ফতোওয়ায়ে আহলে সুন্নাহ (আটটি বিষয়ের সমাধান)

ফতোওয়ায়ে আহলে সুন্নাহ (আটটি বিষয়ের সমাধান)
____________________
ফতোওয়ায়ে আহলে সুন্নাহ (আটটি বিষয়ের সমাধান)

গ্রন্থনা ও সংকলনেঃ
মুহাম্মদ শহিদুল্লাহ বাহাদুর
প্রতিষ্ঠাতা, ইমাম আযম রিসার্চ সেন্টার, বাংলাদেশ।
মোবাইলঃ ০১৭২৩-৯৩৩৩৯৬

সম্পাদনা পরিষদঃ
আল্লামা মুফতি আলাউদ্দিন জিহাদী (মা.জি.আ.)
মুনাজেরে আহলে সুন্নাহ ও বিশিষ্ট ইসলামী লেখক ও গবেষক।

Text Ready :
▪ মাসুম বিল্লাহ সানি
▪ মুহাম্মদ দেলোয়ার হোসাইন
▪ মুহাম্মদ সিরাজুম মুনির তানভির

মাওলানা জাবের আল-মানছুর মোল্লা
খতিব, ঐতিহাসিক শাহী মসজিদ, ভাদুঘর, বাহ্মণবাড়িয়া।

উৎসর্গঃ বাহ্মণবাড়িয়া জেলার সম্মানিত আওলিয়ায়ে কেরাম (رضي الله عنه)ও আহলে সুন্নাহ ওয়াল জামাতের নিবেদিত প্রাণ ব্যক্তিগণের উদ্ধেশ্যে উৎসর্গকৃত।

পৃষ্ঠপোষকতায়ঃ
ভাদুঘর শাহী মসজিদ কতৃপক্ষ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া।
গ্রন্থস্বত্বঃ লেখক কর্তৃক সংরক্ষিত।
প্রথম প্রকাশঃ
২৪/০২/২০১৬ইং, রোজঃ বুধবার।
পরিবেশনায়ঃ ইমাম আযম (رحمة الله) রিসার্চ সেন্টার, বাংলাদেশ।
শুভেচ্ছা হাদিয়া ১০০/= টাকা
যোগাযোগঃ দেশ-বিদেশের যে কোন স্থানে বিভিন্ন সার্ভিসের মাধ্যমে কিতাবটি সংগ্রহ করতে যোগাযোগ- মোবাইলঃ ০১৮৪২-৯৩৩৩৯৬ 

➖➖➖➖➖➖➖➖➖➖➖

ভূমিকা
____________________
ভূমিকা

আল্লাহ তা’য়ালার মহান দরবারে অসংখ্য কৃতজ্ঞতা সহ সিজদা আদায়ের পর, সৃষ্টির শ্রেষ্ঠতম উপঢৌকন মহানবী হযরত মুহাম্মদ (ﷺ) তাঁর পুণ্যময় চরণে লক্ষ কোটি দরুদ ও সালাম পেশ করছি। সম্মানিত পাঠকবৃন্দ! আমার এই ক্ষুদ্র পুস্তকে অতীব গুরুত্বপূর্ণ কিছু বিষয়ের উপর আলোকপাত করছি। যে বিষয়গুলি যুগযুগ ধরে সমগ্র মুসলিম সম্প্রদায়ের নিকট অতি পরিচিত ও পালনীয় আমল হিসাবে বিবেচ্য। 

বর্তমান আধুনিক সভ্যতার এই যুগে এসে কিছু তথাকথিত জ্ঞানপাপী এ সব দীপ্তমান বিষয়গুলির প্রতি নানান অভিযোগ পেশ করে সরলমনা মুসলিম জনতাকে বিভ্রান্ত করছে প্রতিনিয়ত। যুগ যুগ ধরে সকল মুসলিম ঈদে মিলাদুন্নবী (ﷺ) পালন করে এসেছেন। এখন আধুনিকতার ছোয়ায় কিছু জ্ঞান পাপী মৌলভীগণ বিদ‘আত বলা শুরু করেছেন। সে রকম কিছু বাহ্মণবাড়িয়ার আলেম দাবিদার ঈদে মিলাদুন্নবী (ﷺ), আযানের আগে সালাতু সালাম, রাসূল (ﷺ) নাম মোবারক শুনে বৃদ্ধাঙ্গুলিদ্বয় চুমু খাওয়া, জানাযার নামাযের পর দোয়া করা, গিয়ারভী শরীফ পালনকে বিদ‘আত এবং রাসূল (ﷺ)-এর ইলমে গায়ব জানেন এবং রাসূল (ﷺ) হাযির-নাযির ধারণা রাখাকে শিরক বলে আখ্যা দিতে শুরু করে। তারা দাবি করছেন যে এগুলো যারা পালন এবং বিশ্বাস স্থাপন করছেন তাদের স্পক্ষে কোন দলিল নেই। মা'য়া যাল্লাহ!

উল্লেখিত প্রত্যেকটি বিষয়ের উপরে আমার আলাদা কিতাব ইতোমধ্যে বেড়িয়েছে এবং কিছু বিষয় প্রায় প্রকাশের পথে রয়েছে। আমার সম্মানিত বড় ভাই আল্লামা জাবের আল-মানছুর মোল্লা (মা.জি.আ)-এর অনুরোধ ক্রমে আমি অধম এ গূরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলোর স্বপক্ষে সংক্ষিপ্ত আকারে একটি কিতাব তৈরী করার আদেশ করেন; সেজন্যই আমার এ গ্রন্থ লিখার অবতারণা। কিতাবটি ৪ দিনে সমাপ্ত করায় দলিল বিস্তারিত দেয়ার সুযোগ আমার হয়নি বটে; তবে আমি নিরলস চেষ্টা করেছি।

প্রিয় পাঠক মহল! নাতিদীর্ঘ এই পুস্তকটি পুরোপুরি পড়ে বিবেকের আদালতে মুখোমুখি হবেন। এতে আপনার অন্তর চক্ষু খুলে যাবে, ইনশাআল্লাহ! সফলতার মুখ দেখবে আমার পরিশ্রম।     

অধম রচয়িতা মুহাম্মদ শহিদুল্লাহ বাহাদুর

২১/০২/২০১৬ইং
➖➖➖➖➖➖➖➖➖➖➖

উলামায়ে কেরামের বাণী
____________________
উলামায়ে কেরামের বাণী

নাহমাদুহু ওয়া নুসাল্লী ওয়া নুসাল্লিমু আলা রাসূলিহীল কারীম। আম্মাবাদ। মহান রাব্বুল আলামীনের দরবারে অগণিত শোকর এবং মহানবী হযরত মুহাম্মদ (ﷺ)'র পূণ্যময় চরণে লক্ষ কোটি দরুদ ও সালাম পেশ করছি। আল্লাহর মনোনিত ধর্ম ইসলামের সঠিক অনুসারিদের বিভ্রান্ত করার জন্য শয়তানের অনুচররা ইসলাম প্রকাশের পর থেকে নানান ষড়যন্ত্রে লিপ্ত। তাদের দলের সংখ্যা ৭২; আর একমাত্র নাযাত প্রাপ্ত দল হল আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাত। এক মাত্র নাযাত প্রাপ্ত দল আহলে সুন্নাত ওয়াত জামা‘আতের অনুসারীগণ ঈদে মিলাদুন্নবী (ﷺ), আযানের আগে সালাতু সালাম, রাসূল (ﷺ) নাম মোবারক শুনে বৃদ্ধাঙ্গুলিদ্বয় চুমু খাওয়া, জানাযার নামাযের পর দোয়া করা, গিয়ারভী শরীফ পালনের উপর আমল এবং রাসূল (ﷺ)-এর ইলমে গায়ব জানেন এবং রাসূল (ﷺ) হাযির-নাযির ধারণা রেখে আসছে। কিন্তু, আজ আধুনিক সভ্যতার যুগে এসে কিছু জ্ঞান পাপী নামধারী মুফতি এগুলোকে বিদ‘আত, শিরক বলে আখ্যা দিতে শুরু করছে। অথচ আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা‘আতের অনুসারীদের স
স্বপক্ষে কুরআন, সুন্নাহ, ইজমা ও কিয়াসের ভিত্তির উপরে অসংখ্য দলিল রয়েছে বলেই সূর্যের আলোর ন্যায় পরিষ্কার ছিল তাদের নিকট।

আমরা দেখে ও শুনে খুশি হয়েছি বাহ্মণবাড়িয়ার ভাদুঘরের ঐতিহাসিক শাহী মসজিদের সম্মানিত খতিব মাওলানা জাবের আল-মানছুর মোল্লা (মা. জি.আ.)-এর আদেশক্রমে ভাদুঘর আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতের পক্ষ হতে তরুণ লেখক মাওলানা শহিদুল্লাহ বাহাদুর এ আটটি বিষয়ের সমাধানে দলিলাদীসহ “ফতোওয়ায়ে আহলে সুন্নাহ’’ গ্রন্থ প্রণয়ন করেছেন। আমরা পুরো বইটি চোখ বুলিয়ে এখন নির্ধিদ্বায় বলতে পারি, এই কিতাবটি অত্যন্ত সময় উপযোগি অনবদ্য এক অপূর্ব রচনাশৈলী। গ্রন্থটি জোঁকের মুখে লবণের মতো ভুমিকা পালন করবে।

আমরা লেখকের সুস্বাস্থ্য ও উজ্জল ভবিষ্যত এবং অত্র পুস্তিকার বহুল প্রচার ও প্রসারের আশা রাখি। আল্লাহ তার এ খেদমত কবুল করুন। আমিন।

মুফতি সৈয়দ অছিয়উর রহমান ফকিহ
অধ্যক্ষ,
জামেয়া আহমদিয়া সুন্নিয়া আলিয়া,
চট্টগ্রাম।

আল্লামা আলহাজ্ব আব্দুল মতিন
অধ্যক্ষ,
কুমিল্লা ইসলামিয়া কামিল মাদরাসা।

মাওলানা এমদাদুল হক
সহকারি অধ্যাপক,
শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, সিলেট।

➖➖➖➖➖➖➖➖➖➖➖

শাব্দিক অর্থে জশনে জুলুসে ঈদে মীলাদুন্নবী (ﷺ)
____________________
প্রথম অধ্যায়ঃ ঈদে মিলাদুন্নবী (ﷺ) প্রসঙ্গ

শাব্দিক অর্থে জশনে জুলুসে ঈদে মীলাদুন্নবী (ﷺ)ঃ

جشن (জশন) একটি ফার্সী শব্দ যার অর্থ খুশি বা আনন্দ আর جلوس শব্দটি আরবী। তার অর্থ সম্পর্কে فيروز اللغات এর ৪৬২ নং পৃষ্ঠায় বলা হয়েছে- 

اميروں اورباد شايوں كى سوارى كسى خاص موقع پر بھت سے لوگوں کا اکٹھے ھوکر بازاروں غيره ميں سے گزرنا - 

-‘‘জুলুস হলো অনেক লোক কোন খাছ বা বিশেষ সময়ে একত্রিত হয়ে আমীর ও বাদশাহদের সাওয়ারী নিয়ে বাজার ও শহরের মধ্যে দিয়ে অতিক্রম করা।’’

ঈদে মীলাদুন্নবী (ﷺ) অর্থ রাসূল (ﷺ)- এর দুনিয়ায় শুভাগমন উপলক্ষ্যে আনন্দ পালন করা। সুতরাং জশনে জুলুসে ঈদে মীলাদুন্নবী (ﷺ) অর্থ- হলো রাসূলে করিম (ﷺ) এর দুনিয়ায় আগমন বা মীলাদুন্নবী (ﷺ) উপলক্ষ্যে আনন্দ শুভাযাত্রা বের করা। 

প্রচলিত অর্থে জশনে জুলুসে ঈদে মীলাদুন্নবী (ﷺ) 

১২ রবিউল আউয়াল তারিখে রাসূল (ﷺ) এর দুনিয়ায় শুভাগমন উপলক্ষ্যে অনেক রাসূল প্রেমিক মুসলমানগণ একত্রিত হয়ে পবিত্র ও সুন্দর পোষাক পরিচ্ছদ পরিধান করে আতর গোলাপ গায়ে মেখে কালামে পাক, নাতে রাসূল (ﷺ) এবং নবী করিম (ﷺ) এর প্রতি দরূদ ও সালাম পাঠ করে আল্লাহ ও তাঁর রাসূল (ﷺ) এর নামে শ্লোগান দিয়ে রাস্তায় বা শহরে শুভাযাত্রা সহকারে আনন্দের সহিত নবী করিম (ﷺ) এর শুভগমন ও তৎসম্বলিত ঘটনাবলীর আলোচনার যে বিরাট মাহফিল অনুষ্ঠিত হয় তার নাম জশনে জুলুসে ঈদে মীলাদুন্নবী (ﷺ)।

অতএব, এখন আমি “জশনে জুলুসে ঈদে মীলাদুন্নবী (ﷺ) উদযান করাকে হারাম, নাজায়েয ও গোনাহের কাজ ইত্যাদি ফতোয়া দানকারী আলেমদের নিকট জানতে চাই উপরে বর্ণিত আমল সমূহ বা কাজগুলো থেকে কোন্ কোন্ আমল গুনাহ ও নাজায়েয যার কারণে আপনারা পবিত্র জশনে জুলুসকে হারাম ফতোয়া দিচ্ছেন। বলতে পারবেন কি? কিয়ামত পর্যন্ত কোন উত্তর মিলবে না।

ঈদে মিলাদুন্নবী (ﷺ) পবিত্র কুরআনের আলোকে
____________________
ঈদে মিলাদুন্নবী (ﷺ) পবিত্র কুরআনের আলোকেঃ

মহান আল্লাহ তা‘য়ালা নিয়ামাত প্রাপ্তির পর তার শোকরিয়া আদায়ের জন্য মহান রব কুরআনে বহুবার তাগিদ দিয়েছেন। আর আল্লাহর বড় অনুগ্রহ বা নিয়ামত হলো রাসূলুল্লাহ (ﷺ)। তাই রাসূল (ﷺ) কে পেয়ে খুশি, আনন্দ, উল্লাস উদ্যাপন করা মহান আল্লাহ তা‘য়ালার নির্দেশ। পবিত্র কুরআনে ইরশাদ হচ্ছে-

قُلْ بِفَضْلِ اللَّهِ وَبِرَحْمَتِهِ فَبِذَٰلِكَ فَلْيَفْرَحُوا هُوَ خَيْرٌ مِّمَّا يَجْمَعُونَ🔺(يونس-٥٨)…

হে হাবিব! আপনি বলে দিন আল্লাহর অনুগ্রহ (ইলম) ও তার রহমত (রহমাতুল্লিল আলামিন) প্রাপ্তিতে তাদের (মু‘মিনদের) খুশি (ঈদ) উদযান করা উচিত এবং আর সেটা হবে তাদের জমাকৃত ধন সম্পদ অপেক্ষা শ্রেয়।’’ 
🔺(সুরা ইউনুস-৫৮).. 
এ আয়াতে আল্লাহর (ফদ্বল) অনুগ্রহ এবং আল্লাহর রহমত (রহমাতাল্লিল আলামিন) পাওয়ার পরে মুমিনদের খুশি মানে ঈদ উদযাপন করার নির্দেশ মহান আল্লাহর। এ আয়াতের ব্যাখ্যায় বিখ্যাত তাফসিরকারক ও হাফিজুল হাদিস ইমাম জালালুদ্দীন সুয়ূতি (رحمة الله) 🔺(ওফাত. ৯১১হি.) লিখেন-

وَأخرج أَبُو الشَّيْخ عَن ابْن عَبَّاس رَضِي الله عَنْهُمَا فِي الْآيَة قَالَ: فضل الله الْعلم وَرَحمته مُحَمَّد صلى الله عَلَيْهِ وَسلم قَالَ الله تَعَالَى وَمَا أَرْسَلْنَاك إِلَّا رَحْمَة للْعَالمين.        
(১০৭ الْأَنْبِيَاء الْآيَة )

-‘‘ইমাম আবু শায়খ ইস্পাহানী (رحمة الله) তার তাফসীরে উল্লেখ করেন, সাহাবি হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (رضي الله عنه) এ আয়াতের ব্যাখ্যায় বলেন, এখানে আল্লাহর (ফাদ্বল) বা অনুগ্রহ দ্বারা ইলম বা জ্ঞানকে এবং (রহমত) দ্বারা নবীজী (ﷺ) কে বুঝানো হয়েছে। যেমন মহান আল্লাহ ইরশাদ করেন- হে হাবিব আমি আপনাকে সমগ্র বিশ্ব-জগতের জন্য রহমত স্বরূপ প্ররেণ করেছি। 
(সুরা আম্বিয়া, আয়াত নং-১০৭)।’’ 
🔺(ইমাম তিরমিযী-মাজমাউল বায়ান,৫/১৭৭-১৭৮পৃ)

এ আয়াতের ব্যাখ্যায় বিখ্যাত মুফাস্সির ইমাম সৈয়দ শিহাবুদ্দীন মাহমুদ আলূসী বাগদাদী (رحمة الله) 🔺(ওফাত. ১২৭০হি.) স্বীয় তাফসীরে উল্লেখ করেন-

وأخرج أبو الشيخ عن ابن عباس رضي الله تعالى عنهما أن الفضل العلم والرحمة محمد صلّى الله عليه وسلم.

“হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (رضي الله عنه) এ আয়াতের তাফসীরে বলেন নিশ্চয়ই (ফাদ্বলুল্লাহ্) বা অনুগ্রহ হল ইলমে দ্বীন এবং রহমত হলো নবী করিম (ﷺ)।’’
🔺(আল্লাম শিহাব উদ্দিন সৈয়দ মাহদুদ আলুসী-রুহুল মা'আনী,৬/১৩৩পৃ)

 ইমাম সৈয়দ মাহমুদ আলূসী (رحمة الله) আরও উল্লেখ করেন-

وأخرج الخطيب، وابن عساكر عنه تفسير الفضل بالنبي عليه الصلاة والسلام.

-‘‘হযরত খতিবে বাগদাদী (رحمة الله) এবং ইমাম ইবনে আসাকীর (رحمة الله) সাহাবী হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (رضي الله عنه) হতে বর্ণনা করেন, ফাদ্বল (অনুগ্রহ) দ্বারাও নবী করীম (ﷺ) কে বুঝানো হয়েছে।”
🔺(আল্লামা শিহাব উদ্দিন মাহমুদ আলুসী-রুহুল মা'আনী,৬/১৩৩পৃ)

 সম্মানিত পাঠকবৃন্দ! সাহাবীদের তাফসীর হল মারফূ হাদিসের ন্যায়। ইমাম হাকেম নিশাপুরী (ওফাত. ৪০৫হি.) বলেন-

 وَتَفْسِيرُ الصَّحَابِيِّ عِنْدَهُمَا مُسْنَدٌ -

‘‘ইমাম বুখারী মুসলিমের নিকট সাহাবীদের তাফসীর মারফূ হাদিসের ন্যায়।’’ 
🔺(ইমাম হাকেম নিশাপুরী : আল-মুস্তাদরাক : ১/২১১পৃ. কিতাবুল ইলম, হাদিস নং-৪২২, দারুল কুতুব ইলমিয়্যাহ, বয়রুত, লেবানন, প্রথম প্রকাশ. ১৪১১হি.)

ইমাম নববী আশ্-শাফেয়ী (ওফাত. ৬৭৬হি.) বলেন- 

وَأَمَّا قَوْلُ مَنْ قَالَ: تَفْسِيرُ الصَّحَابِيِّ مَرْفُوعٌ -

‘‘সাহাবীদের কোরআনের কোন ব্যাখ্যা মারফূ হাদিসের ন্যায়।’’ 
🔺(ইমাম নববী : আল-তাক্বরীব ওয়াল তাইসীর : ৩৪পৃ. দারুল কিতাব আরাবী, বয়রুত, লেবানন, প্রথম প্রকাশ. ১৪০৫হি.)

বিশিষ্ট তাবেয়ী হযরত কাতাদা (رضي الله عنه) ও তাবেয়ী ইমাম মুজাহিদ (رحمة الله) সহ আর ও অনেকে বর্ণনা করেন যে আহলে বায়াতের অন্যতম সদস্য হযরত ইমাম আবু জাফর বাকের (رضي الله عنه) এ আয়াতের ব্যাখ্যায় বলেন- 

عن قتادة رضى الله تعالى عنه ومجاهد وغيرهما قال ابو جعفر الباقر عليه السلام فضل الله رسول الله صلى الله تعالى عليه وسلم .

-“আল্লাহর (ফদ্বল) বা অনুগ্রহ দ্বারা ও রাসূল (ﷺ) কে বুঝানো হয়েছে।”
🔺(ইমাম তিবরিসী, মাজমাউল বায়ান ৪/১৭৭-১৭৮ পৃ.।)

শুধু তাই নয় উক্ত আয়াতের ব্যাখ্যায় ইমাম হাইয়্যান আন্দুলুসী (رحمة الله) 🔺(ওফাত. ৭৪৫হি.) বর্ণনা করেন- 

وَقَالَ ابْنُ عَبَّاسٍ فِيمَا رَوَى الضَّحَّاكُ عَنْهُ: الْفَضْلُ الْعِلْمُ وَالرَّحْمَةُ مُحَمَّدٌ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ.

“তাবেয়ী ইমাম দাহ্হাক (رحمة الله) সাহাবী হযরত ইবনে আব্বাস (رضي الله عنه) হতে বর্ণনা করেন- উক্ত আয়াতে (ফদ্বল) দ্বারা ইলমকে এবং (রহমত) দ্বারা মুহাম্মদ (ﷺ) কে বুঝানো হয়েছে।”
🔺(ইমাম হাইয়্যান, তাফসীরে বাহারুল মুহিত, ৫/১৭১ পৃ.)

বিশ্ব-বিখ্যাত মুহাদ্দিস ও তাফসিরকারক ইমাম যওজী (رحمة الله) 🔺(ওফাত.৫৯৭হি.) উক্ত আয়াতে সম্পর্কে লিখেন- 

ফাদ্বল দ্বারা ইলম বা জ্ঞানকে এবং রহমত দ্বারা মুহাম্মদ (ﷺ) কে বুঝানো হয়েছে যেমনটি তাবেয়ী ইমাম দাহ্হাক (رحمة الله) তাঁর শায়খ হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (رضي الله عنه) থেকে বর্ণনা করেছেন।” 
🔺(ইমাম যওজী, যা’দুল মাসীর ফি উলূমূত তাফাসীর, ৪/৪০ পৃ.)

উক্ত আয়াতের রহমত এবং (فضل الله) ফাদ্বলুল্লাহ দ্বারাও রাসূল (ﷺ) কে বুঝানো হয়েছে বলে সাহাবী এবং তাবেয়ীদের তাফসীর দ্বারা প্রমাণ পাওয়া গেল। সুতরাং আলোচ্য আয়াত ও তাঁর তাফসীরের মাধ্যমে বুঝা গেল, মিলাদুন্নবী (ﷺ) বা রাসূল (ﷺ) এর দুনিয়ায় শুভাগমনের কারণে আল্লাহ্ পাক আমাদেরকে আনন্দ উৎসব বা খুশি উদ্যাপন করার নির্দেশ দিয়েছে তার নামই হল ঈদে মিলাদুন্নবী (ﷺ)। 

মহান রব ইরশাদ করেন- 
‘‘যারা আল্লাহর নেয়ামতকে কুফুরী বশতঃ পরিবর্তন করেছে।’’ 
🔺(সূরা ইব্রাহিম, আয়াত নং- ২৮)

রাসূল (ﷺ) কে আল্লাহ এ আয়াতে নিয়ামত বলেছেন; আর নিয়ামতকে অস্বীকার করেছেন কারা সে সম্পর্কে ইমাম বুখারী (رحمة الله) উল্লেখ করেছেন- هم كفار أهل مكة -‘‘হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (رضي الله عنه) বলেন, যারা আল্লাহর নেয়ামত (রাসূলুল্লাহ (ﷺ) কে) কুফুরী বশতঃ পরিবর্তন করেছে তারা হলেন মক্কার কুরাইশ গোত্রের কাফের গণ।’’
🔺(বুখারী, আস্-সহিহ, ৬/৮০পৃ. হাদিস নং. ৪৭০০)

সুতরাং যারা কুরআনে ঘোষিত হওয়ার পরও রাসূল (ﷺ) কে আল্লাহর রহমত বা অনুগ্রহ স্বীকার করতে চান না, তারা সুস্পষ্ট গোমরাহীর মধ্যে নিমজ্জিত।

সম্মানিত পাঠকবৃন্দ! রাসূল (ﷺ) এর দুনিয়ায় আগমনের কারণে ঈদ বা আনন্দ উৎসব করার দলীল উপরের আয়াতে কারিমাগুলোতে আমরা ইতোমধ্যে পেলাম। আর ঈমানদারের জন্য এতটুকু এই দলিলই যথেষ্ট।

হাদিস শরীফের আলোকে ঈদে মিলাদুন্নবী (ﷺ)
____________________
হাদিস শরীফের আলোকে ঈদে মিলাদুন্নবী (ﷺ)

(১) ইমাম বুখারী (رحمة الله)-এর দাদা উস্তাদ ইমাম আব্দুর রাজ্জাক (ওফাত.২১১হি.) রাসূল (ﷺ)-এর মিলাদ বা সৃষ্টি সম্পর্কে একটি হাদিস সংকলন করেন এভাবে- 

عَنْ جَابِرٍ قَالَ: قُلْتُ يَا رَسُولَ اللَّهِ بِأَبِي أَنْتَ وَأُمِّي أَخْبِرْنِي عَنْ أَوَلَّ شَيْءٍ خَلَقَهُ اللَّهُ قَبْلَ الأَشْيَاءِ، فَقَالَ: يَا جَابِرُ! إِنَّ اللَّهَ خَلَقَ قَبْلَ الأَشْيَاءِ نُورُ نَبِيِّكَ مِنْ نُورِهِ، فَجَعَلَ ذَلِكَ النُّورِ يَدُورُ بِالْقُدْرَةِ حَيْثُ شَاءَ اللَّهُ، وَلَمْ يَكُنْ فِي ذَلِكَ الْوَقْتِ لَوْحٌ وَلا قَلَمٌ وَلا جَنَّةٌ وَلا نَارٌ وَلا مُلْكٌ وِلا سِمِاءٌ وَلا أَرْضٌ وَلا شَمْسٌ وَلا قَمَرٌ وَلا جِنِّيٌ وَلا إِنْسٌ.   

-‘‘হযরত জাবির বিন আব্দুল্লাহ (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত, তিনি বর্ণনা করেন, আমি নবী করিম (ﷺ) কে লক্ষ্য করে বললাম- হে আল্লাহর রাসূল (ﷺ) আমার পিতা মাতা আপনার উপর কোরবান হোক। আমাকে কি আপনি অবহিত করবেন যে, আল্লাহ রাব্বুল আলামীন কোন বস্তু সর্বপ্রথম সৃষ্টি করেছেন? তদুত্তরে রাসূলে করিম (ﷺ) ইরশাদ করেন- হে জাবির! সমস্ত বস্তুর সৃষ্টির পূর্বে আল্লাহ তোমার নবীর নূরকে তাঁর আপন নূর হতে সৃষ্টি করেছেন। আল্লাহ পাকের ইচ্ছায় ঐ নূর কুদরতে যেথায় সেথায় ভ্রমণ করতেছিল। ঐ সময় লওহ-কলম, বেহেস্ত-দোজখ, ফেরেশতা, আসমান-জমীন, চন্দ্র-সূর্য, জিন-ইনসান কিছুই ছিল না।’’ 
🔺(ইমাম আবদুর রায্যাক : আল-মুসান্নাফ (জুযউল মুফকুদ) : ১/৬৩, হাদিস-১৮, (ঈসা মানে হিমইয়ারা সংকলিত), আল্লামা আজলুনী : কাশফুল খাফা : ১/৩১১পৃ. হাদিস : ৮১১, আল্লামা কুস্তালানী : মাওয়াহেবে লাদুন্নিয়া : ১/১৫, মাকতুবাতুল ইসলামী, বয়রুত, লেবানন, আল্লামা জুরকানী: শরহুল মাওয়াহেব : ১/৮৯, আশরাফ আলী থানবী : নশরুত্ত্বীব : পৃ. ২৫, আব্দুল হাই লাখনৌভী, আসারুল মারফূআ,৪২-৩৩পৃ. ইবনে হাজার মক্কী, ফতাওয়ায়ে হাদিসিয়্যাহ, ৪৪পৃ. (শামেলা), শায়খ ইউসুফ নাবহানী, হুজ্জাতুল্লাহিল আলামিন: ৩২-৩৩পৃ. ও জাওয়াহিরুল বিহার, ৩/৩৭পৃ. আনোওয়ারে মুহাম্মাদিয়্যা, ১৯পৃ. মোল্লা আলী ক্বারী, মাওয়ারিদুর রাভী, ২২পৃ. ইমাম নববী, আদ্-দুরারুল বাহিয়্যাহ, ৪-৮। এ হাদিসের আরও রেফারেন্স বিস্তারিত জানতে আমার লিখিত ‘‘প্রমাণিত হাদিসকে জাল বানানোর স্বরূপ উন্মাচন’’ এর ১ম খন্ডের ২৯৩-৫৭৪পৃষ্ঠা দেখুন)

এ হাদিসে রাসূল (ﷺ) তাঁর শুভাগমনের সূচনা কিভাবে হয়েছিল তা আলোকপাত করেছেন। এ হাদিস ও বিষয় সম্পর্কে আপত্তির নিষ্পত্তি বিস্তারিত জানতে আমার লিখিত [‘‘প্রমাণিত হাদিসকে জাল বানানোর স্বরূপ উন্মোচন’’ ১ম খন্ডে ৩৪৩-৩৭১পৃষ্ঠা দেখুন।]

-‘‘হাদিস শাস্ত্রের প্রখ্যাত ইমাম আবু ঈসা মুহাম্মদ তিরমিযী (رحمة الله) তাঁর সংকলিত ‘সুনানে তিরমিযী’ শরীফে একটি অধ্যায়ের মধ্যে بَابُ مَا جَاءَ فِي مِيلاَدِ النَّبِيِّ
 صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلم ‘মিলাদুন্নবী (ﷺ) শিরোনামে একটি পরিচ্ছেদ প্রণয়ন করেছেন এবং এতে হুজুর (ﷺ) এর জন্ম তারিখ নিয়ে আলোচনা সম্বলিত হাদিস বর্ণনা করেছেন। হাদিসটি হলো-হযরত মোত্তালিব ইবনে আব্দুল্লাহ আপন দাদা কায়েস বিন মোখরামা (رضي الله عنه) হতে বর্ণনা করেছেন, তিনি বলেছেন- আমি ও নবী করিম (ﷺ) ‘আমুল ফীল’ অর্থাৎ, বাদশাহ আবরাহার হস্তি বাহিনীর উপর আল্লাহর গযব নাজিল হওয়ার বছর জন্মগ্রহণ করেছি। হযরত ওসমান বিন আফ্ফান (رضي الله عنه) বনি ইয়ামার ইবনে লাইস এর ভাই কুবাছ ইবনে আশইয়ামকে বললেন- ‘আপনি বড় না রাসূল (ﷺ) ? তখন তিনি বললেন, রাসূল আমার চেয়ে অনেক বড় সম্মান ও মর্যাদার দিক থেকে, আর আমি জন্ম সূত্রে রাসূল (ﷺ) থেকে আগে মাত্র।’’
🔺(তিরমিযী, আস্-সুনান, ৫/৫৮৯ পৃ. হাদিস নং. ৩৬১৯, দারুল গুরুবুল ইসলামী, বয়রুত, লেবানন, প্রকাশ. ১৯৯৮খৃ.।)

 এ হাদিসটিকে ইমাম তিরমিযি (رحمة الله) ‘হাসান’ বলেছেন। এ হাদিস থেকে দুটি বিষয় প্রমাণিত হল (১) সাহাবীদের যুগে বিভিন্ন স্থানে মিলাদুন্নবী (ﷺ)-এর আলোকপাত হত (২) আর যারা বলেন মিলাদুন্নবী (ﷺ) বলতে কোনো কথা কুরআন হাদিসে নেই ইমাম তিরমিযি (رحمة الله) তাদের মুখোশ উন্মোচন করে দিয়েছেন মিলাদুন্নবী (ﷺ) অধ্যায় রচনা করে। নিন্মের এ হাদিসে নবীজি নিজেই তার মিলাদুন্নবী (ﷺ)-এর আলোচনা করেছেন। 

عَن العِرْباض بن ساريةَ عَنْ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَنَّهُ قَالَ... وَسَأُخْبِرُكُمْ بِأَوَّلِ أَمْرِي دَعْوَةُ إِبْرَاهِيمَ وَبِشَارَةُ عِيسَى وَرُؤْيَا أُمِّي الَّتِي رَأَتْ حِينَ وَضَعَتْنِي وَقَدْ خَرَجَ لَهَا نُورٌ أَضَاءَ لَهَا مِنْهُ قصر الشام… (رواية في شرح ااسنة) 

(৪) -‘‘হযরত ইরাবাদ বিন ছারিয়া (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত, তিনি হযরত নবী করিম (ﷺ) হতে বর্ণনা করেন...আমি হযরত ইব্রাহিম (عليه السلام) এর দোয়া হযরত ঈসা (عليه السلام) এর সুসংবাদ। আমার মাতা যখন আমাকে প্রসব করলেন তখন যে নূর বের হয়েছিল তাতে শাম দেশের কোঠা তিনি দেখতে পেয়েছেন। আমি সেই স্বপ্ন বা দৃশ্য।’’ 
🔺(খতিব তিবরিযি, মিশকাতুল মাসাবিহ, ৩/১৬০৪পৃ. হাদিস নং. ৫৭৫৯, মাকতুবাতুল ইসলামী, বয়রুত, লেবানন, ১৯৮৫খৃ. আলবানী এ হাদিসটিকে মিশকাতের তাহকীকে সহিহ বলেছেন, হাকিম, মুস্তাদরাক, ২/৬৫৬পৃ. হাদিস নং. ৪১৭৪, ইবনে কাসির, বেদায়া ওয়ান নিহায়া, ২/৮৫পৃ. ও ২৭৫পৃ. ও তাফসীরে ইবনে কাসির, ৪/৩৬১পৃ.)

এ হাদিসটিকে আহলে হাদিসের ইমাম নাসিরুদ্দীন ইমাম আলবানী স্বয়ং সনদটিকে সহিহ বলেছেন।
🔺(এ বিষয়ে বিস্তারিত জানতে আমার লিখিত ‘রাসূল (দ.)-এর সৃষ্টি নিয়ে বিভ্রান্তির অবসান’’ দেখুন)
 এ হাদিসটি অসংখ্য সনদে বর্ণিত আছে।

عَن الْعَبَّاس أَنَّهُ جَاءَ إِلَى النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَكَأَنَّهُ سَمِعَ شَيْئًا فَقَامَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَلَى الْمِنْبَرِ فَقَالَ:مَنْ أَنَا؟ فَقَالُوا: أَنْتَ رَسُولُ اللَّهِ. فَقَالَ:أَنَا مُحَمَّدُ بْنُ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ عَبْدِ الْمُطَّلِبِ إِنَّ اللَّهَ خَلَقَ الْخَلْقَ فَجَعَلَنِي فِي خَيْرِهِمْ ثمَّ جعلهم فرقتَيْن فجعلني فِي خير فِرْقَةً ثُمَّ جَعَلَهُمْ قَبَائِلَ فَجَعَلَنِي فِي خَيْرِهِمْ قَبيلَة ثمَّ جعله بُيُوتًا فَجَعَلَنِي فِي خَيْرِهِمْ بَيْتًا فَأَنَا خَيْرُهُمْ نفسا وَخَيرهمْ بَيْتا . رَوَاهُ التِّرْمِذِيّ-

-‘‘হুজুর করিম (ﷺ) এর চাচা হযরত আব্বাস (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত তিনি বলেন, একদা তিনি হুযুর (ﷺ) এর নিকট ভারাক্রান্ত হৃদয়ে আসলেন। কারণ তিনি যেন হুযুর করিম (ﷺ) এর বংশ বুনিয়াদ সম্পর্কে বিরূপ কিছু মন্তব্য শুনেছেন। (তা হুযুর করিম (ﷺ) কে অবহিত করলেন।) তখন হুজুর (ﷺ) মিম্বর শরীফের উপর আরোহন করলেন। (বরকতময় ভাষন দেয়ার উদ্দেশ্যে) অতঃপর তিনি সাহাবা কেরামগণের উদ্দেশ্যে বললেন “আমি কে ?” উত্তরে তাঁরা বললেন “আপনি আল্লাহর রাসূল”। তখন হুজুর আকরাম (ﷺ) এরশাদ করলেন “আমি আবদুল্লাহ ইবনে আবদুল মুত্তালিবের পুত্র মুহাম্মদ (ﷺ)। নিশ্চয়ই আল্লাহ তায়ালা মানব-দানব সবই সৃষ্টি করেছেন। এতেও আমাকে উত্তম পক্ষের (অর্থাৎ মানবজাতি) মধ্যে সৃষ্টি করেছেন। অতঃপর তাদের (মানব জাতি) কে দু ‘সম্প্রদায়ে বিভক্ত করেছেন (অর্থাৎ আরবীয় ও অনারবীয়) এতেও আমাকে উত্তম দু‘সম্প্রদায়ে (আরবী) সৃষ্টি করেছেন। অতঃপর আরব জাতিকে অনেক গোত্রে বিভক্ত করেছেন। আর আমাকে গোত্রের দিক দিয়ে উত্তম গোত্রে (কুরাইশ) এ রেখেছেন করেছেন। তারপর তাদেরকে (কুরাইশ) বিভিন্ন উপগোত্রে ভাগ করেছেন। আর আমাকে উপগোত্রের দিক দিয়ে উত্তম উপগোত্রে (বনি হাশেম) সৃষ্টি করেছেন। সুতরাং আমি তোমাদের মধ্যে সত্তাগত, বংশগত ও গোত্রগত দিক থেকে সর্বশ্রেষ্ঠ।’’ ইমাম তিরমিযি এ সনদটিকে ‘হাসান’ বলে উল্লেখ করেছেন।
🔺(তিরমিযী, আস্-সুনান, ৬/৮ পৃ. হাদিস নং. ৩৬০৮; খতিব তিবরিযি, মিশকাতুল মাসাবিহ, - ৫১৩ পৃ.)

আলোচ্য হাদিস দ্বারা স্পষ্ট ভাবে বুঝা গেল রাসূল (ﷺ) স্বীয় মিলাদুন্নবী (ﷺ) বা জন্ম বৃত্তান্ত বর্ণনা করে নিজের বংশগত শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণ করেছেন।

عن ابن عباس رضى الله عنهما انه كان يحدث ذات يوم فى بيته وقائع ولادته صلى الله عليه وسلم قال حلت لكم شفاعتي - 

-‘‘হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা) হতে বর্ণিত, একদা তিনি হুযুর (ﷺ) এর পবিত্র মিলাদের বা জন্মের ঘটনা বর্ণনা করছিলেন। এমন সময় নবী করিম (ﷺ) সেখানে তাশরীফ আনলেন এবং তা দেখে এরশাদ করলেন- “তোমাদের জন্য কেয়ামত দিবসে আমার শাফা’য়াত ওয়াজিব হয়ে গেল”। (অর্থাৎ সমবেত হয়ে আমার জন্ম বৃত্তান্ত বর্ণনার ফলে তোমাদের জন্য কিয়ামত দিবসে আমার সুপারিশ নিশ্চিত হয়ে গেলো।’’ (ইবনে দাহিয়াহ, আত্তানবীর ফিল মাওলিদিল বাশীরিন্নাযীর, ৭৭পৃ. )।

عن ابى الدرداء رضى الله عنه انه مر مع النبى صلى الله عليه وسلم إلى بيت عامر الأنصاري وكان يعلم وقائع ولادته صلى الله عليه وسلم لابنائه وعشيرته ويقول هذا اليوم هذا اليوم فقال عليه الصلوة والسلام ان الله فتح لك أبواب الرحمة والملائكة يستغفرون لك ومن فعل فعلك نجانجا تك - 

(৮) -‘‘হযরত আবু দারদা (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত, একদা তিনি হুযুর করিম (ﷺ) এর সাথে হযরত আমের আনসারী (رضي الله عنه) এর ঘরে গিয়েছিলেন। তখন হযরত আমের আনসারী (رضي الله عنه) তাঁর সন্তান ও স্বগোত্রীয় লোকদের সাথে নিয়ে মিলাদুন্নবী (ﷺ) বা হুযুর করিম (ﷺ) এর জন্ম বৃত্তান্ত আলোচনা করছিলেন এবং বলছিলেন- “এই দিনটি, এই দিনটি” তখন হুযুর (ﷺ) এরশাদ করেলেন- “(হে আমের আনসারী!) নিশ্চয়ই আল্লাহ তায়ালা তোমার জন্য রহমতের দরজা সমূহ খুলে দিয়েছেন। আর ফিরিশতাগণ তোমার জন্য মাগফেরাত কামনা করছে। তাছাড়া যারা তোমার মতো আমার মিলাদুন্নবী (ﷺ) বা জন্ম বৃত্তান্ত বর্ণনা করবে তারা তোমার মতোই নাজাত লাভ করবে। (ইবনে দাহিয়াহ, আত্তানভীন ফী মাওলিদিল বাশীরিন্নাযীর, ৭৮পৃ. ) 

আলোচ্য হাদিস দু’টি থেকে প্রমাণিত হয় যে, সাহাবায়ে কেরাম (رضي الله عنه) হুজুর (ﷺ) এর মিলাদ বা জন্ম বৃত্তান্ত আলোচনা করতেন এবং তা নিজ সন্তান ও স্বগোত্রীয়দের শিক্ষা দিতেন। এ দুটি হাদিস ও বিষয় সম্পর্কে আপত্তির নিষ্পত্তি বিস্তারিত জানতে আমার লিখিত ‘‘প্রমাণিত হাদিসকে জাল বানানোর স্বরূপ উন্মোচন’’ ১ম খন্ডে ৫১১-৫১৭ পৃষ্ঠা দেখুন।

রাসূল (ﷺ)-নিজেই ঈদে মিলাদুন্নবী (ﷺ) উদযাপন করেছেন
____________________
রাসূল (ﷺ)-নিজেই ঈদে মিলাদুন্নবী (ﷺ) উদযাপন করেছেনঃ

রাসূল (ﷺ) মিলাদুন্নবী (ﷺ) পালন করার ব্যাপারে উৎসাহিত করেছেন। হাদিস শরীফটি হলো নিম্নরূপঃ

عَنْ أَبِي قَتَادَةَ الْأَنْصَارِيِّ، رَضِيَ اللهُ عَنْهُ أَنَّ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ سُئِلَ عَنْ صَوْمِ الِاثْنَيْنِ؟ فَقَالَ: فِيهِ وُلِدْتُ - 

(৯)-‘‘হযরত আবু কাতাদাহ (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত, তিনি বর্ণনা করেন, রাসূলে করিম (ﷺ) কে সোমবার রোযা রাখা সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলে, তার উত্তরে রাসূলে করিম ((ﷺ)) বললেন “এ দিন আমার মিলাদুন্নবী (ﷺ) অর্থাৎ এ দিন আমি জন্মগ্রহণ করেছি।’’
🔺(মেশকাত শরীফ- ১৭৯ পৃ; মুসলিম শরীফ- ১/৩৬৮ পৃ.)

 আলোচ্য হাদিস শরীফের মাধ্যমে স্পষ্টভাবে প্রমাণিত হলো রাসূল (ﷺ) শোকরিয়া স্বরূপ রোজা রেখে সাপ্তাহিক মিলাদুন্নবী (ﷺ) পালন করেছেন।

সাহাবীদের আমল
____________________
সাহাবীদের আমল

(১ ) হযরত আবু বকর সিদ্দীক (رحمة الله) এরশাদ করেছেন- 

قَالَ اَبُوْ بَكْرِ الْصِّدِّيْق ؓ مَنْ اَنْفَقَ دِرْ هَمًاعَلٰى قِرَاءَةِ مَوْلِدِ النَّبِىَ ﷺ كَانَ رَفِيْقِى فِى الْجَنَّةِ- 

-“যে ব্যক্তি নবী করীম ﷺ এর মীলাদ-ই-পাকের জন্য একটি মাত্র দিরহাম খরচ করবে, সে (যদি সে ঈমানদার হয়) জান্নাতে আমার সঙ্গী হবে।” 
🔺(ইবনে হাজার মক্কী, আন-নি‘আমাতুল কুবরা আলাল আলাম, পৃষ্ঠা নং- ৭, মীর মুহাম্মদ কারখানা, করাচী, পাকিস্তান এবং মাকতুবাতুল হক্কীয়্যাহ, তুরস্ক)

২- হযরত ওমর ফারুক (رحمة الله) এরশাদ করেছেন- 

قَالَ عُمَرَ مَنْ عَظَّمَ مَوْلِدَ النَّبِىِّ ﷺ فَقَدْ اَحْيَا الْاِسْلَامَ-

“যে ব্যক্তি নবী করীম (ﷺ) এর মীলাদ-ই-পাককে সম্মান ও মযাদা দান করেছে সে নিশ্চয় ইসলামকে জীবিত করেছে।” 
🔺(আন নেয়ামাতুল কুবরা আলাল আলাম পৃষ্ঠা নং- ৭।)

এ দুটি হাদিস ও এ বিষয় সম্পর্কে বাতিলদেও আপত্তির নিষ্পত্তি জানতে আমার লিখিত ‘‘প্রমাণিত হাদিসকে জাল বানানোর স্বরূপ উন্মোচন’’ ১ম খন্ডে ১৬৯-১৭২-৫১৭ পৃষ্ঠা দেখুন।

ওলামায়ে উম্মতের কওল ও আমলের আলোকে মীলাদুন্নবী (ﷺ)
____________________
ওলামায়ে উম্মতের কওল ও আমলের আলোকে মীলাদুন্নবী (ﷺ)

১. মুহাদ্দিস ইমাম ইবনুল জাওযী (رحمة الله) 🔺(ওফাত. ৫৯৭ হি.) বলেন- 

لا زال أهل الحرمين الشريفين والمصر واليمن والشام وسائر بلاد العرب من المشرق والمغرب يحتفلون بمجلس مولد النبى صلى الله عليه وسلم ويفرحون بقدومه هلال شهر ربيع الأول و يهتمون اهتماما بليغا على السماع والقراءة لمولد النبى صلى الله عليه وسلم وينالون بذلك أجرا جزيلا وفوزا عظيما- 

“মক্কা, মদীনা, ইয়ামন, শাম ও তামাম ইসলামী বিশ্বের পূর্ব ও পশ্চিমবাসীরা সবসময় হুজুর (ﷺ) এর বেলাদাত শরীফের ঘটনায় মীলাদ মাহফিল আয়োজন করত। তারা রবিউল আউয়াল মাসের নতুন চাঁদ উদিত হলে খুশি হয়ে যেত এবং হুজুরের মিলাদ শুনা ব্যাপারে ও পড়ার সীমাহীন গুরুত্বারোপ করত। আর মুসলমানগণ এসব মাহফিল কায়েম করে পরিপূর্ণ প্রতিদান ও আধ্যত্মিক কামিয়াবী হাছিল করত।” 
🔺(ইমাম যওজী, বয়ানুল মিলাদুন্নবী- ৫৮ পৃ.)

৩. ইমামুল হাফেজ সাখাভী (رحمة الله) বলেন-

لا زال أهل الإسلام في سائر الأقطار والمدن الكبار يحتفلون في شهر مولده صلى الله عليه وسلم بعمل الولائم البديعة المشتملة 

-“বিশ্বের চতুর্দিকে ও শহরগুলোতে হুজুর (ﷺ) এর জন্ম গ্রহণের মাসে মুসলমানরা বড় বড় আনন্দনুষ্ঠান করে থাকে।” 
🔺(মোল্লা আলী ক্বারী, মাওয়ারিদুর রাবী, ইবনে সালেহ শামী, সবলুল হুদা ১/ ৩৬২ পৃ. )

৪. ইমাম জালালুদ্দীন সূয়ূতী (رحمة الله) বলেন- 

عِنْدِي أَنَّ أَصْلَ عَمَلِ الْمَوْلِدِ الَّذِي هُوَ اجْتِمَاعُ النَّاسِ وَقِرَاءَةُ مَا تَيَسَّرَ مِنَ الْقُرْآنِ وَرِوَايَةُ الْأَخْبَارِ الْوَارِدَةِ فِي مَبْدَأِ أَمْرِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَمَا وَقَعَ فِي مَوْلِدِهِ مِنَ الْآيَاتِ، ثُمَّ يُمَدُّ لَهُمْ سِمَاطٌ يَأْكُلُونَهُ وَيَنْصَرِفُونَ مِنْ غَيْرِ زِيَادَةٍ عَلَى ذَلِكَ - هُوَ مِنَ الْبِدَعِ الْحَسَنَةِ الَّتِي يُثَابُ عَلَيْهَا صَاحِبُهَا لِمَا فِيهِ مِنْ تَعْظِيمِ قَدْرِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَإِظْهَارِ الْفَرَحِ وَالِاسْتِبْشَارِ بِمَوْلِدِهِ 

-“আমার মতে মিলাদের জন্য সমাবেশ করা, তেলাওয়াতে কোরআন, হুজুর (ﷺ) এর পবিত্র জীবনের বিভিন্ন ঘটনাবলী এবং জন্ম গ্রহণকালীন গঠিত নানান আলামত সমূহের আলোচনা করা এমন বেদআতে হাছানার অন্তর্ভুক্ত; যে সব কাজের ছওয়াব দেয়া হয়। কেননা এতে হুজুর (ﷺ) এর তা’জিম, মোহাব্বত এবং তাঁর আগমনের খুশী জাহির করা হয়।”
🔺(ইমাম সুয়ূতি, আল-হাভীলিল ফাতওয়া, ১/২২১পৃ.)

৫. ইমাম হাফেজ ইবনে হাজর মক্কী (رحمة الله) বলেন- 

الموالد والأذكار الَّتِي تفعل عندنَا أَكْثَرهَا مُشْتَمل على خير، كصدقة، وَذكر، وَصَلَاة وَسَلام على رَسُول الله صلى الله عَلَيْهِ وَسلم

-“আমাদের এখানে মিলাদ মাহফিল জিকর-আজকার যা কিছু অনুষ্ঠিত হয়, তার অধিকাংশই ভাল কাজের অন্তর্ভুক্ত। যেমন, সাদকা করা, জিকির করা, দরুদ পড়া, ও রাসূলে পাক (ﷺ) এর উপর ছালাম পেশ করা।”
🔺(ইবনে হাজার মক্কী, ফাতওয়া হাদিসিয়্যাহ, ১/১০৯ পৃ. দারুল ফিকর ইলমিয়্যাহ, বয়রুত, লেবানন।)

৬. বুখারী শরীফের ব্যাখ্যাকার আল্লামা ইমাম কুস্তালানী (رحمة الله) লিখেন-

ولا زال أهل الاسلام يحتفلون بشهر مولوده صلى الله عليه وسلم ويعملون الولائم ويتصد قون فى لياليه بانواع الصدقات ويظهرون السرور ويزيدون فى المبرات ويعتنون بقرأة مولده الكريم ويظهر عليهم من بركاته كل فضل عميم – 

-‘‘প্রতিটি যুগে মুসলমানগণ নবী করীম (ﷺ) এর বেলাদাত শরীফের মাসে মীলাদ মাহফিলের আয়োজন করে আসছে, উন্নত মানের খাবারের আয়োজন করেন, এর রাতগুলোতে বিভিন্ন ধরণের সাদক্বাহ খায়রাত করেন, আনন্দ প্রকাশ করতে থাকেন, পুন্যময় কাজ বেশি পরিমাণে করার প্রতি গুরুত্ব দিয়ে আসেন। ফলে আল্লাহর অসংখ্য বরকত ও ব্যাপক অনুগ্রহ প্রকাশ পায়।’’
🔺(আল্লামা ইমাম যুরকানী : শরহুল মাওয়াহেব : ১ম খন্ড : ২৬২ পৃষ্ঠা)

৭. আল্লামা মোল্লা আলী ক্বারী (رحمة الله) বলেন-

لازال اهل الاسلام يختلفون فى كل سنة جديدة ويعتنون بقراءة مولده الكريم ويظهر عليهم من بركاته كل فضل عظيم.

-‘‘মুসলমানগণ প্রতি নববর্ষে মাহফিল করে আসছেন এবং তাঁরা মীলাদ পাঠের আয়োজন করেন। এর ফলে তাদের প্রতি অসীম রহমতের প্রকাশ ঘটে।’’
🔺(মোল্লা আলী ক্বারী, মাওয়ারিদুর রাভী, ৫ পৃ. )

৮. তাফসীরে রুহুল বায়ান প্রণেতা আল্লামা ইসমাঈল হাক্কী (رحمة الله) বলেন-

ومن تعظيمه عمل المولد إذا لم يكن فيه منكر قال الامام السيوطي قدس سره يستحب لنا اظهار الشكر لمولده عليه السلام

-‘‘মীলাদ শরীফ করাটা হুযুর (ﷺ)-এর প্রতি সম্মান, যদি এটা মন্দ কথা বার্তা থেকে মুক্ত হয়। ইমাম সুয়ূতি (رحمة الله) বলেন, হুযুর (ﷺ)-এর বেলাদাতের শুকরিয়া জ্ঞাপন করা আমাদের জন্য মুস্তাহাব।’’
🔺(ইসমাঈল হাক্কী, রুহুল বায়ান, ৯/৫৬পৃ. দারুল ফিকর ইলমিয়্যাহ, বয়রুত, লেবানন।)

৯. শায়খ আব্দুল হক মোহাদ্দেসে দেহলভী (رحمة الله) বলেন- 

لا يزال اهل الاسلام يحتفلون بشهر مولده صلى الله عليه وسلم ويعملون الولائم ويتصدقون فى لياليه بانواع الصدقات ويظهرون السرور ويزيدون فى المبرات ويعتنون بقراء مولده الكريم- 

-“হুজুর (ﷺ) এর পবিত্র বেলাদতের মাসে মিলাদ-মাহফিলের আয়োজন সমগ্র মুসলিম বিশ্বে সর্বদাই পালিত হয়ে আসছে। ঐ মাসের রাত্রিতে দান ছদকা করে, আনন্দ প্রকাশ করে এবং ঐ স্থানে বিশেষভাবে নবীর আগমনের উপর প্রকাশিত বিভিন্ন ঘটনাবলীর বর্ণনা করা মুসলমানদের বিশেষ আমল সমূহের অন্তর্ভুক্ত।”
🔺(শায়খ আব্দুল হক মুহাদ্দিসে দেহলভী, মা সাবাতা বিসুন্নাহ, ৬০পৃ.)

১০. শাহ্ ওয়ালী উল্লাহ্ মোহাদ্দেসে দেহলভী (رحمة الله) বলেন- 

وكنت قبل ذالك بمكة المعظمة فى مولد النبى صلى الله عليه وسلم فى يوم ولادته والناس يصلون على النبى صلى الله عليه وسلم - 

-“মক্কা মোয়াজ্জামায় হুজুর (ﷺ) এর বেলাদত শরীফের দিন আমি এমন একটি মিলাদ মাহফিলে শরীক হয়েছিলাম, যাতে লোকেরা হুজুরের দরগাহে দুরূদ-ছালাতের হাদিয়া পেশ করছিল।”
🔺(শাহ ওয়ালী উল্লাহ দেহলভী, ফয়জুল হারামাঈন, ৮০-৮১পৃ.)

১১. অন্যত্র তিনি স্বীয় পিতা হযরত শাহ্ আব্দুর রহীম দেহলভী (رحمة الله) এর সূত্রে উল্লেখ করে বলেন- 

كنت اصنع في أيام المولد طعاما صلة بالنبي صلى الله عليه وسلم فلم يفتح لي سنة من السنين شئ اصنع به طعاما فلم اجد الا حمصا مقليا فقسمته بين الناس فرأيته صلى الله عليه وسلم بين يديه هذا الحمص مبتهجا وبشاشا- 

-“আমি প্রতি বছর হুজুর (ﷺ) এর মিলাদে মাহফিলে খানার ব্যবস্থা করতাম। কিন্তু এক বছর আমি খাবার যোগাড় করতে পারিনি। তবে কিছু ভুনা করা চনাবুট পেয়েছিলাম। অতঃপর আমি তা মিলাদে আগত মানুষের মধ্যে বন্টন করে দিলাম। পরে আমি স্বপ্নে হুজুর (ﷺ)কে বড়ই খোশ হাসেল তাশরিফ আনতে দেখলাম এবং তার সামনে মওজুদ রয়েছে উক্ত চনাবুট (যা আমি বন্টন করেছিলাম)।”
🔺(শাহ ওয়ালী উল্লাহ মুহাদ্দিসে দেহলভী, আদ-দুরুরুস সামীন, ৪০পৃ. )

১২. আহলে হাদিসের ইমাম ইবনে তাইমিয়া বলেন-

فتعظيم المولد، واتخاذه موسمًا، قد يفعله بعض الناس، ويكون له فيه أجر عظيم لحسن قصده، وتعظيمه لرسول الله صلى الله عليه وسلم، كما قدمته لك أنه يحسن من بعض الناس، ما يستقبح من المؤمن المسدد.

-“আমি ইতোপূর্বে আলোচনা করছি যে মিলাদকে মানুষেরা মৌসুমীভাবে পালন করে তা’জিম করে থাকে, এতে তাদের অনেক সাওয়াব হবে। আর এটাও সুস্পষ্ট যে, কিছু লোক এটাকে হাসান মনে করে, কারণ সঠিক মু’মিন ব্যক্তি মন্দ কাজ করে না।” 
🔺(ইবনে তাইমিয়া, একতেদ্বাউল সিরাতাল মুস্তাকিম ২/১২৬ পৃ. দারুল আ‘লামুল কিতাব, বয়রুত, লেবানন)

১৩. দেওবন্দীদের পীরানে পীর হাজী এমদাদুল্লাহ মুহাজের মক্কী (رحمة الله) বলেন-  

ہمارے علماء مولد شريف میں بہت تنازعه كرتے ہیں تاہم علماء جواز كى طرف بہى گۓ ہیں - جب صورت جواز كى موجود ہے پہر كيوں ايسا تشدد كر تے ہيں اور ہمارے واسطے اتباع حرمين كافى ہے- 

-“আমাদের আলেমগণ মওলুদ শরীফ নিয়ে অনেক ঝগড়া করে থাকে। এরপরেও আলেমগণ কিন্তু জায়েযের পক্ষে মত ব্যক্ত করেছেন। যখন জায়েযের ছুরত রয়ে গেছে, তো এত বাড়াবাড়ির কি প্রয়োজন। আমাদের জন্য হারামাঈনের অনুসরণ করাই যথেষ্ঠ।”
🔺(হাজী এমদাদুল্লাহ মুহাজেরে মক্কী, কুল্লিয়াতে এমদাদিয়া, ২০৭পৃ. ফয়সালায়ে হাফতে মাসায়েল, ৭-৮ পৃ.)

হযরত হাজী সাহেব (رحمة الله) ফয়সালায়ে হাফতে মাসয়ালা গ্রন্থে নিজের আমলও বর্ণনা করে দিয়েছেন- 

فقير مشرب يہ ہے محفل مولد میں شريك ہوتا بلكہ بركات كا ذريعہ سمجہ كر ہر سال منعقد كرتا ہوں اور قيام میں لطف اور لذت پا ہوں 

-“এই ফকীরের নিয়ম হল এই যে, আমি মওলুদ মাহফিলে অংশ গ্রহণ করি, এমনকি বরকতের ওসিলা মনে করে প্রতি বছর উক্ত অনুষ্ঠান করে থাকি এবং কিয়ামের মধ্যে লুতফ (ভালবাসা) ও লাজ্জাত (স্বাদ) পেয়ে থাকি।” 
🔺(হাজী এমদাদুল্লাহ মুহাজেরে মক্কী, কুল্লিয়াতে এমদাদিয়া, ২০৭ পৃ., ফয়সালায়ে হাফতে মাসায়েল, ৭-৮ পৃ.)

দেওবন্দীদেরকে বলবো যে নিজের পীরানে পীরকে মানেন না তো কেমন আদব ওয়ালা মুরীদ আপনারা?

ঈদে মিলাদুন্নবী (ﷺ) লাইলাতুল ক্বদর হতে উত্তম
____________________
ঈদে মিলাদুন্নবী (ﷺ) লাইলাতুল ক্বদর হতে উত্তম

বিশ্ব বিখ্যাত ফকীহ ইমাম তাহাবী (رحمة الله) ইমাম শাওয়াফে (رحمة الله) এর কওল নকল করে লিখেন-

إن أفضل الليالي ليلة مولده صلى الله عليه وسلم ثم ليلة القدر- 

-‘‘নিশ্চয়ই ইবাদতের মধ্যে সবচেয়ে উত্তম রাত হলো ঈদে মিলাদুন্নবী (ﷺ) এর রা তবা রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর শুভাগমনের রাত্র (১২ই রবিউল আউয়াল) তারপর হলো শবেই কদরের রাত্র।’’ 
🔺(আল্লামা শায়খ ইউসূফ নাবহানী : যাওয়াহিরুল বিহার : ৩/৪২৬ পৃ : মারকাযে আহলে সুন্নাহ বি বারকাতে রেযা, গুজরাট হতে প্রকাশিত।)

ইমাম শায়খ ইউসুফ বিন ইসমাঈল নাবহানী (رحمة الله) লিখেন-

وليلة مولده صلى الله عليه وسلم أفضل من ليلة القدر

-‘‘শবে ক্বদর হতে মিলাদুন্নবী (ﷺ)-এর রাত উত্তম।’’ 
🔺(আল্লামা শায়খ ইউসূফ নাবহানী : আনওয়ারে মুহাম্মাদিয়াহ, ২৮পৃ. দারুল কুতুব ইলমিয়্যাহ, বয়রুত, লেবানন।)

ইমাম কুস্তালানী (رحمة الله)ও অনুরূপ বলেছেন এবং এর তিনটি কারণ উল্লেখ করেছেন।
🔺(আল্লামা কুস্তালানী : মাওয়াহেবে লাদুনিয়্যাহ, ২৮১/১৪৫পৃ. মাকতুবাতুত তাওফিকহিয়্যাহ, কায়রু, মিশর।)

ক. হাযির-নাযির বলতে কী বুঝায় ?
____________________
দ্বিতীয় অধ্যায়ঃ হাযির-নাযির প্রসঙ্গ

ক. হাযির-নাযির বলতে কী বুঝায় ?

‘হাযির’ শব্দের আভিধানিক অর্থ হলো- সামনে উপস্থিত থাকা, অনুপস্থিত না থাকা। ‘নাযির’ শব্দের আভিধানিক অর্থ হলো- দৃষ্টিসম্পন্ন ব্যক্তি, দ্রষ্টা, চোখের মণি, নাকের রগ, চোখের পানি ইত্যাদি। আর হাযির ও নাযির-এর পারিভাষিক র্অথ হলো- 
(১) পবিত্র ক্ষমতা সম্মপন্ন ব্যক্তি একই স্থানে অবস্থানপূর্বক সমগ্র জগতকে নিজ হাতের তালুর মত দেখা। 
(২) দূরে-কাছের আওয়াজ শুনতে পারা, অথবা এক মুহুর্তে সমগ্র ভ্রমণ করার ক্ষমতা রাখা। অনেক দূরে অবস্থানকারী বিপদগ্রস্থকে সাহায্য করতে পারা। এক্ষেত্রে আসা-যাওয়া রুহানীভাবে অথবা রুপক শারীর নিয়ে বা আসল দেহ নিয়ে হতে পারে। উদাহরণ স্বরূপ দেখুন হযরত ইবনে মাসউদ (رضي الله عنه) রাসূল (ﷺ) থেকে বর্ণনা করেছেন-

حَيَاتِي خَيْرٌ لَكَمْ تُحْدِثُونَ وَيُحَدَثُ لَكَمْ، وَوَفَاتِي خَيْرٌ لَكَمْ تُعْرَضُ عَلَيَّ أَعْمَالُكُمْ، فَمَا رَأَيْتُ مِنْ خَيْرٍ حَمَدَتُ اللَّهَ عَلَيْهِ، وَمَا رَأَيْتُ مِنْ شَرٍّ اسْتَغْفَرْتُ اللَّهَ لَكَمْ -  

-‘‘আমার হায়াত তোমাদের জন্য উত্তম বা নেয়ামত। কেননা আমি তোমাদের সাথে কথা বলি তোমরাও আমার সাথে কথা বলতে পারছ। এমনকি আমার ওফাতও তোমাদের জন্য উত্তম নেয়ামত। কেননা (আমার ওফাতের পর) তোমাদের আমল আমার নিকট পেশ করা হবে এবং আমি তা দেখবো। যদি তোমাদের কোন ভাল আমল করতে দেখি তাহলে আমি তোমাদের ভাল আমল দেখে আল্লাহর নিকট প্রশংসা করবো, আর তোমাদের কোন মন্দ কাজ দেখলে আল্লাহর কাছে (তোমাদেও পক্ষ হয়ে) ক্ষমা প্রার্থনা করবো।’’ 
🔺(ক.বায্যার, আল-মুসনাদ, ৫/৩০৮পৃ. হাদিসঃ ১৯২৫, সুয়ূতি, জামিউস সগীর, ১/২৮২পৃ. হাদিসঃ ৩৭৭০-৭১, ইবনে কাছির, বেদায়া ওয়ান নিহায়া, ৪/২৫৭পৃ. মুত্তাকী হিন্দী, কানযুল উম্মাল, ১১/৪০৭পৃ. হাদিসঃ ৩১৯০৩, ইমাম ইবনে জওজী, আল-ওফা বি আহওয়ালি মোস্তফা, ২/৮০৯-৮১০পৃ., ইবনে কাছির, সিরাতে নববিয়্যাহ, ৪/৪৫পৃ.)

এ হাদিস দ্বারা প্রমাণিত হল নবীজি (ﷺ) আমাদের ভাল, মন্দ সব কিছুই দেখতেছেন এবং দেখতে থাকবেন। ইমাম নুরুদ্দীন ইবনে হাযার হাইসামী (رحمة الله) বলেন-

 رَوَاهُ الْبَزَّارُ، وَرِجَالُهُ رِجَالُ الصَّحِيحِ. 

-‘‘হাদিসটি ইমাম বাযযার (رحمة الله) বর্ণনা করেছেন আর সনদের সমস্ত রাবী বুখারীর সহিহ গ্রন্থের ন্যায় বিশুদ্ধ।’’ 
🔺(ইমাম হাইসামী, মাযমাউয যাওয়াইদ, ৯/২৪পৃ. হাদিস নং. ১৪২৫০, মাকতুবাতুল কুদসী, কায়রু, মিশর।)

খ. হাযির-নাযির আল্লাহ না রাসূল?
____________________
খ. হাযির-নাযির আল্লাহ না রাসূল?

আল্লাহকে হাযির-নাযির বলা যাবে না। আহলে হাদিসদের মতো আল্লাহ আরশে আযীমে সমাসীনও বলা যাবে না। কেননা আল্লাহ স্থান কাল থেকে মুক্ত। মহান আল্লাহ সমস্ত জগত বেষ্টন করে রয়েছেন; তাকে কোন সৃষ্টি বেষ্টন করতে পারে না। মহান রব পবিত্র কুরআনে বলেছেন-

إِنَّهُ بِكُلِّ شَيْءٍ مُحِيطٌ

 -‘‘নিশ্চয় তিনি সব কিছুকে বেষ্টন করে আছেন।’’
(সুরা হা-মীম সিজদাহ, ৫৪) 
অনেকে রাসূলুল্লাহ (ﷺ) কে হাযির নাযির অস্বীকার করতে গিয়ে বলেন হাযির নাযির আল্লাহর গুণ। কিন্তু আহলে হাদিসদেরই মাযহাব আল্লাহ সব জায়গায় হাযির-নাযির নয়; বরং আরশে সমাসীন কিন্তু রাসূলুল্লাহ (ﷺ) হাযির-নাযির অস্বীকার করতে গিয়ে তাদের নিজস্ব মতবাদ ভুলে যান। আর দেওবন্দীরা তাদের বিভিন্ন আক্বায়েদের কিতাবে লিখে থাকেন যে, আল্লাহ স্থান, কাল, আকার, আকৃতি থেকে মুক্ত। কিন্তু রাসূলুল্লাহ (ﷺ) হাযির-নাযির অস্বীকার করতে গিয়ে তারা আবার বেঁকে বসে এবং মুতাযিলা ও ক্বাদরিয়া ফিরকার আক্বিদা পোষণ করেন। কিন্তু দুঃখের বিষয় হলো তারও আহলে সুন্নাহ ওয়াল জামা‘আতের অনুসারী বলে দাবী করে। ইমাম জুরজানী (رحمة الله) বলেন- 

 أنه تعالى ليس في جهة، ولا في مكان. 

-‘‘মহান আল্লাহ কোনো দিকে বা স্থানে নন।’’ 
🔺(ইমাম জুরজানী, শরহুল মাওয়াকিফ, ২/৫১-৫২পৃ., সাফর বিন আবদুর রাহমান আল-হাওলী, মিনহাজুল আশাইরাহ, ৭৯পৃ. (শামিলা))

ইমামে আহলে সুন্নাহ আবূ মানসূর মাতুরিদী 🔺(ওফাত.৩৩৩হি.) বলেন-

 وقالت القدرية و المعتزلة أن الله تعالى فى كل مكان 

-‘‘বাতিল ফিরকা মুতাযিলা ও ক্বদরিয়াগণ বলেন, আল্লাহ সব স্থানে উপস্থিত।’’ 
🔺(ইমাম মাতুরিদী, শরহুল ফিকহুল আকবার, ১৯পৃ.)

ইমাম ইবনে জারীর আত্-তবারী (رحمة الله) বলেন-

لا يتمكن في كلّ مكان.-

‘‘তিনি সব স্থানে নন।’’ তাই আমরা কী বলবো সে প্রসঙ্গে 
🔺(ইমাম তবারী, তাফসীরে তবারী, ৬/২১০পৃ.)

ইমাম কুরতুবী আন্দুলুসী (رحمة الله) বলেন- 

وأنه في كل مكان بعلمه،-

‘‘নিশ্চই মহান রবের জ্ঞান সকল স্থানে উপস্থিত।’’ 
🔺(ইমাম কুরতুবী, হিদায়া ইলা বুলুগুল নিহায়া, ১/১২পৃ.)

শায়খ আহমাদ বিন উমর মাসআদ হাযামী তার شرح كتاب التوحيد. কিতাবের ৫৩/৮পৃষ্ঠায় (শামিলা) উল্লেখ করেন-

 اعتقد أن الله تعالى في كل مكان هذا كفر أكبر، -‘

‘কেউ যদি আক্বিদা রাখে আল্লাহ সবখানে (হাযির-নাযির) এই ধারণা কুফুরে আকবার।’’ আহলে সুন্নাহ ওয়াল জামা‘আতের আকায়েদের ইমাম আবুল হাসান আশ‘আরী (رحمة الله) 🔺(ওফাত. ৩২৪হি.) তার الإبانة عن أصول الديانة গ্রন্থের ১০৯ পৃষ্ঠায় (যা দারুল আনসার, কায়রু মিশর হতে ১৩৯৭ হিজরীতে প্রকাশিত) লিখেন-

 وزعمت المعتزلة والحرورية والجهمية أن الله تعالى في كل مكان، -

‘‘ মুতাযিলা, হারুরিয়াহ এবং জাহমিয়্যাহ বাতিল ফিরকার লোকেরা বিশ্বাস করে আল্লাহ সকল স্থানে (হাযির-নাযির) আছেন।’’ ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল (রহ)-এর ছেলে ইমাম আবু আব্দুল্লাহ আহমদ ইবনে মুহাম্মদ হাম্বল (ওফাত. ২৪১হি.) তিনি তার الرد على الجهمية والزنادقة কিতাবের ১১৪ পৃষ্ঠায় এ আক্বিদা পোষণ কারীদের খন্ডনে একটি শিরোনাম করেন এ নাম দিয়ে 

الرد على الجهمية في زعمهم أن الله في كل مكان -

‘‘আল্লাহ সকল স্থানে (হাযির-নাযির) আছেন জাহমিয়্যাহ ফিরকার বাতিল আক্বিদার খন্ডন।’’ 

আকায়েদবিদ ইমাম ত্বাহাবী (رحمة الله) বলেন-

مُحِيطٌ بِكُلِّ شَيْءٍ وَفَوْقَهُ وَقَدْ أَعْجَزَ عَنِ الإحاطة خلقه

-‘‘প্রত্যেক বস্তুই তাঁর পরিবেষ্টনে রয়েছে এবং তিনি সব কিছুর ঊর্ধ্বে। আর সৃষ্টিকুল তাঁকে পরিবেষ্টনে অক্ষম।’’ 
🔺(ইমাম তাহাভী, আক্বিদাতুল তাহাভী, ৫৬পৃ. ক্রমিক. ৫১, মাকতুবাতুল ইসলামী, বয়রুত, লেবানন, প্রকাশ.১৪১৪হি.)

আর এজন্যই আল্লাহ তা‘য়ালার একটি নামই হল মুহিত বা পরিবেষ্টনকারী অর্থাৎ তিনি সকল সৃষ্টিকে বেষ্টন করে রয়েছেন। ইমাম ত্বাহাবী (رحمة الله) তাঁর এ কিতাবের অন্যত্র বলেন-

لَيْسَ فِي مَعْنَاهُ أَحَدٌ من البرية وَتَعَالَى عَنِ الْحُدُودِ وَالْغَايَاتِ وَالْأَرْكَانِ وَالْأَعْضَاءِ وَالْأَدَوَاتِ لا تحويه الجهات الست كسائر المبتدعات  

-‘‘আল্লাহ তা‘য়ালার গুণে সৃষ্টি জগতের কেহ নেই। তিনি সীমা, পরিধি, অঙ্গপ্রতঙ্গ এবং উপাদান উপকরণের ঊর্ধ্বে। সৃষ্টি জগতের ন্যায় ছয় দিকের কোন দিক তাকে বেষ্টন করতে পারে না।’’
🔺(ইমাম তাহাভী, আক্বিদাতুত তাহাভী, ৪৪পৃ. ক্রমিক. ৩৮, মাকতুবাতুল ইসলামী, বয়রুত, লেবানন, প্রকাশ.১৪১৪হি.)

 তাই প্রমাণিত হল আল্লাহকে হাযির-নাযির বলা আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা‘আতের মতে কুফুরী।

কুরআনের আলোকে ‘হাযির-নাযির’ এর প্রমাণ
____________________
কুরআনের আলোকে ‘হাযির-নাযির’ এর প্রমাণ-

يا أَيُّهَا النَّبِيُّ إِنَّا أَرْسَلْناكَ شاهِداً وَمُبَشِّراً وَنَذِيراً - وَداعِياً إِلَى اللَّهِ بِإِذْنِهِ وَسِراجاً مُنِيراً

এক.‘‘হে অদৃশ্যের সংবাদদাতা! নিশ্চয়ই আমি আপনাকে হাযির-নাযির, সুসংবাদদাতা, ভয়প্রদর্শনকারী, আল্লাহর অনুমতিক্রমে আল্লাহর দিকে আহ্বানকারী ও আলোকময়কারী সূর্য হিসেবে প্রেরণ করেছি।’’ (সুরা আহযাব, আয়াত, নং.৪৫) আলোচ্য আয়াতে ‘শাহিদ’ শব্দের অর্থ হাযির ও নাযির। ইমাম রাগিব ইস্পাহানী (رحمة الله) বলেন-

الشُّهُودُ والشَّهَادَةُ: الحضور مع المشاهدة، إمّا بالبصر، أو بالبصيرة

'শাহিদ’ স্বচক্ষে অথবা অন্তরদৃষ্টি দ্বারা প্রত্যক্ষ করত: উপস্থিত তাঁকেই বলা হয়।’’ 
🔺( রাগেব ইস্পাহানী, মুফরাদাত ফি গারায়েবুল কোরআন, ৪৬৫পৃ.)

এখন প্রশ্ন হলো তাঁকে কার বা কাদের সাক্ষী হিসেবে প্রেরণ করা হয়েছে? এর উত্তর আলোচ্য আয়াতের তাফসীরে মুফাস্সিরগণ পেশ করেছেন। মুফাসসির ইমাম সৈয়দ আলূসী বাগদাদী (رحمة الله) ও ইমাম সৈয়দ আবুস সাউদ (رحمة الله) বলেন-

يا أيها النبى إِنَّا أرسلناك شَاهِداعلى مَن بُعثتَ إليهم تُراقبُ أحوالهم وتُشاهدُ أعمالَهم وتتحمَّلُ منهم الشَّهادةَ بما صدرَ عنهُم منَ التَّصديقِ والتَّكذيبِ وسائرِ ما هُم عليهِ من الهدى والضَّلالِ وتُؤدِّيها يومَ القيامةِ أداءً مقبولا فيما لهُم وما عليهم

‘যাদের প্রতি আপনাকে রাসূল করে প্রেরণ করা হয়েছে, তাদের সকলের জন্যে আমি আপনাকে ‘শাহিদ’ (হাযির-নাযির) করে পাঠিয়েছি। প্রিয় নবী (ﷺ) কে উম্মতের নিম্নবর্ণিত বিষয়াবলীর সাক্ষী বানানো হয়েছে (১) অবস্থাসমূহ পর্যবেক্ষণ করা। 
(২) তাদের আমলসমূহ প্রত্যক্ষ করা ।
(৩) তাদের সত্যায়ন ও মিথ্যা প্রতিপন্ন করার সাক্ষ্য প্রদান।
(৪) তাদের হেদায়াত ও গোমরাহী সম্পর্কে সাক্ষ্য প্রদান। 
এসব বিষয়ে তিনিই কিয়ামতে সাক্ষ্য প্রদান করবেন।’’ 
🔺(আলূসী, রুহুল মা‘য়ানী, ১১/২২২পৃ. আবুস সাউদ, তাফসীরে আবুস্-সাউদ, ৭/১০৭-১০৮পৃ.)

আল্লামা যামাখশারী বলেন- 

شاهِداً على من بعثت إليهم، وعلى تكذيبهم وتصديقهم، 

-‘‘যাদের প্রতি আপনাকে রাসূল করে প্রেরণ করা হয়েছে, তাদের সকলের জন্যে আমি আপনাকে ‘শাহিদ’ (হাযির-নাযির) করে পাঠিয়েছি এবং আপনি তাদের সত্যায়ন ও মিথ্যা প্রতিপন্ন করার সাক্ষ্য প্রদান করবেন।’’(তাফসীরে কাশ্শাফ, ৩/৫৪৬পৃ.) ইমাম কাযি নাসিরুদ্দীন বায়যাভী (رحمة الله)ও অনুরূপ বলেছেন। (বায়যাভী, তাফসীরে বায়যাভী, ৪/২৩৪পৃ.) ইমাম নাসাফী (رحمة الله)ও অনুরূপ তার তাফসীরে বলেছেন। (তাফসীরে নাসাফী, ৩/৩৬পৃ. দারুল কালামুল তৈয়্যব, বয়রুত, লেবানন, প্রকাশ. ১৪১৯হি.) ইমাম আবু হাইয়্যান আন্দুলুসী (رحمة الله)ও অনুরূপ তার তাফসীওে বলেছেন। (তাফসিরে বাহারুল মুহিত, ৮/৪৮৭পৃ. দারুল ফিকর ইলমিয়্যাহ, বয়রুত, লেবানন, প্রকাশ. ১৪২০হি.) আল্লামা আহমদ বিন মুস্তফা আল-মারাগী (رحمة الله) বলেন- 

شاهدا على من بعثت إليهم تراقب أحوالهم، وترى أعمالهم، 

-‘‘যাদের প্রতি আপনাকে রাসূল করে প্রেরণ করা হয়েছে, তাদের সকলের জন্যে আমি আপনাকে ‘শাহিদ’ (হাযির-নাযির) করে পাঠিয়েছি; তাদের অবস্থা পর্যবেক্ষণ এবং আমলসহ অবলোকন করবেন।’’ (তাফসীরে মারাগী, ২২/১৯পৃ.) উপরে বর্ণিত আলোচনা থেকে প্রমাণিত হয় যে, তিনি যাদের প্রতি প্রেরিত, তিনি তাঁদের জন্য হাযির ও নাযির। তিনি উম্মতের যাবতীয় বিষয় প্রত্যক্ষ না করলে কিভাবে সাক্ষ্য প্রদান করবেন। আর তিনি সমগ্র সৃষ্টি জগতের প্রতি প্রেরিত। হযরত আবু হুরায়রা (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত রাসূল (ﷺ) ইরশাদ করেন-

 وَأُرْسِلْتُ إِلَى الْخَلْقِ كَافَّةً

-‘‘আমি সকল সৃষ্টির জন্য প্রেরিত হয়েছি।’’  
🔺(মুসনাদে আহমদ, ১৫/৯৫পৃ. হাদিস, ৯৩৩৭, মুয়াস্সাতুর রিসালা, বয়রুত, লেবানন, সহিহ মুসলিম, হাদিসঃ ৫২৩)

পবিত্র কোরআনে ‘শাহেদ’ শব্দের ব্যবহার দেখুন
____________________
আয়াতে উল্লেখিত شاهد (শাহিদ) শব্দের অর্থ সাক্ষীও হতে পারে এবং ‘হাযির-নাযির’ ও হতে পারে। সাক্ষী অর্থে ‘শাহিদ’ শব্দটি এজন্য ব্যবহৃত হয় যে, সে ঘটনাস্থলেই উপস্থিত ছিল। যেমনঃ

পবিত্র কোরআনে ‘শাহেদ’ শব্দের ব্যবহার দেখুন-

وَلَا تَعْمَلُونَ مِنْ عَمَلٍ إِلَّا كُنَّا عَلَيْكُمْ شُهُودًا-

‘‘তোমরা যে কার্য কর, আমি তোমাদের কাছে হাযির ও উপস্থিত থাকি।’’ 
(সুরা ইউনূস, আয়াত, নং ৬১)

পবিত্র কোরআনের অন্য স্থানে দেখুন- 

وَاللَّهُ شَهِيدٌ عَلَى مَا تَعْمَلُونَ -‘‘ 

আল্লাহ সর্ব বিষয় প্রত্যক্ষকারী।’’
(সুরা আলে ইমরান, ৩৩) 

পবিত্র কুরআনের অন্যস্থানে দেখুন মহান রব বলেছেন- 

فَمَنْ شَهِدَ مِنْكُمُ الشَّهْرَ فَلْيَصُمْهُ -‘‘ 

সুতরাং তোমাদের মধ্যে যারা রমযান মাসে উপস্থিত থাকবে তারা যেন এই মাসে রোযা রাখে।’’
(সুরা বাক্বারা, আয়াত, ১৮৫)

একটি হাদিসে পাকে দেখুন হযরত আবু হুরায়রা (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত, রাসূল (ﷺ) ইরশাদ করেন-

مَنْ شَهِدَ الْجِنَازَةَ حَتَّى يُصَلَّى عَلَيْهَا فَلَهُ قِيرَاطٌ

-‘‘যে ব্যক্তি জানাযার নামায শেষ হওয়া পর্যন্ত উপস্থিত হল তার জন্য রয়েছে এক কির‘আত সাওয়াব।’’  
🔺(ইমাম বুখারী, আস-সহিহ, ২/৮৭পৃ. হাদিস নং. ১৩২৫, মুসলিম, আস্-সহিহ, ২/৬৫২পৃ. হাদিস নং.৯৪৫, ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল, আল-মুসনাদ, ১৫/১১৪পৃ. হাদিস নং. ৯২০৮, নাসাঈ, আস্-সুনানিল কোবরা, ২১৩৩, ইবনে হিব্বান, আস-সহিহ, ৭/৩৪৭পৃ. হাদিস নং. ৩০৭৮)

দেওবন্দী, আহলে হাদিস এবং আমরা আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতের অনুসারীরা জানাযার নামাযে পড়ে থাকি যা হযরত আবূ ইবরাহিম আল-আনসারী (رضي الله عنه) তাঁর পিতা থেকে বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) কে জানাযার নামাযে এ দোয়া পড়তে শুনেছেন-  

اللهُمَّ اغْفِرْ لِحَيِّنَا، وَمَيِّتِنَا، وَشَاهِدِنَا، وَغَائِبِنَا، وَذَكَرِنَا، وَأُنْثَانَا، وَصَغِيرِنَا، وَكَبِيرِنَا

-‘‘হে আল্লাহ! আপনি ক্ষমা করুন আমাদের জীবিতদের ও আমাদের মৃতদের এবং আমাদের উপস্থিতদের ও আমাদের অনুপস্থিতদের.....।’’ 
🔺(তিরমিযি, আস্-সুনান, হাদিস নং. ১০২৪, তিনি আবু হুরায়রা (رضي الله عنه)-এর সূত্রে, নাসাঈ, আস্-সুনানিল কোবরা, ২/৪৪৭পৃ. হাদিস নং.২১২৪, ও ৯/৩৯৭পৃ. হাদিস নং. ১০৮৫৬, নাসাঈ, আস্-সুনান, ৪/৭৪পৃ. হাদিস নং. ১৯৮৬, ইবনে মাযাহ, আস্-সুনান, ১/৪৮০পৃ. হাদিস নং. ১৪৯৮)

 আমি বিরোদ্ধবাদীদের বলবো এই দুই হাদিসে ‘শাহেদ’ শব্দের অর্থ কী হবে?

النَّبِيُّ أَوْلَى بِالْمُؤْمِنِينَ مِنْ أَنْفُسِهِمْ 

🔺(সুরা আহযাব আয়াত নং. ৬)

-‘‘(২) নবী(ﷺ) মু’মিনদের প্রাণের চেয়েও অধিক নিকটে।’’ 

দেওবন্দ মাদ্রাসার কথিত প্রতিষ্ঠাতা মাওলানা কাসেম নানুতভী বলেন- আলোচ্য আয়াতে - أَوْلَى শব্দটির অর্থ হলো অধিক নিকটবর্তী।
🔺(তাহযীরুন্নাস, পৃ: ১০, কৃত: মাওলানা কাসেম নানুতভী, কুতুবখানা রহীমিয়া, দেওবন্দ কর্তৃক প্রকাশিত)

 হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত, রাসূল (ﷺ) ইরশাদ করেন-

أَوْلَى النَّاسِ بِي يَوْمَ القِيَامَةِ أَكْثَرُهُمْ عَلَيَّ صَلاَةً.

-‘‘কিয়ামতের দিনে সেই ব্যক্তি আমার অতি নিকটে থাকবে যে আমার প্রতি অধিক দরূদ পড়েছে।’’
🔺(আবি শায়বাহ, আল-মুসান্নাফ, ১/২০৭পৃ. হাদিস,৩০৬, ও ৬/৩২৫পৃ. হাদিস.৩১৭৮৭, তিরমিযী : আস্-সুনান : ২/৩৫৪ পৃ: হাদিস : ৪৮৪, ইবনে হিব্বান : আস্-সহিহ : ৩/১৯২ পৃ. হাদিস : ৯১১, ইমাম দারেকুতনী : আল ইল্লল : ২৪১ পৃ. বায়হাকী : আস-সুনানুল কোবরা : ৩/২৪৯পৃ. হাদিস : ৫৭৯১, বায়হাকী : শু’আবুল ঈমান : ৩/১২৯ পৃ. হাদিস :১৪৬২, ইমাম আবু ই‘য়ালা : আল-মুসনাদ : ৮/৪২৮পৃ. হাদিস : ৫০১১, ইমাম মুনযিরী : তারগীব ওয়াত তারহীব : ২/৩২৭ পৃ. হাদিস : ২৫৭৫, খতিব তিবরিযী : মিশকাত : ১/১১৮ পৃ. হাদিস : ৯২৩, হাকিম নিশাপুরী : আল-মুস্তাদরাক : ২/৪২১ পৃ. বগবী, শরহে সুন্নাহ, ৩/১৯৭পৃ. হাদিস,৬৮৬, মুত্তাকী হিন্দী, কানযুল উম্মাল, ১/৪৮৯পৃ. হাদিস,২১৫১)

এ হাদিসের অর্থ সকলেই নিকটে অর্থ করে থাকেন। 

যেমন এ হাদিসের ব্যাখ্যায় আল্লামা মোল্লা আলী ক্বারী (রঃ) বলেন- أَيْ: أَقْرَبُهُمْ -‘‘এখানে আওলা অর্থ নিকটে।’’ 
🔺(মোল্লা আলী ক্বারী, মেরকাত, ২/৭৪৩পৃ. হাদিস নং. ৯২৩)

ইমাম তিরমিযি হাদসটিকে ‘হাসান’ ও ইমাম ইবনে হিব্বান (رحمة الله) হাদিসটিকে সহিহ বলেছেন।
🔺(এ দুটি হাদিস ও বিষয় সম্পর্কে আপত্তির নিষ্পত্তি বিস্তারিত জানতে আমার লিখিত ‘‘প্রমাণিত হাদিসকে জাল বানানোর স্বরূপ উন্মোচন’’ ১ম খন্ডের ৫২১-৫২৩ পৃষ্ঠা দেখুন।)

وَكَذَلِكَ جَعَلْنَاكُمْ أُمَّةً وَسَطًا لِتَكُونُوا شُهَدَاءَ عَلَى النَّاسِ وَيَكُونَ الرَّسُولُ عَلَيْكُمْ شَهِيدًا

(৩)-‘‘এবং কথা হলো এই যে আমি (আল্লাহ তা’য়ালা) তোমাদেরকে (উম্মতে মুহাম্মদী কে) সমস্ত উম্মতগণের মধ্যে শ্রেষ্ঠত্বের মর্যাদা দান করেছি, যাতে তোমরা অন্যান্য লোকদের ব্যাপারে সাক্ষ্য প্রদান করতে পার এবং এ রাসূল (ﷺ) তোমাদের জন্য পর্যবেক্ষণকারী ও সাক্ষীরূপে প্রতিভাত হন।’’
🔺(সূরাঃ বাক্বারাঃ আয়াতঃ ১৪৩, পারাঃ ২)

فَكَيْفَ إِذَا جِئْنَا مِنْ كُلِّ أُمَّةٍ بِشَهِيدٍ وَجِئْنَا بِكَ عَلَى هَؤُلَاءِ شَهِيدًا

(৪)-‘‘তখন কি অবস্থা হবে, যখন আমি (আল্লাহ্ তা’য়ালা) প্রত্যেক উম্মত থেকে একজন করে সাক্ষী উপস্থিত করব, এবং হে মাহবুব! আপনাকে সে সমস্ত সাক্ষীদের প্রত্যক্ষদর্শী সাক্ষীরূপে আনয়ন করবো।’’
🔺(সূরাঃ নিসা, আয়াতঃ ৪১, পারাঃ ৫) 

لَقَدْ جَاءَكُمْ رَسُولٌ مِنْ أَنْفُسِكُمْ عَزِيزٌ عَلَيْهِ مَا عَنِتُّمْ

(৫)-‘‘নিশ্চয় তোমাদের কাছে তোমাদের মধ্য থেকে সে রাসূলই এসেছেন, যাঁর কাছে তোমাদের কষ্টে নিপতিত হওয়ার ব্যাপারটি বেদনাদায়ক।’’
🔺(সূরাঃ তাওবাহ, আয়াতঃ ১২৮, পারাঃ ১১)

বুঝতে পারলাম যে হুযুর আলাইহিস সালাম প্রত্যেক মুসলমানের প্রতিটি কাজকর্ম সম্পর্কে অবগত বলেই আমাদের দুঃখে তিনি দুঃখিত হন। 

(৬) মহান রব বলেন-

وَمَا أَرْسَلْنَاكَ إِلَّا رَحْمَةً لِلْعَالَمِينَ-

‘‘আমি আপনাকে সমগ্র বিশ্বের জন্য রহমতস্বরূপ প্রেরণ করেছি।’’ 
🔺(সূরাঃ আম্বিয়া, আয়াতঃ ১০৭)

অন্যত্র বলা হয়েছে

وَرَحْمَتِي وَسِعَتْ كُلَّ شَيْءٍ 

-‘‘আমার রহমত প্রত্যেক কিছুকেই পরিবেষ্টন করে আছে।’’
🔺(সূরাঃ আ’রাফ, আয়াতঃ ১৫৬, পারাঃ ৯)

বোঝা গেল যে, রাসূল (ﷺ) বিশ্ব চরাচরের জন্য রহমত স্বরূপ এবং ‘রহমত সমগ্র বিশ্বকে পরিবেষ্টন করে রয়েছে।

وَمَا كَانَ اللَّهُ لِيُعَذِّبَهُمْ وَأَنْتَ فِيهِمْ 

(৭)-‘‘হে মাহবুব! এটা আল্লাহর অভিপ্রেত নয় যে আপনি তাদের মধ্যে থাকাকালে আল্লাহ তাদেরকে শাস্তি প্রদান করবেন।’’
🔺(সূরাঃ আনফাল, আয়াতঃ ৩৩, পারাঃ ৯)

অর্থাৎ খোদার কঠিন শাস্তি তারা পাচ্ছে না এজন্য যে, আপনি তাদের মধ্যে রয়েছেন। আর, সাধারণ ও সর্বব্যাপী আযাব তো কিয়ামত পর্যন্ত কোন জায়গায় হবে না। আল্লাহ তা’য়ালা ইরশাদ করেছেন

وَاعْلَمُوا أَنَّ فِيكُمْ رَسُولَ اللَّهِ -

‘‘তোমরা জেনে রেখ,তোমাদের মধ্যে রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বিরাজমান।’’ 
🔺(সূরাঃ হুজরাত, আয়াতঃ ৭, পারাঃ ২৬)

এখানে সমস্ত সাহাবায়ে কিরামকে সম্বোধন করা হয়েছে, অথচ তাঁরা বিভিন্ন জায়গায় বিক্ষিপ্তভাবে বসবাস করতেন। সুতরাং, স্পষ্টই বোঝা যায় যে, হুযুর আলাইহিস সালাম সে সব জায়গায়ও তাঁদের কাছে আছেন।

হাযির-নাযির’ বিষয়ক হাদিস সমূহের বর্ণনা
____________________
হাযির-নাযির’ বিষয়ক হাদিস সমূহের বর্ণনা

সুবিখ্যাত হাদিস গ্রন্থ ‘মিশকাত’ শরীফের ‘ইছবাতু আযাবিল কবর’ শীর্ষক অধ্যায়ে 🔺(হযরত আনাস বিন মালেক (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত আছেঃ

فَيَقُولَانِ مَا كُنْتَ تَقُولُ فِي هَذَا الرَّجُلِ لِمُحَمَّدٍ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ

(১)-‘‘মুনকার-নকীর ফিরিশতাদ্বয় কবরে শায়িত মৃত ব্যক্তিকে জিজ্ঞাসা করবেন, ওনার (মুহাম্মদ রাসূলুল্লাহ ) সম্পর্কে তুমি কি ধারণা পোষন করতে? 
🔺(খতিব তিবরিযীঃ মেশকাতঃ ১/৪৫ পৃ. হাদিসঃ ১২৬, মুসলিমঃ আস-সহীহঃ ৪/২২০০ হাদিসঃ ১৮৭০, বুখারীঃ আস-সহীহঃ ৩/২০৫, হাদিসঃ ১৩৩৮, মুসলিমঃ আস-সহীহঃ ১/৪৪২ হাদিসঃ ৭০, নাসায়ীঃ সুনানে কোবরাঃ ৪/৯৭ পৃ. হাদিসঃ ২০৫১, আবু দাউদঃ আস্-সুনানঃ ৫/১১৪ পৃ. হাদিসঃ ৪৭৫২)

এ হাদিস প্রসঙ্গে ইমাম জালালুদ্দীন সুয়ূতি (رحمة الله) লিখেন-

قَالَ النَّوَوِيّ قيل يكْشف للْمَيت حَتَّى يرى النَّبِي صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَهِي بشرى عَظِيمَة لِلْمُؤمنِ ان صَحَّ

-‘‘মুসলিম শরিফের ব্যাখ্যাকার ইমাম নববী (رحمة الله) বলেন, মৃত ব্যক্তির দৃষ্টি থেকে আবরণ উঠিয়ে নেয়া হয়, যার ফলে সে নবী করীম (ﷺ)কে দেখতে পায়। এটা তার জন্য বড়ই শুভ সংবাদ। যদি সে সঠিক পথে থাকে।’’ 
🔺(সুয়ূতি, শরহে সুনানে ইবনে মাযাহ, ১/৩১৬পৃ. হাশীয়ায়ে মেশকাতঃ ২৪ পৃ. নূর মুহাম্মদ কুতুবখানা, করাচী, পাকিস্তান।)

তাই রাসূল (ﷺ) সর্ব অবস্থায়ই হাযির-নাযির আছেন। আমরা আমাদের পাপ রাশির কারণে দেখিনি। ইমাম কুস্তালানী (رحمة الله) এ হাদিসের ব্যাখ্যায় লিখেন-

فَقِيْلَ يُكْشَفُ لِلْمَيِّتِ حَتَّى يَرْىَ النَّبِىَّ عَلَيْهِ السَّلاَمُ وَهِىَ بَشْرَى عَظِيْمَةُ لِلْمُؤْمِنِ اِنْ صَحَّ.

-‘‘এও বলা হয়েছে যে, তখন মৃত ব্যক্তির দৃষ্টির আবরণ অপসারণ করা হয়, যার দরুণ সে নবী(ﷺ) দেখতে পায়।এটি মুসলমানদের জন্য বড় সুখের বিষয়, যদি সে সঠিক পথে থাকে।’’ 
🔺(.ইমাম কুস্তালানীঃ ইরশাদুস্-সারীঃ ২/৪৬৪পৃ.)

আহলে হাদিসদের ইমাম আযিমাবাদী এবং মোবারকপুরীও অনুরূপ তাদের হাদিসের ব্যাখ্যা গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন।
🔺(আযিমাবাদী, আওনুল মা‘বুদ, ১৩/৬২পৃ. মোবারকপুরী, তুহফাতুল আহওয়াজী, ৪/১৫৫পৃ.)

(২) মিশকাত শরীফের المعجزات শীর্ষক অধ্যায়ে হযরত আনাস (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন-

نَعَى النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ زَيْدًا وَجَعْفَرًا وَابْنَ رَوَاحَةَ لِلنَّاسِ قَبْلَ أَن يَأْتِيهِ خَبَرُهُمْ فَقَالَ أَخْذَ الرَّايَةَ زِيدٌ فَأُصِيبَ ثُمَّ أَخَذَ جَعْفَرٌ فَأُصِيبَ ثُمَّ أَخَذَ ابْنُ رَوَاحَةَ فَأُصِيبَ وَعَيْنَاهُ تَذْرِفَانِ حَتَّى أَخَذَ الرَّايَةَ سَيْفٌ من سيوف الله حَتَّى فتح الله عَلَيْهِم. رَوَاهُ البُخَارِيّ

-‘‘হযরত যায়েদ, জা’ফর ও ইবন রাওয়াহা (রিদওয়ানুল্লাহে আলাইহিম আজমায়ীন) প্রমুখ সাহাবীগণের শাহাদত বরণের সংবাদ যুদ্ধক্ষেত্র থেকে আসার আগেই হুযুর(ﷺ)মদীনার লোকদেরকে উক্ত সাহাবীগণের শহীদ হওয়ার কথা জানিয়ে দেন। 
তিনি (ﷺ)বলেনঃ- পতাকা এখন হযরত যায়দের (رضي الله عنه) হাতে, তিনি শহীদ হয়ে গেলেন। শেষ পর্যন্ত ‘আল্লাহর তলোয়ার’ উপাধিতে ভূষিত সাহাবী হযরত খালেদ বিন ওয়ালীদ (رضي الله عنه)এর হাতে নিয়েছেন, শেষ পর্যন্ত আল্লাহ তা’আলা তাঁকে জয় যুক্ত করলেন।’’ 
🔺(ক. খতিব তিবরিযীঃ মিশকাতঃ ৪/৩৮৪ পৃ. হাদিসঃ ৫৮৮৯, বুখারীঃ আস-সহীহঃ ৭/৫১২ পৃ. হাদিসঃ ৪২৬২)

এতে বোঝা গেল, মদীনা থেকে অনেক দূরে অবস্থিত যুদ্ধ ক্ষেত্র ‘বিরে মউনা’য় যা কিছু হচ্ছিল, হুযুর আলাইহিস সালাম তা’ সুদূর মদীনা থেকে অবলোকন করছিলেন।

(৩) মিশকাত শরীফের ২য় খন্ডেরبَاب الكرامات অধ্যায়ের পর وَفَاةِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ শীর্ষক অধ্যায়ে হযরত উকবা বিন আমের (رضي الله عنه) হতে উল্লেখিত আছেঃ

وَإِنَّ مَوْعِدَكُمُ الْحَوْضُ وَإِنِّي لَأَنْظُرُ إِلَيْهِ من مَقَامِي

-‘‘তোমাদের সঙ্গে আমার পুনরায় সাক্ষাতকারের জায়গা হল ‘হাউজে কাউছার’ যা আমি এখান থেকেই দেখতে পাচ্ছি।’’ কোথায় হাওজে কাউছার কোথায় নবীজি! অথচ সেটি নবীজির সামনেই অর্থাৎ হাযির-নাযির ছিল।
🔺(ক. খতিব তিবরিযীঃ মিশকাতঃ ৪/৪০২ পৃ. হাদিসঃ ৫৯৫৮, বুখারীঃ আস-সহীহঃ ৭/৩৪৮ হাদিসঃ ৪০৪২, মুসলিমঃ আস-সহীহঃ ৪/১৭৭৫ হাদিসঃ ২২৯৬, নাসায়ীঃ সুনানে কোবরাঃ ৪/৬১ পৃ. হাদিসঃ ১৯৫৪, আহমদ ইবনে হাম্বলঃ আল-মুসনাদঃ ৪/১৪৮পৃ., মুসলিমঃ আস্-সহীহঃ প্রথম খÊঃ হাদিসঃ ৩০)

(৪) মিশকাত শরীফের بَاب تَسْوِيَة الصَّفّ শিরোনামের অধ্যায়ে আনাস (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত আছেঃ

أَقِيمُوا صُفُوفَكُمْ وَتَرَاصُّوا فَإِنِّي أَرَاكُمْ مِنْ وَرَاءِ ظَهْرِي       

-‘‘নামাযে তোমাদের কাতার সোজা রাখ’ জেনে রাখ, আমি তোমাদেরকে পেছনের দিক থেকেও দেখতে পাই।’’
🔺(ক. খতিব তিবরিযীঃ মিশকাতঃ ১/২১৭ পৃ. হাদিসঃ ১০৮৬, বুখারীঃ আস-সহীহঃ কিতাবুস্-সালাতঃ ২/২০৮ হাদিসঃ ৭১৯, আবু নুঈমঃ দালায়েলুল নবুয়তঃ পৃ. ৭১, হাদিসঃ ৫৬, আবু আওয়ানাহঃ আল-মুসনাদঃ ১/৪৬২, হাদিসঃ ১৭১৭, মুসলিমঃ আস-সহীহঃ ১/৩২৪ পৃ. হাদিসঃ ৪৩৪, নাসায়ীঃ আস-সুনানুল কোবরাঃ ২/৯২ পৃ. হাদিসঃ ৮১৪)

(৫) সুপ্রসিদ্ধ হাদীস গ্রন্থ ‘তিরমিযী শরীফ’ ২য় খন্ডের ‘বাবুল ইলম’ এর অন্তভুর্ক্ত مَا جَاءَ فِىْ ذَهَابِ الْعِلْمِ শীর্ষক অধ্যায়ে হযরত আবু দারদা (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত আছে।

كُنَّا مَعَ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَشَخَصَ بِبَصَرِهِ إِلَى السَّمَاءِ ثُمَّ قَالَ: هَذَا أَوَانُ يُخْتَلَسُ العِلْمُ مِنَ النَّاسِ حَتَّى لَا يَقْدِرُوا مِنْهُ عَلَى شَيْءٍ

-‘‘একদা আমরা হুযুর আলাইহিস সালামের সাথেই ছিলাম। তিনি আসমানের দিকে দৃষ্টি করে বললেনঃ ইহা সে সময়, যখন জনগণ থেকে জ্ঞান ছিনিয়ে নেয়া হবে। শেষ পর্যন্ত তারা এ জ্ঞানের কিছুই ধারণ করতে পারবে না।’
🔺(ইমাম তিরমিজীঃ কিতাবুল ইলমঃ ৫/৩১ হাদিসঃ ২৬৫৩)

এ হাদীসের ব্যাখ্যায় হাদীসের সুবিখ্যাত ভাষ্যকার মোল্লা আলী কারী (রঃ) তাঁর বিরচিত “মিরকাত” এর ‘কিতাবুল ইলম’ এ বলেছেনঃ

قَالَ الطِّيبِيُّ: فَكَأَنَّهُ عَلَيْهِ الصَّلَاةُ وَالسَّلَامُ لَمَّا نَظَرَ إِلَى السَّمَاءِ كُوشِفَ بِاقْتِرَابِ أَجَلِهِ فَأَخْبَرَ بِذَلِكَ.

-‘‘ইমাম তিব্বী (رحمة الله) বলেন, হুযুর আলাইহিস সালাম যখন আসমানের দিকে তাকালেন, তখন তাঁর নিকট প্রকাশ পায় যে তাঁর পরলোক গমনের সময় ঘনিয়ে আসছে। তখনই তিনি সে সংবাদ দিয়েছিলেন।’’
🔺(মোল্লা আলী ক্বারীঃ মেরকাতঃ ১/৩২০পৃ. হাদিসঃ ২৪৫ )

(৬) মিশকাত শরীফের ২য় খন্ডেরঃباب الكرامات

শীর্ষক অধ্যায়ে হযরত আবদুল্লাহ ইবনে উমর (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত আছেঃ 

হযরত উমর (رضي الله عنه) হযরত সারিয়া (رضي الله عنه) কে এক সেনা বাহিনীর অধিনায়ক নিযুক্ত করে ‘নেহাওয়ানন্দ’ নামক স্থানে পাঠিয়েছিলেন। এরপর একদিন হযরত উমর ফারুক (رضي الله عنه) মদীনা মুনাওয়ারায় খুতবা পাঠের সময় চিৎকার করে উঠলেন। হাদীছের শব্দগুলো হলঃ

فَبَيْنَمَا عُمَرُ يَخْطُبُ، فَجَعَلَ يَصِيحُ: يَا سَارِيَ! الْجَبَلَ

-‘‘হযরত উমর (رضي الله عنه) মদীনা মুনাওয়ারায় খুতবা পড়ার সময় চিৎকার করে বলে উঠলেন ‘ওহে সারিয়া! পাহাড়ের দিকে পিঠ দাও।’’ বেশ কিছুদিন অতিবাহিত হওয়ার পর উক্ত সেনাবাহিনী থেকে বার্তা বাহক এসে জানানঃ আমাদিগকে শত্রুরা প্রায় পরাস্ত করে ফেলেছিল। এমন সময় কোন এক আহ্বানকারীর ডাক শুনতে পেলাম। উক্ত অদৃশ্য আহ্বানকারী বলেছিলেনঃ ‘সারিয়া! পাহাড়ের শরণাপন্ন হও।’ তখন আমরা পাহাড়কে পিঠের পেছনে রেখে যুদ্ধে অবতীর্ণ হলাম। এরপর আল্লাহ আমাদের সহায় হলেন, ওদেরকে পযুর্দস্ত করে দিলেন।’’
🔺(খতিব তিবরিযীঃ মেশকাতঃ ৪/৪৪৬ পৃ. হাদিসঃ ৫৯৫৪, বায়হাকীঃ দালায়েলুল নবুয়তঃ ৬/৩৭০ পৃ., শায়খ ইউসূফ নাবহানীঃ হুজ্জাতুল্লাহি আলাল আলামীনঃ ৬১২-৬১৩ পৃ., আবু নঈম ইস্পহানীঃ দালায়েলুল নবুয়তঃ পৃ. ৫১৮-৫১৯, মুত্তাকী হিন্দীঃ কানযুল উম্মালঃ ৫৭১ পৃ. হাদিসঃ ৩৫৭৮৮, বায়হাকীঃ কিতাবুল ই’তিকাদঃ ২০৩ পৃ.)

(৭) হযরত হারিছ ইবনে নুমান (رضي الله عنه) থেকে বর্ণনা করেছেন, একবার আমি (হারিছ) হুযুর আলাইহিস সালামের খিদমতে উপস্থিত হই। সরকারে দু’জাহান আমাকে জিজ্ঞাস করলেন, ‘হে হারিছ, তুমি কোন অবস্থায় আজকের এ দিনটিকে পেয়েছ?” আরয করলামঃ খাঁটি মুমিন। পুনরায় জিজ্ঞাসা করলেনঃ তোমার ঈমানের স্বরূপ কি? আরয করলামঃ

وَكَأَنِّي أَنْظُرُ إِلَى عَرْشِ رَبِّي بَارِزًا، وَكَأَنِّي أَنْظُرُ إِلَى أَهْلِ الْجَنَّةِ يَتَزَاوَرُونَ فِيهَا، وَكَأَنِّي أَنْظُرُ إِلَى أَهْلِ النَّارِ يَتَضَاغَوْنَ فِيهَا.

-‘‘আমি যেন খোদার আরশকে প্রকাশ্যে দেখছিলাম। জান্নাতবাসীদেরকে পরস্পরের সঙ্গে সাক্ষাত করতে এবং দোযখবাসীদেরকে অসহনীয় যন্ত্রণায় হট্টগোল করতে দেখতে পাচ্ছিলাম।’’
(ইমাম আবি শায়বাহ, আল-মুসান্নাফ, ৬/১৭০পৃ. হাদিসঃ ৩০৪২৩-২৫, মাকতাবাতুর রাশাদ, রিয়াদ, সৌদি, ইমাম আব্দুর রায্যাক, জামেউ মা‘মার বিন রাশাদ, ১১/১২৯পৃ. হাদিসঃ ২০১১৪, ইবনে মোবারক, আয্-যুহুদ ওয়াল রিকাক, ১/১০৬পৃ. হাদিসঃ ৩১৪, ইবনে আরাবী, মু‘জাম, ১/১৩০পৃ. হাদিসঃ ২০৬, বায়হাকী, শুয়াবুল ঈমান, ১৩/১৫৯পৃ. হাদিসঃ ১০১০৭ ও ১০১০৮, ইমাম বায়হাকী (رحمة الله) এ হাদিসটির আকেটি সুত্র সাহাবি হযরত আনাস বিন মালেক (رضي الله عنه) হতে সংকলন করেন ( শুয়াবুল ঈমান, ১৩/১৫৮পৃ. হাদিসঃ ১০১০৬) ইমাম তাবরানী, মু’জামুল কবীরঃ ৩/২৬৬ হাদিসঃ ৩৩৬৭)

মিলাদ মাহফিলে হুযুর (ﷺ) উপস্থিত হতে পারেন বলে ধারনা রাখা প্রসঙ্গে
____________________
মিলাদ মাহফিলে হুযুর (ﷺ) উপস্থিত হতে পারেন বলে ধারনা রাখা প্রসঙ্গেঃ

সমস্ত নবিরা তাদের নিজ নিজ রওযা শরীফে জীবিত রয়েছেন। সহিহ মুসলিম শরীফের হাদিস রয়েছে আনাস (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত মি‘রাজে হযরত মুসা (عليه السلام) এর কবরের পাশ দিয়ে যেতে গিয়ে রাসূল (ﷺ) দেখেনঃ

‘‘তিনি মুসা (عليه السلام)তাঁর মাযারে কবরে নামায পড়ছেন।’’
🔺(ক. ইমাম মুসলিম : আস সহীহ : ৪/১৮৪৫ : হাদিস : ২৩৭৫, ইমাম নাসায়ী : সুনান : ৩/১৫১ : হাদিস : ১৬৩৭,ইমাম আহমদ : মুসনাদ : ৩/১২০ পৃ:,ইমাম বগভী : শরহে সুন্নাহ : ১৩/৩৫১ : হাদিস : ৩৭৬০,ইমাম ইবনে হিব্বান : আস সহীহ : ১/২৪১ : হাদিস : ৪৯,ইমাম আবি শায়বাহ : আল মুসান্নাফ : ১৪/৩০৮ : হাদিস : ১৮৩২৪, ইমাম নাসায়ী : সুনানে কোবরা : ১/৪১৯ : হাদিস : ১৩২৯, ইমাম আবু ই’য়ালা : আল মুসনাদ : ৭/১২৭ : হাদিস : ৪০৮৫, ইমাম মানাবী : ফয়জুল কাদীর : ৫/৫১৯ পৃ: হাদিস : ৩০৮৯, আল্লামা মুকরিজী : ইমতাঈল আসমা’আ : ১০/৩০৪ পৃ:)

 অনুরূপ হযরত আবু হুরায়রা (রঃ) হতে বর্ণিত, আরও সহিহ হাদিস রয়েছে, তাতে পরিস্কার হয়ে যাবে বিষয়টি-

عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، قَالَ: قَالَ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ:وَقَدْ رَأَيْتُنِي فِي جَمَاعَةٍ مِنَ الْأَنْبِيَاءِ، فَإِذَا مُوسَى قَائِمٌ يُصَلِّي، فَإِذَا رَجُلٌ ضَرْبٌ، جَعْدٌ كَأَنَّهُ مِنْ رِجَالِ شَنُوءَةَ، وَإِذَا عِيسَى ابْنُ مَرْيَمَ عَلَيْهِ السَّلَامُ قَائِمٌ يُصَلِّي، أَقْرَبُ النَّاسِ بِهِ شَبَهًا عُرْوَةُ بْنُ مَسْعُودٍ الثَّقَفِيُّ، وَإِذَا إِبْرَاهِيمُ عَلَيْهِ السَّلَامُ قَائِمٌ يُصَلِّي، أَشْبَهُ النَّاسِ بِهِ صَاحِبُكُمْ - يَعْنِي نَفْسَهُ - فَحَانَتِ الصَّلَاةُ فَأَمَمْتُهُمْ-

-‘‘রাসূল (ﷺ) ইরশাদ করেন, মি‘রাজের রাত্রে আম্বিয়া (عليه السلام) এর এক বিরাট জামাতকে দেখেছি, মুসা (আঃ )-কে তাঁর কবরে নামায পড়তে দেখেছি। তাকে দেখতে মধ্য আকৃতির চুল কোকরানো সানওয়া দেশের লোকের মত। আমি ঈসা (عليه السلام) কে দন্ডায়মান অবস্থায় নামায পড়তে দেখেছি, তিনি দেখতে ওরওয়া ইবনে মাসউদ সাকাফী (رضي الله عنه)‘র মত। তার পরে নামাযের সময় আসলো আমি সকল নবী(عليه السلام) এর ইমামতি করলাম।’’
🔺(ক. ইমাম মুসলিম : সহীহ : ফাযায়েলে মূসা (عليه السلام) : ১/১৫৭ : হাদিস : ১৭৩,খতিব তিবরিযী : মিশকাতুল মাসাবীহ : ৩/২৮৭ : হাদিস : ৫৮৬৬, ইমাম বায়হাকী : দালায়েলুল নবুয়ত : ২/৩৮৭ পৃ:,ইমাম তকি উদ্দিন সুবকী :শিফাউস-সিকাম : ১৩৫-১৩৮পৃ. ইমাম সূয়ূতী : আল-হাভীলিল ফাতওয়া : ২/২৬৫পৃ., ইমাম সাখাভী : কওলুল বদী : ১৬৮পৃ.,ইমাম মুকরিজী : ইমতাঈল - আসমা: ৮/২৪৯ পৃ:)

এ আলোচনা থেকে প্রমাণিত হলো হযরত মূসা (عليه السلام) সহ সকল নবি তাঁদের নিজ নিজ রওযা শরীফে জিবিত এবং বিভিন্ন স্থানে অবস্থানরত থাকার পরও আবার বায়তুল মুকাদ্দাসে উপস্থিত হয়েছেন। তাহলে বুঝা গেল তাঁদের জীবন শুধু কবরের মধ্যেই সিমাবদ্ধ নয়; তা না হলে তারা বায়তুল মুকাদ্দাসে রাসূল (ﷺ)-এর পিছনে নামায পড়তে গেলেন কিভাবে ? আর শরীয়ত মতে শর্ত হলো নামাযের জন্য যাহেরী জিসিম বা দেহ থাকার একান্ত প্রয়োজন। সম্মানিত পাঠকবৃন্দ! গভীরভাবে লক্ষ্য করুন যে বোরাকে আবার যখন রাসূল ৬ষ্ঠ আকাশে গেলেন তখন দেখেন হযরত মূসা (عليه السلام) সেখানে উপস্থিত হয়ে রয়েছেন এবং এমনকি আমাদের আখিরী যামানার উম্মতের উপর ৫০ ওয়াক্ত নামায তারই ওসিলাতে কমে ৫ ওয়াক্তে রুপান্তরিত হলো।

(মিশকাতুল মাসাবীহ, মি‘রাজ অধ্যায়, বুখারী, মুসলিমের সূত্রে)

সম্মানিত পাঠকবৃন্দ! তাহলে আপনারা গভীরভাবে লক্ষ্য করুন নবীজি(ﷺ) মূসা (عليه السلام) কে এক সময়ে মোট ৩ এরও অধিক স্থানে দেখলেন। তাহলে আমি এই ভন্ড আলেম নামে কলঙ্কদের বলবো যে আমাদের রাসূল (ﷺ) এর অনেক পরের মর্যাদার নবি মূসা (আ.) যদি ওফাতের পরেও বহু স্থানে উপস্থিত হয়ে আমাদের উম্মতে মুহাম্মাদিকে সাহায্য করতে পারেন তাহলে আমাদের নবীজি (ﷺ) ওফাতের পরে শুধু মাত্র দুনিয়াতেই একাধিক স্থানে উপস্থিত হতে পারবেন না কেন ?

সাধারন পাঠকগণের উদ্দেশ্যে আমি বলবো নবীজি (ﷺ) অনেক নবী (عليه السلام)দেরকে তাদের কবরে দেখেছেন, আবার বায়তুল মুকাদ্দাসেও দেখেছেন, আবার তাদেরকেই অনেককে আসমানে দেখেছেন; তাহলে তাঁরা ওফাতের পরেও বহু স্থানে উপস্থিত থাকতে পারেন তাহলে আমাদের নবী (ﷺ)ওফাতের পরে একাধিক স্থানে উপস্থিত হতে পারবে না কেন?

পাঠকবৃন্দ তাদের বক্তব্য থেকেই ইহুদীদের দালালির টাকার গন্ধ পাওয়া যাচ্ছে বলে মনে হয়, এ বিষয়ে বিস্তারিত জানতে আমার লিখিত ‘প্রমাণিত হাদিসকে জাল বানানোর স্বরূপ উন্মোচন’’ ১ম খন্ডের ১৪৮-১৫৭ পৃষ্ঠা দেখুন। শুধু তাই নয় ইমাম জালালুদ্দীন সুয়ূতি (রঃ) 🔺(ওফাত.৯১১হি.) এর প্রসিদ্ধ কিতাব 
[أَنْبَاءُ الْأَذْكِيَاءِ بِحَيَاةِ الْأَنْبِيَاءِ]এর ৭ পৃষ্ঠায় লিখেন-

النَّظَرِ فِي أَعْمَالِ أُمَّتِهِ وَالِاسْتِغْفَارِ لَهُمْ مِنَ السَّيِّئَاتِ، وَالدُّعَاءِ بِكَشْفِ الْبَلَاءِ عَنْهُمْ، وَالتَّرَدُّدِ فِي أَقْطَارِ الْأَرْضِ لِحُلُولِ الْبَرَكَةِ فِيهَا، وَحُضُورِ جِنَازَةِ مَنْ مَاتَ مِنْ صَالِحِ أُمَّتِهِ، فَإِنَّ هَذِهِ الْأُمُورَ مِنْ جُمْلَةِ أَشْغَالِهِ فِي الْبَرْزَخِ كَمَا وَرَدَتْ بِذَلِكَ الْأَحَادِيثُ وَالْآثَارُ، ـ

-‘‘উম্মতের বিবিধ কর্ম কান্ডের প্রতিদৃষ্টি রাখা, তাদের পাপরাশির জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করা, তাদের বালা-মসিবত থেকে রক্ষা করার জন্য দুআ করা, পৃথিবীর এক প্রান্ত থেকে অপর প্রান্তে আনাগোনা করা ও বরকত দান করা এবং নিজ উম্মতের কোন নেক বান্দার ওফাত হলে তার জানাযাতে অংশগ্রহণ করা, এগুলোই হচ্ছে হুযুর (ﷺ) এর সখের কাজ। অন্যান্য হাদিস থেকেও এসব কথার সমর্থন পাওয়া যায়।’’
🔺(সুয়ূতি, আল-হাভী লিল ফাতওয়া, ২/১৮৪-১৮৫পৃ. দারুল ফিকর ইলমিয়্যাহ, বয়রুত, লেবানন।)

বিশ্ববিখ্যাত মুফাস্সির আল্লামা ইসমাঈল হাক্কী (রঃ) তাফসীরে রুহুল বায়ানে সূরা মূলকের ২৯নং আয়াতের ব্যাখ্যায় উল্লেখ করেন-

قال الإمام الغزالي رحمه الله تعالى والرسول عليه السلام له الخيار فى طواف العوالم مع أرواح الصحابة رضى الله عنهم لقد رآه كثير من الأولياء ـ  

-‘‘সূফী কূল সম্রাট হুজ্জাতুল ইসলাম ইমাম গাজ্জলী (রঃ) বলেছেন, হুযুর (ﷺ) এর সাহাবায়ে কিরামের রুহ মোবারক সাথে নিয়ে জগতের বিভিন্ন স্থানে পরিভ্রমণের ইখতিয়ার আছে। তাই অনেক আওলিয়া কিরাম তাঁদেরকে দেখেছেন।’’
🔺(ইসমাঈল হাক্কী : তাফসীরে রুহুল বয়ান : ১০/৯৯পৃ. সূরা মুলক,আয়াত.নং.২৯।)

নবীগণ ও আল্লাহর ওলীগণ এক সময়ে বহু জায়গায় উপস্থিত হয়ে থাকেন।
আর রাসূল(ﷺ) এর তো কোন তুলনাই চলে না। অনুরূপ মোল্লা আলী ক্বারী (রঃ) বলেন-

وَلَا تَبَاعُدَ مِنَ الْأَوْلِيَاءِ حَيْثُ طُوِيَتْ لَهُمُ الْأَرْضُ، وَحَصَلَ لَهُمْ أَبْدَانٌ مُكْتَسَبَةٌ مُتَعَدِّدَةٌ، وَجَدُوهَا فِي أَمَاكِنَ مُخْتَلِفَةٍ فِي آنٍ وَاحِدٍ، ـ

-‘‘ওলীগণ একই মুহুর্তে কয়েক জায়গায় বিচরণ করতে পারেন। একই সময়ে তারা একাধিক শরীরের অধিকারীও হতে পারেন।’’
🔺(আল্লামা মোল্লা আলী ক্বারী : মেরকাত, ৪/১০১পৃ. হাদিসঃ ১৬৩২)

ওলীদের এ অবস্থা হলে নবীদের কী হবে? 

শিফা শরীফে ইমাম কাযী আয়ায আল-মালেকী (র) একটি হাদিস সংকলন করেন-  

قَالَ: إِنْ لَمْ يَكُنْ فِي الْبَيْتِ أَحَدٌ فَقُلْ السَّلَامُ عَلَى النَّبِيِّ وَرَحْمَةُ اللَّهِ وَبَرَكَاتُهُ، السَّلَامُ عَلَيْنَا وَعَلَى عِبَادِ اللَّهِ الصَّالِحِينَ-

  -‘‘যে ঘরে কেউ না থাকে, সে ঘরে (প্রবেশের সময়) বলবেন, হে নবী আপনার প্রতি সালাম, আপনার উপর আল্লাহর অশেষ রহমত ও বরকত বর্ষিত হোক।’’ 
🔺(ইমাম কাজী আয়াজ : শিফা শরীফ : ২/৪৩ পৃ.)

এ হাদিসের ব্যাখ্যায় আল্লামা মোল্লা আলী ক্বারী (রঃ) শরহে শিফা গ্রন্থে লিখেন-

أي لأن روحه عليه السلام حاضر في بيوت أهل الإسلام

-‘‘কেননা, নবী(ﷺ) এর পবিত্র রুহ মুসলমানের ঘরে ঘরে বিদ্যমান আছেন।’’ 
🔺(আল্লামা মোল্লা আলী ক্বারী, শরহে শিফা : ২/১১৮ পৃ. দারুল কুতুব ইসলামিয়্যাহ, বয়রুত, লেবানন।)

 সম্মানিত পাঠকবৃন্দ! তাহলে কী ইমাম মোল্লা বাতিল পন্থীদের ফতোওয়ায় কাফির ছিলেন?

وَقَال النَّخَعِيّ إذَا لَم يَكُن فِي الْمَسْجِد أَحَد فَقُل: السَّلَام على رسول الله صلى الله عليه وَسَلَّم وَإذَا لَم يَكُن فِي البَيْت أَحَد فَقُل: السَّلَام عَلَيْنَا وَعَلَى عِبَاد اللَّه الصَّالِحِين

-‘‘বিখ্যাত তাবেয়ী হযরত ইবরাহিম নাখঈ (র) বলেন যখন মসজিদের মধ্যে কোন লোক থাকবে না তখন রাসূল (ﷺ) কে সালাম দিবে এবং । যে ঘরে কেউ না থাকে, সে ঘরে (প্রবেশের সময়) বলবেন, হে আল্লাহর মাহবুব বান্দাগন আপনাদের প্রতি সালাম।’’
🔺( ইমাম কাযী আয়ায : শিফা তাহরিফে হুকুকে মোস্তফা : ২/৬৭পৃ.দারুল ফিকর ইলমিয়্যাহ, বয়রুত।)

عَمْرِو بْنِ حَزْمٍ قَالَ: كَانَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِذَا دَخَلَ الْمَسْجِدَ قَالَ: السَّلَامُ عَلَى النَّبِيِّ وَرَحْمَةُ اللَّهِ، اللَّهُمَ افْتَحْ لِي أَبْوَابَ رَحْمَتِكَ وَالْجَنَّةَ

-‘‘ হযরত আমর ইবনে হাযম(رضي الله عنه) বলেন রাসূল(ﷺ) যখন মসজিদে প্রবেশ করতেন তিনি বলতেন আল্লাহর হাবিবের উপর সালাম ও সালাম বর্ষিত হউক। তারপর প্রবেশের দোয়া বলতেন......।’’ 
🔺(ইমাম আবদুর রায্যাক, আল-মুসান্নাফ,: ১/৪২৫পৃ.হাদিস:১৬৬৩)

পাঠকবৃন্দ! এটি তিনি আমাদের শিখানোর জন্যই বলতেন।

عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ قَالَ: قَالَ لِي كَعْبُ بْنُ عُجْرَةَ: " إِذَا دَخَلْتَ الْمَسْجِدَ فَسَلِّمْ عَلَى النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، وَقُلِ: اللَّهُمَّ افْتَحْ لِي أَبْوَابَ رَحْمَتِكَ، وَإِذَا خَرَجْتَ فَسَلِّمْ عَلَى النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، وَقُلِ: اللَّهُمَّ احْفَظْنِي مِنَ الشَّيْطَانِ "

-‘হযরত আবু হুরায়রা (رضي الله عنه) কা‘ব বিন উযরাহ কে বলেন তুমি যখন মসজিদে প্রবেশ করবে তখন রাসূল (ﷺ) কে সালাম দিবে ও বলবে যে.......। আর যখন মসজিদ হতে বের হবে তখনও নবি (ﷺ)দোজাহানকে সালাম দিবে তারপর বলবে.....।’’ 
🔺(ইমাম আবি শায়বাহ, আল-মুসান্নাফ,: ১/২৯৮পৃ. হাদিস: ৩৪১৫ও ৬/৯২পৃ. হাদিস, ২৯৭৬৭)

এ ব্যাপারে আরেকটি হাদিসে পাক দেখুন-

أَنَّ عَبْدَ اللَّهِ بْنَ سَلَامٍ كَانَ إِذَا دَخَلَ الْمَسْجِدَ سلَّمَ عَلَى النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، وَقَالَ: افْتَحْ لِي أَبْوَابَ رَحْمَتِكَ وَإِذَا خَرَجَ سلَّمَ عَلَى النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَتَعَوَّذَ مِنَ الشَّيْطَانِ

-‘‘ নিশ্চয়ই হযরত আবদুুল্লাহ বিন সালাম (رضي الله عنه) তিনি যখন কোন মসজিদে প্রবেশ করতেন তিনি প্রথমে নবিয়ে দুজাহানকে সালাম দিতেন তাপর প্রবেশের দোয়া বলতেন।’’ 
🔺(ইমাম আবি শায়বাহ, আল-মুসান্নাফ, ৬/৯৭পৃ. হাদিস : ২৯৭৬৮ (খ) ইবনে আবি উসামা ইবনে হারেস (ওফাত.২৮২হি.), মুসনাদে হারিস, ১/২৫৪পৃ.হাদিস,১/২৫৪পৃ.হাদিস,১৩০)

এ বিষয়ে আরও একটি হাদিসে পাক দেখুন-

عَنْ أَبِي حُمَيْدٍ السَّاعِدِيِّ، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: إِذَا دَخَلَ أَحَدُكُمُ الْمَسْجِدَ، فَلْيُسَلِّمْ عَلَى النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، ثُمَّ لِيَقُلْ: اللَّهُمَّ افْتَحْ لِي أَبْوَابَ رَحْمَتِكَ،

-‘‘হযরত আবু হুমাইদ সায়েদী (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত তিনি বলেন রাসূল (ﷺ) বলেছেন যখন কোন ব্যক্তি মসজিদে প্রবেশ করবে অতঃপর সে যেন তাঁর রাসূলের প্রতি সালাম দেয়। তাপর বলবে এই দোয়া.......।’’
🔺((১) সুনানে দারেমী, ২/৮৭৬পৃ. হাদিস, ১৪৩৪, (২) সুনানে ইবনে মাযাহ, ১/২৫৪পৃ. হাদিস, ৭৭২, আলবানী এ হাদিসের তাহক্বীকে সনদটিকে সহিহ বলেছেন, (৩) বায়হাকী, আস্-সুনানিল কোবরা, ২/৬১৯পৃ. হাদিসঃ ৪৩১৭ ও ২/৬১৯পৃ. হাদিসঃ ৪৩১৯, (৫) আবূ দাউদ, আস্-সুনান,১/১২৬পৃ. হাদিস,৪৬৫ (৬) বায্যার, আল-মুসনাদ, ৯/১৬৯পৃ. হাদিসঃ ৩৭২০ (৭) নাসাঈ, আস্-সুনানিল কোবরা, ১/৪০৪পৃ. হাদিসঃ ৮১০ (৮) নাসাঈ, আমালুল ইউয়াম ওয়াল লাইলা, ১/২২০পৃ. হাদিস,১৭৭ (৯) আবূ আওয়ানাহ,আল-মুসনাদ, ১/৩৫৪পৃ. হাদিস,১২৩৪ (১০) ইবনে হিব্বান, আস্-সহিহ, ৫/৩৯৭পৃ. হাদিসঃ ২০৪৮)

এ বিষয়ে হযরত আবু হুরায়রা (رضي الله عنه) হতেও আরেকটি হাদিসে পাক বর্ণিত আছে।’’ 
🔺((১) সুনানে ইবনে মাযাহ, ১/২৫৪পৃ. হাদিস,৭৭৩, আলবানী এ হাদিসের তাহক্বীকে সনদটিকে সহিহ বলেছেন, (২) বায্যার, আল-মুসনাদ, ১৫/১৬৮পৃ. হাদিসঃ ৮৫২৩,ইবনে খুযায়মা, আস্-সহিহ, ১/২৩১পৃ. হাদিসঃ ৪৫২, আলবানী বলেন এটি মুসলিমের শর্ত অনুযায়ী সহিহ (৮) ও ৪/২১০পৃ. হাদিসঃ ২৭০৬ (৯-১০) ইবনে হিব্বান, আস্-সহিহ, ৫/৩৯৫পৃ. হাদিসঃ ২০৪৭,)

উপমহাদেশের শ্রেষ্ঠতম মুহাদ্দিস শাহ ওয়ালী উল্লাহ মুহাদ্দিস দেহলভী (রঃ) ‘ফয়যুল হারামাঈন’ কিতাবে নিজের মতামত প্রকাশ করে বলেন-

ورأيته صلى الله عليه وسلم فى أكثر الأمور بيدى اى صورته الكريمة التى كان عليها مرة بعد مرة في تفطنت أن له خاصة من تقويم روحه بصورة جسده عليه السلام وأنه الذى اشار اليه بقوله إن الأنبياء لا يموتون وأنهم يصلون فى قبورهم وهم يحجون وانهم أحياء ـ

-‘‘আমি রাসূল (ﷺ) কে অধিকাংশ দ্বীনি ব্যাপারে তার নিজ আকৃতিতে আমার সম্মুখে বার বার দেখেছি। এতে আমি উপলব্ধি করলাম যে, তার রুহ মোবারকের এমন বিশেষ শক্তি রয়েছে যে, তা তার আকৃতি ধারণ করতে পারে। এটা রাসূল (ﷺ) এর ঐ উক্তির ইঙ্গিত যে, নবীগণ মরে না, তারা নিজ নিজ কবরে নামায পড়ে থাকেন, তারা হজ্জ করে থাকেন এবং তাঁরা জীবিত আছেন।’’
🔺(শাহ ওয়ালী উল্লাহ মুহাদ্দেস দেহলভী : ফয়যুল হারামাঈন : ২৪৫ পৃ)

সূফীকুল সম্রাট ইমাম শা’রানী (রঃ) এর অন্যতম গ্রন্থ لواقح الانوار القدسية فى البيان العهود المحمدية এর ১২১ পৃষ্ঠায় লিখেন, আমার পীর শেখ নূরুদ্দীন শাওনী (রঃ) প্রতিদিন দশ হাজার বার দুরূদ পড়তেন আর (তার শায়খ) শেখ আহমদ যাওয়াভী (রঃ ) চল্লিশ বার তার অযিফা পড়তেন। তিনি একবার আমাকে (শা’রানী কে) বললেন-

طريقتنا ان نكثر من الصلاة على النبي صلى الله عليه وسلم حتى يصير يجالسنا يقظه وصحبه مثل الصحابة ونسأله عن امور ديننا وعن الأحاديث التي ضعفها الحافظ عندنا ونعمل بقوله صلى الله عليه وسلم فيها وما لم يقع لنا ذلك فلسنا من لم اكثرين للصلاة عليه صلى الله عليه وسلم ـ

-‘‘আমাদের বাধা নিয়ম এই যে, আমরা নবী করীম (ﷺ) এর উপরে এত অধিক সালাত (দরূদ) পড়তাম যাতে তিনি জাগ্রত অবস্থায় আমাদের নিকট বসতেন, সাহাবাগণ যেমনিভাবে তার সাহচর্য যে রূপ লাভ করেছেন, আমরাও সেরূপ সাহচর্য লাভ করতাম, আমাদের দ্বীনি বিষয়গুলো তার নিকট ফয়সালা করে নিতাম, যে সমস্ত হাদিস মুহাদ্দিসগণ, হাফেযগণ দ্বঈফ বলেছেন, ঐ বিষয়ে জিজ্ঞাসা করে সঠিক উত্তর জেনে নিতাম এবং তাঁর নাম অনুসারে ঐ সমস্ত হাদিসের উপরে আমল করতাম। যে পর্যন্ত আমরা ঐ পর্যায়ে না পৌঁছতাম, সে পর্যন্ত আমরা নিজেদেরকে সালাত (দরূদ) স্পষ্টপাঠকারী বলে গণ্য করতাম না।’’
এখন দেওবন্দীদের পীর ও গুরু এবং পীরানে পীর হাজী এমদাদুল্লাহ মুহাজিরে মক্কী (রঃ) থেকে মীলাদে নবীজী হাজির-নাজির হওয়া প্রসঙ্গে দলিল পেশ করছি। তিনি তার প্রসিদ্ধ গ্রন্থ “শামায়েলে এমদাদীয়া” এর মধ্যে বলেন,

البتہ وقت قيام كے اعتقاد تولد كا نہ كرنا چاہئے - اگر اہتمام تشريف آورى كا كيا جا ئے مضائقہ نہیں كيونکہ عالم خلق مقيد بزمان ومكان ہے - ليكن عالم امر دونوں سے پاك ہے – پس قدم رنجہ فرمانا ذات بابركات كا بعيد نہیں-  

“মীলাদ শরীফে” কিয়াম করার সময় হুযুর (ﷺ) এখন ভুমিষ্ট হচ্ছেন এ ধরনের বিশ্বাস না রাখা উচিত। আর যদি মাহফিলে তাশরীফ আনেন এমন বিশ্বাস রাখে, তাহলে অসুবিধা নেই, কারণ এ নশ্বর জগতে কাল ও স্থানের সাথে সম্পৃক্ত। আর পরকাল স্থান-কালের সম্পর্ক থেকে মুক্ত।’’ 
🔺(হাজী এমদাদুল্লাহ মুহাজিরে মক্কী : শামায়েলে এমদাদীয়া : পৃষ্ঠা নং- ১০৩ পৃ. মাকতুবায়ে থানবী, দেওবন্দ।)

অতএব হুযুর (ﷺ) মাহফিলে তাশরীফ আনয়ন করা ও উপস্থিত হওয়া অসম্ভব নয়। উক্ত গ্রন্থটি মাওলানা আশরাফ আলী থানবী সাহেব কৃত সত্যায়িত করা হয়েছিল। যা দেওবন্দ এর “মাকতুবায়ে থানবী” লাইব্রেরী থেকে প্রকাশিত। শুধু তাই নয় হাজী সাহেব (رحمة الله) আরও বলেন,

رہايہ اعتقاد كہ مجلس مولد ميں حضور پر نور صلى الله عليہ وسلم رونق افروز ہو تے ہیں اسى اعتقاد كو كفر و شرك كہنا حد سے بڑهنا كيوں كہ يہ امر ممكن عقلا ونقلا – بلكہ بعض مقامات پر اس كا وقوع بهى و ہوتاہے –

-‘‘এ আক্বীদা ও বিশ্বাস রাখা যে, মিলাদ মাহফিলে হুযুর পুরনুর (ﷺ) উপস্থিত হন, এটা ‘কুফর’ বা ‘শিরক’ নয়, বরং এমন বলা সীমা লঙ্গন ছাড়া কিছুই নয়। কেননা এ বিষয়টি যুক্তিভিত্তিক ও শরীয়তের দলীলের আলোকে সম্ভব। এমনকি অনেকক্ষেত্রে বাস্তবে তা ঘটেও থাকে।’’
🔺(আল্লামা হাজী এমদাদুল্লাহ মুহাজিরে মক্কী : কুল্লীয়াতে এমদাদীয়া, পৃ : ১০৩ মাকতুবাতে থানবী, দেওবন্দ, ভারত।)

রাসুল(ﷺ)এর ইলমে গায়েব
____________________
তৃতীয় অধ্যায়ঃ রাসুল(ﷺ)এর ইলমে গায়েবঃ

এ বিষয়টি নিয়ে আমাদের সমাজের এক শ্রেণীর আলেম ফিতনা ছড়াচ্ছে। তাই এ বিষয়ের আমার কিছু লিখার অবতারণা।
(১) মহান রব তা‘য়ালা ইরশাদ করেন-  

عَالِمُ الْغَيْبِ فَلَا يُظْهِرُ عَلَى غَيْبِهِ أَحَدًا - إِلَّا مَنِ ارْتَضَى مِنْ رَسُولٍ. 

-‘‘(আল্লাহ পাক) তাঁর মনোনীত রাসূলগণ ছাড়া কাউকেও তাঁর অদৃশ্য বিষয় সম্পর্কে প্রকাশ বা অবহিত করেন না।’’
🔺(সূরা: জ্বিন, আয়াত: ২৬, পারা: ২৯)

তাফসীরে ‘খাযেনে’ এ আয়াতের ব্যাখ্যায় করা হয়েছে-

اِلاَّمَنْ يَّصْطَفِيْهِ لِرِسَالَتِهِ وَنُعَوّتِهِ فَيُظْهِرُ عَلَى مَنْ يَّشَاءُ مِنَ الْغَيْبِ حَتَّى يَسْتَدِلَّ عَلَى نُبَوَّتِهِ بِمَا يُخْبِرُ بِهِ مِنَ 
الْمُغِيْبَاتِ فَيَكُوْنُ ذَلِكَ مُعْجِزَةُ لَهُ.

-‘‘যাদেরকে (আল্লাহ পাক) নবুয়াত বা রিসালাতের জন্য মনোনীত করেন, তাঁদের মধ্যে হতে যাকে ইচ্ছা করেন, তার কাছে এ অদৃৃশ্য বিষয় ব্যক্ত করেন, যাতে তাঁর অদৃশ্য বিষয়াদির সংবাদ প্রদান তাঁর নবুয়তের সমর্থনে সর্ব সাধারণের নিকট প্রমাণ স্বরূপ গৃহীত হয়। এটাই তাঁর মুজিযারূপে পরিণত হয়।’’
🔺(ইমাম খাযিন: লুবাবুত তা’ভীল: ৪/৩১৯ পৃ.)

উক্ত আয়াতের ব্যাখ্যায় তাফসীরে রূহুল বয়ানে আছে-

قَالَ اِبْنُ الشَّيْخُ اِنّهُ تَعَالَى لاَيُطْلِعُ عَلَى الْغَيْبِ الَّذِىْ يَخْتَصُّ بِهِ تَعَالَى عِلْمُهُ اِلاَّلِمُرْ تَضَى الَّذِىْ يَكًوْنُ رَسُوْلًا وَمَالاَ يَخْتَصُّ بِهِ يُطْلِعُ عَلَيْهِ غَيْرَ الرَّسُوْلِ.

‘‘শায়খ মুহিউদ্দিন ইবনুল আরাবী (রঃ) বলেছেন আল্লাহ তা’আলা তার পছন্দনীয় রাসূল ছাড়া কাউকে তাঁর খাস গায়ব সম্পর্কে অবহিত করেন না। তবে তার বিশেষ অদৃশ্য বিষয়াদি ছাড়া অন্যান্য অদৃশ্য বিষয়াদি রাসূল(ﷺ) নন এমন ব্যক্তিদেরকে ও অবহিত করেন।
🔺(আল্লামা ইসমাঈল হাক্কী: তাফসীরে রুহুল বায়ান: ১০/২৩৬ পৃ.)

২. মহান আল্লাহ তা‘য়ালা অন্যত্র ইরশাদ করেন-

وَمَا هُوَعَلَى الْغَيْبِ بِضَنِيْنٍ.  

-‘‘এ নবী (ﷺ) গায়েব প্রকাশের ক্ষেত্রে কৃপণ নন।’’ 
🔺(সূরা: তাকভীর, আয়াত: ২৪।)

এ কথা বলা তখনই সম্ভবপর, যখন হুজুর ﷺ গায়বী ইলমের অধিকারী হয়ে জনগণের কাছে তা ব্যক্ত করেন।
ইমাম বগভী (রঃ) এ আয়াতের ব্যাখ্যায় লিখেন

عَلَى الْغَيْبِ وَخَبْرِ السَّمَاءِ وَمَااُطَّلِعَ عَلَيْهِ مِنَ الْاَخْبَارِ وَاالْقَصَصِ بِضَنِيْنَ اَىْ بِبَخِيْلٍ يَقُوْلُ اِنَّهُ يَاتِيْهِ عِلْمُ الغَيْبِ فَلاَ يَبْخَلُ بِهِ عَلَيْكُمْ بَلْ يُعَلّضمَكُمْ وَيُخْبِرُ كُمْ وَلاَيِكْتُمُهُ كَمَا يَكْتُمُ الكَاهِنُ.

-‘‘হুজুর ﷺ অদৃশ্য বিষয়, আসমানী খবর ও কাহিনী সমূহ প্রকাশ করার ব্যাপারে কৃপণ নন। অর্থাৎ হুজুর ﷺ অদৃশ্য বিষয়ের জ্ঞান লাভ করেন, তবে উহা তোমাদের কাছে ব্যক্ত করার ক্ষেত্রে কোনরূপ কার্পণ্য করেন না, বরং তোমাদেরকে জানিয়ে দেন ও উহাদের সংবাদ দেন। গণক ও ভবিষ্যতবেত্তারা যে রূপ খবর গোপন করে রাখেন। সেরূপ তিনি গোপন করেন না।’’
🔺(ইমাম বগভী: মা’আলিমুত তানযীল: ৪/৪২২ পৃ).

ইমাম খাযেন (رحمة الله) এ আয়াতের তাফসীরে লিখেন

يَقُوْلُ اِنَّهُ عَلَيْهِ السَّلاَمُ يَأتِيْهِ عِلْمُ الْغَيْبِ فَلاَ يَبْخَلُ بِهِ عَلَيْكُمْ بِلْ يُعَلِّمُكُمْ

-‘‘এ আয়াতে একথাই বোঝানো হয়েছে যে হুজুর ﷺের কাছে অদৃশ্য বিষয়ের সংবাদ আসে। তিনি উহা তোমাদের কাছে ব্যক্ত করার ক্ষেত্রে কার্পণ্য করেন না, বরং তোমাদেরকে জানিয়ে দেন।’’
🔺(ইমাম খাযেন: লুবাবুত তা’ভীল: ৪/৩৫৭ পৃ.)

৩. মহান আল্লাহ তা‘য়ালা অন্যত্র আরও ইরশাদ করেন-

وَمَا كَانَ اللَّهُ لِيُطْلِعَكُمْ عَلَى الْغَيْبِ وَلَكِنَّ اللَّهَ يَجْتَبِي مِنْ رُسُلِهِ مَنْ يَشَاءُ -
-‘‘হে সাধারণ লোকগণ, এটা আল্লাহর শান নয় যে তোমাদের ইলমে গায়ব দান করবেন। তবে হ্যাঁ, রাসূলগণের মধ্যে যাকে তিনি ইচ্ছা করেন, তাকে এ অদৃশ্য জ্ঞানদানের জন্য মনোনীত করেন।’’
🔺(সূরা: আলে ইমরান, আয়াত: ১৭৯, পারা: ৪)

ইমাম খাযেন (رحمة الله) তার ‘তাফসীরে খাযেনে’ লিখেন

لَكِنَّ اللهَ يَصْطَفِىْ وَبَخْتَارُ مِنْ رُسُلِهِ مَنْ يُّشَاءُ فَيُطْلِعُهُ عَلَى بَعْضِ عِلْمِ الْغَيْبِ.

-‘‘কিন্তু আল্লাহ তা’য়ালা রাসূলগণের মধ্যে যাদেরকে ইচ্ছে করেন মনোনীত করেন, তাদেরকে ইলমে গায়ব সম্পর্কে তাঁদেরকেই অবহিত করেন।’’
🔺(ইমাম খাযেন: তাফসীরে খাযেন: ১/৩০৮ পৃ.)

ইমাম রাজী (رحمة الله) তার ‘তাফসীরে কাবীরে’ এ আয়াতের ব্যাখ্যায় লিখেন

فَاَمَّا مَعْرَفَةُ ذَلِكَ عَلَى سَبِيْلِ الْاِعْلاَمِ مِنَ الْغَيْبِ فَهُوَ مِنْ خَوَاصِّ الْاَنْبِيَاءِ.

-‘‘খোদা প্রদত্ত অদৃশ্য জ্ঞানের ফলশ্রতি স্বরূপ সে সমস্ত অদৃশ্য বিষয়াদি জেনে নেয়া নবীগণ (আলাইহিস সালাম) এরই বৈশিষ্ট্য।’’ 
🔺(ইমাম রাজী: তাফসীরে কাবীর: ৯/৪৪২ পৃ.)

তাফসীরে জুমুলে এ আয়াতের ব্যাখ্যায় উল্লেখিত আছে

اَلْمَعْنَى لَكِنَّ اللهَ يَجْتَبِىْ اَنْ يَصْطَفِىَ مِنْ رُسُلِهِ مَنْ يَّشَاءُ فَيُطْلِعُهُ عَلَى الْغَيْبِ.

-‘‘আয়াতের অর্থ হলো:- আল্লাহ তা’য়ালা রাসূলগণের মধ্যে যাঁকে ইচ্ছে করেন, মনোনীত করেন। অতঃপর তাঁকে গায়ব সম্পর্কে জ্ঞান দান করেন।’’ 
🔺(ইমাম ফখরুদ্দীন রাজী: তাফসীরে কবীর: ৯/১১১ পৃ.)

তাফসীরে জালালাইনে উল্লেখিত আছে

(وَمَا كَانَ اللَّه لِيُطْلِعكُمْ عَلَى الْغَيْب ( فَتَعْرِفُوا الْمُنَافِق مِنْ غَيْره قَبْل التَّمْيِيز (وَلَكِنَّ اللَّه يَجْتَبِي) يَخْتَار (مِنْ رُسُله مَنْ يَشَاء) فَيُطْلِعهُ عَلَى غَيْبه كَمَا أَطْلَعَ النَّبِيّ صَلَّى اللَّه عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَلَى حَال الْمُنَافِقِينَ.

-‘‘আল্লাহ তা’আলা তোমাদেরকে গায়েব সম্পর্কে অবহিত করবেন না, যা’তে মুনাফিকদেরকে আল্লাহ কর্তৃক পৃথকীকরণের পূর্বেই তোমরা চিনতে না পার, কিন্তু আল্লাহ তা’আলা যাকে ইচ্ছে করেন, তাঁকে মনোনীত করেন, তাঁর অদৃশ্য বিষয় সম্পর্কে অবহিত করেন যেমন নবী করীম(ﷺ) মুনাফিকদের অবস্থা সম্পর্কে অবহিত করেছিলেন।’’
🔺(ইমাম জালালুদ্দীন সূয়তী: তাফসীরে জালালাইন: ৯২ পৃ.)

ইমাম ইসমাঈল হাক্কী (رحمة الله) এ আয়াতের তাফসিরে লিখেন

فَاِنَّ غَيْبَ الْحَقَائِقِ وَالْاَحْوَالِ لاَ يَنْكَشِفُ بِلاَ وَاسِطَةِ الرَّسُوْلِ.

-‘‘কেননা, রাসূল আলাইহিস সালামের মাধ্যম ব্যতীত কারো নিকট অদৃশ্য ও রহস্যাবৃত অবস্থাও মৌলতত্ত্ব প্রকাশ করা হয় না।’’
🔺(আল্লামা ইসমাঈল হাক্কী: তাফসীরে রুহুল বায়ান: ২/১৬২ পৃ.)

৪. মহান আল্লাহ তা‘য়ালা আরও ইরশাদ করেন-

وَعَلَّمَكَ مَا لَمْ تَكُنْ تَعْلَمُ وَكَانَ فَضْلُ اللَّهِ عَلَيْكَ عَظِيمًا 

-‘‘এবং আপনাকে শিখিয়ে দিয়েছেন, যা’ আপনি জানতেন না। আপনার উপর আল্লাহর এটি একটি বড় মেহেরবাণী।’’
🔺(সূরা: নিসা, আয়াত: ১১৩)

ইমাম সুয়ূতী (রঃ) তার তাফসীরে জালালাইনে এ আয়াতের তাফসীরে লিখেন

اَىْ مِنَ اْلاَحْكَامِ وَالْغَيْبِ 

-‘‘যা’ তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) জানতেন না, তা হচ্ছে ধর্মের অনুশাসন ও (ইলমে গায়ব) অদৃশ্য বিষয়াদি।’’
🔺(.ইমাম জালালুদ্দীন সূয়তী: তাফসীরে জালালাইন: ৯৭পৃ.)

ইমাম খাযেন (رحمة الله) এ আয়াতের ব্যাখ্যায় লিখেন

اَنْزَلَ اللهُ عَلَيْكَ الْكِتَابَ وَالْحِكْمَةَ وَاَطْلَعَكَ عَلَى اَسْرَارِ هِمَا وَوَافَقَكَ عَلَى حَقَائِقِهِمَا.

-‘‘আল্লাহ তা’য়ালা আপনার উপর কুরআন ও হিকমত (জ্ঞান-বিজ্ঞান ও দর্শন) অবতীর্ণ করেছেন, উহাদের গুপ্ত ভেদসমূহ উদ্ভাসিত করেছেন এবং উহাদের হাকীকত সমূহ সম্পর্কেও আপনাকে অবহিত করেছেন।’’ 
🔺(ইমাম খাযেন, তাফসীরে খাযেন, ১/৪২৬পৃ. দারুল কুতুব ইলমিয়্যাহ, বয়রুত, লেবানন।)

ইমাম খাযেন (রঃ) লিখেন-

وَعَلَّمَكَ ما لَمْ تَكُنْ تَعْلَمُ يعني من أحكام الشرع وأمور الدين وقيل علمك من علم الغيب

-‘‘আপনি যা জানতে না তা আপনাকে জানানো হয়েছে তার মমার্থ হলো দ্বীনের হুকুম আহকাম এবং ধর্মীয় বিষয়াদী। অনেকে এ ব্যাখ্যা করেছেন যে আপনাকে যা জানানো হয়েছে তাহল ইলমে গায়ব।’’ 
🔺(ইমাম খাযেন, তাফসীরে খাযেন, ১/৪২৬পৃ. দারুল কুতুব ইলমিয়্যাহ, বয়রুত, লেবানন।) 

ইমাম নাসাফী (রঃ) এ আয়াতের ব্যাখ্যায় লিখেন

مِنْ اُمَوْرِ الدِّيْنِ وَالشَّرَائِعِ اَوْمِنْ خَفِيَّاتِ الْاُمُوْرِ وَضَمَاِئرِ القُلُوْبِ.

-‘‘দ্বীন ও শরীয়তের বিষয়সমূহ শিখিয়েছেন আপনাকে এবং গোপনীয় বিষয়াদি ও মানুষের অন্তরের গোপণীয় ভেদ ইত্যাদিও শিখিয়ে দিয়েছেন।’’
🔺(ইমাম নাসাফী: তাফসীরে মাদারিক: ১/২৮২ পৃ.)

৫. মহান রব তা‘য়ালা আরও ইরশাদ করেন-

اَلرَّ حْمَنُ. عَلَّمَ الْقُرْاَنَ. خَلَقَ الْاِنْسَانَ- عَلَّمَهُ الْبَيَانَ. 

-‘‘ব্যাখ্যা বহুল অনুবাদঃ দয়াবান আল্লাহ তা’আলা স্বীয় মাহবুবকে কুরআন শিখিয়েছেন, মানবতার প্রাণতুল্য হযরত মুহাম্মদ ((ﷺ)কে) সৃষ্টি করেছেন এবং তাঁকে সৃষ্টির পূর্বাপর সব কিছুর তাৎপর্য বাতলে দিয়েছেন।’’
🔺(সূরা রাহমান, আয়াত: ১-৪)

ইমাম বাগভী (رحمة الله) আয়াতের ব্যাখ্যা করা হয়েছে নিম্নরূপ

خَلَقَ الْاِنْسَانَ اَىْ مُحَمَّدً عَلَيْهِ السَّلاَمُ عَلَمَّهُ الْبَيَانَ. يَعْنِىْ بَيَانَ مَاكَانَ وَمَا يَكُوْنَ.

-‘‘আল্লাহ তা’য়ালা মানবজাতি তথা মুহাম্মদ রাসূলুল্লাহ (ﷺ)কে সৃষ্টি করেছেন এবং তাঁকে পূর্ববর্তী ও পরবর্তী সমস্ত বিষয়ের বর্ণনা শিক্ষা দিয়েছেন।’’
🔺(ইমাম বাগভী, মা‘লিমুত তানযিল, ৪/৩৩১পৃ)

‘তাফসীরে খাযেনে’ এ আয়াতের ব্যাখ্যায় লিখা হয়েছে

قِيْلَ اَرَادَ بِالْاِنْسَانِ مُحَمَّدًا صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمْ عَلَّمَهُ الْبَيَانَ يَعْنِىْ بَيَانَ مَاكَانَ وَمَايَكُوْنَ لِانَّهُ عَلَيْهِ السَّلاَمُ نَبِّى عَنَ خَبْرِ الْاُوَّلِيَنَ وَالْاَخِرِيْنَ وَعَنْ يَوْمِ الدِّيْنِ.

-‘‘বলা হয়েছে যে, (উক্ত আয়াতে) ‘ইনসান’ বলতে হযরত মুহাম্মদ (ﷺ) কে বোঝানো হয়েছে। তাঁকে পূর্ববর্তী ও পরবর্তী সব বিষয়ের বিবরণ শিক্ষা দেয়া হয়েছে। কেননা, তাঁকে পূর্ববতী ও পরবর্তীদের ও কিয়ামতের দিন সম্পর্কে অবহিত করা হয়েছে।’’
🔺(ইমাম খাযিন: তাফসীরে খাযিন: ৪/২০৮ পৃ.)

ইমাম বাগভী (رحمة الله)ও উপরের অনুরূপ ব্যাখ্যা করেছেন। 
🔺(ইমাম বাগভী, মা‘লিমুত তানযিল, ৪/৩৩১পৃ.)

ইমাম যওজী (رحمة الله) এ আয়াতের ব্যাখ্যায় লিখেন-

أنه محمّد صلّى الله عليه وسلم، علّمه بيان كلّ شيء ما كان وما يكون، قاله ابن كيسان.

-‘‘ইমাম ইবনে কায়সান (رحمة الله) বলেন, এ আয়াতে ইনসান বলতে মুহাম্মদ (ﷺ) কে বুঝানো হয়েছে। বায়ান বা বর্ণনা বলতে সব কিছু অর্থাৎ যা হয়েছে এবং ভবিষৎতে যা হবে তা আল্লাহ্ নবীজি(ﷺ) কে শিক্ষা দিয়েছেন।’’
🔺(ইমাম যওজী, যাদুল মাইসীর, ৪/২০৬পৃ.)

হাদিসের আলোকে ইলমে গায়েব
____________________
হাদিসের আলোকে ইলমে গায়েবঃ

রাসূল (ﷺ) এর ইলমে গায়েব প্রসঙ্গে অসংখ্য হাদিসে পাক রয়েছে; তার মধ্য হতে কিছু হাদিসে পাক আপনাদের সামনে উপস্থাপন করছি।
(১) বুখারী শরীফের بَدْءِ الْخَلْقِ শীর্ষক আলোচনায় ও মিশকাত শরীফের بَدْءِ الْخَلْقِ وَذِكْرُ الْاَنْبِيَاءِ শীর্ষক অধ্যায়ে হযরত উমর ফারুক (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত

قَامَ فِيْنَا رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مَقَامًا فَاَخْبَرَ نَا عَنْ بَدْءِ الْخَلْقِ حَتَّى دَخَلَ اَهْلُ الْجَنَّةِ مَنَازِ لَهُمْ وَاَهْلُ النَّارِ مَنَازِ لَهُمْ حَفِظَ ذَلِكَ مَنْ حَفِظَهُ وَنَسِيَهُ مَنْ نَسِيَهُ.

-‘‘হুজুর ﷺ এক জায়গায় আমাদের সাথে অবস্থান করেছিলেন, সেখানে তিনি (ﷺ) আমাদেরকে আদি সৃষ্টির সংবাদ দিচ্ছিলেন, এমন কি বেহেশত বাসী ও দোযখ বাসীগণ নিজ নিজ মঞিলে বা ঠিকানায় পৌঁছে যাওয়া অবধি পরিব্যাপ্ত যাবতীয় অবস্থা ও ঘটনাবলীর র্বণনা প্রদান করেন। যিনি ওসব স্মরণ রাখতে পেরেছেন, তিনি তো স্মরণ রেখেছেন, আর যিনি স্মরণ রাখতে পারেন নি, তিনি ভুলে গেছেন।’’
🔺(ক. বুখারী: আস-সহিহ: ২৮৬ হাদীস: ৩১৯২, মুসলিম: আস-সহিহ: কিতাবুল ফিতান: ২/৩৯০পৃ. খতিব তিবরিযী: মিশকাত: ৫/৫০৬ হাদীস: ৫৬৯৯, তিরমিজী: আস-সুনান: ৪/৪১৯ হাদীস: ২১৯১, আবু দাউদ: আস-সুনান: ৪/৪৪১পৃ. হাদীস: ৪২৪০)

(২) মিশকাত শরীফের اَلْمَعْجِزَاتِ অধ্যায়ে হযরত আমর ইবনে আখতাব (رضي الله عنه) থেকে একই কথা বর্ণিত, সেখানে আছে

فَأَخْبَرَنَا بِمَا كَانَ وَبِمَا هُوَ كَائِنٌ فَأَعْلَمُنَا أَحْفَظُنَا 

-‘‘আমাদেরকে সেই সমস্ত ঘটনাবলীর খবর দিয়েছেন, যেগুলো কিয়ামত পর্যন্ত ঘটতে থাকবে। আমাদের মধ্যে সব চেয়ে বড় ‘আলিম হলেন তিনি, যিনি এসব বিষয়াদি সর্বাধিক স্মরণ রাখতে পেরেছেন।’’
🔺(ক. মুসলিম: আস-সহীহ: ২/৩৯০ পৃ. হাদিস: ২৫, খতিব তিবরিযী: মিশকাত: ৪/৩৯৭ হাদীস: ৫৯৩৬, মুসলিম: আস-সহীহ: ৪/২২১৭ হাদিস: ২৮৯২, আহমদ ইবনে হাম্বল: আল-মুসনাদ: ৫/৩৪১ পৃ.)

(৩) মিশকাত শরীফের اَلْفِتُنُ শীর্ষক অধ্যায়ে বুখারী ও মুসলিম শরীফের বরাত দিয়ে হযরত হুযাইফা (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত হয়েছে

مَا تَرَكَ شَيْئًا يَكُونُ فِي مَقَامِهِ ذَلِكَ إِلَى قِيَامِ السَّاعَةِ، إِلَّا حَدَّثَ بِهِ حَفِظَهُ مَنْ حَفِظَهُ وَنَسِيَهُ مَنْ نَسِيَهُ،.

-‘‘হুজুর ﷺ সে জায়গায় কিয়ামত পর্যন্ত যা কিছু ঘটবে, সব কিছুর খবর দিয়েছেন, কোন কিছুই বাদ দেননি। যাদের পক্ষে সম্ভব, তাঁরা সব স্মরণ রেখেছেন, আর অনেকে ভুলেও গেছেন।"
🔺( ক. বুখারী: আস-সহীহ: ১১/৯৭৭ পৃ. হাদিস: ৬৬০৪, মুসলিম: আস-সহীহ: কিতাবুল ফিতান: ২/৩৯০ হাদিস: ২২১৭, খতিব তিবরিযী: মিশকাত: ৫/৪৬১পৃ. হাদিস: ৫৩৭৯, ইমাম বায়হাকী: দালায়েলুল নবুয়ত: ৬/৩১৩ পৃ., ইমাম কুস্তালানী: মাওয়াহেবে লাদুন্নীয়া: ৩/৯৫পৃ. আবু দাউদ: আস-সুনান: হাদীস: ৪২৪০, আহমদ ইবনে হাম্বল: আল-মুসনাদ: ৫/৩৮৩-৩৮৯, ইমাম আবু নুয়াইম: দালায়েলুল নবুয়ত: ২০ পৃ. হাদিস: ২৭৩, তিরমিজী: আস-সুনান: ৪/৪১০ হাদীস: ২১৯১)

(৪) মিশকাত শরীফের ‘ফযায়েলে সায়্যিদুল মুরসালীন’ শীর্ষক অধ্যায়ে ‘মুসলিম শরীফের’ বরাত দিয়ে হযরত ছাওবান (رضي الله عنه) থেকে বর্ণনা করা হয়েছে

إِنَّ اللهَ زَوَى لِي الْأَرْضَ، فَرَأَيْتُ مَشَارِقَهَا وَمَغَارِبَهَا،.

-‘‘আল্লাহ তা‘য়ালা আমার সম্মুখে গোটা পৃথিবীকে এমনভাবে সঙ্কুচিত করে দিয়েছেন যে, আমি পৃথিবীর পূর্বপ্রান্ত ও পশ্চিমপ্রান্ত সমূহ স্বচক্ষে অবলোকন করেছি।’’
🔺(ক. মুসলিম: আস-সহিহ: কিতাবুল ফিতান: ২/৩৯০পৃ. মুসলিম: আস-সহিহ: ৪/২২১৬ হাদিস: ২৮৮৯, বায্যার: আল-মুসনাদ: ৮/৪১৩-৪১৪ হাদিস: ৩৪৮৭, ইবনে মাজাহ: আস-সুনান: হাদীস: ৩৯৫২, আবু দাউদ: আস-সুনান: কিতাবুল ফিতান: ৪/৯৫ হাদিস: ৪২৫২, ইমাম আহমদ: আল-মুসনাদ: ৫/২৮৪ হাদিস: ২২৫০, আবু দাউদ: আস-সুনান: ৪/৯৭ পৃ. হাদিস: ৪২৫২, মুসলিম: আল-সহীহ: হাদিস: ২৮৮৯)

(৫) মিশকাত শরীফের ‘মাসাজিদ’ অধ্যায়ে হযরত আবদুর রহমান ইবন আয়েশ (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত আছে

رَأَيْتُ رَبِّيَ عَزَّ وَجَلَّ فِي أَحْسَنِ صُورَةٍ قَالَ: فَبِمَ يَخْتَصِمُ الْمَلَأُ الْأَعْلَى؟ قُلْتُ: أَنْتَ أَعْلَمُ قَالَ: فَوَضَعَ كَفَّهُ بَيْنَ كَتِفِيَّ فَوَجَدْتُ بَرْدَهَا بَيْنَ ثَدْيَيَّ فَعَلِمْتُ مَا فِي السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ.

-‘‘আমি আল্লাহ তা’য়ালাকে সুন্দরতম আকৃতিতে দেখেছি।....তিনি স্বীয় কুদরতের হাতখানা আমার বুকের উপর রাখলেন, যার শীতলতা আমি স্বীয় অন্তস্থলে অনুভব করেছি। ফলে, আসমান যমীনের সমস্ত বস্তু সম্পর্কে অবগত হয়েছি।’’
🔺(ক. ইমাম দারেমী: আস-সুনান: কিতাবুর রুইয়াত: ২/৫১পৃ. হাদিস: ২১৫৫, ইবনে সা’দ: তবাকাত: ৭/১৫০ পৃ. ইমাম তাবরানী: মুসনাদি-শামীয়্যীন: ১/৩৩৯-৩৪০ হাদিস: ৫৯৭, ইমাম তাবরানী: মু’জামুল কবীর: ২০/১০৯ হাদিস: ২১৬, ইমাম বায্যার: আল-মুসনাদ: ৭/১১০-১১১ হাদিস: ২৬৬৮, সুয়ূতি, জামিউল আহাদিস: ২০/৮২পৃ. হাদিস: ১৫৬৮৮, ইবনে সালেহ: সবলুল হুদা ওয়ার রাশাদ: ১০/১০ পৃ. )

(৬) হযরত আবদুল্লাহ ইবনে উমর (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত আছে, রাসূল (ﷺ) ইরশাদ করেন

إِنَّ اللهَ عَزَّ وَجَلَّ قَدْ رَفَعَ لِيَ الدُّنْيَا فَأَنَا أَنْظُرُ إِلَيْهَا وَإِلَى مَا هُوَ كَائِنٌ فِيهَا إِلَى يَوْمِ الْقِيَامَةِ كَأَنَّمَا أَنْظُرُ إِلَى كَفِّي هَذِهِ،.

-‘‘আল্লাহ তা’য়ালা আমার সামনে সারা দুনিয়াকে তুলে ধরেছেন। তখন আমি এ দুনিয়াকে এবং এতে কিয়ামত পর্যন্ত যা’ কিছু হবে এমনভাবে দেখতে পেয়েছি, যেভাবে আমি আমার নিজ হাতকে দেখতে পাচ্ছি।’’
🔺(ক. ইমাম আবু নুয়াইম: হুলিয়াতুল আউলিয়া: ৬/১০১ পৃ., মুত্তাকী হিন্দী: কানযুল উম্মাল: ১১/১৩৭৮ হাদিস: ৩১৮১০, ইবনে হাজার হায়সামী: মাযমাউদ যাওয়াহিদ: ৮/২৮৭ পৃ.)

(৭) মিশকাত শরীফের ‘মাসাজিদ’ অধ্যায়ে ‘তিরমিযী শরীফের’ উদ্ধৃতি দিয়ে হযরত মুয়াজ বিন জাবাল (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত আছে

فَتَجَلَّى لِي كُلُّ شَيْءٍ وَعَرَفْتُ -‘‘ 

তখন প্রত্যেক কিছু আমার কাছে উন্মুক্ত হয়েছে এবং আমি এগুলো চিনতে পেরেছি।’’
🔺(ক. ইমাম তিরমিজী: আস-সুনান: কিতাবুত তাফসীর: ৫/১৬০ হাদিস: ৩২৩৫, খতিব তিবরিযী: মিশকাত: ১/৭১-৭২ পৃ. হাদিস: ৬৯২)

(৮) হযরত আবু যর গিফারী (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত আছে

لَقَدْ تَرَكْنَا رَسُولَ اللَّهِ - صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ - وَمَا يُحَرِّكُ طَائِرٌ جَنَاحَيْهِ فِي السَّمَاءِ إِلَّا ذَكَّرَنَا مِنْهُ عِلْمًا.

-‘‘হুজুর ﷺ আমাদেরকে এমনভাবে অবহিত করেছেন যে, একটা পাখীর পালক নাড়ার কথা পর্যন্ত তাঁর বর্ণনা থেকে বাদ পড়েনি।’’
🔺(আহমদ ইবনে হাম্বল: আল-মুসনাদ: ৫/১৫৩ পৃ. হাদিস: ২১৩৯৯, আহমদ ইবনে হাম্বল: আল-মুসনাদ: ৫/৩৮৫-৩৮৯ পৃ., তাবরানী: মু’জামুল কবীর: ২/১৫৫ হাদিস: ১৬৪৭, ইমাম আবু ই’য়ালা: আল-মুসনাদ: ৯/৪৬ হাদিস: ৫১০৯, বায্যার: আল-মুসনাদ: ৯/৩৪১ হাদিস: ৩৮৯৭)

(৯) মিশকাত শরীফের ‘বাবুল ফিতান’ নামক অধ্যায়ের দ্বিতীয় পরিচ্ছেদে হযরত হুযাইফা (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত আছে

مَا تَرَكَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مِنْ قَائِدِ فِتْنَةٍ، إِلَى أَنْ تَنْقَضِيَ الدُّنْيَا، يَبْلُغُ مَنْ مَعَهُ ثَلَاثَ مِائَةٍ فَصَاعِدًا، إِلَّا قَدْ سَمَّاهُ لَنَا بِاسْمِهِ، وَاسْمِ أَبِيهِ، وَاسْمِ قَبِيلَتِهِ -

-‘‘হুজুর ﷺ পৃথিবীর মেয়াদ উত্তীর্ণ হয়ে যাওয়া পর্যন্ত অনুষ্ঠিতব্য কোন ফিত্না পরিচালনা কারীর কথা বাদ দেন নি, যাদের সংখ্যা তিনশত কিংবা ততোধিক হবে; এমন কি তাদের নাম, তাদের বাপের নাম ও গোত্রের নামসহ আমাদের নিকট বর্ণনা করেছেন।’’
🔺(ক. ইমাম আবু দাউদ: আস-সুনান: ৪/৪৪৩ হাদিস: ৪২৪৩, খতিব তিবরিযী: মিশকাত: ৫/৪৬৩ হাদিস: ৫৩৯৩, এ হাদিসটিকে আলবানী মিশকাতের তাহক্বীকে সনদ ‘হাসান’ বলেছেন।)

(১১) মিশকাত শরীফের مَنَاقِبِ اَهْلَ الْبَيْتِ শীর্ষক অধ্যায়ে 🔺(হযরত আবি আম্মার সাদ্দাদ বিন আব্দুল্লাহ (رضي الله عنه) তিনি ) হযরত উম্মে ফযল বিনতে হারেস (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত আছে তিনি একদা স্বপ্ন দেখেছিলেন; আর রাসূল (ﷺ) তার ব্যাখ্যায় বলে দিলেন

رَأَيْتِ خَيْرًا تَلِدُ فَاطِمَةُ إِنْ شَاءَ اللَّهُ غُلَامًا يَكُونُ فِي حِجْرِكِ 

-‘‘হুজুর ﷺ হযরত উম্মুল ফযল (رضي الله عنه) এর নিকট ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন যে, তুমি ভাল স্বপ্ন দেখেছ। হযরত ফাতিহা তুয যুহরা (রাদিআল্লাহু আনহা) এর ঘরে এক পুত্র সন্তান জন্মগ্রহণ করবে, সে তোমারই (হযরত উম্মুল ফযল (رضي الله عنه) কোলে লালিত পালিত হবে।’’
🔺(ক. খতিব তিবরিযী: মিশকাত: ৫/৫৭২ হাদিস: ৬১৮০, বায়হাকী, দালায়েলুল নবুয়ত, ৬/৪৬৯পৃ. দারুল কুতুব ইলমিয়্যাহ, বয়রুত, লেবানন, প্রকাশ.১৪০৫হি. তিনি সনদসহ, মুকরীজি, ইমতাউল আসমা, ১২/২৩৭পৃ. ও ১৪/১৪৫পৃ. দারুল কুতুব ইলমিয়্যাহ, বয়রুত, লেবানন, ১৪২০হি. ইবনে কাসির, মু‘যাজাতুন্নবী (ﷺ), ১/৩২৫পৃ. মাকতুবাতুত্-তাওফিকহিয়্যাত, মিশর। 
আহলে হাদিস আলবানী তার মিশকাতের তাহক্বীক গ্রন্থে এ হাদিসের সনদের ব্যাপারে নিরব ছিলেন।)

(১২) বুখারী শরীফে اِثْبَاتِ عَذَابِ الْقَبْرِ শীর্ষক অধ্যায়ে হযরত ইবনে আব্বাস (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত (এছাড়া অন্য অনেক ছাহাবী হতেও) আছে

مَرَّ بِقَبْرَيْنِ يُعَذَّبَانِ، فَقَالَ: إِنَّهُمَا لَيُعَذَّبَانِ، وَمَا يُعَذَّبَانِ فِي كَبِيرٍ، أَمَّا أَحَدُهُمَا فَكَانَ لاَ يَسْتَتِرُ مِنَ البَوْلِ، وَأَمَّا الآخَرُ فَكَانَ يَمْشِي بِالنَّمِيمَةِ، ثُمَّ أَخَذَ جَرِيدَةً رَطْبَةً، فَشَقَّهَا بِنِصْفَيْنِ، ثُمَّ غَرَزَ فِي كُلِّ قَبْرٍ وَاحِدَةً، فَقَالُوا: يَا رَسُولَ اللَّهِ، لِمَ صَنَعْتَ هَذَا؟ فَقَالَ: لَعَلَّهُ أَنْ يُخَفَّفَ عَنْهُمَا مَا لَمْ يَيْبَسَا.

-‘‘হুজুর ﷺ একদা দুটো কবরের পার্শ্ব দিয়ে যাচ্ছিলেন, তখন কবর দুটোতে আযাব হচ্ছিল। তিনি (ﷺ) বললেন এ দু’জনের আযাব হচ্ছে কিন্তু কোন গুরুতর অপরাধের জন্য নয়। তাদের মধ্যে একজন প্রশ্রাবের সময় সতর্কতা অবলম্বন করতো না। অপরজন চোগলখুরী করে পরস্পরের মধে ঝগড়া সৃষ্টি করত। তখন তিনি (ﷺ) খেজুরের একটি কাঁচা ডাল নিয়ে তা’ দুভাগে ভাগ করলেন ও অংশ দু’টো উভয় কবরে একটি করে পুঁতে দিলেন এবং ইরশাদ করলেন ততক্ষণ পর্যন্ত ডাল দু’টো শুকিয়ে না যাবে, ততক্ষণ পর্যন্ত তাদের শাস্তি লাঘব হবে।’’ 
🔺(ক. বুখারী: আস-সহীহ: ১/৬১১ পৃ., মুসলিম: আস-সহীহ: ১/১৪১পৃ. আবু দাউদ: আস-সুনান: ১/৬ হাদিস: ২০-২১, নাসাঈ: সুনানে কোবরা: ১/৭ পৃ., ইমাম বায়হাকী: সুনানে কোবরা: ১/১০৪ পৃ. ইবনে খুযায়মা: আস-সহিহ: ১/৩২-৩৩ হাদিস: ৫৫, আবি শায়বাহ: আল-মুসান্নাফ: ৩/৩৭৭পৃ., আবি আওয়ানাহ: মুসনাদ: ১/১৯৬, ইবনে হিব্বান: আস-সহীহ: ৬/৫২ পৃ., ইবনে মাজাহ: আস-সুনান: ১/১২৫ হাদিস: ৩৪৭, দারেমী: আস-সুনান: ১/২০৫পৃ. হাদিস: ৭৩৯, খতিব তিবরিযী: মিশকাত: ১/১৫-১৬ পৃ.)

(১৩) বুখারী শরীফের
كِتَابُ الْاِعْتِصَامِ بِالْكِتَاِب وَالسُّنَّةِ 
এ ও তাফসীরে খাযেনে لاَ تَسْئَلُوْا عَنِ الْاَشْيَاءِ اِنْه تُبْدَ لَكُمْ 
আয়াতের ব্যাখ্যায় উল্লেখিত আছে

قَامَ عَلَى المِنْبَرِ، فَذَكَرَ السَّاعَةَ، وَذَكَرَ أَنَّ بَيْنَ يَدَيْهَا أُمُورًا عِظَامًا، ثُمَّ قَالَ: مَنْ أَحَبَّ أَنْ يَسْأَلَ عَنْ شَيْءٍ فَلْيَسْأَلْ عَنْهُ، فَوَاللَّهِ لاَ تَسْأَلُونِي عَنْ شَيْءٍ إِلَّا أَخْبَرْتُكُمْ بِهِ مَا دُمْتُ فِي مَقَامِي هَذَا، قَالَ أَنَسٌ: فَأَكْثَرَ النَّاسُ البُكَاءَ، وَأَكْثَرَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَنْ يَقُولَ: سَلُونِي، فَقَالَ أَنَسٌ: فَقَامَ إِلَيْهِ رَجُلٌ فَقَالَ: أَيْنَ مَدْخَلِي يَا رَسُولَ اللَّهِ؟ قَالَ: النَّارُ، فَقَامَ عَبْدُ اللَّهِ بْنُ حُذَافَةَ فَقَالَ: مَنْ أَبِي يَا رَسُولَ اللَّهِ؟ قَالَ: أَبُوكَ حُذَافَةُ، قَالَ: ثُمَّ أَكْثَرَ أَنْ يَقُولَ: سَلُونِي سَلُونِي.

-‘‘একদিন হুজুর ﷺ মিম্বরের উপর দাঁড়ালেন। অতঃপর কিয়ামতের উল্লেখপূর্বক এর আগে যে সমস্ত ভয়ানক ঘটনাবলী ঘটবে, সে সম্পর্কে বর্ণনা দিলেন। এরপর তিনি (ﷺ) বললেন, ‘যার যা খুশী জিজ্ঞাসা করতে পার।’ খোদার শপথ, এ জায়গা অর্থাৎ এ মিম্বরে আমি যতক্ষণ দন্ডায়মান আছি, ততক্ষণ তোমরা যা কিছু জিজ্ঞাসা কর না কেন, আমি অবশ্যই উত্তর দেব।’ জনৈক ব্যক্তি দাঁড়িয়ে আরয করলেন, ‘পরকালে আমার ঠিকানা কোথায়?’ ফরমালেন জাহান্নামের মধ্যে। হযরত আবদুল্লাহ ইবনে হুযায়ফা (رضي الله عنه) দাঁড়িয়ে জিজ্ঞাসা করলেন ‘আমার বাপ কে? ইরশাদ করেন, হুযায়ফা।’ এরপর রাসূল (ﷺ) বার বার ইরশাদ ফরমান, জিজ্ঞাসা করো, জিজ্ঞাসা করো।’’
🔺(ক. বুখারী: আস-সহীহ: ৯/৯৫পৃ. হাদিস: ৭২৯৪, ইবনে হিব্বান, আস্-সহিহ, ১/৩০৯পৃ. হাদিস: ১০৬, বগভী, শরহে সুন্নাহ, ১৩/২৯৯পৃ. হাদিস, ৩৭২০, আব্দুর রায্যাক, জামেউ মা‘মার বিন রাশেদ, ১১/৩৭৯পৃ. হাদিস, ২০৭৯৬, মাকতুবাতুল ইসলামী, বয়রুত, প্রকাশ.১৪০৩হি., ইমাম খাযেন, তাফসীরে খাযেন, ২/৮২পৃ. দারুল কুতুব ইলমিয়্যাহ, বয়রুত, লেবানন, প্রকাশ. ১৪১৫হি.)

(১৪) মিশকাত শরীফের مناقب على رضى الله عنه অধ্যায়ে বর্ণিত হযরত সাহল বিন সা‘দ (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত আছে -

قَالَ يَوْمَ خَيْبَرَ: لَأُعْطِيَنَّ هَذِهِ الرَّايَةَ غَدًا رَجُلًا يَفْتَحُ اللَّهُ عَلَى يَدَيْهِ يُحِبُّ اللَّهَ وَرَسُولَهَ وَيُحِبُّهُ اللَّهُ وَرَسُولُهُ.

-‘‘হুযুর(ﷺ) খায়বারের যুদ্ধের দিন ইরশাদ ফরমান:- ‘আমি আগামী দিন এ পতাকা এমন এক ব্যক্তিকে অর্পণ করবো, যার হাতে আল্লাহ তা’আলা ‘খায়বরের বিজয় নির্ধারণ করেছেন। তিনি এমন এক ব্যক্তি, যিনি আল্লাহ ও তাঁর রাসূলকে ভালবাসেন।’’
🔺(ক. বুখারী: আস-সহিহ: কিতাবুল ফাযায়েল: ৩/১৩৫৭পৃ. হাদিস নং: ৩৪৯৯, মুসলিম: আস-সহিহ: কিতাবুল ফাযায়েল: ৪/১৮৭২ হাদিস: ২৪০৭, বায়হাকী: সুনানে কোবরা: ৬/৩৬২ হাদিস: ১২৮৩৭
    ঘ. মুসলিম: আস-সহীহ: কিতাবুল ফাযায়েল: ২/২৭৯ পৃ., বুখারী: আস-সহীহ: কিতাবুল জিহাদ: ২/৫০৬পৃ. ইমাম আবু নাঈম ইস্পাহানী: হুলিয়াতুল আউলিয়া: ১/৬২ পৃ. ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল: আল-মুসনাদ: ৪/৫২ পৃ. ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল: ফাযায়েলে সাহাবা: ২/৫৮৪পৃ. হাদিস: ৯৮৮, ইমাম নাসায়ী: ফাযায়েলে ছাহাবা: ১৫-১৬ পৃ. হাদিস: ৪৬-৪৭, খতিব তিবরিযী: মিশকাত: ৪/৪২৮ হাদিস: ৬০৮৯)

(১৫) মিশকাত শরীফের ‘মাসাজিদ’ অধ্যায়ে হযরত আবু যর গিফারী (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত আছে

عُرِضَتْ عَلَيَّ أَعْمَالُ أُمَّتِي حَسَنُهَا وَسَيِّئُهَا، فَوَجَدْتُ فِي مَحَاسِنِ أَعْمَالِهَا الْأَذَى يُمَاطُ عَنِ الطَّرِيقِ، -

-‘‘আমার সামনে আমার উম্মতের ভালমন্দ আমলসমূহ পেশ করা হয়েছে। আমি তাদের নেক আমল সমূহের মধ্যে রাস্তা থেকে কষ্টদায়ক বস্তু সমূহ অপসারণের মত পুণ্য কাজও লক্ষ্য করেছি।’’
🔺(ক. খতিব তিবরিযী: মেশকাত: ১/১৫০পৃ. হাদিস: ৭০৯, মুসলিম: আস-সহীহ: কিতাবুল মাসাজিদ: ১/২০৭ পৃ. হাদিস ৫৫৩ এবং ৫৭, আহমদ ইবনে হাম্বল: আল-মুসনাদ: ৫/১৮০ পৃ., আবু নঈম ইস্পাহানী: দালায়েলুল নবুয়ত: ২০৬ পৃ. হাদিস: ২৮০, আবু আওয়ানা: আল- মুসনাদ: ১/৪০৬ পৃ. বায়হাকী: সুনানে কোবরা: ২/২৯১ পৃ., ইবনে মাজাহ: আস-সুনান: ২/১২১৪পৃ. হাদিস: ৩৬৭৩)

(১৬) ‘মুসলিম শরীফের كتاب الجهاد ২য় খন্ডে ’ এর ‘বদরের যুদ্ধ’ শীর্ষক অধ্যায়ে হযরত আনাস (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত আছে

فَقَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: هَذَا مَصْرَعُ فُلَانٍ، قَالَ: وَيَضَعُ يَدَهُ عَلَى الْأَرْضِ هَاهُنَا، هَاهُنَا، قَالَ: فَمَا مَاطَ أَحَدُهُمْ عَنْ مَوْضِعِ يَدِ رَسُولِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ.

-‘‘হুজুর ﷺ ইরশাদ ফরমান এটা হলো অমুক ব্যক্তির নিহত হয়ে পতিত হওয়ার সুনির্দিষ্ট স্থান’ এবং তিনি (ﷺ) তাঁর পবিত্র হস্ত মুবারক যমীনের উপর এদিক সেদিক সঞ্চালন করছিলেন। বর্ণনাকারী বলেন যে, নিহত ব্যক্তিদের মধ্যে কেউ হুজুর ﷺের হাতের নির্দেশিত স্থানের কিঞ্চিত বাহিরেও পতিত হয়নি।’’
🔺(মুসলিম: আস-সহিহ: কিতাবুল জিহাদ: ২/১০২পৃ. হাদিস: ১৭৭৯, ইমাম তাবরানী: মু’জামুল আওসাত: ৮/২১৯ হাদিস: ৮৪৫৩, আবু দাউদ, আস-সুনান: ৩/৫৮ হাদিস: ২৬৮১, ইমাম জওজী: আল-ওফা বি আহওয়ালিল মুস্তফা: ১/৩০৬ পৃ., ইবনে ছালেহ: সুবলুল হুদা ওয়ার রাশাদ: ৪/৫৪-৫৫ পৃ., ইবনে কাসীর: বেদায়া ওয়ান নেহায়া: ৩/২৭৬ পৃ., ইবনে কাসীর: সিরাতে নবুবিয়্যাহ: ২/৩৪৭ পৃ., বুরহান উদ্দিন হালবী: সিরাতে হালবিয়্যাহ: ২/৩৯৫ পৃ.)

(১৭) মিশকাত শরীফের ‘মুজিযাত’ অধ্যায়ে হযরত আবু হুরাইরা (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত আছে

فَقَالَ الرَّجُلُ: تَاللَّهِ إِنْ رَأَيْتُ كَالْيَوْمِ ذِئْبٌ يَتَكَلَّمُ! فَقَالَ الذِّئْبُ: أَعْجَبُ مِنْ هَذَا رَجُلٌ فِي النَّخَلاتِ بَيْنَ الْحَرَّتَيْنِ يُخْبِرُكُمْ بِمَا مَضَى، وَمَا هُوَ كَائِنٌ بَعْدَكُمْ.

-‘‘জনৈক শিকারী আশ্চর্য হলে বললো, নেকড়ে বাঘকে আজ যেরূপ কথা বলতে দেখলাম সেরূপ ইতিপূর্বে আর কখনও দেখিনি। তখন নেকড়ে বাঘ বলে উঠলো, ‘এর চেয়ে আশ্চর্যজনক বিষয় হলো ঐ দুই উন্মুক্ত প্রান্তরের মধ্যবর্তী মরূদ্যানে (মদীনায়) একজন সম্মানিত ব্যক্তি (হুযুর (ﷺ)আছেন, যিনি তোমাদের নিকট বিগত ও অনাগত ভবিষ্যতের বিষয় সম্পর্কে সংবাদ পরিবেশ করেন।’’
🔺(ক. খতিব তিবরিযী: মিশকাত: ৪/৩৯৪ পৃ. হাদীস: ৫৯২৭, ইমাম ইসহাক: সিরাতে ইবনে ইসহাক: পৃ.- ২৬১ হাদিস: ৪৩৩, ইবনে সা’দ: তবকাতুল কোবরা: ১/১৭৪ পৃ. আহমদ ইবনে হাম্বল: আল-মুসনাদ: ৩/৮৩ হাদিস: ১১৮০৯, ইমাম আবু নুঈম ইস্পাহানী: দালায়েলুল নবুয়ত: ১১২ পৃ. হাদিস: ১১৬, ইমাম আবু নুঈম ইস্পাহানী: দালায়েলুল নবুয়ত: ১৮২ পৃ. হাদিস: ২৩৪, ইমাম বগভী: শরহে সুন্নাহ: ১৫/৮৭পৃ. হাদিস: ৪২৮২, এ হাদিসটিকে আহলে হাদিস আলবানী সে মিশকাতের তাহক্বীক করতে গিয়ে সনদটি সহিহ বলে মত প্রকাশ করেছেন। (আলবানী, তাহক্বীকে মিশকাত, ৩/১৬৬৬পৃ. হাদিস: ৫৯২৭, মাকতুবাতুল ইসলামী, বয়রুত, লেবানন, তৃতীয় প্রকাশ.১৯৮৫খৃ.)

(১৮) তাফসীরে খাযেনের ৪র্থ পারার আয়াত

🔺(সূরা: আলে ইমরান: আয়াত: ১৭৯, পারা: ৪)

এর ব্যাখ্যায় ইমাম হযরত সুদ্দি (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত একটি হাদিস উল্লেখ করা হয়েছে

قاَلَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عُرِضَتْ عَلَىَّ امُّتِىْ فِىْ صُوَرِ هَا فِى الطِّيْنِ كَمَا عُرِضَتْ عَلَى اَدَمَ وَاُعْلِمْتُ مَنْ يُؤْمِنُ بِىْ وَمَنْ يُّكْفُرُ بِىْ فَبَلَغَ ذَلِكَ الْمُنَافِقِيْنَ فَالُوا اِشْتِهْزَاءً زَعَمَ مُحَمَّدٌ اَنَّهُ يَعْلَمُ مَنْ يُؤْمِنُ بِهِ وَمَنْ يَّكْفُرُ مِمَّنْ لَمْ يُخْلَقْ بَعْدُ وَنَحْنُ مَعَهُ وَمَايَعْرِفُنَا، فَتَلَغَ ذَلِكَ رَسُوْلَ اللهِ عَلَيْهِ السَّلاَمُ فَقَامَ عَلَى الْمِنْبَرِ فَحَمِدَ اللهَ وَاَثْنَى عَلَيْهِ ثُمَّ قَالَ مَابُالُ اَقْوَامٍ طَعَنُوْا فِىْ عِلْمِىْ لاَتَسْئَلُوْنِىْ عَنْ شَيْئٍ فِيْمَا بَيْنَكُمْ وَبَيْنَ السَّاعَةِ اِلاَّ اَنْبَئْتُكُمْ بِهِ.

‘‘হুযুর (ﷺ) ইরশাদ ফরমান আমার কাছে আমার উম্মতকে তাদের নিজ নিজ মাটির আকৃতিতে পেশ করা হয়েছে, যেমন ভাবে আদম (আলাইহিস সালাম) এর কাছে পেশ করা হয়েছিল। আমাকে বলে দেয়া হয়েছে কে আমার উপর ঈমান আনবে আর কে আমাকে অস্বীকার করবে। যখন এ খবর মুনাফিকদের কাছে পৌঁছালো, তখন তারা হেসে বলতে লাগলো, ‘হুযুর (ﷺ’)ওসব লোকদের জন্মের আগেই তাদের মুমিন ও কাফির হওয়া সম্পর্কে অবগত হয়ে গেছেন, অথচ আমরা তাঁর সাথেই আছি কিন্তু আমাদেরকে চিনতে পারেন নি।’ এ খবর যখন হুযুর (ﷺ এর ) নিকট পৌঁছলো, তখন তিন মিম্বরের উপর দাঁড়ালেন এবং আল্লাহর প্রশংসা করে ইরশাদ ফরমান এসব লোকদের কি যে হলো, আমার জ্ঞান নিয়ে বিরূপ সমালোচনা করছে। এখন থেকে কিয়ামত পর্যন্ত যে কোন বিষয় সম্পর্কে তোমরা আমাকে জিজ্ঞাস করো, আমি অবশ্যই বলে দিব।’’ 
🔺(ক. ইমাম খাযেন: লুকাবুত তা’ভীল: ১/৩২৪ পৃ. দারুল কুতুব ইলমিয়্যাহ, বয়রুত, লেবানন, প্রকাশ.১৪১৫হি.।)

এ হাদীস থেকে দু’টি বিষয় সম্পর্কে জানা গেল। এক, হুযুর (ﷺ এর ) জ্ঞান সম্পর্কে বিরূপ মন্তব্য করা মুনাফিকদের বৈশিষ্ট্য। দুই, কিয়ামত পর্যন্ত সমস্ত ঘটনাবলী সম্পর্কে হুজুর ﷺ অবগত।

(১৯) মিশকাত শরীফের ‘কিতাবুল ফিতান’ যুদ্ধ বিগ্রহের বর্ণনা শীর্ষক অধ্যায়ের প্রথম পরিচ্ছেদে মুসলিম শরীফের উদ্ধৃতি দিয়ে আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু) থেকে বর্ণিত আছে

إِنِّي لَأَعْرِفُ أَسْمَاءَهُمْ وَأَسْمَاءَ آبَائِهِمْ وَأَلْوَانَ خُيُولِهِمْ هُمْ خَيْرُ فَوَارِسَ أَوْ مِنْ خَيْرِ فَوَارِسَ عَلَى ظَهْرِ الأَرْض.

-‘‘তাদের নাম, (দাজ্জালের বিরুদ্ধে জিহাদের প্রস্তুতি গ্রহণকারীগণের) তাঁদের বাপ-দাদাদের নাম ও তাদের ঘোড়াসমূহের বর্ণ পর্যন্ত আমার জানা আছে, তাঁরাই হবেন ভূ-পৃষ্ঠের সর্বোৎকৃষ্ট ঘোড়া সাওয়ার।’’
🔺(ক. খতিব তিববিযী: মিশকাত: ৫/৪৬৭ হাদিস: ৫৪২২, মুসলিম: আস-সহিহ: কিতাবুল ফিতান: ২/৩৯২ পৃ. হাদিস: ২২২৪, আহমদ ইবনে হাম্বল: আল-মুসনাদ: ১/৩৮৫ পৃ., হাকেম নিশাপুরী: আল-মুস্তাদরাক: ৪/৪৪৭পৃ. আব্দুর রায্যাক: আল-মুসান্নাফ: হাদিস: ২০৮১, ইমাম আবি শায়বাহ: আল-মুসান্নাফ: ১৫/১৩৯পৃ. ইমাম জুরকানী: শরহুল মাওয়াহেব: ৭/২০৬ পৃ., ইমাম কুস্তালানী: মাওয়াহেবে লাদুন্নীয়া: ৩/৯৫ পৃ.)

(২০) মিশকাত শরীফের مناقب ابي بكر وعمر অধ্যায়ে বর্ণিত আছে। হযরত আয়েশা সিদ্দীকা (রাদি আল্লাহু আনহু) হুজুর (সাল্লালাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর নিকট জানতে চাইলেন, এমন কেউ আছেন কিনা, যা’র নেকী সমূহ তারকারাজির সমসংখ্যক হবে?” হুজুর ﷺ উত্তরে ইরশাদ ফরমান, হ্যাঁ এবং তিনি হলেন হযরত উমর (رضي الله عنه)।’’
🔺(ক. খতিব তিবরিযী: মিশকাতুল মাসাবিহ: ৪/৪২৩ পৃ. হাদিস: ৬০৬৮, তিনি ইমাম রাজীন (رحمة الله)‘র সুত্রে বাংলাদেশ তাজ কম্পানী, ঢাকা।)

আযানের আগে ও পরে দুরুদ সালামের বৈধতা
____________________
চতুর্থ অধ্যায়ঃ আযানের আগে ও পরে দুরুদ সালামের বৈধতাঃ

ক. কুরআনের আলোকে আযানের আগে ও পরে দুরুদ সালামের বৈধতার প্রমাণঃ 

আল্লাহ তা‘য়ালা নবী করিম (ﷺ) এর প্রতি দরূদ সালাম পাঠ করার জন্য সময় বেধে দেন নি।
আল্লাহ তা‘য়ালা কুরআনে পাকে বলেন- 

إِنَّ اللَّهَ وَمَلَائِكَتَهُ يُصَلُّونَ عَلَى النَّبِيِّ يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا صَلُّوا عَلَيْهِ وَسَلِّمُوا تَسْلِيمًا

-‘‘নিশ্চয় আল্লাহ ও তার সকল ফিরিশতারা রাসূল (ﷺ) এর উপর দুরূদ শরীফ পড়তেছেন। হে ঈমানদারগণ! তোমরা রাসূল (ﷺ) এর প্রতি দুরূদ পড় এবং সালাম দাও মুহব্বত ও তাজিম সহকারে।’’
🔺(সূরা আহযাব আয়াত নং ৫৬)

উক্ত আয়াতে প্রিয় নবী (ﷺ)কে সালাম দিতে বলা হয়েছে এখানে কোন সময়কে খাস বা নির্দিষ্ট করা হয়নি যে শুধু এক বা নির্দিষ্ট সময়ই নবীকে সালাম দিবে, বরং এ আয়াতে আম ব্যাপককতার প্রমাণ মিলে যে নবীজি(ﷺ) র উপর দুরুদ সালাম পাঠ করার। এ বক্তব্যের সমর্থনে হানাফী মাযহাবের অন্যতম ফকীহ, মুহাদ্দিস, আল্লামা মোল্লা আলী ক্বারী হানাফী (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) উক্ত আয়াত প্রসঙ্গে বলেন-

اَنَّهُ تَعَالَى لَمْ يَوقُتْ ذَلِكَ لِيشَمِلُ سَائِرُ الْاَوْقَات-

-‘‘আল্লাহ তা‘য়ালা এখানে উক্ত আয়াতে কোন নির্দিষ্ট ওয়াক্ত বা সময় নির্ধারন করেন নি বরং সমস্ত সময় অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। (অর্থাৎ যে কোন সময়ই দরূদ সালাম পড়া যাবে নিষেধাজ্ঞা সময় ব্যতীত)।’’
🔺(আল্লামা মোল্লা আলী ক্বারী : শরহে শিফা : ২/১০৭পৃ. দারুল কুতুব ইলমিয়াহ, বৈরুত)

এ বিষয়ে একটি হাদিসে পাক পাওয়া যায় যেমন ইমাম তিরমিযি (রঃ) সংকলন করেন-

عَنِ الطُّفَيْلِ بْنِ أُبَيِّ بْنِ كَعْبٍ، عَنْ أَبِيهِ، قَالَ: كَانَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِذَا ذَهَبَ ثُلُثَا اللَّيْلِ قَامَ فَقَالَ: يَا أَيُّهَا النَّاسُ اذْكُرُوا اللَّهَ اذْكُرُوا اللَّهَ جَاءَتِ الرَّاجِفَةُ تَتْبَعُهَا الرَّادِفَةُ جَاءَ الْمَوْتُ بِمَا فِيهِ جَاءَ الْمَوْتُ بِمَا فِيهِ، قَالَ أُبَيٌّ: قُلْتُ: يَا رَسُولَ اللهِ إِنِّي أُكْثِرُ الصَّلاَةَ عَلَيْكَ فَكَمْ أَجْعَلُ لَكَ مِنْ صَلاَتِي؟ فَقَالَ: مَا شِئْتَ. قَالَ: قُلْتُ: الرُّبُعَ، قَالَ: مَا شِئْتَ فَإِنْ زِدْتَ فَهُوَ خَيْرٌ لَكَ، قُلْتُ: النِّصْفَ، قَالَ: مَا شِئْتَ، فَإِنْ زِدْتَ فَهُوَ خَيْرٌ لَكَ، قَالَ: قُلْتُ: فَالثُّلُثَيْنِ، قَالَ: مَا شِئْتَ، فَإِنْ زِدْتَ فَهُوَ خَيْرٌ لَكَ، قُلْتُ: أَجْعَلُ لَكَ صَلاَتِي كُلَّهَا قَالَ: إِذًا تُكْفَى هَمَّكَ، وَيُغْفَرُ لَكَ ذَنْبُكَ.

-‘‘হযরত উবাই ইবনে কাব (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, ...আমি বললাম সবটুকু সময় আপনার উপর সালাত পাঠে লাগাব। রাসূল (ﷺ) ইরশাদ ফরমালেন, তাহলে তো তোমার চিন্তা মুক্তির জন্য তাই যথেষ্ট হবে।’’
🔺(তিরমিযি, আস-সুনান, ৪/২১৮পৃ. হা/২৪৫৭, ইমাম হাকেম, আল-মুস্তাদরাক, ২/৪৫৭পৃ. হা/৩৫৭৮, এবং হা/৩৮৯৪, শুয়াবুল ঈমান, ৩/৮৫পৃ. হা/১৪১৮, মুকাদ্দাসী, আহাদিসুল মুখতার, ৩/৩৯০পৃ. হা/১১৮৫, শেকাত, হা/৯২৯, মোবারকপুরী, তুহফাতুল আহওয়াজী, ৭/১২৯পৃ. ইবনে হাজার আসকালানী, ফতহুল বারী, ১১/১৬৮পৃ. ইমাম ইবনে আছির, জামিউল উসূল, ১১/৫পৃ. হা/৮৪৬৭, মুত্তাকী হিন্দী, কানযুল উম্মাল, ২/২৭৬পৃ. হা/৩৯৯৭)

 তবে ফকীহগণ কিছু স্থানে দুরূদ সালাম পড়ার ব্যাপারে মাকরূহ বলে উল্লেখ করেছেন তাছাড়া সব স্থানে দুরূদ সালাম পড়া মুস্তাহাব বলে গণ্য। তাই মাকরূহ সময় সমূহের মধ্যে আজানের আগে ও পরে উল্লেখ নেই। যেমন ফতোয়ার শামীতে রয়েছে যে- 

تُكْرَهُ الصَّلَاةُ عَلَيْهِ - صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ - فِي سَبْعَةِ مَوَاضِعَ: الْجِمَاعِ، وَحَاجَةِ الْإِنْسَانِ، وَشُهْرَةِ الْمَبِيعِ وَالْعَثْرَةِ، وَالتَّعَجُّبِ، وَالذَّبْحِ، وَالْعُطَاسِ

-‘‘ইমাম ইবনে আবেদীন শামী হানাফী (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেন, সাত অবস্থায় নবীজী (ﷺ) এর উপর সালাত ও সালাম পাঠ করা মাকরূহ (তাহরীমী)। যথা- (১) স্ত্রী সহবাসকালে (২) পেশাব পায়খানার সময় (৩) ব্যবসার মাল চালু করার সময়। (৪) হোচট খাওয়ার পর (৫) যবেহ করার সময় (৬) আশ্চর্য্যকর সংবাদ শ্রবণ করার সময়। (৭) এবং হাঁচি দেয়ার সময়।’’
🔺(ইমাম ইবনে আবেদীন শামী : ফতোয়ায়ে শামী: ১/৩৮৩ পৃ)

এই নিষিদ্ধ সময় ছাড়া দরুদ-সালাম পড়া মোস্তাহাব। যেমন ইমাম ইবনে আবেদীন শামী (রঃ) এই স্থান ছাড়া বাকী স্থানে দরুদ-সালাম পড়া সম্পর্কে লিখেন-

(قَوْلُهُ وَمُسْتَحَبَّةٌ فِي كُلِّ أَوْقَاتِ الْإِمْكَانِ(أَيْ حَيْثُ لَا مَانِعَ.

-‘‘নিষিদ্ধ স্থান ব্যতীত প্রত্যেক যায়গায় রাসূল (ﷺ) এর দরুদ-সালাম পাঠ করা মোস্তাহাব।’’
🔺(ইমাম ইবনে আবেদীন শামী : ফতোয়ায়ে শামী, ১/৫১৮পৃ. দারুল ফিকর ইলমিয়্যাহ, বয়রুত, লেবানন)

হাদিসের আলোকে আযান ও ইকামতের আগে দুরূদ সালাম
____________________
হাদিসের আলোকে আযান ও ইকামতের আগে দুরূদ সালাম

উপরোল্লেখিত সূরা আহযাবের ৫৬ নং আয়াতের ব্যাখ্যায় হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রাদিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহু) বলেন-

يَا أَيهَا الَّذين آمنُوا صلوا عَلَيْهِ أثنوا عَلَيْهِ فِي صَلَاتكُمْ وَفِي مَسَاجِدكُمْ وَفِي كل موطن

-‘‘মহান রবের ঘোষণা হে ঈমানদারগণ! তোমরা আমার হাবিবের উপর দুরুদ সালাম পাঠ কর। হযরত ইবনে আব্বাস (রা) বলেন, এ আয়াতের মধ্যে দুরূদ-সালাম নামাযে, মসজিদের মধ্যে এবং এমনকি সর্বাবস্থায় (আযানের আগে পড়ে বলতে কোন কথা নেই) পড়ার হুকুম দেয়া হয়েছে।’’ 
🔺(আল্লামা ইবনুল কাইয়্যুম : জালাউল ইফহাম : ১/৪২২পৃ. দারুল উরুবাত, কুয়েত, দ্বিতীয় প্রকাশ. ১৪০৭হি.)

মিলাদুন্নবী (ﷺ)-এর আলোচনায় উল্লেখ করেছি যে সাহাবীদের তাফসীর মারফু হাদিসের হুকুমের অন্তর্ভুক্ত। তাই এটিও রাসূল (ﷺ)-এর আদেশ। তাহলে দুরুদ-সালাম পড়ার কোন সময় নির্ধারিত নেই, তবে ফুকাহায়ে কেরাম কিছু নির্দিষ্ট স্থানে মাকরুহ বলেছেন যা ইতিপূর্বে আলোকপাত করেছি। ইমাম আবু দাউদ (رحمة الله) একটি হাদিসে পাক বর্ণনা করেন-

عَنْ عُرْوَةَ بْنِ الزُّبَيْرِ، عَنْ امْرَأَةٍ مِنْ بَنِي النَّجَّارِ قَالَتْ: كَانَ بَيْتِي مِنْ أَطْوَلِ بَيْتٍ حَوْلَ الْمَسْجِدِ وَكَانَ بِلَالٌ يُؤَذِّنُ عَلَيْهِ الْفَجْرَ فَيَأْتِي بِسَحَرٍ فَيَجْلِسُ عَلَى الْبَيْتِ يَنْظُرُ إِلَى الْفَجْرِ، فَإِذَا رَآهُ تَمَطَّى، ثُمَّ قَالَ: اللَّهُمَّ إِنِّي أَحْمَدُكَ وَأَسْتَعِينُكَ عَلَى قُرَيْشٍ أَنْ يُقِيمُوا دِينَكَ قَالَتْ: ثُمَّ يُؤَذِّنُ، قَالَتْ: وَاللَّهِ مَا عَلِمْتُهُ كَانَ تَرَكَهَا لَيْلَةً وَاحِدَةً تَعْنِي هَذِهِ الْكَلِمَاتِ

-‘‘হযরত ওরওয়াহ বিন জুবাইর রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি নাজ্জার গোত্রের এক মহিলা সাহাবী থেকে, তিনি বলেন, মসজিদে নববীর নিকটবর্তী ঘর সমূহের মধ্যে আমার বাড়ি ছিল সুউচ্চ হযরত বিলাল রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু সেখানে উঠে ফজরের আযান দিতেন। তিনি সাহরীর শেষ সময়ে এসে ঐ ছাদের উপরে বসে সুবহে সাদেকের অপেক্ষা করতেন। অতঃপর ভোর হয়েছে দেখার পর তিনি সোজা হয়ে দাঁড়াতেন এবং বলতেন

- اللَّهُمَّ إِنِّي أَحْمَدُكَ وَأَسْتَعِينُكَ عَلَى قُرَيْشٍ أَنْ يُقِيمُوا دِينَكَ‘

ইয়া আল্লাহ! আমি আপনার প্রসংশা করি এবং আপনার কাছে সাহায্য প্রার্থনা করি এজন্য যে, আপনি কোরাইশদেরকে দীন ইসলাম কায়েমের তৌফিক দান করেছেন।’’ রাবী বলেন, অতঃপর হযরত বিলাল রাদিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহু আযান দিতেন। রাবী আরো বলেন, আল্লাহর শপথ! বিলাল রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু এ দোয়া পাঠ কোন রাতে বাদ দিয়েছেন বলে আমার জানা নাই।’’ 
🔺(ইমাম আবু দাঊদ : আস সুনান : বাবুল আযান : ১/৭৭ পৃ. হাদিস নং. ৫১৯, ইমাম বায়হাকী, আস সুনানুল কুবরা : আযান ফিল মিনারাহ : ১/৪২৫পৃ. হাদিসঃ ১৮৪৬, মাকতুবায়ে দারুল বায, মক্কাতুল মুক্কাররামা সৌদি)

যারা বলেন আযানের পূর্বে কিছু বলা নিষেধ উক্ত হাদিস দ্বারা তাদের মুখোশ উন্মোচন হয়ে গেল। এ হাদিসটিকে আহলে হাদিসদের ইমাম আলবানীও ‘হাসান’ বলেছেন।
🔺(আলবানী, সহিহুল সুনানে আবি দাউদ, হাদিস নং. ৫১৯)

আযান ও ইকামাতের শব্দ একই দুটি শব্দ ছাড়া। এজন্যই রাসূল (ﷺ) ইকামাতকেও আযান বলেছেন। হযরত বুরায়রাদা (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত, রাসূল (ﷺ) ইরশাদ করেছেন-

وَعَنْ بُرَيْدَةٍ أَنَّ النَّبِيَّ - صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ - قَالَ: بَيْنَ كُلِّ أَذَانَيْنِ صَلَاةٌ إِلَّا الْمَغْرِبَ

-‘‘প্রত্যেক দুই আযানের (আযান ও ইকামাতের) মধ্যবর্তী সময়ে নামায রয়েছে, তবে মাগরিব ব্যতীত।’’ 
🔺(ইমাম বাযযার, আল-মুসনাদ, হাইসামী, মাযমাউয যাওয়াইদ, ২/২৩১পৃ. হাদিস নং. ৩৩৯১, মুত্তাকী হিন্দী, কানযুল উম্মাল, হাদিস নং. ২১৩৬৮)

মুফতি আমিমুল ইহসান ও ইমাম হায়সামী (رحمة الله) হাদিসটিকে ‘হাসান’ বলেছেন। 
🔺(মুফতি আমিমুল ইহসান, ফিকহুস সুনানি ওয়াল আছার, ১/১৫৩পৃ. হাদিস নং. ৩৬৮)

ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল (رحمة الله) হযরত মাগাফ্ফাল (رضي الله عنه) আরেকটি হাদিসে পাক বর্ণনা করেছেন-

 بَيْنَ كُلِّ أَذَانَيْنِ صَلَاةٌ لِمَنْ شَاءَ 

-‘‘দুই আযানের মধ্যে যে চায় নামায পড়বে।’’ 
🔺(ইমাম আহমদ, আল-মুসনাদ, ২৭/৩৪৬পৃ. হাদিস নং. ১৬৭৯০, হাদিসটির সনদ সহিহ, সুনানে দারেমী, হাদিস নং. ১৪৮০, সহিহ বুখারী, হাদিস নং. ৬২৪, সহিহ মুসলিম, হাদিস নং. ৮৩৮)

 তাহলে রাসূলে কারীমের এ হাদিস মোতাবেক ইকামাতও আযান। তাহলে মুয়াজ্জিন হযরত বেলাল (رضي الله عنه)এর একটি হাদিসে পাক লক্ষ করুন-

عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ قَالَ: كَانَ بِلَالٌ إِذَا أَرَادَ أَنْ يُقِيمَ الصَّلَاةَ قَالَ: السَّلَامُ عَلَيْكَ أَيُّهَا النَّبِيُّ وَرَحْمَةُ اللهِ وَبَرَكَاتُهُ، الصَّلَاةُ رَحِمَكَ اللهُ

-‘‘হযরত আবু হুরায়রা (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন হযরত বেলাল (رضي الله عنه) যখন ইকামাত (ইকামাতও এক প্রকার আযান) দেওয়ার ইচ্ছা পোষণ করতেন তখন তিনি নবীজির প্রতি সালাম পেশ করতেন এভাবে

السلام عَلَيْكَ أَيُّهَا النَّبِيُّ وَرَحْمَةُ اللَّهِ وَبَرَكَاتُهُ، الصَّلَاةُ رَحِمَكَ اللَّهُ 

হে আল্লাহর নবি আপনার প্রতি সালাম.....।’’ 
🔺(হাইসামী, মাযমাউয যাওয়াইদ, ২/৭৫পৃ. হাদিস নং. ২৩৮৯)

তাই আযান ও ইকামাতের পূর্বে সালাতু সালাম দেয়া হযরত বিলালের সুন্নাত। 

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর আলোচনা বা তাকে সালাম দেওয়া তার প্রতি দুরূদ শরীফ পড়া সবকিছুই জিকিরের অর্ন্তভুক্ত। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ আলোচনাকে আল্লাহ কুরআনে জিকির বলছেন। 

وَرَفَعْنَا لَكَ ذِكْرَك -

‘‘আপনার জিকির (দুরূদ, সালাম, আলোচনা) কে আমি বুলন্দ করে দিয়েছি।’’ 
🔺(সুরা ইনশিরাহ : আয়াত:৪)

শুধু তাই নয় আল্লাহর নাম নেওয়া যেমনি যিকর তেমনিভাবে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নাম নেয়া তাকে সালাম দেওয়াও জিকিরের অর্ন্তভুক্ত। 
যেমন আল্লাহ হাদীসে কুদসীতে ইরশাদ ফরমান-

وَعَنْ أَبِي سَعِيدٍ، عَنْ رَسُولِ اللَّهِ - صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ - أَنَّهُ قَالَ: أَتَانِي جِبْرِيلُ فَقَالَ: إِنَّ رَبِّي وَرَبَّكَ يَقُولُ: كَيْفَ رَفَعْتُ ذِكْرَكَ؟ قَالَ: اللَّهُ أَعْلَمُ، قَالَ: إِذَا ذُكِرْتُ ذُكِرْتَ مَعِي قال الهيثمي رَوَاهُ أَبُو يَعْلَى وَإِسْنَادُهُ حَسَنٌ -   

-‘‘হযরত আবু সাঈদ খুদরী রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হতে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ ফরমান : আমার নিকট জিবরাঈল আলাইহিস সালাম আগমন করলেন বললেন আল্লাহ পাক জানতে চেয়েছেন তিনি আপনার জিকিরকে কীভাবে বুলন্দ করেছেন? রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, আল্লাহ তায়ালাই ভাল জানেন। জিবরাঈল (আ.) বলেন মহান রব আমাকে : হে হাবিব! যেখানে আমার জিকির হবে সেখানে আমার সাথে আপনার ও জিকির হবে।’’ 
🔺((ক) ইমাম আবু ইয়ালা: আল মুসনাদ : ২/৫২২ : হাদীস : ১৩৮০, ইমাম ইবনে হাইয়্যান : আস সহীস : ৮/১৭৫: হাদীস : ৩৩৮২, ইমাম দায়লামী : আল মুসনাদিল ফিরদাউস : ৪/৪০৫ : হদীস : ৭১৭৬, ইমাম ইবনে খাল্লাল : আল মুসনাদ: ১/২৬২ : হাদীস : ৩১৮, ইবনে হাজার আসকালানী : ফতহুল বারী শরহে বুখারী : ৮/৭১২পৃ. আল্লামা ইবনে কাসীর : তাফসীরে ইবনে কাসীর : ৪/৫২৫পৃ., আল্লামা ইবনে হাজার হায়সামী : মাযমাউদ যাওয়ায়েদ: ৮/২৫৪।)

আল্লামা ইবনে হাজার হায়সামী বলেন, সনদটি “হাসান” পর্যায়ের। শুধু তাই নয় রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে সালাম দেওয়া জিকিরের অর্ন্তভুক্ত এ প্রসঙ্গে আরেকটি হাদীসে পাক দেখুন-

عَنِ الْمُهَاجِرِ بْنِ قُنْفُذٍ، أَنَّهُ أَتَى النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَهُوَ يَبُولُ فَسَلَّمَ عَلَيْهِ، فَلَمْ يَرُدَّ عَلَيْهِ حَتَّى تَوَضَّأَ، ثُمَّ اعْتَذَرَ إِلَيْهِ فَقَالَ " إِنِّي كَرِهْتُ أَنْ أَذْكُرَ اللَّهَ عَزَّ وَجَلَّ إِلَّا عَلَى طُهْرٍ أَوْ قَالَ: عَلَى طَهَارَةٍ

-‘‘হযরত মুহাজির ইবনে কুনফুয রাদিয়াল্লাহু তাআলা হতে বর্ণিত। তিনি বলেন: এক দিন তিনি হুযুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর খিদমতে এমন সময় হাজির হলেন যখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ওযু করতেছিলেন। তিনি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে সালাম দিলেন। কিন্তু হুযুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ওযু না করা পর্যন্ত সালামের জবাব দেননি। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার কারণ উল্লেখ করলেন এবং বললেন আমি অপবিত্র অবস্থায় আল্লাহর জিকির করা অপছন্দ করি।’’
🔺((ক) ইমাম আবু দাঊদ : আস সুনান : ১/৪পৃ. কিতাবুত তাহারাত : হাদীস : ১৮, ইমাম ইবনে মাজাহ : আস সুনান : ১/৬৫পৃ হাদিস : ৩০২, আলবনিীও সনদটিকে এ গ্রন্থগুলোর তাহকীকে হাদিসটিকে সহিহ বলেছেন)

অতএব উক্ত হাদীস শরীফ দ্বারা প্রমাণিত হলো রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে সালাম দেয়াও জিকির। এ বিষয়ে হযরত সায়ীদ ইবনে আবু আরুবা রাদিয়াল্লাহু তাআলা আনহু হতে হাদিস বর্ণিত আছে।
🔺(ইমাম ইবনে মাজাহ : আস সুনান : ১/৬৫ পৃ : হাদীস : ৩৫০)

তাই জিকির করার সময় কী নির্ধারণ আছে? এ সম্পর্কে মহান আল্লাহ তায়ালার হাবীব এর আমল দেখুন-

عَنْ عَائِشَةَ، قَالَتْ: كَانَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَذْكُرُ اللَّهَ عَزَّ وَجَلَّ عَلَى كُلِّ أَحْيَانِهِ

-‘‘হযরত আয়েশা (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সকল অবস্থায় বা সময়ে আল্লাহর যিকর করতেন।’’
🔺(ইমাম মুসলিম : আস-সুনান : ১/২৮২পৃ. , ইমাম আবু দাঊদ : আস-সুনান : ১/৫পৃ. কিতাবুত-তাহারাত : হাদিস : ১৮, ইমাম ইবনে মাজাহ : আস-সুনান : ১/৮২পৃ. কিতাবুত তাহারাত হাদিস : ৩০২, ইমাম তিরমিযী : আস সুনান: ১/২৪৮পৃ.)

তাই অতএব প্রমাণিত হলো রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে সালাম দেওয়া নিষিদ্ধ স্থান ছাড়া সব স্থানে বৈধ। তাই অতএব জ্ঞানীদেরজন্য এতটুকুই যথেষ্ট মনে করি। অনেক বিজ্ঞ বিজ্ঞ ফকীহগণ ইহার উপরে মুস্তাহাব ফতোয়া দিয়েছেন তা বিস্তারিত আলোচনা করতে গেলে কিতাব দীর্ঘ হওয়ার আশংকা রয়েছে।

ফুকাহায়ে কেরামের আলোকে
____________________
ফুকাহায়ে কেরামের আলোকে

আহলে হাদিস ও দেওবন্দীদের ইমাম ইবনে কাইয়্যুম (ওফাত.হি.৭৫১হি.) বলেন-

الموطن السَّادِس من مَوَاطِن الصَّلَاة عَلَيْهِ صلى الله عَلَيْهِ وَسلم الصَّلَاة عَلَيْهِ بعد إِجَابَة الْمُؤَذّن وَعند الْإِقَامَة

-‘‘রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর প্রতি দুরুদ শরীফের ৭ম মুস্তাহাব স্থান হলো আযানের সময় (পূর্বে) এবং ইকামতের পূর্বে।’’ 
🔺(আহলে হাদীস আল্লামা ইবনুল কাইয়্যুম : জালাউল ইফহাম : ৩০৮পৃ)

অপরদিকে ইমাম কাজি আয়াজ আল-মালেকী (رحمة الله) 🔺(ওফাত.৫৪৪হি.) বলেন-

ومن مواطن الصلاة عليه عند ذكره وسماع اسمه أو كتابة أو عند الأذان-

-‘‘রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর প্রতি দুরুদ মুস্তাহাব হল যখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নাম উল্লেখ বা স্মরণ হবে, যখন তাঁর নাম মোবারক কোথাও লিখবে এবং পূর্বে আযানের।’’ 
🔺(ইমাম কাজী আয়াজ: শিফা শরীফ : ২/৪৩পৃ. দারুল কুতুব ইলমিয়্যাহ, বয়রুত, লেবানন)

উক্ত বক্তব্যের ব্যাখ্যায় আল্লামা মোল্লা আলী ক্বারী (رحمة الله) বলেন-

(عند الأذان (أي الإعلام الشامل للإقامة-

-‘‘আযানের পূর্বে বা নিকট দ্বারা ইকামতের পূর্বেও অন্তর্ভুক্ত।’’ 
🔺(আল্লামা মোল্লা আলী ক্বারী: শরহে শিফা : ২/১১৬পৃ দারুল কুতুব ইলমিয়াহ, বয়রুত, লেবানন)

অপরদিকে দেওবন্দের অন্যতম শ্রদ্ধেয় আলেম আল্লামা আব্দুল হাই লখনোভী (রাহমাতুল্লাহি আলাইহি) সাহেব লিখেন-

يستفاد منه بظاهره استحبابه عند شروع الاقامة كما هو متعارف في بعض البلاد-

-‘‘স্পষ্টত ইকামতের পূর্বে দুরুদ সালাম পড়া মুস্তাহাব এরই প্রমান মিলে যেমনি ভাবে কিছু দেশে এর আমল পরিচিতি রয়েছে।’’ 
🔺(আল্লামা সায়ীদ উল্লাহ খান ক্বাদেরী : তাখরীজে জাআল হক: ৭৮১পৃ)

অপরদিকে ইমাম আবু সাইয়েদ বকরী (رحمة الله) এর ব্যাখ্যায় বলেন-

اى الصلوة والسلام على النبي صلى الله عَلَيْهِ وَسلم قبل الاذان الإقامة-

-‘‘নবী পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর উপর দুরুদ ও সালাম পাঠ করার মুস্তাহাব সময় হলো আযানের এবং ইকামতের পূর্বে।’’
🔺(ইমাম আবু সাইয়েদ বকরী : ফতহুল মুঈন : ১/২২৩পৃ.)

আল্লামা আব্দুর রাহমান জাযরী (ওফাত. ১৩৬০হি.) লিখেন-

الصلاة على النبي قبل الأذان والتسابيح قبله بالليل

-‘‘অনুচ্ছেদ : আযানের পূর্বে ও রাতের বেলায় আযানের পূর্বে নবী পাক (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর উপর সালাত ও তাসবীহ পাঠ।’’
🔺(জাযরী, কিতাবুল ফিকহু আ‘লা মাযাহাবিল আরবা‘আ, ১/৩২৬পৃ.)

আযান এর পর দুরুদ ও সালাম বৈধতার প্রমাণ
____________________
আযান এর পর দুরুদ ও সালাম বৈধতার প্রমাণঃ 

এ বিষয়ে সরাসরি সহিহ মুসলিমের একটি হাদিসে পাক লক্ষ করুন-

وَعَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ عَمْرِو بْنِ الْعَاصِ أَنَّهُ سَمِعَ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُولُ: إِذَا سَمِعْتُمُ الْمُؤَذِّنَ فَقُولُوا مِثْلَ مَا يَقُولُ ثُمَّ صَلُّوا عَلَيَّ فَإِنَّهُ مَنْ صَلَّى عَلَيَّ صَلَاةً صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ بِهَا عَشْرًا-

-‘‘প্রখ্যাত সাহাবী হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আমর ইবনুল আস (রাদিয়াল্লাহু তাআলা আনহু) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূল ইরশাদ ফরমান, যখন তোমরা মুয়াজ্জিনের আজান শ্রবণ করবে তখন সে যা বলে তোমরাও তা বলবে। অতঃপর আমার উপর দুরূদ সালাম পাঠ করবে। কেনা যে ব্যক্তি একবার আমার প্রতি দুরূদ সালাম পাঠ করে তার জন্য আল্লাহ তাআলা দশটি রহমত বর্ষণ করেন।’’
🔺(ইমাম মুসলিম : আস সহীহ : ১/১০২পৃ. কিতাবুস সালাত : হাদীস : ৩৮৪, খতীব তিবরিযী : মিশকাত : ১/১৪০ : হাদীস : ৬০৬, আবু দাঊদ : আস সুনান : ১/৩৫৯পৃ. কিতাবুত সালাত : হাদীস : ৫২৩, নাসাঈ : আস-সুনান : কিতাবুল আযান, ২/২৫পৃ. হাদীস : ৬৭৮, ইবনে মাজাহ : আস সুনান : ১/৮২পৃ .হাদিস : ৭১০, সুয়ূতী : জামেউস সগীর : ১/৫৫পৃ হাদীস : ৭০২, ইমাম তিরমিযী : আস সুনান : কিতাবুস সালাত, ৫/৫৪৭পৃ হাদীস : ৩৬১৪)

এ বিষয়ে বাতিলপন্থীদের ধোঁকার জবাব
____________________
এ বিষয়ে বাতিলপন্থীদের ধোঁকার জবাবঃ

সম্মানিত পাঠকবৃন্দ! ইসলামী শরীয়তে সকল কিছুই প্রথমত বৈধ, যে পর্যন্ত তা কোন সুস্পষ্ট দলীল দ্বারা নিষেধ প্রমাণিত না হয়। বৈধ হওয়ার জন্য এতটুকুই যথেষ্ট। এজন্যই ইমাম আবু হানিফা (رحمة الله) ও ইমাম শাফেয়ী (رحمة الله) উভয়ই বলেন-

الْمُخْتَارَ أَنَّ الْأَصْلَ الْإِبَاحَةُ عِنْدَ الْجُمْهُورِ مِنْ الْحَنَفِيَّةِ وَالشَّافِعِيَّةِ

ইমাম শাফেয়ী, ইমাম আবু হানিফা এবং জমহুর ইমামদের পছন্দনীয় মতামত হল প্রত্যেক কিছুই বৈধ (যে পর্যন্ত না কোন দলীল দ্বারা নিষেধ করা হয়)।
🔺(ইমাম ইবনে আবেদীন শামী : রদ্দুল মুখতার আলা দুররুল মুখতার: ১/৭৮পৃ কিতাবুত তাহারাত)

 তাই বৈধ হওয়ার জন্য এতটুকুই যথেষ্ট। আমাদের সমাজের এক শ্রেণীর কাঠ মোল্লাগণ মাহফিলে এই আমলটি কে হারাম পর্যন্ত ফাতওয়া দিয়ে বেড়ান। অথচ হযরত সালমান ফারসী (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক ব্যক্তির প্রশ্নের জবাবে বলেন-

الْحَلَالُ مَا أَحَلَّ اللَّهُ فِي كِتَابِهِ وَالْحَرَامُ مَا حَرَّمَ اللَّهُ فِي كِتَابِهِ وَمَا سَكَتَ عَنْهُ فَهُوَ مِمَّا عَفَا عَنْهُ

-‘‘হালাল হচ্ছে যা আল্লাহ তা‘য়ালা স্বীয় কিতাবে (কুরআনে) হালাল করেছেন; আর হারাম হচ্ছে, স্বীয় কিতাবে (কুরআনে) যা হারাম করেছেন এবং যেটা সম্পর্কে নিরব রয়েছেন সেটা মাফ।’’ 
🔺(খতীব তিবরিযী : মিশকাত : কিতাবুত : কিতাবুদ-ত্বআম: ৩/৯৮পৃ., ইমাম তিরমিযী : আস সুনান: ৪/১৯২পৃ : হাদিস : ১৭২৬, ইমাম ইবনে মাজাহ : আস-সুনান: ২/১১১পৃ হাদিস : ৩৩৯৭)

তাহলে সেই কাঠ মোল্লাদের কাছে জানতে চাওয়া কোরআন, অথবা হাদিসের কোন কিতাবে আমলটি নিষিদ্ধ বলা হয়েছে ? কিয়ামত পর্যন্ত তারা কোন জবাব দিতে পারবে না। আমরা এটিকে নফল বা মুস্তাহাব হিসেবেই জানি। মুস্তাহাব হওয়ার জন্য শরিয়তে কোন নিষেধ না থাকলে এবং বুযর্গদের ভাল ধারণাই যথেষ্ট। ইমাম আলাউদ্দিন হাসকাফী (رحمة الله) তাঁর লিখিত বিখ্যাত হানাফী ফিকহের গ্রন্থ ‘‘দুররুল মুখতারের’’ ওজুর মুস্তাহাব অধ্যায়ে লিখেন-

وَمُسْتَحَبُّهُ وَهُوَ مَا فَعَلَهُ النَّبِيُّ - صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ - مَرَّةً وَتَرَكَهُ أُخْرَى، وَمَا أَحَبَّهُ السَّلَفُ

-‘‘মুস্তাহাব ঐ কাজটাকে বলা হয়, যেটা হুযুর (ﷺ) কোন সময় করেছেন আবার কোন সময় করেননি এবং ঐ কাজটাকেও বলে, যেটা বিগত মুসলমানগণ ভাল মনে করেছেন।’’
🔺(ইবনে আবেদীন শামী, ফাতোয়ায়ে শামী, ১/১২৩পৃ. দারুল ফিকর ইলমিয়্যাহ, বয়রুত, লেবানন)

জানাযা নামাজ নাকি দোয়া
____________________
পঞ্চম অধ্যায়ঃজানাযার নামাযের পর দোয়ার বৈধতার প্রমাণ-

জানাযা নামাজ নাকি দোয়াঃ

আমাদের দেশে এক শ্রেণীর নামধারী আলেম রয়েছেন যারা জানাযা দোয়া ছাড়া নামায মানতে রাজী নয়। যাই হোক এখন আমরা পৃথিবীর কোনো মৌলভীর কথা না শুনে মহান রব তা‘য়ালা এ বিষয়ে কী বলেছেন তা দেখবো। 

ক. রাসূল (ﷺ) মুনাফিক সর্দার আব্দুল্লাহ ইবনে উবাই এর জানাযার নামায পড়তে গেলে নিষেধ করতে গিয়ে মহান রব তা‘য়ালা ইরশাদ করেন-

وَلا تُصَلِّ عَلى أَحَدٍ مِنْهُمْ ماتَ أَبَداً وَلا تَقُمْ عَلى قَبْرِهِ

-‘‘আপনি কখনও তাদের (মুনাফিক) কারোর উপর (জানাযার) নামায পড়বেন না এবং তাদের কবরের নিকট (জিয়ারতের) জন্য দাঁড়াবেন না।’’
(সুরা তাওবাহ, আয়াত, ৮৪)
🔺(শানে নূযুল দেখুন সহিহ বুখারী, ২/৭৬পৃ. হাদিস নং. ১২৬৯, হযরত ইবনে উমর (রা) এর সূত্রে)

ক. জানাযার নামাযের পর দোয়া করা রাসূলের আদেশ
____________________
ক. জানাযার নামাযের পর দোয়া করা রাসূলের আদেশঃ

দলীল নং- ১-৩৪

 سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُولُ: إِذَا صَلَّيْتُمْ عَلَى الْمَيِّتِ، فَأَخْلِصُوا لَهُ الدُّعَاءَ-

-‘‘হযরত আবু হুরায়রা (রা) হতে বর্ণিত, রাসূল (ﷺ) ইরশাদ ফরমান : যখন মৃত ব্যক্তির উপর জানাযার নামায পড়ে ফেলবে অত:পর তার জন্য খালেস বা নিষ্ঠার সাথে দোয়া কর।’’
🔺(ইবনে মাযাহ : আস-সুনান : কিতাবুল জানায়েজ : ১/৪৮০ পৃ. : হাদিস : ১৪৯৭, দারুল কুতুব ইলমিয়্যাহ, বয়রুত, আবি দাউদ : আস্-সুনান : কিতাবুল জানায়েজ : ৩/৫৩৮ পৃ. : হাদিস : ৩১৯৯, দারুল কুতুব ইলমিয়্যাহ, বয়রুত, ইবনে হিব্বান : আস-সহিহ : ৭/৩৪৬পৃ. হাদিসঃ ৩০৭৭, সুয়ূতি : জামেউস-সগীর : ১/৫৮ পৃ. : হাদিস : ৭২৯, দারুল কুতুব ইলমিয়্যাহ, বয়রুত, খতিব তিবরিযী : মিশকাতুল মাসাবীহ : ২/৩১৯ পৃ., হাদিস : ১৬৭৪, দারুল কুতুব ইলমিয়্যাহ, বয়রুত, লেবানন, আলবানী : সহীহুল মিশকাত : হাদিস : ১৬৭৪ এ তিনি বলেন, হাদিসটি ‘হাসান’, বায়হাকী : আস-সুনানুল কোবরা : ৪/৪০ পৃ. দারুল মা’রিফ, বয়রুত, লেবানন, ইমাম নববী : রিয়াদুস সালেহীন : ৩১০-৩১১ প. হাদিস : ৯৩৭, ইমাম তাবরানী : কিতাবুদ-দোয়া : ৩৬২ পৃ. হাদিস : ১২০৫-১২০৬, দায়লামী, আল-ফিরদাউস, ৩/৩১৯পৃ. হাদিসঃ ২২৭৫)

এ হাদিসের সারমর্মঃ উক্ত হাদিসে রাসুল পাক (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন فَأَخْلِصُوا -‘‘অত:পর খালেস বা আন্তরিকভাবে তার জন্য দোয়া কর।’’ কালিমার প্রথমে فاء বর্ণ তা‘কিব (বিলম্ব ব্যতীত অন্যটা শুরু করা) জন্য এসে থাকে।

৪. আল্লামা সিরাজ উদ্দিন উসমান (রহ) এর নাহু শাস্ত্রের বিখ্যাত কিতাব হেদায়াতুন নাহুতে উল্লেখ করেন-

والفاء للترتيب بلا مهلة نحو قام زيد فعمرو إذا كان زيد متقدما وعمرو متأخرا بلا مهلة

-‘‘ ‘ফা’ হরফটি বিলম্বহীন পর্যায়ক্রমে অর্থে ব্যবহৃত হয়। যেমন- قام زيد فعمرو অর্থ যায়েদ দাড়ালো, অতঃপর আমর দাড়ালো। এ উদাহারণটি যায়েদের দাড়ানোর আমরের পূর্বে হবে এবং আমরের দাঁড়ানো বিলম্বহীনভাবে যায়েদের পরে হবে।’’
🔺(হেদায়াতুন্নাহু- ১১৩-১১৪পৃ. কাদীমী কুতুবখানা, করাচী, পাকিস্তান, পরিচ্ছেদ : হরফে আতফ)

৬. আল্লামা কাযি সানাউল্লাহ পানীপথি (রহ) বলেন-

بالفاء الموضوع للتعقيب بلا تراخ

-‘‘(ف) ‘ফা’ অব্যয়টি কোন সময় না নিয়ে অনতিবিলম্বে কোন কাজের পরে অন্য কাজ সম্পাদন করার অর্থে ব্যবহার হয়।’’ (তাফসীরে মাযহারী, ৮/১২৮পৃ.)

এ হাদিসটির সনদ পর্যালোচনাঃ উক্ত হাদিসটি আহলে হাদিসদের তথাকথিত ইমাম আলবানী তার, সহীহুল মিশকাত এ উক্ত হাদিসটিকে ‘‘হাসান’’ বলেছেন। 
🔺(ক. আহলে হাদিস আলবানী, ইরওয়উল গালীল, ৩/১৭৯পৃ. হাদিসঃ ৭৩২, আলবানী, সহিহুল জা‘মে, হাদিসঃ ৬৬৯, সহিহুল মিশকাত, তিনি বলেন সনদটি ‘হাসান')

এমনকি ইমাম জালালুদ্দীন সুয়ূতি তার জামেউস সগীরে ‘হাসান’ বলেছেন, ইবনে হিব্বান তাঁর ‘সহিহ’ গ্রন্থে সহিহ‘র তালিকায় রেখেছেন।

খ. জানাযার পর দোয়া করার বিষয়ে রাসূল (ﷺ)-এর আমল
____________________
খ. জানাযার পর দোয়া করার বিষয়ে রাসূল (ﷺ)-এর আমলঃ

১. বিখ্যাত সিরাতবিদ ইমাম ওয়াকীদী (ওফাত. ২০৭ হি) তার বিখ্যাত সিরাত গ্রন্থে উল্লেখ করেন-

عَبْدُ الْجَبّارِ بْنُ عُمَارَةَ بْنِ عَبْدِ اللهِ بْنِ أَبِي بَكْرٍ..... فَصَلّى عَلَيْهِ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَدَعَا لَهُ، ثُمّ قَالَ: اسْتَغْفِرُوا لِأَخِيكُمْ فَإِنّهُ شَهِيدٌ، دَخَلَ الْجَنّةَ فَهُوَ يَطِيرُ فِي الْجَنّةِ بِجَنَاحَيْنِ مِنْ يَاقُوتٍ حَيْثُ يُشَاءُ مِنْ الْجَنّةِ.

-‘‘হযরত আব্দুল জব্বার ইবনু উমারাহ ইবন্ আব্দুল্লাহ ইবন্ আবি বকর (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত,....... অত:পর রাসূল (ﷺ) হযরত জাফর বিন আবি তালেব (রা) এর জানাযার নামাজ আদায় করলেন এবং তার জন্য দোয়া করলেন। তিনি তাদেরকে আরও বললেন তোমরা তার জন্য ক্ষমা প্রার্থনা কর সে এখন জান্নাতে অবস্থান করছেন........।’’
🔺( ইমাম ওয়াকীদী, কিতাবুল মাগাজী, ২/৭৬২পৃ. দারুল আ‘লামী, বয়রুত, লেবানন, প্রকাশ. ১৪০৯হি.)

২. প্রসিদ্ধ ফকীহ ইমাম কামালুদ্দীন ইবনুল হুমাম (রহ) 🔺(ওফাত.৮৬১ হি) তাঁর ফতোয়ার কিতাবে মুতার যুদ্ধের ঘটনায় উল্লেখ করেন-

عَبْدُ الْجَبَّارِ بْنُ عُمَارَةَ عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ أَبِي بَكْرٍ قَالَا: لَمَّا الْتَقَى النَّاسُ بِمُؤْتَةِ جَلَسَ رَسُولُ اللَّهِ - صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ - عَلَى الْمِنْبَرِ وَكُشِفَ لَهُ مَا بَيْنَهُ وَبَيْنَ الشَّامِ فَهُوَ يَنْظُرُ إلَى مُعْتَرَكِهِمْ، فَقَالَ - عَلَيْهِ الصَّلَاةُ وَالسَّلَامُ -: أَخَذَ الرَّايَةَ زَيْدُ بْنُ حَارِثَةَ فَمَضَى حَتَّى اُسْتُشْهِدَ وَصَلَّى عَلَيْهِ وَدَعَا وَقَالَ: اسْتَغْفِرُوا لَهُ، دَخَلَ الْجَنَّةَ وَهُوَ يَسْعَى، ثُمَّ أَخَذَ الرَّايَةَ جَعْفَرُ بْنُ أَبِي طَالِبٍ فَمَضَى حَتَّى اُسْتُشْهِدَ، فَصَلَّى عَلَيْهِ رَسُولُ اللَّهِ - صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ - وَدَعَا لَهُ وَقَالَ: اسْتَغْفِرُوا لَهُ دَخَلَ الْجَنَّةَ فَهُوَ يَطِيرُ فِيهَا بِجَنَاحَيْنِ حَيْثُ شَاءَ -

-‘‘হযরত আবদুল জাব্বার বিন উমারাহ (রহ) তিনি হযরত আবদুল্লাহ বিন আবি বাকরাহ (রা) থেকে তিনি বলেন-যখন মুসলমানগণ (সাহাবীগণ) মুতার যুদ্ধ করতে ছিলেন। তখন রাসূল (ﷺ) মদিনার মসজিদে মিম্বারে উপবিষ্ট ছিলেন। সেখান থেকে শামদেশ পর্যন্ত পর্দা উঠিয়ে দেয়া হলো। যার ফলে তিনি স্বচক্ষে যুদ্ধক্ষেত্র দেখতে ছিলেন। অতঃপর রাসূল (ﷺ) বললেন, এখন যায়েদ বিন হারেসা (রা) এক হাতে ঝান্ডা নিয়ে যুদ্ধ পরিচালনা করছেন। অতঃপর তিনি বললেন, সে শাহাদাত বরণ করেছেন। নবীজি তাঁর জানাযার নামায পড়লেন এবং তার জন্য দোয়া করলেন এবং বললেন তোমরা তার জন্য ইস্তিগফার অর্থাৎ ক্ষমা প্রার্থনা কর। সে এখন জান্নাতে অবস্থান করে ছুটাছুটি করছেন। তারপর রাসূল (ﷺ) ইরশাদ করেন এখন জাফর বিন আবি তালেবের এক হাতে ঝান্ডা নিয়ে যুদ্ধ পরিচালনা করছেন। সেও শহীদ হয়ে গেলেন; নবীজি তাঁর জানাযার নামায পড়লেন এবং তার জন্য দোয়া প্রার্থনা করলেন; সাহাবীদেরকে বললেন তোমরা তার জন্য ইস্তিগফার ক্ষমা প্রার্থনা কর সে এখন ইয়াকুত ডানায় ভর করে জান্নাতের যেখানে ইচ্ছা সেখানে উড়ে বেড়াচ্ছেন।’’
🔺(ক. আল্লামা ইমাম কামালুদ্দীন ইবনে হুমাম : ফাতহুল ক্বাদীর : কিতাবুয জানাইয : ২/১১৭ পৃ., আল্লামা বদরুদ্দীন আইনী : উমদাদুল ক্বারী : ৮/২২ পৃ., আল্লামা ওয়াকেদী : কিতাবুল মাগাজী : ২/২১০-২১১ পৃ.)

৩. মুতার যুদ্ধে রাসূল (ﷺ) সাহাবীর জানাযার নামাযের পর কী করলেন তা ইমাম বায়হাকী (রহ) সুন্দর করে সহিহ সনদে এভাবে বর্ণনা দিচ্ছেন- 

عَنْ عَاصِمِ بْنِ عُمَرَ بْنِ قَتَادَةَ، أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، قَالَ: حَتَّى اسْتُشْهِدَ فَصَلَّى عَلَيْهِ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَدَعَا لَهُ وَقَالَ اسْتَغْفِرُوا لِأَخِيكُمْ فَإِنَّهُ شَهِيدٌ دَخَلَ الْجَنَّةَ وَهُوَ يَطِيرُ فِي الْجَنَّةِ بِجَنَاحَيْنِ مِنْ يَاقُوتٍ حَيْثُ يَشَاءُ مِنَ الْجَنَّةِ- 

-‘‘হযরত আসিম বিন উমর বিন কাতাদা (রা) বর্ণনা করেন-----তারপর জাফর বিন আবি তালেব (রা) শহীদ হয়ে গেলেন, অত:পর রাসূল (ﷺ) তার জানাযার নামায পড়লেন এবং তার জন্য দোয়া করলেন। তারপর বললেন তোমরা তোমাদের ভাইয়ের জন্য আল্লাহর দরবারে ইস্তিগফার কর, নিশ্চয় সে এখন শহীদ হয়ে জান্নাতে প্রবেশ করেছে এবং ইয়াকুত ডানায় ভর করে জান্নাতের যেখানে ইচ্ছা সেখানে উড়ে বেড়াচ্ছেন।’’
🔺(ইমাম বায়হাকী, দালায়েলুল নবুয়ত, ৪/৩৭৯পৃ. দারুল ফিকর ইলমিয়াহ, বয়রুত, প্রথম প্রকাশ. ১৪০৫ হি.)

৯. বিখ্যাত মুহাদ্দিস ও চার মাযহাবের ইমামের অন্যতম একজন ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল ও ইমাম হাকেম নিশাপুরী (রহ) তাদের হাদিস গ্রন্থে বর্ণনা করেন-

عَنْ إِبْرَاهِيمَ الْهَجَرِيِّ، عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ أَبِي أَوْفَى، قَالَ: تُوُفِّيَتْ بِنْتٌ لَهُ فَتَبِعَهَا عَلَى بَغْلَةٍ يَمْشِي خَلْفَ الْجِنَازَةِ، وَنِسَاءٌ يَرْثِينَهَا، فَقَالَ: يَرْثِينَ، أَوْ لَا يَرْثِينَ، فَإِنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ نَهَى عَنِ الْمَرَاثِي .وَلْتُفِضْ إِحْدَاكُنَّ مِنْ عَبْرَتِهَا مَا شَاءَتْ، ثُمَّ صَلَّى عَلَيْهَا فَكَبَّرَ عَلَيْهَا أَرْبَعًا، ثُمَّ قَامَ بَعْدَ الرَّابِعَةِ قَدْرَ مَا بَيْنَ التَّكْبِيرَتَيْنِ يَسْتَغْفِرُ لَهَا وَيَدْعُو وَقَالَ: كَانَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَصْنَعُ هَكَذَا هَذَا حَدِيثٌ صَحِيحٌ، وَلَمْ يُخَرِّجَاهُ

-‘‘তাবেয়ী হযরত ইব্রাহিম হাজারী (রহ) বলেন, আমি হযরত আব্দুল্লাহ বিন আওফা (রা) যিনি বাইতুর রিদওয়ানে উপস্থিত ছিলেন। তার কন্যার ওফাত হলে তিনি তার মেয়ের কফিনের পিছনে একটি খচ্চরের উপর সাওয়ার হয়ে যাচ্ছেন। তখন মহিলারা কান্না করতে ছিলেন। তিনি তাদেরকে বললেন তোমরা মর্সিয়া করো না, যেহেতু হুজুর (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মর্সিয়া থেকে নিষেধ করেছেন। তবে তোমাদের মধ্যে যে কেউ চায় অশ্রু ঝরাতে পারবে। এরপর জানাযার নামায চারটি তাকবীরের মধ্যে সম্পন্ন করলেন। চতুর্থ তাকবীরের পর, দুই তাকবীরের মধ্যেখানের সম-পরিমাণ দোয়া করতেছিলেন এবং তিনি (সাহাবী) বললেন অনুরূপ হুযুর (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) জানাযায় করতেন।’’ 
🔺(আহমদ : আল-মুসনাদ : ৫/৪৭৪-৪৭৫পৃ. হাদিস : ১৮৩৫১; ইমাম বায্যার : আল-মুসনাদ : ৮/২৮৭পৃ.হাদিস : ৩৩৫৫; ইমাম বায়হাকী : আস-সুনানুল কোবরা : ৪/৭০পৃ. হাদিস : ১৫৮১; ইমাম জালালুদ্দিন সূয়তি : জামিউল জাওয়ামে : ১৪/৪৯৩ পৃ. হাদিস : ১১৫৫৪; ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল : আল-মুসনাদ : হাদিস : ১৮৬০২; ইমাম হাকেম নিশাপুরী : আল-মুস্তাদরাক, হাদিস : ১২৭৭; আল্লামা মুত্তাকী হিন্দি : কানযুল উম্মাল, ১৫/৬৫০পৃ. হাদিস নং : ৪২৪৪৬)

হাদিসের সারমর্মঃ এ হাদিসে দ্বারা দুটি বিষয় প্রমাণিত হয় যে, স্বয়ং আল্লাহর হাবীব (ﷺ) নিজে জানাযার নামাযের পর দোয়া করেছেন এবং জান্নাতের সার্টিফিকেট প্রাপ্ত সাহাবী আওফা (رضي الله عنه) জানাযার পর দোয়া করেছেন। উল্লেখ্য যে, ثُمَّ (ছুম্মা) শব্দ দ্বারা প্রমাণ হয় দাঁড়িয়ে দোয়া নামাযের মধ্যে ছিল না, বরং নামাযের পরপরই ছিল। ইমাম হাকিম নিশাপুরী (রহ) হাদিসটি সংকলন করে বলেন- 

هَذَا حَدِيثٌ صَحِيحٌ، وَلَمْ يُخَرِّجَاهُ 

-‘‘হাদিসটির সনদ সহিহ বা বিশুদ্ধ। 
🔺(ইমাম হাকেম নিশাপুরী : আল-মুস্তাদরাক, হাদিস : ১২৭৭)

উক্ত হাদিসটিকে ইমাম জালাল উদ্দিন সুয়ূতি (রহ)ও তার গ্রন্থে সহিহ বলে মেনে নিয়েছেন।
🔺(সুয়ূতি : জামিউস সগীর, ২/৫৬০ পৃ. হাদিস : ৯৩৮৫)

১১. বিখ্যাত ইমাম কাসানী (রহ) হাদিস সংকলন করেন-

رُوِيَ ্রأَنَّ النَّبِيَّ - صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ - صَلَّى عَلَى جِنَازَةٍ فَلَمَّا فَرَغَ جَاءَ عُمَرُ وَمَعَهُ قَوْمٌ فَأَرَادَ أَنْ يُصَلِّيَ ثَانِيًا، فَقَالَ لَهُ النَّبِيُّ: - صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ - الصَّلَاةُ عَلَى الْجِنَازَةِ لَا تُعَادُ، وَلَكِنْ اُدْعُ لِلْمَيِّتِ وَاسْتَغْفِرْ لَهُ-

-‘‘বর্ণিত হয়েছে একবার রাসূল (ﷺ) একটা যানাযার নামায শেষ করলেন। এরপর হযরত ওমর (রা) উপস্থিত হলেন, তার সাথে কিছু লোকও ছিল। তিনি দ্বিতীয় বার যানাযা পড়তে চাইলেন। তখন রাসূল (ﷺ) তাকে বললেন যানাযার নামায দ্বিতীয় বার পড়া যায় না। তবে তুমি মৃতব্যক্তির জন্য দু’আ করতে পার এবং তার জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করো।’’ 
🔺(আল্লামা ইমাম কাসানী : বাদাঈ সানায়ে, ৩/৩১১পৃ.)

*জানাযার নামাযের পর রাসূল (ﷺ) নিজেই বিভিন্ন দোয়া পড়তেন
____________________
*জানাযার নামাযের পর রাসূল (ﷺ) নিজেই বিভিন্ন দোয়া পড়তেনঃ

১২. উপরের বিভিন্ন হাদিসে আমরা দেখেছি রাসূল (ﷺ) নিজে দোয়া করেছেন এবং সাহাবীদেরকে দোয়া করতে উৎসাহ প্রদান করেছেন। এখন কিছু হাদিসে পাক উল্লেখ করবো নবীজি বাস্তব জীবনে জানাযার নামাযের পর নিজে বিভিন্ন শব্দে দোয়া করে সাহাবীদেরকে শিক্ষাও দিয়েছেন। ইমাম আবু দাউদ (রহ) একটি হাদিসে পাক উল্লেখ করেছেন-

عَنْ وَاثِلَةَ بْنِ الْأَسْقَعِ، رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ قَالَ: صَلَّى بِنَا رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَلَى رَجُلٍ مِنَ الْمُسْلِمِينَ فَسَمِعْتُهُ يَقُولُ:اللَّهُمَّ إِنَّ فُلَانَ ابْنَ فُلَانٍ فِي ذِمَّتِكَ، وَحَبْلِ جِوَارِكَ، فَقِهِ مِنْ فِتْنَةِ الْقَبْرِ وَعَذَابِ النَّارِ، وَأَنْتَ أَهْلُ الْوَفَاءِ وَالْحَقِّ، اللَّهُمَّ اغْفِرْ لَهُ وَارْحَمْهُ، إِنَّكَ أَنْتَ الْغَفُورُ الرَّحِيمُ 

-‘‘হযরত ওয়াছিলা ইবনে আসকা (রা) হতে বর্ণিত রাসূল (ﷺ) আমাদেরকে নিয়ে এক ব্যক্তির উপর জানাযার নামায পড়লেন। অতঃপর (জানাযার পর) আমি শুনলাম তিনি মহান আল্লাহর দরবারে ঐ ব্যক্তির জন্য দোয়া করলেন। এভাবে হে আল্লাহ! অমুকের ছেলে অমুক তোমার জিম্মায় ও তোমার আশ্রয়ে তাকে তুমি কবরের পরীক্ষা হতে রক্ষা কর। দোযখের আযাব হতে বাঁচাও। তুমি ওয়াদা ও হক পূরণকারী। অতএব তুমি মাফ কর, তুমি ক্ষমাশীল ও মেহেরবান।’’
🔺(আবু দাউদ, আস্-সুনান, ৩/২১১পৃ. হাদিস নং.৩২০২, আলবানীর তাহক্বীক সূত্রে সহিহ, সুনানে ইবনে মাযাহ, ১/৪৮০পৃ. হাদিস নং. ১৪৯৯, তাবরানী, কিতাবুদ দোয়া, ১/৩৫৯পৃ. হাদিস নং.১১৮৯, ও মু‘জামুল কাবীর, ২২/৮৯পৃ. হাদিস নং. ২১৪, ও মুসনাদে শামিয়্যীন, ৩/২৫২পৃ. হাদিস নং. ২১৯৪, বায়হাকী, দাওয়াতুল কাবীর, ২/২৮৮পৃ. হাদিস নং. ৬৩১,)

১৩. আরেকটি হাদিসে পাক লক্ষ করুন ইমাম বায়হাকী (রহ) সংকলন করেছেন-

عَنْ سَعِيدِ بْنِ الْمُسَيِّبِ، عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، رَضِيَ اللهُ عَنْهُ، أَنَّهُ صَلَّى عَلَى الْمَنْفُوسِ، ثُمَّ قَالَ: " اللهُمَّ أَعِذْهُ مِنْ عَذَابِ الْقَبْرِ-

-‘‘বিখ্যাত তাবেয়ী সাঈদ ইবনুল মুসায়্যিব (রহ) তিনি হযরত আবু হুরায়রা (রা) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন রাসূল (ﷺ) জনৈক ব্যক্তির উপর জানাযার নামায পড়লেন। তারপর বললেন হে আল্লাহ! এ ব্যক্তিকে কবর আযাব হতে রক্ষা কর।’’ 
🔺(ইমাম বায়হাকী, আস্-সুনানিল কোবরা, ৪/১৪পৃ. হাদিস নং. ৬৭৯৩, প্রাগুক্ত., ও মা‘রিফাতুল সুনানি ওয়াল আছার, ৫/২৪৮পৃ. হাদিস নং. ৭৪১০, ও এছবাত আযাবুল কুবুর, ১/১০৫পৃ. হাদিস নং. ১৬০ ও ১৬১)

সম্মানিত পাঠকবৃন্দ! উল্লেখ্য যে, ثُمَّ (ছুম্মা) শব্দ দ্বারা প্রমাণ হয় দাঁড়িয়ে দোয়া নামাযের মধ্যে ছিল না, বরং নামাযের পরপরই ছিল।

গ. জানাযার নামাযের পর দোয়া খলিফাদের সুন্নত
____________________
গ. জানাযার নামাযের পর দোয়া খলিফাদের সুন্নতঃ

ইসলামের চতুর্থ খলিফার আমল দেখুন-

عَنِ الْمُسْتَظِلِّ، أَنَّ عَلِيًّا رَضِيَ اللهُ عَنْهُ: صَلَّى عَلَى جِنَازَةٍ بَعْدَ مَا صُلِّيَ عَلَيْهَا

-‘‘হযরত মুসতাযিল ইবনে হুসাইন (রা) বর্ণনা করেন, নিশ্চয়ই আলী (রা) এক জানাযার নামায আদায় করেন অতঃপর আবার তার জন্যে দোয়া করেন।’’
🔺(বায়হাকী, আস-সুনানিল কোবরা, ৪/৭৪পৃ. হাদিস নং.৬৯৯৬)

ঘ. জানাযার নামাযের পর দোয়া করা সাহাবীদের সুন্নত
____________________
ঘ. জানাযার নামাযের পর দোয়া করা সাহাবীদের সুন্নতঃ

সম্মানিত পাঠকবৃন্দ! আমরা এখন অনুসন্ধান করবো জানাযার নামায সমাপ্ত হলে সাহাবীরা দোয়া করতেন, এমন কোন আমল পাওয়া যায় কিনা।

عَنْ عُبَيْدِ اللَّهِ بْنِ عُمَرَ، عَنْ نَافِعٍ قَالَ: كَانَ ابْنُ عُمَرَ إِذَا انْتَهَى إِلَى جِنَازَةٍ وَقَدْ صُلِّيَ عَلَيْهَا دَعَا وَانْصَرَفَ وَلَمْ يُعِدِ الصَّلَاةَ-

-‘‘(১) বিশিষ্ট তা’বেয়ী না’ফে (রহ) বর্ণনা করেন, হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে উমর (রা) তিনি যদি কোনো জানাযায় উপস্থিত হয়ে দেখতেন যে, সালাতুল জানাযা আদায় করা হয়ে গেছে, তাহলে তিনি (আদায় কৃত জানাযার) পর দোয়া করে ফিরে আসতেন, পুনরায় সালাত (জানাযা) আদায় করতেন না।’’
🔺(ইমাম আব্দুর রাযযাক, আল-মুসান্নাফ : ৩/৫১৯ পৃ. হাদিস, ৬৫৪৫, মুফতি আমিমুল ইহসান, ফিকহুস-সুনানি ওয়াল আছার, ১/৪০০পৃ. হাদিসঃ ৩১৪, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, তিনি বলেন হাদিসটির সনদ সহীহ)

 মুফতী আমিমুল ইহসান (রহ) বলেন এ হাদিসের সনদটি সহিহ।’’
🔺(মুফতি আমিমুল ইহসান, ফিকহুস-সুনানি ওয়াল আছার :- ১/৪০০পৃ. হাদিসঃ ৩১৪, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, তিনি বলেন হাদিসটির সনদ সহীহ)

২. ইমাম বায়হাকী (রহ) হাদিস সংকলন করেন-

عَنْ عَمْرِو بْنِ مُرَّةَ، عَنْ خَيْثَمَةَ، أَنَّ أَبَا مُوسَى: صَلَّى عَلَى الْحَارِثِ بْنِ قَيْسٍ الْجُعْفِيِّ بَعْدَ مَا صُلِّيَ عَلَيْهِ أَدْرَكَهُمْ بَالْجَبَّانِ

-‘‘হযরত আমর বিন মুররাতা (رحمة الله) তিনি তাবেয়ী হযরত খায়ছামা (রহ) হতে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, নিশ্চয় আবু মূসা আশ‘আরী (রা) হযরত হারেস ইবনে কায়েছ আল-জুফিয়ী (রা)-এর জানাযার নামায আদায় করলেন, পরে তাঁর জন্যে দোয়া করেন।’’
🔺(বায়হাকী, আস-সুনানিল কোবরা, ৪/৭৪পৃ. হাদিস নং.৬৯৯৭)

🖋হাদিস (৩)ঃ শামসুল আয়িম্মা ইমাম সারখসী (রহ) 🔺(ওফাত.৪৮৩হি.) তাঁর বিখ্যাত ‘মবসুত শরীফে’ “মাইয়্যাতের গোসল” শীর্ষক অধ্যায়ে একটি হাদিস সংকলন করেন-

مَا رُوِيَ عَنْ ابْنِ عَبَّاسٍ - رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمَا - وَابْنِ عُمَرَ - رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ - أَنَّهُمَا فَاتَتْهُمَا الصَّلَاةُ عَلَى جِنَازَةٍ فَلَمَّا حَضَرَا مَا زَادَا عَلَى الِاسْتِغْفَارِ لَهُ وَعَبْدُ اللَّهِ بْنُ سَلَامٍ - رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ - فَاتَتْهُ الصَّلَاةُ عَلَى جِنَازَةِ عُمَرَ فَلَمَّا حَضَرَ قَالَ: إنْ سَبَقْتُمُونِي بِالصَّلَاةِ عَلَيْهِ فَلَا تَسْبِقُونِي بِالدُّعَاءِ لَهُ. 

-‘‘হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে উমর (রা) এবং হযরত ইবনে আব্বাস (রা) থেকে বর্ণিত আছে উভয়ে এক জানাযায় গিয়ে জানাযার নামায না পেয়ে মায়্যিতের জন্য ইস্তিগফার পড়লেন বা দোয়া করলেন। একদা হযরত উমর (রা) এর জানাযা যখনই শেষ হয়ে গেল তখন হযরত আবদুল্লাহ বিন সালাম (রা) আসলেন তিনি বললেন হে আমার সাথীরা ! তোমরা আমাকে নামাজে মাসবুক করেছো তবে জানাযার পর দোয়াতে আমাকে মাসবুক (বাদ দিয়ে) করো না (এসো আমরা সবাই মিলে দোয়া করি)।’’ 
🔺(ইমাম সরখ্সী , আল-মবসুত, ২/৬৭পৃ.,আল্লামা আবু-বকর বিন মাসউদ কাসানী, বাদায়ে সানায়ে, ১/৩১১পৃ. দারুল কুতুব ইলমিয়াহ, বয়রুত, লেবানন)

জানাযার নামাযের পর দোয়ার বিষয়ে ফোকাহায়ে কেরামের দলিল
____________________
জানাযার নামাযের পর দোয়ার বিষয়ে ফোকাহায়ে কেরামের দলিলঃ

ইমাম আযম (রহ)সহ বিখ্যাত মুজতাহিদ ইমামগণ কী বলেছেন?

বিখ্যাত ইমাম শা‘রানী (রহ) লিখেন-

ومن ذلك قول أبى حنيفة : أن التعزية سنة قبل الدفن لا بعد وبه قال الثورى مع قول الشافعى وأحمد أنها تسن قبله وبعد الى ثلاثة ايام ......ان شدة الحزن إنما تكون قبل الدفن فيعزى ويدعى له بتخفيف الحزن-

-‘‘আর এমনিভাবে ইমাম আবু হানিফা (রহ) এর বক্তব্য হচ্ছে : দাফনের পূর্বে শোক প্রকাশ করা সুন্নাত, পরে নয়। তারই সাথে সাথে ইমাম সুফিয়ান সাওরী (রহ) এবং তাঁর সাথে ইমাম শাফেয়ী (রহ) ও ইমাম আহমদ (রহ) বলেছেন যে, নিশ্চয় দাফনের পূর্বেই পেরেশানী বেশী থাকে। ফলে সে সময় মৃত ব্যক্তির জন্য শোক প্রকাশ করবে ও দোয়া করবে।’’ 
🔺(ইমাম শা‘রানী, মিযানুল কোবরা, ১/১৫৩পৃ. দারুল কুতুব ইলমিয়্যাহ, বয়রুত, লেবানন)

এ ইবারত থেকে প্রমাণিত হল যে দাফনের পূর্বে (মানে জানাযার পর) দোয়া করা জায়েয এটা স্বয়ং ইমাম আযমেরই অভিমত।

জানাযার পরবর্তী দোয়া কবুলযোগ্য
____________________
জানাযার পরবর্তী দোয়া কবুলযোগ্যঃ

জানাযার নামায যেহেতু ফরয আর আমরা এখন দেখবো যে ফরয নামাযের কবুল হওয়ার বিষয়ে নবীজি কী বলেছেন। হযরত আবু উমামা (রা) বর্ণিত, তিনি বলেন-

عَنْ أَبِي أُمَامَةَ، قَالَ:قِيلَ يَا رَسُولَ اللَّهِ: أَيُّ الدُّعَاءِ أَسْمَعُ؟ قَالَ: جَوْفَ اللَّيْلِ الآخِرِ، وَدُبُرَ الصَّلَوَاتِ المَكْتُوبَاتِ.: هَذَا حَدِيثٌ حَسَنٌ.-

-‘‘রাসূল (ﷺ) এর কাছে জানতে চাওয়া হল, কোন সময়ের দোয়া সবচেয়ে বেশি কবুল হয়? রাসূল (ﷺ) উত্তরে বলেন, রাতের শেষ অংশে (তাহাজ্জুতের সময়) ও ফরয নামাজের পরবর্তী দোয়া।’’ 
🔺(ক. তিরমিযি : আস-সুনান : ৫/৫২৬ পৃ. হাদিস : ৩৪৯৯, নাসাঈ : আস-সুনান : ৯/৪৭পৃ. হাদিস : ৯৮৫৬ ও আমালুল ইয়াউম ওয়াল লাইলা, ১/১৮৬পৃ. হাদিসঃ ১০৮, মুনযিরী : তারগীব ওয়াত তারহীব : ২/৪৮৬ পৃ. হাদিস : ২৫৫০, বায়হাকী, দাওয়াতুল কাবীর, ২/২৩৮পৃ. হাদিসঃ ৬৭০, ইবনে আছির, জামিউল উসূল, ৪/১৪১পৃ. হাদিস : ২০৯৮, আসকালানী : ফাতহুল বারী, ১২/৪১৮ পৃ. হাদিস : ৬৩৩০, তিনি বলেন হাদিসটি “হাসান”,ও তঁার অপর গ্রন্থ দিরায়া ফি তাখরীজে আহাদিসুল হিদায়া, ১/২২৫পৃ. হাদিসঃ ২৯১, যায়লাঈ : নাসিবুর রাঈয়াহ : ২/২৩৫পৃ. তিনি ইমাম তিরিমিযির ‘হাসান’ বলা মতকে মেনে নিয়েছেন, খতিব তিবরিযী : মিশকাতুল মাসাবীহ : কিতাবুস সালাত : ১/১৯৬ পৃ. হাদিস : ৯৬৮)

হযরত কা‘ব (রা) এর সূত্রে ইমাম আব্দুর রাযযাক (রব) আরেকটি বিশুদ্ধ সনদ সংকলন করেছেন। 
🔺(ইমাম আব্দুর রাযযাক : আল-মুসান্নাফ : ২/৪২৪ পৃ. হাদিস : ৩৯৪৯ )

তাই বুঝতে পারলাম যে (জানাযার নামায যেহেতু ফরয তাই তার) পরবর্তী দোয়া কবুলযোগ্য, যা প্রিয় নবির হাদিস শরীফ দ্বারা প্রমাণিত।

আহলে হাদিস ও দেওবন্দী ভাইদের প্রতি আমার আকুল আবেদন
____________________
আহলে হাদিস ও দেওবন্দী ভাইদের প্রতি আমার আকুল আবেদনঃ

সম্মানিত পাঠকবৃন্দ! জানাযার নামাযের পর দোয়া করাকে কিছু গন্ডমূর্খ আলেম মাকরুহে তাহরীমী বলে থাকেন; অথচ হানাফী সকল বিজ্ঞ ফকিহগণ বলেছেন যে কোন কিছুকে মাকরুহ বলতে হলে হাদিস বা দলিলে খাছ লাগবে। হানাফী মাযহাবের প্রতিষ্ঠাতা ইমাম আযম আবু হানিফা (রহ) বলে গেছেন-

قَالَ أَبُو مُحَمَّدِ بْنُ حَزْمٍ: جَمِيعُ الْحَنَفِيَّةِ مُجْمِعُونَ عَلَى أَنَّ مَذْهَبِ أَبِي حَنِيفَةَ أَنَّ ضَعِيفَ الْحَدِيثِ أَوْلَى عِنْدَهُ مِنَ الْقِيَاسِ وَالرَّأْيِ.

-‘‘ইমাম আবু মুহাম্মদ ইবনে হাযম (রহ) বলেন, হানাফি মাযহাবের সকল ইমামগণ একমত পোষণ করেছেন যে কোন আলেমের কিয়াস হতে দ্বঈফ সনদের উপর আমল করা উত্তম।’’
🔺(ইমাম যাহাবী, তারিখুল ইসলাম, ৩/৯৯০পৃ. ক্রমিক নং. ৪৪৫, দারুল ফিকর ইলমিয়্যাহ, বয়রুত, লেবানন, প্রকাশ. ২০০৩ইং.)

 ইমাম ইবনে আবেদীন শামী (রহ) বলেন-

قَالَ فِي الْبَحْرِ: وَهُوَ مُسْتَحَبٌّ وَلَا يَلْزَمُ مِنْ تَرْكِ الْمُسْتَحَبِّ ثُبُوتُ الْكَرَاهَةِ، إذْ لَا بُدَّ لَهَا مِنْ دَلِيلٍ خَاصٍّ

-‘‘বাহার গ্রন্থকার (রহ) বলেন, আর এটি মুস্তাহাব; আর মুস্তাহাব তরক করলে মাকরুহ (তাহরীমী) প্রমাণিত হওয়া অপরিহার্য নয়। তখনই প্রমাণিত হবে যখন কোন বিশেষ দলিল পাওয়া যাবে।’’
🔺(ইবনে আবেদীন শামী, ফাতোয়ায়ে শামী, ২/১৭৭পৃ. ঈদের নামাযের অধ্যায়, ও ১/৬৫৩পৃ. নামায অধ্যায়, ১/১২৪পৃ. কিতাবুল ওজু)

তাই তাদের এমন কোন হাদিস নেই যার দ্বারা প্রমাণিত হয় যে এ কারণে জানাযার নামাযের দোয়া করা মাকরুহ। ইমাম ইবনে আবেদীন শামী (রহ) বলেন-

أَنَّ الْمُخْتَارَ أَنَّ الْأَصْلَ الْإِبَاحَةُ عِنْدَ الْجُمْهُورِ مِنْ الْحَنَفِيَّةِ وَالشَّافِعِيَّةِ

-‘‘ইমাম শাফেয়ী (رحمة الله) ও ইমাম আবু হানিফা (رحمة الله) এবং জমহুর ইমামদের পছন্দনীয় মতামত হল প্রত্যেক কিছুই বৈধ (যে পর্যন্ত না কোন দলিল দ্বারা নিষেধ করা হয়)।’’ 
🔺(ইবনে আবেদীন শামী, ফাতোয়ায়ে শামী, ১/১০৫পৃ. কিতাবুল ওজু অধ্যায়)

তাই আমরা করি তা যায়েজ বলেই; আর আপনারা মাকরুহ বা নাজায়েয বলেছে তা কোরআন সুন্নাহের আলোকে প্রমাণ পেশ করুন।

ইসলামী শরীয়তে দোয়া কি ইবাদত নয়?
____________________
ইসলামী শরীয়তে দোয়া কি ইবাদাত নয়?

অনেকে দোয়াকে ইবাদত মনে করতেই রাজি নয়; তাই বারবার তাদের দোয়া করলে তাদের নাকি অসুবিধা হয়। কিন্তু আমাদের মনে রাখা উচিত যে, আমাদের ধারণাটি কোরআন সুন্নাহের আলোকে কতটুকু সঠিক। হযরত আবু হুরায়রা (রা) হতে বর্ণিত, রাসূল (ﷺ) ইরশাদ করেন- فَأَكْثِرُوا الدُّعَاءَ-‘‘অতঃপর তোমরা বেশী বেশী করে দোয়া কর।’’ 
🔺(ইমাম আহমদ, আল-মুসনাদ, ১৫/২৭৪পৃ. হাদিস নং. ৯৪৬১, মুসলিম, আস্-সহিহ, ১/৩৫০পৃ. হাদিস নং. ৪৮২, আবু দাউদ, আস্-সুনান, ১/২৩১পৃ. হাদিস নং. ৮৭৫, নাসাঈ, আস্-সুনান, ১/২২৬পৃ. হাদিস নং. ১১৩৭, ও আস্-সুনানিল কোবরা, ১/৩৬৪পৃ. হাদিস নং. ৭২৭, ইবনে হিব্বান, আস্-সহিহ, ৫/২৫৪পৃ. হাদিস নং. ১৯২৮, বায়হাকী, আস্-সুনানিল কোবরা, ২/১৫৮পৃ. হাদিস নং. ২৬৮৬)

সম্মানিত পাঠকবৃন্দ! আপনারা কী রাসূল (ﷺ)-এর আদেশ মানবেন না সলিমুদ্দীন মোল্লার? এটি আপনাদের বিবেকের আদালতেই রইল। এবার আসি 

عَنْ أَنَسِ بْنِ مَالِكٍ، عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: الدُّعَاءُ مُخُّ العِبَادَةِ-

-‘‘হযরত আনাস বিন মালিক(রা) হতে বর্ণিত, রাসূল (ﷺ) ইরশাদ করেন , দোয়া হল ইবাদতের মগজ স্বরূপ।’’ 
🔺(ক. ইমাম তিরমিযী : আস সুনান : ৫/৪৫৬ : কিতাবুত দাওয়াত, হাদিস : ৩৩৭১, ইমাম জালালুদ্দীন সূয়তী : জামেউস সগীর : ১/৬৫৪ : হাদিস : ৪২৫৬, সূয়তী, জামেউল আহাদিস : ৪/৩৬০পৃ. হাদিস : ১২১৬০, ইমাম দায়লামী : আল ফিরদাউস : ২/২২৪ পৃ: হাদিস : ৩০৮৭, ইমাম হাকেম তিরমিযী : নাওয়ারিদুল উসূল : ২/১১৩ পৃ:, ইমাম মুনযির : তারগিব আত তারহীব : ২/৩১৭ পৃ: হাদিস : ২৫৩৪, আল্লামা ইবনে রজব : জামেউল উলূম ওয়াল হিকাম : ১/১৯১ পৃ:, খতিব তিবরিযী : মিশকাত : কিতাবুত দাওয়াত : ২/৪১৯ পৃ. হাদিস : ২২৩১)

এ হাদিসটি ‘হাসান’ পর্যায়ের। 
🔺(এ বিষয়ে বিস্তারিত জানতে আমার লিখিত ‘‘প্রমাণিত হাদিসকে জাল বানানোর স্বরূপ উন্মোচন’’ এর ১ম খন্ড দেখুন আশা করি এ হাদিসের সঠিক সিদ্ধান্ত আপনাদের সঠিক বিষয়টি বুঝে আসবে)

আরেকটি হাদিসে পাক লক্ষ্য করুন-

عَنْ النُّعْمَانِ بْنِ بَشِيرٍ، عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: الدُّعَاءُ هُوَ العِبَادَةُ- وقال الترمذىهَذَا حَدِيثٌ حَسَنٌ صَحِيحٌ قال الحاكم إسناده صحيح-

-‘হযরত নু‘মান বিন বশির(রা) হতে বর্ণিত রাসূল (ﷺ) ইরশাদ করেন : দোয়া হলো একটি ইবাদত।’’ 
🔺(ক. ইমাম আবু দাউদ : আস-সুনান : কিতাবুস-সালাত : ২/৭৬ পৃ. হাদিস : ১৪৭৯, ইমাম তিরমিযী : আস-সুনান : ৪/২৭৯ পৃ. হাদিস : ৪০৪৯, ইবনে মাজাহ : আস-সুনান : ২/১২৫ পৃ. হাদিস : ৩৮২৮, ইবনে হিব্বান : আস-সহীহ : ৩/১৭২ পৃ. হাদিস : ৮৯০, ইমাম হাকেম, আল মুস্তাদরাকে : ২/৫০ : হাদিস : ১৮০২, ইমাম তায়লসী : আল-মুসনাদ : ১/১৮০ পৃ. হাদিস : ৮০১, খতিব তিবরিযী : মেশকাত : কিতাবুত দাওয়াত : ২/৪১৯ পৃ. হাদিস : ২২৩০)

উক্ত হাদিসটিকে ইমাম হাকিম নিশাপুরী ও সুয়ূতি তাঁদের স্ব-স্ব গ্রন্থে সহিহ বলেছেন। এ ব্যাপারে হযরত আবু হুরায়রা (রা) হতে বর্ণিত, أشْرَفُ الْعِبَادَةِ الدُّعاءُ -‘‘রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ) ইরশাদ ফরমান শ্রেষ্ঠ ইবাদাত হলো দোয়া।’’
🔺(ইমাম বুখারী, আদাবুল মুফরাদাত, ১/৬৬পৃ. হাদিসঃ ৭১৩, মুত্তাকী হিন্দী, কানযুল উম্মাল, ২/৬২পৃ. হাদিস : ৩১১৫)

 তাই বিরুদ্ধবাদীদেরকে বলবো যে, আপনাদের প্রতি অনুরোধ করবো মনগড়া ফাতওয়া বাতিল করে সহিহ হাদিসের এবং মাযহাবের ইমামের ফাতওয়াকে মেনে নিন এবং দুনিয়া ও আখিরাতে মৃত ব্যক্তিসহ নিজে কামিয়াবী হাসিল করুন। কেননা রাসূল (ﷺ)-এর সুন্নাহের বিরোধীর পরিণাম ভয়াবহ। হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে উমর (রা) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন- مَنْ خَالَفَ السُّنَّةَ كَفَرَ -‘‘যে আমার নবির সুন্নাতের বিরোধীতা করবে সে কাফির।’’ 
🔺(ইমাম আব্দুর রাযযাক, আল-মুসান্নাফ, ২/৫১৯পৃ. হাদিস নং. ৪২৮১, বায়হাকী, আস্-সুনানিল কোবরা, ৩/২০১পৃ. হাদিস নং. ৫৪১৭, তাবরানী, মু‘জামুল কাবীর, ১৩/২৬০পৃ. হাদিস নং. ১৪০১০, ও ১৩/২৯৪পৃ. হাদিস নং. ১৪০৭২, ও ১৪০৭৩ ও ১৪০৭৪, হায়সামী, মাযমাউয যাওয়াইয, ২/১৫৪পৃ. হাদিস নং. ২৯৩৬, বায্যার, আল-মুসনাদ, ১২/২২২পৃ. হাদিস নং. ৫৯২৯, ইমাম তাহাবী, শরহে মা‘আনীল আছার, ১/৪২২পৃ. হাদিস নং. ২৪৬২)

জানাযার নামাযের পর দোয়ার বিষয়ে বিস্তারিত জানতে আমার লিখিত ‘‘হাদিসের আলোকে জানাযার নামাযের পর দোয়ার বিধান’’ দেখুন।

রাসূল (ﷺ)-এর নাম মোবারক শুনে দুই বৃদ্ধাঙ্গুলিতে চুমু খাওয়ার বিধান
____________________

ষষ্ঠ অধ্যায়ঃ-রাসূল (ﷺ)-এর নাম মোবারক শুনে দুই বৃদ্ধাঙ্গুলিতে চুমু খাওয়ার বিধানঃ

* এ ব্যাপারে হযরত আদম (عليه السلام) এর আমলঃ

বিখ্যাত মুফাস্সির আল্লামা ইসমাঈল হাক্কী (রহ) তাঁর উল্লেখযোগ্য তাফসীর তাফসীরে ‘রুহুল বায়ানে’ লিখেন-

وفي قصص الأنبياء وغيرها أن آدم عليه السلام اشتاق إلى لقاء محمد صلى الله عليه وسلم حين كان في الجنة فأوحى الله تعالى إليه هو من صلبك ويظهر فى آخر الزمان فسأل لقاء محمد صلى الله عليه وسلم حين كان في الجنة فأوحى الله تعالى اليه فجعل الله النور المحمدي فى إصبعه المسبحة من يده اليمنى فسبح ذلك النور فلذلك سميت تلك الإصبع مسبحة كما فى الروض الفائق. او اظهر الله تعالى جمال حبيبه فى صفاء ظفري ابهاميه مثل المرآة فقبل آدم ظفري إبهامه ومسح على عينيه فصار أصلا لذريته فلما اخبر جبرائيل النبي صلى الله عليه وسلم بهذه القصة قال عليه السلام (من سمع اسمى فى الاذان فقبل ظفري ابهامه ومسح على عينيه لم يعم ابدا 

-‘‘কাসাসুল আম্বিয়া কিতাবে বর্ণিত আছে যে, হযরত আদম (عليه السلام) জান্নাতে অবস্থানকালে মহানবি হযরত মুহাম্মদ (ﷺ)‘র সাথে সাক্ষাতের জন্যে আগ্রহ প্রকাশ করেন। অত:পর আল্লাহ তা‘য়ালা তাঁর নিকট ওহী প্রেরণ করেন যে, হে আদম! তিনি তোমার পৃষ্ঠ হতে শেষ যামানায় প্রকাশ হবেন। তা শুনার পর তিনি জান্নাতে অবস্থানকালে আল্লাহর কাছে প্রার্থনা জানালেন। বিনিময়ে আল্লাহ তা‘য়ালা ওহী প্রেরণ করলেন, যে নূরে মুহাম্মদী (ﷺ) তোমার ডান হাতের শাহাদাত আঙ্গুলীর মধ্যে স্থানান্তরিত করেছি, তখন সে অঙ্গ হতে তাসবীহ পাঠ আরম্ভ হলো। এজন্যই এই আঙ্গুলকে তাসবীহ পাঠকারী আঙ্গুল বলা হয়। যেমন ‘রওযাতুল ফায়েক’ কিতাবেও বর্ণিত আছে, অথবা আরেক বর্ণনায় রয়েছে, আল্লাহ তা‘য়ালা আপন হাবীব (ﷺ) এর সৌন্দর্য প্রকাশ করলেন দুই বৃদ্ধাঙ্গুলীর উপর যেভাবে আয়নাতে দেখা যায়। তখন আদম (عليه السلام) দুই বৃদ্ধাঙ্গুলি চুম্বন করে স্বীয় চোখের উপর মালিশ করলেন। এটি দলীল হিসেবে প্রমাণিত হলো যে, তাঁর সন্তানাদীর জন্য। অতঃপর জিবরাঈল (আ) এই ঘটনা হুযুর (ﷺ) কে জানালেন। হুযুর (ﷺ) বললেন, যেই ব্যক্তি আযানের মধ্যে আমার নাম মোবারক শুনে দুই বৃদ্ধাঙ্গুলী চুম্বন করবে আর চোখে মালিশ করবে, সে কখনো অন্ধ হবে না।’’
🔺(ক.আল্লামা ইসমাঈল হাক্কী : তাফসীরে রুহুল বয়ান : ৭/২২৯ : সূরা মায়েদা আয়াত : ৫৭ নং এর ব্যাখ্যা, আবদুর রহমান ছাফুরী, নুযাহাতুল মাযালিস, ২/৭৪পৃ.)

মূসা (عليه السلام)-এর যামানায় এর আমল
____________________
মূসা (আ.)-এর যামানায় এর আমলঃ

حَدَّثَنَا عَبْدُ اللهِ بْنُ مُحَمَّدِ بْنِ جَعْفَرٍ، ثنا أَبُو بَكْرٍ الدَّيْنُورِيُّ الْمُفَسِّرُ، ثنا مُحَمَّدُ بْنُ أَيُّوبَ الْعَطَّارُ، ثنا عَبْدُ الْمُنْعِمِ بْنُ إِدْرِيسَ، عَنْ أَبِيهِ، عَنْ جَدِّهِ وَهْبٍ قَالَ: كَانَ فِي بَنِي إِسْرَائِيلَ رَجُلٌ عَصَى اللهَ مِائَتَيْ سَنَةٍ ثُمَّ مَاتَ، فَأَخَذُوا بِرِجْلِهِ فَأَلْقُوهُ عَلَى مِزْبَلَةٍ، فَأَوْحَى اللهُ إِلَى مُوسَى عَلَيْهِ السَّلَامُ أَنِ اخْرُجْ فَصَلِّ عَلَيْهِ. قَالَ: يَا رَبِّ، بَنُو إِسْرَائِيلَ شَهِدُوا أَنَّهُ عَصَاكَ مِائَتَيْ سَنَةٍ، فَأَوْحَى اللهُ إِلَيْهِ: هَكَذَا كَانَ، إِلَّا أَنَّهُ كَانَ كُلَّمَا نَشَرَ التَّوْرَاةَ وَنَظَرَ إِلَى اسْمِ مُحَمَّدٍ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَبَّلَهُ وَوَضَعَهُ عَلَى عَيْنَيْهِ، وَصَلَّى عَلَيْهِ، فَشَكَرْتُ ذَلِكَ لَهُ، وَغَفَرْتُ ذُنُوبَهُ، وَزَوَّجْتُهُ سَبْعِينَ حَوْرَاءَ-    

-‘‘হযরত ওয়াহাব ইবনে মুনাব্বাহ (রা) বলেন, বনী ইসরাঈলের মধ্যে এক ব্যক্তি ছিল অত্যন্ত পাপী, যে ২০০ বছর পর্যন্ত আল্লাহর নাফরমানী করেছে। যখন সে মৃত্যুবরণ করে মানুষেরা তাকে এমন স্থানে নিক্ষেপ করল, যেখানে আবর্জনা ফেলা হতো। তখন হযরত মুসা (আ) এর প্রতি ওহী এলো যে, লোকটিকে ওখান থেকে তুলে যেন তার ভালভাবে জানাযার নামায পড়ে তাঁকে দাফন করা হয়। হযরত মুসা (আ) আরজ করলেন, হে আল্লাহ! বনী ইসরাঈল সাক্ষ্য দিচ্ছে যে, লোকটি ২০০ বছর পর্যন্ত তোমার নাফরমানী করেছিল। ইরশাদ হলো, হ্যাঁ , তবে তার একটি ভাল অভ্যাস ছিল। যখন সে তাওরাত শরীফ তেলাওয়াত করতো, যতবার আমার হাবীব হযরত মুহাম্মদ (ﷺ) এর নাম মোবারক দেখত তখন সেটা ততবার চুম্বন করে চোখের উপর রাখত এবং তার প্রতি দুরূদ পাঠ করত। এজন্য আমি তাকে ক্ষমা করে দিয়েছি এবং সত্তর জন হুর স্ত্রী স্বরূপ তাকে দান করেছি।’’
🔺(ক. ইমাম আবু নঈম : হুলিয়াতুল আউলিয়া : ৩/১৪২পৃ. আল্লামা বুরহানুদ্দীন হালভী : সিরাতে হালবিয়্যাহ ১ম খন্ড পৃষ্ঠা-৮৩, আল্লামা শফী উকাড়ভী : জিকরে জামীল : ৩৫৪ পৃষ্ঠা, জালালুদ্দীন সুয়ূতি : খাসায়েসুল কোবরা : ১/৩০, হাদিস : ৬৮, মাকতুত-তাওফিকহিয়্যাহ, বয়রুত, আল্লামা আবদুর রহমান ছাফূরী : নুযহাতুল মাযালিস : ২/১৪২ পৃ., দিয়ার বকরী : আল খামীস ফি আহওয়ালে আনফাসে নাফীস : ১/২৮২ পৃ.)

হযরত খিযির (عليه السلام) কর্তৃক রাসূল (ﷺ) এর নাম শুনে চুমু খাওয়ার আমল বর্ণিত
____________________
হযরত খিযির (আ) কর্তৃক রাসূল (ﷺ) এর নাম শুনে চুমু খাওয়ার আমল বর্ণিতঃ

ما أورده أبو العباس أحمد ابن أبي بكر الرداد اليماني المتصوف في كتابه "موجبات الرحمة وعزائم المغفرة" بسند فيه مجاهيل مع انقطاعه، عن الخضر عليه السلام أنه: من قال حين يسمع المؤذن يقول أشهد أن محمد رسول اللَّه: مرحبا بحبيبي وقرة عيني محمد بن عبد اللَّه صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، ثم يقبل إبهاميه ويجعلهما على عينيه لم يرمد أبدا، - 

-‘‘ইমাম আবু আব্বাস আহমদ বিন আবি বকর ইয়ামানী (রহ) তাঁর লিখিত উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ موجبات الرحمة و عزائم المغفرة এর মধ্যে হযরত খিযির (আ) থেকে বর্ণিত আছে, যে ব্যক্তি মুয়াজ্জিনের কণ্ঠে ‘আশহাদু আন্না মুহাম্মদার রাসূলূল্লাহ’ শোনে বলবে

 مرحبا بحبيبي وقرة عينى محمد بن عبد الله صلى الله عليه وسلم 

🔺(মারহাবা বি হাবিবি ওয়া কুররাতো আইনী মুহাম্মাদ ইবনে আব্দুল্লাহ (রা)) অতঃপর স্বীয় বৃদ্ধাঙ্গুলীদ্বয় চুম্বন করে চোখে লাগাবে, তাহলে তার চোখে কখনও ব্যথা হবে না এবং সে কোন দিন অন্ধ হবে না।’’
🔺(ইমাম সাখাভী : মাকাসিদুল হাসানা : ১/৩৮৩ : হাদিস : ১০২১, আযলূনী : কাশফুল খাফা : ২/২৭০ : হাদিস : ২২৯৬, মোল্লা আলী ক্বারী : মওদ্বুআতুল কবীর : ১০৮ পৃ.)

ইসলামের প্রথম খলিফা হযরত আবু বকর (رضي الله عنه) এর আমল
____________________
ইসলামের প্রথম খলিফা হযরত আবু বকর (রা) এর আমলঃ

حَدِيثِ أَبِي بَكْرٍ الصِّدِّيقِ أَنَّهُ لَمَّا سَمِعَ قول المؤذن أشهد أن محمد رَسُولُ اللَّه قَالَ هَذَا، وَقَبَّلَ بَاطِنَ الأُنْمُلَتَيْنِ السَّبَّابَتَيْنِ وَمَسَحَ عَيْنَيْهِ، فَقَالَ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: مَنْ فَعَلَ مِثْلَ مَا فَعَلَ خَلِيلِي فَقَدْ حَلَّتْ عَلَيْهِ شَفَاعَتِي- رواه الديلمى المسند الفردوس

-‘‘হযরত আবু বকর (রা) হতে বর্ণিত, তিনি মুয়াযযিনকে ‘আশহাদু আন্না মুহাম্মাদার’ রাসূলুল্লাহ বলতে শোনলেন, তখন তিনিও তা বললেন এবং বৃদ্ধাঙ্গুলীদ্বয়ে চুমু খেয়ে তা চোখে বুলিয়ে নিলেন। তা দেখে রাসূল (ﷺ) ইরশাদ করেন : যে ব্যক্তি আমার বন্ধুর ন্যায় আমল করবে, তার জন্য আমার সুপারিশ বৈধ হয়ে গেল।’’ 
🔺(ইমাম আবদুর রহমান সাখাভী : মাকাসিদুল হাসানা : ৩৮৩ : হাদিস : ১০২১, আল্লামা ইমাম আযলূনী : কাশফুল খাফা : ২/২৫৯ : হাদিস : ২২৯৬, আল্লামা মোল্লা আলী ক্বারী : আসরারুল মারফূ : ৩১২ পৃষ্ঠা : হাদিস : ৪৫৩, ইমাম তাহতাভী : মারাকিল ফালাহ : ১৬৫ পৃ. : কিতাবুল আযান, শাওকানী : ফাওয়াহিদুল মওদ্বুআত : ১/৩৯ পৃ., ইসমাঈল হাক্কী : তাফসীরে রুহুল বায়ান : ৭/২২৯ পৃ., তাহের পাটনী : তাযকিরাতুল মওদ্বুআত : ৩৪ পৃ., জালালুদ্দীন সূয়তী : লাআলীল মাসনূ আ : ১৬৮-১৭০ পৃ., আব্দুল হাই লাক্ষনৌভী : আসারুল মারফূ আ: ১৮২ পৃ., নাসিরুদ্দীন আলবানী : সিল..দ্বঈফাহ : ১/১০২ পৃ. হাদিস : ৭৩)

বাতিলপন্থীদের একটি ধোঁকা
____________________
বাতিলপন্থীদের একটি ধোঁকাঃ

বাতিলপন্থীদের দাবি হল ইমাম সাখাভী (রহ) হযরত আবু বকর (রা) এর বর্ণিত হাদিসটি সংকলন করে বলেন, لا يصح ‘হাদিসটি সহিহ নয়।’ 
🔺(ইমাম সাখাভী : মাকাসিদুল হাসানা : ১/৩৮৪ : হাদিস : ১০২১)

সমস্ত মুহাদ্দিসগণ একমত যে হাদিসটি ‘সহিহ নয়’ শব্দ দ্বারা হাদিসটি ‘হাসান’ বুঝায়। আল্লামা মোল্লা আলী ক্বারী (রহ) বলেন-

وَقَالَ ابْنُ الْهَمَّامِ: وَقَوْلُ مَنْ يَقُولُ فِي حَدِيثٍ أَنَّهُ لَمْ يَصِحَّ إِنْ سَلِمَ لَمْ يُقْدَحْ ; لِأَنَّ الْحُجَّةَ لَا تَتَوَقَّفُ عَلَى الصِّحَّةِ، بَلِ الْحَسَنُ كَافٍ،– فصل الثانى من باب: ما يجوز من العمل فى الصلاة.

-‘‘ইমাম কামালুদ্দীন মুহাম্মদ বিন হুমাম (রহ) বলেন : কোন হাদিস সম্পর্কে কোন মুহাদ্দিস যদি বলেন যে এ হাদিসটি সহিহ (বিশুদ্ধ) নয়, তাদের কথা সত্য বলে মান্য করা হলেও কোন অসুবিধা নেই, যেহেতু (শরীয়তের) দলীল বা প্রমাণ হিসেবে সাব্যস্ত হওয়ার জন্য শুধু (হাদিস) সহিহ বা বিশুদ্ধ হওয়া নির্ভরশীল নয়। সনদ বা সূত্রের দিক দিয়ে ‘হাসান’ হলেও (হাদিসটি শরীয়তের দলীল হিসেবে সাব্যস্ত হওয়ার জন্য) যথেষ্ট।’’ 
🔺(আল্লামা মোল্লা আলী ক্বারী : মিরকাত : ৩/৭৭পৃ, হাদিস : ১০৮, দারুল ফিকর ইলমিয়্যাহ, বয়রুত, লেবানন)

আল্লামা ইবনে হাজার মক্কী (রহ) তার কিতাবে লিখেন-

وَقَول أَحْمد إِنَّه حَدِيث لَا يَصح أَي لذاته فَلَا يَنْفِي كَونه حسنا لغيره وَالْحسن لغيره يحْتَج بِهِ كَمَا بَين فِي علم الحَدِيث - (الصواعق المحرقة على أهل الرفض والضلال والزندقة: خاتمة الفصل الاول من الباب: الحادى عشر:২২৮)

-‘‘ইমাম ইবনে হাজর মক্কী (রহ) বলেন, ইমাম আহমদ বিন হাম্বল (রহ)‘র একটি হাদিস প্রসঙ্গে বক্তব্য হাদিসটি لا يصحবিশুদ্ধ নয় এর অর্থ হবে সহিহ লিজাতিহী তথা জাতি বা প্রকৃত অর্থে সহিহ নয় উক্ত হাদিসটি (সনদের দিক দিয়ে) হাসান লিজাতিহী বা অন্য সনদে হাসান লিগায়রিহী (জাতিগত সহিহ না হওয়া; সংশ্লিষ্ট বিষয়ের সহিহ’র কারণে নিজে সহিহ হওয়া।) হওয়াকে মানা (নিষেধ) করে না। আর হাসান লিগায়রিহীও (শরিয়তের) প্রমাণ হিসেবে গ্রহণ করা যায়। যা ইলমে হাদিস তথা হাদিসশাস্ত্র হতে জানা যায়।’’ 
🔺(ইবনে হাজার মক্কী : আস-সাওয়ায়েকুল মুহরিকা, ২য় খন্ড, পৃ-৫৩৬, মুয়াস্সাতুর রিসালা, বয়রুত, লেবানন)

আল্লামা মোল্লা আলী ক্বারী (রহ) তাঁর গ্রন্থে ইমাম সাখাভী (رحمة الله)‘র রায় পেশ করে সমাধানের কথা বলেন যে-

قُلْتُ وَإِذَا ثَبَتَ رَفْعُهُ عَلَى الصَّدِّيقِ فَيَكْفِي الْعَمَلُ بِهِ لِقَوْلِهِ عَلَيْهِ الصَّلَاةُ وَالسَّلَامُ عَلَيْكُمْ بِسُنَّتِي وَسِنَّةِ الْخُلَفَاءِ الرَّاشِدِين من بعدى-

-‘‘আমার কথা হলো হাদিসটির সনদ যেহেতু হযরত আবু বকর সিদ্দিক (রা) পর্যন্ত প্রসারিত (মারফূ হিসেবে প্রমাণিত), সেহেতু আমলের জন্য এতটুকুই যথেষ্ট। কেননা হুযুর (ﷺ) ইরশাদ করেছেন, 
🔺( ক. ইমাম আবু দাউদ : আস্-সুনান : হাদিস : ৪৬০৭, হযরত উমর (رضي الله عنه) এর সূত্রে, তিরমিযী : আস্-সুনান : হাদিস : ২৬৭৬, ইবনে মাজাহ : আস্-সুনান : হাদিস : ৪২, ইমাম ইবনুল বার্ : জামিউল বায়ান ওয়াল ইলমে বি ফাদ্বলিহী : ২/৯০ পৃ. ইমাম আহমদ : আল মুসনাদ : ৪/১২৭ পৃষ্ঠা হযরত ইরবায বিন সারিয়া (رضي الله عنه) এর সূত্রে)

তোমরা আমার পর আমার সুন্নাত ও আমার খোলাফায়ে রাশেদীনের সুন্নাতকে আকড়ে ধরো।’’
🔺(মোল্লা আলী ক্বারী : মওদ্বুআতুল কাবীর : ৩১৬ : হাদিস : ৪৫৩, মোল্লা আলী ক্বারী : আসারুল মারফ‘ূআ : ২১০ : হাদিস : ৮২৯, আযলূনী : কাশফুল খাফা : ২/২৭০ : হাদিস : ২২৯৬)

ফকিহগণের দৃষ্টিতে এই হাদিসের ব্যাপারে আমল
____________________
ফকিহগণের দৃষ্টিতে এই হাদিসের ব্যাপারে আমলঃ

বিশ্ব বিখ্যাত ফকিহ ইমাম ইবনে আবেদীন শামী (رحمة الله) তাঁর ফতোয়ার কিতাব ফতোয়ায়ে শামীতে باب الاذان লিখেন- 

يُسْتَحَبُّ أَنْ يُقَالَ عِنْدَ سَمَاعِ الْأُولَى مِنْ الشَّهَادَةِ: صَلَّى اللَّهُ عَلَيْك يَا رَسُولَ اللَّهِ، وَعِنْدَ الثَّانِيَةِ مِنْهَا: قَرَّتْ عَيْنِي بِك يَا رَسُولَ اللَّهِ، ثُمَّ يَقُولُ: اللَّهُمَّ مَتِّعْنِي بِالسَّمْعِ وَالْبَصَرِ بَعْدَ وَضْعِ ظُفْرَيْ الْإِبْهَامَيْنِ عَلَى الْعَيْنَيْنِ فَإِنَّهُ - عَلَيْهِ السَّلَامُ - يَكُونُ قَائِدًا لَهُ إلَى الْجَنَّةِ، كَذَا فِي كَنْزِ الْعِبَادِ. اهـ. قُهُسْتَانِيٌّ، وَنَحْوُهُ فِي الْفَتَاوَى الصُّوفِيَّةِ. وَفِي كِتَابِ الْفِرْدَوْسِ مَنْ قَبَّلَ ظُفْرَيْ إبْهَامِهِ عِنْدَ سَمَاعِ أَشْهَدُ أَنَّ مُحَمَّدًا رَسُولُ اللَّهِ فِي الْأَذَانِ أَنَا قَائِدُهُ وَمُدْخِلُهُ فِي صُفُوفِ الْجَنَّةِ وَتَمَامُهُ فِي حَوَاشِي الْبَحْرِ لِلرَّمْلِيِّ عَنْ الْمَقَاصِدِ الْحَسَنَةِ لِلسَّخَاوِيّ- 

-‘‘মুস্তাহাব হলো আযানের সময় শাহাদাত বলার মধ্যে صلى الله عليك يا رسول الله বলা এবং দ্বিতীয় শাহাদাত বলার সময় বলবে قرة عينى بك يا رسول الله। অতঃপর নিজের বৃদ্ধাঙ্গুলীদ্বয়ের নখে চুমু খেয়ে স্বীয় চোখদ্বয়ের উপর রাখবে এবং এই দোয়াটি اللهم متعنى بالسمع و البصر পড়বে এর ফলে হুযুর (ﷺ) তাকে নিজের পিছনে পিছনে টেনে বেহেশতে নিয়ে যাবেন। অনুরূপ কানযুল ইবাদ ও কুহস্থানী গ্রন্থে বর্ণিত আছে। ফাতাওয়ায়ে সূফিয়াও তদ্রুপ উল্লেখিত আছে। কিতাবুল ফিরদাউসে বর্ণিত আছে, যে ব্যক্তি আযানে আশহাদু আন্না মুহাম্মাদার রাসূলুল্লাহ শুনে স্বীয় বৃদ্ধাঙ্গুলীদ্বয়ের নখ চুম্বন করে, আমি তাকে আমার পিছনে পিছনে টেনে বেহেশতে নিয়ে যাব এবং তাকে বেহেশতীদের কাতারে অন্তর্ভুক্ত করবো। এর পরিপূর্ণ আলোচনা বাহারুর রায়েক এর টীকায় ফতোয়ায়ে রমলীতে আছে।’’ 
🔺(ক. ইমাম ইবনে আবেদীন শামী : ফতোয়ায়ে শামী ১/৩৯৮ পৃষ্ঠা কিতাবুল আযান অধ্যায়, মুফতী আমিমুল ইহসান মুজাদ্দেদী : কাওয়াইদুল ফিক্হ : ১/২৩৩ পৃ., আল্লামা ইসমাঈল হাক্কী : তাফসীরে রুহুল বায়ান : ৭/২২৯ পৃ.)

দেওবন্দীদেরও শ্রদ্ধীয় আল্লামা আব্দুল হাই লাক্ষনৌভী তার ফিকহের সুপ্রসিদ্ধ গ্রন্থ “মাজমুআয়ে ফতোয়ায়ে আব্দুল হাই”-এ লিখেন- 

اعلم أنه يستحب أن يقال عند سماع الاول من الشهادة صلى الله عليك يا رسول الله و عند سماع الثانية قرة عينى بك يا رسول الله ثم قال "اللهم متعنى بالسمع و البصر" بعد وضع ظفر اليدين على العينين فإنه صلى الله عليه و سلم يكون قائدا له الى الجنة كذا في كنز العباد-  

-‘‘জেনে রাখুন! নিশ্চয় মুস্তাহাব হলো আযানে যখন প্রথম শাহাদাত বাক্য বলবে, তখন শ্রোতারা বলবে صلى الله عليك يا رسول الله তারপর যখন দ্বিতীয় শাহাদাত বাক্য বলবে তখন শ্রোতারা বলবে যে قرة عينى بك يا رسول الله অতঃপর বলবে যে, اللهم متعنى بالسمع والبصر তারপর দুই বৃদ্ধাঙ্গুলীদ্বয়ের নখের পৃষ্ঠে চুমু দিয়ে চক্ষুদ্বয়ের উপর মুছে দেবে, যে অনুরূপ করবে নিশ্চয় রাসূল (ﷺ) তাকে বেহেশতের দিকে টেনে নিজের পিছনে নিবেন, এটা ‘কানযুল ইবাদে’ আছে। 
🔺(আব্দুল হাই লাক্ষনৌভি : মাজমূআয়ে ফতোয়ায়ে : ১/১৮৯ : কিতাবুস সালাত অধ্যায়)

হানাফী মাযহাবের অন্যতম প্রসিদ্ধ ফকীহ ইমাম তাহতাভী (রহ) তার ফতোয়ার কিতাবে লিখেছেন-

ذكر القهستاني عن كنز العباد أنه يستحب أن يقول عند سماع الأولى من الشهادتين للنبي صلى الله عليه وسلم صلى الله عليك يا رسول الله وعند سماع الثانية قرت عيني بك يا رسول الله اللهم متعني بالسمع والبصر بعد وضع إبهامه على عينيه فإنه صلى الله عليه وسلم يكون قائدا له في الجنة-      

-‘‘ইমাম কুহিস্তানী (رحمة الله) কানযুল ইবাদ কিতাবের উদ্ধিৃতি দিয়ে বর্ণনা করেছেন নিশ্চয় মুস্তাহাব হলো আযানে আশহাদু আন্না মুহাম্মাদার রাসূলুল্লাহ শুনবে তখন বলবে صلى الله عليك يا رسول الله আর যখন দ্বিতীয়বার শুনবে তখন বলবে قرة عينى بك يا رسول الله তারপর এই দোয়া পড়বে اللهم متعنى بالسمع و البصر পড়ার পর নিজের বৃদ্ধাঙ্গুলীদ্বয়ের নখে চুমু খেয়ে চক্ষুদ্বয়ে রাখবেন। যে এরূপ করবে তাকে হুযুর (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) নিজের পিছনে টেনে টেনে জান্নাতে নিয়ে যাবেন।’’
🔺(ইমাম তাহতাভী : মারাকিল ফালাহ : ১/২০৬ পৃ : কিতাবুল আজান অধ্যায়, দারুল কুতুব ইলমিয়্যাহ, বয়রুত, লেবানন)

আহলে হাদিসদের দৃষ্টিতে এ হাদিসের অবস্থান
____________________
আহলে হাদিসদের দৃষ্টিতে এ হাদিসের অবস্থানঃ

 শুধু তা-ই নয়, আহলে হাদীসের মুহাদ্দিস নাসিরুদ্দীন আলবানী হযরত আবু বকর (رضي الله عنه)-এর হাদিসটি সম্পর্কে বলেছেন- لا يصح অর্থাৎ, হাদিসটি সহিহ পর্যায়ের নয়। তাই বুঝা গেল, সহিহ নয় মানে ‘হাসান’ অর্থাৎ হাদিসটি জাল বা বানোয়াট নয় যা ইতিপূর্বে আলোকপাত করেছি।
🔺(আলবানী, সিল...দ্বঈফাহ, ১/১০২ পৃ. হাদিস নং. ৭৩)

সফরের উদ্দেশ্যে আওলিয়ায়ে কেরামের মাযার যিয়ারত প্রসঙ্গ
____________________
সপ্তম অধ্যায়ঃ সফরের উদ্দেশ্যে আওলিয়ায়ে কেরামের মাযার যিয়ারত প্রসঙ্গঃ

বাতিল পন্থীগণের একটি ধোঁকাঃ ইসলামের প্রাথমিক যুগে রাসূল (ﷺ) কবর যিয়ারত নিষেধ করেছিলেন। পরে অনুমতি প্রদান করেন। কিন্তু যখন অনুমতি দিয়েছেন তখন তিনি কাছে দূরে খাস করেননি। যেমন হযরত ইবনে মাসউদ (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত রাসূল (ﷺ)বলেন,

كُنْتُ نَهَيْتُكُمْ عَنْ زِيَارَةِ الْقُبُورِ فَزُورُوهَا، فَإِنَّهَا تُذَكِّرُ الْآخِرَةَ،ـ 

-‘‘তোমাদেরকে কবর যিয়ারত করতে নিষেধ করেছিলাম, এখন তোমরা কবর যিয়ারত কর। কেননা নিশ্চয় তা পরকালের কথা মনে করিয়ে দেয়।"
🔺(আবদুর রায্যাক,আল-মুসান্নাফ, ৩/৫৬৯পৃ. হাদিস : ৬৭০৮, ইমাম তিরমিযী : আস সুনান : কিতাবুজ জানাইয : ২/৩৬১.পৃ, হাদিস ১০৫৪, আবি শায়বাহ, আল-মুসান্নাফ, ৩/২৯পৃ. হাদিস : ১১৮০৪, মুসনাদে বায্যার, ১০/২৭১পৃ. হাদিস : ৪৩৭৩, সুনানে নাসাঈ, ৮/৩১০পৃ. হাদিস : ৫৬৫২, সহিহ ইবনে হিব্বান, ৩/২৬১পৃ. হাদিস : ৯৮১, তাবরানী, মু‘জামুল কাবীর, ২/১৯পৃ. হাদিস : ১১৫২, নাসাঈ, সুনানে কোবরা, ৮/৫৪০পৃ. হাদিস : ১৭৪৮৬, সবাই উপরের হযরত বুরায়দা (رضي الله عنه) এর পিতার সূত্রে বর্ণনা করেছেন। আবি শায়বাহ, আল-মুসান্নাফ, ১/২১২পৃ. হাদিস, হাদিস :৩১২,সুনানে ইবনে মাযাহ, ১/৫০১পৃ. হাদিস : ১৫৭১, হাকিম নিশাপুরী, আল-মুস্তাদরাক, ১/৫৩১পৃ. হাদিস : ১৩৮৭, নাসাঈ, সুনানে কোবরা, ৪/১২৯পৃ. হাদিস : ৭১৯৭,উপরের সবাই হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ (رضي الله عنه) এর সূত্রে। আবি শায়বাহ, আল-মুসান্নাফ, ৩/২৯পৃ.হাদিস :১১৮০৬, মুসনাদে আহমাদ, ২/৩৯৭পৃ. হাদিস : ১২৩৬, উপরের সবাই হযরত আলী (رضي الله عنه) এর সূত্রে। তাবরানী, মু‘জামুল কাবীর, ২/৯৪পৃ. হাদিসঃ ১৪১৯, হযরত ছাওবান (رضي الله عنه) এর সূত্রে। হাকিম নিশাপুরী, আল-মুস্তাদরাক, ১/৫৩২পৃ. হাদিসঃ ১৩৯৩, ও ১/৫৩২পৃ. হাদিসঃ ১৩৯৪, হযরত আনাস বিন মালেক (رضي الله عنه) এর সূত্রে, ইমাম মুসলিম : কিতাবুজ জানাইয : হাদিসঃ ১০৬)

 বর্তমানে এক শ্রেণীর নামধারী মুসলিম রয়েছেন যারা নিন্মের এ হাদিস দ্বারা সফরের উদ্দেশ্যে আওলিয়াদের মাযার যিয়ারতকে হারাম বলে থাকেন। হাদিসটি হল-

وَعَنْ أَبِي سَعِيدٍ الْخُدْرِيِّ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: " لَا تُشَدُّ الرِّحَالُ إِلَّا إِلَى ثَلَاثَةِ مَسَاجِدَ: مَسْجِدِ الْحَرَامِ وَالْمَسْجِدِ الْأَقْصَى وَمَسْجِدِي هَذَا

-‘‘তিন মসজিদ ছাড়া অন্য কোন (মসজিদের) দিকে সফর করবে না। এ তিন মসজিদগুলো হলো বায়তুল্লাহ, বায়তুল মুকাদ্দিস ও আমার এ মসজিদ।’’(বুখারী, মুসলিম) 
তারা বুঝাতে চান এ হাদিস থেকে বোঝা যায় এ তিন মসজিদ ব্যতীত অন্য কোন দিকে সফর করা জায়েয নেই এবং কবর যিয়ারতের সফর এ তিনটির বাইরে বিধায় নাজায়েয। অথচ এ হাদিসের ভাবার্থ হচ্ছে এ তিন মসজিদে নামাযের ছওয়াব বেশী পাওয়া যায়। যেমন মসজিদ বায়তুল্লাহ এক নেকীর ছওয়াব অন্যান্য জায়গায় এক লাখের সমান (বুখারী) এবং বায়তুল মুকাদ্দাস ও মাদীনা পাকের মসজিদে এক নেকীর ছওয়াব পঞ্চাশ হাজারের সমান। (ইবনে মাযাহ) সুতরাং এসব মসজিদসমূহে এ নিয়তে দূর থেকে সফর করে আসা কল্যাণকর ও জায়েয। কিন্তু অন্য কোন মসজিদের দিকে একই নিয়তে সফর করা অনর্থক ও নাজায়েয। নাউযুবিল্লাহ! 

সম্মানিত পাঠকবৃন্দ! কবর যিয়ারত মানুষ কোনো খারাপ উদ্দেশ্য করে না। ইমাম সান‘আনী (رحمة الله) বলেন-

وَمَقْصُودُ زِيَارَةِ الْقُبُورِ الدُّعَاءُ لَهُمْ وَالْإِحْسَانُ إلَيْهِمْ وَتَذَكُّرُ الْآخِرَةِ وَالزُّهْدُ فِي الدُّنْيَا

-‘‘কবর যিয়ারতের উদ্দেশ্য হলো মৃতদের জন্য দু‘আ করা, তাদের সাথে সদাচরণ করা, পরকালের কথা স্মরণ করা ও দুনিয়ার প্রতি অনীহাবোধ জাগ্রত করা।’’ 
🔺(সানআনী, সবলুস সালাম, ১/৫০৯পৃ.)

এ হাদিসের ব্যাখ্যায় আল্লামা মোল্লা আলী ক্বারী (رحمة الله) মিশ্কাত শরীফের অপর ব্যাখ্যা গ্রন্থ মিরকাতে এ হাদিস প্রসঙ্গে লিখেন-

وَفِي شَرْحِ مُسْلِمٍ لِلنَّوَوِيِّ قَالَ أَبُو مُحَمَّدٍ: يَحْرُمُ شَدُّ الرَّحْلِ إِلَى غَيْرِ الثَّلَاثَةِ وَهُوَ غَلَطٌ، وَفِي الْإِحْيَاءِ: ذَهَبَ بَعْضُ الْعُلَمَاءِ إِلَى الِاسْتِدْلَالِ بِهِ عَلَى الْمَنْعِ مِنَ الرِّحْلَةِ لِزِيَارَةِ الْمَشَاهِدِ وَقُبُورِ الْعُلَمَاءِ وَالصَّالِحِينَ، وَمَا تَبَيَّنَ فِي أَنَّ الْأَمْرَ كَذَلِكَ، بَلِ الزِّيَارَةُ مَأْمُورٌ بِهَا لِخَبَرِ: ( كُنْتُ نَهَيْتُكُمْ عَنْ زِيَارَةِ الْقُبُورِ أَلَا فَزُورُوهَا ) . وَالْحَدِيثُ إِنَّمَا وَرَدَ نَهْيًا عَنِ الشَّدِّ لِغَيْرِ الثَّلَاثَةِ مِنَ الْمَسَاجِدِ لِتَمَاثُلِهَا، بَلْ لَا بَلَدَ إِلَّا وَفِيهَا مَسْجِدٌ، فَلَا مَعْنَى لِلرِّحْلَةِ إِلَى مَسْجِدٍ آخَرَ، وَأَمَّا الْمَشَاهِدُ فَلَا تُسَاوِي بَلْ بَرَكَةُ زِيَارَتِهَا عَلَى قَدْرِ دَرَجَاتِهِمْ عِنْدَ اللَّهِ، ثُمَّ لَيْتَ شِعْرِي هَلْ يَمْنَعُ هَذَا الْقَائِلُ مِنْ شَدِّ الرَّحْلِ لِقُبُورِ الْأَنْبِيَاءِ كَإِبْرَاهِيمَ وَمُوسَى وَيَحْيَى، وَالْمَنْعُ مِنْ ذَلِكَ فِي غَايَةِ الْإِحَالَةِ، وَإِذَا جُوِّزَ ذَلِكَ لِقُبُورِ الْأَنْبِيَاءِ وَالْأَوْلِيَاءُ فِي مَعْنَاهُمْ، فَلَا يَبْعُدُ أَنْ يَكُونَ ذَلِكَ مِنْ أَغْرَاضِ الرِّحْلَةِ، كَمَا أَنَّ زِيَارَةَ الْعُلَمَاءِ فِي الْحَيَاةِ

-‘‘ইমাম নববী (رحمة الله) এর শরহে মুসলিমে বর্ণিত আছে-ইমাম আবু মুহাম্মদ (رحمة الله) বলেছেন যে, ওই তিন মসজিদ ব্যতীত অন্য দিকে সফর করা হারাম। কিন্তু এটা ভুল ধারণা। ইমাম গাযযালীর ‘ইহ্ইয়াউল উলুমুদ্দীন’ কিতাবে উল্লেখিত আছে “কতেক আলিম বরকতময় স্থানসমূহ ও উলামায়ে কিরামের মাযারে যিয়ারত উপলক্ষে সফর করাকে নিষেধ বলে। কিন্তু আমি যা বিশ্লেষণ করে পেয়েছি, তা এরকম নয় বরং কবর যিয়ারতের নির্দেশ আছে যেমন হাদীসে আছে أَلَا فَزُورُوهَا (এখন থেকে যিয়ারত কর) ঐ তিন মসজিদ ব্যতীত অন্য কোন মসজিদের দিকে সফর করার থেকে নিষেধ এজন্য করা হয়েছে যে বাকী সব মসজিদ ফযীলতের দিক দিয়ে একই বরাবর। কিন্তু বরকতময় স্থানসমূহ একই বরাবর নয় বরং মর্তবা অনুযায়ী ওগুলোর বরকত ভিন্ন ভিন্ন। এসব নিষেধকারীরা কি নবীদের মাযার, যেমন হযরত ইব্রাহীম (عليه السلام) হযরত মুসা (عليه السلام) হযরত ইয়াহিয়া (عليه السلام) প্রমুখের মাযার যিয়ারত করা থেকে নিষেধ করতে পারবে কি? নিশ্চয়ই না, কারণ এটা অসম্ভব। আর আল্লাহর ওলীগণের বেলায়ও একই হুকুম প্রযোজ্য। সুতরাং বিশেষ বিশেষ উদ্দেশ্যে যদি ওনাদের সেখানে সফর করে যাওয়া হয়, যেমনি উলামায়ে কিরামের জীবদ্দশায় তঁাদের কাছে যাওয়া যায়, কি অসুবিধে আছে?।’’
🔺(মোল্লা আলী ক্বারী, মেরকাত, ২/৫৮৯পৃ. হাদিস নং.৬৯৩)

ফাত্ওয়ায়ে শামী প্রথম খন্ডে ‘যিয়ারতে কুবুর’ শীর্ষক আলোচনায় উল্লিখিত আছে
____________________
ফাত্ওয়ায়ে শামী প্রথম খন্ডে ‘যিয়ারতে কুবুর’ শীর্ষক আলোচনায় উল্লিখিত আছে-

وَهَلْ تُنْدَبُ الرِّحْلَةُ لَهَا كَمَا اُعْتِيدَ مِنْ الرِّحْلَةِ إلَى زِيَارَةِ خَلِيلِ الرَّحْمَنِ وَأَهْلِهِ وَأَوْلَادِهِ، وَزِيَارَةِ السَّيِّدِ الْبَدَوِيِّ وَغَيْرِهِ مِنْ الْأَكَابِرِ الْكِرَامِ؟ لَمْ أَرَ مَنْ صَرَّحَ بِهِ مِنْ أَئِمَّتِنَا، وَمَنَعَ مِنْهُ بَعْضُ أَئِمَّةِ الشَّافِعِيَّةِ إلَّا لِزِيَارَتِهِ - صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ - قِيَاسًا عَلَى مَنْعِ الرِّحْلَةِ لِغَيْرِ الْمَسَاجِدِ الثَّلَاثَةِ. وَرَدَّهُ الْغَزَالِيُّ بِوُضُوحِ الْفَرْقِ،

-‘‘কবর যিয়ারত উপলক্ষে সফর করা মুস্তাহাব। যেমন আজকাল হযরত খলিলুর রহমান (رحمة الله) ও হযরত ছৈয়দ বদ্দবী (رحمة الله) এর মাযার যিয়ারতের জন্য সফর করা হয়। আমি এ ক্ষেত্রে আমাদের ইমামদের কারো ব্যাখ্যা দেখিনি। তবে শাফেঈ মাযহাবের কয়েকজন আলিম তিন মসজিদ ব্যতীত ভিন্ন সফর নিষেধ এ হাদীসের উপর অনুমান করে নিষেধ বলেছেন। কিন্তু ইমাম গাযযালী (رحمة الله) এ নিষেধাজ্ঞাকে খন্ডন করেছেন এবং পার্থক্যটা বিশ্লেষণ করে দিয়েছেন।’’
🔺(ইবনে আবেদীন শামী, ফাতওয়ায়ে শামী, ২/২৪২পৃ. দারুল ফিকর ইলমিয়্যাহ, বয়রুত, লেবানন)

ইমাম ইবনে আবেদীন শামী (رحمة الله) এ হাদিসের ব্যাখ্যায় আরও বলেছেন-

وَأَمَّا الْأَوْلِيَاءُ فَإِنَّهُمْ مُتَفَاوِتُونَ فِي الْقُرْبِ مِنْ اللَّهِ - تَعَالَى، وَنَفْعُ الزَّائِرِينَ بِحَسَبِ مَعَارِفِهِمْ وَأَسْرَارِهِمْ.

-‘‘কিন্তু আল্লাহর ওলীগণ আল্লাহর নৈকট্য লাভে ও যিয়ারককারীদের ফায়দা পেীঁছানোর বেলায় নিজেদের প্রসিদ্ধ ও আধ্যাত্নিক শক্তি অনুসারে ভিন্নতর।’’
🔺(ইবনে আবেদীন শামী, ফাতওয়ায়ে শামী, ২/২৪২পৃ. দারুল ফিকর ইলমিয়্যাহ, বয়রুত, লেবানন)

 ইমাম ইবনে কুদামা (رحمة الله) বলেছেন- وَالصَّحِيحُ إبَاحَتُهُ، -‘‘বিশুদ্ধ হল তিন মসজিদ ছাড়াও অন্য কোন স্থানের উদ্দেশ্যে সফর করা বৈধ।’’  
🔺(ইবনে কুদামা, আল-মুগনী, ২/১৯৫পৃ. মাকতুবাতুল কাহেরা, মিশর, প্রকাশ)

কোরআনের আলোকে যিয়ারতের উদ্দেশ্যে সফর
____________________
কোরআনের আলোকে যিয়ারতের উদ্দেশ্যে সফর

হযরত মুসা (আ:) কে নির্দেশ দেয়া হলোঃ

اذْهَبْ إِلَى فِرْعَوْنَ إِنَّهُ طَغَى

-‘‘ফিরাউনের কাছে যাও, কারণ সে বিদ্রোহী হয়ে গেছে।’’(সুরা নাযিআহ, আয়াত নং.১৭) তাবলীগের জন্য সফর প্রমাণিত হলো। মহান রব অন্যত্র বলেন-

قُلْ سِيرُوا فِي الْأَرْضِ ثُمَّ انْظُرُوا كَيْفَ كَانَ عَاقِبَةُ الْمُكَذِّبِينَ

-‘‘তাদেরকে বলুন, পৃথিবীতে ভ্রমণ কর এবং কাফিরদের কি পরিণাম হয়েছে, তা দেখ।’’(সুরা আন‘আম, আয়াত, নং.১১) যেসব দেশে খোদায়ী গজব নাযিল হয়েছে, ওগুলো দেখে সতর্ক হওয়ার জন্য সফর প্রমাণিত হলো। কুরআন করীমে রয়েছে-

وَمَنْ يَخْرُجْ مِنْ بَيْتِهِ مُهَاجِرًا إِلَى اللَّهِ وَرَسُولِهِ ثُمَّ يُدْرِكْهُ الْمَوْتُ فَقَدْ وَقَعَ أَجْرُهُ عَلَى اللَّهِ

-‘‘যে ব্যক্তি আল্লাহ ও রাসূলের উদ্দেশ্য নিজ গৃহ থেকে মুহাজির হয়ে বের হলো এবং (পথে) তার মৃত্যু ঘটলো, তার পুরষ্কার আল্লাহর কাছে অবধারিত হয়ে গেল। (সুরা নিসা, আয়াত নং.১০০) হিজরত উপলক্ষে সফর প্রমাণিত হলো। এ রকম কুরআনুল কারীমে আরও বিভিন্ন নির্দেশনা রয়েছে সফরের জন্য।

হাদিসের আলোকে যিয়ারতের উদ্দেশ্যে সফর এর প্রমাণ
____________________
হাদিসের আলোকে যিয়ারতের উদ্দেশ্যে সফর এর প্রমাণঃ

ক. আল্লামা তাবারী (رحمة الله) একটি হাদিসে পাক সনদসহ বর্ণনা করেন হযরত মুহাম্মদ ইবনে ইবরাহিম (رضي الله عنه) বর্ণনা করেন-

أَنَّ النَّبِيَّ - صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ - كَانَ يَأْتِي قُبُورَ الشُّهَدَاءِ بِأُحُدٍ عَلَى رَأْسِ كُلِّ حَوْلٍ فَيَقُولُ: السَّلَامُ عَلَيْكُمْ بِمَا صَبَرْتُمْ فَنِعْمَ عُقْبَى الدَّارِ

-‘‘হুযুর আলাইহিস সালাম প্রতি বছর উহুদ যুদ্ধের শহীদদের কবরে তাশরীফ নিয়ে যেতেন অতঃপর বলতেন....।’’  
🔺(ইবনে কাসির, তাফসীরে ইবনে কাসির, ৪/৩৮৯পৃ. দারুল কুতুব ইলমিয়্যাহ, বয়রুত, লেবানন (মতনটি এ কিতাবের), আব্দুর রায্যাক, মুসান্নাফ, ৩/৫৭৩পৃ. আইনী, উমদাতুল ক্বারী, ৮/৭০পৃ., ইমাম তবারী, জামিউল বয়ান ফি তাফসিরীল কোরআন, ১৬/৪২৬পৃ. হাদিস নং. ২০৩৪৫, ইবনে আবিদীন শামী, ফাতোয়ায়ে শামী, ২/২৪২পৃ.)


খ. ইমাম ইবনে কুদামা (رحمة الله) 🔺(ওফাত. ৬২০ হি.) বর্ণনা করেন-

لَانَ النَّبِيَّ - صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ - كَانَ يَأْتِي قُبَاءَ رَاكِبًا وَمَاشِيًا، وَكَانَ يَزُورُ الْقُبُورَ،

-‘‘রাসূলুল্লাহ (ﷺ) কখনো পায়ে হাঁটে, আবার কখনো উটে চড়ে কুবা‘য় আসতেন এবং বিভিন্ন কবর যিয়ারত করতেন।’’  
🔺(ইবনে কুদামা, আল-মুগনী, ২/১৯৫পৃ. মাকতুবাতুল কাহেরা, মিশর, প্রকাশ)

এ হাদিসের ব্যাখ্যায় ইমাম ইবনে আবিদীন শামী (رحمة الله) বলেছেন-

اُسْتُفِيدَ مِنْهُ نَدْبُ الزِّيَارَةِ وَإِنْ بَعُدَ مَحَلُّهَا.

-‘‘ এ হাদিস থেকে কবর দূরে অবস্থিত হলেও যিয়ারত করা যে মুস্তাহাব তা বোঝা যায়।’’ 
🔺(ইবনে আবিদীন শামী, ফাতোয়ায়ে শামী, ২/২৪২পৃ.)

গ. ইমাম সুয়ূতি (رحمة الله)-এর তাফসিরে দুররুল মানসূরে উল্লেখিত আছে

رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عَلَيْهِ وَسلم يَأْتِي قُبُور الشُّهَدَاء على رَأس كل حول فَيَقُول 🔺(سَلام عَلَيْكُم بِمَا صَبَرْتُمْ فَنعم عُقبى الدَّار) وَأَبُو بكر وَعمر وَعُثْمَان

-‘‘হুযুর আলাইহিস সালাম থেকে প্রমাণিত আছে যে তিনি প্রতি বছর শহীদদের কবরে তশরীফ নিয়ে যেতেন এবং ওদেরকে সালাম দিতেন। হযরত আবু বকর, উমর, উসমান (رضي الله عنه)ও অনুরূপ করতেন।’’ 
🔺(ইমাম সুয়ূতি, তাফসীরে দুরুরুল মানসূর, ৪/৬৪১পৃ.)

এ হাদিসে মাজার বা কবর যিয়ারতের উদ্দেশ্যে সফর রাসূল (ﷺ)-এর সুন্নাত প্রমাণিত হল। তাই ইমাম ইবনে আবিদীন শামী (رحمة الله) বলেছেন-

وَفِيهِ يُسْتَحَبُّ أَنْ يَزُورَ شُهَدَاءَ جَبَلِ أُحُدٍ

-‘‘শুহাদায়ে জাবালের যিয়ারত করা মুস্তাহাব।’’
🔺(ইবনে আবিদীন শামী, ফাতোয়ায়ে শামী, ২/২৪২পৃ.)

ঘ. হযরত মা ফাতেমা (رضي الله عنه) প্রতি জুমা‘বার তাঁর চাচা হযরত আমির হামযা (رضي الله عنه)-এর মাযার যিয়ারত করতে যেতেন।
🔺(হাকিম নিশাপুরী, আল-মুস্তাদরাক, হাদিস : ১৩৪৫, বায়হাকি,আস্-সুনানিল কোবরা, ৪/৭৮পৃ.)

ঙ. ইমাম ইবনে আসাকির (رحمة الله) বিশুদ্ধ ‘হাসান’ সনদে হযরত আবু দারদা (রা) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, হযরত বেলাল (رضي الله عنه) শামে অবস্থান কালে এক রাতে স্বপ্নে দেখলেন যে, রাসুল (ﷺ) তার উদ্দেশ্যে বলেন-

ما هذه الجفوة يا بلال أما ان لك أن تزورني يا بلال

বেলাল! তোমার এ নির্দয় আচরনের কারণ কী! আজও কী আমার জিয়ারতের সময় হয়নি? এরপর তিনি বিষন্ন মনে ও ভিতসন্ত্রস্ত্র অবস্থায় জেগে উঠলেন। তারপর তিনি বাহনে চড়ে মদিনার উদ্দেশ্যে সফরে রওয়ানা হলেন। রওযা শরীফে পৌঁছে তিনি রওযার পাশে কাঁদতে লাগলেন এবং তাঁর চেহাড়া রওযা শরীফের সাথে মললেন।’ 
🔺(আল্লামা ইবনে আসাকীর : তারীখে দামেস্ক : ৭/১৩৭পৃ., যাহাবী, তারীখুল ইসলাম : ৪/২৭৩পৃ, ইবনে হাজার আসকালানী : লিসানূল মিযান : ১/৪৫পৃ, ইমাম যাহাবী : সিয়ারু আ‘লামিন আন্-নুবালা : ৩/২১৮পৃ, দারুল হাদিস, কাহেরা, মিশর, মুফতি আমিমুল ইহসান : ফিকহুস সুনানি ওয়াল আছার : ১/৪১৪পৃ. হাদিস : ১১৭১, ইমাম তকি উদ্দিন সুবকী, শিফাউস সিকাম : ৩৯পৃ. ইবনে হাজর মক্কী, যাওয়াহিরুল মুনাজ্জাম : পৃ-২৭, শাওকানী, নায়লুল আওতার : ৫/১৮০পৃ. ইমাম জাযরী আশ্-শায়বানী: সাদ্দাল গাবাত ফি মা‘রিফাতুল সাহাবা : ১/৪১৫পৃ. দারূল কুতুব ইলমিয়্যাহ, বয়রুত, লেবানন, ইমাম ইফরিকী, মুখতাসিরে তারিখে দামেস্ক : ৪/১১৮পৃ.)

উক্ত হাদিস সম্পর্কে মুফতি আমিমুল ইহসান (رحمة الله) বলেন,‘‘ইবনে আসাকির গ্রহণযোগ্য সনদে হাদিসটি বর্ণনা করেছেন’’। 
🔺(মুফতি আমিমুল ইহসান : ফিকহুস সুনানি ওয়াল আছার : ১/৪১৪পৃ. হাদিস : ১১৭১, যা বাংলাদেশ ইসলামিক ফাউন্ডেশন হতে প্রকাশিত)

ইমাম সুবকী (رحمة الله) এবং ইবনে হাজার মক্কী (رحمة الله) তাদের গ্রন্থে হাদিসটিকে ‘হাসান’ বলেছেন।

চ. আরেকটি হাদিসে পাক দেখুন-

عَنْ نَافِعٍ , عَنِ ابْنِ عُمَرَ , قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: مَنْ زَارَ قَبْرِي وَجَبَتْ لَهُ شَفَاعَتِي- 

-“হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে উমর (রা) হতে বর্ণিত, রাসূল (ﷺ) ইরশাদ করেন, যে আমার রওযা মোবারক যিয়ারত করবে তার জন্য আমার শাফায়াত অনিবার্য।”
🔺(ক. ইমাম বায়হাকী : শুয়াবুল ঈমান : ৬/৫১.পৃষ্ঠা, হাদিস,৩৮৬২, কাজী আয়াজ আল-মালেকী, আশ্-শিফা শরীফ : ২/৮৩ পৃষ্ঠা, দারেকুতনী, আস-সুনান, ৩/৩৩৪পৃ., হাদিস,২৬৬৫, মুয়াস্সাতুল রিসালা, বয়রুত, লেবানন, বায্যার, আল মুসনাদ, ২/২৪৮ পৃষ্ঠা, হাকিম তিরমিযী, নাওয়ারিদুল উসূল ফি আহাদিসুর রুসুল,২/৬৭পৃষ্ঠা, ইস্পাহানী, তারগীব ওয়াত তারহীব, ২/২৭পৃ. হাদিস,১০৮১,আদি, আল-কামিল, ৮/২৬৯ পৃষ্ঠা, ক্রমিক নং.১৮৩৪, ও ৪/১৯০-১৯১পৃষ্ঠা, সুয়ূতি, জামিউল আহাদিস, ২০/৩৪৮পৃষ্ঠা, হাদিস,২২৩০৪, সুয়ূতি, জামিউস-সগীর : ২/৬০৫ পৃষ্ঠা, হাদিস : ৮৭১৫, ইমাম হায়সামী : মাযমাউদ যাওয়াইদ : ৪/২ পৃষ্ঠা, হাদিসঃ ৫৮৪১, ও কাশফুল আশতার,২/৫৭পৃ.হাদিস :১১৯৮, কুস্তালানী, মাওয়াহেব লাদুন্নীয়া : ২/৫৭১.পৃষ্ঠা, ইমাম তকি উদ্দিন সুবকী : শিফাউস সিকাম ফি যিয়ারাতিল খায়রি আনাম : ১৫ পৃষ্ঠা, মুফতী আমিমুল ইহসান : ফিকহুস সুনানি ওয়াল আছার : ১/৪১৩ পৃ: হাদিস : ১১৭৯, ই.ফা.বা, হতে প্রকাশিত, মুত্তাকী হিন্দী : কানযুল উম্মাল : ১৫/৬৫১ পৃ. হাদিস : ৪২৫৮৩)

 এ হাদিসে নবীজি তাঁর রওযা যিয়ারতের জন্য সফর করার উৎসাহ দিয়েছেন। আল্লামা মোল্লা আলী ক্বারী (রহ) আরো বলেন,

رواه الدارقطني وغيره وصححه جماعة من ائمة الحديث

-‘ইমাম দারেকুতনীসহ অন্যান্য ইমামগণ উক্ত রেওয়ায়েতকে বর্ণনা করেছেন এবং এক জামাত ইমামগণ উক্ত হাদিসটিকে সহিহ বলেছেন।’’ 
🔺(আল্লা মোল্লা আলী ক্বারী : শরহে শিফা : ২/১৫০ পৃ.)

অন্য হাদিসে দেখুন নবীজি (ﷺ) ইলমের জন্য সফর করতে বলেছেন-

عَنْ سَخْبَرَةَ، عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ،مَنْ طَلَبَ الْعِلْمَ كَانَ كَفَّارَةً لِمَا مَضَى

-‘‘হযরত সাখবারাহ (রা) হতে বর্ণিত, রাসূল (ﷺ) ইরশাদ করেন : যদি কোনো ব্যক্তি ইলম শিক্ষা করে, তবে তা তার পূর্ববর্তী পাপের জন্য ক্ষতিপূরণ (পাপ মোচনকারী) হবে।’’
🔺(ক. ইমাম তিরমিযী : আস-সুনান : কিতাবুল ইলম : ৪/২৯ পৃ. হাদিস : ২৬৪৮, ইমাম দারেমী : আস সুনান : ১/১৪৯ পৃ. হাদিস : ৫৬১, মুত্তাকী হিন্দী, কানযুল উম্মাল, ১০/১৩৯পৃ. হাদিস,২৮৬৯৯, ইমাম সূয়তী : জামেউস সগীর : ২/৬২১ হাদিস : ২০৮৭১, ইমাম জালালুদ্দীন সুয়ুতী : জামিউল আহাদিস : ৭/৬১ পৃ. হাদিস : ২০৮৭১, খতিব তিবরিজী : মিশকাত : কিতাবুল ইলম : ১/ হাদিস : ২২১)

ইমাম শাফেয়ী (رحمة الله) যিয়ারতের উদ্দেশ্যে ইমাম আযম (رحمة الله)‘র মাজার সফর
____________________
ইমাম শাফেয়ী (رحمة الله) যিয়ারতের উদ্দেশ্যে ইমাম আযম (رحمة الله)‘র মাজার সফরঃ

ইমাম ইবনে আবেদীন শামী (رحمة الله) লিখেন-

إنِّي لَأَتَبَرَّكُ بِأَبِي حَنِيفَةَ وَأَجِيءُ إلَى قَبْرِهِ، فَإِذَا عَرَضَتْ لِي حَاجَةٌ صَلَّيْت رَكْعَتَيْنِ وَسَأَلْت اللَّهَ تَعَالَى عِنْدَ قَبْرِهِ فَتُقْضَى سَرِيعًا.

-‘‘আমি ইমাম আবু হানিফা (رحمة الله) থেকে বরকত হাসিল করি এবং তার মাজারে আসি। আমার কোন সমস্যা দেখা দিলে, প্রথমে দু’রাকাত নামায পড়ি। অতঃপর তাঁর মাজারে গিয়ে আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করি, তখন সহসা আমার সমাধান হয়ে যায়।’’
🔺(ইবনে আবেদীন শামী, ফাতওয়ায়ে শামী, ১/৫৫পৃ. দারুল ফিকর ইলমিয়্যাহ, বয়রুত, লেবানন)

উপরোক্ত বক্তব্য থেকে কয়েকটি বিষয় জানা গেল ইমাম শাফেঈ (রহ) নিজের জন্ম ভূমি ফিলিস্তিন থেকে ইমাম আবু হানিফা (রহ) এর মাযার যিয়ারত করার উদ্দেশ্যে সূদুর বাগদাদ শরীফ আসতেন। তাহলে এ বিজ্ঞ মুজতাহিদ ইমাম শাফেয়ী (রহ) কী হারাম, শিরক কাজ করলেন? অনেকে দাবি করতে পারেন এ হাদিসটির তো ইমাম ইবনে আবিদীন (রহ) কোন সনদ উল্লেখ করেননি। বিখ্যাত মুহাদ্দিস ইমাম খতিবে বাগদাদী (রহ) এ ঘটনাটির সনদসহ উল্লেখ করেন এভাবে-

أَخْبَرَنَا الْقَاضِي أَبُو عَبْد اللَّهِ الْحُسَيْنُ بْن عَلِيّ بْن مُحَمَّد الصيمري قال أنبأنا عمر بن إبراهيم قال نبأنا عَلِيّ بْن ميمون قَالَ: سمعت الشافعي يقول: إني لأتبرك بأبي حنيفة وأجيء إِلَى قبره في كل يوم- يَعْنِي زائرا- فإذا عرضت لي حاجة صليت ركعتين وجئت إِلَى قبره وسألت الله تعالى الحاجة عنده، فما تبعد عني حتى تقضى.

-‘‘ইমাম খতিবে বাগদাদী (রহ) বলেন আমাকে.......তাকে আলী ইবনে মায়মুন (রা) বলেন আমি ইমাম শাফেয়ী (রহ) কে বলতে শুনেছি......।’
🔺(খতিবে বাগদাদী, তারীখে বাগদাদ, ১/১৩৫ পৃ. দারুল কুতুব ইলমিয়্যাহ, বয়রুত, লেবানন)

★গেয়ারভী শরীফের ইতিহাস★
____________________
অষ্টম অধ্যায়

★গেয়ারভী শরীফের ইতিহাস★

ইসলামী শরীয়তে সকল কিছুই প্রথমত বৈধ, যে পর্যন্ত তা কোন সুস্পষ্ট দলীল দ্বারা নিষেধ প্রমাণিত না হয়। বৈধ হওয়ার জন্য এতটুকুই যথেষ্ট। এজন্যই ইমাম আবু হানিফা (رحمة الله) ও ইমাম শাফেয়ী (رحمة الله) উভয়ই বলেন-

الْمُخْتَارَ أَنَّ الْأَصْلَ الْإِبَاحَةُ عِنْدَ الْجُمْهُورِ مِنْ الْحَنَفِيَّةِ وَالشَّافِعِيَّةِ

ইমাম শাফেয়ী, ইমাম আবু হানিফা এবং জমহুর ইমামদের পছন্দনীয় মতামত হল প্রত্যেক কিছুই বৈধ (যে পর্যন্ত না কোন দলীল দ্বারা নিষেধ করা হয়)। 
🔺(ইমাম ইবনে আবেদীন শামী : রদ্দুল মুখতার আলা দুররুল মুখতার: ১/৭৮পৃ কিতাবুত তাহারাত)

তাই বৈধ হওয়ার জন্য এতটুকুই যথেষ্ট। আমাদের সমাজের এক শ্রেণীর কাঠ মোল্লাগণ মাহফিলে এই গেয়ারভী শরীফকে হারাম পর্যন্ত ফাতওয়া দিয়ে বেড়ান। অথচ হযরত সালমান ফারসী (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক ব্যক্তির প্রশ্নের জবাবে বলেন-

الْحَلَالُ مَا أَحَلَّ اللَّهُ فِي كِتَابِهِ وَالْحَرَامُ مَا حَرَّمَ اللَّهُ فِي كِتَابِهِ وَمَا سَكَتَ عَنْهُ فَهُوَ مِمَّا عَفَا عَنْهُ

-‘‘হালাল হচ্ছে যা আল্লাহ তা‘য়ালা স্বীয় কিতাবে (কুরআনে) হালাল করেছেন; আর হারাম হচ্ছে, স্বীয় কিতাবে (কুরআনে) যা হারাম করেছেন এবং যেটা সম্পর্কে নিরব রয়েছেন সেটা মাফ।’’ 
🔺(খতীব তিবরিযী : মিশকাত : কিতাবুত : কিতাবুদ-ত্বআম: ৩/৯৮পৃ., ইমাম তিরমিযী : আস সুনান: ৪/১৯২পৃ : হাদিস : ১৭২৬, ইমাম ইবনে মাজাহ : আস-সুনান: ২/১১১পৃ হাদিস : ৩৩৯৭)

তাহলে সেই কাঠ মোল্লাদের কাছে জানতে চাওয়া কোরআন, অথবা হাদিসের কোন কিতাবে গিয়ারভী শরীফ পালন নিষিদ্ধ বলা হয়েছে ? কিয়ামত পর্যন্ত তাদের মুখ থেকে কোন জবাব পাওয়া যাবে না। আমরা এটিকে নফল বা মুস্তাহাব হিসেবেই জানি। মুস্তাহাব হওয়ার জন্য শরিয়তে কোন নিষেধ না থাকলে এবং বুযুর্গদের ভাল ধারণাই যথেষ্ট। ইমাম আলাউদ্দিন হাসকাফী (رحمة الله) তাঁর লিখিত বিখ্যাত হানাফী ফিকহের গ্রন্থ ‘‘দুররুল মুখতারের ওজুর মুস্তাহাব অধ্যায়ে লিখেন-

وَمُسْتَحَبُّهُ وَهُوَ مَا فَعَلَهُ النَّبِيُّ - صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ - مَرَّةً وَتَرَكَهُ أُخْرَى، وَمَا أَحَبَّهُ السَّلَفُ

-‘‘মুস্তাহাব ঐ কাজটাকে বলা হয়, যেটা হুযুর(ﷺ ) কোন সময় করেছেন আবার কোন সময় করেননি এবং ঐ কাজটাকেও বলে, যেটা বিগত মুসলমানগণ ভাল মনে করেছেন।’’ 
🔺(ইবনে আবেদীন শামী, ফাতোয়ায়ে শামী, ১/১২৩পৃ. দারুল ফিকর ইলমিয়্যাহ, বয়রুত, লেবানন)

গেয়ারভী শরীফে যে সমস্ত আমল ওজীফা রয়েছে সেগুলো বড় পীর গাউসুল আযম আব্দুল কাদের জিলানী (رحمة الله) কুরানের আয়াত এবং বিভিন্ন বিক্ষিপ্ত হাদিস থেকে একসাথে করেছেন। তাতে ইসলামী শরীয়তে অসুবিধার কিছু নেই। তেমনিভাবে বিরোদ্ধবাদীদেও পীর বুযুর্গরাও বিভিন্ন দোয়া ওজিফা বর্তমানে দিচ্ছেন এবং দিয়ে গেছেন তাহলে সেটা বিদ‘আত, নাজায়েয বলেন না কেন?

★গেয়ারভী শরীফের ভিত্তি ও ইতিকথা ★
____________________
★গেয়ারভী শরীফের ভিত্তি ও ইতিকথা ★

হাকীমুল উম্মত মুফতী আহ্মদ ইয়ার খান নঈমী গুজরাটী (رحمة الله) স্বীয় রচিত তাফসির- আহছানুত তাফসীর-(সংক্ষেপে তাফসীরে নঈমী) প্রথম পারা সুরা বাক্বারা ২৭ নম্বর আয়াত পৃষ্ঠা ২৯৭ তে হযরত আদম আলাইহিস সালামের তাওবা প্রসঙ্গে সংক্ষেপে গেয়ারভী শরীফের ভিত্তি ও ইতিকথা লিপিবদ্ধ করেছেন। সেখানে তিনি প্রসিদ্ধ আম্বিয়ায়ে কেরাম আলাইহিমুস সালামগণের গেয়ারভী শরীফ পালনের ইতিকথা বর্ণনা করেছেন। নিম্নে তা উদ্ধৃত করা হলোঃ 

১. হযরত আদম আলাইহিস সালাম কতৃক গেয়ারভী শরীফ পালনঃ 
 হযরত আদম আলাইহিস সালাম ও হযরত বিবি হাওয়া আলাইহিস সালাম বেহেস্ত হতে দুনিয়াতে নিক্ষিপ্ত হওয়ার পর আল্লাহর সান্নিধ্য ও স্বর্গসুখ হতে বঞ্চিত হওয়ার কারণে এবং নিজেদেও সামান্য ভুলের অনুশোচনায় তিনশত বৎসর একাধারে কেঁদে কেঁদে বুক ভাসিয়েছিলে এবং তাওবা কারেছিলেন। তাঁদের প্রথম আমল ছিল অনুতাপ ও তাওবা। তাই আল্লাহর নিকট বান্দার তাওবা ও চোখের পানি অতি প্রিয়। তিনশত বৎসর পর আল্লাহর দয়া হলো। হযতর আদম আলাইহিস সালামের অন্তরে আল্লাহ তায়ালা কতিপয় তাওবার দোয়া গোপনে ঢেলে দিলেন। হযতর আদম আলাইহিস সালাম সে সব দোয়া করে অবশেষে আল্লাহর আরশে আল্লাহরই নামের পাশের্ব লিখা নাম “মুহাম্মদুর রাসুলুল্লাহ” (ﷺ)- এর উছিলা ধরে ক্ষমা ভিক্ষা করলেন। আল্লাহ্ এতে খুশী হয়ে হযতর আদম আলাইহিস সালাম এর তাওবা কবুল করলেন। 
🔺(এ বিষয়ে বিস্তারিত জানতে আমার লিখিত ‘‘প্রমাণিত হাদিসকে জাল বানানোর স্বরূপ উন্মোচন’’ ১ম খন্ডের ১০৫-১০৯ পর্যন্ত দেখুন)

ঐ দিনটি ছিল আশুরার দিন- অর্থাৎ মুহররমের ১০ তারিখ রোজ শুক্রবার। এ মহা বিপদ থেকে মুক্তি পেয়ে হযরত আদম ও হযরত হাওয়া আলাইহিস সালাম ঐ রাতে অর্থাৎ ১১ই রাতে তাওবা কবুল ও বিপদ মুক্তির শুকরিয়া স্বরূপ মুযদালিফার যে বিশেষ ইবাদত করেছিলেন- তারই নাম গেয়ারভী শরীফ।

২.হযরত নূহ আলাইহিসসালাম কতৃক গেয়ারভী শরীফ পালনঃ
 হযরত নূহ্ আলাইহিস সালাম মহা প্লাবনের সময় রজব মাসের ১০ তারিখ থেকে মুহররম মাসের ১০ তারিখ পর্যন্ত ছয় মাস ৭২ জন সঙ্গী নিয়ে কিস্তির মধ্যে ভাসমান ছিলেন। গাছ-গাছালী, পাহাড়-পর্বত সব কিছু ছিল পানির নীচে। অতঃপর আল্লাহর রহমতে ছয়মাস পর তার নৌকা জুদী পাহাড়ের চূড়ায় এসে ঠেকলো। পানি কমে গেলে তিনি দুনিয়ায় নেমে আসেন। ঐ তারিখটিও উপলক্ষে সকলকে নিয়ে ১১ই রাত্রে শুকরিয়া স্বরূপ ইবাদত করেছিলেন। এটা ছিল নূহ নবীর আলাইহিস সালাম এর গেয়ারভী শরীফ।

৩.হযতর ইব্রাহীম আলাইহিস সালামের গেয়ারভী শরীফঃ 
হযরত ইব্রাহীম আলাইহিস সালামকে কোন রকমেই তার ইসলাম প্রচার থেকে বিরত করতে না পেরে এবং সকল বাহাছ-বিতর্কে পরাজিত ও নাস্তনাবুদ হয়ে অবশেষে জালেম বাদশাহ নমরূদ হযরত ইব্রাহীম আলাইহিস সালামকে অগ্নিকুন্ডে নিক্ষেপ করলো। চল্লিশ দিন পর্যন্ত তাকে অগ্নিকুন্ডের মধ্যে রাখা হলো। আল্লাহর অসীম রহমতের আগুনের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে গেলো এবং অগ্নিকুন্ডে ফুল বাগিচার পরিণত হলো। চল্লিশ দিন পর যেদিন হযতর ইব্রাহিম আলাইহিস সালাম আগুন থেকে বের হয়ে আসলেন- সে দিনটিও ছিল আশুরার দিন। তিনি এই মহামুক্তির শুকরিয়া আদায় করলেন ১১ই রাত্রে। তাই এটা ছিল হযতর ইব্রাহীম আলাইহিস সালামের গেয়ারভী শরীফ।

৪.হযরত ইয়াকুব আলাইহিস সালাম এর গেয়ারভী শরীফঃ 
 হযরত ইয়াকুব আলাইহিস সালাম আপন প্রিয়তম পুত্র হযতর ইউসুফ আলাইহিস সালামকে হারিয়ে চল্লিশ বৎসর একাধারে কান্নারত ছিলেন। কুরআনে বর্ণিত বহু ঘটনার পর অবশেষে তিনি হারানো পুত্রকে ফিরে পেলেন এবং তার অন্ধ চক্ষু হযতর ইউসুফের জামার বরকতে ফিরে পেলেন। এই দীর্ঘ বিপদ মুক্তির দিনটিও ছিল আশুরার দিন। তিনি ঐ রাত্রে আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করলেন। এটা ছিল হযরত ইয়াকুব আলাইহিস সালাম এর গেয়ারভী শরীফ।

৫.হযতর আইউব আলাইহিস সালাম এর গেয়ারভী শরীফঃ 
 হযরত আইউব আলাইহিস সালাম আল্লাহর বিশেষ পরীক্ষা স্বরূপ দীর্ঘ আঠার বৎসর রোগমুক্তির দিনটিও ছিল আশুরার দিন। তিনি এই রোগমুক্তি ও ঈমানী পরীক্ষা পাশের শুকরিয়া স্বরূপ ১১ই রাত্রটি ইবাদতে কাটালেন। এটা ছিল হযতর আইউব আলাইহিস সালাম এর গেয়ারভী শরীফ।

৬.হযরত মুছা আলাইহিসসালাম এর গেয়ারভী শরীফঃ   
 হযরত মুছা আলাইহিস সালাম ও বণী ইসরাঈলকে মিশরের অধিপতি ফেরাউন বহু কষ্ট দিয়েছিল। নবীর সাথে তার বেয়াদবী যখন সীমা ছাড়িয়ে যায় এবং তার খোদায়ী দাবীর মেয়াদ ফুরিয়ে যায়, তখন আল্লাহর নির্দেশে হযতর মুছা আলাইহিস সালাম শিশুসহ ১২ লক্ষ বণী ইসরাঈলকে নিয়ে মিশর ত্যাগ করেন। সামনে নীল নদ। আল্লাহর নির্দেশে তার লাঠির আঘাতে নীলনদের পানি দ্বিখন্ডিত হয়ে দু’দিকে পাহাড়ের মত দেয়াল স্বরূপ দাঁড়িয়ে যায় এবং ১২টি শুকনো রাস্তা হয়ে যায়। প্রত্যেক রাস্তা দিয়ে একলক্ষ লোক তড়িৎ গতিতে অতিক্রক করে নদীর অপর তীরে এশিয়া ভূ-খন্ডে প্রবেশ করে। ফেরাউন তাদের পশ্চাদ্ধাবন করতে গিয়ে দু’দিকের পাহাড়সম পানির আঘাতে স্বসৈন্যে ডুবে মরে। হযরত মুছা আলাইহিস সালাম ও তার সঙ্গীসহ ১১ই রাত্র শুকরিয়া স্বরূপ আল্লাহর ইবাদতে নিমগ্ন থাকেন। এটা ছিল হযতর মুছা আলাইহিস সালামের গেয়ারভী শরীফ। নবী করিম (দ.) মদিনার ইহুদী জাতিকে আশুরার দিনে রোযা পালন করতে দেখেছেন। তাই উম্মতে মুহাম্মদির জন্য আশুরার রোযা রাখা নফল করে দিয়েছেন।

৭. হযতর ইউনুছ আলাইহিস সালাম এর গেয়ারভী শরীফঃ 
হযতর ইউনুস আলাইহিস সালাম দীর্ঘ ৪০ দিন পর মাছের পেট থেকে মোসেলের নাইনিওয়া নামক স্তানে মুক্তি পেয়েছিলেন। সেদিনটিও ছিল আশুরার দিন। তাই তিনি ঐ রাত্রে খোদার শুক্রিয়া আদায় করেছিলেন খুব দুর্বল অবস্থায়। কাজেই এটা ছিল হযতর ইউনুছ আলাইহিস সালাম এর গেয়ারভী শরীফ।

৮.হযরত দাউদ আলাইহিস সালাম এর গেয়ারভী শরীফঃ 
 হযরত দাউদ আলাইহিস সালাম ১০০তম বৈধ বিবাহের কারণে আল্লাহর ইঙ্গিতে অনুতপ্ত হয়ে আল্লাহর কাছে সিজদায় পড়ে তাওবা করেন। আল্লাহ তার তাওবা কবুল করে খুশি হয়ে যান। ঐ দিনটিও ছিল আশুরার দিন। তাই তিনি ঐ রাত্রে শুকরিয়া আদায় করেন। এটা ছিল হযরত দাউদ আলাইহিস সালাম এর গেয়ারভী শরীফ।

৯. হযরত সোলায়মান আলাইহিস সালাম এর গেয়ারভী শরীফঃ 
হযতর সোলায়মান আলাইহিস সালাম একবার রাজ্য ও সিংহাসন হারা হয়েছিলেন। চল্লিশ দিন পর জ্বীন জাতি কতর্ৃক লুক্বায়িত তার হারানো আংটি ফেরত পেয়ে রাজ্য ও সিংহাসন উদ্ধার করেন এবং জ্বীন জাতিকে শাস্তি প্রদান করেন। সৌভাগ্যক্রমে ঐ রাত্রেই হারানো নেয়ামতটি ফেরত পাওয়ার শুকরিয়া আদায় করেন। এটা ছিল হযরত সোলায়মান আলাইহিস সালাম এর গেয়ারভী শরীফ।

১০.হযতর ঈসা আলাইহিস সালাম এর গেয়ারভী শরীফঃ 
 হযতর ঈসা আলাইহিস সালামকে ইহুদী জাতি কখনও বরদাস্ত করতে পারেনি। ইহুদী রাজা হেরোডেটাস গুপ্তচর মারফত হযতর ইসা আলাইহিস সালামকে গ্রেফতার করার ষড়যন্ত্র করে। কিন্তু আল্লাহ্ পাক ঈসা আলাইহিস সালাম কে জিব্রাইলের মাধ্যমে আকাশে তুলে নেন এবং ঐ গুপ্তচরের আকৃতি পরিবর্তন করে ঈসা আলাইহিস সালামের আকৃতির অনুরূপ করে দেন। অবশেষে ঈসা আলাইহিস সালাম এর শক্রই ধৃত হয়ে শুলে বিদ্ধ হয়। হযতর ঈসা আলাইহিস সালাম এর আকাশে উত্তোলনের দিনটিও ছিল আশুরার দিন। তিনি মহাবিপদ থেকে মুক্তি পেয়ে ঐ রাত্রে আকাশে খোদার শুকরিয়া আদায় করেন। এটাই হযতর ঈসা আলাইহিস সালাম এর গেয়ারভী শরীফ।

১১.সাইয়িদুল মুরসালিন হযরত মুহাম্মদ মোস্তফা (ﷺ) এর গেয়ারভী শরীফঃ 
নবী করিম রাউফুর রাহীম হযতর মুহাম্মদ মোস্তফা সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম ৬ষ্ঠ হিজরীতে চৌদ্দশত সাহাবায়ে কেরামকে সাথে নিয়ে ওমরাহ্ করার উদ্দেশ্যে মক্কা শরীফ রওয়ানা দেন। কিন্তু মক্কার অদূরে হোদায়বিয়ার পৌঁছে মক্কার কুরাইশদের দ্বারা বাধাপ্রাপ্ত হন। ১৯ দিন পর অবশেষে একটি চুক্তির মাধ্যমে তিনি সে বৎসর ওমরাহ্ না করেই মদিনার পথে ফিরতি যাত্রা করেন। সাহাবায়ে কেরাম এটাকে গ্লানী মনে করে মনক্ষুন্ন হলেও রাসুলে পাকের দির্দেশ নতশীরে মেনে নেন। মদিনার পথে কুরা গামীম নামক স্থানে পৌঁছে নবী করিম (ﷺ) বিশ্রামের জন্য তাবু ফেলেন। ঐখানে সুরা আল ফাতাহ্ এর প্রথম কয়েকটি আয়াত নাযিল হয়। এতে মনক্ষুন্ন সাহাবায়ে কেরামকে শান্তনা দিয়ে আল্লাহ তায়ালা তার প্রিয় হাবীবকে লক্ষ্য করে বলেন- “হে রাসুল! আমি আপনার কারণেই হোদায়বিয়ার সন্ধিটিকে একটি মহান বিজয় হিসাবে দান করেছি। আপনার উছিলায়ই আপনার পূর্ববর্তী ও পরবর্তী সকলের গুনাহ্ আল্লাহ্ মাফ করে দিবেন।”

যেদিন এই সুসংবাদবাহী আয়াত নাযিল হয়- সেদিনটিও ছিল মুহররম মাসের ১০ তারিখ। মহা বিজয় ও গুনাহ মাগফিরাতের সুসংবাদ শ্রবণ করে সাহাবায়ে কেরাম হোদায়বিয়ার চুক্তির প্রকৃত রহস্য বুঝতে পারেন। নবী করিম (ﷺ) এবং সাহাবায়ে কেরাম ঐ ১১ই রাত্র আল্লাহ্ তায়ালার শুক্রিয়া আদায় করে কাটিয়ে দেন। এটা ছিল হুযুর (ﷺ) এর গেয়ারভী শরীফ। এ ঘটনাগুলো বিভিন্ন তাফসীরে বিদ্যমান রয়েছে। সময় স্বল্পতার কারণে এখানেই ক্ষান্ত হলাম।
এখানে সর্বমোট ১১ জন নবীর গেয়ারভী শরীফের দলীল পেশ করা হলো। অন্যান্য নবীগণের ঘটনাবলী এবং কারবালার হৃদয় বিদারক ঘটনাও ১০ই মুহররম তারিখে সংঘটিত হয়েছিল। গেয়ারভী শরীফের তাৎপর্যের সাথে সঙ্গতি রেখেই মাত্র ১১টি ঘটনার উল্লেখ করা হলো।

★হযরত গাউসুল আ’যম আবদুল কাদের জিলানী (رضي الله عنه) কিভাবে নবীগণের এই গেয়ারভী শরীফ পেলেন?★
____________________
★হযরত গাউসুল আ’যম আবদুল কাদের জিলানী (رضي الله عنه) কিভাবে নবীগণের এই গেয়ারভী শরীফ পেলেন?★

গেয়ারভী শরীফ মূলতঃ খতম ও দোয়া বিশেষ। হযতর গাউসুল আযম (رضي الله عنه) এর ইনতিকাল দিবসকে উপলক্ষ করে প্রতি চন্দ্র মাসের ১১ই তারিখে রাতে বা দিনে গাউসে পাকের পবিত্র রূহে ইছালে ছাওয়াবের উদ্দেশ্যে আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাআতের আলেম উলামা ও পীর মাশায়েখগণ উক্ত গেয়ারভী শরীফ বিশেষ নিয়মে খতমের মাধ্যমে পালন করে থাকেন। হযতর গাউসুল আযম (رضي الله عنه) কিভাবে এই গেয়ারভী শরীফ পেলেন- সে সম্পর্কে “মিলাদে শায়খে বরহক” বা ফাযায়েলে গাউছিয়া” নামক কিতাবে বর্ণিত আছেঃ 

“হযতর গাউসুল আযম আবদুল কাদের জিলানী (رضي الله عنه) (৪৭১-৫৬১) নবী করিম (ﷺ) এর বেলাদত উপলক্ষে প্রতি বৎসর ১২ই রবিউল আউয়াল তারিখটি নিয়মিতভাবে ও ভক্তি সহকারে পালন করতেন। এক দিন স্বপ্নের মধ্যে নবী করিম (ﷺ) গাউসে পাক্কে বললেন- “আমার ১২ই রবিউল আউয়াল তারিখকে তুমি যেভাবে সম্মান প্রদর্শন করে আসছো এর বিনিময়ে আমি তোমাকে আম্বিয়ায়ে কেরামের গেয়ারভী শরীফ দান করলাম”- মীলাদে শায়খে বরহক।
হযতর গাউসুল আযমের তরিকাভূক্ত পীর মাশায়েখগণ এবং অন্যান্য তরিকার মাশায়েখগণও গাউসে পাকের অনুসরণে প্রতি চন্দ্র মাসের ১১ তারিখ রাত্রে বা দিনে বিশেষ নিয়মে এই গেয়ারভী শরীফ পালন করে থাকেন এবং কেয়ামত পর্যন্ত ইহা চালু থাকবে- ইন্শাআল্লাহ।

★গেয়ারভী শরীফের ফযিলত ★ 
____________________
★গেয়ারভী শরীফের ফযিলত ★ 

ফাযায়েলে গাউছিয়া বা মীলাদে শায়খে বরহক কিতাবে উল্লেখ আছে-

১. যে ব্যক্তি নিয়মিতভাবে প্রতি চাঁদের ১১ তারিখে গেয়ারভী শরীফ পালন করবে, সে অল্পদিনের মধ্যে ধনবান ও স্বচ্ছল হবে এবং তার দরিদ্রতা দূর হয়ে যাবে। যে ব্যক্তি ইহাকে অস্বীকার করবে, সে দারিদ্রের মধ্যে থাকবে।

২. যেখানে এই গেয়ারভী শরীফ পালিত হয়, সেখানে খোদার রহমত নাযিল হয়। কেননা, হাদীস শরীফে আছে-

 تنزل الرحمة عند ذكر الصالحين

-“তানায্যালুর রাহ্মাতু ইন্দা যিকরিছ ছালেহীন” 
অর্থাৎ আউলিয়াগনের আলোচনা মজ্লিশে খোদার রহমত নাযিল হয়ে থাকে। 
🔺(ক. আল্লামা আযলূনী : কাশফুল খাফা : ২/৬৫ পৃ. হাদিস : ১৭৭০
    খ. খতিবে বাগদাদী : তারিখে বাগদাদ : ৩/২৪৯ পৃ., দারুল কুতুব ইলমিয়্যাহ, বয়রুত)

হযরত মু‘য়ায ইবনে জাবাল (রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু ) হতে বর্ণিত-  

ذِكْرُ الأنْبِياءِ مِنَ العِبادَةِ وذِكْرُ الصَّالِحِينَ كَفَّارَةٌ وَذِكْرُ المَوْتِ صَدَقَةٌ وَذِكْرُ القَبْرِ يُقَرِّبُكُمْ مِنَ الجَنَّةِ

-‘‘রাসূল (ﷺ) ইরশাদ করেন : নবীগণের যিকির হলো ইবাদত, সালেহীনদের (ওলীদের) যিকির হলো গুনাহের কাফ্ফারা, মওতের যিকির বা স্মরণ হলো সদকার সমতুল্য, কবরের কথা যিকির বা স্মরণ করলে তা তোমাদেরকে জান্নাতের নিকটবর্তী করে দেবে।’’
🔺(ক. ইমাম দায়লামী : আল মুসনাদুল ফিরদাউস : ১/৮২ পৃ., ইমাম সূয়তী : জামেউস সগীর : ১/৬৬৫ হাদিস নং : ৪৩৩১, ইমাম দায়লামী “হাসান” বলেছেন, ইমাম সূয়তী : জামিউল আহাদিস : ১৩/৪০পৃ. হাদিস : ১২৫০২, মুত্তাকী হিন্দী : কানযুল উম্মাল : ১৫/৮৬৪ পৃ. হাদিস : ৪৩৪৩৮,ও ১৫/৯১৮পৃ. হাদিস : ৪৩৫৮৪, আজলুনী, কাশফুল খাফা, ১/৪৮০পৃ. হাদিসঃ ১৩৪৫, শায়খ ইউসুফ নাবহানী, ফতহুল কাবীর, ২/১১৫পৃ. হাদিস, ৬৪৫৯, মানাবী, ফয়যুল কাদীর, ৩/৫৬৪পৃ.)

যে ব্যক্তি এই গেয়ারভী শরীফ পালন করবে, সে খায়র ও বরকত লাভ করবে।

৪. যে ব্যক্তি নিয়মিতভাবে গেয়ারভী শরীফ পালন করবে, সে বিপদ-আপদ থেকে রক্ষা পাবে। দুঃখ ও চিন্তা মুক্ত হবে এবং সুখে শান্তিতে জীবন যাপন করবে।

(সমাপ্ত)



Comments

Popular posts from this blog

বালাকোট আন্দোলনের হাকীকত

সৈয়দ আহমদ বেরলভীর জম্ম ও পরিচয়

মওদুদীর ভ্রান্ত আক্বিদা ও ইসলামী আক্বিদা