কুরআন-হাদীসের আলোকে তরীকার প্রয়োজনীয়তা
কুরআন-হাদীসের আলোকে তরীকার প্রয়োজনীয়তা
গ্রন্থনা ও সংকলনেঃ
ব্রিগেডিয়ার জেনারেল খুরশীদ আলম (অবঃ)
সম্পদনায়ঃ
আবু আহমদ জামেউল আখতার চৌধুরী
মুফ্তি মাওলানা আলাউদ্দিন জিহাদী
টেক্সট রেডীঃ মাসুম বিল্লাহ সানি
পৃষ্ঠপোষকতায়
আবতাহী ফাউন্ডেশন প্রকাশনা বিভাগ
প্রকাশনায়
সন্জরী পাবলিকেশন
৪২/২ আজিমপুর ছোট দায়রা শরীফ, ঢাকা-১২০৫
৮১, শাহী জামে মসজিদ সুপার মার্কেট, আন্দরকিল্লা, চট্টগ্রাম-৪০০০
প্রকাশক :
মুহাম্মদ আবু তৈয়ব চৌধুরী
লেখক কর্তৃক সর্বসত্ব সংরক্ষিত
প্রকাশকাল :
প্রথম সংস্করণ : ০৪ সেপ্টেম্বর, ২০১৬।
দ্বিতীয় সংস্করণ : ০৯ জানুয়ারি, ২০১৭।
প্রকাশনায় :
সন্জরী পাবলিকেশন
৪২/২ আজিমপুর ছোট দায়রা শরীফ, ঢাকা- ১২০৫, মোবাইল : ০১৯২৫-১৩২০৩১
৮১, শাহী জামে মসজিদ মার্কেট, আন্দরকিল্লা, চট্টগ্রাম, মোবাইল : ০১৬১৩-১৬০১১১
মূল্য : ৪০ [চল্লিশ] টাকা মাত্র।
مَـــوْلَايَ صَــلِّ وَّسَــلِّمْ دَائِــمًا أَبَــدًا
عَليٰ حَـبِـيْـبِـكَ خَــيْرِ الْـخَلْقِ كُلِّـهِم
مُـحَمَّدٌ سَـيِّدُ الْكَـوْنَـيـْنِ وَالثَّـقَـلَـيْنِ
وَالْفَـرِيْـقَـيْـنِ مِنْ عُرْبٍ وَّمِنْ عَـجَم
﴿صَلَّي اللهُ تَعَاليٰ عَلَيْهِ وَعَليٰ آلِـه وَصَحْبِه وَبَارِكْ وَسَلَّمَ﴾
প্রকাশকের কথা
আল্লাহ বলেন,
لَقَدْ مَنَّ اللَّهُ عَلَى الْمُؤْمِنِينَ إِذْ بَعَثَ فِيهِمْ رَسُولًا مِنْ أَنْفُسِهِمْ يَتْلُو عَلَيْهِمْ آَيَاتِهِ وَيُزَكِّيهِمْ وَيُعَلِّمُهُمُ الْكِتَابَ وَالْحِكْمَةَ وَإِنْ كَانُوا مِنْ قَبْلُ لَفِي ضَلَالٍ مُبِينٍ
-মু’মিনদের প্রতি আল্লাহ পাকের বড়ই ইহসান যে তাদের মধ্য থেকে তাদের জন্য একজন রাসূল প্রেরণ করেছেন, তিনি আল্লাহ পাকের আয়াতগুলি তিলাওয়াত করে শুনাবেন, তাদেরকে তাজকিয়া (পরিশুদ্ধ) করবেন এবং কিতাব ও হিকমত (আধ্যাত্মিক) জ্ঞান শিক্ষা দিবেন। যদিও তারা পূর্বে হেদায়ত প্রাপ্ত ছিল না।
এ আয়াত শরীফে বিশেষভাবে চারটি বিষয়ের প্রতি ইঙ্গিত দেয়া হয়েছে তন্মধ্যে আয়াত শরীফ তিলাওয়াত করে শুনানো এবং কিতাব ও হিকমত শিক্ষা দেয়া এ তিনটি বিষয় হচ্ছে ইলমে জাহেরী বা ইলমে ফিকহ্ ও ইলমে মা‘রিফাতের অন্তর্ভূক্ত। আর চতুর্থ হচ্ছে তাজকিয়ায়ে ‘ক্বল্ব’ অর্থাৎ অন্তর পরিশুদ্ধ করার মাধ্যমে আত্মশুদ্ধি লাভ করা, যাকে ইলমে তাসাউফ বলা হয়। ইলমে তাসাউফ মন বা অন্তরকে গাইরুল্লাহ থেকে ফিরিয়ে আল্লাহ পাকের দিকে রুজু করে দেয়। সর্বদা আল্লাহ পাকের হুজুরী পয়দা করে দেয় এবং ক্বলব বা মন থেকে বদ স্বভাব দূর করতঃ নেক স্বভাব সৃষ্টি করে অন্তরকে পরিশুদ্ধ করে দেয়।
দিল বা অন্তর থেকে দূরাশা, লোভ, কৃপণতা, হারাম, পরনিন্দা, মিথ্যা, হিংসা, অহংকার, ভন্ডামী, আক্রোশ, আত্মগরীমাসহ যাবতীয় মন্দ স্বভাব বা খারাপ চরিত্রসমূহ দূর করা এবং তাওবা, ইনাবাত, যুহ্দ, শোকর, তাওয়াক্কুল, তাসলীম, রেযা, সবর, কানা‘আতসহ সৎগুণাবলীসমূহ অন্তরে অর্জন করার পদ্ধতিকে মূলত তরীকত বলে।
খৃষ্ঠীয় দশম শতাব্দীতে আধ্যাত্মিক সাধনার পদ্ধতি নিয়ে সূফীদের মধ্যে মতানৈক্য সৃষ্টি হয়। কিন্তু প্রত্যেকটি দলই হযরত মুহাম্মদ মুস্তফা (ﷺ)কে প্রথম ও শ্রেষ্ঠ বলে অভিহিত করে এবং আধ্যাত্মিক জ্ঞানের উৎস বলে স্বীকার করে।
সূফীবাদের মতানৈক্যের ভিত্তিতে গঠিত তরীকাসমূহ, যেমন- কাদেরীয়া, নকশ্বন্দীয়া, চিশতীয়া, মুজাদ্দেদীয়া, সোহরাওয়ার্দীয়া ইত্যাদি তরীকা, যাদের প্রত্যেকটি বরহক তরীকা। একজন মুসলামান হিসেবে আন্তরের পরিশুদ্ধি অর্জনের জন্য যে-কোন একটি তরীকায় অন্তর্ভূক্ত হয়ে নিজেদের জীবনকে সঠিক পথে পরিচালিত করা আবশ্যক। কারণ আল্লাহ বলেন,
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آَمَنُوا اتَّقُوا اللَّهَ وَكُونُوا مَعَ الصَّادِقِينَ
-হে ঈমানদারগণ! তোমরা আল্লাহকে ভয় কর আর সাদেকীনদের সঙ্গী হও। এই আয়াত শরীফে আল্লাহ তা‘আলা মূলতঃ পীর মাশায়েখগণের সঙ্গী বা সোহবত ইখতিয়ার করার কথা বলা হয়েছে। কেননা, হক্কানী মুর্শিদগণই প্রকৃত সাদেকীন।
বর্তমান পরিস্থিতিতে মুসলিম উম্মাহর ঈমান-আকীদা ও আমলের সংরক্ষণে পবিত্র কুরআন-হাদীস থেকে তথ্য আহরণ করে ‘তরীকার’ প্রয়োজনীয়তা মুসলিম উম্মাহর সামনে পেশ করা সময়ের দাবী।
বিশিষ্ট লেখক জনাব ব্রিগেডিয়ার জেনারেল খুরশীদ আলম (অবঃ) রচিত এ পুস্তকে ‘তরীকার প্রয়োজনীয়তা’ সম্পর্কে পবিত্র কুরআন-হাদীসের অনেক তথ্য ও তত্তে¡র সমাবেশ ঘটেছে। পুস্তক রচনায় লেখক অনেক পরিশ্রম করেছেন বলে মনে হয়। আল্লাহ তাঁর শ্রম কবুল করুন। এর দ্বারা সত্যপ্রিয় পাঠক সমাজ উপকৃত হলে আমাদের এ শ্রম সার্থক হবে। পুস্তকের কোথাও কোন ভুল-ত্রুটি কারো নজরে পড়লে আমাদেরকে অবগত করলে চিরকৃতজ্ঞ থাকবো এবং পরবর্তী সংস্করণে তা সংশোধন করা চেষ্টা করবো। ইনশাআল্লাহ্! আল্লাহ আমাদের সকলের শ্রম কবূল করুন। আমীন!
মুহাম্মদ আবু তৈয়ব চৌধুরী
সন্জরি পাবলিকেশন
-ঃ উৎসর্গঃ-
আমার মহান মুরশিদ, অলীয়ে কামেল, হাদীয়ে আগা, কুতুবুজ্জামান, আশেকে রাসূল (ﷺ) শাহ সূফী হযরত মাওলানা শেখ আবদুস সালাম ফরিদপুরী নকশ্বন্দী মোজাদ্দেদী (মা.জি.আ.) এর
পবিত্র উসিলা নিয়ে উম্মতে মুহাম্মদীর কল্যাণের জন্য উৎসর্গকৃত।
পীরে তরীকত, রাহনুমায়ে শরীয়ত, আশেকে রাসূল (ﷺ) এবং মকিমীয়া মোজাদ্দেদীয়া দরবার শরীফের পীর সাহেব কেবলা হযরত শেখ আবদুস সালাম নকশ্বন্দী মোজাদ্দেদীয় (মা.জি.আ.) সাহেব-এর অভিমত
বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম
‘তরীকার প্রয়োজনীয়তা’ নামীয় পুস্তিকা খানার লিখকের “হক্ব-বাতিলের পরিচয় ও ঈমান রক্ষা” নামক একখানা বই ইতোপূর্বে প্রকাশিত হয়েছে।
সেখানে তিনি ফিৎনা সৃষ্টিকারী র্ফিকাসমূহের বাতিল আক্বিদার বিস্তারিত বিবরণ উপস্থাপন করে আহলে সুন্নাত ওয়াল জামায়াতের সঠিক আক্বিদা চমৎকারভাবে তুলে ধরেছেন। সঠিক আক্বিদার সঠিক পথে মঞ্জিলে মাকসুদে পৌঁছার জন্য তরীকার প্রয়োজনীয়তা ও অপরিহার্যতার বিষয়ে তিনি এই পুস্তিকায় বিষদভাবে বর্ণনা করেছেন। এতদ্ প্রসঙ্গে কুরআন, সহীহ হাদীস, ইজমা ও কিয়াসভিত্তিক বুজুর্গানে দ্বীনের মতামত বেশ সুচারুভাবে সংকলন করে উপস্থাপন করেছেন। বইখানে পড়ে আমি চমৎকৃত হয়েছি।
আল্লাহ জাল্লাশানুহু যাদের মু’মিন হিসেবে কবুল করতে চান; তারা এই বইখানা পড়ে অবশ্যই সঠিক পথের দিশা পাবে বলে আমি আশা পোষণ করি।
পরিশেষে আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের পাক দরবারে দয়াল নবীর উসিলায় প্রার্থনা করি লিখকের নেক নিয়্যতের এই মহতি প্রয়াস যেন সাফল্যের নূরানী সূর্য রশ্মিতে আলোকিত হয়ে দিশারীরূপে দীপ্যমান থাকে।
শেখ আব্দুস সালাম নকশ্বন্দী মোজাদ্দেদী
দরবারে মকিমীয়া মোজাদ্দেদীয়া
টানপাড়া, নিকুঞ্জ- ২, ঢাকা-১২২৯।
সংকলকের কথা
বিসমিল্লাহির রাহমানীর রাহীম
নাহমাদুহু ওয়া নুসাল্লি আলা রাসূলিহিল কারীম। আম্মা বা‘দ!
লোকে বলে পৈত্রিক সূত্রে বা বিনাশ্রমে প্রাপ্ত জিনিসের নাকি যথার্থ মূল্যায়ণ হয় না। হয়ত এমন ধারনা সর্বক্ষেত্রে প্রযোজ্য না হলেও আমাদের ইসলাম ধর্মের অনুসারীগণের বেলায় কথাটা আমার মতে খুবই সঠিক। আমরা অধিকাংশই জন্মসূত্রে মুসলমান। তাই আমরা ওয়ারিশানরা আমাদের ধর্মের মূল মন্ত্র তথা এর অমিয় বানী- ‘শান্তি, প্রেম, সংযম, মানবতা, আত্মশুদ্ধি’ এসব ভুলে গেছি। শত্রুরা যাই বলুক, এ ভূখন্ডে তো নয়ই, পৃথিবীর কোথাও ইসলাম তলোয়ারের জোরে প্রচার-প্রসার হয়নি। ইসলাম বিস্তার লাভ করেছে প্রেম ও মানবতার পাখায় ভর করে। কে শুনেছে সূদূর মালয়েশিয়া বা ইন্দোনেশিয়ায় ইসলামী ফৌজের অভিযানের কথা। সেখানে শান্তির ধর্ম ইসলাম মহব্বতের পরশে এসেছে। ভিন দেশে এক অনৈসলামিক পরিবেশে মহা প্রতাপশালী ও অত্যাচারী রাজা পৃথ্বিরাজ এক সূফী সাধকের আধ্যাত্মিক শক্তি ও ইসলামের অমিয় বাণীর কাছে পরাভূত। সেই আজমিরী সাধক একাই নিজ জীবদ্বশায় ৯০ লক্ষ মানুষকে আল্লাহর দ্বীনে দীক্ষিত করেন। একইভাবে ৩৬০ সাথী নিয়ে এক ইয়ামেনী সূফী সাধক জায়নামাযে বসে সুরমা নদী পাড়ি দিয়ে বঙ্গদেশ জয় করেন।
আরো ছিলেন- খুলনার খান জাহান আলী (رحمة الله), রাজশাহীতে শাহ মখদুম (رحمة الله), ঢাকার মিরপুরে শাহ আলী বাগদাদী (رحمة الله), কলিকাতার শাহ ফাতেহ আলী (رحمة الله), চট্টগ্রামে কথিত ১২ আওলিয়াসহ বাংলার আনাচে-কানাচে অসংখ্য সূফী সাধক যাঁদের অক্লান্ত পরিশ্রমের ফসল হলাম আমরা এবং আমাদের পূর্ব পুরুষগণ। তাঁদের ছিল আদর্শ, প্রেম, মানবতা, ছিল অন্যান্য সর্বোত্তম চারিত্রিক গুনাবলী এবং সর্বোপরি আল্লাহ প্রদত্ত বিধান ও মদদ। কিন্তু সে কথা আমরা বেমালুম ভুলে গেছি। কত অকৃতজ্ঞ আমরা, এ যেন সন্তান বাবাকে অস্বীকার করার মত ঘটনা। আমাদের জন্য তো কোন নতুন নবী আসেনি, না এসেছে নতুন কোন শরীয়ত। তবে কেন আমরা কুরআন-হাদীসের আলোকে প্রমাণিত এবং ইজমা-কিয়াস দ্বারা সাব্যস্ত ও প্রতিষ্ঠিত আমল-আক্বীদার ক্ষেত্রে নতুন নতুন উদ্ভট চিন্তা-চেতনার ও ভ্রান্ত আমল-আক্বীদার অনুপ্রবেশ ঘটিয়ে ইসলামের শান্তির বাগানকে তছনছ করে দিচ্ছি? এক দিকে যেমন রীতি-নীতি ও আমল-আখলাকের বাগানে ঝড় উঠেছে, অপর দিকে মানুষকে কাবাব বানিয়ে, কিমা বানিয়ে, গুপ্তহত্যা ও গণহত্যা করে স্বর্গের রথে চড়ানোর জন্য যুব সমাজকে উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে। যদিও তাদেরকে জান্নাতের অফুরন্ত নিয়ামতসহ হুর-গিলমানের স্বপ্ন দেখানো হচ্ছে, কিন্তু প্রকৃতপক্ষে এ সকল যুবকদেরকে জাহান্নামের পথে পরিচালিত করা হচ্ছে। চারদিকে চলছে গভীর ও মারাত্মক ষড়যন্ত্র আর চূড়ান্ত। এ যেন এক ভয়াবহ পরিনতিরই ইঙ্গিত। এ থেকে বাঁচতে হলে আমাদের মূল মন্ত্রে ফিরে যেতে হবে। তা হলো ইসলামের অমিয় বানী- যা আমাদের পূর্ব-পুরুষগণ সূফী সাধকদের মাধ্যমে পেয়েছিলেন। অর্থাৎ আমাদের শরীয়তের পাশাপাশি তরীকত, হাকীকত ও মা‘রিফাতের সোনালী পথে চলতে হবে। শরীয়ত-তরীকতের হাত ধরে ইয়াজিদি ইসলাম পরিত্যাগ করে হুসাইনী ইসলামের পূনঃউন্মেষ ঘটাতে হবে।
ইদানিং কিছু লোক মনে করে তরীকত-মা’রিফত বা পীরি-মুরিদি বলতে কিছু নেই, এ পথ ভ্রান্ত পথ এবং এ পথে চলা নাজায়েয। এমন কি কখনো কখনো শিরক, বিদ‘আত, হারামের ফতোয়া দিয়ে বসে। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে কুরআন-হাদীসের অপব্যাখ্যা করে তারা নিজেরাই ইসলামের ভুল রাস্তায় চলে ধ্বংসের পথে অগ্রসর হচ্ছে। বাস্তবে তারাই বাতিল। হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রাাদ্বিয়াল্লাহু আনহু) কতই না সুন্দর বলেছেন, ‘তারা ঈমান আনবে মুহকাম (স্পষ্টভাবে নির্দেশিত) আয়াত সমূহে এবং ধ্বংস হয়ে যাবে মুতাশাবিহ্ (অস্পষ্ট) আয়াতসমূহের কারণে।’ মহান আল্লাহ্ বলেছেন, যাদের অন্তরে ব্যাধি আছে তারা অস্পষ্ট আয়াতের অপব্যাখ্যা করে মানুষকে ধোঁকা দিবে। (সূরা আলে-ইমরান; আয়াত:৭)। আর যারা কুরআন-হাদীসের সঠিক ব্যাখ্যা করতে পেরেছেন তারাই তরীকতের পথে চলে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনে সক্ষম হয়েছেন। তরীকতের পথ যদি সত্যিই অপ্রয়োজনীয় হতো তবে উম্মাহর শ্রেষ্ঠ আলেম ইমামে আজম আবু হানিফা (رحمة الله), উম্মাহর শ্রেষ্ঠ হাফিজে হাদীস (১০ লক্ষ হাদীসের হাফিজ) ইমাম আহমদ বিন হাম্বল (রহমাতুল্লাহি আলাইহি), উম্মাহর শ্রেষ্ঠ ওলামাগণ তরীকতের অনুসারী হতেন না। চার তরীকার চার ইমাম, চার মাযহাবের চার ইমামসহ দ্বীনের সকল হাক্কানী প্রচারক ও সাধকগণতো তরীকতের অনুসারীই ছিলেন। এমন কি যারা আজ তরীকত প্রত্যাখ্যান করছে তাদের মুরুব্বিরাও তরীকতের দীক্ষা নিয়েছেন এবং পীরি-মুরিদি করেছেন। তরীকতের অনুসারী ব্যতিত কেউ কোন দিন আল্লাহর অলীর দপ্তরে নাম লিখাতে পারেনি এবং কিয়ামত পর্যন্ত তা পারবেও না। আর এ অলীরাই হলেন পীর বা মুরশিদ, যাদের অনুসারী হতে আল্লাহ ও তাঁর হাবীব (ﷺ) নির্দেশ করেছেন। ইমাম মেহেদী (আলাইহিস্ সালাম) এর আগমন পর্যন্ত তরীকতের সীলসীলা চলতেই থাকবে এবং ইমাম মেহেদী স্বয়ং তরীকতপন্থী হিসাবেই প্রকাশিত হবেন, ইন্শাআল্লাহ্।
মা’রিফতের পথ হলো আত্ম-শুদ্ধির মাধ্যমে আত্ম-পরিচয় ও স্রষ্টার পরিচয় লাভের পথ। আল্লাহ্ ফরমান, ‘আমার পরিচয় না পেয়ে কবরে এসো না’। আর এ পথে সফলতার জন্য তিনি রেখেছেন পরীক্ষা। যেখানে পরীক্ষা সেখানেই দরকার কিছু সাধনা, আছে কিছু কষ্ট। কিন্তু আমাদের সাধনার পথ ইতিমধ্যে কুরআন-হাদীসের অপব্যখ্যা করে এবং মিথ্যা ও বানোয়াট তন্ত্র-মন্ত্রের প্রচার-প্রসার করে (বিশেষ করে কোন কোন ইলেকট্রনিক্স মিডিয়ার কল্যাণে) মারাত্মক বিভ্রান্তিকর ও কন্টকময় করে ফেলা হয়েছে। মনে হয় যেন হুযুর (ﷺ) এর সে ৭৩ ফিরকার হাদীসের মর্ম অনুযায়ী আমরা তা বাস্তবায়নের দিকেই ধাবিত হচ্ছি। এই ফাঁদ থেকে মুসলিম উম্মাহ্ বেরিয়ে আসতে পারবে কি না তা আল্লাহ্ই ভালো জানেন।
তবে শরীয়ত-তরীকত-মা’রিফতের পথই হলো আমাদের সত্যিকারের উত্তরনের পথ। বর্তমান বিশ্বের অশান্ত পরিবেশকে শান্ত করতে এবং জঙ্গিবাদকে নির্মূল করতে সূফিবাদ অর্থাৎ তরীকত-মা’রিফতের পথকেই বেঁছে নিতে হবে।
কিন্তু আফসোস অত্যন্ত সুকৌশলে এবং বিশাল অর্থ ব্যয়ে এই পথকে ঘৃণিত ও পরিত্যাজ্য বিষয় বলে প্রচার করা হচ্ছে। তদুপরি এপথে কাঁটা বিঁছিয়ে বসে আছে কিছু ভন্ড ও অর্থলোভী তথাকথিত সূফী নামের প্রতারকের দল। তাই যদিও অনন্তকালের সফলতার জন্য সত্যিকার কামেল সূফীর সোহবত এবং তরীকত-মা’রিফতের পথ অবলম্বন অপরিহার্য, কিন্তু যাত্রীকে হতে হবে সাবধান, হুঁশিয়ার। এহেন পরিস্থিতিতে তরীকত-মা’রিফত সম্বন্ধে কুরআন-হাদীসে কি শিক্ষা ও নির্দেশনা রয়েছে তা জানানোর জন্য অধমের এই ক্ষুদ্র প্রয়াস। মহান রাব্বুল আ‘লামিনের দরবারে আকুল প্রার্থনা এর কবুলিয়াতের জন্য। আর এতে যদি কোন বিনিময়ের সুযোগ থাকে, তবে তা যেন মুসলিম উম্মাহর পরিত্রান ও কল্যাণের জন্য বর্ষিত হয়। আমিন
এছাড়া আন্তরিকভাবে শুকরিয়া জানাচ্ছি আমার দয়াল পীর দস্তগীর হযরত শেখ আবদুস্ সালাম নক্শবন্দী মোজাদ্দেদী (মাঃ জিঃ আঃ)’র প্রতি, যাঁর উৎসাহ, দোয়া ও পবিত্র সোহবতের কারণে আমি গুনাহগার এ ক্ষুদ্র কিতাব রচনা করতে পেরেছি। আরো শুকরিয়া জানাই তাদেরকে, যারা আমাকে বিভিন্নভাবে সহযোগীতা করেছেন, বিশেষ করে ‘সন্জরী পাকলিকেশন’ এর স্বত্তাধিকারী ও এ কিতাবের প্রকাশক জনাব মুহাম্মদ আবু তৈয়ব চৌধুরী সাহেবকে। আল্লাহ পাক সকলকে উত্তম বিনিময় দান করুন। আমিন
আরজ গুজার
ব্রিগেডিয়ার জেনারেল খুরশীদ আলম (অবঃ)
খাদেম দরবারে মকিমীয়া মোজাদ্দেদীয়া
টানপাড়া, নিকুঞ্জ- ২, ঢাকা-১২২৯
তরীকার প্রয়োজনীয়তা
১. পবিত্র কুরআন-হাদীসে বর্ণিত আদেশ ও নিষেধাবলীর নাম হলো শরীয়ত।
২. আল্লাহকে চিনা বা আল্লাহর পরিচয় পাওয়ার যে পথ তার নাম হলো তরীকত।
৩. কুরআনে আল্লাহ্ ফরমান¬-
وَمَا خَلَقْتُ الجِّنَّ وَالْاِنْسَ إِلَّا لِيَعْبُدُوْنِ-
জ্বীন ও ইনসানকে সৃষ্টি করা হয়েছে আল্লাহর ইবাদতের জন্য। ১
➥১. আল কুরআন : সূরা আয-যারিয়াত, ৫১:৫৬।
৪. আর ইবাদত করার জন্য প্রয়োজন ইলম বা জ্ঞান। তাই আল্লাহ্ প্রত্যেক নারী-পুরুষের জন্য ইলম তথা বিদ্যা অর্জন ফরজ করেছেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেন-
طَلَبُ الْعِلْمِ فَرِيضَةٌ عَلَى كُلِّ مُسْلِمٍ.
অর্থ : প্রত্যেক মুসলমান নর-নারীর ওপর জ্ঞানার্জন ফরজ। ২
➥২.
ক) ইবনে মাজাহ : আস্ সুনান, বাবু ফদ্বলিল ওলামায়ি ওয়াল হাস্সি আলা তালাবিল ইলম, ১:২৬০, হাদিস নং : ২২০।
খ) তাবরিযী : মিশকাতুল মাসাবীহ, কিতাবুল ইলম, ১ম পরিচ্ছেদ, পৃ. ৪৭, হাদিস নং : ২১৮।
গ) তাবরানী : মু’জামুস্ সগীর, বাবু তালাবিল ইলমি ফারিদাতু আলা কুল্লি মুসলিম, ১:২৫, হাদিস নং: ২২।
ঘ) বায়হাকী : শু‘আবুল ঈমান, বাবু তালাবিল ইলমি ফারিদাতু আলা কুল্লি মুসলিম, ৪:১৭৬, হাদিস নং : ১৬১৪।
৫. ইলম আবার দুই প্রকার। যথা-
(ক) জাহেরী বা প্রকাশ্য ইলম, যাকে বলা হয় শরীয়ত।
(খ) বাতেনী বা র্সিরি বা অপ্রকাশ্য বা গোপন ইলম, যাকে বলা হয় তরীকত-মা‘রিফত বা তাসাউফ।
৬. আল্লাহ্ যেহেতু ইলম অর্জনকে ‘আম’ বা ব্যাপকার্থে ফরজ করেছেন, সেহেতু উভয় প্রকার ইলম অর্জনই ফরজ হয়ে যায়। অথচ আমরা শুধু জাহেরী ইলম বা শরীয়ত মানব, কিন্তু বাতেনী ইলম বা তরীকত মানব না- এটা তো হতে পারে না। আল্লাহর যে কোন হুকুম না মানাই কুফরি।
৭. পবিত্র কুরআনে আল্লাহ তা‘আলা এরশাদ করেন-
اَفَتُؤْمِنُوْنَ بِبَعْضِ فَمَا جَزَاءُ مَنْ يَفْعَلُ ذَلِكَ مِنْكُمْ إِلَّا خِزْىٌ فِىْ الْحَيَوَاةِ الدُّنِيَا وَيَوْمَ الْقِيَامَةِ يُرَدُّوْنَ إِلىَ أَشَدِّ الْعَذَابَ-
অর্থ : তবে কি তোমরা কিতাবের কিছু অংশ বিশ্বাস কর এবং কিছু অংশকে প্রত্যাখান কর? সুতরাং তোমাদের যারা এরূপ করে তাদের একমাত্র প্রতিফল পার্থিব জীবনে হীনতা ও কিয়ামতের দিন তারা কঠিন শাস্তির দিকে নিক্ষিপ্ত হবে। ৩
➥৩. আল কুরআন : সূরা বাকারা, ২:৮৫।
৮. ইমাম মালেক (رحمة الله) বলেন,
مَنْ تَفَقَّهَ وَلَمْ يَتَصَوَّفْ فَقَدْ تَفَسَّقَ، وَمَنْ تَصَوَّفَ وَلَمْ يَتَفَقَّهْ فَقَدْ تَزَنْدَقَ، وَمَنْ جَمَعَ بَيْنَهُمَا فَقَدْ تَحَقَّقَ،
অর্থ : যে ব্যক্তি ইলমে শরীয়ত হাসিল করলো এবং ইলমে মা‘রিফাত হাসিল করেনি সে ফাসেক, আর যে ব্যক্তি শুধু মা‘রিফত বিদ্যা অর্জন করেছে কিন্তু শরিয়তের ইলম নেই, সে হচ্ছে জিন্দিক (কাফের), আর যেই ব্যক্তি উভয় প্রকার ইলম অর্জন করেছেন, সে-ই হচ্ছে হক্কানী আলেম বা নবীর খাঁটি ওয়ারিশ। ৪
➥৪. মোল্লা আলী কারী : মিরকাতুল মাফাতীহ শরহে সহীহুল বুখারী, কিতাবুল ইলম, ১:৩৩৫।
৯. পবিত্র কুরআনে আল্লাহ তা‘আলা এরশাদ করেন-
وَأَسْبَغَ عَلَيْكُمْ نِعَمَهُ، ظَاهِرَةً وَبَاطِنَةً-
অর্থ : তোমাদের প্রতি তাঁর (আল্লাহর) জাহেরী ও বাতেনী নিয়ামত সম্পূর্ণ করেছেন। ৫
➥৫. আল কুরআন : সূরা লোকমান, ৩১:২০।
উল্লেখ্য যে, জাহেরী নিয়ামত হলো শরীয়ত আর বাতেনী নিয়ামত হলো তরীকত, মা‘রিফত বা তাসাউফ।
১০. মি’রাজের রজনীতে প্রাপ্ত ইলম- ৯০,০০০। তন্মধ্যে ৩০,০০০ হলো সাধারণ লোকদের জন্য প্রযোজ্য, যা শরীয়ত। ৩০,০০০ খাছ, বিশেষদের কিংবা অলীদের জন্য প্রযোজ্য, যা তরীকত এবং ৩০,০০০ হলো আখাচ্ছুল-খাছ, যা আল্লাহ্ ও তাঁর প্রিয় রাসূল (ﷺ) এর জন্য প্রযোজ্য। ৬
➥৬. মোল্লা জিওন : তাফসীরে আহমদিয়া, পৃ. ৩৩৯। [সূরা নজমের ব্যাখ্যা দ্রষ্টব্য]
১১. জাহেরী বা শরিয়তের ইলম ফিকাহ শাস্ত্রে পাওয়া যায় এবং শিখার জন্য প্রয়োজন মাদ্রাসা ও ওস্তাদ। আর বাতেনী ইলম অর্জন বা তরিকত্বের নিয়মাবলী শিখার জন্য প্রয়োজন খানকা ও শায়খ বা পীর।
১২. শরিয়তের মূল শাখা তিনটি। যথা-
(ক) ইলম-জ্ঞান বা বিদ্যা;
(খ) আমল- ইলম অনুযায়ী আমল।
(গ) এখলাস- আন্তরিক বিশ্বাস/ বিশুদ্ধ নিয়ত।
হাদীস শরীফে বর্ণিত হয়েছে যে,
إِنَّمَا الْأَعْمَالُ بِالنِّيَّاتِ.
অর্থ : নিশ্চয় কর্মকান্ড নিয়্যতানুযায়ী সম্পাদিত হয়। ৭
➥৭. বুখারী : আস্ সহীহ, বাবু বদউল ওহী, ১:৩, হাদিস নং : ০১।
উল্লেখ্য যে, ইলম ও আমল হলো শরিয়তের বিষয় আর এখলাস হলো শরীয়ত, তরীকত ও মা‘রিফতের বিষয়। আর বিশুদ্ধ এখলাস অর্জনের সাহায্যকারী খাদেম হলো তরীকত তথা পীর।
১৩. হাদীসে জিব্রাঈল এর আলোকে আমাদের ধর্মের পূর্ণতার জন্য প্রয়োজন-
(ক) ইসলাম- কলেমা পড়বে, নামাজ পড়বে, রোজা রাখবে, যাকাত দিবে, হজ্জ করবে।
(খ) ঈমান- বিশ্বাস আল্লাহকে, আসমানী কিতাবে, রাসূলগণে, কিয়ামতে, তকদিরের ভাল-মন্দের উপর।
(গ) এহসান- এমন করে ইবাদত করবে যেন তুমি আল্লাহকে দেখছ বা অন্তত এই বিশ্বাস রাখবে যে আল্লাহ অবশ্যই তোমাকে দেখছেন।
নোট :
(১) ইসলাম ও ঈমান হলো শরিয়তের বিষয়। আর এহসান হলো তরিকতের। আমাদের জীবনে ইসলামের পূর্ণতার জন্য এহসান অবশ্যই প্রয়োজন, আর এহসান অর্জনের জন্য তরীকত। তরিকতের পীর-মাশাঈখদের চৌকাট ব্যতিত অন্য কোথাও এহসান অর্জন করা যায় না। (২) শুধু শরীয়তের মাধ্যমে দ্বীনের পূর্ণতা আসবে না। (৩) শরীয়তকে মজবুত করার জন্যই হলো তরীকত এবং মা‘রিফত। (৪) শরীয়ত হলো দুধ আর তরীকত মাখন। (৫) শরীয়ত হলো দেহ আর তরীকত প্রাণ। (৬) শুধু শরীয়তের অনুসারীরা হলো ফাসিক, আর শুধু তরীকতের অনুসারীরা হলো যিন্দীক (কাফির)। শরীয়ত এবং তরীকত নিয়েই পূর্ণতা।
১৪. ইয়াকীনের স্তর ০৩টি। যথা-
(ক) ইলমুল ইয়াকীন;
(খ) আইনুল ইয়াকীন;
(গ) হাক্কুল ইয়াকীন।
উল্লেখ্য যে, আইনুল ইয়াকীন এবং হাক্কুল ইয়াকীন অর্জনের জন্য প্রয়োজন তরীকত।
কুরআনের আলোকে পথ প্রদর্শকের প্রয়োজনীয়তার দলীল
১. পবিত্র কুরআনে আল্লাহ তা‘আলা এরশাদ করেন-
مَنْ يُضْلِلِ اللهُ فَلَا هَادِىَ لَهُ، وَيَذَرُهُمْ فِىْ طُغْيَانِهِمْ يَعْمَهُوْنِ-
অর্থ : আল্লাহ্ যাদেরকে বিপদগামী করেন তাদের কোন হাদী (পথ প্রদর্শক) নেই, আর তাদেরকে তিনি তাদের অবাধ্যতায় উৎ-ভ্রান্তের ন্যায় ঘুরে বেড়াতে দেন। ৮
➥৮. আল কুরআন : সূরা আ‘রাফ, ৭:১৮৬।
২. পবিত্র কুরআনে আল্লাহ তা‘আলা এরশাদ করেন-
وَمَنْ يُضْلِلِ اللهُ فَمَا لَهُ، مِنْ هَادٍ-
অর্থ : আর আল্লাহ্ যাকে বিভ্রান্ত করেন তার কোন হাদী (পথ প্রদর্শক) নাই। ৯
➥৯. আল কুরআন : সূরা আর-রা‘দ, ১৩:৩৩।
৩. পবিত্র কুরআনে আল্লাহ তা‘আলা এরশাদ করেন-
وَمَنْ يَهْدِ اللهُ فَهُوَ الْمُهْتَدِ وَمَنْ يُضْلِلْ فَلَنْ تَجِدَ لَهُمْ أَوْلِيَاءَ مِنْ دُوْنِهِ-
অর্থ : যাদেরকে তিনি পথভ্রষ্ট করেন তুমি কখনই তাঁদেরকে ব্যতিত অন্য কাউকে তাদের আওলিয়া (অভিভাবক) পাবে না। ১০
➥১০. আল কুরআন : সূরা বনি ইসরাঈল, ১৭:৯৭।
৪. পবিত্র কুরআনে আল্লাহ তা‘আলা এরশাদ করেন-
وَمَنْ يُضْلِلْ فَلَنْ تَجِدَ لَهُ، وَلِيًّا مُرْشِدًا-
অর্থ : এবং তিনি যাকে পথভ্রষ্ট করেন, তুমি কখনও তার কোন পথ প্রদর্শনকারী মুর্শিদ (অভিভাবক) পাবে না। ১১
➥১১. আল কুরআন : সূরা আল-কাহাফ, ১৮:১৭।
৫. পবিত্র কুরআনে আল্লাহ তা‘আলা এরশাদ করেন-
وَمَنْ يُضْلِلِ اللهٌ لَهُ، فَمَا لَهُ، مِنْ هَادٍ-
অর্থ : আল্লাহ্ যাকে বিভ্রান্ত করেন, তাহার কোন হাদী (পথপ্রদর্শক) নাই। ১২
➥১২. আল কুরআন : সূরা আয-যুমার, ৩৯:২৩।
৬. পবিত্র কুরআনে আল্লাহ তা‘আলা এরশাদ করেন-
وَمَنْ يُضْلِلِ اللهٌ لَهُ، فَمَا لَهُ، مِنْ هَادٍ-
অর্থ : আল্লাহ্ যাকে পথভ্রষ্ট করেন তার জন্য কোন হাদী (পথ প্রদর্শক) নাই। ১৩
➥১৩. আল কুরআন : সূরা আয-যুমার, ৩৯:৩৬।
৭. পবিত্র কুরআনে আল্লাহ তা‘আলা এরশাদ করেন-
وَمَنْ يُضْلِلِ اللهٌ لَهُ، فَمَا لَهُ، مِنْ هَادٍ-
অর্থ : আল্লাহ্ যাকে পথভ্রষ্ট করেন তার জন্য কোন হাদী (পথ প্রদর্শক) নাই। ১৪
➥১৪. আল কুরআন : সূরা আল-মু’মিন, ৪০:৩৩।
৮. পবিত্র কুরআনে আল্লাহ তা‘আলা এরশাদ করেন-
وَمَنْ يُضْلِلِ اللهُ لَهُ، مِنْ وَلِىٍّ مِّنْ بَعْدِهِ-
অর্থ : আল্লাহ্ যাকে পথভ্রষ্ট করেন তৎপর তার জন্য কোন অলী (অভিভাবক) নাই। ১৫
➥১৫. আল কুরআন : সূরা আশ-শুরা, ৪২:৪৪।
৯. পবিত্র কুরআনে আল্লাহ তা‘আলা এরশাদ করেন-
وَمَا كَانَ لَهُمْ مِنْ أَوْلِيَاءَ يَنْصُرُوْنَهُمْ مِّنْ دُوْنِ اللهِ وَمَنْ يُضْلِلِ اللهُ فَمَا لَهُ، مِنْ سَبِيْلٍ-
অর্থ : আল্লাহ্ ব্যতিত তাদেরকে সাহায্য করার জন্য তাদের কোন আউলিয়া (অভিভাবক) থাকবে না এবং আল্লাহ্ যাকে পথভ্রষ্ট করেন তার কোন গতি নাই। ১৬
➥১৬. আল কুরআন : সূরা আশ-শুরা, ৪২:৪৬।
উপরোক্ত ৯টি আয়াত দ্বারা বুঝা গেল হাদী, আউলিয়া, অলী, মুর্শিদ এবং পীরের অবশ্যই প্রয়োজন আছে। অলীদের সোহবত হাসিল করলে, আনুগত্য করলে, সম্মান করলে, আল্লাহর যিকির হয়ে যায়, চিত্ত প্রশান্তি লাভ করে এবং নসীব বুলন্দ হয়। তাই আমাদের উচিত উপযুক্ত ‘হাদী’র সন্ধান করে তাঁর কাছ থেকে আল্লাহর পরিচয় লাভের পথ তথা তরীকতের দীক্ষা নেওয়া এবং তাঁর অনুসরণ করা।
কুরআনের আলোকে তরীকার প্রয়োজনীয়তার দলীল
১. পবিত্র কুরআনে আল্লাহ তা‘আলা এরশাদ করেন,
إِنَّ رَبَّكَ أَحَاطَ بِالنَّاسِ-
অর্থ : নিশ্চয়ই তোমার প্রতিপালক মানুষকে পরিবেষ্টন করে আছেন। ১৭
➥১৭. আল কুরআন : সূরা বনী ইসরাঈল, ১৭:৬০।
২. পবিত্র কুরআনে আল্লাহ তা‘আলা এরশাদ করেন,
وَنَحْنُ أَقْرَبُ إِلَيْهِ مِنْ حَبْلِ الْوَرِيْدِ-
অর্থ : আমি বান্দার শাহরগ (মেরু রজ্জু) হতেও নিকটে আছি। ১৮
➥১৮. আল কুরআন : সূরা ক্বফ, ৫০:১৬।
৩. পবিত্র কুরআনে আল্লাহ তা‘আলা এরশাদ করেন,
أَنَّ اللهَ يَحُوْلُ بَيْنَ الْمُوْءِ وَقَلْبِهِ-
অর্থ : আল্লাহ্ মানুষ ও তার অন্তরের মধ্যবর্তী হয়ে থাকেন। ১৯
➥১৯. আল কুরআন : সূরা আল-আনফাল, ৮:২৪।
৪. পবিত্র কুরআনে আল্লাহ তা‘আলা এরশাদ করেন,
فَإِنِّىْ قَرِيْبٌ أُجِيْبُ دَعْوَةَ الدَّاعِ إِذَا دَعَانِ-
অর্থ : আমি তো নিকটেই। আহবানকারী যখন আমাকে আহবান করে আমি তার আহবানে সাড়া দেই।২০
➥২০. আল কুরআন : সূরা আল-বাকারা, ২:১৮৬।
৫. পবিত্র কুরআনে আল্লাহ তা‘আলা এরশাদ করেন,
وَمَا كَانَ لِبَشَرٍ أَنْ يُّكَلِّمَهُ إِلَّا وَحْيًا أَوْ مِن وَرَاىٍ حِجَابٍ أَوْ يُرْسِلَ رَسُوْلًا فَيُوْحِىَ بِإِذْنِهِ، مَا يَشَاءُ-
অর্থ : মানুষের এমন মর্যাদা নাই যে, আল্লাহ্ তার সাথে কথা বলবেন ওহীর মাধ্যম ব্যতিত অথবা পর্দার অন্তরাল ছাড়া অথবা এমন দূত প্রেরণ ব্যতিত, যে দূত তাঁর অনুমতিক্রমে তিনি যা চান তা ব্যক্ত করেন। ২১
➥২১. আল কুরআন : সূরা আশ-শুরা, ৪২:৫১।
৬. পবিত্র কুরআনে আল্লাহ তা‘আলা এরশাদ করেন,
وَفِىْ أَنْفُسِكُمْ أَفَلَا تُبْصِرُوْنَ-
অর্থ : আমার নিদর্শন তো তোমাদের মধ্যেও। তোমরা কি তা দেখ না? বা আমি তো তোমাদের সীনার (আনফাস) মধ্যেই আছি, তোমরা কি তা দেখ না? ২২
➥২২. আল কুরআন : সূরা আয-যারিয়াত, ৫১:২১।
৭. পবিত্র কুরআনে আল্লাহ তা‘আলা এরশাদ করেন,
إِنَّ رَبِّىْ قَرِيْبٌ مُجِيْبُ-
অর্থ : নিশ্চয়ই আমার প্রতিপালক নিকটে, তিনি আহবানে সাড়া দেন। ২৩
➥২৩. আল কুরআন : সূরা হুদ, ১১:৬১।
৮. পবিত্র কুরআনে আল্লাহ তা‘আলা এরশাদ করেন,
وَمَنْ كَانَ فِىْ هَذِهِ أَعْمَىَ فَهُوَ فِىْ الْأَخِرَةِ أَعْمَىَ وَأَضَلُّ سَبِيْلًا-
অর্থ : আর যেই ব্যক্তি এইখানে অন্ধ সে আখিরাতেও অন্ধ এবং অধিকতর পথভ্রষ্ট। ২৪
➥২৪. আল কুরআন : সূরা বনী ইসরাঈল, ১৭:৭২।
৯. পবিত্র কুরআনে আল্লাহ তা‘আলা এরশাদ করেন,
اَلَّذِيْنَ كَانَتْ اَعْيُنُهُمْ فِىْ غِطَاءٍ عَنْ ذِكْرِى وَكَانُوْا لَا يَسْتَطِيْعُوْنَ سَمْعًا-
অর্থ : যাদের চক্ষু ছিল অন্ধ আমার নিদর্শনের প্রতি এবং যারা শুনতেও ছিল অক্ষম। ২৫
➥২৫. আল কুরআন : সূরা আল-কাহাফ, ১৮:১০১।
১০. পবিত্র কুরআনে আল্লাহ তা‘আলা এরশাদ করেন,
فَإِنَّهَا لَا تَعْمَى اَلْاَبَصَارُ وَلَاكِنْ تَعْمَى اَلْقُلُوْبِ الَّتِىْ فِىْ الصُّدُوْرِ-
অর্থ : বস্তুত চক্ষু তো অন্ধ নয়, বরং অন্ধ হচ্ছে বক্ষস্থিত হৃদয়। ২৬
➥২৬. আল কুরআন : সূরা হজ্ব, ২২:৪৬।
১১. পবিত্র কুরআনে আল্লাহ তা‘আলা এরশাদ করেন,
فِىْ قُلُوْبِهِمْ مَّرَضٌ-
অর্থ : ‘(ধর্মদ্রোহীদের) ক্বল্বে রয়েছে অসুখ।’ তাই তারা আল্লাহকে চিনে না। ২৭
➥২৭. আল কুরআন : সূরা আল-বাকারা, ২:১০।
১২. পবিত্র কুরআনে আল্লাহ তা‘আলা এরশাদ করেন,
يَا أَيُّهَا الَّذِيْنَ اَمَنُوْا اتَّقُوْا اللهَ حَقَّ تُقَاتِهِ، وَلَا تَمُوْتُنَّ إِلَّا وَأَنْتُمْ مُسْلِمُوْنَ-
অর্থ : হে মু’মিনগণ! তোমরা আল্লাহকে যথার্থভাবে ভয় কর এবং তোমরা আত্মসমর্পণকারী না হয়ে কোন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করো না। ২৮
➥২৮. আল কুরআন : সূরা আলে ইমরান, ৩:১০২।
১৩. পবিত্র কুরআনে আল্লাহ তা‘আলা এরশাদ করেন,
قَدْ أَفْلَحَ مَنْ زَكَهَا، وَقَدْ خَابَ مَنْ دَسَّهَا-
অর্থ : নিশ্চয়ই যারা সেটাকে (রূহকে) জাগ্রত করেছে তারাই শুধু মুক্তি লাভ করেছে। আর তারা ধ্বংস হয়েছে, যারা (রূহকে) মাটি চাপা দিয়ে রেখেছে। ২৯
➥২৯. আল কুরআন : সূরা আশ-শামস, ৯১:৯-১০।
১৪. পবিত্র কুরআনে আল্লাহ তা‘আলা এরশাদ করেন,
يَا أَيُّهَا الَّذِيْنَ أَمَنُوْا اَدْخُلُوْا فِىْ السِّلْمِ كَافَّةُ-
অর্থ : হে মু’মিনগণ! তোমরা পরিপূর্ণভাবে ইসলামে প্রবেশ কর। ৩০
➥৩০. আল কুরআন : সূরা আল-বাকারা, ২:২০৮।
১৫. পবিত্র কুরআনে আল্লাহ তা‘আলা এরশাদ করেন,
إِلَّا مَنْ أَتَى اللهَ بِقَلْبٍ سَلِيْمٍ-
অর্থ : পরিচ্ছন্ন দিল ছাড়া আল্লাহর দরবারে মুক্তি পাওয়া যাবে না। ৩১
➥৩১. আল কুরআন : সূরা আশ-শুরা, ২৬:৮৯।
১৬. পবিত্র কুরআনে আল্লাহ তা‘আলা এরশাদ করেন,
فَأَذْكُرُوْنِىْ أَذْكُرُكُمْ وَاشْكُرُوْا لِىْ وَلَا تَكْفُرُوْنِ-
অর্থ : সুতরাং তোমরা আমাকেই স্মরণ কর, আমিও তোমাদেরকে স্মরণ করবো। ৩২
➥৩২. আল কুরআন : সূরা আল-বাকারা, ২:১৫২।
১৭. পবিত্র কুরআনে আল্লাহ তা‘আলা এরশাদ করেন,
وَمَنْ يُشَاقِقِ الرَّسُوْلَ مِنْ بَعْدِ مَا تَبَيَّنَ لَهُ الْهُدَىَ وَيَتَّبِعَ غَيْرَ سَبِيْلِ الْمُوْمِنِيْنَ نُوَلِّهِ، مَا تَوَلِىْ وَنُصْلِهِ، جَهَنَّمَ وَسَاءَتْ مَصِيْرًا-
অর্থ : কারো নিকট সৎপথ প্রকাশের পর সে যদি রাসূলের বিরুদ্ধাচরণ করে বা মু’মিনদের পথ ব্যতিত অন্য পথ অনুসরণ করে .... জাহান্নামে তাদের দ্বগ্ধ করব। ৩৩
➥৩৩. আল কুরআন : সূরা আন-নিসা, ৪:১১৫।
১৮. পবিত্র কুরআনে আল্লাহ তা‘আলা এরশাদ করেন,
لَيْسَ عَلىَ الَّذِيْنَ أَمَنُوْا وَعَمِلُوْا الصَّالِحَاتِ جُنَاحٌ فِيْمَا طَعِمُوْا إِذَا مَا اَتَّقَوْا وَأَمَنُوْا وَعَمِلُوْا الصَّالِحَاتِ ثُمَّ اَتَّقَوْا وَاَمَنُوْا ثُمَّ اتَّقَوْا وَأَحْسَنُوْا وَاللهُ يُحِبُّ الْمُحْسِنِيْنَ-
অর্থ : যারা ঈমান আনে ও সৎকর্ম (আমলে ছালেহা) করে তারা পূর্বে যা ভক্ষণ করেছে সেজন্য তাদের কোন গুনাহ নাই, যদি তারা সাবধান হয় এবং ঈমান আনে ও সৎকর্ম করে, সাবধান হয় ও বিশ্বাস করে, পুনরায় সাবধান হয় ও সৎকর্ম করে এবং আল্লাহ সৎকর্ম পরায়নদিগকে ভালবাসেন। ৩৪
➥৩৪. আল কুরআন : সূরা আল-মায়িদা, ৫:৯৩।
নোট :
(১) ঈমান, সৎকর্ম ও তাকওয়ার সাথে এহসানও আবশ্যক। কারণ এহসান ব্যতিত সূফী, মোহসীন কিংবা অলী হওয়া যায় না। আর এহসানের জন্য তরীকত প্রয়োজন। সূরা বাকারার ১২২নং আয়াত অনুযায়ী মোহসীন ও সূফীগণ জান্নাতি।
(২) আল্লাহকে চিনা, আল্লাহর পরিচয় লাভ, দিলকে পরিচ্ছন্ন করা, রূহ ও অন্তর চক্ষুকে জাগ্রত করা, আল্লাহর যিকিরকে দায়েমী করা, পরিপূর্ণভাবে ইসলামে দাখিল হওয়া, দীলে হুযুরী বা একাগ্রতা সৃষ্টি করা, দীলে আল্লাহর ভয় ও মহব্বত সৃষ্টি করা, এহসান ও এখলাস অর্জন করা- এ’ সবের জন্যই প্রয়োজন তরীকত। আল্লাহ যেহেতু সরাসরি আমাদের সাথে কথা বলেন না, তাই আমাদের উসিলা অবলম্বন আবশ্যক।
(৩) বর্ণমালা হতে শব্দ চয়ন করতে যেমন একজন শিক্ষক প্রয়োজন, তেমনি বর্ণিত বিষয়গুলো আয়ত্ত করতেও একজন ওস্তাদ বা পীর মুরশিদের প্রয়োজন।
কুরআনের আলোকে পীর ধরার প্রত্যক্ষ দলিল
১. পবিত্র কুরআনে আল্লাহ তা‘আলা এরশাদ করেন,
يَا أَيُّهَا الَّذِيْنَ أَمَنُوْا اتَّقُوْا اللهَ وَابْتَغُوْا إِلَيْهِ الْوَسِيْلَةَ وَجَاهِدُوْا فِىْ سَبِيْلِهِ، لَعَلَّكُمْ تُفْلِحُوْنَ-
অর্থ : হে মুমিনগণ! আল্লাহকে ভয় কর, তাঁর নৈকট্য লাভের উসিলা অন্বেষণ কর ও তাঁর পথে সংগ্রাম কর, যাতে তোমরা সফলকাম হতে পারো। ৩৫
➥৩৫. আল কুরআন : সূরা আল-মায়িদা, ৫:৩৫।
নোট: যদিও কেউ কেউ এই ওসীলাকে নেক আমল বলে, কিন্তু অধিকাংশের মতেই এই ওয়াসিলা হলো আল্লাহর অনুগ্রহ প্রাপ্ত ব্যক্তিবর্গ তথায় আল্লাহর অলী বা পীর-মাশায়েখগণ।
২. পবিত্র কুরআনে আল্লাহ তা‘আলা এরশাদ করেন,
يَا أَيُّهَا الَّذِيْنَ أَمَنُوْا اتَّقُوْا اللهَ وَكُوْنُوْا مَعَ الصَادِقِيْنَ-
অর্থ : হে মুমিনগণ! তোমরা আল্লাহকে ভয় কর এবং সত্যবাদীদের অন্তর্ভূক্ত হও। ৩৬
➥৩৬. আল কুরআন : সূরা আত-তাওবা, ৯:১১৯।
নোট : সত্যবাদীতা (সিদ্ক) পাওয়া যায় একমাত্র সাহেবানে সিদ্কগণের অর্থাৎ অলী-পীরগণের নিকট হতে। তাই এহসান, এখলাস (বিশুদ্ধ নিয়ত) এবং সিদ্ক (সত্যবাদীতা) অর্জনের জন্য এবং আইনুল ইয়াকীন ও হাক্কুল ইয়াকীন হাসিলের জন্য অলীগণের সঙ্গী হওয়া অর্থাৎ গোলামী করা একান্ত অপরিহার্য।
৩. পবিত্র কুরআনে আল্লাহ তা‘আলা এরশাদ করেন,
أَوْلَائِكَ الَّذِيْنِ يَدْعُوْنَ يَبْتَغُوْنَ إِلىَ رَبَّهِمُ الْوَسِيْلَةَ أَيُّهُمْ أَقْرَبُ وَيَرْجُوْنَ رَحْمَتَهُ، وَيَخَافُوْنَ عَذَابَهُ، إِنَّ عَذَابَ رَبِّكَ كَانَ مَحْذُوْرًا-
অর্থ : তারা যাদেরকে আহবান করে তারাই তো তাদের প্রতিপালকের নৈকট্য লাভের উসিলা সন্ধান করে যে, তাদের মধ্যে কে কত নিকটতর হতে পারে, তাঁর দয়া প্রত্যাশা করে ও তাঁর শাস্তিকে ভয় করে। ৩৭
➥৩৭. আল কুরআন : সূরা বনী ইসরাঈল, ১৭:৫৭।
নোট : উসিলার সন্ধান করা আল্লাহ্ কর্তৃক স্বীকৃত। আর এ আয়াত তারই প্রমাণ।
৪. পবিত্র কুরআনে আল্লাহ তা‘আলা এরশাদ করেন,
يَا أَيُّهَا الَّذِيْنَ أَمَنُوْا أَطِيْعُوْا اللهَ وَأَطِيْعُوْا الرَّسُوْلَ وَأُوْلِى الْأَمْرِ مِنْكُمْ-
অর্থ : হে মুমিনগণ! তোমরা আল্লাহ, তাঁর রাসূল ও উলিল আমরকে মান। ৩৮
➥৩৮. আল কুরআন : সূরা আন-নিসা, ৪:৫৯।
নোট:
(১) উলিল আমর হলেন- নায়েবে রাসূল, নবীর ওয়ারিশ, অলীয়ে কামেল এবং সাহেবে হুকুম তথা ন্যায় পরায়ন শাসক।
(২) ইমাম জাফর সাদেক (رحمة الله) বলেন, ‘হযরত আলী (رضي الله عنه) তাদের অন্তর্ভূক্ত।’
৫. পবিত্র কুরআনে আল্লাহ তা‘আলা এরশাদ করেন,
فَسْئَلُوْا أَهْلَ الذِّكْرِ إِنْ كُنْتُمْ لَا تَعْلَمُوْنَ-
অর্থ : তোমরা যদি না জান তবে জ্ঞানীদেরকে জিজ্ঞাসা কর। ৩৯
➥৩৯. আল কুরআন : সূরা আল-আম্বিয়া, ২১:৭।
হযরত আলী (رضي الله عنه) বলেন, জ্ঞানীরা হলেন, ‘আহলে যিক্র’ অর্থাৎ অলীগণ।
৬. পবিত্র কুরআনে আল্লাহ তা‘আলা এরশাদ করেন,
وَاَتَّبِعْ سَبِيْلَ مَنْ أَنَابَ أِلَىَّ-
অর্থ : যে বিশুদ্ধচিত্তে আমার অভিমুখী হয়েছে তার পথ অবলম্বন কর। ৪০
➥৪০. আল কুরআন : সূরা লোকমান, ৩১:১৫।
নোট : আল্লাহর অলীগণই প্রকৃতপক্ষে বিশুদ্ধচিত্তে আল্লাহর দিকে অগ্রসরমান।
৭. পবিত্র কুরআনে আল্লাহ তা‘আলা এরশাদ করেন,
وَاَصْبِرْ نَفْسَكَ مَعَ الَّذِيْنَ يَدْعُوْنَ رَبَّهُمْ بِالْغَدَوَاةِ وَالْعَشِىِّ يُرِيْدُوْنَ وَجْهَهُ، وَلَا تَعْدُ عَيْنَاكَ عَنْهُمْ-
অর্থ : তোমরা অন্তরকে এমন লোকদের সংষ্পর্শে স্থিতিশীল রাখ যারা নিজেদের প্রতিপালকের সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য সকাল-সন্ধ্যা তাঁকে ডাকে। আর তার দিক থেকে কখনো অন্যদিকে দৃষ্টি নিবদ্ধ করো না। ৪১
➥৪১. আল কুরআন : সূরা কাহাফ, ১৮:২৮।
৮. পবিত্র কুরআনে আল্লাহ তা‘আলা এরশাদ করেন,
كُنَّا طَرَائِقَ قِدَدًا-
অর্থ : ‘আমরা ছিলাম বিভিন্ন পথের (তরীকার) অনুসারী’ (জ্বীনদের উক্তি)। ৪২
➥৪২. আল কুরআন : সূরা জ্বীন, ৭২:১১।
وَأَلَّوِ اَسْتَقَامُوْا عَلىَ الطَّرِيْقَةِ لَأَ سْقَيْنَاهُمْ مَّاءً غَدَقًا-
অর্থ : তারা যদি সত্য পথে (তরীকতের পথে) প্রতিষ্ঠিত থাকতো (তবে) তাদেরকে আমি প্রচুর রহমত বর্ষনের মাধ্যমে সমৃদ্ধ করতাম (আল্লাহর উক্তি)। ৪৩
➥৪৩. আল কুরআন : সূরা জ্বীন, ৭২:১৬।
নোট : উপরোক্ত আয়াতদ্বয়ের বর্ণনা তো তরীকার প্রয়োজনীয়তার স্পষ্ট দলীল।
৯. পবিত্র কুরআনে আল্লাহ তা‘আলা এরশাদ করেন,
اَتَّبِعُوْا مَنْ لَّا يَسْئَلُكُمْ أَجْرًا وَهُمْ مُّهْتَدُوْنَ-
অর্থ : অনুসরণ করো তাদের, যারা তোমাদের নিকট কোন প্রতিদান চায় না এবং যারা সৎপথ প্রাপ্ত। ৪৪
➥৪৪. আল কুরআন : সূরা ইয়াসীন, ৩৬:২১।
১০. পবিত্র কুরআনে আল্লাহ তা‘আলা এরশাদ করেন,
صِرَاطَ الَّذِيْنَ أَنْعَمْتَ عَلَيْهِمْ-
অর্থ : (আমাদেরকে তুমি) তাদের পথ (দান কর), যাদেরকে তুমি অনুগ্রহ দান করেছ। ৪৫
➥৪৫. আল কুরআন : সূরা আল-ফাতিহা, ১:৬।
নোট:
(১) সূরা নিসার ৬৯নং আয়াত হতে জানা যায় যে, অনুগ্রহ প্রাপ্তরা হলেন- নবী, সিদ্দিক, শহীদ ও সোয়ালেহীনগণ।
(২) সূরা ফাতিহার মাধ্যমে আমরা এ অনুগ্রহ প্রাপ্তদের পথ পাওয়ার জন্য প্রতিনিয়ত আল্লাহর নিকট প্রার্থনা করি, অথচ বাস্তবে সেই অনুগ্রহ প্রাপ্ত সিদ্দিক ও সোয়ালেহীনদের অর্থাৎ অলী-পীরগণের কাছে যাই না- এ কেমন কথা।
কুরআনের আলোকে পীর ধরার পরোক্ষ দলিল
১. আসহাবে কাহ্ফের কুকুর জান্নাত লাভ করবে। কারণ ঐ কুকুর আল্লাহর বিশেষ ওলীদের সঙ্গী হয়েছিল।
২. আল্লাহ্ তা‘আলা মূসা আলাইহিস্ সালামকে বিশেষ জ্ঞান অর্জনের জন্য আল্লাহর বিশেষ অলী খিজির আলাইহিস্ সালাম এর নিকট পাঠিয়েছিলেন। যখন খোদায়ী নির্দেশে বিশেষ জ্ঞান অর্জনের জন্য একজন উলুলুল আ‘যম পয়গাম্বরকে অলীর দারস্থ হতে হয়েছে, তখন অবশ্যই এই জ্ঞান অর্জনের জন্য আমাদেরও একজন অলী বা পীরে কামেলের কাছে যেতে হবে। তাঁদের মাধ্যম ব্যতিত বিশেষ জ্ঞান তথায় মা‘রিফাতের জ্ঞান অর্জন কোন দিনই সম্ভব না।
৩. খিজির আলাইহিস্ সালাম এর এলাকা চিনতে ও তাঁর পরিচয় লাভের জন্য আল্লাহ্ মূসা আলাইহিস্ সালামকে ভাজা মাছ সহকারে সেথায় যাওয়ার আদেশ করেন। কারণ ভাজা মাছ খিজির আলাইহিস্ সালাম এর পরিবেশে গিয়ে প্রাণ লাভ করে। তাই আমাদের মুর্দা দিলকে জিন্দা করার জন্য একজন কামেল অলীর সোহবত অপরিহার্য।
৪. পবিত্র কুরআনে আল্লাহ তা‘আলা এরশাদ করেন,
هُنُالَكَ دَعَا زَكَرِيَّا رَبَّهُ، قَالَ رّبِّ هَبْ لِىْ مِنْ لَّدُنْكَ ذُرِّيَّةً طَيِّبَةً إِنَّكَ سَمِيْعُ الدُّعَاءِ-
অর্থ : সেখানেই যাকারিয়া আলাইহিস্ সালাম তাঁর প্রতিপালকের নিকট প্রার্থনা করে বলল, হে আমার প্রতিপালক! আমাকে সৎ বংশধর দান কর। ৪৬
➥৪৬. আল কুরআন : সূরা আলে ইমরান, ৩:৩৮।
নোট : হযরত যাকারিয়া আলাইহিস্ সালাম নিজে নবী হয়ে সারা জীবন কেঁদেও যখন সন্তান লাভে ব্যর্থ হলেন, তখন (বৃদ্ধ বয়সে) মরিয়ম আলাইহাস্ সালাম এর মর্যাদা (হুজরায় জান্নাতী ফল) দেখে মরিয়মের চৌকাটে দাঁড়িয়ে আল্লাহর দরবারে সন্তান চেয়ে সফল হলেন। পীর এবং উসিলার প্রয়োজনীয়তা এ দ্বারাও প্রমাণিত।
৫. পবিত্র কুরআনে আল্লাহ তা‘আলা এরশাদ করেন,
فَتَلَقَّىَ أَدَمُ مِنْ رَّبِّهِ، كَلِمَتٍ فَتَابَ عَلَيْهِ إِنَّهُ، هُوَ التَّوَّابُ الرَّحِيْمُ-
অর্থ : আদম তার প্রতিপালক হইতে কিছু বাণী প্রাপ্ত হলো। ৪৭
➥৪৭. আল কুরআন : সূরা আল-বাকারা, ২:৩৭।
নোট:
(১) আদম আলাইহিস্ সালাম মহান প্রভূর শিখানো কালাম পাঠ করার পরও ৩৪০ বৎসর পর্যন্ত দোয়া কবুল না হওয়ায় হুযুর (ﷺ) এর উসিলা দিয়ে দোয়া করলে তা কবুল হয়। অবশ্য ঐ কালামের বরকতেই উসিলা গ্রহণের ধারণা ও প্রেরণা তাঁর অন্তরে জাগে।
(২) কুরআনের আলোচ্য বর্ণনাসমূহ হলো উসিলা অবলম্বনের দলিল। আমাদের জন্য আল্লাহর সন্তুষ্টি ও পরিচয় লাভের উসিলা বা মাধ্যম হলেন কামেল মুর্শিদ।
হাদীস হতে দলিল ও কিছু যুক্তি-প্রমাণ
১. হাদীস শরীফে আছে- শরীরে এক টুকরা গোশ্ত আছে যা পরিশুদ্ধ হলে শরীর পরিশুদ্ধ, আর তা নাপাক হলে শরীর নাপাক। যা পরিস্কারের ঔষধ হলো আল্লাহর যিকির আর যিকির দায়েমী করার জন্য প্রয়োজন কামেল মুর্শীদ। ৪৮
➥৪৮. বুখারী ও মুসলিম।
২. পবিত্র হাদীসে রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এরশাদ করেন,
اَلصَّلَاةُ مِعْرَاجُ اْلمُوْمِنِيْنَ.
-সালাত হলো মু’মিনের মি’রাজ। ৪৯
➥৪৯.
ক) হক্কী : রুহুল বয়ান, সূরা হজ্ব, আয়াত: ৭৮, ৬:৬৪।
খ) আলুসী : রুহুল মা‘আনী, সূরা ফাতিহা, ১:৯১।
আর সালাত সঠিকভাবে আদায়ের জন্য প্রয়োজন হুযুরী ক্বলব তথা একনিষ্ঠতা। এই হুযুরী কামেল মুর্শীদের গোলামীতেই হাসিল হয়।
৩.
قَلْبُ اْلمُؤْمِنِ عَرْشُ اللهِ.
অর্থ : মু’মিনের ক্বলব হলো আল্লাহর আরশ। ৫০
➥৫০. হক্কী : রুহুল বয়ান, সূরা আ‘রাফ, ৩:১৩৩।
আর এই আরশকে সাজিয়ে দেন কামেল পীর।
৪.
لَا صَلَاةَ إِلَّا بِحُضُوْرِ الْقَلْبِ.
অর্থ : হুযুরী দিল ছাড়া নামাজ পড়লে তা গ্রহণযোগ্য হয় না বরং মুখমন্ডলে নিক্ষিপ্ত হয়। তবে পীরের আনুগত্যের মাধ্যমে হুযুরী অর্জনে সহায়ক।
৫. ১০০ খুনের আসামী এখলাসের সাথে তওবা ও মুক্তির উদ্দেশ্যে ‘খবিস বস্তি’ হতে আল্লাহওয়ালাদের বস্তির দিকে রওয়ানা দেওয়ার কারণেই (যদিও মৃত্যু তাকে গন্তব্যে পৌঁছতে দেয়নি) নাজাত লাভ করেন। ৫১
➥৫১. বুখারী ও মুসলিম।
৬. ঈসা আলাইহিস্ সালাম ৬ষ্ঠ আসমান থেকে সিরিয়ার একটি মসজিদের ছাদের উপর অবতরণ করিয়া নীচে আসার জন্য একটি মইয়ের সাহায্য নিবেন।
৭. আল্লাহ্ পবিত্র কালাম মাজীদকে কুদরাতি ভাবে প্রত্যেকের ঘরে ঘরে না পৌঁছিয়ে নবী (ﷺ) এর মাধ্যমে আমাদের নিকট পৌঁছিয়েছেন।
৮. হাদীসে জিব্রাঈল- এ হাদীস দ্বারা ইহসান অর্জন অপরিহার্য প্রমাণিত হয়। আর ইহসান অর্জনের জন্য তরীকত অপরিহার্য।
৯. এখলাস অর্জন- এখলাস অর্জনের ক্ষেত্রেও তরীকতের মাশাইখদের সোহবত অপরিহার্য।
১০. হাদীস শরীফ : ‘যা আমি বলেছি- তা শরীয়ত, যা আমি করেছি- তা তরীকত, যা দেখেছি- তা হাকীকত, আর যা চিনেছি ও জেনেছি- তা মা’রিফাত। এ হাদীসও তরীকত-মা’রিফাতের সুস্পষ্ট দলীল।
নোট : ফেরেস্তা রূহ ফুঁকে দেয়, বান্দার হেফাজত করে, বৃষ্টি নাযিল করে, মেঘমালা তৈরী ও সঞ্চালন করে, রিজিক বন্টন করে, মৃত্যু দান করে ইত্যাদি। ডাক্তার ঔষধের মাধ্যমে রোগ দূর করে, সূর্য তাপের মাধ্যমে পৃথিবীকে উষ্ণ রাখে, পিতা-মাতার মিলনে সন্তান ইত্যাদি। এই বিষয়গুলি তো সোহবত, মাধ্যম, ওয়াসীলাই প্রমাণ করে। আর এ জন্যই প্রয়োজন তরীকত ও মুর্শিদ। অথচ এর বিপরীতে দেখি মানুষ আজকাল তরিকাবিমূখ, এমনকি তরিকা বিদ্বেষী। আর দেখুন আল্লাহ কি ফরমান-
(১) পবিত্র কুরআনে আল্লাহ তা‘আলা এরশাদ করেন,
كُلُّ حِزْب بِمَا لَدَيْهِمْ فَرِحُوْنَ-
অর্থ : (মুশরিকদের) প্রত্যেক দলই নিজ নিজ মতবাদ লইয়া উৎফুল্ল। ৫২
➥৫২. আল কুরআন : সূরা আর-রূম, ৩০:৩২।
(২) পবিত্র কুরআনে আল্লাহ তা‘আলা এরশাদ করেন,
فَتَقَطَّعُوْا أَمْرَهُمْ بَيْنَهُمْ زُبُرًا كُلُّ حِزْبِ بِمَا لَدَيْهِمْ فَرِحُوْنَ-
অর্থ : কিন্তু তারা নিজের মধ্যে তাদের দ্বীনকে বহুধা বিভক্ত করেছে। প্রত্যেক দলই তাদের নিকট যা আছে তা নিয়ে আনন্দিত। ৫৩
➥৫৩. আল কুরআন : সূরা আল-মু’মিন, ২৩:৫৩।
(৩) পবিত্র কুরআনে আল্লাহ তা‘আলা এরশাদ করেন,
كَذَالِكَ زَيَّنَّا لِكُلِّ أُمَّةٍ عَمَلَهُمْ-
অর্থ : এইভাবে আমি প্রত্যেক জাতির দৃষ্টিতে তাদের কার্যকলাপ সুশোভন করেছি। ৫৪
➥৫৪. আল কুরআন : সূরা আল-আন‘আম, ৬:১০৮।
(৪) পবিত্র কুরআনে আল্লাহ তা‘আলা এরশাদ করেন,
إِنَّ الَّذِيْنَ فَرَّقُوْا دِيْنَهُمْ وَكَانُوْا شِيْعًا لَّسْتَ مِنْهُمْ فِىْ شّْئْءٍ-
অর্থ : যারা দ্বীন সম্পর্কে নানা মতের সৃষ্টি করেছে এবং বিভিন্ন দলে বিভক্ত হয়েছে, তাদের কোন দায়িত্ব তোমার নয়। ৫৫
➥৫৫. আল কুরআন : সূরা আল-আন‘আম, ৬:১৫৯।
(৫) পবিত্র কুরআনে আল্লাহ তা‘আলা এরশাদ করেন,
يَوْمَ نَدْعُوْا كُلَّ أُنَاسِ بِإِمَامِهِمْ-
অর্থ : স্মরণ কর, সেই দিনকে যখন আমি প্রত্যেক স¤প্রদায়কে তাদের নেতাসহ আহবান করবো। ৫৬
➥৫৬. আল কুরআন : সূরা বনী ইসরাঈল, ১৭:৭১।
নোট :
(১) উপরোক্ত ৫টি আয়াত দ্বারা বুঝা যায় আমরা আমাদের নিজস্ব মতবাদ, ফিরকা ও দল এবং দলপতি, নেতা ও ইমাম নিয়ে সন্তুষ্ট। কিন্তু আল্লাহ্ যখন হাশরে যে দলপতি সহকারে আমাদেরকে আহবান করবেন সে দলপতি যদি নিজেই অভিশপ্ত হয় তখন আমাদের কি উপায় হবে?
(২) সূরা আন‘আমের ১৫৮নং আয়াতে আল্লাহ বলেন,
لَمْ تَكُنْ آَمَنَتْ مِنْ قَبْلُ أَوْ كَسَبَتْ فِي إِيمَانِهَا خَيْرًا قُلِ انْتَظِرُوا إِنَّا مُنْتَظِرُونَ
-যে ব্যক্তি পূর্বে ঈমান আনেনি কিংবা যে ব্যক্তি ঈমানের মাধ্যমে কল্যাণ অর্জন করেনি, তাদের ঈমান কাজে আসবে না; অর্থাৎ তারা উভয়ে সমান। ৫৭
➥৫৭. আল কুরআন : সূরা আন্‘আম, ৬:১৫৮।
১১. সকল আউলিয়া কিরাম, আয়িম্যায়ে মুজতাহিদীন, সলফে সালেহীন ও বুযুর্গানে দ্বীন কর্তৃক একথা স্বীকৃত যে, আল্লাহর পরিচয় লাভ কিংবা কামালিয়াত অর্জন কিংবা আল্লাহর মাকবুল বান্দা (অলী) হওয়ার জন্য তিনটি ধাপ বা সোপান রয়েছে। আর তা হলো- (১) ফানা ফিশ্-শাইখ, (২) ফানা ফির-রাসূল ও (৩) ফানাফিল্লাহ; অর্থাৎ নিজ অস্তিত্ব বা আমিত্বকে যথাক্রমে পীরের মধ্যে বিলীন, রাসূলে বিলীন ও আল্লাহতে বিলীন। এ তিন ধাপ অতিক্রম করার পরেই তালেবে মাওলা (আল্লাহকে তলবকারী) বা আল্লাহর পথের পথিক বাকাবিল্লাহর স্তরে উন্নিত হয় এবং এ পথে স্থায়িত্ব লাভ করে। তখনই হয় সে কামেল-মোকাম্মেল (পরিপূর্ণ কামেল) এবং পরিপূর্ণ হাদী (হেদায়তকারী)। তাই আল্লাহর পরিচয় লাভ বা কামালিয়াত অর্জনের প্রথম ধাপ যার মাধ্যমে অতিক্রম করতে হবে, যদি আমরা সে পীর বা শায়খকেই না মানি তাহলে আমরা কোন দিনই পরবর্তী ধাপে পৌঁছতে পারবো না। সেক্ষেত্রে আল্লাহর পরিচয় লাভ হবে সুদূরপরাহত।
কুরআন-হাদীসের জাহেরী ও বাতেনী শিক্ষা
১. কুরআন-হাদীসের মাধ্যমে জাহেরী শিক্ষা লাভ করা যায়। আর বাতেনী শিক্ষার জন্য আমাদের যেতে হবে সূফী সাধক বা পীরের কাছে। সূফীগণ এই শিক্ষা সিনা-বসিনা হুযুর (ﷺ) হতে লাভ করেন। আল্লাহ্ হুযুর (ﷺ)কে সিরাজুম্মুনীরা করেছেন- বাতেনী নিয়ামত ঐ চেরাগের আলো হতে প্রাপ্ত হয়ে অলীগণ তা বিতরণ করে থাকেন। স্মরণ রাখতে হবে যে, কুরআন-হাদীসের বাহ্যিক শিক্ষা গ্রহণ হলো কুফরীর মূল।
২. পবিত্র কুরআনে আল্লাহ তা‘আলা এরশাদ করেন,
هُوَ الَّذِىْ أَنْزَلَ عَلَيْكَ الْكِتَابَ مِنْهُ أَيَاتِ مُحْكَمَاتِ هُنَّ أُمَّ الْكِتَابِ وَأُخَرُ مُتَشَابِهَاتٌ فَاَمَّا الَّذِيْنَ فِىْ قُلُوْبِهِمْ زَيْغٌ فَيَتَّبِعُوْنَ مَا تَشَابَهَ مِنْهُ اِبَتِغَاءَ الْفِتْنَةِ وَاَبْتِغَاءَ تَأوِيْلَهِ-
অর্থ : তিনিই তোমার প্রতি এ কিতাব অবতীর্ণ করেছেন যার কতেক আয়াত ‘মুহকাম’ (স্পষ্টভাবে নির্দেশিত), এগুলো কিতাবের মূল; আর অন্যগুলো ‘মুতাশাবিহ’ (অস্পষ্ট), যাদের অন্তরে সত্য-লংঘন প্রবণতা আছে শুধু তারাই ফিত্না এবং ভূল ব্যাখ্যার উদ্দেশ্যে (মানুষকে ধোকা দেয়ার জন্য) মুতাশাবিহাতের অনুসরণ করে। ৫৮
➥৫৮. আল কুরআন : সূরা আলে ইমরান ৩:৭।
৩. পবিত্র কুরআনে আল্লাহ তা‘আলা এরশাদ করেন,
وَإِذَا قِيْلَ لَهُمْ تَعَالُوْا إِلىَ مَا أَنْزَلَ اللهُ وَإِلىَ الرَّسُوْلِ رَأَيْتَ الْمُنَافِقِيْنَ يَصُدُّوْنَ عَنْكَ صُدُوْدًا-
অর্থ : তাদেরকে যখন বলা হয় আল্লাহ্ যা অবতীর্ণ করেছেন তার দিকে এবং রাসূলের দিকে এসো, তখন মুনাফিকদেরকে তুমি তোমার নিকট হতে একেবারে মুখ ফিরিয়ে নিতে দেখবে। ৫৯
➥৫৯. আল কুরআন : সূরা আন-নিসা, ৪:৬১।
নোট :
(১) সত্য লংঘন প্রবনতা ও কুরআনের অপব্যাখ্যা ও মুনাফেকী হতে বাঁচার জন্য প্রয়োজন কামেল মুরশিদ।
(২) আল্লাহ্ ও কুরআনের প্রতি বিশ্বাস রেখে ও রাসূল (ﷺ) হতে মুখ ফিরালে মুনাফিক।
তরীকত বা বেলায়তের উৎস
১. নবুয়তের শেষ মোহর- হুযুর (ﷺ)।
২. বেলায়েতের শুরু- হযরত আলী (رضي الله عنه)। গাদীরে খুমে হুযুর (ﷺ) এর ঘোষণা-
مَنْ كُنْتُ مَوْلَاهُ فَعَلِيٌّ مَوْلَاهُ.
অর্থ : আমি যার মওলা আলী তার মওলা। ৬০
➥৬০.
ক) তিরমিযী : আস্ সুনান, বাবু মানাক্বিবি আলী ইবনে আবী তালেব, ১২:১৭৫, হাদিস নং : ৩৬৪৬।
খ) ইবনে মাজাহ : আস্ সুনান, বাবু ফদ্বলি আলী ইবনে আবী তালেব, ১:১৩৪, হাদিস নং : ১১৮।
গ) তাবরিযী : মিশকাতুল মাসাবীহ, বাবু মানাক্বিবি কুরাইশ ওয়া যিকরি ফাদ্বায়িলি, পৃ. ৩২৮, হাদিস নং : ৬০৮২।
ঘ) আহমদ ইবনে হাম্বল : আল মুসনাদ, বাবু মুনসানি আলী ইবনে আবী তালেব, ২:১১২, হাদিস নং : ৬০৬।
৩. বেলায়েতের ও তরিকতের বাহকগণ হলেন আল্লাহর অলী, নায়েবে রাসূল, অলীয়ে কামেলগণ।
৪. হাদীস- হযরত আবু বকর (رضي الله عنه)র সিনায় হুযুর (ﷺ) সব কিছু ঢেলে দিয়েছিলেন।
৫. হাদীস শরীফে বর্ণিত হয়েছে যে,
أَنَا دَارُ الْحِكْمَةِ وَعَلِيٌّ بَابُهَا.
অর্থ : হযরত আলী (رضي الله عنه) জ্ঞানের দরজা।৬১
➥৬১.
ক) তিরমিযী : আস্ সুনান, বাবু মানাক্বিবি আলী ইবনে আবী তালেব, ১২:১৮৬, হাদিস নং : ৩৬৫৭।
খ) তাবরিযী : মিশকাতুল মাসাবীহ, বাবু মানাক্বিবি কুরাইশ ওয়া যিকরি ফাদ্বায়িলি, পৃ. ৩২৯, হাদিস নং : ৬০৮৭।
গ) তাবারী : তাহযিবুল আসার, বাবু আনা দারুল হিকমাতি..., ৪:১২৩, হাদিস নং : ১৪১৪।
নোট :
উপরোক্ত হাদীসের আলোকে দেখা যাচ্ছে যে, এই সাহাবীদ্বয় (رضي الله عنه)মার মাধ্যমেই তরিকার বিস্তার লাভ করে। শাখা-প্রশাখা অনেক হলেও মূল তরিকা ৪টি- কাদেরীয়া, চিশতিয়া, নকশ্বন্দীয়া ও মোজাদ্দেদীয়া। এই তরিকার ধারা ইমাম মেহেদী আলাইহিস্ সালাম পর্যন্ত জারি থাকবে।
হাদীস মতে শেষ জামানায় ৭৩টি ফিরকা হবে যার মধ্যে মাত্র ১টি নাজাতপ্রাপ্ত। কাজেই সঠিক দল, মত, পথ বাঁচাই করা খুবই জরুরী। তাই দেখা যায় তামাম দুনিয়ায় আল্লাহর অলীগণই কোন না কোন তরিকার এবং কোন না কোন মাযহাবের অনুসারী ছিলেন বা আছেন।
ইমাম গাজ্জালী (رحمة الله) আল্লাহর পরিচয় লাভের জন্য ১২ বৎসর নির্জনতা অবলম্বন করেছিলেন। মাওলা রুমী (رحمة الله) বলেছেন যে তিনি সাম্ছ তিবরিযি (رحمة الله) সোহবত না পেলে ধ্বংস হয়ে যেতেন। ইমাম আবু হানিফা (رحمة الله) ইমাম জাফর সাদেক (رحمة الله) সোহবতের বিষয়ে প্রায় একই উক্তি করেছেন।
ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল বলেন, তিনি নিজে আল্লাহকে জানতেন, কিন্তু হযরত বিশর ইবনে হাফী (رحمة الله) আল্লাহকে চিনতেন। তাই তিনি জগৎ বিখ্যাত আলেম হওয়া সত্ত্বেও বিশর হাফী (رحمة الله) সোহবত এখতিয়ার করেছেন।
অতএব, এই আলোচনার ভিত্তিতে আমরা তরীকত বা তাসাউফকে আমাদের জন্য অপরিহার্য বলতেই পারি।
অলী বা পীর নির্বাচন ও অলীর মর্যাদা
১. হাদীস শরীফ- যাকে দেখলে আল্লাহকে স্মরণ হয়, যার আমল দেখলে আখেরাত স্মরণ হয় এবং যার কথা শুনলে হেকমত লাভ হয়- তিনিই হলেন অলী।
২. হাদীস শরীফ- দুনিয়াতে কিছু লোক আছেন যারা হলেন, আল্লাহ যিকিরের চাবী। (হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসূদ রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু থেকে ইমাম তাবরানী (رحمة الله) কর্তৃক বর্ণিত)।
৩. হাদীসে কুদসীর বরাতে হুযুর (ﷺ) এরশাদ করেন-
مَنْ عَادَى لِي وَلِيًّا فَقَدْ آذَنْتُهُ بِالْحَرْبِ.
অর্থ : আল্লাহ বলেন, যে আমার অলীদের সাথে শত্রুতা করে, তার সাথে আমি যুদ্ধ ঘোষণা করি। ৬২
➥৬২.
ক) বুখারী : আস্ সহীহ, বাবুত্ তাওয়াদ্বুয়ী, ২০:১৫৮, হাদিস নং : ৬০২১।
খ) তাবরিযী : মিশকাতুল মাসাবীহ, বাবু যিকরিল্লাহি ওয়াত্ তার্কারাবু ইলাইহি, পৃ. ১০, হাদিস : ২২৬৬।
গ) বায়হাকী : সুনানুল কুবরা, ৩:৩৪৬।
ঘ) ইবনে হিব্বান : আস্ সহীহ, বাবু মা জা’আ ফীত্ ত্বয়াত, ২:১৮৫, হাদিস নং : ৩৪৮।
৪. পবিত্র কুরআনে আল্লাহ তা‘আলা এরশাদ করেন,
أَلَا إِنَّ أَوْلِيَاءَ اللهِ لَا خَوْفُ عَلَيْهِمْ وَلَا هُمْ يَحْزَنُوْنَ-
অর্থ : অলীদের কোন ভয় নেই এবং তারা দুঃখিত-চিন্তিতও হবে না। ৬৩
➥৬৩. আল কুরআন : সূরা ইউনুস, ১০:৬২।
৫. হাদীস শরীফে হুযুর (ﷺ) এরশাদ করেন-
إِنَّ الْعُلَمَاءَ وَرَثَةُ الْأَنْبِيَاءِ.
অর্থ : আলেমগণ নবীর ওয়ারিশ, প্রতিনিধি। ৬৪
➥৬৪.
ক) তিরমিযী : আস্ সুনান, বাবু মা জা’আ ফী ফদ্বলিল ফিকহি, ৯:২৯৬, হাদিস নং : ২৬০৬।
খ) আবু দাউদ : আস্ সুনান, বাবুল হাস্সি আলা তলাবিল ইলমি, ১০:৪৯, হাদিস নং : ৩১৫৭।
গ) তাবরিযী : মিশকাতুল মাসাবীহ, কিতাবুল ইলম, ১ম পরিচ্ছেদ, পৃ. ৪৬, হাদিস নং : ২১২।
৬. হাদীস শরীফে হুযুর (ﷺ) এরশাদ করেন-
أَنَّ الْعُلَمَاءَ هُمْ وَرَثَةُ الْأَنْبِيَاءِ.
অর্থ : শুধু হক্কানী আলেমগণই হলেন নবীর ওয়ারিশ। ৬৫
➥৬৫.
ক) বুখারী : আস্ সহীহ, বাবুল ইলমি ক্ববলাল কাওলি ওয়াল আমল, ১:১১৯।
খ) ইবনে মাজাহ : আস্ সুনান, বাবু ফদ্বলিল উলামা ওয়াল হাস্সি আলা ত্বলাবিল ইলমি, ১:২৫৯, হাদিস নং : ২১৯।
গ) আহমদ ইবনে হাম্বল : আল মুসনাদ, বাবু বাকা হাদিসী আবিদ্ দরদা, ৪৪:১৯২, হাদিস নং : ২০৭২৩।
৭. হাদীস শরীফে হুযুর (ﷺ) এরশাদ করেন-
نَظْرَةٌ إِلَي وَجْهِ الْعَالِمِ أَحَبُّ إِلَي اللهِ مِنْ عِبَادَةِ سِتِّيْنَ سَنَةً صِيَامًا وَقِيَامًا.
অর্থ : একজন হক্কানী আলেমের চেহারার দিকে একনজর মহব্বতের সঙ্গে তাকিয়ে থাকলে এক বছরের নফল রোজা ও নফল নামাজের চেয়ে বেশী হিসেবে গণ্য হবে।
৮. হাদীস শরীফে হুযুর (ﷺ) এরশাদ করেন-
مَنْ زَارَ عَالِماً فَكَأَنَّمَا زَارَنِيْ، وَمَنْ صَافَحَ عَالِماً فَكَأَنَّمَا صَافَحَنِيْ.
অর্থ : যে একজন হক্কানী আলেমকে দেখল, সে যেন আমি স্বয়ং নবীকে দেখল এবং যে তার সঙ্গে মুসাফা করল, সে যেন আমার সঙ্গেই মুসাফা করল।
৯. হাদীস শরীফে হুযুর (ﷺ) এরশাদ করেন- তোমরা কামেল মু’মিনের (অলীর) অন্তদৃষ্টিকে ভয় কর, কেননা তাঁরা আল্লাহর নূর দ্বারা দর্শন করেন। ৬৬
➥৬৬. তিরমিযী শরীফ।
১০. হাদীসে কুদসী- আসমান জমীন আমাকে ধারন করতে পারে না, কিন্তু মু’মিনের হৃদয় আমার স্থান।
১১. হাদীসে কুদসী- মানুষ আমার রহস্য এবং আমি মানুষের রহস্য।
১২. হাদীসে কুদসী- আমি ফকিরের (সূফির) ভিতর এবং ফকীর আমার মধ্যে।
১৩. হাদীস শরীফে রাসূলুল্লাহ (ﷺ) ঘোসণা করেন-
مَنْ عَرَفَ نَفْسَهُ فَقَدْ عَرَفَ رَبَّهُ.
-যে নিজেকে চিনেছে, সে আল্লাহকে চিনেছে। ৬৭
➥৬৭. আলুসী : তাফসীরে রুহুল মা‘আনী, ১:৫৩।
১৪. হাদীস- মু’মিনের হৃদয় আল্লাহর সিংহাসন।
১৫. হাদীস- ফকিরগণের (সূফীদের) মাধ্যমে আল্লাহর অনুসন্ধান কর।
১৬. হাদীস- দুনিয়াতে এমন কিছু জির্ন-শীর্ণ ও উশ্কো-খুশকো আল্লাহর বান্দা আছে, যাদের তোমরা চিন না; কিন্তু তারা আল্লাহর দরবারে হাত উঠালে আল্লাহ তা ফিরান না। ৬৮
➥৬৮. ইবনে মাজাহ।
উপরোক্ত দলীলসমূহ তো অলী, সূফী বা পীরের পরিচয় ও মর্যাদারই জানান দেয়। আর সৌভাগ্যবানরাই তাঁদের অনুসারী হয়। হযরত ওমর (رضي الله عنه) বলেন, ‘আমার অন্তর আমার রবকে তাঁর জ্যোতি দ্বারা দর্শন করেছে।’ আর হযরত আলী (رضي الله عنه)র ফরমান- ‘আমি এমন রবের ইবাদত করি না, যাকে আমি দেখিনা।’ (অর্থাৎ আমি আমার রবকে দেখে দেখে ইবাদত করি)।
আখিরাতে সব জান্নাতিই কোন মধ্যস্থতা ব্যতিত আপন হৃদয় দর্পনে আল্লাহ তা‘আলা জামাল/ সৌন্দর্য অবলোকন (দীদার) করবে। আর দুনিয়াতে আল্লাহর জ্যোতির দর্শন কিম্বা তাঁকে দেখা (যেমনটা হযরত আলী (رضي الله عنه) ও হযরত ওমর (رضي الله عنه) দেখেছেন) -এ সৌভাগ্য শুধু কামীয়াব ও ভাগ্যবান তরীকত পন্থীদেরই নসীব হবে।
নোট :
(১) প্রত্যেক অলীই হলেন কোন না কোন মাযহাব ও কোন না কোন তরীকতের অনুসারী।
(২) অলীর খানকা ছাড়া কেউ কোনো দিন অলী হতে পারেনি এবং ভবিষ্যতেও পারবে না। পীরের খানকা হল অলী তৈরির কারখানা।
(৩) আলেম অর্থ জ্ঞানী। আর ‘হক্কানী আলেম’ হলেন তারা যারা ইলমে শরীয়ত এবং ইলমে মা‘রিফাত- উভয় জ্ঞানে জ্ঞানী।
(৪) অলী নির্বাচনের ক্ষেত্রে এখলাসের সাথে আল্লাহর দয়া ভিক্ষা নিয়ে অত্যন্ত সতর্কতার সাথে এগুতে হবে। ভন্ডের হাতে পড়লে দু’কুলই শেষ।
অলীগণকে মুহব্বতের ফায়দা
১. পবিত্র কুরআনে আল্লাহ তা‘আলা এরশাদ করেন,
فَسَوْفَ يَأْتِى اللهُ بِقَوْمٍ يُحِبُّهُمْ وَيُحِبُّوْنَهُ-
অর্থ : আল্লাহ্ এমন এক স¤প্রদায় আনবেন যাদেরকে তিনি ভালোবাসবেন এবং যারা তাঁকে ভালবাসবে। ৬৯
➥৬৯. আল কুরআন : সূরা আল-মায়িদা, ৫:৫৪।
২. পবিত্র কুরআনে আল্লাহ তা‘আলা এরশাদ করেন,
إِنَّ الَّذِيْنَ أَمَنُوْا وَعَمِلُوْا الصَّالِحَاتِ سَيَجْعَلُ لَهُمُ الرَّحْمَنُ وُدًّا-
অর্থ : যারা ঈমান আনে ও সৎ কর্ম করে দয়াময় অবশ্যই তাদের জন্য সৃষ্টি করবেন ভালোবাসা। ৭০
➥৭০. আল কুরআন : সূরা মরিয়ম, ১৯:৯৬।
নোট : আয়াতদ্বয় থেকে আমরা জানতে পারি যে, আল্লাহ্ নেক বান্দাদেরকে আগে ভালোবাসা শুরু করেন। তারপর (আল্লাহর ভালোবাসার বরকতে) বান্দা আল্লাহকে ভালোবাসতে শুরু করে। আল্লাহ্ কাউকে ভালোবাসা শুরু করলে জিবরাঈল আলাইহিস্ সালামকে ডেকে এর ঘোষণা দিয়ে দেন এবং জিবরাঈল আলাইহিস্ সালাম এর মাধ্যমে আসমান এবং জমিনেও এর ঘোষণা দেওয়া হয়। তখন সকল সৃষ্টি ঐ বান্দাকে ভালোবাসা শুরু করে দেয়। তা ছাড়া উপরোক্ত আয়াতদ্বয়ের মাধ্যমে অলীগণকে ভালোবাসা আল্লাহর সুন্নাত প্রমাণিত হলো।
আল্লাহর সুন্নাত ২টি। যথা:-
(ক) নবী (ﷺ) এর উপর দরূদ পাঠানো।
(খ) অলীগণকে মহব্বত করা।
৩. হুযুর (ﷺ) ঘোষণা করেন-
يَضَعُ اللَّهُ لَهُمْ يَوْمَ الْقِيَامَةِ مَنَابِرَ مِنْ نُورٍ فَيُجْلِسُهُمْ عَلَيْهَا فَيَجْعَلُ وُجُوهَهُمْ نُورًا وَثِيَابَهُمْ نُورًا يَفْزَعُ النَّاسُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ وَلَا يَفْزَعُونَ وَهُمْ أَوْلِيَاءُ اللَّهِ الَّذِينَ لَا خَوْفٌ عَلَيْهِمْ وَلَا هُمْ يَحْزَنُونَ.
অর্থ : একদল লোকের জন্য কিয়ামতের দিন আরশে মুআল্লার চতুর্দিকে আসন স্থাপন করা হবে। তাদের মুখমন্ডল হবে চন্দ্রের মত উজ্জ্বল। সবাই ভীত হলেও তারা ভীত হবে না, সন্ত্রস্ত হবে না, ভয়-ভীতি, দুঃখ-দুর্দশা থাকবে না। তারা কারা জিজ্ঞাসা করলে উত্তর আসবে, তারা আল্লাহর অলী এবং যারা আল্লাহর উদ্দেশ্যে একে অপরকে ভালোবেসে ছিলো। ৭১
➥৭১. আহমদ ইবনে হাম্বল : আল মুসনাদ, ৩৭:৫৪১, হাদিস নং : ২২৯০৬।
আরো ফরমান-
إِنَّ حَوْلَ الْعَرْشِ مَنَابِرٌ مِنْ نُوْرٍ عَلَيْهَا قَوْمٌ لِبَاسُهُمْ نُوْرٌ وَوُجُوْهُهُمْ نُوْرٌ لَيْسُوْا بِأَنْبِيَاءَ وَلَا شُهَدَاءَ يَغْبِطُهُمُ النَّبِيُّوْنَ وَالشُّهَدَاءُ، فَقَالُوْا يَا رَسُوْلَ اللهِ: فَمَنْ هُمْ؟ فَقَالَ: هُمُ اْلمُتَحَابُّوْنَ فِيْ اللهِ وَاْلمُتَجَالِسُوْنَ فِيْ اللهِ وَاْلمُتَزَاوَرُوْنَ فِيْ اللهِ.
অর্থ : একদল লোককে আরশে মুআল্লার চতুর্দিকে নূরের মিম্বারের উপর উপবিষ্ট দেখা যাবে, যাদের চেহারা ও পোষাক হবে নূরের, অথচ তারা নবী বা শহীদ নয়। তাদের মর্যাদা দেখে নবী-রাসূল ও শহীদগণও ঈর্ষান্বিত হবেন। তাদের গুণাবলি/ পরিচয় সম্বন্ধে জিজ্ঞেস করা হলে, উত্তর আসবে, তারা আল্লাহর উদ্দেশ্যে পরস্পরকে ভালোবাসে, আল্লাহর উদ্দেশ্যে মাহফিলে বসে এবং আল্লাহর উদ্দেশ্যে পরস্পরের সাথে সাক্ষাৎ করে।৭২
➥৭২.
ক) তাবরানী : মু’জামুল কবীর, ৩:৪৬৮।
খ) আহমদ ইবনে হাম্বল : আল মুসনাদ, বাবু হাদিসী আবি মালেক আশ‘আরী, ৪৬:৩৭১, হাদিস নং : ২১৮২১।
এছাড়াও আল্লাহ তা‘আলা হাদীসে কুদসীতে বলেন,
قَدْ حَقَّتْ مَحَبَّتِي لِلَّذِينَ يَتَحَابُّونَ مِنْ أَجْلِي وَحَقَّتْ مَحَبَّتِي لِلَّذِينَ يَتَصَافُّونَ مِنْ أَجْلِي وَحَقَّتْ مَحَبَّتِي لِلَّذِينَ يَتَزَاوَرُونَ مِنْ أَجْلِي وَحَقَّتْ مَحَبَّتِي لِلَّذِينَ يَتَبَاذَلُونَ مِنْ أَجْلِي وَحَقَّتْ مَحَبَّتِي لِلَّذِينَ يَتَنَاصَرُونَ مِنْ أَجْلِي.
অর্থ : যারা আমার উদ্দেশ্যে পরস্পরের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে, তাদের জন্য আমার সাহায্য সুনিশ্চিত। হাশরে আল্লাহর উদ্দেশ্যে যারা পরস্পরকে ভালোবেসেছিল আল্লাহ তাদের ডেকে আরশের ছায়ায় স্থান দিবেন। ৭৩
➥৭৩.
ক) আহমদ ইবনে হাম্বল : আল মুসনাদ, বাবু হাদিসী আমর ইবনে আবাসা, ৩৯:৪৩২, হাদিস নং : ১৮৬২১।
খ) বায়হাকী : শু‘আবুল ঈমান, বাবু কিস্সাতি ইবরাহীম ফী মু‘আনাকা, ১৯:৪, হাদিস নং : ৮৭১২।
গ) ইমাম গায্যালী : ইয়াহইয়াউ উলূমিদ্দীন, ৩:১৫৮।
৪. হাদীস শরীফে আছে যে, হাশরের দিন আল্লাহ তা‘আলা ৭০,০০০ উম্মতে মুহাম্মাদীকে বিনা হিসেবে জান্নাত দান করবেন। এবং তাদের প্রতি হাজারের অথবা প্রতিজনের সাথে আরো ৭০,০০০ করে জান্নাতে প্রবেশ করবে।
৫. হাদীস শরীফে আছে, বিনা হিসেবে বেহেস্ত প্রাপ্তগণ সঙ্গী-সাথী ও পরিচিতদের ছাড়া জান্নাতে যাবে না। আল্লাহ সাথে, প্রতিবেশীর সাথে হক আদায়ের মত, ঝগড়া করবে এবং প্রথমে যাদের এক দিনার পরিমাণ ঈমান আছে তাদের জাহান্নাম হতে মুক্ত করাবে; দ্বিতীয় দফায় অর্ধ দিনার পরিমাণ ঈমান ওয়ালাদেরকে এবং তৃতীয় দফায় যাদের এক রক্তি/ কণা পরিমাণ ঈমান আছে তাদেরকে।
নোট : আল্লাহ্ দোযখকে পূর্বেই নির্দেশ দিয়ে রাখবেন যেন তাদের চেহারা না জ্বালানো হয়, কারণ আল্লাহ মহা জ্ঞানী, তিনি জানেন যে, অলীগণ তাদের সাথীদের উদ্ধারের জন্য আসবেন। এমন কি পরিচিতগণ ও অলীদের উসিলায় মুক্তি পাবেন।
৬. হাদীস শরীফ- অলী/ ইমামগণ হাতে হাত ধরিয়া নিজ নিজ নেসাবতের অনুসারীদের নিয়ে জান্নাতে প্রবেশ করবেন।
৭. রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেন,
أَنْتَ مَعَ مَنْ أَحْبَبْتَ.
অর্থ : তুমি যাকে ভালোবাস তার সাথেই তুমি জান্নাতে থাকবে। ৭৪
➥৭৪.
ক) বুখারী : আস্ সহীহ, বাবুল ক্বদায়া ওয়াল ফাতায়া ফীত্ তরীক, ১৩:৯১, হাদিস নং : ৪৭৭৫।
খ) তাবরিযী : মিশকাতুল মাসাবীহ, বাবুস্ সালাম, ১ম পরিচ্ছেদ, পৃ. ৮৫, হাদিস নং : ৫০০৯।
গ) আহমদ ইবনে হাম্বল : আল মুসনাদ, বাবু মুসনাদি আনাস ইবনে মালেক, ২৫:৩৪৭, হাদিস নং : ১২৩০১।
৮. হাদীস শরীফ আছে,
الْمَرْءُ مَعَ مَنْ أَحَبَّ.
অর্থ : যে যাকে ভালোবাসে হাশর-নশর তার সাথেই হবে। ৭৫
➥৭৫.
ক) বুখারী : আস্ সহীহ, বাবু আলামাতি হুব্বিল্লাহি, ১৯:১৪৫, হাদিস নং : ৫৭০২।
খ) মুসলিম : আস্ সহীহ, বাবুল মারয়ি মা‘আ মান আহাব্বা, ১৩:৯৫, হাদিস নং :৪৭৭৯।
গ) তিরমিযী : আস্ সুনান, বাবু মা জা’আ আন্নাল মারআ মা‘আ মান আহাব্বা, ৮:৩৯৬, হাদিস নং : ২৩০৮।
ঘ) আবু দাউদ : আস্ সুনান, বাবু ইখবার্রি রজুলি..., ১৩:৩৩২, হাদিস নং : ৪৪৬২।
৯. হাদীস শরীফ- আল্লাহ যার মঙ্গল কামনা করেন একজন ধার্মিক বন্ধু/ রফিক তাকে দেন।
১০. হাদীস শরীফ- প্রত্যেকে হাশরে দিন তার নেতা/ ইমামের সাথে উঠবে।
১১. পবিত্র কুরআনে আল্লাহ তা‘আলা ঘোষণা করেন,
يَوْمَ نَدْعُوْا كُلَّ أُنَاسِ بِإِمَامِهِمْ-
অর্থ : প্রত্যেক সম্প্রদায়কে তাদের ইমামের সাথে হাশরে আহবান করা হবে। ৭৬
➥৭৬. আল কুরআন : সূরা বনী ইসরাঈল, ১৭:৭১।
১২. আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
وَمَنْ يُطِعِ اللهَ وَالرَّسُوْلَ فَأُوْلَائِكَ مَعَ الَّذِيْنَ اَنْعَمَ اللهُ عَلَيْهِمْ مِّنَ النَّبِيِّنَ وَالصَّدِيْقِيْنَ وَالشُّهَدَاءِ وَالصَّالِحِيْنَ وَحَسُنَ أُوْلَائِكَ رَفِيْقًا-
অর্থ : কেউ আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের আনুগত্য করলে হাশরে সে নবী, সত্যনিষ্ট, শহীদ ও সৎকর্ম পরায়নদের সঙ্গী হবে। ৭৭
➥৭৭. আল কুরআন : সূরা আন-নিসা, ৪:৬৯।
১৩. তফসিরে রুহুল বয়ান- হাশরে যাদের কোন নেতা থাকবে না, তাদের শয়তান বলে আহবান করা হবে।
১৪. হাসীদে কুদসীতে বর্ণিত হয়েছে যে, আল্লাহ শপথ করে ফরমান- যে ব্যক্তি আমার অলীদের মুহাব্বত করে, আমিও সেই মুহাব্বতকারীদের মুহাব্বত করি; যারা আমার অলীগণের যিয়ারতে যায়, আমি ঐ যিয়ারতকারীদেরও মুহাব্বত করি এবং যে আমার অলীগণের সোহবতে বা মজলিসে বসে আমি তাদেরও মুহাব্বত করি। (অলীগণের মুহাব্বতকারীদের মুহাব্বত করা আল্লাহ নিজের জন্য ওয়াজিব করে নিয়েছেন)।
নোট
(১) উপরোক্ত বর্ণনার আলোকে আমাদেরকে অলীগণের সাথে সম্পর্কিত হওয়া অবশ্যই বাঞ্চনীয়।
(২) অলীগণের দরবারে আসা-যাওয়া করা উচিত। কারণ যে যারে ভালোবাসে সে তাকে ভুলে না।
(৩) তোমার মর্যাদা/ আমল অলীদের সমান না হলেও অলীর বন্ধুত্বের কারণে আল্লাহ তোমার মর্যাদা বৃদ্ধি করে অলীর সাথী করবেন।
(৪) যারা পরিপূর্ণভাবে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের আনুগত্য করে তারা অবশ্যই সত্যবাদীদের সঙ্গী এবং তরিকাপন্থী।
(৫) মাওলানা রুমী রাহামাতুল্লাহি আলাইহি বলেন, এক মুহূর্ত কোন অলীর (কামেল-মোকাম্মেল পীর) সংসর্গে থাকা একশত বছরের বেরীয়া (অকপট) বন্দেগী অপেক্ষায়ও উত্তম।
আল্লাহ্ তরীকতপন্থীদের অনেক ভালোবাসেন
১. হাদীস শরীফ- একদা এক ব্যক্তি আল্লাহর উদ্দেশ্যে এক বন্ধুর সাথে সাক্ষাতের জন্য রওয়ানা হলেন। পথিমধ্যে আল্লাহ এক ফেরেস্তা পাঠিয়ে জিজ্ঞাসা করেন:-
প্রশ্ন : কোথায় যাচ্ছ?
উত্তর : বন্ধুর কাছে।
প্রশ্ন : কোন প্রয়োজন আছে কী?
উত্তর : না।
প্রশ্ন : কোন আত্মীয়তা আছে কী?
উত্তর : না।
প্রশ্ন : তোমার কোন উপকার করেছে কী?
উত্তর : না।
প্রশ্ন : কোন কারণে তার কাছে যাচ্ছ এবং কেনইবা তার সাথে সাক্ষাৎ করবে?
উত্তর : আল্লাহর উদ্দেশ্যে তার সাথে আমি ভালোবাসা স্থাপন করেছি। তখন ফেরেস্তা নিজ পরিচয় দিয়ে বলল- আল্লাহ্ আমাকে তোমার নিকট এই সংবাদ দিতে পাঠিয়েছেন যে, “আল্লাহ্ তোমাকে অত্যন্ত ভালোবাসেন।”
২. বর্ণিত আছে,
أَنَّ اللهَ تَعَليَ قَالَ لِمُوْسَي عَلَيْهِ السَّلَامُ: يَا مُوْسَي! هَلْ عَمِلْتَ لِيْ عَمْلًا قَطُّ؟ قَالَ: إِلَهِيْ صَلَّيْتُ لَكَ، وَصُمْتُ لَكَ، وَتَصَدَّقْتُ لَكَ، وَذَكَرْتُكَ.
قَالَ اللهُ: أَمَّا الصَّلَاةُ فَلَكَ بُرْهَانٌ، يَعْنِيْ حُجَّةٌ لَّكَ، وَالصَّوْمُ جُنَّةٌ، وَالصَّدْقَةُ وَالذِّكْرُ نُوْرٌ، فَأَيُّ عَمَلٍ لِيْ؟ قَالَ مُوْسَي عَلَيْهِ السَّلَامُ: إِلَهِيْ دُلَّنِيْ عَلَي الْعَمَلِ الَّذِيْ هُوَ لَكَ.
قَالَ: يَا مُوْسَي هَلْ وَالَّيْتَ لِيْ وَلِيًا أَوْ عَادَيْتَ لِيْ عَدُوًّا؟ فَعُلِمَ مُوْسَي أَنَّ أَفْضَلَ الْأَعْمَالِ اَلحُبُّ فِيْ اللهِ تَعَالَي وَالْبُغْضُ فِيْ اللهِ تَعَاليَ.
অর্থ : আল্লাহ্ অহীর মাধ্যমে মূসা আলাইহিস্ সালামকে জিজ্ঞেসা করেন, “হে মুসা! তুমি আমার সন্তুষ্টির জন্য কি কাজ করেছ? উত্তরে মূসা আলাইহিস্ সালাম বলেন- আমি নামাজ, রোজা, যাকাত, দান-খয়রাত ইত্যাদি নিষ্ঠার সাথে করে থাকি। তখন আল্লাহ্ ফরমান- নামাজ তোমার প্রকাশ্য প্রমাণ, রোজা তোমার ঢাল, যাকাত হলো নূর, দান-খয়রাত হলো ছায়া। কিন্তু আমার জন্য কি করেছ? মূসা আলাইহিস্ সালাম হয়রান ও পেরেশান হয়ে জিজ্ঞাসা করলেন, আল্লাহ্ কোন কাজটা করলে তা তোমার হবে?
উত্তর: আমার জন্য কি কোন বন্ধু গ্রহণ করেছ? আমার জন্য কি কাউকে শত্রু গণ্য করেছ? ৭৮
➥৭৮. আবু লাইস সমরকন্দী : তানবিহুল গাফিলীন ফি আহাদিসি সায়্যিদিল আম্বিয়া ওয়াল মুরসালীন, পৃ. ৪৮২, হাদিস নং : ৭৫২।
নোট : এটা দ্বারা বুঝা গেল আল্লাহর জন্য ভালোবাসা ও আল্লাহর জন্য ঘৃণা করা হলো আল্লাহর সর্বোত্তম পছন্দনীয় আমল- যা তরীকত পন্থীরাই করে থাকে।
৩. হাদীস শরীফে বর্ণিত হয়েছে যে,
إِنَّ الَّذِينَ يَتَحَابُّونَ فِي اللَّهِ فِي ظِلِّ عَرْشِ اللَّهِ يَوْمَ لا ظِلَّ إِلا ظِلُّهُ.
অর্থ : যারা আল্লাহর উদ্দেশ্যে একে অপরকে ভালোবাসে তারা হাশরের মাঠে আল্লাহর আরশের ছায়ায় স্থান পাবে। ৭৯
➥৭৯. তাবরানী : মু‘জামুল কবীর, ১৪:৪৮৬, হাদিস নং : ১৬৫৭৬।
৪. হাদীস শরীফ- যারা আল্লাহ্ উদ্দেশ্যে পরস্পরকে ভালোবাসে, একত্রে মজলিস করে, পরস্পরে সাক্ষাৎ করে, তারা হাশরের মাঠে নূরের মিম্বারের উপর উপবিষ্ট থাকবে এবং তাদের হবে নূরের চেহারা ও নূরের পোষাক, যা দেখে সবাই ইর্ষা করবে।
উপসংহার
আমার বিশ্বাস উপরোক্ত আলোচনার মাধ্যমে তরিকা গ্রহণের বিষয়টি অপরিহার্য প্রমাণিত হয়েছে। একজন কামেল পীরের নিকট তরীকা গ্রহণকেই বায়আত বলা হয়। এই বায়আতকে কেউ বলে সুন্নাত, কেউ ওয়াজিব, কেউ ফরজ, আবার কেউ অস্বীকারও করে। যারা হুযুর (ﷺ) এর নিকট বায়আত গ্রহণ করেছেন, আল্লাহ তা‘আলা তাদের সম্পর্কে বলেন,
يَدُ اللهِ فَوْقَ أَيْدِيْهِمْ-
অর্থ : আল্লাহর হাত তাদের হাতের উপর। ৮০
➥৮০. আল কুরআন : সূরা আল-ফাতাহ, ৪৮:১০।
সাহাবায়ে কেরামগণ হুযুর (ﷺ) এর নিকট বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন বিষয়ে বায়আত গ্রহণ করেছেন। যেমন-
(১) ইসলাম গ্রহণকালীন বায়আত;
(২) পরহেযগারীর রশিকে দৃঢ়তার সাথে ধারণের বায়আত;
(৩) জিহাদে অটুট থাকার বায়আত ইত্যাদি। বায়আতে রিদওয়ান তো সুপ্রসিদ্ধ। ৮১
➥৮১. আল কুরআন : সূরা আল-ফাতাহ, ৪৮:১০।
কাজেই বায়আত যে অন্তত সুন্নাত এটা অস্বীকারের কোন সুযোগ নেই। কামেল পীরের মাধ্যমে সিরাজুম্মুনীরার নূরের সাথে সম্পৃক্ত হয়ে রাসূল প্রেম ও আল্লাহর পরিচয় লাভের উদ্দেশ্যে বায়আত গ্রহণ ওয়াজিব বা ফরজ বলে অনেক বুজুর্গের অভিমত।
খোদায়ী বিধানে জ্ঞান অর্জন ফরজ হওয়ার কারণে বাতেনী বা আধ্যাত্মিক জ্ঞান অর্জনের জন্য বায়আত হওয়াও তো ফরজ হয়ে যায়। আর বাতেনী জ্ঞান অর্জন মুরশিদ ছাড়া কখনোই সম্ভব না। তাছাড়া আমাদের পূর্ব পুরুষগণ তো এই তরিকাপন্থী অলীদের মাধ্যমেই ইসলামে দীক্ষিত হন। কাজেই তরিকা বা বায়আত গ্রহণকে অস্বীকার করা অজ্ঞতা ও বদ নসীবিই বটে। তরিকা/ বায়আত অস্বীকারকারীদের সূরা বাকারার ৮৫নং আয়াত স্মরণ করা উচিত। এতে আল্লাহ তা‘আলা ইরশাদ করেন,
أَفَتُؤْمِنُوْنَ بِبَعْضِ الْكِتَابِ وَتَكْفُرُوْنَ بِبَعْضٍ فَمَا جَزَاءُ مَن يَفْعَلُ ذَلِكَ مِنْكُمْ إِلَّا خِزْىٌ فِىْ الْحَيْوَاةِ الدُّنْيَا وَيَوْمَ الْقِيَامَةِ يُرَدُّوْنَ إِلىَ أَشَدِّ الْعَذَابِ-
অর্থ : তবে কি তোমরা কিতাবের কিছু অংশ বিশ্বাস কর এবং কিছু অংশকে প্রত্যাখ্যান কর? সুতরাং তোমাদের যারা এরূপ করে তাদের একমাত্র প্রতিফল পার্থিব জীবনে হীনতা ও কিয়ামতের দিন তারা কঠিন শাস্তির দিকে নিক্ষিপ্ত হবে। ৮২
➥৮২. আল কুরআন : সূরা আল-বাকারা, ২:৮৫।
তরীকা ছাড়া কেউ জান্নাতে যেতে পারবে না, এমনটা হয়ত পরহেযগার ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে বলা যাবে না। তবে এটা নিশ্চিত বলা যায় যে, শরীয়ত পরিপূর্ণভাবে পালন করে তরীকতের পথ এখতিয়ার করলে, তালেবে মওলার জন্য চলার পথ মসৃণ ও সুগম হবে এবং সহজে গন্তব্যে পৌঁছাতে পারবে। তাই তো দেখি সকল অলীগণই তরীকতের সোনালী পথের পথিক ও বিচরণকারী এবং কিয়ামত পর্যন্ত এমনটাই হবে। আর যারা ফাসিক বা পাপাচারে লিপ্ত তারা যদি কামেল মুরশিদের নিকট বায়‘আত না হয়, তাহলে অবশ্যই তারা শয়তানের প্ররোচনার কারণে জাহান্নামের পথে এগুবে। এ ক্ষেত্রে ফাসেক/ পাপাচারীদের জন্য বায়‘আত হওয়া জরুরী। যেমন- আল্লাহ কুরআনে বলেছেন,
وَمَنْ يُضْلِلْ فَلَنْ تَجِدَ لَهُ وَلِيًّا مُرْشِدًا
“এবং তিনি যাকে পথভ্রষ্ট করেন, তুমি কখনো তার কোন পথপ্রদর্শনকারী মুরশিদ (অভিভাবক) পাবে না। ৮৩
➥৮৩. আল কুরআন : সূরা আল-কাহাফ, ১৮:১৭।
৫. হাদীস শরীফে বর্ণিত হয়ে যে,
وَمَنْ مَاتَ وَلَيْسَ فِي عُنُقِهِ بَيْعَةٌ مَاتَ مِيتَةً جَاهِلِيَّةً.
অর্থ : যে ব্যক্তি মারা গেল, অথচ তার গলায় বায়আতের বন্ধন রইল না, সে অজ্ঞতার (জাহেলী যুগের মত) মৃত্যুবরণ করলো। ৮৪
➥৮৪.
ক) মুসলিম : আস্ সহীহ, বাবু ওজুবি মুলাজামাতি জামা‘আতিল মুসলিমীন, ৯:৩৯৩, হাদিস নং : ৩৪৪১।
খ) তাবরিযী : মিশকাতুল মাসাবীহ, কিতাবুল ইমারাতি ওয়াল ক্বদ্বাআ, ১ম পরিচ্ছেদ পৃ. ৩৩৬, হাদিস নং : ৩৬৭৪।
গ) বায়হাকী : সুনানুল কুবরা, ৮:১৫৬।
ঘ) ইবনে বাত্তা : আল ইবানাতুল কুবরা, বাবু মান খলায়া ইয়াদাহু মিন তা’আতি, ১:১৪৯, হাদিস নং : ১৪৪।
ঙ) হাকেম : মুসতাদ্রাক আলাস্ সহীহাইন, বাবু ওয়া আম্মা হাদিসী আশ‘আস ইবনে জাবের, ১:২৫০, হাদিস নং : ২৩৯।
আল্লাহ আমাদেরকে সঠিক বুঝ দান করুন এবং সঠিক পথে চলার তৌফিক দিন। আমিন
সমাপ্ত
Comments
Post a Comment