রাসুলেপাক (ﷺ) এর মুজেযা
রাসুলেপাক (ﷺ) এর মুজেযা
সংকলকঃ মাসুম বিল্লাহ সানি
____________________
নবী করীম (ﷺ) এর মুজেজা ও রোগের চিকিৎসা
নবী করীম (ﷺ) রোগের চিকিৎসা করা।
-------------------------------------
🖋কৃতঃ Mohammad Shahadat Hossain
🕋 হযরত কাতাদা ইবনে নু‘মান (ﷺ) হতে বর্ণিত তিনি বলেন, উহুদ যুদ্ধে তলোয়ারের আঘাতে আমার এক চোখ আঘাত প্রাপ্ত হই। এমন কি চোখের মণি বের হয়ে গন্ডদেশে চলে আসে। এমতাবস্থায় আমি প্রিয় নবী (ﷺ) এর সকাশে দৌড়ে এসে আরয করি, হে আল্লাহ রাসূল! আমার একজন স্ত্রী আছে। যিনি আমার কাছে অত্যন্ত প্রিয়। আমি এ অসুস্থ ও অপছন্দনীয় চোখ নিয়ে তার কাছে যাওয়াকে ভাল মনে করি না। তখন হুযুর (ﷺ) আমার আহত চোখকে তাঁর নিজ হাতে যথা স্থানে লাগিয়ে দেন এবং বললেন, হে আল্লাহ! তাঁর চোখ খুব সুস্থ করে দিন। এ ঘটনার পর হতে তাঁর এ চোখের দৃষ্টিশক্তি অপর সুস্থ চোখ হতে বেড়ে যায় এবং অন্য চোখে দরদ ব্যথা হলেও প্রিয় রাসূলের মোবারক হাত স্পর্শে ধন্য চোখ যাবতীয় রোগ-ব্যাধি হতে নিরাপদ থাকে।
(ক) ইমাম বায়হাকীঃ দালায়িলুন নবুয়্যাত, পৃষ্ঠা:৪৩৯,
(খ) ইমাম আব্দুল হক মুহাদ্দিসে দেহলভীঃ মাদারিজুন নবুয়্যাত (১ম খন্ড), পৃষ্ঠ: ৩৫৭)
🕋 ইমাম ইবনে মাজা তাঁর ‘সুনানে ইবনে মাজা‘য় ‘সালাতুল হাজত’ অধ্যায়ে বর্ণিত আছে যে, হযরত উসমান ইবনে হানীফ নামক এক সাহাবী বলেন, এক অন্ধ সাহাবী নবী করিম (ﷺ) এর খিদমতে উপস্থিত হয়ে আরয করলেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমার খিদমতের জন্য কোন লোক নেই, এ কারণে আমার বড় কষ্ট হচ্ছে।এতে হুযুর (ﷺ)বললেন যাও গিয়ে ওযূ করে আস, পরে দু’রাকাত নামায পড়, তারপর এ দোয়া
পড়ে দোয়া কর-اللهم انلي اسئلك و اتو جه اليك بنبيك محمد نبي الر حمـة يا محمج اني وجهت بك الي ربي في حا جتي حذه لتفضي لي حجتي
“উসমান ইবনে হানীফ (رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ) বলেন, আমরা মজলিসে হতে উঠে চলে যাবার আগেই এবং বেশ কিছু কথা বলার পূর্বেই সেই অন্ধত্ব সম্পূর্ণরূপে দূর হয়ে গেছে এবং এমন মনে হলো, যেন তিনি কখনই অন্ধ ছিলেন না।
(ক) ইমাম ইবনে মাজা: সুনান-ই ইবনে মাজা, অধ্যায়- সালাতুল হাজত,
(খ) মতিউর রহমান মালনানা: মু’জিযাতুন নবী, ১৯৯৪, পৃষ্ঠ:৫৯৬।
🕋 উহুদ যুদ্ধে হযরত কুলসুম ইবনে হাসীন (رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ) বক্ষে একটি তীর এসে বিন্ধ হলে তিনি দৌড়ে হুযুর (ﷺ) এর দরবারে গিয়ে উপস্থিত হন। তখন হুযুর (ﷺ) তার জখমের উপর থু থু মোবারক দিলে তিনি তখনই সুস্থ হয়ে যান।
[ইমাম কাযী আ‘য়ায: শিফা শরীফ (১ম খন্ড) পৃষ্ঠ: ২১২]
প্রিয় নবী (ﷺ) এর মুজেযা
____________________
প্রিয় নবী (ﷺ) এর মুজেযা
🖋মাওলানা মুহাম্মদ আরিফুল ইসলাম আশরাফী
মুজেযা শব্দের অর্থ নবীদের দ্বারা সংঘটিত অলৌকিক ঘটনা। আল্লাহ পাকের প্রেরিত সকল নবীরই কম বেশী মুজেযা রয়েছে। কিন্তু আমাদের নবী সরওয়ারে কায়েনাত সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের মোজেজাসমূহ অন্যান্য নবীগণের মোজেজা থেকে অধিক পূর্ণ ও অধিক উজ্জ্বল। অন্যান্য আম্বিয়া কেরামকে সম্মিলিতভাবে যত মোজেজা দেওয়া হয়েছিল, আমাদের প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে একা তার চেয়ে বেশি মোজেজা দেওয়া হয়েছে। অন্যান্য নবীগণের মুজেযা ছিল শুধু জমিনে, কিন্তু আমাদের প্রিয় নবীর মুজেযা ছিল জমিনে, আসমানে এবং বেহেশতে। অন্যান্য নবীগণের মুজেযা ছিল নির্দিষ্ট কিন্তু নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের মুজেযা নির্দিষ্ট ছিলোনা, তিনি যা ইচ্ছা করতেন আল্লাহ পাক তাই বাস্তবায়ন করে দিতেন। মূলতঃ তিনি নিজেই ছিলেন আপাদমস্তক মুজেযা।
সামান্য আহারে বরকত
____________________
সামান্য আহারে বরকতঃ
খাবারে বরকত সংক্রান্ত অসংখ্য ঘটনার বর্ণনা বিভিন্ন হাদীস গ্রন্থে এসেছে। তার মধ্যে একটি হলো-
হযরত আবু আইউব আনসারী রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত আছে যে, তিনি নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এবং হযরত আবুবকর রাদিয়াল্লাহু আনহুর জন্য খাবার প্রস্তুত করলেন। কিন্তু যথা সময় নবীজি তাকে বললেন, বড় বড় দেখে ত্রিশ জন আনসারীকে দাওয়াত কর। নবীজির হুকুম অনুযায়ী ত্রিশজন আনসারী এসে খেয়ে গেল। অবশেষে দেখা গেল, ঐ দুজনের খাবার হতে ত্রিশজন আনসারী তৃপ্তি সহকারে আহার করবার পরও খাবার বেঁচে গিয়েছে। (বায়হাকী)
হযরত আবু আইউব আনসারী রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, ঐ সামান্য খাবার হতে ত্রিশজন আনসারী পেট ভরে আহার করলো এবং এই মুজিযা দেখে সকলে ইসলাম কবুল করে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের হাতে বাইয়াত গ্রহণ করলো। তিনি আরো বলেন, সেই দিন ঐ খাবার দ্বারা সর্ব মোট একশ আশিজন তৃপ্তি সহকারে আহার করেছিলো।
উপরোক্ত ঘটনাটি ঐ সময়ের, যখন প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মক্কা হতে হিজরত করে হযরত আবু আইউব আনসারী রাদিয়াল্লাহু আনহুর গৃহে সাময়িকভাবে মেহমান হিসেবে অবস্থান করছিলেন।
নবীজির দোয়ার বরকত
____________________
নবীজির দোয়ার বরকতঃ
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হযরত ইবনে আব্বাসের জন্য দোয়া করলেন- ইয়া আল্লাহ! ইবনে আব্বাসকে দ্বীনের সমঝ ও তাফসীরের এলেম দান কর। নবীপাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের দোয়ার বরকতে তিনি এমন এলেম হাসিল করলেন যে, অবশেষে তাঁকে ‘বড় আলেম’ উপাধিতে ভূষিত করা হলো। তাফসীরের ক্ষেত্রে তিনি ‘তরজুমানুল কুরআন’ উপাধি লাভ করেছিলেন। (বুখারী ও মুসলিম)
গাছপালার আনুগত্য
____________________
গাছপালার আনুগত্যঃ
ইমাম হাকিম হযরত ইবনে ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণনা করছেন, আমরা একদা রাসুলে করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সঙ্গে কোন এক সফরে ছিলাম। এক বেদুইন আমাদের সামনে পড়লো। লোকটি নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের নিকট এলে তিনি জিজ্ঞেস করলেন, তুমি কোথায় যাচ্ছ? সে বললো, আমার পরিবার পরিজনের কাছে। তিনি বললেন, কোন কল্যাণ কি তুমি কামনা করো? সে বললো, সেটা আবার কী? নবীজি বললেন, ‘আল্লাহ ছাড়া আর কেউ উপাস্য নেই আর মোহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁর বান্দা এবং রাসুল’ এই সাক্ষ্য প্রদান করা। সে বললো, আপনি যা বললেন তার সত্যতার সাক্ষী কে? তিনি বললেন, এই বৃক্ষটিই আমার সাক্ষী। রাসুলে পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এক প্রান্তে অবস্থিত গাছটিকে ডাক দিলেন। বৃক্ষটি তৎক্ষনাত মাটি চিরে দুই ভাগ করে দৌড়ে নবীজির সামনে উপস্থিত হলো। তারপর তিনি গাছের নিকট থেকে তিনবার সাক্ষ্যগ্রহণ করলেন। গাছটি আবার যথাস্থানে ফিরে গেলো।
প্রাণীর আনুগত্য
____________________
প্রাণীর আনুগত্যঃ
ইমাম আহমদ এবং নাসায়ী হযরত আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত একখানা হাদীস বর্ণনা করেছেন। আনসার গোত্রের প্রত্যেকেই উট পালন করতো। এক বাড়িওয়ালা নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে নিবেদন করলেন, আমার একটি উট রয়েছে যার পিঠে করে আমি পানি এনে থাকি। উটটি বড় বেয়াড়া হয়ে গিয়েছে। বোঝা বহন করতে চায় না। আর এদিকে আমার খেজুর বাগান পানির অভাবে শুকিয়ে যাচ্ছে। এ কথা শুনে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সাহাবা কেরামকে সঙ্গে নিয়ে উটটির কাছে গেলেন। তিনি বাগানে পৌছলেন এবং একস্থানে দাঁড়িয়ে গেলেন। বাগানের এক কোণে বসা ছিলো উটটি।
আনসারী লোকটি বললো, ইয়া রাসুলাল্লাহ! এটাই আমার উট, যে কুকুরের মতো মানুষকে কামড়াতে চায়। আমার ভয় হচ্ছে, না জানি আপনাকেও সে কামড়ে দেয়। নবীজি বললেন, আমার ব্যাপারে ভয় করো না। তিনি উটের সামনে গেলেন। উটটি তাঁকে দেখা মাত্র মাথা উঠালো এবং তাঁর সামনে গিয়ে কদম মোবারকের কাছে মাথা নত করে সেজদা করলো। রাসুলে পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উটটির মাথার পশম ধরে টান দিয়ে কাজে লাগিয়ে দিলেন। সাহাবা কেরাম নিবেদন করলেন, ইয়া রাসুলাল্লাহ! এটি একটি জানোয়ার, তার কোন জ্ঞানবুদ্ধি নেই। এই প্রাণীটি আপনাকে সেজদা করেছে। তবেতো আমরাও আপনাকে সেজদা করতে পারি। রাসুলে পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এরশাদ করলেন, কোনো মানুষের জন্য এটা উচিত নয় যে, সে অন্য একজন মানুষকে সেজদা করবে। মানুষের জন্য মানুষকে সেজদা করা বৈধ হলে আমি নারী জাতিকে তাদের স্বামীগণকে সেজদা করতে বলতাম।
জড় পদার্থের আনুগত্য
____________________
জড় পদার্থের আনুগত্যঃ
দুনিয়ার সকল প্রাণীকুলই শুধু নবী পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের গোলামী করেননি, জড় পদার্থসমূহও প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের হুকুমের গোলাম ছিলো। তারাও নবীজির দরবারে সালাম নিবেদন করেছে, কথা বলেছে। এ সংক্রান্ত অনেক ঘটনা রয়েছে। তার মধ্যে মাত্র কয়েকটি উল্লেখ করা হলো।
১। সহীহ মুসলিম শরীফে হযরত জাবের ইবনে সামুরাহ রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত আছে। নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এরশাদ করেছেন, আমি নিঃসন্দেহে ঐ পাথরগুলোকে চিনি, যারা নবুওয়াতপ্রাপ্তির পূর্বে মক্কা মুকাররামায় আমাকে সালাম জানাতো। বেশির ভাগ মুহাদ্দেসীনে কেরামের মতে এই পাথরগুলোর নাম ‘যেকাকুল হাজার’ যে পাথরগুলো নবীজির আসা যাওয়ার পথে তাঁকে সালাম পেশ করতো।
২। হযরত আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত আছে, একদা রাসুলে পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হযরত আবু বকর, হযরত ওমর ও হযরত ওসমানকে সঙ্গে নিয়ে উহুদ পাহাড়ে উঠেছিলেন। উহুদ মদিনা মনোয়ারার নিকটবর্তী একটি পাহাড়। নবীজি বলেন, উহুদ এমন একটি পাহাড় যে আমাদেরকে ভালোবাসে এবং আমরা তাকে ভালোবাসি। তিনজন উহুদ পাহাড়ে আরোহন করলে সে কাঁপতে লাগলো। নবীজি স্বীয় কদম মোবারক তাঁর উপর রেখে বললেন, হে উহুদ! স্থির থাকো। তোমার উপর এ মুহুর্তে একজন নবী, একজন সিদ্দিক এবং দুজন শহীদ ব্যতীত আর কেউ নেই। সাথে সাথে পাহাড়ের কম্পন বন্ধ হয়ে যায়।
পানি সম্পর্কিত মুজিযা
____________________
পানি সম্পর্কিত মুজিযাঃ
১। বোখারী ও মুসলিম শরীফে বর্ণিত আছে যে, হুদায়বিয়াতে একবার সাহাবায়ে কেরাম পিপাসায় কাতর হয়ে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের নিকট আরজ করলেন, সহযাত্রীদের কারো নিকট পান করার মতো পানির কোন ব্যবস্থা নেই। আপনি অজু করার পর বদনাতে যে সামান্য পানি পড়ে আছে এখন তাই শেষ সম্বল। একথা শুনে প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম স্বীয় হস্ত মোবারক বদনার ভিতর ঢুকিয়ে দিলেন। সঙ্গে সঙ্গে তাঁর অঙ্গুলী হতে পানির ¯্রােত বইতে লাগলো। সকল সাহাবা তৃপ্তির সঙ্গে পানি পান করে অজু করলেন। হযরত জাবের রাদিয়াল্লাহু আনহুকে জিজ্ঞেস করা হলো, সাহাবাদের সংখ্যা কত ছিলো? তিনি বললেন, আমাদের সংখ্যা পনেরশ ছিলো বটে কিন্তু এই সংখ্যা যদি লক্ষও হতো তথাপি সকলের প্রয়োজন মিটাতে ঐ পানিই যথেষ্ট ছিলো।
২। বারা বিন আজিব রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত আছে যে, তিনি বলেন, হুদায়বিয়াতে আমরা চৌদ্দশ ব্যক্তি নবী পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সঙ্গে ছিলাম। তথায় একটি মাত্র কূপ ছিলো। আমরা উহার সম্পূর্ণ পানি উত্তোলন করে শেষ করে ফেললাম। অবশেষে এতে আর এক ফোটা পানিও অবশিষ্ট রইলো না। সংবাদ পেয়ে নবী পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ঐ কূপের নিকট তাশরিফ আনলেন। একটি পাত্রে কিছু পানি এনে তিনি অজু করলেন। অজু শেষে পুনরায় কুলি করে আল্লাহ পাকের দরবারে দোয়া করলেন। অতঃপর অজু শেষে যে সামান্য পানি বেঁচে ছিলো তা কূপের ভিতরে ঢেলে দিয়ে বললেন, কিছুক্ষণ অপেক্ষা করো। বর্ণনাকারী বলেন, একটি পরেই ঐ কূপে এতো পানি বৃদ্ধি পেলো যে, আমাদের গবাদী পশুগুলো সহ আমরা সকলে তৃপ্তির সাথে পানি পান করলাম। আমরা সকলে তথায় বিশ দিন অবস্থান করলাম। ঐ সময় ঐ কূপ থেকেই আমাদের পানির চাহিদা পূরণ হয়।
রোগীদের আরোগ্য করা
____________________
রোগীদের আরোগ্য করাঃ
১। যায়েদ বিন আবী ওবায়দা হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি সালামা বিন আকওয়ার পায়ের যখমের চিহ দেখে জিজ্ঞাসা করলাম, তোমার পায়ে কি হয়েছিল? জবাবে সে বললো, খায়বরের যুদ্ধে প্রতিপক্ষের আঘাতে আমার পায়ে জখম হয়। জখমের ভয়াবহতার কারণে মানুষের মধ্যে রটে গেল যে, আমি শাহাদাত বরণ করেছি। কারণ ঐ আঘাতের পর বেঁচে থাকা স্বাভাবিক ছিলো না।
সালামা বিন আকওয়া রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের দরবারে ঐ জখম নিয়ে হাজির হলে তিনি ক্ষতস্থানে তিনবার দম করলেন। ফলে তার জখম সম্পূর্ণ ভালো হয়ে গেলো।
২। হযরত কাতাদা ইবনে নোমান রাদিয়াল্লাহু আনহুর চোখে উহুদের যুদ্ধের দিন আঘাত লেগেছিলো। চোখের মণি বের হয়ে গাল পর্যন্ত নেমে এসেছিলো। তিনি নবী পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের দরবারে এসে নিবেদন করলেন, ইয়া রাসুলাল্লাহ! আমার স্ত্রীকে আমি খুব ভালোবাসি। আমার চোখের এরুপ যখম নিয়ে তার নিকট যেতে আমি অস্বস্থিবোধ করছি। নবী পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তখন তার চোখের মণিটি হাত দিয়ে ধরে কোটরে বসিয়ে দিলেন এবং বললেন, হে আল্লাহ চোখটি ভালো করে দাও। তাঁর চোখটি অপর চোখের চেয়ে অধিকতর সুন্দর ও উত্তম দৃষ্টিসম্পন্ন হয়েছিলো। কখনো অপর চোখে যন্ত্রণা হলেও এই চোখটি সবসময় সুস্থ থাকতো।
নবীজির বদদোয়া
____________________
নবীজির বদদোয়াঃ
১। সালামা বিন আকওয়া রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে মুসলিম বর্ণনা করেন, নবী পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সম্মুখে এক ব্যক্তি বাম হাতে আহার করছিলো। প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাকে নসীহত করে বললেন, ডান হাতে আহার করো। কিন্তু ঐ হতভাগ্য এ বলে নসীহত প্রত্যাখ্যান করলো যে, আমি ডান হাতে খেতে পারি না। অথচ তার ডান হাতে কোন অসুবিধা ছিলো না। তার ঐ বেপরোয়া উত্তরের জবাবে নবী পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, তুমি ডান হাত দিয়ে খেতে পারবে না। অতঃপর তার ডান হাত এমন অকেজো হয়ে গেলো যে, তা আর মুখ পর্যন্ত উঠাতে পারতো না।
২। হায়হাকী, হাকিম এবং ইবনে ইসহাক বলেন, রাসুলে পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আবু লাহাবের ছেলে উতবার জন্য বদ দোয়া করে বললেন, ইয়া আল্লাহ! কুকুর জাতীয় প্রাণী হতে কোন একটি কুকুরকে তার পেছনে লেলিয়ে দাও। রাসুলে পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এই বদ দোয়ার পর উতবাকে একটি বাঘ আক্রমণ করে শেষ করে ফেলেছিলো।
৩। বায়হাকী বর্ণনা করেন, হাকাম বিন আবিল আস নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের মজলিসে বসা ছিলো। হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যখন কথা বলতেন, তখন সে নাক মুখ ভেংচাতো এবং মুনাফিকদের দিকে চোখের ইশারা করে প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কথার উপর হাসি তামাশা করতো। নবীজি তার এই অশালীন আচরণ দেখে বললেন, তুমি এরুপই হয়ে যাবে। অতঃপর সে মৃত্যু পর্যন্ত অনবরত অনুরুপভাবে মুখ ভেংচাতে ছিলো।
চন্দ্র দ্বিখন্ডিত করা
____________________
চন্দ্র দ্বিখন্ডিত করাঃ
প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের অসংখ্য মুজিযার মধ্যে সবচেয়ে বিস্ময়কর ছিলো আঙুলের ইশারায় চাঁদ দ্বিখন্ডিত করা। এটি কুরাইশদের সামনে ছিলো নবীজির নবুওয়াতের প্রমাণ এবং নবী বিদ্বেষীদের জন্য তাঁর উচ্চ মর্যাদার দলীল। অন্য কোন নবীর পক্ষ থেকে এর চেয়ে বিস্ময়কর কোন ঘটনা ঘটেনি। ঘটনাটি নিম্নরুপ-
হিজরতের পূর্বে মক্কা শরীফে আবু জাহেল, ওলীদ বিন মুগীরাহ এবং আ’স বিন ওয়ায়েল প্রমুখ কাফিররা রাসুলে পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বলল যে, তুমি যদি সত্য নবী হও, তবে আকাশের চন্দ্রকে দ্বিখন্ডিত করে দেখাও। প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাদেরকে জিজ্ঞেস করলেন, আমি যদি এরূপ করে দেখাতে পারি, তবে কি তোমরা ঈমান আনবে? উত্তরে তারা বললো- হ্যা। নবী পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আল্লাহ পাকের দরবারে দোয়া করলেন যেন চাঁদ দুই টুকরা হয়ে যায়। আল্লাহ তাঁর প্রিয় হাবীবের দোয়া কবুল করলেন। অতঃপর তিনি চাঁদের দিকে ইশারা করতেই তা দুই টুকরা হয়ে গেলো। এবার তিনি কাফিরদের এক একজনের নাম নিয়ে ডেকে ডেকে বললেন, হে অমুক, সাক্ষী থাকো। হে অমুক সাক্ষী থাকো। সকল কাফিররা চাঁদের দ্বিখন্ডন ভালোভাবে দেখতে পেলো। চাঁদের খন্ড দুইটি পরস্পর থেকে এতো দূরে চলে গেলো যে এটার মধ্যদিয়ে হেরা পর্বত দেখা যাচ্ছিল। কিন্তু কাফিররা এই ঘটনাকে অস্বীকার করলো এবং এটাকে নিছক যাদুক্রিয়া বলে মন্তব্য করলো। এই মুজিযা সম্পর্কে আল্লাহ পাক ইরশাদ করেন।
اِقْتَرَبَتِ السَّاعَةُ وَانْشَقَّ الْقَمَرُ – وَاِنْ يَّرَوْا ايَةً يَعْرُضُوْنَ وَيَقُوْلُوْا سِحْرٌ مُسْتَمَر-
অর্থাৎ- “কেয়ামত নিকটে এসে পড়েছে এবং চন্দ্র দ্বিখন্ডিত হয়ে গিয়েছে। আর যদি তারা কোন মু’জিযা দেখে তবে টাল-বাহানা করে এবং বলে এতো যাদু, এখনই তাদের অবসান ঘটবে।”
ডুবন্ত সূর্যকে ফিরিয়ে আনা
____________________
ডুবন্ত সূর্যকে ফিরিয়ে আনাঃ
উর্দ্ধাকাশে নবীজির মুজেযার আরেকটি দৃষ্টান্ত হচ্ছে ডুবন্ত সূর্যকে ফিরিয়ে আনা। ইমাম তাহাভী ও তাবরানী আসমা বিনতে উমাইস রাদিয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্ণনা করেন। নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম খায়বারের কাছাকাছি সাহ্বা নামক স্থানে অবস্থান করছিলেন। ঐ সময় তাঁর উপর অহী নাযিল হয়। তিনি হযরত আলী রাদিয়াল্লাহু আনহুর জানুতে মাথা রেখে ঘুমিয়ে পড়লেন। হযরত আলী রাদিয়াল্লাহু আনহুর তখনও আসর নামাজ পড়া হয়নি। প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের নিদ্রা ভেঙ্গে যাওয়ার আশঙ্কায় তিনি নড়া চড়া করছেন না। সূর্য অস্ত গেলো। নবীজি নিজেই জাগ্রত হয়ে হযরত আলীকে জিজ্ঞেস করলেন, আলী! আসরের নামাজ পড়েছো? তিনি বললেন, না। রাসুলে পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মুনাজাত করলেন, হে আল্লাহ! তোমার আলী, তোমার এবং তোমার রাসুলের আনুগত্যে ছিলো। তুমি সূর্যকে পুনরায় উদিত করে দাও। এখানে লক্ষণীয় যে, নবীজি মুনাজাতে বললেন, আলী তোমার ও তোমার রাসুলের আনুগত্যে ছিলো। অথচ আলী রাদিয়াল্লাহু আনহু তো শুধু নবীরই আনুগত্য করছিলেন। অতঃএব, একথা পরিষ্কার যে রাসুলের আনুগত্যই আল্লাহর আনুগত্য, রাসুলের প্রতি ভালোবাসাই আল্লাহর প্রতি ভালোবাসা, রাসুলের প্রতি শত্রুতা পোষণই আল্লাহর প্রতি শত্রুতা পোষণ। এটা রাসুলে পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের একক মর্যাদা যা পৃথিবীর অন্য কাউকে দেওয়া হয়নি।
আল্লাহ পাক তাঁর প্রিয় হাবীব সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে ভালোবাসার নিদর্শন স্বরুপ এমন অসংখ্য মর্যাদা দান করেছেন। নবীজির এমন অনেক মর্যাদা হয়তো আছে যা আমাদের অজানা। প্রকৃতপক্ষে আল্লাহ এবং তাঁর রাসুলই জানেন যে আল্লাহ পাক তাঁর প্রিয় হাবীবকে কত মর্যাদা দান করেছেন।
নবীজির মুনাজাতের সাথে সাথে সূর্য আকাশে উদিত হলো। হযরত আলী রাদিয়াল্লাহু আনহু তখন আসরের নামাজ আদায় করে নিলেন। হযরত আসমা রাদিয়াল্লাহু আনহা বলেন আমি সূর্যকে ডুবে যেতে দেখেছি। তারপর আবার সে সূর্যকে আকাশে উঠতেও দেখেছি। সূর্যের রশ্নি তখন পাহাড়ের চূড়া এবং যমীনে পতিত হয়েছিলো।
হযরত জাবেরের মৃত সন্তানদেরকে জীবিত করা
____________________
হযরত জাবেরের মৃত সন্তানদেরকে জীবিত করাঃ
একদা হযরত জাবের প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে দাওয়াত দিয়েছিলেন। নবীজিকে মেহমানদারীর জন্য তিনি একটি বকরী জবেহ করেছিলেন। বকরী জবেহ করার দৃশ্যটি দেখে তার সন্তান দুটির মনে কৌতুহল হলো। বকরীটি জবেহ করার অনুকরণে বড় ছেলেটি তার ছোট ভাইটিকে শুইয়ে দিলো এবং তার গলায় ছুরি চালিয়ে দিলো। তাদের মা এই দৃশ্য দেখে দৌড়ে আসছিলেন। রক্তাক্ত ছোট ভাইকে দেখে বড় ছেলেটি ভয় পেয়ে বাড়ির উপর তলা থেকে ঝাপ দিয়ে পড়ে গেলো এবং সঙ্গে সঙ্গে মৃত্যুবরণ করলো। রাসুলে পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যখন দাওয়াত খেতে হযরত জাবের রাদিয়াল্লাহু আনহুর ঘরে আসলেন, এসে দেখলেন হযরত জাবেরের দুই ছেলে মৃত্যুবরণ করেছে। নবীজি তখন তার দুই ছেলেকে জীবিত করে দিয়েছিলেন।
হযরত আবুবকর রাদিয়াল্লাহু আনহু কে সাপের বিষ থেকে রক্ষা
____________________
হযরত আবুবকর রাদিয়াল্লাহু আনহু কে সাপের বিষ থেকে রক্ষাঃ
একদহিজরতের সময়ে মদিনায় যাওয়ার পথে সাওর পর্বতের চুড়ায় পৌছে একটি গুহায় আশ্রয় নিলেন। হযরত আবুবকর রাদিয়াল্লাহু আনহু গুহার ভিতরে ঢুকে গুহা পরিষ্কার করে চারিদিকের ছিদ্র গুলি কাপড় ছিড়ে বন্ধ করে দিলেন। একটি ছিদ্র বন্ধ করার মতো কাপড় ছিলো না। তিনি তখন নিজের পা দিয়ে সেই ছিদ্রটি বন্ধ করে দিলেন। নবী পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হযরত আবু বকরের কোলে মাথা মোবারক রেখে শুয়ে পড়লেন এবং নবীজির তন্দ্রা এসে গেলো। হযরত আবুবকর রাদিয়াল্লাহু আনহু যে ছিদ্রে পা রেখেছিলেন, তার ভিতরে ছিল একটি সাপ। এই সাপটি এক হাজার বছর ধরে নবীজির দীদারের আশায় এই গুহায় অবস্থান করছিল। সাপটি তিনবার ফোঁস ফোঁস করে হযরত আবু বকর রাদিয়াল্লাহু আনহুকে পা সরিয়ে নেওয়ার জন্য সংকেত দিচ্ছিলো। অবশেষে যখন হযরত আবুবকর পা সরালেন না তখন সাপটি হযরত আবু বকরের পায়ে দংশন করলো। সাপের বিষ সারা শরীরে ছড়িয়ে পড়লো। এমতাবস্থায় তিনি নড়াচড়া করলেন না যাতে প্রিয় নবীর আরামে কোন ব্যাঘাত না ঘটে। হঠাৎ করে তার দুফোটা চোখের পানি নবীজির চেহারা মোবারকের উপর পড়লো। তখনি নবীজির তন্দ্রা ভেঙ্গে গেলো। নবীজি জিজ্ঞেস করলেন, হে আবুবকর! কি হয়েছে? আবু বকর বললেন, সাপে দংশন করেছে। নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম একটি থুথু মোবারক আবু বকরের দংশিত স্থানে মালিশ করে দিলেন। সাথে সাথে বিষের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে গেলো। পুরোপুরি সুস্থ হয়ে গেলেন হযরত আবুবকর সিদ্দীক রাদিয়াল্লাহু আনহু।
অস্তমিত সূর্য রসুলেপাক ﷺ এর হুকুমে পুনরায় উদিত
____________________
অস্তমিত সূর্য রসুলে পাক ﷺ এর হুকুমে পুনরায় উদিত
*হাদিসঃ ০১
হযরত আসমা বিনতে উমায়েস (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু) হতে বর্নিত : একদা রাসূল সল্লল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হযরত আলী (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু) এর কোলে মাথা মোবারক রেখে ঘুমাচ্ছিলেন/আরাম ফরমাচ্ছিলেন ছিলেন, তখন (ঘুমে) ওহী নাযিল হচ্ছিল। সূর্য অস্তমিত হয়ে গেল ততক্ষণ পর্যন্ত হযরত আলী (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু) আসর নামায পড়তে পারেন নি। অতঃপর রাসূল সল্লল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, হে আল্লাহ! আলী তোমার এবং তোমার রাসূলের আনুগত্য করেছে তাই সূর্যকে পুনরায় উদিত করে দাও। বর্ণনাকারী আসমা (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু) বলেন : আমি দেখেছি যে সূর্য অস্তমিত হয়ে গেছে তা পুনরায় রাসূল সল্লল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর আদেশে উদয় হয়েছে।’’ইমাম হাইসামী তাবরানীর সনদ সম্পর্কে বলেন, হাদিসটি ইমাম তাবরানী (রহঃ) বর্ণনা করেছেন, উক্ত হাদীসের সমস্ত রাবী সিকাহ, ইব্রাহীম ইবনে ‘হাসান’ তিনিও সিকাহ বা বিশ্বস্ত, এমনকি ইমাম ইবনে হিব্বান এর দৃষ্টিতেও তিনি বিশ্বস্ত, তবে ফাতেমা বিনতে আলী বিন আবি তালিব সম্পর্কে আমার জানা নেই।—-
ক.*ইমাম তাবরানী : মু‘জামুল কবীর : ২৪/১৪৪পৃ. হাদিস:৩৮২,
খ.ইমাম তাবরানী, মু’জামুল আওসাত,
গ.ইবনে কাসীর : আল-বেদায়া ওয়ান নেহায়া : ৬/৮৩ পৃ.,
ঘ.হায়সামী : মাযমাউদ যাওয়াইদ : ৮/২৯৭ পৃ.,
ঙ.ইমাম তাহাভী, মুশকিলুল আসার : ২/৮-৯ পৃ. হাদিস নং : ১২০৭, তিনি সহীহ সনদে। তাহাভীর মুশকিলুল আসার,৮/৩৮৮পৃ.,
চ.উকাইলী : আদ্ব-দ্বঈফাউল কাবীর : ১/৪২২পৃ.,
ছ. ইবনে কাছির,আস-শামায়েল : ১৪৪পৃ.
জ.ইমাম ইবনে আবি আছিম,আস-সুনান, হাদিস নং,১৩২৩,
ঝ.সুয়ূতি : মুখতাসারুল মিনহাজুল আস-সুন্নাহ : ৫২৪-৫২৮পৃ.
ঞ.শিহাবুদ্দীন খিফ্ফাযী : নাসিমুর রিয়াদ্ধ : ৩/১০-১৪পৃ.,
ট.ইবনে হাজার আসকালানী : ফাতহুল বারী : ৬/২২১-২২২পৃ.
ঠ.ইবনে কাইয়্যুম : মানারুল মুনীফ : ৫৭-৫৮পৃ.,
ড.আল্লামা বদরুদ্দীন আইনী : উমদাদুল কারী : ১৫/৪৩পৃ.
ঢ.ইমাম জালালুদ্দীন সুয়ূতি : খাসায়েসুল কোবরা : ২/৩২৪ পৃ.
★ হাদিসঃ ০২
অপরদিকে উক্ত হাদিসটি অন্য আরেকটি সনদে কিছুটা শব্দ পরিবর্তন হয়ে বর্ণিত হয়েছে নিম্নোক্তভাবে–‘‘হযরত আসমা বিনতে উমায়েস (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু) হতে বর্ণিত, নিশ্চয় রাসূল সল্লল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ‘ছাহবা’ নামকস্থানে যোহরের নামায পড়লেন। অতঃপর হযরত আলী (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু) কে কোন এক ওজরে প্রেরণ করলেন অতঃপর তিনি ফিরে আসলেন। রাসূল সল্লল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আসরের নামাজ পড়লেন তারপর হযরত আলী (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু) এর কোলে মাথা মোবারক রেখে ঘুমালেন। হযরত আলী (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু) রাসূল সল্লল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জাগাননি এমনকি সূর্য অস্তমিত হয়ে গেল। অতঃপর রাসূল সল্লল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জাগ্রত হয়ে বলতে লাগলেন। হে আল্লাহ! নিশ্চয় তোমার পেয়ারা গোলাম আলী তোমার নবীর প্রেমে নিজেকে আবদ্ধ / মগ্ন রেখেছেন, অতঃপর আলী (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু) নামাযআদায় করার জন্য আল্লাহ তা‘য়ালা পুনরায় অস্তমিত সূর্যকে উদিত করেছেন। বর্ণনাকারী হযরত আসমা বিনতে উমায়েস (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু) বলেন : সূর্যপুনরায় উদিত হয়ে যমীন ও পাহাড়ের উপর এসে গেল। অতঃপর হযরত আলী (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু) ওযু করে নামায আদায় করলেন। তারপর ছাহ্বা নামক স্থানে সূর্য অস্তমিত হয়ে গেল।’
’ক. আল্লামা ইবনে হাজার হায়সামী : মাযমাউদ যাওয়ায়েদ : ৮/২৯৭ পৃ:
খ.আল্লামা তাবরানী : মু’জামুল কবীর : ২৪/১৫১-১৫২ পৃ: হাদিস : ৩৯১
গ. আল্লামা ইবনে কাসীর : বেদায়া ওয়ান নেহায়া : ৬/৮৪ পৃ:
ঘ. আল্লামা ইবনে হাজার আসকালানী : ফাতহুল বারী শরহে বুখারী : ৬/২২১-২২২ পৃ. হাদিস : ৩১২৪
ঙ. আল্লামা ইবনে হাজার হায়সামী : মাযমাউদ যাওয়ায়েদ : ৮/২৯৮ পৃ.
চ. ইমাম তাহাভী : মুশকিলুল আছার : ৪/৭ পৃ. হাদিস : ১২০৮
ছ. আল্লামা ওকাইলী : আদ্ব-দ্বঈফা : ১/৪২২ পৃ.
জ. আল্লামা ইবনে কাছির : বেদায়া ওয়ান নেহায়া : ৬/৮৪ পৃ.
ঝ. আল্লামা ইবনে কাছির : আস-শামায়েল : ১৪৫ পৃ.
ঞ. আল্লামা ইমাম জালালুদ্দীন সুয়ুতী : খাসায়েসুল কোবরা : ২/৩২৪ পৃ.
★ হাদিসঃ০৩
উক্ত হাদীসের সমর্থনে আরও হাদিস পাওয়া যায়। যেমন–‘‘হযরত যাবের (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু) বলেন,নিশ্চয় রাসূল সল্লল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর আদেশে সূর্য অস্তমিত হতে কিছুটা বিলম্ব করেছিল। ইমাম হাইসামী (রহঃ) বলেন : হাদিসটি ইমাম তাবরানী মু’জামুল আওসাত গ্রন্থে বর্ণনা করেছেন আর হাদিসটি সনদের দিক দিয়ে ‘হাসান’ বা গ্রহণযোগ্য।’’
ক. ইমাম তাবরানী : মুজামুল আওসাত :৪/২২৪পৃ,হাদিস:৪০৩৯
খ. আল্লামা ইবনে হাজার হায়সামী : মাযমাউদ যাওয়াইদ : ৮/২৯৭ পৃ.
গ. আল্লামা ইবনে হাজার আসকালানী : ফাতহুল বারী : ৬/২২২ পৃ. হাদিস : ৩১২৪
ঘ. আল্লামা শিহাবুদ্দীন খিফফাজী : নাসিমুর রিয়াদ্ধ : ৩/১০-১৪৫ পৃ.সর্বশেষে আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীর এ বিষয়ের হাদিসটিকে ‘হাসান’ বলে স্বীকার করেছেন। এ পর্যন্ত তাবরানীর সনদ নিয়ে পর্যালোচনা হল।ইমাম সাখাভী ও আল্লামা আযলূনী (রহঃ) প্রথম ও দ্বিতীয় হাদিস সম্পর্কে বলেন-ولكن قد صححه الطحاوي، وصاحب الشفاء، وأخرجه ابن منده، وابن شاهين-‘‘তার উক্ত হাদিসটি হযরত আসমা বিনতে উমায়েস (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু) হতে সহিহ সূত্রে বর্ণনা করেন ইমাম ত্বাহাবী (রহঃ) এবং শিফা শরীফে ইমাম কাযী আয়ায (রহঃ)। অপরদিকে ইমাম ইবনে মুনাদাহ (রহঃ), ইমাম ইবনে শাহীন (রহঃ) প্রমুখ তাদের কিতাবে হাদিসটি বর্ণনা করেছেন।’’তাই প্রমাণিত হয়ে গেল ইমাম তাবরানী (রহঃ) এর সনদে একজন রাবি অপরিচিত হলেও ইমাম সাখাভীর মতে ইমাম ত্বাহাবীও ইমাম কাযী আয়ায (রহঃ) সহ অন্যান্য মুহাদ্দীসগণ অন্যধারায় সহিহ সূত্রে বর্ণনা করেছেন। অপরদিকে আল্লামা সাখাভী ও আল্লামা আযলূনী (রহঃ) উক্ত হাদীসের অন্য সনদ সম্পর্কে বলতে গিয়ে লিখেন-وابن مردويه من حديث أبي هريرة، -‘‘ইমাম ইবনে মারদুআহ (রহঃ) তার হাদীসের গ্রন্থে হযরত আবু হুরায়রা (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু)হতে একটি সূত্রে বর্ণনা করেন।’’অপরদিকে আল্লামা আযলূনী, হযরত যাবের (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু) এর বর্ণিত হাদিস প্রসঙ্গে আরো বলেন روى الطبرانى فى الكبيروالاوسط بسند حسن–‘‘হাদিসটি ইমাম তাবরানী (রহঃ) তাঁর “মু’জামুল কবীর” ও “মু’জামুল আওসাত” গ্রন্থে ‘হাসান’ সনদে বর্ণনা করেছেন।’’অতএব উক্ত হাদিসটির চারটিরও বেশি সনদ পাওয়া গেল। তাই বলতে চাই, যখন দ্বঈফ হাদিস একাধিক সনদে বর্ণিত হয় তা দ্বঈফ বা দুর্বল থাকে না। কিন্তু উক্ত হাদিসের প্রথম আসমা বিনতে উমায়েস (রা.)‘র তাবরানীর সূত্র ছাড়া বাকী সবগুলো সনদ সহিহ ও ‘হাসান’ মানের। তাই অবশ্যই গ্রহণযোগ্য।
দলিল ০১-০৫
____________________
মিলাদ মাহফিলে হুজুর ﷺ উপস্থিত হতে পারেন
“প্রচলিত জাল হাদিস” বইয়ে মাওলানা জুনাইদ বাবুনগরী ১৭২ পৃঃ এবং ” হাদিসের নামে জালিয়াতি” বইয়ে ২৮৭পৃঃ, ড. আবদুল্লাহ জাহাঙ্গীর লিখেছেন, আল্লামা আবদুল হাই লক্ষৌনভীর ” আসরারুল মারফুআ’ ৪৬ পৃষ্ঠায় একটি উদ্ধৃতি এভাবে দেওয়া হয়েছে যে, ” মাওলিদের ওয়াযের মাজালিসে তাঁর মাওলিদ বা জন্মের কথা উল্লেখের সময় তিনি নিজে সেখানে উপস্থিত হন। এ কথার উপরে তারা তাঁর মাওলিদের বা জন্মের কথার সময় সম্মান ও উক্তি প্রদর্শনের জন্য কিয়াম বা দাঁড়ানোর প্রচলন করেছে।”
উক্ত মিথ্যা বক্তব্যের জবাবঃ
কেবল মাওলানা আবদুল হাই লক্ষৌনভীর মন্তব্যে প্রমাণ হয় না যে, মিলাদ মাহফিলে নবিজী উপস্থিত হতে পারেন না। এমনকি তিনি তা লিখেনও নি।শুধু এতটুকুই বলেছেন যে, অনেকেই ভক্তি প্রদর্শন কর থাকে, বিশ্বাস রাখে যে, কিয়ামের সময় রাসুল(সলল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) উপস্থিত হন। তিনি লিখেননি যে, উপস্থিত হয়না,এই বিশ্বাস পোষণ করা হারাম, নাজায়েজ বা অন্য কিছু।আর তাছাড়া উক্ত দুই বইয়ের লেখক জুনাইদ বাবুনগরী ও আবদুল্লাহ জাহাঙ্গীর আর কোন দলীল পেশ করতে পারেনি।এই বিষয়ে আমরা উভয়কে বলতে চাই যে আপনারা আল্লামা আবদুল হাই এর এ দলীলটি চোখে পড়েছে কিন্তু উক্ত কিতাব ” আল – আসরারুল মারফুআ” এর ৪২ পৃষ্ঠায় হযরত জাবের(রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু) এর রসুলুল্লাহ(সলল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) নূরের হাদিস প্রসঙ্গে লিখেছেন যে-
” এ হাদিসটি ইমাম আবদুর রাজ্জাক(রহঃ) তাঁর মুসান্নাফ গ্রন্থে বর্ণনা করেছেন। তাহলে এটি কী আপনাদের চোখে পড়েনি, না চোখে কাল চশমা লাগানো ছিল?
তাই আমরা এ বিষয়ে তাদের জবাবে কিছু দলীল উল্লেখ করছি।
★★হাদিসঃ
“হযরত আনাস বিন মালিক(রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু) হতে বর্নিত, রাসুল(সলল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এরশাদ করেন, নিশ্চয় আম্বিয়ায়ে কিরাম(আঃ) তাদের নিজ নিজ কবরে জীবিত এবং তারা সেখানে নামায আদায় করেন”।
★কঃইমাম আবু ইয়ালাঃআল মুসনাদঃ৬/১৪৭পৃঃ,হাদিসঃ৩৪২৫
★খঃইমাম বায়হাকীঃহায়াতুল আম্বিয়াঃ৬৯-৭০পৃঃ।
★গঃইমাম হায়তামীঃমাযমাউদ যাওয়াইদঃ৮/২১১পৃঃ,হাদিসঃ১৩৮১২।
★ঘঃইমাম আবু নঈম ইস্পাহানীঃ তবকাতে ইস্পাহানীঃ২/৪৪পৃঃ।
★ঙঃইমাম আদিঃ আল কামিলঃ২/৭৩৯পৃঃ।
★চঃইমাম সৈয়ুতিঃআল জামেউস সগীরঃ১/২৩০পৃঃ, হাদিসঃ৩০৮৯।
★ছঃ ইমাম সৈয়ুতিঃ শরহুস সুদুরঃ২৩৭পৃঃ।
★জঃইমাম দায়লামীঃআল – ফিরদাউসঃ১/১১৯পৃঃ,হাদিসঃ৪০৩।
★ ইমাম সৈয়ুতি(রহঃ) বলেন, হাদিসটি “হাসান”।আল্লামা ইবনে হাজর হাইতামী(রহঃ) বলেন, সনদের সকল বর্ণনাকারী রাবী বিশ্বস্থ।
★ নাসিরুদ্দিন আলবানী তার দু’টি গ্রন্থে হাদিসটিকে সহীহ বলে মত প্রকাশ করেছেন
কঃআলবানীঃ সিলসিলাতুল সহীহাঃহাদিসঃ৬২২
খঃ আলবানীঃসহীহুল জামেঃহাদিস নংঃ২৭৯০।
উপরের আলোচনা থেকে প্রমাণিত হল যে সমস্ত নবীরা তাদের নিজ নিজ রওজা শরীফে জীবিত রয়েছেন।এ প্রসঙ্গে সহীহ মুসলিম শরীফে হাদিস রয়েছে,
“হযরত আনাস(রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু) হতে বর্নিত, মি’রাজে হযরত মূসা(আঃ) এর কবরের পাশ দিয়ে যেতে গিয়ে রাসুল(সলল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) দেখেন-“তিনি মূসা(আঃ) তাঁর কবরের মাঝে দাঁড়িয়ে নামাজ পড়ছেন”।
★মুসলীমঃ৪/১৮৪৫পৃঃ হাদিসঃ২৩৭৫
★নাসাঈঃ৩/১৫১পৃঃ হাদিসঃ১৬৩৭
★মুসনাদে আহমদঃ৩/১২০পৃঃ
★শরহে সুন্নাহঃ১৩/১৫১পৃঃ হাদিসঃ৩৭৬০
★সহীহ হিব্বানঃ১/২৪১পৃঃ,হাদিসঃ৪৯
ইত্যাদি………
অনুরুপভাবে হযরত আবু হুরায়রা(রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু) হতে বর্নিত, রাসুল (সলল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এরশাদ করেন, মি’রাজের রাত্রে আম্বিয়া(আঃ) এর এক বিরাট জামাতকে দেখেছি, মুসা(আঃ) কে তাঁর কবরে নামাজ পড়তে দেখেছি।তাকে দেখতে মধ্য আকৃতির চুল কোকরানো সানওয়া দেশের লোকের মত।আমি ঈসা(আঃ)কে দন্ডায়মান অবস্থায় নামাজ পড়তে দেখেছি, তিনি ওরওয়া ইবনে মাসউস(রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুর) মত।তার পরে সময় আসল আমি সকল নবী(আঃ) এর ইমামতি করলাম।”
★ মুসলীমঃ৪/১৮৪৫পৃঃ,হাদিসঃ২৩৭৫
★মুসনাদে আহমদঃ৩/১৪৮পৃঃ
★দালায়েলুন নবুয়ত লিল বায়হাকীঃ২/৩৮৭পৃঃ
★ফয়জুল কাদীরঃ৫/৫১৯পৃঃ (ইমাম মানাবী)
ইত্যাদি…………..
উপরের আলোচনা থেকে বুঝা গেল, মূসা(আঃ) নিজ কবর থেকে বায়তুল মোকাদ্দাসে রাসুল (সলল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর পিছনে নামাজ পড়ার জন্য গেলেন।
আবার রাসুল (সলল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) যখন ৬ষ্ঠ আসমানে গেলেন তখন দেখেন মূসা(আঃ) সেখানে উপস্থিত হয়ে রয়েছেন এমনকি আখেরী নবীর উম্মতের উপর ৫০ ওয়াক্ত নামাজই তারই ওসিলাতে কমে ৫ ওয়াক্ত রুপান্তরিত হল।(মিশকাতঃ মিরাজ অধ্যায়,বুখারী, মুসলিম সুত্রে)
তাহলে বুঝা গেল মূসা(আঃ) কবরে, বায়তুল মোকাদ্দাসে ও ৬ষ্ঠ আসমানে গিয়েছেন সহীহ হাদিস দ্বারা প্রমাণিত।
তাহলে সব নবীদের শ্রেষ্ঠ নবী যার কারণে আল্লাহ তাআলা সব কিছু সৃষ্টি করেছেন তিনি কেন মিলাদ মাহফিলে আসতে পারবেন না!!!
এই পর্যায়ে আমরা কিছু দলীল গ্রহণ করব, ইনশাআল্লাহ!
দলীল নং-১
আবদুল হাই লক্ষৌনভী ধুমপনের উপর লিখিত ছোট রিসালায় লিখেছেন,
তিনি উক্ত পুস্তকে একটি ঘটনা লিখেন-
” জৈনক ব্যক্তি নাত পাঠ করতো এবং হুক্কাও পান করতো। সে একদিন স্বপ্নে দেখল যে, নবী করীম (সলল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তাকে বলেছেন – তুমি যখন মিলাদ শরীফ পাঠ কর,তখন আমি মাহফিলে উপস্থিত হই।কিন্তু যখনই হুক্কা আনা হয়,তখন আমি কালবিলম্ব না করে মাহফিল থেকে ফিরে যাই।
★জা’আল হকঃ১/১৪৭পৃঃ(উর্দু)
দলীল নং-২
ইমাম সৈয়ুতি “শরহুস সুদুরে” লিখেন-
” যদি কেউ বিশ্বাস পোষণ করে যে, হুজুর (সলল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)এর পবিত্র রুহ মুবারক ও তাঁর জিসিমে মিছালী মিলাদ পাঠের সময়, রমযানে খতমে কুরআনের সময় এবং নাত পাঠ করার সময় উপস্থিত হয়, তবে এ বিশ্বাস পোষণ করা জায়েজ।”
দলীল নং-৩
শুধু তাই নয়, ইমাম সৈয়ুতি(রহঃ) একটি হাদিসের ব্যাখ্যায় বলেন-
“উম্মতের বিবিধ কর্ম কান্ডের প্রতিদৃষ্টি রাখা, তাদের পাপরাশির জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করা,তাদের বালা মসিবত থেকে রক্ষা করার জন্য দুআ করা, পৃথিবীর এক প্রান্ত থেকে অপর প্রান্তে আনাগোনা করা ও বরকত দান করা এবং নিজ উম্মতের কোন নেক বান্দার ওফাত হলে তার জানাজাতে অংশগ্রহণ করা, এগুলো হুজুর (সলল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর সখের কাজ।অন্যান্য হাদিস থেকেও এসব কথার সমর্থন পাওয়া যায়।”
★সৈয়ুতি কৃতঃ আল হাভী লিল ফতওয়াঃ২/১৮৪-১৮৫পৃঃ, দারুল ফিকর ইলমিয়্যাহ, বৈরুত, লেবানন।
দলীল নং-৪
বিশ্ববিখ্যাত মুফাসসির আল্লামা ইসমাইল হক্কী(রহঃ) তাফসিরে রুহুল বয়ানে সূরা মুলূকের ২৯ নং আয়াতের ব্যাখ্যায় উল্লেখ করেনঃ
” সূফী কুল সম্রাট হুজ্জাতুল ইসলাম ইমাম গজ্জালী(রহঃ) বলেছেন,হুজুর (সলল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর সাহবাকেরামের রুহ মুবারক সাথে নিয়ে জগতের বিভিন্ন স্থানে পরিভ্রমণ ইখতিয়ার আছে।তাই অনেক আউলিয়া কিরাম তাদের দেখেছেন।
★তাফসিরে রহুল বয়ানঃ১০/৯৯পৃঃ
দলীল নং-৫
মিশকাতের ব্যাখ্যা গ্রন্থ মিরকাতে মোল্লা আলী ক্বারী(রহঃ) বলেন-
” ওলীগণ একই মুহুর্তে কয়েক জায়গায় বিচরণ করতে পারেন।একই সময়ে তারা একাধিক শরীরের অধিকারীও হতে পারেন।”
★★ মিরকাতঃ৪/১০১পৃঃ,হাদিসঃ১৬৩২
দলিল ০৬-১০
____________________
দলীল নং-৬
শিফা শরীফে ইমাম কাজী আয়াজ আল মালেকী(রহঃ) লিখেন,
“যে ঘরে কেউ না থাকে, সে ঘরে(প্রবেশের সময়) বলবেন, হে নবী আপনার প্রতি সালাম,আপনার উপর আল্লাহর অশেষ রহমত ও বরকত বর্ষিত হোক।”
★শিফা শরীফঃ২/৪৩পৃঃ
দলীল নং-৭
এর ব্যাখ্যায় মোল্লা আলী ক্বারী(রহঃ) শরহে শিফা গ্রন্থে লিখেন-
“কেননা নবী (সলল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর পবিত্র রুহ মুসলমানদের ঘরে ঘরে বিদ্যমান আছেন।”
★শরহে শিফাঃ২/১১৮পৃঃ,দারুল কুতুব ইসলামিয়্যাহ,বৈরুত,লেবানন।
দলীল নং-৮
হযরত আমর ইবনে হাযম(রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু) বলেন, রাসুল (সলল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) যখন মসজিদে প্রবেশ করতেন তিনি বলতেন আল্লাহর হাবীবের উপর সালাম ও সালাত বর্ষিত হোক।তারপর প্রবেশের দোয়া বলতেন………….।”এটি তিনি আমাদের শিখানোর জন্যই বলতেন।
★ আল-মুসান্নাফে আবদুর রাজ্জাকঃ১/৪২৫পৃঃ হাদিসঃ১৬৬৩
দলীল নং-৯
“হযরত কা’বুল আহবার(রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু) কে হযরত আবু হুরায়রা(রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু) বলেছিলেন, তুমি ২ টি জিনিস হেফাজত কর।যখন মসজিদে প্রবেশ করবে রাসুল (সলল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) কে সালাম দিবে তখন বলবে যে……………………… ”
★আল মুসান্নাফে আবদুর রাজ্জাকঃ১/৪২৭পৃঃ,হাদিসঃ১৬৭০
★নাসাঈঃসুনানে কোবরাঃ৯/৪০পৃঃ হাদিসঃ৯৮৩৯
★ নাসাঈঃআমালুল ইউয়াম ওয়াল লাইলাঃ১/১৭৮পৃঃ হাদিসঃ৯১.
দলীল নং-১০
“হযরত আবদুল্লাহ বিন সালাম(রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু) তিনি যখন কোন মসজিদে প্রবেশ করতেন তিনি প্রথমে নবিয়ে দুজাহানকে সালাম দিতেন তারপর প্রবেশের দুআ বলতেন।
★ইমাম আবি শায়বাহঃআল- মুসান্নাফঃ ৬/৯৭পৃঃ হাদিসঃ২৯৭৬৮
দলিল ১১-১৬
____________________
দলীল নং-১১
” হযরত আবু হুমাইদ সায়েদী(রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু) হতে বর্নিত তিনি বলেন, রসুল (সলল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন যখন কোন ব্যক্তি মসজিদে প্রবেশ করবে অতঃপর সে যেন তাঁর রসুলের প্রতি সালাম দেয়।তারপর বলবে এই দুআ আল্লাহুম মাফতাহলি আবওয়াবা রাহমাতিক।
★ সুনানে দারেমীঃ২/৮৭৬পৃঃ,হাদিসঃ১৪৩৪
★ সুনানে ইবনে মাজাহঃ১/২৫৪পৃঃ,হাদিসঃ৭৭২। আলবানী এ হাদিসের তাহক্বীকে সনদকে সহীহ বলেছেন।
★বায়হাকী আস সুনান কোবরাঃ২/৬১৯পৃঃ হাদিসঃ৪৩১৭ ও ৪৩১৯
★ আবু দাুউদ আস সুনানঃ১/১২৬পৃঃহাদিসঃ৪৬৫
★বাযযার আল মুসনাদঃ৯/১৬৯পৃঃহাদিসঃ৩৭২০
★নাসাঈ আস সুনানে কোবরাঃ১/৪০৪পৃঃ,হাদিসঃ৮১০
★নাসাঈ, আমালুল ইউয়াম ওয়াল লাইলাঃ১/১২০পৃঃহাদিসঃ১৭৭
★সহীহ ইবনে হিব্বানঃ৫/৩৯৭পৃঃহাদিসঃ২০৪৮
★তাবরানি,কিতাবুদ দোয়াঃ১/১৫০পৃঃহাদিসঃ৪২৬
★ইমাম নববী,আল মুখাল্লিসিয়্যাতেঃ২/৩৯১পৃঃহাদিসঃ১৮২৪
★বায়হাকীঃদাওয়াতুল কবীরঃ১/১২৬পৃঃহাদিসঃ৬৬
দলীল নং-১২
“হযরত আবু হুরায়রা(রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু) হতে বর্নিত তিনি বলেন রাসুল (সলল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) নিশ্চয় বলেছেন যখন কোন ব্যক্তি মসজিদে প্রবেশ করবে অতঃপর সে যেন তাঁর রাসুলের প্রতি সালাম দেয়।তারপর এই দোয়া পড়বে……(মসজিদে প্রবেশের দোয়া)….. এবং আবার যখন মসজিদ থেকে বের হবে তখনও রাসুল (সলল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)কে সালাম দিয়ে বের হবে”।
★সুনানে ইবনে মাজাহঃ১/২৫৪পৃঃহাদিসঃ৭৭৩; আলবানী এই হাদিসের তাহক্বীকে সনদকে সহীহ বলেছেন।
★বাযযার আল মুসনাদঃ১৫/১৬৮পৃঃহাদিসঃ৮৫২৩
★নাসাঈ আস সুনানে কোবরাঃ৯/৪০পৃঃহাদিসঃ৯৮৩৮
★ইবনে খুযাইমা, আস সহীহঃ১/২৩১পৃঃহাদিসঃ৪৫২; আলবানী বলেন এটি মুসলিমের শর্ত অনুযায়ী সহীহ।
★ সহীহ হিব্বানঃ৫/৩৯৫পৃঃহাদিসঃ২০৪৭ ও ৫/৩৯৯পৃঃ হাদিসঃ২০৫০;
★বায়হাকী আস সুনানে কোবরাঃ২/৬২০পৃঃ, হাদিসঃ৪৩২১
★ হাইতামী, মাওয়ারিদুয যমানঃ১/১০১পৃঃহাদিসঃ৩২১
দলীল নং-১৩
মোল্লা আলী ক্বারী রহঃ মিরকাতে লিখেন-
” হুজ্জাতুল ইসলাম ইমাম গজ্জালী(রহঃ) বলেছেন,আপনি যখন মসজিদে প্রবেশ করবেন,তখন হুজুর (সলল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)কে সশ্রদ্ধ সালাম দিবেন।কারণ তিনি মসজিদ সমুহে বিদ্যমান আছেন।”
★ মিরকাতঃ২য়খন্ড, মসজিদ অধ্যায়
দলীল নং-১৪
উপমহাদেশের শ্রেষ্ঠতম মোহাদ্দেস শাহ ওয়ালী উল্লাহ মোহাদ্দেস দেহলভী(রহঃ) বলেন-
“আমি রাসুল (সলল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)কে অধিকাংশ দ্বীনি ব্যাপারে তার নিজ আকৃতিতে আমার সম্মুখে বার বার দেখেছি।এতে আমি উপলব্দি করলাম যে, তার রুহ মুবারকের এমন বিশেষ শক্তি রয়েছে যে, তা তার আকৃতি ধারণ করতে পারে। এটা রাসুল (সলল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর ঐ উক্তির ইঙ্গিত যে, নবীগণ মরে না, তারা নিজ নিজ কবরে নামাজ পড়ে থাকেন, তারা হজ্জ্ব করে থাকেন এবং তাঁরা জীবিত আছেন।
★ফয়জুল হারামাঈনঃ২৪৫পৃঃ
দলীল নং-১৫
দেওবন্দীদের পীর ও গুরু এবং পীরানে পীর হাজী এমদাদুল্লাহ মুহাজেরি মক্কী (রহঃ) থেকে মীলাদে নবীজী হাজির নাজির দলীল পেশ করছি।
তিনি তার গ্রন্থ ”শামায়েলে এমদাদীয়া” এর মধ্যে বলেন,
”মিলাদ শরীফে কিয়াম করার সময় হুজুর (সলল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এখন ভূমিষ্ট হচ্ছেন এ ধরনের বিশ্বাস না রাখা উচিৎ।আর যদি মাহফিলে তাশরীফ আনেন এমন বিশ্বাস রাখে, তাহলে অসুবিধা নেই, কারণ এ নশ্বর জগতে কাল ও স্থানের সাথে সম্পৃক্ত।আর পরকাল স্থান – কালের সম্পর্ক থেকে মুক্ত।
★ শামায়েলে এমদাদীয়াঃ১০৩পৃঃ,মাকতাবাতে থানবী, দেওবন্দ।
দলীল নং-১৬
মুহাজেরি মক্কী আরো বলেন
“এ আক্বিদা ও বিশ্বাস রাখা যে, মিলাদ মাহফিলে হুজুর (সলল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) উপস্থিত হন, এটা কুফর বা শিরক নয়,বরং এমন বলা সীমা লঙ্গন ছাড়া কিছুই নয়।কেননা এ বিষয়টি যুক্তিভিত্তিক ও শরীয়তের দলীলের আলোকে সম্ভব। এমনকি অনেকক্ষেত্রে বাস্তবে তা ঘটেও থাকে।”
★কুল্লীয়াতে এমদাদীয়াঃ ১০৩ পৃঃ, মাকতুবাতে থানবী, দেওবন্দ
দরুদ শরীফ পাঠকারী অবশ্যই জান্নাতে যাবে!
____________________
দরুদ শরীফ পাঠকারী অবশ্যই জান্নাতে যাবে!
দরুদ শরীফ পাঠে গুনাহ মাফ ও মর্যাদা বৃদ্ধি
রসুলে পাক সল্লল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেন,” যে ব্যক্তি আমার উপর একবার দরুদ শরীফ পড়বে,আল্লাহ তা’আলা তার উপর দশটি রহমত বর্ষণ করবেন এবং তাকে দশটি সওয়াব দেওয়া হবে।অর্থাৎ- দশটি দরজা বুলন্দ করা হবে।( নাসাঈ শরীফ, মিশকাত শরীফ-৮৬পৃঃ)
আবু হুরায়রা(রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু) হতে বর্ণনা করেন। তিনি করীম সল্লল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেছেন-
“আমার উপর দরুদ শরীফ পাঠের কারণে পুলছিরাত আলোকিত হবে।যে ব্যক্তি শুক্রবারে আমার উপর ৮০ বার দরুদ পাঠ করবে তার ৮০ বছরের গুনাহ মাফ করে দেওয়া হবে।(দারে কুতনী, জাওয়াহেরুল বিহার,৪র্থ খন্ড, পৃঃ ১৬৩)
কাহিনীঃ
হযরত আবদুল্লাহ ইবনে ওমর রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্নিত,হাশরের দিনে খুবই গরম হবে,মিযান আদল কায়েম হবে।মানুষের জীবনের আমল সমূহের হিসাব নিকাশের ব্যবস্থা করা হবে।প্রত্যেক ব্যক্তি প্রকম্পিত থাকবে।চক্ষু থেকে পানি বের হবে।রোযে আযল থেকে আরম্ভ করে কিয়ামত পর্যন্ত সকল মানুষকে ভিড়ের মধ্যে একটি ময়দানে একত্রিত করা হবে।মানুষেরা এই ভিড়ে হযরত আদম আলাইহিস সালামকে খোজাখুজি করবে।তিনি সবুজ রঙ্গের পোশাক পড়ে আরশের নীচে তাশরীফ রাখবেন।তিনি দেখবেন যে তার সন্তানের মধ্যে কে কে জান্নাতে প্রবেশ করছে।কোন কোন লোক জাহান্নামে নিক্ষিপ্ত হচ্ছে। এমতাবস্থায় হযরত আদম আলাইহিস সালাম স্বচক্ষে দেখবেন যে,নবী করীম সল্লল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের এক উম্মতকে ফেরেশতাগণ টেনে টেনে জাহান্নামেরর দিকে নিয়ে যাচ্ছে।এটা দেখে হযরত আদম আলাইহিস সালাম আহবান করবেন,হে আহমদ,হে আহমদ,তিনি জবাব দেবেন লব্বাইক ইয়া আবাল বশর,সৈয়ুদুনা আদম আলাইহিস সালাম বলবেন- দেখ দেখ আপনার এক উম্মতকে ফেরেশতাগণ জাহান্নামের দিকে নিয় যাচ্ছে। হযরত আদম আলাইহিস সালামের এই কথা শুনে হযরত মুহাম্মদ সল্লল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজের উম্মতের দিতে দৌড়ে গিয়ে ফেরেশতাদেরকে বলবেন- হে আল্লাহ তা’আলার দূত! একটু দাঁড়ান।এ ব্যক্তিকে কোথায় নিয়ে যাচ্ছেন। ফেরেশতাগণ আরজ করবেন- আমরা কঠরোতা অবলম্বনকারী ফেরেশতা।আমরা আল্লাহ তা’আলার হুকুম থেকে বিন্দুমাত্র নড়ি না।আমরা তার হুকুম থেকে মুখ ফিরায় না।সেই সময় সৈয়দে দো’আলম সল্লল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজের দু’হাত মোবারক তুলে আল্লাহ তা’আলার নিকট আরজ করবেন- হে আল্লাহ! আপনি আমার সাথে ওয়াদা করেছিলেন যে,আমাকে আমার উম্মতের ব্যাপারে মাথা ঘামাতে হবে না।
এখন ওয়াদা পূরণ করার সময় এসেছে।খুব তড়িৎ আরশে ইলাহী থেকে আহবান করা আসল- আমার হাবিবের আনূগত্য কর।ফেরেশতারা পুনরায় তাকে মিযান আদলের নিকটে নিয়ে আসবেন।সেখানে তার আমলসমূহ দ্বিতীয় বার মেফে দেখানো হল।হযরত সল্লল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একটি সাদা কাগজ তার নেকীর পাল্লায় দিয়ে দিলেন।মিযান মুহুর্তের মধ্যে ভারী হয়ে গেল।পাপের পাল্লা হালকা হয়ে গেল এবং নেকীর পাল্লা ভারী হয়ে গেল।বদী নেকীর মোকাবেলায় অনেক কমে গেল।সাথে সাথে সেই ব্যক্তির ভাগ্য বদলে গেল।তারপর একটি আহবান এলো। এখন এ বান্দার গণনা নেকী লোকদের মধ্যে হয়ে গেল।এখন তাকে জান্নাতে নিয়ে যাও।যখন ফেরেশতারা সেই ব্যক্তিকে জান্নাতে যাওয়ার জন্য বলবে, তখন সে তাদেরকে বলবে-কিছুক্ষণ থাম।আমি ওই সম্মানিত ব্যক্তির কাছে আরজ করি।সে ব্যক্তি তাঁর নিকট উপস্থিত হয়ে আরজ করবে- আমার পিতা -মাতা আপনার কদমে উৎসর্গ হোক;আপনি কতই সুন্দর এবং দয়ালু।বলবেন- জনাব! আপনি কোন সম্মানিত জাত? আপনি আমাকে জাহান্নামের সেই মহাবিপদ থেকে রক্ষা করছেন।উত্তরে তিনি এরশাদ করবেন- আমি তোমার নবী হযরত মুহাম্মদ(দঃ)।আর সাদা কাগজটি হল সেই দরুদ শরীফ যেটা তুমি আমার উপর একবার পড়েছিলে।আমি তা সংরক্ষণ করেছিলাম।যেন প্রয়োজনের সময় তোমার কাজে আসে।আজ প্রয়োজন মিটাতে ব্যবহৃত হয়েছে।
★★★জাওয়াহিরুল বিহার, ৪র্থ খন্ড, ১৬৭পৃঃ।
★★তাফসীরে দুররে মনসুর কৃতঃ ইমাম জালাল উদ্দীন সৈয়ুতী।
আল্লাহুম্মা সাল্লেআলা সায়িদিনা মুহাম্মাদিন ওয়াআলা আলী সাইয়িদিনা মুহাম্মাদিন ওয়াবারিক ওয়া সাল্লিম।
https://youtu.be/v4wyKacdIT0
রসুলে পাক ﷺ পিছন থেকেও দেখতে পান
____________________
রসুলে পাক ﷺ পিছন থেকেও দেখতে পান
নিশ্চই আমি তোমাদের পিছন থেকেও দেখতে পাই (I can see you from behind my back) হাদিসটির পর্যালোচনাঃ
হাদিসের ১ম সূত্রঃ
? আনাস বিন মালেক (রাঃ) হতে বর্নিত,
عَنْ أَنَسٍ قَالَ أُقِيْمَتِ الصَّلَاةُ فَأَقْبَلَ عَلَيْنَا رَسُوْلُ اللهِ بِوَجْهِهِ فَقَالَ أَقِيْمُوْا صُفُوْفَكُمْ وَتَرَاصُّوْا فَإِنِّىْ أَرَاكُمْ مِنْ وَرَاءِ ظَهْرِىْ.
একদা ছালাতের ইক্বামত দেওয়া হল। অতঃপর রাসূলুল্লাহ (ﷺ) আমাদের দিকে মুখ ফিরালেন এবং বললেন, তোমরা কাতার সোজা কর এবং
পরস্পরে মিলে দাঁড়াও। নিশ্চয় আমি তোমাদেরকে আমার পিছন থেকেও দেখতে পাই।
Reference :
★ ছহীহ বুখারী হা/৭২৫, ১ম খন্ড, পৃঃ ১০০, (ইফাবা হা/৬৮৯, ২/৯৫ পৃঃ)।
★ ছহীহ বুখারী হা/৭১৯, ১ম খন্ড, পৃঃ ১০০, (ইফাবা হা/৬৮৪, ২/৯৩ পৃঃ), ‘আযান’ অধ্যায়, অনচ্ছেদ-৪৩;
★ মিশকাত হা/১০৮৬; বঙ্গানুবাদ মিশকাত হা/১০১৮, ৩য় খন্ড, পৃঃ ৫৬।
? পাবলিশারঃ ইসলামিক ফাউন্ডেশন
গ্রন্থঃ সহীহ মুসলিম (ইফাঃ)
অধ্যায়ঃ ৪/ কিতাবুস স্বলাত ( كتاب الصلاة)
হাদিস নম্বরঃ ৮৪৫ | 845 | ۸٤۵
পরিচ্ছদঃ ২৫. ইমামের পূর্বে রুকু সিজদা করা নিষেধ (ইফাঃ)
পরিচ্ছদঃ ২৪. সুন্দরভাবে বিনয় ও ভীতি সহকারে সালাত আদায়ের নির্দেশ (হাদিস একাডেমী)
৮৪৫। মুহাম্মাদ ইবনু আল মুসান্নাফ, ইবনু বাশশার (রহঃ), আবূ বাকর ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ) ও আলী ইবনু হুজর (রহঃ) … আনাস ইবনে মালেক (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) একদিন সালাত (নামায/নামাজ) আদায়ের পর আমাদের দিকে লক্ষ্য করে বললেন, হে লোক সকল! আমি তোমাদের ইমাম। সুতরাং রুকু, সিজদা, কিয়াম ও সালামে আমার আগে চলে যেও না। কারণ আমি সম্মুখ ও পাশ্চাৎ হতে তোমাদেরকে দেখতে পাই। অতঃপর বললেন, যার হাতে আমার প্রাণ, সেই সত্তার শপথ, আমি যা দেখছি, তোমরা তা দেখতে পেলে হাসতে কম, কাঁদতে বেশী। সাহাবাগণ জিজ্ঞাসা করলেন, ইয়া রাসুলাল্লাহ! আপনি কী দেখেছেন? তিনি বললেন, আমি জান্নাত ও জাহান্নাম দেখেছি।
Reference :
★ ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ হাদিস নং ৮৪১,
★ ইসলামিক সেন্টারঃ হাদিস নং ৮৫৪
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
হাদিসের ২য় সূত্রঃ
? হযরত আনাস রাঃ বলেন-
692 – حدثنا عمرو بن خالد قال حدثنا زهير عن حميد عن أنس عن النبي صلى الله عليه و سلم قال : ( أقيموا صفوفكم فإني أراكم من وراء ظهري ) . وكان أحدنا يلزق منكبه بمنكب صاحبه وقدمه بقدمه (صحيح البخارى-كتاب الجماعة والإمامة ، باب إلزاق المنكب بالمنكب والقدم بالقدم في الصف، رقم الحديث-692)
রাসূলুল্লাহ (ﷺ) ইরশাদ করেছেন-“তোমরা কাতার সোজা কর। নিশ্চয় আমি তোমাদের পিছন থেকেও দেখি”।
Reference :
★ সহীহ বুখারী, হাদীস নং-৬৯২
হাদিসের ৩য় সূত্রঃ
? আবূ হুরাইরা (রা) থেকে বর্ণিতঃ
গ্রন্থঃ সহীহ বুখারী (ইফাঃ)
অধ্যায়ঃ ১০/ আযান (كتاب الأذان)
হাদিস নম্বরঃ [705]
পাবলিশারঃ ইসলামিক ফাউন্ডেশন
باب الْخُشُوعِ فِي الصَّلاَةِ
حَدَّثَنَا إِسْمَاعِيلُ، قَالَ حَدَّثَنِي مَالِكٌ، عَنْ أَبِي الزِّنَادِ، عَنِ الأَعْرَجِ، عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم قَالَ “ هَلْ تَرَوْنَ قِبْلَتِي هَا هُنَا وَاللَّهِ مَا يَخْفَى عَلَىَّ رُكُوعُكُمْ وَلاَ خُشُوعُكُمْ، وَإِنِّي لأَرَاكُمْ وَرَاءَ ظَهْرِي ”.
পরিচ্ছদঃ ৪৮০. সালাতে খুশু’ (বিনয়, নম্রতা, একাগ্রতা, নিষ্ঠা ও তন্ময়তা)।
৭০৫। ইসমায়ীল (রহঃ) … আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসূল (ﷺ) বলেছেনঃ তোমরা কি মনে কর যে, আমার কিবলা শুধুমাত্র এ দিকে? আল্লাহর শপথ, তোমাদের রুকূ’ তোমাদের বিনম্রতা’, কোন কিছুই আমার কাছে গোপন থাকে না। আর নিঃসন্দেহে আমি তোমাদের দেখি আমার পিছন দিক থেকেও।
Reference :
★ সহিহ বুখারী, হাদিস ৭০৫
★ সহিহ মুসলিম, হাদিস ৪২৩
★ মুসনাদে আহমদ, হাদিস ৯৫০৪
★ মিশকাতুল মাসাবিহ, হাদিস ৮১১
★ ইমাম ইউসুফ নাবহানী (রহঃ) : হুজ্জাতুল্লাহি আলাল আলামীন, খন্ড ২ : ৩৬৯ পৃঃ
মানঃ সহিহ
হাদিসের ৪র্থ সূত্রঃ
? আবূ হুরাইরা (রা) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,
রাসুলুল্লাহ (ﷺ) আমাদের জোহরের নামাজ পড়ালেন। একেবারে শেষ কাতারে একজন মুসল্লী নামাজে খারাপ কিছু করল। রাসুলুল্লাহ (ﷺ) সালাম ফিরিয়ে তাকে ডাক দিয়ে বললেন,
হে অমুক ব্যক্তি! তুমি কি আল্লাহকে ভয় করো না? তুমি কিভাবে নামাজ পড়তেছ তা দেখবেনা?
“তোমরা মনে কর যে, তোমাদের আমাল আমার অগোচরে থাকে। খোদার শপথ আমি সাম্মুখে যেমন দেখি পশ্চাতেও অনুরূপ দেখি।
Reference :
★ সহিহ বুখারী হাদিস নং ৭৪১
★ সহিহ মুসলিম হাদিস নং ৪২৪
★ ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল (রহঃ) এর রেওয়াতে মিশকাত শরীফ ৭৭ পৃঃ
হাদিসের ৫ম সূত্রঃ
? হযরত আনাস (রাঃ) ও আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্নিত,
রাসুলুল্লাহ (ﷺ) নামাজে দন্ডায়মান হলে বলতেন, তোমরা কাতার সোজা কর এবং সবাই সমান হয়ে দাঁড়াও। কেননা,
আমি তোমাদের পেছন থেকেও দেখি যেমনটা সামনে থেকে দেখি।
Reference :
★ আবু নঈম ইস্পাহানী (রহঃ) এর থেকে দালায়েলুন নবুওয়াত পৃ: ৩৯০ পৃ নেয়া হয়েছে।
হাদিসের ৬ষ্ঠ সূত্রঃ
? হযরত আয়েশা সিদ্দিকা (রাঃ) থেকে বর্নিত,
كان رسول الله صلى الله صلى عليه وسلم يرى فى الظلماء كما يرى فى الضوء
অর্থাৎঃ- “রাসুলুল্লাহ (ﷺ) যেমনি ভাবে আলোতে দেখতে পান, তেমনিই ঘোর অন্ধকারেও দেখতে পান।”
Reference :
★ ইমাম বায়হাকী স্বীয় বায়হাকী শরীফে
★ ইমাম সুয়ূতী (রহঃ) : খাসায়েসে কুবরা ১ম খন্ড ৬১ পৃঃ
হাদিসের ৭ম সূত্রঃ
? হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্নিত,
“রাসুলুল্লাহ (ﷺ) দিনের আলোয় যেভাবে দেখতেন, ঘোর অন্ধকারেও অনুরুপ দেখতেন।”
Reference :
★ ইমাম বায়হাকী স্বীয় বায়হাকী শরীফে
ইমামগণের ব্যাখ্যাঃ
? ইবনু হাজার আসকালানী (রহঃ) বলেন:
ظاهر الحديث إن ذلك يختص بحالة الصلاة ويحتمل أن يكون ذلك واقعا في جميع أحواله وأغرب الداودي الشارح فحمل البعدية هنا على ما بعد الوفاة يعني أن أعمال الأمة تعرض عليه وكأنه لم يتأمل سياق حديث أبي هريرة حيث بين فيه سبب هذه المقالة
“হাদীসের বাহ্যিক বা স্পষ্ট অর্থ থেকে বুঝা যায় যে, পিছন থেকে দেখতে পাওয়ার এ অবস্থাটি শুধুমাত্র সালাতের জন্য খাস। অর্থাৎ তিনি শুধু সালাতের মধ্যেই এইরূপ পিছন থেকে দেখতে পেতেন। এমনও হতে পারে যে, সর্বাবস্থাতেই তিনি এইরূপ দেখতে পেতেন।
★ ইবনু হাজার আসকালানী (রহঃ) : ফতহুল বারী শরহে বুখারী (1/515)
? ইমাম সুয়ূতী (রহঃ) ও
? ইমাম আবু নঈম (রহঃ) বর্ননা করেন,
নবীজীর চোখের মু’জিযা সম্পর্কে স্বয়ং তিনি ইরশাদ করেছেন-
إنى لأنظر ٳلى ما ورائى كما أنظر ٳلى ما بين يدى
অর্থাৎঃ- “নিশ্চয়ই আমি আমার পিছনেও সেরূপ দেখি, যেরূপ আমার সম্মুখে দেখি।” (দালায়িলুন নবুওয়াহ-আবু নঈম, খাসায়েসে কুবরা ১ম খন্ড ৬১ পৃঃ)
? Al-Haafiz Ibn Rajab (Rah) said:
This does not mean that he used to turn around and look behind him whilst he was praying, so that he could see how they were praying, as some people think. Imam Ahmad refuted those who claimed that, and affirmed that this was one of his unique characteristics, and one of his signs and miracles.
★ Fath al-Baari by Ibn Rajab (4/341)
? “””ইমাম নববী (রহঃ) – An-Nawawi (Rah) said, commenting on this hadeeth: The scholars said: What this means is that Allah, may He be exalted, created for the
Prophet (ﷺ) (had) the ability in the back of his head to see what was behind him, and he (ﷺ) was granted more extraordinary abilities than this. This is not contrary
to reason or textual evidence; rather the texts confirm this, so we must believe in it.
? ইমাম কাজী আয়াজ (রহঃ)- Al-Qazi Ayaz said: Ahmad ibn Hanbal (Rah) and the majority of the scholars said that this seeing was in a literal and real sense.””””””
★ Sharh Muslim by an-Nawawi (4/149)
? হুজ্জাতুল ইসলাম ইবনে হাজর আসকালানী (রহঃ) Al-Haafiz Ibn Hajar (Rah) said: There was a difference of scholarly opinion as to the meaning of this. It was said that what was meant is knowledge, either by means of Revelation so that he knew thereby how people really performed the prayer, or by means of inspiration. But this is subject to further discussion, because if what is meant is mere knowledge,
he would not have specified by saying “behind my back.”
And it was suggested that
what is meant is that he could see whoever was on his right and on his left,
of those on whom his gaze fell if he turned slightly sometimes, and he described those who were standing there as being behind his back. But this appears to be stretching the meaning and it is turning away from the apparent meaning when there is no need to do so.
The correct view is that it is to be interpreted as it appears to mean, and
that this “seeing” was in a real and literal sense that was unique to the Prophet (ﷺ)
and was an extraordinary feat. Based on that, the author narrated this hadeeth under the heading of the signs of Prophethood; it was also narrated under a similar heading from Imam Ahmad and others.
★ Fath al-Baari by Ibn Hajar (1/514)
? ইমাম সুলতান মোল্লা আলী কারী (রহঃ) – Mullah ‘Ali al-Qaari said:
The words “I can see you behind my back” do not necessarily mean that this occurred all the time.
★ Mirqaat al-Mafaateeh Sharh Mishkaat al-Masaabeeh (4/197)
নবীজী সব দেখতে পান ও শুনতে পান
____________________
নবীজী সব দেখতে পান ও শুনতে পান
নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহী ওয়াসাল্লাম বলেছেন-
إنّى أرى مالا ترونَ وأسمعُ مالا تسمعونَ
আমি সেসব কিছু শুনতে পাই যা তোমরা শুনতে পাওনা এবং সেসব কিছু দেখতে পাই যা তোমরা দেখতে পাওনা।
সুত্র:-তিরমিযি -জামেউস সহীহ,আবওয়াবুয যুহুদ ৪/১৪৫, হাদীস ২৩১২;
ইবনে মাজাহ-আস সুনান ৪/৫০৫, কিতাবুয যুহুদ,হাদীস নং ৪১৯০;
মাসনাদু আহমদ৫/১৭৩;
মাসনাদু বাযযার ৯/৩৫৮, হাদীস নং ৩৯২৫;
মুসতাদরাক ২/৫১০, হাদীস নং ৮৬৩৩, ৮৭২৬;
বায়হাকী-সুনানে কুবরা ৭/৫২;
আলবানী(নামদারী আহলে হাদীসদের গুরু)-সিলসিলাতুল আহাদীসুস সহীহা ৪/২৯৯, হাদীস নং ১৭২২;
নবিজী সাল্লাল্লাহু আলাইহী ওয়াসাল্লাম আরো বলেন –
فو الّذى نفسى بيدهِ انى لأراكم من خلفى كما أراكم من بين يديَّ
যেই মহান সত্তার হাতে আমার প্রান তার শপথ, আমার পিছন থেকে আমি তোমাদেরকে ঠিক সেরকমই দেখতে পাই যেরকম আমার সামনে থেকে দেখতে পাই।
সুত্র:-সুনান নাসাঈ-কিতাবুল ইমামাহ,হাদীস নং ৮১৪;
নাসাঈ-সুনানে কুবরা ১/২৮৮,হাদীস নং ৮৮৭;
মসনাদে আবু ইয়ালা ৬/৪৬, ২২৮ হাদীস নং ৩২৯১, ৩৫১৪;
অতএব বুঝা গেলো আল্লাহ তাআলা আমাদের নবিকে সব কিছু দেখার ও শুনার ইখতেয়ার দিয়েছেন।
খেজুর গাছের কান্না (উসতুওয়ানা হান্নানাহ!)
____________________
খেজুর গাছের কান্না (উসতুওয়ানা হান্নানাহ!)
রহমতে আলম,নূরে মুজাস্সাম হুজুর পাক ﷺ এঁর জন্য মৃত খেজুর গাছের কান্না (উসতুওয়ানা হান্নানাহ!)

🌾১ম দলিল🌾
আবূ নু’আইম (রহঃ) … জাবির ইবনু আবদুল্লাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত। নাবী ﷺ একটি বৃক্ষের উপর কিংবা একটি খেজুর বৃক্ষের কাণ্ডের উপর (হেলান দিয়ে) শুক্রবারে খুৎবা প্রদানের জন্য দাঁড়াতেন। এমতাবস্থায় একজন আনসারী মহিলা অথবা একজন পুরুষ বলল, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আঁপনার জন্য একটি মিম্বার তৈরি করে দেব কি? নাবী ﷺ বললেন, তোমাদের ইচ্ছা হলে দিতে পার। অতঃপর তাঁরা একটি কাঠের মিম্বার তৈরি করে দিলেন। যখন শুক্রবার এল নাবী ﷺ মিম্বারে আসন গ্রহণ করলেন, তখন কাণ্ডটি শিশুর ন্যায় চীৎকার করে কাঁদতে লাগল। নাবী ﷺ মিম্বার হতে নেমে এসে উহাকে জড়িয়ে ধরলেন। রাবী বলেন, কিন্তু কান্ডটি এজন্য কাঁদছিল যেহেতু সে খুতবাকালে অনেক যিকর শুনতে পেত।
[সহীহ বুখারীঃ ৩৩৩১, ইবনে মাজাহ হাদিস নং ১৪১৫, ফাতহুল বুখারী নং হাদিস ৩৯৯]
👍পরবর্তীতে সেই খেজুর কাণ্ডটিকে মানুষের ন্যায় হুজুর ﷺ এঁর মিম্বারের পিছনে কবর দেয়া হয়।কোন কোন বর্ণনায় রয়েছে রাসূল ﷺ উক্ত খেজুর বৃক্ষটিকে জান্নাতে তাঁর সাথি হবার সুসংবাদ প্রদান করলে উক্ত খেজুর কাণ্ডটি কান্না থামায়। সুবহানআল্লাহ!
🌴২য় দলিল🌴
হাদিস শরীফে ইরশাদ হয়েছে:
عَنِ ابْنِ عُمَرَ، أَنَّ النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم كَانَ يَخْطُبُ إِلَى جِذْعٍ فَلَمَّا اتَّخَذَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم الْمِنْبَرَ حَنَّ الْجِذْعُ حَتَّى أَتَاهُ فَالْتَزَمَهُ فَسَكَنَ ”
ইবনু উমার (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে, নাবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম খেজুর গাছের গুড়ির সাথে ভর দিয়ে জুমু’আর বক্তৃতা করতেন। যখন মিম্বার তৈরী করা হল খেজুরের গুড়িটা কাঁদতে লাগল। তিঁনি গাছটির নিকট গেলেন এবং তা স্পর্শ করলেন।ফলে এটা চুপ করল।
[জামে তিরমিযী:৫০৫, সুনানে দারেমী:৩১, সুনানুল কুবরা:৫৫৬৭, বুখারী:৩৩৯০]
🌹বিশেষ দ্রষ্টব্য: নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যখন খুতবা দিতেন তখন তিনি দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকতে তাঁর কষ্ট হত। তখন তাঁর জন্য খেজুর গাছের একটি কাষ্ঠ খণ্ড নিয়ে আসা হল এবং তিঁনি যেখানে দাঁড়াতেন তাঁর পাশে গর্ত করে খাড়া ভাবে পূঁতে দেওয়া হল। অতঃপর তিনি দীর্ঘক্ষণ ধরে খুতবা দেওয়ার সময় সেটিতে ভর করে ঠেস দিয়ে দাঁড়াতেন।
💜৩য় দলিল💜
ইবনু আব্বাস রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুমা হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, মিম্বার বানানোর পূর্বে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম একটি কাষ্ঠখণ্ডের নিকট (দাঁড়িয়ে) খুতবা দিতেন। তারপর যখন তিঁনি মিম্বার বানালেন এবং সেটির দিকে ফিরে গেলেন,তখন কাষ্ঠখণ্ডটি কান্নাজুড়ে দিল। ফলে তিঁনি এটিকে আলিঙ্গন করলেন, অতঃপর এটি শান্ত হল। আর তিঁনি বললেন: ‘আঁমি যদি একে আলিঙ্গন না করতাম, তবে অবশ্যই তা কিয়ামত পর্য়ন্ত (এভাবে) কাঁদতে থাকত।’
[সুনানে দারেমী:৩৯, মুসনাদে আহমাদ: ১/২৪৯, ২৬৩, ২৬৭; ইবনু আবী শাইবা: ১১/৪৮৪]
💘৪র্থ দলিল💘
আনাস ইবনে মালিক রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম জুমু’আর দিনে মসজিদের একটি কাষ্ঠখণ্ডের সাথে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে লোকদের মাঝে খুতবা দিতেন। তারপর এক রোমান ব্যক্তি এসে বলল, আঁমি আঁপনার জন্য একটি কিছু বানিয়ে দিব যার উপরে বসলে মনে হবে যেন আঁপনি দাঁড়িয়ে আছেন? তারপর সে তাঁর জন্যে একটি মিম্বার তৈরী করল, যার (নিচের দিকে) দু’টি ধাপ ছিল, আর (উপরের দিকে) তৃতীয় ধাপে তিঁনি বসতেন। অতঃপর যখন আল্লাহর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সেই মিম্বারে বসলেন,তখন কাষ্ঠখণ্ডটি ষাঁড়ের মত আর্তনাদ করতে লাগলো, এমনকি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এঁর শোকে পুরো মসজিদ প্রকম্পিত হয়ে উঠল।
* তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মিম্বার হতে নেমে সেটির দিকে আসলেন এবং আর্তনাদরত কাষ্ঠখণ্ডটিকে আলিঙ্গন করলেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সেটিকে আলিঙ্গন করা মাত্র তা শান্ত হয়ে গেল। তারপর তিঁনি বলেন: ‘সেই মহান সত্ত্বার কসম, যার হাতে রয়েছে মুহাম্মাদের প্রাণ,আঁমি যদি একে আলিঙ্গন না করতাম, তবে অবশ্যই তা কিয়ামত পর্যন্ত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এঁর শোকে এভাবে কাঁদতে থাকত।’ এরপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এটিকে দাফন করার নিদের্শ দিলেন, ফলে একে দাফন করে দেয়া হল।
[সুনানে দারেমী,৪১,তিরমিযী,(শুধু প্রথমাংশ): ৩৬২৭, সহীহ ইবনু খুযাইমাহ:১৭৭৬-১৭৭৭]
“কাণ্ডটি এজন্য কাঁদছিল যেহেতু সে খুতবাকালে যিকর শুনতে পেত।”
[দ্রষ্টব্য: বুখারী:৩৩৯১,সহীহ ইবনে খুযাইমাহ: ১৭৭৭]
👏লক্ষ্য করুন: একটি খেজুর গাছ যদি রাসূলকে চিনল,ভালোবাসলো, মোহাব্বত করলো আর নাফরমান-মালাউন,মুনাফিক, ইয়াজিদের দোসররা অহরহ রাসূলের শানে বেয়াদবি করতেছে। আমার কথা হল আল্লাহ তা’আলা স্বয়ং যাঁকে এত সম্মানীত করেছেন,সেই রাসূলকে কেউ না মানলে কি সেই রাসূলের শান কমে যাবে?? না কখনো কমবে না বরং বাড়তে থাকবে।
----------- সমাপ্ত ----------
Comments
Post a Comment