বিষয় ভিত্তিক মুজিযাতুর রাসূল (ﷺ)

বিষয় ভিত্তিক মুজিযাতুর রাসূল (ﷺ)
____________________
বিষয় ভিত্তিক মুজিযাতুর রাসূল (ﷺ)

হাফেজ মাওলানা মুহাম্মদ ওসমান গণি

আরবি প্রভাষক জামেয়া আহমদিয়া সুন্নিয়া আলিয়া

ষােলশহর, চট্টগ্রাম। মােবাইল: ০১৮১৭-২৩২৩৬৪

প্রকাশক : আলহাজ্ব রশিদ আহমদ

টেক্সট রেডীঃ মাসুম বিল্লাহ সানি, সিরাজুম মুনির তানভির, ফাতিমাতুজ জোহরা শাকিলা, সরকার জিলানী, আব্দুল্লাহ আল কাফি, আব্দুল ওহাব রিজভী।

গ্রন্থস্বত্ব : লেখক কর্তৃক সংরক্ষিত।

প্রথম প্রকাশকাল : জুলাই ২০১২ ঈসায়ী চিশতি প্রকাশনী, বালুচরা, বায়েজীদ, চট্টগ্রাম।

কম্পােজ : এট্যাচ এ্যাড, চট্টগ্রাম।

মূল্য : (১৬০/-) একশত ষাট টাকা মাত্র

উৎসর্গঃ আমার জান্নাতবাসী পিতা-মাতা যথাক্রমে-মরহুম আহমদ জরিফ মরহুমা আলহাজ্ব আনােয়ারা বেগম।

প্রকাশকের জান্নাতবাসী পিতা মরহুম তােফায়েল আহমদ

প্রকাশকের কথাঃ

আলহামদুলিল্লাহ, ওয়াশ শুকরু লিল্লাহ। ওয়াস সালাতু ওয়াস সালামু আলা রাসূলিল্লাহ।

বিশ্ব সভ্যতার ক্রমবিকাশ আর তথ্য প্রযুক্তির চরম উৎকর্ষতার যুগে পৃথিবী ক্রমাগত উন্নতির দিকে ধাবিত হচ্ছে। উন্নতির চাবিকাঠি হল শিক্ষা। আর শিক্ষার অন্যতম উপকরণ হল বই। আল্লামা আবু ওসমান জাহেয বলেন, বই নিঃসঙ্গ মুহূর্তের শ্রেষ্ঠ সঙ্গী, অচেনা দেশে উত্তম গাইড, বই উত্তম বন্ধু ও উপদেশদাতা। তাইতাে আল্লাহ তায়ালা রাসূল (ﷺ) প্রেরণের সাথে সাথে কিতাব ও নাযিল করেছেন। অথচ এই চরম প্রতিযােগিতার যুগেও বই লেখা ও বই পড়ার ক্ষেত্রে অন্যদের তুলনায় আমরা অনেক পশ্চাদে অবস্থান করছি নিঃসন্দেহে।

আল্লাহ তায়ালা দিশেহারা পথভ্রষ্ট মানবজাতির হেদায়েতের জন্য নবী-রাসূল (আ.) প্রেরণ করেন এবং সাথে তাদের সত্যতার প্রমাণস্বরূপ মুজিযাও দান করেন। পবিত্র কুরআন ও হাদীস শরীফে এসব মুজিযার বিস্তারিত বর্ণনা রয়েছে। অমুসলিমদের কাছে ইসলামের সত্যতা বাস্তবতা ও মর্যাদা প্রমাণ এবং মুসলমানদের ঈমান, আকীদা ও আমল মজবুত করার উদ্দেশ্যে মহানবী 'র মুজিযা সম্পর্কে জ্ঞানর্জন করা একান্ত প্রয়ােজন।

আরবী ভাষায় এ বিষয়ে অসংখ্য নির্ভরযােগ্য কিতাব রচিত হলে ও বাংলা ভাষায় নির্ভর ও গ্রহণযােগ্য কোন গ্রন্থ রচিত হয়নি। বন্ধুবর হাফেজ মাওলানা মুহাম্মদ ওসমান গনি কুরআন, হাদিস এবং সর্বজন স্বীকৃত বিশুদ্ধ ও নির্ভরযােগ্য কিতাব থেকে রেফারেন্সসহ বিষয়ের উপর বিষয় ভিত্তিক মু'জিযাতুর রাসূল (ﷺ) ' নামক একখানা গুরুত্বপূর্ণ গ্রন্থ রচনা করে শুন্যতা পূরণ করেছেন।

গ্রন্থটির গুরুত্ব বিবেচনা করে পাঠকের হাতে উপহার দেওয়ার লক্ষ্যে বইটি প্রকাশের উদ্যোগ নিয়েছি। আশা করি বইটি পাঠক মলে সমাদৃত হবে। বইখানা প্রকাশের অন্তরালে যাদের অবদান রয়েছে সকলের শুকরিয়া জ্ঞাপন করছি।

বইটির গুণগত মান বৃদ্ধিতে সচেতন বিজ্ঞ পাঠক ও সুধীজনের যে কোন গঠনমূলক পরামর্শ সাদরে গৃহীত হবে এবং সে মােতাবেক যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণে আমরা সর্বদা সচেষ্ট থাকব।

-আলহাজ্ব রশিদ আহমদ

লেখকের কথা
____________________
লেখকের কথা

ভূমিকা সকল প্রশংসা মহান রাব্বল আলামীন, আহকামুল হাকেমীন, নিখিল বিশ্বের একমাত্র স্রষ্টা, সর্বময় ক্ষমতার একক অধিকারী আল্লাহর জন্য যিনি তাঁর শ্রেষ্ঠ সৃষ্টি, আশরাফুল মাখলুকাত- মানব জাতির হেদায়েতের জন্যে যুগে যুগে সময়ের দাবী অনুযায়ী অসংখ্য মুজিযার ধারক-বাহক বানিয়ে নবী-রাসূল (আ.) প্রেরণ করে মানবজাতির উপর বড়ই এহসান করেছেন। নতশিরে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি তাঁর, যিনি আমাদেরকে শ্রেষ্ঠ নবীর শ্রেষ্ঠ উম্মত বলে সম্মানিত করেছেন।

অসংখ্য দুরূদ-সালাম পেশ করছি সৃষ্টির উৎস মানবতার অগ্রদূত, সভ্যতার জনক ইমামুল আম্বিয়া, সায়্যিদুল মুরসালিন, রাহমাতুল লিল আলামীন হযরত মুহাম্মদ মােস্তফা(ﷺ)-এর পাক চরণে যার আপাদ-মস্তক ছিল অসংখ্য মু'জিযা’র শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করছি সাহাবায়ে কেরাম ও আহলে বাইতে রাসূল (ﷺ) কে যারা স্বচক্ষে মহানবীর মু'জিযা দেখে নিজেদের ঈমান-আকীদা মজবুত করার সুযােগ লাভে ধন্য হয়েছিলেন।

মানব জাতির স্বভাব যে, দলীল-প্রমাণ ছাড়া কোন দাবী মানতে চায়না। তাই নবী রাসূল (আ.) গণ যখনই তাদের সম্প্রদায়ের কাছে আল্লাহর একত্ববাদের বাণী ও দর্শন নিয়ে আগমণ করতেন তখনই তারা যুক্তি-প্রমাণ বিশেষত কোন চক্ষুস প্রমাণ দাবী করত। আবার একেক যুগে একেক বিষয়ের প্রচলন ও চর্চা ছিল। যেমন হযরত মুসা ও সােলাইমান 'র যুগে যাদু বিদ্যার চর্চা ছিল বেশী তাই তাদেরকে যাদুর ন্যায় এমন মু'জিযা দেয়া হয়েছিল যা প্রচলিত যাদু বিদ্যাকে হার মানায়। অনুরূপভাবে হযরত ঈসা (عليه السلام)'র যুগে চিকিৎসা বিদ্যার চর্চা তুঙ্গে ছিল বিধায় হযরত ঈসা (عليه السلام)-কে চিকিৎসা বিষয়ক মুজিযা প্রদান করা হয়েছিল যার সামনে সমস্ত চিকিৎসা বিজ্ঞান অক্ষম ও অসার হয়ে পড়েছিল। সুতরাং প্রজ্ঞাময় আল্লাহ তায়ালা যুগের চাহিদা মােতাবেক তাঁর নবী-রাসূল (আ.)গণকে এমন এমন মু'জিযা দান করেছেন যা সাধারণ মানুষের সাধ্যের বাইরে ছিল এবং যা দেখে প্রত্যেক বিবেকবান মানুষ নবী রাসূল (আ.) গণের দাওয়াত মেনে নিতে অনুপ্রাণিত হয়েছিল।

পবিত্র কুরআনে আয়াত, বুরহান, বাইয়্যিনাত ইত্যাদি শব্দ মু'জিযা অর্থে ব্যবহৃত
____________________
পবিত্র কুরআনে আয়াত, বুরহান, বাইয়্যিনাত ইত্যাদি শব্দ মু'জিযা অর্থে ব্যবহৃত। যেমনঃ

❏ আপনি বনী ইসরাঈল কে জিজ্ঞেস করুন, আমি মুসাকে নয়টি প্রকাশ্য মু'জিযা দান করেছি। যখন তিনি তাদের কাছে আগমন করেন, তখন ফেরাউন তাঁকে বলল, হে মুসা! আমার ধারণায় তুমিতাে যাদু গ্রস্থ। (সূরা বনী ইসরাঈল, আয়াত নং ১০১)

❏ অতঃপর আমি মুসা ও তাঁর ভাই হারুনকে প্রেরণ করেছিলাম আমার নিদর্শনাবলী ও সুস্পষ্ট সনদ (দলীল) সহ। (সূরা মু'মিনুন, আয়াত-৪৫৬)

❏ অতঃপর আমি মুসা ও তাঁর ভাই হারুনকে প্রেরণ করেছিলাম আমার নিদর্শনাবলী ও সুস্পষ্ট সনদ (দলীল) সহ। (সূরা মু’মিনুন, আয়াত-৪৫৬)

❏ ওদের কাছে রাসূল (আ.) গণ গিয়েছিলেন নিদর্শন তথা মু’জিযা সহকারে। অতঃপর কস্মিনকালেও এরা ঈমান আনায়নকারী ছিলনা, ইতিপূর্বেও মিথ্যা প্রতিপন্ন করেছিল তারা। (সূরা আল আ’রাফ, আয়াত নং ১০১)

❏ পূর্ববর্তীগণ কর্তৃক নিদর্শন তথা মু’জিযা অস্বীকার করার ফলেই আমাকে মু’জিযা সমূহ প্রেরণ থেকে বিরত থাকতে হয়েছে। (সূরা বনী ইসরাঈল, আয়াত নং ৫৯)

❏ এভাবে হাদিস শরীফে নবী করিম (ﷺ) এরশাদ করেন-

"আম্বিয়ায়ে কেরামগণের প্রত্যেককে (নবুয়তের) নিদর্শন স্বরূপ মু’জিযা দেওয়া গয়েছে, যা দ্বারা মানুষ ঈমান এনেছে। আর আমাকে মু’জিযা স্বরূপ যা দেওয়া হয়েছে তা হল ওহী।" 1
_____________________________
১.(মুহাম্মদ ইবনে ইসমাঈল বুখারী (২৫৬হি.), সহীহ বুখারী শরীফ, আরবী, ইউপি, ইন্ডিয়া, পৃ:১০৮০, হাদিস নং ৬৭৭৮)

মু’জিযা শব্দটি আরবী। এর আভিধানিক অর্থ পরাভূতকারী, অক্ষমকারী।

❏ সর্বজন স্বীকৃত আরবী অভিধান ‘আল মুনজাত’ গ্রন্থে মু’জিযার পারিভাষিক সংজ্ঞায় বলা হয়েছে-

بمثله يأتوا ان عن البشر يعجز العادة خارق امر المعجزة

এমন অস্বাভাবিক কাজ করা বা প্রকাশ হওয়া যা করতে মানুষ অক্ষম। 2
_____________________________
২.(আল মুনজাত, আরবী, বৈরূত, পৃ:৪৮৮)

❏ আল মু'জামুল ওয়াসীত অভিধানে আছে-

المعجزة امر خارق العادة يظهره االله على يدى نبى تأييدًا لنبوته وما يعجز البشران يأتوا بمثله

এমন অস্বাভাবিক কিছু কাজ যা আল্লাহ তায়ালা নবীর নবুয়তের সত্যায়নে নবীর হাতে (মাধ্যমে) প্রকাশ করেন। 3
_____________________________
৩.(আল মু'জামুল ওয়াসীত, আরবী, পৃ:৫৮৫)

❏ মীর সৈয়্যদ শরীফ (رحمة الله) বলেন,

المعجزة امر خارق للعادة داعية الى الخير والسعادة مفرونة بدعو ا النبوة قصدبه اظهار صدق من ادعى انه رسول من االله

নবুয়তের দাবী সহকারে কল্যাণ ও সৌভাগ্যের প্রতি আহ্বানকারী অস্বাভাবিক ঘটনা সংঘটিত হওয়াকে মুজিযা বলা হয়। আর এর উদ্দেশ্য হয় আল্লাহর পক্ষ হতে প্রেরিত রাসূল (ﷺ) এর দাবীর সত্যতা প্রমাণ করা। 4
_____________________________
৪. আলী ইবনে মুহাম্মদ জুরজানী (رحمة الله) (৮১৬হি.), কিতাবুত তারীফাত, আরবী, বৈরুত, লেবনান, পৃ:২১৯ ও মুফতি আমীমুল এহসান (رحمة الله) (১৯৭৪খৃ), কাওয়ায়েদুল ফিকহ, আরবী, পৃ:৪৯৪

❏ আল্লামা তাফতানী (رحمة الله) বলেন,-

وهى امر يظهر يخلاف العادة على يد مدعى النبوة عند تحدى المنكرين على وجه يعجز المنكرين عن الاتيان بمثله

মুজিযা বলা হয়, নবুয়ত অস্বীকার কারীদের সাথে চ্যালেঞ্জ করার সময় নবুয়ত প্রাপ্ত ব্যক্তি হতে এমন অলৌকিক কাজ সংঘটিত হওয়া যার মুকাবিলা করতে অবিশ্বাসী সম্প্রদায় অক্ষম। 5
_____________________________
৫. আল্লামা সা’দ উদ্দিন তাফতানী (رحمة الله) (৭৯১হি.), শরহুল আকায়েদ নসফিয়্যাহ, আরবী, পৃ:১৩৪

❏ ড. মুস্তফা মুরাদ বলেন,

المعجزة في اللغة مأخوذ من الاعجاز وحقيقة اثبات العجز في الغير ثم استعير لاظهار ثم اسند مجازا إلى ما هو سبب العجز وجعل اسماله ، وهو الأمر الخارق للعادة والتاء فيه للمبالغة والمعجزة اصطلاحا امر خارق للعادة يظهره الله على يدي مدعي النبوة في دار التكلف سالم من المعارضة يقصد بها تحدى المنکرین

মুজিযা শব্দটি الاعجاز থেকে নির্গত। এর উদ্দেশ্য হল অপরকে অক্ষম করা। অতঃপর রূপক অর্থে অক্ষমতা প্রকাশ ও এর কারণের জন্যে ব্যবহার হয় এবং রূপক অর্থেই এর নামকরণ করা হয়েছে। অস্বাভাবিক কাজকে মু'জিযা বলা হয়। এখানে ও অক্ষরটি মুবালাগা তথা সর্বোচ্চ বা অতিমাত্রা অর্থে ব্যবহৃত। পরিভাষায়- এই পৃথিবীতে যে সব অস্বাভাবিক ঘটনা নবীর নবুয়তের প্রমাণ স্বরূপ আল্লাহ তায়ালা নবী’র মাধ্যমে প্রকাশ করেন তাকে মু'জিযা বলা হয়। এর দ্বারা উদ্দেশ্য হল বিরােদ্ধ বাদীদেরকে চ্যালেঞ্জের মাধ্যমে অক্ষম করা। 6
_____________________________
৬. ড. মুস্তফা মুরাদ, মু'জিযাতুল রাসূল (ﷺ) , আরবী, কায়রাে, মিশর, পৃ:১২

❏ ‘আন নিবাস' গ্রন্থে স্বভাববিরােধী কাজকে সাতভাগে বিভক্ত করা হয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে,

اقسام الخوارق سبعة احدها المعجزة من الانبياء ثانيها الكرامة للاوليآء ثالثها المعونة لعوام

المؤمنين ممن ليس ناسقًا ولاوليا رابعها الارهاص للنبى قبل ان يبعث كشليم الاحجار على النبى صلى

االله عليه وسلم وادرجه بعضهم فى الكرامة وبعضهم فى المعجزة مجازًا خامسها الاستدراج للكافر

والفاسق المجاهر على وفق غرضه سمى لانه يوصل بالتديج الى النار سادسها الاهانة للكافر والفاسق

على خلاف غرضه كما ظهر عن مسيلمة اكذاب اذ تمضمض فى ماء فصارملحً ا –

ومس عين الاعور فصار عمى سابعها السحر لنفس شريرة تستعمل اعمالاً محصوصة باعانة

الشياطين

অর্থ: অলৌকিক বা স্বভাব বিরােধী কাজ হল সাত প্রকার। যথা: এক, মুজিযা যা আম্বিয়ায়ে কিরাম থেকে প্রকাশ পায়, দুইকারামাত যা আউলিয়ায়ে কিরাম থেকে প্রকাশ পায়, তিন, মাউনাত যা সাধারণ মুমিন ব্যক্তি থেকে প্রকাশ পায় যারা ফাসিকও নয় আবার অলীও নয়, চার. ইরহাছ যা নবুয়ত প্রাপ্তি বা প্রকাশের পূর্বে নবীগণ থেকে প্রকাশ পায়। যেমন- পাথরে নবী কে সালাম করা নবুয়ত প্রকাশের পূর্বে। তবে কেউ কেউ এই প্রকারকে কারামাতের অন্তর্ভুক্ত করেছেন আবার কেউ কেউ রূপকভাবে এটাকে মুজিযার অন্তর্ভুক্ত করেছেন। পাঁচ, ইসতিদরাজ যা কাফির ও প্রকাশ্য ফাসেক ব্যক্তি থেকে তার উদ্দেশ্য বা চাহিদা মােতাবেক প্রকাশ হয়। এটা ইসতিদরাজ করে নাম করণের কারণ হল এটি ধীরে ধীরে তার প্রকাশক কে জাহান্নামের দিকে নিয়ে যায়। ছয়. এহানত যা কাফির ও ফাসিক ভণ্ড নবী মুসায়লামাতুল কাজ্জাব থেকে। সে যখন কোন পানিতে কুলি করত তা লবণাক্ত হয়ে যেত আর যখন কোন বাঁকা চোখ স্পর্শ করত তা কিছু বিশেষ আমল বা কাজ যা শয়তানের সাহায্যে সংঘটিত হয়। 7
_____________________________
৭. মুহাম্মদ আব্দুল আজিজ ফারহাদী (رحمة الله), আন নিবরাস, আরবী, পৃ:২৭২ ও মুহাম্মদ আমজাদ আলী (رحمة الله). (১৩৬৭হি.) বাহারে শরিয়ত, উর্দু, বেরেলী শরীফ, খণ্ড:১ম, পৃ:১৭ ও গােলাম রাসূল (ﷺ) সাঈদী, শরহে মুসলিম, উর্দু, গুজরাট, খণ্ড:৬ষ্ট, পৃ:৬৭৯।

মুজিযা ও যাদুর পার্থক্য 
____________________
মুজিযা ও যাদুর পার্থক্য

১. যাদু বিদ্যা শিক্ষার মাধ্যমে হাসিল করা হয় কিন্তু মুজিযা শিক্ষার মাধ্যমে হাসিল করা যায় না। বরং আল্লাহ তায়ালা যখন ইচ্ছা করেন তখন তিনি নবী-রাসূলগণের মাধ্যমে এর বহিঃপ্রকাশ ঘটান।

২. যাদুর মােকাবিলা করা সম্ভব। তাই এক যাদুকর অন্য যাদুকরের যাদুকে নস্যাত করে দিতে পারে। কিন্তু মু'জিযার মােকাবিলা করা কোন মানুষের পক্ষে সম্ভব নয়।

৩. যাদুর কোন বাস্তবতা নেই। বরং যাদু হচ্ছে একটি দৃষ্টিবিভ্রম ও সম্মােহন জনিত বিষয়। পক্ষান্তরে মুজিযা কোন দৃষ্টিবিভ্রম বা কাল্পনিক বিষয় নয়। বরং মু'জিযা হচ্ছে বাস্তব ঘটনা যা আল্লাহর কুদরতের নিদর্শন।

৪. যাদু প্রদর্শন করা হয় পার্থিন স্বার্থ চরিতার্থ করার জন্য। আর মু'জিযার বহিঃপ্রকাশ ঘটানাে হয় দ্বীনের সত্যতা প্রকাশের জন্য।

৫. যাদুকর তার ইচ্ছানুযায়ী যাদু প্রকাশ করতে পারে, কিন্তু মুজিযার প্রকাশ নির্ভর করে একমাত্র আল্লাহ তায়ালার ইচ্ছার উপর।

৬. যাদু মানুষকে অহংকারী ও গােমরাহ বানায় পক্ষান্তরে মুজিযা আল্লাহর আনুগত্যে ও বন্দেগীতে পূর্ণতা আনে।

৭. যাদুতে শয়তানী প্রভাব থাকে কিন্তু মুজিযায় খােদায়ী প্রভাব থাকে। তাই সর্বশ্রেষ্ট ও সর্বশেষ যাদুকর হবে প্রধান দাজ্জাল পক্ষান্তরে সর্বশ্রেষ্ট ও সর্বশেষ মুজিযার অধিকারী হলেন খাতেমুন নবী হযরত মুহাম্মদ মােস্তফা।

মুজিযা ও কারামাতের পার্থক্য
____________________
মুজিযা ও কারামাতের পার্থক্য

১. মু'জিযার উদ্দেশ্য হল নবুয়ত অস্বীকারকারী লােকদের নিকট নবীর সত্যতা প্রকাশ এবং অস্বীকার কারীদের তা থেকে অক্ষম প্রকাশ করা। আর কারামাতের উদ্দেশ্য হচ্ছে ওলীগণের সম্মান বৃদ্ধি করা।

২. মু'জিযা নবী ও রাসূল (আ.) গণের মাধ্যমেই প্রকাশ ঘটে। আর কারামাত ঘটে থাকে ওলীগণের মাধ্যমে।

৩. মু'জিযা প্রকাশ করা জরুরী। কিন্তু কারামাত গােপন রাখা উত্তম।

৪. ওলী তাঁর কারামাত সম্বন্ধে অবগত নাও থাকতে পারেন। কিন্তু নবী-রাসূলগণের মাধ্যমে প্রকাশিত মু'জিযা সম্পর্কে তাঁরা অবহিত থাকেন। 8
_____________________________
৮. দৈনন্দিন জীবনে ইসলাম, বাংলা, ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ, পৃ:৭৫ ও বিভিন্ন নির্ভরযােগ্য কিতাব

প্রকৃতপক্ষে মুজিযা হল আল্লাহ তায়ালার অপরিসীম কুদরতের অন্যতম নিদর্শন। এর মাধ্যমে যেমনি আল্লাহর অসীম কুদরতের প্রকাশ ঘটে ঠিক তেমনি এর দ্বারা সংশ্লিষ্ট নবীর নবুয়তও প্রমাণিত হয়। মুজিযা অস্বীকার করা প্রকারান্তরে আল্লাহর কুদরতকে অস্বীকার করার সমতুল্য আর তা নিঃসন্দেহে কুফুরী।

আল্লাহ তায়ালা তাঁর প্রেরিত রাসূল (আ.) গণের মধ্যে সবচেয়ে মু'জিযা দান করেছেন তাঁর প্রিয় শেষ নবী মুহাম্মদকে । মূলত প্রিয় নবী থেকে প্রকাশিত মু'জিযার সংখ্যা নিরূপণ করা অসম্ভব।

❏ ইমাম সুয়ূতী (رحمة الله) প্রসিদ্ধ কিতাব আল খাসায়েসুল কুবরা ১ম খণ্ডের ১৯৭ পৃষ্ঠায় বলেছেন- শুধু পবিত্র কুরআনের মধ্যেই ষাট হাজারের অধিক মুজিযা বিদ্যমান।

❏ ইমাম নববী (رحمة الله) শরহে মুসলিমের ভুমিকায় বলেন- নবী করিম ও রৈ মু'জিযার সংখ্যা বারশ’র বেশী।

ইমাম বায়হাকী (رحمة الله) মাদখাল’ গ্রন্থে এর সংখ্যা এক হাজার বলেছেন। হানাফী মাযহাবের প্রখ্যাত ইমাম যাহেদী (رحمة الله) বলেন, রাসূল (ﷺ) কারুর হাত মােবারকে একহাজার মুজিযা প্রকাশ পেয়েছে। কোন কোন রেওয়ায়েতে এর সংখ্যা তিন হাজার বলা হয়েছে।

❏ ইমাম যুরকানী (رحمة الله) শরহে মাওয়াহেব গ্রন্থে বলেন- রাসূল (ﷺ)'র মু'জিযার সংখ্যা এক হাজার কিংবা তিন হাজার যে বলা হয়েছে, তাতে কুরআনী মু'জিযা অন্তর্ভুক্ত নেই। কুরআনী মুজিযা ব্যতীত এ সংখ্যা নির্ণয় করা হয়েছে। কেননা শুধু কুরআনে হাকীমে প্রায় ষাট হাজার মুজিযা বিদ্যমান।” 9
_____________________________
৯. আল্লামা ইউসুফ নাবহানী (رحمة الله) (১৩৫০হি.), হুজ্জাতুল্লাহি আলাল আলামীন, উর্দু, গুজরাট, খণ্ড:১ম পৃ:১৫৯, ১৬০

❏ দেওবন্দী মওলভীদের গ্রহণযােগ্য শায়খ মাওলানা আশরাফ আলী থানভী তার রচিত কিতাব নাশরুত তীব ফী যিকরিন নাবিয়্যিল হাবীব’ এর ১৯৯ পৃষ্ঠায় বলেছেন, রাসূল (ﷺ) পর মুজিযা এবং অলৌকিক ঘটনা অসংখ্য। এর মধ্যে অত্যন্ত প্রকাশ্য সংখ্যা দশ হাজারের অধিক।

এ অসংখ্য মু'জিযা সমূহকে যুগে যুগে শ্রেষ্ঠ মুহাদ্দিসীনে কেরাম বিশাল গ্রন্থ রচনা করে একত্রিত করার চেষ্টা করেছেন। তন্মধ্যে উল্লেখযােগ্য কয়েকটি হল-

১. হাফেজ আবু বকর বায়হাকী (رحمة الله)- দালায়েলুন নবুয়্যত।

২. আবু নঈম ইস্পাহানী (رحمة الله),

৩. আবুস শায়খ ইস্পাহানী (رحمة الله),

৪. আবুল কাশেম তাবরানী (رحمة الله),

৫. আবু ঘুরআ রাযী (رحمة الله),

৬. আবু বকর ইবনে আবিদ দুনিয়া (رحمة الله),

৭. আবু ইসহাক হারবী (رحمة الله),

৮. আবু জাফর ফারয়াবী (رحمة الله) ও

৯. আবু আব্দুল্লাহ মুকাদ্দাসী (رحمة الله)।

এদের সকলের লিখিত কিতাবের নাম হল-  

১০. আবুল ফরজ ইবনে জওযী (رحمة الله)’র কিতাবুল ওয়াফা ফি ফাযায়েলিল মােস্তফা,

১১. আল্লামা জালাল উদ্দিন সুয়ূতী (رحمة الله)'র আল খাসায়েসুল কুবরা,

১২. ইবনে কাসীর (رحمة الله)’র মুজিযাতুর রাসূল (ﷺ) ,

১৩. আল্লামা ইউসুফ নাবহানী (رحمة الله)’র হুজ্জাতুল্লাহি আলাল আলামীন ও
১৪. ড. মুস্তফা মুরাদ’র মুজিযাতুর রাসূল (ﷺ) উল্লেখযােগ্য গ্রন্থ।

সাধারণত মুজিযার প্রয়ােজনীয়তা ও উপকারিতা তিনটি। যথা:

এক, নবী-রাসূলগণের নবুয়ত ও রেসালতের সত্যতা প্রমাণ করা,

দুই. কাফির, মুশরিক ও বেঈমানদের ঈমান গ্রহণ করা ও

তিন. ঈমানদারগণের ঈমান আরাে মজবুত করা। যেহেতু নবী আগমনের কোন অবকাশ নেই সেহেতু প্রথমটির প্রয়ােজনীয়তাও বর্তমান নেই তবে শেষ দুটির প্রয়ােজনীয়তা এখনাে বিদ্যমান। নবী-রাসূলগণের মু'জিযা পড়ে ও শুনে ঈমান আনার ঘটনা সংখ্যায় কম হলেও দূর্বল ঈমানদারের ঈমান মজবুত ও সুদৃঢ় হওয়ার অসংখ্য দৃষ্টান্ত বিদ্যমান।

কালের বিবর্তনে মানুষের ঈমান ক্রমান্বয়ে দূর্বল হয়ে আসছে। এই সব বাস্তব, সত্য ও বিশুদ্ধ মুজিযা সমূহ পাঠে নিশ্চয়ই পাঠকের ঈমান মজবুত হবে। এই মহৎ উদ্দেশ্যকে সামনে রেখে বিশেষত ‘আল খাসায়েসুল কুবরা সহ বিভিন্ন নির্ভরযােগ্য আরবী-উর্দু, কিতাব থেকে নবী মুহাম্মদ ﷺ সহ অন্যান্য আম্বিয়ায়ে কেরামের মুজিযাসমূহকে বাংলা ভাষায় সংকলন করার প্রয়াস পেয়েছি।

তাছাড়া ইতিপূর্বে অধমের প্রকাশিত বিষয় ভিত্তিক কারামতে আউলিয়া’ গ্রন্থটি পাঠক সমাজে বিপুল সমাদৃত হওয়া ও পাঠকের ভালােবাসাই মূলত এই গ্রন্থটি সংকলনের প্রতি উদ্বুদ্ধ করেছে। গ্রন্থটির নামকরণ করা হয়েছে বিষয় ভিত্তিক মু'জিযাতুর রাসূল (ﷺ) । গ্রন্থটি যদি পাঠকের অন্তরে সামান্যতমও স্থান লাভ করে এবং পাঠক সন্তুষ্ট হয়ে দোয়া করে তবে তাই হবে আমাদের জন্য সবচেয়ে বড় পাওনা।

উল্লেখ্য যে, এ পুস্তকে বর্ণিত মুজিযা সমূহ কোন কল্পিত কাহিনী কিংবা মনগড়া বর্ণনা নয় বরং সবগুলাে মু'জিযা পবিত্র কুরআন বা বিশুদ্ধ হাদিস দ্বারা সমর্থিত। প্রতিটি মু'জিযা বর্ণনার শেষে লেখকের নাম, মূল কিতাবের নাম, সূরার নাম, পৃষ্ঠা নম্বর ও আয়াত নম্বর সহ উদ্ধৃতি দিতে কার্পণ্য করিনি। তবে যে কিতাবের রেফারেন্স দেওয়া হয়েছে ঘটনাটি শুধু সেই কিতাবেই সীমাবদ্ধ নয় বরং আরাে বহু কিতাবে ঐ ঘটনা উল্লেখ রয়েছে। কিন্তু অধমের ক্ষুদ্র জ্ঞান সাধ্য ও সগ্রহ স্বল্পতার কারণে এবং পুস্তকখানা কলেবর বৃদ্ধি হওয়ার আশঙ্কায় উদ্ধৃতি দু’একটি গ্রন্থের মধ্যেই সীমাবদ্ধ রাখতে হয়েছে, রেফারেন্স গ্রন্থের স্বল্পতার কারণে নয়। মানুষ ভুলের উর্ধ্বে নয়, তবুও সাধ্যমত চেষ্টা করেছি নির্ভুল করতে। অনিচ্ছা সত্ত্বেও কোন। ত্রুটি বিজ্ঞ পাঠকের দৃষ্টিগােচর হলে মার্জিত দৃষ্টি কাম্য। যদি আমাদেরকে অবহিত করেন তবে কৃতজ্ঞ হবাে এবং পবরর্তী সংস্করণে সংশােধনের চেষ্টা করবাে।

পরিশেষে যাদের অক্লান্ত পরিশ্রম এবং বিশেষত প্রকাশক বন্ধুবর আলহাজ্ব রশিদ আহমদ’র অর্থায়নে গ্রন্থখানি পাঠকের হাতে পৌঁছেছে। সকলের পরিশ্রম ও সহযােগীতাকে শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করছি ও তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। সাথে সাথে মহান আল্লাহর দরবারে প্রার্থনা করছি যেন তিনি এই ক্ষুদ্র প্রয়াস কবুল করে উভয় জগতের কামিয়াবী দান করেন। আমীন, বেহুরমতে খাতামুন নাবিয়্যীন।

আল-কুরআন 
____________________
আল-কুরআন

আল্লামা ইউসূফ নাবহানী (رحمة الله) হুজ্জাতুল্লাহি আলাল আলামীন গ্রন্থে বলেন, ওলামায়ে কেরামগণ বলেন, নবী করিম এর সবচেয়ে বড় মুজিযা ও নবুয়তের সর্বশ্রেষ্ঠ প্রমাণ হল পবিত্র কুরআনে করিম। যার মু'জিযাপূর্ণ কালাম দিয়ে নবুয়তের অস্বীকারকারীদের সাথে চ্যালেঞ্জ করা হয়েছিল এবং কুরআনের অনুরূপ ছােট্ট একটি সূরা তৈরী করে আনার চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দেয়া হয়েছিল। কিন্তু বালাগাত-ফাসাহাতের সর্বোচ্চ যুগ হওয়া সত্ত্বেও তারা শত চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়েছে।” 10
_____________________________
১০. (ইউসূফ নাবহানী (رحمة الله) (১৩৫০হি.), হুজ্জাতুল্লাহি আলাল আলামীন, উর্দু, গুজরাট, পাকিস্তান, খণ্ড ১ম, পৃ: ৪৬৬)।

আল্লামা সুয়ূতী (رحمة الله) বলেন, কুরাইশ মুশরিকরা স্বীকার করতে বাধ্য হয়েছে যে, এটা কোন মানুষের কথা নয়। মানুষের কথার সাথে এর কোন সাদৃশ্যও নেই।

❏ এ ব্যাপারে আল্লাহ তায়ালা কুরআনে করিমে চ্যালেঞ্জ করে বলেন,

قُل لَّئِنِ اجْتَمَعَتِ الإِنسُ وَالْجِنُّ عَلَى أَن يَأْتُواْ بِمِثْلِ هَـذَا الْقُرْآنِ لاَ يَأْتُونَ بِمِثْلِهِ وَلَوْ كَانَ بَعْضُهُمْ لِبَعْضٍ ظَهِيرًا

হে নবী! আপনি বলুন, যদি মানব ও জ্বিন এই কুরআনের অনুরূপ রচনা করে আনয়নের জন্যে জড়াে হয় এবং তারা পরস্পরের সাহায্যকারীও হয়। তবুও তারা কখনাে এর অনুরূপ রচনা করে আনতে পারবে না। (সূরা বনী ইসরাঈল, আয়াত: ৮৮)

❏ অপর আয়াতে বলেন,

وَإِن كُنتُمْ فِي رَيْبٍ مِّمَّا نَزَّلْنَا عَلَى عَبْدِنَا فَأْتُواْ بِسُورَةٍ مِّن مِّثْلِهِ وَادْعُواْ شُهَدَاءكُم مِّن دُونِ اللّهِ إِنْ كُنْتُمْ صَادِقِينَ

فَإِن لَّمْ تَفْعَلُواْ وَلَن تَفْعَلُواْ فَاتَّقُواْ النَّارَ الَّتِي وَقُودُهَا النَّاسُ وَالْحِجَارَةُ أُعِدَّتْ لِلْكَافِرِينَ

আর যদি তােমাদের কোন সন্দেহ থাকে যা আমি আমার বিশেষ বান্দার প্রতি অবতীর্ণ করেছি, তাহলে এর মত একটি সূরা রচনা করে নিয়ে এসাে। তােমাদের সে সব সাহায্যকারীদেরকেও সঙ্গে নাও- এক আল্লাহ ছাড়া, যদি তােমরা সত্যবাদী হয়ে থাক। আর যদি তা না পার অবশ্য তা তােমরা কখনাে পারবে না সুতরাং তােমরা জাহান্নামের আগুনের ভয় কর। (সূরা বাকারা, আয়াত: ২৩ ও ২৪)

❏ আল্লাহ তায়ালা কুরআনে অন্য জায়গায়ও এই চ্যালেঞ্জ করে বলেন,

فَلْيَأْتُوا بِحَدِيثٍ مِثْلِهِ إِنْ كَانُوا صَادِقِينَ ﴿٣٤﴾

যদি তারা সত্যবাদী হয়ে থাকে, তবে এর অনুরূপ কোন রচনা উপস্থিত করুক। (সূরা তূর, আয়াত: ৩৪) 11
_____________________________
১১. ইমাম সুয়ূতীর জালাল উদ্দিন সুয়ূতী (رحمة الله) (৯১১হি:), আল খাসায়েসুল কুবরা, আরবী, বৈরূত, খণ্ড-১ম, পৃ:১৮৭

❏ কাজী আয়ায (رحمة الله) বলেন, আল্লাহ তায়ালা বলেন,

أَمْ يَقُولُونَ افْتَرَاهُ قُلْ فَأْتُواْ بِسُورَةٍ مِّثْلِهِ وَادْعُواْ مَنِ اسْتَطَعْتُم مِّن دُونِ اللّهِ إِن كُنتُمْ صَادِقِينَ

তারা কি বলে যে, এটি বানিয়ে এনেছে? আপনি বলে দিন, তােমরা একটি মাত্র সূরা নিয়ে এসাে, আর এ ব্যাপারে আল্লাহ ব্যতীত যাদেরকে ডাকা সক্ষম সবাইকে ডেকে নাও। (সূরা ইউনুস, আয়াত: ৩৮)

❏ অপর জায়গায় বলেন,

أَمْ يَقُولُونَ افْتَرَاهُ قُلْ فَأْتُواْ بِعَشْرِ سُوَرٍ مِّثْلِهِ مُفْتَرَيَاتٍ وَادْعُواْ مَنِ اسْتَطَعْتُم مِّن دُونِ اللّهِ إِن كُنتُمْ صَادِقِينَ

অর্থ: তারা কি বলে! কুরআনকে আপনি বানিয়ে এনেছেন? আপনি বলুন, তবে তােমরাও অনুরূপ তৈরী করে নিয়ে এসাে এবং আল্লাহ ছাড়া যাকে পার ডেকে নাও, যদি তােমরা সত্যবাদী হও। (সূরা হুদ, আয়াত: ১৩) 12
 _____________________________
১২. কাযী আয়ায (رحمة الله) (৪৭৬-৫৪৪হি.) শেফা শরীফ, আরবী, মাকতাবাতুস সাফা, কায়রাে, মিশর, খণ্ড ১ম, পৃ. ১৭১

❏ ইমাম বুখারী (رحمة الله) হযরত আবু হােরায়রা (رضي الله عنه) থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, রাসূল (ﷺ) এরশাদ করেন,

ما من الانبياء بنى الا اعطى ما مثله آمن عليه البشر وانما كان الذى اتيته وحيً ا اوحاه االله الىّ فار جوان اكون اكثرهم تايعً ا-

আম্বিয়ায়ে কেরামগণের প্রত্যেককে এর ন্যায় বস্তু দেওয়া হয়েছে, যার উপর মানবজাতি ঈমান এনেছিল। আর আমাকে যা দেওয়া হয়েছে তা তা হল ওহী, যা আল্লাহ আমার প্রতি প্রেরণ করেছেন। সুতরাং আমি আশাকরি, সকল আম্বিয়ায়ে কেরাম থেকে আমার অনুসারী অধিক হবে। 13
_____________________________
১৩. ইমাম সুয়ূতী, জালাল উদ্দিন সুয়ূতী (رحمة الله), আল খাসায়েসুল কুবরা, আবী, বৈরুত, খণ্ড ১ম, পৃ. ১৮৮)

কুরআন স্থায়ী মু'জিযা 
____________________
কুরআন স্থায়ী মু'জিযা

❏ ইমাম সুয়ূতী (رحمة الله) বলেন, ওলামায়ে কেরাম উক্ত হাদীসে উদ্দেশ্য হল, অন্যান্য আম্বিয়ায়ে কেরামের মুজিযা তাদের যামানা শেষ হওয়ার সাথে শেষ হয়ে গিয়েছিল। আর তাদের মুজিযাসমূহ শুধু তারাই অবলােকন করেছিল যারা সেকালে ছিল। পক্ষান্তরে কুরআনে করিম হল কিয়ামত পর্যন্ত বিদ্যমান থাকা একটি মুজিযা। তাছাড়া কুরআনে করিম তার বচন ভঙ্গী, অলংকারপূর্ণ তথা বালাগাত ও ফাসাহাতে ও অদৃশ্যের সংবাদ প্রদানে সম্পূর্ণ অলৌকিক।।

প্রতি যুগে সংঘটিত কোন না কোন প্রকাশিত ঘটনা সম্পর্কে কুরআনে প্রকাশ করা হয়েছে এবং ভবিষ্যতে কি হবে না হবে এ বিষয়েও সংবাদ দেওয়া হয়েছে। সুতরাং এ সব কিছু কুরআনের বিশুদ্ধতার প্রমাণ বহন করে। 14
_____________________________
১৪. ইমাম সুয়ূতী, জালাল উদ্দিন সুয়ূতী (رحمة الله) (৯১১হি.), আল খাসায়েসুল কুবরা, আরবী, বৈরুত, খণ্ড ১ম, পৃ. ১৮৮।

ওলীদ ইবনে মুগীরা’র স্বীকারােক্তি 
____________________
ওলীদ ইবনে মুগীরা’র স্বীকারােক্তি

❏ ইমাম বায়হাকী (رحمة الله) ওলীদ ইবনে মুগীরার ঘটনা বর্ণনা করে বলেন, সে বালাগাত ফাসাহাতে তৎকালীন কুরাইশদের মধ্যে শ্রেষ্ঠ ছিল। সে একবার নবী করিম এর কাছে আরজ করল, আপনার উপর যা অবতীর্ণ হয় তা থেকে কিছু পড়ে আমাকে শুনান যাতে আমি তা নিয়ে গবেষণা করবাে।

❏ তখন তিনি নিম্নোক্ত আয়াত পাঠ করেন

ان الله يأمر بالعدل والإحسان وایتاء ذي القربى وينهى عن الفحشاء والمنكر والبغي يعظكم لعلكم تزكرون

নিশ্চয়ই আল্লাহ তায়ালা ন্যায় প্রতিষ্ঠার, সৎ কাজের ও প্রতিবেশীকে দান করার আদেশ করেন। আর অশ্লীলতা, অবৈধ কাজ এবং অবাধ্য হওয়া থেকে নিষেধ করেন। তােমাদেরকে নসীহত বা সৎ উপদেশ দিচ্ছেন যাতে তােমরা উপদেশ গ্রহণ করতে পার। (সূরা..... আয়াত: ...)

ওলীদ এই আয়াত শুনে বলল, আবার পড়ন। তিনি দ্বিতীয়বার এই আয়াত তেলাওয়াত করলে ওলীদ বলল, আল্লাহর কসম, এই কালাম বড়ই মিষ্টি ও সতেজ। এর উপরিভাগ খেজুরে পূর্ণ আর নিন্মভাগ খুবই শক্ত ও মজবুত। بشر هذا يقول وما আর এটি কোন মানবের কালাম নয়। 15
_____________________________
১৫.ইউসূফ নাবহানী (رحمة الله) (১৩৫০হি.), হুজ্জাতুল্লাহি আলাল আলামীন, উর্দু, গুজরাট, খণ্ড ১ম, পৃ. ৪৭১

কুরআন সংরক্ষণের দায়িত্ব আল্লাহর 
____________________
কুরআন সংরক্ষণের দায়িত্ব আল্লাহর

পবিত্র কুরআনের অন্যতম একটি মু'জিযা হল কিয়ামত পর্যন্ত ইহা সম্পূর্ণ অবিকৃত থাকবে আর এর সংরক্ষণের দায়িত্ব স্বয়ং স্রষ্টা।

❏ আল্লাহ তায়ালা বলেন,

اِنَّا نَحۡنُ نَزَّلۡنَا الذِّکۡرَ وَاِنَّا لَہٗ لَحٰفِظُوۡنَ ﴿۹﴾ 

অনুবাদঃ নিশ্চয় আমি অবতীর্ণ করেছি এই ক্বোরআন এবং নিশ্চয় আমি নিজেই সেটার সংরক্ষক। (সূরা হিজর-০৯)

❏ ইমাম কুরতুবী (رحمة الله) এই আয়াতের ব্যাখ্যায় মুত্তাসিল সনদ দ্বারা এবং ইমাম জালাল উদ্দিন সুয়ূতী (رحمة الله) আল-খাসায়েসুল কুবরা' গ্রন্থে খলিফা মামুনুর রশিদের দরবারের একটি ঘটনা বর্ণনা করেছেন। খলিফা মামুনের দরবারে মাঝে মাঝে শিক্ষা সম্পর্কিত বিষয়াদি নিয়ে তর্ক-বিতর্ক ও আলােচনা সভা অনুষ্ঠিত হত। এতে জ্ঞান-বিজ্ঞানের বিভিন্ন শাখার পন্ডিত ব্যক্তিগণের অংশগ্রহণের অনুমতি ছিল। এমনি এক আলােচনা সভায় জনৈক ইহুদী পন্ডিত আগমণ করল। আকার-আকৃতি, পােশাক ইত্যাদির দিক দিয়েও তাকে একজন বিশিষ্ট ব্যক্তি মনে হচ্ছিল। তদুপরি তার আলােচনাও ছিল অত্যন্ত প্রাঞ্জল, অলংকারপূর্ণ এবং বিজ্ঞানসূলভ। সভা শেষে মামুন তাকে ডেকে জিজ্ঞেস করলেন, তুমি কি ইহুদী? সে স্বীকার করল। মামুন পরীক্ষা করে তাকে বললেন, তুমি যদি মুসলমান হয়ে যাও, তবে তােমার সাথে চমৎকার ব্যবহার করা হবে।

সে উত্তরে বলল, আমি পৈতৃক ধর্ম বিসর্জন দিতে পারিনা। কথাবার্তা এখানেই শেষ হয়ে গেল। লােকটি চলে গেল। কিন্তু এক বছর পর সে মুসলমান হয়ে আবার দরবারে আগমণ করল এবং আলােচন্য সভায় ইসলামী ফিকাহ সম্পর্কে সারগর্ভ বক্তৃতা ও যুক্তিপূর্ণ তথ্যাদি উপস্থিত করল। সভা শেষে মামুন তাকে ডেকে বললেন, আপনি কি ঐ ব্যক্তি, যে বিগত বছর এসেছিল? সে বলল, হ্যাঁ, আমি ঐ ব্যক্তিই বটে। মামুন জিজ্ঞেস করলেন, তখন তাে আপনি ইসলাম গ্রহণ করতে অস্বীকৃত ছিলেন। এরপর এখন মুসলমান হওয়ার কারণটা কি?

সে বলল, আপনার দরবার থেকে ফিরে যাবার পর আমি বর্তমানকালের বিভিন্ন ধর্ম সম্পর্কে গবেষণা করার ইচ্ছা করি। আমি একজন হস্তলেখা বিশারদ। স্বহস্তে গ্রন্থাদি লিখে উঁচু দামে বিক্রয় করি। আমি পরীক্ষামূলকভাবে তাওরাতের তিনটি কপি লিপিবদ্ধ করলাম। এগুলােতে অনেক জায়গায় নিজের পক্ষ থেকে বেশ কম করে লিখে কপিগুলাে নিয়ে ইহুদীদের উপসনালয়ে উপস্থিত হলাম। ইহুদীরা অত্যন্ত আগ্রহের সাথে কপিগুলাে কিনে নিল। অতঃপর এমনিভাবে ইঞ্জিলের তিন কপি কম-বেশ করে লিখে খৃষ্টানদের উপাসনালয়ে নিয়ে গেলাম। তারাও খুব খাতির যত্ন করে কপিগুলাে আমার কাছ থেকে কিনে নিল। এরপর কুরআনের ক্ষেত্রেও আমি তাই করলাম। এরও তিনটি কপি সুন্দরভাবে লিপিবদ্ধ করলাম এবং নিজের পক্ষ থেকে কম-বেশ করে দিলাম। এগুলাে নিয়ে যখন বিক্ৰয়াৰ্থে বের হলাম, তখন যে-ই দেখল, সে-ই প্রথমে আমার লেখা কপিটি নির্ভূল কি না, যাচাই করে দেখল। অত:পর বেশ-কম দেখে কপিগুলাে ফেরৎ দিয়ে দিল।

এ ঘটনা দেখে আমি শিক্ষাই গ্রহণ করলাম যে, গ্রন্থটি হুবহু সংরক্ষিত আছে এবং আল্লাহ তায়ালা নিজেই এর সংরক্ষণ করছেন। এরপর আমি মুসলমান হয়ে গেলাম।

❏ ঘটনার বর্ণনাকারী হযরত ইয়াহিয়া ইবনে আকসাম (رحمة الله) বলেন, ঘটনাক্রমে সে বছর আমার হজ্বব্রত পালন করার সৌভাগ্য হয়। সেখানে প্রখ্যাত আলেম হযরত সুফিয়ান ইবনে ওয়াইনাহ (رحمة الله) সাথে আমার সাক্ষাৎ হলে ঘটনাটি তাঁর কাছে ব্যক্ত করলাম, তিনি বললেন, নি:সন্দেহে এরূপ হওয়াই বিধেয়। কারণ, কুরআনে এ সত্যের সমর্থন বিদ্যমান রয়েছে। আমি বললাম, কুরআনের কোন আয়াতে আছে? উত্তরে তিনি বলেন, কুরআনে তাওরাত ও ইঞ্জিলের বেলায় আল্লাহ বলেছেন- 

অর্থ: কেননা, তাদেরকে (ইহুদী ও খৃষ্টানদেরকে) আল্লাহর কিতাব (তাওরাত ও ইঞ্জিল)’র হেফাজতের দায়িত্ব দেয়া হয়েছিল। (সূরা মায়িদাহ, আয়াত: ৪৪)

ঐ কিতাবদ্বয়ের সংরক্ষণের দায়িত্ববান ছিল তারা। পক্ষান্তরে কুরআনের বেলায় বলা হয়েছে-

আল্লাহ নিজেই এর সংরক্ষণের দায়িত্ব নিয়েছেন বিধায় আজ পর্যন্ত এটির একটি যের, যবর ও মুক্তা পর্যন্ত কেউ পরিবর্তন করতে পারেনি এবং কিয়ামত পর্যন্ত পারবেও না। 16
_____________________________
১৬. ইমাম সুয়ূতী, জালাল উদ্দিন সুয়ূতী (رحمة الله) (৯১১হি.), আল খাসায়েসুল কুবরা, আরবী, বৈরুত, খণ্ড ২য়, পৃ. ৩১৬

মে’রাজ
____________________
মে’রাজ

❏ পবিত্র কুরআনে আল্লাহ তায়ালা এরশাদ করেন,

سُبْحَانَ الَّذِي أَسْرَى بِعَبْدِهِ لَيْلاً مِّنَ الْمَسْجِدِ الْحَرَامِ إِلَى الْمَسْجِدِ الأَقْصَى الَّذِي بَارَكْنَا حَوْلَهُ لِنُرِيَهُ مِنْ آيَاتِنَا إِنَّهُ هُوَ السَّمِيعُ البَصِيرُ

পরম পবিত্র ও মহিমাময় সত্তা তিনি, যিনি স্বীয় বান্দা মুহাম্মদ ﷺ কে রাত্রি বেলায় ভ্রমণ করিয়েছিলেন মসজিদে হারাম থেকে মসজিদে আকসা পর্যন্ত, যার চার দিকে আমি পর্যাপ্ত বরকত দান করেছি- যাতে আমি তাঁকে কুদরতের কিছু নিদর্শন দেখিয়েছেই। নিশ্চয়ই তিনি পরম শ্রবণকারী, দর্শনশীল। (সূরা বনী ইসরাঈল, আয়াত: ১)

❏ ইমাম জালাল উদ্দিন সুয়ুতী (رحمة الله) বলেন, নিন্মােক্ত সাহাবা কেরাম থেকে মে’রাজের ঘটনা সংক্ষিপ্ত ও দীর্ঘাকারে বর্ণিত হয়েছে-

১) হযরত আনাস (رضي الله عنه),

২) হযরত উবাই ইবনে কা'ব (رضي الله عنه),

৩) বুরাইদাহ (رضي الله عنه),

৪) জাবের ইবনে আব্দুল্লাহ (رضي الله عنه),

৫) হুযাইফা ইবনুল ইয়ামান (رضي الله عنه),

৬) সামুরা ইবনে যুনদাব (رضي الله عنه),

৭) সাহল ইবনে সা'দ (رضي الله عنه),

৮) সাদ্দাদ ইবনে আউস (رضي الله عنه),

৯) সুহাইব (رضي الله عنه),

১০) ইবনে আব্বাস (رضي الله عنه),

১১) ইবনে ওমর (رضي الله عنه),

১২) ইবনে আমর (رضي الله عنه),

১৩) ইবনে মাসউদ (رضي الله عنه),

১৪) আব্দুল্লাহ ইবনে আসয়াদ ইবনে যেরারাহ (رضي الله عنه),

১৫) আব্দুর রহমান ইবনে কারায (رضي الله عنه),

১৬) আলী ইবনে আবি তালেব (رضي الله عنه),

১৭) ওমর ইবনে খাত্তাব (رضي الله عنه),

১৮) মালেক ইবনে সা’সায়াহ (رضي الله عنه),

১৯) আবু উমামাহ (رضي الله عنه),

২০) আবু আইয়ুব আনসারী (رضي الله عنه),

২১) আবু হিব্বাহ (رضي الله عنه),

২২) আবুল হামরা (رضي الله عنه),

২৩) আবু যর (رضي الله عنه),

২৪) আবু সাঈদ খুদুরী (رضي الله عنه),

২৫) আবু সুফিয়ান। ইবনে হারাব (رضي الله عنه),

২৬) আবু লায়লা আনসারী (رضي الله عنه),

২৭) আবু হােরায়রা (رضي الله عنه),

২৮) আয়েশা (رضي الله عنه),

২৯) আসমা বিনতে আবি বকর (رضي الله عنه),

৩০) উম্মেহানী (رضي الله عنه) ও

৩১) উম্মে সালমা (رضي الله عنه)

_17
_____________________________
১৭. ইমাম সুয়ূতী, জালাল উদ্দিন সুয়ূতী (رحمة الله) (৯১১হি.), আল খাসায়েসুল কুবরা, আরবী, বৈরুত, খণ্ড ১ম, পৃ. ২৫২

❏ ইমাম মুসলিম (رحمة الله) মুসলিম শরীফে,

হযরত আনাস (رضي الله عنه) থেকে বর্ণনা করেন, নবী করিম (ﷺ) এরশাদ করেন, আমার কাছে বুরাক আনা হলাে। সেটি দীর্ঘকায় ও সাদা রঙের চতুষ্পদ জন্তু যা গাধা থেকে বড় আর খচ্চর থেকেও ছােট ছিল। এর পা দৃষ্টিশক্তির প্রান্ত সীমা পর্যন্ত পৌঁছত। আমি এর আরােহণ করে বায়তুল মােকাদ্দাসে পৌঁছলাম। যেখানে আম্বিয়ায়ে কেরামগণ তাদের সওয়ারী বাঁধতেন আমিও সেখানে উহাকে বাঁধলাম। তারপর মসজিদে প্রবেশ করে দু'রাকাত নামায পড়ে বাইরে আসলাম। হযরত জিব্রাঈল (عليه السلام) আমার কাছে এক পাত্র শরাব ও একপাত্র দুধ নিয়ে আসেন। আমি দুধ নিলাম। তখন জিব্রাঈল (عليه السلام) বললেন, আপনি ফিতরাত গ্রহণ করলেন।

তারপর আমাকে আসমানে নিয়ে যাওয়া হলাে এবং জিব্রাঈল (عليه السلام) আসমানের দরজায় করাঘাত করলে জিজ্ঞেস করা হল কে? তিনি বললেন, আমি জিব্রাঈল, জিজ্ঞেস করা হল, আপনার সাথে কে? উত্তরে বললেন, মুহাম্মদ । জিজ্ঞেস করা হল তাঁকে আহ্বান করা হয়েছে? উত্তরে বললেন, হ্যাঁ, তাঁকে কি আহ্বান করা হয়েছে। রাসূল (ﷺ) বলেন, আমাদের জন্য আসমানের দরজা খুলে দেওয়া হল সেখানে হযরত আদম (عليه السلام)'র সাথে আমার সাক্ষাৎ হল। তিনি আমাকে মারহাবা বলে স্বাগতম জানালেন এবং দোয়া করলেন। তারপর আমাকে দ্বিতীয় আসমানে নিয়ে যাওয়া হল এবং হযরত জিব্রাঈল (عليه السلام) দরজায় করাঘাত করলে আওয়াজ আসল আপনি কে? তিনি বলেন, আমি জিব্রাঈল। জিজ্ঞেস করা হল আপনার সাথে কে? উত্তরে বললেন, মুহাম্মদ । জিজ্ঞেস করা হল- তাকে কি আহ্বান করা হয়েছে? উত্তর দিলেন, হ্যাঁঁ, তাঁকে আহ্বান করা হয়েছে।

রাসূল (ﷺ) এরশাদ করেন, আসমানের দরজা খুলে দেওয়া হল। সেখানে হযরত ঈসা (عليه السلام)ইবনে মরয়ম ও হযরত ইয়াহিয়া ইবনে যাকারিয়া এর সাথে আমার সাক্ষাৎ হল, যারা পরস্পর সম্পর্কে খালত ভাই ছিল। তারা উভয়ে আমাকে স্বাগতম জানালেন এবং দোয়া করলেন।

এরপর আমাদেরকে তৃতীয় আসমানে নেওয়া হলাে এবং জিব্রাঈল (عليه السلام) দরজায় নাড়া দিলে জিজ্ঞেস করা হয় কে? উত্তর দিলেন, আমি জিব্রাঈল, জিজ্ঞেস করা হল, আপনার সাথে কে? উত্তরে বললেন, মুহাম্মদ । জিজ্ঞেস করা হল- তাকে কি আহ্বান করা হয়েছে? উত্তরে বললেন, হ্যাঁঁ, তাঁকে আহ্বান করা হয়েছে। রাসূল (ﷺ) বলেন, আমাদের জন্য আসমানের দরজা খুলে দেওয়া হল এবং সেখানে হযরত ইউসূফ (عليه السلام)'র সাথে আমার সাক্ষাৎ হল, যাকে আল্লাহ তায়ালা সৌন্দর্য্যের অর্ধেক দান করেছেন। তিনি আমাকে স্বাগতম

জানালেন এবং দোয়া কররেন, তারপর আমাদেরকে চতুর্থ আসমানে নিয়ে যাওয়া হল। জিব্রাঈল আসমানের দরজায় করাঘাত করলে প্রশ্ন করা হল কে? উত্তরে বলেন, আমি জিব্রাঈল। জিজ্ঞেস করা হল আপনার সাথে কে? উত্তরে বলেন, মুহাম্মদ । জিজ্ঞেস করা হল তাঁকে কি আহ্বান করা হয়েছে? উত্তরে বলেন, যা, তাঁকে আহ্বান করা হয়েছে। রাসূল (ﷺ) শাক এরশাদ করেন, আমাদের জন্য আসমানের দরজা খুলে দেওয়া হল আর সেখানে হযরত ইদ্রিস (عليه السلام)'র সাথে আমার সাক্ষাতৎ হল। তিনি আমাকে স্বাগতম জানালেন এবং দোয়া করলেন। আল্লাহ তায়ালা হযরত ইদ্রিস (عليه السلام) সম্পর্কে বলেছেন-

اعلي اًمكان ورف

আমি তাঁকে উঁচু স্থান দান করেছি।”

তারপর আমাদেরকে পঞ্চম আসমানে নিয়ে যাওয়া হল। জিব্রাঈল (عليه السلام) আসমানের দরজা খুলালে জিজ্ঞেস করা হল কে? উত্তর দিলেন, আমি জিব্রাঈল। জিজ্ঞেস করা হল, আপনার সাথে কে? উত্তর দিলেন, মুহাম্মদ । জিজ্ঞেস করা হল, তাকে কি আহ্বান করা হয়েছে? উত্তরে বললেন, হ্যাঁ, তাঁকে আহ্বান করা হয়েছে। রাসূল (ﷺ) এরশাদ করেন, আমাদের জন্য আসমানের দরজা খুলে দেওয়া হল। সেখানে হযরত হারূন (عليه السلام)'র সাথে আমার সাক্ষাৎ হল। তিনি আমাকে স্বাগতম জানালেন এবং দোয়া করলেন। তারপর আমাদেরকে ষষ্ঠ আসমানে নিয়ে যাওয়া হল। জিব্রাঈল (عليه السلام) দরজা খুলালে জিজ্ঞেস করা হল কে? তিনি বললেন, জিব্রাঈল। প্রশ্ন করা হল, আপনার সাথে কে? উত্তর দিলেন, মুহাম্মদ। প্রশ্ন করা হল, তাঁকে কি আহ্বান করা হয়েছে? উত্তর দিলেন, হ্যাঁ, তাঁকে আহ্বান করা হয়েছে। রাসূল (ﷺ) বললেন, আমাদের জন্য আসমানের দরজা খুলে দেওয়া হল আর হযরত মুসা (عليه السلام)'র সাথে আমার সাক্ষাৎ হল। তিনি আমাকে খােশ আমদেদ জানালেন আর দোয়া করলেন।

অত:পর আমাদের সপ্তম আসমানে নিয়ে যাওয়া হল। জিব্রাঈল (عليه السلام) আসমানের দরজা খুলালে জিজ্ঞেস করা হল কে? উত্তরে বলেন, জিব্রাঈল, প্রশ্ন করা হল, আপনার সাথে কে? উত্তর দিলেন মুহাম্মদ । জিজ্ঞেস করা হল, তাকে কি আহ্বান করা হয়েছে? উত্তর দিলেন, হ্যাঁ, তাঁকে আহ্বান করা হয়েছে। তারপর আমাদের জন্য দরজা খুলে দেওয়া হল। সেখানে হযরত ইব্রাহীম (عليه السلام)'র সাথে আমার সাক্ষাৎ হল, যিনি বায়তুল মামুরের সাথে ঠেস দেওয়া অবস্থায় ছিলেন। আর এই বায়তুল মামুরে প্রতিদিন সত্তর হাজার ফেরেশতা প্রবেশ করে। যারা একবার এই সুযােগ পাবে দ্বিতীয়বার তারা এ সুযোেগ আর পাবে না। এরপর জিব্রাঈল (عليه السلام) আমাকে সিদরাতুল মুনতাহা পর্যন্ত নিয়ে যায়। সিদরাতুল মুন্তাহা হল একটি বরই বৃক্ষ যার পাতা হাতির কানের ন্যায় আর ফল মটকার সমান। আর এই বৃক্ষ আল্লাহর হুকুমে এমন সৌন্দর্য্য মন্ডিত হল যার বর্ণনা খােদার সৃষ্টির কেউ দিতে পারবে না।

এরপর আল্লাহ তায়ালা তার ইচ্ছে মােতাবেক আমার প্রতি ওহী করেছেন এবং দিনে রাতে পঞ্চাশ ওয়াক্ত নামায ফরয করেছেন। আমি ফিরে আসার সময় হযরত মুসা (عليه السلام)'র নিকট আসলে তিনি জিজ্ঞেস করলেন, আল্লাহ তায়ালা আপনার উম্মতের উপর কি ফরয। করেছেন? আমি বললাম, প্রতি দিনে-রাতে মােট পঞ্চাশ ওয়াক্ত নামায ফরয করেছেন। হযরত মুসা (عليه السلام) বললেন, আপনার প্রভুর কাছে গিয়ে কিছুটা কমানাের প্রার্থনা করুন।

কেননা, আপনার উম্মত এত বেশী নামায পড়ার ক্ষমতা রাখবেনা। আমি বনী ইসরাঈলকে ভালভাবে পরীক্ষা করে দেখেছি। রাসূল (ﷺ) বলেন, আমি আমার প্রভুর কাছে গিয়ে বললাম, হে প্রভু! আমার উম্মতের উপর কিছু হাল্কা করে দিন। তখন আল্লাহ তায়ালা পাঁচ ওয়াক্ত নামায কমিয়ে দিলেন। আমি ফিরে মুসা (عليه السلام)'র কাছে এসে বললাম, আল্লাহ তায়ালা পাঁচ ওয়াক্ত কমিয়ে দিলেন। হযরত মুসা (عليه السلام) বললেন, আপনার এত নামায পড়তে পারবে না, আপনি আপনার প্রভুর কাছে আরাে কমানাের প্রার্থনা করুন। রাসূল (ﷺ) এরশাদ করেন, আমি প্রভুর কাছে যেতাম আর কমিয়ে আনতাম কিন্তু মুসা (عليه السلام) বলতেন আবার যান গিয়ে আরাে কমিয়ে আনুন। এভাবে কমাতে কমাতে পরিশেষে আল্লাহ তায়ালা বললেন, হে মুহাম্মদ! দিনে ও রাতে মাত্র পাঁচ ওয়াক্ত নামায ফরয করা হল তবে প্রতি নামাযে দশগুণ সওয়াব দেওয়া হবে। সুতরাং পাঁচ ওয়াক্ত পড়ে পঞ্চাশ ওয়াক্তের সওয়াব পাবে। যে ব্যক্তি ভাল কাজ করার ইচ্ছে করবে কিন্তু কোন কারণে সে সৎ কাজটি করতে পারেনি তবুও তার জন্য একটি নেকী লিখা হবে। আর যদি সে সেই সৎ কাজটি করে তবে তার জন্য দশটি নেকী লিখা হবে। পক্ষান্তরে যে ব্যক্তি খারাপ কাজ করার ইচ্ছে পােষণ করে তা না করে তবে তার আমলনামায় কিছুই লিখা হবে না। পক্ষান্তরে সে যদি সেই খারাপ কাজটি করে তবে তার জন্য একটি গুনাহ লিখা হবে মাত্র।

❏ রাসূল (ﷺ) এরশাদ করেন, এরপর আমি হযরত মুসা (عليه السلام)'র কাছে আসলাম এবং তাঁকে এই আহকামে সংবাদ দিলাম। তিনি আবারাে বললেন, আপনার প্রভুর কাছে আরাে কমিয়ে আনুন। রাসূল (ﷺ) বললেন,

 فقلت قدرجعت الى ربى حتى استحييت منه

আমি বললাম, আমি বারংবার আমার প্রভুর কাছে গিয়ে প্রার্থনা করেছি, এখন আমার (আবার যেতে) লজ্জাবােধ হচ্ছে। 18
_____________________________
১৮. ইমাম মুসলিম (رحمة الله) (২৬১হি.) মুসলিম শরীফ, সূত্র, গােলাম রাসূল (ﷺ) সাঈদী, শরহে সহীহ মুসলিম, উর্দু, গুজরাট, পাকিস্তান, খন্ড ১ম, পৃ. ৬৭১, বাব নং-৭১, হাদিস নং-৩১৯ ও জালাল উদ্দিন সুয়ুতী (رحمة الله) (৯১১হি.), আল খাসায়েসুল কুবরা, আরবী, বৈরুত, খন্ড ১ম, পৃ. ২৫২)।

রেসালতের সাক্ষ্যদান নবজাতক শিশুর সাক্ষ্যদান
____________________
রেসালতের সাক্ষ্যদান নবজাতক শিশুর সাক্ষ্যদান

❏ ইমাম বায়হাকী ও ইবনে আসাকের (رحمة الله) হযরত মুয়াইকিব (رضي الله عنه) থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, আমি বিদায় হজ্বে অংশগ্রহণ করেছিলাম এবং একটি ঘরে গেলাম যেখানে রাসূল (ﷺ) কে ছিলেন। তাঁর কাছে ইয়ামামা থেকে এক ব্যক্তি একদিন বয়সের একটি নবজাতক শিশু নিয়ে আসল। নবী করিম এর সেই বাচ্চাকে জিজ্ঞেস করলেন, হে বাচ্চা! বল, আমি কে? বাচ্চা বলল, االله رسول انت আপনি আল্লাহর রাসূল (ﷺ)। রাসূল (ﷺ) বললেন,

فيك االله بارك صدقت

তুমি ঠিক বলেছ, আল্লাহ তােমার মধ্যে বরকত দান করুন। সে শিশু যুবক হওয়া পর্যন্ত আর কথা বলেনি। আমরা তার নাম রেখেছি মােবারকুল ইয়ামামা। 19
_____________________________
১৯. ইমাম সুয়ূতী, জালাল উদ্দিন সুয়ূতী (رحمة الله) (৯১১হি.), আল খাসায়েসুল কুবরা, আরবী, বৈরুত, খন্ড ২য়, পৃ. ৬৪

বাঘের সাক্ষ্যদান
____________________
বাঘের সাক্ষ্যদান

❏ ইবনে ওহাব (رحمة الله) বর্ণনা করেন, আবু সুফিয়ান ইবনে হারাব ও সাফওয়ান ইবনে উমাইয়্যা ইসলাম গ্রহণের পূর্বে বাঘে কথা বলতে শুনেছিল। একদা একটি বাঘ একটি হরিণ ধরার জন্য তাড়া করছিল। বাঘ হেরেম শরীফের বাইরে তাড়া করলে হরিণ পালিয়ে এসে হেরেম শরীফে প্রবেশ করে আশ্রয় নেয়। বাঘে হরিণকে ছেড়ে চলে গেল। আবু সুফিয়ান ও সাফওয়ান এই ঘটনা দেখে বড়ই অবাক হয়ে গেল। কারণ এভাবে হাতের নাগালে পেয়েও না খেয়ে চলে যেতে তারা কোন দিন দেখেনি, তখন বাঘ তাদেরকে উদ্দেশ্য করে বলতে লাগল তােমরা হরিণকে আয়ত্ত্বে পেয়েও ছেড়ে দেওয়ায় আশ্চার্য হয়েছ? অথচ ,

اعجب من ذالك محمدبن عبداالله بالمدينة يدعوكم الى الجنة وتدعونه الى النار-

অর্থাৎ এর চেয়েও বড় আশ্চার্যজনক ঘটনা হল, মদীনা শরীফে মুহাম্মদ ইবনে আব্দুল্লাহ তােমাদেরকে জান্নাতের দিকে আহ্বান করতেছেন আর তােমরা তাঁকে জাহান্নামের দিকে আহ্বান করতেছ। বাঘের মুখে মানুষের ন্যায় এভাবে স্পষ্ট ভাষায় কথা বলা শুনে আবু সুফিয়ান বলল, লাত-ওজ্জার শপথ, হে বাঘ! তুমি যদি এরূপ কথা মক্কা মােকাররমায় জনসম্মুখে বলতে তবে গােত্রের অতিশয় বৃদ্ধা বিধবা মহিলারা পর্যন্ত লাত-ওজ্জাকে পরিত্যাগ করত। 20
_____________________________
২০. কাযী আয়ায (رحمة الله) (৪৭৬-৫৪৪হি.), শেফা শরীফ, আরবী, মাকতাবাতুস সাফা, কায়রাে, মিশর, খণ্ড ১ম, পৃ. ২০৪)

চন্দ্র-সূর্যের আনুগত্য চাঁদের সাথে কথা বলা
____________________
চন্দ্র-সূর্যের আনুগত্য চাঁদের সাথে কথা বলা

❏ ইমাম বায়হাকী, খতীবে বাগদাদী এবং ইবনে আসাকের হযরত ইবনে আব্বাস (رضي الله عنه) থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন- আমি রাসূল (ﷺ) কে বললাম, হে আল্লাহর রাসূল (ﷺ)! আমি আপনার শিশুকালে আলামতে নবুয়ত দেখেই ঈমান এনেছিলাম। আর তা হল- আমি দেখলাম যে, আপনি দোলনায় শুয়ে শুয়ে চাঁদের সাথে কথা বলছিলেন আর আঙ্গুল মােবারক দিয়ে চাঁদের দিকে ইশারা করছিলেন। আপনি যেদিকে ইশারা করতেন চাঁদ সেদিকে ঝুকে যেতাে। রাসূল (ﷺ) ইরশাদ করেন,

اني كنت احدثه ويحدثی ويلهيني عن البكاء واسمع وجبته حين يسجد تحت العرش.

অর্থাৎ আমি চাঁদের সাথে কথা বলছিলাম আর চাঁদ আমার সাথে কথা বলছিল। চাঁদ আমাকে ক্রন্দন করা থেকে ভূলিয়ে রাখার চেষ্টা করছিল । এমনকি চাঁদ যখন আল্লাহর আরশের নীচে সিজদা করে তখন আমি তার তাসবীহ’র আওয়াজ শুনতে পাই। 21
_____________________________
২১. আল্লামা সুয়ুতী (رحمة الله) (৯১১হি.), আল খাসায়েসুল কুবরা, আরবী, বৈরুত, পৃ. ৯১।

চন্দ্র দ্বিখণ্ডিত করা
____________________
চন্দ্র দ্বিখণ্ডিত করা

❏ হযরত আনাস (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত,

মক্কাবাসী কাফেররা রাসূল (ﷺ) এর নিকট মুজিযা দেখানাের জন্য দাবী জানালে তিনি তাদেরকে চাঁদ দ্বিখন্ডিত করে দেখালেন। 22
_____________________________
২২. ইমাম বুখারী (رحمة الله) (২৫৬হি.), সহীহ বুখারী শরীফ, আরবী, পৃ. ৫১৩।

❏ আবু নঈম আতা ও দ্বিহাক থেকে এবং তারা ইবনে আব্বাস (رضي الله عنه) থেকে বর্ণনা করেন যে, মক্কার মুশরিকরা একদা নবী করিম এর কাছে এসে বলতে লাগল যে, আপনি যদি সত্যি নবী হন তাহলে আমাদের সামনে চাঁদকে এমনভাবে দু’অংশে ভাগ করে দেখান যেন চাঁদের একাংশ আবু কুবাইস পাহাড়ে অপর অংশ কাইকায়ান পাহাড়ে পতিত হয়। আর এ সময় চাঁদ চৌদ্দ তারিখের পূর্ণতা লাভ করেছিল।

অত:পর রাসূল (ﷺ) আল্লাহর দরবারে দোয়া করেন যেন তাদের আকাঙ্খিত মু'জিযা দেখানাের ক্ষমতা দান করেন। এরপর সাথে সাথে চাদ দু'টুকরাে হয়ে একটুকরাে আবু কুবাইস পাহাড়ে আর অপর টুকরাে কাইকায়ান পাহাড়ে পতিত হয়। তখন রাসূল (ﷺ) বললেন, তােমরা সাক্ষী থাক। এই মু'জিযা দেখে মক্কার কাফিররা বলতে লাগল যে, এটা যাদু। মুহাম্মদ তােমাদের উপর যাদু করেছে। তােমরা মুসাফিরদের জিজ্ঞেস করাে। যদি তারাও তােমাদের ন্যায় চাঁদকে দু'টুকরাে হতে দেখেছে বলে সাক্ষ্য দেয় তবে সত্যি বলে ধরে নেবে। আর যদি তারা না দেখে তবে তা নিশ্চিত যাদু। অতঃপর বিভিন্ন দিক থেকে আগত মুসাফিরদেরকে জিজ্ঞেস করে এ ব্যাপারে জানতে চাইলে তারা বলল- আমরাও চাঁদ দ্বিখন্ডিত হতে দেখেছি। 23
_____________________________
২৩. আল্লামা সুয়ূতী (رحمة الله) (৯১১হি.), আল খাসায়েসুল কুবরা, আরবী, বৈরুত, খণ্ড ১ম, পৃ. ২০৯, আব্দুর রহমান জামী (رحمة الله) (৮৯৮হি.), শাওয়াহেদুন নবুয়াত, উর্দু, পৃ. ১০৭। আবু নঈম ইস্পাহানী (رحمة الله) (৪৩০হি.), দালায়েলুন নবুয়ত, উর্দু, নয়াদিল্লী, পৃ. ২৪৪ ও কাযী আয়ায (رحمة الله) (৪৭৬-৫৪৪হি.), শেফা শরীফ, আরবী, মাকতাবাতুস সাফা, কায়রাে, মিশর, খণ্ড ১ম, পৃ. ১৮৬।

চন্দ্র দ্বিখণ্ডিত হওয়া বহিরাগতদের সাক্ষ্য
____________________
চন্দ্র দ্বিখণ্ডিত হওয়া বহিরাগতদের সাক্ষ্য

❏ হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ (رضي الله عنه) বর্ণনা করেন, যখন আমরা মক্কায় ছিলাম তখন চন্দ্র দ্বিখণ্ডিত হয়েছিল। কুরাইশ কাফেররা বলল, এটা যাদু। ইবনে আবি কাবশা তােমাদের চোখে যাদু করেছে। এখন বাইরের মুসাফির যারা আসবে তাদের থেকে খবর নিয়ে দেখ, তারাও যদি তােমাদের ন্যায় দেখে তবে মুহাম্মদের কথা সত্য। বর্ণনাকারী বলেন,

فما قدم عليهم احد من وجه من الوجوه الا اخبروهم بانهم رأوه .

অত:পর পৃথিবীর যেকোন প্রান্ত হতে আগত ব্যক্তিকে এ ব্যাপারে জিজ্ঞেস করলে তারা বলতাে আমরা নিজেরাই স্বচক্ষে এরূপ দেখেছি।

বাস্তব কথা হল চন্দ্র দ্বিখন্ডিত বিষয়ক হাদীস এত বেশী সংখ্যায় বর্ণিত আছে এটাকে অস্বীকার করার কোন সুযােগ নেই। আল্লামা আলুসী (رحمة الله) রূহুল মায়ানী’ গ্রন্থে লিখেন,

والأحاديث في الانشقاق كثيرة .

অর্থাৎ- চন্দ্র দ্বিখন্ডিত বিষয়ক অসংখ্য হাদীস বিদ্যমান। 24
_____________________________
২৪. আবু নঈম ইস্পাহানী (رحمة الله) (৪৩০হি.), দালায়েলুন নবুয়ত, উর্দু, নয়া দিল্লী, পৃ. ২৪৫।

❏ ইমাম তাজ উদ্দিন সুবকী (رحمة الله) শরহে আল- মুখতাসার গ্রন্থে বলেন,

الصحيح عندى ان انشقاق القمر متواتر منصوص فى القرآن مروى فى الصحيحين وغيرهما من طرق شئ بحيث لايتمارى فى تواتره

অর্থাৎ- আমার মতে বিশুদ্ধ মত হল চন্দ্র দ্বিখন্ডিত হওয়া মুতাওয়াতি। পবিত্র কুরআনে এর দলীল বিদ্যমান। বুখারী ও মুসলিম সহ অন্যান্য বিশুদ্ধ হাদীস গ্রন্থে বিভিন্ন সনদে মুহাদ্দিসীনে কিরাম এ বিষয়ে হাদীস বর্ণনা করেছেন। সুতরাং এর মুতাওয়াতিরে কোন সন্দেহ নেই। 25
_____________________________
২৫. মাওলানা মুহাম্মদ তৈয়্যব, উর্দু অনুবাদক, দালায়েলুন নবুয়ত, দালায়েলুন নবুয়তের প্রাপ্লত টীকা, পৃ. ২৪৫।

সূর্যের আনুগত্য
____________________
সূর্যের আনুগত্য

❏ ইমাম তাহাভী (رحمة الله) বর্ণনা করেন, খন্দক যুদ্ধের সময় নবী করিম (ﷺ) একবার সূর্য ঢলে গেল কিন্তু আসরের নামায পড়তে পারেননি। আল্লাহ তায়ালা সূর্যকে থেমে দিলেন। এমনকি ডুবে যাওয়া সূর্যকে পুনরায় তুলে দেন। অতঃপর তিনি আসরের নামায আদায় করা শেষ হলে সূৰ্য পুনরায় ডুবে যায়। ইমাম নববী (رحمة الله) শরহে মুসলিমে বলেন, এই রেওয়াতের বর্ণনাকারী সেকাহ তথা সুদৃঢ়। 26
_____________________________
২৬. সুয়ূতী, জালাল উদ্দিন সুয়ূতী (رحمة الله) (৯১১হি.) আল-খাসায়েসুল কুবরা, আরবী, বৈরুত, খণ্ড ১ম, পৃ. ৩৮৪ ও কাযী আয়ায (رحمة الله) (৪৭৬-৫৪৪হি.), শাফা শরীফ, আরবী, মাকতাবাতুস সাফা, কায়েরাে, মিশর, খণ্ড ১ম, পৃ. ১৮৭।

অস্ত যাওয়া সূর্য পুন: উদিত হওয়া
____________________
অস্ত যাওয়া সূর্য পুন: উদিত হওয়া

❏ হযরত আসমা বিনতে উমাইস (رضي الله عنه) বর্ণনা করেন, আমরা খায়বরের ময়দানে ছিলাম। নবীজী ﷺ'র মাথা মােবারক হযরত আলী (رضي الله عنه)'র কোলে ছিল। এ সময় ওহী নাযিল হল আর সূর্য অস্ত গেল। ফলে হযরত আলী (رضي الله عنه)’র আসরের নামায কাযা হয়ে গেল। ওহী শেষ হলে নবী করিম ও দোয়া করলেন,

اللهم انه كان في طاعتك وطاعة رسولك فاردو عليه الشمس .

“হে আল্লাহ! আলী যদি তােমার ও তােমার রাসূল (ﷺ) এর আনুগত্যে থাকে তবে সূর্যকে আদেশ দাও যেন পুনরায় ফিরে আসে।”

❏ হযরত আসমা (رضي الله عنه) বলেন, সূর্য ডুবে গিয়েছিল কিন্তু আমরা দেখলাম যে, সূর্য পুনরায় উঠে গেল আর সূর্যের আলােতে পাহাড় আলােকিত হয়ে গেল। ইমাম তাহাভী (رحمة الله) বলেন,

এই হাদীসখানা বিশুদ্ধ আর এর বর্ণনাকারীগণ সেকা। ইমাম আহমদ ইবনে সালেহ (رحمة الله) বলেন, এই হাদীসের বিরােধীতা করা কোন জ্ঞানী লােকের উচিত নয়। কারণ এটা মু'জিযা ও নবুয়তের নিদর্শন। 27

تیرے ماضی پا گیا سورج پھر الٹے قدم * تیری انگلی اٹھ گئی ما ہ کا کلیجہ چیر گیا وہ
_____________________________
২৭. আব্দুর রহমান জামী (رحمة الله) (৮৯৮হি.), শাওয়াহেদুন নবুয়ত, উর্দু, বেরেলী, পৃ. ১৬০।

সূৰ্য স্থির থাকা
____________________
সূৰ্য স্থির থাকা

❏ কাযী আয়ায (رحمة الله) ইবনে ইসহাক (رحمة الله) থেকে বর্ণনা করেন, যখন নবী করিমﷺ'কে মি’রাজ করানাে হয়েছিল তখন মিরাজের প্রমাণ স্বরূপ তিনি তার সম্প্রদায়ের লােকদেরকে ব্যবসায়িক কাফেলার সংবাদ দেন এবং তাদের উটের আলামতও বর্ণনা করেন। তখন তারা তাঁর কাছে জিজ্ঞেস করল, কাফেলা কখন মদীনায় পৌঁছবে? উত্তরে তিনি বলেছিলেন, বুধবারে তারা মদীনায় এসে পৌঁছবে।

বুধবার আসলে মহানবীর কথা সত্য কিনা জানার আগ্রহে সবাই ঐ আগন্তুক কাফেলার অপেক্ষায় রয়েছে। এমনকি দিন শেষ হয়ে যাচ্ছে, সূর্য ডুবে যাচ্ছে তবুও কাফেলা আসতেছেনা। এ অবস্থায় রাসূল (ﷺ) আল্লাহর দরবারে দোয়া করলেন তখন তাঁর কথা সত্যে পরিণত করার জন্য সূর্যকে থেমে দিয়ে দিনকে বৃদ্ধি করা হয়েছিল। অর্থাৎ, কাফেলা মদীনায় পৌঁছা পর্যন্ত সূর্য স্থির ছিল। তারা এসে পৌঁছলে সূর্য অস্ত যায়। 28
_____________________________
২৮. ইউসূফ নাবহানী (رحمة الله) (১৩৫০হি.), হুজ্জাতুল্লাহি আলান আলামীন, উর্দু, গুজরাট, খণ্ড ১ম, পৃ. ৬৪০ ও কাজী আয়ায (رحمة الله) (৪৭৬-৫৪৪হি.), আরবী মাকতাবাতুস সাফা, কায়রাে, মিশর, খণ্ড ১ম, পৃ. ১৮৮

বক্ষ বিদীর্ণ
____________________
বক্ষ বিদীর্ণ

❏ হযরত হালিমা (رضي الله عنه) বলেন, একদিন রাসূল (ﷺ) এর ছাগলের জন্য চারণভূমিতে তাশরীফ নিলেন। তাঁর দুধভাই হামযা দুপুরের সময় কাঁদতে কাঁদতে এসে বলল, হে আম্মাজান! আমার কুরাইশী ভাইয়ের চিন্তা করুন। এখন তাে তার সাথে সাক্ষাত করা মুশকিল। আমি বললাম, ঘটনা কি খুলে বল। সে বলল, আমরা খেলতেছি হঠাৎ এক ব্যক্তি এসে তাকে পাহাড়ে নিয়ে যায় এবং তাঁর পেট কেটে ফেলেছে। হালিমা (رضي الله عنه) বলেন, এ কথা শুনামাত্র আমি আবু যুআইবকে সঙ্গে নিয়ে সেখানে পৌঁছে তাঁকে পাহাড়ের উপর আকাশের দিকে মুখ করে তাকানাে অবস্থায় পেয়েছি। আমি তাঁর কাছে গিয়ে তাঁকে চুমু খেয়ে জিজ্ঞেস করলাম, হে আমার প্রিয় বৎস! তুমি কেমন আছ আর তােমার নিকট কে এসেছে? উত্তরে তিনি বললেন, আমি আমার সাথী ভাইদের সাথে খেলতেছি, ইত্যবসরে তিনজন ব্যক্তি এসেছে। এদের একজনের হাতে ছিল লােটা, দ্বিতীয় জনের হাতে ছিল রূপার বাটি যা সাদা বরফে ভর্তি ছিল। তারা আমাকে আমার ভাইদের কাছ থেকে তুলে নিয়ে পাহাড়ে নিয়ে একজনে অত্যন্ত নম্রতার সহিত আমাকে ঘুম পাড়িয়ে দিল এবং আমার বক্ষ হতে নাভি পর্যন্ত কেটে ফেলল।

তবে আমার কোন কষ্ট হয়নি। সে আমার অন্তর ভিতর থেকে বের করে কেটে সেখান থেকে কিছু কাল বর্ণের রক্তমাংস বের করে বাইরে নিক্ষেপ করল আর বলল, এটা আপনার ভিতরে অশুভ উৎস ছিল যা আমরা বের করে ফেলে দিলাম। এখন আপনি শয়তানের প্রতারণা থেকে সুরক্ষা থাকবেন। পুনরায় আমার অন্তরকে যথাস্থানে রেখে দিয়ে নূরের মহর লাগিয়ে দিল যার ঠান্ডা অনুভূতি আমি এখনাে অনুভব করছি। তৃতীয় ব্যক্তি ঐ দু’ব্যক্তিকে বলল, এখন তােমরা চলে যাও কেননা, তােমরা তােমাদের কাজ সমাপন করেছ। তারপর সেই তৃতীয় ব্যক্তি আমার কাছে এসে আমার বক্ষে ক্ষতস্থানে হাত রাখলে আমার ক্ষতস্থান মুছে চলে গেল।

তারা যাওয়ার সময় বলে গেল, হে হাবীবে খােদা! ভয় পাবেন না, আপনি ধীরে ধীরে বুঝতে পারবেন মহান আল্লাহ আপনাকে আরাে কত নেয়ামত ও সম্মান দান করবেন। 29
_____________________________
২৯. আব্দুর রহমান জামী (رحمة الله) (৮৯৮হি.), শাওয়াহেদুল নবুয়ত, উর্দু, বেরেলী, পৃ. ৬৫)।

অদৃশ্যের সংবাদ প্রদান খেয়ানতের পরিনতি সম্পর্কে সংবাদ প্রদান
____________________
অদৃশ্যের সংবাদ প্রদান খেয়ানতের পরিনতি সম্পর্কে সংবাদ প্রদান:

❏ হযরত আবু হুরাইরা (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, খায়বার যুদ্ধে আমরা বিজয় লাভ করেছি কিন্তু গনীমত হিসেবে আমরা সােনা-রূপা কিছুই লাভ করিনি। আমরা যা পেয়েছিলাম তা ছিল গরু, উট বিভিন্ন দ্রব্যসামগ্রী ও ফলের বাগান। যুদ্ধ শেষে আমরা রাসূল (ﷺ)’র সাথে ওয়াদিউল কুরা নামক স্থানে ফিরে আসলাম। তাঁর সঙ্গে ছিল মিদআন নামক একটি গােলাম। বনী যুবাইর এর জনৈক ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ (ﷺ) কে এটি হাদিয়া দিয়েছিল। এক সময় সে রাসূলুল্লাহ (ﷺ)’র হাওদা নামানাের কাজে ব্যস্ত ছিল আর ঐ মুহূর্তে এক অজ্ঞাত স্থান থেকে একটি তীর ছুটে এসে তার গায়ে পড়লাে। ফলে গােলাম টি মারা গেল। এ অবস্থা দেখে লােকজন বলাবলি শুরু করলাে যে, তার শাহাদত কতই আনন্দদায়ক! তখন রাসূলুল্লাহ (ﷺ) কি বললেন, তাই নাকি? সেই মহান সত্তার কসম, যার হাতে আমার প্রাণ, বন্টনের আগে খায়বার যুদ্ধলব্ধ গনীমত থেকে সে যে চাদর খানা গােপনে তুলে নিয়েছিল সেটি আগুন হয়ে অবশ্যই তাকে দগ্ধ করবে। নবীজী ﷺ না থেকেও এ কথাটি শােনার পর আরেক ব্যক্তি একটি অথবা দুটি জুতার ফিতা নিয়ে এসে বলল, এ জিনিসটি আমি বন্টনের আগেই নিয়েছিলাম। তখন রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বললেন, এ একটি অথবা দুটি জুতার ফিতাও আগুনের ফিতায় রূপান্তরিত হতাে।” 30
_____________________________
৩০. ইমাম বুখারী, মুহাম্মদ ইবনে ইসমাঈল (رحمة الله) (২৫৬হি.), বুখারী শরীফ, আরবী, ইউপি, ইন্ডিয়া, পৃ. ৬০৮, হাদিস নং ৩৯১৫।

খাবারে বিষ মিশানোর সংবাদ প্রদান
____________________
খাবারে বিষ মিশানোর সংবাদ প্রদান

❏ ইমাম বুখারী (رحمة الله) হযরত আবু হুরাইরা (رضي الله عنه) থেকে বর্ণনা করেন, যখন খায়বার বিজয় হল তখন রাসূলুল্লাহ (ﷺ) -’র জন্য বিষ মিশ্রিত একটি রান্না করা ছাগল পেশ করা হল। রাসূল (ﷺ) এ সম্পর্কে অবহিত হয়ে সেখানকার সকল ইহুদীদের একত্রিত হতে নির্দেশ দেন। সবাই একত্রিত হলে তিনি বললেন, আমি তােমাদের কাছে একটি বিষয়ে প্রশ্ন করবাে। হ্যাঁঁ অথবা না বাচক উত্তর দেবে। ইহুদীরা বলল, ঠিক আছে। তিনি জিজ্ঞেস করেন, তােমাদের পিতা কে? তারা বলল, আমাদের পিতা অমুক, তিনি বললেন, তােমরা মিথ্যা বলেছ। তােমাদের পিতা সেই নয় বরং অমুক। ইহুদীরা বলল, আপনি ঠিক বলেছেন। তারপর তিনি জিজ্ঞেস করলেন, তােমরা এই ছাগলে বিষ মিশিয়েছ? তারা উত্তর দিল হ্যাঁ, আমরা বিষ মিশিয়েছি। তিনি জিজ্ঞেস কররেন, তােমরা এটা কেন করেছ? ইহুদীরা বলল, এতে আমাদের উদ্দেশ্য হল আপনি যদি মিথ্যাবাদী হন তবে আমরা মুক্তি পাবাে আর যদি আপনি যদি সত্য নবী হন তবে এতে আপনার কোন ক্ষতি হবে না।

❏ ইমাম বায়হাকী (رحمة الله) হযরত আবু হুরাইরা (رضي الله عنه) থেকে বর্ণনা করেন, এক ইহুদী মহিলা রাসূল (ﷺ)’র খেদমতে বিষ মিশ্রিত ছাগল প্রেরণ করে। তিনি সাহাবাদের বললেন, থাম, খেয়ােনা, কেননা এতে বিষ মিশ্রণ করা হয়েছে।” 31
_____________________________
৩১. ইমাম সুয়ূতী, জালাল উদ্দিন সুয়ূতী (رحمة الله) (৯১১হি.), আল খাসায়েসুল কুবরা, আরবী, বৈরুত, খণ্ড-১ম, পৃ. ৪২৫

ইসলামের বিপক্ষে উৎসাহিত করার সংবাদ প্রদান
____________________
ইসলামের বিপক্ষে উৎসাহিত করার সংবাদ প্রদান

❏ ইমাম বায়হাকী ও আবু নঈম (رحمة الله) হযরত উরওয়াহ (رضي الله عنه) থেকে বর্ণনা করে, উয়াইনা ইবনে হাছন রাসূল (ﷺ) ’র নিকট তায়েফবাসীর সাথে হেদায়েতের আলােচনা করতে যাওয়ার অনুমতি চেয়েছেন। রাসূল (ﷺ) তাকে অনুমতি দিলে তিনি সেখানে গিয়ে ইসলামের বিপক্ষে কথা বলেন। তিনি তাদেরকে বলেন, তােমরা আপন জায়গায় অটুট থাক। খােদার কসম, আমরা যারা মুসলমান হয়েছি গােলামের চেয়ে লাঞ্ছিত অবস্থায় আছি। আমি খােদার শপথ করে বলছি, যদি তার কারণে আরবে কোন ঘটনা সংঘটিত হয় তবে আরবদের সম্মান ও শক্তি বৃদ্ধি পাবে। তােমরা স্বীয় দুর্গে অবস্থান কর এবং নিজেদের শক্তি নিজেদের হাতে ধ্বংস করা থেকে বিরত থাক। নতুবা তিনি তােমাদের উপর এত বেশী আক্রমণ করবেন যে, এই বৃক্ষ পর্যন্ত কেটে ফেলবে। একথা বলার পর উয়াইনা ফিরে আসলেন।

নবী করীম তাকে বললেন, তুমি তাদেরকে কি বলেছ? তিনি বললেন, আমি তাদের সাথে আলাপ-আলােচনা করেছি, ইসলামের প্রতি দাওয়াত দিয়েছি, ইসলাম গ্রহণের আদেশ দিয়েছি। আর দোযখের ভয় প্রদর্শন করেছি এবং জান্নাতের পথ প্রদর্শন করেছি। রাসূল (ﷺ) : এরশাদ করেন, ا كذا قلت بل كذبت অর্থাৎ তুমি মিথ্যা বলতেছ, বরং তুমি তাদেরকে এরূপ এরূপ বলেছ। অত:পর উয়াইনা বললেন, االله الى اتوب االله رسول يا صدقت

. ذالك من واليك ওহে আল্লাহর রাসূল (ﷺ)! আপনি ঠিক বলেছেন। আমি এই অপরাধের কারণে আল্লাহ ও আপনার কাছে তাওবা করতেছি। 32
_____________________________
৩২. ইমাম সুয়ূতী, জালাল উদ্দিন সুয়ুতী (رحمة الله) (৯১১হি.), আল খাসায়েসুল কুবরা, আরবী, বৈরুত, খণ্ড-১ম, পৃ. ৪৫১

নিজের মৃত্যুর আভাস প্রদান
____________________
নিজের মৃত্যুর আভাস প্রদান

❏ ইমাম মুসলিম (رحمة الله) হযরত জাবের (رضي الله عنه) থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, কুরবানীর দিন আমি নবী করিম ﷺ কে দেখেছি উটের উপর থেকে পাথর নিক্ষেপ করছিলেন আর বলছিলেন,

تأخذوا عني مناسككم فانی لادرى لعلي لا احج بعد حجتي هذه

তােমরা আমার থেকে হজ্বের বিধানাবলী শিখে নাও। সম্ভবতঃ আমি এরপরে আর হজ্ব নাও করতে পারি। 33
_____________________________
৩৩. ইমাম সুয়ূতী, জালাল উদ্দিন সুয়ূতী (رحمة الله) (৯১১হি.), আল খাসায়েসুল কুবরা, আরবী, বৈরুত, খণ্ড-২য়, পৃ. ৬৫।

ওফাত লাভের প্রতি ইঙ্গিত
____________________
ওফাত লাভের প্রতি ইঙ্গিত

❏ ইমাম আহমদ ও বায়হাকী (رحمة الله) হযরত আসেম ইবনে হুমাইদ (رضي الله عنه) থেকে বর্ণনা করে, নবী করিম ﷺ হযরত মুয়ায ইবনে জাবাল (رضي الله عنه)কে ইয়েমন প্রেরণ করার সময় তিনি তার সাথে কিছু দূর পর্যন্ত তাশরীফ নেন। আর তাকে উপদেশ দেন যে, হে মুয়ায! এ বছরের পর তুমি আর আমার সাথে সাক্ষাত করতে পারবে না। তুমি যখন ফিরে আসবে তখন তুমি আমার মসজিদ ও আমার কবর দেখবে। একথা শুনে হযরত মুয়ায কেঁদে ফেললেন। ঠিকই তিনি যখন ফিরে আসেন তখন নবী করিম এর ইন্তেকাল হয়ে গেলেন। 34
_____________________________
৩৪. ইমাম সুয়ূতী, জালাল উদ্দিন সুয়ূতী (رحمة الله) (৯১১হি.), আল খাসায়েসুল কুবরা, আরবী, বৈরুত, খণ্ড-২য়, পৃ. ৬৬।

অদৃশ্যের সংবাদঃ জান্নাতী খাবার কি হবে?
____________________
অদৃশ্যের সংবাদঃ জান্নাতী খাবার কি হবে?

❏ ইমাম বুখারী (رحمة الله) হযরত আনাস ইবনে মালেক (رضي الله عنه) থেকে বর্ণনা করেন, নবী করিম ﷺ মদীনায় তাশরীফ আনার সংবাদ শুনে হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে সালাম (رضي الله عنه) তাঁর খেদমতে আসেন এবং আরজ করলেন- আমি আপনার কাছে তিনটি প্রশ্ন করবাে কোন নবী ছাড়া এ প্রশ্নগুলাের উত্তর সম্পর্কে অন্য কেউ ওয়াকেফহাল নন। এক. কিয়ামতের আলামতসমূহ থেকে প্রথম আলামত কি? দুই. জান্নাতীদের জন্য প্রথম খাবার কি হবে? তিন. সন্তান পিতা-মাতার অনুরূপ হয় কিভাবে?

রাসূল (ﷺ) এরশাদ করেন, হযরত জিব্রাঈল (عليه السلام) এ ব্যাপারে আমাকে অবহিত করেন।

কিয়ামতের প্রথম আলামত হল এমন আগুন যা লােক সম্মুখে পূর্বপ্রান্ত থেকে প্রকাশিত হয়ে পশ্চিমপ্রান্ত পর্যন্ত পৌঁছবে। জান্নাতীদের প্রথম খাবার হবে মাছের কলিজা।

আর পুরুষের বীর্য যদি নারীর বীর্যের অগ্রগামী হয় তবে সন্তান পিতার আকৃতি ধারণ করে পক্ষান্তরে নারীর বীর্য যদি পুরুষের বীর্যের অগ্রগামী হয় তবে সন্তান মায়ের ন্যায় হয়।

এ উত্তর শুনে হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে সালাম (رضي الله عنه) বলেন, আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ ছাড়া কোন মাবুদ নেই এবং আরাে সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আপনি আল্লাহর প্রেরিত রাসূল (ﷺ) এই বলে তিনি ইসলাম গ্রহণ করেন। 35
_____________________________
৩৫. ইমাম সুয়ূতী, জালাল উদ্দিন সুয়ূতী (رحمة الله) (৯১১হি.), আল খাসায়েসুল কুবরা, আরবী, বৈরুত, খণ্ড-১ম, পৃ. ৩১৪।

তারকারাজির নাম বলা 
____________________
তারকারাজির নাম বলা 

❏ হযরত ইবনে মরদুইয়্যা, হাকেম, বায়হাকী (رحمة الله) প্রমুখ হযরত জাবের ইবনে আব্দুল্লাহ (رضي الله عنه) থেকে বর্ণনা করেন যে, এক ইহুদী রাসূল (ﷺ) এর খেদমতে এসে বলল, আপনি আমাকে ঐসব তারকারাজির নাম বলুন যেগুলাে হযরত ইউসুফ (عليه السلام) কে সিজদা করেছিল। তিনি ঐ ইহুদীকে কোন উত্তর দেন নি। এরপর জিব্রাঈল (عليه السلام) এসে তাঁকে ঐ তারকারাজির নাম সম্পর্কে অবহিত করেন। তখন রাসূল (ﷺ) নিজেই লােক পাঠিয়ে ইহুদীকে ডেকে এনে বললেন, যদি আমি তােমাকে ঐ তারকারাজির নাম বলি তবে কি মুসলমান হবে? ইহুদী বলল, জী, হ্যাঁঁ, তখন তিনি বললেন, এগুলাের নাম হল হারসান, তারেক, যিয়াল, কেন্আন,

যুল ফারা, ওসাব, উমদান, কাবেস, দ্বুরুহ, মাসীহ, ফলিক, দ্বিয়া ও নূর। হযরত ইউসুফ (عليه السلام) আসমানে ঐ তারকারাজিদেরকে তাঁকে সিজদা করতে দেখেছেন। একথা শুনে ইহুদী বলল, খােদার শপথ! ঐ তারকারাজির নাম এগুলােই। 36
_____________________________
৩৬. ইমাম সুয়ূতী, জালাল উদ্দিন সুয়ূতী (رحمة الله) (৯১১হি.), আল খাসায়েসুল কুবরা, আরবী, বৈরুত, খণ্ড-১ম, পৃ. ৩১৮।

অদৃশ্যের সংবাদ শত্রুর অবস্থা বর্ণনা করা
____________________
অদৃশ্যের সংবাদ শত্রুর অবস্থা বর্ণনা করা

❏ ইমাম বায়হাকী ও আবু নঈম (رحمة الله) হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আনিস/উনাইস (رضي الله عنه) থেকে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, রাসূল (ﷺ) আমাকে ডেকে বললেন, আমি জানতে পারলাম যে, ইবনে মুবাইহ আমার সাথে যুদ্ধ করতে লােকদের একত্রিত করতেছে। সে এখন নাখলা অথবা উনা নামক স্থানে রয়েছে। তুমি গিয়ে তাকে হত্যা কর। আমি আরজ করলাম, ইয়া রাসূলাল্লাহ (ﷺ)! তার কোন চিহ্ন বা আলামত বলে দিন যাতে আমি তাকে চিনতে পারি। তিনি বললেন, তােমার আর তার মধ্যে আলামত হল সে তােমাকে দেখা মাত্র ভয়ে কাপতে থাকবে। তারপর আমি গিয়ে যখন তাকে দেখলাম তখন ঐ অবস্থায় তাকে পেলাম যা নবী করিম (ﷺ) বলেছিলেন। তার মধ্যে কম্পন সৃষ্টি হল। আমি তার সাথে কিছু দূর গেলাম। যেইমাত্র আমি সুযােগ পেলাম সাথে সাথে তরবারী দিয়ে আক্রমণ করে তাকে হত্যা করলাম। 37
_____________________________
৩৭. ইমাম সুয়ূতী, জালাল উদ্দিন সুয়ূতী (رحمة الله) (৯১১হি.), আল খাসায়েসুল কুবরা, আরবী, বৈরুত, খণ্ড-১ম, পৃ. ৩৯০।

হারিয়ে যাওয়া উটের সংবাদ ও সমালােচনার তথ্য ফাঁস করা
____________________
হারিয়ে যাওয়া উটের সংবাদ ও সমালােচনার তথ্য ফাঁস করা

❏ ইমাম বায়হাকী ও আবু নঈম হযরত মুছা ইবনে উকবা ও উরওয়াহ (رضي الله عنه) থেকে বর্ণনা করেন, নবী করিম (ﷺ) বনী মুস্তালিকার যুদ্ধ থেকে ফেরৎ আসার পথে প্রচণ্ড বাতাস প্রবাহিত হয়। আর এই বাতাস দিনের শেষ বেলায় বন্ধ হয়েছিল এবং লােকেরা নিজ নিজ সাওয়ারী একত্রিত করে নিলেন। কিন্তু নবী করিম ﷺ এর উটটি উটের দল থেকে হারিয়ে গেল। সাহাবায়ে কিরাম উটের খুঁজা-খুঁজি করলে এক মুনাফিক আনসারগণের মজলিসে বলল, আল্লাহ কি তার উট কোথায় আছে তা বলে দিতে পারেন না। তিনি তাে আমাদেরকে উটনীর চেয়েও আশ্চর্যজনক কথা বলেন। এই কথা বলে ঐ মুনাফিক আনসাগরণের মজলিস থেকে উঠে নবী করিম ﷺ এর দিকে যাচ্ছিল তিনি কি বলেন তা শুনার জন্য। সে গিয়ে তাঁকে এমন অবস্থায় পেল যে, আল্লাহ তায়ালা তাঁকে এই মুনাফিকের সমালােচনা সম্পর্কে অবহিত করে দেন। তিনি বললেন, (তার কথা ঐ মুনাফিক শুনতেছে) মুনাফিকদের এক ব্যক্তি ঠাট্টাচ্ছলে বলল, রাসূলের উটনী হারিয়ে গেল। আল্লাহ স্বীয় রাসূলকে তাঁর উটের ঠিকানা বলে দিতে পারে না। অথচ যেখানে উটনী রয়েছে সেই স্থান সম্পর্কে আল্লাহ আমাকে অবহিত করে দিয়েছেন আর ইলমে গায়েব আল্লাহ (সাহায্য) ছাড়া কেউ জানে না।

তখন তিনি বললেন, উটনী ঐ সামনের গিরিপথে আছে এবং এর রশি একটি বৃক্ষের সাথে আটকে রয়েছে। সাহাবায়ে কিরাম সেদিকে গিয়ে উটনী নিয়ে আসলেন। তারপর ঐ মুনাফিক দ্রুতবেগে আনসারীদের সেই মজলিসে আসল যাদের সামনে সে ঐ মন্তব্য করেছিল। এই আনসারীগণ তখনাে মজলিসে বসা আছে একজনও মজলিস থেকে উঠে কোথাও যায়নি। ঐ মুনাফিক এসে তাদেরকে বলল, তােমাদের খােদার কসম দিয়ে বলতেছি তােমাদের মধ্য থেকে কি কেউ মুহাম্মদের কাছে গিয়ে আমার কথা বলে দিয়েছ? আনসারগণ বলল, হে আল্লাহ! তুমি ভাল জান যে, আমাদের মধ্য থেকে কেউ তাঁর কাছে যায়নি এবং আমরা এখনাে আপন জায়গায় বসা আছি। ঐ মুনাফিক বলল, আমিতাে তাঁর নিকট ঐসব কথা শুনেছি যা আমি তােমাদেরকে বলেছিলাম। তার শান-মান সম্পর্কে আমি সন্দিহান ছিলাম কিন্তু এখন আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, االله لرسول انه তিনি নিশ্চয়ই আল্লাহর রাসূল।

ইবনে ইসহাক (رحمة الله) স্বীয় উস্তাদগণ থেকে উপরােল্লিখিত ঘটনা বর্ণনা করেন এবং মৃত মুনাফিকের নাম বলেছেন রেফায়া ইবনে যায়েদ ইবনে তাবুত। 38
_____________________________
৩৮. ইমাম সুয়ূতী, জালাল উদ্দিন সুয়ূতী (رحمة الله) (৯১১হি.), আল খাসায়েসুল কুবরা, আরবী, বৈরুত, খণ্ড-১ম, পৃ. ৩৯১।

লুকিয়ে রাখা উটের সংবাদ প্রদান
____________________
লুকিয়ে রাখা উটের সংবাদ প্রদান

❏ ইবনে আসাকের হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে যিয়াদ (رحمة الله) থেকে বর্ণনা করেন, মাসিঈ’র বছর বনী মুস্তালিকের যুদ্ধে জুআইরিয়া বিনতে হারেসকে আল্লাহ তায়ালা মালে ফাই হিসেবে রাসূল কে দান করেছেন। জুআইরিয়া’র পিতা তাকে মুক্ত করার জন্য ফিদইয়া নিয়ে আসল। যখন সে ‘আকীক’ নামক স্থানে আসল তখন সে ঐসব উটগুলাে দেখল যেগুলাে মেয়ের মুক্তিপন দেওয়ার জন্য এনেছিল। ঐ উটগুলাের মধ্যে দুটি উট সবচেয়ে শ্রেষ্ঠ ছিল যেগুলাে তার খুবই পছন্দ হল। সে ঐ দুটি উটকে আকীক এলাকার ঘাটি সমূহ থেকে একটি ঘাটিতে গােপনে রেখে দিল। অবশিষ্ট উটগুলাে নিয়ে নবী করিম এর খেদমতে এসে বলল, হে মুহাম্মদ(ﷺ)! আপনি আমার মেয়েকে বন্দী করেছেন এগুলাে তার ফিদইয়া। এগুলাের বিনিময়ে তাকে মুক্তি দিন। রাসূল (ﷺ) বললেন,

اين البعيران الذان غيبت بالعقيق بتنعب كذ اوكذا ؟

ঐ উট দুটি কোথায়? কোথায়? যেগুলােকে তুমি আকীক এলাকার অমুক ঘাটির মধ্যে গােপন করে রেখে এসেছ। তখন হারেস বলল- আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, নিশ্চয়ই আপনি আল্লাহর রাসূল। ঐ উট দু’টি আমিই গােপন করে রেখেছি। আমি ও আল্লাহ ছাড়া এ ব্যাপারে কেউ জানেনা। অত:পর হারেস মুসলমান হয়ে গেল। 39
_____________________________
৩৯. ইমাম সুয়ূতী, জালাল উদ্দিন সুয়ূতী (رحمة الله) (৯১১হি.), আল খাসায়েসুল কুবরা, আরবী, বৈরুত, খণ্ড-১ম, পৃ. ৩৯২।

লুকিয়ে রাখা সরঞ্জামের সংবাদ প্রদান
____________________
লুকিয়ে রাখা সরঞ্জামের সংবাদ প্রদান

❏ ইবনে সা'দ হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (رضي الله عنه) থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, রাসূল (ﷺ) যখন খায়বার অধিকার করলেন তখন খায়বার বাসীর সাথে এই শর্তে সন্ধি হল যে, তারা নিজেরা এবং তাদের পরিবার-পরিজন নিয়ে এখান থেকে চলে যাবে সঙ্গে কোন স্বর্ণ-রৌপ্য থেকে কিছুই নিয়ে যেতে পারবে না। অতঃপর তাঁর খেদমতে কেনানা ও রবী উপস্থিত হলে তিনি তাদেরকে বললেন, তােমাদের ঐ দামী পাত্রগুলাে কোথায়? যা তােমরা মক্কাবাসীদেরকে কর্জ স্বরূপ দিতে? তারা বলল, আমরা এমন অবস্থায় পলায়ন করতেছি, এক মাটি আমাদের লাঞ্ছিত করতেছে অপর ভূমি সম্মান দিতেছে। আমরা সবকিছু খরচ করে ফেলেছি। অর্থাৎ, আমাদের কাছে আর কিছুই অবশিষ্ট নাই।

রাসূল (ﷺ) বললেন, তােমরা আমার থেকে কোন কিছু গােপন করলে তা আমার অবগতি হয়ে যাবে। তখন তােমাদের রক্ত আওলাদগণের কঠোর শাস্তি পেতে হবে। তারা উভয়ে বলল, আপনি আমাদের ব্যাপারে ধারণা করবেন না। ঠিক আছে, যদি আমাদের কথার বিপরীত হয় তবে আপনার ফায়সালা শিরােধার্য করে নেবাে।

এরপর রাসূল (ﷺ) একজন আনসারী সাহাবীকে ডেকে বললেন, তুমি অমুক জায়গায় যাও, যেখানে কোন পানি ও বৃক্ষ নেই। তারপর খেজুর বৃক্ষের নিকটে যাবে এবং একটি বৃক্ষ দেখবে যেটি তােমার ডানে অথবা বামে হবে। এরপর একটি উঁচু বৃক্ষ দেখবে। তাতে যা কিছু আছে তা আমার কাছে নিয়ে আসবে। তারপর ঐ আনসারী নির্ধারিত স্থানে গিয়ে সেখান থেকে ঐ ইহুদীর (বরতন) পাত্র ও সম্পদ নিয়ে আসলেন। রাসূল (ﷺ) এর শর্ত মতে তাদের গর্দান উড়িয়ে দিলেন এবং তাদের সন্তানদের বন্দী করে রাখলেন।” 40
_____________________________
৪০. ইমাম সুয়ূতী, জালাল উদ্দিন সুয়ূতী (رحمة الله) (৯১১হি.), আল খাসায়েসুল কুবরা, আরবী, বৈরুত, খণ্ড-১ম, পৃ. ৪২২।

মুনাফিকের সমালােচনার সংবাদ প্রদান
____________________
মুনাফিকের সমালােচনার সংবাদ প্রদান

❏ ইমাম বায়হাকী (رحمة الله) হযরত আলী (رضي الله عنه) থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, রাসূল আমার নিকট যখন হযরত ফাতিমা (رضي الله عنه)'র বিবাহের প্রস্তাব আসল তখন আমার মাওলাত .......... আমাকে বলল, আপনি কি জানেন? হযরত ফাতিমা (رضي الله عنه)’র বিবাহের প্রস্তাব এসেছে। আপনি কেন তাঁর কাছে গিয়ে বিবাহের প্রস্তাব দিচ্ছেন না? তিনি বলেন, আলি নবী করিম (ﷺ)'র কাছে গােলাম কিন্তু তাঁর হালতে জালালী দেখে আমি তাঁর সামনে বসে পড়ি, ভয়ে তাঁর সাথে কোন কথাই বলতে পারিনি। রাসূল (ﷺ) আমাকে বললেন,

يا علي ما جاء بك فسكت فقال لعلك جئت تخطب فاطمة ؟ قلت نعم.

হে আলী কেন এসেছাে? আমি চুপ রইলাম। তিনি বললেন, সম্ভবতঃ তুমি ফাতেমার সাথে বিবাহের প্রস্তাব নিয়ে এসেছাে? আমি বললাম, হ্যাঁঁ, এজন্যেই এসেছি। 41
_____________________________
৪১. (ইমাম সুয়ূতী, জালাল উদ্দিন সুয়ূতী (رحمة الله) (৯১১হি.), আল খাসায়েসুল কুবরা, আরবী, বৈরুত, খন্ড:২য় পৃ:১৭৩)।

গােশত পাথর হয়ে যাওয়া
____________________
গােশত পাথর হয়ে যাওয়া

❏ ইমাম বায়হাকী ও আবু নঈম (رحمة الله) হযরত উম্মে সালমা (رضي الله عنه) থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, আমার নিকট এক টুকরা গােশত হাদিয়া আসল। আমি খাদেমা কে বললাম, এই গোশতের টুকরাটি রাসূল (ﷺ)'র জন্য সংরক্ষণ করে রাখ। ইত্যবসরে একজন ফকীর এসে বলল, , فـيكم االله بـارك تصـدقوا সদকা করুন, আল্লাহ আপনাদেরকে বরকত দেবেন। আমরা ফকীরকে উত্তর দিলাম فيـك تعـالى االله بـارك, আল্লাহ তােমার মধ্যে বরকত দান করুন। ফকীর চলে গেলে নবী করিম (ﷺ) তাশরীফ আনলেন। আমি খাদেমা কে বললাম, গােশত তাঁর সামনে রাখ।

খাদেমা গােশত রাখলে দেখা গেল গােশত সাদা পাথরে পরিণত হয়ে গেল। তখন তিনি জিজ্ঞেস করলেন, তােমাদের নিকট কি কোন ফকীর এসেছিল যাকে তােমরা ফিরিয়ে দিয়েছিলে? আমি বললাম, হ্যাঁঁ, এসেছিল এবং কিছু না দিয়ে ফিরিয়ে দেওয়া হয়েছিল। তিনি বললেন, গােশত এজন্যেই পাথর হয়ে গেল। এই পাথর হযরত উম্মে সালমা (رضي الله عنه)'র ঘরের এক কোণে পড়ে থাকত, তার মৃত্যু পর্যন্ত এই পাথরকে পাটা হিসেবে আটা পিসার কাজে ব্যবহার করতেন। 42
_____________________________
৪২. ইমাম সুয়ূতী, জালাল উদ্দিন সুয়ূতী (رحمة الله) (৯১১হি.), আল খাসায়েসুল কুবরা, আরবী, বৈরুত, খন্ড:২য় পৃ:১৭৮।

অদৃশ্যের সংবাদ
____________________
অদৃশ্যের সংবাদ

❏ হযরত আবু হুরাইরা (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল (ﷺ) রমযানের যাকাতের মালের সংরক্ষনের দায়িত্ব আমার উপর ন্যাস্ত করেছিলেন। রাতে এক অচেনা ব্যক্তি এসে সেখান থেকে খাবার নিয়ে যাচ্ছিল আর আমি ধরে ফেললাম এবং বললাম, আমি রাসূল (ﷺ)’র কাছে নিয়ে যাবাে। সে বলল, আমি অভাবী লােক। আমার পরিবার-পরিজন রয়েছে তাছাড়া এগুলাে আমার খুবই প্রয়ােজন। আমি তাকে ছেড়ে দিলাম। সকালে আমি রাসূল (ﷺ) এর কাছে গেলে (আমি বলার আগেই) তিনি জিজ্ঞেস করলেন, হে আবু হুরায়রা! তােমার রাতের কয়েদী কোথায়? আমি বললাম, ইয়া রাসূলাল্লাহ(ﷺ)! সে অভাবী ও পরিবার-পরিজন আছে বলে বলেছে। তাই দয়া করে তাকে ছেড়ে দিয়েছি। নবী করিম বললেন, সে তােমার সাথে মিথ্যা বলেছে আর সে তােমার কাছে আবার আসবে।

পরের রাতে আমি তার অপেক্ষায় রইলাম। সে আবার এসে খাবার হাতে নিলে আমি তাকে ধরে ফেললাম। সে বলল, আমাকে ছেড়ে দাও, আমি অভাবী, আমার সন্তান-সন্ততির ভরণ-পােষণের দায়িত্ব আমার উপর, আমি আর আসবাে না। তার প্রতি দয়াপরবশ হয়ে তাকে ছেড়ে দিলাম। সকালে নবী করিম(ﷺ)'এর দরবারে গেলে তিনি বললেন,

البارحـة؟ اسـيرك فعـل مـ

তােমার রাতের বন্দী কোথায় গেল? আমি বললাম, ইয়া রাসূলাল্লাহ! সে অভাবী ও ক্ষুধার্ত সন্তান-সন্ততির অভিভাবক বলে বলেছে তাই তাকে দয়া করে ছেড়ে দিয়েছি। তিনি বললেন, সে মিথ্যা বলেছে এবং তৃতীয়বার আবার আসবে।

তৃতীয়বার রাতেও আমি তার অপেক্ষায় আছি আর সে আসল এবং খাবার নিতে লাগল। আমি তাকে ধরে ফেললাম এবং বললাম, আমি তােমাকে রাসূল (ﷺ)'এর কাছে নিয়ে যাবাে। তুমি এই পর্যন্ত তিনবার এসেছে এটি শেষবার। সে বলল, আমাকে ছেড়ে দাও। আমি তােমাকে এমন কথা বলে দেবাে যাতে আল্লাহ তায়ালা তােমাকে উপকৃত করবেন। আর তা হল- যখন তুমি ঘুমাতে যাবে তখন তুমি আয়াতুল কুরসী পড়বে এতে আল্লাহ তােমাকে সংরক্ষণ করবেন আর সকাল পর্যন্ত শয়তান তােমার কাছে আসতে পারবে না।

হযরত আবু হােরায়রা (رضي الله عنه) বলেন, আমি সকালে উঠে রাসূল (ﷺ)কে এই ঘটনা বললে, তিনি বলেন, আয়াতুল কুরসীর ব্যাপারে সে সত্য বলেছে কিন্তু সে মিথ্যুক। তােমার কাছে আগন্তুক ব্যক্তি হল শয়তান। 43
_____________________________
৪৩. ইমাম সুয়ূতী, জালাল উদ্দিন সুয়ূতী (رحمة الله) (৯১১হি.), আল খাসায়েসুল কুবরা, আরবী, বৈরুত, খন্ড:২য় পৃ:১৬১

অদৃশ্যের সংবাদ
____________________
অদৃশ্যের সংবাদ

❏ হযরত আলী ইবনে আবি তালেব (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, একদা আমি রাসূল (ﷺ)'র সাথে সফরে ছিলাম। তিনি হযরত আম্মার (رضي الله عنه)কে বললেন, তুমি গিয়ে আমাদের জন্য পানি নিয়ে এসাে। আম্মার পানি আনতে গেলে শয়তান একজন হাবশী গােলামের আকৃতি ধারণ করে আম্মার ও পানির মাঝখানে প্রতিবন্ধক সৃষ্টি করল। আম্মার তাকে ধরে আছাড় দিয়ে ফেলে দিল। শয়তান বলল, আমাকে ছেড়ে দাও, আমি পানির সামনে থেকে সরে যাবাে। আম্মার তাকে ছেড়ে দিল। সে পুনরায় আসলে তাকে আবার আছাড় দিয়ে ফেলে দিল। সে বলল, আমাকে ছেড়ে দাও, আমি সরে যাবাে। ফলে তাকে ছেড়ে দিল। সে তৃতীয়বার আসলে এবারও তাকে ধরে আছাড় দিয়ে ফেলে দিল।

এদিকে নবী করিম বললেন, শয়তান এক হাবশী গােলামের আকৃতি ধারণা করে আম্মারের ও পানির মধ্যখানে প্রতিবন্ধক হল আর আল্লাহ তায়ালা আম্মার কে শয়তানের উপর সফলতা দান করেছেন।

হযরত আলী (رضي الله عنه) বলেন, আমরা যখন আম্মারের সাথে সাক্ষাত করলাম তখন রাসূল (ﷺ) এর এই সংবাদ তাকে বললাম। আম্মার বলল, আমি যদি জানতাম যে, সে শয়তান তবে তাকে অবশ্যই হত্যা করতাম। 44
_____________________________
৪৪. ইমাম সুয়ূতী, জালাল উদ্দিন সুয়ূতী (رحمة الله) (৯১১হি.), আল খাসায়েসুল কুবরা, আরবী, বৈরুত, খন্ড:২য় পৃ:১৬৫

ভবিষ্যৎবাণী : হযরত আম্মার (رضي الله عنه)'কে আগুনে
____________________
ভবিষ্যৎবাণী : হযরত আম্মার (رضي الله عنه)'কে আগুনে দগ্ধ না করার দোয়া:

❏ হযরত ইবনে সা'দ (رحمة الله) হযরত আমর ইবনে ইয়াসির (رضي الله عنه) থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন হযরত আম্মার বিন ইয়াসির (رضي الله عنه)কে মুশরিকরা আগুনে জ্বালিয়ে ফেলেছিল। রাসূল (ﷺ) তাঁর কাছে গেলে (মৃত্যুপূর্বে) তাঁর হাত মােবারক আম্মারের মাথায় রেখে বলতেন,

يا نار كونى بردًا وسلامً ا على عمار كما كنت على ابراهيم تقتك الفئة الباغية

হে আগুন! আম্মারের উপর শীতল হয়ে যাও, যেভাবে হযরত ইব্রাহীম (عليه السلام)'র উপর হয়েছিলে। তােমাকে অবাধ্য দলে শহীদ করবে। 45
_____________________________
৪৫. ইমাম সুয়ূতী, জালাল উদ্দিন সুয়ূতী (رحمة الله) (৯১১হি.), আল খাসায়েসুল কুবরা, আরবী, বৈরুত, খন্ড:২য় পৃ:১৩৪

পরবর্তী খলীফা সম্পর্কে ইঙ্গিত প্রদান
____________________
পরবর্তী খলীফা সম্পর্কে ইঙ্গিত প্রদান

❏ ইবনে আসাকের (رحمة الله) হযরত আনাস (رضي الله عنه) থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, বনী মুস্তালিকের প্রতিনিধি দল আমাকে রাসূল (ﷺ)’র কাছে পাঠিয়ে বলল, তুমি গিয়ে তাঁর কাছে জিজ্ঞেস করবে যে, আমরা আগামী বছর এসে যদি আপনাকে না পাই তবে আমাদের সদকার মাল কাকে দেবাে? রাসুল(ﷺ)উত্তরে বললেন, তুমি তাদেরকে বল যে, তারা তা আবু বকর'কে প্রদান করবে। আমি তাদেরকে এই কথা পৌঁছিয়ে দিলাম। তারা বলল, তুমি জিজ্ঞেস করে এসাে যে, যদি আবু বকর (رضي الله عنه) কে না পাই তবে কাকে দেবাে? আমি তাঁকে একথা বললে তিনি বলেন, তুমি তাদেরকে বল যে, তখন ওমরকে দিবে। আমি তাদেরকে এ সংবাদ দিলে তারা পুণরায় বলল, তুমি জিজ্ঞেস কর, যদি হযরত ওমর (رضي الله عنه)কেও না পাই তবে কাকে দেবাে? আমি তাঁকে এ ব্যাপারে বললে তিনি বলেন, তুমি তাদেরকে বল, তখন তাদের সদকা উসমানকে দিবে। আর যেদিন উসমান শহীদ হবে সেদিন তােমরা ধ্বংস হবে। 46
_____________________________
৪৬. ইমাম সুয়ূতী, জালাল উদ্দিন সুয়ূতী (رحمة الله) (৯১১হি.), আল খাসায়েসুল কুবরা, আরবী, বৈরুত, খন্ড:২য় পৃ:১৯৬

হযরত আলী (رضي الله عنه) খলীফা ও শহীদ হবেন 
____________________
হযরত আলী (رضي الله عنه) খলীফা ও শহীদ হবেন 

❏ ইমাম তাবরানী ও আবু নঈম (رحمة الله) হযরত জাবির ইবনে সামুরাহ (رضي الله عنه) থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, রাসূল (ﷺ) হযরত আলী (رضي الله عنه) কে উদ্দেশ্য করে বলেছিলেন, হে আলী! তুমি আমীর ও খলীফা হবে এবং শহীদ হবে। তােমার দাঁড়ি তােমার মাথার রক্তে রঞ্জিত হবে। 47
_____________________________
৪৭. ইমাম সুয়ূতী, জালাল উদ্দিন সুয়ূতী (رحمة الله) (৯১১হি.), আল খাসায়েসুল কুবরা, আরবী, বৈরুত, খন্ড:২য় পৃ:১৯৬

হযরত মুয়াবিয়া (رضي الله عنه) সম্পর্কে ভবিষ্যত বাণী 
____________________
হযরত মুয়াবিয়া (رضي الله عنه) সম্পর্কে ভবিষ্যত বাণী

❏ ইমাম আহমদ (رحمة الله) হযরত আবু হােরাইরা (رضي الله عنه) থেকে বর্ণনা করেন, নবী করিম (ﷺ) এরশাদ করেন, হে মুয়াবিয়া! যদি তুমি শাসনভার গ্রহণ কর তবে আল্লাহকে ভয় করবে এবং ইনসাফ প্রতিষ্ঠা করবে। হযরত মুয়াবিয়া (رضي الله عنه) বলেন, আমি তাঁর এই ভবিষ্যত বাণী’র পর সর্বদা ধারণা করতাম যে, তাঁর কথা মতাে আমি এই বিষয়ে তথা ক্ষমতা প্রাপ্ত হয়ে বড় পরীক্ষায় লিপ্ত হবাে। অবশেষে আমি এই পরীক্ষায় লিপ্ত হয়ে গেলাম। 48
_____________________________
৪৮. ইমাম সুয়ূতী, জালাল উদ্দিন সুয়ূতী (رحمة الله) (৯১১হি.), আল খাসায়েসুল কুবরা, আরবী, বৈরুত, খন্ড:২য় পৃ:১৯৯

ইমাম হােসাইন (رضي الله عنه)'র শাহাদত সম্পর্কে অগ্রীম সংবাদ
____________________
ইমাম হােসাইন (رضي الله عنه)'র শাহাদত সম্পর্কে অগ্রীম সংবাদ

❏ ইমাম হাকেম, বায়হাকী (رحمة الله) হযরত উম্মুল ফযল বিনতে হারেস (رضي الله عنه) থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, একদিন আমি হযরত হােসাইন (رضي الله عنه)কে নিয়ে রাসূল (ﷺ)' এর কাছে গেলাম এবং তাকে তাঁর কোলে রাখলাম। আমি দেখলাম যে, তাঁর দু'চোখ দিয়ে অশ্রু প্রবাহিত হচ্ছে। আর তিনি বললেন, আমার কাছে হযরত জিব্রাঈল (عليه السلام) এসে আমাকে বলে গেল যে, আমার উম্মত অচিরেই আমার এই সন্তানকে হত্যা করবে। হযরত জিব্রাঈল (عليه السلام) তার হত্যার স্থানের লাল রঙের মাটিও আমার কাছে নিয়ে এসেছে। 49
_____________________________
৪৯. ইমাম সুয়ূতী, জালাল উদ্দিন সুয়ূতী (رحمة الله) (৯১১হি.), আল খাসায়েসুল কুবরা, আরবী, বৈরুত, খন্ড:২য় পৃ:২১২

হযরত যায়েদ ইবনে আরকাম (رضي الله عنه) দীর্ঘায়ু প্রাপ্ত ও অন্ধ হওয়া
____________________
হযরত যায়েদ ইবনে আরকাম (رضي الله عنه) দীর্ঘায়ু প্রাপ্ত ও অন্ধ হওয়া

❏ ইমাম বায়হাকী (رحمة الله) হযরত যায়েদ ইবনে আরকাম (رضي الله عنه) থেকে বর্ণনা করেন, যায়েদ অসুস্থ হলে রাসূল (ﷺ) তাকে দেখতে যান এবং বলেন, এই অসুখে তােমাকে কোন ক্ষতি করবেনা তবে তুমি কি করবে যখন আমার ইন্তেকালের পর তুমি দীর্ঘ হায়াত পাবে এবং অন্ধ হয়ে যাবে? যায়েদ বলল, আমি আল্লাহর কাছে সওয়াবের আশা করবাে আর ধৈর্যধারণ করবাে। রাসূল (ﷺ) বললেন- حسـاب بغيـر الجنة تدخل اذن তবে তুমি বিনা হিসেবে জান্নাতে প্রবেশ করবে। অতঃপর নবী করিম (ﷺ) তাঁর ইন্তেকালের পর যায়েদ অন্ধ হয়ে গিয়েছিল পরে আল্লাহ তায়ালা তার দৃষ্টিশক্তি ফেরৎ দেন। এরপর তিনি ইন্তেকাল করেন। 50
_____________________________
৫০. ইমাম সুয়ূতী, জালাল উদ্দিন সুয়ূতী (رحمة الله) (৯১১হি.), আল খাসায়েসুল কুবরা, আরবী, বৈরুত, খন্ড:২য় পৃ:২৪১

উম্মতে মুহাম্মদীর তিয়াত্তর দলে বিভক্তি 
____________________
উম্মতে মুহাম্মদীর তিয়াত্তর দলে বিভক্তি

❏ ইমাম বায়হাকী ও হাকেম (رحمة الله) হযরত আবু হুরাইরা (رضي الله عنه) থেকে বর্ণনা করেন, নবী করিম (ﷺ) এরশাদ করেন, ইহুদীরা একাত্তর বা বাহাত্তর দলে বিভক্ত হয়েছিল এবং খৃষ্টানরাও একাত্তর বা বাহাত্তর দলে বিভক্ত হয়েছিল আর আমার উম্মত তিয়াত্তর দলে বিভক্ত হবে।

অপর বর্ণনায় আছে, তিনি বলেছেন, আমার উম্মত তিয়াত্তর হবে তন্মধ্যে এক দল ব্যতীত সব দল জাহান্নামে যাবে। সাহাবায়ে কিরাম জিজ্ঞেস করেন, সেটি কোন দল? তিনি বললেন, واصـحابى اليـوم عليـه انـا مـا আজ যে পথে আমি এবং আমার সাহাবায়ে কিরাম আছে সে পথের অনুসারীগণই হবে জান্নাতী। 51
_____________________________
৫১. ইমাম সুয়ূতী, জালাল উদ্দিন সুয়ূতী (رحمة الله) (৯১১হি.), আল খাসায়েসুল কুবরা, আরবী, বৈরুত, খন্ড:২য় পৃ:২৪৮।

❏ ইমাম তাবরানী (رحمة الله) হযরত আবু সাঈদ খুদুরী (رضي الله عنه) থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, রাসূল (ﷺ) এরশাদ করেন, আমার উম্মতের মধ্যে দু’প্রকারের বাতিল ফেরকার আগমণ ঘটবে। ইসলামে তাদের কোন অংশ নেই। তন্মধ্যে একটি হল কাদরীয়া আর অপরটি হল জাবরীয়া। 52
_____________________________
৫২. ইমাম সুয়ূতী, জালাল উদ্দিন সুয়ূতী (رحمة الله) (৯১১হি.), আল খাসায়েসুল কুবরা, আরবী, বৈরুত, খন্ড:২য় পৃ:২৫১।

বদর ময়দানে কাফেরদের মৃত্যুর স্থান নির্ণয় 
____________________
বদর ময়দানে কাফেরদের মৃত্যুর স্থান নির্ণয়

❏ ইমাম মুসলিম, আবু দাউদ ও বায়হাকী (رحمة الله) হযরত আনাস (رضي الله عنه) থেকে বর্ণনা করেন, নবী করিম (ﷺ) বদর যুদ্ধের পূর্ব রাতে এরশাদ করেন, আগামীকাল ইনশাল্লাহ এই স্থানটি অমুকের হত্যার স্থান এই বলে স্থান নির্ণয়ের উদ্দেশ্যে তিনি মাটিতে হাত রখেছেন। এই স্থানটি আগামীকাল অমুকের হত্যার স্থান ইনশাল্লাহ এই বলে তিনি হাত মােবারক মাটিতে রাখেন। এই স্থানটি আগামীকাল অমুক ব্যক্তির হত্যার স্থান ইনশাল্লাহ এই বলে তিনি হাত মােবারক মাটিতে রাখেন। হযরত আনাস (رضي الله عنه) খােদার শপথ করে বলেন, তাঁর স্থান নির্ধারণে বিন্দুমাত্রও ত্রুটি হয়নি। যার নামে যে স্থান তিনি নির্ধারণ করে দিয়েছেন সে ব্যক্তি সেখানেই পরাজিত হয়েছিল। তারপর তাদেরকে কালীবে বদর নামক স্থানে ফেলে দেওয়া হয়েছে।

নবী করিম সেখানে গিয়ে বললেন, হে অমুকের ছেলে অমুক!

"তােমাদের প্রভূ যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন তােমাদেরকে

তােমরা তা সত্য পেয়েছ?

"আমার প্রভূ আমাকে যে ওয়াদা দিয়েছিলেন আমিতাে তা সত্য পেয়েছি। উপস্থিত সাহাবায়ে কিরাম বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! আপনি কি প্রাণ বিহীন শরীরের সাথে কথা বলতেছেন? তিনি বললেন, তােমরা তাদের চেয়ে বেশী শুনতে পাওনা তবে তাদের এতটুকু শক্তি নেই যে, তারা আমার কথার জবাব দেবে। 53
_____________________________
৫৩. ইমাম সুয়ূতী, জালাল উদ্দিন সুয়ূতী (رحمة الله) (৯১১হি.), আল খাসায়েসুল কুবরা, আরবী, বৈরুত, খন্ড:১ম পৃ:৩২৮

অন্য বর্ণনায় বদর ময়দানে কাফেরদের নাম ধরে ধরে তাদের মৃত্যুর স্থান ও সময় পর্যন্ত রাসূল নির্ণয় করে দিয়েছিলেন। (সংকলক)

উকবা ইবনে আবি মুয়ীত’র মৃত্যু সংবাদ
____________________
উকবা ইবনে আবি মুয়ীত’র মৃত্যু সংবাদ

❏ হযরত আবু নঈম বিশুদ্ধ সূত্রে হযরত ইবনে আব্বাস (رضي الله عنه) থেকে বর্ণনা করেন, উকবা ইবনে আবি মুয়ীত একদা রাসূল কে খাবারের দাওয়াত দেয়। নবী করিম (ﷺ) বললেন-

ما انا ياكل حقا تشهد ان لآ اله الاَّ االله وانى رسول االله

আমি খাবার খাবােনা যতক্ষন না তুমি সাক্ষ্য দেবে যে, আল্লাহ ছাড়া কোন মাবুদ নাই আর আমি হলাম আল্লাহ রাসূল। অতঃপর উকবা এরূপ সাক্ষ্য দিল। তার এক বন্ধু তার সাক্ষাতে এসে এই সাক্ষ্য সম্পর্কে শুনে তাকে ভর্ৎসনা ও তিরস্কার করল। সে বলল, আচ্ছা এখন বল, কি করলে কুরাইশদের অন্তর থেকে আমার প্রতি ঘৃণা চলে যাবে আর আমার হারিয়ে যাওয়া সম্মান পুণরায় ফেরৎ আসবে?

তার বন্ধু তাকে পরামর্শ দিল যে, তুমি মুহাম্মদের মজলিসে গিয়ে তাঁর মুখে থু থু নিক্ষেপ কর তবেই তােমার প্রতি কুরাইশের ঘৃণা মুছে যাবে এবং তুমি তােমার সম্মান ফেরৎ পাবে। উকবা গিয়ে রাসূল (ﷺ)'র চেহরা মােবারকে থু থু নিক্ষেপ করল (নাউযুবিল্লাহ)। রাসূল (ﷺ) চেহরা মােবারক থেকে থু থু মুছে নেন এবং বললেন, যখন মক্কার পাহাড়ের বাইরে তােমাকে পাব তখন ধৈর্য্যের অস্ত্র দ্বারা তােমার গর্দান কেটে দেবাে।

বদর যুদ্ধের দিন তার সঙ্গী-সাথীরা যুদ্ধের জন্য বের হলে উকবা সৈন্যদের সাথে বাইরে যেতে অস্বীকার করল এবং বলল ঐ ব্যক্তি (মুহাম্মদ) আমাকে পাহাড়ের বাইরে পেলে ধৈর্য্যের অস্ত্র দিয়ে আমাকে হত্যা করবে বলেছে। এতে তার লােকেরা বলল, আমরা আপনাকে লাল বর্ণের দ্রুতগামী উন্নত মানের উটনী দিচ্ছি। তিনি আপনাকে পাবে না। যদি পলায়ন করতে হয় তবে দ্রুতগতিতে পলায়ন করতে পারবেন।

অতঃপর তাদের কথায় বাধ্য হয়ে সে তাদের সাথে যুদ্ধে বের হল। তারা যখন পরাজিত হল তখন সে সেই নির্দিষ্ট উটনীর উপর আরােহণ করে পলায়ন করতে লাগল। তার উটনী তাকে একটি উন্মুক্ত ময়দানে নিয়ে পিঠ থেকে ফেলে দিল। ফলে সে মুসলমানদের হাতে বান্দী হল। আর নবী করিম (ﷺ) ধৈর্যের মাধ্যমে তার গর্দান উড়িয়ে দিলেন। 54
_____________________________
৫৪. ইমাম সুয়ূতী, জালাল উদ্দিন সুয়ূতী (رحمة الله) (৯১১হি.), আল খাসায়েসুল কুবরা, আরবী, বৈরুত, খন্ড:১ম পৃ:৩৪১

আগমনের পূর্বেই সংবাদ প্রদান
____________________
আগমনের পূর্বেই সংবাদ প্রদান

❏ হামদানী আল আনসাব' গ্রন্থে বলেন, হারেস ইবনে আবদে কিলাল হুমাইরী ইয়েমেনের বাদশা ছিল। সে নবী করিম (ﷺ) এর কাছে আসে। নবী করিম(ﷺ) তার আগমনের পূর্বেই সাহাবায়ে কিরামকে বলেছিলেন, তােমাদের নিকট এমন ব্যক্তি আসবে যে الجـدين كـريم

কারীমুল জিদ্দাইন ও الخـدين صـبيح সবীহুল খান্দাইন। অতঃপর হারেস এসে মুসলমান হয়ে গেল। তিনি তার সাথে কোলাকুলি করেছেন এবং তার জন্য স্বীয় চাদর বিছিয়ে দিয়েছিলেন। 55
_____________________________
৫৫. ইমাম সুয়ূতী, জালাল উদ্দিন সুয়ূতী (رحمة الله) (৯১১হি.), আল খাসায়েসুল কুবরা, আরবী, বৈরুত, খন্ড:২য় পৃ:৪৬।

হযরত মুহাম্মদ বিন হানফিয়্যা (رضي الله عنه) জন্ম সংবাদ
____________________
হযরত মুহাম্মদ বিন হানফিয়্যা (رضي الله عنه) জন্ম সংবাদ

❏ ইমাম বায়হাকী (رحمة الله) হযরত আলী (رضي الله عنه) থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, রাসূল (ﷺ) আমাকে বলেছিলেন, " وكنيتى اسمى خلته قد غلام بعدى سيولدلك

অর্থ- আমার ইন্তেকালের পর অচিরেই তােমার এক পুত্র সন্তান জন্মগ্রহণ করবে। তুমি তার নামও উপনাম আমার নামও উপনামে রাখবে। 56
_____________________________
৫৬. ইমাম সুয়ূতী, জালাল উদ্দিন সুয়ূতী (رحمة الله) (৯১১হি.), আল খাসায়েসুল কুবরা, আরবী, বৈরুত, খন্ড:২য় পৃ:২২৬

ভবিষ্যৎ বাণী মদীনায় বসে হাউসে কাউসার দেখা
____________________
ভবিষ্যৎ বাণী মদীনায় বসে হাউসে কাউসার দেখা:

❏ হযরত উকবা ইবনে আমের (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত, একবার নবী করিম (ﷺ) বের হয়ে মৃত ব্যক্তির সালাতে জানাযার ন্যায় ওহুদ যুদ্ধে শাহাদত বরণকারী সাহাবায়ে কেরামের কবরের পার্শ্বে দাঁড়িয়ে সালাত আদায় করলেন। তারপর ফিরে এসে মিম্বরে আরােহণ করে বললেন, আমি তােমাদের জন্য অগ্রগামী ব্যক্তি। আমি তােমাদের পক্ষে আল্লাহর দরবারে সাক্ষ্য প্রদান করব। আল্লাহর কসম, আমি এখানে বসে থেকেই আমার হাউযে কাউসার দেখতে পাচ্ছি। পৃথিবীর ধন-ভান্ডারের চাবি আমার হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে। আল্লাহর কসম, আমার ওফাতের পর তােমরা মুশরিক হয়ে যাবে-এ আশঙ্কা আমার নেই। তবে আমি তােমাদের সম্পর্কে এ ভয় করি যে, পার্থিব ধন-সম্পদের প্রাচুর্য ও মােহ তােমাদেরকে আত্মকলহে লিপ্ত করে তুলবে। 57
_____________________________
৫৭. ইমাম বুখারী, মুহাম্মদ ইবনে ইসমাঈল (رحمة الله) (২৫৬হি.), সহীহ বুখারী শরীফ, আরবী, ইউপি, ইন্ডিয়া, পৃ:৫০৭, হাদিস নং ৩৩৪১

ফ্যাসাদ সৃষ্টিকারী ব্যক্তি 
____________________
ফ্যাসাদ সৃষ্টিকারী ব্যক্তি

❏ হযরত আবু সাঈদ খুদুরী (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমরা রাসূলুল্লাহ এর দরবারে উপস্থিত ছিলাম। তিনি কিছু গণীমতের মাল বন্টন করছিলেন। তখন বনু তামীম গােত্রের জুলখােয়াই সিরাহ নামে এক ব্যক্তি এসে হাযির হল এবং বলল, ইয়া রাসূলাল্লাহ(ﷺ)! আপনি (বন্টনে) ইনসাফ করুন। তিনি বললেন, তােমার দুর্ভাগ্য! আমি যদি ইনসাফ না করি, তবে ইনসাফ করবে কে? আমিতাে নিষ্ফল ও ক্ষতিগ্রস্ত হবাে যদি ইনসাফ না করি। হযরত ওমর (رضي الله عنه) বললেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ(ﷺ)! আমাকে অনুমতি দিন আমি এর গর্দান উড়িয়ে দিই। তিনি বললেন, একে যেতে দাও, তার এমন কিছু সঙ্গী-সাথী রয়েছেঃ

- তােমাদের কেউ তাদের সালাতের তুলনায় নিজের সালাত ও সিয়াম তুচ্ছ বলে মনে করবে।

- এরা কুরআন পাঠ করে, কিন্তু কুরআন তাদের কণ্ঠনালীর নিম্নদেশে প্রবেশ করেন।

- তারা দ্বীন থেকে এমনভাবে (দ্রুত) বেরিয়ে যাবে যেমন তীর ধনুক থেকে বেরিয়ে যায়। তীরের অগ্রভাগের লােহা দেখা যাবে কিন্তু (শিকারের) কোন চিহ্ন পাওয়া যাবে না। কাঠের অংশটুকু দেখলে তাতেও কিছু পাওয়া যাবেনা। মধ্যবর্তী অংশটুকু দেখলে তাতেও কিছু পাওয়া যাবে না। তার পালক দেখলে তাতেও কোন চিহ্ন পাওয়া যায় না, অথচ তীরটি শিকারী জন্তুর নাড়িভুড়ি ভেদ করে রক্তমাংস অতিক্রম করে রেরিয়ে গেছে।

- এদের নিদর্শন হল এমন একটি কাল মানুষ যার একটি বাহু মেয়ে লােকের স্তনের ন্যায় অথবা মাংস টুকরার ন্যায় নড়াচড়া করবে। তারা লােকদের মধ্যে বিরােধকালে আত্মপ্রকাশ করবে।

হযরত আবু সাঈদ খুদুরী (رضي الله عنه) বলেন, আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আমি স্বয়ং রাসূলুল্লাহ (ﷺ)’র নিকট থেকে একথা শুনেছি। আমি এও সাক্ষ্য দিচ্ছি যে আলী ইবনে আবু তালেব (رضي الله عنه) এদের সঙ্গে যুদ্ধ করেছেন। আমিও তাঁর সঙ্গে ছিলাম। তখন হযরত আলী (رضي الله عنه) ঐ ব্যক্তিকে তালাশ করে খুঁজে বের করতে আদেশ দিলেন। তালাশ করে যখন আনা হল। আমি মনােযােগের সহিত করে তার মধ্যে ঐসব চিহ্নগুলি দেখতে পেলাম, যা নবী করিম (ﷺ) বলেছিলেন। 58
_____________________________
৫৮. ইমাম বুখারী, মুহাম্মদ ইবনে ইসমাঈল (رحمة الله), সহীহ বুখারী শরীফ, আরবী ইউপি, ইন্ডিয়া, পৃ:৫০৯ হাদিস নং ৩৩৫২।

ভন্ড নবীর আবির্ভাব 
____________________
ভন্ড নবীর আবির্ভাব 

❏ হযরত ইবনে আব্বাস (رضي الله عنه) বলেন, হযরত আবু হুরাইরা (رضي الله عنه) আমাকে জানিয়েছেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) কি বলেছেন। (একদিন) আমি ঘুমিয়ে ছিলাম, স্বপ্নে দেখতে পেলাম আমার দু’হাতে সােনার দুটি বালা শােভা পাচ্ছে। বালা দুটি আমাকে ভাবিয়ে তুলল। স্বপ্নেই আমার নিকট অহী এল, আপনি ফু দিন। আমি তাই করলাম। বালা দুটি উড়ে অদৃশ্য হয়ে গেল।

আমি স্বপ্নের ব্যাখ্যা এভাবে করলাম, আমার পর দু’জন কাযযাব (চরম মিথ্যাবাদী তখা ভন্ডনবী) আবির্ভূত হবে। এদের একজন আসওয়াদ আনসী, অপরজন ইয়ামামার বাসিন্দা। মুসায়লামাতুল কাযযাব। 59
_____________________________
৫৯. ইমাম বুখারী, মুহাম্মদ ইবনে ইসমাঈল (رحمة الله), সহীহ বুখারী শরীফ, আরবী ইউপি, ইন্ডিয়া, পৃ:৫১১ হাদিস নং ৩৩৬২।

হযরত হাসান (رضي الله عنه) সমঝােতাকারী হবেন
____________________
হযরত হাসান (رضي الله عنه) সমঝােতাকারী হবেন

❏ হযরত আবু বকর (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করিম (ﷺ) এর একদিন হযরত হাসান (رضي الله عنه) কে নিয়ে বেরিয়ে এলেন এবং তাঁকেসহ মিম্বরে আরােহণ করলেন। তারপর বললেন, আমার এ ছেলেটি (নাতী) সাইয়্যেদ তথা সরদার। নিশ্চয়ই আল্লাহ তায়ালা এর মাধ্যমে বিবাদমান দু’দল মুসলমানের আপােস (সমঝােতা) করিয়ে দেবেন। 60
_____________________________
৬০. ইমাম বুখারী, মুহাম্মদ ইবনে ইসমাঈল (رحمة الله) (২৫৬হি.), সহীহ বুখারী শরীফ, আরবী, ইউপি, ইন্ডিয়া, পৃ:৫১২ হাদিস নং ৩৩৬৮।

খায়বার যুদ্ধের বিজয় সংবাদ
____________________
খায়বার যুদ্ধের বিজয় সংবাদ

❏ হযরত সালমা (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আলী (رضي الله عنه) নবী করিম (ﷺ) এর সঙ্গে খায়বার যুদ্ধে যাননি। কেননা তাঁর চোখে অসুখ ছিল। এতে তিনি মনে মনে বললেন, আমি কি রাসূলুল্লাহ(ﷺ)’র সঙ্গে জিহাদে যাবাে না? তারপর তিনি বেরিয়ে পড়লেন এবং রাসূল (ﷺ)’র সাথে মিলিত হলেন। খায়বর বিজয়ের পূর্বরাত্রে (সন্ধ্যায়) রাসূল (ﷺ) বললেন, আগামী সকালে আমি এমন এক ব্যক্তিকে পতাকা প্রদান করব অথবা বলেছিলেন, এমন এক ব্যক্তি ঝান্ডা গ্রহণ করবে যাকে আল্লাহ ও তাঁর রাসূল ভালবাসেন অথবা বলেছিলেন, সে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলকে ভালবাসে। তাঁর মাধ্যমে আল্লাহ তায়ালা (খায়বর) বিজয় দান করবেন। তারপর আমরা দেখতে পেলাম তিনি হলেন হযরত আলী অথচ আমরা তাঁর সম্পর্কে এমনটি আশা করিনি। তাই সকলেই বলে উঠলেন, এই যে আলী (رضي الله عنه)। রাসুলুল্লাহ (ﷺ) পরদিন তাঁকেই পতাকা দিলেন এবং তাঁর মাধ্যমেই আল্লাহ তায়ালা বিজয় দিলেন। 61
_____________________________
৬১. ইমাম বুখারী, মুহাম্মদ ইবনে ইসমাঈল (رحمة الله) (২৫ হি.), সহীহ বুখারী শরীফ, আরবী, ইউপি, ইন্ডিয়া, পৃ:৫২৫ হাদিস নং ৩৪৩৭

উমাইয়া ইবনে খালফের মৃত্যু সংবাদ
____________________
উমাইয়া ইবনে খালফের মৃত্যু সংবাদ

❏ হযরত সা'দ ইবনে মুয়ায (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেছেন, তাঁর ও উমাইয়্যা ইবনে খালফের মধ্যে গভীর বন্ধুত্ব ছিল। উমাইয়্যা মদীনায় আসলে সা’দ এর অতিথি হত এবং সা’দ মক্কায় গেলে উমাইয়্যার আতিথেয়তা গ্রহণ করতেন। রাসূল(ﷺ) কে মদীনায় হিজরত করার পর একদা সা’দ ওমরা করার উদ্দেশ্যে মক্কা এবং উমাইয়্যার বাড়ীতে আবস্থান করলেন। সা’দ উমাইয়্যাকে নিয়ে দ্বিপ্রহরে কাবা তাওয়াফ করার সময় আবু জাহেলের সাক্ষাৎ হয়।

তখন হযরত সা'দ এর সাথে আবু জাহেলের সাথে বাদানুবাদ হয়। এক পর্যায়ে সা’দ (رضي الله عنه) আবু জাহেলকে উচ্চ কণ্ঠে হুমকি দিলে উমাইয়্যা তাঁকে বলল, হে সাদ! এ উপত্যকার প্রধান সর্দার আবুল হাকামের (আবু জাহেল) সাথে এরূপ উচ্চস্বরে কথা বলিওনা। তখন সা’দ (رضي الله عنه) বললেন, হে উমাইয়্যা! তুমি চুপ কর। আল্লাহর কসম, আমি রাসূলুল্লাহ (ﷺ) কে বলতে শুনেছি যে, তারা তােমার হত্যাকারী। উমাইয়্যা জিজ্ঞেস করল, মক্কার বুকে? সা’দ বললেন, তা জানিনা। উমইয়্যা এতে অত্যন্ত ভীত ও সন্ত্রস্ত হয়ে পড়ল।

এরপর উমাইয়্যা বাড়ীতে গিয়ে তার স্ত্রীকে ডেকে বলল, হে উম্মে সফওয়ান! সা’দ আমার সম্পর্কে কি বলেছে জান? সে বলল, সা’দ তােমাকে কি বলেছে? উমাইয়া বলল, সে বলেছে যে, মুহাম্মদ (ﷺ) নাকি তাদেরকে জানিয়েছে যে, তারা আমার হত্যাকারী। তখন আমি তাকে জিজ্ঞেস করলাম, তা কি মক্কায়? সে বলল, তা আমি জানিনা। এরপর উমাইয়্যা বলল, আল্লাহর কসম, আমি কখনাে মক্কা থেকে বের হবােনা। কিন্তু বদর যুদ্ধের দিন সমাগত হলে আবু জাহেল সর্বস্তরের জনসাধারণকে সদলবলে যুদ্ধে বের হওয়ার আহ্বান জানিয়ে বলল, তােমরা তােমাদের কাফেলা রক্ষা করার জন্য অগ্রসর হও। উমাইয়্যা মক্কা ছেড়ে বের হওয়াকে অপছন্দ করলে আবু জাহেল এসে তাকে বলল, হে আবু সফওয়ান! তুমি এ উপত্যকার অধিবাসীদের একজন নেতা। তাই লােকেরা যখন দেখবে তুমি যুদ্ধে যাচ্ছনা তখন তারাও তােমার সাথে থেকে যাবে। অবশেষে বাধ্য হয়ে যুদ্ধে যাওয়ার জন্য উত্তম উট ক্রয় করে প্রস্তুতি নিল। এতে তার স্ত্রী বলল, হে আবু সফওয়ান! তােমায় মদীনাবাসী যা বলেছিলেন তা কি তুমি ভূলে গিয়েছ? সে বলল, না। আমি তাদের সাথে কিছুদূর যাবাে মাত্র। অবশেষে রাসূল (ﷺ)’র ভবিষ্যত্বাণী মতে বদর যুদ্ধে আল্লাহর হুকুমে সে মারা গেল। 62
_____________________________
৬২. ইমাম বুখারী, মুহাম্মদ ইবনে ইসমাঈল (رحمة الله) (২৫৬হি.), সহীহ বুখারী শরীফ, আরবী, ইউপি, ইন্ডিয়া, পৃ:৫৬৩ হাদিস নং ৩৬৬৫

হাদিস অস্বীকারকারীর আগমন 
____________________
হাদিস অস্বীকারকারীর আগমন

❏ প্রসঙ্গে ইমাম বায়হাকী (رحمة الله) হযরত মােকদাদ ইবনে মাদী কারুবা (رضي الله عنه) থেকে বর্ণনা করেন, নবী করিম(ﷺ) এরশাদ করেছেন, সাবধান! আমাকে কিতাব (কুরআন) দেওয়া হয়েছে এবং কিতাবের সাথে কিতাবের সাদৃশ্য (হাদিস) ও দেওয়া হয়েছে। অচিরেই এমন এক পেটুক বালিশে হেলান দিয়ে বসে বসে বলবে- তােমরা কুরআন কে আবশ্যক করে নাও। কুরআন যা হালাল শুধু হালাল আর কুরআনে যা হারাম শুধু তাই হারাম। অর্থাৎ তারা হাদিসকে অস্বীকার করবে।

❏ ইমাম আবু দউদ ও বায়হাকী (رحمة الله) হযরত আবু রাফে (رضي الله عنه) থেকে বর্ণনা করেন, নবী করিম (ﷺ) এরশাদ করেন, তােমাদের মধ্যে এক ব্যক্তি ঠেস দিয়ে বসে থাকবে। তার কাছে যখন আমার কোন হুকুম-আহকাম (হাদিস) বর্ণনা করা হবে যাতে কোন কাজের আদেশ বা নিষেধ থাকবে। তখন সে তা শুনে বলবে, আমরা এগুলাে জানিনা। কিতাবুল্লাহ-তে আমরা যা পাই শুধু তাই অনুসরণ করি। 63
_____________________________
৬৩. ইমাম সুয়ূতী, জালাল উদ্দিন সুয়ূতী (رحمة الله) (৯১১হি.), আল খাসায়েসুল কুবরা, আরবী, বৈরুত, খন্ড:২য় পূ:২৫৩-৫৪।

আশেকে রাসূল (ﷺ)’র আগমন
____________________
আশেকে রাসূল (ﷺ)’র আগমন

❏ ইমাম হাকেম (رحمة الله) হযরত আবু হোরাইরা (رضي الله عنه) থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, রাসূল (ﷺ)- এরশাদ করেন,

ان انسًا من امتى ياتون بعدى بود احدهم الواشترى رؤيتى باهله وماله.

অর্থাৎ- আমার ইন্তেকালের পরে এমন অনেক লােক আসবে যারা তাদের ধন-সম্পদ ও পরিবার-পরিজনের বিনিময়ে হলেও আমার সাক্ষাত ক্রয় করতে ভালবাসবে। অর্থাৎ তারা। আমার এমন আশেক হবে তাদের জীবনে সবকিছুর বিনিময়ে আমার দীদার লাভ করতে চাইবে। 64
_____________________________
৬৪. ইমাম সুয়ূতী, জালাল উদ্দিন সুয়ূতী (رحمة الله) (৯১১হি.), আল খাসায়েসুল কুবরা, আরবী, বৈরুত, খন্ড:২য় পৃ:২৫৫

কূফা ও বসরা সম্পর্কে ভবিষ্যত বাণী
____________________
কূফা ও বসরা সম্পর্কে ভবিষ্যত বাণী

❏ ইমাম আবু নঈম (رحمة الله) হযরত আবু যর (رضي الله عنه) থেকে বর্ণনা করেন, রাসূল (ﷺ) কূফাবাসী সম্পর্কে আলােচনা করে বলেন, কুফাবাসীদের উপর বড় বড় বিপদ আসবে। এরপর তিনি বসরাবাসী সম্পর্কে আলােচনা করে বলেন, সেখানে অনেক মসজিদ হবে আর মুয়াজ্জিনের সংখ্যাও অনেক হবে। বসরা থেকে যে পরিমাণ বালা মুসীবত দূরীভূত করা হবে। সমগ্র পৃথিবীকে থেকেও সে পরিমাণ দূরীভূত করা হবে না। 65
_____________________________
৬৫. ইমাম সুয়ূতী, জালাল উদ্দিন সুয়ূতী (رحمة الله) (৯১১হি.), আল খাসায়েসুল কুবরা, আরবী, বৈরুত, খন্ড:২য় পৃ:২৫৭।

মুজাদ্দিদের আগমন 
____________________
মুজাদ্দিদের আগমন 

❏ ইমাম হাকেম (رحمة الله) হযরত আবু হােরায়রা (رضي الله عنه) থেকে বর্ণনা করেন, রাসূল (ﷺ) এরশাদ করেন, প্রতি শতাব্দির প্রারম্ভে আল্লাহ তায়ালা একজন মুজাদ্দিদ প্রেরণ করবেন যিনি এই উম্মতের দ্বীনের সংস্কার করবেন। 66
_____________________________
৬৬. ইমাম সুয়ূতী, জালাল উদ্দিন সুয়ুতী (رحمة الله) (৯১১হি.), আল খাসায়েসুল কুবরা, আরবী, বৈরুত, খন্ড:২য় পৃ:২৫৮।

কুদরতী নিরাপত্তা
____________________
কুদরতী নিরাপত্তা

কাফেরের দৃষ্টি থেকে আড়াল রাখা হত।

❏ আল্লাহ তায়ালা কুরআনে এরশাদ করেন,

অর্থাৎ- হে নবী! যখন আপনি কুরআন তেলাওয়াত করেন তখন আমি আপনাকে পরকালে অবিস্বাসীদের থেকে আড়াল করে রাখি। (সূরা আসরা, আয়াত নং ৪৫)

❏ আল্লাহ তায়ালা আরাে বলেন,

وَجَعَلْنَا مِنْ بَيْنِ أَيْدِيهِمْ سَدًّا وَمِنْ خَلْفِهِمْ سَدًّا فَأَغْشَيْنَاهُمْ فَهُمْ لَا يُبْصِرُونَ.

অর্থাৎ- আমি একটি আড়াল তাদের সামনে আর একটি আড়াল তাদের পেছনে সৃষ্টি করে দেই যাতে আমি তাদেরকে ঢেকে রাখি ফলে তারা দেখতে পায়না। (সূরা ইয়াসিন ৯)

❏ হযরত আবু ইয়ালা ইবনে আবি হাতেম, বায়হাকী ও আবু নঈম (رحمة الله) হযরত আসমা বিনতে আবু বকর (رضي الله عنه) থেকে বর্ণনা করেন, যখন সূরা ‘তাব্বত ইয়াদা’ নাযিল হল তখন আওরা বিনতে হারব রাগান্বিত অবস্থায় আসল এবং তার হাতে ছিল পাথর। এ সময় নবী করিম (ﷺ) ছিলেন মসজিদের পাশে। তাঁর সাথে হযরত আবু বকর (رضي الله عنه)ও ছিলেন।

হযরত আবু বকর (رضي الله عنه) যখন আওরাকে আসতে দেখেন তখন বললেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আওরা আসতেছে। আমার ভয় হচ্ছে হয়তাে সে আপনাকে দেখবে এবং অনাকাঙ্খিত কিছু করে ফেলবে। তিনি বললেন, সে আমাকে দেখতে পাবে না। তিনি কুরআন মজীদ পাঠ করে নিজেকে হেফাযত করেছেন। আওরা এসে হযরত আবু বকর (رضي الله عنه)'র কাছে দাঁড়াল কিন্তু রাসূল (ﷺ) কে দেখতে পেলনা। আবু বকরকে বলল, তােমার সঙ্গী আমার ব্যাপারে কটুক্তি করেছে। আবু বকর (رضي الله عنه) বললেন, বায়তুল্লাহ’র শপথ! তিনি তােমার বিরুদ্ধে কটুক্তি করেন নি।

হযরত আবু বকর আরজ করলেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ(ﷺ)! সে আপনাকে দেখেনি। তিনি বললেন, তার ও আমার মধ্যখানে একজন ফেরেস্তা ছিলেন যিনি স্বীয় পাখা দিয়ে আমাকে সে চলে যাওয়া পর্যন্ত গােপন করে রেখেছেন। 67
_____________________________
৬৭. ইমাম সুয়ূতী, জালাল উদ্দিন সুয়ূতী (رحمة الله) (৯১১হি.), আল খাসায়েসুল কুবরা, আরবী, বৈরুত, খন্ড:১ম পৃ:২১৩।

চোখের সামনে থেকেও না দেখা
____________________
চোখের সামনে থেকেও না দেখা

❏ বায়হাকী হযরত ইবনে আব্বাস (رضي الله عنه) থেকে বর্ণনা করেন, তিনি ব্যাখ্যায় বলেন, কুরাইশ কাফেরদের মাঝখানে আল্লাহ তায়ালা আড়াল করে দিয়েছেন। ফলে তারা দেখতে পায়নি। কেননা বনী মাখযুম এর কিছু লােক হুমূরকে হত্যা করার ইচ্ছে পােষণ করল। যাদের মধ্যে আবু জাহেল ও ওয়ালিদ ইবনে মুগীরা ও তাঁর কিরাতের শব্দ শুনল আর ওয়ালিদকে হযরতকে হত্যা করার জন্য পাঠায়।

অতঃপর ওয়ালিদ হযরতের নামাজের স্থানে আসল এবং তাঁর কিরাতের আওয়াজ শুনতে পাচ্ছে কিন্তু তাঁকে দেখতে পাচ্ছে না। সে ফিরে গিয়ে ঘটনা সবাইকে অবহিত করল। এতে সবাই অবাক হয়ে আসল তারাও আওয়াজ শুনতেছে কিন্তু তাঁকে দেখতেছেনা। তারা পিছন থেকে আওয়াজ শুনলে পিছনে যায় কিন্তু সেখানে কিছু দেখতে পায়না। এভাবে বেশ কয়েকবার হওয়ার অবশেষে নিরাশ তারা ফিরে যায়। 68
_____________________________
৬৮. ইমাম সুয়ূতী, জালাল উদ্দিন সুয়ূতী (رحمة الله) (৯১১হি.), আল খাসায়েসুল কুবরা, আরবী, বৈরুত, খন্ডঃ১ম পৃ:২১৪।

দুশমনের হাতে পাথর জমাট বেঁধে যাওয়া
____________________
দুশমনের হাতে পাথর জমাট বেঁধে যাওয়া

❏ হযরত আবু নঈম মু’তামার ইবনে সােলাইমান এর সূত্রে তিনি তাঁর পিতা থেকে বর্ণনা করেন যে, বনী মাখযুমের জনৈক ব্যক্তি রাসূলের প্রতি নিক্ষেপ করার উদ্দেশ্যে হাতে পাথর নিয়ে নবী(ﷺ)’র দিকে অগ্রসর হল। সে তাঁর নিকটে গেল তখন তিনি নামাজে সিজদারত অবস্থায় ছিলেন। সে পাথর নিক্ষেপের জন্য হাত উত্তোলন করলে পাথর হাতের সাথে জমাট বেঁধে গেল। শত চেষ্টা করেও পাথর ছুড়ে মারতে সক্ষম হলনা।

অতঃপর ব্যর্থ হয়ে সঙ্গীদের নিকট চলে আসলে তারা বলল, তুমি তাে ঐ ব্যক্তির সাথে মােকাবেলায় কাপুরুষতার পরিচয় দিয়েছ। সে বলল, আমি কাপুরুষ নই বরং পাথর আমার হাতেই আছে কিন্তু ছুঁড়ে মারতে পারিনি। এতে তারা অবাক হয়ে গেল এবং তারা দেখল যে, পাথর তার হাতের আঙ্গুলের সাথে জমাট বাঁধা পেল। অতঃপর তারা তার আঙ্গুল চিকিৎসা (অপারেশন) করায়ে তাকে এ অবস্থা থেকে পরিত্রান করল এবং বলতে লাগল এটা তার অসৎ উদ্দেশ্যের কারণে কুদরতের পক্ষ থেকে হয়েছে। 69
_____________________________
৬৯. ইমাম সুয়ূতী, জালাল উদ্দিন সুয়ূতী (رحمة الله) (৯১১হি.), আল খাসায়েসুল কুবরা, আরবী, বৈরুত, খণ্ড:২য় পৃ:২১৪ ও আবু নঈম ইস্পাহানী (رحمة الله) (৪৩০হি.), দালায়েলুন নবুয়ত, উর্দু, নয়া দিল্লী, পৃ:১৭৪

বাঘের মাধ্যমে হেফাযত
____________________
বাঘের মাধ্যমে হেফাযত

ওয়াকেদী ও আবু নঈম (رحمة الله) হযরত উরওয়াহ ইবনে যুবাইর (رضي الله عنه) থেকে বর্ণনা করেন, নদ্বর ইবনে হারেস সর্বদা রাসূল কে কষ্ট দিত ও বিরক্ত করত। একদা প্রচণ্ড গরমের মৌসুমে তিনি হাযতের (মল ত্যাগের) উদ্দেশ্যে “সানিয়াতুল হুজন” এর নিম্ন স্থানে তাশরীফ নেন। তাঁর স্বভাবই ছিল যে, হাযতের জন্যে তিনি বহুদূরে চলে যেতেন। নদ্বর তাঁকে দেখে চিন্তা করল যে, এরকম একাকী তাঁকে আর পাওয়া যাবে না। সুতরাং তাঁকে হত্যা করার এটাই সুবর্ণ সুযােগ।

এরপর নদ্বর তাঁর দিকে গেলে হঠাৎ ভীত-সন্ত্রস্ত হয়ে পিছনে ফিরে আসল। পথে আবু জাহেলের সাক্ষাৎ হলে যে বলল, কোথা থেকে আসতেছ? উত্তরে নদ্বর বলল, আমি মুহাম্মদের পিছু নিয়েছিলাম তাঁকে হত্যার উদ্দেশ্যে। কেননা তিন একাকী ছিলেন। কিন্তু হঠাৎ দেখলাম যে, ভয়ংকর বাঘ হা করে এসে আমার রাস্তার মাথায় দাড়ালাে। দাঁত দিয়ে আক্রমণের উপক্রম হয়েছে। আমি ঐ হিংস্র বাঘের ভয়ে ভীত হয়ে ফিরে আসলাম। আবু জাহেল বলল, এটা তাঁর একটা যাদু। 70
_____________________________
৭০. আবু নঈম ইস্পাহানী (رحمة الله) (৪৩০হি.), দালায়েলুন নবুয়ত, উর্দু, নয়া দিল্লী, পৃ:১৭৮, ইমাম সুয়ূতী, জালাল উদ্দিন সুয়ূতী (رحمة الله) (৯১১হি.), আল খাসায়েসুল কুবরা, আরবী, বৈরুত, খণ্ড:১ম পৃ:২১৫।

সাফা-মারওয়া পাহাড় দ্বারা নিরাপত্তা 
____________________
সাফা-মারওয়া পাহাড় দ্বারা নিরাপত্তা

❏ তাবরানী ইবনে মুনদাহ ও আবু নঈম (رحمة الله) কায়েস হুযর এর সূত্রে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, হাকাম এর কন্যা বর্ণনা করেন, আমার দাদা হাকাম আমাকে বলেছেন যে, হে আমার কন্যা! আমি তােমাকে নিজের চোখে দেখা ঘটনা বর্ণনা করতেছি যে, একদিন আমরা সকলে মিলে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হলাম যে, রাসূল (ﷺ) কে ধরবাে। তারপর আমরা এমন বিকট শব্দ শুনলাম যে, ভাবলাম এতে ‘তাহামা’ নামক পাহাড় চুর্ণ-বিচুর্ণ হয়ে পড়েছে। আর আমরা অজ্ঞান হয়ে গেলাম। রাসূল (ﷺ) নামায শেষ করে ঘরে ফিরে যাওয়া পর্যন্ত আমাদের হুশ ছিলনা। তারপর পরের রাতে আমরা পুনরায় ঐ কাজের জন্য ওয়াদাবদ্ধ হলাম। যখন তিনি তাশরীফ আনেন তখন আমরা তাঁর দিকে গিয়ে দেখি সাফা ও মারওয়া উভয় পাহাড় এসে পরস্পর মিলে আমাদের এবং তাঁর মধ্যে আড়াল হয়ে গেল। খােদার শপথ! এবারেরও পরিকল্পনাও ব্যর্থ হল এমনকি আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে ইসলাম গ্রহণের তাওফিক দান করেছেন এবং ইসলামে আসার অনুমতি প্রদান করেছেন। 71
_____________________________
৭১. ইমাম সুয়ূতী, জালাল উদ্দিন সুয়ূতী (رحمة الله) (৯১১হি.), আল খাসায়েসুল কুবরা, আরবী, বৈরুত, খণ্ড:১ম পৃ:২১৫।

কুদরতী/ অদৃশ্য শক্তি দ্বারা হেফাযত
____________________
কুদরতী/ অদৃশ্য শক্তি দ্বারা হেফাযত 

❏ ইমাম বায়হাকী (رحمة الله) রুকানা ইবনে আবদে ইয়াযিদ থেকে বর্ণনা করেন। রুকানা একজন বিশাল শক্তিধর লােক ছিলেন। তিনি বলেন, আমি এবং নবী করিম (ﷺ) আবু তালেবের চারণ ভুমিতে বকরী চরাচ্ছিলাম। তিনি একদিন আমাকে বললেন, তুমি কি আমার সাথে কুস্তি লড়বে? আমি বললাম, আপনি কি আমার সাথে কুস্তি লড়তে চান? তিনি বললেন, হ্যাঁঁ। আমি বললাম কোন শর্তে? তিনি বললেন, এই বকরীগুলাে থেকে একটি বকরীর শর্তে।

তারপর আমি তাঁর সাথে কুস্তি লড়লাম কিন্তু আমাকে পরাজিত করে দেন আর একটি বকরী আমার থেকে নিয়ে নিলেন। তিনি আবার জিজ্ঞেস করেন, দ্বিতীয় বার লড়বে? আমি রাজী হলাম। দ্বিতীয়বারও তিনি আমাকে পরাজিত করলেন এবং একটি বকরী নিয়ে নিলেন। আর আমি চারিদিকে দেখতে লাগলাম আমার পরাজিত হওয়া কেউ দেখছে কিনা? তিনি বললেন, তােমার কি হল যে, তুমি চতুর্দিকে দেখতেছ যে, আমি বললাম, অন্যান্য রাখালগণ আমাকে দেখছে কিনা দেখতেছি। কারণ তারা আমার এ দূর্বলতা ও অক্ষমতা দেখলে আমার উপর বাহাদুরী করা শুরু করবে অথচ আমি হলাম আমার সম্প্রদায়ের মধ্যে সবচেয়ে শক্তিশালী পলােয়ান।

তিনি পুনরায় জিজ্ঞেস করেন, তৃতীয়বার লড়বে? আমাকে পরাজিত করতে পারলে একটি বকরী দিবে। আমি বললাম,হ্যাঁ, লড়বাে। এবারও তিনি আমাকে পরাজিত করলেন এবং আরাে একটি বকরী নিয়ে নিলেন। আর আমি অত্যন্ত চিন্তিত ও মর্মাহত অবস্থায় বসে রইলাম। তিনি জিজ্ঞেস করলেন, রুকানা! তােমার কি হল? আমি বললাম, আমি আবদে ইয়াযিদ’র নিকট যাচ্ছি। তাদের তিনটি বকরী আমি দিয়ে দিলাম। অথচ আমি মনে করতাম কুরাইশদের মধ্যে আমিই সবচেয়ে শক্তিশালী। তিনি আবার জিজ্ঞেস করলেন, চতুর্থবার লড়বে? আমি বললাম, তিনবার পরাজয় হওয়ার পর আর সাহস পাচ্ছিনা। তিনি বললেন, তােমার বকরী তােমাকে ফেরৎ দেবাে। তারপর তিনি আমার বকরী আমাকে ফেরৎ দিলেন। কিছুদিন পর তাঁর নবুয়ত প্রকাশ পেলে আমি তাঁর খেদমতে এসে ইসলাম গ্রহণ করলাম আর আমি বুঝতে পারলাম সেদিন তিনি আমাকে তাঁর স্বীয় শক্তি দ্বারা পরাজিত করেননি বরং অন্য কোন (খােদায়ী) শক্তি দিয়ে পরাজিত করেছেন। 72
_____________________________
৭২. ইমাম সুয়ূতী, জালাল উদ্দিন সুয়ূতী (رحمة الله) (৯১১হি.), আল খাসায়েসুল কুবরা, আরবী, বৈরুত, খণ্ড:১ম পৃ:২১৬

হাত তরবারীর সাথে আটকে যাওয়া
____________________
হাত তরবারীর সাথে আটকে যাওয়া

❏ হযরত আবু নঈম (رحمة الله) হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (رضي الله عنه) থেকে বর্ণনা করেন, আরবাদ ইবনে কায়েস ও আমের ইবনে তােফায়েল রাসূল (ﷺ)’র দরবারে এসেছিল। আমের বলল, আপনার পরে যদি আমাকে হুকুমত্বের দায়িত্ব প্রদান করেন তবে আমি মুসলমান হয়ে যাবাে। রাসূল (ﷺ) এরশাদ করেন, হে আমের! এটা তুমি এবং তােমার কওমের জন্য নয়। সে বলল, আল্লাহর কসম, আমি আপনার বিরুদ্ধে মদীনা কে ঘােড়া ও লােকে লােকারণ্য করাে দেবাে। রাসূল (ﷺ) বললেন, আল্লাহ তােমাকে এ কাজ থেকে বিরত রাখুক।

অতঃপর তারা উভয় যখন বের হল তখন আমের আরবাদ কে বলল, আমি মুহাম্মদের সাথে আলাপে নিয়ােজিত রেখে তাকে ভুলিয়ে রাখবাে আর এ সুযােগে তুমি তরবারী মেরে দিবে। আরবাদ বলল, ঠিক আছে তাই হবে। তারপর তারা উভয় পুনরায় ফিরে এসে আমের বলল, হে মুহাম্মদ! আসুন, আমার পাশে দাঁড়ান, আপনার সাথে কথা বলবাে। তিনি তার সাথে দাঁড়ালেন আর আরবাদ মিয়ান থেকে তরবারী বের করতে হাত দিলে হাত তরবারীর সাথে আটকে যায়। ফলে শত চেষ্টা করেও হাতে তরবারী নিয়ে আঘাত করতে ব্যর্থ হল। তারপর তারা উভয় ফিরে যাওয়ার পথে রকম’ নামক একটি কুপের নিকটে পৌঁছলে আল্লাহ তায়ালা আরবাদের উপর এমন বজ্রধ্বনি ও গর্জন প্রেরণ করেন যাতে সে মারা যায় আর আমের এমনভাবে আহত হল যে সেও মারা গেল। 73
_____________________________
৭৩. ইমাম সুয়ূতী, জালাল উদ্দিন সুয়ূতী (رحمة الله) (৯১১হি.), আল খাসায়েসুল কুবরা, আরবী, বৈরুত, খণ্ড:২য় পৃ:২৯ ও আবু নঈম ইস্পাহানী (رحمة الله) (৪৩০হি.), দালায়েলুন নবুয়ত, উর্দু, নতুন দিল্লি, পৃ:১৮১ *.

তখন আল্লাহ তায়ালা এই আয়াত নাযিল করেন- - انثى كل تحمل ما يعلم االله থেকে المحال شديد পর্যন্ত। (সূরা রা'দ ৮)

ছাগলের গােশত কথা বলা
____________________
ছাগলের গােশত কথা বলা

❏ আবু নঈম (رحمة الله) হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত, রাসূল (ﷺ) বদর যুদ্ধ থেকে ফেরার পথে রাস্তায় এক ইহুদী মহিলার সাক্ষাত হল যার মাথায় খাবার বর্তন ছিল। তাতে ভূনা ছাগলের মাংস ছিল। এ সময় রাসূল তাে ক্ষুধার্ত ছিলেন। মহিলা বলল আলহামদুলিল্লাহ, হে মুহাম্মদ! আমি মান্নত করেছি যে, আপনি যদি সহি সালামতে ফেরৎ আসেন তবে এই ছাগল যবেহ করে ভূনা করে আপনাকে খাওয়াবাে।

অতঃপর আল্লাহ তায়ালা ঐ ছাগলের গােশতে বাক শক্তি দান করলেন ফলে সেই গােশত স্পষ্ট ভাষায় বলেছিল, হে মুহাম্মদ! আপনি খাবেন না, আমি বিষ মিশ্রিত। 74
_____________________________
৭৪.ইউসূফ নাবহানী (رحمة الله) (১৩৫০হি.), হুজ্জাতুল্লাহি আলাল আলামীন, উর্দু, গুজরাট, খণ্ড:১ম পৃ:৭১৮

মাকড়সার খেদমত 
____________________
মাকড়সার খেদমত

❏ হযরত ইবনে সা'দ (رحمة الله), হযরত ইবনে আব্বাস (رضي الله عنه) , হযরত আলী (رضي الله عنه) , আয়েশা বিনতে আবি বকর (رضي الله عنه) ও আয়েশা বিনতে কুদাম (رضي الله عنه) ও সুরাকাহ ইবনে জুশাম (رضي الله عنه) বর্ণনা করেন, রাসূল (ﷺ) ঘর থেকে বের হলেন অথচ কাফেররা তাঁর দরজায় বসে আছে। তিনি একমুষ্টি পাথর হাতে নিয়ে তাদের মাথার দিকে নিক্ষেপ করে সূরা ইয়াসিন তিলাওয়াত করতে করতে বেরিয়ে গেলেন। অর্থাৎ, হিযরতের রাতে রাসূলকে হত্যার উদ্দেশ্যে রাতে তাঁর ঘরের দরজায় কাফেররা অপেক্ষমান ছিল। কিন্তু তিনি তাদের প্রতি একমুষ্টি পাথর নিক্ষেপ করে তাদের চোখের সম্মুখ দিয়ে চলে আসেন তারা তাঁকে দেখতে পায়নি। কেউ বলল, তােমরা কার অপেক্ষায় আছ? তারা বলল, মুহাম্মদের অপেক্ষায় আছি। সে বলল, খােদার কসম! তিনি তাে তােমাদের থেকে চলে গিয়েছেন। তারা বলল, খােদার কসম, আমরা তাে তাঁকে যেতে দেখিনি। অতঃপর তারা মুখ থেকে মাটি ঝাড়তে ঝাড়তে দাঁড়িয়ে গেল আর নবী করিম (ﷺ) হযরত আবু বকর (رضي الله عنه) সত্তর পর্বতের দিকে চলে যান এবং পর্বতের একটি গুহায় প্রবেশ করেন। গুহায় মুখে মাকড়সা জাল বুনে দিল। (অপর বর্ণনা আছে কবুতরে ডিম দিয়েছিল।) কুরাইশরা তাঁকে অনেক তালাশ করতে করতে গুহার মুখে পৌঁছে গেল। তাদের কেউ বলল, গুহায় খুঁজে দেখ। অপরজন বলল, গুহার মুখে তাে এমন পুরাতন মাকড়সার জাল যা মুহাম্মদের জন্মের পূর্বের। এই কথা বলে তার ফিরে গেল। 75
_____________________________
৭৫. ইমাম সুয়ূতী, জালাল উদ্দিন সুয়ুতী (رحمة الله) (৯১১হি.), আল খাসায়েসুল কুবরা, আরবী, বৈরুত, খণ্ড:১ম পৃ:৩০৪

ঘােড়াসহ মাটিতে ধ্বসে যাওয়া 
____________________
ঘােড়াসহ মাটিতে ধ্বসে যাওয়া

❏ ইমাম বুখারী ও ইমাম মুসলিম (رحمة الله) হযরত আবু বকর (رضي الله عنه) থেকে বর্ণনা করেন, হিযরতের সময় কুরাইশ আমাদের তালাশ করেও সুরাকা ইবনে মালিক ছাড়া কেউ আমাদের সন্ধান পায়নি। সে তার ঘােড়ার উপর আরােহণ ছিল। আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! এই অন্বেষণকারী আমাদের নিকটে পৌঁছে গেছে।

তিনি বললেন,

اًمعن االلهّ ان لاتحزن

অর্থ তুমি চিন্তা করােনা, নিশ্চয় আল্লাহ আমাদের সাথে আছেন।

যখন আমাদের ও তার মাঝে এক বা তিন তীর পরিমাণ দূরত্ব বাকী ছিল তখন রাসূল(ﷺ) এতে তাঁকে বদদোয়া করে বলেন-

 شئت بما اكفناه اللهم

অর্থ: হে আল্লাহ! আপনি যেভাবে চান তার অনিষ্ট থেকে আমাদের রক্ষা করুন। সাথে সাথে তার ঘােড়া তাকে নিয়ে পেট পর্যন্ত মাটিতে ধ্বসে গেল।

সুরাকা বলল, হে মুহাম্মদ! আমি বুঝেছি যে, এটা আপনার কাজ অর্থাৎ আপনার দোয়ার কারণেই আমার এই অবস্থা। সুতরাং আল্লাহর কাছে দোয়া করুন যেন এই বিপদ থেকে আমি মুক্তি পাই। খােদার শপথ! যারা আমার পেছনে আপনাকে খুঁজতে আসতেছে আমি তাদেরকে অন্ধ বানিয়ে দেবাে অর্থাৎ তাদেরকে ফিরিয়ে দেবাে। অতঃপর তিনি তার জন্য দোয়া করলেন ফলে সে ফিরে গেল। 76
_____________________________
৭৬. ইমাম সুয়ূতী, জালাল উদ্দিন সুয়ূতী (رحمة الله) (৯১১হি.), আল খাসায়েসুল কুবরা, আরবী, বৈরুক্ত, খণ্ড:১ম পৃ:৩০৬

হযরত জিব্রাঈল (عليه السلام) কর্তৃক সুরক্ষা
____________________
হযরত জিব্রাঈল (عليه السلام) কর্তৃক সুরক্ষা

❏ ওয়াকেদী (رحمة الله) মুহাম্মদ ইবনে যিয়াদ, যায়েদ ইবনে আবি এতাব থেকে অপর বর্ণনায় দ্বাহহাক ইবনে ওসমান ও আব্দুর রহমান ইবনে মুহাম্মদ ইবনে আবু (رضي الله عنه) থেকে বর্ণনা করেন, রাসূল (ﷺ) অবগত হলেন যে, গাতফান গােত্রের বনী সা'লাবার লােকেরা যিআমর’ নামক স্থানে একত্রিত হয়েছে। তাদের উদ্দেশ্য হল রাসূল (ﷺ) কে চতুর্দিক থেকে ঘিরে রাখা। তাদের সরদার হল দাসূর ইবনে হারেস। রাসূল (ﷺ) এই খবর শুনে সাড়ে চারশ জন লােক নিয়ে সেদিকে রওয়ানা হলেন। তাদের সাথে ঘােড়াও ছিল। কাফেরের দল ভয়ে পাহাড়ের চুড়ায় আত্মগােপন করল। রাসূল (ﷺ) যিআমর’ নামক স্থানে সৈন্য সহ অবতরণ করেন। এ সময় এখানে প্রচন্ড বৃষ্টি হয়েছিল। রাসূল (ﷺ) হাযত সারতে গেলে বৃষ্টির পানিতে তাঁর জামা মুবারক ভিজে গেল। তিনি উপত্যকার একটি গাছের নীচে গিয়ে সেই কাপড় মোবারক (মুচরিয়ে) পানি ঝেরে দিয়ে শুকানাের জন্য বিলিয়ে দেন আর গাছের নীচে শুয়ে পড়েন। গ্রাম্য শত্রুরা এ অবস্থা দেখে তাদের সরদারকে বলল, হে দা’সূর! তুমি আমাদের সরদার ও একজন বীর বাহাদুর ব্যক্তি। এ সময় তুমি মুহাম্মদের উপর বিজয় হতে পারবে। কেননা তিনি এখন তাঁর সঙ্গীদের থেকে দূরে একাকী অবস্থান করতেছেন।

দাসূ’র একটি ধারালাে উন্মুক্ত তরবারী নিয়ে হুযূর পাক (ﷺ)’র সামনে আসল এবং বলল, হে মুহাম্মদ! তােমাকে আজ আমার হাত থেকে কে বাঁচাবে? তিনি সাহসীকতার সাথে উত্তর দিলেন, আল্লাহ আমাকে রক্ষা করবেন। হযরত জিব্রাঈল (عليه السلام) দা’সূর এর বক্ষে জোরে আঘাত করলেন ফলে তার হাত থেকে তরবারী পড়ে গেল। তখন রাসূল ঐ তরবারী তুলে নেন এবং দা’সূরের মাথার উপর তরবারী ধরে বললেন, এখন তােমাকে আমার কাছ থেকে কে রক্ষা করবে? উত্তরে সে বলল, কেউ রক্ষা করতে পারবে না এই বলে সে কালিমা পড়ে মুসলমান হয়ে গেল। রাসূল (ﷺ) তার তরবারী তাকে দিয়ে দেন এবং একটু পিছে গিয়ে আবার সামনে এসে বলল, খােদার কসম! আপনি আমার থেকে অবশ্যই শ্রেষ্ঠ। রাসূল (ﷺ) বলেন, আমি তােমার চেয়ে শ্রেষ্ঠ হওয়ার অধিক হকদার।

দা’সূর তার সম্প্রদায়ের লােকের কাছে ফিরে গেলে তারা তাকে বলল, আফসােস! তুমি গিয়ে আক্রমনের জন্য প্রস্তুতি নিয়েছিলে কিন্তু তাঁর সাথে কিছু কথা বলে ফেরৎ এসেছ। অথচ তুমি ছিলে অস্ত্রধারী আর তিনি ছিলেন ঘুমন্ত। সে বলল, খােদার শপথ! আমার উদ্দেশ্য ও তাকে হত্যা করা ছিল কিন্তু যখন আমি তাঁর কাছে গেলাম হঠাৎ একজন শুভ্র রঙের লম্বা লােক আমার দৃষ্টিগােচর হল। সে আমার বক্ষে সজোরে আঘাত করলে আমি নীচে পড়ে গেলাম। আমি জানতে পারলাম যে, তিনি একজন ফেরেস্তা আর আমি সাক্ষ্য দিলাম যে, মুহাম্মদ এক আল্লাহর রাসূল। তখন সে তার সম্প্রদায়কে ইসলামের দিকে আহ্বান করতে লাগলেন।" 77
_____________________________
৭৭. ইমাম সুয়ুতী, জালাল উদ্দিন সুয়ূতী (رحمة الله) (৯১১হি.), আল খাসায়েসুল কুবরা, আরবী, বৈরুত, খণ্ড:১ম পৃ:৩৪৬

❏ এই ঘটনার প্রতি ইঙ্গিত করে এই আয়াত নাযিল হয়,

অর্থ: হে মুমিনগণ! তােমাদের প্রতি আল্লাহর অনুগ্রহ স্মরণ কর, যখন এক সম্প্রদায় তােমাদের দিকে স্বীয় হস্ত প্রসারিত করতে সচেষ্ট হয়েছিল, তখন তিনি তাদের হস্ত তােমাদের থেকে প্রতিহত করে দিলেন। (সূরা মায়েদাহ, আয়াত নং ১১)

কুদরতী নিরাপত্তাঃ ফেরেস্তার ছায়াদান
____________________
কুদরতী নিরাপত্তাঃ ফেরেস্তার ছায়াদান

❏ ইবনে সা’দ ইবনে আসাকের (رحمة الله) থেকে বর্ণনা করেন, নবী করিম ২৫ বছর বয়সে হযরত খাদীজা (رضي الله عنه)'র মাল নিয়ে ব্যবসার উদ্দেশ্যে সিরিয়া যাত্রা করেন। সঙ্গে খদীজা (رضي الله عنه)'র গােলাম মায়সারাও ছিলেন। মায়সারা বলেন, যখন দুপুরে প্রচন্ড গরম আরম্ভ হত তখন আমি দু’জন ফেরেস্তাকে নবী করিম (ﷺ) কে ছায়াদান করতে দেখতাম। সে এই দেখা ঘটনা সংরক্ষন করে রেখেছে। সিরিয়া থেকে ফিরে এসে মক্কায় প্রবেশ করার সময় দুপুর বেলা প্রচন্ড গরম ছিল। এ সময় হযরত খাদীজা (رضي الله عنه) স্বীয় বালাখানায় ছিলেন। তিনি রাসুল (ﷺ) কে দেখেন যে, তিনি স্বীয় উটে আরােহণ অবস্থায় আছেন আর দু’জন ফেরেস্তা তাঁর উপর ছায়াদান করছেন। তিনি আশে পাশের সকল মহিলাদেরকে এই দৃশ্য দেখান। ফলে সকলেই অবাক হয়ে গেল এবং এই ঘটনা হযরত খদীজা মায়সারাকে অবহিত করলে সে বলল, যখন থেকে আমরা মক্কা থেকে রওয়ানা হয়েছিলাম তখন থেকে আমি এই দৃশ্য দেখতেছি। তখন মায়সারা এই সফরে সংঘটিত অলৌকিক ঘটনাসমূহ তাঁকে অবহিত করেছে। 78
_____________________________
৭৮. ইমাম সুয়ূতী, জালাল উদ্দিন সুয়ূতী (رحمة الله) (৯১১হি.), আল খাসায়েসুল কুবরা, আরবী, বৈরুত, খণ্ড:১ম পৃ:১৫৪।

শয়তান থেকে হেফাযত 
____________________
শয়তান থেকে হেফাযত

❏ ওয়াকেদী (رحمة الله) ও আবু নঈম (رحمة الله) হযরত আতা (رحمة الله)’র সূত্রে বর্ণনা করেন, তিনি হযরত ইবনে আব্বাস (رضي الله عنه) থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, শয়তানরা ওহী’র কথা শুনতে পেতাে। যখন আল্লাহ তায়ালা রাসূল (ﷺ) কে প্রেরণ করেন তখন থেকে শয়তান কে এ কাজ থেকে বিরত রাখা হয়েছে। সে তাদের নেতা ইবলিস কে এ ব্যাপারে অভিযােগ করলে ইবলিস বলল, নিশ্চয়। কোন বড় ধরনের ঘটনা সংঘটিত হয়েছে যার ফলে এরূপ করা হচ্ছে। অভিশপ্ত ইবলিশ জবলে আবু কুবাইস নামক পাহাড়ে উঠে দেখল যে, রাসূল (ﷺ) মাকামে ইব্রাহীমের পেছনে নামাজ পড়তেছেন। সে বলল, আমি আসতেছি আর তাঁর গর্দান ভেঙ্গে দিচ্ছি।

অতএব সে যখন আসল হযরত জিব্রাঈল (عليه السلام) তখন তাঁর পাশেই ছিলেন। হযরত জিব্রাঈল (عليه السلام) অভিশপ্ত ইবলিসকে ঠুকা মেরে অমুক স্থানে নিক্ষেপ করেছেন। অপর বর্ণনায় আছে- হযরত জিব্রাঈল তাকে উরদুন নামক উপত্যকায় নিক্ষেপ করেছেন। 79
_____________________________
৭৯. ইমাম সুয়ুতী, জালাল উদ্দিন সুয়ূতী (رحمة الله) (৯১১হি.), আল খাসায়েসুল কুবরা, আরবী, বৈরুত, খণ্ড:১ম পৃ:১৮৭।

মানুষের অনিষ্ট থেকে নিরাপদ থাকা
____________________
মানুষের অনিষ্ট থেকে নিরাপদ থাকা

❏ ইমাম তিরমিযি (رحمة الله), বায়হাকী (رحمة الله) ও আবু নঈম (رحمة الله) হযরত আয়েশা (رضي الله عنه) থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, রাসূল (ﷺ) কে প্রথমে প্রথমে পাহারা দেওয়া হত। যখন يعصمك واالله الناس من “আল্লাহ আপনাকে মানুষের অনিষ্ট থেকে নিরাপদ রাখবেন” আয়াত নাযিল হয় তখন তিনি তাবু থেকে মাথা মােবারক বের করে পাহারাদারেদের কে বললেন, তােমরা চলে যাও, স্বয়ং আল্লাহ তায়ালাই আমাকে হেফাযত করবেন।

❏ ইমাম আহমদ (رحمة الله), তাবরানী (رحمة الله) ও আবু নঈম (رحمة الله) জুদাহ (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি একদা নবী করিম এর দরবারে আসলাম এ সময় তাঁর নিকট জনৈক ব্যক্তিকে আনা হল এবং বলা হল যে, এই লােকটি আপনাকে হত্যা করার ইচ্ছে করেছে। তখন রাসূলুল্লাহ (ﷺ) তাকে বললেন, তুমি ভয় করাে না, ভয় পেয়ােনা, যদি তুমি হত্যার ইচ্ছেও কর তবুও আল্লাহ তােমাকে আমার উপর বল প্রয়ােগের ক্ষমতা দিতেন না।” 80
_____________________________
৮০. ইমাম সুয়ূতী, জালাল উদ্দিন সুয়ূতী (رحمة الله) (৯১১হি.), আল খাসায়েসুল কুবরা, আরবী, বৈরুত, খণ্ড:১ম পৃ:২১০।

আবু জাহেলের অনিষ্ট থেকে সুরক্ষা 
____________________
আবু জাহেলের অনিষ্ট থেকে সুরক্ষা

❏ ইমাম মুসলিম (رحمة الله) হযরত আবু হুরাইরা (رضي الله عنه) থেকে বর্ণনা করেন যে, আবু জাহেল একদা লােকের কাছে জিজ্ঞেস করল যে, মুহাম্মদ কি তােমাদের সম্মুখে চেহরা মাটিতে রাখে অর্থাৎ সিজদা করে? লােকেরা বলল, হ্যাঁ। তখন আবু জাহেল বলল, লাতও ওজ্জার কসম! যদি আমি তাঁকে এরূপ করতে দেখি তবে তার গর্দান গুড়িয়ে দেবাে অথবা তার চেহরা ধুলি বালি মিশ্রণ করে দেবাে।

অতঃপর যখন তিনি নামাজ পড়তে লাগলেন তখন আবু জাহেল তার অসৎ উদ্দেশ্য সাধনের জন্য আসল। এ সময় সেখানে উপস্থিত লােকেরা দেখল যে, আবু জাহেল উল্টো দিকে পালাতে লাগল এবং স্বীয় উভয় হাত দ্বারা নিজেকে রক্ষা করতেছে। তাকে এর কারণ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হলে উত্তরে সে বলল, তখন আমার ও মুহাম্মদ’র মধ্যখানে একটি আগুনের গর্ত, ভয়ানক দৃশ্য ও কয়েকটি হাতের বাহু দেখেছি। নবী করিম (ﷺ) বললেন, যদি সে আমার নিকটে আসত তবে ফেরেস্তারা তার একেক অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ ছিনিয়ে নিত। আর আল্লাহ তায়ালা يطغى الانسان ان كلا থেকে সূরা’র শেষ পর্যন্ত অবতীর্ণ করেন।” 81
_____________________________
৮১. ইমাম সুয়ূতী, জালাল উদ্দিন সুয়ূতী (رحمة الله) (৯১১হি.), আল খাসায়েসুল কুবরা, আরবী, বৈরুত, খণ্ড:১ম পৃ:২১১ ও আবু নঈম ইস্পাহানী (رحمة الله) (৪৩০হি.), দালায়েলুন নবুয়ত, উর্দু, নয়া দিল্লী, পৃ:১৮২.

আবু জাহেল ভীত-সন্ত্রস্ত হয়ে গেল 
____________________
আবু জাহেল ভীত-সন্ত্রস্ত হয়ে গেল

❏ হযরত আবু নঈম সালাম ইবনে মিসকীন থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আবু ইয়াযিদ মদনী ও আবু কু'আ বাহেলী বর্ণনা করেন, জনৈক ব্যক্তি আবু জাহেলের কাছে কর্জ পেতাে। আবু জাহেল তা দিতে অস্বীকার করল। লােকেরা লােকটিকে বলল, আমরা তােমাকে এমন ব্যক্তির সংবাদ দেবাে যিনি তােমার কর্জ উসুল করে দিতে পারবেন? সে বলল নিশ্চয় বল। তারা বলল, ইনি হলেন মুহাম্মদ ইবনে আব্দুল্লাহ। তাঁর কাছে যাও। অতঃপর লােকটি তাঁর কাছে আসল, তিনি তাকে নিয়ে আবু জাহেলের কাছে গিয়ে বললেন, তার হক তাকে দিয়ে দাও। আবু জাহেল বলল, আচ্ছা দিচ্ছি। সে ঘরের ভিতরে গিয়ে টাকা এনে কর্জ আদায় করে দিল।

এতে লােকেরা তাকে বলল, তুমি তাে মুহাম্মদ (ﷺ) কে রীতিমত ভয় পেয়ে গিয়েছ। আবু জাহেল বলল, ঐ সত্তার শপথ! যার হাতে আমার প্রাণ, আমি তাঁর সাথে এমন কতিপয় লােক দেখেছি যাদের কাছে চকচকে ধারালাে তীর ছিল। যদি আমি লােকটির হক আদায় না করতাম তবে আমার ভয় হচ্ছিল যে, ঐ তীর দিয়ে আমার পেট বিদীর্ণ করা হত। 83
_____________________________
৮৩. ইউসূফ নাবহানী (رحمة الله) (১৩৫০হি.), হুজ্জাতুল্লাহি আলাল আলামীন, উর্দু, গুজরাট, খন্ড:২য় পৃ:১৯২

❏ ইমাম বুখারী ও ইমাম মুসলিম (رحمة الله) হযরত জাবির ইবনে আব্দুল্লাহ (رضي الله عنه) থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন নজদের দিকে সৈন্যদল সহ যাত্রাকালে রাসূল (ﷺ)'র সাথে আমিও ছিলাম। পথে তিনি এমন এক অধিক বৃক্ষ বিশিষ্ট উপত্যকায় যাত্রাবিরতি করলেন। লােকেরা কায়লুলা তথা দুপুরের বিশ্রাম নিতে বৃক্ষের ছায়ায় আশ্রয় নিল। রাসূল (ﷺ) ও একটি ববুল বৃক্ষের নীচে তাশরীফ নিয়ে স্বীয় তলােয়ার ঐ বৃক্ষে লটকিয়ে রেখে বিশ্রাম নিলেন। আমাদের চোখ লেগে আসল হঠাৎ রাসূল (ﷺ)’র আহ্বানের শব্দ শুনে আমরা তাঁর খেদমতে হাযির হলাম। সেখানে তাঁর সম্মুখে একজন গ্রাম্য ব্যক্তি বসা দেখলাম। তিনি বললেন, এই গ্রাম্য ব্যক্তি এসে আমার নিদ্রা অবস্থায় আমার তলােয়ার নিয়ে নিল। আমি চোখ খুলে দেখি তার হাতে এই তলােয়ার উন্মুক্ত। সে আমাকে বলল, আপনাকে আমার হাত থেকে কে রক্ষা করবে? আমি অনায়সে/ নির্বিঘ্নে বললাম, আমার আল্লাহই আমাকে রক্ষা করবে। এই কথা বলার সাথে সাথে তার হাত হতে তলােয়ার পড়ে গেল আর সে ভয়ে ভীত-সন্ত্রস্ত হয়ে বসে পড়ল, পরে রাসুল (ﷺ) তাকে ক্ষমা করে দেন। 82
_____________________________
৮২. ইমাম সুয়ুতী, জালাল উদ্দিন সুয়ূতী (رحمة الله) (৯১১হি.), আল খাসায়েসুল কুবরা, আরবী, বৈরুত, খণ্ড:১ম পৃ:২১২

আবু জাহেল ভীত-সন্ত্রস্ত হওয়া 
____________________
আবু জাহেল ভীত-সন্ত্রস্ত হওয়া

❏ আব্দুল্লাহ ইবনে আব্দুল মালিক ইবনে আবি সুফিয়ান সকফী (رحمة الله) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ইরাশ গােত্রের জনৈক ব্যক্তি উট বিক্রি করতে এসে আবু জাহেলের কাছে বিক্রি করল। আবু জাহেল মূল্য পরিশােদ বাহানা করে বিলম্ব করতে লাগল। ঐ ব্যক্তি কুরাইশদের এক মজলিসে এসে উপস্থিত হল তখন নবী করিম (ﷺ) মসজিদে হারামের এক কোণায় অবস্থান করছিলেন। লােকটি উপস্থিত কুরাইশদের বলতে লাগল, তােমাদের মধ্যে কি এমন কেউ আছ যে, আবুল হাকাম ইবনে হেশাম (আবু জোহেল) থেকে আমার মূল্য আদায় করে দিতে পারবে? আমি একজন গরীব অসহায় মুসাফির। সে আমার হক দিচ্ছে না। মজলিসে উপস্থিত লােকেরা ঠাট্টা করে নবী করিম (ﷺ) এর দিকে ইঙ্গিত করে বলল, ঐ ব্যক্তিকে দেখতেছ? সেই আবু জাহেল থেকে তােমার হক আদায় করে দিতে পারবে। তার কাছে যাও।

লােকটি রাসূল (ﷺ)'র কাছে গিয়ে বলতে লাগল, হে আল্লাহর বান্দা! আবুল হাকাম ইবনে হেশাম আমার হক দিচ্ছেনা, আমি একজন গরীর অসহায় মুসাফির। আমি ঐ কওমের কাছে আমার হক আদায়ের ব্যাপারে সাহায্য প্রার্থনা করেছি কিন্তু তারা আপনার দিকেই ইঙ্গিত করেছে। অর্থাৎ আপনিই নাকি তার থেকে আমার হক উসূল করে দিতে পারবেন।

সুতরাং তার থেকে আমার প্রাপ্য উসূল করে দিন, আল্লাহ আপনার উপর দয়া করবেন। তিনি বললেন, আমি এক্ষুনি তার কাছে যাচ্ছি। এই বলে তিনি যাচ্ছিলেন আর কুরাইশরা। একজন ব্যক্তিকে বলল, তুমি পিছে পিছে গিয়ে দেখ তার কি অবস্থা হয়। রাসূল (ﷺ) আবু জাহেলের ঘরে গিয়ে দরজায় করাঘাত করলে ভিতর থেকে সে বলল কে? তিনি উত্তর দিলেন, আমি মুহাম্মদ, বাইরে এসাে, এবং আমার কথা শুন। আবু জাহেল বাইরে আসলে ভয়ে তার চেহারা হলুদ বর্ণের হয়ে গিয়েছিল। তিনি তাকে বললেন, তুমি এই গরীব মুসাফির ব্যক্তির হক দিচ্ছনা কেন? সে বলল, আচ্ছা দিচ্ছি, আপনি দাঁড়ান আমি নিয়ে আসছি। সে ভিতরে গিয়ে মূল্য এনে সেই মুসাফিরের হাতে অর্পন করলে তিনি মুসাফিরকে বিদায় দিয়ে চলে আসেন।

সেই মুসাফির পুণরায় মজলিশে এসে বলল, আল্লাহ তাকে উত্তম প্রতিদান দান করুন যিনি আমার হক উসূল করে দেন। ইত্যবসরে পিছে পিছে যাওয়া ব্যক্তি এসে পড়ল। উপস্থিত লােকেরা তার কাছে জিজ্ঞেস করল তাঁর কি হল? সে বলল, আমি আশ্চার্যজনক দৃশ্য দেখেছি। মুহাম্মদ যখন দরজায় করাঘাত করলেন তখন আবু জাহেল এমন অবস্থায় আসল যেন ভয়ে শরীরে প্রাণই ছিলনা। তিনি তাকে বললেন, তার হক আদায় করে দাও। সে বলল, যা, দিচ্ছি আপনি একটু অপেক্ষা করুন, এক্ষুনি দিচ্ছি। সুতরাং একটু পরেই সে তার হক আদায় করে দিল।

এখনাে তাদের কথা শেষ হয়নি আবু জাহেল এসে গেল। উপস্থিত লােকেরা বলল, খােদার শপথ, তােমাকে এরূপ ভীত হতে আমরা কখনাে দেখিনি। আবু জাহেল বলল, খােদার শপথ তিনি যখন দরজায় করাঘাত করলেন এবং আমি তাঁর শব্দ শুনি তখন আমার মন ভয়ে কাঁপতে লাগল। বাইরে এসে দেখি তাঁর মাথার উপর একটি বিরাট শক্তিশালী উট। এরূপ বক্ষ, গর্দান ও দাঁত বিশিষ্ট উট আমি কখনাে দেখিনি। খােদার কসম, আমি যদি অস্বীকার করতাম তবে সেই উট আমাকে খেয়ে ফেলতাে। 84
_____________________________
৮৪. আবু নঈম ইস্পাহানী (رحمة الله) (৪৩০হি.), দালায়েলুন নবুয়ত, উর্দু, নয়া দিল্লী, পৃ:১৮৪

জিন শয়তান থেকে নিরাপদ লাভ 
____________________
জিন শয়তান থেকে নিরাপদ লাভ 

❏ হযরত আবু হােরাইরা (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত, নবী করিম (ﷺ) এরশাদ করেন, এক ভয়ানক শয়তান জিন আজ রাতে আমার উপর প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা চালায় যেন আমার নামাযে বিঘ্ন ঘটে। আল্লাহ আমাকে তার উপর ক্ষমতা প্রদান করেন ফলে আমি তাকে চেপে ধরেছি এবং মসজিদের স্তম্ভে বেঁধে রাখতে চেয়েছি যাতে সকালে সবাই তাকে দেখবে কিন্তু হযরত সােলাইমান (عليه السلام)'র এই দোয়া:

হে প্রভু! আমাকে ক্ষমা করুন এবং আমাকে এমন ক্ষমতা দান করুন যা আমার পরে অন্য কেউ পাবেনা। (সূরা সা’দ, আয়াত ৩৫)

আমার মনে পড়লে আমি তাকে ছেড়ে দিই আর সে ব্যর্থ হয়ে পালিয়ে যায়। 85
_____________________________
৮৫. আবু নঈম ইস্পাহানী (رحمة الله) (৪৩০হি.), দালায়েলুন নবুয়ত, উর্দু, নয়া দিল্লী, পৃ:৩৩০

দোয়া কবুল হওয়া তাৎক্ষনিক দোয়ার ফল
____________________
দোয়া কবুল হওয়া তাৎক্ষনিক দোয়ার ফল

❏ ইমাম বায়হাকী (رحمة الله) হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মসউদ (رضي الله عنه) থেকে বর্ণনা করে, তিনি বলেন, একদা রাসূল (ﷺ)'র নিকট একজন মেহেমান এসেছিলেন, তিনি তাঁর কোন এক স্ত্রীর কাছে কিছু খাবারের জন্য পাঠালেন। কিন্তু কারাে কাছে কোন খাবার ছিলনা। তখন তিনি দোয়া করলেন,

اللهم انى اسئلك من فضلك ورحمتك فانه لايملكها الا انت

হে আল্লাহ আমি আপনার কাছে আপনার দয়া ও মেহেরবাণী প্রার্থনা করছি। কারণ আপনি ছাড়া কেউ সক্ষম নয়। এই দোয়ার পর তাঁর কাছে ভূনা ছাগল হাদিয়া আসলে তিনি বলেন,

 الرحمة تنظر ونحن االله فضل من هذه

ইহা আল্লাহর ফযল, আমরা এই রহমতের অপেক্ষায় ছিলাম। 86
_____________________________
৮৬. ইমাম সুয়ূতী, জালাল উদ্দিন সুয়ূতী (رحمة الله) (৯১১হি.), আল খাসায়েসুল কুবরা, আরবী, বৈরুত, খণ্ড:২য় পৃ:২৭৯

দোয়ায় রােগ মুক্তি
____________________
দোয়ায় রােগ মুক্তি

❏ ইমাম হাকেম, বায়হাকী ও আবু নঈম (رحمة الله) হযরত আলী (رضي الله عنه) থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, আমি একবার অসুস্থ হলে রাসূল (ﷺ) আমাকে দেখতে আসলেন। আর আমি প্রার্থনা করতেছি যে, হে আল্লাহ! যদি আমার মৃত্যু আসন্ন হয় তবে আমাকে এই রােগ থেকে মুক্তি দিন আর যদি বিলম্বে হয় তবে আমাকে আরােগ্য দান করুন। আর যদি এই অসুস্থতা পরীক্ষা স্বরূপ হয় তবে আমাকে ধৈর্য ধারণ করার শক্তি দিন। তখন রাসূল (ﷺ) এই দোয়া করলেন,

 عافه اللهم اشفه اللهم

হে আল্লাহ! তাকে শেফা ও সুস্থতা দান করুন। তারপর তিনি আমাকে বললেন, তুমি দাঁড়াও, সাথে সাথে আমি দাঁড়িয়ে গেলাম। এরপর থেকে আজ পর্যন্ত ঐ রােগ আর হয়নি। (ইমাম হাকেম হাদিসটিকে বিশুদ্ধ বলেছেন) 87
_____________________________
৮৭. ইমাম সুয়ূতী, জালাল উদ্দিন সুয়ূতী (رحمة الله) (৯১১হি.), আল খাসায়েসুল কুবরা, আরবী, বৈরুত, খণ্ড:২য় পৃ:২৭৯

❏ হযরত সা’দ (رضي الله عنه)’র জন্য দোয়া ইমাম ইবনে আসাকের (رحمة الله) হযরত আবু বকর সিদ্দিক (رضي الله عنه) থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, আমি নবী করিম (ﷺ) কে হযরত সা’দ ইবনে আবি ওয়াক্কাস (رضي الله عنه)'র জন্য এরূপ দোয়া করতে শুনেছি-

হে আল্লাহ! আপনি সা’দের তীরকে সােজা রাখুন অর্থাৎ যেন লক্ষ্যবস্তু ভুল না হয়, তার দোয়া কবুল করুন আর তাকে আপনি ভালবাসুন। 88
_____________________________
৮৮. ইমাম সুয়ূতী, জালাল উদ্দিন সুয়ূতী (رحمة الله) (৯১১হি.), আল খাসায়েসুল কুবরা, আরবী, বৈরুত, খণ্ড:২য় পৃ:২৮০

এরপর থেকে তিনি মুস্তাজাবুত দাওয়াত হিসেবে প্রসিদ্ধ লাভ করেছিলেন। তাঁর দোয়া কবুলের অনেক ঘটনা ইমাম সুয়ূতী (رحمة الله) এই হাদিসের পরে বর্ণনা করেছেন। কলেবর বৃদ্ধির ভয়ে তা উল্লেখ করা হলনা। -লেখক

❏ হযরত আনাস (رضي الله عنه)'র জন্য দোয়া ইমাম বুখারী ও মুসলিম (رحمة الله) হযরত আনাস (رضي الله عنه) থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, নবী করিম (ﷺ) আমার জন্য এই বলে দোয়া করেন,

হে আল্লাহ! আনাসের ধন-দৌলত, সন্তান-সন্ততিও বৃদ্ধি করুন আর তাঁর রিযিকে বরকত দান করুন।

হযরত আনাস (رضي الله عنه) বলেন, আমার অনেক ধন-সম্পদ, ছেলে ও নাতী মিলে প্রায় একশ। তিনি আরাে বলেন, আমার কন্যা আমেনা বলেছে যে, বাসরায় হাজ্জাজের আগমণের পূর্ব পর্যন্ত আমার বংশের থেকে একশত উনত্রিশ জনকে দাফন করা হয়েছে।

❏ ইমাম তিরমিযি ও বায়হাকী (رحمة الله) হযরত আবুল আলিয়া (رضي الله عنه) থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, হযরত আনাস (رضي الله عنه)’র একটি বাগান ছিল- যা বছরে দু'বার ফল দিত আর তাতে মেশকের ন্যায় এক প্রকারের সুগন্ধি ছিল।

অপর বর্ণনায় আছে, রাসূল (ﷺ) তার দীর্ঘায়ুর জন্য দোয়া করেছিলেন ফলে তিনি ৯১হি. সনে নিরান্নব্বই বছর বয়সে ইন্তেকাল করেন। 89
_____________________________
৮৯. ইমাম সুয়ুতী, জালাল উদ্দিন সুয়ূতী (رحمة الله) (৯১১হি.), আল খাসায়েসুল কুবরা, আরবী, বৈরুত, খণ্ড:২য় পৃ:২৮৬

দৃষ্টিশক্তি ফেরৎ
____________________
দৃষ্টিশক্তি ফেরৎ

❏ ইমাম বুখারী (তারীখ গ্রন্থে), ইমাম বায়হাকী ও আবু নঈম (رحمة الله) হযরত ওসমান ইবনে হানিফ (رضي الله عنه) থেকে বর্ণনা করেন, একজন অন্ধ ব্যক্তি নবী করিম (ﷺ) এর নিকট এসে আরজ করল, আমার দৃষ্টিশক্তি ফেরৎ পাওয়ার জন্য আপনি আল্লাহর কাছে দোয়া করুন। তিনি বললেন, তুমি যদি চাও তবে পরকালের জন্য রেখে দাও আর এটাই হবে তােমার জন্য অধিক কল্যাণকর। আর যদি এক্ষুনি চাও, তবে আমি আল্লাহর কাছে দোয়া করবাে, সে বলল, আপনি দোয়া করুন। তিনি বললেন, অজু করে এসাে। সে উত্তমভাবে অজু করে দু'রাকাত নামায পড়লে তাকে নিম্নোক্ত দোয়া শিখিয়ে দেন

اللهم انى اسئلك واتوجه اليك بنيك محمد صلى االله عليه وسلم نبى الرحمة يا محمد انى اتوجه بك الى ربى فى حاجتى هذه فيقضيها لى اللهم شفعه فى -

হে আল্লাহ! আমি আপনার কাছে প্রার্থনা করছি এবং আপনার রহমতের নবী মুহাম্মদ (ﷺ)’র উসিলায় আপনার শুভ দৃষ্টি কামনা করছি। হে মুহাম্মদ(ﷺ)! আমি আপনার শুভ দৃষ্টি কামনা করছি। আমার প্রভুর ব্যাপারে আমার এই প্রয়ােজনে সুতরাং যেন আমার দোয়া কবুল করা হয়। হে আল্লাহ! আপনি তার সুপারিশ আমার বেলায় কবুল করুন। লােকটি এরশাদ মােতাবেক দোয়া করলে তার দৃষ্টিশক্তি ফেরৎ পেল।” 90
_____________________________
৯০. ইমাম সুয়ূতী, জালাল উদ্দিন সুয়ুতী (رحمة الله) (৯১১হি.), আল খাসায়েসুল কুবরা, আরবী, বৈরুত, খণ্ড:২য় পৃ:৩৪৬।

হযরত আবু হােরায়রা (رضي الله عنه)’র মায়ের ইসলাম গ্রহণ
____________________
হযরত আবু হােরায়রা (رضي الله عنه)’র মায়ের ইসলাম গ্রহণ

❏ ইমাম মুসলিম মুসলিম শরীফে হযরত আবু হােরাইরা (رضي الله عنه) থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, পৃথিবীর প্রত্যেক মু'মিন নর-নারী আমাকে ভালবাসে। রাবী বলেন, আমি তাঁকে জিজ্ঞেস করলাম আপনি এটা কিভাবে বুঝলেন? তিনি বললেন, আমি সর্বদা আমার মাকে ইসলামের দাওয়াত দিতাম, কিন্তু তিনি গ্রহণ করতেন না। আমি রাসূলাল্লাহ (ﷺ)কে আরজ করলাম, আপনি আমার মাকে ইসলাম গ্রহণের তাওফিক হওয়ার জন্য আল্লাহর দরবারে দোয়া করুন। তখন তিনি দোয়া করলেন। আমি ঘরে আসলে আমার মা তাওহীদ ও রেসালতের শাহাদত দেন অর্থাৎ তিনি ইসলাম কবুল করলেন।

আমি খুশী হয়ে পুণরায় নবী করিম (ﷺ) এর দরবারে এসে বললাম, ইয়া রাসূলাল্লাহ(ﷺ)! আল্লাহ তায়ালা আপনার দোয়া কবুল করেছেন আর আবু হােরাইরা’র মাকে ইসলামের দিকে হেদায়েত করেছেন। এখন একটু দোয়া করুন আমাকে এবং আমার মাকে তাঁর বান্দাগণের অন্তরে যেন প্রিয় করে দেন আর তাঁর বান্দাগণের ভালবাসা যেন আমাদের অন্তরে প্রবেশ করে দেন। অতঃপর নবী করিম এ দোয়া করলেন,

اللهم حبب عبيدك هذا وامه الى عبادك المؤمنين وحببهم اليها

হে আল্লাহ! আমাকে, আবু হােরাইরা ও তার মাকে আপনার মুমিন বান্দাগণের নিকট প্রিয় করে দিন আর ওরা দু’জনের অন্তরে ঈমানদারগণের ভালবাসা সৃষ্টি করে দিন।

আবু হােরাইরা (رضي الله عنه) এই দোয়ার পর থেকে এমন কোন মু'মিন সম্পর্কে আমার জানা নেই যিনি আমাকে ভালবাসে না আমি তাকে ভালবাসি না।” 91
_____________________________
৯১. ইউসূফ নাবহানী (رحمة الله) (১৩৫০হি.), হুজ্জাতুল্লাহি আলাল আলামিন, উর্দু, গুজরাট, খণ্ড:২য় পৃ:১৯৫

রাসূল (ﷺ) এর উসিলায় বৃষ্টি
____________________
রাসূল (ﷺ) এর উসিলায় বৃষ্টি

❏ ইবনে আসাকের স্বীয় তারীখে জালহিমা ইবনে উরফুতা (رضي الله عنه) বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, আমি মক্কায় আগমণ করেছি এসময় মক্কায় অনাবৃষ্টির কারণে কুরাইশ লােকেরা বলতে লাগল, হে আবু তালেব! উপত্যকায় বড় দুর্ভিক্ষ চলছে, মানুষ অনাহারে মরে যাচ্ছে, আসুন বৃষ্টির জন্য দোয়া করি।

আবু তালেব বের হলেন, তার সাথে এমন একজন সুন্দর বালক ছিল যেন কাল মেঘ সরে সূর্য আলােকিত হল। তার চতুর্দিকে ছােট ঘােট আরাে বালক ছিল। আবু তালেব তাঁর হাত ধরে বায়তুল্লাহ’র সাথে ঠেস দিয়ে স্বীয় আঙ্গুল দিয়ে ঐ বালককে স্পর্শ করল। এ সময় আকাশে একটুকরা মেঘও ছিলনা। কিন্তু হঠাৎ চতুর্দিক থেকে মেঘ এসে গেল এবং ভারী বৃষ্টিপাত হল আর উপত্যকা পানিতে ভরে গেল। শহর-গ্রাম সতেজতা লাভ করল। এই ঘটনা সম্পর্কে আবু তালেব বলেন,

للارامل عصمة اليتامى شمال – بوجهه الغمام يستسقى وابيض

يلوذبه الهلاك من ال هاشم – فهم عنده فى نعمة وفواضل

অর্থ: তাঁর চেহারার আলােতে মেঘও আলােকিত হয়। তিনি ইয়াতীমের আশ্রয়স্থল, বিধবাদের সংরক্ষক।

ধ্বংসের সময় কুরাইশগণ তাঁর উসিলা গ্রহণ করতেন এবং তাঁর থেকে নিয়ামত ও ফযিলত অর্জন করতেন। 92
_____________________________
৯২. ইমাম সুয়ূতী, জালাল উদ্দিন সুয়ূতী (رحمة الله) (৯১১হি.), আল খাসায়েসুল কুবরা, আরবী, বৈরুত, খণ্ড:১ম পৃ:১৪৬।

শুধু সৈন্যদের উপর বৃষ্টিপাত হওয়া 
____________________
শুধু সৈন্যদের উপর বৃষ্টিপাত হওয়া

❏ ইবনে খুযাইমা, ইবনে হিব্বান, বায়হাকী ও আবু নঈম (رحمة الله) হযরত ইবনে আব্বাস (رضي الله عنه) থেকে বর্ণনা করেন, (হাকেম উহা বিশুদ্ধ বলেছেন) কেউ হযরত ওমর (رضي الله عنه)কে বলল, আপনি আমাদেরকে ‘সায়াত উসরাত সম্পর্কে তথা ভীষণ কষ্টের সময় সম্পর্কে বলুন। হযরত ওমর (رضي الله عنه) বলেন, আমরা প্রচণ্ড গরমের মৌসুমে তাবুক অভিযানে রওয়ানা হলাম। আমরা এমন এক জায়গায় অবতরণ করলাম যেখানে পিপাসায় এমন কাতর হলাম, মনে হল যেন আমার গর্দান ভেঙ্গে পড়বে। পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে পৌঁছল যে, কেউ কেউ উট যবেহ করে উটের গর্দান চিপে পানি পান করে বাকীগুলাে তাদের বক্ষে মালিশ করবে।

হযরত আবু বকর (رضي الله عنه) আরজ করলেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ(ﷺ)! আল্লাহ তায়ালা আপনার দোয়ায় বারংবার কল্যাণ দান করেছেন। আল্লাহর জন্য দু’হাত তুললেন। তিনি হাত তখনাে নামান নি আকাশে মেঘ আসল এবং বৃষ্টিপাত আরম্ভ হল। সৈন্যদের যেসব পাত্র ছিল তারা সব ভরে নিল। আমরা দেখলাম যে, শুধু সৈন্যদের উপরই বৃষ্টিপাত হয়েছে অন্য কোথাও নয়। 93
_____________________________
৯৩. ইমাম সুয়ূতী, জালাল উদ্দিন সুয়ূতী (رحمة الله) (৯১১হি.), আল খাসায়েসুল কুবরা, আরবী, বৈরুত, খণ্ড:১ম পৃ:৪৫৭

দোয়া কবুল হওয়া বৃষ্টিপাত হওয়া
____________________
দোয়া কবুল হওয়া বৃষ্টিপাত হওয়া:

❏ হযরত আনাস (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল সা’র যুগে একবার মদীনাবাসী অনাবৃষ্টির দরুন দুর্ভিক্ষে পতিত হল। ঐ সময় কোন এক জুমার দিনে নবী করিম (ﷺ) খুতুবা দিচ্ছিলেন। তখন এক ব্যক্তি উঠে দাঁড়িয়ে বলল- ইয়া রাসূলাল্লাহ! অনাবৃষ্টির কারণে ঘােড়াগুলাে ধ্বংস হয়ে গেল, বকরীগুলাে নষ্ট হয়ে গেল। আল্লাহর দরবারে বৃষ্টির জন্য দোয়া করুন। রাসূল (ﷺ) তৎক্ষনাৎ দু'হাত তুলে দোয়া করলেন। হযরত আনাস (رضي الله عنه) বলেন তখন আকাশ আয়নার মত পরিস্কার ছিল। অর্থাৎ মেঘের কোন চিহ্নই ছিলনা। হঠাৎ মেঘ সৃষ্টিকারী বাতাস বইতে শুরু করল এবং মেঘ ঘনিভূত হয়ে গেল। তারপর প্রবল বারিপাত শুরু হল যেন আকাশ তার দ্বার উন্মুক্ত করে দিল। আমরা (সালাত শেষে মসজিদ থেকে বের হয়ে) পানি ভেঙ্গে বাড়ী পৌঁছলাম। পরবর্তী শুক্রবার পর্যন্ত অনবরত বৃষ্টিপাত হল। ঐ শুক্রবার জুমা’র সময় ঐ ব্যক্তি বা অন্য কেউ দাঁড়িয়ে বলল, ইয়া রাসূলাল্লাহ(ﷺ)! (অতিবৃষ্টির কারণে) বাড়ীঘর ধ্বংস হয়ে গেল। বৃষ্টি বন্ধের জন্য আল্লাহর দরবারে দোয়া করুন। তখন রাসূল (ﷺ) মুচকি হাঁসলেন এবং বললেন, হে আল্লাহ! আমাদের আশেপাশে বৃষ্টি হউক, আমাদের উপর নয়। হযরত আনাস (رضي الله عنه) বলেন, তখন আমি দেখলাম, মদীনার আকাশ থেকে মেঘমালা চতুর্দিক সরে গেছে আর মদীনা যেন মেঘমুক্ত হয়ে মুকুটের ন্যায় শােভা পাচ্ছে। 94
_____________________________
৯৪. ইমাম বুখারী, মুহাম্মদ ইবনে ইসমাঈল (رحمة الله) (২৫৬হি.), সহীহ বুখারী শরীফ, আরবী, ইউপি, ইন্ডিয়া, পৃ:৫০৬, হাদিস নং ৩৩২৯

কতিপয় কাফেরের বিরুদ্ধে দোয়া
____________________
কতিপয় কাফেরের বিরুদ্ধে দোয়া

❏ হযরত আব্দুল্লাহ (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করিম (ﷺ) কাবা’র ছায়ায় নামাজ আদায় করছিলেন। তখন আবু জাহেল ও কুরাইশদের কিছু লােক পরামর্শ করে। সেই সময় মক্কার বাইরে একটি উট যবেহ হয়েছিল। কুরাইশরা লােক পাঠিয়ে সেখান থেকে নাড়ি-ভূড়ি এনে তারা তা নবী করিম (ﷺ) এর পিঠে ঢেলে দিল। তারপর ফাতিমা (رضي الله عنه) এসে এটি তাঁর থেকে সরিয়ে দিলেন। এ সময় নবী (ﷺ) তাদের বিরােদ্ধে দোয়া করেন, ইয়া আল্লাহ! আপনি কুরাইশদের ধ্বংস করুন। ইয়া আল্লাহ! আপনি কুরাইশদের ধ্বংস করুন। ইয়া আল্লাহ! আপনি কুরাইশদের ধ্বংস করুন। আবু জাহেল, ইবনে হিশাম, উত্বা ইবনে রবীয়া, শায়বা ইবনে রবীয়া, ওয়ালিদ ইবনে ওত্বা, ইবাই ইবনে খালফ এবং উহ্বা ইবনে আমি মুআইত (এদেরকে ধ্বংস করুন)।

বর্ণনাকারী আব্দুল্লাহ (رضي الله عنه) বলেন, এরপর আমি তাদের সকলকে বদরের একটি পরিত্যাক্ত কূপে নিহত দেখেছি। আবু ইসহাক বলেন, আমি সপ্তম ব্যক্তির নাম ভুলে গিয়েছি। শু’বা বলেন, ইমাইয়্যা অথবা উবাই। তবে সহীহ হল উমাইয়্যা। 95
_____________________________
৯৫. ইমাম বুখারী, মুহাম্মদ ইবনে ইসমাঈল (رحمة الله) (২৫৬হি.), সহীহ বুখারী শরীফ, আরবী, ইউপি, ইন্ডিয়া,

পৃ:৪১১ হাদিস নং ২৭৩৩।

শেফা দান
____________________
শেফা দান

❏ আবু নঈম (رحمة الله) ও বায়হাকী (رحمة الله) হযরত আনাস (رضي الله عنه) থেকে বর্ণনা করেন, একদা আবু তালেব অসুস্থ হন। নবী করিম (ﷺ) সঙ্গে তার সেবা করার জন্য তাশরীফ নিলেন। চাচা বললেন, হে ভাতিজা! তুমি যে প্রভুর এবাদত কর তাঁর কাছে আমার সুস্থতার জন্য দোয়া কর। তিনি বললেন, ইয়া আল্লাহ! আমার চাচাকে শেফা দান করুন। সাথে সাথে আবু তালেব এমনভাবে সুস্থ হয়ে দাঁড়িয়ে যান যেন রশির বাঁধ খুলে দেয়া হল।

আবু তালেব বললেন, হে ভাতিজা! যে প্রভু’র তুমি এবাদত কর তিনি তােমার কথা কবুল করেন। তখন নবী করিম (ﷺ) কে বললেন, চাচা! আপনিও যদি আল্লাহর আনুগত্য হন। তবে আপনার কথাও কবুল করবেন। 96
_____________________________
৯৬. ইমাম সুয়ূতী, জালাল উদ্দিন সুয়ূতী (رحمة الله) (৯১১হি.), আল খাসায়েসুল কুবরা, আরবী, বৈরুত, খণ্ড:১ম পৃ:২০৭।

হাত মােবারক উত্তোলনের সাথে সাথে বৃষ্টি
____________________
হাত মােবারক উত্তোলনের সাথে সাথে বৃষ্টি

❏ ইমাম ওয়াকেদী (رحمة الله)'র সূত্রে আবু নঈম (رحمة الله) বর্ণনা করেন, সালমানের প্রতিনিধি দল আগমন করল দশম হিজরি শাওয়াল মাসে। নবী করিম (ﷺ) এ তাদেরকে তাদের দেশ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করে বলেন,

তােমাদের শহরের কি অবস্থা? তারা বলল, অনা*বৃষ্টির কারণে দুর্ভিক্ষ চলছে। আপনি আমাদের শহরে বৃষ্টিপাতের জন্য দোয়া করুন। তিনি দোয়া করলেন-

হে আল্লাহ! ওদের শহরে বৃষ্টি দান করুন।

তখন তারা বলল, হে আল্লাহর নবী(ﷺ)! আপনি দোয়ার জন্য হাত তােলার সাথে সাথে প্রচুর বৃষ্টিপাত হয়েছে। একথা শুনে তিনি মুচকি হাসলেন এবং এভাবে উভয় হাত উত্তোলন করেন যাতে তাঁর উভয় বগলের শুভ্রতা প্রকাশিত হয়েছিল।

ওরা আপন শহরে চলে গেল এবং সেখানে গিয়ে দেখে যে, যেদিন যে সময় তিনি দোয়া করেছিলেন ঠিক সেদিন সে সময় সেখানে বৃষ্টি হয়েছিল। 97
_____________________________
৯৭. ইমাম সুয়ূতী, জালাল উদ্দিন সুয়ূতী (رحمة الله) (৯১১হি.), আল খাসায়েসুল কুবরা, আরবী, বৈরুত, খণ্ড:২য় পৃ:৪৭

দোয়া কবুল হওয়া আবু লাহাবের দৃঢ় বিশ্বাস
____________________
দোয়া কবুল হওয়া আবু লাহাবের দৃঢ় বিশ্বাস:

❏ ইমাম বায়হাকী (رحمة الله) ও আবু নঈম (رحمة الله) আবু আকবর (رضي الله عنه) থেকে বর্ণনা করেন যে, লাহাব ইবনে আবু লাহাব অর্থাৎ আবু লাহাবের পুত্র লাহাব নবী করিম (ﷺ) এর সাথে বেয়াদবী মূলক আচরণ করেছিল এবং তাঁকে মন্দ বলেছিল। নবী করিম (ﷺ) দোয়া করলেন اللهم سلط علیه کلیك অর্থাৎ হে আল্লাহ! তার উপর আপনার পক্ষ থেকে একটি কুকুর নিযুক্ত করে দিন।

বর্ণনাকারী বলেন, আবু লাহাব বাণিজ্যের উদ্দেশ্যে সিরিয়ায় কাপড় পাঠাত। সঙ্গে স্বীয় পুত্র, খাদেম ও অন্যান্য কর্মচারীদের প্রেরণ করত এবং সে তাদেরকে বলত- আমি আমার ছেলের ব্যাপারে মােহাম্মদ’র দোয়া’র ভয় পাচ্ছি। তারা তার পুত্রের হেফাযতের সংকল্প করল এবং তাকে যথাযথভাবে সংরক্ষণ করার প্রতিশ্রুতি দিল। তারা (কাফেলা) কোন এক মনযিলে পৌঁছলে আবু লাহাবের ছেলেকে তারা একটি দেয়ালের পাশে করে সরঞ্জাম ও কাপড়-চাদর দিয়ে তাকে ডেকে রাখল। এভাবে দীর্ঘ দিন তারা তাকে হেফাযত করল। একদা হঠাৎ একটি হিংস্র প্রাণী এসে তাকে হত্যা করে চলে গেল। এ খবর আবু লাহাবের কাছে পৌঁছলে সে বলে উঠল- الم اقل لکم اتی اخاف علیه دعوة محمد؟

অর্থাৎ আমি কি তােমাদেরকে বলিনি যে, আমি তার বেলায় মুহাম্মদ’র বদ দোয়া বাস্তবায়নের আশংকা করছি?

❏ অপর বর্ণনায় আছে যে, আবু নঈম (رحمة الله) ও ইবনে আসাকের (رحمة الله) হযরত উরওয়া (رضي الله عنه)´র সূত্রে হেবার ইবনে আসওয়াদ (رحمة الله) থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, আবু লাহাব ও তার পুত্র উতবা। সিরিয়ায় বাণিজ্যের উদ্দেশ্যে যাত্রা করার উদ্দেশ্যে মালামাল প্রস্তুত করল সাথে আমিও আমার মালামাল নিয়ে যাওয়ার মনস্থ করি। উতবা বলল, আমি মুহাম্মদ’র কাছে গিয়ে তার প্রভুর ব্যাপারে তাকে কষ্ট দেবাে। হতভাগা উতবা গেল এবং বলল-

 یا محمد هو یکفر بالذی دنا فتدلی فکان قاب قوسین اوادنی

রাসূল (ﷺ) তার এই বেয়াদবী মূলক আচরণ শুনে বললেন,

للهم ابعث علیه کلبا من کلابك

অর্থ- হে আল্লাহ! আপনার কুকুর সমূহ থেকে একটি কুকুর তার উপর প্রেরণ করুন। তারপর সে ফিরে আসলে তার পিতা তাকে জিজ্ঞেস করল, তুমি মুহাম্মদ কে কি বলেছ আর তিনি তােমাকে কি বলেছেন? তখন সে তার পিতাকে রাসূল (ﷺ) বদ দোয়া'র কথা অবহিত করলে আবু লাহাব বলল, হে আমার প্রিয় বৎস খােদার কসম! মুহাম্মদ এর বদ দোয়া'র ব্যাপারে আমি তােমাকে নিরাপদ মনে করছিনা।

বর্ণনাকারী বলেন, আমরা সিরিয়ার উদ্দেশ্যে রওয়ানা হলাম এবং 'সুরাত’ নামক স্থানে যাত্রা বিরতি করলাম। এই স্থানটি ছিল শহরের কেন্দ্রবিন্দু। আবু লাহাব আমাদেরকে বলল, নিশ্চয় তােমরা আমার বয়স ও অধিকার সম্পর্কে জ্ঞাত আছ। মুহাম্মদ আমার ছেলের বিরুদ্ধে বদ দোয়া করেছেন। আল্লাহর কসম! আমি তার ব্যাপারে নিরাপদ নই। সুতরাং তােমরা তােমাদের মালামাল (পার্শবর্তী) এই গীর্জায় রাখ এবং এর উপর আমার ছেলের জন্য চাদর বিছাও। তাকে মধ্যখানে রেখে তােমরা তার চতুর্দিকে চাদর বিছায়ে শুয়ে যাও। অতঃপর আমরা এরূপই করলাম। মালামালের উপর আবু লাহাবের ছেলে থাকল আমরা তার চারিদিকে ছিলাম। রাতের বেলায় একটি বাঘ এসে আমাদের সকলের ঘ্রাণ নিয়ে নিয়ে খুঁজতে লাগল কিন্তু তাকে পেলনা। হঠাৎ বাঘ লাপ দিয়ে মালামালের উপর উঠে উতবা'র মুখের ঘ্রাণ নিল এবং তাকে দাঁতে কামড়ে ধরে চিড়ে ফেলে, মাথাকে চুর্ণ-বিচুর্ণ করে চলে গেল। এতে লাহাব বলল,

قد واللّٰه عرفت ما کان لینفلت من دعوة محمد

অর্থাৎ খােদার কসম! আমি জানতাম যে, মুহাম্মদ’র দোয়া বৃথা যাবে না। ●98
_____________________________
৯৮. ইমাম সুয়ূতী, জালাল উদ্দিন সুয়ূতী (رحمة الله) (৯১১হি.), আল খাসায়েসুল কুবরা, আরবী, বৈরুত, খণ্ড:১ম পৃ: ২৪৪

দুর্ভিক্ষের জন্য দোয়া
____________________
দুর্ভিক্ষের জন্য দোয়া

❏ ইমাম বুখারী (رحمة الله) ও মুসলিম (رحمة الله) হযরত ইবনে মসউদ (رضي الله عنه) থেকে বর্ণনা করেন, কুরাইশ যখন রাসূল (ﷺ)'র বিরােদ্ধাচরণে সীমালঙ্ঘন এবং ইসলাম গ্রহণে বিলম্ব করতে লাগল তখন তিনি তাদের জন্য এই দোয়া করেন-

 اللهم اعنی علیهم بسبع کسبع یوسف

হে আল্লাহ! তাদের উপর এমন দুর্ভিক্ষ নাযিল কর যেভাবে ইউসুফ (عليه السلام)'র যুগে হয়েছিল। এরপর তারা দুর্ভিক্ষে পতিত হল। দুর্ভিক্ষ তাদের সবকিছু শেষ করে দিল এমনকি মৃত জন্তু খাওয়ার উপক্রম হল। ক্ষুধার তাড়নায় অস্থির হয়ে তারা আকাশ ধূসর বর্ণের দেখছিল। অতঃপর তারা দোয়া করল যে, হে আমাদের প্রভূ! আমাদের উপর থেকে এই আযাব দূরীভূত করে দিন আমরা মু'মিন হবাে।

রাসুল (ﷺ) কে বলা হল যে, যদি তাদের থেকে আযাব তুলে নেওয়া হয় তবে তারা পুণরায় পূর্বের অবস্থায় ফিরে যাবে। তারপর তাদের থেকে তুলে নেওয়া হলে তার পুণরায় পূর্বাবস্থায় ফিরে গেল অর্থাৎ কাফির হয়ে গেল। তখন পরবর্তীতে বদর যুদ্ধের দিন তাদের থেকে এর বদলা বা প্রতিশােধ নেওয়া হল। ●99
_____________________________
৯৯. ইমাম সুয়ূতী, জালাল উদ্দিন সুয়ূতী (رحمة الله) (৯১১হি.), আল খাসায়েসুল কুবরা, আরবী, বৈরুত, খণ্ড:১ম পৃ: ২৪৬

❏ এ ব্যাপারে আল্লাহ তায়ালা এরশাদ করেন,

 یوتأتی السماء بدخان مبین الخ

অর্থ: আপনি সেই দিনের অপেক্ষা করুন, যখন আকাশ ধুয়ায় ছেয়ে যাবে। যা মানুষকে ঘিরে ফেলবে। এটা যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি। হে আমাদের পালন কর্তা! আমাদের উপর থেকে শাস্তি প্রত্যাহার করুন, আমরা বিশ্বাস স্থাপন করছি। তারা কি করে বুঝবে, অথচ তাদের কাছে এসেছিলেন স্পষ্ট বর্ণনাকারী রাসূল। অতঃপর তারা তাঁকে পৃষ্ঠপ্রদর্শন করে এবং বলে, সেতো উম্মাদ-শিখানাে কথা বলে। আমি তােমাদের উপর থেকে আযাব কিছুটা প্রত্যাহার করব, কিন্তু তােমরা পুণরায় পূর্বাবস্থায় ফিরে যাবে। যেদনি আমি প্রবলভাবে ধৃত করব, সেদিন পরােপুরি প্রতিশােধ গ্রহণ করবই। (সূরা দোখান, আয়াত ১০-১৬)

দোয়ায় বৃষ্টিপাত হওয়া
____________________
দোয়ায় বৃষ্টিপাত হওয়া:

❏ ইবনে সা’দ (رحمة الله) ও আবু নঈম (رحمة الله) ওয়াকেদী (رحمة الله) থেকে বর্ণণা করেন, রাসূল (ﷺ) তাবুক যুদ্ধ থেকে ফিরে আসার পর নবম হিজরিতে ‘বনী মুররাহ' এর প্রতিনিধি দল তাঁর নিকট আগমন করেন। তিনি তাদের দেশ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলে তারা বলল, অনাবৃষ্টির কারণে আমাদের মূল ও নিখুঁত মাল সমূহ শেষ হয়ে গিয়েছে। আপনি আল্লাহর কাছে দোয়া করুন। তিনি এই বলে দোয়া করলেন, اللهم اسقهم الغیث হে আল্লাহ! তাদেরকে বৃষ্টি দিয়ে সতেজতা দান করুন।

এরপর তারা আপন এলাকায় চলে গেল। যখন তারা তাদের শহরে পৌঁছল তখন সেই দিন সেখানে বৃষ্টিপাত হয়েছিল। রাসূল (ﷺ) যখন বিদায় হজ্বের প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন তখন ওখানকার একজন ব্যক্তি এসে বলল, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমরা আমাদের শহরে গিয়ে দেখি যেদিন আপনি দোয়া করেছিলেন ঠিক সেদিন বৃষ্টিপাত হয়েছিল। আমরা ক্ষেতে পানি জমা করে রাখলাম। পরেন দিন যাবৎ বৃষ্টিপাত হয়েছিল। ঘাস এমনভাবে জন্মাল ও বাড়ল যে, উট বসে বসে ঘাস খেত আর বকরীগুলাে ঘরের আশে পাশে চরে পেট ভরে নিত এবং ঘরের পাশেই থেকে যেতাে। একথা শুনে তিনি الحمد للّٰه الذی صنع ذالك সমস্ত প্রসংশা ঐ আল্লাহর যিনি এরূপ করেছেন। ●100
_____________________________
১০০. ইমাম সুয়ুতী, জালাল উদ্দিন সুয়ূতী (رحمة الله) (৯১১হি.), আল খাসায়েসুল কুবরা, আরবী, বৈরুত, খণ্ড:২য় পৃ:৪৪

মদীনা শরীফকে মহামারী মুক্ত করা 
____________________
মদীনা শরীফকে মহামারী মুক্ত করা 

❏ ইমাম বুখারী (رحمة الله) ও মুসলিম (رحمة الله) হযরত আয়েশা সিদ্দিকা (رضي الله عنه) থেকে বর্ণনা করেন, নবী করিম (ﷺ) আর যখন মদীনা তাশরীফ নেন তখন মদীনা পৃথিবীর সবচেয়ে বেশী রােগের বিশেষতঃ জ্বর রােগের কেন্দ্র ছিল। তিনি দোয়া করলেন

اللهم بارك لنا في صاعنا ومدنا وصححها لنا وانقل حماها الى الجهفة

হে আল্লাহ! যেভাবে আপনি আমাদেরকে মক্কা মুয়াজ্জমার ভালবাসা দান করেছেন সেভাবে মদীনা মুনাওয়ারা’র ভালবাসা দান করুন কিংবা মদীনার ভালবাসা মক্কার চেয়েও বেশী করে দিন। আমাদের জন্য সা’ ও মুদ-এ বরকত দান করুন এবং আমাদের জন্য মদীনার আবহাওয়াকে স্বাস্থকর করে দিন আর এখানকার জ্বর রােগকে ‘জুহফা” নামক স্থানে। স্থানান্তর করে দিন।

❏ ইমাম বায়হাকী (رحمة الله) হিশাম ইবনে উরওয়া (رضي الله عنه) থেকে বর্ণনা করেন, জাহেলী যুগে মদীনা মুনাওয়ারা রােগ-ব্যধির খ্যাতি ছিল। রাসূল (ﷺ) দোয়া করেন যেন রােগ-ব্যধি ‘জুহফা নামক স্থানে স্থানান্তর করে দেন। ফলে জুহফায় যেসব ছেলে জন্ম গ্রহণ করতে সাবালেগ হওয়ার পূর্বেই জ্বরে আক্রান্ত হয়ে দূর্বল হয়ে পড়তাে। ●101
_____________________________
১০১. ইমাম সুয়ূতী, জালাল উদ্দিন সুয়ূতী (رحمة الله) (৯১১হি.), আল খাসায়েসুল কুবরা, আরবী, বৈরুত, খণ্ড:১ম পৃ:৩১৯

হযরত ওমর (رضي الله عنه)'র ইসলাম গ্রহণ
____________________
হযরত ওমর (رضي الله عنه)'র ইসলাম গ্রহণ

❏ ইবনে সা'দ (رحمة الله) হযরত ওসমান ইবনে আরকাম (رضي الله عنه) থেকে বর্ণনা করেন, নবী করিম (ﷺ) দোয়া করলেন- হে আল্লাহ! ওমর ইবনে খাত্তাব ও আমর ইবনে হিশাম এই দু’জন থেকে যে আপনার কাছে প্রিয়, তাকে দিয়ে দ্বীনে ইসলামকে শক্তিশালী করুন। অতঃপর পরের দিন সকালে হযরত ওমর (رضي الله عنه) ইসলাম গ্রহণ করেন।

❏ হযরত আনাস (رضي الله عنه) বলেন, তিনি বৃহস্পতিবার রাতে এই করেছিলেন, আর শুক্রবার সকালে হযরত ওমর ইসলাম গ্রহণ করেন। ●102
_____________________________
১০২. ইউসুফ নাবহানী (رحمة الله) (১৩৫০ হি), হুজ্জাতুল্লাহি আলাল আলামীন, উর্দু, গুজরাট, খণ্ড ২য়, পৃ. ১৭৯।

ফেরেস্তা কর্তৃক সাহায্য 
____________________
ফেরেস্তা কর্তৃক সাহায্য

❏ ইমাম মুসলিম (رحمة الله) ও বায়হাকী (رحمة الله) হযরত ইবনে আব্বাস (رضي الله عنه) থেকে বর্ণনা করেন, হযরত ওমর (رضي الله عنه) আমাকে বলেছেন যে, বদরের দিন রাসূল (ﷺ) ও মুশরিকদের দিকে তাকিয়ে দেখেন। তাদের সংখ্যা ছিল এক হাজার পক্ষান্তরে তাঁর সাথী ছিলেন মাত্র তিনশ সতের জন।

রাসূল (ﷺ) কিবলামুখী হয়ে উভয় হাত কিবলার দিকে প্রসারিত করে স্বীয় প্রভুকে ডাকতে (দোয়া করতে) লাগলেন। এমনকি তাঁর কাঁধ মােবারক থেকে রুমাল পড়ে যায়। তাঁর অবস্থা দেখে হযরত আবু বকর (رضي الله عنه) গিয়ে তাঁর রুমাল তুলে কাঁধের উপর রাখলেন এবং তাঁর পেছনে গিয়ে দাঁড়িয়ে বললেন, হে আল্লাহর নবী (ﷺ)! আপনি আপনার প্রভুকে শপথ দেওয়াই যথেষ্ট। ●103
_____________________________
১০৩. ইমাম সুয়ুতী, জালাল উদ্দিন সুয়ূতী (رحمة الله) (৯১১হি.), আল খাসায়েসুল কুবরা, আরবী, বৈরুত, খণ্ড:১ম পৃ:৩২৯

আপনার প্রভূ আপনাকে যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন তা অচিরেই পূর্ণ করবেন। তখন আল্লাহ তায়ালা এই আয়াত নাযিল করেন-

অর্থ: তােমরা যখন ফরিয়াদ করতে আরম্ভ করছিলে স্বীয় প্রভুর নিকট তখন তিনি তােমাদের ফরিয়াদের মঞ্জুরী দান করলেন যে, আমি তােমাদিগকে সাহায্য করবাে ধারাবাহিকভাবে আগত হাজার ফেরেস্তার মাধ্যমে। (সূরা আনফাল, আয়াত নং ৯)।

শাহাদত লাভের জন্য দোয়া কামনা 
____________________
শাহাদত লাভের জন্য দোয়া কামনা 

❏ ইমাম বায়হাকী (رحمة الله) ওয়াকেদী (رحمة الله) থেকে বর্ণনা করেন, খায়সামা আবি সা’দ ইবনে খায়সামা (رضي الله عنه) থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, বদর যুদ্ধে অংশগ্রহণের ইচ্ছে থাকা সত্তেও আমাকে সুযােগ দেয়া হলনা। রাসুল (ﷺ) আমার ছেলেকে বদর যুদ্ধে অংশগ্রহণের জন্য সুযােগ দেওয়া হবে কিনা লটারী করা হল। লটারীতে তার নাম আসল। সে যুদ্ধে শরীক হল এবং শাহাদত বরণ করল। পিতা বলেন, আমি আজ রাত আমার ছেলেকে স্বপ্নে দেখেছি যে, সে অত্যন্ত সুন্দর আকৃতিতে আছে এবং জান্নাতের ফল বাগানে ও জান্নাতের নদ-নদীতে ভ্রমণরত আছে। সে আমাকে দেখে বলল, আপনি ও আমার সাথে চলে আসুন যে দুজনেই একসাথে জান্নাতে বসবাস করি। আমার প্রভূ আমার সাথে যেসব ওয়াদা করেছিলেন সবটুকু আমি সত্য পেয়েছি।      

হে আল্লাহর রাসূল! খােদার কসম, আমি জান্নাতে আমার ছেলের সহিত মিলিত হওয়ার প্রত্যাশা রাখি। সুতরাং আল্লাহর কাছে দোয়া করুন যেন তিনি আমাকে শাহাদত ও জান্নাতে তার সাথে মিলিত হওয়ার সুযােগ করে দেন।

অতঃপর রাসূল (ﷺ) তার জন্য দোয়া করেন এবং উহুদ যুদ্ধে অংশগ্রহণ করে শাহাদত বরণ করেন। ●104
_____________________________
১০৪. ইমাম সুয়ূতী, জালাল উদ্দিন সুয়ূতী (رحمة الله) (৯১১হি.), আল খাসায়েসুল কুবরা, আরবী, বৈরুত, খণ্ড: ১ম পৃ: ৩৫৯

পথ ভুলে যাওয়া
____________________
পথ ভুলে যাওয়া

❏ ইমাম বায়হাকী (رحمة الله) হযরত জাবের ইবনে আব্দুল্লাহ (رضي الله عنه) থেকে বর্ণনা করেন, রাসূল (ﷺ) উরাইনার বিশ্বাসঘাতক মুনাফিকদের খোঁজে লােক পাঠান এবং তাদের বিপক্ষে দোয়া করেন-

? اللهم غم علیهم الطریق واجعلها علیهم اضیق من مسك جمل

হে আল্লাহ! তাদের রাস্তা ভুলিয়ে দাও এবং অতঃপর আল্লাহ তায়ালা তাদের পথ ভুলিয়ে দেন ফলে তার ধরা পড়ল এবং হুযূর (ﷺ)’র খেদমতে আনা হল। তাদের হাত, পা কাটা হল এবং চোখ তুলে ফেলা হল। ●105
_____________________________
১০৫. ইমাম সুয়ূতী, জালাল উদ্দিন সুয়ূতী (رحمة الله) (৯১১হি.), আল খাসায়েসুল কুবরা, আরবী, বৈরুত, খণ্ড: ১ম পৃ: ৩৯৭

বিচারকের যােগ্য বানানাে 
____________________
বিচারকের যােগ্য বানানাে

❏ ইমাম বায়হাকী (رحمة الله) ও হাকেম (رحمة الله) হযরত আলী (رضي الله عنه) থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, রাসূল (ﷺ) আমাকে কাযী নিয়ােগ দিয়ে ইয়েমেনে প্রেরণ করেন। আমি বললাম, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমি একজন যুবক। আপনি আমাকে বিচারক বানিয়ে পাঠাচ্ছেন অথচ আমার জানা নাই যে, বিচার কিভাবে করতে হয়?

তখন নবী করিম (ﷺ) স্বীয় হাত মােবারক আমার বক্ষে রেখে এই দোয়া করলেন-

 اللهم اهد قلبه وثبت لسانه

হে আল্লাহ! তার অন্তরকে হেদায়েত দান করুন আর তার জিহ্বা কে সুদৃঢ় রাখুন। হযরত আলী (رضي الله عنه) খােদার শপথ করে বলেন, দু’ব্যক্তির মধ্যে ফয়সালা করতে আমি কখনাে সন্দেহ পােষণ করিনি। ●106
_____________________________
১০৬. ইমাম সুয়ূতী, জালাল উদ্দিন সুয়ূতী (رحمة الله) (৯১১হি.), আল খাসায়েসুল কুবরা, আরবী, বৈরুত, খণ্ড:২য় পৃ:১২২

যুদ্ধ জয়ের দোয়া
____________________
যুদ্ধ জয়ের দোয়া

❏ ইমাম মুসলিম (رحمة الله) ও বায়হাকী (رحمة الله) হযরত ইবনে আব্বাস (رضي الله عنه) থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, হযরত ওমর (رضي الله عنه) আমাকে বলেছেন, বদর যুদ্ধের দিন নবী করিম (ﷺ) মুশরিক সৈন্যদের এক হাজারের অধিক অথচ মুসলমানের সংখ্যা ছিল তিনশত উনিশ জন দেখে কেবল মুখী হয়ে হাত তুলে আল্লাহর দরবারে আকুতি-মিনতি করে দোয়া করতে লাগলেন। এমনকি তাঁর চাদর মােবারক কাঁধ থেকে পড়ে গেল। হযরত আবু বকর (رضي الله عنه) চাদর মােবারক তুলে নিয়ে বললেন, হে আল্লাহর নবী! আপনি তাে আল্লাহর দরবারে যথেষ্ট দোয়া ও মিনতি করেছেন এই বলে তিনি তাঁর চাদর মােবারক কাঁধে তুলে দিয়ে তাঁকে বুকে জড়িয়ে ধরলেন। ●107
_____________________________
১০৭. ইউসূফ নাবহানী (رحمة الله) (১৩৫০হি.), হুজ্জাতুল্লাহি আলাল আলামীন, উর্দু, গুজরাট, খণ্ড: ২য় পৃ: ২০৪

❏ তখন এই আয়াত নাযিল হয়-      

স্মরণ করুন, যখন তােমরা স্বীয় পালন কর্তার সাহায্য প্রার্থনা করছিলে, তখন তিনি তােমাদের প্রার্থনা কবুল করে বলেন, আমি একহাজার অনুসরণকারী ফেরেস্তার দ্বারা তােমাদের সাহায্য করবাে। (সূরা আনফাল, আয়াত নং ৯)

জ্বর থেকে মুক্তি পাওয়ার দোয়া 
____________________
জ্বর থেকে মুক্তি পাওয়ার দোয়া 

❏ ইমাম বায়হাকী (رحمة الله) হযরত আনাস (رضي الله عنه) থেকে বর্ণনা করেন, নবী করিম (ﷺ) হযরত আয়েশা সিদ্দিকা (رضي الله عنه)'র কাছে তাশরীফ নিলেন তখন হযরত আয়েশা সিদ্দিকা (رضي الله عنه) জ্বরে আক্রান্ত ছিলেন এবং জ্বরকে মন্দ বলতেছেন। নবী করিম (ﷺ) এরশাদ করেন, জ্বরকে গালি দিওনা সে তো আদিষ্ট হয়েছে। হ্যাঁ, যদি তুমি চাও তবে তােমাকে এমন দোয়া শিখিয়ে দেবাে তুমি এই দোয়া পড়লে আল্লাহ তােমার থেকে এই জ্বর দূরীভূত করে দেবেন। তিনি আরজ করলেন, আমাকে শিখিয়ে দিন। তখন তিনি বললেন- তুমি এই দোয়া পড়া,

اللهم ارحم جلدى الرقيق وعظمى الدقيق من شدة الحريق يا ام ملدم ان كنت امنت باللّٰه العظيم فلا تصدعى الرأس ولا تنتني الفم ولاتأكلي اللحم ولاتشربي الدم ولاتحولی الى من اتخذ مع اللّٰه الها اخر

হে আল্লাহ! আমার হাল্কা-পাতলা চামড়া ও চিকন হাড়ি কে প্রচন্ড জ্বরের জ্বালা ও ব্যাথা দয়া করে মুক্তি দান করুন। হে জ্বর! তুমি যদি মহান আল্লাহর উপর ঈমান রাখ তবে মাথায় ব্যাথা দিওনা, মুখে দুর্গন্ধ সৃষ্টি করােনা আর রক্ত ও মাংস পানাহার করােনা এবং তুমি মুশরিকদের কাছে চলে যাও।

❏ হযরত আনাস (رضي الله عنه) বলেন,

হযরত আয়েশা (رضي الله عنه) এই দোয়া পাঠ করলে তাঁর জ্বর চলে গেল। ●108
_____________________________
১০৮. ইউসূফ নাবহানী (رحمة الله) (১৩৫০হি.), হুজ্জাতুল্লাহ আলাল আলামীন, উদু, গুজরাট, খণ্ড: ২য় পৃ: ২২৪

কর্জ পরিশােধের দোয়া 
____________________
কর্জ পরিশােধের দোয়া

❏ হযরত আয়েশা সিদ্দিকা (رضي الله عنه) বর্ণনা করেন, তাঁর পিতা হযরত আবু বকর সিদ্দিক (رضي الله عنه) তাঁর কাছে তাশরীফ নিলেন এবং বললেন, আমি রাসূল (ﷺ) থেকে এমন দোয়া শুনেছি যদি কারাে উপর পাহাড় পরিমাণ সােনা কর্জ থাকে আল্লাহ তায়ালা এই দোয়ার বরকতে ঐ কর্জ পরিশােধের ব্যবস্থা করে দেন। দোয়াটি নিম্নরূপ-

اللهم فارج اللهم كاشف الغم مجيب دعوة المضطرين رحمن الدنيا والاخرة ورحيمها انت ترحمني برحمة تغنيني بها عن رحمة من سواك

হে আল্লাহ! আপনিই দুশ্চিন্তা দূরকারী, কষ্ট নিরসনকারী, অসহায় লােকদের দোয়া কবুলকারী, ইহ ও পরকালের সবচেয়ে বড় মেহেরবান ও দয়ালু আমার উপর এমন দয়া করুন আপনার দয়া ব্যতীত অন্য কারাে দয়ার প্রয়ােজন যেন না হয়।"

❏ হযরত আবু বকর সিদ্দিক (رضي الله عنه) বলেন, আমার উপর একজনের কিছু কর্জ ছিল যা আমার চিন্তার বড় কারণ ছিল। আমি এই দোয়া পাঠ করার ফলে অল্প দিনের মধ্যেই আল্লাহ আমাকে এমন সম্পদ দিলেন যা দিয়ে আমার কর্জ পরিশােধের ব্যবস্থা হয়ে গেল।

❏ হযরত আয়েশা সিদ্দিক (رضي الله عنه) বলেন, আমার উপর হযরত আসমা (رضي الله عنه)’র কর্জ ছিল। আমি তাকে দেখলে লজ্জায় মুখে কাপড় দিয়ে চলতাম। আমি এই দোয়া পাঠ করলে বেশী দিন অতিক্রম হয়নি আল্লাহ আমাকে এমন রিযিক দান করেছেন যা ওয়ারিশ কিংবা সদকার সাথে কোন সম্পর্ক ছিলনা। আমি ঐ রিযিক থেকে কর্জ শােধ করে দিয়েছিলাম। ●109
_____________________________
১০৯. ইউসূফ নাবহানী (رحمة الله) (১৩৫০হি.), হুজ্জাতুল্লাহি আলাল আলামীন, উর্দু, গুজরাট, খণ্ড:২য় পৃ:২২৫

স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে ভালবাসা সৃষ্টি
____________________
স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে ভালবাসা সৃষ্টি

❏ হযরত জাবের (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করিম (ﷺ) একদা মদীনার এমন এক বাজার দিয়ে গমন করছিলেন যেখানে আরবী-অনারবী একত্রিত হত। তাঁর সাথে হযরত ওমর (رضي الله عنه) ও ছিলেন। একজন মহিলা সম্মুখ থেকে এসে আরজ করল ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমি আমার ঘরে স্বামীর সাথে স্ত্রীর মত হয়ে থাকি এবং আমি একজন মুসলিম মহিলা। আমি শুধু ওটাই চাই যা সাধারণত একজন মহিলা চায়। অর্থাৎ আমি চাই যে, আমার স্বামী আমাকে ভালবাসুক এবং স্ত্রীর হক আদায় করুক। তিনি বললেন, তােমার স্বামীকে আমার কাছে নিয়ে এসাে। মহিলা তার স্বামীকে আনলে তিনি তাকে বললেন, তােমার স্ত্রী কি বলতেছে? সে বলল- সেই আল্লাহর শপথ, যিনি আপনাকে সত্য সহকারে প্রেরণ করেছেন। তার সাথে সহবাস করে যে গােসল করেছি তার পানি এখনাে মাথায় শুকায়নি। স্ত্রী বলল, ইয়া রাসূলাল্লাহ! মাসে মাত্র একবার। তিনি স্বামীকে জিজ্ঞেস করলেন, তুমি কি তােমার স্ত্রীকে ঘৃণা কর। সে বলল, হ্যা, তখন নবী করিম (ﷺ) বললেন, তােমরা উভয়েই আপন আপন মাথা আমার নিকটে কর। তারা এরূপ করলে তিনি দোয়া করলেন:

اللهم الف بينهما وحبب احدهما الى الاخر

হে আল্লাহ! এরা উভয়ের মধ্যে ভালবাসা সৃষ্টি করে দিন এবং উভয়কে একে অপরের প্রতি অনুরক্ত করে দিন।

এর কিছু দিন পর রাসূল (ﷺ) ওদের পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন। লােকটি ছিল চামার। তিনি তার স্ত্রীকে কাঁধে করে চামড়া নিয়ে স্বামীর নিকট যাচ্ছে দেখে বললেন, হে ওমর! ওটা কি সেই মহিলা যেই কিছু দিন পূর্বে তার স্বামীর বিরুদ্ধে অভিযােগ করেছিল? মহিলা তাঁর এই কথা শুনে কাঁধ থেকে চামড়া ফেলে দৌড়ে এসে তাঁর কদমে চুমু খেল। তিনি জিজ্ঞেস করলেন, তােমরা স্বামী-স্ত্রীর কি অবস্থা? সে শপথ করে বলল, এখন আমার কাছে আমার স্বামী পৃথিবীর সবচেয়ে প্রিয়। তখন তিনি বললেন, আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আমি আল্লাহর রাসূল তখন হযরত ওমর (رضي الله عنه)ও বলতে লাগলেন,

 وانا اشهد انك رسول اللّٰه

আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আপনি আল্লাহর রাসূল। ●110
_____________________________
১১০. আবু নঈম ইস্পাহানী (رحمة الله) (৪৩০হি.), দালায়েলুন নবুয়ত, উর্দু, দিল্লী, পৃ: ৪০৭

ক্ষুধা নিবারণ
____________________
ক্ষুধা নিবারণ 

❏ হযরত ইমরান ইবনে হােসাইন (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি নবী করিম (ﷺ)’র নিকট থাকতাম। একদিন হযরত ফাতেমা (رضي الله عنه) তাশরীফ এনেছেন। আমি দেখলাম তাঁর চেহারায় বিন্দুমাত্র রক্ত নেই, ক্ষুধায় তাঁর চেহারা শুন্য হয়ে হলুদ বর্ণ হয়ে গিয়েছে। নবী করিম (ﷺ) তাঁকে দেখে কাছে ডেকে আনলেন। তিনি তাঁর সামনে দাঁড়ালে নবী করিম (ﷺ) তাঁর হাত মােবারক ফাতেমার বক্ষের উপরিভাগে যেখানে হার ঝুলে থাকে রাখলেন এবং আঙ্গুল মােবারক ছড়িয়ে দিয়ে দোয়া করলেন

اللهم مشبع الجاعة ورافع الوضعة لاتجع فاطمة بنت محمد

হে আল্লাহ! হে ক্ষুধার্ত তৃপ্তকারী, লাঞ্ছিতদের মর্যাদা প্রদানকারী! মুহাম্মদের কন্যা ফাতেমাকে ক্ষুধার্ত রেখােনা।

হযরত ইমরান (رضي الله عنه) বলেন, আমি দেখলাম তাঁর হলুদ বর্ণের চেহারায় রক্ত সঞ্চরিত হয়ে উজ্জ্বলবর্ণ ফুটে উঠল। কিছুদিন পর তাঁর সাথে সাক্ষাত হলে তখন তিনি বললেন, এরপর থেকে আমার কখনাে ক্ষুধা লাগেনি। ●111
_____________________________
১১১. আবু নঈম ইস্পাহানী (رحمة الله) (৪৩০হি.), দালায়েলুন নবুয়ত, উর্দু, দিল্লী, পৃ: ৪০৯

ঘোড়ার পিঠে স্থির থাকা 
____________________
ঘোড়ার পিঠে স্থির থাকা 

❏ হযরত জারীর ইবনে আব্দুল্লাহ বাজলী (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি ঘােড়ার পিঠে স্থির থাকতে পারতামনা। নবী করিম (ﷺ) এ ব্যাপারে বললে তিনি তাঁর হাত মােবারক আমার বক্ষে রাখলেন যার শীতল ছোঁয়া আমি অনুভব করেছি। তারপর বললেন,

হে আল্লাহ। তাকে সুদৃঢ় রাখুন এবং হেদায়েত প্রাপ্ত করে দিন। এরপর থেকে আমি কখনাে ঘােড়া থেকে পড়িনি। ●112
_____________________________
১১২. আবু নঈম ইস্পাহানী (رحمة الله) (৪৩০হি.), দালায়েলুন নবুয়ত, উর্দু, দিল্লী, পৃ: ৪০২

রােগ মুক্তি/ আরোগ্য লাভ
____________________
রােগ মুক্তি/ আরোগ্য লাভ

চক্ষু রােগ থেকে মুক্তিলাভ:

❏ হযরত সাহল ইবনে সা'দ (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত, রাসূল (ﷺ) বলেন, (খায়বর বিজয়ের পূর্ব দিন) আমি আগামীকাল এমন এক ব্যক্তিকে পতাকা দিবাে যার হাতে আল্লাহ বিজয় দান করবেন। রাবী বলেন, তারা সবাই এই আগ্রহ নিয়ে রাত্রি যাপন করলেন যে, কাকে ঐ পতাকা দেয়া হবে? যখন সকাল হল তখন সকলেই রাসূল (ﷺ) এর নিকট গিয়ে হাযির হলেন। তাদের প্রত্যেকেই এই আশা পােষণ করেছিলেন যে, পতাকা তাকে দেয়া হবে। তারপর তিনি বললেন, আলী ইবনে আবু তালেব কোথায়? তারা বললেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! তিনি চক্ষু রােগে আক্রান্ত। তিনি বললেন, কাউকে পাঠিয়ে তাকে আমার কাছে নিয়ে এসাে।

যখন তিনি এলেন, তখন রাসূল (ﷺ) তাঁর দু'চোখে থু থু মােবারক লাগিয়ে দিলেন এবং তাঁর জন্য দোয়া করলেন। এতে তিনি এমন সুস্থ হয়ে গেলেন যেন তাঁর চোখে কোন রােগই ছিলনা। ●113
 _____________________________
১১৩. ইমাম বুখারী, মুহাম্মদ ইবনে ইসমাঈল (رحمة الله) (২৫৬হি.), সহীহ বুখারী শরীফ, আরবী, ইউপি, ইন্ডিয়া, পৃ:৫২৫ হাদিস নং ৩৪৩৬

বােবার মুখে বুলি ফোটানাে
____________________
বােবার মুখে বুলি ফোটানাে

❏ ইমাম বায়হাকী (رحمة الله) শিমার ইবনে আতীয়্যাহ থেকে বর্ণনা করেন, এক মহিলা তার এক যুবক সন্তান নিয়ে নবী করিম (ﷺ)’র নিকট এসে আরজ করল, আমার সন্তান জন্মের পর থেকে আজ পর্যন্ত কোন কথা বলেনি। অর্থাৎ সে বােবা। রাসূল (ﷺ) ঐ বােবা ছেলেকে জিজ্ঞেস করলেন, বল, আমি কে? সাথে সাথে স্পষ্ট ভাষায় সে বলল, আপনি আল্লাহর রাসুল। ●114
_____________________________
১১৪. ইমাম সুয়ূতী, জালাল উদ্দিন সুয়ূতী (رحمة الله) (৯১১হি.), আল খাসায়েসুল কুবরা, আরবী, বৈরুত, খণ্ড: ২য় পৃ: ১১৪

দৃষ্টিশক্তি ফেরৎ দান 
____________________
দৃষ্টিশক্তি ফেরৎ দান

❏ ইমাম ইবনে আবি শাইবা (رحمة الله), ইবনুস সকন (رحمة الله), ইমাম বাগভী (رحمة الله), বায়হাকী (رحمة الله), তাবরানী (رحمة الله) ও আবু নঈম (رحمة الله), হযরত হাবীব ইবনে ফুদাইক (رضي الله عنه) থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, তার চোখ ছিল সাদা। এবং কিছুই দেখতে পেতনা। তার কাছে জিজ্ঞেস করলেন, তােমার দৃষ্টিশক্তি কিভাবে চলে গেল। সে বলল, একবার আমার পা সাপের ডিমে পড়েছিল ফলে তখন থেকে আমার দৃষ্টিশক্তি চলে যেতে লাগল।   

তিনি তার উভয় চোখে কিছু পাঠ করে ফুঁ দিলেন। সাথে সাথে তার দৃষ্টিশক্তি ফেরৎ আসল। বর্ণনাকারী বলেন, যখন তার বয়স আশি বছর হল তখনও সে সুঁইয়ে সূতা প্রবেশ করতে পারতাে অথচ তার চোখ দুটি পূর্বের ন্যায় সাদা বর্ণেরই ছিল। ●115
_____________________________
১১৫. ইমাম সুয়ূতী, জালাল উদ্দিন সুয়ূতী (رحمة الله) (৯১১হি.), আল খাসায়েসুল কুবরা, আরবী, বৈরুত, খণ্ড:২য় পৃ:১১৫

পুড়ে যাওয়া হাত ভাল হওয়া 
____________________
পুড়ে যাওয়া হাত ভাল হওয়া

❏ ইমাম বায়হাকী (رحمة الله) সাম্মাক ইবনে হারব (رحمة الله)’র সূত্রে হযরত মুহাম্মদ ইবনে হাতে (رضي الله عنه) থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, আমার হাতে গরম ডেকচি পড়ে হাত পুড়ে গিয়েছিল। আমার মা আমাকে নবী করিম (ﷺ)'র নিকট নিয়ে যান। তিনি ঐ হাতের উপর থু থু নিক্ষেপ করে করে বলতে লাগলেন, اذهب الباس رب الناس হে পরওয়ারদেগার! সমস্যা দূরীভূত করে দিন। অতঃপর আমি সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে উঠলাম। ●116
_____________________________
১১৬, ইমাম সুয়ুতী, জালাল উদ্দিন সুয়ূতী (رحمة الله) (৯১১হি.), আল খাসায়েসুল কুবরা, আরবী, বৈরুত, খণ্ড:২য় পৃ:১১৫

❏ অনুরূপ ঘটনা একই বর্ণনাকারী থেকে ইমাম বুখারী (رحمة الله) (আত তারীখ গ্রন্থে) বর্ণনা করেছেন। -লেখক

ফোঁড়ার চিহ্ন পর্যন্ত না থাকা
____________________
ফোঁড়ার চিহ্ন পর্যন্ত না থাকা

❏ ইমাম বুখারী (رحمة الله) স্বীয় তারীখে, তাবরানী (رحمة الله), ইবনুস সকন (رحمة الله), ইবনে মুনদাহ (رحمة الله) ও বায়হাকী (رحمة الله) হযরত শুরাহবীল জুফী (رضي الله عنه) থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, আমি রাসূল (ﷺ)'র নিকট গিয়ে আরজ করলাম, আমার হাতের তালুতে ফোঁড়া উঠে ফুলে রয়েছে যার কারণে আমার খুবই কষ্ট হচ্ছে। আমি তলােয়ার কিংবা ঘােড়ার রশি ধরি তখন এই ব্যাথা আরাে বেড়ে যায়। তিনি আমার হাতে ফুঁক দিলেন এবং তাঁর হাত মােবারক আমার ফোঁড়ায় রেখে মালিশ করেছেন। রাসূল (ﷺ) যখন হাত মােবারক তুলে নিলেন তখন আমার হাতে ফোঁড়ার কোন চিহ্নও ছিলনা। ●117
_____________________________
১১৭. ইমাম সুয়ূতী, জালাল উদ্দিন সুয়ূতী (رحمة الله) (৯১১হি.), আল খাসায়েসুল কুবরা, আরবী, বৈরুত, খণ্ড:২য় পৃ:১১৬

দাউদ রােগ ভাল হওয়া
____________________
দাউদ রােগ ভাল হওয়া

❏ ইবনে সা’দ (رحمة الله), বায়হাকী (رحمة الله) ও আবু নঈম (رحمة الله) হযরত আবইয়া ইবনে হাম্মাল (رضي الله عنه) থেকে বর্ণনা করেন, তার মুখে দাউদ হয়েছিল ফলে তার মুখমন্ডল সাদা হয়ে গিয়েছিল। অপর এক বর্ণনায় আছে তার মুখের দাউদে তার নাক পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়েছে। রাসূল (ﷺ) দোয়া করলেন এবং তার মুখে হাত মােবারক বুলিয়ে দেন। রাত অতিক্রম হতে পারেনি তার দাউদের চিহ্ন পর্যন্ত ছিলনা। ●118
_____________________________
১১৮. ইমাম সুয়ুতী, জালাল উদ্দিন সুয়ূতী (رحمة الله) (৯১১হি.), আল খাসায়েসুল কুবরা, আরবী, বৈরুত, খণ্ড: ২য় পৃ: ১১৬

ইমাম বায়হাকী (رحمة الله) হযরত হাবীব ইয়াসাফ (رضي الله عنه) থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, আমি রাসূল (ﷺ)’র সাথে এক যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিলাম। আমার কাঁধে তরবারীর একটি আঘাত লাগল ফলে আমার হলে তিনি এই আঘাতে লালা মােবারক লাগিয়ে দিলেন। এতে আমার আহত স্থানে ভরে গেল এবং আমি ভাল হয়ে গেলাম। আর যে আমাকে আঘাত করেছিল তাকে আমি হত্যা করেছি। ●119
_____________________________
১১৯. ইমাম সুয়ূতী, জালাল উদ্দিন সুয়ূতী (رحمة الله) (৯১১হি.), আল খাসায়েসুল কুবরা, আরবী, বৈরুত, খণ্ড: ২য় পৃ: ১১৬

মাথার আঘাত থেকে আরােগ্য লাভ
____________________
মাথার আঘাত থেকে আরােগ্য লাভ

❏ ইমাম তাবরানী (رحمة الله) হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে উনাইস (رضي الله عنه) থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, মুস্তানীর ইবনে রোম নামক এক ইহুদী আমার মাথার হাড়ি কিংবা মাথার খুলি কেটে মগজে আঘাত লেগেছিল। আমি নবী করিম (ﷺ) এর নিকট এসেছি। তিনি খুলে সেখানে ফুঁক দিলেন ফলে কোন কষ্টই আমি অনুভব করিনি। ●120
_____________________________
১২০ ইমাম সুয়ূতী, জালাল উদ্দিন সুয়ূতী (رحمة الله) (৯১১হি.), আল খাসায়েসুল কুবরা, আরবী, বৈরুত, খণ্ড:২য় পৃ:১১৭

চূড় হয়ে যাওয়া গােড়ালী মুহূর্তেই ভাল হওয়া
____________________
চূড় হয়ে যাওয়া গােড়ালী মুহূর্তেই ভাল হওয়া

❏ ইবনুস সকন (رحمة الله) ও আবু নঈম (رحمة الله) “আস সাহাবা” নমক গ্রন্থে হযরত মুয়াবিয়া ইবনে হাকাম (رضي الله عنه) থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, আমরা রাসূল (ﷺ)’র সাথে (খন্দক যুদ্ধে) ছিলাম। আমার ভাই আলী ইবনে হাকাম খন্দকের উপর থেকে তার ঘােড় নিয়ে লাফিয়ে পার হওয়ার চেষ্টা করল কিন্তু সক্ষম হয়নি। ঘােড়া পড়ে গেল আর খন্দকের দেওয়ালে তার পায়ের গােড়ালী চুড় হয়ে গেল। আমরা তাকে ঘােড়ায় করে নবী করিম (ﷺ) এর কাছে নিয়ে গেলাম। তিনি তার গােড়ালীতে হাত মােবারক বুলিয়ে দিলেন। সে ঘােড়া থেকে নামার আগেই সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে গেল। ●121
_____________________________
১২১. ইমাম সুয়ূতী, জালাল উদ্দিন সুয়ুতী (رحمة الله) (৯১১হি.), আল খাসায়েসুল কুবরা, আরবী, বৈরুত, খণ্ড:২য় পৃ:১১৮

উট সুস্থ হওয়া 
____________________
উট সুস্থ হওয়া

❏ হযরত রফায়েস ইবনে রাফে (رضي الله عنه) বর্ণনা করেন, আমি আমার ভাই খাল্লাদ ইবনে রাফে’র সাথে বদর যুদ্ধে একটি উটের উপর আরােহণ করেছিলাম। আমরা বদর ময়দানে পৌঁছলে আমাদের উট অসুস্থ হয়ে পড়ল। আমার ভাই মান্নত করেছিল যে, হে আল্লাহ! যদি এই যুদ্ধে আমরা বিজয় লাভ করি তবে মদীনায় গিয়ে আমরা এই উটকে কুরবানী দেবাে। হঠাৎ করে নবী করিম (ﷺ) আমাদের পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন আর আমাদেরকে দেখে তিনি থামলেন। তিনি এসে পানি তলব করে অজু করেন এবং কুলি করেন। তারপর তিনি উটের মুখ খুলতে বললেন, আমরা মুখ খুললে তিনি উটের মুখে অজু’র ব্যবহৃত পানি প্রবেশ করিয়ে দেন। এরপর উটের মাথায়, গদানে, বক্ষে এবং লেজে পানি ছিটালেন আর আমাদেরকে আরােহণ করতে আদেশ দিলেন। আমরা উঠলে ঐ উট আমাদেরকে নিয়ে দ্রুত গতিতে দৌড়তে লাগল। আমরা বদর থেকে মদীনায় ফিরে আসলে আমার ভাই উট যবেহ করে গরীব মিসকীনদের মধ্যে বন্টন করে দিয়েছে। ●122
_____________________________
১২২ আব্দুর রহমান জামী (رحمة الله) (৮৯৮হি.), শাওয়াহেদুন নবুয়ত, উর্দু, বেরেলী, পৃ:১২৪।

মুখ ও মাথার ফুলা দূরীভূত হওয়া
____________________
মুখ ও মাথার ফুলা দূরীভূত হওয়া

❏ ইমাম বায়হাকী (رحمة الله) হযরত আসমা বিনতে আবি বকর (رضي الله عنه) থেকে বর্ণনা করেন, তার মুখে ও মাথায় ফুলা এসেছিল। রাসূল (ﷺ) স্বীয় হাত মােবারক মাথায় ও মুখে রেখে তিনবার এই দোয়া পাঠ করেন

بسم اللّٰه اذهب عنها سؤه وفحشه بدعوة بنيك الطيب المبارك المكين عندك

হে আল্লাহ! তােমার নামের বরকতে ও তােমার সম্মানিত বরকত মন্ডিত ও পবিত্র নবীর দোয়ার উসিলায় তার রােগ-ব্যাধি দূরীভূত করে দিন। এই দোয়ার বরকতে ফুলা ও ব্যাথা দূরীভূত হল। ●123
_____________________________
১২৩. ইমাম সুয়ূতী, জালাল উদ্দিন সুয়ূতী (رحمة الله) (৯১১হি.), আল খাসায়েসুল কুবরা, আরবী, বৈরুত, খণ্ড:২য় পৃ:১১৬
           
জ্বিনের কুপ্রভাব থেকে মুক্তি লাভ 
____________________
জ্বিনের কুপ্রভাব থেকে মুক্তি লাভ 

❏ ইমাম আহমদ (رحمة الله), দারেমী (رحمة الله), তাবরানী (رحمة الله), বায়হাকী (رحمة الله) ও আবু নঈম (رحمة الله) ইবনে আব্বাস (رضي الله عنه) থেকে বর্ণনা করেন, জনৈক মহিলা তার সন্তান নিয়ে রাসূল (ﷺ)’র নিকট এসে বলল, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমার সন্তানকে জ্বিনে ধরেছে। আমাদের সকাল ও রাতের খাবারের সময় তার উপর জ্বিনের প্রভাব পড়ে। ফলে খাবারের স্বাদ চলে যায়। রাসূল (ﷺ) তাঁর হাত মােবারক দিয়ে তার বক্ষে মাসেহ করে দেন এবং তার জন্য দোয়া করলেন। সে বমি করে দিল এবং তার পেট থেকে হিংস্র জন্তুর বাচ্চার ন্যায় একটি কালাে বস্তু বের হল। এরপর সে সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে গেল। ●124
_____________________________
১২৪. ইমাম সুয়ূতী, জালাল উদ্দিন সুয়ূতী (رحمة الله) (৯১১হি.), আল খাসায়েসুল কুবরা, আরবী, বৈরুত, খণ্ড:২য় পৃ:১১৬

দাঁতের ব্যাথা দূরীভূত হওয়া
____________________
দাঁতের ব্যাথা দূরীভূত হওয়া

❏ ইমাম বায়হাকী, ইয়াযিদ ইবনে নূহ ইবনে যাকওয়ান (رضي الله عنه) থেকে বর্ণনা করেন, আব্দুল্লাহ ইবনে রাওয়াহা (رضي الله عنه) আরজ করলেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমার দাঁতের ব্যাথা আমাকে প্রচন্ড কষ্ট দিচ্ছে। তিনি তাঁর হাত মােবারক তার ব্যাথাযুক্ত চোয়ালে রেখে সাত বার এই দোয়া পাঠ করেন,

اللهم اذهب عنه سؤ مايجد وفشه بدعوة نبيك المبارك المكين عندك

হে আল্লাহ! আপনার কাছে সম্মানিত ও আপনার বরকত মন্ডিত নবীর দোয়ার বরকতে তার ব্যাথা ও যাবতীয় অনিষ্ট তার থেকে দূরীভূত করে দাও। অতঃপর তিনি সেখান থেকে চলে আসার পূর্বেই আল্লাহ তায়ালা তাকে শেফা দান করেন। ●125
_____________________________
১২৫. ইমাম সুয়ূতী, জালাল উদ্দিন সুয়ুতী (رحمة الله) (৯১১হি.), আল খাসায়েসুল কুবরা, আরবী, বৈরুত, খণ্ড:২য় পৃ:১১৭

হাতের ব্যাথা দূরীভূত হওয়া 
____________________
হাতের ব্যাথা দূরীভূত হওয়া

❏ ইমাম তাবরানী (رحمة الله) হযরত জারহাদ (رضي الله عنه) থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বাম হাত দিয়ে খাবার খাচ্ছিলেন। নবী করিম (ﷺ) বললেন, তুমি ডান হাত দিয়ে খাবার খাও, তিনি উত্তরে বললেন, আমার ডান হাতে ব্যাথা। রাসূল (ﷺ) তার হাতে ফুঁ দিয়ে ঝেড়ে দিলেন। ফলে মৃত্যু পর্যন্ত তার হাতে আর কোন ব্যাথা ছিলনা। ●126
_____________________________
১২৬. ইমাম সুয়ূতী, জালাল উদ্দিন সুয়ূতী (رحمة الله) (৯১১হি.), আল খাসায়েসুল কুবরা, আরবী, বৈরুত, খণ্ড: ২য় পৃ: ১১৭

হাত মােবারকের ছোঁয়ায় দূরীভূত হওয়া 
____________________
হাত মােবারকের ছোঁয়ায় দূরীভূত হওয়া 

❏ মু'জাম গ্রন্থে আবুল কাসেম বগভী (رحمة الله) হযরত মুয়াবিয়া ইবনে হাকাম (رضي الله عنه) থেকে বর্ণনা করেন, আমরা খন্দক যুদ্ধে নবী করিম (ﷺ) এর সাথে ছিলাম। আলী ইবনে হাকামের এক ভাইয়ের পায়ে খন্দকের একটি দেয়াল ভেঙ্গে পড়লে তার পায়ে আঘাত পেল। সে নবী করিম (ﷺ) তার কাছে আসলে তিনি বিসমিল্লাহ পড়ে স্বীয় হাত মােবারক তার পায়ে বুলিয়ে দেন। ফলে তার পায়ে কোন ব্যাথা ও আঘাতের চিহ্নও অবশিষ্ট থাকল না। ●127
_____________________________
১২৭. ইমাম সুয়ূতী, জালাল উদ্দিন সুয়ূতী (رحمة الله) (৯১১হি.), আল খাসায়েসুল কুবরা, আরবী, বৈরুত, খণ্ড:১ম পৃ:৩৭৭

পায়ের গােড়ালীর আঘাত ভাল হওয়া
____________________
পায়ের গােড়ালীর আঘাত ভাল হওয়া

❏ ইমাম বুখারী (رحمة الله) হযরত বারা ইবনে আযেব (رضي الله عنه) থেকে বর্ণনা করেন, হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আতিক (رضي الله عنه) কাফের আবু রাফে কে হত্যা করে তার ঘর থেকে সিঁড়ি দিয়ে চলে আসার সময় মাটিতে পড়ে পায়ের গােড়ালী ভেঙ্গে গিয়েছিল। তিনি বলেন, আমি এ ব্যাপারে রাসূল (ﷺ) কে অবহিত করলে তিনি বললেন, তােমার পা লম্বা করে রাখ। আমি পা লম্বা করে রাখলে তিনি স্বীয় হাত মােবারক আমার পায়ের গােড়ালীতে বুলিয়ে দেন। সাথে সাথে গােড়ালী এমন ভাল হয়ে গেল যেন কোন আঘাতও লাগেনি এবং কোন ব্যাথাও ছিলনা। ●128
_____________________________
১২৮. বুখারী, মুহাম্মদ ইবনে ইসমাঈল বুখারী (رحمة الله) (২৫৬হি.), বুখারী শরীফ, আরবী, ইউপি, ইন্ডিয়া, পৃ:৫৭৭) (ইমাম সুয়ূতী, জালাল উদ্দিন সুয়ূতী (رحمة الله) (৯১১হি.), আল খাসায়েসুল কুবরা, আরবী, বৈরুত, খণ্ড:১ম পৃ:৩৯০

ফুঁক দিয়ে ক্ষত ভাল করা
____________________
ফুঁক দিয়ে ক্ষত ভাল করা

❏ হযরত মক্কী ইবনে ইব্রাহীম (رحمة الله) হযরত ইয়াযিদ ইবনে আবু উবাইদ (رضي الله عنه) থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, আমি হযরত সালমা ইবনে আকওয়া (رضي الله عنه)'র পায়ের নলায় আঘাতের চিহ্ন দেখে তাঁকে জিজ্ঞাসা করলাম, হে আবু মুসলিম! এ আঘাতটি কিসের? তিনি বললেন, এটি খায়বার যুদ্ধে প্রাপ্ত আঘাত। যুদ্ধে আমি আঘাতপ্রাপ্ত হওয়ার পর লােকজন বলতে লাগল যে, সালমা মারা যাবে। অর্থাৎ আঘাতটি এত মারাত্মক ছিল যে, মারা যাওয়ার উপক্রম ছিল। এরপর আমি রাসূল (ﷺ) এর কাছে আসলাম। তিনি ক্ষতস্থানে তিনবার ফুঁ দিয়ে দেন। ফলে আজ পর্যন্ত আমি এতে কোন ব্যাথা অনুভব করিনি। ●129
_____________________________
১২৯. ইমাম বুখারী, মুহাম্মদ ইবনে ইসমাঈল বুখারী (رحمة الله) (২৫৬হি.), বুখারী শরীফ, আরবী, ইউপি, ইন্ডিয়া, পৃ:৬০৫ হাদিস নং ৩৮৯১

কুলির পানি দিয়ে রােগ মুক্তি
____________________
কুলির পানি দিয়ে রােগ মুক্তি

❏ ইমাম আহমদ (رحمة الله), ইবনে আবি শায়বা (رحمة الله), বায়হাকী (رحمة الله), তাবরানী (رحمة الله) ও আবু নঈম (رحمة الله) হযরত উম্মে যুনদুব (رضي الله عنه) থেকে বর্ণনা করেন তিনি বলেন, আমি রাসূল (ﷺ)কে জামরায় আকাবার নিকট দেখেছি। তিনি সহ অন্যরা পাথর নিক্ষেপ করেন। তিনি সেখান থেকে চলে আসলে জনৈক মহিলা তার ছেলেকে নিয়ে তাঁর নিকট আসল, যাকে জ্বিনে পেয়েছে। মহিলা তার ছেলের অবস্থা বর্ণনা করলে তিনি পানি আনতে বললে পানি আনা হল। পানি হাতে নিয়ে কুলি করেন এবং ছেলের জন্য দোয়া করে বলেন, এই পানি ছেলেকে পান করাও আর গােসল দাও। উম্মে যুনদুব বলেন, আমি ঐ মহিলার পিছনে গিয়ে তাকে বললাম আমাকে একটু পানি দাও। সে আমার হাতে একটু পানি দিল। আমি আমার ছেলে আব্দুল্লাহ কে পান করালাম সে জিন্দা রইল, এভাবে রাসূল (ﷺ) এর বরকতে আমার ছেলে ও নব জীবন লাভ করল আর ঐ মহিলার ছেলেও সুস্থ হয়ে গেল। আবু নঈম (رحمة الله) বলেন, ঐ ছেলে বড় হয়ে অত্যন্ত বুদ্ধিমান ও জ্ঞানী হয়েছিল। ●130
_____________________________
১৩০. ইমাম সুয়ুতী, জালাল উদ্দিন সুয়ূতী (رحمة الله) (৯১১হি.), আল খাসায়েসুল কুবরা, আরবী, বৈরুত, খণ্ড:২য় পৃ:৬৪

কাটা বাহু জোড়া লেগে গেল 
____________________
কাটা বাহু জোড়া লেগে গেল

❏ বদর যুদ্ধে উমাইয়্যা ইবনে খলফ হযরত খুবাইব (رضي الله عنه)’র উপর এমনভাবে আঘাত করল, তাঁর হাতের বাহু কাধ থেকে পৃথক হয়ে গেল। হযরত খােবাইব (رضي الله عنه) উমাইয়্যা কে হত্যা করল। রাসূল (ﷺ) তার বাহুকে স্বীয় হাত মােবারক দিয়ে জোড়া লাগিয়ে দেন। আল্লাহ তায়ালা তাকে পরিপূর্ণ সুস্থ করে দেন। ●131
_____________________________
১৩১. আব্দুর রহমান জামী (رحمة الله) (৮৯৮হি.), শাওয়াহেদুন নবুয়ত, উর্দু, বেরেলী, পৃ:১২৮

চুল মােবারক মহৌষধ
____________________
চুল মােবারক মহৌষধ

❏ রাসূল (ﷺ) হুদাইবিয়ায় চুল কাটালেন এবং সমস্ত চুল মােবারক একটি সবুজ বৃক্ষে নিক্ষেপ করলেন। উপস্থিত সকল সাহাবায়ে কিরাম ঐ বৃক্ষের নীচে একত্রিত হয়ে চুল মােবক কাড়াকাড়ি করে নিয়ে নিলেন। হযরত উম্মে আম্মারাহ (رضي الله عنه) বলেন, এ সময় আমি ও কয়েকখানা চুল মােবারক নিয়েছিলাম। রাসূল (ﷺ)’র ওফাতের পর কেউ অসুস্থ হলে আমি ঐ মােবারক চুলগুলাে পানিতে ডুবিয়ে পানি রােগীকে পান করালে আল্লাহ তায়ালা তাকে সুস্থ করে দিতেন। ●132
_____________________________
১৩২, আব্দুর রহমান জামী (رحمة الله) (৮৯৮হি.), শাওয়াহেদুন নবুয়ত, উর্দু, বেরেলী, পৃ:১৪৮

ফুঁক দিয়ে ব্যাথা উপশম
____________________
ফুঁক দিয়ে ব্যাথা উপশম

❏ ইমাম বুখারী, ইয়াযিদ ইবনে আবি উবাইদ (رضي الله عنه) থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, আমি সালাম ইবনে আকওয়া (رضي الله عنه)'র পায়ের গােড়ালীতে যখম দেখে তাকে জিজ্ঞেস করেছি এটা কিসের যখম? উত্তরে সে বলল, খায়বার যুদ্ধে এই আঘাত লেগেছিল। লােকেরা বলল,

সালমা আঘাতপ্রাপ্ত হয়েছে। আমি রাসূল (ﷺ) এর খেদমতে হাযির হলে তিনি আমার আহত স্থানে তিনবার ফুঁ দিলেন। অতঃপর আজ পর্যন্ত ঐ স্থানে কোন ব্যাথা অনুভব করিনি। ●133
_____________________________
১৩৩. ইউসূফ নাবহানী (رحمة الله) (১৩৫০হি.), হুজ্জাতুল্লাহি আলাল আলামীন, উদু, গুজরাট, খণ্ড: ১ম পৃ:৬৮২

দোয়ার প্রভাবে ব্যাথা থেকে মুক্তি লাভ
____________________
দোয়ার প্রভাবে ব্যাথা থেকে মুক্তি লাভ

❏ ইমাম বায়হাকী, আবু নঈম (رحمة الله) হযরত ওসমান ইবনে আবিল আস (رضي الله عنه) থেকে বর্ণনা করেন, আমি একদা নবী করিম (ﷺ) এর খেদমতে উপস্থিত হলাম। তখন আমার শরীরে প্রচন্ড ব্যাথায় প্রাণ বেরিয়ে যাবার উপক্রম হয়েছিল। রাসূল (ﷺ) আমাকে বললেন, তােমার ডান হাত সাতবার ফিরায়ে এই দোয়া পাঠ কর,

بسم اللّٰه اعوذ بعزة الله وقدرته من شرّما اجد

মহান আল্লাহর নামে, আল্লাহর ইজ্জত ও কুদরতের সদকায় আমার ব্যাথা থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করছি।

অতঃপর আমি এরূপ করার সাথে সাথে আল্লাহ তায়ালা যাবতীয় দরদ ব্যথা এমনভাবে দূরীভূত করে দেন যেন কোন ব্যাথাই ছিলনা। এরপর থেকে আমি সর্বদা নিজের পরিবার পরিজন ও অন্যান্য লােকদেরকেও এই আমল করার উপদেশ দিই। ●134
_____________________________
১৩৪. ইউসূফ নাবহানী (رحمة الله) (১৩৫০হি.), হুজ্জাতুল্লাহি আলাল আলামীন, উদু, গুজরাট, খণ্ড:১ম পৃ:৬৮৩
           
কাপড়ের টুকরা নিয়ে রােগ মুক্তি
____________________
কাপড়ের টুকরা নিয়ে রােগ মুক্তি

❏ হযরত সিনান ইবনে তালাক ইয়ামামী (رضي الله عنه) বর্ণনা করেন, বনু হানিফ গােত্র হতে সর্বপ্রথম তিনি প্রতিনিধি হিসাবে রাসুল (ﷺ)'র খেদমতে হাযির হন। তিনি বলেন, আমি রাসূল (ﷺ) তাঁর মাথা মােবারক ধৌত করতে দেখেছি। তিনি আমাকে বললেন, হে ইয়ামামী ভাই! তােমার মাথা ধুয়ে নাও। তখন আমি রাসূল (ﷺ)’র বেচে যাওয়া পানি দিয়ে আমার মাথা ধুইলাম তারপর ইসলাম প্রহণ করলাম। এরপর তিনি আমাকে এক টুকরা লিখিত কাগজ দিলেন। আমি বললাম, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমাকে আপনার জামার একটি টুকরা প্রদান করুন যা থেকে আমি বরকত হাসিল করবাে।

অতঃপর তিনি আমাকে তাঁর জামার একটি টুকরা প্রদান করেন। মুহাম্মদ ইবনে জাবের (رضي الله عنه) বলেন, এই জামার টুকরা আমার পিতার সাথে থাকতাে। তিনি রােগীর শেফার জন্য ঐ জামার টুকরা ধুয়ে পানি পান করাতেন। ●135
_____________________________
১৩৫. ইউসূফ নাবহানী (رحمة الله) (১৩৫০হি.), হুজ্জাতুল্লাহি আলাল আলামীন, উদু, গুজরাট, খণ্ড:১ম পৃ:৬৮৪

চুল মোবারক চোখ উঠা রােগ ভাল হওয়া
____________________
চুল মোবারক

চোখ উঠা রােগ ভাল হওয়া:

❏ আব্দুল্লাহ ইবনে মাওহাব (رحمة الله) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমাকে আমার পরিবারের লােকেরা এক পেয়ালা পানিসহ হযরত উম্মে সালমা (رضي الله عنه) কাছে পাঠাল। উম্মে সালমা’র কাছে রক্ষিত একটি রূপার পানি ভর্তি পাত্র থেকে (ইউনুসের পুত্র) ইসরাঈল তিনটি আঙ্গুল দিয়ে কিছু পানি তুলে নিল। ঐ পাত্রের মধ্যে নবী করিম (ﷺ)’র কয়েকটি চুল মােবারক ছিল। কোন লােকের যদি চোখ লাগতাে কিংবা অন্য কোন রােগ দেখা দিত, তবে উম্মে সালমা’র কাছ থেকে পানি আনার জন্য পাঠিয়ে দিত। আমি সে পাত্রের মধ্যে একবার লক্ষ্য করলাম, দেখলাম লাল রঙের কয়েকটি চুল আছে। ●136
_____________________________
১৩৬. ইমাম বুখারী, মুহাম্মদ ইবনে ইসমাঈল বুখারী (رحمة الله), (২৫৬হি.), সহীহ বুখারী শরীফ, আরবী, ইউপি, ইন্ডিয়া, খণ্ড: ২য় পৃ: ৮৭৫

❏ “নসীমুর রিয়াজ” নামক গ্রন্থে উল্লেখ করা হয়েছে যে, আদম ইবনে জাহের আলভীর নিকট রাসূল (ﷺ) চৌদ্দটি চুল মােবারক ছিল। তিনি হালাবের এক আমীর কে ঐ চুল মােবারক গুলাে হাদিয়া দিলেন। ঐ আমীর আলভী সম্প্রদায় হযরত আলী (رضي الله عنه)’র বংশ অনুসারীদেরকে ভালবাসতেন। হালাবের আমীর ঐ চুল মােবারক গুলােকে অত্যন্ত ভক্তির সাথে গ্রহণ করলেন এবং ইবনে জাহের কেও যথাযথ সম্মান করে পুরস্কৃত করলেন।

দীর্ঘদিন পরের ঘটনা। আমীদ আদম ইবনে জাহের আলভী ঐ আমীরের সাথে দেখা করতে আসলেন। কিন্তু আমীর তাঁর দিকে তাকিয়ে কথাও বললেন না। আলভী আমীরের রাগের কারণ জানতে চাইলে তিনি বললেন, আমি জানতে পেরেছি যে, তুমি আমাকে যে চুল দিয়েছ, আসলে তা রাসূলুল্লাহর নয়। তুমি আমার সাথে প্রতারণা করেছ। আলভী আমীরের মনের সন্দেহ দূর করার উদ্দেশ্যে বললেন, চুল মােবারকগুলাে বের করে আনুন। অতঃপর আগুন প্রজ্জলিত করে চুল মােবারকগুলাে তাতে নিক্ষেপ করা হল। কিন্তু আগুনে ঐ চুল মােবারক গুলােকে জ্বালাতে পারল না। বরং আগুনের ভেতর থেকে উক্ত চুল মােবারক গুলাের শােভা আরাে বর্ধন হল। এ দৃশ্য দেখে আমীরের ভুল ভাঙ্গল এবং আলভীকে পূর্বাপেক্ষা আরাে বেশী তাজীম ও সম্মান করে হাদিয়া ও তােহফা প্রদান করলেন। ●137
_____________________________
১৩৭. মাওলানা মুহাম্মদ আব্দুল আজিজ, মােযেযা’য়ে আম্বীয়া ও আউলিয়া কেরামের হাজার ঘটনা, বাংলা, পৃ:৬০

ভাঙ্গা হাত ভাল হওয়া
____________________
ভাঙ্গা হাত ভাল হওয়া

❏ একজন সাহাবী বর্ণনা করেন, একদা আমরা রাসূল (ﷺ) এর খেদমতে উপস্থিত হলাম। আমাদের সাথে একটি ছােট ছেলে ও ছিল। এক দিন পূর্বে তার হাত ভেঙ্গে গিয়েছিল এবং হাতে বেন্ডিজ বাঁধা ছিল। রাসূল (ﷺ) তাকে ডেকে বেন্ডিজ খুলে স্বীয় হাত মােবারক ভাঙ্গা হাতে মালিশ করলে তৎক্ষনাত সে হাত এমন ভাল হয়ে গেল। কোন হাত ভেঙ্গেছিল লােকেরা বুঝতেও পারতাে না। এরপর খাবার আসলে সবাই মিলে খাবার খেল। ছেলেকে বলা হয়েছে এই বেন্ডিজকে তােমার সাথে ঘরে নিয়ে যাও হয়তাে কোন কাজে আসতে পারে।

এই ছেলে যখন তার সম্প্রদায়ের কাছে ফিরে গেল তখন সেখানে একজন বৃদ্ধলােক ছিল যে এখনাে ঈমান আনেনি। সে জিজ্ঞেস ছেলেকে জিজ্ঞেস করল, তােমার হাতের কি অবস্থা? সে পুরাে ঘটনা বর্ণনা করলে সে বৃদ্ধ সাথে সাথে মুসলমান হয়ে গেল। ●138
_____________________________
১৩৮. আব্দুর রহমান জামী (رحمة الله) (৮৯৮হি.), শাওয়াহেদুন নবুয়ত, উর্দু, বেরেলী, পৃ:২১২

যেমন বলা তেমন হওয়া
হযরত হুযাইফা (رضي الله عنه)’র সর্দি চলে যাওয়া
____________________
যেমন বলা তেমন হওয়া

হযরত হুযাইফা (رضي الله عنه)’র সর্দি চলে যাওয়া:

❏ হযরত আবু নঈম (رحمة الله) হযরত ইবনে ওমর (رضي الله عنه) থেকে বর্ণনা করেন, আহযাবের যুদ্ধের রাতে নবী করিম (ﷺ) তিনবার বললেন, তােমাদের মধ্যে কে আছ যে (কাফের) সম্প্রদায়ের অবস্থা সম্পর্কে সংবাদ আনতে পারে? আল্লাহ তাকে জান্নাতে আমার সঙ্গী বানাবেন। কেউ উত্তর দিলনা। অতঃপর তিনি হযরত হুযাইফা (رضي الله عنه) কে ডাক দিলে তিনি উত্তর দিলেন। হুযুর তাকে জিজ্ঞেস করলেন, তুমি কেন একাজে সম্মত হচ্ছনা। হুযাইফা (رضي الله عنه) বলেন, সর্দির কারণে। হুযূর পাক বললেন, সর্দি তােমার কোন ক্ষতি করতে পারবে না, তুমি যাও।

হুযাইফা (رضي الله عنه) বলেন, আমার সর্দি চলে যেতে লাগল আর আমি গিয়ে সংবাদ নিয়ে আসলাম। হুযাইফা (رضي الله عنه) ফিরে আসার পর পূর্বের ন্যায় আবার সর্দি অনুভব করতে লাগলেন। ●139
_____________________________
১৩৯, ইমাম সুয়ুতী, জালাল উদ্দিন সুয়ূতী (رحمة الله) (৯১১হি.), আল খাসায়েসুল কুবরা, আরবী, বৈরুত, খণ্ড:১ম পৃ:৩৮২

এক মুনাফিকের নেতার মৃত্যু
____________________
এক মুনাফিকের নেতার মৃত্যু

❏ ইমাম মুসলিম (رحمة الله) হযরত জাবের (رضي الله عنه) থেকে বর্ণনা করেন, নবী করিম (ﷺ) গযওয়ায়ে বনী মুস্তালিক থেকে ফেরার সময় মদীনার নিকটে আসলে এমন প্রচণ্ড বাতাস আরম্ভ হল যে, সওয়ার সওয়ারী থেকে পড়ে যাওয়ার উপক্রম হল। তখন তিনি বললেন, এই বাতাস মুনাফিকের মৃত্যুর জন্য প্রেরণ করা হয়েছে।

অতঃপর আমরা যখন মদীনা মুনাওয়ারায় পৌঁছলাম তখন দেখলাম যে, মুনাফিকদের একজন বড় নেতা মরে গিয়েছে। ●140
_____________________________
১৪০. ইমাম সুয়ূতী, জালাল উদ্দিন সুয়ূতী (رحمة الله) (৯১১হি.), আল খাসায়েসুল কুবরা, আরবী, বৈরুত, খণ্ড:১ম পৃ:৩৯১

পানির গুণাবলী পরিবর্তন হওয়া
____________________
পানির গুণাবলী পরিবর্তন হওয়া

❏ হযরত যুবাইর ইবনে বাক্কার (رحمة الله) মুহাম্মদ ইবনে ইব্রাহীম (رضي الله عنه) থেকে বর্ণনা করেন, যী কারদ’ যুদ্ধের সময় রাসূল (ﷺ) 'বীসান’ নামক কূপের পাশ দিয়ে গমণ করছিলেন। তিনি এই কুপ সম্পর্কে জানতে চাইলে বলা হল ইয়া রাসূলাল্লাহ (ﷺ) এই কূপের নাম ‘বীসান' এবং এর পানি লবণাক্ত। তিনি বললেন, না, এর নাম 'নু'মান' আর এর পানি পবিত্র। নবী করিম (ﷺ) এই কূপের নাম পরিবর্তন করে দিলেন আর আল্লাহ তায়ালা এর

পানিকে পরিবর্তন করে দেন। পরে কূপটি হযরত তালহা (رضي الله عنه) ক্রয় করে সদকা করে দেন। ●141
_____________________________
১৪১. ইমাম সুয়ূতী, জালাল উদ্দিন সুয়ূতী (رحمة الله) (৯১১হি.), আল খাসায়েসুল কুবরা, আরবী, বৈরুত, খণ্ড:১ম পৃ:৪১৬
 
বায়তুল্লাহর চাবি আমার হাতে আসবে অথবা বায়তুল্লাহর চাবি হস্তগত হওয়া 
____________________
বায়তুল্লাহর চাবি আমার হাতে আসবে অথবা বায়তুল্লাহর চাবি হস্তগত হওয়া

❏ হযরত ইবনে সা’দ হযরত ওসমান ইবনে তালহা (رضي الله عنه) থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন রাসূল (ﷺ) হিজরতের পূর্বে মক্কা মুকাররমায় আমার সাথে সাক্ষাত হলে তিনি আমাকে ইসলামের দাওয়াত দেন। আমি বললাম, হে মুহাম্মদ! আপনি তাে আশ্চার্য লােক। কিভাবে আশা করলেন আমি ইসলাম গ্রহণ করবাে। অথচ আপনি নিজের সম্প্রদায়ের বিরােধীতা করতেছেন আর নতুন ধর্ম নিয়ে এসেছেন। আমরা জাহেলী যুগে সপ্তাহে দুদিন সােম ও বৃহস্পতিবার বায়তুল্লাহ খুলে দিতাম।

একদিন তিনি এসে লােকদের সাথে বায়তুল্লাহ-এ প্রবেশের চেষ্টা করলে আমি তার সাথে কঠোর ব্যবহার করলাম এবং প্রবেশ করতে বাঁধা দিলাম। কিন্তু তিনি ধৈর্যের সাথে মেনে নিলেন আর আমাকে বললেন, হে ওসমান! নিশ্চয় অচিরেই তুমি দেখবে যে, বায়তুল্লাহর এই চাবি একদিন আমার হাতে। আর আমি যাকে ইচ্ছে তাকে দেবাে। অতঃপর আমি বললাম, সে দিন কুরাইশ ধ্বংস ও লাঞ্ছিত হয়ে যাবে। তিনি বললে, না, বরং সেদিন কুরাইশ উপস্থিত থাকবে এবং সাম্মানিত হবে। একথা বলে তিনি বায়তুল্লাহ-এ প্রবেশ করেন। কিন্তু তাঁর কথা গুলাে আমার অন্তরে স্থান করে নিল আর আমি নিশ্চিত হয়ে গেলাম যে, তিনি যেরূপ বলেচেন সেরূপই হবে। আমি ইসলাম গ্রহণের ইচ্ছে পােষণ করলে আমার সম্প্রদায়ের লােকেরা আমাকে কঠোরভাবে হুমকি দিন।

অতঃপর মক্কা বিজয়ের দিন তিনি আমাকে বললেন, হে ওসমান! বায়তুল্লাহ’র চাবি নিয়ে এসাে। আমি চাবি নিয়ে আসলে তিনি চাবি নিয়ে নেন। তারপর পুনরায় আমাকে দিয়ে বললেন, স্থায়ীভাবে এই চাবি নাও। অত্যচারী ব্যক্তি ছাড়া কেউ এই চাবি তােমার কাছ থেকে চিনিয়ে নিবেনা।

যখন আমি চাবি নিয়ে ফিরে যাচ্ছি তখন তিনি আমাকে ডাক দেন, আমি কাছে গেলে বলেন, সে কথা কি সত্য হয়নি যা আমি তােমাকে বলেছিলাম? তখন তিনি আমাকে হিজরতের পূর্বে মক্কায় যে কথা বলেছিলেন তা আমার স্মরণ পড়েছে। আর তা হল,

لعلك سترى هذا المفتاح يؤها بيدي أضعه حيث شئت

অর্থাৎ নিশ্চয় অচিরেই দেখবাে যে, এই চাবি একদিন আমার হাতে আসবে। আমি যাকে ইচ্ছে তাকে তা দেবাে। আমি বসলাম, হ্যাঁ, আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, নিশ্চয় আপনি আল্লাহর রাসূল। ●142
_____________________________
১৪২. ইমাম সুয়ূতী, জালাল উদ্দিন সুয়ূতী (رحمة الله) (৯১১হি.), আল খাসায়েসুল কুবরা, আরবী, বৈরুত, খণ্ড:১ম পৃ:৪৪২

❏ ইবনে ইসহাক (رحمة الله), হাকেম (رحمة الله) ও বায়হাকী (رحمة الله) ইবনে মসউদ (رضي الله عنه) থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, রাসূল (ﷺ) যখন তাবুক রওয়ানা হন তখন কয়েকজন পিছে রয়ে গেল। তারপর পিছনে পিছনে আবু যর (رضي الله عنه) আসতেছেন। মুসলমানগণের মধ্য থেকে জনৈক মুসলমান দেখল এবং আরজ করল যে, ইয়া রাসূলাল্লাহ! এই ব্যক্তি রাস্তা দিয়ে একাকী আসতেছে। রাসূল (ﷺ) বললেন, সে আবু যর হবে। সাহাবায়ে কিরাম ভাল করে দেখে বলল, খােদার শপথ, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আবু যরই আসতেছে।

তখন রাসূল (ﷺ) এরশাদ করেন,

يرحم اللّٰه أبا ذر يمشي وحده ويموت وحده ويبعث وحده

আল্লাহ তায়ালা আবু যরের উপর রহম (দয়া) করুন, সে একাকী চলে, একাকী নির্জনে ইন্তেকাল করবে এবং একাকীই জীবন-যাপন করবে, কিয়ামত দিবসে ও একাকী উঠবে।

কালের আবর্তনে তাকে বাধ্য হয়ে 'যবদাহ’ নামক স্থানে হিজরত করতে হয়েছে এবং সেখানেই তিনি ইন্তেকাল করেন। তার কাছে তখন শুধু তার স্ত্রী ও গােলাম ছিল। জানাযা পড়ার মত লােক না থাকায় তার লাশ রাস্তার মাথায় রেখে দেওয়া হল। সামনের দিক থেকে একটি কাফেলা আসল যার মধ্যে হযরত ইবনে মসউদ (رضي الله عنه) ও ছিলেন। তিনি জিজ্ঞেস করেন, এটা কি? বলা হল, এটা হযরত আবু যর গিফারী (رضي الله عنه)'র লাশ। তখন ইবনে মসউদ (رضي الله عنه) কেঁদে ফেললেন এবং বললেন, রাসূল (ﷺ) সত্য বলেছিলেন। এরপর তিনি সওয়ারী থেকে নেমে তাকে দাফন করেন। ●143
_____________________________
১৪৩. ইমাম সুয়ূতী, জালাল উদ্দিন সুয়ূতী (رحمة الله) (৯১১হি.), আল খাসায়েসুল কুবরা, আরবী, বৈরুত, খণ্ড:১ম পৃ:৪৫৩

যেমন বলা তেমন হওয়া জাহান্নামী ব্যক্তি
____________________
যেমন বলা তেমন হওয়া

জাহান্নামী ব্যক্তি:

❏ হযরত সাহল ইবনে সা'দ সায়েদী (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল (ﷺ) মুশরিকদের সাথে যুদ্ধরত এক ব্যক্তির দিকে তাকালেন। সে ব্যক্তি অন্যান্য লােকের চেয়ে ধনী ছিল। তিনি বললেন, কেউ যদি জাহান্নামী লােক দেখতে চায়, সে যেন এই লােকটিকে দেখে। একথা শুনে অবাক হয়ে এক ব্যক্তি তার পেছনে পেছনে যেতে লাগল। সে যুদ্ধ করতে করতে অবশেষে আহত হয়ে গেল। সে দ্রুত মৃত্যু কামনা করল আর নিজের তরবারীর অগ্রভাগ বুকে লাগিয়ে উপুড় হয়ে সজোরে এমনভাবে চাপ দিল যে, তলােয়ারটি তার বক্ষস্থলে ভেদ করে পার্শ্বদেশ অতিক্রম করে গেল।

এরপর রাসূল (ﷺ) বললেন, কোন বান্দা এমন কাজ করে যায়, যে দেখে লােকেরা একে জান্নাতী লােকের কাজ মনে করাে। কিন্তু বাস্তবে সে জাহান্নামবাসীদের অন্তর্ভুক্ত। আবার কোন বান্দা এমন কাজ করে যায়, যা মানুষের চোখে জাহান্নামীদের কাজ বলে মনে হয়, অথচ সে জান্নাতী লােকদের অন্তর্ভুক্ত। নিশ্চয় মানুষের যাবতীয় আমল তার শেষ পরিণামের উপর নির্ভরশীল। ●144
_____________________________
১৪৪. ইমাম বুখারী, মুহাম্মদ ইবনে ইসমাঈল (رحمة الله), সহীহ বুখারী শরীফ, আরবী ইউপি, ইন্ডিয়া, পৃ:৯৬১ হাদিস নং ৬০৪৯

কাফের হয়ে মৃত্যুবরণ করা
____________________
কাফের হয়ে মৃত্যুবরণ করা

❏ ইমাম বায়হাকী (رحمة الله) হযরত মাকসাম (رحمة الله) থেকে বর্ণনা করেন, উহুদ যুদ্ধে নবী করিম (ﷺ)’র দাঁত মােবারক যখন শহীদ হন তখন তিনি উতবা ইবনে আবি ওয়াক্কাস’র বিরুদ্ধে দোয়া করেন, اللهم لایحل علیه الحول حتی یموت کافرا অর্থ: হে আল্লাহ এক বছর অতিক্রম হতেই যেন সে কাফের অবস্থায় মরে। তারপর এক বছর অতিক্রম হতে পারেনি সেই কাফের হয়ে মারা গিয়েছে। ●145
_____________________________
১৪৫. ইমাম সুয়ূতী, জালাল উদ্দিন সুয়ূতী (رحمة الله) (৯১১হি.), আল খাসায়েসুল কুবরা, আরবী, বৈরুত, খণ্ড:১ম পৃ:৩৬১

রক্তপানে জান্নাতের সুসংবাদপ্রাপ্ত হওয়া
____________________
রক্তপানে জান্নাতের সুসংবাদপ্রাপ্ত হওয়া
     
❏ হযরত ইমাম বায়হাকী (رحمة الله) হযরত আমর ইবনে সায়েব (رضي الله عنه) থেকে বর্ণনা করেন, উহুদ যুদ্ধের দিন যখন নবী করিম (ﷺ) আহত হলেন তখন আবু সাঈদ খুদরী (رضي الله عنه)’র পিতা হযরত মালেক (رضي الله عنه) হুযূর (ﷺ)’র আহত স্থানে থেকে রক্ত চুসে চুসে পরিস্কার করেছিলেন। তাকে বলা হল তুমি মুখ থেকে রক্ত থু দিয়ে ফেলে দাও। তখন সে বলল, খােদার কসম! আমি রাসূলুল্লাহ (ﷺ)'র রক্ত মােবারক কখনাে ফেলবােনা। এরপর তিনি যুদ্ধে লিপ্ত হলেন। রাসূল (ﷺ) এরশাদ করেন, কারাে যদি জান্নাতী ব্যক্তি দেখতে ইচ্ছে হয় সে যেন মালেক কে দেখে। তারপর সে যুদ্ধ করতে করতে শাহাদত বরণ করেন। ●146
_____________________________
১৪৬. ইমাম সুয়ূতী, জালাল উদ্দিন সুয়ুতী (رحمة الله) (৯১১হি.), আল খাসায়েসুল কুবরা, আরবী, বৈরুত, খণ্ড:১ম পৃ:৩৬১

কবরে লাশ গ্রহণ না করা
____________________
কবরে লাশ গ্রহণ না করা

❏ ইমাম বুখারী (رحمة الله), মুসলিম (رحمة الله), ইমাম আহমদ (رحمة الله), বায়হাকী (رحمة الله) ও আবু নঈম (رحمة الله) হযরত আনাস (رضي الله عنه) থেকে বর্ণনা করেন, জনৈক ব্যক্তি রাসূল (ﷺ)'র ওহী লিখত। সে তাঁর সামনে علیمًا حکیمَا লিখতে আর তিনি তাকে বলতেন তুমি سمیعًا بصیرَا লিখ। সে বলত, আপনি যেরূপ বলেছেন সে রূপই লিখতেছি। সে রাসূল (ﷺ) এর সামনে سمیعا بصیرَا লিখতে পরে عالیما حکیمًا করে দিত। পরবর্তীতে এই ব্যক্তি মুরতাদ হয়ে মুশরিকদের সাথে মিলে গিয়েছিল আর বলেছিল, আমি মুহাম্মদের চেয়ে বড় জ্ঞানী। আমি যা চাইতাম তাই লিখে দিতাম।

লােকটি মারা গেলে রাসূল (ﷺ) এরশাদ করেন, মাটি তাকে গ্রহণ করবেনা। তাকে দাফন করা হলে মাটি তাকে গ্রহণ করেনি। হযরত আবু তালহা (رضي الله عنه) বলেন, তাকে যেখানে দাফন করা হয়েছিল আমি সেখানে গিয়েছিলাম এবং দেখলাম সে কবরে মাটির বাইরে পড়ে রয়েছে। আমি উপস্থিত লােকদের কাছে জিজ্ঞেস করলাম, এর কারণ কি? তারা বলল, دفناه فلم تقبله الارض আমরা তাকে দাফন করেছি, কিন্তু মাটি তাকে গ্রহণ করেনি। ●147
_____________________________
১৪৭. ইমাম সুয়ূতী, জালাল উদ্দিন সুয়ূতী (رحمة الله) (৯১১হি.), আল খাসায়েসুল কুবরা, আরবী, বৈরুত, খণ্ড:২য় পৃ:১৩১  

এক প্রতারকের পরিণাম
____________________
এক প্রতারকের পরিণাম

❏ ইমাম আব্দুর রাজ্জাক (আল মুসন্নি গ্রন্থে), বায়হাকী (رحمة الله) হযরত সাঈদ ইবনে জবাইর (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আনসারগণের গ্রামে জনৈক ব্যক্তি এসে বলল, রাসূল (ﷺ) আমাকে আপনাদের কাছে পাঠিয়েছেন এবং আপনাদেরকে আদেশ দিয়েছেন যে, অমুক মহিলা যেন আমার সাথে বিবাহ দেন। অথচ রাসূল (ﷺ) তাকে পাঠান নি।

রাসূল (ﷺ)'র কাছে যখন এ খবর পৌঁছল তখন তিনি হযরত আলী ও যুবাইর (رضي الله عنه) কে এই বলে পাঠান যে, তােমরা উভয়ে গিয়ে তাকে পেলে হত্যা করবে। তবে আমার মনে হয় তােমরা তাকে পাবে না। তারা দেখলেন সাপের কামড়ে সে মারা গিয়েছে। ●148
_____________________________
১৪৮. ইমাম সুয়ূতী, জালাল উদ্দিন সুয়ূতী (رحمة الله) (৯১১হি.), আল খাসায়েসুল কুবরা, আরবী, বৈরুত, খণ্ড:২য় পৃ:১৩১

আজীবন মুখ বাঁকা থাকা
____________________
আজীবন মুখ বাঁকা থাকা

❏ ইমাম হাকেম (رحمة الله), বায়হাকী (رحمة الله) ও তাবরানী (رحمة الله) হযরত আব্দুর রহমান ইবনে আবি বকর সিদ্দিক (رضي الله عنه) থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, হাকেম ইবনে আবিল আস রাসূল (ﷺ)'র মজলিসে বসত। যখন তিনি কথা বলতেন তখন সে (ঠাট্টা করে) তার মুখ বাঁকা করত। এ ব্যাপারে তিনি অবগত হলে তাকে বলেন- کن کذالك তুমি এরূপই হবে। অতঃপর সে মৃত্যু পর্যন্ত সর্বদা মুখ বাঁকা অবস্থায় ছিল। ●149
_____________________________
১৪৯. ইমাম সুয়ূতী, জালাল উদ্দিন সুয়ূতী (رحمة الله) (৯১১হি.), আল খাসায়েসুল কুবরা, আরবী, বৈরুত, খণ্ড: ২য় পৃ: ১৩২

❏ ইমাম বায়হাকী (رحمة الله) হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর (رضي الله عنه) থেকে বর্ণনা করেন, একদিন নবী করিম (ﷺ) খােতবা দিচ্ছিলেন আর জনৈক ব্যক্তি তাঁর পেছন থেকে তাঁকে ব্যঙ্গ করে তাঁর মতাে করতেছে। তিনি বললেন, তুমি সেরূপ হয়ে যাও। লােকেরা তাকে তুলে তার ঘরে নিয়ে গেল। সে দু'মাস যাবৎ বেঁহুশ ছিল। তারপর যখনই জ্ঞান ফিরে আসত তখন। সেরূপই থাকত যে রূপ নবী করিম (ﷺ) বলেছিলেন। ●150
_____________________________
১৫০. ইমাম সুয়ূতী, জালাল উদ্দিন সুয়ূতী (رحمة الله) (৯১১হি.), আল খাসায়েসুল কুবরা, আরবী, বৈরুত, খণ্ড:২য় পৃ:১৩২

মৃত্যু ও দাফনের সময় ও স্থান বলে দেওয়া
____________________
মৃত্যু ও দাফনের সময় ও স্থান বলে দেওয়া

❏ ইবনে আসাকের (رحمة الله) হযরত আকরা’ ইবনে শফী (رضي الله عنه) থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, আমি রাসূল (ﷺ)'র নিকট অসুস্থ অবস্থায় হাযির হয়ে বললাম, সম্ভবত আমি এই অসুখে মরে যাবাে। তিনি বলেন, তুমি এখন মরবেনা, বরং তুমি সিরিয়ায় হিজরত করবে এবং সেখানেই মৃত্যুবরণ করবে। আর ফিলিস্তিনের উর্দু ভূমিতে দাফন হবে। তিনি হযরত ওমর (رضي الله عنه)'র খেলাফতে ইন্তেকাল করেন এবং রমলা নামক স্থানে তাকে দাফন করা হয়। ●151
_____________________________
১৫১. ইমাম সুয়ূতী, জালাল উদ্দিন সুয়ূতী (رحمة الله) (৯১১হি.), আল খাসায়েসুল কুবরা, আরবী, বৈরুত, খণ্ড:২য় পৃ:২১৮

হযরত ওয়ায়েছ করণী (رحمة الله) পরিচয় প্রদান
____________________
হযরত ওয়ায়েছ করণী (رحمة الله) পরিচয় প্রদান

❏ ইমাম মুসলিম (رحمة الله) হযরত ওমর (رضي الله عنه) থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, রাসূল (ﷺ) আমাদেরকে বলেছেন, তােমাদের কাছে ইয়েমন থেকে একজন লােক আসবে। ইয়েমনে শুধু তার ছাড়া আর কেউ থাকবে না। তার শরীরে সাদা দাগ থাকবে। সে আল্লাহর কাছে তা দূরীভূত হওয়ার জন্য দোয়া করবে আর আল্লাহ তার দোয়ায় তা দূরীভূত করে দেবেন তবে এক দীনার পরিমাণ স্থানে সাদা দাগ থেকে যাবে। তার নাম হবে ওয়ায়েছ। যে ব্যক্তি তার সাক্ষাত পাবে সে যেন নিজের জন্য তাকে দিয়ে দোয়া করায়ে নেয়। ●152
_____________________________
১৫২. ইমাম সুয়ূতী, জালাল উদ্দিন সুয়ূতী (رحمة الله) (৯১১হি.), আল খাসায়েসুল কুবরা, আরবী, বৈরুত, খণ্ড:২য় পৃ:২২০

বৃষ্টিতে কাপড় ভিজেনি
____________________
বৃষ্টিতে কাপড় ভিজেনি:

❏ একজন সাহাবী বর্ণনা করেন, আমি মদীনায় এসে ইসলাম গ্রহণ করে নবী করিম (ﷺ)’র মজলিশে সর্বদা উপস্থিত থাকতাম। তিনি সন্ধ্যা ও এশা’র মধ্যবর্তী আমাদেরকে ইসলামের আদব ও নিয়মাবলী শিক্ষা দিতেন। এক রাতে প্রচন্ড বজ্রপাত, প্রবলবেগে বাতাস প্রবাহিত এবং মুসলধারে বৃষ্টিপাত হচ্ছিল। উপস্থিত লােকেরা বলল, আমরা বাড়ীতে যাবাে কিভাবে? তিনি বললেন, আমি তােমাদেরকে তােমাদের ঘড়ে এমন ভাবে পৌঁছিয়ে দেব যাতে বৃষ্টি তােমাদের কষ্ট দেবেনা।

আমরা নামায শেষ করলে তিনি বললেন, উঠ, আমরা উঠে মসজিদের বাইরে আসলাম, দেখলাম, আকাশ খুবই অন্ধকার এবং প্রচণ্ড বৃষ্টিপাত হচ্ছে। তিনি আদেশ দিলেন, তােমরা সামনের দিকে অগ্রসর হও। আমরা প্রত্যেকেই আপন ঘরে পৌঁছে গেলাম কিন্তু কারাে কাপড় পর্যন্ত ভিজেনি। ●153
_____________________________
১৫৩. আব্দুর রহমান জামী (رحمة الله) (৮৯৮হি.), শাওয়াহেদুন নবুয়ত, উর্দু, বেরেলী, পৃ:১৯৪

বাগানের ফলের পরিমাণ বলে দেওয়া
____________________
বাগানের ফলের পরিমাণ বলে দেওয়া

❏ ইমাম মুসলিম (رحمة الله) আবু হুমাইদ (رضي الله عنه) থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, আমরা তাবুক অভিযানে নবী করিম (ﷺ) এর সাথে রওয়ানা হলাম। আমরা ওয়াদিয়ে কুরায় এক মহিলার বাগানে পৌঁছলাম। রাসূল (ﷺ) বললেন, এই বাগানে কত ফল হবে তােমরা অনুমান কর। আমরা একেক জনে একেক রকম অনুমান করলাম কিন্তু রাসূল (ﷺ) এর অনুমানে দশ ওসক নির্ধারিত হল। তিনি মহিলাকে বললেন, ইনশাল্লাহ, আমরা ফিরে আসা পর্যন্ত এর পরিমাণ মনে রাখবে।

তারপর সম্মুখে চললাম এবং তাবুকে পৌঁছলাম। রাসূল (ﷺ) বলেছেন, আজ রাতে প্রচন্ড অন্ধকার ও প্রবল বেগে বাতাস প্রবাহিত হবে। তােমাদের কেউ তাতে দাঁড়াতে পারবে না। আর যাদের উট আছে তারা যেন উটকে শক্ত করে বেঁধে রাখে। অতঃপর তিনি যেরূপ বলেছেন ঠিক সেরূপ হল। ঘন অন্ধকার প্রচণ্ড তুফান হল। এক ব্যক্তি দাঁড়ালে বাতাস তাকে উড়িয়ে নিয়ে তাই পাহাড়ে ফেলে দিয়েছে।      

অতঃপর আমরা তাবুক থেকে ফিরে আসার পথে আবার ওয়াদিয়ে কুরায় পৌঁছলে রাসূল (ﷺ) ঐ মহিলাকে বাগানের ফলের পরিমাণ সম্পর্কে জানতে চাইলে সে বলল, পূর্ণ দশ ওসকই হয়েছিল। ●154
_____________________________

১৫৪. ইমাম সুয়ূতী, জালাল উদ্দিন সুয়ূতী (رحمة الله) (৯১১হি.), আল খাসায়েসুল কুবরা, আরবী, বৈরুত, খণ্ড:১ম পৃ:৪৫৮

একাকী বের হতে নিষেধ করা
____________________
একাকী বের হতে নিষেধ করা

❏ ইমাম বায়হাকী ও ইবনে ইসহাক (رحمة الله) হযরত সাহল ইবনে সা'দ (رضي الله عنه) থেকে বর্ণনা করেন, তাবুক অভিযানে নবী করিম এ যখন ‘হাজার’ নামক স্থানে অবস্থান করেন তখন বলেছিলেন, আজ রাতে তােমরা কেউ সঙ্গী ছাড়া একাকী বের হইও না। দু’ব্যক্তি ছাড়া সকলেই তাঁর পাক কথা আমল করেছে। দু’জন থেকে একজন প্রাকৃতিক প্রয়ােজনে একা বের হয়েছে অপর ব্যক্তি উট খোঁজার জন্য বের হয়েছে।

অতঃপর সে প্রাকৃতিক প্রয়ােজনে গিয়েছিল তাকে সেখানেই গলা টিপে দেওয়া হয়েছে আর যে উট খোঁজতে গিয়েছিল তাকে বাতাসে উড়ে নিয়ে 'তাই' নামক পাহাড়ে নিক্ষেপ করেছে। এ ব্যাপারে রাসূল (ﷺ) কে অবহিত করা হলে তিনি বলেন, আমি তােমাদেরকে সঙ্গী ছাড়া একাকী বের হতে নিষেধ করিনি? অতঃপর যাকে মলমূত্র ত্যাগের স্থানে গলা টিপে দেওয়া হয়েছিল তার জন্য দোয়া করলেন ফলে সে ভাল হয়ে গেল আর যে উট খোঁজার জন্য গিয়েছিল সে হুযুর (ﷺ) এর কাছে ঐ সময় আসল যখন তিনি তাবুক থেকে ফিরে আসেন। ●155
_____________________________
১৫৫. ইমাম সুয়ূতী, জালাল উদ্দিন সুয়ূতী (رحمة الله) (১১১হি.), আল খাসায়েসুল কুবরা, আরবী, বৈরুত, খণ্ড:১ম পৃ:৪৫৯

পা’দ্বয় বেকার হয়ে যাওয়া
____________________
পা’দ্বয় বেকার হয়ে যাওয়া

❏ ইমাম আবু দাউদ (رحمة الله) ও বায়হাকী (رحمة الله) গায়ওয়ান (رحمة الله) থেকে বর্ণনা করেন, সাহাবায়ে কিরাম তাবুকে অবতরণ করেন। তারা চলতে অক্ষম এক ব্যক্তিকে দেখল। তারা তার কাছে এর কারণ সম্পর্কে প্রশ্ন করলে সে বলল, রাসূল (ﷺ) তাবুকে একটি খেজুর বৃক্ষের পাশে অবতরণ করে সে দিক হয়ে নামাজ পড়তেছেন। আমি এবং একটি ছেলে দৌড়ে তাঁর সামনে আসলাম। আমি ঐ বৃক্ষ ও তাঁর মধ্যবর্তী স্থান দিয়ে চলে গেলাম। তখন রাসূল (ﷺ) বললেন,

قطع صلاتنا اللّٰه اشراه فما قمت علیها الی یومی هذا

সে আমার নামায নষ্ট করে দিল, আল্লাহ তার নিশানও নষ্ট করে দিন। ফলে সেদিন থেকে আমি আমার পায়ে দাঁড়াতে পারিনা। ●156
_____________________________
১৫৬. ইমাম সুয়ূতী, জালাল উদ্দিন সুয়ূতী (رحمة الله) (৯১১হি.), আল খাসায়েসুল কুবরা, আরবী, বৈরুত, খণ্ড:১ম পৃ:৪৬০

জ্বর হত্যাকারী
____________________
জ্বর হত্যাকারী

❏ আবু নঈম (رحمة الله) হযরত ওয়াকেদী (رحمة الله) থেকে বর্ণনা করেন, আব্দুল্লাহ যুল জাদাইন (رضي الله عنه) তাবুক অভিযানে রাসূল (ﷺ)'র সাথে রওয়ানা হল। আব্দুল্লাহ রাসূল (ﷺ)’র কাছে আরজ করল, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমার জন্য শাহাদত বরণের দোয়া করুন। তিনি বললেন, হে আল্লাহ! তার রক্ত কাফেরদের জন্য হারাম করে দিন। তিনি আরাে বললেন, তুমি আল্লাহর রাস্তায় বের হওয়ার সময় তােমাকে জ্বরে পেয়েছিল। সেই জ্বরই তােমাকে হত্যা করেছে, তুমি শহীদ। সাহাবায়ে কিরাম যখন তাবুকে অবতরণ করেন তখন কিছু দিন পর আব্দুল্লাহ ইন্তেকাল করেন। ●157
_____________________________
১৫৭. ইমাম সুয়ুতী, জালাল উদ্দিন সুয়ূতী (رحمة الله) (৯১১হি.), আল খাসায়েসুল কুবরা, আরবী, বৈরুত, খণ্ড:১ম পৃ:৪৬১
 
নব্বই বছর বয়সেও দাঁত নড়েনি
____________________
নব্বই বছর বয়সেও দাঁত নড়েনি

❏ ইবনে মুনদাহ (رحمة الله), ইবনুস সকন (رحمة الله) ও আবু নঈম (رحمة الله) বুজাইরাহ ইবনে বুজাইরা (رضي الله عنه) থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, রাসূল (ﷺ) খালেদ বিন ওয়ালিদ কে দুমাতুল জান্দালের খৃষ্টান বাদশা আকীদার’র বিরুদ্ধে অভিযানে পাঠালেন। সেই সৈন্যদলে আমিও ছিলাম। রাসূল (ﷺ) খালেদ কে বললেন, তােমরা তাকে গাভী শিকারে রত দেখবে। আমরা চাঁদনী রাতে রাসূল (ﷺ) যেভাবে বলেছিলেন ঠিক সেভাবেই পেলাম। আমরা তাকে গ্রেফতার করে যখন হুযূর (ﷺ)’র নিকট আনলাম তখন আমি কয়েকটি কবিতা আবৃতি করলাম। তন্মধ্যে একটি হল,

تبارك سائق البقرات الني + رأيت اللّٰه يهدي كل هاد

গাভীগুলাের চালক বরকত মণ্ডিত। আমি দেখছি আল্লাহ প্রত্যেক হাদী (গাভী চালক) কে পথ প্রদর্শন করেন। তখন নবী করিম (ﷺ) বললেন,

 لا یقضض اللّٰه فاك

আল্লাহ তােমার চেহরা নষ্ট করুক। অতএব বুজাইরার বয়স নব্বই বছর অতিক্রম করেছে কিন্তু একটি দাঁতও নড়েনি। ●158
_____________________________
১৫৮. ইমাম সুয়ূতী, জালাল উদ্দিন সুয়ূতী (رحمة الله) (৯১১হি.), আল খাসায়েসুল কুবরা, আরবী, বৈরুত, খণ্ড:১ম পৃ:৪৬২

বৃক্ষের খেজুর বরকত
____________________
বৃক্ষের খেজুর বরকত

❏ ইমাম বুখারী ও মুসলিম (رحمة الله) হযরত জাবের (رضي الله عنه) থেকে বর্ণনা করেন, হযরত জাবের (رضي الله عنه)’র পিতা ইন্তেকাল করলেন (ওহুদ যুদ্ধে)। তার উপর এক ইহুদীর ত্রিশ ওসক খেজুর ঝণ রেখে যান। হযরত জাবের (رضي الله عنه) ইহুদী থেকে কয়েক দিনের সুযােগ চাইলেন কিন্তু ইহদী সুযােগ দিলনা। জাবের (رضي الله عنه) রাসূল (ﷺ)’র কাছে আরজ করেন, আপনি একটু ইহুদীকে সুপারিশ করুন। তিনি ইহুদীকে বললেন, তােমার ঋনের বিনিময়ে গাছের খেজুরগুলাে গ্রহণ কর কিন্তু সে অস্বীকার করল।

তখন তিনি খেজুর বৃক্ষের নিকট গিয়ে ঘুরে দেখেন এবং বললেন হে পাথর! গাছ থেকে খেজুর নামিয়ে ইহুদীর ঋণ শােধ করে দাও। এই বলে তিনি চলে গেলেন আর তিনি খেজুর নামিয়ে ত্রিশ ওসক ইহুদীকে দিলেন এবং নিজের জন্য আরাে সতের ওসক খেজুর বেঁচে গেল। হযরত জাবের (رضي الله عنه) এই ঘটনা হযরত ওমর (رضي الله عنه) কে বর্ণনা করেছিলেন তখনই আমি বুঝে নিলাম যে, আল্লাহ তায়ালা ঐ খেজুরে বরকত দান করবেন। ইমাম বায়হাকী (رحمة الله) বলেন- সম্মিলিত পাওনাদারকে দেওয়ার পর এই ইহুদী পরে এসেছিল আর গাছে অবশিষ্ট থেকে পাওয়া খেজুর রাসূল (ﷺ) ইহুদীকে দিতে বলেছিলেন। ●159
_____________________________
১৫৯. ইমাম সুয়ূতী, জালাল উদ্দিন সুয়ূতী (رحمة الله) (৯১১হি.), আল খাসায়েসুল কুবরা, আরবী, বৈরুত, খণ্ড:২য় পৃ:৮৭

হযরত ওমর (رضي الله عنه)’র খাবারে বরকত
____________________
হযরত ওমর (رضي الله عنه)’র খাবারে বরকত

❏ হযরত দাকীর ইবনে সাঈদ (رضي الله عنه) বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, আমরা চারশ ব্যক্তি রাসূল (ﷺ)'র নিকট খাবারের জন্য আসছি। তিনি হযরত ওমর (رضي الله عنه) কে বললেন, হে ওমর! তুমি তাদেরকে খাবার খাওয়াও এবং অতিরিক্ত কিছু দাও। তিনি আরজ করলেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমার কাছে তাে মাত্র কয়েক সের খেজুর আছে যা আমার পরিবারের জন্য রেখেছি। হযরত আবু বকর সিদ্দিক (رضي الله عنه) বললেন, হে ওমর! তুমি রাসূল (ﷺ)'র হুকুম শুন, আর বাস্তবায়ন কর। হযরত ওমর (رضي الله عنه) বললেন, হুযুরের আদেশ তাে শিরােধার্য- এই বলে তিনি ঘরে গিয়ে চাবি নিয়ে দরজা খুলে সাবাইকে বললেন, তােমরা প্রবেশ কর। এতে সবাই ঘরে প্রবেশ করল আর আমি ছিলাম সবার পেছনে। হযরত ওমর (رضي الله عنه) বললেন

خذوا فاخذ كل رجل منهم ما احب ثم التفت اليه واني اخر القوم وكأنا لم نرزأ تمرة

তােমরা নাও, সুতরাং প্রত্যেকেই চাহিদা মােতাবেক খেল এবং নিয়ে নিল। আমি খাবারের দিকে তাকালাম, দেখলাম দস্তরখানায় একটি খেজুরও কমেনি অথচ আমি ছিলাম সর্বশেষ খাবার গ্রহণকারী। ●160
_____________________________
১৬০. আবু নঈম ইস্পাহানী (رحمة الله) (১৩৫০হি.), দালায়েলুন নবুয়ত, উর্দূ, দিল্লী, পৃ-৩৮২)

❏ হযরত আবু হােরাইরা (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসূলাল্লাহ (ﷺ) কে বলতে শুনেছি যে, আমার উম্মত থেকে কিছুলােক দল বেঁধে বেহেশতে প্রবেশ করবে। আর তারা হবে সংখ্যায় সত্তর হাজার, তাদের চেহারাগুলাে পূর্ণিমার চাঁদের আলাের ন্যায় উজ্জ্বল থাকবে। হযরত আবু হােরাইরা (رضي الله عنه) বলেন, এতদশ্রবণে উক্কাশ ইবনে মিহসান আসাদী তাঁর গায়ের চাদর উঠাতে উঠাতে দাঁড়ালেন এবং বললেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমার জন্য দোয়া করুন, আল্লাহ তায়ালা যেন আমাকে তাঁদের অন্তর্ভুক্ত করেন। রাসূলাল্লাহ (ﷺ) দোয়া করলেন, হে আল্লাহ! আপনি একে তাদের অন্তর্ভুক্ত করুন। এরপর আনসার সম্প্রদায়ের এক লােক দাঁড়িয়ে বলল, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আল্লাহর নিকট দোয়া করুন, তিনি যেন আমাকে ও তাদের অন্তর্ভুক্ত করেন। নবী করিম (ﷺ) বললেন, উক্কাশা তাে উক্ত দোয়ার ব্যাপারে তােমার চেয়ে অগ্রগামী হয়ে গিয়েছে। ●161
_____________________________
১৬১. ইমাম বুখারী, মুহাম্মদ ইবনে ইসমাঈল বুখারী (رحمة الله) (২৫৬হি.), সহীহ বুখারী শরীফ, আরবী, ইউপি, ইন্ডিয়া, খন্ড:২য় পৃ:৯৬৮, হাদিস নং ৬০৯৯

জান্নাতী পানি পান
____________________
জান্নাতী পানি পান

❏ ইবনে আসাকের (رحمة الله) ইবনে আব্বাস (رضي الله عنه) থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, হযরত আবু বকর (رضي الله عنه) রাসূল (ﷺ) এর সাথে সত্তর গুহায় ছিলেন। হযরত আবু বকর (رضي الله عنه)’র পানির পিপাসা লাগলে রাসূল (ﷺ) তাকে বললেন, اذهب الی صدی لغار فاشرب অর্থ: গুহার সম্মুখ দিয়ে যাও আর পানি পান কর। আবু বকর (رضي الله عنه) গুহার সম্মুখ দিকে গিয়ে তা থেকে পানি পান করেন। ঐ পানি মধুর চেয়ে মিষ্টি, দুধের চেয়ে শুভ্র ও মেশকের চেয়ে অধিক সুগন্ধি ছিল। এরপর আবু বকর (رضي الله عنه) চলে আসেন। তখন রাসূল (ﷺ) এরশাদ করেন-

ان اللّه امر الملك الموكل بانهار الجنة أن خرق نهّرا من جنة الفردوس الى صدر الغار لتشرب

       অর্থাৎ আল্লাহ তায়ালা জান্নাতের নহরের দায়িত্ববান ফেরেস্তাকে আদেশ দেন যেন জান্নাতুল ফেরদৌসের নহর কে গুহার সম্মুখ ভাগে প্রবাহিত করে দেন যাতে তুমি পানি পান করতে পার। ●162
_____________________________
১৬২. ইমাম সুয়ূতী, জালাল উদ্দিন সুয়ূতী (رحمة الله) (৯১১হি.), আল খাসায়েসুল কুবরা, আরবী, বৈরুত, খণ্ড:১ম পৃ:৩০৭

মদীনার জ্বরে মৃত্যুবরণ করা
____________________
মদীনার জ্বরে মৃত্যুবরণ করা

❏ ইমাম বাইহাকী (رحمة الله) ইবনে ইসহাক (رحمة الله) থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, বনু তাই গােত্রের প্রতিনিধি দল আসল। তাদের মধ্যে যায়েদ আল খায়েল নামক এক ব্যক্তি ছিল। তারা মুসলমান হল আর রাসূল (ﷺ) যায়েদ আল খায়েল এর নাম রাখলেন যায়েদ আল খায়ের। সে যখন স্বীয় কওমে ফিরে গেল তখন নবী করিম (ﷺ) বললেন- لم ینجو زید من حمی المدینة যায়েদ মদীনার জ্বর থেকে বাঁচতে পারবে না। অতঃপর সে যখন নজদে পৌঁছল তখন জ্বরে আক্রান্ত হল এবং সেখানে সে মৃত্যুবরণ করল। ●163
_____________________________
১৬৩. ইমাম সুয়ূতী, জালাল উদ্দিন সুয়ূতী (رحمة الله) (৯১১হি.), আল খাসায়েসুল কুবরা, আরবী, বৈরুত, খণ্ড:১ম পৃ:৩৪

সুস্থ হয়ে সৎলােক হয়ে শহীদ হওয়া
____________________
সুস্থ হয়ে সৎলােক হয়ে শহীদ হওয়া

❏ ইমাম বায়হাকী (رحمة الله) হযরত মুহাম্মদ বিন সীরীন (رحمة الله) থেকে বর্ণনা করেন, জনৈক মহিলা তার এক রুগ্ন ছেলেকে নিয়ে নবী করিম (ﷺ)’র দরবারে এসে বলল, এটি আমার ছেলে। তার এমন এমন রােগ-ব্যধি হয়েছে যার ফলে সে এখন এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যা আপনি দেখতেছেন। সুতরাং আপনি তার মৃত্যুর জন্য আল্লাহর কাছে দোয়া করুন। তিনি বললেন, আমি তার শেফা ও সুস্থতার জন্য আল্লাহর কাছে দোয়া করতেছি সে যেন ভাল হয়ে বড় হয়ে সৎ লােক হয়ে আল্লাহর রাস্তায় জিহাদ করে শাহাদত বরণ করে জান্নাতে প্রবেশ করতে পারে। ●164
_____________________________
১৬৪. ইমাম সুয়ূতী, জালাল উদ্দিন সুয়ূতী (رحمة الله) (৯১১হি.), আল খাসায়েসুল কুবরা, আরবী, বৈরুত, খণ্ড:২য় পৃ:১১৭

প্রচণ্ড শীতকালীন ভােরেও পাখা ব্যবহার
____________________
প্রচণ্ড শীতকালীন ভােরেও পাখা ব্যবহার

❏ ইবনে আদী (رحمة الله), বায়হাকী (رحمة الله) ও আবু নঈম (رحمة الله) হযরত বেলাল (رضي الله عنه) থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, আমি একদা শীতকালীন সকালে আযান দিলে করিম (ﷺ) ঘর থেকে বের হয়ে আসেন কিন্তু মসজিদে তখনাে কেউ আসেনি। তিনি জিজ্ঞেস করলেন, বেলাল, লােকেরা কোথায়? আমি বললাম, প্রচণ্ড ঠাণ্ডার কারণে আসেনি। তখন তিনি দোয়া করলেন- اللهم اذهب عنهم البرد হে আল্লাহ! ওদের থেকে শীত দূরীভূত করে দিন। হযরত বেলাল (رضي الله عنه) বলেন, আমি তাদেরকে সকালে ভাের বেলায়ও পাখা ব্যবহার করতে দেখেছি। ●165
_____________________________
১৬৫. ইমাম সুয়ূতী, জালাল উদ্দিন সুয়ূতী (رحمة الله) (৯১১হি.), আল খাসায়েসুল কুবরা, আরবী, বৈরুত, খণ্ড:২য় পৃ:১২১

হযরত সফীনা (رضي الله عنه)'র নামকরণ
____________________
হযরত সফীনা (رضي الله عنه)'র নামকরণ

❏ ইমাম আহমদ (رحمة الله), ইবনে সা'দ (رحمة الله), বায়হাকী (رحمة الله) ও আবু নঈম (رحمة الله) হযরত সফীনা (رضي الله عنه) থেকে বর্ণনা করেন, একদা তাকে কেউ জিজ্ঞাসা করল যে, তােমার নাম কি? তিনি উত্তর দেন যে, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) আমার নাম রাখেন সফীনা। জিজ্ঞেস করা হল এই নাম কেন রাখা হল। উত্তরে তিনি বলেন, একদা রাসূল (ﷺ) স্বীয় সাহাবীদের নিয়ে কোথাও তাশরীফ নিলেন। সাহাবাদের জিনিসপত্র ভারী হয়েছিল। তখন রাসূল (ﷺ) একটি চাদর বিছালেন এবং সকলেই তাদের মালপত্র তাতে রেখে আমার উপর তুলে দিলেন, আর রাসূল (ﷺ) বললেন احمل فانما انت سفینة অর্থাৎ তুমি উঠাও, কেননা তুমি হলে সফীনা তথা নৌকা। সেদিন থেকে আমি সাতটি উঠের বােঝা বহন করলেও আমার ভারী হতাে না। ●166
_____________________________

১৬৬. ইমাম সুয়ূতী, জালাল উদ্দিন সুয়ূতী (رحمة الله) (৯১১হি.), আল খাসায়েসুল কুবরা, আরবী, বৈরুত, খণ্ড:২য় পৃ:১২১

❏ হযরত আলী (رضي الله عنه) বর্ণনা করেন, নবী করিম (ﷺ) আমাকে বললেন, আমার উটনীতে আরােহণ কর আর ইয়েমেনে যাও। যখন অমুক পাহাড় দিয়ে গমণ করবে তখন লােকেরা তােমায় এস্তেকবালিয়া তথা তােমাকে স্বাগতম জানানাের উদ্দেশ্যে আসবে। সেখানে দাঁড়িয়ে বলবে, یا حجر یا مرر، یا شجر رسول اللّٰه بقرء کم سلام হে পাথর, হে মাটির ঢিলা, হে বৃক্ষ রাসূলুল্লাহ তােমাদের সালাম দিয়েছেন। হযরত আলী (رضي الله عنه) বলেন, যখন আমি ঐ পাহাড়ে পৌঁছি তখন দেখি লােকেরা আমার দিকে আসতে লাগল আর বলতে লাগল । یا حجر یا مرر یا شجر رسول اللّٰه کم علیکم السلام মাটি থেকেও উচ্চস্বরে এরূপ শব্দ আসতে লাগল। এখানকার লােকেরা এই শব্দ শুনে সকলে মুসলমান হয়ে গেল। ●167
_____________________________

১৬৭. আব্দুর রহমান জামী (رحمة الله)  (৮৯৮ হি.), শাওয়াহেদুন নবুয়ত, উর্দু, বেরেলী, পৃঃ: ২০২

যেমন চাওয়া তেমন হওয়া
কিবলা পরিবর্তন
____________________
যেমন চাওয়া তেমন হওয়া:

কিবলা পরিবর্তন:

      ইবনে সা’দ (رحمة الله) হযরত ইবনে আব্বাস (رضي الله عنه) থেকে বর্ণনা করেন, নবী করিম (ﷺ) মদীনায় হিজরত করে মােল মাস পর্যন্ত বায়তুল মােকাদ্দেসের দিকে ফিরে নামায আদায় করেন। কিন্তু তাঁর আশা ছিল যে, বায়তুল্লাহকেই কিবলা বানানাে হােক। তিনি হযরত জিব্রাঈল (عليه السلام) কে বললেন, আমার আকাঙ্ক্ষা যে, আল্লাহ যেন আমার কিবলা ইহুদীদের কিবলা থেকে ফিরিয়ে দেন। জিব্রাঈল (عليه السلام) বললেন, আমিতাে একজন বান্দাহ মাত্র। আপনিই আপনার প্রভূর কাছে প্রার্থনা করুন।

       অতঃপর রাসূল (ﷺ) যখনই বায়তুল মােকাদ্দাসের দিকে ফিরে নামায আদায় করতেন। তখন স্বীয় মাথা মােবারক আসমানের দিকে উঠাতেন।১৬৮ তারপর:

قد نرى تقلب وجهك في السماء فلنولينك قبلة ترضها

       অর্থ: নিশ্চয়ই আমি আপনাকে বার বার আকাশের দিকে তাকাতে দেখি। অতএব, অবশ্যই আমি আপনাকে সে কেবলার দিকেই ঘুরিয়ে দেবাে যাকে আপনি পছন্দ করেন। (সূরা বাকারা, আয়াত নং ১৪৫)

১৬৮. ইমাম সুয়ূতী, জালাল উদ্দিন সুয়ুতী (رحمة الله) (৯১১হি.), আল খাসায়েসুল কুবরা, আরবী, বৈরুত, খণ্ড: ১ম পৃ: ৩২২

যতবার চাইতাম ততবার দিতে থাকতে
____________________
যতবার চাইতাম ততবার দিতে থাকতে

        হযরত উসামা ইবনে যায়েদ (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমরা বিদায় হজ্বের সময় হজ্বের উদ্দেশ্যে নবী করিম (ﷺ) এর সাথে রওয়ানা হয়ে 'বতনে রুহা’ নামক স্থানে পৌঁছলাম। তিনি দেখলেন যে, একজন মহিলা তাঁর দিকে আসতেছে। তিনি স্বীয় সওয়ারী থামালেন। মহিলা এসে বলল, ইয়া রাসূলাল্লাহ! এটা আমার সন্তান। সে জন্মলগ্ন থেকে অসুস্থ। তিনি ছেলেটি নিয়ে স্বীয় সওয়ারীতে বক্ষ মােবারকের সামনে বসায়ে তার মুখে স্বীয় লালা মােবারক লাগিয়ে দিয়ে বললেন, اخرج یا عدو اللّٰه فانی رسول اللّٰه বেরিয়ে যা, হে আল্লাহর দুশমন। কেননা, আমি হলাম আল্লাহর রাসুল। এই বলে তিনি ছেলে মহিলাকে দিয়ে বললেন- চলে যাও আর কোন আশঙ্কা নেই।

       হযরত উসামা (رضي الله عنه) বলেন, রাসূল (ﷺ) হজ্ব সমাপন করে ফিরে আসার সময় 'বতনে রুহা’ তে পৌঁছলে মহিলা পুণরায় একটি ভূনা বকরী নিয়ে আসল। তিনি আমাকে বললেন, আমাকে বকরীর সামনের পা দাও, আমি দিলাম। তিনি পুনরায় বলেন, আরেকটি দাও, আমি দিলাম। তিনি আবার বললেন, এর সামনের পা দাও। আমি আরজ করলাম, ইয়া রাসূলাল্লাহ! বকরীর তাে দু'টি পা থাকে। আমি উভয় পা আপনাকে দিয়ে দিয়েছি। তখন তিনি বললেন, والذی نفسی بیده ما زالت تناولینی ذراعَا খােদার শপথ, যদি তুমি চুপ থাকতে তবে যতবার আমি চাইতাম ততবার তুমি দিতে থাকতে।

      এরপর তিনি আমাকে বললেন, দেখ, আশে-পাশে কোন বৃক্ষ বা পাথর দেখ কিনা? আমি আরজ করলাম, পরস্পর কাছাকাছি কয়েকটি খেজুর গাছ আর পাথরের টুকরা দেখতেছি। তিনি বললেন, তুমি বৃক্ষের কাছে গিয়ে বল। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) আদেশ দিচ্ছেন যে, তাঁর প্রকৃতিক প্রয়ােজন পূরণের জন্য তােমরা কাছাকাছি এসে একত্রিত হয়ে যাও। আর পাথরকেও অনুরূপ বল।

       উসামা (رضي الله عنه) বলেন, আমি ওগুলাের নিকটে গিয়ে অনুরূপ বললাম। খােদার শপথ, যিনি তাকে সত্য সহকারে প্রেরণ করেছেন, বৃক্ষ মাটি ছিড়ে চলতে লাগল এবং পরস্পর একস্থানে একত্রিত হয়ে গেল। আর দেখলাম পাথর নড়াচড়া করতে করতে ঐ বৃক্ষসমূহের পিছে এমনভাবে জমাট বেঁধে গেল যেন এগুলাে গেঁথে দেওয়া হয়েছে। তিনি প্রয়ােজন শেষ করে ফিরে এসে আমাকে বললেন, তুমি এগুলােকে বল, যেন তারা আপন জায়গায় চলে যায়। আমি গিয়ে বললাম,

أن رسول اللّٰه صلى اللّٰه عليه وسلم يأمركن ان ترجعن إلى مواضعكن

অর্থ: রাসূল (ﷺ) তােমাদেরকে আদেশ দিচ্ছেন যে, তােমরা তােমাদের স্থানে চলে যাও। (অনুরূপ ঘটনা হযরত জাবের (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত আছে, লেখক)১৬৯

১৬৯. ইমাম সুয়ূতী, জালাল উদ্দিন সুয়ূতী (رحمة الله) (৯১১হি.), আল খাসায়েসুল কুবরা, আরবী, বৈরুত, খণ্ড:২য় পৃ:৬০

প্রথম খণ্ড সমাপ্ত


বৃক্ষের আনুগত্য 
____________________
বৃক্ষের আনুগত্য 

       ইমাম মুসলিম, বায়হাকী, আবু নঈম (রহ.) হযরত জাবের ইবনে আব্দুল্লাহ (رضي الله عنه) থেকে বর্ণনা করেন যে, আমরা রাসুল (ﷺ)'র সাথে ‘গযওয়াযে যাতির রিকা’র উদ্দেশ্যে রওয়ানা হলাম এবং একটি প্রশস্ত উপত্যকায় পৌঁছলাম। নবী করিম (ﷺ) প্রাকৃতিক প্রয়ােজনে যান। আমি পানির পাত্র নিয়ে তাঁর পেছনে পেছনে গেলাম। তিনি কোন আড়াল পেলেন না। তবে উপত্যকার পাশে দুটি বৃক্ষ দেখেন। তিনি একটি বৃক্ষের নিকটে গিয়ে বৃক্ষের ঢাল ধরে বললেন, انقیادی باذن اللّٰه فانقادت معه کالبعیر المخشوس

       অর্থ: আল্লাহর হুকুমে আমার আনুগত হয়ে যায়, সাথে সাথে বৃক্ষ নাকে রশি বাঁধা উটের ন্যায় পিছে পিছে চলতে লাগল। এরপর তিনি অপর বৃক্ষের নিকটে গিয়ে বৃক্ষের একটি শাখা ধরে বললেন, খােদার হুকুমে আমার অনুগত হও। ঐ বৃক্ষটিও তাঁর পিছু নিতে লাগল। এভাবে উভয় বৃক্ষকে একস্থানে এনে বললেন, আল্লাহর হুকুমে একত্রে মিলে যাও। তখন উভয় বৃক্ষ একসাথে মিলে গেল।

        হযরত জাবের (رضي الله عنه) বলেন, আমি বসে গেলাম আর মনে মনে চিন্তা করতে লাগলাম। হঠাৎ যখন আমার দৃষ্টি পড়ল দেখলাম রাসূল (ﷺ) তাশরীফ আনতেছেন আর বৃক্ষ দুটি পৃথক হয়ে আপন স্থানে গিয়ে দাঁড়িয়ে গেল। আমি দেখলাম যে, তিনি কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকে স্বীয় মাথা মােবারক ডানে ও বামে ইশারা করলেন তারপর সামনের দিকে আসলেন। আমার সামনে এসে বললেন, হে জাবের! আমি যেখানে কিছুক্ষণ দাঁড়িয়েছিলাম তা তুমি দেখেছ? আমি বললাম, হ্যাঁ, তিনি বললেন, তুমি ঐ বৃক্ষ দু’টির নিকট গিয়ে প্রত্যেক থেকে একটি করে শাখা কেটে নিয়ে যেখানে আমি দাঁড়িয়েছিলাম সেখানে একটি তােমার ডান দিকে আপরটি বাম দিকে রাখবে।

        হযরত জাবের (رضي الله عنه) বলেন, আমি একটি পাথরকে ধরাল করে তা দিয়ে ঐ বৃক্ষ দু’টি থেকে দুটি শাখা কেটে নিয়ে ঐ স্থানে গিয়ে একটি ডানদিকে একটি বাম দিকে ফেলে রেখে তার কাছে চলে আসলাম। তারপর জিজ্ঞেস করলাম, হে আল্লাহর রাসূল! আপনি যা বলেছেন তা করেছি কিন্তু এর কারণটি কি? তিনি বললেন, আমি এমন দুটি কবরের পাশ দিয়ে যাচ্ছিলাম যে কবরদ্বয়ের মুর্দার উপর আযাব হচ্ছে। আমি চাইলাম যে, আমার শাফায়তের দ্বারা তাদের কবর আযাবে হ্রাস হােক যেই পর্যন্ত শাখা দুটি তাজা থাকবে।

       তারপর আমরা সৈন্যদলে পৌঁছলে তিনি আমাকে বললেন, জাবের! সকলকে অজু করার ঘােষণা কর। অমি সকলকে অজু করার ঘােষণা করলাম। আমি বললাম ইয়া রাসূলাল্লাহ! কাফেলায় বিন্দুমাত্র পানিও নেই। জনৈক আনসারী ব্যক্তি ছিল যিনি (ﷺ)’র জন্য মশকে পানি ঠান্ডা করে রাখত। তিনি বলেন, ঐ আনসারীর কাছে গিয়ে দেখ মশকে সামান্য পানি আছে কিনা। আমি গিয়ে দেখলাম মশকের দুখে মাত্র ফোঁটা পানি আছে। যদি আমি মশককে কাত করি তবে মশকের শুকনাে অংশ ভিজে শেষ হয়ে যাবে। আমি হুজুরের খেদমতে এসে তাঁকে অবহিত করলাম। তিনি বললেন, ঐ মশক নিয়ে এসাে। আমি মশক নিয়ে আসলাম। তিনি হাত মােবারক দিয়ে মশককে কয়েকটি চাপ দিয়ে আমাকে দিয়ে বললেন, জাবের, ঘােষণা কর যেন কাফেলার সবচেয়ে বড় পানির পাত্র নিয়ে আসা হয়। আমি উচ্চস্বরে বললে বড় পানির পাত্র নিয়ে আসা হয়। আমি উচ্চস্বরে বললে বড় পাত্র আনা হল। লােকেরা বহণ করে আনল। আমি উহা রাসূল (ﷺ)'র সামনে রাখলাম। হুযুর (ﷺ) উহাতে স্বীয় হাত মােবারক বুলিয়ে হাতের আঙ্গুল সমূহ প্রশস্ত করে স্বীয় হাত মােবারক পাত্রের মুখে রাখলেন আর এরশাদ করলেন, হে জাবের! এই মশক নিয়ে বিসমিল্লাহ বলে আমার হাতের উপর ঢাল। আমি বিসমিল্লাহ বলে। ঐ পানি তার হাত মােবারকে ঢেলে দিলাম। অতঃপর দেখলাম তাঁর আঙ্গুল মােবারকের মাঝখান থেকে পানির ঝর্ণা প্রবাহিত হতে লাগল। এমনকি পানির বেগে পাত্র ঘুরে গেল এবং পানি পূর্ণ হয়ে গেল।

       তারপর বললেন, হে জাবের! ঘােষণা কর- যার পানির প্রয়ােজন সে যেন এসে পানি নিয়ে যায়। তখন সাহাবীগণ এসে পানি নিয়ে যান এবং সবাই পরিতৃপ্ত হলেন। এরপর তিনি স্বীয় হাত মােবারক পাত্র থেকে তুলে নিলে পাত্র পানিতে পূর্ণ ছিল।

       সাহাবায়ে কিরাম তাঁর কাছে ক্ষুধার অভিযােগ করলে তিনি বলেন, অচিরেই আল্লাহ তােমাদের খাবারের ব্যবস্থা করবেন। অতঃপর আমরা একটি নদীর তীরে আসলে নদী একটি মাছ আমাদের উদ্দেশ্যে তীরে নিক্ষেপ করল। আমরা নদীর তীরে আগুন জ্বালিয়ে মাছ রান্না ও ভূনা করে খেয়েছি। হযরত জাবের (رضي الله عنه) এটা কত বড় মাছ ছিল তার বর্ণনা দিতে গিয়ে বলেন, আমি এবং অমুক অমুক মােট পাঁচ জন ব্যক্তি ঐ মাছের চোখের খােসায় ঢুকে গেলাম আমাদের কাউকে দেখা যাচ্ছিলনা তারপর আমরা বেরিয়ে আসলাম। তারপর আমরা ঐ মাছের পাশের একটি হাড়ি নিয়ে ধনুকের ন্যায় বাঁকা করে রেখেছি আর কাফেলার সবচেয়ে লম্বা ব্যক্তি সবচেয়ে বড় উঁচু উটের উপর আরােহন করেছিল তাকে ডাকা হল। সে ঐ উঁচু ঘােড়ায় সওয়াব হয়ে ঐ মাছের হাড্ডির নীচ দিয়ে মাথা ঝুঁকানাে ব্যতীত অনায়েসে চলে গেলে।

১৭০. ইমাম সুয়ূতী, জালাল উদ্দিন সুয়ূতী (রঃ) (৯১১হি.), আল খাসায়েসুল কুবরা, আরবী, বৈরুত, খন্ড ১ম, পৃ: ৩৭১

বৃক্ষের শাহাদাত বা সাক্ষ্য
____________________
বৃক্ষের শাহাদাত বা সাক্ষ্য

       ইমাম আবু নঈম (رحمة الله) থেকে বর্ণনা করেন, জনৈক গ্রাম্য ব্যক্তি নবী করিম (ﷺ)’র দরবারে এসে বলল, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমি আপনার দরবারে মুসলমান হয়ে এসেছি। আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ ছাড়া কোন মাবুদ নাই, আর আপনি আল্লাহর বান্দা ও তাঁর রাসূল। আমার মনে চচ্ছে যে, আপনি ঐ সুজলা-সুফলা বৃক্ষটিকে আহ্বান করুন যেন আপনার কাছে এসে যায়। তিনি বৃক্ষকে ডাক দিলে বৃক্ষ প্রথমে ডানে ঝুঁকে পড়ে ফলে ডান দিকের শিকড় মাটি থেকে পৃথক হয়ে গেল। দ্বিতীয়বার বাম দিকে ঝুঁকে পড়ে পলে বাম দিকের শিকড় মাটি থেকে উঠে যায়। তারপর বৃক্ষটি সােজা

হয়ে দাঁড়িয়ে নবী করিম (ﷺ)’র নিকট এসে গেল। নবী করিম (ﷺ) বললেন, بما شهدین یا شجرة হে বৃক্ষ! তুমি কি সাক্ষ্য দিবে? তখন বৃক্ষ বলল اشهد ان لا اله الا اللّٰه وانك رسول اللّٰه আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ ছাড়া কোন মাবুদ নাই, আর আপনি আল্লাহর রাসূল। রাসূল (ﷺ) বললেন, তুমি সত্য বলেছ। গ্রাম্য লােকটি বলল, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আপনি বৃক্ষটিকে তার স্থানে চলে যেতে বলুন। তিনি বললেন, তুমি তােমার স্থানে চলে যাও এবং যেরকম ছিলে সেরকম হয়ে যাও। সাথে সাথে বৃক্ষ চলে গেল এবং শিকড়ের উপর শক্ত হয়ে গেল। তখন গ্রাম্য লােকটি বলল, আমি আমার পরিবারে যাচ্ছি, তাদের এই অলৌকিক মু'জিযা শুনিয়ে তাদেরকে মুসলমান বানিয়ে নিয়ে আসতেছে।১৭১

১৭১. ইমাম সুয়ূতী, জালাজ উদ্দিন সুয়ূতী (رحمة الله) (৯১১ হি.), আল খাসায়েসুল কুবরা, আরবী, বৈরুত, খন্ড ২য় পৃ: ৫৯

খেজুর কাণ্ডের কান্না
____________________
খেজুর কাণ্ডের কান্না

        হযরত জাবির ইবনে আব্দুল্লাহ (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত, নবী করিম (ﷺ) একটি বৃক্ষের উপর কিংবা খেজুর বৃক্ষের কান্ডের উপর হেলান দিয়ে মসজিদে নববীতে শুক্রবারে জুমার খুতবা প্রদানের জন্য দাঁড়াতেন। তখন একজন আনসারী মহিলা অথবা একজন পুরুষ বলল, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আপনার জন্য একটি মিম্বর তৈরী করে দেবাে কি? রাসূল পাক (ﷺ) বললেন, তােমাদের ইচ্ছে হলে দিতে পার। অতঃপর তারা একটি কাঠের মিম্বর তৈরী করে দিলেন।

       যখন শুক্রবার এল রাসূল (ﷺ) মিম্বরে আসন গ্রহণ করলেন খুতবা দেওয়ার জন্য। তখন শিশুর ন্যায় চিৎকার করে কাঁদতে লাগল। রাসূল (ﷺ) মিম্বর থেকে নেমে এসে উহাকে জড়িয়ে ধরলেন। কিন্তু কান্ডটি আবেগ আপ্লুত কন্ঠে শিশুর মত আরাে ফুফিয়ে ফুফিয়ে কাঁদতে লাগল। রাবী বলেন, কান্ডটি এজন্য কাঁদছিল যেহেতু সে খুতবা কালে অনেক যিকর শুনতে পেত।১৭২

       ইমাম দারেমী (رحمة الله) হযরত বারিদাহ (رضي الله عنه) থেকে বর্ণনা করেন, রাসুল (ﷺ) মিম্বর থেকে নেমে এসে ঐ কান্ডের উপর হাত রেখে শান্তনা স্বরূপ বললেন, হে কান্ড! যদি তুমি চাও তবে তােমাকে ঐ স্থানে বপন করে দেবাে যেখানে তুমি ছিলে। আর যদি ভাল মনে কর তবে তােমাকে জান্নাতে বপন করে দেবাে যাতে তুমি জান্নাতের নদী-নালা থেকে তাজা হবে এবং উন্নত মানের ফল দেবে যা জান্নাতবাসী আল্লাহর প্রিয়জনরা খাবে। তখন রাসূল (ﷺ) শুনেছেন যে, সে বলল, আমি পছন্দ করেছি। নবী (ﷺ) জিজ্ঞেস করেন, কি পছন্দ করেছ? উত্তরে বলল, আমি জান্নাতী বৃক্ষ হতে চাই। এ জাতীয় রেওয়ায়েত তাবরানী এবং ইবনে আবি শাইবা, দারেমী ও আবু নঈম হযরত আবু সাঈদ খুদুরী (رضي الله عنه) থেকে রেওয়ায়েত করেন।১৭৩

      ইমাম তাজ উদ্দিন সুবকী (رحمة الله) বলেন, খেজুর বৃক্ষের কান্ড রাসূল (ﷺ)’র বিরহে ক্রন্দন করার হাদিস মুতাওয়াতির পর্যায়ে পৌঁছেছে। প্রায় বিশজন সাহাবী ঐ ঘটনা বর্ণনা করেন। আর এ ঘটনার অধিকাংশ সনদ বিশুদ্ধ। সুতরাং তা অকাট্য ও সন্দেহাতীত।১৭৪

       আল্লামা জামী (رحمة الله) শাওয়াহেদুন নবুয়ত গ্রন্থে এই ঘটনা বর্ণনা করার পর একটি কবিতা উল্লেখ করেন

أستن حنانہ درھجر رسول * نالہ می زد ہمچوار باب عقول

      রাসূল (ﷺ) এর বিরহে উস্তুুনে হান্নানাহ (জড়পদার্থ হয়েও) জ্ঞানীদের ন্যায় কান্না করেছিল।১৭৫

       ইবনে আবি শায়বা, আবু ইয়ালা, দারেমী ও বায়হাকী হযরত আ’মশ, আবু সুফিয়ান ও আনাস (رضي الله عنه) থেকে বর্ণনা করেন যে, হযরত জিব্রাঈল (عليه السلام) নবী করিম (ﷺ)'র নিকট আসলেন তখন তিনি মক্কার বাইরে ছিলেন। মক্কা বাসীরা তাঁকে রক্তাক্ত করে দেয়। জিব্রাঈল (عليه السلام) জিজ্ঞেস করলেন কি হয়েছে আপনার? তিনি বললেন, তারা আমাকে রক্তাক্ত করে দিল আর আমার বিরুদ্ধে এরূপ-সেরূপ বলতেছেন।

       জিব্রাঈল (عليه السلام) বললেন, আপনি যে, সত্য নবী এ ব্যাপারে কোন নিদর্শন দেখতে চান? তিনি উত্তর দিলেন, হ্যাঁ, জিব্রাঈল (عليه السلام) বললেন, ঐ বৃক্ষকে আহ্বান করুন। তিনি ওটাকে আহ্বান করা মাত্র তা মাটি ছিড়ে এসে তাঁর সামনে দন্ডায়মান। জিব্রাঈল (عليه السلام) বললেন ওটাকে পুনরায় চলে যেতে বলেন। তিনি বৃক্ষকে বললেন, তুমি আপন স্থানে চলে যাও। সাথে সাথে বৃক্ষ আপন জায়গায় চলে গেল। তখন রাসূল (ﷺ) বললেন, এতটুকুই আমার জন্য যথেষ্ট।১৭৬

১৭২. ইমাম বুখারী, মুহাম্মদ ইবনে ইসমাঈল (رحمة الله) (২৫৬ হি.), সহীহ বুখারী শরীফ, আরবী, ইউপি, ইন্ডিয়া, পৃ: ৫০৬, হাদিস নং ৩৩৩১

১৭৩. ইউসুফ নাবহানী (رحمة الله) (১৩৫০ হি.) হুজ্জাতুল্লাহি আলাল আলামীন, উর্দু, গুজরাট, পৃ:৭১৫

১৭৪. প্রাগুক্ত, পৃ:৭১৪

১৭৫. আল্লামা জামী (رحمة الله) (৮৯৮হি.) শাওয়াহেদুন নবুয়ত, উর্দু, বেরেলী, পৃ:১৬১

১৭৬. সুয়ূতী, জালাল উদ্দিন সুয়ূতী (رحمة الله) (৯১১ হি.), আল খাসায়েসুল কুবরা, আরবী, বৈরুত, খন্ড: ১ পৃ: ২০২

মাটি থেকে পানি প্রবাহিত করা
____________________
মাটি থেকে পানি প্রবাহিত করা

       ইবনে সা’দ হযরত আমর ইবনে সাঈদ (رضي الله عنه) থেকে বর্ণনা করেন, হযরত আবু তালেব বলেন, একদা আমি আমার ভাতিজা তথা নবী করিম (ﷺ)'র সাথে 'যুল মাজাস' নামক স্থানে ছিলাম। আমার প্রচন্ড পানির পিপাসা হল। আমি তাঁর কাছে এ ব্যাপারে অভিযােগ পেশ করলাম। আমি বললাম, হে ভাতিজা! আমি পিপাসার্ত। তবে আমার করুণ অবস্থা তাঁকে বলিনি। কারণ আমি দেখতেছি যে, আফসােস করা ছাড়া তাঁর কাছে আর কিছু নেই।

       তারপর তিনি সওয়ারী থেকে নামলেন এবং বললেন, হে চাচা! আপনি কি পিপাসার্ত? আমি বললাম হ্যাঁ। তখন তিনি নিজের পেছনের দিকে মাটির দিকে একটু ঝুঁকে তাকালেন।

হঠাৎ আমি সেখানে পানি দেখলাম। তিনি বললেন, চাচা! পানি পান করুন। আবু তালেব বলেন, আমি পানি পান করলাম।১৭৭

১৭৭. সুয়ূতী, জালাল উদ্দিন সুয়ূতী (رحمة الله) (৯১১হি.), আল খাসায়েসুল কুবৃরা, আরবী, বৈরুত, খন্ড: ১ম পৃ: ২০৭

বৃক্ষ ভাগ হয়ে চলে আসা
____________________
বৃক্ষ ভাগ হয়ে চলে আসা

       আরবের বিখ্যাত শক্তিধর পলােয়ান রুকানাকে নবী করিম (ﷺ) তিন তিনবার পরাজিত করে তিনটি বকরী গ্রহণের পর বললেন, হে রুকানা! তােমার বকরীর কোন প্রয়ােজন নেই আমার। বরং আমি তােমাকে ইসলামের দাওয়াত দিচ্ছি, তুমি ইসলাম গ্রহণ কর। কেননা তুমি দোযখে যাও তা আমি চাইনা। যদি তুমি ইসলাম গ্রহণ কর তবে নিরাপদে থাকবে। রুকানা বলল, যতক্ষন না আপনি কোন নিদর্শন দেখাবেন ততক্ষন আমি ইসলাম গ্রহণ করবাে না। রাসূল (ﷺ) বললেন, তােমার উপর আমি আল্লাহ তায়ালাকে সাক্ষী করছি যে, যদি আল্লাহ আমার দোয়ায় কোন নিদর্শন তােমাকে দেখায় তবে আমি তােমাকে যেদিকে আহ্বান করি তুমি তা কবুল করবে? সে বলল, হ্যাঁ, অবশ্যই কবুল করবাে। তাঁর নিকটেই শাখা-প্রশাখা বিশিষ্ট তরু-তাজা একটি বৃক্ষ ছিল। তিনি ঐ বৃক্ষের দিকে ইশারা করেন এবং বললেন, আল্লাহর হুকুমে আমার সামনে চলে এসাে। সাথে সাথে বৃক্ষ দু'ভাগে ভাগ হয়ে অর্ধেক স্বীয় শাখা-প্রশাখা ও তাজা পাতাসহ তাঁর ও রুকানার সামনে এসে দণ্ডায়মান। এ দৃশ্য দেখে সে রাসূল (ﷺ) কে বলল, আপনি তাে আমাকে মস্তবড় আযাব কাণ্ড দেখালেন। সে বলল, আপনি আবার হুকুম করুন যেন বৃক্ষ আপন জায়গায় চলে যায়। তিনি বললেন, হে রুকানা! তােমার উপর আমি আল্লাহ তায়ালাকে সাক্ষী করছি, যদি আমি তাঁর কাছে দোয়া করি এই বৃক্ষ চলে যেতে এবং বৃক্ষ যদি আপন স্থানে চলে যায় তবে কি তুমি তােমাকে যে দিকে আহ্বান করি তুমি কবুল করবে? উত্তরে সে বলল, অবশ্যই কবুল করবাে। এই কথা বলার সাথে সাথে বৃক্ষ স্বীয় শাখা ও পাতাসহ চলে গিয়ে স্বীয় অপর অংশের সাথে মিলে গেল। তারপর তিনি তাকে বললেন, মুসলমান হয়ে যাও তবে নিরাপদে থাকবে।

       রুকানা বলল, এত বড় আশ্চার্য ঘটনা দেখে ইসলাম গ্রহণ করতে আর কোন বাঁধা রইলনা তবে আমি ভাবনায় পড়েছি যে, শহরের নারীরা বলবে যে, আমি মুহাম্মদ (ﷺ)’র ভয়ে ইসলাম গ্রহণ করছি। শহরের নারী-পুরুষ সবাই জানে যে, এই পর্যন্ত কেউ আমার বাহু মাটিতে লাগাতে পারেনি এবং জীবনে কোন দিন আমার মনে কারাে ভীতি সঞ্চার করেনি। সুতরাং আপনি শর্ত মােতাবেক বকরী নিয়ে নিন। আমি ইসলাম গ্রহণ করবাে না। তখন রাসূল (ﷺ) বললেন, তুমি ইসলাম গ্রহণ না করলে তােমার বকরীর আমার কোন প্রয়ােজন নেই।১৭৮

১৭৮. সুয়ূতী, জালাল উদ্দিন সুয়ূতী (رحمة الله) (৯১১হি.), আল খাসায়েসুল কুবরা, আরবী বৈরুত, খন্ড:১ম পৃ:২১৭ ও আবু নঈম ইস্পাহানী (رحمة الله) (৪৩০হি.), দালায়েলুন নবুয়ত, উর্দু, দিল্লী, পৃ: ৩৫৫

বৃক্ষ আদেশ পালন করা
____________________
        বৃক্ষ আদেশ পালন করা

     আবু নঈম (رحمة الله) হযরত আলকামার সূত্রে হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ (رضي الله عنه) থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, আমরা খায়বার যদ্ধে রাসূল (ﷺ)’র সাথে ছিলাম। তিনি হাযত পূরণের মনস্থ করলে আমাকে বললেন, হে আব্দুল্লাহ! দেখ, পর্দা করার জন্য কিছু আছে কিনা? আমি দেখলাম একটি বৃক্ষ রয়েছে এবং নবী করিম (ﷺ) কে এই বৃক্ষ সম্পর্কে অবহিত করলাম। তিনি আবার বললেন, দেখ, আর কিছু আছে কিনা, আমি দেখলাম যে, প্রথম বৃক্ষের বহু দূরে আর একটি বৃক্ষ রয়েছে। এটার ব্যাপারেও তাঁকে অবহিত করলাম। তিনি বললেন, তুমি ঐ বৃক্ষ দু’টিকে বল- রাসূল (ﷺ) তােমাদেরকে আদেশ দিচ্ছেন যে, তােমরা একত্রে মিলে যাও। আমি বৃক্ষ দুটি এরূপ বলার সাথে সাতে বৃক্ষ দুটি পরস্পর মিলে গেল।

       তারপর তিনি এসে হাযত সেরে যখন দাড়ালেন তখন বৃক্ষ দু’টি আপন স্থানে চলে গেল।১৭৯

১৭৯. সুয়ূতী, জালাল উদ্দিন সুয়ুতী (رحمة الله) (৯১১হি.), আল খাসায়েসুল কুবরা, আরবী, বৈরুত, খন্ড: ১ম পৃ: ৪২২

বৃক্ষের শাখা দৌঁড়ে আসা
____________________
বৃক্ষের শাখা দৌঁড়ে আসা

       ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল ও ইমাম বুখারীর (رحمة الله) (তারীখ গ্রন্থে), ইমাম দারেমী, তিরমিযি ও হামেম (رحمة الله) (তারা এটাকে বিশুদ্ধ বলেছেন), ইমাম বায়হাকী, আবু ইয়ালা ও ইবনে সা'দ (رحمة الله) হযরত ইবনে আব্বাস (رضي الله عنه) থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, বনী আমের ইবনে সা’সা’ গােত্রের এক গ্রাম্য ব্যক্তি নবী করিম (ﷺ) এর দরবারে আগমন করে বলল, আমি কিভাবে বুঝাবাে যে, আপনি আল্লাহর রাসূল? তিনি বললেন, আমি যদি এই বৃক্ষের শাখাটিকে ডেকে আনি তবে তুমি মানবে? সেই বলল, হ্যাঁ, মানবাে। অতঃপর বৃক্ষের শাখাটিকে আহ্বান করলে শাখা বৃক্ষ থেকে নেমে মাটিতে পড়ে দৌঁড়ে এসে গেল।

       ইমাম আবু নঈম (رحمة الله)’র বর্ণনা আছে যে, ঐ শাখা এসে তাঁকে সিজদা করে সামনে দাঁড়িয়ে গেল। তিনি শাখাকে বললেন, ارجع الی مکانك তুমি তােমার স্থানে ফিরে যাও। সে তার স্থানে ফিরে গেল আর গ্রাম্য ব্যক্তি এই মু'জিযা দেখে কালিমা পড়ে মুসলমান হয়ে গেল।১৮০

১৮০. ইমাম সুয়ুতী, জালাজ উদ্দিন সুয়ূতী (رحمة الله) (৯১১হি.), আল খাসায়েসুল কুবরা, আরবী, বৈরুত, খন্ডঃ ২য় পৃ: ৬০

বৃক্ষ নবুয়তের সাক্ষ্য দেওয়া 
____________________
বৃক্ষ নবুয়তের সাক্ষ্য দেওয়া

       হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমরা এক সফরে রাসূল (ﷺ)'র সাথে ছিলাম। এক গ্রাম্য ব্যক্তি আসল, সে কাছে আসলে তিনি তাকে বললেন, কোথায় যাবার ইচ্ছে? সে বলল, আমার পরিবারে। তিনি জিজ্ঞেস করলেন, তােমার কোন কল্যাণের ইচ্ছে আছে? সে বলল, কি কল্যাণ? তিনি বললেন, তুমি সক্ষ্য দাও যাও, আল্লাহ ছাড়া কোন মাবুদ নাই, তিনি একক, তাঁর কোন অংশীদার নেই। আর আমি তাঁর বান্দা ও তাঁর রাসূল। লােকটি বলল, আপনি যা বলছেন তা যে সত্য কে সাক্ষী হবে? তিনি বললেন, এই বৃক্ষ সাক্ষী। তখন তিনি বৃক্ষকে ডাকলেন (বৃক্ষটি উপত্যকার পাশে ছিল) বৃক্ষটি মাটি ছিড়ে তাঁর নিকট চলে আসে। তিনি বৃক্ষ থেকে তিনবার সাক্ষ তলব করেন। বৃক্ষ প্রতিবার রাসূল (ﷺ) যা বলেছেন তাঁর পক্ষে সাক্ষ্য দিয়েছে। এরপর বৃক্ষ আপন স্থানে চলে গেল আর গ্রাম্য ব্যক্তি বলল, আমার সম্প্রদায়ের লােকেরা আমার কথা মানলে আমি তাদেরকে সঙ্গে নিয়ে আসবাে অন্যথায় আমি একা এসে আপনার সঙ্গে থেকে যাবাে।১৮১

১৮১. ইমাম সুয়ূতী, জালাল উদ্দিন সুয়ূতী (رحمة الله) (৯১১হি.), আল খাসায়েসুল কুবরা, আরবী, বৈরুত, খন্ড: ২য় পৃ: ৬০

পাথর তাসবীহ্ পড়া
____________________
পাথর তাসবীহ্ পড়া

       ইমাম বাযযার, তাবরানী (আওসাত গ্রন্থে), আবু নঈম ও বায়হাকী (رحمة الله) হযরত আবু যর গিফারী (رحمة الله) থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, একদা নবী করিম (ﷺ)'র একাকী বসে আছেন। আমি এসে তাঁর পাশে বসলাম। এরপর হযরত আবু বকর (رضي الله عنه) এসে সালাম করে বসে গেলেন। এরপর হযরত ওমর (رضي الله عنه), হযরত ওসমান (رضي الله عنه) এসেছেন। এ সময় রাসূল (ﷺ)"র সামনে সাতটি কঙ্কর ছিল। তিনি ঐগুলাে নিয়ে হাতের তালুতে রাখলে ঐগুলাে তাসবীহ পড়া আরম্ভ করল। এমন কি মধু পােকার ন্যায় ঐগুলাে থেকে গুনগুন তাসবীহর আওয়াজ শুনতে পাই। তিনি ঐগুলাে রেখে দিলে আওয়াজ বন্ধ হয়ে যায়।

        তারপর আবার ঐগুলাে নিয়ে হযরত আবু বকর (رضي الله عنه)'র হাতে রাখলে সেখানেও মধু পােকার শব্দের ন্যায় তাসবীহর আওয়াজ শুনেছি। তারপর রেখে দিলে আওয়াজ বন্ধ হয়ে যায়। এভাবে হযরত ওমর ও হযরত ওসমান (رضي الله عنه)'র হাতে ঐ পাথর গুলাে আনুরূপভাবে তাসবীহ পাঠ করে এবং এই আওয়াজ মধুপােকার আওয়াজের মতাে আমি নিজে শুনেছি। তখন নবী করিম (ﷺ) এরশাদ করেন- هذه خلافة نبوة এগুলাে নবুয়তের খেলাফত।

      হযরত আনাস (رضي الله عنه) থেকেও অনুরূপ হাদিস বর্ণিত আছে।

১৮২. ইমাম সুয়ূতী, জালাল উদ্দিন সুয়ূতী (رحمة الله) (৯১১হি.), আল খাসায়েসুল কুবরা, আরবী, বৈরুত, খন্ড: ২য় পৃ: ১২৪

প্লেটের খাবার তাসবীহ পড়া
____________________
প্লেটের খাবার তাসবীহ পড়া

       হযরত আনাস (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল (ﷺ)'র কাছে ‘সারিদ’ নামক খাবার আনা হলে তিনি বলেন, ان هذا الطعام یسبح এই খাবার তাসবীহ পড়তেছে। উপস্থিত লােকেরা বলল, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আপনি কি এদের তাসবীহ বুঝতেছেন? তিনি বললেন, হ্যাঁ। তখন তিনি এক ব্যক্তিকে বললেন, এই প্লেটটি এই ব্যক্তির নিকটে করে দাও। প্লেট তার কাছে আনা হলে সেই বলল, হ্যাঁ, ইয়া রাসূলাল্লাহ, এই খাবার তাসবীহ পাঠ করতেছে। তারপর অপর আরাে দুই ব্যক্তির নিকটে করা হলে তার উভয়ে অনুরূপ বলল। তখন তিনি ঐ খাবার প্লেট নিয়ে রেখে দিলেন। উপস্থিত এক ব্যক্তি বলল, ইয়া রাসূলাল্লাহ! এই প্লেট যদি সকলের নিকট আসত কতইনা ভাল হত। তখন রাসূল (ﷺ) বললেন, এই প্লেট যদি কারাে নিকটে গিয়ে চুপ হয়ে যেতাে তাহলে লােকেরা বলত যে, তার গুনাহের কারণে এরূপ হয়েছে।১৮৩

১৮৩. ইমাম সুয়ূতী, জালাল উদ্দিন সুয়ূতী (رحمة الله) (৯১১হি.), আল খাসায়েসুল কুবরা, আরবী, বৈরুত, খন্ড: ২য়, পৃ: ১২৫

শুকনাে বৃক্ষে ফল
____________________
শুকনাে বৃক্ষে ফল

        একদিন রাসূল (ﷺ) হযরত আবু বকর, ওমর ও আলী (رضي الله عنه)সহ আবুল হায়শাম ইবনে তাহাইয়্যান (رضي الله عنه)’র ঘরে তাশরীফ নিলে সে তাদেরকে স্বাগতম জানিয়ে বলল, মারহাবা ইয়া রাসূলাল্লাহ ও সাহাবায়ে কিরাম আমার প্রাণের চাহিদা ছিল যে, আপনি সাহাবাগণকে নিয়ে আমার ঘরে তাশরীফ আনবেন। আমার যা কিছু ছিল তা আমি প্রতিবেশীদের মধ্যে বন্টন করে দিয়েছি। তিনি বললেন, তুমি খুবই ভাল করেছ। হযরত জিব্রাঈল আমাকে প্রতিবেশীর হক সম্পর্কে এত বেশী তাগীদ দিতেন প্রতিবেশীকে ওয়ারিশের হকদার বানিয়ে দেওয়ার আশংকা করেছিলাম।

       তারপর তিনি চোখ তুলে দেখেন আবুল হায়শামের ঘরের এক কোণায় একটি খেজুর বৃক্ষ আছে। তিনি তাকে বললেন, তােমার অনুমতি পেলে আমরা এই বৃক্ষ থেকে খেজুর খেতে পারি, সে বলল, দীর্ঘ দিন থেকে এই বৃক্ষে ফল আসেনি এখন আপনার ইচ্ছে। তিনি বললেন, আল্লাহ বরকত দান করবেন। এরপর হযরত আলী (رضي الله عنه) কে হুকুম করলেন, একটি পানির পেয়ালা নিয়ে এসাে। যখন পানি আনা হল তখন তিনি সামান্য পানি দিয়ে কুলি করে ঐ বৃক্ষের দিকে নিক্ষেপ করলেন। সাথে সাথে ঐ খেজুর বৃক্ষে খেজুরের খােবা ঝুলতে লাগল যাতে অনেক বড় বড় খেজুর ছিল। তিনি বললেন, এগুলাে জান্নাতের বাগানের খেজুর যা কিয়ামত দিবসে তােমরা পাবে। এগুলাে এমন নিয়ামত কিয়ামত দিবসে হিসাব হবে।১৮৪

১৮৪. আব্দুল রহমান জামী (رحمة الله) (৮৯৮হি.), শাওয়াহেদুন নবুয়ত, উর্দু, বেরেলী, পৃ: ১৯৫

দেয়ালে আমীন বলা 
____________________
দেয়ালে আমীন বলা

       ইমাম বায়হাকী ও আবু নঈম (رحمة الله) আবু উসাইদ সায়েদী (رضي الله عنه) থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, রাসূল (ﷺ) হযরত আব্বাস (رضي الله عنه) কে বললেন, আগামীকাল সকাল বেলা আপনি ও আপন সন্তানরা আমি না আসা পর্যন্ত ঘরে থাকবেন। কেননা আপনাদের সাথে আমার কাজ আছে।

        পরের দিন সকালে তিনি সেখানে গিয়ে বললেন, তােমরা সবাই কাছাকাছি হয়ে যাও। তারা কাছাকছি এসে দাঁড়ালে তিনি তাদের উপর স্বীয় চাদর দিয়ে এই দোয়া করেন, یارب هذا عمی وضو لاء اهل بیتی فاسترهم من النار کستری ایاهم یملاتی هذه হে প্রভূ! ইনি আমার চাচা; আমার পিতার মতাে। আর এরা আমার পরিবার, আপনি তাদেরকে জাহান্নাম থেকে ডেকে রাখুন যেভাবে আমি আমার চাদর দিয়ে তাদেরকে ডেকে রেখেছি। তখন রাসূল সাল্লাল্লাহু তায়ালা আলাইহি ওয়াসাল্লাম’র এই দোয়ায় দরজার চৌকট ও দেওয়ালে আমীন, আমীন, আমীন বলেছিল।১৮৫

১৮৫. ইমাম সুয়ূতী, জালাল উদ্দিন সুয়ূতী (رحمة الله) (৯১১হি.), আল খাসায়েসুল কুবরা, আরবী, বৈরুত, খন্ডঃ২য় পৃ:১২৮

উহুদ পাহাড়ের আনুগত্য 
____________________
উহুদ পাহাড়ের আনুগত্য

        ইমাম বুখারী ও মুসলিম (رحمة الله) হযরত আনাস (رضي الله عنه) থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, নবী করিম (ﷺ) উহুদ পাহাড় কিংবা হেরা পর্বতে আরােহণ করেন। এ সময় তাঁর সাথে হযরত আবু বকর, ওমর এবং ওসমান (رضي الله عنه) ও ছিলেন। পাহাড় তাদেরকে নিয়ে হরকত করলে তিনি পা মােবারক দ্বারা পাহাড়ে আঘাত করলেন এবং বললেন, থাম, তােমার উপর একজন নবী, একজন সিদ্দীক ও দু’জন শহীদ বিদ্যমান। (সাথে সাথে পাহাড় স্থীর হয়ে গেল)।১৮৬

১৮৬. ইমাম সুয়ূতী, জালাল উদ্দিন সুয়ূতী (رحمة الله) (৯১১হি.), আল খাসায়েসুল কুবরা, আরবী, বৈরুত, খন্ড: ২য় পৃ: ১২৯

মিম্বর নড়াচড়া করা
____________________
মিম্বর নড়াচড়া করা

       ইমাম আহমদ, মুসলিম, নাসায়ী ও ইবনে মাজাহ (رحمة الله) হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি নবী করিম (ﷺ) কে মিম্বরে দাঁড়িয়ে বলতে শুনেছি, তিনি বলেন, জাব্বার (আল্লাহ) আসমান ও জমিকে হাতে নিয়ে বলবেন- আমিই হলাম জাব্বার, আমি ব্যতিত যারা জাব্বার ও অহংকারী আছ তােমরা কোথায়? নবী করিম সাল্লাল্লাহু তায়ালা আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ কথা বলার সময় ডানে ও বামে ঝুঁকে ছিলেন। ইবনে ওমর (رضي الله عنه) বলেন, আমি দেখলাম যে, মিম্বরের নীচের অংশ এমনভাবে নড়তে লাগল, আমি ভাবলাম মিম্বর রাসূল সাল্লাল্লাহু তায়ালা আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে ফেলে দেবে কিনা।১৮৭

১৮৭. ইমাম সুয়ুতী, জালাল উদ্দিন সুয়ূতী (رحمة الله) (৯১১হি.), আল খাসায়েসুল কুবরা,আরবী, বৈরুত, খন্ড: ২য় পৃ: ১২৯

বৃক্ষের শাখা আলাে দেওয়া
____________________
বৃক্ষের শাখা আলাে দেওয়া

        ইমাম আবু নঈম (رحمة الله) হযরত আবু সাঈদ খুদুরী (رضي الله عنه) থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, একদা বর্ষা রাত্রে রাসূল (ﷺ) এশার নামাযের জন্য বাইরে তাশরীফ নিলে একটি আলাে প্রকাশিত হল। এতে তিনি হযরত কাতাদাহ ইবনে নােমান (رضي الله عنه) দেখতে পান। তিনি তাকে বললেন, হে কাতাদাহ! তুমি নামায শেষে আমি আদেশ না দেওয়া পর্যন্ত আপন স্থানে অবস্থান করবে। তিনি নামায শেষ করে হযরত কাতাদাহ (رضي الله عنه)কে একটি গাছের ডাল দিয়ে বললেন, یضٸ لك امامك عشرًا وخلقك عشرًا এটা ধর। এটি তােমার দশ কদম আগেও দশ কদম পিছে তােমাকে আলাে দিবে।

কুলির পানি থেকে ফলজ বৃক্ষ
____________________
কুলির পানি থেকে ফলজ বৃক্ষ

       আল্লামা যমখাশরী “রবীউল আবরার” নামক গ্রন্থে হযরত উম্মে মা'বাদ (رضي الله عنه)'র খালত বােন হিন্দ থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, নবী করিম (ﷺ) আমার তাঁবুতে আরাম করেছিলেন। ঘুম থেকে উঠে তিনি পানি তলব করলেন। পানি দিয়ে তিনি হাত ধুয়ে এবং কুলি করে কুলির পানি তাঁবুর পাশেই একটি বৃক্ষের শিকড়ে নিক্ষেপ করলেন। সকালে উঠে আমরা দেখি সেখানে একটি তরু-তাজা বৃক্ষ উঠে ফলে ভারে নুয়ে পড়েছে এবং পাকা ফলের সুগন্ধি বের হচ্ছে। এই বৃক্ষের ফল মধুর চেয়েও মিষ্টি ছিল। কোন ক্ষুধার্ত লােকে খেলে পরিতৃপ্ত হয়ে যেতাে। কোন পিপাসার্ত লােকে খেলে তৃষ্ণা মিটে যেতাে এবং কোন অসুস্থ লােকে খেলে সুস্থ হয়ে যেতাে। কোন ছাগল কিংবা ভেড়ায় ঐ বৃক্ষের পাতা খেলে দুধে স্তন পূর্ণ হয়ে যেতাে। আমরা ঐ বৃক্ষের নাম রেখেছি মােবারাকাহ। লােকেরা দূর-দূরান্ত থেকে আমাদের কাছে বিভিন্ন প্রকারের রােগীদের নিয়ে এসে ঐ বৃক্ষের ফল খেয়ে শেফা লাভ করত।

        একদিন আমরা দেখলাম যে, ঐ বৃক্ষের সব পাতা শুকিয়ে মাটিতে পড়ে গেল। এতে আমরা খুবই দুঃখিত হলাম, পরে রাসূল (ﷺ)’র ইন্তেকালের সংবাদ পেলাম। এর ত্রিশ বছর পর আমরা দেখলাম ঐ বৃক্ষের শাখা-প্রশাখায় পর্যন্ত শুধু কাঁটা আর কাঁটা এবং ফল ঝড়ে পড়েছে। ঐ দিনই আমরা হযরত আলী (رضي الله عنه)'র শাহাদতের সংবাদ পেয়েছে। এরপর থেকে ঐ বৃক্ষ আর ফল ধরেনা তবে আমরা ঐ বৃক্ষের পাতা থেকে উপকৃত হচ্ছি। একদিন উঠে দেখি ঐ বৃক্ষ থেকে রক্ত প্রবাহিত হচ্ছে এবং পাতাগুলাে মরে শুকিয়ে গিয়েছে। আমরা অত্যন্ত চিন্তিত হয়ে পড়লাম। এ সময় আমরা হযরত হােসাইন (رضي الله عنه)'র শাহাদতের সংবাদ পাই। এরপর ঐ বৃক্ষ মরে শুকিয়ে মাটিতে পড়ে গিয়েছিল।

১৮৮. আব্দুর রহমান জামী (رحمة الله) (৮৯৮হি.), শাওয়াহেদুন নবুয়ত, উর্দু, বেরেলী, পৃ: ১১৭

কূপের পানি বৃদ্ধি
____________________
কূপের পানি বৃদ্ধি

        বনী সাদের একটি দল নবী করিম (ﷺ)’র খেদমতে হাযির হয়ে আবেদন করল, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমরা আমাদের পরিবার-পরিজনকে এমন এক কূপের পাশে রেখে এসেছি যে কূপে পানি নিতান্ত কম, যা আমাদের জন্য মােটেও যথেষ্ট নয়। আমরা চাই যেন আপনার দোয়ায় এর পানি বৃদ্ধি পায় আর এর দ্বারা আমাদের মান-সম্মান বেড়ে যাবে এবং আমাদের বিরুদ্ধবাদীদের প্রতি আমাদের মুখাপেক্ষী হতে হবেনা।

        রাসূল সাল্লাল্লাহু তায়ালা আলাইহি ওয়াসাল্লাম একজনকে কিছু পাথর আনতে বললে সে তিনটি পাথর নিয়ে আসল। তিনি ঐ পাথরগুলাে হাতে নিয়ে একটু নাড়াচাড়া করে ঐ ব্যক্তিকে পাথরগুলাে দিয়ে বললেন, যাও, আল্লাহর নাম নিয়ে এই পাথরগুলাে একটি একটি করে কূপে নিক্ষেপ করবে। সে গিয়ে এরূপ করলে কূপের পানি এমনভাবে বৃদ্ধি পেল তারা তাদের দুশমনদের উপর প্রাধান্য বিস্তার করতে সক্ষম হল এবং তাই মুতাওয়াল্লী হয়ে গেল।১৮৯

১৮৯. আব্দুল রহমান জামী (رحمة الله) (৮৮৯হি.), শাওয়াহেদুন নবুয়ত, উর্দু, বেরেলী, পৃ: ১৭৪

মেঘে ছায়া দান
____________________
মেঘে ছায়া দান

        ইবনে আবি শায়বা, ইমাম তিরমিযি, বায়হাকী, আবু নঈম এবং খারায়েতী হযরত আবু মুছা আশআরী (رضي الله عنه) থেকে বর্ণনা করেন, আবু তালেব কুরাইশের কতিপয় মুরুব্বীকে নিয়ে সিরিয়া ভ্রমণে বের হলেন সঙ্গে নবী করিম (ﷺ) ও ছিলেন। কাফেলা যখন (বাহিরা) রাহেবের নিকটে পৌঁছে তখন তারা সওয়ারী থেকে অবতরণ করে যাত্রা বিরতি করল। রাহেব কাছে আসলেন। অথচ ইতিপূর্বে কত কাফেলা আসা-যাওয়া করেছে কিন্তু রাহেব কোন দিন তাদের কাছে আসতেন না এবং তাদের প্রতি দৃষ্টিপাত ও করতেন না। রাহেব এসে কাফেলার ভিতরে ঘুরে ঘুরে কি যেন খুঁজছেন। অতঃপর রাসূল সাল্লাল্লাহু তায়ালা আলাইহি ওয়াসাল্লাম’র হাত ধরে বলতেছেন- ইনি সায়্যিদিল আলামীন, ইনি সমগ্র পৃথিবীবাসীর রাসূল, তাকেই আল্লাহ তায়ালা রাহমাতুল্লিল আলামীন বানিয়ে প্রেরণ করেছেন।

        কুরাইশী মুরুব্বীরা বলল- আপনি কিভাবে বুঝলেন? তিনি বললেন, যখন আপনারা এই জনপদ দিয়ে যাচ্ছিলেন তখন প্রত্যেক বৃক্ষ ও পাথর সিজদা করতেছিল। অতচ বৃক্ষ ও পাথর নবী ছাড়া অন্য কাউকে সিজদা করেনা। আমি তাঁকে দু’কাঁধের মধ্যবর্তী কোমল স্থানে। আপেলের ন্যায় দেখতে মহরে নবুয়ত দ্বারা চিনে ফেলেছি।

        তারপর রাহেব চলে গিয়ে সকলের জন্য খাবার তৈরী করেন আনেন। তখন তিনি কাফেলার উট চরাতে গিয়েছিলেন। রাহেব বললেন, তাঁকে ডাক। যখন তিনি আসলেন তখন এক খন্ড মেঘ তাঁকে ছায়া দিচ্ছিল। রাহেব বলল- দেখ, তাঁকে মেঘে ছায়া দিচ্ছে। তিনি আসার পূর্ব থেকে লােকেরা গাছের ছায়ায় ছিল। তিনি আসা মাত্র গাছের ছায়া অন্যদের উপর থেকে সরে তাঁর দিকে ঝুঁকে পড়েছে।

       রাহেব দাঁড়িয়ে তাদেরকে কসম করে বললেন, আপনারা তাকে নিয়ে রােমে যাবেন না। কেননা সেখানের অধিবাসীরা তাঁকে চিনে ফেলবে আর তাঁকে হত্যা করে ফেলবে। তিনি অন্য দিকে ফিরে দেখেন- নয়জন রােমবাসী আসতেছে। তিনি তাদেরকে জিজ্ঞেস করলেন, তােমরা কেন এসেছ? উত্তরে তারা বলল, আমরা সেই নবীর খোঁজে (হত্যার উদ্দেশ্যে) বের হয়েছি যিনি এই শহরে প্রকাশ হবেন। আর সবদিকে আমরা তাঁর খোঁজে লােক পাঠানাে হয়েছে। রাহে তাদেরকে বললেন, তােমাদের কি ধারণা যে, আল্লাহ যদি কোন কিছু করার ইচ্ছে পােষণ করেন তবে কি কোন মানুষ তা রােধ করতে পারবে? তারা বলল, না। ঐ রােমবাসীরা রাহেবের হাতে বাইয়াত গ্রহণ করল এবং তার কাছে রয়ে গেল। ইমাম তিরমিযি হাদিসটিকে 'হাসন’ এবং হাকেম সহীহ বলেছেন।১৯০

১৯০. সুয়ূতী, জালাল উদ্দিন সুয়ূতী (رحمة الله) (৯১১হি.), আল খাসায়েসুল কুবরা, আরবী, বৈরুত, খন্ড: ১ম পৃ: ১৪০

লাঠির ইঙ্গিতে মুর্তি ভেঙ্গে যাওয়া 
____________________
লাঠির ইঙ্গিতে মুর্তি ভেঙ্গে যাওয়া 

        ইমাম বায়হাকী ও আবু নঈম (رحمة الله) আব্দুল্লাহ ইবনে দীনার এর সূত্রে হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর (رضي الله عنه) থেকে বর্ণনা করেন, নবী করিম (ﷺ) যখন মক্কা বিজয়ের দিন বায়তুল্লাহ এ প্রবেশ করলেন তখন সেখানে তিনশত ষাটটি মুর্তি পেলেন, তিনি প্রত্যেক মুর্তির দিকে লাঠি দিয়ে ইশারা করতেন আর বলতেন,

جاء الحق وزحق الباطل ، إن الباطل كان زهوقا

       অর্থ: সত্য এসেছে এবং মিথ্যা বিলুপ্ত হয়েছে। নিশ্চয় মিথ্যা বিলুপ্ত হওয়ারই ছিল। (সূরা বনী ইস্রাঈল, আয়াত-৮১) তখন যেই মুর্তির দিকেই ইশারা করতেন সাথে সাথে লাঠি লাগানাে ব্যতিত মুর্তি আপনা-আপনি বেঙ্গে পড়তাে।১৯১

১৯১. সুয়ূতী, জালাল উদ্দিন সুয়ূতী (رحمة الله) (৯১১হি.), আল খাসায়েসুল কুবরা, আরবী, বৈরুত, খন্ড: ১ম পৃ: ৪৩৭

পবিত্র গােড়ালীর আঘাতে পানি প্রবাহিত হওয়া
____________________
পবিত্র গােড়ালীর আঘাতে পানি প্রবাহিত হওয়া

        ইবনে সা'দ ও ইবনে আসাকের (رحمة الله) হযরত আমর ইবনে শােয়াইব (رضي الله عنه) থেকে বর্ণনা করেন, হযরত আবু তালেব বর্ণনা করেন, একদা (নবুয়ত প্রকাশের পূর্বে আমি আমার ভাতিজা মুহাম্মদের সাথে চলার পথে ‘যিল মাজায়’ নামক স্থানে পৌঁছলে আমার প্রচন্ড তৃষ্ণা লাগল, আমি তাঁকে বললাম, ভাতিজা! আমার পিপাসা লেগেছে। তিনি মাটিতে স্বীয় পায়ের গােড়ালী (মুড়ি) দিয়ে আঘাত করা মাত্র মাটি থেকে পানি প্রবাহিত হতে লাগল। তারপর বললেন, চাচাজান! পানি পান করুন। তখন আমি পানি করে তৃষ্ণা নিবারণ করলাম।১৯২

১৯২. ইউসূফ নাবহানী (رحمة الله) (১৩৫০হি.), হুজ্জাতুল্লাহি আলাল আলামীন, উর্দু, গুজরাট, খন্ড: ২য় পৃ: ২৮৯।

পর্বত ও বৃক্ষে সালাম দেওয়া
____________________
পর্বত ও বৃক্ষে সালাম দেওয়া

        হযরত আলী (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি মক্কায় নবী করিম (ﷺ) ’র সাথে থাকতাম। একবার রাসূল সাল্লাল্লাহু তায়ালা আলাইহি ওয়াসাল্লাম’র সাথে মক্কার পাহাড় ও বৃক্ষসমূহের পাশ দিয়ে যাচ্ছিলাম। فلم یمر بشجر ولاجبل الا قال السلام علیك یارسول اللّٰه তখন যেসব পাহাড় ও বৃক্ষের পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় প্রত্যেক পাহাড় ও বৃক্ষ ‘আসসালামু আলাইকা ইয়া রাসূলাল্লাহ’ বলে সালাম করত।১৯৩

১৯৩. আবু নঈম ইস্পাহানী (رحمة الله) (৪৩০হি.), দালায়েলুল নবুয়ত, উর্দু, দিল্লী, পৃ: ৩৪৯

পাথরে সালাম দেওয়া
____________________
পাথরে সালাম দেওয়া

হযরত জাবির ইবনে সামুরাহ (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত, নবী করিম (ﷺ) এরশাদ করেন,

آن بمكة لحجرا كان يسلم على ليالی بعشتُ الی لاعرفه اذا مررت عليه

মক্কায় একটি পাথর ছিল। যে রাতে আমার নবুয়ত প্রকাশ হয়েছিল সে রাত থেকে ঐ পাথর আমাকে সালাম করত। আজো যদি আমি তার পাশ দিয়ে যাই তবে তাকে আমি চিনবাে।১৯৪

১৯৪. আবু নঈম ইস্পাহানী (رحمة الله) (৪৩০হি.), দালায়েলুন নবুয়ত, উর্দু, দিল্লী, পৃ: ৩৫৭

লাঠি অন্ধকে আলাে দেওয়া
____________________
লাঠি অন্ধকে আলাে দেওয়া

        হযরত সাইমুন ইবনে যায়েদ ইবনে আবি আবস (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল (ﷺ) হযরত আবি আবস ইবনে জাবর (رضي الله عنه)কে তার দৃষ্টিশক্তি হারানাের পর একটি লাঠি প্রদান করেন এবং বললেন ............. এটা দ্বারা আলাে গ্রহণ কর। অতঃপর সেই প্রদত্ত লাঠি তাকে আলাে প্রদান করত।১৯৫

১৯৫. ড. মুস্তফা মুরাদ, মু'জিযাতুর রাসূল সাল্লাল্লাহু তায়ালা আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরবী, কায়রাে, মিশর, পৃ: ৭৮

মেঘে ছায়াদান
____________________
মেঘে ছায়াদান

        ইবনে সা’দ, আবু নঈম, ইবনে আসাকের ও ইবনে তাররাহ (رحمة الله) হযরত আতা ইবনে আবি রাবাহ (رحمة الله) থেকে বর্ণনা করেন, হযরত ইবনে আব্বাস (رضي الله عنه) বলেন, হযরত হালিমা (رضي الله عنه) রাসূল (ﷺ) তাঁর দুধুবােন সীমা’র সাথে দুপুরে পশু পালের দিকে বেরিয়ে গেলেন। হযরত হালিমা (رضي الله عنه) তাঁকে খুঁজতে তাঁর বােনের সাথে পেলেন। হালিমা সীমাকে জিজ্ঞেস করলেন, এই গরমে তুমি তাঁকে কেন এনেছ? তাঁর বােন সীমা বলল,

یا امه ما وجد اخي حرا رأيت غمامة تظل عليه اذا وقف وقفت واذا سار سارت حتى انتهى الى هذا الموضع

       হে মা! আমার ভাইয়ের মােটেও গরম লাগেনি। এক মেঘে তাঁকে ছায়া দান করতে দেখেছি। যখন সে দাঁড়িয়ে গেলে মেঘও দাঁড়িয়ে যেতাে, সে চললে মেঘও চলতাে এভাবে এই জায়গায় পর্যন্ত পৌঁছেছি। একথা শুনে হযরত হালিমা (رضي الله عنه) তাকে জিজ্ঞেস করলেন, এটা কি সত্যি? সে বলল, খােদার কসম, সত্যি।১৯৬

১৯৬. ইমাম সুয়ূতী, জালাল উদ্দিন সুয়ূতী (رحمة الله) (৯১১হি.), আল খাসায়েসুল কুবরা, আরবী, বৈরুত, খন্ড: ১ম পৃ: ১০০

পশু পাখির আনুগত্য : হরিণীর প্রতিশ্রুতি
____________________
পশু পাখির আনুগত্য: হরিণীর প্রতিশ্রুতি

        হযরত ইমাম তাবরানী (আল কবীর গ্রন্থে) ও আবু নঈম (رحمة الله) হযরত উম্মে সালমা (رضي الله عنه) থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, একদা রাসূল (ﷺ) এক উম্মুক্ত ময়দানে দিয়ে তাশরীফ নিচ্ছিলেন। সেখানে ইয়া রাসূলাল্লাহ! বলে একটি আওয়াজ শুনে তিনি ফিরে দেখেন কেউ নেই। পুনরায় দেখলে দেখতে পেলেন যে, একটি হরিণী বাঁধা রয়েছে। সে বলল, ইয়া রাসূলাল্লাহ! একটু এদিকে আসুন। তিনি হরিণীর কাছে গিয়ে জিজ্ঞেস করেন কি প্রয়ােজন? হরিণী বলল, ঐ পাহাড়ে আমার দুটি বাচ্চা আছে। আপনি আমাকে খুলে দিন যাতে আমি বাচ্চাদেরকে দুধ পান করায়ে আসতে পারি। তিনি জিজ্ঞেস করলেন, তুমি দুধ পান করায়ে আবার ফিরে আসবে? উত্তরে বলল, যদি আমি ফিরে না আসি তবে আল্লাহ যেন আমাকে দশ মাস গর্ভীতা উটনীর ন্যায় শাস্তি দেন।

        তখন তিনি হরিণীকে ছেড়ে দিলে সে গিয়ে তার বাচ্চাদ্বয়কে দুধ পান করায়ে ফিরে আসে আর তিনি হরিণীকে বেঁধে রাখেন। এ সময় শিকারী গ্রাম্য ব্যক্তিটি ঘুমিয়ে ছিল। সে ঘুম থেকে উঠে জিজ্ঞেস করল, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আপনার কি কোন কিছু প্রয়ােজন হবে? তিনি বললেন, হ্যাঁ, প্রয়ােজন হল তুমি এই হরিণীকে মুক্ত করে দাও। তখন সে হরিণীকে আযাদ করে দিল আর হরিণী দৌঁড়ে যেতে যেতে বলতে লাগল- اشهد ان لا اله الا اللّٰه واشهد انك رسول الله

১৯৭. ইমাম সুয়ূতী, জালাল উদ্দিন সুয়ূতী (رحمة الله) (৯১১হি.), আল খাসায়েসুল কুবরা, আরবী, বৈরুত, খন্ড:২য় পৃ:১০১ ও আয়াস (رحمة الله) (৪৭৬-৫৪৪হি.), শেফা শরীফ, আরবী, মাকতাবাতুস সাফা, কায়রাে, মিশর, খন্ড: ১ম পৃ: ২০৬

অদৃশ্যের সংবাদ পশু-পাখির আনুগত্য
____________________
অদৃশ্যের সংবাদ পশু-পাখির আনুগত্য

        বনের বাঘ ও রাসূল (ﷺ)’র ইলমে গায়েব বিশ্বাস করে: ইবনে আদী ও ইমাম বায়হাকী (رحمة الله) হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, একদা এক রাখাল তার বকরীগুলাের হেফাজতে রত থাকা অবস্থায় একটি বাঘ এসে বকরী তুলে নিয়ে যেতে লাগলে রাখাল দৌঁড়ে গিয়ে বকরীকে বাঘের মুখ থেকে কেড়ে নিল। তখন বাঘ স্পষ্ট ভাষায় বলল, তুমি কি খােদাকে ভয় করােনা? আমার রিযিক কেন চিনিয়ে নিচ্ছ যা আল্লাহ আমাকে দান করেছেন। রাখাল বলল, কি আশ্চার্য! বাঘও কথা বলতেছে। তখন রাখালের কথা শুনে বাঘ বলল, এর চেয়েও আশ্চার্যের বিষয় হল নাখলা স্থানে রাসূলে খােদা (ﷺ) লােকদেরকে পূর্ববর্তী ও পরবর্তীর সংবাদ শুনাচ্ছেন।

        বাঘের মুখে একথা শুনে রাখাল রাসূল (ﷺ)’র কাছে এসে আদ্যপান্ত ঘটনা বর্ণনা করে মুসলমান হয়ে যায়।১৯৮

১৯৮.ইমাম সুয়ূতী, জালাল উদ্দিন সুয়ূতী (رحمة الله) (৯১১হি.), আল খাসায়েসুল কুবরা, আরবী, বৈরুত, খন্ড: ২য় পৃ: ১০৩

বাঘের আবেদন 
____________________
বাঘের আবেদন

        ইবনে সা’দ ও আবু নঈম (رحمة الله) হযরত মুত্তালিব ইবনে আব্দুল্লাহ থেকে বর্ণিত, একদা নবী করিম (ﷺ) সাহাবীদের নিয়ে মদীনায় ছিলেন। হঠাৎ একটি বাঘ এসে তাঁর সামনে দন্ডায়মান হয়ে আবেদনের সুরে কথা বলা আরম্ভ করল। রাসূল (ﷺ) উপস্থিত লােকদেরকে বললেন, তােমাদের কাছে বাঘদের পক্ষ থেকে এই বাঘটি প্রতিনিধি হিসেবে এসেছে। তােমরা চাইলে ওদের জন্য কিছু খাবার নির্ধারিত করে দাও, যাতে তারা তা সীমালঙ্গন করতে না পারে। আর যদি চাও তবে যেভাবে আছে সেভাবেই চলবে। তবে তােমরা সর্বদা শঙ্খিত থাকবে- কখন সে এটা ওটা নিয়ে যাবে আর সেটিই তার রিযিক হবে।

       সাহাবায়ে কিরাম বললেন, আমরা নিজেরাই অভাবী সুতরাং এদেরকে কিছু দিতে আমাদের সম্মতি নেই। এতে তিনি তিন আঙ্গুলের ইঙ্গিতে বাঘকে ইশারা করে বললেন, তুমি ওদের বকরীকে চিনিয়ে নিতে থাক। সাথে সাথে বাঘ ফিরে, মাথা নেড়ে নেড়ে দূরে চলে গেল।১৯৯

১৯৯. ইমাম সুয়ুতী, জালাল উদ্দিন সুয়ূতী (رحمة الله) (৯১১হি.), আল খাসায়েসুল কুবরা, আরবী, বৈরুত, খন্ডঃ ২য় পৃ: ১০৪

জঙ্গলী জন্তুর আদব
____________________
জঙ্গলী জন্তুর আদব

         ইমাম আহমদ, আবু ইয়ালা, বাসর, তাবরানী (আল আওসাত গ্রন্থে), বায়হাকী, আবু নঈম, দারে দুনী ও ইবনে আসাকের (رحمة الله) হযরত আয়েশা সিদ্দিকা (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আলে রাসুল (ﷺ)’র নিকট একটি জঙ্গলী জম্ভ ছিল। রাসূল সাল্লাল্লাহু তায়ালা আলাইহি ওয়াসাল্লাম বাইরে কোথাও তাশরীফ নিলে সেটি খেলতে খেলতে বাইরে চলে যেতাে পুণরায় চলে আসতাে। আর যখন তিনি চলে আসতেন সেটি ঘরে এসে বসে থাকতাে। তিনি যতক্ষণ ঘরে থাকতেন ততক্ষণ কোন নড়াচড়া করতােনা।২০০

২০০. ইমাম সুয়ূতী, জালাল উদ্দিন সুয়ূতী (رحمة الله) (৯১১হি.), আল খাসায়েসুল কুবরা, আরবী, বৈরুত, খন্ড: ২য় পৃ: ১০৫

রাসূল সাল্লাল্লাহু তায়ালা আলাইহি ওয়াসাল্লাম’র প্রতি গাধার ভালবাসা 
____________________
রাসূল সাল্লাল্লাহু তায়ালা আলাইহি ওয়াসাল্লাম’র প্রতি গাধার ভালবাসা

        ইবনে আসাকের (رحمة الله) আবু মনযুর (رحمة الله) থেকে বর্ণনা করেন, খায়বর বিজয়ের সময় রাসূল (ﷺ) এর ভাগে একটি কাল রঙ্গের গাধা এসেছিল। তিনি ঐ গাধার সাথে কথা বললেন। তিনি এর কাছে জিজ্ঞেস করলেন, তােমার নাম কি? গাধা বলল, আমার নাম ইয়াযিদ ইবনে শিহাব। আমার পূর্বপুরুষের বংশ থেকে আল্লাহ তায়ালা ষাটটি গাধা সৃষ্টি করেছেন। এদের সবার উপর আম্বিয়ায়ে কিরাম আরােহণ করেছেন। আমার আশা যে, আপনি আমার উপর আরােহণ করবেন। কেননা, বর্তমানে আমার পূর্বপুরুষের বংশে আমি ছাড়া আর কোন গাধা জীবিত নেই আর আম্বিয়ায়ে কেরামের মধ্যে আপনি ছাড়া আর কেউ বেঁচে নেই।

       আমি এক ইহুদীর মালিকানাধীন ছিলাম। সে আমার উপর আরােহণ করতে চাইলে আমি ধাক্কা দিয়ে তাকে ফেলে দিতাম। সে আমার পিটে ও পেটে হাত মারতাে। অর্থাৎ রাসূল (ﷺ)কে তার পিটে বসাবে বলে ঐ ইহুদীক বসতে দেয়নি।

     রাসূল (ﷺ) খুশী হয়ে তার নাম রাখেন ‘ইয়াকুব'। এই গাধা রাসূল সাল্লাল্লাহু তায়ালা আলাইহি ওয়াসাল্লাম’র এতই অনুগত ছিল যে, তিনি ঐ গাধার মাধ্যমে কাউকে ডাকতে পাঠালে সে গিয়ে ঐ ব্যক্তির ঘরে গিয়ে মাথা দিয়ে দরজায় নাড়া দিত আর ঘরের মালিককে ইশারা করে বুঝিয়ে দিত যে, তাকে রাসূল সাল্লাল্লাহু তায়ালা আলাইহি ওয়াসাল্লাম ডাকতেছেন।

        নবী করিম (ﷺ) ইন্তেকাল করলে এই ইয়াকুব আবুল হায়শাম ইবনে নাহিয়্যান এর কূপে গিয়ে রাসূল সাল্লাল্লাহু তায়ালা আলাইহি ওয়াসাল্লাম’র ওফাতের বিরহে ও দুঃখে কুপে পড়ে আত্মহত্যা করল।২০১

২০১. ইমাম সুয়ূতী, জালাল উদ্দিন সুয়ূতী (رحمة الله) (৯১১হি.), আল খাসায়েসুল কুবরা, আরবী বৈরুত, খন্ড:২য় পৃ:১০৭ ও কাযী আয়ায (رحمة الله) (৪৭৬-৫৪৪হি.), শেফা শরীফ, আরবী, মাকতাবাতুস সাফা, কায়রাে, মিশর, খন্ড: ১ম পৃ: ২০৬

পশু-পাখির আনুগত্য: উটের ফরিয়াদ 
____________________
পশু-পাখির আনুগত্য: উটের ফরিয়াদ 

        হযরত জাবের (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমরা গযওয়ায়ে যাতির রেকা থেকে ফেরৎ আসার পথে হাররাহ' নামক স্থানের নীচু এলাকায় পৌঁছি তখন সম্মুখ থেকে একটি উট দৌড়তে দৌড়তে এসে রাসূল (ﷺ) দন্ডায়মান হল। হুযূর (ﷺ) আমাদেরকে বললেন, اتدرون ما قال هذا الجمل

       তােমরা কি বুঝেছ, এই উট কি বলেছে? এই উট তার মালিকের বিপক্ষে আমার কাছে সাহায্য প্রার্থনা করতেছে। এর মালিক কয়েক বছর যাবৎ এর দ্বারা ক্ষেতের কাজ নিয়েছে। এখন সে তাকে যবেহ করার ইচ্ছে করেছে। জাবের! তুমি গিয়ে এর মালিকের কাছে তাকে আমার কাছে নিয়ে এসাে। জাবের বলেন, আমি বললাম, আমিতাে এর মালিককে চিনি না। তিনি বললেন, এই উট তােমাকে এর মালিকের কাছে নিয়ে যাবে।

       হযরত জাবের (رضي الله عنه) বলেন, ঐ উট আমার সামনে সামনে দ্রুত বেগে চলতে চলতে আমাকে নিয়ে তার মালিকের সামনে গিয়ে দাঁড়ান। আমি এর মালিককে রাসূল (ﷺ)’র কাছে নিয়ে আসলাম। এই গযওয়ায় এমন এমন আশ্চার্য জনক মুজিযা রসূল (ﷺ) থেকে সংঘটিত হয়েছিল যার ফলে হযরত জাবের (رضي الله عنه) বলেন- এই গযওয়াকে গযওয়াতুল আয়াজীব তথা আশ্চার্য গযওয়া বলা হত।২০২

        ইমাম বুখারী ও মুসলিম (رحمة الله) হযরত জাবের (رضي الله عنه) থেকে বর্ণনা করেন, আমি জিহাদের উদ্দেশ্যে রাসূল (ﷺ)’র সাথে রওয়ানা হলাম। পথে আমার উট পিছে পড়ে গেল ফলে আমি কাফেলা থেকে পিছে পড়ে রইলাম। রাসূল (ﷺ) এসে আমার অবস্থা সম্পর্কে আমাকে জিজ্ঞেস করেন। আমি বললাম, আমার উট অলস হয়ে আমাকে পিছে ফেলে দিল। রাসূল (ﷺ) স্বীয় লাঠি দিয়ে উটকে মৃদু প্রহার করে বললেন, তুমি আরােহণ কর।

সুতরাং আমি আরেহণ করলাম। এরপর উট এত দ্রুতগামী হল যে, রাসূল সাল্লাল্লাহু তায়ালা আলাইহি ওয়াসাল্লাম’র আগে চলে যাওয়া থেকে বিরত রাখার জন্য বাঁধা দিতাম।২০৩

২০২. সুয়ূতী, জালাল উদ্দিন সুয়ূতী (رحمة الله) (৯১১হি.), আল খাসায়েসুল কুবরা, আরবী, বৈরুত, খন্ড:১ম পৃ:৩৭৩

২০৩,সুয়ূতী, জালাল উদ্দিন সুয়ূতী, (رحمة الله) (৯১১হি.), আল খাসায়েসুল কুবরা, আরবী, বৈরুত, খন্ড: ১ম পৃ: ৩৭৪

ছাগল আপন মালিকের কাছে চলে যাওয়া
____________________
ছাগল আপন মালিকের কাছে চলে যাওয়া

        ইমাম বায়হাকী (رحمة الله) হযরত মুছা ইবনে উকবা ও হযরত উরওয়াহ (رضي الله عنه) থেকে অপর এক সূত্রে হযরত জাবের ইবনে আব্দুল্লাহ (رضي الله عنه) থেকে বর্ণনা করেন, খায়বার এর সৈন্যদল একজন রাখাল হাবশী গােলাম কে ধরে নবী করিম (ﷺ)’র খেদমতে নিয়ে আসেন। সে এসে বলল, আমি যদি মুসলমান হই তবে আমি কি লাভ করবাে? নবী করিম (ﷺ) বললেন, জান্নাত লাভ করবে। সে বলল, ঠিক আছে আমি মুসলমান হলাম তবে আমার এতগুলাে ছাগলের কি হবে? এগুলাে হল আমানত। কারাে একটি কারাে দুটি আবার কারাে আরাে বেশী। অর্থাৎ এগুলােকে কিভাবে মালিকের কাছে পৌঁছাবাে। নবী করিম (ﷺ) বললেন, তুমি এক মুষ্টি কংকর নিয়ে ঐগুলাের মুখে নিক্ষেপ কর। সবগুলাে আপন আপন মালিকের কাছে পৌঁছে যাবে। সে এক মুষ্টি কংকর নিয়ে ছাগল পালের দিকে নিক্ষেপ করলে ছাগল পালের প্রত্যেকটি ছাগল দৌঁড়ে দৌঁড়ে আপন মালিকের কাছে পৌঁছে গেল। তারপর ঐ গােলাম যুদ্ধে অংশ গ্রহণ করে শাহাদত বরণ করল অথচ সে আল্লাহর সামনে একটি সিজদা দেয়নি কিন্তু রাসূল (ﷺ) তাকে জান্নাতের সুসংবাদ দেন এবং বলেন, তার কাছে জান্নাতের হুরদের মধ্যে থেকে দুটি হুর বিবি হিসেবে দেখেছি।২০৪

২০৪. সুয়ূতী, জালাল উদ্দিন সুয়ূতী (رحمة الله) (৯১১হি.), আল খাসায়েসুল কুবরা, আরবী, বৈরুত, খন্ড: ১ম পৃ: ৪১৯

মালিকের বিরুদ্ধে উটের অভিযােগ 
____________________
মালিকের বিরুদ্ধে উটের অভিযােগ

ইমাম আহমদ, বায়হাকী ও আবু নঈম (رحمة الله) হযরত ইয়ালা ইবনে মুররাহ (رضي الله عنه) থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, আমি রাসূল (ﷺ) থেকে তিনটি মুজিযা দেখেছি। একদা আমরা রাসূল সাল্লাল্লাহু তায়ালা আলাইহি ওয়াসাল্লাম’র সাথে সফরে এমন একটি উটের পাশ দিয়ে যাচ্ছিলাম যাকে দিয়ে পানি উঠানাে হত। উট তাঁকে দেখে গর্দান মাটিতে রেখে তার মালিকের বিরােদ্ধে অভিযােগ দায়ের করল। নবী করিম (ﷺ) তার মালিককে ডাকালেন এবং বললেন, এই উট দিয়ে বেশী কাজ করায়ে অল্প খাবার দেওয়ার অভিযােগ করেছে। সুতরাং তুমি তার প্রতি দয়া কর। একথা বলে তিনি চলে গেলেন। অতঃপর আমরা আরেক মনযিলে গিয়ে থামলাম। সেখানে নবী করিম (ﷺ) এক স্থানে নিদ্রা যাপন করলেন। ইত্যবসরে একটি বৃক্ষ মাটি ফেটে এসে তাঁকে ছায়াদান করল। তিনি জাগ্রত হলে বৃক্ষ পুণরায় আপন জায়গায় চলে গেল। আমি তাঁকে এ ব্যাপারে বললে তিনি বলেন, বৃক্ষটি আমাকে সালাম করার জন্য আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করলে, আল্লাহ তা মঞ্জুর করেন।২০৫

২০৫. ইমাম সুয়ূতী, জালাল উদ্দিন সুয়ূতী (رحمة الله) (৯১১হি.), আল খাসায়েসুল কুবরা, আরবী, বৈরুত, খন্ড: ২য় পৃ: ৬৩।

অবাধ্য উট বাধ্য হয়ে গেল 
____________________
অবাধ্য উট বাধ্য হয়ে গেল

        ইমাম বায়হাকী (رحمة الله) হযরত জাবের (رضي الله عنه) থেকে বর্ণনা করেন, বনী সালমার এক ব্যক্তির পানি তােলার উট বদ মেযাজী হয়ে তার উপর আক্রমণ করল এবং পানি তােলা বন্ধ করে দিল। ফলে বাগান শুকিয়ে গেল। সে উট সম্পর্কে নবী করিম (ﷺ) কে অভিযােগ করলে তিনি খেজুর বাগানের দরজা পর্যন্ত চলে যান। কেউ তাঁকে বলল, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আপনি বাগানে প্রবেশ করবে না। কেননা, আমরা ঐ পাগল উট আপনাকে আক্রমণ করার ভয় করছি। তিনি বললেন, তােমরা বাগানে প্রবেশ কর, ভয়ের কিছুই নেই।

       উট রাসূল (ﷺ) কে দেখামাত্র স্বীয় মাথা নিচু করে চলে এসে তাঁর সামনে দাঁড়িয়ে গেল এবং তাঁকে সিজদা করল। তখন তিনি বললেন, তােমরা উট নিয়ে যাও আর রশি লাগিয়ে দাও।২০৬

২০৬. ইমাম সুয়ূতী, জালাল উদ্দিন সুয়ূতী (رحمة الله) (৯১১হি.), আল খাসায়েসুল কুবরা, আরবী, বৈরুত, খন্ড: ২য় পৃ: ৯৪

উটে সিজদা করা
____________________
উটে সিজদা করা

       ইমাম তাবরানী ও আবু নঈম হযরত ইয়ালা ইবনে মুররাহ (رضي الله عنه) থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, একদিন নবী করিমম (ﷺ) বের হলেন একটি উঠ চিৎকার করতে করতে এসে তাঁকে সিজদা করল। তখন উপস্থিত মুসলমানগণ বলল, نحن احق ان نسجد للنبی صلی اللّٰه علیه وسلم আমরা আপনাকে সিজদা করার অধিক হকদার। তখন তিনি বললেন, لو کنت امر احدًا ان یسجد لغیر اللّٰه لامرت المراة ان نسجد لزوجها আল্লাহকে ছাড়া যদি কাউকে সিজদা করতে আমি আদেশ দিতাম তবে স্ত্রীদেরকে তাদের স্বামীকে সিজদা করতে আদেশ দিতাম।

        তােমরা বুঝেছ এই উট কি বলতেছে? সে বলতেছে- আমি আমার মালিকের চল্লিশ বছর খেদমত করেছি। এখন যখন বৃদ্ধ হয়ে পড়েছি তখন আমাকে খাবার কমিয়ে দিল আর কাজ বেশী নেয়া আরম্ভ করে দিল। এখন বিবাহ উপলক্ষে আমাকে যবেহ করে দিতে চাচ্ছে।

       তিনি একজন উঠের মালিকের কাছে পাঠিয়ে ঘটনার সত্যতা যাচাই করলে তারা বলল, খােদার কসম, ইয়া রাসূলাল্লাহ! ঘটনা সত্য। তিনি বললেন, আমি চাই যে, তােমরা উঠকে আমার কাছে রেখে যাও।২০৭

২০৭. ইমাম সুয়ূতী, জালাল উদ্দিন সুয়ূতী (رحمة الله) (৯১১হি.), আল খাসায়েসুল কুবরা, আরবী, বৈরুত, খন্ড: ২য় পৃ: ৯৬

উটের অভিযােগ
____________________
উটের অভিযােগ

        ইমাম আবু নঈম, হযরত আনাস (رضي الله عنه) থেকে বর্ণনা করেন, এক আনসারী ব্যক্তির উঠ আবাধ্য হয়ে উত্তেজিত হলে সে নবী করিম (ﷺ) কে বলল, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমার উঠ আবাধ্য হয়ে জমি শেষ প্রান্তে গিয়ে উত্তেজিত হয়ে আছে। আর ভয়ে আমি তার কাছে যেতে সাহস পাচ্ছিনা। তখন তিনি উঠের নিকটে গেলে উঠ তাঁকে দেখে গর্দান মাটিতে রেখে কি যেন বলতে বলতে রাসূল (ﷺ) সামনে এসে বসে গেল এবং উঠের চোখ দিয়ে অশ্রু প্রবাহিত হতে লাগল। তিনি আনসারীকে বললেন, হে অমুক! আমি দেখতেছি যে, তােমার উঠ তােমার বিরুদ্ধে অভিযােগ করতেছে। তুমি তার উপর ইহসান কর। মালিক রশি নিয়ে এসে উঠের মাথা দিয়ে গলায় বেঁধে নিল।২০৮

২০৮. ইমাম সুয়ূতী, জালাল উদ্দিন সুয়ূতী (رحمة الله) (৯১১হি.), আল খাসায়েসুল কুবরা, আরবী, বৈরুত, খন্ড: ২য় পৃ: ৯৬

অলস গাধী সরস হওয়া 
____________________
অলস গাধী সরস হওয়া

        হযরত হালিমা সাদিয়া (رضي الله عنه) বলেন, আমি যখন শিশু মুহাম্মদ কে নিয়ে বাড়ী ফিরে যাচ্ছি তখন আমি আমার গাধীর উপর আরােহণ করলাম আর মুহাম্মদ (ﷺ) কে আমার সামনে বসালাম। আমি দেখলাম যে, গাধী তিনবার বায়তুল্লাহর দিকে সিজদা করে মাথা তুলে এমন দ্রুত বেগে চলা আরম্ভ করল সব সওয়ারীদের আগে চলে গেল আর অন্যান্য সওয়ারীগুলাে পিছনে পড়ে রইল। আমার সাথীরা বলতে লাগল হে হালিমা তােমার সওয়ারীর লাগাম নিয়ন্ত্রণ কর। এটা কি সেই সওয়ারী যেটি শত চেষ্টার পরও আগ্রসর হত না? আমি নিশ্চিত হলাম যে, এ সব কিছু এই বাচ্চার বরকতেই হচ্ছে। ২০৯

        নবী করিম (ﷺ) উভয় জগতে সমগ্র সৃষ্টির ভাষা, কথা, আবেদন নিবেদন বুঝতে সক্ষম ছিলেন। এটা আল্লাহর পক্ষ থেকে তাঁর উপর বিশেষ দয়া ও মর্যাদা। যেহেতু তিনি সমগ্র সৃষ্টির প্রতি প্রেরিত সেহেতু আল্লাহ তায়ালা তাঁকে সব ভাষার জ্ঞান দান করেছেন। পবিত্র কুরআনে আল্লাহ তায়ালা এরশাদ করেন, وما ارسلنا من رسول الا بلسان قومه অর্থ আমি প্রত্যেক রাসূল কে তাঁর সম্প্রদায়ের ভাষা জ্ঞান দিয়ে পাঠিয়েছে। সুতরাং এটি তাঁর একটি বড় মু'জিযা।২১০

২০৯. আব্দুর রহমান জামী (رحمة الله) (৮৯৮হি.), শাওয়াহেদুন নবুয়ত, উর্দু, বেরেলী, পৃ:৬২

২১০. ইউসূফ নাবহানী (رحمة الله) (১৩৫০হি.), হুজ্জাতুল্লাহি আলাল আলামীন, উর্দু, গুজরাট, খন্ড: ২য় পৃ: ৩৩০

গুই সাপের সাক্ষ্য 
____________________
গুই সাপের সাক্ষ্য

        ইমাম তাবরানী (আওসাত ও সগীর গ্রন্থে), ইবনে আদী, হাকেম (আল মু'জিযাত গ্রন্থে), ইমাম বায়হাকী ও ইবনে আসাকের (رحمة الله) হযরত ওমর (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত, একদা রাসূল (ﷺ) আপনজনদের এক অনুষ্ঠানে বসে আছেন। বনী সুলাইম গােত্রের এক গ্রাম্য ব্যক্তি এসেছে। সে একটি গুই সাপ শিকার করেছিল সঙ্গে সেটিও ছিল। সে বলল, লাত-ওজ্জার শপথ, এই গুই সাপ আপনার উপর ঈমান না আনা পর্যন্ত অমিও ঈমান আনবে না। তিনি গুই সাপকে সম্বােধন করে বললেন, হে গুই সাপ!

আমি কে? এই গুই সাপ এমন সুস্পষ্ট আরবী ভাষায় উত্তর দিল যে, সমস্ত লােক শুনেছিল এবং বুঝেছিল। সে বলল, লাব্বায়েক ওয়া সা’দায়ক ইয়া রাসূলাল্লাহ! তিনি এর কাছে জিজ্ঞেস করলেন, তুমি কার ইবাদত কর? সে বলল, الذی فی السماء عرشه وفی الارض سلطانه وفی البحر سبیله وفی الجنة رحمة وفی النار عذابه অর্থাৎ- আমি ঐ সত্ত্বার ইবাদত করি যার আরশ আকাশে, যার ক্ষমতা পৃথিবীতে, যার রাস্তা সমুদ্রে, যার রহমত জান্নাতে ও যার শাস্তি জাহান্নামে। তারপর তিনি জিজ্ঞেস করলেন, আমি কে? সে বলল, انت رسول رب العالمین خاتم النبیین قد افلح من صدقك وقد خاب من کذابك অর্থাৎ- আমি সমগ্র পৃথিবীর পালন কর্তার রাসূল, সর্বশেষ নবী। যারা আপনাকে বিশ্বাস করেছে তারা সফলকাম হয়েছে আর যারা আপনাকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করেছে তারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। একথা শুনে গ্রাম্য লােকটি মুসলমান হয়ে গেল।২১১

২১১. ইমাম সুয়ূতী, জালাল উদ্দিন সুয়ূতী (رحمة الله) (৯১১হি.), আল খাসায়েসুল কুবরা, আরবী বৈরুত, খন্ড: ২য় পৃ:১০৭ ও কাবী আয়ায (رحمة الله) (৪৭৬-৫৪৪হি.), শেফা শরীফ, আরবী, মাকতাবাতুস সাফা, কায়রাে, মিশর, খন্ড: ১ম পৃ: ২০৩

চিল পাখির খেদমত
____________________
চিল পাখির খেদমত

       ইমাম বায়হাকী ও আবু নঈম (رحمة الله) হযরত ইবনে আব্বাস (رضي الله عنه) থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, রাসূল (ﷺ) প্রাকৃতিক প্রয়ােজনের ইচ্ছে করলে তিনি লােকালয় থেকে বহুদূরে চলে যেতেন। একদা তিনি এই উদ্দেশ্যে তাশরীফ নিলেন আমি তাঁর পেছনে পেছনে গেলাম। তিনি একটি বৃক্ষের নীচে বসে গেলেন। তিনি তাঁর মােজা খুলে ফেললেন। তারপর একটি মােজা পরিধান করলেন এমন সময় একটি পাখি এসে দ্বিতীয় মােজাটি ছোঁ মেরে নিয়ে গেল আর উড়ে উপরে উঠে মােজাকে নাড়া দিয়ে মােজা থেকে একটি বিষাক্ত চামড়া পাল্টানাে কালাে সাপ ফেলল। তখন নবী করিম (ﷺ) এরশাদ করেন- هذه کرامة اکرمنی اللّٰه بها এটি এমন কারামত যদ্বারা আল্লাহ আমাকে সম্মানীত করেছেন।২১২

২১২, ইমাম সুয়ূতী, জালাল উদ্দিন সুয়ূতী (رحمة الله) (৯১১হি.), আল খাসায়েসুল কুবরা, বৈরুত, খন্ড: ২য় পৃ: ১০৮

অলস গাধা দ্রুতগামী হওয়া 
____________________
অলস গাধা দ্রুতগামী হওয়া

        হযরত ইবনে সা'দ (رحمة الله) হযরত ইসহাক ইবনে আব্দুল্লাহ ইবনে আবু তালহা (رضي الله عنه) থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, রাসূল (ﷺ) সা’দ (رضي الله عنه)'র সাথে সাক্ষাত করেন এবং তার কাছে দুপুরে কায়লুলা (বিশ্রাম) করেন। রােদ একটু ঠান্ডা হলে একজন গ্রাম্য ব্যক্তি দূর্বল, অলস ও ধীরগতি সম্পন্ন একটি গাধা আনল যার উপর তুলার তৈরী কাপড় ছিলানাে ছিল। তিনি এর উপর আরােহণ করে ঘরে পৌঁছে গাধাটি পুণরায় ফেরৎ দেন।

এরপর থেকে গাধাটি এমন দ্রুতগামী ও শক্তিশালী হয়ে গেল যে, কোন সওয়ারীই তার এত দ্রুত বেগে চলতে পারে না।২১৩

        কাযী আয়ায (رحمة الله) শেফা শরীফে বর্ণনা করেন, নবী করিম (ﷺ) এক সফরে নামাযের জন্য মনযিল করলেন এবং নিজের ঘােড়াকে ছেড়ে দিয়ে বললেন, যতক্ষণ আমরা নামায শেষ করবােনা ততক্ষণ নড়াচড়া করবে না, আল্লাহ তােমার মধ্যে বরকত দান করবেন। অতঃপর তিনি নামায আদায় করলেন কিন্তু ততক্ষণ পর্যন্ত ঘােড়া তার শরীরের কোন অংশ পর্যন্ত নড়াচড়া করেনি। এতে বুঝা যায় যে, অবােধ জম্ভ তাঁর কথা বুঝে এবং তাঁর আনুগত্য করে।২১৪

২১৩. ইমাম সুয়ূতী, জালাল উদ্দিন সুয়ূতী (رحمة الله) (৯১১হি.), আল খাসায়েসুল কুবরা, আরবী, বৈরুত, খন্ডঃ ২য় পৃ: ১০৬

২১৪. ইউসূফ নাবহানী (رحمة الله) (১৩৫০হি.), হুজ্জাতুল্লহি আলাল আলামীন, উর্দু, গুজরাট, খন্ড: ১ম পৃ: ৭৩১

খচ্চর নবীর কথা বুঝা
____________________
খচ্চর নবীর কথা বুঝা

        ইমাম বগভী, বায়হাকী, আবু নঈম ও ইবনে আসাকের (رحمة الله) হযরত শায়বা ইবনে ওসমান হাজাযী (رضي الله عنه) থেকে বর্ণনা করেন, রাসূল (ﷺ) হযরত আব্বাস (رضي الله عنه) কে বললেন, মাটি থেকে কিছু কংকর নিয়ে আমাকে দাও। আল্লাহ তায়ালা তাঁর এই কথা তাঁর খচ্চরের বােধগম্য করে দেন। খচ্চর নীচু হয়ে এমনভাবে বসে গেল তার পেট মাটিতে লেগে গেল। তখন তিনি নিজেই কয়েকটি কংকর তুলে নিয়ে দুশমনের দিকে নিক্ষেপ করেন আর বলেন, شاهت الوجوه حم لا ینصرون২১৫।

        হযরত আনাস ইবনে মালেক (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করিম (ﷺ) একটি বাগানে তাশরীফ নিলেন সাথে আবু বকর, ওমর ও আরাে কয়েকজন আনসারী সাহাবী ছিলেন। বাগানে কতগুলাে ছাগল ছিল। ছাগল দল তাঁকে দেখা মাত্র তাঁর সামনে এসে সিজদাবনত হয়ে গেল। হযরত আবু বকর সিদ্দিক (رضي الله عنه) এটা দেখে বলেন, ইয়া রাসূলাল্লা! এই ছাগল দলের চেয়ে আপনাকে সিজদা করার আমরাই বেশী হকদার।

       তিনি এরশাদ করলেন, আমার উম্মতের জন্য এরূপ সিজদা করা জায়েয নেই। পরস্পর পরস্পরকে সিজদা করা যদি বৈধ হত তবে আমি স্বামীকে সিজদা করতে স্ত্রীকে আদেশ দিতাম।২১৬

২১৫. ইউসূফ নাবহানী (رحمة الله) (১৩৫০হি.), হুজ্জাতুল্লাহি আলাল আলামীন, উর্দু, গুজরাট, খন্ড: ১ম পৃ: ৭৩১

২১৬. আবু নঈম ইস্পাহানী (رحمة الله) (৪৩০হি.), দালায়েলুন নবুয়ত, উর্দু, নয়া দিল্লী, পৃ: ৩৪২

একজনের খাবার চল্লিশজনে খাওয়া
____________________
একজনের খাবার চল্লিশজনে খাওয়া

        ইবনে ইসহাক ও বায়হাকী (رحمة الله) হযরত আলী (رضي الله عنه) থেকে বর্ণনা করেন, যে সময় নবী করিম (ﷺ)’র উপর وانزر عشیرتك الاقربین (অর্থ- হে নবী! আপনার কবিলার নিকটতম ব্যক্তিদেরকে জাহান্নামের ভয় প্রদর্শন করুন) আয়াত নাযিল হয় তখন তিনি বললেন, হে আলী! একটি ছাগলের পায়া এবং এক সা' খাদ্য বস্তু নিয়ে খাবার তৈরী কর এবং এক পেয়ালা দুধ ও তৈরী রাখ। তারপর বনী আব্দুল মােত্তালেবের লােকদের একত্রিত কর।

       হযরত আলী (رضي الله عنه) বলেন, আমি তাঁর কথা মতে সব কিছু তৈরী করেছি, বনী আব্দুল মােত্তালেবের প্রায় চল্লিশ জন লােক এসেছে। তাদের মধ্যে হযরতের চাচা আবু তালেব, হামযা, আব্বাস ও আবু লাহাবও ছিল। আমি খাবারের পেয়ালা তাদের সামনে নিলাম। রাসূল (ﷺ) প্রথমে ঐ পেয়ালা থেকে লম্বা এক টুকরা গােত নিয়ে দাঁত মােবারক দিয়ে ছিড়ে পেয়ালার চতুর্দিকে ঢেলে দিলেন। তারপর উপস্থিত সকলকে বললেন, তােমরা বিসমিল্লাহ বলে খাও। তখন সকলেই পরিতৃপ্ত হয়ে আহার করলেন আর আমরা শুধু পেয়ালায় আঙ্গুলের চাপ দেখতেছি মাত্র কিন্তু সব খাবার রয়ে গেল। অথচ খােদার কসম খাবার মাত্র একজনের পরিমাণ মত ছিল। তারপর বললেন, হে আলী! সবাইকে দুধ পান করাও। সে পেয়ালায় দুধ ছিল আমি তা নিয়ে তাদের সকলকে দুধ পান করালাম। সবাই তৃপ্ত হল। খােদার কসম! আমাদের মধ্যে একজন যদি তা পান করত তবে শেষ হয়ে যেতাে। এরপর রাসূল (ﷺ) যখন তাদের সাথে (কুরআনের সম্পর্কে কিংবা হেদায়েত সম্পর্কে) কথা বলতে চেয়েছেন তখন আবু লাহাব সর্বাগ্রে বলে উঠল হে লােকেরা তােমাদের সঙ্গী তােমাদের উপর যাদু করেছে। একথা শুনে সবাই বিচ্ছিন্ন হয়ে চলে গেল। রাসূল (ﷺ) তাদের সাথে আর কোন কথা বলার সুযােগ পেলেন না।

        পরের দিন ও নবী করিম (ﷺ) বললেন, হে আলী! গতকালের ন্যায় খানা-পিনা তৈরী কর। আমি তৈরী করলাম আর লােকদের একত্রিত করলাম। রাসূল (ﷺ) প্রথম দিন যে রকম খাবার খাওয়ায়েছিলেন আজকেও অনুরূপ খাওয়ালেন এবং তারা সকলেই পরিতৃপ্ত হলাে। তারপর তিনি বললেন, হে বনী আব্দুল মােত্তালেব! আমি আরবের কোন যুবককে জানিনা, যে স্বীয় সম্প্রদায়ের কছে আমার চেয়ে উত্তম নিয়ে এসেছে। আমি তােমাদের কাছে দুনিয়া আখেরাতের বিষয় নিয়ে এসেছি।২১৭

২১৭. সুয়ূতী, জালাল উদ্দিন সুয়ুতী (رحمة الله) (৯১১হি.), আল খাসায়েসুল কুবরা, আরবী, বৈরুত, খন্ড: ১ম পৃ: ২০৫

এক সা যব এক হাজার লােকের পরিতৃপ্ত খাবার
____________________
এক সা যব এক হাজার লােকের পরিতৃপ্ত খাবার

         হযরত জাবের ইবনে আব্দুল্লাহ (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, যখন খন্দকের যুদ্ধে পরিখা খনন করা হচ্ছিল তখন আমি নবী (ﷺ) কে ভীষণ ক্ষুধার্ত অবস্থায় দেখতে পেলাম। তকন আমি আমার স্ত্রীর কাছে ফিরে গিয়ে জিজ্ঞেস করলাম, তােমার কাছে খাবার বস্তু কিছু আছে কি? আমি রাসূলুল্লাল্লাহ্ (ﷺ) কে দারুণ ক্ষুধার্ত দেখেছি। একথা শুনে তিনি একটি চামড়ার পাত্র এনে তা থেকে এক সা পরিমাণ যব বের করে দিলেন। আমাদের গৃহপালিত একটি বকরীর বাচ্চা ছিল। আমি সেটি যবেহ করলাম এবং গােশত কেটে কেটে ডেকচিতে ভরলাম। আর আমার স্ত্রী যব পিষে দিল। আমি আমার কাজ শেষ করার সাথে সাথে সেও তার কাজ শেষ করল। এরপর আমি রাসূলুল্লাহ (ﷺ)’র কাছে (তাঁকে ডেকে আনার জন্য) যাচ্ছিলাম। আমার স্ত্রী বলল, আমাকে রাসূলুল্লাহ ও তাঁর সাহাবীদের নিকট লজ্জিত করবেন না। (অর্থাৎ- খাবার অল্প তাই সবাইকে নয় বরং কয়েকজনকে ডেকে আনবেন।)

        এরপর আমি রাসূলুল্লাহ (ﷺ)’র নিকট গিয়ে চুপে চুপে বললাম, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমরা আমাদের একটি বকরীর বাচ্চা যবেহ করেছি এবং আমাদের ঘরে এক সা যব ছিল। তা আমার স্ত্রী পিষে রেখেছে। আপনি আরাে কয়েকজন নিয়ে সাথে আসুন। তখন নবী করিম (ﷺ) উচ্চস্বরে সবাইকে বললেন, হে পরিখা খননকারীগণ! জাবের খানার ব্যবস্থা করেছে। এসাে, তােমরা ডেকচি নামাবে না এবং খামির থেকে রুটিও তৈরী করবে না। আমি বাড়ীতে আসলাম এবং রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ) সাহাবায়ে কেরামসহ তাশরীফ আনলেন। এরপর আমি আমার স্ত্রীর নিকট আসলে সে বলল, তােমার মঙ্গল করুন। তুমি একি করলে? এতগুলাে লােক নিয়ে আসলে? অথচ খাদ্য একেবারে অল্প। আমি বললাম, তুমি যা বলেছ আমি তাই করেছি।

       এরপর সে রাসূলুল্লাহর সামনে আটার খামির বের করে দিলে তিনি তাতে মুখের লালা মােবারক মিশিয়ে দিলেন এবং বরকতের জন্য দোয়া করলেন। এরপর তিনি ডেকচির দিকে এগিয়ে গিয়ে তাতে মুখের লালা মােবারক মিশিয়ে বরকতের জন্য দোয়া করলেন। তারপর বললেন, হে জাবের! রুটি প্রস্তুককারিনীকে ডাক। সে আমর পাশে বসে রুটি প্রস্তুত করুক এবং ডেকচি থেকে পেয়ালা ভরে গােশত পরিবেশন করুক। তবে চুলা থেকে ডেকচি নামাবে না। তাঁরা আগুন্তুক সাহাবায়ে কিরামের সংখ্যা ছিল এক হাজার। আমি আল্লাহর কসম করে বলছি, তাঁরা সকলেই তৃপ্তি সহকারে খেয়ে অবশিষ্ট খাদ্য রেখে চলে গেলেন। অথচ আমাদের ডেকচি পূর্বের ন্যায় তখনও টগবগ করছিল এবং আমাদের আটার খামির থেকেও পূর্বের মত রুটি তৈরী হচ্ছিল।২১৮

২১৮. ইমাম বুখারী, মুহাম্মদ ইবনে ইসমাঈল (رحمة الله) (২৫৬হি.), বুখারী শরীফ, আরবী, ইউপি, ইন্ডিয়া, পৃ: ৫৮৮

তাবুকে কূপে পানি পূর্ণ হয়ে গেল
____________________
তাবুকে কূপে পানি পূর্ণ হয়ে গেল

        ইমাম বায়হাকী ও আবু নঈম (رحمة الله) হযরত উরওয়া (رضي الله عنه) থেকে বর্ণনা করেন, নবী করীমম (ﷺ) যে সময় তাবুকে অবস্থান করছিলেন তখন সেখানে পানির সল্পতা ছিল। তিনি হাতে এক ক্রোশ পানি নিয়ে কুলি করে কুলির পানি। একটি কূপে নিক্ষেপ করলেন। ফলে কূপে পানি ফুলে উঠে উপর অংশ পর্যন্ত পূর্ণ হয়ে গেল এবং এখনাে পর্যন্ত এরূপই রয়েছে।২১৯

২১৯. ইমাম সুয়ূতী, জালাল উদ্দিন সুয়ূতী (رحمة الله) (৯১১হি.), আল খাসায়েসুল কুবরা, আরবী, বৈরুত, খন্ড: ১ম পৃ: ৪৫৩

সংগ্রহীত সামান্য খাবারে অভাবনীয় বরকত হওয়া
____________________
সংগ্রহীত সামান্য খাবারে অভাবনীয় বরকত হওয়া

         ইমাম মুসলিম (رحمة الله) হযরত আবু হুরাইরা (رضي الله عنه) থেকে বর্ণনা করেন, নবী করিম (ﷺ) যখন তাবুকে পৌঁছেন তখন সাহাবায়ে কিরাম ক্ষধায় দুর্বল হয়ে পড়েছিল। তারা আরজ করল, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আপনি অনুমতি দিলে আমরা আমাদের উট যবেহ করে খেয়ে শক্তি অর্জন। করতে পারি। হযরত ওমর (رضي الله عنه) আরজ করলেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! যদি আপনি এরূপ করেন তবে সওয়ারী কমে যাবে। বরং আপনি যদি অবশিষ্ট খাবার সংগ্রহ করে আল্লাহর দরবারে বরকতের জন্য দোয়া করুন। আশা করি আল্লাহ তায়ালা এতে বরকত দেবেন।

রাসূল (ﷺ) বলেছেন সুন্দর পরামর্শ। তিনি চামড়ার একটি দস্তরখানা নিয়ে বিছায়ে দিলেন। তারপর তাদের অতিরিক্ত পাথেয় নিয়ে আসতে ঘােষণা দেন। অতঃপর কেউ এক মুষ্টি খাবার, কেউ একমুষ্টি খেজুর, আর কেউ এক টুকরা রুটি নিয়ে আসতে আসতে দস্তরখানায় কিছু খাবার বস্তু সগ্রহ হল। এরপর তিনি বরকতের জন্য দোয়া করলেন এবং সাহাবায়ে কিরামকে বললেন, তােমরা আপন আপন পাত্র ভরে নাও। ফলে সৈন্যদের মধ্যে এমন কারাে পাত্র ছিলনা যা ভরে নেয়নি এবং সবাই পরিতৃপ্ত হয়ে খেয়ে নিয়েছিলেন এরপরও খাবার রয়ে গেল। তারপর রাসূল (ﷺ) এরশাদ করেন, আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ ছাড়া কোন মাবুদ নেই, আর আমি আল্লাহর রাসূল। এই কালিমা নিয়ে সন্দেহ ব্যতীত যে ব্যক্তি আল্লাহর সাথে মিলবে তাকে জান্নাতে প্রবেশে বাঁধা দেওয়া হবে না।২২০

২২০. ইমাম সুয়ূতী, জালাল উদ্দিন সুয়ূতী (رحمة الله) (৯১১হি.), আল খাসায়েসুল কুবরা, আরবী, বৈরুত, খন্ড: ১ম পৃ: ৪৫৪

অল্পতে বরকত হওয়া খালি কূপ পানিতে পূর্ণ হওয়া
____________________
অল্পতে বরকত হওয়া

খালি কূপ পানিতে পূর্ণ হওয়া: 

        হযরত বারা ইবনে আযিব (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন- হুদায়বিয়ায় আমরা নবী করিম (ﷺ)’র সাথে চৌদ্দশ লােক ছিলাম। হুদায়বিয়া একটি কূপ, আমরা তা হতে সব পানি এমনভাবে উঠিয়ে নিলাম যে, তাতে একফোঁটা পানিও বাকী থাকল না। নবী (ﷺ) কূপের কিনারায় বসে সামান্য পানি আনার জন্য আদেশ করলেন। সামান্য আনীত পানি কুলি করে ঐ পানি কূপে নিক্ষেপ করলেন। আমরা কিছুক্ষণ অপেক্ষা করলাম। তখন কূপটি পানিতে ভরে গেল। আমরা পান করে তৃপ্তি লাভ করলাম, আমাদের উটগুলােও পানি পানে তৃপ্ত হল।২২১

২২১. ইমাম বুখারী, মুহাম্মদ ইবনে ইসমাঈল (رحمة الله) (২৫৬হি.), সহীহ বুখারী শরীফ, আরবী ইউপি, ইন্ডিয়া, পৃ: ৫০৫, হাদীস নং ৩৩২৪

 অল্প খাবার অনেকজনে খাওয়া
____________________
অল্প খাবার অনেকজনে খাওয়া

       হযরত আনাস (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, হযরত আবু তালহা (رضي الله عنه) তদীয় (পত্নী) উম্মে সুলাইম্ কে বললেন, আমি নবী করিম (ﷺ) এর কণ্ঠস্বর দুর্বল শুনেছি। আমি তাঁর মধ্যে ক্ষুধা বুঝতে পেয়েছি। তােমার নিকট কোন খাবার আছে কি? তিনি বললেন, হ্যাঁ আছে। এই বলে তিনি কয়েকটা যবের রুটি বের করলেন। তারপর তার একখানা ওড়না বের করে এর কিয়দাংশ দিয়ে রুটিগুলাে মুড়ে আমার হাতে গােপন করে রেখে দিলেন ও ওড়নার অপর অংশ আমার শরীর জড়িয়ে দিলেন। এবং আমাকে নবী (ﷺ)’র খেদমতে পাঠালেন।

        রাবী আলম (رضي الله عنه) বলেন, আমি তাঁর নিকট গেলাম। ঐ সময় তিনি কতিপয় লােকসহ মসজিদে অবস্থান করছিলেন। আমি গিয়ে তাঁদের সম্মুখে দাঁড়ালাম। নবী (ﷺ) আমাকে দেখে বললেন, তােমাকে আবু তালহা পাঠিয়েছে? আমি বললাম, জি হ্যাঁ। নবী (ﷺ) বললেন, খাওয়ার দাওয়াত দিয়ে পাঠিয়েছে? আমি বললাম, জি হ্যা। তখন নবী (ﷺ) সঙ্গীদেরকে বললেন, চল, আবু তালহা আমাদেরকে দাওয়াত করেছে। আনাস (رضي الله عنه) বলেন আমি তাঁদের আগেই চলে গিয়ে আবু তালহা (رضي الله عنه) কে নবী (ﷺ)’র আগমন বার্তা শুনালাম। ইহা শুনে আবু তালাহা বলেন, হে উম্মে সুলাইম! নবী (ﷺ) তাঁর সঙ্গী-সাথীদের নিয়ে আসছেন। তাঁদেরকে খাওয়ানাের মত কিছুই আমাদের কাছে নেই? উম্মে সুলাইম (رضي الله عنه) বললেন, আল্লাহ ও তাঁর রাসূলই ভাল জানেন।

       আবু তালহা (رضي الله عنه) তাঁদেরকে অভ্যর্থনা জানানাের জন্য বাড়ী হতে কিছু দূর অগ্রসর হলেন এবং রাসূল (ﷺ) ’র সাক্ষাত করলেন। রাসূল (ﷺ) তাকে নিয়ে তার ঘরে আসলেন। আর বললেন, হে উম্মে সুলাইম! তােমার নিকট যা কিছু আছে তা নিয়ে এসাে। তিনি যবের ঐ রুটিগুলাে হাযির করলেন এবং তাঁর নির্দেশে রুটিগুলাে টুকরাে টুকরাে করা হল। উম্মে সুলাইম ঘিয়ের পাত্র ঝেড়ে মুছে সামান্য য়ি বের করে তা তরকারী স্বরূপ পেশ করলেন। এরপর রাসূল (ﷺ) কিছু পাঠ করে তাতে ফু দিলেন। তারপর দশজনকে খাওয়ার জন্য নিয়ে আসতে বললেন। তাঁরা দশজন আসলেন এবং রুটি খেয়ে পরিতৃপ্ত হয়ে বেরিয়ে গেলেন। তারপর আরাে দশজনকে আসার কথা বলা হল। তাঁরা আসলেন এবং তৃপ্তসহকারে রুটি খেয়ে বেরিয়ে গেলেন। আবার আরাে দশজনকে আসতে বলা হল। তাঁরাও আসলেন এবং পেট ভরে খেয়ে নিলেন। অনুরূপভাবে সমেবত সকলেই রুটি খেয়ে পরিতৃপ্ত হলেন। তারা সর্বমােট সত্তর বা আশিজন ছিলেন।২২২

২২২. ইমাম বুখারী, মুহাম্মদ ইবনে ইসমাঈল (رحمة الله) (২৫৬হি.), সহীহ বুখারী শরীফ, আরবী, ইউপি, ইন্ডিয়া, পৃ: ৫০৫, হাদিস নং ৩৩২৫

পাওনাদারের প্রাপ্য শােধ
____________________
পাওনাদারের প্রাপ্য শােধ

        হযরত জাবির (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত, তাঁর পিতা (আব্দুল্লাহ (رضي الله عنه) ওহুদ যুদ্ধে) ঋণ রেখে শাহাদত বরণ করেন। তিনি বলেন, তখন আমি নবী করিম (ﷺ)’র দরবারে উপস্থিত হয়ে বললাম, আমার পিতা অনেক ঋণ রেখে গেছেন।

আমার নিকট বাগানের উৎপন্ন কিছু খেজুর ব্যতীত অন্য কোন সম্পদ নেই। কয়েক বছরের উৎপাদিত খেজুর একত্রিত করলেও এদ্বারা তাঁর ঋণ শােধ হবে না। আপনি দয়া করে আমার সাথে চলুন, যাতে (আপনাকে দেখে) পাওনাদারগণ আমার প্রতি কঠোর মনােভাব গ্রহণ না করে।

       নবী করিম (ﷺ) তাঁর সাথে গেলেন এবং খেজুরের একটি স্তুপের চারদিকে ঘুরে দোয়া করলেন। এরপর অন্য স্তুপের নিকটে গিয়ে বসে পড়লেন এবং জাবির (رضي الله عنه) কে বললেন, খেজুর বের করে দিতে থাক। অতঃপর সকল পাওনাদের প্রাপ্য শােধ করে দিলেন অথচ পাওনাদারদের যা দিলেন তার সমপরিমাণ রয়ে গেল।২২৩

২২৩. ইমাম বুখারী, মুহাম্মদ ইবনে ইসমাঈল (رحمة الله), সহীহ বুখারী শরীফ, আরবী, ইউপি, ইন্ডিয়া, পৃ: ৫০৫, হাদিস নং-৩৩২৭

রাসূল (ﷺ)’র বরকতে পরিতৃপ্ত হওয়া 
____________________
রাসূল (ﷺ)’র বরকতে পরিতৃপ্ত হওয়া

        ইবনে সা'দ আবু নঈম ও ইবনে আসাকের হযরত আতা (رحمة الله) থেকে তিনি হযরত ইবনে আব্বাস ও মুজাহিদসহ আরাে অনেক থেকে বর্ণনা করেন, যখন আবু তালেব এর পরিবারের সদস্যরা একত্রে বসে কিংবা একা একা রাসূল (ﷺ) ব্যতীত খাবার খেতেন তখন তাদের পেট ভরে খাওয়া হতনা অর্থাৎ পরিতৃপ্ত হতনা। কিন্তু যখন রাসূল (ﷺ) সহ খেতে বসতেন তখন সবাই পরিতৃপ্ত হতাে।

         অতঃপর সকাল সন্ধ্যা যখন খাওয়ার সময় হত তখন আবু তালেব পরিবারের সদস্যদের বলত থাম, আমার পুত্র আসুক। তারপর তিনি যখন আসতেন তখন তাঁর সাথে খাবার খেলে সবাই পরিতৃপ্ত হয়ে খেতেন এবং আরাে খাবার থেকে যেতাে। আর তিনি খাবারে শরীক না হলে সবাই ক্ষুধার্ত থেকে যেতাে।

        যদি ঘরে দুধ থাকে তাহলে চাচা প্রথমে তাঁকে পান করাতেন পরে সবাই তা থেকে পান। করতাে এতে সবাই পরিতৃপ্ত হয়ে যেতাে। পক্ষান্তরে দুধের পেয়ালা তাঁকে না দিয়ে অন্য কেউ পান করতাে তখন একজনই তা পান করে ফেলতাে। এতে চাচা তাঁকে বলতেন- তুমি বড়ই বরকত মন্ডিত। সব ছেলেরা সকালে চোখে ময়লা নিয়ে ঘুম থেকে উঠে কিন্তু তিনি সম্পূর্ণ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন ও মাথায় তেল, চোখে সুরমা লাগানাে অবস্থায় ঘুম থেকে উঠতেন।২২৪

২২৪. সুয়ুতী, জালাল উদ্দিন সুয়ূতী (رحمة الله) (৯১১হি.), আল খাসায়েসুল কুবরা, আরবী, বৈরুত, খন্ড: ১ম পৃ: ১৪০

এক দেরহামের খাবার সকল আহলে বাইতের যথেষ্ট হওয়া
____________________
এক দেরহামের খাবার সকল আহলে বাইতের যথেষ্ট হওয়া

        ইবনে সা'দ (رحمة الله) হযরত আলী (رضي الله عنه) থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, এক রাতে (খাবার না থাকার কারণে) আমরা খাবার না খেয়ে ঘুমালাম, সকালে উঠে আমি তালাশ করে একটি দেরহাম পেলাম যা দিয়ে কিছু খাবার ও গােশত কিনে আনলাম এবং ফাতেমাকে দিলাম। তিনি রুটি ও সালন তৈরী করে বললেন, আমার পিতাকেও ডাকলে ভাল হত। আমি তাঁকে ডাকতে গেলাম তখন তিনি আল্লাহর কাছে ক্ষুধা থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করতেছেন। আমি বললাম, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমাদের ঘরে খাবার আছে, আপনি তাশরীফ আনুন। রাসূল (ﷺ) যখন আসেন তখন ডেকচিতে খাবার ফুটতেছে। তিনি বললেন, আয়েশার জন্য খাবার তুলে পৃথক করে রাখ। সুতরাং আয়েশার জন্য এক বাটি নিয়ে পৃথকভাবে রাখা হল। তারপর বললেন, হাফসা’র জন্য তুলে রাখ, হাফসার জন্য ও এক বাটি তুলে রাখা হল। এভাবে হ্যরত ফাতেমা (رضي الله عنه) রাসূল (ﷺ) ’র নয়জন স্ত্রীর জন্য পাত্ৰভরে পৃথক পৃথক করে রেখে দিলেন।

        এরপর তিনি বললেন, তােমারা স্বামী ও তােমার পিতার জন্য রেখে দাও এবং তােমার জন্যও রাখ আর খাও। হযরত ফাতেমা (رضي الله عنه) বলেন, সকলের জন্য খাবার তুলে রাখার পর ডেকচি খুলে দেখি ডেকচির উপরিভাগ পর্যন্ত ভর্তি ছিল আর আমরা আল্লাহর ইচ্ছে মােতাবেক খেয়েছি।২২৫

২২৫. ইমাম সুয়ূতী, জালাল উদ্দিন সুয়ূতী (رحمة الله) (৯১১হি.), আল খাসায়েসুল কুবরা, আরবী, বৈরুত, খন্ড: ২য় পৃ: ৮১

ত্রিশ সা’ যব দিয়ে সপরিবারে ছয়মাস খাওয়া
____________________
ত্রিশ সা’ যব দিয়ে সপরিবারে ছয়মাস খাওয়া

         ইমাম হাকেম ও বায়হাকী (رحمة الله) হযরত নওফল ইবনে হারেস (رضي الله عنه) থেকে বর্ণনা করেন, তার বিয়ের জন্য রাসূল (ﷺ) ’র নিকট সাহায্য প্রার্থনা। করলে তিনি তাকে ত্রিশ সা’ যব দান করেন। নওফল বলেন আমরা ঐ যব ছয়মাস পর্যন্ত খেয়েছিলাম। তারপর পাল্লা দিয়ে মেপে দেখি সামান্য পরিমাণ রয়েছে মাত্র। আমি এই ঘটনা রাসূল (ﷺ) কে বললে তিনি বলেন, যদি তুমি মেপে দেখতে তবে সারা জীবন খেতে পারতে।২২৬

২২৬. ইমাম সুয়ূতী, জালাল উদ্দিন সুয়ূতী (رحمة الله) (৯১১হি.), আল খাসায়েসুল কুবরা, আরবী, বৈরুত, খন্ড: ২য় পৃ: ৮৬

খালি পাত্র পূর্ণ ভর্তি হওয়া
____________________
খালি পাত্র পূর্ণ ভর্তি হওয়া

        হযরত আনাস (رضي الله عنه)’র আম্মা হযরত উম্মে সুলাইম (رضي الله عنه) রাসূল (ﷺ)’র খেদমতে এক বাটি ঘি হাদিয়া পাঠালেন। তিনি ঘি নিয়ে খালি বাটি পাঠিয়ে দেন। অপর এক মহিলা উম্মে সুলাইম (رضي الله عنه)’র কাছে সামান্য ঘি চাইলে তিনি তাকে বললেন, সমস্ত ঘি রাসূল (ﷺ) কে দিয়ে ফেলেছি আমাদের কাছে আর ঘি নেই। মহিলা বলল, একটু দেখুন না, বাটিতে সামান্য রয়ে গেছে কিনা।

       উম্মে সুলাইম তার মেয়েকে বললেন, বাটিটি দেক সামান্য ঘি আছে কিনা। মেয়ে গিয়ে দেখে বাটিতে ঘি পূর্ণ। উম্মে সুলাইম (رضي الله عنه) রাসূল (ﷺ)’র দরবারে এসে বললেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আপনি আমার ঘি গ্রহণ করেন নি কেন? তিনি বললেন, কেন, আমি তাে পুরাে বাটি খালি করে দিয়েছি। উম্মে সুলাইম (رضي الله عنه) বললেন, সেই খােদার কসম, যিনি আপনাকে সত্য রাসূল হিসেবে প্রেরণ করেছেন, সেই খালি বাটির মুখ পর্যন্ত ঘি পূর্ণ হয়ে আছে। তিনি মুচকী হেসে বললেন, সেগুলাে ব্যবহার করতে থাকো আর বাটি সেই স্থান থেকে সরাবে না।২২৭

২২৭. আব্দুর রহমান জামী (رحمة الله) (৮৯৮হি.), শাওয়াহেদুন নবুয়ত, উর্দু, বেরেলী, পৃ: ২২৭

খালি ঘি’র বাটি থেকে সারা জীবন খাওয়া
____________________
খালি ঘি’র বাটি থেকে সারা জীবন খাওয়া-

❏ হযরত উম্মে শুরাইক (رضي الله عنه) একদা তার দাসীর মারফত এক বাটি ঘি রাসূল সাল্লাল্লাহু তায়ালা আলাইহি ওয়াসাল্লাম’র খেদমতে প্রেরণ করলেন। তিনি ঘি নিয়ে খালি বাটি পাঠিয়ে দেন এবং দাসীকে বললেন এটি নিয়ে লটকিয়ে রাখবে আর মুখ বন্ধ করবে না। দ্বিতীয় দিন উম্মে শুরাইক (رضي الله عنه) ঐ বাটি দেখেন যে, বাটি ঘিয়ে ভর্তি। তিনি দাসীকে ডেকে বকা দিয়ে বলেন, তােমাকে বলেছি ঘি রাসূল সাল্লাল্লাহু তায়ালা আলাইহি ওয়াসাল্লাম’র কাছে নিয়ে যেতে। তুমি নাওনি কেন? সে শপথ করে আমাকে দিয়ে দিয়েছেন আর আমি উহাকে উল্টিয়ে দেখেছি এক ফোঁটা ঘিও ছিলনা। তবে তিনি বলেছিলেন উহাকে লটকিয়ে রাখতে আর মুখ বন্ধ না করতে।

উম্মে শুরাইক (رضي الله عنه) সারা জীবন ঐ বাটি থেকে ঘি খেয়েছিলেন। একদা বাহাত্তর জন ব্যক্তি ঐ বাটি থেকে ঘি খেয়েছিল কিন্তু এতে বিন্দুমাত্রও কমেনি। ●২২৮
_____________________________

228.[আব্দুল রহমান জামী (رحمة الله) (৮৯৮হি.), শাওয়াহেদুন নবুয়ত, উর্দু, বেরেলী, পৃ: ২২৮ ]

মাত্র সাতটি খেজুর থেকে অগণিত খেজুর হওয়া
____________________
মাত্র সাতটি খেজুর থেকে অগণিত খেজুর হওয়া-

❏ ইমাম ওয়াকেদী, আবু নঈম ও ইবনে আসাকের (رحمة الله) হযরত আরবায ইবনে সারিয়্যা (رضي الله عنه) থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, আমরা রাসূল সাল্লাল্লাহু তায়ালা আলাইহি ওয়াসাল্লাম’র সাথে তাবুক যুদ্ধে ছিলাম। একরাতে তিনি হযরত বেলাল (رضي الله عنه) কে জিজ্ঞেস করেন, রাতে খাবারের জন্য কিছু আছে? হযরত বেলাল (رضي الله عنه) খােদার কসম করে বলেন, আমরা আমাদের থলে ঝেড়ে ফেলেছি। অর্থাৎ আমাদের কাছে খাওয়ার কিছুই নেই। তিনি হযরত বেলাল (رضي الله عنه) কে বললেন, দেখ হয়তাে পেয়ে যাবে।

অতঃপর হযরত বেলাল (رضي الله عنه) একেকটি থলে নিয়ে জাড়তে লাগলেন। কোনটি থেকে একটি, কোনটি থেকে দু'টি খেজুর পড়েছে। এভাবে আমি হযরত বেলাল (رضي الله عنه)'র হাতে সাতটি খেজুর দেখেছি। তিনি একটি বড় থলে নিয়ে সেখানে খেজুরগুলাে রাখলেন। এরপর তিনি থলের ভিতরে খেজুরে হাত মােবারক রেখে বললেন, বিসমিল্লাহ খাও। আমরা তিন জন খেয়েছি। আমি খাওয়ার সময় গণনা করেছি মােট চুয়ান্নটি খেজুর গুনেছি আর দানাগুলাে আমার অপর হাতে ছিল। আমার অপর দুই সাথিও অনুরূপ করেছিল এমনকি আমরা তৃপ্ত হয়ে হাত তুলে নিলাম। দেখলাম সাতটি খেজুর যেভাবে ছিল সেভাবে রয়েছে। তারপর বললেন,

يا بلال ارفعها فانه لايأكل منها احد الا نهل منها شبعا

 হে বেলাল! এই খেজুরগুলাে তুলে নাও। এগুলাে থেকে যেই খাবে সেই পরিতৃপ্ত হবে।

 পরের দিন তিনি বেলালকে ডেকে বললেন, খেজুরগুলাে নিয়ে এসাে। খেজুর আনলে তিনি তাতে হাত মােবারক খেজুরের উপর রেখে বললেন, বিসমিল্লাহ, খাও। আমরা খেলাম এবং তৃপ্ত হলাম আর আমরা মােট দশজন ছিলাম। আমরা তৃপ্ত হয়ে হাত উঠিয়ে নিলাম কিন্তু পূর্বের ন্যায় অবশিষ্ট রয়েছে। রাসূল সাল্লাল্লাহু তায়ালা আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেন, আমি আমার রবকে যদি লজ্জা না করতাম তবে আমাদের পরবর্তীতে আগত লােকেরাও মদীনা মুনাওয়ারা পৌঁছা পর্যন্ত খেতে পারতাম। তারপর খেজুরগুলাে এক বালককে দিয়ে দেন সে দাতে চিবুতে চিবুতে চলে গেল। ●২২৯
_____________________________

229.[ইমাম সুয়ুতী, জালাল উদ্দিন সুয়ূতী (رحمة الله) (৯১১হি.), আল খাসায়েসুল কুবরা, আরবী বৈরুত, খন্ড: ১ম পৃ: ৪৫৫]

আঙ্গুল মোবারক থেকে নির্গত পানি ত্রিশ হাজার লোক ও চব্বিশ হাজার উট-ঘোড়া পানি পান করা
____________________
আঙ্গুল মোবারক থেকে নির্গত পানি ত্রিশ হাজার লোক ও চব্বিশ হাজার উট-ঘোড়া পানি পান করাঃ -

❏ ইমাম ওয়াকেদী ও ও আবু নঈম (رحمة الله) হযরত আবু কাতাদাহ (رضي الله عنه) থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, আমরা রাসূল সাল্লাল্লাহু তায়ালা আলাইহি ওয়াসাল্লাম’র সাথে সৈন্যগণসহ যুদ্ধে (তাবুক) যাচ্ছি। সৈন্যরা এমন পিপাসার্ত হল যে, সৈন্য, ঘােড়া ও উটের গর্দান ভেঙ্গে যাওয়ার উপক্রম হল। তিনি সামান্য পানি ভর্তি একটি লােটা আনালেন এবং এতে তিনি আঙ্গুল মােবারক রাখেন। তখন তাঁর আঙ্গুল মােবারকের মধ্যবর্তী স্থান থেকে পানি প্রবাহিত হতে লাগল। এমনভাবে প্রবাহিত হল সবাই পানি পান করে তৃপ্ত হল। তারা তাদের ঘােড়া ও উট গুলােকেও পানি পান করালাে। এ সময় তাদের সাথে বার হাজার উট, বার হাজার ঘােড়া ও ত্রিশ হাজার লােক ছিল। ●২৩০
_____________________________

230.[ইমাম সুয়ূতী, জালাল উদ্দিন সুয়ুতী (رحمة الله) (৯১১হি.), আল খাসায়েসুল কুবরা, আরবী, বৈরুত, খন্ড: ১ম পৃ: ৪৫৬]

তিনটি ডিম সকলে পরিতৃপ্ত হয়ে গেল 
____________________
তিনটি ডিম সকলে পরিতৃপ্ত হয়ে গেল

❏ ইমাম ওয়াকেদী ও আবু নঈম (رحمة الله) হযরত জাবের (رضي الله عنه) থেকে বর্ণনা করেন, যে সময় নবী করিম (ﷺ) ‘গযওয়ায়ে যাতুর রিকা' এ যাত্রা করার মনস্থ করেন তখন আলবা ইবনে যিয়াদ হারেসী তিনটি উট পাখর ডিম নিয়ে রাসূল সাল্লাল্লাহু তায়ালা আলাইহি ওয়াসাল্লাম’র কাছে এসে আরজ করেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! এই ডিমগুলাে আমি উট পাখির বাসায় পেয়েছি। তিনি বললেন, জাবের! ডিমগুলাে নিয়ে রান্না করে আন। অতঃপর আমি গিয়ে রান্না করে একটি বড় পেয়ালা করে নিয়ে আসলাম আর রুটি তালাশ করতে লাগলাম।

নবী করিম (ﷺ) ও তাঁর সাহাবায়ে কিরাম রুটি ছাড়া ঐ ডিম খাওয়া আরম্ভ করে দেন। প্রথমে তিনি পরিতৃপ্ত হলেন কিন্তু ডিম পূর্ণই রয়ে গেল।

তারপর দাঁড়িয়ে গেলেন তারপর ঐ ডিম থেকে তাঁর সকল সাহাবায়ে কিরাম খেলেন। এরপর আমরা ঠান্ডা হয়ে রওয়ানা হলাম। ●২৩১
_____________________________
231.[সুয়ূতী, জালাল উদ্দিন সুয়ূতী (رحمة الله) (৯১১হি.), আল খাসায়েসুল কুবরা, আরবী, বৈরুত, খন্ড: ১ম পৃ: ৩৭৫]

এক বাটি খাবার খন্দক যুদ্ধের সকল মুজাহিদের জন্য যথেষ্ট হও
____________________
কয়েকটি খেজুর সকলের জন্য যথেষ্ট-

❏ ইমাম বায়হাকী ও আবু নঈম (رحمة الله) হযরত নােমান ইবনে বশীর (رضي الله عنه)’র বােন বর্ণনা করেন, তার বােন বলেন, খন্দকের যুদ্ধের সময় আমার মা আমার কাপড়ের আঁচলে কয়েকটি খেজুর দিয়ে আমাকে আমার পিতা ও মামার নিকট পাঠালেন। তখন তারা খন্দক খননে লিপ্ত ছিলেন। আমি নবী করিম (ﷺ)’র পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় তিনি আমাকে ডাক দিলে আমি তাঁর কাছে গেলাম। তিনি আমার আঁচল থেকে খেজুরগুলাে নিয়ে নিলেন। খেজুর পরিমাণে এত কম ছিল যে, তাতে তাঁর হাত মােবারকও ভরেনি। তিনি একটি কাপড় বিছায়ে সেখানে খেজুরগুলাে ছেড়ে দিলেন ফলে খেজুর কাপড়ের চতুর্দিকে ছড়িয়ে পড়ল। তারপর তিনি খন্দক খননকারী সকলকে আদেশ দিলেন যে, তােমরা একত্রিত হয়ে খেজুর খেয়ে যাও। তারা এসে খেজুর খেতে লাগল আর খেজুর বাড়তে লাগল। এভাবে সবাই খেজুর তৃপ্ত হয়ে খাওয়ার পরও কাপড়ের কোনায় খেজুর পড়ে রইল। ●২৩৩
_____________________________
233.[সুয়ূতী, জালাল উদ্দিন সুয়ূতী (رحمة الله) (৯১১হি.), আল খাসায়েসুল কুবরা, আরবী, বৈরুত, খন্ড: ১ম পৃ: ৩৮০]

কয়েকটি খেজুর সকলের জন্য যথেষ্ট
____________________
আল্লাহর পক্ষ থেকে রিযিক-

❏ হযরত জাবের (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত, একদা নবী করিম (ﷺ) কয়েকদিন যাবৎ খাবার খায়নি এমনকি ক্ষুধার্ত থাকা কষ্টদায়ক হয়ে পড়ল। তিনি হযরত ফাতেমা (رضي الله عنه)’র কাছে এসে বললেন, হে ফাতেমা! তােমার কাছে কিছু আছে? তিনি বললেন, না। যখন তিনি চলে গেলেন তখন তার এক প্রতিবেশী মহিলা দু'টি চাপাতি রুটি ও এক টুকরা গােশত পাঠালেন। হযরত ফাতেমা (رضي الله عنه) এ গুলােকে একটি পেয়ালায় ঢেকে রেখে রাসূল সাল্লাল্লাহু তায়ালা আলাইহি ওয়াসাল্লাম ডেকে পাঠান। তিনি আসলেন এবং বললেন, আল্লাহ তায়ালা নিশ্চয় কিছু দিয়েছেন। ঠিক কাছে নিয়ে এসাে। ঐ পেয়ালা আনা হলে তিনি ঢানি খুলে দেখেন পেয়ালা রুটি ও গােশত ভর্তি। হযরত ফাতেমা (رضي الله عنه) দেখে। অবাক হয়ে গেলেন, আর বুঝে নিলেন নিশ্চয় আল্লাহর পক্ষ থেকে বরকত হয়েছে। তখন নবী করিম (ﷺ) বললেন- :

من اين لك هذا يا بنية؟

 হে আমার প্রিয় কন্যা! এগুলাে তােমার কাছে কোথা হতে এলাে? তিনি উত্তর দিলেন-

يا أبت هو من عند الله إن الله يرزق من يشاء بغير حساب

 হে আমার পিতা! এগুলাে আল্লাহর পক্ষ থেকে। নিশ্চয় তিনি যাকে ইচ্ছে অগণিত রিযিক দান করেন।

(সূরা আলে ইমরান আয়াত নং ৩৭)

অতঃপর নবী সাল্লাল্লাহু তায়ালা আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেন- আলহামদুলিল্লাহ, হে আমার প্রিয় কন্যা! আল্লাহ তায়ালা তােমাকে বনী ইস্রাইলের মহিলাদের সর্দার তথা হযরত মরিয়ম (عليه السلام)'র সাদৃশ্য করেছেন। তারও এরূপ আল্লাহর পক্ষ থেকে রিযিক আসত। তাকেও যখন জিজ্ঞেস করা হত এগুলাে কোথা হতে আসে? সেও অনুরূপ উত্তর দিত। তারপর তিনি হযরত আলী (رضي الله عنه) ডাকলেন এবং তিনি, আলী, ফাতেমা, হাসান-হােসাইন সহ সকল বিবিগণ সহ পরিবারের সবাই তৃপ্ত হয়ে খাবার খেলেন আর পেয়ালা পূর্বের ন্যায় ভর্তি রয়ে গেল। হযরত ফাতেমা (رضي الله عنه) ঐ অবশিষ্ট খাবার প্রতিবেশীগণের নিকট পাঠালেন। আল্লাহ তায়ালা ঐ খাবারে অনেক বরকত ও প্রচুর কল্যাণ দান করেছেন। ●২৩৪
_____________________________
234.[ইমাম সুয়ূতী, জালাল উদ্দিন সুয়ূতী (رحمة الله) (৯১১হি.), আল খাসায়েসুল কুবরা, আরবী, বৈরুত, খন্ড: ২য় পৃ: ৮২]

আল্লাহর পক্ষ থেকে রিযিক
____________________
এক থলে থেকে দু'শ ওসক খেজুর খাওয়া

❏ হজরত আবু হুরাইরা (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ইসলাম গ্রহণের পর আমার উপর তিনটি বড় মুসিবত অবতীর্ণ হয়। একটি নবী করিম (ﷺ)’র ওফাত, দ্বিতীয়টি হল হযরত ওসমান (رضي الله عنه)'র শাহাদত আর তৃতীয়টি হল সফরে খাবার রাখার থলে হারিয়ে যাওয়া। লােকেরা বলল, থলের ঘটনা কি? হযরত আবু হুরাইরা (رضي الله عنه) বলেন, আমরা নবী করিম (ﷺ)’র সাথে সফরে ছিলাম। তিনি আমাকে জিজ্ঞেস করেন তােমার কাছে কি খাবার কিছু আছে? আমি বললাম, থলের মধ্যে সামান্য খেজুর আছে। তিনি বললেন, নিয়ে এসাে। আমি থলে থেকে খেজুর বের করে তাঁর কাছে আনলাম। তিনি উহা স্পর্শ করে এগুলাের জন্য দোয়া করেন। আর বললেন দশজন করে করে ডাক। এভাবে দশজন করে এসে পুরাে সৈন্যবাহিনী তৃপ্ত হয়ে খাওয়ার পর থলের মধ্যে খেজুর অবশিষ্ট রয়ে গেল।

তিনি বললেন, হে আবু হুরাইরা! যখনই থলে থেকে কিছু নিতে চাইবে এতে হাত প্রবেশ করে খেজুর নিবে তবে কখনাে থলে ঝেড়ে ফেলবেনা। ঐ থলে থেকে আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু তায়ালা আলাইহি ওয়াসাল্লাম হযরত আবু বকর, ওমর এবং হযরত ওসমান (رضي الله عنه)’র শাসনামল পর্যন্ত খেয়েছিলাম। যখন হযরত ওসমান (رضي الله عنه) যখন শাহাদাত বরণ করেন তখন আমার ঘরের জিনিসপত্র লুট করা হয়েছিল আর এসময় ঐ বরকতের থলেটিও নিয়ে গিয়েছিল। আমি উহা থেকে দু’শ ওসক খােরমা খেয়েছি। ●২৩৫
_____________________________
235.[ইমাম সুয়ূতী, জালাল উদ্দিন সুয়ূতী (رحمة الله) (৯১১হি.), আল খাসায়েসুল কুবরা, আরবী, বৈরুত, খন্ড: ২য় পৃ: ৮৫]

এক থলে থেকে দু'শ ওসক খেজুর খাওয়া
____________________
দুধে বরকত-

❏ হযরত আবু হুরায়রা (رضي الله عنه) বলতেন- আল্লাহর কসম! যিনি ছাড়া আর কোন মাবুদ নেই, আমি ক্ষুধার জ্বালায় আমার পেটকে মাটিতে রেখে উপুড় হয়ে পড়ে থাকতাম। আর কোন সময় ক্ষুধার জ্বালায় আমার পেটে পাথর বেঁধে রাখতাম। একদিন আমি ক্ষুধার যন্ত্রণায় বাধ্য হয়ে নবী সাল্লাল্লাহু তায়ালা আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও সাহাবীগণের বের হওয়ার পথে বসে থাকলাম। আবু বকর যেতে লাগলে আমি কুরআনের একটি আয়াত সম্পর্কে প্রশ্ন করলাম। তাঁকে প্রশ্ন করার উদ্দেশ্য হল আমার ক্ষুধার্ত অবস্থা বুঝতে পেরে আমাকে পরিতৃপ্ত করে কিছু খাওয়াবেন। কিন্তু তিনি চলে গেলেন, কিছুই করলেন না। কিছুক্ষণ পর ওমর (رضي الله عنه) যাচ্ছিলেন। আমি তাঁকে কুরআনের একটি আয়াত সম্পর্কে প্রশ্ন করলাম। এতেও আমার উদ্দেশ্য ছিল তিনি আমাকে পরিতৃপ্ত করে খাওয়াবেন। কিন্তু তিনি চলে গেলেন। আমার কোন ব্যবস্থা করলেন না। তার পরক্ষণে আবুল কাসিম সাল্লাল্লাহু তায়ালা আলাইহি ওয়াসাল্লাম যাচ্ছিলেন। তিনি আমাকে দেখেই মুসকি হাসলেন এবং আমার মনের অস্থিরতা আমার চেহরার অবস্থা থেকে তিনি আঁচ করতে পারলেন। তারপর বললেন, হে আবু হুরায়রা! আমি বললাম, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমি হাযির আছি। তিনি বললেন, তুমি আমার সঙ্গে চল। এ বলে তিনি চললেন, আমিও তাঁর অনুসরণ করলাম। তিনি ঘরে প্রবেশের অনুমতি চাইলেন এবং আমাকেও প্রবেশের অনুমতি দিলেন। তিনি ঘরে প্রবেশ করে একটি পেয়ালার মধ্যে সামান্য পরিমাণ দুধ পেলেন। তিনি জিজ্ঞেস করলেন, এ দুধ কোথা থেকে এসেছে? তাঁরা বললেন, এটা আপনাকে অমুক পুরুষ অথবা অমুক মহিলা হাদিয়া দিয়েছেন। তখন তিনি বললেন, হে আবু হুরায়রা! তুমি সুফফাবাসীদেরকে আমার কাছে ডেকে নিয়ে এসাে। রাবী বলেন, সুফফাবাসীরা ইসলামের মেহেমান ছিলেন। তাদের কোন পরিবার ছিলনা এবং তাদের কোন সম্পদও ছিল না। আর কারাে উপর নির্ভরশীল হওয়ারও সুযােগ ছিলনা, যখন কোন সাদকা আসত তখন তিনি তা তাদের কাছে পাঠিয়ে দিতেন। তিনি এর থেকে কিছুই গ্রহণ করতেন না। আর কোন হাদিয়া আসলে তার কিছু অংশ তাদেরকে দিয়ে দিতেন এবং এর থেকে নিজেও কিছু রাখতেন। এর মধ্যে তাদেরকে শরীক করতেন।আবু হুরায়রা (رضي الله عنه) এ আদেশ শুনে আমি হতাশ হলাম। মনে মনে ভাবলাম যে, এ সামান্য দুধ দ্বারা সুফফাবাসীদের কি হবে? এ সামান্য দুধ আমার জন্যই যথেষ্ট হতাে। এটা পান করে আমি শরীরে কিছুটা শক্তি পেতাম।

এরপর যখন তারা এসে গেলেন, তখন তিনি আমাকে নির্দেশ দিলেন যে, আমিই যেন তা তাদেরকে দেই, আর আমার আশা রইলনা যে, এ দুধ থেকে আমি কিছু পাবাে। কিন্তু আল্লাহ ও তার রাসূলে(ﷺ) এর নির্দেশ না মেনে কোন উপায় নেই। তাই তাঁদের কাছে গিয়ে তাঁদেরকে ডেকে আনলাম। তাঁরা এসে ভেতরে প্রবেশের অনুমতি চাইলে তিনি তাদেরকে অনুমতি দিলেন। তাঁরা এসে ঘরে আসন গ্রহণ করলেন। তিনি বললেন, হে আবু হুরায়রা! তুমি পেয়ালাটি নিয়ে তাদেরকে দাও। আমি পেয়ালা নিয়ে একজনকে দিলাম। তিনি পরিতৃপ্ত হয়ে পান করে পেয়ালাটি আমাকে দিয়ে দিলেন। আমি আর একজনকে দিলাম। তিনিও পরিতৃপ্ত হয়ে পান করে পেয়ালাটি আমাকে ফিরিয়ে দিলেন। এমনিভাবে সকলকে দিতে দিতে নবী সাল্লাল্লাহু তায়ালা আলাইহি ওয়াসাল্লাম পর্যন্ত পৌঁছলাম। তাঁরা সবাই তৃপ্ত হয়েছিলেন। তারপর তিনি পেয়ালাটি হাতে নিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে বললেন, এখন শুধু আমি আর তুমি আছি। আমি বললাম, আপনি ঠিক বলছেন ইয়া রাসুলাল্লাহ। তিনি বললেন, এখন তুমি বসে পান কর। তখন আমি বসে কিছু পান করলাম। তিনি বললেন, তুমি আরাে পান কর। আমি আরাে পান করলাম। তিনি বার বার আমাকে পান করার নির্দেশ দিতে লাগলেন। এমনকি আমি বলতে বাধ্য হলাম যে, আর পারছিনা। যে সত্তা আপনাকে সত্য ধর্মসহ পাঠিয়েছেন, তাঁর কসম আর পান করার মত পেটে জায়গা নেই। তিনি বললেন, তাহলে আমাকে দাও। আমি পেয়ালাটি তাঁকে দিলে তিনি আলহামদুলিল্লাহ ও বিসমিল্লাহ বলে বাকীটা পান করলেন। ●২৩৬
_____________________________
236.[ইমাম বুখারী, মুহাম্মদ ইবনে ইসমাঈল (رحمة الله) (২৫৬হি.), সহীহ বুখারী শরীফ, আরবী, ইউপি, ইন্ডিয়া,

পৃ: ৯৫৫, হাদিস নং-৬০০৮]

দুধে বরকত
____________________
তীর গেড়ে কূপের পানি বৃদ্ধি-

❏ ইমাম বুখারী (رحمة الله) বুখারী শরীফে হযরত মিসওয়ার ইবনে মা খারমা (رضي الله عنه) থেকে বর্ণনা করেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু তায়ালা আলাইহি ওয়াসাল্লাম হুদায়বিয়ার একটি অল্প পানি ওয়ালা কূপের পাশে অবতরণ করেন। তখন সাহাবায়ে কিরাম তা থেকে সামান্য সামান্য পানি নিতে নিতে অল্পক্ষণের মধ্যেই কূপের পানি শেষ হয়ে গেল। তারা তাঁর কাছে পানির অভাবের ও পিপাসার কথা অবহিত করলে তিনি একটি তীর বের করেন এবং সেটিকে কূপে গেড়ে দিতে আদেশ করেন। তীর কূপে গেড়ে দিলে সেই তীরের বরকতে কূপে পানি বৃদ্ধি হয়ে উপছে পড়তে লাগল।।সবাই তৃপ্ত হয়ে প্রত্যাবর্তন করল। এসময় সাহাবায়ে কিরামের সংখ্যা ছিল প্রায় দেড়হাজার। ●২৩৭
_____________________________
237.[ইউসূফ নাবহানী (رحمة الله) (১৩৫০হি), হুজ্জাতুল্লাহি আলামীন, উর্দু, গুজরাট, খন্ড: ২য় প: ২৭১]

তীর গেড়ে কূপের পানি বৃদ্ধি
____________________
দু’জনের খাবার একশ আশি জনে খাওয়া-

❏ হযরত আবু আইয়ুব আনসারী (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করিম (ﷺ) যখন হিযরত করে মদীনায় তাশরীফ আনেন তখন আমি তাঁর ও হযরত আবু বকর (رضي الله عنه)'র জন্য শুধু দু'জনের পরিমাণ খাবার তৈরী করেছি। আমি খাবার এনে সামনে রাখলে তিনি বললেন যাও, মদীনার বিশিষ্ট সম্মানিত ব্যক্তিবর্গ গণকে ডেকে নিয়ে এসাে। কথাটি আমার কাছে বড় ভারী মনে হল। কেননা আমার কাছে এর বেশী খাবার ছিলনা। তিনি আবার বললেন, যাও, ত্রিশজন মদীনার সম্মানিত ব্যক্তি ডেকে নিয়ে এসাে। আমি গিয়ে ডেকে নিয়ে আসলাম,তারা আসলে তিনি বললেন, খাও, তারা খাওয়া

আরম্ভ করল এমনকি সবাই তৃপ্ত হয়ে খেল। তারপর তারা সাক্ষ্য দিল যে, আপনি আল্লাহর সত্য রাসূল এবং যাবার পূর্বে তার তাঁর হাতে ইসলামের উপর বাইয়াত গ্রহণ করল। তিনি আবার বললেন, যাও, আরাে মদীনার ষাটজন নেতৃবৃন্দ ডেকে নিয়ে এসাে। আব আইয়ুব (رضي الله عنه) বলেন, ত্রিশের পরিবর্তে ষাটজনের কথা শুনে আমি দ্বিগুণ চিন্তিত হয়ে পড়লাম, তারপরও ডেকে আনলাম। তিনি তাদেরকে বললেন, ভাই! তৃপ্ত হয়ে খেয়ে নাও। তারাও তৃপ্ত হয়ে খেল এবং সাক্ষ্য দিল যে, আপনি আল্লাহর রাসূল। আর যাবার আগে তারাও তাঁর হাতে বাইয়াত গ্রহণ করল।

এরপর তিনি পুনরায় বললেন, তুমি গিয়ে আরাে নব্বইজন মদীনাবাসী ডেকে নিয়ে এসাে। এখন ত্রিশ ও ষাটের স্থলে নব্বই জনের কথা শুনে প্রথম দুই বারের চেয়ে কয়েকগুণ বেশী ভয় অনুভব করছি। কিন্তু তাদেরকেও ডেকে আনলে তারাও তৃপ্ত হয়ে খেল এবং সাক্ষ্য দিল যে, আপনি আল্লাহর সত্য রাসূল। তারাও নবী করিম (ﷺ)’র হাতে বাইয়াত গ্রহণ করে চলে গেল। আবু আইয়ুব (رضي الله عنه) বলেন সেদিন আমার দু’জনের খাবার একশ আশিজন লােকে খেয়েছিল এবং তারা সবাই ছিল আনসার। ●২৩৮
_____________________________
238.[আবু নঈম ইস্পাহানী (رحمة الله) (১৩৫০হি.), দালায়েলুন নবুয়ত, উর্দু, দিল্লী, পৃ:৩৮২ ও ইমাম সুয়ূতী,

জালাল উদ্দিন সুয়ূতী (رحمة الله) (৯১১হি.), আল খাসায়েসুল কুবরা, আরবী, বৈরুত, খন্ডঃ ২য় পৃ: ৮০ ]

দু’জনের খাবার একশ আশি জনে খাওয়া
____________________
আবু সুফিয়ানের মনের কথা জানা

❏ হযরত ইবনে সা'দ,বায়হাকী ও ইবনে আসাকের (رحمة الله) হযরত আবু ইসহাক সুবাই (رضي الله عنه) থেকে বর্ণনা করেন, আবু সুফিয়ান ইবনে হারাব মক্কা বিজয়ের পর বসে বসে মনে মনে বলতেছে যে, যদি মুহাম্মদের বিপক্ষে একটি বড় দল কে প্রস্তুত করতে পারতাম। ইত্যবসরে রাসূল সাল্লাল্লাহু তায়ালা আলাইহি ওয়াসাল্লাম এসে তার দু’কাধের মধ্যবর্তী স্থানে হাত রেখে বললেন, যদি তুমি এরূপও করতে তবুও আল্লাহ তায়ালা তােমাকে লাঞ্ছিত করতেন। তখন আবু সুফিয়ান মাথা তুলে দেখল রাসূল সাল্লাল্লাহু তায়ালা আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার মাথার সামনে দন্ডায়মান। আবু সুফিয়ান আরজ করল, এই সময় আপনার নবী হওয়ার বিষয়টি আমার ইয়াক্বিন ছিলনা, তাই আমার মনে এইসব কথা সৃষ্টি হচ্ছে।

অন্য বর্ণনা আছে আবু সুফিয়ান রাসূল সাল্লাল্লাহু তায়ালা আলাইহি ওয়াসাল্লাম’র বিরােদ্ধে মনে মনে দ্বিতীয়বার যুদ্ধ করার চিন্তা করছিল, এমন সময় হঠাৎ রাসূল সাল্লাল্লাহু তায়ালা আলাইহি ওয়াসাল্লাম এসে তার বক্ষে থাপ্পর দিয়ে বললেন, এতেও আল্লাহ তায়ালা তােমাকে লাঞ্ছিত করতেন। তখন আবু সুফিয়ান বলল,

اتوب الى الله واستغفر الله مما تغوهت به

আমি মনে মনে যেসব কথা বলেছি সেগুলাে তাে আল্লাহর কাছে তাওবা ও মাগফিরাত কামনা করছি। ●২৩৯
_____________________________
239.[ইমাম সুয়ূতী, জালাল উদ্দিন সুয়ূতী (رحمة الله) (৯১১হি.), আল খাসায়েসুল কুবরা, আরবী, বৈরুত, খন্ড: ১ম পৃ: ৪৪১]

আবু সুফিয়ানের মনের কথা জানা
____________________
স্বামী-স্ত্রীর গােপন কথা জানা-

❏ ইমাম বায়হাকী, আবু নঈম ও ইবনে আসাকের (رحمة الله) হযরত সাঈদ ইবনে মুসায়্যিব (رضي الله عنه) থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, যেই রাতে সাহাবায়ে কিরাম মক্কায় প্রবেশ করেছিলেন সেটি মক্কা বিজয়ের রাত ছিল। সেই রাতে তারা সকাল পর্যন্ত তাকবীর, তাহলীল, বায়তুল্লাহর তাওয়াফে ব্যস্ত ছিলেন। আবু সুফিয়ান তার স্ত্রী হিন্দাকে বলল দেখতেছ ইহা আল্লাহর পক্ষ থেকে হচ্ছে।

অতঃপর সকাল হলে আবু সুফিয়ান রাসূল সাল্লাল্লাহু তায়ালা আলাইহি ওয়াসাল্লাম’র খেদমতে আসলে তিনি তাকে বললেন,

قلت لهذا امرتين هذا من الله نعم وهو من الله

 অর্থাৎ- তুমি বলেছিলে হিন্দাকে ইহা আল্লাহর পক্ষ থেকে হচ্ছে, হক, ইহা আল্লাহর পক্ষ থেকেই হচ্ছে। তখন আবু সুফিয়ান বলল

اشهد انك عبد الله ورسوله والله اسمع قولى هذا أحد من الناس الا الله و هنده

 অর্থাৎ- আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আপনি আল্লাহর বান্দা ও তাঁর রাসূল। খােদার কসম, আমার এই কথা আল্লাহ ও হিন্দা ছাড়া অন্য কেউ শুনেনি। ●২৪০
_____________________________
240.[ইমাম সুয়ূতী, জালাল উদ্দিন সুয়ূতী (رحمة الله) (৯১১হি.), আল খাসায়েসুল কুবরা, আরবী, বৈরুত, খন্ডঃ ১ম পৃ: ৪৪১]

স্বামী-স্ত্রীর গােপন কথা জানা
____________________
মনের কথা জানা স্বামী-স্ত্রীর গােপনীয়তা প্রকাশ:

❏ হযরত উকাইলী ও ইবনে আসাকের (رحمة الله) হযরত ওহাব ইবনে মুনাব্বাহ (رضي الله عنه) দুর সূত্রে হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (رضي الله عنه) থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু তায়ালা আলাইহি ওয়াসাল্লাম বায়তুল্লাহ তাওয়াফ করার প্রাককালে আবু সুফিয়ানের সাক্ষাত মিলে। তিনি তাকে বললেন-

يا أبا سفيان هل كان بينك وبين هند كذا وكذا

হে আবু সুফিয়ান! তােমার আর হিন্দা’র মধ্যে এরূপ এরূপ কথা হয়েছে? তখন আবু সুফিয়ান মনে মনে বলতে লাগল নিশ্চয় হিন্দা আমার গােপন কথা ফাঁস করে দিয়েছে আমি তাকে এর শাস্তি স্বরূপ এরূপ করবাে।

রাসূল ও তাওয়াফ থেকে অবসর নিলে আবার আবু সুফিয়ানের সাথে সাক্ষাত হল। তখন তাকে বলল,

لا تكلم هند فانها لم نفش من سرك شيئا

অর্থাৎ- হে আবু সুফিয়ান! হিন্দাকে কিছু বলােনা, কেননা সে তােমার গােপনীয়তা ফাঁস করেনি। তখন আবু সুফিয়ান বলল,

اشهد انك رسول الله

আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আপনি আল্লাহর রাসূল। ●২৪১
_____________________________
241.[ইমাম সুয়ূতী, জালাল উদ্দিন সুয়ূতী (رحمة الله) (৯১১হি.), আল খাসায়েসুল কুবরা, আরবী, বৈরুত, খন্ড:ৎ১ম পৃ: ৪৪১]

❏ ইবনে সা’দ ইবনে আসাকের ও হারেস ইবনে আবু উসামা স্বীয় মসনদে হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আবি বকর ইবনে হাযম (رضي الله عنه) থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, নবী করিম (ﷺ) বের হলেন আর আবু সুফিয়ান মসজিদে বসা ছিল। সে মনে মনে বলতেছিল যে, আমার বুঝে আসতেছেনা যে, মুহাম্মদ কিসের কারণে আমাদের উপর বিজয় লাভ করলাে?

অতঃপর নবী করিম (ﷺ) তার নিকটে এসে তার বক্ষে হাত মেরে বললেন,

بالله يغلبك

আল্লাহর সাহায্যেই তােমার উপর বিজয় দান করেছে। তখন আবু সুফিয়ান বলল, আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আপনি আল্লাহর রাসূল। ●২৪২
_____________________________
242.[ইমাম সুয়ূতী, জালাল উদ্দিন সুয়ূতী (رحمة الله) (৯১১হি.), আল খাসায়েসুল কুবরা, আরবী, বৈরুত, খন্ড: ১ম পৃ: ৪৪১]
 
মনের কথা জানা স্বামী-স্ত্রীর গােপনীয়তা প্রকাশ
____________________
আগমনের উদ্দেশ্য বলে দেওয়া-

❏ ইমাম বায়হাকী ও আবু নঈম (رحمة الله) হযরত আনাস (رضي الله عنه) থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, আমি রাসূল এর সাথে মসজিদে খাইফে বসে ছিলাম। তখনি রাসূল (ﷺ) এর নিকট একজন আনসারী ও একজন সকফী এসে আরজ করল যে, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমরা আপনার কাছে এসেছি। তিনি বললেন, তােমরা যদি চাও তবে আমি তােমাদেরকে বলে দেব তােমরা কি প্রশ্ন করতে এসেছে। আর যদি চাও তবে তােমরা প্রশ্ন করতে থাক আর আমি উত্তর দিতে থাকবাে। তারা বলল, বরং আপনিই বলুন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! যাতে আমাদের ঈমান মজবুত হয়।

তখন রাসূল (ﷺ) সকফী ব্যক্তিকে বললেন, তুমি এজন্য এসেছে যে, তােমার রাতের নামায, রুকু ও সিজদা এবং স্বীয় রােযা ও নাপাকীয় গােসল সম্পর্কে আমার কাছে জিজ্ঞেস করতে এসেছে। তারপর আনসারীকে বললেন, তুমি এসেছাে তুমি তােমার ঘর থেকে বায়তুল্লাহর দিকে বের হলে কিভাবে আরাফাহ ময়দানে অবস্থান করবে। কিভাবে মাথা মুন্ডাবে, কিভাবে তাওয়াফ করবে আর কিভাবে পাথর নিক্ষেপ করবে ইত্যাদি বিষয়ে জানার জন্য। একথা শুনে তারা উভয় আরজ করল, খােদার কসম, আমরা নিশ্চিত এই মাসয়ালাগুলাে আপনার থেকে জেনে নেওয়ার জন্য এসেছি। ●২৪৩
_____________________________
243.[ইমাম সুয়ূতী, জালাল উদ্দিন সুয়ুতী (رحمة الله) (৯১১হি.), আল খাসায়েসুল কুবরা, আরবী, বৈরুত, খন্ড:২য় পৃ:৬৫ ও আব্দুর রহমান জামী (رحمة الله) (৮৯৮হি.), শাওয়াহেদুন নবুয়ত, উর্দু বেরেলী, পৃ: ২২১]

আগমনের উদ্দেশ্য বলে দেওয়া
____________________
মনের কথা জানা

❏ বিলম্বে ফিরে আসার কারণ জানা হযরত ওসমান (رضي الله عنه)'র মাওলা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল (ﷺ) হযরত ওসমান (رضي الله عنه)'র নিকট কিছু হাদিয়া পাঠিয়েছেন। যে ব্যক্তি হাদিয়া নিয়ে এসেছে সে ফিরে যেতে একটু বিলম্ব করলে নবী করিম (ﷺ)ও তাকে বললেন, তুমি কেন দেরী করেছ আমি বলবাে? তুমি একবার ওসমানের দিকে তাকাচ্ছিলে আরেকবার রােকেয়ার দিকে তাকাচ্ছিলে আর মনে মনে ভাবতেছিলে তারা উভয়ের মধ্যে কে অধিক সুন্দর। সে বলল, ঠিক বলেছেন, এ কারণেই আমার বিলম্ব হয়েছিল। ●২৪৪
_____________________________
244.[ইমাম সুয়ূতী, জালাল উদ্দিন সুয়ূতী (رحمة الله) (৯১১হি.), আল খাসায়েসুল কুবরা, আরবী, বৈরুত, খন্ড: ২য় পৃ: ১৮০]

মনের কথা জানা 
____________________
আহলে কিতাবীদের আগমনের উদ্দেশ্য জানা

❏ হযরত উতবাহ ইবনে আমের জুহানী (رضي الله عنه) বলেন, একদিন আমি এবং রাসূল (ﷺ) মজলিস থেকে বের হয়ে চলে যাচ্ছিলাম। পথে কয়েকজন আহলে কিতাবের সাথে সাক্ষাত হল যারা কিতাব নিয়ে আসতেছে। তারা আমাকে বলল, আমাদের জন্য একটু অনুমতি নাও, যাতে আমরা তাঁর সাথে সাক্ষাত করতে পারি। আমি ফিরে গিয়ে তাঁকে বললাম। তিনি বললেন, তাদের সাথে আমার কি প্রয়ােজন। তারা আমার কাছে এমন বিষয়ে প্রশ্ন করবে যার সাথে আমার কোন সম্পর্ক নেই। আমিতাে একজন আল্লাহর বান্দা। তিনি যতক্ষণ আমাকে অবহিত না করেন ততক্ষণ আমি জানিনা।

তারপর তিনি পানি আনতে বললেন, পানি দিয়ে অজু করে তিনি দু'রাকাত নামায আদায় করেন। তখন তাঁর মুখমন্ডল দিয়ে আনন্দের চিহ্ন প্রস্ফুটিত হচ্ছিল। তিনি বললেন, যাও তাদেরকে এবং সকল সাহাবাকে ডেকে নিয়ে এসাে। সবাই ভিতরে আসলে তিনি বললেন, তােমরা কি চাও, তােমরা কি কি প্রশ্ন করতে এসেছ এবং তার উত্তর কি তা আমি উত্তর দেবাে যা তােমাদের গ্রন্থে লিখিত আছে? তারা বলল, যা, ঐ সব প্রশ্ন বলুন যা আমরা জিজ্ঞেস করতে এসেছি। তিনি বললেন, তােমরা ইস্কান্দর’র ঘটনা জানতে এসেছো আর আমি তােমাদেরকে ঐসব উত্তর দেবাে যা তােমাদের গ্রন্থে লিখা আছে। তখন তিনি ইস্কান্দর’র পুরাে কাহিনী বর্ণনা করে শুনালেন। তারা সকলেই স্বীকার করল যে, সত্যিই আমাদের কিতাবেও অনুরূপ বর্ণনা বিদ্যমান। ●২৪৫
_____________________________
245.[আব্দুর রহমান জামী (رحمة الله) (৮৯৮হি.), শাওয়াহেদুন নবুয়ত, উর্দু, বেরেলী, পৃ: ২২৩]

আহলে কিতাবীদের আগমনের উদ্দেশ্য জানা  
____________________
মৃতকে জীবিত করা রাসূল ’র পিতা-মাতার ইসলাম গ্রহণ

❏ হযরত আয়েশা (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল (ﷺ) বিদায় হজ্বে আমাদেরকে হজ্ব করায়েছিলেন এবং তিনি আমাকে নিয়ে উকবাতুল হাজুন' নামক স্থানে গমণ করলেন। এ সময় তিনি ক্রন্দনরত ও পেরেশান ছিলেন। কিন্তু ফিরে আসার সময় উফুল্ল মুচকি হাসছিলেন। আমি তাঁকে এর কারণ জিজ্ঞেস করলে তিনি বললেন,

ذهبت الى قبرى فسألت الله أن يحيها فآمنت بي وردها الله

অর্থাৎ- আমি আমার মায়ের কবরে গিয়ে আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করলাম যে, জীবিত হয়ে আমার উপর ঈমান আনেন। (আল্লাহ তায়ালা আমার দোয়া কবুল করেন। তিনি তাকে জীবিত করে দেন এবং আমার উপর ঈমান আনেন) অতঃপর পুনরায় আল্লাহ তাকে পূর্বাবস্থায় ফেরৎ দেন। ●২৪৬
_____________________________
246.[ইমাম সুয়ূতী, জালাল উদ্দিন সুয়ূতী (رحمة الله) (৯১১হি.), আল খাসায়েসুল কুবরা, আরবী, বৈরুত, খন্ড: ২য় পৃ: ৬৬]

মৃতকে জীবিত করা রাসূল ’র পিতা-মাতার ইসলাম গ্রহণ
____________________
হাড্ডি থেকে ছাগল জীবিত করা-

❏ ইমাম আবু নঈম (رحمة الله) হযরত আব্দুর রহমান ইবনে কা'ব ইবনে মালেক (رضي الله عنه) থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, হযরত জাবের (رضي الله عنه) নবী করিম (ﷺ) এর কাছে এসে দেখেন যে,

তাঁর চেহরা মােবারক (ক্ষুধায়) কিছুটা পরিবর্তন হয়ে গেল। তিনি ঘরে এসে স্ত্রীকে বললেন, আমার মনে রাসূল প্রচন্ড ক্ষুধা পেয়েছে যার ফলে তাঁর নুরানী চেহরা মােবারক পরিবর্তন হয়ে গিয়েছে। স্ত্রী বলল, আমাদের কাছে তাে কিছুই নেই তবে এ বকরীও অতিরিক্ত সামান্য খাবার। অতঃপর বকরী যবেহ করা হল। সামান্য যব ছিল তা পিসে রুটি তৈরী করল এবং গােশত রান্না করে এক বড় পেয়ালা শরীফ তৈরী করে তাঁর খেদমতে নিয়ে আসলেন, তিনি বললেন, হে জাবের! তােমার সম্প্রদায়ের লােকদের আমার কাছে ডেকে নিয়ে এসাে। তিনি বলেন, আমি সবাইকে ডেকে নিয়ে আসলাম। একদল যেতে গিয়ে তৃপ্ত হয়ে খেয়ে আসত আবার আর একদল যেতাে তারাও তৃপ্ত হয়ে খেয়ে আসতাে। এভাবে সবাই পরিতৃপ্ত হয়ে খেয়েছে কিন্তু পেয়ালায় তাই রয়ে গেল যা প্রথমে ছিল। তিনি খাবার গ্রহণকারী লােকদের বলেছিলেন, তােমরা খাবার খাও তবে হাড্ডি ভেঙ্গে ফেলবেনা। তারপর তিনি হাড্ডিগুলাে একত্রিত করে ঐগুলাের উপর হাত মােবারক রেখে কিছু পাঠ করলেন যা আমি শুনিনি। হঠাৎ বকরী কান ঝাড়তে ঝাড়তে দাঁড়িয়ে গেল। তখন তিনি আমাকে বললেন-

خذ شاتك

 তােমার বকরী নাও। তারপর আমি বকরী নিয়ে ঘরে গেলে স্ত্রী জিজ্ঞেস করল এটা আবার কোন বকরী? আমি বললাম, এটি সেই বকরী যেটি আমরা যবেহ করেছিলাম। রাসূল ও আল্লাহর কাছে দোয়া করলেন ফলে এই বকরী আমাদের জন্য জীবিত হয়ে গেল। আমার স্ত্রী বলল, আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, তিনি আল্লাহর রাসূল। ●২৪৭
_____________________________
247.[ইমাম সুয়ূতী, জালাল উদ্দিন সুয়ূতী (رحمة الله) (৯১১হি.), আল খাসায়েসুল কুবরা, আরবী, বৈরুত, খন্ড:২য় পৃ:১১২ ও আবু নঈম ইস্পাহানী (رحمة الله) (৪৩০হি.), দালায়েলুন নবুয়ত, উর্দু, দিল্লী, পৃ: ৫৪৯]

হাড্ডি থেকে ছাগল জীবিত করা
____________________
হযরত জাবির (رضي الله عنه)’র মৃত দুই ছেলে জীবিত হওয়া

❏ হযরত জাবির ইবনে আব্দুল্লাহ (رضي الله عنه) বর্ণনা করেন, রাসূল (ﷺ)'র অভ্যাস ছিল যে, কেউ দাওয়াত দিলে তিনি তা প্রত্যাক্ষান করতেন না। একদা হযরত জাবির (رضي الله عنه) তাঁকে দাওয়াত দেন। তিনি বলেন, অমুক দিন আসবাে। নির্দিষ্ট দিনে তিনি জাবিরের ঘরে তাশরীফ নিলেন। রাসূল(ﷺ)কে তার ঘরে দেখে এতই খুশী হল যে, ঘরে গােলাপজল ছিটায়ে আনন্দ উৎফুল্ল মনে তাঁর কাছে এসে অভ্যর্থনা জানিয়ে ঘরে নিয়ে যায়। হযরত

জাবির (رضي الله عنه) যিয়াফতের জন্য ছাগল যবেহ করে রান্নার ব্যবস্থা করতে লাগল। তার দু’জন সন্তান ছিল। বড় ছেলে ছােট ছেলেকে বলল, আমাদের পিতা আমাদের ছাগল কিভাবে যবেহ করেছে তােমাকে বলবাে? সে ছােট ভাইকে মাটিতে শুয়াইয়ে গলায় চুরি চালিয়ে অজ্ঞতা বশত যবেহ করে দিল। হযরত জাবির (رضي الله عنه)’র স্ত্রী যখন দেখল দৌড়ে আসলে বড় ছেলে ভয়ে ঘরের ছাদে উঠে গেল। মাকে তার দিকে আসতে দেখে ভয়ে ছেলে ঘরের ছাদ থেকে পড়ে মৃত্যুবরণ করল। এই ধৈৰ্য্যশীল মহিলা রাসুল (ﷺ)এর মেহেমানদারীতে ব্যাঘাত হবার ভয়ে এই হৃদয় বিদারক ঘটনায় বিন্দুমাত্র কান্না-কাটি করেনি বরং ধৈৰ্য্যধারণ করে। ছেলেদের উপর একটি চাদর দিয়ে ঢেকে রেখে এই সংবাদ প্রকাশ হতে দেয়নি। মা যদিও

রাসূল (ﷺ) এর খেদমতের স্বার্থে বাহ্যিকভাবে উৎফুল্ল ছিল কিন্তু মনে মনে সন্তানের মৃত্যুতে শােকাহত। এমন কি স্বামী হযরত জাবির (رضي الله عنه) কেও এ সংবাদ দেয়নি।

খানা রান্না করে রাসূল এর সামনে পেশ করা হলে হজরত জিব্রাঈল (عليه السلام) অবতরণ করে বললেন, আল্লাহ তায়ালা বলেছেন, যেন জাবিরকে বলা হয় তার সন্তান দু'টি নিয়ে আসতে আর আপনার সাথে খাবার খেতে। রাসূল (ﷺ) জাবিরকে বললেন, তােমার সন্তান দু’টি কোথায়? তাদের নিয়ে এসাে। আমি তাদের নিয়ে খাবার খাবাে। জাবির তাড়াতাড়ি ভিতরে গিয়ে স্ত্রীকে বলল, সন্তানেরা কোথায়? স্ত্রী বলল, তারা এখন হয়তাে কোথাও বাইরে গিয়েছে। জাবির (رضي الله عنه) এসে তাঁকে অবহিত করল যে, এই মুহূর্তে তারা ঘরে নেই। আপনি খাবার গ্রহণ করুন। নবী করিম (ﷺ) বললেন, আল্লাহ তায়ালার আদেশ যেন তাদের নিয়ে খাবার গ্রহণ করা হয়।

হযরত জাবির (رضي الله عنه) স্ত্রীর কাছে দ্বিতীয়বার জিজ্ঞেস করলে তখন স্ত্রী কেঁদে উঠে দুই সন্তানের উপর থেকে চাদর তুলে সমস্ত ঘটনা বলে দিল। উভয়ে কাঁদতে কাঁদতে তাঁর কদমেপাকে পড়ে গেল এবং সমস্ত ঘরে কান্নার রােল পড়ে গেল। হযরত জিব্রাঈল (عليه السلام) এসে বললেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আপনি এই বাচ্চাদের লাশের সামনে দাঁড়িয়ে দোয়া করুন, জীবনদাতা আল্লাহ, তিনি সেখানে গিয়ে দোয়া করলে আল্লাহর হুকুমে তারা জীবিত হয়ে গেল। ●২৪৮
_____________________________
248.[আব্দুর রহমান জামী (رحمة الله)(৮৯৮হি.), শাওয়াহেদুন নবুয়ত, উর্দু, বেরেলী, পৃ: ১৪৩]

হযরত জাবির (رضي الله عنه)’র মৃত দুই ছেলে জীবিত হওয়া
____________________
কবর থেকে জীবিত করা

❏ ইমাম বায়হাকী দালায়েল গ্রন্থে লিখেন- রাসূল (ﷺ) জনৈক ব্যক্তিকে ইসলামের দাওয়াত দিলে সে বলল, আমি আপনার উপর ঈমান আনবােনা যতক্ষণ না আপনি আমার মেয়ে জীবিত করে দেবেন। তিনি বললেন, আমাকে তার কবর দেখাও। তখন সে তাঁকে তার মেয়ের কবর দেখালে তিনি বললেন, হে অমুক মহিলা! মেয়ে কবর থেকে উত্তর দিল লাব্বায়েক ওয়া সা’দায়েখ ইয়া রাসূলাল্লাহ। তিনি মেয়েকে জিজ্ঞেস করলেন, তুমি কি পৃথিবীতে ফিরে আসতে চাও? সে উত্তর দিল না, ইয়া রাসূলাল্লাহ। আমি আল্লাহ তায়ালা কে আমার পিতা-মাতা থেকে উত্তম ও দয়াবান পেয়েছি এবং ইহকাল থেকে পরকালকে উত্তম দেখেছি। ●২৪৯
_____________________________
249.[ইউসূফ নাবহানী (رحمة الله) (১৩৫০হি.), হুজ্জাতুল্লাহিল আলাল আলামীন, উর্দু, গুজরাট, খন্ড:১ম পৃ:৬৭৫ ও কাযী আয়ায (رحمة الله) (৪৭৬-৫৪৪হি.) শেফা শরীফ, আরবী, মাকতাবাতুস সাফা, কায়রাে, মিশর, খন্ড: ১ম পৃ: ২০৯]

কবর থেকে জীবিত করা
____________________
কবর থেকে উঠে গেল

❏ কাযী আয়ায (رحمة الله) শাফা শরীফে হযরত হাসান বসরী (رحمة الله) থেকে বর্ণনা করেন, একজন ব্যক্তি রাসূল (ﷺ) এর দরবারে এসে বলল, আমি আমার মেয়েকে অমুক উপত্যকায় কবর দিয়ে এসেছি। তিনি লােকটির সাথে ঐ উপত্যকায় তাশরীফ নিয়ে যান এবং সেই মেয়েকে নাম ধরে ডাকলেন- হে অমুক! আল্লাহর হুকুমে জীবিত হয়ে যাও। সে লাব্বায়েক ওয়া সা’দায়েখ বলতে বলতে কবর থেকে বের হয়ে আসল। তিনি সেই মেয়েকে বললেন, তােমার পিতা-মাতা ইসলাম গ্রহণ করেছে যদি তুমি চাও তবে তােমাকে তাদের কাছে পাঠিয়ে দেবাে। মেয়ে উত্তরে বলল, তাদের আর প্রয়ােজন নাই। আমি আল্লাহ তায়ালাকে তাদের চেয়ে উত্তম পেয়েছি। ●২৫০
_____________________________
250.[ইউসূফ নাবহানী (رحمة الله) (১৩৫০হি.), হুজ্জাতুল্লাহিল আলাল আলামীন, উর্দু, গুজরাট, খন্ড: ১ম পৃ: ৬৭৫]

কবর থেকে উঠে গেল
____________________
কবরে অক্ষত থাকা নবীগণের শরীর খাওয়া মাটির উপর হারাম

❏ ইমাম ইবনে মাজাহ ও আবু নঈম (رحمة الله) হযরত আউস ইবনে আউস সকফী (رضي الله عنه) থেকে তিনি নবী করিম (ﷺ)এর থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, তােমাদের দিন সমূহের মধ্যে জুমার দিন হল সর্বশ্রেষ্ট সুতরাং এই দিন তােমরা আমার উপর বেশী করে দুরূদ শরীফ পাঠ কর। তােমাদের দুরূদ আমার কাছে পেশ করা হবে। তারা আরজ করল, হে আল্লাহর রাসূল! কিভাবে আপনার নিকট পেশ করা হবে? অর্থাৎ আপনার শরীর মােবারক কি অক্ষত অবস্থায় বহাল থাকবে? উত্তরে তিনি বলেন,

ان الله حرم على الارض ان تأكل اجساد الانبياء

আম্বিয়ায়ে কিরামের শরীর মােবারক খাওয়া আল্লাহ তায়ালা মাটির উপর হারাম করে দিয়েছেন। ●২৫১
_____________________________
251.[ইমাম সুয়ূতী, জালাল উদ্দিন সুয়ূতী (رحمة الله) (৯১১হি.), আল খাসায়েসুল কুবরা, আরবী, বৈরুত, খন্ড: ২য় পৃ: ৪৮৯]

❏ হযরত যুবাইর ইবনে বাক্কার (رحمة الله) (আখবারে মদীনা গ্রন্থে) হযরত হাসান (رضي الله عنه) থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, রাসূল এরশাদ করেন যিনি রুহুল কুদুস তথা হযরত জিব্রাঈল (عليه السلام)’র সাথে কথা বলবে মাটি তাঁর মাংস ভক্ষণ করতে অনুমতি প্রাপ্ত হয়নি। ●২৫২
_____________________________
252.[ইমাম সুয়ূতী, জালাল উদ্দিন সুয়ূতী (رحمة الله) (৯১১হি.), আল খাসায়েসুল কুবরা, আরবী, বৈরুত, খন্ড: ২য় পৃ: ৪৮৯]

রাসূল (ﷺ) কবরে জীবিত 
____________________
রাসূল (ﷺ) কবরে জীবিত

❏ ইমাম ইস্পাহানী (رحمة الله) আত্ তারগীব গ্রন্থে হযরত আবু হােরায়রা (رضي الله عنه) থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, রাসূল (ﷺ) এরশাদ করেন, যে ব্যক্তি আমার কবরে পাশে দাঁড়িয়ে আমার দুরূদ পাঠ করে আমি তার দুরূদ শুনি, আর যে ব্যক্তি দূর থেকে আমার উপর দুরূদ প্রেরণ করে তা আমার কাছে পাঠানাে হয়। ●২৫৩
_____________________________
253.[ইমাম সুয়ূতী, জালাল উদ্দিন সুয়ূতী (رحمة الله) (৯১১হি.), আল খাসায়েসুল কুবরা, আরবী, বৈরুত, খন্ড: ২য় পৃ: ৪৮৯]

দুরূদ প্রেরণের জন্য ফেরেস্তা নিয়ােগ
____________________
দুরূদ প্রেরণের জন্য ফেরেস্তা নিয়ােগ

❏ ইমাম ইস্পাহানী (رحمة الله) হযরত আনাস (رضي الله عنه) থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, নবী করিম (ﷺ) ইরশাদ করেন, যে ব্যক্তি আমার উপর জুমার দিনে ও রাতে একশ বার দুররূদ শরীফ পাঠ করবে আল্লাহ তায়ালা তার একশটি প্রয়ােজন পূর্ণ করে দিবেন। তন্মধ্যে সত্তরটি হবে পরকালের আর বাকী ত্রিশটি হবে ইহকালের প্রয়ােজন।

আল্লাহ তায়ালা এই জন্য একজন ফেরেস্তা নিয়ােগ দিয়েছেন, যিনি এই দরূদ শরীফ নিয়ে আমার কবরে এমনভাবে প্রবেশ করে যেমন তােমাদের নিকট কেউ হাদিয়া-উপঢৌকন নিয়ে আসে। তিনি আরাে বলেন,

ان علمى بعد موت موتى كعلمي في الحياة

নিশ্চয় আমার ইন্তেকালের পরেও আমার ইলম সেই রকমই আছে যেই রকম জীবদ্দশায় ছিল। ●২৫৪
_____________________________
254.[ইমাম সুয়ূতী, জালাল উদ্দিন সুয়ূতী (رحمة الله) (৯১১হি.), আল খাসায়েসুল কুবরা, আরবী, বৈরুত, খন্ড: ২য় পৃ: ৪৯০]

উম্মতের দরূদ-সালাম রাসূল (ﷺ) ’র উপর পেশ করা হয়
____________________
উম্মতের দরূদ-সালাম রাসূল (ﷺ) ’র উপর পেশ করা হয়

❏ ইবনে রাহওয়াইয়া (رحمة الله) হযরত ইবনে আব্বাস (رضي الله عنه) থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন,

ليس احد من أمة محمد صلى الله عليه وسلم يصلي او يسلم عليه الأبلغه يصلى عليك فلان وسلم عليك فلان

 অর্থাৎ- রাসূল (ﷺ) যেকোন উম্মত তাঁকে দরূদ কিংবা সালাম পেশ করে তা তাঁর কাছে এই বলে পাঠানাে হয় যে, ইয়া রাসূলাল্লাহ! অমুক ব্যক্তি আপনার উপর দুরূদ পাঠ করেছে, অমুক ব্যক্তি আপনাকে সালাম দিয়েছে। ●২৫৫
_____________________________
255.[ইমাম সুয়ূতী, জালাল উদ্দিন সুয়ুতী (رحمة الله) (৯১১হি.), আল খাসায়েসুল কুবরা, আরবী, বৈরুত, খন্ড: ২য় পৃ: ৪৯০]

কবর শরিফ থেকে আজানের ধ্বনি
____________________
কাবা শরিফ থেকে আজানের ধ্বনি-

❏ ইমাম আবু নঈম (رحمة الله) হযরত সাঈদ বিন মুসায়্যিব (رحمة الله) থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, আমি গরমকালে রাতের বেলায় মসজিদে নববী শরীফে আসতাম আর আমি ছাড়া মসজিদে কেউ ছিলনা। নামাযের সময় হলে আমি কবর শরীফ থেকে আযান শুনতাম।

অপর বর্ণনায় তিনি বলেন, আমি গ্রীষ্মকালে রাসূল র কবর থেকে সর্বদা আযান ও ইকামত শুনতাম। ●২৫৬
 _____________________________
256.[ইমাম সুয়ূতী, জালাল উদ্দিন সুয়ূতী (رحمة الله) (৯১১হি.), আল খাসায়েসুল কুবরা, আরবী, বৈরুত, খন্ড: ২য় পৃ: ৪৯০]

কবর শরীফ থেকে ক্ষমার ঘােষণা
____________________
কবর শরীফ থেকে ক্ষমার ঘােষণা:

❏ হযরত আলী (رضي الله عنه) বলেন, আমরা রাসূল (ﷺ)কে দাফন করার পর একজন গ্রাম্য ব্যক্তি এসে তাঁর কবরের মাটিতে পড়ে মাথায় মাটি লাগিয়ে কেঁদে কেঁদে বলতে লাগল, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আপনি আদেশ করেছেন আর আমরা শুনেছি। আপনি কুরআনে করিম আল্লাহ থেকে শিখেছেন আর আমরা আপনার কাছ থেকে শিখেছি। আল্লাহ তায়ালা বলেছেন

ولو أنهم اذ ظلموا أنفسهم جاءوك فاستغفروا الله واستغفر لهم الرسول.

তারা যদি নিজেদের আত্মার উপর জুলুম করে হে নবী! আপনার দরবারে আসত অতঃপর তারা আল্লাহর কাছে মাগফিরাত কামনা করত আর রাসূল তাদের মাগফিরাতের সুপারিশ করতেন তবে অবশ্যই তারা আল্লহকে অধিক তাওবা কবুলকারী দয়ালু পেতাে।

(সূরা নিসা, আয়াত নং ৬৪)।

আমি আমার আত্মার উপর জুলুম করেছি এবং আপনার দরবারে উপস্থিত হয়েছি যেন আপনি আমার জন্য মাগফিরাত তলব করেন। এই বলে লােকটি কান্না করতে লাগলে এই সময় কবর শরীফ থেকে আওয়াজ আসল তােমাকে ক্ষমা করা হয়েছে। ●২৫৭
_____________________________
257.[আব্দুর রহমান জামী (رحمة الله) (৮৯৮হি.), শাওয়াহেদুন নবুয়ত, উর্দু, বেরেলী, পৃ: ১৮৯]

মৃতের সাথে কথা বলা 
____________________
মৃতের সাথে কথা বলা

❏ হযরত ওবাইদ ইবনে মরযুক (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, মদীনা মুনাওয়ারায় একজন মহিলা ছিল যেই মসজিদ ঝাড় দিত। সেই মহিলা মারা গেল। সেই মহিলা সম্পর্কে তিনি অবহিত ছিলেন না। একদা তিনি সেই মহিলার কবরের পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় জিজ্ঞেস করেন, এটি কার কবর? উপস্থিত লােকেরা বলল, এটি উম্মে মেহজানের কবর। তিনি বললেন, এটি কি সেই মহিলার কবর, যেই মসজিদ ঝাড় দিত? লােকেরা বলল, হ্যা। তখন তিনি সকলকে নিয়ে কাতার বন্দি হয়ে ঐ মহিলার নামাযে জানাযা আদায় করলেন।

তারপর তিনি কবরস্থ সেই মহিলাকে জিজ্ঞেস করলেন

اي العمل وجدت افضل؟

অর্থাৎ তুমি কবরে কোন আমলটি উত্তম পেয়েছ? লােকেরা তাঁকে জিজ্ঞেস করল, হে আল্লাহর রাসূল! এই মহিলা কি শুনতেছে? তিনি বললেন

ما انتم اسمع منها فذكر انها جابت.

তােমরা (জীবিতরা) এর চেয়ে (মৃতদের) বেশী শুনতে পাওনা। মহিলাটি কবর থেকে তাঁর প্রশ্নের উত্তর দিল। ●২৫৮
_____________________________
258.[ইমাম সুয়ূতী, জালাল উদ্দিন সুয়ূতী (رحمة الله) (৯১১হি.), আল খাসায়েসুল কুবরা, আরবী, বৈরুত, খন্ড: ২য় পৃ: ১১২]

রাসূল (ﷺ) চাইলে মৃতকে জীবিত করতে পারেন
____________________
রাসূল (ﷺ) চাইলে মৃতকে জীবিত করতে পারেন-

❏ হযরত আবু নঈম (رحمة الله) হযরত যমরাহ (رضي الله عنه) থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, জনৈক ব্যক্তির নিকট কিছু বকরী ছিল। সে যখন দুধদোহন করত তখন সে দুধের পেয়ালা নিয়ে নবী করিম (ﷺ)র কাছে আসতাে। কিছুদিন সে দুধ নিয়ে আসেনি। তার পিতা এসে তাঁকে জানাল যে, সে মৃত্যুবরণ করেছে। তখন নবী তাকে বললেন, তুমি কি চাও, আমি আল্লাহর কাছে দোয়া করি যেন তােমার ছেলে জীবিত হয়ে যায় নাকি ধৈৰ্য্যধারণ করবে আর কিয়ামত দিবসে তােমার ছেলে তােমাকে হাত ধরে জান্নাতে নিয়ে যাবে? আর সেদিন বেহেস্তের সেই দরজা দিয়ে প্রবেশ করবে। সেই বলল, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমার জন্য কে এরূপ করবে? উত্তরে তিনি বললেন, তােমার জন্য তােমার ছেলে করবে আর প্রত্যেক মু'মিনের ছেলে পিতার জন্য এরূপ করবে। ●২৫৯
_____________________________
259.[ইমাম সুয়ুতী, জালাল উদ্দিন সুয়ূতী (رحمة الله) (৯১১হি.), আল খাসায়েসুল কুবরা, আরবী, বৈরুত, খন্ড: ২য় পৃ: ১১৩]

ভূনা ছাগল দাঁড়িয়ে কথা বলা
____________________
ভূনা ছাগল দাঁড়িয়ে কথা বলা

❏ হযরত ইবনে আব্বাস (رضي الله عنه) বর্ণনা করেন, নবী করিম (ﷺ) ইরশাদ করেন আমি যুদ্ধ থেকে মদীনায় ফেরার পথে আমার প্রচন্ড ক্ষুধা পেয়েছিল। ইত্যবসরে একজন ইহুদী মহিলা সম্মুখ থেকে আমার সাক্ষাত হল। তার মাথায় বড় একটি খালি যাতে ভূনা ছাগলের বাচ্চা ছিল এবং হাতে সামান্য চিনিও ছিল। সে বলতে লাগল, মহান আল্লাহর প্রসংশা যিনি আপনাকে নিরাপদে মদীনায় পৌঁছে দেন। আল্লাহর জন্য আমি মানত করেছি যে, আপনি নিরাপদে ফিরে আসেন তবে আমি এই ছাগল যবেহ করে ভূনে আপনাকে খাওয়াবাে।

 فاستنفطق الله الجدي فاستوى ئما على اربع قوائم فقال يا محمد لا تأكلني فانی مسموم

আল্লাহ তায়ালা ছাগলকে বাক শক্তি দান করলেন আর সেই ভূনা ছাগল চার পায়ে দাঁড়িয়ে বলতে লাগল, হে মুহাম্মদ! অমাকে খাবেন না, কেননা আমি বিষমিশ্রিত। ●২৬০
_____________________________
260.[আবু নঈম ইস্পাহানী (رحمة الله) (৪৩০হি.), দালায়েলুন নবুয়ত, উর্দু, দিল্লী, পৃ: ১৭৩ ২৬১. বুখারী শরীফের প্রান্ত টীকা, পৃ: ৬১০, টীকা নং 2]

বিষ পানে ক্ষতি না হওয়া
____________________
বিষ পানে ক্ষতি না হওয়া

❏ হজরত আবু হুরাইরা (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত, যখন খায়বার বিজয় হয় তখন ইহুদীদের পক্ষ থেকে একটি বকরী রাসূল (ﷺ)কে হাদিয়া দেওয়া হয়। সেই বকরীটি বিষ মিশানাে ছিল। (বুখারী শরীফ)

এই হাদিসের ব্যাখ্যায় ইমাম কাসতুলানী (رحمة الله) বলেন, খায়বার যুদ্ধে যখন ইহুদীদের জন্য মুসলমানদের অনুগত্য স্বীকার ব্যতীত অন্য কোন পথ বাকী রইলনা তখন তারা ঘৃণ্য ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়। ইহুদী হারিসের কন্যা ও সালাম ইবনে মুশকিমের স্ত্রী যয়নাব একটি বকরীর গােশতে বিষ মিশিয়ে তা রাসূল (ﷺ)এর জন্য হাদিয়া পাঠালাে। রাসূলাল্লাহ আল বকরীটির গােশত খেলেও বিষ তাঁর কোন ক্ষতি করতে পারেনি বটে, কিন্তু তাঁর সাহাবী বারাআ ইবনে মা’রূর (رضي الله عنه) বিষক্রিয়ার ফলে শহীদ হন। ষড়যন্ত্রকারী ধরা পড়ার পর প্রথমে তাকে মাফ করে দেওয়া হয়েছিল, কিন্তু পরবর্তীতে যখন বারাআ (رضي الله عنه) বিষক্রিয়ায় শহীদ হন তখন ‘কিসাস' হিসেবে তাকে হত্যা করা হয়। তবে হযরত মামার (رضي الله عنه) বলেন, ঐ মহিলা পরে ইসলাম গ্রহণ করেছিল বিধায় তাকে ক্ষমা করে দেওয়া হয়েছিল। ●২৬১
_____________________________
261.[বুখারী শরীফের প্রান্ত টীকা, পৃ: ৬১০, টীকা নং ২]

❏ হযরত আবু সাঈদ খুদুরী (رضي الله عنه) বর্ণনা করেন, এক ইহুদী মহিলা ভূনা ছাগল নিয়ে নবী করিম (ﷺ)এর জন্য হাদিয়া আনে। সাহাবীগণ খেতে চাইলে নবী করিম (ﷺ)- বললেন, থাম,

 فان عضوا لها يخجرني انها مسمومة.

এই ছাগলের এবং অঙ্গ আমাকে সংবাদ প্রদান করেছে যে, আমি বিষ মিশ্রিত।

তখন নবী করিম (ﷺ)এ ঐ মহিলাকে ডেকে পাঠান এবং খাবারে বিষ মিশানাের কারণ জিজ্ঞেস করা হলে সে বলল, যদি আপনি মিথ্যাবাদী হন তবে লােকদেরকে আপনার থেকে মুক্তি দেবাে আর যদি সত্যবাদী হন তবে আল্লাহ আপনাকে অবশ্যই অবহিত করবেন। তখন

নবী করিম (ﷺ)সাহাবীগণকে বললেন, তােমরা আল্লাহর নামে খাও। সুতরাং সাহাবীগণ সেই বিষ মিশ্রিত ভূনা ছাগল খেলেন কিন্তু কারাে কোন ক্ষতি হয়নি। ●২৬২
_____________________________
262.[আবু নঈম ইস্পাহানী (رحمة الله) (৪৩০হি.), দালায়েলুন নবুয়ত, উর্দু, দিল্লী, পৃ: ১৭৩]

আগুনে দগ্ধ না করা - আগুনে রুমাল পরিষ্কার করা
____________________
আগুনে দগ্ধ না করা - আগুনে রুমাল পরিষ্কার করা

❏ ইমাম আবু নঈম (رحمة الله) হযরত আব্বাস ইবনে আব্দুস সামাদ (رحمة الله) থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, আমরা হযরত আনাস ইবনে মালেক (رضي الله عنه)’র কাছে আসলাম। তিনি তার দাসীকে বললেন, দস্তরখানা নিয়ে এসাে আমরা খানা খাবাে। সে দস্তরখানা আনলে তিনি তাকে বললেন, রুমালটি আন। সে ময়লাযুক্ত একটি রুমাল নিয়ে এলাে। তিনি তাকে আগুন জ্বালাতে নির্দেশ দেন। সে আগুন জ্বালালে তিনি রুমালটি আগুনে নিক্ষেপ করলেন। রুমালটি আগুন থেকে দুধের ন্যায় সাদা পরিষ্কার হয়ে গেল।

আমরা হযরত আনাস (رضي الله عنه)কে জিজ্ঞেস করলাম এটি কেমন রুমাল? তিনি বললেন,

كان مديل كان رسول صلي الله عليه وسلم يمسح به وجهه.

 এটি সেই রুমাল যা দিয়ে রাসূল কাছে তাঁর চেহরা মােবারক মুছতেন। এটি ময়লা হলে আমরা আগুনে নিক্ষেপ করি ফলে সেটি দুধের মত সাদা হয়ে যায়।

لأن النار لا تأكل شيأ مر علي وجوه الأنبياء عليھم الصلاة والسلام.

কেননা, যে বস্তু আম্বিয়ায়ে কেরামের চেহারার সাথে লেগেছে সে বস্তুকে আগুনে দগ্ধ করতে পারেনা। ●২৬৩
_____________________________
263.[ইমাম সুয়ূতী, জালাল উদ্দিন সুয়ূতী (رحمة الله) (৯১১হি.), আল খাসায়েসুল কুবরা, আরবী, বৈরুত, খন্ড: ২য় পৃ: ১৩৪]

রুটি আগুনে না পােড়া
____________________
রুটি আগুনে না পােড়া

❏ একদা রাসূল (ﷺ) হযরত ফাতেমা (رضي الله عنه)’র ঘরে তাশরীফ নিলেন। হযরত ফাতেমা (رضي الله عنه) সে সময় চুলা জ্বালিয়ে রুটি পাকানাে আরম্ভ করলেন। চুলার আগুনের তাপে তিনি ঘেমে গেলেন। এটা দেখে রাহমাতুল লিল আলামীন নিজ হাতে কয়েকটি রুটি আগুনে দিলেন। কিছুক্ষণ পর হযরত ফাতেমা (رضي الله عنه) দেখলেন রাসূল র হাত মােবারক দ্বারা আগুনে প্রদত্ত রুটি কাঁচা রয়ে গেল। আগুনের কোন প্রভাব তাতে পড়েনি। হযরত ফাতেমা (رضي الله عنه) দেখে অবাক হয়ে গেলেন। রাসূল (ﷺ) অবাক হওয়ার কারণ জিজ্ঞেস করলে তিনি উত্তর দেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমার অবাক হওয়ার কারণ হল, যে সব রুটিতে আপনার হাত মােবারক লেগেছে সেগুলাে এখনাে পর্যন্ত কাঁচা রয়ে গিয়েছে। আগুনে এগুলাের উপর বিন্দুমাত্রও প্রভাব বিস্তার করতে পারেনি। রাসূল একথা শুনে বললেন, হে প্রিয় কন্যা! এতে অবাক হওয়ার কি আছে? কেননা, যেসব বস্তুতে আমার হাত স্পর্শ করবে আগুন তাতে কোন প্রভাব ফেলতে পারেনা। সুতরাং আমার হাত মােবারাক লাগা রুটিতে চুলার আগুনে কিভাবে জ্বালাবে? ●২৬৪
_____________________________
264.[আব্দুল হক মুহাদ্দিস দেহলভী (رحمة الله) (১০৫২হি.), মাদারেজুন নবুয়ত, ফার্সী, খন্ড: ২য় পৃ: ৩১৫।]

দূরবস্তু দৃশ্যমান হওয়া
____________________
দূরবস্তু দৃশ্যমান হওয়া

❏ হযরত সওবান (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল (ﷺ) এরশাদ করেন-

ان الله زوى لي الأرض فرأيت مشارقها ومغاربها.

আল্লাহ তায়ালা আমার জন্য পৃথিবীকে সংকুচিত করে দিয়েছেন। ফলে আমি পৃথিবীর পূর্ব ও পশ্চিম প্রান্ত পর্যন্ত দেখি। ●২৬৫
_____________________________
265.[ইমাম মুসলিম (رحمة الله) (২৬১হি.), মুসলিম শরীফ, সূত্র, মিশকাত শরীফ, আরবী, পৃ: ৫১২]

❏ মোল্লা আলী কারী (رحمة الله) (১০১৪হি.) তাঁর মিশকাত শরীফের প্রসিদ্ধ ব্যাখ্যা গ্রন্থ আল মিরকাত-এ উপরিউক্ত হদিসের ব্যাখ্যায় বলেন,

حاصله انه طوى له الأرض وجعلها مجموعة كهيئة كف في مراة نظره

মোদ্দা কথা হল, আল্লাহ তায়ালা নবী করিম (ﷺ)এর জন্য পৃথিবীকে সংকুচিত করে দেন। আর সমগ্র পৃথিবীকে এমনভাবে তাঁর চোখের সামনে এনে দেন যেন হাতের তালু। অর্থাৎ হাতের তালু যেমন চোখের সামনে সম্পূর্ণ দৃশ্যমান অনুরূপ তাঁর চোখের সামনে সমগ্র পৃথিবী দৃশ্যমান। ●২৬৬
_____________________________
266.[মিশকাত শরীফের প্রান্ত টীকা, পৃ: ৫১২]

মদীনা থেকে সিরিয়ার শাহী মহল দৃশ্যমান
____________________
মদীনা থেকে সিরিয়ার শাহী মহল দৃশ্যমান

❏ ইমাম বায়হাকী ও আবু নঈম (رحمة الله) হযরত বারা ইবনে আযিব (رضي الله عنه) থেকে বর্ণনা করেন। খন্দক খননের সময় একাংশে আমাদের সামনে একটি শক্ত পাথর ছিল, যাতে কোদাল অকৃতকার্য হল। অর্থাৎ কোদাল দ্বারা কাটা যাচ্ছে না। এ ব্যাপারে আমরা নবী করিম (ﷺ)কে অবহিত করলাম। তিনি ঐ পাথরটি দেখে একটি কোদাল হাতে নিয়ে বিসমিল্লাহ পড়ে একটি আঘাত করলেন। ফলে পাথরের একতৃতীয়াশ ভেঙ্গে যায়। তখন তিনি বললেন, আল্লাহু আকবর! আমাকে সিরিয়ার চাবিকাটি দেওয়া হয়েছে। খােদার শপথ! আমি এখন থেকে সিরিয়ার লাল বর্ণের শাহী মহল দেখতেছি।

অতঃপর তিনি দ্বিতীয় আঘাত করলে পাথরের দুই তৃতীয়াংশ ভেঙ্গে গেল। তখন তিনি বললেন, আল্লাহু আকবর! আমি মাদায়েনের শুভ্র মহল দেখতে পাচ্ছি। তারপর তিনি তৃতীয়বার আঘাত করলে পাথরের বাকী অংশ ও ভেঙ্গে গেল। তখন তিনি বললেন, আল্লাহু আকবর, আমাকে ইয়েমেনের চাবিকাটি অর্পন করা হয়েছে। খােদার কসম, আমি এই মুহুর্তে এখান থেকে সানয়া” নামক স্থানের মহলের দরজা সমূহ অবলােকন করতেছি। ●২৬৭
_____________________________
267.[ইমাম সুয়ূতী, জালাল উদ্দিন সুয়ূতী (رحمة الله) (৯১১হি.), আল খাসায়েসুল কুবরা, আরবী, বৈরুত, খন্ড: ১ম পৃ: ৩৭৮]

❏ ইমাম মুসলিম ও বায়হাকী (رحمة الله) হযরত আনাস (رضي الله عنه) থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, একদিন আমরা রাসূল ’র সাথে নামাযের প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম। তখন তিনি বললেন, হে লােক সকল! আমি তােমাদের সামনে ইমাম হিসেবে থাকি। তােমরা রুকু-সিজদায় আমার আগে যেওনা এবং আমার আগে তােমাদের মাথা রুকু-সিজদা থেকে উঠাবেনা।

فاني ارا كم من امامي و من خلفي.

কেননা আমি তােমাদেরকে সামনে-পেছনে উভয় দিক থেকে দেখি। খােদার শপথ, আমি যা দেখছি তা যদি তােমরা দেখতে তবে তােমরা

لضحتكم قليلا و لبكيتم كثيرا.

হাসতে কম আর কাঁদতে বেশী। সাহাবায়ে কিরাম আরজ করল, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আপনি কি দেখেছেন? উত্তরে তিনি বলেন-

رأيت الجنة والنار.

 আমি জান্নাত ও জাহান্নাম দেখছি। সুতরাং তিনি নামাযে তাঁর পেছনের কাতারের মুসল্লিদেরকেও দেখতেন যেভাবে সামনে দেখতেন। ●২৬৮
_____________________________
268.[ড. মুস্তফা মুরাদ, মু'জিযাতুর রাসূল (ﷺ), আরবী, কায়রাে, মিশর, পৃ: ১৪৪]

জান্নাতী মহল দর্শন
____________________
জান্নাতী মহল দর্শন

❏ হযরত আনাস (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল (ﷺ)বললেন, আমি জান্নাতে প্রবেশ করলাম। আমার সামনে একটি মহল দেখতে পেলাম। আমি জিজ্ঞেস করলাম এই মহল কার জন্য? ফেরেস্তারা বলল, এটি হযরত ওমর ইবনে খাত্তাব (رضي الله عنه)’র জন্য। হে ওমর! আমি ঐ মহলে শুধু তােমার (উচ্চতম) ব্যক্তিত্বের কারণে প্রবেশ করিনি।

❏ বর্ণনাকারী হযরত আবু বকর ইবনে আইয়্যাশ (رضي الله عنه) বলেন, আমি হযরত হুমাইদ (رضي الله عنه)'র কাছে জিজ্ঞেস করলাম, তিনি ঐ মহল ঘুমে দেখেছেন নাকি জাগ্রত অবস্থায় দেখেছেন? তিনি বললেন, না, বরং তিনি জাগ্রত অবস্থায় দেখেছিলেন। ●২৬৯
_____________________________
269.[ইমাম সুয়ূতী, জালাল উদ্দিন সুয়ূতী (رحمة الله) (৯১১হি.), আল খাসায়েসুল কুবরা, আরবী, বৈরুত, খন্ড: ২য় পৃ: ১৫১]

বস্তুর পরিবর্তন
____________________
বস্তুর পরিবর্তন

❏ হযরত সালেম ইবনে জা’দ (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত, রাসূল (ﷺ) দু’জন ব্যক্তি কোন কাজে পাঠালে তারা আরজ করল ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমাদের কাছে পথের কোন পাথেয় নেই। রাসূল - এরশাদ করলেন- তােমাদের পানির মশক আমার কাছে নিয়ে এসাে। তারা তা আনলে তিনি ঐ মশকে পানি ভরতে আদেশ দিলেন এবং তার মুখ বন্ধ করে দিয়ে তাদেরকে বললেন, এই পানির মশক নিয়ে যাও। যখন তােমরা অমুক স্থানে পৌঁছবে তখন আল্লাহ তায়ালা তােমাদেরকে রিযিক দান করবেন।

অতঃপর তার দু’জন রওয়ানা হয়ে যেই স্থানের কথা নবী করিম (ﷺ) বলেছিলেন সেই স্থানে পৌঁছল তখন তারা মশকের মুখ খুললে সেখানে দুধ ও মাখন দেখতে পেল। তারা তা পেট ভরে আহার করল। ●২৭০
_____________________________
270.[ইউসূফ নবাহানী (رحمة الله) (১৩৫০হি.), হুজ্জাতুল্লাহি আলাল আলামীন, উর্দু, গুজরাট, খন্ড: ২য় পৃ: ২৫৩]

পানির উপর চলা: পাথর পানিতে ভাসা
____________________
পানির উপর চলা: পাথর পানিতে ভাসা-

❏ ইমাম ফখর উদ্দিন রাযী (রহ.) স্বীয় বিখ্যাত তাফসীর, তাফসীরে কবীর-এ বর্ণনা করেন, আল্লাহ তায়ালা হযরত নূহ (عليه السلام)এর চিশতিকে পানিতে ডুবতে দেননি বরং পানিতে ভাসিয়ে রাখেন। পক্ষান্তরে আমাদের রাসূল (ﷺ) কে এর চেয়েও বড় মুজিযা দান করেন।

একদা নবী করিম (ﷺ) পানির পাশে অবস্থান করছিলেন। সেখানে ইকরামা ইবনে আবু জেহেল উপস্থিত ছিল। সে বলল- হে মুহাম্মাদ! যদি আপনি রাসূল হওয়ার দাবীতে সত্যবাদী হন তবে পানির অপর পাশে বিদ্যমান ঐ পাথরকে আপনার দিকে আহ্বান করুন যাতে পানিতে না ডুবে ভাসতে ভাসতে আপনার কাছে চলে আসে। অতঃপর তিনি পাথরকে ইশারা করা মাত্র পাথর আপন স্থান থেকে পানির উপর ভাসতে ভাসতে নবীর কদমে পাকে এসে রেসালাতের সাক্ষ্য দেয়। ●২৭১
_____________________________
271.[আল্লামা ইউসুফ নাবহানী (رحمة الله) (১৩৫০হি.), হুজ্জাতুল্লাহি আলালা আলামীন, উর্দু, পৃ: ৪৯]

জান্নাতী রিযিক
____________________
জান্নাতী রিযিক

❏ ইমাম আহমদ, দারেমী, নাসায়ী, হাকেম (তিনি এ হাদিসখানা বিশুদ্ধ বলেছেন) বাযযার, আবু ইয়ালা ও তাবরানী (رحمة الله) হযরত সালমা ইবনে নুফাইল (رضي الله عنه) থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, আমরা নবী করিম (ﷺ)ওর পাশে বসা ছিলাম। হঠাৎ কেউ জিজ্ঞেস করল, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আপনার জন্য কি আসমান থেকে অন্য রেওয়াতে আছে জান্নাত থেকে খাবার আসে? তিনি বললেন, হ্যা। জিজ্ঞেস করল, কিসে করে আসে? তিনি বললেন, ‘মিসখানান’ (পানি গরম করার পাত্র) করে। সে জিজ্ঞেস করল, তাতে আপনার কিছু খাবার অবশিষ্ট ছিল? তিনি বললেন, হ্যা। সে বলল, ঐগুলাে কোথায়? তিনি বললেন- ঐ আসমানে উঠিয়ে নেয়া হয়েছে। ●২৭২
_____________________________
272.[ইমাম সুয়ূতী, জালাল উদ্দিন সুয়ূতী (رحمة الله) (৯১১হি.), আল খাসায়েসুল কুবরা, আরবী, বৈরুত, খন্ড: ২য় পৃ: ৯২]

❏ হযরত ইবনে আব্বাস (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত,তিনি বলেন, হযরত জিব্রাঈল (عليه السلام) রাসূল এর নিকট এসে বলেন, আপনার প্রভু আপনাকে সালাম দিয়েছেন আর আমাকে দিয়ে আপনার জন্য আঙ্গুরের খােসা প্রেরণ করেন। তিনি আঙ্গুরের খােসা নিয়ে নিলেন। ●২৭৩
_____________________________
273.[ ইমাম সুয়ূতী, জালাল উদ্দিন সুয়ূতী (رحمة الله) (৯১১হি.), আল খাসায়েসুল কুবরা, আরবী, বৈরুত, খন্ড: ২য় পৃ: ৯৩]

গায়েবী রিযিক
____________________
গায়েবী রিযিক

❏ হযরত নাফে (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, একদা আমরা নবী করিম (ﷺ) তার সাথে প্রায় চারশ সাহাবী সফর সঙ্গী ছিলাম। আমরা এমন এক জায়গায় মনযিল করলাম যেখানে পানির নাম নিশানাও ছিলনা। এই জায়গায় অবতরণ করা সকলের মনপুত হলনা। নবী করিম (ﷺ) কে অবতরণ করতে দেখে আমরাও অবতরণ করলাম।

হঠাৎ করে লােহার ন্যায় মজবুত শিং বিশিষ্ট একটি ছাগল নবী করিম (ﷺ)এর নিকটে এসে গেল। তিনি ঐ ছাগল থেকে দুধ দোহন করে সকল সৈন্যদের তৃপ্ত সহকারে পান করান এবং নিজেও পান করেন, তারপর বলেন-

يا نافع املكها ما اراك تملكها

হে নাফে! তুমি এটাকে সামলে রাখ তবে আমি জানি যে, তুমি এটাকে সামলাতে পারবে না। রাসূল এই মন্তব্য শুনে আমি একটি বড় পেরেক মাটিতে ভালভেবে গেড়ে শক্ত রশি ছাগলের গলায় বেঁধে পেরেকের সাথে বেঁধে দিলাম। ইত্যবসরে রাসূল (ﷺ) নিদ্রা যাপন করলেন এবং লোকেরাও ঘুমিয়ে পড়ল আর আমি ও ঘুমিয়ে পড়লাম। আমি জাগ্রত হয়ে দেখি রশি খুলে পড়ে রইল আর ছাগল অদৃশ্য। নবী করিম (ﷺ)((ﷺ))'র নিকট এসে এ সম্পর্কে তাঁকে অবহিত করলে তিনি আমাকে বললেন, হে নাফে! আমি তােমাকে বলেছিলাম , তুমি ওটাকে সংরক্ষণ করতে পারবেনা। তিনি বললেন,

ان الذي جاء بها هو الذي ذهب بها.

নিশ্চয় যিনি উহাকে এনেছিলেন তিনিই নিয়ে গেলেন।●২৭৪
_____________________________
274.[আবু নঈম ইস্পাহানী (رحمة الله) (৪৩০হি.), দালায়েলুন নবুয়ত, উর্দু, দিল্লী, পৃ: ৩৮২।]

শরীর মােবারক সুগন্ধি
____________________
শরীর মােবারক সুগন্ধি-

❏ ইমাম বায়হাকী ও ইবনে আসাকের (رحمة الله) হযরত ওয়ায়েল ইবনে হুজর (رضي الله عنه) থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, আমি নবী করিম (ﷺ)এর সাথে মােসাফাহা করলে কিংবা আমার শরীরের কোন অংশ তাঁর শরীর মােবারকের কোন অংশের সাথে স্পর্শ করলে তিন দিন পর্যন্ত আমি সুগন্ধি অনুভব করতাম। ●২৭৫
_____________________________
275.[ইউসুফ নাবহানী (رحمة الله) (১৩৫০হি.), হুজ্জাতুল্লাহি আলাল আলামীন, উর্দু, গুজরাট, খন্ড: ১ম পৃ: ৭০২]

❏ ইমাম আহমদ (رحمة الله) হযরত ওয়ায়েল হুজর (رضي الله عنه) থেকে বর্ণনা করেন, নবী করিম (ﷺ)এ একটি কূপ থেকে পানি লােটায় কুলি করে লােটার পানি সেই কূপে ঢেলে দেন ফলে ঐ কূপ থেকে কস্তুরীর ন্যায় সুগন্ধি উঠতাে। ●২৭৬
_____________________________
276.[আবু নঈম ইস্পাহানী (رحمة الله) (৪৩০হি.), দালায়েলুন নবুয়ত, উর্দু, দিল্লী,, পৃ: ৭০৩]

❏ ইমাম মুসলিম, হযরত আনাস (رضي الله عنه) থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন,

ما شمهت عنبرا قط ولا مسكا ولاشي با اطيب من ريح رسول الله صلى الله عليه وسلم

আমি রাসূল এর ন্যায় সুগন্ধি আম্বর, মিশক ও অন্য কোন বস্তুর মধ্যে অনুভব করিনি। ●২৭৭
_____________________________
277.[ইমাম মুসলিম (رحمة الله) (২৫১হি.), সূত্র, গােলাম রাসূল সাঈদী; শরহে সহীহ মুসলিম, উর্দু, খন্ড: ৬ পৃ: ৭৮০]

ছায়া বিহীন কায়া
____________________
ছায়া বিহীন কায়া

❏ হযরত হাকীম তিরমিযি (رحمة الله) হযরত যাকওয়ান (رضي الله عنه) থেকে বর্ণনা করেন, সূর্যের আলাে কিংবা চাঁদের কিরণে নবী করিম (ﷺ) এর ছায়া দেখা যেতাে না। ইবনে সাবআ (رحمة الله) বলেন, ইহা তাঁর বিশেষ বৈশিষ্ট্য। তার কারণ হলাে তিনি হলেন নূর। তিনি সূর্য ও চাঁদের আলােতে বের হলে তাঁর ছায়া পরিলক্ষিত হতােনা। ●২৭৮
_____________________________
278.[ইউসূফ নাবহানী (رحمة الله) (১৩৫০হি.), হুজ্জাতুল্লাহি আলাল আলামীন, উর্দু, গুজরাট, খন্ড: ২য় প: ৩৮০]

❏ কাযী আয়ায (رحمة الله) শেফা শরীফে বর্ণনা করেন, নবী করিম (ﷺ) এর শরীর মােবারকে মাছি বসতােনা। ইবনে সাবআ (رحمة الله) বলেন, নবী করিম (ﷺ)’র কাপড়ে ও কখনাে মাছি বসেনি কোন ভােমরা (৯) তাঁকে কোনদিন কষ্ট দেয়নি। ●২৭৯
_____________________________
279.[ইউসূফ নাবহানী (رحمة الله) (১৩৫০হি.), হুজ্জাতুল্লাহি আলাল আলামীন, উর্দু, গুজরাট, খন্ডঃ ২য় পৃ: ৩৮০]

ঘাম মােবারক সুগন্ধি
____________________
ঘাম মােবারক সুগন্ধি-

❏ হযরত আনাস (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করিম(ﷺ) হযরত উম্মে সুলাইম (رضي الله عنه)'র ঘরে তাশরীফ নিতেন। তিনি তাঁর জন্য চামড়ার চাটাই বিছিয়ে দিতেন। রাসূল (ﷺ) তাতে আরাম করতেন। তিনি উঠে গেলে উম্মে সুলাম (رضي الله عنه) ঐ চাটাই থেকে তাঁর ঘাম মােবারক নিয়ে আতর দানীতে সংগ্রহ করে রাখতেন।

(তিরমিযি ও ইবনে মাজাহ)

❏ ইমাম বুখারী (رحمة الله) তাঁর প্রসিদ্ধ কিতাব তারীখে বুখারীতে হযরত জাবের (رضي الله عنه) থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, নবী করিম (ﷺ)এর কিছু অসাধারণ ও দূর্লভ বৈশিষ্ট্য ছিল। যেমন, তিনি যেই রাস্তা দিয়ে গমণ করতেন লােকেরা বুঝতে পারত যে, তিনি এই পথ দিয়ে গমণ করেছিলেন। কেননা, তাঁর শরীর মােবারকের সুগন্ধিযুক্ত ঘাম মােবারক পুরাে রাস্তাকে সুগন্ধি করে দিত যা অনেক্ষণ পর্যন্ত বিদ্যমান থাকত। ●২৮০
_____________________________
280.[আবু নঈম ইস্পাহানী (رحمة الله) (৪৩০হি.), দালায়েলুন নবুয়ত, উর্দু, দিল্লী, পৃ:৩৯২ ও কাযী আয়ায (رحمة الله) (৪৭৬-৫৪৪হি.), শেফা শরীফ, আরবী, মাকতাবাতুস সাফা, কায়রাে, মিশর, খন্ড: ১ম পৃ: ৫৩।]

❏ ইমাম মুসলিম (رحمة الله) হযরত আনাস (رضي الله عنه) থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, নবী করিম (ﷺ) আমাদের ঘরে তাশরীফ আনেন এবং দুপুরে বিশ্রাম নিলেন। যখন তাঁর শরীর থেকে ঘাম বের হচ্ছিল। তিনি জাগ্রত হয়ে আমার মা কে বললেন, উম্মে সুলাইম! তুমি কি করতেছ? তিনি আরজ করলেন, হুযুর আপনার ঘাম মােবারক নিচ্ছি যা আমরা সুগন্ধির জন্য ব্যবহার করবাে। কেননা, এই ঘাম মােবারক সব সুগন্ধি থেকে উত্তম সুগন্ধি। ●২৮১
_____________________________
281.[ইউসূফ নাবাহানী (رحمة الله) (১৩৫০হি.), হুজ্জাতুল্লাহি আলাল আলামীন, উর্দু, গুজরাট, পাকিস্তান, খন্ড:২য় পৃ:৩৭৮, কাযী আয়ায (৪৭৬-৫৪৪হি.), শেফা শরীফ, আরবী, মাকতাবাতুস সাফা, কায়রাে, মিশর, খন্ড: ১ম পৃ: ৫৩]

ঘাম মােবারকের সুগন্ধি সমগ্র মদীনা ছড়িয়ে পড়া
____________________
ঘাম মােবারকের সুগন্ধি সমগ্র মদীনা ছড়িয়ে পড়া-

❏ হযরত আবু ইয়ালা ও তাবরানী (رحمة الله) হযরত আবু হুরাইরা (رضي الله عنه) থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, জনৈক ব্যক্তি নবী করিম(ﷺ) এর খেদমতে হাযির হয়ে আরজ করল, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমি আমার মেয়েকে বিবাহ দিয়েছি। আমি আশা করছি যেন আপনি আমাকে সাহায্য করবেন। এ সময় তাঁর কাছে দেওয়ার মত কিছুই ছিলনা, তিনি তাকে বললেন, তুমি একটি শিশি ও একটি কাঠের কাটি নিয়ে এসাে। সে উভয়টি নিয়ে আসলে তিনি স্বীয় উভয় হাত মুছে ঘাম মােবারক নিয়ে শিশির ভর্তি করে দিয়ে বললেন, নাও। আর তােমার মেয়েকে বলবে, এই শিশিরে ডুবিয়ে সুগন্ধি হিসেবে যেন ব্যবহার করা হয়। সেই মেয়ে এই ঘাম মােবারক ব্যবহার করলে সমগ্র মদীনাবাসীরা এর সুগন্ধি অনুভব করেছিল। এ কারণে লােকেরা তার ঘরকে “সুগন্ধিযুক্তদের ঘর” বলা হত। ●২৮২
_____________________________
282.[ইউসূফ নাবহানী (رحمة الله) (১৩৫০হি.), হুজ্জাতুল্লাহি আলাল আলামীন, উর্দু, গুজরাট, পাকিস্তান, খন্ড: ২য় পৃ: ৩৭৯]

গােলাপ ফুলের সুগন্ধির উৎস
____________________
গােলাপ ফুলের সুগন্ধির উৎস

❏ কোন কোন হাদিসে এসেছে যে, গােলাপ ফুলের সুগন্ধি রাসূল (ﷺ) এর ঘাম মােবারক থেকে সৃষ্টি হয়েছে। হাদিসে এরূপ আছে যে, নবী করিম (ﷺ) বলেন, আমি মে’রাজ থেকে ফিরে আসার পর আমার শরীরের এক ফোঁটা ঘাম মাটিতে পড়েছিল তা থেকে গােলাপ ফুল জন্ম হয়। যে আমার সুগন্ধি পেতে চায়, সে যেন গােলাপ ফুলের সুগন্ধি নেয়। ●২৮৩
_____________________________
283.[আব্দুল হক মুহাদ্দিস দেহলভী (رحمة الله) (১০৫২হি.), মাদারেজুন নবুয়ত, ফার্সী, খন্ড: ১ম পৃ: ৩০]

শরীর মােবারক শীতল ও সুগন্ধি ছিল 
____________________
শরীর মােবারক শীতল ও সুগন্ধি ছিল 

❏ ইমাম মুসলিম (رحمة الله) হযরত জাবের ইবনে সামুরাহ (رضي الله عنه) থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, আমি রাসূল (ﷺ) এর সাথে যােহরের নামায আদায় করি। তিনি নামায শেষে তাঁর ঘরের দিকে গেলে আমিও তাঁর সাতে গেলাম। সামনে থেকে কয়েকজন ছােট বালক আসল। তিনি তাদের প্রত্যেকের মুকেল উপর হাত বুলিয়ে দেন এবং আমার মুখেও হাত বুলিয়ে দেন। আমি তাঁর হাত মােবারকের ঠান্ডা ছোঁয়া এবং সুগন্ধি এমনভাবে অনুভব করেছি যেন তিনি তাঁর হাত মােবারক আতর বিক্রিকারীর আতরের বােতল থেকে বের করেছেন। ●২৮৪
_____________________________
284.[ইমাম মুসলিম (رحمة الله) (২৬১হি.), মুসলিম শরীফ, সূত্র, গােলাম রাসূল সাঈদী, শরহে সহীহ মুসলিম, উর্দু, খন্ড: ৬ষ্ঠ পৃ: ৭৮০।]

শরীর মােবারক মেশক আম্বর থেকেও বেশী সুগন্ধি
____________________
শরীর মােবারক মেশক আম্বর থেকেও বেশী সুগন্ধি

❏ ইমাম মুসলিম (رحمة الله) হযরত আনাস (رضي الله عنه) থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, রাসূল (ﷺ) এর শরীরের রঙ ছিল শুভ্র ও উজ্জল, তাঁর ঘামের ফোঁটা মুতির ন্যায় আলােক উজ্জল ছিল। তিনি যখন চলতেন সামনের দিকে কিঞ্চিৎ ঝুঁকে চলতেন। আমি কোন রেশমী কাপড়কে রাসূল এর চেয়ে বেশী নরম ও মুলায়েম পাইনি এবং কোন মেশকে আম্বরকেও তাঁর (শরীর মােবারকের) চেয়ে বেশী সুগন্ধি পাইনি। ●২৮৫
_____________________________
285.[ইমাম মুসলিম (رحمة الله) (২৬১হি.), মুসলিম শরীফ, সূত্র, গােলাম রাসূল সাঈদী, শরহে সহীহ মুসলিম, উর্দু, গুজরাট, পাকিস্তান, খন্ড: ৬ষ্ঠ পৃ: ৭৮১]

চেহারা মােবারক
____________________
চেহারা মােবারক

❏ ইবনে আসাকের (رحمة الله) হযরত আয়েশা (رضي الله عنه) থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, আমি সাহরীর সময় সেলাই করতেছি। আমার হাত হতে সুই পড়ে গেলে অনেক খুঁজেছি কিন্তু পাইনি। এ সময় রাসূল প্রবেশ করেন-

فتبيت الابرة بشعاع نور وجهه.

তাঁর চেহারা মােবারকের নুরানী আলােতে সুই পেয়ে গেলাম। আমি তাঁকে এ সংবাদ দিলে তিনি বললেন,

হে হুমাইরা! الويز ثم الويل ثللاثا لمن حرك النظر الي وجهي

যারা আমার চেহারা দীদার থেকে বঞ্চিত তাদের জন্য আফসােস- কথাটি তিনি তিনবার বলেছিলেন। ●২৮৬
_____________________________
286.[ইমাম সুয়ূতী, জালাল উদ্দিন সুয়ূতী (رحمة الله) (৯১১হি.), আল খাসায়েসুল কুবরা, আরবী, বৈরুত, খন্ড: ১ম পৃ: ১০৭]

❏ ইমাম তিরমিযি (رحمة الله) হযরত আবু হােরাইরা (رضي الله عنه) থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন,

ما رأيت شيئا احسن من رسول الله صلى الله عليه وسلم كأن الشمس تجرى في وجهه -
আমি রাসূল (ﷺ) এর চেয়ে অধিক সুন্দর কোন কিছু দেখিনি, যেন সূৰ্য তাঁর চেহারা মােবারকে নেমে এসেছে। ●২৮৭
_____________________________
287.[ইমাম তিরমিযি (رحمة الله) (২৭৯হি.), তিরমিযি শরীফ, সূত্র, মিশকাত শরীফ, আরবী, পৃ: ১৫৮]

❏ ইমাম তিরমিযি ও দারেমী (رحمة الله) হযরত জাবের ইবনে সামুরাহ (رضي الله عنه) থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, আমি একবার চাঁদনী রাতে নবী করিম (ﷺ)কে দেখলাম তিনি লাল বর্ণের চাদর পরিহিত ছিলেন। আমি একবার তাঁর দিকে দেখি একবার চাঁদের দিকে দেখি। অতঃপর আমি তাঁকে চাঁদের চেয়েও বেশী সুন্দর পেয়েছি। ●২৮৮
_____________________________
288.[শেখ অলি উদ্দিন মুহাম্মদ ইবনে আব্দুল্লাহ (رحمة الله) (৭৪০হি.), মিশকাত শরীফ, আরবী, পৃ: ১৫৭]

আওয়াজ মােবারক
____________________
আওয়াজ মােবারক

❏ ইমাম বায়হাকী ও আবু নঈম (رحمة الله) হযরত বারা (رضي الله عنه) থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন,

خطبنا رسول الله صلى الله عليه وسلم حتى اسمع العواتق في خدورهن

অর্থ- রাসূল (ﷺ) আমাদেরকে ভাষণ দিলেন। তাঁর আওয়াজ পর্দার আড়ালের মহিলারা পর্দার ভিতর থেকেও শুনেছিল। ●২৮৯
_____________________________
289.[ইমাম সুয়ূতী, জালাল উদ্দিন সুয়ূতী (رحمة الله) (৯১১হি.), আল খাসায়েসুল কুবরা, আরবী, বৈরুত, খন্ড: ১ম পৃ: ১১৩]

❏ ইমাম বায়হাকী ও আবু নঈম (رحمة الله) হযরত আয়েশা (رضي الله عنه) থেকে বর্ণনা করেন, এক জুমার দিন নবী করিম (ﷺ) মিম্বরে বসে লােকদেরকে বললেন, তােমরা বসে যাও। আব্দুল্লাহ ইবনে রাওয়াহা (رضي الله عنه) ও এই আওয়াজ শুনেছিলেন অথচ এ সময় তিনি বনী গনমে। অতঃপর তিনি সেখানেই বসে গেলেন। ●২৯০
_____________________________
290.[ইমাম সুয়ূতী, জালাল উদ্দিন সুয়ূতী (رحمة الله) (৯১১হি.), আল খাসায়েসুল কুবরা]

❏ ইবনে ও আবু নঈম (رحمة الله) আব্দুর ইবনে মুয়ায (رضي الله عنه) থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, রাসূল (ﷺ) আমাদেরকে মীনায় ভাষণ দিচ্ছিলেন। তখন আমাদের প্রবণ শক্তি বৃদ্ধি হয়ে গেল। আমরা তাঁর ভাষণ নিজেদের ঘরে বসে শুনেছি। ●২৯১
_____________________________
291.[ইমাম সুয়ূতী, জালাল উদ্দিন সুয়ূতী (رحمة الله) (৯১১হি.), আল খাসায়েসুল কুবরা]

❏ ইবনে মাজাহ ও বায়হাকী (رحمة الله) হযরত উম্মে হানী (رضي الله عنه) থেকে বর্ণনা করেন, রাসূল (ﷺ) রাতের বেলার কা'বার ভিতরের কেরাত আমরা নিজেদের ঘরের মধ্যেও শুনতে পেতাম-

كنا نسمع قرأة النبي صلى الله عليه وسلم في جول في الليل عند الكعبة وانا على ده عريشي.
_____________________________
292.[ইমাম সুয়ূতী, জালাল উদ্দিন সুয়ূতী (رحمة الله) (৯১১হি.), আল খাসায়েসুল কুবরা]

লালা মােবারক মহৌষধ
____________________
লালা মােবারক মহৌষধ

❏ হযরত আবু বারা (رضي الله عنه) নবী করিম (ﷺ) এর খেদমতে দুটি ঘােড়া ও দু’টি উট উপঢৌকন হিসেবে প্রেরণ করে। তিনি বললেন, আমি যদি মুশরিকদের হাদিয়া গ্রহণ করতাম তবে আবু বারা’র হাদিয়াও কবুল করতাম। লােকেরা আবেদন করল, হুযুর! আবু বারা অসুস্থ। সে সুস্থতার জন্য এই তােহফা আপনার খেদমতে পাঠিয়েছে।

তিনি মাটির একটি ঢিলা তুলে নিয়ে তাতে স্বীয় মুখের লালা মােবারক লাগিয়ে বললেন, এটাকে পানিতে মিশিয়ে তাকে পান করাও। যখন এরূপ করা হয়েছে তখন আল্লাহ তায়ালা তাকে শেফা দান করেন। ●২৯৩
_____________________________
293.{আব্দুর রহমান জামী (رحمة الله) (৮৯৮হি.), শাওয়াহেদুন নবুয়ত, উদু, বেরেলী, পৃ: ১৩৭}

লালা মােবারকের মুজিযা শরীরের কাটা অংশ জোড়া লাগানো
____________________
লালা মােবারকের মুজিযা শরীরের কাটা অংশ জোড়া লাগানাে

❏ ইবনে ইসহাক ও বায়হাকী (رحمة الله) স্বীয় সূত্রে খুবাইব ইবনে আব্দুর রহমান থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, আমার দাদা খুবাইব বদরের যুদ্ধে তরবারীর আঘাতে শরীরের একটি অংশ কেটে একদিকে ঝুলে পড়ল। রাসূল (ﷺ) এর উপর লালা মােবারক লাগিয়ে দিয়ে শরীরের অপর অংশের অঙ্গের সাথে মিলিয়ে দেন। এতে কাটা অংশ শরীরের মতােই হয়ে গেল আর আঘাতের কোন চিহ্নই ছিলনা। ●২৯৪
_____________________________
294.{ইমাম সুয়ূতী, জালাল উদ্দিন সুয়ূতী (رحمة الله) (৯১১হি.), আল খাসায়েসুল কুবরা, আরবী, বৈরুত, খন্ড: ১ম পৃ: ৩৩৬}

ঝুলে পড়া চোখ পুনঃস্থাপন
____________________
ঝুলে পড়া চোখ পুনঃস্থাপন

❏ হযরত আবু নঈম (رحمة الله) আব্দুল্লাহ ইবনে আবি সা’সা’ (رضي الله عنه) সূত্রে বর্ণনা করেন, আবু সাঈদ খুদুরী (رضي الله عنه) থেকে তিনি তাঁর ভাই কাতাদাহ ইবনে নােমান (رضي الله عنه) থেকে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, আমার উভয় চোখে বদরের দিন আঘাত লেগেছে ফলে উভয় চোখ বের হয়ে আমার দুচোয়েলের উপর এসে পড়েছে। আমি ঐ চোখ দুটি নিয়ে রাসূল রে নিকট আসলাম। তিনি উভয় চোখ আপনস্থানে লাগিয়ে দিয়ে স্বীয় মুখের লালা মােবারক লাগিয়ে দেন ফলে চোখ দুটি সুস্থ হয়ে চমকাতে লাগল। ●২৯৫
_____________________________
295.{ইমাম সুয়ূতী, জালাল উদ্দিন সুয়ূতী (رحمة الله) (৯১১হি.), আল খাসায়েসুল কুবরা, আরবী, বৈরুত, খন্ড: ১ম পৃ: ৩৩৮}

শয়তানের অনিষ্ট থেকে রক্ষা
____________________
শয়তানের অনিষ্ট থেকে রক্ষা

❏ ইমাম বাযযার, তাবরানী আওসাত গ্রন্থে ও আবু নঈম (رحمة الله) হযরত জাবের (رضي الله عنه) থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, আমরা রাসূল (ﷺ)র সাথে গযওয়ায়ে যাতির রেকা এর উদ্দেশ্যে রওয়ানা হয়ে “হারবাহ ওয়াকাম” নামক স্থানে পৌঁছলাম। সেখানে একজন গ্রাম্য মহিলা তার সন্তানসহ এসে বলল, হে আল্লাহর রাসূল! এ আমার সন্তান। সে আমার অবাধ্য হয়ে পড়েছে। তার উপর শয়তান প্রভাব বিস্তার করেছে। তিনি সে সন্তানের মুখ খুলে তাতে লালা মােবারক নিক্ষেপ করেন এবং তিন বার বললেন,

احسن عدو الله انا رسول الله.

অর্থাৎ- লাঞ্ছিত হও হে আল্লাহর দুশমন, আমি আল্লাহর রাসূল।

তারপর তিনি মহিলাকে বললেন, তুমি তােমার সন্তানকে নিয়ে যাও তাকে যে কষ্ট দিত সে আর তার কাছে কখনাে আসবে না। যখন আমরা গযওয়া থেকে ফেরৎ আসতেছি তখন ঐ মহিলা আবার আসল। রাসূল ল তার কাছে তার ছেলের খবর নিলে মহিলা বলল, পূর্বে যে আসত এখন সে আর আসেনা। ●২৯৬
_____________________________
296.{ইমাম সুয়ূতী, জালাল উদ্দিন সুয়ূতী (رحمة الله) (৯১১হি.), আল খাসায়েসুল কুবরা, আরবী, বৈরুত, খন্ড: ১ম পৃ: ৩৭৩}

মুখের যখম ভাল হওয়া
____________________
মুখের যখম ভাল হওয়া

❏ ইবনে সা’দ হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আবু কাতাদাহ (رضي الله عنه) থেকে তিনি তাঁর পিতা আবু কাতাদাহ (رضي الله عنه) থেকে বর্ণনা করেন, গযওয়ায়ে “যী করদ” এর দিন রাসূল ও আমাকে পেয়ে আমার দিকে তাকিয়ে বলেন,

اللهم بارك له في شعره يشره.

হে আল্লাহ! তার চুলে ও চামড়ায় বরকত দান করুন। তিনি আরাে বললেন, তােমার চেহরার কল্যাণ হােক, মুসআদাহ কে হত্যা করেছ? আমি বললাম, জী, হা। তিনি বললেন, তােমার চেহরায় কি হয়েছে? আমি বললাম তীর লেগেছে। তিনি বললেন আমার কাছে এসাে, আমি তাঁর কাছে গেলে তিনি ক্ষত স্থানে স্বীয় লালা মােবারক লাগিয়ে দেন। ফলে এমন সুস্থ হয়ে গেলাম যেন আমার কোন আঘাতই লাগেনি এবং এতে কোন পুঁজও সৃষ্টি হয়নি। আবু সত্তর বছর বয়সে ইন্তেকাল করেছিলেন অথচ তাকে দেখলে মনে হত যেন পনের বছরের যুবক। ●২৯৭
_____________________________
297.{ইমাম সুয়ূতী, জালাল উদ্দিন সুয়ূতী (رحمة الله) (৯১১হি.), আল খাসায়েসুল কুবরা, আরবী, বৈরুত, খন্ডঃ ১ম পৃ: ৪১৬}

জান্নাতীদের দর্শন করা
____________________
জান্নাতীদের দর্শন করা

❏ ইমাম বায়হাকী ও আবু নঈম (رحمة الله) হযরত উরওয়াহ ও হযরত মুছা ইবনে উকবা (رضي الله عنه)'র সূত্রে হযরত ইবনে শিহাব থেকে বর্ণনা করেন, তিন বলেন, রাসূল (ﷺ) হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে রাওয়াহা (رضي الله عنه)কে ত্রিশটি সওয়ারীসহ ইয়াসির ইবনে রিযাম ইহুদীর বিরােদ্ধে যুদ্ধের উদ্দেশ্যে পাঠান। এই দলে হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে উনাইস আব্দুল্লাহ ইবনে আনীস (رضي الله عنه) ও ছিলেন। ইয়াসির ইহুদী আব্দুল্লাহ ইবনে উনাইস এর চেহরায় এমন আঘাত করল যে, তাঁর মাথার মগজে পর্যন্ত পৌঁছেছে। হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে উনাইস (رضي الله عنه) রাসূল মার খেদমতে আসলে তিনি তার আহত স্থানে লালা মােবারক লাগিয়ে দেন।

অতঃপর আব্দুল্লাহ ইবনে উনাইস (رضي الله عنه)’র ইন্তেকাল পর্যন্ত ঐ আহত স্থানে থেকে কখনাে রক্তও পড়েনি এবং কোন প্রকারের ব্যাথা অনুভব করেনি। ২৯৮
_____________________________
298.{ ইমাম সুয়ূতী, জালাল উদ্দিন সুয়ূতী (رحمة الله) (৯১১হি.), আল খাসায়েসুল কুবরা, আরবী, বৈরুত, খন্ড: ১ম পৃ: ৪২৭}

রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর সাথে সম্পর্কই মর্যাদার মানদন্ড
____________________
রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর সাথে সম্পর্কই মর্যাদার মানদন্ড-

❏ হযরত ইবনে সা'দ (رحمة الله) মুহাম্মদ ইবনে ওমর ইবনে আলী (رضي الله عنه) থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, রাসূল (ﷺ) এরশাদ করেন, আমি হযরত জাফর (رضي الله عنه)কে ফেরেস্তার আকৃতিতে জান্নাতে উড়তে দেখেছি আর তার পাখার সম্মুখ ভাগ হতে রক্তের ফোঁটা ঝড়তেছিল এবং হযরত যায়েদ ইবনে হারেসা (رضي الله عنه)কে জাফরের চেয়ে কম মর্যাদায় দেখেছি। (তারা উভয় মুতা যুদ্ধে শহীদ হন। তখন আমি বললাম, আমি যায়েদকে জাফরের চেয়ে কম মর্যাদাবান মনে করিনা। এখানে তার মর্যাদা কম হলাে কেন? হযরত জিব্রাঈল (عليه السلام) এসে উত্তর দেন যে,

فقال ان زيدا ليس بدون جعفر و لكن جعفرفضلنا لقربته منك.

 অর্থ- হযরত যায়েদ হযরত জাফরের চেয়ে মর্যাদয় কম নয় তবে আমরা হযরত জাফর (رضي الله عنه) কে আপনার নিকটতম আত্মীয়তার কারণে শ্রেষ্টত্ব দান করেছি। ●২৯৯
_____________________________
299.{ইমাম সুয়ূতী, জালাল উদ্দিন সুয়ূতী (رحمة الله) (৯১১হি.), আল খাসায়েসুল কুবরা, আরবী, বৈরুত, খন্ড: ১ম পৃ: ৪৩৩}

লালা মােবারক মহাঔষধ
____________________
লালা মােবারক মহাঔষধ

❏ ইবনে আসাকের হযরত আব্দুর রহমান ইবনে আযহার (رضي الله عنه) থেকে বর্ণনা করেন, হুনাইনের যুদ্ধের দিন হযরত খালেদ বিন ওয়ালিদ (رضي الله عنه) আহত হন। রাসূল (ﷺ) সঙ্গে সঙ্গে তার আহতস্থানে স্বীয় লালা মােবারক লাগিয়ে দিলে খালেদ পূর্ণ আরােগ্য লাভ করেন। ●৩০০
_____________________________
300.{ইমাম সুয়ূতী, জালাল উদ্দিন সুয়ূতী (رحمة الله) (৯১১হি.), আল খাসায়েসুল কুবরা, আরবী, বৈরুত, খন্ড: ১ম পৃ: ৪৫০}

মিষ্টি ভাষী হওয়া
____________________
মিষ্টি ভাষী হওয়া

❏ ইমাম তাবরানী (رحمة الله) হযরত আবু উমামা বাহেলী (رضي الله عنه) থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, জনৈক মহিলা পুরুষদের সাথে খারাপ ব্যবহার করত অর্থাৎ তার মুখের ব্যবহার খুবই খারাপ ও অশালীন ছিল। একদা সে রাসূল (ﷺ) তার পাশ দিয়ে যাচ্ছিল আর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে সারিদ আহার করছিলেন। মহিলা তাঁর থেকে সারিদ খুজলে তিনি তাকে তা দিলেন। মহিলা বলল, আমাকে আপনার মুখের ভিতর থেকে দিন। অতঃপর তিনি তাঁর মুখের ভিতর থেকে দিলে সে খেয়ে ফেলল। এরপর তার মধ্যে এমন লজ্জা প্রাধান্য পেলাে যে, সে মৃত্যুপর্যন্ত কখনাে কারাে সাথে অশ্লীল আচরণ ও ব্যবহার করেনি। ●৩০১
_____________________________
301.{ইমাম সুয়ূতী, জালাল উদ্দিন সুয়ূতী (رحمة الله) (৯১১হি.), আল খাসায়েসুল কুবরা, আরবী, বৈরুত, খন্ড: ২য় পৃ: ১২২}

মাথা ও পায়ের আঘাত ভাল হওয়া
____________________
মাথা ও পায়ের আঘাত ভাল হওয়া

❏ ইমাম বায়হাকী (رحمة الله) ইসহাক (رحمة الله)’র সনদে বর্ণনা করেন, হযরত হারেস বিন আউস (رحمة الله) কা'ব ইবনে আশরাফ ইহুদীকে হত্যাকারীদের একজন। কারাে তরবারীর আঘাতে তার মাথা ও পায়ে আঘাত পেয়েছিল। সঙ্গীরা তাকে নিয়ে নবী করিম (ﷺ) এর খেদমতে নিয়ে

আসল। তিনি তার আহতস্থানে লালা মােবারক লাগিয়ে দেওয়ার সাথে সাথে সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে যায়। ●৩০২
_____________________________
302.{ইউসূফ নাবহানী (رحمة الله) (১৩৫০হি.), হুজ্জাতুল্লাহি আলাল আলামীন, উর্দু, গুজরাট, খন্ডঃ ১ম পৃ: ৬৮১}

লালা মােবরাক উত্তম খাদ্য ও পানীয়
____________________
লালা মােবরাক উত্তম খাদ্য ও পানীয়

❏ একদা দুগ্ধপানকারী একটা ছােট ছেলেকে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর খেদমতে আন হল, তিনি তাঁর লালা মােবারক তার মুখে দিলে সে এমন তৃপ্ত হল যে, সারাদিন সে দুধ পান করেনি।

একদিন হযরত ইমাম হাসান (رضي الله عنه) প্রচন্ড পিপাসার্ত ছিলেন। তখন নবী করিম (ﷺ) স্বীয় জ্বিহবা মােবারক তার মুখে রাখলে সে তাঁর জ্বিহবা মােবারক চুসে। এসে সে সারাদিন তৃপ্ত ছিল, দুধপানের প্রয়ােজন হয়নি। ●৩০৩
_____________________________
303.{শাহ আব্দুল হক মুহাদ্দিস দেহলভী (رحمة الله) (১০৫২হি.), মাদারেজুন নবুয়ত, ফার্সী, খন্ড: ১ম পৃ: ১১ ও জালাল উদ্দিন সুয়ূতী (رحمة الله) (৯১১হি.), আল খাসায়েসুল কুবরা, আরবী, বৈরুত, খন্ড: ১ম পৃ: ১০৬}

পোড়া হাত ভালো হওয়া
____________________
পোড়া হাত ভালো হওয়া-

❏ ইমাম বুখারী তারীখ গ্রন্থে বর্ণনা করেন, মুহাম্মদ ইবনে হাতেব (رضي الله عنه) বর্ণনা করেন, আমার উম্মে জামিল আমাকে বলেছেন যে, আমি তােমাকে হাবশা থেকে নিয়ে মদীনায় আগমণ করি। একরাতে আমি মদীনা শরীফে চুলায় ডেকচি তুলে রান্না করতেছি। লাকড়ি শেষ হয়ে গেলে আমি লাকড়ি আনতে গেলে তুমি ডেকচিতে হাত দিলে ডেকচি উল্টে তােমার বাহুতে পড়ে হাত পুড়ে গিয়েছিল। আমি তােমাকে নবী করিম (ﷺ) এর কাছে নিয়ে গেলে তিনি আমার বাহুতে লালা মােবারক লাগিয়ে দিতে দিতে এই দোয়া পাঠ করলেন

 اذهب البأس رب الناس اشف أنت الشافي لا شفاء الا شفائك شفاء لا يغادر سقما

তখন আমি তাঁর সম্মুখ থেকে এখনাে উঠিনি তােমার হাত ভাল হয়ে গিয়েছে। ●৩০৪
_____________________________
304.{ইউসূফ নাবহানী (رحمة الله), হুজ্জাতুল্লাহি আলাল আলামীন, উর্দু, গুজরাট, খন্ডঃ ১ম পৃ: ৬৮৬}

❏ ইমাম বায়হাকী ও আবু নঈম (رحمة الله) রাসূল ত’র আযাদকৃত দাসী রাজিনা থেকে বর্ণনা করেন, রাসূল (ﷺ) আশুরার দিন নিজের ও হযরত ফাতেমা (رضي الله عنه)’র দুধপানকারী শিশুদেরকে ডেকে তাদের মুখে থু থু দিতেন। তারপর তাদের মা দেরকে বলতেন,

لا ترضعهم إلى الليل فكان ربقة يجزيهم.

আজ রাত পর্যন্ত এদেরকে দুধ পান করাইওনা, কেননা তাঁর লালা মােবারক তাদের পানাহরের জন্য যথেষ্ট হয়ে যেতাে। ●৩০৫
_____________________________
305.{ইমাম সুয়ূতী, জালাল উদ্দিন সুয়ূতী (رحمة الله) (৯১১হি.), আল খাসায়েসুল কুবরা, আরবী, বৈরুত, খন্ড: ১ম পৃ: ১০৫}

❏ ইমাম তাবরানী ও ইবনে আসাকের (رحمة الله) হযরত আবু হােরায়রা (رضي الله عنه) থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, আমরা রাসূল (ﷺ)র সাথে এক সফরে বের হলাম। পথে হযরত হাসান ও হােসাইন (رضي الله عنه)’র ক্রন্দনের আওয়াজ আসল। তারা উভয়ই তাদের মা হযরত ফাতেমা (رضي الله عنه)'র কাছে নবী করিম (ﷺ) দ্রুত তাঁর কাছে গিয়ে বললেন, আমার সন্তানদের কি হয়েছে, তারা কাঁদতেছে কেন? ফাতেমা (رضي الله عنه) বলেন, পিপাসা লেগেছে তাই কাঁদতেছে।

তিনি পানি তালাশ করলেন কিন্তু এক ফোঁটাও পাওয়া যায়নি। তখন তিনি হযরত ফাতেমা (رضي الله عنه) কে বললেন, তাদের একজনকে আমাকে দাও। তিনি (ফাতেমা) পর্দার আড়াল থেকে একজনকে দিলে রাসূল তাঁর বক্ষে লাগালেন আর উচ্চস্বরে কাঁদতে লাগল। তারপর তিনি তাঁর জ্বিহবা মােবারক তার মুখে রাখলে সে চুসতে লাগল আর ক্রন্দন বন্ধ করে চুপ হয়ে গেল। এভাবে অপরজনও কাঁদতে লাগলে, তাকেও অনুরূপ করলে সেও ক্রন্দন বন্ধ করে চুপ হয়ে গেল। এভাবে উভয় ছেলে চুপ হয়ে গেল আর তাদের ক্রন্দনের শব্দ শুনা যায়নি। ●৩০৬
_____________________________
306.{ইমাম সুয়ূতী, জালাল উদ্দিন সুয়ূতী (رحمة الله) (৯১১হি.), আল খাসায়েসুল কুবরা, আরবী, বৈরুত, খন্ডঃ ১ম পৃ: ১০৬}

চোখ মােবারক
____________________
চোখ মােবারক

عن عائشة رضي الله عنها كان رسول الله صلى الله عليه وسلم يرى في الظلماء كما يرى في

❏ হযরত আয়েশা সিদ্দিকা (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত, রাসূল (ﷺ) আলােতে যেরূপ দেখতেন অনুরূপ ঘাের অন্ধকারেও দেখতেন। (বায়হাকী)

❏ ইমাম বুখারী ও ইমাম মুসলিম (رحمة الله) হযরত আবু হােরাইরা (رضي الله عنه) থেকে বর্ণনা করেন,

أن رسول الله صلى الله عليه وسلم قال هل ترون قبلتی ههنا فوالله ما يخفى على ركوعكم ولاسجد وكم الى لأراكم وراء ظهرى (متفق عليه)

রাসূল (ﷺ) এরশাদ করেন, তােমরা মনে কর আমি শুধু সামনের দিকটা দেখি? খােদার শপথ তােমাদের রুকু, সিজদা আমার অগােচরে নয়। আমি তােমাদেরকে আমার পিঠের তথা পিছনে দিক দিয়েও দেখি। (বুখারী মুসলীম) ৩০৭
_____________________________
307.{ইউসূফ নাবহানী (رحمة الله) (১৩৫০হি), হুজ্জাতুল্লাহি আলাল আলামীন, উর্দু, গুজরাট, খন্ড: ২য় পৃ: ৩৬৯ }

عن ابن عباس قال كان رسول الله صلى الله عليه وسلم يري بالليل في الظلمة كما يرى بالنهار
من الضوء -

❏ হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুল (ﷺ) দিনের আলােয় যেভাবে দেখতেন রাতের অন্ধকারেও অনুরূপ দেখতেন। ●৩০৮
_____________________________
308.{(বায়হাকী) (ড. মুস্তফা মুরাদ, মু'জিযাতুর রাসূল (ﷺ), আরবী, কায়রাে, মিশর, পৃ: ১৪৪)}

❏ হযরত আনাস ও আবু হােরাইরা (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত, নবী করিম (ﷺ) নামাযে দণ্ডায়মান হলে বলতেন, তােমরা কাতার সােজা কর এবং সবাই সমান হয়ে দাঁড়াও। কেননা, আমি তােমাদেরকে পেছন থেকেও দেখি যেভাবে সামনে থেকে দেখি। ●৩০৯
_____________________________
309.{ আবু নঈম ইস্পাহানী (رحمة الله) (৪৩০হি.), দালায়েলুন নবুয়ত, উর্দু, দিল্লী, পৃ: ৩৯০}

❏ হযরত আবু হােরাইরা (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল (ﷺ) আমাদেরকে যােহরের নামায পড়ালেন। একেবারে শেষ কাতারে একজন মুসল্লী নামাযে খারাপ কিছু করল। রাসূল সালাম ফিরিয়ে তাকে ডাক দিয়ে বললেন, হে অমুক ব্যক্তি! তুমি কি আল্লাহ কে ভয় করনা, তুমি কিভাবে নামায পড়তেছ তা দেখবেনা? -

انكم ترون يخفي علي شئ مما تصنعون والله إني لأراى من خلفي لما راى من بين يدي.

তােমরা মনে কর যে, তােমাদের আমল আমার অগােচরে থাকে। খােদার শপথ, আমি সামনে যেভাবে দেখি পিছনেও অনুরূপ দেখি। ●৩১০
_____________________________
310.{ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল (رحمة الله) (২৪১হি.) সূত্র, মিশকাত শরীফ, আরবী, পৃ: ৭৭}

নবী (ﷺ) এর শ্রবণশক্তি ও দৃষ্টিশক্তি
____________________
নবী (ﷺ) এর শ্রবণশক্তি ও দৃষ্টিশক্তি

❏ ইমাম তিরমিযি, ইবনে মাজাহ ও আবু নঈম (رحمة الله) হযরত আবু যর গিফারী (رضي الله عنه) থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, রাসূল (ﷺ) এরশাদ করেন, আমি যা দেখতে পাই তােমরা তা দেখনা। আমি যা শুনতে পাই তােমরা শুননা। আসমান গুড় গুড় আওয়াজ দিচ্ছে আর এরূপ করাই উচিত। আসমানে চার আঙ্গুল পরিমান জায়গা খালি নাই যেখানে ফেরেস্তাগণ আল্লাহর উদ্দেশ্যে সিজদারত নেই। অর্থাৎ পুরাে আসমানে পেরেস্তাগণ সিজদায় নিয়ােজিত আছেন।

❏ আবু নঈম (رحمة الله) হযরত হাকীম ইবনে হাযাম (رضي الله عنه) থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, একদা আমরা সাহাবায়ে কেরাম নবী করিম এর সাথে ছিলাম। হঠাৎ করে তিনি সাহাবাগণকে বললেন,  

تسمعوني ما اسمع؟

আমি যা শুনতে পাচ্ছি তােমরা কি শুনতেছ? তারা বলল, না আমরা কিছুই শুনতে পাচ্ছিনা। তিনি বলেন-

اني لا اطيط اسمع السماء وما تلام تئط ما فيها موضع شبر الا و عليه ملك ساجد او قائم.

আমি শুনতেছি, আসমান গুড় গুড় করে শব্দ করতেছে এরূপ করাই উচিত। সেখানে এক বিগত পরিমাণ জায়গাও খালি নেই যেখানে ফেরেস্তাগণ সিজদা কিংবা দণ্ডায়মান অবস্থায় নেই। ●৩১১
_____________________________
311.{ইমাম সুয়ূতী, জালাল উদ্দিন সুয়ূতী (رحمة الله) (৯১১হি.), আল খাসায়েসুল কুবরা, আরবী, বৈরুত, খণ্ড: ১ম পৃ: ১১৩}

কবরের আযাব শ্রবণ
____________________
কবরের আযাব শ্রবণ

❏ ইমাম মুসলিম (رحمة الله) হযরত যায়েদ ইবনে সাবিত (رضي الله عنه) থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, নবী করিম (ﷺ) খচ্চরে আরােহণ করে বনী নাজ্জারের বাগান দিয়ে যাচ্ছিলেন। আমরা তাঁর সাথে ছিলাম। হঠাৎ খচ্চর থেমে গিয়ে গতি পরিবর্তন করল এমনভাবে তাঁকে পিট থেকে ফেলে দেওয়ার উপক্রম হল। তিনি সেখানে চার, পাঁচ কিংবা ছয়টি কবর দেখতে পেলেন। তিনি জানতে চাইলেন যে, এই কবর বাসীদেরকে কেউ চিনে কিনা? জনৈক ব্যক্তি বলল, আমি এদেরকে চিনি। তিনি জিজ্ঞেস করলেন এরা কখন মৃত্যুবরণ করেছে? লােকটি বলল, তারা শিরীক অবস্থায় মারা গিয়েছে।

তখন তিনি বললেন, তারা আপন আপন কবরে আযাবে লিপ্ত যদি তােমাদেরকে দাফন করা না হত তবে আমি আল্লাহর কাছে দোয়া করতাম যেন আল্লাহ তায়ালা তােমাদেরকেও কবর আযাবের শব্দ শুনান যা আমি শুনতেছি।” ৩১২
_____________________________
312.{ইমাম সুয়ূতী, জালাল উদ্দিন সুয়ূতী (رحمة الله) (৯১১হি.), আল খাসায়েসুল কুবরা, আরবী, বৈরুত, খন্ড: ২য় পৃ: ১৪৮}

❏ ইমাম হাকেম (رحمة الله) হযরত আনাস (رضي الله عنه) থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, রাসূল (ﷺ) ও হযরত বেলাল (رضي الله عنه) জান্নাতুল বাকী দিয়ে যাচ্ছিলেন। তখন তিনি হযরত বেলাল (رضي الله عنه) কে জিজ্ঞেস করেন-

يا بلال هل تسمع ما اسمع؟

হে বেলাল! আমি যা শুনতেছি তুমি কি শুনতেছ? বেলাল আরজ করলেন, না, ইয়া রাসূলাল্লাহ। তিনি বললেন, তুমি কি এই কবরবাসীর আওয়াজ শুনতে পাচ্ছনা যাদেরকে আযাব দেওয়া হচ্ছে। ●৩১৩
_____________________________
313.{ইমাম সুয়ূতী, জালাল উদ্দিন সুয়ূতী (رحمة الله) (৯১১হি.), আল খাসায়েসুল কুবরা, আরবী, বৈরুত, খণ্ড: ২য় পৃ: ১৪৯}

মুমিনের সাথে জান্নাতী হুরের বিবাহ
____________________
মুমিনের সাথে জান্নাতী হুরের বিবাহ

❏ ইমাম ইস্পাহানী (رحمة الله) (আততারগীব গ্রন্থে) হযরত জাবির ইবনে আব্দুল্লাহ (رضي الله عنه) থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, আমরা রাসূল (ﷺ)র সাথে বের হলাম এবং একটি উন্মুক্ত ময়দান অতিক্রম করছিলাম। আমরা দেখলাম যে, একজন আরােহী আমাদের দিকে আসতেছে। তিনি তাকে জিজ্ঞেস করলেন, তুমি কোথা থেকে আসতেছ? সে বলল, আমার সম্পদ, সন্তান ও কাবীলা থেকে। তিনি জিজ্ঞেস করলেন, কোথায় যাওয়ার ইচ্ছে করেছ? সে বলল, রাসূল এর কাছে যাচ্ছি। তিনি বললেন, তুমি পৌঁছে গিয়েছ।

তিনি তাকে ইসলাম শিক্ষা দিলেন, সে মুসলমান হল। তার উটের পা ইঁদুরের গর্তে পড়ে মাটিতে পড়ে গেল ফলে সে উট থেকে পড়ে মৃত্যুবরণ করল। রাসূল গলায় বললেন, আমি দেখলাম যে দু’জন ফেরেস্তা তার মুখে জান্নাতের ফল দিচ্ছে।

❏ ইবনে আসাকের (رحمة الله) হযরত ইবনে মাসউদ (رضي الله عنه) থেকে অনুরূপ হাদিস বর্ণনা করেন, তবে ঐ হাদিসে এতটুকু বাড়তি আছে। নবী করিম (ﷺ) তার কবরে নামলেন এবং দীর্ঘক্ষণ অবস্থান করার পর বেরিয়ে এসে বললেন, তার কবরে বড় বড় চোখ বিশিষ্ট জান্নাতী হুর অবতরন করল আর প্রত্যেকেই আরজ করল- ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমাদেরকে তার সাথে বিবাহ দেন। অর্থাৎ আমাদেরকে তার স্ত্রী বানিয়ে দিন। আমি তন্মধ্যে সত্তরজন হুরকে তার সাথে বিবাহ করিয়ে দিলাম।

এই হাদিস দ্বারা প্রমাণিত হল যে, রাসূল ’র ইখতিয়ার আছে যে, তিনি চাইলে যে কোন মুমিনের সাথে যে কোন হুরকে বিবাহ দিতে পারেন যেভাবে দুনিয়ার যে কোন মহিলাকে যে কারাে সাথে বিবাহ দেওয়ার অধিকার রাখেন। ●৩১৪
_____________________________
314.{ইমাম সুয়ূতী, জালাল উদ্দিন সুয়ুতী (رحمة الله) (৯১১হি.), আল খাসায়েসুল কুবরা, আরবী, বৈরুত, খণ্ড: ২য় পৃ: ১৫০}

রক্ত মােবারক পবিত্র
____________________
রক্ত মােবারক পবিত্র

❏ হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে যুবাইর (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত, তিনি নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর খেদমতে হাযির হল। এ সময় তিনি সিঙ্গা লাগিয়েছিল। তিনি আমাকে বললেন, হে আব্দুল্লাহ! এই রক্ত গুলাে এমন জায়গায় ফেলে এসাে, যেখানে কেউ দেখবে না। আব্দুল্লাহ রক্ত নিয়ে গিয়ে তা পান করে চলে আসল। তিনি জিজ্ঞেস করলেন, আব্দুল্লাহ! রক্ত কি করেছ? সে উত্তর দিল ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমি এমন গােপন স্থানে ঢেলে দিয়েছি যেখানে সর্বদা মানুষের অগােচরে থাকবে। তিনি বললেন, সম্ভবত তুমি তা পান করেছ। সে বলল, হ্যা। অনেকেই মনে করত আব্দুল্লাহ (رضي الله عنه) শক্তিশালী হওয়া ঐ রক্ত মােবারকের বরকতেই হয়েছিল। ●৩১৫
_____________________________
315.{ইউসূফ নাবহানী (رحمة الله), হুজ্জাতুল্লাহি আলাল আলামীন, উর্দু, গুজরাট, খণ্ড: ২য় পৃ: ৩৮১}

পেশাব মােবারক পানে দোযখ হারাম
____________________
পেশাব মােবারক পানে দোযখ হারাম

❏ ইমাম তাবরানী ও বায়হাকী (رحمة الله) বিশুদ্ধ সনদে হযরত হাকীমাহ বিনতে উমাইমাহ (رضي الله عنه) থেকে বর্ণনা করেন, তিনি তার মা থেকে বর্ণনা করেন, তার মা বলেন, রাসূল (ﷺ) একটি কাঠের পেয়ালায় পেশাব করতেন এবং তা তাঁর খাটের নীচে রেখে দিতেন। এক রাতে তিনি উঠে জিজ্ঞেস করেন, পেশাবের পেয়ালা কোথায়? উত্তরে বলা হল যে, হযরত উম্মে সালমা (رضي الله عنه)'র সেই খাদেমা বাররাহ তা পান করে ফেলেছে যে উম্মে সালমার সাথে হাবশা থেকে এসেছিল।

তখন নবী করিম টি এরশাদ করেন,

لقد احتظرت من النار بحظار.

অর্থাৎ জাহান্নামের আগুন তার উপর হারাম হয়ে গেল। ●৩১৬
_____________________________
316.{ইমাম সুয়ূতী, জালাল উদ্দিন সুয়ূতী (رحمة الله) (৯১১হি.), আল খাসায়েসুল কুবরা, আরবী, বৈরুত, খণ্ড: ২য় পৃ: ৪৪১}

❏ হযরত আনাস (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করিম (ﷺ) নামাযে দীর্ঘ কিয়াম করতেন। তিনি নিজের ঘরে অবস্থিত একটি কূপে পেশাব করতেন। ফলে পুরাে মদীনা শরীফে ঐ কূপের চেয়ে মিষ্টি পানি ওয়ালা কূপ ছিলনা। তাঁর ঘরে কোন মেহেমান আসলে তিনি সেই কূপ থেকে মিঠা পানি এনে দিতেন। জাহেলী যুগে সেই কূপের নাম ছিল আল বরূদ। ●৩১৭
_____________________________
317.{আবু নঈম ইস্পাহানী (رحمة الله) (৪৩০হি.), দালায়েলুন নবুয়ত, উর্দু, দিল্লী, পৃ: ৩৯৩।}

মল মােবারক পাক
____________________
মল মােবারক পাক

❏ উম্মুল মু'মিনিন হযরত আয়েশা (رضي الله عنه) বর্ণনা করেন, রাসূল (ﷺ) প্রকৃতিক প্রয়ােজনে বায়তুল খালা-এ তাশরীফ নিলে প্রয়ােজন শেষে আমি ভিতরে গিয়ে কস্তুরীর সুগন্ধি ব্যতীত কিছুই পেতাম না। আমি এ কথা তাঁকে বললে, তিনি বলেন-

انا معاشر الأنبياء نبتت اجسادنا على ارواح اهل الجنة فما خرج منها من شي ابتلعته الأرض.

আমরা আম্বিয়ায়ে কিরামগণের শরীর জান্নাতীদের শরীরের ন্যায় সৃষ্টি করা হয়েছে। এদের থেকে যা কিছু বের হয় মাটি তা গিলে ফেলে। ●৩১৮
_____________________________
318.{ইউসূফ নাবহানী (رحمة الله) (১৩৫০হি.), হুজ্জাতুল্লাহি আলাল আলামীন, উর্দু, গুজরাট, খণ্ড: ২য় পৃ: ৩৮২}

❏ ইমাম তাবরানী ও আবু নঈম (رحمة الله) হযরত সালমান ফার্সী (رضي الله عنه) থেকে বর্ণনা করেন, তিন রাসূল (ﷺ)র দরবারে প্রবেশ করে সেখানে হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে যুবাইর (رضي الله عنه) কে দেখেন যে, তার সামনে একটি পাত্রে পানীয় জাতীয় বস্তু রয়েছে আর তিনি তা পান করতেছেন। রাসূল (ﷺ) তাকে জিজ্ঞেস করলেন, রক্ত কি করেছ? উত্তরে তিনি বলেন,

اني احببت ان يكون من دم رسول الله صلى الله عليه وسلم في جوفي.

 অর্থাৎ রাসূল (ﷺ)র রক্ত মােবারক আমার পেটে থাকাটাই আমি ভালবাসি। সে জন্য আমি তা পান করে ফেলেছি। তখন রাসূল (ﷺ) এরশাদ করেন-

ويل لك من الناس وويل للناس منك لاتمسك النار الاقسم المين.319
_____________________________
319.{ইমাম সুয়ূতী, জালাল উদ্দিন সুয়ূতী র (৯১১হি.), আল খাসায়েসুল কুবরা, আরবী, বৈরুত, খণ্ড: ২য় পৃ: ৪৪০}

রক্ত মােবারক পানে জাহান্নামের আগুন হারাম হওয়া
____________________
রক্ত মােবারক পানে জাহান্নামের আগুন হারাম হওয়া

❏ ইমাম দারে কুতনী (رحمة الله) হযরত আসমা বিনতে আবি বকর (رضي الله عنه) থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, নবী করিম (ﷺ) একদা সিঙ্গা লাগিয়ে রক্ত বের করে আমার ছেলেকে রাখতে দেন। সে রক্ত পান করে ফেলল। হযরত জিব্রাঈল (عليه السلام) এসে এ ব্যাপারে তাঁকে অবহিত করলে তিনি জিজ্ঞেস করলেন তুমি কি করেছ? সে উত্তর দিল আপনার রক্ত মােবারক মাটিতে ফেলে দেওয়া আমার পছন্দ হয়নি তাই আমি তা পান করে ফেলেছি। তখন নবী করিম এরশাদ করেন-

لا تمسك النار.

তােমাকে জাহান্নামের আগুনে স্পর্শ করবে না। আর তিনি তার মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বলেন

ويل للناس منك وويل لك من الناس. ৩২০
_____________________________
320.{ইমাম জালাল উদ্দিন সুয়ূতী (رحمة الله) (৯১১হি.), আল খাসায়েসুল কুবরা, আরবী, বৈরুত, খণ্ড: ২য় পৃ: ৪৪০}

রাসূল (ﷺ)’র রক্ত প্রসংশিত হওয়া
____________________
রাসূল (ﷺ)’র রক্ত প্রসংশিত হওয়া-

❏ ইমাম হাকেম (رحمة الله) হযরত আবু সাঈদ খুদুরী (رضي الله عنه) থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, উহুদ যুদ্ধের দিন রাসূল (ﷺ)র মাথা মােবারকে আঘাত লেগেছিল। আমার পিতা এসে তাঁর মাথা মােবারক থেকে নির্গত রক্ত মােবারক মুখে চুসে নিয়ে পান করে ফেলল। তখন তিনি এরশাদ করেন, কেউ যদি এমন ব্যক্তি দেখতে চায় যার রক্তের সাথে আমার রক্ত মিশে গিয়েছে তাহলে সে যেন মালেক ইবনে সানান (رضي الله عنه) কে দেখে নেয়। তাবরানী’র অপর বর্ণনায় আছে, তার রক্ত আমার রক্তের সাথে মিশে গেল। আর তাকে জাহান্নামের আগুন স্পর্শ করবে না।” ৩২১
_____________________________
321.{ইমাম সুয়ূতী, জালাল উদ্দিন সুয়ুতী (رحمة الله) (৯১১হি.), আল খাসায়েসুল কুবরা, আরবী, বৈরুত, খণ্ড: ২য় পৃ: ৪৪১}

পেশাব মােবারক পেটের উপশম 
____________________
পেশাব মােবারক পেটের উপশম

❏ আবু ইয়ালা হাকেম, দারে কুতুনী, তাবরানী ও আবু নঈম (رحمة الله) হযরত উম্মে আইমান (رضي الله عنه) থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, নবী করিম (ﷺ) একবার রাত্রে একটি মাটির পাত্রে পেশাব করেছিলেন। আমি রাতে ঘুম হতে উঠলাম এবং প্রচণ্ড পিপাসার্ত ছিলাম। ফলে আমি ঐ পাত্র থেকে পেশাব পান করেছি। সকালে উঠে আমি ঘটনা তাঁকে অবহিত করলাম তখন। তিনি একটু হেসে বললেন-

اما انك لا يتجعن بطنك ابدا

তােমার পেটে কখনাে ব্যাথা হবে না।

হযরত আবু ইয়ালা (رحمة الله)'র মতে রাসূল (ﷺ) এরূপ বলেছিলেন-

انك لن تشتكي بطنك بعد يومك هذا ابدا.

অর্থাৎ আজ থেকে কোন দিন তােমার পেটের রােগ হবে না। ●৩২২
_____________________________
322.{ইমাম সুয়ূতী, জালাল উদ্দিন সুয়ূতী (رحمة الله) (৯১১হি.), আল খাসায়েসুল কুবরা, আরবী, বৈরুত, খণ্ড: ২য় পৃ: ৪৪১}

কেশ লােম মােবারক
____________________
কেশ লােম মােবারক

❏ হযরত ইবনে সীরীন (رحمة الله) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি আবীদা (رحمة الله)কে বললাম, আমাদের কাছে নবী করিম (ﷺ)'র একটি কেশ মােবারক রয়েছে যা আমরা আনাস (رضي الله عنه)'র কাছে থেকে কিংবা আনাস (رضي الله عنه)’র পরিবারের থেকে পেয়েছি। তিনি বললেন, তাঁর একটি কেশ মােবারক আমার কাছে থাকাটা সারা পৃথিবী এবং পৃথিবীর মধ্যে যা কিছু আছে তা পাওয়ার চাইতে বেশী পছন্দনীয়। ●৩২৩
_____________________________
323.{ইমাম বুখারী, মুহাম্মদ ইবনে ইসমাঈল বুখারী (رحمة الله) (২৫৬হি.), সহীহ বুখারী শরীফ, আরবী, ইউপি, ইন্ডিয়া, খণ্ড: ১ম পৃ: ২৯}

চুল মােবারক
____________________
চুল মােবারক

❏ ইমাম বায়হাকী (رحمة الله) ইবনুল আসীর (رحمة الله) উসদুল গাবাহ' গ্রন্থে হযরত খালেদ বিন ওয়ালিদ (رضي الله عنه) থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, আমরা নবী করিম (ﷺ)র সাথে উমরাহ করেছিলাম। তিনি মাথা মােবারক মুণ্ডলে সাহাবায়ে কিরাম চুল মােবারক নিতে ঝাপিয়ে পড়ল। আমি এগিয়ে গিয়ে তাঁর কপালের চুল মােবারক তাবাররুক হিসেবে অর্জন করলাম। এটি আমি আমার টুপির অগ্রভাগে রেখে দিই। এরপর থেকে আমি যে দিকেই যুদ্ধে যেতাম বিজয় আমার পদচুম্বন করত। ●৩২৪
_____________________________
324.{ইউসূফ নাবহানী (رحمة الله) (১৩৫০হি.), হুজ্জাতুল্লাহি আলাল আলামীন, উর্দু, গুজরাট, খণ্ড: ২য় পৃ: ৩৩৮}

হাত মােবারকের মু'জিযা আঙ্গুল মােবারক দিয়ে পানি প্রবাহিত হওয়া
____________________
হাত মােবারকের মু'জিযা আঙ্গুল মােবারক দিয়ে পানি প্রবাহিত হওয়া:-

❏ হযরত আনাস (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত, নবী করিম (ﷺ)এর নিকট একটি পানির পাত্র আনা হল, তখন (মদীনার নিকটবর্তী) যাওরা’ নামক স্থানে অবস্থান করছিলেন। নবী করিম হয় তাঁর হাত মােবারক ঐ পাত্রে রেখে দিলেন আর তখনই পানি আঙ্গুলির ফাঁক দিয়ে উপচে পড়তে লাগল। ঐ পানি দিয়ে উপস্থিত সকলেই অজু করে নিলেন। কাতাদাহ (رحمة الله) বলেন,

আমি আনাস (رضي الله عنه) কে জিজ্ঞেস করলাম, আপনাদের লােক সংখ্যা কত ছিল? তিনি বললেন, আমরা তিনশ’ বা তিনশ’ এর কাছাকাছি ছিলাম। ●৩২৫
_____________________________
325.{ইমাম বুখারী, মুহাম্মদ ইবনে ইসমাঈল বুখারী (رحمة الله) (২৫৬হি.), সহীহ বুখারী শরীফ, আরবী, ইউপি,

ইন্ডিয়া, পৃ: ৫০৪ হাদিস নং ৩৩১৯}

দুই মশক পানি চল্লিশ জনে পান করা
____________________

দুই মশক পানি চল্লিশ জনে পান করা

❏ হযরত ইমরান ইবনে হােসাইন (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত, খায়বারের যুদ্ধ থেকে প্রত্যাবর্তনকালে তারা রাসূল (ﷺ) এর সাথে ছিলেন। তিনি বলেন, রাসূল সলঃ আমাকে অগ্রগামী দলের সাথে পাঠিয়ে দেন এবং আমরা ভীষণ তৃষ্ণার্ত হয়ে পড়লাম। এমতাবস্থায় আমরা পথ চলছি। হঠাৎ এক উষ্ট্রারােহিনী মহিলা আমাদের ন্যরে পড়ল। সে পানি ভর্তি দু’টি মশকের মধ্যখানে পা ঝুলিয়ে বসেছিল। আমরা তাকে জিজ্ঞেস করলাম, পানি কোথায়? সে বলল, আশেপাশে কোথাও পানি নেই। আমরা বললাম, তােমরা ও পানির স্থানের মধ্যে দূরত্ব কতটুকু? সে বলল, একদিন ও একরাতের দূরত্ব। আমরা তাকে বললাম, রাসূলুল্লাহর নিকট চল। সে বলল, রাসূলুল্লাহ কি? আমরা তাকে বাধ্য করে নবীর খেদমতে নিয়ে গেলাম। সে নবীর খেদমতে এসেও ঐ জাতীয় কথাবার্তাই বলল যা সে আমাদের সঙ্গে বলেছিল। তবে সে তাঁর নিকট বলল, সে কয়েকজন ইয়াতীম সন্তানের মাতা।

নবী তার মশক দু'টি নামিয়ে ফেলতে আদেশ করলেন। অতঃপর তিনি দুটির মুখে হাত মােবারক বুলালেন। আমরা তৃষ্ণাকাতর চল্লিশজন মানুষ পানি পান করে পিপাসা নিবারণ করলাম। তারপর আমাদের সকল মশক, বাসনপত্র পানি ভর্তি করে নিলাম। তবে উটগুলােকে পানি পান করান হয় নাই, এত সবের পরও মহিলার মশক দু’টি এত পানি ভর্তি ছিল যে, তা ফেটে যাওয়ার উপক্রম হয়ে গিয়েছিল। ●৩২৬
_____________________________
326.{ইমাম বুখারী, মুহাম্মদ ইবনে ইসমাঈল বুখারী (رحمة الله) (২৫৬হি.), সহীহ বুখারী শরীফ, আরবী, ইউপি,

ইন্ডিয়া, পৃ: ৫০৪ হাদিস নং ৩৩১৮}

হাত মােবারক থেকে ঝর্ণা প্রবাহিত হওয়া
____________________
হাত মােবারক থেকে ঝর্ণা প্রবাহিত হওয়া

❏ হযরত জাবির ইবনে আব্দুল্লাহ (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, হুদায়বিয়ায় অবস্থানকালে একদিন সাহাবায়ে কেরাম পীপাসায় কাতর হয়ে পড়লেন। নবী করিম (ﷺ)র সম্মুখে একটি (চামড়ার) পাত্রে অল্প পানি ছিল। তিনি অজু করলেন। তাঁর নিকট প্রচুর পানি আছে মনে করে সকলে ঐ দিকে ভীড় করতে লাগলেন। নবী করিম (ﷺ) বললেন, তােমাদের কি হয়েছে? তাঁরা বললেন, আপনার সম্মুখস্থ পাত্রের সামান্য পানি ব্যতীত অজু ও পান করার মত পানি আমাদের নিকট নেই।

নবী করিম (ﷺ) যখন ঐ পাত্রে হাত মােবারক রাখলেন তখনই তাঁর হাত উপচিয়ে ঝর্ণা ধারার ন্যায় দ্রুতগতি বেগে পানি বের হতে লাগলাে। আমরা সকলেই এই পানি থেকে পান করলাম ও অজু করলাম। বর্ণনাকারী সালিম বলেন, আমি জাবির (رضي الله عنه)কে জিজ্ঞেস করলাম, আপনারা কতজন ছিলেন? তিনি বললেন, আমরা যদি একলক্ষও হতাম তবুও আমাদের জন্য পানি যথেষ্ট হত। তবে আমরা ছিলাম মাত্র পনেরশ। ●৩২৭
_____________________________
327.{ইমাম বুখারী, মুহাম্মদ ইবনে ইসমাঈল বুখারী (رحمة الله) (২৫৬হি.), সহীহ বুখারী শরীফ, আরবী, ইউপি,

ইন্ডিয়া, পৃ: ৫০৫ হাদিস নং ৩৩২৩}

অল্প বয়স্ক ছাগল বাচ্চার স্তনে দুধ
____________________
অল্প বয়স্ক ছাগল বাচ্চার স্তনে দুধ-

❏ তায়ালুসী, ইবনে সা'দ, ইবনে আবি শায়বা, বায়হাকী ও আবু নঈম (رحمة الله) হযরত ইবনে মসউদ (رضي الله عنه) থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, আমি অপ্রাপ্ত বয়স্ক বালক ছিলাম এবং মক্কা মুকাররমায় উকবা ইবনে আবি মুয়ীতের ছাগল চড়াতাম। রাসূল (ﷺ) ও আবু বকর মুশরিকদের থেকে (হিজরতের সময়) গােপনে আমার কাছে আসলেন। উভয় হযরত আমাকে বললেন, হে বালক তােমার কাছে কি পান করার মত দুধ আছে? আমি বললাম, আমি আমানতদার। তারপর তাঁরা বললেন, তােমার কাছে কি এমন ছাগলের বাচ্চা আছে? যার সাথে আদৌ কোন পুরুষ ছাগলের মিলন হয়নি। আমি বললাম, হ্যা, আছে। আমি এ ধরণের ছাগল ধরে তাঁদের কাছে নিয়ে গেলাম। হযরত আবু বকর (رضي الله عنه) ওটাকে বাঁধলেন আর নবী করিম কে ছাগলের স্তন ধরলেন এবং কিছু দোয়া পড়ে স্তন মালিশ করলেন। সাথে সাথে চাগলের স্তন দুধে পূর্ণ হয়ে গেল।

হযরত আবু বকর (رضي الله عنه) পাথরের একটি পেয়ালা দিলেন রাসূল কে তিনি দুধ দোহন করে ঐ পেয়ালাতে নিলেন আর নিজে ও আবু বকর (رضي الله عنه) দুধ পান করলেন আমাকেও পান করালেন। অতঃপর তিনি ছাগলের স্তনকে উদ্দেশ্য করে বললেন, হে স্তন শুকিয়ে যাও। সাথে সাথে শুকিয়ে গিয়ে পূর্বের ন্যায় হয়ে গেল। ●৩২৮
_____________________________
328.{ইমাম সুয়ূতী, জালাল উদ্দিন সুয়ূতী (رحمة الله) (৯১১হি.), আল খাসায়েসুল কুবরা, আরবী, বৈরুত, খণ্ড: ২য় পৃ: ৪৪১}

যেহেতু উক্ত ছাগল স্তনের দুধ রাসূল (ﷺ)'র হাত মােবারক ও দোয়ার বরকতে এসেছিল সেহেতু দুধপান করা বৈধ হয়েছিল। লেখক।

দূর্বল ও অসুস্থ ছাগল থেকে প্রচুর দুধ দোহন করা
____________________
দূর্বল ও অসুস্থ ছাগল থেকে প্রচুর দুধ দোহন করা-

❏ ইমাম বগভী, ইবনে শাহীন, ইবনে সাকন, ইবনে মুনদাহ, তাবরানী, হাকেম, বায়হাকী ও আবু নঈম (رحمة الله) হুবাইশ ইবনে খালেদ থেকে বর্ণনা করেন, রাসূল (ﷺ) আবু বকর ও তাঁর গােলাম ফুহাইরা এবং তাদের পথ প্রদর্শক আব্দুল্লাহ ইবনে আরকীত মক্কা থেকে মদীনা হিযরতের সময় উম্মে মা’বাদের দুই তাঁবুর পাশ দিয়ে গমণ করছিলেন। উম্মে মাবাদ ছিলেন বয়স্ক ও অত্যন্ত বিচক্ষণ। তিনি তাঁবুর বাইরে চাদর মুড়িয়ে বসে থাকতেন আর পথিককে পানাহার করাতেন। তারা তার কাছ থেকে মাংস ও খেজুর কিনতে চাইলেন কিন্তু কিছুই পেলেন না। অতঃপর রাসূল (ﷺ) তাঁবুর এক পাশে একটি ছাগল দেখে জিজ্ঞেস করেন- হে উম্মে মাবাদ! এটা কি রকম ছাগল? উম্মে মা'বাদ উত্তর দিলেন, ছাগলটি রােগে দূর্বল হওয়ায় অন্যান্য ছাগলের সাথে চারণভূমিতে যেতে অক্ষম। তিনি জিজ্ঞেস করলেন, এটাতে দুধ পাওয়া যাবে? উম্মে মা'বাদ উত্তর দিলেন, ছাগলটি খুবই অসুস্থ। তিনি বললেন, তুমি আমাকে এটা থেকে দুধ দোহন করতে অনুমতি দেবে? উত্তরে উম্মে মা'বাদ বললেন, আপনি যদি দুধ পাবেন বলে মনে করেন তবে দোহন করুন।

রাসূল (ﷺ) দুর্বল অসুস্থ ছাগলটি আনালেন এবং স্তনে স্বীয় হাত মােবারক মালিশ করলেন আর আল্লাহর নাম নিয়ে উম্মে মা’বাদের জন্য এবং তার ছাগলের জন্য দোয়া করেন। সাথে সাথে ছাগল দুধ দোহনের জন্য পা ফাঁক করে দিয়ে স্তনে দুধ ভর্তি করে দিল। তিনি দশজনের জন্য যথেষ্ট হয় এমন এক বড় পাত্র সংগ্রহ করে তাতে দুধ দোহন করেন এবং পাত্র উপছে পড়ার উপক্রম হল। তারপর প্রথমে উম্মে মা'বাদকে তারপর স্বীয় সাথীদেরকে পরিতৃপ্ত করে পান করালেন। সর্বশেষে তিনি নিজে দুধ পান করেন। এভাবে সবাই দ্বিতীয়বার দুধ পান করেন। এরপর তিনি পাত্রে দ্বিতীয়বার দুধ দোহন করেন। এবারও দুধে পাত্র পূর্ণ হয়ে যায়। এই দুধ উম্মে মা’বাদকে দিয়ে তার থেকে বাইয়াত গ্রহণ করে চলে যান।

এর কিছুক্ষণ পর উম্মে মা’বাদের স্বামী আবু মা’বাদ জঙ্গল থেকে দুর্বল ছাগলগুলাে নিয়ে এসেছেন। তিনি দুধ দেখে অবাক হয়ে বললেন, তােমার কাছে দুধ কোথা হতে আসল? অথচ ছাগল চারণভূমিতে দূরে ঘরে অবস্থান করতেছে। তখন উম্মে মা'বাদ বললেন, খােদার কসম, আমাদের পাশ দিয়ে এমন বরকতময় ব্যক্তির গমণ হয়েছে যার অবস্থা এরূপ এরূপ। তিনি তার স্বামীকে রাসূল (ﷺ) এর পরিচয় ও গুণাবলী পুঙ্খানুঙ্খরূপে বর্ণনা করেন। ●৩২৯
_____________________________
329.{ইমাম সুয়ূতী, জালাল উদ্দিন সুয়ূতী (رحمة الله) (৯১১হি.), আল খাসায়েসুল কুবরা, আরবী, বৈরুত, খণ্ড: ১ম পৃ: ৩০৯}

❏ ইবনে সা’দ ও আবু নঈম (رحمة الله) ওয়াকেদীর সূত্রে বর্ণনা করেন, উম্মে মা’বাদ বর্ণনা করেন, যে ছাগলটির স্তনে নবী করিম (ﷺ) হাত মােবারক মালিশ করে দুধ দোহন করেছিলেন ঐ ছাগলটি আমাদের কাছে হযরত ওমর ফারুক (رضي الله عنه)'র যামানা পর্যন্ত ছিল। সকাল-সন্ধ্যা আমরা ওটা থেকে দুধ দোহন করতাম অথচ অনাবৃষ্টি ও দুর্ভিক্ষের কারণে ঘাস বা ছাগলের খাবার যােগ্য কিছুই ছিলনা। ●৩৩০
_____________________________
330.{ইমাম সুয়ূতী, জালাল উদ্দিন সুয়ূতী (رحمة الله) (৯১১হি.), আল খাসায়েসুল কুবরা, আরবী, বৈরুত, পৃ: ৩১১}

চেহারা হল পুর্ণিমার চাঁদের ন্যায়
____________________
চেহারা হল পুর্ণিমার চাঁদের ন্যায়-

❏ ইমাম বুখারী (তারীখ গ্রন্থে) ইমাম বঘভী ও ইবনে মুনদাহ (আস সাহাবাহ) নামক গ্রন্থে সায়্যেদ ইবনে আলা ইবনে বিশর থেকে তিনি তার পিতা তিনি তার দাদা বিশর ইবনে মুয়াবিয়া থেকে বর্ণনা করেন, তিনি তার পিতা মুয়াবিয়া ইবনে সওর (رضي الله عنه) এর সাথে নবী করিম (ﷺ)র দরবারে আগমন করেন। তিনি তার মাথায় হাত মেবারক মাসেহ করে দেন এবং তার জন্য দোয়া করেন। রাসূল ’র মাসেহের ফলে তার চেহারা পুর্ণিমার চাঁদের ন্যায় উজ্জ্বল ছিল এবং তিনি যাকে হাত বুলিয়ে দিতেন সেও রােগ ও দোষ মুক্ত হয়ে যেতাে। ●৩৩১
_____________________________
331.{ইমাম সুয়ূতী, জালাল উদ্দিন সুয়ূতী (رحمة الله) (৯১১হি.), আল খাসায়েসুল কুবরা, আরবী, বৈরুত, খণ্ড: ২য় পৃ: ৪৭}

স্মরণ শক্তি বৃদ্ধি
____________________
স্মরণ শক্তি বৃদ্ধি

❏ হযরত আবু হােরাইরা (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি বললাম, ইয়া রাসূলাল্লাহ আমি আপনার কাছ থেকে বহু হাদিস শুনি কিন্তু ভুলে যাই। তিনি বললেন তােমার চাদর খুলে ধর। আমি তা খুলে ধরলাম। তিনি দু'হাত আঞ্জলী করে তাতে কিছু ঢেলে দেওয়ার মত করে বললেন, এটা তােমার বুকের সাথে লাগিয়ে ধর। আমি তা বুকের সাথে লাগালাম। এরপর আমি কিছুই ভুলিনি। ●৩৩২
_____________________________
332.{ইমাম বুখারী, মুহাম্মদ ইবনে ইসমাঈল বুখারী (رحمة الله) (২৫৬হি.), সহীহ বুখারী শরীফ, আরবী, ইউপি, ইন্ডিয়া, পৃ: ২২}

সাপের বিষ নিষ্ক্রিয় হওয়া
____________________
সাপের বিষ নিষ্ক্রিয় হওয়া-

❏ হিজরতের সময় রাসূল (ﷺ)কে যখন হযরত আবু বকর (رضي الله عنه) সহ সত্তর পর্বতের গুহায় পৌঁছেন তখন হযরত আবু বকর (رضي الله عنه) গুহার ভিতরে যাওয়ার অনুমতি প্রার্থনা করেন, যাতে ভিতরে কোন কষ্টদায়ক বস্তু থাকলে তা থেকে তাঁকে নিরাপদে রাখা যায়। গর্তে প্রবেশ করে তিনি যে কয়টি ছিদ্র দেখলেন সব কয়টি কে তিনি আঙ্গুল দিয়ে চিপে বন্ধ করে দিলেন। তবে একটি ছিদ্র বড় ছিল বলে তিনি এর মুখে নিজের পায়ের মুড়ি দিয়ে চেপে রেখে মুখ বন্ধ করে দেন। অপর বর্ণনায় আছে যে, তিনি স্বীয় চাদর ছিড়ে ছােট ছিদ্রের মুখ বন্ধ করে ছিলেন। যখন কাপড় শেষ হয়ে গেল তখন তিনি বড় ছিদ্রে স্বীয় পা রেখে দিলেন। তিনি নবী করিম শঃ আরজ করলেন- আমি স্থান নিরাপদ করেছি এখন আসতে পারবেন।

রাসূল (ﷺ) গুহায় অবতরণ করলেন এবং একটু বিশ্রাম নিলেন। এদিকে হযরত আবু বকর (رضي الله عنه) সাপের বিষের যন্ত্রণায় ছটপট করতেছিলেন। সকাল হলে তিনি আবু বকর (رضي الله عنه)’র পা ফুলা দেখে জিজ্ঞেস করলেন, হে আবু বকর! তােমার পায়ে কি হয়েছে? তিনি আরজ করলেন, হুযূর! সাপে কেটেছে। রাসূল (ﷺ) এরশাদ করলেন, আমাকে বলনি কেন? তিনি আরজ করলেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আপনার ঘুমের ব্যাঘাত সৃষ্টি করতে আমার মনে সায় দেয়নি। তখন রাসূল স্বীয় হাত মােবারক হযরত আবু বকর (رضي الله عنه)'র পায়ের ধ্বংশন স্থানে বুলিয়ে দেন সাথে সাথে সাপের বিষ ও ফুলা অদৃর্শ হয়ে গেল। ●৩৩৩
_____________________________
333.{আব্দুর রহমান জামী (رحمة الله) (৮৯৮হি.), শাওয়াহেদুন নবুয়ত, উর্দু, বেরেলী, পৃ: ১১৪}

ভাঙ্গা পা সুস্থ হওয়া
____________________
ভাঙ্গা পা সুস্থ হওয়া

❏ হিজরতের চতুর্থ বছর নবী করিম (ﷺ) ও পাঁচজন ব্যক্তিকে খায়বর পাঠিয়েছিলেন সালাম ইবনে আবিত তাহকীক কে হত্যা করার জন্য। এদের মধ্যে হযরত আবু কাতাদাহ (رضي الله عنه) ও ছিলেন। তারা রাতের বেলায় তার ঘরে প্রবেশ করে তাকে হত্যা করে বাইরে চলে আসল। আবু কাতাদাহ তার কামান সেখানে ভুলে ফেলে এসেছিল। সে পুনরায় গিয়ে ভিতর থেকে কামান নিয়ে আসল তবে তার পায়ে প্রচণ্ড আঘাত লাগল। কেউ বলেন, তার পা ভেঙ্গে এই গিয়েছিল। সে পাগড়ী দিয়ে পা বেঁধে সঙ্গীদের কাছে চলে আসল। তারা তাকে পালা করে করে বহন করে নবী করিম 'র দরবারে নিয়ে আসল। তিনি তাঁর হাত মােবারক তার পায়ে বুলিয়ে দিলেন সাথে সাথে সে সুস্থ হয়ে গেল। ●৩৩৪
_____________________________
334.{আব্দুর রহমান জামী (رحمة الله) (৮৯৮হি.), শাওয়াহেদুন নবুয়ত, উর্দু, বেরেলী, পৃ: ১৩৯}

হাত মোবারকের মুজিযা - শয়তানের প্রতারণা থেকে মুক্তিলাভ
____________________
হাত মোবারকের মুজিযা - শয়তানের প্রতারণা থেকে মুক্তিলাভ-

❏ ইমাম আবু নঈম (رحمة الله) হযরত ওসমান ইবনে আবুল আস (رضي الله عنه) থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, নবী করিম (ﷺ) যখন আমাকে তায়েফ প্রেরণ করেন তখন আমার নামাযে ত্রুটি হতে লাগল। আমি নামাযে কি পড়ি তা আমার বােধগম্য হচ্ছে না। আমি নবী করিম এর কাছে এসে তাঁকে এ ব্যাপারে অবহিত করলে তিনি বলেন, ওটা শয়তান। অর্থাৎ শয়তানে তােমার নামাযে এরূপ করতেছে। তুমি আমার কাছে এসাে। আমি তাঁর কাছে গেলে তিনি বললেন, মুখ খুল। তিনি আমার বক্ষে হাত মােবারক মেরে আমার মুখে লালা মােবারক দিয়ে বললেন,

اخرج عدو الله.

বেরিয়ে যা, আল্লাহর শত্রু। তিনি তিনবার এরূপ করে আমাকে বললেন, তুমি তােমার আমল করতে থাক। এরপর থেকে শয়তান আমাকে আর ওয়াসওয়াসা দিতে পারে নি।

স্মরণ শক্তি বৃদ্ধি-১
____________________
স্মরণ শক্তি বৃদ্ধি

❏ ইমাম বায়হাকী ও আবু নঈম (رحمة الله) হযরত ওসমান ইবনে আবুল আস (رضي الله عنه) থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, আমি রাসূল কে আমার স্মরণ শক্তি হ্রাস পাওয়া সম্পর্কে অবহিত করে বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! আমি পবিত্র কুরআন মুখস্থ করতে পারছি না। তিনি বললেন, এটা খানব’ নামক শয়তানের কাজ। হে ওসমান! আমার কাছে এসাে। তারপর তিনি তাঁর হাত মােবারক আমার বক্ষে রাখেন যার শীতল প্রভাবে আমার দু’কাঁধের মধ্যখানে অনুভব করেছি। অতঃপর তিনি বললেন,

اخرج يا شيطان من صدر عثمان.

 হে শয়তান! ওসমানের বক্ষ থেকে বেরিয়ে যা, এরপর থেকে আমার স্মরণ শক্তি এত প্রখর হল যে, যখন যা শুনতাম তা মুখস্থ করে ফেলতাম। ●৩৩৫
_____________________________
335.{ইমাম সুয়ূতী, জালাল উদ্দিন সুয়ুতী (رحمة الله) (৯১১হি.), আল খাসায়েসুল কুবরা, আরবী, বৈরুত, খণ্ড: ২য় পৃ: ২৪৭}

চেহারা আলােকিত হওয়া
____________________
চেহারা আলােকিত হওয়া-

❏ হযরত ইবনে সা’দ বলেন, যিয়াদ ইবনে আব্দুল্লাহ ইবনে মালেক (رضي الله عنه) নবী করিম এর দরবারে প্রতিনিধি হয়ে আসেন। রাসূল তার জন্য দোয়া করেন এবং হাত মােবারক তার মাথায় বুলিয়ে নাক পর্যন্ত এনেছেন। বনু হেলাল (হেলাল গােত্রের লােকেরা) বলত যে, যিয়াদের চেহরায় সর্বদা বরকতের চিহ্ন পরিস্ফুটিত হত।

জনৈক কবি আলী ইবনে যিয়াদের প্রসংশায় নিম্নোক্ত কবিতা রচনা করেন-

یا ابق الذي مسح الرسول برأسه + وعاء له بالخير عند المسجد

اعني زيادا لا اريد سواه + من غائر او متهم او منجد ما زال ذاك النور في عرنينه + حتى تبو أبيته في ملحد

হে ঐ ব্যক্তির সন্তান! যার মাথায় রাসূল হাত বুলিয়ে দিয়েছিলেন এবং মসজিদে তার জন্য দোয়া করেছিলেন। এর দ্বারা আমার উদ্দেশ্য হল যিয়াদ, অন্য কেউ নয়। রাসূল মা 'র হাত মােবারকের নূর যিয়াদের নাকের মধ্যে মৃত্যু পর্যন্ত পরিস্ফুটিত হয়েছিল। ●৩৩৬
_____________________________
336.{ইমাম সুয়ূতী, জালাল উদ্দিন সুয়ূতী (رحمة الله) (৯১১হি.), আল খাসায়েসুল কুবরা, আরবী, বৈরুত, খণ্ড: ২য় পৃ: ৩৩}

ঘােড়া থেকে পড়ে না যাওয়া
____________________
ঘােড়া থেকে পড়ে না যাওয়া- 

❏ আবু নঈম (رحمة الله) হযরত জাবির (رضي الله عنه) থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, আমি ঘােড়ায় শক্তভাবে বসতে পারতাম না। রাসূল (ﷺ) কে এ ব্যাপারে বললে তিনি স্বীয় হাত মােবারক আমার বক্ষে মেরে আমার জন্য এই দোয়া করেন-

اللهم ثبته واجعله هاديا.

হে আল্লাহ! তাকে মজবুত করে দাও এবং পথ প্রদর্শক বানিয়ে দাও। সে বলল, এরপর থেকে আমি আর ঘােড়া থেকে পড়ে যাইনি। ●৩৩৭
_____________________________
337.{ইমাম সুয়ুতী, জালাল উদ্দিন সুয়ূতী (رحمة الله) (৯১১হি.), আল খাসায়েসুল কুবরা, আরবী, বৈরুত, খণ্ড: ২য় পৃ: ৩৪ }

কূপের পানি উপচে পড়া
____________________
কূপের পানি উপচে পড়া

❏ রাসূল (ﷺ) তাবুকে পৌঁছার পূর্বেই সাহাবায়ে কিরামকে বলছিলেন, তােমরা আগামীকাল সকালে তাবুকে পৌঁছে যাবে তবে একটি কথা মনে রেখ যতক্ষণ আমি না আসবাে ততক্ষণ তােমরা সেখানকার পানি স্পর্শ করবে না। তারা পুরােদল সেখানে পৌঁছে দেখে কূপে পানি খুবই কম। রাসূল র কথা মতে কেউ পানিতে হাত দেয়নি। তিনি সেখানে তাশরীফ আনলে তিনি ঐ কূপের পানি দিয়ে হাত ধুইলে কুপের পানি পূর্ণ হয়ে উপছে পড়তে লাগল। সকল মুসলমানগণ প্রয়ােজন অনুসারে পানি পাত্রে ভরে নিল। তিনি হযরত মুয়ায (رضي الله عنه) কে বললেন, তােমার বয়স এত দীর্ঘায়ু হবে যে, এই কূপের পানি দিয়ে এই এলাকার বাগান সমূহে সেচ দিতে দেখবে। ●৩৩৮
 _____________________________
338.{আব্দুর রহমান জামী (رحمة الله) (৮৯৮হি.), শাওয়াহেদুন নবুয়ত, উর্দু, বেরেলী, পৃ: ১৭১}

হাত মােবারকের মু'জিযা ঝুলে পড়া চোখের পুতলি স্বস্থানে স্থাপন
____________________
হাত মােবারকের মু'জিযা ঝুলে পড়া চোখের পুতলি স্বস্থানে স্থাপন:

❏ হযরত ইবনে আদী, আবু ইয়ালা ও বায়হাকী (رحمة الله) আসেম ইবনে ওমর ইবনে কাতাদাহ থেকে তিনি তার দাদা কাতাদাহ ইবনে নােমান (رضي الله عنه) থেকে বর্ণনা করেন, বদর যুদ্ধের দিন তার চোখে আঘাত লাগল। ফলে চোখের পুতলি বের হয়ে চোয়ালে ঝুলে পড়ল। লােকেরা তা টেনে ফেলে দিতে উদ্যত হল এবং এ ব্যাপারে রাসূল (ﷺ) এর কাছে জিজ্ঞেস করলেন তারা। তিনি বললেন, না, তােমরা এরূপ করাে না। তিনি কাতাদাহ কে ডাকলেন এবং স্বীয় হাত মােবারক দিয়ে স্বস্থানে টিপ দিয়ে লাগিয়ে দিলেন। চোখটি এমনভাবে লেগে গেল যে, যেন চোখে কোন আঘাতই লাগেনি। অন্য বর্ণনায় আছে- কাতাদাহ (رضي الله عنه)'র দু’চোখের মধ্যে ঐ চোখটিই বেশী ভাল ও সুস্থ ছিল। ●৩৩৯
_____________________________
339.{ইমাম সুয়ূতী, জালাল উদ্দিন সুয়ূতী (رحمة الله) (৯১১হি.), আল খাসায়েসুল কুবরা, আরবী, বৈরুত, খণ্ড: ১ম পৃ: ৩৩৭।}

লাকড়ি হল তলােয়ার
____________________
লাকড়ি হল তলােয়ার

❏ ইমাম ওয়াকেদী, উমর ইবনে উসমান হাজাবী (رحمة الله) থেকে তিনি তাঁর পিতা থেকে তিনি তাঁর ফুফু থেকে বর্ণনা করেন, উক্কাশাহ ইবনে মিহসান (رضي الله عنه) বলেন, বদর যুদ্ধের দিন আমার তলােয়ার ভেঙ্গে গেল। রাসূল (ﷺ) আমাকে একটি লাকড়ি তথা গাছের ঢাল দান করলেন। দেখলাম ওটা একটা লম্বা সাদা ধবধবে তরবারী। আমি ওটা দিয়ে যুদ্ধ করলাম। অবশেষে আল্লাহ তায়ালা মুশরিকদের পরাজিত করলেন। ঐ তরবারী তার মৃত্যু পর্যন্ত তাঁর কাছেই ছিল। হাদিসখানা ইমাম বায়হাকী ও ইবনে আসাকের ও বর্ণনা করেন। ●৩৪০
_____________________________
340.{ইমাম সুয়ূতী, জালাল উদ্দিন সুয়ূতী (رحمة الله) (৯১১হি.), আল খাসায়েসুল কুবরা, আরবী, বৈরুত, খণ্ড: ১ম পৃ: ৩৩৮}

গাছের ঢাল হল তরবারী
____________________
গাছের ঢাল হল তরবারী-

❏ হযরত ওয়াকেদী ও বায়হাকী (رحمة الله) হযরত উসামা ইবনে যায়েদ লাহসী (رضي الله عنه) এবং বনী আসহাল গােত্রের অনেক লোক থেকে বর্ণনা করেন, বদর যুদ্ধের দিন সালমা ইবনে আসলাম ইবনে হারীস (رضي الله عنه)'র তলােয়ার ভেঙ্গে গেলে তিনি অস্ত্র বিহীন/ নিরস্ত্র হয়ে গেলেন। রাসূল (ﷺ) ইবনে তাব’ নামক গাছের ঢাল যা তাঁর হাত মােবারকে ছিল তা সালমাকে দিয়ে বললেন, এটা দিয়ে আঘাত কর। সাথে সাথে ঐ গাছের ঢাল তীক্ষ্ণ তরবারীতে রুপান্তরিত হয়ে গেল। (যা দিয়ে যুদ্ধ করেন) এই তরবারী জাসরে আবি উবাইদ-এ শাহাদত বরণ করা পর্যন্ত তার সাথে ছিল। ●৩৪১
_____________________________
341.{ইমাম সুয়ূতী, জালাল উদ্দিন সুয়ূতী (رحمة الله) (৯১১হি.), আল খাসায়েসুল কুবরা, আরবী, বৈরুত, খণ্ড: ১ম পৃ: ৩৩৮}

খেজুর বৃক্ষের শাখা হয়ে তরবারী
____________________
খেজুর বৃক্ষের শাখা হয়ে তরবারী

❏ ইমাম আব্দুর রাজ্জাক (رحمة الله) সাঈদ ইবনে আব্দুর রহমান থেকে তিনি তাঁর মাশায়েখগণ থেকে বর্ণনা করেন, হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে জাহাশ (رضي الله عنه) উহুদ যুদ্ধের দিন নবী করিম (ﷺ) এর নিকট আসেন। তাঁর তরবারী নষ্ট হয়ে গিয়েছিল। হুযূর আগে তাকে খেজুর বৃক্ষের একটি শাখা দিলেন। ঐ শাখাটি হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে জাহাশের হাতে গিয়ে তরবারী হয়ে গেল। হাদিসখানা ইমাম বায়হাকী বর্ণনা করেন। ●৩৪২
_____________________________
342.{ইমাম সুয়ূতী, জালাল উদ্দিন সুয়ূতী (رحمة الله) (৯১১হি.), আল খাসায়েসুল কুবরা, আরবী, বৈরুত, খণ্ড: ১ম পৃ: ৩৫৯}

মাথার চুল কালাে থাকা
____________________
মাথার চুল কালাে থাকা

❏ ইমাম বুখারী (رحمة الله) (তারীখ গ্রন্থে) আবু সুফিয়ান ফাযারী (رضي الله عنه) থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, আমি আমার আযাদকৃত গােলামদের নিয়ে নবী করিম (ﷺ)এর দরবারে এসে মুসলমান হলাম। তিনি আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দেন। বর্ণনা কারীগণ বলেন, নবী করিম নার মাথার যতটুকু স্থানে হাত রেখেছেন ততটুকু চুল কালাে ছিল আর অবশিষ্ট চুল সাদা ছিল। ●৩৪৩
_____________________________
343.{ইমাম সুয়ূতী, জালাল উদ্দিন সুয়ুতী (رحمة الله) (৯১১হি.), আল খাসায়েসুল কুবরা, আরবী, বৈরুত, খণ্ড: ২য় পৃ: ১৩৮ ও ইউসূফ নাবহানী (رحمة الله) (১৩৫০হি.), হুজ্জাতুল্লাহি আলাল আলামীন, উর্দু, গুজরাট, খণ্ড: ১ম পৃ: ৬৯৯}

মাথার চুল সাদা না হওয়া
____________________
মাথার চুল সাদা না হওয়া-

❏ ইবনে সা'দ (رحمة الله) সায়েব ইবনে ইয়াযিদের মাওলা (আযাদ কৃত গােলাম) হযরত আতা (رضي الله عنه) থেকে বর্ণনা করেন, তিন বলেন, সায়েব’র মাথার তালু থেকে কপাল পর্যন্ত চুল কালাে ছিল আর মাথার বাকী অংশের চুল ছিল সাদা। আমি জিজ্ঞেস করলাম, হে আমার মাওলা! আপনার ন্যায় এই আশ্চর্য জনক চুল আমি আর কারাে দেখিনি। তিনি বললেন, হে প্রিয় বৎস! তুমি জাননা এর কারণ কি। আমি একদা ছোেটাকালে অন্যান্য বাচ্চাদের সাথে খেলতেছিলাম। তিনি সেদিক দিয়ে কোথাও যাচ্ছিলেন। তিনি আমার নাম জিজ্ঞেস করলেন। আমি বললাম, আমার নাম সায়েব ইবনে ইয়াযিদ। তখন তিনি তাঁর হাত মােবারক আমার মাথায় বুলিয়ে দেন এবং এই দোয়া করেন,

بارك الله فيه.

 অতএব এই চুল কখনাে সাদা হবে। ●৩৪৪
_____________________________
344.{ইমাম সুয়ুতী, জালাল উদ্দিন সুয়ূতী (رحمة الله) (৯১১হি.), আল খাসায়েসুল কুবরা, আরবী, বৈরুত, খণ্ড: ২য় পৃ: ১৩৮ ও ইউসূফ নাবহানী (رحمة الله) (১৩৫০হি.), হুজ্জাতুল্লাহি আলাল আলামীন, উর্দু, গুজরাট, খণ্ড: ১ম পৃ: ৬৯৯}

চুল সাদা না হওয়া
____________________
চুল সাদা না হওয়া

❏ ইমাম বুখারী (তারীখ গ্রন্থে) ও ইমাম বায়হাকী (رحمة الله) ইউনুস ইবনে মুহাম্মদ ইবনে আনাস (رضي الله عنه) থেকে, তিনি তার পিতা থেকে বর্ণনা করেন, তার পিতা বলেন, রাসূল (ﷺ) যখন মদীনা মুনাওয়ারায় আগমন করেন তখন আমি দু’সপ্তাহের শিশু ছিলাম। আমাকে তাঁর কাছে আনা হলে তিনি তাঁর হাত মােবারক আমার মাথায় রেখে আমার জন্য বরকতের দোয়া করে বলেন, আমার নামে এর নাম রাখ তবে আমার উপনাম রেখােনা। তিনি বিদায় হজ্বে যখন এসেছিলেন তখন আমার বয়স হয়েছিল দশ বছর।

হযরত ইউনুস (رحمة الله) বলেন, আমার পিতা এত বয়স পেয়েছিলেন যে, তার সব মাথার চুল সাদা হয়ে গিয়েছিল তবে যে স্থানে রাসূল হাত মােবারক রেখেছিলেন সে স্থানে ও তার দাঁড়ি সাদা হয়নি। ●৩৪৫
_____________________________
345.{ইমাম সুয়ূতী, জালাল উদ্দিন সুয়ূতী (رحمة الله) (৯১১হি.), আল খাসায়েসুল কুবরা, আরবী, বৈরুত, খণ্ড: ২য় পৃ: ১৩৮ ও ইউসূফ নাবহানী (رحمة الله) (১৩৫০হি.), হুজ্জাতুল্লাহি আলাল আলামীন, উর্দু, গুজরাট, খণ্ড: ১ম পৃ: ৭০০}

চেহারা সতেজ থাকা
____________________
চেহারা সতেজ থাকা

❏ ইমাম তিরমিযি (رحمة الله) ও ইমাম বায়হাকী (رحمة الله) হযরত আবু যায়েদ আনসারী (رضي الله عنه) থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, রাসূল (ﷺ) আমার মাথা ও দাঁড়িতে স্বীয় হাত মােবারক বুলিয়ে এই দোয়া করেন,

اللهم جمله.

হে আল্লাহ! তাকে সুন্দর রাখুন। বর্ণনাকারী বলেন, তার বয়স একশত নয় বছর হয়েছে কিন্তু তার দাঁড়ি মােটেও সাদা হয়নি। তার চেহরা আমৃত্যু তরু তাজা ছিল। ●৩৪৬
_____________________________
346.{ইমাম সুয়ূতী, জালাল উদ্দিন সুয়ূতী (رحمة الله) (৯১১হি.), আল খাসায়েসুল কুবরা, আরবী, বৈরুত, খণ্ড: ২য় পৃ: ১৩৮}

হাতের স্পর্শের উসিলায় রােগ মুক্তি
____________________
হাতের স্পর্শের উসিলায় রােগ মুক্তি

❏ ইমাম আহমদ, ইমাম বুখারী (তারীখ গ্রন্থে), তাবরানী ও বায়হাকী (رحمة الله) হযরত হানযালা ইবনে হুযাইম (رحمة الله) থেকে বর্ণনা করেন, নবী করিম (ﷺ) তার মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়েছিলেন এবং তার জন্য দোয়া করে বললেন,

بورك فيك.

তােমার মধ্যে বরকত হােক। যিয়াল বলেন, আমি দেখেছি যে, হানালার কাছে এমন রুগ্ন বকরী আনা হত যেগুলাের স্তন ফুলে গিয়েছিল এবং ফুলা রােগে আক্রান্ত অনেক উট ও মানুষ আনা হত। তিনি স্বীয় হাতে থু থু নিয়ে ঐ রুগ্ন বকরী, উট ও মানুষের ফুলাস্থানে মালিশ করতেন আর বলতেন-

بسم الله علي أثر يد رسول الله صلى الله عليه و سلم..

ফলে ফুলা ও ব্যাথা নিমিষেই চলে যেতাে। ●৩৪৭
_____________________________
347.{ইমাম সুয়ূতী, জালাল উদ্দিন সুয়ুতী (رحمة الله) (৯১১হি.), আল খাসায়েসুল কুবরা, আরবী, বৈরুত, খণ্ড: ২য় পৃ: ১৪০}

❏ ইমাম বুখারী (তারীখ গ্রন্থে) ও বগভী ইবনে মুনদাহ থেকে, আবু নঈম (رحمة الله) (দালায়েল গ্রন্থে) হযরত বিশর ইবনে মুয়াবিয়া থেকে বর্ণনা করেন, তিনি তার পিতার সাথে রাসূল এর নিকট আসলে তিনি তার চেহারা ও মাথায় হাত বুলিয়ে দেন এবং তার জন্য দোয়া করেন। বিশরের চেহারায় তাঁর হাত মােবারকের প্রভাবে এমন শুভ্র চিহ্ন পরিস্ফুটিত হতাে যেন ঘােড়র কপালের শুভ্র চিহ্ন। আর যে কোন রুগ্ন ব্যক্তি বা বস্তুর উপর হাত রাখলে সাথে সাথে সুস্থ হয়ে যেতাে। ●৩৪৮
_____________________________
348.{ইমাম সুয়ূতী, জালাল উদ্দিন সুয়ূতী (رحمة الله) (৯১১হি.), আল খাসায়েসুল কুবরা, আরবী, বৈরুত, খণ্ড: ২য় পৃ: ১৪০}

 হাতের স্পর্শে শ্রেষ্ঠ সুগন্ধি লাভ
____________________
হাতের স্পর্শে শ্রেষ্ঠ সুগন্ধি লাভ- 

❏ ইমাম তাবরানী (رحمة الله) উত্তম সনদের ও ইমাম বায়হাকী উতবা ইবনে ফারকাদ (رضي الله عنه) এর স্ত্রী উম্মে আসেম (رضي الله عنه) থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, উতবা’র নিকট আমরা চার জন স্ত্রী ছিলাম। আমরা প্রত্যেকেই ভাল মানের সুগন্ধি ব্যবহার করতাম এবং আমাদের প্রত্যেকেই চাইতাে যে, অপরের চেয়ে তার সুগন্ধিই উত্তম হােক। অর্থাৎ উত্তম সুগন্ধি ব্যবহারে প্রতিযােগীতা করতাম। অথচ উতবা সুগন্ধি স্পর্শও করতােনা কিন্তু আমাদের সকলের চেয়ে তার সুগন্ধি ছিল বেশী। যখন তিনি লােকসমাগমে বসতেন তখন সবাই তার সুগন্ধির প্রসংশা করতাে। আমরা তার এই সুগন্ধির কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, রাসূল (ﷺ)এর যামানায় আমার শরীরে এক প্রকারের রােগ হয়েছিল।

এই রােগের অভিযােগ নিয়ে আমি তাঁর কাছে গেলাম। তিনি আমাকে জামা খুলতে বললে আমি জামা খুলে খালি গায়ে তাঁর সামনে বসলাম। তিনি তাঁর হাত মােবারকে ফুক দিয়ে হাত আমার পেট ও পিঠে মালিশ করেছিলেন। ঐ দিন থেকে এই সুগন্ধি আমার থেকে

প্রকাশিত হয়ে আসছে।

আঙ্গুল মােবারক
____________________
আঙ্গুল মােবারক

❏ ইমাম কুরতুবী (رحمة الله) বলেন, নবী করিম (ﷺ) এর আঙ্গুল মােবারক থেকে পানি প্রবাহিত হওয়া বিষয়ক মুজিযা বিভিন্ন স্থানে বড় বড় লােক সমাগমে কয়েক দফা প্রকাশিত হয়েছিল। তিনি আরাে বলেন-

ووردت من طرق كثيرة يفيد مجموعها للعلم القطعي المستفاد من المتواتر المعنوي.

এই সম্পর্কীয় বর্ণনা এত বেশী সূত্রে বর্ণিত হয়েছে যে, সবগুলাে মিলে ইলমে কাতয়ী তথা অকাট্য জ্ঞানের পর্যায়ে পৌঁছে গিয়েছে যা মুতাওয়াতিরে মানভী সমতুল্য।

ওলামায়ে কেরামগণ এরশাদ করেন, এ ধরণের মুজিযা নবী করিম এ ছাড়া অন্য কোন নবী থেকে পাওয়া যায়নি। কেননা নবী করিম এর আঙ্গুল মােবারক ছিল হাড্ডি, গােশত, রক্ত ও চামড়ার সমন্বয়ে আর তা হতেই পানি প্রবাহিত হয়েছিল।

❏ ইমাম ইবনে আব্দুল বার (رحمة الله) ইমাম মনী (رحمة الله) থেকে বর্ণনা করেন, নবী করিম (ﷺ) এর আঙ্গুল মােবারক থেকে পানি প্রবাহিত হওয়া হযরত মুসা (عليه السلام)'র লাঠি মােবারকের আঘাতে পাথর ফেটে পানি প্রবাহিত হওয়া থেকে অধিক আশ্চার্যজনক, কেননা পাথর থেকে পানি প্রবাহিত স্বাভাবিক ব্যাপার পক্ষান্তরে গােশত ও রক্ত থেকে পানি বের হওয়া স্বভাব বিরােধী ও অতি আশ্চার্য ব্যাপার। ●৩৪৯
_____________________________
349.{ইমাম সুয়ুতী, জালাল উদ্দিন সুয়ূতী (رحمة الله) (৯১১হি.), আল খাসায়েসুল কুবরা, আরবী, বৈরুত, খণ্ড: ২য় পৃ: ১৪১}

চার আঙ্গুল মােবারক থেকে পানি প্রবাহিত হওয়া
____________________
চার আঙ্গুল মােবারক থেকে পানি প্রবাহিত হওয়া

❏ হযরত আনাস (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত, নবী করিম (ﷺ) কোবায় তাশরীফ নিলে সেখানকার কোন এক ঘর থেকে পানির ছােট একটি পেয়ালা পেশ করা হল যার মধ্যে তিনি হাত প্রবেশ করতে চাইলেন কিন্তু ছােট হওয়ার কারণে প্রবেশ করতে পারেন নি। তারপর তিনি তাঁর চারটি আঙ্গুল প্রবেশ করালেন তবে বৃদ্ধাঙ্গুল পেয়ালার বাইরে ছিল। তারপর সকলকে উদ্দেশ্য করে বললেন, তােমরা সকলে এসে পানি পান করে যাও।

হযরত আনাস (رضي الله عنه) বলেন, আমি নিজের কপালের চোখে দেখেছি যে, তাঁর আঙ্গুলে মােবারক থেকে পানি প্রবাহিত হতে লাগল আর লােকেরা দলে দলে পানি পান করে যাচ্ছে এভাবে সকলেই পরিতৃপ্ত হয়ে পানি পান করেছিল। ●৩৫০
_____________________________
350.{ইউসূফ নাবহানী (رحمة الله) (১৩৫০হি.), হুজ্জাতুল্লাহি আলাল আলামীন, উর্দু, গুজরাট, খণ্ড: ২য় পৃ: ২৬৬}

আঙ্গুল মােবারক পানির ঝর্ণা
____________________
আঙ্গুল মােবারক পানির ঝর্ণা

❏ ইমাম আহমদ, বায়হাকী, বার, তাবরানী ও আবু নঈম (رحمة الله) হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (رضي الله عنه) থেকে বর্ণনা করেন, একদা সৈন্য দলে কারাে কাছে পানি ছিল না। রাসূল (ﷺ) এর খেদমতে এক ব্যক্তি এসে আরজ করল, ইয়া রাসূলাল্লাহ! পুরাে দলে কারাে কাছে পানি নেই, তিনি জিজ্ঞেস করলেন, তােমার কাছে কি পানি আছে? সে বলল, হ্যাঁ, সামান্য পানি আছে মাত্র। তিনি বললেন, তা নিয়ে এসাে। লােকটি বাটিতে করে সামান্য পানি আনলে তিনি বাটির মুখে আঙ্গুল মােবারক রেখে প্রশস্ত করলেন। ইবনে আব্বাস (رضي الله عنه) বলেন, সেই পানির ঝর্ণা অবলােকন করেছি যা তাঁর আঙ্গুল মােবারক থেকে উপটে পড়তেছে। রাসূল (ﷺ) হযরত বেলাল (رضي الله عنه) কে আদেশ দিলেন যে, লােকদেরকে আহ্বান কর যেন তারা অজু’র জন্য এই বরকত মন্ডিত পানি নিয়ে যায়। ৩৫১
_____________________________
351.{ইউসূফ নাবহানী (رحمة الله) (১৩৫০হি.), হুজ্জাতুল্লাহি আলাল আলামীন, উর্দু, গুজরাট, খণ্ড: ২য় পৃ: ২৬৭}

আঙ্গুল মােবারক হল পানির ঝর্ণা
____________________
কূপের পানি বৃদ্ধি

❏ হযরত যিয়াদ ইবনে হারেস ছাদায়ী (رحمة الله) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমরা এক সফরে নবী করিম (ﷺ) এর সাথে ছিলাম। তিনি আমাকে বললেন, তােমাদের কাছে পানি আছে? আমি বললাম, সামান্য পানি আছে যা শুধু আপনাকেই হবে। সেই সামান্য পানি কোন পাত্রে ঢেলে আমার কাছে নিয়ে এসাে। আমি পাত্র করে পানি নিয়ে আসলে তিনি হাত মােবারক পানির পাত্রে রাখেন। আমি দেখলাম তাঁর প্রত্যেক দুই আঙ্গুলের মধ্য হতে পানি ঝর্ণা প্রবাহিত হতে লাগল। তিনি বলেন, যদি আমার প্রভুকে লজ্জা না করতাম তবে সর্বদা আমরা এখান থেকে পানি নিজেরা পান করতাম এবং অন্যদেরকেও পান করাতাম। আমার সাহাবীদের ডেকে আন যাদের পানি প্রয়ােজন তারা যেন প্রয়ােজন মতে পানি সংগ্রহ করে রাখে।

যিয়াদ বলেন, আমি আমার সম্প্রদায়ের পক্ষ হতে প্রতিনিধি হিসেবে নবী করিম ﷺ এর দরবারে এসেছিলাম যাতে তাঁর থেকে শিখে গিয়ে আমার কওমকে ইসলামের শিক্ষা দিতে পারি। আমাদের দলের এক ব্যক্তি বালল, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমাদের সেখানে একটি কূপ আছে। শীতকালীন এতে পর্যাপ্ত পানি থাকে যা আমাদের জন্য যাথেষ্ট হয় কিন্তু গ্রীষ্মকালে পানি অনেক কমে যায়। তখন আমরা আশে-পাশের কূপে গিয়ে প্রয়ােজন পূরণ করি। বর্তমানে এটা আমাদের জন্য বড় কষ্টসাধ্য হয়ে পড়েছে। কেননা, আমরা মুসলমান হয়েছি আমাদের আশে-পাশের সবাই আমাদের শত্রু। সুতরাং আপনি আল্লাহর কাছে দোয়া করুন যেন আমাদের কূপের পানি সর্বদা সমানভাবে বিদ্যমান থাকে। তখন রাসূল (ﷺ) সাতটি কংকর হাতে নিয়ে একটু নড়াচড়া করে দোয়া করলেন তারপর বললেন, তােমরা গিয়ে এই কংকর গুলি একটি একটি করে কূপে নিক্ষেপ করবে এবং প্রতিটি কংকর নিক্ষেপের সময় বিসমিল্লাহ বলবে। অতএব এরপর অধিক পানির কারণে ঐ গভীরতা কতটুকু তা অনুমান করা সম্ভব ছিলনা। ●৩৫২
_____________________________
352.{আবু নঈম ইস্পাহানী (رحمة الله) (৪৩০হি.), দালায়েলুন নবুয়ত, উর্দু, পৃ: ৩৭০}

❏ হযরত আনাস ইবনে মালেক (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসূল একে দেখলাম, তখন আসরের সালাতের সময় হয়ে গিয়েছিল। আর লােকজন আজুর পানি তালাশ করতে লাগল কিন্তু পেলনা। তারপর রাসূল র কাছে কিছু পানি আনা হল। তিনি সে পাত্রে তাঁর হাত মােবারক রাখলেন এবং লােকজনকে তা থেকে অজু করতে বললেন। হযরত আনাস (رضي الله عنه) বলেন, সে সময় আমি দেখলাম তাঁর আঙ্গুল মােবারকের নীচ থেকে পানি উথলে উঠছে। এমনকি তাদের শেষ ব্যক্তি পর্যন্ত তা দিয়ে অজু করল। ●৩৫৩
_____________________________
353.{ইমাম বুখারী, মুহাম্মদ ইবনে ইসমাঈল বুখারী (رحمة الله) (২৫৬হি.), সহীহ বুখারী শরীফ, আরবী, ইউপি, ইন্ডিয়া, খণ্ড: ১ম পৃ: ২৯}

আঙ্গুল মােবারক হল পানির ঝর্ণা
____________________
আঙ্গুল মােবারক হল পানির ঝর্ণা

❏ হযরত আনাস (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত, নবী করিম এর এক পাত্র পানি চাইলেন। একটি বড় পাত্র তাঁর কাছে আনা হল, তাতে সামান্য পানি ছিল। অতঃপর তিনি তার মধ্যে তাঁর আঙ্গুল মােবারক রাখলেন। হযরত আনাস (رضي الله عنه) বলেন, আমি পানির দিকে তাকিয়ে দেখলাম, তাঁর আঙ্গুলের মাঝখান থেকে পানি উথলে উঠতে লাগল। হযরত আনাস (رضي الله عنه) বলেন, যারা অজু করেছিল, আমি অনুমান করলাম তাদের সংখ্যা ছিল সত্তর থেকে আশিজন। ●৩৫৪
_____________________________
354.{ইমাম বুখারী, মুহাম্মদ ইবনে ইসমাঈল বুখারী (رحمة الله) (২৫৬হি.), সহীহ বুখারী শরীফ, আরবী, ইউপি, ইন্ডিয়া, পৃ: ৩৩}

অল্প পানিতে আশিজনের অজু
____________________
অল্প পানিতে আশিজনের অজু

❏ হযরত আনাস (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, একবার নামাযের সময় উপস্থিত হলে যাঁদের বাড়ী নিকটে ছিল তারা অজু করার জন্য বাড়ী চলে গেলেন। আর কিছু লােক রয়ে গেলেন তাঁদের অজুর কোন ব্যবস্থা ছিলনা। তখন রাসূল (ﷺ)র জন্য একটি পাথরের পাত্রে করে সামান্য পানি আনা হল। পাত্রটি এত ছােট ছিল যে, এর মধ্যে তাঁর হাতের তালু মেলে দেওয়াও সম্ভব ছিলনা। এই পাত্রে তিনি হাত মােবারক প্রবেশ করলে আঙ্গুল মােবারক থেকে এমনভাবে পানি প্রবাহিত হতে লাগল যা থেকেই কওমের সকল লােক অজু করলেন। আমরা জিজ্ঞাসা করলাম- আপনারা কতজন ছিলেন? তিনি বললেন, আশিজন বা আরাে

বেশী। ●৩৫৫
_____________________________
355.{ইমাম বুখারী, মুহাম্মদ ইবনে ইসমাঈল বুখারী (رحمة الله) (২৫৬হি.), সহীহ বুখারী শরীফ, আরবী, ইউপি, ইন্ডিয়া, পৃ: ৩২}

অল্প খাবারে ৭২ জন তৃপ্ত হয়ে খাওয়া
____________________
অল্প খাবারে ৭২ জন তৃপ্ত হয়ে খাওয়া-

❏ ইমাম আবু নঈম ও ইবনে আসাকের (رحمة الله) হযরত আনাস (رضي الله عنه) থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, রাসূল (ﷺ) যখন যয়নাব বিনতে জাহাশ (رضي الله عنه) কে বিবাহ করেন তখন আমার মা আমাকে বললেন, হে আনাস! নবী করিম " শাদী করেছেন এবং সকাল হয়েছে আমার মনে হয় তাঁর কাছে কোন খাবার নাই। তুমি ঘরে যে খেজুর ও ঘি আছে তা নিয়ে এসাে। আমি গিয়ে তা আনলাম। খেজুর গুলাের স্বাদ পর্যন্ত পরিবর্তন হয়ে গিয়েছিল।

আমার মা তা দিয়ে হীস’ তৈরী করে দিয়ে আমাকে বলেন, এগুলাে রাসূল (ﷺ) ও তাঁর বিবির কাছে নিয়ে যাও। পাথরের একটি পাত্রে করে ‘হীস’ আমি তাঁর কাছে নিয়ে

গেলাম। তিনি বললেন, এগুলােকে ঘরের এক কোণে রেখে দাও। আর তুমি গিয়ে আবু বকর, ওমর, ওসমান, আলীসহ অন্যান্য সাহাবাদের ডেকে নিয়ে এসাে। আর মসজিদে যারা আছে, রাস্তায় যাদেরকে পাও সবাই ডেকে নিয়ে এসাে। খাবারের স্বল্পতা ও লােকের আধিক্যতা আমাকে আশ্চার্য করে দিল। অতঃপর আমি সবাইকে ডেকে আনলাম। এত পরিমাণ লােক হল যে, হুজরা ও ঘর সব পূর্ণ হয়ে গেল।

তারপর তিনি বললেন, আনাস! ঐ খাবার নিয়ে এসাে। আমি খাবার পাত্রটি নিয়ে আসলাম। এতে তিনি তাঁর তিনটি আঙ্গুল মােবারক প্রবেশ করে দিলে এ খাবার পাত্রে উচু হয়ে বাড়তে লাগল আর লােকেরা তা হতে খেতে লাগল। সবাই খেয়ে অবসর নিলে দেখি পাত্রে ততটুকু খাবার রয়ে গেল যতটুকু প্রথমে ছিল। রাসূল (ﷺ) বললেন, এই খাবার যয়নবের সামনে রেখে এসাে। হযরত সাবিত (رضي الله عنه) বলেন, আমি হজরত আনাস (رضي الله عنه) কে জিজ্ঞেস করলাম, এই খাবার কতজনে খেয়েছিলেন? তিনি বললেন, বাহাত্তোর জনে। ●৩৫৬
_____________________________
356.{ ইমাম সুয়ূতী, জালাল উদ্দিন সুয়ুতী (رحمة الله) (৯১১হি.), আল খাসায়েসুল কুবরা, আরবী, বৈরুত, খণ্ড: ১ম পৃ: ৭৭}

আল্লাহর পক্ষ থেকে খাবার বৃদ্ধি হওয়া
____________________
আল্লাহর পক্ষ থেকে খাবার বৃদ্ধি হওয়া

❏ ইমাম দারেমী, ইবনে আবি শায়বা, তিরমিযি, হাকেম ও বায়হাকী (رحمة الله) সকলেই হাদিসটিকে বিশুদ্ধ বলেছেন, এবং আবু নঈম (رحمة الله) হযরত সামুরা ইবনে যুনদুন (رضي الله عنه) থেকে বর্ণনা করেন, রাসূল (ﷺ) এর কাছে খাবারের একটি পেয়ালা আনা হল। সকাল থেকে যােহর পর্যন্ত ললাকজন আসতেছে আর খেয়ে যাচ্ছে। একদল খাওয়া শেষ করে দাঁড়ালে আর একদল বসে। জনৈক ব্যক্তি সামুরা (رضي الله عنه)'র কাছে জিজ্ঞেস করল, খাবার কি বাড়তেছে? তিনি উত্তরে আকাশের দিকে ইঙ্গিত করে বললেন, ওখান (আল্লাহর পক্ষ থেকেই খাবার বৃদ্ধি হচ্ছে। ●৩৫৭
_____________________________
357.{ইমাম সুয়ূতী, জালাল উদ্দিন সুয়ূতী (رحمة الله) (৯১১হি.), আল খাসায়েসুল কুবরা, আরবী, বৈরুত, খণ্ড: ২য় পৃ: ৭৯}

হযরত আদম (عليه السلام)
____________________
হযরত আদম (عليه السلام)

❏ হযরত আদম (عليه السلام) জান্নাত থেকে পৃথিবীতে যখন তাশরীফ আনলেন, তখন পৃথিবীর জীব-জন্তু তাঁর সাক্ষাতে আসতে আরম্ভ করল। তিনি প্রত্যেক জীব-জন্তুর প্রয়ােজনানুপাতে দোয়া করতেন। এভাবে জঙ্গলের কয়েকটি হরিণ ও তাঁর সাক্ষাত লাভ ও সালাম করার নিয়তে উপস্থিত হয়। তিনি তাদের পিঠে হাত বুলিয়ে দেন এবং তাদের জন্য দোয়া করলেন। ফলে তাদের নাভী মেশকের ন্যায় সুগন্ধি হয়ে গেল। এ হরিণদল বিরল সুগন্ধির উপহার নিয়ে যখন অন্যান্য হরিণ দলের কাছে গেল তারা এই সুগন্ধি পাওয়ার কারণ জিজ্ঞেস করে জানতে পারল যে, এটি হযরত আদম (عليه السلام)'র দোয়ার বরকত। অতঃপর অন্যান্য হরিণদল বলল, তাহলে আমরাও যাচ্ছি। তারা আসলে আদম তাদের পিঠে হাত বুলায়ে দিলেন কিন্তু তাদের মধ্যে সুগন্ধি সৃষ্টি হয়নি।

তারা এসে অবাক হয়ে বলল, একি ব্যাপার! তােমরা গিয়েছ সুগন্ধি পেয়েছ কিন্তু আমরা গেলাম কিছুই পেলাম না। তখন প্রথম দল উত্তরে বলল, তার কারণ হল- আমরা গিয়েছিলাম শুধু যিয়ারতের নিয়তে আর তােমরা গিয়েছ সুগন্ধি পাওয়ার আশায়। মূলত তােমাদের নিয়ত বিশুদ্ধ ছিলনা। ●৩৫৮
_____________________________
358.{আব্দুর রহমান সফুরী (رحمة الله) (৮৯৪হি.), নুজহাতুল মাজালীস, খণ্ড: ১ম পৃ: ৪, সূত্র: সাচ্ছি হেকায়াত, উর্দু, খণ্ড: ১ম পৃ: ৫৩}

হযরত নূহ (عليه السلام)
____________________
হযরত নূহ (عليه السلام)

❏ হযরত নূহ (عليه السلام) হযরত আদম (عليه السلام) এর ইন্তেকালের ১০২৬ বছর পর জন্মলাভ করেন। পবিত্র কুরআনে প্রায় ৪৩ জায়গায় তাঁর সম্পর্কে আলােচনা এসেছে। কুরআনের ভাষ্যমতে তিনি সাড়ে নয়শ বছর যাবৎ তাঁর সম্প্রদায়কে হেদায়েতের চেষ্টা করে নিস্ফল হল।

❏ আল্লাহ বলেন,

لَقَدۡ اَرۡسَلۡنَا نُوۡحًا اِلٰی قَوۡمِہٖ فَلَبِثَ فِیۡہِمۡ اَلۡفَ سَنَۃٍ اِلَّا خَمۡسِیۡنَ عَامًا ؕ فَاَخَذَہُمُ الطُّوۡفَانُ وَ ہُمۡ ظٰلِمُوۡنَ.

নিশ্চয় আমি নূহকে তার সম্প্রদায়ের নিকট রাসূল বানিয়ে পাঠিয়েছি। অতঃপর তিনি পঞ্চাশ বছর কম এক হাজার বছর সেখানে অবস্থান করেছিলেন। (সূরা আনকাবুত, আয়াত নং ১৪)

এত দীর্ঘ সময় পর্যন্ত দাওয়াত কাজ চালিয়ে যাওয়ার পর মাত্র কয়েকজন ব্যতীত যখন কেউ ঈমান আনতেছেনা তখন তিনি চিন্তাগ্রস্ত হয়ে পড়েন।

❏ তখন আল্লাহ তায়ালা তাকে শান্ত দিয়ে বলেন,

وَ اُوۡحِیَ اِلٰی نُوۡحٍ اَنَّہٗ لَنۡ یُّؤۡمِنَ مِنۡ قَوۡمِکَ اِلَّا مَنۡ قَدۡ اٰمَنَ فَلَا تَبۡتَئِسۡ بِمَا کَانُوۡا یَفۡعَلُوۡنَ.

নূহ (عليه السلام)’র উপর ওহী প্রেরণ করা হল যে, যারা ঈমান আনার তারা এনেছে এখন। অবশিষ্টদের কেউ ঈমান আনয়নকারী নেই, সুতরাং তাদের আচরণে তুমি চিন্তিত হইওনা। (সূরা হুদ, আয়াত নং ৩৬)

❏ ওহীর মাধ্যমে যখন তিনি জানতে পারলেন যে, এরা ঈমান আনবেনা তখন তিনি তাদের ধ্বংসের জন্য আল্লাহর দরবারে প্রার্থনা করেন,

قَالَ نُوۡحٌ رَّبِّ لَا تَذَرۡ عَلَی الۡاَرۡضِ مِنَ الۡکٰفِرِیۡنَ دَیَّارًا ، اِنَّکَ اِنۡ تَذَرۡہُمۡ یُضِلُّوۡا عِبَادَکَ وَ لَا یَلِدُوۡۤا اِلَّا فَاجِرًا کَفَّارًا ..

হে প্রভু! আপনি পৃথিবীতে একজন কাফেরকে ও অবশিষ্ট রাখবেন না। যদি আপনি তাদেরকে এমনি (শাস্তি না দিয়ে) রেহাই দেন তবে এরা আপনার বান্দাদেরকে পথভ্রষ্ট করে ফেলবে আর তাদের বংশধর যারা আসবে তারাও অবাধ্য হয়ে জন্মগ্রহণ করবে। (সূরা নূহ, আয়াত নং ২৬ ও ২৭)

❏ অতঃপর আল্লাহ তায়ালা তার দোয়া কবুল করেন এবং ঐশী শিক্ষার মাধ্যমে তাঁকে নৌকা তৈরী শিক্ষা দিয়ে বড় আকারের একটি নৌকা তৈরীর নির্দেশ দেন। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ বলেন,

وَ اصۡنَعِ الۡفُلۡکَ بِاَعۡیُنِنَا وَ وَحۡیِنَا وَ لَا تُخَاطِبۡنِیۡ فِی الَّذِیۡنَ ظَلَمُوۡا ۚ اِنَّہُمۡ مُّغۡرَقُوۡنَ

 আর আপনি আমার সম্মুখে আমার নির্দেশ মােতাবেক একটি নৌকা তৈরী করুন এবং পাপীষ্ঠদের ব্যাপারে আমাকে কোন কথা বলবেন না। অবশ্যই তারা ডুবে মরবে। (সূরা হুদ, আয়াত নং ৩৭)

❏ আল্লাহ তায়ালা জিব্রাঈল (عليه السلام)’র মাধ্যমে নৌকা তৈরীর প্রয়ােজনীয় উপকরণাদি ও নির্মাণ কৌশল নূহ (عليه السلام) কে শিক্ষা দিয়েছিলেন। তিনি তিনশ গজ দীর্ঘ, পঞ্চাশ গজ প্রস্ত, ত্রিশ গজ উচু ও ত্রিতল বিশিষ্ট একটি নৌকা শাম গাছ দিয়ে তৈরী করলেন। তিনি বলেন,

قَالَ رَبِّ اِنِّیۡ دَعَوۡتُ قَوۡمِیۡ لَیۡلًا وَّ نَہَارًا ۙ، فَلَمۡ یَزِدۡہُمۡ دُعَآءِیۡۤ اِلَّا فِرَارًا.

নিশ্চয় আমি আমার জাতিকে দিবা-রাত্রি দাওয়াত দিয়েছি। কিন্তু আমার দাওয়াত তাদের শুধু সত্যপথ থেকে পলায়নের প্রেরণতাই বৃদ্ধি করেছে।

(সূরা নূহ আয়াত ৫ ও ৬)।

❏ এই নৌকার উভয় পাশ দিয়ে অনেকগুলি জানালা ছিল। অতঃপর প্লাবনের প্রাথমিক আলামত স্বরূপ ভুমি হতে পানি উচ্ছ্বসিত হয়ে উঠতে লাগল তখন তিনি ঈমানদারগণ কে নৌকায় উঠতে আদেশ দেন। আর মানুষের প্রয়ােজনীয় রসদপত্র সহ ঘােড়া, গরু, গাধা, ছাগল, কুকুর, বিড়াল ইত্যাদি সর্বপ্রকার প্রাণীর এক-এক জোড়া মাত্র ৭২ কিংবা ৮০ জন। আল্লাহ বলেন,

حَتّٰۤی اِذَا جَآءَ اَمۡرُنَا وَ فَارَ التَّنُّوۡرُ ۙ قُلۡنَا احۡمِلۡ فِیۡہَا مِنۡ کُلٍّ زَوۡجَیۡنِ اثۡنَیۡنِ وَ اَہۡلَکَ اِلَّا مَنۡ سَبَقَ عَلَیۡہِ الۡقَوۡلُ وَ مَنۡ اٰمَنَ ؕ وَ مَاۤ اٰمَنَ مَعَہٗۤ اِلَّا قَلِیۡلٌ

অবশেষে, যখন আমার আদেশ এলো এবং উনান উথলে উঠলো, আমি বললাম, ‘কিশ্‌তীতে উঠিয়ে নাও প্রত্যেক শ্রেণী থেকে এক জোড়া করে নর ও মাদী এবং যাদের বিরুদ্ধে পূর্ব সিদ্ধান্ত হয়ে গেছে তারা ব্যতীত আপন পরিবার পরিজনকে ও অবশিষ্ট মুসলমানদেরকে; এবং তার সাথে মুসলমান ছিলো না, কিন্তু অল্প সংখ্যক লোক। (সূরা হুদ, আয়াত নং ৪০)

❏ অতঃপর আল্লাহ তায়ালা আসমান থেকে মুষলধারে বৃষ্টি বর্ষণ করেন আর মাটি থেকেও প্রস্রবণ প্রবাহিত করে দেন।

فَفَتَحۡنَاۤ اَبۡوَابَ السَّمَآءِ بِمَآءٍ مُّنۡہَمِرٍ.

অতঃপর আমি মুষলধারায় বর্ষণের সাথে সাথে আসমানের দ্বারসমূহ খুলে দিলাম এবং যমীনে প্রস্রবণরূপে প্রবাহমান করলাম। (সূরা কামার, আয়াত ১১)

তারপর দেখতে না দেখতে উপরে নীচে উভয় দিক থেকে পানি এসে মহাপ্লাবন সৃষ্টি হল শুধু নৌকায় আরােহীগণ ছাড়া সবাই ধ্বংস হয়ে গেল। তবে একজন মু'মিন বৃদ্ধ নৌকায় আরােহণ না করেও অলৌকিক ভাবে বেঁচে গিয়েছিলেন। হযরত নূহ (عليه السلام) ১০ রজব নৌকায় আরােহণ করেছিলেন। দীর্ঘ ছয়মাস পর্যন্ত নৌকা পানিতে ভেসেছিল। নৌকা ভাসতে ভাসতে যখন মক্কা শরীফের কাবা শরীফের পাশে পৌঁছল তখন সাতবার নৌকা পানির উপর কাবা শরীফের তাওয়াফ করল। আল্লাহ তায়ালা কা’বাকে পানির উপর তুলে নিয়ে রক্ষা করেছিলেন। পরিশেষে ১০ মহররম আশুরার দিন জুদী পাহাড়ে নৌকা ভিড়ল। শােকরিয়া স্বরূপ সেদিন হযরত নূহ (عليه السلام) ও নৌকায় অবস্থানরত সব প্রাণী রােযা পালন করেছিলেন। ●৩৫৯
_____________________________
359.{নঈম উদ্দিন মুরাদাবাদী (رحمة الله) (১৩৬৭হি.), খাযায়েনুল ইরফান, উর্দু, প্রান্ত টীকা, খানযুল ঈমান, উর্দু, পৃ: ২৭০}

হযরত ইদ্রিস (عليه السلام) - জান্নাতে অবস্থান
____________________
হযরত ইদ্রিস (عليه السلام) - জান্নাতে অবস্থানঃ

❏ হযরত কা'ব আখবার (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত, হযরত ইদ্রিস (عليه السلام) মালাকুল মাওত তথা আজরাঈল (عليه السلام) কে বললেন, মৃত্যু কিভাবে হয় এবং মৃত্যুর স্বাদ কি রকম হয় তা অনুধাবন করার জন্যে আমার রূহ কবজ করে দেখান। আজরাঈল তাঁর কথা মতে তাঁকে মৃত্যুদান করলেন এবং পুনরায় তাঁর রূহ ফেরৎ দিয়ে তাঁকে জীবিত করে দেন। তারপর তিনি আজরাঈল (عليه السلام) কে বললেন, আমাকে জাহান্নাম দেখান যাতে আমার মধ্যে খােদাভীতি বৃদ্ধি পায়। জাহান্নাম দেখানাে হল। অতঃপর জাহান্নামের দারগাকে বললেন, আমি জাহান্নামের উপর দিয়ে গমণ করতে চাই। তিনি জাহান্নামের উপর দিয়ে গমণ করলেন। এরপর তিনি আজরাঈল কে বললেন, আমাকে জান্নাত দেখান। জান্নাতের দরজা খুলে তাতে প্রবেশ করে কিছুক্ষণ অবস্থান করার পর আজরাঈল (عليه السلام) বললেন, এখন। বেরিয়ে আসুন, আপনার পৃথিবীতে চলে যান। তিনি বললেন, আমি এখান থেকে কোথাও যাব না। কেননা, আল্লাহ তায়ালা বলেছেন,

كل نفس ذائقة الموت.

 প্রত্যেককে মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করতে হবে। আমি মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করেছি। আল্লাহ বলেছেন,

وان منكم الا واردها.

তােমাদের প্রত্যেককে জাহান্নামের উপর দিয়ে গমণ করতে হবে। আমি তাও করেছি। আর এখন আমি জান্নাতে পৌঁছে গিয়েছি। আর জান্নাতে প্রবেশকারীদের সম্পর্কে আল্লাহ বলেছেন,

وماهم منها بمخرجين.

অর্থাৎ ওদেরকে (জান্নাতে প্রবেশকারীদেরকে) সেখান (জান্নাত) থেকে বের করা হবে না। এখন আপনি আমাকে জান্নাত থেকে বের হতে বলছেন কেন?

ইত্যবসরে আল্লাহ তায়ালা আজরাঈল (عليه السلام) কে অহীর মাধ্যমে জানিয়ে দেন যে, ইদ্রিস (عليه السلام) যা কিছু করেছে আমার অনুমতিতে করেছে সুতরাং তাঁকে ছেড়ে দাও, সে জান্নাতেই থাকবে। অতএব তিনি জান্নাতে জীবিত আছেন। ●৩৬০
_____________________________
360.{আল্লামা নঈম উদ্দিন মুরাদাবাদী (رحمة الله) (১৩৬৭হি.), খাযায়েনুল ইরফান, উর্দু, প্রান্ত টীকা, খানযুল ঈমান, উর্দু, পৃ: ৩৬৯}

হযরত ছালেহ (عليه السلام)
____________________
হযরত ছালেহ (عليه السلام)

❏ আল্লাহর নবী হযরত হুদ (عليه السلام)'র পরে সামুদ জাতির প্রতি আল্লাহ তায়ালা হযরত ছালেহ (عليه السلام) কে নবী হিসেবে প্রেরণ করেন। তিনি দীর্ঘ দিন সম্প্রদায়কে হেদায়েত করেও সৎপথে আনতে সক্ষম হননি। অবশেষে সম্প্রদায়ের লােকেরা তাঁকে অক্ষম করার উদ্দেশ্যে একটি অস্বাভাবিক কাজ করে দেখাতে আবেদন জানাল। তিনি বললেন, তােমরা কি দেখতে চাও?

তাদের সর্দার জানদা ইবনে আমর বলল, ঐ কাতেবা পাহাড় থেকে একটি দশ মাসের গর্ভবতী, সবল ও স্বাস্থ্যবর্তী উষ্ট্রী বের করে দেখান। তবে আমরা বুঝব যে, আপনি সত্য নবী আর আমরা আপনার উপর ঈমান আনবাে।

তিনি তাদের থেকে কঠোর অঙ্গীকার নিলেন যে, যদি আমি তােমাদের দাবী পূরণ করে এই মুজিযা দেখাই তবে তােমরা ঈমান আনবে কিনা? তারা সবাই এই মর্মে অঙ্গীকার করলে তিনি আল্লাহর দরবারে দু'রাকাত নামায পড়ে দোয়া করলে সাথে সাথে পাহাড়ে কম্পন সৃষ্টি হল এবং জীব-জন্তু বাচ্চা প্রসবের সময় যেরূপ শব্দ করে সেরূপ শব্দ করে বিরাট প্রস্তর খণ্ড বিস্ফোরিত হয়ে তার ভেতর থেকে তাদের দাবীর অনুরূপ একটি উষ্ট্রী বের হল। সাথে সাথে উষ্ট্রী এমন একটি বাচ্চা প্রসব করল যা মায়ের সমান। মুফতি আহমদ ইয়ার খান নঈমী (رحمة الله) বলেন- এই উষ্ট্রীর মাধ্যমে বহু মুজিযা প্রকাশ পেয়েছে যথা-

১. এটি পিতা-মাতা বিহীন জন্মলাভ করা,

২. কঠিন পাথর থেকে বের হওয়া,

৩. খুব সবল, স্বাস্থ্যবর্তী ও যুবতী হওয়া,

৪. গর্ভবতী সৃষ্টি সাথে সাথে বাচ্চা দেওয়া,

৫. বাচ্চা ও আবার অন্যান্য স্বাভাবিক বাচ্চার ন্যায় ছােট ও নাজুক ছিলনা বরং তাও মায়ের সমান,

৬. এই উষ্ট্রী একদিন পর পর কূপে পানি পান করত এবং কূপের সমস্ত পানি একেবারে পান করে ফেলত,

৭. এই উষ্ট্রীর পানি পানের নির্ধারিত দিনে অন্যান্য পশুদল পানি পান করতে কূপে আসত না,

৮, এটি এত বেশী পরিমাণ দুধ দিত যে, পুরাে সামুদ জাতির জন্য যথেষ্ট হয়ে যেত এবং যে চারণ ভূমিতে এটি চরত তাতে অভাবনীয় বরকত হত। ●৩৬১
_____________________________
361.{হাকীমুল উম্মত মুফতি আহমদ ইয়ার খান নঈমী (رحمة الله), (১৩৯১হি.), তাফসীরে নঈমী, উর্দু, খণ্ড: ৮ম, পারা: ৮ম, পৃ: ৬৬৩}

সামুদ জাতির ধ্বংস
____________________
সামুদ জাতির ধ্বংসঃ

❏ হযরত সালেহ (عليه السلام)'র বিস্ময়কর মুজিযা দেখে অল্প সংখ্যক লােক ঈমান আনল কিন্তু অধিকাংশ লােকেরা অঙ্গীকার ভঙ্গ করল। খােদায়ী আযাব থেকে রক্ষা পাওয়ার উপায় হিসাবে তিনি সম্প্রদায়ের লােকদের বলেছিলেন, এখন তােমরা এই উষ্ট্রীদ্বয়কে দেখাশুনা কর। এদেরকে কোনরূপ কষ্ট দিওনা। যেমন আল্লাহ বলেন

الۡوَزۡنُ یَوۡمَئِذِ ۣالۡحَقُّ ۚ فَمَنۡ ثَقُلَتۡ مَوَازِیۡنُہٗ فَاُولٰٓئِکَ ہُمُ الۡمُفۡلِحُوۡنَ.

অর্থ: এটি আল্লাহর উষ্ট্রী- তােমাদের জন্যে নিদর্শন। অতএব, আল্লাহর ভূখন্ডে চরে বেড়াতে দাও এবং একে অনিষ্টের অভিপ্রায়ে স্পর্শ করােনা। নতুবা তােমাদেরকে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি পাকড়াও করবে।

(সূরা আল আ'রাফ, পারা: ৮, আয়াত নং ৭৩)।

অবশেষে এই উষ্ট্রী সামুদ জাতির জন্য পরীক্ষার বিষয়ে পরিণত হল। যে কুপ থেকে মানুষ, জীব-জন্তু পানি পান করত, উষ্ট্রী সব পানি একাই পান করে ফেলত। তাই ছালেহ (عليه السلام) পালা করে দিলেন যে, একদিন সবাই পান করবে আর একদিন শুধু উষ্ট্রী পানি পান করবে। তাছাড়া এই উষ্ট্রীদ্বয় যে কোন চারণভুমি কিংবা যে কারাে ক্ষেত-খামারে চরবে কেউ বাঁধা দিতে পারবে না। এসব কারণে তাদের বেশ অসুবিধা হচ্ছিল কিন্তু আযাবের ভয়ে সহ্য করে যেত।

অতঃপর সম্প্রদায়ের দু’জন সুন্দরী মহিলা ছিল যারা সম্পদশালী ছিল এবং তাদের চেয়েও অধিক সুন্দরী কন্যা ও ছিল তাদের। একজনের নাম হল আনীযাহ অপর জনের নাম হল সাদকা বিনতে মুখতার। সাদকা তার চাচাত ভাই মিছদা কে বলল, আমি বিধবা নারী তােমাকে বিবাহ করবাে যদি তুমি ঐ উষ্ট্রীকে হত্যা করতে পার। অপরজনে জারজ সন্তান। কেদার ইবনে সালেফ নামক ব্যক্তিকে ডেকে বলল, তুমি ঐ উষ্ট্রীর হত্যায় যদি সাহায্য কর তবে আমার সুন্দরী মেয়েদের থেকে যাকে ইচ্ছে তােমাকে বিয়ে দেবাে। এরা দুজন গােপনে পানির কূপের রাস্তায় গিয়ে অপেক্ষায় রইল। এদিকে উষ্ট্রীদ্বয় পানি পান করে আসার সময় মিছদা তীর নিক্ষেপ করল যাতে উষ্ট্রীর পায়ের গােড়ালীতে লেগে মাটিতে পড়ে গেল। তারপর কেদার তলােয়ার নিয়ে প্রথমে উষ্ট্রীর পা কাটল পরে যবেহ করে দিল। উষ্ট্রী তিনটি আওয়াজ দিয়ে অদৃশ্য হয়ে গেল। ছালেহ (عليه السلام) এই ঘটনা শুনে অত্যন্ত মর্মাহত হলেন এবং তাদেরকে আযাবের জন্য প্রস্তুত থাকতে বললেন। কিন্তু তাতেও তারা ঠাট্টা-বিদ্রুপ করতে লাগল। অবশেষে তিনি আযাবের ধরণও বর্ণনা করে দেন। এভাবে যবেহের তিনদিন পর তােমাদের উপর পরিপূর্ণ আযাব আসবে। তারা উষ্ট্রী যবেহ করেছিল বুধবারে। প্রথমদিন। বৃহস্পতিবার তােমাদের নারী-পুরুষ, যুবক-বৃদ্ধ নির্বিশেষে সবার মুখমন্ডল হলদে ফ্যাকাশে হয়ে যাবে। দ্বিতীয় শুক্রবার সবার মুখমন্ডল গাঢ় লাল বর্ণ ধারণ করবে এবং তৃতীয় দিন শনিবার সবার মুখমন্ডল ঘাের কৃষ্ণবর্ণের হয়ে যাবে আর এটাই হবে তােমাদের জীবনের শেষ দিন। অতঃপর তাঁর কথা মােতাবেক সবকিছু আলামত প্রকাশ পেল। তিনি শনিবার দিবাগত রবিবার রাতে মুমিনগণকে নিয়ে শামের দিকে রওয়ানা দিয়ে ফিলিস্তিনে রামালা নামক স্থানে গিয়ে অবস্থান করেন। ঐ দিন সকালে সামুদ জাতি কাফনের কাপড় উড়িয়ে, গায়ে সুগন্ধি লাগিলে মৃত্যুর জন্য মাটিতে উপড় হয়ে শুয়ে পড়ল এবং মাঝে-মধ্যে আকাশের দিকে দেখত যেন কোন দিক থেকে ও কিভাবে আযাব আসে অবলােকন করতে পারে। রবিবার দুপুরে হঠাৎ আকাশ থেকে একটি বজ্রধ্বনি আসল যাতে বড় ধরণের ভুমিকম্পন সৃষ্টি হল। ফলে সকলেই মৃত্যুবরণ করল। ৩৬২
_____________________________
362.{হাকীমুল উম্মত মুফতি আহমদ ইয়ার খান নঈমী (رحمة الله), (১৩৯১হি.), তাফসীরে নঈমী, উর্দু, দিল্লী, খণ্ড: ৮ম, পারা: ৮ম, পৃ: ৬৮৩ ও ৬৯০}

হযরত ইব্রাহীম ’র মু'জিযা - বালু গমে পরিণত হওয়া
____________________
হযরত ইব্রাহীম ’র মু'জিযা - বালু গমে পরিণত হওয়া-

❏ নমরূদ একজন প্রভাবশালী বাদশা ছিল। একদা সেখানে দুর্ভিক্ষ দেখা দিলে নমরূদ খাদ্য বিতরণ করল। যারা তার কাছে খাদ্য বস্তু নেওয়ার জন্য আসত সে জিজ্ঞেস করত তােমার প্রভু কে? যারা বলত- আপনিই আমাদের প্রভু, তাদেরকে খাদ্য দিত। হযরত ইব্রাহীম (عليه السلام) ও খাদ্য নিতে গেলে সে তাঁকে জিজ্ঞেস করল তােমার প্রভু কে? উত্তরে তিনি বলেন, যিনি হায়াত-মওতের মালিক তিনিই আমার প্রভু। সে বলল, এই ক্ষমতা তাে আমারও আছে। দু’জন কয়দী ডেকে সে একজনকে হত্যা করায়ে দিল আর অপরজনকে আযাদ করে দিয়ে বলল, দেখ, যাকে ছেড়ে দিলাম তাকে জিন্দিগী তথা হায়াত দিলাম আর যাকে হত্যা করলাম তাকে মৃত্যু দিলাম। সুতরাং আমিই তাে প্রভু, হায়াত-মওত আমার আয়ত্ত্বে। মূলত নমরূদ হায়াত-মওতের মালিক হওয়ার মমার্থ অনুধাবন করতে পারেনি। তাই ইব্রাহীম (عليه السلام) সে বিষয়ে বিতর্কে না গিয়ে বললেন-আমার প্রভু সর্বদা সূর্য পূর্ব দিক থেকে উদিত করেন আর পশ্চিম দিকে অস্ত করেন। যদি তুমি প্রভু হয়ে থাক তবে সূর্যের উদয়-অস্ত পরিবর্তন করে দেখাও। অন্তত একবার হলেও সূর্যকে পশ্চিম দিক থেকে উদিত কর। এবার নমরূদ চুপ হয়ে গেল এবং কোন উত্তর দিতে না পেরে বলল, তােমার জন্য আমার কাছে কোন খাদ্যবস্তু নেই, তুমি তােমার সে প্রভুর কাছে খাদ্য প্রার্থনা কর যার ইবাদত তুমি কর।

 হযরত ইব্রাহীম (عليه السلام) খালি হাতে ফেরৎ আসার সময় পথে বালুময় এলাকা থেকে এক থলে বালু ভরে ঘরে নিয়ে আসেন। বালুর থলে রেখে তিনি শুয়ে গেলেন। তাঁর স্ত্রী সারা (عليه السلام) থলে খুললে তাতে উন্নত মানের গম পেলেন। তিনি তা দিয়ে রুটি তৈরী করেন। ইব্রাহীম (عليه السلام) ঘুম থেকে জাগ্রত হলে স্ত্রী তাঁর খেদমতে খাবার পেশ করলে জিজ্ঞেস করলেন এই গম কোথা থেকে আসল? উত্তরে স্ত্রী বললেন, এগুলাে এই থলেই পেয়েছি। তখন ইব্রাহীম (عليه السلام) বুঝতে পারলেন, এই রিযিক আল্লাহ তায়ালাই দান করেছেন।

এরপর আল্লাহ তায়ালা একজন ফেরেশতাকে মানুষের আকৃতি ধারণ করে তার কাছে পাঠান। ফেরেস্তা বললেন, তােমার প্রভু বলতেছেন- তুমি আমার উপর ঈমান আন। সে বলল, প্রভু তাে আমিই, আমার প্রভু আবার কে হবে? এভাবে ফেরেশতা তিনবার বলার পর আল্লাহ তায়ালা নমরূদ বাহিনীর উপর মশা আযাব প্রেরণ করেন। এত বেশী মশা আগমন করল ফলে সূর্য আচ্ছাদিত হয়ে গেল এবং সুর্যের আলাে মাটিতে পড়তেছেনা। এই মশাগুলাে নমরূদ ব্যতীত সকলের রক্ত চুসে মাংস পর্যন্ত খেয়ে ফেলল শুধু হাড্ডিগুলাে পড়ে রইল। একটি মশা নমরূদের নাক দিয়ে মস্তিষ্কে প্রবেশ করে চারশ বছর পর্যন্ত মগজে আঘাত করেছিল। মাথার উপর আঘাত করলে মশার আঘাত ও বন্ধ থাকে নতুবা মশা মগজে আঘাত করতে থাকে। সুতরাং দিবা-রাত্রি তার মাথায় জুতার আঘাত মারতে হত। এমনকি তার দরবারের একটি নিয়ম করে দেয়া হল যে, দরবারে যে-ই আসবে তার মাথায় জুতার আঘাত করতে হবে। এভাবে চারশ বছর পর্যন্ত ছিল। নমরূদ ইতিপূর্বে চারশ বছর আরাম-আয়েশ বাদশাহী করেছিল। আর চারশ বছর জুতা-পিটা খেয়েছিল। সে মােট আটশ বছরের কিছু বেশী হায়াত পেয়েছিল। ●৩৬৩
_____________________________
363.{ হাকীমুল উম্মত মুফতি আহমদ ইয়ার খান নঈমী (رحمة الله), (১৩৯১হি.), তাফসীরে নঈমী, উর্দু, দিল্লী, খণ্ড: ৩য়, পারা: ৩য়, পৃ: ৬৭ }

❏ ইবনে আবি শায়বা (رحمة الله) আবু সালেহ (رحمة الله) থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, ইব্রাহীম (عليه السلام) মু'জিযায় যে বালু গমে রূপান্তরিত হয়েছিল সেই গমকে বপন করা হলে তা গম বৃক্ষ হয়ে শিকড় থেকে শাখার উপরিভাগ পর্যন্ত খােশায় ভরে যেতাে। ●৩৬৪
_____________________________
364.{ইমাম জালাল উদ্দিন সুয়ুতী (رحمة الله) (৯১১হি.), আল খাসায়েসুল কুবরা, আরবী, বৈরুত, খণ্ড: ২য়, পৃ: ৩০৮}

মৃতকে জীবিত করা
____________________
মৃতকে জীবিত করা

❏ একদা হযরত ইব্রাহীম (عليه السلام) সমুদ্রের পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় দেখলেন যে, একটি মৃত লাশ পড়ে আছে। সমুদ্রে জোয়ার আসলে মাছেরা এর মাংস ভক্ষণ করে আবার পানি নীচে নেমে গেলে কখনাে হিংস্র জীব-জন্তু ভক্ষণ করে, কখন পশু-পক্ষীরা ভক্ষণ করে। তিনি চিন্তা করলেন, একটি মুর্দা কতগুলাে জীব-জন্তুর পেটে গেল। কিয়ামতের দিন এর হাড্ডি মাংস একত্রিত হয়ে কিভাবে পূর্ণ জীবিত হবে। তখন তিনি আল্লাহর দরবারে প্রার্থনা করলেন- হে পরওয়ারদেগার! আমাকে মৃতকে জীবিত করার পদ্ধতি দেখান যাতে আমার মনে প্রশান্তি আসে এবং যাতে আমার বিশ্বাসে উপনীত হতে পারি। তারপর তাঁকে আদেশ দেয়া হল যে, চারটি পাখি ধরে এগুলাে লালন-পালন করে নিজের পােষ মেনে যায় যাতে ডাকামাত্র চলে আসে। তারপর এগুলােকে যবেহ করে হাড় মাংস, পাখা ইত্যাদি সবগুলােকেই কিমায় পরিণত করে সেগুলােকে কয়েকভাগ করে কিছু পাহাড়ে, কিছু মাঠে এবং কিছু বাতাসে নিক্ষেপ কর আর একাংশ নিজের কাছে রেখে দাও। তারপর দাঁড়িয়ে ঐগুলােকে ডাক দাও এই বলে- হে পাখিরা! আল্লাহর হুকুমে আমার নিকট চলে এসাে। তখন এগুলাে তাৎক্ষণিক জীবিত হয়ে দৌড়ে তােমার কাছে চলে আসবে।

অতঃপর তিনি ময়ুর, মুরগ, কবুতর ও গুদ কিংবা কাক ধরে আল্লাহর কথা মত লালন পালন করে পরে যবেহ করে গােশত কে কিমায় করে ভালভাবে মিশিয়ে চারটি, সাতটি কিংবা দশটি পাহাড়ে নিক্ষেপ করলেন এবং এসব পাখিগুলাের মাথা নিজের কাছে রেখে দেন। তারপর ডাক দিলেন- হে পাখিরা! আল্লাহর হুকুমে আমার নিকট চলে এস। সাথে সাথে হাড়ের সাথে হাড়, মাংসের সাথে মাংস, পাখার সাথে পাখা মিলে শুন্যে তাঁর চোখের সামনে চারটি পাখির বড়ি কৈরী হয়ে দৌড়ে দৌঁড়ে তাঁর কাছে চলে আসল এবং আপন আপন মাথার সাথে জুড়ে গিয়ে পূর্ণ পাখি হয়ে গেল। ●৩৬৫
_____________________________
365.{হাকীমুল উম্মত মুফতি আহমদ ইয়ার খান নঈমী (رحمة الله), (১৩৯১হি.), তাফসীরে নঈমী, উর্দু, দিল্লী, খণ্ড: ৩য়, পারা: ৩য়, পৃ: ৯১}

❏ এ প্রসঙ্গে আল্লাহ তায়ালা এরশাদ করেন,

واذ قال ابراهيم رب ارني کیف تحيي الموتى قال أولم تؤمن ، قال بلى ولكن ليطمئن قلبي ، قال فخذ اربعة من الطير فصرهن ، اليك ثم اجعل على كل جبل منهن جزء ثم ادعهن يأتينك سعيا ، واعلم

إن الله عزيز حكيم

অর্থ: আর স্মরণ করুন, যখন ইব্রাহীম বলল, হে আমার পালনকর্তা! আমাকে দেখান, কেমন করে আপনি মৃতকে জীবিত করেন। বললেন, তুমি কি বিশ্বাস করনা? বলল, অবশ্যই বিশ্বাস করি, তবে এজন্যে দেখতে চাই যাতে অন্তরে প্রশান্তি লাভ করতে পারি। বললেন,

তাহলে চারটি পাখি ধরে নাও। সেগুলােকে নিজের পােষ মানিয়ে নাও। অতঃপর সেগুলাের দেহের একেকটি অংশ বিভিন্ন পাহাড়ের উপর রেখে দাও। তারপর সেগুলােকে ডাক; তােমার নিকট দৌড়ে চলে আসবে। আর জেনে রেখাে, নিশ্চয়ই আল্লাহ পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়।

(সূরা আল বাকারা, পারা: ৩য়, আয়াত নং ১৬০)

মুখের ভাষা পরিবর্তন হওয়া
____________________
মুখের ভাষা পরিবর্তন হওয়া-

❏ হযরত ইবনে সা'দ স্বীয় সনদে হযরত ইবনে আব্বাস (رضي الله عنه) থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, হযরত ইব্রাহীম (عليه السلام) নমরূদের আগুন থেকে বের হয়ে কুসী’ থেকে থেকে রওয়ানা তখন তাঁর ভাষা ছিল সুরিয়ানী। তিনি যখন ফুরাত নদী পার হয়ে যান তখন আল্লাহ তায়ালা তাঁর ভাষা পরিবর্তন করে ইবরানী করে দেন। নমরূদ তাঁর পেছনে তাঁকে ধরার জন্যে লোেক পাঠিয়ে বলল, সুরিয়ানী ভাষায় কথা বলার লােক পেলে তাদেরকে পাকড়াও করবে। তারা গিয়ে ইব্রাহীম (عليه السلام)'র সাথে সাক্ষাত করেছে কিন্তু তাঁর মুখে ইবরানী ভাষা শুনে তারা তাঁকে ছেড়ে দেয় ফলে তিনি এবারও নমরূদের অনিষ্ট থেকে রক্ষা পেলেন। ●৩৬৬
_____________________________
366.{ইমাম সুয়ূতী, জালাল উদ্দিন সুয়ুতী (رحمة الله) (৯১১হি.), আল খাসায়েসুল কুবরা, আরবী, বৈরুত, খণ্ড: ২য় পৃ: ৩০৭}

হযরত ইব্রাহীম (عليه السلام) আঙ্গুলি থেকে দুধ, পানি, মধু ইত্যাদি প্রবাহিত হওয়া
____________________
হযরত ইব্রাহীম (عليه السلام) আঙ্গুলি থেকে দুধ, পানি, মধু ইত্যাদি প্রবাহিত হওয়া- 

❏ তাফসীরে আযিযীর’র উদ্ধৃতি দিয়ে মুফতি আহমদ ইয়ার খান নঈমী (رحمة الله) বলেন, হযরত ইব্রাহীম (عليه السلام) হযরত নূহ (عليه السلام)'র তুফানের ১৭০৯ সতেরশ নয় বছর পরে এবং হযরত ঈসা (عليه السلام)'র জন্মের প্রায় ২৩০০ দুই হাজার তিনশ বছর পূর্বে বাবেল শহরে জন্মলাভ করেন। ●৩৬৭
_____________________________
367.{তাফসীরে নঈমী, উর্দু, খণ্ড: ১ম, পারা: ১ম, পৃ: ৬৬৯}

❏ একদা নমরূদ স্বপ্নে দেখল যে, আকাশে একটি তারকা উদিত হল যার আলােতে সুর্য ও চন্দ্রের আলাে অন্ধকার হয়ে গেল। সে ভীত হয়ে গণকদের ডেকে এর ব্যাখ্যা চাইলে তারা বলল, এই বছর অপনার রাজ্যে এমন এক সন্তান ভুমিষ্ট হবে যে আপনার ধ্বংসের কারণ হবে এবং আপনার ধর্ম তারই হাতে ধ্বংস হবে। এ সংবাদ শ্রবণে নমরূদ ভীষণ ভাবে ভয় পেয়ে গেল। অতঃপর সে আদেশ জারি করল যে, এ বছর যেসব সন্তান জন্ম হবে তাদেরকে হত্যা করা হােক। ফলে এক লক্ষ্য বে কসুর সন্তান হত্যা করা হল। এ আদেশ জারি করল যে, কোন স্বামী-স্ত্রী মিলন করতে পারবে না এবং তারা যেন পরস্পর পরস্পর থেকে পৃথক থাকে। এসব হুকুম পালন হচ্ছে কিনা দেখা-শুনার জন্য বিশেষ ব্যবস্থা করা হল। কিন্তু কুদরতী ফায়সালাকে ঠেকাবে কে? এত কিছুর পরও ইব্রাহীম (عليه السلام) মাতৃগর্বে তাশরীফ নিলেন। ইব্রাহীম (عليه السلام)’র আম্মাজান অল্প বয়স্কা ছিলেন বিধায় গর্ভ প্রকাশ পায়নি। প্রসব সময় সন্নিকট হলে মা একটি গর্তে চলে যান যা শহরের অদুরে তাঁর পিতা তারেক তৈরী করেছিলেন। সেখানে তিনি জন্মলাভ করেন।  

মা তাঁকে গর্তে রেখে আসেন এবং প্রতিদিন যথাসময়ে গিয়ে দুধপান করায়ে আসেন। মা যখন তাঁর কাছে যেতেন তখন দেখতেন যে, তিনি আঙ্গুলির অগ্রভাগ চুসতেছেন এবং তা থেকে দুধ বের হচ্ছিল। মা’আরিজুন্নবুয়্যত গ্রন্থের ৩১০ পৃষ্ঠায় বলা হয়েছে যে, হযরত ইব্রাহীম (عليه السلام) সেই গর্তে থাকাকালীন তাঁর এক আঙ্গুলি থেকে পানি, অপর আঙ্গুলি থেকে দুধ, তৃতীয় আঙ্গুলি থেকে মধু ও চতুর্থ আঙ্গুলি থেকে ঘি বের হত। সেখানে তিনি এত দ্রুত বেড়েছিলেন যে, সাধারণ সন্তান দু’বছরে যা বাড়ত তিনি এক মাসে ততটুকু বেড়ে যেতেন। মতান্তরে তিনি সেখানে সাত, তের ও সতের বছর ছিলেন। ●৩৬৮
_____________________________
368.{মাওলানা নূর মুহাম্মদ, মাওয়ায়েজে রেজভীয়া, উর্দু, দিল্লী, খণ্ড: ৪র্থ, পৃ: ২}

মূর্তির মুখে বুলি
____________________
মূর্তির মুখে বুলি

❏ আযর ছিল হযরত ইব্রাহীম (عليه السلام)'র চাচা। সে উন্নত মানের মুর্তি বানিয়ে চড়া মূল্যে বিক্রি করত। বাজারে বিক্রি করার জন্য সে ইব্রাহীম (عليه السلام) কে ও মুর্তি দিয়ে বাজারে পাঠাত। হযরত ইব্রাহীম (عليه السلام) মুর্তি কাঁধে নিয়ে বাজারে বলতেন-

 এই মুর্তি কে কিনবে যে কোন লাভ-ক্ষতি করতে পারেনা। ফলে তাঁর কাছ থেকে কেউ মুর্তি ক্রয় করে না। মুর্তি ফেরৎ নিয়ে সন্ধা বেলায় তিনি ঘরে আসলে চাচা জিজ্ঞেস করত মুর্তি বিক্রি হলনা কেন? সম্ভবত তুমি এগুলাের কোন প্রসংশা করনি। এই শহরে কোন বস্তুর প্রসংশা না করলে কেউ তা কিনেনা। তিনি বললেন, চাচা! আমি এদের প্রসংশা কিভাবে করব, এরাতাে বধির কানে শুনে না, অন্ধ চোখে দেখেনা এবং এত অক্ষম যে, নিজের থেকে একটি মশা তাড়াতে পারে না। তারপর চাচাকে হেদায়েতের উদ্দেশ্যে বললেন,

“হে চাচা! এমন বস্তুর ইবাদত কেন করতেছেন যা শুনেও না, দেখেও না এবং আপনার থেকে কোন বিপদাপদ ও দূরীভূত করতে পারে না। আর কোন উত্তর দিতে না পেরে বলল, হে ইব্রাহীম! এই মুর্তি যদি তােমার রেসালতের ও তােমার খােদার একত্ববাদের সাক্ষ্য দেয় তবে আমি তােমার উপর ঈমান আনবাে। হযরত ইব্রাহীম (عليه السلام) দোয়ার জন্য হাত উঠালেন আর সব মুর্তি থেকে আওয়াজ আসল-

আর এই মু'জিযা দেখে বলল, ইব্রাহীম (عليه السلام) তাে বড় যাদুকর, এই বলে সে ঈমান গ্রহণ করলনা। ●৩৬৯
_____________________________
369.{মুল্লা মুঈন ওয়ায়েজ আল হারভী (رحمة الله) (৯০৭হি.), মা’আরিজুন্নবুয়্যত, পৃ: ৩১৯}

আগুনে অক্ষত থাকা - অগ্নিকুণ্ড শীতল হওয়া
____________________
আগুনে অক্ষত থাকা - অগ্নিকুণ্ড শীতল হওয়াঃ

❏ নমরূদ ও তার সম্প্রদায় সম্মিলিত ভাবে সিদ্ধান্ত নিল যে, ইব্রাহীম (عليه السلام)কে অগ্নিকুণ্ডে নিক্ষেপ করা হােক।

এ প্রসঙ্গে কুরআনে বলা হয়েছে,

তার জন্য একটি ইমারত তৈরী করা হােক তারপর প্রজ্জলিত অগ্নিকুন্ডে নিক্ষেপ করা হােক।

(সূরা সাফফাত, পারা: ২৩, আয়াত; ৯৭)

তখন তারা পাথর দিয়ে ত্রিশ গজ লম্বা, বিশগজ প্ৰস্তু চারটি দেওয়ালা তৈরী করে ঘােষণা করা হল যে, নমরূদের আদেশ যে, ছােট-বড় নারী পুরুষ সকলেই লাকড়ি জমা করে এখানে আনতে হবে অন্যথায় ইব্রাহীমের সাথে তাকেও অগ্নিকুন্ডে নিক্ষেপ করা হবে। ফলে সকলেই কাঠ সংগ্রহ করে বিশাল স্তুপ করল। দীর্ঘ একমাস যাবৎ কাঠ সংগ্রহের কাজ চলল। এমনকি তাদের অসুস্থ মহিলা মান্নত করল যে, ভাল হলে অগ্নিকুন্ডের জন্য কাঠ সংগ্রহ করবে। অতঃপর তাতে অগ্নিসংযােগ করে সাতদিন পর্যন্ত প্রজ্জলিত করতে থাকে। অগ্নিশিখা আকাশ চুম্বি হল। কোন পাখি এর উপর আকাশে উড়লে জ্বলে চাই হয়ে যেত।

এরপর হযরত ইব্রাহীম (عليه السلام) কে হাত-পা ও গলায় বেঁধে তাঁকে আগুনের পাশে আনা হল।

কিন্তু অগ্নিকুন্ডের পাশে যাওয়াই মুশকিল হয়ে পড়ল। অগ্নির অসহ্য তাপের কারণে তার ধারে-কাছেও যেতে কারাে সাধ্য ছিলনা। তারা দুঃশ্চিন্তায় পড়ে গেল কিভাবে তাঁকে আগুনে নিক্ষেপ করবে। এমতাবস্থায় শয়তান এসে ইব্রাহীম (عليه السلام) কে ‘মিনজানিক’ (এক প্রকার নিক্ষেপন যন্ত্র) রেখে অগ্নিকুন্ডে নিক্ষেপ করার পদ্ধতি শিখিয়ে দিল। যখন তাঁকে মিনজানিকে রেখে অগ্নিকুন্ডে নিক্ষেপের প্রস্তুতি নিচ্ছিল তখন এই দৃশ্য ফেরেস্তাকুল, দ্যুলােকে ভূলােকে সমস্ত সৃষ্টিজীব চিল্কার করে কেঁদে উঠল আর আরজ করল- হে আল্লাহ! সমগ্র ভূপিষ্ঠে শুধুমাত্র তােমার একজন বান্দাই তােমার ইবাদত করতেছে।

তাঁকে আজ অত্যন্ত মর্মান্তিকভাবে অগ্নিকুন্ডে নিক্ষেপ করা হচ্ছে। যদি অনুমতি হয় তবে আমরা তাঁকে সাহায্য করতে পারি। আল্লাহ বলেন, যদি তিনি সাহায্য চায় তবে অনুমতি দিলাম তােমরা সাহায্য করতে পার। আর যদি আমার কাছে চায় তবে অমি তাকে সাহায্য করব। তখন পানির বাতাসের দায়িত্ববান ফেরেস্তাদ্বয় এসে সাহায্যের আবেদন করলে তিনি বলেন, তােমাদের সাহায্যের কোন প্রয়ােজন নেই, প্রভুর সন্তুষ্টিতেই ইব্রাহীম সন্তুষ্ট। মিনজানিক থেকে তাঁকে অগ্নিকুন্ডে নিক্ষেপ করার পর যখন তিনি অগ্নিকুন্ডের নিকটে পৌঁচে গেলেন তখন জিব্রাঈল (عليه السلام) তাঁর খেদমতে এসে বলল,

, حاجة الك ابراهيم يا

হে ইব্রাহীম! সাহায্যের প্রয়ােজন আছে? উত্তরে তিনি বললেন,

, فلا اليك اما نعم

প্রয়ােজন তাে আছে তবে তােমার কাছে নয়। জিব্রাঈল (عليه السلام) বলল, আচ্ছা যার কাছে প্রয়ােজন তাকে আহ্বান করুন। কারণ আগুনের একেবারে নিকটে এসে গিয়েছেন আপনি। তিনি বললেন, من حبسى بحالى علمه

سوالى তিনি আমার অবস্থা সম্পর্কে অবহিত আছেন, তিনিই আমার প্রয়ােজন পুরণে যথেষ্ট।

তখন আল্লাহ তায়ালা আগুনকে আদেশ করলেন,

হে আগুন! ইব্রাহীমের জন্য শীতল ও নিরাপদ হয়ে যাও।

(সূরা আম্বিয়া, পারা: ১৭, আয়াত নং ৬৯)

সাথে সাথে অগ্নিকুন্ড আরামদায়ক বাগানে পরিণত হয়ে গেল এবং তাঁকে জান্নাতি রেশমী পােষাক পরিধান করায়ে বেহেশতী একটি তখতে বসানাে হল। ডানে জিব্রাঈল, বামে মিকাঈল (عليه السلام) বসে আছেন অপর এক ফেরেস্তা হাতে পাখা নিয়ে বাতাস করতেছে। যে সব রশি বেঁধে তাঁকে অগ্নিকুন্ডে নিক্ষেপ করেছিল সেগুলাে পর্যন্ত পুড়ে ছাই হয়ে গেল কিন্তু ইব্রাহীম (عليه السلام)’র একটি লােমও পুড়েনি বরং কোন কোন বর্ণনায় আছে যে, আল্লাহর আদেশে সে সময় পৃথিবীর সমস্ত প্রজ্জলিত আগুন নিভে গিয়েছিল। ●৩৭০
_____________________________
৩৭০. মুল্লা মুঈম আল হারভী (رحمة الله) (৯০৭হি.), মা’আরেজুন্নবুয়্যত, পৃ: ৩২৬

হযরত ইব্রাহীম (عليه السلام)’র আওয়াজ
____________________
হযরত ইব্রাহীম (عليه السلام)’র আওয়াজ

❏ বায়তুল্লাহ’র নির্মাণ কাজ সমাপ্ত হলে আল্লাহ তায়ালা হযরত ইব্রাহীম (عليه السلام)কে নির্দেশ দেন যে, তুমি মানব জাতিকে বায়তুল্লাহয় হজব্রত পালনের উদ্দেশ্যে আগমণের জন্য আহ্বান কর। তিনি মকামে ইব্রাহীম নামক পাথরখানা নিয়ে আবু কুবাইস পাহাড়ে রেখে এবং এই পাথরে দাঁড়িয়ে সমগ্র মানব জাতিকে আহ্বান করলেন।

পবিত্র কুরআনে তাঁর আহ্বান সম্পর্কে বর্ণিত হয়েছে যে,

অর্থ: এবং মানুষের মধ্যে হজ্বের জন্যে ঘােষণা প্রচার কর। তারা তােমার কাছে আসবে পায়ে হেঁটে এবং সর্বপ্রকার কৃশকায় উটের পিঠে সওয়ার হয়ে দূর-দূরান্ত থেকে।

(সূরা হাজ্ব, পারা: ১৭, আয়াত নং ২৭)

ইব্রাহীম (عليه السلام)’র এই আহ্বান আল্লাহ তায়ালা বিশ্বের কোণে কোণে পৌঁছিয়ে দেন এবং শুধু তখনকার জীবিত মানুষ পর্যন্ত নয়; বরং ভবিষ্যতে কিয়ামত পর্যন্ত আগমণকারী সকল মানুষের কানে কানে এই আহ্বান পৌঁছিয়ে দেন। যারা এই ঘােষণা শুনে চুপ ছিল তাদের ভাগ্যে হজ্বের সুযােগ হবেনা। আর যারা যতবার

لبيك اللهم لبيك বলে জবাব দিয়েছিলেন তারা ততবার হজ্ব করতে পারবেন। এ সময় এই পাথরে হযরত ইব্রাহীম (عليه السلام)'র পায়ের আঙ্গুলির চাপ বসে গেল। ইহা ইব্রাহীম (عليه السلام)’র স্থায়ী মু'জিযা যা আদৌ বিদ্যমান। ●৩৭১
_____________________________
৩৭১. হাকীমুল উম্মত মুফতি আহমদ ইয়ার খান নঈমী (رحمة الله), (১৩৯১হি.),

তাফসীরে নঈমী, উর্দু, দিল্লী, খণ্ড: ১ম, পারা: ১ম, পৃ: ৬৮০

মকামে ইব্রাহীম
____________________
মকামে ইব্রাহীম।

❏ হযরত ইব্রাহীম ও হযরত ইসমাঈল (عليه السلام) কাবা ঘরের পূণনির্মাণ কাজ সম্পন্ন করেন। ইব্রাহীম (عليه السلام) ছিলেন মূল কারিগর আর ইসমাঈল (عليه السلام) ছিলেন সহকারী। কা’বার দেয়াল যখন উচু হয়ে গেল হাতের নাগালে পাওয়া যাচ্ছিলনা তখন তিনি ইসমাঈল (عليه السلام) বললেন, আমার জন্য একখানা উচু পাথর নিয়ে এসাে যার উপর দাঁড়িয়ে দেয়াল নির্মাণ কাজ করতে পারি। হযরত ইসমাঈল (عليه السلام) পাথরের খুঁজে জাবলে আবু কুবাইস নামক পাহাড়ের দিকে যাওয়ার পথে জিব্রাঈল (عليه السلام)'র সাক্ষাত হয়। জিব্রাঈল (عليه السلام) তাঁকে বললেন, আসুন, আমি আপনাকে এমন এক পাথরের সন্ধান দেবাে যেটি হযরত আদম (عليه السلام) পৃথিবীতে আসার সময় জান্নাত থেকে এনেছিলেন আর ইদ্রীস (عليه السلام) নূহ (عليه السلام)’র তুফানের ভয়ে এটাকে এই পাহাড়ে দাফন করে রেখেছিলেন।

পাহাড়ের নির্দিষ্ট স্থানে গিয়ে জিব্রাঈল (عليه السلام) বললেন, এখানে দুটি পাথর আছে একটিকে নিয়ে কা'বার দরজার নিকটে স্থাপন করে দিন যাতে তাওয়াফকারীগণ এটাকে চুমু খেতে পারে। এটি হল হাজরে আসওয়াদ। আর বড় পাথর খানাতে ইব্রাহীম (عليه السلام) দাড়িয়ে কা’বা নির্মাণ করবেন। অতঃপর উভয় পাথর নিয়ে এসে হযরত ইব্রাহীম (عليه السلام) দিলেন এবং খােদায়ী হুকুম ও পৌঁছালেন। আল্লাহর আদেশ অনুযায়ী ইব্রাহীম (عليه السلام) হাজরে আসওয়াদকে দরজার পাশে স্থাপন করে দিলেন আর বড়টির উপর দাঁড়িয়ে কা’বার নির্মাণ কাজ করেন। যে পরিমাণ দেয়াল উচু হতে যাচ্ছিল ততটুকু পরিমাণ এই পাথরখানাও উচু হয়ে যেতাে। এভাবে পাথরখানা বর্তমান আধুনিক যুগের আবিস্কৃত লিপ্টর ন্যায় কাজ করেছিল। এভাবে তিনি কাবার নির্মাণ কাজ সমাপ্ত করেন। ●৩৭২
_____________________________
৩৭২. হাকীমুল উম্মত মুফতি আহমদ ইয়ার খান নঈমী (رحمة الله), (১৩৯১হি.),

তাফসীরে নঈমী, উর্দু, দিল্লী, খণ্ড: ১ম, পারা: ১ম, পৃ: ৬৮০

হযরত ইব্রাহীম (عليه السلام) কে বাঘে সিজদা করা
____________________
হযরত ইব্রাহীম (عليه السلام) কে বাঘে সিজদা করা।

❏ মুফতি আহমদ ইয়ার খান নঈমী (رحمة الله) তাঁর প্রসিদ্ধ গ্রন্থ তাফসীরে নঈমীতে তাফসীরে আযিযী’র উদ্ধৃতি দিয়ে বলেন- একদা হযরত ইব্রাহীম (عليه السلام)'র যুগের কাফেররা দু'টি বাঘকে তাঁর দিকে ছেড়ে দিল। বাঘ দুটি তাঁকে আক্রমণ করাতাে দূরের কথা বরং বাঘ দু’টি তাঁর কদমে সিজদায় পড়ে জিহ্বা দিয়ে তাঁর কদম ছাটতে লাগল। ●৩৭৩
_____________________________
৩৭৩. হাকীমুল উম্মত মুফতি আহমদ ইয়ার খান নঈমী (رحمة الله), (১৩৯১হি.),

তাফসীরে নঈমী, উর্দু, দিল্লী, খণ্ড: ১ম, পারা: ১ম, পৃ: ৬৭০

হযরত ইয়াকুব (عليه السلام)’র মুজিযা বাঘের সাথে কথােপকথন
____________________
হযরত ইয়াকুব (عليه السلام)’র মুজিযা

বাঘের সাথে কথােপকথন

❏ হযরত রবীয়া (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, হযরত ইয়াকুব (عليه السلام) কে যখন বলা হল যে, হযরত ইউসুফ (عليه السلام) কে বাঘে খেয়ে ফেলেছে, তখন তিনি সেই বাঘকে ডেকে বললেন,

فوادى وثمرة عينى قرة اكلت

তুমি কি আমার চোখের নয়ন কলিজার টুকরা ইউসুফ কে খেয়েছ? উত্তরে বাঘ বলল-افعل الم না, আমি একাজ করিনি। তিনি বাঘকে জিজ্ঞেস করলেন, তুমি কোথা থেকে আসতেছ আর কোথায় যাবার ইচ্ছে করেছ? বাঘে উত্তর দিল, মিশর আসতেছি আর জুরজান যাওয়ার ইচ্ছে করেছি।

তিনি পুনরায় বাঘকে জিজ্ঞেস করলেন, এই ভ্রমণের উদ্দেশ্য কি? বাঘ উত্তরে বলল, আমি আপনার পূর্ববর্তী আম্বিয়াগণের কাছে শুনেছি যে,

من از حميما او قريب ما كتب الله له بكل سيئة ورفع له الف درجة حسنة وحط عنه الف

অর্থাৎ যে ব্যক্তি কোন বন্ধু কিংবা নিকটতম আত্মীয়ের সাথে সাক্ষাত করে তবে আল্লাহ তায়ালা তার প্রতি কদমে একহাজার নেকী লিখে দেন আর একহাজার গুনাহ মুছে দেন এবং একহাজার মর্যাদা বৃদ্ধি করে দেন।

অতঃপর হযরত ইয়াকুব (عليه السلام) তাঁর সন্তানদেরকে ডাকলেন এবং বললেন, এই বাঘ থেকে হাদিসখান লিখে নাও। কিন্তু বাঘে তাদেরকে হাদিস বর্ণনা করতে অসম্মতি জানাল। তিনি এর কারণ জিজ্ঞেস করলে বাঘে বলে-

انهم عصاة - কেননা, তারা অপরাধী গুনাহগার, তাই আমি তাদেরকে হাদিস বর্ণনা করবােনা। ●৩৭৪
_____________________________
৩৭৪. ইমাম সুয়ূতী, জালাল উদ্দিন সুয়ূতী (رحمة الله),

আল খাসায়েসুল কুবরা, আরবী, বৈরুত, খণ্ড: ২য় পৃ: ৩০৮

হযরত ইউসুফ (عليه السلام)’র মুজিযা দোলনার শিশুর সাক্ষ্যদান
____________________
হযরত ইউসুফ (عليه السلام)’র

মুজিযা দোলনার শিশুর সাক্ষ্যদান

❏ আযীযে মিশরের স্ত্রী জুলেখা হযরত ইউসুফ (عليه السلام)’র উপর আশেক হয়ে তাঁকে সাত দরজার ভিতরে নিয়ে দরজাসমূহ বন্ধ করে তালা লাগিয়ে দিয়ে পাপ কাজের দিকে আহ্বান করল। হযরত ইউসুফ (عليه السلام) আত্মরক্ষার উদ্দেশ্যে আল্লাহর উপর নির্ভর করে তালাবদ্ধ বন্ধ দরজার দিকে দৌড় দিলে আপনা-আপনি দরজার তালা খুলে নীচে পড়ে গেল আর তিনি অনায়সে দৌড়ে বাইরে চলে গেলেন। পিছে পিছে জুলেখাও দৌড়ে এসে উভয় আযীয মিশরের সামনে উপস্থিত হল। পালানাের সময় জুলেখা ইউসুফ (عليه السلام)’র জামা ধরে রাখার কারণে তাঁর জামার পিছন দিক ছিড়ে গিয়েছিল। জুলেখা নিজের দোষ ইউসুফ (عليه السلام)'র চাপিয়ে বলল, যে ব্যক্তি আপনার পরিজনের সাথে কুকর্মের ইচ্ছা করে। তাকে কারাগারে পাঠাননা অথবা অন্য কোন যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি দেয়া ছাড়া তার আর কি শাস্তি হতে পারে? ইউসুফ (عليه السلام) বললেন, সে-ই আমাকে আত্মসংবরণ না করতে ফুসলিয়েছে।

ব্যাপারটি ছিল খুবই স্পর্শকাতর। তাছাড়া কে সত্যবাদী তা নির্ণয় করা ছিল সুকঠিন। কারণ সাক্ষ্য-প্রমাণের কোন অবকাশ ছিলনা। কিন্তু আল্লাহ তায়ালা সত্য উদঘাটন করে স্বীয় নবীর পিম্পাপ ও নির্দোষ হওয়ার ব্যবস্থা কুদরতীভাবে করে রেখেছেন। হযরত ইবনে আব্বাস ও আবু হােরাইরা (رضي الله عنه)’র বর্ণনা অনুযায়ী একটি কচি শিশুকে আল্লাহ তায়ালা বিজ্ঞ ও দার্শনিক সুলভ বাকশক্তি দান করলেন। এ শিশু এ ঘরেই দোলনায় লালিত হচ্ছিল। হযরত ইউসুফ (عليه السلام) মুজিযা হিসাবে ঠিক ঐ মুহুর্তে দার্শনিক সুলভ বলে উঠল- ইউসুফ (عليه السلام)'র জামাটি দেখ- যদি তা সামনের দিকে ছিন্ন থাকে, তবে জুলেখার কথা সত্য আর ইউসুফ (عليه السلام) মিথ্যাবাদীরূপে সাব্যস্ত হবেন। পক্ষান্তরে যদি জামা পিছন দিক থেকে ছিন্ন থাকে, তবে মহিলা মিথ্যাবাদী এবং ইউসুফ (عليه السلام) সত্যবাদী। অতঃপর দেখা গেল যে, তাঁর

জামা পিছন দিকেই ছিন্ন ছিল। এতে ইউসুফ (عليه السلام) নির্দোষ ও নিস্পাপ সাব্যস্থ হলেন আর জুলেখা দোষী সাব্যস্থ হয়ে লজ্জিত হল। আল্লামা নঈম উদ্দিন মােরাদাবাদী (رحمة الله) বলেন, এই সাক্ষ্যদাতা শিশুটি জুলেখার মামাত ভাই ছিল যার বয়স হয়েছিল তখন মাত্র চার মাস। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ তায়ালা সূরা ইউসুফে আয়াত নং ২৩-৩০ পর্যন্ত বিস্তারিতভাবে বর্ণনা করেন।

দূরবস্তু দৃশ্যমান হওয়া
____________________
হযরত ইউসুফ (عليه السلام)

দূরবস্তু দৃশ্যমান হওয়া

❏ জুলেখা হযরত ইউসুফ (عليه السلام)'র উপর প্রেমাসক্ত হয়ে আবদ্ধ ঘরে নিয়ে নির্জনে পাপ কাজের প্ররােচনা চালায় তখন স্বীয় পালন কর্তার প্রমাণ (বুরহান) তাঁর চোখের সামনে এসেছিল, ফলে অনিচ্ছাকৃত কল্পনা ও ধারণা অন্তর থেকে দূর হয়ে গেল। এ বুরহান কি ছিল তা নিয়ে মাতানৈক্য থাকলেও হযরত ইবনে আব্বাস, মুজাহিদ, সাঈদ ইবনে জুবাইর, মুহাম্মদ ইবনে সীরিন, হাসান বসরী (رحمة الله) প্রমুখ বলেছেন, আল্লাহ তায়ালা মুজিযা হিসাবে এ নির্জন কক্ষে হযরত ইউসুফ (عليه السلام) স্বীয় পিতা হযরত ইয়াকুব (عليه السلام) এমন অবস্থায় দেখতে পান যে, তিনি হাতের আঙ্গুলি দাঁতে চেপে ধরে তাঁকে সাবধান করে দিয়েছেন যেন পাপ কাজে লিপ্ত না হয়।

❏ এ প্রসঙ্গে পবিত্র কুরআনে আল্লাহ পাক এরশাদ করেন,

অর্থ: নিশ্চয় মহিলা তাঁর বিষয়ে চিন্তা করেছিল এবং সেও মহিলার বিষয়ে চিন্তা করত যদি না সে স্বীয় পালনকর্তার বুরহান’ অবলােকন করত। এমনিভাবে আমি তার কাছ থেকে মন্দ বিষয় ও নির্লজ্জ বিষয় সরিয়ে দেই। নিশ্চয় সে আমার মনােনীত বান্দাদের একজন।

(সূরা ইউসুফ, পারা: ১২, আয়াত নং ২৪)

জেলখানায় অদৃশ্যের সংবাদ ও প্রশ্নের ব্যাখ্যা প্রদান
____________________
জেলখানায় অদৃশ্যের সংবাদ ও প্রশ্নের ব্যাখ্যা প্রদান

❏ দোলনার শিশুর সাক্ষ্য দ্বারা ইউসুফ (عليه السلام)'র নিস্পাপ চরিত্র দিবালােকের ন্যায় ফুটে উঠার পর তিনি দোয়া করেছিলেন,

হে প্রভূ! তারা আমাকে যে কাজের দিকে আহ্বান করে, তার চাইতে আমি কারাগারে থাকাই পছন্দ করি। (সূরা ইউসুফ, আয়াত নং ৩৩)

তাছাড়া আযীযে মিনার ও তাঁর স্ত্রী লােক নিন্দা বন্ধ করার লক্ষে কিছু দিনের জন্য তাঁকে কারাগারে প্রেরণ করার সিদ্ধান্ত নেয়। ইউসুফ (عليه السلام) দোয়া কবুল হল এবং তাঁকে কারাগারে পাঠিয়ে দিল। সাথে আরাে দু'জন

অভিযুক্ত কয়েদী কারাগারে প্রবেশ করল। তাদের একজন বাদশাকে মদ্যপান করাত অপর জন্য বাবুর্চি ছিল। তারা উভয়জন বাদশাকে খাদ্যে বিষ মিশানাের অভিযােগে গ্রেফতার হয়ে কারাগারে আসল এবং তদন্ত কাজ সমাপ্ত না হওয়া পর্যন্ত কারাগারে থাকার সিদ্ধান্ত হল। কারাগারে ইউসুফ (عليه السلام)’র সদাচরণে ও চরিত্র মাধুর্যে মুগ্ধ হল সকল কারাবাসী।

একদা ঐ দু’জন কয়েদী দু'টি স্বপ্ন দেখল এবং স্বপ্নে তা'বীর বর্ণনা করতে ইউসুফ (عليه السلام)'র নিকট আসল। স্বপ্ন বর্ণনা করতে গিয়ে মদ্যপানকারী ব্যক্তি বলল, আমি স্বপ্ন দেখি যে, আঙ্গুর থেকে শরাব বের করছি। বাবুর্চি বলল, আমি স্বপ্ন দেখি যে, আমার মাথায় রুটিভর্তি পাত্র রয়েছে। তা থেকে পাখিরা টুকরা টুকরা করে খাচ্ছে। তিনি স্বপ্নের ব্যাখ্যায় বলেন- মদ্যপানকারী মুক্তিপাবে এবং পুনরায় চাকুরীতে পূর্ণবহাল হয়ে বাদশাকে মদ্যপান করাবে। পক্ষান্তরে বাবুর্চির অপরাধ প্রমাণিত হবে এবং তাকে শুলে চড়ানাে হবে। তার মাথার মগজ পাখিরা ঠুকরে খাবে। তাছাড়া কয়েদীদের নিকট খাবার আসার পূর্বেই তিনি কি খাবার আসবে, কতটুক পরিমাণ আসবে, ঐগুলাের রঙ কিরূপ হবে এবং কখন আসবে। ইত্যাদি তাদের অগ্রীম বলে দিতেন। আর তিনি যেরূপ বলতেন ঠিক সেরূপই হত। ●৩৭৫
_____________________________
৩৭৫. মাওলানা হেফজুর রহমান, কাসাসুল কুরআন, উর্দু, করাচী, খণ্ড: ১ম পৃ: ৩০০ ও আল্লামা নঈম মােরাদাবাদী (رحمة الله) (১৩৬৭হি.), খাযায়েনুল ইরফান, উর্দু, প্রান্ত টীকা কানযুল ঈমান, সূরা ইউসূফ, পারা: ১২ পৃ:ৎ২৮৬

❏ এ প্রসঙ্গে আল্লাহ তায়ালা এরশাদ করেন,

অর্থ: আর তাঁর সাথে কারাগারে দু’জন যুবক প্রবেশ করল। তাদের একজন বলল, আমি স্বপ্নে দেখলাম যে, আমি মদ নিঙড়াচ্ছি। অপরজন বলল, আমি দেখলাম যে, নিজ মাথায় রুটি বহন করছি, তা থেকে পাখী ঠুকরিয়ে খাচ্ছে। আমাদেরকে এর ব্যাখ্যা বলুন। আমরা আপনাকে সকর্মশীল দেখতে পাচ্ছি। তিনি বললেন, তােমাদেরকে প্রত্যেহ যে খাদ্য দেয়া হয়, তা তােমাদের কাছে আসার আগেই আমি তার ব্যাখ্যা বলে দেবাে। এ জ্ঞান আমার পালনকর্তা আমাকে শিক্ষা দিয়েছেন। আমি ঐ সব লােকের ধর্ম পরিত্যাগ করেছি যারা আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করেনা এবং পরকালে অবিশ্বাসী।

(সূরা ইউসূফ, পারা: ১২, আয়াত নং ৩৬ ও ৩৭)

বাদশার স্বপ্নের ব্যাখ্যা প্রদান 
____________________
বাদশার স্বপ্নের ব্যাখ্যা প্রদান

❏ হযরত ইউসুফ (عليه السلام) বার বছর জেলখানায় বিনা দোষে আবদ্ধ থাকার পর মিশরের বাদশা রাইয়্যান ইবনে ওয়ালীদ এক আশ্চার্য স্বপ্ন দেখলেন। তিনি স্বপ্ন দেখলাম যে, সাতটি মােটা তাজা গাভীকে অপর সাতটি দূর্বল গাভী খেয়ে ফেলতেছে এবং সাতটি সবুজ শীষ ও সাতটি শুষ্ক শীর্ষ দেখেছেন। বাদশা রাজ্যের স্বপ্নের ব্যাখ্যাদাতাদের একত্রিত করে এ ব্যাখ্যা জানতে চাইলেন। কিন্তু স্বপ্নটি কারাে বােধগম্য হলনা। তাই তারা এটিকে কল্পনা প্রসূত বলে উড়িয়ে দিয়ে এর ব্যাখ্যা করতে অপারগতা প্রকাশ করল। তখন ইউসুফ (عليه السلام)'র বন্দী বন্ধু যে নির্দোষ সাব্যস্ত হয়ে মুক্তি লাভ করেছিল সে বলল, আমি এর ব্যাখ্যা বলে দিতে পারবাে। তােমরা আমাকে জেলখানায় প্রেরণ কর।

সে জেলখানায় গিয়ে এই অদ্ভুদ স্বপ্নের কথা বললে হযরত ইউসুফ (عليه السلام) এর যথার্থ ও বাদশার মনপুত ব্যাখ্যা প্রদান করেন। ব্যাখ্যায় তিনি বলেন- প্রথম সাতবছর তােমাদের ভাল ফলন হবে এরপর সাত বছর দুর্ভিক্ষ হবে। প্রথম বছরের অতিরিক্ত উৎপন্ন শস্য গমের শীটের মধ্যেই সংরক্ষিত রাখতে হবে যাতে দীর্ঘ দিন রাখলেও গমে পােকা না লাগে। পরবর্তী সাত বছর দুর্ভিক্ষের সময় সংরক্ষিত শস্য কাজে আসবে। এরপর প্রচুর বৃষ্টিপাত হবে এবং উৎপাদনও বাড়বে।

লােক মারফত স্বপ্নের এই শুনে বাদশা অত্যন্ত খুশী হল এবং ইউসুফ (عليه السلام) জ্ঞান গরিমায় মুগ্ধ হয়ে স্বয়ং ইউসুফ (عليه السلام)'র যবান থেকে এর ব্যাখ্যা শােনার জন্য তিনি তাঁকে জেল থেকে সম্মানের সহিত মুক্তি দিলেন। বাদশা তাঁর মুখ থেকে স্বপ্নের ব্যাখ্যা শুনতে চাইলে প্রথমে তিনি নিখুত ও পুত্থানুরূপে বাদশার দেখা স্বপ্নের বিবরণ দিলেন যা বাদশা আজ পর্যন্ত কারাে কাছে প্রকাশ করেন নি। তারপর স্বপ্নের ব্যাখ্যা ও এর সমাধান বর্ণনা করেলে বাদশা মুগ্ধ হয়ে তাঁকে তার সাথে রেখে দেন। এক বছর পর রাষ্ট্রীয় দায়িত্ববার তাঁর উপর অর্পণ করে ক্ষমতা হস্তান্তর করেন। এ ভাবেই তিনি একজন গােলাম থেকে মিশরের রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় অধিষ্টিত হন। ●৩৭৬
_____________________________
৩৭৬. আল্লামা নঈম উদ্দিন মােরাদাবাদী (رحمة الله) (১৩৬৭হি.), খাযায়েনুল ইরফান, উর্দু, প্রান্ত টীকা, খানযুল ঈমান, পৃ: ২৮৭ ও ২৮৮

হযরত ইউসূফ (عليه السلام)’র মুজিযা জামা মােবারক
____________________
হযরত ইউসূফ (عليه السلام)’র মুজিযা

জামা মােবারক

❏ হযরত ইউসুফ (عليه السلام)'র ব্যবহৃত জামা মােবারকের মাধ্যমে তাঁর অনেক মুজিযা প্রকাশিত হয়েছিল। এটি একটি পূর্বপুরুষের বরকত মন্ডিত জামা ছিল যা বংশ পরম্পরায় তিনি পেয়েছিলেন। এটি মুলত হযরত ইব্রাহীম (عليه السلام)'র জামা ছিল যা জান্নাতী রেশম দিয়ে তৈরী। যখন হযরত ইব্রাহীম (عليه السلام) কে নমরূদে জামা পরিধান করায়েছিলেন। এটি হযরত ইব্রাহীম (عليه السلام) তাঁর পুত্র হযরত ইসহাক (عليه السلام) কে এবং তিনি তাঁর পুত্র হযরত ইয়াকুব (عليه السلام) কে দান করেছিলেন। ইয়াকুব (عليه السلام)’র সন্তানরা হযরত ইউসুফ (عليه السلام) কূপে নিক্ষেপ করতে নিয়ে যাওয়ার সময় তিনি ইউসুফ (عليه السلام)’র গলায় জামাটি তাবীজ আকারে বেঁধে দিয়েছিলেন।

ইউসুফ (عليه السلام)’র ভাইয়েরা তাঁকে হাত-পা বেঁধে জামা খুলে কুপে নিক্ষেপ করে রশি কেটে দিলে তিনি নীচে পতিত হওয়ার পূর্বেই হযরত জিব্রাঈল (عليه السلام) আল্লাহর হুকুমে এসে তাঁকে একটি পাথরে বসিয়ে দিলেন এবং তাঁর হাত-পা খুলে দেন। পিতা কর্তৃক গলায় বেঁধে দেওয়া জামাটি খুলে জিব্রাঈল (عليه السلام) তাঁকে পরিয়ে দেন। এই জামার বরকতে অন্ধকার কূপ আলােকিত হয়ে গেল।

এরপর হযরত ইউসুফ (عليه السلام)'র সাথে তাঁর ভাইদের সাথে দীর্ঘদিন নাটকীয়ভাবে পরিচয় হওয়ার পর যখন জানতে পারলেন যে, পিতা ইয়াকুব (عليه السلام) তাঁর বিরহে কাঁদতে কাঁদতে দৃষ্টিশক্তি হারিয়ে ফেলেছে তখন তিনি সেই ঐতিহাসিক জামাটি দিয়ে বলেছিলেন, আমার এই জামাটি নিয়ে যাও এবং আমার পিতার চেহারার উপর রেখে দাও। এতে তিনি দৃষ্টিশক্তি ফিরে পাবেন। পারিবারের সকলকে আমার কাছে নিয়ে এস। এদিকে ইয়াকুব (عليه السلام)'র জেষ্টপুত্র ইয়াহুদা মিশর থেকে জামা নিয়ে রওয়ানা হল ঐ দিকে প্রায় আড়াইশ মাইল দূর কেনানে হযরত ইয়াকুব (عليه السلام), ইউসুফ (عليه السلام) জামার বা শরীরের গন্ধ অনুভব করেন। আর ইয়াহুদা জামাটি নিয়ে তাঁর মুখে রাখল তখন সঙ্গে সঙ্গেই তাঁর দৃষ্টিশক্তি ফিরে এল।

❏ এ প্রসঙ্গে আল্লাহ তায়ালা এরশাদ করেন,

অর্থ: যখন কাফেলা (জামা নিয়ে) রওয়ানা হল তখন তাদের পিতা বললেন, তােমরা যদি আমাকে বােকা মনে না কর তবে বলি- আমি নিশ্চিতরূপেই ইউসুফের গন্ধ পাচ্ছি। লােকেরা বলল, আল্লাহর কসম, আপনি তাে সেই পুরানাে ভ্রান্তিতেই পড়ে আছেন। অতঃপর যখন সুসংবাদদাতা পৌঁছল, সে জামাটি তাঁর মুখে রাখল। অমনি তাঁর দৃষ্টিশক্তি ফিরে পেলেন।

(সূরা ইউসুফ, পারা: ১৩, আয়াত নং ৯৪-৯৬)

হযরত মুসা (عليه السلام) কে প্রদত্ত অসংখ্য মুজিযা
____________________
হযরত মুসা (عليه السلام) কে প্রদত্ত অসংখ্য মুজিযা

❏ আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কুরআনে হযরত মুসা কে নয়টি প্রকাশ্য নিদর্শন তথা মু'জিযা প্রদানের কথা উল্লেখ করেছেন।

সূরা বনী ইসরাঈল’র একশ’ এক নম্বর আয়াতে আল্লাহ বলেন- অর্থাৎ আমি মুসা কে নয়টি প্রকাশ্য নিদর্শন তথা মুজিযা দান করেছি।

হযরত ইবনে আব্বাস (رضي الله عنه) বলেন- এই নয়টি মু'জিযা হল- যথা: এক, হযরত মুসা (عليه السلام)'র লাঠি, যা অজগর সাপ হয়ে যেত, দুই, শুভ্র হাত, যা কালের নীচ থেকে বের করতেই চমকাতে থাকত, তিন, মুখের তােতলামী, যা পরে দূর করে দেয়া হয়েছিল, চার, বনী ইসরাঈলকে নদীপার হওয়ার জন্যে নদীকে দু'ভাগে বিভক্ত করে রাস্তা করে দেয়া পাঁচ.

অস্বাভাবিক ভাবে পঙ্গপালের আযাব প্রেরণ করা, ছয়, তুফান প্রেরণ করা, সাত, শরীরের কাপড়ে এত উকুন সৃষ্টি করা, যা থেকে আত্মরক্ষার কোন উপায় ছিলনা, আট, ব্যাঙের আযাব চাপিয়ে দেয়া, ফলে প্রত্যেক পানাহারের বস্তুতে ব্যাঙ কিলবিল করতাে এবং নয়, রক্তের আযাব প্রেরণ করা। ফলে প্রত্যেক পাত্রে ও পানাহারের বস্তুতে রক্ত দেখা যেত।”৩৭৭
_____________________________
৩৭৭. আল্লামা নঈম উদ্দিন মােরাদাবাদী (رحمة الله) (১৩৬৭হি.),

খাযায়েনুল ইরফান, উর্দু, প্রান্ত টীকা, খানযুল ঈমান, পৃ: ৩৪৯




Comments

Popular posts from this blog

বালাকোট আন্দোলনের হাকীকত

সৈয়দ আহমদ বেরলভীর জম্ম ও পরিচয়

মওদুদীর ভ্রান্ত আক্বিদা ও ইসলামী আক্বিদা