মদিনা মুনাওয়াহা বসে প্রত্যেকের নাম এবং তার পিতার নাম জানেন। সুতরাং ফেরেশতার অবস্থা যখন এরূপ হল, সেই স্বত্তার শান কী হবে, ফেরেশতা যাঁর গোলাম? সেই আল্লাহর হাবীব তাঁর গোলাম এবং তাদের পিতার নাম কেনো জানবেন না, অবশ্যই রাসূলে পাক (ﷺ) তাঁর গোলামদের নাম জানেন। কবি বলেন-
بنده مٹ جاتے نہ آقا پہ وه بنده كيا ہے
بے خبر ہو جو غلاموں سے وه آقا كيا ہے
‘‘মুনিব-পালায়ন! এ কেমন অনুচর
ভৃত্যবার্তা রাখে না! সে কেমন ক্ষমতাধর!!
এজন্যই আল্লামা শাহ আব্দুল আযিয মুহাদ্দিস দেহলভী ➡১১৩ (رحمة الله) পবিত্র কুরআন মাজীদের আয়াত -
وَيَكُونَ الرَّسُولُ عَلَيْكُمْ شَهِيدًا
এর তাফসীরে বলেন-
-‘‘হুযুর করিম (ﷺ) নবুয়তের নূর দ্বারা দ্বীন ইসলামের মধ্যে প্রতিটি গোপন বিষয়ে খবর রাখেন। তিনি এটাও জানেন যে, আমার দ্বীনে সে কতটুকু পর্যন্ত পৌঁছেছে, তার ঈমানের প্রকৃতি কী, সে কোন পর্দায় রয়েছে, যে কারণে সে উন্নতি হতে বঞ্চিত হচ্ছে। সুতরাং রাসূল (ﷺ) উম্মতের পাপ, ইসলাম, নিফাক সম্পর্কে অবগত। এজন্যই দুনিয়া-আখেরাতে তাঁর পক্ষে গ্রহণীয় এবং এর উপর বিশ্বাস করা ওয়াজিব।’’ (শাহ আবদুল আযিয মুহাদ্দিসে দেহলভী, তাফসিরে আযিযি, ৫১৮ পৃ.)
সুতরাং কুরআন সুন্নাহ দ্বারা প্রতীয়মান হল দেওবন্দী এবং গাইরে মুকালিদ আহলে হাদিসরা আহলে সুন্নাত ওয়াল জাম‘আত নয়।
টিকা━━━━━━━━━━━━━━━━━━━━
১১৩. ওহাবীদের ইমাম ইসমাঈল দেহলবী হযরত শাহ আব্দুল আজিজ দেহলবী (رحمة الله) সম্পর্কে নিম্মের কিতাবগুলো লেখেন ‘হেদায়তে মায়ার’ কুদওয়াতে আবরারে সিদ্ক ওয়াসফা, যুবদাহ আসহাবে ফানা-দানা, সায়্যিদুল উলামা, সায়্যিদুল আউলিয়া, হুজ্জাতুল্লাহি আলাল আলামীন, ওয়ারিছুল আম্বিয়া ওয়াল মুরসালিন, মারজা হার জলীল।
আল্লাহর ওলীদেরকে ডাকা
____________________
❏ বিষয় নং-৯: আল্লাহর ওলীদেরকে ডাকা:
দেওবন্দীরা ওলী আল্লাহরদেরকে ডাকা এবং আহবান করাকে শিরক বলে। আহলে সুন্নাত ওয়াল জাম‘আত আল্লাহর ওলীদেরকে ডাকা এবং আহ্বান করাকে বৈধ বলেন। আল্লাহ তা‘য়ালা পবিত্র কুরআন মাজীদে তাঁর প্রিয় মাহ্বুব(ﷺ) কে বলেন-
فَإِنَّ اللَّهَ هُوَ مَوْلَاهُ وَجِبْرِيلُ وَصَالِحُ الْمُؤْمِنِينَ وَالْمَلَائِكَةُ بَعْدَ ذَلِكَ ظَهِيرٌ
-‘‘তবে নিশ্চয়ই আল্লাহ সাহায্যকারী এবং জিবরাইল এবং সৎকর্মপরায়ন মুমিনগণ এবং এরপর ফিরিশতাগণ সাহায্যকারী রয়েছে।’’ (সূরা তাহরীম, আয়াত নং-৪, ২৮ পারা, ১৯ রুকু)
এই আয়োতের তাফসীরে আল্লামা আলূসী (رحمة الله) مَوْلَاهُ এর অর্থ أي ناصره বা তার সাহায্যকারী বলেছেন। ১১৪
১১৪. আল্লামা মাহমুদ আলূসী, তাফসিরে রুহুল মা‘আনী, ১৪/৩৪৮ পৃ., দারুল কুতুব ইলমিয়্যাহ, বয়রুত, লেবানন, প্রকাশ. ১৪১৫ হি.।
অপর আয়াতে আল্লাহ তা‘য়ালা ইরশাদ করেন-
إِنَّمَا وَلِيُّكُمُ اللَّهُ وَرَسُولُهُ وَالَّذِينَ آمَنُوا الَّذِينَ يُقِيمُونَ الصَّلَاةَ وَيُؤْتُونَ الزَّكَاةَ وَهُمْ رَاكِعُونَ
-“নিশ্চয়ই তোমাদের বন্ধু তো, আল্লাহ এবং তাঁর রাসূল ও ঈমানদারগণ, যারা নামায কায়েম করে যাকাত দেয় এবং আল্লাহরই সামানে বিনত হয়। (সূরা মায়েদা, আয়াত নং-৫৫, ৬ষ্ট পারা ১২ রুকু)
হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (رضي الله عنه)’র আকিদা
____________________
হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (رضي الله عنه)’র আকিদা
হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত, রাসূলে পাক (ﷺ) ইরশাদ করেন, যদি কারো পশু জঙ্গলে হারিয়ে যায়, তো সে যদি তা খুঁজে পেতে চায়, তবে সে যেন তিন বার বলে,
فَلْيُنَادِ: أَعِينُوا عِبَادَ اللَّهِ
‘হে আল্লাহর বান্দা সাহায্য করুন! হে আল্লাহর বান্দা সাহায্য করুন!’’১১৫
১১৫. ইমাম হাইসামী, মাযমাউয যাওয়াইদ, ১০/১৩২ পৃ. হা/১৭১০৪, ইমাম বায্যার, আল-মুসনাদ, হা/, ইমাম জাযরী, হিসনে হাসীন-১৬৩ পৃ.
অন্য বর্ণনায় এসেছে-
فَلْيُنَادِ: يَا عِبَادَ اللَّهِ احْبِسُوا، يَا عِبَادَ اللَّهِ احْبِسُوا
-‘‘হে আল্লাহর বান্দা! তাকে বেঁধে রাখুন, হে আল্লাহর বান্দা! তাকে বেঁধে রাখুন।’’ ১১৬
১১৬. ইমাম হাইসামী, মাযমাউয যাওয়াইদ, ১০/১৩২ পৃ. হা/১৭১০৫, ইমাম আবু ই‘য়ালা, আল-মুসনাদ, হা/, ইমাম তাবরানী, মু‘জামুল কাবীর, হা/, ইমাম জাযরী, হুসনে হাসিন, ১৬৩ পৃ.
আল্লামা মুহাদ্দিস ইবনে জাযরী (رحمة الله) বলেন, এক বুর্যুগ ব্যক্তির একটি পশু হারিয়ে গেল। তাঁর উপরোক্ত হাদিসটি জানা ছিল। তখন তিনি উল্লেখিত শব্দগুলো বললে, আল্লাহ তা‘য়ালা তার জন্তু ফেরত দেন। তাবরানী শরীফের হাওলা দিয়ে আল্লামা ইবনে জাযরী (رحمة الله) আরেকটি হাদিস বর্ণনা করেন যে,
اِنَّ أَرَادَ عَوْنًا فَلْيَقُلْ: يَا عِبَادَ اللهِ أَغِيثُونِي، يَا عِبَادَ اللهِ أَغِيثُونِي
-“যদি কারো সাহায্যের প্রয়োজন হয়, তবে সে যেন বলে, হে আল্লাহর বান্দা সাহায্য করো, হে আল্লাহর বান্দা সাহায্য করো, হে আল্লাহর বান্দা সাহায্য করো।”
হাদিস খানা বর্ণনা করার পর রাবী (উতবাহ ইবনে গাযওয়ান) বলেন-
وَقَدْ جُرِّبَ ذَلِكَ
-‘‘এটি পরীক্ষিত।’’ ১১৭
টিকা━━━━━━━━━━━━━━━━━━━━
১১৭. আল্লামা জাযরী, হিসনে হাসীন-১৬৩ পৃ.,
❏ তবে ইমাম তাবরানী (رحمة الله) হাদিসটি এভাবে সংকলন করেছেন-
عَنْ عُتْبَةَ بْنِ غَزْوَانَ، عَنْ نَبِيِّ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: إِذَا أَضَلَّ أَحَدُكُمْ شَيْئًا أَوْ أَرَادَ أَحَدُكُمْ عَوْنًا وَهُوَ بِأَرْضٍ لَيْسَ بِهَا أَنِيسٌ، فَلْيَقُلْ: يَا عِبَادَ اللهِ أَغِيثُونِي، يَا عِبَادَ اللهِ أَغِيثُونِي، فَإِنَّ لِلَّهِ عِبَادًا لَا نَرَاهُمْ وَقَدْ جُرِّبَ ذَلِكَ
-‘‘হযরত উতবাহ ইবনে গাযওয়ান (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত। তিনি নবী করীম (ﷺ) হতে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, পৃথিবীর নির্জন স্থানে তোমাদের কারোও কিছু হারিয়ে গেলে বা কারোও কোনো সাহায্যের প্রয়োজন হলে, সে যেন বলে, হে আল্লাহর প্রিয় বান্দা! আমাকে সাহায্য করুন, হে আল্লাহর প্রিয় বান্দা আমাকে সাহায্য করুন, তাঁরা এমন বান্দা যাদেরকে দেখা যায় না, এ আমলটি পরীক্ষিত।’’ (ইমাম তাবরানী, মু‘জামুল কাবীর, ১৭/১১৭ পৃ. হা/২৯০, হাইসামী, মাযমাউয-যাওয়াইদ, ১০/১৩২ পৃ. হা/১৭১০৩)
━━━━━━━━━━━━━━━━━━━━
আল্লামা মোল্লা আলী ক্বারী (رحمة الله)’র আক্বিদা
____________________
আল্লামা মোল্লা আলী ক্বারী (رحمة الله)’র আক্বিদা:
হিসনে হাসীন এর ব্যাখ্যা গ্রন্থ “হারজে ছামিন” এ আল্লামা মোল্লা আলী ক্বারী (رحمة الله) এই হাদীসের ব্যাখ্যায় বলেন-
قَالَ بَعْضُ الْعُلَمَاءِ الثِّقَاتِ: هَذَا حَدِيثٌ حَسَنٌ يَحْتَاجُ إِلَيْهِ الْمُسَافِرُونَ وَرُوِىَ عَنِ الْمَشَائِخِ اَنَّهُ مُجَرَّبُ مُحَقَّقٌ
-‘‘অনেক বিশ্বস্ত আলেম বলেন, এই হাদীস খানা ‘হাসান’। মুসাফিরদের এরূপ অনেক হাজত থাকে। আর মাশায়েখে কেরামগণ বলেন, এই হাদিস খানা পরীক্ষিত।’’ ১১৮
১১৮. মোল্লা আলী ক্বারী, মেরকাত, ৪/১৬৯৩ পৃ. হা/২৪৪১
আল্লামা নববী (رحمة الله)’র আকিদা
____________________
আল্লামা নববী (رحمة الله)’র আকিদা:
মুসলিম শরীফের ব্যাখ্যাকার আল্লামা ইমাম নববী (رحمة الله) একটি ঘটনা বর্ণনা করেছেন-
قُلْتُ: حَكى لِي بَعْضُ شَيُوْخِنَا الْكِبَارِ فِي الْعِلْمِ أَنُّه اِنْفَلَتَتْ لَه دَابَّةٌ أَظُنُّهَا بَغْلَةً، وَكَانَ يَعْرِفُ هَذَا الْحَدِيْثَ، فَقَالَه: فَحَبَسَهَا اَللهُ عَلَيْهِمْ فِي الْحَالِ؛ وَكُنْتُ أَنَا مَرَّةً مَعَ جَمَاعَةٍ فَانْفَلَتَتْ مِنْهَا بَهِيْمَةٌ، وَعَجَزُوْا عَنْهَا، فَقُلْتُه، فَوَقَفَتْ فِي الْحَالِ بِغَيْرِِ سَبَبٍ سَوَىٰ هَذَا الْكَلَامِ.
-‘‘আমাকে এক বুযুর্গ একটি ঘটনা বর্ণনা করেন যে, একদা আমার একটি খচ্ছর হারিয়ে গেল। রাসূলে পাক (ﷺ)’র হাদীস খানা আমার জানা ছিল। তখন আমি বললাম “হে আল্লাহর বান্দা! আমাকে সাহায্য করুন! তখন আল্লাহ তা‘য়ালার দয়ায় আমার খচ্ছর মিলে গেল। মুহাদ্দিস আল্লামা নববী (رحمة الله) বলেন, একদা আমি নিজেই এক বড় দলের সাথে ছিলাম, হঠাৎ আমাদের চতুষ্পদ জন্তুটি পালাতে লাগল। আমরা অনেক চেষ্টা করেও তা পেলাম না, তখন আমিও “হে আল্লাহর বান্দা, আমাকে সাহায্য করুন! বলে চিৎকার দিলাম। সাথে সাথে তা আটকে গেল।’’ (ইমাম নববী, কিতাবুল আযকার, ৩৭৮ পৃ. হা/১১৪৭-এর আলোচনা।)
সায়্যিদুনা আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (رضي الله عنه)’র আকিদা
____________________
সায়্যিদুনা আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (رضي الله عنه)’র আকিদা:
আহলে হাদীস গাইরে মুকাল্লিদগণের বড় আলেম কাজী মুহাম্মদ শাওকানী তার স্বীয় কিতাব “হিসনে হাসিনের ব্যাখ্যাগ্রন্থ “তুহফাতুয্ যাকিরীন” একটি হাদীস নকল করে তিনি নিজেই উক্ত হাদীসের ব্যাখ্যা করেছেন। এ দুটিই উপকারার্থে নিম্মে দেয়া হল। ইমাম বায্যার (رحمة الله) হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (رضي الله عنه)’র সুত্রে বর্ণনা করেন-
وَأخرج الْبَزَّار من حَدِيث ابْن عَبَّاس رَضِي الله عَنْهُمَا أَن رَسُول الله صلى الله عَلَيْهِ وَسلم قَالَ إِن لله مَلَائِكَة فِي الأَرْض سوى الْحفظَة يَكْتُبُونَ مَا سقط من ورق الشّجر فَإِذا أصَاب أحدكُم شَيْء بِأَرْض فلاة فليناد أعينوني يَا عباد الله قَالَ فِي مجمع الزَّوَائِد رِجَاله ثِقَات وَفِي الحَدِيث دَلِيل عَلى جَوَاز الِاسْتِعَانَة بِمن لَا يراهم الْإِنْسَان من عباد الله من الْمَلَائِكَة وصالحي الْجِنّ وَلَيْسَ فِي ذَلِك بَأْس كَمَا يجوز للْإنْسَان أَن يَسْتَعِين ببني آدم إِذا عثرت دَابَّته أَو انفلتت
-‘‘ইমাম বায্যার (رحمة الله) হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (رضي الله عنه)’র সূত্রে বর্ণনা করেন, ফেরেশতা ছাড়াও পৃথিবীতে এমন কতগুলো ফেরেশতা আছেন, যারা কোন একটি গাছের পাতাও ঝড়ে পড়লে তা লেখেন। সুতরাং তোমাদের কেউ যখন কোন জঙ্গলে বিপদে পড়বে, তখন সে যেন বলে, হে আল্লাহর বান্দা, আমাকে সাহায্য করুন! (ইমাম হাইসামীর) মাযমাউয যাওয়ায়েদে রয়েছে এ হাদিসের সমস্ত রাবীগণ বিশ্বস্ত। এ হাদীসের মধ্যে বৈধতা আছে যে, অদৃশ্য ব্যক্তি তথা ফেরেশতা এবং নেককার জিনদের কাছে সাহায্য চাওয়া বৈধ। যেমনিভাবে মানুষের কোন জন্তু হারিয়ে গেলে বনী আদম থেকেও সাহায্য প্রার্থনা করা বৈধ।’’ (শাওকানী, তুহফাতুয যাকিরীন, ২৩৮ পৃ.)
সায়্যিদুনা আবদুল্লাহ ইবনে উমর (رضي الله عنه)’র আকিদা
____________________
সায়্যিদুনা আবদুল্লাহ ইবনে উমর (رضي الله عنه)’র আকিদা:
তাবরানী শরীফের হাওলা দিয়ে ইমাম জালালুদ্দিন সুয়ূতি (رحمة الله) একটি হাদীস বর্ণনা করেন,
عنِ ابْنِ عُمَر، قَال: قَال رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إنّ لله تَعَالَى عِباداً اخْتَصَّهُمْ بِحَوَائِجِ النَّاسِ يَفْزَعُ النّاسُ إلَيْهِمْ فِي حَوَائِجِهِمْ أولَئِكَ الآمِنُونَ مِنْ عذابِ الله
-‘‘হযরত আবদুল্লাহ ইবনে উমর (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত, রাসূলে পাক (ﷺ) ইরশাদ করেন, আল্লাহর এমন কিছু বান্দা আছে, যাদেরকে মানুষের প্রয়োজন পূরনার্থে নির্দিষ্ট করা হয়েছে। কোন মানুষ বিপদে পড়ে তাদেরকে আবেদন জানালে আল্লাহর আজাব হতে তারা মুক্তি পায়।’’ ১১৯
১১৯. ইমাম সুয়ূতি, জামে সগীর, ১ম খণ্ড ৭৮ পৃ. হা/, ইমাম ইবনে আদী, আল-কামিল, ৫/৩১৫ পৃ. ক্রমিক.১০০৩, ইমাম ইবনে আসাকীর, তারিখে দামেস্ক, ৫৪/৪ পৃ. ক্রমিক. ৬৫৫৯, ইমাম সুয়ূতি, জামেউল আহাদিস, ৯/২১৩ পৃ. হা/৮২৬৬, ইমাম হাইসামী, মাযমাউয-যাওয়াইদ, ৮/১৯২ পৃ. হা/১৩৭১০
আল্লামা আবদুল ওহ্হাব শা‘রানী (رحمة الله)’র আক্বিদা
____________________
আল্লামা আবদুল ওহ্হাব শা‘রানী (رحمة الله)’র আক্বিদা:
আল্লামা শা‘রানী (رحمة الله) তাঁর অনাবদ্য কিতাব “আত-তবকাতুল কোবরা ”গ্রন্থে আল্লাহর ওলী গণের দূর থেকে সাহায্য করার একটি ঘটনা বর্ণনা করেন- এরূপ একটি ঘটনা বর্ণনা করা হল, যাতে প্রমাণিত হয় আহলে সুন্নাত ওয়াল জাম‘আত কারা?
আল্লামা আবদুল ওহ্হাব শা‘রানী (رحمة الله) বলেন, শামসুদ্দীন মুহাম্মদ হানাফী (رحمة الله) একদা নিজ হুজুরার মধ্যে অযু করছিলেন, আকস্মিক তাঁর একটি খড়ম শূন্যে নিক্ষেপ করলে তা অদৃশ্য হয়ে যায়। অথচ হুজরার মধ্যে বের হবার কোন পথ ছিল না। ২য় খড়মটি খাদেমকে দিয়ে বললেন, অপর খড়ম না আসা পর্যন্ত এটা রাখ। অনেক দিন পর সিরিয়া থেকে এক ব্যক্তি কিছু হাদিয়াসহ সেই খড়ম নিয়ে আসলেন। আরয করলেন আল্লাহ আপনাকে উত্তম প্রতিদান করুন। মূল ঘটনা ছিল এরূপ যে,
إِنَّ اللِّصَ لَمَّا جَلَسَ عَلٰى صَدْرِي لِيَذْبَحَنِي قُلْتُ: فِي نَفْسِي يَا سَيِّدِي مُحَمَّد يَا حَنَفِي فَجَاءَتُهُ فِي صَدْرِه، فَانْغَلَبَ مُغْمَىَ عَلَيْهِ وَنَحَانِي اَللهُ عَزَّ وَجَلَّ بِبَرْكَتِكَ
-এক চোর আমাকে হত্যা করার জন্য আমার বুকের উপর বসলো। তখন আমি মনে মনে বললাম, হে আমার পীর মুহাম্মদ! হে হানাফী! তখন এই খড়মটি চোরের বুকের উপর এসে পড়ে। তখন চোর অচৈতন্য হয়ে পড়ে যায়। আল্লাহ তা‘য়ালা আপনার বরকতে আমাকে মুক্তি দান করেন।’’ ১২০
১২০. ইমাম শা‘রানী, তবকাতুল কুবরা, ২য় খণ্ড , ৮৪ পৃ.
আরেফে হাক্কানী আল্লামা আবদুল ওহাব শারানী (কুদ্দিসা সিররুহুল আযিয) হযরত মূসা আবু আমের (رحمة الله)’র শানে তাঁর ক্ষমতা এবং পূর্ণতা সম্পর্কে বলেন,
وَكَانَ إِذَا نَادَاهُ مُرِيْدُه أَجَابَه مِنْ مُسِيْرَةِ سَنَة، وَأَكْثَرَ
যখন তাঁর কোন মুরিদ যে কোন স্থান হতে তাকে আহ্বান করতেন, তিনি তাঁর ডাকে সাড়া দিতেন। তা দশ বছরের দূরত্ব হোক বা তার চেয়ে বেশি হোক।’’ ১২১
১২১. ইমাম শা‘রানী, আত্-তবকাতুল কুবরা, ২য় খণ্ড , ২৯ পৃ.
ইমাম ইবনে হাজার মক্কী (رحمة الله)’এর আক্বিদা
____________________
ইমাম ইবনে হাজার মক্কী (رحمة الله)’এর আক্বিদা:
যিনি দেওবন্দীদের দৃষ্টিতেও গ্রহণযোগ্য ছিলেন, তিনি তাঁর ফাতওয়ার মধ্যে বলেন,
وَمن نفعهم لِلْخلقِ أَن بركتهم تغيث الْعباد وَيدْفَع بهَا الْفساد وَإِلَّا لفسدت الأَرْض
-‘‘আল্লাহর ওলীগণের উপকারের মধ্যে অন্যতম হলো তাদের বরকতে মানুষের উপর বৃষ্টি বর্ষণ হয় এবং সমস্যা দূর হয়, অন্যথায় যমিন ধ্বংস হতো।’’ (ইবনে হাজার মক্কী, ফাতওয়ায়ে হাদিসিয়্যাহ, ২২১ পৃ.)
আল্লামা ইবনে আবেদীন শামী (رحمة الله)’র আকিদা
____________________
আল্লামা ইবনে আবেদীন শামী (رحمة الله)’র আকিদা:
আল্লামা শামী (رحمة الله) তাঁর বিশ্ববিখ্যাত কিতাব রদ্দুল মুহতার বা শামী শরীফের হাশিয়ার মধ্যে লেখেন, যিয়াদী বর্ণনা করেন যে, যদি কোন ব্যক্তির কিছু হারিয়ে যায় এবং সে কামনা করে যে, আল্লাহ তাঁর হারানো বস্তু ফিরিয়ে দিক, তবে সে এক উঁচু স্থানে উঠে কিবলার দিকে মুখ করে ফাতিহা পড়ে এবং সাওয়াব রাসূল (ﷺ) র দরবারে বখশিশ করবে এবং সায়্যিদ আহমদ বিন উলওয়ান (رحمة الله)’র রূহে পাঠাবে এবং নিম্নের দোয়া পড়বে-
يَا سَيِّدِى اَحْمَد بْنِ عَلْوَانَ اِنْ تَرُدَّ عَلٰى ضَالَّتِى وَ اِلَّا نَزَعْتُكَ مِنْ دِيْوَانِ الاَوْلِيَاءِ فَاِنَّ اَللهَ تَعَالٰى يَرُدْدُّ عَلٰى مَنْ قَالَ ذَلِكَ ضَالَّتَه بِبَرْكَتِه اُجُوْرِىْ مَعَ زِيَادَةٍ كَذَا فِى حَاشِيَةِ شَرْحِ المُنْهَجِ لِدَّاؤدِى رَحِمَهُ اَللهُ
-“হে আমার সর্দার আহমদ, হে ইবনে আলওয়ান আপনি যদি আমার হারানো বস্তু ফেরত দেন, তবে তো ভাল, অন্যথায় আপনার নাম আল্লাহর অলীগণের দিওয়ান থেকে বাদ পড়বে। এই আমলের ফলে উক্ত আল্লাহর অলীর উছিলায় আল্লাহ তা‘য়ালা হারানো বস্তু ফেরত দেবে।’’ ১২২
১২২. হাশিয়ায়ে রদ্দুল মুহতার শরহে দুররুল মুখতার, ৩য় খণ্ড, ৩৩৪ পৃ. মিশরে হতে প্রকাশিত
শাহ আবদুল আজিজ মুহাদ্দিস দেহলভী (رحمة الله)’র আকিদা
____________________
শাহ আবদুল আজিজ মুহাদ্দিস দেহলভী (رحمة الله)’র আকিদা:
শাহ আবদুল আজিজ মুহাদ্দিস দেহলভী (رحمة الله), মাওয়াহেবে ল্লাদুন্নিয়ার মুসান্নিফ, বুখারী শরীফের ব্যাখ্যাকার আল্লামা কাস্তাল্লানী (رحمة الله) এ আল্লামা শামসুদ্দিন (رحمة الله)’র উস্তাদ শায়খ আহমদ যুরওয়াক (رحمة الله)’র একটি বানী নকল করে মসলকে হক্ব তথা আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতের যথার্থতা প্রমাণ করে বলেন-
اَنَا الْمُرِيْدِىْ جَامِعٌ لِشَتَاتِه اِذَا مَاسَطَا جَوْرُ الزَّمَانِ بِنُكْبَةِ
فَاِنْ كُنْتَ فِى ضَيْقِ وَكَرْبٍ وَّ وَحْشَةٍ فَنَادِبِيَازُرُّوْقُ اٰتِ بِسُرْعَةٍ
-‘‘আমি আমার মুরিদের পেরেশানীকে সান্তনা দানকারী, যুগের দুর্দশা যখন তার উপর হামলা করবে। যখন তুমি সংকীর্ণতা এবং একাকীত্বতা অনুভব করবে তখন তুমি “ইয়া যারুকু” বলে ডাক দিবে, তৎক্ষণাৎ আমি তোমার কাছে আসবা।’’ (বুস্তানুল মুহাদ্দেসীন, ফার্সী)
প্রিয় পাঠকবৃন্দ! হানাফীদের নির্ভরযোগ্য এবং ফিক্হের প্রসিদ্ধ কিতাব শামী শরীফে ও আলী আল্লাহুদের ডাকা এবং তাঁদের কাছে প্রার্থনা করার হুকুম আছে। দেওবন্দীরা নিজেদের হানাফী বলে বলে সাদা সিধে মুসলমানদেরকে ধোঁকা দেয়ার জন্য রাত দিন ব্যস্ত। বিভিন্ন মসজিদ দখল করার চিন্তায় ব্যস্ত। পাকিস্তানের বিভিন্ন শহর, গ্রাম, মহল্লার মসজিদে মসজিদে ফেতনা ছড়ানোর কাজেই তারা নিয়োজিত। অথচ উপর্যুক্ত কুরআনে পাক, সুন্নাহ এবং নির্ভরযোগ্য মুহাদ্দিসিনে কেরামগণের কিতাব হতে দিবালোকের ন্যায় সুস্পষ্ট যে, দেওবন্দীদের আকিদা আহলে সুন্নতের আকিদা হতে অনেক দূরে। তারা না আহলে সুন্নাত ওয়াল জাম‘আত না হানাফী। বরং অলী আল্লাহদেরকে দূর থেকে আহ্বান কারী এবং তাদের থেকে সাহায্য প্রার্থনাকারী এবং আল্লাহর হুকুমে কোন কাজ সংঘটিত হয়। এ বিষয়ে অবগতকারীরাই আহলে সুন্নাত ওয়াল জাম‘আত। ১২৩
টিকা━━━━━━━━━━━━━━━━━━━━
১২৩.
❏ তবে একটি বর্ণনা রয়েছে-
إِذَا تَحَيَّرْتُمْ فِي الْأُمُورِ فَاسْتَعِينُوا بِأَهْلِ الْقُبُورِ
-“যখন তোমরা কোন ব্যাপারে পেরেশান হও, তখন কবরবাসীদের (ওলীদের) নিকট সাহায্য প্রার্থনা করো।” (মোল্লা আলী ক্বারী, মেরকাত, ৪/১২৫৯ পৃ. হা/১৭৬৯)
❏ আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতের অন্যতম ইমাম, আল্লামা খাযেন আশ্শাফেয়ী (ওফাত.৭৪১হি.) এ বিষয়ে বলেন-
فَإِنَّ اَلإِسْتِعَانَةُ بِالمَخْلُوْقِ فِي دَفْعِ الضَّرَرِ جَائِزة
-‘‘দুঃখ কষ্ট দূর করার জন্য আল্লাহর মাখলুকের কাছ থেকে সাহায্য চাওয়া বৈধ।’’ (ইমাম খাযেন, লুবাবুত তাভিল ফি মা‘আনিত তানযিল, ২/৫৩০)
❏ বিখ্যাত মুহাদ্দিস ইমাম খতিবে বাগদাদী (رحمة الله) এ ঘটনাটির সনদসহ উল্লেখ করেন এভাবে-
أَخْبَرَنَا الْقَاضِي أَبُو عَبْد اللَّهِ الْحُسَيْنُ بْن عَلِيّ بْن مُحَمَّد الصيمري قال أنبأنا عمر بن إبراهيم قال نبأنا عَلِيّ بْن ميمون قَالَ: سمعت الشافعي يقول: إني لأتبرك بأبي حنيفة وأجيء إِلَى قبره في كل يوم- يَعْنِي زائرا- فإذا عرضت لي حاجة صليت ركعتين وجئت إِلَى قبره وسألت الله تعالى الحاجة عنده، فما تبعد عني حتى تقضى.
-‘‘ইমাম খতিবে বাগদাদী (رحمة الله) বলেন আমাকে.......তাকে আলী ইবনে মায়মুন (رحمة الله) বলেন, আমি ইমাম শাফেয়ী (رحمة الله) কে বলতে শুনেছি, আমি ইমাম আবু হানিফা (رحمة الله) এর উসিলায় প্রতিদিন তার যিয়ারত করার মানসে বরকত হাসিল করি এবং তাঁর মাজারে আসি। আমার কোন সমস্যা দেখা দিলে, প্রথমে দু’রাকাত নামায পড়ি। তাঁর মাজারের পাশে গিয়ে আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করি, তখন সহসা আমার সমাধান হয়ে যায়।’’ (খতিবে বাগদাদী, তারীখে বাগদাদ, ১/১৩৫পৃ. দারুল কুতুব ইলমিয়্যাহ, বয়রুত, লেবানন, ইবনে আবেদীন শামী, ফাতওয়ায়ে শামী, ১/৫৫পৃ. দারুল ফিকর ইলমিয়্যাহ, বয়রুত, লেবানন।)
তিনি দ্বীনের মুজতাহিদ ইমামদের থেকেও কতবড় হাদিস পন্ডিত তা সকলেরই জানা আছে। আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে এই সত্য গোপনকারী আলেম হতে হেফাজত করুন। আমিন।
━━━━━━━━━━━━━━━━━━━━
উপকারকারী
____________________
❏ বিষয় নং-১০: উপকারকারী:
দেওবন্দী ওহাবীরা বলে নবী করিম (ﷺ) আতায়ী ভাবে লাভ-ক্ষতির মালিক নয়। আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতের আকিদা হল সারকারে দুজাহান, শাফিয়ে মুজরিমা, হুযূর পুর নুর (ﷺ) কে আল্লাহ তা‘য়ালা লাভ-ক্ষতির মালিক করেছেন। কুরআনে পাকে মহান আল্লাহ বলেন-
وَمَا نَقَمُوا إِلَّا أَنْ أَغْنَاهُمُ اللَّهُ وَرَسُولُهُ مِنْ فَضْلِهِ
-“এ কথাই নয় কি যে, আল্লাহ ও রাসূল তাদের নিজ কৃপায় অভাব মুক্ত করে দিয়েছেন? (সূরা তাওবা, আয়াত নং-৭৪) তিনি আরও ইরশাদ করেন-
وَلَوْ أَنَّهُمْ رَضُوا مَا آتَاهُمُ اللَّهُ وَرَسُولُهُ وَقَالُوا حَسْبُنَا اللَّهُ سَيُؤْتِينَا اللَّهُ مِنْ فَضْلِهِ وَرَسُولُهُ إِنَّا إِلَى اللَّهِ رَاغِبُونَ
-‘‘এবং কতই ভাল হতো, যদি তারা তাতেই সুন্তুষ্ট হতো, যা আল্লাহ ও রাসূল তাদেরকে দিয়েছেন এবং বলতো, আল্লাহই আমাদের জন্য যথেষ্ট, এখন আল্লাহ আমাদেরকে দিচ্ছেন আপন করুণা থেকে এবং আল্লাহ রাসূল; আমরা আল্লাহরই প্রতি আসক্ত।’’ ১২৪
১২৪. সূরা তাওবা; আয়াত নং-৫৯
তিনি আরও ইরশাদ করেন-
وَمَا كَانَ لِمُؤْمِنٍ وَلَا مُؤْمِنَةٍ إِذَا قَضَى اللهُ وَرَسُولُهُ أَمْرًا أَنْ يَكُونَ لَهُمُ الْخِيَرَةُ مِنْ أَمْرِهِمْ وَمَنْ يَعْصِ اللهَ وَرَسُولَهُ فَقَدْ ضَلَّ ضَلَالًا مُبِينًا
-‘‘এবং না কোন মুসলমান পুরুষ, না কোন মুসলমান নারীর জন্য শোভা পায় যে, যখন আল্লাহ ও রাসূল কোন র্নিদেশ দেন তখন তাদের স্বীয ব্যাপারে কোন ইখতিয়ার থাকবে। এবং যে কেউ নিদের্শ অমান্য করে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের, নিশ্চয় সুস্পষ্ট বিভ্রান্তিতে পথভ্রষ্ট হয়েছে।’’ ১২৫
১২৫. ২২ পারা, ২য় রুকু, সূরা আহযাব, আয়াত নং-৩৬
তিনি আরও ইরশাদ করেন-
وَإِذْ تَقُولُ لِلَّذِي أَنْعَمَ اللهُ عَلَيْهِ وَأَنْعَمْتَ عَلَيْهِ
-‘‘এবং হে মাহবুব! স্মরণ করুন, যখন আপনি বলতেন তাকে, যাকে আল্লাহ অনুগ্রহ প্রদান করেছেন এবং আপনিও তাকে অনুগ্রহ প্রদান করেছেন।’’ ১২৬
১২৬. ২২ পারা, ২য় রুকু, সুরা আহযাব , আয়াত নং-৩৭
তিনি আরও ইরশাদ করেন-
وَلَوْ أَنَّهُمْ إِذْ ظَلَمُوا أَنْفُسَهُمْ جَاءُوكَ فَاسْتَغْفَرُوا اللهَ وَاسْتَغْفَرَ لَهُمُ الرَّسُولُ لَوَجَدُوا اللهَ تَوَّابًا رَحِيمًا
এবং যদি কখনো তারা নিজেদের আত্মার প্রতি যুলুম করে তখন, হে মাহবুব ! (তারা) আপনার দরবারে হাযির হয় এবং অতঃপর আল্লাহর নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করে, আর রাসূল তাদের পক্ষে সুপারিশ করেন, তবে অবশ্যই আল্লাহকে অত্যন্ত তাওবা কবুলকারী, দয়ালু পাবে।’’ ১২৭
১২৭. ৫ম পারা, ৬ রুকু, সুরা নিসা; আয়াত : ৬৪
তিনি আরও ইরশাদ করেন-
يَسْأَلُونَكَ عَنِ الْأَنْفَالِ قُلِ الْأَنْفَالُ لِلهِ وَالرَّسُولِ فَاتَّقُوا اللهَ وَأَصْلِحُوا ذَاتَ بَيْنِكُمْ وَأَطِيعُوا اللهَ وَرَسُولَهُ إِنْ كُنْتُمْ مُؤْمِنِينَ
-‘‘হে মাহবুব! আপনাকে গণীমতসমূহ সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করছে, আপনি বলুন, গণীমত সমূহের মালিক আল্লাহ ও তাঁর রাসূল; সুতরাং আল্লাহকে ভয় করো এবং পরস্পরের মধ্যে সদ্ভাব রাখো আর আল্লাহ ও রাসূলের নির্দেশ পালন করো; যদি ঈমান রাখো।’’ ১২৮
১২৮. ৯ম পারা, ১৫ রকু, সূরা আনফাল: ১
প্রিয় পাঠক! পবিত্র এই আয়াতগুলো ছাড়াও আরো অনেক আয়াত রয়েছে, যে গুলো দ্বারা প্রমাণিত হয় মহান আল্লাহর অনুগ্রহে রাসূলে কারিম (ﷺ) লাভ-ক্ষতির মালিক। আপনারা নিজেরাই চিন্ত করুন! কাউকে ধনী বানানো কাউকে দান করা, কাউকে দান করা, কাউকে অনুগ্রহ করা, কাউকে সুপারিশ করা, গণীমতের মালিক হওয়াই তো উপকারকারী হওয়া। অতঃপর সাহাবায়ে কেরাম রাসূলে কারিম (ﷺ)’র দরবার হতে ফয়েজ বরকত এবং উপকার লাভ করতেন। যেমনটি অসংখ্য হাদিস এসেছে। এরূপ কয়েকটি হাদিস বর্ণনা করা হবে।
পবিত্র কুরআনের যে সব আয়াত লাভ ক্ষতির মালিক না হওয়ার বর্ণনা এসেছে, তা হল স্বত্ত্বাগত মালিক হওয়াকে নাফি (নিষেধ) করা হয়েছে। আতায়ী বা দানকৃত মালিক হওয়াকে নাফি করা হয়নি। যদি আতায়ী বা দানকৃত মালিক হওয়াকে নাফি করা হয়, তবে উপরে যে সব আয়াত আমরা উল্লেখ করেছি, সেগুলোর ব্যাপারে কী করা হবে? মসলাকে হক্ব তথা আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতের পবিত্র কুরআনের প্রতিটি আয়াতের উপরই বিশ্বাস রাখে। যে আয়াতে নাফি করা হয়েছে তা সত্ত্বাগত, আর যেগুলো দ্বারা মালিক সাব্যস্থ হয়েছে তা আতায়ী বা দানকৃত। এখন কুরআনে কারিমে অন্য যেসব আয়াতের মধ্যে অন্যান্য নবীগণ (عليه السلام) কে লাভ-ক্ষতির মালিক বলা হয়েছে তা আলোচনা করা হবে। হযরত ঈসা (عليه السلام)’র একটি ঘটনা পবিত্র কুরআনে এভাবে এসেছে।
হযরত ঈসা (عليه السلام) বলেন,
أَنِّي أَخْلُقُ لَكُمْ مِنَ الطِّينِ كَهَيْئَةِ الطَّيْرِ فَأَنْفُخُ فِيهِ فَيَكُونُ طَيْرًا بِإِذْنِ اللَّهِ
-‘‘আমি তোমাদের জন্য মাটি দ্বারা পাখী সদৃশ আকৃতি গঠন করে থাকি, অতঃপর সেটার মধ্যে ফুৎকার করি। তখন সেটা তৎক্ষনাৎ পাখী হয়ে যায় আল্লাহর নির্দেশে।’’ ১২৯
১২৯. ৩য় পারা ১৩ রুকু, সুরা আলে ইমরান, আয়াত নং-৪৯
এখন মাটি থেকে পাখির আকৃতি বানানো হযরত ঈসা (عليه السلام)’র কাজ, ফুৎকার করাও হযরত ঈসা (عليه السلام)’র কাজ। যখন ফুৎকার দেন তখন আল্লাহর হুকুমে তা উড়ে যায়। এর থেকে যদি হযরত ঈসা (عليه السلام)’র উপকার করার এবং পূর্ণতা অর্জনের বিষয় প্রমাণিত না হয় তবে কোথা হতে হবে? হযরত ঈসা (عليه السلام) উপকারের এই বিষয়টি পবিত্র কুরআন আল্লাহ বর্ণনা করে হযরত ঈসা (عليه السلام)’র মর্যাদা প্রকাশ করেছেন। আর এর চেয়ে অনেক অনেক বেশি মর্যাদা বান হল আমার প্রিয় নবী (ﷺ)’র শান। নিন্মোক্ত আয়াত হতে হযরত ঈসা (عليه السلام)’র উপকারী হওয়ার বিষয়টি আরো বেশি প্রমাণিত।
وَأُبْرِئُ الْأَكْمَهَ وَالْأَبْرَصَ وَأُحْيِ الْمَوْتَى بِإِذْنِ اللَّهِ
-‘‘এবং আমি নিরাময় করি জন্মান্ধ ও সাদা দাহা সম্পন্ন (কুষ্ঠ রোগী) কে আর আমি মৃতকে জীবিত করি আল্লাহর নির্দেশে।’’ ১৩০
১৩০. ৩য় পারা, ১৩ রুকু, সুরা আলে ইমরান, আয়াত ৪৯
হযরত ঈসা (عليه السلام)’র মাধ্যমে আল্লাহর হুকুমে আরোগ্য লাভ, কুষ্টরোগ ভাল এবং মৃত ব্যক্তিকে জীবিত করার এসব বিষয় উপকারী না হলে আর কোন গুলো হবে?
এই সমস্ত দেওবন্দীরা কোন মুখে ঈসাইদের সামনে বলবে যে, নবী করিম (ﷺ) লাভ-ক্ষতির মালিক নয়। কুরআন পাকেই যখন তাদের নবী হযরত ঈসা (عليه السلام) লাভ-ক্ষতির মালিক হিসেবে প্রমাণিত? হযরত জিবরাঈল (عليه السلام) যখন হযরত মারিয়াম (عليه السلام)’র সামনে এসে বললেন, আমি আপনাকে একটি সন্তান দিতে এসেছি; তবে কি জিবরাঈল (عليه السلام) উপকার দাতা নন?
শেষমেষ জিবরাঈল (عليه السلام)ও তো মাখলুক। পবিত্র কুরআনে তাঁর বর্ণনা এভাবে এসেছে যে,
قَالَ إِنَّمَا أَنَا رَسُولُ رَبِّكِ لِأَهَبَ لَكِ غُلَامًا زَكِيًّا
-“বললো, ‘আমি তো তোমার রবের প্রেরিত আমি তোমাকে এক পবিত্র পুত্র দান করবো।’’ ১৩১
১৩১. সূরা মারিয়াম, আয়াত নং-১৯
অনুরূপভাবে হযরত ইউসুফ (عليه السلام)’র বরকতে হযরত ইয়াকুব (عليه السلام)’র দৃষ্টি শক্তি ফিরে আসার বিষয়টিও পবিত্র কুরআনে এসেছে। দৃষ্টিশক্তি ফিরে আসাটা কী উপকার নয়? অবশ্যই, তা উপকার। এখন কুরআনে পাকের উপর্যুক্ত আয়াত পেশ করা হবে যাতে উপরোক্ত বিষয়টি বিদ্যমান। হযরত ইউসুফ (عليه السلام) বলেন-
اذْهَبُوا بِقَمِيصِي هَذَا فَأَلْقُوهُ عَلَى وَجْهِ أَبِي يَأْتِ بَصِيرًا
-“আমার এই জামা নিয়ে যাও। এটা আমার পিতার মুখমন্ডল এর উপর রেখে দিও, তিনি দৃষ্টিশক্তি ফিরে পাবেন। আর তোমাদের পরিবারের সকলকে আমার নিকট নিয়ে এসো।’’ ১৩২
১৩২. ১৩ পারা, ৪ রুকু , সুরা ইউসুফ, আয়াত নং-৯৩
فَلَمَّا أَنْ جَاءَ الْبَشِيرُ أَلْقَاهُ عَلَى وَجْهِهِ فَارْتَدَّ بَصِيرًا
-“অতঃপর যখন সুসংবাদদাতা উপস্থিত হলো, তখন সে জামাটা ইয়াকুবের মুখের উপর রাখলো। তখনই তার দৃষ্টিশক্তি ফিরে এলো।’’ ১৩৩
১৩৩. ১৩ পারা, রুকু ৫, সুরা ইউসুফ, আয়াত নং-৯৬
প্রিয় পাঠক! উপরোক্ত আয়াতগুলোতে হযরত ঈসা (عليه السلام), হযরত ইউসুফ (عليه السلام) এবং জিবরাঈল (عليه السلام) উপকারী হওয়ার বিষয়টি দিবালোকের ন্যায় স্পষ্ট। এখন সাধারণ কোন মুসলমানের কাছে জিজ্ঞাসা করুন যে, নবীগণের মধ্যে সবচেয়ে বড় কে? অবশ্যই উত্তরে তিনি বলবেন সর্বশ্রেষ্ঠ নবী রাসুলে কারিম (ﷺ) সবচেয়ে বড়। সুতরাং অন্যান্য নবীগণ যখন উপকার করতে পারেন তবে রাসূল করিম (ﷺ)’র ব্যাপারে কেন মুসলমানগণ অস্বীকার করবে? প্রকৃত মুসলমান তো সে ব্যক্তিই হবে যে রাসূলে করিম (ﷺ) কে উপকারী মনে করে। এবং হাজতপূর্ণকারী মানে। এজন্য আ’লা হযরত আজিমুল বরকত শাহ আহমদ রেযা (رحمة الله) বলেন-
رافع نافع دافع شافع
كيا كيا رحمت لاتے يہ ہيں
‘‘উন্নত-হিতকর, বিতাড়ক-অনুরোধবর
কীরূপ আশিষ ত্রানে, বড়ই দয়াধর।’’
এখন এর সমর্থনে হাদীস শরীফ বর্ণনা করা হবে।
হযরত মা‘ইজ (رضي الله عنه)‘র আকিদা
____________________
হযরত মা‘ইজ (رضي الله عنه)‘র আকিদা:
সাহাবী হযরত মা‘ইজ ইবনে মালেক (رضي الله عنه) হতে একটি বড় পাপ প্রকাশ পেল। তখন তিনি রাসূল (ﷺ)’র দরবারে গিয়ে বলেন,
يَا رَسُولَ اللهِ طَهِّرْنِي.
-‘‘হে রাসূল (ﷺ) আমাকে পবিত্র করুন।’’ ১৩৪
১৩৪. খতিব তিবরিযি, মিশকাত শরীফ, ২/১০৫৮ পৃ. হা/৩৫৬২, ইমাম মুসলিম, আস-সহীহ, ৩/১৩২১ পৃ. হা/১৬৯৫
সাহাবী গুনাহ করেছেন আল্লাহর কাছে কিন্তু তিনি নবী করিম (ﷺ)’র দরবারে এসে আরয করলেন ‘আমাকে পবিত্র করুন’ বুঝা গেল রাসূল (ﷺ) কে সাহাবায়ে কেরাম উপকার দাতা হিসেবে জানতেন। এজন্যই সাহাবী (رضي الله عنه) গণ এরূপ আরয করছেন। রাসূলে করিম (ﷺ) ইরশাদ করেন
إِنَّمَا أَنَا قَاسِمٌ وَيُعْطِي اللَّهُ عَزَّ وَجَلَّ
-“নিশ্চয়ই আমি বন্টন করি, আর আল্লাহ আমাকে দান করেন।’’ ১৩৫
১৩৫. বুখারী শরীফ ৪র্থ খণ্ড ৮৪ পৃ, মুসনাদে আবি ই‘য়ালা, ১০/২৩৮ পৃ. হা/৫৮৫৫, ইমাম তাবরানী, মু‘জামুল কাবীর, ১৯/৩২৯ পৃ. হা/৭৫৫
হাদিস শরীফ হতে বুঝা গেল, রাসূলে করিম (ﷺ) সমস্ত পৃথিবীর মধ্যে বন্টন কারী। আর যিনি বন্টনকারী হন, তিনি উপকারকারী।
সায়্যিদুনা রবী‘আ বিন মালেক (رضي الله عنه)’র আকিদা
____________________
সায়্যিদুনা রবী‘আ বিন মালেক (رضي الله عنه)’র আকিদা:
হযরত রবী‘আ (رضي الله عنه) রাসূল (ﷺ) দরবারে আরয করেন-
أَسْأَلُكَ مُرَافَقَتَكَ فِي الْجَنَّةِ.
-“আমি আপনার কাছে প্রার্থনা করছি জান্নাতে আমি আপনার সাথে থাকবো।’’ ১৩৬
১৩৬. খতিব তিবরিযি, মিশকাত শরীফ, (৮৬ পৃ.), ১/২৮১ পৃ. হা:৮৯৬, মুসলিম শরীফ, ১ম খণ্ড, ৩৫৩ পৃ. হা/৪৮৯, ইমাম বাগভী, শরহে সুন্নাহ, ৩/১৪৯ পৃ. হা/৬৫৫
প্রিয় পাঠক! কুরআন সুন্নাহর আলোকে প্রমাণিত হল নবী করিম (ﷺ) উপকার করার মালিক। এজন্য দেওবন্দী এবং গাইরে মুকাল্লিদ ওহাবীরা আ্হলে সুন্নাত ওয়াল জাম‘আত নয়।
উসিলা
____________________
❏ বিষয় নং-১১: উসিলা
দেওবন্দী ওহাবীদের আকিদা হল উসিলা জায়েয নয়। আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতের আকিদা হল উসিলা জায়েয। আল্লাহ তা‘য়ালা কুরআন মাজীদে ইরশাদ করেন-
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا اتَّقُوا اللهَ وَابْتَغُوا إِلَيْهِ الْوَسِيلَةَ وَجَاهِدُوا فِي سَبِيلِهِ لَعَلَّكُمْ تُفْلِحُونَ
-“হে ঈমানদারগণ! আল্লাহকে ভয় করো এবং তাঁর দিকে মাধ্যম তালাশ করো এবং তাঁর পথে জিহাদ করো এ আশায় যে, সফলতা পেতে পারো।’’ (সুরা মায়েদা আয়াত, ৩৫)
وَلَوْ أَنَّهُمْ إِذْ ظَلَمُوا أَنْفُسَهُمْ جَاءُوكَ فَاسْتَغْفَرُوا اللهَ وَاسْتَغْفَرَ لَهُمُ الرَّسُولُ لَوَجَدُوا اللهَ تَوَّابًا رَحِيمًا
-“এবং যদি কখনো তারা নিজেদের আত্মার প্রতি যুলুম করে তখন, হে মাহবুব! (তারা) আপনার দরবারে হাযির হয় এবং অতঃপর আল্লাহর নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করে, আর রাসূল তাদের পক্ষে সুপারিশ করেন, তবে অবশ্যই আল্লাহকে অত্যন্ত তাওবা কবূলকারী দয়ালু পাবে।’’ ১৩৭
১৩৭. ৫ম পারা , ৭ রুকু, সুরা নিসা, আয়াত নং- ৬৪
সম্মানিত পাঠকবৃন্দ! এই আয়াতের তাফসীরে মুফাস্সিরগণ একটি ঘটনা বর্ণনা করেন, নিম্মে তা বর্ণিত হল:
جاء أعرابي بعد دفنه عليه السلام فرمى بنفسه على قبره وحثا من ترابه على رأسه وقال يا رسول الله قلت فسمعنا وكان فيما أنزل عليك ولو أنهم إذ ظلموا
النساء (৬৫ থ ৬৯) أنفسهم الآية وقد ظلمت نفسي وجئتك أستغفر الله من ذنبي فاستغفر لي من ربي فنودي من قبره قد غفر لك
-‘‘রাসুলে করিম (ﷺ) ইন্তেকালের পর এক বেদুঈন এসে রওযা শরীফের মাটি মুবারক নিজের মাথার উপর মালিশ করে এবং আরয করতে লাগল। হে রাসূল (ﷺ)! আপনার উপর নিম্নোক্ত আয়াত নাযিল হয়। আমি আমার নফসের উপর যুলুম করেছি। এখন আপনার দরবারে এসেছি আল্লাহর কাছে গুনাহ মার্জনা করার জন্য। তখন রওজা মুবারক হতে আওয়াজ আসে। তোমার পাপ ক্ষমা করা হল।’’ ১৩৮
১৩৮. ইমাম নাসাফী, তাফসীরে মাদারিক, ১ম খণ্ড ৩৭০ পৃ., শায়খ আবদুল হক মুহাদ্দিস দেহলভী, জুযবুল কুলুব, (ফার্সী), ২১১ পৃ.
মহান রব তা‘য়ালা ইরশাদ করেন-
وَكَانُوا مِنْ قَبْلُ يَسْتَفْتِحُونَ عَلَى الَّذِينَ كَفَرُوا فَلَمَّا جَاءَهُمْ مَا عَرَفُوا كَفَرُوا بِهِ فَلَعْنَةُ اللَّهِ عَلَى الْكَافِرِينَ
-‘‘কাফেরদের উপর বিজয় প্রার্থনা করতো, অতঃপর যখন তাশরীফ এসেছেন তাদের নিকট সেউ পরিচিত সত্ত্বা, তখন তাঁকে অস্বীকারকারী হয়ে বসেছে। এতএব আল্লাহর লা’নত (অভিশাপ) অস্বীকার কারীদের উপর।’’১৩৯
১৩৯. ১ম পারা ১১ রুকু, সুরা বাকারা, আয়াত নং-৮৯
মুফাস্সিরগণ এই আয়াতের ব্যাখ্যায় বলেন, হুযুর পুর নুর (ﷺ) উসিলা নিয়ে ইহুদীরা প্রার্থনা করতো।
সায়্যিদুনা আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (رضي الله عنه)’র আকিদা
____________________
সায়্যিদুনা আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (رضي الله عنه)’র আকিদা:
সায়্যিদুল মুফাস্সিরিন হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (رضي الله عنه) বলেন, ইহুদীরা কাফেরদের উপর বিজয় লাভের জন্য নিন্মোক্ত প্রার্থনা করত-
اللَّهُمَّ إِنَّا نَسْتَنْصِرُكَ بِحَقِّ النَّبِي الْأُمِّي إِلاَّ نصرتنا عَلَيْهِم
-‘‘হে আল্লাহ আমাদেরকে নবীয়ে উম্মী (ﷺ)’র উসিলায় মুশরিকদের উপর বিজয় দান করুন।’’ ১৪০
১৪০. ইমাম সুয়ূতি, তাফসীরে দুররে মানসুর, ১ম খণ্ড ২১৬ পৃ.
ইমাম ফখরুদ্দীন রাজী (رحمة الله)’র আকিদা
____________________
ইমাম ফখরুদ্দীন রাজী (رحمة الله)’র আকিদা:
ইমাম ফখরুদ্দীন রাজী (رحمة الله) ইসলামি দুনিয়ার বিখ্যাত মুফাস্সির। তিনিও আলোচ্য আয়াতের তাফসীরে বলেন-
اللَّهُمَّ افْتَحْ عَلَيْنَا وَانْصُرْنَا بِالنَّبِيِّ الْأُمِّيِّ.
-“হে আল্লাহ! নবীয়ে উম্মী (ﷺ) উসিলায় আমাদেরকে বিজয় দান করুন এবং সাহায্য করুন।’’ ১৪১
১৪১. ইমাম ফখরুদ্দীন রাজী, তাফসীরে কাবীর, ৩/৫৯৮ পৃ., ইমাম আবু হাফস সিরাজুদ্দীন উমর বিন দামেস্কী হানাফী, লুবাব ফি উলূমিল কিতাব, ২/২৭৬ পৃ.
হযরত আবু আলিয়া (رضي الله عنه)’র আকিদা
____________________
হযরত আবু আলিয়া (رضي الله عنه)’র আকিদা:
তাবেয়ী হযরত আবুল আলিয়া (رحمة الله) বর্ণনা করেন ইহুদিরা প্রার্থনা করতো-
اللَّهُمَّ ابْعَثْ هَذَا النَّبِيَّ الَّذِي نَجِدُهُ مَكْتُوبًا عِنْدَنَا حَتَّى يُعَذِّبَ الْمُشْرِكِينَ وَيَقْتُلُهُمْ.
-‘‘হে আল্লাহ এমন নবী (ﷺ) কে প্রেরণ করুন, যাঁর কথা আমরা তাওরাতে পেয়েছি, যাতে তিনি ইহুদিদের শাস্তি এবং কতল করতে পারেন।’’ ১৪২
১৪২. ইমাম তবারী, তাফসিরে তবারী, ২/২৪০ পৃ.
আল্লামা ইবনে জারীর তাবারী (رحمة الله) র আকিদা
____________________
আল্লামা ইবনে জারীর তাবারী (رحمة الله) র আকিদা:
ইমাম ইবনে জারীর তাবারী (رحمة الله) এই আয়াতের তাফসীরে বলেন-
عَنْ عَلِيٍّ الْأَزْدِيِّ: فِي قَوْلِ اللَّهِ: {وَكَانُوا مِنْ قَبْلُ يَسْتَفْتِحُونَ عَلَى الَّذِينَ كَفَرُوا} [البقرة: ৮৯] قَالَ: الْيَهُودُ، كَانُوا يَقُولُونَ: اللَّهُمَّ ابْعَثْ لَنَا هَذَا النَّبِيَّ يَحْكُمُ بَيْنَنَا وَبَيْنَ النَّاسِ
-‘‘ইহুদী প্রার্থনা সুরে বলত, হে আল্লাহ! নবী করিম (ﷺ) কে প্রেরণ করুন, যিনি আমাদের এবং মানুষের মাঝে ফায়সালা করবেন এবং যাঁর উসিলা নিয়ে লোকেরা দোয়া করে বিজয়ী হবে এবং সাহায্য প্রার্থনা করবে।’’ ১৪৩
১৪৩. ইমাম তবারী, তাফসিরে তবারী, ২/২৩৮ পৃ.
আল্লামা জালালুদ্দিন সুয়ূতি (رحمة الله), আল্লামা শরবিনী (رحمة الله), আল্লামা নাসাফী (رحمة الله), ইমাম নিশাপুরী (رحمة الله), আল্লামা আবুস সাউদ (رحمة الله)’র আকিদা
____________________
আল্লামা জালালুদ্দিন সুয়ূতি (رحمة الله), আল্লামা শরবিনী (رحمة الله), আল্লামা নাসাফী (رحمة الله), ইমাম নিশাপুরী (رحمة الله), আল্লামা আবুস সাউদ (رحمة الله)’র আকিদা:
উম্মতে মুহাম্মদী (ﷺ)’র এই মহান মুফাস্রিগণ এই আয়াতের তাফসীরে বলেন, ইহুদীরা আল্লাহর দরবারে প্রার্থনা করে বলতো-
اللَّهُمَّ انْصُرْنَا عَلَيْهِمْ بِالنَّبِيِّ الْمَبْعُوثِ فِي آخِرِ الزَّمَانِ الَّذِي نَجِدُ صِفَتَهُ فِي التَّوْرَاةِ،
-‘‘হে আল্লাহ! আমাদেরকে সাহায্য করুন, এমন নবী (ﷺ)’র উসিলায় যিনি শেষ জামানায় প্রেরিত হবে। যাঁর গুণাবলি সম্পর্কে আমরা তাওরাতে জেনেছি।’’ ১৪৪
১৪৪. তাফসীরে মাদারেক, ১ম খণ্ড ৩৭০ পৃ., জালালাইন ১ম খণ্ড ১৪ পৃ., তাফসিরে নিশাপুরী ১ম খণ্ড ৩২৭ পৃ., তাফসিরে সিরাতুম মুনীর, ১ম খণ্ড ৭৩ পৃ., তাফসিরে জামেউল বয়ান, ১ম খণ্ড ১৬ পৃ., তাফসিরে কাশশাফ, ১ম খণ্ড ২৯৬ পৃ., ইমাম বাগভী, তাফসিরে মা‘লিমুত তানযিল, ইমাম আবু হাফস সিরাজুদ্দীন উমর বিন দামেস্কী হানাফী, লুবাব ফি উলূমিল কিতাব, ২/২৭৬ পৃ., ইমাম সাম‘আনী, তাফসিরে সাম‘আনী, ১/১০৮ পৃ., ইমাম খাযেন, তাফসিরে খাযেন, ১/৬০ পৃ., তাফসিরে মানার, ১/৩১৫ পৃ.
মুহাদ্দিস ইবনে জাওযী (رحمة الله)-এর আক্বিদা
____________________
মুহাদ্দিস ইবনে জাওযী (رحمة الله)-এর আক্বিদা:
ইমাম আবুল ফারাহ আবদুর রহমান জাওযী (رحمة الله) বলেন-
عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ: أَنْ يَهُودَ، كَانُوا يَسْتَفْتِحُونَ عَلَى الْأَوْسِ وَالْخَزْرَجِ بِرَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَبْلَ مَبْعَثِهِ.
-“হযরত ইবনে আব্বাস (رضي الله عنه) বলেন, নিশ্চয়ই ইহুদীরা আউস এবং খাযরাজে গোত্রের উপর বিজয় হওয়ার জন্য রাসূল (ﷺ)’র প্রেরণের পূর্বে তাঁর উসিলা নিয়ে প্রার্থনা করত। ১৪৫
টিকা━━━━━━━━━━━━━━━━━━━━
১৪৫.
ইবনে জাওযী, কিতাবুল ওয়াফা বিআহওয়ালিল মুস্তফা, ১ম খণ্ড ৪৪ পৃ., ইমাম তবারী, তাফসিরে তবারী, ২/২৩৭ পৃ., ইমাম মাওয়ারিদী, তাফসিরে মাওয়ারিদী, ১/১৫৮ পৃ., ইমাম ইবনে আবি হাতেম, তাফসিরে ইবনে আবি হাতেম, ১/১৭২ পৃ., ইমাম সুয়ূতি, তাফসিরে দুররুল মানসূর, ১/২১৭ পৃ., ইমাম আবু হাফস সিরাজুদ্দীন উমর বিন দামেস্কী হানাফী, লুবাব ফি উলূমিল কিতাব, ২/৩১৭ পৃ., ইবনে কাসির, তাফসিরে ইবনে কাসির, ১/২১৭ পৃ., ইমাম আবু সাউদ, তাফসিরে আবিস সাউদ, ১/১২৮ পৃ., ইমাম নিশাপুরী, তাফসিরে নিশাপুরী, ১/৩৪৪ পৃ.,
❏ ইমাম ফখরুদ্দীন রাজী (رحمة الله) এটি উল্লেখ করে লিখেন-
عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ وَقَتَادَةَ وَالسُّدِّيِّ.
-‘‘এমনটি রঈসুল মুফাস্সিরীন হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (رضي الله عنه), তাবেয়ী কাতাদা (رحمة الله), তাবেয়ী ইমাম সুদ্দী (رحمة الله)-এর ব্যাখ্যা।’’ (ইমাম রাজী, তাফসিরে কাবীর, ৩/৫৯৯ পৃ.)
━━━━━━━━━━━━━━━━━━━━
হযরত কাতাদাহ (رضي الله عنه) র আকিদা
____________________
হযরত কাতাদাহ (رضي الله عنه) র আকিদা:
জলিলুল কদর মুফাস্সির হযরত কাতাদাহ (رضي الله عنه) এই আয়াতের তাফসীরে বলেন-
عَنْ قَتَادَةَ: قَوْلُهُ: {وَكَانُوا مِنْ قَبْلُ يَسْتَفْتِحُونَ عَلَى الَّذِينَ كَفَرُوا} [البقرة: ৮৯] كَانَتِ الْيَهُودُ تَسْتَفْتِحُ بِمُحَمَّدٍ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَلَى كُفَّارِ الْعَرَبِ مِنْ قَبْلُ، وَقَالُوا: اللَّهُمَّ ابْعَثْ هَذَا النَّبِيَّ الَّذِي نَجِدُهُ فِي التَّوْرَاةِ يُعَذِّبُهُمْ وَيَقْتُلُهُمْ.
-‘‘ইহুদীরা রাসূলে কারিম (ﷺ)’র উসিলা নিয়ে কাফেরদের উপর বিজয় কামনা করত। তারা বলত, হে আল্লাহ! এমন নবী (ﷺ) কে প্রেরণ করুন, যাঁর গুণাবলী আমরা তাওরাতে পেয়েছি যাতে আমরা তাদেরকে শাস্তি ও কতল করতে পারি।’’ ১৪৬
১৪৬. ইমাম ইবনে জাওযী, কিতাবুল ওয়াফা ১ম খণ্ড , ৪৪-৪৫ পৃ., ইমাম তাবারী, তাফসিরে তবারী, ২/২৩৯ পৃ., ইমাম আবু লাইস সমরকুন্দী, তাফসিরে বাহরুল উলূম, ১/৯৬ পৃ., ইমাম সুয়ূতি, তাফসিরে দুররুল মানসূর, ১/২১৬ পৃ.
ইমাম আবু নাঈম, বায়হাকী, হাকিম এবং শাহ আব্দুল আযিয মুহাদ্দেস দেহলভী (رحمة الله)’র আক্বিদা
____________________
ইমাম আবু নাঈম, বায়হাকী, হাকিম এবং শাহ আবদুল আযিয মুহাদ্দেস দেহলভী (رحمة الله)’র আক্বিদা:
আল্লামা শাহ আবদুল আযিয মুহাদ্দিস দেহলভী (رحمة الله) এই আয়াতের তাফসীরে বলেন,
اللَّهُمَّ إِنَّا نَسْأَلك بِحَق مُحَمَّد النَّبِي الْأُمِّي الَّذِي وعدتنا أَن تخرجه لنا فِي آخر الزَّمَان وبكتابك الَّذِي تنزل عَلَيْهِ الَّذِي وعدتنا
-“হে আল্লাহ! হে আমাদের পরওয়ারদিগার! আমরা আপনার কাছে ওই নবী (ﷺ)’র উসিলায় প্রার্থনা করছি। যাঁকে প্রেরণ করার আপনি অঙ্গীকার করেছেন। ওই কিতাবের বরকতে যা আপনি তাঁর উপর অবর্তীণ করেছেন সকল কিতাবের পরে। সুতরাং আমাদের দুশমনের উপর আমাদেরকে বিজয় দান করুন।’’ ১৪৭
১৪৭. ইমাম সুয়ূতি, তাফসিরে দুররুল মানসূর, ১/২১৬ পৃ., তাফসিরে ফতহুল আযিয, ৩৩৯ পৃ.
রাসূলে আজম (ﷺ)’র আক্বিদা
____________________
রাসূলে আজম (ﷺ)’র আক্বিদা:
হযরত উসমান বিন হানিফ (رضي الله عنه) বর্ণনা করেন, এক অন্ধ ব্যক্তি রাসূলে কারিম (ﷺ)’র দরবারে এসে আরয করেন, হে রাসূল (ﷺ)! আমার জন্য একটু দোয়া করুন যেন আমার দৃষ্টিশক্তি ফিরে আসে। তখন রাসূলে কারিম (ﷺ) তাকে বললেন যাও, অযু করে দু’রাকাত নামায পড়ে নিম্নোক্ত ভাবে প্রার্থনা কর:
"اللَّهُمَّ إِنِّي أَسْأَلُكَ، وَأَتَوَجَّهُ إِلَيْكَ بِمُحَمَّدٍ نَبِيِّ الرَّحْمَةِ، يَا مُحَمَّدُ، إِنِّي قَدْ تَوَجَّهْتُ بِكَ إِلَى رَبِّي فِي حَاجَتِي هَذِهِ لِتُقْضَى، اللَّهُمَّ شَفِّعْهُ فِيَّ
-“হে আল্লাহ! আমি আপনার কাছে প্রার্থনা করছি, আপনার দিকে মনোনিবেশ করছি আপনার মাহবুব (ﷺ)’র উসিলায়। হে রাসূল (ﷺ)! আপনার উসিলা নিয়ে আমার রবের প্রতি মনোনিবেশ করছি আমার এই হাজত পূরণের জন্য। হে আল্লাহ! আমার হকে আপনার মাহবুবের শাফায়াত কবুল করুন।’’ ১৪৮
১৪৮. ইমাম ইবনে মাজাহ, আস-সুনান, ২/৩৯৫ পৃ. হা/১৩৮৫
আল্লামা আবদুল গণী দেহলভী (رحمة الله) ইবনে মাজাহ শরীফের হাশিয়ায় এই হাদিসের ব্যাখ্যায় বলেন-
قَالَ الشَّيْخُ عَبْدُ الْغَنِيِّ فِي إِنْجَاحِ الْحَاجَةِ ذَكَرَ شَيْخُنَا عَابِدٌ السِّنْدِيُّ فِي رِسَالَتِهِ وَالْحَدِيثُ يَدُلُّ عَلَى جَوَازِ التَّوَسُّلِ وَالِاسْتِشْفَاعِ بِذَاتِهِ الْمُكَرَّمِ فِي حَيَاتِهِ وَأَمَّا بَعْدَ مَمَاتِهِ
-‘‘এই হাদিস উসিলা বৈধ হওয়ার দলীল এবং তাঁর হায়াত ও ইন্তেকালের পর সুপারিশকারী হওয়ার দলিল।’’ ১৪৯
১৪৯. ইমাম সুয়ূতি, মিসবাহুজ জুয্যাহ, ১/৯৯ পৃ. আব্দুর রহমান, মোবারকপুরী, তুহফাতুল আহওয়াজী, ১০/২৫ পৃ., উবাইদুল্লাহ মোবারকপুরী, মের‘আত, ৮/২৬৫ পৃ.
হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (رضي الله عنه)’র হতে বর্ণিত। রাসূলে পাক (ﷺ) আল্লাহর দরদারে আরয করলেন-
وَعَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ - رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمَا - عَنِ النَّبِيِّ - صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ - قَالَ: اللَّهُمَّ أَعِزَّ الْإِسْلَامَ بِأَبِي جَهْلِ بْنِ هِشَامٍ، أَوْ بِعُمَرَ بْنِ الْخَطَّابِ فَأَصْبَحَ عُمَرُ، فَغَدَا عَلَى النَّبِيِّ - صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ - فَأَسْلَمَ، ثُمَّ صَلَّى فِي الْمَسْجِدِ ظَاهِرًا . رَوَاهُ أَحْمَدُ، وَالتِّرْمِذِيُّ.
-“হে আল্লাহ! আপনি ইসলামকে মর্যাদাবান করুন আবু জাহল বিন হিশাম অথবা উমর ইবনুল খাত্তাব দ্বারা। অতঃপর হযরত উমর বিন খাত্তাব (رضي الله عنه) প্রত্যুষে রাসূলে পাক (ﷺ)’র দরবারে উপস্থিত হয়ে ইসলাম গ্রহণ করেন এবং রাসূলে পাক (ﷺ)’র পেছনে প্রকাশ্যে মসজিদে নামায পড়েন। ১৫০
১৫০. খতিব তিবরিযি, মিশকাত, ৩/১৭০৪ পৃ. হা/৬০৪৫, ৫৫৭ পৃ: তিরমিযী শরীফ ২য় খণ্ড ২০০ পৃ:, ইমাম বাগভী, শরহে সুন্নাহ, ১৪/৯২ পৃ. হা/৩৮৮৫
সায়্যিদুনা আদম (عليه السلام)’র আকিদা
____________________
সায়্যিদুনা আদম (عليه السلام)’র আকিদা:
ইমাম তাবরানী (رحمة الله), ইমাম সুয়ূতি (رحمة الله), আল্লামা হাকেম (رحمة الله), আল্লামা ইবনে আসাকীর (رحمة الله), আল্লামা জুরকানী (رحمة الله), আল্লামা ইবনে জাওযী (رحمة الله), আল্লামা কাস্তাল্লানী (رحمة الله), আল্লামা শায়খ ইউসুফ নাবহানী (رحمة الله) এবং শাহ আবদুল আযিয মুহাদ্দিসে দেহলবী (رحمة الله) প্রমুখ মুহাদ্দীসগণ তাঁদের নিজ নিজ কিতাবে বর্ণনা করেন যখন হযরত আদম (عليه السلام) হতে অপ্রকাশিত্য ভাবে ভুল প্রকাশিত হল। তখন তিনি আল্লাহর দরবারে রাসূলে পাক (ﷺ)’র উসিলা নিয়ে নিম্নোক্তভাবে দোয়া করেন-
يَا رَبِّ أَسْأَلُكَ بِحَقِّ مُحَمَّدٍ لَمَا غَفَرْتَ لِي
-‘‘হে আমার পরওয়ারদিগার হযরত মুহাম্মদ (ﷺ)’র উসিলায় আমাকে ক্ষমা করে দিন।’’ ১৫১
১৫১. ইমাম হাকেম নিশাপুরীঃ আল মুস্তাদরাকঃ ২/৬৭২ পৃ. হা/৪২২৮, ইমাম তাবরানীঃ মু’জামুল আওসাত : ৬/৩১৩ হাদিসঃ ৬৫০২, তাবরানীঃ মু’জামুস সগীর : ২/১৮২ হাদিসঃ ৯৯২, ইবনে হাজার হায়সামীঃ মাযমাউদ যাওয়াইদ : ৮/২৫৩ : পৃ., ইমাম ইবনে আসাকিরঃ- তারিখে দামেস্ক : ৭/৪৩৭, আল্লামা ইবনে কাসীর, বেদায়া ওয়ান নেহায়া, ১/১৮ পৃ., ইমাম জালালুদ্দীন সুয়ূতি, খাসায়েসুল কোবরা, ১/১২ হাদিসঃ ১২, ইমাম বুরহান উদ্দিন হালবীঃ সিরাতে হালবিয়্যাহ ১/৩৫৫ পৃ., ইমাম কাস্তাল্লানীঃ মাওয়াহেবে লাদুনীয়া, ১/৮২ পৃ., ইমাম জালালুদ্দীন সুয়ূতিঃ তাফসীরে দুররে মানসুর, ১/১৪২ পৃ., ইমাম বায়হাকীঃ দালায়েলুল নবুয়তঃ ৫/৪৮৯ পৃ., ইমাম হাকেম নিশাপুরীঃ আল মাদখালঃ ১/১৫৪ পৃ., ইমাম আবু নুয়াইম ইস্পাহানীঃ হিলইয়াতুল আউলিয়া, আল্লামা শায়খ ইউসুফ নাবহানী : শাওয়াহিদুল হক্ব : পৃ নং: ১৩৭, আল্লামা শায়খ ইউসুফ নাবহানী : আনোয়ার-ই-মুহাম্মদিয়া : পৃ নং: ৯-১০, আল্লামা শাহ আ: আজীজ মুহাদ্দিস দেহলভী : তাফসীর-ই-আযীযী : প্রথম খন্ডঃ পৃ-১৮৩, আল্লামা শায়খ ইউসুফ নাবহানী : আফযালুস্ সালাত : পৃ-১১৭, আল্লামা ইসমাঈল হাক্কী : তাফসীরে রুহুল বায়ান: ২/৩৭০ পৃ. সূরা মায়েদা: আয়াত নং-১৫, আল্লামা ইবনে হাজার হায়সামী : শরহে শামায়েল : ১/১১৫ পৃ., আল্লামা শায়খ ইউসূফ নাবহানী : জাওয়াহিরুল বিহার : ২/১১৪ পৃ:, ইমাম জুরকানীঃ শরহে মাওয়াহেবে লাদুন্নীয়া, ১/১৭২ পৃ., শায়খ ইউসুফ নাবহানী : হুজ্জাতুল্লাহি আলাল আলামিন : ৭৯৫ পৃ. এবং ৩১ পৃ., মাকতুবাতুত- তাওফিকহিয়্যাহ্, কায়রু, মিশর। আল্লামা শফী উকাড়বীঃ যিকরে হাসীন, ৩৭ পৃষ্ঠা, মাওলানা আশরাফ আলী থানবী : নশরত্তীবঃ পৃষ্ঠা নং- ২৮
━━━━━━━━━━━━━━━━━━━━
সায়্যিদুনা নূহ (عليه السلام)’র আকিদা
____________________
সায়্যিদুনা নূহ (عليه السلام)’র আকিদা:
আল্লামা শায়খ মুস্তফা আকরামী (رحمة الله) বলেন, হযরত নূহ (عليه السلام) যখন তাঁর নিজ কউমের জন্য দোয়া করতেন তখন এভাবে বলতেন,
الهى اسئلك ان تنصرنى عليهم بنور محمد صلى الله عليه وسلم
-“হে আল্লাহ! আমি আপনার নিকট প্রার্থনা করছি যে, আপনার মাহবুব মুহাম্মদ (ﷺ)’র নূর মুবারকের উসিলায় তাদের উপর আমাকে সাহায্য করুন।’’ ১৫২
১৫২. রিসালাতুস সুন্নিঈন ফিরদ্দি আলাল মুবতাদীঈন তওহাবীয়্যীন, ২৪ পৃ. মিশর হতে প্রকাশিত
উম্মুল মুমিনীন হযরত আয়েশা (رضي الله عنه)’র আক্বিদা
____________________
উম্মুল মুমিনীন হযরত আয়েশা (رضي الله عنه)’র আক্বিদা:
সায়্যিদাহ, তায়্যিবাহ, তাহেরাহ উম্মুল মু‘মিনীন হযরত আয়েশা (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলে আকরাম (ﷺ) ই সায়্যিদুনা রশাদ করেন,
عَنْ عَائِشَةَ، قَالَتْ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ - صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ -: "اللَّهُمَّ أَعِزَّ الْإِسْلَامَ بِعُمَرَ بْنِ الْخَطَّابِ خَاصَّةً
-“হে আল্লাহ! উমর (رضي الله عنه)’র মাধ্যমে ইসলামকে মর্যাদাবান করুন।” ১৫৩
১৫৩. ইমাম ইবনে মাজাহ, ১/৭৭ পৃ. হা/১০৫, ইমাম হাকেম, আল-মুস্তাদরাক, ৩/৮৯ পৃ. হা/৪৪৮৫, ইমাম বায়হাকী, আস-সুনানুল কোবরা, ৬/৬০২ পৃ. হা/১৩১০২, সহীহ ইবনে হিব্বান, হা/৬৮৮২
আলী মুরতাদা শেরে খোদা কাররামাহুল্লাহ ওয়াজুহুল কারীম(رضي الله عنه)’র আক্বিদা
____________________
আলী মুরতাদা শেরে খোদা কাররামাহুল্লাহ ওয়াজুহুল কারীম:
সায়্যিদুনা আলী (رضي الله عنه) ইরশাদ করেন, আমি রাসূল (ﷺ) কে একথা বলতে শুনেছি, রাসূলে করিম (ﷺ) ইরশাদ করেন-
الْأَبْدَالُ يَكُونُونَ بِالشَّامِ، وَهُمْ أَرْبَعُونَ رَجُلًا، كُلَّمَا مَاتَ رَجُلٌ أَبْدَلَ اللهُ مَكَانَهُ رَجُلًا، يُسْقَى بِهِمُ الْغَيْثُ، وَيُنْتَصَرُ بِهِمْ عَلَى الْأَعْدَاءِ، وَيُصْرَفُ عَنْ أَهْلِ الشَّامِ بِهِمِ الْعَذَابُ
-“আবদালগণ শাম দেশেই হবে, তাঁরা ৪০ জন পুরুষ, তাঁদের কেউ ইন্তিকাল করলে তদস্থলে আল্লাহ তা‘য়ালা অন্যজনকে স্থলাভিষিক্ত করেন, তাঁদের বরকতে বৃষ্টি বর্ষিত হয়, তাঁদের উসিলায় শক্রুর উপর জয়ী হয় এবং তাঁদের বরকতে বিপদ দূরীভূত হয়।’’ ১৫৪
১৫৪. ইমাম আহমদ, আল-মুসনাদ, ২/২৩১ পৃ. হা/৮৯৬, এবং ইমাম আহমদ, ফাযায়েলুস সাহাবা, ২/৯০৬ পৃ. হা/১৭২৭, ইমাম যিয়া মুকাদ্দাসী, আহাদিসিল মুখতার, ২/১১০ পৃ. হা/৪৮৪, খতিব তিবরিযি, মিশকাত শরীফ, (ভারতীয় ৫৮২ পৃ.) ৩/১৭৬৭ পৃ.হা/৬২৭৭, ইমাম সুয়ূতি, জামেউ সগীর, ১২২ পৃ: ১ম খণ্ড, আহলে হাদিস আলবানী এটিকে মিশকাতের তাহকীকে যঈফ বলে মনগড়া তাহকীক করেছে, মূলত সনদটি ‘হাসান’, এ বিষয়ে আমার লিখিত ‘প্রমাণিত হাদিসকে জাল বানানোর স্বরূপ উন্মোচন’ তৃতীয় খণ্ড দেখুন।
আল্লামা মোল্লা আলী ক্বারী (رحمة الله)’র আকিদা
____________________
আল্লামা মোল্লা আলী ক্বারী (رحمة الله)’র আকিদা:
আল্লামা মোল্লা আলী ক্বারী (رحمة الله) উক্ত হাদিসের ব্যাখ্যায় বলেন,
أَيْ: بِبَرَكَتِهِمْ أَوْ بِسَبَبِ وُجُودِهِمْ فِيهَا.... بِهِمْ يُدْفَعُ الْبَلَاءُ عَنْ هَذِهِ الْأُمَّةِ
-“আবদালগণের বরকতে এবং তাঁদের উপস্থিতির কারণে বৃষ্টি বর্ষণ হয় দুশমনের উপর বিজয় লাভ করা যায় এবং তাঁদের বরকতে রাসূলে করিম (ﷺ)’র উম্মত হতে বিপদ দূর হয়।’’ ১৫৫
১৫৫. আল্লামা মোল্লা আলী ক্বারী, মিরকাত, ৯/৪০৪২ পৃ. হা/৬২৭৭-এর আলোচনা।
হযরত খালেদ বিন ওয়ালিদ (رضي الله عنه) এবং হযরত সাদ বিন আবি ওয়াককাস (رضي الله عنه)’র আক্বিদা
____________________
হযরত খালেদ বিন ওয়ালিদ (رضي الله عنه) এবং হযরত সাদ বিন আবি ওয়াককাস (رضي الله عنه)’র আক্বিদা:
আল্লামা মুহিবুদ্দীন তাবারী (ওফাত. ৬৯৪ হি.) বর্ণনা করেন সায়্যিদুনা ফারুকে আজম (رضي الله عنه)’র খিলাফতকালে কিসরার দিকে একটি সৈন্যদল প্রেরণ করেন। হযরত সাদ বিন আবী ওয়াককাস (رضي الله عنه) কে তাদের আমির নিযুক্ত করা হয়। আর সেনাপতি নির্বাচিত হন হযরত খালেদ বিন ওয়ালিদ (رضي الله عنه)। তাঁরা দজলা নদী পর্যন্ত পৌঁছে দেখতে পান সেখানে কোন জাহাজ কিংবা নৌকা নেই। তখন হযরত খালেদ বিন ওয়ালিদ (رضي الله عنه) এবং সাদ বিন আবি ওয়াককাস (رضي الله عنه) সামনে গিয়ে নদীকে সম্বোধন করে বলেন-
يا بحر إنك تجري بأمر الله, فبحرمة محمد -صلى الله عليه وسلم- وبعدل عمر خليفة رسول الله إلا خليتنا والعبور، فعبر الجيش بخيله وجماله إلى المدائن ولم تبتل حوافرها.
-“হে নদী! তুমি আল্লাহর হুকুমে প্রবাহমান। সুতরাং রাসূলে কারিম (ﷺ) এবং রাসূলে কারিম (ﷺ)’র খলিফা হযরত উমর (رضي الله عنه)’র আদালতের উসিলায় আমাদের মাঝে এবং আমাদের ঘোড়ার মাঝে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি কর না। এরপর সৈন্যদল তাদের উট এবং ঘোড়া নিয়ে মাদায়েন চলে যান অথচ তাদের পায়ের খুর পর্যন্ত ভিজেনি।’’ ১৫৬
১৫৬. আল্লামা মহিবুদ্দীন তবারী, আর-রিয়াদুন নাদিরাহ ফি মানাকিবে আশারা, ২/৩৩১ পৃ.
হযরত উসমান বিন হানিফ (رضي الله عنه)’র আক্বিদা
____________________
হযরত উসমান বিন হানিফ (رضي الله عنه)’র আক্বিদা:
৩য় খলিফা হযরত সায়্যিদুনা উসমান গণী (رضي الله عنه)’র খেলাফতকালে একটি ঘটনা সংঘটিত হয়। যা হাদিস শরীফের নির্ভরযোগ্য কিতাব তাবরানী শরীফ এবং ইবনে মাজাহ শরীফের হাশিয়া মিসবাহুয জুয্যাহ এর ১/১০০ পৃষ্ঠায় এসেছে। হযরত উসমান গণী (رضي الله عنه)’র সাথে এক ব্যক্তির গুরুত্বপূর্ণ কাজ ছিল। কিন্তু হযরত উসমান (رضي الله عنه) লোকটির প্রতি দৃষ্টিপাত করলেন না। লোকটি হযরত উসমান বিন হানিফ (رضي الله عنه) কে বিষয়টি অবহিত করলে তিনি রাসূলে করিম (ﷺ)’র উসিলা নিয়ে দোয়া করতে বলেন। লোকটি কথামত আমলটি করলেন, তখন হযরত উসমান (رضي الله عنه) তার দিকে দৃষ্টিপাত করলেন। দোয়াটি নিম্নরূপ-
اللَّهُمَّ إِنِّي أَسْأَلُكَ، وَأَتَوَجَّهُ إِلَيْكَ بِمُحَمَّدٍ نَبِيِّ الرَّحْمَةِ، يَا مُحَمَّدُ، إِنِّي قَدْ تَوَجَّهْتُ بِكَ إِلَى رَبِّي فِي حَاجَتِي هَذِهِ لِتُقْضَى، اللَّهُمَّ شَفِّعْهُ فِيَّ
-‘‘হে আল্লাহ! আমি আপনার কাছে প্রার্থনা করছি, রহমতের নবী মুহাম্মদ (ﷺ)’র উসিলায়, আপনার নিকট মনোনিবেশ করছি। হে মুহাম্মদ (ﷺ)! আপনার উসিলা নিয়ে নিজ রবের নিকট মনোনিবেশ করছি, আমার এমন হাজতে যা পূরণীয় হে আল্লাহ! হুযুর (ﷺ)’র শাফায়াত আমার জন্য কবুল করুন।’’ ১৫৭
১৫৭. ইমাম তাবরানী, মু‘জামুল কাবীর, ৯/৩০ পৃ. হা/৮৩১০, জযবুল কুলুব ফার্সী, ২১৯-২২০ পৃ.
সায়্যিদুনা আবু সাঈদ খুদরী (رضي الله عنه)’র আক্বিদা
____________________
সায়্যিদুনা আবু সাঈদ খুদরী (رضي الله عنه)’র আক্বিদা:
হযরত আবু সাঈদ খুদরী (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলে কারিম (ﷺ) ইরশাদ করেন,
يَأْتِي عَلَى النَّاسِ زَمَانٌ، فَيَغْزُو فِئَامٌ مِنَ النَّاسِ، فَيَقُولُونَ: فِيكُمْ مَنْ صَاحَبَ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ؟ فَيَقُولُونَ: نَعَمْ، فَيُفْتَحُ لَهُمْ، ثُمَّ يَأْتِي عَلَى النَّاسِ زَمَانٌ، فَيَغْزُو فِئَامٌ مِنَ النَّاسِ، فَيُقَالُ: هَلْ فِيكُمْ مَنْ صَاحَبَ أَصْحَابَ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ؟ فَيَقُولُونَ: نَعَمْ، فَيُفْتَحُ لَهُمْ، ثُمَّ يَأْتِي عَلَى النَّاسِ زَمَانٌ، فَيَغْزُو فِئَامٌ مِنَ النَّاسِ، فَيُقَالُ: هَلْ فِيكُمْ مَنْ صَاحَبَ مَنْ صَاحَبَ أَصْحَابَ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ؟ فَيَقُولُونَ: نَعَمْ، فَيُفْتَحُ لَهُمْ
-“এমন এক সময় আসবে যে একদল লোক যুদ্ধ করবে, তখন তারা জিজ্ঞাসা করবে আপনাদের মধ্যে কি এমন কেউ আছেন যিনি রাসূলে আকরাম (ﷺ)’র সাথে ছিলেন, তারা বলবেন, হ্যাঁ, অতঃপর তাঁদের উসিলায় যুদ্ধে তারা জয় লাভ করবে। অতঃপর এমন এক সময় আসবে একদল লোক যুদ্ধ করবে। তারা তখন বলবেন আপনাদের মাঝে এমন কেউ আছেন যিনি সাহাবায়ে কেরামের (رضي الله عنه) সান্নিধ্য পেয়েছেন, তাঁরা বলবেন হ্যাঁ, এরপর তাঁর উসিলায় যুদ্ধে তারা জয় লাভ করবেন। অতঃপর এমন এক সময় আসবে যে একদল মানুষ যুদ্ধ করবে তখন তারা জিজ্ঞাসা করবেন আপনাদের মাঝে এমন কেউ আছেন যিনি সাহাবায়ে রাসূল (ﷺ)’র সান্নিধ্য পেয়েছেন। তাঁরা বলবেন, হ্যাঁ, তখন তাঁর উসিলায় তাঁরা জয় লাভ করবেন।’’ ১৫৮
১৫৮.
ক. খতিব তিবরিযি, মিশকাত শরীফ, (ভারতীয় ৫৫৩ পৃ.) ৩/১৬৯৪ পৃ., হা/৬০০৯, পরিচ্ছেদ: بَاب مَنَاقِب الصَّحَابَة
খ. ইমাম বুখারী, আস-সহীহ, ৫/২ পৃ. হা/৩৬৪৯
গ. ইমাম বাগভী, শরহে সুন্নাহ, ১৪/৭৪ পৃ. হা/৩৮৬৪
আল্লামা সাবী আল-মালেকী (رحمة الله)’র আকিদা
____________________
আল্লামা সাবী আল-মালেকী (رحمة الله)’র আকিদা:
উমদাতুল মুফাস্সিরীন আল্লামা সাবী (رحمة الله) বলেন,
فَالْاَنْبِيَاءُ وَسَائِطِ لَاُمِهِمْ فِى كُلِّ شَيْئٍ وَوَاسِطَتِهِمْ رَسُوْلُ اَلله
-‘‘প্রত্যেক নবী (عليه السلام) তাঁদের উম্মতের জন্য প্রতিটি বিষয়ে উসিলা, আর রাসূলে করিম (ﷺ) প্রত্যেক নবীর জন্য উসিলা।’’ (তাফসীরে সাবী, ১ম খ-, ১০৭ পৃ:) তিনি আরও লিখেন-
فَهُوَ الْوَاسِطَةُ لِكُلِّ وَاسِطَةٍ حَتَّى اَدَمَ
-‘‘সুতরাং হুযুর আকরাম (ﷺ)’র প্রত্যেক উসিলার উসিলা এমন কি হযরত আদম (আ;)’রও উসিলা।’’ (তাফসীরে সাবী, ১ম খ-, ২২ পৃ:)
শায়খ আবদুল হক মুহাদ্দিস দেহলবী (رحمة الله)’র আকিদা
____________________
শায়খ আবদুল হক মুহাদ্দিস দেহলবী (رحمة الله)’র আকিদা:
শায়খুন মুহাদ্দিসিন আল্লামা আবদুল হক মুহাদ্দিস দেহলভী (رحمة الله) বলেন-
توسل يوےصلى الله عليه وسلم قضائے حاجت وسبب نحاح مرام است
-‘‘হাজত পূরণের জন্য হুযুর আকরাম (ﷺ)’র উসিলা আবশ্যক এবং উদ্দেশ্য পূরণের কারণ।’’(কিতাবের নাম) শায়খুন মুহাদ্দিসিন (رحمة الله) তাঁর অনবদ্য রচনার অন্যস্থানে বলেন,
توسل واستمداد بديں حضرت متقبت جناب صلى الله عليه وسلم زيارت حضرت سيد المرسلين صلى الله عليه وسلم اكمال الصلوة وافضلہا جماع علمائے دين قولا وفعلا از افضل سنن دار كه مستحبات است
-‘‘ধর্ম বিশেষজ্ঞ আলেমদের কথা ও কাজের ঐকমত্যে হুযূর পুর নূর (ﷺ)’র উসিলা তালাশ, সাহায্য প্রার্থনা এবং যিয়ারত সর্বোত্তম সুন্নাত এবং তাগিদযুক্ত মুস্তাহাব (আবশ্যকরনীয়) বিধান।’’ (শায়খ আবদুল হক মুহাদ্দিসে দেহলভী, জযবুল কুলুব, ফার্সী, ২১৬ পৃ:)
আল্লামা আহমদ দাহলান মক্কী (رحمة الله)’র আকিদা
____________________
আল্লামা আহমদ দাহলান মক্কী (رحمة الله)’র আকিদা:
আল্লামা আহমদ বিন দাহলার মক্কী (رحمة الله) বর্ণনা করেন-
التَّوَسَّلُ مَجْمَعٌ عَلَيْهِ عِنْدَ اَهْلِ السُّنَّتهِ
-‘‘উসিলা বৈধ হওয়ার ব্যাপারে আহলে সুন্নাত ওয়াল জাম‘আত ঐকমত্য পোষণ করেন।’’ (আদদুরারুস সানিয়াহ, ৪০ পৃ:)
আল্লামা শারজী (رحمة الله)’র আকিদা
____________________
আল্লামা শারজী (رحمة الله)’র আকিদা:
আল্লামা শারজী ১৫৯ (رحمة الله) বলেন, কেউ যখন কোন সমস্যায় পড়বে সে যেন নিম্নোক্ত নিয়মে চার রাকাত নামায পড়ে। প্রথম রাকাতে সূরা ফাতিহার পর দশ বার সূরা ইখলাস, ২য় রাকাতে সূরা ফাতিহার পর বিশবার সূরা ইখলাস, ৩য় রাকাতে সূরা ফাতিহার পর ৩০ বার সূরা ইখলাস এবং ৪র্থ রাকাতে সূরা ফাতিহার পর ৪০ বার সূরা ইখলাস পড়ে নামায সম্পন্ন করে নিম্নের দোয়াটি পড়বে-
اللهم بِنُوْرِكَ وَجَلَالِكَ وَبِحَقِّ هَذَا الاسْم الاعْظَم وَبِحَقِّ نَبِيِّكَ مُحَمَّد اَسْئَلُكَ اَنْ تقضى حَاجَتِى وَتَبْلِغْنِى سوئى
তবে দোয়া কবুল হবে। (কিতাবুস ফাওয়ায়েদিস সালাত ও আওয়ায়েদ, ২৯ পৃ.)
টিকা__________________
১৫৯. আল্লামা শারজী (رحمة الله) এমন ব্যক্তি যিনি দেওবন্দীদের অন্যতম আলেম নবাব সিদ্দিক হাসান ভুপালীর দৃষ্টিতেও গ্রহণযোগ্য। তিনি তাঁর আদ্ দা ওয়াদ দাওয়া” গ্রন্থে আল্লামা শারজী (رحمة الله)’র কথা এনেছেন। (ফকীর আবুল হামেদ মুহাম্মদ জিয়াউল্লাহ কদেরী গুফিয়াল্লাহু)
━━━━━━━━━━━━━━━━━━━━
সম্মানিত পাঠকবৃন্দ! কুরআন সুন্নাহর আলোকে বুঝা গেল উসিলা জায়েয, এটাও বুঝা গেল যে, দেওবন্দী ও আহলে হাদিসরা আহলে সুন্নাত ওয়াল জামআত নয়।
সৃষ্টি জগতের শিক্ষক রাসূলে কারিম (ﷺ)
____________________
❏ বিষয় নং-১২: সৃষ্টি জগতের শিক্ষক রাসূলে কারিম (ﷺ)
দেওবন্দীদের মতে রাসূলে কারিম (ﷺ) তাদের থেকে উর্দু শিখেছেন।
১৬০. দেখুন বায়াহেনে কাতেয়া কৃত খলিল আহমদ সাহারান পুরী
আর আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতের মতে রাসূল (ﷺ) সারা পৃথিবীর মহান শিক্ষক। কুরআন মাজীদে আল্লাহ তা‘য়ালা ইরশাদ করেন-
قُلْ إِنْ كُنْتُمْ تُحِبُّونَ اللهَ فَاتَّبِعُونِي يُحْبِبْكُمُ اللهُ وَيَغْفِرْ لَكُمْ ذُنُوبَكُمْ وَاللهُ غَفُورٌ رَحِيمٌ
-“হে মাহবুব (ﷺ) ! আপনি বলে দিন, হে মানব কুল, যদি তোমরা আল্লাহকে ভালবেসে থাকে। তবে আমার অনুগত হয়ে যাও, আল্লাহ তোমাদের গুনাহ ক্ষমা করবেন আর আল্লাহ ক্ষমাশীল দয়ালু।’’ ১৬১
১৬১. সূরা আল ইমরান, আয়াত নং-৩১
مَنْ يُطِعِ الرَّسُولَ فَقَدْ أَطَاعَ اللهَ
-“যে ব্যক্তি রাসূলের নির্দেশ মান্য করেছে, নিঃসন্দেহে সে আল্লাহর নির্দেশ মান্য করেছে।’’ ১৬২
১৬২. ৫ পারা, ১১ রুকু, সূরা নিসা: আয়াত নং-৮০
رَبَّنَا وَابْعَثْ فِيهِمْ رَسُولًا مِنْهُمْ يَتْلُو عَلَيْهِمْ آيَاتِكَ وَيُعَلِّمُهُمُ الْكِتَابَ وَالْحِكْمَةَ وَيُزَكِّيهِمْ إِنَّكَ أَنْتَ الْعَزِيزُ الْحَكِيمُ
-“হে আমাদের প্রতিপালক! এবং প্রেরণ করুন তাদের মধ্যে একজন রাসূল তাদেরই মধ্য থেকে, যিনি তোমার আয়াত সমূহ তাদের নিকট তেলাওয়াত করবেন এবং তাদেরকে তোমার কিতাব ও পরিপক্ষ জ্ঞান শিক্ষা দেবেন এবং তাদেরকে অতি পবিত্র করবেন। নিশ্চই তুমিই পরাক্রমশালী প্রজ্ঞাময়।’’ ১৬৩
১৬৩. ১ পারা, ১৫ রুকু সূরা বাকারা: আয়াত নং-১২৯
هُوَ الَّذِي أَرْسَلَ رَسُولَهُ بِالْهُدَى وَدِينِ الْحَقِّ لِيُظْهِرَهُ عَلَى الدِّينِ كُلِّهِ وَلَوْ كَرِهَ الْمُشْرِكُونَ
-“তিনিই হন যিনি আপন রাসূলকে হিদায়ত ও সত্য দ্বীন সহকারে প্রেরণ করেন। যেন সেটাকে সমস্ত ধর্মের উপর শ্রেষ্ঠত্ব দান করেন, যদিও অপছন্দ করে মুশরিকগণ।’’ ১৬৪
১৬৪. ২০ পারা ১ রুকু, সূরা সাফ, আয়াত নং-৯
وَمَا آتَاكُمُ الرَّسُولُ فَخُذُوهُ وَمَا نَهَاكُمْ عَنْهُ فَانْتَهُوا
-“এবং যা কিছু তোমাদেরকে রাসূল দান করেন তা গ্রহণ কর। আর যা থেকে নিষেধ করেন তা থেকে বিরত থাকো।’’ (২৮ পারা, ১ম রুকু, সূরা হাশর, আয়াত নং ৭)
وَمَا أَرْسَلْنَا مِنْ رَسُولٍ إِلَّا بِلِسَانِ قَوْمِهِ لِيُبَيِّنَ لَهُمْ
-“এবং আমি প্রত্যেক রাসূলকে তার স্বজাতির ভাষাভাষী করে প্রেরণ করেছি যেন সে তাদেরকে পরিস্কাভাবে বলে দেয়।’’ (সূরা ইবরাহিম, আয়াত নং-৪)
আল্লামা সোলাইমান (رحمة الله)’র আক্বিদা
____________________
আল্লামা সোলাইমান (رحمة الله)’র আক্বিদা:
এই আয়াতের তাফসীরে আল্লামা সোলাইমান (رحمة الله) তাফসীরে জুমালে বলেন,
وَهُوَ ﷺ كَانَ يَخَاطِبْ كُلُّ قَوْمٍ بَلَغَتُهُمْ
-“এবং রাসূল (ﷺ) গোত্রের কাছে তাদের ভাষায় ভাষণ দিতেন।’’ ১৬৫
১৬৫. সুলায়মান জামাল, তাফসীরে জুমাল, ২য় খণ্ড, ৫১২ পৃ.
আল্লামা শিহাবুদ্দীন খিফ্ফাজী (رحمة الله)’র আকিদা
____________________
আল্লামা শিহাবুদ্দীন খিফ্ফাজী (رحمة الله)’র আকিদা:
শেফা শরীফের ব্যাখ্যা গ্রন্থ ‘নাসিমুর রিয়াদ্ব’ এর মধ্যে বলেছেন,
اَنَّهُ ﷺ لِجَمِيْعِ النَّاسِ عَلَّمَهُ جَمِيْعُ اللُّغَاتِ
-“নিশ্চয় রাসূল (ﷺ) মানুষদেরকে তাদের ভাষা শিখাতেন।” ১৬৬
১৬৬. আল্লামা শিহাবুদ্দীন খিফ্ফাজী, নাসিমুর রিয়াদ্ব শরহে শিফা, ২য় খণ্ড, ৩৮৭ পৃ.
সম্মনিত পাঠক! সরকারে দো আলম (ﷺ) পুরোপৃথিবীর রাসূল। আল্লাহ তা‘য়ালার একটি নিয়ম হলো যে গোত্রের কাছে রাসূল পাঠাবেন তাদের ভাষা শিক্ষা দিয়েই পাঠান। সুতরাং এটা মানতেই হবে যে, পৃথিবীতে যতভাষা আছে, সবই আল্লাহ তা‘য়ালা রাসূল (ﷺ) কে শিক্ষা দিয়েছেন। আর অসংখ্য ভাষার মধ্যে উর্দুও একটি ভাষা। আল্লাহ তা‘য়ালা ইরশাদ করেন,
وَيُعَلِّمُهُمُ الْكِتَابَ وَالْحِكْمَةَ وَإِنْ كَانُوا مِنْ قَبْلُ لَفِي ضَلَالٍ مُبِينٍ ۞ وَآخَرِينَ مِنْهُمْ لَمَّا يَلْحَقُوا بِهِمْ
-‘‘এবং তাদেরকে কিতাব ও হিকমতের জ্ঞান দান করেন এবং নিশ্চয় তারা ইতোপূর্বে অবশ্যই সু:স্পষ্ট পথভ্রষ্টতার মধ্যেই ছিলো এবং তাদের মধ্য থেকে অন্যান্যদেরকে পবিত্র করেন এবং জ্ঞান দান করেন তাদেরকে, যারা ঐ পূর্ববর্তীদের সাথে মিলিত হয়নি এবং তিনিই সম্মান এ প্রজ্ঞাময়।’’ ১৬৭
১৬৭. ২৮ পার রুকু ১১ সূরা জুম‘আ: আয়াত নং-২-৩
এই আয়াত শরীফ হতে বুঝা যায় হুযুর (ﷺ), সাহাবায়ে কেরাম (رضي الله عنه) এবং সাহাবায়ে কেরামের পরবর্তী সকলকে হুযুর (ﷺ) কিতাব এবং হিকমত শিক্ষা দিয়েছেন।
আল্লামা মুহাম্মদ বিন আহমদ আনসারী কুরতুবী (رحمة الله)’র আকিদা
____________________
আল্লামা মুহাম্মদ বিন আহমদ আনসারী কুরতুবী (رحمة الله)’র আকিদা:
এই আয়াতের ব্যাখ্যায় তাফসীরে কুরতুবীতে বলা হয়েছে,
أَيْ يُعَلِّمُهُمْ وَيُعَلِّمُ آخَرِينَ مِنَ الْمُؤْمِنِينَ، لِأَنَّ التَّعْلِيمَ إِذَا تَنَاسَقَ إِلَى آخِرِ الزَّمَانِ كَانَ كُلُّهُ مُسْنَدًا إِلَى أَوَّلِهِ فَكَأَنَّهُ هُوَ الَّذِي تَوَلَّى كُلَّ مَا وُجِدَ مِنْهُ. (لَمَّا يَلْحَقُوا بِهِمْ) أَيْ لَمْ يَكُونُوا فِي زَمَانِهِمْ وَسَيَجِيئُونَ بعدهم. قال ابن عمرو سعيد بْنُ جُبَيْرٍ: هُمُ الْعَجَمُ..... وَقَالَ مُجَاهِدٌ: هُمُ النَّاسُ كُلُّهُمْ، يَعْنِي مَنْ بَعْدَ الْعَرَبِ الَّذِينَ بُعِثَ فِيهِمْ مُحَمَّدٌ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ. وقاله ابن زيد ومقاتل ابن حَيَّانَ. قَالَا: هُمْ مَنْ دَخَلَ فِي الْإِسْلَامِ بَعْدَ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِلَى يَوْمِ الْقِيَامَةِ.
-“রাসূলে পাক (ﷺ) মুমিনদেরকে তালিম দান করেন। এমনকি মু‘মিনদেরকেও যারা পরবর্তীতে আসেন, কেননা তাঁর তালিম যখন শেষ অববি বিদ্যমান থাকবে তখন তার সম্পর্ক হুযুর (ﷺ)’র দিকেই হবে। لَمَّا يَلْحَقُوا بِهِمْ দ্বারা উদ্দেশ্য ওই লোক যারা রাসূল (ﷺ)’র সময়ে ছিলেন না। এবং তারা পরে আসবে। হযরত আবদুল্লাহ বিন উমর (رضي الله عنه) এবং তাবেয়ী সাঈদ বিন জুবাইর (رحمة الله) বলেন, তারা অনারবী লোক। ইমাম মুজাহিদ (رحمة الله) বলেন, এর দ্বারা উদ্দেশ্য আরবদের পরে ওই সমস্ত লোক যারা হুযুর আকরাম (ﷺ)’র উপর ঈমান এনেছেন। আর হযরত ইবনে যায়েদ (رضي الله عنه) এবং হযরত ইমাম মুকাতিল (رحمة الله) বলেন, এরা এমন লোক যারা হুযূর (ﷺ)’র ইন্তেকালের পর কিয়ামত পর্যন্ত তাঁর উপর ঈমান আনবে।’’ ১৬৮
১৬৮. ইমাম কুরতুবী, তাফসীরে কুরতুবী, ১৮/৯৩ পৃ.
আল্লামা মাহমুদ আলূসী (رحمة الله)’র আকিদা
____________________
আল্লামা মাহমুদ আলূসী (رحمة الله)’র আকিদা:
তাফসীরে রুহুল মা‘আনীতে বলা হয়েছে,
أَيْ لَمْ يَلُحَقُوْا بِهِمْ بَعْدَ وَسَيَلُحَقُوْنَ، وَهُمُ الَّذِيْنَ جَاؤُا بَعَدَ الصَّحَابَة إِلَى يَوْمِ الدِّيْن
-“যারা এখন পর্যন্ত সাহাবায়ে কেরাম (رضي الله عنه)’র সাথে মিলিত হননি। অচিরেই তারা মিলিত হবে। এ সমস্ত মানুষ সাহাবায়ে কেরাম (رضي الله عنه)’র পর থেকে কিয়ামত পর্যন্ত সকলেই।’’ ১৬৯
১৬৯. মাহমুদ আলূসী, তাফসীরে রুহুল মাআনী, ১৪ খণ্ড, ২৮৯ পৃ:
আল্লামা আবদুল্লাহ বিন আহমদ নাসাফী (رحمة الله)’র আকিদা
____________________
আল্লামা আবদুল্লাহ বিন আহমদ নাসাফী (رحمة الله)’র আকিদা:
তাফসীরে মাদারিকুত তানযিলে বলা হয়েছে,
أَيْ لَمْ يَلْحَقُوْا بِهِمْ بَعْدَ وَسَيَلْحَقُوْنَ بِهِمْ وَهُمْ الَّذِيْنَ بَعْدَ الصَّحَابةِ رَضِي الله تَعَالى عَنْهُمْ أو هم الَّذِيْنَ يَأْتُوْنَ مِنْ بَعْدِهِمْ إِلَى يَوْمِ الدِّيْن
-“তারা এমন লোক যারা এখনো সাহাবায়ে কেরাম (رضي الله عنه)’র সাথে মিলিত হননি, তারা সাহাবারে কেরাম (رضي الله عنه)’র পরে আসবেন এবং কিয়ামত পর্যন্ত ইসলামে প্রবেশ করবে।’’ ১৭০
১৭০. ইমাম নাসাফী, তাফসীরে মাদারিকুত তানযিল, ৩/৪৮০ পৃ.
আল্লামা মুহাম্মদ বিন জারীর তাবারী (رحمة الله)’র আক্বিদা
____________________
আল্লামা মুহাম্মদ বিন জারীর তাবারী (رحمة الله)’র আক্বিদা:
এই আয়াতের ব্যাখ্যায় তাফসীরে ইবনে জারীরে বলা হয়েছে,
وَقَالَ آخَرُونَ: إِنَّمَا عُنِيَ بِذَلِكَ جَمِيعُ مَنْ دَخَلَ فِي الْإِسْلَامِ مِنْ بَعْدِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ كَائِنًا مَنْ كَانَ إِلَى يَوْمِ الْقِيَامَةِ
-“অনেক মুফাসসির বলেছেন, এর দ্বারা উদ্দেশ্য হল কিয়ামত পর্যন্ত ইসলাম গ্রহণ কারীগণ। তারা যে কেউ হোক না কেনো?’’ (তাফসীরে ইবনে জরীর, ২২/৬৩০ পৃ.)
আল্লামা ইবনে জরীর একটি হাদীস পাক বর্ণনা করেন,
قَالَ ابْنُ زَيْدٍ، فِي قَوْلِ اللَّهِ عَزَّ وَجَلَّ: {وَآخَرِينَ مِنْهُمْ لَمَّا يَلْحَقُوا بِهِمْ} [الجمعة: ৩] قَالَ: هَؤُلَاءِ كُلُّ مَنْ كَانَ بَعْدَ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِلَى يَوْمِ الْقِيَامَةِ، كُلُّ مَنْ دَخَلَ فِي الْإِسْلَامِ مِنَ الْعَرَبِ وَالْعَجَمِ
-“হযরত ইবনে যায়েদ (رضي الله عنه) বলেন, وَآخَرِينَ مِنْهُمْ لَمَّا يَلْحَقُوا بِهِمْ দ্বারা উদ্দেশ্য কিয়ামত পর্যন্ত ওই সমস্ত মানুষ যারা হুযূর (ﷺ) উপর ঈমান আনবে তারা আরবী হোক আর অনারবী হোক।’’ (তাফসীরে ইবনে জারীর, ২২/৬৩১ পৃ.)
আল্লামা আবদুল ওহ্হাব শা‘রানী (رحمة الله) ’র আক্বিদা
____________________
আল্লামা আবদুল ওহ্হাব শা‘রানী (رحمة الله) ’র আক্বিদা:
গাউসে ছামদানী মুহাকেকুল ইসলাম আল্লামা শা‘রানী (رحمة الله) বলেন-১৭১
ليس احد ينال علما فى الدنيا الا وهو من باطنية محمد ﷺ سواء الانبياء والاولياء المتقدمون على بعثه والمتأخرون عنه
-‘‘দুনিয়াতে এমন কোন কেউ নেই যে, রাসূল (ﷺ) থেকে উপকৃত হননি। চাই আম্বিয়ায়ে কেরাম হোক, আউলিয়ায়ে কেরাম হোক, পূর্বের শরীয়তের হোক অথবা এই শরীয়তের হোক।’’
অপরস্থানে আল্লামা শা‘রানী (رحمة الله) বলেন,
اما القطب الواحد المهد الجميع الانبياء والرسل والاقطاب من حين النشئ الانسانى الى يوم القيامة فهو روح محمد ﷺ
-‘‘অতঃপর একজন কুতুব, আম্বিয়ায়ে কেরাম, সমস্ত রাসূলগণ (عليه السلام) এবং প্রত্যেক আকতাবের প্রথম মানুষ থেকে শুরু করে কিয়ামত পর্যন্ত সাহায্যকারী হলেন হুযূর (ﷺ)’র রূহ মুবারক।’’ ১৭২
১৭১. আল্লামা শা‘রানী (رحمة الله) সম্পর্কে দেওবন্দী আলেম মাওলানা আনোয়ার শাহ কাশ্মীরী বলেন, তিনি ঘুমন্ত অবস্থায় হুযুর (ﷺ) থেকে সহীহ বুখারী শরীফ পড়েন। (ফয়জুল বারী, ১ম খণ্ড, ২০৪ পৃ:)
১৭২. ইমাম শা’রানী আল-ইয়াকিত ওয়াল জাওয়াহির, ২য় খণ্ড, ৮২ পৃ.
কুরআন মাজীদ, নির্ভরযোগ্য তাফসীর এবং গ্রহণযোগ্য কিতাবের আলোকে বুঝা গেল হুযুর (ﷺ) সমস্ত জগতের শিক্ষক আর সকল ভাষা আল্লাহ তা‘য়ালা তাঁর হাবীব (ﷺ) কে শিক্ষা দিয়েছেন। সুতরাং প্রমাণিত হল দেওবন্দী আহলে হাদীসগণ আহলে সুন্নাত নয়।
হুযূর (ﷺ) কে আল্লাহ তা‘য়ালা ইলম শিক্ষা দিয়েছেন
____________________
❏ বিষয় নং-১৩:
হুযূর (ﷺ) কে আল্লাহ তা‘য়ালা ইলম শিক্ষা দিয়েছেন
দেওবন্দীদের আকিদা হল হুযুর (ﷺ) কে দেওবন্দীরা উর্দু শিখিয়েছে, আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতের আকিদা হল হুযুর (ﷺ) কে আল্লাহ তা‘য়ালা প্রত্যেক বস্তুর ইলম শিক্ষা দিয়েছেন। যেমন- কুরআনে পাকে আল্লাহ তা‘য়ালা ইরশাদ করেন:
وَعَلَّمَكَ مَا لَمْ تَكُنْ تَعْلَمُ وَكَانَ فَضْلُ اللّٰهِ عَلَيْكَ عَظِيمًا
-“আর আপনাকে শিক্ষা দিয়েছেন যা কিছু আপনি জানতেন না এবং আপনার উপর আল্লাহ মহা অনুগ্রহ করেছেন।’’ ১৭৩
১৭৩. ৫ পারা ১৪ রুকু সূরা নিসা আয়াত: ১১৩
আপনাকে শিক্ষা দিয়েছেন তা, যা আপনার জানা ছিল না, এটি বারংবার পড়ে কোন মুসলমান এই আকিদা রাখবে যে, হুযুর (ﷺ)’র অমুক বস্তুর ইলম ছিল না এবং অমুক ভাষা জানতেন না। কুরআন মাজীদের অপরস্থানে মহান আল্লাহ ইরশাদ করেন-
وَمَا أَرْسَلْنَا مِنْ رَسُولٍ إِلَّا بِلِسَانِ قَوْمِهِ لِيُبَيِّنَ لَهُمْ
-“এবং আমি প্রত্যেক রাসূলকে তাঁর স্ব-জাতির ভাষাভাষী করে প্রেরণ করেছি যেন তিনি তাদেরকে পরিষ্কারভাবে বলে দেন।’’১৭৪
১৭৪. ১৩ পারা ১৩ রুকু, সূরা: ইবরাহীম আয়াত: ০৪
এই আয়াতের আল্লাহ তা‘য়ালা একটি নিয়ম বর্ণনা করেন যে, যে গোত্রের নিকটই রাসূল করবেন সেই গোত্রের ভাষা রাসূল জানেন। এবার দেখুন রাসূল (ﷺ) কাদের জন্য রাসূল হিসেবে প্ররিত হয়েছেন। আল্লাহ তা‘য়ালা ইরশাদ করেন:
أَيُّهَا النَّاسُ إِنِّي رَسُولُ اللّٰهِ إِلَيْكُمْ جَمِيعًا
-“হে রাসূল! আপনি বলে দিন হে লোক সকল! তোমাদের সকলের প্রতি আমি আল্লাহর রাসূল।’’ ১৭৫
১৭৫. ৯ পারা, ১০ রুকু সূরা: আরাফ: ১৫৮
এই আয়াত হতে স্পষ্ট বুঝা যাচ্ছে, রাসূল করিম (ﷺ) দুনিয়ার সকল মানুষের রাসূল। আর এই মানুষের মধ্যে উর্দু ভাষাভাষীরাও রয়েছে। আল্লাহ তা‘য়ালা সূরা ফুরকানের শুরুতে বলেন-
تَبَارَكَ الَّذِي نَزَّلَ الْفُرْقَانَ عَلَى عَبْدِهِ لِيَكُونَ لِلْعَالَمِينَ نَذِيرًا
-“বড় মঙ্গলময় তিনি যিনি অবর্তীণ করেছেন কুরআন আপন বান্দার প্রতি যাতে তিনি সমগ্র জগতের জন্য সর্তককারী হন।’’ ১৭৬
১৭৬. ১৮ পারা, ১৬ রুকু, সূরা: ফুরকান আয়াত: ১
এই আয়াতে মহান আল্লাহ তা‘য়ালা তাঁর প্রিয় হাবীব (ﷺ) কে সমস্ত পৃথিবীকে সর্তককারী হিসেবে বলেছেন। আর জাহানের মধ্যে উর্দু ভাষাভাষীও আছে। আল্লাহ তা‘য়ালা আরো বলেন-
وَمَا أَرْسَلْنَاكَ إِلَّا رَحْمَةً لِلْعَالَمِينَ
-“আমি আপনাকে সমগ্র জগতের রহমত রূপেই প্রেরণ করেছি।’’ ১৭৭
১৭৭. ১৭ পারা রুকু ৭ সূরা আম্বিয়া আয়াত: ১০৭
এ সকল আয়াতে মুবারাকা হতে প্রমাণিত হল ছরকারে দো আলম শাফিয়ে মুয়াজ্জম (ﷺ) সারা জগতের জন্য রাসূল হিসেবে তাশরীফ এনেছেন। আর মহান আল্লাহর একটি নিয়ম হল যাদের নিকট রাসূল প্রেরিত হবেন তাঁদের ভাষা তিনি জানবেন। সুতরাং শুধু উর্দু নয় বরং পৃথিবীর সব ভাষাই রাসূল (ﷺ) জানেন। আর যারা বলে বেড়ায় আমাদের থেকেই রাসূল উর্দু শিখেছেন এটা তাদের চরম বেয়াদবী এবং কুরআনের আয়াতকে অস্বীকার করার নামান্তর যা হল কুফুরী। কুরআনের আয়াতের পর নিম্নে দুটি হাদীস শরীফও বর্ণনা করা হল।
হযরত আবু যায়েদ (رضي الله عنه)’র আকিদা
____________________
হযরত আবু যায়েদ (رضي الله عنه)’র আকিদা:
হযরত আবু যায়েদ অর্থাৎ আমর ইবনে আখতাব (رضي الله عنه) বর্ণনা করেন, রাসূল (ﷺ) ইরশাদ করেন-
فَأَخْبَرَنَا بِمَا كَانَ وَبِمَا هُوَ كَائِنٌ
-‘‘নবী করিম (ﷺ) পূর্বাপর সবকিছুর বর্ণনা করেছেন। সুতরাং আসমান-জমিনে যা কিছু আছে সবকিছুই আমি জেনেছি।’’ ১৭৮
১৭৮. ইমাম মুসলিম, আস-সহীহ, ৪/২২১৭ পৃ. হা/২৮৯২, খতিব তিবরিযি, মিশকাতে শরীফ, ৩/১৬১৭ পৃ. হা/৫৯৩৬
আল্লামা আলী বিন খাযেন (رحمة الله)'র আকিদা
____________________
আল্লামা আলী বিন খাযেন (رحمة الله)'র আকিদা:
মুফাস্সিরে কুরআন আল্লামা আলী বিন মুহাম্মদ খাযেন (رحمة الله) তাঁর স্বীয় তাফসীরে বে-নযির এ সারকারে কায়েনাত ফখরে মওজুদাত বায়েছে তাখলিকে কায়েনাত হুযূর পুর নূর (ﷺ)’র একটি হাদিস এনেছেন, হুযুর করিম (ﷺ) বলেন,
مَا بَالَ أَقْوَامٍ طَعَنُوْا فِي عِلْمِي لَا تَسْأَلُوْنِي عَنْ شَيْء فِيْمَا بَيْنَكُمْ وَبَيْنَ السَّاعَةِ إلّا نَبَأَتُكُمْ بِه
-‘‘তাদের কী হল যে, তারা আমার জ্ঞান নিয়ে ঠাট্টা করছে। কিয়ামত পর্যন্ত যা কিছু হবে আমাকে জিজ্ঞাসা করো, তা আমি বলে দিবো।’’ (ইমাম খাযেন, তাফসিরে খাযেন, ১/৩২৪ পৃ.)
পবিত্র কুরআন ও হাদিসে পাকের আলোকে বলা যায় দেওবন্দী ওহাবীরা আহলে সুন্নাত ওয়াল জাম‘আত নয়।
মৃতদের শ্রবণ শক্তি
____________________
❏ বিষয় নং-১৪: মৃতদের শ্রবণ শক্তি
দেওবন্দী এবং আহলে হাদীস পন্থিরা বলে মৃতরা শুনে না। আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতের আকিদা হল মৃতরা শুনতে পান। পবিত্র কুরআনে আছে কাউমে ছামুদের উপর আল্লাহ তা‘য়ালা আযাব নাজিল করেন। তারা মৃত্যু বরণ করে তখন হযরত ছালেহ (عليه السلام) তাদেরকে বলেন-
فَتَوَلَّى عَنْهُمْ وَقَالَ يَا قَوْمِ لَقَدْ أَبْلَغْتُكُمْ رِسَالَةَ رَبِّي وَنَصَحْتُ لَكُمْ وَلَكِنْ لَا تُحِبُّونَ النَّاصِحِينَ
-“অতঃপর সালিহ তাদের দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে নিলেন এবং বললেন, ‘হে আমার সম্প্রদায়, নিশ্চয় আমি তোমাদের নিকট আমার রবের রিসালত পৌঁছিয়ে দিয়েছি এবং তোমাদের মঙ্গল কামনা করেছি, কিন্তু তোমরা হিতাকাঙ্খীদের কল্যান পছন্দই করো না।’’ ১৭৯
১৭৯. ৮ পারা ১৭ রুকু সূরা: আরাফ আয়াত নং-৭৯
হযরত শোয়াইব (عليه السلام)
____________________
হযরত শোয়াইব (عليه السلام)
অনুরূপভাবে আল্লাহ তা‘য়ালা মাদায়েনের ঘটনা বর্ণনা করে বলেন, যেমন মাদায়েন বাসীর উপর যখন আযাব আসে তারা ধ্বংস হয়, তখন হযরত শোয়াইব (عليه السلام) এই মৃতুদেরকে উদ্দেশ্য করে বলেন-
فَتَوَلَّى عَنْهُمْ وَقَالَ يَا قَوْمِ لَقَدْ أَبْلَغْتُكُمْ رِسَالَاتِ رَبِّي وَنَصَحْتُ لَكُمْ فَكَيْفَ آسَى عَلَى قَوْمٍ كَافِرِينَ
-“অতঃপর শোয়াইব তাদের দিক হতে মুখ ফিরিয়ে নিলো এবং বললো ‘হে আমার সম্প্রদায়! আমি তোমাদের নিকট আমার প্রতিপালকের (প্রেরিত) বানী:পৌঁছিয়েছি এবং তোমাদের মঙ্গলের জন্য উপদেশ দিয়েছি, সুতরাং (আমি) কি করে সমবেদনা প্রকাশ করি কাফিরদের জন্য।’’ ১৮০
১৮০. ৯ পারা ১ রুকু সূরা আরাফ: আয়াত ৯৩
সম্মানিত পাঠক! মৃত কাউমকে হরফে নেদা يَا দ্বারা আহ্বান করা দ্বারা প্রকাশ পেয়েছে যে, তারা শুনে। আর যিনি আহ্বান করছেন তিনি জলিলুন মরতাবাবান নবী।
সারওয়ারে আম্বিয়া (ﷺ)’র আকিদা
____________________
সারওয়ারে আম্বিয়া (ﷺ)’র আকিদা:
বদর ময়দানে মক্কার মুশরিকরা যখন সাংঘাতিক পরাজয় হল তাদের মৃতদেহ গুলোকে একটি কূপে নিক্ষেপ করা হল। এই কূপের নিকটে গিয়ে হুযুর (ﷺ) তখন বলতে লাগলেন:
্রيَا فُلَانَ بْنَ فُلَانٍ وَيَا فُلَانُ بْنَ فُلَانٍ أَيَسُرُّكُمْ أَنَّكُمْ أَطَعْتُمُ اللَّهَ وَرَسُولَهُ؟ فَإِنَّا قَدْ وَجَدْنَا مَا وَعَدَنَا رَبُّنَا حَقًّا فَهَلْ وَجدتمْ مَا وعدَكم رَبُّكُمْ حَقًّا؟
-‘হে অমুকের পুত্র অমুক, অমুকের পুত্র অমুক! তোমরা কী এটার উপর খুশি হতে না যে, তোমরা আল্লাহ এবং তাঁর রাসূল (ﷺ)’র আনুগত্য করবে? এরপর বলেন, নিশ্চয়ই আমাদের রবের অঙ্গীকার আমরা যথাযথভাবে পেয়েছি। তোমরাও কী তোমাদের রবের অঙ্গীকার যথার্থ পেয়েছ?’’
তখন হযরত উমর (رضي الله عنه) আরয করলেন, হে রাসূল (ﷺ) আপনি কাদের সাথে কথা বলছেন! এদের তো প্রাণ নেই। তখন রাসূল (ﷺ) বললেন,
وَالَّذِي نَفْسُ مُحَمَّدٍ بِيَدِهِ مَا أَنْتُمْ بِأَسْمَعَ لِمَا أَقُولُ مِنْهُمْ
-‘‘আল্লাহর শপথ! তাঁর হাতে আমার প্রাণ আমি যা বলছি এদের চেয়ে অধিক তোমরা শুনো না।’’ ১৮১
১৮১. খতিব তিবরিযি, মিশকাত শরীফ, ২/১১৬০ পৃ. হা/৩৯৬৭, পরিচ্ছেদ: بَاب حكم الاسراء , ইমাম বুখারী, আস-সহীহ, ৫/৮৬ পৃ. হা/৪০২৬, ইমাম আহমদ, আল-মুসনাদ, ১০/২৯১ পৃ. হা/৬১৪৫, ইমাম নাসাঈ, আস-সুনানুল কোবরা, ২/৪৮১ পৃ. হা/২২১২, ইমাম আবু ই‘য়ালা, আল-মুসনাদ, ৬/৪৩৩ পৃ. হা/৩৮০৮
হযরত ঈসা (عليه السلام)’র আক্বিদা
____________________
হযরত ঈসা (عليه السلام)’র আক্বিদা:
হযরত ঈসা (عليه السلام)’র একটি মু‘জিযা প্রসিদ্ধ আছে যে, তিনি মৃত ব্যক্তিকে জীবিত করতেন। যেমন কুরআনে পাকে আছে,
وَأُبْرِئُ الْأَكْمَهَ وَالْأَبْرَصَ وَأُحْيِ الْمَوْتَى بِإِذْنِ اللهِ
-“এবং আমি নিরাময় করি জন্মন্ধ ও সাদা দাগ সম্পন্ন (কুষ্ঠ রোগী) কে আর আমি মৃতকে জীবিত করি আল্লাহর নির্দেশে।” (৩য় পারা, সূরা আলে-ইমরান, আয়াত, ৪৯)
এই আয়াতের তাফসীরে হতে স্পষ্ট বুঝা যায়, তিনি মৃতকে জীবিত করতেন। তাফসীরে আছে মৃতকে জীবিত করার জন্য তিনি قُمْ بِإِذْنِ اللهِ বলতেন। قُمْ শব্দটি আমর তথা নির্দেশ সূচক শব্দ। যার অর্থ উঠ! তিনি قُمْ বললে মৃত ব্যক্তি দাঁড়াতেন বুঝা গেল মৃত ব্যক্তি প্রথমত قُمْ শব্দটি শ্রবণ করাটা প্রমাণিত এরপর হযরত ঈসা (عليه السلام)’র মু‘জিযার প্রকাশ। মৃত যদি না শুনতো তবে তিনি قُمْ শব্দটি বলতেন না। قُمْ শব্দটি বলার দ্বারাই বুঝা যায় মৃতরা শুনতে পায়।
হযরত আনাস (رضي الله عنه)’র আক্বিদা
____________________
হযরত আনাস (رضي الله عنه)’র আক্বিদা:
সারকারে দোআলম (ﷺ)’র অন্যতম সাহাবা হযরত আনাস (رضي الله عنه) বলেন, রাসূলে কারিম (ﷺ) ইরশাদ করেন-
إِنَّ العَبْدَ إِذَا وُضِعَ فِي قَبْرِهِ وَتَوَلَّى عَنْهُ أَصْحَابُهُ، وَإِنَّهُ لَيَسْمَعُ قَرْعَ نِعَالِهِمْ
-“কোন মানুষকে যখন কবরস্ত করা হয় এবং তার বন্ধু বান্ধবরা চলে যায় তখন মৃত ব্যক্তি তাদের জুতার শব্দও শুনতে পায়।’’ ১৮২
১৮২. ইমাম বুখারী, আস-সহীহ, ২/৯৮ পৃ. হা/১৩৭৪, খতিব তিবরিযি, মিশকাত শরীফ, (ভারতীয় ২৪ পৃ.) ১/৪৫ পৃ. হা/১২৬, ইমাম মুসলিম, আস-সহীহ, ৪/২২০০ পৃ. হা/২৮৭০, সহীহ ইবনে হিব্বান, ৭/৩৯০ পৃ. হা/৩১২০
হযরত ইবনে আব্বাস (رضي الله عنه) বলেন, রাসূলে আকরাম (ﷺ) মদিনা শরীফের কবরের পাশ দিয়ে গমনের সময় বলতেন,
السَّلاَمُ عَلَيْكُمْ يَا أَهْلَ القُبُورِ، يَغْفِرُ اللهُ لَنَا وَلَكُمْ، أَنْتُمْ سَلَفُنَا، وَنَحْنُ بِالأَثَرِ.
-‘‘হে কবর বাসী! তোমাদের উপর শান্তি বর্ষিত হোক। আল্লাহ আমাদেরকে এবং তোমাদেরকে ক্ষমা করুন। তোমরা আমাদের আগে এসেছো, আমরা তোমাদের পরে আসবো।’’ ১৮৩
১৮৩. ইমাম তিরমিযি, আস-সুনান, ২/৩৬০ পৃ. হা/১০৫৩, খতিব তিবরিযি, মিশকাত, ১/৫৫৩ পৃ. হা/১৭৬৫
প্রিয় পাঠক! ‘‘ইয়া আহলাল কুবুর! দ্বারা কবরে মৃতরা শুনে, বরং দেওবন্দী, গাইরে মুকাল্লিদ আহলে হাদীস, তাবলীগ জাম‘আত এবং মওদুদীদের অন্যতম মুজাদ্দেদ ইবনে কাইয়ুমও এ বাস্তবতার স্বীকার করেছে।
ইবনে কাইয়্যুমের স্বীকারূক্তি
____________________
ইবনে কাইয়্যুমের স্বীকারূক্তি:
ইবনুল কাইয়্যুম জাওযী লিখেন-
وَالْخِطَابُ وَالنِّدَاءُ لَمَوْجُوْدِ يَسْمَعُ وَيُخَاطَبُ وَيَعْقِلْ
-‘‘মৃতব্যক্তি তার পাশের জনের আহ্বান, কথা-বার্তা, শুনে এবং বুঝে।’’ তিনি আরও লিখেন:
فَإِن السَّلَامُ عَلٰى مَنْ لَايَسْمَعُ وَلَا يَشْعُرُ وَلَا يَعْلَمُ بِالْمُسلمِ مَحَالْ
-‘‘কেননা যে সালাম শুনেনা এবং বুঝে না, তাকে সালাম করা অসম্ভব।’’ (ইবনুল কাইয়্যুম জাওযিয়্যাহ, কিতাবুর রূহ, ৮ পৃ.)
কুরআন সুন্নাহর আলোকে বুঝা গেল দেওবন্দী এবং আহলে হাদীস পন্থিরা আহলে সুন্নাত ওয়াল জাম‘আত নয়।
জানাযার নামাযের পর দোয়া করা
____________________
❏ বিষয় নং-১৬:
জানাযার নামাযের পর দোয়া করা
দেওবন্দী ওহাবী এবং আহলে হাদিসদের মতে নামাযে জানাযার পর দোয়া করা বিদআত। আর আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতের মতে জানাযার পর দোয়া করা বৈধ। রাহমাতুল্লীল আলামীন আনিসুল গারেবীন রাসূলে আকরাম (ﷺ) ইরশাদ করেন-
إِذَا صَلَّيْتُمْ عَلَى الْمَيِّتِ فَأَخْلِصُوا لَهُ الدُّعَاءَ
-“মৃত ব্যক্তির জানাযা পড়ার পর তোমরা তার জন্য দোয়ায় মনোনিবেশ কর।” ১৯৯
১৯৯. ইবনে মাযাহ : আস-সুনান : কিতাবুল জানায়েজ : ১/৪৮০ পৃ. : হাদিস : ১৪৯৭, দারুল কুতুব ইলমিয়্যাহ, বয়রুত, আবি দাউদ : আস্-সুনান : কিতাবুল জানায়েজ : ৩/৫৩৮ পৃ. : হাদিস : ৩১৯৯, দারুল কুতুব ইলমিয়্যাহ, বয়রুত, ইবনে হিব্বান : আস-সহিহ : ৭/৩৪৬পৃ. হাদিসঃ ৩০৭৭, সুয়ূতি : জামেউস-সগীর : ১/৫৮ পৃ. : হাদিস : ৭২৯, দারুল কুতুব ইলমিয়্যাহ, বয়রুত, খতিব তিবরিযী : মিশকাতুল মাসাবীহ : ২/৩১৯ পৃ. : হাদিস : ১৬৭৪, দারুল কুতুব ইলমিয়্যাহ, বয়রুত, লেবানন, আলবানী : সহীহুল মিশকাত : হাদিস : ১৬৭৪ এ তিনি বলেন, হাদিসটি ‘হাসান’, বায়হাকী : আস-সুনানুল কোবরা : ৪/৪০ পৃ. দারুল মা’রিফ, বয়রুত, ইমাম নববী : রিয়াদুস সালেহীন : ৩১০-৩১১ প. হাদিস : ৯৩৭,ইমাম তাবরানী : কিতাবুদ-দোয়া : ৩৬২ পৃ. হাদিস : ১২০৫-১২০৬, দায়লামী, আল-ফিরদাউস, ৩/৩১৯পৃ. হাদিসঃ ২২৭৫, ইমাম ইবনে কুদামা : আল-মুগনী : ২/১৮১ পৃ. দারুল ফিকর ইলমিয়্যাহ, বয়রুত, মোবারকপুরী, তুহফাতুল আহওয়াজী : ৪/৯৫ পৃ. দারুল কুতুব ইলমিয়্যাহ, বয়রুত, ইমাম নববী : আল-মাজমূূ : ৫/১৯২ পৃ. দারুল ফিকর ইলমিয়্যাহ, বয়রুত, আহলে হাদিস নাওয়াব সিদ্দক হাসান খাঁন ভূপালী : আওনুল বারী : ৩/৩০০ পৃ. মিশর হতে প্রকাশিত, শাওকানী : নায়লুল আউতার : ৪/১০৫ পৃ. দারুল জলীল, বয়রুত, ইমাম মিয্যী : তুহফাতুল আশরাফ বি মা‘রিফাতুল আতরাফ : ১০/৪৭২ পৃ. হাদিস : ১৪৯৯৩, ইমাম নববী : ফতহুর রব্বানী : ৭/২৩৮ পৃ. মিশর হতে প্রকাশিত, মোল্লা আলী ক্বারী : মিরকাত : ৩/২৪৮ পৃ. হাদিস নং-১৬৭৪, শাওকানী : তুহফাতুল মুহতাজ : ১/৫৯৪ পৃ. হাদিস : ৭৮৬, ইমাম তাবারী : গায়াতুল আহকাম : ৩/৫৫৭ পৃ. হাদিস : ৬৮১৬, শায়খ আব্দুল হক্ব মুহাদ্দেস দেহলভী : আশিয়াতুল লুমআত : হাদিস : ১৬৭৪, ইবনুল আছির, জামিউল উসূল, ৬/২১৯পৃ. হাদিস : ৪৩১১, নাওয়াবী, খুলাসালাতুল আহকাম, ২/৯৭৮পৃ. হাদিস.১৪৯৯৩, ইমাম ইবনুল মুলাক্কিন, বদরুল মুনীর, ৫/২৬৯পৃ. ইবনে হাজার আসকালানী, ইত্তিহাফুল মুহরাহ, ১৪/৭৪৭পৃ. হাদিসঃ ১৮৬৩৫,ও ১৫/২৮পৃ. হাদিসঃ ১৮৭৯৬,ও ১৬/১৯০পৃ. হাদিসঃ ২০৬২৫, আসকালানী, তালখিসুল হবির, ২/২৮৮পৃ. ক্রমিক.৭৬৯,ও ২/২৪৭পৃ. ক্রমিক.৭৭০, শায়খ ইউসুফ নাবহানী, ফতহুল কাবীর, ১/১২২পৃ. হাদিসঃ ১২৩৯,ও ১৫/৫৮৩পৃ. হাদিস, ৪২২৭৯, সুলাইমান ফার্সী, জামিঊল ফাওয়াইদ, ১/৪২৮পৃ. হাদিসঃ ২৫৩৮, আহলে হাদিস আলবানী, ইরওয়াউল গালীল, ৩/১৭৯পৃ. হাদিস,৭৩২, মাকতুবাতুল ইসলামী, বয়রুত, লেবানন, সহিহুল জা‘মে, হাদিসঃ ৬৬৯, তিনি উভয় গ্রন্থে বলেন সনদটি ‘হাসান’।
━━━━━━━━━━━━━━━━━━━━
সকলের ঐক্যমতে, জানাযার নামায ফরযে কেফায়াহ। আর ফরয নামাজের পর দোয়া করার ব্যাপারে স্বয়ং রাসূলে আকরাম (ﷺ) নির্দেশ দিয়েছেন।
সায়্যিদুনা জাফর বিন আবি তালিব (رضي الله عنه)’র জানাযার পর দোয়া
____________________
সায়্যিদুনা জাফর বিন আবি তালিব (رضي الله عنه)’র জানাযার পর দোয়া:
মিম্বার শরীফে বসে বসেই রাসূল (ﷺ) সাহাবায়ে কেরাম (رضي الله عنه) কে মূতার যুদ্ধের সংবাদ শুনান এবং হযরত জাফর বিন আবি তালিব (رضي الله عنه)’র শাহাদাতের সংবাদও শুনান।
فَصَلَّى عَلَيْهِ رَسُولُ اللَّهِ - صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ - وَدَعَا لَهُ وَقَالَ: اسْتَغْفِرُوا لَهُ
-‘‘এরপর রাসূল (ﷺ) তাঁর জানাযা পড়ে তাঁর জন্য দোয়া করলেন এবং সাহাবায়ে কেরামগণ (رضي الله عنه) কে তাঁর মাগফিরাত কামনার জন্য নির্দেশ দিলেন।’’ (ইমাম ইবনুল হুমাম, ফতহুল কাদীর, ২/১১৭ পৃ.)
দেওবন্দী ওহাবীদের নিকটও শামসুল আইম্মাহ হিসেবে খ্যাত ইমাম সারাখসী (رحمة الله)
____________________
দেওবন্দী ওহাবীদের নিকটও শামসুল আইম্মাহ হিসেবে খ্যাত ইমাম সারাখসী (رحمة الله) তাঁর অনাবদ্য গ্রন্থ “মাবসুতে” একটি বর্ণনা এনেছেন এভাবে:
হযরত সায়্যিদুনা আবদুল্লাহ ইবনে উমর (رضي الله عنه)-এর বর্ণনা:
ইমাম সারাখসী (رحمة الله) উল্লেখ করেন, হযরত সায়্যিদুনা আবদুল্লাহ ইবনে সালাম (رضي الله عنه) হযরত উমর (رضي الله عنه)’র জানাযার পর উপস্থিত হয়ে বলেন,
عَبْدُ اللَّهِ بْنُ سَلَامٍ - رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ - فَاتَتْهُ الصَّلَاةُ عَلَى جِنَازَةِ عُمَرَ فَلَمَّا حَضَرَ قَالَ: إنْ سَبَقْتُمُونِي بِالصَّلَاةِ عَلَيْهِ فَلَا تَسْبِقُونِي بِالدُّعَاءِ لَهُ.
-‘‘আমার আগে যদিওবা তোমরা নামায পড়েছো, কিন্তু দোয়া আমার পূর্বে করো না।’’ ২০০
২০০. ইমাম সারখ্সী , আল-মাবসুত , ২/৬৭ পৃ.।
শামসুল আইম্মা ইমাম সারাখসী (رحمة الله) তাঁর মাবসুতে “মৃত ব্যক্তির গোসল অধ্যায়ে হযরত আবদুল্লাহ ইবনে উমর (رضي الله عنه) এবং হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (رضي الله عنه)’র বর্ণনা দ্বারা জানাযার পর দোয়া করা প্রমাণ করেছেন। ২০১
টিকা━━━━━━━━━━━━━━━━━━━━
২০১. শামসুল আয়িম্মা ইমাম সারখসী (رحمة الله) {ওফাত.৪৮৩হি.}
❏ তাঁর বিখ্যাত ‘মবসুত শরীফে’ “মাইয়্যাতের গোসল” শীর্ষক অধ্যায়ে একটি হাদিস সংকলন করেন-
مَا رُوِيَ عَنْ ابْنِ عَبَّاسٍ - رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمَا - وَابْنِ عُمَرَ - رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ - أَنَّهُمَا فَاتَتْهُمَا الصَّلَاةُ عَلَى جِنَازَةٍ فَلَمَّا حَضَرَا مَا زَادَا عَلَى الِاسْتِغْفَارِ لَهُ
-‘‘হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে উমর (رضي الله عنه) এবং হযরত ইবনে আব্বাস (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত আছে উভয়ে এক জানাযায় গিয়ে জানাযার নামায না পেয়ে মায়্যিতের জন্য ইস্তাগফার পড়লেন বা দোয়া করলেন।’’ (ইমাম সারখ্সী, আল-মাবসুত , ২/৬৭ পৃ.)
━━━━━━━━━━━━━━━━━━━━
সম্মানিত পাঠকবৃন্দ! হযরত আবদুল্লাহ ইবনে উমর (رضي الله عنه) এমন সাহাবী যার ব্যাপারে আসমাউর রিজালের কিতাবে এসেছে যে, নবী করিম (ﷺ)’র এই আমল খুবই পছন্দ ছিল। জানাযার পর মোনাজাত করা যদি বিদআত হতো, তবে তিনি কখনো জানাজার পর দোয়া করতেন না। ২০২
টিকা━━━━━━━━━━━━━━━━━━━━
২০২. তার বিষয়ে আরও বর্ণিত আছে-
عَنْ عُبَيْدِ اللَّهِ بْنِ عُمَرَ، عَنْ نَافِعٍ قَالَ: كَانَ ابْنُ عُمَرَ إِذَا انْتَهَى إِلَى جِنَازَةٍ وَقَدْ صُلِّيَ عَلَيْهَا دَعَا وَانْصَرَفَ وَلَمْ يُعِدِ الصَّلَاةَ-
-‘‘বিশিষ্ট তা’বেয়ী না’ফে (رحمة الله) বর্ণনা করেন, হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে উমর (رضي الله عنه) তিনি যদি কোনো জানাযায় উপস্থিত হয়ে দেখতেন যে, সালাতুল জানাযা আদায় করা হয়ে গেছে, তাহলে তিনি (আদায় কৃত জানাযার) পর দোয়া করে ফিরে আসতেন, পুনরায় সালাত (জানাযা) আদায় করতেন না।’’ (ইমাম আব্দুর রায্যাক, আল-মুসান্নাফ, ৩/৫১৯ পৃ. হা/৬৫৪৫, মুফতি আমিমুল ইহসান, ফিকহুস-সুনানি ওয়াল আছার, ১/৪০০পৃ. হাদিসঃ ৩১৪, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, তিনি বলেন, হাদিসটির সনদ সহীহ।)
━━━━━━━━━━━━━━━━━━━━
সায়্যিদুল মুফাস্সিরিন হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (رضي الله عنه)ও জানাযার পর দোয়া করার পক্ষে মত দিয়েছেন। জানাযার পর মুনাজাত করা যদি বিদআত হতো তবে হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (رضي الله عنه) কখনো জানাযার পর মুনাজাত করতেন না। উপরোক্ত বর্ণনাগুলো দ্বারা রাসূল (ﷺ) এবং সাহাবায়ে কেরামগণ কর্তৃক জানাযার পর মুনাজাত করা প্রমাণিত হল। ২০৩
টিকা━━━━━━━━━━━━━━━━━━━━
২০৩.
এ বিষয়ে আরও বর্ণিত আছে যে, ইমাম বায়হাকী (رحمة الله) হাদিস সংকলন করেন-
عَنْ عَمْرِو بْنِ مُرَّةَ، عَنْ خَيْثَمَةَ، أَنَّ أَبَا مُوسَى: صَلَّى عَلَى الْحَارِثِ بْنِ قَيْسٍ الْجُعْفِيِّ بَعْدَ مَا صُلِّيَ عَلَيْهِ أَدْرَكَهُمْ بَالْجَبَّانِ
-‘‘হযরত আমর বিন মুর্রা (رحمة الله) তিনি তাবেয়ী হযরত খায়ছামা (رحمة الله) হতে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, নিশ্চয় আবু মূসা আশ‘আরী (رضي الله عنه) হযরত হারেস ইবনে কায়েছ আল-জুফিয়ী (رضي الله عنه)-এর জানাযার নামায আদায় করলেন, পরে তাঁর জন্যে দোয়া করেন।’’ (ইমাম বায়হাকী, আস-সুনানিল কোবরা, ৪/৭৪ পৃ. হা/৬৯৯৭)
━━━━━━━━━━━━━━━━━━━━
সুতরাং জানাজার পর মুনাজাত করা বিদআত বলে দেওবন্দী ওহাবীরা সরলমনা আহলে সুন্নাত ওয়াল জাম‘আত পন্থিদের ধোঁকা দিচ্ছে। মূলত প্রকৃত আহলে সুন্নাত ওয়াল জাম‘আত তারাই যারা জানাযার পর মুনাজাত করে। আপনারা দেখবেন আহলে সুন্নাত ওয়াল জাম‘আত বেরলভী (رحمة الله) এর উপর আমল করে। দেওবন্দী ওহাবীরা বলে থাকে জানাযার নামায এক প্রকার দোয়া বিধায় এর পর পুনরায় আমরা দোয়া করি না। আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাত বলে থাকে পবিত্র কুরআন-সুন্নহর মধ্যে আল্লাহ তা‘য়ালা ও তাঁর প্রিয় হাবীব (ﷺ) কোন স্থানে এমনটি বলেননি যে, একবার দোয়ায় পর যদি তোমরা দ্বিতীয়বার মুনাজাত কর তবে গুনাহগার হবে। অথবা এরূপ বলেননি যে, তোমাদের দোয়া কবুল হয়ে গেছে। সুতরাং তোমরা মুনাজাত করা থেকে বিরত থাক। আল্লাহ এবং তাঁর রাসূল (ﷺ)’র পক্ষ থেকে যখন এরূপ নিষেধাজ্ঞা নেই তো, শরীয়তের বিধানে নাক গলানোর তোমরা কে? মূলত দেওবন্দী ওহাবীরাই প্রকৃত বিদআতী। কবি বলেন-
خدا محفوظ ركتہے ہر بلا سے
خصوصًا وہابيّت كى ديا سے!
‘‘হে খোদা! বাঁচাও কত মসিবত
সবিশেষ বাতুল্য আর ওহাবিয়্যাত।’’
আল্লাহ তা‘য়ালা এবং তাঁর প্রিয় হাবীব (ﷺ)’র এরূপ কোন বানী নেই। কিন্তু আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতের উক্ত আমলের প্রমাণ কুরআন ও হাদীস থেকে অবশ্যই পাওয়া যাবে। আল্লাহ তা‘য়ালা ইরশাদ করেন:
وَقَالَ رَبُّكُمُ ادْعُونِي أَسْتَجِبْ لَكُمْ إِنَّ الَّذِينَ يَسْتَكْبِرُونَ عَنْ عِبَادَتِي سَيَدْخُلُونَ جَهَنَّمَ دَاخِرِينَ
-“এবং তোমাদের প্রতিপালক বলেছেন, আমার নিকট প্রার্থনা করো, আমি গ্রহন করবো। নিশ্চয় ঐসব লোক, যারা আমার ইবাদত থেকে অহংকারে বিমুখ হয়, তারা অনতিবিলম্বে জাহান্নামে যাবে লাঞ্চিত হয়ে।’’ ২০৪
২০৪. সূরা গাফির আয়াত নং-৬০
এই আয়াতে আল্লাহ তা‘য়ালা মুমিনদেরকে দোয়া করার হুকুম দিচ্ছেন। আর মুমিনদের বিশেষীকরণের মাধ্যমে তাদের দোয়া কবুল করার শুভ সংবাদ দিচ্ছেন। আর যারা অস্বীকার করে এবং আল্লাহর নিকট দোয়া করা প্রয়োজন মনে করেনা তাদেরকে জাহান্নামে প্রবেশ করানোর ঘোষণা দিচ্ছেন। আপনারা লক্ষ্য করবেন যে, জানাযার নামাযের পর অনেকে হাত তুলে মুনাজাত করে আবার অনেকে অহংকারীর মতো দাঁড়িয়ে থাকে। আয়াতে কারিমাটি পড়ে আপনারাই বিচার করুন যে মুনাজাতের সময় এভাবে দাঁড়িয়ে থাকা এবং দোয়া থেকে বিরত থাকার পরিনাম কী হতে পারে? আল্লাহ তা‘য়ালা আরো বলেন:
وَإِذَا سَأَلَكَ عِبَادِي عَنِّي فَإِنِّي قَرِيبٌ أُجِيبُ دَعْوَةَ الدَّاعِ إِذَا دَعَانِ فَلْيَسْتَجِيبُوا لِي وَلْيُؤْمِنُوا بِي لَعَلَّهُمْ يَرْشُدُونَ
-‘‘এবং হে মাহবুব! যখন আপনাকে আমার বান্দাগণ আমার সম্বন্ধে জিজ্ঞাসা করে, আমি তো নিকটেই আছি, প্রার্থনা গ্রহন করি আহ্বানকারীর যখন আমাকে আহবান করে। সুতরাং তাদের উচিত যেন আমার নির্দেশ মান্য করে এবং আমার উপর ঈমান আনে, যাতে পথের দিশা পায়।’’ ২০৫
২০৫. সূরা বাকারা, আয়াত নং-১৮৬
এই আয়াতেও আল্লাহ তা‘য়ালা তাঁর বান্দার উপর অনুগ্রহ প্রকাশ করতে বলেন। যখনই বান্দা আমার কাছে প্রার্থনা করে তা আমি কবুল করি। এই আয়াতে এমন কোন শর্ত নেই যে, একবার দোয়া করার পর দ্বিতীয় বার দোয়া করলে তিনি অসন্তুষ্ট হবেন এবং অসন্তুষ্ট হওয়ার কারনে কবুল হওয়া দোয়া ফেরত দেয়া হবে। বরং বর্ণনা হয়েছে যে, যখনই দোয়া কর তা কবুল করা হবে। এটি একটি নিয়ম যে, যাকে যে ভালবাসে তাকে সে বারবার ডাকে। মৃতব্যক্তির সাথে মনে হয় দেওবন্দী ওহাবীদের সাথে দুশমনি আছে, সে জন্য তারা দোয়া করা থেকে বিরত থাকে এবং যারা মুনাজাত করে তাদের ব্যাপারে আপত্তি ও ফতোয়া চাপিয়ে দিয়ে বলে বেড়ায় যে, জানাযা স্বয়ং দোয়া এবং এর পর দোয়া করা বিদআত। দেওবন্দীদের এই দলিলটি একেবারে ভিত্তিহীন। কেননা এই জ্ঞান দ্বারা কোন অন্ধ বা মূর্খ ব্যক্তিরও একথা জানা থাকবে না যে, পাঞ্জাগানা নামাযের পর সবাই যে দোয়া করে তবে কী ওই নামায দোয়া নয়?
১. জানাযার নামাযে প্রথমে ছানা পড়া হয়। পাঁচ ওয়াক্ত নামাযেও প্রথমে ছানা পড়া হয়।
২. জানাজার নামাযে দরুদ শরীফ পড়া হয়, পাঁচওয়াক্ত নামাযেও দরুদ শরীফ পড়া হয়।
৩. জানাযার নামাযে মুসলমানদের মাগফিরাতের জন্য দোয়া করা হয়, পাঁচওয়াক্ত নামাযের اللَّهُمَّ اغْفِرْ لِي দ্বারা মাগফিরাত কামনা করা হয়।
৪. জানাযার নামাযে السَّلَامُ عَلَيْكُمْ وَرَحْمَةُ اللهِ বলা হয় অনুরূপ পাঁচওয়াক্ত নামাযেও السَّلَامُ عَلَيْكُمْ وَرَحْمَةُ اللهِ বলা হয়। ২০৬
২০৬. জানাযা যে দোয়া নয় বরং সালাত সে বিষয়ে বিস্তারিত জানতে আমার লিখিত ‘হাদিসের আলোকে জানাযার পর দোয়ার বিধান’ দেখুন, আশা করি সঠিক বিষয়টি পাঠকবৃন্দেও বুঝে আসবে।
সম্মানিত পাঠকবৃন্দ! পরস্পর এই আলোর দিকে গভীর দৃষ্টি দিলে প্রমাণিত হবে পাঁচওয়াক্ত নামাযে এমনসব বিষয় পড়া হয়, যা মূলত জানাযার নামাযে পড়া হয়ে থাকে। তাহলে কি কারণে দেওবন্দী ওহাবীরা পাঁচওয়াক্ত নামাযের পর মুনাজাত করে? এবং জানাযার পর মুনাজাত করাকে বিদআত বলে? সুতরাং বুঝা গেল একাজগুলো তাদের কাছ থেকেই সৃষ্টি হয়েছে। আল্লাহ ও তাঁর প্রিয় হাবীব (ﷺ) ’র পক্ষ থেকে এরূপ কোন বাঁধা-বাধ্যকতা নেই। সুতরাং পবিত্র শরীয়তে নিজ থেকে নতুন কিছু প্রবর্তন করার কারণে দেওবন্দীরা নিজেরাই বেদআতী হল এবং আহলে সুন্নাত ওয়াল জাম‘আত থেকে বের হয়ে গেল।
কুরআনুল কারীমের আয়াত ও তার তাফসির
____________________
কুরআনুল কারীমের আয়াত ও তার তাফসির:
পবিত্র কুরআনে কারীমে ইরশাদ হচ্ছে-
فَإِذَا فَرَغْتَ فَانْصَبْ (৭) وَإِلَى رَبِّكَ فَارْغَبْ
-“অতএব, যখন আপনি নামায থেকে অবসর হবেন তখন দোয়ার মধ্যে মনোনিবেশ করুন।’’ ২০৭
২০৭. সূরা ইনশিরাহ, আয়াত নং-৭-৮
তাফসীরে ইবনে জারীর: ২০৮
উম্মতে মুহাম্মদীর মধ্যে অন্যতম মুফাস্সির ইমাম ইবনে জারীর তাবারী (رحمة الله) এই আয়াতের তাফসীরে বলেন-
عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ، فِي قَوْلِهِ: {فَإِذَا فَرَغْتَ فَانْصَبْ} [الشرح: ৭] يَقُولُ: فِي الدُّعَاءِ
-‘‘হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (رضي الله عنه) বলেন, তোমরা যখন নামায শেষ করবে পর দোয়ার জন্য মনোনিবেশ কর।’’ ২০৯
টিকা━━━━━━━━━━━━━━━━━━━━
২০৮.
❏ দেওবন্দীদের আলেম শিবলী নুমানী বলেন, ইমাম তাবারী এমন স্তরের ব্যক্তিত্ব যে, প্রত্যেক মুহাদ্দিসগণ তাঁর জ্ঞান গরীমা এবং মর্যাদা সম্পর্কে অবগত। তাঁর তাফসীরকে সর্বোকৃষ্ট তাফসীর মনে করা হয়। মুহাদ্দিস ইবনে খুজায়মা বলেন, দুনিয়াতে তাঁর চেয়ে বড় আলেম আর নেই। (সিরাতুন্নবী ১ম খণ্ড ১০৩০ পৃ:)
❏ হাফেজ ইবনে যাহাবী (رحمة الله) ইমাম ইবনে জরীরকে ইসলামের অন্যতম ইমাম হিসেবে আখ্যায়িত করেন। (মিযানুল ইতিদাল)
❏ গাইরে মুকাল্লিদ ওহাবীদের মুখপাত্র লেখেন যে, ইমাম ইবনে জারীর তাবারী (رحمة الله) বিজ্ঞ মুফাস্সির, মুহাদ্দিস এবং ইতিহাসবেত্তা।’’ (আল-ইতিসাম, লাহোর, ৯ পৃ: ২০ ফেব্রুয়ারী ১৯৫৯ পৃ:)
❏ নবাব সিদ্দিক হাসান ভুপালী বলেন, তাফসীরে ইবনে জারীর তাবারী এবং তাফসীরে জালালাইন হল উৎকৃষ্ট তাফসীর। (আল-মকালুতুল নাসিহা, ১২৪ পৃ.)
❏ গাইরে মুকাল্লিদগনের ইমাম আবদুস সাত্তার দেহলভী লেখেন যে, ৪র্থ স্তরের প্রসিদ্ধ হলেন আল্লামা আবু জাফর মুহাম্মদ বিন তাবারী (ইন্তেকাল ৩১০ হি:)
❏ ইমাম সুয়ূতী (رحمة الله) বলেন, তাঁর কিতাব হল অতুলনীয় এবং মহান তাফসীরের মধ্যে অন্যতম। কেননা এটি বিভিন্ন বর্ণনা এবং একের উপর অপর বর্ণনার প্রাধান্য, ইরাব এবং বিভিন্ন কিছু নির্গতকরনের প্রতি গুরুত্বরোপ করেছে। একারণে এটি অন্যান্য কিতাব হতে উপকারী। ইমাম নববীও “তাহযীবে” এরূপ বলেছেন। (মুকাদ্দামায়ে তাফসীরে সাত্তারী, ১৭ পৃ.)
━━━━━━━━━━━━━━━━━━━━
২০৯. ইমাম ইবনে জারীর আত-তবারী, তাফসীরে ইবনে জারীর, ২৪/৪৯৭ পৃ.
তিনি তার তাফসিরে আরও উল্লেখ করেন-
عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ: {فَإِذَا فَرَغْتَ فَانْصَبْ} [الشرح: ৭] يَقُولُ: فَإِذَا فَرَغْتَ مِمَّا فُرِضَ عَلَيْكَ مِنَ الصَّلَاةِ فَسَلِ اللَّهَ، وَارْغَبْ إِلَيْهِ، وَانْصَبْ لَهُ
-‘‘হযরত ইবনে আব্বাস (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, যখন তোমরা তোমাদের উপর অর্পিত বিষয় থেকে মুক্ত হবে (ফরয সালাত শেষ করবে) তখন আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করবে এবং দোয়ার প্রতি মনোনিবেশ করবে।’’২১০
২১০. তাফসীরে ইবনে জারীর, ২৪/৪৯৭ পৃ.
সায়্যিদুল মুফাস্সিরীন হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (رضي الله عنه)’র পর হযরত মুজাহিদ (رحمة الله)’র তাফসীর
____________________
সায়্যিদুল মুফাস্সিরীন হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (رضي الله عنه)’র পর হযরত মুজাহিদ (رحمة الله)’র তাফসীর বর্ণনা করা হল-
عَنْ مُجَاهِدٍ، قَوْلُهُ: {فَإِذَا فَرَغْتَ فَانْصَبْ} [الشرح: ৭] قَالَ: إِذَا قُمْتَ إِلَى الصَّلَاةِ فَانْصَبْ فِي حَاجَتِكَ إِلَى رَبِّكَ
-‘‘তাবেয়ী হযরত মুজাহিদ (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, যখন তোমরা নামায শেষ করবে তখন তোমাদের প্রয়োজনের প্রতি মনোনিবেশ কর।’’ ২১১
২১১. তাফসীরে ইবনে জারীর, ২৪/৪৯৭ পৃ.
হযরত মুজাহিদ (رضي الله عنه)’র পর হযরত কাতাদাহ (رضي الله عنه)’র তাফসীর বর্ণনা করা হল-
عَنْ قَتَادَةَ، قَوْلُهُ: {فَإِذَا فَرَغْتَ فَانْصَبْ وَإِلَى رَبِّكَ فَارْغَبْ} [الشرح: ৮] قَالَ: أَمَرَهُ إِذَا فَرَغَ مِنْ صَلَاتِهِ أَنْ يُبَالِغَ فِي دُعَائِهِ
-‘‘তাবেয়ী হযরত কাতাদাহ (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, মহান আল্লাহ তায়ালার বানী ‘যখন তোমরা নামায হতে ফারেগ হবে, তখন আল্লাহর প্রতি মনোনিবেশ কর।’ অর্থাৎ যখন নামায শেষ করবে তখন দোয়ার মধ্যে পৌঁছবে।’’ ২১২
টিকা━━━━━━━━━━━━━━━━━━━━
২১২.
ইমাম ইবনে জারীর আত-তবারী, তাফসীরে ইবনে জারীর, ২৪/৪৯৮ পৃ.,
তিনি উক্ত তাবেয়ী থেকে আরেকটি সূত্র এভাবে উল্লেখ করেন-
عَنْ مَعْمَرٍ، عَنْ قَتَادَةَ، فِي قَوْلِهِ: {فَإِذَا فَرَغْتَ} [الشرح: ৭] : مِنْ صَلَاتِكِ {فَانْصَبْ} [الشرح: ৭] : فِي الدُّعَاءِ
-‘‘তাবেয়ী কাতাদা (رحمة الله) এ আয়াতের ব্যাখ্যায় বলেন, আল্লাহর বানী হল, যখন নামায শেষ করবে তখন দোয়ায় মননিবেশ কর।’’ (তবারী, তাফসীরে ইবনে জারীর, ২৪/৪৯৮ পৃ.)
━━━━━━━━━━━━━━━━━━━━
জ্ঞানীদের ভাল করেই জানা আছে যে, তাফসীর শাস্ত্রে হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (رضي الله عنه), হযরত মুজাহিদ (رضي الله عنه) এবং হযরত কাতাদা (رضي الله عنه)’র মর্যাদা অনেক ঊর্ধ্বে। কোন জ্ঞানবানই এসব তাফসীরকে অস্বীকার করতে পারে না। فَانْصَبْ এর ব্যাখ্যায় প্রত্যেক মুফাস্সিরগণই নামাযের পর মুনাজাত করার কথা বলেছেন কিন্তু দেওবন্দী এবং আহলে হাদিসরা একে বিদআত বলে।
ইমাম খাযেন এবং ইমাম বাগভী (رحمة الله) এই আয়াতের ব্যাখ্যায় বলেন
____________________
ইমাম খাযেন এবং ইমাম বাগভী (رحمة الله) এই আয়াতের ব্যাখ্যায় বলেন,
فَإِذا فَرَغْتَ فَانْصَبْ ..... قَالَ ابْنُ عَبَّاسٍ وَقَتَادَةُ وَالضَّحَّاكُ وَمُقَاتِلٌ وَالْكَلْبِيُّ: فَإِذَا فَرَغْتَ مِنَ الصَّلَاةِ الْمَكْتُوبَةِ فَانْصَبْ إِلَى رَبِّكَ فِي الدُّعَاءِ
-‘‘হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (رضي الله عنه), কাতাদাহ, দাহ্হাক, মুকাতিল এবং কালবী (رحمة الله) বলেন, ফরয নামায থেকে মুক্ত হবে, আল্লাহর প্রতি প্রার্থনা কর এবং মুনাজাত করার জন্য তাঁর প্রতি মনোনিবেশ কর, তিনি তোমাদেরকে দান করবেন।’’ ২১৩
২১৩. ইমাম খাযেন, তাফসীরে খাযেন, ৪ খণ্ড ৪৪৩ পৃ., বাগভী, মাআলিমুত তানযীল, ৫ খণ্ড ২৭৬ পৃ.
প্রিয় পাঠকবৃন্দ! উপরোক্ত কুরআনের আয়াত বিজ্ঞ মুফাস্সিরগণের ব্যাখ্যা এবং হুযুর পুর নূর (ﷺ)’র পবিত্র হাদিস দ্বারা প্রকাশ পেল যে, নামাযের পর মুনাজাত করা আল্লাহ পাকের হুকুম। রাসূলে পাক (ﷺ), সাহাবায়ে কেরাম (রাঃ) ২১৪, তাবেয়ীনে এজাম (رضي الله عنه), তাবে-তাবেঈন (رضي الله عنه) এবং সালফে সালেহীন (رضي الله عنه) সকলেই নামাযান্তে মুনাজাত করেছেন।
টিকা━━━━━━━━━━━━━━━━━━━━
২১৪.
❏ হযরত ইরবাদ ইবনে সারিয়া (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত রাসূলে আকরাম (ﷺ) ইরশাদ করেন-
فَعَلَيْكُمْ بِسُنَّتِي وَسُنَّةِ الْخُلَفَاءِ الْمَهْدِيِّينَ الرَّاشِدِينَ
-‘‘তোমরা আমার ও আমার খোলাফায়ে রাশেদীনের সুন্নাতকে আঁকড়ে ধর।’’
(আবু দাউদ, আস্-সুনান, ৪/২০০পৃ. হাদিস নং.৪৬০৭, আলবানীর তাহক্বীক সূত্রে সহিহ।)
❏ তাই বুঝতে পারলাম যে নবীজির খলিফাদের অনুসরণ করাও আমাদের জন্য সুন্নাত। ইসলামের চতুর্থ খলিফার আমল দেখুন-
عَنِ الْمُسْتَظِلِّ، أَنَّ عَلِيًّا رَضِيَ اللهُ عَنْهُ: صَلَّى عَلَى جِنَازَةٍ بَعْدَ مَا صُلِّيَ عَلَيْهَا
-‘‘হযরত মুসতাযিল ইবনে হুসাইন (رحمة الله) বর্ণনা করেন, নিশ্চয়ই আলী (رضي الله عنه) এক জানাযার নামায আদায় করেন অতঃপর আবার তার জন্যে দোয়া করেন।’’ (বায়হাকী, আস-সুনানিল কোবরা, ৪/৭৪পৃ. হাদিস নং.৬৯৯৬)
এ হাদিসের সনদটিও সহীহ। বুঝা গেল জানাযার নামাযের পর দোয়া করা খলিফাদের সুন্নাত।
━━━━━━━━━━━━━━━━━━━━
হাত তুলে দোয়া করা
____________________
হাত তুলে দোয়া করা :২১৫
টিকা━━━━━━━━━━━━━━━━━━━━
২১৫.
❏ ইমাম যায়লাঈ (رحمة الله) বলেন-
وَقَدْ ثَبَتَ أَنَّهُ عليه السلام رَفَعَ يَدَيْهِ فِي الدُّعَاءِ
-‘‘রাসূল (ﷺ) দোয়ায় তাঁর হাত মোবারক উত্তোলন করতেন এ বিষয়টি প্রমাণিত।’’ (ইমাম যায়লাঈ, নাসবুর রায়্যাহ, ৩/৫২ পৃ.)
❏ হিজরী ১১শ শতাব্দির মোজাদ্দেদ, বিশ্ব বিখ্যাত ফকিহ্ আল্লামা মোল্লা আলী ক্বারী (رحمة الله) {ওফাত ১০১৪ হিজরী} উল্লেখ করেন-
أَنَّهُ عَلَيْهِ الصَّلَاةُ وَالسَّلَامُ كَانَ يَرْفَعُ يَدَيْهِ فِي كُلِّ دُعَاءٍ
-“নিশ্চয় আল্লাহর নবী (ﷺ) প্রত্যেক দোয়া দুই হাঁত উঠিয়ে করতেন।” (আল্লামা মোল্লা আলী ক্বারী, মেরকাত শরহে মেসকাত, ৫ম খন্ড, ১৩২ পৃ.)
━━━━━━━━━━━━━━━━━━━━
হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (رضي الله عنه) বর্ণনা করেন, রাসূলে আকরাম (ﷺ) ইরশাদ করেন
عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمَا، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ ﷺ: إِذَا سَأَلْتُمُ اللَّهَ فَاسْأَلُوهُ بِبُطُونِ أَكُفِّكُمْ، وَلَا تَسْأَلُوهُ بِظُهُورِهَا، وَامْسَحُوا بِهَا وُجُوهَكُمْ
‘আল্লাহর কাছে মুনাজাত করার সময় দু’হাত প্রসারিত করেই দোয়া করবে। এরপর দুহাত মুখে মালিশ করবে। আরেক বর্ণনায় এসেছে এরূপ করার কারণে তাতে আল্লাহ তা‘য়ালা বরকত দান করবেন।’’ ২১৬
২১৬. ইমাম আবু নসর মারুজী, কিয়ামুল লায়ল, ৩২৭ পৃ., তাঁর বর্ণনার সনদ সহীহ, ইমাম হাকেম, আল-মুস্তাদরাক, ১/৭১৯ পৃ. হা/১৯৬৮, ইমাম বায়হাকী, আস-সুনানুল কোবরা, ২/৩০১ পৃ. হা/৩১৫১, তাবরানী, মু‘জামুল কাবীর, ১০/৩১৯ পৃ. হা/১০৭৭৯, ইমাম আবু দাউদ, হা/১৪৮৫, বাগভী, শরহে সুন্নাহ, ৫/২০৪ পৃ. হা/১৪০০
ওহাবী আহলে হাদিসদের মুরব্বী মাওলানা সানাউল্লাহ অমৃতসরীও বলেন, হাদিসে পাকে এসেছে,
عَنْ أَنَسٍ، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: إِنَّ رَبَّكُمْ حَيِيٌّ كَرِيمٌ، يَسْتَحْيِي إِذَا رَفَعَ الْعَبْدُ إِلَيْهِ يَدَهُ أَنْ يَرُدَّهَا صِفْرًا حَتَّى يَجْعَلَ فِيهَا خَيْرًا
-“হযরত আনাস (رضي الله عنه) বলেন, রাসূলে করিম (ﷺ) বলেছেন: তোমাদের প্রভূ লজ্জাশীল ও দাতা; তাঁর কোন বান্দা তাঁর কাছে দুই হাঁত উঠালে তা খালি ফিরিয়ে দিতে লজ্জাবোধ করেন। এমনকি এতে সে কল্যাণ নির্ধারিত হয়।” ২১৭
টিকা━━━━━━━━━━━━━━━━━━━━
২১৭. ইমাম আব্দুর রায্যাক, জামেউ মা’মার ইবনে রাশিদ, হাদিস/১৯৬৪৮, আহলে হাদীস, অমৃতসর, ৮ পৃ: ১৬ জুলাই ১৯১৫ ইং।
❏ এ বিষয়ে আরেক হাদিসে রয়েছে-
حَدَّثَنَا يَعْقُوبُ بْنُ مُجَاهِدٍ الْبَصْرِيُّ، ثنا الْمُنْذِرُ بْنُ الْوَلِيدِ الْجَارُودِيُّ، ثنا أَبِي، ثنا شَدَّادٌ أَبُو طَلْحَةَ الرَّاسِبِيُّ، عَنِ الْجُرَيْرِيِّ، عَنْ أَبِي عُثْمَانَ، عَنْ سَلْمَانَ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: مَا رَفَعَ قَوْمٌ أَكُفَّهُمْ إِلَى اللهِ عَزَّ وَجَلَّ يَسْأَلُونَهُ شَيْئًا، إِلَّا كَانَ حَقًّا عَلَى اللهِ أَنْ يَضَعَ فِي أَيْدِيهِمُ الَّذِي سَأَلُوا
-“হজরত সালমান ফারসী (رضي الله عنه) বলেন, রাসূলে পাক (ﷺ) বলেছেন, যখন কোন সম্প্রদায় তাদের হাঁতের অগ্রভাগ আল্লাহর দরবারে কোন কিছু প্রার্থনার জন্য উচু করে, তখন আল্লাহর জন্য আবশ্যক হয়ে যায় যে, যা প্রার্থনা করে তা দেওয়া।”
(ইমাম তাবারানী, মু‘জামুল কাবীরে, হাদিস/৬১৪২; ইমাম সুয়ূতি, জামেউস সগীর, হাদিস/১১৮৫৪; ইমাম সুয়ূতি, জামেউল আহাদিস, হাদিস/২০০৮০; মানাভী, আত্ তায়ছির শরহে জামেউছ ছাগির, ২য় খন্ড, ৩৫০ পৃ:; মুখলিসিয়্যাত, হাদিস/২৮১৫; ইমাম হাইসামী, মাযমাউয-যাওয়াইদ, হা/১৭৩৪১; সান‘আনী, আত্ তানভির শরহে জামেউস সাগির, ৯/৩৯৬ পৃ.)
━━━━━━━━━━━━━━━━━━━━
জানাযার পর রাসূলে আকরাম (ﷺ)-এর দোয়া করা
____________________
জানাযার পর রাসূলে আকরাম (ﷺ)-এর দোয়া করা:
জানাযার পর রাসূলে আকরাম (ﷺ) দোয়া করেছেন। মুহাদ্দিস ইমাম বায়হাকী (رحمة الله) আস-সুনানুল কুবরার মধ্যে একটি রেওয়ায়েত এনেছেন, এর দ্বারা প্রমাণিত হয় যে রাসূলে পাক (ﷺ) জানাযার পর মুনাজাত করেছেন। নিম্নে তা দেয়া হল:
ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল ও ইমাম হাকেম নিশাপুরী (رحمة الله) তাদের হাদিস গ্রন্থে বর্ণনা করেন-
عَنْ إِبْرَاهِيمَ الْهَجَرِيِّ، عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ أَبِي أَوْفَى، قَالَ: تُوُفِّيَتْ بِنْتٌ لَهُ فَتَبِعَهَا عَلَى بَغْلَةٍ يَمْشِي خَلْفَ الْجِنَازَةِ، وَنِسَاءٌ يَرْثِينَهَا، فَقَالَ: يَرْثِينَ، أَوْ لَا يَرْثِينَ، فَإِنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ نَهَى عَنِ الْمَرَاثِي .وَلْتُفِضْ إِحْدَاكُنَّ مِنْ عَبْرَتِهَا مَا شَاءَتْ، ثُمَّ صَلَّى عَلَيْهَا فَكَبَّرَ عَلَيْهَا أَرْبَعًا، ثُمَّ قَامَ بَعْدَ الرَّابِعَةِ قَدْرَ مَا بَيْنَ التَّكْبِيرَتَيْنِ يَسْتَغْفِرُ لَهَا وَيَدْعُو وَقَالَ: كَانَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَصْنَعُ هَكَذَا هَذَا حَدِيثٌ صَحِيحٌ، وَلَمْ يُخَرِّجَاهُ
-‘‘তাবেয়ী হযরত ইব্রাহিম হাজারী (رحمة الله) বলেন, আমি হযরত আব্দুল্লাহ বিন আওফা (رضي الله عنه) যিনি বাইতুর রিদওয়ানে উপস্থিত ছিলেন। তার কন্যার ওফাত হলে তিনি তার মেয়ের কফিনের পিছনে একটি খচ্চরের উপর সাওয়ার হয়ে যাচ্ছেন। তখন মহিলারা কান্না করতে ছিলেন। তিনি তাদেরকে বললেন তোমরা মর্সিয়া করো না, যেহেতু হুযুর (ﷺ) মর্সিয়া থেকে নিষেধ করেছেন। তবে তোমাদের মধ্যে যে কেউ চায় অশ্রু ঝরাতে পারবে। এরপর জানাযার নামায চারটি তাকবীরের মধ্যে সম্পন্ন করলেন। চতুর্থ তাকবীরের পর, দুই তাকবীরের মধ্যেখানের সময় পরিমাণ দোয়া করতেছিলেন এবং তিনি (সাহাবী) বললেন, অনুরূপ হুযুর (ﷺ) জানাযায় করতেন।’’ ২১৮
২১৮. আহমদ : আল-মুসনাদ : ৫/৪৭৪-৪৭৫পৃ. হাদিস : ১৮৩৫১; ইমাম বায্যার : আল-মুসনাদ : ৮/২৮৭পৃ.হাদিস : ৩৩৫৫; ইমাম বায়হাকী : আস-সুনানুল কোবরা : ৪/৭০পৃ. হাদিস : ১৫৮১; ইমাম জালালুদ্দিন সূয়তি : জামিউল জাওয়ামে : ১৪/৪৯৩ পৃ. হাদিস : ১১৫৫৪; সুয়ূতি : জামিউল আহাদিস :১৭/১৪৫-১৪৬পৃ. হাদিসঃ ৯৫০৯, দারুল ফিকর ইলমিয়াহ, বয়রুত, লেবানন। সুয়ূতি : জামিউল আহাদিস : ২০/২২৭ পৃ. হাদিসঃ ১৬৪৬৮; সুয়ূতি : জামিউস সগীর, ২/৫৬০ পৃ. হাদিস: ৯৩৮৫; শায়খ ইউসূফ নাবহানী, ফতহুল কাবীর : ৩/২৬৬পৃ. হাদিস : ১২৮৬৫; আহলে হাদিস নাসিরুদ্দিন আলবানী : সিলসিলাতুল আহাদিসুদ্-দ্বইফাহ, হাদিস নং-৪৭২৪; ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল : আল-মুসনাদ : হাদিস : ১৮৬০২; ইমাম হাকেম নিশাপুরী : আল-মুস্তাদরাক, হাদিস : ১২৭৭; আল্লামা মুত্তাকী হিন্দি : কানযুল উম্মাল, ১৫/৬৫০পৃ. হাদিস নং : ৪২৪৪৬।
বুখারী শরীফের ব্যাখ্যাকার আল্লামা মুহাম্মদ আবদুল্লাহ বিন আবু হামযা মালেকী (رحمة الله) “বাহজাতুন নুফুস” এ একটি হাদীস শরীফ এনেছেন। এর দ্বারাও প্রমাণিত হয় হুযুর পুর নূর (ﷺ) জানাযার পর দোয়া করতেন। হাদিস শরীফ খানা নিম্নরূপ:
قَدْ صَلَّى عَلٰى صَبِىٍّ وَدَعَا لَهُ بِاَنَّ يُعَافِيَهَ اَللهُ مِنْ فِتْنَةِ الْقَبْرِ
-“নিশ্চয় রাসূলে পাক (ﷺ) এক ছোট ছেলের জানাযা পড়ান এরপর তার জন্য দোয়া করেন যার ফলে কবরের পরীক্ষা থেকে আল্লাহ তা‘য়ালা তাকে মুক্তি দান করেন।’’ (বাহজাতুন নুফুস, ১ম খ-, ১২২ পৃ:)
রাসূলে পাক (ﷺ) ইরশাদ করেন-
عَنْ النُّعْمَانِ بْنِ بَشِيرٍ، عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: الدُّعَاءُ هُوَ العِبَادَةُ- وقال الترمذىهَذَا حَدِيثٌ حَسَنٌ صَحِيحٌ قال الحاكم إسناده صحيح
-‘‘হযরত নু‘মান বিন বাশির (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত রাসূল (ﷺ) ইরশাদ করেন : দোয়া হলো একটি ইবাদত।’’ ২১৯
২১৯. ইমাম আবু দাউদ : আস-সুনান : কিতাবুস-সালাত : ২/৭৬ পৃ. হাদিস : ১৪৭৯, ইমাম তিরমিযী : আস-সুনান : ৪/২৭৯ পৃ. হাদিস : ৪০৪৯, ইবনে মাজাহ : আস-সুনান : ২/১২৫ পৃ. হাদিস : ৩৮২৮, ইবনে হিব্বান : আস-সহীহ : ৩/১৭২ পৃ. হাদিস : ৮৯০, ইমাম হাকেম, আল মুস্তাদরাকে : ২/৫০ : হাদিস : ১৮০২, ইমাম জালালুদ্দীন সূয়তী : জামেউস সগীর : ১/৬৫৪ : হাদিস : ৪২৫৫, ইমাম আহমদ : আল মুসনাদ : ৪/২৬৭ পৃ., ইমাম তিরমিযী : আস-সুনান : কিতাবুত তাফসীর : ৫/৩৭৪ পৃ. হাদিস : ৩২৪৭, ইমাম তিরমিযী : আস-সুনান : কিতাবুত তাফসীর : ৫/২১১ পৃ. হাদিস : ২৯৬৯, ইমাম নাসায়ী : আস-সুনানুল কোবরা : ৬/৪৫০ পৃ. হাদিস : ১১৪৬৪, ইমাম আবু ই‘য়ালা : আল’মুজাম : ১/২৬২ পৃ. হাদিস : ৩২৮, ইমাম তায়লসী : আল-মুসনাদ : ১/১৮০ পৃ. হাদিস : ৮০১, খতিব তিবরিযী : মেশকাত : কিতাবুত দাওয়াত : ২/৪১৯ পৃ. হাদিস : ২২৩০
তিনি আরো বলেন-
عَنْ أَنَسِ بْنِ مَالِكٍ ؓ، عَنِ النَّبِيِّ ﷺ قَالَ: الدُّعَاءُ مُخُّ العِبَادَةِ-
-‘‘হযরত আনাস বিন মালিক (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত, রাসূল (ﷺ) ইরশাদ করেন, দোয়া হল ইবাদতের মগজ।“ ২২০
২২০. ইমাম তিরমিযী : আস সুনান : ৫/৪৫৬ : কিতাবুত দাওয়াত, হা/৩৩৭১, ইমাম জালালুদ্দীন সূয়তী : জামেউস সগীর : ১/৬৫৪ : হা/৪২৫৬, সূয়তী, জামেউল আহাদিস : ৪/৩৬০পৃ. হাদিস : ১২১৬০, ইমাম দায়লামী : আল ফিরদাউস : ২/২২৪ পৃ: হাদিস : ৩০৮৭, ইমাম হাকেম তিরমিযী : নাওয়ারিদুল উসূল : ২/১১৩ পৃ:, ইমাম মুনযির : তারগিব আত তারহীব : ২/৩১৭ পৃ: হাদিস : ২৫৩৪, আল্লামা ইবনে রজব : জামেউল উলূম ওয়াল হিকাম : ১/১৯১ পৃ:, খতিব তিবরিযী : মিশকাত : কিতাবুত দাওয়াত : ২/৪১৯ পৃ. হাদিস : ২২৩১, আল্লামা মোল্লা আলী ক্বারী : কিতাবুত দাওয়াত : ৫/১২০ পৃ. হাদিস : ২২৩১,তাবরানী, মু‘জামুল আওসাত, ৩/২৯৩পৃ. হাদিস :৩১৯৬, তাবরানী,কিতাবুদ্-দোয়া, ১/২৪পৃ. হাদিসঃ ৮, ইবনে আছির, জামিউল উসূল, ৯/৫১১পৃ. হা/৭২৩৭, মিয্যী, তুহফাতুল আশরাফ বি মা‘রিফাতুল আতরাফ, ১/৮০পৃ. হাদিসঃ ১৬৫, শায়খ ইউসুফ নাবহানী, ফতহুল কাবীর, ২/১০৯ পৃ. হা/৬৩৮৬, মুত্তাকী হিন্দী, কানযুল উম্মাল, ২/৬২ পৃ. হা/৩১১৪,
সম্মানিত পাঠক! যখন দোয়া করাই ইবাদত এবং ইবাদতের মূল হল দোয়া। ২২১
২২১. এ ব্যাপারে হযরত আবু হুরায়রা (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত, أشْرَفُ الْعِبَادَةِ الدُّعاءُ -‘‘রাসুল (ﷺ) ইরশাদ ফরমান শ্রেষ্ঠ ইবাদাত হলো দোয়া।’’ (ইমাম বুখারী, আদাবুল মুফরাদাত, ১/৬৬ পৃ. হা/৭১৩, মুত্তাকী হিন্দী, কানযুল উম্মাল, ২/৬২ পৃ. হা/৩১১৫, শায়খ ইউসুফ নাবহানী, ফতহুল কাবীর, ১/১৭৭ পৃ. হা/১৮৭১, সালিম জার্রার, মুসনাদে জা‘মে, ১৭/৭১৩পৃ. হা/১৪৩৬, আলবানী, দ্বঈফু আদাবুল মুফরাদ, হা/৭১৩)
পসুতরাং নামাজের পর যারা মুনাজাত করে না তারা অনেক বরকত হতে বঞ্চিত। বরং দোয়া করা হতে যারা বাঁধা প্রদান করে তারা আল্লাহ এবং তাঁর প্রিয় হাবীব (ﷺ)’র দরবারে অপরাধী।
হাত পা চুম্বন করা
____________________
❏ বিষয় নং-১৭: হাত পা চুম্বন করা:
দেওবন্দীদের এবং আহলে হাদিসদের মুরব্বীরা হাত পা চুম্বন করাকে নাযায়েজ এবং শিরক বলে থাকে। কিন্তু আহলে সুন্নাত ওয়াল জাম‘আত একে জায়েয এবং মুসতাহসান বলে থাকেন। কেননা হাদিসে পাকে আছে সাহাবায়ে কেরাম (رضي الله عنه) রাসূলে কারিম (ﷺ)’র হাত ও পা মুবারকে চুম্বন করতেন এবং নিজেরাও পরস্পরের সাক্ষাতে এরূপ করতেন।
হুযূর পুর নূর (ﷺ)’র সম্মানার্থে সায়িদ্যাতুননিসা ফাতেমা (رضي الله عنه)’র আমল
____________________
হুযূর পুর নূর (ﷺ)’র সম্মানার্থে সায়িদ্যাতুননিসা ফাতেমা (رضي الله عنه)’র আমল:
ইমামুল মুহাদ্দেসীন ইমাম বুখারী (رحمة الله), ইমাম আবু দাউদ (রহ), ইমাম খতীব তিবরিযি (رحمة الله), সারকারে গাউসে পাক (رحمة الله), শায়খ আবদুল হক মুহাদ্দেসে দেহলভী (رحمة الله) এবং শাহ ওয়ালিউল্লাহ (رحمة الله) বর্ণনা করেন যে, হযরত উম্মুল মু‘মিনীন মা আয়েশা সিদ্দিকাহ (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলে পাক (ﷺ) যখন মা ফাতেমা (رضي الله عنه)’র ঘরে তাশরীফ আসতেন। তখন তাঁর সম্মানার্থে দাঁড়িয়ে যেতেন।
فَأَخَذَتْ بِيَدِهِ فَقَبَّلَتْهُ وَأَجْلَسَتْهُ فِي مجلسِها
-‘‘অতঃপর তাঁর হাত মুবারকে চুম্বন করে নিজের জায়গায় বসাতেন। আর হযরত ফাতেমা (رضي الله عنه) যখন রাসূল (ﷺ)’র দরবারে আসতেন, তখন রাসূল (ﷺ) দাঁড়িয়ে তাঁর হাতে চুমু দিতেন এবং নিজ স্থানে বসাতেন।’’ ২২২
২২২. ইমাম বুখারী, আদাবুল মুফরাদ, ১৩৮ পৃ., ইমাম আবু দাউদ, আস-সুনান, ৪/৩৩৫ পৃ. হা/৫২১৭, খতিব তিবরিযি, মিশকাত শরীফ, (ভারতীয় ছাপা ৪০২ পৃ.) ৩/১৩২৯ পৃ. হা/৪৬৮৯, শাহ ওয়ালী উল্লাহ দেহলভী, হুজ্জাতুল্লাহিল বালিগা ২য় খণ্ড ১৪৮ পৃ., শায়খ আব্দুল হক মুহাদ্দীসে দেহলভী, মাদারেজুন নবুওয়াত, (ফার্সী) ২য় খণ্ড ৫৪২ পৃ., শায়খ আব্দুল কাদের জিলানী, গুনিয়াতুত তালেবীন, ৩১ পৃ., ইমাম বায়হাকী, আস-সুনানুল কোবরা, ৭/১৬২ পৃ. হা/১৩৫৭৮ এবং আল-আদাব, ১/৯৭ পৃ. হা/২৪১ এবং শুয়াবুল ঈমান, ১১/২৭০ পৃ. হা/৮৫২৯
সায়্যিদুনা আবদুল্লাহ ইবনে উমর (رضي الله عنه)’র আকিদা
____________________
সায়্যিদুনা আবদুল্লাহ ইবনে উমর (رضي الله عنه)’র আকিদা: ২২৩
হযরত আবদুল্লাহ ইবনে উমর (رضي الله عنه) বলেন,
فَقَبَّلْنَا يَده
-‘‘আমরা রাসূল (ﷺ)’র হাত মুবারক চুম্বন করেছি।’’ ২২৪
টিকা━━━━━━━━━━━━━━━━━━━━
২২৩. হযরত আবদুল্লাহ ইবনে উমর (رضي الله عنه) সুন্নত পালনে খুবই মনোযোগী ছিলেন। (সিরাতে বুখারী, ১ম খণ্ড, আবদুস সালাম মুবারকপুরী ওহাবী) দেওবন্দীদের বিগদ্ধ লেখক “রশাদ” বলেন, তিনি এমন পর্যায়ের সুন্নতের অনুসারী ছিলেন যে, রাসূল (ﷺ) যেখানে অবতরণ এবং নামায পড়তেন। তিনিও সেখানে নামায পড়তেন। তিনি মুসলমানদের ইমাম এবং প্রসিদ্ধ মুফতি ছিলেন। তিনি রাসূল (ﷺ)’র অনেক হাদীস বর্ণনা করেন। (মাহে নামা রশাদ শিয়ালকোট, ৫২ পৃষ্ঠা, জুলাই ১৯৭৩ ইং)
২২৪. ইমাম আবু দাউদ, আস-সুনান, তৃতীয় খণ্ড, ৪৬ পৃ. হা/২৬৪৭ এবং ৪/৩৫৬ পৃ. হা/৫২২৩, ইমাম বুখারী, আদাবুল মুফরাদ, ৫৪১ পৃ. হা/৯৭২, ইমাম নববী, কিতাবুল আযকার, ২৬২ পৃ. হা/৭৫২, ইমাম ইবনে আবি শায়বাহ, আল-মুসান্নাফ, ৬/৫৪১ পৃ. হা/৩৩৬৮৬, ইমাম বাগভী, শরহে সুন্নাহ, ১১/৬৯ পৃ. হা/২৭০৮, খতিব তিবরিযি, মিশকাত, ২/১১৫৬ পৃ. হা/৩৯৫৮, ইমাম বায়হাকী, আল-আদাব, ১/৯৭ পৃ. হা/২২৬, ইমাম বায়হাকী, আস-সুনানুল কোবরা, ৭/১৬২ পৃ. হা/১৩৫৮৪ এবং শুয়াবুল ঈমান, ১১/২৯৩ পৃ. হা/৮৫৫৯
━━━━━━━━━━o━━━━━━━━━━
প্রিয় পাঠক! ওহাবীদের মুজাদ্দিদ মুহাম্মদ ইবনে আবদুল ওহহাব নজদীর ছেলে আবদুল্লাহও এই বর্ণনাটি তার ফতোয়ার মধ্যে এনেছেন। (মাজমুয়ায়ে রাসায়েল ওয়া মাসায়েল, ১ম খ-, ৮২ পৃ.)
হযরত আশবাহ (رضي الله عنه)’র আকিদা
____________________
হযরত আশবাহ (رضي الله عنه)’র আকিদা:
হযরত মা’জিদাতুল আবদী (رضي الله عنه) বর্ণনা করেন যে, হযরত আশবাহ (رضي الله عنه) একদা রাসূল (ﷺ)’র দরবারে হাজির হয়ে
حَتى أَخذ بِيد النَّبِيِّ ﷺ فَقبَلهَا
তাঁর হাত মুবারক ধরে চুম্বন করেন।’ তখন রাসূল (ﷺ) ইরশাদ করলেন,
إنَّ فِيك لَخُلقَين يُحبُهما اللَّهُ وَرَسُولُهُ
-‘‘তোমার মধ্যে এমন দুটি অভ্যাস আছে, যা আল্লাহ ও তাঁর হাবীবের কাছে প্রিয়।’’ ২২৫
২২৫. ইমাম বুখারী, আদাবুল মুফরাদ, ৩০৩ পৃ. হা/৫৮৭, মুসনাদে আবি ই‘য়ালা, ১২/২৪৩ পৃ. হা/৬৮৪৯
প্রিয় পাঠক! উপরোক্ত হাদীস শরীফ দ্বারা প্রমাণিত হল হাত চুম্বন করা মন্দও নয়, শিরকও নয়, বরং উত্তম কাজ। স্বয়ং রাসূল (ﷺ) একে উত্তম বলেছেন।
হযরত জারে‘ঈন (رضي الله عنه)’র আকিদা
____________________
হযরত জারে‘ঈন (رضي الله عنه)’র আকিদা:
ইমাম আবূ দাউদ (رحمة الله) সংকলন করেন-
عَنْ زَارِعٍ وَكَانَ فِي وَفْدِ عَبْدِ الْقَيْسِ قَالَ: لَمَّا قَدِمْنَا الْمَدِينَةَ فَجَعَلْنَا نَتَبَادَرُ مِنْ رَوَاحِلِنَا، فَنُقَبِّلُ يَدَ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَرِجْلَهُ،
-‘‘হযরত যারে‘ঈন (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত আছে, যিনি আবদুল কায়েসের প্রতিনিধিভুক্ত ছিলেন। তিনি বলেন, যখন আমরা মদীনা মনোওয়ারায় আসলাম তখন আমরা নিজ নিজ বাহন থেকে তাড়াতাড়ি অবতরণ করতে লাগলাম। অতঃপর আমরা হুযূর (ﷺ) এর পবিত্র হাত ও পা মুবারককে চুমু দিয়েছিলাম।’’ ২২৬
২২৬. ইমাম বুখারী : তারীখুল কাবীর : ৪/৪৪৭ পৃ. : হা/১৪৯৩, ইমাম বুখারী : আদাবুল মুফরাদাত : ২৩৮ পৃ: হা/৯৭৫, ইমাম ইবনে আবি শায়বা : আল মুসান্নাফ : ৮/৫৬২ পৃ., ইমাম আবু দাউদ : আস সুনান : ৪/৩৫৭ পৃ. : কিতাবুল আদাব : হা/৫২২৫, ইমাম তাবরানী : মুজামুল কাবীর : ৫/২৭৫ পৃ. : হা/৫৩১৩, ইমাম তাবরানী : মুজামুল আওসাত : ১/১৩৩ পৃ. : হা/৪১৮, ইমাম বায়হাকী : আস সুনানে কোবরা : ৭/১০২ পৃ. : হা/১৩৩৬৫, ইমাম বায়হাকী : শুয়াবুল ঈমান : ১১/২৯৪ পৃ., হা/৮৫৬০, ইমাম শায়বানী : আহাদিসুল মাসানী : ৩/৩০৪ পৃ. : হা/১৬৮৪, ইবনে হাজার আসকালানী : তালখীসুল হুবাইর : ৪/৯৩ পৃ. : হা/১৮৩০, ইমাম ইবনে হাজার আসকালানী : আদ-দিরায়্যাত ফি তাখরীজ আহাদিসুল হিদায়াত : ২/২৩২ পৃ. হাদিস: ৬৯১, ইমাম খতিব তিবরিযী : মিশকাত: ৩/১৩২৮পৃ. হা/৪৬৮৮ (মুসাফা ও মু‘আনাকা অধ্যায়), ইমাম মিয্যী : তাহজীবুল কামাল : ৭/২৬৬ পৃ. রাবী: ১৯৪৬, ইমাম যায়লাঈ : নাসীমুর রিয়াদ্ব : ২/২৩২.পৃ., ইমাম আবি আছেম, আস্-সুন্নাহ, হা/১৯০, ইমাম শায়খ আব্দুল হক মুহাদ্দিস দেহলভী : আশিআতুল লুমআত, ৩/৫০৮ পৃ., হা/৪৬৮৮, মোবারকপুরী : তুহফাতুল আহওয়াজী : ৭/৫৬২ পৃ., আল্লামা ইবনে হাজার আসকালানী : ফতহুল বারী : ৮/৮৫ পৃ., ইমাম বায়হাকী : দালায়েলুল নবুওয়াত : ৫/৩২৭ পৃ.
হযরত ছাফওয়ান বিন আসসাল (رضي الله عنه)
____________________
হযরত ছাফওয়ান বিন আসসাল (رضي الله عنه):
ইমাম তিরমিযি (رحمة الله) সংকলন করেন-
عَنْ صَفْوَانَ بْنِ عَسَّالٍ ؓ، أَنَّ قَوْمًا مِنَ الْيَهُودِ قَبَّلُوا يَدَ النَّبِيِّ ﷺ وَرِجْلَيْهِ
-‘‘হযরত সাফওয়ান বিন আস্সালাম (رضي الله عنه) বর্ণনা করেছেন, নিশ্চয় ইয়াহুদীদের একটি জামাত (দল) রাসূল (ﷺ) এর হাত ও পা মোবারকে চুমু খেয়েছেন।’’ ২২৭
২২৭. ইমাম ইবনে মাজাহ : আস্-সুনান : ২/১২২১পৃ. : হা/৩৭০৫, খতিব তিবরিযী : মিশকাতুল মাসাবীহ : ১/৩২ পৃ. হা/৫৮, ইমাম তিরমিযী : আস্-সুনান, ৫/৭২ পৃ. হা/২৭৩৩, ইমাম নাসায়ী : আস-সুনান : ৭/১১১ পৃ. হা/৪০৭৮, ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল : আল-মুসনাদ : ৪/২৩৯ পৃ., আবি শায়বাহ, আল-মুসান্নাফ, ১/১২৭ পৃ. হাদিস:৩, আবি শায়বাহ, আল-মুসান্নাফ, ৫/২৯২ পৃ. হাদিস:২৬২০৭, যায়লাঈ, নাসিবুর রায়্যাহ, ৪/২৫৮পৃ. তিনি তিরমিযির হাসান, সহীহ বলা মতকে মেনে নিয়েছেন, ইমাম হাকেম নিশাপুরী : আল-মুস্তাদরাক : কিতাবুল ঈমান : হা/২০, ইমাম ইবনে হাজার আসকালানী, আল-দেরায়া ফি তাখরীজে হেদায়া, ২/২৩২ পৃ., শায়খ মাহমুদ মুহাম্মদ খলিল, আল-মুসনাদিল জামে, ৭/৫০৪ পৃ., আলবানী, দ্বঈফু সুনানে ইবনে মাজাহ, হা/৩৭০৫, তিনি বলেন, সনদটি দ্বঈফ। ইমাম নববী, কিতাবুল আযকার, ২য় খণ্ড, ২৭১ পৃ., শরফে ফিকহুল আকবর, ২২ পৃ., শায়খ ইউসুফ নাবহানী, হুজ্জাতুল্লাহু আলাল আলামীন, ১১৮ পৃ.
হযরত উসামা (رضي الله عنه)’র আক্বিদা
____________________
হযরত উসামা (رضي الله عنه)’র আক্বিদা:
শায়খুল মুহাদ্দেসীন আল্লামা আবদুল হক মুহাদ্দেস দেহলভী (رحمة الله) ২২৮
তিনি তাঁর অনাবদ্য গ্রন্থ “মাদারেজুন নবুওয়াতে” বর্ণনা করেন যে, হযরত উসামা (رضي الله عنه) ১১ রবিউল আউয়াল শরীফ রাসূল (ﷺ)’র দরবারে হাজির হন। তার সৈন্যদল প্রেরণের অনুমতির জন্য তিনি এসে রাসূল (ﷺ) সামনে দাঁড়িয়ে নিজ মাথা অবনমিত করে রাসূল (ﷺ) মাথা মুবারক এবং হাত মুবারক চুম্বন করেন।
(মাদারেজুন নবুওয়াত, ২য় খ- ৪৮৬ পৃ.)
২২৮. ওহাবীদের বরণ্য মওলবী ইবরাহীম মীর শিয়ালকুটি বলেন যে, শায়খ আবদুল হক মুহাদ্দিস দেহলভী (رحمة الله) থেকে আমি অধমের ইলম অর্জন, হাদিসের খেদমত, প্রকাশ্য অপ্রকাশ্য কামালিয়তের ফলে তাঁর সম্পর্কে উত্তম আকিদা পোষণ করি। আমার কাছে তাঁর অনেক কিতাব আছে, এর থেকে আমি উপকৃত হই। (তারীখে আহলে হাদীস, ৩৯৮ পৃ.)
হযরত ওয়াযে বিন আমের (رضي الله عنه)’র আকিদা
____________________
হযরত ওয়াযে বিন আমের (رضي الله عنه)’র আকিদা:
হযরত ওয়াযে বিন আমের (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমরা রাসূল (ﷺ)’র নিকট উপস্থিত ছিলাম। কিন্তু ইতোপূর্বে আমরা রাসূল (ﷺ) কে দেখিনি। (আমরা তাঁর কাছে অপরিচিত ছিলাম), তখন কেউ একজন বললেন,
ذَاكَ رَسُولُ اللَّهِ، فَأَخَذْنَا بِيَدَيْهِ وَرِجْلَيْهِ نُقَبِّلُهَا
-‘‘ইনিই রাসূল (ﷺ), তখন আমরা তাঁর মুবারক হাত ও পা ধরে চুম্বন করলাম।’’ ২২৯
২২৯. ইমাম বুখারী, আদাবুল মুফরাদ, ৩৩৯ পৃ. হা/৯৭৫
ইমাম জালালুদ্দিন সুয়ূতি (رحمة الله)
____________________
ইমাম জালালুদ্দিন সুয়ূতি (رحمة الله) তাঁর অনাবদ্য গ্রন্থ “খাসায়েসুল কুবরা” গ্রন্থে বলেন, হযরত আবদুল্লাহ ইবনে উমর (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত আছে, রাসূল (ﷺ)’র নিকট একদা এক মহিলা তার স্বামী সম্পর্কে অভিযোগ করে।
রাসূল (ﷺ) তাকে জিজ্ঞাসা করলেন, তুমি কী তোমার স্বামীর উপর অসন্তুষ্ট? সে বলল, হ্যাঁ। রাসূল (ﷺ) বললেন, তোমরা পরস্পরের মাথা নিকটবর্তী কর। এরপর রাসূল (ﷺ) তাদের মাথা এমনভাবে মিলিত করলেন যে, স্ত্রীর কপাল স্বামীর কপালের সাথে মিলে গেল। এরপর রাসূল (ﷺ) তাদের মধ্যকার হৃদ্যতা এবং মুহাব্বতের জন্য দোয়া করলেন। এর কিছুদিন পর মহিলাটি হুযুর (ﷺ)’র দরবারে এসে হুযুর (ﷺ)’র হাত মুবারকে চুম্বন করলেন। হুযুর (ﷺ) তাকে জিজ্ঞাসা করলেন, তোমার স্বামী এখন তোমার সাথে কিরূপ আচরণ করেন? উত্তরে মহিলাটি বললেন, তিনি বাচ্চা ছেলের মতও নয়, বৃদ্ধের মতও নয়, বরং একজন ছোট বাচ্চার চেয়েও তিনি আমাকে মুহাব্বত করেন।
হুযুর (ﷺ) তখন বললেন:
أشهد أَنِّي رَسُول الله
-‘‘আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আমি আল্লাহর রাসূল।’’ তখন হযরত উমর (رضي الله عنه) বললেন,
أشهد أَنِّي رَسُول الله
আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আপনি আল্লাহর রাসূল। ২৩০
২৩০.ইমাম সুয়ূতি, খাছায়েসুল কুবরা, ২/২৯১ পৃ., ইমাম আবু নুয়াইম ইস্পাহানী, দালায়েলুন নবুওয়াত, ১৬৫ পৃ., ইমাম মুকরিযি, ইমতাউল আসমা, ১২/৬৫ পৃ., ইবনে কাসির, মু‘যিজাতুন্নবী (ﷺ), ১/২০৭ পৃ.
‘আপনার জবান মুবারক হতে যা বের হয় তাই হয়ে থাকে’
হযরত মায়িদাতুন আসরী (رضي الله عنه)’র আক্বিদা
____________________
হযরত মায়িদাতুন আসরী (رضي الله عنه)’র আক্বিদা :
ইমাম বুখারী (رحمة الله) তাঁর অনাবদ্য কিতাব “তারীখুল কাবীরে” বলেন, হযরত আবদুল্লাহ বিন সা’দ আবদী (رضي الله عنه) বলেন, আমি হযরত মাজিদাতুল আসরী (رضي الله عنه) কে একথা বলতে শুনেছি, তিনি বলেন,
أَتَينا النَّبيَّ صَلى اللَّهُ عَلَيه وسَلم، فَنَزَلتُ إِلَيهِ فَقَبَّلتُ يَدَهُ.
-‘‘একদা আমরা রাসূল (ﷺ)’র দরবারে এসে তাঁর নিকটে গিয়ে হাত মুবারক চুমু খেলাম।’’ ২৩১
টিকা━━━━━━━━━━━━━━━━━━━━
২৩১.
ইমাম বুখারী, আত-তারিখুল কাবীর, ৮ম খণ্ড, ৩০ পৃ. ক্রমিক.২০৪৮,
❏ ইমাম ইবনে হাজার আসকালানী (رحمة الله) উল্লেখ করেন-
عن أبي بزة، قال: دخلت مع مولاي عبد اللَّه بن السائب على النبي صلى اللَّه عليه وسلّم فقبّلت يده ورأسه ورجله.
-“হযরত আবি বাযাতা (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে সায়িব (رضي الله عنه) এর গোলামের সাথে রাসূল (ﷺ) এর কাছে যাই, অতঃপর আমি রাসূল (ﷺ) এর হাত, মাথা এবং পা মুবারকে চুমু খাই।”
-‘‘ইবনে হাজার, ইসাবা ফি তামিয়িযিস সাহাবা, ৭/৩৪ পৃ. ক্রমিক. ৯৬১৯, ইবনে আবি আছির, আসাদুল গাবাহ, ৬/২৯ পৃ. ক্রমিক. ৫৭২৮
━━━━━━━━━━o━━━━━━━━━━
দেওবন্দী এবং তাবলীগীদের মাওলানা ইদরীস কান্দলবী তার কিতাব “হায়াতে সাহাবা” এর মধ্যে বলেন, হযরত যায়েদ বিন ছাবেত (رضي الله عنه) বর্ণনা করেন যে, হযরত সাদ বিন ইবাদাহ (رضي الله عنه) তাঁর ছেলেকে নিয়ে হুযুর (ﷺ)’র দরবারে এসে সালাম জানালেন। হুযুর (ﷺ) বললেন, এখানে বস, এখানে বস। তাকে ডানে বসালেন এবং বললেন, আনসারের জন্য মারহাবা, আনসারের জন্য মারহাবা। হযরত সাদ বিন উবাদাহ (رضي الله عنه) তাঁর ছাহেবজাদাকে হুযুর (ﷺ)’র সামনে দাঁড় করালেন। হুযুর (ﷺ) তাকে বসতে বললে ছাহেবজাদা বসে পড়লেন। তিনি বললেন, কাছে এসো। তখন তিনি আরেকটু কাছে এসে বললেন এবং হাত মুবারক চুমু খেলেন। এসময় রাসূল (ﷺ) বললেন, আমি আনসারদেও (নানীর বংশের দিকথেকে) আর আনসারের ছেলে আমার কাছে। এটা শুনে হযরত সাদ (رضي الله عنه) বললেন, আল্লাহ তা‘য়ালা আপনার মর্যাদা অক্ষুন্ন রাখুন। যেমনিভাবে আপনি আমাদেরকে সম্মানিত করেছেন হুযূর পাক (ﷺ) এর পূর্বে বলেছেন যে, আমি তোমাদেরকে সম্মানিত করবো, তোমরা মানুষদেরকে সম্মান দ্বারা দয়া করবে। নিঃসন্দেহে আমার পর তোমরা নিজেদের উপর প্রাধান্য দেখবে। তোমরা তখন ধর্য ধারণ করতে থাকবে শেষে আমার নিকট হাউজে কাউসার পাবে। ২৩২
২৩২. মাওলানা ইদরীস কান্দলবী, হায়াতুস সাহাবা, ২য় খণ্ড, ৪৩০ পৃ.
রাসূল (ﷺ)’র বাণী
____________________
রাসূল (ﷺ)’র বাণী :
বুখারী শরীফের ব্যাখ্যাকার আল্লামা বদরুদ্দীন আইনী (رحمة الله) একটি হাদীস বর্ণনা করেন-
عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ، أَن رَجُلًا أَتَى النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَقَالَ: إِنِّي نَذَرْتُ إِنْ فَتْحَ اللَّهُ عَزَّ وَجَلَّ عَلَيْكُمْ مَكَّةَ أَنْ آتِيَ الْبَيْتَ فَأُقَبِّلَ أَسْفَلَ الْأُسْكُفَّةِ، فَقَالَ: قَبِّلْ قَدَمَيْ أُمِّكَ وَقَدْ وَفَّيْتَ نَذْرَكَ
-‘‘একদা এক ব্যক্তি রাসূল (ﷺ)’র নিকট এসে বললেন, আমি মানত করেছি যে, আল্লাহ তা‘য়ালা আপনাকে মক্কা শরীফের বিজয় দান করলে, আমি বায়তুল্লাহর চৌকট চুম্বন করব। নবী করিম (ﷺ) তাকে বললেন, তুমি ঘরে গিয়ে মায়ের পা চুম্বন কর, তোমার মানত পূর্ণ হবে।’’ ২৩৩
২৩৩. ইমাম আবুল কাসেম তামাম বিন বাজলী দামেস্কী, আল-ফাওয়াইদ, ১/৩০০ পৃ. হা/৭৫৭, আল্লামা আইনী, উমদাতুলকারী, ২২/৮২পৃ.
হযরত ছাফওয়ান বিন আস্সাল (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত আছে, এক ইহুদী তার বন্ধুকে বলল, চলো আমরা কুরআনের নিম্নোক্ত আয়াত (সূরা বানী ইসরাঈল, আয়াত নং-১০১) সম্পর্কে নবী (ﷺ) কে জিজ্ঞাসা করব-
وَلَقَدْ آتَيْنَا مُوسَى تِسْعَ آيَاتٍ بَيِّنَاتٍ
তারা রাসূল (ﷺ) দরবারে এসে প্রশ্ন করলো। রাসূলে পাক (ﷺ) তাদের উত্তর দিলেন এবং তাদেরকে বললেন- আল্লাহর সাথে শিরক করবে না, অপচয় করবে না, যেনা করবে না, এমন কোন ব্যক্তিকে হত্যা করবে না, যাকে আল্লাহ হারাম করেছেন, কিন্তু বৈধ হলে ভিন্ন কথা, যাদু করবে না, সুদ খাবে না। কোন বড় ব্যক্তিকে নিয়ে এমন যালেমের কাছে যাবে না, যে তাকে হত্যা করবে। কাউকে অপবাদ দিবে না, সতী সাধবী নারীর কাছে সপ্তাহের প্রতিদিন অতিক্রম করবে না। এগুলো শুনে তারা
فَقَبَّلَا يَدَيْهِ وَرِجْلَيْهِ، وَقَالَا: نَشْهَدُ أَنَّكَ نَبِيٌّ.
-‘‘রাসূল (ﷺ)’র হাত ও পা মুবারক চুম্বন করে বলতে লাগল আমরা সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আপনি আল্লাহর রাসূল।’’ ২৩৫
২৩৫. ইমাম আহমদ, আল-মুসনাদ, ৩০/১৩ পৃ. হা/১৮০৯২, ইমাম যিয়া মুকাদ্দাসী, আহাদিসিল মুখতার, ৮/২৯ পৃ. হা/১৮, তিনি বলেন- إِسْنَاده صَحِيح -‘‘এ হাদিসটির সনদ সহীহ।’’ ইবনে হাজার আসকালানী, ফতহুল বারী, ১১/৫৭ পৃ., ইবনে কাসির, জামেউল মাসানীদ ওয়াল সুনান, ৪/৩০৩ পৃ. হা/৫৩২৪, শায়খ ইউসুফ নাবহানী, হুজ্জাতুল্লাহে আলাল আলামীন, ১১৭-১১৮ পৃ., আযিমাবাদী, আওনুল মা‘বুদ, ১৪/৮৯ পৃ., মোবারকপুরী, তুহফাতুল আহওয়াজি, ৭/৪৩৭ পৃ., আহলে হাদিস শাইখ ইবনে উসাইমীন, শরহে রিয়াযুস সালেহীন, ৪/৪৪৮ পৃ. হা/৮৮৯-এর আলোচনায় লিখেন- رواه الترمذي وغيره بأسانيد صحيحة -‘‘এ হাদিসটি ইমাম তিরমিযি (رحمة الله)সহ আরও অনেকে সংকলন করেন, সনদটি সহীহ।’’ ইমাম ইবনে আছির, জামেউল উসূল, ১১/৩৮১ পৃ. হা/৮৯২৯, ইমাম ইবনে সালেহ শামী, সবলুল হুদা ওয়ার রাশাদ, ৭/১৫০ পৃ.
হযরত আদ্দাস (رضي الله عنه)’র আকিদা
____________________
হযরত আদ্দাস (رضي الله عنه)’র আকিদা:
মুহাদ্দিস ইমাম ইবনে জাওযী (رحمة الله) আদাসের ঘটনা বর্ণনাপূর্বক বলেন-
فَأَكَبَّ عَدَّاسٌ عَلَى رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يُقَبِّلُ رَأْسَهُ وَيَدَيْهِ وَقَدَمَيْهِ قَالَ: يَقُولُ ابْنَا رَبِيعَةَ أَحَدُهُمَا لِصَاحِبِهِ: أَمَّا غُلَامُكَ فَقَدْ أَفْسَدَهُ عَلَيْكَ. فَلَمَّا جَاءَهُمَا عَدَّاسٌ، قَالَا لَهُ: وَيْلَكَ يَا عدّاس! مَا لَك تُقَبِّلُ رَأْسَ هَذَا الرَّجُلِ وَيَدَيْهِ وَقَدَمَيْهِ؟
আদ্দাস হুযুর (ﷺ)’র মাথা মুবারক, হাত ও পা মুবারক ঝুকে চুম্বন করেন, তখন হুযুর (ﷺ) ইরশাদ করেন, এর কাছে রবীয়ার দুই সন্তানের কোন একজন স্বীয় বন্ধুকে বলেছে যে, এরূপই বুঝা যায় যে, এই মহান ব্যক্তিত্বের সামনে তোমার গোলামের আকল শেষ হয়ে গেছে। আদ্দাস যখন তাদের সামনে আসলেন তখন বলল, আদ্দাস! আফসোস! তুমি এই ব্যক্তির হাত-পা চুম্বন করলে? তখন আদ্দাস বললেন-
يَا سَيِّدِي مَا فِي الْأَرْضِ شَيْءٌ خَيْرٌ مِنْ هَذَا، لَقَدْ أَخْبَرَنِي بِأَمْرِ مَا يَعْلَمُهُ إلَّا نَبِيٌّ
-‘‘হে আমার মুনিব! পৃথিবীতে তাঁর মতো কোন ব্যক্তিত্ব নেই, এই মহান স্বত্ত্বা আমাকে এমন সংবাদ দিয়েছেন যা কেবল নবীগণই জানেন।’’ ২৩৬
২৩৬. ইমাম ইবনে জাওযী, কিতাবুল ওয়াফা বিআহওয়ালিল মুস্তফা, ১ম খণ্ড, ২১৪ পৃ., ইমাম ইবনে হিশাম, সিরাতে ইবনে হিশাম, ১/৪২১ পৃ., ইমাম সুহাইলী, রাওযুল উনূক, ৪/২৯ পৃ., ইমাম মুকরিযি, ইমতাউল আসমা, ৮/৩০৭ পৃ., ইবনে কাসির, সিরাতে নববিয়্যাহ, ২/১৫১ পৃ., ইবনে সালেহ শামী, সবলুল হুদা ওয়ার রাশাদ, ২/৪৩৯ পৃ., আল্লামা বুরহানুদ্দীন হালাবী, সিরাতে হালাবিয়্যাহ, ১/৫০২ পৃ., ইমাম দিয়ার বকরী, তারিখুল খামীস, ১/৩০৩ পৃ., ইবনে আছীর, আসাদুল গাবাহ, ৪/৪ পৃ. ক্রমিক. ৩৬০৩
হযরত জাবের (رضي الله عنه)’র আক্বিদা
____________________
হযরত জাবের (رضي الله عنه)’র আক্বিদা :
আল্লামা আবদুর রহমান জামী (رحمة الله) তাঁর অনাবদ্য কিতাব “শাওয়াহেদুন নবুওয়াত” গ্রন্থে বলেন, হযরত ইমাম মুহাম্মদ বাকের (رحمة الله) বলেন, আমি হযরত জাবের (رضي الله عنه) এর নিকট এসে সালাম করলাম যখন তাঁর দৃষ্টিশক্তি চলে গেছে। আমার সালামের উত্তর দিয়ে তিনি আমার পরিচয় জানতে চাইলেন। আমি বললাম মুহাম্মদ বিন আলী বিন হোসাইন (رضي الله عنه)। তখন জাবের (رضي الله عنه) বললেন, হে প্রিয় বৎস! একটু কাছে আসুন। আমি কাছে গেলে তিনি আমার হাত-পা চুম্বন করলেন। এরপর বললেন, হুযুর করিম (ﷺ) আপনাকে সালাম দিয়েছেন। আমি বললাম, হুযুর (ﷺ) এর উপরও সালাত সালাম বর্ষিত হোক।
এরপর আমি বললাম, আপনি এরূপ কেন করলেন? তিনি বললেন, একদা আমি হুযুর পুর নুর (ﷺ) এর দরবারে বসা ছিলাম। তখন তিনি আমাকে বললেন, হয়তো তোমার সাথে আমার বংশধরের সাক্ষাৎ হবে। যাঁর নাম মুহাম্মদ বিন হোসাইন (رضي الله عنه)। যাকে আল্লাহ তা‘য়ালা নূর এবং হিকমত দান করেছেন। তাকে আমার সালাম বলবে। (আল্লামা আবদুর রহমান জামী, শাওয়াহেদুন নবুওয়াত, ১৮১ পৃ.)
উল্লেখিত হাদীসগুলো দ্বারা প্রমাণিত হল সাহাবায়ে কেরাম (رضي الله عنه) হুযুর পুর নূর (ﷺ) এর হাত ও পা মুবারক চুম্বন করতেন। তখন আপনাদের সামনে এমন কতগুলো হাদীস বর্ণনা করবো, যেগুলোর মধ্যে খোলাফায়ে রাশেদীন এবং অন্যান্য সাহাবাগণ (رضي الله عنه) একে অপরের হাত-পা চুম্বন করতেন। ২৩৭
টিকা━━━━━━━━━━━━━━━━━━━━
২৩৭.
❏ অনেক মুহাদ্দিস সংকলন করেন-
حَدِيثُ ابْنِ عُمَرَ فِي قِصَّةٍ قَالَ: فَدَنَوْنَا مِنْ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَقَبَّلْنَا يَدَهُ وَرِجْلَهُ رَوَاهُ أَبُو دَاوُد.
-“হযরত ইবনে উমর (رضي الله عنه) এর রেওয়াতের মধ্যে লম্বা কাহিনীর পরে উল্লেখ আছে, তিনি বলেন: অতঃপর তাঁরা রাসূলে পাক (ﷺ) এর নিকটবর্তী হলেন এবং প্রিয় নবীজি (ﷺ) এর হস্ত ও পদচুম্বন করলেন। ইমাম আবু দাউদ (رحمة الله) এই হাদিস বর্ণনা করেছেন।” (আল্লামা ইবনুল মুলাক্কিন: বাদরুল মুনীর, ৯ম খন্ড, ৪৮ পৃ:; ইমাম ইবনে হাজার আসকালানী: তালখিসুল হুবাইর, ৪র্থ খন্ড, ২৪৬ পৃ:)।
খোলাফায়ে রাশেদীন (رضي الله عنه)-এর সুন্নাত
____________________
খোলাফায়ে রাশেদীন (رضي الله عنه)-এর সুন্নাত:
আমিরুল মুমেনীন ফিল হাদীস ইমাম বুখারী (رحمة الله) এর মহান ব্যক্তিত্ব সম্পর্কে সকলেই অবগত।
হযরত উমর (رضي الله عنه)এবং আবু উবায়দা বিন র্জারাহ (رضي الله عنه)-এর আক্বিদা:
হুজ্জাতুল ইসলাম ইমাম গাযযালী (رحمة الله) এমন এক ব্যক্তিত্ব যার গবেষণার নির্ভরযোগ্যতার ব্যাপারে সকলেই একমত। তিনি বলেন-
أَبُو عبيدة بْن الجراح بوسه برد ست أَمِيرَ الْمُؤْمِنِينَ عُمَرُ بْنُ الْخَطَّابِ ؓ
-‘‘হযরত আবু উবাদাহ বিন র্যারাহ (رضي الله عنه) হযরত উমর ফারুক (رضي الله عنه) এর হতে মুবারকে চুম্বন করেছেন।’’ ২৩৮
২৩৮. ইমাম গায্যালী, কিমিয়ায়ে সা‘আদাত, ফার্সী ১৯৪ পৃ: শায়খ শিহাবুদ্দীন সাহারওয়ারর্দী, আওয়ারিফুল মা‘রিফ, ১৬০ পৃ.
এই বর্ণনাটি দেবন্দীদের অন্যতম ব্যক্তিত্ব মুহাম্মদ বিন আব্দুল ওহ্হাব নাজদীর ছেলে আবদুল্লাহু তার স্বীয় ফতোয়ার মধ্যে এনেছেন। (মাজমুয়ায়ে বি রাসায়েল মাসায়েলে নজদীয়া, ১ম খ-, ৮২২ পৃ.)
হযরত যায়েদ বিন সাবেত (رضي الله عنه) এবং হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (رضي الله عنه)’র আক্বিদা:
শায়খুল ইসলাম আবুল কাসেম আবদুল করিম হাওয়ায়িনুল কুশাইরী (رحمة الله), শায়খ আবদুল হক মুহাদ্দেস দেহলভী (رحمة الله), শায়খুল ইসলাম ইবনে হাজার মাক্কী, আল্লামা ইয়াফায়ী (رحمة الله) গণ তাদের নিজ স্ব-স্ব নির্ভরযোগ্য কিতাবে বর্ণনা করেছেন যে, একদা হযরত যায়েদ বিন ছাবেত (رضي الله عنه) এক বাহনে আরোহন করছিলেন, তখন তিনি হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (رضي الله عنه) কে বললেন, হে প্রিয় রাসূল (ﷺ) এর চাচাতো ভাই! একটু থামুন! অর্থাৎ লাগম ধরবেন না। তখন হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (رضي الله عنه) বললেন, আমাকে আলেমদেরকে সম্মান করার জন্য বলা হয়েছে। এটা শুনে-
فأخذ زيد كفه ويقبلها
-‘‘হযরত যায়েদ বিন সাবেত (رضي الله عنه) তাঁর হাতে চুমু করেন।’’ এরপর তিনি বললেন,
هَكَذَا أمرنَا أَن نَفْعل بِأَهْل بَيت نَبينَا ﷺ
-‘‘রাসূল (ﷺ) বলেছেন আমরা যেন তাঁর আহলে বায়তকে সম্মান করি।’’ ২৩৯
২৩৯. ইমাম ইবনে আব্দুল বার্, জামেউল ইলমে ওয়া ফাদ্বলিহী, ১/৫১৪ পৃ. হা/৮৩২, ইমাম দিনওয়ারী, মাজালিস, ৪/১৪৬ পৃ. হা/১৩১৪, রিসালায়ে কজীরিয়্যাহ ২৬ পৃ: শায়খ আব্দুল হক মুহাদ্দিসে দেহলভী, মাদারিজুন্নবু (ফার্সী), ২য় খন্ড, ৬৩০ পৃ. ইবনে হাজার মক্কী, আস-সাওয়াইকুল মুহরিকা, ২/৬৮১ পৃ., ইমাম ইয়াফী, মিরাতুল জিনান, ১/৯৯ পৃ., মুত্তাকী হিন্দী, কানযুল উম্মাল, ১৩/৩৯৬ পৃ. হা/৩৭০৬১, ইমাম ইবনে হাজার, ইসাবা ফি তামিযিস সাহাবা, ৪/১২৬ পৃ., ইবনে আসাকীর তারিখে দামেস্ক, ১৯/৩২৬ পৃ., ইমাম কাযি আয়্যায, শিফা শরীফ, ২/১১০ পৃ., ইবনে সালেহ শামী, সবলুল হুদা ওয়ার রাশাদ, ১১/১৪ পৃ., মোল্লা আলী ক্বারী, শরহে শিফা, ২/৮৬ পৃ.
ওহাবীদের মুজাদ্দেদ মুহাম্মদ বিন আবদুল ওহ্হাব নজদীর ছেলে আবদুল্লাহও এই বর্ণনাটি তাঁর ফতোয়ার মধ্যে এনেছেন। ২৪০
২৪০. মারফাত বিনতে কামিল, ইহতিসাব মুহাম্মদ বিন আব্দুল ওহ্হাব নাজদী, ৪০০ পৃ., মাজমুআতুর রসায়েলে মাসায়েল, ১ম খণ্ড, ৮২ পৃ.
হযরত আনাস (رضي الله عنه) এবং ছাবেত (رحمة الله)’র আকিদা :
তাবেয়ী হযরত ছাবেত বুনানী (رحمة الله) হযরত আনাস (رضي الله عنه) কে জিজ্ঞাসা করলেন,
قَالَ ثَابِتٌ لِأَنَسٍ: أَمَسَسْتَ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بِيَدِكَ؟
‘আপনি কী রাসূল (ﷺ) এর হাত মুবারক চুম্বন করেছেন?’
قَالَ: نَعَمْ، فَقَبَّلَهَا
-‘‘তিনি বললেন, হ্যাঁ, চুম্বন করেছি, অতঃপর হযরত সাবেত বুনানী (رحمة الله) খাদেমুর রাসূল (ﷺ) হযরত আনাস (رضي الله عنه) এর হাতে চুমু খেলেন।’’ ২৪১
২৪১. ইমাম বুখারী, আদাবুল মুফরাদ, ১/৩৩৮ পৃ. হা/৯৭৪, তানবীরুল কুলুব, ২০০ পৃ.)
হযরত সালমাহ বিন আকওয়া (رضي الله عنه) এবং আবদুল্লাহ বিন রাজীন (رضي الله عنه)’র আকিদা :
হযরত আবদুল্লাহ বিন রাজীন (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, একদা আমরা রবদা নামক স্থান থেকে ফিরছিলাম আমাদের জানা ছিল যে, হযরত সালমাহ বিন আকওয়া (رضي الله عنه) এর নিবাস এখানে, আমরা তাঁর কাছে গিয়ে সালাম করলাম।
فَأَخْرَجَ يَدَيْهِ فَقَالَ: بَايَعْتُ بِهَاتَيْنِ نَبِيَّ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ. فَأَخْرَجَ كَفًّا لَهُ ضَخْمَةً كَأَنَّهَا كَفُّ بَعِيرٍ فَقُمْنَا إليها فقبلناها.
-‘‘তখন তিনি তাঁর হাত মুবারক বের করে বললেন, এই হাতেই আমি রাসূল (ﷺ) এর হাতে বায়াত গ্রহণ করেছি। অতঃপর তিনি তাঁর হস্তদ্বয় বের করেন, যেগুলো উঠের বাচ্চার চেয়ে কোমল ছিল। আমরা দাঁড়িয়ে তা চুম্বন করলাম।’’ ২৪২
২৪২. ইমাম বুখারী, আদাবুল মুফরাদ, ৫৪১ পৃ. হা/৯৭৩, তাবীরুল কুলুব, ২০০ পৃ.
সাহাবায়ে কিরাম (رضي الله عنه)-এর আকিদা
____________________
সাহাবায়ে কিরাম (رضي الله عنه)-এর আকিদা :
ফকীহ আবু লাইস সমরকন্দী (رحمة الله) বলেন, নবী করিম (ﷺ)-এর সম্মানিত সাহাবীগণ (رضي الله عنه)’র ব্যাপারে বর্ণিত আছে যে, তারা যখন কোন সফর থেকে আসতেন একে অপরের সাথে কুলাকুলি করতেন-
وَيُقَبِّلُ بَعْضُهُمْ بَعْضًا
-‘‘এবং একে অপরের হাতে চুম্বন করতেন।’’ ২৪৩
২৪৩. বুসতানুল আরেফীন এর হাশিরায়ে তানবীহুল গাফেলীন ১৬০ পৃ. মিশর
হযরত আল্লামা নুরুদ্দীন ইবনে হাজার হাইসামী (رحمة الله) এক বর্ণনায় বলেন,
وَعَنْ جَمِيلَةَ أُمِّ وَلَدِ أَنَسِ بْنِ مَالِكٍ قَالَتْ: كَانَ ثَابِتٌ إِذَا أَتَى أَنَسًا قَالَ: يَا جَارِيَةُ، هَاتِي لِي طِيبًا أَمْسَحُ يَدِي ; فَإِنَّ ابْنَ أُمِّ ثَابِتٍ لَا يَرْضَى حَتَّى يُقَبِّلَ يَدِي.
-‘‘হযরত আনাস (رضي الله عنه) এর মাতা হযরত জামিলাহ (رضي الله عنه) বর্ণনা করেন হযরত ছাবেত (رضي الله عنه) এর আমল ছিল যে, হযরত আনাস (رضي الله عنه) যখন তাঁর কাছে আসতেন তখন তিনি তাঁর বাঁদীকে বলতেন যে, আমার জন্য খুশবু নিয়ে আস, আমি হাতে লাগাব। কেননা উম্মে ছাবেত (رضي الله عنه)-এর ছেলে যতক্ষণ না আমার হাতে চুমু না দেয় খুশবু হয় না।’’ ২৪৪
টিকা━━━━━━━━━━━━━━━━━━━━
২৪৪. হাইসামী, মাযমাউয যাওয়ায়েদ, ১ম খণ্ড, ১৩০ পৃ. হা/৫৪৬ এবং মাকাসিদুল উ‘লা, ১/৬৮ পৃ. হা/৮৭, ইমাম আবু ই‘য়ালা, আল-মুসনাদ, ৬/২১২ পৃ. হা/৩৪৯৩,
❏ ইমাম হাইসামী (رحمة الله) এ হাদিস প্রসঙ্গে লিখেছেন-
رَوَاهُ أَبُو يَعْلَى، وَجَمِيلَةُ هَذِهِ لَمْ أَرَ مَنْ تَرْجَمَهَا.
-‘‘হাদিসটি ইমাম আবু ই‘য়ালা (رحمة الله) বর্ণনা করেছেন, এ হাদিসের বর্ণনাকারী জামিলা এর জীবনী আমি দেখিনি।’’ (হাইসামী, মাযমাউয যাওয়ায়েদ, ১ম খণ্ড, ১৩০ পৃ. হা/৫৪৬)
❏ অথচ ইবনে হাজার আসকালানী (رحمة الله) উল্লেখ করেন-
عاصم بن عمر بن الخطاب القرشي العدوي
أمّه جميلة بنت ثابت بن أبي الأفلح الأنصاري.
-‘‘তাবেয়ী আসেম বিন উমর বিন খাত্তাব কুরশী উদবী (رضي الله عنه) যার মা হলেন উম্মে জামিলা বিনতে সাবিত বিন আবি আফলাহ আনসারী (رضي الله عنه)।’’ (ইবনে হাজার আসকালানী, ইসাবা ফি তামিযিস সাহাবা, ৫/৩ পৃ. ক্রমিক. ৬১৬৯)
━━━━━━━━━━o━━━━━━━━━━
সম্মানিত পাঠক! নির্ভরযোগ্য হাদীসের কিতাব হতে প্রমাণিত হল যে, হাত-পা চুম্বন করা সুন্নাতে কওলী, ফেলী এবং তাকরীরী। এটার উপর সিজদা, শিরক, বিদআত এবং হারামের ফতোয়া দেয়া মূলত অজ্ঞতা। দেওবন্দী এবং আহলে হাদীসের অনুসারীরা একে হারাম, বিদআত এবং শিরক বলে, কারণ তারা আহলে সুন্নাত ওয়াল জাম‘আত নয়।
❏ বিষয় নং-১৮: হাত পা চুম্বন করা সিজদা নয়
____________________
❏ বিষয় নং-১৮: হাত পা চুম্বন করা সিজদা নয়
দেওবন্দী ও আহলে হাদিসরা হাত-পা চুম্বন করাকে সিজদা বলে থাকে। আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতের অনুসারীরা হাত-পা চুম্বন করাকে সিজদা বলে না। কারণ, রাসূলে পাক (ﷺ) এর পবিত্র শরীয়তে সিজদার সংজ্ঞায় বলা হয়েছে যে, সিজদার সময় জমিনে শরীরের সাতটি অঙ্গ লাগবে। যেমন হাদিসে পাকের কিতাবে এর স্পষ্ট বর্ণনা রয়েছে। ইমামুল মুহাদ্দেসীন ইমাম বুখারী (رحمة الله) সহীহ বুখারী শরীফে بَابُ السُّجُودِ عَلَى سَبْعَةِ أَعْظُمٍ “সিজদার সময় সাতটি অঙ্গ জমিনে স্পর্শ করবে” নামে বাবে হযরত ইবনে আব্বাস (رضي الله عنه) হতে বর্ণনা করেন যে,
عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ، أُمِرَ النَّبِيُّ صلّى الله عليه وسلم أَنْ يَسْجُدَ عَلَى سَبْعَةِ أَعْضَاءٍ
-‘‘রাসূল পাক (ﷺ) আমাদেরকে সাতটি অঙ্গ দ্বারা সিজদা করতে আদেশ করেছেন।’’ ২৪৫
টিকা━━━━━━━━━━━━━━━━━━━━
২৪৫.
সহীহ বুখারী, ১/১৬২ পৃ: হা/৮০৯, সহীহ মুসলিম, ১/৩৫৪ পৃ. হা/৪৯০, ইমাম তাবরানী, মু‘জামুল আওসাত, ৫/৮২ পৃ. হা/৪৭৩৭ এবং মু‘জামুল কাবীর, ১১/৯ পৃ. হা/১০৮৬০, সহীহ ইবনে খুজায়মা, হা/৬৩৪, সুনানে দারেমী, ২/৮৩২ পৃ. হা/১৩৫৭, ইমাম আহমদ, আল-মুসনাদ, ৪/৩২০ পৃ. হা/২৫২৭, সুনানে নাসাঈ, ২/২০৮ পৃ. হা/১০৯৩, সুনানে তিরমিযি, হা/২৭৩,
❏ ইমাম তাবরানী (رحمة الله)-এর এক বর্ণনায় রয়েছে-
وَعَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ - صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ : السُّجُودُ عَلَى سَبْعَةِ أَعْضَاءٍ
-‘‘হযরত আবু হুরায়রা (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূল পাক (ﷺ) ইরশাদ করেন, সিজদা সাতটি অঙ্গ দ্বারা হয়ে থাকে।’’ (ইমাম তাবরানী, হা/, হাইসামী, মাযমাউয যাওয়ায়েদ, ২য় খণ্ড, ২৪ পৃ. হা/২৭৪৯)
❏ ইমাম আবু ই‘য়ালা (رحمة الله) সংকলন করেন-
عَنْ سَعْدِ بْنِ أَبِي وَقَّاصٍ قَالَ: أُمِرَ الْعَبْدُ أَنْ يَسْجُدَ عَلَى سَبْعَةِ آرَابٍ
-“হযরত সা’দ বিন আবি ওয়াক্কাস (رضي الله عنه) বলেন, বান্দাকে সাতটি অঙ্গ দ্বারা সেজদা করতে আদেশ করা হয়েছে।”
-‘‘ হাইসামী, মাযমাউয যাওয়ায়েদ, ২য় খণ্ড, ২৪ পৃ. হা/২৭৪৮)
━━━━━━━━━━o━━━━━━━━━━
ইমাম আবু ঈসা তিরমিযী (رحمة الله) হযরত আব্বাস (رضي الله عنه) থেকে বর্ণনা করেন, তিনি রাসূল (ﷺ) কে বলতে শুনেছেন যে, রাসূল (ﷺ) ইরশাদ করেছেন যে,
أَنَّهُ سَمِعَ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُولُ: إِذَا سَجَدَ العَبْدُ سَجَدَ مَعَهُ سَبْعَةُ آرَابٍ: وَجْهُهُ، وَكَفَّاهُ، وَرُكْبَتَاهُ، وَقَدْمَاهُ.
-‘‘বান্দা যখন সিজদা করে তখন তার সাথে সাতটি অঙ্গ তথা কপাল, দুই হাত, দু’হাঁটু এবং দু’পা সিজদা করে।’’ ২৪৬
টিকা━━━━━━━━━━━━━━━━━━━━
২৪৬.
ইমাম তিরমিযী, আস-সুনান, ১ম খণ্ড, ৩৬০ পৃ: হা/২৭২, ইমাম যায়লাঈ, নাসবুর রাইয়্যা ফি তাখরীজে আহাদিসিল হিদায়াহ, ৮০ পৃ:, সহীহ ইবনে খুজায়মা, ১/৩৪৪ পৃ. হা/৬৩১, সুনানে ইবনে মাযাহ, হা/৮৮৫, ইমাম আহমদ, আল-মুসনাদ, ৩/২৮৯ পৃ. হা/১৭৬৪, বায়হাকী, আস-সুনানুল কোবরা, ২/১৪৬ পৃ. হা/২৬৪১, সুনানে নাসাঈ, ২/২১০ পৃ. হা/১০৯৯, সুনানে আবি দাউদ, ১/২৩৫ পৃ. হা/৮৯১,
❏ ইমাম তিরমিযি (رحمة الله) বলেন-
حَدِيثُ العَبَّاسِ حَدِيثٌ حَسَنٌ صَحِيحٌ. وَعَلَيْهِ العَمَلُ عِنْدَ أَهْلِ العِلْمِ.
-‘‘হযরত আব্বাস (رضي الله عنه)-এর হাদিসটি হাসান, সহীহ। আর এর উপরে আহলে ইলমের আমল অব্যাহত রয়েছে।’’
━━━━━━━━━━o━━━━━━━━━━
হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (رضي الله عنه) এবং অন্যান্য সাহাবায়ে কেরাম (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত আছে যে, মহান আল্লাহ রাসূলে পাক (ﷺ) এর প্রতি ওহী করেছেন যে,
أَنْ يَسْجُدَ عَلَى سَبْعَةِ أَعْظُمٍ
-‘‘সাত অঙ্গ দ্বারা সিজদা করার জন্য।’’ ২৪৭
২৪৭. ইমাম তাবরানী, মু‘জামুল আওসাত, ৫/৮২ পৃ. হা/৪৭৩৭, মুসনাদে ইমামে আযম, ১ম খণ্ড ৩৯৬ পৃ., সহীহ ইবনে খুজাইমা, ১/৩৪৪ পৃ. হা/৬৩৩, সুনানে ইবনে মাযাহ, হা/৮৮৩, সুনানে নাসাঈ, হা/১০৯৭
হযরত আবু সাঈদ খুদরী (رضي الله عنه) বর্ণনা করেন যে, রাসূলে পাক সাহেবে লাওলাক (ﷺ) ইরশাদ করেন-
الْإِنْسَانَ يَسْجُدُ عَلَى سَبْعَةِ أَعْظُمٍ جَبْهَتِهِ، وَكَفَّيْهِ، وَرُكْبَتَيْهِ، وَصُدُورِ قَدَمَيْهِ، وَإِذَا جَلَسَ فَلْيَنْصُبْ رِجْلَهُ الْيُمْنَى
-‘‘মানুষ সিজদা করার সময় সাতটি অঙ্গ তথা কপাল, দুই হাত, দু’হাঁটু এবং দু’পায়ের আঙ্গুলী দ্বারা করে থাকে। সে ইচ্ছা করলে তার প্রত্যেক অঙ্গ আলাদা রাখতে পারে।’’ ২৪৮
২৪৮. ইমাম বায়হাকী, আস-সুনানুল কোবরা, ২/১২১ পৃ. হা/২৫৫৩, জামে মাসানিদে ইমামে আযম, ১ম খণ্ড, ১০০ পৃ.
ইমাম জালালুদ্দিন সুয়ূতি (رحمة الله) বর্ণনা করে বলেন-
عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ، أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: السُّجُودُ عَلَى سَبْعَةِ أَعْضَاءٍ: الْيَدَيْنِ، وَالْقَدَمَيْنِ، وَالرُّكْبَتَيْنِ، وَالْجَبْهَةِ
-‘‘সিজদা সাতটি অঙ্গ তথা দু’হাত, দু’পা, দু’হাঁটু এবং কপাল দ্বারা হয়ে থাকে।’’ ২৪৯
২৪৯. ইমাম তাবারানী, মু‘জামুল আওসাত, ২/১৯২ পৃ. হা/১৬৮৭, ইমাম সুয়ূতি, জামেউস সগীর, ১ম খণ্ড, পৃ. হা/৭০৮, ইমাম তাবারানী, মু‘জামুল কাবীর, ১১/৪৫২ পৃ. হা/১২২৮২, ইমাম সুয়ূতি, জামেউল আহাদিস, ১৩/৩৬৫ পৃ. হা/১৩৩১৫
আরেফ বিল্লাহ শায়খ মুহাম্মদ আমিন কারয়ী আলবিলি (رحمة الله) বলেন-
السُّجُوْدُ عَلٰى أَلاعْضَاءٍ السَبْعَةِ التى هِى الْجَبْهَةِ وَالرُّكْبَتَان وَبَاطِنَا الكَفَّيْنِ وَاطْرَافُ بُطُوْنِ أَصَابِعِ الْقَدَمَيْنِ وَانْ يكُوْنَ السُّجُوْدُ عَلٰى أَلاعْضَاءٍ السَبْعَةِ فى ان واحد
-‘‘সাতটি অঙ্গ তথা কপাল, দু’হাঁটু, দু’হাত এবং দু’পায়ের আঙ্গুলীর স্পর্শ দ্বারা হয় আর সাতটি অঙ্গ দ্বারা একই সময়ে হয়ে থাকে।’’ ২৫০
২৫০. তানবীরুল কুলুব কি মুআলিমাতি আল্লামুল গুযুর, ১৩৪ পৃ.
গাইরে মুকাল্লিদের অন্যতম মওলবী সোলাইমান সাহেব মনসুরপুরীও সিজদার সংজ্ঞায় বলেন,
‘‘রাসূল (ﷺ)-’র শরীয়তে সিজদা হল কপাল এবং নাক জমিনে লাগানো অনুরূপভাবে দু’হাত, দু’হাঁটু এবং দু’পায়ের আঙ্গুলীও লাগানো হবে। রান পেট থেকে এবং দু’বাহু থেকে আলাদা থাকবে। এই পরিভাষাকে শরীয়ত বলে।’’ (আল-জামাল আল-কামাল, ৫৩ পৃ.)
উপরোক্ত বর্ণনা দ্বারা দিবালোকের ন্যায় প্রমাণিত হল সাতটি অঙ্গ জমিনে লাগানোর নামই সিজদা, এর কম হলে সিজদা হবে না। কেননা সিজদার জন্য সাতটি অঙ্গ লাগানোই আবশ্যক। এমনকি ৬টি অঙ্গ লাগালে ও সিজদা হবে না। যাই সে নামাজের মধ্যে হোক না কেন। সুতরাং হাত-পা চুম্বন করাকে সিজদা বলা মূলত কমজ্ঞান তথা অজ্ঞতার নামান্তর। কেননা হাত-পা চুম্বনে সাত অঙ্গ লাগানো হয় না। সিজদার মধ্যে নিয়্যতও অর্ন্তভুক্ত। একজন ব্যক্তি তখনই সিজদাকারী হবে যখন তার নিয়্যত থাকবে। যদি কেউ নিয়্যত ছাড়া রূকু, কিয়াম এবং সিজদা করে তবে কী তার ছাওয়ার অর্জন হবে? কখনো না, কারণ সাওয়াবের জন্য নিয়্যত শর্ত। হুযুর পাক (رحمة الله) ইরশাদ করেন-
إِنَّمَا الأَعْمَالُ بِالنِّيَّاتِ
-‘‘আমলের সাওয়াব নিয়্যতের উপর নির্ভর করে।’’২৫১
২৫১. সহীহ বুখারী শরীফ, ১ম খণ্ড ২ পৃ. হা/১
হুযুর পাক (رحمة الله) ইরশাদ করেন-
إِنَّ اللهَ لَا يَنْظُرُ إِلَى أَجْسَادِكُمْ، وَلَا إِلَى صُوَرِكُمْ، وَلَكِنْ يَنْظُرُ إِلَى قُلُوبِكُمْ
-‘‘নিশ্চই আল্লাহ তা‘য়ালা তোমাদের ব্যহ্যিক আকৃতি দেখেন না। তিনি কেবল তোমাদের অন্তর তথা নিয়্যতের দিকে দেখেন।’’ ২৫২
২৫২. সহীহ মুসলিম, ৪/১৯৮৬ পৃ. হা/২৫৬৪, ইমাম মুনযিরী, তাগরীব ওয়াত তারহীব, ১/২৬ পৃ. হা/১৯, খতিব তিবরিযি, মিশকাত, ৩/১৪৬২ পৃ. হা/৫৩১৪
উল্লেখিত হাদিস সমূহ থেকে দিবালোকের ন্যায় প্রমাণিত হল যে, হাত-পা চুম্বন করা সিজদা নয়। রাসূলে পাক ছাহেবে লাওলাক (ﷺ)ও হাত-পা চুম্বন করাকে সিজদা বলেন নি। যেমন ইমামে আহলে সুন্নাত আল্লামা কাজী আয়ায (رحمة الله) তাঁর স্বীয় কিতাব ‘আশ শিফা বি তারিফে হুকুকিল মুস্তফা’র মধ্যে আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতের দু’জন বিখ্যাত ফকীহ আল্লামা ইবনে আবেদীন শামী (رحمة الله) “রদ্দুল মুহতারে, আল্লামা আবু লাইস সমরকন্দী (رحمة الله) তাঁর ‘‘তাম্বীহুল গাফেলীন” এ এবং আল্লামা কারখী (رحمة الله) “তানবীরুল কুলুবে’’ হযরত বুরাইদাহ (رضي الله عنه) এর একটি বর্ণনা এনেছেন, এক ইহুদী এসে রাসূলে পাক (ﷺ) এর কাছে এসে মুজিযা দেখানোর আরয করল। রাসূলে পাক (ﷺ) তাকে বললেন-
قُلْ لِتِلْكَ الشَّجَرَةِ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَدْعُوكِ
-‘‘যাও ওই বৃক্ষ কে গিয়ে বল যে, রাসূল পাক (ﷺ) তোমাকে ডাকছেন। হযরত বুরাইদা (رضي الله عنه) বলেন, এরূপ বলার সাথে সাথে গাছটি ডানে-বামে উপরে-নীচে হেলে দুলতে লাগল, যাতে এর শিকড় উঠে যায়, অতঃপর বৃক্ষটি জমিন থেকে ওঠে রাসূলে পাক (ﷺ)-এর দরবারে এসে-
السَّلَامُ عَلَيْكَ يَا رَسُولَ اللَّهِ..
এভাবে সালাম নিবেদন করলো। লোকটি বললো, বৃক্ষটিকে আবার চলে যেতে বলুন। রাসূল (ﷺ) বলার সাথে সাথেই বৃক্ষটি চলে গেল। এই মুজিযা দেখার পর ইহুদী নিবেদন করে বলল, একটু অনুমতি দেন আমি আপনাকে সিজদা করবো। তখন রাসূলে পাক (ﷺ) ইরশাদ করলেন-
قَالَ: لَوْ أَمَرْتُ أَحَدًا أَنْ يَسْجُدَ لِأَحَدٍ لَأَمَرْتُ الْمَرْأَةَ أَنْ تَسْجُدَ لِزَوْجِهَا.. قَالَ فَأْذَنْ لِي أَنْ أُقَبِّلَ يَدَيْكَ وَرِجْلَيْكَ.. فأذن له.
-‘‘সিজদা করার অনুমতি থাকলে আমি প্রত্যেক মহিলাকে তাদের স্বামীকে সিজদা করার হুকুম করতাম। ইহুদি পুনরায় নিবেদন জানিয়ে বললো, তাহলে হাত-পা মুবারক চুম্বন করার অনুমতি চাইলে তাকে অনুমতি দেয়া হল।’’ ২৫৩
২৫৩. ইমাম কাযি আয়্যায, শিফা শরীফ, ১ম খণ্ড ৫৭৪ পৃ. ইমাম আবু লাইস সমরুকন্দী, তাম্বীহুল গাফেলীন, ২৬২ পৃ: ইবনে আবেদীন শামী, ফাতওয়ায়ে শামী, ৬/৩৮৩ পৃ., ইমাম জুরকানী, শারহুল মাওয়াহেব, ৬/৫১৭ পৃ., মোল্লা আলী ক্বারী, শরহে শিফা, ১/৬১৯ পৃ., ইমাম মাওয়ারিদী, ই‘লামুন নবুয়ত, ১/১৪৫ পৃ.,
দেওবন্দী ওহাবীদের ফতোয়ার অসারতা:
দেওবন্দী ওহাবীরা হাত-পা চুম্বন করাকে সিজদা বলে বেড়ায়। এমনকি শিরকও বলে। কিন্তু উপর্যুক্ত হাদিস শরীফগুলোর মাধ্যমে ওহাবী-দেওবন্দীদের ফতোয়ার অসারতা প্রমাণিত হয়। সাথে সাথে এটাও প্রমাণিত হয় যে, হাত-পা চুম্বন করা সিজদা নয়, এগুলো সিজদা হলে সিজদার মধ্যে গণ্য হতো। তখন রাসূলে পাক (ﷺ) যেভাবে সিজদা করার অনুমতি দেননি, এগুলোর অনুমতিও দিতেন না। বরং এটা বলে দিতেন যে, হাত-পা চুম্বন করাও সিজদা। কিন্তু সিজদার অনুমতি না দেয়া এবং হাত-পা চুম্বন করার অনুমতি দান করাই প্রমাণ করে যে, হাত-পা চুম্বন সিজদা নয়।
বিজ্ঞ পাঠক! এখন দিবালোকের ন্যায় প্রমাণিত হল যে, হাত-পা চুম্বনকে সিজদা বলা দেওবন্দীরা আহলে সুন্নাত ওয়াল জাম‘আত নয়।
❏ বিষয় নং-১৯: মীলাদ শরীফের মাহফিল
____________________
❏ বিষয় নং-১৯: মীলাদ শরীফের মাহফিল
দেওবন্দী এবং আহলে হাদীস পন্থিরা বলে থাকে মিলাদ শরীফের মাহফিল আয়োজন করা, মিলাদ শরীফের উপর খুশি উদযাপন করা বিদআত এবং হারাম। আর আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতের দৃষ্টিতে মিলাদ শরীফ করা জায়েয এবং বরকতের একটি মাধ্যম। মহান আল্লাহ তা‘য়ালা ইরশাদ করেন-
قُلْ بِفَضْلِ اللَّهِ وَبِرَحْمَتِهِ فَبِذَلِكَ فَلْيَفْرَحُوا هُوَ خَيْرٌ مِمَّا يَجْمَعُونَ
-“আপনি বলুন! আল্লাহরই অনুগ্রহ ও তাঁরই দয়া এবং সেটারই উপর তাদের আনন্দ প্রকাশ করা উচিত।’’ (সূরা ইউনুস, আয়াত নং-৫৮)
এসব আয়াত হতে আল্লাহর হুকুম স্পষ্টভাবে বুঝা যাচ্ছে যে, আল্লাহর ফজল, রহমত এবং নিয়ামতের উপর খুশি প্রকাশ করা। ২৫৪
টিকা━━━━━━━━━━━━━━━━━━━━
২৫৪.
❏ এ আয়াতের ব্যাখ্যায় ইমাম জালালুদ্দীন সুয়ূতি (رحمة الله) বলেন-
وَأخرج أَبُو الشَّيْخ عَن ابْن عَبَّاس رَضِي الله عَنْهُمَا فِي الْآيَة قَالَ: فضل الله الْعلم وَرَحمته مُحَمَّد صلى الله عَلَيْهِ وَسلم قَالَ الله تَعَالَى (وَمَا أَرْسَلْنَاك إِلَّا رَحْمَة للْعَالمين) (الْأَنْبِيَاء الْآيَة ১০৭)
-‘‘সাহাবি হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (رضي الله عنه) এ আয়াতের ব্যাখ্যায় বলেন, এখানে আল্লাহর (ফদ্বল) বা অনুগ্রহ দ্বারা ইলমকে এবং (রহমত) দ্বারা নবি করিম (ﷺ) কে বুঝানো হয়েছে। যেমন মহান আল্লাহ ইরশাদ করেন- হে হাবিব আমি আপনাকে সমগ্র বিশ্ব-জগতের জন্য রহমত স্বরূপ প্ররেণ করেছি। (সুরা আম্বিয়া, ১০৭)।’’ (ইমাম সুয়ূতি, তাফসীরে দুররুল মানসূর, ৪/৩৬৭ পৃ. দারুল ফিকর ইলমিয়্যাহ, বয়রুত, লেবানন।)
❏ আওলাদে রাসূল (ﷺ) ইমাম আবু জাফর বাকের (رحمة الله) বলেন, এখানে (ফদ্বল) দ্বারাও নবি পাক (ﷺ) কে উদ্দেশ্য।
(ইমাম সুয়ূতি, তাফসীরে দুররুল মানসূর, ৪/৩৬৭পৃ. দারুল ফিকর ইলমিয়্যাহ, বয়রুত, লেবানন, ইমাম আলূসী, তাফসীরে রুহুল মা‘য়ানী, ১১/১৮৩পৃ. ইমাম তিবরিসী, মাজমাউল বায়ান, ৫/১৭৭-১৭৮পৃ., হাইয়্যান, তাফসীরে বাহারে মুহিত, ৫/১৭১পৃ. ইমাম ইবনে জাওযী, তাফসীরে যাদুল মাইসীর, ৪/৪০পৃ.)
তাই বুঝা গেল মহান রব তা‘য়ালাই তার রাসূল কে পাওয়ার কারণে আনন্দ বা ঈদ উদ্যাপনের নির্দেশ দিয়েছেন।
━━━━━━━━━━o━━━━━━━━━━
এখন এমন কোন মুসলমান নেই যে, রাসূলে পাক (ﷺ) এর উপর আল্লাহ তা‘য়ালার অনুগ্রহ, রহমত এবং নিয়ামত অনুধাবন করতে পারে না। বরং তিনি হচ্ছেন সমস্ত জগতের জন্য রহমত এবং এমন মহান অনুগ্রহ যাঁর প্রেরনের পর খোটা দেয়া হয়েছে। আল্লাহ তা‘য়ালা ইরশাদ করেন:
لَقَدْ مَنَّ اللَّهُ عَلَى الْمُؤْمِنِينَ إِذْ بَعَثَ فِيهِمْ رَسُولًا
-“নিশ্চয় আল্লাহর মহান অনুগ্রহ হয়েছে মুসলমানদের উপর যে, তাদের মধ্যে তাদেরই মধ্য থেকে একজন রাসূল প্রেরণ করেছেন।’’ ২৫৫
২৫৫. সূরা আলে ইমরান, আয়াত নং-১৬৪
তিনি মহান আল্লাহর এমন হাবীব এবং সমস্ত নবীগণ (عليه السلام)’র তামান্না যাঁর আগমনের শুভসংবাদ সমস্ত নবীগণ (عليه السلام) দিয়েছেন। যেমন হযরত ঈসা (عليه السلام) ইরশাদ করেন-
وَمُبَشِّرًا بِرَسُولٍ يَأْتِي مِنْ بَعْدِي اسْمُهُ أَحْمَدُ
-“আমি ঐ মহান সম্মানিত রাসূলের সু-সংবাদ দিচ্ছি যিনি আমার পরে তাশরীফ আনবেন, তাঁর নাম আহমদ।’’ ২৫৬
২৫৬. সূরা সাফ, আয়াত নং-৬
হযরত ঈসা (عليه السلام) আল্লাহ তা‘য়ালার দরবারে প্রার্থনা করে বলেছিলেন-
اللَّهُمَّ رَبَّنَا أَنْزِلْ عَلَيْنَا مَائِدَةً مِنَ السَّمَاءِ تَكُونُ لَنَا عِيدًا لِأَوَّلِنَا وَآخِرِنَا
-“হে আল্লাহ! হে প্রতিপালক! আমাদের উপর আকাশ থেকে একটা খাদ্য-খাঞ্চা অবতরণ করুন, যা আমাদের জন্য ঈদ (আনন্দ-উৎসব) হবে আমাদের পূর্ববর্তী ও পরবর্তী সকলের জন্য।’’ ২৫৭
২৫৭. সূরা মায়েদাহ, আয়াত নং-১১৪
সম্মানিত পাঠকবৃন্দ! যে দিন হযরত ঈসা (عليه السلام) এর উপর মায়েদা অবতীর্ণ হয়েছিল সেদিন তিনি পূর্ববর্তী এবং পরবর্তীদের জন্য খুশির দিন নির্ধারণ করে ছিলেন। সুতরাং যেদিন মাহবুবে খোদা সরকারে দোজাহা বায়েছে কাউমে মক্কা হুযুর (ﷺ) দুনিয়ায় তাশরীফ এনেছেন সেদিন কেন খুশি এবং ঈদের দিন হবে না?
কবি বলেন-
صبح طيبہ ميں ہوئى بٹتا ہے باره نور كا
صدقہ لينے نور كا آيا ہے تارا نور كا
باغ طيبہ ميں سهانا پہول پہولا نور كا
مت جو ہيں بلبليں پڑ هتى ہيں كلمہ نور كا
‘‘আলোর বিতরণ হয়েছে পবিত্র ভোর
তারকারাজি এলো দাক্ষিণ্য নিতে নূর।
পূতবাগ পুষ্পিত, ফোটেছে নূরের ফুল
উন্মাদ:দিশেহারা বাষতে কলি বুলবুল।’’
আল্লাহ তা‘য়ালা তাঁর ফজল, রহমত এবং অনুগ্রহের চর্চা করার হুকুম দিয়েছেন, আর চর্চা তখনই হবে যখন তাঁর উত্তম যিকর করা হবে। তাঁর প্রশংসা মুজিযার আলোচনাই হল যিকরে খাইর তথা উত্তম যিকির। নির্ভরযোগ্য সিরাতের কিতাবসমূহ অধ্যায় অধ্যায়ন করা চাই যেগুলো বিরোদ্ধবাদীদের নিকটও গ্রহণযোগ্য। এ কিতাব গুলোর মধ্যেও হুযূর (ﷺ) এর বেলাদতের বা শুভাগমনের চিত্রাকর্ষক ঘটনা রয়েছে যার মাধ্যমে ঈমান তাজা হয়। মহান আল্লাহ তা‘য়ালা বলেন,
وَذَكِّرْهُمْ بِأَيَّامِ اللهِ
-“এবং তাদেরকে আল্লাহর দিবস সমূহ স্মরণ করিয়ে দাও।’’ (সূরা ইবরাহিম আয়াত নং-৫)
সম্মানিত মুফাসসিরগণ এই আয়াতের أَيَّامِ اللهِ দ্বারা এমন দিনকে বুঝিয়েছেন যেদিনে আল্লাহ তা‘য়ালা তাঁর বান্দার উপর অনুগ্রহ করেছেন। ২৫৮
টিকা━━━━━━━━━━━━━━━━━━━━
২৫৮.
❏ ইমাম তাবারী (رحمة الله) উল্লেখ করেন-
عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ ؓ، عَنْ أُبَيٍّ، عَنِ النَّبِيِّ ﷺ : وَذَكِّرْهُمْ بِأَيَّامِ اللَّهِ قَالَ: نِعَمِ اللَّهِ
-‘‘হযরত ইবনে আব্বাস (رضي الله عنه) তিনি তাঁর পিতা হযরত আব্বাস (رضي الله عنه) হতে বর্ণনা করেন, তিনি নবী করীম (ﷺ) হতে এ আয়াতের তাফসির বর্ণনা করেন, তিনি বলেছেন, তোমরা নেয়ামত প্রাপ্ত দিন সমূহকে স্মরণ কর।’’ (ইবনে জারীর আত-তবারী, তাফসিরে তবারী, ১৩/৫৯৬ পৃ.)
عَنْ مُجَاهِدٍ: {وَذَكِّرْهُمْ بِأَيَّامِ اللهِ} [إبراهيم: ৫] قَالَ: بِأَنْعُمِ اللهِ
❏ -‘‘তাবেয়ী ইমাম মুজাহিদ (رحمة الله) বলেন, এখানে সেই দিনের কথাই বুঝানো হয়েছে যে দিনে মহান রব আমাদেরকে নেয়ামত দান করেছেন।’’ (ইবনে জারীর আত-তবারী, তাফসিরে তবারী, ১৩/৫৯৬ পৃ.)
❏ ইমাম তাবারী (رحمة الله) আরও উল্লেখ করেন-
عَنْ سَعِيدِ بْنِ جُبَيْرٍ: {وَذَكِّرْهُمْ بِأَيَّامِ اللهِ} [إبراهيم: ৫] قَالَ: بِنِعَمِ اللهِ
-‘‘তাবেয়ী সাঈদ ইবনে জুবাইর (رحمة الله) এখানে সেই দিনের কথাই বুঝানো হয়েছে যে দিনে মহান রব আমাদেরকে নেয়ামত দান করেছেন।’’ (তাফসিরে তবারী, ১৩/৫৯৭ পৃ.)
❏ তিনি আরও উল্লেখ করেন-
عَنْ قَتَادَةَ: {وَذَكِّرْهُمْ بِأَيَّامِ اللَّهِ} [إبراهيم: ৫] يَقُولُ: ذَكِّرْهُمْ بِنِعَمِ اللَّهِ عَلَيْهِمْ
-‘‘তাবেয়ী কাতাদা (رحمة الله) এ আয়াতের ব্যাখ্যায় বলেন, তোমরা সে সমস্ত দিবস সমূহকে স্মরণ কর যে দিনে মহান রব তোমাদেরকে নেয়ামত দান করেছেন।।’’ (ইবনে জারীর আত-তবারী, তাফসিরে তবারী, ১৩/৫৯৭ পৃ.)
━━━━━━━━━━o━━━━━━━━━━
সম্মানিত পাঠকবৃন্দ! যেদিন হুযুর পুর নূর (ﷺ) এ দুনিয়ায় তাশরীফ এনেছেন সেদিনও أَيَّامِ اللهِ এর অন্তুর্ভুক্ত। মহান আল্লাহ ইরশাদ করেন-
وَذَكِّرْهُمْ بِأَيَّامِ اللهِ
-“এবং তাদেরকে আল্লাহর দিবস সমূহ স্মরণ করিয়ে দাও। (সূরা ইবরাহীম, আয়াত নং-৫)
সুতরাং এদিনকে স্মরণ করার সবচেয়ে বড় পদ্ধতি মিলাদ মাহফিলের ব্যবস্থা করা, যা মুসলমানরা বড়গুরুত্বের সাথে পালন করে। এ ব্যাপারে ফতোয়াবাজিকারী এবং হারাম আখ্যাদান কারীদের শিক্ষা গ্রহণ করা উচিত।
আল্লামা ইসমাঈল হাক্কী ছাহেবে তাফসিরে রুহুল বায়ান:
তাফসীরে রূহুল বয়ানে আল্লামা ইসমাঈল হাক্কী (رحمة الله) পবিত্র কুরআনের আয়াত مُحَمَّدٌ رَسُولُ اللَّهِ এর তাফসীরে বলেছেন,
ومن تعظيمه عمل المولد إذا لم يكن فيه منكر قال الامام السيوطي قدس سره يستحب لنا اظهار الشكر لمولده عليه السلام
-“কোন ধরনের মন্দ কথা না বলে মিলাদ মাহফিল করা হুযুর (ﷺ) এর তাজিমের অর্ন্তভুক্ত। ইমাম সুয়ূতি (رحمة الله) বলেন, হুযুর (ﷺ)’র বিলাদতের দিনে খুশী উদযাপন করা মুস্তাহাব।’’ (আল্লামা ইসমাঈল হাক্কী, তাফসিরে রুহুল বায়ান, ৯/৫৬ পৃ.)
হাফেজ ইবনে হাজার (رحمة الله) এবং ইমাম সুয়ূতি (رحمة الله) এর আকিদা:
আল্লামা ইসমাঈল হাক্কী (رحمة الله) তাফসীরে রূহুল বয়ানে লিখেন-
وقد استخرج له الحافظ ابن حجر أصلا من السنة وكذا الحافظ السيوطي وردا على الفاكهاني المالكي في قوله ان عمل المولد بدعة مذمومة كما في انسان العيون
-‘‘ইমাম হাফেজ ইবনে হাজার আসকালানী (رحمة الله) এবং ইমাম সুয়ূতি (رحمة الله) মিলাদ শরীফের বৈধতা হাদিস পাক থেকে প্রমাণ করেছেন, আর যারা মিলাদ শরীফকে বিদ‘আত এবং বাঁধা প্রদান করে তাদের আপত্তির জবাব দিয়েছেন।’’ ২৫৯
২৫৯. ইসমাঈল হাক্কী, তাফসীরে রূহুল বয়ান, ৯ খণ্ড, ৫৭ পৃ.
সহীহ বুখারী শরীফ:
ইয়ামুল মুহাদ্দেসীন মুহাম্মদ বিন ইসমাঈল বুখারী (رحمة الله) বলেন:
فَلَمَّا مَاتَ أَبُو لَهَبٍ أُرِيَهُ بَعْضُ أَهْلِهِ بِشَرِّ حِيبَةٍ، قَالَ لَهُ: مَاذَا لَقِيتَ؟ قَالَ أَبُو لَهَبٍ: لَمْ أَلْقَ بَعْدَكُمْ غَيْرَ أَنِّي سُقِيتُ فِي هَذِهِ بِعَتَاقَتِي ثُوَيْبَةَ
-‘‘আবু লাহাব যখন মারা গেল, তার পরিবারের কোন একজন তাকে খারাপ অবস্থায় স্বপ্নে দেখল, জিজ্ঞাসা করল, তোমার কী খবর? উত্তরে সে জানালো তোমাদের থেকে আসার পর থেকে আমার ভাল সংবাদ নেই, কিন্তু দাসী সুওয়াইবাকে আযাদ করার কারণে আমার শাহাদত আঙ্গুল থেকে এ্রক-প্রকার মিষ্টি পানি বের হয়, যে আঙ্গুলের ইশারায় তাকে আযাদ করেছিলাম।’’ ২৬০
২৬০. ইমাম বুখারী, আস-সহীহ, ৭/৯ পৃ. হা/৫১০১, ইবনে হাজার আসকালানী, ফতহুল বারী, ১/৩২১ পৃ.
আল্লামা ইবনে হাজার আসকালানী (رحمة الله) যিনি বুখারী শরীফের ব্যাখ্যাকার। তিনি উপর্যুক্ত হাদিসে পাকের ব্যাখ্যায় বলেন-
وَذَكَرَ السُّهَيْلِيُّ أَنَّ الْعَبَّاسَ قَالَ لَمَّا مَاتَ أَبُو لَهَبٍ رَأَيْتُهُ فِي مَنَامِي بَعْدَ حَوْلٍ فِي شَرِّ حَالٍ فَقَالَ مَا لَقِيتُ بَعْدَكُمْ رَاحَةً إِلَّا أَنَّ الْعَذَابَ يُخَفَّفُ عَنِّي كُلَّ يَوْمِ اثْنَيْنِ قَالَ وَذَلِكَ أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وُلِدَ يَوْمَ الِاثْنَيْنِ وَكَانَتْ ثُوَيْبَةُ بَشَّرَتْ أَبَا لَهَبٍ بِمَوْلِدِهِ فَأَعْتَقَهَا
-‘‘হযরত ইমাম সুহাইলী (رحمة الله) উল্লেখ করেন, হযরত আব্বাস (رضي الله عنه) বর্ণনা করেন আবু লাহাব মারা যাওয়ার এক সাপ্তাহ পর তাকে স্বপ্নে দেখি তার অবস্থা খুবই করুন ছিল। সে বলল, আপনাদের থেকে আসার পর থেকে আমি কোন ধরনের স্বস্তি পাইনি। তবে প্রতি সোমবার আযাব হালকা করা হয়। হযরত আব্বাস (رضي الله عنه) বলেন, এটা এজন্য যে, এদিন হুযুর (ﷺ)’র বেলাদত শরীফ হয়েছে এবং সুওয়াইবা শুভসংবাদ দেয়ার কারণে তাকে আযাদ করা হয়েছিল।’’ ২৬১
২৬১. ইবনে হাজার আসকালানী, ফতহুল বারী, ৯ম খণ্ড ১৪৫ পৃ:
বিজ্ঞ পাঠকবৃন্দ! আবু লাহাব ছিল কাফের। তার বিরুদ্ধে মহান আল্লাহ সূরা লাহাব নাজিল করেছেন। কিন্তু সে রাসূলে পাক (ﷺ) কে ভাতিজা জেনে খুশী হবার কারণে আল্লাহ তা‘য়ালা তাকেও বঞ্চিত করেননি। সুতরাং সে সকল মুসলমান রাসূলে পাক (ﷺ) কে আক্বা মাওলা জেনে তাঁর মিলাদ শরীফে খুশী উদর্যাপন করবে এবং মাহফিলের আয়োজন করবে তবে তাদের অবস্থা কী হবে? নিশ্চয়ই আল্লাহ তা‘য়ালা তাদেরকে অনুগ্রহ দান করবেন।
শেখ সাদী (رحمة الله) এর আকিদা:
আল্লামা শেখ সাদাী (رحمة الله) তার এক পঙতিতে বলেন-
ددستاں راكبا كنى محروم
توكہ بادشناں نظر دارى
‘‘কীরূপ ভাগ্যাহত করবে আপনজন
সতত তাকাও! চেয়ে দেখ দুষমন।’’
শায়খ আবদুল হক মুহাদ্দেস দেহলভী (رحمة الله) এর আক্বিদা:
শায়খ আবদুল হক মুহাদ্দেস দেহলভী (رحمة الله) উপর্যুক্ত হাদিসের ব্যাখ্যায় বলেন,
১৫০ পৃ.
-‘‘যারা মিলাদ শরীফ পালন করেন তাদের জন্য এই ঘটনাটি স্পষ্ট দলিল। রাসূলে পাক (ﷺ) এর বেলাদত শরীফের রাতে খুশি উদযাপন করে এবং টাকা-পয়সা খরচ করে। অর্থাৎ কট্টর-কাফের আবু লাহাব রাসূলে পাক (ﷺ) এর বেলাদত শরীফে খুশি উদযাপন এবং স্বীয় বাঁদীকে মুক্তি দেয়ার কারণে সে অনুগ্রহ প্রাপ্ত হয়েছে। সুতরাং সে সকল মুসলমানদের অবস্থা কী হবে? যারা রাসূলে পাক (ﷺ) এর বেলাদত শরীফে খুশি উদযাপন পূর্বক টাকা পয়সা খরচ করে এবং মিলাদ মাহফিলের আয়োজন করে। তবে শর্ত হচ্ছে উক্ত মিলাদ মাহফিলে যেন কোন বিদআতী এবং হারামখোর না থাকে।’’ (মাদারিজুন নবুয়ত, (ফার্সী) ২য় খ-, ২৪ পৃ:) শায়খ আবদুল হক মুহাদ্দেস দেহলভী (رحمة الله) তাঁর “মাসাবাতা বিস সুন্নাহ” কিতাবে বলেন,
وَلَا زَالَ اَهْلُ الْاِسْلَامِ يَحْفَلُوْنَ بِشَهُرِ مَوَلِدِه ﷺ
-‘‘মুসলমানগণ স্বয়ং হুযুর (ﷺ) এর সময়েও মিলাদ মাহফিল করতেন।’’ (শায়খ আবদুল হক মুহাদ্দিসে দেহলভী, মাসাবাতা বিস সুন্নাহ, ৪০ পৃ:)
মুহাদ্দেস ইবনে জাযরী (رحمة الله) এর আকিদা:
হাফেজুল হাদীস আল্লামা আবুল খায়র শামসুদ্দিন মুহাম্মদ বিন মুহাম্মদ জাযরী (رحمة الله) উক্ত হাদিসের ব্যাখ্যা বলেন-
فَمَا بَالَ حَالِ الْمُسْلِمِ الْمُوَحِدِ مِنْ أُمَّتِه عَلَيْهِ السَّلَامُ يَسُرُّ بِمَوْلِدِه، وَيَبْذُلَ مَا تَّصَلَ إِلَيْهِ قُدْرَتَه فِي مُحَبَّتِه صَلَّى اَللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، لَعَمُرِيُ إِنَّمَا يَكُوْنَ جَزَاؤُه مِنَ اَللهِ الْكَرِيْمِ أَنْ يُدْخِلَه بِفَضْلِهِ الْعَمِيْمِ جَنَّاتِ النَّعِيْمِ.
-“সুতরাং কট্টর পন্থি কাফের আবু লাহাব হুযুর পুর নূর (ﷺ)-এর বেলাদত শরীফে খুশী উদযাপন করার কারণে নিয়ামাত প্রাপ্ত হয়। তবে ওইসব মুসলমানদের অবস্থা কী হবে? যারা হুযুর (ﷺ) এর বেলাদত শরীফে খুশী উদযাপন পূর্বক নিজেদের সামর্থনুযায়ী টাকা পয়সা খরচ করে। আমি আমার প্রাণের শপথ করে বলছি যে, আল্লাহ তা‘য়ালা তাকে নিজ অনুগ্রহে জান্নাতুন নাঈমে প্রবেশ করাবেন।’’ ২৬২
২৬২. ইমাম কাস্তাল্লানী, আল-মাওয়াহিবুল্লাদুনিয়্যাহ, ১/৮৯ পৃ., ইমাম জুরকানী, শারহুল মাওয়াহেব, ১/২৬১ পৃ.
খোলাফায়ে রাশেদীনের (رضي الله عنه) এর আকিদা:
শায়খুল ইসলাম আল্লামা ইবনে হাজার মক্কী (رحمة الله) তাঁর অনাবদ্য কিতাব ‘আন-নিমাতুল কোবরা আলাল আলামা কি মাওলিদী সায়্যিদি ওলদে আদাম’ গ্রন্থে মিলাদ শরীফের ফজিলতের উপর খোলাফায়ে রাশেদীন (رضي الله عنه)’র বানীসমূহ এনেছেন নিম্নের এসব বর্ণনা আলোচনা করা হল:
قَالَ اَبُوْ بَكْرِ الْصِّدِّيْق ؓ مَنْ اَنْفَقَ دِرْ هَمًاعَلٰى قِرَاءَةِ مَوْلِدِ النَّبِىَ ﷺ كَانَ رَفِيْقِى فِى الْجَنَّةِ-
-‘‘হযরত সায়্যিদুনা আবু বকর (رضي الله عنه) ইরশাদ করেন, যে ব্যক্তি হুযুর (ﷺ) এর মিলাদ শরীফে এক দিরহাম পরিমান ব্যয় করবে জান্নাতে সে আমার সাথেই থাকবে।’’ ২৬৩
২৬৩. ইমাম ইবনে হাজার হাইতামী, আন-নিমাতুল কোবরা আলাল আলামা কি মাওলিদী সায়্যিদি ওলদে আদাম, ৭ পৃ., ইস্তাম্বুল, তুরস্ক হতে প্রকাশিত।
قَالَ عُمَرَ ؓ مَنْ عَظَّمَ مَوْلِدَ النَّبِىِّ ﷺ فَقَدْ اَحْيَا الْاِسْلَامَ-
-‘‘হযরত সায়্যিদুনা উমর ফারুক (رضي الله عنه) ইরশাদ করেন, যে ব্যক্তি অত্যন্ত জাঁকজমকভাবে ঈদে মিলাদুন্নবী (ﷺ) পালন করে সে যেন ইসলামকে জীবনদান করলো।’’ ২৬৪
২৬৪. ইমাম ইবনে হাজার হাইতামী, আন-নিমাতুল কোবরা আলাল আলামা কি মাওলিদী সায়্যিদি ওলদে আদাম, ৭ পৃ.
قَالَ عُثْمَانُ ؓ مَنْ اَنْفَقَ دِرْهَمًا عَلٰى قِرَاءَةَ مَوْلِدَ النَّبِىِّ ﷺ فَكَانَّمَا شَهِدَ غَزْوَةَ بَدْرٍ وَ حُنَيْنٍ
-‘‘হযরত সায়্যিদুনা উসমান (رضي الله عنه) ইরশাদ করেন, যে ব্যক্তি রাসূলে পাক (ﷺ) এর মিলাদ শরীফে এক দিরহাম পরিমাণ ব্যয় করে সে যেন বদর ও হুনাইনের যুদ্ধে অংশগ্রহণ করল।’’ ২৬৫
২৬৫. ইমাম ইবনে হাজার হাইতামী, আন-নিমাতুল কোবরা আলাল আলামা কি মাওলিদী সায়্যিদি ওলদে আদাম, ৭ পৃ.
قَالَ عَلِىُّ ؓ وَكَرَّمَ اَللهُ وَجْهَه مَنْ عَظَّمَ مَوْلِدَ النَّبِىِّ ﷺ وَكَانَ سَبَبًا لِقَرَاءَتِه لَايُخْرُجُ مِنَ الدُّنْيَا اِلَّا بِالْاِيْمَانِ وَيَدْخُلُ الْجَّنَةَ بِغَيْرِ حِسَابٍ
-‘‘হযরত সয়্যিদুনা আলী (رضي الله عنه) ইরশাদ করেন, যে ব্যক্তি অত্যন্ত জাঁকজমকভাবে রাসূলে পাক (ﷺ)’র মিলাদ শরীফ পালন করবে দুনিয়া থেকে ঈমান নিয়ে কবরে যাবে এবং কোন প্রকার হিসাব ছাড়াই বেহেশতে প্রবেশ করবে।’’ ২৬৬
২৬৬. ইমাম ইবনে হাজার হাইতামী, আন-নিমাতুল কোবরা আলাল আলামা কি মাওলিদী সায়্যিদি ওলদে আদাম, ৭ পৃ
সায়্যিদুনা হাসান বসরী (رضي الله عنه) এর আকিদা:
শায়খুল ইসলাম আল্লামা ইবনে হাজার মক্কী (رحمة الله) খোলাফায়ে রাশেদীন (رضي الله عنه) এর বানী ছাড়াও আওলিয়ায়ে কেরাম এবং বিভিন্ন আলেমদের উক্তিও এনেছেন। হযরত হাসান বসরী (رضي الله عنه) বলেন,
وُدِدْتُ لَوْ كَانَ لِى مِثْلُ جَبَلِ اُحُدٍ ذَهُبًا فَانْفَقْتُه عَلٰى قِرَاءَةِ مَوْلِدِ النَّبِىِّ ﷺ
-‘‘আমি পছন্দ করি যে, আমার কাছে যদি ওহুদ পাহাড় পরিমাণ স্বর্ণও থাকত তবে তা আমি হুযুর পাক (ﷺ)’র মিলাদ শরীফে খরচ করতাম।’’ ২৬৭
২৬৭. ইমাম ইবনে হাজার হাইতামী, আন-নিমাতুল কোবরা আলাল আলামা কি মাওলিদী সায়্যিদি ওলদে আদাম, ৭ পৃ.
হযরত জুনাইদ বোগদাদী (رحمة الله) এর আকিদা:
তিনি বলেন,
مَنْ حَضَرَ مَوْلِدَ النَّبِىِّ ﷺ وَعّظَّمَ قَدُرَهُ فَقَدْ نَازَ بِالْاِيْمَانِ
-‘‘যে ব্যক্তি রাসূলে পাক (ﷺ)’র মিলাদ শরীফে উপস্থিত হবে এবং সাধ্যানুযায়ী তাজিম করবে সে ব্যক্তি ঈমানের সাথে সফলতা অর্জন করবে।’’ ২৬৮
২৬৮. ইমাম ইবনে হাজার হাইতামী, আন-নিমাতুল কোবরা আলাল আলামা কি মাওলিদী সায়্যিদি ওলদে আদাম, ৮ পৃ.
আল্লামা ইবনে হাজার মক্কী (رحمة الله) এর আকিদা:
শাইখুল ইসলাম ইবনে হাজার মক্কী (رحمة الله) বলেন-
الموالد والأذكار الَّتِي تفعل عندنَا أَكْثَرهَا مُشْتَمل على خير، كصدقة، وَذكر، وَصَلَاة وَسَلام على رَسُول الله صلى الله عَلَيْهِ وَسلم ومدحه،
-‘‘আমরা যে মিলাদ মহফিল এবং যিকির আযকার করি তার সবটুকুই উত্তম। যেমন সাদকাহ, যিকির, নামায এবং রাসূল (ﷺ) এর দরূদ শরীফ পড়া।’’ ২৬৯
২৬৯. ইমাম ইবনে হাজার মক্কী, ফাতওয়ায়ে হাদিসিয়্যাহ, ১০৯ পৃ.
আল্লামা কাস্তাল্লানী (رحمة الله) এর আকিদা:
বোখারী শরীফের ব্যাখ্যাকার আল্লামা কাস্তাল্লানী (رحمة الله) বলেন,
ولا زال أهل السلام يحتفلون بشهر مولده- عليه السّلام-، ويعملون الولائم، ويتصدقون فى لياليه بأنواع الصدقات، ويظهرون السرور، ويزيدون فى المبرات. ويعتنون بقراءة مولده الكريم، ويظهر عليهم من بركاته كل فضل عميم. ومما جرب من خواصه أنه أمان فى ذلك العام، وبشرى عاجلة بنيل البغية والمرام، فرحم الله امرآ اتخذ ليالى شهر مولده المبارك أعيادا،
-‘‘প্রতিটি যুগে মুসলমানগণ নবী করীম (ﷺ) এর বেলাদাত শরীফের মাসে মীলাদ মাহফিলের আয়োজন করে আসছে। আনন্দেচিত্রে খাবার তৈরি ও দাওয়াতের আয়োজন করছে। ঐ রাতে (১২ই রবিউল আউয়াল) দান-সাদকা করে আসছে। বৈধপন্থায় আনন্দ উদ্যাপন এবং সৎ কর্মের প্রতি প্রতিযোগিতায় করে আসছে। সবিশেষে মিলাদ শরীফ পড়ে আসছে। তাই, তাদের প্রতি মহান আল্লাহর বিশেষ করুণার দ্বারা উন্মোচিত হচ্ছে। আর যে বছর মিলাদে মোস্তফার (ﷺ) ব্যবস্থা করা হয়, সে বছর আল্লাহ সমস্ত বালা-মসিবত থেকে পরিত্রান দান করেন। মিলাদ ব্যবস্থাকারীদের মনোবাসনাপূর্ণ হয়। লোকদের প্রতি মহান আল্লাহ সীমাহীন দয়া বর্ষণ করেন। ফলে তারা মিলাদুন্নবীর (ﷺ) প্রতিটি রাতে খুশি উদযাপন (ঈদ হিসেবে পালন) করে।’’ ২৭০
২৭০.ইমাম-কাস্তাল্লানী,আল-মাওয়াহিবুল লদুনিয়্যাহ, ১/৯০ পৃ., আল্লামা ইমাম জুরকানী : শরহুল মাওয়াহেব, ১/২৬২ পৃষ্ঠা
আল্লামা কাস্তাল্লানী (رحمة الله) মাওয়াহিবুল্লা দুনিয়ায় এবং শায়খ আবদুল হক মুহাদ্দেস দেহলভী (رحمة الله) ‘মাসাবা বিস সুন্নাহ’ এর মধ্যে বলেছেন-
ليلة مولده أفضل من ليلة القدر
-‘‘রাসূল (ﷺ) এর বেলাদত শরীফের রাত কদরের রাত থেকেও উত্তম।’’ ২৭১
টিকা━━━━━━━━━━━━━━━━━━━━
২৭১.
ইমাম কাস্তাল্লানী, মাওয়াহেবুল্লাদুনীয়াহ, ১/৮৮ পৃ., শায়খ আবদুল হক মুহাদ্দেস দেহলভী, মাসাবাতা বিস সুন্নাহ, ৫৯ পৃ.
❏ এ বিষয়ে ইমাম ইবনে আবেদীন শামী (رحمة الله) লিখেন-
عَنْ بَعْضِ الشَّافِعِيَّةِ: أَنَّ أَفْضَلَ اللَّيَالِي لَيْلَةُ مَوْلِدِهِ - صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ - ثُمَّ لَيْلَةُ الْقَدْرِ، ثُمَّ لَيْلَةُ الْإِسْرَاءِ وَالْمِعْرَاجِ، ثُمَّ لَيْلَةُ عَرَفَةَ، ثُمَّ لَيْلَةُ الْجُمُعَةِ، ثُمَّ لَيْلَةُ النِّصْفِ مِنْ شَعْبَانَ، ثُمَّ لَيْلَةُ الْعِيدِ
-‘‘একদল শাফেয়ী ফকীহগণ থেকে বর্ণিত আছে, সবচেয়ে উত্তম রাত হলো মিলাদুন্নবী (ﷺ)-এর রাত, তারপর লাইলাতুল ক্বদরের রাত, তারপর ইসরা বা মি‘রাজের রাত, তারপর আরাফাতের রাত, তারপর জুম‘আর রাত, তারপর ১৫ই শাবান তথা শবে বরাতের রাত, তারপর দুই ঈদের রাত।’’ (ইমাম ইবনে আবিদীন শামী, ফাতওয়ায়ে শামী, ২/৫১১ পৃ.)
━━━━━━━━━━o━━━━━━━━━━
মুহাদ্দিস শায়খ তাহের পাটনী (رحمة الله) এর আকিদা:
তিনি পবিত্র রবিউল আউয়াল সর্ম্পকে লিখতে গিয়ে বলেন-
مَظُهَرُ مَنْبَع الْاَنْوَارِ وَالرَّحْمَةِ شَهْرُ رَبِيْعُ الْاَوَّلِ وَاَنَّه شَهْرٌ اُمِرْنَا بِاِظْهَارِ الْحَبُوْرِ فِيْهِ كُلُّ عَامٍ
-‘‘রবিউল আউয়াল মাস নূর এবং রহমত প্রকাশের উৎস। এটি এমন একমাস যে প্রতি বছরেই এ মাসে খুশি উদযাপন করার হুকুম দেয়া হয়েছে।’’ (আল্লামা তাহের পাটনী, মাজমাউল বিহার, ৩য় খ-, ৫৫০ পৃ.)
মুহাদ্দিস ইবনে জাওযী (رحمة الله) এর আকিদা:
তিনি বলেন,
جَعَلَ لِمَنْ فَرِحَ بِمَوْلِدِه حِجَابًا مِّنَ النَّارِ وَيِتْرًا وَمَنْ اَنْفَقَ فِى مَوْلِدِه دِرْهَمَا كَانَ الْمُصْطَفٰى ﷺ لَه شَافِعًا و مُشَفَّعًا
-‘‘যে ব্যক্তি রাসূলে পাক (ﷺ) এর বেলাদত শরীফে খুশি উদযাপন করবে তা জাহান্নামের আগুনের জন্য পর্দা এবং প্রাচীর হবে। আর যে ব্যক্তি রাসূলে পাক (ﷺ) মিলাদ শরীফে এক দিরহাম খরচ করবে কিয়ামতে দিবসে রাসূলে পাক (ﷺ) তার জন্য সুপারিশ করবেন।’’ ২৭২
টিকা━━━━━━━━━━━━━━━━━━━━
২৭২.
আল্লামা ইবনে জাওযী, মাওলিদুল আরুস (মাওলুদুন নববী শরীফ নামে পরিচিত), ৯ পৃ.,
❏ মিলাদের ফজিলত প্রসঙ্গে আল্লামা ইবনে জাওযী (رحمة الله) (ওফাত ৫৯৭ হিজরী) বলেছেন ও শারিহে বোখারী আল্লামা ইমাম কাস্তাল্লানী (رحمة الله) (ওফাত ৯২৩ হিজরী) উল্লেখ করেছেন,
وَقَالَ اِلْإِمَام الْحَافِظْ أَبُوْ الْخَيْر بْنِ الْجَزْرِيْ رحمه الله تَعَالى شَيْخ القراء: من خواصه أَنَّهُ أَمَان فِي ذَلِكَ الْعام
-“শাইখুল কুর্রা ইমাম হাফিজ আবুল খায়ের ইবনে জাওযী (رحمة الله) বলেছেন: মিলাদ শরীফের খুছুছিয়াত বা বিশেষ বৈশিষ্ট্য হলো এর উছিলায় লোকেরা ঐ বৎসর নিরাপদে থাকবেন।”
(আল্লামা নুরুদ্দিন হালাবী: ইনছানুল উয়ুন, ১ম খণ্ড, ১২৪ পৃ:; আল্লামা ইসমাঈল হাক্কী: তাফসিরে রুহুল বয়ান, ৯ম খণ্ড, ৬৪ পৃ:; ইমাম কাস্তালানী: মাওয়াহেবুল্লাদুন্নিয়া, ১ম খণ্ড, ১৪৮ পৃ:; ইমাম ইবনে ছালেহী শামী: সুবুলুল হুদা ওয়ার রাশাদ, ১ম খণ্ড, ৩৬২ পৃ:)
তাই বর্তমান জামানার বিপদ-আপদ ও গজব থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্যে ও আল্লাহর রহমতের চঁাদরের নিচে থাকার জন্য আমাদের বেশী বেশী মিলাদে মোস্তফার আয়োজন করা উচিৎ।
━━━━━━━━━━o━━━━━━━━━━
আহলে হাদিসদের ইমাম নবাব সিদ্দিক হাসান ভূপালীর সাক্ষ্য:
এখন গায়রে মুকাল্লিদগণের মুজাদ্দিদ শায়খুল ইসলাম নবাব সিদ্দিক হাসান খাঁন ভূপালীর সাক্ষ্য পেশ করা হবে যাতে মিলাদ শরীফ অস্বীকারকারীগণ ২য় বার দৃষ্টিপাত করে। নবাব সিদ্দিক বলেন-
جس كو حضرت كے ميلاد كا حال منكر فرحت حاصل نہ ہو اور شكر خدا كا حصول پہ اس نعمت كے نہ كر سے وه مسلمان نهيں
-“যে ব্যক্তি হুযুর (ﷺ)’র মিলাদ শরীফ শুনে খুশি হয় না এবং আল্লাহর মহান নিয়ামত অর্জনের শুকরিয়া করে না, সে মুসলমান নয়।’’ (শামামাতুল আম্বরিয়া, ১২ পৃ.)
প্রিয় পাঠকবৃন্দ! আহলে হাদিসের বরণ্য আলেম নবাব সিদ্দিক সাহেব যারা মিলাদ শরীফে খুশি উদযাপন করে না তাদেরকে কুফুরী ফাতওয়া দিয়েছেন। এখন আহলে হাদিসপন্থি এবং দেওবন্দীদের বাতিল আকিদার প্রতি দৃষ্টিপাত করুন, কেননা “আশ-শামামাতুল আম্বরিয়া’ এমন একটি গ্রন্থ যাকে আশরাফ আলী থানবীও গ্রহণযোগ্য বলেছেন। (আশরাফ আলী থানবী, নশরুত্তীব, ১৫ পৃ.)
হাজী এমদাদুল্লাহ মুহাজেরে মক্কীর উক্তি:
দেওবন্দীদের আকাবের হাজী ইমদাদুল্লাহ মুহাজেরে মক্কী (رحمة الله) বলেন,
فقير مشرب يہ ہے محفل مولد میں شريك ہوتا بلكہ بركات كا ذريعہ سمجہ كر ہر سال منعقد كرتا ہوں اور قيام میں لطف اور لذت پا ہوں
-“এই ফকীরের নিয়ম হল এই যে, আমি মওলুদ মাহফিলে অংশ গ্রহণ করি, এমনকি বরকতের উসিলা মনে করে প্রতি বছর উক্ত অনুষ্ঠান করে থাকি এবং কিয়ামের মধ্যে লুতফ (ভালবাসা) ও লাজ্জাত (স্বাদ) পেয়ে থাকি।”২৭৩
২৭৩. হাজী এমদাদুল্লাহ মুহাজেরে মক্কী, কুল্লিয়াতে এমদাদিয়া, ২০৭ পৃ., ফয়সালায়ে হাফতে মাসায়েল, ৭-৮ পৃ.
হাজী ইমদাদুল্লাহ মুহাজেরে মক্কী (رحمة الله)’র লিখিত ‘ইমদাদুল মুশতাকে’ও রয়েছে যেখানে তিনি স্বীকার করেছেন যে, রাসূলে পাক (ﷺ) মিলাদ শরীফে তাশরীফ আনেন। নিম্নে আপনাদের খেমতে কিতাবের মূল উদ্বৃতি উল্লেখ করা হল। তিনি বলেন-
البتہ وقت قيام كے اعتقاد تولد كا نہ كرنا چاہئے - اگر احتمال تشريف آورى كا كيا جا ئے مضائقہ نہیں كيوں كہ عالم خلق مقيد برزمان ومكان ہے - ليكن عالم امر دونوں سے پاك ہے – پس قدم رنجہ فرمانا ذات بابر كات كا بعيد نہیں
-“মীলাদ শরীফে” কিয়াম করার সময় হুযূর (ﷺ) এখন ভুমিষ্ট হচ্ছেন এ ধরনের বিশ্বাস না রাখা উচিত। আর যদি মাহফিলে তাশরীফ আনেন এমন বিশ্বাস রাখে, তাহলে অসুবিধা নেই, কারণ এ নশ্বর জগতে কাল ও স্থানের সাথে সম্পৃক্ত। আর পরকাল স্থান-কালের সম্পর্ক থেকে মুক্ত।’’ ২৭৪
২৭৪. হাজী এমদাদুল্লাহ মুহাজিরে মক্কী : শামায়েলে এমদাদীয়া : পৃষ্ঠা নং- ১০৩ পৃ. মাকতুবায়ে থানবী, দেওবন্দ এবং এমদাদুল মুশতাক, ৫৬ পৃ.
পবিত্র কুরআন সুন্নাহ এবং বিদগ্ধ মুহাদ্দিস মুফাস্সির এবং মুহাক্কীকগণের অনাবদ্য কিতাব দ্বারা প্রমাণিত হল যে দেওবন্দী এবং আহলে হাদীসগং আহলে সুন্নাত ওয়াল জাম‘আত নয়।
❏ বিষয় নং-২০: দিবস নির্ধারণ করা
____________________
❏ বিষয় নং-২০: দিবস নির্ধারণ করা
দেওবন্দী এবং গাইরে মুকাল্লিদ আহলে হাদীস পন্থিদের মতে, দিবস নির্ধারণ করা হারাম এবং বিদআত। আর আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতের মতে দিবস নির্ধারণ করা জায়েয তথা বৈধ। আল্লাহ তা‘য়ালা পবিত্র কুরআনে ইরশাদ করেন-
وَذَكِّرْهُمْ بِأَيَّامِ اللَّهِ
-“এবং তাদেরকে আল্লাহর দিবস সমূহ স্মরণ করিয়ে দাও।’’ (সূরা ইবরাহিম আয়াত নং-৫)
وَاذْكُرُوا اللَّهَ فِي أَيَّامٍ مَعْدُودَاتٍ
-“এবং আল্লাহকে স্মরণ করে গণনাকৃত দিনগুলোতে।’’ (সূরা বাকারা, আয়াত নং-২০৩) পবিত্র কুরআনের পর আহলে বাইত এবং সাহাবায়ে কেরাম (رضي الله عنه) এর আক্বিদা নিম্নে বর্ণনা করা হল -২৭৫
টিকা━━━━━━━━━━━━━━━━━━━━
২৭৫.
প্রতি বছরের শুরুর দিনকে নির্দিষ্ট করে প্রিয় নবীজি (ﷺ) ও সাহাবায়ে কেরাম উহুদ যুদ্ধের শুহাদাদের মাজার যিয়ারত করতেন। যেমনঃ
❏ হাদিসটি লক্ষ্য করুন:-
حَدَّثَنَا الْمُثَنَّى، قَالَ: ثنا سُوَيْدٌ، قَالَ: أَخْبَرَنَا ابْنُ الْمُبَارَكِ، عَنْ إِبْرَاهِيمَ بْنِ مُحَمَّدٍ، عَنْ سَهْلِ بْنِ أَبِي صَالِحٍ، عَنْ مُحَمَّدِ بْنِ إِبْرَاهِيمَ التَّيْمِيِّ قَالَ: كَانَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَأْتِي قُبُورَ الشُّهَدَاءِ عِنْدَ رَأْسِ الْحَوْلِ، فَيَقُولُ: السَّلَامُ عَلَيْكُمْ بِمَا صَبَرْتُمْ فَنِعْمَ عُقْبَى الدَّارِ. قَالَ: وَكَانَ أَبُو بَكْرٍ وَعُمَرَ وَعُثْمَانَ يَفْعَلُونَ ذَلِكَ
-“মুহাম্মদ ইবনে ইব্রাহিম আত্-তায়মী (رحمة الله) বলেন: আল্লাহর রাসূল (ﷺ) প্রতি বছরের শুরুতে উহুদের যুদ্ধে শহিদগণের কবরে আসতেন। অতঃপর বলতেন: “আস-সালামু আলাইকুম বিমা ছাবারতুম ফানি’মা উকবা দারে”। তিনি বলেন, হযরত আবু বকর সিদ্দিক (رضي الله عنه), উমর (رضي الله عنه) ও উসমান (رضي الله عنه) অনুরূপ করতেন।”
(তাফসিরে তাবারী, ১৩/৫১৩ পৃ. হা/২০৩৪৫, সূরা রা’দ এর ২৪ নং আয়াতের ব্যাখ্যায়; তাফসিরে ছা’লাভী, ৫ম খণ্ড, ২৮৭ পৃ:; তাফসিরে নিছাপুরী, ২য় খণ্ড, ২২৭ পৃ:; তাফসিরে কুরতবী, ৯ম খণ্ড, ৩১২ পৃ:; তাফসিরে আবু ছাউদ, ৫ম খণ্ড, ১৮ পৃ:; মুছান্নাফে আব্দুর রাজ্জাক, ৩য় খণ্ড, হাদিস নং ৬৭১৬; তাখরিজু আহাদিছুল কাশ্শাফ, হা/৬৫১)
এই হাদিসের রাবী مُحَمَّدِ بْنِ إِبْرَاهِيمَ التَّيْمِيِّ {মুহাম্মদ ইবনে ইব্রাহিম আত-তায়মী (رحمة الله)} একজন নির্ভরযোগ্য রাবী বা বর্ণনাকারী এবং বিখ্যাত তাবেঈ। যেমন- তাঁর ব্যাপারে নিচের বর্ণনা গুলো লক্ষ্য করুন:-
❏ ইমাম শামসুদ্দিন যাহাবী (رحمة الله) তদীয় কিতাবে বলেন, مُحَمَّد بن إِبْرَاهِيم التَّيْمِيّ من ثِقَات التَّابِعين -“মুহাম্মদ ইবনে ইব্রাহিম আত তায়মী (رحمة الله)” বিশ্বস্ত তাবেঈগণের একজন।” (ইমাম যাহাবী: আল মুগনী ফিদ-দোয়াফা, রাবী নং ৫২০৩)।
❏ আল্লামা হাফিজ ইবনে হাজার আসকালানী (رحمة الله) বলেন,
قلت: وثقة الناس واحتج به الشيخان
-“আমি (ইবনে হাজার আসকালানী) বলছি: লোকেরা তাকে বিশ্বস্ত বলেছেন। ইমাম বুখারী ও ইমাম মুসলীম (رحمة الله) তার উপর নির্ভর করেছেন।” (ইমাম ইবনে হাজার আসকালানী: লিছানুল মিযান, ৫ম খণ্ড, ২০ পৃ:)।
❏ ইমাম আজলী (رحمة الله) {ওফাত ২৬১ হিজরী} তদীয় কিতাবে বলেন,
محمد بن إبراهيم التيمي: مدني ثقة.
-“মুহাম্মদ ইবনে ইব্রাহিম আত্-তায়মী মাদানী’ বিশ্বস্ত রাবী।” (ইমাম আজলী: আছ-ছিক্বাত, রাবী নং ১৪৩২)।
সুতরাং ‘মুহাম্মদ ইব্রাহিম আত্ তায়মী (رحمة الله)’ এর রেওয়ায়েত ছহীহ্ হিসেবে স্বীকৃত। আর এই ছহীহ্ রেওয়ায়েত হতে জানা যায় যে, প্রিয় নবীজি (ﷺ) প্রতি বছরের শুরুতে নির্দিষ্ট দিনে উহুদের যুদ্ধের শহিদগণের মাজার যিয়ারত করতেন, এমনকি হযরত আবু বকর সিদ্দিক (رضي الله عنه), হযরত উমর (رضي الله عنه) ও হযরত উসমান (رضي الله عنه) এরূপ আমল করেছেন।
━━━━━━━━━━o━━━━━━━━━━
রাসূলে পাক (ﷺ)’র আকিদা:
উম্মুল মু‘মিনীন হযরত আয়েশা (رضي الله عنه) বর্ণনা করেন
كَانَ رَسُوْلُ اَللهِ ﷺ يَصُومُ الِاثْنَيْنِ وَالْخَمِيسَ
-“রাসূলে পাক (ﷺ) সোমবার এবং বৃহস্পতিবারে রোযা রাখতেন।’’ ২৭৬
টিকা━━━━━━━━━━━━━━━━━━━━
২৭৬.
খতিব তিবরিযি, মিশকাত শরীফ, (ভারতীয় ১৭৯ পৃ.)১/৬৩৭ পৃ., হা/২০৫৫, নাসাঈ, আস-সুনান, ৪/২০৩ পৃ. হা/২৩৬৪ এবং আস-সুনানুল কোবরা, ৩/১৭৮ পৃ. হা/২৬৮৫, সুনানে ইবনে মাযাহ, হা/১৭৩৯,
❏ অনুরূপ হাদিস হযরত হাফসা (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত আছে। (ইমাম নাসাঈ, আস-সুনান, ৪/২০৩ পৃ. হা/২৩৬৭, মুসনাদে আবি ই‘য়ালা, ১২/৪৬৬ পৃ. হা/৭০৭৩)
❏ অনুরূপ মতনে হযরত আবু হুরায়রা (رضي الله عنه) হতেও বর্ণিত আছে। (সুনানে ইবনে মাযাহ, ১/৫৫৩ পৃ. হা/১৭৪০, ইমাম আহমদ, আল-মুসনাদ, ১৪/৯৮ পৃ. হা/৮৩৬১)
❏ অনুরূপ হাদিস হযরত উসামা (رضي الله عنه) হতেও বর্ণিত আছে। (মুসনাদে আবি দাউদ তায়লসী, ২/২৩ পৃ. হা/৬৬৬, মুসান্নাফে ইবনে আবি শায়বাহ, ১/১২২ পৃ. হা/১৫৯,
❏ ইমাম যিয়া মুকাদ্দাসী, আহাদিসিল মুখতার, ৪/১৪৩ পৃ. হা/১৩৫৭, তিনি বলেন- إِسْنَاده حسن -‘‘তিনি বলেন, সনদটি ‘হাসান’।)
❏ অনুরূপ শব্দের হাদিস হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ (رضي الله عنه) হতেও বর্ণিত আছে। (ইমাম তাবরানী, মু‘জামুল কাবীর, ১০/১৩৮ পৃ. হা/১০২৩৩)
❏ অনুরূপ শব্দের হাদিস হযরত আ‘লা ইবনে মুসায়্যিব (رحمة الله) তিনি তাঁর পিতার সূত্রে মারফু হিসেবে বর্ণনা করেছেন। (মুসান্নাফে ইবনে আবি শায়বাহ, ২/৩০০ পৃ. হা/৯২২৭)
সাহাবী ও তাবেয়ীদের আমল:
❏ ইমাম ইবনে আবি শায়বাহ (رحمة الله) সংকলন করেন-
عَنْ خِلَاسٍ، أَنَّ عَلِيًّا كَانَ يَصُومُ الِاثْنَيْنِ وَالْخَمِيسَ
-‘‘তাবেয়ী খিলাস (رحمة الله) বলেন, নিশ্চয় আমিরুল মু‘মিনীন মাওলা আলী (رضي الله عنه) সোমবার এবং বৃহস্পতিবারে রোযা রাখতেন।’’ (মুসান্নাফে ইবনে আবি শায়বাহ, ২/৩০১ পৃ. হা/৯২৩৮)
❏ তিনি আরও সংকলন করেন-
عَنْ زِرٍّ، عَنْ عَبْدِ اللهِ، أَنَّهُ كَانَ يَصُومُ الِاثْنَيْنِ وَالْخَمِيسَ
-‘‘তাবেয়ী যির্ (رحمة الله) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ (رضي الله عنه) এর ব্যাপারে বর্ণিত আছে যে, তিনি সোমবার এবং বৃহস্পতিবারে রোযা রাখতেন।’’ (মুসান্নাফে ইবনে আবি শায়বাহ, ২/৩০১ পৃ. হা/৯২৩৬)
❏ তিনি আরও উল্লেখ করেন-
عَنْ أَبِي عُقْبَةَ، قَالَ: كَانَ أَبُو هُرَيْرَةَ يَصُومُ الِاثْنَيْنِ وَالْخَمِيسَ
-‘‘তাবেয়ী আবু উকবাহ (رحمة الله) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, হযরত আবু হুরায়রা (رضي الله عنه) এর ব্যাপারে বর্ণিত আছে যে, তিনি সোমবার এবং বৃহস্পতিবারে রোযা রাখতেন।’’ (মুসান্নাফে ইবনে আবি শায়বাহ, ২/৩০০ পৃ. হা/৯২৩০)
❏ তিনি আরও উল্লেখ করেন-
عَنْ يَحْيَى بْنِ سَعِيدٍ، أَنَّ عُمَرَ بْنَ عَبْدِ الْعَزِيزِ كَانَ يَصُومُ الِاثْنَيْنِ وَالْخَمِيسَ
-‘‘তাবেয়ী ইয়াহইয়া ইবনে সাঈদ (رحمة الله) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, ইসলামের পঞ্চম খলিফা হযরত উমর বিন আবদুল আযিয (رضي الله عنه) এর ব্যাপারে বর্ণিত আছে যে, তিনি সোমবার এবং বৃহস্পতিবারে রোযা রাখতেন।’’ (মুসান্নাফে ইবনে আবি শায়বাহ, ২/৩০১ পৃ. হা/৯২৩৩)
━━━━━━━━━━o━━━━━━━━━━
সায়্যিদুনা আবদুল্লাহ ইবনে উমর (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত আছে-
كَانَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَأْتِي مَسْجِدَ قُبَاءٍ رَاكِبًا وَمَاشِيًا، فَيُصَلِّي فِيهِ رَكْعَتَيْنِ
-‘‘রাসূলে পাক (ﷺ) প্রতি সপ্তাহের শনিবার মসজিদে কুবায় আসতেন কখনো পায়ে হেঁটে, কখনো আরোহী হয়ে। সেখানে দু’রাক‘আত নামায আদায় করতেন।’’ ২৭৭
টিকা━━━━━━━━━━━━━━━━━━━━
২৭৭.
সহীহ বুখারী শরীফ, ২/৬১ পৃ. হা/১১৯৩-১১৯৪, সহীহ মুসলিম শরীফ, ২য় খণ্ড, ১০১৬ পৃ. হা/১৩৯৯,
❏ বিশুদ্ধ হাদিসে আছে,
عَنْ عَلِيِّ بْنِ الْحُسَيْنِ، عَنْ أَبِيهِ، أَنَّ فَاطِمَةَ بِنْتَ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، كَانَتْ تَزُورُ قَبْرَ عَمِّهَا حَمْزَةَ كُلَّ جُمُعَةٍ فَتُصَلِّي وَتَبْكِي عِنْدَهُ
-“আলী ইবনে হুছাইন তার পিতা হজরত হুছাইন ইবনে আলী (رضي الله عنه) এর সূত্রে বর্ণনা করেন, নিশ্চয় প্রত্যেক জুময়ার দিনে ফাতেমা বিনতে রাসূলিল্লাহ (ﷺ) নবীর চাচা আমীর হামজা (رضي الله عنه) এর মাজার যিয়ারত করতেন। তার উপর সালাত আদায় করতেন ও তার কাছে কান্নাকাটি করতেন।” (মুস্তাদরাকে হাকেম, ১/৫৩৩ পৃ. হা/১৩৯৬; ইমাম বায়হাক্বী: আস-সুনানুল কোবরা, ৪/১৩১ পৃ. হা/৭২০৮)
❏ ইমাম হাকেম (رحمة الله) হাদিসটিকে صحيح সহীহ্ বলেছেন। হাফিজ ইবনে হাজার আসকালানী (رحمة الله) এই হাদিস উল্লেখ করে লিখেছেন: صحيح الإسنادএর সনদ সহীহ।” (হাফিজ ইবনে হাজার: ইত্তেহাফুল মিহরাত, হা/২৩৩১৩)
❏ এ বিষয়ে আরেকটি রেওয়াত রয়েছে,
عَبْدُ الرَّزَّاقِ عَنِ الْبَجَلِيِّ، عَنِ الْكَلْبِيِّ، عَنِ الْأَصْبَغِ بْنِ نَبَاتَةَ: أَنَّ فَاطِمَةَ بِنْتَ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ كَانَتْ تَأْتِي قَبْرَ حَمْزَةَ
-“আছবাগি ইবনে নাবাতা (رحمة الله) বলেন: নিশ্চয় রাসূল (ﷺ) এর কন্যা ফাতেমা (رضي الله عنه) হজরত আমীর হামজা (رضي الله عنه) এর মাজারে যিয়ারতে আসতেন।” (মুছান্নাফে আব্দুর রায্যাক, হাদিস নং ৬৭১৭; ইমাম আইনী: উমদাতুল ক্বারী শরহে বুখারী, ৩৮২১ নং হাদিসের ব্যাখ্যায়) সনদ সহীহ্।
❏ ইমাম উমর ইবনে শিবাহ বাসরী (رحمة الله) ওফাত ২৬২ হিজরী তদীয় কিতাবে ইহার আরেকটি সনদ উল্লেখ করেছেন,
حَدَّثَنَا مُحَمَّدُ بْنُ بَكَّارٍ قَالَ: حَدَّثَنَا حِبَّانُ بْنُ عَلِيٍّ، عَنْ سَعْدِ بْنِ طَرِيفٍ، عَنْ أَبِي جَعْفَرٍ، أَنَّ فَاطِمَةَ بِنْتَ رَسُولِ اللَّهِ، صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ كَانَتْ تَزُورُ قَبْرَ حَمْزَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ،
-“আবী জাফর বলেন, নিশ্চয় ফাতেমা বিনতে রাসূলিল্লাহ (ﷺ) আমীর হামজা (رضي الله عنه) এর মাজার যিয়ারত করতেন।” (ইমাম ইবনে শিবাহ: তারিখে মাদিনা, ১ম খণ্ড, ১৩২ পৃ:)
❏ যেমন আরেকটি রেওয়াত লক্ষ্য করুন,
عَبْدُ الرَّزَّاقِ، عَنِ ابْنِ عُيَيْنَةَ، عَنْ جَعْفَرِ بْنِ مُحَمَّدٍ، عَنْ أَبِيهِ قَالَ: كَانَتْ فَاطِمَةُ بِنْتُ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ تَزُورُ قَبْرَ حَمْزَةَ كُلَّ جُمُعَةٍ
-“জাফর ইবনে মুহাম্মদ তার পিতা ইমাম বাকের (رضي الله عنه) সূত্রে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন: ফাতেমা বিনতে রাসূলিল্লাহ (ﷺ) প্রত্যেক জুময়ার দিন আমীর হামজা (رضي الله عنه) এর মাজার যিয়ারত করতেন।” (মুছান্নাফে আব্দুর রায্যাক, হাদিস নং ৬৭১৩)
এই হাদিস দ্বারা প্রমাণ হয়, স্বয়ং রাসূল (ﷺ) এর কন্যা এবং জান্নাতের মহিলাদের সর্দারনী হজরত ফাতেমা (رضي الله عنه) নিজেই হজরত আমীর হামজা (رضي الله عنه) এর মাজার নির্দিষ্ট করেই প্রতি জুমআর দিনে যিয়ারত করেছেন। উল্লেখ্য যে, হজরত আমীর হামজা (رضي الله عنه) এর মাজার হল উহুদ পাহাড়ের পাদদেশে।
━━━━━━━━━━o━━━━━━━━━━
সায়্যিদুনা কাব বিন মালেক (رضي الله عنه)’র আকিদা:
তিনি বলেন-
أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ خَرَجَ يَوْمَ الخَمِيسِ فِي غَزْوَةِ تَبُوكَ وَكَانَ يُحِبُّ أَنْ يَخْرُجَ يَوْمَ الخَمِيسِ
-‘‘রাসূলে পাক (ﷺ) বৃহস্পতিবার তাবুক যুদ্ধে তাশরিফ আনেন, আর তিনি বৃহস্পতিবারে ছফর করকেই পছন্দ করতেন।’’ ২৭৮
২৭৮. সহীহ বুখারী, ৪/৪৮ পৃ. হা/২৯৫০, খতিব তিবরিযি, মিশকাত শরীফ, (ভারতীয় ৩৩৮ পৃ.) ২/১১৪২ পৃ., হা/৩৮৯২
উম্মুল মু‘মিনীন উম্মে সালামা (رضي الله عنه)’র আকিদা:
তিনি বলেন-
كَانَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَأْمُرُنِي أَنْ أَصُومَ ثَلَاثَةَ أَيَّامٍ مِنْ كُلِّ شَهْرٍ أَوَّلُهَا الِاثْنَيْنِ وَالْخَمِيس
-‘‘রাসূলে পাক (ﷺ) আমাকে প্রতি মাসে তিনটি রোযা রাখার আদেশ করতেন, আর তা সোমবার বা বৃহস্পতিবার হতে শুরু হতো।’’ ২৭৯
২৭৯. খতিব তিবরিযি, মিশকাত শরীফ, (ভারতীয় ১৮০ পৃ.) ১/৬৩৭ পৃ. হা/২০৬০, আবু দাউদ শরীফ ২য় খণ্ড ৩২৮ পৃ: হা/২৪৫২, ইমাম আহমদ, আল-মুসনাদ, ৪৪/৮২ পৃ. হা/২৬৪৮০
সায়্যিদুনা আবু যার গিফারী (رضي الله عنه) আকিদা:
তিনি বলেন,
إِذَا صُمْتَ مِنَ الشَّهْرِ ثَلَاثَةَ أَيَّامٍ فَصُمْ ثَلَاثَ عَشْرَةَ وَأَرْبَعَ عَشْرَةَ وَخَمْسَ عَشْرَةَ
-‘‘রাসূলে পাক (ﷺ) আমাকে প্রতি মাসের ১৩, ১৪ এবং ১৫ তারিখ রোযা রাখতে বলেছেন।’’ ২৮০
২৮০.খতিব তিবরিযি, মিশকাত শরীফ, (ভারতীয় ১৮০ পৃ.) ১/৬৩৭ পৃ. হা/২০৫৭, জামে তিরমিযী, তৃতীয় খণ্ড ১২৫ পৃ: হা/৭৬১, নাসাঈ, আস-সুনান, হা/২৪২৬, আস-সুনানুল কোবরা, ৩/২০০ পৃ. হা/২৭৪৬, সহীহ ইবনে খুজায়মা, হা/২১২৮, ইমাম আহমদ, আল-মুসনাদ, ৩৫/২৬৩ পৃ. হা/২১৩৩৪, বায়হাকী, আস-সুনানুল কোবরা, ৪/৪৮৬ পৃ. হা/৮৪৪৪, সহীহ ইবনে হিব্বান, হা/৩৬৫৫
সুতরাং কুরআন-সুন্নাহর আলোকে প্রমাণিত হল দেওবন্দী এবং আহলে হাদীসগণ আহলে সুন্নাত ওয়াল জাম‘আত নয়।
❏ বিষয় নং-২১: আল্লাহ ব্যতীত অন্য কারো নামে জবেহ
___________________
❏ বিষয় নং-২১: আল্লাহ ব্যতীত অন্য কারো নামে জবেহ
দেওবন্দী এবং আহলে হাদিস পন্থিরা ‘আল্লাহ ভিন্ন অন্য কারো নামে জবেহ করার হুকুমে আল্লাহর ওলীগনের রূহে সাওয়াব পৌঁছানোর লক্ষ্যে জবেহকৃত পশুকে অন্তর্ভুক্ত করে হারাম বলে। আর আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতের অনুসারীগণ বোত এবং জবেহের সময় শর্তারোপ পূর্বক উক্তপশুকে হালাল বলেন। পবিত্র কুরআনে এই বিষয়ে চার জায়গায় আলোচনা হয়েছে। নিম্নে উল্লেখিত আয়াতের তাফসীরের আলোকে এর আলোচনা তুলে ধরা হল।
ইমাম আবদুর রহমান বায়জাবী (رحمة الله)’র আকিদা:
ইমামুল মুফাসসির ইমাম আব্দুর রহমান বায়জাভী (رحمة الله)
وَمَا أُهِلَّ بِهِ لِغَيْرِ اللهِ
(সূরা বাক্বারা, আয়াত নং-১৭৩) আয়াতের তাফসীরে লিখেন-
وَما أُهِلَّ بِهِ لِغَيْرِ اللهِ أي رفع به الصوت عند ذبحه للصنم.
-“জবেহের সময় বোতের উদ্দেশ্যে আওয়াজ বড় করা।’’ ২৮২
২৮২. ইমাম কাযি নাসীরুদ্দীন বায়যাভী, তাফসিরে বায়যাভী, ১/১২০ পৃ.
তাবেয়া রবী‘ঈ বিন আনাস এবং কাজী ছানা উল্লাহ পানিপথির আকিদা:
বিখ্যাত তাবেয়ী ও হযরত আনাস ইবনে মালিক (رضي الله عنه)-এর শিষ্য হযরত রবী‘ঈ বিন আনাস (رحمة الله) বলেন,
وَما أُهِلَّ بِهِ لِغَيْرِ اللَّهِ قال الربيع بن انس يعنى ما ذكر عند ذبحه اسم غير الله
-‘‘এমন পশু যা যবেহের সময় আল্লাহ ভিন্ন অন্য কারো নাম উল্লেখ করা হয়।’’ ২৮৩
২৮৩. কাজী সানাউল্লাহ পানিপথি, তাফসীরে মাযহারী, ১/১৭০ পৃ:
ইমামা খাযেন (رحمة الله) এর আকিদা:
তিনি বলেন-
وَما أُهِلَّ لِغَيْرِ اللَّهِ بِهِ يعني ما ذكر على ذبحه غير اسم الله وذلك أن العرب في الجاهلية كانوا يذكرون أسماء أصنامهم عند الذبح فحرم الله بهذه الآية
-‘‘এই আয়াতে এমন পশুর কথা বলা হয়েছে যবেহের সময় আল্লাহ ভিন্ন অন্যকারো নাম নেয়া হয়। আর তা হল জাহেলী যুগে আরববা পশু জবেহের সময় তাদের মূর্তির নাম নিত। আল্লাহ তা‘য়ালা এই আয়াতের মাধ্যমে সেগুলোকে হারাম করেছেন।’’ ২৮৪
২৮৪. ইমাম খাযেন, তাফসীরে খাজেন, ২য় খণ্ড, ৭ পৃ.
ইমাম নাসাফী (رحمة الله) এর আকিদা:
ইমাম আবদুল্লাহ বিন আহমদ নাসাফী (رحمة الله) বলেন,
{وَمَا أُهِلَّ لِغَيْرِ الله بِه} أي رفع الصوت به لغير الله وهو قولهم باسم اللات والعزة عند ذبحه
-‘‘জবেহের সময় আল্লাহ ভিন্ন অন্য কারো নাম উচ্চস্বরে উল্লেখ করা। আর তা হল আরবরা জবেহের সময় লাত ও উয্যার নাম উচ্চারণ করত।’’ ২৮৫
২৮৫. ইমাম নাসাফী, তাফসীরে মাদারেক, ১ম খণ্ড ৪২৫ পৃ.
আল্লামা আলূসী (رحمة الله) এর আকিদা:
হযরত ইমাম মুহাম্মদ মাহমুদ আলূসী (رحمة الله) বলেন-
{وَمَا أُهِلَّ لِغَيْرِ الله بِهِ} والمراد الذبح على اسم الأصنام.
-‘‘এর দ্বারা উদ্দেশ্য হল বোতের নামে যবেহ করা।’’ ২৮৬
২৮৬. আল্লামা মাহমুদ আলূসী, তাফসীরে রুহুল মাআনী, ৪ খণ্ড, ২৮৭ পৃ.
সম্মানিত পাঠক! আপনাদের সম্মুখে উক্ত আয়াতের ব্যাখ্যা বিদগ্ধ মুফাস্সিরীনে কেরামগণের তাফসীরের আলোকে উল্লেখ করা হল। তাঁদের মতে জবেহের সময় উচ্চস্বরে আওয়াজ করাকেই وَما أُهِلَّ بِهِ لِغَيْرِ اللهِ বলা হয়।
সারকারে গাউসে পাক (رضي الله عنه)’র পবিত্র গিয়ারভী শরীফ উপলক্ষ্যে যেসব পশু জবেহ করা হয় অথবা অন্যকোন ওলী আল্লাহর পবিত্র ওরসের সময় যেসব পশু যবেহ করা হয় তখন ‘বিসমিল্লাহ আল্লাহু আকবার’ বলা হয়। সুতরাং সকলের ঐক্যমতে তা হালাল তথা বৈধ। দেওবন্দী এবং গাইরে মুকাল্লিদ পন্থিরা এই আয়াতের তাসীরে অধিকাংশ মুফাস্সিরদের বিরোধীতা করেছেন। এজন্য তারা আহলে সুন্নাত ওয়াল জাম‘আত নয়।
❏ বিষয় নং-২২: খতম শরীফ
____________________
❏ বিষয় নং-২২: খতম শরীফ
দেওবন্দী এবং আহলে হাদিসপন্থিরা খতম পড়াকে বিদআত এবং হারাম বলে। আর আহলে সুন্নাত ওয়াল জাম‘আত খতম পড়াকে জায়েয বলেন। পবিত্র কুরআনে পাকে আল্লাহ তা‘য়ালা ইরশাদ করেন-
وَنُنَزِّلُ مِنَ الْقُرْآنِ مَا هُوَ شِفَاءٌ وَرَحْمَةٌ لِلْمُؤْمِنِينَ
-“এবং আমি কুরআনের মধ্যে অবতীর্ণ করি ঐ বস্তু যা ঈমানদারের জন্য আরোগ্য ও রহমত।’’ (সূরা বানী ইসরাইল, আয়াত নং-৮২)
তাফসীরে রুহুল বয়ানে আল্লামা ইসমাইল হাক্কী (رحمة الله) আয়াতের তাফসীরে বলেন,
وعن حميد بن الأعرج قال من قرأ القرآن وختمه ثم دعا أمن على دعائه اربعة آلاف ملك ثم لا يزالون يدعون له ويستغفرون ويصلون عليه الى المساء او الى الصباح
-‘‘তাবেয়ী হযরত হুমাইদ আ‘রাজ (رحمة الله) হতে বর্ণিত আছে, যে ব্যক্তি কুরআনে পাকের খতম করে প্রার্থনা করে চার হাজার ফেরেশতা তার মুনাজাতে আমিন বলেন। অতঃপর সকাল সন্ধ্যা তার জন্য দোয়া করেন এবং ক্ষমা প্রার্থনা করেন।’’ ২৮৭
২৮৭. আল্লামা ইসমাইল হাক্কী, তাফসীর রুহুল বয়ান, ৩/৬৬ পৃ.
হযরত মুজাহিদ (رحمة الله) এর আকিদা:
মুসলিম শরীফের ব্যাখ্যাকার আল্লামা ইমাম নববী (رحمة الله) বলেন-
وروى بإسناده الصحيح عن مجاهد قال: كانوا يجتمعون عند ختم القرآن يقولون: إن الرحمة تنزيل عند القرآن. تنزل الرحمة. ويستحب الدعاء عقب الختمة
-‘‘বিশুদ্ধ সূত্রে হযরত মুজাহিদ (رحمة الله) হতে বর্ণিত আছে, খতমে কুরআনের ব্যাপারে সকলে ঐক্যমত পোষণ করে বলেন, কুরআন শরীফ খতমের সময় আল্লাহর রহমত অবতীর্ণ হয়। (ইমাম নববী (رحمة الله) আরও বলেন) খতমে কুরআনের পর দোয়া কবুল হয়।’’ ২৮৮
টিকা━━━━━━━━━━━━━━━━━━━━
২৮৮.
আল্লামা নববী, কিতাবুল আযকার, ১০৪-১০৫ : ৩১০, আল্লামা ইবনে কাইয়্যুম, জালাউল আফহাম, ৪০২ পৃ:,
❏ এ বিষয়ে আল্লামা ইবনে কাইয়্যুম আরও উল্লেখ করেন-
عَن ابْن مَسْعُود أَنه قَالَ من ختم الْقُرْآن فَلهُ دَعْوَة مستجابة
-‘‘হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত। নিশ্চয় তিনি বলেন, যে কুরআন খতম করে দোয়া করে তার দোয়া কবুল করা হয়।’’ (আল্লামা ইবনে কাইয়্যুম, জালাউল আফহাম, ৪০২ পৃ.)
━━━━━━━━━━o━━━━━━━━━━
মুফাস্সিরকুল শিরমনি হযরত আবদুল্লাহ বিন আব্বাস (رضي الله عنه)’র আকিদা:
মুসলিম শরীফের ব্যাখ্যাকার আল্লামা নববী (رحمة الله) বলেন, সুনানে দারেমীতে এসেছে,
وروينا في مسند الدارمي، عن ابن عباس رضي الله عنهما، أنه كان يجعل رجلا يراقب رجلا يقرأ القرآن، فإذا أراد أن يختم أعلم ابن عباس رضي الله عنهما فيشهد ذلك
-‘‘হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (رضي الله عنه) কুরআন তেলাওয়াত করার জন্য এক ব্যক্তিকে নিযুক্ত করেন। যখন তিনি অবগত হতেন যে, কুরআন খতম করা হবে তখন হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (رضي الله عنه) উক্ত স্থানে উপস্থিত হতেন।’’ ২৮৯
২৮৯. ইমাম নববী, কিতাবুল আযকার, ১০৪ পৃ., হা/৩০৭, আল্লামা ইবনে কাইয়্যুম, জালাউল আফহাম, ৪০২ পৃ.
হযরত আনাস বিন মালেক (رضي الله عنه)’র আকিদা:
আল্লামা নববী (رحمة الله) হযরত আনাস (رضي الله عنه) সম্পর্কে বলেন,
عَنْ أَنَسٍ أَنَّهُ كَانَ إِذَا خَتَمَ الْقُرْآنَ جَمَعَ أَهْلَهُ
-‘‘তিনি কুরআন শরীফ খতম করার সময় তাঁর পরিবার পরিজনের সকলকে নিয়ে দোয়া করতেন।’’ ২৯০
টিকা━━━━━━━━━━━━━━━━━━━━
২৯০.
ইমাম বায়হাকী, শুয়াবুল ঈমান, ৩/৪২১ পৃ. হা/১৯০৭, ইমাম নববী, কিতাবুল আযকার, ১০৪ পৃ: হা/৩০৮, আল্লামা ইবনে কাইয়্যুম, জালাউল আফহাম, ৪০২ পৃ.
❏ তবে ইমাম বায়হাকী (رحمة الله) আরও সংকলন করেন-
عَنْ قَتَادَةَ، عَنْ أَنَسٍ: أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ كَانَ إِذَا خَتَمَ الْقُرْآنَ جَمَعَ أَهْلَهُ
-‘‘তাবেয়ী কাতাদা (رحمة الله) হযরত আনাস ইবনে মালিক (رضي الله عنه) হতে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, নিশ্চয়ই রাসূল (ﷺ) কুরআন শরীফ খতম করার সময় তাঁর পরিবার পরিজনের সকল কে নিয়ে দোয়া করতেন।’’ (ইমাম বায়হাকী, শুয়াবুল ঈমান, ৩/৪২১ পৃ. হা/১৯০৮)
❏ ইমাম বায়হাক্বী (رحمة الله) হাদিসটি সম্পর্কে বলেন:
هَذَا هُوَ الصَّحِيحُ مَوْقُوفٌ -“এই হাদিস মাওকুফ সহীহ্।” (ইমাম বায়হাকী, শুয়াইবুল ঈমান, হাদিস নং ১৯০৭)
❏ ইমাম নুরুদ্দিন হায়সামী (رحمة الله) এই হাদিস সম্পর্কে বলেন,
رَوَاهُ الطَّبَرَانِيُّ، وَرِجَالُهُ ثِقَاتٌ. -“ইমাম তাবারানী এটি বর্ণনা করেছেন এবং এর সকল বর্ণনাকারী বিশ্বস্ত।” (ইমাম হায়সামী: মাজমাউয যাওয়াইদ, হা/১১৭১৩)
❏ নাছিরুদ্দিন আলবানী বলেছেন: إسناده صحيح. -“এর সনদ সহীহ।” (সিলসিলাতুল আহাদিসিস সাহীহা, হাদিস নং ১৪২)
দেখুন! আমলের শেষে প্রিয় নবীজি (ﷺ), সাহাবী ও তাবেঈগণ দোয়ার সময় সকলে একত্রিত হয়ে দোয়া করতেন এবং ঐ দোয়া আল্লাহর হাবীব (ﷺ) কবুলের গ্যারান্টি দিয়েছেন। তাই যেহেতু একত্রি হয়ে ও সমষ্টিগতভাবে দোয়া করলে কবুল হওয়ার গ্যারান্টি আছে সেহেতু অনেক লোক একত্রিত হয়ে আনুষ্ঠানিক ভাবে দোয়া করা হয়।
❏ অপরদিকে লোকেরা একত্রিত হলে তাদের মেহমানদারী তথা যিয়াফত করা স্বয়ং রাসূলে পাক (ﷺ) এর সুন্নাত। যেমন-
حَدَّثَنَا عَبْدُ اللَّهِ بْنُ مُحَمَّدٍ، حَدَّثَنَا ابْنُ مَهْدِيٍّ، حَدَّثَنَا سُفْيَانُ، عَنْ أَبِي حَصِينٍ، عَنْ أَبِي صَالِحٍ، عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: مَنْ كَانَ يُؤْمِنُ بِاللَّهِ وَالْيَوْمِ الْآخِرِ فَلْيُكْرِمْ ضَيْفَهُ
-“হযরত আবু হুরায়রা (رضي الله عنه) বলেন, রাসূলে পাক (ﷺ) বলেছেন: যে ব্যক্তি আল্লাহ ও আখেরাতের উপর বিশ্বাস রাখে, সে যেন অবশ্যই মেহমানদের যিয়াফত করে।’’
সুতরাং মৃত ব্যক্তির রুহে সাওয়াব রেছানীর উদ্দেশ্যে ফাতেহা অনুষ্ঠান করা, দোয়ার সময় সকলে একত্রিত হওয়া ও সামর্থ অনুযায়ী লোকদেরকে যিয়াফত করা তথা খাবার পরিবেশন করা সবই রাসূলে পাক (ﷺ) এর হাদিস দ্বারা প্রমাণিত।
━━━━━━━━━━o━━━━━━━━━━
শায়খ আবদুল হক মুহাদ্দিস দেহলভী (رحمة الله) মিশকাত শরীফের ব্যাখ্যায় বলেন-
بعض روايات آمده است كہ روح ميت سے آيد خانہ خود را شب جمعہ پں نظر مى كند كہ تصدق كنند ازو سے يا نہ
-‘‘কোন কোন বর্ণনায় এসেছে যে, জুম‘আর রাতে মৃত ব্যক্তির আত্মা ঘরে এসে দেখে তার পক্ষ থেকে পরিবার পরিজন দান সাদকাহ করছেন নাকি করেননি।’’ ২৯১
২৯১. শায়খ আব্দুল হক মুহাদ্দিসে দেহলভী, আশিয়াতুল লুম‘আত, ১ম খণ্ড ৪৭০ পৃ:
ইমাম গায্যালী (رحمة الله)’র আকিদা:
ইমাম গায্যালী (رحمة الله) বলেন-
يَخْرُجُ الْاَمْوَاتُ مِنْ قُبُوْرِهِمْ فَيَقُوْمُوْنَ عَلَى اَبْوَابِ بُيُوْتِهِمْ وَيَقُوْلُوْنَ اِرْحَمُوْا عَلَيْنَا فَى هَذِه اللَّيْلَةِ بَصَدَقَةٍ اَوْ لُقْمَةٍ
-‘‘হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (رضي الله عنه) বর্ণনা করেন, ঈদের দিন, আশুরার দিন, আশুরার রাতে, জুম‘আর দিন, রজবের ১ম জুম‘আ অথবা শাবান মাসের ১৫ তারিখ (শবে বরাতে) মৃত ব্যক্তিরা তাদের কবর থেকে বের হয়ে ঘরের দরজায় গিয়ে বলতে থাকেন এই রাতে দান, সাদকাহ অথবা কাউকে খাবার দানের মাধ্যমে আমাদের উপকার কর।’’ ২৯২
২৯২. ইমাম গায্যালী, দাকায়েকুল আখবার, ৭০-৭১ পৃ.
বিজ্ঞ পাঠক! কুরআন হাদীসের আলোকে প্রমাণিত হল দেওবন্দী এবং গাইরে মুকাল্লিদ আহলে হাদিস পন্থিরা আহলে সুন্নাত ওয়াল জাম‘আত নয়।
❏ বিষয় নং-২৩:
ইয়া শায়খ আবদুল কাদের জিলানী শাইআন লিল্লাহ বলা
____________________
❏ বিষয় নং-২৩:
ইয়া শায়খ আবদুল কাদের জিলানী শাইআন লিল্লাহ বলা:
দেওবন্দী এবং ওহাবীরা বলে বেড়ায় ‘ইয়া শায়খ আবদুল কাদের জিলানী শাইআন লিল্লাহ’ বলা শিরক। আর আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতের অনুসারীদের মতে ‘ইয়া শায়খ আবদুল কাদের জিলানী শাইআন লিল্লাহ’ বলা বৈধ। আল্লাহ তা‘য়ালা পবিত্র কুরআন পাকে বলেন-
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا اسْتَعِينُوا بِالصَّبْرِ وَالصَّلَاةِ
-“হে ঈমানদারগণ! সবর ও নামাযের মাধ্যমে সাহায্য চাও।’’ ২৯৩
২৯৩. সূরা বাকারা , আয়াত নং-১৫৩
وَتَعَاوَنُوا عَلَى الْبِرِّ وَالتَّقْوَى وَلَا تَعَاوَنُوا عَلَى الْإِثْمِ وَالْعُدْوَانِ
-“এবং সৎ ও খোদাভীরুতার কাজে তোমরা পরস্পরকে সাহায্য করো আর পাপ ও সীমা লংঘনে একে অন্যের সাহায্য করো না।’’ ২৯৪
২৯৪. সূরা মায়েদাহ, আয়াত নং- ২
هُوَ الَّذِي أَيَّدَكَ بِنَصْرِهِ وَبِالْمُؤْمِنِينَ
-“তিনি ঐ সত্তা, যিনি আপনাকে শক্তিপ্রদান করেছেন স্বীয় সাহায্য এবং মুমিনদের দ্বারা।’’ (সূরা আনফাল, আয়াত নং-৬২)
يَا أَيُّهَا النَّبِيُّ حَسْبُكَ اللَّهُ وَمَنِ اتَّبَعَكَ مِنَ الْمُؤْمِنِينَ
-“হে অদৃশ্যের সংবাদদাতা নবী! আল্লাহ আপনার জন্য যথেষ্ট এবং যতসংখ্যক মুসলমান আপনার অনুসারী হয়েছে।“ ২৯৫
২৯৫. সূরা আনফাল, আয়াত নং-৬৪
وَالْمُؤْمِنُونَ وَالْمُؤْمِنَاتُ بَعْضُهُمْ أَوْلِيَاءُ بَعْضٍ
-“এবং মুসলমান নর ও মুসলমান নারীগণ একে অপরের বন্ধু।” (সূরা তাওবা, আয়াত নং-৭১)
এসব আয়াতে আল্লাহ তা‘য়ালার সৃষ্টি থেকে সাহায্য চাওয়ার প্রমাণ মিলে। আল্লাহর হুকুমে সৃষ্টি থেকে সাহায্য প্রার্থনা করা যদি শিরক হতো পবিত্র কুরআনে আল্লাহ তা‘য়ালা এর অনুমিত দিতেন না।
আম্বিয়া কেরাম (عليه السلام) শিরক থেকে বেঁচে থাকার শিক্ষা দিয়ে থাকেন। তাঁরা নিজেরাও শিরক করেন না এবং এর শিক্ষাও দেন না। পবিত্র কুরআন পাক থেকে প্রমাণিত হয় আম্বিয়া কেরাম (عليه السلام) আল্লাহর মাখলুক থেকে সাহায্য চেয়েছেন। যেমন-হযরত ঈসা (عليه السلام) তার অনুসারীদের বলেন,
مَنْ أَنْصَارِي إِلَى اللَّهِ
-“কারা আছে, যারা আল্লাহর পক্ষ থেকে আমায় সাহায্য করবে?” ২৯৬
২৯৬. সূরা সাফফ, আয়াত নং- ১৪
এর উত্তরে তারা বলেছিলেন-
قَالَ الْحَوَارِيُّونَ نَحْنُ أَنْصَارُ اللَّهِ
-“হাওরারীগণ বললো, আমরাই হলাম আল্লাহর দ্বীনের সাহায্যকারী।” ২৯৭
২৯৭. সূরা সাফফ, আয়াত নং- ১৪
হযরত মূসা (عليه السلام) নিজের বোঝা বহন এবং সাহায্যের জন্য প্রার্থনা করেছেন। উক্ত প্রার্থনায় তিনি আপন ভ্রাতা হযরত হারুন (عليه السلام)’র নাম উল্লেখ করেন। যেমন পবিত্র কুরআনে আছে,
وَاجْعَلْ لِي وَزِيرًا مِنْ أَهْلِي ۞ هَارُونَ أَخِي ۞ اشْدُدْ بِهِ أَزْرِي
-“এবং আমার জন্য আমার পরিবারবর্গের মধ্য থেকে একজন উযীর করে দাও, সে কে? আমার ভাই হারুন, তাঁর দ্বারা আমার কোমর শক্ত কর।” (সূরা তোহা, আয়াত নং- ২৯-৩১)
উল্লিখিত দু’জন সম্মানিত নবীগণ (عليه السلام) কর্তৃক আল্লাহর সৃষ্টি থেকে সাহায্য চাওয়ার বিষয়টি সুস্পষ্ট। এরূপ সাহায্য চাওয়া শিরক হলে তাঁরা সাহায্য চাইতেন না।
যদিওবা কুরআনের আয়াতের মধ্যে আল্লাহর অনুমতি অথবা আল্লাহর দান কথাটি নেই তথাপি আলেমগণের উচিত যে, তারা সাধারণ জনতাকে একথা জানিয়ে দেবে যে, প্রকৃত সাহায্যকারী হলেন মহান আল্লাহ তা‘য়ালা।
যেমন: আল্লাহার বাণী
إِيَّاكَ نَعْبُدُ وَإِيَّاكَ نَسْتَعِينُ
-“আমরা যেন তোমারই ইবাদত করি এবং তোমারই নিকট সাহায্য প্রার্থনা করি।’’ (সূরা ফাতিহা, আয়াত নং-৪) এ আয়াত থেকে একথাটি সুস্পষ্টভাবে বুঝা যায়।
আল্লাহর অনুমতি এবং তাঁর দান অনুসারে সৃষ্টির মধ্যেও সাহায্যকারী হতে পারে। উপর্যুক্ত আয়াতের মধ্যে এর প্রকৃষ্ট প্রমাণ পাওয়া যায়। কিন্তু পরিতাপের বিষয় হল এ পার্থক্যটি বর্ণনা করা ছাড়াই দেওবন্দীরা শিরক শিরক করে চিৎকার করে বেড়ায় এবং সাধাসিধে মুসলমানদেরকে চিন্তায় ফেলে মানুষের মাঝে বিভ্রান্তি ছড়ায়। শরীয়ত এবং দেশীয় উভয় আইনে তা গুরুতর অপরাধ।
একদিকে নবীগণ (عليه السلام) তো সৃষ্টি থেকে সাহায্য চাওয়ার বিষয়টি রয়েছে। অন্যদিকে স্বয়ং আল্লাহ তা‘য়ালা হযরত জিবরাঈল (عليه السلام) এর নেককার মুমিনকেও সাহায্য কারী বলেছেন। ইরশাদ হচ্ছে- পবিত্র কুরআনের ৩য় পারায় হযরত জিবরাইল (عليه السلام) কর্তৃক হযরত ঈসা (عليه السلام) কে সাহায্য করার বিষয়টি এভাবে এসেছে যে,
فَإِنَّ اللَّهَ هُوَ مَوْلَاهُ وَجِبْرِيلُ وَصَالِحُ الْمُؤْمِنِينَ وَالْمَلَائِكَةُ بَعْدَ ذَلِكَ ظَهِيرٌ
-‘‘আর আমি মরিয়ম তনয় ঈসাকে স্পষ্ট নির্দেশনাসমূহ প্রদান করেছি এবং পবিত্র রূহ দ্বারা তাকে সাহায্য করেছি।“ ২৯৮
২৯৮. সূরা তাহরীম, আয়াত নং-৪
আয়াতে রুহুল কুদুস হচ্ছে হযরত জিবরাইল (عليه السلام) যিনি হচ্ছেন ফেরেশতা, যাঁর উপাধি হল মুয়াল্লিমুল মালাইকা তথা ফিরিশতাদের শিক্ষক। হযরত জিবরাঈল (عليه السلام) হচ্ছেন আল্লাহর সৃষ্টি। আর আল্লাহর সৃষ্টি কাছে সাহায্য চাওয়া শিরক হলে আল্লাহ তা‘য়ালা কখনো তা প্রকাশ করতেন না।
হযরত হাস্সান বিন ছাবেত (رضي الله عنه) হুযুর পূরনূর (ﷺ)’র পবিত্র দরবারে নাত পড়তেন। হুযুর করিম (ﷺ) খুশি হয়ে তাঁর জন্য যে দোয়া করেছেন তা আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতের জন্য প্রমাণ্য দলিল। দোয়াটি এরূপ ছিল-
اللَّهُمَّ أَيِّدْهُ بِرُوحِ القُدُسِ
-‘‘আল্লাহ তাকে হযরত জিবরাঈল (عليه السلام) এর মাধ্যমে সাহায্য করুন।’’ (সহীহ বুখারী, ১/৯৮ পৃ., হা/৪৫৩)
সায়্যিদুল মুফাসসিরিন হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (رضي الله عنه) এবং ইমাম ফখরুদ্দিন রাজী (رحمة الله) এর আক্বিদা:
ইমামুল মুফাস্সির ইমাম ফখরুদ্দিন রাজী (رحمة الله) তাফসীরে কাবীরে (رحمة الله)
وَإِذْ قَالَ رَبُّكَ لِلْمَلَائِكَةِ إِنِّي جَاعِلٌ فِي الْأَرْضِ خَلِيفَةً
এ আয়াতের তাফসীরে হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (رضي الله عنه)’র একটি রেওয়ায়েত এনেছেন।
عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ قَالَ: إِنَّ لِلَّهِ مَلَائِكَةً سِوَى الْحَفَظَةِ يَكْتُبُونَ مَا يَسْقُطُ مِنْ وَرَقِ الْأَشْجَارِ، فَإِذَا أَصَابَ أَحَدَكُمْ حَرِجَةٌ بِأَرْضِ فَلَاةٍ فَلْيُنَادِ: أَعِينُوا عِبَادَ اللَّهِ يَرْحَمُكُمُ اللَّهُ.
-‘‘তিনি বলেন, তোমাদের কেউ হলে হারিয়ে গেলে সে বলবে, হে আল্লাহর (নৈকট্যশীল) বান্দাগণ সাহায্য করুন! তাহলে আল্লাহ তা‘য়ালা দয়া করবেন।’’ (ইমাম রাজী, তাফসিরে কাবীর, ২/৩৮৭ পৃ.)
বিজ্ঞপাঠক! উপর্যুক্ত আয়াত এবং হাদিসে পাকের আলোকে বলা যায়, সৃষ্টি থেকে সাহায্য চাওয়া বৈধ। হুযুর গাউছে পাক (رضي الله عنه) আল্লাহ তা‘য়ালার প্রিয় ভাজন হওয়ার ব্যাপারে কারো মতবিরোধ নেই। সুতরাং এই মকবুল বান্দা হতে সাহায্য প্রার্থনা করা কিভাবে শিরক হবে। দেওবন্দী এবং ওহাবীরা সাধাসিধে মুসলমানদের ধোঁকাচ্ছলে বলে থাকে আল্লাহ ছাড়া কাউকে ডাকা যাবে না। কারণ আল্লাহ ছাড়া কাউকে ডাকা শিরক। কিন্তু এসব ভাবলেশহীনদের এতটুকুও জ্ঞান নেই যে, স্বয়ং আল্লাহ তা‘য়ালা কুরআনে পাকে মানবজাতিকে সম্বোধন করে (يَا أَيُّهَا النَّاسُ) বলেছেন। প্রাণিধান যোগ্য যে, মানুষের মধ্যে মুসলমান কাফের সবাই অন্তর্ভূক্ত। দেওবন্দীরা আল্লাহর ওলীদের আহবান করাকে শিরক বলে। কিন্তু আল্লাহ তা‘য়ালা সকল মানুষকেই আহবান করেছেন।
পবিত্র কুরআনে পাকের অনেক স্থানে আল্লাহ তা‘য়ালা
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا
বলে সম্বোধন করেছেন, ঈমানদারদের মধ্যে বড়পীর আব্দুল কাদের জিলানী (رضي الله عنه)ও রয়েছেন। আবার রাসূলে পাক (ﷺ) ইরশাদ করেন,
يَا أُمَّةَ مُحَمَّدٍ
হে উম্মতে মুহাম্মদী! (সহীহ বুখারী, হা/৫২২১) এখানেও গাউসে পাক (رضي الله عنه) রয়েছেন। সুতরাং উল্লেখিত দলিলের আলোকে প্রমাণিত হল সাহায্য চাওয়া এবং ‘ইয়া শায়খ আবদুল কাদের জিলানী শাইআন লিল্লাহ’ বলা বৈধ।
ইমাম ফখরুদ্দিন রাযী (رحمة الله), আল্লামা খাযেন (رحمة الله) এবং আল্লামা ইসমাঈল হাক্কী (رحمة الله) এর আক্বিদা:
পবিত্র কুরআনের আয়াত-
فَلَبِثَ فِي السِّجْنِ بِضْعَ سِنِينَ
(সূরা ইউসুফ, আয়াত নং-৪২) এর তাফসীরে বলেছেন-
الاستعانة بالمخلوق في دفع الضرر جائزة
-‘‘বিপদ এবং অত্যাচার দূরীভূত করণে মাখলুক থেকে সাহায্য প্রার্থনা করা বৈধ।’’ (ইমাম খাযেন, তাফসিরে খাযেন, ২/৫৩০ পৃ.)
শাহ আব্দুল আযিয মুহাদ্দিসে দেহলভী (رحمة الله)-এর আকিদা:
দেওবন্দী ওহাবীদের এবং আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতের নিকট নির্ভরযোগ্য ব্যক্তিত্ব শাহ আবদুল আজিজ দেহলভী (رحمة الله) তাঁর স্বীয় তাফসীর “ফতহুল আজিজ” এ
إِيَّاكَ نَعْبُدُ وَإِيَّاكَ نَسْتَعِينُ
এর তাফসীরে বলেছেন করতে গিয়ে এমন পার্থক্য বর্ণনা করেছেন যে, যার মাধ্যমে সব ধরনের সন্দেহের অবসান হয়ে যায়।
অর্থাৎ তিনি বলেন, এ আয়াত থেকে বুঝা যাচ্ছে যে, আল্লাহ ভিন্ন অন্য কারো উপর নির্ভর করে এবং তাঁকে প্রকৃত সাহায্যের মালিক মনে না করে সাহায্য প্রার্থনা করা হারাম।’’ (তাফসিরে আযিযি, ১/৮ পৃ.)
সুতরাং কুরআন সুন্নাহ থেকে প্রতিভাত হলো যে, আহলে হাদীস এবং দেওবন্দীরা আহলে সুন্নাত ওয়াল জাম‘আত নয়।
❏ বিষয় নং-২৪: আযানের পূর্বাপর দরুদ শরীফ পড়া
____________________
❏ বিষয় নং-২৪: আযানের পূর্বাপর দরুদ শরীফ পড়া
দেওবন্দী পন্থিরা আযানের পূর্বে ও পরে দরুদ শরীফ পাঠ করাকে বিদআত বলে থাকে। এটা বন্ধ করার জন্য কঠোর ভূমিকা পালন করে এবং দরুদ পাঠকারীদের উপর শুধু শুধু ফতোয়া দিয়ে থাকে।
আহলে সুন্নাত ওয়াল জাম‘আত আযানের পূর্বে ও পরে দরুদ শরীফ পাঠ করাকে বৈধ বলে থাকে। সাথে সাথে তারা মনে প্রাণে বিশ্বাস করে যে, আল্লাহ এবং তাঁর প্রিয় হাবীব (ﷺ)’র এমন কোন বাধ্যবাধকতা নেই যে, অমুক সময়ে দরুদ পড়া যাবে না। ২৯৯
টিকা━━━━━━━━━━━━━━━━━━━━
২৯৯.
তবে ফকীহগণ কিছু স্থানে দুরূদ সালাম পড়ার ব্যাপারে মাকরূহ বলে উল্লেখ করেছেন তাছাড়া সব স্থানে দুরূদ সালাম পড়া মুস্তাহাব বলে গণ্য। তাই মাকরূহ সময় সমূহের মধ্যে আজানের আগে ও পরে উল্লেখ নেই। ।
❏ যেমন ফতোয়ার শামীতে রয়েছে যে-
تُكْرَهُ الصَّلَاةُ عَلَيْهِ - صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ - فِي سَبْعَةِ مَوَاضِعَ: الْجِمَاعِ، وَحَاجَةِ الْإِنْسَانِ، وَشُهْرَةِ الْمَبِيعِ وَالْعَثْرَةِ، وَالتَّعَجُّبِ، وَالذَّبْحِ، وَالْعُطَاسِ
-‘‘ইমাম ইবনে আবেদীন শামী হানাফী (رحمة الله) বলেন, সাত অবস্থায় নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর উপর সালাত ও সালাম পাঠ করা মাকরূহ (তাহরীমী)। যথা-
(১) স্ত্রী সহবাসকালে
(২) পেশাব পায়খানার সময়
(৩) ব্যবসার মাল চালু করার সময়।
(৪) হোচট খাওয়ার পর
(৫) যবেহ করার সময়
(৬) আশ্চর্য্যকর সংবাদ শ্রবণ করার সময়।
(৭) এবং হাঁচি দেয়ার সময়।’’
(ইমাম ইবনে আবেদীন শামী : ফতোয়ায়ে শামী: ১/৩৮৩ পৃ.)
❏ এই নিষিদ্ধ সময় ছাড়া দরুদ-সালাম পড়া মোস্তাহাব। যেমন ইমাম ইবনে আবেদীন শামী (رحمة الله) এই স্থান ছাড়া বাকী স্থানে দরুদ-সালাম পড়া সম্পর্কে লিখেন-
(قَوْلُهُ وَمُسْتَحَبَّةٌ فِي كُلِّ أَوْقَاتِ الْإِمْكَانِ) أَيْ حَيْثُ لَا مَانِعَ.
-‘‘নিষিদ্ধ স্থান ব্যতীত প্রত্যেক যায়গায় রাসূল (ﷺ) এর দরুদ-সালাম পাঠ করা মোস্তাহাব।’’ (ইমাম ইবনে আবেদীন শামী : ফতোয়ায়ে শামী, ১/৫১৮পৃ. দারুল ফিকর ইলমিয়্যাহ, বয়রুত, লেবানন।)
আল্লাহ তা‘য়ালা ইরশাদ করেন-
إِنَّ اللَّهَ وَمَلَائِكَتَهُ يُصَلُّونَ عَلَى النَّبِيِّ يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا صَلُّوا عَلَيْهِ وَسَلِّمُوا تَسْلِيمًا
-‘‘নিশ্চয় মহান রব ও তাঁর ফিরিশতারা রাসূল (ﷺ) এর উপর দরুদ পড়েন। হে ঈমানদারগণ! তাঁর প্রতি দরুদ ও খুব সালাম প্রেরণ করো।’’ ৩০০
৩০০. সূরা আহযাব, আয়াত নং-৫৬
এই আয়াতে আল্লাহ তা‘য়ালা সালাত এবং সালামের নির্দেশ দিয়েছেন। এ স্থানে সময়ের কোন শর্ত নেই। ৩০১
টিকা━━━━━━━━━━━━━━━━━━━━
৩০১.
উক্ত আয়াতে প্রিয় নবীকে সালাম দিতে বলা হয়েছে এখানে কোন সময়কে খাস বা নির্দিষ্ট করা হয়নি যে শুধু এক বা নির্দিষ্ট সময়ই নবীকে সালাম দিবে, বরং এ আয়াতে আম ব্যাপককতার প্রমাণ মিলে যে নবীজির উপর দুরুদ সালাম পাঠ করার।
❏ এ বক্তব্যের সমর্থনে হানাফী মাযহাবের অন্যতম ফকীহ, মুহাদ্দিস, আল্লামা মোল্লা আলী ক্বারী হানাফী (رحمة الله) উক্ত আয়াত প্রসঙ্গে বলেন-
اَنَّهُ تَعَالَى لَمْ يَوقُتْ ذَلِكَ لِيشَمِلُ سَائِرُ الْاَوْقَات-
-‘‘আল্লাহ তা‘য়ালা এখানে উক্ত আয়াতে কোন নির্দিষ্ট ওয়াক্ত বা সময় নির্ধারন করেন নি বরং সমস্ত সময় অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। (অর্থাৎ যে কোন সময়ই দরূদ সালাম পড়া যাবে নিষেধাজ্ঞা সময় ব্যতীত)।’’ (আল্লামা মোল্লা আলী ক্বারী : শরহে শিফা : ২/১০৭ পৃ. দারুল কুতুব ইলমিয়াহ, বয়রুত, লেবানন।)
━━━━━━━━━━o━━━━━━━━━━
আল্লাহ তা‘য়ালা তার প্রিয় হাবীব (ﷺ) যেখানে সময়ের বাধ্যবাধকতা করেন নি। সেখানে দেওবন্দী ওহাবীরা বাধ্যবাধকতা করা মূলত আল্লাহ তা‘য়ালা ও তাঁর প্রিয় মাহবুব (ﷺ) এর বিরোধীতা করার নামান্তর। ৩০২
টিকা━━━━━━━━━━━━━━━━━━━━
৩০২.
❏ উপরোল্লেখিত সূরা আহযাবের ৫৬ নং আয়াতের ব্যাখ্যায় হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (رضي الله عنه) বলেন-
{يَا أَيهَا الَّذين آمنُوا صلوا عَلَيْهِ} أثنوا عَلَيْهِ فِي صَلَاتكُمْ وَفِي مَسَاجِدكُمْ وَفِي كل موطن
-‘‘মহান রবের ঘোষণা হে ঈমানদারগণ! তোমরা আমার হাবিবের উপর দুরুদ সালাম পাঠ কর। হযরত ইবনে আব্বাস (رضي الله عنه) বলেন, এ আয়াতের মধ্যে দরূদ-সালাম নামাযে, মসজিদের মধ্যে এবং এমনকি সর্বাবস্থায় (আযানের আগে পড়ে বলতে কোন কথা নেই) পড়ার হুকুম দেয়া হয়েছে।’’ (আল্লামা ইবনুল কাইয়্যুম : জালাউল ইফহাম : ১/৪২২পৃ. দারুল উরুবাত, কুয়েত, দ্বিতীয় প্রকাশ. ১৪০৭হি.)
━━━━━━━━━━o━━━━━━━━━━
রাসূলে পাক (ﷺ)’র বাণী:
সায়্যিদুনা আবদুল্লাহ বিন আমর বিন আস (رضي الله عنه) বলেন, রাসূলে মাকবুল (ﷺ) ইরশাদ করেন-
إِذَا سَمِعْتُمُ الْمُؤَذِّنَ، فَقُولُوا مِثْلَ مَا يَقُولُ ثُمَّ صَلُّوا عَلَيَّ، فَإِنَّهُ مَنْ صَلَّى عَلَيَّ صَلَاةً صَلَّى الله عَلَيْهِ بِهَا عَشْرًا
-‘‘মুয়াজ্জিন যখন আযান দেন, তখন তোমরা তার অনুরূপ বলো। এরপর আমার উপর দরুদ শরীফ পড়। যে আমার উপর একবার দরুদ শরীফ পড়বে আল্লাহ তা‘য়ালার তার উপর দশবার রহমত প্রেরণ করবেন।’’ ৩০৩
৩০৩.খতিব তিবরিযি, মিশকাত শরীফ, (ভারতীয় ৬৪ পৃষ্ঠা), ১/২০৭ পৃ. হা/৬৫৭, সহীহ মুসলিম, ১/২৮৮ পৃ. হা/৩৮৪
এই হাদীসের মধ্যে রাসূলে পাক (ﷺ) আযানের পর- صَلُّوا عَلَيَّ -‘‘দরুদ শরীফ পড়ার হুকুম দিয়ে বলেছেন-
مَنْ صَلَّى عَلَيَّ صَلَاةً صَلَّى الله عَلَيْهِ بِهَا عَشْرًا
-‘‘যে আমার উপর একবার দরুদ শরীফ পড়বে আল্লাহ তা‘য়ালা তার উপর দশটি রহমত দান করবেন।’’ ৩০৪
৩০৪.খতিব তিবরিযি, মিশকাত শরীফ, (ভারতীয় ৬৪ পৃষ্ঠা), ১/২০৭ পৃ. হা/৬৫৭, সহীহ মুসলিম, ১/২৮৮ পৃ. হা/৩৮৪
নবাব সিদ্দিক হাসান ভূপালির বক্তব্য
ওহাবীদের দাবী তিনি কুরআন সুন্নাহ খুব ভাল করেই বুঝেন। দরুদ শরীফের ব্যাপারে তার মন্তব্য হল- বিভিন্ন সময় দরুদ শরীফ পড়ার জন্য রাসূলে পাক (ﷺ) হুকুম দিয়েছেন। সুতরাং কোন কোন সময় দরুদ শরীফ পড়া ওয়াজিব কখনো মুস্তাহাব। সুতরাং আযানের পরেও দরুদ পড়া এমন একটি সময়। এ কারণে ইমাম মুহাম্মদ (رحمة الله) হযরত আবদুল্লাহ বিন আমর বিন আস (رضي الله عنه) থেকে হাদিস বর্ণনা করেছেন যে, রাসূলে পাক (ﷺ) ইরশাদ করেন, মুয়াজ্জিন যখন আযান দেন তোমরাও তার অনুরূপ বলবে, এরপর আমার উপর দরুদ শরীফ পড়বে, কারণ যে আমার উপর একবার দরুদ শরীফ পড়বে আল্লাহ তা‘য়ালা তার উপর দশটি রহমত প্রেরণ করবেন।’’ ৩০৫
৩০৫. নবাব সিদ্দিক হাসান ভূপালি, তাফসীরে তারজুমানুল কুরআন, ১১ খণ্ড, ৪০১ পৃষ্ঠা
রাসূলে পাক (ﷺ)’র ইরশাদ অনুযায়ী আযানের পর দরুদ পড়া পূণ্য এবং আল্লাহর রহমত অর্জনের মাধ্যম। কিন্তু দেওবন্দী দরুদ শরীফ পড়াকে বিদআতী এবং জাহান্নামী বলা মূলত রাসূলে পাক (ﷺ) বিরোধিতা করার নামান্তর। আল্লাহর আশ্রয়!
উম্মতে মুহাম্মাদীর জলিলুল ক্বদর মুহাদ্দিস আবু বকর আহমদ বিন মুহাম্মদ বিন ইসহাক দিনওয়ারী (رحمة الله) যিনি ইবনে সুন্নি নামে প্রসিদ্ধ (ওফাত. ৩৬৪ হি.) এই বর্ণনাকে কেন্দ্র করে
بَابُ الصَّلَاةِ عَلَى النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عِنْدَ الْأَذَانِ
-‘‘আযানের পূর্বে রাসূল (ﷺ)-এর উপর দরুদ-সালাম পাঠের পরিচ্ছেদ।’’ (ইমাম ইবনে সুন্নী, ১/৮৩ পৃ., দারুল কিবলাহ, বয়রুত, লেবানন।) শিরোনামে একটি স্বতন্ত্র বাবের নামকরণ করেছেন।
এতোবড় মুহাদ্দিস কর্তৃক এই শিরোনামে বাবের নামকরণই প্রমাণ করে আযানের পূর্বে পরে দরুদ শরীফ পড়া অতীত পূর্ণের মাধ্যম।
এ বিষয়ে রাসূলে পাক (ﷺ) এর বাণী:
ইমাম জালালুদ্দীন সুয়ূতি (رحمة الله) তার অনাবদ্য কিতাব ‘আল জামেউস সগীর’ এ রাসূলে পাক ছাহেবে লাওলাক (ﷺ)’র একটি হাদিস শরীফ এনেছেন এর দ্বারাও প্রমাণিত হয় আযানের পূর্বে দরুদ পড়া মূলত পূণ্যের কাজ।
রাসূলে পাক (ﷺ) ইরশাদ করেন,
كُلُّ أَمْرٍ ذِي بَالٍ لاَ يُبْدَأُ فِيهِ بِحَمْدِ الله وَالصَّلاَةِ عَلَيَّ فَهُوَ أَقْطَعُ أَبْترُ مَمْحُوقٌ مِنْ كُلِّ برَكَةٍ
-‘‘যে সব ভাল কাজ আল্লাহর হামদ এবং আমার উপর দরুদ শরীফ দ্বারা শুরু হয় না তা বরকত শূণ্য হয়।’’ ৩০৬
৩০৬. ইমাম সুয়ূতি, আল-জামিউস সগীর, দ্বিতীয় খণ্ড, পৃ. ৯২, হা/৯৭০২ এবং জামিউল আহাদিস, ১৫/৩১৫ পৃ. হা/১৫৫৮৬, ইমাম দায়লামী, মুসনাদিল ফিরদাউস, ৩/২৪৬ পৃ. হা/৪৭২৬, আহলে হাদিস আলবানী এ হাদিসটির সনদকে যঈফ বলেছেন, আমরা বলবো, এটি যঈফ হলেও মুস্তাহাব হিসেবে আমল করার ক্ষেত্রে অবশ্যই গ্রহণযোগ্য।
এমন কোন মুসলমান আছে, যে আযানকে ভাল কাজ মনে করে না? মুসলমানগণ তো আযানকে ভাল কাজ মনে করেই আযানের পূর্বে দরুদ শরীফ পাঠ করেন।
ইমাম বদরুদ্দিন আইনি (رحمة الله) আকিদা:
বুখারী শরীফের ব্যাখ্যাকার আল্লামা বদরুদ্দীন আইনি (رحمة الله) তাঁর অনাবদ্য কিতাব “উমদাতুল কারী” গ্রন্থে উপরোক্ত হাদিসের ব্যাখ্যায় বলেছেন
وَأما الصَّلَاة فَلِأَن ذكره صلى الله عَلَيْهِ وَسلم مقرون بِذكرِهِ تَعَالَى وَلَقَد قَالُوا فِي قَوْله تَعَالَى {ورفعنا لَك ذكرك} مَعْنَاهُ ذكرت حَيْثُمَا ذكرت
-“এজন্যই রাসূলে পাক (ﷺ) এর উপর দরুদ শরীফ পড়া হয় যাতে আল্লাহ পাকের সাথে তার যিকরও হয়। ওলামায়ে কেরাম (رحمة الله) ورفعنا لَك ذكرك এর ব্যাখ্যায় বলেন, মহান রবের বানী, “হে রাসূল! আমি আপনার যিকরকে বুলন্দ করে দিয়েছি’ এর মমার্থ হল, যেখানেই আমার যিকর হবে সেখানে আপনার যিকর হবে।” ৩০৭
৩০৭. আইনী, উমদাতুল কারী, প্রথম খণ্ড, ১১ পৃষ্ঠা
মুহাদ্দিসগণ আযানের পূর্বে দরুদ শরীফ পড়াকে জায়েয এবং মুস্তাহাব বলেছেন, কিন্তু দেওবন্দীরা এর থেকে নিষেধ করে থাকে।
ইমাম শাফেয়ী (رحمة الله)’র আক্বিদাঃ
আল্লামা ইবনে হাজার আসকালানী (رحمة الله) এবং তাঁর অন্যতম শাগরিদ মুহাদ্দিস আল্লামা সাখাভী (رحمة الله) ইমাম শাফেয়ী (رحمة الله) এর একটি উক্তি বর্ণনা করেছেন যে,
قال الشافعي - رضي الله عنه - أحب كثرة الصلاة على النبي - صلى الله عليه وسلم
-‘‘ইমাম শাফেয়ী (رحمة الله) বলেন, রাসূলে পাক (ﷺ)’র উপরে সর্বদা দরুদ পড়তে আমি পছন্দ করি।” (আল্লামা সাখাভী, আল-কওলুল বদী, ১৯৬ পৃ.)
ইমাম শাফেয়ী (رحمة الله) এর ন্যায় ব্যক্তিত্ব সর্বদা দরুদ পড়তে পছন্দ করেন আর তারা বেদআত এবং হারামের ফতোয়া ছড়ায়।
তাদের কাছে হযরত সালাহ উদ্দিন আইয়ুবীর সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলে উত্তরে তারা বলবে তিনি একজন নেককার বাদশা ছিলেন, তিনি বায়তুল মুকাদ্দস জয় করেছেন এবং আলেম ওলামাদের তাঁর জন্য দোয়া করেন। এই হযরত সালাহ উদ্দিন আইয়ুবী (رحمة الله)ও আযানের পূর্বে দরুদ শরীফ পড়ার হুকুম দিয়েছেন। তাঁর যুগে এর বড় গুরুত্ব ছিল। আল্লামা সাখাভী (رحمة الله) তাঁর আল-কাওলুল বদীতে এবং আল্লামা সুলায়মান (رحمة الله) তাফসিরে জামালে তা বর্ণনা করেছেন।
কাজী আয়্যায (رحمة الله)’র আকিদা:
তিনি তাঁর অনাবদ্য কিতাব যেটি রাসূলে আকরাম (ﷺ) এর দরবারে কবুল হয়েছে। “আশ-শিফা ফি তা‘রিফে হুকুকিল মুস্তফা” এর মধ্যে আযানের সময় রাসূল (ﷺ) এর দরুদ শরীফ পাঠ করার কথা বলেছেন। তিনি বলেন-
وَمِنْ مُوَاطِنِ الصَّلَاةِ عَلَيْهِ عِنْدَ ذِكْرِهِ وَسَمَاعِ اسْمِهِ أَوْ كِتَابَتِهِ أَوْ عِنْدَ الْأَذَانِ.
-‘‘রাসূলে পাক (ﷺ) এর উপর দরুদ শরীফ পাঠ করার অসংখ্য সময় হতে একটি হল আযানের সময় দরুদ শরীফ পড়া।’’ (ইমাম কাযি আয়্যায, আশ-শিফা, ২/১৫২)
এখানেও ইমাম আয়্যায (رحمة الله) আযানের সময় উল্লেখ করেছেন। আল্লামা মোল্লা আলী কারী হানাফী (رحمة الله) এর ব্যাখ্যা করতে গিয়ে বলেন-
أي الاعلام الشامل للإقامة
-‘‘এখানে আযান দ্বারা জানিয়ে দেয়া উদ্দেশ্য। এটি আযান ইকামত উভয়কে অন্তর্ভূক্ত করে।’’ ৩০৮
৩০৮. আল্লামা মোল্লা আলী কারী হানাফী, শরহে শিফা, ২য় খণ্ড ১১৬ পৃ.
আল্লামা দিমিয়াতী মক্কী (رحمة الله)’র আকিদা:
তিনি তাঁর কিতাব “ফতহুল মুঈন” গ্রন্থে আযান ও ইকামতের পূর্বে দরুদ শরীফ পড়া মুস্তাহাব এবং সুন্নাত উল্লেখ করে বলেন-
وقال الشيخ الكبير البكري أنها تسن قبلهما
শায়খে কাযীর বিকরী (رحمة الله) আযান ইকামতের পূর্বে দরুদ শরীফ পড়া মুস্তাহাব এবং সুন্নাত।’’ (আল্লামা দিমিয়াতি, ইয়ানাতুত ত্বালেবীন, ১/২৮০ পৃ.)
ফতহুল মুঈন এর ব্যাখ্যাগ্রন্থ “ইয়ানাতুত তলেবীন “এর মধ্যে এসেছে”
اَىْ الصَّلٰوةُ وَالسَّلَامُ عَلَى النَّبِيِّ ﷺ قَبْلَ الْأَذَانِ وَالْاِقَامَةِ
-‘‘আযান ও ইকামতের পূর্বে দরুদ শরীফ পড়া সুন্নাত।’’ ৩০৯
৩০৯. ইয়ানাতুত ত্বালেবীন, ১ম খণ্ড ২২৩ পৃ.
বিজ্ঞ পাঠকবর্গ! উম্মতে মুহাম্মদীর বিদগ্ধ আলেমদের বর্ণনা দ্বারা প্রমাণিত হল আযানের পূর্বে দরুদ শরীফ পড়া সন্দেহ ছাড়া মুস্তাহাব।
সুতরাং উপরোক্ত আলোচনার প্রেক্ষিতে দিবা লোকের ন্যায় প্রমাণিত হল আযানের পূর্ব-পরে দরুদ শরীফ পাঠ করা থেকে যারা বাধা প্রদান করে তথা ওই সমস্ত দেওবন্দী ওহাবীরা আহলে সুন্নাত ওয়াল জাম‘আত নয়।
❏ বিষয় নং-২৫: আঙ্গুল চুম্বন করার প্রমাণ
____________________
❏ বিষয় নং-২৫: আঙ্গুল চুম্বন করার প্রমাণ
আযানের সময় أَشْهَدُ أَنَّ مُحَمَّدًا رَسُولُ اللهِ তথা রাসুলে পাক (ﷺ) এর প্রিয় নাম মুবারক শ্রবণ করে আঙ্গুল চুমু করাকে দেওবন্দীরা বেদ‘আত এবং হারাম বলে থাকে।
আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতের অনুসারীরা আযানের সময় রাসূল করিম (ﷺ) এর নাম মুবারক শ্রবণে আঙ্গুল চুম্বু করাকে জায়েয এবং মুস্তাহাব বলে থাকে।
রাসূলে পাক (ﷺ) এর ইরশাদ মুবারক:
আল্লামা মুহাম্মদ গাবরিম বিন মুহাম্মদ দাগেরী আল-মালেকী আশ‘আরী (رحمة الله) তাঁর কিতাব ‘নাওআফিহুল আত্যারিয়্যা’ এর মধ্যে একটি হাদিস শরীফ এনেছেন-
قَالَ رَسُوْلُ اَللهِ ﷺ مَنْ مَسَحَ بِيَدِه اِسْمَ مُحَمَّدٍ ثُمَّ قَبَّلَ يَدَه بِشَفَتِهِ ثُمَّ مَسَحَ عَلٰى عَيْنَيْهِ يَرٰى رَبَّه بِمَا يَرَاهُ الصَّالِحُوْنَ وَ يَنَالُ شَفَاعَتِى وَلَوْ كَانَ عَاصِيًّا
-“রাসূলে পাক (ﷺ) ইরশাদ করেন, যে ব্যক্তি ‘মুহাম্মদ’ নামটি হাতে স্পর্শ করে হাত দুটিকে হাতে চুম্বন করে অতঃপর করে অতঃপর তাকে চোখের মধ্যে মালিশ করবে সে নেককার বান্দাদের ন্যায় আল্লাহুকে দেখবে এবং সে আমার শাফায়াত লাভ করবে যদিও সে গুনাহগার হয়।’’৩১০
৩১০. নাওআফিহুল আত্যারিয়্যা, ৫১ পৃ. মিশর হতে প্রকাশিত
হযরত আদম (عليه السلام) এর আকিদা এবং রাসূলে পাক (ﷺ) এর আকিদা
বিখ্যাত মুফাস্সির আল্লামা ইসমাঈল হাক্কী (رحمة الله) তাঁর উল্লেখযোগ্য তাফসীর তাফসীরে ‘রুহুল বায়ানে’ লিখেন,
وفِى قَصَصُ الْأَنْبِيَاء وَغَيْرِهَا اَنَّ آدَمَ عَلَيْهِ السَّلام اِشْتَاقَ اِلَى لِقَاءِ مُحَمَّد صلى الله عليه وسلم حِيْنَ كَانَ فِى الْجَنَّةِ فَاَوْحَى اَللهُ تَعَالَى اِلِيْهِ هُوَ مِنْ صُلْبِكَ وَيَظْهَرُ فِى آخِرِ الزَّمَانِ فَسَأَلَ لِقَاءَ مُحَمَّد صَلى اَللهُ عَلَيْهِ وَسَّلَّمَ حِيْنَ كَانَ فِى الْجَنَّةَ فَاَوحَى اَللهُ تَعَالى اِلَيْهِ فَجَعَلَ اَللهُ النُّوْرَ المُحَمَّدِي فِى إِصْبَعِه المُسَبَّحَةِ مِنْ يَدَه الْيُمْنَى فَسَبَّحَ ذَلِكَ النُّوْر فَلِذَلِكَ سُمِّيَتْ تِلْكَ الإَصْبَعُ مُسَبَّحَةً كَمَا فِى الرَّوْضِ الفَائِقْ. اَوْ اَظْهَرَ اَللهُ تَعَالى جَمال حَبِيْبِه فِى صِفَاءِ ظَفَرَىْ اِبْهَامَيْهِ مِثْلُ المِرَآةِ فَقَبَّلَ آدَمُ ظَفْرى اِبْهَامَيْهِ وَمَسَحَ عَلَى عَيْنَيْه فَصَارَ أَصْلًا لِذُرِّيَّتِه فَلَمَّا اَخْبَرَ جِبْرَائِيْلُ النَّبِيِّ صَلى اَللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بِهَذِه القِصَّةِ قَالَ عَلَيْهِ السَّلَامُ (مَنْ سَمِعَ اِسْمِى فِى الْاَذَانِ فَقَبَّلَ ظَفَرَىْ اِبْهَامَيْهِ وَمَسَحَ عَلَى عَيْنَيْهِ لَمْ يَعْمِ اَبَدًا
-‘‘কাসাসুল আম্বিয়া কিতাবে বর্ণিত আছে যে, হযরত আদম (عليه السلام) জান্নাতে অবস্থানকালে মহানবি হযরত মুহাম্মদ (ﷺ)‘র সাথে সাক্ষাতের জন্যে আগ্রহ প্রকাশ করেন। অতঃপর আল্লাহ্ তা‘য়ালা তাঁর নিকট ওহী প্রেরণ করেন যে, হে আদম! তিনি তোমার পৃষ্ঠ হতে শেষ যামানায় প্রকাশ হবেন। তা শুনার পর তিনি জান্নাতে অবস্থানকালে আল্লাহর কাছে প্রার্থনা জানালেন। বিনিময়ে আল্লাহ্ তা‘য়ালা ওহী প্রেরণ করলেন, যে নূরে মুহাম্মদী (ﷺ) তোমার ডান হাতের শাহাদাত আঙ্গুলীর মধ্যে স্থানান্তরিত করেছি, তখন সে অঙ্গ হতে তাসবীহ পাঠ আরম্ভ হলো। এজন্যই এই আঙ্গুলকে তাসবীহ পাঠকারী আঙ্গুল বলা হয়। যেমন ‘রওযাতুল ফায়েক’ কিতাবেও বর্ণিত আছে, অথবা আরেক বর্ণনায় রয়েছে, আল্লাহ্ তা‘য়ালা আপন হাবীব (ﷺ) এর সৌন্দর্য প্রকাশ করলেন দুই বৃদ্ধাঙ্গুলীর উপর যেভাবে আয়নাতে দেখা যায়। তখন আদম (عليه السلام) দুই বৃদ্ধাঙ্গুলে চুম্বুন করে স্বীয় চোখের উপর মালিশ করলেন। এটি দলীল হিসেবে প্রমাণিত হলো যে, তাঁর সন্তানাদীর জন্য। অতঃপর জিবরাঈল (عليه السلام) এই ঘটনা হুযূর (ﷺ) কে জানালেন। হুযূর (ﷺ) বললেন, যেই ব্যক্তি আযানের মধ্যে আমার নাম মোবারক শুনে দুই বৃদ্ধাঙ্গুলী চুম্বন করবে আর চোখে মালিশ করবে, সে কখনো অন্ধ হবে না।’’ ৩১১
৩১১.আল্লামা ইসমাঈল হাক্কী : তাফসীরে রুহুল বয়ান : ৭/২২৯ পৃ. সূরা মায়েদা আয়াত : ৫৭ নং এর ব্যাখ্যা, আবদুর রহমান ছাফুরী, নুযাহাতুল মাযালিস, ২/৭৪ পৃ.
হযরত আবু বকর সিদ্দিক (رضي الله عنه)’র আকিদা :
আল্লামা ইসমাঈল হাক্কী (رحمة الله) তাঁর প্রসিদ্ধ তাফসীরে রুহুল বয়ানে বলেন,
ودر محيط آورده كه پيغمبر صلى الله عليه وسلم بمسجد درآمد ونزديك ستون بنشست وصديق رضى الله عنه در برابر آن حضرت نشسته بود بلال رضى الله عنه برخاست وباذان اشتغال فرمود چون گفت اشهد ان محمدا رسول الله ابو بكر رضى الله عنه هر دو ناخن ابهامين خود را بر هر دو چشم خود نهاده گفت قرة عينى بك يا رسول الله چون بلال رضى الله عنه فارغ شد حضرت رسول صلى الله عليه وسلم فرموده كه يا أبا بكر هر كه بكند چنين كه تو كردى خدائے بيامرزد كناهان جديد وقديم او را اگر بعمد بوده باشد اگر بخطا
-‘‘মুহিত গ্রন্থে এসেছে একদা হুযুরে পাক (ﷺ) মসজিদে প্রবেশ করে একটি খুঁটির পাশে বসে পড়েন। হযরত আবু বকর (رضي الله عنه) ও তাঁর পাশে বসে পড়লেন। ইত্যবস্যারে আযানের সময় হলে হযরত বেলাল (رضي الله عنه) দাঁড়িয়ে আযান দিতে শুরু করলেন। তিনি যখন أَشْهَدُ أَنَّ مُحَمَّدًا رَسُولُ اللهِ উচ্চারণ করলেন হযরত আবু বকর (رضي الله عنه) তাঁর দু’আঙ্গুলির পিঠের উপর চুমু খেয়ে দু’ চোখের উপর রেখে বলতে লাগলেন-
قُرَّةَ عَيْنِى بِكَ يَا رَسُوْلَ اَلله
হযরত বেলাল (رضي الله عنه) আযান শেষ করলে রাসূলে পাক (ﷺ) বলতে লাগলেন, আবু বকর যে ব্যক্তি আপনার অনুরূপ আমল করবে আল্লাহ তা‘য়ালা তার সমস্ত গুনাহ ক্ষমা করে দেবেন।’’ ৩১২
৩১২. আল্লামা ইসমাঈল হাক্কী, তাফসীরে রুহুল বয়ান, ৭ম খণ্ড, ২২৯ পৃ., দারুল ফিকর ইলমিয়্যাহ, বয়রুত, লেবানন।
ইমাম আবু তালেব মুহাম্মদ বিন আলী মাক্কী (رحمة الله)’র আকিদা:
ইমাম আবু তালেব মুহাম্মদ বিন আলী মক্কী (رحمة الله) এর অনাবদ্য রচনা “কুউয়াতুল কুলুব’’ গ্রন্থের হাওয়ালা দিয়ে বিখ্যাত মুফাস্সির আল্লামা ইসমাঈল হাক্কী (رحمة الله) বলেন-
وحضرت شيخ امام ابو طالب محمد بن على المكي رفع الله درجته در قوت القلوب روايت كرده از ابن عيينه رحمه الله كه حضرت پيغمبر عليه الصلاة والسلام بمسجد درآمد در دهه محرم وبعد از آنكه نماز جمعه ادا فرموده بود نزديك أسطوانة قرار كرفت وابو بكر رضى الله عنه بظهر ابهامين چشم خود را مسح كرد وكفت قرة عينى بك يا رسول الله و چون بلال رضى الله عنه از أذان فراغتى روى نمود حضرت رسول الله صلى الله عليه وسلم فرمود كه اى أبا بكر هر كه بگويد آنچهـ تو كفتى از روى شوق بلقاى من وبكند آنچهـ تو كردى خداى دركذارد كناهان ويرا آنچهـ باشد نو وكهنه خطا وعمد ونهان وآشكارا
-“হযরত শায়খ ইমাম আবু তালেব মুহাম্মদ বিন আলী মক্কী (رحمة الله) বলেন, তাবেয়ী ইমাম ইবনে উয়াইনা (رحمة الله) বর্ণনা করেন, একদা রাসূলে খোদা (ﷺ) ১০ ই মুহররাম জুম‘আর নামাজের জন্য মসজিদে তাশরীফ নিয়ে একটি খুঁটির নিকট বসে পড়লেন। হযরত আবু বকর সিদ্দিক (رضي الله عنه) তাঁর দু’আঙ্গুলির পিঠে চুমু খেয়ে চোখের মধ্যে মালিশ করে বললেন قُرَّةَ عَيْنِى بِكَ يَا رَسُوْلَ اَلله। হযরত বেলাল (رضي الله عنه) আযান শেষ করার পর রাসূলে পাক (ﷺ) ইরশাদ করলেন, আবু বকর আমার মুহাব্বতে আপনি যা কিছু করেছেন এবং যা বলেছেন যে আপনার ন্যায় করবে আল্লাহ তা‘য়ালা তার পূর্বা-পর এবং প্রকাশ্য অপ্রকাশ্য সবগুনাহ ক্ষমা করবেন।’’ ৩১৩
৩১৩. আল্লামা ইসমাঈল হাক্কী, তাফসীরে রুহুল বয়ান, ৭ম খণ্ড, ২২৯ পৃ., দারুল ফিকর ইলমিয়্যাহ, বয়রুত, লেবানন।
আল্লামা শাসমুদ্দিন সাখাবী (رحمة الله) এর আকিদা:
আল্লামা সাখাবী (رحمة الله) দায়লামী শরীফের রেফারেন্স দিয়ে বলেন-
حَدِيثِ أَبِي بَكْرٍ الصِّدِّيقِ أَنَّهُ لَمَّا سَمِعَ قول المؤذن أَشْهَدُ أَنَّ مُحَمَّد رَسُوْلُ اَلله قَالَ هَذَا، وَقَبَّلَ بَاطِنَ الأُنْمُلَتَيْنِ السَّبَّابَتَيْنِ وَمَسَحَ عَيْنَيْهِ، فَقَالَ ﷺ : مَنْ فَعَلَ مِثْلَ مَا فَعَلَ خَلِيلِي فَقَدْ حَلَّتْ عَلَيْهِ شَفَاعَتِي،
-‘‘হযরত আবু বকর (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত। তিনি মুয়ায্যিনকে ‘আশহাদু আন্না মুহাম্মাদার’ রাসূলূল্লাহ বলতে শোনলেন, তখন তিনিও তা বললেন এবং বৃদ্ধাঙ্গুলীদ্বয়ে চুমু খেয়ে তা চোখে বুলিয়ে নিলেন। তা দেখে রাসূল (ﷺ) ইরশাদ করেন, যে ব্যক্তি আমার বন্ধুর ন্যায় আমল করবে, তার জন্য আমার সুপারিশ বৈধ হয়ে গেল।’’ ৩১৪
৩১৪.
ক. ইমাম আবদুর রহমান সাখাভী : মাকাসিদুল হাসানা : ৩৮৩ পৃ. : হা/১০২১
খ. আল্লামা ইমাম আজলূনী : কাশফুল খাফা : ২/২৫৯ পৃ. হা/২২৯৬
গ. আল্লামা মোল্লা আলী ক্বারী : আসরারুল মারফূ : ৩১২ পৃ. হা/৪৫৩
ঘ. আল্লামা ইমাম তাহতাভী : মারাকিল ফালাহ : ১৬৫ পৃ., কিতাবুল আযান
ঙ. শাওকানী, ফাওয়াহিদুল মাজমু‘আহ ফি আহাদিসিল মাওদ্বুআহ: ১/৩৯ পৃ.
চ. আল্লামা ইসমাঈল হাক্কী : তাফসীরে রুহুল বায়ান : ৭/২২৯ পৃ.
ছ. আল্লামা তাহের পাটনী : তাযকিরাতুল মওদ্বুআত : ৩৪ পৃ.
জ. আল্লামা জালালুদ্দীন সূয়তী : লা-আলীল মাসনূআ : ১৬৮-১৭০ পৃ.
ঝ. আল্লামা আব্দুল হাই লাখনৌভী : আসারুল মারফূআহ, ১৮২ পৃ.
ঞ. আলবানী : সিলসিলাতুল আহাদিসিদ দ্বঈফাহ, ১/১০২ পৃ. হা/৭৩
সায়্যিদুনা ইমাম হাসান (عليه السلام)’র আক্বিদা:
ইমাম সাখাভী (رحمة الله) উল্লেখ করেন-
وروي عَن الفَقِيْه مُحَمَّد بْن سَعِيْد الخولاني قَالَ: أَخْبَرْنِي الفَقِيْه العَالِمْ أَبُو الْحَسَن عَلِي ابْنِ مُحَمَّد بْن حَدِيْد الحُسَيْنِي أَخْبَرْنِي الفَقِيْه الزَّاهِد البِلَالِي عَنْ الحَسَنْ عَلَيْهِ السَّلَامْ أَنَّهُ قَالَ: مَنْ قَالَ حِيْنَ يَسْمَعُ المُؤَذِّنَ يَقُوْلُ أَشْهَدُ أَنَّ مُحَمَّدًا رَسُوْلُ الله: مَرْحَبَا بِحَبِيْبِي وَقُرَّةُ عَيْنِي مُحَمَّد بْنِ عَبْدُ الله صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَيُقَبِّلُ إِبْهَامَيْهِ وَيَجْعَلْهُمَا عَلى عَيْنَيْهِ لَمْ يَعْمِ وَلَمْ يَرْمُد
-‘‘ফকীহ মুহাম্মদ বিন সাঈদ খুলানী (رحمة الله) থেকে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন, আমাকে ফকীহ আলেম আবুল হাসান আলী বিন মুহাম্মদ বিন হাদীদ আল-হুসাইনী (رحمة الله) বর্ণনা করেছেন তিনি বলেন, আমাকে ফকীহ যাহেদ বেলালী (رحمة الله) বলেছেন যে, সায়্যিদুনা ইমাম হাসান (عليه السلام) বলেছেন, মুয়ায্যিন হতে أَشْهَدُ أَنَّ مُحَمَّد رَسُوْلُ اَلله শুনে যে ব্যক্তি مَرْحَبَا بِحَبِيْبِي এবং
قُرَّةُ عَيْنِي مُحَمَّد بْنِ عَبْدُ الله صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ
বলে দুআঙ্গুলে চুমু খেয়ে দুচোখে মালিশ করবে সে কখনো অন্ধ হবে না এবং তার চোখে কখনো রোগ হবে না।’’ (ইমাম সাখাভী, মাকাসিদুল হাসানা, ৬০৬ পৃ. হা/১০২১)
হযরত খিজির (عليه السلام)’র আকিদা:
ইমাম সাখাভী (رحمة الله) সংকলন করেন-
ما أورده أبو العباس أحمد ابن أبي بكر الرداد اليماني المتصوف في كتابه موجبات الرحمة وعزائم المغفرة بسند فيه مجاهيل مع انقطاعه، عن الخضر عليه السلام أنه: من قال حين يسمع المؤذن يقول أشهد أن محمد رسول اللَّه: مرحبا بحبيبي وقرة عيني محمد بن عبد اللَّه ﷺ ، ثم يقبل إبهاميه ويجعلهما على عينيه لم يرمد أبدا-
-‘‘ইমাম আবু আব্বাস আহমদ বিন আবি বকর ইয়ামানী (رحمة الله) তাঁর লিখিত উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ موجبات الرحمة و عزائم المغفرة এর মধ্যে হযরত খিযির (عليه السلام) থেকে বর্ণিত আছে, যে ব্যক্তি মুয়াজ্জিনের কণ্ঠে ‘আশহাদু আন্না মুহাম্মদার রাসূলূল্লাহ’ শোনে বলবে
مَرْحَبَا بِحَبِيْبِي وَقُرَّةُ عَيْنِي مُحَمَّد بْنِ عَبْدُ الله صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ
মারহাবা বি হাবিবি ওয়া কুররাতো আইনী মুহাম্মাদ ইবনে আব্দুল্লাহ (ﷺ)) অতঃপর স্বীয় বৃদ্ধাঙ্গুলীদ্বয় চুম্বন করে চোখে লাগাবে, তাহলে তার চোখে কখনও ব্যথা হবে না এবং সে কোন দিন অন্ধ হবে না।’’ ৩১৫
৩১৫.
ক. আল্লামা ইমাম সাখাভী : মাকাসিদুল হাসানা : ১/৩৮৩ : হা/১০২১
খ. আল্লামা আজলূনী : কাশফুল খাফা : ২/২৭০ : হা/২২৯৬
গ. আল্লামা মোল্লা আলী ক্বারী : মওদ্বুআতুল কাবীর : ১০৮ পৃ.
ঘ. মুফতী আহমদ ইয়ার খাঁন নঈমী : জাআল হক : ২/২৪৬ পৃ.
ইরাকের বুযুর্গদের আকিদা:
আল্লামা সাখাবী (رحمة الله) বলেন, আল্লামা ইবনে সালেহ (رحمة الله) বর্ণনা করেন,
وسمعت ذلك أيضا من الفقيه محمد بن الزرندي عن بعض شيوخ العراق أو العجم أنه يقول عندما يمسح عينيه: صلى اللَّه عليك يا سيدي يا رسول اللَّه يا حبيب قلبي ويا نور بصري ويا قرة عيني، وقال لي كل منهما: منذ فعلته لم ترمد عيني
-‘‘আমি ফকীহ মুহাম্মদ বিন যারানাদি (رحمة الله) হতে শ্রবণ করেছি তিনি ইরাক ও আজমের বড় শায়খ হতে বর্ণনা করেছেন, হুযূর (ﷺ) এর নাম মোবারক আযানের মধ্যে শ্রবণ করে বৃদ্ধাঙ্গুলীদ্বয়ে চুমু দিয়ে চোখে মালিশ করিবে তারপর বলবে-
صلى الله عليك يا سيدى يا رسول الله يا حبيب قلبى و يا نور بصرى و يا قرة عينى
দুজন শায়খই বলছেন, যখন থেকে আমরা এই আমল করতে লাগলাম তখন থেকে আমাদের চোখ কোনদিন অসুস্থ হয়নি।’’ ৩১৬
৩১৬.
ক. ইমাম সাখাভী : মাকাসিদুল হাসানা : ৩৮৪ পৃ. হা/১০২১
খ. আল্লামা আজলূনী : কাশফুল খাফা : ২/২৭০ পৃ. : হা/২২৯৬
গ. মুফতী আহমদ ইয়ার খাঁন নঈমী : জা’আল হক : ২/২৪৯ পৃ.
আল্লামা ইবনে আবেদীন শামী (رحمة الله) এর আকিদা:
হানাফী মাযহাবের প্রসিদ্ধ কিতাব শামী শরীফে আল্লামা ইবনে আবেদীন শামী (رحمة الله) তাঁর ফতোয়ার কিতাব ফতোয়ায়ে শামীতে باب الاذان লিখেন-
يُسْتَحَبُّ أَنْ يُقَالَ عِنْدَ سَمَاعِ الْأُولَى مِنْ الشَّهَادَةِ: صَلَّى اللَّهُ عَلَيْك يَا رَسُولَ اللَّهِ، وَعِنْدَ الثَّانِيَةِ مِنْهَا: قَرَّتْ عَيْنِي بِك يَا رَسُولَ اللَّهِ، ثُمَّ يَقُولُ: اللَّهُمَّ مَتِّعْنِي بِالسَّمْعِ وَالْبَصَرِ بَعْدَ وَضْعِ ظُفْرَيْ الْإِبْهَامَيْنِ عَلَى الْعَيْنَيْنِ فَإِنَّهُ - عَلَيْهِ السَّلَامُ - يَكُونُ قَائِدًا لَهُ إلَى الْجَنَّةِ، كَذَا فِي كَنْزِ الْعِبَادِ.
-‘‘মুস্তাহাব হলো আযানের সময় শাহাদাত বলার সময়ের মধ্যে صَلَّى اللَّهُ عَلَيْك يَا رَسُولَ اللَّهِ বলা এবং দ্বিতীয় শাহাদাত বলার সময় বলবে قَرَّتْ عَيْنِي بِك يَا رَسُولَ اللَّهِ অতঃপর নিজের বৃদ্ধাঙ্গুলীদ্বয়ের নখে চুমু খেয়ে স্বীয় চোখদ্বয়ের উপর রাখবে এবং এই দোয়াটি اللَّهُمَّ مَتِّعْنِي بِالسَّمْعِ وَالْبَصَرِ পড়বে এর ফলে হুযূর (ﷺ) তাকে নিজের পিছনে পিছনে টেনে বেহেশতে নিয়ে যাবেন।’’ ৩১৭
৩১৭.
ক. ইমাম ইবনে আবেদীন শামী : ফতোয়ায়ে শামী ১/৩৯৮ পৃষ্ঠা কিতাবুল আযান অধ্যায়
খ. মুফতী আমিমুল ইহসান মুজাদ্দেদী : কাওয়াইদুল ফিক্হ : ১/২৩৩ পৃ.
গ. ইমাম আহমদ রেযা খাঁন : আহকামে শরীয়ত : ১/১৭২ পৃ.
ঘ. ইমাম আহমদ রেযা : ফতোয়ায়ে আফ্রিকা : ৭৮ পৃ.
ঙ. মুফতী আহমদ ইয়ার খাঁন নঈমী : জা‘আল হক্ব : ২/২৪৬ পৃ.
চ. আল্লামা ইসমাঈল হাক্কী : তাফসীরে রুহুল বায়ান : ৭/২২৯ পৃ.
ইমাম কাহাস্তানী (رحمة الله) এর আকিদা:
আল্লামা ইবনে আবেদীন শামী (رحمة الله) উপরোক্ত ইবারত লেখার বলেন-
كَذَا فِي كَنْزِ الْعِبَادِ. اهـ. قُهُسْتَانِيٌّ، وَنَحْوُهُ فِي الْفَتَاوَى الصُّوفِيَّةِ. وَفِي كِتَابِ الْفِرْدَوْسِ مَنْ قَبَّلَ ظُفْرَيْ إبْهَامِهِ عِنْدَ سَمَاعِ أَشْهَدُ أَنَّ مُحَمَّدًا رَسُولُ اللَّهِ فِي الْأَذَانِ أَنَا قَائِدُهُ وَمُدْخِلُهُ فِي صُفُوفِ الْجَنَّةِ وَتَمَامُهُ فِي حَوَاشِي الْبَحْرِ لِلرَّمْلِيِّ عَنْ الْمَقَاصِدِ الْحَسَنَةِ لِلسَّخَاوِيّ-
-‘‘অনুরূপভাবে কানযুল ইবাদ এবং ইমাম কাহাস্তানী (رحمة الله) এর গ্রন্থের মধ্যে রয়েছে। একইভাবে ফতোয়ায়ে ছুফিয়া এবং কিতাবুল ফিরদাউসের মধ্যে রয়েছে যে, যে ব্যক্তি আযানের শাহাদাত শুনে নিজ আঙ্গুলের নখে চুমু দেবে সে জান্নাতে রাসূলে পাক (ﷺ)-এর সাথে থাকবে। তাকে জান্নাতের কাতারে প্রবেশ করানো হবে এবং সম্পূর্ণ আলোচনা এবং ব্যাখ্যা বাহরূর রায়েকের হাশিয়ার মধ্যে রয়েছে।’’ ৩১৮
৩১৮. ইমাম ইবনে আবেদীন শামী : ফতোয়ায়ে শামী ১/৩৯৮ পৃষ্ঠা কিতাবুল আযান অধ্যায়
ইমামুল মুফাস্সিরিন আল্লামা ইসমাঈল হাক্কী (رحمة الله) নিজেও ইমাম কাহাস্তানী (رحمة الله) এর ইবারতটুকু তাফসীরে রুহুল বয়ানে এনেছেন। ৩১৯
৩১৯. আল্লামা ইসমাঈল হাক্কী : তাফসীরে রুহুল বায়ান : ৭/২২৯ পৃ.
আল্লামা তাহতাবী (رحمة الله) এর আক্বিদা:
হানাফী মাযহাবের প্রসিদ্ধ কিতাব হাশীয়ায়ে তাহতাবী শরীফের মধ্যে রয়েছে-
ذَكَرَ القهستَانِي عَنْ كَنْزِ الْعبادِ أَنَّهُ يَسْتَحِبُّ أَنْ يَقُوْلَ عِنْدَ سَمَاعِ الأوْلى مِنَ الشَّهَادَتَيْنِ لِلنَّبِيِّ صَلَّى اَللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ صَلَّى اَللهُ عَلَيْكَ يَا رَسُوْلَ اللهِ وَعِنْدَ سِمَاعِ الثَّانِيَةِ قُرَّتُ عَيْنِي بِكَ يَا رَسُوْلَ اَللهِ اَللهم مَتِّعْنِي بِالْسَّمْعِ وَالْبَصَرِ بَعْدَ وَضْعِ إِبْهَامَيْهِ عَلى عَيْنَيْهِ فَإِنَّه صَلَّى اَللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَكُوْنُ قَائِدًا لَه فِي الْجَنَّةِ وَذَكَرَ الدَّيْلَمِي فِي الْفِرْدَوْسِ مِنْ حَدِيْثِ أَبِي بَكْر الصِّدِّيْق رَضِي اَللهُ عَنْهُ مَرْفُوْعًا مَنْ مَسْحٍ الْعَيْنَيْنِ بِبَاطِنِ أَنْمِلَةِ السَّبَابَتَيْنِ بَعْدَ تَقْبِيْلِهِمَا عِنْدَ قَوْلِ الْمُؤَذِّنِ أَشْهَدُ أَنَّ مُحَمَّدًا رَسُوْلُ اَللهِ وَقَالَ: أَشْهَدُ أَنَّ مُحَمَّدًا عَبْدُه وَرَسُوْلُه رَضِيْتُ بِاللهِ رَبَّا وَبِالْإِسْلَامِ دِيْنَا وَبِمُحَمَّدٍ صَلَّى اَللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ نَبِيًّا حَلَّتْ لَهُ شَفَاعَتِي اهـ وَكَذَا رُوِيْ عَنْ الْخِضِر عَلَيْهِ السَّلَامِ وَبِمِثْلِه يُعْمَلُ فِي الْفَضَائِلِ
-‘‘আল্লামা কাহাস্তানী (رحمة الله) কানযুল ইবাদে উল্লেখ করেছেন, মুস্তাহাব হল-মুয়াজ্জিন যখন ১ম শাহাদাত বলবেন শ্রবণকারী
صَلَّى اَللهُ عَلَيْكَ يَا رَسُوْلَ الله
বলবে। ২য় শাহাদাতের পর বলবে
قُرَّتُ عَيْنِي بِكَ يَا رَسُوْلَ اَللهِ اَللهم مَتِّعْنِي بِالْسَّمْعِ وَالْبَصَر
এ সময় নিজ আঙ্গুলিকে চোখের উপর রাখবে তবে রাসূল (ﷺ) জান্নাতে তার কায়েদ হবেন। আর ইমাম দায়লামী (رحمة الله) ফিরদাউস নামক গ্রন্থে বলেন হযরত আবু বকর (رضي الله عنه) থেকে মারফু সূত্রে বর্ণিত আছে, শাহাদাত শ্রবণের সময় দু’হাতের দু’আঙ্গুলের চুমু খেয়ে চোখের উপর মালিশ করবে। এ সময় বলবে-
أَشْهَدُ أَنَّ مُحَمَّدًا عَبْدُه وَرَسُوْلُه رَضِيْتُ بِاللهِ رَبَّا وَبِالْإِسْلَامِ دِيْنَا وَبِمُحَمَّدٍ صَلَّى اَللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ نَبِيًّا
রাসূল (ﷺ) ইরশাদ করেন, এরূপ আমলকারীর জন্য আমার শাফায়াত আবশ্যক হবে। অনুরূপভাবে হযরত খিজির (عليه السلام) হতে বর্ণিত আছে, এবং যা ফাযায়েল আমল হিসেবে আমল করা যায়।’’ (আল্লামা তাহতাভী, হাশীয়ায়ে তাহতাভী আ‘লা মারাকিল ফালাহ, ২০৬ পৃ.)
হাদিস শাস্ত্রের মহান শিক্ষক আল্লামা শামসুদ্দিন মুহাম্মদ বিন আবু নাসের বুখারী (رحمة الله) এর আকিদা:
ইমামুল মুহাদ্দিস শামসুদ্দিন সাখাবী (رحمة الله) হযরত ইমাম তাউসী (رحمة الله) বলেন, আমি আবু নসর বুখারী (رحمة الله) কে হাদিস বর্ণনায় শুনেছি যে,
قَالَ الطاوسي: إِنَّهُ سَمَعَ مِنَ الشَّمْس مُحَمَّد اِبْنِ أَبِي نَصْر البُخَارِي خواجه حديث: مَنْ قَبَّلَ عِنْدَ سمَاعَه مِنَ الْمُؤَذِّن كَلِمَة الشَّهَادَة ظَفَرَيْ إِبْهَامَيْهِ وَمَسَحَهُمَا عَلى عَيْنَيْهِ وَقَالَ عِنْدَ الْمَسِّ: اَللَّهُمَّ اِحْفَظْ حَدَقَتَيْ وَنُوْرِهِمَا بِبَرْكَةِ حَدَقَتَيْ مُحَمَّدٍ رَسُوْل اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَنُوْرِهِمَا لَمْ يَعْمِ
-‘‘কোন ব্যক্তি মুয়ায্যিনকে আশহাদু আন্না মুহাম্মাদার রাসূলুল্লাহ বলতে শুনে বৃদ্ধাঙ্গুলীদ্বয় চুম্বন করে চোখে স্পর্শ করবে এবং এই দোয়া পাঠ করবে,
اَللَّهُمَّ اِحْفَظْ حَدَقَتَيْ وَنُوْرِهِمَا بِبَرْكَةِ حَدَقَتَيْ مُحَمَّدٍ رَسُوْل اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَنُوْرِهِمَا
তাহলে সে কখনো অন্ধ হবে না।’’ ৩২০
৩২০.
ক. আল্লামা ইমাম সাখাভী : মাকাসিদুল হাসানা : ১/২৮৫ পৃ. হা/১০২১
খ. আল্লামা আজলূনী : কাশফুল খাফা : ২/২৭১ পৃ. হা/২২৯৬
গ. মুফতি আহমদ ইয়ার খাঁন নঈমী : জা’আল হক : ২/২৪৬ পৃ.।
সুতরাং কুরআন হাদিসের আলোকে বুঝা গেল আহলে হাদীস এবং দেওবন্দীরা আহলে সুন্নাত ওয়াল জাম‘আত নয়।
❏ বিষয় নং-২৬: হায়াতুন্নবী (ﷺ)
____________________
❏ বিষয় নং-২৬: হায়াতুন্নবী (ﷺ)
দেওবন্দী এবং আহলে হাদিস পন্থীরা রাসূলে পাক (ﷺ) কে হায়াতুন্নবী বলাকে অস্বীকার করে, আর আহলে সুন্নাত ওয়াল জাম‘আত রাসূলে পাক (ﷺ) কে হায়াতুন্নবী হিসেবে স্বীকার করেন। ৩২১
টিকা━━━━━━━━━━━━━━━━━━━━
৩২১.
❏ ইমাম বায্যার এবং আবূ ই‘য়ালা (رحمة الله)সহ আরও অনেকে সংকলন করেন-
عَنْ أَنَسِ بْنِ مَالِكٍ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ - ﷺ -: الْأَنْبِيَاءُ أَحْيَاءٌ فِي قُبُورِهِمْ يُصَلُّونَ-
-‘‘হযরত আনাস বিন মালিক (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূল (ﷺ) ইরশাদ করেন, নিশ্চয় আম্বিয়ায়ে কিরাম (عليه السلام) তাঁদের নিজ নিজ কবরে জীবিত এবং তারা সেখানে নামায আদায় করেন।’’
(ইমাম আবু ই‘য়ালা : আল মুসনাদ : ৬/১৪৭ পৃ: হা/৩৪২৫, ইমাম বায়হাকী : হায়াতুল আম্বিয়া : ৬৯-৭০পৃ., ইমাম হায়সামী : মাযমাউদ যাওয়াইদ : ৮/২১১ পৃ. হা/১৩৮১২, ইমাম আবু নুয়াইম ইস্পাহানী : তবকাতে ইস্পাহানী : ২/৪৪ পৃ:, ইমাম ইবনে আদী, আল-কামিল : ২/৭৩৯ পৃ:, ইমাম জালালুদ্দীন সূয়ুতী: আল-জামেউস সগীর : ১/২৩০ পৃ: হা/৩০৮৯, ইমাম জালালুদ্দীন সূয়ুতী: শরহুস সুদূর: পৃ. ২৩৭, আহলে হাদিস নাসিরুদ্দীন আলবানী: সিলসিলাতুস সহীহা: হাদিস নং- ৬২২, আহলে হাদিস নাসিরুদ্দীন আলবানী : সাহীহুল জামে : হা/২৭৯০, দায়লামী, আল-ফিরদাউস, ১/১১৯ পৃ. হা/৪০৩)
❏ অপরদিকে আল্লামা ইবনে হাজার হাইসামী (رحمة الله) উক্ত হাদিসটির সনদ সম্পর্কে বলেন,
رَوَاهُ أَبُو يَعْلَى وَالْبَزَّارُ، وَرِجَالُ أَبِي يَعْلَى ثِقَاتٌ
-‘‘উক্ত হাদিসটি ইমাম আবু ই‘য়ালা ও ইমাম বায্যার (رحمة الله) বর্ণনা করেছেন, আর ইমাম আবু ই‘য়ালার বর্ণনার সকল রাবী সিকাহ বা বিশ্বস্ত।’’
(ইমাম হায়সামী : মাযমাউদ যাওয়াইদ : ৮/২১১পৃ. হা/১৩৮১২)
❏ আল্লামা মোল্লা আলী ক্বারী (رحمة الله) এ হাদিসের ব্যাখ্যায় লিখেছেন-
فَإِنْ صَحَّ فَالْمُرَادُ أَنَّهُمْ لَا يُتْرَكُونَ يُصَلُّونَ إِلَّا هَذَا الْمِقْدَارَ ثُمَّ يَكُونُونَ مُصَلِّينَ بَيْنَ يَدَيِ اللَّهِ تَعَالَى
-‘‘নিশ্চয় বিশুদ্ধ কথা হলো এ হাদিস দ্বারা উদ্দেশ্য এ নির্ধারিত দিন ছাড়া তাঁরা (কবরে) সালাত বন্ধ করেন না, নির্ধারিত সময় অতিবাহিত হওয়ার পর তাঁরা মহান রবের দরবারে সালাত আদায় করেন।’’ (জামেউল ওসায়েল, ১/৫৩ পৃ.)
❏ ইমাম ইবনুল হজ্জ (رحمة الله) ‘আল-মাদখাল’ গ্রন্থে ও ইমাম শিহাবুদ্দীন কাস্তাল্লানী (رحمة الله) তার ‘মাওয়াহেবুল্লাদুন্নিয়া’ গ্রন্থে “বাবুল জিয়ারাতুল কুবুর শরীফ” শীর্ষক অধ্যায়ে বলেছেন-
وَقَدْ قَالَ عُلَمَاؤُنَا رَحْمَةُ إذْ لَا فَرْقَ بَيْنَ مَوْتِهِ وَحَيَاتِهِ أَعْنِي فِي مُشَاهَدَتِهِ لِأُمَّتِهِ وَمَعْرِفَتِهِ بِأَحْوَالِهِمْ وَنِيَّاتِهِمْ وَعَزَائِمِهِمْ وَخَوَاطِرِهِمْ، وَذَلِكَ عِنْدَهُ جَلِيٌّ لَا خَفَاءَ فِيهِ.
-‘‘আমাদের সুবিখ্যাত উলামায়ে কিরাম বলেন যে, হুযূর (ﷺ) এর জীবন ও ওফাতের মধ্যে কোন পার্থক্য নেই। তিনি নিজ উম্মতকে দেখেন, তাদের অবস্থা, নিয়ত, ইচ্ছা ও মনের কথা ইত্যাদি জানেন। এগুলো তার কাছে সম্পূর্ণ রূপে সুস্পষ্ট, বরং এই কথার মধ্যে কোন রূপ অস্পষ্টতা ও দুর্বোধ্যতার অবকাশ নেই।’’
(আল্লামা ইমাম কাস্তাল্লানী : মাওয়াহেবে লাদুন্নীয়া : দ্বিতীয় পরিচ্ছেদ : ৪/৫৮০ পৃ., আল্লামা ইবনুল হাজ্ব : আল মাদখাল, ১/২৫২ পৃ., আল্লামা ইমাম জুরকানী : শরহুল মাওয়াহেব : ৪/৩১২ পৃ.)
❏ এ প্রসঙ্গে আল্লামা জালালুদ্দীন সুয়ূতি (رحمة الله) বলেন,
وَالْأَنْبِيَاءُ أَوْلَى بِذَلِكَ، فَهُمْ أَجَلُّ وَأَعْظَمُ، وَمَا نَبِيٌّ إِلَّا وَقَدْ جَمَعَ مَعَ النُّبُوَّةِ وَصْفَ الشَّهَادَةِ، فَيَدْخُلُونَ فِي عُمُومِ لَفْظِ الْآيَةِ.
-‘‘আম্বিয়ায়ে কেরাম জীবিত থাকার ব্যাপারে শহীদগণ অপেক্ষা উত্তম, উন্নত ও শ্রেষ্ঠতম। নিঃসন্দেহে আল্লাহ্ তা‘য়ালা প্রত্যেক নবীর মধ্যে নবুওয়াত ও শাহাদাত উভয় গুণকে একত্রিত করেছেন। সুতরাং আম্বিয়ায়ে কেরামও আয়াতের ব্যাপকতায় অন্তর্ভূক্ত।’’ (আল্লামা আব্দুর রহমান জালালুদ্দীন সূয়তী, আল-হাভীলিল ফাতাওয়া, ২/১৮০ পৃ., আল্লামা আব্দুর রহমান জালালুদ্দীন সূয়তী : শরহুস সুদুর : ২৫৬ পৃ.)
❏ আল্লামা জালালুদ্দীন সূয়ূতি (رحمة الله) সর্বশেষ হায়াতুন্নবী (ﷺ)-এর হাদিসের মানের অবস্থা বর্ণনা করতে গিয়ে উল্লেখ করেন-
حَيَاةُ النَّبِيِّ ﷺ فِي قَبْرِهِ هُوَ وَسَائِرِ الْأَنْبِيَاءِ مَعْلُومَةٌ عِنْدَنَا عِلْمًا قَطْعِيًّا لِمَا قَامَ عِنْدَنَا مِنَ الْأَدِلَّةِ فِي ذَلِكَ وَتَوَاتَرَتْ الْأَخْبَارُ، وَقَدْ أَلَّفَ الْبَيْهَقِيُّ جُزْءًا فِي حَيَاةِ الْأَنْبِيَاءِ فِي قُبُورِهِمْ، فَمِنَ الْأَخْبَارِ الدَّالَّةِ عَلَى ذَلِكَ
-“হায়াতুন্নবী (ﷺ) তথা রাসূলুল্লাহ (ﷺ) স্বীয় রওযা মোবারকে জীবিত এবং সমস্ত নবীগণই জীবিত যা অকাট্য জ্ঞান দ্বারা পরিজ্ঞাত। কেননা, এ ব্যাপারে আমাদের নিকট দলীল প্রমাণ অকাট্য এবং এ প্রসঙ্গে অনেক মুতাওয়াতির হাদিস বর্ণিত হয়েছে।” (আল্লামা আব্দুর রহমান জালালুদ্দীন সূয়তী : আল হাভীলিল ফাতাওয়া : ২/১৭৮ পৃ.)
সম্মানিত পাঠকবৃন্দ! উপরের আলোচনা থেকে প্রমাণিত হল যে, আমাদের নবীসহ সকল নবীগণ তাদের আপন আপন মাজারে জীবিত, তাতে কোনো সন্দেহ নেই, যে এটা অস্বীকার করবে সে কাফির তাতেও কোনো সন্দেহ নেই, কেননা এ বাতিল আক্বিদা ধারণ মানে মুতাওয়াতির হাদিসের বিরোধীতা করা।
━━━━━━━━━━━━━━━━━━━━
আল্লাহ তা‘য়ালা পবিত্র কুরআনে ইরশাদ করেন-
وَلَا تَقُولُوا لِمَنْ يُقْتَلُ فِي سَبِيلِ اللهِ أَمْوَاتٌ بَلْ أَحْيَاءٌ وَلَكِنْ لَا تَشْعُرُونَ
-“এবং যারা আল্লাহর পথে নিহত হয়, তাদেরকে মৃত বলো না, তারা জীবিত হ্যাঁ তোমাদের খবর নেই।’’ ৩২২
৩২২. সূরা বাক্বারা, আয়াত নং-১৫৪
আল্লামা ইবনে হাজার আসকালানী (رحمة الله) এর আকিদা:
বুখারী শরীফের ব্যাখ্যাকার হাফেজুল হাদীস আল্লামা ইবনে হাজার আসকালানী (رحمة الله) বর্ণনা করেন-
قُلْتُ وَإِذَا ثَبَتَ أَنَّهُمْ أَحْيَاءٌ مِنْ حَيْثُ النَّقْلِ فَإِنَّهُ يُقَوِّيهِ مِنْ حَيْثُ النَّظَرِ كَوْنُ الشُّهَدَاءِ أَحْيَاءٌ بِنَصِّ الْقُرْآنِ وَالْأَنْبِيَاءُ أَفْضَلُ مِنَ الشُّهَدَاءِ
-“আমি (ইবনে হাজার আসকালানী) বলি, পবিত্র কুরআনের আয়াত থেকে প্রমাণিত হল শহীদগণ জিন্দা। সুতরাং যুক্তিগত ভাবে এটা ও প্রমাণিত হল যে, শহীদগণের চেয়ে মর্যাদাবান নবীগণ (عليه السلام) অবশ্যই জিন্দা।’’ ৩২৩
৩২৩. ইবনে হাজার আসকালানী, ফতহুল বারী শরহে সহীহুল বুখারী, ৬/৪৮৮ পৃ.
আল্লাহু তা‘য়ালা ইরশাদ করেন-
وَاسْأَلْ مَنْ أَرْسَلْنَا مِنْ قَبْلِكَ مِنْ رُسُلِنَا أَجَعَلْنَا مِنْ دُونِ الرَّحْمَنِ آلِهَةً يُعْبَدُونَ
-“এবং তাদেরকেই জিজ্ঞাসা করো, যাদেরকে আমি আপনার পুর্বে রাসূলরূপে প্রেরণ করেছি, আমি কি পরম দয়াময় (আল্লাহ) ব্যতীত অন্য কোন খোদা স্থির করেছি, যেগুলোর উপাসনা করা যায়?’’ ৩২৪
৩২৪. সুরা যুখরূফ, আয়াত নং-৪৫
এই আয়াত সম্পর্কে দেওবন্দীদের শায়খুত তাফসীর মওলবী আহমদ আলী সাহেবের খলিফা মওলবী নাহেদুল হুসাইন সাহেব বলেন-
يَسْتَدِلُّ بِه عَلٰى حَيٰوةَ الْاَنْبِيَاءِ (عليه السلام)
-‘‘এই আয়াতের কয়েকটি তাফসীরে ওলামায়ে কেরাম বলেন, নবীগণ (عليه السلام) জিন্দা।’’ (মুশকিলাতুল কুরআন, ২৩৪ পৃ.)
হযরত আল্লামা আনওয়ার শাহ কাশ্মীরী বলেন-‘‘এই আয়াত দ্বারা প্রমাণিত হয় নবীগণ (عليه السلام) জিন্দা। কারণ যে সকল মানুষ মৃত্যু বরণ করেন তাদের কাছে কোন কিছু জিজ্ঞাসা করা অথবা এর হুকুম দেয়া সঠিক নয়।’’
সকল মুফাসসিরগণ এরূপ তাফসীর এবং তারজুমা করেছেন। নিম্মে কতিপয় মুফাস্সিরের নাম উল্লেখ করা হল। ৩২৫
৩২৫. ইমাম সুয়ূতি, তাফসীরে দুররে মানসুর, ৬ষ্ঠ খণ্ড ১৬ পৃ., আল্লামা আলূসী, তাফসীরে রুহুল মায়ানী, ২৫ খণ্ড ৮৯ পৃ., তাফসীরে জুমাল আলাল জালালাইন, ৪র্থ খণ্ড ৮৮ পৃ., শায়খ জাদাহ হানাফী হাশিয়ায়ে বায়জাবী, ৩য় খণ্ড ২৯৮ পৃ. আল্লামা খিফফাজী মিসরী, হাশিয়ায়ে বায়জাবী, ৭ম খণ্ড ৪৪৪ পৃ. রহমতে কায়েনাত ১৫৬ পৃ.
নবীয়ে পাক ছাহেবে লাওলাক (ﷺ)’র আকিদা:
أَتَيْتُ عَلَى مُوسَى لَيْلَةَ أُسْرِيَ بِي عِنْدَ الْكَثِيبِ الْأَحْمَرِ، وَهُوَ قَائِمٌ يُصَلِّي فِي قَبْرِهِ
-‘‘রাসূলে মূসা (عليه السلام) এর পাশ দিয়ে গমন করেছি। দেখলাম তিনি একটি লাল টিলার উপর দাঁড়িয়ে তাঁর কবরে নামায পড়ছেন।’’ ৩২৬
৩২৬. ইমাম মুসলিম : কিতাবুল ফাযায়েল : ৪/১৮৪৫ পৃ. : হা/২৩৭৫, ইমাম আহমদ : আল মুসনাদ : ৩/১৪৮ পৃ:, ইমাম বায়হাকী : দালায়েলুল নবুয়ত : ২/৩৮৭ পৃ:, ইমাম মানাবী : ফয়যুল কাদীর : ৫/৫১৯ পৃ:, ইমাম সুবকী : সিফাস সিকাম: ১৩৭ পৃ. ইমাম মুকরিযি : ইমতাঈ আসমা : ৮/২৫০ পৃ:, ইমাম মুকরিযি : ইমতাঈল আসমা : ১০/৩০৪ পৃ:, ইমাম সুয়ূতি : হাবীলিল-ফাতওয়া : ২/২৬৪ পৃ:, ইমাম সাখাভী : ক্বওলুল বদী : ১৬৮ পৃ, ইমাম আব্দুর রায্যাক : আল-মুসান্নাফ : ৩/৫৭৭ পৃ. হা/৬৭২৭
সহীহ হাদিসের মধ্যে আছে একদা রাসূলে পাক (ﷺ) এর সাথে অসংখ্য সাহাবায়ে কেরাম (رضي الله عنه) ছিলেন, রাসূলে আকরাম (ﷺ) ইরশাদ করেন, আমি দেখলাম যে, হযরত মূসা এবং হযরত ইউনুস (عليه السلام)
لَبَّيْكَ لَبَّيْكَ اللَّهُمَّ لَبَّيْكَ
বলছেন। (সহীহ মুসলিম)
হযরত আবু দারদা (رضي الله عنه)’র আকিদা:
হযরত আবু দারদা (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত, রাসূলে আকরাম (ﷺ) ইরশাদ করেন,
أَكْثِرُوا الصَّلَاةَ عَلَيَّ يَوْمَ الْجُمُعَةِ، فَإِنَّهُ مَشْهُودٌ تَشْهَدُهُ الْمَلَائِكَةُ، وَإِنَّ أَحَدًا لَنْ يُصَلِّيَ عَلَيَّ إِلَّا عُرِضَتْ عَلَيَّ صَلَاتُهُ حَتَّى يَفْرُغَ مِنْهَا قَالَ: قُلْتُ: وَبَعْدَ الْمَوْتِ؟ قَالَ: "وَبَعْدَ الْمَوْتِ، إِنَّ اللَّهَ حَرَّمَ عَلَى الْأَرْضِ أَنْ تَأْكُلَ أَجْسَادَ الْأَنْبِيَاءِ"، فَنَبِيُّ اللَّهِ حَيٌّ يُرْزَقُ
-‘‘জুম‘আর দিন আমার উপর বেশি করে দরুদ শরীফ পাঠ কর। কেননা এদিন উপস্থিতির দিন। এদিন ফেরেশতারা উপস্থিত হন। তোমাদের যে কেউ আমার উপর দরুদ শরীফ পাঠ করবে তা আমার কাছে পাঠানো হয় তার পাঠ বন্ধ হওয়া পর্যন্ত। রাবী বলেন, আমি জিজ্ঞাসা করলাম, আপনার ইন্তেকালের পরেও। তদুত্তরে রাসূলে পাক (ﷺ) বললেন, নিশ্চয়ই আল্লাহু তা‘য়ালা যমিনের জন্য নবীগণ (عليه السلام) দের শরীর মুবারক ভক্ষণ করাকে হারাম করেছেন। সুতরাং সমস্ত নবী (عليه السلام)গণকে রিযিক দান করা হয়।’’ ৩২৭
৩২৭. ইমাম ইবনে মাযাহ, আস-সুনান, ১/৫২৪ পৃ. হা/১৬৩৭, খতিব তিবরিযি, মিশকাত, ১/৪৩১ পৃ. হা/১৩৬৬, আহলে হাদিস আলবানীও একে সহীহ বলেছেন।
হযরত আউস বিন আউস (رضي الله عنه)’র আকিদা:
হযরত আবু দারদা (رضي الله عنه) ছাড়াও হযরত আউস বিন আউস (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত আছে যে, রাসূলে করিম (ﷺ) ইরশাদ করেন সমস্ত দিনের মধ্যে জুম‘আর দিন সবচেয়ে উত্তম। এদিনে হযরত আদম (عليه السلام) কে সৃষ্টি করা হয়েছে এবং এদিনই তাঁর ইন্তেকাল হয়েছে। এদিনই ফুৎকার দেয়া হবে এবং এদিনই কিয়ামত সংঘটিত হবে।
فَأَكْثِرُوا عَلَيَّ مِنْ الصَّلَاةِ فِيهِ، فَإِنَّ صَلَاتَكُمْ مَعْرُوضَةٌ عَلَيَّ، فَقَالَ رَجُلٌ: يَا رَسُولَ اللَّهِ، كَيْفَ تُعْرَضُ صَلَاتُنَا عَلَيْكَ وَقَدْ أَرِمْتَ- يَعْنِي بَلِيتَ-؟ قَالَ: "إِنَّ اللَّهَ حَرَّمَ عَلَى الْأَرْضِ أَنْ تَأْكُلَ أَجْسَادَ الْأَنْبِيَاءِ
-‘‘সুতরাং এদিন তোমরা আমার উপর বেশি করে দরুদ পড়, কারণ তা আমার কাছে পৌঁছানো হয়। তাঁরা প্রশ্ন করলেন, কিভাবে আমাদের দরুদ প্রেরণ করা হবে আপনি তো রওযায়ে পাকে থাকবেন। তদুত্তরে রাসূলে পাক (ﷺ) ইরশাদ করলেন, আল্লাহ তা‘য়ালা নবীগণের শরীর মুবারককে ভক্ষণ করতে জমিনের উপর হারাম করেছেন।’’ ৩২৮
৩২৮. খতিব তিবরিযি, মিশকাত শরীফ, (ভারতীয় ১২০ পৃ.) ১/৪৩১ পৃ., হা/১৩৬৬, আবু দাউদ শরীফ ২য় খণ্ড, ৬৩৬ পৃ. হা/১৫৩১, নাসাঈ, আস-সুনানুল কোবরা, ২/২৬২ পৃ. হা/১৬৭৮, ইমাম ইবনে মাজাহ, আস-সুনান, ২/৫৫৬ পৃ. ৭৭ পৃ. হা/১৬৩৭, ইমাম দারমী, আস-সুনান, ২/৯৮১ পৃ. হা/১৬১৩, ইমাম হাকেম, আল-মুস্তাদরাক ১ম খণ্ড ২৭৮ পৃ. বায়হাকী, আস-সুনানুস সুগড়া, ১/২৩৩ পৃ. হা/৬০৫, ইমাম তাবরানী, মু‘জামুল আওসাত, ৫/৯৭ পৃ. হা/৪৭৮০, মুসনাদে বায্যার, ৮/৪১১ পৃ. হা/৩৪৮৫
আল্লামা বদরুদ্দিন আইনী হানাফী (رحمة الله):
হাফেজুল হাদিস আল্লামা বদরুদ্দীন আইনি (رحمة الله) বলেন,
صَحَّ عَنْهُ - صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّم - أَنَّ الأَرْضَ لَا تَأْكُلُ أَجْسَادَ الْأَنْبِيَاء عَلَيْهِم الصَّلَاة وَالسَّلَام وَأَنَّ النَّبِي - صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ - قَدْ اجْتمع بِهِمْ لَيْلَة الْإِسْرَاء بِبَيْت الْمُقَدّس وَالسَّمَاء خُصُوْصًا بِمُوسَى عَلَيْهِ الصَّلَاة وَالسَّلَام فَتُحَصَّلُ مِنْ جُمْلَة هَذَا الْقَطْعِ بِأَنَّهُمْ غَيَّبُوْا عَنَّا بِحَيْثُ لَا نَدَرُكُهُمْ وَإِنَّ كَانُوْا مَوْجُوْدِيْنَ أَحْيَاءٌ وَذَلِكَ كَالْحَالِ فِي الْمَلَائِكَة عَلَيْهِم الصَّلَاة وَالسَّلَام فَإِنَّهُم مَوْجُوْدُوْنَ أَحْيَاءٌ لَا يَرَاهُمْ أَحَدٌ مِنْ نَوْعِنَا إِلَّا مَنْ خَصَّهُ الله تَعَالَى بِكَرَامَتِه وَإِذَا تَقَرَّرَ أَنَّهُمْ أَحْيَاءٌ
-‘‘রাসূলে পাক (ﷺ) থেকে বিশুদ্ধ পবিত্র বাণী, নবীগণ (عليه السلام)-এর শরীর মুবারককে জমিন ভক্ষণ করেন না। একথা স্পষ্টভাবে প্রমাণিত হল যে, সমস্ত নবীগণ জিন্দা। তাঁরা কেবল আমাদের থেকে অদৃশ্য, আমরা তাঁদেরকে অনুভব করেও পারি না। ফেরেশতাগণের ব্যাপারটিও অনুরূপ তারাও জিন্দা। তবে আমরা তাদেরকে দেখতে পাই না। তবে আল্লাহ তা‘য়ালা যাদেরকে দয়া করেছেন তারা তাদেরকে দেখেন। সুতরাং একথা দৃঢ়ভাবে প্রমাণিত হল যে, সমস্ত নবীগণ (عليه السلام) জিন্দা।’’ ৩২৯
৩২৯. আল্লামা আইনী, উমদাতুল ক্বারী, ১২/২৫১ পৃ.
মোল্লা আলী কারী হানাফী (رحمة الله)’র আকিদা:
উম্মতে মুহাম্মদীর বিগদ্ধ মুহাদ্দিস আল্লামা মোল্লা আলী ক্বারী হানাফী (رحمة الله) মিশকাত শরীফের ব্যাখ্যাগ্রন্থ মিরকাতে বলেন-
(قَالَ) ، أَيْ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: (إِنَّ اللَّهَ حَرَّمَ عَلَى الْأَرْضِ) ، أَيْ: مَنَعَهَا وَفِيهِ مُبَالَغَةٌ لَطِيفَةٌ (أَجْسَادَ الْأَنْبِيَاءِ) ، أَيْ: مِنْ أَنْ تَأْكُلَهَا، فَإِنَّ الْأَنْبِيَاءَ فِي قُبُورِهِمْ أَحْيَاءٌ.....فَمُحَصِّلُ الْجَوَابِ أَنَّ الْأَنْبِيَاءَ أَحْيَاءٌ فِي قُبُورِهِمْ، فَيُمْكِنُ لَهُمْ سَمَاعُ صَلَاةِ مَنْ صَلَّى عَلَيْهِمْ
-‘‘রাসূলে পাক (ﷺ) ইরশাদ করেন, আল্লাহ তা‘য়ালা জমিনের উপর নবীগণ (عليه السلام)’র শরীর ভক্ষণ করাকে হারাম করেছেন। আর এটা এজন্য যে, নবীগণ (عليه السلام) রওযা শরীফে জিন্দা। একথাটি রাসূলে পাক (ﷺ) সাহাবায়ে কেরাম (رضي الله عنه) এর একটি প্রশ্নের উপরে বলেছেন। তাঁরা প্রশ্ন করেছেন যে, ইন্তেকালের পরেও কি দরুদ শরীফ পাঠানো হয়? ......সুতরাং এই হাদিসে পাক থেকে দূঢ়ভাবে একথা বুঝা গেল যে, ইন্তেকালের পরেও যারা দরুদ শরীফ পাঠ করবে তা রাসূল (ﷺ) নিজ কানে শুনেন।’’ (মোল্লা আলী ক্বারী, মিরকাতে শরহে মিশকাত, ৩য় খ- ১০১৭ পৃ., হা/১৩৬১-এর আলোচনা।)
শায়খ আবদুল হক মুহাদ্দিস দেহলভী (رحمة الله)-এর আকিদা :
তিনি বলেন-
ازيں جا معلوم مى شود كہ حيات انبياء حيات جسمى ودنياوى است نہ بمجرد وبقا ئے ارواح
-‘‘এর থেকে বুঝা গেল নবীগণ (عليه السلام) স্বশরীরেই জিন্দা কেবল আত্মা নয়। (শায়খ আবদুল হক মুহাদ্দিসে দেহলভী, মাদারেজুন নবুওয়াত, ফার্সী, ২য় খ-, ৯৬০ পৃ.)
শায়খে মুহাকিক আবদুল হক মুহাদ্দিস দেহলভী (رحمة الله) তাঁর অপর অনাবদ্য গ্রন্থ তাকমিলুল ঈমানে বলেন,
انبياء عليه السلام كو موت نهيں وه زنده اورياقى ہيں ان كے واسطے وہى ايك موت سے جو ايك دنعه اپكى اس كے بعد ان كى روحيں بدن مي لوٹادى جاتى ہيں اور جو حيات ان كو دنيا مي تہى دبى عطا فرما تے ہيں
-‘‘নবীগণ (عليه السلام) মৃত নয় বরং জীবিত। তাঁদের সাময়িক মৃত্যু আসে। এরপর তাঁদের রূহ মুবারক পুনরায় ফেরত দেন। অতঃপর তাঁরা দুনিয়ার হায়াত পুনরায় লাভ করেন।’’ (শায়খ আবদুল হক মুহাদ্দিসে দেহলভী, তাকমিলুল ঈমান, ৫৮ পৃ.)
আল্লামা শামী হানাফী (رحمة الله)-এর আকিদা :
তিনি বলেন-
أَنَّ الْأَنْبِيَاءَ - عَلَيْهِمْ الصَّلَاةُ وَالسَّلَامُ أَحْيَاءٌ فِي قُبُورِهِمْ
-‘‘নিশ্চয় সমস্ত নবীগণ তাদের নিজ নিজ সমাধীতে জীবিত।’’ (ইবনে আবেদীন শামী, রদ্দুল মুহতার, ৪/১৫১ পৃ., দারুল ফিকর ইলমিয়্যাহ, বয়রুত, লেবানন।)
আল্লামা মোল্লা আলী ক্বারী (رحمة الله) লিখেন-
قَالَ ابْنُ حَجَرٍ: وَمَا أَفَادَهُ مِنْ ثُبُوتِ حَيَاةِ الْأَنْبِيَاءِ حَيَاةً بِهَا يَتَعَبَّدُونَ، وَيُصَلُّونَ فِي قُبُورِهِمْ، مَعَ اسْتِغْنَائِهِمْ عَنِ الطَّعَامِ وَالشَّرَابِ كَالْمَلَائِكَةِ أَمْرٌ لَا مِرْيَةَ فِيهِ،
-‘‘ইবনে হাজার (رحمة الله) বর্ণনা করেন, নবীগণ (عليه السلام) জিন্দা হবার বড় প্রমাণ হল তারা নিজ নিজ কবর শরীফে ইবাদত করেন নামায পড়েন। তবে ফেরেশতা গণের যেভাবে পানাহারের প্রয়োজন হয় না।’’ (মোল্লা আলী ক্বারী, মিরকাতে শরহে মিশকাত, ৩য় খ- ১০১৭ পৃ., হা/১৩৬১-এর আলোচনা।)
সুতরাং কুরআন সুন্নাহর আলোকে প্রমাণিত হল দেওবন্দী এবং গাইরে মুকাল্লিদ পন্থিরা আহলে সুন্নাত ওয়াল জাম‘আত নয়।
❏ বিষয় নং-২৭: রাহমাতুললিল আলামীন (ﷺ)
____________________
❏ বিষয় নং-২৭: রাহমাতুললিল আলামীন (ﷺ)
দেওবন্দী এবং গাইরে মুকাল্লিদ পন্থিদের আকিদা হল ‘রহমাতাল্লিল আ‘লামীন’ সিফাতটি রাসূলে পাক (ﷺ)’র জন্য নির্দিষ্ট নয়। বরং অন্যান্য নবী, ওলী এবং আলেমগণও রহমতে আলেম হতে পারে। আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতের আকিদা হল সমস্ত জাহানের জন্য রহমত হওয়া এটা কেবল রাসূলে পাক (ﷺ) এর একক বৈশিষ্ট্য। মহান আল্লাহ ইরশাদ করেন-
وَمَا أَرْسَلْنَاكَ إِلَّا رَحْمَةً لِلْعَالَمِينَ
-“এবং আমি আপনাকে সমগ্র জগতের জন্য রহমত হিসেবে প্রেরণ করেছি।’’ (সুরা আম্বিয়া, আয়াত নং-১০৭)
وَمَا أَرْسَلْنَاكَ إِلَّا كَافَّةً لِلنَّاسِ
-“এবং হে মাহবুব! আমি আপনাকে প্রেরণ করিনি, কিন্তু এমন রিসালাত সহকারে, যা সমস্ত মানব জাতিকে পরিব্যাপ্ত করে নেয়।” ৩৩১
৩৩১. সুরা সাবা, আয়াত নং- ২৮
قُلْ يَا أَيُّهَا النَّاسُ إِنِّي رَسُولُ اللَّهِ إِلَيْكُمْ جَمِيعًا
-“আপনি বলুন, ‘হে মানবকূল! আমি তোমাদের সবার প্রতি আল্লাহরই রাসূল হই।’’ ৩৩২
৩৩২. সুরা আরাফ, আয়াত নং-১৫৮
রাসূলে পাক (ﷺ)’র আকিদা:
রাসূলে পাক ছাহেবে লাওলাক (ﷺ) ইরশাদ করেন-
وَكَانَ النَّبِيُّ يُبْعَثُ إِلَى قَوْمِهِ خَاصَّةً وَبُعِثْتُ إِلَى النَّاسِ عامَّةً
-‘‘প্রত্যেক নবী (عليه السلام) কেবল তাঁদের স্বীয় সম্প্রদায়ের জন্য প্রেরিত হয়েছেন, আর আমি সমস্ত মানব জাতির জন্য প্রেরিত হয়েছি।’’ ৩৩৩
৩৩৩. খতিব তিবরিযি, মিশকাত শরীফ, (ভারতীয় ৫১২ পৃ.) ৩/১৬০১ পৃ., হা/৫৭৪৭, ইমাম আহমদ, আল-মুসনাদ, ২২/১৬৫ পৃ. হা/১৪২৬৪, বায়হাকী, আস-সুনানুল কোবরা, ১/৩২৬ পৃ. হা/১০১৭, ইমাম বুখারী, আস-সহীহ, ১/৭৪ পৃ. হা/৩৩৫, সহীহ ইবনে হিব্বান, হা/৬৩৯৮, ইমাম ইবনে আবি শায়বাহ, আল-মুসান্নাফ, ৬/৩০৩ পৃ. হা/৩১৬৪২, বাগভী, শরহে সুন্নাহ, ১৩/১৯৬ পৃ. হা/৩৬১৬
রাসূলে পাক (ﷺ) আরো ইরশাদ করেন-
وَأُرْسِلْتُ إِلَى الْخَلْقِ كَافَّةً
-‘‘সমস্ত সৃষ্টিজগতের নিকটই আমাকে প্রেরণ করা হয়েছে।’’ ৩৩৪
৩৩৪. ইমাম মুসলিম, আস-সহীহ, ১/৩৭১ পৃ. হা/৫২৩, খতিব তিবরিযি, মিশকাত, (ভারতীয় ৫১২ পৃ.) ৩/১৬০১ পৃ. হা/৫৭৪৮, ইমাম আহমদ, আল-মুসনাদ, ১৫/১৯৫ পৃ. হা/৯৩৩৭, বায়হাকী, আস-সুনানুল কোবরা, ২/৬০৭ পৃ. হা/৪২৬২, সুনানে তিরমিযি, ৩/১৭৫ পৃ. হা/১৫৫৩, সহীহ ইবনে হিব্বান, ৬/৮৭ পৃ. হা/২৩১৩, বাগভী, শরহে সুন্নাহ, ১৩/১৯৮ পৃ. হা/৩৬১৭
সম্মানিত পাঠকবর্গ! আল্লাহ তা‘য়ালা কেবল রাসূলে পাক (ﷺ) কেই সমস্ত জগতের জন্য প্রেরণ করেছেন। সুতরাং সমস্ত জাহানের জন্য রহমত হওয়া কৈবল তাঁরাই বৈশিষ্ট্য । এটা অন্য কারো বৈশিষ্ট হতে পারে না। সুতরাং দেওবন্দী এবং গাইরে মুক্কাল্লিদগণের আকিদা কুরআন সুন্নাহ বিরোধী, তাই তারা আহলে সুন্নাত ওয়াল জাম‘আত নয়।
❏ বিষয় নং-২৮: হাযির-নাযির
____________________
❏ বিষয় নং-২৮: হাযির-নাযির
দেওবন্দী এবং আহলে হাদীস পন্থিরা প্রিয় নবী (ﷺ) হারির-নাযির হওয়াকে শিরক মনে করে। আর আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতের অনুসারীগণের ঈমানের দাবী হল রাসূলে আকরাম (ﷺ) হাজের-নাযের।
মহান আল্লাহ তা‘য়ালা ইরশাদ করেন-
يَا أَيُّهَا النَّبِيُّ إِنَّا أَرْسَلْنَاكَ شَاهِدًا وَمُبَشِّرًا وَنَذِيرًا (৪৫) وَدَاعِيًا إِلَى اللَّهِ بِإِذْنِهِ وَسِرَاجًا مُنِيرًا
“হে অদৃশ্যের সংবাদদাতা (নবী)! নিশ্চয় আমি আপনাকে প্রেরণ করেছি ‘উপস্থিত’ পর্যবেক্ষণকারী’ (হাজির-নাযির) করে সুসংবাদদাতা এবং সর্তককারীরূপে এবং আল্লাহর প্রতি তাঁর নির্দেশে আহবানকারী আর আলোকোজ্জ্বলকারী সূর্যরূপে।” ৩৩৫
৩৩৫. সূরা আহযাব, আয়াত নং-৪৫-৪৬
শাহেদ অর্থ হাজের-নাযের । কেননা شَاهِدْ শব্দটি شُهُوْدُ এবং شَهَادَتْ শব্দ হতে নির্গত। ইমাম রাগেব (رحمة الله) তাঁর ‘মুফরাদাতে’ লিখেন-
الشُّهُودُ والشَّهَادَةُ: الحضور مع المشاهدة، إمّا بالبصر، أو بالبصيرة،
-‘‘ الشُّهُودُ এবং الشَّهَادَةُ এর অর্থ চোখে দেখার সাথে উপস্থিত হওয়া।’’ ৩৩৬
৩৩৬. ইমাম রাগেব ইস্পাহানী, আল-মুফরাদাত, ৪৬৫ পৃ.
তাফসীরে কাবীর, রহুল মা‘আনী, মাদারেক, আবুস সাউদ, বায়জাবী, জুমাল এবং জালালাইন শরীফে আছে তাদের জন্যই নবী পাক (ﷺ) শাহেদ, যাদের কাছে তিনি প্রেরিত হয়েছেন।
নিন্মে তাফসীরে জালালাইন শরীফের মূল ইবারত দেয়া হল-
{يأيها النَّبِيّ إنَّا أَرْسَلْنَاك شَاهِدًا} عَلَى مَنْ أَرْسَلْت إلَيْهِمْ
-‘‘আমি আপনাকে তাদের জন্যই হাজের-নাযের করেছি, যাদের কাছে আপনাকে প্রেরণ করেছি।’’ ৩৩৭
৩৩৭. ইমাম সুয়ূতি, তাফসিরে জালালাইন শরীফ, ৩৫৫ পৃ.
সহীহ মুসলিম শরীফে রয়েছে রাসূলে পাক (ﷺ) ইরশাদ করেন-
وَأُرْسِلْتُ إِلَى الْخَلْقِ كَافَّةً
-‘‘আমি সমস্ত সৃষ্টির নিকট প্রেরিত হয়েছি।’’ ৩৩৮
৩৩৮. ইমাম মুসলিম, আস-সহীহ, ১/৩৭১ পৃ. হা/৫২৩, খতিব তিবরিযি, মিশকাত, (ভারতীয় ৫১২ পৃ.) ৩/১৬০১ পৃ. হা/৫৭৪৮, ইমাম আহমদ, আল-মুসনাদ, ১৫/১৯৫ পৃ. হা/৯৩৩৭, বায়হাকী, আস-সুনানুল কোবরা, ২/৬০৭ পৃ. হা/৪২৬২, সুনানে তিরমিযি, ৩/১৭৫ পৃ. হা/১৫৫৩, সহীহ ইবনে হিব্বান, ৬/৮৭ পৃ. হা/২৩১৩, বাগভী, শরহে সুন্নাহ, ১৩/১৯৮ পৃ. হা/৩৬১৭
আল্লাহ তা‘য়ালা ইরশাদ করেন-
وَيَكُونَ الرَّسُولُ عَلَيْكُمْ شَهِيدًا
-“আর এ রাসূল তোমাদের রক্ষক ও সাক্ষী।”(সূরা বাকারা, আয়াত নং-১৪৩)
আল্লামা তাদের পাটনী (رحمة الله)’র আকিদা:
আল্লামা তাহের পাটনী (رحمة الله) হাদিস গ্রন্থ মাজমাউল বিহারুল আনওয়ারে বলেন-
انا شهيد اى اشهد عليكم باعمالكم فكاتئ باق معكم انا شهيد على هؤلاء اى اشفع واشهد بانهم بذلوا ارواحهم لية
-‘‘আমি তোমাদের প্রত্যেক কর্মের সাক্ষ্য দেব। সুতরাং আমি তোমাদের সাথেই আছি। তাবরানী শরীফে আছে-আমি তাদের জন্য শাফায়াত করবো এবং এ মর্মে সাক্ষ্য দেব যে, তারা তাদের আত্মা আল্লাহর জন্য উৎসর্গ করেছে।’’ ৩৩৯
৩৩৯. তাহের পাটনী, মাজমাউল বিহারুল আনওয়ার, ২য় খণ্ড, ২২০ পৃ.
ইমাম খাযেন (رحمة الله) এর আকিদা:
তাফসীরে খাজনে তিনি বলেন
شُهُودٌ أي حضور
-‘‘শুহুদ অর্থ উপস্থিত হওয়া।’’ (তাফসিরে খাযেন, ৪/৪১৩ পৃ.)
রাসূলে পাক (ﷺ)’র আকিদা:
রাসুলে পাক ছাহেবে লাওলাক (ﷺ) ইরশাদ করেন-
أَنَا أَوْلَى بِكُلِّ مُؤْمِنٍ مِنْ نَفْسِهِ، مَنْ تَرَكَ دَيْنًا فَعَلَيَّ
-‘‘আমি প্রত্যেক মু‘মিনে প্রাণের চেয়েও এত কাছে যে, সে কোন কর্জ করলে তাও আমার জিম্মায় থাকে।’’ ৩৪০
৩৪০. ইমাম নাসাঈ, আস-সুনান, ৪র্থ খণ্ড ৬৫ পৃ., হা/১৯৬২ এবং আস-সুনানুল কোবরা, ২/৪৩৭ পৃ. হা/২১০০ এবং ৭/৪৩৮ পৃ. হা/৮৪১৫, ইমাম আহমদ, আল-মুসনাদ, ২২/৬৫ পৃ. হা/১৪১৫৯, ইমাম আবু দাউদ, আস-সুনান, ৩/২৪৭ পৃ. হা/৩৩৪৩
আল্লাহ তা‘য়ালা ইরশাদ করেন-
وَما أَرْسَلْناكَ إِلاَّ رَحْمَةً لِلْعالَمِينَ
-“এবং আমি আপনাকে প্রেরণ করেনি কিন্তু রহমত করে সমগ্র বিশ্ব জগতের জন্য।” ৩৪১
৩৪১. সূরা আম্বিয়া, আয়াত নং-১০৭
আল্লামা আলূসী (رحمة الله)’র আকিদা:
আল্লামা আলূসী (رحمة الله) উপরুক্ত আয়াতের তাফসীরে বলেন-
وكونه صلّى الله عليه وسلّم رحمة للجميع باعتبار أنه عليه الصلاة والسلام واسطة الفيض الإلهي على الممكنات على حسب القوابل، ولذا كان نوره صلّى الله عليه وسلّم أول المخلوقات، ففي الخبر أول ما خلق الله تعالى نور نبيك يا جابر وجاء الله تعالى المعطي وأنا القاسم وللصوفية قدست أسرارهم في هذا الفصل كلام فوق ذلك
-‘‘রাসূলে পাক (ﷺ) এ দৃষ্টিকোণে সমস্ত সৃষ্টির জন্য রহমত যে, মহান আল্লাহর অনুগ্রহ পাবার মূখ্য মাধ্যম হলেন হুযূরে পাক (ﷺ) এজন্য যে, হুযুর পুর নুর (ﷺ)’র নূর মুবারক সর্বপ্রথম সৃষ্টি। হাদিসে পাকে এসেছে রাসূলে পাক (ﷺ) ইরশাদ করেন, হে জাবের! আল্লাহ তা‘য়ালা সর্বপ্রথম তোমার নবীর নূর মুবারক কে সৃষ্টি করেছেন। হাদিসে পাকে আরো এসেছে, আল্লাহ আমাকে দান করেন আমি বন্টন করি। এ ব্যাপারে সুফিয়ানে কেরাম আরো বিস্তারিত বলেছেন।’’ ৩৪২
৩৪২. আল্লামা আলূসী, রুহুল মা‘আনী, ৯/১০০ পৃ., সূরা আম্বিয়া, আয়াত নং-১০৭-এর আলোচনা।
আল্লামা ইসমাঈল (رحمة الله) এর আকিদা:
তাফসীরে রুহুল বয়ানে আল্লামা ইসমাঈল হাক্কী (رحمة الله) এই আয়াতে তাফসীরে বলেন-
قال فى عرائس البقلى ايها الفهيم ان الله أخبرنا ان نور محمد عليه السلام أول ما خلقه ثم خلق جميع الخلائق من العرش الى الثرى من بعض نوره فارساله الى الوجود والشهود رحمة لكل موجود إذا لجميع صدر منه فكونه كون الخلق وكونه سبب وجود الخلق وسبب رحمة الله على جميع الخلائق فهو رحمة كافية وافهم ان جميع الخلائق صورة مخلوقة مطروحة فى فضاء القدرة بلا روح حقيقة منتظرة لقدوم محمد عليه السلام فاذا قدم الى العالم صار العالم حيا بوجوده لانه روح جميع الخلائق.
-‘‘(আরাইস গ্রন্থে এসেছে) হে ফাহীম (অনুধাবনকারী)! আল্লাহ তা‘য়ালা তোমাকে সংবাদ দিয়েছেন যে, সমস্ত সৃষ্টির পূর্বেই নূরে মুহাম্মাদী (ﷺ) সৃষ্টি হয়েছে। এরপর আরশ থেকে তাহতুছ ছারা পর্যন্ত প্রত্যেক সৃষ্টি তাঁর নূর মোবারক থেকে সৃষ্টি হয়েছে। “
সুতরাং এ অর্থে তিনি আলমে ওয়াজুদ, শুহুদ (অস্তিত্ব এবং দৃশ্যমান জগত) এর রাসূল এবং সমগ্র সৃষ্টির জন্য রহমত। সমস্ত মাখলুক তাঁর থেকেই সৃষ্টি হয়েছে। সৃষ্টি জগতের অনু-পরমানুর জন্য তিনি রহমত। বুঝা গেল কুদরতের রাজ্যে সমস্ত মাখলুক প্রাণহীন ছিল এবং হুযূর (ﷺ)-এর আগমনের অপেক্ষায় ছিল। সুতরাং তাঁর আবির্ভাবের সাথে সৃষ্টি জগত জীবন লাভে ধন্য হয়। কেননা তিনি সমস্ত জগতের প্রাণ।’’ (আল্লামা ইসমাঈল হাক্কী, তাফসিরে রুহুল বায়ান, ৫/৫২৮ পৃ.)
মহান আল্লাহ ইরশাদ করেন,
النَّبِيُّ أَوْلَى بِالْمُؤْمِنِينَ مِنْ أَنْفُسِهِمْ وَأَزْوَاجُهُ أُمَّهَاتُهُمْ
-“এ নবী মুসলমানদের তাদের প্রাণের চেয়েও অধিক নিকটে এবং তাঁর স্ত্রীগণ তাদের মাতা।” ৩৪৩
৩৪৩. সুরা আহযাব, আয়াত নং-৬
لَقَدْ جَاءَكُمْ رَسُولٌ مِنْ أَنْفُسِكُمْ عَزِيزٌ عَلَيْهِ مَا عَنِتُّمْ حَرِيصٌ عَلَيْكُمْ بِالْمُؤْمِنِينَ رَءُوفٌ رَحِيمٌ
-“নিশ্চয় তোমাদের নিকট তাশরীফ আনয়ন করেছেন, তোমাদের মধ্য থেকে ঐ রাসূল, যাঁর নিকট তোমাদের কষ্টে পড়া কষ্টদায়ক, তোমাদের কল্যাণ অতিমাত্রায় কামনাকারী, মুসলমানদের উপর পুর্ণ দয়াদ্র, দয়ালু।’’৩৪৪
৩৪৪. সুরা তাওবা, আয়াত নং-১২৮
وَقُلِ اعْمَلُوا فَسَيَرَى اللَّهُ عَمَلَكُمْ وَرَسُولُهُ وَالْمُؤْمِنُونَ
-“এবং আপনি বলুন, জেনে রেখো, এখন তোমাদের কাজ দেখবেন আল্লাহ ও তাঁর রাসূল এবং মু‘মিনগণ।’’ ৩৪৫
৩৪৫. সুরা তাওবা, আয়াত নং-১০৫
সায়্যিদুনা হযরত আবু হোরাইরা (رضي الله عنه) এর আকিদা:
হযরত আবু হোরাইরা (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলে পাক (ﷺ) ইরশাদ করেন-
مَنْ رَآنِي فِي المَنَامِ فَسَيَرَانِي فِي اليَقَظَةِ، وَلاَ يَتَمَثَّلُ الشَّيْطَانُ بِي
-‘‘স্বপ্নে যে আমাকে দেখেছে আচিরেই জাগ্রত অবস্থান সে আমার সাক্ষাৎ পাবে।’’ ৩৪৬
৩৪৬. ইমাম বুখারী, আস-সহীহ, নবম খণ্ড ৯৯ পৃ. হা/৬৯৯৩, খতিব তিবরিযি, মিশকাত শরীফ, (ভারতীয় ৩৯৪ পৃ.) ২/১২৯৭ পৃ. হা/৪৬১১, দাউদ ৪র্থ খণ্ড ৩০৫ পৃ. হা/৫০২৩, সহীহ মুসলিম শরীফ ৪র্থ খণ্ড ১৭৭৫ পৃ., হা/২২৬৬ ইবনে মাযাহ, আস-সুনান, ৫/৬০ পৃ. হা/৩৯০০
শায়খ আবদুল হক মুহাদ্দীস দেহলভী (رحمة الله)’র আকিদা:
এই হাদিসের ব্যাখ্যায় আল্লামা শায়খ আবদুল হক মুহাদ্দিস দেহলভী (رحمة الله) বলেন-
ايں بشارت است براياں جمال اورا در خواب كہ اسفر بعد ازار تفاع كہ ورات نضانيہ وقطع علأئق جسمانيہ بمرتبہ بر سندكہ كہ بہ حجاب كشفا دعيانا در بيدارى بايں سعادت فائز باشتدچناپنہ اہل خصوص از اولياء رامييا شد وبرايں معنى اس حديث دليل ميشود ير صحت رؤيت آں حضرت ﷺ در يقظہ
-‘‘এ শুভ সংবাদ তাদের জন্য যারা স্বপ্নে হুযূর (ﷺ) এর দীদার লাভ করে। অবশেষে সে অন্ধকার নিঃশ্বাসের পর শারীরিক প্রতিবন্ধকতা শেষ হওয়ার পর এই স্তরে পৌঁছবে যে, পর্দাবিহীন জাগ্রত অবস্থায় পরিষ্কারভাবে দেখতে পাবে।’’ (আল্লামা শায়খ আবদুল হক মুহাদ্দিস দেহলভী, আশিয়াতুল লুম‘আত (ফার্সী), ২/৬৪০ পৃ.) তিনি তার আরেক প্রসিদ্ধ গ্রন্থে লিখেন-
وہاچنديں اختلافات وكثرت مذاہب كہ درعلماء امت است كہ يك كس راد ريں مسئلہ خلافے نيست كہ آنحضرت ﷺ بحقيت حيات بے شائيہ مجاز وترہم وتاويل دائم وباقى است وبر اعمال امت حاضر وناضر ومر غالباں حقيقة راو متوبہان آں حضرت را مفيض ومربى است
-‘‘যদিওবা আলেম সমাজের মধ্যে শরয়ী বিধানের ক্ষেত্রে বহুধা মত পরিলক্ষিত হয়; কিন্তু একটি বিষয়ে সন্দেহাতীতভাবে চিন্তা ও গবেষণা ব্যতিত একমত যে, সরকারে দো‘আলম আঁ হযরত (ﷺ) প্রকৃত জীবনসমৃন্ধ এবং আপন জীবনে এখনো বিদ্যমান। উম্মতের কর্মযজ্ঞ সম্পর্কে চাক্ষুষ প্রত্যক্ষবান। তাঁর (ﷺ) প্রতি মুখাপেক্ষিদেরকে স্বয়ং নিজেই উপকৃত ও অনুগ্রহ করেন।’’ (আখবারুল আখিয়ার, ১৬১ পৃ.)
হযরত আবু হুমাইদ সাঈদী (رضي الله عنه)’র আকিদা:
হযরত আবু হুমাইদ সাঈদী (رضي الله عنه) বলেন, রাসূলে পাক (ﷺ) ইরশাদ করেন-
إِذَا دَخَلَ أَحَدُكُمُ الْمَسْجِدَ، فَلْيُسَلِّمْ عَلَى النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، ثُمَّ لِيَقُلْ: اللَّهُمَّ افْتَحْ لِي أَبْوَابَ رَحْمَتِكَ
-“যখন তোমাদের কেউ মসজিদে প্রবেশ করবে তার পূর্বে রাসূলে পাক (ﷺ)’র উপর দরুদ পাঠ করবে এরপর নিম্মোক্ত
اللَّهُمَّ افْتَحْ لِي أَبْوَابَ رَحْمَتِكَ
দোয়া পড়বে।’’ ৩৪৭
৩৪৭. ইমাম ইবনে মাযাহ, আস-সুনান, ১/২৫৪ পৃ. হা/৭৭২, ইমাম আবু দাউদ, আস-সুনান, ১/১২৬ পৃ. হা/৪৬৫, খতিব তিবরিযি, মিশকাতুল মাসাবীহ, ১/২২১ পৃ. হা/৭০৩
হযরত আলক্বামা (رضي الله عنه)’র আকিদা:
ইমামুল মুহাদ্দিস কাজী আয়্যায মালেকী (رحمة الله) বলেন,
وَعَنْ عَلْقَمَةَ : إِذَا دَخَلْتُ الْمَسْجِدَ أَقُولُ: السَّلَامُ عَلَيْكَ أَيُّهَا النَّبِيُّ وَرَحْمَةُ اللَّهِ وَبَرَكَاتُهُ
-‘‘হযরত আলকামা (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি মসজিদে প্রবেশ কালে বলে থাকি -
السَّلَامُ عَلَيْكَ أَيُّهَا النَّبِيُّ وَرَحْمَةُ اللهِ وَبَرَكَاتُهُ
‘হে নবী! আপনাকে সালাম এবং আপনার উপর মহান রবের অগনিত করুনা এবং বরকত বর্ষিত হোক’।’’ ৩৪৮
৩৪৮. ইমাম কাযি আয়্যায, আশ-শিফা, ২য় খণ্ড, ১৫৬ পৃ.
হযরত আলকামাহ (رضي الله عنه)’র এই বর্ণনা দ্বারা বুঝা যায়। তিনি মসজিদে প্রবেশের পূর্বে রাসূলে পাক (ﷺ) কে খেতাব করেই নেদা করতেন।
সায়্যিদুনা আমর বিন দিনার (رحمة الله)’র আকিদা:
আল্লামা কাজী আয়্যায মালেকী (رحمة الله) বলেন-
إِنْ لَمْ يَكُنْ فِي الْبَيْتِ أَحَدٌ فَقُلْ السَّلَامُ عَلَى النَّبِيِّ وَرَحْمَةُ اللَّهِ وَبَرَكَاتُهُ
তাবেয়ী হযরত আমর বিন দিনার (رحمة الله) বলেন, তোমরা ঘরে প্রবেশ কালে তাতে কেউ না থাকলে বলবে ‘হে নবী! আপনাকে সালাম এবং আপনার উপর মহান রবের অগনিত করুনা এবং বরকত বর্ষিত হোক’।’’৩৪৯
৩৪৯. ইমাম কাযি আয়্যায, শিফা শরীফ, ২য় খণ্ড, ১৫৫ পৃ.
মোল্লা আলী ক্বারী হানাফী (رحمة الله)’র আকিদা:
হযরত আমর বিন দিনার (رحمة الله) এর উপরোক্ত উক্তির ব্যাখ্যা করতে গিয়ে আল্লামা মোল্লা আল ক্বারী হানাফী (رحمة الله) বলেন,
أي لأن روحه عليه السلام حاضر في بيوت أهل الإسلام
-‘‘এটা এজন্য যে প্রত্যেক মুসলমানের ঘরে রাসূলে পাক (ﷺ) এর রূহ মুবারক উপস্থিত থাকেন।’’ ৩৫০
৩৫০. আল্লামা মোল্লা আল ক্বারী হানাফী, শরহে শিফা শরীফ, ২য় খণ্ড , ১১৮ পৃ.
আল্লামা ইবনে হাজার আসকালানী (رحمة الله), আল্লামা বদরুদ্দীন আইনি (رحمة الله), আল্লামা কাস্তাল্লানী (رحمة الله) এবং আল্লামা আবদুল বাকী জুরকানী (رحمة الله) এর আকিদা:
وَيُحْتَمَلُ أَنْ يُقَالَ عَلَى طَرِيقَةِ أَهْلِ الْعِرْفَانِ إِنَّ الْمُصَلِّينَ لَمَّا اسْتَفْتَحُوا بَابَ الْمَلَكُوتِ بِالتَّحِيَّاتِ أَذِنَ لَهُمْ بِالدُّخُولِ فِي حَرَمِ الْحَيِّ الَّذِي لَا يَمُوتُ، فَقَرَّتْ أَعْيُنُهُمْ بِالْمُنَاجَاةِ فَنُبِّهُوا عَلَى أَنَّ ذَلِكَ بِوَاسِطَةِ نَبِيِّ الرَّحْمَةِ وَبِرْكَةِ مُتَابَعَتِهِ فَالْتَفَتُوا، فَإِذَا الْحَبِيبُ فِي حَرَمِ الْحَبِيبِ حَاضِرٌ فَأَقْبَلُوا عَلَيْهِ: قَائِلِينَ السَّلَامُ عَلَيْكَ أَيُّهَا النَّبِيُّ وَرَحْمَةُ اللَّهِ وَبَرَكَاتُهُ.
-‘‘আহলে ইরফান (মা‘রিফাত পন্থী) দের তরীকা এটাও হতে পারে যে, মুসল্লীরা যখন আত্তাহিয়্যাতুর মাধ্যমে মালাকুতের দরজা উন্মুক্ত করা হয়, তখন তাদেরকে চিরজীবের স্তরে প্রবেশ করার অনুমতি দেয়া হয়। তখন একাকীত্বের আনন্দে তাঁদের চক্ষু যুগল শীতল হয়। তখন তাদের এ বিষয়ে সতর্ক করা হয় যে, মহান আল্লাহর দরবারে যে মর্যাদা তারা লাভ করেছেন তা রাসূলে পাক (ﷺ) এর উসিলায়। নামাযীরা এ হাকিকত (রহস্য) দ্বারা অবগত হয়ে যখন দৃষ্টিপাত করে তখন তারা অলোকন করে যে, হাবীবের হেরমে হাবীব (ﷺ) উপস্থিত (আল্লাহর দরবারে রাসূলে পাক (ﷺ) হাযির) হুযূর (ﷺ) কে দেখেই তারা
السَّلَامُ عَلَيْكَ أَيُّهَا النَّبِيُّ وَرَحْمَةُ اللَّهِ وَبَرَكَاتُهُ
বলে রাসূলে পাক (ﷺ) এর দিকে তারা মনোনিবেশ করে। ’’ ৩৫১
৩৫১. আল্লামা জুরকানী, শরহে মুয়াত্তায়ে মালেক, ১/৩৪৩ পৃ. হা/২০৭, আইনী, উমদাতুল ক্বারী, ৬/১১১ পৃ., কাস্তাল্লানী, ইরশাদুস সারী, ২/১৩২ পৃ., ইমাম ইবনে হাজার আসকালানী, ফতহুল বারী, ২/৩১৪ পৃ. হা/৮৩১-এর আলোচনা।
❏ বিষয় নং-২৯: আতায়ী অদৃশ্য জ্ঞান
____________________
❏ বিষয় নং-২৯: আতায়ী অদৃশ্য জ্ঞান:
দেওবন্দী এবং গাইরে মুকাল্লিদ আহলে হাদীস পন্থিরা রাসূলে পাক (ﷺ) এর আতায়ী ইলমে গায়েবকেও শিরক বলে, এমন কি এ আকিদা পোষণ কারীকে আবু জাহেলের চেয়েও জঘন্য মুশরিক বলে থাকে। আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতের আকিদা হল মহান আল্লাহর অনুগ্রহে আদি-অন্তের অবস্থা এবং অদৃশ্যের জ্ঞান রাখেন। মহান আল্লাহ ইরশাদ করেন-
وَمَا كَانَ اللَّهُ لِيُطْلِعَكُمْ عَلَى الْغَيْبِ وَلَكِنَّ اللَّهَ يَجْتَبِي مِنْ رُسُلِهِ مَنْ يَشَاءُ
-“এবং আল্লাহর শান এ নয় যে, হে সর্বসাধারণ! তোমাদের কে অদৃশ্যের জ্ঞান দিয়ে দেবেন। তবে আল্লাহ নির্বাচিত করে নেন তার রাসূলগণের মধ্য থেকে যাঁকে চান।’’ ৩৫২
৩৫২. সূরা আলে ইমরান- আয়াত নং-১৭৯
ইমাম সুয়ূতি (رحمة الله) এর আকিদা:
আল্লামা ইমাম জালালুদ্দিন সুয়ূতি (رحمة الله) তাঁর তাফসীরে বলেন-
{وَلَكِنَّ اللَّه يَجْتَبِي} يَخْتَار {مِنْ رُسُله مَنْ يَشَاء} فَيُطْلِعهُ عَلَى غَيْبِه
-‘‘এর অর্থ হল আল্লাহ রাসূলগণের মধ্যে যাকে ইচ্ছা করে ইলমে গায়ব দান করেন।’’ ৩৫৩
৩৫৩. ইমাম সুয়ূতি, তাফসিরে জালালাইন শরীফ, ৯২ পৃ.
আল্লামা হাক্কী (رحمة الله)’র আকিদা:
আল্লামা ইসমাঈল হাক্কী (رحمة الله) এই আয়াতের তাফসীরে বলেন-
فَانَّ غَيْبَ الحَقَائِقِ وَالْأَحْوَالْ لَا يَنْكَشِفُ بِلَا وَاسِطَةِ الرَّسُوْلِ
-‘‘সুতরাং রাসূলে আকরাম (ﷺ) এর উসিলা ব্যতীত কোন অদৃশ্য বস্তুর প্রকৃত অবস্থা প্রতিভাত হয় না।’’ ৩৫৪
৩৫৪. তাফসীরে রুহুল বায়ান, ২য় খণ্ড, ১৩২ পৃ.
অন্য আয়াতে আল্লাহ তা‘য়ালা ইরশাদ করেন-
وَعَلَّمَكَ مَا لَمْ تَكُنْ تَعْلَمُ وَكَانَ فَضْلُ اللهِ عَلَيْكَ عَظِيمًا
-“এবং আপনাকে শিক্ষা দিয়েছেন যা কিছু আপনি জানতেন না এবং আপনার উপর আল্লাহর মহা অনুগ্রহ রয়েছে।” ৩৫৫
৩৫৫. সূরা নিসা, আয়াত নং-১১৩
ইমাম সুয়ূতি (رحمة الله) এর আকিদা:
ইমামুল মুফাসসিরীন ইমাম সুয়ূতি (رحمة الله) এই আয়াতের তাফসীরে বলেন-
مَا فِيهِ مِنْ الْأَحْكَام وَالْغَيْب
-‘‘(আপনাকে যা শিক্ষা দিয়েছেন তা হল) আহকাম এবং ইলমে গায়ব।’’ ৩৫৬
টিকা━━━━━━━━━━━━━━━━━━━━
৩৫৬.
ইমাম সুয়ূতি, তাফসিরে জালালাইন, ১২২ পৃ.,
❏ মহিউস সুন্নাহ ইমাম বাগভী (رحمة الله) এ আয়াতের তাফসিরে লিখেন-
وَعَلَّمَكَ مَا لَمْ تَكُنْ تَعْلَمُ..... وَقِيلَ: مِنْ عِلْمِ الْغَيْبِ
-‘‘(আপনার রব আপনাকে যা জানতেন না তা শিক্ষা দিয়েছেন) মুফাসসিরানে কিরাম বলেছেন, তা হলো ইলমে গায়ব।’’ (তাফসিরে মা‘আলিমুত তানযিল, ১/৭০০ পৃ.)
❏ এ আয়াতের তাফসিরে ইমাম তাবারী (رحمة الله) উল্লেখ করেন-
{وَعَلَّمَكَ مَا لَمْ تَكُنْ تَعْلَمُ} [النساء: ১১৩] مِنْ خَبَرِ الْأَوَّلِينَ وَالْآخَرِينَ , وَمَا كَانَ , وَمَا هُوَ كَائِنٌ قَبْلَ
-‘‘(আপনার রব আপনাকে যা জানতেন না তা শিক্ষা দিয়েছেন) মুফাস্সিরানে কিরাম বলেছেন, তা হলো সৃষ্টির প্রারম্ভ থেকে লয় পর্যন্ত এবং ইতোপূর্বে যা হয়েছে যা কিয়ামতের পূর্বে হবে তা আপনাকে শিক্ষা দিয়েছেন।’’ (তাফসিরে তবারী, ৭/৪৮০ পৃ.)
❏ ইমাম সাম‘আনী (رحمة الله) এর আয়াতের তাফসিরে লিখেন-
{وعلمك مَا لم تكن تعلم} يعْنى:.....قيل: من علم الْغَيْب
-‘‘(আপনার রব আপনাকে যা জানতেন না তা শিক্ষা দিয়েছেন) মুফাসসিরানে কিরাম বলেছেন, তা হলো ইলমে গায়ব।’’ (তাফসিরে সাম‘আনী, ১/৪৭৭ পৃ.)
❏ ইমাম খাযেন (رحمة الله) এ আয়াতের তাফসিরে লিখেন-
وقيل علمك من علم الغيب ما لم تكن تعلم وقيل معناه وعلمك من خفيات الأمور وأطلعك على ضمائر القلوب وعلمك من أحوال المنافقين وكيدهم ما لم تكن تعلم
-‘‘মুফাসসিরানে কিরাম বলেছেন, রাসূল (ﷺ) যা জানতেন না তা হলো ইলমে গায়বের জ্ঞান যা মহান রব নবীজীকে নিজেই শিক্ষা দিয়েছেন। আবার কোনো কোনো মুফাসসিরানে কিরাম বলেছেন, আপনাকে অতি গোপনীয় বিষয় এবং অন্তরের রহস্যসমূহ এবং মুনাফিকদের অবস্থা সম্পর্কে জানিয়ে দিয়েছেন।’’ (তাফসিরে খাযেন, ১/৪২৬ পৃ.)
❏ আল্লামা ইসমাঈল হাক্কী (رحمة الله) বলেন-
্রعلمك ما لم تكن تعلمগ্ধ نكته فعلمت علم الأولين والآخرين
-‘‘(আপনার রব আপনাকে যা জানতেন না তা শিক্ষা দিয়েছেন) তার ব্যাখ্যায় নবীজী নিজেই বলেন, আমি সৃষ্টির প্রারম্ভ থেকে লয় পর্যন্ত সব কিছু সম্পর্কে অবগত।’’ (তাফসিরে রুহুল বয়ান, ৫/৪৩৩ পৃ.)
❏ তিনি তার উক্ত বিখ্যাত তাফসিরে আরও লিখেন-
وعلم نبينا عليه السلام القرآن واسرار الالوهية كما قال وعلمك ما لم تكن تعلم
-‘‘নবী করীম (ﷺ) কোরআনের গভীর জ্ঞান, মহান রবের রহস্যময় জ্ঞান সম্পর্কে অবগত ছিলেন, যেমন মহান রব তা‘য়ালা আপনার রব আপনাকে যা জানতেন না তা শিক্ষা দিয়েছেন।’’ (ইসমাঈল হাক্কী, তাফসিরে রুহুল বয়ান, ৯/২৮৯ পৃ.)
❏ ইমাম নিযামুদ্দীন নিশাপুরী (رحمة الله) এ আয়াতের তাফসিরে লিখেন-
الثاني أن يكون المراد منها خفيات الأمور وضمائر القلوب أي علمك ما لم تكن تعلم من أخبار الأولين،
-‘‘এ আয়াতের ব্যাখ্যায় মুফাসসিরদের দ্বিতীয় অভিমত হলো, আপনাকে অতি গোপনীয় বিষয় এবং অন্তরের রহস্যসমূহ জানিয়ে দেয়া হয়েছে অর্থাৎ যা আপনি যা জানতেন না তা অর্থাৎ তা হল সৃষ্টির প্রারম্ভের ঘটনাবালী।’’ (তাফসিরে নিশাপুরী, ২/৪৯৪ পৃ.)
❏ বিখ্যাত হাদিসের সমালোচক, ইমাম ইবনে জাওযী (رحمة الله) লিখেন-
والثاني: أخبار الأولين والآخرين،
-‘‘এ আয়াতের ব্যাখ্যায় মুফাসসিরদের দ্বিতীয় অভিমত হলো, সৃষ্টির প্রারম্ভ থেকে লয় পর্যন্ত সব কিছু সম্পর্কে আপনাকে অবহিত করেছেন।’’ (ইবনে জাওযী, যাদুল মাইসীর, ১/৪৭০ পৃ.)
━━━━━━━━━━০━━━━━━━━━━
ইমাম নাসাফী (رحمة الله)’র আকিদা:
আল্লামা নাসাফী (رحمة الله) বলেন-
{وَعَلَّمَكَ مَا لَمْ تَكُنْ تَعْلَمُ} من أمور الدين والشرائع أو من خفيات الأمور وضمائر القلوب
-‘‘পুত্র পবিত্র শরীয়তের আহকাম এবং দ্বীনের বিষয়সমূহ শিক্ষা দিয়েছেন এবং অদৃশ্যজ্ঞানের এমন সব বিষয় শিক্ষা দিয়েছেন যা আপনি অবগত ছিল না। আবার কারো মতে এর অর্থ হল আপনাকে অতি গোপনীয় বিষয় এবং অন্তরের রহস্যসমূহ জানিয়ে দেয়া হয়েছে।’’ ৩৫৭
৩৫৭. ইমাম নাসাফী, তাফসীরে মাদারিকুত তানযীল, ১ম খণ্ড, ৩৯৫ পৃ.
আল্লামা মোল্লা মঈন কাশেফী (رحمة الله)’র আকিদা:
আল্লামা কাশেফী (رحمة الله) এই আয়াতের তাফসীরে বলেন-
آں علم ما كان وما يكون ہست كہ حق سبحانه در شب اسرا بلا حضرت عطا فرمود چنا نچہ در حديث معراج ہست كہ من درزيه عرش بهدم قطره در حلق من ريحنتذ فَعَلِمْتُ مَا كَانَ وَمَا يَكُوْن
-‘‘এটা হল আদি-অন্তের জ্ঞান যা পবিত্র মেরাজ রজনীতে হুযুর আকরাম (ﷺ) কে দান করা হয়েছে। যেমন মেরাজ শরীফের হাদিসে রাসূলে পাক (ﷺ) বলেন, আমি আরশের নীচে ছিলাম এ সময় আমার কণ্ঠনালীতে একফোঁড়া দেয়া হল, এর ফলে আমি পূর্বাপর সবকিছু সম্পর্কে অবগত হলাম।’’ (তাফসীরে হুসাইনী, ১৪৪ পৃ.)
আল্লাহ তা‘য়ালা ইরশাদ করেন-
الرَّحْمَنُ (১) عَلَّمَ الْقُرْآنَ (২) خَلَقَ الْإِنْسَانَ (৩) عَلَّمَهُ الْبَيَانَ (৪)
-“পরম-দয়ালু আপন মাহবুবকে কোরআন শিক্ষা দিয়েছে। মানবতার প্রাণ মুহাম্মদ (ﷺ) কে সৃষ্টি করেছেন, যা সৃষ্টি হয়েছে এবং যা সৃষ্টি হবে সব কিছুর (পূর্বা-পর) সপ্রমাণ বর্ণনা তাঁকেই শিক্ষা দিয়েছেন।’’ ৩৫৮
৩৫৮. সূরা রহমান, আয়াত নং-১-৪
আল্লামা খাযেন (رحمة الله)’র আকিদা:
তাফসীরে খাযেনে উক্ত আয়াতের তাফসীরে বলা হয়েছে
وقيل أراد بالإنسان محمدا صلّى الله عليه وسلّم علّمه البيان يعني بيان ما يكون وما كان لأنه صلّى الله عليه وسلم ينبئ عن خبر الأولين والآخرين وعن يوم الدين
-‘‘কোন কোন মুফাস্সিরগণ বলেছেন যে, (উক্ত আয়াতে) ইনসান বলতে হযরত মুহাম্মদ (ﷺ) কে বুঝানোর উদ্দেশ্য। (عَلَّمَهُ الْبَيانَ)-এর মমার্থ হলো, তাঁকে (মুহাম্মদ (ﷺ) কে) পূর্ববর্তী ও পরবর্তী যা হবে সব বিষয়ের বিবরণ এবং কিয়ামতের দিন হওয়া পর্যন্ত সব অবহিত করেছেন।’’ ৩৫৯
৩৫৯. ইমাম খাযেন, তাফসীরে লুবাবুত তা‘বীল, ৪/২২৫ পৃ.
আল্লামা কাযী সানাউল্লাহ পানিপথী (رحمة الله)’র আকিদা :
তিনি বলেন-
وَعَلَّمَكَ الْعُلُوْمِ بِالْاَسْرَارِ وَالْمُغِيْبَاتِ
-‘‘আল্লাহ তা‘য়ালা আপনাকে অদৃশ্যের জ্ঞান দিয়েছেন।’’৩৬০
৩৬০. কাযি সানাউল্লাহ পানিপাথি, তাফসীরে মাযহারী, ২/২৩৪ পৃ.
আল্লামা জারুল্লাহ যামাখশশারীর আক্বিদা:
আল্লামা যামাখশশারী তার স্বীয় তাফসীরে কাশশাফে বলেন-
من خفيات الأمور وضمائر القلوب، أو من أمور الدين والشرائع.
-‘‘গোপন বিষয় মানুষের অন্তরের খবর এবং দ্বীনের বিষয় এবং শরীয়তের হুকুম আহকাম সমূহ।’’ ৩৬১
৩৬১. যামাখশারী, তাফসীরে কাশশাফ, ১ম খণ্ড, ৫৬৪ পৃ.
আল্লামা বাগবী (رحمة الله)’র আকিদা:
তাফসীরে মুআলিমুত তানযীলে এই আয়াতের তাফসীরে বলা হয়েছে-
وَقَالَ ابْنُ كَيْسَانَ: خَلَقَ الْإِنْسانَ (৩) يَعْنِي مُحَمَّدًا صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَلَّمَهُ الْبَيانَ (৪) يَعْنِي بَيَانَ مَا كَانَ وَمَا يَكُونُ لِأَنَّهُ كَانَ يُبِينُ عَنِ الْأَوَّلِينَ وَالْآخَرِينَ وَعَنْ يَوْمِ الدِّينِ.
আল্লাহ তা‘য়ালা ইনসান তথা হুযুর আকরাম (ﷺ) কে সৃষ্টি করেছেন এবং তাকে আদি-অন্তের সবকিছুর জ্ঞান দেয়া হয়েছে।“ ৩৬২
৩৬২. ইমাম বাগভী, তাফসীরে মুআলিমুত তানযীল, ৪/৩৩১ পৃ.
সুতরাং কুরআন সুন্নাহর আলোকে বুঝা গেল আহলে হাদীস এবং দেওবন্দীরা আহলে সুন্নাত ওয়াল জাম‘আত নয়।
❏ বিষয় নং-৩০: হুযুর (ﷺ)’র দুনিয়া-আখেরাতের জ্ঞান
____________________
❏ বিষয় নং-৩০: হুযুর (ﷺ)’র দুনিয়া-আখেরাতের জ্ঞান
দেওবন্দীদের আকিদা হল নবী ওলীগণ নিজেদের এবং অন্যদের সম্পর্কে অবগত নন যে, আল্লাহ তা‘য়ালা কবর-হাশর তাদের সাথে কিরূপ আচরণ করবেন।
আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতের আকিদা হল আল্লাহ তা‘য়ালা তাঁর প্রিয় হাবীব (ﷺ) কে দুনিয়া-আখেরাতের সব কিছু সম্পর্কে অবগত করেছেন।
আল্লাহ তা‘য়ালা ইরশাদ করেন-
وَمَا كَانَ اللَّهُ لِيُطْلِعَكُمْ عَلَى الْغَيْبِ وَلَكِنَّ اللَّهَ يَجْتَبِي مِنْ رُسُلِهِ مَنْ يَشَاءُ
-“এবং আল্লাহর শান এ নয় যে, হে সর্বসাধারণ! তোমাদেরকে অদৃশ্যের জ্ঞান দিয়ে দিবেন, তবে আল্লাহ নির্বাচিত করে নেয় তাঁর রাসূলগণের মধ্য থেকে যাঁকে চান।’’ ৩৬৩
৩৬৩. সুরা আলে ইমরান, আয়াত নং-১৭৯
অন্যত্র ইরশাদ করেন,
عَالِمُ الْغَيْبِ فَلَا يُظْهِرُ عَلَى غَيْبِهِ أَحَدًا (২৬) إِلَّا مَنِ ارْتَضَى مِنْ رَسُولٍ
-‘‘অদৃশ্যের জ্ঞাতা, সুতরাং আপন অদৃশ্যের উপর কাউকে ক্ষমতাবান করেন না, আপন মনোনীত রাসূলগণ ব্যতীত।” ৩৬৪
৩৬৪. সুরা জ্বীন, আয়াত নং-২৬-২৭
হযরত ইবরাহিম (عليه السلام) সম্পর্কে আল্লাহ তা‘য়ালা বলেন-
وَكَذَلِكَ نُرِي إِبْرَاهِيمَ مَلَكُوتَ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ وَلِيَكُونَ مِنَ الْمُوقِنِينَ
-“এবং এভাবে আমি ইবরাহিমকে দেখাচ্ছি সমগ্র বাদশাহী আসমান সমূহের এবং যমীনের এবং এ জন্য যে, তিনি স্বচক্ষে দেখা নিশ্চিত বিশ্বাসীদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাবেন।” ৩৬৫
৩৬৫. সুরা আনআম, আয়াত নং-৭৫
আয়াত সমূহ থেকে বুঝা যাচ্ছে যে, আল্লাহ তা‘য়ালা তাঁর প্রিয় হাবীব (ﷺ) কে গায়বের ইলম দান করেছেন। বরং হযরত ইবরাহীম (عليه السلام) কে আসমান-জমিনের রাজত্ব দেখিয়েছেন।
আল্লামা মোল্লা আলী ক্বারী হানাফী (رحمة الله) মিশকাত শরীফের ব্যাখ্যাগ্রন্থ মিরকাতে উপরের আয়াতের ব্যাখ্যা করতে গিয়ে বলেছেন-
أَنَّ اللَّهَ أَرَى إِبْرَاهِيمَ عَلَيْهِ الصَّلَاةُ وَالسَّلَامُ مَلَكُوتَ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ، وَكَشَفَ لَهُ ذَلِكَ فَتَحَ عَلِيَّ أَبْوَابَ الْغَيْبِ
-‘‘আল্লাহ তা‘য়ালা ইবরাহীম (عليه السلام) কে আসমান জমিনের রাজত্ব দেখিয়েছেন, সবকিছুকে উন্মুক্ত করে দিয়েছেন এবং অদৃশের দরজাসমূহ খুলে দিয়েছেন।’’ ৩৬৬
৩৬৬. মোল্লা আলী ক্বারী, মিরকাত শরহে মিশকাত, ২য় খণ্ড, ৬০৯ পৃ. হা/৭২৫
রাসূলে পাক ছাহেব লাওলাক হুযুর পুর নূর (ﷺ) এর বরকতময় হাদিস -
فَعَلِمْتُ مَا فِي السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ
‘(আল্লাহর কুদরতী হাত আমার বক্ষে স্থাপনের) ফলে আমি আসমান এবং যমীনে যা কিছু আছে সব কিছু সম্পর্কে অবগত হয়েছি।’ ৩৬৭
৩৬৭. খতিব তিবরিযি, মিশকাত, মসজিদ অধ্যায়, হা/৭২৫
এই হাদিসের ব্যাখ্যা করতে গিয়ে আল্লামা মোল্লা কারী হানাফী (رحمة الله) বলেন-
وَقَالَ ابْنُ حَجَرٍ: أَيْ جَمِيعَ الْكَائِنَاتِ الَّتِي فِي السَّمَاوَاتِ بَلْ وَمَا فَوْقَهَا، كَمَا يُسْتَفَادُ مِنْ قِصَّةِ الْمِعْرَاجِ، وَالْأَرْضِ هِيَ بِمَعْنَى الْجِنْسِ، أَيْ: وَجَمِيعَ مَا فِي الْأَرَضِينَ السَّبْعِ، بَلْ وَمَا تَحْتَهَا، كَمَا أَفَادَهُ إِخْبَارُهُ - عَلَيْهِ السَّلَامُ - عَنِ الثَّوْرِ وَالْحُوتِ اللَّذَيْنِ عَلَيْهِمَا الْأَرَضُونَ كُلُّهَا
-‘‘ইবনে হাজার (رحمة الله) বলেন, مَا فِي السَّمَاوَاتِ দ্বারা সমস্ত আসমান বরং এর উপরের সব কিছুর জ্ঞানও উদ্দেশ্য। যেমন মিরাজ শরীফের ঘটনা থেকে বুঝা যায়। আর জমিন দ্বারা সমস্ত পৃথিবী এবং এর নীচে যা কিছু আছে সব কিছু উদ্দেশ্য। যেমন রাসূলে পাক (ﷺ) ছাওরা এবং হুউত (যা সমুদ্রের বিশেষ প্রাণী) এর সংবাদ দান করা।’’ ৩৬৮
৩৬৮. মোল্লা আলী ক্বারী, মিরকাত শরীফ, ২য় খণ্ড, ৬০৯ পৃ. হা/৭২৫
হুযুর পুর নুর (ﷺ)’র অপর একটি হাদিসও বর্ণনা করা হল যেখানে হুযুর পাক (ﷺ) সমস্ত সাহাবীগণকে জান্নাতের শুভ সংবাদ দিয়েছেন। হযরত জাবের (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত, রাসূলে পাক (ﷺ) ইরশাদ করেন-
لَا تَمَسُّ النَّارُ مُسْلِمًا رَآنِي أَوْ رَأَى مَنْ رَآنِي
-‘‘যে মুসলমান আমাকে দেখেছেন, অথবা যাঁরা আমাকে দেখেছেন তাদেরকে দেখেছেন দোযখের আগুন তাদের স্পর্শ করবে না।’’ ৩৬৯
হযরত আবদুর রহমান বিন আউফ (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত, রাসূলে পাক (ﷺ) ইরশাদ করেন-
عَنْ عَبْدِ الرَّحْمَنِ بْنِ عَوْفٍ، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: أَبُو بَكْرٍ فِي الجَنَّةِ، وَعُمَرُ فِي الجَنَّةِ، وَعُثْمَانُ فِي الجَنَّةِ، وَعَلِيٌّ فِي الجَنَّةِ، وَطَلْحَةُ فِي الجَنَّةِ وَالزُّبَيْرُ فِي الجَنَّةِ، وَعَبْدُ الرَّحْمَنِ بْنُ عَوْفٍ فِي الجَنَّةِ، وَسَعْدٌ فِي الجَنَّةِ، وَسَعِيدٌ فِي الجَنَّةِ، وَأَبُو عُبَيْدَةَ بْنُ الجَرَّاحِ فِي الجَنَّةِ.
-‘‘হযরত আবু বকর (رضي الله عنه) জান্নাতী, হযরত উমর (رضي الله عنه) জান্নাতী, হযরত ওসমান (رضي الله عنه) জান্নাতী, হযরত আলী (رضي الله عنه) জান্নাতী, হযরত তালহা (رضي الله عنه) জান্নাতী, হযরত জুবাইর (رضي الله عنه) জান্নাতী, হযরত আবদুর রহমান বিন আউফ (رضي الله عنه) জান্নাতী, হযরত সাদ বিন আবি ওয়াককাস (رضي الله عنه) জান্নাতী, হযরত সাঈদ বিন যায়েদ (رضي الله عنه) জান্নাতী এবং হযরত আবু উবাইদা বিন র্জারাহ (رضي الله عنه) জান্নাতী।“ ৩৭০
মহান আল্লাহ তা‘য়ালা পবিত্র কুরআন হযরত খিজির (عليه السلام) সম্পর্কে ইরশাদ করেন-
وَعَلَّمْنَاهُ مِنْ لَدُنَّا عِلْمًا
-“এবং তাকে আমি ইলমে লাদ্ন্নুী দান করেছি।” ৩৭১
৩৬৯. খতিব তিবরিযি, মিশকাত শরীফ, (ভারতীয় ৫৫৪ পৃ.) ৩/১৬৯৫ পৃ. হা/৬০১৩, এ গ্রন্থের তাহকীকে আলবানী একে ‘হাসান’ বলে তাহকীক করেছেন। মিরকাত শরীফ, ১১ খণ্ড ২৭৮ পৃ., আশিয়াতুল লুমআত (ফার্সী), ৪র্থ খণ্ড ৬৩২ পৃ. জামে তিরমিযী, ৬ষ্ঠ খণ্ড, ১৭৭ পৃ. হা/৩৮৫৮
৩৭০. ইমাম তিরমিযী, আস-সুনান, ৬ খণ্ড, ১০১ পৃ., হা/৩৪৪৭
৩৭১. সুরা কাহাফ, আয়াত নং-৬৫
নিভর্রযোগ্য কয়েকটি তাফসীর থেকে এই আয়াতের তাফসীর দেয়া হল, আল্লামা কুরতুবী (رحمة الله) বলেন-
(وَعَلَّمْناهُ مِنْ لَدُنَّا عِلْماً) أَيْ عِلْمَ الْغَيْبِ.
-‘‘আমার পক্ষ থেকে তাকে জ্ঞান দান করলাম অর্থাৎ ইলমে গায়ব।’’ ৩৭২
টিকা━━━━━━━━━━━━━━━━━━━━
৩৭২. ইমাম কুরতবী, তাফসীরে কুরতুবী, ১১ খণ্ড, ১৬ পৃ.,
❏ তিনি আরও উল্লেখ করেন-
ابْنُ عَطِيَّةَ: كَانَ عِلْمُ الْخَضِرِ عِلْمُ مَعْرِفَةِ بَوَاطِنَ قَدْ أُوحِيَتْ إِلَيْهِ، لَا تُعْطِي ظَوَاهِرَ الْأَحْكَامِ أَفْعَالَهُ بِحَسَبِهَا، وَكَانَ عِلْمُ مُوسَى عِلْمُ الْأَحْكَامِ وَالْفُتْيَا بِظَاهِرِ أَقْوَالِ الناس وأفعالهم.
-‘‘ইবনে আতিয়্যাহ (رحمة الله) বলেন, হযরত খিযির (ﷺ)-এর জ্ঞান ছিল ইলমে মা‘রিফাত, ইলমে বাতেন যা মহান রব তাকে প্রদান করেছেন, তাই তাকে জাহেরী আহকাম সংক্রান্ত জ্ঞান দান করেননি, অপরদিকে মহান রব হযরত মূসা (عليه السلام) কে ইলমে আহকাম, জাহেরী ফাতওয়া দেয়ার জ্ঞান করেছেন, মানুষ সেগুলো বলবে এবং করবে।’’ (ইমাম কুরতবী, তাফসীরে কুরতুবী, ১১ খণ্ড, ১৬ পৃ.)
━━━━━━━━━━━o━━━━━━━━━
আল্লামা আলুসী (رحمة الله) তাফসীরে রুহুল মা‘আনী শরীফে বর্ণনা করেন-
وَعَلَّمْناهُ مِنْ لَدُنَّا عِلْماً أي علما لا يكتنه كنهه ولا يقادر قدره وهو علم الغيوب وأسرار العلوم الخفية
-‘‘আমি তাকে আমার পক্ষ থেকে এমন ইলম দান করলাম যার প্রকৃতি সম্পর্কে কেউ জানেন না এবং এর মর্যাদা বুঝাও কারো পক্ষে সম্ভব নয়, তা হল অদৃশ্যের জ্ঞান।’’৩৭৩
৩৭৩. আল্লামা মাহমুদ আলূসী, তাফসীরে রুহুল মাআনী, ৮ খণ্ড ৩১১ পৃ.
আল্লামা আবুস সাউদ (رحمة الله) বলেন-
{وَعَلَّمْنَاهُ مِن لَّدُنَّا عِلْمًا} خاصاً لا يُكتنه كُنهُه ولا يُقادَرُ قدرُه وهو علمُ الغيوب
-‘‘আমার পক্ষ থেকে তাকে ইলম দান করলাম যার প্রকৃতি এবং মযার্দা সম্পর্কে কেউ অবগত নন আর তা হল অদৃশ্যের জ্ঞান।’’ ৩৭৪
৩৭৪. তাফসীরে আবুস সাউদ, ৫ম খণ্ড, ২৩৪ পৃ.
তাফসীরে রুহুল বয়ানে এসেছে-
وَعَلَّمْناهُ مِنْ لَدُنَّا عِلْماً خاصا هو علم الغيوب والاخبار عنها باذنه تعالى على ما ذهب اليه ابن عباس رضى الله عنهما او علم الباطن
-‘‘আমি তাকে আমার পক্ষ থেকে ইলম দান করলাম আর তা হল অদৃশ্য জ্ঞান।’’ ৩৭৫
টিকা━━━━━━━━━━━━━━━━━━━━
৩৭৫. আল্লামা ইসমাঈল হাক্কী, তাফসিরে রুহুল বায়ান, ৫/২৭০ পৃ.,
❏ আল্লামা খাযেন (رحمة الله) এ আয়াতের তাফসিরে লিখেন-
وَعَلَّمْناهُ مِنْ لَدُنَّا عِلْماً أي علم الباطن إلهاما ولم يكن الخضر نبيا عند أكثر أهل العلم.
-‘‘আমি খিযির (عليه السلام) কে ইলমে বাতেন (গায়ব), ইলহাম দান করেছি, অধিকাংশ আহলে ইলমের মতে, তিনি নবী ছিলেন না।’’ (ইমাম খাযেন, তাফসিরে খাযেন, ৩/১৭১ পৃ.)
❏ আল্লামা নিযামুদ্দীন নিশাপুরী (رحمة الله) তার তাফসিরে লিখেন-
وَعَلَّمْناهُ مِنْ لَدُنَّا عِلْماً إشارة إلى أنه تعالى أطلعه على بواطن الأشياء وحقائقها،
-‘‘মহান রব এ আয়াতে ইশারা করেছেন যে, হযরত খিজির (عليه السلام) কে ইলমে বাতেনী (গায়ব) জ্ঞান এবং প্রত্যেক বিষয়ের হাকীকতের (রহস্যের) জ্ঞান দান করেছেন।’’ (তাফসিরে নিশাপুরী, ৪/৪৫৪ পৃ.)
❏ আহলে হাদিসদের ইমাম শাওকানী লিখেন-
وَعَلَّمْناهُ مِنْ لَدُنَّا عِلْماً وَهُوَ مَا عَلَّمَهُ اللَّهُ سُبْحَانَهُ مِنْ عِلْمِ الْغَيْبِ الَّذِي اسْتَأْثَرَ بِهِ.
-‘‘আল্লাহু সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা হযরত খিযির (ﷺ) কে যে জ্ঞান দান করেছেন তা হল ইলমে গায়ব।’’ (শাওকানী, তাফসিরে ফতহুল কাদীর, ৩/৩৫৪ পৃ.)
❏ তিনি আরও লিখেছেন-
فَقَدْ كَانَ عِلْمُ مُوسَى عِلْمَ الْأَحْكَامِ الشَّرْعِيَّةِ وَالْقَضَاءِ بِظَاهِرِهَا، وَكَانَ عِلْمُ الْخَضِرِ عِلْمَ بَعْضِ الْغَيْبِ
-‘‘হযরত মূসা (عليه السلام) কে আল্লাহ আহকামে শরীয়াহ এবং দুনিয়াবী বিচার কার্যের জ্ঞান দান করেছেন, আর হযরত খিযির (ﷺ) কে ইলমে গায়ব দান করেছেন।’’ (শাওকানী, ফতহুল কাদীর, ৩/৩৫৪ পৃ.)
━━━━━━━━━━o━━━━━━━━━━
প্রিয় পাঠক ! হযরত খিজির (عليه السلام) নবী হওয়ার ব্যাপার মতানৈক্য আছে কিন্তু অলী হওয়ার ব্যাপার কারো দ্বিমত নেই। ৩৭৬
টিকা━━━━━━━━━━━━━━━━━━━━
৩৭৬.
❏ ইমাম বাগভী (رحمة الله) এ আয়াতের ব্যাখ্যায় লিখেন-
وَعَلَّمْناهُ مِنْ لَدُنَّا عِلْماً، أَيْ عِلْمَ الْبَاطِنِ إِلْهَامًا وَلَمْ يَكُنِ الْخَضِرُ نَبِيًّا عِنْدَ أَكْثَرِ أَهْلِ الْعِلْمِ.
-‘‘এবং তাকে আমি ইলমে লাদু্ন্নী দান করেছি অর্থাৎ ইলহাম তথা ইলমে বাতেন দান করেছি, হযরত খিজির (عليه السلام) কোনো নবী ছিলেন না, এটিই অধিকাংশ আহলে ইলমের অভিমত।’’ (ইমাম বাগভী, শরহে সুন্নাহ, ৩/৩০৫ পৃ., তাফসিরে মাযহারী, ৬/৫০ পৃ., তাফসিরে লুবাব ফি উলূমিল কিতাব, ১২/৫৩০ পৃ.)
❏ আল্লামা ইবনে কাসির (رحمة الله) তার তাফসিরে লিখেন-
وَذَهَبَ كَثِيرُونَ إِلَى أَنَّهُ لَمْ يَكُنْ نَبِيًّا. بَلْ كَانَ وَلِيًّا. فَاللهُ أَعْلَمُ.
-‘‘অধিকাংশ মুফাসসিরীনে কেরামগণ বলেছেন, নিশ্চয় হযরত খিযির (ﷺ) নবী ছিলেন না, বরং তিনি মহান রবের ওলী ছিলেন। মহান রবই এ বিষয়ে ভাল জানেন।’’ (তাফসিরে ইবনে কাসির, ৫/১৮৭ পৃ.)
❏ বিখ্যাত মুফাসসির ইমাম ওয়াহেদী (رحمة الله) এ আয়াতের তাফসিরে লিখেন-
{وعلمناه من لدنا علماً} أعطيناه علماً من علم الغيب
-‘‘তাঁকে আমি ইলম দান করেছি তথা ইলমে গায়ব দান করেছি।’’ (তাফসিরে ওয়াহেদী, ১/৬৬৭ পৃ.)
❏ ইমাম নাসাফী (رحمة الله) তার বিখ্যাত তাফসীরে লিখেন-
{وَعَلَّمْنَاهُ مِن لَّدُنَّا عِلْمًا} يعني الإخبار بالغيوب وقيل العلم اللدني ما حصل للعبد بطريق الإلهام
-‘‘তাঁকে আমি ইলম দান করেছি তথা ইলমে গায়ব দান করেছি, কোনো কোনো মুফাসসিরানে কিরাম বলেছেন, আল্লাহ তাঁকে ইলমে ল্লাদুনি দান করেছেন, যা বান্দা ইলহামের মাধ্যমে হাসিল করেন।’’ (তাফসিরে নাসাফী, ২/৩১০ পৃ.)
❏ ইমাম আবু হাফস সিরাজুদ্দীন দামেস্কী (رحمة الله) তার তাফসিরে লিখেন-
وَعَلَّمْنَاهُ مِن لَّدُنَّا عِلْماً} أي: علم الباطن إلهاماً.
-‘‘আমি খিযির (عليه السلام) কে ইলমে বাতেন (গায়ব), ইলহাম দান করেছি।’’ (তাফসিরে লুবাব ফি উলূমিল কিতাব, ১২/৫৩০ পৃ.)
❏ আল্লামা কাযি নাসীরুদ্দীন বায়যাভী (رحمة الله) তার তাফসিরে লিখেন-
وهو علم الغيوب.
-‘‘খিজির (عليه السلام) কে মহান রব যে জ্ঞান দান করেছেন তা হল ইলমে গায়ব।’’ (তাফসিরে বায়যাভী, ৩/২৮৭ পৃ.)
❏ আল্লামা কাযি সানাউল্লাহ পানিপথি (رحمة الله) লিখেন-
الحاصل للاولياء بالإلهام
-‘‘(হযরত খিযির আঃ কে যে জ্ঞান দান করা হয়েছে তা) আউলিয়ায়ে কিরাম ইলহামের মাধ্যমে ইলমে গায়বের জ্ঞান অর্জন করে।’’ (কাযি সানাউল্লাহ পানিপথি, তাফসিরে মাযহারী, ৬/৫০ পৃ.)
━━━━━━━━━━o━━━━━━━━━━
সুতরাং খিজির (عليه السلام) এর মর্যাদা যদি এতো উঁচু হয়, তবে হুযুরে আকরাম (ﷺ)’র মর্তবা কতবড় হবে? যারা হুযুর (ﷺ)’র শানে শ্রীহীন শব্দ ব্যবহার করে তারা কতবড় অজ্ঞ আর মুর্খ।
হযরতে ফারুকে আজম (رضي الله عنه) এর আকিদা:
বুখারী শরীফের بدء الخلق ও মিশকাত শরীফের بدء الخلق وذكر الانبياء নামক অধ্যায়ে হযরত উমর (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত আছে-
وَعَن عمرؓ قَالَ: قَامَ فِينَا رَسُولُ اللَّهِ ﷺ مَقَامًا فَأَخْبَرَنَا عَنْ بَدْءِ الْخَلْقِ حَتَّى دَخَلَ أَهْلُ الْجَنَّةِ مَنَازِلَهُمْ وَأَهْلُ النَّارِ مَنَازِلَهُمْ حَفِظَ ذَلِكَ مَنْ حَفِظَهُ وَنَسِيَهُ مَنْ نسيَه . رَوَاهُ البُخَارِيّ ـ
-‘‘হযরত উমর (رضي الله عنه) বলেন, রাসূল (ﷺ) এক জায়গায় আমাদের সাথে অবস্থান করছিলেন। সেখানে তিনি আমাদেরকে সৃষ্টির সূচনা থেকে সংবাদ দিচ্ছিলেন। এমনকি বেহেস্তবাসী দোযখবাসীগণ নিজ নিজ ঠিকানায় পৌঁছে যাওয়া অবধি পরিব্যাপ্ত যাবতীয় অবস্থা ও ঘটনাবলীর বর্ণনা প্রদান করেন। যিনি ওসব বিষয় স্মরণ রাখতে পেরেছেন তিনি তা স্মরণ রেখেছেন, আর যিনি স্মরণ রাখতে পারেননি তিনি ভুলে গেছেন।’’ ৩৭৭
৩৭৭.
ক. ইমাম বুখারী : আস্ সহীহ্ :৬/২৮৬ পৃ. হাদিস, ৩১৯২
খ. খতিব তিবরীযি : মিশকাতুল মাসাবিহ্ : ৪/৫০৬ পৃ. হাদিস, ৫৬৯৯
গ. ইমাম আবূ দাউদ, আস্-সুনান, ৪/৪৪১ পৃ. হাদিস, ৪২৪০
ঘ. ইমাম তিরমিযী, আস্-সুনান, ৪/৪১৯ পৃ. হাদিস, ২১৯১
ঙ. ইমাম আহমদ, আল-মুসনাদ, ৫/৩৮৫ পৃ.
চ. ইমাম বুখারী, আস্-সহীহ, ১১/৪৯৪ পৃ. হাদিস, ৬৬০৪
ছ. ইমাম মুসলিম, আস্-সহীহ, ৫/২২১৭ পৃ. হা/২৮৯১ এবং ২৩
জ. ইমাম ইবনে মাযাহ, আস্-সুনান, ২/১৩৪৬পৃ. হাদিস, ৪০৫৩
ঝ. ইমাম খতিব তিবরিযী, মিশকাতুল মাসাবীহ, কিতাবুল ফিতান, ৪/২৭৮ পৃ. হাদিস, ৫৩৭৯
হযরত হোযাইফা (رضي الله عنه)’র আকিদা:
মিশকাত শরীফের الفتن অধ্যায়ে হযরত হুযাইফা (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত হয়েছে-
مَا تَرَكَ شَيْئًا يَكُونُ فِي مقَامه إِلَى قِيَامِ السَّاعَةِ إِلَّا حَدَّثَ بِهِ حَفِظَهُ مَنْ حَفِظَهُ وَنَسِيَهُ مَنْ نَسِيَهُ ـ
-‘‘রাসূল (ﷺ) সে স্থানে কিয়ামত পর্যন্ত যা কিছু ঘটবে সব কিছুর খবর দিয়েছেন। কোন কিছুই বাদ দেননি। যারা মনে রাখার তারা মনে রেখেছেন, যারা ভুলে যাওয়ার ভুলে গেছেন।’’ ৩৭৮
টিকা━━━━━━━━━━━━━━━━━━━━
৩৭৮.
ক. ইমাম মুসলিম : আস্ সহীহ্ : ২/৩৯০ পৃ. হাদিস নং : ২৮৯২ এবং ২৩
খ. খতিব তিবরিযি : মিশকাত শরীফ, পৃ-৪৬১, হাদিস নং : ৫৩৭৯
গ. বুখারী : আস সহীহ : ১১/৪৯৪ পৃ. হা/৬৬০৪,
❏ এ বিষয়ে আরেকটি বর্ণনার হাদিস রয়েছে- হযরত আবু সাঈদ খুদরী (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন,
وَعَنْ أَبِي سَعِيدٍ الْخُدْرِيِّ ؓ قَالَ: قَامَ فِينَا رَسُولُ اللَّهِ ﷺ خَطِيبًا بَعْدَ الْعَصْرِ فَلَمْ يَدَعْ شَيْئًا يَكُونُ إِلَى قِيَامِ السَّاعَةِ إِلَّا ذَكَرَهُ حَفِظَهُ مَنْ حَفِظَهُ وَنَسِيَهُ مَنْ نَسِيَهُ
-‘‘রাসূল (ﷺ) আসরের নামাযের পর দাঁড়ালেন আর খুতবা দিতে গিয়ে কিয়ামত পর্যন্ত যা কিছু সংঘটিত হবে তা তিনি বর্ণনা করেছেন যিনি এসব বিষয় স্মরণ রাখতে পেরেছেন তিনি তা স্মরণ রেখেছেন, আর যিনি স্মরণ রাখতে পারেননি তিনি ভুলে গেছেন।’’
(ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল : আল মুসনাদ : ৫/১৫৩ পৃ. হা/২১৩৯৯, ইমাম তাবরানী : মু‘জামুল কাবীর : ২/১৫৩ পৃ. হা/১৬৪৭, ইমাম হাজার হায়সামী: মাজমাউয যাওয়াইদ: ৮/২৬৩ পৃ. হা/১৩৯৭১, আল্লামা শায়খ ইউসুফ নাবহানী : হুজ্জাতুল্লাহি আলাল আলামীন : ৩৩৬ পৃ., কাজী আযাজ, শিফা শরীফ, ১/২০৭ পৃ., জুরকানী, শরহুল মাওয়াহেব, ৭/২০৬ পৃ., আহমদ, আল-মুসনাদ, ৫/৩৮৫ পৃ., আবূ ই‘য়ালা, আল-মুসনাদ, ৯/৪৬ পৃ. হাদিস, ৫১০৯, বায্যার, আল-মুসনাদ, ৯/৩৪১ পৃ. হা/৩৮৯, ইবনুল বার্, আল-ইস্তিআ‘ব, ৪/১৬৫৫ পৃ., সুয়ূতি, খাসায়েসুল কোবরা, ২/১৮৪ পৃ., ইমাম কাস্তাল্লানী, মাওয়াহেবে লাদুন্নীয়া, ৩/৯৫ পৃ.)
হযরত আবদুল্লাহ বিন উমর (رضي الله عنه)’র আকিদা:
বোখারী শরীফের ব্যাখ্যাকার আল্লামা কাস্তাল্লানী (رحمة الله) সিরাতে রাসূল (ﷺ) এর উপর লিখিত মাওয়াহেবে ল্লাদুনি গ্রন্থে একটি হাদিস শরীফ এনেছেন-
عن ابن عمر، قال : قَالَ رَسُولُ اللَّهِ ﷺ : إِنَّ اللَّهَ رَفَعَ لِي الدُّنْيَا فَأَنَا أَنْظُرُ إِلَيْهَا وَإِلَى مَا هُوَ كَائِنٌ فِيهَا إِلَى يَوْمِ الْقِيَامَةِ كَمَا أَنْظُرُ إِلَى كَفِّي هَذِهِ-
-‘‘হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে উমর (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত। রাসূল (ﷺ) ইরশাদ ফরমান, আল্লাহ্ তা‘য়ালা আমার সামনে সারা দুনিয়া তুলে ধরেছেন। ফলে আমি এ দুনিয়াতে এবং এতে কিয়ামত পর্যন্ত যা কিছু হবে এমনভাবে দেখতে পাচ্ছি যেভাবে আমি আমার নিজ হাতকে দেখতে পাচ্ছি।’’ ৩৭৯
৩৭৯. ইমাম নুয়াঈম বিন হাম্মাদ, আল-ফিতান, ১/২৭ পৃ. হা/২, আবু নুয়াইম ইস্পাহানী : হিলইয়াতুল আউলিয়া : ৬/১০১ পৃ. দারুল কিতাব আল-আরাবী, বয়রুত, লেবানন, তাবরানী : মু’জামুল কাবীর, ১৩/৩১৮ পৃ. হা/১৪১১২, ইমাম কাস্তাল্লানী : মাওয়াহেবে লাদুন্নিয়া : ৩/৯৫ পৃ. ইমাম জুরকানী : শরহুল মাওয়াহেব : ৭/২০৪ পৃ., মুত্তাকী হিন্দী : কানযুল উম্মাল : ১১/৪২০৯ পৃ. হা/৩১৯৭৯ ও ১১/৪২০ পৃ. হা/৩১৯৭১, ইমাম সুয়ূতি : খাসায়েসুল কোবরা : ২/১৮৫ পৃ. সুয়ূতি : জামিউল জাওয়ামে : হা/৪৮৪৯ ও জামিউস সগীর, ১/৩৫৪৭ পৃ. হা/৩৫৪৭ এবং জামিউল আহাদিস, ৮/৫৫ পৃ. হা/৬৮৫৪, হাইসামী : মাযমাউয যাওয়ায়েদ : ৮/২৮৭ পৃ. হা/১৪০৬৭, শায়খ ইউসুফ নাবহানী : জামিউল কাবীর, হা/৪৮৪৯, আবুল কাসেম তায়মী ইস্পাহানী, আল-হুজ্জাত, ২/৪৪০ পৃ. হা/৪২১, ইমাম তায়মী ইস্পাহানী, আত্ তারগীব ওয়াত তারহীব, ২/২১১ পৃ. হা/১৪৫৬, দারুল হাদিস, কায়রু, মিশর, শায়খ ইউসুফ নাবহানী, ফতহুল কাবীর, ১/৩১৬ পৃ. হা/৩৪০৫, এ হাদিসটিকে আহলে হাদিস আলবানীসহ আরও বিভিন্ন বাতিলপন্থীগণ যঈফ বলে উড়িয়ে দিতে চেয়েছেন, তাদের এ মিথ্যাচারের জবাব জানতে আমার লিখিত ‘প্রমাণিত হাদিসকে জাল বানানোর স্বরূপ উন্মোচন’ ১ম খণ্ডের ২৮৩-২৮৯ পৃষ্ঠায় দেখুন।
হযরত আবু হোরায়রা (رضي الله عنه)’র আকিদা:
হযরত আবু হোরায়রা (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, এক ব্যক্তি এসে রাসূলে পাক (ﷺ) এর দরবারে এসে আরয করলেন-
دُلَّنِي عَلَى عَمَلٍ إِذَا عَمِلْتُهُ دَخَلْتُ الْجَنَّةَ. قَالَ: تَعْبُدُ اللَّهَ وَلَا تُشْرِكُ بِهِ شَيْئًا وَتُقِيمُ الصَّلَاةَ الْمَكْتُوبَةَ وَتُؤَدِّي الزَّكَاةَ الْمَفْرُوضَةَ وَتَصُومُ رَمَضَانَ . قَالَ: وَالَّذِي نَفْسِي بِيَدِهِ لَا أَزِيدُ عَلَى هَذَا شَيْئًا وَلَا أَنْقُصُ مِنْهُ. فَلَمَّا وَلَّى قَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: ্রمَنْ سَرَّهُ أَنْ يَنْظُرَ إِلَى رَجُلٍ مِنْ أَهْلِ الْجنَّة فَلْينْظر إِلَى هَذَا
-‘‘আমাকে এমন আমল সম্পর্কে বলুন যা পালন করে জান্নাতে প্রবেশ করতে পারি। রাসূলে পাক (ﷺ) বললেন, আল্লাহর ইবাদত করবে, তাঁর সাথে কাউকে শরীক করবে না। ফরয নামায প্রতিষ্ঠা করবে, ফরয যাকাত প্রদান করবে, রমযানের রোযা পালন করবে। এরপর লোকটি আল্লাহর শপথ করে বললেন, আমি এর কমবেশ করবো না। সে চলে গেলে রাসূলে পাক (ﷺ) বললেন, যে কোন জান্নাতী লোক দেখতে চায়, সে যেন এ ব্যক্তির দিকে দেখে।“ ৩৮০
৩৮০. খতিব তিবরিযি, মিশকাত, (ভারতীয় ১২ পৃ.) ১/১১ পৃ. হা/১৪, সহীহ বুখারী, ২/১০৫ পৃ. হা/১৩৯৭, সহীহ মুসলিম, ১/১৪ পৃ. হা/১৫
এই হাদিসে রাসূলে পাক (ﷺ) দুনিয়াতেই তাকে জান্নাতের কথা বলেছেন।
হযরত আনাস (رضي الله عنه)’র আকিদা:
হযরত আনাস (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, অদৃশ্যের সংবাদদাতা নবী রাসূলে পাক (ﷺ) ইরশাদ করেন,
إِنَّ الْجَنَّةَ تَشْتَاقُ إِلَى ثَلاَثَةٍ: عَلِيٍّ، وَعَمَّارٍ، وَسَلْمَانَ.
-‘‘তিন ব্যক্তির জন্য জান্নাত অধির আগ্রহে আছে, তাঁরা হলেন, হযরত আলী (رضي الله عنه) হযরত আম্মার (رضي الله عنه) এবং হযরত সালমান (رضي الله عنه)’’ ৩৮১
৩৮১. ইমাম তিরমিযী, আস-সুনান, ৬ষ্ঠ খণ্ড, ১৪১ পৃ. হা/৩৭৯৭, তিনি বলেন হাদিসটি ‘হাসান’।
সায়্যিদুনা আবদুল্লাহ বিন উমর (رضي الله عنه)’র আকিদা:
তিনি বলেন, রাসূলে পাক (ﷺ) ইরশাদ করেন,
يَنْزِلُ عِيسَى بن مَرْيَمَ إِلَى الْأَرْضِ فَيَتَزَوَّجُ وَيُولَدُ لَهُ وَيَمْكُثُ خَمْسًا وَأَرْبَعِينَ سَنَةً ثُمَّ يَمُوتُ فَيُدْفَنُ مَعِي فِي قَبْرِي
-‘‘হযরত ঈসা বিন মারিয়াম (عليه السلام) পৃথিবীতে অবতরণ করবেন, অতঃপর তাঁর শাদী হবে, তাঁর সন্তান হবে এবং তিনি ৪৫ বছর জীবিত থাকবেন অতঃপর তিনি ইন্তিকাল করবেন এবং আমার পাশেই তাকে দাফন করা হবে।’’ ৩৮২
৩৮২. খতিব তিবরিযি, মিশকাত শরীফ, (ভারতীয় ৪৮৮ পৃ.) ৩/১৫২৪ পৃ., হা/৫৫০৮ আশিয়াতুল লুম‘আত, ৪র্থ খণ্ড, ৩৫৩ পৃ., মোল্লা আলী ক্বারী, মিরকাত ১০ খণ্ড, ২৩৩ পৃ.
হযরত আবু সাঈদ খুদরী (رضي الله عنه)’র আকিদা :
হযরত আবু সাঈদ খুদরী (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন,
الحَسَنُ وَالحُسَيْنُ سَيِّدَا شَبَابِ أَهْلِ الجَنَّةِ.
-‘‘রাসূলে পাক (ﷺ) ইরশাদ করেন, হযরত হাসান এবং হোসাইন (رضي الله عنه) জান্নাতিদের যুবকদের সর্দার।’’ ৩৮৩
৩৮৩. ইমাম তিরমিযী, আস-সুনান, ৬ষ্ঠ খণ্ড, ১১৭ পৃ. হা/৩৭৬৮, খতিব তিবরিযি, মিশকাত শরীফ, ৩/১৭৩৭ পৃ. হা/৬১৬৩, নাসাঈ, আস-সুনানুল কোবরা, ৭/৪৬০ পৃ. হা/৮৪৭৫, সহীহ ইবনে হিব্বান, ১৫/৪১১ পৃ. হা/৬৯৫৯
অদৃশ্যের সংবাদদাতা, নবীয়ে পাক (ﷺ) ইরশাদ করেন,
عَنْ أَبِي سَعِيدٍ الخُدْرِيِّ، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: اتَّقُوا فِرَاسَةَ المُؤْمِنِ فَإِنَّهُ يَنْظُرُ بِنُورِ اللهِ
-‘‘মুমিনের ফিরাসত (দূর দৃষ্টি) কে ভয় করে। কেননা তাঁরা আল্লাহর নূর দ্বারা দেখেন।’’ ৩৮৪
৩৮৪. জামে তিরমিযি, ৫/২৯৮ পৃ. হা/৩১২৭, এ বিষয়ক হাদিসের মান মুতাওয়াতিরের ন্যায়, বিস্তারিত জানতে আমার লিখিত ‘প্রমাণিত হাদিসকে জাল বানানোর স্বরূপ উন্মোচন’ ১ম খণ্ডের ৩৩৮-৩৪৪ পৃষ্ঠায় দেখুন।
আল্লামা মোল্লা আলী কারী হানাফী (رحمة الله)’র আকিদা:
আল্লামা মোল্লা আলী ক্বারী হানাফী (رحمة الله) বলেন,
قَالَ الطِّيبِيُّ: وَذَلِكَ أَنَّ النُّفُوسَ الزَّكِيَّةَ الْقُدُسِيَّةَ إِذَا تَجَرَّدَتْ عَنِ الْعَلَائِقِ الْبَدَنِيَّةِ عَرَجَتْ وَوَصَلَتْ بِالْمَلَأِ الْأَعْلَى، وَلَمْ يَبْقَ لَهَا حِجَابٌ، فَتَرَى الْكُلَّ كَالْمُشَاهَدِ بِنَفْسِهَا
-‘‘ইমাম তিব্বী (رحمة الله) বলেন, পুত পবিত্র আত্মা যখন শরীর থেকে পৃথক হয় তখন মালায়ে আলার সাথে মিলিত হয় তখন তাদের মাঝে আর কোন পর্দা থাকে না। সেজন্য তারা সকল বস্তু এমনভাবে দেখেন যেন তা তাঁদের সামনে।’’ ৩৮৫
৩৮৫. মোল্লা আলী ক্বারী, মিরকাত শরহে মিশকাত, ২য় খণ্ড ৭৪৪ পৃ. হা/৯২৬-এর আলোচনা।
ইমামে রব্বানী আল্লামা আবদুল ওহ্হাব শা‘রানী (رحمة الله)’র আকিদা:
তিনি তাঁর শায়খ (পীর) সায়্যিদ আলী খাওয়াস (رحمة الله) কে বলতে শুনেছেন-
لَاتَكْمِيْلُ الرَّجُلُ عِنْدَنَا حَتَّى يَعْلَمَ حَرْكَاتِ مُرِيْدِه فِى اِنْتَقَالِه فِى الْاَصْلَابِ وَهُوَ مِنْ يَوْمِ اَلَسْتُ اِلَى اِسْتَقْرَارِه فِى الْجَنَّةِ اَوْ فِى النَّارِ
-‘‘আমাদের মতে মুরশিদ ততক্ষণ পর্যন্ত কামিল হন না যতক্ষণ না তিনি তাঁর মুরিদের ঔরসে স্থানান্তর হতে মৃত্যুর পর সে কি জান্নাতী নাকি দোজখী তা জানেন না।’’ (ইমাম শা‘রানী, কাবারিয়্যাতিল আহমার বর হাশিয়ায়ে ইয়াকিয়াত ওয়াল জাওয়াহির)
আল্লামা সায়্যিদি আবদুল ওহ্হাব শা‘রানী (رحمة الله) তাঁর অপর অনাবদ্য রচনা তবকাতে কুবরার মধ্যে ওলীয়ে কামেলের ইলম সম্পর্কে বলেছেন-
وأَطْلَعَه عَلَى غَيْبِه حَتَّى لَا تُنْبُتُ شَجَرَةٌ وَلَا تُخْضُرُ وَرَقةٌ اِلَّا بِنَظْرِه
-‘‘আল্লাহ তা‘য়ালা অলীদেরকে ইলমে গায়ব সম্পর্কে অবগত করেন যার ফলে কোন গাছ উৎপন্ন হলে এবং পাতা সবুজ হলে তা তারা দেখেন।’’ ৩৮৬
৩৮৬. ইমাম শা‘রানী, আত-তাবকাতুল কুবরা, ১/১২২ পৃ. মিশর হতে প্রকাশিত
কুতুবে জামান হযরত আবদুল আজিজ দিবাগ (رحمة الله)’র আকিদা:
যাকে দেওবন্দীরাও অলী হিসেবে শ্রদ্ধা করে, তিনি বলেন,
مَا السَّمَوتُ السَّبْعُ وَالْاَرْضُوْنَ السَّبْعُ فِى نَظَرِ الْعَبْدِ الْمُؤْمِنِ اِلَّا كَحَلْقَةٍ مُلْقَاةٍ فِى فُلَاةٍ مِنَ الْاَرْضِ
-‘‘মুমিনে কামেলের নিকট সাত আসমান জমিন এমন যেন কোন নিজর্ন মরুভূমিতে একটি আংটি নিক্ষেপ করা হল।’’ ৩৮৭
৩৮৭. আল-ইবরিয, ২৪২ পৃ. মিশর হতে প্রকাশিত
শাহ ওয়ালী উল্লাহ মুহাদ্দিস দেহলভী (رحمة الله)’র আকিদা:
তিনি বলেন-
عارفين كاملين پر ہر چيز روشن اور ظاهر ہو جاتى امور غائبہ بہى منكشف ہوجا تے ہيں
-‘‘আরেফীন কামেলীনগণের নিকট প্রত্যেক বস্তু প্রকাশ হয়ে যায় এবং অদৃশ্য বস্তু উন্মুক্ত হয়ে যায়।’’ ৩৮৮
৩৮৮. শায়খ আবদুল হক মুহাদ্দিসে দেহলভী, আশিয়াতুল লুমআত, (ফার্সী) ১ম খণ্ড, ১২১ পৃ.
اولياء الله كو لوگوں كے دلوں كے حالت اور آئنده وقوع پذيہ ہو نے وا لے واقعات كا علم ہوتا ہے
-‘‘আল্লাহর ওলীগণ মানুষের অন্তরের খবর এবং ভবিষ্যতে সংঘটিত ঘটনা সমূহের ইলম রয়েছে।’’ ৩৮৯
৩৮৯. আল-কাওলুল জামিলের অনুবাদ শিফাউল আলীল, ৫৬ পৃ.
শাহ্ সাহেব (رحمة الله) বলেন,
সম্মানিত পাঠকবর্গ! প্রত্যেক বিষয় কুরআন সুন্নাহ থেকে প্রমাণ করা হয়েছে। যার থেকে রাসূলে পাক (ﷺ), সাহাবায়ে কেরাম, আহলে বায়াত (رضي الله عنه)’র আকিদা এবং দৃষ্টিভঙ্গি দিবালোকের ন্যায় স্পষ্ট হয়েছে। কিন্তু দেওবন্দী এবং গাইরে মুকাল্লিদের মতে এই সকল আকিদা শিরক, কুফর এবং হারাম। এর পরেও তারা আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতের দাবী করে। সুতরাং কুরআন সুন্নাহর আলোকে প্রমাণিত হল তারা আহলে সুন্নাত ওয়াল জাম‘আত নয়।
واخر دعونا ان الحمد لله رب العلمين
Comments
Post a Comment