রদ্দে আহমদ শফী

রদ্দে আহমদ শফী

মাওঃ আহমদ শফী সাহেবের বক্তব্যের জবাব

প্রথম পর্ব

মিথ্যা ও প্রতারণা সংশ্লিষ্ট কবীরা গুনাহ থেকে
লক্ষ লক্ষ কৌমী আলেমদের পরিত্রাণের উপায়

অনুসন্ধান ও রচনায়

মাওঃ আবুল খায়ের ইবনে মাহতাবুল হক

টেক্সট রেডীঃ মুহাম্মদ আব্দুল খালেক

প্রকাশনায়
আল আমিন প্রকাশন
বিয়ানী বাজার, সিলেট

بسم الله الرحمن الرحيم

উদ্দেশ্য

দেওবন্দী ধারার কওমী উলামায়ে কেরামগণের মধ্যে যারা প্রশাখাগত বিষয় নিয়ে মিথ্যা, অতীরঞ্জন, ভুল সিদ্ধান্ত উপস্থাপন করে পরোক্ষভাবে আমাদের মহান ইমাম, মুজতাহিদ, মুফাসসির, মুহাদ্দিস, ফকীহ, আল্লামা ও আউলিয়ায়ে কেরামগণকে কাফির, ফাজির, মুলহিদ, জিন্দিক, বিদআতী তথা গুমরাহ, ফাসিক ইত্যাদি অপবাদে সম্বন্ধযুক্ত করে চলতেছে। আমরা তাদের মিথ্যা, অতীরঞ্জন, ভুল সিদ্ধান্তকে চিহ্নিত করে তার থেকে পরিত্রাণের উপর আলোকপাত করার চেষ্টা করেছি।

যতটুকু সম্ভব চেষ্টা করা হয়েছে ইনশাআল্লাহ। চলমান পর্বের প্রিন্ট বিচ্যুতি আগামীতে প্রকাশ হলে তা সংশোধন করা হবে।

{{বিরোধীতার জন্য নহে। আত্মরক্ষার জন্য। শুধু বিরোধিতায় কল্যাণ নেই।}}

জনাব মাওঃ আহমদ শফী সাহেব রচিত সুন্নাত ও বিদআত গ্রন্থের আলোচনাঃ

মীলাদ মাহফিল

"মীলাদ" মীম যুক্ত "মাছদার"। "ইছমে জরফ" হিসাবে"মাওলেদ", এর অর্থ হচ্ছে, জম্মবৃত্তান্ত। এতে কোন সন্দেহের অবকাশ নেই যে, যখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর সত্ত্বা ও তাঁর সাথে গভীর সম্পর্ক ব্যতীত ঈমান পরিপূর্ণ হয় না। কারণ, হাদীস শরীফে উল্লেখ রয়েছে—

لَا يُؤْمِنُ أَحَدُكُمْ حَتَّی أَكُونَ أَحَبَّ إِلَيْهِ مِنْ وَلَدِهِ وَوَالِدِهِ وَالنَّاسِ أَجْمَعِينَ

'তোমাদের কেউ পূর্ণ ঈমানদার হতে পারবে না, যতক্ষণ না আমি তাঁর নিকট তার পিতা-মাতা, ছেলে-মেয়ে ও সকল মানব থেকে প্রিয় হই। বিধায়, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর যাবতীয় অবস্থা, ঘটনা এবং কথাবার্তা ছহীহ্ শুদ্ধভাবে উপস্থাপন ও বর্ণনা করা অবশ্যই রহমত অবতরণের কারণ। প্রত্যেক মুসলমানের নৈতিক দায়িত্ব হচ্ছে, তারা যেন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর জীবন বৃত্তান্ত ভালভাবে জানে এবং জীবন পাথেয় বানায়। এমন কোন সময় নেই, যখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর জীবনালোচনা করা বা শোনা নিষিদ্ধ। সর্বাবস্থায় তাঁর পূত পবিত্র জীবনী চর্চা সর্বোত্তম কাজ। এতে কোন মুসলমানের দ্বন্দ্ব থাকতে পারে না। এটা দ্বন্দ্বস্থল নয়।

কিন্তু লক্ষণীয় বিষয় হচ্ছে, তবে কি রবিউল আওয়ালের ১২ তারিখেই মীলাদ করতে হবে? মিছিল বের করতে হবে? সেই দিনেই ফকির-মিছকিনকে খানা খাওয়াতে হবে? দান-খয়রাত করতে হবে? এমন বাধ্যবাধকতা সাহাবায়ে কিরামের স্বর্ণ যুগে ছিল কিনা? যদি থাকে, তাহলে এতে কোন মুসলমানের মাতানৈতিক্যের বিন্দুমাত্র অধিকার নেই। কারণ, যা কিছু তাঁরা দ্বীন হিসাবে করেছেন বা বর্জন করেছেন, তাই দ্বীন। এর বিরোধিতা ধর্মহীনতা। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর নবুওয়্যাত প্রাপ্তির পর বার বৎসর মক্কী জীবন, দশ বৎসর স্বর্ণকাল, ফের একশত দশ বৎসর সাহাবায়ে কিরামের পবিত্র যুগ, এরপর একশত সত্তর হিজরী পর্যন্ত তাবেঈনের যুগ, অতঃপর প্রায় দু-শত হিজরী পর্যন্ত তবে-তাবেঈনের যুগ- স্বর্ণ যুগের নিদর্শন ছিল। যখন তারা সকলেই নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর পূর্ণাঙ্গ অনুসরণ ও ধর্মীয় কাজের অগ্রপথিক ছিল। এবং তাঁদের সফলতার ঘোষণা স্বয়ং আল্লাহ তাআলা কুরআনে করীমে দিয়েছেন, যথাঃ "এবং ঐ সকল ঈমানদারগণ যারা সকলের পূর্বে ঈমান এনেছেন, অর্থাৎ মুহাজিরীনগণ এবং যারাই তাঁদের একনিষ্ঠ অনুসরণ করেছেন, আল্লাহ তাআলা তাঁদের প্রতি সন্তুষ্ট হয়ে গেছেন এবং তাঁরাও আল্লাহর প্রতি সন্তুষ্ট হয়ে গেছেন। তাঁদের অপেক্ষা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর প্রতি ভালবাসা ও সম্মান প্রদর্শন কর বেশী হতে পারে? যদি বিদআত সমর্থনকারীগণ সাহস করে তা প্রমাণ করে দিতে পারেন, তাহলে আমাদের চুক্ষু আলোকিত এবং আমাদের অন্তর প্রফুল্ল হবে। এবং তাতে কোন মুসলমানের বিন্দুমাত্র মতানৈক্যের অবকাশও থাকবে না। কিন্তু যদি তারা এর যথার্থতা প্রমাণে অক্ষম হয় (বস্তুতঃ তাঁরা কিয়ামত পর্যন্ত তা পারবে না), তাহলে প্রশ্ন হল, কারণ ও চাহিদা বিদ্যমান থাকা সত্ত্বেও তারা এই পবিত্র আমল করলেন না কেন? বর্তমানে কিভাবে তা দ্বীনের কাজ হয়ে গেল? ছেরেফ এই একটি বিষয়ের প্রতি সিদ্ধান্ত নিন। ঐ সকল উপকারিতা, লাভ ও বরকত তখনো বিদ্যমান ছিল, যা আজ পেশ করা হচ্ছে। কবির ভাষায়- "বমুস্তফা বেরছাঁ কে দ্বীন হামা ওছ্ত + আগর বাও নরছীদি তামাম বূ-লাহাবী-ছ্ত"। (অর্থাৎ) নিজকে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর অনুকরণ-অনুসরণ উৎসর্গ করুন, ইহাই দ্বীন। অন্যথায় সবেই আবু লাহাবী" অর্থাৎ ধর্মহীনতা।

নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর জীবনী আলোচনা এক জিনিস এবং মীলাদ মাহফিল ভিন্ন জিনিস। আর মীলাদ মাহফিলে কিয়াম করা অন্য জিনিস। তিনটিকে এক ও অভিন্ন জ্ঞান করা মারাত্মক ভুল মূলতঃ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর জীবনালোচনা করা শরীয়তসম্মত ভাল ও ছাওয়াবের কাজ। এতে অপছন্দনীয়তা ও অবৈধতা নিজের পক্ষ হতে আবিস্কৃত শর্তাদি দ্বারা আসতে পারে। বস্তুতঃ মানব রচিত শর্তাদি বিদ্আত। যেমন-মিলাদের জন্য রবিউল আওয়াল মাসের বার তারিখ নির্ধারণ করা বা রবিউল আওয়াল মাস ঠিক করা ইত্যাদি। তদ্রূপ দরুদ শরীফ আর মীলাদকে এক জিনিস বুঝাও নিছক মূর্খতা। দরূদ শরীফ জীবনে একবার হলেও পাঠ করা ফরজ। বেশী বেশী দরূদ শরীফ পাঠ করা ছাওয়াব ও বরকতের আমল। স্বয়ং নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর তাকীদ দিয়েছেন। দরূদ শরীফ পরিত্যাগকারীর সমালোচনা ও নিন্দা করেছেন, কিন্তু প্রচলিত মিলাদ মাহফিলের বিষয়ে কিছুই উল্লেখ নেই। না এর ফজিলত সম্পর্কে কিছু বর্ণিত আছে, না এর ভাষা ও বর্ণনা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে বর্ণিত আছে। সবই বিদআত। পূণ্যময়কাল হিজরী ছয় শতাব্দী অতিবাহিত হয়ে যায়, তখন এই বিদআতের কোন অস্তিত্বই ছিল না। ছয়শত চার হিজরী সনে ইরাকের মাসূল শহরে এক অপব্যয়ী শাসক বাদশাহ মুজাফ্ফরুদ্দীন কওকবরী (মৃত: ৬৩০ হিঃ) এর নির্দেশে তার এক অর্থলোভী মৌলভী বন্ধু দ্বারা মীলাদ মাহফিলের আবিষ্কার হয়।
(ইবনে খলকান)

প্রতুত্তোর আলোচনা
জনাব, মাও. আহমদ শফী সাহেব অত্যন্ত সুন্দর আলোচনা করেছেন। যদিও বা জন্ম বৃত্তান্ত বা মীলাদ মাহফিল অধ্যায় উল্লেখ করত শুধু জন্ম বৃত্তান্তের আলোচনা না বলে যাবতীয় অবস্থা, জীবনী চর্চা সর্বোত্তম কাজ আখ্যায়িত করেছেন। তিনি বলেন, এতে কোন মুসলমানদের দ্বন্দ্ব থাকতে পারে না।

পবিত্র মীলাদ শরীফ নিয়ে যে মতানৈক্য সমাজে বিদ্যমান তা কিভাবে এসেছে তা অবশ্যই খুঁজে বের করতে হবে? এর মূল কারণ কি?

এ গ্রন্থটি ভালভাবে অধ্যায়ন করলে এবং তাদের লিখিত বইগুলো অধ্যায়ন করলে আপনা আপনি মতানৈক্যের মূল কারণ হৃদয়ঙ্গম করতে পারা যাবে।

জনাব, আহমদ শফী সাহেব নিজ থেকে এখানে কিছু বিষয় উপস্থাপন করেছেন তিনি বলেছেন- যে, ১২ই রবিউল আউয়াল তারিখেই মীলাদ, মিছিল, ফকির মিসকিনকে আহার করানো ও দান খয়রাত করা।

বাংলাদেশের প্রতিটি মুসলমান ভাল করে জানে যে, কোন ভাল কাজ করতে হলে একটা নির্দিষ্ট সময় ও দিনের প্রয়োজন যা কাজের সহজার্থে। ব্যক্তিগত এককভাবে করতে হলে যে কোন সময় করা যেতে পারে, তারপরও দিনের প্রত্যাহিক কাজের মধ্যে একটা উত্তম সময় নির্ধারণ করে কাজ করা হয়। অথবা অন্যান্য কাজের ফাকে ফাকে করে। যখন কোন ব্যক্তি ভাল কাজটি আঞ্জাম দিতে ব্যাপকতা অনুভব করে অন্যের সহযোগিতা প্রয়োজন বোধ করে অথবা কাজটি দ্বারা অন্যের কল্যাণ থাকতে পারে তখন নির্দিষ্ট সময়ের বা দিনের প্রয়োজন অনুভব করে। এবং দিন ও সময় নির্ধারণ করে কাজটি করে।

জনাব মাওঃ আহমদ শফী সাহেব যে দাবি উপস্থাপন করছেন যে ঐ তারিখেই বাধ্যতামুলকভাবে করতে হবে?

তার স্ব-উপস্থাপিত দাবির সাথে আমরা সম্পূর্ণ অপরিচিত। এধরনের কোন কাজ কেহ করেছে এমনটি আমাদের জানা নেই।

জনাব মাওঃ আহমদ শফী সাহেব ১২ তারিখের বক্তব্যটা একান্ত নিজ থেকে উপস্থাপিত। তার অভিযোগের সাথে কোন মুসলমান পরিচিত নহে।

আমরা বছরের যে কোন দিন যে কোন সময় রাসুলে পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর জন্ম বৃত্তান্তের আলোচনার মাহফিল করে থাকি এবং রবিউল আউয়াল মাস আসলে বেশী করে থাকি। এবং বিশেষভাবে সময়, শৃংখলা ও বিশেষ অনুভূতি সৃষ্টি হওয়াতে ১১/১২ তারিখ মীলাদ মাহফিলের জন্য প্রাধান্য দেয়া হয়। শুধু মাত্র ১২ই রবিউল আউয়ালে করতে হবে এমন কোন শরঈ নীতিমালা আছে আমাদের জানা নেই।

জনাব মাওঃ আহমদ শফী সাহেব এখানে আরেকটি বিষয় উপস্থাপন করছেন যে, কাজটি স্বর্ণযুগে ছিল কিনা? সাহাবী, তাবেয়ীন, তবে তাবেয়ীন যা দ্বীন হিসাবে করেছেন বা বর্জন করেছেন, তাই দ্বীন। এর বিরোধিতা ধর্মহীনতা।

এটা তো সবাই জানে বুঝে। সাহাবায়ে কেরাম, তাবিয়ীন, তবে তাবেয়ীনগণ রহ. যা বর্জন করেছেন তা কেউ গ্রহণ করেননি এবং কেহ কিয়ামত পর্যন্ত দ্বীন হিসাবে গ্রহণ করবে না। আপনি বলতে চাচ্ছেন এর বিরোধিতা! কে এর বিরোধিতা করেছেন। এমন কোন মুসলমান আছে? নাই। তবে যদি চিন্তা করেন তবে হয়ত আপনাদের দৃষ্টিভঙ্গি দ্বারা আপনাদের উপরে পড়ে কি না একটু চিন্তা করে দেখার অনুরোধ কামনা করছি। এখানে আরেকটি বিষয় রয়ে গেছে। যে সকল বিষয় সাহাবায়ে কিরামগণ করেন নি এবং বর্জনও এমন বিষয়গুলিকে জনাব মাওঃ আহমদ শফী সাহেব কি বলবেন?

জনাব মাওঃ আহমদ শফী সাহেব বলেন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর জীবনী আলোচনা এক জিনিস এবং মীলাদ মাহফিল ভিন্ন জিনিস। আর মীলাদ মাহফিলে কিয়াম করা অন্য জিনিস। তিনটিকে এক ও অভিন্ন জ্ঞান করা মারাত্মক ভুল এ বক্তব্য হাস্যকর। এটা ধর্মজ্ঞানহীন জাহিল সমাজের। সমগ্র আলেমদের নিকট কোনটি শুদ্ধ আর কোনটি ভুল তা জানা আছে। মাওঃ আহমদ শফী সাহেব নিজেই ভুলের মধ্যে হাবুডুবু খাচ্ছেন। আবেগজনিত বক্তব্য মৌখিক হতে পারে কিন্তু কলমে নয়। চক্ষু আলোকিত ও অন্তর প্রফুল্ল করা মহান আল্লাহ পাকের দয়া। যার সহজটা হল প্রিয় আলেম বান্দার মাধ্যমে বেদাতীর মাধ্যমে নয়। জনাব মাওঃ আহমদ শফী সাহেব এখানে মীলাদ শরীফের আলোচনাকে তার খেয়াল ও রুচি মুতাবিক উপস্থাপন করে অজ্ঞাত (বিদয়াতী) লোকের ক্রিয়া দেখিয়ে বুঝাতে চাচ্ছেন যে সাহাবায়ে কেরামগণ কেন এ (মীলাদ) আমল করলেন না? আর তা কিভাবে দ্বীনের কাজ হল?

জনাব মাওঃ আহমদ শফী সাহেবের অবহিত থাকা যে, পবিত্র মীলাদ শরীফে যে সকল মূল কাজ বা আমল করা হয় তা মহান সাহাবায়ে কেরামগণ করেছেন তাবেয়ীনগণ করেছেন তবে তাবিয়্যিনগণ করেছেন আসবাবে তাবাগন করেছেন এবং কিয়ামত পর্যন্ত সকল মুমিন মুমিনাতগণ তা করবে। এতে কোন ধরণের সংশয় সন্দেহের কারণ নেই। কথা হচ্ছে এ সকল কাজ একত্রভাবে কুরনে ছালাছায় ছিল কি না? একত্রভাবে কুরনে ছালাছায় না থাকার কারনে মুসলিম উম্মাহর সকল উচ্চ পর্যায়ের আলেমগণ এটাকে বিদয়াতে হাছানা বলে আখ্যায়িত করেছেন। সেই সাথে তারা একথা বলতে কোন দ্বিধাবোধ করেননি যদি কোন মীলাদ মাহফিলে ইসলামী শরীয়ত সমর্থনযোগ্য নহে এমন গর্হিত কাজ অনুপ্রবেশ করে তবে অনুপ্রবেশকারী মাহফিল শরীয়ত সমর্তিত নয়।

আমরা বলব প্রচলিত মীলাদ মাহফিলের মূল কাজের মধ্যে কোন মন্দকর্ম অনুপ্রবেশ করে না। কোন অজ্ঞ ব্যক্তি কর্তৃক ত্রুটি প্রকাশিত হলে সে ত্রুটির জন্য মীলাদ মাহফিলের উপর দায় পড়ে না। বরং অজ্ঞ ব্যক্তির ত্রুটিটি একান্ত তারই। ত্রুটিগত বিষয় সময় সময় অবহিত করা হয়। যাতে সংশোধিত হয়।

জনাব, মাওঃ আহমদ শফী সাহেব আরেকটি বিষয় অবতারণা করেন, তাঁরা (সাহাবা তাবেয়ীন) না করার কারণে বর্তমানে কিভাবে তা দ্বীনের কাজ হয়ে গেল। তার এ বক্তব্য উদ্দেশ্য প্রণোদিত। এ ধরণের কোন উছুল ইসলামী শরীয়তে কোথায়? তার বক্তব্যের খুলাছা হল, তিন যুগের পর যা কিছু হবে বা হয়েছে এগুলো বিদআত। তার এ মতবাদের কারণে এদেশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে ফিতনা আর ফিতনা। দিন দিন এ মতবাদের ফলশ্রুতিতে সহজ সরল মানুষ এবং অর্ধশিক্ষিত তাদের আলেমগণ বিভ্রান্তির স্বীকারে পরিণত হচ্ছে।

বেশী কিছু বলবনা তার চড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা সতীর্থ, ছাত্র: মুহিব্বিন সহ সকলের প্রতি জিজ্ঞাসা যে, দালাইলুল খাইরাত জপকারী ও খতমে বুখারী শরীফ পড়া কি সাহাবায়ে কেরাম, তাবেয়ীন, তবে তাবেয়ীনগণের সময়ে ছিল? নামাযে মৌখিক নিয়ত পড়া কি ছিল? তারা কেন এগুলো আমল করলেন না? তারা কেন দরসে নেজামির মত শিক্ষা পদ্ধতি করল না? কেন তারা ছয় উছুল ভিত্তিক তাবলীগ করল না, এগুলোর জবাব কে দেবে?

জনাব মাওঃ আহমদ শফী সাহেবের নিকট করজোড়ে আবেদন, জীবনের শেষ প্রান্তে এসে উপনীত হয়ে গেছেন। মাথার কালো সুন্দর চুলগুলো সাদা হয়ে গেছে। শরীর নুয়ে পড়ছে। হয়তো এ লেখাগুলো আপনার হাতে পৌঁছবে কি না জানি না। যদি পৌঁছে তবে বিনীতভাবে আরজ করছি। জাতির কাছে ভুল মতবাদের অবসান ঘটান। নতুবা মুহাম্মদ ইবনে আব্দুল ওহাব নজদীর মত আপনিও মুমিনগণের কাছ থেকে নিন্দার ঝড় সহিতে হবে। যদিও মৃত্যুর পর সে ঝড় স্থিমিত না হয় তবে তার শাস্তি কি গ্রহণ করতে হবে?

জনাব মাওঃ আহমদ শফী সাহেব এখানে প্রচন্ড ধরনের খেয়াল হীনতার স্বীকার হয়েছেন। তিনি বলেছেন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর জীবনী আলোচনা এক জিনিস এবং মীলাদ মাহফিল ভিন্ন জিনিস। জনাব মাওঃ আহমদ শফী সাহেবের এ বক্তব্য বিন্দুমাত্র সত্যতা বহন করে না। কারণ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর জীবন আলোচনার হাজার পর্বের মধ্যে মীলাদ মাহফিল বা জন্ম বৃত্তান্ত একটি পর্ব। কোন অবস্থায় ভিন্ন জিনিস নয়। এটা সম্পূর্ণ স্বঘোষিত মিথ্যা। এ গ্রন্থটি নয়বার প্রকাশিত হয়েছে। হাজার হাজার মানুষের নিকট পোঁছে গেছে। তারা আপনাকে প্রখ্যাত আলেম জানার পর বইটি নিয়ে পড়ছে এবং মানার চেষ্টা করতেছে। এ মিথ্যা বক্তব্যটিও তারা সত্য হিসাবেও গ্রহণ করবে। এতে আপনি কত জন মানুষকে ভুল তথ্য বা মিথ্যা তথ্য জানালেন। এ মিথ্যা তথ্যের দায় থেকে আপনি কেমন করে মুক্ত থাকতে পারবেন?

কোন বিষয় না জানার কারণে সে বিষয়ের উপর সমালোচনা করতে হলে সে বিষয় সম্পর্কে ব্যাপক গবেষণা করা প্রয়োজন। লেখনীর ভাষ্য থেকে দুজন বিদগ্ধ আলেমের নাম এসেছে। এছাড়া আর কোন নাম না আসার কারণে বুঝা যায় যে, মীলাদ শরীফের উপর লিখিত বইগুলো অধ্যায়নের সুযোগ হয়নি হয়তো।

জনাব মাওঃ আহমদ শফী সাহেব আর বলেন যে, মীলাদ শরীফে কিয়াম করা অন্য জিনিস। হ্যাঁ মীলাদ শরীফে কিয়াম না করলে মীলাদুন্নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বা জন্ম বৃত্তান্তের আলোচনায় কোন বাধাও সৃষ্টি হয় না। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর জন্ম বৃত্তান্ত আলোচনার আগে বা পরে দরূদ শরীফ পড়া শরীয়তে কোন নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে নাই। দরূদ শরীফ পড়ার ফজিলত ব্যাপকতা হওয়াতে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর জীবন বৃত্তান্তের শেষে দরূদ শরীফ পড়া হয়ে থাকে। এখানে দরূদ শরীফ দাঁড়িয়ে পড়া উলামায়ে কেরামগণের আমল। যার 

Comments

Popular posts from this blog

বালাকোট আন্দোলনের হাকীকত

সৈয়দ আহমদ বেরলভীর জম্ম ও পরিচয়

মওদুদীর ভ্রান্ত আক্বিদা ও ইসলামী আক্বিদা