ইয়াজিদ বিন মুয়াবিয়া (লানাতুল্লাহ)

ইয়াজিদ বিন মুয়াবিয়া (লানাতুল্লাহ)

সংকলকঃ মাসুম বিল্লাহ সানি

ইয়াজিদ বিষয়ে ইমাম আজম আবু হানিফা রহ. এর নীরবতাই ইয়াজিদের প্রতি ইমামে আজমের চরম ঘৃণা প্রকাশ।

ইয়াজিদের বিষয়ে ইমামে আজম রহ. এঁর নীরবতাকে কেন্দ্র করে একটি ভুল ধারণা রয়েছে। ইমামে আজম রহ. এঁর ইয়াজিদ বিষয়ে এই নীরবতা ইয়াজিদের কুফরকে স্পষ্ট করে তোলে। তাঁর এই নীরবতাই ইয়াজিদের কুফরী বিষয়ে আমাদের উপলব্ধীকে বদ্ধমূল করে। ইমাম যায়দ বিন আলী বিন হুসাইন রহ. উমাইয়া শাসক হিশামের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে অবতীর্ণ হলে ইমামে আজম আবু হানিফা রহ. ফতোয়া জারি করেন যে, ইমাম যায়দ বিন আলি বিন হুসাইন রহ. এঁর পক্ষে লড়াই রাসূলুল্লাহ্ এঁর পক্ষে বদর যুদ্ধে লড়াই করার অনুরূপ। এখানে প্রতীয়মান হচ্ছে ইমামে আজম রহ. যুদ্ধে ইমাম যায়দ বিন আলি রহ. এঁর বিরুদ্ধে উমাইয়া শাসক হিশাম বিন আব্দুল মালিকের অবস্থানকে কুফ্ফারের সাথে তুলনা দিয়েছেন। কাজেই ইমামে আজম রহ. এঁর নীরবতাকে আমরা ইয়াজিদের বিপরীতে কুফরীর প্রতি সমর্থন ধরে নিতে পারি যদিও তিনি সরাসরি তা বলেন নি। হিশামের তুলনায় ইয়াজিদ চরম জঘন্য, কুখ্যাত ও নিন্দনীয় ছিল।
ইমাম আবু হানিফা রহ. এঁর সময়কালে বিশেষত শিয়ারা ইয়াজিদকে কাফির বলে নিন্দা ও অভিশাপ দিত। ইমামে আজম রহ. যদি তা সমর্থন না করতেন তাহলে তিনি ইয়াজিদকে উদ্দেশ্য করে কাফির নিন্দাবাদ ও অভিশাপের দোয়া করার তৎকালিন ব্যাপক চর্চার বিরোধীতা করে শিয়াদের খণ্ডনে অগ্রণী ভূমিকা পালন করতেন। অথচ তিনি তখন নীরব ভূমিকা পালন করেন। সুতরাং তাঁর নীরবতাকে ইয়াজিদের কুফরী বা তার প্রতি অভিশাপের দোয়া করার বিষয়কে প্রত্যাখ্যান না করে সমর্থনকে দৃঢ় করে।
[সূত্রঃ আবু জুহরা, হায়াত ওয়া আসর, পৃষ্ঠা ৩৬-৩৭]।
ইমাম আবু হানিফা রহ. যদি হিশামের কর্মকাণ্ড সম্পর্কে না জানতেন তবে তিনি কখনো হিশামকে আবু লাহাব আর আবু জাহেলের সাথে তুলনা করতেন না। অতএব, ইমাম আজম রহ. এঁর আক্বিদা হচ্ছে চরম অবাধ্যতা ইমানকে বরবাদ করে দেয়।

প্রিয় পাঠক, সুন্নি নামধারী ইয়াজিদ প্রেমিকেরা ফিকাহ্ শাস্ত্রের একটি নীতি বা উসূল খুব ভাল করেই জানে যে, কোন বিষয়ে ফিকাহ্ শাস্ত্রে "সুকুত বা নীরবতা" কে সে বিষয়ে "হ্যাঁ বা সম্মতি" কিংবা সে বিষয়টি "অনুমোদিত" বলে ধরে নেয়া হয়। কিন্তু এ প্রেক্ষাপটে সুন্নি নামধারী সে সকল এজিদ প্রেমিকেরা ফিকাহ্ শাস্ত্রের এই উসুলকে নিজ স্বার্থ চরিতার্থ করার জন্য পাশ কাটিয়ে "না বা অসম্মতিসূচক" কিংবা "অননুমোদিত" বলে গণ্য করে ফেত্না ছড়াতে ব্যস্ত রয়েছে।

অভিশপ্ত ইয়াজিদ কর্তৃক আইয়ামে হাররা বা মদিনা শরীফে আক্রমণ

অভিশপ্ত এজিদ কর্তৃক আইয়ামে হাররা বা মদিনা শরীফে আক্রমণ ও প্রিয় নাবী রাসূলুন কারিম (صلى الله عليه و آله و سلم) এঁর রওজা মুবারক থেকে আজানের আওয়াজ।
আইয়ামে হাররা এর সময় মসজিদে নববীতে তিন দিনের জন্য আজান দেয়া হয়নি। একামত ও দেয়া হয়নি। সায়ীদ বিন মুসাইয়াব (সাইয়্যিদুত তাবিয়ীন) মসজিদে নববী থেকে বের হতে পারেননি। (ঐ তিন দিন তিনি মসজিদে নববীতে অবস্থান করছিলেন)। তিনি (এ সময়) মসজিদে নববী থেকে এক ধরণের আওয়াজ শুনে নামাজের সময় অনুধাবন করতেন।
(অন্যত্র বলা হয়েছে, ঐ আওয়াজ ছিল আজানের ধ্বনি)।
রেফারেন্সঃ
১/ তাখরীজু আহাদীসিল মাসাবীহঃ ৫/২৩৬১।
মুহাদ্দিসঃ মুহাম্মাদ আল মানাওয়ী
হাদীসটি সহীহ।
২/ সুনানে দারিমী
খন্ড-১, পেইজ নাম্বার-২২৮
হাদীস সহীহ।
আইয়ামে হাররা কী?
আইয়ামে হাররা ঐ দিন গুলোকে বলা হয়, যখন অভিশপ্ত ইয়াযীদের নির্দেশে মদীনা মুনাওওয়ারা আক্রমণ করা হয়েছিল। এ সময় তার নির্দেশে মদীনাতে হত্যা, লুন্ঠন, ধর্ষণ সব কিছু সংঘটিত করেছিল অভিশপ্ত ইয়াযিদের অভিশপ্ত বাহিনী। অনেক সাহাবীদেরকে এ সময় শহীদ করা হয়েছিল।
রেফারেন্সঃ
১/ আল বিদায়াহ ওয়ান নিহায়াহ
ষষ্ট খন্ড
অধ্যায়ঃ আল ইখবারু আন ওয়াকআতিল হাররাহ।
২/
আত তাবারীঃ ৫/৪৮৪
৩/ আল কামিলঃ ৪/১১২
৪/ আল বিদায়াহঃ ৮/২১৮
এ ঘটনাকালে মুসলমানের রক্তে পিচ্ছিল হয়ে গিয়েছিল মদীনার রাস্তাগুলো।
মুসলমানের রক্ত গড়িয়ে গড়িয়ে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের রওযা মোবারক পর্যন্ত পৌঁছেছিল।
মসজিদে নববী রক্তে ভরে গিয়েছিল। ১০০০০ মুসলমানকে হত্যা করা হয়েছিল।
ধর্ষণের ফলে ১০০০ জারজ সন্তান জন্ম নিয়েছিল।
সুত্রঃ
আত তাযকিরাহ
ইমাম ইবনুল জাওযী
পেইজঃ ৬৩,১৬৩
হাররার দিন গুলোতে সায়ীদ বিন মুসাইয়্যাব (রাঃ) রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের রাওযা মুবারক থেকে নামাজের সময়গুলোতে আজানের আওয়াজ শুনতেন। এ সময় তিনি ছাড়া আর কেউ মসজিদে ছিলনা।
রেফারেন্সঃ
কিতাবুল ফারকি বাইনা আউলিয়া ইর রাহমানি ওয়া আউলিয়া ইশ শাইতানি
ইবনু তাইমিয়াহ
অধ্যায়ঃ কারামাতুস সাহাবাতি ওয়াত তাবিয়ীন।
- সায়ীদ বিন মুসাইয়াব কে ছিলেন?
সায়ীদ বিন মুসাইয়াব ছিলেন মদীনা মুনাওওয়ারার ফকীহদের মধ্য থেকে একজন। তিনি হাদীস, তাফসীর এবং ফিকহ সম্পর্কে অনেক জ্ঞানের অধিকারী ছিলেন।
রেফারেন্সঃ
কিতাবু শাযারাতিয যাহাবি ফী আখবারিম মিন যাহাবি
ইবনু ইমাদ হাম্বালী
তালহা বিন মুহাম্মাদ বলেন, হাররার দিন গুলোতে সায়ীদ বিন মুসাইয়াব মসজিদে নববীতে ছিলেন। কোথাও বের হন নাই। তিনি বলেছেন, যখন নামাজের সময় হত, আমি রাসুলের রাওযা হতে আজানের আওয়াজ বের হতে শুনতাম।
রেফারেন্সঃ
সিয়ারু আ’লামিন নুবালা
ইমাম যাহাবী।
আরো দেখুন,
১/দালাইলুন নুবুওওয়াহঃ৫০৯/৫১০
আবু নাঈম।
২/আত তাবাকাতুল কুবরা
ইবনু সা’দ (৫৮১৯)-৫:৬।
__________
এজিদের উপর, তার সহযোগীদের উপর, তার কর্মে সমর্থনকারীদের উপর অভিশাপ নিপতিত।

ইমাম হুসাইন (রা) এর হত্যায় ইয়াজিদের ভুমিকা :

উমাইয়্যা বংশীয় খলিফা ইয়াযীদ ইবনে মু‘আবিয়া তার তিন বছরের শাসনামলে তিনটি বড় ধরনের অপরাধে লিপ্ত হয়েছিল।

তার শাসনামলের প্রথম বছরে তার নির্দেশে ইমাম হুসাইন (আ.) সহ মহানবী (সা.)-এর পরিবারের পঞ্চাশজন শিশু, যুবক ও পৌঢ় ব্যক্তিকে হত্যা করা হয়; 
দ্বিতীয় বছরে তার সেনাদল মদীনায় আক্রমণ চালায় এবং আশিজন সাহাবীসহ দশ হাজার লোককে হত্যা করে এবং এক হাজার মুসলিম নারীর শ্লীলতাহানি ঘটায়; 
তৃতীয় বছরে সে আবদুল্লাহ্ ইবনে যুবাইরকে দমনের উদ্দেশে মক্কায় আক্রমণের নির্দেশ দেয় ও তার সৈন্যরা পবিত্র কাবা গৃহে অগ্নিসংযোগ করে।

এ প্রবন্ধে আমরা খেলাফতের আসনে অধিষ্ঠিত হওয়ার পর থেকে ইয়াযীদ ইমাম হুসাইন (আ.)-এর শাহাদাত পর্যন্ত তাঁকে হত্যার যে সকল প্রয়াস চালিয়েছিল, হত্যার নির্দেশ দিয়ে যে পত্রগুলো সে বিভিন্ন ব্যক্তির নিকট প্রেরণ করেছিল এবং তাঁকে হত্যার পেছনে তার ভূমিকা থাকার অন্যান্য দলিল নিয়ে কয়েকটি শিরোনামে আলোচনা করব।

১.

মদীনার গভর্নরের প্রতি ইয়াযীদের নির্দেশ : ‘হুসাইন বাইআত না করলে তাকে হত্যা কর’
ইতিহাস সাক্ষ্য দেয় যে, ইয়াযীদ কেবল তার নেতৃত্বকে মেনে নেয়ার সাপেক্ষেই ইমাম হুসাইন (আ.)-কে হত্যা করা থেকে নিবৃত্ত হত। ঐতিহাসিক ইয়াকুবী লিখেছেন : ‘ইয়াযীদ মদীনার গভর্নর ওয়ালীদ ইবনে ওকবাকে এ মর্মে পত্র লিখে যে, যখন আমার পত্র তোমার হাতে পৌঁছবে তখন হুসাইন ইবনে আলী ও আবদুল্লাহ্্ ইবনে যুবাইরকে ডেকে পাঠাও এবং তাদের থেকে বাইআত (আনুগত্যের শপথ) গ্রহণ কর। যদি তারা অস্বীকার করে, তবে তাদের মস্তক বিচ্ছিন্ন করে আমার নিকট প্রেরণ কর।’
এ নির্দেশের প্রেক্ষিতে ওয়ালীদ ইমাম হুসাইনকে স্বীয় প্রাসাদে ডেকে পাঠায়। ইমাম হুসাইন তাঁকে হত্যার ষড়যন্ত্র আঁচ করে বনি হাশিমের যুবকদের সঙ্গে নিয়ে সেখানে যান। ওয়ালীদ ইমাম হুসাইনকে বাইআতের প্রস্তাব দিলে তিনি তার জবাবে বলেন : ‘হে আমীর! আমরা নবীর আহলে বাইত, রেসালতের খনি; আমাদের গৃহে ফেরেশতাদের আনা-গোনা হত, (তা ছিল) রহমত অবতীর্ণের ক্ষেত্র, মহান আল্লাহ্ সকল কল্যাণের শুরু করেছেন আমাদের থেকে এবং আমাদের মাধ্যমেই তার পরিসমাপ্তি ঘটিয়েছেন। কিন্তু ইয়াযীদ হল দুষ্কৃতিপরায়ণ, মদ্যপায়ী, সে সম্মানিত ব্যক্তিদের হত্যাকারী এবং প্রকাশ্য পাপাচারী। সুতরাং আমার মত কেউ তার মত কারও হাতে বাইআত করতে পারে না।’
এরূপ জবাব শুনে ওয়ালীদ নিশ্চুপ থাকলেও মারওয়ান ইবনুল হাকাম ইমাম হুসাইন (আ.)-কে হত্যার পরামর্শ দেয়। ওয়ালীদ ইসলামের বিধান মতে ইমাম হুসাইনকে হত্যা জায়েয নয় বলে তা করতে অস্বীকার করে। এ খবর ইয়াযীদের নিকট পৌঁছলে সে ওয়ালীদকে লিখে পাঠায় : ‘যখন আমার পত্র তোমার হাতে পৌঁছবে তখন দ্বিতীয়বারের ন্যায় মদীনার জনগণের নিকট বাইআত নিবে এবং আবদুল্লাহ্ ইবনে যুবাইরকে তার অবস্থায় ছেড়ে দাও। কারণ, সে আমাদের নিকট থেকে পালাতে পারবে না। কিন্তু হুসাইনকে হত্যা করে তার মাথা আমার নিকট পাঠিয়ে দাও। যদি তুমি তা কর, তবে তোমার জন্য উন্নত জাতের কিছু ঘোড়া ও আরো মূল্যবান অনেক উপহার পাঠাব।’
কিন্তু ইয়াযীদের পত্র ওয়ালীদের নিকট পৌঁছার পূর্বেই ইমাম হুসাইন মদীনা ত্যাগ করেছিলেন।
এর কিছুদিন পরই ইয়াযীদ ওয়ালীদকে দুর্বলতার অভিযোগে পদচ্যুত করে। এর কয়েক মাস পর ইয়াযীদ একইভাবে ইমাম হুসাইনের দূত মুসলিম ইবনে আকীলের তৎপরতার বিপক্ষে কঠোর পদক্ষেপ না নেয়ার অভিযোগে কুফার গভর্নর নোমান ইবনে বাশীরকেও পদচ্যুত করে।

২.

ইমাম হুসাইনের উক্তি : ‘আমাকে তারা হত্যা করবেই’
তাবারী বর্ণনা করেছেন যে, ইমাম হুসাইন (আ.) মক্কায় এক জনসমাবেশে লোকদের উদ্দেশ করে বলেন : ‘তোমরা কি জান, ইবনে যুবাইর কি বলছে?’ লোকেরা বলল : ‘না, আমরা জানি না। আল্লাহ্ আমাদের আপনার জন্য উৎসর্গিত করুন।’ ইমাম হুসাইন বললেন : ‘ইবনে যুবাইর আমাকে এ মসজিদে অবস্থানের কথা বলেছে এবং দাবি করেছে যে, আমার জন্য সৈন্য সংগ্রহ করবে। কিন্তু আমি আল্লাহর শপথ করে তোমাদের বলছি, আমার জন্য মক্কার এক বিঘত দূরে নিহত হওয়া এর অভ্যন্তরে নিহত হওয়া অপেক্ষা শ্রেয়। আল্লাহর শপথ, যদি আমি আত্মগোপন করি এবং কোন গুহায়ও আশ্রয় গ্রহণ করি, তবু তারা আমাকে খুঁজে বের করা পর্যন্ত বিশ্রাম গ্রহণ করবে না এবং তারা আমার সাথে তা-ই করবে যা তারা সিদ্ধান্ত নিয়েছে।’
এ বিষয়গুলো থেকে আমরা এ সিদ্ধান্তে উপনীত হতে পারি যে, ইমাম হুসাইন (আ.) বনি উমাইয়্যার বিদ্বেষের তীব্রতা ও তাঁকে হত্যার অসৎ উদ্দেশ্য সম্পর্কে সম্পূর্ণরূপে অবহিত ছিলেন।

৩. 

ইয়াযীদ ইমাম হুসাইনকে হত্যার নির্দেশ দিয়েছিল
ইয়াকুবী বর্ণনা করেছেন : ‘হুসাইন (আ.) ইরাকের উদ্দেশে যাত্রা করেছেন জানতে পেরে ইয়াযীদ কুফার গভর্নর হিসেবে উবাইদুল্লাহ্ ইবনে যিয়াদকে নিয়োগ দান করে এবং তাকে এ মর্মে পত্র লিখে পাঠায় : আমার নিকট খবর পৌঁছেছে যে, কুফার লোকেরা হুসাইনকে ইরাকে আসার আহ্বান জানিয়ে পত্র লিখেছে। আমি নিশ্চিত, সে কুফার দিকে যাত্রা করেছে... যদি তুমি তাকে হত্যা কর, তবে তুমি তোমার দায়িত্ব পালন করেছ। আর যদি তা না কর, তবে আমি তোমাকে তোমার মৃত পূর্ব-পুরুষদের নিকট পাঠিয়ে দেব। সুতরাং সাবধান! এ সুযোগকে হাতছাড়া কর না।’

ইবনে আসাম বর্ণনা করেছেন : ‘হুর ইবনে ইয়াযীদ রিয়াহি, উবাইদুল্লাহ্ ইবনে যিয়াদকে লিখে পাঠায় যে, সে ইমাম হুসাইনকে কারবালায় অবরুদ্ধ করেছে। এখন তার করণীয় কী?’ ইবনে যিয়াদ জবাবে লিখে : ‘আমীরুল মুমিনীন ইয়াযীদ ইবনে মু‘আবিয়া পত্র মারফত আমাকে নির্দেশ দিয়েছেন যে, তিনি তার নির্দেশ পালন না করলে আমার সাথে যথেচ্ছ আচরণ, এমনকি আমাকে হত্যা করতেও কুণ্ঠাবোধ করবেন না।’
এ ঐতিহাসিক বর্ণনাগুলো এ সাক্ষ্য প্রদান করে যে, ইয়াযীদ স্বয়ং উবাইদুল্লাহ্ ইবনে যিয়াদের প্রতি ইমাম হুসাইনকে হত্যার নির্দেশ দিয়েছিল, এমনকি তার এ নির্দেশ পালন না করলে তাকে হত্যার হুমকিও দিয়েছিল।

৪. 

ইবনে যিয়াদ ইমাম হুসাইনের বিষয়ে নিজের থেকে কখনই কোন পদক্ষেপ নেয়নি
ইতিহাস সাক্ষ্য দেয় যে, ইমাম হুসাইন (আ.)-এর শাহাদাত পর্যন্ত ইয়াযীদ ও ইবনে যিয়াদের মধ্যে অবিচ্ছিন্নভাবে যোগাযোগ ছিল। কারণ, ইয়াযীদ তাকে নির্দেশ দিয়েছিল সে যেন সবসময় তার সঙ্গে যোগাযোগ রাখে এবং ছোট-বড় সব বিষয়েই তাকে পত্র (দূত) মারফত অবহিত করে। তাবারী লিখেছেন : ‘মুসলিম ইবনে আকীল এবং হানীকে হত্যার পর ইবনে যিয়াদ তাঁদের উভয়ের মাথা কেটে সিরিয়ায় ইয়াযীদের নিকট প্রেরণ করে। ইয়াযীদ তাদের কর্তিত মাথা দেখার পর বেশ কিছু দিকনির্দেশনা দিয়ে ইবনে যিযাদকে একটি পত্র লিখে। তাতে সে উল্লেখ করে : ‘আমার কাছে সংবাদ পৌঁছেছে যে, হুসাইন কুফার দিকে যাত্রা করেছে। তার সঙ্গে যারা যোগাযোগ রাখে তাদের প্রতি কড়া নজরে রাখ এবং তাদের শনাক্ত করার জন্য কুফায় গুপ্তচরদের নিয়োগ কর ও তাদের গ্রেফতার কর। যে কোন অজুহাতে হোক তার অনুসারীদের বন্দি কর। আর কুফায় যা-ই ঘটে না কেন, আমাকে অবহিত কর। তোমার ওপর আল্লাহ্ রহমত বর্ষিত হোক।’
ইবনে আসাকির বর্ণনা করেছেন : ‘যখন ইয়াযীদ জানতে পারে যে, ইমাম হুসাইন কুফার দিকে রওয়ানা হয়েছেন তখন সে ইবনে যিয়াদের নিকট দূত প্রেরণ করে নির্দেশ দেয় তাঁর সাথে যুদ্ধ করার ও তাঁকে (জীবিত অথবা মৃত) সিরিয়ায় পাঠানোর।’

ইবনে আসামের বর্ণনায় এসেছে : ইবনে যিয়াদ গভর্নর হিসেবে কুফায় প্রবেশের পরই কুফার জনগণের উদ্দেশে বক্তব্যে বলে : ‘ইয়াযীদ ইবনে মুআবিয়া আমার নিকট পত্র এবং চার হাজার দিনার (স্বর্ণমুদ্রা) ও দুই লক্ষ দিরহাম প্রেরণ করে এ অর্থ তোমাদের মধ্যে বিতরণ করার নির্দেশ দিয়েছে। সে আরও নির্দেশ দিয়েছে যে, আমি যেন তোমাদেরকে তার শত্রু হুসাইন ইবনে আলীর বিরুদ্ধে যুদ্ধে পাঠাই এবং তোমাদের তার আনুগত্যের দাওয়াত দেই।’

আল্লামা সুয়ূতী লিখেছেন : ‘ইয়াযীদ এক পত্রে তার নিযুক্ত কুফার গভর্নর ইবনে যিয়াদকে হুসাইনের সঙ্গে যুদ্ধের ও তাঁকে হত্যার নির্দেশ দেয়।’
এ বর্ণনাগুলো থেকে স্পষ্ট হয় যে, কুফায় যা কিছু ঘটত, ইয়াযীদ সে বিষয়ে শুধু অবহিতই ছিল না; বরং ইবনে যিয়াদ যা করত তা তার নির্দেশ অনুযায়ী ও তার অনুমতি সাপেক্ষেই করত। ফলে ইবনে যিয়াদের কর্মের দায় প্রথমত ইয়াযীদের ওপরই বর্তায়।

৫. 

ইমাম হুসাইন (আ.)-এর হত্যায় ইয়াযীদ আনন্দ ও দম্ভ প্রকাশ করেছিল
ইবনে আসাম, আবুল ফারাজ ইসফাহানী এবং ইবনে কাসির বর্ণনা করেছেন যে, ইমাম হুসাইন (আ.)-এর কর্তিত পবিত্র মাথা ইয়াযীদের নিকট নেয়া হলে সে আনন্দিত হয়ে ইবনে যেবারার নিম্নোক্ত কবিতাটি আবৃত্তি করে তার মনোভাব প্রকাশ করে :

لعبت هاشم بالملک فلا خبر جاء و لا وحی نزل
لستُ مِن خندف ان لم انتقم مِن بنی احمد ما کان فعل
قد قتلنا قرم ساداتهم و عدلنا میل بدر فاعتدل

‘বনি হাশিম রাজত্ব নিয়ে খেলা করেছে। প্রকৃতপক্ষে কোন ঐশী বার্তাও আসেনি, আর কোন ওহীও অবতীর্ণ হয়নি। আমি যদি বনি আহমাদ অর্থাৎ মুহাম্মাদ (সা.)-এর বংশধরদের থেকে যা সে করেছিল তার প্রতিশোধ না নেই তবে আমি খিনদিফের (সন্তানদের) অন্তর্ভুক্ত নই। নিশ্চয় আমরা তাদের নেতাদের মধ্যে শীর্ষস্থানীয়কে হত্যা করেছি এবং বদরের (নিহতের প্রতিশোধ গ্রহণ করে) সমান সমান হয়েছি।’
এ কবিতায় ইয়াযীদ রাসূল (সা.)-এর নবুওয়াতকে অস্বীকার করেছে এবং ইমাম হুসাইনের হত্যাকে বদরের যুদ্ধের প্রতিশোধ বলে উল্লেখ করেছে। এভাবে সে তার অন্তরের বিশ্বাসকেই ব্যক্ত করেছে।
ইবনে আসির বর্ণনা করেছেন : ‘হুসাইনের শাহাদাতের পর তাঁর পবিত্র মাথা ইয়াযীদের কাছে প্রেরিত হলে সে তার হাতের লাঠি দিয়ে তাঁর গলায় আঘাত করে কবিতা পাঠ করছিল।’
যদি ইয়াযীদ ইমাম হুসাইনের হত্যায় সন্তুষ্ট না হয়ে থাকে তবে কেন তাঁর গলায়, কোন কোন বর্ণনা মতে পবিত্র ঠোঁট ও দাঁতে আঘাত করে দম্ভের সাথে কবিতা আবৃত্তি করছিল। এ ঘটনায় ইমাম হুসাইনের প্রতি তার বিদ্বেষ সুস্পষ্টরূপে প্রকাশিত হয়েছে।

আল্লামা সুয়ূতী লিখেছেন : ‘ইমাম হুসাইন ও তাঁর পিতার বংশের লোকদের হত্যার পর ইবনে যিয়াদ তাঁদের মস্তকগুলোকে সিরিয়ায় প্রেরণ করলে ইয়াযীদ প্রথমে আনন্দিত হয়, কিন্তু পরে যখন মুসলমানদের মধ্যে তার প্রতি অসন্তোষ ও ঘৃণার আশংকা করল তখন সে বাহ্যিকভাবে অনুশোচনা প্রকাশ করে। সুতরাং মানুষের ইয়াযীদের প্রতি ক্ষুব্ধ হওয়ার অধিকার রয়েছে।’

৬. 

ইমাম হুসাইনকে হত্যার পর ইয়াযীদ ইবনে যিয়াদকে পুরস্কৃত করেছিল
ইমাম হুসাইনকে হত্যার পর ইয়াযীদ, ইবনে যিয়াদকে তার পদে শুধু বহালই রাখেনি; বরং এ ঘটনার কয়েক মাস পর যখন সে তার সঙ্গে সিরিয়ায় দেখা করতে যায় তখন সে ইবনে যিয়াদকে আলিঙ্গন করে তার কপালে চুম্বন করে নিজ সিংহাসনের পাশে বসায় এবং এক গায়ককে তাকে সম্বর্ধনা দানের জন্য গান গাইতে বলে। সে তার সাকীকে মদ পরিবেশনের নির্দেশ দেয়। অতঃপর সে রাষ্ট্রীয় কোষাগার থেকে ইবনে যিয়াদ ও ওমর ইবনে সাদকে দশ লক্ষ দিরহাম (রৌপ্যমুদ্রা) দান করে। এমনকি সে এক বছরের জন্য ইবনে যিয়াদকে ইরাকের (কুফা ও বসরার) বার্ষিক খাজনার পুরোটাই গ্রহণের অনুমতি দেয়।

ইবনে আসির লিখেছেন : ‘ইমাম হুসাইনকে হত্যা করার পর ইবনে যিয়াদ তাঁর পবিত্র মস্তক ইয়াযীদের নিকট প্রেরণ করলে সে তার প্রতি খুবই খুশী হয়। কিন্তু যখন সে বুঝতে পারে যে, জনগণ তার এ কর্মে সন্তুষ্ট নয় তখন কৃত্রিমভাবে শোক প্রকাশ শুরু করে। এ কারণেই ইয়াযীদ তার মৃত্যু পর্যন্ত তাকে কুফার গভর্নর হিসেবে বহাল রাখে। এমনকি ইবনে যিয়াদই কুফার মিম্বারে ইয়াযীদের মৃত্যুর ঘোষণা দেয়।’
তাবারীও ইমাম হুসাইনকে হত্যা করার পর ইয়াযীদের নিকট ইবনে যিয়াদের মর্যাদা বৃদ্ধির বিষয় বর্ণনা করেছেন।

৭. 

আবদুল্লাহ্ ইবনে আব্বাস ইয়াযীদকে ইমাম হুসাইনকে হত্যার অভিযোগে অভিযুক্ত করেছেন
ইমাম হুসাইন (আ.)-এর শাহাদাতের পর আবদুল্লাহ্ ইবনে আব্বাস ইয়াযীদকে এক পত্রে লিখেন : ‘হে অবৈধ সন্তান! তুমিই হলে সেই ব্যক্তি যে তার পাপিষ্ঠ ও কলুষ হাত দিয়ে হুসাইনকে হত্যা করেছে। আমি কখনই এ কথা ভুলে যাইনি যে, তোমার হাত রক্তে রঞ্জিত। তুমি হুসাইনসহ বনি হাশিমের এমন ব্যক্তিদের হত্যা করেছ যাঁরা সকলেই উজ্জ্বল, দীপ্তিময় আলো এবং অন্ধকারে নিপতিতদের জন্য পথপ্রদর্শক তারকাস্বরূপ ছিলেন।’
ইবনে আব্বাস একজন প্রসিদ্ধ সাহাবী এবং মহানবীর চাচা হযরত আব্বাসের সন্তান। তিনি কারবালার ঘটনার সময় জীবিত ছিলেন এবং ঐ ঘটনা সংঘটনের (আশুরার) দিনে তিনি দ্বিপ্রহরে স্বপ্ন দেখেন যে, রাসূলুল্লাহ্্ (সা.) ক্রন্দনরত ও দুঃখভারাক্রান্ত অবস্থায় কারবালা ময়দান থেকে ইমাম হুসাইনের রক্ত সংগ্রহ করছেন। স্বপ্নেই রাসূল (সা.) তাঁকে ইমাম হুসাইনের শাহাদাতের সংবাদ দেন। নিঃসন্দেহে তিনি ইয়াযীদকে মিথ্যা অভিযোগে অভিযুক্ত করেননি।

৮. 

কারবালার প্রত্যক্ষ সাক্ষী হযরত যায়নাব বিনতে আলী (আ.) ইয়াযীদের সামনেই তাকে ইমাম হুসাইন (আ.)-এর হত্যাকারী বলেছেন
মহানবী (সা.)-এর বংশের বন্দি নারী, শিশুসহ তাঁর আহলে বাইতের মহান ব্যক্তিদের পবিত্র মস্তকগুলো নিয়ে যখন ইবনে যিয়াদের সৈন্যরা সিরিয়ায় পৌঁছে তখন ইয়াযীদ তাদেরকে তার সামনে উপস্থিত করার নির্দেশ দেয়। ইমাম হুসাইনের পবিত্র মস্তকের ওপর ইয়াযীদের দৃষ্টি পড়া মাত্রই সে তার হাতের লাঠি দিয়ে তাঁর পবিত্র গলা, ঠোঁট ও দাঁতে আঘাত করতে থাকে এবং ইবনে যেবারার কবিতাটি আওরাতে থাকে। এ দৃশ্য দেখে হযরত যায়নাব ইয়াযীদের উদ্দেশে অত্যন্ত বলিষ্ঠভাবে তার ইসলামের বাহ্যিক মুখোশ উন্মোচন করেন। তিনি ইয়াযীদের সকল কর্মকা-কে অনৈসলামিক এবং ব্যক্তিগত বিদ্বেষ ও গোত্রীয় আক্রোশপ্রসূত প্রমাণ করে এক দীর্ঘ বাগ্মিতাপূর্ণ বক্তব্য দান করেন। বক্তব্যের এক স্থানে তিনি বলেন:

‘হে ইয়াযীদ! তুই এ মহাঅপরাধ করার পর নিজেকে পাপী ও অপরাধী না ভেবে এবং এ অপরাধ কত বড় তা চিন্তা না করে বলছিস : ‘হায়! আমার পিতারা যদি এখানে উপস্থিত থাকত।’ তুই কি মনে করেছিস তারা এ কথা শুনে আনন্দে অভিভূত হয়ে তোকে বলত : ‘হে ইয়াযীদ! তোর হাত পঙ্গু না হোক।’ তুই এ ধরনের ঔদ্ধত্যমূলক কথা বলছিস এবং বেহেশতের যুবকদের সর্দারের দাঁতে আঘাত করছিস! তুই কতটা নির্লজ্জ! হ্যাঁ, এরূপ উদ্ভট ও অসংগত কথা তোর জন্যই সাজে। কারণ, তুই হচ্ছিস ঐ ব্যক্তি যে পূর্বের ক্ষতকে উন্মুক্ত করেছিস এবং যার হাত মুহাম্মাদ (সা.)-এর বংশধরদের রক্তে রঞ্জিত। তুই আবদুল মুত্তালিবের বংশের তারকাদের হত্যা করেছিস এবং আমাদের মূলকে কর্তন করেছিস। আর এখন আনন্দে মাতোয়ারা হয়ে পূর্বপুরুষদের ডাকছিস, আর ভাবছিস ওরা তোর আহ্বান শুনতে পাচ্ছে। শীঘ্রই তুইও তাদের সাথে মিলিত হবি এবং এমন শাস্তির সম্মুখীন হবি যে, তখন আকাক্সক্ষা করবি, যদি পূর্বেই তোর হাতগুলো পঙ্গু, আর তোর জিহ্বা মূক হয়ে যেত।’

৯. 

ইমাম যায়নুল আবেদীন (আ.) ইয়াযীদকে তাঁর পিতার হত্যাকারী বলে সম্বোধন করেছেন
ইমাম যায়নুল আবেদীনও সিরিয়ায় অবস্থানকালে ইয়াযীদের উপস্থিতিতে কয়েকবার তাকে তাঁর পিতার হত্যাকারী বলে অভিহিত করেছেন। ইয়াযীদ ইমাম সাজ্জাদকে উদ্দেশ করে যখন বলে : ‘তুমি কি ঐ ব্যক্তির সন্তান যাকে আল্লাহ্ হত্যা করেছেন?’ ইমাম জবাবে বলেন : ‘আমি হলাম আলী, যার পিতাকে তুমি হত্যা করেছ।’ অতঃপর তিনি পবিত্র কুরআনের নিম্নোক্ত আয়াতটি তেলাওয়াত করেন :

وَ مَن يَقْتُلْ مُؤْمِنًا مُّتَعَمِّدًا فَجَزَاؤُهُ جَهَنَّمُ خَلِدًا فِيهَا وَ غَضِبَ اللَّهُ عَلَيْهِ وَ لَعَنَهُ وَ أَعَدَّ لَهُ عَذَابًا عَظِيمًا

‘যে কেউ ইচ্ছাকৃতভাবে কোন মুমিনকে হত্যা করে তার শাস্তি জাহান্নাম; সেখানে সে স্থায়ী হবে এবং আল্লাহ্ তার প্রতি ক্রোধান্বিত হবেন, তাকে লানত করবেন এবং তার জন্য মহাশাস্তি প্রস্তুত রেখেছেন।’
যখন ইয়াযীদ লক্ষ্য করল যে, হযরত যায়নাব (আ.) এবং ইমাম যায়নুল আবেদীন (আ.)-এর বক্তব্য তার দরবারে উপস্থিত ব্যক্তিদেরও প্রভাবিত করছে এবং পরিবেশ তার নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাচ্ছে তখন সে তার মুয়াজ্জিনকে আজান দিতে বলে। মুয়াজ্জিন আজানে রাসূল (সা.)-এর রিসালাতের সাক্ষ্য দান শুরু করলে ইমাম তাকে থামার নির্দেশ দিয়ে ইয়াযীদকে উদ্দেশ করে বলেন : ‘হে ইয়াযীদ! যে মুহাম্মাদ (সা.)-এর কথা তুমি বলছ; সে কি তোমার পূর্বপুরুষ, না আমার? যদি তুমি তাঁকে নিজের পূর্বপুরুষ বলে দাবি কর, তবে তুমি মিথ্যা বলছ। আর যদি তিনি আমার পূর্বপুরুষ হন তবে কেন তুমি তাঁর বংশধরদের হত্যা করেছ?’

১০. 

ইয়াযীদ সম্পর্কে আহলে সুন্নাতের বিশিষ্ট আলেমদের দৃষ্টিভঙ্গি
আহলে সুন্নাতের প্রসিদ্ধ কিছু সংখ্যক আলেম ইয়াযীদের কাফির হওয়াকে নিশ্চিত বলেছেন এবং তাকে লানত করা জায়েয বলেছেন এবং তারা নিজেরাও তাকে লানত করেছেন। তন্মধ্যে আহমাদ ইবনে হাম্বাল, ইবনে যাওযী, কাযী আবু ইয়ালী, জাহিয, আল্লামা তাফতাযানী এবং আল্লামা সুয়ূতীর নাম উল্লেখযোগ্য।
আল্লামা তাফতাযানী বলেন : ‘ইমাম হুসাইনকে হত্যার পর ইয়াযীদের সন্তুষ্টি ও আনন্দ প্রকাশ এবং মহানবী (সা.)-এর আহলে বাইতের প্রতি তার নিকৃষ্ট আচরণ তার অসংখ্য মন্দ কর্মের কিছু নমুনা মাত্র যা বিভিন্ন গ্রন্থে ও সূত্রে বর্ণিত হয়েছে। আমরা তার বংশের পরিচয় দেখব না; বরং তার ঈমানের প্রকৃত অবস্থা দেখব। মহান আল্লাহ্ তাকে ও তার পক্ষাবলম্বীদের লানত করুন।’
ইয়াযীদের সকল গুরুতর অপরাধকে তুলে ধরে জাহিয বলেছেন : ‘এ বিষয়গুলো তার নিষ্ঠুরতা, কপটতা ও অধার্মিকতার প্রমাণ। নিঃসন্দেহে সে দুর্বৃত্ত ও অভিশপ্ত। যে কেউ তাকে সমর্থন করবে সে নিজেকেই অসম্মানিত করবে।’
বারযানজী তাঁর ‘ইশাআ’ গ্রন্থে এবং হাইসামী তাঁর ‘সাওয়ায়েকুল মুহরিকা’ গ্রন্থে বর্ণনা করেছেন : ‘আহমাদ ইবনে হাম্বলকে তাঁর পুত্র যখন বলেন যে, আল্লাহ্ কিতাবে আমি ইয়াযীদকে লানত করার সপক্ষে কোন দলিল পাই না। তখন তিনি পবিত্র কুরআনের সূরা মুহাম্মাদের ২২ ও ২৩ নং আয়াত দু’টি তেলাওয়াত করেন :

فَهَلْ عَسَيْتُمْ إِن تَوَلَّيْتُمْ أَن أَن تُفْسِدُواْ فىِ الْأَرْضِ وَ تُقَطِّعُواْ أَرْحَامَكُم أُوْلَئكَ الَّذِينَ لَعَنَهُمُ اللَّهُ فَأَصَمَّهُمْ وَ أَعْمَى أَبْصَرَهُمْ

‘তোমরা কি আশা কর যে, তোমরা কর্তৃত্বের অধিকারী হলে ভূপৃষ্ঠে বিপর্যয় সৃষ্টি করতে থাকবে এবং তোমাদের আত্মীয়তার বন্ধন ছিন্ন করবে? (যারা এরূপ করবে) তারাই হল সে সকল লোক যাদের আল্লাহ্ অভিসম্পাত (স্বীয় রহমত হতে দূর) করেন এবং তাদের কর্ণে বধিরতা ও তাদের চক্ষুতে অন্ধত্ব সৃষ্টি করেছেন।’
অতঃপর তিনি বলেন : ‘ইয়াযীদ যা করেছে তার থেকে বড় কোন বিপর্যয় ও আত্মীয়তার বন্ধন ছিন্ন করার নমুনা আছে কি?’

আল্লামা আলুসী বলেন : ‘যদি কেউ বলে ইয়াযীদের কোন দোষ ছিল না এবং সে কোন অপরাধ করেনি, তাই তাকে লানত করা যাবে না; নিঃসন্দেহে সে ইয়াযীদের অন্যতম সহযোগী এবং তার দলের অন্তর্ভুক্ত।’ 

তথ্যসূত্র

১. তারিখে ইয়াকুবী, ২য় খ-, পৃ. ২৪১; ইবনে আসাম, আল ফুতুহ, ৩য় খ-, ৫ম অধ্যায়, পৃ. ১০-১১।
২. ইবনে আসাম, আল ফুতুহ, ৩য় খ-, ৫ম অধ্যায়, পৃ. ১৫-১৮।

ইয়াজিদের নামের পার্শ্বে ‘রাদ্বিয়াল্লাহু তাআলা আনহু’ ব্যবহার-কারী জাকির নায়েকের মিথ্যাচারিতার পোস্ট-মর্টেম

ইয়াজিদের নামের পার্শ্বে ‘রাদ্বিয়াল্লাহু তাআলা আনহু’ ব্যবহার-কারী জাকির নায়েকের মিথ্যাচারিতার পোস্ট-মর্টেম : শাইখ আবুল কালাম আজাদ
ইয়াজিদের নামের পার্শ্বে ‘রাদ্বিয়াল্লাহু তাআলা আনহু’ ব্যবহার-কারী জাকির নায়েকের মিথ্যাচারিতার পোস্ট-মর্টেম : শাইখ আবুল কালাম আজাদ
ইয়াজিদের নামের পার্শ্বে ‘রাদ্বিয়াল্লাহু তাআলা আনহু’ ব্যবহার-কারী জাকির নায়েকের মিথ্যাচারিতার পোস্ট-মর্টেম

       প্রিয় পাঠক! ইসলামের ইতিহাসে ঘৃণিত ব্যক্তিদের কোনো তালিকা তৈরী করা হলে একেবারে উপরের দিকে থাকবে ইয়াজিদ পালিতের নাম।এই খলনায়কটি হল নিমর্মতা, পৈশাচিকতা এবং মানবাধিকার লংঘনের মূর্ত প্রতীক। নির্বিচার গণহত্যার মাধ্যমে বিশ্বমানবতাকে স্তম্ভিত করে দেওয়া এই নরপিশাচটির ফাসিক হওয়া সম্পর্কে উলেমায়ে ইসলাম এবং হাদীস-বিশেষজ্ঞগনের মধ্যে কোন দ্বিমত নেই। কিন্তু গভীর পরিতাপের বিষয়, মুসলিম উম্মাহর মধ্যে বিবাদ-দ্বন্দ-অনৈক্য সৃস্টিকারী একটি বিশেষ গোষ্ঠী মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম এবং তার প্রিয় আহলে বাইতের প্রতি বিদ্বেষ-ঈর্ষা হেতু ইয়াজিদের নারকীয় কর্মকান্ডকে ধামাচাপা দেওয়ার চেস্টা করেএবং তার প্রশংসা করে । সম্প্রতি ঐ বিশেষ গোষ্ঠীর এক টিভি-প্রচারক ইয়াজিদের নামের পার্শ্বে ‘রাদ্বিয়াল্লাহু তাআলা আনহু’ ব্যবহার করেছেন এবং মুসলিমদের হৃদয়ে তীব্র ব্যথা প্রদান করেছেন। সর্বাধিক যন্ত্রনাদায়ক বিষয় হল, এই ইয়াজিদ-প্রেমিক টিভি-প্রচারক তাঁর কাজকে সঠিক প্রমান করার জন্য মিথ্যাচারিতা ও ছলনার আশ্রয় নিতেও কার্পন্য করেন নি। ইহা ফিতনা এবং ইসলামের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা। এই আর্টিকালে আমরা উক্ত ইয়াজিদ-প্রেমিকের মিথ্যাচারিতা ও ছলনার পূর্নাঙ্গ পোস্ট-মর্টেম করব যেন সরলপ্রান মুসলিম ভাই-বোনগন এই ধর্ম-ব্যবসায়ীদের পাতা ফাঁদে পা না দেন এবং পবিত্র আহলে বাইতের সঙ্গে সুদৃঢ়ভাবে সম্পৃক্ত থাকেন।

        ইয়াজিদের নামের পার্শ্বে ‘রাদ্বিয়াল্লাহু তাআলা আনহু’ ব্যবহার-কারীদের মিথ্যাচারিতা নং ১ : উক্ত ইয়াজিদ-প্রেমিক তার কাজকে সঠিক প্রমান করার জন্য যুক্তি প্রদান করে যে, “ সহীহ বুখারীতে একটি হাদীস আছে যেখানে বলা হয়েছে যে যারা কনস্টান্টিনোপল (কুসতুনতুনিয়া) জয় করবেন তাঁরা জান্নাত পাবেন এবং ইয়াজিদ ছিল ঐ বাহিনীর কমান্ডার” [www.youtube.com/watch?v=R1qgyHCb0Jw]। প্রিয় পাঠক! এই ব্যক্তি সহীহ বুখারীর নামে সম্পূর্ন মিথ্যা কথা বলেছে। সহীহ বুখারীতে এমন কোন হাদীস নেই যেখানে বলা হয়েছে “যে যারা কনস্টান্টিনোপল (কুসতুনতুনিয়া) জয় করবেন তাঁরা জান্নাত পাবেন এবং ইয়াজিদ ছিল ঐ বাহিনীর কমান্ডার”। ইহা সহীহ বুখারীর নামে সরলপ্রান মুসলিমগনকে বিভ্রান্ত করার একটি ঘৃন্য প্রচেষ্টা । হাদীসের নামে যারা মিথ্যা কথা বলে তাদের ইসলাম নিয়ে কথা বলার কি অধিকার আছে? হাদীসের নামে জেনেশুনে মিথ্যা কথা বলা কি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লামের সঙ্গে ও ইসলামের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা নয় ? ইয়াজিদ-প্রেমিকদের প্রতি আহলে সুন্নাত ওয়াল জামায়াতের পক্ষ থেকে চ্যালেঞ্জ থাকল যদি সহীহ বুখারী থেকে এমন হাদীস দেখাতে পারেন যেখানে বলা হয়েছে যে “যারা কনস্টান্টিনোপল (কুসতুনতুনিয়া) জয় করবেন তাঁরা জান্নাত পাবেন এবং ইয়াজিদ ছিল ঐ বাহিনীর কমান্ডার”, তাহলে এক লাখ টাকা নগদ পুরস্কার প্রাদান করা হবে ।রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম কি বলেন নি, “ যে ব্যক্তি আমার সম্পর্কে মিথ্যা কথা বলে তার ঠিকানা জাহান্নাম?” [তথ্যসূত্র ; সহীহ বুখারী - খন্ড নং ০১- পৃ নং ৪১ – হাদীস নং ১০৬] ভাই! হাদীসের নামে মিথ্যা কথা বলার জন্য তওবা করে নিন এবং দয়া করে ফির্কা-পারাস্তি থেকে বিরত থাকুন। [ বিশদে জানার জন্য পাঠ করুন আমার নিবন্ধ : “ কুখ্যাত ইয়াজিদ কি ক্ষমাপ্রাপ্ত বা মাগফুর ? সহীহ বুখারীর নামে ইয়াজিদ-প্রেমিকদের মিথ্যাচারিতার পোস্ট-মর্টেম” ]

ইয়াজিদের নামের পার্শ্বে ‘রাদ্বিয়াল্লাহু তাআলা আনহু’ ব্যবহার-কারীদের মিথ্যাচারিতা ও ছলনার পোস্ট-মর্টেম [ পর্ব ০২ ]
লেখক : মাওলানা মুহাম্মদ এ কে আজাদ

ইয়াজিদের নামের পার্শ্বে ‘রাদ্বিয়াল্লাহু তাআলা আনহু’ ব্যবহার-কারীদের মিথ্যাচারিতা নং 2 : উক্ত ইয়াজিদ-প্রেমিক তার কাজকে সঠিক প্রমান করার জন্য সহীহ বুখারীর সুবিখ্যাত তফসীরকার ইমাম ইবনে হাজার আসকালানী (রাঃ) এর নামেও সম্পূর্ন মিথ্যা কথা বলেছেন। তিনি বলেছেন, “ ইবনে হাজার যেখানে বুখারীর তফসীরে তাকে (ইয়াজিদকে) জান্নাতী বলেছেন, সেখানে আমি কিভাবে তাকে (ইয়াজিদকে) অভিশাপ দিতে পারি”? [www.youtube.com/watch?v=R1qgyHCb0Jw]।

  প্রিয় পাঠক! এটিও সম্পূর্ন মিথ্যা এবং বানোয়াট কথা । ইমাম ইবনে হাজার আসকালানী (রাঃ)তাঁর তফসীরে কোথাও ইয়াজিদকে জান্নাতী বলেন নি । আল্লাহু আকবার ! ইমাম ইবনে হাজার আসকালানী (রাঃ) তো ইয়াজিদের ‘মাগফুর’ বা ক্ষমাপ্রাপ্ত হওয়ার ধারণাটিকে তাঁর তফসীরে ধূলিসাৎ করেছেন এবং ‘আল ইমতা বিল আরবাঈন’ গ্রন্থের শিরোনামই দিয়েছেন ’ইয়াযীদের প্রতি লা’নত’। সর্বোপরী, ইমাম ইবনে হাজার আসকালানী (রাঃ)বর্ণনা করেছেন যে, খলীফা উমর বিন আবদুল আযীয বা দ্বিতীয় উমর ইয়াযীদের প্রশংসা কারীকে কুড়িটি দোররা মারার নির্দেশ দান করে ছিলেন। কিন্তু মিথ্যাচারিতার সওদাগর উক্ত ইয়াজিদ-প্রেমিক ইমাম ইবনে হাজার আসকালানী (রাঃ)এর নামে সম্পূর্ণ বিপরীত কথা বলে ফেললেন। প্রিয় পাঠক! আসুন, দেখে নিই, ইমাম ইবনে হাজার আসকালানী (রাঃ)ইয়াযিদ সম্পর্কে ঠিক কি বলেছেন :

       (১) ইমাম ইবনে হাজার ইয়াজিদের ক্ষমাপ্রাপ্ত হওয়ার ধারণাটিকে ধূলিসাৎ করেছেন : ইমাম ইবনে হাজার আসকালানী (রাঃ)তাঁর তফসীরে ইয়াজিদের ‘মাগফুর’ বা ক্ষমাপ্রাপ্ত হওয়ার ধারণাটিকে ধূলিসাৎ করেছেন এভাবে , “ ইবনে মুহলাব বলেছেন যে এই হাদীসে আমীর মুয়াবিয়ার কথা ইঙ্গিত করা হয়েছে কারন তিনি প্রথম নৌ-অভিযান করেছিলেন এবং এই হাদীসে ইয়াযিদের কথাও ইঙ্গিত করা হয়েছে কারন সে প্রথম কাইসারের নগরী আক্রমন করেছিল ( এই তথ্য সম্পূর্ণ মিথ্যা কারন ইয়াযিদ প্রথম যুদ্ধে অংশগ্রহন করে নি সে অনেক পরের একটি অভিযানে তার পিতা কর্তৃক শাস্তিস্বরুপ প্রেরিত হয়েছিল- লেখক)কিন্তু ইবনে আল তীন এবং ইবনে আল্ মূনীর এর উত্তর দিয়েছেন এবং বলেছেন যে ইহা অপরিহার্য নয় যে ব্যতিক্রম ব্যতিরেকে সকলেই এই ক্ষমাপ্রাপ্তির অন্তর্ভুক্ত কারন জ্ঞানীব্যক্তি-বর্গ সকলেই একমত যে, তারাই এই ক্ষমাপ্রাপ্তির অন্তর্ভুক্ত হবে যারা প্রকৃতই তার উপযুক্ত হবে কারন আক্রমনকারীদের মধ্যে যদি কেউ পরে মুরতাদ হয়ে যায় তহলে সে আর ক্ষমাপ্রাপ্তগনের অন্তর্ভুক্ত বলে বিবেচিত হবে না এবং এটা প্রমান যে উক্ত হাদীসে উল্লেখিত ক্ষমাপ্রাপ্তির বিষয়টি শর্তাধীন [ তথ্যসূত্র : ফাতহুল বারী শারাহ সাহীহ বুখারী - ইমাম ইবনে হাজার আসকালানী – খন্ড নং ৬ – পৃ নং ২০০-২০১ ] প্রিয় পাঠক! দেখলেন তো, ইমাম ইবনে হাজার আসকালানী (রাঃ)যে ধারণাটিকে খন্ডন করলেন উক্ত ইয়াজিদ-প্রেমিক ঐ ধারণাটিকেই তাঁর নামে চালিয়ে দিলেন !

   (২) ইমাম ইবনে হাজার আসকালানী (রাঃ)তাঁর ‘আল ইমতা বিল আরবাঈন’ গ্রন্থের শিরোনামই দিয়েছেন ’ইয়াযীদের প্রতি লা’নত’ : ইয়াযিদের প্রতি ইমাম ইবনে হাজার আসকালানী (রাঃ)এর ঘৃনা এবং অসন্তোষের অধিক প্রমান আর কি হতে পারে যে তিনি দ্বীধাহীন চিত্তে ঘোষনা করেছেন যে, একমাত্র ’ পথভ্রষ্ট- গোমরাহ’ ব্যক্তিরাই ইয়াযিদের প্রশংসা করে এবং তিনি তাঁর ‘আল ইমতা বিল আরবাঈন’ গ্রন্থের শিরোনামই দিয়েছেন ’ইয়াযীদের প্রতি লা’নত’! ইমাম ইবনে হাজার আসকালানী (রাঃ লিখেছেন,
           “ইয়াযীদকে ভক্তি ও তার প্রশংসা ’পথভ্রষ্ট-গোমরাহ’ ব্যক্তি ছাড়া আর কেউই করে না যার বিশ্বাস একেবারেই শূন্য। কেননা, ইয়াযীদের এমন সব বৈশিষ্ট্য ছিল যার ভক্ত-অনুরক্ত হলে কুফর তথা অবিশ্বাসের যোগ্য হতে হয় কারন কেবল আল্লাহর উদ্দেশ্যে ভালোবাসা এবং কেবল আল্লাহর উদ্দেশ্যে ঘৃণা করাই হল ঈমানের লক্ষণ।” [ তথ্যসূত্র : ‘আল-’এমতা বিল্ আরবাঈন আল-মাতবাইনাত আস্ সামা’আ’- ইমাম ইবনে হাজর আসকালানী – পৃষ্ঠা নং ৯৬ - দার আল-কুতুব আল-’এলমিয়্যা, বৈরুত, লেবানন হতে ১৯৯৭ সালে প্রকাশিত]

       (৩) ইমাম ইবনে হাজার আসকালানী (রাঃ)এর মতে, ইয়াযীদের প্রশংসা কারীকে কুড়িবার দোররা মারতে হবে : ইমাম ইবনে হাজার আসকালানী (রাঃ) লিখেছেন, “এয়াহইয়া ইবনে আব্দিল মুলক্ বিন আবি গানিয়্যা যিনি ’নির্ভরযোগ্য’ বর্ণনাকারীদের একজন’, তিনি ’নির্ভরযোগ্য’ বর্ণনাকারী নওফল বিন আবি আকরাব থেকে শুনেছেন: একবার খলীফা উমর ইবনে আবদিল আযীয (২য় উমর)-এর দরবারে মানুষেরা ইয়াযীদ ইবনে মু’আবিয়া সম্পর্কে আলাপ করছিলেন। ওই সময় একজন লোক ইয়াযীদকে ‘আমীরুল মূমীনীন’(ঈমানদারদের শাসক) খেতাবে সম্বোধন করে। এটি শুনে খলীফা ২য় উমর (রাগান্বিত হয়ে) তাকে বলেন, “তুমি ইয়াযীদকে আমীরুল মো’মেনীন ডেকেছ?” অতঃপর তিনি ওই লোকটিকে ২০টি দোররা মারার হুকুম দেন। [ ‘তাহযিবুত্ তাহযিব’- ইমাম ইবনে হাজার আসকালানী – খন্ড নং ৬ – পৃষ্ঠা নং ৩১৩ ]

                *** একটি নির্নায়ক প্রশ্ন : প্রিয় পাঠক! উক্ত ইয়াজিদ-প্রেমিক নিজেকে দাবি করেন “আহলে সহীহ হাদীস” বলে এবং কথায় কথায় বলেন, আমাকে কুরআন এবং সহীহ হাদীস থেকে প্রমান দেখান, আমি মেনে নিব। এখন মিলিয়ন-ডলার প্রশ্ন হল, ইয়াযিদের নামের পার্শ্বে ‘রাদ্বিয়াল্লাহু তাআলা আনহু’ বলার স্বপক্ষে তিনি নিজে কেন কুরআন এবং সহীহ হাদীস থেকে প্রমান দিচ্ছেন না ? তিনি কেন ইমাম ইবনে হাজার আসকালানী (রাঃ) কে প্রমান হিসেবে উপস্থাপন করছেন, তাও আবার নিখাদ মিথ্যা কথা বলে ? নিজে আহলে সুন্নাত ওয়াল জামায়াতের নিকট থেকে দলীল দাবি করবেন কুরআন এবং সহীহ হাদীস থেকে আর নিজে মনগড়া দলীল উপস্থাপন করবেন? দ্বিতীয়ত, ইমাম ইবনে হাজার আসকালানী (রাঃ)ইয়াযিদ সম্পর্কে যে কথা বলেন নি তা তাঁর নামে চালিয়ে দিলেন আর তিনি যে স্বীয় ‘আল ইমতা বিল আরবাঈন’ গ্রন্থের শিরোনামই দিয়েছেন ’ইয়াযীদের প্রতি লা’নত’ এবং মন্তব্য করেছেন যে “ইয়াযীদকে ভক্তি ও তার প্রশংসা ’পথভ্রষ্ট-গোমরাহ’ ব্যক্তি ছাড়া আর কেউই করে না, তা সম্পূর্ণ চেপে দিলেন ? উক্ত ইয়াজিদ-প্রেমিক ইহাও সম্পূর্ণ চেপে দিলেন যে ইমাম ইবনে হাজার আসকালানী (রাঃ)এর গ্রন্থে বর্নিত আছে যে, শারীয়াতের আদালতে ইয়াজিদের প্রশংসাকারীদের ন্যূনতম শাস্তি হল কুড়িবার দোররা [‘তাহযিবুত্ তাহযিব’- ইমাম ইবনে হাজার আসকালানী – খন্ড নং ৬ – পৃষ্ঠা নং ৩১৩ ]? মহান আল্লাহ পাক বলেন, “আর তোমরা হককে (সত্য) বাতিলের (মিথ্যা) সাথে মিশ্রিত করো না এবং জেনে-বুঝে হককে গোপন করো না” [ আল কুরআন- সুরাহ বাকারাহ – আয়াত নং ৪২ ]।

কারবালার সেই হত্যাকাণ্ডে কি ইয়াজিদ দায়ী নয়? আহলে বাইত কারা?

▪কারবালার সেই হত্যাকাণ্ডে কি ইয়াজিদ দায়ী নয়? 
▪জেনে রাখুন আহলে বাইত কারা? 
➖➖➖➖ ✍️ ইমরান বিন বদরী

সমস্ত প্রশংসা মহান আল্লাহপাক রব্বুল আ’লামীনের দরবারে, যিনি অসংখ্য মাখলূকাতের মধ্যে একমাত্র মানব জাতিকে তথা মানুষকে “আশরাফুল মাখলূকাত” অর্থাৎ সর্বশ্রেষ্ঠ মর্যাদা দান করেছেন। সালাত ও সালাম হাবীবে খোদা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রতি।
ইয়াজিদের পরিচয় আশাকরি সবার যানা আছে। নতুন করে পরিচয় দেয়ার প্রয়োজন আছে বলে মনেহয় না। ইতিহাসে নির্মম কালো অধ্যায় রচনাকারী এই কুখ্যাত ইয়াজিদ। পৃথিবীতে কুখ্যাতি জন্য যে সকল লোক ধিকৃত, ইয়াজিদ তাদের অন্যতম। 'ইয়াজিদ' এমনই একটি কলঙ্কিত নাম যাকে আজো বিশ্বের কোটি কোটি মানুষ অভিসম্পাত করে থাকেন। দুঃখজনক হলেও সত্য যে আজও আমাদের মাঝে তার কিছু অনুসারীর উপস্থিতি লক্ষণীয়। তারা হয়তো জানেওনা যে তাদের ভালবাসার মানুষটির সাথেই কাল হাশর হবেন। আমরা জান্নাতের সরদার ইমাম হুসাইন রাদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুর সাথে হাশরের মাঠে উপস্থিত হতে চাই বলেই আমার এই লেখা। ইয়াজিদকে ভালোবেসে তার সাথে হাশর হোক তা আমি চাইনা।
মহররম মাস আসলেই আমাদের মাঝে স্পষ্ট হয় ইয়াজিদী আর হোসাইনিদের পার্থক্য। ইসলামে দুটি গোত্রের স্পষ্টতা রয়েছে শিয়া আর সুন্নি। অনেকে মডার্ন মুসলিম সেজে অস্বীকার করেন যে ইসলামে এসব আবার কি? বিষয়টি খুবি কঠিন এবং গভীর চিন্তাভাবনার দাবী রাখেন। কথার উপর শিয়া সুন্নি এসব ইসলামকে ভাগ করার পায়তারামাত্র বলে উড়িয়ে দিলে সত্য মিথ্যার পার্থক্য কিন্তু আপনার নজরে স্পষ্ট হবেনা কোন দিন।
আমি শিয়াদের ব্যপারে বলতে চাইনা, শিয়া তো শিয়াই যারা আহলে বাইতকে ভালোবাসার নামে খলিফাতুর রাসুলদেরও গালি দিতে কুণ্ঠাবোধ করেনা। সেটা ভিন্ন বিষয়। আমি আজ সেই সব ইয়াজিদি মুসলমানদের কথাই বলবো যারা আহলে বাইতকে বেশুমার ভালোবাসার মাফকাঠিকে সীমাবদ্ধতায় নিয়ে এসে ইয়াজিদকে রাহিমাহুল্লাহ বলতে মরিয়া। যারা আজ ইয়াজিদের ভালবাসায় বিভোর।
আসুন মুল কথায় আসি। ইয়াজিদ সম্পর্কে আমাদের সিদ্ধান্ত নেওয়ার পূর্বে আহলে বাইত কারা এবং তাদের মর্যাদা কি, সে সম্পর্কে স্পষ্ট ধারনা থাকা চাই। অন্যথায় এসব সুক্ষ বিষয়টি সহজে কারো বোধগম্য হবেনা। সেদিন সপরিবারে কারবালার প্রান্তে যার পরোক্ষ নির্দেশে আহলে বাইতদেরকে শহীদ করা হয় তার প্রতি এতো দরদ দেখে কি মনে প্রশ্ন জাগেনা! এখনো ইয়াজিদীরা অর্থাৎ ইমাম হুসাইন রাদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুর বিপক্ষে তলোয়ার চালানো লোকের অনুসারীরা আমাদের সমাজে বিদ্যমান!
ইয়াজিদের সমস্ত অপরাধকে ভালোবাসাযুক্ত দেখে কারবালারমত এতোবড় ঘটনাকে ধামাচাপা দেয়ার চেষ্টাকরণ কেন? ইয়াজিদের প্রতি এতো ভালোবাসার উৎপত্তির কারণ কি? ১০ ই মহররম কারবালার মর্মান্তিক ঘটনার সময় সে কি সিরিয়ার মসনদে আসীন ছিলোনা! কুফার তথা বর্তমান ইরাকের ইবনে জিয়াদ কার হুকুমে কারবালার প্রান্তরে গিয়েছিল? এতো বড় মর্মান্তিক একটা ঘটনাকে নিছক দুর্ঘটনা মনে করার কারণ কি? এসব প্রশ্নগুলি আজ আমাকে ভাবতে শিখিয়েছে।
কোন মুমিন বান্দা ইয়াজিদকে ভালো বাসতে পারেনা। ভালোবাসার তো কোন প্রশ্নেই আসেনা। সেতো ঘৃণির। তার প্রতি যে ঘৃণার কারণে আজ পর্যন্ত কোন মুসলমান ইয়াজিদ নামটিও তার সন্তানের জন্য উপযুক্ত মনে করেনাই। যে ব্যক্তি মুহাম্মদি ধর্মকে অবজ্ঞা করে ইসাঈ চিন্তা চেতনায় মদ এর মত নিষিদ্ধ পানীয়কে হালাম মনে করে তার প্রতি এতো দরদ কি মুসলমান হিসেবে প্রশ্নবিদ্ধ নয়!?
ইয়াজিদ যদি অপরাধের নির্দেশনা না দিতেন তো হজরত ইমাম হুসাইন রাদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুর মস্তকহীন দেহ রেখে মস্তক মুবারক কেন সিরিয়ায় নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। ইয়াজিদ যদি আহলে বাইতের প্রতি এতোই দরদি ছিলো তো লাঠি আঘাত কেন শহীদ হওয়া ইমাম হুসাইন রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুর মুখের উপর করেছিলো। ইয়াজিদ যদি এতো আহলে বাইতের হত্যার নির্দেশ না দিতেন তো কারবালার নির্মম ঘটনার পরবর্তীতে এমন অমানুষিক কর্মকাণ্ডের কেসাস কেন নেয়নি। কারবালার ঘটনার প্রত্যক্ষ নায়ক ইবনে জিয়াদ আর শিমার তো কারবালার পরবর্তীতে বহাল তবিয়তে ছিলো। ইয়াজিদ যদি এতোই ধার্মিক হতো তো মদিনার মতো পবিত্র স্থানে এভাবে সাহাবীদের অর্থাৎ মদিনাবাসীদের নির্যাতন কিভাবে করেছে? মদিনা শরীফে তিনদিন মসজিদে নববীতে আজান পর্যন্ত হয়নি ইয়াজিদিদের আক্রমণে। মক্কায় হামলা করে কাবা শরীফের গিলাফে আগুন লাগাতে পারতোনা।
এর পরেও অনেকে ইয়াজিদকে জান্নাতি বানানোর জন্য তার পিতা হজরত আমীরে মুয়াবিয়া রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুর সময়ে ইয়াজিদও নাকি বর্তমান তুর্কীতে যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিলো। বেশ ভালোকথা, হাদিস শরীফ অনুযায়ী সে যুদ্ধে অংশগ্রহণকারীরা জান্নাতি। ইয়াজিদ ভক্তদের যুক্তি হচ্ছে সে হিসেবে ইয়াজিদও জান্নাতি। এখন প্রশ্ন হচ্ছে, কোন ব্যক্তি যদি লাইলাতুলকদর রাতে ইবাদত করে বা আশুরার রোজা রাখে বা আরাফার দিন রোজা রেখে মানুষ হত্যা করেন, তবে কি সে হত্যাকারী ব্যক্তিও আল্লাহ দরবারে তার সমস্ত গুনাহ ক্ষমা পাবেন? কারণ কদর রাতে ইবাদত করা মানে তো হাজার বছরের ইবাদতের সমান, আশুরা রোজা, আরাফার দিনের রোজার ফজিলত কিন্তু আগে পরের একটি বছরের গুনাহ মাফের কথা বলা হয়েছে। 
তাই যদি হয় তো ইসলামে হত্যার বদলে হত্যার হুকুমের কি হবে? ইয়াজিদের ব্যাপারটিও কি ঠিক সে রকম নয়? যে একদিকে জান্নাতি দলের সাথে যুদ্ধে গমন অন্যদিকে জান্নাতের সরদারকে সপরিবারে কারবালার প্রান্তরে শহীদ করে দেওয়া!! এটা কিভাবে সম্ভব? ইয়াজিদের রাষ্ট্রে এতোবড় হত্যাকাণ্ড আর ইয়াজিদ অবগত নয় এটাও কি বিশ্বাস করতে হবে আমাদের? 
অল্প বয়সে মারা যাওয়া ইয়াজিদেই ছিলেন ইতিহাসের সবচেয়ে জঘন্যতম হত্যাকাণ্ডের মূল নায়ক।

 এবার আসুন ইয়াজিদের অপরাধ বুঝতে হলে আহলে বাইতের প্রতি একজন মুসলমানের কতটুকু ভালোবাসা থাকা চাই সে বিষয়ে আলোকপাত করি।
যে ভালোবাসার ঘাটতি থাকায় আজ ইয়াজিদের প্রেমে বিভোর আমাদের কিছু ভাই! ইনিয়ে বিনিয়ে বলা হচ্ছে কারবালার ঘটনায় ইয়াজিদের কোন হাত ছিলনা।অথচ যার নেতৃত্বে এই নির্মম হত্যাকাণ্ড হয়েছিল সেই ইবনে জিয়াদকে কুফায় গভর্নর হিসেবে ইয়াজিদেই নিযুক্ত করেছিল। ইমাম হোসাইন রাদিআল্লাহু আনহুর চাচাত ভাই হজরত মুসলিম বিন আকিলকে হত্যাকরা থেকে শুরু করে কারবালা পর্যন্ত সমস্ত কাজ ইয়াজিদ সুক্ষভাবে তাকে দিয়েই সমাধান করিয়েছিলো। ইয়াজিদ নাকি ইবনে জিয়াদকে ইমাম হুসাইন রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুকে তার উপর বায়াতের জন্য হুকুম দিয়েছিল হত্যার জন্য নয়! দেখুন কিভাবে ইতিহাস বিকৃত করে ইয়াজিদকে রক্ষার মিশনে নেমেছে আজ মুসলিম পরিবারের সন্তানেরা। আশ্চর্য!!

➡ আসুন সূরা আশ-শুরার ২৩ নং আয়াত নিয়ে একটু আলোচনা করি আহলে বাইতের মর্যাদা নিয়ে। পূর্ববর্তী আয়াতে অর্থাৎ ২২ নং আয়াতে কাফিরদের ভয় দেখিয়ে আল্লাহপাক মুমিনদের সুসংবাদ স্বরূপ বলেন,
قُل لَّا أَسْأَلُكُمْ عَلَيْهِ أَجْرًا إِلَّا الْمَوَدَّةَ فِي الْقُرْبَى
অর্থাৎ: হে হাবীব আপনি বলুন, আমি তোমাদের নিকট দাওয়াত পালনের (নবুয়ত) জন্য কোনো প্রতিদান চাইনা। তবে আমার নিকটজনদের (তথা আহলে বাইত) প্রতি তোমরা সদাচরণ করবে।”
উপরোক্ত আয়াতটির ব্যাখ্যা করতে গিয়ে তাফসীরে এসেছে ঠিক এভাবে - 
لا اسئلكم اجرا الا ان تودوا اقربائى واهل بيتى وعترتى وذلك لانه صلى الله عليه وسلم كان خاتم النبين لا نبى بعده.
অর্থাৎ “আমি তোমাদের নিকট প্রতিদান চাইনা তবে তোমরা আমার নিকটাত্মীয় তথা আহলে বাইত ও বংশধর উনাদের (যথাযথ সম্মান প্রদর্শন পূর্বক) হক্ব আদায় করবে। কেননা, আল্লাহ পাক উনার হাবীব হুযূরপাক সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তিনি হচ্ছেন শেষ নবী। উনার পরে কোনো নবী নেই। (তাফসীরে মাজহারী)

 অন্যত্রে আল্লাহ পাকে এরশাদ করেন, 
اِنَّمَا يُرِيْدُ اللهُ لِيُذْهِبَ عَنْكُمُ الرِّزْسَ اَهْلَ الْبَيْتِ وَيُطَهِّرَكُمْ تَطْهِيْرًأ

অর্থাৎ; "হে নবী পরিবারের সদস্যবৃন্দ! আল্লাহ্ তো এটাই চান যে, তিনি তোমাদের থেকে সকল প্রকার অপবিত্রতা দূর করে দিবেন এবং তোমাদেরকে সম্পূর্ণরুপে পূতঃ পবিত্র রাখবেন।" 
সত্যিকার অর্থে আহলে বাইতের সম্মান অনেক ঊর্ধ্বে।
 হজরত সা’দ ইবনে আবি ওয়াক্কাছ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বলেন,
لما نزلت هذه الاية فقل تعالوا ندع ابناءنا وابناءكم دعا رسول الله صلى الله عليه وسلم عليا وفاطمة وحسنا وحسينا فقال اللهم هؤلاء اهل بيتى. যখন ندع ابناءنا وابناءكم الاية 
(আসো আমরা আহবান করি আমাদের সন্তানগণকে ও তোমাদের সন্তানগণকে) আয়াত শরীফ নাযিল হলো, তখন রাসুলেপাক সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তিনি হযরত আলী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু, সাইয়্যিদাতুন নিসা হযরত ফাতিমাতুয যাহরা আলাইহাস সালাম ও হযরত ইমাম হাসান আলাইহিস সালাম এবং হযরত ইমাম হুসাইন আলাইহিস সালাম উনাদেরকে ডাকলেন এবং বললেন, আয় আল্লাহ পাক! এরা সকলে আমার আহলে বাইত।” (মুসলিম শরীফ)

⬇️ নিন্মে আরো কয়েকটি হাদিসে রাসুল (দরুদপাঠ) উল্লেখ করছি।
 হজরত বারা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বলেন,
رايت النبى صلى الله عليه وسلم والحسن بن على على عاتقه يقول اللهم انى احبه فاحبه

অর্থাৎ ; আমি রাসুলেপাক সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে দেখেছি যে, তিনি হাসান ইবনে আলী'কে নিজের কাঁধের উপর রেখে বলছেন: হে আল্লাহ পাক! আমি একে মুহব্বত করি, আপনিও একে মুহব্বত করুন।” (মুত্তাফাকুন আলাইহি)
 হযরত জাবির রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বলেন, 
رايت رسول الله صلى الله عليه وسلم فى حجته يوم عرفة وهو على ناقته القصواء يخطب فسمعته يقول يا ايها الناس انى تركت فيكم ما ان اخذتم به لن تضلوا كتاب الله وعترتى اهل بيتى
অর্থাৎ ; আমি নবীয়েপাক সল্লাল্লাহু তায়ালা আলাইহি ওয়াসাল্লামাকে দেখেছি, তিনি (বিদায়) হজ্জের সময় আরাফাতের দিন ‘কাসওয়া’ নামক উষ্ট্রীর উপর সওয়ার অবস্থায় খুতবা দান করছেন। আমি শুনেছি, তিনি খুতবায় বলেছেন, হে লোক সকল! আমি তোমাদের মাঝে এমন জিনিস রেখে যাচ্ছি, তোমরা যদি তাকে শক্তভাবে ধরে রাখো, তবে কখনো গোমরাহ হবেনা। তা হলো আল্লাহ পাকের কিতাব ও আমার ইতরত বা আহলে বাইত আলাইহিমুস সালাম। (তিরমিযী শরীফ)

 হযরত জায়িদ ইবনে আরকাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বলেন,
ان رسول الله صلى الله عليه وسلم قال لعلى رضى الله تعالى عنه وفاطمة عليها السلام والحسن عليه السلام والحسين عليه السلام انا حرب لـمن حاربهم وسلم لـمن سالـمهم.
অর্থাৎ ; নিশ্চয়ই রসূলেপাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হযরত আলী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু, সাইয়্যিদাতুন নিসা হযরত ফাতিমাতুয যাহরা আলাইহাস সালাম, হযরত ইমাম হাসান আলাইহিস সালাম ও হযরত ইমাম হুসাইন আলাইহিস সালাম উনাদের সম্পর্কে বলেছেন, যারা উনাদের প্রতি শত্রুতা পোষণ করবে, আমি তাদের শত্রু। পক্ষান্তরে যে উনাদের সাথে সদ্ব্যবহার করবে,আমি তাদের সাথে সদ্ব্যবহার করবো। (তিরমিযী শরীফ)

 হযরত আবূ সাঈদ খুদরী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বলেন, 
قال رسول الله صلى الله عليه وسلم الحسن عليه السلام والحسين عليه السلام سيدا شباب اهل الجنة.
অর্থাৎ ; রাসুলেপাক সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, হাসান ও হুসাইন তারা দুজনই জান্নাতী যুবকগণের সাইয়্যিদ (সরদার)। (তিরমিযী)

➡ এবার আপনিই ভেবে দেখুন সেই আহলে বাইতের হত্যাকারীর প্রতি আপনার কেমন ধারণা হওয়া চাই।







হোসাইনিয়াত ও ইয়াজিদিয়াতঃ কেয়ামত পর্যন্ত বহমান দুটো বিপরীত ধারার চেতনার নাম
---------------------------------------
সৈয়দ গোলাম কিবরিয়া আজহারী
ইমাম হোসাইন (রাঃ) একটা চেতনার নাম।
আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতাআ'লা পবিত্র কুরআন মাজিদে ইরশাদ করেন,
ولا تستوي الحسنة ولا السيئة
" ভাল ও মন্দ এক সমান নয়।"
(সূরা ফুসসিলাত, আয়াত নং- ৪১) 
হোসাইনিয়াত হচ্ছে উত্তমতার নাম, আর ইয়াজিদিয়াত হচ্ছে অধমতার নাম, নিকৃষ্টতার নাম। এই দুটো কোন সময় এক হৃদয়ে বাসা বাঁধতে পারে না। আমাদের মধ্যে হয়ত হোসাইনিয়াত থাকবে আর না হয় ইয়াজিদিয়াত থাকবে।
Husainiyat is a philosophy, husainiyat is a consciousness. Its a feelings which we have to inplenent in our personal life, family life and social life.
অন্যায়ের সাথে আপোষ না করার নাম হোসাইনিয়াত।
অন্যায়, অবিচার ও জুলুমের কাছে নতি স্বীকার না করার নাম হোসাইনিয়াত। জুলুমের বিরুদ্ধে সিনা টান করে দাঁড়ানোর নাম হোসাইনিয়াত। নিজের ভেতর থেকে ইয়াজিদিয়াতকে বের করে দেয়ার নাম হোসাইনীয়াত। ইয়াজিদ যদি ভেতর থেকে বের হয়ে যায় তবেই সে অন্তরে হোসাইনের জায়গা হয়।
ইয়াজিদীয়ত কী? ইয়াজিদিয়াত হচ্ছে দুনিয়া লোভের এক মূর্ত প্রতীক। Yazidiyat is the synonym of illegal way of earning money and power. Yazidiyat is the synonym of arrogance, envy and greed. হালাল পথে সম্পদ অর্জন কোন গোনাহের কাজ নয়, কিন্তু টাকা পয়সার অবৈধ লোভ, ক্ষমতার লোভ, যে কোন কিছু করেই হোক আমাকে ক্ষমতায় টিকে থাকতে হবে এর নামই ইয়জিদিয়াত। যদি দ্বীনের নবীর কলিজার টুকরো নাতিকেও জবাই করতে হয় করব, কিন্তু দুনিয়ার ক্ষমতা আর সৌর্য-বীর্য আমার লাগবেই। আমার কবরের চিন্তার প্রয়োজন নেই, আমার হাশরের চিন্তার প্রয়োজন নেই। আমার হাউজে কাওসারের পানির প্রয়োজন নেই। এরকম নিকৃষ্ট চিন্তা চেতনার নামই হচ্ছে ইয়াজিদিয়াত।
ইমাম হোসাইন (রাঃ) উনার জীবনের শেষ ভাষণে কী বলেছিলেন? ফোরাতের তীরে কারবালার ময়দানে সিনা টান করে সেদিন ওমর ইবনে সাদ, শিমার, ইবনে জিয়াদদের উদ্দেশ্য করে বলেছিলেন,
"হে (২০,০০০) ইয়াজিদি সৈনিকেরা! তোমাদের মধ্যে কী একজনও মুসলমান নেই?"
প্রিয় পাঠক! এই একই কথা ইমাম হোসাইন রাঃ এঁর বোন সায়্যিদা জয়নব দামেশকে ইয়াজিদের দরবারে বলেছিলেন।
সায়্যিদা ফিজ্জা ছিলেন হজরতে ফাতেমাতুজ জাহরা (রাঃ)র হাবশী (বর্তমান ইথিওপিয়ান) দাসী। সারাজীবন মা ফাতেমার সেবা করেছেন। কারবালার মর্মান্তিক ঘটনার পর যখন ইমাম জয়নুল আবেদিন, সায়্যিদাহ জয়নবসহ আহলে বায়তের বেঁচে থাকা সকল সদস্যকে কয়েদী বানিয়ে ইয়াজিদের দরবারে পেশ করা হলো, সেসময় তাঁদের সাথে এই সায়্যিদা ফিজ্জাও ছিলেন, তখন তিনি বার্ধক্যে উপনীত হয়েছেন, কিন্তু আহলে বায়তকে ছেড়ে থাকতে পারেন নি।
অভিশপ্ত ইয়াজিদ সায়্যিদাহ জয়নব ও ইমাম জয়নুল আবেদিনের প্রতি কয়েদীসুলভ আচরণ শুরু করল।
সায়্যিদা ফিজ্জার (রাঃ) তা দেখে সহ্য হলো না। ওঠে দাঁড়িয়ে গেলেন। বললেন, "রে বদবখত ইয়াজিদ! তুই যাদেরকে কয়েদি মনে করে দুর্ব্যবহার করছিস তারা দুনিয়া আখিরাতের বাদশা। তাঁদের সাথে উত্তম আচরণ কর।"
ইয়াজিদ কালো কৃষ্ণাঙ্গ হাবশী দাসী সায়্যিদা ফিজ্জার রাঃ জবানে পাক থেকে এরকম কথা শুনে ক্রোধান্বিত হয়ে ওঠল। সে তার সামনের দুই প্রহরীকে আদেশ করল এক্ষুনি এই বুড়ি মহিলার গর্দান উড়িয়ে দাও। সৈনিক দুজন উদ্যত হলো সায়্যিদা ফিজ্জা রাঃ কে আঘাত করবে। ইয়াজিদের দরবারে উপস্থিত ২০০ কালো কৃষ্ণাঙ্গ হাবশী সৈনিক তলোয়ার বের করে ফেলল। সাবধান! এই বুড়ি মহিলা আমাদের দেশের বাসিন্দা। হাবশার বাসিন্দা। এই মহিলাকে আক্রমণ করা হলে একটা মাথাও দেহে থাকবে না।
ইয়াজিদের ঐসকল কৃষ্ণাঙ্গ প্রহরী ও সৈনিকদের মধ্যে নিজ দেশের মানুষের প্রতি ভালবাসা জেগে ওঠল।
এই দৃশ্য দেখে সায়্যিদা জয়নব (রাঃ) ওঠে দাঁড়ালেন, মদীনা শরিফের দিকে মুখ করে দাঁড়ালেন, দাঁড়িয়ে বললেন, "ইয়া রাসুলাল্লাহ! ইয়া হাবিবাল্লাহ! ওহ আমার নানাজী! আজ এখানে আমার আম্মাজানের দাসী ফিজ্জার জান মাল ইজ্জতের হেফাজতের জন্য ২০০ মানুষ দাঁড়িয়ে গেছে।
ওহ আমার নানাজী! আপনার খান্দান উজাড় করে দিল এই ইয়াজিদের দল। কিন্তু আপনার উম্মতের মাঝে আজ কেউ নেই যে আপনার খান্দানের জান মাল ইজ্জত রক্ষার জন্য দাঁড়াবে।"
দরবারের সকলের দিকে তাকিয়ে বললেন,
"তোমাদের মধ্যে কী একজনও নবির আশিক নাই? একজনও কী আহলে বায়তের প্রেমিক নাই? আমার নানাজীর পরিবারের পক্ষে দাঁড়ানোর জন্য কী তোমাদের মধ্যে একজন মুসলমানও নাই?" হায়রে মুসলমান! হায়রে মুসলমান!
ইমাম হোসাইন রাঃ কারবালার জমিনে শেষ ভাষণ দিচ্ছেন,
"হে (২০,০০০) ইয়াজিদি সৈনিকেরা! তোমাদের মধ্যে কী একজনও মুসলমান নেই?
তোমরা কী জান না যে আমি এবং আমার ভাই হাসান জান্নাতের যুবকদের সর্দার? তোমরা কী জাননা যে আমরা দুই ভাই আমাদের নানাজানের কলিজার টুকরা ছিলাম? তোমরা কী জাননা যে আমাদের নানাজান বলে গেছেন, আমার হাসান হোসাইন জান্নাতের দুটো ফুল। তোমরা কী জাননা আমরা দুই ভাই কাল হাশরের দিনে হাউজে কাউসারের কাছে আমার নানাজীর দুই পাশে বসা থাকব। আমরা দুই ভাই উম্মতকে কাওসারের পানি পান করাব। নবীর নাতিকে শহীদ করে তোমরা কাল হাউজে কাওসারের পানি পাবে তা কিভাবে আশা কর?"
প্রিয় পাঠক! হোসাইনিয়াত হচ্ছে একটা চেতনার নাম।
মন্দকে ত্যাগ করা ও ভালকে গ্রহন করার নাম হোসাইনিয়াত।
প্রতিদিন হোসাইনীয়াত ও ইয়াজিদিয়াত আপনার দরজায় কড়া নাড়বে, অপশন আপনার কাছে থাকবে আপনি কোনটা গ্রহণ করবেন। যদি হোসাইনিয়াতকে গ্রহণ করেন তবে আপনি জান্নাতী, আর যদি ইয়াজিদিয়াতকে গ্রহণ করেন তবে আপনি জাহান্নামী! ইখতিয়ার আপনার।
আপনি যদি সরকারী চাকুরী করেন, লক্ষ লক্ষ টাকা ঘুষ নেয়ার সুযোগ আছে, আপনি নেন না। আপনি খাঁটি হোসাইনী।
আপনি বেসরকারী ফার্মে জব করেন। ছয় নয় করে লাখ লাখ টাকা আপনি কামাতে পারেন। কিন্তু সেই রাস্তায় যান না। ছেড়ে দিলেন সেই কাজ টিকতে না পেরে। আপনি খাঁটি হোসাইনি মুসলমান।
একটু যদি কম্প্রমাইজ করে নিতেন ইমাম হোসাইন রাঃ আর বলতেন, "যা ইয়াজিদ! তুই জালিমকেই মেনে নিলাম খলিফা।" তাহলে কী ইমাম হোসাইন দুনিয়াতে বেহেশতী জীন্দেগী যাপন করতে পারতেন না? পারতেন। কেন কম্প্রোমাইজ করলেন না?
নানাজীর দ্বীন কে বাঁচাতে। একটা উদাহরণ কায়েম করতে। ইমাম হোসাইন রাঃ যদি কারবালার জমিনে জুলুমের বিরুদ্ধে আওয়াজ না তুলতেন, তবে কাল কেয়ামত পর্যন্ত পৃথিবীতে অন্যায় অবিচার ও জুলমের বিরুদ্ধে কেউ আওয়াজ ওঠাত না।
অনেকেই বলে, ইমাম হোসাইন রাঃ এবং তাঁর পরিবার পানির অভাবে কারবালাতে শহীদ হয়েছেন। আরে পানি তো একটা বাহানা ছিল মাত্র।
খাজা মুইনুদ্দিন চিশতি আজমিরি সাঞ্জরি রাহঃ বলেন, "অবুঝরা বলে ইমাম হোসাইন পানির অভাবে শহীদ হয়েছেন।
আরে নাদানো! আমি মুইনুদ্দিন ইমাম হোসাইনের আদনা একজন গোলামের গোলাম, আমি মুইনুদ্দিন যদি কারাবালার ময়দানে পা দিয়ে আঘাত করতাম তবে শত শত নদী বয়ে যেত। আর তিনি তো ছিলেন কে? ইমাম হোসাইন। দ্বীনের নবীর নাতি। সেই দ্বীনের নবী। রাহমাতুল্লিল আলামিন! বোখারী শরিফে হাদিস এসেছে, আংগুল মুবারক ডুবিয়ে দিয়েছেন, শত শত মানুষ অল্প পানি দিয়ে অজু গোসল করেছেন, আংগুল মুবারক থেকে নহর বয়ে গেছে। সেই নানাজীরই তো নাতি।
সম্মানিত পাঠক! হোসাইনিয়াত এমন একটা চেতনার নাম যেই চেতনা ধারণ করলে বর্শার আগায় থেকেও নামাজ আদায় করতে হয়, তীরের টার্গেটে থেকেও নামাজ ছাড়া যায় না। নামাজ কাজা করতে পারবেন না।
আর ইয়াজিদিয়াত কী জিনিস? ৬১ হিজরির ১০ মুহাররম কারবালার ময়দান আসরের সময় ইমাম হোসাইন আলাইহিস সালাম যুদ্ধ করতে করতে ক্লান্ত। ৩৫ টি বর্শার আঘাত, ৩৩ টি তীরের আঘাত, অনেকগুলো তরবারির আঘাতে ইমামের শরীর জর্জরিত। নিথর দেহ মোবারক পড়ে আছে।
ইয়াজিদের সৈন্যবাহিনী বলছে, জলদি জলদি হোসাইনের মাথাটা কেটে নাও আসরের নামাজের ওয়াক্ত চলে যাচ্ছে।
হায়রে নামাজি!! হায়রে ইবাদাতকারী।
লানত তোদের মত ইবাদাতকারীদের ওপর।
নামাজ দুই পক্ষতেই ছিল।
প্রিয় পাঠকেরা! দ্বীনদরদী ভাই ও বোন আমার! ইমাম হোসাইন রাঃ জিজ্ঞেস করেছিলেন, তোমাদের মধ্যে কী একজনও মুসলমান নেই?
তারা তো বেশভূষায় মুসলমানই ছিল প্রিয় পাঠক! তাদের সুন্নতী দাড়িও ছিল, পাগড়িও ছিল, টুপিও পড়ত, লেবাসও ছিল সুন্নতি, কারবালার ময়দানে তারাও নামাজ পড়েছে আজান-ইকামাতের মাধ্যমে। তারাও আল্লাহু আকবার তাকবির দিয়েছে। বাহ্যিক ইসলামের সবই ছিল তাদের মাঝে। তবুও ইমাম হোসাইন তাদের উদ্দেশ্যে জিজ্ঞেস করেছেন, "তোমাদের মধ্যে কী একজনও মুসলমান নেই?"
কারণ কী? কোন একটা জিনিস ছিল না তাদের মাঝে?
নবীর ভালবাসা, নবীর প্রেম। নবীর আহলে বায়তের ভালবাসা। পাক পাঞ্জাতনের ভালবাসা।
প্রিয় পাঠক! এখনো কী এমন নামাজি ও রোজাদার নাই আমাদের সমাজে?
শুক্রবার আসলে এই বাংলাদেশেই মিম্বরের মাঝে ইয়াজিদ বন্দনা হয়। ইয়াজিদের নামের শেষে মায়াজাল্লাহ আস্তাগফিরুল্লাহ, রাহমাতুল্লাহি আলাইহি এমনকি রাদিয়াল্লাহু আনহুও বলে অনেকে।
বাংলাদেশে হাজার হাজার মসজিদে খবর নিয়ে দেখুন পুরো মুহাররম মাসে আহলে বায়ত, পাঞ্জাতন, কারবালার কোন আলোচনাই নেই। সেই ইয়াজিদের দল আজও আছে। যারা আহলে বায়ত চিনে না। যারা কারবালার ঘটনা আলোচনা করে না।
আর যা ও কিছু মসজিদে আলোচনা হয় কিছু কিছু আছে বলে কী জানেন? ইমাম হোসাইন রাঃ এর শাহাদাতে ইয়াজিদের কোন দোষ ছিল না। এটা তার পাপাত্মা সেনাপতি ইবনে জিয়াদের কাজ। ইয়াজিদ ভাল ছিল। সে তো ক্ষমাপ্রাপ্ত কন্সটান্টিনোপল বিজয়ী দলের সদস্য। মায়াজাল্লাহ আস্তাগফিরুল্লাহ।
আচ্ছা তর্কের খাতিরে ধরে নিলাম, কারবালার নির্মম ঘটনা ইবনে জিয়াদ, শিমার ও ওমর ইবনে সা'দের কাজ। তো ইয়াজিদ কারবালার এই ঘটনা জানার ঐ পাপিষ্ঠদেরকে শাস্তি কী দিয়েছিল? কিছুই না। স্বপদে বহাল ছিল সবাই। উল্টো সবার প্রমোশন হয়েছিল। এটা কী প্রমাণ করে? কারবালার ট্রাজেডি ইয়াজিদের কাজ।
উল্টো ইমাম হোসাইনের শির মুবারক সামনে নিয়ে মদ খেয়ে মাতাল হয়ে সে কবিতা আবৃত্তি করছিল,
আজ আমার বদরের যুদ্ধে নিহত আত্মীয়রা (নানা ও মামা) দেখলে খুশি হয়ে যেত।
সেই পাপিষ্ঠ কবিতার সুরে সুরে বলছিল, বদরের যুদ্ধে মাওলা আলি ও আমির হামজা রাঃ এঁর হাতে নিহত, তার মামা ও নানার মৃত্যুর বদলা নিয়েছিল ইমাম হোসাইনের শাহাদাতের মাধ্যমে।
সম্মানিত পাঠক! হোসাইনিয়াত এমন একটা আদর্শের নাম যেই আদর্শ ধারন করলে আপনি শত্রুর সাথেও ভাল ব্যবহার করবেন।
وَلَا تَسْتَوِي الْحَسَنَةُ وَلَا السَّيِّئَةُ ۚ ادْفَعْ بِالَّتِي هِيَ أَحْسَنُ فَإِذَا الَّذِي بَيْنَكَ وَبَيْنَهُ عَدَاوَةٌ كَأَنَّهُ وَلِيٌّ حَمِيمٌ
সমান নয় ভাল ও মন্দ। জওয়াবে তাই বলুন যা উৎকৃষ্ট। তখন দেখবেন আপনার সাথে যে ব্যক্তির শত্রুতা রয়েছে, সে যেন অন্তরঙ্গ বন্ধু।
কারবালা সেই মর্মান্তিক ঘটনার পর ইমাম জয়নুল আবেদিন দামেশকের বন্দীদশা থেকে মুক্ত হয়ে মদিনা শরিফে ফিরে আসলেন। ইমাম আলি জয়নুল আবেদিন রাঃ এঁর কাছে এক লোক আসল। এসে আশ্রয় চাইল। ইমাম আশ্রয় দিলেন। তিন দিন পর্যন্ত মেহমানদারী করলেন। ঐ মেহমানকে উত্তম খাওয়া দিলেন, উত্তম পোশাক দিলেন। সকল প্রয়োজন মেটালেন।
তিনদিন পর ঐ মেহমান বললেন, ইমাম আমাকে এখন অনুমতি দিন। ইমাম জয়নুল আবেদিন ঐ লোককে কিছু টাকা পয়সা দিলেন পথ খরচের জন্য।
সে বিদায় নিয়ে কিছুদূর চলে গেল, আবার ফিরে আসল। এসে বলল, ইমাম আপনি কী আমাকে আসলেই চিনতে পারেন নি? আমি তো ইয়াজিদের এক সেনাপতি। ইয়াজিদ আমার উপরে রাগ করে আমার নামে ফরমান জারী করেছে, তাই আমি আপনার আশ্রয়ে আত্মগোপনে ছিলাম। ইমাম আমি সেই নরাধমদের একজন যারা আপনার আব্বাজানের ওপরে কারবালার ময়দানে তীর মেরেছে।
হায়রে ইমাম বংশ! শত্রুও বিপদে পড়ে আশ্রয় চাইতে ইমাম বংশের কাছেই আসে। হায়রে ইমাম বংশ!
একথা শুনে ইমাম জয়নুল আবেদিন বলে ওঠলেন, রে পাপিষ্ঠ ইয়াজিদ সেনাপতি! আমি তোকে প্রথম দিনই চিনেছি। কারবালার তাবু থেকে শুয়ে শুয়ে আমি সবই দেখেছি।
ঐ ইয়াজিদ সেনাপতি আশ্চর্য হয়ে গেল। বলে ওঠল, আপনি আমাকে চিনেছেন কিন্তু তারপরও আমার সাথে এত উত্তম ব্যবহার করলেন এই তিনদিন?
ইমাম জয়নুল আবেদিন বলে ওঠলেন, কী করব বল! আমার নানাজী দ্বীনের নবীর আদর্শ যে এটাই। মেহমানের সাথে উত্তম ব্যবহার কর। যে আল্লাহ এবং পরকালে বিশ্বাস করে সে যেন মেহমানের সম্মান করে।
প্রিয় পাঠক এরই নাম হোসাইনিয়াত!
এজিদের বন্দীদশা থেকে মুক্ত হয়ে মদিনা শরিফে ফিরে এসে ইমাম আলী জয়নুল আবেদিন ইবনুল হোসাইন আলাইহিমাস সালাম দাস-দাসী ক্রয় করতেন। তাদেরকে পরিপূর্ণ দ্বীন শিক্ষা দিতেন অতঃপর তাদেরকে মুক্ত করে দিতেন আল্লাহর ওয়াস্তে।
অনেক আলিম বলেছেন যে, তিনি এভাবে হাজার হাজার দাস-দাসীকে দ্বীন শিক্ষা দিয়ে মুক্ত করে দেন। এরকমভাবেই ইমাম আলি জয়নুল আবেদিন ইবনুল হোসাইন আলাইহিমাস সালামের বাগানের একটি ফলই হচ্ছেন মুহাম্মাদ বিন কাসিম আস সাকাফি যিনি ভারতে ইসলামের রাস্তা উন্মুক্ত করেন। ভারত এখন ইসলামের আলোর মাঝে সাতার কাটছে আর তা ইমাম আলি ইবনুল হোসাইন আলাইহিমাস সালামের অবদান।
এরই নাম হোসাইনিয়াত!
নিজেকে পবিত্র করার নাম হোসাইনিয়াত!
ভেতরের জগতকে পরিবর্তন করার নাম হোসাইনিয়াত!
মানবিক গুণ দিয়ে নিজেকে সাজানোর নাম হোসাইনিয়াত। পাশবিকতার অপর নাম ইয়াজিদিয়াত।
মদ ছিল ইয়াজিদের নিত্যসঙ্গী। অশ্লীলতা ছিল তার নিত্যসঙ্গী। নর্তকী নাচিয়ে বাদ্য-বাজনা ছিল তার নিত্যসঙ্গী। এগুলোই ইয়াজিদিয়াত। এগুলোকে ত্যাগ করতে হবে।
যোগ্য লোকের কাছে না ঝুকা ইয়াজিদিয়াত। arrogance. আমি কেন কারো কাছে নত হব? হোক সে নবীর নাতি। হোক সে জান্নাতের যুবকদের সর্দার। হোক সে আলাহর নবীর সবচাইতে প্রিয়। হোক সে আমার চাইতে মহাজ্ঞানী। আমি কারো কাছে ঝুকব না। এটাই ইয়াজিদিয়াত। 
যোগ্য লোকের কাছে আত্মসর্পণের নাম হোসাইনী চেতনা।

ইয়াজিদের ঘৃণ্যতম অপরাধ

১/ আল্লাহর প্রতিষ্ঠিত বিধান যদি কেও পরিবর্তন করার মত দুঃসাহস দেখায় তবে তাকে কি মুসলমান বলা যাবে? 
২/ আল্লাহ তাআলা মদ পান করাকে হারাম করেছেন এখন কেও যদি আল্লাহর এই নিষেধকে অমান্য করে বলে মদ খাওয়া হালাল তাহলে তাকে মুসলমান বলা যাবে? 
৩/ আল্লাহ তাআলা মুসলিম পুরুষদের জন্য যেসব মহিলা বিবাহ হারাম করেছেন যেমন- মা,বোন,খালা,ফুফু,মেয়ে ইত্যাদি রকমের মহিলা যাদের বিয়ে করা ইসলামে অবৈধ যদি কেও বলে আজ থেকে এদের বিয়ে করা জাইজ তবে সে কি মুসলমান থাকবে? 
এখন হয়তো ওহাবীরা প্রশ্ন করতে পারেন যে ইয়াজিদ এগুলো করেছে কে বল্লো? 
উত্তর -  
১/ ইয়াজিদ মদ হালালের ব্যাপারে তার জঘন্য উক্তি-
সে বলে, মদ যদি দ্বীনে মুহাম্মাদিতে হারাম হয়ে থাকে তবে ঈসা ইবনে মারিয়মের ধর্ম তথা খ্রিস্টান ধর্মের আলোকে হালাল হিসেবে খাও!!! (তাফসিরে ইবনে মাজহারি, খ-৫, পৃ-২১১-১২)
২/ ইয়াজিদ সম্পর্কে ইমাম দাহাবী(রাহ) অভিমত - তিনি বলেন- 
ﻭﻛﺎﻥ ﻧﺎﺻﺒﻴﺎ ﻓﻈﺎ ﻏﻠﻴﻈﺎ ﺟﻠﻔﺎ ﻳﺘﻨﺎﻭﻝ ﺍﻟﻤﺴﻜﺮ ﻭﻳﻔﻌﻞ ﺍﻟﻤﻨﻜﺮ ﺍﻓﺘﺘﺢ ﺩﻭﻟﺘﻪ ﺑﻤﻘﺘﻞ ﺍﻟﺸﻬﻴﺪ ﺍﻟﺤﺴﻴﻦ ﻭﺍﺧﺘﺘﻤﻬﺎ ﺑﻮﺍﻗﻌﺔ ﺍﻟﺤﺮﺓ ﻓﻤﻘﺘﻪ ﺍﻟﻨﺎﺱ ﻭﻟﻢ ﻳﺒﺎﺭﻙ ﻓﻲ ﻋﻤﺮﻩ ﻭﺧﺮﺝ ﻋﻠﻴﻪ ﻏﻴﺮ ﻭﺍﺣﺪ ﺑﻌﺪ ﺍﻟﺤﺴﻴﻦ ﻛﺄﻫﻞ ﺍﻟﻤﺪﻳﻨﺔ ﻗﺎﻣﻮﺍ ﻟﻠﻪ
- ইয়াজিদ অত্যন্ত মারাত্মক চরিত্রের অধিকারী ছিলো সে পবিত্র আহলে বায়েতকে ঘৃণা করতো। এছাডাও সে মদ পানকে হালাল মনে করতো এবং বিভিন্ন অশালীন কাজে অভ্যস্ত ছিলো। সে প্রথম তার খিলাফত সুরু করে ইমাম হোসাইন(রা) এর শাহাদাত দিয়ে। এবং শেষ করে পবিত্র কাবা শরীফে হামলার মাধ্যমে। তৎকালীন মদিনার সবাই তাকে লানত দিয়েছিলো যা হাদীস দ্বারাও প্রমানিত। এবং সবাই তাকে ঘৃণারপাত্র হিসেবে লানত দিতে থাকে। 
( দলিল- কিতাব সিয়ার আলাম আন নুবালা/৪র্থ খন্ড/৩৭.৩৮) 
[ [Siyar A'lam an Nubala, Volume No. 4, Page No. 37-38 - Screen page-]

বিখ্যাত মুহাদ্দিস ও মুফাচ্ছির ইমাম আল্লামা জালালুদ্দী সুয়ূতী(রাহ) এজিদের এই তিনটি চরিত্র নিয়ে তার বিখ্যাত কিতাব "তারিখে খুলাফা" মধ্যে বলেন - 
ইয়াজিদের অহরহ মারাত্মক চরিত্রের মধ্যে তিনটি মারাত্মক ও অশালীন চরিত্র ছিলো।
১/ সে মদ পানকে হালাল করে দিয়েছিলো।
২/ সে আল্লাহর পক্ষ থেকে পুরুষদের জন্য হারামকৃত মহিলাদের সে বিয়ে করা হালাল করে দিয়েছিলো।
৩/ সে তার মহলে দিনরাত মহিলাদের দ্বারা অশালীন নৃত্য করাতো। (দলিল- তারিখে খুলাফা / ৩য় খন্ড) 
[ Traikh R Khulafa /Volume No. 3, Screen page-)

ইয়াজিদ কি কি কু-কর্ম করেছিল
===================

ইয়াজিদ তার তিন বছর নয় মাসের অবৈধ শাসনামলে যে তিনটি মহাপাপ ও অপরাধযজ্ঞের জন্য ইসলামের ইতিহাসে সবচেয়ে কুখ্যাত ও ঘৃণিত ব্যক্তিতে পরিণত হয়েছে।

এই তিনটি মহাপাপের মধ্যে প্রথমটি হল ৬১ হিজরিতে কারবালায় রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের দৌহিত্র সায়্যেদ ইমাম হুসাইন বিন আলী রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু ও তাঁর ছয় মাসের শিশুপুত্র হযরত আলী আসগরসহ নবী বংশের ১৮/২৭ জন সদস্যকে নৃশংসভাবে পিপাসার্ত অবস্থায় শহীদ করা। কারবালায় ইমাম হুসাইন রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু এর আরো প্রায় ৬০ জন সমর্থকও বীরের মত লড়াই করে শহীদ হয়েছিলেন।

ইয়াজিদ বাহিনী ইমাম হুসাইন রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু এর পবিত্র লাশসহ নবী-পরিবারের সদস্যদের লাশের উপর ঘোড়া ছুটিয়ে লাশগুলো দলিত-মথিত করেছিল এবং তাঁদের মস্তক ছিন্ন করে বর্শার আগায় বিদ্ধ করেছিল। তারা কারবালায় ইমাম হুসাইন রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু এর শিবিরের তাঁবুগুলোতে আগুন ধরিয়ে দিয়ে লুটপাট চালিয়েছিল। এ ছাড়াও নবী-বংশের নারী ও শিশুদেরকেও টেনে হিঁচড়ে শিকল পরিয়ে বন্দী অবস্থায় কুফার গভর্নরের দরবারে ও দামেস্কে ইয়াজিদের দরবারে নিয়ে গিয়েছিল খোদাদ্রোহী ইয়াজিদ বাহিনী। অভিশপ্ত ইয়াজিদের সামনে যখন ইমাম হুসাইন ইমাম বিন আলী রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু এর পবিত্র শির মুবারক আনা হয় তখন সে বলেছিল, আহা! আমার পূর্বপুরুষরা যদি আজ বেঁচে থাকত তাহলে তারা দেখতে পেতেন যে কিভাবে আমি বদর এবং ওহুদ যুদ্ধে (মুসলমানদের হাতে) নিহত আমার (দাদা আবু সুফিয়ানের) আত্মীয়-স্বজনদের রক্তের বদলা নিয়েছি মুহাম্মদের কাছ থেকে!

ইয়াজিদের দ্বিতীয় মহাপাপটি ছিল পবিত্র মদীনা শহরে হামলা এবং মসজিদে নববীর অবমাননা ও তিন দিন ধরে ইয়াজিদ বাহিনীর হাতে মদীনায় লুট-পাট আর গণহত্যা চালানোসহ গণ-ধর্ষণের অনুমতি দেয়া।

ইয়াজিদের তৃতীয় মহাপাপটি ছিল পবিত্র মক্কার কাবা ঘরে হামলা চালিয়ে তা ধ্বংস করে দেয়া। পাষণ্ড ইয়াজিদের বর্বর সেনারা (কারবালার মহাঅপরাধযজ্ঞ সম্পাদনের তিন বছর পর) পবিত্র মক্কা অবরোধ করে। তারা মহান আল্লাহর ঘরে তথা পবিত্র কাবায় জ্বলন্ত ন্যাপথালিনযুক্ত অগ্নি-গোলা নিক্ষেপ করে কাবা ঘর জ্বালিয়ে দেয়। ফলে মক্কার বিশিষ্ট সাহাবীদের কাছে ইয়াজিদের খোদাদ্রোহী চরিত্রের বিষয়টি আবারও স্পষ্ট হয় পবিত্র কাবাঘরে হামলার পরই খবর আসে যে কুখ্যাত জালিম ও অভিশপ্ত ইয়াজিদ মারা গেছে। এ সময় তার বয়স হয়েছিল ৩৭ বছর । তাকে দামেস্কের বাব আস সাগিরে দাফন করা হয়।

অবশ্য মহাপাপী ও অভিশপ্ত ইয়াজিদের মৃত্যু সম্পর্কে কয়েকটি বর্ণনা রয়েছে।ইয়াজিদ "তার প্রাপ্যই তার প্রতি" এর জঘন্যতা।

তাফসীর, হাদীস, আকীদা, এবং ইতিহাস ও জীবনীর কিতাবগুলো থেকে যতদূর যানা যায়, তাতে দেখা যায় সালফে সালেহীনের নিকট গ্রহণযোগ্য এবং অনুকরণীয় কোন ইমামের কিতাবে ইয়াজিদের জন্য দোয়া করা বৈধ হওয়ার কথা আজ পর্যন্ত খুঁজে পাই নাই। কেউ তার নামের শেষে রাহিমাহুল্লাহ এ বাক্যেটি উল্লেখ করেন নি‼️

আল্লামা আলূসী রাহিমাহুল্লাহ বলেন, ইমাম বারযাঞ্জী তার ইশা’আহ গ্রন্থে, ইমাম হাইসামী তার সাওয়াইক গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন যে, ইমাম আহমাদকে তার ছেলে আব্দুল্লাহ জিজ্ঞাসা করেছিলেন ইয়াজিদের উপর লা’নত দেয়া যাবে কি না? উত্তরে তিনি বলেছিলেন, কেন তাকে লা’নত দেয়া যাবেনা যাকে স্বয়ং আল্লাহ কুরআনে কারীমে লা’নত দিয়েছেন।

আব্দুল্লাহ বললেন, আমি তো কুরআন শরীফ অধ্যয়ন করেছি, কিন্তু ইয়াজিদের লা’নতের বিষয়টি পাইনি। তখন ইমাম আহমাদ রাহিমাহুল্লাহ বললেন, আল্লাহ তা'য়ালা পবিত্র কুরআনে ইরশাদ করেন,,

فَهَلْ عَسَيْتُمْ إِنْ تَوَلَّيْتُمْ أَنْ تُفْسِدُوا فِي الْأَرْضِ وَتُقَطِّعُوا أَرْحَامَكُمْ

ক্ষমতা লাভ করলে, সম্ভবতঃ তোমরা পৃথিবীতে অনর্থ সৃষ্টি করবে এবং আত্নীয়তা বন্ধন ছিন্ন করবে।

أُولَٰئِكَ الَّذِينَ لَعَنَهُمُ اللَّهُ فَأَصَمَّهُمْ وَأَعْمَىٰ أَبْصَارَهُمْ

এদের প্রতিই আল্লাহ অভিসম্পাত করেন, অতঃপর তাদেরকে বধির ও দৃষ্টিশক্তিহীন করেন।

- সূরা মুহাম্মাদঃ ২২-২৩

এরপর ছেলেকে উদ্দেশ্য করে বলেন এযিদ যা করেছে তা থেকে অধিক ফাসাদ ও আত্মীয়তার বন্ধন বিনষ্ট করা আর কী হতে পারে?- রুহুল মা’আনী, ২৬ তম খন্ড, পেইজ নাম্বারঃ ৭২-৭৩

আল্লামা তাফতাযানী রাহিমাহুল্লাহ বলেন, সঠিক কথা হচ্ছে, ইমাম হুসাইন রাদিয়াল্লাহু আনহুকে শহীদ করার ব্যাপারে ইয়াজিদের সম্মতি ছিল। তার উপর আল্লাহর লা’নত পড়ুক। লা’নত পড়ুক তাদের উপর যারা তাকে এ ব্যাপারে সাহায্য করেছে।- ফায়দুল কাদীরঃ ৩/১০৯ দারুল কুতুবিল ইলমিয়্যাহ

ইমাম যাহাবী রাহিমাহুল্লাহ বলেন, لانسبه ولانحبه
ইয়াজিদ মদীনাবাসীদের সাথে যা করার তা করেছিল এবং ইমাম হুসাইন রাদিয়াল্লাহু আনহুকে, তার ভাইদেরকে এবং পরিবারকে শহীদ করেছিল। সে মাতাল ছিল।

- তারিখুল ইসলামঃ ৫/৩০
- সিয়ারু আ’লামিন নুবালাঃ ৪/৩৭-৩৮

ইমাম হালাবী রাহিমাহুল্লাহ বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন : হে আল্লাহ, যে ব্যক্তি মদীনা বাসীর উপর অত্যাচার করে এবং তাদেরকে ভয় প্রদর্শন করে, তুমি তাকে ভয় প্রদর্শন কর। এমন ব্যক্তির উপর আল্লাহ, ফেরেশতাগণ এবং সকল মানুষের লা’নত বর্ষিত হোক।

" তবে কী বুঝা গেলো, বুঝা গেলো যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মদীনা আক্রমণকারীর উপর লা’নত দিয়েছেন। সহীহ হাদীস তার প্রমাণ। ইতিহাসবীদ্গণ ঐক্যমতের ভিত্তিতে প্রমাণ করেছেন, ইয়াযিদের নির্দেশে মদীনা শরীফে হত্যা, লুঠ, ধর্ষণ হয়েছে। তাই এই পাপিষ্ঠ লা’নত পাবার উপযুক্ত।"

- মু’জামুল আওসাত লিত তাবারানীঃ ২/১২৫/১
- আস সিলসিলাতুস সাহীহাহ লিল আলবানীঃ ১/৬২০, ১/৩৫১
- আলা মাজমা’ লিল হাইসামীঃ ৩/৩০৬
- আসসীরাতুল হালাবিয়্যাহঃ ২/২৮৭

ইমাম জালালুদ্দীন সুয়ুতী রাহিমাহুল্লাহ বলেন, ইয়াজিদ ও ইবনে যিয়াদ সহ ইমাম হুসাইন রাদিয়াল্লাহু আনহুর হত্যাকারীদের উপর আল্লাহর লা’নত পড়ুক।

- তারীখুল খুলাফাঃ ২০৭

ইবনুল ইমাদ হাম্বালী রাহিমাহুল্লাহ ও আল্লামা ইয়াফেয়ী রাহিমাহুল্লাহ বলেন, যে হুসাইন রাদিয়াল্লাহু আনহুকে শহীদ করেছে অথবা তার নির্দেশ দিয়েছে সে কাফের।

- শাযারাতুয যাহাবিঃ১/৬৮

কোন মু'মিন ইয়াজিদের মুহাব্বাত করতে পারে না; তাকে মুহাব্বাতকারী মু'মিন থাকতে পারে না।

উপর উক্ত আয়াত শরীফ, হাদীস শরীফ ও ইমামগনের ভাষ্য দ্বারা ইয়াজিদের উপর লা’নত দেয়া জায়েয।

ইয়াজিদকে লানত দেয়ার বিধান

লেখক, সংকলকঃ মাসুম বিল্লাহ সানি

যারা ডঃ জাকির নায়েককে অন্ধভাবে মানেন তারা ইয়াজিদকে আজ থেকে (রহিমুল্লাহ) বলবেন। আর যদি না পারেন তাহলে ডঃ জাকির নায়েকের এই নিকৃষ্ট ফতোয়ার বিরোদ্ধে আওয়াজ তোলুন। কোন মুসলমান ইয়াজিদ প্রেমী হতে পারে না আমরা সেই ইমাম হোসাইনের জন্য পাগল যিনি শির দিয়েছেন কিন্তু ইয়াজিদকে হক বলেন নি, যিনি প্রানের নবী ((ﷺ)) এর কলিজার টুকরা প্রিয় দৌহিত্র , যিনি সমস্ত জান্নাতী যুবকদের সরদার। ইয়াজিদ গুষ্টি কিয়ামতের দিন কিভাবে পার পায় দেখা যাবে।

(I) ইয়াজিদের নিকৃষ্টতম পাপগুলোঃ 

যে ইয়াজিদকে ডঃ জাকির নায়েক বলে (রহিমুল্লাহ) আসুন দেখি ইতিহাস কি বলেঃ

১. ইয়াযিদের ক্ষমতা দখল ও কারবালার হৃদয় বিদারক ঘটনা: 

যে সমস্ত কারণে উলামায়ে কেরামগণ ইয়াযিদের প্রতি লা’নত প্রদান জায়েয বলেছেন তার প্রধান কারণ হল, রাসূলেপাক (ﷺ) এর প্রাণপ্রিয় দৌহিত্র ইমাম হোসাইন রাদিয়াল্লাহু আনহুকে শহিদ করা, তার মস্তক মোবারকের সাথে বেয়াদবি, নবী পরিবারের সাথে দুর্ব্যবহার করা ইত্যাদি। আর এ সবগুলোই হয়েছিল ইয়াযিদের সরাসরি নির্দেশ মোতাবেক।
আমিরে মুয়াবিয়া রাদিয়াল্লাহু আনহু এর ইন্তেকালের পর ইয়াযিদ জোরপূর্বক ক্ষমতা দখল করে মক্কা মদিনাসহ সকল শহরে তার অনুগত লোকদেরকে গভর্ণর হিসেবে নিয়োগ করে এবং তার হাতে বাইআত গ্রহণ করতে সবাইকে নির্দেশ প্রদান করে। ইমাম হোসাইন রাদিয়াল্লাহু আনহু এজিদের হাতে বাইআত করতে অস্বীকার করাই ছিল কারবালার ঘটনার মূল কারণ।

❏ ইমাম জালাল উদ্দিন সুয়ুতি (রহ.) লিখেন,
অর্থঃ ইরাকবাসী ইমাম হোসাইন (رضي الله عنه) এর কাছে অসংখ্য দূত মারফত পত্রাদি প্রেরণ করে তাকে সেখানে আসতে আহবান করে। অতঃপর হোসাইন (رضي الله عنه) জিলহজ্বের ১০ তারিখ মক্কাশরীফ থেকে ইরাক পথে রওয়ানা দেন। তার সাথে ছিলেন পরিবারের কিছু পুরুষ, মহিলা ও শিশুগণ। তখন এজিদ ইরাকের গভর্ণর উবায়দুল্লাহ বিন যিয়াদকে পত্র মারফত নির্দেশ দেয় হোসাইন (رضي الله عنه)কে শহিদ করার জন্য।
[ইমাম জালাল উদ্দিন সুয়ুতিঃ ‘তারিখুল খোলাফা’ গ্রন্থের ১৬৫ পৃষ্ঠা]

❏ হাফেজ ইবনে কাসীর আরো লিখেছেন, ইয়াজিদ হযরত হোসাইন (رضي الله عنه) ও তাঁর সাথীদেরকে ওবাইদুল্লাহ ইবনে জিয়াদের মাধ্যমে হত্যা করিয়েছিল। (আল বেদায়া ওয়ান্নেহায়া ৮ম খন্ডঃ ২২২ পৃষ্ঠা)

২. শির মোবারকের সাথে ইয়াযিদের বেয়াদবি: 

আমি ইতোপূর্বে প্রমাণ করেছি যে, এজিদের নির্দেশেই কারবালার নির্মম হত্যাকাণ্ড ঘটেছে এবং এজন্য এজিদই দায়ি। এখন আমি প্রমাণ করব ইমাম হোসাইন রাদিয়াল্লাহু আনহু এর শির মোবারক দামেস্কে প্রেরণ করা হয়েছিল এবং এজিদ পবিত্র মস্তক মোবারকের সাথে বেয়াদবি করেছিল।

❏ হাফিজ ইবনে কাছিরের বর্ণনা: 

আল্লামা হাফিজ ইবনে কাছির (আরবি) পৃ-২৬ গ্রন্থে ১১/৫৫৯ পৃষ্ঠায় বর্ণনা করেন-
অর্থ: হযরত মুজাহিদ থেকে বর্ণিত, ইমাম হুসাইন রাদিআল্লাহু আনহু এর শির মোবারক যখন আনা হল, অতঃপর এজিদের সামনে রাখা হল তখন এজিদ নিম্নলিখিত কবিতাগুলি আবৃত্তি করতে লাগল-
    
‘হায়! আজ যদি বদরে নিহত আমার মুরুব্বিগণ এ অবস্থা দেখত তাহলে তারা খুশি হয়ে যেত।

❏ সিবতু ইবনুল জাওযীর বর্ণনা: 

আল্লামা সিবতু ইবনুল জাওযী তাঁর গ্রন্থে বর্ণনা করেন-
অর্থ: এজিদের ব্যাপারে সবগুলো বর্ণনা যাচাই বাছাই করার পর প্রসিদ্ধ মত হল যে, ইমাম হোসাইন রাদিআল্লাহু আনহু এর শির মোবারক শামে পৌছার পর যখন এজিদের সামনে রাখা হল তখন সে শাম বাসীদের একত্রিত করল। অতঃপর তার হাতে লাঠি দ্বারা শির মোবারকের উপর আঘাত করতে লাগল। এবং ইবনে যুবারীর কবিতা আবৃত্তি করতে লাগল।
‘হায় বদরে নিহত আমার মুরুব্বিগণ যদি এ অবস্থা দেখত। খাযরাজ গোত্রের তলওয়ার গুলো আজ আক্রমণ করছে। (তাযকিরাতুল খাওয়াস ২৬১)

৩. পবিত্র মদিনা শরীফ আক্রমণকারীর উপর লানতঃ 

❏ সহিহ হাদিসে আছে রাসুল (ﷺ) বলেছেন, হে আল্লাহ, যে ব্যক্তি মদীনা বাসীর উপর অত্যাচার করে এবং তাদেরকে ভয় প্রদর্শন করে, তুমি তাকে ভয় প্রদর্শন কর। এমন ব্যক্তির উপর আল্লাহ, ফেরেশতাগণ এবং সকল মানুষের লা’নত বর্ষিত হোক।

তথ্যসূত্রঃ
●মু’জামুল আওসাত লিত তাবারানীঃ২/১২৫/১
●আস সিলসিলাতুস সাহীহাহ লিল আলবানীঃ১/৬২০, ১/৩৫১
●আলা মাজমা’ লিল হাইসামীঃ৩/৩০৬

ইয়াযিদের লা’নত পাবার যোগ্য দুঃষ্কর্ম সমূহের দ্বিতীয় অধ্যায় হল মদিনা শরীফে আক্রমণ। এজিদী বাহিনী মদিনা শরীফে হামলা করে সন্ত্রাস কায়েম করে। তিন দিনের জন্য সকল লুঠতরাজ মুবাহ ঘোষণা করে। তারা অসংখ্য আনসার মুহাজিরদেরকে শহীদ করে। অসংখ্য মা বোনদেরকে ইজ্জত লুণ্ঠন করে। তিনদিন পর্যন্ত মসজিদে নববীতে আযান ইকামত বন্ধ ছিল।

মদিনাবাসীর বিরুদ্ধে এজিদী বাহিনীর তাণ্ডবঃ

মদিনাবাসীর বিদ্রোহের খবর যখন এজিদের কাছে পৌছল তখন সে মুশরিক বিন উকবার নেতৃত্যে একদল সেনাবাহিনী সেখানে প্রেরণ করল।

❏ হাফিজ ইবনে কাছিরের বর্ণনা:

"অতঃপর মুসরিফ বিন উকবাহ এজিদের নির্দেশক্রমে মদিনা শরীফকে তিন দিনের জন্য বৈধ ঘোষণা করল। এজন্য আল্লাহ তাকে ভাল প্রতিদান দিবেন না। সে অসংখ্য সম্মানিত সাহাবি হাফিজে কুরআনদেরকে শহিদ করল। তাদের মাল সম্পদ লুণ্ঠন করে নিল। অনেক মহিলাদের উপর পতিত হল। মারাত্মক ফাসাদ তৈরি করল। এ ইতিহাস অনেকেই বর্ণনা করেছেন। (বেদায়া-৬২০ পৃষ্ঠা)

৪. দশ হাজার লোক হত্যা ও ১০০০ কুমারী নারীর ইজ্জত লুণ্ঠনঃ

এজিদ বাহিনী সেদিন ৭ শত নেতৃস্থানীয় কুরাইশ, আনসার ও মুহাজিরদেরকে হত্যা করে। তাছাড়া মহিলা ও ছোট-ছোট বাচ্চাসহ ১০ হাজার লোককে তারা হত্যা করে। এ বর্ণনাগুলো প্রায় সবগুলো তারিখের কিতাবেই উল্লেখিত হয়েছে।
    
❏ দেখুন হাফিজ ইবনে কাছিরের বর্ণনাঃ

"মাদাইনী মদিনা শরীফের একজন শেখ থেকে বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেন- আমি ইমাম যুহরীকে প্রশ্ন করলাম ‘হারবার যুদ্ধের’ দিন কত লোক শহিদ হয়েছিলেন? তিনি বললেন আনসার ও মুহাজিরীনদের ৭ শত নেতৃস্থানীয় লোক সে দিন শহিদ হন। তাছাড়া অপরিচিত পুরুষ, মহিলা ও দাস-দাসী ও অন্যান্য ১০ হাজার লোক শাহাদত বরণ করেন। (বেদায়া ৮/২২১ পৃষ্ঠা, আর রাদ্দু আলাল মুতাআসসিব ৬৭, কিতাবুল মিলহান ১৫১ পৃষ্ঠা)

এক হাজার কুমারী নারীর ইজ্জত লুণ্ঠন:

এজিদ বাহিনীর হামলা থেকে নিরীহ মা বোন পর্যন্ত রেহাই পায় নাই। এ ইতিহাস বড় লজ্জাজনক ইতিহাস, বড় কলঙ্কজনক অধ্যায়। অথচ আজ যারা এজিদের প্রশংসায় পঞ্চমুখ তাদের কি লজ্জা লাগে না। 

❏ দেখুন হাফিজ ইবনে কাসিরের বর্ণনাঃ

মাদাইনী থেকে বর্ণিত, তিনি আবু বকর কুররাহ থেকে বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেন হিশাম বিন হাসান বর্ণনা করেছেন, তিনি বলেন- হাররার যুদ্ধের পর মদিনাবাসী এক হাজার মহিলা স্বামী ব্যতীত সন্তান প্রসব করেছেন। (বিদায়া ৮/২১১, আর রাদ্দু আলাল মুতাআসসিব ৬৭ পৃষ্ঠা)
    
❏ ইমাম শামসুদ্দিন যাহাবি ‘তারিখুল ইসলাম’ গ্রন্থে ২৬ পৃষ্ঠায় বর্ণনা করেছেনঃ

হযরত জারির বিন আব্দুল হামিদ থেকে বর্ণিত, তিনি মুগিরা থেকে বর্ণনা করেছেন, তিনি বলেন- মুসরিফ বিন উকবাহ তিনদিন পর্যন্ত মদিনা শরীফে সন্ত্রাসী তাণ্ডব চালিয়েছে। সেদিন এক হাজার কুমারী মহিলাদের ইজ্জত তারা লুণ্ঠন করেছে।
    
❏ ইমাম জালাল উদ্দিন সুয়ুতি বর্ণনা করেছেনঃ

হাসান মুররাহ বর্ণনা করেছেন তিনি বলেন- আল্লাহর শপথ, সেদিন মনে হয় নাই যে, তাদের আক্রমণ থেকে কেউ রক্ষা পাবে। সে আক্রমণ অনেক সাহাবি সহ অসংখ্য লোক শহিদ হয়েছিলেন। মদিনা শরীফকে লুঠতরাজের জন্য বৈধ ঘোষণা করা হয়েছিল। এতে এক হাজার কুমারি নারী তাদের ইজ্জত হারিয়েছিলেন। ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহ রাজিউন। (তারিখুল খোলাফা- ১৬৬ পৃষ্ঠা)

৫. রক্তাক্ত ইতিহাসের পাতায় হাররার ঘটনাঃ 

❏ হুজ্জাতুল ইসলাম (৩ লক্ষ হাদিসের হাফিজ) ইবনে হাজার আসকালানী রাহিমাহুল্লাহ বলেন, 

ঐতিহাসিকগণ হাররার ঘটনার সত্যতার ব্যাপারে ঐক্যমত পোষণ করেছেন যে ঘটনায় ৮০জন সাহাবী শহীদ হয়েছিলেন। এ ঘটনার পর আর কোন বদরী সাহাবী জীবিত থাকেন নি।

তথ্যসূত্রঃ 
●ফতহুল বারী:৮/৬৫১

❏ এ হাররার ঘটনাকালে ইয়াযিদ বাহিনী মানুষ হত্যা, সম্পদ লুন্ঠন এবং নারী ধর্ষণ-সব কিছুই করেছিল।

তথ্যসূত্রঃ
●আত তাবারীঃ ৫/৪৮৪
●আল কামিলঃ ৪/১১২
●আল বিদায়াহঃ৮/২১৮

❏ এ হাররার ঘটনাকালে মুসলমানের রক্তে পিচ্ছিল হয়ে গিয়েছিল মদীনার রাস্তাগুলো। মুসলমানের রক্ত গড়িয়ে গড়িয়ে রাসুল (ﷺ) এর রওযা মোবারক পর্যন্ত পৌঁছেছিল। মসজিদে নববী রক্তে ভরে গিয়েছিল। ১০০০০ মুসলমানকে হত্যা করা হয়েছিল। (সেই পশু গুলোর) ধর্ষণের ফলে ১০০০ জারজ সন্তান জন্ম নিয়েছিল।

তথ্যসূত্রঃ
●ইমাম ইবনুল জাওযীঃ আত তাযকিরাহঃ পেইজঃ ৬৩, ১৬৩

II) কোন মুসলমানকে হত্যা করা মহাপাপঃ

❏ এজিদ ইরাকের গভর্ণর উবায়দুল্লাহ বিন যিয়াদকে পত্র মারফত নির্দেশ দেয় হোসাইন (رضي الله عنه)কে শহিদ করার জন্য। [ইমাম জালাল উদ্দিন সুয়ুতিঃ ‘তারিখুল খোলাফা’ গ্রন্থের ১৬৫ পৃষ্ঠা]

❏ হাফেজ ইবনে কাসীর আরো লিখেছেন, ইয়াজিদ হযরত হোসাইন (رضي الله عنه) ও তাঁর সাথীদেরকে ওবাইদুল্লাহ ইবনে জিয়াদের মাধ্যমে হত্যা করিয়েছিল। (আল বেদায়া ওয়ান্নেহায়া ৮ম খন্ডঃ ২২২ পৃষ্ঠা)

আয়াত: 

“যে ব্যাক্তি স্বেচ্ছায় কোন মু’মিনকে কতল করে সে জাহান্নামী।” ●সুরা নিসা ৯৩

হাদিস:

(১)
● আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসুল পাক (ﷺ) বলেছেন, মুসলমানদেরকে গালাগালি করা ফাসেকি আর তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করা কুফরী | [ বুখারী ৪৮, মুসলিম ৬৪ ]

(২)
●আসওয়াদ (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত। "ইয়া রাসুলুল্লাহ! এ ব্যাপারে আপনি কি মনে করেন, যদি আমি কোন কাফিরের সম্মুখীন হই এবং সে আমার সাথে যুদ্ধ চালিয়ে যায়, তার তলোয়ার দ্বারা আমার একটি হাত উড়িয়ে দেয়, এরপর কোন গাছের আড়ালে গিয়ে বলে আমি আল্লাহর উদ্দেশ্যে ইসলাম গ্রহণ করলাম! এ কথা বলার পরও আমি কি তাকে কতল করতে পারি?" রাসুলুল্লাহ (ﷺ) বললেনঃ "তাকে হত্যা করো না।" আমি আরয করলাম, "হে আল্লাহর রাসুল! সে আমার একটি হাত কেটে ফেলে এ কথা বলেছে, তবুও কি আমি তাকে হত্যা করব না?" তিনি বললেনঃ "না, হত্যা করতে পারবে না। যদি তুমি তাকে হত্যা কর (তবে) এ হত্যার পুর্বে তোমার যে অবস্হান ছিল সে ব্যাক্তি সে স্হানে পৌছবে এবং কালিমা পড়ার আগে সে ব্যাক্তি যে অবস্হানে ছিল তুমি সে স্হানে পৌছবে।"
[সহীহ মুসলিম ১৭৬, সহীহ বুখারি ৩৭৯৪]

(৩)
● রাসুলুল্লাহ (ﷺ) মুসলমানদের একটি বাহিনী মুশরিক সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে পাঠালেন। উভয় দল পরস্পর সম্মুর্খীন হল। মুশরিক বাহিনীতে এক ব্যাক্তি ছিল। সে যখনই কোন মুসলিমকে হামলা করতে ইচ্ছা করত, সে তাকে লক্ষ করে ঝাপিয়ে পড়ত এবং শহীদ করে ফেলত। একজন মুসলিম তার অসতর্ক মূহৃর্তের অপেক্ষা করতে নাগলেন। জুনদুব বললেন, আমাদের বলা হলো যে, সে ব্যাক্তি ছিল উসামা ইবনু যায়িদ। তিনি যখন তার উপর তলোয়ার উত্তোলন করলেন তখন সে বলল, 'লা ইলাহা ইল্লাহ' তবুও উসামা (رضي الله عنه) তাকে হত্যা করলেন। দুত যুদ্ধে জয়লাভের সুসংবাদ নিয়ে নাবী (ﷺ) -এর খেদমতে হাযির হলেন। তিনি তার কাছে যুদ্ধের পরিস্হিতি সম্পর্কে প্রশ্ন করলেন। তিনি সব ঘটনাই বর্ণনা করলেন, এমন কি সে ব্যাক্তির ঘটনাটিও বললেন যে তিনি কি করেছিলেন। নাবী (ﷺ) উসামাকে ডেকে পাঠালেন এবং প্রশ্ন করলেন, তুমি সে ব্যাক্তিকে হত্যা করলে কেন? উসামা বললেন, হে আল্লাহর রাসুল! সে অনেক মুসলিমকে ঘায়েল করেছে এবং অমুক অমুককে শহীদ করে দিয়েছে। এ বলে কয়েকজনের নাম উল্লেখ করলেন। আমি যখন তাকে আক্রমণ করলাম এবং সে তলোয়ার দেখে অমনি 'লা ইলাহা ইল্লাহ' বলে উঠল। রাসুলুল্লাহ (ﷺ) বললেনঃ তুমি কি তাকে মেরে ফেললে? তিনি বললেন, জি হ্যা। রাসুল বললেনঃ কিয়ামত দিবসে যখন সে 'লা ইলাহা ইল্লাহ' (কালিমা) নিয়ে আসবে, তখন তুমি কি করবে? তিনি আরয করলেন, ইয়া রাসুলুল্লাহ! আমার মাগফিরাতের জন্য দু'আ করুন। রাসুল বললেনঃ কিয়ামত দিবসে যখন সে 'লা ইলাহা ইল্লাহ' (কালিমা) নিয়ে আসবে তখন তুমি কি করবে? তারপর তিনি কেবল এ কথাই বলছিলেনঃ কিয়ামতের দ্বীন যখন সে 'লা ইলাহা ইল্লাহ' (কালিমা) নিয়ে আসবে, তখন তুমি কি করবে? তিনি এর অতিরিক্ত কিছু বলেন নি। [মুসলিম ১৭৬]

III) ইমাম হোসাইন (رضي الله عنه) এর হত্যার প্রতিশোধঃ

হযরত জয়নাব বিনতে জাহাশ (رضي الله عنه) থেকে বর্নিত, 
নবীজী (ﷺ) বলেছেন, 
আমাকে আল্লাহ তায়ালা প্রত্যাদেশ পাঠিয়েছেন যে, আমি হযরত ইয়াহিয়া ইবনে জাকারিয়া (رضي الله عنه) এর হত্যার বদল হিসেবে ৭০ হাজার লোককে হত্যা করেছি, আমি আমার দৌহিত্রের হত্যার বদলা হিসেবে ৭০ হাজারের ৭০ গুন লোককে হত্যা করব। - আল্লাহু আকবার

তথ্যসূত্রঃ
● তাবারানীঃ আল মুজমাউল কবীরঃ খন্ড ২৪ : পৃ: ৫৪ হাদিস ১৪১
● আল হাকিমঃ সহিহ আল মুসতাদরেক : আব্দুল্লাহ ইবনে উমর (رضي الله عنه) এর সুত্রে, খন্ড ২ : পৃ: ৩১৯ : হাদিস ৩১৪৭

IV) ভেবে দেখুন ইয়াজিদ বাহিনী কাকে কতল করল?

হযরত জাবির (رضي الله عنه) বলেন, আমি বিদায় হজ্বে আরফাতের দিন হুযূরে পাক (ﷺ)কে 'ক্বাসওয়া' নামক উষ্ট্রীর উপর আরোহণরত অবস্থায় বলতে শুনেছি, 

یا ایها الناس انی تر کت فیکم ماان اخزتم به لن تضالو ا کتاب الله و عتدتی اهال بیتی

হে লোকেরা! আমি তোমাদের মধ্যে যা রেখে যাচ্ছি যদি তোমরা তা দৃঢ়ভাবে ধারণ কর তাহলে কখনো পথভ্রষ্ট হবে না। তা হল আল্লাহর কিতাব এবং আমার বংশধর তথা আহলে বায়ত।

তথ্যসূত্রঃ
●[তিরমিযী শরীফ, মিশকাত শরীফ - ৫৬৫ পৃঃ]

হাদিসঃ রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ) বারবার বলতেন : ‘হুসাইন আমা থেকে, আর আমি হুসাইন থেকে।’

তথ্যসূত্রঃ 
● কানযুল উম্মাল, ৬ষ্ঠ খণ্ড, পৃ. ২২১;
● সহীহ তিরমিযী, ২য় খণ্ড, পৃ. ৩০৬;
● মুসনাদে আহমাদ ইবনে হাম্বাল, ৩য় খণ্ড;
● হিলইয়াতু আবু নাঈম, ৫ম খণ্ড, ৪র্থ খন্ড;
● তারিখে বাগদাদ, ৯ম খণ্ড;
● তাহযিবুত তাহযীব, 
● ইবনে হাজার, ৩য় খণ্ড;
● সহীহ ইবনে মাজাহ;
● মুস্তাদরাকুস সাহীহাইন, ৩য় খণ্ড;

রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ) ইরশাদ করেন: 
‘মা ফাতেমা (رضي الله عنه) সমস্ত জান্নাতী মহিলাদের সরদার আর ইমাম হাসান ও ইমাম হুসাইন (رضي الله عنه) সমস্ত বেহেশতী যুবকদের সরদার।

তথ্যসূত্রঃ
● সহীহ তিরমিযী, আল জামি-উস-সহীহ (৫: ৬৬০) 3781)
● সহীহ ইবনে মাজাহ, 
● ফাযায়েলে আসহাবুন নবী অধ্যায়; বুখারী ফি আদাবুল মুফরাদ
●নসাই, আস-সুনান-উল-কুবরা (5: 80, 95 # 8298, 8365)
●নসাই, ফাদাইল-উস-সাহাবাহ (পৃ. 58, 72 # 193, 260)
●আহমাদ বিন হাম্বল, আল-মুসনাদ (৫: ৩৯১)
●আহমাদ বিন হাম্বল, ফাদাইল-উস-সাহাবাহ (২: 788 # 1406)
●ইবনে আবী শায়বাহ, আল-মুসান্নাফ (6: 388 # 32271)
●হাকিম, আল-মুস্তাদরাক (3: 164 # 4721, 4722)
●তবারানী, আল-মুজাম-উল-কবির (22: 402 # 1005)
●বায়হাকী, আল-ইতিকাদ (পৃষ্ঠা ৩৩২)
●মুহিব্ব তাবারী, খাইর-উল-উকবা ফী (পৃষ্ঠা ২২২৪)

V) মা ফাতেমা (رضي الله عنه) কে কষ্ট দেয়ায় লানতঃ

"যারা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলকে কষ্ট দেয়, আল্লাহ তাদের প্রতি ইহকালে ওপরকালে অভিসম্পাত করেন এবং তাদের জন্যে প্রস্তুত রেখেছেন অবমাননাকর শাস্তি”। 
(সূরা আহযাব : ৫৭)

Note: ইমাম হোসাইনকে যারা কতল করেছে তাদের প্রতি আল্লাহ ও রাসুল উভয়ই অসন্তুষ্ট এই হাদিস দ্বারা বুঝা যায়।

হযরত আল-মিসওয়ার ইবনে মাখরামা ((رضي الله عنه)) থেকে বর্ণিত, হযরত রাসূলুল্লাহ (ﷺ) ইরশাদ করেছেনঃ

"ফাতেমা (رضي الله عنه) আমার শরীরের অংশ (যেমন ঠিক তেমন)। সুতরাং যে তাকে অসন্তুষ্ট করল, সে যেন আমাকেই অসন্তুষ্ট করল।"

তথ্যসূত্রঃ :
● বুখারীঃ আস-সহীহ, ৩য় খন্ড, পৃ.১৩৬১, ১৩৬৪, ১৩৭৪, হাদীস: ৩৫১০, ৩৫২৩, ৩৫৫৬; এবং ৫ম খন্ড, পৃ.২৩০৩, হাদীস: ৪৯৩২;
● মুসলিমঃ আস-সহীহ, ৪/১৯০৩, হাদীস: ২৪৪৯]
● মুসলিমঃ আস-সহীহ, ৭/১৪১, হাদীস: ৬৪৬১]

এই হাদিসের ৬৬টি রেফারেন্স আছে এত গুলো টাইপ করাও সম্ভব নয়।

(VI) ইয়াযীদ সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর ভবিষ্যত বাণীঃ

কারবালার হৃদয়বিদারক ঘটনার পূর্বাভাষ রাসূল ﷺ নিজেই দিয়ে গেছেন। এ ব্যাপারে অনেকগুলো সহীহ হাদিস রয়েছে। কোন কোন হাদিসে আবার সরাসরি এজিদের নামও উল্লেখ করা হয়েছে। নিচে কয়েকটি হাদিস উল্লেখ করে হলো।

(১) সহীহ বুখারী শারীফের ব্যাখ্যাকারী এবং ফাতহুল বারীর লেখক হাফিজ আহমদ বিন হাজর আসকলানী (رحمة الله) মুসান্নাফ ইবন আবি শায়বা সূত্রে বর্ণনা করেন, "হযরত আবু হুরায়রা (رضي الله عنه) বাজারে যাওয়ার সময় প্রার্থনা করত ‘ও আল্লাহ, আমাকে ৬০ হিজরী এবং যুবকের রাজত্বকাল পর্যন্ত বাঁচিয়ে রেখ না।’

সহীহ বুখারীর ব্যাখ্যাকারী ইমাম বদরুদ্দীন আইনি (رحمة الله) সুনির্দিষ্টভাবে উল্লেখ করেন, ‘প্রথম বালক যে শাসন করবে’এই কথা দ্বারা ইয়াজিদকে বুঝানো হয়েছে। [উমদাত উল কাদরী ভলি. ১৬, পেজ ৩৩৩]

(২) হযরত আবু হুরায়রা (رضي الله عنه) সূত্রে বর্ণীত, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন- আল্লাহ তা’আলার সাহায্য প্রার্থনা কর ৭০ দশক হতে এবং এক যুবকের রাজত্বকাল হতে। 

তথ্যসূত্রঃ
[মুসনাদ ইমাম আহমদ, হাদীস নং ৩৮০০]

হাফিজ ইবন হাজর আসকলানী (رحمة الله) এর ব্যাখ্যা করতে গিয়ে বলেন, এই হাদীসে ৬০ হিজরীতে একজন শাসকের কথা বলা হয়েছে। হাদীস অনুসারে তাই ঘটে। ইয়াজিদ বিন মুয়্যাবিয়্যা এই বছরেই শাসনে বসেন এবং ৬৪ হিজরীতে মারা যান।

(৩) আমর বিন ইয়াহিয়া সায়ে’দ বিন আমর বিন সায়ে’দ তাঁর দাদার সূত্রে বর্ণনা করেন, "আমি হযরত আবু হুরায়রা (رضي الله عنه) এর সাথে মসজিদে নববীতে বসেছিলাম এবং মারওয়ান আমাদের সাথে ছিলেন। হযরত আবু হুরায়রা (رضي الله عنه) বলেছিলেনঃ “আমি শুনেছিলাম রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন, কুরাইশ বংশের কিছু যুবকদের দ্বারা আমার উম্মত ধ্বংস প্রাপ্ত হবে”। মারওয়ান বলেন, আল্লাহ এই ধরণের যুবকদের অভিশাপ দেন। হযরত আবু হুরায়রা (رضي الله عنه) বলেন, আমি বলতে পারি অমুক, অমুকের পুত্র অমুক, তমুকের পুত্র তমুক যদি আমি চাই। হযরত আমর বিন ইয়াহিয়া বলেন, আমি আমার দাদার সাথে বনী মারওয়ানে গিয়েছিলাম যখন তারা সিরিয়া নিয়ন্ত্রণ করছিল এবং এক জন যুবককে দেখতে পেলাম। আমার দাদা বললেন তারাও তাদের একজন হবে। আমরা বললাম তা আপনি ভাল বলতে পারবেন।

তথ্যসূত্রঃ
[সহীহ বুখারীঃ কিতাবুল ফিতনা, (আধুনিক প্রকাশনী- ৬৫৬৭, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৫৮০, তৌহিদ ফাউন্ডেশন - ৭০৫৮) ]

(৪) বিখ্যাত মুহাদ্দীস ইমাম সাহাবুদ্দীন আহমেদ বিন হাজর হায়তামী (رحمة الله) ভিন্ন সনদে একই হাদীস উল্লেখ করেছেন।
"হযরত আবু দারদা (رضي الله عنه) বলেছেন, “আমি শুনেছিলাম রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন – আমার সুন্নাহকে পরিবর্তনকারী প্রথম ব্যক্তি হবে বনি উম্যায়াহ গোত্রের ইয়াজিদ”।

তথ্যসূত্রঃ
[ইমাম সাহাবুদ্দীন আহমেদ বিন হাজর হায়তামী (رحمة الله) আস-সাবাক আল-মুহরিকা গ্রন্থের ১৩২ পৃঃ]

(৫) "হযরত আবুযার ঘিফারী (رضي الله عنه) থেকে। এই বর্ণনায় ‘যার নাম ইয়াজিদ হবে’ এই কথাটি অনুপস্থিত।

তথ্যসূত্রঃ
●হাফিজ ইবন কাছীর একই হাদীস উল্লেখ করেছেন তাঁর সুবিখ্যাত আল-বিদায়াহ ওয়ান-নিহ্যায়াহ গ্রন্থের ৬ষ্ঠ খণ্ডের ২৫৬ নং পৃষ্ঠায়। 
●মুসান্নাফ ইবন আবি শায়বা- খণ্ডঃ ৮, পৃঃ ৩৪১, হাদীস নং ১৪৫; 
●দালাইল উন নবুয়্যাত লিল বায়হাকী আবওয়াব ঘাজওয়া তাবুক- হাদীস নং ২৮০২; 
●মাতালিব আল-আলিয়্যাহ- হাদীস নং ৪৫৮৪।

(৬) তৃতীয় শতাব্দীর এক বিখ্যাত মুহাদ্দীস ইমাম আবু ইয়া’লা (رحمة الله) তাঁর মুসনাদ সহীহ সনদে উল্লেখ করেনঃ

"হযরত আবু উবায়দাহ বিন জাররাহ (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন – “মুসলিম উম্মাহর যাবতীয় কাজে ততক্ষণ পর্যন্ত ন্যায়পরায়ণতা পরিলক্ষিত হবে যতক্ষণ না বনি উম্যায়াহ গোত্রের একজন শাসক এসে দ্বীনের মধ্যে ফাটল ধরাবে। তার নাম হবে ইয়াজিদ।”

তথ্যসূত্রঃ 
●ইমাম আবু ইয়া'লা তাঁর "মুসনাদে আবি ইয়ালা, খন্ড ২, পৃঃ ৭১।
●ইমাম জালালুদ্দীন সুয়ূতিঃ তারীখুল খুলাফা তে।

হাদিসের সকল রাবী সৎ ও নির্ভরযোগ্য।
(মুসনাদে আবি ইয়ালা, খন্ড ২, পৃঃ ৭১, সহীহ সনদে)

হাদিসটির বিভিন্ন সুত্র :

(১) হযরত আবুযার ঘিফারী (رضي الله عنه) 
(২) হযরত আবু উবায়দাহ বিন জাররাহ (رضي الله عنه)
(৩) হযরত আবু দারদা (رضي الله عنه)

ভিন্ন ভিন্ন সনদে আসার কারনে তা হাসান পর্যায়ে পৌঁছেছে।

الطريق الأول : هشام بن الغاز عن مكحول:
و اختلف عن هشام :

أ- فتارة يرويه عن مكحول عن أبي عبيدة بن الجراح مرفوعا ، رواه عنه :
1- عبد القدوس بن الحجاج الخولاني [و هو صدوق] :أخرجه نعيم بن حماد في الفتن (817) و (824) .
2- يحيى بن حمزة الحضرمي [ثقة رمي بالقدر] :أخرجه أحمد بن منيع في "مسنده" كما في "المطالب العالية" (4466) ، و أبي يعلى الموصلي في "مسنده" (870) .
ب- و تارة يرويه عن مكحول ، عن أبي ثعلبة الخشني ، عن أبي عبيدة بن الجراح مرفوعا ، رواه عنه :
أخرجه يعقوب بن سفيان الفسوي في "المعرفة و التاريخ" (1/295) ، و من طريقه البيهقي في "الدلائل" (6/467) ، و ابن عساكر في "تاريخه" (68/41) .

الطريق الثاني : سليمان بن أبي داود عن مكحول :
أخرجه البزار في "مسنده" (1284) :وَحَدَّثَنَاهُ سُلَيْمَانُ بْنُ سَيْفٍ الْحَرَّانِيُّ ، قَالَ : حَدَّثَنَا مُحَمَّدُ بْنُ سُلَيْمَانَ بْنِ أَبِي دَاوُدَ ، قَالَ : حَدَّثَنِي أَبِي ، عَنْ مَكْحُولٍ ، عَنْ أَبِي ثَعْلَبَةَ الْخُشَنِيُّ ، عَنْ أَبِي عُبَيْدَةَ بْنِ الْجَرَّاحِ ، قَالَ : قَالَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم : لاَ يَزَالُ هَذَا الأَمْرُ قَائِمًا حَتَّى يَثْلِمَهُ رَجُلٌ مِنْ بَنِي أُمَيَّةَ.
قال البزار : "وَهَذَا الْحَدِيثُ لاَ نَعْلَمُهُ يُرْوَى عَنِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم ، إِلاَّ مِنْ هَذَا الْوَجْهِ بِهَذَا الإِسْنَادِ" .

الطريق الثالث : الأوزاعي عن مكحول :
أخرجه الحارث بن أبي أسامة في "مسنده" (رقم 616-بغية الباحث) ، و أبي يعلى الموصلي في "مسنده" (871) فقالا : حدثنا الحكم بن موسى حدثنا الوليد بن مسلم عن الأوزاعي عن مكحول ، عن أبي عبيدة قال : قال رسول الله صلى الله عليه و سلم : " لا يزال أمر أمتي قائما بالقسط حتى يكون أول من يثلمه رجل من بني أمية يقال له يزيد " .

الطريق الرابع : هشام بن عروة عن أبيه ، عن جابر ، عن أبي عبيدة :

أخرجه محمد بن الحسين الحاجي البزاز في "فوائده" كما في "أخبار قزوين" للرافعي (1/475) : فقال أنبأ أبو الحسين محمد بن عمار البزاز ثنا علي بن إبراهيم بن سلمة ثنا أحمد بن علي بن الفضل الخزاز ثنا عبيد بن صدقة النصيبي ثنا محمد بن سليمان حدثني صدقة بن عبد الله عن هشام بن عروة عن أبيه عن جابر عن أبي عبيدة قال قال رسول الله صلى الله عليه وآله وسلم: "لا يزال هذا الأمر قائما بالقسط حتى ثلمه رجل من بني أمية".

তাছাড়া এ ব্যাপারে আরেকটি হাদীস আছে, যা আলবানী হাসান বলেছেন, 

حديث أبي ذر مرفوعًا بلفظ: «أول من يغير سنتي رجل من بني أمية!» أخرجه ابن أبي عاصم في «الأوائل» [رقم/ 63]، وابن أبي شيبة [رقم/35877]، وابن عدي في الكامل [164/3
حسنه الإمام في الصحيحة [329/4

অভিশপ্ত ইয়াজিদ বিন মুয়াবিয়া

❏ অভিশপ্ত ইয়াযীদঃ
❏ কৃত:- মাওলানা মুহাম্মদ আব্দুল মান্নান

==> ষাট হিজরী পর্যন্ত ইসলামের দীর্ঘ ইতিহাস নিষ্কলুষ, ন্যায়নীতি ও বিজয়াদি দ্বারা সমৃদ্ধ থাকার পর যে লোকটা ইসলামের ইতিহাসে একটি কলঙ্কিত অধ্যায় রচনা করেছিলো, সে ছিলো হযরত আমীর মু‘আভিয়া [رضي الله عنه]’র কুপুত্র ইয়াযীদ। এক মহান সাহাবী, ওহী লিখক ও ন্যায়পরায়ণ শাসক সাহাবীর সন্তান হয়েও ইয়াযীদ ইসলামী রাষ্ট্রের শাসনভার লাভের পর পিতার শিক্ষা ও দীক্ষা এবং অন্যান্য বুযুর্গ ব্যক্তিদের নসীহত ইত্যাদিকে উপেক্ষা করে তার ব্যক্তিগত দুশ্চরিত্র, বিলাসিতা, ইসলামী অনুশাসনের প্রতি উদাসীনতা বরং অবজ্ঞা ইত্যাদিকেই চরিতার্থ করেছিলো। তিন বছর নয় মাসের শাসনামলে সে দ্বীন ও গণ মানুষের কোন কল্যাণ করে সুনাম তো অর্জন করতে পারেনি বরং তার নানাবিধ কুকর্ম ও স্বৈরাচার এবং অযোগ্যতা দ্বারা গোটা মুসলিম জাতির বহু অপূরণীয় ক্ষতি সাধন করে ইতিহাসের আস্তাকুঁড়ে নিক্ষিপ্ত হয়েছে।
মুসলমান মাত্রই কোন ব্যক্তি ও তার কৃতকর্মের ধরন নির্ণয় করেন- কিতাবুল্লাহ্, সুন্নাতে রসূল, ইজমা’ ও ক্বিয়াসের আলোকে।
সুতরাং ইয়াযীদ এবং তার কৃতকর্মগুলোকে এতদ্ভিত্তিতে চুলচেরা বিচার-বিশ্লেষণ করলে সে পলীদ (নাপাক), মাল‘ঊন (অভিশপ্ত), ধিক্কৃত ও পরিত্যাজ সাব্যস্ত হয়েছে; কিন্তু একশ্রেণীর অবিবেচক, ইসলামী নীতিমালার প্রতি উদাসীন ও ভ্রান্ত আক্বীদা পোষণকারী লোক ইয়াযীদকে নির্বিচারে ‘আমীরুল মু’মিনীন ও উদারপন্থী ইত্যাদি উপাধিতে ভূষিত করতে দ্বিধাবোধ করছেনা। তারা ইয়াযীদের কৃতকর্ম, ধর্ম বিশ্বাস ও অমার্জনীয় সীমালংঘনগুলোকে হালকা করে দেখে তার পক্ষে উকালতি করতে গিয়ে উল্টো ফুলের চেয়েও পবিত্র ইমাম হযরত হোসাঈন [رضي الله عنه]’র অশালীন সমালোচনার মতো ধৃষ্টতা দেখাচ্ছে। অথচ সহীহ্ হাদীস শরীফে আছে, যখন কোন ফাসিক্ব বা পাপাচারীর প্রশংসা করা হয়, তখন আল্লাহ্ তা‘আলা ক্রোধান্বিত হন এবং এ ক্রোধের কারণে তাঁর আরশ কেঁপে ওঠে। আর প্রশংসাকারী তার নির্লজ্জতা ও ইসলামের প্রতি তার বিদ্বেষকেই প্রকাশ করে।
উল্লেখ্য যে, ইয়াযীদের অপকর্ম ও সেগুলোর পরিণাম সম্পর্কে ইসলামের নির্ভরযোগ্য কিতাবগুলোতে গ্রহণযোগ্য আলোচনা মওজূদ রয়েছে। পক্ষান্তরে, কিছুসংখ্যক বিধর্মী ইতিহাসবিদ ও বাতিলপন্থী লেখকের মন্তব্যাদি সরলপ্রাণ মুসলমান এবং এ সম্পর্কে সঠিক জ্ঞানশূন্য মানুষকে বিভ্রান্ত করে আসছে। তাই এ নিবন্ধে ইয়াযীদের আসল পরিচয় প্রামান্য কিতাব-পুস্তকাদির আলোকে আলোচনা করার প্রয়াস পাচ্ছি।

○》 ইয়াযীদ কে?
_____________

নাম ইয়াযীদ, পিতা হযরত আমীর মু‘আভিয়া [رضي الله عنه], কুনিয়াৎ ‘আবূ খালিদ’ উমাইয়া বংশোদ্ভূত। সে ওই হতভাগা লোক, যার কপালে নিরপরাধ আহলে বায়ত-ই কেরামের হত্যাযজ্ঞের কালো দাগ লেগে আছে। এরপর থেকে প্রতিটি যুগে ইসলামী দুনিয়া তাকে তিরষ্কার করে আসছে এবং করতে থাকবে। ক্বিয়ামত পর্যন্ত তার নাম ঘৃণা ভরে নেওয়া হবে। এ অপবিত্র-অন্তর বিশিষ্ট, পাষাণ হৃদয় এবং বংশের কলঙ্ক (ইয়াযীদ) ২৫ হিজরীতে আমীর মু‘আভিয়া [رضي الله عنه]’র ঘরে মায়মূন বিনতে মুনজাদিল কিলাবিয়ার গর্ভে জন্মগ্রহণ করে। সে অতিমাত্রায় মোটা, কুৎসিৎ চেহারা বিশিষ্ট, বেশী চুল সম্পন্ন, দুশ্চরিত্র, বদ মেজাজ, ফাসিক্ব বা পাপাচারী, মদ্যপায়ী, অপকর্মে অভ্যস্ত, যালিম এবং বে-আদব (গোস্তাখ) ছিলো।
[সূত্র. ‘সাওয়ানিহ্-ই কারবালা’, কৃত. সদরুল আফাযিল সৈয়দ নঈম উদ্দীন মুরাদাবাদী [رحمه الله عليه]]

রাজকীয় পরিবেশে সে লালিত হয়। হযরত আমীর মু‘আভিয়া [رضي الله عنه] তার লালন-পালনের ক্ষেত্রে কোনরূপ ত্রুটি করেননি। তিনি শুরু থেকেই লেখাপড়ার সাথে সাথে তাকে রাষ্ট্র পরিচালনার নিয়মাবলীও শিক্ষা দেওয়ার ব্যবস্থা করেছিলেন। তিনি দু’ বার তাকে আমীরুল হজ্জ নিয়োগ করেন। কয়েকটা যুদ্ধেও সে অংশগ্রহণ করেছিলো। আরবী সাহিত্য ও কাব্যের প্রতি তার ঝোঁক ছিলো যথেষ্ট। সে কবিতা রচনা ও আবৃত্তিতে দক্ষতাও লাভ করেছিলো। অন্যদিকে শিকারের প্রতি তার আগ্রহ ছিলো প্রবল। সে কয়েক প্রকারের শিকারী কুকুর পালন করতো ক্রমশ এটা এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে, তজ্জন্য লোকেরা তাকে পছন্দ করতো না। হযরত আমীর মু‘আভিয়া [رضي الله عنه]’র ইন্তিকালের পর ইয়াযীদ ৬০ হিজরীর রজব মাসে সিংহাসনে বসেছিলো।
[সূত্রঃ তারীখে ইসলাম, কৃত. ড. হামীদ উদ্দীন]

অবশ্য কোন কোন ঐতিহাসিকের মতে ৬৮০ খ্রিস্ট্রাব্দে এপ্রিল মাস, মোতাবেক ৬১ হিজরির সা’বান মাসে হযরত আমীরে মু‘আভিয়া [رضي الله عنه]’র ইনতিক্বালের পর ইয়াযীদ সিংহাসনে অধিষ্টিত হয়।
[সূত্রঃ ইসলামের ইতিহাস, কৃত. হাসান আলী চৌধুরী]

○》 ইয়াযীদের মৃত্যুঃ
_____________ 

ইয়াযীদ ইবনে মু‘আভিয়া ৩৯ বছর বয়সে ৬৪হিজরীর রবিউল আউয়াল মাসে মৃত্যুবরণ করেছে। বাবুস্ সগীরাহ্ গোরস্তানে তাকে গোরস্থ করা হয়। [সূত্রঃ হায়াতুল হায়াওয়ান: কৃত. আল্লামা কামাল উদ্দীন দামিরী]
○》 শাসনকালঃ
_____________

ইয়াযীদ, মতান্তরে ৩ বছর ৯ মাস শাসনকার্য পরিচালনা করেছে। ঐতিহাসিক আল ফাখরী, ফম ক্রেমার ও ইবনুত্ তিকতারের মতে ইয়াযীদের এ শাসনকাল তিন(০৩)টি দুষ্কর্মের জন্য কুখ্যাত ছিলো। প্রথম বছরে সে হযরত হুসাঈন ইবনে আলী [رضي الله عنه]’কে ও আহলে বায়তের নিরপরাধ লোকদেরকে শহীদ করেছে। দ্বিতীয় বছরে মদীনা শরীফের বিরুদ্ধে তার সৈন্য প্রেরণ করে মদীনা মুনাওয়ারাকে লুণ্ঠন ও অবমাননা করিয়েছে। আর তৃতীয় বছরে সে কা’বা শরীফের উপর হামলা করেছে ও কা’বার গিলাফে অগ্নিসংযোগ করেছে। এ তিনটি ঘটনা ইসলামের ইতিহাসে এক অতি ভয়াবহ প্রভাব বিস্তার করেছিলো। [সূত্রঃ ইসলামের ইতিহাস: প্রথম খন্ড, কৃত, হাসান আলী চৌধুরী]
○》 ইয়াযীদের অন্যান্য দুষ্কর্মঃ
___________________

হযরত আবদুল্লাহ্ ইবনে হানযালাহ্ আল গাসীল [رضي الله عنه] বলেন, ‘‘আল্লাহরই শপথ, আমি ইয়াযীদকে তখনই ত্যাগ করেছি ও তার নিকট থেকে দূরে সরে গিয়েছি, যখন আমার আশঙ্কা হয়েছিলো যে, তার অসৎ কাজগুলোর কারণে আসমান থেকে পাথর বর্ষিত হবে কিনা। (যেভাবে হযরত লূত [عليه السلام]-এর সম্প্রদায়ের উপর বর্ষিত হয়েছিলো)
শাসনভার হাতে নিয়ে এ হতভাগা ‘মুহাররামাত’ (যেসব নারীকে বিবাহ্ করার হারাম)-এর সাথে বিবাহ্ করা বৈধ বলে ঘোষণা করলো, সুদের মতো হারাম কাজকে বৈধ বলে ঘোষনা দিয়ে প্রকাশ্যে তা চালু করছিলো। মদীনাতুর রসূল [ﷺ]-এর অবমাননা, কা’বাতুল্লাহর মানহানি ও গিলাফে কা’বায় অগ্নি সংযোগ করিয়েছিলো। দূরদর্শী ও গূঢ় রহস্যজ্ঞানী সাহাবীগণ তখনই ভয় পেয়ে গিয়েছিলেন, যখন মুসলিম রাজ্যের শাসনভার এ হতভাগার হাতে এসেছিলো। ৫৯ হিজরীতে হযরত আবূ হোরায়রা [رضي الله عنه] আল্লাহর দরবারে দো‘আ করেছিলেন, ‘‘হে আমার রব, আমি তোমার দরবারে পানাহ্ (আশ্রয়) চাচ্ছি ৬০ হিজরীর প্রারম্ভ ও অল্পবয়স্ক ছেলেদের রাজত্ব থেকে।’’ এ দো‘আ কবুল হয়েছিলো। তিনি ৫৯ হিজরীতে মদীনা তাইয়্যেবায় ওফাত পান। অর্থাৎ ৬০/৬১ হিজরীতে ইয়াযীদ সিংহাসন দখল করেছিলো; এর পূর্বে তিনি ওফাত পেয়ে যান। সাহাবী-ই রসূল হযরত আবুদ্ দারদা [رضي الله عنه] হাদীস বর্ণনা করেছেন, যার বিষয়বস্তু হচ্ছে- হুযূর-ই আক্বদাস এরশাদ করেছেন, ‘‘আমার সুন্নাতকে সর্বপ্রথম বদলে ফেলবে উমাইয়া বংশের এক লোক, যার নাম হবে ইয়াযীদ।’’ হযরত আবূ ওবায়দাহ্ [رضي الله عنه] থেকেও একই বিষয়বস্তুর হাদীস বর্ণিত হয়েছে।
[সূত্রঃ সাওয়ানিহে কারবালা, কৃত. সদরুল আফাযিল [رحمه الله عليه]]
○》 সহীহ্ হাদীসসমূহে ইয়াযীদ সম্পর্কে সতর্কবাণীঃ
_____________________

ইমাম বোখারী, হযরত আবূ হোরায়রা [رضي الله عنه]’র বরাতে বর্ণনা করেছেন, হুযূর-ই আক্রাম এরশাদ করেন, ‘‘আমার উম্মতের ধ্বংস (অপূরণীয় বিপর্যয়) ক্বোরাঈশের ছেলেদের হাতে হবে।’’ হযরত আবূ হোরায়রা [رضي الله عنه] বলেন, ‘‘তোমরা চাইলে আমি তার এবং তার পিতার নামও বলে দিতে পারি। সে হলো অমুখের পুত্র অমুক।’’ ইমাম আমর ইবনে ইয়াহিয়া বলেন, ‘‘আমি আমার দাদার সাথে সিরিয়া যেতাম। আমি সেখানে অল্পবয়স্ক যুবকদের দেখেছি। ইয়াযীদও তাদের মধ্যে ছিলো।’’ তাঁর ছাত্রগণ আরয করলেন, ‘‘তাহলে আপনি তার সম্পর্কে ভালভাবে জানতেন।’’ হযরত আমর ইবনে ইয়াহিয়া মারওয়ানকেও ওইসব অভিশপ্ত যুবকদের অন্তর্ভুক্ত বলেছেন। তিনি এ হাদীস শরীফকে উমাইয়া বংশের লোকদের বেলায় প্রযোজ্য বলেছেন।

সহীহ্ বোখারী শরীফের ব্যাখ্যাগ্রন্থ ‘কিরমানী’ তে আল্লামা কিরমানী বলেছেন, ‘‘হাদীস শরীফে ‘আহদাস’ শব্দ এসেছে।) ‘আহদাস’ হচ্ছে উঠতি বয়সের যুবকগণ। তাদের মধ্যে প্রথম ব্যক্তি হচ্ছে ইয়াযীদ। সে সাধারণত বয়স্ক বুযুর্গদেরকে শহরগুলোর নেতৃত্ব থেকে নামিয়ে অল্পবয়স্ক আত্মীয়-স্বজনদেরকে শাসক নিয়োগ করেছিলো।
সমস্ত ব্যাখ্যাকারী, হযরত মোল্লা আলী ক্বারীসহ একথার উপর একমত যে, হাদীস শরীফে উল্লেখিত غِلْمَةُ قُرَيْش (ক্বোরাইশ বংশের ছেলেগণ)-এর মধ্যে ইয়াযীদ অবশ্যই রয়েছে। 
হযরত আবূ হোরায়রা [رضي الله عنه] বলেন, হুযূর রাহমাতুল্লিল আলামীন [ﷺ] এরশাদ করেন-
تَعَوَّذُوْا بِاللهِ مِنْ رَأْسِ السِّتِّيْنَ وَاِمَارَةِ الصِّبْيَانِ
[হে লোকেরা! (হিজরী) ষাট সালের প্রারম্ভ ও ছেলেদের আমীর বা শাসক হওয়া থেকে আল্লাহর পানাহ্ (আশ্রয়) কামনা করো।] [মিশকাত শরীফ: ৩২৩পৃ.]
ছেলেদের শাসক হওয়া’ মানে মূর্খ প্রকৃতির ছেলেদের রাজত্ব। যেমনঃ ইয়াযীদ ইবনে মু‘আভিয়া, মারওয়ান ইবনে হাকামের ছেলেরা। (সূত্র. মোল্লা আরী ক্বারী)

অন্য হাদীসে, হুযূর-ই আক্রাম তাঁর পবিত্র স্বপ্নে এদেরকেই মিম্বরের উপর খেলাধুলা করতে দেখেছিলেন। হুযূর-ই আক্রামের একটি হাদীসে এমনও বর্ণিত হয়েছে, যা আল্লামা সুয়ূত্বী ‘তারীখুল খোলাফা’য়, ইমাম ইবনে হাজর ‘সাওয়া-ইক্বে মুহরিক্বাহ্’য়, শায়খ মুহাম্মদ সাবগান ‘ইস‘আফুর রাগিবীন’-এ ‘মুসনাদ-ই আবূ ইয়া’লা’ থেকে বর্ণনা করেছেন- 
لاَ يَزَالُ اَمْرُ اُمَّتِىْ قَائِمًا بِالْقِسْطِ حَتّى يَكُوْنَ اَوْلُ مَنْ يُثَلْمِهُ رَجَلٌ مِّنْ بَنِىْ اُمَيَّةَ يُقَالُ لَه يَزِيْدُ 
অর্থাৎ : আমার উম্মতের বিষয়াদি ঠিকঠাক থাকবে যতক্ষণ না এক প্রথম ব্যক্তি তাতে ফাটল ধরাবে, সে হচ্ছে বনী উমাইয়ার এক ব্যক্তি, যার নাম ‘ইয়াযীদ’।

তিনি আরো বর্ণনা করেছেন-
سَمِعْتُ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُوْلُ اَوَّلُ مَنْ يُّبَدِّلُ سُنَّتِىْ رَجَلٌ مِّنْ بَنِىْ اُمَيَّةَ يُقُالُ لَه يَزِيْدُ
‘‘আমি হুযূর-ই আক্রাম রসূলুল্লাহ্ [ﷺ]’কে এরশাদ করতে শুনেছি, প্রথম ব্যক্তি, যে আমার সুন্নাতকে বদলে ফেলবে, সে বনী উমাইয়ার এক ব্যক্তি হবে, যার নাম হবে ইয়াযীদ।’’
○》 ইয়াযীদ সম্পর্কে বুযুর্গ ব্যক্তিদের মন্তব্যঃ
________________________________

 এক ব্যক্তি হযরত ওমর ইবনে আবদুল আযীয [رضي الله عنه]’র সামনে ইয়াযীদকে ‘আমীরুল মু’মিনীন’ বলেছিলো। তিনি লোকটাকে ‘বিশটি কশাঘাত’ করেছিলেন। (২০ দুররা মেরেছিলেন।)
[সূত্রঃ ‘সাওয়া-ইক্বি মুহরিক্বাহ্ ও তারীখুল খোলাফা, পৃ. ১৪৬]

 ইয়াযীদের সমসাময়িক হযরত আবদুল্লাহ্ ইবনে হানযালাহ্ গসীলুল মালাইকাহ্ [رضى الله عنهما] ইয়াযীদ সম্পর্কে বলেছেন- ‘‘সে উম্মে ওয়ালা, কন্যা ও বোনদের সাথে বিবাহের প্রচলনদাতা, মদ্যপায়ী ও নামায বর্জনকারী।’’
[সূত্রঃ তারীখুল খোলাফা, পৃ. ১৪৬]

 হযরত শায়খ আবদুল হক্ব মুহাদ্দিসে দেহলভী [رحمه الله عليه] ও লিখেছেন- ‘‘ইয়াযীদ-ই পলীদ ছিলো ফাসিক্ব-ফাজির (পাপাচারী), খোদাদ্রোহী, লুণ্ঠনকারী ইত্যাদি। এসব বিষয়ের পক্ষে অকাট্য প্রমাণাদি রয়েছে।’’ ইমাম হোসাঈন [رضي الله عنه]’র বিরুদ্ধে সৈন্য পাঠিয়ে তাঁকে শহীদ করার নেপথ্যে ইয়াযীদের হাত রয়েছে। এ-ই শায়খ মুহাক্বক্বিক্ব ‘আলাল ইত্বলাক্ব ‘জযবুল ক্বুলূব’-এ লিখেছেন, হযরত ইমাম আলী মাক্বামের শাহাদাতের পর সর্বাপেক্ষা মন্দ ও গর্হিত কাজ ও ঘটনা ইয়াযীদের শাসনামলে ঘটেছিলো, তা হচ্ছে ‘হাররার ঘটনা’। এ ঘটনায় ইয়াযীদ তার সেনাপতি মুসলিম ইবনে ওক্বাবাহকে বিরাট সেনাবাহিনীর সাথে মিলে মদীনাবাসীদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার জন্য পাঠিয়েছিলো। আর বলেছিলো, ‘‘যদি তাঁরা আনুগত্য স্বীকার না করেন, তাহলে তিনদিন যাবৎ এ ভূ-খন্ডকে তোমার জন্য মুবাহ্ করা হলো।’’ (হত্যাযজ্ঞের অনুমতি দেওয়া হলো।) সিরীয় পশুগুলো হেরম-ই পাকে ঢুকে সেটার মর্যাদাকে পদদলিত করেছে। এক হাজার সাতশ’ মুহাজির ও আনসার সাহাবী ও তাবে‘ঈ আলিম, সাতশ’ হাফেয-ই ক্বোরআন এবং দু’ হাজার জনসাধারণকে যবেহ (হত্যা) করেছে। আর হাজার হাজার পর্দানশীন কুমারীর শ্লীলতা নষ্ট করেছে। মসজিদে নবভী শরীফে ঘোড়া দৌঁড়িয়েছে। রিয়াযুল জান্নাতে ঘোড়া বেঁধেছে। (সেগুলোর পায়খানা-প্রস্রাব দ্বারা সেটাকে নাপাক করেছে।) তিনদিন যাবৎ মসজিদে নবভী শরীফে আযান ও নামায হয়নি। হযরত আবূ সা‘ঈদ খুদরী [رضي الله عنه]’র দাড়ি মুবারক উপড়ে ফেলা হয়েছে। রক্ষা পেয়েছিলো একমাত্র তারাই, যারা এহেন দুশ্চরিত্র যালিম ইয়াযীদের বায়‘আত গ্রহণ করেছিলো।

 ইয়াযীদের পুত্র দ্বিতীয় মু‘আভিয়া যে খোৎবা (ভাষণ) দিয়েছিলেন, তাও ইয়াযীদের দুর্ষ্কম ও ইসলাম-বিদ্বেষের প্রমাণ বহন করে। (তিনি অবশ্য সৎ ও ন্যায়পরায়ণ লোক ছিলেন।) তিনি বলেন, ‘‘অতঃপর আমার পিতাকে রাজকীয় পোশাক পরানো হয়। সে অনুপযুক্ত ছিলো। রসূল-ই আক্রামের দৌহিত্রের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছে। এর ফলে তার জীবন হ্রাস পেয়েছে, বংশ নিপাত গেছে, সে তার কবরে তার পাপরাশির শাস্তিতে গ্রেফতার হয়ে আছে।’’
তারপর তিনি কেঁদে কেঁদে বললেন, ‘‘আমাদের সবার জন্য অতি আফসোস ও মনোকষ্টের ব্যাপার হলো তার মন্দমৃত্যু ও মন্দ ঠিকানা (পরিণাম)। সে তো রসূলে আক্রামের সম্মানকে ভূ-লুণ্ঠিত করেছে। মদকে হালাল করেছে, কা’বা শরীফ ধ্বংস করেছে।’’[সূত্রঃ সাওয়া-ইক্ব-ই মুহরিক্বাহ্, পৃ. ১৩৪]
◇ ইয়াযীদের উপর লা’নতঃ 
_____________________

ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল, আল্লামা ইবনে জূযী [رضى الله عنهما] প্রমুখ ইয়াযীদকে লা’নত (অভিম্পাত) করা বৈধ বলে সাব্যস্ত করেছেন। সাইয়্যেদুনা ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল [رضي الله عنه] ইয়াযীদকে ‘কাফির’ বলেছেন। তার উপর লা’নত করাকে বৈধ বলেছেন।
আল্লামা সা’দ উদ্দীন তাফতাযানী শাফে‘ঈ [رحمه الله عليه] ‘শরহে আক্বা-ইদ’-এ ইয়াযীদকে কাফির ও লা’নতী বলেছেন; কিন্তু খারেজী সম্প্রদায়ের লোকেরা হযরত উম্মে হাকাম বিনতে মিলহানের হাদীসের ভুল ব্যাখ্যা দিয়ে ইয়াযীদকে সৎকর্মপরায়ণ ও মাগফিরাত (ক্ষমা)-এর উপযোগী বলে থাকে। বস্তুত তারা নিরেট নির্লজ্জতা ও মিথ্যার আশ্রয় নিয়ে ইসলামের প্রতি তাদের শত্রুতার বহিঃপ্রকাশ করে থাকে এবং এটা প্রমাণিত করতে চায়; অথচ উক্ত হাদীস শরীফে এমন কোন শব্দ নেই, যা একথা বুঝায় যে, ইয়াযীদ কিংবা কনস্টান্টিনিপোলের যুদ্ধে অংশগ্রহণকারী প্রত্যেক ব্যক্তিকে মাগফিরাতের সুসংবাদ দেওয়া হয়েছে। বস্তুত ‘মাগফূরুন লাহুম’ (তাদেরকে ক্ষমা করা হবে)-এর সুসংবাদ তাদের জন্যই, যারা যুদ্ধ করার সময় মুসলমান থাকে এবং জীবনের শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত ঈমানের উপর ক্বায়েম থাকে। আর যদি কেউ ওই যুদ্ধের পর কাফির হয়ে যায়, সে ইমাম ও বিজ্ঞ আলিমদের সর্বসম্মতিক্রমে ওই সুসংবাদের উপযোগী নয়।

প্রকৃতপক্ষে, ইয়াযীদকে যারা ‘আমীর’, ‘খলীফা’, ধার্মিক ও সৎকর্মপরায়ণ বলে, তারাও লা’নতের উপযোগী এবং ঈমান হারাচ্ছে। এ থেকেও ইয়াযীদের চরিত্রহীনতা ও পাপাচারিতার প্রমাণ পাওয়া যায় যে, 

ইয়াযীদ যখন হযরত আবুদ্ দারদা [رضي الله عنه]’র কন্যাকে শাদী করার প্রস্তাব পাঠালো, তখন হযরত আবুদ্ দারদা [رضي الله عنه] এ বলে ওই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছিলেন, ‘‘তার ঘরে তো কাজের মেয়েরা রয়েছে।’’ 
আসলে হযরত আবুদ্ দারদা ইঙ্গিতে বলেছিলেন, ‘‘সে তো ভোগ-বিলাসী ও ব্যভিচারী। কাজের মেয়েরা তার অপকর্মের শিকার হয়ে আছে। 
সুতরাং এমন দুশ্চরিত্র লম্পটকে কে তার কন্যার বিবাহ দেবে?’’ সুতরাং হযরত আবদুদ্ দারদা [رضي الله عنه] ইয়াযীদেরই এক সমসাময়িক যুবকের সাথে তাঁর কন্যার বিবাহ্ দিয়েছিলেন।

○》একটি সংশয়ের অপনোদনঃ 
________________________
যারা ইয়াযীদের পক্ষে উকালতী করে এবং তার সাফাই গায় তারা সহীহ্ বোখারী শরীফের নিন্মলিখিত হাদীস শরীফকে তাদের পক্ষে দলীল হিসেবে দাঁড় করাতে চায়-
قَالَ النَّبِىُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ اَوَّلُ جَيْسٍ مِّنْ اُمَّتِىْ يَغْزُوْنَ مَدِيْنَةَ قَيْصَرَ مَغْفُوْرٌ لَّهُمْ (بخارى جلد اول : كتاب الجهاد : باب ماقيل فى قتال الروم)
অর্থাৎ নবী করীম [ﷺ] এরশাদ করেছেন, আমার উম্মতের ওই সেনাবাহিনীকে ক্ষমা করা হবে, যারা রোম সম্রাট ক্বায়সারের শহর (ইস্তাম্বুল)-এর উপর সর্বপ্রথম হামলা করবে।
[বোখারী শরীফ: ১ম খন্ড: জিহাদ পর্ব: রোমের বিরুদ্ধে যুদ্ধ শীর্ষক অধ্যায়: পৃ. ৪১০]

এ হাদীসের কোন কোন ব্যাখ্যাকারীও এ হাদীসের ব্যাখ্যায় ইয়াযীদকে ওই প্রথম যুদ্ধের সিপাহসালার ছিলো মর্মে লিখে ফেললেও এ প্রসঙ্গে সঠিক ব্যাখ্যা, অভিমত ও সিদ্ধান্ত নিম্বরূপ:
নিন্সলিখিত প্রশ্নগুলোর জবাবেই এ প্রসঙ্গে সঠিক বিষয়টি বের হয়ে আসে-
১. ইস্তাম্বুলের উপর কতবার হামলা করা হয়েছিলো? 
২. ইয়াযীদ তাতে শরীক ছিলো কিনা? শরীক থাকলেও কীভাবে? সিপাহ্সালার হিসেবে, না সাধারণ সৈন্য হিসেবে? 
৩. তার এ অংশগ্রহণ কি তার ইচ্ছাকৃত ছিলো, না বাধ্য হয়ে যুদ্ধে রওনা হয়েছিলো? শরীক হলেও উক্ত হাদীস শরীফের সুসংবাদ তার বেলায় প্রযোজ্য কিনা?

[] উত্তরঃ প্রথম প্রশ্নের জবাবে সঠিক অভিমত হচ্ছে- ইস্তাম্বুলের উপর হামলা কয়েকবার হয়েছিলো: ৪৬ হিজরিতে হযরত আবদুর রহমান ইবনে খালিদের নেতৃত্বে, ৪৯ হিজরীতে সুফিয়ান ইবনে আউফের নেতৃত্বে, ৫২ হিজরীতে, অন্য এক বর্ণনায় ৫৫ হিজরিতে ইয়াযীদের নেতৃত্বে। উল্লেখ্য, এমন ক’টি যুদ্ধে হযরত আবূ আইয়ূব আনসারী [رضي الله عنه] শরীক ছিলেন এবং ৫২হিজরীতে তিনি সেখানে ওফাত পান এবং ওখানেই তাঁকে দাফন করা হয়। 
কনস্টান্টিনিপোল (ইস্তাম্বুল) যে যুদ্ধে বিজিত হয়েছিলো, ওই যুদ্ধে ইয়াযীদ সিপাহ্সালার ছিলোনা; বরং একজন সাধারণ সৈন্য ছিলো। [কামিল: ইবনুল আসীর]

ইয়াযীদ ইস্তাম্বুল (কনস্টান্টিনিপোল)-এর যুদ্ধে সন্তুষ্টচিত্তে যায়নি; বরং তার পিতা হযরত আমীর মু‘আভিয়া [رضي الله عنه] কঠোর নির্দেশ দিয়ে এবং অন্যথায় কঠোর শাস্তি দেওয়ার ভয় দেখিয়ে তাকে যুদ্ধে পাঠিয়েছিলেন। কিন্তু সে পথিমধ্যে ‘ফারক্বাদূনা’ নামক স্থানে অসুস্থ হয়ে পড়ে এবং ওখানেই থেকে যায়। তখন সে বলেছিলো, ‘‘তখনতো আমার কোন পরোয়া নেই, যখন আমি ‘দিয়ারে সারান’-এ উঁচু কার্পেটে বসা আছি এবং আমার স্ত্রী উম্মে কালসূম আমার বগলে আছে।’’
সুতরাং ইয়াযীদ কোন মতেই ওই সুসংবাদের আওতায় আসবে না। সে ক্ষমা পাবার উপযোগী নয়। এমনকি মতান্তরে সিপাহ্সালার থাকলেও নয়। বিশেষ করে ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল [رضي الله عنه] প্রমুখ বলেছেন, ইয়াযীদ কাফির ছিলো। কাফির কোন সৎকর্মের কারণে মাগফিরাত পায় না। সুরা নিসার আয়াত নম্বর ১১ তে একথা এরশাদ হয়েছে।
[সূত্রঃ তাহাফ্ফুযে আক্বাইদ: ৬৬০ পৃ., মিরআত শরহে মিশকাত: ৬ষ্ঠ খন্ড, বাংলা সংস্করণ, পৃ. ২০৪]

পরিশেষে, ইযাযীদ যেমন অভিশপ্ত তেমনি ইয়াযীদীরাও অভিশপ্ত, নির্লজ্জ ও অবিবেচক। অভিশাপ কাফিরকেই দেওয়া যায়। ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল [رحمه الله عليه] এজন্যই বলেছেন, ইয়াযীদ কাফির ছিলো, সে অভিশাপেরই উপযোগী। বিশ্ববিখ্যাত আক্বাইদগ্রন্থ ‘শরহে আক্বাইদ’-এ ইয়াযীদকে কাফির ও লা’নতী বলা হয়েছে। সুতরাং ইয়াযীদী তথা যারা ইয়াযীদের পক্ষে শাফাই গায় তারা ইসলামের দুশমন।

পক্ষান্তরে, হযরত ইমাম হোসাঈন [رضي الله عنه]) সত্যের উপর ছিলেন। তিনি ইয়াযীদ ও ইয়াযীদের বাতিল খিলাফতের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে শহীদ হয়ে ইসলামের গৌরবকেই অক্ষুন্ন রেখেছেন। এর পক্ষেও বহু অকাট্য প্রমাণ রয়েছে। আর হযরত আমীর মু‘আভিয়া [رضي الله عنه] একজন ন্যায়পরায়ণ সাহাবী ছিলেন। ইয়াযীদ তাঁর পুত্র ছিলো এবং তাঁর পরবর্তীতে ইসলামী রাষ্ট্রের শাসক হয়েছিলো। তা কীভাবে হলো এবং তজ্জন্য আমীর মু‘আভিয়া [رضي الله عنه]’কে দায়ী করা যাবে না এবং তাঁর বিরুদ্ধে অশালীন ও অমূলক সমালোচনা করা যাবে না। এ মর্মেও অনেক শরীয়তসম্মত ও ঐতিহাসিক প্রমাণাদি রয়েছে। 
‘তাহাফ্ফুযে আক্বাইদ’, সাওয়া-ইক্বে মুহারিক্বাহ্, ‘‘হযরত আমীর মু‘আভিয়া’ (কৃত. মুফতী আহমদ ইয়ার খান) ইত্যাদি দ্রষ্টব্য। পরিসরের স্বল্পতার কারণে এ প্রসঙ্গে দীর্ঘ আলোচনা এ নিবন্ধে করা গেলো না। {সংগৃহীত}

ইয়াজিদকে লানত দেয়া যাবে কি?

ইয়াজিদকে লানত দেয়া প্রসঙ্গেঃ

বিখ্যাত হাম্বলী আলেম ও ইতিহাসবিদ আল্লামা আবদুর রহমান ইবনুল জওযী (৫১০-৫৯৭) এর লেখা তাঁর ঐতিহাসিক
الرد على المتعصب العنيد المانع من ذم يزيد নামের কিতাবে তিনি বর্ণনা করেছেনঃ

إن الإمام أحمد لما سأله ولده عبد الله عن لعن يزيد قال: كيف لا يلعن من لعنه الله تعالى في كتابه؟ فقال عبد الله قد قرأت كتاب الله عز وجل فلم أجد فيه لعن يزيد؟ فقال الإمام: أن الله تعالى يقول : فهم عسيتم إن توليتم أن تفسدوا في الأرض وتقطعوا أرحامكم . أولئك الذين لعنهم الله [سورة محمد ، الآية رقم 23] وأي فساد وقطيعة أشد مما فعله يزيد. [روح المعاني - سورة محمد - تفسير الآية رقم ( 23 ) - الجزء : ( 17)].

অর্থঃ ইমাম আহমদকে তাঁর ছেলে আবদুল্লাহ যখন এজিদকে লানত করার কারণ জিজ্ঞেস করলো, তখন তিনি বললেন, ‘যাকে আল্লাহ তাঁর কিতাবে লানত করেছেন, তাকে কেন লানত করা হবে না?’ তখন আবদুল্লাহ বললো, আমিতো আল্লাহর কিতাব পড়েছি। তবে তাতে এজিদকে লানতের কথা পাইনি। তখন ইমাম আহমদ বললেন, ‘আল্লাহ বলেছেন, “তোমরা কি এটার নিকটবর্তী হয়েছো যে, ক্ষমতাসীন হলে জমিনে ফাসাদ সৃষ্টি করবে এবং রক্তের সম্পর্ক ছিন্ন করবে? বস্তুত ওরা সেসব লোক, যাদেরকে আল্লাহ লানত করেছেন।” তো এজিদ যা করেছে, তার চেয়ে বড় ফাসাদ ও রক্তের সম্পর্ক ছিন্নকরণ আর কি হতে পারে?

প্রসঙ্গত,
★ আল্লামা দুমাইরীর হায়াতুল হায়াওয়ান, খন্ড- ২, পৃষ্ঠা- ১৭৫
★ বিখ্যাত হানাফী মুফাসসির আল্লামা আলুসী বাগদাদী (রহঃ) তাঁর রচিত তাফসীর ‘রুহুল মাআনী’তে সূরা মুহাম্মদের ২৩ নম্বরে আয়াতের তাফসীরেও ইমাম আহমদের উপরোক্ত বক্তব্যটি এনেছেন।
-
এবার আসুন এজিদকে লানত দেওয়া জায়েয ও উচিত বলেছেন এমন সালাফ ও খলফদের নাম শুনিঃ

১. ইমাম আবু হানীফা (দ্রষ্টব্যঃ আল্লামা দুমাইরীর হায়াতুল হায়াওয়ান, খন্ড- ২, পৃষ্ঠা- ১৭৫)
২. ইমাম মালেক বিন আনাস (দ্রষ্টব্যঃ ঐ)
৩. ইমাম আহমদ বিন হাম্বল (দ্রষ্টব্যঃ ঐ এবং ইবনে কাছীরের আল-বিদায়াহ ওয়ান নিহায়া, খন্ড- ৮, পৃষ্ঠা- ২২৩)
৪. কাজী আবু ইয়ালা হাম্বলী (দ্রষ্টব্যঃ ঐ)
৫. কাজী আবুল হুসাইন হাম্বলী (দ্রষ্টব্যঃ ঐ)
৬. আবুল ফরজ ইবনুল জওযী (দ্রষ্টব্যঃ তাঁর লিখিত ‘আর-রদ্দু আলাল মুতআচ্ছিবিল আনীদ আল-মানে মিন যম্মি ইয়াযীদ)
৭. ইবনে আকীল হাম্বলী (দ্রষ্টব্যঃ সিবত ইবনুল জওযীর তাযকিরাতুল খওয়াছ, পৃষ্টা- ২৬১)
৮. আল্লাম সাদুদ্দীন তাফতাজানী (দ্র্ষ্টব্যঃ শরহুল আকায়িদিন নাসাফিয়া, পৃষ্ঠা- ১৮১)
৯. হাফিজুদ্দীন আল-কুরদী আল-হানাফী (দ্রষ্টব্যঃ মানাভীর ফয়যুল কদীর, খন্ড- , পৃষ্ঠা- ২৬৫)
১০. কিওয়ামুদ্দীন আছ-ছফারী (দ্রষ্টব্যঃ ঐ)
১১. আল-মাওলা ইবনুল কামাল (দ্রষ্টব্যঃ ঐ)
১২. আল্লামা শাওকানী (দ্রষ্টব্যঃ তাঁর স্বরচিত নাইলুল আউতার, খন্ড- ৭, পৃষ্ঠা- ৩৬২)
১৩. আল্লামা আলুসী হানাফী (দ্রষ্টব্যঃ তাঁর স্বরচিত রূহুল মাআনী, খন্ড-২৬, পৃষ্ঠা- ৭৩)
১৪. আল্লামা আহমদ ছিদ্দীক আল-গুমারী (দ্রষ্টব্যঃ তাঁর স্বরচিত জুনাতুল আত্তার. খন্ড- ২, পৃষ্ঠা- ১৫৪)।
-
এজিদের রাজাগারির শুরু-শেষঃ
-
এ ব্যাপারে আল্লামা যাহাবী বলেছেনঃ
افتتح دولته بمقتل الشهيد الحسين ، واختتمها بواقعة الحرة ، فمقته الناس، ولم يبارك في عمره . وخرج عليه غير واحد بعدالحسين . كأهل المدينة قاموا لله ... وابن الزبير بمكة.
অর্থ: ‘এজিদ তার রাজত্ব শুরু করেছিল শহীদ হুসাইনকে হত্যা করার মাধ্যমে, আর তার রাজত্বের সমাপ্তি হারার ঘটনার (মদীনায় গণহত্যা) মাধ্যমে। সুতরাং লোকজন তাকে অপছন্দ করে। তার হায়াতে বরকত হয়নি (৪০ বছরের আগেই ধ্বংস হয়েছে)। হুসাইনের পর তার বিরুদ্ধে আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্যে লড়তে অনেকেই বের হয়েছেন, যেমন মদিনাবাসী (মদীনাতে), আবদুল্লাহ বিন যুবাইর মক্কাতে।’ [যাহাবী রচিত সিয়ারু আলামিন নুবালা, খ- ৪, পৃ- ৩৮]
-
এজিদকে আমীর বলার শাস্তিঃ
-
যাহাবী আরো লিখেছনঃ
عن نوفل بن أبي الفرات ، قال : كنت عند عمر بن عبد العزيز فقال رجل : قال أمير المؤمنين يزيد ، فأمر به فضرب عشرين سوطا.
অর্থ: ‘নওফাল বিন ফুরাত বলেন, আমি উমর ইবন আবদুল আযিযের সাথে ছিলাম । তখন এক ব্যক্তি এজিদের ব্যাপারে বললো, ‘আমিরুল মুমিনিন ইয়াযিদ।’ এটি শুনে উমর ইবন আবদুল আযিয সে লোককে বিশটি চাবুক মারতে আদেশ দিলেন।’
[যাহাবী রচিত সিয়ারু আলামিন নুবালা, খ- ৪, পৃ- ৩৯]

বিস্তারিতঃ Related topics About Yazid bin Muwabiya (LA) :-

★★★ ইয়াজিদকে লানত দেয়া প্রসঙ্গেঃ
http://sunni-encyclopedia.blogspot.com/2015/11/blog-post.html?m=1
★★★ ইয়াজিদ সম্পর্কে ইমাম বুখারী (রহ) এর নামে মিথ্যাচারকারী ড জাকির নায়েকের জবাবঃ
http://sunni-encyclopedia.blogspot.com/2015/07/blog-post_30.html?m=1
★★★ কারবালার ক্রিমিনাল কুখ্যাত ইয়াজিদ ড. জাকির নায়েকের চোখে হিরো !!!
http://goo.gl/2aqwdm
★★★ ইয়াজিদ সম্পর্কে আহলুস- সুন্নাহ এর ফতোওয়া (পর্ব ১-২) : -
১) http://goo.gl/uuBGv8
২) http://goo.gl/qqBkGy
কাফির ইয়াজিদ কি ন্যায়সঙ্গত উত্তরাধিকারী?
http://goo.gl/hyGvBy
শানে হযরত আলী রাদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু:-
http://goo.gl/Zo74vZ
ইমামে আকবর ইমাম হোসাইন (রা) এর স্মরনে :-
http://goo.gl/XuVa4j
ইসলামের পবিত্র স্থান, জান্নাতুল বাকি ও অন্যান্য মাযারগুলো কারা ধ্বংশ করল?
http://goo.gl/LaI2jI
ইয়াজিদ, যিয়াদ ও কারবালা যুদ্ধের হিংস্র নরপশুদের করুন পরিনতি :-
http://goo.gl/7xlvEa

ইয়াজিদ বদর যুদ্ধে তার দাদাকে হত্যার প্রতিশোধ হিসাবে ইমাম হুসাইন (আঃ) কে শহীদ করলঃ

সুনান ঈসফাহানীর মধ্যে স্পষ্ট হাদীস।

হযরত জাবের (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত। কোন মুসলমান কলেমা পড়ার পরে যদি সে আহলে বাইয়াত কে ভালো না বাসে রাসূল (ﷺ) বলেন তাকে আমিও ভালবাসবনা এবং তার উপর আল্লাহর লানত।

ইয়াজিদ বদর যুদ্ধে তার দাদাকে হত্যার প্রতিশোধ হিসাবে ইমাম হুসাইন (আঃ) কে শহীদ করলঃ

▶ইয়াজিদ লানাতুল্লাহি বলেছিল,
আজকে আমি হুসাইন (আঃ) কে কতল করে বদর যুদ্ধের প্রতিশোধ নিলাম (নাউজুবিল্লাহ) যে যুদ্ধে আমার দাদা কে রাসুলুল্লাহ (ﷺ) কতল করেছিলেন আজকে তার বদলা নিলাম (নাউজুবিল্লাহ) 
[আল্লামা আলুসী বাগদাদীঃ রুহুল মাআনি ২৫ তম খন্ড]

▶শুধু তা নয় এই ইয়াজিদের হুকুমে, 
মদীনা শরীফেও হামলা করেছিল। কি ভাবে একজন মুসলমান তার ইমানের উপর হামলা করতে পারে? অনেক সাহাবী শত শত হাফেজে কুরআনকে শহীদ করল। [ইমাম ইবনে কাসীরঃ আল-বেদায়া ওয়ান নেহায়া]

তার পরেও কি আমরা তাকে মুসলমান বলতে পারি।

স্ক্যান কপি গুলো দেখতে https://www.sunni-encyclopedia.com/2019/09/blog-post_54.html?m=1

ইয়াযীদ সম্পর্কে মহানবী (ﷺ) এর ভবিষ্যৎবাণী ও ইয়াজিদের উপর লানতের বৈধ্যতা

▪ তৃতীয় শতাব্দীর এক বিখ্যাত মুহাদ্দীস ইমাম আবু ইয়া’আল(রঃ) তাঁর মুসনাদ(ভলি. ২, পেজ ৭১) সহীহ চেইনে উল্লেখ করেনঃ
হযরত আবু উবায়দাহ বিন জারাহ(রাঃ) থেকে বর্ণীত, রাসূলুল্লাহ(ﷺ) বলেছেন – “মুসলিম উম্মাহ এর যাবতীয় কাজ কারবারে ততক্ষণ পর্যন্ত ন্যায়পরায়ণতা পরিলক্ষিত হবে যখন বনি উম্যায়াহ গোত্রের এক জন এসে দ্বীনের মধ্যে ফাটল ধরাবে। তার নাম হবে ইয়াজিদ”
হাদীসটির বর্ণনাকারীর সকলেই সৎ এবং নির্ভরযোগ্য।

▪ আরেক বিখ্যাত মুহাদ্দীস ইমাম সাহাবুদ্দীন আহমেদ বিন হাজর হায়তামী(রঃ) তাঁর আস-সাবাক আল-মুহরিকা গ্রন্থের ১৩২ পৃঃ একই হাদীস উল্লেখ করেছেন।
হযরত আবু দারদা(রাঃ) বলেছেন, “আমি শুনেছিলাম রাসূলুল্লাহ(ﷺ) বলেছেন – আমার সুন্নাহকে পরিবর্তনকারী প্রথম ব্যক্তি হবে বনি উম্যায়াহ গোত্রের ইয়াজিদ”।

▪ হাফিজ ইবন কাথীর(রঃ) একই হাদীস উল্লেখ করেছেন তাঁর সুবিখ্যাত আল-বিদ্যায়াহ আন-নিহ্যায়াহ গ্রন্থের ভলি. ৬, পেজ ২৫৬ তে হযরত আবুযার ঘিফারী(রাঃ) থেকে। এই বর্ণনায় ‘যার নাম ইয়াজিদ হবে’ এই কথাটি অনুপস্থিত।

▪ হাদীসটি এই গ্রন্থেও বর্ণীত আছে
মুসান্নাফ ইবন আবি শায়বা- ভলি. ৮, পেজ ৩৪১, হাদীস নং ১৪৫; দালাইল উন নবুয়্যাত লিল বায়হাকী আবওয়াব ঘাজওয়া তাবুক- হাদীস নং ২৮০২; মাতালিব আল-আলিয়্যাহ- হাদীস নং ৪৫৮৪।

▪ আমর বিন ইয়াহিয়া সায়ে’দ বিন আমর বিন সায়ে’দ তাঁর দাদার সূত্রে বর্ণনা করেন, আমি হযরত আবু হুরায়রা(রাঃ) এর সাথে মসজিদে নববীতে বসেছিলাম এবং মারওয়ান আমাদের সাথে ছিলেন। হযরত আবু হুরায়রা(রাঃ) বলেছিলেনঃ “আমি শুনেছিলাম রাসূলুল্লাহ(ﷺ) বলেছেন, কুরাইশ বংশের কিছু যুবকদের দ্বারা আমার উম্মত ধ্বংস প্রাপ্ত হবে”। মারওয়ান বলেন, আল্লাহ এই ধরণের যুবকদের অভিশাপ দেন। হযরত আবু হুরায়রা(রাঃ) বলেন, আমি বলতে পারি অমুক, অমুকের পুত্র অমুক, তমুকের পুত্র তমুক যদি আমি চাই। হযরত আমর বিন ইয়াহিয়া বলেন, আমি আমার দাদার সাথে বনী মারওয়ানে গিয়েছিলাম যখন তারা সিরিয়া নিয়ন্ত্রণ করছিল এবং এক জন যুবককে দেখতে পেলাম। আমার দাদা বললেন তারাও তাদের একজন হবে। আমরা বললাম তা আপনি ভাল বলতে পারবেন।
[সহীহ বুখারী ভলি. ২, কিতাবুল ফিতনা]

▪ হযরত আবু হুরায়রা(রাঃ) সূত্রে বর্ণীত, রাসূলুল্লাহ(ﷺ) বলেছেন- আল্লাহ তা’আলার সাহায্য প্রার্থনা কর ৭০ দশক হতে এবং এক যুবকের রাজত্বকাল হতে।
[মুসনাদ ইমাম আহমদ, হাদীস নং ৩৮০০]

▪ সহীহ বুখারী শারীফের ব্যাখ্যাকারী এবং ফাতহুল বারীর লেখক হাফিজ আহমদ বিন হাজর আসকলানী(রঃ) মুসান্নাফ ইবন আবি শায়বা সূত্রে বর্ণনা করে লিখেন, মুসান্নাফ ইবন আবি শায়বার হাদীসে বলা আছে, হযরত আবু হুরায়রা(রাঃ) বাজারে যাওয়ার সময় প্রার্থনা করত ‘ও আল্লাহ, আমাকে ৬০ A.H. এবং যুবকের রাজত্বকাল পর্যন্ত বাঁচিয়ে রেখ না’
হাফিজ ইবন হাজর আসকলানী(রঃ) এর ব্যাখ্যা করতে গিয়ে বলেন, এই হাদীসে ৬০A.H. এ এক জন শাসকের কথা বলা হয়েছে। হাদীস অনুসারে তাই ঘটে। ইয়াজিদ বিন মুয়্যাবিয়্যা এই বছরেই শাসনে বসেন ৬৪A.H. পর্যন্ত এবং এই সময়ে মারা যান।

▪ সহীহ বুখারীর ব্যাখ্যাকারী ইমাম বদরুদ্দীন আইনি(রঃ) সুনির্দিষ্টভাবে উল্লেখ করেন, ‘প্রথম বালক যে শাসন করবে’ এই কথা দ্বারা ইয়াজিদকে বুঝানো হয়েছে।
[উমদাত উল কাদরী ভলি. ১৬, পেজ ৩৩৩]

মূলত এই কারণে আগেরকার যুগের বড় বড় আলেমগণ ইয়াজিদ বিন মুয়্যাবিয়্যার নামের শেষে ‘আল্লাহ এর লানত বর্ষিত হোক’ কথাটি লিখতেন। তাঁদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য কয়েক জন হলেন -

▪ Imam Ibn Hajr (rah) made the whole title in his book al-Imta bil al-Arb'ain as "SENDING LANAH ON YAZID 

(لعن يزيد)"
وأما المحبة فيه والرفع من شأنه فلا تقع إلا من مبتدع فاسد الاعتقاد فإنه كان فيه من الصفات ما يقتضي سلب الإيمان عمن يحبه لأن الحب في الله والبغض في الله من الإيمان والله المستعان

Translation: Loving and glorifying him (Yazid) is not done “EXCEPT BY A HERETIC” who has void belief because he (Yazid) had such characteristics that his lover deserves to be faithless, because to love and hate just for the sake of God is a sign of faith. 

[Publisher's name: Dar ul Kutb al iLmiyyah, Beirut, Lebanon, Book name: al-Imta bil al-Arba'in al-Matbainatus Samah (الإمتاع بالأربعين المتباينة السماع), Author: Imam Ibn Hajr al Asqalani (rah), Publication date: 1997, Page No. 96]

قال يحيـى بن عبد الملك بن أبـي غنية أحد الثقات، ثنا نوفل بن أبـي عقرب ثقة قال: كنت عند عمر بن عبد العزيز فذكر رجل يزيد بن معاوية، فقال: قال أمير المؤمنين يزيد، فقال عمر: تقول أمير المؤمنين يزيد، وأمر به فضرب عشرين سوطاً
Translation: Yahya bin Abdul Mulk bin Abi Ghania "WHO WAS AMONGST THIQA NARRATORS" he heard from Nawfl bin Abi Aqrab "WHO IS THIQA" he narrates: Once in the gathering of Umar Bin Abdul Aziz [R.A] people talked about Yazid bin Muawiya, 
someone among the people mentioned Yazid with the title of Ameer ul Momineen, hearing this Hadrat Umar bin Abdul Aziz [ra] replied (in anger): You have called Yazeed Amir Ul Mominein? 
Then he gave order of 20 lashes to be given to the persion.

[Imam Ibn Hajr al Asqalani in Tahdhib ut Tahdhib, Volume No. 6, Page No. 313].

▪ নবম শতাব্দীর মুজাদ্দিদ ইমাম জালালুদ্দিন সুয়ুতি(রঃ) তাঁর সুবিখ্যাত ইতিহাসগ্রন্থ “তারিখ উল খুলাফা” গ্রন্থে ইয়াজীদ সম্পর্কে লিখেনঃ
“You (Imam Hussain - Radhi Allaho Anho) were martyred and your head was brought to Ibn Ziyad on a plate. "May Allah's Lanah (Curse) be upon the person who killed you, also Ibn Ziyad "AND UPON YAZID." 
[As-Suyuti in Tarikh ul Khulafa, Page No. 165]”

The Proof of sending Lanah upon Yazid is derived from this (ayah), as was mentioned by 
▪ Al-Barzanji (rah) in his Al-Ashaat and
▪ Imam Haythami (rah) in As-Sawaiq from 
▪ Imam Ahmed (rah) that his son Abdullah 
asked him about sending Lanah on Yazid, and how sending Lanah upon him is mentioned in the book of Allah (i.e. Quran). Imam Ahmed (rah) in proof of (sending Lanah upon Yazid) mentioned these verses:Would ye then, if ye were given the command, work corruption in the land and sever your ties of kinship? Such are the men whom Allah has cursed…(47:22-23), So could there be a greater fitnah than the actions committed by Yazid? [Ruh ul Ma’ani by Imam Al-Alusi, Volume 9 Under Surah Muhammad 22-23]

▪ Allama Alusi said: And I say what is prevalent over my mind that (Yazid) Khabith did not testify to the messengership of the Holy Prophet (Peace Be Upon Him). According to me it is correct to curse a person like Yazid, although one cannot imagine a Fasiq like him and apparently he never repented, the possibility of his repentance is weaker than the possibility of his faith (Iman). Along with Yazid, Ibn Ziyad, Ibn Sa'ad and his group shall also be included. Verily, may Allah's curse be upon all of them, their friends, their supporters, their group and upon everyone who inclines towards them until Qayamah and until an eye sheds a tear for Abu Abdullah Hussain (ra). [Tafsir Ruh al-Ma'ani, Volume 26, Page No. 73]

অথচ এই শেষ যুগে এসে ওহাবী/সালাফী/আহলে হাদীস নামের দলটির নেতারা এই ব্যক্তির নামের শেষে ‘আল্লাহ এর রহমত বর্ষিত হোক’ কথাটি ব্যবহার করে চলেছে। আল্লাহ তা’আলা আমাদের রক্ষা করুন এদের হাত থেকে। সুম্মা আমিন।
স্ক্যান কপি গুলো দেখতে https://www.sunni-encyclopedia.com/2019/09/blog-post_33.html?m=1

ইমাম হুসাইন রা. কে হত্যায় পাপিষ্ঠ ইয়াজিদের স্বীকারোক্তি।

অভিশপ্ত ইয়াজিদ ইমাম হুসাইন (আ.) কে শহীদ করার ঘটনার পর বলেছিল: আমার পূর্বপুরুষরা যদি বেঁচে থাকতেন তাহলে তারা দেখতেন যে, কিভাবে আমি মুহাম্মাদের পরিবার ও (তাঁদের গোত্র) বনি হাশিমের কাছ থেকে প্রতিশোধ নিয়েছি।
অভিশপ্ত ইয়াজিদ এক কবিতা আবৃত্তি করে বলেছিল: আমি আহমদের (রাসূল-সা.) কাছ থেকে প্রতিশোধ নিয়েছি বদর যুদ্ধের বদলা হিসেবে যা সে (তিনি) করেছিল ওই যুদ্ধে আমাদের পূর্ব পুরুষদের বিরুদ্ধে।
লম্পট ও মদ্যপ ইয়াজিদ আরো বলেছিল: মদ যদি দ্বীনে মুহাম্মাদিতে হারাম হয়ে থাকে তবে ঈসা ইবনে মারিয়মের ধর্ম তথা খ্রিস্টান ধর্মের আলোকে হালাল হিসেবে খাও!
[সূত্রঃ তাফসিরে ইবনে মাজহারি, খ-৫, পৃ-২১১-১২]।

প্রিয় পাঠক, ইমাম হুসাইন রাদিয়াল্লাহু আনহুর পবিত্র মস্তক মোবারক এজিদের সামনে আনার পর এজিদ কয়েক লাইন কবিতা আবৃত্তি করেছিল- তা নিম্নরূপ,
ليت أشياخي ببدر شهدوا ... جزع الخزرج من وقع الأسل
قد قتلنا القوم من ساداتكم ... وعدلنا ميل بدر فاعتدل
فأهلوا واستهلوا فرحا ... ثم قالوا: يا يزيد لا تسل

“আমার কাছে কতই না ভাল লাগত, যদি বদরের যুদ্ধের আমার শায়কগণ দেখত, তরবারির আঘাতে খাযরাজ গোত্রের যন্ত্রণার দৃশ্যের মত – আমি তাদের সম্মানীয়দের মধ্য থেকে দ্বিগুণ সংখ্যক হত্যা করে বদরের একদিকে ঝুঁকে থাকা দন্ডটা সমান করে দিয়েছি। তারা আমাকে অভিনন্দন জানিয়ে আনন্দে চিৎকার করে বলত, এজিদ থেমে যেয়ো না”।
এজিদের আবৃত্তি করা কবিতার পংক্তি গুলো- কোথাও আংশিক কোথাও পুরো - যে সকল র্নিভরযোগ্য কিতাবে আছে তা নিম্নরূপ,
تاريخ الطبري :محمد بن جرير بن يزيد بن كثير بن غالب الآملي، أبو جعفر الطبري (المتوفى: 310هـ)
البداية والنهاية : أبو الفداء إسماعيل بن عمر بن كثير القرشي البصري ثم الدمشقي (المتوفى: 774هـ)
شذرات الذهب في أخبار من ذهب : عبد الحي بن أحمد بن محمد ابن العماد العَكري الحنبلي، أبو الفلاح (المتوفى: 
1089

প্রিয় পাঠক, আরবী قتلنا (কাতালনা) শব্দটি লক্ষ করুন। অর্থ আমি হত্যা করেছি। এজিদ নিজেই যেখানে আহলে বাইতকে হত্যা করার স্বীকৃতি প্রদান করে সেখানে ঠিকাদাররা এজিদকে হুসাইন-হত্যার দায়মুক্তির সবুজ সনদ দিয়ে পবিত্র ইমাম বানাতে ব্যস্ত!
আদ্দালনা ও ফা’তাদাল শব্দ দু‘টিও খেয়াল করুন। মানে, ‘আমি সোজা করে দিয়েছি এবং তা সোজা হয়ে গিয়েছে’। মুসলমানদের দিকে ঝুঁকে থাকা বিজয়ের পাল্লা মুসলিম হত্যার মাধ্যমে সোজা করে দিয়ে ইসলাম ও মুসলমানদের বুঝি বড় উপকার করেছে তাদের ঐ ‘জান্নাতি আমিরুল মুমিনিন’!
প্রিয় পাঠক, এজিদের শায়খদেরকে চিনেছেন তো! আবু জেহেল, আবু লাহাবদের মত বড় বড় কাফের নেতা! ঐ শায়খরা যে কাজে খুশি হবে এজিদ সে কাজে শতভাগ সফল! ঐ শায়খদের খুশি করতে এজিদের হাতে ইমাম হুসাইন রাদিয়াল্লাহু আনহুকে শহিদ করার বিকল্প কি ছিল বলেন? কাফের শায়খদের খুশি করতে নবি বংশকে হত্যা করার চেয়ে অধিক মহৎ(?) কাজ এজিদ খুজেঁ পাবে কোথায়? যে এজিদ আবু জেহেলের মত শায়খদের রেজামন্দি হাসিল করতে ব্যস্ত সে আল্লাহ ও রাসূলের রেজামন্দি প্রাপ্ত ইমানদার হয় কিভাবে?
কাফেরদের আনুকল্য প্রত্যাশাকারীদের আসল পরিচয় সূরা-আলে ইমরানের ২৮ নং আয়াত আছে। এজিদ নিজেই যখন আবু জাহেলদেরকে ‘আমার শায়খ’ বলে গর্ববোধ করেছে তখন ঠিকাদাররা নিরব কেন? ‘আবু জাহেল কো আপনা শায়খ কেহনে ওয়ালা পাক্কা ইমানদার ,জান্নাতি, মাগফুর, আমিরুল মু‘মিনিন’ হ্যায় !!!

প্রিয় পাঠক, এজিদের আবৃত্তি করা কবিতার প্রথম শব্দটা তার আসল পরিচয় প্রমাণ করার জন্য যথেষ্ঠ। গুরুত্বপূর্ণ সে শব্দটি হল ليت (লাইতা)। আরবী ভাষায় এ শব্দটি শুধুমাত্র ঐ বিষয়ের বস্তুর উপরই ব্যবহার হয় যে বিষয়বস্তু ঐ শব্দ ব্যবহারকারীর কাছে অত্যধিক প্রিয় ও ভালবাসার হয়। এজিদ ليت (লাইতা) শব্দ ব্যবহার করে মূলত; তার মধ্যে লুকিয়ে থাকা ‘আসল এজিদে’র পরিচয় তুলে ধরেছে পৃথিবীর কাছে। তাহলে ليت (লাইতা)শব্দের পরে উল্লেখিত বিষয়গুলোই ঐ আসল এজিদ এর মূল প্রেরণা ও বিশ্বাস এবং সে হিসেবে আসল এজিদের মূল পরিচয় এ রকম –
যে আহলে বাইতের রক্তপাত করতে খুব ভালবাসে,
যে হুসাইনের উপর আঘাত করতে খুব ভালবাসে,
যে হুসাইনের শিরচ্ছেদ করতে খুব ভালবাসে,
যে আবু জেহেল আবু লাহাবদের খুশি করতে খুব ভালবাসে,
যে আবু জেহেল আবু লাহাবদের শায়খ বলতে খুব ভালবাসে,
যে বদর যুদ্ধে মুসলমানদের বিজয়-হীনতা প্রতিষ্ঠা করতে খুব ভালবাসে,
বিশিষ্ট তাবেয়ি তাফসির বিশারদদের শিরোমনি ইমাম মুজাহিদ বলেন, কবিতার এই পংক্তি গুলো আবৃত্তি করার মাধ্যমে এজিদ যে আসলে মুনাফিক সে নিজেই তা প্রকাশ করেছে।

প্রিয় নবী রাসূলুন কারিম (صلى الله عليه و آله و سلم) ইরশাদ করেন,
“আমার পরে এমন সব ইমাম হবে (নেতা হবে) যে আমার হেদায়েত অনুসারে আমল করবে না এবং আমার সুন্নাতকে আমলের উপযুক্ত মনে করবে না এবং শীঘ্রই তাদের মধ্যে হতে এমন লোকেরা উঠে দাঁড়াবে, যাদের দেহ হবে মানুষের মত কিন্তু অন্তর হবে শয়তানের”।
[সূত্রঃ সহীহ্ মুসলিম, খ. ৬, পৃ. ২০, (আরবি); সহীহ্ মুসলিম-(সকল খণ্ড একত্রে), পৃ. ৭৫১, হা/ ৪৬৩৩; (তাজ কোং)]।
______
ইয়াজিদ প্রিয় নাবী রাসূলুন কারিম (صلى الله عليه و آله و سلم) এর হিদায়াত গ্রহণ করতে পারে নি, বরং তাঁর আহলে বায়তকে তার প্রতিবন্ধক জেনে হত্যা করে তার অবৈধ ক্ষমতাকে পোক্ত করতে চেয়েছিল, কিন্তু মহান আল্লাহ্ পাক ইমাম হুসাইন রা. কে শাহাদাতের মর্যাদা দান করলেন, পক্ষান্তরে ইয়াজিদের উপর অচিরেই গজব নিপতিত হয়ে সে অক্কা পায়, ইসলামের ইতিহাসে তার অনুসারীরারা ইয়াজিদি শিয়া হিসেবে কুখ্যাত।
ইসলাম ঝিন্দাবাদ! ইয়াজিদি শিয়া নিপাত যাক!
_________
রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন,
আমার উম্মতের মধ্যে যে সর্ব প্রথম আমার সুন্নাহকে পরিবর্তন করে দিবে, সে হল বনু উমাইয়ার ইয়াজিদ।
[সূত্রঃ সাওয়ায়েকে মুহরিকা ২ / ৬৩৩]।

ইয়াজিদ এর ব্যাপারে ফতোয়া উলামায় কেরামের رای
عن وتكفير يزيد من كتب السنة
بسم الله الرحمن الرحيم
حاولت أن أجمع بعض المصادر من كتب السنة على لعن وكفر يزيد بن معاوية لعنه الله
راجيا من الله عز وجل قبول هذا العمل
ولا تنسونا من صالح الدعاء
أفتى كلّ من سبط بن الجوزي والقاضي أبو يعلى والتفتازاني والجلال السيوطي وغيرهم من أعلام السنة القدامى بكفر يزيد وجواز لعنه
قال اليافعي: وأمّا حكم من قتل الحسين، أو أمر بقتله، ممّن استحلّ ذلك فهو كافر.
شذرات من ذهب / ابن العماد الحنبلي: 1 / 68
وقال الذهبي: كان ناصبياً فظاً غليظاً، يتناول المسكر ويفعل المنكر، افتتح دولته بقتل الحسين، وختمها بوقعة الحرّة. نفس المصدر السابق
وقال ابن كثير: ان يزيد كان اماماً فاسقاً البداية: 8 / 223
قال المسعودي: ولمّا شمل الناس جور يزيد وعماله وعمّهم ظلمه وما ظهر من فسقه ومن قتله ابن بنت رسول الله (صلى الله عليه وسلم) وأنصاره وما أظهر من شرب الخمر، سيره سيرة فرعون، بل كان فرعون أعدل منه في رعيّته، وأنصف منه لخاصّته وعامّته أخرج أهل المدينة عامله عليهم، وهو عثمان بن محمّد بن أبي سفيان.مروج الذهب: 3 / 82.
وروي أنّ عبد الله بن حنظلة الغسيل قال: والله ما خرجنا على يزيد، حتى خفنا أن نرمى بالحجارة من السماء، أنّه رجل ينكح أمهات الأولاد والبنات والأخوات ويشرب الخمر ويدع الصلاة.
الكامل: 3 / 310 وتاريخ الخلفاء: 165
المنكرات التي اقترفها يزيد من قتل الحسين وحمله بنات رسول الله (ص) سبايا، وقرعه ثنايا الحصين بالعود، وإخافته أهل المدينة، وهدم الكعبة، تدل على القسوة والغلظة، والنصب، وسوء الرأي، والحقد والبغضاء والنفاق والخروج عن الايمان، فالفاسق ملعون، ومن نهى عن شتم الملعون فملعون
الجاحظ - الرسالة الحادية عشر في بني أمية - رقم الصفحة: (398)
الحق أن رضا يزيد بقتل الحسين (ع) واستبشاره به، وإهانته أهل بيت النبي (ص) مما تواتر معناه وإن كانت تفاصيله آحادا، فنحن لا نتوقف في شأنه بل في إيمانه، لعنة الله عليه وعلى أنصاره وأعوانه
العلامة سعد الدين التفتازاني الشافعي - شرح العقائد النسفية - رقم الصفحة: (181)
قال اليافعي: وأما حكم من قتل الحسين، أو أمر بقتله، ممن استحل ذلك فهو كافر.
- وقال التفتازاني في شرح العقائد النفسية: والحق أن رضا يزيد بقتل الحسين، واستبشاره بذلك، وإهانته أهل بيت الرسول مما تواتر معناه، لعنة الله عليه، وعلى أنصاره وأعوانه
إبن العماد الحنبلي - شذرات الذهب في أخبار من ذهب - الجزء: (1) - رقم الصفحة: (68)
لا لعدم تصويب فعله، بل لأنهم يرون عدم جواز إراقة الدماء، فلا يجوز نصرة يزيد بقتال الحسين، بل قتله من فعلات يزيد المؤكدة لفسقه، والحسين فيها شهيد
إبن خلدون - المقدمة - رقم الصفحة: (254)
وقد روي أن يزيد كان قد اشتهر بالمعازف وشرب الخمر والغناء والصيد واتخاذ الغلمان والقيان والكلاب والنطاح بين الكباش والدباب والقرود، وما من يوم إلا يصبح فيه مخمورا، وكان يشد القرد على فرس مسرجة بحبال ويسوق به، ويلبس القرد قلانس الذهب، وكذلك الغلمان، وكان يسابق بين الخيل، وكان إذا مات القرد حزن عليه. وقيل: إن سبب موته أنه حمل قردة وجعل ينقزها فعضته
إبن كثير - البدايه والنهايه - الجزء: (8) - رقم الصفحة: (258)
ولقد أفرط بعض أهل العلم كالكرامية ومن وافقهم في الجمود على أحاديث الباب حتى حكموا بأن الحسين السبط (ر) وأرضاه باغ على الخمير السكير الهاتك لحرم الشريعة المطهرة يزيد بن معاوية لعنهم الله، فيالله العجب من مقالات تقشعر منها الجلود ويتصدع من سماعها كل جلمود
الشوكاني - نيل الأوطار - الجزء: (7) - رقم الصفحة: (147)
قال: لعن الله قاتله - يعني حسينا (ع) - وابن زياد معه ويزيد أيضا.جلال الدين السيوطي - تاريخ الخلفاء - رقم الصفحة: (207).
٢٧١ - وَعَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ - رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ -، قَالَ: حَفِظْتُ مِنْ رَسُولِ اللَّهِ - صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ - وِعَاءَيْنِ، فَأَمَّا أَحَدُهُمَا فَبَثَثْتُهُ فِيكُمْ، وَأَمَّا الْآخَرُ فَلَوْ بَثَثْتُهُ قُطِعَ هَذَا الْبُلْعُومُ - يَعْنِي مَجْرَى الطَّعَامِ - رَوَاهُ الْبُخَارِيُّ.
٢٧١ - (وَعَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ قَالَ: حَفِظْتُ مِنْ رَسُولِ اللَّهِ) أَيْ: مِنْ كَلَامِهِ - صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ -، قَالَ الْأَبْهَرِيُّ: فِي أَكْثَرِ الرِّوَايَاتِ (عَنْ) وَفِي رِوَايَةِ الْكُشْمِيهَنِيِّ (مِنْ) بَدَلَ (عَنْ) وَهَذَا صَرِيحٌ فِي تَلَقِّيهِ مِنَ النَّبِيِّ - صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ - بِلَا وَاسِطَةٍ (وِعَاءَيْنِ) : أَيْ: نَوْعَيْنِ كَثِيرَيْنِ مِنَ الْعِلْمِ مِلْءَ ظَرْفَيْنِ مُتَسَاوِيَيْنِ (فَأَمَّا أَحَدُهُمَا) : وَهُوَ عِلْمُ الظَّاهِرِ مِنَ الْأَحْكَامِ وَالْأَخْلَاقِ (فَبَثَثْتُهُ) : أَيْ: أَظْهَرْتُهُ بِالنَّقْلِ (فِيكُمْ، وَأَمَّا الْآخَرُ) : وَهُوَ عِلْمُ الْبَاطِنِ (قُطِعَ هَذَا الْبُلْعُومُ) : بِضَمِّ الْبَاءِ أَيِ الْحُلْقُومُ، لِأَنَّ أَسْرَارَ حَقِيقَةِ التَّوْحِيدِ مِمَّا يَعْسُرُ التَّعْبِيرُ عَنْهُ عَلَى وَجْهِ الْمُرَادِ، وَلِذَا كُلُّ مَنْ نَطَقَ بِهِ وَقَعَ فِي تَوْهِيمِ الْحُلُولِ وَالْإِلْحَادِ، إِذَ فَهْمُ الْعَوَامِّ قَاصِرٌ عَنْ إِدْرَاكِ الْمَرَامِ، وَمِنْ كَلَامِ الصُّوفِيَّةِ صُدُورُ الْأَحْرَارِ قُبُورُ الْأَسْرَارِ، وَقَوْلُهُ: " قُطِعَ " يَحْتَمِلُ الْإِخْبَارَ مِمَّا يُتَوَقَّعُ، وَيَحْتَمِلُ الدُّعَاءَ مُبَالَغَةً فِي إِسْرَارِ الْأَسْرَارِ كَمَا هُوَ دَأْبُ الْخُلَّصِ مِنَ الْأَبْرَارِ، وَقِيلَ إِنَّهُ عِلْمٌ يَتَعَلَّقُ بِالْمُنَافِقِينَ بِأَعْيَانِهِمْ أَوْ بِوِلَادَةِ الْجَوْرِ مِنْ بَنِي أُمَيَّةَ أَوْ بِفِتَنٍ أُخْرَى فِي زَمَنِهِ، وَقَالَ الْأَبْهَرِيُّ: حَمَلَ الْعُلَمَاءُ الْوِعَاءَ الَّذِي لَمْ يَبُثَّهُ عَلَى الْأَحَادِيثِ الَّتِي فِيهَا يَتَبَيَّنُ أَسَامِي أُمَرَاءِ الْجَوْرِ وَأَحْوَالُهُمْ وَذَمُّهُمْ، وَكَانَ أَبُو هُرَيْرَةَ يُكَنِّي عَنْ بَعْضِهِ وَلَا يُصَرِّحُ بِهِ خَوْفًا عَلَى نَفْسِهِ مِنْهُمْ كَقَوْلِهِ: أَعُوذُ بِاللَّهِ مِنْ رَأْسِ السِّتِّينَ، وَإِمَارَةِ الصِّبْيَانِ، يُشِيرُ إِلَى خِلَافَةِ يَزِيدَ بْنِ مُعَاوِيَةَ لِأَنَّهَا كَانَتْ سَنَةَ سِتِّينَ مِنَ الْهِجْرَةِ، وَاسْتَجَابَ اللَّهُ دُعَاءَ أَبِي هُرَيْرَةَ فَمَاتَ قَبْلَهَا بِسَنَةٍ (يَعْنِي مَجْرَى الطَّعَامِ) . تَفْسِيرٌ مِنْ بَعْضِ رُوَاةِ الْحَدِيثِ (رَوَاهُ الْبُخَارِيُّ) . لَكِنْ قَالَ الْعَسْقَلَانِيُّ: زَادَ فِي رِوَايَةِ الْمُسْتَمْلِي، قَالَ أَبُو عَبْدِ اللَّهِ: الْبُلْعُومُ مَجْرَى الطَّعَامِ وَعَلَى هَذَا لَا يَخْفَى مَا فِي الْمِشْكَاةِ إِذْ يُفْهَمُ مِنْهُ أَنَّ تِلْكَ الْعِبَارَةَ مِنْ أَبِي هُرَيْرَةَ أَوْ أَحَدِ رُوَاتِهِ وَلَا يُفْهَمُ مِنْهُ أَنَّهَا لِلْبُخَارِيِّ، وَاللَّهُ أَعْلَمُ.
٥٩٥١ - وَعَنْ سَعْدِ بْنِ عَبْدِ الْعَزِيزِ، قَالَ: لَمَّا كَانَ أَيَّامُ الْحَرَّةِ لَمْ يُؤَذَّنْ فِي مَسْجِدِ النَّبِيِّ - صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ - ثَلَاثًا وَلَمْ يُقَمْ، وَلَمْ يَبْرَحْ سَعِيدُ بْنُ الْمُسَيَّبِ الْمَسْجِدَ، وَكَانَ لَا يَعْرِفُ وَقْتَ الصَّلَاةِ إِلَّا بِهَمْهَمَةٍ يَسْمَعُهَا مِنْ قَبْرِ النَّبِيِّ - صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ - رَوَاهُ الدَّارِمِيُّ.
٥٩٥١ - (وَعَنْ سَعِيدِ بْنِ عَبْدِ الْعَزِيزِ) ، قَالَ الْمُؤَلِّفُ: تَنُوخِيٌّ دِمَشْقِيٌّ، كَانَ فَقِيهَ أَهْلِ الشَّامِ فِي زَمَنِ الْأَوْزَاعِيِّ بَعْدَهُ. وَقَالَ أَحْمَدُ: لَيْسَ بِالشَّامِ أَصَحَّ حَدِيثًا مِنْهُ وَمِنَ الْأَوْزَاعِيِّ، وَهُوَ وَالْأَوْزَاعِيُّ عِنْدِي سَوَاءٌ، وَكَانَ سَعِيدٌ بَكَّاءً، فَسُئِلَ فَقَالَ: مَا قُمْتُ إِلَى الصَّلَاةِ إِلَّا مُثِّلَتْ لِي جَهَنَّمُ. (قَالَ: لَمَّا كَانَ) ، أَيْ: وَقَعَ (أَيَّامَ الْحَرَّةِ) : بِفَتْحٍ فَتَشْدِيدٍ. قَالَ الطِّيبِيُّ: هُوَ يَوْمٌ مَشْهُورٌ فِي الْإِسْلَامِ أَيَّامَ يَزِيدَ بْنِ مُعَاوِيَةَ لَمَّا نَهَبَ الْمَدِينَةَ عَسْكَرٌ مِنْ أَهْلِ الشَّامِ نَدَبَهُمْ لِقِتَالِ أَهْلِ الْمَدِينَةِ مِنَ الصَّحَابَةِ وَالتَّابِعِينَ، وَأَمَرَ مُسْلِمُ بْنُ عُيَيْنَةَ الْمُرِّيُّ فِي ذِي الْحِجَّةِ سَنَةَ ثَلَاثٍ وَسِتِّينَ، وَعَقِيبَهَا هَلَكَ يَزِيدُ، وَالْحَرَّةُ هَذِهِ أَرْضٌ بِظَاهِرِ الْمَدِينَةِ بِهَا حِجَارَةٌ سُودٌ كَثِيرَةٌ وَقَعَتْ فِيهَا هَذِهِ الْوَقْعَةُ (لَمْ يُؤَذَّنْ فِي مَسْجِدِ النَّبِيِّ - صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ -) : بِصِيغَةِ الْمَجْهُولِ. أَيْ: لَمْ يُؤَذِّنْ أَحَدٌ فِيهِ لِأَجْلِ الْفِتْنَةِ (ثَلَاثًا) ، أَيْ: ثَلَاثَ لَيَالٍ بِأَيَّامِهَا (وَلَمْ يُقَمْ) : عَلَى بِنَاءِ الْمَفْعُولِ مِنَ الْإِقَامَةِ أَيْ: وَلَمْ يُقِمْ أَحَدٌ لِلصَّلَاةِ أَيْضًا (وَلَمْ يَبْرَحْ) : بِفَتْحِ الرَّاءِ لَمْ يُفَارِقْ (سَعِيدُ بْنُ الْمُسَيَّبِ الْمَسْجِدَ) : وَكَانَ النَّاسُ يَقُولُونَ فِي حَقِّهِ: إِنَّهُ شَيْخٌ مَجْنُونٌ. قَالَ الْمُؤَلِّفُ: كَانَ سَيِّدَ التَّابِعِينَ جَمَعَ بَيْنَ الْفِقْهِ وَالْحَدِيثِ وَالزُّهْدِ وَالْوَرَعِ وَالْعِبَادَةِ لَقِيَ جَمَاعَةً كَثِيرَةً مِنَ الصَّحَابَةِ، وَرَوَى عَنْهُمْ وَعَنِ الزُّهْرِيِّ، وَكَثِيرٍ مِنَ التَّابِعِينَ وَغَيْرِهِمْ، حَجَّ أَرْبَعِينَ حَجَّةً مَاتَ سَنَةَ ثَلَاثٍ وَسَبْعِينَ. (وَكَانَ) ، أَيْ: سَعِيدٌ فِي ذَلِكَ الْوَقْتِ الشَّدِيدِ (لَا يَعْرِفُ وَقْتَ الصَّلَاةِ إِلَّا بِهَمْهَمَةٍ) ، أَيْ: بِصَوْتٍ خَفِيٍّ لَا يُفْهَمُ (يَسْمَعُهَا مِنْ قَبْرِ النَّبِيِّ - صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ -. رَوَاهُ الدَّارِمِيُّ) .
٥٣٨٨ - وَعَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ - رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ - قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ - صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: " «هَلَكَةُ أُمَّتِي عَلَى يَدَيْ غِلْمَةٍ مِنْ قُرَيْشٍ» ". رَوَاهُ الْبُخَارِيُّ.
٥٣٨٨ - (وَعَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ - صَلَّى اللَّهُ تَعَالَى عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: " هَلَكَةُ أُمَّتِي ") بِفَتْحِ الْهَاءِ وَاللَّامِ أَيْ: هَلَاكُهُمْ، وَالْمُرَادُ بِالْأُمَّةِ هُنَا الصَّحَابَةُ ; لِأَنَّهُمْ خِيَارُ الْأُمَّةِ وَأَكَابِرُ الْأَئِمَّةِ (" عَلَى يَدَيْ ") تَثْنِيَةٌ مُضَافَةٌ إِلَى (" غِلْمَةٍ مِنْ قُرَيْشٍ ") بِكَسْرِ الْغَيْنِ جَمْعُ غُلَامٍ، أَيْ: عَلَى أَيْدِي الشُّبَّانِ الَّذِينَ مَا وَصَلُوا إِلَى مَرْتَبَةِ كَمَالِ الْعَقْلِ، وَالْأَحْدَاثِ السَّنِّ، الَّذِينَ لَا مُبَالَاةَ لَهُمْ بِأَصْحَابِ الْوَقَارِ وَأَرْبَابِ النُّهَى، وَالظَّاهِرُ أَنَّ الْمُرَادَ مَا وَقَعَ بَيْنَ عُثْمَانَ - رَضِيَ اللَّهُ تَعَالَى عَنْهُ - وَقَتَلَتِهِ، وَبَيْنَ عَلِيٍّ وَالْحَسَنِ - رَضِيَ اللَّهُ تَعَالَى عَنْهُمَا - وَمَنْ قَاتَلَهُمْ. وَقَالَ الْمُظْهِرُ: لَعَلَّهُ أُرِيدَ بِهِمُ الَّذِينَ كَانُوا بَعْدَ الْخُلَفَاءِ الرَّاشِدِينَ مِثْلَ يَزِيدَ وَعَبْدِ الْمَلَكِ بْنِ مَرْوَانَ وَغَيْرِهِمَا. (رَوَاهُ الْبُخَارِيُّ) ، وَلَفْظُ الْجَامِعِ: " «هَلَاكُ أُمَّتِي عَلَى يَدَيْ غِلْمَةٍ مِنْ قُرَيْشٍ» ". رَوَاهُ أَحْمَدُ وَالْبُخَارِيُّ عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ.
٣٧١٦ - وَعَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ - صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ -: «تَعَوَّذُوا بِاللَّهِ مِنْ رَأْسِ السَّبْعِينَ وَإِمَارَةِ الصِّبْيَانِ» . رَوَى الْأَحَادِيثَ السِّتَّةَ أَحْمَدُ وَرَوَى الْبَيْهَقِيُّ حَدِيثَ مُعَاوِيَةَ فِي دَلَائِلِ النُّبُوَّةِ.
٣٧١٦ - (وَعَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ - صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ - «تَعَوَّذُوا بِاللَّهِ مِنْ رَأْسِ السَّبْعِينَ» ) ; أَيْ مِنْ فِتْنَةٍ تَنْشَأُ فِي ابْتِدَاءِ السَّبْعِينَ مِنْ تَارِيخِ الْهِجْرَةِ، أَوْ وَفَاتِهِ عَلَيْهِ الصَّلَاةُ وَالسَّلَامُ، (وَإِمَارَةِ الصِّبْيَانِ) بِكَسْرِ أَوَّلِهِ ; أَيْ وَمِنْ حُكُومَةِ الصِّغَارِ الْجُهَّالِ كَيَزِيدَ بْنِ مُعَاوِيَةَ، وَأَوْلَادِ الْحَكَمِ بْنِ مَرْوَانَ، وَأَمْثَالِهِمْ وَأَغْرَبَ الطِّيبِيُّ حَيْثُ قَالَ: قَوْلُهُ " وَإِمَارَةِ الصِّبْيَانِ " حَالٌ ; أَيْ وَالْحَالُ أَنَّ الصِّبْيَانَ أُمَرَاءُ يُدَبِّرُونَ أَمْرَ أُمَّتِي، وَهُمْ أُغَيْلِمَةٌ مِنْ قُرَيْشٍ، رَآهُمُ النَّبِيُّ - صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ - فِي مَنَامِهِ يَلْعَبُونَ عَلَى مِنْبَرِهِ عَلَيْهِ الصَّلَاةُ وَالسَّلَامُ، وَقَدْ جَاءَ فِي تَفْسِيرِ قَوْلِهِ تَعَالَى: {وَمَا جَعَلْنَا الرُّؤْيَا الَّتِي أَرَيْنَاكَ إِلَّا فِتْنَةً لِلنَّاسِ} [الإسراء: ٦٠] أَنَّهُ - صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ - رَأَى فِي الْمَنَامِ ; أَنَّ وَلَدَ الْحَكَمِ يَتَدَاوَلُونَ الْمِنْبَرَ كَمَا يَتَدَاوَلُ الصِّبْيَانُ الْكُرَةَ، (رَوَى الْأَحَادِيثَ السِّتَّةَ) ; أَيْ مِنْ أَوَّلِ الْفَصْلِ (أَحْمَدُ) وَوَافَقَهُ الطَّبَرَانِيُّ فِي الْحَدِيثِ الْأَوَّلِ، وَرَوَى الطَّبَرَانِيُّ وَالضِّيَاءُ عَنْ عَوْفِ بْنِ مَالِكٍ، وَلَفْظُهُ «إِنْ شِئْتُمْ أَنْبَأْتُكُمْ عَنِ الْإِمَارَةِ، وَمَا هِيَ ; أَوَّلُهَا مَلَامَةٌ، وَثَانِيهَا نَدَامَةٌ، وَثَالِثُهَا عَذَابُ يَوْمِ الْقِيَامَةِ، إِلَّا مَنْ عَدَلَ» . (وَرَوَى الْبَيْهَقِيُّ حَدِيثَ مُعَاوِيَةَ فِي دَلَائِلِ النُّبُوَّةِ) وَأَخْرَجَ ابْنُ عَسَاكِرَ بِسَنَدٍ وَاهٍ عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ قَالَ: «كُنْتُ عِنْدَ النَّبِيِّ - صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ - وَعِنْدَهُ أَبُو بَكْرٍ وَعُمَرُ وَعُثْمَانُ وَمُعَاوِيَةُ، إِذْ أَقْبَلَ عَلِيٌّ فَقَالَ النَّبِيُّ - صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ - لِمُعَاوِيَةَ: أَتُحِبُّ عَلِيًّا؟ قَالَ: نَعَمْ، قَالَ: إِنَّهَا سَتَكُونُ بَيْنَكُمَا هُنَيَّةٌ، قَالَ مُعَاوِيَةُ: فَمَا بَعْدَ ذَلِكَ يَا رَسُولَ اللَّهِ؟ قَالَ: عَفْوُ اللَّهِ وَرِضْوَانُهُ، قَالَ: رَضِينَا بِقَضَاءِ اللَّهِ فَنَزَلَ ; {وَلَوْ شَاءَ اللَّهُ مَا اقْتَتَلُوا وَلَكِنَّ اللَّهَ يَفْعَلُ مَا يُرِيدُ} [البقرة: ٢٥٣] » كَذَا فِي الدُّرِّ الْمَنْثُورِ فِي التَّفْسِيرِ الْمَأْثُورِ.
٣٧٠٠ - وَعَنْ كَعْبِ بْنِ عُجْرَةَ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ - صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ -: «أُعِيذُكَ بِاللَّهِ مِنْ إِمَارَةِ السُّفَهَاءِ، قَالَ: وَمَا ذَاكَ يَا رَسُولَ اللَّهِ؟ قَالَ: أُمَرَاءُ سَيَكُونُونَ مِنْ بَعْدِي، مَنْ دَخَلَ عَلَيْهِمْ فَصَدَّقَهُمْ بِكَذِبِهِمْ وَأَعَانَهُمْ عَلَى ظُلْمِهِمْ، فَلَيْسُوا مِنِّي، وَلَسْتُ مِنْهُمْ، وَلَنْ يَرِدُوا عَلَيَّ الْحَوْضَ، وَمَنْ لَمْ يَدْخُلْ عَلَيْهِمْ وَيُصَدِّقْهُمْ بِكَذِبِهِمْ وَلَمْ يُعِنْهُمْ عَلَى ظُلْمِهِمْ، فَأُولَئِكَ مِنِّي، وَأَنَا مِنْهُمْ، وَأُولَئِكَ يَرِدُونَ عَلَيَّ الْحَوْضَ» . رَوَاهُ التِّرْمِذِيُّ وَالنَّسَائِيُّ.
٣٧٠٠ - (وَعَنْ كَعْبِ بْنِ عُجْرَةَ) بِضَمٍّ فَسُكُونٍ قَالَ الْمُصَنِّفُ: نَزَلَ الْكُوفَةَ وَمَاتَ بِالْمَدِينَةِ سَنَةَ إِحْدَى وَخَمْسِينَ، وَهُوَ ابْنُ خَمْسٍ وَسَبْعِينَ سَنَةً، رَوَى عَنْهُ خَلْقٌ كَثِيرٌ مِنَ الصَّحَابَةِ وَالتَّابِعِينَ، (قَالَ: قَالَ لِي) ; أَيْ وَحْدِي، أَوْ مُخَاطِبًا لِي، (رَسُولُ اللَّهِ - صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ - أُعِيذُكَ بِاللَّهِ مِنْ إِمَارَةِ السُّفَهَاءِ) ; أَيْ مِنْ عَمَلِهِمْ، أَوْ مِنَ الدُّخُولِ عَلَيْهِمْ، أَوِ اللُّحُوقِ بِهِمْ، وَالسُّفَهَاءُ الْجُهَّالُ عِلْمًا وَعَمَلًا، وَقَالَ الطِّيبِيُّ: السُّفَهَاءُ الْخِفَافُ الْأَحْلَامِ، وَفِي النِّهَايَةِ السَّفَهُ فِي الْأَصْلِ ; الْخِفَّةُ وَالطَّيْشُ، وَسُفِّهَ فُلَانٌ رَأْيُهُ إِذَا كَانَ مُضْطَرِبًا لَا اسْتِقَامَةَ لَهُ، وَالسَّفِيهُ الْجَاهِلُ، (قَالَ) ; فِيهِ الْتِفَاتٌ، أَوْ تَجْرِيدٌ، إِذْ حَقُّهُ أَنْ يَقُولَ: قُلْتُ (وَمَا ذَاكَ يَا رَسُولَ اللَّهِ) ; أَيْ ; أَيُّ شَيْءٍ مَا ذَكَرْتَهُ مِنْ إِمَارَةِ السُّفَهَاءِ؟ وَقَالَ الطِّيبِيُّ: إِشَارَةٌ إِلَى مَعْنَى إِمَارَةِ السُّفَهَاءِ، وَهُوَ فِعْلُهُمُ الْمُسْتَفَادُ مِنْهُ مِنَ الظُّلْمِ وَالْكَذِبِ، وَمَا يُؤَدِّي إِلَيْهِ جَهْلُهُمْ وَطَيْشُهُمْ (قَالَ أُمَرَاءُ سَيَكُونُونَ مِنْ بَعْدِي) ; أَيْ سُفَهَاءُ ; مَوْصُوفُونَ بِالْكَذِبِ وَالظُّلْمِ، (مَنْ دَخَلَ عَلَيْهِمْ) ; أَيْ مِنَ الْعُلَمَاءِ وَغَيْرِهِمْ، (فَصَدَّقَهُمْ بِكَذِبِهِمْ) بِفَتْحٍ فَكَسَرٍ، وَيَجُوزُ بِكَسْرٍ فَسُكُونٍ، وَالْأَوَّلُ أَصَحُّ وَأَفْصَحُ ; لِعَدَمِ وُرُودِ غَيْرِهِ فِي الْقُرْآنِ، وَقِيلَ الْكَذِبُ: إِذَا أُخِذَ فِي مُقَابَلَةِ الصِّدْقِ كَانَ بِسُكُونِ الذَّالِ لِلْازْدِوَاجِ، وَإِذَا أُخِذَ وَحْدَهُ كَانَ بِالْكَسْرِ، (وَأَعَانَهُمْ عَلَى ظُلْمِهِمْ) ; أَيْ بِالْإِفْتَاءِ وَنَحْوِهِ، (فَلَيْسُوا مِنَّي وَلَسْتُ مِنْهُمْ) ; أَيْ بَيْنِي وَبَيْنَهُمْ بَرَاءَةٌ وَنَقْضُ ذِمَّةٍ، (وَلَنْ يَرِدُوا) وَفِي نُسْخَةٍ، وَلَمْ يَرِدُوا مِنَ الْوُرُودِ ; أَيْ لَمْ يَمُرُّوا (عَلَيَّ) بِتَشْدِيدِ الْيَاءِ بِتَضْمِينِ مَعْنَى الْعَرْضِ ; أَيْ لَنْ يَرِدُوا عَلَيَّ مَعْرُوضِينَ، (الْحَوْضَ) ; أَيْ حَوْضَ الْكَوْثَرِ فِي الْقِيَامَةِ، أَوْ فِي الْجَنَّةِ، (وَمَنْ لَمْ يَدْخُلْ عَلَيْهِمْ وَلَمْ يُصَدِّقْهُمْ بِكَذِبِهِمْ وَلَمْ يُعِنْهُمْ عَلَى ظُلْمِهِمْ ; فَأُولَئِكَ مِنِّي، وَأَنَا مِنْهُمْ، وَأُولَئِكَ يَرِدُونَ عَلَيَّ الْحَوْضَ) ، قَالَ الطِّيبِيُّ: أَدْخَلَ الْفَاءَ فِي خَبَرِ (مَنْ) لِتَضَمُّنِهِ مَعْنَى الشَّرْطِ، زَادَ فِيهِ (أُولَئِكَ) وَكَرَّرَهُ لِمَزِيدِ تَقْرِيرِ الْعِلَّةِ ; لِأَنَّ اسْمَ الْإِشَارَةِ فِي مِثْلِ هَذَا الْمَقَامِ، مُؤْذِنٌ بِأَنَّ مَا يَرِدُ عَقِيبَهُ جَدِيرٌ بِمَا قَبْلَهُ ; لِاتِّصَافِهِ بِالْخِصَالِ الْمَذْكُورَةِ كَقَوْلِهِ تَعَالَى: {أُولَئِكَ عَلَى هُدًى مِنْ رَبِّهِمْ وَأُولَئِكَ هُمُ الْمُفْلِحُونَ} [البقرة: ٥] بَعْدَ قَوْلِهِ: {الَّذِينَ يُؤْمِنُونَ بِالْغَيْبِ} [البقرة: ٣] إِلَى مَا يَتَّصِلُ بِهِ، اسْتِحْمَادًا عَلَى فِعْلِهِمْ مِنَ الِاجْتِنَابِ عَنْهُمْ، وَعَنْ تَصْدِيقِهِمْ وَمُعَاوَنَتِهِمْ، قَالَ سُفْيَانُ الثَّوْرِيُّ: لَا نُخَالِطُ السُّلْطَانَ وَلَا مَنْ يُخَالِطُهُ، وَقَالَ: صَاحِبُ الْقَلَمِ، وَصَاحِبُ الدَّوَاةِ، وَصَاحِبُ الْقِرْطَاسِ، وَصَاحِبُ اللِّيطَةِ بَعْضُهُمْ شُرَكَاءُ بَعْضُ، وَرُوِيَ أَنَّ خَيَّاطًا سَأَلَ عَبْدَ اللَّهِ بْنَ الْمُبَارَكِ عَنْ خِيَاطَتِهِ لِلْحُكَّامِ ; هَلْ أَنَا دَاخِلٌ فِي قَوْلِهِ تَعَالَى: وَلَا تَرْكَنُوا إِلَى الَّذِينَ ظَلَمُوا؟ قَالَ: بَلْ يَدْخُلُ فِيهِ مَنْ يَبِيعُكَ الْإِبْرَةَ، قَالَ ابْنُ مَسْعُودٍ: مَنْ رَضِيَ بِأَمْرِ الظَّالِمِ وَإِنْ غَابَ عَنْهُ ; كَانَ كَمَنْ شَهِدَهُ وَتَلَا الْآيَةَ (رَوَاهُ التِّرْمِذِيُّ وَالنَّسَائِيُّ) .
٣٦٩٣ - وَعَنْ أَبِي بَكْرَةَ قَالَ: «لَمَّا بَلَغَ رَسُولَ اللَّهِ - صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ - أَنَّ أَهْلَ فَارِسَ قَدْ مَلَّكُوا عَلَيْهِمْ بِنْتَ كِسْرَى قَالَ: لَنْ يُفْلِحَ قَوْمٌ وَلَّوْا أَمْرَهُمُ امْرَأَةً» . رَوَاهُ الْبُخَارِيُّ.
٣٦٩٣ - (وَعَنْ أَبِي بَكْرَةَ) بِالتَّاءِ (قَالَ لَمَّا بَلَغَ رَسُولَ اللَّهِ - صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ - أَنَّ أَهْلَ فَارِسَ) بِكَسْرِ الرَّاءِ وَفَتْحِ السِّينِ (قَدْ مَلَّكُوا) بِتَشْدِيدِ اللَّامِ ; أَيْ جَعَلُوا الْمَلِكَ (عَلَيْهِمْ بِنْتَ كِسْرَى) بِكَسْرِ الْكَافِ وَيَفْتَحُ، مَلِكُ الْفُرْسِ مُعَرَّبٌ خِسْرُوا ; أَيْ وَاسِعُ الْمُلْكِ ذَكَرَهُ فِي الْقَامُوسِ، وَفِي النِّهَايَةِ لَقَبُ مَلِكِ الْفُرْسِ، يَعْنِي كَمَا أَنَّ قَيْصَرَ لَقَبُ مَلِكِ الرُّومِ، وَفِرْعَوْنَ لَقَبُ مَلِكِ مِصْرَ، وَتُبَّعَ لِمَلِكِ الْيَمَنِ، (قَالَ لَنْ يُفْلِحَ قَوْمٌ وَلَّوْا) بِالتَّشْدِيدِ ; أَيْ فَوَّضُوا (أَمْرَهُمْ) ; أَيْ أَمْرَ مُلْكِهِمْ (امْرَأَةً) فِي شَرْحِ السُّنَّةِ ; لَا تَصْلُحُ الْمَرْأَةُ أَنْ تَكُونَ إِمَامًا، وَلَا قَاضِيًا ; لِأَنَّهُمَا مُحْتَاجَانِ إِلَى الْخُرُوجِ لِلْقِيَامِ بِأُمُورِ الْمُسْلِمِينَ، وَالْمَرْأَةُ عَوْرَةٌ لَا تَصْلُحُ لِذَلِكَ، وَلِأَنَّ الْمَرْأَةَ نَاقِصَةٌ ; وَالْقَضَاءُ مِنْ كَمَالِ الْوِلَايَاتِ ; فَلَا يَصْلُحُ لَهَا إِلَّا الْكَامِلُ مِنَ الرِّجَالِ. (رَوَاهُ الْبُخَارِيُّ) وَكَذَا أَحْمَدُ وَالتِّرْمِذِيُّ وَالنَّسَائِيُّ.
_______________________

এয়াযীদ সম্পর্কে আহলুস্ সুন্নাহ’র সিদ্ধান্ত

অনুবাদ: কাজী সাইফুদ্দীন হোসেন
[আমার পীর ও মুরশেদ আউলিয়াকুল শিরোমণি সৈয়দ মওলানা এ, জেড, এম, সেহাবউদ্দীন খালেদ সাহেব রহমতুল্লাহি আলাইহি’র পুণ্যস্মৃতিতে উৎসর্গিত]
আরবী ও অনলাইন সেট-আপ: মুহাম্মদ রুবাইয়াত বিন মূসা
এয়াযীদ সম্পর্কে আহলুস্ সুন্নাহ’র সিদ্ধান্ত
(আল্লাহতা’লা যেন তার যা প্রাপ্য তা তাকে দেন এবং তার বাবা হযরত আমীরে মোয়াবিয়া রাদিয়াল্লাহু আনহুর প্রতি সন্তুষ্ট হন)
বর্তমানে এটি পরিলক্ষিত হচ্ছে যে কিছু মানুষ আহলে বায়ত (মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লামের পরিবার সদস্য ও আত্মীয়-পরিজন)-এর প্রতি নিজেদের প্রত্যক্ষ, এমন কি পরোক্ষ ঘৃণার বহিঃপ্রকাশস্বরূপ এয়াযীদের যাবতীয় কর্মকাণ্ড ধামাচাপা দিতে সচেষ্ট এবং এরই ধারাবাহিকতায় তারা তাকে এক মহান ব্যক্তিত্ব হিসেবে চিত্রিত করছে। আল্লাহর অনুগ্রহে আমরা এই লেখায় ইসলামের এই বিশ্বাসঘাতক (এয়াযীদ) কীভাবে ইমাম হুসাইন  রাদিয়াল্লাহু আনহুকে শহীদ করেছিল এবং কীভাবে সে মদীনা মোনাওয়ারাকে লণ্ডভণ্ড করে লুঠতরাজ চালিয়েছিল সে সম্পর্কে আলোকপাত করবো।
প্রথমতঃ আমরা মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর একটি সহীহ হাদীস পেশ করবো, যা মনোরম মদীনা মোনাওয়ারা নগরীকে যে সব লোক ’লণ্ডভণ্ড’ করে তাদের সম্পর্কে বর্ণনা দেয়।
ইমাম  আহমদ রহমতুল্লাহি আলাইহি রহমতুল্লাহি আলাইহি হযরত সা’য়েব ইবনে খালেদ রাদিয়াল্লাহু আনহুর সূত্রে বর্ণনা করেন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের হাদীস, যিনি এরশাদ ফরমান:
الْمَدِينَةُ حَرَمٌ مَا بَيْنَ عَيْرٍ إِلَى ثَوْرٍ ، فَمَنْ أَحْدَثَ فِيهَا حَدَثًا ، أَوْ آوَى مُحْدِثًا ، فَعَلَيْهِ لَعْنَةُ اللهِ وَالْمَلائِكَةِ وَالنَّاسِ أَجْمَعِينَ.
-     
   “যে কেউ অন্যায়ের প্রসার এবং মদীনাবাসীদের হয়রানি বা ভীত-সন্ত্রস্ত করে, তার প্রতি আল্লাহর লা’নত (অভিসম্পাত), ফেরেশতাকুলের এবং গোটা মানব জাতির (মো’মেন বান্দাদের) লা’নত-ও।” [১.]

   কুরআন মজীদে ঘোষিত হয়েছে:
إِنَّ الَّذِينَ يُؤْذُونَ اللَّهَ وَرَسُولَهُ لَعَنَهُمُ اللَّهُ فِي الدُّنْيَا وَالْآخِرَةِ وَأَعَدَّ لَهُمْ عَذَابًا مُهِينًا.
-    “নিশ্চয় যারা কষ্ট দেয় আল্লাহ ও তাঁর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে, তাদের প্রতি আল্লাহর লা’নত (অভিসম্পাত) দুনিয়া ও আখেরাতে এবং আল্লাহ তাদের জন্যে লাঞ্ছনাদায়ক শাস্তি প্রস্তুত করে রেখেছেন।” [২.]
মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে তাঁর দৌহিত্রকে নৃশংসভাবে শহীদ করা এবং তিনি যে স্থানকে হাররাম (পবিত্র) বলে ঘোষণা করেছেন ওকে তছনছ করার চেয়ে বেশি কষ্টদায়ক আর কী-ই বা হতে পারে?
১/ - এয়াযীদের নানা ঘৃণ্য অপরাধ
ইবনে কাসীর ৬৩ হিজরীর (কারবালার) ঘটনা সম্পর্কে নিজ ‘তারিখ’ গ্রন্থে লিখেন:
 فَقَالَ ابْنُ الزُّبَيْرِ لِأَصْحَابِهِ: يَا هَؤُلَاءِ، قُتِلَ أَصْحَابُكُمْ، فَإِنَّا لِلَّهِ وَإِنَّا إِلَيْهِ رَاجِعُونَ. وَقَدْ أَخْطَأَ يَزِيدُ خَطَأً فَاحِشًا فِي قَوْلِهِ لِمُسْلِمِ بْنِ عُقْبَةَ أَنْ يُبِيحَ الْمَدِينَةَ ثَلَاثَةَ أَيَّامٍ، وَهَذَا خَطَأٌ كَبِيرٌ، فَإِنَّهُ وَقَعَ فِي هَذِهِ الثَّلَاثَةِ أَيَّامٍ مِنَ الْمَفَاسِدِ الْعَظِيمَةِ فِي الْمَدِينَةِ النَّبَوِيَّةِ مَا لَا يُحَدُّ وَلَا يُوَصَفُ، مِمَّا لَا يَعْلَمُهُ إِلَّا اللَّهُ عَزَّ وَجَلَّ. وَقَدْ أَرَادَ بِإِرْسَالِ مُسْلِمِ بْنِ عُقْبَةَ تَوْطِيدَ سُلْطَانِهِ وَمُلْكِهِ، وَدَوَامَ أَيَّامِهِ، فَعَاقَبَهُ اللَّهُ بِنَقِيضِ قَصْدِهِ، فَقَصَمَهُ اللَّهُ قَاصِمُ الْجَبَابِرَةِ، وَأَخَذَهُ أَخْذَ عَزِيزٍ مُقْتَدِرٍ. وَكَذَلِكَ أَخْذُ رَبِّكَ إِذَا أَخَذَ الْقُرَى وَهِيَ ظالمة إن أخذه أليم شديد.
-     ইবনে যুবাইর রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু বলেন, ওহে মানুষেরা! তোমাদের আসহাবদেরকে হত্যা করা হয়েছে - ইন্না লিল্লাহে ইন্না ইলাইহে রাজেউন। - এয়াযীদ একটি ঘৃণিত ভুল কাজ করেছে মদীনা মোনাওয়ারাকে তিন দিনের জন্যে ‘মোবাহ’ হিসেবে কার্যকর করার লক্ষ্যে মুসলিম ইবনে উকবাকে আদেশ দিয়ে। এটি ছিল তার সবচেয়ে বড় ও মারাত্মক ভুল। অনেক সাহাবা-এ-কেরাম ও তাঁদের সন্তানদের হত্যা করা হয়। আগেই উল্লেখ করা হয়েছে যে উবায়দুল্লাহ ইবনে যিয়াদের মাধ্যমে এয়াযীদ আমাদের রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের দৌহিত্র ইমাম হুসাইন রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু ও তাঁর সাথীদের শহীদ করে; আর ওই তিন দিনে মদীনা মোনাওয়ারায় এমন সব গর্হিত অপরাধ সংঘটিত হয় যা আল্লাহ ছাড়া কেউই জানেন না। এয়াযীদ তার শাসনকে মুসলিম ইবনে উকবাহের প্রেরণের মাধ্যমে সংহত করতে চেয়েছিল, কিন্তু আল্লাহতা’লা তার ইচ্ছাকে পুরো হতে দেন নি এবং তাকে শাস্তি দিয়েছিলেন। বস্তুতঃ আল্লাহ তাকে মেরে ফেলেন যেমনিভাবে তিনি আগ্রাসী শহরগুলোকে (অর্থাৎ, ওই শহরগুলোর আক্রমণকারীদেরকে) নিজ কব্জায় নিয়েছিলেন; আর নিঃসন্দেহে আল্লাহর কব্জা কঠোর ও বেদনাদায়ক।” [৩.]
২/ - ইবনে যিয়াদও এয়াযীদের আচরণে বিরূপ
এয়াযীদের অপরাধ এতো গর্হিত ছিল যে এমন কি তার অনুগত উবায়দুল্লাহ ইবনে যিয়াদ যাকে মুসলিম ইবনে আকীল ও পরবর্তী পর্যায়ে ইমাম হুসাইন রাদিয়াল্লাহু আনহুর হত্যার জন্যে পাঠানো হয়েছিল, এবং যাকে পত্র মারফত এয়াযীদ বলেছিল মক্কায় গিয়ে হযরত আবদুল্লাহ ইবনে যুবাইর রাদিয়াল্লাহু আনহুর ওপর আবরোধ দিতে, সেও তা করতে অস্বীকৃতি জানিয়ে বলেছিল:
وَقَدْ كَانَ يزيد كتب إلى عبد الله بن زياد أن يسير إلى الزُّبَيْرِ فَيُحَاصِرَهُ بِمَكَّةَ، فَأَبَى عَلَيْهِ وَقَالَ: وَاللَّهِ لَا أَجْمَعُهُمَا لِلْفَاسِقِ أَبَدًا، أَقْتُلُ ابْنَ بِنْتُ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، وَأَغْزُو الْبَيْتَ الْحَرَامَ؟ وَقَدْ كَانَتْ أُمُّهُ مَرْجَانَةُ قَالَتْ لَهُ حِينَ قَتَلَ الْحُسَيْنَ: وَيْحَكَ مَاذَا صَنَعْتَ وماذا ركبت؟ وعنفته تعنيفا شديدا. قَالُوا: وَقَدْ بَلَغَ يَزِيدَ أَنَّ ابْنَ الزُّبَيْرِ يقول في خطبته: يزيد القرود، شارب الخمور، تارك الصلوات، منعكف على القينات.
-      ‘আল্লাহর শপথ! আমি কোনো ফাসেক (পাপী এয়াযীদ)-এর খাতিরে দুটো (অপ)-কর্মতে জড়াবো না। আমি ইতোমধ্যেই রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের মেয়ের (ঘরের) নাতিকে হত্যা করেছি; আর এখন (সে নির্দেশ দিচ্ছে) বায়তুল হাররামের সাথে যুদ্ধ করতে।’ তবে এয়াযীদ যখন ইমাম হুসাইন রাদিয়াল্লাহু আনহুকে শহীদ করে, তখন তার মা মারজানা তাকে বলেন, ‘তুমি মরো গে! তুমি এই জঘন্য অপরাধ কীভাবে করতে পারলে?’ তিনি তাকে অত্যন্ত কঠোর ভাষায় ভর্ৎসনা করেন। এয়াযীদকে জানানো হয় যে হযরত আবদুল্লাহ ইবনে যুবাইর রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু তাঁর বিভিন্ন ভাষণে এয়াযীদ সম্পর্কে বলতেন, সে একজন জালিয়াত, মদ্যপ, নামায তরককারী ও গায়িকা (ভ্রষ্টা) নারীদের সাহচর্যে অবস্থানকারী ব্যক্তি।[৪.]
ইবনে কাসীর আরও বর্ণনা করেন:
ثُمَّ أَبَاحَ مُسْلِمُ بْنُ عُقْبَةَ، الَّذِي يَقُولُ فِيهِ السَّلف مسرف بن عقبة - قبحه الله من شيخ سوء ما أجهله - المدينة ثلاث أَيَّامٍ كَمَا أَمَرَهُ يَزِيدُ، لَا جَزَاهُ اللَّهُ خَيْرًا، وَقَتَلَ خَلْقًا مِنْ أَشْرَافِهَا وَقُرَّائِهَا وَانْتَهَبَ أَمْوَالًا كَثِيرَةً مِنْهَا، وَوَقَعَ شرُّ عَظِيمٌ وَفَسَادٌ عَرِيضٌ عَلَى مَا ذَكَرَهُ غَيْرُ وَاحِدٍ. فَكَانَ مِمَّنْ قُتِلَ بَيْنَ يَدَيْهِ صَبْرًا مَعْقِلُ بْنُ سنان، وَقَدْ كَانَ صَدِيقَهُ قَبْلَ ذَلِكَ ، وَلَكِنْ أَسْمَعَهُ فِي يَزِيدَ كَلَامًا غَلِيظًا فَنَقَمَ عَلَيْهِ بِسَبَبِهِ.
-      মুসলিম ইবনে উকবা, যার অপর পরিচিতি আস্ সাইফ মুসরাফ বিন উকবা নামে (আল্লাহ এই বদ ও মূর্খ লোকের কল্যাণ না করুন, আমীন), সে এয়াযীদের আদেশে মদীনা মোনাওয়ারার আক্রমণকে ‘বৈধতা’ দিয়েছিল তিন দিনের জন্যে। আল্লাহতা’লা এয়াযীদকে ‘জাযা’ ও ’খায়র’ মন্ঞ্জুর না করুন, আমীন। সে বহু ন্যায়বান মানুষের হত্যা সংঘটন করে এবং মদীনার বিপুল মালামাল লুঠপাট করে। একাধিক বর্ণনায় এসেছে যে সে ওখানে প্রচুর ক্ষতি সাধন করে এবং অনেক ফাসাদের জন্ম দেয়। এও উল্লেখিত হয়েছে যে (সাহাবী) হযরত মুয়াফল ইবনে সানান রাদিয়াল্লাহু আনহুকে ইবনে উকবার সামনে বেঁধে রাখা হয় এবং তারপর শহীদ করা হয়। এই সময় সে বলে, ‘তুমি এয়াযীদের বন্ধু ছিলে, কিন্তু পরে তুমি তার বিরুদ্ধে কঠোর ভাষা ব্যবহার করেছ; তাই এয়াযীদ তোমার প্রতি বিরূপ ভাবাপন্ন হয়েছে।[৫.]
৩/ - নেতৃস্থানীয় তাবেঈ সাঈদ ইবনে মুসাইয়েব রহমতুল্লাহি আলাইহির প্রতি এয়াযীদের বৈরিতা
قَالَ الْمَدَائِنِيُّ: وَجِيءَ إِلَى مُسْلِمٍ بِسَعِيدِ بْنِ الْمُسَيَّبِ فَقَالَ لَهُ: بَايِعْ! فَقَالَ: أُبَايِعُ عَلَى سِيرَةِ أَبِي بَكْرٍ وَعُمَرَ: فَأَمَرَ بِضَرْبِ عُنُقِهِ، فَشَهِدَ رَجُلٌ أَنَّهُ مَجْنُونٌ فَخَلَّى سبيله.
-      আল-মুদাইনী রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন যে হযরত সাঈদ ইবনে মুসাইয়েব রহমতুল্লাহি আলাইহিকে নিয়ে আসা হয় মুসলিম বিন উকবার সামনে। সে তাঁকে তার কাছে বায়াত (আনুগত্য) গ্রহণ করতে বলে। তিনি এর জবাবে বলেন, “আমি (শুধু) সাইয়্যেদুনা হযরত আবু বকর রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু ও সাইয়্যেদুনা হযরত উমর রাদিয়াল্লাহু আনহুর সীরাতের (আদর্শের) প্রতি বায়াত নিতে পারি।” এমতাবস্থায় ইবনে উকবা তাঁকে হত্যার নির্দেশ দেয়। কিন্তু কেউ একজন (তাঁকে বাঁচাবার জন্যে) বলেন যে এই ব্যক্তি (হযরত সাঈদ) পাগল। এতে তাঁকে ছেড়ে দেয়া হয়।[৬.]
৪/ - শায়খুল ইসলাম ইমাম ইবনে হাজর আসকালানী রহমতুল্লাহি আলাইহি 
ইমাম ইবনে হাজর আসকালানী রহমতুল্লাহি আলাইহি তাঁর রচিত ‘আল-এমতা’ বিল আরবাঈন’ শীর্ষক বইয়ের পুরো শিরোনামই দিয়েছেন ‘এয়াযীদের প্রতি লা’নত’। ওতে তিনি লিখেন,
وَأما الْمحبَّة فِيهِ وَالرَّفْع من شَأْنه فَلَا تقع إِلَّا من مُبْتَدع فَاسد الِاعْتِقَاد فَإِنَّهُ كَانَ فِيهِ من الصِّفَات مَا يَقْتَضِي سلب الْإِيمَان عَمَّن يُحِبهُ لِأَن الْحبّ فِي الله والبغض فِي الله من الْإِيمَان وَالله الْمُسْتَعَان.
-       “এয়াযীদকে ভক্তি ও তার প্রশংসা ‘বেদআতী-গোমরাহ’ ব্যক্তি ছাড়া আর কেউই করে না, যে ব্যক্তির বিশ্বাস একেবারেই শূন্য। কেননা, এয়াযীদের এমন সব বৈশিষ্ট্য ছিল যার ভক্ত-অনুরক্ত হলে কুফর তথা অবিশ্বাসের যোগ্য হতে হয়। এটা এই কারণে যে আল্লাহর ওয়াস্তে ভালোবাসা এবং তাঁরই ওয়াস্তে ঘৃণা করা ঈমানেরই লক্ষণ।” [৭.]
ইমাম সাহেব রহমতুল্লাহি আলাইহি অন্যত্র লিখেন,
وقال يحيى بن عبد الملك بن أبي غنية أحد الثقات ثنا نوفل بن أبي عقرب ثقة قال كنت عند عمر بن عبد العزيز فذكر رجل يزيد بن معاوية فقال أمير المؤمنين يزيد فقال عمر تقول أمير المؤمنين يزيد وأمر به فضرب عشرين سوط.
-      “এয়াহইয়া ইবনে আব্দিল মুলক্ বিন আবি গানিয়্যা যিনি ’সিকা (নির্ভরযোগ্য) বর্ণনাকারীদের একজন’, তিনি ‘সিকা’ বর্ণনাকারী নওফল বিন আবি আকরাব থেকে শুনেছেন: একবার খলীফা উমর ইবনে আবদিল আযীয (২য় উমর)-এর দরবারে মানুষেরা এয়াযীদ ইবনে মু’আবিয়া সম্পর্কে আলাপ করছিলেন। ওই সময় এক লোক এয়াযীদকে ‘আমীরুল মো’মেনীন’ (ঈমানদারদের শাসক) খেতাবে সম্বোধন করে। এটি শুনে খলীফা ২য় উমর (রাগান্বিত হয়ে) তাকে বলেন, “তুমি এয়াযীদকে আমীরুল মো’মেনীন ডেকেছ?” অতঃপর তিনি ওই লোককে ২০টি দোররা মারার হুকুম দেন।[৮.]
৫/ - ইমাম জালালউদ্দীন সৈয়ুতী রহমতুল্লাহি আলাইহি ’তারিখুল খুলাফা’ গ্রন্থে যা বলেন
فأبوا إلا قتله، فقتل وجيء برأسه في طست حتى وضع بين يدي ابن زياد، لعن الله قاتله وابن زياد معه ويزيد أيضًا.
-       ‘‘আপনি (ইমাম হুসাইন রাদিয়াল্লাহু আনহু) শাহাদাত বরণ করেন এবং আপনার কর্তিত শির ইবনে যিয়াদের সামনে একটি থালায় করে আনা হয়। আপনাকে যে ব্যক্তি হত্যা করেছে তার ওপর আল্লাহর লা’নত (অভিসম্পাত); আরও লা’নত ইবনে যিয়াদ ও এয়াযীদের ওপর।” [৯. দলিলচিত্র-http://www.ahlus-sunna.com/index.php?option=com_content&view=article&id=46&Itemid=29&limitstart=31]
ইমাম সৈয়ুতী রহমতুল্লাহি আলাইহি আরও লিখেন:
قال نوفل بن أبي الفرات: كنت عند عمر بن عبد العزيز، فذكر رجل يزيد، فقال: قال أمير المؤمنين يزيد بن معاوية، فقال: تقول أمير المؤمنين؟ وأمر به، فضرب عشرين سوطًا. وفي سنة ثلاث وستين بلغه أن أهل المدينة خرجوا عليه وخلعوه، فأرسل إليهم جيشًا كثيفًا وأمرهم بقتالهم، ثم المسير إلى مكة لقتال ابن الزبير، فجاءوا وكانت وقعة الحرة على باب طيبة، وما أدراك ما وقعة الحرة؟ ذكرها الحسن مرة فقال: والله ما كاد ينجو منهم أحد، قتل فيها خلق من الصحابة -رضي الله عنهم- ومن غيرهم، ونهبت المدينة، وافتض فيها ألف عذراء، فإنا لله وإنا إليه راجعون قال صلى الله عليه وسلم: "من أخاف أهل المدينة أخافه الله، وعليه لعنة الله والملائكة والناس أجمعين". رواه مسلم
 وكان سبب خلع أهل المدينة له أن يزيد أسرف في المعاصي.
وأخرج الواقدي من طرق: أن عبد الله بن حنظلة الغسيل قال: والله ما خرجنا على يزيد  حتى خفنا أن نرمى بالحجارة من السماء إنه رجل ينكح أمهات الأولاد، والبنات، والأخوات، ويشرب الخمر، ويدع الصلاة.
قال الذهبي: ولما فعل يزيد بأهل المدينة ما فعل، مع شربه الخمر وإتيانه المنكرات، اشتد عليه الناس، وخرج عليه غير واحد، ولم يبارك الله في عمره، وسار جيش الحرة إلى مكة لقتال ابن الزبير، فمات أمير الجيش بالطريق، فاستخلف عليه أميرًا، وأتوا مكة، فحاصروا ابن الزبير وقاتلوه ورموه بالمنجنيق، وذلك في صفر سنة أربع وستين، واحترقت من شرارة نيرانهم أستار الكعبة وسقفها وقرنا الكبش الذي فدى الله به إسماعيل وكانا في السقف، وأهلك الله يزيد في نصف شهر ربيع الأول من هذا العام، فجاء الخبر بوفاته والقتال مستمر، فنادى ابن الزبير: يا أهل الشام إن طاغيتكم قد أهلك، فانقلبوا وذلوا وتخطفهم الناس، ودعا ابن الزبير إلى بيعة نفسه, وتسمى بالخلافة، وأما أهل الشام فبايعوا معاوية بن يزيد، ولم تطل مدته كما سيأتي.
-      নগরী লুঠপাটের পরে সে তার বাহিনীকে পবিত্র মক্কায় পাঠায় সাহাবী হযরত আবদুল্লাহ ইবনে যুবাইর রাদিয়াল্লাহু আনহুকে শহীদ করার জন্যে। ওই সময় ‘হাররা’-এর ঘটনা ঘটে। হাররায় কী ঘটেছিল আপনারা জানেন কি? এ প্রসঙ্গে (তাবেঈ) হযরত হাসসান বলেন, হযরত নওফল বিন আবি ফিরায়াত রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেছেন যে একবার তিনি খলীফা উমর ইবনে আব্দিল আযীযের দরবারে বসেছিলেন; এমন সময় এক লোক এয়াযীদকে ‘আমীরুল মো’মেনীন’ খেতাবে সম্বোধন করে। এতে খলীফা (রাগান্বিত হয়ে) তাকে বলেন, “তুমি এই ব্যক্তিকে ’আমীরুল মো’মেনীন’ বলো?” অতঃপর তিনি ওই লোককে ২০টি দোররা মারার আদেশ দেন। ৬৩ হিজরীতে এয়াযীদ জানতে পারে যে মদীনাবাসী মুসলমানবৃন্দ তাকে প্রত্যাখ্যান করেছেন এবং তার বিরুদ্ধে যুদ্ধের প্রস্তুতি নিচ্ছেন। তাই সে এক বিশাল সৈন্যবাহিনী পবিত্র নগরীতে প্রেরণ করে এবং মদীনাবাসীদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে। পবিত্র “মদীনা মোনাওয়ারায় হামলা হলে পর কেউই নিরাপদ ছিলেন না। অসংখ্য সাহাবী ও অন্যান্য মানুষ শহীদ হন এবং মদীনায় লুঠপাট হয়; আর সহস্র সহস্র কুমারী মেয়ের ইজ্জত নষ্ট করা হয়। ইন্না লিল্লাহে ওয়া ইন্না ইলাইহে রাজেউন। ... মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেন: “মদীনাবাসীকে যে কেউ (সন্ত্রাসের মাধ্যমে) হয়রানি বা ভীত-সন্ত্রস্ত করলে আল্লাহ-ও তাকে অনুরূপ প্রতিদান দেবেন এবং তার ওপর আল্লাহর লা’নত, ফেরেশতাকুল ও মানব জাতির (মো’মেনদের) লা’নত-ও” (মুসলিম শরীফ)। মদীনাবাসী মুসলমানবৃন্দ যে কারণে এয়াযীদের বায়াত গ্রহণ করেন নি, তা হলো সে ’অত্যধিক পাপাচারে লিপ্ত’ ছিল। আল-ওয়াকিদী সাহাবী হযরত আবদুল্লাহ বিন খাযলাতাল গুসাইল রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন: “আল্লাহর শপথ! আমরা এয়াযীদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছি যখন আমরা নিশ্চিত হয়েছি যে ‘আমাদের প্রতি আসমান থেকে পাথর নিক্ষেপ করা হবে’; কেননা, এয়াযীদী গোষ্ঠী তাদের মা, বোন ও কন্যাদের বিয়ে করা আরম্ভ করেছিল, প্রকাশ্যে মদ্যপান করছিল এবং নামাযও তরক করছিল।” ইমাম যাহাবী বলেন, এয়াযীদ ‘মদ্যপান ও অন্যান্য কুকর্মে লিপ্ত’ হবার পর মদীনাবাসীদের প্রতি জুলুম-নিপীড়ন করলে মক্কাবাসী মুসলমানবৃন্দও চারদিক থেকে তার বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ান। আল্লাহতা’লা এয়াযীদের জীবনে কোনো রহমত-বরকত দেন নি। (এয়াযীদ মক্কা আক্রমণ করে হযরত আবদুল্লাহ ইবনে যুবাইর রাদিয়াল্লাহু আনহুকেও শহীদ করে)।[১০. দলিলচিত্র-http://www.ahlus-sunna.com/index.php?option=com_content&view=article&id=46&Itemid=29&limitstart=32]
৬/ - আল্লামা মাহমূদ আলূসী তাঁর কৃত ‘তাফসীরে রূহুল মা’আনী’ কেতাবে সূরা মুহাম্মদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম)-এর ২২-২৩ নং আয়াতগুলোর ব্যাখ্যায় বলেন:
واستدل بها أيضا على جواز لعن يزيد عليه من الله تعالى ما يستحق نقل البرزنجي في الإشاعة والهيثمي في الصواعق أن الإمام أحمد لما سأله ولده عبد الله عن لعن يزيد قال كيف لا يلعن من لعنه الله تعالى في كتابه فقال عبد الله قد قرأت كتاب الله عز وجل فلم أجد فيه لعن يزيد فقال الإمام إن الله تعالى يقول: فَهَلْ عَسَيْتُمْ إِنْ تَوَلَّيْتُمْ أَنْ تُفْسِدُوا فِي الْأَرْضِ وَتُقَطِّعُوا أَرْحامَكُمْ أُولئِكَ الَّذِينَ لَعَنَهُمُ اللَّهُ الآية وأي فساد وقطيعة أشد مما فعله يزيد انتهى.
-      “এয়াযীদের প্রতি ‘লা’নত’ দেয়ার দালিলিক প্রমাণ এই আয়াত থেকেই বের করা হয়েছে, যেমনটি ইমাম আহমদ রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর সূত্রে উল্লেখ করেছেন আল-বরযানজি রহমতুল্লাহি আলাইহি নিজ ‘আল-আশআত’ পুস্তকে এবং আল-হায়তামী তাঁর ‘আস্ সাওয়াইক্ক’ গ্রন্থে এই মর্মে যে, ইমাম আহমদ (رحمة الله)-এর পুত্র আবদুল্লাহ তাঁকে এয়াযীদের প্রতি লা’নত দেয়ার ব্যাপারে জিজ্ঞেস করেন। ইমাম সাহেব বলেন, ‘তার প্রতি লা’নত দেয়া যাবে না কেন, যেখানে স্বয়ং আল্লাহতা’লা-ই কুরআন মজীদে তাকে লা’নত দিয়েছেন?’ আবদুল্লাহ আবার প্রশ্ন করেন, ‘কিতাবুল্লাহর ওই আয়াতটি তেলাওয়াত করুন যাতে আমি জানতে পারি কীভাবে এয়াযীদের প্রতি লা’নত দেয়া হলো?’ এমতাবস্থায় ইমাম আহমদ রহমতুল্লাহি আলাইহি নিম্নবর্ণিত আয়াতগুলো তেলাওয়াত করেন, ‘তবে কি তোমোদের এ লক্ষণ দৃষ্টিগোচর হচ্ছে যে তোমরা শাসনক্ষমতা লাভ করলে পৃথিবীতে বিপর্যয় ডেকে আনবে এবং আপন আত্মীয়তার বন্ধন ছিন্ন করবে? এরা হচ্ছে ওই সব লোক যাদের প্রতি আল্লাহতা’লা অভিসম্পাত (লা’নত) দিয়েছেন...’ (আল-কুরআন, ৪৭:২২-২৩)। অতঃপর তিনি বলেন, ‘এয়াযীদ যা করেছে তার থেকে বড় বিপর্যয় আর কী হতে পারে’?”[১১.]
দ্বিতীয়তঃ  আল্লামা আলূসী আরও বলেন,
ولو سلّم أن الخبيث كان مسلما فهو مسلم جمع من الكبائر ما لا يحيط به نطاق البيان، وأنا أذهب إلى جواز لعن مثله على التعيين ولو لم يتصور أن يكون له مثل من الفاسقين، والظاهر أنه لم يتب، واحتمال توبته أضعف من إيمانه، ويلحق به ابن زياد وابن سعد وجماعة فلعنة الله عز وجل عليهم أجمعين، وعلى أنصارهم وأعوانهم وشيعتهم ومن مال إليهم إلى يوم الدين ما دمعت عين على أبي عبد الله الحسين.
-      “আর আমি বলি, আমার ভাবনায় যা প্রাধান্য পায় তা হলো এই খবীস (এয়াযীদ) মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর রেসালতের পক্ষে সাক্ষ্য দেয় নি। আমার মতে, এয়াযীদের মতো লোককে লা’নত দেয়া সঠিক, যদিও তার মতো এতো বড় ফাসিকের কথা কল্পনা করা কারো পক্ষে সম্ভব নয়; আর এটাও স্পষ্ট প্রতীয়মান হয় যে সে কখনোই তওবা করে নি; (উপরন্তু) তার তওবা করার সম্ভাবনাও তার ঈমান পোষণ করার সম্ভাবনার চেয়ে ক্ষীণতর। এয়াযীদের পাশাপাশি ইবনে যিয়াদ, ইবনে সা’আদ ও তার দল-বল এতে জড়িত। অবশ্যঅবশ্য কেয়ামত দিবস অবধি এবং ইমাম হুসাইন রাদিয়াল্লাহু আনহুএর জন্যে (মো’মেনদের) চোখের পানি যতোদিন ঝরবে ততোদিন পর্যন্ত আল্লাহর লা’নত তাদের সবার ওপর পতিত হোক; তাদের বন্ধু-বান্ধব, সমর্থক, দল-বল এবং ভক্তদের ওপরও পতিত হোক!” [১২. দলিলচিত্র-http://www.ahlus-sunna.com/index.php?option=com_content&view=article&id=46&Itemid=29&limitstart=43]
৭/ - ইমাম যাহাবীর ভাষ্য -
وَكَانَ نَاصِبِيّاً فَظّاً غَلِيْظاًجَلْفاً, يتناول المسكر, ويفعل المنكر. افْتَتَحَ دَوْلَتَهُ بِمَقْتَلِ الشَّهِيْدِ الحُسَيْنِ, وَاخْتَتَمَهَا بِوَاقِعَةِ الحَرَّةِ فَمَقَتَهُ النَّاسُ وَلَمْ يُبَارَكْ فِي عُمُرِه. وَخَرَجَ عَلَيْهِ غَيْرُ وَاحِدٍ بَعْدَ الحُسَيْنِ: كَأَهْلِ المَدِيْنَةِ قَامُوا للهِ,.
-      ‘‘এয়াযীদ ছিল এক জঘন্য নসিবী (আহলে বায়তকে ঘৃণাকারী)। সে রাজত্ব আরম্ভ করে ইমাম হুসাইন রাদিয়াল্লাহু আনহুকে শহীদ করে এবং রাজত্বের ইতি টানে হাররা-এর ঘটনা দ্বারা (অর্থাৎ, মদীনা অবরোধ, যার দরুন সহীহ হাদীস মোতাবেক সে লা’নতের যোগ্য হয়)। ফলে মানুষেরা তাকে ঘৃণা করতো; অধিকন্তু সে জীবনে রহমত-বরকত কিছুই পায় নি; ইমাম হুসাইন রাদিয়াল্লাহু আনহুএর শাহাদাতের পরে তার বিরুদ্ধে অনেকে অস্ত্র তুলে নেন - যেমনটি করেছিলেন মদীনাবাসীগণ, যাঁরা আল্লাহর ওয়াস্তে (তার বিরুদ্ধে) রুখে দাঁড়ান।”[১৩.]
দ্বিতীয়তঃ ইমাম যাহাবী আরও লিখেন,
قلت: ولما فَعَلَ يَزِيدُ بِأَهْلِ الْمَدِينَةِ مَا فَعَلَ، وَقُتِلَ الْحُسَيْنُ وَإِخْوَتُهُ وَآلُهُ، وَشَرِبَ يَزِيدُ الْخَمْرَ، وَارْتَكَبَ أَشْيَاءَ مُنْكَرَةً، بَغِضَهُ النَّاسُ، وَخَرَجَ عَلَيْهِ غَيْرُ وَاحِدٍ، وَلَمْ يُبَارِكِ اللَّهُ فِي عُمْرِهِ، فَخَرَجَ عَلَيْهِ أَبُو بِلَالِ مِرْدَاسِ بْنِ أُدَيَّةَ الْحَنْظَلِيُّ.
-      “আমি বলি, এয়াযীদ মদীনাবাসীদের সাথে যে আচরণ করেছিল, এবং ইমাম হুসাইন রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু ও তাঁর বংশধরদের যেভাবে হত্যা করেছিল, আর যেভাবে মদ্যপান ও গর্হিত কাজে লিপ্ত হয়েছিল, তাতে মানুষেরা তাকে ঘৃণা করতেন এবং তার বিরুদ্ধে একাধিকবার রুখে দাঁড়িয়েছিলেন। আল্লাহতা’লা এয়াযীদের জীবনে রহমত-বরকত দেন নি; উপরন্তু, আবু বিলাল মিরদাস্ বিন আদইয়া আল-হানযালী তার বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ান।”[১৪. দলিলচিত্র-http://www.ahlus-sunna.com/index.php?option=com_content&view=article&id=46&Itemid=29&limitstart=44]
তৃতীয়তঃ ইমাম যাহাবী আরও লিখেন,
وَعَنْ زِيَادٍ الحَارِثِيِّ, قَالَ: سَقَانِي يَزِيْدُ شَرَاباً مَا ذُقْتُ مِثْلَهُ, فَقُلْتُ: يَا أَمِيْرَ المُؤْمِنِيْنَ, لَمْ أُسَلْسِلْ مِثْلَ هَذَا قَالَ هَذَا رُمَّانُ حُلْوَانَ بِعَسَلِ أَصْبَهَانَ, بِسُكَّرِ الأَهْوَازِ, بِزَبِيْبِ الطَّائِفِ, بِمَاءِ بَرَدَى. وَعَنْ مُحَمَّدِ بنِ أَحْمَدَ بنِ مِسْمَعٍ, قَالَ: سَكِرَ يَزِيْدُ, فَقَامَ يَرْقُصُ, فَسَقَطَ عَلَى رَأْسِهِ, فَانْشَقَّ وَبَدَا دِمَاغُهُ.
-      “যিয়াদ হারসী বর্ণনা করে: ‘এয়াযীদ আমাকে মদ পান করতে দেয়। আমি ইতিপূর্বে কখনোই এ রকম মদ পান করি নি; তাই তাকে জিজ্ঞেস করি কোথা থেকে সে এই মদের উপাদান সংগ্রহ করেছে। এয়াযীদ জবাবে বলে, এটি মিষ্টি ডালিম, ইসপাহানের মধু, হাওয়াযের চিনি, তায়েফের আঙ্গুর ও বুরদাহ-এর পানি দ্বারা প্রস্তুতকৃত।’ আহমদ ইবনে মাসামা বর্ণনা করেন: ‘একবার এয়াযীদ মদ্যপান করে নাচা আরম্ভ করে; হঠাৎ সে পড়ে যায় এবং তার নাক দিয়ে রক্ত বেরুতে আরম্ভ করে’।”[১৫. দলিলচিত্র-http://www.ahlus-sunna.com/index.php?option=com_content&view=article&id=46&Itemid=29&limitstart=46]
৮/ - এয়াযীদ সম্পর্কে কাজী সানাউল্লাহ পানিপথী রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর ভাষ্য - 
মহান মুফাসসির ও সুবিখ্যাত গ্রন্থাবলীর প্রণেতা এবং সকল সুন্নী মুসলমানের কাছে গ্রহণযোগ্য ইসলামী জ্ঞান বিশারদ কাজী সানাউল্লাহ পানিপথী রহমতুল্লাহি আলাইহি কুরআন মজীদের ১৪:২৮ আয়াতখানি উদ্ধৃত করেন:
أَلَمْ تَرَ إِلَى الَّذِينَ بَدَّلُوا نِعْمَتَ اللَّهِ كُفْرًا وَأَحَلُّوا قَوْمَهُمْ دَارَ الْبَوَارِ.
-      “আপনি কি তাদেরকে দেখেন নি যারা অকৃজ্ঞতাবশত আল্লাহর অনুগ্রহকে বদল করেছে এবং আপন সম্প্রদায়কে ধ্বংসের ঘরে নামিয়ে এনেছে?”
অতঃপর এর তাফসীরে হযরত পানিপথী রহমতুল্লাহি আলাইহি লিখেন,
اما بنوا امية فمتعوا بالكفر حتّى اسلم ابو سفيان ومعاوية وعمرو بن العاص وغيرهم- ثم كفر يزيد ومن معه بما أنعم الله عليهم وانتصبوا العداوة ال النبي صلى الله عليه وسلم وقتلوا حسينا رضى الله عنه ظلما وكفر يزيد بدين محمّد صلى الله عليه وسلم حتّى انشد أبياتا حين قتل حسينا رضى الله عنه- مضمونها اين أشياخي ينظرون انتقامي بال محمّد وبنى هاشم واخر الأبيات
ولست من جندب ان لم انتقم ... من بنى احمد ما كان فعل
وايضا أحل الخمر وقال
مدام كنز فى اناء كفضة ... وساق كبد مع مدام كانجم
وشمسه كرم برجها قعرها ... ومشرقها الساقي ومغربها فهى
فان حرمت يوما على دين احمد ... فخذها على دين المسيح بن مريم
-      “বনী উমাইয়া সব সময় কুফরীর ওপর উল্লাস প্রকাশ করেছিল; তবে আবু সুফিয়ান, আমীরে মোয়াবিয়া রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু, আমর ইবনে আস্ এবং অন্যান্যরা মুসলমান হয়েছিলেন। পরবর্তীকালে এয়াযীদ ও তার সাথীরা আল্লাহর এই নেয়ামত (আশীর্বাদ) প্রত্যাখ্যান করে আহলে বায়তের প্রতি বৈরিতার পতাকা উড়ায়; আর শেষমেশ ইমাম হুসাইন রাদিয়াল্লাহু আনহুকে শহীদ করে এমন এক পর্যায়ে পৌঁছায়, যেখানে সে মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামএর ধর্মকে অস্বীকার করে বসে। ইমাম হুসাইন রাদিয়াল্লাহু আনহুএর শাহাদাতের পরে সে বলে: ‘আমার পূর্বপরুষেরা বেঁচে থাকলে তাঁরা আজ দেখতেন কীভাবে আমি মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামএর পরিবার ও বনী হাশেমের ওপর প্রতিশোধ নিয়েছি।’ সে এ কথা ব্যক্ত করতে যে দ্বিচরণ শ্লোক ব্যবহার করে তার শেষাংশে আছে - ’বদরের যুদ্ধে আহমদ (মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম) আমার পূর্বপুরুষদের সাথে যা কিছু করেছেন, তার বদলা আমি নেবো’ (নাউযুবিল্লাহ)। সে মদ হালাল ঘোষণা করে এবং এর প্রশংসায় বলে, ‘যদি মুহাম্মদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম)-এর ধর্মে মদ হারাম হয়, তাহলে ঈসা ইবনে মরঈয়মের (আ:) ধর্মে একে জায়েয জেনো’।”
৯/ - ইবনে কাসীরের ভাষ্য -
ইবনে কাসীর তার রচিত ‘আল-বেদায়া’ গ্রন্থের ৮ম খণ্ডের ১১৬৯ পৃষ্ঠায় ‘যিকরে এয়াযীদ বিন মোয়াবিয়া’ শীর্ষক অধ্যায়ে লিখেন:
বিভিন্ন বর্ণনায় আমরা জানতে পারি যে এয়াযীদ দুনিয়ার কুকর্ম পছন্দ করতো; মদ্যপান করতো, গান-বাজনায় ছিল আসক্ত, দাড়িবিহীন ছেলেদের সাথে সমকামিতায় লিপ্ত, ঢোল বাজাতো, কুকুর পালতো, ব্যাঙের, ভালুকের ও বানরের লড়াই লাগিয়ে দিতো। প্রতিদিন সকালে সে মদ্যপ অবস্থায় বানরকে ঘোড়ার পিঠের সাথে বেঁধে ঘোড়াকে দৌড় দিতে বাধ্য করতো।”
১০/ - ইবনে আসীরের মন্তব্য
ইবনে আসীর নিজ ‘তারীখ আল-কামিল’ গ্রন্থের ৩য় খণ্ডের ৪৫০ পৃষ্ঠায় মুনযির ইবনে যাবীর থেকে বর্ণনা করেন:
إِنَّهُ قَدْ أَجَازَنِي بِمِائَةِ أَلْفٍ وَلَا يَمْنَعُنِي مَا صَنَعَ بِي أَنْ أُخْبِرَكُمْ خَبَرَهُ، وَاللَّهِ إِنَّهُ لَيَشْرَبُ الْخَمْرَ.
-      ‘‘এটি সত্য যে এয়াযীদ আমাকে ১,০০,০০০ (এক লক্ষ) দিরহাম পুরস্কারস্বরূপ দিয়েছিল, কিন্তু এটি তার প্রকৃত অবস্থা বর্ণনা করা হতে আমাকে রুখবে না। আল্লাহর কসম, সে একজন মাতাল।”
১১/ - ‘মাতাল’ এয়াযীদ সম্পর্কে ইবনে জাওযীর মন্তব্য

ইবনে জাওযী তাঁর ‘ওয়াফা আল-ওয়াফা’ কেতাবে বলেন:
ما ذكره الإمام ابن الجوزي قال: لما دخلت سنة اثنين وستين ولّى يزيد عثمان بن محمد بن أبي سفيان المدينة، فبعث إلى يزيد وفدا من المدينة، فلما رجع الوفد أظهروا شتم يزيد، وقالوا: قدمنا من عند رجل ليس له دين، يشرب الخمر، ويعزف بالطنابير، ويلعب بالكلاب؛ وإنا نشهدكم أنا قد خلعناه. وقال المنذر: أما واله لقد أجازني مائة ألف درهم، ولا يمنعني ما صنع أن أصدقكم عنه.
-      এয়াযীদ তার চাচাতো ভাই উসমান বিন মুহাম্মদ বিন আবি সুফিয়ানকে মদীনার শাসক পদে নিয়োগ করে। উসমান উপহার সামগ্রীসহ এক প্রতিনিধি দল প্রেরণ করে এয়াযীদের কাছে তারই আনুগত্যের শপথ নেয়ার উদ্দেশ্যে। কিন্তু প্রতিনিধি দলের প্রত্যাবর্তনশেষে এর সদস্যরা বলেন, ‘আমরা এমন এক লোকের সাথে সাক্ষাৎ করে এসেছি যার কোনো ধর্ম নেই; সে মদ্যপান করে, বাদ্যযন্ত্র বাজায়, গায়িকা (ভ্রষ্টা নারী) ও কুকুর সাথে রাখে। আমরা তার প্রতি আনুগত্যের শপথ প্রত্যাহার করে নেয়ার কথা ঘোষণা করছি।’ আবদুল্লাহ ইবনে আবি উমরু বিন হাফস মখযুমী বলেন, ‘এয়াযীদ আমাকে উপহার সামগ্রী দিয়েছিল। কিন্তু বাস্তবতা হলো, এই লোক আল্লাহর একজন শত্রু এবং মদ্যপ। আমি যেভাবে আমার এমামা (পাগড়ী) মাথা থেকে সরিয়ে ফেলছি, ঠিক একইভাবে তার থেকে নিজেকে আলাদা করবো।”[১৬.]
১২/ - কুসতুনতুনিয়া-বিষয়ক হাদীসের অপব্যাখ্যার অপনোদন
 ‘‘তিনি মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছেন, ‘নৌযুদ্ধে অংশগ্রহণকারী আমার সাহাবীদের প্রথম দলটি বেহেশতী হবে।’ মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর পর বলেন,
أوَّلُ جَيْشٍ مِنْ أُمَّتِي يَغْزُونَ مَدِينَةَ قَيْصَر مَغْفُورٌ لَهُمْ.
-      ‘আমার সাহাবীদের মধ্যে প্রথম বাহিনী যারা (রোমক) সিজারের শহর (কুসতুনতুনিয়া তথা কনস্টানটিনোপোল/ইস্তাম্বুল) জয় করবে, তাদের গুনাহ মাফ করা হবে’।”[১৭.]
প্রথমতঃ সিজারের শহর জয়ী প্রথম বাহিনীর মধ্যে এয়াযীদ ছিল না, যেমনটি আবু দাউদের সুনানে বর্ণিত সহীহ হাদীসে বিবৃত হয়েছে:
عَنْ أَسْلَمَ أَبِي عِمْرَانَ قَالَ: غَزَوْنَا مِنَ الْمَدِينَةِ نُرِيدُ الْقُسْطَنْطِينِيَّةَ، وَعَلَى الْجَمَاعَةِ عَبْدُ الرَّحْمَنِ بْنُ خَالِدِ بْنِ الْوَلِيدِ.
-       হযরত আসলাম আবি ইমরান রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু বলেন, “আমরা কনস্টানটিনোপোল জয়ের উদ্দেশ্যে মদীনা হতে বের হই। আবদুর রহমান বিন খালেদ বিন ওয়ালিদ ছিলেন এই বাহিনীর প্রধান।” [১৮.]
ইমাম তাবারী নিজ ‘তারিখ’ গ্রন্থে বলেন -
فمما كان فيها من ذلك دخول المسلمين مع عبد الرحمن بن خالد بن الوليد بلاد الروم ومشتاهم بها وغزو.
-      আবদুর রহমান বিন খালেদ বিন ওয়ালিদের সেনাপতিত্বে ৪৪ হিজরী সালে মুসলমান বাহিনী রোমে (কনস্টানটিনোপোল) প্রবেশ করেন এবং সেখানে গযওয়া (ধর্মযুদ্ধ) সংঘটিত হয়।[১৯. দলিলচিত্র-http://www.ahlus-sunna.com/index.php?option=com_content&view=article&id=46&Itemid=29&limitstart=82]
অথচ এয়াযীদ আরও বহু পরে ওখানে যায়। উপরন্তু, তাকে সেখানে পাঠানো হয়েছিল শাস্তিস্বরূপ; আর সে ওই প্রথমে অংশগ্রহণকারী যোদ্ধাদের প্রতি বিদ্রূপাত্মক মন্তব্য করেছিল।
ইমাম ইবনে আসীর রহমতুল্লাহি আলাইহি লিখেন: 
في هذه السنة وقيل ‏:‏ سنة خمسين سير معاوية جيشًا كثيفًا إلى بلاد الروم للغزاة ، وجعل عليهم سفيان بن عوف ، وأَمَرَ ابنه يزيد بالغزاة معهم فتثاقل واعتلّ فأمسك عنه أبوه ، فأصاب الناس في غزاتهم جوعٌ ومرض شديد ، فأنشأ يزيد يقول ‏:ما إن أبالي بما لاقت جموعهم  بالفرقدونة من حمى ومن موم
إذا اتكأت على الأنماط مرتفقًا  بدير مروان عندي أم كلثومِ ‏
فبلغ معاوية شعره، فأقسم عليه ليلحقنّ بسفيان في أرض الروم، ليصيبه ما أصاب الناس، فسار ومعه جمع كثير أضافهم إليه أبوه.
-      এই বছর, অর্থাৎ, ৪৯ বা ৫০ হিজরী সালে হযরত আমীরে মোয়াবিয়া রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু রোমের (কনস্টানটিনোপোল) উদ্দেশ্যে এক বিশাল বাহিনী প্রেরণ করেন। তিনি এর দায়িত্বভার অর্পণ করেন সুফিয়ান বিন আউফের প্রতি এবং তাঁর ছেলে এয়াযীদকে ওই বাহিনীর সাথে যেতে বলেন। কিন্তু এয়াযীদ ‘অসুস্থ হওয়ার ভান করে এবং যেতে অস্বীকৃতি জানায়’। যোদ্ধারা যখন ক্ষুধা ও রোগ-ব্যাধিগ্রস্ত হন, তখন সে ব্যঙ্গ করে কবিতায় বলে, ‘ফারকুদওয়ানা-এ মহা গযবে তারা পতিত হয়েছে; তাদের জ্বর বা অন্য যা-ই কিছু হোক, তাতে আমার যায় আসে না। কেননা, আমি বসে আছি উচ্চ ফরাশে (ম্যাট্রেস); আর আমার বাহুবন্ধনে আছে উম্মে কুলসুম (এয়াযীদের স্ত্রীদের একজন)।’
‘‘হযরত আমীরে মোয়াবিয়া রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু যখন এই কবিতার শ্লোক সম্পর্কে জানতে পারেন, তখন তিনি এয়াযীদকে শপথ গ্রহণ করতে ও কনস্টানটিনোপোলে সুফিয়ান ইবনে আউফের সাথে যোগ দিতে বাধ্য করেন, যাতে করে ’সেও ইসলামের মোজাহিদদের মোকাবেলাকৃত কঠিন পরীক্ষার অংশীদার হতে পারে’ (এটি এয়াযীদের প্রতি শাস্তি ছিল)।এমতাবস্থায় এয়াযীদ অসহায় হয়ে পড়ে এবং তাকে যুদ্ধে যেতে হয়; আর হযরত আমীরে মোয়াবিয়া রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু তার সাথে আরেকটি বাহিনী প্রেরণ করেন।” [২০.]
ইমাম বদরুদ্দীন আইনী রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন:
قلت: الْأَظْهر أَن هَؤُلَاءِ السادات من الصَّحَابَة كَانُوا مَعَ سُفْيَان هَذَا وَلم يَكُونُوا مَعَ يزِيد بن مُعَاوِيَة، لِأَنَّهُ لم يكن أَهلا أَن يكون هَؤُلَاءِ السادات فِي خدمته.
-      আমি বলি, অসংখ্য সাহাবী রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু হযরত সুফিয়ান ইবনে আউফ রাদিয়াল্লাহু আনহুএর অধীনে যুদ্ধে গিয়েছিলেন এবং ‘এয়াযীদ ইবনে মোয়াবিয়ার নেতৃত্বে যান নি, কেননা সে তাঁদেরকে নেতৃত্বদানে অযোগ্য ছিল’।” [২১.]
কনস্টানটিনোপোলে সেনা অভিযানের সার-সংক্ষেপ নিম্নরূপ:
* প্রথম আক্রমণ  পরিচালিত হয় ৪২ হিজরী সালে। দ্বিতীয় দফায় আক্রমণ হয় ৪৩ হিজরীতে এবং এর সেনাপতি ছিলেন হযরত বসর বিন আবি আরকা।
* তৃতীয় অভিযান পরিচালনা করা হয় ৪৪ হিজরী সালে এবং এটি নেতৃত্ব দেন আবদুর রহমান বিন খালেদ বিন ওয়ালীদ। পরবর্তী অভিযান ছিল ৪৬ হিজরীতে যার সেনাপতি ছিলেন মালিক বিন আবদির্ রহমান ও আবদুর রহমান বিন খালেদ বিন ওয়ালীদ।
* ৪৭ হিজরীতে পরবর্তী অভিযান পরিচালনা করেন মালিক বিন হোবায়রা ও আবদুর রহমান বিন কায়েমী। ৪৯ হিজরী সালে কনস্টানটিনোপোল তিনবার আক্রমণ করা হয়। আর সর্বশেষ ৫০ হিজরীতে যে অভিযান পরিচালিত হয় তাতে এয়াযীদ যোগ দেয়।
হযরত আমীরে মোয়াবিয়া রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু এয়াযীদকে আটক করে সিজারের ওখানে পাঠান, কারণ সে মোজাহিদীনবৃন্দের প্রতি বিদ্রূপ করতো। তাই শাস্তিস্বরূপ তাকে ওখানে পাঠানো হয়েছিল, জ্বেহাদের জন্যে নয়।
অতএব, এয়াযীদ সপ্তম সেনা অভিযানে অংশগ্রহণ করেছিল, প্রথম অভিযানে নয় । আর বোখারী শরীফে উল্লেখিত হয়েছে,
أوَّلُ جَيْشٍ مِنْ أُمَّتِي يَغْزُونَ مَدِينَةَ قَيْصَر مَغْفُورٌ لَهُمْ.
-      আমার উম্মতের মধ্যে সিজারের নগরী আক্রমণকারী প্রথম সেনা দলের পাপ-পঙ্কিলতা মাফ করা হবে।”
রেফারেন্স:
আল-বেদায়া ওয়ান্ নেহায়া
ইবনে খালদুনের ইতিহাস
ইমাম ইবনে আসীরের ইতিহাস
১৩/ - এয়াযীদের কুরআন প্রত্যাখ্যান
নিচের রেফারেন্সগুলো দেখুন -
১. আল-বেদায়া ওয়ান নেহায়া ৮ম খণ্ড, ২০৪ পৃষ্ঠা, যিকর রাস আল-হুসাইন
২. মিনহাজ আস্ সুন্নাহ ২য় খণ্ড, ২৪৯ পৃষ্ঠা, যিকর এয়াযীদ
৩. শরহে ফেকাহে আকবর, ৭৩ পৃষ্ঠা, যিকর এয়াযীদ
৪. শরহে তাফসীরে মাযহারী, ৫ম খণ্ড, ২১ পৃষ্ঠা, সূরাহ ইবরাহীম
৫. শাযরাহ আল-যাহাব, ৬৯ পৃষ্ঠা, যিকরে শাহাদাতে হুসাইন
৬. মাকাতাহিল হুসাইন ২য় খণ্ড, ৫৮ পৃষ্ঠা, যিকরে শাহাদাতে হুসাইন
৭. তাযকিরায়ে খাওওয়াস, ১৪৮ পৃষ্ঠা
৮. তারীখে তাবারী ১১তম খণ্ড, ২১-২৩ পৃষ্ঠা, যিকর ২৮৪ হিজরী
৯. তাফসীরে রূহুল মা’আনী (সূরা মোহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম)
১৪/ - তাফসীরে রূহুল মা’আনী গ্রন্থটি এয়াযীদকে কাফের ঘোষণা করে
আল্লামা আলূসী বলেন,
وعلى هذا القول لا توقف في لعن يزيد لكثرة أوصافه الخبيثة وارتكابه الكبائر في جميع أيام تكليفه ويكفي ما فعله أيام استيلائه بأهل المدينة ومكة.
-      অপবিত্র এয়াযীদ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর রেসালতকে অস্বীকার করেছিল। মক্কা মোয়াযযমা ও মদীনা মোনাওয়ারার মুসলমান সর্বসাধারণ এবং মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামএর পরিবার সদস্যদের প্রতি যে (অসভ্য ও বর্বর) আচরণ সে করেছিল, তাতে প্রমাণ হয় যে সে কাফের (অবিশ্বাসী) ছিল।”
আমীরুল মোমেনীন (খলীফা) উমর ইবনে আব্দিল আযীযের দরবারে একবার মানুষেরা এয়াযীদ সম্পর্কে আলোচনা করছিলেন। এমন সময় মানুষের মধ্যে কেউ একজন এয়াযীদকে ‘আমীরুল মোমেনীন’ বলে সম্বোধন করে। এতে খলীফা রাগান্বিত হয়ে ওই লোককে জিজ্ঞেস করেন, ‘তুমি (দুশ্চরিত্র, দুরাত্মা) এয়াযীদকে আমীরুল মোমেনীন হিসেবে ডাকো?’ অতঃপর খলীফা উমর ইবনে আবদিল আযীয ওই লোককে ২০টি দোররা মারার নির্দেশ দেন।[২২.]
১৫/ - এয়াযীদের প্রতি লা’নত তথা অভিসম্পাত দেয়ার প্রমাণ
نقل البرزنجي في الإشاعة والهيثمي في الصواعق أن الإمام أحمد لما سأله ولده عبد الله عن لعن يزيد قال كيف لا يلعن من لعنه الله تعالى في كتابه فقال عبد الله قد قرأت كتاب الله عز وجل فلم أجد فيه لعن يزيد فقال الإمام إن الله تعالى يقول: فَهَلْ عَسَيْتُمْ إِنْ تَوَلَّيْتُمْ أَنْ تُفْسِدُوا فِي الْأَرْضِ وَتُقَطِّعُوا أَرْحامَكُمْ أُولئِكَ الَّذِينَ لَعَنَهُمُ اللَّهُ الآية وأي فساد وقطيعة أشد مما فعله يزيد انتهى.
-       এয়াযীদের প্রতি অভিসম্পাত দেয়ার প্রমাণ বের করা হয়েছে নিম্নবর্ণিত আয়াতটি থেকে যা আল-বরযানজি নিজ ’আল-আশয়াত’ কেতাবে এবং ইমাম হায়তামী তাঁর ‘আস্ সাওয়াইক’ পুস্তকে বর্ণনা করেছেন ইমাম আহমদ রহমতুল্লাহি আলাইহি হতে এই মর্মে যে, ইমাম সাহেবের পুত্র আবদুল্লাহ এয়াযীদের প্রতি লা’নত বর্ষণের পক্ষে কুরআন মজীদের কোথায় প্রামাণ্য দলিল আছে সে ব্যাপারে তাঁকে জিজ্ঞেস করেন। ইমাম আহমদ রহমতুল্লাহি আলাইহি এর পক্ষে উদ্ধৃত করেন আল-কুরআনের বাণী: “তবে কি তোমোদের এ লক্ষণ দৃষ্টিগোচর হচ্ছে যে তোমরা শাসনক্ষমতা লাভ করলে পৃথিবীতে বিপর্যয় ডেকে আনবে এবং আপন আত্মীয়তার বন্ধন ছিন্ন করবে? এরা হচ্ছে ওই সব লোক যাদের প্রতি আল্লাহতা’লা অভিসম্পাত (লা’নত) দিয়েছেন...” (৪৭:২২-২৩)। বস্তুতঃ এয়াযীদ যে অপকর্ম করেছে, তার থেকে বড় কোনো ফিতনা আর হতে পারে কি?[২৩].
-                                                 সমাপ্ত
তথ্যসূত্র
১. আহমদ : আল মুসনাদ, মুসনাদু আলী ইবনে আবী তালিব, ১:৮১, হাদীস নং ৬১৫।
ক) বুখারী : আস সহীহ, বাবু হারামিল মদীনা, ৩:২০ হাদীস নং ১৮৬৭।
খ) মুসলিম : আস সহীহ, বাবু ফদ্বলিল মদীনা, ২:৯৯৪ হাদীস নং ১৩৬৬।
গ) আবূ দাঊদ : আস সুনান, বাবু ফি তাহরিমিল মদীনা, ২:২১৬ হাদীস নং ২০৩৪।
ঘ) তিরমিযী : আস সুনান, ৪:৪৩৮ হাদীস নং ২১২৭।
ঙ) নাসায়ী : আস সুনানুল কুবরা, ৪:২৫৮ হাদীস নং ৪২৬৩।
চ) ইবনে কাসীর : আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া, ৮:২৭৪।
২. আল কুরআন : আল আহযাব, ৩৩:৫৭।
৩. ইবনে কাসীর : আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া, ৮:২৮৩।
৪. ইবনে কাসীর : আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া, ৮:২৭৯।
৫. ইবনে কাসীর : আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া, ৮:২৮০।
৬.ইবনে কাসীর : আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া, ৮:২৮১।
৭. ইমাম ইবনে হাজর আসকালানী : ‘আল-’এমতা বিল্ আরবাঈন আল-মাতবাইনাত আস্ সামা’আ’, দার আল-কুতুব আল-এলমিয়্যা, বৈরুত, লেবানন হতে ১৯৯৭ সালে প্রকাশিত  প্রণীত  পুস্তকের ৯৬ পৃষ্ঠা।
৮. ইমাম আসকালানী : ‘তাহযিবুত্ তাহযিব’, ৬:৩১৩।
৯. ইমাম সৈয়ুতী রচিত : তারিখুল খুলাফা, ১:১৬৫।
১০. ইমাম সৈয়ুতী প্রণীত : তারিখুল খুলাফা ১:১৬৭।
১১. আল্লামা আলূসী : রূহুল মা’আনী’, আত তাফসীর ৯ম খণ্ড, আল-কুরআন ৪৭:২২-২৩-এর ব্যাখ্যায়।
১২. আল্লামা আলূসী : রূহুল মা’আনী’, আত তাফসীর, ২৬:৭৩।
১৩. সিয়্যার আল-আ’লম আন্ নুবালা : ৪:৩৭-৩৮।
১৪. তারিখুল ইসলাম ওয়া তাবাকাত আল-মাশাহির ওয়াল্ আ’লম : ৫:৩০।
১৫. সিয়ার আল-আ’লম আন্ নুবালাহ : ৪:৩৭ ।
১৬. ইবনে জাওযী : ওফাউল ওফা, ১:১০৩।
১৭.  বুখারী : আস সহীহ, ৪র্থ খণ্ড, হাদীস - ১৭৫।
১৮. আবু দাউদ : আস সুনান, ২য় খণ্ড, হাদীস নং ২৫১২; আলবানীও এই হাদীসকে সহীহ বলেছে তার ‘তাখরিজ’ পুস্তকে।
১৯. তারিখে তাবারী : ৪৪ হিজরীর ঘটনা, ৫:২১২ পৃষ্ঠা; কায়রোর ‘দারুল মা’আরিফ’ প্রকাশনী হতে প্রকাশিত।
২০ ‘তারিখে ইবনে আল-আসীর’, ৩:১৩১ পৃষ্ঠা।
২১.‘উমদাতুল কারী : শরহে সহীহ আল-বোখারী, ১৪/১৯৭-১৯৮।
২২. তাহযিবুত্ তাহযিব : ১:৩৬১ পৃষ্ঠা।
২৩. আল্লামা আলূসী : রুহুল মা’আনী, আত তাফসীর, ৯ম খণ্ড, সূরা মোহাম্মদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম), ২২-২৩।
লিঙ্ক: http://kazisaifuddinhossain.blogspot.com/2017/12/blog-post.html

মাথা দামী না হাত দামীঃ ইমাম আলি মকাম হোসাইন (আলাইহিমুস সালাম)

সৈয়দ গোলাম কিবরিয়া আজহারী 

ইয়াজিদ লানতি শর্ত দিল, হে হোসাইন! হয়ত হাত দাও (বায়াতের জন্য) আর না হয় শির দাও, মাথা দাও। 

আমাদের কাছে যদি কেউ দুটো জিনিসের যেকোন একটা দাবী করে তখন আমরা তুলনা করে দেখব কোনটার মূল্য তুলনামূলক কম।

ইমাম হোসাইন আলাইহিস সালাম চিন্তা করলেন, আমার মাথা একজন মুসলমানের মাথা, কিন্তু আমার এই হাত এক লাখ চব্বিশ হাজার নবী রাসুলের প্রতিনিধিত্ব করে। ইব্রাহিম আঃ যেই হাত নমরুদের হাতে দেন নাই, মুসা আঃ যেই হাত ফিরয়াউনের হাতে দেন নাই, হুজুর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যেই হাত আবু জাহলের হাতে দেন নাই, আমি ইমাম হোসাইন এই হাত কিভাবে অত্যাচারী ফাসিক শরাবী নারীলোভী লম্পট ইয়াজিদের হাতে দেব?

রে পাপিষ্ঠ ইয়াজিদ! নরাধম! তুই আমার শির নিয়ে যা, কিন্তু সেই শিরও জিন্দা তোর সামনে ঝুকবে না, নিতে হলে কেটে নিতে হবে।

তো ইমাম শির দিয়ে দিলেন! 

"শাহ আস্ত হোসাইন, বাদশাহ আস্ত হোসাইন
দ্বীন আস্ত হোসাইন, দ্বীনে পানাহ আস্ত হোসাইন 

সার দাদ না দাদ, দাস্ত দার দাস্তে ইয়াজিদ
হাক্কাকে বেনা লা ইলাহা আস্ত হোসাইন।"

হোসাইন শাহানশাহ, হোসাইন বাদশাহ
হোসাইন ধর্ম, হোসাইন দ্বীনের আশ্রয়স্থল

শির দিলেন তবু হাত দিলেন না ইয়াজিদের হাতে
লা ইলাহা কালিমার বুনিয়াদ ইমাম হোসাইন!"

- খাজা এ আজমির হজরত সায়্যিদ মুইনুদ্দিন চিশতি রাহঃ

ইয়াজিদ সম্পর্কে ইমাম বুখারী (রহ) এর নামে মিথ্যাচারকারী ড জাকির নায়েকের জবাব :

জাকির নায়েক তার কাজকে সঠিক প্রমান করার জন্য যুক্তি প্রদান করে যে,

“ সহীহ বুখারীতে একটি হাদীস আছে যেখানে বলা হয়েছে যে যারা কনস্টান্টিনোপল (কুসতুনতুনিয়া) জয় করবেন তাঁরা জান্নাত পাবেন এবং ইয়াজিদ ছিল ঐ বাহিনীর কমান্ডার” 
www.youtube.com/watch?v=R1qgyHCb0Jw
________________________________
এই ব্যক্তি সহীহ বুখারীর নামে সম্পূর্ন মিথ্যা কথা বলেছে।
________________________________

সহীহ বুখারীতে এমন কোন হাদীস নেই যেখানে বলা হয়েছে যে,

``যারা কনস্টান্টিনোপল (কুসতুনতুনিয়া) জয় করবেন তাঁরা জান্নাত পাবেন এবং ইয়াজিদ ছিল ঐ বাহিনীর কমান্ডার”।

ইহা সহীহ বুখারীর নামে সরলপ্রান মুসলিমগনকে বিভ্রান্ত করার একটি ঘৃন্য প্রচেষ্টা । হাদীসের নামে যারা মিথ্যা কথা বলে তাদের ইসলাম নিয়ে কথা বলার কোন অধিকার থাকতে পারে না।
হাদীসের নামে জেনেশুনে মিথ্যা কথা বলা রসূলে কারিম সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম'র সঙ্গে ও ইসলামের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা।

★ রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম বলেছেন,

“ যে ব্যক্তি আমার সম্পর্কে মিথ্যা কথা বলে তার ঠিকানা জাহান্নাম”

[তথ্যসূত্র ; সহীহ বুখারী, খন্ড ০১, পৃ. ৪১, হাদীস ১০৬]

উক্ত ইয়াজিদ'র প্রেমে আসক্ত ব্যাক্তি তার কাজকে সঠিক প্রমান করার জন্য সহীহ বুখারীর সুবিখ্যাত তফসীরকার ইমাম ইবনে হাজার আসকালানী (রাঃ) এর নামেও সম্পূর্ন মিথ্যা কথা বলেছেন।
তিনি বলেছেন, “ ইবনে হাজার যেখানে বুখারীর তফসীরে তাকে (ইয়াজিদকে) জান্নাতী বলেছেন, সেখানে আমি কিভাবে তাকে (ইয়াজিদকে) অভিশাপ দিতে পারি”?

[www.youtube.com/watch?v=R1qgyHCb0Jw]।

________________________________
এটিও সম্পূর্ন মিথ্যা এবং বানোয়াট কথা ।
________________________________

উক্ত ইয়াজিদ আসক্ত ব্যাক্তি ইমাম ইবনে হাজার আসকালানী (রাঃ) এর নামে সম্পূর্ণ বিপরীত কথা বানিয়ে ফেললেন।

আসুন, দেখে নিই, ইমাম ইবনে হাজার আসকালানী (রাঃ)ইয়াযিদ সম্পর্কে ঠিক কি বলেছেন :

১.

ইমাম ইবনে হাজার ইয়াজিদের ক্ষমাপ্রাপ্ত হওয়ার ধারণাটিকে ধূলিসাৎ করেছেন :
ইমাম ইবনে হাজার আসকালানী (রাঃ) তাঁর তফসীরে, ইয়াজিদের ‘মাগফুর’ বা ক্ষমাপ্রাপ্ত হওয়ার ধারণাটিকে ধূলিসাৎ করেছেন এভাবে , “

ইবনে মুহলাব বলেছেন যে, এই হাদীসে আমীর মুয়াবিয়ার কথা ইঙ্গিত করা হয়েছে কারন তিনি প্রথম নৌ অভিযান করেছিলেন এবং এই হাদীসে ইয়াযিদের কথাও ইঙ্গিত করা হয়েছে কারন সে প্রথম কাইসারের নগরী আক্রমন করেছিল (এই তথ্য সম্পূর্ণ মিথ্যা কারন ইয়াযিদ প্রথম যুদ্ধে অংশগ্রহন করে নি সে অনেক পরের একটি অভিযানে তার পিতা কর্তৃক শাস্তিস্বরুপ প্রেরিত হয়েছিল- লেখক)

কিন্তু, ইবনে আল তীন এবং ইবনে আল্ মূনীর এর উত্তর দিয়েছেন এবং বলেছেন যে, ইহা অপরিহার্য নয় যে, ব্যতিক্রম ব্যতিরেকে সকলেই এই ক্ষমাপ্রাপ্তির অন্তর্ভুক্ত কারন উলামায়ে ক্বিরাম তথা জ্ঞানী ব্যক্তিবর্গ সকলেই একমত যে, তারাই এই ক্ষমাপ্রাপ্তির অন্তর্ভুক্ত হবে যারা প্রকৃতই তার উপযুক্ত হবে কারন আক্রমনকারীদের মধ্যে যদি কেউ পরে মুরতাদ হয়ে যায় তাহলে সে আর ক্ষমাপ্রাপ্তগনের অন্তর্ভুক্ত বলে বিবেচিত হবে না এবং এটা প্রমান যে উক্ত হাদীসে উল্লেখিত ক্ষমাপ্রাপ্তির বিষয়টি শর্তাধীন।

[ তথ্যসূত্র : ফাতহুল বারী শারাহ সাহীহ বুখারী - ইমাম ইবনে হাজার আসকালানী – খন্ড নং ৬ – পৃ নং ২০০-২০১ ]

________________________________
দেখা যাচ্ছে যে, ইমাম ইবনে হাজার আসকালানী (রাঃ) যে ধারণাটিকে খন্ডন করলেন উক্ত ইয়াজিদ আসক্ত ব্যাক্তি ঐ ধারণাটিকেই তাঁর নামে চালিয়ে দিলেন।
________________________________

২.

ইমাম ইবনে হাজার আসকালানী (রাঃ) তাঁর ‘আল ইমতা বিল আরবাঈন’ গ্রন্থের শিরোনামই দিয়েছেন

              ```’ইয়াযীদের প্রতি লা’নত````

ইমাম ইবনে হাজার আসকালানী (রাঃ) লিখেছেন,

“ইয়াযীদকে ভক্তি ও তার প্রশংসা ’পথভ্রষ্ট, গোমরাহ ব্যক্তি ছাড়া আর কেউই করে না; আর তার ইমান তথা বিশ্বাস একেবারেই শূন্য। কেননা, ইয়াযীদের এমন সব বৈশিষ্ট্য ছিল যার ভক্ত, অনুরক্ত হলে কুফর তথা কুফরির তথা অবিশ্বাসের যোগ্য হতে হয; কারন, কেবল আল্লাহর উদ্দেশ্যে ভালোবাসা এবং কেবল আল্লাহর উদ্দেশ্যে ঘৃণা করাই হল ঈমানের লক্ষণ।”

[ তথ্যসূত্র : ‘আল-’এমতা বিল্ আরবাঈন আল-মাতবাইনাত আস্ সামা’আ’- ইমাম ইবনে হাজর আসকালানী; পৃষ্ঠা নং ৯৬, দার আল-কুতুব আল-’এলমিয়্যা, বৈরুত, লেবানন হতে ১৯৯৭ সালে প্রকাশিত]

৩.

ইমাম ইবনে হাজার আসকালানী (রাঃ)এর মতে, ইয়াযীদের প্রশংসা কারীকে কুড়িবার দোর্রা মারতে হবে : ইমাম ইবনে হাজার আসকালানী (রাঃ) লিখেছেন, “এয়াহইয়া ইবনে আব্দিল মুলক্ বিন আবি গানিয়্যা যিনি ’নির্ভরযোগ্য’ বর্ণনাকারীদের একজন’, তিনি ’নির্ভরযোগ্য’ বর্ণনাকারী নওফল বিন আবি আকরাব থেকে শুনেছেন: একবার খলীফা উমর ইবনে আবদিল আযীয (২য় উমর) এর দরবারে মানুষেরা ইয়াযীদ ইবনে মু’আবিয়া সম্পর্কে আলাপ করছিলেন। ওই সময় একজন লোক ইয়াযীদকে ‘আমীরুল মুমিনিন (ঈমানদারদের শাসক) খেতাবে সম্বোধন করে। এটি শুনে খলীফা ২য় উমর (রাগান্বিত হয়ে) তাকে বলেন, “তুমি ইয়াযীদকে আমীরুল মো’মেনীন ডেকেছ?” অতঃপর তিনি ওই লোকটিকে ২০টি দোর্রা মারার হুকুম দেন।

[ ‘তাহযিবুত্ তাহযিব’- ইমাম ইবনে হাজার আসকালানী; খন্ড নং ৬, পৃষ্ঠা নং ৩১৩ ]

হাদীসে কুসতুনতুনিয়ার অপব্যাখ্যার জবাব

কৃতঃ মুহাম্মদ আখতারুজ্জামান

[নাহমাদুহু ওয়ানুসাল্লি ওয়ানুসাল্লিমু আলা হাবীবিহিল করীম ওয়ালা আলিহী ওয়া আসহাবিহী আজমায়ীন আম্মা বা’দ]

বর্তমান সময়ে প্রচলিত ফিতনা সমূহের মধ্যে একটি হল ইয়াযিদকে লা’নতি(অভিশপ্ত) না মেনে তাকে নিরাপরাধ এমনকি আল্লাহর নিকট মাকবুল এবং জান্নাতী ঘোষণা দিয়ে এর প্রচার করা। ইয়াযিদের ব্যাপারে নানা ঠুনকো বর্ণনা এবং কারবালা ও তার পরবর্তী ঘটনায় তার সরাসরি সম্পৃক্ত না থাকা দিয়ে তাকে নিষ্পাপ প্রমাণের এক নির্লজ্জ অপচেষ্টা চালানো হচ্ছে। এমনকি সহীহ আল বুখারীতে বর্ণিত একটি হাদীসকে তার শানে সম্পৃক্ত করে তার পক্ষে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে। যেখানে এই হাদিসের অনুসারেও ইয়াযিদ এর হুকুমের অংশ নয় এটাই আহলে ইলমের মত এবং এটাই সত্য। সত্যনিষ্ঠ ঐতিহাসিক বর্ণনার মাধ্যমেই ইয়াযিদ আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতের নিকট একজন পাপিষ্ঠ ও লাঞ্ছিত ব্যক্তি, তার উপর আল্লাহর লা’নত(অভিশম্পাত)। পরিতাপের বিষয়, নবীজাদা ইমাম হুসাইন রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুর শাহাদাত ও তাঁর পরবর্তীতে পবিত্র শহর মক্কা মদীনায় নৃশংস হামলার পরও এর হুকুমদাতা ইয়াযিদ কিভাবে নিরাপরাধ হয়। একজন মু’মিনের পক্ষে কিভাবে তা চিন্তা করা বা বলা সম্ভব?

হাদীসে কুসতুনতুনিয়া

حَدَّثَنِي إِسْحَاقُ بْنُ يَزِيدَ الدِّمَشْقِيُّ، حَدَّثَنَا يَحْيَى بْنُ حَمْزَةَ، قَالَ: حَدَّثَنِي ثَوْرُ بْنُ يَزِيدَ، عَنْ خَالِدِ بْنِ مَعْدَانَ، أَنَّ عُمَيْرَ بْنَ الأَسْوَدِ العَنْسِيَّ، حَدَّثَهُ – أَنَّهُ أَتَى عُبَادَةَ بْنَ الصَّامِتِ وَهُوَ نَازِلٌ فِي سَاحَةِ حِمْصَ وَهُوَ فِي بِنَاءٍ لَهُ، وَمَعَهُ أُمُّ حَرَامٍ – قَالَ: عُمَيْرٌ، فَحَدَّثَتْنَا أُمُّ حَرَامٍ: أَنَّهَا سَمِعَتِ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، يَقُولُ: أَوَّلُ جَيْشٍ مِنْ أُمَّتِي يَغْزُونَ البَحْرَ قَدْ أَوْجَبُوا، قَالَتْ أُمُّ حَرَامٍ: قُلْتُ: يَا رَسُولَ اللَّهِ أَنَا فِيهِمْ؟ قَالَ: أَنْتِ فِيهِمْ، ثُمَّ قَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: أَوَّلُ جَيْشٍ مِنْ أُمَّتِي يَغْزُونَ مَدِينَةَ قَيْصَرَ مَغْفُورٌ لَهُمْ، فَقُلْتُ: أَنَا فِيهِمْ يَا رَسُولَ اللَّهِ؟ قَالَ: لا

অর্থাৎ হযরত উমাইর ইবনে আসওয়াদ আনসী রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি উবাদা ইবনে সামিত রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুর কাছে আসলেন। তখন উবাদা রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু হিমস উপকূলে তার একটি ঘরে অবস্থান করছিলেন এবং তার সঙ্গে ছিলেন উম্মে হারাম রাদ্বিয়াল্লাহু আনহা। উমাইর রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু বলেন, উম্মে হারাম রাদ্বিয়াল্লাহু আনহা আমাদের কাছে বর্ণনা করেন, তিনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে ইরশাদ করতে শুনেছেন যে, আমার উম্মতের মধ্যে প্রথম যে দলটি নৌ যুদ্ধে অংশগ্রহণ করবে তাদের জন্য জান্নাত অনিবার্য। উম্মে হারাম রাদ্বিয়াল্লাহু আনহা আরজ করলেন, আমি কি তাদের মধ্যে হব? হুযুর পুরনূর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করলেন, তুমি তাদের মধ্যে হবে। উম্মে হারাম রাদ্বিয়াল্লাহু আনহা বলেন, তারপর নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করলেন, আমার উম্মতের প্রথম যে দলটি কায়সার [রোমক সম্রাট] এর রাজধানী [কুসতুনতুনিয়া তথা কনস্টানটিনোপোল] আক্রমণ করবে তারা ক্ষমাপ্রাপ্ত। তারপর আমি [উম্মে হারাম] বললাম ইয়া রাসূলাল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমি কি তাদের মধ্যে হব? নবী পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করলেন, না। 
১. সহীহ আল বুখারী, কিতাবুল জিহাদ, ৪:৪২ হাদীস নং- ২৯২৪/২৭৬৬ , ৫ম খণ্ড ১৮৩ পৃষ্ঠা হাদীস-২৭২৩ [ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ], তাবরানী আল মু’জামুল কবীর ২৫:১৩৩ হাদীস-৩২৩ মাকতাবা ইবনে তাইয়্যিমাহ কায়রো।

ইয়াযিদ প্রেমীদের বক্তব্য হল- কুসতুনতুনিয়ায় আক্রমণকারী প্রথম সৈন্যবাহিনীকে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কর্তৃক ক্ষমা ঘোষণা করা হয়েছে। আর ইয়াযিদ এ বাহিনীতে ছিল এতে করে সে ক্ষমাপ্রাপ্ত।

কিন্তু এরূপ দাবী নিয়ে আগ্রাসনকারী ব্যক্তিরা এই হাদীসের বক্তব্যটুকু ভালভাবে পড়ে নেয়া জরুরী মনে করেননি বোধহয়। নইলে তারা ইয়াযিদকে ক্ষমাপ্রাপ্ত হিসেবে দাবী করে কিভাবে। হাদিস শরীফের বক্তব্য অনুসারে কায়সারের শহর বা কুসতুনতুনিয়ায় হামলাকারী প্রথম বাহিনীকে ক্ষমা ঘোষণা করা হয়েছে; এমন বলা হয়নি যে, এ জিহাদে অংশ নেয়া সকলেই ক্ষমাপ্রাপ্ত। এমন কথা কোথাও বর্ণিত আছে কি? এ সম্পর্কিত দলীলগুলো নিম্নে উপস্থাপন করা হল।

কায়সারের শহর

আল্লামা ইবনে হাজর আসকালানী রাহমাতুল্লাহি আলাইহ তার বুখারী শরীফের ব্যাখ্যাগ্রন্থে উল্লেখ করেন-

وَجَوَّزَ بَعْضُهُمْ أَنَّ الْمُرَادَ بِمَدِينَةِ قَيْصَرَ الْمَدِينَةُ الَّتِي كَانَ بِهَا يَوْمَ قَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ تِلْكَ الْمَقَالَةَ وَهِيَ حِمْصُ وَكَانَتْ دَارَ مَمْلَكَتِهِ إِذْ ذَاكَ

অর্থাৎ কোন কোন উলামার মতে কায়সারের শহর দ্বারা ঐ শহরকে বুঝানো হয়েছে, যা হুযুর করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সময়ে কায়সারের অধীনে ছিল আর তা ছিল হিম্‌স বা হাম্‌স আর ঐ সময়ে সেখানেই কায়সারের শাসনকার্য চলত। [২]
২. আসকালানী ফাতহুল বারী শরহে সহীহ বুখারী ৬:১০৩ দারুল মা’রেফাহ বৈরুত।

এ বিষয়ক কোন হাদীসেই কুসতুনতুনিয়া শব্দের উল্লেখ হয়নি বরং উল্লেখ হয়েছে কায়সারের শহর এর। আর কায়সার রোমের বাদশাহর উপাধি। সে যেখানে অবস্থান করত সেটাকেই মদীনায় কায়সার বলা হত। আর এ মর্মে হাম্‌স ছিল সে শহর যেখানে প্রথম বাহিনী প্রেরণ হয় ১৫ হিজরীতে হযরত উমর ফারুক রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুর শাসনামলে। যেখানে বহু শীর্ষস্থানীয় সাহাবা কেরাম অংশ নেন। আল্লামা ইবনে আসীর উল্লেখ করেন –

فَلَمَّا فَرَغَ أَبُو عُبَيْدَةَ مِنْ دِمَشْقَ سَارَ إِلَى حِمْصَ، فَسَلَكَ طَرِيقَ بَعْلَبَكَّ

অর্থাৎ হযরত আবু উবাইদাহ রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু দামেশক হতে বের বা’লাবাক্ক শহরের রাস্তা হয়ে হিমসের দিকে রওনা হলেন। [৩]
৩. ইবনে আসীর তারিখে কামিল ২:৩২২ দারুল কিতাবিল আরাবী বৈরুত।

আল্লামা হাফেজ ইবনে কাসীর বর্ণনা করেন –

لَمَّا وَصَلَ أَبُو عُبَيْدَةَ فِي اتِّبَاعِهِ الرُّومَ الْمُنْهَزِمِينَ إِلَى حِمْصَ، نَزَلَ حَوْلَهَا يُحَاصِرُهَا، وَلَحِقَهُ خَالِدُ بْنُ الْوَلِيدِ فَحَاصَرُوهَا حِصَارًا شَدِيدًا، وَذَلِكَ فِي زَمَنِ الْبَرْدِ الشَّدِيدِ

অর্থাৎ ১৫ হিজরী সনে হযরত উমর ফারূক রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু হযরত আবু উবাইদাহ রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুর নেতৃত্বে একটি বাহিনী প্রেরণ করেন, তারা রোম বিজয় করে হিম্‌সের দিকে এগিয়ে যায়, পরবর্তীতে হযরত খালিদ বিন ওয়ালিদ রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু তাতে যোগ দেন। মুসলমানরা সেখানে অবস্থান নেন এবং অবরোধ করেন। সে সময় সেখানে প্রচন্ড শীত পড়ে এবং এ অবস্থায় মুসলমানরা কঠিন ধৈর্যের পরিচয় দেন। তারা হিমস জয় করেন। [৪]
৪. ইবনে কাসীর আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া,৮:২৪৮ দারু ইহয়ায়ুত তুরাসুল আরাবী বৈরুত, ৭:৫২ দারুল ফিকর বৈরুত।

এই ঘটনা তখনের যখন পাপিষ্ঠ ইয়াযিদের জন্মই হয়নি। ইয়াযিদের জন্ম প্রসঙ্গে ইতিহাসভিত্তিক বর্ণনা –

হাফেজ ইবনে কাসীরের মতে-

وُلِدَ سَنَةَ خَمْسٍ أَوْ سِتٍّ أَوْ سَبْعٍ وَعِشْرِينَ

অর্থাৎ ইয়াযিদ বিন মুয়াবিয়ার জন্ম ২৫/২৬/২৭ হিজরী সনে। [৫]
৫. ইবনে কাসীর আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া,৮:২৪৮ দারু ইহয়ায়ুত তুরাসুল আরাবী বৈরুত, ৮:২২৬ দারুল ফিকর বৈরুত।

ইমাম জালাল উদ্দীন সুয়ূতীর মতে-

২৫/২৬ হিজরীতে , ইবনে হাজর আসকালানীর মতে উসমান রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুর শাসনামলে, ইবনে আসীরের মতে ২৬ হিজরীতে। [৬]
৬. সুয়ূতী তারিখুল খুলাফা ১৫৬ পৃঃ (ইয়াযিদ বিন মুয়াবিয়া অধ্যায়), ইবনে আসীর তারিখে কামিল ২:৪৬০ দারুল কিতাবিল আরাবী বৈরুত, তাহযীবুত তাহযীব ১১:৩৬০।

কুসতুনতুনিয়ায় ১ম হামলা

এ বর্ণনা দ্বারা উদ্দেশ্য কুসতুনতুনিয়া হলেও সে বাহিনীতে ইয়াযিদ ছিলনা। সুতরাং সে ক্ষমার সংবাদ প্রাপ্তদের অন্তর্ভুক্ত নয়।

আল্লামা হাফেজ ইবনে কাসীরের বর্ণনানুসারে –

وَفِيهَا غَزَا مُعَاوِيَةُ بِلَادَ الرُّومِ حَتَّى بَلَغَ الْمَضِيقَ مَضِيقَ الْقُسْطَنْطِينِيَّةِ وَمَعَهُ زَوْجَتُهُ عَاتِكَةُ

অর্থাৎ ৩২ হিজরী সনে হযরত আমীরে মুয়াবিয়া রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু রোমে আক্রমণ করেন এবং একের পর এক স্থান অতিক্রম করেন এমনকি তার নেতৃত্বাধীন মুসলিম বাহিনী কুসতুনতুনিয়া পর্যন্ত পৌছে যায়। তার সাথে তার স্ত্রী আতিকাহও ছিলেন। [৭]
৭. ইবনে কাসীর আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া, ৭:১৭৯ দারু ইহয়ায়ুত তুরাসুল আরাবী বৈরুত, ৭:১৫৯ দারুল ফিকর বৈরুত।

আল্লামা ইবনে আসীর বর্ণনা করেন –

قِيلَ: فِي هَذِهِ السَّنَةِ غَزَا مُعَاوِيَةُ بْنُ أَبِي سُفْيَانَ مَضِيقَ الْقُسْطَنْطِينِيَّةِ وَمَعَهُ زَوْجَتُهُ عَاتِكَةُ بِنْتُ قَرَظَةَ

অর্থাৎ বর্ণিত আছে, এ বছরই হযরত আমীর মু’আবিয়া রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু কুসতুনতুনিয়া পর্যন্ত আক্রমণ করেন এবং তার সাথে তার স্ত্রী আতিকাহ বিন্তে কারযাহ ছিল। [৮]
৮. ইবনে আসীর তারিখে কামিল ২:৫০৩ দারুল কিতাবিল আরাবী বৈরুত।

আল্লামা তাবারীর তারিখেও ৩২ হিজরীর ঘটনায় অনুরূপ উল্লেখ হয়।

এটা ছিল কুসতুনতুনিয়ায় প্রথম হামলার বর্ণনা, যা ৩২ হিজরী সনে হয়েছিল। আর ইয়াযিদের জন্ম ২৫ বা ২৬ হিজরী সনে হয়েছিল। আর এ বর্ণনায় আমীর মু’আবিয়া রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুর সাথে তার স্ত্রী ছিলেন আর কারো কথা উল্লেখ হয়নি।

কুসতুনতুনিয়ায় ২য় হামলাঃ

কুসতুনতুনিয়ায় দ্বিতীয়বার অভিযান ৪৩ হিজরী সনে হয়। হাফেজ ইবনে কাসীরের বর্ণনা-

فِيهَا غَزَا بُسْرُ بْنُ أَبِي أَرْطَاةَ بِلَادَ الرُّومِ فَوَغَلَ فِيهَا حَتَّى بَلَغَ مَدِينَةَ قُسْطَنْطِينِيَّةَ

অর্থাৎ এ বছর অর্থাৎ ৪৩ হিজরীতে বসর বিন আবী আরতাহ রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুর নেতৃত্বে অভিযান পরিচালিত হয় আর তা রোম ছড়িয়ে কুসতুনতুনিয়া পর্যন্ত পৌছে যায়। [৯]
৯. ইবনে কাসীর আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া, ৮:২৭ দারু ইহয়ায়ুত তুরাসুল আরাবী বৈরুত, ৮:২৪ দারুল ফিকর বৈরুত।

তারিখে ইবনে খালদুনে উল্লেখ হয়-

ثم دخل بسر بن أرطاة أرضهم سنة ثلاث وأربعين ومشى بها وبلغ القسطنطينيّة

অর্থাৎ অতঃপর হযরত বসর বিন আরতাহ রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুর নেতৃত্বে মুসলিম বাহিনী রোমে প্রবেশ করে এবং পরবর্তীতে তারা কুসতুনতুনিয়া পর্যন্ত পৌছে যায়। [১০]
১০. তারিখে ইবনে খালদুন ৩:১১ দারুল ফিকর বৈরুত।

ইবনে জারীর তাবারীর তারিখে ৪৩ হিজরীর বর্ণনায় এর উল্লেখ হয়।

কুসতুনতুনিয়ায় ৩য় হামলাঃ

কুসতুনতুনিয়ায় ৩য় অভিযান ৪৪ অথবা ৪৬ হিজরী সনে পরিচালিত হয়। তারিখে কামিলে ৪৪ হিজরীর বর্ণনায় উল্লেখ হয়-

فِي هَذِهِ السَّنَةِ دَخَلَ الْمُسْلِمُونَ مَعَ عَبْدِ الرَّحْمَنِ بْنِ خَالِدِ بْنِ الْوَلِيدِ بِلَادَ الرُّومِ وَشَتَوْا بِهَا، وَغَزَا بُسْرُ بْنُ أَبِي أَرْطَأَةَ فِي الْبَحْرِ

অর্থাৎ এ বছর অর্থাৎ ৪৪ হিজরীতে মুসলিম বাহিনী হযরত আব্দুর রহমান বিন খালিদ বিন ওয়ালিদ রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুর নেতৃত্বে রোমে জিহাদ পরিচালনা করে আর শীতকালীন সময়ে সেখানে অবস্থান করেন। আর হযরত বসর বিন আবী আরতাহ রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু সমুদ্রপথে সেখানে আক্রমণ পরিচালনা করেন। [১১]
১১. ইবনে আসীর তারিখে কামিল ৩:৩৮ দারুল কিতাবিল আরাবী বৈরুত।

হাফেজ ইবনে কাসীরের আল বিদায়া ওয়ান নিহায়াতেও অনুরূপ বর্ণনা পাওয়া যায়।

তারিখে কামিলে ৪৬ হিজরীর বর্ণনায় উল্লেখ হয়-

فِي هَذِهِ السَّنَةِ كَانَ مَشْتَى مَالِكِ بْنِ عَبْدِ اللَّهِ بِأَرْضِ الرُّومِ، وَقِيلَ: بَلْ كَانَ ذَلِكَ عَبْدُ الرَّحْمَنِ بْنُ خَالِدِ بْنِ الْوَلِيدِ، وَقِيلَ: بَلْ كَانَ مَالِكُ بْنُ هُبَيْرَةَ

অর্থাৎ এ বছর অর্থাৎ ৪৬ হিজরীতে হযরত মালিক বিন আব্দুল্লাহ রোমে অবস্থান করেন, আর বলা হয় যে, আব্দুর রহমান বিন খালিদ বিন ওয়ালিদ রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু সেখানে ছিলেন। আবার বলা হয়ে থাকে মালিক বিন হুবাইরাহ রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু ছিলেন। [১২]
১২. ইবনে আসীর তারিখে কামিল ৩:৫১ দারুল কিতাবিল আরাবী বৈরুত।

হাফিজ ইবনে কাসীরের বর্ননাতেও অনুরূপ উল্লেখ হয়।

হযরত আব্দুর রহমান বিন খালিদ বিন ওয়ালিদ রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুর নেতৃত্ব দানের কথা কেবল ইতিহাসের কিতাবেই নয়, হাদীসের কিতাবেও তা উল্লেখ হয়েছে। আর তা সিহাহ সিত্তাহর কিতাব সুনানে আবী দাউদে-

عَنْ أَسْلَمَ أَبِي عِمْرَانَ قَالَ : غَزَوْنَا مِنَ الْمَدِينَةِ نُرِيدُ الْقُسْطَنْطِينِيَّةَ، وَعَلَى الْجَمَاعَةِ عَبْدُ الرَّحْمَنِ بْنُ خَالِدِ بْنِ الْوَلِيدِ، وَالرُّومُ مُلْصِقُو ظُهُورِهِمْ بِحَائِطِ الْمَدِينَةِ، فَحَمَلَ رَجُلٌ عَلَى الْعَدُوِّ، فَقَالَ النَّاسُ: مَهْ مَهْ لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ، يُلْقِي بِيَدَيْهِ إِلَى التَّهْلُكَةِ، فَقَالَ أَبُو أَيُّوبَ: ” إِنَّمَا نَزَلَتْ هَذِهِ الْآيَةُ فِينَا مَعْشَرَ الْأَنْصَارِ لَمَّا نَصَرَ اللَّهُ نَبِيَّهُ، وَأَظْهَرَ الْإِسْلَامَ قُلْنَا: هَلُمَّ نُقِيمُ فِي أَمْوَالِنَا وَنُصْلِحُهَا “، فَأَنْزَلَ اللَّهُ تَعَالَى: {وَأَنْفِقُوا فِي سَبِيلِ اللَّهِ وَلَا تُلْقُوا بِأَيْدِيكُمْ إِلَى التَّهْلُكَةِ} فَالْإِلْقَاءُ بِالْأَيْدِي إِلَى التَّهْلُكَةِ أَنْ نُقِيمَ فِي أَمْوَالِنَا وَنُصْلِحَهَا وَنَدَعَ الْجِهَادَ “، قَالَ أَبُو عِمْرَانَ: فَلَمْ يَزَلْ أَبُو أَيُّوبَ يُجَاهِدُ فِي سَبِيلِ اللَّهِ حَتَّى دُفِنَ بِالْقُسْطَنْطِينِيَّةِ

অর্থাৎ আসলাম আবূ ইমরান রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমরা মদীনা মুনাওয়ারাহ হতে কুসতুনতুনিয়া ( ইস্তাস্বুল) অভিমুখে যুদ্ধ যাত্রা করলাম। আমাদের সেনাপতি ছিলেন খালিদ ইবন ওয়ালীদের পুত্র আবদুর রহমান রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু। রোমের সৈন্যদল ইস্তাম্বুল শহরের দেওয়ালে পিঠ লাগিয়ে যুদ্ধের জন্য দন্ডায়মান ছিল। এমতাবস্থায় এক ব্যক্তি শত্রু- সৈন্যের উপর আক্রমণ করে বসল। তখন আমাদের লোকজন বলে উঠল : থাম, থাম, লা ইলাহা ইল্লাহ্, সে তো নিজেই ধ্বংসের দিকে নিজেকে ঠেলে দিচ্ছে। তখন আবূ আইয়ূব আনসারী রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু বলেন, ( অনুচ্ছেদে বর্ণিত) এ আয়াত আমাদের আনসার সম্প্রদায় সম্পর্কে অবতীর্ণ হয়েছিল। যখন আল্লাহর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে আল্লাহ সাহায্য করলেন এবং ইসলামকে জয়যুক্ত করলেন, তখন আমরা বলেছিলাম, আমরা যুদ্ধে না গিয়ে ঘরে থেকে আমাদের সহায় – সম্পদ দেখাশুনা করব এবং এর সংস্কার সাধন করব। তখন আল্লাহ্ এ আয়াত নাযিল করেনঃ ‘‘ আর তোমরা আল্লাহ রাস্তায় ব্যয় কর এবং নিজেদেরকে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দিও না।’’ আমাদের ঘরে থেকে মালামালে রক্ষণাবেক্ষণ করা ও যুদ্ধে না যাওয়াই হল নিজেকে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দেয়া। আবূ ইমরান রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু বলেন , এ কারণেই আবূ আইয়ূব আনসারী রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু আ্ল্লাহর রাস্তায় সর্বদা জিহাদে লিপ্ত থাকতেন। শেষ পর্যন্ত তিনি যুদ্ধ করতে করতে শহীদ হয়ে কুসতুনতুনিয়ায় সমাহিত হলেন। [১৩]
১৩. সুনানে আবু দাউদ, কিতাবুল জিহাদ হাদীস নং-২৫১২, হাকেম আল মুস্তাদরিকু আলাস সাহিহাইন, কিতাবুল জিহাদ, হাদীস-২৪৩৪।

তারিখে কামিলে ৪৬ হিজরীর বর্ণনা অনুসারে হযরত আব্দুর রহমান বিন খালিদ বিন ওয়ালিদ রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু ৪৬ হিজরীতে হিমসে ওফাত লাভ করেন। বিদায়া নিহায়াতেও একই কথা উল্লেখ হয়।

৪৭ হিজরী সনে মালিক বিন হুবাইরা রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুর নেতৃত্বে রোম অঞ্চলে অভিযান পরিচালিত হয়। এ বর্ণনাও তারিখে কামিল ও বিদায়া নিহায়াতে উল্লেখ হয়।

উপরোক্ত আলোচনা হতে এ কথা স্পষ্ট হয় যে, কুসতুনতুনিয়াতে প্রথম দিকে যে জিহাদ পরিচালিত হয় তাতে ইয়াযিদের অংশগ্রহণ ছিল না। তাহলে হাদীসের বক্তব্য অনুসারে সে কিভাবে ক্ষমাপ্রাপ্তদের দলে অন্তর্ভুক্ত হয়?

কুসতুনতুনিয়ার জিহাদে ইয়াযিদের অন্তর্ভুক্তিঃ

কুসতুনতুনিয়ায় ইয়াযিদের অন্তর্ভুক্তির সাল নিয়ে নানা বর্ণনা উল্লেখ হয়, হাফেজ ইবনে কাসীর বলেন-

فِيهَا غَزَا يَزِيدُ بْنُ مُعَاوِيَةَ بِلَادَ الرُّومِ حتى بلغ قسطنطينية

অর্থাৎ এ বছর ইয়াযিদ বিন মু’আবিয়া রোমে আক্রমণ করে এবং এ বাহিনী কুসতুনতুনিয়া পর্যন্ত পৌছে যায়।[১৪]
১৪. ইবনে কাসীর আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া, ৮:৩৬ দারু ইহয়ায়ুত তুরাসুল আরাবী বৈরুত, ৮:৩২ দারুল ফিকর বৈরুত।

তারিখে তাবারীতেও ইবনে জারীর তাবারী একই বর্ণনা উল্লেখ করেন।

আল্লামা বদরুদ্দীন আইনী রাহমাতুল্লাহি আলাইহি তাঁর বুখারী শরীফের ব্যাখ্যাগ্রন্থ উমদাতুল কারীতে উল্লেখ করেন –

أَن يزِيد بن مُعَاوِيَة غزا القسنطينية فِي سنة اثْنَتَيْنِ وَخمسين

অর্থাৎ ইয়াযিদ বিন মুয়াবিয়া কুসতুনতুনিয়ায় অভিযানে ৫২ হিজরী সনে অংশ নেন। আল্লামা ইবনে হাজর আসকালানীও ফাতহুল বারীতে একই বর্ণনা দেন।

বর্ণিত হয়, এ সময়ে বহু সাহাবী তাতে অংশ নেন। হযরত আবু আইয়ুব আনসারী রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুর শাহাদত ও দাফন এখানেই হয়। এরূপ বর্ণনা বুখারী শরীফের হাদীস হতেও পাওয়া যায়। কিন্তু তা হতে ইয়াযিদের ক্ষমাপ্রাপ্তির অন্তর্ভুক্তি হয় না। কেননা সুনানে আবু দাউদের বর্ণনা অনুসারে কুসতুনতুনিয়ায় হামলা আব্দুর রহমান বিন খালিদ বিন ওয়ালিদের নেতৃত্বে হয়। এছাড়াও তারিখের(ইতিহাসের) কিতাবসমূহে হযরত আমীরে মুয়াবিয়া রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুর বাহিনীকে ৩২ হিজরীতে কুসতুনতুনিয়ায় অভিযানের কথা উল্লেখ হয়। আবার অন্য বর্ণনায় বসর বিন আবী আরতাহ রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুর বাহিনী ৪৩ হিজরীতে অভিযানের কথা উল্লেখ হয়। প্রথম বাহিনীতে ইয়াযিদ ছিল কই? ইয়াযিদ কুসতুনতুনিয়ায় হামলাকারী বাহিনীতে ছিল কিন্তু প্রথম আক্রমণকারী বাহিনীতে নয় আর সেটা স্পষ্ট উল্লেখিত দলীলসমূহ হতে।

ইয়াযিদ কুসতুনতুনিয়ায় আক্রমণকারী বাহিনীতে ছিল; কিন্তু তা জিহাদের উদ্দেশ্যে নয়, বরং তাকে তো সেখানে শাস্তিস্বরূপ পাঠানো হয়েছিল। আল্লামা ইবনে আসীর বর্ণনা করেন –

فِي هَذِهِ السَّنَةِ، وَقِيلَ:سَنَةَ خَمْسِينَ، سَيَّرَ مُعَاوِيَةُ جَيْشًا كَثِيفًا إِلَى بِلَادِ الرُّومِ لِلْغَزَاةِ وَجَعَلَ عَلَيْهِمْ سُفْيَانَ بْنَ عَوْفٍ وَأَمَرَ ابْنَهُ يَزِيدَ بِالْغَزَاةِ مَعَهُمْ، فَتَثَاقَلَ وَاعْتَلَّ، فَأَمْسَكَ عَنْهُ أَبُوهُ، فَأَصَابَ النَّاسُ فِي غَزَاتِهِمْ جُوعٌ وَمَرَضٌ شَدِيدٌ، فَأَنْشَأَ يَزِيدُ يَقُولُ: مَا إِنْ أُبَالِي بِمَا لَاقَتْ جُمُوعُهُمُ … بِالْغَزْقَذُونَةِ مِنْ حُمَّى وَمِنْ مُومِ

إذا اتكأت على الأنماط مرتفقاً … بدير سمعان عندي أم كلثوموَأُمُّ كُلْثُومٍ امْرَأَتُهُ، وَهِيَ ابْنَةُ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ عَامِرٍ.فَبَلَغَ مُعَاوِيَةَ شِعْرُهُ فَأَقْسَمَ عَلَيْهِ لَيَلْحَقَنَّ بِسُفْيَانَ إِلَى أَرْضِ الرُّومِ لِيُصِيبَهُ مَا أَصَابَ النَّاسَ، فَسَارَ وَمَعَهُ جَمْعٌ كَثِيرٌ أَضَافَهُمْ إِلَيْهِ أَبُوهُ

অর্থাৎ এই বছর, অর্থাৎ, ৪৯ বা ৫০ হিজরী সালে হযরত আমীরে মু’আবিয়া রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু রোমের উদ্দেশ্যে এক বিশাল বাহিনী প্রেরণ করেন। তিনি এর দায়িত্বভার অর্পণ করেন সুফিয়ান বিন আউফ রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুর প্রতি এবং তাঁর ছেলে ইয়াযিদকে ওই বাহিনীর সাথে যেতে নির্দেশ দেন। কিন্তু ইয়াযিদ অসুস্থ হওয়ার ভান করে এবং যেতে অস্বীকৃতি জানায়। এ অভিযানে মুসলিম যোদ্ধারা ক্ষুধা ও রোগ-ব্যাধিগ্রস্ত এবং নানা কঠিন পরিস্থিতির শিকার হন। ইয়াযিদের কাছে যখন এ খবর আসে, তখন সে ব্যঙ্গ করে কবিতায় বলে, ‘ফারকুদওয়ানা-এ মহা গযবে তারা পতিত হয়েছে; তাদের জ্বর বা অন্য যা-ই কিছু হোক, তাতে আমার যায় আসে না। কেননা, আমি বসে আছি উচ্চ ফরাশে (ম্যাট্রেস), আর আমার বাহুবন্ধনে আছে উম্মে কুলসুম।’ উম্মে কুলসুম ছিলেন ইয়াযিদের স্ত্রীদের একজন আব্দুল্লাহ বিন আমের রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুর কন্যা। হযরত আমীরে মু’আবিয়া রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু যখন এই কবিতার শ্লোক সম্পর্কে জানতে পারেন, তখন তিনি এয়াযীদকে শপথ গ্রহণ করতে ও কনস্টানটিনোপোলে সুফিয়ান ইবনে আউফ রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুর সাথে যোগ দিতে বাধ্য করেন, যাতে করে ’সেও ইসলামের মুজাহিদদের মোকাবেলাকৃত কঠিন পরীক্ষার অংশীদার হতে পারে’ (এটি ইয়াযিদের প্রতি শাস্তি ছিল)। এমতাবস্থায় ইয়াযিদ অসহায় হয়ে পড়ে এবং তাকে যুদ্ধে যেতে হয়; আর হযরত আমীরে মু’আবিয়া রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু তার সাথে আরেকটি বাহিনী প্রেরণ করেন। [১৫]
১৫. ইবনে আসীর তারিখে কামিল ৩:৫৬,৫৭ দারুল কিতাবিল আরাবী বৈরুত।
এ ঘটনা ইবনে খালদুনের তারিখেও উল্লেখ হয়। [১৬]
১৬. তারিখে ইবনে খালদুন ৩:১২ দারুল ফিকর বৈরুত।

এ থেকেই বুঝা যায় ইয়াযিদের মুসলিম বাহিনীতে অন্তর্ভূক্তি কিভাবে হয়েছে। সে মুসলিম সৈন্যদের নিয়ে বিদ্রুপ করার দরুন শাস্তিস্বরূপ সেখানে প্রেরিত হয়।

আল্লামা বদরুদ্দীন আইনী রাহমাতুল্লাহি আলাইহি তাঁর উমদাতুল কারীতে উল্লেখ করেন-

الْأَظْهر أَن هَؤُلَاءِ السادات من الصَّحَابَة كَانُوا مَعَ سُفْيَان هَذَا وَلم يَكُونُوا مَعَ يزِيد بن مُعَاوِيَة، لِأَنَّهُ لم يكن أَهلا أَن يكون هَؤُلَاءِ السادات فِي خدمته

অর্থাৎ অসংখ্য সাহাবী রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুম হযরত সুফিয়ান ইবনে আউফ রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুর অধীনে যুদ্ধে গিয়েছিলেন এবং ‘ইয়াযিদ ইবনে মুয়াবিয়ার নেতৃত্বে যান নি, কেননা সে তাঁদেরকে নেতৃত্বদানে অযোগ্য ছিল ‘। [১৭]
১৭. উমদাতুল ক্বারী শরহে সহীহ বুখারী, বাবু মা ক্বীলা ফি ক্বিতালির রূম, ১৪:১৯৮,১৯৯ দারু ইহয়ায়ুত তুরাসুল আরাবী বৈরুত।

এরপরেও ইয়াযিদ প্রেমীরা তাকে ক্ষমাপ্রাপ্ত বা জান্নাতী দাবী কিভাবে করতে পারে, যেখানে কায়সারের শহর বা কুসতুনতুনিয়ায় আক্রমণকারী প্রথম বাহিনীতে সে ছিলই না। হাদীসে প্রথম বাহিনীর কথা বলা হয়েছিল, সেখানে যারা জিহাদ করবে সকলের কথা বলা হয়নি। এরপরও মেনে নেয়া হল সে ছিল, এর দ্বারা তার পরবর্তী গুনাহের কাজ, অনুমোদন ইত্যাদি যে মাফ হবে তা কিভাবে হয়। হাদীস শরীফে বহু জায়গায় ক্ষমার কথা উল্লেখ আছে এমনকি ”লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ” বলার কারণে জান্নাতী হবার ঘোষণাও আছে। এর মানে এ নয় যে, এতে করে সব হিসেব নিকেশ মাফ হয়ে যাবে, এমন হলে তো আমলের প্রয়োজনই ছিল না। ক্ষমা তারই হবে যে এর উপযুক্ত থাকবে। আল্লামা বদরুদ্দীন আইনী বলেন-

فَإِن قلت: قَالَ، صلى الله عَلَيْهِ وَسلم، فِي حق هَذَا الْجَيْش: مغْفُور لَهُم. قلت: لَا يلْزم، من دُخُوله فِي ذَلِك الْعُمُوم أَن لَا يخرج بِدَلِيل خَاص، إِذْ لَا يخْتَلف أهل الْعلم أَن قَوْله، صلى الله عَلَيْهِ وَسلم: مغْفُور لَهُم، مَشْرُوط بِأَن يَكُونُوا من أهل الْمَغْفِرَة حَتَّى لَو ارْتَدَّ وَاحِد مِمَّن غَزَاهَا بعد ذَلِك لم يدْخل فِي ذَلِك الْعُمُوم، فَدلَّ على أَن المُرَاد مغْفُور لمن وجد شَرط الْمَغْفِرَة فِيهِ مِنْهُم

অর্থাৎ যদিও ইয়াযিদ এই বাহিনীর অন্তর্ভুক্ত হয়, তবুও সে এই সুসংবাদের হুকুম হতে বের হয়ে যায় তার পরবর্তী কৃতকর্মের কারণে। এ জন্যে যে, উলামা কেরামের এই মাসয়ালায় ঐকমত্য আছে যে হুযুর নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের এই ঘোষণা ‘ তাদের ক্ষমা করে দেয়া হবে’ কাজে দিবে এই শর্তে যে এর পরবর্তীতেও তারা এর উপযুক্ত থাকবে। পরে যদি কেউ ইসলাম হতে বের হয়ে যায়, ফাসিক, মুরতাদ হয়ে যায় তবে তার অন্তর্ভুক্তি হবে না। সুতরাং এ যুদ্ধে অংশ নেয়া লোকেরা ক্ষমা পাবে তখনই যখন এর উপযুক্ততা তদের মধ্যে উপস্থিত পাওয়া যাবে। [১৮]
১৮. উমদাতুল ক্বারী শরহে সহীহ বুখারী, বাবু মা ক্বীলা ফি ক্বিতালির রূম, ১৪:১৯৯।

উলামায়ে আহলে সুন্নাতের মতে ইয়াযিদ একজন পাপিষ্ঠ ও অভিশপ্ত ব্যক্তি। এতে কোন প্রকার সংশয় রাখা যাবে না। আর যে ব্যক্তির নির্দেশে আহলে বায়তের উপর নির্মমভাবে হামলা হয়, শহীদ করা হয় তাদের। শহীদ হন হযরত ইমাম হুসাইন রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু। অপদস্থ হন আহলে বায়তের পবিত্র নারীগণ, হামলা হয় পবিত্র দুই শহর মক্কা ও মদীনা শরীফে, শহীদ করা হয় সাহাবা ও তাবেয়ী রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুমদের, পবিত্রতা নষ্ট করা হয় মক্কা-মদীনা শরীফের, মসজিদে নববীর পবিত্রতা নষ্ট করা হয়, আজান বন্ধ করা হয়, কাবা ঘরের গিলাফ পোড়ানো হয়। এমনকি ইয়াযিদের মৃত্যুও হয় যখন মক্কা মুকাররামায় আগুন জ্বলছিল আর আর তার পাশে ছিল মদের পেয়ালা। একজন বিবেকবান মাত্রই বলতে ও বুঝতে সক্ষম যে, এ প্রকার ব্যক্তি ক্ষমাপ্রাপ্ত হয় কিভাবে। অথচ যে বাহিনীতে তার অন্তর্ভুক্তি নিয়ে তাকে বর্তমানে জান্নাতী বানানোর ঘৃণ্য পায়াতারা চালানো হচ্ছে, সে বাহিনীকে নিয়েই সে বিদ্রুপ করেছিল, আর তারই শাস্তি স্বরূপ সে সেখানে যেতে বাধ্য হয়। আল্লাহ আমাদের এসকল ফিতনা হতে হিফাজত করুন এবং তাঁর প্রিয় হাবীব, তাঁর আসহাব ও আহলে বাইতের পথে অটল রাখুন। আমিন, বিহুরমাতি সায়্যিদিল মুরসালীন।

[অভিশপ্ত ইয়াজিদ] হযরত দাতা গঞ্জে বখশ লাহোরী (রহমাতুল্লাহি আলায়হি) এর লানত

অভিশপ্ত ইয়াজিদকে নিয়ে হযরত দাতা গঞ্জে বখশ লাহোরী (رحمة الله)'র বদদো'আঃ

"এজিদের উপর আল্লাহর গযব হোক, লা'নত হোক, লাঞ্ছনা হোক, এ অভিশপ্তকে ধ্বংস করুন, তাঁর মহাসম্মানিত পিতা [সাহাবী-এ রসূল হযরত আমীরে মু'আবিয়া (رضي الله عنه)কে নয়]।"

[সূত্রঃ হযরত দাতা গঞ্জে বখশ (রহ.) রচিত বিখ্যাত গ্রন্থ কাশফুল মাহজুব এর (উর্দূ তরজমা)'র ১৮৬ পৃষ্ঠা]

চিহ্নিত অংশটি হযরত দাতা গঞ্জে বখশ (রহমাতুল্লাহি আলায়হি) রচিত বিখ্যাত গ্রন্থ কাশফুল মাহজুব এর (উর্দূ তরজমা)'র ১৮৬ পৃষ্ঠার বর্ণনা।
যুগশ্রেষ্ঠ ওলিয়ে কামিল যাকে অভিসম্পাত করে, কোন মু'মিন কখনো এ ঘৃণ্য জালিমের প্রতি ভালো ধারণা করতে পারে না। আল্লাহ তা'আলা আমাদেরকে আহলে বায়তে রসূল (সাল্লাল্লাহু তা'আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম)'র পরিপূর্ণ আদব ও মুহাব্বত নসীব করুন।

https://www.sunni-encyclopedia.com/2019/09/blog-post_36.html?m=1

ইয়াজিদি মুসলমানদের পরিনতিঃ

ইয়াজিদী সৈন্যদের ভয়ংকর পরিণতি – শেষ পর্ব

  অজগর ও ইয়াজিদী সৈন্য
ইবনে যিয়াদ এবং তার সেনাপতিদের মাথা মুখতার সাকাফীর সামনে এনে যখন রাখা হল, তখন হঠাৎ এক বিশাল অজগর দেখা গেল; এমতাবস্থায় অজগরটি সব মাথা ছেড়ে ইবনে যিয়াদের মাথায় তার নাকের ছিদ্র দিয়ে প্রবেশ করলো। কিছুক্ষণ পরই অজগরটি মুখ দিয়ে বাহিরে এল। অতঃপর আবার নাক দিয়ে ঢুকলো, আবার মুখ দিয়ে বের হল। অর্থাৎ এমন করে তিন বার ভিতর ঢুকল আর বাহিরে আসল। এক পর্যায়ে অজগরটি অদৃশ্য হয়ে গেল।
ঐতিহাসিক লিখেন যে, মুখতার সাকাফীর সাথে যুদ্ধে সত্তর হাজার(৭০,০০০) শামবাসী মারা যায় (যারা সবাই ইমাম পাকের শাহাদাতের সাথে জড়িত ছিল)। আর এমনিভাবে হাদীস শরীফে বর্ণিত আল্লাহ তা’আলার ওয়াদাও পূর্ণ হল যে, হযরত ইমাম হুসাইন রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু’র রক্তের বদলায় সত্তর হাজার পাপীষ্ঠ মারা যাবে।
إِنَّ اللَّهَ عَلَىٰ كُلِّ شَيْءٍ قَدِيرٌ
অর্থাৎ নিশ্চয় আল্লাহ তা’আলা সর্বশক্তিমান।
টীকা
জান্নাতের সর্দার, সাইয়্যেদুশ শোহাদা হযরত ইমাম হুসাইন রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু’র শাহাদাত এমন এক চরম হৃদয় বিদারক ঘটনা যে, আজ পর্যন্ত কারবালার যমীনে প্রবাহিত হওয়া তাঁদের এক এক ফোটা রক্তের বিনিময়ে পৃথিবী অশ্রু সাগরে পরিণত হয়েছে। সংক্ষেপে এতটুকু বলা যায় যে, পৃথিবীর কোন মর্মান্তিক ঘটনার বেলায় এতটুকু অশ্রু ঝরেনি, যতটুকু কিনা কারবালার ব্যাপারে ঝরেছে।
হযরত আবু হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু যেহেতু এই ফিত্‌নার বিষয়ে অবগত হয়েছিলেন। এজন্যই তিনি শেষ বয়সে এই দু’আ করতেন,
“হে আল্লাহ ! আমি তোমার নিকট আশ্রয় চাচ্ছি, ষাটতম হিজরী এবং নবীনদের নেতৃত্ব থেকে”
ষাট হিজরীতেই ইয়াজিদের মত কনিষ্ঠ ব্যক্তি খিলাফতের দায়িত্ব নেয় এবং এই ফিত্‌নারও সূত্রপাত হয়।
টীকা
সাইয়্যেদুনা হযরত ইমাম হুসাইন রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু’র ইয়াজিদের বিরুদ্ধে অবস্থান নেওয়াটা বাতিলের শক্তিকে নিশ্চিহ্ন এবং হক্বকে প্রতিষ্ঠা করার জন্যেই ছিল। কিন্তু পাপীষ্ঠ খারেজী সম্প্রদায়রা বলে যে, (নাউযু বিল্লাহ) ইমাম হুসাইন রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু ইয়াজিদের বিপক্ষে অন্যায়ভাবে দাঁড়িয়েছে,এ জন্যই সে নির্মমভাবে মারা গিয়েছে। (আল্লাহ এবং তাঁর রাসূলের অভিশম্পাত ইমাম হুসাইনের এই দুশমনদের উপর -অনুবাদক)
সুতরাং খারেজীদের সম্পর্কে কিছু কথা উল্লেখ করব।
    হুসাইন রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু’র দুশমন অন্ধ হয়ে গেলো
মুহাম্মদ বিন ছলাত আব্দী এবং র’বী বিন মুনযির তোরী যারা তাদের পিতা হতে বর্ণনা করেন যে, এক ব্যক্তি এসে ইমাম হুসাইন রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু’র শাহাদাতের সুসংবাদ দেয়(অর্থাৎ সে ইমাম হুসাইনের শাহাদাতে খুশি ছিল-অনুবাদক) এবং সে তখনই অন্ধ হয়ে যায়। যাকে পরে অন্য এক লোক এসে ধরে নিয়ে যায়।
    পৃথিবীতে ইমাম হুসাইন রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু’র দুশমনের শাস্তি
ইবনে আইনিয়্যাহ বর্ণনা করেন যে, আমাকে আমার দাদী বলছেন, জুফাইন গোত্রের দু’ব্যক্তি হযরত ইমাম হুসাইন রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু’র শাহাদাতে শরীক ছিল, যাদের মধ্যে থেকে একজনের লজ্জাস্থান এতটাই দীর্ঘ হয়ে গিয়েছিল যে, সে বাধ্য হয়েই সেটাকে ভাঁজ করে চলাফেরা করতো। এবং অপরজনের এত চরম পিপাসা সৃষ্টি হয়ে গেল যে, সে পানি ভর্তি মশক’কে(বড় পাত্র) মুখের সাথে লাগাতো এবং পাত্রের শেষ বিন্দুটা পর্যন্ত চুষে খেতো।
    হুসাইন রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু’র দুশমন জ্বলন্ত আগুনে পুরে মারা গেলো
সুদ্দী এক ঘটনার বর্ণনা করেন যে- আমি এক জায়গায় মেহমান হিসেবে গেলাম, যেখানে ইমাম হুসাইন রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু’র শাহাদাতের আলোচনা চলছিল। আমি বললাম, হুসাইন রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু’র শাহাদাতে যারা জড়িত ছিল, তারা ন্যাক্কারজনকভাবে মারা গিয়েছে। একথা শুনে এক ব্যক্তি বলল, হে ইরাকিরা ! তোমরা কতইনা মিথ্যাবাদী। দেখো ! আমি হুসাইনের হত্যায় জড়িত ছিলাম, কিন্তু এখনও পর্যন্ত আমি এহেন মৃত্যূ থেকে নিরাপদ আছি। এ কথা শেষে সে তখন জ্বলন্ত একটি চেরাগে তেল ভরে বাতিকে নিজের আঙ্গুল দ্বারা কিছুটা বাড়িয়ে দিতেই পুরো বাতিতে আগুন লেগে যায়, ঐ আগুন সে তার থু থু দ্বারা নিভাতে ছিল, ঠিক তখনই তার দাঁড়িতে আগুন ধরে যায়। সে সেখান থেকে দৌঁড়িয়ে পানিতে ঝাপ দেয়, যাতে আগুন নিভে যায়। কিন্তু পরিশেষে যখন তাকে দেখা গেল, ততক্ষনে সে জ্বলে কয়ালায় পরিণত হয়ে গিয়েছে। অতঃপর আল্লাহ তা’আলা দুনিয়াতেই দেখিয়ে দিলেন যে, “তোর দুস্কৃতির এটাই পরিণতি।”
    ইবনে যিয়াদের উপর অজগরের আক্রমন
আম্মার বিন উমায়ের রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু বর্ণনা করেন যে, যখন উবাইদুল্লাহ বিন যিয়াদ এবং তার সাথীদের মাথা নিয়ে মসজিদের বরাবর বাহিরে রাখা হয়েছিল, তখন আমি ঐ লোকদের নিকট পৌঁছলাম, যখন কিনা তারা বলছিল- “ঐ এসেছে-ঐ এসেছে”। এমনই মুহুর্তে একটি সাপ এসে ঐসকল মাথার মধ্যে ঢুকতে শুরু করলো। অতঃপর উবাইদুল্লাহ বিন যিয়াদ এর নাকের ছিদ্রে ঢুকলো ও তাতে কিছুক্ষন থাকার পর বাহিরে চলো এলো। সাপটি কোথায় থেকে আসলো আবার কোথায় চলে গেল। এই ঘটনাটিকে ইমাম তিরিমিযী বর্ণনা করেন এবং তার সনদকে সহীহ হাসান বলেছেন।
    আগুলের স্ফুলিঙ্গ লাগাতে অন্ধ হয়ে গেলোঃ
ইমাম আহমদ বিন হাম্বল রহমাতুল্লাহি তা’আলা আলাইহি বর্ণনা করেন যে, এক ব্যক্তি ইমাম হুসাইন রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু’কে ফাসিক ইবনে ফাসিক (ফাসিকের ছেলে ফাসিক) বলে গালি দেয়। আল্লাহ তা’আলা তখনই তার উপর দুইটি ছোট তারকার স্ফুলিঙ্গ বর্ষণ করে তাকে অন্ধ করে দেন। [সাওয়াইকে মুহাররিকাহ,পৃষ্ঠা ১৯৪]
    ইয়াজিদের চেলা মুসলিম বিন উকবার পরিণতি
মুসলিম বিন উকবা মদীনা শরীফে গিয়ে লোকদেরকে ইয়াজিদের বায়’আত হওয়ার আহবান জানাতেই কিছু লোক জান-মালের ভয়ে ইয়াজিদের বায়’আত হলো। তাদের মধ্যে কুরাইশ গোত্রের একজন ব্যক্তিও ছিল। বায়’আতের সময় সে বলল যে, আমি বায়’আত হলাম ইয়াজিদের আনুগত্যের উপর, তার গুনাহের (সাথে একাত্মতার) উপর নয়। একথা শোনা মাত্রই মুসলিম বিন উকবা তাকে হত্যা করলো। এমতাবস্থায় সে ব্যক্তির মা ছেলে হত্যার প্রতিশোধ নেয়ার শপথ নিয়ে বলল যে, যদি মুসলিম বিন উকবা মরেও যায়. তাহলেও আমি কবর খনন করে তার লাশ জ্বালিয়ে দেব। মুসলিম বিন উকবা যখন মারা গেল, তখন ঐ মা তার দাসকে বলে তার কবর খনন করলো। খননের এক পর্যায়ে যখন লাশের নিকট পৌঁছলো তখন দেখলো যে, তার ঘাড়ে অজগর সাপ পেঁচিয়ে আছে এবং তার নাক দিয়ে ঢুকে তাকে দংশন করছে। [ইবনে আসাকির,তইয়ুল ফারাসিখ]
    হযরত হুসাইন রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহুর দুশমন
আবু নঈম এবং ইবনে আসাকির আ’মাশ হতে বর্ণনা করেন যে, এক ব্যক্তি ইমাম হুসাইন রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহুর মাজার শরীফে পায়খানা করে দিল (নাউজুবিল্লাহ)। সে সঙ্গে সঙ্গে পাগল হয়ে গেল এবং কুকুরের ন্যায় ঘেউ ঘেউ শব্দ করতে লাগলো। যখন সে মারা গেল, তখন তার কবর হতেও কুকুরের ঘেউ ঘেউ আওয়াজ আসতে লাগলো। [তাবাক্বাতে মানাদী আজ জামালে আউলিয়া,পৃষ্ঠা-৩৪]
টীকা
প্রকৃতার্থে আহলে বাইত রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহুম’দের দুশমন কুকুরের চেয়েও নিকৃষ্ট। অর্থাৎ পৃথিবীর কুকুর তো তার জীবনে ঘেউ ঘেউ করেই; আর আহলে বাইতের দুশমন মানুষ হয়ে জন্ম নিলেও কুকুর হয়ে মরে এবং মরার পরও ঘেউ ঘেউ করে। বুঝা গেল যে,আল্লাহ ওয়ালাদের ব্যক্তিত্বই সম্মানের পাত্র।এভাবে তাঁদের মাজার শরীফও সম্মানের স্থান।
    ইমাম হুসাইন রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু’র উট
হযরত মাওলানা আব্দুর রহমান জামী রহমাতুল্লাহি তা’আলা আলাইহি তাঁর কিতাব “শাওয়াহেদুন নবুওয়াতে” উল্লেখ করেন যে, সাইয়্যেদুনা ইমাম হুসাইন রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু’র (কাফেলা হতে) বেচে যাওয়া কিছু উট ছিল। সেগুলোকে জালিমরা যবেহ করে কাবাব বানালো। ঐ গোশতের স্বাদ এতই তিক্ত ছিল যে, সেখান থেকে ভক্ষন করার সাহস কারোরই হল না।
টীকাঃ
এই শাস্তি ফেরাউনীদের ঐ শাস্তির সদৃশ, যেখানে পানি বনী ইসরাঈলীদের জন্য তার মৌলক অবস্থায় ছিল। অন্যদিকে ফেরাউনীদের জন্য রক্তে পরিণত হয়েছিল। এমনকি যে, যেই পাত্র দ্বারা বনী ইসরাঈলগণ পানি নিত তা পানিই থাকতো। কিন্তু ঐ পাত্র দ্বারা যখন ফিরাউনীরা পানি নিত তখন তা রক্তে রুপান্তরিত হত। তাদের খাদ্য দ্রব্যে উকুনে ছেঁয়ে গেলো। এমনকি যে, বনী ইসরাঈল হতে তারা খাদ্য নিলে সেটাও উকুনে ছেঁয়ে যেত।
   ✴ ইয়াজিদের উপর খোদায়ী গযব
ইয়াজিদের মৃত্যূর পর তার কবরে পাথর নিক্ষেপ করা হত। পরবর্তীতে লোকেরা এটার উপর দালান-কোঠা তৈরী করে ফেলে। এক পর্যায়ে ইয়াজিদের কবরের উপর লোহা,কাঁচ গলানোর বিশাল চুলা স্থাপিত করা হয়। যেমনটা মনে হচ্ছে যে, ইয়াজিদের কবরে প্রত্যহ আগুন প্রজ্জলিত হচ্ছে। এমনকি এক পর্যায়ে তার কবরের নাম নিশানাই আর থাকল না।
  ✴ ইয়াজিদের ধংস
হযরত ইমাম হুসাইন রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু’র শাহাদাতের পর এক দিনও শান্তিতে কাটেনি ইয়াজিদের। সমগ্র মুসলিম জাহানে শহীদদের রক্তের ডাক এবং ক্ষোভের সূত্রপাত হয়। ইয়াজিদের জিন্দেগী এর পর দুই বছর আট মাস এর বেশী দীর্ঘ হয়নি। দুনিয়াতেও আল্লাহ তা’আলা তাকে অপদস্থ করেছেন এবং সে অপদস্থতার সাথেই ধংস হয়ে যায়।
    তীর নিক্ষেপকারী পিপাসার্ত অবস্থায় ছটফট করে মারা গেলো
যে ব্যক্তি হযরত ইমাম হুসাইন রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহুকে তীর নিক্ষেপ করেছিল এবং পানি পান করতে দেয়নি। তার মধ্যে আল্লাহ তা’আলা এমন পিপাসা সৃষ্টি করে দিয়েছিলেন যে, কোনভাবেই তা নিবারণ হত না।পানি যতই পান করুক না কেন, পিপাসায় সর্বদা কাতরাতো। এক পর্যায়ে সে পেট ফেটে মারা গেল।
✴ অবিশ্বাস্য সময়
এটা আমাদের দূর্ভাগ্য মনে করা হোক বা অবিশ্বাস্য সময় বলে মনে করা হোক, আমাদের যুগে এসে এমন পাপীষ্ঠও সৃষ্টি হয়েছে; যে কিনা হযরত ইমাম হুসাইন রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু’র শাহাদতকে বিদ্রোহ জনিত মৃত্যূ বলে আখ্যা দেয়। বদমাশ,নাফরমান,খবীস ইয়াজিদকে আমীরুল মু’মিনীন ইত্যাদি বলে। এমতাবস্থায় খলিফায়ে রাশিদ সাইয়্যেদুনা উমর বিন আব্দুল আযীয রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু ঐ ব্যক্তিকে বিশটি বেত্রাঘাতের হুকুম দিতেন, যে কিনা ইয়াজিদকে আমীরুল মু’মিনীন বলতো।
হায় ! আজ যদি সাইয়্যেদুনা উমর বিন আব্দুল আযীয রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু জীবদ্দশায় থাকতেন, তাহলে আমরা তাঁর নিকট আবেদন করতাম যে, “বাংলাদেশে এক জন নয় এরকম লাখো আছে,আর তারা কোন সাধারণ ব্যক্তি নয় বরং ধার্মিক। এমনকি ধর্মের কর্ণধার। হে উমর বিন আব্দুল আযীয ! একটু অনুগ্রহ করে তাদেরকেও শিক্ষা দিন। কিন্তু আফসোস যে, তিনি আমাদের সময়ের আগেই দুনিয়া হতে পর্দা করেছেন। ইনশা’আল্লাহ আমরা কিয়ামতের দিন ইমাম হুসাইন রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু’র পতাকা তলে থাকবো এবং তারা ইয়াজিদের ধুঁতির মধ্যে থাকবে।
    একটি সংশয়ের নিরসনঃ
ইয়াজিদ পন্থীরা বলে থাকে যে, ইয়াজিদ ইমাম হুসাইন রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহুকে হত্যার আদেশ দেয়নি এবং না সে এই কাজে সন্তুষ্ট ছিল। (যারা এমনটা বলে) তারাও ভ্রান্ত।
“এবং কতেক বলে থাকে যে, ইমাম হুসাইন রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু’র হত্যা ছিল কবীরা গুনাহ, কুফরী নয়; এবং লা’নত যে কাফিরের জন্য নির্ধারিত,এটাও ভূল।”
তোমরা কি জান না যে, দো’জাহানের নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামা’কে কষ্ট দেওয়াটাও যে অন্যতম কুফরী।
আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন,
إِنَّ الَّذِينَ يُؤْذُونَ اللَّهَ وَرَسُولَهُ لَعَنَهُمُ اللَّهُ فِي الدُّنْيَا وَالْآخِرَةِ وَأَعَدَّ لَهُمْ عَذَابًا مُهِينًا
অর্থাৎ নিশ্চয় যারা আল্লাহ এবং তাঁর রাসূলকে কষ্ট দেয়, তাদের উপর দুনিয়া ও আখিরাতে আল্লাহর অভিশম্পাত। এবং তাদের জন্য প্রস্তুত রাখা হয়েছে অপমানজনক শাস্তি।
আপত্তিঃ কিছু লোক বলে থাকে যে, ইয়াজিদের শেষ অবস্থাটা জানা যায়নি। হয়ত সে কুফর ও গুনাহের পর তাওবা করে থাকতেও পারে। তাওবাকারী হয়ে সে মৃত্যূ বরণ করেছে। ইমাম গাজ্জালী তারঁ “এহয়াউল উলুম” এর মধ্যে এ দিকেই ইঙ্গিত দিয়েছেন।
জবাবঃ তাওবার সম্ভাবনা সম্ভাবনাই । আহ ! এই অভাগা তাদেরই অন্তর্ভুক্ত যারা এমন কিছু করেছে, যা অন্য কেউই করেনি। ইমাম হুসাইন এবং আহলে বাইতকে শহীদের পর সে মদিনা মুনাওয়ারাকে অপবিত্র করতে এবং মদীনাবাসীকে হত্যা এবং শহীদ করার জন্যে সেখানে সৈন্য প্রেরণ করে। তিন দিন পর্যন্ত মসজিদে নববী আযান ও নামাযহীন থাকে। তারপরে কাবা শরীফে আক্রমণ করা এবং স্বয়ং কাবার অভ্যন্তরে হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে যুবাইর রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহুকে শহীদ করা এবং তাঁদের দুর্নাম বর্ণনা করা; সবই তার কাজ ছিল। [আল্লাহই ভালো জানেন]
আপত্তিঃ বুখারী শরীফ প্রথম খন্ডে কিতাবুল জিহাদে হযরত উম্মে হেরা রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহা বর্ণনা করেন যে,আমি নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামা হতে শুনেছি। তিনি ইরশাদ করেন যে, আমার উম্মতের মধ্যে থেকে প্রথম সৈন্যবাহিনী যারা কিনা রোম সম্রাটের এর শহর কুস্তন্তুনিয়ায় জিহাদ করবে, তাদেরকে ক্ষমা করা হবে। আমি আরয করলাম, ইয়া রাসূলাল্লাহু সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ! আমিও কি সেখানে যাব ? হুজুর বললেন ‘না’।
এই জিহাদ ৫০ হিজরীতে সংঘটিত হয়েছিল। তাতে সেনাপতি ছিল ইয়াজিদ বিন মুয়াবিয়া। এবং এই যুদ্ধে অনেক সাহাবায়ে কিরামও অংশ নিয়েছিলেন। যাদের মধ্যে রয়েছেন, হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে উমর, আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস, আব্দুল্লাহ ইবনে যুবায়ের এবং আবু আইয়ুব আনসারী রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহুম। এই মুজাহিদদেরকে হুজুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামা ক্ষমাকৃত বলে ঘোষণা করেছেন। এজন্যই ইয়াজিদের খিলাফত সঠিক ছিল এবং সে জান্নাতী।
এটা ছিল ইয়াজিদ পন্থী খারেজীদের সবচেয়ে বড় দলীল, যা কিনা তাদের পক্ষ হতে বলা হয়ে থাকে। এবং এই হাদীস দ্বারা অনেকে কারণ বের করেছে যে, ইয়াজিদের খিলাফত সহীহ ছিল এবং সে জান্নাতী।
জবাবঃ এই হাদীস দ্বারা এটা কিভাবে হৃদয়াঙ্গম হলো যে, ইয়াজিদের খিলাফত সঠিক ! কেননা যখন ইয়াজিদ কুসতুন্তুনিয়াতে আক্রমন করতে গিয়েছিল সে সময়ে হযরত আমীরে মুয়াবিয়া রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু জীবিত ছিলেন। তখন তাঁর খিলাফতকাল ছিল। তাঁর আমরণ খিলাফত ওলামায়ে কিরামের ঐক্যমত্যের ভিত্তিতে সহিহ ছিল। কারণ ইমামে বরহক্ব হযরত ইমাম হাসান রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু ইসলামী সম্রাজ্যের খিলাফত হযরতে মুয়াবিয়া রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু’র নিকট অর্পণ করেছিলেন। এখন যোদ্ধাদের ক্ষমাকৃত হওয়ার দ্বারা এটা আবশ্যক হয় না যে, তার প্রত্যেককে মাফ করা হবে এবং সে বেহেশতী হবে। হুজুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামার সাথে স্বয়ং এক ব্যক্তি বীরত্বের সাথে লড়াই করছিল। হুজুর ইরশাদ করেন, সে দোযখী। বেহেশতী আর দোযখী হওয়াটা সর্বশেষ অবস্থার উপর নির্ভর করে। ইয়াজিদ প্রথমে অনেক ভাল কাজ করেছে যে, কুসতুনতুনিয়ায় আক্রমন করা। কিন্তু খলীফা হওয়ার পর সে এমন হীন কর্মের দ্বারা নিজ বহিঃপ্রকাশ ঘটিয়েছে যে, নাউজুবিল্লাহ ! ইমাম হুসাইন রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহুকে হত্যা এবং আহলে বাইতকে অপমান করিয়েছে। যখন ইমাম হুসাইন রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু’র মাথা মুবারক আনা হল, তখন অভিশপ্ত ইয়াজিদ বলতে লাগল, “আমি বদরের প্রতিশোধ নিলাম”।
মদীনা মুনাওয়ারায় সে হামলা চালালো, হেরেমের পবিত্র স্থানে ঘোড়া বাধলো, মসজিদে নববী এবং রওযা শরীফকে অপমান করলো। এসকল গুনাহের পরও কি ইয়াজিদকে ক্ষমাকৃত এবং জান্নাতী বলা যেতে পারে !!
সহীহ বুখারী শরীফের ব্যাখ্যাকার ইমাম কুস্তোলানী রহমাতুল্লাহি আলাইহি বলেছেন যে, এ কথা তো সবারই জানা যে, ইয়াজিদ ইমাম হুসাইন রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু’র হত্যায় এবং আহলে বাইতের অপমানে খুশি ও রাজী ছিল। এজন্যই আমরা তার বিষয়ে নীরবতা অবলম্বন করি না। বরং তার ঈমানের ব্যাপারেই আমাদের আপত্তি। আল্লাহর অভিশম্পাত ইয়াজিদ ও তার সহযোগীদের উপর।
    আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা’আতের ফয়সালা
সকল মুফাসসীরিন, মুহাদ্দীসীন, আইম্মায়ে কিরাম, ওলামায়ে রাব্বানী এবং আল্লাহর ওলীগণ এই কথার উপর ঐক্যমত যে, হযরত ইমাম হুসাইন রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু হক্বের উপর ছিলেন। অপরদিকে ইয়াজিদ ফাসিক ও ফাজির ছিল। হুজুর সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন যে,আমার উম্মতের ঐক্যমত কখনোই গোমরাহীর উপর হতে পারে না।
ইমামে রাব্বানী হযরত মুজাদ্দীদ আলফে সানী সহ অন্যান্য আওলিয়ায়ে কিরাম এবং ওলামায়ে ইসলামগণ বলেন, ইয়াজিদ পাপীষ্ঠ ও ফাসিকদের দলের অন্তর্ভূক্ত। তার পাপীষ্ঠতার ব্যাপারে কারো দ্বিমত নাই। যে হীন কর্ম এই দূর্ভাগা করেছে, কোন কাফির ফিরিঙ্গিও তা করতো না। [মাকতুবাত শরীফ-৫৪,২৫১]
[মুফতীয়ে আযম শায়খ আল্লামা ফয়য আহমদ ওয়াইসী রহমাতুল্লাহি আলাইহি’র লিখিত ”ইয়াজিদ গাজীয়ো কে আঞ্জামে বদ্‌” কিতাব হতে লেখাটি অনূদিত]
ভাষান্তরঃ মুহাম্মদ মহিউদ্দীন।
==> আলহামদুলিল্লাহ ! সমাপ্ত <==

ইয়াজিদ কি ক্ষমাপ্রাপ্ত ? জাকির নায়েক ও সালাফীদের বুখারীর নামে মিথ্যাচার

https://www.sunni-encyclopedia.com/2019/09/blog-post_10.html


__________ সমাপ্ত __________

Comments

Popular posts from this blog

বালাকোট আন্দোলনের হাকীকত

সৈয়দ আহমদ বেরলভীর জম্ম ও পরিচয়

মওদুদীর ভ্রান্ত আক্বিদা ও ইসলামী আক্বিদা