মানাকিবে আহলে বাইত

بِسْــــــــــــــــمِ اﷲِالرَّحْمَنِ الرَّحِيم


কিতাবঃ মানাকিবে আহলে বাইত

লেখক, অনুবাদক, সংকলকঃ মাসুম বিল্লাহ সানি

শিক্ষার্থীঃ এম.বি.বি.এস, ইসলামিক রিসার্চার।

ব্লগারঃ ইসলামী বিশ্বকোষ
www.sunnipedia.org
www.sunni-encyclopedia.com


━━━━━━━━━━━━━━━

কিতাবঃ মানাকিবে আহলে বাইত
লেখক, সংকলক, অনুবাদকঃ
মাসুম বিল্লাহ সানি (০১৭১০৩৫৫৩৪২)
প্রথম প্রকাশকালঃ ৯.১২.১৯
কপিরাইট © লেখক কর্তৃক সংরক্ষিত।

উৎসর্গঃ
আহলুল বাইত ও শোহাদায়ে কারবালা


লেখক পরিচিতিঃ

তরুণ লেখক মুহাম্মদ মাসুম বিল্লাহ সানি, ২০১২ সাল থেকে কতিপয় ধর্মীয় বিষয় নিয়ে জ্ঞানচর্চা ও গবেষণা শুরু করে। এরই ফলশ্রুতিতে ২০১৫ সালে অনলাইন এক্টিভিটিস্ট হিসেবে ইসলামী-বিশ্বকোষ (সুন্নি-বিশ্বকোষ) নামক ব্লগ পরিচালনা শুরু করে। যা ইতিমধ্যেই ১০ হাজারের অধিক বিষয়ে জ্ঞানের বিরল তথ্যভান্ডারে পরিনত হয়েছে। অতঃপর অনলাইনে দ্বীনের সঠিক আকিদা প্রচারে সাইবার টিম গঠন করে একগুচ্ছ ধর্মপ্রাণ তরুণ মুসলমানদের নিয়ে কাজ করে যাচ্ছে। সাইবার টিমের মাধ্যমে বিভিন্ন ইসলামিক এপ্স, পি.ডি.এফ, ব্লগিংসহ অন্যান্য কাজ করে যাচ্ছে। ধর্মীয় গবেষণার পাশাপাশি MBBS কোর্সে অধ্যয়ণরত আছেন। লেখক ৮ম শ্রেণী থেকে বিভিন্ন কাব্য ও সাহিত্য রচনায় নিয়োজিত। 
লেখকের রচিত কবিতার সংখ্যা প্রায় শতাধিক। লিখিত উপন্যাস সংখ্যা ২। লেখকের লিখিত ইসলামিক কিতাবের মধ্যে রয়েছে ১.মানাকিবে আহলে বাইত, ২.কদম্বুচি শিরক নয় সুন্নাহ, ৩. আন নাবী আল উম্মী, ৪. ফাজায়েলে দুরুদ, ৫. ইলমে দ্বীন অর্জনের ফজিলত, ৬. ইবাদত কবুলে আকিদার বিশুদ্ধতার গুরুত্ব, ৭. আল-বিদআতঃ বিদআতে সাইয়্যা ও বিদআতে হাসানা, ৮.শব্দ ব্যবহারের শিষ্টাচার, ৯.সৃষ্টিতত্ত্ব ও নূরতত্ত্ব। যেগুলো এখনও অপ্রকাশিত।

মসলকে আ'লা হযরতের অনুসারী। ২০১৫ সালের দিকে পীরে কামেল, আওলাদে রাসূল আল্লামা সৈয়দ মুহাম্মদ তাহের শাহ (মা.জি.আ.) এর নিকট বায়াত গ্রহণ করে তরিকায়ে কাদরীয়াতে দাখিল হন। 


লেখকের কথাঃ

আহলে বাইত হল রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর নিকটাত্মীয়। বিশেষ করে মওলা আলী (رضي الله عنه), হযরত ফাতেমা (رضي الله عنه), ইমাম হাসান ও ইমাম হোসাইন (رضي الله عنه)। তারা আমাদের আত্মার খোরাক, ভালবাসার মূল উপাদান। তাঁদের শান মান সম্পর্কে এত বিপুল সংখ্যক হাদিস এসেছে যে কেউ যদি তা অস্বীকার করতে যায় দ্বীন থেকে বহির্ভূত হয়ে কাফির হয়ে যাবে। বিবাহ বন্ধন ছিন্ন হয়ে যাবে, জীবনের যাবতীয় ইমান, আমল সব বরবাদ হয়ে যাবে। আমি অধম এখানে ৩০০ এর অধিক প্রমাণ দ্বারা আহলে বাইতের শান তোলে ধরার চেষ্টা করলাম। আহলে বাইতের আলোচনা ইসলামের মধ্যে দুইটি দল সবচেয়ে বেশি করে থাকে। যেমনঃ এক. আহলুস সুন্নাহ (হক্ব) দুই. শিয়া (বাতিল) আর বাকি যত বাতিল ফির্কা আছে তারা সারা বছরই আহলে বাইতের আলোচনা থেকে উদাসীন থাকে।

আহলে বাইতের প্রকৃত ও পুঙ্খানুপুঙ্খরূপে অনুসরণ করে কেবল মাত্র আহলুস সুন্নাহ। আর শিয়ারা আহলে বাইতের প্রতি অতিরঞ্জন করতে গিয়ে সাহাবীদের বিরোধিতা করে বসে। শিয়াদের কিছু দল সাহাবীদের অনেককে কাফির, মুনাফিক বলে থাকে, কুরআনকে বানোয়াটভাবে বিকৃত করা হয়েছে বলে মিথ্যাচার করে। সুতরাং, তারা যে "আহলে বাইত নিয়ে অতিরঞ্জিত করে বিপথে চলে যাবে" সে সম্পর্কেও হাদিসে পাকে কিতাবুল ফিতানে ভবিষ্যৎবানী এসেছে।
আর অপর পক্ষ যারা আহলে বাইতকে ত্যাগ করেছিল তাদের প্রাথমিক সূচনা হয় খারেজীদের মাধ্যমে। তারা ইসলামের প্রচীনতম বাতিল ফির্কা। তারা ছিল আহলে বাইত বিদ্বেষী। কালের পরিক্রমায় বিবর্তনের ধারায় বদলে গেছে তাদের নাম, কখনও পরিবর্ধন ও পরিবর্তনের মাধ্যমে দ্বীনের মধ্যে বিবর্তন নিয়ে এসেছে। তারাই হল আহলুল বিদাআত ওয়াল ফুরকা। 

হাদিসে পাকে, 
রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর ভালবাসা যেমন ঈমানদারের জন্য ফরজ তেমনি আহলে বাইত প্রতি ভালবাসাও ফরজ। তাঁরা হলেন ইমানের পূর্বশর্ত। 
তাই তাঁদেরকে বাদ দিয়ে তামাম জিন্দেগী নিরলস পরিশ্রম করে, নিরবিচ্ছন্নভাবে মক্কা মদিনার সর্বোচ্চ সম্মানিত স্থানগুলোতেও যদি কেউ ইবাদত বন্দিগীতে জীবন কাটিয়ে দেয় তবুও তারা জাহান্নামের জ্বালানী হবে। কারণ, ইমানহীন আমল জাহান্নামে দগ্ধ হবে।

আহলে বাইতকে আঁকড়ে ধরার জন্য কয়েকটি হাদিসই যথেষ্ট, (এক.) আহলে বাইত নূহ (আ.) এর কিস্তির মত যে এতে আরোহণ করবে সে মুক্তি পাবে, যে বিমুখ হল সে জাহান্নামে নিক্ষিপ্ত হবে। (দুই.) তোমরা দুটি ভারী বস্তু আঁকড়ে ধরো। ১) আল্লাহর কিতাব, ২) আমার আহলে বাইত।

হাদিসগুলোর অনেক সূত্র রেফারেন্সসহ কিতাবের মধ্যে আলোচিত হয়েছে। আফসোসের বিষয় হলঃ আহলে বাইতকে নিয়ে বেশ কিছু মানুষ বড়ই উদাসীন ও বিভ্রান্ত।
তাদের ধারণা,
১. আহলে বাইতকে ভালবাসলেই শিয়া (কারণ এদের নামের স্মরণ শিয়ারাই বেশি করে কিন্তু তাঁদের সঠিক অনুসরণ থেকে তারা বঞ্চিত)
২. আহলে বাইতকে ভালবাসা ফরজ এটা অনেক সুন্নীও জানে না। (তারা মূলত দ্বীনী জ্ঞান থেকে অজ্ঞ)
৩. আহলে বাইত কারা? আর তাদের প্রতি কেমন ভালবাসা, মায়া-মুহাব্বত থাকা উচিত সে সম্পর্কে সবচেয়ে বেশি উদাসীন ও অজ্ঞ স্কুল, কলেজ, ভার্সিটি পড়ুয়া ছাত্ররা।
আমি এমনও দেখেছি মাষ্টার্স লেভেলের ছাত্র ইমাম হোসাইন (رضي الله عنه) ও কারবালার হৃদয়বিদারক ঘটনা সম্পর্কে কিছুই জানে না। অনেকে তো এটাও বলে কারবালা কি? যাদের প্রতি ভালবাসা ফরজ অথচ মুসলমান হয়েও আহলে বাইত কারা সেটাই অনেকে জানে না। এরা কেমন মুসলমান আমি বিষ্মিত! 

"হোসাইন হামারা হে, হাম হোসাইন কা,
গোলামে পাঞ্জাতন নেহী মিটেগা!
যো হোসাইন কা নেহী ও মুস্তফা (ﷺ) কা নেহী,
যো মুস্তফা (ﷺ) কা নেহী ও খোদা কা নেহী।
যো খোদা কা নেহী ও হামারা ভি নেহী।
হামারে লিয়ে হামারা জান সেভি জিয়াদা
হকদার তো আহলে বাইত হ্যায়।"

তারা বলে যে, কবরে এসব প্রশ্ন হবে না। অবাক লাগে প্রতিটি বিষয়েঃ যেমনঃ এই কবরে কি কি প্রশ্ন হবে? হাশরে কিসের কিসের জবাব দেয়া ছাড়া উপায় নেই। এসব হাদিসের অসংখ্য বর্ণনা আছে। আমরা তো এর গুটি কয়েকটিই জেনেছি মাত্র। তাই না জেনে কিভাবে ফতোয়া দেয়া হয়? দ্বীন ইসলাম কি শুধু কবরের তিনটি প্রশ্নে সীমাবদ্ধ? নাকি দ্বীনের যাবতীয় হুকুম আহকাম মানার মত মানার নাম? আল্লাহ পাক এই অবুজ ও অজ্ঞদের সঠিক জ্ঞান দান করুন। সৃষ্টিকুলের মধ্যে এই আহলে বাইতের অপরিসীম শান সম্পর্কে অজ্ঞদের জানিয়ে দেয়ার জন্য দলিলভিত্তিক (মানাকিবে আহলে বাইত/ আহলে বাইতের ফজিলত) পুস্তকটি প্রনয়ণ করলাম। আশা করি আহলে বাইতকে ভালবাসতে গিয়ে যাবতীয় গোঁড়ামী বন্ধ হয়ে যাবে। সেই সাথে জেনে রাখুন- আহলে বাইতের শিক্ষা হল সাহাবায়ে কেরামের অনুসরণ। সুতরাং সাহাবায়ে কেরামকে বাদ দিয়ে কষ্মীনকালেও দ্বীন প্রতিষ্ঠা করা যাবে না, ইমান ঠিক রাখা যাবে না।
পরিশেষে, 

"ইশক্বের নহরে, জীবন প্রহরে,
ভালবাসার শাখা-শৃংখলে,
বিন্দু ফোঁটায় সিন্দু বইছে!

নগ্ন তনুতে বিদগ্ধ হৃদের বাস,
লিখে গেলাম ব্যর্থ ইতিহাস,
জ্বালামুখী খঞ্জরে রক্তাক্ত ক্বলব।

বৃত্তের কেন্দ্র তুমি, বেষ্টনী তামাম প্রাণ।
তোমার রশিতে টান পরেছে জমীন-আসমান!

অবলুন্ঠিত, অবিমিশ্র মায়া,
ঘেঁচড়া নিহীত ক্ষীণ অন্তর-কায়া!
তব প্রেমের ক্ষুরধার খঞ্জরে,
বিলীন এ সফরনামা।"

          অধম,
✍ [মাসুম বিল্লাহ সানি]


অধ্যায়ঃ ১ আহলে বাইত ফযীলত 


আহলে বাইয়াত কারা?

❏ হাদিস ১:

باب فَضَائِلِ أَهْلِ بَيْتِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم ‏‏
حَدَّثَنَا أَبُو بَكْرِ بْنُ أَبِي شَيْبَةَ، وَمُحَمَّدُ بْنُ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ نُمَيْرٍ، – وَاللَّفْظُ لأَبِي بَكْرٍ – قَالاَ حَدَّثَنَا مُحَمَّدُ بْنُ بِشْرٍ، عَنْ زَكَرِيَّاءَ، عَنْ مُصْعَبِ بْنِ شَيْبَةَ، عَنْ صَفِيَّةَ بِنْتِ شَيْبَةَ، قَالَتْ قَالَتْ عَائِشَةُ خَرَجَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم غَدَاةً وَعَلَيْهِ مِرْطٌ مُرَحَّلٌ مِنْ شَعْرٍ أَسْوَدَ فَجَاءَ الْحَسَنُ بْنُ عَلِيٍّ فَأَدْخَلَهُ ثُمَّ جَاءَ الْحُسَيْنُ فَدَخَلَ مَعَهُ ثُمَّ جَاءَتْ فَاطِمَةُ فَأَدْخَلَهَا ثُمَّ جَاءَ عَلِيٌّ فَأَدْخَلَهُ ثُمَّ قَالَ ‏(‏ إِنَّمَا يُرِيدُ اللَّهُ لِيُذْهِبَ عَنْكُمُ الرِّجْسَ أَهْلَ الْبَيْتِ وَيُطَهِّرَكُمْ تَطْهِيرًا‏)

৬০৪৩। আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা ও মুহাম্মাদ ইবনু আবদুল্লাহ ইবনু নূমায়র (রহঃ) … আয়িশা (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (ﷺ) সকালে বের হলেন। তাঁর গায়ে ছিলো কাল পশম দ্বারা খচিত একটি পশমী চাঁদর। হাসান ইবনু আলী (رضي الله عنه) এলেন, তিনি তাঁকে চাঁদরের ভেতর ঢুকিয়ে নিলেন। হুসায়ন ইবনু আলী (رضي الله عنه) এলেন, তিনিও তার সঙ্গে (চাদরে) ঢুকে পড়লেন। ফাতিমা (رضي الله عنه) এলেন, তাকেও ভেতরে ঢুকিয়ে ফেললেন। অতঃপর আলী (رضي الله عنه) এলেন, তাঁকেও ভেতরে ঢুকিয়ে নিলেন। পরে বললেনঃ হে আহলে বাইত! আল্লাহ তাআলা তোমাদের থেকে অপবিত্রতাকে বিদুরিত করে তোমাদের অতিশয় পবিত্রময় করতে চান। [সহীহ মুসলিম (ইফাঃ)]

❏ হাদিস ২:

حَدَّثَنَا نَصْرُ بْنُ عَبْدِ الرَّحْمَنِ الْكُوفِيُّ، حَدَّثَنَا زَيْدُ بْنُ الْحَسَنِ، هُوَ الأَنْمَاطِيُّ عَنْ جَعْفَرِ بْنِ مُحَمَّدٍ، عَنْ أَبِيهِ، عَنْ جَابِرِ بْنِ عَبْدِ اللَّهِ، قَالَ رَأَيْتُ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم فِي حَجَّتِهِ يَوْمَ عَرَفَةَ وَهُوَ عَلَى نَاقَتِهِ الْقَصْوَاءِ يَخْطُبُ فَسَمِعْتُهُ يَقُولُ ‏ “‏ يَا أَيُّهَا النَّاسُ إِنِّي قَدْ تَرَكْتُ فِيكُمْ مَا إِنْ أَخَذْتُمْ بِهِ لَنْ تَضِلُّوا كِتَابَ اللَّهِ وَعِتْرَتِي أَهْلَ بَيْتِي 

৩৭৮৬। জাবির ইবনু আবদিল্লাহ (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-কে আমি তার বিদায় হজ্জে আরাফার দিন তার কাসওয়া নামক উষ্ট্রীতে আরোহিত অবস্থায় বক্তৃতা দিতে দেখেছি এবং তাকে বলতে শুনেছিঃ হে লোক সকল! নিশ্চয় তোমাদের মধ্যে আমি এমন জিনিস রেখে গেলাম, তোমরা তা ধারণ বা অনুসরণ করলে কখনও পথভ্রষ্ট হবে নাঃ আল্লাহ তা’আলার কিতাব (আল-কুরআন) এবং আমার ইতরাত অর্থাৎ আমার আহলে বাইত। [সূনান আত তিরমিজী]

❏ হাদিস ৩:

حَدَّثَنَا قُتَيْبَةُ، حَدَّثَنَا مُحَمَّدُ بْنُ سُلَيْمَانَ بْنِ الأَصْبَهَانِيِّ، عَنْ يَحْيَى بْنِ عُبَيْدٍ، عَنْ عَطَاءِ بْنِ أَبِي رَبَاحٍ، عَنْ عُمَرَ بْنِ أَبِي سَلَمَةَ، رَبِيبِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم قَالَ لَمَّا نَزَلَتْ هَذِهِ الآيَةُ عَلَى النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلمَّ ‏:‏ ‏(‏ إنمَا يُرِيدُ اللَّهُ لِيُذْهِبَ عَنْكُمُ الرِّجْسَ أَهْلَ الْبَيْتِ وَيُطَهِّرَكُمْ تَطْهِيرًا ‏)‏ فِي بَيْتِ أُمِّ سَلَمَةَ فَدَعَا فَاطِمَةَ وَحَسَنًا وَحُسَيْنًا فَجَلَّلَهُمْ بِكِسَاءٍ وَعَلِيٌّ خَلْفَ ظَهْرِهِ فَجَلَّلَهُمْ بِكِسَاءٍ ثُمَّ قَالَ ‏”‏ اللَّهُمَّ هَؤُلاَءِ أَهْلُ بَيْتِي فَأَذْهِبْ عَنْهُمُ الرِّجْسَ وَطَهِّرْهُمْ تَطْهِيرًا ‏”‏ ‏.‏ قَالَتْ أُمُّ سَلَمَةَ وَأَنَا مَعَهُمْ يَا نَبِيَّ اللَّهِ قَالَ ‏”‏ أَنْتِ عَلَى مَكَانِكِ وَأَنْتِ عَلَى خَيْرٍ ‏”‏ ‏.‏

৩২০৫। উমার ইবনু আবী সালামাহ্ (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত আছে, যিনি রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর আশ্রয়ে লালিত পালিত হন। তিনি বলেন, উম্মু সালামাহ رضي الله عنها -এর ঘরে রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর উপর যখন এ আয়াত অবতীর্ণ হল (অনুবাদ) “আল্লাহ তা’আলা তো চান আহলে বাইত হতে অপবিত্রতা দূর করতে এবং তোমাদেরকে সম্পূর্ণরূপে পবিত্র করতে”– (সূরা আহযাবঃ ৩৩), তখন তিনি ফাতিমাহ, হাসান ও হুসাইন (رضي الله عنهم )-কে ডাকলেন এবং তাদেরকে একটি কম্বলের ভিতর ঢেকে নিলেন।
আলী (رضي الله عنه) তার পিছনে ছিলেন। তিনি তাকেও কম্বলের ভিতর নিয়ে নিলেন। তারপর তিনি বললেনঃ “হে আল্লাহ! এরা আমার আহলে বাইত’ (পরিবারের সদস্য)। তুমি তাদের ভিতর হতে অপরিচ্ছন্নতা দূর করে দাও এবং সম্পূর্ণরূপে পরিচ্ছন্ন করে দাও।” উম্মু সালামাহ (رضي الله عنها ) বলেন, হে আল্লাহর নবী! আমিও কি তাদের অন্তর্ভুক্ত? তিনি বললেনঃ তুমি স্ব-স্থানে থাক এবং তুমি কল্যাণের মধ্যেই আছ। [সূনান আত তিরমিজী]

❏ হাদিস ৪:

حَدَّثَنَا قُتَيْبَةُ بْنُ سَعِيدٍ، حَدَّثَنَا مُحَمَّدُ بْنُ سُلَيْمَانَ الأَصْبَهَانِيُّ، عَنْ يَحْيَى بْنِ عُبَيْدٍ، عَنْ عَطَاءِ بْنِ أَبِي رَبَاحٍ، عَنْ عُمَرَ بْنِ أَبِي سَلَمَةَ، رَبِيبِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم قَالَ نَزَلَتْ هَذِهِ الآيَةُ عَلَى النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلمَّ ‏:‏ ‏(‏ إنمَا يُرِيدُ اللَّهُ لِيُذْهِبَ عَنْكُمُ الرِّجْسَ أَهْلَ الْبَيْتِ وَيُطَهِّرَكُمْ تَطْهِيرًا ‏)‏ فِي بَيْتِ أُمِّ سَلَمَةَ فَدَعَا النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم فَاطِمَةَ وَحَسَنًا وَحُسَيْنًا فَجَلَّلَهُمْ بِكِسَاءٍ وَعَلِيٌّ خَلْفَ ظَهْرِهِ فَجَلَّلَهُ بِكِسَاءٍ ثُمَّ قَالَ ‏”‏ اللَّهُمَّ هَؤُلاَءِ أَهْلُ بَيْتِي فَأَذْهِبْ عَنْهُمُ الرِّجْسَ وَطَهِّرْهُمْ تَطْهِيرًا ‏”‏ ‏.‏ قَالَتْ أُمُّ سَلَمَةَ وَأَنَا مَعَهُمْ يَا نَبِيَّ اللَّهِ قَالَ ‏”‏ أَنْتِ عَلَى مَكَانِكِ وَأَنْتِ إِلَى خَيْرٍ ‏”‏ ‏.‏

৩৭৮৭। নাবী (ﷺ)-এর পোষ্য উমার ইবনু আবী সালামাহ (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন, উম্মু সালামাহ্ (رضي الله عنها )-এর ঘরে এ আয়াত নবী (ﷺ)-এর উপর অবতীর্ণ হয়
(অনুবাদ) “হে নাবীর পরিবার। আল্লাহ তা’আলা তো চান তোমাদের হতে অপবিত্রতা দূর করতে এবং তোমাদেরকে সম্পূর্ণভাবে পবিত্র করতে”– (সূরা আহযাব ৩৩)। সে সময় নবী (ﷺ), ফাতিমা, হাসান ও হুসাইন (رضي الله عنهم)-কে ডাকেন এবং তাদেরকে একখানা চাদরে আবূত করেন। তার পেছনে আলী (رضي الله عنه) ছিলেন। তিনি তাকেও চাদরে ঢেকে নেন, তারপর বললেনঃ “হে আল্লাহ! এরা আমার আহলে বাইত। অতএব তুমি তাদের হতে অপবিত্রতা অপসারণ করে দাও এবং তাদেরকে উত্তমভাবে পবিত্র কর”। সে সময় উম্মু সালামাহ্ (رضي الله عنها ) বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! আমিও তাদের অন্তর্ভুক্ত কি? তিনি বললেনঃ তুমি স্বস্থানে আছ এবং তুমি কল্যাণের মাঝেই আছ।
[সূনান আত তিরমিজী]

❏ হাদীস ৫:

হযরত সাআদ ইবনু আবি ওয়াক্কাস (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত হয়েছে, তিনি বলেন,

لما نزلت هذه الآية فقل تعالواندع أبنائنا وأبنائكم دعا رسول الله صلى الله عليه وسلم عليا وفاطمة وحسنا وحسينا فقال: اللهم هؤلاء اهلی

অর্থাৎ, রাসূল (ﷺ) হযরত আলী, হযরত ফাতিমা, হযরত হাসান ও হযরত হােসাইন (رضي الله عنه) কে ডাকলেন। অতঃপর বললেন, “হে আল্লাহ! এঁরা আমার আহলে বাইত তথা বংশধর।” (সহীহ বুখারী ও সহীহ মুসলিম শরীফ)


আহলে বাইত পুতঃপবিত্রঃ

❏ হাদীস ১:

 عن أنس بن مالك رضي الله عنه: أن رسول الله صلى الله عليه وسلم كان يمر بباب فاطمة ستة أشهر إذا خرج إلى
 صلاة الفجر، يقول: الصلاة! يا أهل البيت: (إِنَّمَا يُرِيدُ اللهُ لِيُذْهِبَ عَنكُمُ الرِّجْسَ أَهْلَ الْبَيْتِ وَيُطَهِّرَكُمْ تَطْهِيرًا

আনস ইবনে মালিক (رضي الله عنه) বর্ণনা করেন যে, যখন মহানবী (ﷺ) ফজর এর নামাযের জন্য বের হতেন, তখন তিনি ফাতেমা (رضي الله عنها ) এর দরজা দিয়ে অতিক্রম করার সময় বলতেন, “হে আহলে বাইত।" সালাত আদায় করুন "এবং তারপর তিনি পবিত্র কুরআন থেকে নিম্নলিখিত আয়াতটি তেলাওয়াত করতেন,
"হে নবী পরিবারের সদস্যবর্গ। আল্লাহ কেবল চান তোমাদের থেকে অপবিত্রতা দূর করতে এবং তোমাদেরকে পরিপূর্ণরূপে পূতঃপবিত্র রাখতে। [ সুরা আহযাব ৩৩:৩৩ ]

তথ্যসূত্রঃ
●তিরমিজি, আল জামি-উস-সহীহ (৫: ৩৫২ # ৩২০৬)
●আহমাদ বিন হাম্বল, আল-মুসনাদ (৩: ২৫৯,২৮৫)
●আহমাদ বিন হাম্বল, ফাদাইল-উস-সাহাবাহ (২: ১ ৭৬১ # ১৩৪০, ১৩৪১)
●ইবনে আবী শায়বাহ, আল-মুসান্নাফ (৬: ৩৮৮ # ৩২২৭২)
●শায়বানী, আল-আহাদ ওয়াল-মাসানী (৫: ৩৬০ # ২৯৫৩)
●আব্দ বিন হুমাইদ, আল-মুসনাদ (পৃষ্ঠা.৩৬৭ # ১২২৩)
●হাকিম, আল-মুস্তাদরাক (৩: ১৭২ # ৪৭৪৮)
●তবারানী, আল-মুজাম-উল-কাবীর (৩: ৫৬ # ২৬৭১)
●বুখারী এটি আল-কুনায় আবুল হামরা থেকে বর্ণনা করেছেন (পৃষ্ঠা.২৫ # ২০৫)। 
●আবদ বিন হুমাইদ আল-মুসনাদে বুখারী থেকে বর্ণনা করেছেন (পৃষ্ঠা.১৭৩ # ৪৭৫)।

 ❏ হাদীস ২:

 عن صفية بنت شيبة، قالت: قالت عائشة رضي الله عنها: خرج النبي صلى الله عليه وسلم غداة وعليه مرط مرحل
 من شعر أسود. فجاء الحسن بن علي فأدخله، ثم جاء الحسين فدخل معه ثم جاءت فاطمة رضي الله عنها فأدخلها، ثم
 جاء علي فأدخله، ثم قال: (إِنَّمَا يُرِيدُ اللَّهُ لِيُذْهِبَ عَنكُمُ الرِّجْسَ أَهْلَ الْبَيْتِ وَيُطَهِّرَكُمْ تَطْهِيرًا

অতঃপর মহানবী হযরত মুহাম্মদ (ﷺ) এই আয়াতটি আবৃত্তি করলেন,"হে নবী পরিবারের সদস্যবর্গ। আল্লাহ কেবল চান তোমাদের থেকে অপবিত্রতা দূর করতে এবং তোমাদেরকে পরিপূর্ণরূপে পূতঃপবিত্র রাখতে। [ সুরা আহযাব ৩৩:৩৩ ]

তথ্যসূত্রঃ
●মুসলিম, আস-সহিহ (৪: ১৮৮৩ # ২৪২৪)
●ইবনে আবী শায়বাহ, আল-মুসান্নাফ (৬: ৩৭০ # ৩৬১০২)
●আহমাদ বিন হাম্বল, ফাদাইল-উস-সাহাবাহ (২: ২ ৬৭২ # ১১৪৯)
●ইবনে রাহওয়াহ, আল-মুসনাদ (৩: ৬৭৮ # ১২৭১)
●হাকিম, আল-মুস্তাদরাক (৩: ১৫৯ # ৪৭০৫)
●বায়হাকী, আস-সুনান-উল-কুবরা (২: ১৪৯)
●বাবারী, জামে-উল-বায়ান ফী তাফসীর আল-কুরআন (২২: ,,৭)
●বাগবী, মালিম-উত-তানজিল (৩: ৫২৯)
●ইবনে কাসির, তাফসির-কুরআন আল-আজিম (৩: ৪৮৫)
●সুয়ুতি, আদ-দুর-উল-মনসুর (৫০৫)

❏ হাদীস ৩:

মহানবী (ﷺ) হযরত আলী (عليه السلام), হযরত ফাতেমা (عليها السلام), ইমাম হাসান (عليه السلام), ইমাম হোসাইন (عليه السلام) সবাইকে একই চাদরের নিচে ঢেকে নিলেন এবং বললেন, “হে আল্লাহ! এরা আমার আহলে বাইত সুতরাং তাদেরকে অপবিত্রতা থেকে দূরে রাখুন এবং তাদেরকে পরিপূর্ণরূপে পবিত্র করুন।”

তথ্যসূত্রঃ
●তিরমিজি, আল জামি-উস-সহীহ (৫: ৩৫১,৬৬৩ # ৩২০৫,৩৭৮৭)
●আহমাদ বিন হাম্বল, আল-মুসনাদ (:: ২৯২)
●আহমাদ বিন হাম্বল, ফাদাইল-উস-সাহাবাহ (২: ৫৭৭ # ৯৯৪)
●বায়হাকী এটিকে সুনান-উল-কুবরায় (২: ১৫০) 
●হাকিম, আল-মুস্তাদরাক (২: ৪৫১ # ৩৫৫৮)
●হাকিম, আল-মুস্তাদরাক (৩: ১৫৮ # ৪৭০৫)
●তবারানী, আল-মুজাম-উল-কবির (৩: ৫৪ # ২৬৬২)
●তবারানী, আল-মুজাম-উল-কবির (৯: ২৫ # ৮২৯৫)
●তাবারানী, আল-মুজাম-উল-আওসাত (৪: ১৩৪ # ৩৭৯৯)
●বায়হাকী, আল-ইতিকাদ (পৃষ্ঠা ৩৩২)

❏ হাদীস ৪:

 عن أبي سعيد الخدري رضي الله عنه في قوله: (إِنَّمَا يُرِيدُ اللَّهُ لِيُذْهِبَ عَنكُمُ الرِّجْسَ أَهْلَ الْبَيْتِ) قال: نزلت في خمسة: في رسول الله صلى الله عليه وسلم و علي و فاطمة و الحسن و الحسين رضى الله عنهم

আবু সাইদ খুদরী (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত, হে আহলে বাইত! আল্লাহ তোমাদের থেকে (সমস্ত প্রকারের) অপবিত্রতা দূরে রাখতে চান এবং আপনাদেরকে সম্পূর্ণ পবিত্র করতে চান,' (আল আহজাব ৩৩:৩৩) "এটি নিম্নলিখিত পাঁচ ব্যক্তির সম্মানে প্রকাশিত হয়েছিল: রাসূলুল্লাহ (ﷺ), আলী (كرم الله وجهه), ফাতেমা (سلام الله علیھا), হাসান (عليه السلام) এবং হোসাইন (عليه السلام)।

 তথ্যসূত্রঃ
●তবারানী, আল-মুজাম-উল-আওসাত (৩: ৩৮০ # ৩৪৫৬)
●তবারানী, আল-মুজাম-উস-সাগীর (১: ২৩১ # ৩৭৫)
●ইব্বান হায়ান, তাবকাত-উল-মুহাদ্দিসি দ্বি আসভান (৩ # ৩৮৪)
●খতিব বাগদাদী, তারেখ বাগদাদ (১০: ২৭৮)
●তাবারী, জামে-উল-বায়ান ফা তাফসীর আল-কুরআন (২২:)

ইমামগণের বিবৃতিঃ

❏ পবিত্র আহলে বাইতের শানে আল্লাহ্ তাআলা পারা ২২, সূরা আহযাবের ৩৩নং আয়াতে ইরশাদ করেন:
"আল্লাহ্ তাে এটাই চান, হে নবীর পরিবারবর্গ যে, তােমাদের থেকে প্রত্যেক অপবিত্রতা দূরীভূত করে দেবেন এবং তােমাদেরকে পবিত্র করার মত পবিত্র করবেন।

❏ অধিকাংশ মুফাসসিরিনে কিরামের মতে এই আয়াতে মােবারকা হযরত সায়্যিদুনা আলীউল মুরতাদ্বা, হযরত সায়্যিদাতুনা ফাতেমা যাহরা (عليها السلام) , হযরত সায়্যিদুনা ইমাম হাসান (عليه السلام) এবং হযরত সায়্যিদুনা ইমাম হােসাইন (عليه السلام) দের শানে নাযিল হয়েছে। ইমাম আহমদ (رحمة الله) আবু সাঈদ খুদরী (رضي الله عنه) থেকে বর্ণনা করেন; এই আয়াত পাঞ্জাতন পাকের শানে নাযিল হয়। পাঞ্জাতন দ্বারা উদ্দেশ্য হুযুর নবী করীম (ﷺ) এবং হযরত আলী, হযরত ফাতেমা, হযরত ইমাম হাসান ও হযরত ইমা হােসাইন (عليهم السلام) ।

[ইমাম নঈমুদ্দীন মুরাদাবাদী (رحمة الله) - সাওয়ানেহে কারবালা, ৭৯,৮০]

❏ অন্য এক বর্ণনায় এও রয়েছে যে, হুযুর (ﷺ) এদের সাথে নিজের অন্য শাহজাদা আর নিকটাত্মীয় এবং পবিত্র বিবিদেরও অন্তর্ভুক্ত করেন।

(আস সাওয়ায়েকে মুহরিকা আল বাবুল হাদী আশার, ফসলুল আউয়াল, ১৪৪ পৃষ্ঠা)

❏ আয়াতে মােবারকার তাফসীরে ইমাম তাবারানী (رحمة الله) বলেন: অর্থাৎ হে আলে রাসূল (ﷺ)! আল্লাহ্ তাআলা চায় যে, আপনাদের নিকট থেকে মন্দ কথা, খারাপ বিষয় সমূহ দূরে রাখবেন এবং আপনাদের গুনাহের ময়লা আবর্জনা থেকে পুতঃ পবিত্র করে দেবেন।
(তারাবানী, পারা- ২২, আহযাব, আয়াত- ৩৩, ১০ম খন্ড, ২৯৬ পৃষ্ঠা)

❏ সদরুল আফাযীল ইমাম সায়্যিদ মুফতি মুহাম্মদ নাঈম উদ্দিন মুরাদাবাদী (رحمة الله) বলেন:

এই আয়াত আহলে বাইতে কিরামদের ফযীলতের উৎস এবং জানা গেল যে, সকল মন্দ চরিত্র এবং অবস্থা থেকে এদের বাঁচিয়ে রাখা হয়েছে। অনেক হাদীস শরীফে বর্ণিত আছে যে, আহলে বাইত জাহান্নামের জন্য হারাম (অর্থাৎ আহলে বাইতরা জান্নাতি) এবং এটাই সেই পবিত্রকরণের উপকারীতা এবং এটিই পরিণাম। আর যা তাঁদের পবিত্র অবস্থার যােগ্য নয় তা থেকে আল্লাহ্ তাআলা তাঁদের বাঁচিয়ে রাখতেন।

(ইমাম নঈমুদ্দীন মুরাদাবাদী (رحمة الله) - সাওয়ানেহে কারবালা, ৮২ পৃষ্ঠা)


আহলে বাইত এর দৃষ্টান্ত নূহ (عليه السلام) এর কিস্তির মতঃ

❏ হাদিস ১:

أخرج البزار عن عبد الله بن الزبیر رضی الله عنهما، أن النبيﷺ قال: مثل أهل بیتی، مثل سفينة نوح، من ركبها نجا، ومن تركها غرق ؛

ইমাম বাযযার (رحمة الله) হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে যুবাইর (رضي الله عنه)'র সূত্রে বর্ণনা করেন যে, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) ইরশাদ করেছেন “আমার পরিবারবর্গের (আহলে বাইত) হচ্ছে হযরত নূহ (عليه السلام) এর নৌকার মত, যে তাতে আরােহণ করল সে মুক্তি পেল আর যে তা ছেড়ে দিল (আরােহণ করলনা) সে ডুবে গেল”।

➠ তথ্যসূত্রঃ
১. কাশফুল আসতার-হাইছামী, ৩:২২২ (২৬২৩)।
২. মাজমাউয যাওয়ায়েদ-৯:১৬৮।

❏ হাদিস ২:

أخرج البزار عن ابن عباس رضي الله عنهما قال: قال رسول اللهﷺ مثل أهل بیتی مثل سفينة نوح، من ركبها نجا، ومن تركها غرق ؛

ইমাম বাযযার (رحمة الله) হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (رضي الله عنه) এর সূত্রে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) ইরশাদ করেছেন, “আমার পরিবারবর্গ (আহলে বাইত) এর উদাহরণ হচ্ছে হযরত নূহ (عليه السلام) এর নৌকার মত, যে তাতে আরােহণ করল সে মুক্তি পেল। আর যে তাকে ছেড়ে দিল (আরােহণ করলনা) সে ডুবে গেল”।

➠ তথ্যসূত্রঃ
১. কাশফুল আসতার-হাইছামী, ৩:২২২ (২৬১৫)। 
২. মাজমাউয যাওয়ায়েদ -৯:১৬৮।
৩. মু'জামুল কাবীর- তাবরানী, ৩:৪৬ (২৬৩৮)।
৪. আল-হুলিয়্যাহ- আবু নঈম, ৪:৩০৬।

❏ হাদিস ৩:

أخرج الطبرانی عن أبی ذر رضي الله عنه سمعت رسول اللهﷺ يقول: مثل أهل بيتي فيكم كمثل سفينة نوح في قوم نوح، من ركبها نجا، ومن تخلف عنها هلك. ومثل حطة بني إسرائيل.

ইমাম তাবরানী (رحمة الله) হযরত আবু যর (رضي الله عنه) এর সূত্রে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (ﷺ)কে বলতে শুনেছি, “তােমাদের মধ্যে আমার পরিবারবর্গ (আহলে বাইত) এর উদাহরণ হচ্ছে, হযরত নূহ (عليه السلام) এর উম্মতের জন্য তার নৌকার মত। যে তাতে আরােহন করল সে মুক্তি পেল। আর যে তা হতে পিছন পড়ে রইল (পরিত্যাগ করল) এবং আরােহণ করলনা সে ধ্বংস হল। আর আমার আহলে বাইতের আরাে উদাহরণ হচ্ছে, বনী ইসরাঈলের ‘হিত্তাতুন’ এর মত।

➠ তথ্যসূত্রঃ
১.তাবারানীঃ আল-মু'জামুল আওসাত-৪:২৮৩ (৩৫০২)/৬:২৫১ ৫৫৩২)।
২.আল-মু'জামুস সাগীর, ১:১৩৯।
৩.আল মুসতারিক, ইমাম হাকেম, ২:৩৭৩ (৩৩১২)। মুস্তাদরাক, খণ্ড ২, পৃষ্ঠা ৩৪৩, তিনি বলেন হাদিসটি মুসলিমের শর্তে সহীহ; 
৪.মুখতাসারু ইত্তিহাফুল খাইর, ৫:২১১ (৭৫৪০)।
৫.কাশফুল আসতার, হইছামী, ৩:২২২ (২৬১৪)।
৬.মুসনাদে ইমাম আহমদ
৭.মিশকাত শরিফ,খঃ-১১, হাঃ-৫৯২৩; 
৮.কাশফুল মাহজুব, পৃঃ-৭০, (দাতাগঞ্জ বকস); 
৯.তাফসীরে কাবির, খঃ-২৭, পৃঃ-১৬৭; 
১০.মুসনাদে হাম্বাল,খঃ-২, পৃঃ-৭৮৬; 
১১.কানযুল উম্মাল, খঃ-৬, পৃঃ-২৫৬; 
১২.মানাকেবে ইবনে মাগজিলি, পৃঃ-১৩২; 
১৩.আরবাইন নাবহানী,পৃঃ, ২১৬, 
১৪.সুয়ূতীঃ তারিখে খোলাফা, পৃঃ, ৩০৭; 
১৫.যাখায়েরুল উকবা, পৃঃ-২০; 
১৬.ইবনে হাজার মাক্কী; ইয়ানাবিউল মুয়াদ্দাত, পৃঃ-৩৭০, ৩০৮; 
১৭.আল তাবরানি, খঃ-৩, পৃঃ-৩৭-৩৮; 
১৮.হিলিয়াতুল আউলিয়া, খঃ-৪, পৃঃ-৩০৬; 
১৯.সুয়ূতি রহ., 'আল জামে আল সাগীর', খণ্ড ২, পৃষ্ঠা ৫৩৩, হাদিসটি হাসান।
২০.ইমাম সাখাভী রহ., আল বালদানাইত, পৃষ্ঠা ১৮৬, হাদিসটি হাসান।

❏ হাদিস ৪:

নবী করিম (ﷺ) এর প্রখ্যাত সাহাবী হযরত আবু জার আল গিফারী (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসুল (ﷺ) কে বলতে শুনেছি, আমার আহলে বাইত-এর সদস্যগণ [ আলী, ফাতেমা, হাসান ও হুসাইন عليهم السلام ] আমার উম্মতের জন্য তেমনি নাজাতের তরী, যেমনি আল্লাহ্‌র নবী নুহ (عليه السلام)-এর তরী মহাপ্রলয়ের সময় তার জাতির জন্য আশ্রয় ও নাজাতের তরী ছিলো। অর্থাৎ যারাই হযরত নুহ (عليه السلام)-এর তরীতে উঠেছিল তারাই মহাপ্রলয় থেকে নাজাত পেয়েছিল ( হযরত নুহ (عليه السلام) এর ছেলে তরীতে উঠেনি আল্লাহ তাকেও ক্ষমা করেন নি ) তেমনি এই উম্মতের যারা আমার আহলে বাইত কে অনুসরন করবে তারাই নাজাত পাবে এবং যারা অনুসরন করবে না তারা সুস্পষ্ট পথভ্রষ্ট ( জাহান্নামী ) হবে।

[ মেশকাত শরিফ, কাশফুল মাহজুব, মাসিক মদিনা, পীরের মর্যাদা ও ভুমিকা, জ্ঞানধারা, আস সাওয়ায়েকে মুহরেকা, তাফসীরে কাবির, মুসনাদে হাম্বাল, কানযুল উম্মাল, মুস্তাদারাকে হাকেম, তারিখে খোলফা, ইয়ানাবিউল মুয়াদ্দাত, মুয়াদ্দাতুল কুরবা, নুরুল আবসার, আল তাবরানি, আরজাহুল মাতালেব, ইত্যাদি।]

❏ হাদিস ৫:

হযরত   আবু   সাঈদ  খুদরী     (রাদ্বিয়াল্লাহু তা’আলা   আনহু)   থেকে   বর্নিত।  

أخرج الطبراني في الأوسط عن أبي سعيد الخدری رضی الله عنه سمعت رسول اللهﷺ يقول: إنما مثل أهل بیتی كمثل سفينة نوح، من ركبها نجا، ومن تخلف عنهاغرق ؛ وإنما مثل أهل بيتي فيكم كمثل حطة بني إسرائيل، من دخل غفر له ؛

ইমাম তাবরানী (رحمة الله) হাদিসটি সংকলন করেন। তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (ﷺ)কে বলতে শুনেছি, “নিশ্চয় আমার পরিবারবর্গের (আহলে বাইত) উদাহরণ হচ্ছে, নূহ (عليه السلام) এর নৌকার মত, যে তাতে আরােহন করল সে মুক্তি পেল। আর যে তা থেকে পিছিয়ে পড়ল (আরােহণ করলনা) সে ডুবে গেল। আর নিশ্চয় তােমাদের মধ্যে আমার পরিবারবর্গের (আহলে বাইত) উদাহরণ হচ্ছে, বনী ইসরায়েলের ‘হিত্তাতুন’ এর মত। যে তাতে প্রবেশ করল সে ক্ষমা প্রাপ্ত হল"।

➠ তথ্যসূত্রঃ
১.তাবরানী   কৃত মুজামুল  কাবির  ১২/৩৪, হাঃ ২৩৭৭, ২৬৩৭,২৬৩৮,২৬৩২
২. তাবারানীঃ মুজামুল আউছাত ৪/১০  হাঃ ৩৪৭৮ 
৩. মুজামুল ছাগির  ১/২৪০ হাঃ ৩৯১
৪. মুসতাদরেকে হাকেম ৩/১৬৩ হাঃ ৪৭২০

উপরোক্ত বর্ণনাগুলোর বিষয়বস্তুকে সাপোর্ট দেয় নিচের বর্ণনাগুলোঃ

❏ হাদিস ৬:

ইবনে নাজ্জার তার ‘তারীখ’-এ হযরত হাসান ইবনে আলী (رضي الله عنهما ) থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন,

أخرج ابن النجار في تاريخه عن الحسن بن علی رضی الله عنهما قال: قال رسول الله ﷺ لكل شيء أساس، وأساس الإسلام حب أصحاب رسول اللهﷺ وحب أهل بيته؛

রাসূলুল্লাহ (ﷺ) ইরশাদ করেছেন, “প্রত্যেক কিছুর একটি মূল আছে। আর ইসলামের মূল হচ্ছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাহাবাদের এবং তার পরিবারবর্গ (আহলে বাইত)'কে ভালবাসা”।

তথ্যসূত্র:
‘আদ-দুররুল মনসুর জালালুদ্দীন সুয়ুতী, ৬:৭।

❏ হাদিস ৭:

হযরত ইবনে আবিশ শায়বা এবং মুসাদ্দাদ উভয়ে তাদের ‘মুসনাদ'-এ হাকীম তিরমিজী ‘নাওয়াদেরুল উসূল’-এ আবু ইয়ালা এবং তাবরানী প্রমূখ হযরত সালমা ইবনে আকওয়া' (رضي الله عنه) থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন,
 
أخرج ابن أبي شيبة، ومسدد فی مسنديهما، والحكيم الترمذي في نوادر الأصول، وأبو يعلى، والطبراني عن سلمة بن الأكوع رضي الله عنه قال: قال رسول الله ﷺ النجوم أمان لأهل السماء وأهل بیتی أمان لأمتی؛

রাসূলুল্লাহ (ﷺ) ইরশাদ করেছেন, ‘তারকারাজি হচ্ছে আসমানের অধিবাসীদের জন্য নিরাপত্তা আর আমার পরিবারবর্গ (আহলে বাইত) হচ্ছে, আমার উম্মতের জন্য নিরাপত্তা।

➠তথ্যসূত্রঃ
১.আল-মাতালিবুল আলিয়া-ইবনে হাজর আল আসকালানী - ৪:২৬২ (৩৯৭২)।
২. মুখতাসারু ইত্তিহাফুস সাদাতিল মাহরা-বুসিরী-৫:২১০ (৭৫৩৬)। 
৩. নাওয়াদিরুল উসূল, ২:১৯৯। 
৪. আল মু'জামুল কাবীর- তাবরানী ৭:২২ (৬২৬০)।
৫. আল মারিফাতু ওয়াত তারীখু-আল ফাসভী- ১:৫৩৮। 
৬. যাবায়েরুল উকবা- আত্বাবারী, পৃষ্ঠা- ৪৯।
৭. কানযুল উম্মাল- আল মুত্তাকি আল হিন্দ-১২:১০১।
৮.আল-মসনদ-আর রুয়ানী -২:২৫৩ (১১৫২)/২৫৮(১১৬৪/১১৬৫)।


অধ্যায়ঃ ২ হাদিসে সাক্বলাইনঃ এর বিভিন্ন ইসনদ


ইমাম আহমদ, আবু ই'য়ালা প্রমূখ হযরত আবু সাঈদ খুদরী (رضي الله عنه) থেকে বর্ণনা


হাদিস আস-সাক্বলাইন
 
এই হাদিসটি হল মুতাওয়াতির পর্যায়ভুক্ত হাদিস। যা অস্বীকারকারী কাফির। 

❏ হাদিস ১:

ইমাম আহমদ, আবু ই'য়ালা প্রমূখ হযরত আবু সাঈদ খুদরী (رضي الله عنه) থেকে বর্ণনা করেন যে,

أخرج أحمد وأبو يعلى، عن أبي سعيد الخدری رضی الله عنه أن رسول الله صلى الله عليه وسلم قال: إنی أوشك أن أدعى فأجيب، وإني تارك فيكم الثقلين كتاب الله و عترتی أهل بیتی. وإن اللطيف الخبير خبرنی، أنهما لن يتفرقا حتى یردا على الحوض، فانظروا كيف تخلفونی فيهما؛

রাসূলুল্লাহ (ﷺ) ইরশাদ করেছেন, “আমি এটা কামনা করি যে, আমাকে (আল্লাহর পক্ষ হতে) আহ্বান করা হবে আর আমিও সাড়া দেব (ইন্তিকাল করব)। আর নিশ্চয় আমি তােমাদের জন্য দুটি খুবই গুরুত্বপুর্ণ জিনিস রেখে যাচ্ছি, (তা হচ্ছে) কিতাবুল্লাহ (কুরআন) এবং আমার পরিবার পরিজন তথা আহলে বায়ত। আর সুক্ষ্ম দ্রষ্টা (আল্লাহ) আমাকে খবর দিয়েছেন যে, তারা উভয়ে (কুরআন এবং আমার আহলে বায়ত) কখনাে পৃথক হবেনা যতক্ষণ না উভয়ে আমার নিকট হাউজে কাউছারের নিকট মিলিত হয়। সুতরাং আমার পরে তােমরা তাদের সাথে কেমন ব্যবহার করছ তা লক্ষ্য রেখ।

➠তথ্যসূত্রঃ
১. ইমাম আহমদঃ আল মুসনাদ- ৩: ৩৯৩ (১০৭৪৭)।
২. আবু ইয়ালা-২:৬ (১০১৭)/ ৯:(১০২৩)/ ৪৭:(১১৩৫)।
৩.ইমাম আহামাদ ইবনে হাম্বলঃ 'মুসনাদে আহমদ',৩য় খন্ড, ১৭ ও ২৬ পৃষ্ঠা।
৪.ইবনে আবি শাইবাহ, আবু ইয়ালা, ইবনে সা'দ
৫.কাঞ্জুল উম্মাল ১ম খন্ডের ৪৭ পৃষ্ঠা, হাদিস নং ৯৪৫।

❏ হাদিস ২ : 

أخرج البارودي عن أبی سعید رضی الله عنه قال: قال رسول اللهﷺ إني تارك فيكم ما إن تمسكتم به لن تضلوا: كتاب الله، سبب طرفه بيد الله، وطرفه بأيديكم، وعترتی أهل بیتی، وإنهما لن يتفرقا، حتی یردا على الحوض۔

বারুদী হযরত আবু সাঈদ (رضي الله عنه)'র সূত্রে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) ইরশাদ করেন, নিশ্চয় আমি তােমাদের মধ্যে দুটি জিনিস রেখে যাচ্ছি যতক্ষণ তােমরা তা আঁকড়ে ধরবে তােমরা কখনাে পথভ্রষ্ট হবেনা। (তার একটি হচ্ছে) কিতাবুল্লাহ (কুরআন) যার একপার্শ্ব আল্লাহর হাতে এবং অপর পার্শ্ব তােমাদের হাতে। আর (অপরটি হচ্ছে আমার পরিবারবর্গ (আহলে বাইত)। আর নিশ্চয় এরা উভয়ে (কুরআন ও আহলে বাইত) হাউজে কাউছারের নিকট আমার সাথে সাক্ষাত না করা পর্যন্ত পরস্পর বিচ্ছিন্ন হবেনা। 

তথ্যসূত্র:
১. কিতাবুস সুন্নাহ, ইবনে আবি আসেম, ২:৬৩০ (১৫৫৪)।
২. আল মারিফাতু ওয়াত তারিখ, আল ফাসভী ১:৫৩৭।
৩. আল মু'জামুল আউসাত, তাবরানী, ৪:২৬২ (৩৪৬৩)/৩২৮ (৩৫৬৬)।
৪. আল মুসনাদ, ইমাম আহমদ ৩:৩৮৮ (১০৭২০)।


রাবীঃ আবু সাইদ আল খুদরী (رضي الله عنه)

হাদিসে সাক্বলাইনঃ এর বিভিন্ন ইসনদঃ
রাবীঃ আবু সাইদ আল খুদরী (رضي الله عنه)

মুসনাদে আহমদ ইবনে হাম্বল আল শায়বানী: ➠`আবদুল্লাহ ইবনে আহমাদ ➠ (তাঁর পিতা) আহমদ ইবনে হাম্বল ➠ ইবনে নুমায়র` আল আবদুল মালেক ইবনে আবী সুলায়মান ➠ আতিয়াহুল আল-আওফী ➠ আবু সাইদ আল খুদরী (رضي الله عنه) থেকে ➠ রাসূলুল্লাহ (ﷺ) থেকে।

মুসনাদে আহমেদ ইবনে হাম্বল আল শায়বানী: ➠`আবদুল্লাহ ইবনে আহমাদ ➠ (তাঁর পিতা) আহমদ ইবনে হাম্বল ➠ আসওয়াদ ইবনে` আমির ➠ আবু ইসরা'ল ইসমাইল ইবনে ইসহাক আল-মালাই ➠ আতিয়াহ আবু সাইদ আল খুদরী (رضي الله عنه) থেকে ➠ রাসূলুল্লাহ (ﷺ) থেকে।

মুসনাদে আহমেদ ইবনে হাম্বল আল শায়বানী: ➠আবদুল্লাহ ইবনে আহমদ ➠ (তাঁর পিতা) আহমদ ইবনে হাম্বল ➠ আবু নদর ➠ মুহাম্মদ ইবনে তালাহাহ ➠ আল-আমাশ ➠ আতিয়া আল-আওফি ➠ আবু সাইদ আল খুদরী (رضي الله عنه) থেকে ➠ রাসূলুল্লাহ (ﷺ) থেকে।

মুসনাদে আহমেদ ইবনে হাম্বল আল শায়বানী:
➠ আবদুল্লাহ ইবনে আহমদ ➠ (তাঁর পিতা) আহমদ ইবনে হাম্বল ➠ ইবনে নুমায়র ➠ `আবদুল মালেক আবু সুলায়মান ➠ আতিয়াহ ➠ আবু সাইদ আল খুদরী (رضي الله عنه) থেকে ➠ রাসূলুল্লাহ (ﷺ) থেকে।

মুসনাদ আবী ইয়ালা: ➠ বিশর ইবনুল ওয়ালীদ ➠ মুহাম্মাদ ইবনে তালাহাহ ➠ আল-আমাশ ➠ আতিয়াহ ইবনে সাদ ➠ আবু সাইদ আল খুদরী (رضي الله عنه) থেকে ➠ রাসূলুল্লাহ (ﷺ) থেকে।

আল বাগভীর ইসনাদ: ➠ আবু আল-কাসিম `আব্দুল্লাহ ইবনে মুহাম্মদ ইবনে আবদুল আল-আজিজ আল-বাগভী ➠ বিশর ইবনে ওয়ালিদ আল-কিন্দি ➠ মুহাম্মদ ইবনে তালহাহ ➠ আল-আমাশ ➠ আতিয়া ➠ থেকে আবু সাইদ আল খুদরী (رضي الله عنه) থেকে ➠ রাসূলুল্লাহ (ﷺ) থেকে।

[মু'জামউস সাগীর - তাবারানী] ➠ হাসান ইবনে মুহাম্মদ ইবনে মুসআব আল-আশনানী আল-কুফি ➠ উব্বাদ ইবনে ইয়াকুব আল-আসাদি ➠ আবু` আব্দুর রহমান আল-মাস`দী ➠ কাসির আল-নাওয়া ➠ আতিয়াহ ➠ আবু সাইদ আল খুদরী (رضي الله عنه) থেকে ➠ রাসূলুল্লাহ (ﷺ) থেকে।

[মু'জামউস সাগীর - তাবারানী] ➠ হাসান ইবনে মুসলিম ইবনুল তাবিব আল সানানী ➠ আব্দুল হামিদ ইবনে সাবিহ ➠ ইউনূস ইবনে আরকাম-হারুন ইবনে সাদ ➠ আতিয়াহ ➠ আবু সাইদ আল খুদরী (رضي الله عنه) থেকে ➠ রাসূলুল্লাহ (ﷺ) থেকে।

[আবু ইসহাক আল সালাবী]: হাসান মুহাম্মদ ইবনে হাবিব আল-মুফাসসির বলেছেন:➠ “আমি আমার দাদার নিজের হাতে লেখা বইয়ে পেয়েছিলাম,➠ আহমাদ ইবনে-আহজাম আল-কাদী-মারওয়াজী➠আল-ফাদল ইবনে মুসা আল-শায়বানী➠আবদুল মালেক ইবনে আবী সুলায়মান ➠ আতিয়াহুল আল-উফী ➠ আবু সাইদ আল খুদরী (رضي الله عنه) থেকে ➠ রাসূলুল্লাহ (ﷺ) থেকে।

❏ হাদিস ৩ : 

أخرج الطبراني عن المطلب بن عبد الله بن حنطب، عن أبيه قال: خطبنا رسول اللهﷺ بالجحفة فقال: ألست أولى بكم من أنفسكم؟ قالوا: بلی یارسول الله، قال: فإني سائلكم عن اثنين، عن القرآن، وعترتی؛

ইমাম ত্বাবরানী হযরত মােত্তালিব ইবনে আব্দুল্লাহ ইবনে হানতাব (رضي الله عنه) থেকে তিনি তার পিতা থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) আমাদেরকে উদ্দেশ্য করে যুহফাতে ভাষণ দিলেন, অতঃপর বললেন, 'আমি কি তােমাদের জন্য তােমাদের প্রাণের চেয়েও নিকটে নই? সাহাবা সকলে বলল, অবশ্যই, হে আল্লাহর রাসূল (ﷺ)! তখন রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বললেন, তাহলে নিশ্চয় আমি তােমাদেরকে দুটি বিষয়ে দায়িত্ব দিচ্ছি, (তা হচ্ছে) কুরআনের ব্যাপারে এবং আমার পরিবারবর্গের (বংশধরদের) ব্যাপারে।
১.মাজমাউয যাওয়ায়েদ, হাইসামী ৫:১৯৫।
২.ইমাম তাবারানী।

❏ হাদিস ৪:

ইমাম বাযযার হযরত আবু হুরায়রা (رضي الله عنه) থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন,

أخرج البزار عن أبي هريرة رضي الله عنه قال: قال رسول اللهﷺ إني خلفت فيكم اثنين لن تضلوا بعدهما أبدأ: كتاب الله، ونسبی. ولن يتفرقا، حتی یردا على الحوض -

রাসূলুল্লাহ (ﷺ) ইরশাদ করেছেন, আমি তােমাদের জন্য দুটি প্রতিনিধি রেখে যাচ্ছি, (তােমরা এদের আঁকড়ে ধরলে) এরপর তােমরা কখনাে পথভ্রষ্ট হবে না। (তা হচ্ছে) আল্লাহর কিতাব (কুরআন) এবং আমার বংশধর (আহলে বাইত)। আর আমার কাছে হাউজে কাউছারের নিকট মিলিত না হওয়া পর্যন্ত এঁরা উভয়ে (কুরআন এবং আমার বংশধর) পরস্পর বিচ্ছিন্ন হবেনা।

➠তথ্যসূত্রঃ
১. কাশফুল আসতার- হাইছামী, ৩:২২৩ (২৬১৭), 
২. মাজমাউজ জাওয়ায়েদ-৯:১৬৩।

❏ হাদিস ৫:

ইমাম বাযযার হযরত আলী (رضي الله عنه)'র সূত্রে বর্ণনা করেন,

أخرج البزار عن علي رضي الله عنه قال: قال رسول اللهﷺ إنی مقبوض، وإني قد ترکت فیکم الثقلين: كتاب الله، وأهل بیتی، وإنكم لن تضلوا بعدهما۔

রাসূলুল্লাহ (ﷺ) ইরশাদ করেন, “নিশ্চয় আমি ইন্তিকাল করব। আর নিশ্চয় আমি তােমাদের জন্য দু'টি খুবই গুরুত্বপূর্ণ জিনিস রেখে যাচ্ছি। (তা হচ্ছে) কিতাবুল্লাহ (কুরআন) এবং আমার পরিবারবর্গ (আহলে বাইত)। আর নিশ্চয় তােমরা এ দু’টা শক্তভাবে আঁকড়ে ধরার পর কখনাে গােমরাহ হবেনা।

➠তথ্যসূত্রঃ
১. কাশফুল আসতার - হাইছামী-৩:২২১ (২৬১২)।
২. মাজমাউজ জাওয়ায়েদ - ৯:১৬৩।


রাবীঃ আলী ইবনে আবী তালিব (رضي الله عنه)

হাদিসে সাক্বলাইনঃ এর বিভিন্ন ইসনদঃ
রাবীঃ আলী ইবনে আবী তালিব (رضي الله عنه)

মুহাম্মাদ ইবনে জারীর আত-তাবারী [কাঞ্জুল উম্মাল থেকে]: কাসির ইবনে যায়েদ ➠ মুহাম্মদ ইবনে উমর ইবনে আলী (তাঁর পিতা) ➠`উমর (তাঁর পিতা) থেকে ➠ আলী ইবনে আবী তালিব (رضي الله عنه) থেকে বর্ণনা করেন।

মুসনাদ ইসহাক ইবনে রাহওয়াহ: আহমাদ ইবনে ফাদল ইবনে মুহাম্মাদ (ওয়াসিলাত আল মা'আল' এ) ➠ কাসির ইবনে জায়েদ আল রুমী ➠ আলী ইবনে আবী তালিব (رضي الله عنه) থেকে বর্ণনা করেন।

মুসনাদ আল বাযজার: আল-হুসেন ইবনে আলী ইবনে জাফর `➠ আলী ইবনে সাবিত ➠ সুআদ ইবনে সুলায়মান ➠ আবু ইসহাক ➠ আল-হারিস`➠ আলী ইবনে আবী তালিব (رضي الله عنه) থেকে বর্ণনা করেন।

আবাকাত এ আল-জুআবীঃ আবদুল্লাহ ইবনে মুসা ➠ (তাঁর পিতা) মুসা` ➠ `আবদুল্লাহ ইবনে হাসান ➠ (তাঁর পিতা) হাসান ➠ (তাঁর দাদা) হাসান` ➠ আলী ইবনে আবী তালিব (رضي الله عنه) থেকে বর্ণনা করেন।

মুশকিলুল আসার: ইব্রাহিম ইবনে মারজুক ➠ আবু আমির আল-আকদী ➠ ইয়াজিদ ইবনে কাসির ➠ মুহাম্মদ ইবনে `উমর ইবনে` আলী ➠ (তাঁর বাবা) `উমর ➠ (তাঁর পিতা)` আলী ইবনে আবী তালিব (رضي الله عنه) থেকে বর্ণনা করেন।

❏ হাদিস ৬ :

জামে আল তিরমিযীঃ নসর ইবনে আব্দুর রহমান আল কুফি ➠ জায়েদ ইবনে আল হাসান ➠ জাফর ইবনে মুহাম্মদ ➠ তাঁর পিতা (আল বাকির) ➠ জাবির ইবনে আবদুল্লাহ (رضي الله عنه) থেকে। 

জামে আল তিরমিযীঃ আলী ইবনুল মুঞ্জির আল কুফি ➠ মুহাম্মাদ ইবনুল ফুদায়েল ➠ আল আমাশ ➠ আল আতিয়াহ ➠ আবু সা`দ ও আল আমাশ ➠ হাবিব ইবনে সাবিত ➠ জাবির ইবনে আবদুল্লাহ (رضي الله عنه) থেকে।


জাবির ইবনে আব্দুল্লাহ (رضي الله عنهما)

সূত্রে বর্ণিত,

‏حدثنا ‏ ‏نصر بن عبد الرحمن الكوفي ‏ ‏حدثنا ‏ ‏زيد بن الحسن هو الأنماطي ‏ ‏عن ‏ ‏جعفر بن محمد ‏ ‏عن ‏ ‏أبيه ‏ ‏عن ‏ ‏جابر بن عبد الله ‏ ‏قال ‏رأيت رسول الله ‏ ‏صلى الله عليه وسلم ‏ ‏في حجته يوم ‏ ‏عرفة ‏ ‏وهو على ناقته القصواء يخطب فسمعته يقول يا أيها الناس إني قد ‏ ‏تركت فيكم ما إن أخذتم به لن تضلوا كتاب الله وعترتي أهل بيتي........

‏قال ‏ ‏وهذا ‏ ‏حديث حسن

মহানবী (صلى الله عليه و آله و سلم)-এর শেষ বাণী যা তিনি বিদায় হজ্জে লক্ষাধিক সাহাবীদের মাঝে এরশাদ করেছিলেন: “হে মানব সম্প্রদায়! আমি তোমাদের মধ্যে দু‘টি সমপরিমাণ ভারি বস্তু রেখে যাচ্ছি যদি এ দু‘টিকে আঁকড়ে ধরে থাক (অনুসরণ কর) তাহলে কখনই পথভ্রষ্ট হবে না। আর যদি একটিকে ছাড় তাহলে পথভ্রষ্ট হয়ে যাবে। 
তার প্রথমটি হচ্ছে আল্লাহর কিতাব (কোরআন) দ্বিতীয়টি হচ্ছে আমার ইতরাত, আহলে বাইত [(আলী, ফাতেমা, হাসান ও হোসাইন (আঃ)]; এ দু‘টি কখনই পরস্পর হতে বিচ্ছিন্ন হবে না যতক্ষণ না হাউজে কাউসারে আমার সাথে মিলিত হবে। তাদের সাথে তোমরা কিরূপ আচরণ কর এটা আমি দেখবো”।

➠তথ্যসূত্রঃ
১.সহীহ্ তিরমীজি, খঃ-৬, হাঃ-৩৭৮৬, ৩৭৮৮ (ই,ফাঃ) / অধ্যায়ঃ ৪৬/ রাসূলুল্লাহ ﷺ ও তাঁর সাহাবীগণের মর্যাদা। পরিচ্ছদঃ ৩২. আহলে বাইত-এর মর্যাদা,
হাদিস নম্বরঃ ৩৭৮৬।
২.মিশকাত শরীফ - ৫৬৫ পৃঃ
৩.সুনানে নাসায়ী। 
৪.ইমাম মুত্তাকী হিন্দীঃ কাঞ্জুল উম্মাল, ১ম খন্ড ৪৪ পৃষ্ঠা।
৪.সহীহ্ মুসলিম, খঃ-৫,হাঃ-৬০০৭, ৬০১০, (ই;ফাঃ); 
৫.মেশকাত, খঃ-১১, হাঃ-৫৮৯২-৫৮৯৩, (এমদাদীয়া); 
৬.তাফসীরে মাজহারী,খঃ-২, পৃঃ-১৮১, ৩৯৩, আল্লামা সানাউল্লাহ পানিপথি (ইফাঃ); 
৭.তাফসীরে হাক্কানী (মাওলানা শামসুল হক ফরীদপূরি), পৃঃ-১২-১৩ (হামিদীয়া); 
৮.তাফসীরে নূরুল কোরআন, খঃ-৪, পৃঃ-৩৩ (মাওলানা আমিনুল ইসলাম); 
৯.মাদারেজুন নাবুয়াত, খঃ-৩, পৃঃ-১১৫, শায়খ আব্দুল হক মুহাদ্দেস দেহলভী, মাদারেজুন নাবুয়াত, খঃ-২, পৃঃ-৫৮৫ (উর্দ্দু);
১০.তাফসীরে মারেফুল কোরআন, খঃ-১, পৃঃ-৩৭১, মুফতি মুহাম্মদ সফী (ই,ফাঃ); 
১১.কুরআনুল করিম (মাওলানা মহিউদ্দিন খান), পৃঃ-৬৫; 
১২.সিরাতুন নবী, খঃ-২, পৃঃ-৬০৫, আল্লামা শবলি নুমানী (তাজ কোং); 
১৩.আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া, খঃ-৫, পৃঃ-৩৪৫ খঃ-৭, পৃঃ-৬১৬ (ই,ফাঃ); 
১৪.কাতেবীন ওহী, পৃঃ-১৬৬ (ই,ফাঃ); 
১৫.আশারা মোবাশশারা (ফাযেলে দওবন্দ), পৃঃ-১৬৩ (এমদাদীয়া); 
১৬.বোখারী শরীফ, খঃ-৫, পৃঃ-২৮০, ২৮২, (হামীদিয়া); 
১৭.রিয়াদুস সালেহীন, খঃ-১, পৃঃ-২৫৫ (ই, সেন্টার); 
১৮.যে ফুলের খুশবুতে সারা জাহান মাতোয়ারা (মাওলানা আমিনুল ইসলাম), প:-২৩০; 
১৯.আরজাহুল মাতালেব,পৃঃ-৫৬৮ (উদ্দু); 
২০.ইয়ানাবিউল মুয়াদ্দাত, পৃঃ-৬৭-৭৬, (উর্দ্দু); 
২১.সিলসিলাত আল আহাদিস আস সাহীহাহ্ (নাসিরউদ্দিন আলবানীঃ বলেছে সহিহ, কুয়েত আদদ্বার আস সালাফীয়া, খঃ-৪, পৃঃ-৩৫৫-৩৫৮, হাঃ-১৭৬১, (আরবী)।


রাবীঃ জাবির ইবনে আব্দুল্লাহ (رضي الله عنه)

হাদিসে সাক্বলাইনঃ এর অন্যান্য ইসনদঃ
রাবীঃ জাবির ইবনে আব্দুল্লাহ (رضي الله عنه)

নওয়াদীর আল উসুল [হাকিম আল তিরমিযী]: নসর ইবনে আব্দুর রহমান-আল-ওয়াশা 'জায়েদ ইবনুল-হাসান আল-আনমাতি ➠ জাফর ইবনে মুহাম্মদ ➠ তাঁর পিতা (মুহাম্মদ) থেকে ➠ জাবির ইবনে আবদুল্লাহ (رضي الله عنه) থেকে।

সহীহ্ উসুল ঈ'তিকাদ আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামায়াত : আবদুর রহমান ইবনে উমর ইবনে আহমাদ ➠ আল-হুসাইন বিন ইমাঈল ➠ আবু হিশাম আল রিফা ➠ হাফস মুজাহিদ ➠ আল-শা'বী ➠ জাবির বিন আব্দুল্লাহ (رضي الله عنه) । 
[সহীহ্ উসুল ঈ'তিকাদ আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাহ, খন্ড ১, পৃষ্ঠা ৮১, ৯৫] বিবৃতিতে মুজাহিদ দুর্বল।

❏ হাদিস ৭:

হযরত ইবনে আবিশ শায়বা এবং মুসাদ্দাদ উভয়ে তাদের ‘মুসনাদ'-এ হাকীম তিরমিজী ‘নাওয়াদেরুল উসূল’-এ আবু ইয়ালা এবং তাবরানী প্রমূখ হযরত সালমা ইবনে আকওয়া' (رضي الله عنه) থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন,
 
أخرج ابن أبي شيبة، ومسدد فی مسنديهما، والحكيم الترمذي في نوادر الأصول، وأبو يعلى، والطبراني عن سلمة بن الأكوع رضي الله عنه قال: قال رسول الله ﷺ النجوم أمان لأهل السماء وأهل بیتی أمان لأمتی؛

রাসূলুল্লাহ (ﷺ) ইরশাদ করেছেন, ‘তারকারাজি হচ্ছে আসমানের অধিবাসীদের জন্য নিরাপত্তা আর আমার পরিবারবর্গ (আহলে বাইত) হচ্ছে, আমার উম্মতের জন্য নিরাপত্তা।

➠তথ্যসূত্রঃ
১.আল-মাতালিবুল আলিয়া-ইবনে হাজর আল আসকালানী - ৪:২৬২ (৩৯৭২)।
২. মুখতাসারু ইত্তিহাফুস সাদাতিল মাহরা-বুসিরী-৫:২১০ (৭৫৩৬)। 
৩. নাওয়াদিরুল উসূল, ২:১৯৯। 
৪. আল মু'জামুল কাবীর- তাবরানী ৭:২২ (৬২৬০)।
৫. আল মারিফাতু ওয়াত তারীখু-আল ফাসভী- ১:৫৩৮। 
৬. যাবায়েরুল উকবা- আত্বাবারী, পৃষ্ঠা- ৪৯।
৭. কানযুল উম্মাল- আল মুত্তাকি আল হিন্দ-১২:১০১।
৮.আল-মসনদ-আর রুয়ানী -২:২৫৩ (১১৫২)/২৫৮(১১৬৪/১১৬৫)।

❏ হাদিস ৮:

ইমাম মুসলিম ও ইমাম হাকিম নিশাবুরী (رحمة الله) বর্ণনা করেন,

ইমাম মুসলিম তিনি ➠ যুহায়র ইবনে হারব ও সুজা ইবনে মাখলাদ থেকে ➠ তারা 'উলাইয়া থেকে ➠ তিনি যুহির থেকে ➠ তিনি ইসমাইল ইব্রাহিম থেকে, ➠ তিনি আবু হায়ান থেকে, ➠ তিনি ইয়াজিদ ইবনে হাইয়ান থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন ➠"আমি (ইয়াজিদ ইবনে হাইয়ান), হোসাইন ইবনে সাবরাহ ও উমর ইবনে মুসলিম জায়েদ ইবনে আরকাম (رضي الله عنه) এর নিকট গেলাম। 
আমরা যখন তাঁর সাথে বসলাম তখন হোসাইন তাকে বললেন, হে যায়েদ, আপনে অনেক ভাগ্যবান। রাসূলুল্লাহ (ﷺ)কে দেখেছেন এবং তাঁর বরকতমন্ডিত বক্তব্য শুনেছেন, তাঁর সঙ্গে একসাথে জিহাদ করেছেন এবং তাঁর পিছনে সালাত আদায় করেছেন। প্রকৃতপক্ষে হে জায়েদ, আপনি অত্যন্ত ভাগ্যবান, আপনি আল্লাহর রাসূলের কাছ থেকে যা শুনেছেন তা বর্ণনা করুন।
"জায়েদ (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত,......তিনি বলেন,

حدثني زهير بن حرب وشجاع بن مخلد جميعا عن ابن علية قال زهير حدثنا اسماعيل بن ابراهيم حدثني أبو حيان حدثني يزيد بن حيان قال: انطلقت أنا وحصين بن سبرة وعمر بن مسلم إلى زيد بن أرقم فلما جلسنا إليه قال له حصين لقد لقيت يا زيد خيرا كثيرا, حدثنا يا زيد ما سمعت من رسول الله صلى الله عليه وسلم قال: يا ابن أخي والله لقد كبرت سني وقدم عهدي ونسيت بعض الذي كنت أعي من رسول الله صلى الله عليه وسلم فما حدثتكم فاقبلوه وما لا فلا تكلفونيه ثم قال: قام رسول الله صلى الله عليه وسلم يوما خطيبا فينا بماء يدعى خما بين مكة والمدينة فحمد الله تعالى وأثنى عليه ووعظ وذكر ثم قال: أما بعد ألا أيها الناس فإنما أنا بشر يوشك أن يأتيني رسول ربي عز وجل فأجيب وأنا تارك فيكم الثقلين أولهما كتاب الله عز وجل فيه الهدى والنور فخذوا بكتاب الله تعالى واستمسكوا به فحث على كتاب الله ورغب ثم فيه قال وأهل بيتي أذكركم الله في أهل بيتي أذكركم الله في أهل بيتي أذكركم.الله في أهل بيتي ...

রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেন, ……. আমি আপনাদের মাঝে দুটি মূল্যবান (ভারী) জিনিস (সাকলাইন) রেখে যাচ্ছি। দুইটির মধ্যে প্রথমটি হচ্ছে আল্লাহর কিতাব। এতে রয়েছে হেদায়েত ও আলো। সুতরাং তোমরা আল্লাহর কিতাবকে আঁকড়ে ধর এবং মেনে চল।…. 
অতঃপর তিনি বললেনঃ এবং আমার আহলে বাইত (পরিবার)। [আমার আহলে বাইত এর (প্রতি সদ্ব্যবহার এর ব্যাপারে) তোমরা আল্লাহকে স্মরণ করো (অর্থাৎ, ভয় করো)] এই কথা তিনি ৩ বার বললেন। (সংক্ষিপ্ত অনুবাদ)
তথ্যসূত্রঃ
১.সহিহ মুসলিম : ২য় খন্ড, পৃ. ৩৭৯, ৭ম খণ্ড,পৃ. ১২২; হাদিস নং ৫৯২০, ৫৯২৩। অধ্যায়ঃ কিতাব ফাযাইলুস-সাহাবাহ।
২.সুনানে দারেমীঃ ২য় খণ্ড, পৃ. ৪৩১-৪৩২।
৩.মুসনাদে আহমাদ,৩য় খণ্ড,পৃ. ১৪,১৭,২৬,৫৯; ৪র্থ খণ্ড,পৃ. ৩৬৬,৩৭১; ৫ম খণ্ড,পৃ: ১৮২,১৮৯;
৪.মুসতাদরাকে হাকেম,৩য় খণ্ড,পৃ. ১০৯,১৪৮,৫৩৩

❏ হাদিস ৯-১১:
জায়েদ ইবনে আরকাম (رضي الله عنه) এর সূত্রে।

সনদ ১: ইমাম হাকিম (رحمة الله) বলেছেন➠ আমাদের কাছে বাগদাদে আবু আল-হোসাইন মুহাম্মাদ ইবনে আহমাদ ইবনে তামিম আল-হামজালী বর্ণনা করেছেন,➠তিনি আবু ক্বাল্লাবাহ থেকে➠তিনি ‘আব্দুল মালেক ইবনে মুহাম্মদ আল-রাককাশি থেকে, ➠তিনি ইয়াহিয়া ইবনে হাম্মাদ থেকে।

সনদ ২: ইমাম হাকিম (رحمة الله) বলেছেন ➠ তিনি আবু বকর মুহাম্মদ ইবনে বালাওইহ ও আবু বকর আহমদ ইবনে জাফর আল-বায্যায তারা দুইজন➠ আবদুল্লাহ ইবনে আহমাদ ইবনে হাম্বল থেকে ➠ তিনি তাঁর বাবা ইয়াহিয়া ইবনে হাম্মাদ থেকে বর্ণনা করেছেন; 

সনদ ৩: ইমাম হাকিম (رحمة الله) বলেছেন➠ আমাদের কাছে বুখারার ফকীহ আবু নসর আহমদ ইবনে সুহাইল বর্ণনা করেছেন, ➠ তিনি বাগদাদের হাফিজ সালিহ ইবনে মুহাম্মদ থেকে, ➠ তিনি খালাফ ইবনে সেলিম আল মাখরামী থেকে ➠ তিনি ইয়াহিয়া ইবনে হাম্মাদ থেকে;➠তিনি আবু উওয়াননাহ থেকে➠ তিনি সুলায়মান আল-আমশ থেকে, ➠তিনি হাবীব ইবনে আবি সাবিত থেকে,➠ তিনি আবু আল-তুফায়ল থেকে, ➠ তিনি জায়েদ ইবনে আরকাম (رضي الله عنه) থেকে বর্ণনা করেছেন, 

حدثنا أبو الحسين محمد بن أحمد بن تميم الحنظلي ببغداد ثنا أبو قلابة عبد الملك بن محمد الرقاشي ثنا يحيى بن حماد (و حدثني) أبو بكر محمد بن بالويه و أبو بكر أحمد بن جعفر البزار قالا : ثنا عبد الله بن أحمد بن حنبل حدثني أبي ثنا يحيى بن حماد (وثنا) أبو نصر أحمد بن سهل الفقيه ببخارى ثنا صالح بن محمد الحافظ البغدادي ثنا خلف بن سالم المخرمي ثنا يحيى بن حماد ثنا أبو عوانة عن سليمان الأعمش قال : ثنا حبيب بن أبي ثابت عن أبي الطفيل عن زيد بن أرقم رضي الله عنه قال : لما رجع رسول الله صلى الله عليه و سلم من حجة الوداع و نزل غدير خم أمر بدوحات فقمن فقال : كأني قد دعيت فأجبت إني قد تركت فيكم الثقلين أحدهما أكبر من الآخر كتاب الله تعالى و عترتي فانظروا كيف تخلفوني فيهما فإنهما لن يتفرقا حتى يردا علي الحوض ثم قال : إن الله عز و جل مولاي و أنا مولى كل مؤمن ثم أخذ بيد علي رضي الله عنه فقال : من كنت مولاه فهذا وليه اللهم وال من والاه و عاد من عاداه و ذكر الحديث بطوله. هذا حديث صحيح على شرط الشيخين و لم يخرجاه بطوله.

রাসূলুল্লাহ (ﷺ) গাদির খুম নামক স্থানে তাঁর শেষ বিদায় হজ্জ্বের ভাষণে বলেন, 
"অতঃপর তিনি বললেন, 'আমি (মৃত্যুর বিদায়ী) আহ্বানের ডাকে সারা দিতে চলেছি, নিশ্চয় আমি তোমাদের মধ্যে দুটি মূল্যবান জিনিস রেখে এসেছি যার মধ্যে একটি অপরটির চেয়ে মহান। আল্লাহর মহিমান্বিত কিতাব এবং আমার আহলে বাইত। অতঃপর তুমি আমার পরে এই দুইয়ের প্রতি কিরূপ আচরণ করবে তা জেনে রেখ, কারণ তারা নিকট হাউজে কাওসার এ কাছে আসা অবধি একে অপর থেকে পৃথক হবে না।'"

অতঃপর তিনি বললেন, 'আল্লাহ, সর্বশক্তিমান ও মহিমান্বিত, তিনিই আমার মনিব (মাওলা) এবং আমি প্রত্যেক মু'মিন (বিশ্বাসীদের) মাওলা। অতঃপর তিনি আলী (رضي الله عنه) এর হাত ধরে বললেন,"এই (আলী) যার মাওলা আমি তার মাওলা।" হে আল্লাহ আপনি তাকে ভালবাসুন যে তাঁকে ভালবাসে এবং যে তার শত্রু হয় আপনি তার শত্রু হোন।"

আল-হাকিম (رحمة الله) যোগ করেছেন, "এই হাদীসটি শায়খায়ন (আল-বুখারী ও মুসলিম) এর শর্ত অনুসারে সহীহ, যদিও তারা এটিকে পূর্ণ দৈর্ঘ্যে লিপিবদ্ধ করেননি।"

তথ্যসূত্রঃ 
১.মুসলিম শরীফ হাদিস নং- ৬০০৯
২.কাঞ্জুল উম্মালঃ ১ম খন্ড ৪৪ পৃষ্ঠা।
৩.সূনান আত তিরমিজী, অধ্যায়ঃ ৪৬/ রাসূলুল্লাহ ﷺ ও তার সাহাবীগণের মর্যাদা। হাদিস নম্বরঃ ৩৭৮৮ | পরিচ্ছদঃ ৩২. আহলে বাইত-এর মর্যাদা।
৪.সহীহঃ মিশকাত (৬১৪৪), 
৫.রাওযুন নায়ীর (৯৭৭, ৯৭৮), 
৬.সহীহাহ (৪/৩৫৬-৩৫৭)।
আবূ ঈসা বলেন, এ হাদীসটি হাসান। 


যায়েদ ইবনে আরকাম (رضي الله عنه) সূত্রে।

❏ হাদিস ১২:
যায়েদ ইবনে আরকাম (رضي الله عنه) সূত্রে।

 شاهده حديث سلمة بن كهيل عن أبي الطفيل أيضا صحيح على شرطهما (حدثنا) أبو بكر بن اسحاق أبو بكر بن إسحاق و دعلج بن أحمد السجزي قالا : أنبأ محمد بن أيوب ثنا الأزرق بن علي ثنا حسان بن إبراهيم الكرماني ثنا محمد بن سلمة بن كهيل عن أبيه عن أبي الطفيل عن ابن واثلة أنه سمع زيد بن أرقم رضي الله عنه يقول: نزل رسول الله صلى الله عليه و سلم بين مكة و المدينة عند شجرات خمس دوحات عظام فكنس الناس ما تحت الشجرات ثم راح رسول الله صلى الله عليه و سلم عشية فصلى ثم قام خطيبا فحمد الله و أثنى عليه و ذكر و وعظ فقال ما شاء الله أن يقول ثم قال : يا أيها الناس إني تارك فيكم أمرين لن تضلوا إن اتبعتموهما وهما كتاب الله و أهل بيتي عترتي ثم قال : أتعلمون إني أولى بالمؤمنين من أنفسهم ثلاث مرات قالوا : نعم فقال رسول الله صلى الله عليه و سلم : من كنت مولاه فعلي مولاه.

আমাদের নিকট আবু বকর ইবনে ইসহাক ও দালাজ ইবনে আহমদ আল সিজযি বর্ণনা করেছেন,➠ দু'জনই মুহাম্মদ ইবনে আইয়ুব থেকে,➠তিনি আল-আজরাক ইবনে আলী থেকে, ➠তিনি হাসান ইব্রাহিম আল-কিরমানী থেকে, ➠ তিনি মুহাম্মদ ইবনে সালাহাহ ইবনে কুহাইল থেকে ➠ তিনি তাঁর পিতার কাছ থেকে ➠ তিনি আবু তুফায়লের কাছ থেকে,➠ তিনি ইবনে ওয়াথিলার কাছ থেকে,➠ তিনি যায়েদ ইবনে আরকাম (رضي الله عنه) থেকে হাদিসটি শুনেছেন। 
রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বললেন, হে লোকেরা! নিশ্চয়ই আমি তোমাদের মধ্যে দুটি জিনিস রেখে যাচ্ছি। যদি তোমরা সেগুলো আঁকড়ে ধরো তবে কখনও বিপথগামী হবে না। এই দুটি হ'ল: আল্লাহর কিতাব এবং আমার আহলে বাইত, আমার ‘ইতরাত'। অতঃপর তিনি তিনবার বললেন: 'তোমরা কি জান যে মুমিনদের উপর আমি তাদের নিজেদের চেয়ে বেশি অধিকার লাভ করেছি?' সাহাবায়ে কেরাম বললেন, 'হ্যাঁ (নিশ্চই)।' অতঃপর আল্লাহর রাসূল (ﷺ) বললেন, 'আমি যার মাওলা ‘আলীও তার মাওলা (মনিব/সাহায্যকারী)।

(আল-হাকিম (رحمة الله) বলেছেন :) প্রথম বর্ণনাটি (উপরে বর্ণিত) আবু আল-তুফায়ল থেকে সালামাহ ইবনে কুহাইল এটিকে সমর্থন করেছেন, যা আল বুখারী ও মুসলিমের শর্ত অনুসারে সহীহও রয়েছে।  

[ইমাম আল-হাফিজ আবু ‘আবদুল্লাহ আল-হাকিম (رحمة الله) আল-নিশাবুরী, আল-মুস্তাদরাকাক’আলা আল-সহিহাইন, দারুল-মা’রিফাহ, বৈরুত, খন্ড ৩, পৃষ্ঠা ১০৯,১১০]

❏ হাদিস ১৩ :

(আল-হাকিম (رحمة الله) বলেছেন) আমাদের কাছে➠ ফকিহবিদ আবু বকর মুহাম্মদ ইবনে আল-হোসাইন ইবনে মুসলিম বর্ণনা করেছেন, ➠ তিনি মুহাম্মদ ইবনে আইয়ুব থেকে, ➠তিনি ইয়াহিয়া ইবনুল-মুগিরাহ আল-সাদী থেকে,➠ তিনি জারির ইবনে আবদুল হামিদ থেকে , ➠তিনি আল-হাসান ইবনে আব্দুল্লাহ নাখায়ি থেকে, ➠ তিনি মুসলিম ইবনে সুবায়হ থেকে, ➠ তিনি জায়েদ ইবনে আরকাম (رضي الله عنه) থেকে বর্ণনা করেছেন।

حدثنا أبو بكر محمد بن الحسين بن مصلح الفقيه بالري ثنا محمد بن أيوب يحيى بن المغيرة السعدي ، ثنا : جرير بن عبد الحميد عن الحسن بن عبد الله النخعي عن مسلم بن صبيح عن زيد بن أرقم رضي الله عنه قال : قال رسول الله صلى الله عليه وآله وسلم: إني تارك فيكم الثقلين كتاب الله وأهل بيتي وإنهما لن يتفرقا حتى يردا علي الحوض. هذا حديث صحيح الإسناد على شرط الشيخين ولم يخرجاه.

জায়েদ ইবনে আরকাম (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত, আল্লাহর রাসূল (ﷺ) ইরশাদ করেন, 'আমি তোমাদের মধ্যে দুটি মূল্যবান জিনিস রেখেছি: আল্লাহর কিতাব এবং আমার আহলে বাইত। নিশ্চয় হাউযে কাওসারের পাশে আমার কাছে ফিরে না আসা পর্যন্ত দু'টি কখনও পৃথক হবে না।'

ইমাম হাকিম (رحمة الله) বলেছেন, হাদীসটির ইসনাদ সহিহ। শাইখায়েন (আল বুখারী ও মুসলিম) এর শর্তাবলী অনুযায়ী সহিহ। (হাদিসটি সহিহ)
[আল-হাকিম (رحمة الله), মুস্তাদরাক আল হাকিম (رحمة الله), খণ্ড ৩, পৃষ্ঠা ১৪৮]
❏ হাদিস ১৪ :
সহিহ মুসলিম ও সুনানে দারিমীর মতনঃ

যায়েদ ইবনে আরকাম হতে বর্ণনা করেন যে, আল্লাহর রাসূল (ﷺ) একদিন মদিনা ও মক্কার মধ্যবর্তী স্থলে "খুম" নামক একটি জলাশয়ের কাছে খোতবা দান করেন। উক্ত খোতবায় তিনি আল্লাহর প্রশংসার পর লোকদেরকে নসিহত করে বলেন:
ألا أيّها الناس، فانّما أنا بشرٌ يوشک أن يأتی رسول ربّی فأجيب، و أنا تارکت فيکم الثقلين : أولهما کتاب الله فيه الهدی و النور، فخذوا بکتاب الله و استمسکوا به -فحث علی کتاب الله و رغّب فيه ثم قال: - و أهل بيتی، أذکرکم الله في أهل بيتی، أذکرکم الله فی اهل بيتی، أذکرکم الله فی اهل بيتی
হে লোকসকল! আমি একজন মানুষ। খুব শিগগিরি আমার প্রভুর নিযুক্ত ব্যক্তি (তথা মৃত্যুর ফেরেশতা) আমার কাছে আসবে এবং আমিও তাঁর আহ্বানে সাড়া দেব। আমি তোমাদের মাঝে দু'টি অতি মূল্যবান জিনিস রেখে যাচ্ছি; যার একটি হল আল্লাহর কিতাব; যাতে রয়েছে নূর এবং হেদায়েত। আল্লাহর কিতাবকে শক্তভাবে আঁকড়ে ধর। রাসূল (ﷺ) আল্লাহর কিতাবের উপর আমল করার বিষয়ে বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে অত:পর বলেন: আর অপরটি হলো আমার আহলে বাইত। আমার আহলে বাইতের বিষয়ে তোমাদেরকে মহান আল্লাহর কথা স্মরণ করিয়ে দিচ্ছি (অর্থাৎ মহান আল্লাহকে ভয় করে তাদেরকে অনুসরণ কর) এই বাক্যটিকে তিনি তিনবার উচ্চারণ করেন। 
১.সহীহ মুসলিম, ৪র্থ খণ্ড, পৃ.১৮০৩।
২.সুনানে দারেমী, ২য় খণ্ড, পৃ. ৪৩১-৪৩২।
৩.মুসনাদে আহমাদ, ৩য় খণ্ড, পৃ. ১৪,১৭,২৬,৫৯; ৪র্থ খণ্ড,পৃ. ৩৬৬,৩৭১; ৫ম খণ্ড, পৃ: ১৮২,১৮৯; 
৪.মুসতাদরাকে হাকেম, ৩য় খণ্ড, পৃ. ১০৯, ১৪৮, ৫৩৩। 

❏ হাদিস ১৫ : 

সহিহ তিরমিযির মতনঃ এই হাদিসটিতে (وعترتی أهل بيتی) শব্দগুলো বর্ণনা করেছেন। মূল হাদিসটি হলো:
إنی تارکت فيکم الثقلين ما ان تمسکتم به لن تضلّوا بعدی؛ أحدهما أعظم من الآخر: کتاب الله حبل ممدود من السماء إلی الأرض و عترتی اهل بيتی، لن يفترقا حتی يردا عليَّ الحوض، فانظروا کيف تخلفونی فيها.

"নিশ্চয়ই আমি তোমাদের মাঝে দু'টি ভারী (মূল্যবান) জিনিস (আমানত হিসেবে) রেখে যাচ্ছি। যদি তা শক্তভাবে আঁকড়ে ধর তবে কখনই পথভ্রষ্ট হবে না। সেগুলো একটি অপরটির উপর প্রধান্য রাখে। ( সেগুলো হচ্ছে) আল্লাহর কিতাব যা আসমান হতে জমিন পর্যন্ত প্রসারিত (রহমতের) ঝুলন্ত রশির ন্যায় এবং অপরটি হলো আমার বংশধর; আমার আহলে বাইত। এরা হাউযে কাওসারে আমার সঙ্গে মিলিত না হওয়া পর্যন্ত কখনও একে অপর হতে আলাদা হবে না। অতএব, তোমরা লক্ষ্য রেখ যে, আমার (ছেড়ে যাওয়া) আমানতের সঙ্গে কিরূপ আচরণ করো।'' [সুনানে তিরমিযি, ৫ম খণ্ড, পৃ. ৬৬৩]


রাবীঃ জায়েদ ইবনে আরকাম (رضي الله عنه)

হাদিসে সাক্বলাইনঃ এর বিভিন্ন ইসনাদ :
রাবীঃ জায়েদ ইবনে আরকাম (رضي الله عنه) 

মুসলিমঃ মুহাম্মদ বিন বকর ইবনে রায়আন ➠ হাসান ইবনে ইব্রাহিম ➠ সাঈদ ইবনে মাসউরুক ➠ ইয়াজিদ ইবনে হায়মান ➠ জায়েদ ইবনে আরকাম (رضي الله عنه) থেকে।  
[সহিহ মুসলিম, খন্ড ৬, পৃষ্ঠা ২৬৮, ৬২২৬ (২৪০৮)]।

মুসলিমঃ (আবু বকর ইবনে শাইবাহ মুহাম্মদ বিন ফুয়াদাইল) এবং (ইসহাক ইবনে ইব্রাহীম জারীর) ➠ আবু হায়ানান ➠ ইয়াজিদ ইবনে হায়যান ➠ জায়েদ ইবনে আরকাম (رضي الله عنه) থেকে।
[সহিহ মুসলিম, খন্ড ৬, পৃষ্ঠা ২৬৮ ➠ ২৬৯, ৬২২৭ (২৪০৮)]

ইমাম মুসলিম ও ইমাম হাকিম (رحمة الله) তারা ➠ যুহায়র ইবনে হারব ও সুজা ইবনে মাখলাদ থেকে ➠ তারা 'উলাইয়া থেকে ➠ তিনি যুহির থেকে ➠ তিনি ইসমাইল ইব্রাহিম থেকে, ➠ তিনি আবু হায়ান থেকে, ➠ তিনি ইয়াজিদ ইবনে হাইয়ান থেকে। তারা ➠ জায়েদ ইবনে আরকাম (رضي الله عنه) থেকে বর্ণনা করেন।
[সহিহ মুসলিম, কিতাব ফাযাইলুস-সাহাবাহ, খন্ড ৬, পৃষ্ঠা ২৬৭,২৬৮, ৬২২৫ (২৪০৮)]

ইমাম হাকিম (رحمة الله) বলেছেন➠ আমাদের কাছে বাগদাদে আবু আল হোসাইন মুহাম্মাদ ইবনে আহমাদ ইবনে তামিম আল-হামজালী বর্ণনা করেছেন,➠তিনি আবু ক্বাল্লাবাহ থেকে➠তিনি ‘আব্দুল মালেক ইবনে মুহাম্মদ আল-রাককাশি থেকে, ➠তিনি ইয়াহিয়া ইবনে হাম্মাদ থেকে, তিনি ➠ জায়েদ ইবনে আরকাম (رضي الله عنه) থেকে বর্ণনা করেন।

ইমাম হাকিম (رحمة الله) বলেছেন ➠ তিনি আবু বকর মুহাম্মদ ইবনে বালাওইহ ও আবু বকর আহমদ ইবনে জাফর আল-বায্যায তারা দুইজন➠ আবদুল্লাহ ইবনে আহমাদ ইবনে হাম্বল থেকে ➠ তিনি তাঁর বাবা ইয়াহিয়া ইবনে হাম্মাদ থেকে তিনি ➠ জায়েদ ইবনে আরকাম (رضي الله عنه) থেকে বর্ণনা করেন।

আল হাকিমঃ মুহাম্মদ ইবনে `আলী আল শায়বানী ➠ আহমাদ বিন হাযিম আল গিফারি ➠ আবু নুয়াইম ➠ কামিল আবু আল আ'লা' ➠ হাবিব ইবনে আবী ছাবিত ➠ ইয়াহিয়া ইবনে যাদাহ ➠ জায়েদ ইবনে আরকাম (رضي الله عنه) থেকে বর্ণনা করেন। 
[মুস্তাদরাক আল হাকিম, খন্ড ৩, পৃষ্ঠা ৬১৩, ৬২৭২]। 

ইমাম হাকিম (رحمة الله) বলেছেন➠ আমাদের কাছে বুখারার ফকীহ আবু নসর আহমদ ইবনে সুহাইল বর্ণনা করেছেন, ➠ তিনি বাগদাদের হাফিজ সালিহ ইবনে মুহাম্মদ থেকে, ➠ তিনি খালাফ ইবনে সেলিম আল মাখরামী থেকে ➠ তিনি ইয়াহিয়া ইবনে হাম্মাদ থেকে;➠তিনি আবু উওয়াননাহ থেকে➠ তিনি সুলায়মান আল-আমশ থেকে, ➠তিনি হাবীব ইবনে আবি সাবিত থেকে,➠ তিনি আবু আল তুফায়ল থেকে, তিনি ➠ জায়েদ ইবনে আরকাম (رضي الله عنه) থেকে বর্ণনা করেন।

আল-হাকিম (رحمة الله) বলেছেন ➠ আমাদের নিকট আবু বকর ইবনে ইসহাক ও দালাজ ইবনে আহমদ আল সিজ্জী বর্ণনা করেছেন,➠ দু'জনই মুহাম্মদ ইবনে আইয়ুব থেকে,➠তিনি আল-আজরাক ইবনে আলী থেকে, ➠তিনি হাসান ইব্রাহিম আল-কিরমানী থেকে, ➠ তিনি মুহাম্মদ ইবনে সালাহাহ ইবনে কুহাইল থেকে ➠ তিনি তাঁর পিতার কাছ থেকে ➠ তিনি আবু তুফায়লের কাছ থেকে,➠ তিনি ইবনে ওয়াসিলার কাছ থেকে,➠ তিনি যায়েদ ইবনে আরকাম (رضي الله عنه) থেকে হাদিসটি শুনেছেন। 

আল-হাকিম (رحمة الله) বলেন, "হাদীসটি আল-বুখারী ও মুসলিম এর শর্ত অনুসারে সহীহ।
[ইমাম হাফিজ আবু ‘আবদুল্লাহ আল- হাকিম (رحمة الله) আল - নিশাবুরী, আল - মুস্তাদরাকাক’ আলা আল - সহিহাইন, দারুল-মা’রিফাহ, বৈরুত, খন্ড ৩, পৃষ্ঠা ১০৯,১১০]

আল-হাকিম (رحمة الله) বলেছেন আমাদের কাছে➠ আবু বকর মুহাম্মদ ইবনে আল-হোসাইন ইবনে মুসলিহ আল-ফকহী বর্ণনা করেছেন, ➠ তিনি মুহাম্মদ ইবনে আইয়ুব থেকে, ➠তিনি ইয়াহিয়া ইবনুল-মুগিরাহ আল-সাদী থেকে,➠ তিনি জারির ইবনে আবদুল হামিদ থেকে , ➠তিনি আল-হাসান ইবনে আব্দুল্লাহ নাখায়ি থেকে, ➠ তিনি মুসলিম ইবনে সাবিহ থেকে, ➠ তিনি জায়েদ ইবনে আরকাম (رضي الله عنه) থেকে বর্ণনা করেন।

ইমাম হাকিম (رحمة الله) বলেছেন, হাদীসটির ইসনাদ শাইখায়েন (আল বুখারী ও মুসলিম) এর শর্ত অনুযায়ী সহিহ। [আল-হাকিম (رحمة الله), মুস্তাদরাক আল হাকিম (رحمة الله), খণ্ড ৩, পৃষ্ঠা ১৪৮]

আবদুল্লাহ ইবনে আহমাদঃ ➠ (তার পিতা) আহমদ ইবনে হাম্বাল ➠ ইসমাঈল ইবনে ইবরাহীম ➠ আবু হায়ান আল তামিমী থেকে ➠ ইয়াজিদ ইবনে হায়যান ➠ জায়েদ ইবনে আরকাম (رضي الله عنه) থেকে।
[মুসনাদ আহমদ, খন্ড ৩২, পৃষ্ঠা ১০ ➠ ১১, ১৯২৬৫]

ইমাম আহমদঃ মুসনাদে আহমাদে একটি অনুরূপ আরেকটি সনদ আনেন,➠ জাফর ইবনে আওন ➠ আবু হায়ান ➠ ইয়াজিদ ইবনে হাইয়ান ➠ জায়েদ ইবনে আরকাম (رضي الله عنه) থেকে বর্ণনা করেন।

আবদ ইবনে হামিদঃ জা'ফর বিন শস্যশুক ➠ আবু হাইয়ান আল তায়মী ➠ ইয়াযীদ ইবনে হাইয়ান ➠ জায়েদ ইবনে আরকাম (رضي الله عنه) থেকে বর্ণনা করেন।
[মুসনাদে আবদ ইবনে হামিদ, পৃষ্ঠা ১১৪, ২৬৫]

ইমাম আল বাজ্জারঃ ইউসুফ ইবনে মুসা ➠ জারীর ➠ আবু হায়ানান ➠ ইয়াজিদ বিন হায়ান ➠ জায়েদ ইবনে আরকাম (رضي الله عنه) থেকে বর্ণনা করেন।
[মুসনাদ আল-বাজ্জার, খন্ড ১০, পৃষ্ঠা ২৪০, ৪৩৩৬]।

ইবনে আবি শায়বাঃ আফান ➠ হাসান ইবনে ইব্রাহীম ➠ সাঈদ ইবনে মাসরুক ➠ ইয়াজিদ ইবনে হায়মান ➠ জায়েদ ইবনে আরকাম (رضي الله عنه) থেকে। 
[মুসনাফে ইবনে আবি শাইবা, খন্ড ৬, পৃষ্ঠা ১৩৩, ৩০০৭৮]

ইবনে আবি শায়বাঃ মুহাম্মদ বিন ফুদাইলে ➠ আবু হায়ান ➠ ইয়াজিদ বিন হায়ান ➠ জায়েদ ইবনে আরকাম (رضي الله عنه) থেকে।
[মুসনাদে ইবনে আবি শায়বা, খন্ড ১, পৃষ্ঠা ৩৫১, ৩৫২, ৫১৪]

ইবনে আবী আসিমঃ (আবু বকর ➠ মুহাম্মদ বিন ফুজায়েল ➠ আবু হাইয়ান) & (হুসাইন বিন হাসান ➠ আবু জাওয়াব ➠ `আম্মার বিন রুযায়েক ➠ আমাশ) ➠ ইয়াযীদ ইবনে হাইয়ান ➠ জায়েদ ইবনে আরকাম (رضي الله عنه) থেকে। 
[ইবনে আবী আসিমঃ আল-সুন্নাহ, খন্ড ২, পৃষ্ঠা ৬৪৩, ১৫৫০, ১৫৫১, ১৫৫২]।

ইবনে খোজায়মাঃ ইউসুফ বিন মুসা ➠ (জারীর ও মুহাম্মাদ ইবনে ফুজায়েল) ➠ আবু হাইয়ান আল তায়মী ➠ ইয়াযীদ ইবনে হাইয়ান ➠ জায়েদ ইবনে আরকাম (رضي الله عنه) থেকে।  
[সহিহ ইবনে খোজায়মা, খন্ড ৪, পৃষ্ঠা ৬২-৬৩, ২৩৫৭]

সুনানে দারিমীতে সনদঃ 'আবদুল্লাহ ইবনে আহমদ ➠ (তাঁর পিতা) আহমদ ইবনে হাম্বল ➠ ইসমাইল ইবনে ইব্রাহিম ➠ আবু হায়ান আল তামিমি তিনি ➠ জায়েদ ইবনে আরকাম (رضي الله عنه) থেকে বর্ণনা করেন।

তাফসীর মা'লিম আল তানজিলের সনদঃ আবু সা`দ আহমাদ ইবনে মুহাম্মদ ইবনে আল আব্বাস আল হুমায়দী ➠ আবু `উবায়দ আল্লাহ মুহাম্মদ ইবনে` আবদুল্লাহ আল হাফিজ ➠ আবু আল ফাদল হাসান ইবনে ইয়াকুব ইবনে ইউসুফ আল আযল ➠ আবু আহমদ মুহাম্মদ ইবনে আব্দুল ওহাব আযদী ➠ আবু জাফর ইবনে আওফ ➠ আবু হায়ান ইয়াহিয়া ইবনে সা`দ ইবনে হাইয়ান ➠ ইয়াজিদ ইবনে হাইয়ান ➠ জায়েদ ইবনে আরকাম (رضي الله عنه) থেকে বর্ণনা করেন।

সুনান আল কুবরাঃ ইমাম নাসায়ীঃ আহমাদ ইবনে মুসান্না ➠ ইয়াহিয়া ইবনে মুআদহ ➠ আবু আওয়ানাহ ➠ সুলায়মান ➠ হাবিব ইবনে সাবিত ➠ আবু সাবিত ➠ আবু তুফায়ল ➠ জায়েদ ইবনে আরকাম (رضي الله عنه) থেকে বর্ণনা করেন।

সুনান আল কুবরা - ইমাম নাসায়ীঃ মুহাম্মদ ইবনে মুসান্না ➠ ইয়াহিয়া ইবনে হামমাদ ➠ আবু মুআওয়িয়াহ ➠আমাশ ➠ হাবিব ইবনে আবি সাবিত ➠ আবু তোফায়েল ➠ জায়েদ ইবনে আরকাম (رضي الله عنه) থেকে বর্ণনা করেন।

নাসাঈঃ যাকারিয়া ইবনে ইয়াহিয়া ➠ ইসহাক ➠ জারীর ➠ আবি হাইয়ান আল তায়মী (ইয়াহইয়াহ ইবনে সাঈদ ইবনে হাইয়ান) ➠ ইয়াযীদ ইবনে হাইয়ান ➠ জায়েদ ইবনে আরকাম (رضي الله عنه) থেকে বর্ণনা করেন।
[নাসাঈঃ সুনানুল কুবরাঃ খন্ড ৭, পৃষ্ঠা ৩১৯ - ৩২০, ৮১১৯]।

[আবাকাত]: দালাজ ইবনে আহমদ আল সাজজী] ➠ মুহাম্মদ ইবনে আইয়ুব আল-আজরাাক ইবনে `আলী ➠ হাসান ইব্রাহিম আল-কিরমানি ➠ মুহাম্মদ ইবনে সালাহাহ ইবনে কুহাইল ➠ (তাঁর পিতা) সালামাহ ➠ আবু আল-তুফায়াল ইবনে ওয়াথিলাহ ➠ জায়েদ ইবনে আরকাম (رضي الله عنه) থেকে বর্ণনা করেন।

[আল-তাবারানী তাঁর মুজামউল কবির] ➠ আবু তুফায়াল ➠ সালামাহ ইবনে কুহাইল ➠ জায়েদ ইবনে আরকাম (رضي الله عنه) থেকে বর্ণনা করেন।

তাবারানীঃ (মুহাম্মদ বিন আব্দুল্লাহ আল-হাদরামী ➠ ইবনে আবী শায়বাহ) ও (আবু হোসাইন আল কাযী ➠ ইয়াহিয়া আল হামানী) ➠ উভয় থেকে ➠ মুহাম্মদ বিন ফুজায়েল ➠ ইমাম হুসাইন ইবনে ইসহাক আল তুসতারী ➠ `উসমান ইবনে আবি শায়বাহ ➠ ইয়াযীদ ইবনে হাইয়ান ➠ আবু হাইয়ান ➠ ইসমাঈল বিন ইবরাহীম ➠ জায়েদ ইবনে আরকাম (رضي الله عنه) থেকে বর্ণনা করেন।
[তাবারানীঃ মুযাম আল কবিরঃ খন্ড ৫, পৃষ্ঠা ১৮৩, ৫০২৮১৮৩, ৫০২৮]

তাবারানীঃ মুহাম্মদ বিন হাইয়ান ➠ কাসীর বিন ইয়াহিয়া ➠ হাইয়ান বিন ইব্রাহিম ➠ সাঈদ বিন মাশরুক ➠ সুফিয়ান আল সাওরী ➠ ইয়াযীদ ইবনে হাইয়ান ➠ জায়েদ ইবনে আরকাম (رضي الله عنه) থেকে বর্ণনা করেন। 
[তাবারানীঃ মুযাম আল কবিরঃ খন্ড ৫, পৃষ্ঠা ১৮২, ৫০২৬]। [হাইয়্যান তিনি হাসান ইবনে ইব্রাহীম]

তাবারানীঃ মুহাম্মদ বিন `আব্দুল্লাহ আল-হাদরামী ➠ জা'ফর বিন হুমায়দ ➠ আব্দুল্লাহ বিন বুকাইর ➠ হাকীম ইবনে জুবাইর ➠ আবি আল তুফাইল ➠ জায়েদ ইবনে আরকাম (رضي الله عنه) থেকে বর্ণনা করেন।
[তাবারানীঃ মুযাম আল কবীর, খন্ড ৩, পৃষ্ঠা ৬৩ - ৬৪, ২৬৮১] 

তাবারানীঃ (মুহাম্মদ বিন আব্দুল্লাহ আল হাদরামী ➠ জা'ফর বিন হুমায়দ ) ও (মুহাম্মদ বিন উসমান ইবনে আবি শায়বাহ ➠ আল নাদির বিন সাঈদ আবু শুহাইব) ➠ উভয় থেকে ➠ আব্দুল্লাহ বিন বুকাইর ➠ হাকীম বিন জুবাইর ➠ আবি আল তুফাইল ➠ জায়েদ ইবনে আরকাম (رضي الله عنه) থেকে বর্ণনা করেন। 
[তাবারানীঃ মুযাম আল কবীর, খন্ড ৫, পৃষ্ঠা ১৬৬ - ১৬৭, ৪৯৭১] 

ইবনে আবী দাউদঃ মুহাম্মদ বিন আব্দুল্লাহ বিন নুমাইর আল হামদানি ➠ মুহাম্মদ বিন ফুযায়ল বিন গাজওয়ান ➠ আবু হাইয়ান ইয়াহইয়া ইবনে সাঈদ ইবনে হাইয়ান আল-তামিমি ➠ ইয়াযীদ ইবনে হাইয়ান ➠ জায়েদ ইবনে আরকাম (رضي الله عنه) থেকে বর্ণনা করেন।
[শারহ মুসকিলুল আল-আসার, খন্ড ৯, পৃষ্ঠা ৮৯, ৩৪৬৪]

[আল বায়হাকি - আকতাব খাওয়ারিজমি]: আবু আবদুল্লাহ ➠ আবু নসর আহমদ ইবনে সুহাইল আল-ফকিহ ➠ সালেহ ইবনে মুহাম্মদ আল-হাফিজ আল-বাগদাদি ➠ খালাফ ইবনে সেলিম আল-মাখরামী ➠ ইয়াহিয়া ইবনে হামদ ➠ আবু `আওয়ানাহ ➠ সুলায়মান আল-আমাশ ➠ হাবিব ইবনে আবি সাবিত ➠ আবু আল-তুফায়ল ➠ জায়েদ ইবনে আরকাম (رضي الله عنه) থেকে বর্ণনা করেন।

[আবাকাত]: আবু আল-হাসান `আলী ইবনে মুহাম্মদ আল-অসীমী আল-খাওয়ারিজমি ➠ শায়খ ইসমাই`ল ইবন আহমদ আল-ওয়ায়েজ ➠ আবু বকর আহমদ ইবনে হোসেইন আল-বায়হাকী ➠ আবু আবদুল্লাহ ➠ আবু নসর আহমদ ইবনে সাহল আল ফকিহ ➠ সালেহ ইবনে মুহাম্মদ আল-হাফিজ আল-বাগদাদি ➠ খালাফ ইবনে সেলিম আল-মাখরামী ➠ ইয়াহইয়া ইবনে হামমাদ ➠ আবু আওয়ানাহ ➠ সুলায়মান আল-আমাশ ➠ হাবিব ইবনে আবী সাবিত ➠ আবু আল-তুফায়াল ➠ জায়েদ ইবনে আরকাম (رضي الله عنه) থেকে বর্ণনা করেন।

ইমাম ইবনে হিব্বান ও ইমাম আবু ইয়ালাঃ আলী ইবনে আবি আব্দুল্লাহ ইবনে আল আলাফ আল বাযযার ➠ আব্দুস সালাম বিন `আবদুল মালিকের ইবনে হাবিব আল-বাযযার ➠ আব্দুল্লাহ মুহাম্মদ ইবনে` উসমানের ➠ মুহাম্মদ ইবনে বকর ইবনে `আব্দ আল রাজ্জাক ➠ আবু হাতিম মুগীরা ইবনে মুহাম্মদ ইবনে আল মোহালভী ➠ মুসলিম ইবনে ইব্রাহিম ➠ নূহ ইবনে কায়স আল যুধামী ➠ আল ওয়ালিদ ইবনে সালেহ ➠ জায়িদ ইবনে আরকাম (رضي الله عنه) এর স্ত্রী। 
[আল-মানাকিব আমীরুল মুমিনীন আলী ইবনে আবি তালিব, পৃষ্ঠা ৪৪ - ৪৫ - ৪৬, ২৩, [ইবনে হিব্বান, খন্ড ৭, পৃষ্ঠা ৫৫১, ১১৪২৪ দ্বারা সীক্বা] 

অন্যান্য কিতাবঃ 

আবু তালিব মুহাম্মদ ইবনে আহমদ ইবনে `উসমান ➠ আবু আল হোসাইন মুহাম্মদ ইবনে আল মুজাফফর ইবনে মূসা ইবনে` ঈসা আল হাফিজ ➠ মুহাম্মদ ইবনে মুহাম্মদ ইবনে সুলায়মান আল বাগদাদী ➠ শুয়ায়েদ ➠` আলী ইবনে মুশির ➠ আবু হাইয়ান আল তাইমি ➠ ইয়াজিদ ইবনে হায়মান ➠ জায়েদ ইবনে আরকাম (رضي الله عنه) থেকে বর্ণনা করেন। 
[আল মানাকিব আমীর আল মু'মিনিন আলী ইবনে আবু তালিব, পৃষ্ঠা ৩০৪ - ৩০৫, ২৮৪]

আবু বকর ইবনে আবু শায়বাহ ও আলী বিন আল মুনযির ➠ ইবনে ফুদায়ল ➠ আবু হাইয়ান ➠ ইয়াযীদ ইবনে হাইয়ান ➠ জায়েদ ইবনে আরকাম (رضي الله عنه) থেকে বর্ণনা করেন।
[মরিফা ওয়াল তারীখ, খন্ড ১, পৃষ্ঠা ৫৩৬]

ঊবায়দুল্লাহ বিন উসমানের বিন আলি ➠ উসমান ইবনে জা'ফর ➠ ইউসুফ বিন মুসা ➠ জারীর ও ইবনে ফুযায়ল - ইয়াযীদ ইবনে হাইয়ান ➠ জায়েদ ইবনে আরকাম (رضي الله عنه) থেকে বর্ণনা করেন।
[সহীহ্ উসুল ঈ'তিকাদ আহ্লুস সুন্নাহ ওয়াল জামায়া'আহ, খন্ড ১, পৃষ্ঠা ৭৮ - ৭৯, ৮৮]

❏ হাদিস ১৬ : 

ইমাম আহমদ ও তাবরানী হযরত জায়েদ ইবনে সাবিত (رضي الله عنه) সূত্রে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন,

أخرج أحمد، والطبرانی، عن زيد بن ثابت رضی الله عنه قال: قال رسول اللهﷺ إني تارك فيكم خليفتي: کتاب الله، حبل ممدود ما بين السماء والأرض، وعترتی أهل بیتی، و إنهمالن يتفرقا، حتی یردا على الحوض -

রাসূলুল্লাহ (ﷺ) ইরশাদ করেন, “আমি তােমাদের জন্য আমার দু'টি প্রতিনিধি রেখে যাচ্ছি। (তার একটি হচ্ছে), কিতাবুল্লাহ (কুরআন) যা অাসমান ও যমীনের মধ্যখানে একটি দীর্ঘ রশি। (অপরটি হচ্ছে) আমার পবিবারবর্গ (আহলে বাইত) আর এরা উভয়ে কখনাে বিচ্ছিন্ন হবেনা, যতক্ষণ না তারা (উভয়ে) হাউজে কাউছারের নিকট আমার কাছে অবতরণ করবে।

তথ্যসূত্রঃ
১. মুসনাদে আহমদ ইবনে হাম্বল: ১ম খন্ড, ৫ম অধ্যায়, হাদিস-২, পৃষ্টা-১৫৬, ৫ খন্ডের ১৮২ পৃষ্ঠা, ৫ খন্ডের ১৮৯ পৃষ্ঠা, ১৭তম খ-, পৃ. ২১১, হাদীস ১১১৩১। ৬:২৩২ (২১০৬৮)/ ২৪৫ (২১১৫৩)।
২. তিরমিজি ; আস সহীহ, ৬ খন্ড, হাদিস নং-৩৭৮৬, ৩৭৮৮।
৩. মুসলিম; আস-সহীহ, ৬ খন্ড, হাদিস নং-৬০০৭, ৬০১০। 
৪. নাসাঈঃ আল-খাসায়িস, পৃ. ১১২, হাদীস ৭৮; 
৫. মিশকাত, ১১ খন্ড, হাদিস নং-৫৮৯২, ৫৮৯৩ । 
৬. আবু ইয়ালাঃ আল-মুসনাদ, ২য় খ-, পৃ. ২৯৭, হাদীস ১০২১; 
৭. ইবনে আবি আসিম, কিতাবুস সুন্নাহ, পৃ. ৬৩০, হাদীস ১৫৫৫; 
৮. তাবারানী, সুলাইমান, ৫ম খ-, পৃ. ১৬৯, হাদীস ৯৮০ ও ৪৯৮১।আল মু'জামুল কাবীর, ৫:১৫৪ (৪৯২৩)।
৯. ইমাম হাকিম নিশাপুরিঃ মুস্তাদরাক আল হাকিমঃ ৩য় খন্ড, ১৪৮ পৃষ্ঠা। ইমাম হাকিম বলেন,''বুখারী ও মুসলিমের শর্তানুযায়ী সহীহ। 
ইমাম যাহাবিও তাঁর তালখিসে মুস্তাদরাক' গ্রন্থে তা স্বীকার করেছেন।
১০. কাঞ্জুল উম্মাল, হাদিস নম্বর-৮৭৩।
নাসায়ী,
১১. ইবনে মাগাযিলী, মানাকিব, পৃ. ২৩০, হাদীস ২৮৩; 
১২. ইমাম সুয়ূতীঃ আল জামেউস সাগীরঃ ৩য় খন্ডঃ ১৪ পৃ। (সহিহ বলেছেন)
১৩. ইমাম হায়তামীঃ মাজমাউয-যাওয়াঈদঃ ৯ম খন্ড, ১৬৫ পৃ। (বর্ণনাকারীগণ বিশ্বাসযোগ্য)
১৪. মাদারেজুন নাবুয়াত: আব্দুল হক মুহাদ্দেস দেহলভী, ৩খন্ড, পৃঃ-১০৫ । 
১৫. ইযাযাতুল খিফাঃ শাহ ওয়ালি উল্লাহ মুহাদ্দিসে দেহলভী, খঃ-১, পৃঃ-৫৬৬।

❏ হাদীস ১৭:

أخرج عبد بن حميد في مسنده عن زيد بن ثابت رضی الله عنه قال: قال رسول الله صلى الله عليه وسلم: إني تارك فيكم ما إن تمسكتم به بعدی لن تضلوا: كتاب الله و عترتی أهل بیتی. إنهما لن يتفرقا حتى يردا على الحوض -

আব্দ ইবনে হুমাইদ তার মসনদে হযরত যায়েদ ইবনে ছাবেত (رضي الله عنه) থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এরশাদ করেন, “নিশ্চয় আমি তােমাদের জন্য এমন কিছু রেখে যাচ্ছি, যা আঁকড়ে ধরলে আমার পরে তােমরা কখনাে পথ ভ্রষ্ট হবেনা। তা হচ্ছে, আল্লাহর কিতাব (কুরআন) ও আমার পরিবার পরিজন তথা আহলে বায়ত। নিশ্চয় এ দুটো ততক্ষণ একে অপর থেকে বিচ্ছিন্ন হবে না। যতক্ষণ তারা (কুরআন ও আমার আহলে বায়ত) আমার নিকট হাউজে কাউছারে প্রত্যাবর্তন করবে।

তথ্যসূত্রঃ
১. আল মুন্তাখাব-১০৭:২৪০।
২. আল মুসনাদ -৬: ২৩২ (২১০৬৮)/২৪৪ (২১১৪৫)।
৩. মাজমাউজ জাওয়ায়েদ - আল হাইছামি-৯: ১৬২। এতে انی تارک فیکم خلیفتین অর্থাৎ নিশ্চয় আমি তােমাদের জন্য দুটি খলিফা বা প্রতিনিধি রেখে যাচ্ছি উল্লেখ রয়েছে।
অনুরূপভাবে বর্ণনা রয়েছে, ইবনে আবি শাইবার ‘আল মুসান্নাফ এ - ৬:৩১৩ (৩১৬৭০) এবং ইমাম ফাসভীর “মা'রেফাতুত তারিখ”-৯:৫৩৭ -এ।


রাবীঃ জায়েদ ইবনে সাবিত (رضي الله عنه)

হাদিসে সাক্বলাইনঃ এর বিভিন্ন ইসনাদঃ
রাবীঃ জায়েদ ইবনে সাবিত (رضي الله عنه)

মুসনাদে আহমদ ইবনে হাম্বল আশ শায়বানী: `আবদুল্লাহ ইবনে আহমাদ ➠ (তাঁর পিতা) আহমদ ইবনে হাম্বল ➠ আল-আসওয়াদ ইবনে` আমির ➠ শরিক ➠ আল-রুকায়েন ➠ আল-কাসিম ইবনে হাসান ➠ জায়েদ ইবনে সাবিত (رضي الله عنه) থেকে ➠ রাসূলুল্লাহ (ﷺ) থেকে।

মুসনাদে আহমদ ইবনে হাম্বল আল শায়বানী: `আবদুল্লাহ ইবনে আহমাদ ➠ (তাঁর পিতা) আহমদ ইবনে হাম্বল ➠ আবু আহমদ আল-জুবায়েরী ➠ শরীক আল-রুকায়েন ➠ আল-কাসিম ইবনে হাসান ➠ জায়েদ ইবনে সাবিত (رضي الله عنه) থেকে ➠ রাসূলুল্লাহ (ﷺ) থেকে।

মুসান্নাফ ইবনে আবী শায়বা: `উমর ইবনে সাদ আবু দাউদ আল-হিফরি ➠ শরীক ➠ আল-রুকায়েন ➠ আল-কাসিম ইবনে হাসান ➠ জায়েদ ইবনে সাবিত (رضي الله عنه) থেকে ➠ রাসূলুল্লাহ (ﷺ) থেকে।

মুসনাদে আবদ ইবনে হুমায়দঃ ইয়াহিয়া ইবনে আবদ হামিদ ➠ শরিক ➠ আল-রুকায়েন ➠ আল-কাসিম ইবনে হাসান ➠ জায়েদ ইবনে সাবিত (رضي الله عنه) থেকে ➠ রাসূলুল্লাহ (ﷺ) থেকে।

[মুআজম আল কবির - তবারানী]: (আংশিক সনদ) [শারিক ইবনে আবদুল্লাহ ➠ রুকায়েন ➠ কাসিম ইবনে হাসান ➠ জায়েদ ইবনে সাবিত (رضي الله عنه) থেকে ➠ রাসূলুল্লাহ (ﷺ) থেকে।


রাবীঃ ইবনু আব্বাস (رضي الله عنهما )

হাদিসে সাক্বলাইনঃ 
রাবীঃ ইবনু আব্বাস (رضي الله عنهما )

❏ হাদীস ১৮:
ইবনু আব্বাস (رضي الله عنهما ) হতে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন,

حَدَّثَنَا أَبُو دَاوُدَ، سُلَيْمَانُ بْنُ الأَشْعَثِ قَالَ أَخْبَرَنَا يَحْيَى بْنُ مَعِينٍ، قَالَ حَدَّثَنَا هِشَامُ بْنُ يُوسُفَ، عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ سُلَيْمَانَ النَّوْفَلِيِّ، عَنْ مُحَمَّدِ بْنِ عَلِيِّ بْنِ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ عَبَّاسٍ، عَنْ أَبِيهِ، عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ، قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم ‏ “‏ أَحِبُّوا اللَّهَ لِمَا يَغْذُوكُمْ مِنْ نِعَمِهِ وَأَحِبُّونِي بِحُبِّ اللَّهِ وَأَحِبُّوا أَهْلَ بَيْتِي لِحُبِّي ‏”‏ ‏.‏ 

রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেনঃ তোমরা আল্লাহ তা’আলাকে মহব্বত কর। কেননা তিনি তোমাদেরকে তার নিয়ামাতরাজি খাবার খাওয়াচ্ছেন। আর আল্লাহ্ তা’আলার মহব্বতে তোমরা আমাকেও মহব্বত এবং আমার মহব্বতে আমার আহলে বাইতকেও মহব্বত কর।

রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ) বলেন : ‘আমি তোমাদের মাঝে দু’টি মূল্যবান জিনিস রেখে যাচ্ছি : আল্লাহর কিতাব এবং আমার বংশধর (ইতরাত), আমার আহলে বাইত; নিশ্চয়ই এ দু’টি কখনই বিচ্ছিন্ন হবে না যতক্ষণ না হাউজের নিকট (হাউজে কাউসারের নিকট) আমার কাছে উপস্থিত হয় (কিয়ামত দিবসে)।’

[নাসায়ী, আহমাদ, খাসায়িস, পৃ. ১১২, হাদীস ৭৮; ইবনে মাগাযিলী, মানাকিব, পৃ. ২৩০, হাদীস ২৮৩; আবু ইয়ালী, মুসনাদ, ২য় খ-, পৃ. ২৯৭, হাদীস ১০২১; ইবনে আবি আসিম, কিতাবুস সুন্নাহ, পৃ. ৬৩০, হাদীস ১৫৫৫; ইবনে হাম্বল, মুসনাদ, ১৭তম খ-, পৃ. ২১১, হাদীস ১১১৩১; তাবারানী, সুলাইমান, ৫ম খ-, পৃ. ১৬৯, হাদীস ৯৮০ ও ৪৯৮১]


রাবীঃ বুরাইদা আসলামী (رضي الله عنه)

হাদিসে সাক্বলাইনঃ 
রাবীঃ বুরাইদা আসলামী (رضي الله عنه)
❏ হাদীস ১৯:

পথে রাবেগের নিকটবর্তী খোম কুয়ার নিকট পৌঁছালে বুরাইদা আসলামী (رضي الله عنه) রাসুল (ﷺ)-এর নিকটে আলী (رضي الله عنه) এর ব্যাপারে গনিমত বণ্টন সংক্রান্ত বিষয়ে কিছু কথা বলেন। এর প্রেক্ষিতে রাসুল (ﷺ) সাহাবীদের সামনে কিছু বক্তব্য পেশ করেন। এই বক্তব্যের মধ্যকার কিছু অংশ ছিল –

قَامَ رَسُولُ اللهِ صَلَّىاللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَوْمًا فِينَا خَطِيبًا، بِمَاءٍ يُدْعَى خُمًّا بَيْنَ مَكَّةَ وَالْمَدِينَةِ فَحَمِدَ اللهَ وَأَثْنَى عَلَيْهِ، وَوَعَظَ وَذَكَّرَ، ثُمَّ قَالَ
: " أَمَّا بَعْدُ، أَلَا أَيُّهَا النَّاسُ فَإِنَّمَا أَنَا بَشَرٌ يُوشِكُ أَنْ يَأْتِيَ رَسُولُ رَبِّي فَأُجِيبَ، وَأَنَا تَارِكٌ فِيكُمْ ثَقَلَيْنِ: أَوَّلُهُمَا كِتَابُ اللهِ فِيهِ الْهُدَى وَالنُّورُ فَخُذُوا بِكِتَابِ اللهِ، وَاسْتَمْسِكُوا بِهِ " فَحَثَّعَلَى كِتَابِ اللهِ وَرَغَّبَ فِيهِ، ثُمَّ قَالَ: «وَأَهْلُ بَيْتِي أُذَكِّرُكُمُ اللهَ فِي أَهْلِ بَيْتِي، أُذَكِّرُكُمُاللهَ فِي أَهْلِ بَيْتِي، أُذَكِّرُكُمُ اللهَ فِي أَهْلِ بَيْتِي»

অর্থঃ রাসুলুল্লাহ(ﷺ) একদিন মক্কা ও মদীনার মাঝামাঝি ‘খুম’ নামক স্থানে দাঁড়িয়ে আমাদের সামনে বক্তৃতা দিলেন। আল্লাহর প্রশংসা ও সানা বর্ণনা শেষে ওয়ায-নাসিহত করলেন। অতঃপর বললেনঃ শোনো হে লোক সকল! আমি তো কেবল একজন মানুষ, অতি সত্ত্বরই আল্লাহর পক্ষ থেকে প্রেরিত দূত (মৃত্যুর ফেরেশতা) আসবেন, আর আমিও তাঁর আহ্বানে সাড়া দেবো। আমি তোমাদের নিকট ২টি ভারী জিনিস রেখে যাচ্ছি। এর প্রথমটি হলো আল্লাহর কিতাব (কুরআন)। এতে পথনির্দেশ এবং আলোকবর্তিকা আছে। অতএব তোমরা আল্লাহর কিতাবকে অনুসরণ করো, একে শক্ত করে আঁকড়ে রাখো। তারপর তিনি কুরআনের প্রতি উৎসাহ ও অনুপ্রেরণা দিলেন। এরপর বলেন, আর [অন্যটি হলো] আমার আহলে বাইত[(আলী, ফাতেমা, হাসান ও হোসাইন (عليه السلام)]। আর আমি আমার আহলে বাইতের বিষয়ে তোমাদের আল্লাহকে স্মরণ করিয়ে দিচ্ছি। আমার আহলে বাইতের ব্যাপারে তোমাদের আল্লাহকে স্মরণ করিয়ে দিচ্ছি, আমার আহলে বাইতের বিষয়ে তোমাদের আল্লাহকে স্মরণ করিয়ে দিচ্ছি। …” [সূত্রঃ সহীহ মুসলিম, হা/ ২৪০৮]।


রাবীঃ হুযায়ফাহ ইবনে উসাইদ আল-গিফারী (رضي الله عنه)

হাদিসে সাক্বলাইনঃ এর বিভিন্ন ইসনদঃ
রাবীঃ হুযায়ফাহ ইবনে উসাইদ আল-গিফারী (رضي الله عنه)

[মুআজম আল কবির - তাবারানী]: জায়েদ ইবনে আল-হাসান আল-অনমতী ➠ [মূল গ্রন্থটি পাওয়া যায়নি বলে তবে সনদ ক্ষতিগ্রস্থ নয় এবং পরোক্ষভাবে আল হায়সামি থেকে উল্লেখিত] ➠ জায়েদ ইবনুল হাসান আল-আনমাতি ➠ আবু আল-তুফায়ল ➠ হুদায়াফাহ ইবনে উসাইদ আল-গিফারী (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত।

তাবারানীঃ (মুহাম্মদ বিন আল ফজল আল সাকতি ➠ সাঈদ বিন সুলায়মান) ও (মুহাম্মদ বিন আব্দুল্লাহ আল হাদরামী ও যাকারিয়া ইবনে ইয়াহিয়া আল সাজি) ➠ উভয় থেকে ➠ নসর বিন আবদুল রহমান আল ওয়াসা ➠ যায়েদ ইবনে আবুল হাসান আল আনমতি ➠ মা'রুফ বিন খুরবুদ ➠ আবি আল তুফাইল ➠ হুযাইফা বিন ঊসায়দ আল গিফারি (رضي الله عنه) থেকে।
[তাবারানীঃ মুযাম আল কবীর, খন্ড ৩, পৃষ্ঠা ৬৫, ২৬৮৩] 

তাবারানীঃ (মুহাম্মদ বিন `আব্দুল্লাহ আল-হাদরামী & যাকারিয়া ইবনে ইয়াহিয়া আল সাজি ➠ নসর বিন আবদুল রহমান আল ওয়াসা) ও (আহমাদ ইবনে আল কাসেম ইবনে মুসাওইর আল যাওহারী ➠ সাঈদ বিন সুলায়মান আল ওয়াসিতি) ➠ উভয় থেকে ➠ যায়েদ ইবনে আবুল হাসান আল আনমতি ➠ মা'রূফ বিন খুরবোধ ➠ আবি আল-তুফাইল ➠ হুযাইফা বিন ঊসায়দ আল গিফারি (رضي الله عنه) থেকে।
[তাবারানীঃ মুযাম আল কবীর, খন্ড ৩, পৃষ্ঠা ২০০ - ২০১, ৩০৫২] 

[তারিখে বাগদাদ]: আল-হুসেন ইবনে ওমর ইবনে বুরহান আল-গজল ➠ মুহাম্মদ ইবনে হাসান আল-নাক্কাস ➠ আল-মতিন ➠ নসর ইবন আব্দুর রহমান ➠ জায়েদ ইবনে হাসান ➠ আল-মাআরফ ➠ আবু তুফায়েল ➠ হুদায়াফাহ ইবনে উসাইদ আল-গিফারী (رضي الله عنه) ➠ রাসূলুল্লাহ (ﷺ) থেকে।

[হিলয়াতুল আওলিয়া - আবু নু'আয়ম]: মুহাম্মদ ইবনে আহমাদ ইবনে হামদান ➠ হাসান ইবনে সুফিয়ান ➠ নসর ইবনে `আবদুর রহমান আল-ওয়াশা ➠ জায়েদ ইবনে হাসান আল-আনমাতি ➠ মারুফ ইবনে খারবুদ মক্কী ➠ আল-তুফায়ল ➠ `আমির ইবনে ওয়াসিলাহ ➠ আবু হুদায়েফাহ ইবনে উসাইদ আল-গিফারি (رضي الله عنه) ➠ রাসূলুল্লাহ (ﷺ) থেকে।
[হিলাতুল আওয়ালিয়া, খন্ড ১, পৃষ্ঠা ৩৫৫]।


অন্যান্য রাবী

হাদিসে সাক্বলাইনঃ এর বিভিন্ন ইসনদঃ
অন্যান্য রাবীঃ

[আবু মুহাম্মাদ আহমদ ইবনে মুহাম্মদ ইবনে আলী আল-আসিমির ইসনাদ]: আবু ইসহাক ইব্রাহিম ইবনে জাফর আল-শুরমিনী ➠ আবু আল-হাসান `আলী ইবনু ইউনূস ইবনুল-হাইয়াজ আল-আনসারী ➠ হুসেন ইবনে আব্দুল্লাহ, ➠ ইমরান ইবনে আব্দুল্লাহ,➠ `ইসা ইবনে আলী এবং` আব্দুর রহমান আল-নাসাঈ ➠ আব্দুর রহমান ইবনে সালিহ` ➠ `আলী ইবনে আব্বাস ➠ আবী ইসহাক ➠ হানাশ (رضي الله عنه)

নাওয়াদিরুল উসুল [হাকিম আল তিরমিযী]: যায়েদ ইবনে সাবিত থেকে ইয়াহইয়া ইবনে আবদুল হামিদ শারিক আল-রুকাইন ➠ আল-কাসিম ইবনে হাসান (رضي الله عنه) ➠ রাসূলুল্লাহ (ﷺ) থেকে।

মুসনাদ আল বাযযার: আহমাদ ইবনে মনসুর ➠ দাউদ ইবনে আমর ➠ সালেহ ইবনে মুসা ইবনে আবদুল্লাহ `আবদুল আল-আজিজ ইবনে রাফি` আবু সালিহ ➠ আবু হুরায়রাহ (رضي الله عنه) থেকে ➠ রাসূলুল্লাহ (ﷺ) থেকে।

[আবাকাত]: আল-জুবাবি বর্ণনা করেছেন ➠ `আবদুল্লাহ ইবনে মুসা- (তাঁর পিতা) মুসা ➠` আবদুল্লাহ ইবনে হাসান ➠ (তাঁর পিতা) হাসান ➠ (তাঁর দাদা) হাসান ➠ ইমাম আলী রিদ্বা (رضي الله عنه) ➠ রাসূলুল্লাহ (ﷺ) থেকে।


আহলে বাইতের ভালবাসা ফরযঃ

আহলে সুন্নাতের প্রখ্যাত আলেম আল্লামা জালাল উদ্দিন সূয়ুতী বর্ণনা করেন যে, পবিত্র কোরআন ও নবী (صلى الله عليه و آله و سلم)-এর হাদীস হতে এটা প্রমাণিত হয় যে, আহলে বাইত আলী, ফাতেমা, হাসান ও হোসাইন (عليه السلام)-এর মুয়াদ্দাত (আনুগত্যপূর্ণ ভালোবাসা) দ্বীনের ফরায়েজে গণ্য; সুতরাং ইমাম শাফেয়ী (রহঃ) এটার সমর্থনে এরূপ সনদ দিয়েছেন যে, “ইয়া আহলে বাইত-এ রাসূল, আল্লাহ তাঁর নাজিল করা পবিত্র কোরআনে আপনাদের মুয়াদ্দাতকে ফরজ করেছেন, যারা নামাজে আপনাদের উপর দরুদ পড়বে না, তাদের নামাজই কবুল হবে না”। 
[সূত্রঃ ইবনে হাজার মাক্কীর, সাওয়ায়েকুল মুহরেকা, পৃঃ ১০৩]।

পবিত্র কোরআনে, মহানবী (صلى الله عليه و آله و سلم) -এর আহলে বাইত-এর ভালবাসা ও অনুসরণ ফরজ করা হয়েছে।

❏ আয়াত ১:

“বলুন, যে পারিশ্রমিকেই আমি তোমাদের কাছ চেয়ে থাকি না কেন, তা তো তোমাদেরই জন্য।” [সূরা-সাবা, আয়াত ৪৭]।

❏ আয়াত ২:

“বলুন, আমি আমার রিসালাতের দায়িত্ব পালনের বিনিময়ে তোমাদের কাছে কিছুই চাই না, কেবল আমার আহলে বাইতের প্রতি ভালবাসা ব্যতিত।” [সূরা-শুরা, আয়াত-২৩]

❏ হাদীস ১:

أخرج سعید بن منصور في سننه عن سعید بن جبیر رضی الله عنه في قوله تعالى: (قل لآ أسئلكم عليه أجرا إلا ألمودة في القربي) قال: قربی رسول الله صلى الله عليه وسلم.

হযরত সাঈদ ইবনে মনসুর তাঁর সুনান এ বর্ণনা করেছেন হযরত সাঈদ ইবনে জুবাইর (رضي الله عنه) হতে, তিনি আল্লাহ তা'আলার বাণী ,
 قليلة لآأسئلکم علیه أجراها إلا المودة فی القربی  
অর্থাৎ, হে রাসূল (ﷺ) আপনি বলে দিন, (নবুয়তি দায়িত্ব পালনের) জন্য আমি তােমাদের থেকে কোন বিনিময় চাইনা, শুধু আমার নিকটাত্মীয়দের ভালবাসা ব্যতিত। (সূরা আশ শূরা ২৩) সম্পর্কে মন্তব্য করেন। তিনি (হযরত সাঈদ ইবনে জুবাইর (رضي الله عنه) বলেন, القربی বা নৈকট্য প্রাপ্তরা হচ্ছেন, রাসূল (ﷺ) এর নিকট আত্মীয়।

তথ্যসূত্রঃ
১. জামেউল বয়ান- তাবারী -১১:১৪৪।
২. যাখায়েরুল উকবা, মুহীব্বুত তাবারী- পৃষ্ঠা: ৩
৩. অনুরূপ দাবি করেছেন- ইবনুসসির।
৪. আদদুররুল মনছুর, লিখক- জালালুদ্দীন সুয়ুতী, ৫: ৭০১। 
৫. বুখারীতেও অনুরূপ রয়েছে।

❏ হাদীস ২:

أخرج ابن المنذر، وابن ابی حاتم وابن مردويه في تفاسيرهم، والطبراني في المعجم الكبير عن ابن عباس رضي الله عنهما، لما نزلت هذه الآية: (قل لآ أسئلكم عليه أجرا إلا المودة فی القربی) قالوا: يا رسول الله من قرابتك هؤلاء الذين وجبت مودتهم؟ قال صلى الله عليه وسلم: علی، وفاطمة، وولداهما؛

হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (رضي الله عنه) থেকে বর্ণনা করেন, যখন 
 قل لآ أسئلکم علیه أجراإلا المودةفی القربی; 
হে রাসূল (ﷺ) আপনি বলে দিন, (নবুয়তি দায়িত্ব পালনের) জন্য আমি তােমাদের থেকে কোন বিনিময় চাইনা, শুধু আমার নিকটাত্মীয়দের ভালবাসা ব্যতিত। (সূরা আশ শূরা ২৩) আয়াতটি নাযিল হয় তখন সাহাবায়ে কেরাম (رضي الله عنه) জিজ্ঞাসা করেন, হে আল্লাহর রাসূল (ﷺ)! আপনার ঐসব নিকটত্মীয় কারা, যাদেরকে ভালবাসা আমাদের ওপর আবশ্যক? তিনি [রাসূলুল্লাহ (ﷺ)] উত্তরে ইরশাদ করলেন, (তারা হল) আলী, ফাতিমা এবং তাদের দু'সন্তান।

তথ্যসূত্রঃ
১. আল জামে' লি আহকামিল কুরআন (তাফসীরে কুরতবী)- ইমাম কুরতুবী - ৮:২১। 
২. তাফসীরে কাবীর- ফকরুদ্দীন রাজী ২৭:১৬৬। 
৩. আল মু'জামুল কাবীর- ইমাম তাবরানী-৩: ৪৭ (২৬৪১)/১১: ৩৫১ (১২২৫৯)।
৪. মাজমাউজ জাওয়ায়েদ আল হায়ছামী ৯:১৬৮/৭:১০৩।
৫. আদ দুররুল মনছুর- লিখক (জালালুদ্দীন সুয়ূতী) - ৫:৭০১।
৬.ইবনুল মুনযির, 
৭.ইবনে আবি হাতিম 
৮.ইবনে মারদাওইয়্যাহ প্রমূখ তাফসীর কারকগণ।

❏ হাদিস ৩:

হযরত আবদুল্লাহ বিন আব্বাস (رضي الله عنهما ) বর্ণনা করেছেন যে, যখন এই আয়াত নাযিল হলো তখন সাহাবাগণ জিজ্ঞেস করলেন, “ইয়া রাসূলুল্লাহ (صلى الله عليه و آله و سلم) কাঁরা আপনার নিকট আত্মীয়? যাদের মুয়াদ্দাত (আনুগত্যপূর্ণ ভালোবাসা) পবিত্র কোরআনে উম্মতের উপর ফরজ করা হয়েছে। উত্তরে নবী (ﷺ) বললেন-আলী, ফাতেমা, হাসান ও হোসাইন এর মুয়াদ্দাত (আনুগত্য)।”

[সূত্রঃ কোরআন শরীফ (শুরা,২৩) (আশরাফ আলী থানভী), পৃঃ-৬৯২;তাফসীরে মাজহারী, খঃ-১১, পৃঃ-৬৩ (ই,ফাঃ); তাফসীরে নুরুল কোরআন (মাওলানা আমিনুল ইসলাম),খঃ-২৫, পৃঃ-৬৭; মাদারেজুন নাবুয়াত, খঃ-৩, পৃঃ-১১৭, শায়খ আব্দুল হক মুহাদ্দেস দেহলভী তাফসীরে দূররে মানসুর, খঃ-৬, পৃঃ-৭ (মিশর); তাফসীরে যামাখশারী, খঃ-২, পৃঃ-৩৯৯, (মিশর); তাফসীরে তাবারী, খঃ-২৫, পৃঃ-২৫ (মিশর); তাফসীরে কাশশাফ, খঃ-৩, পৃঃ-৪০২; খঃ-৪, পৃঃ-২২০ (মিশর); তাফসীরে কাবীর, খঃ-২৭, পৃঃ-১৬৬ (মিশর); তাফসীরে বায়যাভী, খঃ-৪, পৃঃ-১২৩ (মিশর); তাফসীরে ইবনে কাসির, খঃ-৪, পৃঃ-১১২ (মিশর); তাফসীরে কুরতুবি, খঃ-১৬, পৃঃ-২২ (মিশর); তাফসীরে নাসাফী, খঃ-৪, পৃঃ-১০৫ (মিশর); তাফসীরে আবু সাউদ, খঃ-১, পৃঃ-৬৬৫; তাফসীরে জামে উল বায়ান, (তাবারী), খঃ-২৫, পৃঃ-৩৩; তাফসীরে আল আকাম, খঃ-২, পৃঃ-১২১; তাফসীরে বাহরুল মুহিয়াত (ইবনে হাইয়্যান), খঃ-৯, পৃঃ- ৪৭৬; তাফসীরে বিহার আল মাদিদ (ইবনে আজি), খঃ-৫, পৃঃ-৪৩১; তাফসীরে আবু সাউদ, খঃ-৬, পৃঃ-৮০; তাফসীরে কাবীর, খঃ-১৩, পৃঃ-৪৩২; তাফসীরে বাইদাবী, খঃ-৫, পৃঃ-১৫৩; তাফসীরে আল নাসাফী, খঃ-৩, পৃঃ-২৮০; তাফসীরে আল নিশাবুরি, খঃ-৬,পৃঃ-৪৬৭; ইয়ানাবিউল মুয়াদ্দাত, পৃঃ-১৭৩, (উর্দ্দু); আরজাহুল মাতালেব, পৃঃ-১০২, ৫৮৭, (উর্দ্দু)]।

❏ হাদীস ৪:

ইমাম আহমদ, ইমাম তিরমিজী (তিনি হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন) ইমাম নাসায়ী এবং হাকেম প্রমূখ হযরত মুত্তালিব ইবনে রাবীয়াহ্ (رضي الله عنه) হতে বর্ণনা করেন,

أخرج أحمد، والترمذي وصححه، والنسائی، والحاکم عن المطلب بن ربيعة رضي الله عنهما قال: قال رسول الله صلى الله عليه وسلم: (والله لا يدخل قلب امریء مسلم إيمان، حتى يحبكم لله ولقرابتي)

তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এরশাদ করেছেন, আল্লাহর শপথ! ততক্ষণ পর্যন্ত কোন মুসলিমের ক্বলবে ঈমান প্রবেশ করবেনা, যতক্ষন সে তােমাদেরকে আল্লাহ ও আমার নিকটাত্মীয়দের কারণে (ওয়াস্তে) ভালবাসবেনা।

তথ্যসূত্রঃ
১. মুসনাদ এ ইমাম আহমদ ১:৩৪২ (১৭৮০)/৫:১৭২ (১৭০৬১)।
২. তিরমীজি- ৫: ৬১০ (৩৭৫৮)।
৩. নাসায়ী-৫:৫১ (৮১৭৫)।
৪. আল মুসতাদরিক- ৪:৮৫:৬৯৬০।
৫. তিবরিযিঃ মিশকাত পৃঃ ৫৭০।

❏ হাদীস ৫:

أخرج الطبراني في الأوسط عن عبد الله بن جعفر رضي الله عنهما قال سمعت رسول اللهﷺ يقول: يابنی هاشم، إني قد سألت الله أن يجعلكم نجداء رحماء. وسألته أن يهدي ضالكم، ويؤمن خائفكم، ويشبع جائعكم. والذي نفسي بيده، لا يؤمن أحد حتى يحبكم بحبي. أترجون أن تدخلوا الجنة بشفاعتی، ولا يرجوها بنوعبد المطلب؟

হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে জা'ফর (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেন, "আল্লাহর কসম! যার হাতে আমার প্রাণ, কোন ব্যক্তি ততক্ষণ ঈমানদার হবেনা, যতক্ষণ না সে তােমাদেরকে আমার কারণে ভালোবাসবে।"

তথ্যসূত্রঃ
আল্ মু'জামুল আওসাত, ৮:৩৭৩ (৭৭৫৭)।

❏ হাদীস ৬:

أخرج ابن النجار في تاريخه عن الحسن بن علی رضی الله عنهما قال: قال رسول الله ﷺ لكل شيء أساس، وأساس الإسلام حب أصحاب رسول اللهﷺ وحب أهل بيته؛

ইবনে নাজ্জার তার ‘তারীখ’-এ হযরত হাসান ইবনে আলী (رضي الله عنه) থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) ইরশাদ করেছেন, “প্রত্যেক কিছুর একটি মূল আছে। আর ইসলামের মূল হচ্ছে, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর সাহাবাদের এবং তার পরিবারবর্গ (আহলে বাইত)'কে ভালবাসা”।

তথ্যসূত্রঃ
‘আদ-দুররুল মনসুর জালালুদ্দীন সুয়ুতী, ৬:৭।

❏ হাদীস ৭:

ইমাম তিরমিজী (তিনি হাদীছটিকে হাসান বলেছেন) ও ইমাম তাবরানী হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (رضي الله عنه) থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন,

أخرج الترمذي وحسنه، والطبراني عن ابن عباس رضی الله عنهما قال: قال رسول الله صلى الله عليه وسلم: أحبوا الله لما يغذوكم به من نعمه، وأحبونی لحب الله، وأحبوا أهل بیتی لحبی۔

রাসূলুল্লাহ (ﷺ) ইরশাদ করেছেন, “আল্লাহ তা'আলা তার নেয়ামতরাজি দ্বারা তােমাদেরকে যেভাবে পানাহার করান তার জন্য তাঁকে ভালোবাস। আর আল্লাহর ভালোবাসা পেতে আমাকে ভালোবাস, আর আমার ভালোবাসা পেতে আমার পরিবার-পরিজনকে ভালোবাস।

তথ্যসূত্রঃ
১. তিরমীজি- ৫:৬৩৩ (৩৭৮৯), আর তিনি বলেছেন, হাদীছটি হাসান গরীব।
২. আল মুজামুল কবীর-ইমাম তাবরানী-৩:৪৬ (২৬৩৮)।
৩. আল মুসতাদরিক- ইমাম হাকেম- ৩: ১৬২ (৪৭১৬), আর তিনি বলেছেন, হাদীছটি সনদের দিক দিয়ে সহীহ, তবে তারা হাদীছটি বর্ণনা করেননি।
অনুরূপ বলেছেন, ইমাম যাহাবী এবং ইমাম বায়হাকী তার শুয়াবুল ঈমানে (২:১৩০/১৩৭৮)।

❏ হাদীস ৮:

أخرج الطبراني في الأوسط عن الحسن بن علی رضي الله عنهما أن رسول الله صلى الله عليه وسلم قال: الزموا مودتنا أهل البيت، فإنه من القى الله وهو يودنا، دخل الجنة بشفاعتنا. والذي نفسي بيده، لا ينفع عبدا عمل عمله، إلا بمعرفته حقنا؛

ইমাম তাবরানী ‘আল আওসাত’ এ হযরত হাসান ইবনে আলী (رضي الله عنه) থেকে বর্ণনা করেন যে, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) ইরশাদ করেছেন, আমার আহলে বাইত বা পরিবারবর্গের সাথে ভালোবাসাকে আবশ্যক করে নাও। কেননা, যে ব্যক্তিই আল্লাহর সাথে এ অবস্থায় সাক্ষাত করবে যে, সে আমাদেরকে ভালোবাসে, সে আমাদের শাফায়াত বা সুপারিশের দ্বারা জান্নাতে প্রবেশ করবে। আল্লাহর কসম! যার হাতে আমার প্রাণ, কোন বান্দার আমল ততক্ষন কাজে আসবে না, যতক্ষন না সে আমাদের অধিকার সম্পর্কে সচেতন হবে (রক্ষা করবে)।

তথ্যসূত্রঃ
১. আর মু'জামুল আওসাত, ৩:২২ (২২৫১)। 
২. কাজী আয়াজ (রাহমাতুল্লাহি তা'আলা আলাইহি) তাঁর শেফা -(৩:৪৮) কিতাবে বলেছেন, কোন কোন আলেম বলেন, معرفتهم অর্থ হচ্ছে নবী করীম (ﷺ) এর মর্যাদা সম্পর্কে জানা। আর যখন তারা (উম্মত) এ সম্পর্কে জানবে তখন তারা তার [নবী করীম (ﷺ)] কারণে তাদের (আহলে বাইতে) অধিকার ও সম্মান সম্পর্কে জানবে।

❏ হাদীস ৯:

أخرج الديلمي عن علي رضي الله عنه قال: قال رسول اللهﷺ أثبتكم على الصراط، أشدكم حبا لأهل بیتی وأصحابی؛

ইমাম দায়লামী হযরত আলী (رضي الله عنه) এর সূত্রে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) ইরশাদ করেন, “তােমাদের মধ্যে সিরাতের ওপর ঐ ব্যক্তিই সবচেয়ে বেশি অটল থাকবে, যে আমার বংশধরগণ ও আমার সাহাবাগণকে বেশি বেশি ভালবাসবে”।

তথ্যসূত্রঃ
১. আল কামেল, ইবনু আদী, ৬:২৩০৪।
২. কানযুল উম্মাল, আল মুত্তাফিউল হিন্দ, ১২:৯৬ (৩৪১৫৭)।
“সিরাত" সিরাত হচ্ছে জাহান্নামের ওপরে স্থাপিত একটি চুলের চেয়ে সুক্ষ্ম, তরবারীর চেয়ে ধারালাে, অসংখ্য কাটাযুক্ত, অন্ধকার ও বিকট শব্দপূর্ণ দীর্ঘ সেতু বা পুল।

❏ হাদীস ১০:

أخرج الديلمي عن علي رضي الله عنه قال: قال رسول اللهﷺ أدبوا أولادكم على ثلاث خصال: حب نبيكم، وحب أهل بيته، وعلى قرأة القرآن. فإن حملة القرآن في ظل الله يوم لا ظل إلا ظله، مع أنبيائه وأصفيائه؛

ইমাম দায়লামী হযরত আলী (رضي الله عنه) থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) ইরশাদ করেন, তোমার সন্তানদেরকে তিনটি বিষয়ে শিষ্টাচার শিক্ষা দাও। তা হচ্ছে, 
১. তোমাদের নবীর (ﷺ) ভালবাসা।
২. তাঁর (ﷺ) পরিবারবর্গের (আহলে বাইত) ভালবাসা।  
৩. এবং কুরআন পড়ার শিক্ষা, কেননা কুরআন বহনকারী সেদিন (কেয়ামতের দিন) আল্লাহর (আরশের) ছায়ার নিচে তার নবীগণ এবং তার পবিত্র বান্দাদের সাথে থাকবে, যেদিন তার ছায়া (আরশের) ব্যতিত আর কোন ছায়া থাকবেনা”।

তথ্যসূত্রঃ
১. কানযুল উম্মাল, আল মুত্তাক্বী আল হিন্দ ১৬:৪৫৬ (৪৫৪০৯)।
২. কাশফুল খাফা, আল আজলূনী, ১:৭৪ (১৭৪)। 

❏ হাদীস ১১:

أخرج الطبراني عن ابن عباس رضي الله عنهما قال: قال رسول اللهﷺ لا تزول قدما عبد حتى يسأل عن أربع: عن عمره فيما أفناه، وعن جسده فيما أبلاه، وعن ماله فيما أنفقه ومن أين اكتسبه وعن محبتنا أهل البيت؛

ইমাম ত্বাবরানী হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (رضي الله عنهما )’র সূত্রে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) ইরশাদ করেন, কোন বান্দাহ ততক্ষণ অগ্রসর হতে পারবেনা, যতক্ষণ না তাকে চারটি প্রশ্ন করা হবে। (তা হচ্ছে) 
১. তার বয়সের ব্যাপারে যে, সে তা কীভাবে ব্যয় করেছে, 
২. তার শরীরের ব্যাপারে যে, তা সে কীভাবে ক্ষয় করেছে। 
৩. তার সম্পদের ব্যাপারে যে, সে তা কীভাবে খরচ করেছে এবং কোথায় হতে আয় করেছে। 
৪. এবং আমার পরিবারবর্গের (আহলে বাইত) ভালবাসার ব্যাপারে।

তথ্যসূত্রঃ 
১. আল মু'জামুল কাবীর, ১১:৮৩ (১১১৭৭)।
২. আল মু'জামুল আওসাত, ১০:১৮৫ (৯৪০২)।
৩. মাজমাউয যাওয়ায়েদ, হাইছামী ১০:৩৪৬ হযরত আবু বরযা’র বর্ণনায় অনুরূপ রয়েছে। 

❏ হাদিস ১২ :

হযরত আবু বকর (رضي الله عنه) বলেন, “মহানবী (صلى الله عليه و آله و سلم) -এর সন্তুষ্টি তাঁর আহলে বাইতের ভালোবাসার মধ্যে নিহিত।”
[সূত্রঃ সহীহ্ বোখারী, খঃ-৬, হাঃ-৩৪৪৭, ৩৪৭৯, (ই. ফাঃ); তাফসীরে ইবনে কাসির, খঃ-১৬, পৃঃ-৫২৬; (হুসাইন আল মাদানী প্রকাশনী, আহলে হাদীস)]।

“আল্লামা যামাখশারী ও আল্লামা ফখরুদ্দীন রাজী প্রখ্যাত দুজন তাফসীরকারক” ও বিজ্ঞ আলেম, তারা তাদের সুবিখ্যাত তাফসীর গ্রন্থদ্বয় “আল কাশশাফ ও আল কাবীর” তাফসিরদ্বয়ে এভাবে লিপিবদ্ধ করেছেন যখন উক্ত আয়াত নাযিল হলো (সূরা-শুরা-আয়াত-২৩) তখন রাসূল (صلى الله عليه و آله و سلم) বলেন:- 
(১) যে ব্যক্তি আলে মুহাম্মাদের ভালোবাসা নিয়ে ইহজগৎ ত্যাগ করে, সে শহিদী মর্যাদা পায়।
(২) যে ব্যক্তি আলে মুহাম্মাদের ভালবাসা নিয়ে ইহজগৎ ত্যাগ করে, সে নাজাত প্রাপ্ত হয়ে ইহজগৎ ত্যাগ করে ।
(৩) যে ব্যক্তি আলে মুহাম্মাদের ভালবাসা নিয়ে ইহজগৎ ত্যাগ করে, সে তওবাকারী হিসাবে ইহজগৎ ত্যাগ করে।
(৪) যে ব্যক্তি আলে মুহাম্মাদের ভালবাসা নিয়ে ইহজগৎ ত্যাগ করে, সে পূর্ণ ঈমানের সঙ্গে ইহজগৎ ত্যাগ করে।
(৫) যে ব্যক্তি আলে মুহাম্মাদের ভালবাসা নিয়ে ইহজগৎ ত্যাগ করে, তাকে মালাকুল মউত, মুনকীর ও নকীর ফেরেশতারা সুসংবাদ দেয়। 
(৬) যে ব্যক্তি আলে মুহাম্মাদের ভালোবাসা নিয়ে ইহজগৎ ত্যাগ করে, তাকে এমন ভাবে বেহেশতে নিয়ে যাওয়া হবে যেমন বিবাহের দিন কন্যা তার শ্বশুরালয়ে যায়।
(৭) যে ব্যক্তি আলে মুহাম্মাদের ভালবাসা নিয়ে ইহজগৎ ত্যাগ করে, তার কবরে জান্নাত মুখী দু‘টি দরজা খুলে দেয়া হবে। 
(৮) যে ব্যক্তি আলে মুহাম্মাদের ভালবাসা নিয়ে ইহজগৎ ত্যাগ করে, আল্লাহ তার কবরকে রহমতের ফেরেশতাদের জিয়ারতের স্থানের মর্যাদা দেন।
(৯) যে ব্যক্তি আলে মুহাম্মাদের ভালবাসা নিয়ে ইহজগৎ ত্যাগ করে, সে নবীর সুন্নত ও খাঁটি-মুসলমানদের দলভুক্ত হয়ে ইহজগৎ ত্যাগ করলো। 
(*) সাবধান যে ব্যক্তি আলে মুহাম্মাদের শত্রুতা নিয়ে মৃত্যুবরণ করে, কিয়ামতের দিনে তার কপালে লেখা থাকবে সে আল্লাহ পাকের রহমত হতে বঞ্চিত। 
(*) যে ব্যক্তি আলে মুহাম্মাদের শত্রুতা নিয়ে মৃত্যুবরণ করে, সে কাফের হয়ে মারা যায়। 
(*) যে ব্যক্তি আলে মুহাম্মাদের শত্রুতা নিয়ে মৃত্যুবরণ করে, সে বেহেশতের সুগন্ধও পাবে না। 
সাহাবারা জিজ্ঞেস করলেন, ইয়া রাসূলুল্লাহ (صلى الله عليه و آله و سلم) আপনার “আ’ল” আহলে বাইত, কারা? “নবীজি (صلى الله عليه و آله و سلم) বললেন, আলী, ফাতেমা, হাসান, ও হোসেইন, তিনি আরো বলেন, আল্লাহর কসম যার হস্তে আমার জীবন, যে ব্যক্তি আমার আহলে বাইতকে শত্রু মনে করবে, সে জাহান্নামী।”

[সূত্রঃ তাফসীরে কাবির, খঃ-২৭, পৃঃ-১৬৫, (মিশর); তাফসীরে আল কাশশাফ ওয়াল বায়ান, খঃ-৩, পৃঃ-৬৭, (মিশর); তাফসীরে কুরতুবি, খঃ-১৬, পৃঃ-২২, (মিশর); এহইয়াউল মাইয়াত, পৃঃ-৬; আরজাহুল মাতালেব, পৃঃ-৪১৮; সাওয়ায়েক মোহরিরকা, পৃঃ-১০৪; ইয়া নাবিউল মুয়াদ্দাত, পৃঃ-৫৫, ৫৯৯]।


আহলে বাইত (عليهم السلام)-এর অনুসরণ ব্যতিত কোন আমল কাজে আসবে নাঃ

❏ প্রমাণ ১:

ইমাম জালালুদ্দিন সুয়ূতি লিখেছেন যে, রাসুল (صلى الله عليه و آله و سلم) বলেছেন যে, “দেখো! আমার আহলে বাইত-এর অনুসরণকে নিজেদের জন্য অতি আবশ্যকীয় কর্তব্য বলে মনে করবে, কারণ যে ব্যক্তি অন্তরে তাঁদের মহব্বতসহ আল্লাহর নিকট কিয়ামতে উপস্থিত হবে, সে আমার শাফায়াতে জান্নাতে প্রবেশ করবে এবং আল্লাহর কসম আমার আহলে বাইত-এর অনুসরণ ব্যতিত কোন ব্যক্তির কোন আমল (নামায, রোজা, যাকাত, হজ্জ সকল ইবাদাত) উপকারে আসবে না”।

[সূত্রঃ আল্লামা জালাল উদ্দিন সূয়ূতীর এহইয়াউল মাইয়াত, পৃঃ-৩; আল্লামা ইবনে হাজার মাক্কী, সাওয়ায়েকুল মুহরেকা, পৃঃ-১১২]।

❏ প্রমাণ ২:

রাসুল (صلى الله عليه و آله و سلم) আরও এরশাদ করেছেন, “আল্লাহর কসম কোন মুসলমানের অন্তরে ঈমান ততক্ষণ পর্যন্ত প্রবেশ করতে পারে না, যতক্ষণ না আমার আহলে বাইতকে আল্লাহর নির্দেশনানুযায়ী ও আমার আত্মীয়তার কারণে অনুসরণ (আনুগত্যপূর্ণ ভালোবাসা) না করবে”।

[সূত্রঃ আল্লামা জালাল উদ্দিন সুয়ূতীর এহইয়াউল মাইয়াত, পৃঃ-৩; আল্লামা ইবনে হাজার মাক্কী, সাওয়ায়েকুল মুহরিকা, পৃঃ-১১২]।

❏ প্রমাণ ৩:

আল্লামা ইবনে হাজার মাক্কী বর্ণনা করেন যে, নবী (صلى الله عليه و آله و سلم) বলেছেন, “আমার আহলে বাইতের শত্রুতাকারীগণ হাউজে কাউসারের নিকট পৌঁছলে তাদেরকে তৃষ্ণার্ত অবস্থায় বিতাড়িত করে দয়া হবে”।

[সূত্রঃ ইবনে হাজার মাক্কীর,
সাওয়ায়েকুল মোহরিকা, পৃঃ ১০৪]।


আহলে বাইতের সম্মান ও হক্বঃ

❏ হাদীস ১:

أخرج مسلم، والترمذي، والنسائي عن زيد بن أرقم رضي الله عنه أن رسول الله صلى الله عليه وسلم قال: أذكركم الله في أهل بیتی

ইমাম মুসলিম, তিরমিজী ও নাসায়ী প্রমূখ হযরত ইয়াজিদ ইবনে আরকাম (رضي الله عنه) থেকে বর্ণনা করেন যে, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এরশাদ করেছেন, আমি তােমাদেরকে আমার আহলে বায়তের (হক্বের) ব্যাপারে আল্লাহর (আদেশের) কথা স্মরণ করিয়ে দিচ্ছি।

তথ্যসূত্রঃ
১. জামেউল বয়ান- তাবারী -১১:১৪৪।
২. যাবায়েরুল উকবা, মুহব্বত তাবারী- পৃষ্ঠা: ৩
৩. অনুরূপ দাবি করেছেন- ইবনুল আসির।
৪. আদদুররুল মনছুর, লিখক জালালুদ্দীন সুয়তী, ৫: ৭০১।
৫. বুখারীতেও অনুরূপ রয়েছে। 

❏ হাদীস ২:
 
أخرج ابن عدی، والبيهقي في شعب الأيمان عن علی رضی الله عنه قال: قال رسول اللهﷺ من لم يعرف حق عترتی، والأنصار، فهو لإحدى ثلاث: إما منافق، وإما لزنية، وإما لغير طهور، یعنی حملته أمه علی غیر طهر;

ইবনে আদি এবং ইমাম বায়হাক্বী ‘শুয়াবুল ঈমান’ এ হযরত আলী (رضي الله عنه) থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) ইরশাদ করেছেন, যে ব্যক্তি আমার পরিবারবর্গ (বংশধর) ও আনসারদের অধিকার সম্পর্কে জানেনা (তাদের হক আদায় করেনা) সে নিশ্চয় তিনজনের একজন। 
১. হয়ত সে মুনাফিক, 
২. অথবা সে জারজ, 
৩. অথবা সে নাপাকীর সন্তান; অর্থাৎ তার মা তাকে ঋতুকালীন (হায়েজ) অবস্থায় গর্ভধারণ করেছেন।

তথ্যসূত্রঃ
১. আল কামেল-ইবনুল আদি-৩:১০৬০।
২. শুয়াবুল ঈমান-২:২৩২ (১৬১৪)।
৩. আল ফেরদৌস-ইমাম দায়লামী ৩:৬৬২ (৫৯৫৫)। 
৪. জাওয়াহিরুল ইকৃদিয়্যীন- আস সামহুদী-২: ২৪।
৫. আছ-ছাওয়াব- আবিশ শাইখ।

❏ হাদীস ৩:

أخرج البخاري عن ابي بكر الصديق رضي الله عنه:قال: "ارقبوا محمدا صلى الله عليه وسلم في أهل بيته .

ইমাম বুখারী (رضي الله عنه) হযরত আবু বকর সিদ্দীক (رضي الله عنه) এর সূত্রে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, তােমরা হযরত মুহাম্মদুর রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর সম্মান রক্ষা করবে তার পরিবারবর্গকে সম্মান করার মাধ্যমে।

তথ্যসূত্রঃ
১. বুখারী, বাবু মানাকিবি কারাবাতি রাসূলিল্লাহি (ﷺ)-ইমাম আবু আব্দিল্লাহ মুহাম্মদ ইবনে ইসমাঈল বুখারী - ৩:২৫ (৩৭১৩)/ বাবু মানাক্বিবিল হাসান ওয়াল হুসাইন ((رضي الله عنه)) - ৩২:(৩৭৫১)।
২. ইমাম সামহুদী তার জাওয়াহেরুল ইকদিয়্যীন -২:৩১১।
৩, দারু কুত্বনী - বিভিন্ন সনদে বর্ণনা করেছেন। এর মধ্যে কোন কোন বর্ণনা হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর (رضي الله عنه) থেকে এসেছে। তিনি বলেছেন, ارقبوا محمداﷺفی اهل بیته অর্থ, 'তােমরা মুহাম্মদ (ﷺ) এর পরিবারবর্গের মাধ্যমে তাকে সর্বোচ্চ সম্মান দেখাবে। অপর বর্ণনায় ارقبوا এর স্থলে اخفظوا (তােমরা সংরক্ষণ করবে) আছে।

❏ হাদীস ৪:

أخرج الحاكم في تاريخه، والديلمي عن أبی سعید رضی الله عنه قال: قال رسول اللهﷺ ثلاث من حفظهن حفظ الله له دينه ودنياه، ومن ضيعهن، لم يحفظ الله له شيئا: حرمة الإسلام، وحرمتی، وحرمة رحمی۔

ইমাম হাকেম তাঁর তারীখ এ এবং ইমাম দায়লামী হযরত আবু সাঈদ (رضي الله عنه)'র সূত্রে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) ইরশাদ করেন, “তিনটি জিনিস যে সংরক্ষণ করবে, আল্লাহ তার দ্বীন ও দুনিয়ার বিষয়গুলি হেফাজত (সংরক্ষণ) করবেন। আর যে এ গুলিকে নষ্ট করবে (সংরক্ষণ করবেনা) আল্লাহ তা'আলা তার কোন কিছুই সংরক্ষণ করবেনা। (সে তিনটি জিনিস হচ্ছে),
১. ইসলামের সম্মান,
২. আমার সম্মান ও,
৩. আমার বংশের সম্মান।

তথ্যসূত্রঃ
১. আল মু'জামুল কাবীর, তাবরানী ৩:১২৬ (২৮৮১)। 
২. আল মু'জামুল আওসাত, তবরানী ১৬২ (২০৫)।

❏ হাদিস ৫ :

‘গাদীরে খোম’ নামক স্থানে রাসূলুল্লাহ (ﷺ) ইরশাদ করেন,

«وَأَهْلُ بَيْتِي أُذَكِّرُكُمُ اللهَ فِي أَهْلِ بَيْتِي، أُذَكِّرُكُمُ اللهَ فِي أَهْلِ بَيْتِي، أُذَكِّرُكُمُ اللهَ فِي أَهْلِ بَيْتِي»

“আমার আহল, আমার আহলের ব্যাপারে তোমাদেরকে আল্লাহর কথা স্মরণ করিয়ে দিচ্ছি। আমার আহলের ব্যাপারে তোমাদেরকে আল্লাহর কথা স্মরণ করিয়ে দিচ্ছি। আমার আহলের ব্যাপারে তোমাদেরকে আল্লাহর কথা স্মরণ করিয়ে দিচ্ছি।” [সূত্রঃ সহীহ মুসলিম, হা/ ২৪০৮]।


আহলে বাইতে বিদ্বেষ পােষণকারী, তাঁদের পরিত্যাগকারী জাহান্নামীঃ

❏ হাদীস ১:

হযরত আবু সাইদ খুদরী (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত,
أخرج ابن عدي في الإكليل عن أبي سعيد الخدری رضي الله عنه قال: قال رسول اللهﷺ: من أبغضنا أهل البيت، فهو منافق ؛ 
রাসূলুল্লাহ (ﷺ) ইরশাদ করেন, "যারা আহলে বাইতের সাথে বিদ্বেষ রাখে তারা মুনাফিক।" 

তথ্যসূত্রঃ 
১. ফাযায়িলুস সাহাবা : ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল , ২য় খন্ড:৬৬১, হাদিস-১১২৬ । 
২. মুহিব্বে তাবারী : যখায়েরুল উকবা , পৃষ্টা-৫১। 
৩. তাফসীরে আদ-দুররুল মুনসুর: আল্লামা সুয়ুতী , ৭ম:৩৪৯ । 
৪. শেত্ব মুক্তা নবী তনয়া ফাতেমাতুয যোহরা : শায়েখুল ইসলাম ড: তাহের আল কাদেরী, পাকিস্তান, পৃষ্টা-৪৪
৫. ‘জাওয়াহেরুল ইকদিয়্যীন- ইমাম সামহুদি-২:২৫। 
৬. আহমদ মুসনাদ এ ইমাম দায়লামী কর্তৃক বর্ণিত হযরত জাবের (رضي الله عنه) এর এই হাদীসটির পক্ষেও স্বাক্ষ্য দেন।
ما کنا نعرفُه المنافقین الاببغضهم علیا رضی الله عنه
অর্থ: আমরা এমন কোন মুনাফিক দেখিনি যে আলী (رضي الله عنه) কে ঘৃণা করতনা।
৭. হাদীসটি ইমাম আহমদ ও তিরমীজি বর্ণনা করেছেন। তবে শব্দগত বর্ণনা ইমাম আহমদের।
৮. ইবনে আদি ‘আল ইক্বলীল' গ্রন্থে বর্ণনা করেন।
৯. আল-ইসতিয়াব, ইবনে আবদ আল-বার, খণ্ড ৩ পৃষ্ঠা ৪৭
১০. আল-ইস্তেদকর, ইবনে আবদুল বারের, খন্ড ৮ পৃষ্ঠা ৪৪৬ (জাবির (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত)
১১. মুওয়াদেহে আহহাম আল-জামে ওয়া আল- তাফরিক, আল-খতিব আল-বাগদাদী, খণ্ড ১ পৃষ্ঠা ৪১
১২. আল-মানাকিব, আল-খাওয়ারিজমি পৃষ্ঠা ২৩২ 
১৩. দাখের আল-উকবা, আল-তাবারি পৃষ্ঠা ৯১ 
১৪. তারিখ আল-খুলাফা, ইমাম-সুয়ুতি পৃষ্ঠা ৬৬
১৫. সহীহ ইবনে হিব্বান (আল ইহসান) ১৫:৪৩৫ (৬৯৭৮)।
১৬. আল মুসতাদরিক-৩:১৬২ (৪৭১৭) এবং তিনি বলেন, এই হাদিসটি ইমাম মুসলিমের শর্ত মতে সহীহ বা বিশুদ্ধ।

তাফসীরে কাশশাফে আছে, 
ألا ومن مات على حب آل محمد مات مؤمناً مستكمل الإيمان۔۔۔ألا ومن مات على بغض آل محمد مات كافراً
“যে ব্যক্তি মুহাম্মদ (ﷺ) এর বংশধরের (আহলে বাইতের) প্রতি ভালবাসা নিয়ে মারা যায় সে পূর্ণ ঈমানের উপর মৃত্যুবরণ করে, আর যে ব্যক্তি মুহাম্মদ (ﷺ) এর বংশধরের প্রতি ঘৃণা নিয়ে মারা যায় সে কাফির হয়ে মারা যায়।"

তথ্যসূত্রঃ
১. তাফসির কাবীর, মিশরে প্রকাশিত (১৩৫৭/১৯৩৮), খন্ড ২৭, পৃষ্ঠা ১৬৫-১৬৬।
২. তাফসীর ইবনে আরবী, ২ য় খণ্ড, পৃষ্ঠা ২১৯
৩. তাফসীর আল-সালাবী, খণ্ড ৮, পৃষ্ঠা ৩১৪
৪. ইয়ানাবি আল-মুওয়াদা খণ্ড ২, পৃষ্ঠা ৩৩৩
৫. তাফসীর আল-কুরতুবী, খণ্ড ১৬ পৃষ্ঠা ২৩
৬. তাজহিজ আল-জাইশ, আল্লামাহ হাসান, আল-দেহলাওয়ী রচিত, পৃষ্ঠা ১৩
৮. আল-শারাফ আল-মুবাদ, আল্লামা আল-নাবহানী, পৃষ্ঠা .৪
৯. আরজাহ আল-মাতালিব লিখেছেন আল্লামাহ অমৃতসরী পৃষ্ঠা ৩২০
১০. নুজহাত আল-মাজালিস, আল্লামা শায়খ আব্দুর রহমান আল-সাফুরী, খণ্ড ২ পৃষ্ঠা ২২২ 

❏ হাদিস ২ :

হাম্বলী মাযহাবের ইমাম আহমাদ ইবনে হাম্বল (মৃত্যুকাল ২৪১ হিজরী) নিজস্ব সনদে বর্ণনা করেছেন যে,
« ﻧﻈﺮ ﺍﻟﻨﺒﻰ ﺻﻠﯽ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﯿﻪ ﻭ ‏( ﺁﻟﻪ ‏) ﻭ ﺳﻠﻢ ﺍﻟﻰ ﻋﻠﯽ ﻭ ﺍﻟﺤﺴﻦ ﻭ ﺍﻟﺤﺴﯿﻦ ﻭ ﻓﺎﻃﻤﺔ ﻓﻘﺎﻝ : ‏« ﺍﻧﺎ ﺣﺮﺏ ﻟﻤﻦ ﺣﺎﺭﺑﮑﻢ ﻭ ﺳﻠﻢ ﻟﻤﻦ ﺳﺎﻟﻤﮑﻢ ».
অনুবাদ : “নবী করিম (ﷺ) আলী, হাসান, হুসাইন ও ফাতেমার (তাদের উপর আল্লাহর দরুদ বর্ষিত হোক) দিকে তাকিয়ে বললেন: যে ব্যক্তি তোমাদের সাথে যুদ্ধ করবে সে আমার সাথেও যুদ্ধে লিপ্ত, আর যে ব্যক্তি তোমাদের সাথে সন্ধী ও শান্তি স্থাপন করবে আমিও তাদের সাথে সন্ধী ও শান্তি স্থাপন করবো”। [মুসনাদে আহমাদ ইবনে হাম্বল]

❏ হাদিস ৩ :

عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ ، عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ ، أَنَّهُ قَالَ : ” يَا بَنِي عَبْدِ الْمُطَّلِبِ ، إِنِّي سَأَلْتُ اللَّهَ لَكُمْ ثَلاثًا : أَنْ يُثَبِّتَ قَائِمَكُمْ ، وَأَنْ يَهْدِيَ ضَالَّكُمْ ، وَأَنْ يُعَلِّمَ جَاهِلَكُمْ ، وَسَأَلْتُ اللَّهَ أَنْ يَجْعَلَكُمْ جُودًا نُجُدًا رُحَمَاءَ ، وَلَوْ أَنَّ رَجُلا صَفَنَ بَيْنَ الرُّكْنِ وَالْمَقَامِ فَصَلَّى وَصَامَ ثُمَّ لَقِيَ اللَّهَ وَهُوَ مُبْغِضٌ لأَهْلِ بَيْتِ مُحَمَّدٍ دَخَلَ النَّارَ ” . 
عن حضرت ابن عباس رضى الله عنهما قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم لو أن رجلا صف بين الركن والمقام فصلى وصام ثم لقى الله مبغضا لاهل بيت محمد صلى الله عليه وسلم دخل النار.

“হযরত ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমা থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, হুযূর পাক (ﷺ) ইরশাদ করেন, কোনো ব্যক্তি যদি সম্মানিত রুকন এবং সম্মানিত মাক্বামের মধ্যবর্তী স্থানে সারিবদ্ধ হয়ে থাকে। অতঃপর নামায পড়ে এবং রোযা রাখে, কিন্তু এই অবস্থায় তার মৃত্যু হয় যে, সে আহলে বাইতের প্রতি বিদ্বেষ পোষণ করে। তাহলে সে অবশ্যই জাহান্নামে প্রবেশ করবে।” (মুস্তাদরাকে হাকীমঃ ৪৭৬৬, যাখাইরুল উক্ববা লি-মুহিব্বে ত্ববারী ১/১৮, হাদিসের মান সহীহ)

❏ হাদিস ৪ :

নবী (ﷺ) ইরশাদ করেছেন, এই উম্মতের যারা আমার আহলে বাইতকে ভালোবাসবে ( অনুসরণ করবে ) তারাই নাজাত পাবে ও যারা অনুসরণ করবে না, তারা ধ্বংস হবে। [মেশকাত, খন্ড-১১, হাদিস-৫৯২৩]

❏ হাদীস ৫ :

أخرج الطبرانی والحاكم عن ابن عباس رضی الله عنهما قال : قال رسول الله صلى الله عليه وسلم: يابنی عبد المطلب، انی سألت الله فيكم ثلاثا: أن يثبت قلوبكم، وأن يعلم جاهلكم، ويهدی ضالكم، وسألته أن يجعلکم جوداء، نجداء، رحماء. فلو أن رجلا صفن بين الركن والمقام فصلى وصام، ثم مات وهو مبغض لأهل بيت محمد، دخل النار؛

ইমাম তাবরানী ও হাকেম হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (رضي الله عنه) এর সূত্রে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) ইরশাদ করেছেন, যদি কোন ব্যক্তি রুকন ও মক্কামে ইব্রাহীমের মাঝখানে অবস্থান করে, অতঃপর (তাতে) নামাজ আদায় করে এবং রােজা রাখে, অতঃপর (এমতাবস্থায়) মারা গেল যে, সে মুহাম্মদুর রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ) এর পরিবার বর্গের (আহলে বায়ত) সাথে হিংসা পােষণকারী, (তাহলে) সে জাহান্নামে প্রবেশ করল। 

তথ্যসূত্রঃ
১. আল মু'জামুল কাবীর-১১: ১৪২ (১১৪১২)।
২. আল মুসতাদরেক -৩:১৬১ (৪৭১২) এবং তিনি এ হাদীসকে ইমাম মুসলিমের শর্তমতে সহীহ বলেছেন। 

❏ হাদীস ৬ :

হযরত আবদুল্লাহ্ ইবনে আব্বাস (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত, হযরত রাসূল (صلى الله عليه و آله و سلم) ইরশাদ করেন, “যদি কোন ব্যক্তি পবিত্র কা’বার পাশে রুকন ইয়ামানি ও মাকাম ইব্রাহিমের মধ্যবর্তী স্থানে দন্ডায়মান হয়ে নামাজ আদায় করে এবং রোযাও রাখে, অতঃপর এমতাবস্থায় আহলে বাইতের সাথে বিদ্বেষ রেখে মৃত্যুবরণ করে, তাহলে সে জাহান্নামে যাবে”।

[সূত্রঃ তাবরানী, আল মু’জাম আল আওসাত,খঃ- ৪, পৃঃ-২১২, হাঃ-৪০০২; হায়সামী, মাজমাউজ যাওয়ায়েদ, খঃ-৯, পৃঃ-১৭২; জুরজানী, তারিখ জুরজান, পৃঃ-৩৬৯; হাকেম আল মুস্তাদরাক, খঃ-৩, পৃঃ-১৬২, হাঃ-৪৭১৭; হায়সামী সাওয়াইক আল-মুহরিকা, পৃঃ-৯০; আল্লামা সূয়ুতী, এহইয়াউল মাইয়্যাত, পৃঃ-২০; ইবনে হিব্বান, আস সহীহ, খঃ-১৫, পৃঃ-৪৩৫, হাঃ-৬৯৭৮; যাহাবী সি’আরু আলামিন নুবালা, খঃ-২, পৃঃ-১২৩; (হাকেমের মত এই হাদীসটি ইমাম মুসলিমের শর্তানুযায়ী সহীহ্); মুহিবের তাবারী, যাখায়েরুল উকবা, পৃঃ-৫১; ফাসবী, আল ‘মা’রিফাতু ওয়াত তারিখ, খঃ- ১, পৃঃ-৫০৫; আল্লামা আলী হামদানি শাফায়ী, মুয়াদ্দাতুল কুরবা, পৃঃ-১০৯; ওবাইদুল্লাহ অমৃতসারি-আরজাহুল মাতালেব, পৃঃ-৫৬৭; কাওকাবে দুরির ফি ফাযায়েলে আলী, পৃঃ-২০৯, সৈয়দ মোঃ সালে কাশাফী সুন্নি হানাফী আরিফ বিল্লাহ; আল্লামা শায়খ আবদুল হক মুহাদ্দিস দেহলভী-মাদারিজুন নবুওয়াত, খঃ-২, পৃঃ-৯০, (ইঃ, ফাঃ)]।

❏ হাদিস ৭ :

عن حضرت جابر بن عبد الله الانصاري رضى الله تعالى عنه قال خطبنا رسول الله صلى الله عليه و سلم فسمعته وهو يقول يا أيها الناس من أبغضنا اهل البيت حشره الله يوم القيامة يهوديا فقلت يا رسول الله صلى الله عليه وسلم وان صام وصلى قال وان صام وصلى وزعم انه مسلم.

অর্থ: “হযরত জাবির ইবনে আব্দুল্লাহ আনছারী (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) একদা আমাদের উদ্দেশ্যে খুতবা দিলেন এবং বলতে থাকলেন যে, হে লোক সকল! যারা আমার আহলে বাইতের প্রতি বিদ্বেষ পোষণ করলো, তাঁদের বিরোধিতা করলো, তাদের হাশর-নশর হবে ইহুদী হিসেবে। আমি আরজ করলাম, ইয়া রসূলাল্লাহ! যদিও তারা রোযা রাখে এবং নামায পড়ে? উত্তরে তিনি ইরশাদ করলেন, হ্যাঁ! যদিও তারা রোযা রাখে, নামায পড়ে এবং দাবি করে যে, তারা মুসলমান।”

তথ্যসূত্রঃ
১.তাবারানীঃ আল মু'জামুল আওসাত- ৫:১৪ (৪০১১)
২.সুয়ূতীঃ জামিউল আহাদীছ ১০/৪৭৫, 
৩.সুয়ূতীঃ জামউল জাওয়ামি‘, 
৪.হায়সামীঃ মাজমাউয যাওয়াইদ লিল হাইছামী ৯/৭১২

❏ হাদীস ৮ :

أخرج الديلمي عن أبی سعید رضی الله عنه قال: قال رسول اللهﷺ اشتد غضب الله على من آذانی فی عترتی۔

ইমাম দায়লামী হযরত আবু সাঈদ খুদরী (رضي الله عنه) এর সূত্রে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) ইরশাদ করেছেন, যে ব্যক্তি আমার পরিবারবর্গ (আহলে বাইত)'র ব্যাপারে আমাকে কষ্ট দেয় আল্লাহ তা'আলা তার ওপরে ভীষণ রাগান্বিত হন।

তথ্যসূত্রঃ 
১. কানযুল উম্মাল, আল মুত্তাকীউল হিন্দ, ১২:৭১৩ (৩৪১৪৩)।
২. যাখাইরুল উক্ববা, তাবারী, পৃ. ৮৩ 

❏ হাদীস ৯ :

أخرج الديلمي عن ابي هريرة رضي الله عنه قال: قال رسول اللهﷺ إن الله يبغض الأكل فوق شبعه، والغافل عن طاعة ربه، والتارك لسنة نبيه، والمخفر ذمته، والمبغض عترة نبيه، والمؤذي جيرانه -

ইমাম দায়লামী হযরত আবু হুরাইরা (رضي الله عنه)'র সূত্রে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) ইরশাদ করেছেন, 'আল্লাহ তা'আলা নিন্মােক্তদের ওপর রাগান্বিত হন,
১. তৃপ্ত হওয়ার পরও খাদ্য গ্রহণকারী, 
২. আপন প্রতিপালকের অনুসরণ থেকে অমনােযােগী, 
৩. তাঁর নবী (ﷺ)'র সুন্নাতকে পরিত্যাগকারী, 
৪. নিজ দায়িত্বে অবহেলাকারী, 
৫. নবী করীম (ﷺ)'র বংশধর (আহলে বাইত)'র প্রতি হিংসা পােষণকারী, 
৬. নিজ প্রতিবেশীকে কষ্ট-দানকারী।

তথ্যসূত্রঃ
কানযুল উম্মাল, আল মুত্তাকিউল হিন্দ, ১৬:৮৭ (৪৪০২৯)।

❏ হাদিস ১০ :

রাসূল (صلى الله عليه و آله و سلم) বলেছেন, সাবধান! “যে ব্যক্তি আলে মুহাম্মদের শত্রুতা নিয়ে মৃত্যুবরণ করে, কিয়ামতের দিন তার কপালে লেখা থাকবে, সে আল্লাহপাকের রহমত হতে বঞ্চিত। যে ব্যক্তি আলে মুহাম্মাদের শত্রুতা নিয়ে মৃত্যুবরণ করে, সে কাফের হয়ে মারা যায়। যে ব্যক্তি আলে মুহাম্মাদের শত্রুতা নিয়ে মৃত্যুবরণ করে, সে বেহেশতের সুগন্ধও পাবে না।”

[সূত্রঃ তাফসীরে আল কাশশাফ ওয়াল বায়ান, খঃ-৩, পৃঃ-৬৭,(মিশর);তাফসীরে কাবির, খঃ-২৭, পৃঃ-১৬৫, (মিশর); তাফসীরে কুরতুবি, খঃ-১৬, পৃঃ-২২, (মিশর); এহইয়াউল মাইয়াত, পৃঃ-৬; আরজাহুল মাতালেব, পৃঃ-৪১৮; সাওয়ায়েক মোহরিকা, পৃঃ-১০৪; ইয়া-নাবিউল মুয়াদ্দাত, পৃঃ-৫৫, ৫৯৯]।

❏ হাদিস ১১ :

রাসূল (صلى الله عليه و آله و سلم) বলেন, “যে ব্যক্তি এজন্য আনন্দিত যে,সে চায় আমার মত জীবন যাপন করতে, আমার মত মৃত্যুবরণ করতে ও আমার প্রতিপালকের চিরস্থায়ী বেহেশতে বাস করতে সে যেন আমার পর, আমার আহলে বাইতকে অনুসরণ করে। কারণ তাঁরা আমার সর্বাধিক আপন এবং তাঁরা আমার অস্তিত্ব হতে অস্তিত্ব লাভ করেছে। আমার জ্ঞান ও প্রজ্ঞা থেকেই তারা জ্ঞান ও প্রজ্ঞা লাভ করেছে। ধ্বংস আমার সেই উম্মতের জন্য যারা আমার আহলে বাইতের শ্রেষ্ঠত্বকে মিথ্যা মনে করে এবং আমার ও তাদের (আহলে বাইত (عليهم السلام)-এর) মধ্যেকার সম্পর্ক ছিন্ন করে। আল্লাহ আমার শাফায়াতকে তাদের জন্য হারাম করেছেন”।

[সূত্রঃ মুস্তাদরাকে হাকেম, খঃ -৩, পৃঃ-১২৮; মুসনাদে আহম্মদ, খঃ -৫, পৃঃ-৯৪; কানজুল উম্মাল, খঃ-৬, পৃঃ-২১৭, হাঃ-৩৭১৯; হুলিয়াতুল আউলিয়া,পৃঃ-৪৪৯]।

❏ হাদীস ১২ :

أخرج الطبراني عن الحسن ابن علی رضی الله عنهما، أنه قال لمعاوية بن حديج: يا معاوية بن حديج، إياك وبغضنا، فإن رسول الله صلى الله عليه وسلم قال: لا يبغضنا أحد، لا يحسدنا أحد، إلا ذيد يوم القيامة عن الحوض بسياط من نار؛

ইমাম তাবরানী হযরত ইমাম হাসান ইবনে আলী (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত, তিনি মুয়াবিয়া ইবনে হুদাইজকে বলেন, হে মুয়াবিয়া ইবনে হুদাইজ! তুমি আমাদেরকে ঘৃণা করা থেকে বিরত থাকো, কেননা, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) ইরশাদ করেছেন, কেউ যেন আমাদেরকে ঘৃণা না করে, কেউ যেন আমাদেরকে হিংসা না করে। যদি করে তাহলে তাকে কিয়ামতের দিন হাউজে কাউছার থেকে আগুনের চাবুক মারতে মারতে তাড়িয়ে দেয়া হবে।

তথ্যসূত্রঃ
১. আল মু'জামুল কবীর- ৩:৮১ (২৭২৬)।
২. আল মু'জামুল আওসত- ৩:২০৩ (২৪২৬)।


আহলে বাইত সর্বোত্তম বংশ মর্যাদার অধিকারীঃ 

❏ হাদীস ১:

أخرج الديلمي عن علي رضي الله عنه قال: قال رسول اللهﷺ خير الناس العرب، وخير العرب قريش، وخير قریش بنوهاشم.

ইমাম দায়লামী হযরত আলী (رضي الله عنه)'র সূত্রে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) ইরশাদ করেছেন, সর্বোত্তম মানুষ হচ্ছে আরবগণ, আর সর্বোত্তম আরব হচ্ছে কুরাইশগণ, আর সর্বোত্তম কুরাইশ বংশীয় লােক হচ্ছে বনু হাশেম।
[দায়লামীঃ আল ফেরদৌস, ২:১৭৮, হাদিস ২৮৯২]

❏ হাদীস ২:

أخرج الطبراني عن عمر رضي الله عنه قال:قال رسول اللهﷺ كل بني أنثى فإن عصبتهم لأبيهم، ما خلا ولد فاطمة فإنی عصبتهم، فأنا أبوهم; 

ইমাম তাবরানী হযরত ওমর (رضي الله عنه) এ সূত্রে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) ইরশাদ করেছেন, “প্রত্যেক নারীর ঔরসজাত সন্তানদের বংশ পরিচয় নির্ণয় হয় তাদের পিতার দিক থেকে। শুধু (আমার কন্যা) ফাতেমার (رضي الله عنه)'র সন্তানগণ ব্যতিত। কেননা, আমিই তাদের ‘আসাবা’ এবং আমিই তাদের পিতার স্থলাভিষিক্ত (অভিভাবক হিসেবে)।"

তথ্যসূত্রঃ 
১. আল-মু'জামুল কবীর, ৩:৪৪ (২৬৩১), 
২. মাজমাউয যাওয়ায়েদ, ইমাম হাইছামী, ৪:২২৪। 

❏ হাদীস ৩:

أخرج الطبراني عن فاطمة الزهراء رضی الله عنها قالت: قال رسول اللهﷺ كل بني أم ينتمون إلى عصبتهم، إلا ولد فاطمة، فأنا وليهما وعصبتهما ؛

ইমাম তাবরানী হযরত ফাতেমাতুজ জাহরা (رضي الله عنه) এর সূত্রে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) ইরশাদ করেছেন, “প্রত্যেক মায়ের সন্তানেরই বংশীয় সম্পর্ক নির্ণীত হয় তাদের পিতার দিক দিয়ে। কিন্তু ফাতেমার সন্তানদের ব্যতিত। কেননা, আমিই তাদের অভিভাবক এবং তাদের বংশীয় উর্ধতন পুরুষ। তাই আমার দিকেই তাদের বংশীয় সম্পর্ক নির্ণীত হবে।"

তথ্যসূত্রঃ 
১. আল মু’জামুল কাবীর, ৩:৪৪ (২৬৩২),
২. আবু ইয়াআলা, ৬:১৬১ (৬৭০৯), 
৩. তারীখু বাগদাদ আল খতীব আল বাগদাদী, ১১:২৮৫, 
৪. আল মাকাসিদুল হাসানা, ইমাম সাখাভী, পৃ. ৩৮১। 

❏ হাদীস ৪:

أخرج الحاكم عن جابر رضی الله عنه قال: قال رسول اللهﷺ لكل بني أم عصبة ينتمون إليهم، إلا ابني فاطمة، فأنا وليهما وعصبتهما؛

রাসূলুল্লাহ (ﷺ) ইরশাদ করেছেন, “প্রত্যেক মায়ের সন্তানেরই বংশীয় সম্পর্ক রয়েছে, যা তাঁদের (পিতার) দিকে সম্পর্কিত হয়। তবে ফাতেমার দুই সন্তান ব্যতিত। কেননা, আমি তাদের অভিভাবক এবং তাদের আসাবা (অর্থাৎ তাদের বংশীয় সম্পর্ক নির্ণীত হবে আমার দিকে)”।

তথ্যসূত্রঃ 
আল মুসতাদরিক (তিনি এ হাদীসকে সহীহ বলেছেন), ৩:১৭৯ (৪৭৭০), ইমাম যাহাবীও তার অনুসরণ করে সহিহ বলেছেন।

❏ হাদীস ৫:

أخرج الطبراني في الأوسط عن جابر رضی الله عنه، أنه سمع عمر بن الخطاب رضي الله عنه يقول للناس حين تزوج بنت على رضي الله عنه: ألا تهنئوني! سمعت رسول اللهﷺ يقول ينقطع يوم القيامة كل سبب ونسب، إلا سببی و نسبی؛

ইমাম তাবরানী ‘আল-আওসাত’ এ হযরত জাবের (رضي الله عنه) থেকে বর্ণনা করেন যে, তিনি হযরত ওমর ইবনে খাত্তাব (رضي الله عنه) যখন আলী (رضي الله عنه)'র কন্যাকে (উম্মে কুলসুম) বিয়ে করেন, তখন মানুষকে লক্ষ করে বলতে শুনেছেন যে, “সাবধান! তােমরা আমাকে স্বাগত জানাবেনা? কেননা, আমি রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-কে বলতে শুনেছি, কিয়ামতের দিন সকল উপায় (উসিলা) ও বংশীয় সম্পর্ক বিচ্ছিন্ন হয়ে যাবে; কিন্তু আমার উপায় ও বংশীয় সম্পর্ক বিচ্ছিন্ন হবেনা।"

তথ্যসূত্রঃ
১. আল মু'জামুল আওসাত, ৬:২৮২ (৫৬০২)। 
২. আস সুনানুল কুবরা, ইমাম বায়হাক্বী, ৭:১০১ (১৩৩৯৩)/ ৭:১৮৫ (১৩৬৬০)। 
৩. আল মু'জামুল কাবীর, ইমাম তাবরানী, ৩:৪৫ (২৬৩৫)।
৪. আয যুররিয়্যাতুত ত্বাহিরা, আদ দুলাভী পৃ. ১১৫ হাদীছ নং- ২১৯।

❏ হাদীস ৬:

أخرج الطبراني عن ابن عباس رضي الله عنهما قال: قال رسول اللهﷺ كل سبب ونسب منقطع يوم القيامة، إلا سببی ونسبی۔

ইমাম তাবরানী হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (رضي الله عنه)র সূত্রে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) ইরশাদ করেন, “কিয়ামতের দিন প্রত্যেক উপায় ও বংশীয় সম্পর্ক বিচ্ছিন্ন হয়ে যাবে, শুধু আমার উপায় (উসিলা) ও বংশীয় সম্পর্ক ব্যতিত”।

তথ্যসূত্রঃ
১. মাজমাউয যাওয়ায়েদ, ইমাম হাইছামী, ৯:১৭৩। 
২. আল মু'জামুল কাবীর, ইমাম তাবরানী, ২:২৭ (৩৩) (মসুরা ইবনে মাখমা এর সূত্রে)। 
৩. আল মু'জামুল আওসাত, ৬:২৮২ (৫৬০২)। 
৪. আস সুনানুল বায়হাক্বী, ৭:১০২ (২৩২৯৪)/ ১৮৫ (১৩৬৬০)।

❏ হাদীস ৭:

أخرج ابن عساكر في تاريخه عن ابن عمر رضي الله عنهما قال: قال رسول اللهﷺ كل نسب وصهر منقطع يوم القيامة، إلا نسبی وصهری؛

ইবনে আসাকির তার ‘তারীখ’ এ হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর (رضي الله عنه) এর সূত্রে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) ইরশাদ করেছেন, “প্রত্যেক বংশীয় ও বৈবাহিক সূত্রের আত্মীয়তা কিয়ামতের দিন বিচ্ছিন্ন হয়ে যাবে, শুধু আমার বংশীয় ও বৈবাহিক সূত্রের আত্মীয়তা ব্যতিত। অর্থাৎ, কিয়ামতের দিন আমার কোন আত্মীয়তাই নষ্ট হবেনা।"

তথ্যসূত্রঃ
১. আল মু'জামুল কাবীর, তাবরানী-৩:৪৫ (২৬৩৪)। 
২. আল ফাওয়ায়েদ, তাম্মাম রাজী, ২:৩৩৩ (১৬০৩)। 
৩. আস সুনানুল কুবরা, ৭:১০২ (১৩৩৯৫/১৩৩৯৬) মােসাওয়ার ইবনে মাখরামা (رضي الله عنه) এর হাদিস থেকে।


আহলে বাইত নাজাতপ্রাপ্তঃ

❏ হাদীস ১:

أخرج الحاكم عن أنس رضي الله عنه قال: قال رسول اللهﷺ وعدنی ربی فی أهل بیتی، من أقر منهم بالتوحید، ولی بالبلاغ، أنه لايعذبهم -

হাকেম হযরত আনাস (رضي الله عنه) এর সূত্রে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) ইরশাদ করেছেন, “আমার প্রতিপালক (আল্লাহ) আমাকে আমার পরিবারবর্গের ব্যাপারে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। (আহলে বাইতের) যারাই আল্লাহর একত্ববাদের স্বীকৃত দিবে, তাদের ব্যাপারে আমাকে এ কথা বলতে নিযুক্ত করা হয়েছে যে, তাদেরকে আযাব দেয়া হবেনা”। 
[আল মুসতাদরিক, ৩:১৬৩ (৪৭১৮)]

❏ হাদীস ২:

أخرج ابن جرير في تفسيره عن ابن عباسی رضی الله عنهما في قوله تعالى: «ولسوف يعطيك ربك فترضی» قال:من رضا محمد: أن لا يدخل أحد من أهل بيته النار؛

হযরত ইবনে জারীর তাঁর 'তাফসীর'-এ হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (رضي الله عنه) এর সূত্রে বর্ণনা করেন, তিনি (হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস) আল্লাহ তা'আলার বাণী ولسوف يعطيك ربك فترضی; অর্থ: আপনার প্রতিপালক (আল্লাহ) অচিরেই আপনাকে দিবেন; যাতে আপনি সন্তষ্ট হয়ে যাবেন।' এর তাফসীরে বলেন, “রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর সন্তুষ্টি হচ্ছে যে, তার পরিবারবর্গ (আহলে বাইত) এর কেউ যেন জাহান্নামে প্রবেশ না করে”।

তথ্যসূত্রঃ
১. ‘জামেউল বায়ান', ইবনে জারীর ১২:৬২৪ (৩৭১৫)। 
২. আদ দুররুল মনসুর, লিখক জালালুদ্দীন সুয়ূতী, ৬:৬১০। 
৩. ‘আল জামে লি আহকামিল কুরআন (তাফসীরে কুরতুবী),ইমাম কুতুবী ১০:৮৪।

❏ হাদীস ৩:
 
হযরত ইমরান ইবনে হােসাইন (رضي الله عنه) থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) ইরশাদ করেছেন, আমি আমার মহামান্বিত প্রতিপালককে আবেদন করেছি এজন্য যে, আমার পরিবারবর্গের (আহলে বাইতের) একজনও যেন জাহান্নামে না যায়। অতঃপর, তা আমাকে দেয়া হয়েছে। 
[আল ফেরদৌস'- ইমাম দায়লামী ২:৩১০ (৩৪০৩)]

❏ হাদীস ৪:

أخرج البزار، وأبو يعلى، والعقیلی، والطبرانی، وابن شاهين عن ابن مسعود رضي الله عنه قال: قال رسول اللهﷺ فاطمة أحصنت فرجها، فحرم الله ذريتها على النار؛

ইমাম বাযযার, আবু ইয়ালা, উকাইলী, তাবরানী এবং ইবনে শাহীন প্রমূখ (মুহাদ্দীসীন) হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ (رضي الله عنه) এর সূত্রে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) ইরশাদ করেছেন, “নিশ্চয় ফাতেমা (رضي الله عنه) নিজের লজ্জাস্থানকে পবিত্র রেখেছেন। তাই আল্লাহ তা'আলা তাঁর সন্তানদেরকে জাহান্নামের জন্য হারাম করেছেন।

তথ্যসূত্রঃ
১. কাশফুল আসতার, হাইছামী, ৩:২৩৫ (২৬৫১)।
২. আল মু'জামুল কাবীর, তাবরানী, ৩:৪১ (২৬২৫)।
৩. আল মাতালিবুল আলিয়া, ইবনুল হাজর, ৪:২৫৮ (৩৯৫৯)।
৪. আল ফাওয়ায়েদ, তাম্মাম রাজী, ১:১৫৪ (৩৫৬)/১৫৫ (৩৫৭)। 
৫. মুখতাসারু ইত্তিহাফুল খাইর, বুসরী ৯:২১৭ (৭৫৬৪)। 
৬. আল হিলিয়্যাহ, আবু নঈম, ৪:১৮৮।

❏ হাদীস ৫:

أخرج الطبرانی عن ابن عباس رضي الله عنهما قال: قال رسول اللهﷺ لفاطمة رضي الله عنها: إن الله غير معذبك ولا ولدک;

ইমাম ত্বাবরানী হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (رضي الله عنه)র সূত্রে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) হযরত ফাতেমা (رضي الله عنه)কে বলেছেন, নিশ্চয় আল্লাহ তা'আলা তােমাকে এবং তােমার সন্তানদেরকে আযাব দিবেন না।
[আল মু'জামুল কাবীর, ১১:২১০, হাদিস-১১৬৮৫]

❏ হাদীস ৬:

أخرج الديلمي عن علی رضی الله عنه سمعت رسول اللهﷺ يقول: أول من يرد على الحوض، أهل بیتی؟ 

ইমাম দায়লামী হযরত আলী (رضي الله عنه) থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (ﷺ)কে বলতে শুনেছি, “সর্ব প্রথম যারা আমার কাছে হাউজে কাউছারে অবতরণ করবে, তারা হচ্ছেন আমার পরিবারবর্গ (আহলে বাইত)। অর্থাৎ, তাদেরকে সর্ব প্রথম পান করানাে হবে।

তথ্যসূত্রঃ
১.কানযুল উম্মাল, আল মুত্তাকী আল হিন্দ, ১২:১০০ (৩৪১৭৮)।
২. ইমাম দায়লামী ও এটা সম্পৃক্ত করেছেন।

❏ হাদীস ৭:

أخرج الطبراني عن ابن عمر رضي الله عنهما قال: قال رسول اللهﷺ أول من أشغع له من أمتي، أهل بیتی؛ . 

ইমাম ত্বাবরানী হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর রাদ্বিয়াল্লাহ আনহুমার সূত্রে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) ইরশাদ করেন, 'আমি আমার উম্মতের যাদের জন্য সর্বপ্রথম শাফায়াত (সুপারিশ) করব, তারা হলেন, আমার পরিবারবর্গ (আহলে বাইত)।

তথ্যসূত্রঃ
১. আল মু'জামুল কাবীর, ১২:৩২১ (১৩৫৫০)।
২. মাজমাউয যাওয়ায়েদ, হাইছামী, ১:৩৮০।
৩. আল মাওদাহ, খতীব বাগদাদী ২:৪৮।
৪. আল ফেরদৌস, দায়লামী, ১:২৩ (২৯)।
৫. আল কামেল, ইবনে আদী, ২:৭৯০।

❏ হাদিস ৮ :

হযরত আবু সাইদ খুদরী (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত, হযরত রাসুল (صلى الله عليه و آله و سلم) বলেছেন, “হাসান-হোসাইন জান্নাতি যুবকদের নেতা। (একই হাদীস, হযরত আলী, হযরত ওমর, আবদুল্লাহ্ বিন ওমর, ও আবু হুরাইরা থেকেও বণির্ত হয়েছে) হযরত হুযাইফা (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত, হযরত রাসূল (صلى الله عليه و آله و سلم) বলেন, একটি ফেরেশতা যিনি ইতিপূর্বে পৃথিবীতে কখনো আসেননি। তিনি আল্লাহর নিকট অনুমতি চাইলেন যে তিনি যেন আমাকে সালাম দিতে পারেন এবং আমাকে সুসংবাদ দিতে পারেন যে, ফাতেমা (عليه السلام) জান্নাতের মহিলাদের নেত্রী এবং হাসান-হোসাইন জান্নাতের সকল যুবকদের নেতা”।

[সূত্রঃ সহীহ তিরমিযী, খঃ-৬, হাঃ-৩৭৬৮ (ইঃ ফাঃ); সহীহ্ তিরমিযী (সকল খণ্ড একত্রে), পৃঃ-১০৮১, হাঃ-৩৭৩০, (তাজ কোং); মেশকাত শরীফ, খঃ-১১, হাঃ-৫৯০৩, (এমদাদীয়া); তিরমিযী আল জামউস সুন্নাহ, খঃ-৫, পৃঃ-৬৫৬, হাঃ-৩৭৬৮; নাসায়ী আস সুনানুল কুবরা, খঃ-৫, পৃঃ-৫০, হাঃ-৮১৬৯; ইবনে হিববান-আস সহীহ্, খঃ-১৫, পৃঃ-৪১২, হাঃ-৬৯৫৯; আহম্মদ ইবনে হান্বাল আল মুসনাদ, খঃ-৩, পৃঃ-৩, হাঃ-১১০১২]।


আহলে বাইত (عليه السلام)-ই জান্নাত ও জাহান্নামের বণ্টনকারী।

❏ হাদিস ১ :

আল্লামা আলী হামদানী শাফেয়ী লিখিয়াছেন যে, “রাসূল (صلى الله عليه و آله و سلم) বলেছেন, আল্লাহ পাক কিয়ামতে জান্নাত ও জাহান্নামের চাবি আমাকে পাঠাইবেন আমি সেই চাবি আমার আহলে বাইতকে দিব তাঁরা যাকে ইচ্ছা জান্নাতে পাঠাবেন এবং যাকে ইচ্ছা জাহান্নামে পাঠাবেন”।

[সূত্রঃ আল্লামা আলী হামদানী শাফেয়ীর-মোয়াদ্দাতুল কুরবা, পৃঃ-৩১; ইবনে হাজার মাক্কীর সাওয়ায়েকুল মুহরিকা, পৃঃ-৭৫]।

❏ হাদিস ২ :

হযরত আবদুল্লাহ বিন মাসুদ (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন হযরত রাসূল (صلى الله عليه و آله و سلم) বলেছেন যে, আমার আহলে বাইতের ভালোবাসা অনুসরণ, সাতটি কঠিন স্থানে কাজে আসবে ও সহায়ক হবে। 
(১) মৃত্যুর সময় (যখন রূহ কবজ করা হবে), 
(২) কবরে (কবরের আযাব থেকে রক্ষা পাওয়ার ক্ষেত্রে),
(৩) কিয়ামত বা হাশরে (কেউ কাউকে চিনবে না, ইয়া নাফসি),
(৪) আমলের (কৃতকর্মের) হিসাব নিকাশের সময়,
(৫) আমলের পরীক্ষার সময়,
(৬) যখন আমল ওজন করা হবে,
(৭) পুলসিরাত অতিক্রম করার সময়।
[সূত্রঃ কাওকাবে দুরির ফি ফাযায়েলে আলী, পৃঃ-২১৯, সৈয়দ মোঃ সালে কাশাফী সুন্নি হানাফী আরিফ বিল্লাহ; ওবাইদুল্লাহ ওমরিতসারী-আরজাহুল মাতালেব, পৃঃ-৫৬৫]।


আহলে বাইতকে মুহাব্বাতকারীদের জন্য শাফায়াতঃ

❏ হাদীস ১:

أخرج الديلمي عن علي رضي الله عنه قال: قال رسول اللهﷺ أربعة أنالهم شفيع يوم القيامة: المکرم لذريتي، والقاضي لهم حوائجهم، والساعي لهم أمورهم عندما اضطروا، والمحب الهم بقلبه ولسانه ؛

ইমাম দায়লামী হযরত আলী (رضي الله عنه) এর সূত্রে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) ইরশাদ করেছেন, কিয়ামতের দিন আমি চার ব্যক্তির জন্য সুপারিশকারী হব। (তারা হল) 
১. আমার বংশধরদেরকে সম্মান কারী, 
২. তাঁদের প্রয়ােজন পূরণকারী, 
৩. তারা যখন কোন বিষয়ে সংকটে পড়বে তখন তাদেরকে সহযােগিতাকারী, এবং 
৪. তাদেরকে অন্তর ও জবান দ্বারা (প্রকৃত) ভালবাসা পােষণকারী'।

তথ্যসূত্রঃ
১. যাখায়েরুল উক্বাবা, তাবরানী- পৃ. ৫০।
২. কানযুল উম্মাল, আল মুত্তাকিউল হিন্দ -১২:১০০ (৩৪১৮০)।
৩. ইত্তিহাফু সা-দাতিল মুত্তাক্বীন, ৮:৭৩।
৪. জাওয়াহিরুল ইক্বদিয়্যীন, আস সামহুদী, ২:৩৮৩। 

❏ হাদীস ২:

أخرج الخطيب في تاريخه عن علی رضی الله عنه قال: قال رسول اللهﷺ شفاعتي لأمتی، من أحب أهل بیتی؛ 

খতীব বাগদাদী তার ‘আত-তারীখ’-এ হযরত আলী (رضي الله عنه) এর সূত্রে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) ইরশাদ করেন, “আমার উম্মতের ঐসব লােকের জন্য আমার শাফায়াত (সুপারিশ) থাকবে একমাত্র যারা আমার পরিবারবর্গ (আহলে বাইত) কে ভালবেসেছে। [তারীখু বাগদাদ-২:১৪৬]

❏ হাদীস ৩:

হযরত আলী (عليه السلام) বর্ণনা করেন, হযরত রাসুল (ﷺ) হাসান – হোসাইন এর হাত ধরে বললেন, যে ব্যাক্তি আমাকে এবং এই দু’জনকে ( হাসান ও হোসাইন ) কে ভালবাসবে সাথে সাথে তাঁদের পিতা- মাতাকে ( হযরত আলী ও হযরত ফাতেমা ) কে ভালবাসবে সে কিয়ামতে দিবসে আমার সাথেই থাকবে।

[জামে আত তিরমিজি, আহমদ ইবনে হাম্বল, আল মুসনাদ, তাবরানি আল মু’জামুল কবির, খতিবে বাগদাদ, তারিখে বাগদাদ, আবু ইয়ালা- আল মুসনাদ]

❏ হাদিস ৪ :

রারসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন, আহলে বাইতের পরিচিতি লাভ দোজখ মুক্তির উসিলা। আর আহলে বাইত কে ভালোবাসা অর্থ পুলসিরাত পাড়ি দেওয়া। আর তাঁদের কে বিশ্বাস করা আল্লহর আযাব থেকে নিরাপত্তা সদৃশ। 
[ইমাম আব্দুল হক মুহাদ্দিসে দেহলভীঃ মাদারেজুন নবুওয়াত, খন্ড-৩, পৃষ্ঠা-১১৫]

❏ হাদিস ৫ :

রারসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন, “কিয়ামতের দিন এক দল লোককে অত্যন্ত চমৎকার ও সম্মানিত অবস্থায় দেখা যাবে। তাদেরকে জিজ্ঞাসা করা হবে, তারা ফেরেস্তা বা নবী কিনা? উত্তরে তারা বলবেন, আমরা ফেরেস্তাও নই নবীও নই, বরং মোহাম্মদ [ﷺ]-এঁর উম্মতের মধ্যে অভাবী লোক। তখন তাদের জিজ্ঞাসা করা হবে, তাহলে কিভাবে তোমরা এত উচ্চ মর্যাদা লাভ করলে? উত্তরে তাঁরা বলবে, আমরা খুব বেশি আমল করিনি এমনকি পুরো বছর রোজাও রাখিনি এবং পুরো রাত্রি ইবাদতেও কাটাইনি। তবে আমরা পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ কায়েম করতাম এবং মোহাম্মদ [ﷺ] ও তাঁর আহলে বাইতের সদস্যগণের নাম শুনলে তাঁদের উপর দূরুদ পাঠ করতাম। আর তাঁদের দুঃখের কথা শুনলে আমাদের গালগড়িয়ে অশ্রু প্রবাহিত হত। 
[ইমাম হাকিমঃ মুসতাদারক আলাস সাহীহাইন, খ–১০, পৃ-৩১৮]

❏ হাদিস ৬ :

হযরত আলী (عليه السلام) হতে বর্ণিত, হযরত রাসূল (صلى الله عليه و آله و سلم) ইরশাদ করেন, “আমি, আলী, ফাতেমা, হাসান ও হোসাইন এবং আমাদের সকল আশেকরা একই স্থানে একত্রিত হবে। কিয়ামতের দিন আমাদের পানাহারও একত্রে হবে, মানুষের বিচারের ফয়সালা হওয়া পর্যন্ত।”

[সূত্রঃ তাবরানী, আল মু’জামুল কবির, খঃ-৩, পৃঃ-৪১, হাঃ-২৬২৩; হায়সামী, মাজমাউয যাওয়ায়েদ, খঃ-৯, পৃঃ-১৬৯; আহমাদ ইবনে হাম্বাল,আল মুসনাদ, খঃ-১, পৃঃ-১০১; বাযযার, আল মুসনাদ, খঃ-৩, পৃঃ-২৯, হাঃ-৭৭৯; শায়বানী আস সুন্নাহ্, খঃ-২, পৃঃ-৫৯৮, হাঃ-১৩২২; ইবনে আসীর উসদুল গাবা, খঃ-৭, পৃঃ-২২০; ইবনে আসাকির তারিখে দামেশ্ক, খঃ-১৩, পৃঃ-২২৭]।

❏ হাদিস ৭ :

মহানবী (صلى الله عليه و آله و سلم) এরশাদ করেন, “যে ব্যক্তি দুনিয়াতে যাকে ভালোবাসবে বা অনুসরণ করবে তার সাথে তার হাশর হবে”। 
[সূত্রঃ সহীহ্ মুসলিম, খঃ-৭, হাঃ-৬৪৭০, (ই,ফাঃ); সহীহ্ তিরমীজি, (সকল খণ্ড একত্রে) পৃঃ-৭২৮, হাঃ-২৩৪০ (তাজ কোং)]।

❏ হাদিস ৮ :

হযরত রাসূল (صلى الله عليه و آله و سلم) বলেন, “(শেষ বিচারের দিবসে) আমার শাফায়াত হবে মুসলিম উন্মাহর মধ্যে তাদের জন্য যারা আমার আহলে বাইতকে (অনুসরণ) মহব্বত করবে”।

[সূত্রঃ খতীব বাগদাদী, তারিখ বাগদাদ, খঃ -২, পৃঃ-১৪৬; হিন্দী, কানযুল উন্মাল, খঃ-৬, পৃঃ-২১৭; সূয়ুতি ইয়াহইয়া আল মাইয়্যিত, পৃঃ-৩৭; আরজাহুল মাতালেব, পৃঃ-৫৬৬, ৫৮১ (উর্দ্দু)]।

❏ হাদিস ৯ :

হযরত রাসূল (صلى الله عليه و آله و سلم) ইমাম হাসান-হোসাইনের হাত ধরে বললেন, “যে ব্যক্তি আমাকে এবং এই দু‘জনকে (হাসান-হোসাইন)-কে ভালোবাসবে সাথে সাথে তাঁদের পিতা-মাতাকে (আলী ও ফাতেমা) কে ভালোবাসবে সে কিয়ামত দিবসে আমার সাথেই থাকবে”।

[সূত্রঃ জামে আত তিরমিযী, খঃ-৬, পৃঃ-৩৩১, হাঃ-৩৬৭০, (ইঃ, সঃ); তিরমিযী, আল-জামেউস সহীহ্, খঃ-৫, পৃঃ-৬৪১, হাঃ-৩৭৩৩; আহমদ ইবনে হাম্বাল, আল মুসনাদ, খঃ-১, পৃঃ-৭৭, হাঃ-৫৭৬; আহম্মদ ইবনে হাম্বাল-ফাযায়িলুস সাহাবা, খঃ-২, পৃঃ-৬৯৩, হাঃ-১১৮৫; তাবরানী-আল মু’জামুল কবির, খঃ-৩, পৃঃ-৫০, হাঃ-২৬৫৪]


রাসূলুল্লাহ (ﷺ) ও তাঁর আহলে বাইতের উপর দূরুদ পড়ার ফযিলতঃ

সাহল ইবনে সা’দ থেকে বর্ণিত হয়েছেঃ

قَدِمَ رَسُولَ الله ﷺ فَاءذا بِأبي طَلحَة, فَقامَ إلَيهِ فَتَلَقّاۀ فَقالَ : بِأ بي اَنتَ وَ اُمّي يا رَسُولَ الله إنّي لَأرَي السُّرُورَفي وَجهِکَ , قالَ أتاني جبرئيلُ آفاً فقالَ: يا مُحمّد ! مَن صَلّي عَلَيکَ مَرَّ ةً کَتَبَ اللهُ بِها عَشرَ حَسَناتٍ وَ مَحي عَنهُ عَشرَ سَيِّئاتٍ وَرَ فَعَ لَهُ بِها عَشرَ دَرَجاتٍ

রাসূল (ﷺ) প্রবেশ করলে আবু তালহা তাঁর নিকট দ্রুত পৌঁছলেম এবং তাঁকে অভ্যর্থনা জানালেন এবং বললেনঃ ‘আমার পিতা-মাতা আপনার জন্য উৎসর্গ হোক হে আল্লাহর রাসূল (ﷺ)! আপনার চেহারা আনন্দিত দেখতে পাচ্ছি। আল্লাহর রাসূল (ﷺ) বলেনঃ জিব্রাইল সবেমাত্র আমার নিকট এসেছিলেন ও বললেনঃ হে মুহাম্মাদ (ﷺ) ! যে কেউ একবার আপনার উপর দূরুদ পড়ে মহান আল্লাহ তাকে দশটি হাসানাহ পুরস্কার দেন, দশটি অপকর্ম ও বদ থেকে তাকে মুক্ত করেন এবং তাকে দশ ধাপ উপরে তুলেন। [কানযুল উম্মাল খন্ড-১, পৃষ্ঠা-৪৩৬,৪৪৮,খন্ড-২ পৃষ্ঠা-১৭৯]

এ রেওয়ায়েতটি আবু তালহার ভাষায় এরূপ অতিরিক্তি সহকারে এসেছে এবং ফেরশতা তাকে (দূরুদ পাঠকারীকে) সেটিই বলে যা তোমাকে বলা হয়েছে। বললামঃ হে জিব্রাইল! এ ফেরেশতাটিকে ? বললেন ! মহিয়ান, গড়িয়ান আল্লাহ যখন আপনাকে সৃষ্টি করেছেন তখন থেকে আপনার মাবয়ূসের (নবুওয়াতের ঘোষণা দেয়া ) সময় পর্যন্ত দু’টি ফেরেশতা আপনার জন্য নিযুক্ত করা হয়েছে। আপনার এমন কোন উম্মত নেই যে দূরুদ পড়েনি আর ফেরেশতা তাকে বলেনিঃ তোমাকেও !মহান আল্লাহ তোমার উপর দূরুদ পাঠিয়েছেন।

[কানযুল উম্মাল খন্ড-১ পৃষ্ঠা-৪৪০,৪৪৯এবং খন্ড-২ পৃষ্ঠা-১৮১।]

এ রেওয়াতেটি সাঈদ ইবনে ওমর আনসারী ও আবু বারদা বিন নাইয়র ও আনাস থেকে ও বর্ণিত হয়েছে।

কানযুল উম্মল খন্ড-১,পৃষ্ঠা-৪৩৮-৪৩৯ এবং ৪৪৮-৪৪৯ সূনানে নাসাঈ খন্ড-৩, পৃষ্ঠা-৫০ কিতাবুস সালাত। অধ্যায় মাহানবীর উপর দূরুদের ফযিলত। ফারায়িদুল সাযাতিন,খন্ড-১ পৃষ্ঠা-২৪, তারিখে বাগদাদ খন্ড-৮ পৃষ্ঠা-২৮১


রাসূলুল্লাহ (ﷺ) ও আহলে বাইতের উপর দুরুদ পাঠ।

হাদিস ০১-১০

হাদিস ১
রাসূলুল্লাহ (ﷺ) ইরশাদ করেন, তােমরা বল, 
"আল্লাহুম্মা ছাল্লি আ'লা মুহাম্মাদিন আব্দিকা ওয়া রাসুলিকা কামা ছাল্লাইতা আ'লা ইবরাহীমা ওয়া বারিক আ'লা মুহাম্মাদিন ওয়া আ'লা আলি মুহাম্মাদিন কামা বারাকতা আ'লা ইবরাহীমা।"
[সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদিস নং- ৭৩৬]

হাদিস ২: কা‘ব ইবনু ‘উজরাহ (رضي الله عنه) সূত্রে বর্ণিত। 

. باب الصَّلَاةِ عَلَى النَّبِيِّ صلي الله عليه وسلم بَعْدَ التَّشَهُّدِ حَدَّثَنَا حَفْصُ بْنُ عُمَرَ، حَدَّثَنَا شُعْبَةُ، عَنِ الْحَكَمِ، عَنِ ابْنِ أَبِي لَيْلَى، عَنْ كَعْبِ بْنِ عُجْرَةَ، قَالَ قُلْنَا أَوْ قَالُوا يَا رَسُولَ اللهِ أَمَرْتَنَا أَنْ نُصَلِّيَ عَلَيْكَ وَأَنْ نُسَلِّمَ عَلَيْكَ فَأَمَّا السَّلَامُ فَقَدْ عَرَفْنَاهُ فَكَيْفَ نُصَلِّي عَلَيْكَ قَالَ ‏"‏ قُولُوا اللَّهُمَّ صَلِّ عَلَى مُحَمَّدٍ وَآلِ مُحَمَّدٍ كَمَا صَلَّيْتَ عَلَى إِبْرَاهِيمَ وَبَارِكْ عَلَى مُحَمَّدٍ وَآلِ مُحَمَّدٍ كَمَا بَارَكْتَ عَلَى آلِ إِبْرَاهِيمَ إِنَّكَ حَمِيدٌ مَجِيدٌ ‏"‏ ‏.‏ - صحيح : ق [1] 

তিনি বলেন, একদা আমরা বললাম অথবা লোকজন বললো, হে আল্লাহর রসূল! আপনি আমাদেরকে আপনার উপর দরুদ ও সালাম পড়ার আদেশ করেছেন। সালাম পাঠের নিয়ম আমরা জানতে পেরেছি। কিন্তু আপনার উপর দরুদ কিভাবে পাঠ করবো? রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বললেনঃ তোমরা বলো-

‘‘আল্লাহুম্মা সল্লি ‘আলা মুহাম্মাদিন ওয়া ‘আলি মুহাম্মাদিন কামা সল্লাইতা ‘আলা ইবরাহীমা ওয়া বারিক ‘আলা মুহাম্মাদিন ওয়া ‘আলি মুহাম্মাদিন কামা বারাকতা ‘আলা ইবরাহীমা ইন্নাকা হামীদুম্ মাজীদ’’-
অর্থঃ হে আল্লাহ, আপনি মুহাম্মদ, তাঁর বংশধরদের উপর রহমত বর্ষন করুন যেরূপ রহমত বর্ষণ করেছেন ইবরাহীমের উপর। আপনি ইবরাহীমকে যেমন বরকত দান করেছেন তেমনি মুহাম্মাদ ও তাঁর বংশধরদের বরকত দান করুন। নিশ্চই আপনি প্রশংসিত ও মহান।

(১) তিরমিযী, আবওয়াবুস সালাত, বাবু মা জাআ ফি সিফাতিস সালাতি আলান্নাবী (ﷺ), ২:৫২, নং-৪৮৩। 
(২) নাসাঈ, সুনান, কিতাবুস সাহু, ৩:৪৭, নং-১২৮৭। 
(৩) নাসাঈ, সুনানুল কুবরা, ১:৩৮৩, নং-১২১। 
(৪) হুমাইদী, মুসনাদ, ২:৩১০, নং-৭১১। 
(৫) তাবরানী, মুজামুল কাবীর, ১৯:১৩১, নং-২৮৭। 
(৬) ইউসুফ বিন মুসা, মু'তাছারুল মুখতাছার, ১:৫৪।
(৭) সুনান আবূ দাউদ, অধ্যায়ঃ ২/ সালাত (كتاب الصلاة), হাদিস নম্বরঃ ৯৭৬
(৮) বুখারী (অধ্যায় : তাফসীর, সূরাহ আল-আহযাব, অনুঃ আল্লাহর বানী : ইন্নাল্লাহা ওয়া মালায়িকাতাহু য়ুসাল্লুনা ‘আল্লান্নাবী ইয়া আইয়ূ হাল্লাযিনা আমানু সল্লু ‘আলায়হি ওয়া সাল্লিমূ তাসলিমা, হাদিস ৪৭৯৭),
(৯) মুসলিম (অধ্যায় : সলাত, অনুঃ তাশাহহুদের পর নাবী (ﷺ)-এর উপর দরূদ পাঠ), কিতাবুস সালাত, খন্ড- ১/৩০৫, হাদীস ৬৬, 
(১০) সুনানে দারামী খন্ড- ১, পৃষ্ঠা-৩০১, 
(১১) সুনানে ইবনে মাজাহ হাদীস ৯০৪,
(১২) মুসনাদে আহমাদ খন্ড- ৪ পৃষ্ঠা- ২৪১-২৪৪। 
(১৩) তাফসীরে তাবারী খন্ড- ২২, পৃষ্ঠা-৩১,
(১৪) তাফসীরে কুরতুবী, খন্ড- ১৪, পৃষ্ঠা- ৩৩৪, 
(১৫) তাফসীরে দূররুল মানসূর খন্ড- ৫, পৃষ্ঠা- ২১৫-২১৬,
(১৬) কাঞ্জুল উম্মাল খন্ড- ২, পৃষ্ঠা- ১৮০, 
(১৭) তাফসীরে ইবনে কাসির খন্ড-৩ পৃষ্ঠা-৫০৭।

হাদিস ৩:ইমাম আবূ দাউদ (رحمة الله) সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, মুহাম্মাদ ইবনুল ‘আলা তার সনদে ইবনু বিশর ও মিস্‘আরের মাধ্যমে হাকাম হতে হাদীসটি বর্ণনার পর দরূদ পাঠ সম্পর্কে বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেনঃ 

. باب الصَّلَاةِ عَلَى النَّبِيِّ صلي الله عليه وسلم بَعْدَ التَّشَهُّدِ حَدَّثَنَا مُحَمَّدُ بْنُ الْعَلَاءِ، حَدَّثَنَا ابْنُ بِشْرٍ، عَنْ مِسْعَرٍ، عَنِ الْحَكَمِ، بِإِسْنَادِهِ بِهَذَا قَالَ ‏"‏ اللَّهُمَّ صَلِّ عَلَى مُحَمَّدٍ وَعَلَى آلِ مُحَمَّدٍ كَمَا صَلَّيْتَ عَلَى إِبْرَاهِيمَ إِنَّكَ حَمِيدٌ مَجِيدٌ اللَّهُمَّ بَارِكْ عَلَى مُحَمَّدٍ وَعَلَى آلِ مُحَمَّدٍ كَمَا بَارَكْتَ عَلَى آلِ إِبْرَاهِيمَ إِنَّكَ حَمِيدٌ مَجِيدٌ ‏"‏ ‏.‏ قَالَ أَبُو دَاوُدَ رَوَاهُ الزُّبَيْرُ بْنُ عَدِيٍّ عَنِ ابْنِ أَبِي لَيْلَى كَمَا رَوَاهُ مِسْعَرٌ إِلَا أَنَّهُ قَالَ ‏"‏ كَمَا صَلَّيْتَ عَلَى آلِ إِبْرَاهِيمَ إِنَّكَ حَمِيدٌ مَجِيدٌ وَبَارِكْ عَلَى مُحَمَّدٍ ‏"‏ ‏.‏ وَسَاقَ مِثْلَهُ ‏.‏ - صحيح : ق [1

‘‘আল্লাহুম্মা সল্লি ‘আলা মুহাম্মাদিন ওয়া ‘আলা ‘আলি মুহাম্মাদিন কামা সল্লাইতা ‘আলা ইবরাহীমা ইন্নাকা হামীদুম্ মাজীদ। আল্লাহুম্মা বারিক ‘আলা মুহাম্মাদিন ওয়া ‘আলা আলি মুহাম্মাদিন কামা বারাকতা ‘আলা ইবরাহীমা ইন্নাকা হামীদুম মাজীদ।’’

ইমাম আবূ দাউদ (رحمة الله) বলেন, হাদীসটি যুবাইর ইবনু ‘আদী (رحمة الله) ইবনু আবূ লায়লাহ (رحمة الله) হতে মিস্‘আরের অনুরূপ বর্ণনা করেছেন। তবে সেখানে শুধু ‘‘কামা সল্লাইতা ‘আলা ইবরাহীমা’’ এর স্থলে ‘‘কামা সল্লাইতা ‘আলা ‘আলি ইবরাহীমা’’ কথাটি উল্লেখ করেছেন। হাদীসের অবশিষ্ট অংশ মিস‘আর বর্ণিত হাদীসের অনুরূপ।

▪ সুনান আবূ দাউদ, অধ্যায়ঃ ২/ সালাত (كتاب الصلاة)
হাদিস নম্বরঃ ৯৭৮, তাশাহ্হুদ পড়ার পর নবীজী (ﷺ)-এর উপর দরুদ পাঠ। 
▪ সহীহ : বুখারী ও মুসলিম

হাদিস ৪ : আবূ হুরাইরাহ (رضي الله عنه) সূত্রে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) ইরশাদ করেন,

 باب الصَّلَاةِ عَلَى النَّبِيِّ صلي الله عليه وسلم بَعْدَ التَّشَهُّدِ حَدَّثَنَا مُوسَى بْنُ إِسْمَاعِيلَ، حَدَّثَنَا حِبَّانُ بْنُ يَسَارٍ الْكِلَابِيُّ، حَدَّثَنِي أَبُو مُطَرِّفٍ، عُبَيْدُ اللهِ بْنُ طَلْحَةَ بْنِ عُبَيْدِ اللهِ بْنِ كَرِيزٍ حَدَّثَنِي مُحَمَّدُ بْنُ عَلِيٍّ الْهَاشِمِيُّ، عَنِ الْمُجْمِرِ، عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، عَنِ النَّبِيِّ صلي الله عليه وسلم قَالَ ‏"‏ مَنْ سَرَّهُ أَنْ يَكْتَالَ بِالْمِكْيَالِ الأَوْفَى إِذَا صَلَّى عَلَيْنَا أَهْلَ الْبَيْتِ فَلْيَقُلِ اللَّهُمَّ صَلِّ عَلَى مُحَمَّدٍ النَّبِيِّ وَأَزْوَاجِهِ أُمَّهَاتِ الْمُؤْمِنِينَ وَذُرِّيَّتِهِ وَأَهْلِ بَيْتِهِ كَمَا صَلَّيْتَ عَلَى آلِ إِبْرَاهِيمَ إِنَّكَ حَمِيدٌ مَجِيدٌ ‏"‏ ‏ - ضعيف [1

কেউ যদি আমাদের আহলে বাইতের উপর দরূদ পড়ার পুরো সওয়াব পেতে চায় সে যেন এভাবে বলেঃ 

‘‘আল্লাহুম্মা সল্লি ‘আলা মুহাম্মাদিনিন নাবিয়্যি ওয়া আয্ওয়াজিহি উম্মাহাতিল মু‘মিনীনা ওয়া যুররিয়াতিহি ওয়া আহলি বাইতিহি কামা সল্লাইতা ‘আলা ইবরাহীমা ইন্নাকা হামীদুম মাজীদ’’। 

অর্থঃ হে আল্লাহ! আপনি নবী মুহাম্মাদ, তাঁর স্ত্রী উম্মাহাতিল মু‘মিনীন, তাঁর সন্তানাদি ও আহলে বাইতের উপর রহমাত বর্ষণ করুন যেমনি রহমত বর্ষণ করেছেন ইবরাহীমের উপর। নিশ্চয়ই আপনি প্রশংসিত ও মহান।’’

▪ সুনান আবূ দাউদ, অধ্যায়ঃ ২/ সালাত (كتاب الصلاة), হাদিস নম্বরঃ ৯৮২, তাশাহ্হুদ পড়ার পর নবীজী (ﷺ)-এর উপর দরুদ পাঠ।
▪ বায়হাক্বী ‘সুনান’ (২/৫২৯), হাদিস ৩৯৬৫,
▪ বুখারী ‘আত-তারীখ’ (৩/৮৭), 
▪ সুয়ূতী একে আদ-দুররে মানসূর (৫/২১৬) গ্রন্থে এবং 
▪ তাবরীযীঃ মিশকাত (হাদিস ৯৩২) গ্রন্থে তুলে ধরেছেন। 
▪ ইমাম কাসতালানীঃ আল-মাওয়াহিবুল লাদুন্নিয়্যাহ (৩য় খণ্ড), পৃ ৩৯১।

হাদিস ৫: আবূ হুমাইদ আস-সাইদী (رضي الله عنه) সূত্রে বর্ণিত। 

 باب الصَّلَاةِ عَلَى النَّبِيِّ صلي الله عليه وسلم بَعْدَ التَّشَهُّدِ حَدَّثَنَا الْقَعْنَبِيُّ، عَنْ مَالِكٍ، ح وَحَدَّثَنَا ابْنُ السَّرْحِ، أَخْبَرَنَا ابْنُ وَهْبٍ، أَخْبَرَنِي مَالِكٌ، عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ أَبِي بَكْرِ بْنِ مُحَمَّدِ بْنِ عَمْرِو بْنِ حَزْمٍ، عَنْ أَبِيهِ، عَنْ عَمْرِو بْنِ سُلَيْمٍ الزُّرَقِيِّ، أَنَّهُ قَالَ أَخْبَرَنِي أَبُو حُمَيْدٍ السَّاعِدِيُّ، أَنَّهُمْ قَالُوا يَا رَسُولَ اللهِ كَيْفَ نُصَلِّي عَلَيْكَ قَالَ ‏"‏ قُولُوا اللَّهُمَّ صَلِّ عَلَى مُحَمَّدٍ وَأَزْوَاجِهِ وَذُرِّيَّتِهِ كَمَا صَلَّيْتَ عَلَى آلِ إِبْرَاهِيمَ وَبَارِكْ عَلَى مُحَمَّدٍ وَأَزْوَاجِهِ وَذُرِّيَّتِهِ كَمَا بَارَكْتَ عَلَى آلِ إِبْرَاهِيمَ إِنَّكَ حَمِيدٌ مَجِيدٌ ‏"‏ ‏.‏ - صحيح : ق [1] 

আবদুল্লাহ ইবনু মাসলামা (رحمة الله) ... আবূ হুমায়দ সাঈদী (رحمة الله) বর্ণনা করেন। একবার লোকেরা জিজ্ঞেস করল, ইয়া রাসূলুল্লাহ (ﷺ)! আমরা আপনার উপর কিভাবে দরূদ পড়বো? রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বললেনঃ তোমরা বলোঃ

‘‘আল্লাহুম্মা সল্লি ‘আলা মুহাম্মাদিন ওয়া আয্ওয়াজিহি ওয়া যুররিয়াতিহি কামা সল্লাইতা ‘আলা ‘আলি ইবরাহীমা ওয়া বারিক ‘আলা মুহাম্মাদিন ওয়া আযওয়াজিহি ওয়া যুররিয়াতিহি কামা বারাকতা ‘আলা ‘আলি ইবরাহীমা ইন্নাকা হামীদুম মাজীদ’’।

"অর্থঃ ইয়া আল্লাহ! আপনি মুহাম্মদ (ﷺ) ও তার সহধর্মিণীগণ এবং তার সন্তান-সন্ততিগণের উপর রহমত নাযিল করুন। যেমন করে আপনি ইবরাহীম (عليه السلام) এর উপর রহমত নাযিল করেছেন। আর আপনি মুহাম্মদ, তার সহধর্মিণীগণ এবং তার আওলাদের উপর বরকত নাযিল করুন, যেমনভাবে আপনি ইবরাহীম (عليه السلام) এর পরিবারবর্গের উপর বরকত নাযিল করেছেন। আপনি অতি প্রশংসিত এবং উচ্চ মর্যাদাশীল।

(১) বুখারী, সহিহ, কিতাবুল আম্বিয়া, বাবু কাউলিল্লাহ ৩:১২৩২, নং ৩১৮৯। আবূ যার (رضي الله عنه) সূত্রে বর্ণিত। হাদীস যমীনে সর্বপ্রথম কোন মাসজিদ স্থাপিত হয়েছে, হাদিস ৩৩৬৯। সহীহ বুখারী (ইফাঃ), অধ্যায়ঃ ৬৭/ দু’আ (كتاب الدعوات), হাদিস নম্বরঃ ৫৯২০।
(২) মুসলিম, সহিহ, কিতাবুস সালাহ, বাবুস সালাতে আলান্নবী (ﷺ) বাদাত তাশাহহুদ, ১:৩০৬, নং ৪০৬।
(৩) ইবনে মাযাহ, সুনান, কিতাবু ইকামাতিস্ সালামে ওয়াস সুন্নাতে ফিহা, বাবুস সালাতে আলান্নাবী(ﷺ), ১:২৯৩, নং-৯০৫। 
(৪) মালিক, মুয়াত্তা, বাবু মা জাআ ফিস সালাতে আলান্নাবী(ﷺ), ১:১৬৫, নং-৩৯৫। 
(৫) নাসায়ী, সুনানুল কুবরা, ১:৩৮৪ , নং-১২১৭। 
(৬) সুনান আবূ দাউদ, অধ্যায়ঃ সালাত (كتاب الصلاة), হাদিস নম্বরঃ ৯৭৯, তাশাহ্হুদ পড়ার পর নবীজী (ﷺ)-এর উপর দরুদ পাঠ।

হাদিস ৬ : ইমাম আলী ইবনে আবি তালিব (رضي الله عنه) বর্ণিত,

قالُوايارَسُولَ الله ! وَکَيفَ نُيفَ نُصَلّي عَلَيک ؟ قالَ ;قُولُوا: أللّهُمَّ صَلِّ عَلي مُحَمَّدٍ وَ آلِ مُحَمَّدٍ کَما صَلَّيتَ عَلي إبراهيمَ وَ آلِ أبراهيم إنَّکَ حَميدُ مَجيدُ وَبارِک عَل مُحَمَّدٍ وَ آلِ مُحَمَّدٍ کَما بارَکتَ عَلي إبراهيمَ وَ عَلي آلِ إبراهيمَ إبَّکَ حَميدُ مَجيدُ

হে আল্লাহর রাসূল (ﷺ)! আমরা কিরূপে আপনার উপর দূরুদ পাঠ করবো ? তিনি বললেনঃ তোমরা বলবে; হে আল্লাহ মুহাম্মাদ (ﷺ) ও আলে মুহাম্মাদ (ﷺ) এর প্রতি দূরুদ পাঠাও, যেরূপে ইব্রাহীম (عليه السلام) ও আলে ইব্রাহীমের প্রতি দূরুদ পাঠিয়েছ। প্রকৃতপক্ষে আপনি প্রশংসিত সমুন্নত এবং মুহাম্মাদ (ﷺ) ও আলে মুহাম্মাদ (ﷺ) এর উপর বরকত দান কর যেরূপে ইব্রাহীম (عليه السلام) ও আলে ইব্রাহীমের উপর বরকত দান করেছ। প্রকৃতপক্ষে আপনি প্রশংসিত ও সমুন্নত। [ইমাম মুত্তাকী আল-হিন্দীঃ কানযূল উম্মাল]

হাদিস ৭ :আবদুর রাহমান ইবনু আবূ লায়লা (رحمة الله) বর্ণনা করেন, 

" باب الصَّلاَةِ عَلَى النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم حَدَّثَنَا آدَمُ، حَدَّثَنَا شُعْبَةُ، حَدَّثَنَا الْحَكَمُ، قَالَ سَمِعْتُ عَبْدَ الرَّحْمَنِ بْنَ أَبِي لَيْلَى، قَالَ لَقِيَنِي كَعْبُ بْنُ عُجْرَةَ فَقَالَ أَلاَ أُهْدِي لَكَ هَدِيَّةً، إِنَّ النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم خَرَجَ عَلَيْنَا فَقُلْنَا يَا رَسُولَ اللَّهِ قَدْ عَلِمْنَا كَيْفَ نُسَلِّمُ عَلَيْكَ، فَكَيْفَ نُصَلِّي عَلَيْكَ قَالَ ‏ "‏ فَقُولُوا اللَّهُمَّ صَلِّ عَلَى مُحَمَّدٍ، وَعَلَى آلِ مُحَمَّدٍ، كَمَا صَلَّيْتَ عَلَى آلِ إِبْرَاهِيمَ، إِنَّكَ حَمِيدٌ مَجِيدٌ، اللَّهُمَّ بَارِكْ عَلَى مُحَمَّدٍ، وَعَلَى آلِ مُحَمَّدٍ، كَمَا بَارَكْتَ عَلَى آلِ إِبْرَاهِيمَ، إِنَّكَ حَمِيدٌ مَجِيدٌ ‏"‏‏.‏

একবার আমার সঙ্গে কাব ইবনু উজরাহ (رضي الله عنه) এর সাক্ষাত হলো। তিনি বললেনঃ আমি কি তোমাকে একটি হাদিয়া দেবো না। তা হল এইঃ একদিন রাসূলুল্লাহ (ﷺ) আমাদের নিকট বেরিয়ে আসলেন, তখন আমরা বললাম, ইয়া রাসুলাল্লাহ! আমরা আপনাকে কেমন করে সালাম দেব, আমরা আপনার উপর দরুদ কিভাবে পড়বো? তিনি বললেনঃ তোমরা বলবে, 

"ইয়া আল্লাহ আপনি মুহাম্মাদের উপর ও তার পরিবারবর্গের উপর খাস রহমত বর্ষণ করুন, যেমন আপনি ইবরাহীম (عليه السلام) এর পরিবারের উপর খাস রহমাত বর্ষণ করেছেন। নিশ্চয়ই আপনি প্রশংসিত, উচ্চ মর্যাদাশীল। ইয়া আল্লাহ! আপনি মুহাম্মদের উপর ও তার পরিবারবর্গের উপর বরকত নাযিল করুন, যেমন আপনি ইববাহীম (عليه السلام) এর পরিবারবর্গের উপর বরকত নাযীল করেছেন। নিশ্চয়ই আপনি প্রশংসিত উচ্চ মর্যাদাশীল।"
[সহীহ বুখারী (ইফাঃ), অধ্যায়ঃ দু’আ (كتاب الدعوات), হাদিস নম্বরঃ ৫৯১৭]

হাদিস ৮ : হযরত আবু মাসউদ আল আনসারী (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ
"রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এলেন ও আমাদের সাথে সাদ ইবনে এবাদার মজলিশে বসলেন। বাশির বিন সাদ (অবু নোমান বিন বাশির) তাঁকে বললেনঃ হে আল্লাহর রাসূল ! মহান আল্লাহ আপনার উপর দূরুদ পড়ার নিদের্শ দিয়েছেন। আমরা কিরূপে দূরুদ পড়বো? বর্ণনাকারী বলেনঃ আল্লাহর রাসূল (এতটা) নিরবতা অবলম্বন করলেন যে আমাদের মনে হচ্ছিল যে হায় যদি এমন প্রশ্ন না করতাম। অতঃপর বললেনঃ 

"হে আল্লাহ ! মুহাম্মাদ ও আলে মুহম্মাদের প্রতি দূরুদ পাঠাও, যেমন ভাবে পাঠিয়েছ, মুহাম্মাদ (ﷺ) ও আলে মুহাম্মাদ (ﷺ) এর প্রতি বরকত দান কর, যেমনভাবে বরকত দান করেছ পৃথিবী বাসীদের মধ্যে ইব্রাহীমকে। প্রকৃতপক্ষে তুমি প্রশংসিত ও সমুন্নত। সালামও ঠিক এরমই যা জেনেছ। "

(১) ইবনে মাজাহ, সুনান, কিতাবু ইকামাতেস সালাতে ওয়াস্ সুন্নাতে ফিহা, বাবুস সালাতে আলান্নাবী (ﷺ), ১:২৯৩, নং-৯০৬ ।
(২) আব্দুর রাজ্জাক, মুসান্নাফ, ২:২১৩, নং-৩১০৯। 
(৩) আবু ইয়ালা, মুসনাদ, ৯:১৭৫, নং-৫২৬৭। 
(৪) তাবরানী, মুজামুল কাবীর, ৮:১১৫, নং-৮৫৯৪। 
(৫) বাইহাকী, শুআবুল ঈমান, ২:২০৮, নং-১৫৫০। 
(৬) ইমাম বায়হাকী,আস-সুনানুল কোবরা, ২/৫২৯ পৃ, হা/ ৩৯৬৫, তিনি বলেন- “এ হাদিসটি হাসান, মুত্তাসিল।" 
(৭) সহীহ মুসলিম, কিতাবুস সালাত খন্ড-১ পৃষ্ঠা-৩০৫, হাদীস ৬৭, অনুঃ নবীজী (ﷺ)-এর উপর দরূদ পাঠ। 
(৮) সূনানে দারেমী, খন্ড- ১ পৃষ্ঠা- ৩১০, 
(৯) সুনানে আবু দাউদ খন্ড- ১ পৃষ্ঠা- ২৫৮ , হাদীস ৯৮০, 
(১০) সুনানে নাসাঈ, অধ্যায় : সাহু, নবীজী(ﷺ)-এর উপর দরূদ পাঠর নির্দেশ, হাদিস ১২৮৪, মালিক হতে।
(১১) সূনানে তিরমিযী, অধ্যায় : তাফসীর, অনুঃ সূরাহ আল-আহযাব, হাদিস ৩২২০, তিনি বলেন, এই হাদীসটি হাসান সহীহ।
(১২) তাফসীরে সূরা আহযাব খন্ড- পৃষ্ঠা- ৯৫ 
(১৩) মুয়াত্তায়ে মালিক খন্ড- ১, পৃষ্ঠা- ১৬৫ ও ১৬৬, 
(১৪) ইমাম আহমদ, আল-মুসনাদ, ২৮/৩০৪ পৃ. হা/১৭০৭২,
(১৫) কানযুল উম্মাল খন্ড- ২ পৃষ্ঠা- ১৮২,
(১৬) তাফসীরে কুরতুবী খন্ড- ৪, পৃষ্ঠা- ২৩৩। 
(১৭) তাফসীরে দূররুল মানসূর খন্ড-৫ পৃষ্ঠা-২১৬ও২১৭। 
(১৮) তাফসীরে ইবনে কাসির খন্ড-৩ পৃষ্ঠা-৫০৮। 
(১৯) তাফসীরে খাযিন খন্ড-৩ পৃষ্ঠা-৪৭৭, 
(২০) মুস্তাদরাক আল হাকিম আস সহীহাইন খন্ড-১, পৃষ্ঠা-২৬৮, 
(২১) সহিহ ইবনে হিব্বান, হা/১৯৫৯, 
(২২) সুনানে দারা কুতনী, ২/১৬৮ পৃ. হা/১৩৩৯, তিনি বলেন- হাদিসটি হাসান, মুত্তাসিল।
(২৩) ইমাম কাসতালানীঃ আল-মাওয়াহিবুল লাদুন্নিয়্যাহ (৩য় খণ্ড), পৃ ৩৯১।

হাদিস ৯: ইবরাহীম ইবনু হামযা (رحمة الله) হযরত আবু সাঈদ খুদরী (رضي الله عنه) থেকে বর্ণনা করেন,

باب الصَّلاَةِ عَلَى النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم حَدَّثَنَا إِبْرَاهِيمُ بْنُ حَمْزَةَ، حَدَّثَنَا ابْنُ أَبِي حَازِمٍ، وَالدَّرَاوَرْدِيُّ، عَنْ يَزِيدَ، عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ خَبَّابٍ، عَنْ أَبِي سَعِيدٍ الْخُدْرِيِّ، قَالَ قُلْنَا يَا رَسُولَ اللَّهِ هَذَا السَّلاَمُ عَلَيْكَ، فَكَيْفَ نُصَلِّي قَالَ ‏ "‏ قُولُوا اللَّهُمَّ صَلِّ عَلَى مُحَمَّدٍ عَبْدِكَ وَرَسُولِكَ، كَمَا صَلَّيْتَ عَلَى إِبْرَاهِيمَ، وَبَارِكْ عَلَى مُحَمَّدٍ وَعَلَى آلِ مُحَمَّدٍ، كَمَا بَارَكْتَ عَلَى إِبْرَاهِيمَ وَآلِ إِبْرَاهِيمَ ‏"‏‏.‏ 

একবার আমরা বললামঃ ইয়া রাসুলাল্লাহ! এই যে 'আসসালামু আলাইকা' তা তো আমরা জেনে নিয়েছি। তবে আপনার উপর দরুদ কিভাবে পড়বো? তিনি বললেনঃ তোমরা পড়বে, 

"ইয়া আল্লাহ! আপনি আপনার বান্দা ও আপনার রাসূল মুহাম্মাদ (ﷺ) এর উপর খাছ রহমত বর্ষণ করুন। যেমন করে আপনি ইবরাহীম (عليه السلام) এর উপর রহমত নাযিল করেছেন। আর আপনি মুহাম্মদ ও তার পরিবারবর্গের উপর বরকত বর্ষণ করুন, যে রকম আপনি ইবরাহীম (عليه السلام) এর উপর এবং ইবরাহীম (عليه السلام) এর পরিবারবর্গের উপর বরকত নাযিল করেছেন।"

▪ সহীহ বুখারী (ইফাঃ), অধ্যায়ঃ দু’আ (كتاب الدعوات)
হাদিস নম্বরঃ ৫৯১৮।
▪ সহীহ বুখারী, কিতাবুত তাফসীর, সূরা আহযাব, খন্ড-৩, পৃষ্ঠা-১১৯ এবং 
▪ কিতাবে দাওয়াত খন্ড- ৪পৃষ্ঠা- ৭২।
▪ সূনানে নাসাঈ খন্ড- ৩পৃষ্ঠা- ৪৯।
▪ সূনানে ইবনে মাযাহ খন্ড-১ পৃষ্ঠা-২৯২, হাদীস ৯০২
▪ মুসনাদে আহমাদ খন্ড-৩ পৃষ্ঠা-৪৭।
▪ তাফসীরে দূররুল খন্ড-৫ পৃষ্ঠা-২১৭।

হাদিস ১০:ইবনে আব্বাস (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত,
অতঃপর বললাম অথবা বললঃ হে আল্লাহর রাসূল (ﷺ) আপনার উপর সালাম সম্পর্কে জেনেছি, কিন্তু আপনার উপর দূরুদ কিরূপে (পড়ে)? বললেনঃ 

"হে আল্লাহ! মুহাম্মাদ (ﷺ) ও আলে মুহাম্মাদ (ﷺ) এর উপর দূরুদ পাঠাও, যেরূপ পাঠিয়েছ ইব্রাহীম ও আলে ইব্রাহীমের উপর। তুমিতো প্রশংসিত ও উন্নত। এবং মুহাম্মাদ (ﷺ) ও আলে মুহাম্মাদ (ﷺ) এর উপর বরকত প্রদান কর, যেরূপ বরকত প্রদান করেছে ইব্রাহীম ও আলে ইব্রাহীমের উপর। নিশ্চয়ই তুমি প্রশংসিত ও সমুন্নত।" 
[তাফসীরে তাবারী, তাফসীরে সূরা আহযাব খন্ড-২২ পৃষ্ঠা-৩১, তাফসীরে দূররুল মনসূর খন্ড-৫, পৃষ্ঠা-২১৬]


হাদিস ১১-১৯

হাদিস ১১: যাইদ ইবনে খারিজাহ (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত, রাসূল (ﷺ) বলেনঃ
আমার উপর দূরুদ পাঠবে এবং দোয়া করবে ও বলবেঃ 

"হে আল্লাহ! মুহাম্মাদ (ﷺ) ও আলে মুহাম্মাদ (ﷺ) এর উপর দূরুদ পাঠাও এবং মুহাম্মাদ (ﷺ) ও আলে মুহাম্মাদ (ﷺ) এর উপর বরকত দান কর যেরূপ বরকত দান করেছ ইব্রাহীম ও আলে ইব্রাহীমের উপর। নিশ্চয়ই তুমি প্রশংসিত ও সমুন্নত। [সুনানে নাসাঈ, কিতাবে সাহু খন্ড-৩ পৃষ্ঠা-৪৯]

হাদিস ১২: আবু তালহা (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত,
 
قُلنا: يارَسول الله!قَد علمنا کَيفَ السَّلام عَلَيک.فَکَيفَ الصَّلاة عَليکَ ؟قالَ : قولوا: أللّهُمَّ صَلِّ عَلي مُحَمَّدٍ وَ علي آلِ مُحَمَّدٍ وَ بارِک عَلي مُحَمَّدٍ وَ آلِ مُحَمَّدٍ کَماصَلَّيتَ و بارَکتَ عَلي إبراهيم وعلي آلِ ابراهيم إنَّکَ حَميدُ مَجيدُ

বললামঃ হে আল্লাহর রাসূল! কিরূপে আপনার উপর সালাম বলবো তা জেনেছি। আপনার উপর দূরুদ কিরূপ? বললেনঃ বল, 

"হে আল্লাহ! মুহাম্মাদ (ﷺ) ও আলে মুহাম্মাদ (ﷺ) এর উপর দূরুদ পাঠাও এবং মুহাম্মাদ (ﷺ) ও আলে মুহাম্মাদ (ﷺ) এর উপর বরকত দান কর যেরূপে ইব্রাহীম ও আলে ইব্রাহীনের উপর দূরুদ ও বরকত দান করেছ। নিশ্চয়ই তুমি প্রশংসিত ও সমুন্নত।"
[কানযুল উম্মাল খন্ড-২, পৃষ্ঠা-১৭৬, তাফসীরে দূররুল মানসূর খন্ড-৫, পৃষ্ঠা- ২১৬, সুনানে নাসাঈ ও মুসনাদে আহমাদ]

হাদিস ১৩: বারদেয়ে খাযায়ী (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত রাসূল (ﷺ) বলেনঃ
বলঃ হে আল্লাহ! মুহাম্মাদ (ﷺ) ও আলে মুহাম্মাদ (ﷺ) এর উপর দূরুদ, রহমতও বরকত দান কর যেরূপে এ গুলো ইব্রাহীমকে দান করেছ। নিশ্চযই তুমি প্রশংসিত ও সমুন্নত। (মুসনাদে আহমাদ ও সুয়ুতির দূররুল মানসূর)

হাদিস ১৪: মুহাম্মাদ ইবনে আব্দুল্লাহ বিন যাইদ (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত রাসূল (ﷺ) বলেনঃ
বলঃ হে আল্লাহ মুহাম্মাদ (ﷺ) ও আলে মুহাম্মাদ (ﷺ) এর উপর দূরুদ প্রেরণ কর যেরূপভাবে ইব্রাহীম (عليه السلام)-এর উপর দূরুদ পাঠিয়েছ। মুহাম্মাদ (ﷺ) ও আলে মুহাম্মাদ (ﷺ) এর উপর বরকত দান কর যেরুপে ইব্রাহীমকে পৃথিবীবাসীর মধ্যে বরক দিয়েছ। নিশ্চয়ই তুমি প্রশংসিত ও সমুন্নত সালাম ও সেরূপ যেমন টি জেনেছ। [কানযুল উম্মাল খন্ড- ১, পৃষ্ঠা-৪৪২]

হাদিস ১৫: হযরত ইব্রাহীম (رضي الله عنه) থেকে اِنّ الله وَ ملا کث এ আয়াতের প্রসঙ্গে বর্ণনা করেছে যে,
قالُوا يا رَسُولَ الله! هذَا السَّلام قَد عَرفناه .فَکَيفَ الصَّلاة عَليکَ ؟ فَقالَ 
তিনি বললেনঃ হে আল্লাহর রাসূল (ﷺ)! এ সালামটি জানতাম। আপনার উপর দূরুদ কিরূপ? বললেনঃ বল, 

"হে আল্লাহ! তোমার বান্দা ও রাসূল মুহাম্মাদের উপর দূরুদ পাঠাও, যেমন ভাবে দূরুদ পাঠিয়েছ ইব্রাহিমের উপর। সত্যিই তুমি প্রশংসিত ও সনুন্নত।"
[ইমাম তাবারীঃ তাফসীরে তাবারী, খন্ড-২, পৃষ্ঠা-৩২, 
ইমাম সুয়ূতীঃ তাফসীরে দূররে মানসূর খন্ড-৫, পৃষ্ঠা- ২১৬]

হাদিস ১৬:উম্মুল মু'মিনীন আয়েশা (رضي الله عنه) থেকে থেকে বর্ণিত যে, তিনি বলেনঃ
قالَ اَصحابُ النَّبيّ يا رَسُول الله أُمِرنا أن نکثر الصَّلاةَ عَلَيکَ فِي اللَّيلَةِ الغراء وَ اليَوم الأزهَر وَ أحبّ ما صَلّينا عَلَيکَ کَم تُحِبّ. قالَ
সাহাবীগণ বললেনঃ হে আল্লাহর রাসূল (ﷺ)! আমাদেরকে আদেশ দেয়া হয়েছে অন্ধকার রাতে ও আলোকিত দিবালোকে আপনার উপর দূরুদ বেশী পড়তে। (তা কতই না সুন্দর যে) আপনার উপর আমাদের দূরুদ এমন হবে যা আপনি পছন্দ করবেন। বললেনঃ বল; 

"হে আল্লাহ! মুহাম্মাদ (ﷺ) ও আলে মুহাম্মাদ (ﷺ) এর উপর দূরুদ পাঠাও, যেরূপ ভাবে ইব্রাহীম ও আলে ইব্রাহীমের উপর দূরুদ পাঠিয়েছ এবং মুহাম্মাদ (ﷺ) ও আলে মুহাম্মাদ (ﷺ) এর উপর রহমত বর্ষণ কর, যেরূপে ইব্রাহীম ও আলে ইব্রাহীমের উপর রহমত করেছো। মুহাম্মাদ (ﷺ) ও আলে মুহাম্মাদ (ﷺ) এর উপর বরক দাত্ত, যেরুপে বরকত দিয়েছো ইব্রাহীম ও আলে ইব্রাহমকে নিশ্ময়ই তুমি প্রশংসিত ও সমুন্নত। আর সালামের প্রক্রিয়া সম্পর্কে তো নিজেই জেনেছ। 
[ইমাম মুত্তাকী আল হিন্দীঃ কানযুল উম্মাল খন্ড- ২, পৃষ্ঠা- ১৮২ ও খন্ড- ১, পৃষ্ঠা- ৪৪৩]

হাদিস ১৭:

সূরা-আহযাবে ইরশাদ হয়েছেঃ
“অবশ্যই আল্লাহ তাঁর ফেরেশতাদের নিয়ে নবীর প্রতি দরুদ পাঠ করেছেন। হে ঈমানদারগণ তোমরাও তাঁর প্রতি দরুদ ও সালাম পেশ করতে থাক।” 
[সূরা-আহযাব, আয়াত ৫৬]
উক্ত আয়াত অবতীর্ণ হওয়ার পর সাহাবারা জিজ্ঞেস করলেন, ইয়া রাসূলুল্লাহ (صلى الله عليه و آله و سلم) আপনার উপর কিভাবে দরুদ পাঠ করতে হবে? উত্তরে নবীজি বলেন :
“আল্লাহুম্মা সাল্লে আলা মুহাম্মাদ, ওয়া আলে মুহাম্মাদ” অতঃপর তিনি বলেন : দেখ, তোমরা যেন আমার উপর লেজ কাটা দরুদ না পড়। 
সাহাবারা বললেন লেজকাটা কেমন? নবীজি উত্তরে বলেন, আমার আহলে বাইত (আলী, ফাতেমা, হাসান ও হোসাইন (رضي الله عنه)-কে বাদ দিয়ে শুধু আমার উপর দরুদ পড়া যেমন “আল্লাহুম্মা সাল্লে আলা মুহাম্মাদ” বলে চুপ থাকা। আমার ‘আলকে’ অবশ্যই সম্পৃক্ত করতে হবে।

[সূত্রঃ মুসনাদে আহমদ, খন্ড-৫, পৃষ্ঠা-৩৫৩; যাখাইরুল উকবা, পৃষ্ঠা-১৯; ইয়া নাবিউল মাওয়াদ্দাত, পৃষ্ঠা-৭; কানযুল উম্মাল, খন্ড-১, পৃষ্ঠা-১২৪; সাওয়ায়েকুল মুহরিকা, পৃষ্ঠা-৮৭,৭৭১; মাজমাউল বয়ান, খন্ড-৮, পৃষ্ঠা-৩৬৯; ফাজায়েলুল খামছা, খন্ড-১, পৃষ্ঠা-২০৯]।

এ প্রসঙ্গ ইমাম শাফেয়ী (রহঃ) বলেন, “ইয়া! আহলে বাইতে রাসূল! আপনাদের মুয়াদ্দাত (আনুগত্যপূর্ণ ভালোবাসা) পবিত্র কোরআনে ফরজ করা হয়েছে, যে ব্যক্তি নামাজ আপনাদের উপর দরুদ না পড়বে তার নামাজই কবুল হবে না।”

[সূত্রঃ ইবনে হাজার মাক্কীর-সাওয়ায়েকে মোহরেকা পৃষ্ঠা-৮৮]।

হাদিস ১৮:

হযরত ওমর (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত আছে। তিনি বলেন, মহানবী (صلى الله عليه و آله و سلم) বলেছেন, দু‘আ ও নামাযসমূহ ততক্ষণ পর্যন্ত আসমান ও যমীনের মধ্যবর্তী স্থানে ঝুলন্ত অবস্থায় থাকে, উপরের দিকে যায় না, যতক্ষণ না নবী করীম (صلى الله عليه و آله و سلم) এর প্রতি দরুদ প্রেরণ করা না হয়।

[সূত্রঃ মাদারেজুন নবুয়াত, খন্ড-২, পৃষ্ঠা-১০৬, (ই.ফা:); জামে আত তিরমিযি, খন্ড-২, হাদিস-৪৫৮; সহীহ তিরমিযি, পৃষ্ঠা-১৭২, হাদিস-৪৮৯, (সকল খণ্ড একত্রে, তাজ কোং)]।

হাদিস ১৯:

ইমাম দারাকুতনী (رحمة الله) ও ইবনে মাযাহ (رحمة الله) হযরত আবু মাসউদ আনসারী (رضي الله عنه) থেকে বর্ণনা করেন, 
-“যে নামায পড়লাে আর আমি নবী (ﷺ) এবং আহলে বায়াতের উপর সালাত পড়লাে না তার নামায কবুল হবে না।”

তথ্যসূত্রঃ
১.ইমাম দারাকুতনী, আস-সুনান, ২/১৭০ পূ, হা/১৩৪৩, 
২.ইমাম যায়লাঈ, নাসবুর রায়্যাহ, ১৪২ পৃ., তিনি বলেন- “সনদে জাবের যঈফ রাবী, তার হাদিস নিয়ে অনেক আলােচনা-সমালােচনা রয়েছে।” 
৩.ইমাম শিহাবুদ্দীন আল-কাস্তালানীঃ আল-মাওয়াহিবুল লাদুন্নিয়্যাহঃ ৪র্থ খন্ড, পৃ ১৫৮, সাকলাইন প্রকাশনী।


আহলে বাইতের নামের পরে (عليه السلام) ব্যবহার

আহলে বাইত এর নামের শেষে (عليه السلام) বলার প্রমাণ।
بِسْــــــــــــــــمِ اﷲِالرَّحْمَنِ الرَّحِيم

১.‘(عليه السلام)’ যে কেবল নবী-রাসূলদের নামের শেষে ব্যবহার করা হয় তা কিন্তু নয়। যেমন-আমরা হযরত লোকমান, হযরত মারিয়াম এবং ইমাম মাহদীর নামের শেষে ‘(عليه السلام)’ ব্যবহার করি অথচ তারা কেউই নবী-রাসূল নন। শুধু তাই নয়, ফেরেশতাদের নামের সাথেও আমরা ‘(عليه السلام)’ ব্যবহার করি।

আমরা আরেকটি প্রশ্ন তুলতে পারি যে, পবিত্র কোরআন বা হাদীসের কোথাও কি এমন বর্ণনা রয়েছে যে, কোনো মুসলমানের নামের পর “(عليه السلام)” বা সংক্ষেপে (عليه السلام) ব্যবহার করা যাবে না বা এ ধরনের ব্যবহার হারাম?

আমাদের জানামতে কোরআন-হাদীসের কোথাও এমন নিষেধাজ্ঞার কথা উল্লেখ করা হয়নি কিংবা এ ধরনের ব্যবহার যে অপছন্দনীয় তাও কোথাও উল্লেখ করা হয়নি। বরং পবিত্র কোরআনের নানা আয়াতের বর্ণনা অনুযায়ী আল্লাহ মুমিনদের, পরহিজগারদের ও বেহেশতীদের সালাম দিয়েছেন। যেমন- 

সুরা ইয়াসিনের ৫৮ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে, ‘করুণাময় পালনকর্তার পক্ষ থেকে তাদেরকে বলা হবে সালাম।’
অনুরূপ বক্তব্য রয়েছে সুরা ত্বাহার ৪৭ নম্বর আয়াতে এবং সুরা আরাফের ৪৬ নম্বর আয়াতে।
“আলাইহিসসালাম” শব্দের অর্থ তার ওপর শান্তি বর্ষিত হোক।

এটি এক বিশেষ প্রার্থনা। আমরা মুসলমানরা সবাই একে-অপরকে সালাম দিয়ে থাকি।
এবার আমরা বিশ্বনবী (صلى الله عليه و آله و سلم) -এঁর আহলে বাইতের সদস্যদের নামের পাশে কিংবা আল্লাহর ওলীগণের নামের পাশে “আলাইহিসসালাম” বা সংক্ষেপে (عليه السلام) ব্যবহার যে বৈধ তার কিছু প্রমাণ তুলে ধরছি:

সহিহ বুখারীঃ

প্রমাণ ১: 

আহলুস সুন্নাহর সবচেয়ে প্রসিদ্ধ বা নির্ভরযোগ্য হাদীস গ্রন্থ বুখারী শরীফের ” কিতাবুল ফাজায়েলে সাহাবিহ” অধ্যায়ের (৩৭/৬২ নম্বর অধ্যায়) “বাবুল মানাক্বিবে ফাতিমাতু” শীর্ষক পর্বে (পর্ব নম্বর ৫৯/২৯) হযরত ফাতিমা (رضي الله عنه) এঁর নামের পর “আলাইহিসসালাম” ব্যবহার করা হয়েছে।

প্রমাণ ২: 

একই হাদীস গ্রন্থের অর্থাৎ বুখারী শরীফের “বাবুল মানাক্বিবি ক্বুরাবাত্বা রাসুলুল্লাহ ওয়া মানাক্বিবাতি ফাতিমাতা আলাইহিসসালাম বিনতি নাবী” শীর্ষক আলোচনায় (পর্ব নম্বর-৪১/১২) “আলাইহিসসালাম” ব্যবহার করা হয়েছে, যা এই শিরোনামের মধ্যেই লক্ষ্যনীয়।

প্রমাণ ৩:

হাদীস শরীফের অন্যতম কিতাব “সহীহ বুখারী” শরীফে একাধিক স্থানে হযরত আলী (عليه السلام), হযরত ফাতেমুয যাহারা (عليه السلام), হযরত ইমাম হুসাইন (عليه السلام) এভাবে উল্লেখ করা হয়েছে। (عليه السلام) ব্যবহার যদি শিয়া হয় তবে কি ওহাবীরা ইমাম বুখারী রহমতুল্লাহি আলাইহিকে শিয়া বলবে?
দারু শুয়াব, কাহেরা মিশর থেকে প্রকাশিত বুখারী শরীফে ৪৯৪৭ নম্বর হাদীস শরীফের ইবারতটা নিম্নে দেয়া হলোঃ

حَدَّثَنَا يَحْيَى ، حَدَّثَنَا وَكِيعٌ ، عَنِ الأَعْمَشِ عَنْ سَعْدِ بْنِ عُبَيْدَةَ ، عَنْ أَبِي عَبْدِ الرَّحْمَنِ ، عَنْ عَلِيٍّ – عَلَيْهِ السَّلاَمُ– قَالَ : كُنَّا جُلُوسًا عِنْدَ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم فَقَالَ مَا مِنْكُمْ مِنْ أَحَدٍ إِلاَّ وَقَدْ كُتِبَ مَقْعَدُهُ مِنَ الْجَنَّةِ وَمَقْعَدُهُ مِنَ النَّارِ فَقُلْنَا يَا رَسُولَ اللهِ أَفَلاَ نَتَّكِلُ قَالَ : لاََ اعْمَلُوا فَكُلٌّ مُيَسَّرٌ ثُمَّ قَرَأَ

উক্ত হাদীস শরীফের সনদটা পড়ে দেখুন। হযরত আলী (عليه السلام) লেখা আছে।

প্রমাণ ৪:

বুখারী শরীফের باب المرأة تطرح عن المصلي شيئا من الأذى তে ৫২০ নম্বর হাদীস শরীফে হযরত ফাতিমা (عليه السلام) বলা হয়েছে। হাদীস শরীফে বর্ণিত আছে ,

 وَضَعَهُ بَيْنَ كَتِفَيْهِ وَثَبَتَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم سَاجِدًا فَضَحِكُوا حَتَّى مَالَ بَعْضُهُمْ إِلَى بَعْضٍ مِنَ الضَّحِكِ فَانْطَلَقَ مُنْطَلِقٌ إِلَى فَاطِمَةَ – عَلَيْهَا السَّلاَمُ – وَهْيَ جُوَيْرِيَةٌ فَأَقْبَلَتْ تَسْعَى

ইবারতটা দেখুন যেখানে হযরত ফাতেমা (عليه السلام) বলা হয়েছে সেখানে আন্ডার লাইন করে দেয়া হয়েছে। দেখা গেলো সহীহ বুখারী শরীফে আহলে বাইতের অন্যতম হযরত যাহরা (عليه السلام) উনার নাম মুবারকের সাথেও “(عليه السلام)” লেখা আছে। শুধু তাই নয় আহলে বাইতের তৃতীয় ইমাম হযরত ইমাম হুসাইন (عليه السلام) উনার নাম মুবারকের সাথেও “(عليه السلام)” লেখা আছে। 

প্রমাণ ৫: 

حَدَّثَنِي مُحَمَّدُ بْنُ الْحُسَيْنِ بْنِ إِبْرَاهِيمَ ، قَالَ : حَدَّثَنِي حُسَيْنُ بْنُ مُحَمَّدٍ ، حَدَّثَنَا جَرِيرٌ ، عَنْ مُحَمَّدٍ ، عَنْ أَنَسِ بْنِ مَالِكٍ ، رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ ، أُتِيَ عُبَيْدُ اللهِ بْنُ زِيَادٍ بِرَأْسِ الْحُسَيْنِ – عَلَيْهِ السَّلاَمُ – فَجُعِلَ فِي طَسْتٍ فَجَعَلَ يَنْكُتُ وَقَالَ فِي حُسْنِهِ شَيْئًا فَقَالَ أَنَسٌ كَانَ أَشْبَهَهُمْ بِرَسُولِ اللهِ صلى الله عليه وسلم ، وَكَانَ مَخْضُوبًا بِالْوَسْمَةِ

দেখুন ইমাম হুসাইন (عليه السلام) উনার নাম মুবারকের সাথে “ (عليه السلام)” লেখা রয়েছে।
বর্তমানে হাদীস শরীফ বা বিভিন্ন কিতাবের ভান্ডর হচ্ছে “মাকতাবায়ে শামেলা” এবং “জামেউল কালিম”। এই দুইটা সপ্টওয়ারে আন্ডারলাইনকৃত অংশ সার্চ করে দেখেন। দেখবেন হুবুহু (عليه السلام) সহ এই হাদীস শরীফ পেয়ে যাবেন। মাকতাবায়ে শামেলাতে বুখারী শরীফের রেফারেন্সে ৯ স্থানে আহলে বাইতের নাম মুবারকের সাথে (عليه السلام) রয়েছে। সুবহানাল্লাহ।

প্রমাণ ৬: 

তাওহীদ প্রকাশনী থেকে প্রকাশিত বুখারী শরীফের ৩য় খন্ড ৬২৯ পৃষ্ঠা। এখানে একটা বাব রয়েছে , বাবে নাম হচ্ছে “বাবু মানাকিবি কারিবাতি রসূলিল্লাহি (ﷺ) ওয়া মানাক্বাবাতি ফাতিমাতা (عليه السلام) বিনতি নাব্যিয়্যি (ﷺ)”। খুব ভালো করে দেখেন হযরত ফাতিমাতুয যাহরা (عليه السلام) উনার নাম মুবারকের সাথে “(عليه السلام)” লেখা আছে। আর ৩৭১১ নম্বর হাদীস শরীফের চিহিৃত ইবারত লক্ষ্য করেন।

তিরিমিজি শরীফঃ

প্রমাণ ৭: 

একই ধরণের ব্যবহার রয়েছে আরেকটি বিখ্যাত হাদীস গ্রন্থ তিরিমিজি শরীফের হাদীসে। যেমন, কিতাবুল মানাক্বিবিত তিরমিজি’র “ফাজলি ফাতিমাতা বিনতি মুহাম্মাদ সাল্লিল্লাহু আলাইহিমা ওয়া সাল্লাম” উপপর্বে। (৫০/৬১ নম্বর অধ্যায়, অর্থাৎ কিতাব নম্বর ৫০, বাব নম্বর ৬১) এখানেও শিরোনামের মধ্যেই “সাল্লিল্লাহু আলাইহিমা ওয়া সাল্লাম” শব্দটির ব্যবহার লক্ষ্যনীয়।

প্রমাণ ৮: 

একই হাদীস গ্রন্থের “মানাক্বিব আল হাসান ওয়া আল হুসাইন আলাইহিমা ওয়া সাল্লাম” শীর্ষক আলোচনার শিরোনামেই এই শব্দের ব্যবহার লক্ষ্যনীয়।

এটা স্পষ্ট যে বিশিষ্ট সাহাবীদের বর্ণিত এসব হাদীসে হযরত ফাতিমা (رضي الله عنه) এবং হযরত ইমাম হাসান ও হোসাইন (رضي الله عنه)’র নামের পর “আলাইহিসসালাম” ব্যবহার করা হয়েছে। এ ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞা থাকলে সাহাবীরা তাঁদের বর্ণনায় কখনও এ শব্দ ব্যবহার করতেন না, বরং শুধু “রাজিয়াল্লাহু আনহু” বা এ জাতীয় অন্য কোনো শব্দ ব্যবহার করতেন। “রাজিয়াল্লাহু আনহু” শব্দের অর্থ আল্লাহ তাঁর ওপর সন্তুষ্ট হোক।

ইমাম ফাখরুদ্দিন রাজিঃ

প্রমাণ ৯: 

ইমাম ফাখরুদ্দিন রাজিও রাসুলুল্লাহ (صلى الله عليه و آله و سلم) -এঁর আহলে বাইতের সদস্যদের নামের পর “আলাইহিসসালাম” দোয়াটি ব্যবহার করেছেন।
তিনি বলেছেন, রাসূল (صلى الله عليه و آله و سلم) ‘র আহলে বাইত (عليه السلام) এঁর ক্ষেত্রেও রাসূল (صلى الله عليه و آله و سلم) -এঁর প্রতি সম্মান প্রদর্শনের মত সম্মান প্রদর্শন করতে হবে। সালাম এসবের মধ্যে অন্যতম। মহান আল্লাহ কোরআনে নবী করিম (صلى الله عليه و آله و سلم) ও তাঁর পবিত্র বংশধরদের প্রতি সালাম দিয়েছেন “আলে ইয়াসিনের ওপর সালাম” শব্দের মাধ্যমে।

ইবনে হাজার মাক্কীঃ

প্রমাণ ১০: 

ইবনে হাজার মাক্কীও মনে করেন, কোরআনে বর্ণিত “আলে ইয়াসিন” শব্দের অর্থ আলে মুহাম্মাদ (صلى الله عليه و آله و سلم) বা মুহাম্মাদের বংশধর। ইয়াসিন প্রিয় নবী (صلى الله عليه و آله و سلم) -এঁরই অন্যতম নাম।
৫-বিশ্বনবী (صلى الله عليه و آله و سلم) -কে প্রশ্ন করা হয়েছিল কিভাবে আমরা আপনার প্রতি দরুদ পাঠাব? উত্তরে তিনি বলেছিলেন, তোমরা বলবে ” আল্লাহুম্মা সাল্লি ‘আলা মুহাম্মাদ ওয়া ‘আলা আলি মুহাম্মাদ”। সালামের মত দরুদ তথা সালাওয়াত পড়া বা সাল্লি আলা বলাও এক ধরনের দোয়া। এর অর্থ কল্যাণ কামনা করা।

[সূত্রঃ সহিহুল বুখারী, খণ্ড ৩; মুসলিম সহিহ, খণ্ড ১; সুলাইমান বালখী রহঃ তদীয় ইয়ানাবিউল মাওয়াদ্দা; ইবনে হাজর রহঃ তদীয় কিতাব সাওয়ায়িকে ক্বাব বিন আযযার বরাতে। ইমাম ফাখরুদ্দীন রাজী রহঃ তদীয় তাফসীরে কাবীর এর খণ্ড ৬-এ।]

প্রমাণ ১১.সূরা নমল-এর উক্ত আয়াত শরীফ-এর তাফসীরঃ 
এ বর্ণিত রয়েছে-

 والارجح فى مثل لقمان ومريم والـخضر والاسكندر الـمختلف فى نبوته ان يقال رضى الله عنه او عنها ولو قال عليه السلام او عليها السلام لا بأس به

অর্থ: অতএব প্রণিধানযোগ্য উদাহরণ হলো: হযরত লুক্বমান, হযরত মারইয়াম, হযরত খিযির, হযরত সেকেন্দার যুল ক্বরনাইন। উনাদের নবী হওয়ার ব্যাপারে ইখতিলাফ থাকার করণে উনাদের শানে (রাদিঅাল্লাহু আনহু) বলা হয়। আর কেউ যদি উনাদের শানে (عليه السلام) অথবা (عليه السلام) বলে, এতে কোনই অসুবিধা নেই।” [তাফসীরে রূহুল বয়ান ৭ম খ- ২২৮ পৃষ্ঠা]

প্রমাণ ১২.সূরা নমল-এর ৫৯নং আয়াত শরীফ-এ মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ করেন-
 قل الحمد لله وسلام على عباده الذين اصطفى 
অর্থ: হে আমার হাবীব (ﷺ)! আপনি বলুন, সমস্ত প্রশংসাই মহান আল্লাহ পাক উনার জন্যে এবং সালাম বা শান্তি বর্ষিত হোক উনার মনোনীত বান্দাগণ উনাদের প্রতি।”
রঈসুল মুফাসসিরীন হযরত ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে বর্ণিত এক রেওয়ায়েতে আছে, আয়াত শরীফ-এ عباده الذين اصطفى ‘মনোনীত বান্দা’ বলতে হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদেরকে বোঝানো হয়েছে। হযরত ইমাম ছুফিয়ান ছওরী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনিও এ মতই গ্রহন করেছেন। মূলত عباده الذين اصطفى এ আয়াতে কারীমা দ্বারা হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারাসহ সমস্ত আওলিয়ায়ে কিরাম উনাদেরকে বোঝানো হয়েছে। (তাফসীরে মাযহারী, তাফসীরে কুরতুবী, ইবনে কাছীর, তাফসীরে কবীর ইত্যাদি)

‘সুনানে দারু কুতনীর” ৯ জায়গায় হযরত আবু বকর সিদ্দীক (عليه السلام) ও ৩৪ স্থানে হযরত উমর (عليه السلام) লেখা আছেঃ

প্রমাণ ১৩: 

হাদীস শরীফের অন্যতম নির্ভযোগ্য কিতাব ‘সুনানে দারু কুতনীর” ৯ জায়গায় হযরত আবু বকর সিদ্দীক (عليه السلام) ও ৩৪ স্থানে হযরত উমর (عليه السلام) লেখা আছে। সকলে জানার জন্য কয়েকটা ইবারত উল্লেখ করা হলো-

30 – حدثنا أبو بكر ، أحمد بن محمد بن إسماعيل الآدمي قال : نا محمد بن الحسين الحنيني ، قال : نا عبد العزيز بن محمد الأزدي ، قال : نا حفص بن غياث ، قال : سمعت جعفر بن محمد ، يقول : ما أرجو من شفاعة علي عليه السلام شيئا ، إلا وأنا أرجو من شفاعة أبي بكر عليه السلام مثله ، ولقد ولدني مرتين

উক্ত কিতাবের ফাদ্বায়িলুছ ছাহাবা অধ্যায়ে এ্ই হাদীস শরীফ পাবেন যেখানে হযরত আবু বকর সিদ্দীক (عليه السلام) লেখা আছে। যা আপনারা মাকতাবায়ে শামেলাতেও পাবেন। 

প্রমাণ ১৪: 

“দারু কুতনী কিতাবের ফাদ্বায়িলুছ ছাহাবা অধ্যায়ে” হযরত উমর (عليه السلام) উনার নাম মুবারকের সাথে “ (عليه السلام)” লেখা আছে। নিম্নে ইবারত ও সনদ দেয়া হলো:

3 – حدثنا محمد بن منصور بن أبي الجهم ، نا السري بن عاصم ، قال : نا أبو معاوية ، عن الحجاج بن أرطأة ، عن من ، أحبوه ، عن الشعبي ، قال : قال علي عليه السلام : لم أكن لأحل عقدة عقدها عمر عليه السلام

দেখুন মাকতাবেয়া শামেলাতে দারু কুতনীতে হযরত উমর (عليه السلام) উনার নামে সাথে “ (عليه السلام)”লিখে অনুসন্ধান করলে কতগুলো রেজাল্ট আসে।

প্রমাণ ১৫.জামিউল কালিম ও ইমাম আহমদ বিন হাম্বলঃ

হাদীস শরী্ফের অন্যতম সপ্টওয়ার জামিউল কালিমে ইমাম আহমদ বিন হাম্বল রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার কিতাবুয যুহদ এর দলীল আছে। উক্ত কিতাবে একটা অধ্যায় আছে যার নাম হচ্ছে زُهْدُ أَبِي بَكْرٍ الصِّدِّيقِ عَلَيْهِ السَّلامُ  
ইমাম আহমদ বিন হাম্বল রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার কিতাবে (عليه السلام)

ইমাম আহমদ বিন হাম্বল রহতুল্লাহি আলাইহি রচিত “ফাদ্বায়েলুছ ছাহাবা” কিতাবে হযরত আলি (عليه السلام) লেখা আছে। 

প্রমাণ ১৬.মুফতী শফীর মা’রেফুল কুরআনেঃ

দেওবন্দীদের অন্যতম মুরুব্বী মুফতী শফীর মা’রেফুল কুরআনে’ নবী রসূল আলাইহিমুস সালাম সালাম ছাড়া অন্যদের বেলায় (عليه السلام) বলা বৈধতা প্রমাণ হয় বলে উল্লেখ আছে। (মারেফুল কুরআন ৬ষ্ঠ খন্ড ৬৫৫ পৃষ্ঠা : প্রকাশনা- ইসলামী ফাউন্ডেশন)

প্রমাণ ১৭-৫০.বুখারি শরীফ থেকে ৩৪ টি দলিলঃ

আহলে বাইতের নামের শেষে আলাইহিস সালাম বলার ক্ষেত্রে বুখারি শরীফ থেকে ৩৪ টি দলিল দেয়া হল - যে গুলোর প্রত্যেকটিতে আহলে বাইতের নামের শেষে অবস্থাভেদে 'আলাইহিস সালাম ও আলাইহাস সালাম এবং আলাইহিমাস সালাম' লেখা আছে! (তথ্যসূত্রঃ আবসার তৈয়বী)

1- صحيح البخاري ( 2/243) كتاب الكسوف باب تحريض النبي (ص) على صلاة الليل والنوافل من غير ايجاب وطرق النبي (ص) #فاطمة_وعلياً_عليهما_السلام ليلة للصلاة.
2- صحيح البخاري (3/ 137) كتاب الهبة/ باب إذا وهب ديناً على رجلٍ /قال شعبة عن الحكم هو جائز ووهب #الحسن_بن_علي_عليهما_السلام لرجلٍ دينه.
3- صحيح البخاري (3/229)/ كتاب الجهاد والسير/ عن سهل (رض) أنه سئل عن جرح النبي (ص) يوم احد فقال:.... فكانت #فاطمة_عليها_السلام تغسل الدم....
4- صحيح البخاري (4/41) / باب فرض الخمس / عن الزهري قال أخبرني علي بن الحسين أن #حسين_بن_علي_عليهما_السلام أخبره أن علياً قال: كانت لي شارف من نصيبي من المغنم يوم بدر.
5- صحيح البخاري (4/42) / باب دعاء النبي(ص)/ أن #فاطمة_عليها_السلام إبنة رسول الله (ص) سألت أبا بكر الصديق بعد وفاة رسول الله (ص) أن يقسم لها ميراثها....
6- صحيح البخاري (4/47) / باب دعاء النبي(ص)/ .. إن علي بن أبي طالب خطب إبنة أبي جهل على #فاطمة_عليها_السلام....
7- صحيح البخاري (4/48) / باب دعاء النبي(ص) / أن #فاطمة_عليها_السلام اشتكت ما تلقى من الرحى...
8- صحيح البخاري (4/ 71)/ باب دعاء النبي(ص) / حتى جاءت #فاطمة_عليها_السلام فأخذت من ظهره(ص) ودعت على من صنع ذلك...
9- صحيح البخاري (4/ 164)/ باب صفة النبي(ص)/ رأيت النبي(ص) وكان #الحسن_بن_علي_عليهما #السلام يشبهه...
10- صحيح البخاري (4/ 208)/ باب مناقب المهاجرين / حدثنا علي أن #فاطمة_عليها_السلام شكت ما تلقى من أثر الرحا...
11- صحيح البخاري ( 4/209)/ باب مناقب قرابة رسول الله(ص) ومنقبة #فاطمة_عليها_السلام ... أن #فاطمة_عليها_السلام أرسلت إلى أبي بكر تسأله ميراثها من النبي (ص)....
12- صحيح البخاري (5/16)/ باب قصة غزوة بدر/ .. أن علياً قال... فلما أردت أن أبتني #بفاطمة_عليها_السلام بنت النبي(ص)...
13- صحيح البخاري (5/25)/ باب حديث بني النضير / عن عائشة رضي الله عنها أن #فاطمة_عليها_السلام والعباس أتيا أبا بكر يلتمسان ميراثهما أرضه من فدك وسهمه من خيبر...
14- صحيح البخاري (5/ 38)/ باب غزوة أحد / كانت #فاطمة_عليها_السلام بنت رسول الله(ص) تغسله....
15- صحيح البخاري (5/82)/ باب غزوة خيبر/ عن عائشة أن فاطمة #عليها_السلام بنت النبي(ص) أرسلت إلى أبي بكر تسأله ميراثها من رسول الله(ص).....
16- صحيح البخاري (5/85)/ باب عمرة القضاء/ وقال #لفاطمة_عليها_السلام...
17- صحيح البخاري (5/ 138)/باب مرض النبي(ص) / دعا النبي(ص) #فاطمة_عليها_السلام في شكواه الذي قُـبض فيه...
18- صحيح البخاري (5/ 144)/ باب مرض النبي(ص) / فلما دفن قالت #فاطمة_عليها_السلام يا أنس أطابت أنفسكم ان تحثوا على رسول الله (ص) التراب؟
19- صحيح البخاري (6/ 48) /سورة الذاريات/ قال #علي_عليه_السلام الذاريات الرياح.
20- صحيح البخاري (6/ 101)/ باب أنزل القرآن على سبعة أحرف / عن #فاطمة_عليها_السلام أسرَّ إلي النبي(ص) ..
21- وأهم مورد يعمم السلام على الائمة عليهم السلام ما قاله البخاري في صحيحه (6/124) / وقال #علي_بن_الحسين_عليهما_السلام.....
22- صحيح البخاري (6/ 192) و(6/ 193) / كتاب النفقات / حدثنا علي أن #فاطمة_عليها_السلام أتت النبي(ص) تشكو إليه...
23- صحيح البخاري (6/ 223) /كتاب الذبائح والصيد / وركب #الحسن_عليه_السلام على سرج من جلود كلاب الماء .
24- صحيح البخاري (7/ 19) كتاب الطب/ فلما رأت #فاطمة_عليها_السلام الدم يزيد على الماء كثرة عمدت إلى حصير فأحرقته وألصقتها على جرح رسول الله(ص) فرقاً الدم.
25- صحيح البخاري (7/ 92) /كتاب الأدب/ وقالت #فاطمة_عليها_السلام أسرَّ إليَّ النبيُّ (ص) فضحكت....
26- صحيح البخاري (7/ 114) كتاب الأدب/ قال البخاري: وقالت عائشة قال النبي(ص) #لفاطمة_عليها_السلام مرحباً بابنتي.
27- صحيح البخاري (7/118) /كتاب الأدب/ عن عدي بن ثابت قال سمعت البراء قال: لما مات #إبراهيم_عليه_السلام قال رسول الله(ص) إن له مرضعاً في الجنة.
28- صحيح البخاري(7/ 140)/ كتاب الاستئذان/ جاء رسول الله(ص) بيت #فاطمة_عليها_السلام فلم يجد علياً في البيت....
29- صحيح البخاري (7/ 141)/ كتاب الاستئذان / عن مسروق حدثتني عائشة أم المؤمنين: إنا كنا أزواج النبي(ص) عنده جميعاً لم تغادر منا واحدة #فأقبلت_فاطمةعليها_السلام تمشي...
30- صحيح البخاري (7/ 149)/ كتاب الدعوات/ عن علي #أن_فاطمة_عليها_السلام شكت ما تلقى في يدها من الرحا....
31- صحيح البخاري (8/ 3)/ كتاب الفرائض/ عن عائشة أن فاطمة #والعباس_عليهما_السلام أتيا أبا بكر يلتمسان ميراثهما من رسول الله(ص) وهما حينئذٍ يطلبان أرضيهما من فدك وسهمهما من خيبر......
33- صحيح البخاري (8/155)/ كتاب الاعتصام بالكتاب والسنة/ #وفاطمة_عليها_السلام بنت رسول الله(ص)...
34- صحيح البخاري (8/190) /كتاب التوحيد/ عن علي بن حسين أنَّ #حسين_بن_علي_عليهما_السلام أخبره....

সুবহানাল্লাহি ওয়া বিহামদিহী ওয়াস সালাতু ওয়াস সালামু আলা রাসূলিহী ওয়া আলা আলিহিত তাইয়্যিবীনা ওয়াত তাহেরীন। প্রিয় পাঠক/পাঠিকা! এগুলো শুধু বুখারি শরীফের দলিল। আর,আহলে সুন্নাতের সকল উলামা ও উম্মতের সমস্ত মুহাদ্দিসগণের এই কথার ওপর ইজমা হয়েছে যে, 'আসাহহুল কুতুব বা'দা কিতাবিল্লাহি হুয়া সহীহুল বুখারি' [অর্থাৎ- কোরআনের পর সবচেয়ে বিশুদ্ধ কিতাব হলো- বুখারি শরীফ]।
আমার বিশ্বাস- এ নিয়ে গবেষণা করলে খোদ আহলে সুন্নাতে প্রায় সকল হাদীসগ্রন্থেই আহলে বাইতের নামের শেষে আলাহিস সালাম লেখা পাওয়া যাবে।


অধ্যায় ৩: মানাকিবে মাওলা আলী (عليه السلام)

আমি যার মাওলা আলি তার মাওলা

❏ ইমাম জালালুদ্দীন সুয়ুতী স্বীয় তাফসীরে দুররে মনসুর-এ উল্লেখ করেন,

ﻭَﺃﺧﺮﺝ ﺍﺑْﻦ ﺃﺑﻲ ﺣَﺎﺗِﻢ ﻭَﺍﺑْﻦ ﻣﺮْﺩَﻭَﻳْﻪ ﻭَﺍﺑْﻦ ﻋَﺴَﺎﻛِﺮ ﻋَﻦ ﺃﺑﻲ ﺳﻌﻴﺪ ﺍﻟْﺨُﺪْﺭِﻱّ ﻗَﺎﻝَ : ﻧﺰﻟﺖ ﻫَﺬِﻩ ﺍﻟْﺂﻳَﺔ } ﻳَﺎ ﺃَﻳﻬَﺎ ﺍﻟﺮَّﺳُﻮﻝ ﺑﻠﻎ ﻣَﺎ ﺃﻧﺰﻝ ﺇِﻟَﻴْﻚ ﻣﻦ ﺭَﺑﻚ { ﻋﻠﻰ ﺭَﺳُﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺳﻠﻢ ﻳَﻮْﻡ ﻏَﺪِﻳﺮ ﺧﻢ ﻓِﻲ ﻋَﻠﻲّ ﺑﻦ ﺃﺑﻲ ﻃَﺎﻟﺐ
ﻭَﺃﺧﺮﺝ ﺍﺑْﻦ ﻣﺮْﺩَﻭَﻳْﻪ ﻋَﻦ ﺍﺑْﻦ ﻣَﺴْﻌُﻮﺩ ﻗَﺎﻝَ : ﻛُﻨَّﺎ ﻧَﻘْﺮَﺃ ﻋﻠﻰ ﻋﻬﺪ ﺭَﺳُﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺳﻠﻢ } ﻳَﺎ ﺃَﻳﻬَﺎ ﺍﻟﺮَّﺳُﻮﻝ ﺑﻠﻎ ﻣَﺎ ﺃﻧﺰﻝ ﺇِﻟَﻴْﻚ ﻣﻦ ﺭَﺑﻚ { ﺃَﻥ ﻋﻠﻴﺎ ﻣﻮﻟﻰ ﺍﻟْﻤُﺆﻣﻨِﻴﻦَ . ﻭَﺇِﻥ ﻟﻢ ﺗﻔﻌﻞ ﻓَﻤَﺎ ﺑﻠﻐﺖ ﺭﺳَﺎﻟَﺘﻪ ﻭَﺍﻟﻠﻪ ﻳَﻌْﺼِﻤﻚ ﻣﻦ ﺍﻟﻨَّﺎﺱ

অর্থাৎ অর্থাৎ ইবনে আবী হাতেম, ইবনে মারদুবিয়া এবং ইবনে আসাকিরের বর্ণনায় রয়েছে হযরত আবু সাঈদ খুদরী (رضي الله عنه) বলেছেন, গাদীরে খুমে কুপের নিকট হযরত আলী (رضي الله عنه) এর শানে এই আয়াত অবতীর্ণ হয়েছে। ইবনে মারদুবিয়ার বর্ণনায় রয়েছে, হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (رضي الله عنه) বলেন, আমরা রেসালাতের যুগে এ আয়াতটি পাঠ করতাম “ইয়া আইয়ুহার রাসূল বাল্লিগ মা উনঝিলা ইলাইকা মিররব্বিক। ইন্না আলিয়ান মাওলাল মুমিনিনা ওয়া ইল্লাম তাফয়াল ফামা বাল্লাগতা রিসালাতাহু ওয়াল্লাহু ইয়া’সিমুকা মিনান্নাস” অর্থাৎ হে রাসূল! আপনার রবের নিকট থেকে আপনার প্রতি যা নাযিল হয়েছে তা প্রচার করুন। নিশ্চয়ই আলী (رضي الله عنه) মুমিনদের মাওলা (অভিভাবক)। যদি আপনি এরূপ না করেন তবে তো আপনি তাঁর রেসালাত প্রচার করলেন না। আল্লাহ আপনাকে মানুষ থেকে রক্ষা করবেন।
(সূত্রঃ ইমাম সুয়ুতী: তাফসীরে দুররে মনসুর, ২/২৯৮পৃ)


❏ গাদীরে খুমে নবীজি দীর্ঘক্ষণ ভাষণ প্রদান করলেন। ভাষণের একেবারে শেষ প্রান্তে রাসূলুল্লাহ (ﷺ) কুরআন ও আহলে বাইতকে শক্ত করে ধারণ করতে বললেন। এরপরই বললেন, ‘হে লোক সকল! আমি কি সকল মু’মিনদের চেয়ে সর্বোত্তম নেতা নই? তখন সকলে সমস্বরে বলে উঠলো, জ্বি ইয়া রাসূলাল্লাহ।’ তিনি আরও বললেন, ﺃَﻟَﺴْﺖُ ﺃَﻭْﻟَﻰ ﺑِﺎﻟْﻤُﺆْﻣِﻨِﻴﻦَ ﻣِﻦْ ﺃَﻧْﻔُﺴِﻬِﻢْ অর্থাৎ আমি কি তোমাদের প্রাণের চাইতে বেশী প্রিয় নই? তখন সকলে সমস্বরে বলে উঠলো, জ্বি ইয়া রাসূলাল্লাহ।’ অতঃপর রাসূলুল্লাহ (ﷺ) তাঁর পার্শ্বে উপবিষ্ট হযরত আলী (رضي الله عنه) এর হাত সকলের সম্মুখে উঁচু করে তুলে ধরলেন এবং ঘোষনা দিলেন,

ﻣَﻦْ ﻛُﻨْﺖُ ﻣَﻮْﻻَﻩُ ﻓَﻌَﻠِﻲٌّ ﻣَﻮْﻻَﻩُ

অর্থাৎ আমি যার মাওলা (অভিভাবক/ বন্ধু), আলী (رضي الله عنه)ও তার মাওলা।
তথ্যসূত্রঃ 
(ক) তিরমিজী শরীফ, কিতাবুল মানাকিব, মানাকিবে আলী (رضي الله عنه), হাদিস নং-৩৭১৩
(খ)সাহাবাহ, ২/৫৬৯পৃ, হাদিস-১৫৯
(গ) ইমাম তাবারানী: আল মুজামুল কবীর, ৫/১৯৫পৃ, হাদিস-৫০৭১
(ঘ) ইবনে কাসীর: আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া, ৫/৪৬৩পৃ
(ঙ) ইবনে আসাকির: তারিখে দামেস্ক, ৪৫/১৬৩পৃ

❏ রাসূলুল্লাহ (ﷺ) আরও বলেন,

ﺍﻟﻠَّﻬُﻢَّ ﻭَﺍﻝِ ﻣَﻦْ ﻭَﺍﻟَﺎﻩُ، ﻭَﻋَﺎﺩِ ﻣَﻦْ ﻋَﺎﺩَﺍﻩُ، ﻭَﺃَﺣِﺐَّ ﻣَﻦْ ﺃَﺣَﺒَّﻪُ، ﻭَﺃَﺑْﻐِﺾْ ﻣَﻦْ ﺃَﺑْﻐَﻀَﻪُ، ﻭَﺍﻧْﺼُﺮْ ﻣَﻦْ ﻧَﺼَﺮَﻩُ، ﻭَﺍﺧْﺬُﻝْ ﻣَﻦْ ﺧَﺬَﻟَﻪُ

অর্থাৎ হে আল্লাহ! আপনি তার বন্ধু হোন যে আলী (رضي الله عنه)'র বন্ধু হয়, তার শত্রু হোন যে আলী (رضي الله عنه)'র শত্রু হয়। তাঁকে ভালবাসুন যে তাঁকে ভালবাসে, তার প্রতি বিদ্বেষ পোষণ করুন যে তার প্রতি বিদ্ধেষ রাখে, তাঁকে সাহায্য করুন যে তাঁকে সাহায্য করে, তাঁকে অপদস্থ করুন যে তাঁকে অপদস্থ করতে চেষ্টা করে।
তথ্যসূত্রঃ 
(ক) ইমাম বাজ্জার: আল মুসনাদ, হাদিস নং-৭৮৬
(খ) ইমাম হায়ছামী: মাজামউয যাওয়ায়েদ, ৯/১০৪পৃৃ
(গ) মুত্তাকি হিন্দি: কানজুল উম্মাল, হাদিস নং-৩৬৪৮৭
(ঘ) ইমাম তাহাবী: মাশকালুল আশার, ২/৩০৮পৃ
(ঙ) ইবনে আসাকির: তারিখে দামেস্ক, ৪৫/১৬০পৃ

❏ যখন রাসূলুল্লাহ (ﷺ) হযরত আলী (رضي الله عنه) কে মাওলা হিসেবে ঘোষণা করলেন তখন সকল সাহাবী হযরত আলী (رضي الله عنه)কে মাওলা হিসেবে মেনে নিলেন এবং মুবারকবাদ জানালেন। তখনই কুরআনের শেষ আয়াত নাযিল হলো।

ﺍﻟْﻴَﻮْﻡَ ﺃَﻛْﻤَﻠْﺖُ ﻟَﻜُﻢْ ﺩِﻳﻨَﻜُﻢْ ﻭَﺃَﺗْﻤَﻤْﺖُ ﻋَﻠَﻴْﻜُﻢْ ﻧِﻌْﻤَﺘِﻲ ﻭَﺭَﺿِﻴﺖُ ﻟَﻜُﻢُ ﺍﻟْﺈِﺳْﻠَﺎﻡَ ﺩِﻳﻨًﺎ

অর্থাৎ আজ আমি তোমাদের জন্যে তোমাদের দ্বীনকে পূর্ণাঙ্গ করে দিলাম, তোমাদের প্রতি আমার নিয়ামত সম্পূর্ণ করে দিলাম এবং ইসলামকে তোমাদের জন্যে দ্বীন হিসেবে মনোনীত করলাম। (সূরা মায়েদা-৩)

❏ হযরত আলী (رضي الله عنه) কে মাওলা ঘোষণার পর রাসূলুল্লাহ (ﷺ) তাঁর মাথায় পাগড়ী পড়িয়ে দেন। যেমন বর্ণিত আছে,

ﻋَﻦْ ﻋَﻠِﻲٍّ ﺭَﺿِﻲَ ﺍﻟﻠَّﻪُ ﻋَﻨْﻪُ، ﻗَﺎﻝَ : ﻋَﻤَّﻤَﻨِﻲ ﺭَﺳُﻮﻝُ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺳَﻠَّﻢَ ﻳَﻮْﻡَ ﻏَﺪِﻳﺮِ ﺧُﻢٍّ ﺑِﻌِﻤَﺎﻣَﺔٍ ﺳَﺪَﻟَﻬَﺎ ﺧَﻠْﻔِﻲ

অর্থাৎ হযরত আলী (رضي الله عنه) নিজেই বর্ণনা করেছেন, তিনি বলেন, গাদীরে খুমের দিন রাসূলুল্লাহ (ﷺ) একটি পাগড়ি আমার মাথায় পরিয়ে দিলেন এবং এর প্রান্তভাগ পিঠের দিকে ঝুলিয়ে দিলেন।
তথ্যসূত্রঃ 
(ক) তায়ালিসি: আল মুসনাদ, হাদিস নং-১৪৯
(খ) ইমাম বায়হাকি: সুনানে কুবরা, হাদিস নং-১৯৭৩৬
(গ) মুত্তাকি হিন্দি: কানজুল উম্মাল, হাদিস নং-৪১১৪১, ৪১৯০৯
(ঘ) ইমাম সুয়ূতী: জামেউল আহাদিস, হাদিস নং- ৩৩৬৭৮ ইমাম হায়ছামী উল্লেখ করেন,

❏ হযরত আলী (رضي الله عنه)কে মাওলা ঘোষনার পর সর্বপ্রথম হযরত আবু বকর ও হযরত উমর (رضي الله عنه) স্বীকৃতি দিলেন। ইমাম হায়ছামী বলেন,

ﻗﺎﻝ ﺃَﺑُﻮ ﺑﻜﺮ ﻭَﻋﻤﺮ ﻟﻌﻠﻰ ﺑﻦ ﺍﺑﻰ ﻃﺎﻟﺐ ﻳﻮﻡ ﻏﺪﻳﺮ ﺧﻢ ﺃﻣﺴﻴﺖ ﻳَﺎ ﺍﺑْﻦ ﺃﺑﻲ ﻃَﺎﻟﺐ ﻣﻮﻟﻰ ﻛﻞ ﻣُﺆﻣﻦ ﻭﻣﺆﻣﻨﺔ -- ﺃﺧﺮﺟﻪ ﺍﻟﺪَّﺍﺭَﻗُﻄْﻨِﻲّ

অর্থাৎ হযরত আবু বকর (رضي الله عنه) ও হযরত উমর (رضي الله عنه) গাদীরে খুমের দিন হযরত আলী (رضي الله عنه) বিন আবি তালিবকে বললেন, হে আবু তালিবের সন্তান! আপনি হলেন প্রতিটি মুমিন পুরুষ ও নারীর মাওলা। এটা দারা কুতনী বর্ণনা করেছেন। (সূত্রঃ ইমাম হায়ছামী: সাওয়ায়েকে মুহরিকা, ৯১পৃ)

❏ হযরত উমর (رضي الله عنه) হযরত আলী (رضي الله عنه) কে উদ্দেশ্য করে বললেন,

ﺑَﺦٍ ﺑَﺦٍ ﻟَﻚَ ﻳَﺎ ﺍﺑْﻦَ ﺃَﺑِﻲ ﻃَﺎﻟِﺐٍ، ﺃَﺻْﺒَﺤْﺖَ ﻣَﻮْﻟَﺎﻩُ ﻭَﻣَﻮْﻟَﻰ ﻛُﻞِّ ﻣُﺆْﻣِﻦٍ،

অর্থাৎ মারহাবা! মারহাবা! হে আবু তালিবের পুত্র। আপনি আমার মাওলা এবং প্রত্যেক মুমিনের মাওলা।
তথ্যসূত্রঃ 
(ক) খতীব বাগদাদী: তারিখে বাগদাদ, ৮/২৯০পৃ
(খ) ইমাম তাবারানী: আল মুজামূল আওসাত, ৩/৩২৪পৃ
(গ) ইবনে আসাকির: তারিখে দামেস্ক, ৪৫/১৭৯পৃ
(ঘ) ওয়াহিদী: আসহাব উন নুজুল, ১০৮পৃ
(ঙ) ইমাম রাজী: তাফসীরে কবীর।

 ❏ যায়েদ ইবনে আরকাম (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত যে, নবী (ﷺ) বলেছেন: "আমি যার মাওলা (অবিভাবক, সহায়ক), আলী তার মাওলা।" [সুনান আল তিরমিযীঃ হাদীস নং ৩৩৩৩]

❏ সাইয়্যিদিনা হুবশি ইবনে জুনাদাহ (رضي الله عنه) বর্ণনা করেছেন যে, আল্লাহর রাসূল (ﷺ) বলেছেন, 
"আলী আমার থেকে এবং আমি আলি থেকে।"
[সুনান ইবনে মাজাহ হাদীস নং ১১৯, ইমাম তিরিমযিও এটি বর্ণনা করেছেন এবং হাসান সহিহ ঘোষণা করেছেন]

❏ রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেনঃ

مَنْ كُنْتُ مَوْلَاهُ فَعَلِيٌّ مَوْلَاهُ، اَللَّهُمَّ وَالِ مَنْ وَالَاهُ وَعَاِد مَنْ عَادَاهُ.

আমি যার মাওলা আলী (رضي الله عنه)ও তার মাওলা। হে আল্লাহ! যে আলী (رضي الله عنه)কে ভালোবাসে তুমি তাঁকে ভালোবাস আর যে আলী (رضي الله عنه)'র সাথে শত্রুতা করে তুমি তার সাথে শত্রুতা করো।
তথ্যসূত্রঃ
১.কানযুল উম্মাল ১১:৬০৯/৩২৯৫০, 
২.আল মুস্তাদরাক-হাকেম ৩:১০৯, 
৩.মাজমাউয যাওয়ায়েদ ৯:১০৪, 
৪.আল মু’জামুল কাবীর-তাবারানী ৪:১৭৩/৪০৫৩, 
৫.তিরমিযী ৫:৬৩৩/৩৭১৩, 
৬.মুসনাদে আহমাদ ১:৮৪, ৮৮, ১১৯, ১৫২, ৩৩১ ও ৪:২৮১, ৩৬৮, ৩৭০, ৩৭২ ও ৫:৩৪৭, ৩৫৮, ৩৬১, ৩৬৬, ৪১৯।

❏ হজরত আবু বকর ও হজরত ওমর, হজরত আলী (رضي الله عنه) কে এ বলে স্বাগতম জানালেন যে, ইয়া আলী (رضي الله عنه) ইবনে আবু তালিব, আজ থেকে আপনি সকল মোমেন ও মোমেনার মাওলা ( অভিভাবক ) হয়ে গেলেন । 
তথ্যসূত্রঃ
১.মুসনাদে হাম্বাল, খঃ-৪, পৃঃ-২৪; 
২.তাফসিরে আল কাবীর, খঃ-১২, পৃঃ-৪৯; 
৩.কানজুল উম্মাল, খঃ-৬, পৃঃ-৩৯৭; 
৪.আর রিয়াযুন নাজরা, খঃ-২। পৃঃ-১৬৯; 
৫.মুস্তাদারাকে হাকেম, খঃ-৩, পৃঃ-১০৯ ইত্যাদি।


❏ রাসূল (ﷺ)-এর হযরত আলী (عليه السلام) সম্পর্কে বলেন,

‘আলী আমার থেকে এবং আমি আলী থেকে।’

[হাদীসটি ঐতিহাসিক ও মুহাদ্দিসদের (হাদীস বিশেষজ্ঞদের) অনেকেই বর্ণনা করেছেন। যেমন তাবারী, তারিখুল উমাম ওয়াল মুলুক, ২য় খণ্ড,পৃ. ৫১৪; ইবনে আসীর, আল-কামিল ফিত তারিখ; ইবনে আবিল হাদীদ, শারহে নাহজুল বালাগা,১০ম খণ্ড,পৃ. ১৮২; তারিখে মাদিনাতে দামেস্ক, হযরত আলীর পরিচিতি পর্বে,১ম খণ্ড,পৃ. ১৪৮-১৫০;আল আগানী,১৪তম খণ্ড,পৃ. ১৭। হাদীস গ্রন্থের মধ্যে সহীহ তিরমিযী,৫ম খণ্ড,পৃ. ৬৩৬,হাদীস নং ৩৭১৯;সুনানে ইবনে মাজা,১ম খণ্ড,পৃ. ৪৪,হাদীস নং ১১৯;আল-মুসনাদ,৪র্থ খণ্ড,পৃ. ১৬৪,মুসনাদে আহমাদ, গবেষণা : হামযা আহমাদ আযযাইন,১৬তম খণ্ড,পৃ.৪৯৭,হাদীস নং ২২৯০৮; সুয়ূতী,তারিখুল খুলাফা,পৃ. ১৬৯;তাবারানী,আল মোজামুল কাবীর,৪র্থ খণ্ড,পৃ. ১৬;মাকতাবাতু ইবনে তাইমিয়া প্রকাশনা,কায়রো,দারু ইহয়িয়াউত তুরাসিল আরাবি ছাপাখানা,বৈরুত।]

❏ আহমদ ইবনে শুয়াইব নাসায়ী তাঁর ‘ফাযায়েল’ গ্রন্থে ইমরান ইবনে হুসাইন সূত্রে মহানবী (ﷺ) থেকে বর্ণনা করেছেন যে,তিনি বলেন : ‘নিশ্চয় আলী আমার থেকে এবং আমি আলীর থেকে এবং সে আমার পর সকল মুমিনের অভিভাবক।’ [ফাযায়িলুস সাহাবা,পৃ. ১৫।]

❏ রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেন,

“আমি যার মাওলা (সাহায্যকারী) আলীও তার মাওলা (সাহায্যকারী) । হে খোদা যে আলীর সঙ্গে বন্ধুত্ব রাখে তুমিও তার সঙ্গে বন্ধুত্ব রাখ, যে আলীর সাথে শত্রুতা রাখে তুমিও তার সাথে শত্রুতা রাখ।”

তথ্যসূত্র:

(১) সহিহ তিরমিযী, খন্ড ২, পৃষ্ঠা ২৯৮, খন্ড ৫, পৃষ্ঠা ৬৩
(২) সুনানে ইবনে মাজাহ, খন্ড ১, পৃষ্ঠা ১২,৪৩
(৩) ইমাম নাসায়ীঃ খাসাই'স, পৃষ্ঠা ৪,২১
(৪) আল-মুস্তাদরাক, আল-হাকিম, খন্ড ২, পৃষ্ঠা ১২৯, খন্ড ৩, পৃষ্ঠা ১০৯-১১০,১১৬,৩৭১
(৫) মুসনাদে আহমদ ইবনে হাম্বল, খন্ড ১, পৃষ্ঠা ৮৪,১১৮,১১৯,১৫২,৩৩০, খন্ড ৪, পৃষ্ঠা ২৮১,৩৬৮,৩৭০, ৩৭২,৩৭৮, খন্ড ৫, পৃষ্ঠা ৩৫,৩৪৭,৩৫৮,৩৬১,৩৬৬,৪১৯ (বর্ণনাকারীদের ৪০ টি সনদ থেকে)
(৬) ফাদ্বাইলুস-সাহাবা, আহমদ হাম্বল, খন্ড ২, পৃষ্ঠা ৫৬৩,৫৭২
(৭) মাজমা ’আল জাওয়াইদ, আল-হাইসামি, খন্ড ৯, পৃষ্ঠা ১০৩ 
(৮) তাফসীর আল-কবির, ইমাম ফখরুদ্দীন-রাজি, খন্ড ১২, পৃষ্ঠা ৪৯-৫০
(৯) তাফসীর আল-দুর আল-মনসুর, ইমাম জালালউদ্দিন সুয়ুতি, খন্ড ৩, পৃষ্ঠা ১৯
(১০) তারিক আল-খুলাফা, ইমাম সুয়ুতি, পৃষ্ঠা ১৬৯,১৭৩
(১১) আল-বিদায়াহ ওয়াল-নিহায়াহ, ইমাম ইবনে কাসির, খন্ড ৩, পৃষ্ঠা ২১৩, খন্ড ৫, পৃষ্ঠা ২০৮
(১২) উসদুল গাবাহ, ইবনে আসির, খন্ড ৪, পৃষ্ঠা ১১৪
(১৩) মুশকিল আল-আছার, ইমাম আত-তাহাবি, খন্ড ২, পৃষ্ঠা ৩০৭-৩০৮
(১৪) হাবিব আল-সিয়ার, মীর খাঁনদ, খন্ড ১, অংশ ৩, পৃষ্ঠা ১৪৪
(১৫) সাওয়াইখ আল-মুহরিকাহ, ইবনে হাজার আল-হায়সামী, পৃষ্ঠা ২৬
(১৬) আল-ইসাবাহ, ইবনে হাজার আল-আসকালানী, খন্ড ২, পৃষ্ঠা ৫০৯; খন্ড ১, পৃষ্ঠা ৩১৯, খন্ড ২, পৃষ্ঠা ৫৭, খন্ড ৩, পৃষ্ঠা ২৯, খন্ড ৪, পৃষ্ঠা ১৪,১৬,১৪৩
(১৭) তাবারানী, যিনি ইবনে উমর, মালিক ইবনে আল-হাওইরথ , হাবশী ইবনে জুনাদাহ, জারি, সা'দ ইবনে আবী ওয়াক্কাস, আনাস ইবনে মালিক, ইবনে আব্বাস, আমারাহ, বুরেদাহ।
(১৮) তারিক, আল-খতিব বাগদাদী, খন্ড ৮, পৃষ্ঠা ২৯০
(১৯) হিলিয়াতুল আউলিয়া, আল-হাফিজ আবু নুয়াম, খন্ড ৪, পৃষ্ঠা ২৩, খন্ড ৫, পৃষ্ঠা ২৬-২৭
(২০) আল-ইসতিয়াব, ইবনে আব্দিল বারের রচিত, "আয়িন" শব্দের অধ্যায় (‘আলী), খন্ড ২, পৃষ্ঠা ৪৬২
(২১) কানজুল উম্মাল, আল-মুত্তাকী আল-হিন্দি, খন্ড ৬, পৃষ্ঠা ১৫৪,৩৯৭
(২২) আল-মিরকাত, খন্ড ৫, পৃষ্ঠা ৫৬৮
(২৩) আল-রিয়াদ আল-নাদিরাহ, আল-মুহিব আল-তাবারী, খন্ড ২, পৃষ্ঠা ১৭২
(২৪) দাখাই'রুল-উকবা, আল-মুহিব আল-তাবারি , পৃষ্ঠা ৬৮।
(২৫) ফায়েদ আল কাদির, আল-মানাভী , খন্ড ৬, পৃষ্ঠা ২১৭।
(২৬) ইয়ানাবী ’আল-মাওয়াদদাহ, আল-কুদূজি আল-হানাফী , পৃষ্ঠা ২৯৭ ... এবং আরও কয়েক শতাধিক।


আল কুরআনের তফসীরকারক যারা গাদির খুমের বর্ণনা উল্লেখ করেছেন: 

১. ইবনে জারির আল-তাবারী (মৃত্যু: ৩১০), "তাফসির আল-বায়ান" -।
২. আল-জাসাসস (মৃত্যু: ৩০০), "আহকাম আল-কোরআন"।
৩. আল-হাফিজ আবু নুয়াম (মৃত্যু: ৪৩০), "আসবাব আল-নুজুল"।
৪. আল-থালাবী (মৃত্যু: ৪২৭ বা ৪৩৭), "তাফসির আল-থা'লাবি"। 
৫. আল-ওয়াহিদী (মৃত্যু: ৪৬৮), "আসবাব আল-নুজুল"। 
৬. আল-কুরতুবী (মৃত্যু: ৫৬৮), "তাফসীর জামিউল হুকাম আল-কোরআন"।
৭.আল-ফখরুদ্দিন আল-রাজি (মৃত্যু: ৬০৬), "আল-তাফসির আল-কবির"। 
৮.আল-খাজিন বাগদাদী (মৃত্যু: ৭৪১), "তাফসির আল-খাজিন"।
৯.আল-নিসাবুরি (অষ্টম শতাব্দী), "তাফসির আল-নিসাবুরি"।
১০. ইবনে কাসীর (মৃত্যু: ৭৪৪) তাঁর "তাফসীর" (সম্পূর্ণ সংস্করণ) আয়াত ৫: ৩ এর অধীনে (এটি মেলানো সংস্করণে বাদ যায়!) ইবনে মারদাওয়াহ থেকে বর্ণিত।
১১. আল-হাফিজ জালালউদ্দীন আল সুয়ুতি (মৃত্যু: ৯১০), তাঁর "তাফসির"।
১২. আল-খতিব আল শারবিনী তাঁর "তাফসির"।
১৩. আবু আল সৌদ আল-হানাফি (মৃত্যু: ৯৭২), তাঁর "তাফসির"।
১৪. আল-আলোসি আল-বাগদাদি (মৃত্যু: ১২৭০), তাঁর "তাফসির"। এবং আরও অনেক তফসীরে।


গাদির খুমের বর্ণনা নিয়েছেন যে সমস্ত ঐতিহাসিকঃ 

১. ইবনে কুতায়বাহ (মৃত্যু: ২৬৬) "মা'আরিফ" এবং "ইমামাহ ওয়াল সিয়াসাহ"।
২. আল-বালধুরী (মৃত্যু: ২৭৯), "আনসাব আল আশরাফ"।
৩. ইবনে জাওলাক আল-মিস্রি (মৃত্যু: ২৭৭), তাঁর গ্রন্থে।
৪. ইবনে জারির আল-তাবারী (মৃত্যু: ৩১০), "কিতাবুল উইলিয়াহ"। 
৫.আল-খতিব আল-বাগদাদী (মৃত্যু: ৪৬৩), "তারিখ বাগদাদ"। 
৬.ইবনে আবদ আল-বার (মৃত্যু: ৪৬৩), "আল- ইসতিয়াব"।
৭. আল-শাহরিস্তিণী (মৃত্যু ৫৪৮), "আল-মিলাল ওয়াল নিহাল"।
৮. ইবনে ‘আসাকির (মৃত্যু: ৫৭১),“ তারিখ ইবনে “আসাকির” এবং “ইয়াকূত আল-হামাভি”।
৯. ইবনে আল আতির (মৃত্যু ৬৩০), "উসদ আল গাবাহ"।
১০. সিব্বত ইবনে আল জাওযী (মৃত্যু ৬৫৪), "তদকিরাত খাওয়াস আল-উম্মাহ"।
১১. ইবনে আবী আল-হাদিদ (মৃত্যু: ৬৫৬), "শারহ নাহজুল বালাগা"।
১২. ইবনে খলকান (মৃত্যু: ৬৮১), "তারিখ ইবনে খলকান"।
১৩. আবুল ফিদা (), তাঁর "তারিখ"।
১৪. আল-ধাবি (মৃত্যু: ৭৪৮), "তদকিরাত আল-হাফধ"
১৫. আল-ইয়াফিআই (মৃত্যু: ৭৬৮), "মীরাত আল-জিনান"
১৬. ইবনে আল শায়খ আল-বালাভি, "আলেফ বা"।
১৭. ইবনে কাসীর (মৃত্যু: ৭৭৪) "আল-বিদায়াহ ওয়াল নিহায়াহ"।
১৮. ইবনে খালদুন (মৃত্যু: ৮০৮), "আল-মুকাদ্দিমাহ"।
১৯. আল-নুওয়াইরি (মৃত্যু: ৩ ৮৩৩), "নিহায়াত আল-ইরাব ফি ফিনুন আল-আদাব"
২০. আল-মাকরিজি (মৃত্যু ৮৪৫), "আল-খিতাত"।
২১. ইবনে হাজার আল-আসকালানী (মৃত্যু ৮৫২), "আল-ইসাবাহ" এবং "তাহহিদ আল-তাহধিব"।
২২. ইবনে আল-সাববাগ আল-মালেকী (মৃত্যু ৮৫৫), "আল-ফুসুল আল-মুহিমাহ"।
২৩. মীর খান্দ (মৃত্যু ৯০৩), "হাবিব আল-সিয়ার"।
২৪. জালালুল উদ্দিন আল সুয়ুতি (মৃত্যু ৯১০), "তারিখ আল খুলাফা"।
২৫. ইবনে হাজার আল-হায়সামী, (ড। ৯৭৪) "আল-সাওয়া'ইক-মুহুরিকাহ"।
২৬. আল-হাফিজ আহমদ ইবনে মুহাম্মদ আল-আসিমি, "জয়ন আল-ফাতা"।
২৭. আল-কিরমানি আল-দামাস্কি (মৃত্যু: ১০১৯), "আখবার আল-দুওয়াল"।
২৮. নূর আল-দীন আল-হালাবী (মৃত্যু: ১০৪৪), "আল-সিরাহ আল-হালাবিয়াহ"। এবং আরও অনেক ইতিহাসবিদ।

গাদির খুমের বর্ণনাটি (মুতাওয়াতির পর্যায়ভুক্ত) যা অস্বীকারকারীর ইমান থাকবে না।

সনদ ট্রান্সমিশনঃ
১. আহমদ ইবনে হাম্বল ৪০ টি সনদে থেকে বর্ণনা করেছেন;
২. ইবনে জারির আল-তাবারী ৭০ টিরও বেশি সনদে;
৩.আবু সাইদ আল-সিজিস্তিনি ১২০ টি সনদে থেকে;
৪. আবু বকির আল-জাবী ১২৫ টি চেইন থেকে;
৫. আল-আমির মুহাম্মদ আল-ইয়ামানী (২য় শতাব্দী) এর ১৫০ টি সনদে ছিল;
৬. আল-ধাবি তার সনদগুলো সহ একটি সম্পূর্ণ বই লিখেছেন এবং রায় দিয়েছেন যে এটি মুতাওয়াতির;
৭. আবুল আব্বাস ইবনে উকদাহ ১৫০ টি সনদের মধ্য দিয়ে বর্ণনা করেছেন।


আলী (عليه السلام) এর শানে শতাধিক হাদিসঃ

হাদিস ০১-১০

” আমিরুল মুমিনীন আলী (رضي الله عنه) সম্পর্কে মহানবী (ﷺ)-এর সত্তুরটি হাদীস “

[আহলে সুন্নাতের বিভিন্ন নির্ভরযোগ্য হাদীস গ্রন্থ থেকে সংকলিত]

১. মুমিনদের আমলনামার শিরোনাম

রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেনঃ

عُنْوَانُ صَحِيفَةِ الْمُؤمِنِ حُبُّ عَلِيِّ بْنِ أََبِي طَالِبٍ.

মুমিনের আমলনামার শিরোনাম হলো আলী (رضي الله عنه) এর ভালোবাসা।

(আল মানাকিব – ইবনে মাগাযেলী: ২৪৩/২৯০, কানযুল উম্মাল ১১:৬০১/৩২৯০০, তারীখে বাগদাদ : ৪:৪১০)

২. আরবের সরদার

রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেনঃ

أَنَا سَيِّدُ وُلْدِ آدَم، وَ عَلِيٌّ سَيِّدُ الْعَرَبِ.

আমি আদম সন্তানদের সরদার আর আলী (رضي الله عنه) আরবদের সরদার।

(আল মু’জামুল আওসাত-তাবারানী ২:২৭৯/১৪৯১, ইমাম আলী (رضي الله عنه) (অনুবাদ)- ইবনে আসাকির ২:২৬২/৭৮৯, কানযুল উম্মাল-১১-১৮/৩৩০০৬)।

৩. হিকমতের দরজা

রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেনঃ

أَنَا دَارُ الْحِكْمَةِ، وَ عَلِيٌّ بَابُهَا.

আমি হিকমতের গৃহ আর আলী (رضي الله عنه) তার দরজা।

(সুনানে তিরমিযী ৫:৬৩৭/৩৭২৩, হিল্লিয়াতুল আউলিয়া ১:৬৪, আল জামিউস্ সাগীর ১:৪১৫/২৭০৪)

৪. জ্ঞানের নগরীর দরজা

রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেনঃ

أَنَا مَدِينَةُ الْعِلْمِ وَ عَليُّ بَابُهَا، فَمَنْ أَرَادَ الْمَدِينَةَ فَلْيَأتِ البَابَ.

আমি সমস্ত জ্ঞানের নগরী আর আলী (رضي الله عنه) তার দরজা। কাজেই যে এই নগরীতে প্রবেশ করবে তাঁকে দরজা বা দ্বারের মধ্য দিয়ে আসতে হবে।

(আল মুস্তাদরাক-হাকেম ৩:১২৬-১২৭, জামেউল উসুল ৯:৪৭৩/৬৪৮৯, উসুদুল গবাহ্ ৪:২২, তারীখে বাগদাদ ১১:৪৯-৫০, আল বেদায়াহ্ ওয়ান নেহায়া ৭:৩৭২, আল জামেউস্ সাগীর ১:৪১৫/২৭০৫, সহি তিরমিজি, ৫ম খণ্ড, পৃ;২০১)

৫. উম্মতের মধ্যে সর্বাপেক্ষা জ্ঞানী

রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেনঃ

أَعْلَمُ اُمَّتِي مِنْ بَعْدِي عَلِیُّ بْنُ أَبِي طَالِبٍ.

আমার পরে আলী (رضي الله عنه) হলো আমার উম্মতের মধ্যে সর্বাপেক্ষা জ্ঞানী। (কানযুল উম্মাল ১১:৬১৪/৩২৯৭৭, আল ফেরদৌস ১:৩৭০/১৪৯১)

আমার উম্মতের মধ্যে আমার পর সর্বোচ্চ জ্ঞানী ব্যক্তি হলেন আলী। (মসনদে আহমদ, ৫ম খ-, পৃ. ৩২)

৬. মহানবী (ﷺ)-এর ভাই

রাসূলুল্লাহ (ﷺ) ইমাম আলী (رضي الله عنه)কে বলেনঃ

أَنْتَ أَخِي فِي الدُّنْيَا وَ الْاَخِرَة.

তুমি দুনিয়া এবং পরকালে আমার ভাই।
(সুনানে তিরমিযী ৫:৬৩৬/৩৭২০, আর রিয়াদুন নাদ্রাহ ৩:১২৪)

৭. রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ)-এর মনোনীত

রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেনঃ

أَمَّا أَنْتَ يَا عَلِيّ، أَنْتَ صَفِيِّي وَ أمِينِي.

আর তুমি হে আলী (رضي الله عنه)! তুমি আমার মনোনীত এবং আমার আমানতদার।

(খাসায়েসে নাসায়ী : ১৯, মাজমাউয যাওয়ায়েদ ৯:১৫৬)

৮. মহানবী (ﷺ)-এর স্থলাভিষিক্ত

হুজুর (ﷺ) হযরত আলী (رضي الله عنه)'র প্রতি ইঙ্গিত করে বলেনঃ

إِنَّ هَذَا أَخِي وَ وَصِيِّي وَ خَلِيفَتِي فِيكُمْ، فَاسْمَعُوا لَهُ وَ أَطِيعُوه.

জেনে রেখো যে, সে তোমাদের মাঝে আমার ভাই, উত্তরসূরি এবং স্থলাভিষিক্ত। সুতরাং তার কথা মনোযোগ দিয়ে শুনবে এবং তার আনুগত্য করবে।

(তারীখে তাবারী ২:২১৭, আল কামিল ফিত্ তারীখ ২:৬৪, মাআলিমুত্ তানযীল ৪:২৭৮)

৯. মুমিনদের অভিভাবক

রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেনঃ

إنَّ عَلِيّاً وَلِيُّكُمْ بَعْدِي.

নিশ্চয় আলী (رضي الله عنه) আমার পরে তোমাদের অভিভাবক।

(কানযুল উম্মাল ১১:৬১২/৩২৯৬৩, আল ফেরদৌস ৫:২৯২/৮৫২৮)

১০. বিচারের সিংহাসনে

রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেনঃ

أَقْضَي اُمَّتِي عَليُّ.

আলী (رضي الله عنه) আমার উম্মতের মাঝে সর্বাপেক্ষা বিচক্ষণ বিচারক।

(আর রিয়াদুন নাদরাহ ৩:১৬৭, মানাকিবে খারেযমী ৩০, যাখায়িরুল উকবা ৮৩)


হাদিস ১১-২০

১১. উম্মতের জন্য হুজ্জাত বা দলিল

রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেনঃ

أَنَا وَ عَلِيٌّ حُجَّةٌ عَلَي أُمَّتِي يَوْمَ الْقِيَامَةِ.

কেয়ামতের দিন আমি এবং আলী (رضي الله عنه) আমার অনুসারীদের জন্য হুজ্জাত (দলিল) এবং পথপ্রদর্শনকারী। (তারীখে বাগদাদ ২:৮৮)

১২. মহানবী (ﷺ)-এর একই বংশধারা

রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেনঃ

أَنَا وَ عَلِيٌّ مِنْ شَجَرَةٍ وَاحِدَةٍ، وَ النَّاسُ مِنْ أشْجَارٍ شَتَّي.

আমি আর আলী (رضي الله عنه) একই বৃক্ষ থেকে, আর অন্যেরা (মানুষ) বিভিন্ন বৃক্ষ থেকে।

(আল মানাকিব – ইবনে মাগাযেলী :৪০০/৫৩, কানযুল উম্মাল ১১:৬০৮/ ৩২৯৪৩, আল ফেরদৌস ১: ৪৪/১০৯, মাজমাউয যাওয়ায়েদ ৯:১০০)

১৩. উম্মতের হেদায়াতকারী

রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেনঃ

أنَا الْمُنْذِرُ وَ عَلِيٌّ الْهَادِي، بِكَ يَا عَلِيُّ يَهْتَدِي الْمُهْتَدُونَ.

আমি হলাম সাবধানকারী। আর হে আলী (رضي الله عنه)! তোমার মাধ্যমে পথ অন্বেষণকারীরা পথ খুঁজে পাবে।

(তাফসীরে তাবারী ১৩:৭২, ইমাম আলী (رضي الله عنه) (অনুবাদ)- ইবনে আসাকির ২:৪১৭/৯২৩)

১৪. জাতির পথ-প্রদর্শক

রাসূলুল্লাহ (ﷺ) ইমাম আলী (رضي الله عنه)কে বলেনঃ

أنْتَ تُبَيِّنُ لِأُمَّتِي مَا اخْتَلَفُوا فِيهِ بَعْدِي.

আমার পরে আমার উম্মত যে বিষয়ে মতবিরোধ করবে তুমি তার সমাধান দান করবে।

(আল মুস্তাদরাক-হাকেম ৩:১২২, কানযুল উম্মাল ১১:৬১৫/৩২৯৮৩, আল ফেরদৌস ৫:৩৩২/৮৩৪৯, হিল্লিয়াতুল আউলিয়া ১:৬৪)

১৫. মহানবী (ﷺ)-এর থেকে

রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেনঃ

أنْتَ مِنِّي وَ أَنَا مِنْكَ.

তুমি আমার থেকে আর আমি তোমার থেকে।

(সহীহ বুখারী ৪:২২, ৫:৮৭, সুনানে তিরমিযী ৫:৬৩৫/৩৭১৬, মাসাবিহুস সুন্নাহ ৪:১৭২/৪৭৬৫ ও ১৮৬/১০৪৮, তারীখে বাগদাদ ৪:১৪০)

১৬. মুমিনদের কর্তৃত্বের অধিকারী

রাসূলুল্লাহ (ﷺ) ইমাম আলী (رضي الله عنه)কে বলেনঃ

أنْتَ وَلِيُّ كُلِّ مُؤمِنٍ وَ مُؤمِنَةٍ بَعْدِي.

আমার পরে তুমি প্রত্যেক মুমিন নর ও নারীর ওপর কর্তৃত্বের অধিকারী।
(আল মুস্তাদরাক-হাকেম ৩:১৩৪, আল মুজামুল কাবীর-তাবারানী ১২:৭৮/১২৫৯৩)

১৭. আদর্শের পথে শহীদ

রাসূলুল্লাহ (ﷺ) ইমাম আলী (رضي الله عنه)কে বলেনঃ

أنْتَ تَعِيْشُ عَلَي مِلَّتِي، وَ تُقْتَلُ عَلَي سُنَّتِي.

তুমি আমার পন্থায় জীবন যাপন করবে, আর আমার আদর্শের পথেই শাহাদাত বরণ করবে।

(কানযুল উম্মাল ১১:৬১৭/৩২৯৯৭, আল মুস্তাদরাক-হাকেম :৩/১৪২)

১৮. সকল মুমিনের নেতাঃ

রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেনঃ

إِنَّ عَلِيّاً مِنِّي، وَ أََنَا مِنْهُ، وَ هُوَ وَلِيُّ كُلِّ مُؤمِنٍ بَعْدِي.

নিশ্চয় আলী (رضي الله عنه) আমার থেকে আর আমি আলী (رضي الله عنه) থেকে। আর সে আমার পরে সকল মুমিনের নেতা।

(খাসায়েসে নেসায়ী :২৩, মুসনাদে আহমাদ ৪:৪৩৮, আল মু’জামুল কাবীর-তাবারানী

১৮: আলী (رضي الله عنه) এর জন্য দোয়াঃ

রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেনঃ

رَحِمَ اللهُ عَلِيّاً ، اَللَّهُمَّ أَدِرِ الْحَقَّ مَعَهُ حَيْثُ دَارَ.

আল্লাহ আলী (رضي الله عنه)র ওপর রহমত বর্ষণ করুন! হে আল্লাহ! আলী (رضي الله عنه) যেখানেই আছে সত্যকে তার সাথে ঘুরিয়ে দিন।

(আল মুস্তাদরাক-হাকেম ৩:১২৪, সুনানে তিরমিযী ৫:৬৩৩/৩৭১৪, ইমাম আলী (رضي الله عنه) – ইবনে আসাকির, ৩:১৫১/১১৬৯-১১৭০)

১৯. মহানবী (ﷺ)-এর হারুন

রাসূলুল্লাহ (ﷺ) ইমাম আলী (رضي الله عنه) কে বলেনঃ

أنْتَ مِنِّي بِمَنْزِلَةِ هَارُونَ مِنْ مُوسَي إِلَّا أَنَّهُ لَا نَبِيَّ بَعْدي.

আমার নিকট তুমি মুসার কাছে হারুনের ন্যায়। শুধু আমার পরে কোনো নবী নেই।

(সুনানে তিরমিযী ৫:৬৪১/৩৭৩০, মাসাবিহুস্ সুন্নাহ ৪:১৭০/৪৭৬২, সহীহ মুসলিম ৪:৪৪/৩০)

২০. রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর সাথে

রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেনঃ

أَبْشِرْ يَا عَلِيُّ، حَيَاتُكَ مَعِي وَ مَوتُك مَعِي.

হে আলী (رضي الله عنه)! সুসংবাদ তোমার ওপর। তোমার জীবন আমার সাথে আর তোমার মরণও আমার সাথে।

(ইমাম আলী (رضي الله عنه)-ইবনে আসাকির ২:৪৩৫, ৯৪৭, মাজমাউয যাওয়াযেদ ৯:১১২, কানযুল উম্মাল ১৩: ১৪৪/৩৬৪৫৩)


হাদিস ২১-৩০

২১. সর্বপ্রথম নামাযী

রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেনঃ

أََوَّلُ مَنْ صَلَّي مَعِي عَلِيٌّ.

সর্বপ্রথম আমার সাথে যে নামায পড়েছে সে হলো আলী (رضي الله عنه)।
(কানযুল উম্মাল ১১:৬১৬/৩২৯৯২, আল ফেরদৌস ১:২৭/৩৯)

২২. শ্রেষ্ঠতম পুরুষ

রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেনঃ

خَيْرُ رِجَالِكُمْ عَلِيُّ بْنُ أَبِي طَالِبٍ.

আলী (رضي الله عنه) তোমাদের মধ্যে শ্রেষ্ঠতম পুরুষ।
(তারীখে বাগদাদ ৪:৩৯২, মুন্তাখাবু কানযুল উম্মাল ৫:৯৩)

২৩. উম্মতের পিতার ন্যায়

রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেনঃ

حَقُّ عَلِيٍّ عَلَي الْمُسْلِمِينَ حَقُّ الوَالِدِ عَلَي الْوَلَدِ.

মুসলমানদের ওপর আলী (رضي الله عنه)র অধিকার, সন্তানের ওপর পিতার অধিকারের ন্যায়।
(আর রিয়াদুন্ নাদরাহ ৩:১৩০, ইমাম আলী (رضي الله عنه) – ইবনে আসাকির ২:২৭২/৭৯৮-৭৯৯)

২৪. ইবাদতের সারসত্য

রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেনঃ

ذِكْرُ عَلِيٍّ عِبَادَةٌ.

আলী (رضي الله عنه)কে স্মরণ করা ইবাদততুল্য।

(কানযুল উম্মাল ১১, ৬০১/৩২৮৯৪, আল ফেরদৌস ২:২৪৪/৩১৫১, ওসীলাতুল মুতাআবেবদীন খ: ৫ আল কাসাম ২:১৬৮)

২৫. মজলিসের সৌন্দর্য

রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেনঃ

زَيِّنُوا مَجَالِسَكُمْ بِذِكْرِ عَلِيٍّ.

তোমাদের মজলিসগুলোকে আলী (رضي الله عنه)র নাম উচ্চারণের মাধ্যমে সৌন্দর্যমন্ডিত করো।

(আল মানাকিব – ইবনুল মাগাযেলী : ২১১/২৫৫)

২৬. সর্বদা সত্যের সাথে

রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেনঃ

رَحِمَ اللهُ عَلِيّاً ، اَللَّهُمَّ أَدِرِ الْحَقَّ مَعَهُ حَيْثُ دَارَ.

আল্লাহ আলী (رضي الله عنه)র ওপর রহমত বর্ষণ করুন! হে আল্লাহ! আলী (رضي الله عنه) যেখানেই আছে সত্যকে তার সাথে ঘোরাও।

(আল মুস্তাদরাক-হাকেম ৩:১২৪, সুনানে তিরমিযী ৫:৬৩৩/৩৭১৪, ইমাম আলী (رضي الله عنه) – ইবনে আসাকির, ৩:১৫১/১১৬৯-১১৭০)

২৭. রাসূলুললাহ (ﷺ)-এর গোপন রহস্যের আধার

রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেনঃ

صَاحِبُ سِرِّي عَلِيُّ ابْنُ أَبِي طَالِبٍ.

আলী (رضي الله عنه) আমার গোপন রহস্যকথার একমাত্র আধার।

(আল ফেরদৌস ২:৪০৩/৩৭৯৩, আল ইমাম আলী (رضي الله عنه) – ইবনে আসাকির ২:৩১১/৮২২)

হযরত ইমাম নেসায়ী (رضي الله عنه) উম্মুল মুমিনীন হযরত উম্মে সালমা (رضي الله عنه) হতে বর্ণনা করেন- ঐ জাত পাকের কসম ! রাসূলে পাক (ﷺ) এর বেসালে হক (ইন্তেকালের) সময় সবচেয়ে নিকটে ছিলেন হযরত আলী আলাইহিস সালাম। দরজার নিকট আমি দেখেছি , হুযুর পাক আলীর মুখে মুখ লাগিয়ে, বুকে বুক লাগিয়েছেন এবং চুপি চুপি কিছু গোপন কথা বলেছেন। 
[খাসায়েসে কুবরা , পৃষ্টা-২৮-২৯, মিশরেছাপা, ইয়া মুকালরেবুল ক্বুলুব, পৃষ্টা-৪৫]

২৮. রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর জ্ঞানের ভান্ডার

রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেনঃ

عَلِيٌّ خَازِنُ عِلْمِي.

আলী (رضي الله عنه) আমার জ্ঞানের ভান্ডার।

(শারহে নাহজুল বালাগা – ইবনে আবিল হাদীদ ৯:১৬৫)

২৯. সৃষ্টিকুলের শ্রেষ্ঠ

রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেনঃ

عَلِيٌّ خَيْرُ الْبَرِيَّةِ.

আলী (رضي الله عنه) সৃষ্টিকুলের সেরা।

(আল ইমাম আলী (رضي الله عنه) – ইবনে আসাকির ২:৪৪৩/৯৫৯, মানাকিবে খারেযমী : ৬২)

৩০. মানুষের মধ্যে শ্রেষ্ঠ

রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেনঃ

عَلِيٌّ خَيْرُ الْبَشَرِ، مَنْ أَبَي فَقَدْ كَفَرَ.

আলী (رضي الله عنه) সর্বশ্রেষ্ঠ মানুষ, যে তা মানবে না সে নিঃসন্দেহে কাফের।

(সিয়ারু আ’লামুন নুবালা ৮:২৫০, ইমাম আলী (رضي الله عنه)-ইবনে আসাকির ২:৪৪৪/৯৬২-৯৬৬, তারীখে বাগদাদ ৭:৪২১)


হাদিস ৩১-৪০

৩১. জ্ঞানের আধার

রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেনঃ

عَلِيٌّ عَيْبَةُ عِلْمِي.

আলী (رضي الله عنه) আমার জ্ঞানের আধার।

(আল জামেউস্ সাগীর ২:১৭৭, শারহে নাহজুল বালাগা – ইবনে আবিল হাদীদ ৯:১৬৫)

৩২. সর্বদা কুরআনের সাথে

রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেনঃ

عَلِيٌّ مَعَ الْقُرْآنِ وَ الْقُرْآنُ مَعَ عَلِيٍّ.

আলী (رضي الله عنه) কুরআনের সাথে আর কুরআন আলী (رضي الله عنه)র সাথে।

(আল মুস্তাদরাক-হাকেম ৩:১২৪, কানযুল উম্মাল ১১:৬০৩/৩২৯১২)

৩৩. রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর নিকটে

হযরত বাররাহ (رضي الله عنه) এবং হযরত ইবনে আব্বাস (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত- রাসুলুল্লাহ (ﷺ) এরশাদ করেন, 

عَلِيٌّ مِنِّي بِمَنْزِلَةِ رَأسِي مِنْ بَدَني.

আলী আমার দেহের মাথার ন্যায়। 
১. হাদিসটি তারীখে বাগদাদ ৭:১২, হযরত বাররাহ (رضي الله عنه) হতে এবং 
২.দায়লমী হযরত ইবনে আব্বাস (رضي الله عنه) হতে বর্ণনা করছেন। 
৩.মুত্তাকী আল হিন্দীঃ কানযুল উম্মাল ১১:৬০৩/৩২৯১৪।
৪.মাসিক আলোকধারা, ১৭শ বর্ষ, ৮ ম সংখ্যা (আগষ্ট ২০১২ সংখ্যা), ২৩ পৃষ্টা।

৩৪. আল্লাহর নিকটে

রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেনঃ

عَلِيٌّ مِنِّيكَمَنْزِلَتِي مِنْ رَبِّي.

আমার নিকটে আলী (رضي الله عنه)র মর্যাদা হলো যেমন আমার প্রতিপালকের নিকটে আমার মর্যাদা।

(আস সাওয়ায়িকুল মুহরিকা :১৭৭, যাখায়িরুল উক্বা : ৬৪)

৩৫. কেয়ামতের দিন বিজয়ী

রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেনঃ

عَلِيٌّ وَ شِيعَتُهُ هُمُ الْفَائِزُونَ يَوْمَ الْقِيَامَةِ.

আলী (رضي الله عنه) এবং তাঁর অনুসারীরা নিঃসন্দেহে কেয়ামতের দিন বিজয়ী।

(আল ফেরদৌস ৩:৬১/৪১৭২, ওয়াসীলাতুল মুতাআবেবদীন খ:৫, আল কিস্ম ২:১৭০)

৩৬. বেহেশতের তারকা

রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেনঃ

عَلِيٌّ يَزْهَرُ فِي الْجَنَّةِ كَكَوْكَبِ الصُّبْحِ لِأَهْلِ الدُّنْيَا.

আলী (رضي الله عنه) বেহেশতের মধ্যে দুনিয়াবাসীর জন্য ভোরের তারকার ন্যায় উজ্জ্বল।

(আল ফেরদৌস ৩:৬৩/৪১৭৮, কানযুল উম্মাল ১১:৬০৪/৩২৯১৭)

৩৭. তাকে কষ্ট দিও না

রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেনঃ

مَنْ آذَي عَلِيّاً فَقَدْ آذَانِي.

যে ব্যক্তি আলী (رضي الله عنه)কে কষ্ট দেয় সে আমাকে কষ্ট দেয়।

(মুসনাদে আহমাদ ৩:৪৮৩, আল মুস্তাদরাক-হাকেম ৩:১২২, দালায়িলুন নব্যুওয়াত ৫:৩৯৫, আল ইহ্সান- ইবনে হাববান ৯:৩৯/৬৮৮৪)

৩৮. আল্লাহর অস্তিত্বে মিশে আছে

রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেনঃ

لَاتَسُبُّوا عَلِيّاً، فَإِنَّهُ مَمْسُوسٌ فِي ذَاتِ اللهِ.

তোমরা আলী (رضي الله عنه)কে গালমন্দ করো না। সে আল্লাহর সত্তায় ফানা গেছে্। অর্থাৎ, আল্লাহর ভালবাসায় বিলীন হয়ে গেছে। 

(আল মু’জামুল কাবীর-তাবারানী ১৯:১৪৮/৩২৪, হিল্লিয়াতুল আউলিয়া ১:৬৮, কানযুল উম্মাল ১১:৬২১/৩৩০১৭)

৩৯. মুনাফিকরা তাঁকে ভালোবাসে না

রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেনঃ

لَا يُحِبُّ عَلِيّاً مُنَافِقٌ، وَ لاَ يُبْغِضُهُ مُؤمِنٌ.

মুনাফিকরা আলী (رضي الله عنه)কে ভালোবাসে না, আর মুমিন তাঁকে ঘৃণা করে না।

(সুনানে তিরমিযী ৫:৬৩৫/৩৭১৭, আর রিয়াদুন নাদ্রাহ ৩:১৮৯)

৪০. রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর হক (অধিকার) পূরণকারী

রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেনঃ

عَلِيٌّ مِنِّي وَ أَنَامِنْ عَلِيٍّ، وَلَا يُؤَدِّي عَنِّي إِلَّا أَنَا أَوْ عَلِيٌّ.

আলী (رضي الله عنه) আমা থেকে আর আমি আলী (رضي الله عنه) থেকে, আমি আর আলী (رضي الله عنه) ব্যতীত কেউই আমার (রেসালাতের) অধিকার পূরণ করেনি।

(মাসাবিহুস সুন্নাহ ৪:১৭২/৪৭৬৮, সুনানে তিরমিযী ৫:৬৩৬/৩৭১৯, মুসনাদে আহমাদ ৪:১৬৪)


হাদিস ৪১-৫০

৪১. মুসলমানদের সরদার

রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেনঃ

عَلِيٌّ سَيِّدُ الْمُسْلِمِينَ، وَ إِمَامُ الْمُتَّقِينَ، وَ قَائِدُ الْغُرِّ الْمُحَجَّلِينَ.

আলী (رضي الله عنه) মুসলমানদের সরদার, পরহেযগারদের নেতা এবং সফলকামদের পথ প্রদর্শক।

(আল মুস্তাদরাক-হাকেম ৩:১৩৮, আল মানাকিব-ইবনুল মাগাযেলী ১০৪/১৪৬)

৪২. নাজাত দানকারী

রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেনঃ

حُبُّ عَلِيٍّ بَرَاءَةٌ مِنَ النَّارِ.

আলী (رضي الله عنه)র প্রতি ভালোবাসা আগুন থেকে মুক্তির কারণ।

(আল ফেরদৌস ২:১৪২/২৭২৩)

৪৩. ঈমানে সর্বাপেক্ষা অবিচল

রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেনঃ

عَلِيٌّ الصِّدِّيقُ الْاَكْبَرُ، وَ فَارُوقُ هَذِهِ الْاُمَّةِ، وَ يَعْسُوبُ الْمُؤْمِنِينَ.

আলী (رضي الله عنه) ঈমানে সর্বাপেক্ষা দৃঢ়পদ, উম্মতের মধ্যে হক ও বাতিলে পার্থক্যকারী আর মুমিনদের কর্তা।

(কানযুল উম্মাল ১১:৬১৬/৩২৯৯০, আল মু’জামুল কাবীর-তাবারানী ৬:২৬৯/৬১৮৪)

৪৪. তাঁকে অভিসম্পাত করো না

রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেনঃ

مَنْ سَبَّ عَلِيّاً فَقَدْ سَبَّنِي.

যে ব্যক্তি আলী (رضي الله عنه)কে গালমন্দ করে সে যেন আমাকেই গালি দিল।

(মুখতাসারু তারীখে দামেস্ক – ইবনে মাঞ্জুর ১৭:৩৬৬, ফাযায়েলুস সাহাবা ২:৫৯৪/১০১১, খাসায়েসে নাসায়ী :২৪, আল মুস্তাদরাক-হাকেম ৩:১২১, মানাকিবে খারেযমী : ৮২)

৪৫. আল্লাহর রাস্তায় কঠোরতা

রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেনঃ

أَيُّهَا النَّاسُ، لَا تَشْكُوا عَلِيّاً، فَو اللهِ إِنَّهُ لَأَخْشَنُ فِيذَاتِاللهِ، أَوْ فِي سَبِيلِ اللهِ.

হে লোকসকল! আলী (رضي الله عنه)র বিরুদ্ধে নালিশ করতে যেও না। সে আল্লাহর কারণে অথবা তাঁর সন্তুষ্টির জন্যেই কঠোর হয়।

(মুসনাদে আহমাদ ৩:৮৬, আল মুস্তাদরাক-হাকেম ৩:১৩৪)

৪৬. সত্যিকারের সৌভাগ্য

রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেনঃ

إنَّ السَّعِيدَ كُلَّ السَّعِيدِ، حَقَّ السَّعِيدِ، مَنْ أحَبَّ عَلِيّاً فِي حَيَاتِهِ وَ بَعْدَ مَوتِهِ.

নিশ্চয় সবচেয়ে সৌভাগ্যবান এবং সত্যিকারের সৌভাগ্যবান সেই ব্যক্তি যে আলী (رضي الله عنه)কে তার জীবদ্দশায় এবং তার মৃত্যুর পরে ভালোবাসে।

(আর রিয়াদুন নাদরাহ ৩:১৯১, ফাযায়িলুস সাহাবা ২:৬৫৮/১১২১, আল মু’জামুল কাবীর-তাবারানী ২২: ৪১৫/১০২৬, মাজমাউয যাওয়ায়েদ ৯:১৩২)

৪৭. পাপ ধ্বংসকারী

রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেনঃ

حُبُّ عَلِيِّ بْنِ أَبِي طَالِبٍ يَأْكُلُ الذُّنُوبَ كَمَا تَأْكُلُ النَّارُ الْحَطَبَ.

আলী (رضي الله عنه) এর ভালোবাসা পাপসমূহকে খেয়ে ফেলে যেভাবে আগুন কাঠকে খেয়ে ফেলে।

(আর রিয়াদুন্ নাদরাহ ৩: ১৯০, কানযুল উম্মাল ১১:৬২১/৩৩০২১, আল ফেরদৌস ২:১৪২/২৭২৩)

৪৮. রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর উত্তরসূরি

রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেনঃ

لِكُلِّ نَبِيٍّ وَصِيٌّ وَ وَارِثٌ، وَ إَِنَّ عَلِيّاً وَصِيِّي وَ وَارِثِي.

প্রত্যেক নবীর ওয়াসী এবং উত্তরসূরি থাকে। আর আমার ওয়াসী এবং উত্তরসূরি হলো আলী (رضي الله عنه)।

(আর রিয়াদুন নাদরাহ ৩:১৩৮, আল ফেরদৌস ৩:৩৩৬/৫০০৯, ইমাম আলী (رضي الله عنه) – ইবনে আসাকির ৩: ৫/১০৩০-১০৩১)

৪৯. তার দিকে তাকানো ইবাদত

রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেনঃ

َالنَّظَرُ إِلَي وَجْهِ عَلِيٍّ عِبَادَةٌ.

আলী (رضي الله عنه)র মুখের দিকে তাকানো ইবাদত।

(আল মানাকিব- ইবনে মাগাযেলী ২০৬/২৪৪-২৪৬ ও ২০৯/২৪৮-২৪৯ ও ২১০/২৫২-২৫৩, আল মুস্তাদরাক-হাকেম ৩:১৪২, আর রিয়াদুন্ নাদ্রাহ ৩:১৯৭)

৫০. রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর ওয়াসী

রাসূলুল্লাহ (ﷺ) হযরত আলী (رضي الله عنه)র প্রতি ইঙ্গিত করে বলেনঃ

هَذَا أَخِي وَ وَصِيِّي وَ خَلِيفَتِي مِنْ بَعْدِي، فَاسْمَعُوا لَهُ وَ أَطِيعُوه.

এ হলো আমার ভাই, আর আমার পরে আমার ওয়াসী এবং খলীফা। তার নির্দেশের প্রতি কর্ণপাত করো এবং তার আনুগত্য করো।

(তারীখে তাবারী ২:৩৩১, মাআলিমুত তানযীল ৪:২৭৯, আল কামিল ফিত তারীখ ২:৬৩, শারহে নাহজুল বালাগা – ইবনে আবিল হাদীদ ১৩:২১১, কানযুল উম্মাল ১৩:১৩১)


হাদিস ৫১-৬০

৫১. ফেরেশতাকুলের দরূদ

রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেনঃ

إنَّ الْمَلَائِِكَةَ صَلَّتْ عَلَيَّ و عَلَي عَلِيٍّ سَبعَ سِنِيْنَ قَبْلَ أَنْ يُسْلِمَ بَشَرٌ.

কোনো মানুষ মুসলমান হওয়ার সাত বছর পূর্ব থেকেই ফেরেশতারা আমার এবং আলী (رضي الله عنه)র ওপর দরূদ পাঠাতো।

(কানযুল উম্মাল ১১: ৬১৬/৩২৯৮৯, মুখতাসারু তারীখে দামেস্ক -ইবনে মাঞ্জুর ১৭:৩০৫)

৫২. ঈমানের মানদন্ড

রাসূলুল্লাহ (ﷺ) আলী (رضي الله عنه) কে বলেনঃ

لَوْلَاكَ مَا عُرِفَ الْمُؤمِنُونَ مِنْ بَعْدِي.

যদি তুমি না থাকতে তাহলে আমার পরে মুমিনদের শনাক্ত করা যেত না।

(আর রিয়াদুন নাদ্রাহ ৩:১৭৩, আল মানাকিব- ইবনুল মাগাযেলী :৭০/১০১, কানযুল উম্মাল ১৩ :১৫২/৩৬৪৭৭)

৫৩. সর্বদা সত্যের সাথে

রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেনঃ

عَلِيٌّ مَعَ الْحَقِّ وَ الْحَقُّ مَعَ عَلِيٍّ، لَنْ يَفْتَرِقَا حَتَّي يَرِدَا عَلَيَّ الْحَوضِ يَوْمَ الْقِيَامَةِ.

আলী (رضي الله عنه) সত্যের সাথে আর সত্য আলী (رضي الله عنه)র সাথে, এই দুটো কখনো একে অপর থেকে বিচ্ছিন্ন হবে না যতক্ষণ না কেয়ামতের দিন হাউজে কাওসারে আমার সাথে মিলিত হবে।

(তারীখে বাগদাদ ১৪:৩২১, ইমাম আলী (رضي الله عنه) – ইবনে আসাকির ৩:১৫৩/১১৭২)

৫৪. তাঁর থেকে পৃথক হয়ো না!

রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেনঃ

مَنْ فَارَقَ عَلِيّاً فَقَدْ فَارَقَنِي وَ مَنْ فَارَقَنِي فَقَدْ فَارَقَ اللهَ عَزَّوَجَلَّ.

যে ব্যক্তি আলী (رضي الله عنه) থেকে পৃথক হয় সে আমা থেকে পৃথক হলো আর যে আমা থেকে পৃথক হলো সে মহান আল্লাহ থেকে পৃথক হয়ে গেল।

(আল মানাকিব- ইবনে মাগাযেলী ২৪০/২৮৭, আল মুস্তাদরাক-হাকেম ৩:১২৪, আল মু’জামুল কাবীর- তাবারানী ১২:৩২৩/১৩৫৫৯)

হযরত ইবনে আব্বাস (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত- একদা একজন আরবী এসে নবীজীর নিকট জিজ্ঞাসা করল - হে আল্লাহর রাসুল ! আমি শুনেছি আপনি বলেছেন- "তোমরা আল্লাহর রজ্জুকে শক্ত করে ধরো এবং পরস্পর পৃথক হয়ো না। (আল-কুরআন) সেই রজ্জু (রশি) কি যাকে আমরা অনুসরণ করবো? তখন রাসুলে পাক (ﷺ) নিজের হাত আলীর হাতের উপর রেখে বললেন, এই আলীই খোদার মজবুত রজ্জু (রশি) তাকে অনুসরণ করো। 
[ইয়া নাবিউল মাওয়াদ্দাত,পৃষ্টা-১১৯, ইয়া মুকাল্রেবুল ক্বুলুব, পৃষ্টা-৪৫]

উম্মুল মুমিনীন হযরত উম্মে সালমা (رضي الله عنه) বর্ণনা করেন- আমি রাসূলে পাক (ﷺ) কে প্রায়ই বলতে শুনেছি, আলী কুরআনের সাথে এবং কুরআন আলীর সাথে। তারা একে অপর থেকে পৃথক হয় না। কিয়ামত দিবসে তারা উভয়ে হাউজে-কাওসারের নিকট আমার সাথে মিলিত হবে। যে আলীকে ত্যাগ করেছে সে কোরআন ত্যাগ করেছে। 
[তিরমিজি শরীফ, কিতাবে আওসাদ : তাবরানী শরীফ ; ইমাম তাবরানী (রহঃ), ৩. ইয়া মুকাল্রেবুল ক্বুলুব, পৃষ্টা-৪৫]

৫৫. মহানবী (ﷺ)-এর জ্ঞানের দরজা

রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেনঃ

عَلِيٌّ بَابُ عِلْمِي، وَ مُبَيِّنُ لِاُمَّتِي مَا اُرْسِلْتُ بِهِ مِنْ بَعْديِ، حُبُّهُ اِيمَانٌ، و بُغْضُُهُ نِفَاقٌ وَ النَّظَرُ اِلَيْهِ رَأْفَةٌ.

আলী (رضي الله عنه) আমার জ্ঞানের দরজা। সে আমার পরে আমার রেসালাতকে আমার উম্মতের জন্যে ব্যাখ্যা করবে। তাকে ভালোবাসা ঈমানের পরিচায়ক, তাকে ঘৃণা করা মুনাফিকের পরিচায়ক এবং তার দিকে তাকানো প্রশান্তির কারণ।

(কানযুল উম্মাল ১১:৬১৪/৩২৯৮১, আল ফেরদৌস ৩:৬৫/৪১৮১)

৫৬. আল্লাহর গোপন রহস্য ব্যক্তকারী

জাবের বলেনঃ তায়েফের দিন রাসূলুল্লাহ (ﷺ) হযরত আলী (رضي الله عنه)কে কাছে ডাকলেন। তাঁকে একপাশে নিয়ে কানে কানে যুক্তি করলেন। লোকজন বললো, ‘‘তাঁর চাচাতো ভাইয়ের সাথে যুক্তি করা কতো দীর্ঘায়িত হলো!’’ রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বললেন :

مَا اَنْتَجَيْتُهُ ، وَلَكِنْ اللهَ انْتَجَاهُ.

আমি তাঁর সাথে যুক্তি করিনি, বরং আল্লাহ তাঁর সাথে যুক্তি করেছেন।

(আর রিয়াদুন নাদ্রাহ ৩:১৭০, সুনানে তিরমিযী ৫:৬৩৯/৩৭২৬, খাসায়েসে নাসায়ী :৫, ফাযায়েলূস সাহাবা ২:৫৬০/৯৪৫, আল মুস্তাদরাক-হাকেম ৩:১৩০-১৩২)

৫৭. মুমিনদের মাওলা

রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেনঃ

مَنْ كُنْتُ مَوْلَاهُ فَعَلِيٌّ مَوْلَاهُ، اَللَّهُمَّ وَالِ مَنْ وَالَاهُ وَعَاِد مَنْ عَادَاهُ.

আমি যার মাওলা আলী (رضي الله عنه)ও তার মাওলা। হে আল্লাহ! যে আলী (رضي الله عنه)কে ভালোবাসে তুমি তাকে ভালোবাস আর যে আলী (رضي الله عنه)র সাথে শত্রুতা করে তুমি তার সাথে শত্রুতা করো।

(কানযুল উম্মাল ১১:৬০৯/৩২৯৫০, আল মুস্তাদরাক-হাকেম ৩:১০৯, মাজমাউয যাওয়ায়েদ ৯:১০৪, আল মু’জামুল কাবীর-তাবারানী ৪:১৭৩/৪০৫৩, তিরমিযী ৫:৬৩৩/৩৭১৩, মুসনাদে আহমাদ ১:৮৪, ৮৮, ১১৯, ১৫২, ৩৩১ ও ৪:২৮১, ৩৬৮, ৩৭০, ৩৭২ ও ৫:৩৪৭, ৩৫৮, ৩৬১, ৩৬৬, ৪১৯)

৫৮. তোমার জন্য সেটাই চাই!

রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেনঃ

يَا عَلِيُّ! إِنِّي اُحِبُّ لَكَ مَا اُحِبُّ لِنَفْسِي، وَ أَكْرَهُ لَكَ مَا أَكْرَهُ لِنَفْسِي.

হে আলী (رضي الله عنه)! আমি নিজের জন্যে যা পছন্দ করি তোমার জন্য সেটাই পছন্দ করি। আর আমার চোখে যা অপছন্দনীয় তোমার জন্যও সেটা অপছন্দ করি।

(মুসনাদে আহমাদ ১:১৪৬, সুনানে তিরমিযী ২:৭২/২৮২, আল মুনাতাখাবু মিন মুসনাদে আব্দু ইবনে হামীদ :৫২/৬৭)

৫৯. বেহেশত-দোযখের বণ্টনকারী

রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেনঃ

يَا عَلِيُّ، إِنَّكَ قَسِيمُ الْجَنَّةِ وَ النَّارِ وَ إِنَّكَ تَقْرَعُ بَابَ الْجَنَّةِ، فَتَدْخُلَهَا بِلَا حِسَابٍ.

হে আলী (رضي الله عنه)! তুমি (মানুষকে) বেহেশত ও দোযখের (মধ্যে) বণ্টনকারী। অতঃপর তুমি নিজে বেহেশতের দরওয়াযায় টোকা দিবে এবং হিসাব ছাড়াই প্রবেশ করবে।

(আল মানাকিব- ইবনুল মাগাযেলী ৬৭/৯৭, আল মানাকিব-খারেযমী : ২০৯, ফারায়িদুস সামতাঈন ১:৩২৫/২৫৩)

৬০. তোমাকে যারা ভালোবাসে তাদের প্রতি সুসংবাদ

রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেনঃ

يا عَلِيّ، طُوبَي لِمَنْ أَحَبَّكَ وَ صَدَّقَ فِيكَ وَ وَيْلٌ لِمَنْ أَبْغَضَكَ وَ كَذَّبَ فِيكَ.

হে আলী (رضي الله عنه)! সুসংবাদ তার প্রতি যে তোমাকে ভালোবাসে এবং তোমাকে সত্য বলে জানে। আর দুর্ভাগ্য তাদের প্রতি যারা তোমার সাথে শত্রুতা করে এবং তোমার ব্যাপারে মিথ্যা আরোপ করে।

(তারীখে বাগদাদ ৯:৭২, ওয়াসীলাতুল মুতাআবেবদীন খ:৫, আল কিস্ম ২:১৬১, উসুদুল গবাহ ৪:২৩)


হাদিস ৬১-৭০

৬১. ওয়াসিগণের মধ্যে সর্বোত্তম

রাসূলুল্লাহ (ﷺ) হযরত ফাতিমাকে বলেনঃ

وَصِيِّي خَيْرُ الْأَوْصِيَاءِ، وَ أَحَبُّهُمْ إِلَي اللهِ عَزَّ وَجَلَّ وَ هُوَ بَعْلُكَ.

ওয়াসিগণের মধ্যে আমার ওয়াসীই সর্বোত্তম এবং আল্লাহর নিকটে তাদের মধ্যে সবচেয়ে প্রিয়তম। আর সে হলো তোমার স্বামী।

(মাজমাউয যাওয়ায়েদ ৯:১৬৫, যাখায়িরুল উকবা :১৩৬)

৬২. মহানবী (ﷺ)-এর ভাই ও সহযোগী

রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেনঃ

اَللَّهُمَّ إنِّيأَقُولُكَمَاقَالَأَخِيمُوسَي: اَللَّهُمَّ اجْعَلْ لِيوَزِيراً مِنْ أَهْلِيأَخِيعَلِيّاً اُشْدُدْ بِهِ أزْرِي وَ أَشْرِكْهُ فِيأَمْرِي كَيْ نُسَبِّحَكَ كَثِيراً وَ نَذْكُرَكَ كَثيراً، إِنَّكَ كُنْتَ بِنَا بَصِيراً.

হে আল্লাহ! আমিও আমার ভাই মুসার মতো বলছি, ‘‘হে খোদা! আমার জন্য আমার পরিবারের মধ্যে থেকে কাউকে সাহায্যকারী হিসেবে নিয়োগ করো। আমার ভাই আলী (رضي الله عنه)কে যার দ্বারা আমার শক্তি মজবুত হয় এবং আমাকে সাহায্য করে। যাতে তোমার মহিমা বর্ণনা করতে সক্ষম হই এবং তোমার অধিক ইবাদতে নিমগ্ন হতে পারি। অবশ্য তুমি আমাদের ওপর দৃষ্টি নিবদ্ধকারী।

(আর রিয়াদুন নাদরাহ ৩:১১৮, ফাযায়িলুস সাহাবা ২:৬৭৮/১১৫)

৬৩. নিরাপত্তা এবং ঈমান

রাসূলুল্লাহ (ﷺ) হযরত আলী (رضي الله عنه) কে বলেনঃ

مَنْ أَحَبَّكَ حُفَّ بِالاَمْنِ وَ الْإِيمَانِ، وَ مَنْ أَبْغَضَكَ أَمَاتَهُ اللهُ مِيْتَةَ الْجَاهِلِيَّةِ.

যে ব্যক্তি তোমাকে ভালোবাসবে, নিরাপত্তা ও ঈমান তাকে আবিষ্ট করবে। আর যে তোমার প্রতি শত্রুতা করবে আল্লাহ তাকে জাহেলিয়াতের মৃত্যু দান করবেন।

(কানযুল উম্মাল ১১:৬০৭/৩২৯৩৫, আল মু’জামুল কাবীর-তাবারানী ১১:৬৩/১১০৯২)

৬৪. সীরাতুল মুস্তাকীম পার হওয়ার অনুমতি

রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেনঃ

إِذَا كَانَ يَوْمُ الْقِيَامَةِ وَ نُصِبَ الصِّرَاطُ عَلَي شَفِيرِ جَهَنَّم لَمْ يَجُزْ إلاَّ مَنْ مَعَهُ كِتَابُ عَلِيّ بْنِ أَبِي طَالِبٍ.

যখন কেয়ামত উপস্থিত হবে এবং জাহান্নামের অগ্নিপার্শ্বে পুলসিরাত টাঙ্গানো হবে তখন শুধু কেবল যার সঙ্গে আলী (رضي الله عنه)-এর পত্র থাকবে সে ছাড়া কারো তা পার হবার অনুমতি থাকবে না।

(আল মানাকিব-ইবনুল মাগাযেলী ২৪২, ২৮৯, ফারায়িদুস সামতাইন ১:২২৮, ২৮৯)

৬৫. আলী (رضي الله عنه)-এর সহচরদের জন্য দোয়া

রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেনঃ

اَللّهُمَّ انْصُرْ مَنْ نَصَرَ عَلِيّاً، اَللَّهُمَّ أَكْرِمْ مَنْ أَكْرَمَ عَلِيّاً ، اَللَّهُمَّ أخْذُلْ مَنْ خَذَلَ عَلِيّاً.

হে আল্লাহ! যে ব্যক্তি আলী (رضي الله عنه)কে সাহায্য করে তুমি তাকে সাহায্য করো, যে ব্যক্তি তাকে সম্মান করে তুমি তাকে সম্মান করো আর যে তাকে লাঞ্ছিত করে তুমি তাকে লাঞ্ছিত করো।

(কানযুল উম্মাল ১১:৬২৩/৩৩০৩৩, আল মু’জামুল কাবীর – তাবারানী ১৭:৩৯,৮২)

৬৬. আল্লাহর সবচেয়ে প্রিয় বান্দা

আনাস ইবনে মালেক বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর জন্য মুরগীর গোশত দ্বারা খাবার প্রস্ত্তত করা হয়েছিল। হুজুর (ﷺ) বললেনঃ

اَللَّهُمَّ ائْتِنِي بِاَحَبِّ خَلْقِكَ إِلَيْكَ يَأْكُلُ مَعِي هَذَا الطَّيْرَ، فَجَاءَ عَلِيٌّ فَأَكَلَ مَعَهُ.

হে আল্লাহ! তোমার সবচেয়ে প্রিয় বান্দাকে পৌঁছে দাও যে আমার সাথে এই মুরগীর গোশত ভক্ষণে অংশ নেবে। এমন সময় আলী (رضي الله عنه) এসে পৌঁছলেন এবং হুজুরের দস্তরখানায় বসে পড়লেন।

(সুনানে তিরমিযী ৫:৬৩৬/৩৭২১, ফাযায়িলুস সাহাবা ২:৫৬০/৯৪৫, খাসায়েসে নাসায়ী : ৫, আল মুস্তাদরাক – হাকেম ৩:১৩০-১৩২)

৬৭. হেদায়াতের পতাকা

রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেনঃ

إِنَّ رَبَّ الْعَالَمِيْنَ عَهِدَ إِلَيَّ عَهْداً فِي عَلِيِّ بْنِ أَبِي طَالِبٍ ، فَقَالَ: إنَّهُ رَايَةُ الْهُدَي، وَ مَنارُ الْاِيْمَانِ، وَ اِمَامُ أَوْلِيَائِي، وَ نُورُ جَمِيعِ مَنْ أَطَاعَنِي.

বিশ্ব প্রতিপালক আলী (رضي الله عنه)র ব্যাপারে আমার সাথে কঠিনভাবে অঙ্গীকারাবদ্ধ হয়েছেন। অতঃপর আমাকে বলেছেন: নিশ্চয় আলী (رضي الله عنه) হলো হেদায়েতের পতাকা, ঈমানের শীর্ষচূড়া, আমার বন্ধুগণের নেতা আর আমার আনুগত্যকারী সকলের জ্যোতিস্বরূপ।

(হিলিয়াতুল আউলিয়া ১:৬৬, শারহে নাহজুল বালাগা – ইবনে আবীল হাদীদ ৯:১৬৮)

৬৮.দুই হাজার বছর আগে থেকে আলী (رضي الله عنه) রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর ভাই

রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেনঃ

مَكْتُوبٌ عَلَي بَابِ الْجَنَّةِ: لَا إِلَهَ إِلَّا اللهُ، مُحَمَّدٌ رَسُولُ اللهِ، عَلِيٌّ أَخُو النَّبِي، قَبْلَ أَنْ يُخْلَقَ الْخَلْقُ بِأَلْفَيْ سَنَة.

বেহেশতের দরওয়াযার ওপরে লেখা রয়েছে: আল্লাহ ছাড়া কোনো উপাস্য নেই, মুহাম্মদ আল্লাহর রাসূল আর মানুষ সৃষ্টি হওয়ার দুই হাজার বছর আগে থেকে আলী (رضي الله عنه) নবীর ভাই। (মাজমাউয যাওয়ায়েদ ৯:১১১, মুখতাসারু তারীখে দামেস্ক – ইবনে মাঞ্জুর ১৭:৩১৫, ফাযায়েলুস সাহাবা ২: ৬৬৮/১১৪০)

৬৯.আলী (رضي الله عنه) এর বেলায়েত বেহেশতের লাল শাখাঃ

مَنْ أَحَبَّ أََنْ يَسْتَمْسِكَ بِالْقَضِيبِ الاَحْمَرِ الَّذِي غَرَسَهُ اللهُ عَزَّ وَجَلَّ فِي جَنَّةِ عَدْنٍ بِيَمِينِهِ، فَلْيَتَمَسَّكْ بِحُبِّ عَلِيِّ بْنِ أََبِي طَالِبٍ.

আল্লাহ রাববুল আলামীন চিরন্তন বেহেশতে যে লাল শাখাটি রোপণ করেছেন যে ব্যক্তি সেটি ধরতে পছন্দ করে সে যেন আলী (رضي الله عنه) এর বেলায়েতকে গ্রহণ করে। (আর রিয়াদুন নাদরাহ ৩:১৯০, ফাযায়েলুস সাহাবা ২:৬৬৪/১১৩২, নাহজুল বালাগা -ইবনে আবিল হাদীদ ৯০/১৬৮)

৭০.আলী (رضي الله عنه) এর গুণঃ

مَنْ أَرَادَ أَنْ يَنْظُرَ إِلَي آدَمَ فِي عِلْمِهِ، وَ إِلَي نُوحٍ فِي فَهْمِهِ وَ إِلَي إِبْرَاهِيمَ فِي حِلْمِهِ وَ إِلَي يَحْيَي بْنِ زَكَرِيَّا فِي زُهْدِهِ وَ إِلَي مُوسَي بْنِ عِمْرَانَ فِي بَطْشِهِ فَلْيَنْظُرْ إِلَي عَلِيِّ بْنِ أََبِي طَالِبٍ.

যে ব্যক্তি আদমকে তাঁর জ্ঞানে, নুহকে তাঁর ধীশক্তিতে, ইবরাহীমকে তাঁর দূরদর্শিতায়, ইয়াহিয়াকে তাঁর সংযমশীলতায় আর মূসা ইবনে ইমরানকে তাঁর সাহসিকতায় দেখতে চায় সে যেন আলী (رضي الله عنه) এর প্রতি লক্ষ্য করে। (ইমাম আলী (رضي الله عنه)-ইবনে আসাকির ২:২৮০/৮১১, আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া ৭:৩৬৯)


হাদিস ৭১-৮০

৭১. ইলমের গোপন ভান্ডারঃ

يَا عَلِيُّ، إِنَّ اللهَ أَمَرَنِي أَنْ اُدْنِيكَ وَ أُعَلِّمُكَ ِلتَعِيَ، وَ أََنْزَلَتْ هَذِهِ الْآيَهُ: «وَ تَعِيَهَا اُذُنٌ وَاِعيَةٌ» فَأََنْتَ اُذُنٌ وَاعِيَةٌ لِعِلْمِي.

হে আলী (رضي الله عنه)! আল্লাহ আমাকে বলেছেন, তোমাকে আমার কাছে এনে আমার ইলমকে তোমাকে শিক্ষা দিতে যাতে তুমি সেগুলো পুরোপুরি শিখে নাও। এ মর্মে এই আয়াত নাযিল হয়েছে ‘‘এবং সত্যগ্রাহী কান এটাকে ধারণ করে’’* কাজেই তুমি আমার জ্ঞানের সত্যগ্রাহী কান! * সূরা আল হাক্কাহ্ : ১২ (হিলিয়াতুল আউলিয়া ১:৬৭, আদ দুররুল মানসূর ৮:২৬৭)

৭২.দুনিয়া ও আখেরাতের সরদারঃ

يَا عَلِيُّ، أَنْتَ سَيِّدٌ فِي الدُُّنْيَا وَ سَيِّدٌ فِي الْآخِرَةِ، حَبِيبُكَ حَبِيبِي وَ حَبِيبِي حَبِيبُ اللهِ، وَ عَدُوُّكَ عَدُوِّي وَ عَدُوِّي عَدُوُّ اللهِ وَ الْوَيْلُ لِمَنْ أَبْغَضَكَ بَعْدِي.

হে আলী (رضي الله عنه)! তুমি দুনিয়া ও আখেরাতের সরদার। তোমার বন্ধু আমারও বন্ধু, আর আমার বন্ধু আল্লাহরও বন্ধু। তোমার শত্রু আমারও শত্রু, আর আমার শত্রু আল্লাহরও শত্রু। অভিসম্পাত তার ওপর যে আমার পরে তোমার সাথে শত্রুতা করবে। (আল মুস্তাদরাক-হাকেম ৩:১২৮, আর রিয়াদুন নাদ্রাহ ৩:১২৪, আল ফেরদৌস ৫:৩২৪/৮৩২৫)

৭৩.আলী (رضي الله عنه) এর পথই সত্যের পথঃ

يَا عَمَّارُ، إِنْ رَأَيْتَ عَلِيّاً قَدْ سَلَكَ وَادِياً وَ سَلَكَ النَّاسُ وَادِياً غَيْرَهُ، فَاسْلُكْ مَعَ عَلِيٍّ و دَعِ النَّاسَ، إِنَّهُ لَنْ يَدُلَّكَ عَلَي رَدَيً، وَ لَنْ يُخْرِجَكَ مِنَ الْهُدَي.
হে আম্মার! যদি দেখতে পাও যে আলী (رضي الله عنه) একপথে চলেছে আর লোকেরা অন্যপথে, তাহলে তুমি আলী (رضي الله عنه)র সাথে চলবে এবং লোকদেরকে ত্যাগ করবে। কারণ, আলী (رضي الله عنه) কখনো তোমাকে বক্রপথে পরিচালিত করবে না এবং তোমাকে হেদায়েতের পথ থেকে বাইরে নিয়ে যাবে না। (কানযুল উম্মাল ১১:৬১৩/৩২৯৭২, তারীখে বাগদাদ ১৩:১৮৭)

৭৪.আল্লাহ এবং তাঁর রাসূল (ﷺ) আলী (رضي الله عنه) কে ভালোবাসেনঃ

لَأَعْطِيَنَّ الرَّايَةُ غَداً رَجُلاً يُحِبُّ اللهَ وَ رَسُولَهُ، وَ يُحِبُّهُ اللهُ وَ رَسُولُهُ، كَرَّارٌ غَيْرُ فَرَّارٍ، فَلَمَّا أَصْبَحَ النَّاسُ، قَالَ : أَيْنَ عَلِيٌّ؟ فَدَفَعَ الرَّايَةَ إِِلَيْهِ، فَفَتَحَ اللهُ عَلَيهِ.

আগামীকাল পতাকাকে এমন কারো হাতে তুলে দেব যাকে আল্লাহ এবং তাঁর রাসূল ভালোবাসেন, আর সেও আল্লাহ ও তাঁর রাসূলকে ভালোবাসে। সে অবিচল দৃঢ়পদ, কখনো পলায়ন করে না। যখন সকাল হলো, বললেন, ‘‘আলী (رضي الله عنه) কোথায়?’’ অতঃপর পতাকাকে তাঁর হাতে অর্পণ করলেন এবং আল্লাহ তাঁকে বিজয় দান করলেন।
(খাসায়েসে নাসায়ী: ৬, সহীহ বুখারী ৫:৮৭/১৯৭-২৭৯/২৩১, সহীহ মুসলিম ৪:১৮৭১/৩২-৩৪, সুনানে তিরমিযী ৫:৬৩৮/৩৭২৪, মুসনাদে আহমাদ ১:১৮৫ ও ৫: ৩৮৫)

৭৫.আলী (رضي الله عنه) উম্মতের অভিভাবকঃ

أُوصِي مَنْ آمَنَ بِي وَ صَدَّقَنِي بِوِلَايَةِ عَلِيِّ بْنِ أبِي طَالِبٍ ، فَمَنْ تَوَلَّاهُ فَقَدْ تَوَلَّانِي، وَ مَنْ تَوَلَّانِي فَقَدْ تَوَلَّي اللهَ، وَ مَنْ أَحَبَّهُ فَقَدْ أَحَبَّنِي، وَ مَنْ أَحَبَّنِي فَقَدْ أَحَبَّ اللهَ، وَ مَنْ أبْغَضَهُ فَقَدْ أَبْغَضَنِي، وَ مَنْ أَبْغَضَنِي فَقَدْ أَبْغَضَ اللهَ عَزَّوَجَلَّ.

আমার প্রতি যে ঈমান আনে ও বিশ্বাস স্থাপন করে তার প্রতি আমার উপদেশ হলো তার নিজের জন্য যেন আলী (رضي الله عنه) এর অভিভাবকত্বকে মেনে নেয়। কারণ, যে ব্যক্তি নিজেকে আলী (رضي الله عنه)র বেলায়েতের অধীনে নিয়োজিত করে আমি তার অভিভাবক হই, আর আমি যার অভিভাবক হই আল্লাহ তাকে স্বীয় বেলায়েতের অধীনে গ্রহণ করেন। আর যে ব্যক্তি আলী (رضي الله عنه)কে ভালোবাসবে সে আমাকেও ভালোবাসবে, আর যে আমাকে ভালোবাসবে আল্লাহ তাকে ভালোবাসবে। আর যে ব্যক্তি আলী (رضي الله عنه)কে ঘৃণা করবে সে আমাকেও ঘৃণা করবে। আর যে আমাকে ঘৃণা করবে আল্লাহ তাকে ঘৃণা করবেন।
(আলমানাকিব-ইবনে মাগাযেলী : ২৩০/২৭৭, মাজমাউয যাওয়ায়েদ ৯:১০৮, কানযুল উম্মাল ১১:৬১০/৩২৯৫৩)

৭৫.সালাত আদায়কারী প্রথম মুসলিমঃ

আলী (رضي الله عنه) (ﷺ) প্রথম মুসলিম। সর্ব প্রথম তিনি সালাত আদায় করেন। (তিরমিযি, ইফা, ৬ :৩৭৩৪, ৩৭২৮)

৭৬.দোয়া

আলী (رضي الله عنه) এক যুদ্ধে ছিলেন। তাই রাসূল (ﷺ) দুই হাত তুলে দোয়া করেছিলেন, হে আল্লাহ ! আলী (رضي الله عنه)কে পুনর্বার না দেখিয়ে আমার মৃত্যু দিও না। (তিরমিযি, ইফাবা, ৬ : ৩৭৩৭)

৭৭.রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর ভাই

রাসুল (ﷺ) বলেছেন, হে আলী (رضي الله عنه) ! আমার ক্ষেত্রে তোমার স্থান হল মূসার ক্ষেত্রে হারুনের মত। তবে আমার পরে কেউ নবী নেই। (তিরমিযি, ইফাবা, ৬ :৩৭৩০, ৩৭৩১; মুসলিম, ইফাবা, ৫ : ৫৯৯৯, ৬০০৩; বোখারী, মিনা. ৫ : ৩৪৩৪)

৭৮.আল্লাহর সঙ্গে কথাঃ

তাঈফ যুদ্ধের দিন রাসূল (ﷺ) আলী (رضي الله عنه)- এর সাথে গোপনে কথা বললে লোকেরা বলাবলি করতে লাগল যে, নবিজী তাঁর চাচাত ভাইয়ের সাথে দীর্ঘক্ষণ গোপনে কথাবার্তা বলছেন, রাসূল (ﷺ) বললেন আমি তাঁর সাথে গোপনে কথা বলিনি, বস্তুতঃ আল্লাহ তা’আলাই তার সঙ্গে কথা বলেছেন। (তিরমিযি, ইফাবা, ৬ : ৩৭২৬)

৭৯.প্রজ্ঞার ঘরঃ

রাসূল (ﷺ) হলেন প্রজ্ঞার ঘর আর আলী (رضي الله عنه) হল এর দ্বার (তিরমিযি, ইফাবা, ৬ঃ৩৭২৩)

৮০.প্রিয় বান্দা ও প্রিয় উম্মতঃ

রাসুল (ﷺ) বলেছেন, আল্লাহর সবচেয়ে “প্রিয় বান্দা আলী (رضي الله عنه)। (তিরমিযি, ইফাবা, ৬ : ৩৭২১)

রাসূল (ﷺ) এর কাছে নারীদের মধ্যে সবচেয়ে প্রিয় “ফাতেমা (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াআলিহী ওয়াসাল্লাম আ.) এবং পুরুষদের মধ্যে আলী (رضي الله عنه)। (তিরমিযি, ইফাবা, ৬ : ৩৮৭৪)


হাদিস ৮১-৯১

৮১.আলী (رضي الله عنه) আমার আমি আলী (رضي الله عنه)'রঃ

রাসুল (ﷺ) বলেছেন, আলী (رضي الله عنه) “আমার আমি “আলী (رضي الله عنه)র। আমার পক্ষ থেকে আমি আর আলী (رضي الله عنه) ছাড়া আর কেউ আমার “দায়িত্ব পালন করতে পারে না(তিরমিযি, ইফাবা, ৬ : ৩৭১৯)

রাসুল (ﷺ) বলেছেন, হে আলী (رضي الله عنه) ! তুমি আমার এবং আমি তোমার জন্য। (তিরমিযি, ইফাবা, ৬ : ৩৭১৬)

৮২.আলী (رضي الله عنه) এর সাথে সত্যঃ

রাসুল (ﷺ) বলেছেন, হে আল্লাহ ! আলী (رضي الله عنه) যে দিকে ঘুরবে হক ও সত্যকেও তুমি সে দিকে ঘুরিয়ে দিও। (তিরমিযি, ইফাবা, ৬ : ৩৭১৪)

৮৩.আলী (رضي الله عنه) কে অসন্তুষ্ট করা মানে ফাতেমাতুজ জাহরা (رضي الله عنه)কে অসন্তুষ্ট ক(رضي الله عنه)

রাসূল (ﷺ) বলেন- ‘যে, ফাতেমা আমার দেহেরই “অংশ । যে তাকে অসুন্তুষ্ট করল, সে নিশ্চয়ই আমাকে “অসন্তুষ্ট করল। (সূত্র : বোখারী, মিনা. ৫ : ৩৪৮৭, মুসলিম, সোলেমানিয়া, ৪০তম অধ্যায়, ৬০৮৯)

৮৪.আলী (رضي الله عنه) এর সদকাহঃ

সূরা মায়দাহ ৫৫নং আয়াত, যেখানে আল্লাহ্‌ রাব্বুল আলামিন মসজিদে নববিতে সংগঠিত একটি ঘটনার প্রশংসায় নাযিল করেছিলেন।

‘তোমাদের ওয়ালি তো হচ্ছেন আল্লাহ্‌ এবং তাঁর রাসুল এবং সেই সকল মুমিনগণ যারা সালাত কায়েম করে এবং রুকু অবস্থায় যাকাত দেয়।’
 
আয়াতটি নাযিলের প্রেক্ষাপট হিসেবে তাফসিরকারক ও ঐতিহাসিকগণ চমৎকার একটি ঘটনার বর্ণনা করেছেন। একবার আল্লাহ’র রাসুল (ﷺ) সাহাবীদের সাথে মসজিদে নববিতে বসে ছিলেন, যখন আলী (رضي الله عنه) সালাত আদায় করছিলেন। এমন সময় এক ভিক্ষুক এসে মসজিদে নববিতে সকলের কাছে ভিক্ষা প্রার্থনা করে নিরাশ হয়েছে এবং আল্লাহ্‌ দরবারে অভিযোগ করছিল যে, ‘ইয়া আল্লাহ্‌! তুমি সাক্ষি থেকো, তোমার নবীর মসজিদ থেকে আমি খালি হাতে ফিরে গেলাম।’ তখন আবুল হাসান (আলী (رضي الله عنه)) রুকু অবস্থায় ছিলেন এবং ভিক্ষুকের দিকে তাঁর হাত বাড়িয়ে দেন এবং ভিক্ষুক তাঁর হাত থেকে রাসুল (ﷺ)’র উপহার দেয়া সুলেমানি আংটি খুলে নিয়ে যায়। এই ঘটনা প্রত্যক্ষ করে রাসুল (ﷺ) আল্লাহ’র দরবারে হাত তুলে দোয়া করেন, ‘হে আল্লাহ্‌! তুমি হারুনকে যেমন মুসার স্থলাভিষিক্ত করেছিলে, তেমনই আলি’কে আমার স্থলাভিষিক্ত করে দাও।’ তখন জিবরাঈল (عليه السلام) সূরা মায়েদার ৫৫ আয়াত নিয়ে হাজির হন।
[তাফিসির-এ-মারেফুল কোরআন, সূরা মায়েদাহ আয়াত ৫৫।]

৮৫.আলী (رضي الله عنه) আল্লাহর অত্যন্ত প্রিয় বান্দাঃ

আনাস ইবনে মালেক বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর জন্য মুরগীর গোশত দ্বারা খাবার প্রস্ত্তত করা হয়েছিল। হুজুর (ﷺ) বললেনঃ

اَللَّهُمَّ ائْتِنِي بِاَحَبِّ خَلْقِكَ إِلَيْكَ يَأْكُلُ مَعِي هَذَا الطَّيْرَ، فَجَاءَ عَلِيٌّ فَأَكَلَ مَعَهُ.

হে আল্লাহ! তোমার সবচেয়ে প্রিয় বান্দাকে পৌঁছে দাও যে আমার সাথে এই মুরগীর গোশত ভক্ষণে অংশ নেবে। এমন সময় আলী (رضي الله عنه) এসে পৌঁছলেন এবং হুজুরের দস্তরখানায় বসে পড়লেন। (সুনানে তিরমিযী ৫:৬৩৬/৩৭২১, ফাযায়িলুস সাহাবা ২:৫৬০/৯৪৫, খাসায়েসে নাসায়ী : ৫, আল মুস্তাদরাক – হাকেম ৩:১৩০-১৩২)

৮৬.আলী (رضي الله عنه) এর বেলায়েতঃ

রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেনঃ

مَنْ أَحَبَّ‌أَنْ يَحْيَا‌حَيَاتِي‌وَ‌يَمُوتَ مَوْتِي‌فَلْيَتَولَّ عَلِيَّ بْنَ أَبِي طَالِبٍ.

যে ব্যক্তি আমার মতো জীবন যাপন করতে এবং আমার মতো মৃত্যুবরণ করতে পছন্দ করে সে যেন আলী (رضي الله عنه) এর বেলায়েতকে মেনে চলে। (আল মুস্তাদরাক-হাকেম ৩:১২৮, কানযুল উম্মাল ১১:৬১১/৩২৯৫৯)

রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেনঃ

عَلِيٌّ أَمِيرُ الْبَرَرَةِ، وَ قَاتِلُ الْفَجَرةِ، مَنْصُورٌ مَنْ نَصَرَهُ، مَخْذُولٌ مَنْ خَذَلَهُ.

আলী (رضي الله عنه) সতকর্মশীলদের নেতা আর ব্যভিচারীদের হন্তা। যে কেউ তাকে সাহায্য করে সে সাহায্য প্রাপ্ত হয় আর যে ব্যক্তি তাকে ত্যাগ করে সে বিফল হয়। (আল মুস্তাদরাক-হাকেম ৩:১২৯, কানযুল উম্মাল ১১:৬০২/৩২৯০৯, আস-সাওয়ায়েকুল মুহরিকা :১২৫, আল ইমাম আলী (رضي الله عنه)-ইবনে আসাকির ২:৪৭৬/১০০৩ ও ৪৭৮/১০০৫)

৮৭.সর্বাগ্রে ইসলাম কবুল ও হাউজে কাওসারে প্রবেশঃ

রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেনঃ

أََوَّلُكُمْ وُرُوداً فِي الْحَوْضِ أََوَّلُكُمْ إِِسْلَاماً عَلِيُّ بْنُ أَبِي طَالِبٍ.

তোমাদের মধ্যে সবার আগে হাউজে কাওসারে প্রবেশ করবে সেই ব্যক্তি যে সবার আগে ইসলাম গ্রহণ করেছে। আর সে হলো আলী (رضي الله عنه)। (আল মুস্তাদরাক-হাকেম ৩:১৩৬, আল ইস্তিয়াব ৩:২৭,২৮, উসুদুল গাবাহ ৪:১৮, তারীখে বাগদাদ ২:৮১)

৮৮.আলী (رضي الله عنه) কে ভালবাসা আল্লাহর নির্দেশঃ

রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেনঃ

إِنَّ اللهَ أَمَرَنِي بِحُبِّ أَرْبِعَةٍ، وَ أَخْبَرَنِي أَنَّهُ يُحِبُّهُمْ. قِيلَ، يَا رَسُولَ اللهِ، سَمِّهِمْ لَنَا. قَالَ: عَلِيٌّ مِنْهُمْ، يَقُولُ ذَلِكَ ثَلَاثاً.

এমন চার ব্যক্তি যারা আল্লাহর কাছে প্রিয় মহান আল্লাহ আমাকে সে চারজনকে ভালোবাসতে নির্দেশ দিয়েছেন।
বলা হলো, হে রাসূলুল্লাহ (ﷺ)! তাদের নামগুলো আমাদের জন্য বলুন। তিনি তিন বার বললেন, আলী (رضي الله عنه) তাদের মধ্যে। (সুনানে তিরমিযী ৫:৬৩৬/৩৭১৮, সুনানে ইবনে মাজাহ ১:৫৩/১৪৯, মুসনাদে আহমাদ ৫:৩৫১, আল মুস্তাদরাক-হাকেম ৩:১৩০)

রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেনঃ

لَوِ اجْتَمَعَ النَّاسُ عَلي حُبِّ عَلِيِّ بْنِ أَبِي طَالِبٍ، لَمَا خَلَقَ اللهُ تَعَالَي النَّارَ.

যদি মানুষ আলী (رضي الله عنه) এর ভালোবাসায় একমত হতো তাহলে মহান আল্লাহ কখনো জাহান্নামকে সৃষ্টি করতেন না। (আল ফেরদৌস ৩:৩৭৩/১৩৫, আল মানাকিব-খারেযমী ৬৭/৩৯, মাকতালুল হুসাইন (رضي الله عنه)-খারেযমী ১:৩৮)

৮৯.উম্মতের সমুদয় কর্মের চাইতে অধিক মূল্যবানঃ

রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেনঃ

لَمُبارِزَةُ عَلِيِّ بْنِ أَبِي طَالِبٍ لِعَمْرِو بْنِ عَبدوُدٍّ يَوْمَ الْخَنْدَقِ، أَفْضَلُ مِنْ عَمَلِ اُمَّتِي إِلَي يَوْمِ الْقِيَامَةِ.

খন্দকের যুদ্ধে আমর ইবনে আবদুউদ্দের বিরুদ্ধে আলী (رضي الله عنه) এর যুদ্ধ নিঃসন্দেহে কেয়ামত পর্যন্ত আমার উম্মতের সমুদয় কর্মের চাইতে অধিক মূল্যবান। (তারীখে বাগদাদ ১৩:১৯, আল মানাকিব-খারেযমী ১০৭/১১২)

৯০.আলী (رضي الله عنه) কে এর জন্য দোয়াঃ

রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেনঃ

اَللّهُمَّ انْصُرْ مَنْ نَصَرَ عَلِيّاً، اَللَّهُمَّ أَكْرِمْ مَنْ أَكْرَمَ عَلِيّاً ، اَللَّهُمَّ أخْذُلْ مَنْ خَذَلَ عَلِيّاً.

হে আল্লাহ! যে ব্যক্তি আলী (رضي الله عنه)কে সাহায্য করে তুমি তাকে সাহায্য করো, যে ব্যক্তি তাকে সম্মান করে তুমি তাকে সম্মান করো আর যে তাকে লাঞ্ছিত করে তুমি তাকে লাঞ্ছিত করো। (কানযুল উম্মাল ১১:৬২৩/৩৩০৩৩, আল মু’জামুল কাবীর – তাবারানী ১৭:৩৯,৮২)

রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেনঃ

يا عَلِيّ، طُوبَي لِمَنْ أَحَبَّكَ وَ صَدَّقَ فِيكَ وَ وَيْلٌ لِمَنْ أَبْغَضَكَ وَ كَذَّبَ فِيكَ.

হে আলী (رضي الله عنه)! সুসংবাদ তার প্রতি যে তোমাকে ভালোবাসে এবং তোমাকে সত্য বলে জানে। আর দুর্ভাগ্য তাদের প্রতি যারা তোমার সাথে শত্রুতা করে এবং তোমার ব্যাপারে মিথ্যা আরোপ করে। (তারীখে বাগদাদ ৯:৭২, ওয়াসীলাতুল মুতাআবেবদীন খ:৫, আল কিস্ম ২:১৬১, উসুদুল গবাহ ৪:২৩)
৯১.আহলুল বাইতকে ভালবাসার ফজিলতঃ

হজরত আলী (رضي الله عنه) বলেন, মহানবী (ﷺ) বলেছেন, “মুনাফিকরা কখনো আলী (رضي الله عنه)কে ভালোবাসবে না, আর মুমিনরা কখনো তাঁকে ঘৃণা করবে না। [সুনানী তিরমিযি, খ–৫, পৃ-৬৩৫, হাদীস-৩৭১৭]

রাসূল (ﷺ) হযরত আলী (رضي الله عنه)র প্রতি ইঙ্গিত করে বলেছেন, “হে আলী (رضي الله عنه) আমার পরে তুমি প্রত্যেক মুমিন নর-নারীর ওপর কর্তৃত্বের অধিকারী। [আল মুস্তাদারক হাকেম, খ–৩, পৃ-১৩৪]

নবী (ﷺ) নির্দেশ দিয়েছেন যে, আহলে বাইতে এর আগে যাওয়ার চেষ্টা করোনা তাহলে ধ্বংস হয়ে যাবে। তাদের থেকে সরে যেয়ো না তাহলে দুঃখ কষ্ট তোমাদের চির সাথী হয়ে যাবে। তাঁদেরকে শিক্ষা দেওয়ার চেষ্টা করোনা তাঁরা তোমাদের থেকে বেশি জ্ঞানী।
সুত্রঃ তাফসিরে দুররে মানসুর, খঃ-২, পৃঃ-৬০; সাওয়ায়েকে মোহরেকা, পৃঃ-১৪৮ ; ইয়া নাবিয়ুল মুয়াদ্দাত, পৃঃ-৩৫৫ ; কানজুল উম্মাল, খঃ-১, পৃঃ- ১৬৮; আল তাবরানি, পৃঃ-৩৪২।

নবী (ﷺ) বলেছেন যে, আলী (رضي الله عنه) রয়েছে সত্যের সাথে এবং সত্য রয়েছে আলী (رضي الله عنه)’র সাথে, ইয়া আল্লাহ্‌ ! সত্যকে সেই দিকে ঘুরিয়ে দাও যেদিকে আলী (رضي الله عنه) যায়।

সুত্রঃ তিরমিজি শরীফ, ৬স্ট খন্ড, পৃষ্ঠা-২৯৮ (ইসঃ ফাঃ বাঃ), সহীহ তিরমিজি ( সব খন্ড একত্রে) পৃস্টা-১৭২,এবং-১০৭২ (২০১০ইং), তাজ কোং, ঢাকা। তারীখে বাগদাদ, খন্ডঃ-১৪, পৃঃ-৩২১। ইয়ানাবিউল মুয়াদ্দাত, পৃঃ-৯১। তাফসীরে কাবির, খঃ-১,পৃঃ-১১১ (মিশর)। জামেউস সাগির, খঃ-২, পৃঃ-৭৪,৭৫,১১০। ইমামত অর সিয়াসাত, খঃ-১,পৃঃ-১১১। আরজাহুল মাতালেব, পৃঃ-৯৮২। তারীখে খোলফা, পৃঃ-১১৬। ইযাযাতুল খিফা ( শাহ্‌ ওয়ালী উল্লাহ্‌ ) খঃ-১,পৃঃ-১৫৮,৫৪৮, কেফায়াতুত তালেব,অধ্যায়-৪৪।

একবার নবীজী (ﷺ) হযরত আলী (رضي الله عنه)কে বললেন , হে আলী (رضي الله عنه) , তোমার মধ্যে এমন কিছু বৈশিষ্ট আছে , যা অন্য কারো মধ্যে নেই , এমনকি আমার মধ্যেও নেই । হযরত আলী (رضي الله عنه) বললেন, হে আল্লার রাসুল (ﷺ) , এ আপনি কি বলছেন ! এও কি সম্ভব , আপনি হলেন , সাইয়্যেদুল মুরসালীন “। নবীজী (ﷺ) মৃদু হেসে তখন বললেন , তোমার বৈশিষ্টগুলি হচ্ছে যেমন তোমার জন্ম পবিত্র কাবা ঘরের অভ্যন্তরে হয়েছে , আমার হয়নি। তোমার শ্বশুর সাইয়্যেদুল মুরসালীন , আমার নয়। তোমার শ্বাশুড়ী হযরত খাদীজাতুল কোবরা সিদ্দীকা , আমার নয়। তোমার স্ত্রী হলেন জান্নাতের সম্রাজ্ঞী , আমার নয়। তোমার দুই পুত্র , ইমাম হাসান ও ইমাম হোসেন জান্নাতের যুবকদের সর্দার , আমার নয়। তাই তুমি কত ভাগ্যবান ও মর্যাদাবান। তবে তোমরা সবাই আমার হতে আর আমি তোমাদের থেকে “।

সূত্র – নবীর (ﷺ) বংশধর ( আঞ্জুমানে কাদেরীয়া , চট্রগ্রাম ) ,পৃ-২২ , আরজাহুল মাতালেব,পৃ-৪১২ , ইয়া নাবিউল মুয়াদ্দাত ,পৃ-৪৬ , শাওয়াহেদুত তানযিল, খন্ড-১, পৃ-৪১৪ , নুরুল আবসার , পৃ-১০২ , আর রিয়াদুন নাদরাহ, খন্ড-৩, পৃ-১৭২।


এক নজরে আরও কিছু হাদিসঃ

“—- যারা কুফরী করেছে তারা বলে , আপনি রাসুল নন। আপনি বলে দিন , আমার ও তোমাদের মধ্যে আল্লাহ এবং ঐ ব্যক্তি যার কাছে কিতাবের ( ইলমুল কিতাব ) জ্ঞান আছে , সাক্ষী হিসাবে যথেষ্ট —- সুুরা রাদ/৪৩।

আবদুল্লাহ বিন সালাম বলেছেন যে , আমি নবীজীকে (ﷺ) প্রশ্ন করলাম যে , এই আয়াতে ঐ ব্যক্তি যার নিকট কিতাবের সমূদয় জ্ঞান রয়েছে , তিনি কে ? নবীজী (ﷺ) উত্তরে বললেন , ঐ ব্যক্তিটি হচ্ছে হযরত আলী (رضي الله عنه) ইবনে আবু তালিব “।
সূত্র – আল কাশফু ওয়াল বায়ান , খন্ড-৪, পৃ-৬০ , আল নাঈম আল মুকিম ,পৃ-৪৮৯ , তাফসীরে কুরতুবি ,খন্ড-৯ পৃ- ৩৩৬ সহ ১৩ টি কিতাবের খন্ড ও পৃষ্ঠার রেফারেন্স দেয়া যাবে।

নবী (ﷺ) বলেছেন, হযরত আলী (رضي الله عنه)র জিকির ( ফজিলত বর্ণনা ) করা ইবাদত।   
সুত্রঃ ইয়ানাবিউল মুয়াদ্দাত, পৃঃ-৪২২, কানজুল উম্মাল, খঃ-৬, পৃঃ-১৫২, মুয়াদ্দাতুল কুরবা, পৃঃ-১১২।

সহী মুসলিমের বর্ণনা অনুসারে বিষয় বস্তু বর্ণিত হয়েছে।]
মাওলা আলী (رضي الله عنه)-এর কাছে একজন ঈসাই ( খ্রিস্টান ) ও একজন ইহুদী এসে এমন এক প্রশ্ন করলো যেন মাওলা আলী (رضي الله عنه) তাদের প্রশ্নের জবাব দিতে একটু সঙ্কোচবোধ করেন।

প্রশ্নটি ছিলোঃ
(১) হে আলী (رضي الله عنه) আপনি বলুনতো সেটা কোন জিনিস যেটা আমরা দেখি কিন্তু খোদা দেখেননা?
(২) আপনারা বলেন কোরআনে সব কিছু মওজুদ (উপস্থিত) আছে, কিন্তু নেই কোনটা?
বাবে ইলম মুচকি হাসি দিয়ে তার জবাবে বললেনঃ
প্রথমত, আল্লাহ স্বপ্ন দেখেননা, কারন আল্লাহর না কখনো ঘুম আসে আর না কখনো তন্দ্রা।
দ্বিতীয়ত হচ্ছে, কোরআনে সব কিছু আছে কিন্তু মিথ্যা কোন কথা নেই।

মহানবী (ﷺ) বলেছেন, “আলী (رضي الله عنه) ঈমানে সর্বাপেক্ষা দৃঢ়পদ, উম্মতের মধ্যে হক ও বাতিলের পার্থক্যকারী এবং মুমিনদের অভিভাবক। [কানযুল উম্মাল, খ–১১, পৃ-৬১৬]

মহানবী (ﷺ) বলেছেন, “মুনাফিকরা কখনো আলী (رضي الله عنه)কে ভালোবাসবে না, আর মুমিনরা কখনো তাঁকে ঘৃণা করবে না। [সুনানী তিরমিযি, খ–৫, পৃ-৬৩৫, হাদীস-৩৭১৭]

মহানবী (ﷺ) বলেছেন, “আলী (رضي الله عنه) এবং তার অনুসারীরা নিঃসন্দেহে কেয়ামতের দিন বিজয়ী। [আল ফেরদৌস, খ–৩, পৃ-৬১, হাদীস-৪১৭২]

রাসূল (ﷺ) হযরত আলী (رضي الله عنه)র প্রতি ইঙ্গিত করে বলেছেন, “হে আলী (رضي الله عنه) আমার পরে তুমি প্রত্যেক মুমিন নর-নারীর ওপর কর্তৃত্বের অধিকারী। [আল মুস্তাদারক হাকেম, খ–৩, পৃ-১৩৪]

মহানবী (ﷺ) হযরত আলী (رضي الله عنه)র প্রতি ইঙ্গিত করে বলেছেন, “হে আলী (رضي الله عنه) আমি হলাম সাবধানকারী আর তোমার মাধ্যমে অন্বেষণকারীরা পথ খুজে পাবে। [তাফসীরের তাবারী, খ–১৩, পৃ-৭২; ইমাম আলী (رضي الله عنه); অনুবাদ-ইবনে আসাকিব, খ–২, পৃ-৪১৭]

মহানবী (ﷺ) হযরত আলী (رضي الله عنه)র প্রতি ইঙ্গিত করে বলেছেন, “জেনে রেখ, সে তোমাদের মাঝে আমার ভাই, আমার উত্তরসূরি এবং আমার স্থলাভিষিক্ত। সুতরাং তার কথা মনোযোগ দিয়ে শুনবে এবং আনুগত্য করবে। [তারীখে তাবারী, খ–২, পৃ-২২১৭]

মাওলা আলী একমাত্র মহাপুরুষ যিনি জন্ম নিয়েছেন কাবাগৃহের মধ্যে। তাঁর জন্মের পূর্বে নবী প্রার্থনা করেছিলেন, হে আল্লাহ, আমাকে ততক্ষণ পর্যন্ত তুলে নিও না যতক্ষণ না আলীর আবির্ভাব ঘটে। (আল বেদায়া ও নেহায়া, পৃ.৩৫৭)

আমার উপর সর্বপ্রথম ঈমান আনয়নকারী এবং আমাকে সর্বপ্রথম সমর্থনকারী হলেন আলী। (আনসাব উল আশরাফ, ২য় খ-, পৃ.৩৬২)

আমার কাছে হাউজে কাউসারে যে আসবে সর্বপ্রথম সে-ই ইসলাম গ্রহণ করেছে (কান্জুল উম্মাল, ২য় খ-, পৃ.২১৪, হাদিস নং ১১৯৩)

নিশ্চয় অটল পথের (সিরাতাল মোস্তাকিম) একটি কাল আছে যখন আলী ব্যতিত কেউ তা পার হতে পারবে না। (তারাবী, পৃ.১২৭)

আবু সাইদ খুদরী থেকে রেওয়ায়েত, আমরা হযরত আলীর প্রতি শত্রুতা থেকেই মোনাফেকদের চিনতে পারতাম। যারা আলীর সাথে শত্রুতা করত তাদের মোনাফেক বলতাম। (তিরমিজি)

পুণ্যবানদের ইমাম (নেতা) ও পাপাচারীদের নিশ্চিহ্নকারী হলেন আলী। (কাঞ্জুল উম্মাল, ১২তম খ-, পৃ.২০৩, হাদিস নং ১১৪৯)

আবু বকর মোহাম্মদ বিন আবদুল্লাহ, মোহাম্মদ বিন বশির, জাকারিয়া, মাসায়াব, সাফিয়া প্রমুখ থেকে রেওয়ায়েত করে আয়েশা বলেন, একদিন সকালে রসুলে করিম একটি কালো চাদরে আবৃত ছিলেন। এমন সময় সেখানে হাসান বিন আলী এলে নবীজি তাঁকে চাদরের মধ্যে টেনে নিলেন। তারপর সেখানে হোসাইন বিন আলী এলেন। নবী করিম তাঁকেও চাদরের মধ্যে নিলেন। তারপর ফাতেমা তুজ জোহরা এলেন। নবী করিম তাঁকেও চাদরের মধ্যে প্রবেশ করালেন। তারপর হযরত আলী এলেন। তাঁকেও নবী সেই চাদরের ভেতর টেনে নিলেন। যখন এই পাঁচজনই চাদরে আবৃত হলেন তখন রসুলে করিম বললেন, এ পাঁচজনই আমার আহলে বাইত অর্থাৎ আদর্শিক গৃহের অধিবাসী। (মুসলিম, ২য় খ-, পৃ.২৮৩)

বীরোত্তম মহাপুরুষ হলেন আলী, তাঁর তলোয়ার জুলফিকার। (আল বেদায়া ও নেহায়া, ৭ম খ-, পৃ.৩৩৭)

জামি ইবনে ওমায়ের বলেছেন যে, একদিন আমি আমার ফুফুর সাথে আয়েশার কাছে গিয়ে জানতে চাইলাম, রসুলে করিম কাকে সবচেয়ে অধিক ভালবাসেন। তিনি বললেন, রসুল ফাতেমাকে খুব ভালবাসেন। আবার প্রশ্ন করা হলো, আর পুরুষদের মধ্যে? তখন তিনি বললেন, তাঁর স্বামী হযরত আলীকে তিনি সবচেয়ে বেশি ভালবাসেন। (তিরমিজি, পৃ. ২৭৬)


অধ্যায় ৪: মানাকিবে খাতুনে জান্নাত মা ফাতেমা (عليه السلام)

খাতুনে জান্নাত হযরত ফাতেমা (عليه السلام) এর গুরুত্বঃ

❏ হাদীস ১:

 عن مسروق: حدثتني عائشة أم المؤمنين رضي الله عنها، قالت: قال رسول الله صلى الله عليه وسلم: يا فاطمة! ألا ترضين أن تكوني سيدة نساء المؤمنين، أو سيدة نساء هذه الأمة

মাশরুক মুমিন হযরত আয়েশা (رضي الله عنها) থেকে বর্ণনা করেছেন যে, মহানবী (ﷺ) [হযরত ফাতেমা (আঃ) কে] বলেছেন, “নারীদের, আপনি কি খুশি নন যে, আপনি সমস্ত মুমিন মহিলারাই বা এই উম্মতের নারীদের অবিভাবক (নেত্রী)? "

 তথ্যসূত্রঃ
●বুখারী, আস-সহিহ (৫: ২৩১৭ # ৫৯২৮)
●মুসলিম, আস-সহিহ (৪: ১৯০৫ # ২৪৫০)
●নাসাঈ, ফাদাইল-উস-সাহাবাহ (পৃষ্ঠা.৭৭ # ২৬৩)
●মুসনাদে আহমাদ, ফাদাইলুস সাহাবাহ (২: ৬২৬২২ # ১৩৪২)
●তায়ালিসি, আল-মুসনাদ (পৃষ্ঠা.১৯৬ # ১৩৭৩)
●ইবনে সাদ, তাবাকাত-উল-কুবরা (২: ২ :৭)
●দওলবী, আজ-জুড়রিয়াতুত-তাহিরাহ (পৃষ্ঠা.১০১,১০২ # ১৮৮)
●আবু নুয়াইম, হিলিয়াতুল আউলিয়া ওয়া তাবাকাত-উল-আসফিয়া (২:৩৯, ৪০)
●যাহাবী, সিয়ার আলম আন-নুবালা (২: ১৩০)

 ❏ হাদীস ২:

 عن أبي هريرة رضي الله عنه أن رسول الله صلى الله عليه وسلم قال: إن ملكا من السماء لم يكن زارني، فاستأذن اللهفي زيارتي، فبشرني أو أخبرني: أن فاطمة سيدة نساء أمتي

আবু হুরায়রা (رضي الله عنه) বর্ণনা করেন যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “আকাশের একজন ফেরেশতা আমাকে দেখেননি, তিনি আল্লাহর নিকট আমাকে দেখার অনুমতি চেয়েছিলেন; তিনি আমার নিকট এ সুসংবাদ নিয়ে এসেছেন যে, ফাতেমা (سلام الله علیھا) আমার উম্মতের সমস্ত মহিলাদের নেত্রী। ”

 তথ্যসূত্রঃ
●বুখারী, তারিখুল-কবির (১: ২৩২ # ৮২৮)
●তাবারানী, আল-মুজাম-উল-কবির (২২: ৪০৩ # ১০০৬)
●হাইসামি মাজমা-উয-জাওয়াইদে (৯: ২০১২) এ রীতিটি তাবারানী বর্ণনা করেছেন। 
●যাহাবী, সিয়ার আলম আন-নুবালা (২: ১২৭)
●মিজি, তাহযিবুল কামাল (২ ২৬: ৩৯১)
●তিরমিজি, আল জামি-উস-সহীহ (৫: ৬০৬০০ # ৩৭৮১)
●নাসাই, আস-সুনান-উল-কুবরা (৫: ৮০,৯৫ # ৮২৯৮,৮৩৬৫)
●নাসাই, ফাদাইল-উস-সাহাবাহ (পৃষ্ঠা.৫৮,৭২ # ১৯৩,২৬০)
●আহমাদ বিন হাম্বল, আল-মুসনাদ (৫: ৩৯১)
●আহমাদ বিন হাম্বল, ফাদাইল-উস-সাহাবাহ (২: ৭৮৮ # ১৪০৬)
●ইবনে আবী শায়বাহ, আল-মুসান্নাফ (৬: ৩৮৮ # ৩২২৭১)
●হাকিম, আল-মুস্তাদরাক (৩: ১৬৪ # ৪৭২১,৪৭২২)
●তাবারানী, আল-মুজাম-উল-কবির (২২: ৪০২ # ১০০৫)
●বায়হাকী, আল-ইতিকাদ (পৃষ্ঠা ৩৩২)
●তাবারী, দাখাইরুল-উকবা (পৃষ্ঠা ২২৪)

হুযাইফা (رضي الله عنه) থেকে বর্ণনা করেছেন যে, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) তাকে বলেছেন : কিছুক্ষণ পূর্বে যে আমার নিকট এসেছিল তাকে কি তুমি দেখেছো? সে ছিল একজন ফেরেশতা; যে এর পূর্বে কখনই পৃথিবীতে অবতীর্ণ হয়নি। সে আমাকে সালাম ও এ সুসংবাদ প্রদানের জন্য মহান আল্লাহর নিকট আবেদন জানিয়েছে যে, ফাতেমা বেহেশতের নারীদের সম্রাজ্ঞী এবং হাসান ও হুসাইন বেহেশতের যুবকদের সর্দার।
[মুসনাদে আহমাদ ইবনে হাম্বাল ও তিরমিজী]

রাসূলুল্লাহ (ﷺ) ইরশাদ করেন,
« ﺍﺭﺑﻊ ﻧﺴﻮﺓ ﺳﯿﺪﺍﺕ ﻋﺎﻟﻤﻬﻦ، ﻣﺮﯾﻢ ﺑﻨﺖ ﻋﻤﺮﺍﻥ ﻭ ﺁﺳﯿﺔ ﺑﻨﺖ ﻣﺰﺍﺣﻢ ﻭ ﺧﺪﯾﺠﺔ ﺑﻦ ﺧﻮﯾﻠﺪ ﻭ ﻓﺎﻃﻤﻪ ﺑﻨﺖ ﻣﺤﻤﺪ ‏( ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﯿﻪ ﻭ ﺁﻟﻪ ‏) ﻭ ﺍﻓﻀﻠﻬﻦ ﻋﺎﻟﻤﺎ ﻓﺎﻃﻤﻪ ‏( ﺳﻼﻡ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﯿﻬﺎ ».
“চারজন নারী বিশ্বের নারীদের সর্দার, 
১) ইমরানের কন্যা মারইয়াম (عليه السلام) [হযরত ঈসা (عليه السلام) এর মাতা], 
২) মুযাহিমের কন্যা আসিয়া (عليه السلام) [ফেরাউনের স্ত্রী], 
৩) খোওয়ালাদের কন্যা খাদিজা (عليه السلام) [মহানবী (ﷺ) এর স্ত্রী] এবং 
৪) মুহাম্মাদ (ﷺ) এর কন্যা ফাতেমা (عليه السلام), যিনি হচ্ছেন হচ্ছেন এদের মধ্যে সর্বশ্রেষ্ট। [মুহীবুদ্দীন তাবারী]

 ❏ হাদীস ৫:

মহানবী (ﷺ) ইরশাদ করেন,
« ﺍﻭﻝ ﺷﺨﺺ ﯾﺪﺧﻞ ﺍﻟﺠﻨﺔ ﻓﺎﻃﻤﺔ ﺑﻨﺖ ﻣﺤﻤﺪ ‏( ﺹ )».
অনুবাদ : “সর্বপ্রথম যে ব্যক্তি জান্নাতে প্রবেশ করবেন তিনি হচ্ছেন মুহাম্মাদ (ﷺ) এর কন্যা ফাতেমা।
তথ্যসূত্রঃ
১.যাহাবী মিজানুল-ইতিদাল (৪: ৩৫১) 
২.আসকালানী লিসানুল মিজানে (৪:১:১৬) 
৩.কাজবিনিঃ তাদউইন ফী আখবার কাযউইন (১: ৪৭৭) ২ হিন্দি, 
৪.কাঞ্জুল উম্মাল (১২: ১১০ # ৩৪২৩৪)

❏ হাদীস ৬:

আলী (رضي الله عنه) বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) ইরশাদ করেন, 
-ইয়া রাসূলআল্লাহ্ (ﷺ)! আপনি কি হাশরেও আপনার উটে সওয়ার হবেন? 
-না। হাশরের ময়দানে আমি বোরাকের উপর সওয়ার হব, আর ফাতিমা আমার উট উজবার উপর।"

তথ্যসূত্রঃ
১.ইবনে আসাকির, তারীখ দিমাশক আল-কাবীর (১০: ৩৫৩)
২.ইবনে আসাকির, তারীখ দিমাশক আল-কাবীর (১০: ৩৫২,৩৫৩)
৩.হিন্দি কানজ-উল-উম্মাল (১১: ৪৯৯ # ৩২৩৪০) আবু নুয়াম ও ইবনে আসাকির তা বর্ণনা করেছেন।
৪.দায়লামী, আল মুসনাদুল ফিরদাউস (১: ৪৪ # ১০৭)
৫.আজাবলানী কাশফুল খিফা (১: ২৩) 
৬.দায়লামী আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাসের মাধ্যমে মারফু সূত্রে এটি বর্ণনা করেছেন।

❏ হাদীস ৭:

আবু হুরাইরা (رضي الله عنه) বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) ইরশাদ করেন, হাশরের দিনে নবীগণ নিজ নিজ সওয়ারে চড়বেন। সালিহ (عليه السلام) তাঁর সেই উটেই সওয়ার হবেন। আমি সওয়ার হব বোরাকে, যার একেকটা পদক্ষেপ চোখ যতদূর দেখতে পায় ততদূর চলে, আর আমার সামনে রাখা হবে ফাতিমাকে। 
[হাকিম আল-মুস্তাদরাক (৩: ১৬৬ # ৪৭২৭) ইমাম মুসলিমের শর্ত অনুসারে বর্ণনাটি সহীহ (যথাযথ)]

❏ হাদীস ৮:

আলী (رضي الله عنه) বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) ইরশাদ করেন, পুনরুত্থানের দিনে আমার মেয়ে সম্মানের পোশাক পরে উঠবেন। যে পোশাক আবে হায়াত দিয়ে ধোয়া হবে। তাঁকে দেখে সমস্ত সৃষ্টি স্তব্ধ হয়ে যাবে। তখন তাঁর গায়ে চড়ানো হবে জান্নাতের পোশাক। পোশাকের প্রতি স্তরে থাকবে আরো হাজার স্তর। প্রতি স্তরে সবুজ অক্ষরে লেখা থাকবে:
মুহাম্মাদ (ﷺ)’র কন্যাকে সবচেয়ে ভালভাবে জান্নাতে নিয়ে যাও। মহা সম্মানে, উচ্চ বরেণ্যতায়, গভীর সম্ভ্রমে।
তাঁকে ঘিরে রাখবে জান্নাতের ৭০ হাজার অসূর্যস্পর্শা নারী। [তাবারী, দাখাইরুল-উকবা পৃ ৯৫]

❏ হাদীস ৯:

রাসূলুল্লাহ (ﷺ) ইরশাদ করেন, 
হাশরের দিনে আল্লাহ্’র কুরসির গভীর থেকে (অন্য কিছু রেওয়ায়েতে, পর্দার আড়াল থেকে) ঘোষক ঘোষণা করবে, হে মানুষ! মাথা নত করে দাও। অবনত করো চোখ! মুহাম্মাদ (ﷺ)’র কন্যা ফাতিমা (رضي الله عنه) সেতু (পুলসিরাত) পেরিয়ে যাবেন। তাঁর সাথের ৭০ হাজার জান্নাতি নারী সত্ত্বা আলোর চমকের মত হবে। 

তথ্যসূত্রঃ
●হাকিম, আল-মুস্তাদরাক (৩: ১৬৬ # ৪৭২৮)
●মুহিব্ব তাবারি, দাখাইর-উল-উকবা (পৃষ্ঠা ৯৯)
●ইবনে আসির, উসাদ-উল-গাবাহ ফী-মারিফাহ আশ-সাহাবাহ (২২০)
●আজলভানী, কাশফ-উল-খিফা (১: ১০১ # ২৩৩)
●হাকিম, আল-মুস্তাদরাক (৩: ১৭৫ # ৪৭৫৭)
●আহমদ বিন হাম্বল, ফাদাইল-উস-সাহাবাহ (২: ৬৩৬৩৬৩ # ১৩৪৪)
●তাবারানী, আল-মুজাম-উল-কবির (১: ১০৮ # ১৮০)
●তাবারানী, আল-মুজাম-উল-কবির (২২: ৪০০ # ৯৯৯)
●তাবারানী, আল-মুজাম-উল-আওসাত (৩: ৩৫ # ২৩৮৬)
●হায়সামি, মাজমা-উজ-জাওয়াইদ (৯: ২১২)
●খতিব বাগদাদী, তারিখ বাগদাদ (৮: ১৪২)
●মুহিব্ব তাবারি, দাখাইর-উল-উকবা ফী মানাকিব ধ-ইল-কুরবা (পৃষ্ঠা ৯৯)
●আজলুনী, কাশফ-উল-খিফা ওয়া মুজিল-উল-ইলবাস (১: ১০১ # ২৩৩)
●মুত্তাকী আল হিন্দি, কাঞ্জুল-উম্মাল, (১২: ১০৬ # ৩৪২১১), (১২: ১০৬ # ৩৪২১০) 
●খতিব বাগদাদী কিছুটা ভিন্ন শব্দের সাথে আয়েশার মাধ্যমে তাখ বাগদাদে (৮: ১৪১) বর্ণনা করেছেন।
●হায়সামিঃ সাওয়াইক-উল-মুহারিকাহ (২: ৫৫৭) 
●হযরত আবু বকর, আল-জিলানিয়তে আইয়ুব আনসারী (رضي الله عنه) এর সূত্রে বর্ণনা করেছেন।
●মুহিব্ব তাবারী দাখাইর-উল-উকবা (পৃষ্ঠা ৯৯) 
●মুত্তাকী আল হিন্দি, কাঞ্জুল উম্মাল (১২: ১০৫,১০৬ # ৩৪২০৯, ৩৪২১০)
●ইবনে জাওযিঃ তাযকিরাতুল খাওয়াসে (পৃ। ২৭৯৯) বর্ণনা করেছেন।
●উমর (رضي الله عنه) সূত্রে হায়সামিঃ সাওয়াইকুল-মুহরিকাহ (২: ২৫৭) -তে আবু বকর আল-গিলানিয়তে বর্ণনা করেছেন।
●মানাভি, ফয়যুল কাদির (১: ৪২০,৪২৯)

❏ হাদীস ১০:

উম্ম সালমা (رضي الله عنه) বলেন:
ফাতিমা (رضي الله عنه) শেষ সময়ে অসুস্থ থাকাকালে আমি তাঁর দেখাশোনা করেছি। সেদিন সকালে অবস্থা একটু ভাল ছিল, আলী (رضي الله عنه) কাজে ছিলেন। ফাতিমা (رضي الله عنه) বললেন, 
-ও মা! আমার গোসলের জন্য কিছুটা পানি আনুন। যতটুকু দেখলাম তিঁনি সবচে ভালভাবে গোসল করলেন।
-ও মা! আমাকে নতুন পোশাক এনে দিন। আমি এনে দিলাম। তিনি পরিধান করলেন।
-ও মা! আমার বিছানা ঘরের মধ্যখানে করে দিন। আমি তাই করলাম।
এরপর ফাতিমা শুয়ে পড়লেন। মুখ করলেন কা’বার দিকে। হাত রাখলেন গালের নিচে। বললেন,
-ও মা! আমার চলে যাবার সময় হয়েছে। আর আমি নিজেকে ভালভাবে পূতপবিত্র করেছি। কেউ যেন আমার পোশাক স্পর্শ না করে।" ঠিক সেই অবস্থাতেই ফাতিমা (رضي الله عنه) চলে গিয়েছিলেন।

তথ্যসূত্রঃ
১.আহমদ বিন হাম্বল, ফাযাইল-উস-সাহাবাহ (২: ৬২৯,৭২৫ # ১০৭৪, ১২৪৩)
২.যুলাবী, আজ-জুড়রিয়াহ আত-তাহিরাহ (পৃষ্ঠা.১১৩)
৩.হায়থামি, মাজমা-উজ-জাওয়াইদ (৯: ২১১)
৪.জায়েলাই, নাসব-উর-রায় (২: ২৫০)
৫.মুহিব্ব তাবারী, দাখাইর-উল-উকবা ফী মানাকিবুল কুরবা (পৃষ্ঠা ১০৩)
৬.ইবনে আসির, উসাদ-উল-গাবাহ ফী মারিফাহ আশ-সাহাবাহ (২২১)


হাদিস পর্যালোচনাঃ হযরত ফাতেমা (عليه السلام) আমার (ﷺ) সত্তার অংশ

হাদিস পর্যালোচনাঃ হযরত ফাতেমা (عليه السلام) আমার (ﷺ) সত্তার অংশ। যে তাকে অসন্তুষ্ট করল, সে আমাকেই অসন্তুষ্ট করলঃ

❏ হাদীস ১:

 عن المسور بن مخرمة: رضي الله عنه: أن رسول الله صلى الله عليه وسلم قال: فاطمة بضعة مني، فمن أغضبها أغضبني

মিসওয়ার ইবনে মাখরামাহ (رضي الله عنه) বর্ণনা করেন যে, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন, “ফাতেমা আমার একটি অংশ। সুতরাং, যে কেউ তাঁকে ক্রোধান্বিত করে সে আমাকে ক্রোধান্বিত করে।"

 তথ্যসূত্রঃ
●বুখারী, আস-সহিহ (৩: ১৩৬১ # ৩৫১০)
●বুখারী, আস-সহিহ (৩: ১৩৭৪ # ৩৫৫৬)
●মুসলিম, আস-সহিহ (৪: ১৯০৩ # ২৪৪৯)
●ইবনে আবী শায়বাহ আল-মুসান্নাফে (৩৮৮ # ৩২২৬৯) আলি (كرم الله وجهه) এর মাধ্যমে বর্ণনা করেছেন।
●শায়বানী, আল-আহাদ ওয়াল-মাসানী (৫: ৩৬১, ২৯৫৪)
●তাবারানী, আল-মুজাম-উল-কবির (২২: ৪০৪ # ১০১৩)
●হাকিম, আল-মুস্তাদরাক (৩: ১৭২ # ৪৭৪৭)
●বায়হাকী, আস-সুনান-উল-কুবরা (১০: ২০১)
●দায়লামী, মুসনাদুল ফিরদাওস (৩: ১৪৫ # ৪৩৮৯)
●আবু আওয়ানা, আল-মুসনাদ (৩: ৭০ # ৪২৩৩)

❏ হাদীস ২:

বুখারী বর্ণনা করেছেন : আবুল ওয়ালিদ, ➠ আবু উয়াইনা থেকে ➠ তিনি আমর ইবনে দিনার থেকে ➠ তিনি ইবনে মুলাইকা থেকে ➠ তিনি মিসওয়ার ইবনে মাখরামা (رضي الله عنه) থেকে বর্ণনা করেছেন যে, মহানবী (ﷺ) বলেছেন, 

« ﻓﺎﻃﻤﻪ ﺑﻀﻌﺔ ﻣﻨﻰ ﻓﻤﻦ ﺍﻏﻀﺒﻬﺎ ﺍﻏﻀﺒﻰ ».

‘ফাতেমা আমার সত্তার অংশ। যে কেউ তাকে অসন্তুষ্ট ও ক্রোধান্বিত করল, সে আমাকেই অসন্তুষ্ট ও ক্রোধান্বিত করল।’
(১) বুখারীঃ আস-সহীহ, ‘মানাকিবুল মুহাজিরিন ওয়া ফাযলুহুম’ অধ্যায়, ৩য় খন্ড, পৃ.১৩৬১, ১৩৬৪, ১৩৭৪, হাদীস: ৩৫১০, ৩৫২৩, ৩৫৫৬; এবং ৫ম খন্ড, পৃ.২৩০৩, হাদীস: ৪৯৩২।
(২) মুসলিমঃ আস-সহীহ, ৪/১৯০৩, হাদীস: ২৪৪৯।

❏ হাদীস ৩:

মুসলিম বর্ণনা করেছেন : আবু মুয়াম্মার ইসমাঈল ইবনে ইবরাহীম আল হাযালি,➠সুফিয়ান থেকে,➠তিনি ইবনে আবি মুলাইকা থেকে ➠ আবি মুলাইকা মিসওয়ার ইবনে মাখরামা (رضي الله عنه) সূত্রে বর্ণনা করেছেন যে, আল্লাহর রাসূল (ﷺ) বলেছেন : ‘ফাতেমা আমার অস্তিত্বের অংশ,যে তাকে কষ্ট দিল সে আমাকেই কষ্ট দিল।’
[মুসলিমঃ আস-সহীহ, ৭/১৪১, হাদীস: ৬৪৬১]

❏ হাদীস ৪:

হাকিম স্বীয় সূত্রে মিসওয়ার ইবনে মাখরামা (رضي الله عنه) থেকে সহীহ সূত্রে বর্ণনা করেছেন : 
‘ফাতেমা আমার অস্তিত্বের অংশ। যা তাকে অসন্তুষ্ট করে আমিও তাতে অসন্তুষ্ট হই এবং যা তাকে আনন্দিত করে আমিও তাতে আনন্দিত হই।’
[মুসতাদরাক আলাস সাহীহাইন, ৩য় খণ্ড,পৃ. ১৫৮, দারুল ফিকর, বৈরুত, ১৩৯৮ হিজরি।]

❏ হাদীস ৫:

হাকেম তাঁর ‘মুসতাদরাক’ গ্রন্থে বর্ণনা করেছেন : আবুল আব্বাস মুহাম্মাদ ইবনে ইয়াকুব,➠হাসান ইবনে আলী ইবনে আফ্ফান আল আমেরী থেকে,➠তিনি কুফার অধিবাসী মুহাম্মাদ ইবনে আলী ইবনে দুহাইম থেকে,➠তিনি আহমাদ ইবনে হাতিম থেকে,➠তিনি তাঁর পিতার সূত্রে ➠আলী ইবনে হুসাইন থেকে এবং তিনি তাঁর পিতার সূত্রে ➠ আলী ইবনে আবি তালিব (رضي الله عنه) থেকে বর্ণনা করেছেন যে, রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ) ফাতেমাকে বলেন : 
« ﯾﺎ ﻓﺎﻃﻤﺔ ﺍﻥ ﺍﻟﻠﻪ ﯾﻐﻀﺐ ﻟﻐﻀﺒﮏ ﻭ ﯾﺮﺿﻰ ﻟﺮﺿﺎﮎ ».
"নিশ্চয়ই আল্লাহ্ তোমার ক্রোধে ক্রোধান্বিত হন এবং তোমার সন্তুষ্টিতে সন্তুষ্ট হন।"
[হাকেম নিশাবুরী, আল- মুসতাদরাক আলাস সাহীহাইন, ৩য় খণ্ড, পৃ. ১৫৩]
হাকেম এ হাদীসটির টীকায় বলেন : ‘হাদীসটি সহীহ সূত্রে বর্ণিত। 

❏ হাদীস ৬:

যাহ্হাক বর্ণনা করেছেন : আবদুল্লাহ্ ইবনে সালিম আল-মাফলুয,➠ যিনি সর্বজন প্রশংসিত ব্যক্তি ছিলেন,➠ তিনি হুসাইন ইবনে যাইদ ইবনে আলী ইবনে হুসাইন ইবনে আলী ইবনে আবি তালিব থেকে,➠ তিনি উমর ইবনে আলী ইবনে জাফর ইবনে মুহাম্মাদ থেকে,➠ তিনি তাঁর পিতার সূত্রে আলী ইবনে হুসাইন ইবনে আলী ইবনে আলী (رضي الله عنه) থেকে বর্ণনা করেন যে, মহানবী (ﷺ) ফাতেমা (رضي الله عنه) কে বলেন : 
‘নিশ্চয়ই আল্লাহ্ তোমার ক্রোধে ক্রোধান্বিত এবং তোমার সন্তুষ্টিতে সন্তুষ্ট হন।’
[আল-আহাদ ওয়াল মাসানী, ৫ম খণ্ড, পৃ. ৩৬৩]

❏ হাদীস ৭:

তাবারানী বর্ণনা করেন : মুহাম্মাদ ইবনে আবদুল্লাহ্ আল হাদরামী,➠আবদুল্লাহ্ ইবনে মুহাম্মাদ ইবনে সালিম আল-কাবযাজ হতে,➠তিনি হুসাইন ইবনে যাইদ ইবনে আলী হতে,➠তিনি আলী ইবনে উমর ইবনে আলী হতে,➠তিনি জাফর ইবনে মুহাম্মাদ হতে,➠তিনি তাঁর পিতা হতে,➠তিনি আলী ইবনে হুসাইন হতে,➠তিনি হুসাইন ইবনে আলী (رضي الله عنه) হতে, ➠তিনি আলী (رضي الله عنه) থেকে বর্ণনা করেন যে, রাসূলুল্লাহ্ ফাতেমা (رضي الله عنه) কে বলেন : 
‘নিশ্চয় আল্লাহ্ তোমার ক্রোধে ক্রোধান্বিত হন এবং তোমার সন্তুষ্টিতে সন্তুষ্ট হন।’
[আল-মোজামুল কাবীর, ১ম খণ্ড, পৃ. ১০৮]

➡হাইসামী বলেন : হাদীসটি তাবারানী হাসান সূত্রে বর্ণনা করেছেন। [মাজমাউয যাওয়ায়িদ ওয়া মানবাউল ফাওয়ায়িদ, ৯ম খণ্ড, পৃ. ২০৩]

➡সালিহী আশ-শামীও হাদীসটির সনদকে হাসান বলেছেন। [সুবুলুল হুদা ওয়ার রাশাদ ফি সিরাতি খাইরিল ইবাদ, ১১তম খণ্ড, পৃ. ৪৪]

❏ হাদীস ৮:

আহমদ ইবনে শুয়াইব নাসায়ী তাঁর ‘ফাযায়েল’ গ্রন্থে মিসওয়ার ইবনে মাখরামা (رضي الله عنه) থেকে বর্ণনা করেন যে, মহানবী (ﷺ) বলেছেন : 
‘নিশ্চয় ফাতেমা আমার অস্তিত্বের অংশ, যে তাকে ক্রোধান্বিত করল, সে আমাকেই ক্রোধান্বিত করল।
[নাসায়ী, ফাযায়েলুস সাহাবা, পৃ. ৭৮, দারুল কুতুব আল- ইলমিয়া, বৈরুত।]

❏ হাদীস ৯:
 
আহমাদ ইবনে হাম্বাল তার নিজস্ব সনদে আল্লাহর রাসূল (ﷺ) হতে বর্ণনা করেছেন যে, তিনি বলেন :
« ﺍﻧﻤﺎ ﻓﺎﻃﻤﺔ ﺑﻀﻌﺔ ﻣﻨﻰ ﯾﻮﺫﯾﻨﻰ ﻣﺎ ﺍﺫﺍﻫﺎ ﻭ ﯾﻨﺼﺒﻨﻰ ﻣﺎ ﺍﻧﺼﺒﻬﺎ ».
অনুবাদ : “ফাতেমা আমার শরীরের অংশ স্বরূপ, যা তাকে কষ্ট দেয় তা আমাকে কষ্ট দেয়, আর যা কিছু তাকে অসন্তুষ্ট করে তা আমাকেও অসন্তুষ্ট করে। [মুসনাদে আহমদ]

❏ হাদীস ১০:

হযরত মোহাম্মদ (ﷺ) বলেছেন, "নিশ্চয় ফাতেমা আমারই একটি অংশ।”

 তথ্যসূত্রঃ
●বাজজার, আল-মুসনাদ (২: ১৬০ # ৫২৬)
●হাইসামি, মাজমাউয জাওয়াইদ (৪: ২৫৫)
●হাইসামি, মাজমাউয জাওয়াইদ (৯: ২০২)
●আবু নুয়াইম, হিলিয়াত-উল-আউলিয়া ওয়া তাবাকাত-উল-আসফিয়া (২:৪০, ৪১,১৭৫)
●দারকুতনি, সুলাত হামযাহ (পৃষ্ঠা.২৮০ # ৪০৯)

❏ হাদীস ১১:

রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ) বলেন : ‘নিশ্চয় ফাতেমা আমার মাংসপিণ্ড।’
[আবদুর রহমান আস সোহাইলী, আর-রাউজুল আনিফ ফি শারহিস সিরাতিন্নাবাভীয়া লি ইবনে হিশাম, ২য় খণ্ড, পৃ. ২৮৮]

————®————

প্রথমটি হলো ‘ফাতিমা আমার অংশ বা আমার অস্তিত্বের অংশ’। হাদীসটিতে ‘বাদআ’ বা ‘বিদআ’ শব্দ ব্যবহৃত হয়েছে। ইবনে কাসীর বলেন : ‘বাদআতুন’ অর্থ মাংসের টুকরা বা অংশ। কখনও কখনও এটি ‘বিদআতুন’ও উচ্চারিত হয়ে থাকে। উভয় ক্ষেত্রেই বাক্যটির অর্থ ‘সে আমার অংশ।’ যেহেতু কারো মাংসের টুকরা তার দেহের ও তার সত্তার অংশ বলে গণ্য সেহেতু হাদীসটির ‘বিদআতুন’ শব্দকে অস্তিত্বের অংশ বা সত্তার অংশ অর্থ করা যায়।
[আন-নিহায়া ফি গারীবিল হাদীস, ১ম খণ্ড, পৃ. ১৩৩,দারুল কুতুব আল-ইলমিয়া, বৈরুত, ১৪২৩ হিজরি।]

ইবনে মানযুর বলেন : ‘অমুক অমুকের অংশ, এর অর্থ সে তার অনুরূপ।’ অতঃপর তিনি আলোচ্য হাদীসটিকে উদাহরণ হিসেবে উল্লেখ করেছেন।
[লিসানুল আরাব,‘বাদ’ ধাতুমূল।]


মা ফাতেমা (رضي الله عنه) এর জানাযা ও দাফনঃ

রাসূল (ﷺ) এর ইন্তেকালের পর হযরত সাইয়্যেদা ফাতিমা (رضي الله عنه) একেবারে ভেঙ্গে পরেন। সব সময় পেরেশান থাকতেন। সর্বক্ষণ অপেক্ষায় ছিলেন, কখন রাসূল (ﷺ) সেই ভবিষ্যৎবাণী তথা সর্বপ্রথম রাসূল (ﷺ) এর সাথে হযরত ফাতেমাই মিলিত হবেন বাস্তবায়িত হবে। কাজকর্মে একদম মন বসতো না। ছেলে-মেয়ে ছিল সবই ছোট ছোট। কিন্তু তাদের দেখাশোনা করতে অক্ষম হয়ে পড়েছিলেন। তখন হযরত আসমা বিনতে উমাইস জান্নাতী মহিলাদের সর্দর হযরত ফাতিমা (رضي الله عنه) এর পরিবারের দেখাশোনার মহান সৌভাগ্য লাভ করেন। তিনি নিষ্ঠার সাথে ফাতিমা (رضي الله عنه) এর পরিবারের দেখাশোনা করতে থাকেন।

আসমা বিনতে উমাইস ছিলেন রাসূল (ﷺ) এর আপন চাচাত ভাই হযরত যাফর তাইয়্যার (رضي الله عنه) এর স্ত্রী। হযরত যাফর (رضي الله عنه) যখন মুতার যুদ্ধে শাহাদত বরণ করেন। তখন আসমা বিনতে উমাইসকে প্রথম খলীফা হযরত আবু বকর (رضي الله عنه) বিবাহ করেন। তিনিই হযরত ফাতিমা (رضي الله عنه) এর পরিবারের পূর্ণ দেখভাল করতে থাকেন।

যেহেতু হযরত ফাতিমা (رضي الله عنه) খুবই লজ্জাবতী ছিলেন। তাই তিনি হযরত আসমা বিনতে উমাইস (رضي الله عنه) কে বলে রাখলেন যে, যেহেতু খোলাভাবে জানাযা
পড়ালে পর্দার মাঝে কমতি আসে। যা আমি খুবই অপছন্দ করি। তাই আমি চাই আমার জানাযা নিয়ে যাওয়ার সময় এবং দাফন করার সময় পূর্ণ পর্দা রক্ষা করা হবে। এ কারণে তুমি এবং আমার স্বামী ছাড়া আমার গোসল করানোর সময় আর কারো সহযোগিতা
নিও না। আর রাতের বেলায়ই যেন জানাযা নিয়ে যাওয়া হয়। হযরত আসমা (رضي الله عنه) বললেন, হে আল্লাহর রাসূলের (নয়নমনি) কন্যা ! আমি হাবশায় দেখেছি যে, জানাযার উপর গাছের শাখা বেঁধে উপরে কাপড় দিয়ে ঢেকে দেয়া হয়। এর দ্বারা ঢুলির মত একটি আকৃতি বানানো হয়ে থাকে। এটা বলে হযরত আসমা (رضي الله عنه) খেজুরের কিছু ঢাল আনালেন। তারপর এগুলোকে একত্র করে এর উপর কাপড় টাঙ্গিয়ে হযরত ফাতিমা (رضي الله عنه) কে দেখালেন। এ দৃশ্য দেখে হযরত ফাতিমা (رضي الله عنه) খুবই খুশি হয়ে বললেন, আরে! এতো খুবই সুন্দর পদ্ধতি! মা ফাতিমা (رضي الله عنه) এর মৃত্যুর পর ঠিক এভাবেই ঢাল দিয়ে তার উপর কাপড় টাঙ্গিয়ে রাতের বেলাই দাফন কাফন সম্পন্ন করা হয়।

তথ্যসূত্রঃ
১. আসাদুল গাবা-৫/৫২৪,
২. তবকাতে ইবনে সাদ-৮/২৫৭,
৩. তারীখে আহলে বাইতে আতহার-৬৭৭-৬৭৯


হযরত ফাতিমাতুজ জাহরা (رضي الله عنه) এর জানাযার নামায কে পড়িয়েছিল?

হযরত ফাতিমাতুজ জাহরা (رضي الله عنه) এর জানাযার নামায কে পড়িয়েছিল? এ ব্যাপারে হাদীস, তারীখ ও
আহলে সুন্নত ওয়াল জামাআত ও শিয়াদের কিতাবে
তিনটি নাম পাওয়া যায়। যথা-

১-হযরত আলী (رضي الله عنه)।
২-হযরত আব্বাস বিন আব্দুল মুত্তালিব (رضي الله عنه)।
৩-হযরত আবু বকর (رضي الله عنه)।
[তাবাকাতে ইবনে সাদ- ৮/২৫, আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া- ৬/৩৩৩]

ﻋﻦ ﺟﻌﻔﺮ ﺑﻦ ﻣﺤﻤﺪ ﻋﻦ ﺃﺑﻴﻪ ﻗﺎﻝ : ﻣﺎﺗﺖ ﻓﺎﻃﻤﺔ ﺑﻨﺖ ﺍﻟﻨﺒﻲ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ
ﻭﺳﻠﻢ ﻓﺠﺎﺀ ﺃﺑﻮ ﺑﻜﺮ ﻭﻋﻤﺮ ﻟﻴﺼﻠﻮﺍ ﻓﻘﺎﻝ ﺃﺑﻮ ﺑﻜﺮ ﻟﻌﻠﻲ ﺑﻦ ﺃﺑﻲ ﻃﺎﻟﺐ :
ﺗﻘﺪﻡ، ﻓﻘﺎﻝ : ﻣﺎ ﻛﻨﺖ ﻷﺗﻘﺪﻡ ﻭﺃﻧﺖ ﺧﻠﻴﻔﺔ ﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ
ﻭﺳﻠﻢ، ﻓﺘﻘﺪﻡ ﺃﺑﻮ ﺑﻜﺮ ﻓﺼﻠﻰ ﻋﻠﻴﻬﺎ . “

ইমাম যাফর সাদেক (رحمة الله) তার পিতা ইমাম মুহাম্মদ বাকের (رحمة الله) থেকে বর্ণনা করেন-
হযরত ফাতিমা (رضي الله عنه) ইন্তেকাল করলে হযরত আবু বকর (رضي الله عنه) জানাযার নামায পড়তে আগমন করেন। তখন হযরত আবু বকর (رضي الله عنه) হযরত আলী (رضي الله عنه) কে বললেন, আপনি জানাযার নামায পড়ান। তখন হযরত আলী (رضي الله عنه) বললেন, আপনি আল্লাহর রাসূলের খলীফা! আপনার আগে যেতে পারবো না। তাই হযরত আবু বকর (رضي الله عنه) সামনে এগিয়ে নামায পড়ালেন।
[কানযুল উম্মাল-১২/৫১৫, হাদীস নং-৩৫৬৭৭]

ﻋﻦ ﻣﺎﻟﻚ ﻋﻦ ﺟﻌﻔﺮ ﺑﻦ ﻣﺤﻤﺪ ﻋﻦ ﺃﺑﻴﻪ ﻋﻦ ﺟﺪﻩ ﻋﻠﻲ ﺑﻦ ﺍﻟﺤﺴﻴﻨﻘﺎﻝ :
ﻣﺎﺗﺖ ﻓﺎﻃﻤﺔ ﺑﻴﻦ ﺍﻟﻤﻐﺮﺏ ﻭﺍﻟﻌﺸﺎﺀ , ﻓﺤﻀﺮﻫﺎ ﺃﺑﻮ ﺑﻜﺮ ﻭﻋﻤﺮ ﻭﻋﺜﻤﺎﻥ
ﻭﺍﻟﺰﺑﻴﺮ ﻭﻋﺒﺪ ﺍﻟﺮﺣﻤﻦ ﺑﻦ ﻋﻮﻑ , ﻓﻠﻤﺎ ﻭﺿﻌﺖ ﻟﻴﺼﻠﻰ ﻋﻠﻴﻬﺎ ﻗﺎﻝ ﻋﻠﻲ -
ﺭﺿﻲ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻨﻪ : ﺗﻘﺪﻡ ﻳﺎ ﺃﺑﺎ ﺑﻜﺮ ﻗﺎﻝ : ﻭﺃﻧﺖ ﺷﺎﻫﺪ ﻳﺎ ﺃﺑﺎ ﺍﻟﺤﺴﻦ؟ ﻗﺎﻝ :
ﻧﻌﻢ ﺗﻘﺪﻡ ﻓﻮﺍﻟﻠﻪ ﻻ ﻳﺼﻠﻲ ﻋﻠﻴﻬﺎ ﻏﻴﺮﻙ , ﻓﺼﻠﻰ ﻋﻠﻴﻬﺎ ﺃﺑﻮ ﺑﻜﺮ -ﺭﺿﻲ ﺍﻟﻠﻪ
ﻋﻨﻬﻢ ﺃﺟﻤﻌﻴﻦ- ﻭﺩﻓﻨﺖ ﻟﻴﻠًﺎ . ﺧﺮﺟﻪ ﺍﻟﺒﺼﺮﻱ ﻭﺧﺮﺟﻪ ﺍﺑﻦ ﺍﻟﺴﻤﺎﻥ ﻓﻲ
ﺍﻟﻤﻮﺍﻓﻘﺔ.

অনুবাদ- হযরত জাফর সাদেক (رحمة الله) তার পিতা মুহাম্মদ বাকের থেকে, আর তিনি তার পিতা যাইনুল
আবেদীন থেকে বর্ণনা করেন যে, খাতুনে জান্নাত ফতিমা (رضي الله عنه) এর ইন্তেকাল মাগরিব ও ইশার মাঝামাঝি
সময়ে হয়। তখন হযরত আবু বকর (رضي الله عنه), হযরত উসমান (رضي الله عنه), হযরত যুবায়ের এবং হযরত আব্দুর রহমান বিন আউফ (رضي الله عنه) জানাযার নামাযের জন্য উপস্থিত হন। হযরত আলী (رضي الله عنه) জানাযার নামায পড়ানোর জন্য আমীরুল মুমিনীন হযরত আবু বকর সিদ্দিক (رضي الله عنه) কে বললেন।
হযরত আবু বকর (رضي الله عنه) বললেন, হে আবুল হাসান! আপনার উপস্থিতিতে আমি কিভাবে জানাযা পড়াই? হযরত আলী বললেন, আপনি এগিয়ে আসুন!
আল্লাহর কসম! আপনি ছাড়া অন্য কোন ব্যক্তি হযরত ফাতিমা (رضي الله عنه) এর জানাযা পড়াবে না। অতএব হযরত আবু বকর (رضي الله عنه)'ই হযরত ফাতিমা (رضي الله عنه) এর জানাযার নামায পড়ান। আর সেই রাতেই তাকে দাফন করা হয়।
[আর রিয়াজুন নাজরাহ ফী মানাকিবিল আশারাহ লিমুহিব তাবারী-১/১৫৬]


ইমাম হাসান (رضي الله عنه) ও হুসাইন (رضي الله عنه) এর গুরুত্ব হাদিস ০১-১০

শাহ্ আস্ত হুসাইন, বাদশাহ্ আস্ত হুসাইন,
দ্বীন আস্ত হুসাইন, দ্বীন পানাহ্ আস্ত হুসাইন,
ছার দাদ, না দাদ দাস্ত, দার দাস্তে ইয়াজিদ,
হাক্কা কে বিনায়ে লা ইলা আস্ত হোসাইন”

“আধ্যাত্বিক জগতের সম্রাট হলেন হোসাইন,
বাদশাহ হলেন হোসাইন, 
ধর্ম হলেন হোসাইন, 
ধর্মের আশ্রয় দাতা হলেন হোসাইন, 
দিলেন মাথা, না দিলেন হাত ইয়াযীদের হাতে,
সত্য তো ইহাই যে, লা-ইলাহার স্তম্ভ হলেন হোসাইন”
🖋গরীবে নেওয়াজ হযরত খাজা মঈনুদ্দীন চিশতী (رحمة الله)

ইমাম হাসান (رضي الله عنه) ও হুসাইন (رضي الله عنه) এর গুরুত্বঃ

❏ হাদীস ১:

আবু হুরায়রা (رضي الله عنه) রাসূলুল্লাহ (ﷺ) ইমাম হাসান (رضي الله عنه) কে বলেছিলেন: হে আল্লাহ, আমি তাকে ভালবাসি। তুমিও তাকে ভালবাস এবং তাকে ভালোবাসো যে তাকে ভালবাসে (হাসান)।

 তথ্যসূত্রঃ
●সহীহ মুসলিম, হাদিস নম্বর ৫৯৫১
●সহিহ মুসলিম হাদিস নম্বর ৫৯৫২
●সহিহ মুসলিম হাদিস নম্বর ৫৯৫৩

আহলে বাইত হবেন জান্নাতী যুবক-যুবতীদের অবিভাবকঃ

❏ হাদীস ২:

 عن حذيفة رضي الله عنه، قال: قال رسولالله صلى الله عليه وسلم: إن هذا ملك لم ينزل الأرض قط قبل هذه الليلة استأذن ربه أن يسلم عليّ و يبشّرني بأن فاطمة سيدة نساء أهل الجنة، وأن الحسن والحسين سيدا شباب أهل الجنة

হুযাইফাহ (رضي الله عنه) বর্ণনা করেন যে, মহানবী (ﷺ) বলেছেন, “এমন এক ফেরেশতা আছেন যিনি আজ রাতের আগে কখনও পৃথিবীতে নেমে আসেননি, তাঁর পালনকর্তার কাছে আমাকে সালাম এবং সুসংবাদ দেওয়ার জন্য অনুমতি চেয়েছেন যে, "ফাতেমা (عليه السلام) জান্নাতের সমস্ত নারীদের নেত্রী এবং ইমাম হাসান (رضي الله عنه) ও ইমাম হোসাইন (رضي الله عنه) হলেন জান্নাতের সকল যুবকের নেতা।"

 তথ্যসূত্রঃ
●তিরমিজি, আল জামি-উস-সহীহ (৫: ৬০৬০০ # ৩৭৮১)
●নাসাই, আস-সুনান-উল-কুবরা (৫: ৮০,৯৫ # ৮২৯৮,৮৩৬৫)
●নাসাই, ফাদাইল-উস-সাহাবাহ (পৃষ্ঠা.৫৮,৭২ # ১৯৩,২৬০)
●আহমাদ বিন হাম্বল, আল-মুসনাদ (৫: ৩৯১)
●আহমাদ বিন হাম্বল, ফাদাইল-উস-সাহাবাহ (২: ৭৮৮ # ১৪০৬)
●ইবনে আবী শায়বাহ, আল-মুসান্নাফ (৬: ৩৮৮ # ৩২২৭১)
●হাকিম, আল-মুস্তাদরাক (৩: ১৬৪ # ৪৭২১,৪৭২২)
●তাবারানী, আল-মুজাম-উল-কবির (২২: ৪০২ # ১০০৫)
●বায়হাকী, আল-ইতিকাদ (পৃষ্ঠা ৩৩২)
●মুহিব্ব তাবারি, দাখায়িরুল-উকবা (পৃষ্ঠা.২২৪)

❏ হাদীস ৩-৪:
হযরত ইমাম হাসান (رضي الله عنه) ও ইমাম হোসাইন (رضي الله عنه) জান্নাতি যুবকদের সর্দার

হযরত হুযাইফা (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমার মাতা আমার কাছে রাসূলে আকরাম (ﷺ)’র খেদমতে আমার হাজির হওয়ার ব্যাপারে জানতে চাইলেন। আমি বললাম, এ ক’দিন থেকে আমি তো হুযুরের খেদমতে হাজির হতে পারি নি। এতে তিনি অসন্তুষ্ট হলেন। আমি বললাম, আমাকে অনুমতি দিন, আমি এ ক্ষুণি রাসূলে আকরাম (ﷺ)’র খেদমতে হাজির হবো, তাঁর সাথে মাগরিবের নামায আদায় করবো ও তাঁর কাছে আবেদন করবো যে, আমার ও আমার মায়ের মাগফিরাতের জন্য দোয়া করুন। অতঃপর আমি রাসূলে আকরাম (ﷺ)’র খেদমতে হাজির হলাম এবং তাঁর সাথে মাগরিবের নামায আদায় করলাম। অতঃপর হুযুর নফল আদায় করতে করতে শেষ পর্যন্ত ইশার নামাযও আদায় করলেন। তারপর রাসূলে আকরাম (ﷺ) হুজরা শরিফের দিকে রওনা করলে আমি তাঁর পেছনে চলতে লাগলাম। তিনি আমার আওয়াজ শুনে বললেন, কে? হুযাইফা! আমি আরজ করলাম, জি- হাঁ। রাসূলে জিজ্ঞাসা করলেন, তোমার কি প্রয়োজন আছে? আল্লাহ তায়ালা তোমার ও তোমার মাতাকে ক্ষমা করে দিয়েছেন। অতঃপর তিনি বললেন, আমার নিকট এক্ষণি একজন ফেরেস্তা এসেছেন। এটি এমন এক ফেরেস্তা যে, ইতিপূর্বে দুনিয়াতে অবতরণ করেন নি; সে স্বীয় রবের নিকট অনুমতি প্রার্থনা করেছে যেন সে আমার ওপর সালাম পেশ করে ও আমাকে এ সুসংবাদ দেয় যে, ফাতিমা জান্নাতি রমনিদের সর্দার আর হাসান ও হোসাইন জান্নাতি যুবকদের সর্দার। 
[তিরমিযি, ৫: ৬৬০, আহমদ, মুসনাদ, ৫: ৩৯১, হাকেম, মুসতাদরাক, ৩: ৪৩৯।]

ﻋﻦ ﺍﺑﻰ ﺳﻌﻴﺪ ﺭﺿﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﺗﻌﺎﻟﻰ ﻋﻨﻪ ﻗﺎﻝ ﻗﺎﻝ ﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ﺍﻟﺤﺴﻦ ﻭﺍﻟﺤﺴﻴﻦ ﺳﻴﺪﺍ ﺷﺒﺎﺏ ﺍﻫﻞ ﺍﻟﺠﻨﺔ .

অর্থ: "হযরত আবূ সাঈদ খুদরী (رضي الله عنه) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) ইরশাদ করেন, হযরত ইমাম হাসান (رضي الله عنه) ও হযরত ইমাম হুসাইন (رضي الله عنه) দু’জনই জান্নাতী যুবকগণের সাইয়্যিদ।" [তিরমিযী শরীফ]

❏ হাদীস ৫:

প্রিয় নবী (ﷺ) নিজেই তাঁদের নাম রেখেছেন

হযরত আলী (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, যখন হযরত ফাতিমার ঘরে হাসানের জন্ম হলো তখন রাসূলে আকরাম (ﷺ) আগমন করলেন অতঃপর বললেন: আমাকে আমার সন্তান আমাকে দেখাও; তোমরা তার কি নাম রেখেছো? আমি বললাম, আমি তার নাম রেখেছি হারব। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বললেন: না; বরং সে হবে হাসান। অতঃপর যখন হোসাইনের জন্ম হলো তখন প্রিয় নবী আগমন করলেন আর বললেন: আমাকে আমার সন্তান আমাকে দেখাও; তোমরা তার কি নাম রেখেছো? আমি বললাম, আমি তার নাম রেখেছি হারব। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বললেন: না; বরং সে হবে হোসাইন। অতঃপর তৃতীয় সন্তান জন্মগ্রহণ করলো তখন তখন প্রিয় নবী আগমন করলেন আর বললেন: আমাকে আমার সন্তান আমাকে দেখাও; তোমরা তার কি নাম রেখেছো? আমি বললাম, আমি তার নাম রেখেছি হারব। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বললেন: না; বরং তার নাম মুহসিন। অতঃপর ইরশাদ করলেন: আমি তাদের নাম হারুন আলায়হিস সালামের সন্তান শাব্বার, শাব্বির ও মুশাব্বার-এর নামের ওপর রেখেছি। আরবি ভাষায় এ তিনটি নাম হলো- হাসান, হোসাইন ও মুহসিন। 
[হাকেম, আল মুসতাদরাক, ৩: ১৮০, হা. ন. ৪৭৭৩, আহমদ বিন হাম্বল, আল মুসনাদ, ১:১১৮, হা. ন. ৯৩৫।]

❏ হাদীস ৬:

নবীজি হাসান ও হোসাইনের কানে আযান দিয়েছেন

হযরত আবু রাফে (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, যখন হাসান ও হোসাইন জম্মগ্রহণ করলেন তখন রাসূলে আকরাম (ﷺ) স্বয়ং তাদের উভয়ের কানে আযান দিয়েছেন। [তাবরাণি, আল মুজামুল কবির, ১: ৩১৫, হা. ন-৯৩১, হায়ছমি, মাজমাউজ জাওয়ায়েদ, ৪: ৬০।]

❏ হাদীস ৭:
প্রিয় নবী (ﷺ) হাসান ও হোসাইনের (رضي الله عنه) আকিকা করেছেন

হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলে আকরাম (ﷺ) হাসান ও হোসাইনের পক্ষ থেকে আকিকার মধ্যে প্রত্যেকের জন্য দুটি করে দুম্বা যবেহ করেছেন। [নাসাই, হা. ন. ৪২১৯, শরহে মুয়াত্তা, ৩: ১৩০]

❏ হাদীস ৮:
হাসান ও হোসাইন প্রিয় নবী (ﷺ)'র সন্তান

হযরত ফাতিমা (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলে আকরাম (ﷺ) আমার ঘরে আগমন করলেন আর বললেন, আমার সন্তানরা কোথায়? আমি বললাম, আলী তাদেরকে সাথে নিয়ে গেছেন। নবীজি তাদের সন্ধানে বের হলেন। আর তাদেরকে পানি পান করার একটি স্থানে খেলারত অবস্থায় পেলেন। আর তাদের সম্মুখে কিছু অবশিষ্ট খেজুর দেখতে পেলেন। অতঃপর তিনি বললেন: আলী খেয়াল রেখো! আমার সন্তানদেরকে গরম শুরু হওয়ার আগেই ফিরিয়ে নিয়ে এসো। 
[হাকেম, আল মুসতাদরাক, ৩: ১৮০, হা. ন. ৪৭৭৪, দুলাবি, আয যুররিয়্যাতুত তাহিরা: ১: ১০৪, হা. ন-১৯৩।]

❏ হাদীস ৮:
হাসান ও হোসাইন আহলে বাইত

হযরত উম্মে সালামা (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলে আকরাম (ﷺ) ফাতিমা, হাসান ও হোসাইনকে একত্রিত করে তাদেরকে স্বীয় চাদরের ভেতরে ঢুকিয়ে বললেন: হে আল্লাহ! এরা আমার আহলে বাইত। 
[হাকেম, আল মুসতাদরাক, ৩: ১৮০, হা. ন. ৪৭০৫, তাররাণি, আল মুজামুল কবির, ৩: ৫৩, হা. ন-২৬৬৩, তাবারি, জামেউল কুরআন ফি তাফসিরুল কুরআন, ২২: ৮, ইবনে কাসির, তাফসিরুল কুরআনিল আজিম ৪: ৪৮৬,]

❏ হাদীস ১০:
হাসান ও হোসাইনের বংশধারা প্রিয় নবী থেকে

হযরত ওমর ইবনুল খাত্তাব (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসূলে আকরাম (ﷺ)কে বলতে শুনেছি: কিয়ামত দিবসে আমার বংশধারা ব্যতীত সকল বংশীয় সম্পর্ক ছিন্ন হয়ে যাবে। প্রত্যেক সন্তান তার পিতার দিকে সম্পর্কিত হবে কিন্তু ফাতিমার সন্তানেরা ছাড়া। কেননা, তাদের পিতাও আমি আর তাদের বংশধারাও আমি। 
[হায়ছমি, মাজমাউজ জাওয়ায়েদ, ৪: ২২৪, তাররাণি, আল মুজামুল কবির, ৩: ৪৪, হা. ন-২৬৩১। শাওকানি, নাইলুল আওতার, ৬: ১৩৯।]


হাদিস ১১-২০

❏ হাদীস ১১:
হযরত ইমাম হাসান (رضي الله عنه) ও ইমাম হোসাইন (رضي الله عنه) সর্বোত্তম বংশের অধিকারী

হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলে আকরাম (ﷺ) ইরশাদ করেন: হে লোকেরা আমি কি তোমাদেরকে তাদের সম্পর্কে অবহিত করবো না যারা নানা-নানীর দিক দিয়ে সকলের চেয়ে উত্তম? আমি কি তোমাদেরকে তাদের সম্পর্কে বলবো না, যারা চাচা ও ফুফুর দিক দিয়ে সকলের চেয়ে উত্তম? আমি কি তোমাদেরকে তাদের সম্পর্কে বলবো না, যারা পিতা-মাতার দিক দিয়ে সকলের চেয়ে উত্তম? তারা হলো, হাসান ও হোসাইন। তাদের নানা আল্লাহর রাসূল, তাদের নানী খাদিজা বিনতে খুয়াইলিদ। তাদের মাতা আল্লাহর রাসূলের কন্যা ফাতিমা। তাদের পিতা আলী ইবনু আবি তালিব। তাদের মামা আল্লাহর রাসূলের পুত্র কাসিম এবং তাদের খালা রাসূলুল্লাহ’র কন্যাগণ যয়নব, রোকেয়া ও উম্মে কুলসুম। তাদের নানা, পিতা, মাতা, চাচা, ফুফু, মামা ও খালা সকলেই জান্নাতে থাকবে এবং এরা দুই জনও থাকবে জান্নাতে। 
[তাবরাণি, আল মুজামুল কবির, ৩: ৬৬, হা. ন-২৬৮২, ইবনে আসাকির, তারিখে দামিশ্কিল কবির, ১৩: ২২৯, হায়ছমি, মাজমাউজ জাওয়ায়েদ, ৯: ১৮৪।]

❏ হাদীস ১২:
হযরত ইমাম হাসান (رضي الله عنه) ও ইমাম হোসাইন (رضي الله عنه)-এর সাথে প্রিয় নবীর সাদৃশ্য  

হযরত আলী (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, হাসান রাসূলে আকরাম (ﷺ)’র বক্ষ হতে মাথা মুবারক পর্যন্ত অংশের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ। আর হোসাইন (رضي الله عنه) রাসূলে আকরাম (ﷺ)’র শরীর মুবারকের অবশিষ্ট নিচের অংশের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ। 
[তিরমিযি হা. ন-৫৭৭৯, আহমদ, মুসনাদ, ১: ৯৯।]

❏ হাদীস ১৩:
হযরত ইমাম হাসান (رضي الله عنه) ও ইমাম হোসাইন (رضي الله عنه) প্রিয় নবীর বৈশিষ্ট্যসমূহের ওয়ারিছ

হযরত সৈয়দা ফাতিমা (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত। তিনি স্বীয় পিতা রাসূলে আকরাম (ﷺ)’র বেসালপূর্ব অসুস্থাবস্থায় হাসান ও হোসাইনকে তার কাছে নিয়ে আসলেন। অতঃপর তিনি আরজ করলেন, ইয়া রাসুলাল্লাহ! এদের দু’জনকে আপনার উত্তরাধিকার থেকে কিছু দান করুন। তিনি ইরশাদ করেন: হাসান আমার ভীতিসঞ্চারক ও নেতৃত্ব এ দুটির ওয়ারিশ; আর হোসাইন আমার ধৈর্য ও দানশীলতা এ দুটির ওয়ারিশ। [আল মুজামুল কবির, ২২: ৪২৩, আল আহাদ ওয়াল মাসানি, ১: ২৯৯।]

❏ হাদীস ১৪:
হযরত ইমাম হাসান (رضي الله عنه) ও ইমাম হোসাইন (رضي الله عنه) পবিত্র চরিত্রের অধিকারী

রাসূলে আকরাম (ﷺ)’র পালিত হযরত ওমর ইবনে আবু সালাম থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, যখন হযরত উম্মে সালমা (رضي الله عنه)র ঘরে নবীজির উপর এ আয়াত....নাজিল হলো তখন তিনি ফাতিমা ও হাসনাইন করিমাইনকে ডাকলেন এবং তাদেরকে একটি চাদরের মধ্যে জড়িয়ে নিলেন। হযরত আলী তাঁর পেছনে ছিলেন। তিনি তাকেও চাদরে জড়িয়ে নিলেন। অতঃপর বললেন, হে আল্লাহ! এরা আমার আহলে বাইত। সুতরাং তাদের থেকে সকল প্রকার অপবিত্রতা দূর করো এবং তাদেরকে পূত-পবিত্র করো। 
[তিরমিযি, ৫: ৩৫১, জামেউল বয়ান, ২২:৮।]

❏ হাদীস ১৫:
হযরত ইমাম হাসান (رضي الله عنه) ও ইমাম হোসাইন (رضي الله عنه) জান্নাতি নাম সমূহের দু’টি নাম

হযরত ইমরান বিন সুলাইমান (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, হাসান ও হোসাইন জান্নাতিদের নামসমূহের দুটি নাম। যে দুটি নাম জাহেলি যুগে কারো নাম হিসেবে রাখা হয় নি। 
[ইবনে হাজর মক্কি, আস সাওয়ায়েকুল মুহরাকা, ১৯২, ইবনে আসির, উসদুল গাবা ফি মারিফাতিস সাহাবা, ২: ২৫।]

❏ হাদীস ১৬-১৮:
হযরত ইমাম হাসান (رضي الله عنه) ও ইমাম হোসাইন (رضي الله عنه) দুনিয়ার বাগানের ফুল

হযরত আবদুর রহমান ইবনে আবু নুআম (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, একজন ইরাকি লোক হযরত আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (رضي الله عنه)কে জিজ্ঞাসা করেন, কাপড়ের উপর মশার রক্ত লাগলে তার বিধান কি? হযরত ইবনে ওমর বললেন, এর দিকে দেখো! মশার রক্তের মাসআলা জিজ্ঞাসা করছে অথচ এরাই রাসূলে আকরাম (ﷺ)’র সন্তান ( হোসাইন) কে শহীদ করেছে। আর আমি রাসূলে আকরাম (ﷺ) বলতে শুনেছি: হাসান ও হোসাইন দুনিয়ায় আমার বাগানের দু’টি ফুল। 
[বুখারি, হা. ন. ৫৬৪৮, তিরমিযি, হা. ন. ৩৭৭০, নাসাই হা. ন. ৮৫৩০।]

❏ "হাসান ও হােসাইন (رضي الله عنه) দুনিয়ায় আমার দু’টি ফুল।”

(সহীহ বুখারী, কিতাবু ফাযায়ীলে আসহাবে নবী, বাব মানাকিবে হাসান ওয়া হােসাইন, ২য় খন্ড, ৫৪৭ পৃষ্ঠা, হাদীস- ৩৭৫৩)

ﻋﻦ ﺍﺑﻦ ﻋﻤﺮ ﺭﺿﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﺗﻌﺎﻟﻰ ﻋﻨﻪ ﺍﻥ ﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ﻗﺎﻝ ﺍﻥ ﺍﻟﺤﺴﻦ ﻭﺍﻟﺤﺴﻴﻦ ﻫﻤﺎ ﺭﻳﺤﺎﻧﻰ ﻣﻦ ﺍﻟﺪﻧﻴﺎ .

অর্থ: "হযরত ইবনে উমর (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত যে, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) ইরশাদ করেন, হযরত হাসান (رضي الله عنه) এবং হযরত হুসাইন (رضي الله عنه) তাঁরা দু’জনেই দুনিয়াতে আমার দু’টি ফুলস্বরূপ। 
[তিরমিযী শরীফ‏]

❏ হাদীস ১৯:
যে ব্যক্তি হযরত হুসাইন (رضي الله عنه)কে মুহব্বত করবে আল্লাহ পাক তাকে মুহব্বত করবেনঃ

ﻋﻦ ﻳﻌﻠﻰ ﺑﻦ ﻣﺮﺓ ﺭﺿﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﺗﻌﻠﻰ ﻋﻨﻪ ﻗﺎﻝ ﻗﺎﻝ ﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ﺣﺴﻴﻦ ﻣﻨﻰ ﻭﺍﻧﺎ ﻣﻦ ﺣﺴﻴﻦ ﺍﺣﺐ ﺍﻟﻠﻪ ﻣﻦ ﺍﺣﺐ ﺣﺴﻴﻨﺎ ﺣﺴﻴﻦ ﺳﺒﻂ ﻣﻦ ﺍﻻﺳﺒﺎﻁ .

অর্থ: "হযরত ইয়া’লা ইবনে মুররাহ (رضي الله عنه) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) ইরশাদ করেছেন, হযরত হুসাইন (رضي الله عنه) আমার থেকে আর আমি হযরত হুসাইন (رضي الله عنه) থেকে। যে ব্যক্তি হযরত হুসাইন (رضي الله عنه)কে মুহব্বত করবে আল্লাহ পাক তাকে মুহব্বত করবেন। হযরত হুসাইন (رضي الله عنه) বংশসমূহের মধ্যে একটি বংশ। [তিরমিযী শরীফ]

❏ হাদীস ২০:

হযরত ইমাম হাসান (رضي الله عنه) ও ইমাম হোসাইন (رضي الله عنه) দেহ মুবারকের সদৃশ স্বয়ং রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর মতঃ

ﻋﻦ ﻋﻠﻰ ﺭﺿﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﺗﻌﺎﻟﻰ ﻋﻨﻪ ﻗﺎﻝ ﺍﻟﺤﺴﻦ ﺍﺷﺒﻪ ﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ﻣﺎ ﺑﻴﻦ ﺍﻟﺼﺪﺭ ﺍﻟﻰ ﺍﻟﺮﺃﺱ ﻭﺍﻟﺤﺴﻴﻦ ﺍﺷﺒﻪ ﺍﻟﻨﺒﻴﻰ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ﻣﺎ ﻛﺎﻥ ﺍﺳﻔﻞ ﻣﻦ ﺫﻟﻚ .

অর্থ: "হযরত আলী (رضي الله عنه) বলেছেন, হযরত হাসান (رضي الله عنه) হলেন (চেহারা-আকৃতি-অবয়বে) মাথা মুবারক হতে বক্ষ মুবারক পর্যন্ত রাসূলুল্লাহ (ﷺ) উনার সদৃশ। আর হযরত ইমাম হুসাইন (رضي الله عنه) হলেন বক্ষ মুবারক হতে নীচ পর্যন্ত রাসূলুল্লাহ (ﷺ) উনার সদৃশ। [তিরমিযী শরীফ]


হাদিস ২১-৩৪

❏ হাদীস ২১:
হাদীসের আলােকে হাসান ও হােসাইনের ফযিলত:

❏ হুযুর (ﷺ) এর বাণী শ্রবন করি: 
"যে এই দু’জনকেই ভালবাসলাে, মূলত সে আমাকেই ভালবাসলাে এবং যে এই দু’জনের সাথে শত্রুতা পােষণ করলাে, মূলত সে আমার সাথেই শত্রুতা পােষণ করলাে।”

(ইবনে মাজাহ্, কিতাবুস সুন্নাহ্, বাবু ফি ফাযায়ীলে আসহাবে রাসূলুল্লাহ্, ১/৯৬, হাদীস- ১৪৩)

❏ হাদীস ২২:

❏ ইমাম হাসান ও ইমাম হােসাইন (عليه السلام) কে ভালবাসা ওয়াজিব: হযরত সায়্যিদুনা আব্দুল্লাহ্ ইবনে আব্বাস (رضي الله عنه) বর্ণনা করেন: যখন এই আয়াতে মােবারকা নাজিল হয়:
"আপনি বলুন, আমি আমার দ্বীন প্রচারের বিনিময়ে তােমাদের নিকট থেকে কোন পারিশ্রমিক চাই না,
কিন্তু নিকটাত্মীয়ের প্রতি ভালবাসা। (সূরা শুরা ২৩)

❏ হাদীস ২৩-২৪:

❏ তখন সাহাবায়ে কিরামগণ এ আবেদন করলাে: ইয়া রাসূলাল্লাহ্ (ﷺ)! আপনার ঐ নিকটাত্মীয়রা কারা, যাদেরকে ভালবাসা আমাদের জন্য ওয়াজিব? হুযুর পুরনূর (ﷺ) ইরশাদ করলেন: “আলীউল মুরতাদ্বা, ফাতেমাতুয যাহারা এবং তাঁদের দুই ছেলে (অর্থাৎ হযরত সায়্যিদুনা হাসান ও ইমাম হােসাইন।”

(মু'জামুর কবির, বাবুল হা, হাসান বিন আলী বিন আবি তালিব, ৩/৪৭, হাদীস- ২৬৪১)

নবীয়ে রহমত, শফিয়ে উম্মত (ﷺ) ইরশাদ করেছেন: "কোন বান্দা পরিপূর্ণ মু'মিন হতে পারবে না, যতক্ষণ পর্যন্ত আমাকে তার প্রাণের চেয়ে বেশি ভালবাসবে না এবং আমি তার নিজ সত্ত্বার চেয়ে বেশি প্রিয় হবাে না। এবং আমার সন্তান তার নিজের সন্তান থেকে বেশি প্রিয় হবে না। এবং আমার আহলে বাইত তার আপন পরিবারের চেয়ে বেশি প্রিয় ও ভালবাসার পাত্র হবে না।”

(শুয়াবুল ঈমান, বাবু ফি হক্কুন নবী, ২/১৭৯, হাদীস- ১৫০৫)

❏ হাদীস ২৫:

❏ হযরত সায়্যিদুনা আবু হােরাইরা (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত; একদা তাজেদারে রিসালাম, শাহানশাহে নবুয়ত, নবীয়ে রহমত (ﷺ) এর সাথে ইশার নামায আদায় করছিলাম। রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ) যখন সিজদায় গেলেন তখন ইমাম হাসান ও ইমাম হােসাইন (عليه السلام) হুযুর পুরনূর (ﷺ) এর পিঠ মােবারকে আরােহন করলেন। তিনি (ﷺ) সিজদা থেকে মাথা উঠালেন তখন তাদেরকে নম্রভাবে ধরে জমিনে বসিয়ে দিলেন। অতঃপর যখন তিনি (ﷺ) দ্বিতীয়বার সিজদায় গেলেন তখন ইমাম হাসান ও ইমাম হােসাইন (عليه السلام) দ্বিতীয়বার এমনই করল, এমনকি তিনি (ﷺ) নামায পরিপূর্ণ করলেন এবং তাঁরা উভয়কে আপন রান মােবারকে বসালেন।

(মুসনদে আহমদ, আবু হােরাইরা, ৩/৫৯৩, হাদীস- ১০৬৬৪, আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া, ৫/৫১৬)

❏ হাদীস ২৬:
 
শৈশবকালে একবার খুতবা চলাকালীন উভয় শাহ্জাদা মসজিদে আগমন করলেন, তখন নবী করীম, রউফুর রহীম (ﷺ) খুতবা বন্ধ রেখে তাঁদের নিকট গেলেন এবং তাদেরকে উঠিয়ে নিজের সামনে বসালেন।

(তিরমিযী, ৫ম খন্ড, ৪২৯ পৃষ্ঠা, হাদীস- ৩৭৯৯)

❏ হাদীস ২৭:
হুযুর পুরনূর (ﷺ) এর ইমাম হাসানের প্রতি বিশেষ মুহাব্বত

হযরত সায়্যিদুনা ওরওয়াহ বিন যুবাইর (رضي الله عنه) নিজের পিতা থেকে বর্ণনা করেন: একবার ছরকারে দো’আলম, নূরে মুজাস্সম (ﷺ) ইমাম হাসান (رضي الله عنه) কে চুমু দিলেন, তাঁর ঘ্রাণ নিলেন এবং বুকের সাথে জড়িয়ে ধরলেন ঐ সময় তিনি (ﷺ) এর পাশে এক আনছারী সাহাবী দাঁড়িয়ে ছিলেন। তিনি রাসূলুল্লাহ (ﷺ) ওনাকে ইমাম হাসান (رضي الله عنه) এর প্রতি এমন মুহাব্বত দেখে আরয করলেন: ইয়া রাসূলাল্লাহ্ (ﷺ) ! আমার একটি ছেলে আছে। সে এখন বালেগ হয়েছে। কিন্তু আমি তাকে কখনাে চুমু দিয়নি। তিনি (ﷺ) ইরশাদ করলেন: “যদি আল্লাহ্ তাআলা তােমার অন্তর থেকে মুহাব্বত তুলে নেয়, তবে এতে আমার কি করার আছে।”

(আল মুস্তাদরাক, মিন ফাযায়ীলিল হাসান বিন আলী, ১ম খন্ড, ৪র্থ খন্ড, ১৬১ পৃষ্ঠা, হাদীস- ৪৮৪৬)

❏ হাদীস ২৮:
হুযুর (ﷺ) এ হাসানাঈনে করীমাঈনকে ফুঁক দিতেন:

হযরত সায়্যিদুনা ইবনে আব্বাস (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত; রহমতে আলম, নূরে মুজাস্সম (ﷺ) হযরত সয়্যিদুনা ইমাম হাসান (رضي الله عنه) ও ইমাম হােসাইন (عليه السلام) কে কলেমাতে তাউয (নিরাপত্তার বাক্য সমূহ) সহকারে ফুক দিতেন। তিনি (ﷺ) ইরশাদ করেন: “তােমাদের সম্মানীত দাদাজান অর্থাৎ হযরত ইসহাক (عليه السلام) এসব কলেমা (বাক্য) দ্বারা ফুঁক দিতেন।
অর্থাৎ আমি আল্লাহ তাআলার পরিপূর্ণ বাক্য সমূহের মাধ্যমে সমস্ত শয়তান ও বিষাক্ত জন্তু এবং সকল বদনযর থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করছি।”

(বুখারী, কিতাবুল আহাদীসুল আম্বিয়া, ২/৪২৯, হাদীস- ৩৩৭১)

❏ হাদীস ২৯:
ইমাম হাসানের প্রতি সিদ্দিকে আকবর (رضي الله عنه) এর ভালবাসা

হযরত সায়্যিদুনা আবু বকর সিদ্দিক (رضي الله عنه) যখন আমীরুল মু'মিনীন ও খলিফাতুল মুসলীমিনের সিংহাসনের আসনে আসীন হলেন। তখন রাসূলে করীম (ﷺ) এর প্রতি সম্পর্কের কারণে তিনি (ﷺ) পবিত্র আহলে বাইতগণের খুবই দেখাশুনা করতেন এবং আহলে বাইতের ব্যাপারে বলতেন: নবী করীম, রউফুর রহীম (ﷺ) এর আত্মীয় স্বজন আমার কাছে আমার আত্মীয়স্বজনের চেয়ে অধিক প্রিয়।

(বুখারী, কিতাবুল মগজী, বাব হাদীস বনি নদ্বীর, ৩য় খন্ড, ২৯ পৃষ্ঠা, হাদীস-৪০৩৬)

❏ হাদীস ৩০:
ইমাম হােসাইনের প্রতি ফারুকে আযম (رضي الله عنه) এর অকৃত্রিম ভালবাসা

হযরত সায়্যিদুনা ইমাম হােসাইন (عليه السلام) বলেন: আমি একদিন আমীরুল মু'মিনীন হযরত সায়্যিদুনা ওমর ফারুকে আযম (رضي الله عنه) এর ঘরে গেলাম, কিন্তু তিনি হযরত আমীরে মুয়াবিয়া (رضي الله عنه) এর সাথে আলাদা ভাবে আলােচনায় ব্যস্ত ছিলেন এবং ওনার ছেলে আব্দুল্লাহ্ (رضي الله عنه) দরজায় দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করছেন। কিছুক্ষণ অপেক্ষা করার পর সে ফিরে আসতে লাগল, তখন তার সাথে আমিও ফিরে আসতে লাগলাম। পরে আমীরুল মুমিনীন হযরত সায়্যিদুনা ওমর ফারুকে আযম (رضي الله عنه) এর সাথে আমার সাক্ষাৎ হলে আমি বললাম: হে আমীরুল মু'মিনীন! আমি আপনার নিকট এসে ছিলাম। কিন্তু আপনি হযরত আমীরে মুয়াবিয়া (رضي الله عنه) এর সাথে আরােচনায় ব্যস্ত ছিলেন। (আমি ভেবেছিলাম যখন ছেলের ভিতরে যাবার অনুমতি নেই সেখানে আমার কিভাবে?) এই কারণে আমিও তার সাথে ফিরে এসেছি। তখন ফারুকে আযম (رضي الله عنه) বললেন: হে আমার পুত্র হােসাইন! আমার সন্তানের চেয়ে অধিক হকদার এই কথার উপর যে আপনি ভিতরে চলে আসবেন। আর আমাদের মাথায় যে চুল রয়েছে, আপনাদের সদকায় তাে সব কিছু উৎপন্ন হয়।

(তারিখ ইবনে আসাকির, ১৪তম খন্ড, ১৭৫ পৃষ্ঠা)

❏ হাদীস ৩১:
ইমাম হাসানের প্রতি শেরে খােদা মওলা আলী (رضي الله عنه)'র ভালবাসাঃ

হযরত সায়্যিদুনা আসবাগ বিন নুবাতা (رضي الله عنه) বলেন: একবার হযরত সায়্যিদুনা ইমাম হাসান মুজতবা (عليه السلام) অসুস্থ হয়ে পড়লেন, তখন হযরত সায়্যিদুনা আলী মুরতাজা (عليه السلام) তাঁর সেবায় তাশরীফ নিয়ে গেলেন। আমিও তাঁর সাথে সেবার জন্য গেলাম। হযরত সায়্যিদুনা আলী মুরতাজা (عليه السلام) তাঁর অবস্থা জিজ্ঞাসা করে বললেন: হে রাসূলের নাতি! আপনার অবস্থা কেমন? উত্তর দিলেন: ভাল আছি। তিনি বললেন: যদি আল্লাহ্ তাআলা চান। তাে ভাল হয়ে যাবেন। তার পর হযরত সায়্যিদুনা ইমাম হাসান (رضي الله عنه) আরজ করলেন: আমাকে হেলান দিয়ে বসান। হযরত সায়্যিদুনা আলী (رضي الله عنه) তাঁকে বুকে ঠেস লাগিয়ে বসিয়ে দিলেন। তারপর হযরত সায়্যিদুনা ইমাম হাসান (رضي الله عنه) বললেন:

একদিন আমাকে নানাজান, রহমতে আলামীন (ﷺ) ইরশাদ করেছেন: “হে আমার পুত্র! জান্নাতে একটি গাছ রয়েছে়। পরীক্ষায় নিমজ্জীত লােকদের কিয়ামতের দিন ঐ বৃক্ষের নিচে একত্রিত করা হবে। ঐ সময় তখন না মীযান রাখা হবে না আমল নামা খােলা হবে। তাদেরকে পরিপূর্ণ ভাবে প্রতিদান দেওয়া হবে।” তার পর ছরকারে দো’আলম (ﷺ) এই আয়াত শরীফ তিলাওয়াত করেন:
কানযুল ঈমান থেকে অনুবাদ:
"ধৈর্যশীলদেরকেই তাদের প্রতিদান পরিপূর্ণ ভাবে দেওয়া হবে অগণিত ভাবে।" (যুমর, আয়াত- ১০)

(কিতাবুদ দোয়া লিত তাবারানী, ৩৪৭ পৃষ্ঠা)

❏ হাদীস ৩২:
হযরত ইমাম হুসাইন (رضي الله عنه) এর শাহাদাত:

হযরত ইমাম হুসাইন (رضي الله عنه) এর বিলাদত শরীফ-এর কিছু দিন পরই উনার শাহাদাতের কথা সবার কাছে জানাজানি হয়ে গিয়েছিল। এ ব্যাপারে অনেক হাদীছ শরীফ বর্ণিত হযেছে। হযরত উম্মুল ফজল (رضي الله عنه) বলেন,
وروى البيهقي عن الحكم وغيره، عن أبي الأحوص، أَخْبَرَنَا أَبُو عَبْدِ اللَّهِ مُحَمَّدُ بْنُ عَلِيٍّ الْجَوْهَرِيُّ بِبَغْدَادَ، ثَنَا أَبُو الْأَحْوَصِ مُحَمَّدُ بْنُ الْهَيْثَمِ الْقَاضِي، ثَنَا مُحَمَّدُ بْنُ مُصْعَبٍ، ثَنَا الْأَوْزَاعِيُّ، عَنْ أَبِي عَمَّارٍ شَدَّادِ بْنِ عَبْدِ اللَّهِ، عَنْ أُمِّ الْفَضْلِ بِنْتِ الْحَارِثِ، أَنَّهَا دَخَلَتْ عَلَى رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَآلِهِ وَسَلَّمَ فَقَالَتْ‏:‏ يَا رَسُولَ اللَّهِ، إِنِّي رَأَيْتُ حُلْمًا مُنْكَرًا اللَّيْلَةَ، قَالَ‏:‏ ‏”‏ مَا هُوَ‏؟‏ ‏”‏ قَالَتْ‏:‏ إِنَّهُ شَدِيدٌ، قَالَ‏:‏ ‏”‏ مَا هُوَ‏؟‏ ‏”‏ قَالَتْ‏:‏ رَأَيْتُ كَأَنَّ قِطْعَةً مِنْ جَسَدِكَ قُطِعَتْ وَوُضِعَتْ فِي حِجْرِي، فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَآلِهِ وَسَلَّمَ‏:‏ ‏”‏ رَأَيْتِ خَيْرًا، تَلِدُ فَاطِمَةُ إِنْ شَاءَ اللَّهُ غُلَامًا، فَيَكُونُ فِي حِجْرِكِ ‏”‏ فَوَلَدَتْ فَاطِمَةُ الْحُسَيْنَ فَكَانَ فِي حِجْرِي كَمَا قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَآلِهِ وَسَلَّمَ، فَدَخَلْتُ يَوْمًا إِلَى رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَآلِهِ وَسَلَّمَ فَوَضَعْتُهُ فِي حِجْرِهِ، ثُمَّ حَانَتْ مِنِّي الْتِفَاتَةٌ، فَإِذَا عَيْنَا رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَآلِهِ وَسَلَّمَ تُهْرِيقَانِ مِنَ الدُّمُوعِ، قَالَتْ‏:‏ فَقُلْتُ‏:‏ يَا نَبِيَّ اللَّهِ، بِأَبِي أَنْتَ وَأُمِّي مَا لَكَ‏؟‏ قَالَ‏:‏ ‏”‏ أَتَانِي جِبْرِيلُ عَلَيْهِ الصَّلَاةُ وَالسَّلَامُ، فَأَخْبَرَنِي أَنَّ أُمَّتِي سَتَقْتُلُ ابْنِي هَذَا ‏”‏، فَقُلْتُ‏:‏ هَذَا‏!‏ فَقَالَ‏:‏ ‏”‏ نَعَمْ، وَأَتَانِي بِتُرْبَةٍ مِنْ تُرْبَتِهِ حَمْرَاءَ ‏”‏‏.‏

আমি একদিন হুযূর পাক (ﷺ) খিদমতে উপস্থিত হয়ে হযরত ইমাম হুসাইন (رضي الله عنه) কে কোলে দিলাম। এরপর আমি দেখলাম, হুযূর পাক (ﷺ)র চোখ মুবারক থেকে টপটপ করে পানি পড়ছে। আমি আরয করলাম, ইয়া রসূলাল্লাহ (ﷺ)! আমার পিতা-মাতা আপনার জন্য কুরবান হোক, এর কারণ কী? ইরশাদ করলেন, আমার কাছে হযরত জিবরীল (عليه السلام) এসে এ খবর দিয়ে গেলেন ‘নিশ্চয়ই আমার উম্মত আমার এ শিশুকে শহীদ করবে।’ হযরত উম্মুল ফজল (رضي الله عنه) বলেন, আমি আরয করলাম, ইয়া রসূলাল্লাহ! এ শিশুকে শহীদ করবে? হুযূর পাক (ﷺ) ইরশাদ করেন,‘হ্যাঁ। হযরত জিব্রাইল (عليه السلام) শাহাদাত স্থলের লাল মাটিও এনেছেন। “আমার ছেলে (দৌহিত্র) হযরত ইমাম হুসাইনকে ফোরাত নদীর তীরে যে জায়গায় শহীদ করা হবে, সে জায়গার নাম কারবালা।’
[হাকেম, ৩/১১৬-১১৭]

❏ হাদীস ৩৩:

মহানবী (ﷺ) বলেছেন, “সমস্ত চোখ কিয়ামতের দিন কাঁদতে থাকবে, নিশ্চয়ই কেবল সেই চোখ ছাড়া, যা ইমাম হুসাইনের বিয়োগান্ত ঘটনায় কেঁদেছে, ঐ চোখ সেই দিন হাসতে থাকবে এবং তাকে জান্নাতের নিয়ামতসমূহের সুসংবাদ প্রদান করা হবে। [বিহারুল আনওয়ার, খ–৪৪, পৃ-১৯৩]

❏ হাদীস ৩৪:

মহানবী (ﷺ) বলেছেন, “নিশ্চয়ই প্রত্যেক মুমিনের হৃদয়ের ইমাম হোসাইন-এর শাহাদাতের বিষয়ে এমন ভালোবাসার উত্তাপ রয়েছে যা কখনো শীতল হওয়ার নয়। [মুস্তাদারক আল ওয়াসাইল, খ–১০, পৃ-৩১৮]


━━━━━━━━━━━━━

প্রমাণ পুঞ্জিঃ

১.আবদুর রায্যাক: আল-মুসান্নাফ: ইমাম আবদুর রায্যাক সান‘আনী (ওফাত. ২১১ হি.): মাকতুবাতুল ইসলামী, বয়রুত, লেবানন।
২. ইসমাঈল ইবনে কাসীর (ওফাত ৭৭৪ হি.) : তাফসীরে কুরআনুল আজীম : দারুল খায়ের, বয়রুত।
৩. আল্লামা মাহমুদ আলূসী (ওফাত ১২৭০ হি.) : রুহুল মা‘য়ানী, এমদাদিয়া, মুলতান, পাকিস্তান।
৪. ইমাম খাযেন (ওফাত : ৭৪১হি. ): তাফসীরে খাযেন, দারুল ফিকর ইলমিয়্যাহ, বয়রুত।
৫. ইমাম কাযী নাসিরুদ্দীন বায়যাভী (ওফাত. ৬৮৫হি.) : তাফসীরে বায়যাভী, দারুল কুতুব ইলমিয়্যাহ, বয়রুত।
৬. আল্লামা ইসমাঈল হাক্কী : (ওফাত. ১১২৭ হি.)ঃ তাফসীরে রুহুল বায়ান : দারুল কুতুব ইলমিয়্যাহ, বয়রুত।
৭. ইমাম ফখরুদ্দিন রাযি (ওফাত. ৬০৬ হি.) : তাফসিরে কাবির : দারুল কুতুব ইলমিয়্যাহ, বয়রুত, লেবানন।
৮. ইবনে আব্বাস: সায়্যিদিল মুফাস্সিরিন হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস: তাফসীর ইবনে আববাস, দারুল কুতুব ইলমিয়্যাহ, বয়রুত, লেবানন।
৯. তাবারী: ইমাম মুহাম্মদ ইবনে জারীর আত-তাবারী (৩১০ হি.): জামেউল বায়ান, দারুল হুজর, কায়রু, মিশর। 
১০. নাসাফী: ইমাম আবদুল্লাহ ইবনে আহমদ নাসাফী: তাফসীরে মাদারেকুত তানযিল ওয়া হাকায়েকুল তাভীল, দারুল কালিমাতুত তায়্যব, বয়রুত, লেবানন।
১১. কুরতুবী: ইমাম আবূ আব্দুল্লাহ মুহাম্মদ বিন সামসুদ্দীন কুরতুবী আল-মালেকী: তাফসীরে জামেউ লি আহকামিল কোরআন: দারুল কুতুব মিশরিয়্যাহ, কায়রু, মিশর, দ্বিতীয় প্রকাশ. ১৩৮৪ হি.
১২. বাগভী: ইমাম মহিউস্ সুন্নাহ আবু মুহাম্মদ হোসাইন ইবনে মাসউদ ইবনে বাগভী আশ-শাফেয়ী (ওফাত. ৫১০ হি.) : তাফসীরে মুআলিমুত তানযিল: দারু ইহ্ইয়াউস তুরাসুল আরাবী, বয়রুত, লেবানন, প্রকাশ. ১৪২০ হি.
১৩. শাহ আবদুল আযিয: তাফসীরে আযীযী: শাহ আবদুল আযীয মুহাদ্দিসে দেহলভী।
১৪. সুয়ূতি: ইমাম জালালুদ্দীন আবদুর রহমান সূয়ূতি: তাফসীরে দুররুল মানসূর, দারুল ফিকর ইলমিয়্যাহ, বয়রুত, লেবানন।
১৫. তাফসীরে জালালাইন: আল্লামা জালালুদ্দীন মহল্লী এবং ইমাম জালালুদ্দীন সুয়ূতি:
১৬. নিশাপুরী: ইমাম মুহাম্মদ বিন হোসাইন নিশাপুরী: তাফসীরে গারাইবুল কুরআন, দারুল কুতুব ইলমিয়্যাহ, বয়রুত, লেবানন।
১৭. মাযহারী: ইমাম কাযী সানাউল্লাহ পানিপথী: তাফসীরে মাযহাবী, মাকতাবায়ে রশীদিয়্যাহ, করাচী, পাকিস্তান।
১৮. হুসাইনী: ইমাম মুঈন উদ্দীন ওয়ায়েয কাশেফী: তাফসীরে হোসাইনী,
১৯. শারবীনী: ইমাম মুহাম্মদ বিন শারবিনী: তাফসীরে সিরাজুল মুনীর।
২০. জুমাল: ইমাম সোলাইমান: তাফসীরে জুমাল।
২১. সাভী: ইমাম আহমদ সাভী আল-মালেকী: তাফসীরে সাভী, দারুল হাদিস, কায়রু, মিশর।
হাদিস
২২. বুখারীঃ আবু আবদুল্লাহ মুহাম্মদ ইবনে ইসমাঈল বুখারী (১৯৪হি-২৫৬হি.) : আস্-সহীহ, দারুল কুতুব ইলমিয়্যাহ, বয়রুত, লেবানন, প্রকাশ.১৪২২ হি. (শামিলা)।
২৩. বুখারীঃ আবু আবদুল্লাহ মুহাম্মদ ইবনে ইসমাঈল বুখারী : আত্-তারিখুল কাবীর, বয়রুত, লেবানন, দারুল কুতুব ইলমিয়্যাহ। 
২৪. বায্যার : আবু বকর আহমদ ইবনে উমর ইবনে আবদুল খালেক বসরী (২১০-২৯২ হি. / ৮২৫-৯০৫ ইং) : আল মুসনাদ: বয়রুত, লেবানন, মুয়াস্সাসাতু উলূমিল কুরআন, ১৪০৯ হিজরী;
২৫. বাগভী : আবু মুহাম্মদ হোসাইন ইবনে মাসউদ ইবনে মুহাম্মদ (৪৩৬-৫১৬ হি. / ১০৪৪-১১২২ ইং) : শরহে সুন্নাহ: বয়রুত, লেবানন, দারুল মা’আরিফ, ১৪০৭ হি / ১৯৮৭ ইং।
২৬. বায়হাকী : আবু বকর আহমদ ইবনে হোসাইন ইবনে আলী ইবনে আবদুল্লাহ ইবনে মূসা (৩৮৪-৪৫৮ হি. / ৯৯৪-১০৬৬ ইং) : দালায়িলুন নবুয়ত, বয়রুত, লেবানন, দারুল কুতুব আল-ইলমিয়া, ১৪০৫ হি. / ১৯৮৫ ইং।
২৭. বায়হাকী : আবু বকর আহমাদ ইবনে হোসাইন ইবনে আলী ইবনে আবদুল্লাহ ইবনে মূসা (৩৮৪-৪৫৮ হি. / ৯৯৪-১০৬৬ ইং) : আস-সুনানুল কুবরা, মক্কা, সৌদি আরব, মাকতাবা দারুল বায, ১৪১৪ হি. / ১৯৯৪ ইং।
২৮. বায়হাকী : আবু বকর আহমাদ ইবনে হোসাইন ইবনে আলী ইবনে আবদুল্লাহ ইবনু মূসা (৩৮৪-৪৫৮ হি. / ৯৯৪-১০৬৬ ইং) : আল-মা‘রিফাতুল সুনানি ওয়াল আছার: 
২৯. তিরমিযী : আবু ঈসা মুহাম্মদ ইবনে ঈসা ইবনে সওরাহ ইবনে মূসা (২১০-২৭৯ হি. ৮২৫-৮৯২ ইং) : আল-জামেউস সহিহ, বয়রুত, লেবানন, দারুল গুরাবিল ইসলামী, ১৯৯৮ ইং।
৩০. হাকিম : আবু আবদুল্লাহ মুহাম্মদ ইবনে আবদুল্লাহ ইবনে মুহাম্মদ (৩২১-৪০৫ হি. ৯৩৩-১০১৪ ইং) : আল-মুস্তাদরাক আলাস সহিহাইন, বয়রুত, লেবানন, দারুল কুতুব আল-ইলমিয়া, ১৪১১ হি. ১৯৯০ ইং।
৩১. ইবনে হিব্বান : আবু হাতেম মুহাম্মদ ইবনে হিব্বান ইবনে আহমাদ ইবনে হিব্বান (২৭০-৩৫৪ হি. ৮৮৪-৯৬৫ ইং) : আস্-সিকাত, বয়রুত, লেবানন, দারুল ফিক্র, ১৩৯৫ হি. / ১৯৭৫ ইং।
৩২. ইবনে খুযায়মা : আবু বকর মুহাম্মদ ইবনে ইসহাক (২২৩-৩১১ হি. / ৮৩৮-৯২৪ ইং) আস-সহীহ, বয়রুত, লেবানন, আল-মাকতাবুল ইসলামী, ১৩৯০ হি. / ১৯৭০ ইং।
৩৩. খতিবে বাগদাদী : আবু বকর আহমাদ ইবনে আলী ইবনে সাবেত ইবনে আহমাদ ইবনে মাহদী ইবনে সাবিত (৩৯২-৪৬০ হি. / ১০০২-১০৭১ ইং) : তারিখে বাগদাদ, বয়রুত, লেবানন, দারুল কুতুব আল-ইলমিয়া।
৩৪. খাওয়ারযামী : আবদুল মু‘আয়্যিদ মুহাম্মদ ইবনে মাহমুদ (৫৯৩-৬৬৫ হি.) : জা‘মিউল মাসানিদ লি ইমাম আবী হানিফা, বয়রুত, লেবানন, দারুল কুতুব আল-ইলমিয়া।
৩৫. দারাকুতনি : আবুল হাসান আলী ইবনে উমর ইবনে আহমদ ইবনে মাহাদী মাসউদ ইবনে নু’মান (৩০৬-৩৮৫ হি. / ৯১৮-৯৯৫ ইং) : আস সুনান, বয়রুত, লেবানন, দারুল মা’আরিফ, ১৩৮৬ হি. / ১৯৬৬ ইং।
৩৬. দারিমি : আবু মুহাম্মদ আবদুল্লাহ ইবনে আবদুর রহমান (১৮১-২৫৫ হি. / ৭৯৭-৮৬৯ ইং) : আস-সুনান, বয়রুত, লেবানন, দারুল কিতাবিল আরাবী, ১৪০৭ হি.।
৩৭. আবু দাউদ : সুলাইমান ইবনে আসআছ সাজিসতানী (২০২-২৭৫ হি. / ৮১৭-৮৮৯ ইং) : আস-সুনান, বয়রুত, লেবানন, দারুল ফিকর, ১৪১৪ হি. / ১৯৯৪ ইং।
৩৮. দায়লামি : আবু সূজা শেরওয়াই ইবনে শহরদার ইবনে শেরওয়াই হামদানী (৪৪৫-৫০৯ হি. / ১০৫৩-১১১৫ ইং) : আল-ফিরদাউস বি মা’সুরিল খিতাব, বয়রুত, লেবানন, দারুল কুতুব আল-ইলমিয়া, ১৯৮৬ ইং।
৩৯. ইবনে সা’দ : আবু আবদুল্লাহ মুহাম্মদ (১৬৮-২৩০ / হি. ৭৮৪-৮৪৫ ইং) : আত্ব ত্বাবক্বাতুল কুবরা, বয়রুত, লেবানন, দারে ছদীর।
৪০. ইবনে আবী শায়বা : আবু বকর আবদুল্লাহ ইবনে মুহাম্মদ ইবনে ইবরাহীম ইবনে উসমান কুফী (১৫৯-২৩৫ হি. / ৭৭৬-৮৪৯ ইং) : আল-মুসান্নাফ, রিয়াদ, সৌদি আরব, মাকতাবাতুর রাশাদ, প্রকাশ. ১৪০৯ হি.।
৪১. তাবরানী : আবুল কাসেম সুলাইমান ইবনে আহমদ ইবনে আইয়ুব (২৬০-৩৬০ হি. / ৮৭৩-৯৭১ ইং) : আল-মু’জামুল আওসাত, রিয়াদ, সৌদি আরব, মাকতাবাতুল মা’রিফ, ১৪০৫ হি. / ১৯৮৫ ইং।
৪২. তাবরানী : আবুল কাসেম সুলাইমান ইবনে আহমদ ইবনে আইয়ুব (২৬০-৩৬০ হি. / ৮৭৩-৯৭১ ইং) : আল-মু’জামুল কাবীর, মুসিল, ইরাক, মাতবাআতুল উলুম ওয়াল হিকম, ১৪০৪ হি. / ১৯৮৪ ইং।
৪৩. তাবারী : আবু জা’ফর মুহাম্মদ ইবনে জারীর ইবনে ইয়াযীদ (২২৪-৩১০ হি./৮৩৯-৯২৩ ইং) : জা’মিউল বয়ান ফী তাফসীরিল কুরআন, বয়রুত, লেবানন, দারুল মা’আরিফ,১৪০০ হি./১৯৮০ ইং।
৪৪. তাহাবী : আবু জাফর আহমাদ ইবনে মুহাম্মদ ইবনে সালামাহ ইবনু সালমা ইবনু আবদুল মালিক ইবনে সালমা (২২৯-৩২১ হি. / ৮৫৩-৯৩৩ ইং) শরহু মা’আনিল আসার, বয়রুত, লেবানন, দারুল কুতুব আল-ইলমিয়্যাহ, ১৩৯৯ ইং।
৪৫. তায়ালসী : আবু দাউদ সুলায়মান ইবনু দাউদ জারুদ (১৩৩-২০৪ হি / ৭৫১-৮১৯ ইং), আল মুসনাদ, বয়রুত, লেবানন, দারুল মা’আরিফ।
৪৬. ইবনে ‘আবদুল র্বা: আবু উমর ইউসূফ ইবনে আবদুল্লাহ ইবনে মুহাম্মদ (৩৬৮-৪৬৩ হি. / ৯৭৯-১০৭১ ইং) : আল ইসতিয়াবু ফী মা’আরিফাতিল আসহাব, বয়রুত, লেবানন, দারুল জিল।
৪৭. ইবনে ‘আবদুল বার : আবু উমর ইউসূফ ইবনে আবদুল্লাহ ইবনে মুহাম্মদ (৩৬৮-৪৬৩ হি. / ৯৭৯-১০৭১ ইং) : জামি’উল বায়ানিল ইল্মি ওয়া ফাদ্বলি, বয়রুত, লেবানন, দারুল কুতুব আল-ইলমিয়া, ১৩৯৮ হি. / ১৯৭৮ ইং।
৪৮. ‘আবদুর রায্যাক : আবূ বকর ইবনে হুম্মাম ইবনে নাফে’ সান‘আনী (১২৬-২১১ হি. / ৭৪৪-৮২৬ ইং) : আল-মুসান্নাফ, বয়রুত, লেবানন, আল মাকতুবাতুল ইসলামী, ১৪০৩ হি.।
৪৯. ইবনে মাযাহ : আবু আবদুল্লাহ মুহাম্মদ ইবনে ইয়াযীদ কাযভীনি (২০৯-২৭৩ হি. / ৮২৪-৮৮৭ ইং) : আস্-সুনান, বয়রুত, লেবানন, দারুল কুতুব আল-ইলমিয়া, ১৪১৯ হি. / ১৯৯৮ ইং।
৫০. মালেক : ইবনে আনাস ইবনু মালেক ইবনু আবী ‘আমর ইবনে হারেছ আসবাহী (৯৩-১৭৯ হি. / ৭১২-৭৯৫ ইং) : আল মুআত্তা, বয়রুত, লেবানন, দারুল ইহইয়াউত আত তুরাসুল আরবিয়্যাহ, ১৪০৬ হি. / ১৯৮৫ খ্রি:।
৫১. মুসলিম : মুসলিম ইবনে হাজ্জাজ আল-কুশাইরি (২০৬-২৬১ হি. / ৭২১-৮৭৫ ইং) : আস-সহীহ, বয়রুত, লেবানন, দারু ইহয়ায়ি আত-তুরাসিল আরাবি।
৫২. মুনযিরী : আবু মুহাম্মদ আবদুল আযীম ইবনে আবদুল কাভী ইবনে আবদুল্লাহ ইবনে সালামাহ ইবনে সা’দ (৫৮১-৬৫২ হি. / ১১৮৫-১২৫৮ ইং) আত তারগীব ওয়াত তারহীব মিনাল হাদীসিশ শরীফ, বয়রুত, লেবানন, দারুল কুতুব আল-ইলমিয়া, ১৪০৭ হি.।
৫৩. নাসাঈ : আহমদ ইবনে মাআ‘ইব (২১৫-৩০৩ হি. / ৮৩০-৯১৫ ইং) : আস-সুনান, হালব, শাম, মাকতুবুল মাতবু’আত, ১৪০৬ হি./১৯৮৬ ইং।
৫৪. আবূ নু‘আঈম : আহমাদ ইবনে ‘আবদুল্লাহ ইবনে আহমাদ ইবনে ইসহাক ইবনে মূসা ইবনে মেহরান ইসবাহানী (৩৩৬-৪৩০ হি. / ৯৪৮-১০৩৮ ইং) : হিলয়াতুল আওলিয়া ওয়া তাবকাতুল আসফিয়া, বয়রুত, লেবানন, দারুল কিতাবিল আরাবি, ১৪০০ হি. / ১৯৮০ ইং;
৫৫. হিন্দি : হুসামুদ্দীন আলা উদ্দিন আলী মুত্তাকী হিন্দী (৯৭৫ হি.) : কানযুল উম্মাল ফি সুনানিল আকওয়ালি ওয়াল আফ’আল, বয়রুত, লেবানন, মুআস্সাসাতুর রিসালা, ১৩৯৯ হি. / ১৯৭৯ ইং।
৫৬. হাইসামি : আবুল হাসান নূরুদ্দিন আলী ইবনে আবু বকর ইবনে সুলাইমান (৭৩৫-৮০৭ হি. / ১৩৩৫-১৪০৫ ইং) : মাজমাউয যাওয়ায়িদ ওয়া মানবা’উল ফাওয়ায়িদ, কায়রো, মিসর, দারুর রায়আন লিত তুরাছ, বয়রুত, লেবানন, দারুল কিতাবিল আরবী, ১৪০৭ হি./১৯৮৭ ইং।
৫৭. আবু ই‘য়ালা : আহমাদ ইবনে আলী ইবনু মুসান্ন ইবনু ইয়াহইয়া ইবনে ‘ঈসা ইবনে হেলাল মুসিলী, তামিমী (২১০-৩০৭ হি. / ৮২৫-৯১৯ ইং) আল-মুসনাদ, দামিশক, সিরিয়া, দারুল মামুন লিত্ তুরাস, ১৪০৪ হি. / ১৯৮৪ ইং।
৫৮. আবূ ইউসূফ : ইয়াকুব ইবনু ইবরাহীম ইবনু আনসারী (১৮২ হি.) : কিতাবুল আসার, সানগালা হাল, শেখপুরা, পাকিস্তান, আল মাকতাবুল আসারিয়া/বয়রুত, লেবানন, দারুল কুতুব আল-ইলমিয়্যাহ।
৫৯. শাফেয়ী : আবূ আবদুল্লাহ মুহাম্মদ ইবনে ইদ্রীস ইবনু আব্বাস ইবনে ওসমান ইবনে শাফেয়ী কারশী (১৫০-২০৪ হি./৭৬৭-৮১৯ ইং) : আল-মুসনাদ, বয়রুত, লেবানন, দারুল কুতুব আল-ইলমিয়্যাহ।
৬০. মুহাম্মদঃ ইমাম মুহাম্মদ হাসান শায়বানিঃ কিতাবুল আসারঃ দারুল কুতুব ইলমিয়্যাহ, বয়রুত, লেবানন।


সহায়ক প্রমাণপুঞ্জিঃ

১.সিহাহ সিত্তাহ এপ্স
২.Ahlus-sunnah.com থেকে বঙ্গানুবাদ।
৩.Al-Islam.com থেকে বঙ্গানুবাদ।
৪. সুন্নি-বিশ্বকোষ 
৫. শ্বেতমুক্তা মা ফাতেমাতুয যাহরা (আঃ)
লেখকঃ ড. তাহেরুল ইসলাম কাদেরী
৬.হাসনাইনে কারিমের পদমর্যাদা।
লেখকঃ ড. তাহেরুল ইসলাম কাদেরী।
৭.ইমাম সাফুরী (রহ.) : নুজহাতুল মাজালিস
৮.মুফতি জালালুদ্দিন আযহারীঃ AnjumanTrust.org প্রবন্ধ।
৯.হাসনাইন কারীমাইনের মাহাত্ম্যঃ দাওয়াতে ইসলামীর প্রকাশিত বই।
১০.নবী বংশের মর্যাদা সম্পর্কিত ৬০ হাদিস
লেখকঃ ইমাম জালালুদ্দিন সূয়ুতি (রহঃ) 
অনুবাদকঃ মাওলানা মুফতি আমির হোসাইন আল কাদেরী। 
১১.Wikipedia.com Ark of Noah (As.)
১২.বাংলা, ইংরেজী বিভিন্ন ওয়েবসাইট 
১৩.ফাযাইলুস সাহাবা ওয়া আহলিল বাইতঃ মাওলানা হুমায়ুন কবির খান।
১৪.নবী (ﷺ) বংশের পবিত্রতা।
লেখকঃ হাকিমুল উম্মাহ মুফতী ইয়ার খান নঈমী (রহঃ)
১৫.সফীনা-ই-নূহ
লেখকঃ আল্লামা মুহাম্মদ শফী উকাড়বী (রহঃ)
১৬.সৈয়দা ফাতেমা বতুল বিনতে রাসূল (ﷺ)
লেখকঃ আল্লামা মুফতি কাজী আব্দুল ওয়াজেদ
১৭.আল মাওয়াহিবুল লাদুন্নিয়াঃ ইমাম শিহাবুদ্দিন কাস্তালানী (সাকলাইন প্রকাশনী)
১৮.দালায়েলুল বারাকাতঃ লেখকঃ ড. তাহেরুল ইসলাম কাদেরী।
১৯.আবসার তৈয়বী প্রবন্ধ
২০.ড. ইউসুফ জিলানী ও ড.মিয়াজি ব্লগ প্রবন্ধ।


_______ সমাপ্ত _______

Comments

Popular posts from this blog

বালাকোট আন্দোলনের হাকীকত

সৈয়দ আহমদ বেরলভীর জম্ম ও পরিচয়

মওদুদীর ভ্রান্ত আক্বিদা ও ইসলামী আক্বিদা