আল মাওরিদুর রাভী ফি মাওলিদিন নববী (ﷺ)

আল মাওরিদুর রাভী ফি মাওলিদিন নববী (ﷺ)
____________________

اَلْمَوْرِدُ الرَّوِى فِيْ مَوْلِدٍ النَّبَوِى

আল মাওরিদুর রাভী ফি মাওলিদিন নববী (ﷺ)

মূলঃ

ইমাম নূরুদ্দীন মুল্লা আলী কারী আল হারুবী (رحمة الله)

অনুবাদঃ

মো. কবিরুজ্জামান

মো. আবুল খায়ের ইবনে মাহতাবুল হক

টেক্সট রেডীঃ মাসুম বিল্লাহ সানি ও সিরাজুম মুনির তানভির

ব্যবস্থাপনায়ঃ

শাহজালাল লতিফিয়া ইসলামী গবেষনা সংস্থা

বিয়ানীবাজার, সিলেট

০১৭২২১১৫১৬১

প্রকাশকঃ       

মোঃ শাহ্ আলম সরকার, সমাচার, ৩৭ পি. কে. রায় রোড, বাংলাবাজার, ঢাকা-১১০০। ফোন ৪৭১১৬১৪৩           

প্রকাশকালঃ        

একুশে বইমেলা, ২০১৭    

গ্রন্থস্বত্বঃ অনুবাদক  

প্রচ্ছদঃ মশিউর রহমান

বর্ণবিন্যাসঃ বাঁধন, সমাচার কম্পিউটার সিস্টেম, বাংলাবাজার, ঢাকা-১১০০

পরিবেশকঃ এস.এস. বুক্স ৩৮ বাংলাবাজার, ঢাকা-১১০০

উত্তর আমেরিকা পরিবেশক : মুক্তধারা, জ্যাকসন

হাইট, নিউইয়র্ক, যুক্তরাষ্ট্র।

যুক্তরাজ্য পরিবেশক: সঙ্গীতা লিমিটেড, ২২ ব্রিকলেন, লন্ডন, যুক্তরাজ্য  

মূল্যঃ ২৫০ টাকা

ঘরে বসে সমাচার এর সকল বই কিনতে ভিজিট করুন

ফোনে অর্ডার করতে ০১৫ ১৯৫২ ১৯৭১ হট লাইন ১৬২৯৭
_________________________________

অনুবাদকের কথা
____________________
অনুবাদকের কথা

الحمد لله والشكر لله والصلوة والسلام على رسول لله اما بعد فقد قال الله تعالى فى القران الكريم من يطع الرسول فقط اطاع الله (الخ) وقال عليه السلام من احب سنتى فقط احبنى ومن احبنى كان معى فى الجنة.

রাসূলে পাক (ﷺ) এর প্রতি আন্তরিক মহব্বত ও তাঁর অনুসরণই নাজাতের একমাত্র অসিলা। আর এটাই স্বাভাবিক যে, ভালোবাসা মহব্বতকৃত ব্যক্তিকেই বার বার স্মরণ করিয়ে দেয়। যেমন হাদীস শরীফে উল্লেখ রয়েছে,

 من احب شئيا اكثر ذكره

আর মহানবী (ﷺ) হলেন, অপরিসীম গুণের অধিকারী।তিনি সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ নবী শাফিউল মুজনিবীন, রাহমাতুল্ল্লিল আলামীন। তাঁর জন্ম বৃত্তান্ত সম্পর্কে আরবী ভাষায় লিখিত আল মাওরিদুর রাভী ফি মাওলিদিন নাবাবী (ﷺ)’ বিশ্বব্যাপী প্রসিদ্ধ একটি গ্রন্থ। প্রথিতযশা মুহাদ্দিস আল্লামা মুল্লা আলী আলী কারী (رحمة الله) যার লিখক। এমন মহান একজন লিখকের অমূল্য কীর্তির বঙ্গানুবাদ করার মতো যোগ্যতা বা সাধ্য আমার নেই। কিন্তু তারপরও এ গ্রন্থের গুরুত্ব এবং ব্যাপক কল্যাণের চিন্তা করেই এবং মাওঃ আবুল খায়ের ইবনে মাহতাবুল হকের পিড়াপিড়িতে আমি আল্লাহর উপর ভরসা করে এ কাজ শুরু করি।

নিঃসন্দেহে আল্লাহ আমাকে এ কাজের জন্য তাওফীক দিয়েছেন যার প্রমাণ যখনই আমি এর অনুবাদ লিখতে বসেছি তখনই সহজতা অনুভব করেছি। লিখক তাঁর কিতাবে অত্যন্ত সহজভাবে বিশ্বনবী (ﷺ) জন্ম বৃত্তান্ত আলোচনা উপলক্ষ্যে আয়োজিত মিলাদ মাহফিলের ব্যাপারে অনবদ্য আলোচনা উপস্থাপন করেছেন। এসব আলোচনা দ্বিধা-বিভক্ত মুসলমান ভাইদের উপকারে আসবে এতে কোনো সন্দেহ নেই। এতো বড় মাপের একজন আলেমের অনবদ্য গ্রন্থের অনুবাদ যথার্থভাবে করা সম্ভব হবেনা, এটাই স্বাভাবিক। তারপরও রাবু্বল আলামীন তাঁর এ আকিঞ্চন বান্দার দ্বারা এ কাজ করিয়েছেন, সেজন্য তাঁর দরবারে জানাই লক্ষ-কোটি সুজুদ। আল্লাহ পাক এর মাধ্যমে পরকালে আমাদেরকে তাঁর নবীর শাফায়াতের অধিকারী করুন এ আমার একান্ত কামনা।

গ্রন্থখানা অনুবাদে ত্রুটি বিচ্যুতি থাকা অসাভাবিক নহে, কার নজরে বিচ্যুতির দৃষ্টি আসলে অনূরুধ যে আমাদের অবগত করা। পরবর্তিতে তা সংশোধন করা হবে।

আল হাকীর

মু. কবিরুজ্জামান


বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম

আমরা সকল প্রশংসা জ্ঞাপন করছি সে মহান আল্লাহ তাবারাকা ওয়া তায়ালার, যিনি তাঁর রাসূলে কিবরিয়া (ﷺ) এর আনুগত্যতার সাথে নিজের ভালবাসাকে সংযুক্ত ও শর্তারোপ করেছেন। যেমনঃ এর স্বপক্ষে নিন্মোক্ত বাণী প্রমাণ বহন করে। মহান আল্লাহর বাণী :

 قُلْ إِن كُنتُمْ تُحِبُّونَ اللّهَ فَاتَّبِعُونِي يُحْبِبْكُمُ اللّهُ

অর্থাৎ: বলুন হে রাসূল! যদি তোমরা আল্লাহ পাককে ভাল বাসতে চাও তবে প্রথমে আমার অনুস্মরণ ও অনুকরন কর। তবেই তিনি (আল্লাহপাক) তোমাদেরকে ভাল বাসবেন।

সালাত ও সালাম বর্ষিত হোক সে নবী (ﷺ) এর প্রতি, যিনি আল্লাহ পাকের নিকট সুমহান ও সর্ব শ্রেষ্ট জীব হিসাবে বিবেচিত, আরও বর্ষিত হোক তাঁর পরম ও চরম আহলে বায়েত ও সকল ছাহাবায়ে কেরামগনের প্রতি।

হামদে বারী সালাত ও সালাম নিবেদনের পর মহান আল্লাহ পাক ও তাঁর রাসূলে পাক (ﷺ) এর ভালবাসা হচ্ছে ইসলামী চিন্তা গবেষনার গুরুত্বপূর্ণ উৎস। তন্মধ্যে প্রধান হচ্ছে-

(১) তাঁকে সর্বোচ্ছ সম্মান প্রদান করা।

(২) তাঁর আনীত ও সকল শিক্ষা দীক্ষার প্রতি যথাযথ আমল করা। কিন্তু পরিতাপের বিষয় হচ্ছে যে, জাতী ইসলামী চিন্তা ধারার এ গুরুত্বপূর্ণ দিক সম্পূর্ণভাবে ভূলে গিয়েছে। অথচ জাতি আজ আল্লাহ ও তাঁর রাসূলে পাকের প্রতি কঠোর ভালবাসা পোষন করা বাঞ্চনীয় ছিল। তাই আল্লাহও রাসূলের প্রতি অগাধ ভালবাসা উপেক্ষা করার দরুন তা একেবারে হ্রাস পেয়ে গেছে। ফলে তাদের মধ্যে পারস্পরিক ভালবাসা, বন্ধুত্ব ও উন্নতির পরিবর্তে অবনতি ক্ষতিগ্রস্থতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। আর এরই সুবাদে আজকের কাফের বেনিয়া গোষ্টিরা তাদের উপর প্রভাব প্রতিপত্বি বিস্তার লাভের প্রস্তুতি ও সৃষ্টি কর্তা আল্লাহ পাক ও তাঁর রাসূলে পাকের প্রতি উম্মতের সুগভীর ভালবাসার সু-সম্পর্ক দুর্বল ও নশ্যাত-করার মানসে গবেষনা ও শিক্ষামুলক প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলে উম্মতে মুহাম্মদী ঝড়বাদীদের আওতায় চলে যাওয়ার ফলে তারা আজ বিজয়ের পরিবর্তে পরিনত হয়েছে বিজিত সম্প্রদায়ে এবং পশ্চিমা নুংড়া জাতিদের নিকৃষ্ট গবেষনার স্রোতে ভেসে গিয়েছে। ফলে তারা তাদের প্রতিপালক ও স্বীয় রাসূলকে ভূলে গিয়েছে। যদ্বরুন ইউরোপীয় ও ঝড়বাদীরা তাদের গাড়ে সাওয়ার হয়ে তাদের উপর নিজেদের প্রভাব প্রতিপত্তি বিস্তার লাভ করে। তা এক চরম বেদনাদায়ক ও আক্ষেপের বিষয়।

এজন্য আমরা তাদের সকল ষঢ়যন্ত্র নশ্যাত করার মানসে শিক্ষামুলক আরবী ভাষায় প্রচারিত বিকল্প ধারা প্রকাশের ব্যবস্থা গ্রহণ করি।

আমরা পূর্ববর্তী তিনজন নির্ভর যোগ্য ইমাম ও ইসলামী উম্মাহর লিখিত তিন খানা অমুল্য গ্রন্থ হতে সংগৃহীত তথ্য উপাত্ত্ব উদঘাটন করেছি যেগুলো তাঁদের নিকট সমাদৃত ও গৃহীত।

মীলাদ সংক্রান্ত বহুল তথ্য উপাত্ত্বগুলো নিন্মোক্ত তিনটি গ্রন্থ হতে সংকলিত।

১। আল মাওরিদুর রাভী ফি মাওলিদিন নাবী (ইমাম মোল্লা আলী কারী (رحمة الله)

২। মাওলিদুর রাসূলুল্লাহ (ﷺ)। (হাফিজ ইবনে কাছীর রচিত)

৩। মাওলিদু নাবী। (হাফিজ ইবনে হাজার হায়তামী রচিত)

অতএব, বহুযুগ ধরে বিশ্বের প্রত্যন্ত অঞ্চলে মুসলমানরা আজ মীলাদ শরীফের প্রতি গুরুত্বরোপ দিয়ে আসছে বিধায় মীলাদ বিরোধীদের শুভ বুদ্ধির উদয় হয়েছে তাই আমরা এ গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের বিশে­ষন করতে শরয়ী প্রমাণাদী উপস্থাপন করছি। এর মূল উদ্দেশ্য যাতে আমরা নবী প্রেমীক উম্মতদের পুনঃরায় আল্লাহ ও তাঁর রাসূলে পাক (ﷺ) এর ভাল বাসার দিকে ফিরিয়ে আনতে সক্ষম হই।

 কেননা মহান আল্লাহ পাক নিন্মোক্ত বাণী দ্বারা স্বীয় রাসূলে পাক (ﷺ) এর অনুগত্যকে নিজের ভালবাসার অন্তর্ভূক্ত করেছেন।

 যেমনঃ মহান আল্লাহ পাকের বাণীঃ -

قُلْ إِن كُنتُمْ تُحِبُّونَ اللّهَ فَاتَّبِعُونِي يُحْبِبْكُمُ اللّهُ

 অর্থাৎ: বলুন। তোমরা যদি আল্লাহকে ভাল বাসতে চাও তবে পূর্বে রাসূল কে ভালবাস। তবেই তিনি তোমাদেরকে ভাল বাসবেন।

আর এ ভালবাসা সম্পর্কে হুযূরে পাক (ﷺ) এরশাদ ফরমানঃ

لا يُؤْمِنُ أَحَدُكُمْ حَتّى أَكُونَ أَحَبَّ إِلَيْهِ مِنْ والِدِهِ وَوَلَدِهِ وَالنَّاسِ أَجْمَعينَ .

অর্থাৎ তোমরা ততক্ষন যাবত পুর্ণ মুমিন হতে পারবেনা যতক্ষন যাবত না আমি তার নিকট তার নিজের চেয়ে, পিতা-মাতার চেয়ে, সন্তান-সন্ততির চেয়ে এবং সমস্ত মানুষের চেয়েও অত্যধিক প্রিয় হই।

অতএব ততক্ষন পর্যন্ত আমরা আমাদের সৃষ্টি কর্তা মহান আল্লাহ পাকের সন্তুষ্টি লাভে সক্ষম হবোনা, যতক্ষণ পর্যন্ত তাঁর রাসূলে পাকের সন্তুষ্টি অর্জন করতে সক্ষম হবোনা এমনকি রাসূলে পাক (ﷺ) এর ভালবাসা ব্যতীত তাঁর অনুস্বরণ ও অনুকরণ করা ও আমাদের পক্ষে-কশ্মিন কালেও সম্ভব হবেনা।

মহান আল্লাহ পাক এ মুল্যবান গ্রন্থ গুলোর সংস্করণের তাওফিক দানের জন্যে আমরা তাঁর কৃতজ্ঞতার পাশের্ব আবদ্ধ।

পাশা পাশি উক্ত গ্রন্থ গুলো সংকলন বিষয়ে সাবির্কভাবে সর্বোত্তম সহযোগীতা করায় মহামান্য শায়েখ আলহাজ লতীফ আহমদ চিশতী এবং মহামান্য শায়েখ আলহাজ মুহাম্মদ জামীল চিশতী মহোদ্বয় গনের প্রতি কৃতজ্ঞতার বিকলপ নেই।

পরিশেষে মহান আল্লাহ পাকের দরগাহে এ আকুতী জানাই যে, তিনি যেন আমাদের পূর্ব পুরূষ হতে এ গুরুত্ব পূর্ণ অমুল্য গ্রন্থ সংকলন ও সংস্করনের অক্লান্ত ও অবিশ্রান্ত পরিশ্রমকে মঞ্জুর করেন এবং এ মেহনতকে তাঁর মোবারক দরগাহে একনিষ্টতার ধার প্রান্তে পৌছে দেন।

(আমীন ছুম্মা আমীন)


বিনীত

আল্লাহর সন্তুষ্টির ভিখারী

মুহাম্মদ খান কাদেরী

ইসলামী বাস্তবায়নকেন্দ্র

(২০৫-শাদমান নং (১) লাহোর পাকিস্থান)

লেখকের কথা
____________________
লেখকের কথা

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম

সমস্ত প্রশংসা মহান আল্লাহ পাকের, যিনি বিশ্বজগতের প্রতি পালক। দরুদ ও সালাম বর্ষিত হোক সাইয়্যিদুল আম্বিয়া ওয়াল মুরসালীন হযরত মুহাম্মদ (ﷺ) এর প্রতি তাঁর পরম আহলে বাইত ও সকল সাহাবায়ে কেরামগনের (رضي الله عنه) প্রতি।

পরর্বতী বক্তব্য হলো, মহান আল্লাহ পাক এ অধমকে হাফিজে হাদীস শায়েখ আব্দুর রহমান বিন আলী আশ শায়বাণী (যিনি ইবনে দিবা নামে পরিচিত) তাইছিরুল উছুল ইলা-জামিউল উছুল, গ্রন্থকারের প্রনেতা) র প্রণীত আল মাওলিদু নাবী, গ্রন্থের খেদমতের উছিলায় ইহসান করেছেন।

গ্রন্থ খানার টিকা ও গবেষনা কাজে আমি নিজেকে উৎসর্গ করি। পাশা পাশি বর্ণিত হাদীস গুলো সন্নিবেশিত করি। আশা করি আল্লাহ পাকের প্রশংসায় মীলাদ প্রেমীকদের নয়ন যুগল হবে।

এরপর আমার নিকট বার্তা পৌছে যে, হাফিজে হাদীস শায়েখ মুল্লা আলী ক্বারী (رحمة الله) এর প্রণীত গ্রন্থ সংকলন করার জন্য। তিনি ছিলেন স্বীয় যুগের এক প্রতিভা সম্পন্ন বড় ইমাম।

যেমন: হাদীস সংগ্রহের ক্ষেত্রে তিনি ছিলেন সে যুগের এক কীনারাহীন বিদ্যাসাগর। এজন্য তৎকালীন যুগে লোকেরা তাঁকে অমুল্য জ্ঞানসমুদ্র বলে উপাধি দেয়।

এ অমুল্য গ্রন্থ প্রায় ৯৩ পৃ: সম্বলিত এবং চমৎকার পরিমার্জিত পান্ডুলিপি। এর অন্য আরেকটি পান্ডুলিপি অতিচমৎকার ফার্সি ভাষায় লিখিত পাওয়া যায়। তবে এর প্রথম হস্তলিপি স্পষ্ট ও পরিমার্জিত থাকার দ্বরুন আমরা তার উপর আস্থা রাখি। গ্রন্থের উপর বহু টিকা লিখা হয়েছে।

গ্রন্থকার (رحمة الله) তাঁর গ্রন্থে অধিকাংশ ক্ষেত্রে সহীহ ও জঈফ হাদীস বর্ণনা করেছেন বিধায় আমি (লেখক) অতিরিক্ত কোন হাদীস বর্ধিত করিনি। গ্রন্থকার (رضي الله عنه) স্বীয় গ্রন্থ প্রণয়নে অধিকাংশ ক্ষেত্রে زعموا- روى- قيل শব্দগুলো বর্ণনা করেছেন। আর হাদীস বিশরাদগনের কাছে এ ধরনের বর্ণনাই যথেষ্ট। আবার কোন কোন সময় গ্রন্থ প্রণয়নে সনদ সহকারে এমন বহু হাদীস বর্ণনা করেছেন, যা নির্ভরযোগ্য তাবেঈন ও আইম্মায়ে কেরামগনের বর্ণিত হাদীস। অথচ বর্ণনা প্রাক্ষালে একথা বলেননি যে, হাদীসটি নবী করীম (ﷺ) এর নিকট মারফু হিসেবে পরিচিত বরং তা মাওকুফ হাদীস। তবে মুফাসিসরীনে কেরামগনের বর্ণিত হাদীসকে তিনি অত্যধিক প্রাধান্য দিয়েছেন এবং তাঁদের বর্ণিত হাদীস মারুফু বলে রায় প্রদান করতেন।

আমাদের দৃষ্টিতে তাঁর বর্ণিত হাদীস সমূহ মারফু সুত্রে বর্ণিত ও প্রকাশ্য দলীলের বিপরীত নয়।

তাঁর সংগৃহীত হাদীস গুলো বর্ণনা করেছেন ইবনে আব্বাস, কা’ব এবং হালীমা সাদিয়াগন (رضي الله عنه)। চতুর্থ ঘটনা বর্ণনা করেন নবীজীর মাতা হযরত সাইয়্যিদা আমেনা (رضي الله عنه)।

অত্রএব তাঁদের বর্ণিত ঘটনাসমুহ কি সমালোচিত হতে পারে না কখনও না।

গ্রন্থকার ইমাম মুল্লা আলী ক্বারী (رحمة الله) সংক্ষিপ্ত পরিচিতি
____________________
গ্রন্থকার ইমাম মুল্লা আলী ক্বারী (رحمة الله) সংক্ষিপ্ত পরিচিতি

তাঁর নাম ইমাম মুল্লা আলী বিন মহাম্মদ সুলতান হারুবী (যিনি মুল্লা আলী কারী হানাফী নামে পরিচিত)। তিনি ছিলেন এক বিশাল প্রতিভা সম্পন্ন, স্বীয় যুগের একমাত্র ব্যক্তিত্ব উজ্জল নক্ষত্র, ভাষা পরিমার্জনকারী, বিশে­ষণের আলোকধারা। তাঁর খ্যাতি সবর্ত্রে প্রচারিত। তিনি হিরা প্রদেশে জন্ম গ্রহন করেন।

ইলমে হাদীসের উদ্দেশ্যে জ্ঞান আহরণের জন্য তিনি সুদূর মক্কায় ভ্রমন করেন। হাদীস সংগ্রহ করেন সেখানকার নির্ভর যোগ্য উস্তাদ জনাব আবুল হাসান আল বিকরী (رحمة الله) সাইয়্যিদ যাকারীয়া আল হাসানী, শিহাব আহমদ বিন হাজার হায়তামী, শায়েখ আহমদ আল মিছরী (যিনি ক্বাজী যাকারীয়া ছাহেবের সুযোগ্য ছাত্র) শায়েখ আব্দুল্লাহ সানাদী, আল্লামা কুতবুদ্দিন মক্কী সহ প্রমুখ মুহাদ্দিসীনে কেরামগনের নিকট হতে।

তাঁর সুখ্যাতি সর্বত্রে ছড়িয়ে পড়ে 
____________________
তাঁর সুখ্যাতি সর্বত্রে ছড়িয়ে পড়ে 

তাঁর জীবদ্দশায় তিনি বহু সুক্ষগ্রন্থ প্রণয়ন করে গেছেন, যে গুলো পরিমার্জিত সংশোধিত সুচী ভিত্তিক এবং বিশাল ফায়দা সংবলিত। তন্মধ্যে মেরক্বাত শরহে মেশকাত ১১ খন্ডে প্রনীত, তা তাঁর সর্ববৃহৎ প্রণীত ও বিশ্বনন্দিত অমুল্য গ্রন্থ, তাছাড়া শরহে শিফা, শরহে শামায়েল, শরহে নুখবাতুল ফিকর শরহে শাত্বেরা, শরহুল জাযরীয়্যা লাখছুন মিনাল ক্বামুস (যা কামুস নামে প্রশিদ্ধ)। তাছাড়া “আল আয়মনারুল জানিয়্যা ফি আসমায়িল হানাফিয়্যা, শরহে ছুলাছিফয়াতে বুখারী নযুতাহুল খাতীর, আল ফাতীর ফি তারজমায়ে শায়খ আব্দুল কাদীর গ্রন্থ গুলোও অন্যতম।

মৃত্যু
____________________
মৃত্যু

তিনি ১০১৪ হিজরীর শাওয়াল মাসে পবিত্র মক্কা নগরীতে ইন্তেকাল ফরমান। এবং জান্নাতুল মুয়াল্লা নামক স্থানে তাকেঁ দাফন করা হয়।

তাঁর মৃত্যু সংবাদ যখন মিসরের উলামায়ে কেরামদের কাছে পৌছে, তখন তাঁরা আল আযহার বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাঙ্গনে জড়ো হয়ে তাঁর গায়েবানা জানাযা আদায় করেন। তাঁর গায়েবানা জানাযায় প্রায় চার হাজারের ও অধিক লোক অংশগ্রহন করেন।

হুযূরে পাক (ﷺ) এর জন্মানুষ্ঠান
____________________
হুযূরে পাক (ﷺ) এর জন্মানুষ্ঠান

হুযূরে পাক (ﷺ) এর জন্মানুষ্ঠান নিয়ে বহু আলোচনা সমালোচনা হয়। তা কি জায়েয? না জায়েয নয়? এ বিষয়ের অবতারনার জন্য কলম হাতে নিলাম। আমার ব্যক্তিগত চিন্তা ধারা ও আজকের সমস্ত মুসলিম জাতিরা যে চিন্তা গবেষনা করছে তা হচ্ছে যে, হুযূরে পাক (ﷺ) এর জন্মানুষ্ঠান বিষয়ে যতই আলোচনা সমালোচনা হোকনা কেন সর্বোপরি তা যে যুক্তি সঙ্গত ও বৈধ বিষয় তা সন্দেহের অবকাশ নেই। তা প্রতি বছর প্রতি মৌসুমে পালিত হয়ে আসছে। আবার কেহ তা শ্রবনে বিরক্ত ও হচ্ছে। তাই আমার কিছু সংখ্যক বন্দু মহল আমার পক্ষ থেকে মীলাদ সংক্রান্ত কিছু প্রমাণ উদঘাটন করতঃ জানতে চাইলে আমি তা লিখার মনস্থ করি। যেহেতু জেনে শুনে কোন বিষয় গোপন করা যে মহা অপরাধ তা থেকে পরিত্রাণের লক্ষ্যে উক্ত বিষয়ে কলম চালনাকে দায়ীত্ব মনে করি। আল্লাহ পাকের নিকট এ প্রার্থনা জানাই, তিনি যেন যথাযতভাবে উক্ত বিষয়ে লিখার শক্তি দান করেন। (আমীন)

মীলাদ মাহফিল বৈধ হওয়ার যুক্তি নির্ভরদলীল সমূহ
____________________
মীলাদ মাহফিল বৈধ হওয়ার যুক্তি নির্ভরদলীল সমূহ

১। আমরা হুযূরে পাক (ﷺ) এর জন্মানুষ্ঠান, এমনকি মীলাদ মাহফিলে তাঁর জীবনী আলোচনা করা, শ্রবন করার উদ্দেশ্যে জড়ো হওয়া, সালাত ও সালাম পাঠ করা, প্রশংসা গাওয়া, শ্রবন করা, খানা খাওয়ানো, উম্মতের হৃদয়ে আনন্দ জাগানো ইত্যাদি বিষয় গুলোকে বৈধ বলে মনে করি।

২। মীলাদ মাহফিলকে কেবল বিশেষ কোন রাত্রে বা দিনে পালন করা হলে আমরা তাকে সুন্নাত বলিনা বরং যারা তার বিশ্বাসী প্রকৃত পক্ষে তারাই আহলে বিদআতী, ধর্মে নতুন বিষয় উদ্ভাবনকারী।

কেননা হুযূরে পাক (ﷺ) এর আলোচনা এবং তাঁর সাথে সম্পর্ক রাখা নিদির্ষ্ট নয় বরং যে কোন সময়ে তা করা যায় তা সকল উম্মতে মুহাম্মদীর উপর ওয়াজিবও বটে। নবী পাকের আলোচনায় স্বীয় আত্মা পরিপুর্ণ করাও ওয়াজিব। বিশেষত: নবী করীম (ﷺ) এর আগমনের মাস তথা মাহে রবিউল আউয়াল আসলে ঈমানদারগণ মানুষকে তার প্রতি অগ্রসর হওয়ার মানসে আহবান করা বা অনুষ্ঠান করিয়ে মীলাদ মাহফিলের সকল ফয়েজ ও বরকত উপলদ্ধি করানো উচিত।

মুসলমানকে অতীত ও বর্তমান বিষয়ে এমনকি যারা উপস্থিত থাকবে তারা অনুপস্থিতগনের অবহিত করবে।

৩। মীলাদ মাহফিল সহ পূবোর্ক্ত নেক কর্ম মুলক কাজ পালন করা আল্লাহর দাওয়াত প্রচারের সুবৃহৎ উসিলা। মানুষের জন্য তা স্বর্ণালী যোগ বিধায় তার জন্য তা পরিহার করা উচিত নয়। এবং প্রত্যেক আহবানকারী উলামায়ে কেরামদের জন্য আবশ্যক যে, তারা যেন মীলাদ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে জাতিকে হুযূরে পাকের আলোচনা, তাঁর চরিত্র, কৃতিত্ব, শিষ্ঠাচারীতা, ন্যায় পরায়নতা, উদারতা, জীবনী আলোচনা, মুয়ামালাত, মুআশারাত ও ইবাদত বিষয়ে লোকদের জানিয়ে দেয়া। তাদেরকে নছীহত মুলক কথা বার্তার মাধ্যমে নেক ও কল্যানের পথে পরিচালিত করা এবং বিদআত, শিরকী ফিৎনাহ ফাসাদ, মুছিবত থেকে বেচে থাকার ভীতি প্রদর্শন করা।

আর আমরা সুন্নীরা আল্লাহর করুনায় সার্বাক্ষণিক ভাবেই এ কাজের আহবান করে আসছি এবং মুসলিম সমাজকে এর প্রতি উৎসাহ ও উদ্দীপনা দিচ্ছি। তাতে আমাদের ব্যক্তিগত কোন সার্থ নেই বরং আমরা তাঁকে আল্লাহ পাকের নৈকট্য লাভের এক পবিত্র ও বিশাল উসিলা হিসেবে মনে করি।

অতএব, জেনে শুনে যারা নবী পাকের ধর্মের কোন ফায়দা লাভ করতে চায়না তারা সমপূর্ণ ভাবেই মীলাদ মাহফিলের সকল কল্যান রহমত ও বরকত হতে বঞ্চিত থাকবে।

মীলাদ মাহফিল জায়েয হওয়ার দলীলসমুহ
____________________
মীলাদ মাহফিল জায়েয হওয়ার দলীলসমুহ

১। মীলাদনুষ্ঠান পালন করা হুযূরে পাক (ﷺ) এর প্রতি আনন্দ ও খুশী প্রকাশ করার এক উত্তম রীতি। এ আনন্দ ও খুশী জাহেরের দ্বরুন কুখ্যাত কাফের আবু লাহাব ও উপকৃত হয়েছে। যেমনঃ বোখারী শরীফে এ প্রসঙ্গে এসেছেঃ

انه خفف عن ابى لهب كل يوم الا ثنين سبب عتقه لثو يبة جاريته لما بشرته بولادة المصطفى صلى الله عليه وسلم-

অর্থাৎ কুখ্যাত আবু লাহাব হতে প্রতি সোমবার জাহান্নামের অগ্নি হালকা করা হয়, যেহেতু তার কৃতদাসী সুয়াইবিয়া কর্তৃক ভাতিজা মুহাম্মদ এর আগমনের সংবাদ জানানোর কারণে তাকে মুক্ত করে দিয়েছিলো। একথা কাব্যাকারে উপস্থাপন করেছেন হাফিজ শামছুদ্দিন মুহাম্মদ বিন নাছির দিমাশকী (رحمة الله)

اذا كان هذا كافرا جاء ذمه * بتبت يداه فى الجحيم مخلدا-

اتى انه فى يوم الاثنين دائما * يخفف عنه للسرور باحمدا-

فماالظن باالعبد الذى كان عمره * با حمد مسرورا ومات موحدا

অর্থাৎঃ আবু লাহাব কাফের হওয়ায় তার নিন্দায় সুরা লাহাব এমর্মে অবর্তীণ হয়েছিল যে, সে চির জাহান্নামী। কিন্তু তা সত্ত্বেও তার ব্যাপারে অত্যাশ্চর্য একটি ঘটনা আছে যে, প্রতি সোমবার তার থেকে প্রজ্জলিত অগ্নিশিখা হালকা করা হয়, কেবল আহমদী শুভাগমনের খুশী প্রকাশের দ্বরুন। তাহলে ঐ ব্যক্তির বেলায় কি অবস্থা হবে, যে সুদীর্ঘ জীবনে আহমদী শুভাগমনে খুশী যাহের করে একত্ববাদে মৃত্যু বরণ করে। রাসূলে পাক (ﷺ) নিজেই নিজের আগমনের দিনকে অত্যধিক সম্মান করতেন এবং এদিবসে তাঁর প্রতি খোদা প্রদত্ত সমুহ নেয়ামতের কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করতেন। যারা এভাবে শুকরিয়া জ্ঞাপন করবে তিনি তাদেরকে মর্যাদায় ভুষিত করবেন। নবীদের জন্মানুষ্ঠানের শুকরিয়াকে কোন সময় রোজা পালনের মাধ্যমেও করা হতো্ যেমনঃ হাদীস শরীফে হযরত কাতাদাহ (رضي الله عنه) হতে একখানা হাদীস এসেছে, তিনি বলেছেনঃ

ان رسول الله صلى الله عليه وسلم سئل سُئِلَ عَنْ صَوْمِ يَوْمِ الِاثْنَيْنِ قَالَ ذَاكَ يَوْمٌ وُلِدْتُ فِيهِ وَيَوْمٌ بُعِثْتُ أَوْ أُنْزِلَ عَلَيَّ فِيهِ

অর্থাৎঃ হুযূরে পাক (ﷺ)কে সোমবার দিনের রোজা সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বললেন: এ দিন আমি জন্মগ্রহণ করেছি এবং এ দিনে আমার উপর প্রথম কোরআন অবর্তীণ হয়। ইমাম মুসলিম (رضي الله عنه) এ হাদীসটি সহীহ মুসলিম শরীফের কিতাবুস সিয়াম অধ্যায়ে আলোচনা করেছেন।

আলোচ্য হাদীস হুযূরে পাকের মীলাদানুষ্ঠানের প্রতি ইঙ্গিত বহন করে থাকে। তবে মীলাদ অনুষ্ঠানের বিভিন্ন আকৃতি থাকলেও মূল অর্থ ও উদ্দেশ্য এক ও অভিন্ন তাতে রোজা দ্বারা পালন করা হোক বা খাদ্য খাওয়ানোর মাধ্যমে হোক, যিকরের আলোচনা মাহফিল হোক বা নবী (ﷺ) এর প্রতি দরুদ ও সালাম পাঠের মাধ্যমে হোক অথবা মাহফিলের আয়োজন করে তাঁর শামায়েল শরীফ শুনানোর মাধ্যমে হোক তাতে কোন বৈপরিত্ব নেই।

৩। হুযূরে পাকা (ﷺ) এর আগমনের খুশী যাহের করা পবিত্র কুরআনে পাকের নিন্মোক্ত বাণী দ্বারা নির্দেশিত।

মহান আল্লাহ পাকের বাণীঃ

قُلْ بِفَضْلِ اللّهِ وَبِرَحْمَتِهِ فَبِذَلِكَ فَلْيَفْرَحُواْ

অর্থাৎঃ বলুন হে রাসূল! আল্লাহর ফজল ও করুনা এ দুটো দ্বারা তারা যেন খুশী যাহের করে। অতএব, মহান আল্লাহ পাক আমাদরেকে তাঁর রহমত দ্বারা খুশী যাহের করার নির্দেশ প্রদান করেছেন। অথচ রাসূলুল্লাহ (ﷺ) ই হচ্ছেন সর্বোত্তম রহমত। যার প্রমাণ মিলে নিন্মোক্ত আয়াতে কারীমাতে وَمَا أَرْسَلْنَاكَ إِلَّا رَحْمَةً لِّلْعَالَمِينَ অর্থাৎঃ আপনাকে সমগ্র বিশ্ববাসীর জন্য রহমত স্বরূপ প্রেরন করেছি।

৪। হুযূরে পাক (ﷺ) অতীত যুগের সময়োপযোগী বড় বড় ধর্মীয় ঘটনাসমুহ বর্ণনা করতেন। এবং বলতেন যখন এ দিবস গুলো আসবে তখন তোমরা তার আলোচনা করবে, এর যথার্থ সম্মান করবে। রাসূলে পাক (ﷺ) এ স্মরনীয় মহিমান্বিত কার্যাবলী নিজেই পালন করেছেন। যেমন: হাদীস শরীফে এসেছে রাসূলুল্লাহ (ﷺ) যখন মদীনায় পৌছলেন, তখন সেখানকার ইয়াহুদী গোষ্টিকে দেখতে পেলেন যে, তারা আশুরার দিনে রোজা রাখছে। তিনি তাদেরকে এ বিষয়ে জিজ্ঞেস করলে তারা বলল, আমরা ঐ দিনে রোজা রাখার কারণ হলো, যেহেতেু মহান আল্লাহ পাক ঐ দিনে আমাদের নবী মুসা (عليه السلام) কে নীল দরিয়ার বিশাল তরঙ্গে ফেরাউনের আক্রমনএ থেকে রক্ষা করেছেন এবং ফেরাউন সহ তার বাহিনীকে সমুদ্রে ডুবিয়ে মারেন। তাই এ নেয়ামতের শুকরিয়া স্বরূপ আমরা ঐ দিনে রোজা রাখি। তা শ্রবনে রাসূলুল্লাহ (ﷺ) , বললেনঃ

 نَحْنُ أَوْلَى بِمُوسَى مِنْكُمْ:، وَأَمَرَ بِصِيَامِهِ

অর্থাৎ: রাসূলুল্লাহ (ﷺ) তাদেরেকে লক্ষ্য করে বললেন: আমরা তোমাদের চেয়ে মুসা (عليه السلام) এর প্রতি অধিক হক্বদার। এর পর রাসূলুল্লাহ (ﷺ) নিজেও রোজা রেখেছেন এবং সাহাবায়ে কেরামকেও রোজা রাখার নির্দেশ দেন।

৫। প্রচলিত ধারায় উদযাপিত মীলাদ মাহফিলের আয়োজন রাসূলে পাকের যুগে ছিলনা বিধায় সুত্র মতে তা বিদআতের আওতায় পড়ে যায় কিন্তু শরীয়াতের দলীলের আওতাভুক্ত হওয়ায় তাকে বিদআতে হাসানাহ বলা হয়েছে। আর কাওয়ায়িদে কুল্লীয়্যা তথা সাধারন নিয়মানুযায়ী তা বেদআত হয়েছে সামাজিক গঠনতন্ত্র অনুযায়ী তবে একক নিয়মানুযায়ী নয়, যা রাসূলে পাকের যুগে কোন একজন পালন করেছেন পরবর্তীতে তা ইজমায় পরিনত হয়ে গেছে।

৬। মূলত: মীলাদ শরীফ পাঠ করা হয় রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর প্রতি সালাত ও সালাম পাঠের নিমিত্তে, যা নিন্মোক্ত বাণী দ্বারা প্রমাণিত। আল্লাহ পাকের বাণীঃ

إِنَّ اللَّهَ وَمَلَائِكَتَهُ يُصَلُّونَ عَلَى النَّبِيِّ يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا صَلُّوا عَلَيْهِ وَسَلِّمُوا تَسْلِيماً .

অর্থাৎ: নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ পাক ও তাঁর ফেরেস্তাগন তাঁর নবীর উপর দুরুদ শরীফ পাঠ করে থাকেন। অতএব, হে মুমিনগণ! তোমরাও তাঁর উপর সালাত ও সালাম পাঠ করতে থাক।

একথা শতস্ফুর্ত যে, শরঈভাবে যা কিছু পাঠ করা হয় মূল তা শরীয়তে দলীল হিসেবে বিবেচিত হয়। অতএব, নবী করীম (ﷺ) এর প্রতি যতই দরুদ শরীফ পড়া হবে ততই নুবুওয়তী ফয়েজ দিলে আসতে থাকবে, মুহাম্মদী সাহায্য অনবরত আসতে থাকবে।

৭। মীলাদ শরীফ মূলত: হুযূরে পাকের জন্মালোচনাকে অন্তভূর্ক্ত করে এমনকি তাঁর মোজেযা, সীরাত এবং তাঁর পরিচয়কে অন্তভূর্ক্ত করে। অর্থাৎ: নবীজীর জন্মালোচনা, মোজেযা, সীরাত ও জীবনী আলোচনার সমন্বয়ে গঠিত মীলাদ।

৮। আমাদের জন্য উচিত রাসূলে পাকের পক্ষ থেকে প্রতিদান পাওয়ার আশায় তাঁর গুনাবলী পরিপূর্ণভাবে বর্ণনা করা, তাঁর চরিত্র বর্ণনা করা। যেহেতু কবি সাহিত্যিকরা তাদেঁর কবিতা আবৃত্তির মাধ্যমে রাসূলে পাকের প্রশংসা জ্ঞাপন করে তাঁর নৈকট্যের ধারপ্রান্তে পৌছিয়েছেন পরে রাসূলুল্লাহ (ﷺ) তাদের আমলের প্রতি সন্তুষ্ট হয়েছেন এবং তাদেরকে উত্তম প্রতিদান দান করেছেন। সুতরাং ব্যক্তি যদি প্রশংসা সুচক কবিতা আবৃত্তি করে তাঁর সন্তুষ্টি লাভ করতে পারে তবে যারা তাঁর পবিত্র শামায়েলসমুহ সংগ্রহ করে তার প্রতি রাসূলুল্লাহ (ﷺ) কেন সন্তুষ্ট হবেন না? অতএব, বান্দাহ রাসূলে পাকের প্রতি সীমাতিরিক্ত সন্তুষ্টি ও ভালবাসা লাভের কারণে তাঁর নৈকট্য লাভে ধন্য হয়ে থাকে।

৯। রাসূলে পাক (ﷺ) এর মু’জিযা ও শামায়েল সমুহের পরিচয় জানা সীমাতিরিক্ত ভালবাসা ও পরিপর্ূণ ঈমানদারের লক্ষন। সাধারন মানব-মানবা সৌন্দর্যের প্রেমে আকর্ষীত হোক চরিত্রে বা গঠনে অথবা ইলমে আমলে, অবস্থায় অথবা আকীদাগত দিক থেকে কিন্তু হুযূরে পাক (ﷺ) এর চরিত্র মাধুর্য্যতা, সৌন্দর্যতা আকর্ষনীয়তা চেয়ে কোন বিষয় অত্যধিক সৌন্দর্যমন্ডিত ও সুরভীত নয়। অতিরিক্ত ভালবাসা ও পরিপূর্ণ ঈমান দুটি শরীয়ত কর্তৃক আদিষ্ট বিষয় বিধায় এ দুটিই নৈকট্য লাভের মূল উৎস।

১০. রাসূলে পাকের তা’যীম তাকরীম করা শরীয়ত কর্তৃক প্রবর্তীত। বিশেষত: তাঁর আগমনের দিনে আনন্দ উল্লাস-খুশী যাহের করা, ভূজ অনুষ্ঠান করা, যিকরের মাহফিল করা, দরীদ্রদের খাদ্যদান করা হচ্ছে সর্বোত্তম তা’যীম, তাকরীম, আনন্দ, উল্লাস ও খুশী যাহের এবং আল্লাহর নেয়ামতের শুকরিয়া আদায় করার নামান্তর।

১১। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) জুমআর দিনের ফজিলত ও বৈশিষ্ট বণর্না করত: বললেন এ দিনে হযরত আদম (عليه السلام) জন্ম গ্রহণ করেন অর্থাৎ: এ দিনে তিনি অস্তিত্ব জগতে ফিরে আসেন বা তাঁর দেহ মোবারক তৈরী করা হয়। যে মোবারক সময়ে জন্মগ্রহণ করেছেন তা দ্বারা সাব্যস্থ হলো যে, নবীগনের আগমনের দিনই হচ্ছে মীলাদ অনুষ্ঠানের দিন। যদি তাই হয়, তবে যে দিন নবীউল আম্বিয়া ওয়াল মুরসালীন, মুহাম্মদ (ﷺ) জন্ম গ্রহণ করেছেন, সে দিনকে কেন আমরা ঈদ হিসেবে পালন করবো না। তা মূলত: শরীয়ত সম্মত ও যুক্তি সঙ্গত।

১২। মীলাদ শরীফ এমন একটি কাজ যাকে উলামায়ে কেরাম ও সকল মুসলমানগন উত্তম বলে রায় দিয়েছেন, যা শরীয়তের পঞ্চম দলীল মুস্তাহসান হিসেবে বিবেচিত। বিশ্বের প্রত্যন্ত অঞ্চলের মুসলিম জনতা তা পালন করে আসছে এবং প্রতিটি দেশে তার আমল প্রবাহমান হয়ে আসছে।

আর উক্ত প্রমাণ হযরত ইবনে মাসউদ (رضي الله عنه) কতৃর্ক নিন্মে বর্ণিত হাদীসে মাওকুফ সুত্রে বর্ণিত হওয়ায় তা শরীয়ত সিদ্ধ।

রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর বাণীঃ

فَمَا رَأوهُ الْمُؤْمِنُونَ حَسَنًا فَهُوَ عِنْدَ اللهِ حَسَنٌ ، وَمَا رَآهُ قَبِيحًا فَهُوَ عِنْدَ اللهِ قَبِيحٌ.

অর্থ: মুসলমান উলামায়ে কেরামগন যেটাকে উত্তম বলে মনে করেন, তা আল্লাহর নিকট উত্তম বলে বিবেচিত। অপর দিকে তারা সেটাকে নিকৃষ্ট বলে রায় দিয়েছেন, তা আল্লাহর কাছেও নিকৃষ্ট বলে বিবেচিত। ইমাম আহমদ বিন হাজার (رحمة الله) তা বর্ণনা করেছেন।

১৩। মীলাদ মাহফিলে হুযূরে পাকের যিকরের বৈঠক, সাদক্বা খায়রাত, প্রশংসা ও তা’জীম কিয়াম প্রদর্শন করা হয়ে থাকে বিধায় তা সু্ন্নাত। আর উক্ত কার্যাদী শরীয়ত কর্তৃক স্বীকৃত ও প্রশংসনীয়। এবিষয়ে বহু বিশুদ্ধ হাদীসসমুহ বর্ণিত আছে এবং উক্ত আমলের প্রতি উদ্ভুদ্ধ হওয়ার ও উৎসাহ দিয়েছে।

১৪। মহান আল্লাহ পাক এরশাদ ফরমানঃ

وَكُـلاًّ نَّقُصُّ عَلَيْكَ مِنْ أَنبَاء الرُّسُلِ مَا نُثَبِّتُ بِهِ فُؤَادَكَ

অর্থাৎ: রাসূলগণের সংবাদ মধ্যকার কিছু কাহিনী আমি আপনার নিকট বর্ণনা করেছি, যাতে করে এর দ্বারা আমি আপনার অন্তকরণকে সুদৃঢ় করতে পারি। এ আয়াত দ্বারা প্রতীয়মান হয়ে গেলো যে, রাসূলগনের কিচ্ছা কাহিনী বর্ণনা করার হেকমত হচ্ছে মূলত: হুযূরে পাক (ﷺ) এর অন্তকরণকে সুদৃঢ় রাখা। যদি তাই হয়, তবে আমরা ও আজ নবীগণের সংবাদ জানার মাধ্যমে আমাদের হৃদয় সুদৃঢ় রাখার প্রত্যাশী। আর এক্ষেত্রে সকল নবীগণের তুলনায় আমাদের নবী (ﷺ) এর আলোচনা জিন্দা রাখার মাধ্যমে আমাদের ক্বলব সুদৃঢ় রাখবো। তা ই যুক্তি নির্ভর কথা।

১৫। সলফে সালেহীনগণ যে কাজ করেননি বা যেটি ইসলামের প্রাথমিক যুগেও ছিলনা সেটা নিকৃষ্ট ও নিন্দনীয় বেদআত বটে। এ ধরনের কাজ করা সম্পুর্ণ হারাম বরং তাকে অস্বীকৃতি জানানোও অত্যাবশ্যক। আর যেগুলো শরঈ দলীলের উপর গঠিত হয়েছে তা মেনে নেয়া ওয়াজিব। যেমনঃ কোন কোনটি ওয়াজিব। কোনটি হারাম, যা মাকরূহের উপর গঠিত তা মাকরূহ, যা মুবাহ তা মুবাহ, অথবা কোনটি মুস্তাহাব হলে মুস্তাহাব হিসেবে পরিগণিত হবে।

উলামায়ে কেরামগন বেদআতকে মোট পাঁচটি ভাগে বিভক্ত করেছেন
____________________
এরপর উলামায়ে কেরামগন বেদআতকে মোট পাঁচটি ভাগে বিভক্ত করেছেন। যেগুলো হচ্ছে:

১। ওয়াজিব বেদআতঃ-যেমন : কোরআন হাদীস ও আরবী ভাষা জানার নিমিত্বে নাহু-ছরফ শিক্ষা করা বাতীল পন্থীদের দাঁতভাঙ্গা জাওয়াব দেয়া।

২। মানদ্বুব বেদআতঃ- যেমন: শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা, গগন চুম্বী মিম্বারের উপর আযান দেয়া, উত্তম কাজ যা প্রথম যুগে সুচীত হয়নি।

৩। মাকরূহ বেদআত:- যেমন: মসজিদসমুহ সীমাতিরিক্ত কারুকার্য করা, কিতাব বাধাই করা। ইত্যাদি।

৪। মুুবাহ বেদআত:- খাওয়া, পান করার প্রচুর্যতা প্রশান্ততা ও প্রসস্থ জায়গা তৈরী করা।

৫। হারাম বেদআত- যেমন: যা নতুন আবিস্কৃত কিন্তু কুরআন হাদীসের সম্পূর্ণ বিপরীত এবং সাধারণভাবে শরঈ দলীল তাকে গ্রাহ্য করেনা যেহেতু তা শরয়ী আওতায় পড়েনি।

১৬। যে বিষয় ইসলামের প্রথম যুগে সমাজবদ্ধভাবে বিন্যস্ত ছিলনা কিন্তু এককভাবে তার অস্তিত্ব বিদ্যমান ছিল তা ও শরীয়তে গ্রাহ্য। কেননা শরীয়তের আওতায় যা প্রতিষ্টিত হয়ে যায়, তা এককভাবে হলেও মূলত: তা শরীয়ত কর্তৃক প্রবর্তীত। তা দিবালোকের ন্যায় স্পষ্ট।

১। প্রত্যেক বেদআত আবার হারাম নয়। কেননা যদি সকল বেদআত হারাম হয়ে যায়, তবে হযরত আবু বকর, ওমর ও যায়েদ (رحمة الله) গনের আমলে কুরআন মযীদ সংরক্ষণ করা হারাম হয়ে যেতো, যখন সাহাবায়ে কেরামগনের মধ্যকার কিছু সংখ্যক হাফিজে কুরআন ও কারীগনের ইন্তেকালে কুরআনের অস্তিত্ব প্রায় বিলীন হওয়ার আশংকায় তা গ্রন্থাকারে লিপিবদ্ধ করে রাখা হয়েছিল। এবং হযরত ওমর (رضي الله عنه) এর আমলে তিনি একই ইমামের পিছনে তারাবীহের ২০ রাকাত নিন্মোক্ত বাণী نعمت البدعة هذه (কতইনা উত্তম বেদআত) তা দ্বারা সুন্নাত সাব্যস্থ করেছিলেন তাও হারাম হয়ে যাবে। মানুষের সামগ্রীক ফায়দা সম্বলিত সমস্ত গ্রন্থ ভান্ডার সমুহ হারাম হয়ে যাবে, আর আমাদের উপর আবশ্যক হয়ে যেতো কাফেরদের সাথে তীর বর্শা দ্বারা যুদ্ধ করা আবার তারাও আমাদেরকে গুলি, কামান তোপ, যুদ্ধ ট্যাংক উড়োজাহাজ, ডুবোজাহাজ, সাবমেরিন ও নৌবহর দ্বারা হামলা করতো। মিনারার উপর আযান দেয়া হারাম হয়ে যাবে। এমনকি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, চিকিৎসা কেন্দ্র (ক্লিনিক) ত্রানসামগ্রী এতীম খানা লঙ্গর খানা জেলখান্ এগুলো সবই হারাম হয়ে যেতো।

এতএব, যে সমস্ত উলামায়ে কেরামগন كل بدعت ضلالة (প্রত্যেক বেদআত গোমরাহী) দ্বারা বেদআত সাইয়্যিয়া উদ্দেশ্য নিয়েছেন এবং বলেছেন যে, সাহাবা ও তাবেঈনগনের আমলে যে সকল বিষয় আবিস্কৃত হয়েছে এবং তা রাসূলে পাকের আমলে বিদ্যমান ছিলনা বিধায় তা বেদআত। এর প্রতি উত্তরে আমরা বলবো আমরাতো বর্তমান যুগে এমন অনেক মাসআলাসমুহ উদগাঠন করেছি যা পূর্ববর্তী আমলে ছিলনা। যেমন: তারাবীহের নামাজের পর আমাদের দেশে শেষ রাত্রে তাহাজ্জুদের নামাজ জামাত বদ্ধ হয়ে আদায় করি উক্ত রাত্রে সমস্ত কুরআন খতম করা হয়, খতমে কুরআনের দোয়া দীর্ঘভাবে পাঠ করা হয়, হারামাইন শরীফাইনের ইমামদ্বয় কর্তৃক রামদ্বান শরীফের ২৭ তারিখ তথা লাইলাতুল কদরের রজনীতে খুতবা পরিবেশন করা, এবং তাহাজ্জুদের নামজের জন্য একজন আহবানকারী কর্তৃক এ বলে আহবান করা صلاة الليل اثابكم الله ইত্যাদি। এগুলোর কোনটিই হুযূরে পাকের আমলে প্রচলিত ছিলনা এমনকি পরবর্তী সাহাবী যুগেও ছিলনা। তাহলে আমাদের ঐ ধারাবাহীক আমল বেদআত হয়ে যাবে কি? এবার বলতে হবে যে, এগুলো বেদআত কিন্তু বেদআতে হাসানাহ বা উত্তম বেদআত।

১৮। ইমাম শাফেয়ী (رحمة الله) বলেন এমন কতগুলো বিষয় উদ্ভাবন হল, যা শরীয়তে মোটেই গ্রাহ্য নয় বা কুরআন, হাদীস, ইজমা, কিয়াসের সম্পূর্ণ বিপরীত, তা হবে বেদআতে দ্বালালাহ বা ভ্রান্ত বেদআত। আর যেগুলো সত্য ও কল্যানের উপর ভিত্তিকরে প্রবর্তীত হয় অথচ এগুলো শরীয়তের চারটি মূলনীতির বিরোধী নয় তবে তা সন্দেহাতীতভাবে শরীয়ত সিদ্ধ ও প্রশংসীত। ইমাম ইজদুদ্দীন বিন আব্দুস সালাম ও ইমাম নব্বীদ্বয় ও তাকে সর্মথন করেছেন এবং এ আমল সমূহ প্রবাহমান রেখেছেন। অনূরূপ ইমাম ইবনুল আছীর স্বীয় গ্রন্থে বিদআত অধ্যায়ে বেদআতে হাসানা বলে মন্ত্যব্য করেছেন।

(১৯) শরীয়ত বিরোধী উদ্ভাবনা ছাড়া যেগুলো শরীয়তের আওতায় পড়ে এবং জনগন তাতে অস্বীকার করেনা, প্রকৃত পক্ষে তা ধর্মের অন্তর্ভুক্ত।

কোন কোন গুড়াপন্থিরা বলে থাকে যে, পূর্ববর্তী আমলে যা ছিলনা বা যে কাজের সর্মতন ছিলনা থাকে কোন অবস্থাতেই দলীল হতে পারেনা বরং তা শরীয়তে তা অগ্রাহ্য ও তাদের এহেন যুুক্তি সম্পুর্ণ অযৌক্তিক ও অবান্তর বৈ কিছুই নয়। কেননা হুয়ূর পাক (ﷺ) প্রকৃত বেদআত উদ্গাঠনকারীকে সুন্নাত ও এর প্রচলনকারীকে প্রতিদানের অঙ্গীকার ব্যক্ত করেছেন। যা নিন্মোক্ত বাণী দ্বারা প্রণিধান যোগ্য। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এরশাদ ফরমান-

مَنْ سَنَّ فِي الْإِسْلَامِ سُنَّةً حَسَنَةً فَعُمِلَ بِهَا بَعْدَهُ كُتِبَ لَهُ مِثْلُ أَجْرِ مَنْ عَمِلَ بِهَا وَلَا يَنْقُصُ مِنْ أُجُورِهِمْ شَيْءٌ .

অথার্ৎ- যে ব্যক্তি ইসলামে একটি উত্তম রীতি প্রর্বতন করতঃ এর প্রতি আমল করবে তার আমল নামায় যারা এর প্রতি আমল করবে তাদের সমপরিমান প্রতিদান দান করা হবে। অথচ আমল কারীদের আমল নামা হতে সরিষা পরিমান ছাওয়াব হ্রাস করা হবেনা। ইমাম ইযযুদ্দীন বিন আব্দুস সালাম ও ইমাম নববীদ্বয় ও তাকে সমর্থন করেছেন এবং এ আমল গুলো প্রবাহমান রেখেছেন। অনুৃরুপভাবে ইমাম ইবনুল আছির স্বীয় গ্রন্থের বেদয়াত অধ্যায়ে বেদআতে হাসানা বলে মন্তব্য করেছেন।

২০। মীলাদ মাহফিল হচ্ছে মুহাম্মদ মুস্তফা (ﷺ) এর সকল আলোচনা জীবিত রাখার এক উত্তম মাধ্যম। আর আমাদের দৃষ্টিতে ইসলামে তা প্রবর্তীত ও উত্তম কাজ। কেননা তুমি লক্ষ্য কর হজ্জের বিধি বিধানের দিকে। এগুলো মুসলমানরা বারং বার পালন করে আসছে তার কারণ কি? মূলত: এর দ্বারা উদ্দেশ্য হচ্ছে সম্মানীয় ও প্রশংসনীয় ঘটনা আল্লাহর নিদর্শন গুলোর স্মৃতি চারণ করা। যেমন: সাফা মারওয়া পাহাড়ে দৌড়া দৌড়ী করা, পাথর নিক্ষেপ করা, মিনাপ্রান্তরে জবেহ করা ইত্যাদি কাজসমুহ অতীত ঘটনা ও নিদর্শনসমুহ বিধায় বিশ্বের প্রত্যন্ত অঞ্চলের মুসলমানগন বাস্তবে হজ্ব পালনের মাধ্যমে এ নিদর্শন গুলোর স্মৃতি চারন করত: জিন্দা রাখে।

২১। মীলাদ মাহফিল শরীয়ত সম্মত হওয়ার ব্যাপারে আমরা পূর্বে যে সমস্ত বৈধ যুক্তিগুলো উপস্থাপন করেছি তা কেবল মাত্র মীলাদে মুস্তফা (ﷺ) এর ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। তবে যে সমস্ত মীলাদ মাহফিলে এমন র্গহীত নিকৃষ্ট ও নিন্দনীয় কাজ হয় যে গুলোর প্রতি ঘৃণা করা আবশ্যক যেমন: নারী পুরুষের সংমিশ্রন, হারাম কাজে মগ্ন হওয়া, সীমাতিরিক্ত অপচয় করা যেগুলোর প্রতি রাসূলুল্লাহ (ﷺ) সন্তুষ্ট নন এগুলো নি:সন্দেহে হারামও নিষিদ্ধ হওয়ার ব্যাপারে কোন সন্দেহ নেই।

তবে একটি বিষয়ের জওয়াব স্পষ্টভাবে দেয়া আবশ্যক যে, যদি কেউ পুবোর্ক্ত নিষিদ্ধ ও নিকৃষ্ট কাজ মীলাদ মাহফিলে সংমিশ্রন করে, তবে তার দ্বারা স্থায়ীভাবে হারাম সাব্যস্ত হয়না। কেননা কোন বৈধ বিষয়ের সাথে অবৈধ বিষয় মিশ্রন হলে অস্থায়ীভাবে তা হারাম হতে পারে কিন্তু মুলকে হারাম করেনা।

অতএব, তাতে প্রতীয়মান হলো যে, মীলাদ শরীফে কোন অশ্লীল ও শরীয়ত গর্হীত কাজ হলে তখনই তা হারাম হবে অন্যতায় শরীয়ত সম্মত কাজের মাধ্যমে পালিত হলে তা সর্ব সম্মতি ক্রমে বৈধ ও শরীয়ত সম্মত কাজ বলে বিবেচিত হবে।

লিখকঃ

মোহাম্মদ বিন আলাভী

✧ ভুমিকা
____________________
✧ ভুমিকা

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম

সমস্ত প্রশংসা জ্ঞাপন করি সে চিরস্থায়ী অনন্ত অবিনশ্বর আল্লাহ পাকের যিনি আহমদী নূরের আলো প্রস্পুটিত করেছেন যিনি মুহাম্মদী আলো উদ্তি করেছেন, যিনি তাঁকে এ অস্তিত্বজগতে মাহমুদ (সুপ্রশংসিত) বলে গুনাম্বিত করে অগনীত নেয়ামত রাজী ও বেশুমার খ্যাতিসম্পন্ন মর্যাদাসমূহ দান করে সমগ্র আরব ও আজমে তথা ৮০ হাজার আলমের ৫০ হাজার সৃষ্টি জীবের পরিপূর্ণ নিয়ামক স্বরূপ প্রেরন করেছেন। পাঠিয়েছেন সৃষ্টিকুলের হেদায়েতের চেরাগ, হাদিয়্যা, রহমত, ক্ষমাশীল হিসাবে। যেহেতু তাঁর এক পবিত্র উপাধি হচ্ছে الودود الرحيم (প্রেমময় অতিশয় দয়াদ্রশীল)। আল্লাহ পাক এ নব জাতক শিশু মুহাম্মদ (ﷺ)কে রবিউল আওয়াল মাসের এক উত্তম সময়ে পাঠিয়ে সুভাসিত ও সৌরভীত করেছেন। তিনি তাঁকে মর্যাদাশীল, সম্মানীত করেছেন, সর্বোচ্চ এহসান করেছেন, তাঁকে সবার উর্ধ্বে নির্বাচিত করেছেন। তাঁর মহিমান্বিত মর্যাদা সম্পর্কে বিচক্ষণবাদীরা কতইনা উত্তম প্রবন্ধ লিখেছেন

لهذا الشهر فى الاسلام فضل * ومنقبة تفوق على الشهور

 فمولود به واسم ومعنى- * وايات يشرن لدى الظهور

ربيع فى ربيع فى ربيع * ونور فوق نور فوق نور-

এ মাসের রয়েছে অনেক মর্যাদা ও গুরুত্ব।

সকল মাসের উপরে তার শ্রেষ্টত্ব

রবিউলে উদিত রবি যিনি

সকল নূরের উর্ধ্ব নূরী তিনি।

মহান আল্লাহ পাক তাঁর কুরআনে আযীম ও ফুরকানে হাকীমে তাঁর হাবিবে পাকের শানে এরশাদ ফরমান:

لَقَدْ جَاءكُمْ رَسُولٌ مِّنْ أَنفُسِكُمْ عَزِيزٌ عَلَيْهِ مَا عَنِتُّمْ حَرِيصٌ عَلَيْكُم بِالْمُؤْمِنِينَ رَؤُوفٌ رَّحِيمٌ.

অর্থাৎ: তোমাদের নিকট তোমাদের মধ্য হতেই একজন রাসূল এসেছেন, তোমাদের বিপন্ন কালে তিনি ব্যথিত হন। তিনি তোমাদের জন্য মংগল কামী। সকল মোমিনদের প্রতি সীমাহীন দয়াদ্রশীল এবং অতিশয় দয়ালু। রাসূলে পাকের সমস্ত নূরের ফয়েজ লাভের জন্য আল্লাহ পাক এ সংবাদ গুলো প্রকাশ করিয়েছেন। বর্ণিত আয়াত দ্বারা এদিকে ইঙ্গিত করা হয়েছে যে, উম্মতের নিকট তাঁর রাসূল (ﷺ) এর আগমন মূলত: তাঁর উম্মতদের প্রতি লক্ষ্য রাখা, তাদেরকে দর্শন দিয়ে অনুগ্রহ করা এবং তাদের ব্যথিত হৃদয়ে শান্তি স্থাপন করা।

আয়াতে বর্ণিত كم শব্দদ্বারা যদিও মুমিন ও কাফেরের অন্তর্ভূক্তি বুঝায় তবুও এখানে মূলত: তিনি যে কেবল মুত্তাকিদের জন্য হেদায়েতকারী তাতে সন্দেহ নেই।। যেমন: মনে করুন নীল দরিয়ার পানি প্রেমীকদের জন্য পানি আবার গোমটা পরিহিতদের জন্য রক্ত।

আয়াতে বর্ণিত মর্মদ্বারা আরও ইঙ্গিত দেয়া হয়েছে যে, রাসূল (ﷺ) এর আগমন তোমাদের নিকট প্রতিশ্রোতিবদ্ধ তোমাদের আশা আকাংখার মূল উদ্দেশ্য। তার প্রমাণ মিলে নিন্মোক্ত আয়াতে কারীমাতে:

فَإِمَّا يَأْتِيَنَّكُم مِّنِّي هُدًى فَمَن تَبِعَ هُدَايَ فَلاَ خَوْفٌ عَلَيْهِمْ وَلاَ هُمْ يَحْزَنُونَ . وَالَّذِينَ كَفَرواْ وَكَذَّبُواْ بِآيَاتِنَا أُولَـئِكَ أَصْحَابُ النَّارِ هُمْ فِيهَا خَالِدُونَ.

অর্থাৎ: তোমাদের নিকট আমার পক্ষ থেকে হেদায়েতকারী আসার পর যদি কেউ সে হেদায়েতের অনুস্মরন করে, তবে তাদের জন্য কোন দু:খও ভয় থাকবেনা। অন্যদিকে যারা কুফরী করবে (সত্যকে প্রত্যাখ্যান করবে) আমাদের আয়াতসমুহকে মিথ্যায় প্রতিপন্ন করবে, কেবল তারাই হবে জাহান্নামের অধিবাসী, আর সেখানে তারা চিরস্থায়ী অবস্থান করবে।

উপরোক্ত আয়াতে বর্ণিত فاما يأتينكم বাক্যের فإما হরফে শর্ত এবং তার সাথে ما হরফ সংযুক্ত হয়েছে, যা দৃঢ়তা সূচক অর্থে ব্যবহৃত। ইহা দ্বারা একথা প্রতীয়মান হলো যে, তাঁর গ্রহণীয়তা বরণীয়ে মহামান্য একটি ব্যাপক নিদর্শন ও পূর্ণ ঈঙ্গিত বহন করে যে, এ নিখীল ধরনীর বুকে হুযূরে পাক (ﷺ) এর মহাগমন মূলত: আলমে আরওয়াহ জগতে সমস্থ আম্বিয়া (عليه السلام) স্থান থেকে যে নবুওয়তী স্বীকৃতি নেয়া হয়েছিল, তার বাস্তবায়ন সহ বান্দাহগণের প্রতি মহান আল্লাহ পাকের সে কৃত প্রতিজ্ঞা বাস্তবায়ন, অনুগ্রহ ও সম্মান দান করা।

এটা থেকে আরও প্রতীয়মান হলো যে, যদি এ ধরাধামে তাঁর মহাগমন না ঘটতো, তবে কেউই তার মর্যাদার অস্তিত্ব ফিরে পেতোনা। যেহেতু তিনি হচ্ছেন নৈকট্য লাভের দিক বিবেচনায় সমুচ্ছ, সম্মান লাভের দিক বিবেচনায় আল্লাহর নিকট প্রথম স্তরে সমাসীন। কেননা তিনি এমনই এক মর্যাদাশীল নবী ও রাসূল, যিনি সৃষ্টি কুলের প্রতি ধাবমান ও মনোযোগী হলেও প্রকৃত প্রস্তাবে তাঁর মাওলায়ে কারীমের সান্নিধ্য থেকে একমুহুর্তের জন্য দুরে নন। ইহাই হচ্ছে রাসূলগনের সমুচ্ছ মর্যাদার নিদর্শন।

আর এ বিষয়টি কেবল রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর বেলায় কেন তাঁর উম্মতের বিশেষ ব্যক্তি বর্গের বেলায় ও তা প্রযোজ্য। যেমনঃ এ প্রসঙ্গে আল্লাহ পাকের বিশেষ বান্দাহ সুলতান মাহমুদ (رحمة الله) এর বিশেষ খাদেম হযরত আয়াম (رضي الله عنه) এর ঘটনা উল্লেখ যোগ্য। তিনি কখনও উচ্ছ পদের অভিলাষী ছিলেননা বরং এক্ষেত্রে সর্বদাই আল্লাহর সান্নিধ্যের পদবী প্রত্যাশা করতেন। একবার তাঁর মুনীব ও সুলতানা তাঁর সম্মোখে বড় বড় গুরুত্বপূর্ণ পদ দানের অভিপ্রায় ব্যক্ত করলে সাথে সাথে তিনি তা প্রত্যাখ্যান করেন। এবং তাঁর মাওলায়ে কারীমের সান্নিধ্যে সর্বোচ্ছ উপস্থিতির মাক্কাম হাছিলের পথে অগ্রসর হয়ে যান। কেননা তাঁর একথা আগোচর ছিলনা যে, তাঁর নবীয়ে কারীম পাক (ﷺ) কখনো নিজের ইচ্ছা অভিপ্রায়কে মহান আল্লাহ পাকের ইচ্ছা অভিপ্রায়ের উর্ধ্বে স্থান দিয়েছেন।

একথা শত র্স্ফুত যে, হুযূরে পাক (ﷺ) নিজের সকল ইচ্ছা অভিলাষকে আল্লাহর ইচ্ছা অভিলাষের ভেতর উৎসর্গ করে দেন। লক্ষ লক্ষ জীবন এ আক্ষেপে বিরান হয়ে গেছে। তবুও তাঁর মাশুক (আল্লাহ ও তদীয় রাসলের) এর যিয়ারত নছীব হয়নি। হঁ্যা অধিক মাত্রায় ছুন্নতের পরিপূর্ণ তাবেদারী এবং মহববতের আবেগেই উহা সম্ভব হয়ে থাকে। তবে এসব গুনে গুনান্নিত হলেই যে যিয়ারত নছীব হয়ে যাবে ইহা কোন জরুরী নয়। কারণ কারও না দেখার ভেতরেও বিশাল হেকমত থাকতে পারে। কাজেই দুঃখ করার কোন কারণ নেই। প্রকৃত প্রেমিকের আসল উদ্দেশ্য হলো মাশুকের সন্তুষ্টি, তাতে মিলন হোক বা না হোক তাতে আফছোছ করার মত কিছুই নেই।

যেমনঃ এ প্রসঙ্গে জনৈক কবি বলেনঃ-

اربد وصاله ويد يد هجرى * فاترك ما اريدلما يريد

অর্থাৎ- আমি মাহবুবের মিলন চাই অথচ মাহবুব চায় আমার বিচ্ছেদ। কাজেই মাহবুবের সন্তুষ্টি বিধানের লক্ষ্যে আমার সকল ইচ্ছা অভিলাষ পরিত্যাগ করলাম।

ইহাই হচ্ছে আল্লাহর মারেফত তত্ত্ববীদ আহলে কামিলগনের সমুচ্ছ মর্যাদার আসন, যঁারা তাজাল্লিয়াতে জামাল ও জালালের মধ্যে মিশ্রিত হয়ে ফানা ফির রাসূল, ফানা ফিল্লাহ ও বাক্কা বিল্লাহতে আত্মা বিলীন করে দিয়েছে। .., প্রার্থীব কোন মোহ তাদেঁরকে হাতছানী দিয়ে ডাকার দুঃসাহস দেখাতে পারেনা। এমনই একজন মুখলিছ বান্দাহ শায়খ আবু ইয়াযীদ (رحمة الله) তন্মধ্যে অন্যতম।

যখন তাকেঁ বলা হলো ওহে আবু ইয়াযীদ! বলতো তুমি কি চাও? তিনি বললেনঃ-

اريد أن لااريد

অর্থাৎ- কিছু না চাওয়াই আমার ইচ্ছা অভিপ্রায়।

অতীতে বহু মারেফত তত্ত্ব অনুসন্ধানকারী সৌভাগ্যশালী ব্যক্তিবর্গগন বহু উক্তি করে গেছেন। তাছাড়া বহু নেতৃস্থানীয় উচ্ছ স্থরের সুফী সাধকগনের ইচ্ছা অভিলাষ ছিল তাই। যেহেতু কেবল আল্লাহর সন্তুষ্টি ব্যতীত অন্য কোন ইচ্ছা- অভিলাস কামনা করা তাদের মুখ্য উদ্দেশ্য ছিলনা। এটাই ছিল খোদা তত্ত্বজ্ঞান গনের কেটি উচ্ছ স্তর।

যারা মাক্কামে ফানা- ও বাক্কার স্তরে উন্নীত যারা নিজ সত্ত্বাকে আল্লাহর মত্ত্বার মধ্যে একীভূত করে দিয়েছে এটা মূলতঃ তাদের নিদর্শন।

আয়াতে বর্ণিত رسول শব্দের لام (লাম) হরফে তানভীন ব্যবহৃত হয়েছে, যেন মনে হয় আয়াতের ভাবার্থ এভাবেই হয়েছে।

لقد جاءكم ايها الكرام رسول كريم من رب كريم بكتاب كريم ويه دعاء الى دوح وريحان وحينة نعيم- وزيادة بشارة الى لقاء لريم وانذار عن الحميم والجيم- كما قال عزوجل نيئى عبدى انى انا الفغود الرحيم وأن عذابى هو العذاب الأليم-

অর্থাৎ- ওহে সম্মানীত ব্যক্তিবর্গ! তোমাদের নিকট অবশ্যই রবেব কারীমের পক্ষ থেকে কিতাবে কারীম তথা সম্মানজনক গ্রন্থ আল কোরআন নিয়ে একজন রাসূলে কারীম (সম্মানজনক রাসূল ) শুভাগমন করেছেন। ইহাতে জান্নাতে নাঈম, আরাম আয়েশ ও জান্নাতী ফলফুলের সৃঘ্রানের প্রতি আহবান করা হয়েছে। এবং লিক্বায়ে কারীম বা রোজ কেয়ামতে মহান মাওলায়ে কারীমের সাথে সম্মানজনক সাক্ষাতের অতিরিক্ত শুভ সংবাদ দানের ইঙ্গিত দেয়া হয়েছে। পাশ্বা পাশ্বি হামীম ও জাহীম তথা প্রচন্ড গরম পানি বিশেষ ও উত্তপ্ত নরক আগ্নি নামক দুটি জাহান্নামের অনিষ্ট থেকে রক্ষা পাওয়ার ভীতি প্রদর্শন করা হয়েছে।

এদিকে ইঙ্গিত করেই মহান আল্লাহ পাক এরশাদ ফরমান:

نبئ عبادى افى انا الغفورا الرحيم وأن غدابى هد العذاب الأليم

অর্থ্যাৎ- আমার বান্দাহগনকে এ সুসংবাদ প্রদান করা হয়েছে যে, তারা অনুতপ্ত হয়ে আমার কাছে ক্ষমা প্রার্থী হলে তখনই আমি তার জন্য ক্ষমাশীল ও অতিদয়াশীল। অন্যতায় যারা অহংকারী, তাদের প্রতি আমার যন্ত্রনাদায়ক শাস্তির অশুভ পরিণাম রয়েছে।

রহমতে আলম রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর প্রতি সকল তাযীম, তাকরীম প্রদর্শনের অন্যতম একটি হচ্ছে যে, রুহ জগতে মিছালী ছুরতে সকল নবী ও রাসূল (عليه السلام) গণ থেকে তাঁর নবুওয়ত ও রেসালাতের স্বীকৃতি এভাবে নেয়া হয়েছে যে, আযমত জালালতের সাথে নবুওয়ত ও রেসালাতের গুরুদায়িত্ব নিয়ে আসবেন তাঁরা যদি তাঁর মহাগমনের সময় দান অথবা নাই পান নির্দিধায় তাঁরা যেন রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর প্রতি ঈমান গ্রহন করে, তাকে সাহায্য করে সবোর্পরি তাঁর সকল আযমত, কার্যালত, জামালত, জালালিয়্যাত ও বুযুর্গীর প্রশাংসা জ্ঞাপন করতে হবে এবং স্বীয় সম্প্রদায়কে এগুলোর বিস্তারীত বর্ণনা করতর এর প্রতি আস্থা বিশ্বাস ও বাস্তবায়ন করার প্রতি গুরুত্বারোপ করতে হবে। সকল মুফাসসিরীনে কেরামগন এর স্বপক্ষে মহান আল্লাহর নিন্মোক্ত বানী দ্বারাই এর সত্যতা প্রমাণ করেন।

وَإِذْ أَخَذَ اللَّهُ مِيثَاقَ النَّبِيِّينَ لَمَا آتَيْتُكُمْ مِنْ كِتَابٍ وَحِكْمَةٍ ثُمَّ جَاءَكُمْ رَسُولٌ مُصَدِّقٌ لِمَا مَعَكُمْ لَتُؤْمِنُنَّ بِهِ وَلَتَنْصُرُنَّهُ.

অর্থাৎ- আল্লাহ পাক সমস্ত নবীগন হতে অঙ্গীকার গ্রহণ করেছিলেন যে, আপনাদেরকে কিতাব এবং হিকমাহ তথা শরীয়ত যাহাই দান করি তারপর আসবেন আপনাদের নিকট এ কজন রাসূল যিনি আপনাদের নিকটস্থ কিতাবের বাস্তবতা প্রমাণকারী হবেন, (যেহেতু তাঁর আগমনের অগ্রিম সংবাদ আপনাদের কিতাবে থাকবে, অতএব, তাঁর মহাগমন দ্বারা আপনাদের কিতাবের বাস্তবতা প্রমানিত হবে। তিনি আপনাদের বর্তমানে এসে গেলে) আপনারা তাঁর প্রতি অবশ্যই ঈমান গ্রহন করবে এবং তাঁর সাহায্য সহায়তা করবেন।

(অঙ্গীকারের এ বিষয়বস্ত উল্লেখ পূর্বক) আল্লাহ পাক নবীগণকে লক্ষ্য করে বললেন আপনারা অঙ্গীকার করলেন তো এবং উক্ত বিষয় বস্তুর উপর আমার কঠোর আদেশ গ্রহণ করলেন তো? নবীগণ সকলেই বলে উঠলেন, আমরা অঙ্গীকার করলাম। আল্লাহ পাক বললেন, তাহলে আপনারা (নিজেরাই নিজেদের উপর) সাক্ষী থাকুন, আমি ও আপনাদের সাথে সাক্ষীদের মধ্যে থাকলাম। (এ অঙ্গীকারে স্বীয় উম্মতগন ও শামিল হবে) এ অঙ্গীকারের পর যে ফিরে যাবে, যে পলায়নকারী হিসেবে অবশ্যই গণ্য হবে।

পূর্বোক্ত হয়েছে যে, আল্লাহ পাক নবী কারীম (ﷺ)কে ধরনীয় বুকে প্রেরনের পূর্বে আদম (عليه السلام) হতে নিয়ে সকল নবীগন হতে রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর নবুওয়ত ও রেসালাতের অঙ্গীকার এবং তাকে সাহায্য সহায়তা করার স্বীকৃতি নেয়া হয়েছিল এবং নবীগণ ও যাতে স্বীয় উম্মত হতে তাঁর প্রতি ঈমান আনয়ন করত: তাকে সাহায্য সহায়তার অঙ্গীকার গ্রহন করতে পারেন সে দিকে জোর তাকিদ দেয়া হয়েছিল।

এ সমুচ্ছ মর্যদা নিয়েই রাসূলুল্লাহ (ﷺ) যুগে যুগে সকল নবী ও রাসূল গণের হাদী ও রাহবর হয়ে ধরাপৃষ্টে আগমন করেন। সেই হিসেবে তো নিঃসন্দেহে তিনি হযরত মুসা (عليه السلام) এরও নবী ছিলেন। এ জন্যই তো রাসূলুল্লাহ (ﷺ) জোরের সাথে বলেছিলেনঃ لوكان موس حيا لماوسعه الااتباعى অর্থ:- এ যুগে মুসা নবী (عليه السلام) জীবিত থাকলে তাঁর জন্য আমার আনুগত্য অনুসরণ ছাড়া উপায় থাকতোন। (মেশকাত শরীফ) মাওয়হেবে লাদুন্নিয়া গ্রন্থে উক্ত তথ্য বর্ণনার পর উল্লেখ আছে এ তথ্যের অনিবার্য অর্থ ইহাই যে, হযরত ছাক্বীয়ে কাওসার রাসূলুল্লাহ (ﷺ) কেবল তাঁর উম্মতের নবী ছিলেন না বরং তিনি সমস্ত নবীগণেরও নবী ছিলেন। এরই প্রতিফলন এবং বিকাশ সাধন হবে কেয়ামতের ভয়াল দিনে হযরত আদম (عليه السلام) এবং তৎপরবর্তী সকল নবীগণও ঐ দিন রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর পতাকাতলে সমবেত থাকবেন। নিন্মোক্ত হাদীস শরীফই তার স্পষ্ট বর্ণনা দিয়েছে এভাবে

آدَم وَمَنْ دُونه تَحْت لِوَائِي يَوْم الْقِيَامَة

অর্থাৎ- কিয়ামতের ভয়াল মাঠে হযরত আদম (عليه السلام) এবং তিনি ছাড়াও আরও যত নবীও রাসূলগন (عليه السلام) আছেন সকলেই আমার পতাকাতলে সমবেত হবেন।

জেনে রাখ! রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বাহ্যিক ছুরত তথা ছুরতে জিসমানী হালতে ধরাপৃষ্টে মুহুরে নবুওয়ত সাধন হলেও প্রকৃত প্রস্তাবে হুযূরী কলব তথা মিছালী ছুরতে পূর্বের ন্যায় আল্লাহ নিকটে অবস্থান করছেন। সে মতে তিনি আল্লাহর পাকের সমীপে সর্বদাই উপস্থিত আছেন। তাতে এক পলকও তাঁর থেকে অদৃশ্য থাকেন না। সেক্ষেত্রে তিনি হচ্ছেন দু সমুদ্রের মিলনস্থল। যেহেতু তিনি তোমাদের কাছে বিস্ময়কর ও দুবোর্ধ হলেও মহান আল্লাহর অতি সান্নিধ্যে। আমাদের কাছে বোধগম্য ও সুষ্পষ্ট হলেও আল্লাহর কাছে সত্ত্বাগত ভাবে বিদ্যমান আছেন, আমাদের সাথে সমতল বা বিছানার মত মনে হলেও তার কাছে আরশ তুল্য। কিন্তু তা সত্ত্বেও রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর প্রত্যাবর্তন স্থল সর্বদাই মাওলায়ে কারীমের সান্নিধ্যে বিদ্যমান।

✧ অনারবে মীলাদ
____________________
✧ অনারবে মীলাদ

واما دلعجم فمن حيث دخول هذا الئهد المعظم والزمان المكرم- لاهلها مجالس فخام من انواع الطعام للفقراء الكرام وللفقراء من الخاص ولعامة- وقراءة الختمات والتلاوات المتواليات والانشادات المتعاليات والبناس البرات والخيرات وانواع السرور واضاف الحبورحتى بعض العبائز من غزلهن ونسجهن يجمعن مايقمن بجمعهن الاكابر والأعيان- وبهيا فهن ما يقدرون عليه فى ذالك الزمان ومن تعظيم مشايخهم وعلمائهم هذا المولدا لمعظم والمجلس المكرم- انه لايأ باه احد فى حضوده دجاء ادراك نوده وسروره وقد وقع لشيخ مشايتنا مولنازين الدين محمود البهدا نى النقشبندى (قدس سره العلى) انه اراد سلطان الزمان وخاقان الدوران هما يون بادشاه- (تغمده الله واحسن مثوااه) ان يجتمع به ويحصل له المدر والامداد بسببه- فأباه السيغ وامتنع ايضا ان يأتيه السلطان ستغاناء بقضل الرحمن- فألح السلطان على وزيره يبرام خان- بانه لابد من تدبير للا جتماع فى الكان ولو فى قليل من الزمان- فسمع الوزيد ان الشيغ لايحصر فى دعوة من هناء وعزاء الافى مولد النبى عليه الصلاة والسلام- تعظيما لذ الك المقام فأنهى الى اللطان فأمره يتهيئة اسبابه الملو كانية من انواع الاطعمة والاسبة ومما يثم به ويتبخر فى المجلس العلمية- ونادى الاكابر والأ هالى- وحفر الشيغ مع بعض الموالى فاخذ الطلن الابريق بيد الأدب ومعاونة التوفيق- والوزير اخذ الطثت من تحت امره- رجاء لطفه ونظره وعسلا يد التسيغ المكرم وحصل لهما يبركة تواضعهما لته تعالى ولرلوله صلى الله عليه وسلم) لمقام المعظم والجاه المفخم.

অর্থাৎ- আরব ছাড়াও অনারবে মীলাদ মাহফিলের প্রচলন ছিল মহাসমারোহে যেমন: পবিত্র রবিউল আওয়াল মাসে এবং মহিমান্বিত দিনে (১২ই তারিখে) এতদঞ্চলের অধিবাসীদের মীলাদ মাহফিলের নামে জাঁকজমক পূর্ণ মাজলিসের আয়োজন হতো সে গরীব মিসকীনদের মধ্যকার বিশেষ ও সাধারনদের জন্য বহু ধরনের খাবারের বন্দোবস্ত করা হতো। তাতে ধারাবাহিক তেলাওয়াত বহু প্রকার খতম এবং উচ্ছাঙ্গ ভাষায় প্রশংসা সম্বলিত কবিতা মালা আবৃত্ব হতো। বহু বরকতময় ও কল্যাণময় আমলের সমাহার ঘটতো বৈধ পন্থায় বঙ্গ আনন্দোল্লাস প্রকাশ করা হতো বহু বিশেষক্ত মহা পন্ডিতগণ ও তাতে অংশ গ্রহণ করতেন। এমনকি কোন কোন বৃদ্ধা মহিলাগণ ও সে মাজলিসে সমবেত হয়ে রাসূলে পাকের শানে বহু প্রেমকাব্য ও ছন্দ মালা সংগ্রহ করতঃ তা মাজলিসে উপবেশন করতো। তাঁদের প্রেমকাব্য বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গগন ও জড়ো হতেন। তাঁদের (মহিলাদের) জন্য সাধ্যানুসারী আপ্যায়নের ব্যবস্থা থাকতো। তৎকালীন উলামা মাশায়েখগণের বহুবিদ সম্মানজনক কার্যাবলীর অন্যতম হচ্ছে এ মহান মীলাদ মাহফিল এবং মহিমাময় মাজলিসের প্রতি গুরুত্বারোপ ও সম্মান প্রদর্শন করা। কিন্তু তা সত্বেও উক্ত মাহফিলে সমবেত হওয়ার ব্যাপারে তাদেঁর কারও থেকে কোন ধরনের অস্বীকৃতি মুলক কঠোক্তি প্রকাশ পায়নি। যেহেতু সকলের এ উত্তম ধারনা ও আত্মবিশ্বাস ছিল যে, উক্ত মাহফিলে সমবেত হওয়া মূলতঃ আত্মতৃপ্তি, হুযূরে পাকের শুভাগমনের খুশী যাহের এবং তাঁরা এ ধরনের বহু উপমা বিদ্যমান রয়েচে। তন্মধ্যে আমাদের মহামান্য শায়েখগনের মুরববী শায়েখ মাওলানা যাইনুদ্দী্ন মাহমুদ আল-বাহদানী নকশবন্দী (رضي الله عنه) এর ঘটনা উল্লেখ যোগ্য।

একবার যুগশ্রেষ্ট প্রতিভা সমপন্ন কালজয়ী, বিপ­বী মুঘল সম্রাট বাদশা হুমায়ুন (আল্লাহ পাক তাকেঁ করুনার আচলে ডেকে রাখুন এবং সর্বোত্তম মাকাম দান করুন) তাঁর বিশাল জাঁকজমকপূর্ণ মাজলিসে মহামান্য শেখ যাইনুদ্দিন মাহমুদ আল বাহদানী নকশেবন্দী (رضي الله عنه) কে সমবেত করার ইচ্ছা ব্যক্ত করেন কিন্তু শায়খ (رحمة الله) সহসাই তা প্রত্যাখ্যান করে বললেন, আল্লাহর অনুগ্রহ থেকে অমুখাপেক্ষী কোন সভা- সমাবেশে তিনি সমবেত হন না। কিন্তু সম্রাট তাঁর এ উক্তিতে পিছপা না হয়ে বরং তাঁর মন্ত্রীমহোদয় জনাব বারাম খাঁনকে দিয়ে বারং বার অনুনয় ব্যক্ত করেন যে, রাজদরবারে এ ধরনের কল্যান মুলক অনুষ্ঠানের নিতান্তই প্রয়োজন বিধায় অল্পক্ষন হলেও উপস্থিতি কামনা করি।

সম্রাটের মন্ত্রী মহোদয় বুঝতে পারলেন যে, আল্লামা মাইনুদ্দিন ছাহেব রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর মীলাদ মাহফিলে কেবল তাঁর সম্মানার্থে উপস্থিত হতে পারেন অন্য কোন অনুষ্ঠানে নয়। এবিষয়টি মন্ত্রী মহোদয় সম্রাট মহোদয়ের দরবারে অবহিত করেন। এ সুবাদে সম্রাট মহোদয় স্বীয় মন্ত্রী মহোদয় কে আন্তর্জাতিক মানের খাদ্য ও পান সামগী প্রস্তুত করত: মাহফিল কে অপরূপ সজ্জায় সজ্জিত এভং সুরভীতি করার জন্য আতর গোলাপ, ধুপদ্বারা সুঘ্রানীত ও সুরভীত করার নির্দেশ দেন।

অনুষ্ঠানে আকাবীর তথা বড় বড় উলামা-মাশায়েখ ও তথাকার অধিবাসীদিগকে অংশ গ্রহনের আহবান করা হয়। হাজারও মানুষের সমাগমে অনুষ্ঠানে সজ্জিত টিক এমনই মুহুর্তেই শায়খুল আল্লামা যাইনুদ্দিন (رحمة الله) কিছু সংখ্যক সহচরবৃন্দকে নিয়ে অনুষ্ঠানে উপস্থিত হন। তাঁর সম্মানার্থে সম্রাট মহোদয় আপ্যায়নের জন্য স্বয়ং- শেখ মহোদয়ের হস্ত ধৌত করনের জন্য শিষ্ঠাচার হস্তে পানির লোটা বহন করেন এবং স্বীয় মন্ত্রী মহোদয় (বারাম খান) নির্দেশের অধীনস্ত হয়ে নীচে চিলমুচি (চিলিমচি) বহন করেন। উভয়ের উদ্দেশ্য একটিই ছিল যে, যাতে করে তাদের প্রতি শায়খ মহোদয়ের সুদৃষ্টি পরায়ন স্নেহশীল এবং কোমলপ্রাণ হোন। তারা তাঁর হস্তমোবারকে মিষ্টি পরিবেশন করেন। এরই ফলে আল্লাহ ও তদীয় রাসূলের সন্তুষ্টি কামনায় তাঁর প্রতি উভয়ের সমোচ্ছ স্থান ও গৌরভয়ম মর্যাদা অর্জিত হয়।

✧ মক্কাবাসীর মিলাদ
____________________
✧ মক্কাবাসীর মিলাদ

قال شيخ مشائخنا الامام العلامة الحبر الفهامة شمس الدين محمد السخاوى بلغه الله المقام العالى وكنت ممن تشرف ادراك المولد فى مكة المشرفة عدة سنين وتعرف ما اشتمل عليه من البركة المشار لبعضها بالتعين تكررت زيارتى فيه لمحل المولد المستفيض وتصورت فكرتى ماهنالك من الفجر الطويل العريض قال واصل على المولد الشريف لم ينقل عن احد من السلف الصلح فى قرون الثلثة الفاضلة وانما حدث بعدها بالمقاصد الحسنة والنية التى الاخلاص شاملة ثم لازال اهل الاسلام فى سائر الاقطاز والمدن العظام يحتفلون فى شهر مولده صلى الله عليه وسلم بعمل الولائم البديعة والمطاعم المشتملة على الامور البهيجة الرفيعة ويتصدقون فى لياليه بانواع الصدقات ويظهرون المسرات ويريدون فى المبرت بل يعتنون بقراءة مولده الكريم يظهر عليهم من –

بركاته كل فضل عميم بحيث كان مما جرب كما قال اللامام شمس الدين ابن الجزرى المقرى المجزرى المقرى المجرب من خواصه انه امان تام فى ذالك العام بشرى تعجيل نبيل ما ينبغى ويرام-

আমাদের মাশায়েখদের ইমাম শায়খ শামসুদ্দীন মুহাম্মদ সাখাবী রাহমাতুল্লাহি আলাইহি বলেন, পবিত্র মক্কা শরীফের মিলাদ অনুষ্ঠানে যারা কয়েক বছর উপস্থিত ছিলেন, আমি তাদের মধ্যে অন্যতম একজন। আমরা মীলাদ অনুষ্ঠানের বরকত অনুভব করছিলাম যা নির্দিষ্ট কয়েক ব্যক্তির প্রতি ইঙ্গিত করা হয়। এ অনুষ্ঠানের মধ্যেও রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর জন্মস্থানের যিয়ারত আমার কয়েক বার হয়েছে। আমার চিন্তা ও মন মানসিকতা কেবল সে জিনিসটিকে ধ্যান, ধারনা করছিল, যার সময়টি ছিল সুবহে সাদিক উদয়ের প্রাক্কালে। ইমাম সাখাবি বলেন মীলাদ অনুষ্ঠানের মূল ভিত্তি উত্তম তিন যুগের পূর্বসূরী কোন নেককার বুযুর্গ লোকদের থেকে পাওয়া যায় না। মীলাদ অনুষ্ঠান উত্তম তিন যুগের পরই ভাল উদ্দেশ্য ও নেক নিয়তের সাথে উদ্ভব হয়েছে। অতঃপর রাসূলুল্লাহ (ﷺ) যে মাসে জন্মগ্রহণ করেছেন, সে মাসে সব দেশ ও অঞ্চলের মুসলমানরা মীলাদ অনুষ্ঠানের নামে সভা সমাবেশে সমবেত হতে থাকে। আর মানুষকে দাওয়াত দিয়ে সুস্বাদু খাদ্য সামগ্রী আহার করায়। আর অনুষ্ঠান রজনীতে গরীব মিসকিনদের মধ্যে বিভিন্ন ধরণের দান সদকা বিতরণ করে খুশী ও আনন্দ প্রকাশ করে। আর ঐ মাসে বহুল পরিমানে পূণ্যময় কাজ করে। আর রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর জন্ম বৃত্তান্ত ও তৎসংশি­ষ্ট অলৌকিক কাহিনীসমূহ বর্ণনাকারীদের মুখে শোনার ব্যবস্থা করে। এর ফলে তাদের প্রতি বরকত প্রকাশ পেতে থাকে। যেমন বাস্তব অভিজ্ঞতা দ্বারা প্রমাণীত, ইমাম শামসুদ্দীন ইবনুল জাযরী আল মুকীরী (رحمة الله) মীলাদ মাহফিল করার উপকারীতা ও বৈশিষ্ট বণর্না করে বলেছেন, মিলাদ মহাফিলের বিশেষ বরকতের মধ্যে এ ও রয়েছে যে, আয়োজন কারীর জন্য অনুষ্ঠানটি পূর্ণ বছরের নিরাপত্তার ওছিলা হয় এবং এর বরকতে যথা শীঘ্র আয়োজকের মনোবাসনাও উদ্দেশ্য পূর্ণ হয়।

✧ মিসর ও সিরিয়াবাসীর মিলাদ
____________________
✧ মিসর ও সিরিয়াবাসীর মিলাদ

فاكثر هم بذالك عناية اهل مصر و الشام ولسلطان مصر فى تلك الليلة من العام اعزم مقام . قال ولقد حضرت فى سنة خمس وثمانين وسبعمائة ءلبلة المولد عند الملك الظاهر برقوق رحمة الله.... بقلعة الجبل العلية فرايت ماهالنى وسرنى وما ساء نى وحررت ما انفق فى تلك الليلة على القراء و الحاضرين من الوعاظ والمنشدين و غيرهم من الاتباع والغلمان والخدام المترددين بنحو عشرة الاف مشقال من الذهب ما بين خلع و مطعوم ومشروب ومشموم ومشموع وغيرها ما يستقيم به الضلوع. وعددت فى ذالك خمسا وعشرين من القراء الصيتين المرجوكونهم مثبتين ولا نزل واحد منهم الا بنحو عشرين خلعة من السلطان ومن الامراء الا عيان قال السخاوى قلت ولم يزل ملوك مصر خدام الحرمين الشريفين ممن وفقهم الله لهدم كثير من المناكير والشين ونظر وا فى امر الرعية كالوالد لولده وشهروا انفسهم بالعدل فاسعفهم الله بجنده ومدده.

মীলাদ মাহফিলে সবচেয়ে অগ্রগামী ছিলেন মিসর ও সিরিয়াবাসি। মিসরের সুলতান প্রতি বছর পবিত্র বেলাদতের রাত্রে মিলাদ মাহফিলের আয়োজনের অগ্রনী ভূমিকা রাখতেন। ইমাম সামছুদ্দীন সাখাবী বর্ণনা করেন- আমি ৭৮৫ হিজরীতে মীলাদের রাতে সুলতান বরকুকের উদোগে আলজবলুল আলীয়া নামক কিল্লায় আয়োজিত মীলাদ মাহফিলে হাজীর হয়ে ছিলাম। ওখানে আমি যা কিছু দেখেছিলাম, তা আমাকে হতবাক করেছে অসীম তৃপ্তি দান করেছে। কোন কিছুই আমার কাছে অসস্থিকর লাগেনি। সে পবিত্র রাতের বাদশাহের ভাষন, উপস্থিত বক্তাগনের বক্তব্য, কারীগনের তেলাওয়াতে কোরআন এবং নাত পাঠকারীগনের না’ত আমি সাথে সাথে লিপিবদ্ধ করে নিয়েছি। এছাড়া উপস্থিত জনতা, শিশু ও নিয়োজিত সেবকদের মধ্যে প্রায় দশ হাজার মিছকাল (একশত ভরী) স্বর্ণ, কাপড় ছোপড়, নানা প্রকারের পানাহার, সুগন্ধি বাতি এবং অনান্য জিনিস পত্র প্রদান করেন যেটা দ্বারা ওরা সাংসারিক জীবনে অনেকটা সচ্ছলতা অর্জন করতেন ঐ সময় আমি এমন পচিশঁ জন “কারী” বাছাই করেছি যাদের সুমিষ্ট কন্ঠের জন্য অন্য সবের উপর তাদের স্থান দিয়েছি। তাদের মধ্যে এমন কেউ ছিল না যিনি বাদশাহ ও বাদশাহের বিশিষ্ট লোকদের কাছ থেকে প্রায় বিশটি বিশেষ পোষাক উপহার না নিয়ে মঞ্চ থেকে অবতরন করেছেন। ইমাম ছাখাবি বলেন, আমার চাক্ষুস বর্ণনা হচ্ছে, মিসরের বাদশাহগন যারা হরমাইন শরীফের খাদিম ছিলেন, তারা এসব লোকদের অন্র্Íগত ছিলেন। যাদেরকে আল্লাহ তাআলা অধিকাংশ দোসত্রুটি প্রতিরোধে তৌফিক দান করে ছিলেন। তারা প্রজাদের সাথে এমন আচরন করতেন যেমন পিতা নিজ সন্তানের সাথে করে থাকে। তারা ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠা দ্বারা সুনাম অর্জন করে ছিলেন। আল্লাহ তাআলা তাদেরকে এ কাজে স্বীয় ফেরেস্থা দ্বারা গায়বী সাহায্য করেন। যেমনঃ বাদশা আবু সাঈদ জামাক্ক মাক্ক (رضي الله عنه) র আলোচনা উল্লেখযোগ্য। তিনি মীলাদ মাহফিলে সমবেত হয়ে ওকে সত্যায়ন করেন এবং এর প্রতি গভীর মনোযোগ প্রদান করত: একদল কারীগনের সমবেত করে জৌলুস পূর্ণ অনুষ্ঠানের ব্যবস্থা করে দুই তৃতীয়াংশের ও বেশী সময় সকল গুরুত্বপূর্ণ বিষয় ও উত্তম দিক গুলো পর্যালোচনায় ব্যয় করতেন।

✧ স্পেন ও পাশ্চাত্য দেশে মীলাদুন্নবী পালন
____________________
✧ স্পেন ও পাশ্চাত্য দেশে মীলাদুন্নবী পালন

كيف كان ملوك الاندلس يحتلفون بالمولد ؟ واما ملوك الاندلس والغرب فلهم فيه ليلة تسير بها الركبان يجتمع فيهاائمة العلماء الاعلام فمن يليهم من كل مكان و تعلوابين اهل الكفر كلمة الايمان. واظن اهل الروم لا يتخلفون عن ذالك اقتفاء بغيرهم من الملوك فيما هنالك الاحتفال فى بلاد الهند وبلاد الهند تزيد على غيرها بكثير كما اعلمنيه بعض اولى النقد زالتحرير.

স্পেন ও পাশ্চাত্য দেশের শহরগুলোতে মীলাদুন নবীর রাতে রাজা-বাদশাহগণ জুলুস বের করতেন, সেথায় বড় বড় ইমাম ও ওলামায়ে কেরামগণ অংশ গ্রহন করতেন। মাঝপথে বিভিন্ন এলাকা থেকে লোক এসে তাঁদের সাথে যোগ দিতেন এবং কাফিরদের সামনে সত্যে ও বানী তুলে ধরতেন। আমার যতটুকু ধারণ, রোমবাসীরাও কোন অংশে ওদের থেকে পিছপা ছিলনা। তারাও অনান্যা বাদশাহগনের মত মীলাদ মাহফিলের আয়োজন করতেন। হিন্দুস্থান শহরগুলোতে মীলাদুন্নবীর প্রসংগে উচ্ছস্থরের ওলামায়ে কেরাম ও বিশিষ্ট লিখকগন আমাকে বলেছেন যে হিন্দুস্থানের লোকেরা অন্যান্য দেশের তুলনায় অধীক ব্যাপক হারে এ পবিত্র ও বরকতময় দিনে নানা অনুষ্ঠানের আয়োজন করতেন।

✧ মক্কাবাসীর মীলাদ মাহফিল 
____________________
✧ মক্কাবাসীর মীলাদ মাহফিল

قال السخاوى واما اهل مكة معدن الخير والبركة فيتوجهون الى المكان المتواتر بين الناس انه محل مولده وهو فى سوق الليل رجاء بالوغ كل منهم بذالك المقصد ويزيد اهتمامهم به على يوم العيد حتى قل ان يتخلف عنه احد من صالح وطالح ومقل وسعيد سيما الشريف صاحب الحجاز بدون توار وحجاز قلت الان سيماء الشريف لاتيان ذالك المكان ولا فى ذالك الزمان قال وجود قاضيها وعالمها البرهانى الشافعى اطعام غالب الواردين وكثيرمن القاطنين المشاهدين ف اخر الاطعمنه والحلوى. ويمد للجمهور فى منزله صبحتها سماطا جامعا رجاء لكشف البلوى. وتبعه ولده الجمالى فى ذالك للقاطن والسالك قلت اماالان فما بقى من تلك الاطعمة الا الدخان ولا يظهرمما ذكر الابريح الريحان فالحال كما قال. اما اخيام فانها كخيامهم -وارى نساء الحى غير نسائهم.

ইমাম সাখাবি (رحمة الله) বলেন মক্কাবাসি কল্যান ও বরকতের খনি। তাঁরা সে প্রসিদ্ধ পবিত্র স্থানের প্রতি বিশেষ মনোনিবেশ করেন, যেটা নবী করিম (ﷺ) এর জন্ম স্থান। এটা ‘সাউকুল লাইলে’ অবস্থিত। যাতে এর বরকতে প্রত্যেকের উদ্দ্যশ্য সাধিত হয়। এসব লোক মীলাদু্নবীর দিন আরও অনেক কিছুর আয়োজন করে থাকেন। এ আয়েজনে আবেদ, নেককার, পরহিজগার, দানবীর কেউ বাদ যায় না। বিশেষ করে হেজাজের আমির বিনা সংকোচে সানন্দে অংশ গ্রহন করেন এবং তাঁর আগমন উপলক্ষে ঔ জায়গায় এক বিশেষ নিশান তৈরী করা হতো। প্রথম যোগে এটা ছিল না। পরবর্তীতে এটা মক্কার বিছারক ও বিশিষ্ট আলেম আল- বুরহানিশ শাফেয়ী মীলাদুন্নবী উপলক্ষ্যে আগত যিয়ারতকারী খাদেম ও সমবেত লোকদেরকে খানা ও মিষ্টি খাওয়ানোকে পছন্দনীয় কাজ বলে রায় দিয়েছেন। হেজাজের আমির (মীলাদুন্নবীর উপলক্ষে স্বীয় আবাসগৃহে সাধারণ লোকদের জন্য ব্যাপক পানাহারের ব্যবস্থা করতেন যেন এর বদৌলতে বিপদ আপদ বালা মুসিবত দূরিবুত হয়ে যায়। তাঁর ছেলেও খাদেম ও মুসাফিরদের বেলায় স্বীয় পিতার অনুসারী ছিলেন। এ সব খানাপিনার মধ্যে কোন কিছু বাদ যেতনা কেবল ধুমপান ছাড়া আর এ সব খানাপিনার মধ্যে নানা ফুলের সুগন্ধ ভরপুর থাকতো। অবস্থাটা ছিল জনৈক কবির কবিতার মত-

. اما اخيام فانها كخيامهم -وارى نساء الحى غير نسائهم

অর্থাৎঃ তাবু তো ওসব তাবুর মতোই কিন্তু আমি দেখতেছি সে গোত্রের মহিলাগন এ সব মহিলা থেকে অনেক ভিন্ন।

✧ মদীনাবাসীর মীলাদ মাহফিল
____________________
✧ মদীনাবাসীর মীলাদ মাহফিল

ولا هل المدينه....كثرهم الله تعالى به احتفال وعلى فعلة اقبال وكان للملك المظفر صاحب اريك بذالك فى ها اتم العنايه و اهتماما بشانه جاوز الغايه فاثنى عليه به العلامه ابو شامه احد شيوخ النووى السابق فى الا ستقامه في كتابه الباعث على البدع والحوادث وقال مثل هذا الحسن يندب اليه ويشكر فاعله ويثنى عليه زاد ابن الجزرى ولولم يكن فى ذالك الا ارغام الشيطان وسرور اهل الايمان قال يعنى الجزرى واذاكان اهل الطلب اتخذوا ليلة مولد نبيهم عيدا اكبرفاهل الاسلام اولى بالتكريم واجدر.

মদীনা বাসিগনও মীলাদ মাহফিলের আয়েজন করতেন এবং অনূরুপ অনুষ্ঠানাদি পালন করতেন। বাদশাহ মোজাফ্ফর শাহ আরিফ অধিক আগ্রহি এবং সীমাহীন আয়োজনকারী ছিলেন। আবু শামা যিনি ইমাম নববীর অন্যতম উস্তাদ এবং বিশেষ বুজর্গ ছিলেন, স্বীয় কিতাব আল বায়াছ আলাল বিদয়ে ওয়াল হাওয়াদিছে’ বাদশাহের প্রশংসা করেছেন এবং বলেছেন এরকম ভাল কাজসমূহ তার খুবই পছন্দ এবং তিনি এধরনের অনুষ্ঠান পালনকারীদের উৎসাহদান ও প্রশংসা করতেন। ইমাম যাযরী এর সাথে আরও সংযোযন করে বলেন, এসব অনুষ্ঠানাদি পালন করার দ্বারা শয়তানকে নাজেহাল এবং ঈমানদারদের উৎসাহ উদ্দিপনা দানই উদ্দেশ্য হওয়া চাই। তিনি আর বলেন, যেহেতু ঈসায়ীরা তাদের নবীর জন্মের রাতকে খুব শান শওকতের সাথে পালন করে থাকে, সেহেতু মুসলমানগন রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর ইজ্জত সম্মান করার অধিক হকদার এবং তাঁর জন্ম দিনে যতদূর সম্ভব আনন্দ আহলাদ প্রকাশ করা উচিত।

মীলাদ মাহফিলের প্রতি বাদশা মুজাফ্ফরের আমল
____________________
মীলাদ মাহফিলের প্রতি বাদশা মুজাফ্ফরের আমল

☛ইরবলের স্বনামধন্য বাদশা মুজাফফর (رحمة الله) সর্বপ্রথম আনুষ্ঠানিকভাবে মীলাদের সুচনা করেন। তিনি মীলাদ মাইফিলের প্রতি ছিলেন গভীর মনোযোগী সীমাহীন যত্মবান ও গুরুত্বশীল। মীলাদ শরীফ বৈধতার ব্যাপারে চুড়ান্ত ফায়সালা দেন। মীলাদ শরীফ পালনের কারণে বিশ্ববিখ্যাত মুহাদ্দিস আল্লামা ইমাম আবু শামা (رحمة الله) তাঁর ভুয়সী প্রশংসা করেন। তিনি স্বীয় ‘কিতাবুল বাইছ আলা ইনকারিল বিদয়ে ওয়াল হাওয়াদীস নামক বিখ্যাত গ্রন্থে তাঁর আলোচনা করত: বলেন যে, তাঁর এ আমল একটি উত্তম ও বৈধ কাজ। তিনি মীলাদ শরীফ পাঠকারীর কৃতজ্ঞাত ও ভূয়সী প্রশংসা করতেন।

ইমাম ইবনে জাযরী (رحمة الله) উক্ত মন্তব্যের উপর আরও কিছু বৃদ্ধি করে বলেন যে, মীলাদ শরীফের মতো একটি বৈধ ও উত্তম আমলকে কেবল লাঞ্চিত ও অপমানীত শয়তান ও তার অনুসারীরাই প্রত্যাখ্যান করতে পারে।

তিনি বলেন, আহলে ছালীব তথা খ্রীষ্ঠানের যদি তাদের নবী ঈসা (عليه السلام) এর জন্ম দিনকে ঈদুল আকবার হিসেবে আখ্যায়িত করতে পারে, তবে সেখানে আবুল ইসলাম তথা উম্মতে মুহাম্মদী তাদের রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর জন্ম দিনকে ঈদুল আকবার হিসেবে তাঁর সর্বোচ্ছ তাযীম ও তাকরীম প্রদর্শন করা অত্যধিক উপযোগী তাতে কোন সন্দেই নেই। যেহেতেু আমরাতো তার প্রতি আদিষ্ট।

☛খাতেমাতুল আইম্মা বিশ্ববিখ্যাত হাদীস শরীফের ইমাম, শায়খুল ইসলাম জনাব আবুল ফদ্বল ইবনে হাজার (رحمة الله) বলেন: মীলাদ শরীফের অনুষ্ঠান পালন মূলত; একটি সুবৃহৎ ও মজবুত স্তম্বের উপর গঠিত, তিনি মীলাদ মাহফিলের উপর এমন একটি সুদৃঢ় মূলনীতি বের করেছেন, যার প্রতি সকল জ্ঞানী, পন্ডিতগন ভিত্তি করে আসছেন। যেমন:

☛পবিত্র বোখারী ও মুসলিম শরীফে এসেছে:

أَنَّ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَدِمَ الْمَدِينَةَ فَوَجَدَ الْيَهُودَ صِيَامًا، يَوْمَ عَاشُورَاءَ، فَقَالَ لَهُمْ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: مَا هَذَا الْيَوْمُ الَّذِي تَصُومُونَهُ؟: فَقَالُوا: هَذَا يَوْمٌ عَظِيمٌ، أَنْجَى اللهُ فِيهِ مُوسَى وَقَوْمَهُ، وَغَرَّقَ فِرْعَوْنَ وَقَوْمَهُ، فَصَامَهُ مُوسَى شُكْرًا، فَنَحْنُ نَصُومُهُ، فَقَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: ্রفَنَحْنُ أَحَقُّ وَأَوْلَى بِمُوسَى مِنْكُمْ فَصَامَهُ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، وَأَمَرَ بِصِيَامِهِ:

অর্থ:- হুযূর মদীনায় আগমন সেখানকার ইয়াহুদীকে দেখতে পেলেন যে, তারা আশুরার দিনে রোযা রাখছে। তিনি তাদেরকে ঐ দিনের রোযা রাখা সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলে জাবাবে তারা বলল, এ দিনে মহান আল্লাহ পাক ফেরাউনকে নীল দরিয়াতে ডুবিয়ে মারেন এবং মুসা (عليه السلام) কে রক্ষা করেছিলেন বিধায় আমরা শুকরিয়া স্বরূপ এদিনে রোযা পালন করে থাকি।

রাসূলুল্লাহ (ﷺ) তাদের একথা শ্রবনে বললেন: তাহলে তো আমরা তোমাদের চেয়ে হযরত মুসা (عليه السلام) এর প্রতি অধিক হক্বদার। এরপর থেকেই রাসূলুল্লাহ (ﷺ) নিজেও রোযা রেখেছিলেন এবং তাঁর সাহাবায়ে কেরামকে রোযা পালনের নির্দেশ দিয়েছিলেন। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেন: আমি যতদিন বেচে থাকবো ততদিন তাদের ন্যায় একটি এবং তাদের সাথে মিশ্রন না হওয়ার আশংকায় আরেকটি মোট দুটি রোযা পালন করবো।

☛শায়েখ ইবনে হাজার আসক্বালানী (رحمة الله) বলেন, বালা মুছিবত বিদূরীত হওয়া ও নেয়ামত প্রাপ্তির আশায় নিদির্ষ্ট দিনেও ঈদ উৎসব পালনের মাধ্যম আল্লাহর শুকরিয়া জ্ঞাপন করা হয়, তাতে বহুবিধ ফায়দা নিহীত আছে। আর তার মত নেয়ামত পুর্ণ দিন বছরে বার বার আসে। প্রকাশ থাকে যে, আল্লাহর শুকরিয়া বহুবিধ ইবাদত দ্বারা হাসিল হয় যেমন: নামাজ, রোযা, তেলাওয়াত ইত্যাদি।

যদি তাই হয়, তবে এবার বলুন! রহমতে আলম হুযূরে পাক (ﷺ) এর চেয়ে বিশাল নেয়ামত আর কি হতে পারে? তাঁর নেয়ামতের বিশালত্ব সম্পর্কে لَقَدْ جَاءكُمْ আয়াত দ্বারা উপলদ্ধি করা যায় এবং আয়াতে বর্ণিত رَسُولٌ ْ مِّن أَنفُسِكُمْ দ্বারা তাঁর আগমনের সময়কার তা’যীম তথা ক্বিয়াম প্রদর্শনের ও ইঙ্গিত পাওয়া যায়।

☛শায়খুল ইসলাম ইবনে হাজার (رحمة الله) আরও বলেন: মিথ্যা ও অহেতুক বিষয় ব্যতিরেকে শরীয়ত কর্তৃক সমর্থিত মীলাদ মাহফিলের মাধ্যমে আল্লাহর কৃতজ্ঞতা প্রকাশের নিমিত্তে নিদির্ষ্ট সময়ে খুশী যাহের করতে কোন বাধা নেই। আর যেথায় হারাম বা মাকরূহ জনিত কার্যাবলী মিশ্রিত হয়, তা হতে বিরত থাকা অবশ্যক। তা ব্যতীত উত্তম পন্থায় মাসের প্রত্যেক দিনও পালন করা যায় তাতে কোন বাধা নেই। যেমন:

☛এ প্রসঙ্গে ইমাম ইবনে জামাআত তামান্নী (رحمة الله) বলেন: মীলাদ সংক্রান্ত বিষয়ে আমাদের কাছে অবিচ্ছিন্ন সনদে বর্ণিত আছে যে, বিখ্যাত আদর্শবান ও যাহেদ অমর ব্যক্তি জনাব আবু ইসহাক ইব্রাহীম বিন আব্দুর রহমান বিন ইব্রাহীম বিন জামাআ (رحمة الله) মদীনা মুনাওয়ারায় ছাহেবে সালাত ও সালাম, পরিপূর্ণ অভিবাদন প্রাপ্তির মালিক জনাবে রাসূলে খোদা (ﷺ) এর রাওদ্বা মোবারকের সম্মুখে এসে মীলাদ মাহফিলের আয়োজন করতেন এবং উক্ত মাহফিলে খাদ্যের ব্যবস্থা করত: মানুষকে খাওয়াতেন এবং মীলাদ শেষে বলতেন যে, মহান আল্লাহ পাক যদি আমাকে তাওফিক দিতেন, প্রতিদিন আমি মীলাদ মাহফিল পালন করতাম।

☛আল্লামা ইমাম মুল্লা আলী কারী (رحمة الله) বলেন, আমি হতভাগার জন্য মানুষদেরকে যিয়াফতের ব্যবস্থা করতে অক্ষম অভ্যন্তরীনভাবে এক নূরানী যিয়াফত হিসেবে আল্লাহর করুনার বোর্ডে মঞ্জুর হয় এবং কোন বছর, মাস নির্ধারিত ব্যতীত তা আজীবন গ্রন্থাকারে স্বর্ণাক্ষরে লিপিবদ্ধ হয়ে থাকে। এ মানষে আমি উক্ত গ্রন্থকে المورد الروى فى المولد النبوى নামে নামকরন করি।

তবে মীলাদ শরীফকে যাতে খাঁটো করে দেখা না হয়, সেদিকে খেয়াল করা উচিত। যেমন: এ প্রসঙ্গে হাদীস বিশারদগন স্বীয় নির্দিষ্ট গ্রন্থ সমুহে এ ব্যাপারে আলোচনা করেছেন। তন্মধ্যে আল মাওরিদুল হানী গ্রন্থ অন্যতম। তাছাড়া ও দালায়েলুন নবুওয়ত গ্রন্থের বিকলপ নেই। বিখ্যাত মুহাদ্দিস ইমাম ইবনে রজব প্রাণীত লাত্বায়েফুল মা.আরেফ গ্রন্থে ও মীলাদ শরীফের আলোচনা করা হয়েছে। এ গ্রন্থ গুলো মীলাদ শরীফ বৈধ হওয়ার এক বিশাল প্রমাণ।

কেননা আজকাল কিছুকিছু উলামায়ে ছুদের আবির্ভাব ঘটছে, যাদের কথা বার্তা ওয়াজ নছীহত গুলো মিথ্যা ও নতুন নতুন আবিস্কৃত উদ্ভাবনায় জর্জরীত। তারা যে সমস্ত গ্রন্থ রচনা করেছে, তাতে মীলাদ বৈধ হওয়ার আলোচনা তো দূরের কথা বরং তাতে মীলাদ মাহফিল বৈধ হওয়ার নামে নিকৃষ্টতা, কদর্যতায় ভরপুর। যে গ্রন্থগুলোর বর্ণনা ও প্রচলিত ব্যবহার আদৌ বৈধ নয় বিধায় তাদের বর্ণিত মীলাদ মাহফিল অবৈধ বক্তব্যের প্রতিবাদ করা সকলের জন্য ওয়াজিব।

মীলাদ মাহফিলে আলোচিত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো হচ্ছে, তেলাওয়াতে কুরআন, মানুষকে খাদ্য খাওয়ানো, সাদক্বা খায়রাত করা, মাহফিলে রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর প্রশংসা, প্রশংসীত কবিতামালা আবৃত্তি, পরকালের পাথেয় ও কল্যানমুলক কার্য্যের প্রতি হৃদয়ের অগ্রসরতা, ছাহেবে মাওলিদ তথা রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর প্রতি সালাত ও সালাম পেরণ করা ইত্যাদি।

☛জেনে রাখ মহান আল্লাহর নিন্মোক্ত বাণী-

لَقَدْ جَاءكُمْ رَسُولٌ مِّنْ أَنفُسِكُمْ

 “তোমাদের কাছে তোমাদের নিজেদের মধ্য হতে অবশ্যই একজন রাসূল এসেছেন” বাক্য দ্বারা উদ্দেশ্য হচ্ছে অর্থাৎ : তোমাদের নিজেদের মধ্য হতে এসেছেন যিনি, তিনি হচ্ছেন, নুবুওয়ত রেসালাত, আযমত ও জালালতের গুনে গুনান্বিত ও বৈশিষ্টপুর্ণ এক মহান ব্যক্তিত্ব।

বর্ণিত বক্তব্য দ্বারা বুঝানো হয়েছে যে, তিনি পরিপুর্ণ সৌন্দর্য্যের মালিক অথবা তা দ্বারা নবী করীম (ﷺ) এর বক্তব্য كنت نبيا وادم بين الماء الطين অর্থাৎ: আমি তখনও নবী ছিলাম যখন আদম (عليه السلام) মাটি ও পানির সংমিশ্রনে ছিলেন, একথা বুঝানো হয়েছে।

☛বর্ণিত ব্যাখ্যা সম্পর্কে যদিও কোন কোন হাফিজে হাদীসবেত্তাগন নিরবতা অবলম্বন করেছেন তবুও এর মমার্থ বিশুদ্ধ পন্থায় বর্ণিত হয়েছে। তন্মধ্যে ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল, ইমাম বায়হাকী ও হাকীম নিশাপুরী (رحمة الله) তাকে বিশুদ্ধ বলে মত দিয়েছেন। তাঁরা বলেন,

বিশুদ্ধ সনদে হযরত ইরবাদ্ব বিন সারিয়্যা (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত আছে, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এরশাদ ফরমান:

إِنِّي عِنْدَ اللَّهِ مَكْتُوبٌ خَاتِمُ النَّبِيِّينَ ، وَإِنَّ آدَمَ لَمُنْجَدِلٌ فِي طِينَتِهِ

অর্থাৎ: আমি মহান আল্লাহ পাকের দরবারে তখন ও সর্বশেষ নবী হিসেবে লিখিত ছিলাম, যখন পিতা আদম (عليه السلام) কদর্মায় মিশ্রিত ছিলেন। অর্থাৎ আদম (عليه السلام) এর ভেতরে রূহ প্রবেশের পূর্বে মাটির মধ্যে বিক্ষিপ্তভাবে থাকাবস্থায়ও আমি নবী ছিলাম।

☛ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল ও বুখারী (رحمة الله) স্বীয় তারীখ গ্রন্থে আবু নাঈম স্বীয় হুলিয়া গ্রন্থে, হাকীম স্বীয় মুস্তাদরেকে হযরত মাইসারা দ্বাবাঈ (رضي الله عنه) হতে একখানা হাদীস বর্ণনা করেছেন, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ)কে আমি নিবেদন করলাম, হে আল্লাহর রাসূল! আপনি বলে দিন যে, কখন থেকে আপনি নবী ছিলেন? রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বললেন, হে মাইসারা! হযরত আদম (عليه السلام) রূহ ও জিসিম মোবারকের মধ্যে বিদ্যমান থাকাবস্থায়ও আমি নবী ছিলাম।

☛ইমাম বায়হাক্বী (رحمة الله) বলেন, আমি একটি গ্রন্থ প্রনয়ন করেছি, যাতে ইমাম তিরমীজি (رحمة الله) এর বর্ণিত হাদীস ও বিদ্যমান আছে। তিনি স্বীয় গ্রন্থে সাইয়্যিদিনা হযরত আবু হুরায়রা (رضي الله عنه) হতে হাসান সূত্রে একখানা হাদীস বর্ণনা করে বলেন: সাহাবায়ে কেরামগন (رضي الله عنه) রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর দরবারে জানতে চাইলেন হে আল্লাহর রাসূল! আপনি বলে দিন কবে থেকে আপনার নবুওয়ত প্রতিষ্টিত হয়? তিনি বললেন: আদম (عليه السلام) রূহ ও জিসিম মোবারকের মধ্যে থাকাবস্থায়।

☛অন্য হাদীসে এসেছে انا اول الانبياء خلقا واخرهم بعثا অর্থাৎ: সৃষ্টিগত দিক থেকে আমি প্রথম নবী এবং প্রেরীত হওয়ার দিক থেকে সর্বশেষ নবী।

☛সহীহ মুসলিম শরীফে হযরত আমর ইবনুল আস (رضي الله عنه) হতে একখানা হাদীস এসেছে রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এরশাদ করেছেন:

كَتَبَ اللَّهُ مَقَادِيرَ الْخَلائِقِ كُلِّهَا قَبْلَ أَنْ يَخْلُقَ السَّمَوَاتِ وَالأَرْضَ بِخَمْسِينَ أَلْفَ سَنَةٍ-، قَالَ: وَعَرْشُهُ عَلَى الْمَاءِ-. ومن جملة ما كتب فى الذكر- وهو ام اكتاب ان محمدا خاتم النبيين-

অর্থাৎ: মহান আল্লাহ পাক অবশ্যই আসমান ও জমিনসমুহ সৃষ্টির ৫০ হাজার বছর পূর্বে সৃষ্টি কুলের তাক্বদীর লিপিবদ্ধ করেন এমতাবস্থায় তাঁর আরশ ছিল পানির উপর স্থিরকৃত। তখন কুরআন মজীদে যা লিখিত ছিল, তার সারগর্ব ছিল মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাহি ওয়া সাল্লাম হচ্ছেন সর্বশেষ নবী। এর দ্বারা উদ্দেশ্য ছিল মুক্বাররাবীন ফেরেস্তাদের জন্য তাঁর নবুওয়ত প্রকাশ পাওয়া এবং মাক্কামে ইল্লিয়্যীনের সর্বোচ্ছ স্থানে তাঁর রূহ মোবারক উচ্ছাসীত এ জন্য যে তাঁর সুমহান মর্যাদা সবার নিকট পরিজ্ঞাত ও প্রস্পুটিত হয়ে উঠে এবং সমস্ত আম্বিয়া ও রাসূলগনের উপরে তাঁর মর্যাদা ও ব্যবধান প্রকাশ পায় এ প্রয়াসে তাঁকে প্রথম সৃষ্টি করা হয়েছে।

সৃষ্টির ৫০ হাজার বছর র্পূবেকার রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাহি ওয়া সাল্লাম এর রূহ প্রকাশের মতলব হচ্ছে মুকাররাবীন ফেরেস্তাদের সামনে তাঁর নবুওয়ত যাহের করা, মাকামে ইল্লীয়্যিনের উচ্ছ স্থানে তাঁর পবিত্রাত্মা বিদ্যমান থাকার অর্থ হচ্ছে তাঁর অপর মযার্দা ও মহিমা তাঁদেরকে জানিয়ে দেয়া। তাছাড়া সমস্ত আম্বিয়াকুল (عليه السلام ) এর উপর তাঁর সুমহান মর্যাদার পরিধি কতটুকু তা জানিয়ে দেয়াই নবুওয়ত প্রকাশ করার মূল উদ্দেশ্য।

এরপর হযরত আদম (عليه السلام ) দেহ ও আত্মার সংমিশ্রনে থাকাবস্থায় হুযূরে পাক সাল্লাল্লাহু আলাহি ওয়া সাল্লাম এর নুবুওয়াত প্রকাশের কারন হচ্ছে যেহেতু এ সময় হযরত আদম (عليه السلام ) দেহ ও আত্মার সংমিশ্রনে থাকাবস্থায় হুযূরে পাক সাল্লাল্লাহু আলাহি ওয়া সাল্লাম এর নবুওয়াত প্রকাশের কারণ হচ্ছে যেহেতু এসময় হযরত আদম (عليه السلام ) রূহ মোবারক দেহ জগতে প্রবেশের সময় ছিল।

হুজ্জাতুল ইসলাম ইমাম ইবনে হাজার (رضي الله عنه ) স্বীয় “কিতাবুল নাফখে ওয়াত তাসভীয়্যা গ্রন্থে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাহি ওয়া সাল্লাম এর অস্তিত্বের পুর্বেকার মিছালী ছুরতে তাঁর নবুওয়তী বৈশিষ্টসমুহ আলোচনা করতে যেয়ে বলেন: রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাহি ওয়া সাল্লাম এর সকল বৈশিষ্টতার পুর্ণতার বাস্তবায়ন এভাবে হয়েছে যে, হাদীসে বর্ণিত مقادير الخلق দ্বারা হুযূর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর সৃষ্টিকেই প্রথমে বুঝানো হয়েছে। তাঁর আগমনের র্পূবে তিনি বিরাজমান জীব হিসেবে না থাকলেও তাঁর লক্ষ্য, গন্তব্য ও কামালতসমুহ তাকদীরে বিদ্যমান ছিল। হুজ্জাতুল ইসলাম (رضي الله عنه ) আরও বলেন:

اول القكرة اخر العمل واخر العمل اول الفكرة

অতএব রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাহি ওয়া সাল্লাম এর বাণী كنت نبيا দ্বারা উদ্দেশ্য হচ্ছে তাঁর কথা আমি আদম (عليه السلام ) এর সমস্ত দেহাবয়ব সৃষ্টির পূর্বে ও নবী ছিলাম। আর বাস্তবে ও ঐ সময় মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাহি ওয়া সাল্লাম ব্যতীত আর কারও অস্থিত্ব বিদ্যমান ছিলনা। যেমন: ধরে নিন একজন ইঞ্জিনিয়ার সাহেব একটি বাড়ী নিমার্ণের পূর্বে কি কি সরঞ্জামাদীর প্রয়োজন তা ভাল করে জানেন এবং তা নির্মাণে তার পূর্বে পরিকল্পনা থাকে। তদ্রæপ মহান আল্লাহ তাক্বদীর সৃষ্টি করে তার অনুকুলে কিভাবে সৃষ্টি করবেন তা জ্ঞাত আছেন।

ইমাম সুবুকী رضي الله عنه আর চমৎকার কথা বলেছেন যে, দেহ সৃষ্টির পূর্বে রূহ সৃষ্টি করা হয়েছে। তাই হুযূরে পাকের বাণী كنت نبيا বাক্য দ্বারা তিনি স্বীয় রূহ পাকের দিকে অথবা হাক্বীক্বতে মুহাম্মাদীর দিকে ইঙ্গিত করেছেন। আর প্রকৃত পক্ষে হাক্বীক্বতে মুহাম্মাদী সাল্লাল্লাহু আলাহি ওয়া সাল্লাম সর্ম্পকে কেবল আল্লাহ পাক ছাড়া দ্বিতীয় কেউই জানেনা।

এর পরে মহান আল্লাহ পাক রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাহি ওয়া সাল্লাম এর হাক্বীক্বত থেকে প্রত্যেকের হাক্বীক্বতকে যে সময়ে বা যে হালতে ইচ্ছা প্রদান করেছেন। অতএব হাক্বীকতে মুহাম্মদী আদম (عليه السلام ) কে সৃষ্টি করার প্রাক্ষালেও বিদ্যমান ছিল। ফলে মহান আল্লাহ পাক হাক্বীক্বতে মুহাম্মাদীকে ঐ গুনে গুনাম্বিত করে সর্ব প্রকার ফয়েজে রাব্বানী দান করে নবী হিসেবে রূপদান করেন। এরপর আরশে আজীমে তাঁর মোবারক নাম লিপিদ্ধ করেন, যাতে তাঁর দরবারে তাঁর হাবীবে পাকের সম্মান মর্যাদা ও বড়ত্ব যে কতটুকু তা সকল ফেরেস্তা ও অন্যান্যরা জানতে সক্ষম হয়।

অতএব, সন্দেহাতীতভাবে বলা যায় যে, ঐ সময় হতেও হাক্বীক্বতে মুহাম্মাদী সাল্লাল্লাহু আলাহি ওয়া সাল্লাম বিদ্যমান ছিল।

স্বীয় জননী মা আমেনা (رضي الله عنه) এর গর্ভে তার দেহাবয়বকে পূর্ণাকৃতি ধারণ করে ধরণীর বুকে আগমন যদিও বিলম্বে হয়েছে, তথাপি তার নবুওয়াতীর গুরূ দায়ীত্বভার প্রজ্ঞার্পূণ নির্দেশনা, হাকিকতে মুহাম্মদীর গুঢ় রহস্যাবলীর সকল ব্যশিষ্টসমুহ এবং তাঁর পূর্ণতার বিকাশ সাধন যুগে যুগে দ্রুত কার্য়কর বা বলবত ছিল। এবং এতে বিলম্বের কোন অবকাশ নেই।

ইমাম কাস্তালানী (رضي الله عنه ) বলেন, মহান আল্লাহ পাক যখন তাঁর সৃষ্টি কুল ও তাদেঁর রিযিকের তাক্বদীর সৃষ্টি ঝুলন্ত রাখলেন ঠিক তখনই তিনি হাক্বীক্বতে মুহাম্মদী সাল্লাল্লাহু আলাহি ওয়া সাল্লামকে প্রকাশ করে নিজের সম্মুখে রাখলেন, তখন থেকেই আহমদী নূরের আলোকে ৮০ হাজার আলমের ঊর্ধ্ব ও নিম্নস্থান আলোকিত হয়ে যায়, এরপর মহান আল্লাহ পাক তাঁর হাবীবে কিবরিয়া সাল্লাল্লাহু আলাহি ওয়া সাল্লামকে নবুওয়তের বিষয় অবগত করত রেসালতের শুভ সংবাদ দেন। অথচ ঐ সময় হযরত আদম (عليه السلام ) ছিলেন রূহ ও দেহের মধ্যখানে অবস্থিত। এরপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাহি ওয়া সাল্লাম এর দৃষ্টি সকল আত্মার প্রতি প্রবাহিত হলো।

সকল সৃষ্টি প্রাণবন্ত হলো  
____________________
সকল সৃষ্টি প্রাণবন্ত হলো

এরপর মালায়ে আলায় তাঁকে প্রকাশ করা হলো। সেখানে তিনি দীর্ঘ দৃষ্টি দিলেন, ফলে সকল সৃষ্টি প্রানবন্ত হলো। ঐ সময়ই রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাহি ওয়া সাল্লামকে সকল জাতির সর্বোচ্ছে ওকে শ্রেষ্ট জাতি হিসেবে নির্বাচন করা হলো। এমনকি প্রকৃত পক্ষে তাঁকে ঐ সময়ই সমগ্র মানব দানব ও সৃষ্টি কুলের আবুল আকবার বা সুবৃহৎ পিতা হিসেবে নির্বাচন করা হলো।

যখন হুযূরে পাক সাল্লাল্লাহু আলাহি ওয়া সাল্লাম এর বাতেনী নাম আকৃতির মেয়াদ অর্থাৎ: মিছালী ছুরতে থেকে জিসমানী ছুরতে প্রকাশের সময় ঘনিয়ে আসলো মহান আল্লাহ পাক তাঁকে যাহেরী ছুরতে এনে মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাহি ওয়া সাল্লাম নাম ধারন করে রূহ ও দেহের সংমিশ্রনে জমিনে প্রেরন করলেন। মোট কথা হলো, মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাহি ওয়া সাল্লাম এর গঠন ও কাঠামো যদিও বিলম্বে প্রকাশ করা হয়েছিল তবুও তাঁর সার্বিক মুল্যায়ন যুগে যুগে পরিচিত হয়ে আসছিল। তাতে সন্দেহের কোন অবকাশ নেই। যেহেতু তিনি হচ্ছেন সমগ্র বিষয়ের গুপ্ত ভান্ডার, সকল বিষয় বাস্তবায়নের আধার। তাঁর ইশারা ব্যতীত কোন কাজ বাস্তবায়িত হতোনা, যুগে যুগে সকল কল্যান ও মঙ্গল তাঁর থেকেই বন্টিত হতো।

একথার সমর্থনে জনৈক কবি কতইনা উত্তম কথা বলেছেন:

الا يابى من كان ملكا وسيدا * وادم بين الماء ولطين واقف

فذاك الرسرل الابطحى محمد* له فى العلا محد تليد وطارف-

 اتى لزمان السعد فى امر المدى * وكان له فى كل عصر مواقف

 اذا رام امرا لايكون خلافه * وليس لذالك الامر فى الكون صارف-

অর্থাৎ: ইমাম মুল্লা আলী ক্বারী (رضي الله عنه ) বলেন:

আবী সাহল কাত্তান (رضي الله عنه ) প্রণীত আমালী গ্রন্থে আছে তিনি হযরত সাহল ইবনে সালেহ আল হামদানী (رضي الله عنه ) হতে বর্ণনা করেন তিনি বলেন: আমি হযরত আবু জাফর মুহাম্মদ বিন আলীকে নিবেদন করি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাহি ওয়া সাল্লাম সর্বশেষ নবী হিসেবে প্রেরীত হওয়া সত্বে ও কিভাবে তিনি সকল নবীর অগ্রে স্থান পেলেন? তিনি বলেন: আল্লাহ পাক যখন আদম (عليه السلام ) সহ সমগ্র বনী আদমের রুহকে একত্রিত করে তাঁর একত্ববাদের স্বীকৃতি গ্রহণ করত: বললেন الست بربكم অর্থাৎ: আমি কি তোমাদের রব নই? তখন সর্বাগ্রে রূহে মুহাম্মদী সাল্লাল্লাহু আলাহি ওয়া সাল্লাম বলেছিলেন بلى হ্যা! আপনি আমাদের রব। এ জন্য তিনি সর্বাগ্রে স্থান দখণ করেন।

হযরত ইবনে সাদ ইমাম শা.বী (رضي الله عنه ) বর্ণনা করেন। তিনি হুযূর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে নিবেদন করেন হে আল্লাহর রাসূল! কবে থেকে আপনি নবী ছিলেন? জবাবে তিনি বললেন: وادم بين الروح و الجسد অর্থাৎ আদম (عليه السلام ) রূহ ও দেহাবয়বের মধ্যখানে থাকাবস্থায় আমি নবী ছিলাম। বর্ণনাকারী বলেন হুযূরে পাকের বাণী : حين اخذ منى الميثاق বাক্য দ্বারা হুযূর একথাই বুঝিয়েছেন যে, হযরত আদম (عليه السلام ) এর গঠন ও অবকাঠামো গঠনের পর তাঁর ভেতর থেকে আমার নূরে মুহাম্মাদীকে বের করে এনে সর্বপ্রথম আমার থেকে আল্লাহ পাক তাঁর একত্ববাদের স্বীকৃতি গ্রহন করেন। এরপর পুন:রায় নূরে মুহাম্মদীকে তাঁর পৃষ্টদেশে ফিরিয়ে নেন, যাতে করে আদম (عليه السلام ) এর ধীরতা ও শান্ত ভাব জন্মে।

এতএব, হুযূরে পাক সাল্লাল্লাহু আলাহি ওয়া সাল্লাম হচ্ছেন সৃষ্টি কুলের প্রথম সৃষ্টি যে সময় আদম (عليه السلام ) এর সৃষ্টি মৃত প্রায় ছিল, যখন তাঁর রূহে পাকের কোন অস্তিত্বই ছিলনা তখন ও রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাহি ওয়া সাল্লাম জীবিত ও প্রানবন্ত ছিলেন এবং প্রথম তাঁর থেকে অঙ্গীকার গ্রহন করা হয়েছিল বিধায় সৃষ্টিগত ধারাবাহিকতায় তিনি ছিলেন প্রথম নবী এবং প্রেরীত হওয়ার ধারাবাহিকতায় তিনি হচ্ছেন সর্বশেষ নবী।

তাফসীরে ইবনে কাছীরে বর্ণিত ইমাম ইবনে কাছীর দিমাশকী (رضي الله عنه ) হযরত আলী ও ইবনে আব্বাস (رضي الله عنه ) দ্বয়ের বর্ণিত হাদীস উল্ল্যেখ করত: বলেন তাঁরা বলেন: আয়াতে বর্ণিত وَإِذْ أَخَذَ اللّهُ مِيثَاقَ النَّبِيِّيْنَ দ্বারা উদ্দ্যেশ্য হচ্ছে যে, মহান আল্লাহ পাক ততক্ষন পর্যন্ত কোন নবীকে নবুওয়তী দান করেননি অতক্ষন পর্যন্ত না তাঁরা হুযূরে পাক সাল্লাল্লাহু আলাহি ওয়া সাল্লাম এর নবুওয়তী স্বীকার করত: যদি তিনি তাদেঁর মধ্যে আসেন অথবা জীবিত থাকেন এবং তাঁরা তাঁকে সাহায্য করবে এবং ঈমান আনয়ন করবে এ অঙ্গিকার দিবে।

অর্থাৎ: হুযূরে পাকের প্রতি তাঁদের ঈমান আনয়ন করত: সাহায্য করার অঙ্গীকারের শর্তে তাঁদেরকে নবুওয়তী প্রদান করা হয়েছে।

এবং এ শর্তেও নবুওয়তী প্রদান করা হয়েছে যে, তাঁরা যাবত স্বীয় সমপ্রদায়ের কাছে তাঁর নবুওয়তীর স্বীকৃত্তি ও ঈমান গ্রহণ করে।

ইমাম ছুবকী (رضي الله عنه ) বর্ণিত আয়াত وَإِذْ أَخَذَ اللّهُ مِيثَاقَ النَّبِيِّيْنَ দ্বারা একথা বুঝিয়েছেন যে, আয়াতে যখন সমস্ত নবীদের থেকে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাহি ওয়া সাল্লাম এর প্রতি ঈমান আনয়ন ও তাঁকে সাহায্য করার স্বীকৃতি নে য়া হয়েছে সেহেতু তাঁরা সকলেই তাঁর উম্মতভূক্ত হয়ে গেলেন বিধায় যুগে যুগে নবী হিসেবে তাঁর মিছালী অস্থিত্ব বিরাজমান ছিল। আর একারনেই তাঁর নবুওয়ত রেসালত আদম (عليه السلام ) থেকে নিয়ে ক্বেয়ামত অবধি তথা সমগ্র সৃষ্টি কুলের জন্য ব্যাপকতায় পরিনত হয়ে গেল। তিনি যে সমগ্র নবীগণ ও তাদেঁর সমপ্রদায়ের নবী ছিলেন তার বাস্তবতা পাওয়া যায় স্বীয় বাণী হতে: তিনি বলেন: وبعثت الى الناس كافة অর্থাৎ: সমগ্র মানব জাতির হেদায়েতে আমার প্রেরিত হওয়াই যতেষ্ট। এর আরও সমর্থন মিলে তাঁর অমীয় বাণী : كُنْتُ نَبِيًّا وَآدَمُ بَيْنَ الرُّوحِ وَالْجَسَدِ বাক্য দ্বারা।

এখন যদি প্রশ্ন করা হয় যে, কেয়ামতের ভয়াল মাঠে সমগ্র নবীগণ (عليه السلام ) তাঁর লেওয়ায়ে হামদের পতাকাতলে অবস্থান করবেন অথবা মেরাজ রজনীতে সকলের জন্য তিনি কর্তৃক সালাত পাঠ করার হেকমত কি? গ্রন্থকার (رضي الله عنه ) এর প্রতিউত্তরে বলেন: এ বিষয়ে ইমাম ফখরুদ্দিন রাজী (رضي الله عنه ) এর বক্তব্যই প্রণিধানযোগ্য। তিনি বলেন: মহান আল্লাহর নিন্মোক্ত বাণী-

تَبَارَكَ الَّذِي نَزَّلَ الْفُرْقَانَ عَلَى عَبْدِهِ لِيَكُونَ لِلْعَالَمِينَ نَذِيراً

অর্থাৎ: বরকতপূর্ণ সে মহান খোদা পাক, যিনি ফুরক্বান তথা পবিত্র কুরানে পাকে তাঁর স্বীয় বান্দাহ মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাহি ওয়া সাল্লাম র প্রতি এজন্য অবতীর্ণ করেছেন, যাতে করে তিনি সমগ্র বিশ্ববাসীর জন্য ভীতি প্রদর্শণকারী হন। বর্ণিত আয়াতে পাকে সমগ্র বিশ্ববাসী বলতে ফেরেস্তাকুল সহ ৮০ হাজার আলমের ৫০ বা ১৮ হাজার জীবকে অন্তভূর্ক্ত করা হয়েছে। অর্থাৎ: তিনি এ সবেরও ভীতি প্রদর্শনকারীরূপে আগমন করেছেন, কেবল মানব জাতীর জন্য সীমাবদ্ধ নয়।

প্রথম সৃষ্টি নূরে মুহাম্মদী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম 
____________________
প্রথম সৃষ্টি নূরে মুহাম্মদী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম 

ইমাম মুল্লা আলী কারী رضي الله عنه বলেন:-

হযরত আব্দুর রাজ্জাক (رضي الله عنه ) স্বীয় গ্রন্থে হযরত জাবের ইবনে আব্দুল্লাহ (رضي الله عنه ) হতে বিশুদ্ধ সনদে একখানা হাদীস বর্ণনা করেন হযরত জাবের ইবনে আব্দুল্লাহ আনছারী (রা.) বলেন: আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাহি ওয়া সাল্লামকে নিবেদন করলাম হে আল্লাহর হাবীব! আমার মাতা-পিতা আপনার প্রতি কুরবান হোন। আপনি আমাকে এ সংবাদ দান করুন যে, মহান আল্লাহ পাক সকল কিছুর পূর্বে কোন জিনিস সৃষ্টি করেছেন? জাবাবে হুযূরে পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন:

أخرج عبد الرَّزَّاق بِسَنَدِهِ عَن جَابر بن عبد الله الْأنْصَارِيّ رَضِي الله عَنْهُمَا قَال قلت: يَا رَسُول اللهِ بِأبي أَنْت وَأمي أَخْبرنِي عَن أوّل شَيْء خلقه الله قبل الْأَشْيَاء؟ قَالَ: يَا جَابر إِن الله خلق قبل الْأَشْيَاء نور نبيك مُحَمَّد صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ من نوره فَجعل ذَلِك النُّور يَدُور بِالْقُدْرَةِ حَيْثُ شَاءَ الله، وَلم يكن فِي ذَلِك الْوَقْت لوح وَلَا قلم وَلَا جنَّة وَلَا نَار وَلَا ملك وَلَا سَمَاء وَلَا أَرض وَلَا شمس وَلَا قمر وَلَا إنس وَلَا جن، فَلَمَّا أَرَادَ الله تَعَالَى أَن يخلق الْخلق قسم ذَلِك النُّور أَرْبَعَة أَجزَاء: فخلق من الْجُزْء الأوّل الْقَلَم، وَمن الثَّانِي اللَّوْح، وَمن الثَّالِث الْعَرْش، ثمَّ قسم الْجُزْء الرَّابِع أَرْبَعَة أَجزَاء: فخلق من الأول حَملَة الْعَرْش، وَمن الثَّانِي الْكُرْسِيّ، وَمن الثَّالِث بَاقِي الْمَلَائِكَة ثمَّ قسم الرَّابِع أَرْبَعَة أَجزَاء: فخلق من الأول نور أبصار الْمُؤمنِينَ، وَمن الثَّانِي نور قُلُوبهم وَهِي الْمعرفَة بِاللَّه وَمن الثَّالِث نور أنسهم وَهُوَ التَّوْحِيد لَا إِلَه إِلَّا الله مُحَمَّد رَسُول اللهِ صلى الله عَلَيْهِ وَسلم) - الحديث- هكذا فى المواهب اللدنية كان مرويا-

অর্থাৎ: তিনি বলেন হে জাবের (رضي الله عنه) নিশ্চয় আল্লাহ পাক সব কিছুর পূর্বে তোমার নবীর ‘নূর’ মোবারক সৃষ্টি করেন।

(অথার্ৎ আল্লাহ পাক এর প্রথম সৃষ্টি হচ্ছে নূরে মুহাম্মদী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম।) অত:পর সে ‘নূর’ মোবারক আল্লাহ পাক এর ইচ্ছা অনুযায়ী কুদরতিভাবে ঘুরছিল। আর সে সময় লৌহ, কলম, বেহেশত দোযখ, ফেরেস্তা, আসমান, জমীন, চন্দ্র, সুর্য, মানুষ ও জ্বীন কিছুই ছিলনা।

 অত:পর মহান আল্লাহ পাক মাখলুকাত সৃষ্টি করার ইচ্ছা পোষণ করলেন। তখন সে ‘নূর’ মোবারক থেকে একটা অংশ নিয়ে চারভাগ করলেন। প্রথম ভাগ দ্বারা ক্বলম, দ্বিতীয় ভাগ দ্বারা লওহে মাহফুজ, তৃতীয় ভাগ দ্বারা আরশ বহনকারী ফেরেস্তা, সৃষ্টি করেন। অত:পর চতুর্থ ভাগকে আবার চার ভাগে বিভক্ত করেন। প্রথম ভাগ দ্বারা আসমান, দ্বিতীয় ভাগ দ্বারা যমীন, আর তৃতীয় ভাগ দ্বারা বেহেস্ত ও দোযখ সৃষ্টি করেন। নূরের অবশিষ্ট এ চতুর্থ ভাগকে আবার চার ভাগ করেন। প্রথম ভাগ দ্বারা মুমিন বান্দাদের চোখের জ্যোতি, দ্বিতীয় ভাগ দ্বারা তাদের ক্বলবের জ্যোতি, আর তৃতীয় ভাগ দ্বারা মুমিনের উনসের ‘নূর।’

টিকা (শুরু):______________________

হযরত জাবের (রা.) কর্তৃক নূরে মুহাম্মাদী সংক্রান্ত হাদীস বিশুদ্ধ তাতে বিভ্রুান্ত হবার কিছু নেই। তবে হাদীসের মতনের ব্যাপারে কিছু মতানৈক্য থাকলেও ইমাম তিরমীযী (رضي الله عنه ) কর্তৃক বর্ণিত হাদীসের ব্যাপারে কোন দ্বন্দ্ব নেই। হাদীসটি হচ্ছে اول ما خلق الله القلم (সর্ব প্রথম আল্লাহ পাক কলমকে সৃষ্টি করেছেন।) দুই হাদীসের মধ্যে একত্রিকরন এ ভাবে সম্ভব হয়েছে যে, নূরে মুহাম্মাদী সাল্লাল্লাহু আলাহি ওয়া সাল্লাম এর সৃষ্টির পরবর্তী সৃষ্টি হচ্ছে কলম। আর সৃষ্টির ধারাবাহিকতা হিসাবে বলা হয়েছে যে, সর্ব প্রথম নূরে মুহাম্মাদীকে সৃষ্টি করা হয়েছে।

যেমন: বর্ণিত আছে اول ما خلق الله من الانوار نورى (মহান আল্লাহ পাক সর্ব প্রথম সকল নুরের সর্বাগ্রে আমার নূরকে সৃষ্টি করেছেন।) অতএব, উক্ত নূরে মুহাম্মাদী সাল্লাল্লাহু আলাহি ওয়া সাল্লাম প্রমাণিত হয়েছে আলী বিন হুসাইন কর্তৃক বর্ণিত হাদীস দ্বারা। আর তা হচ্ছে যে,

وفى احكام ابن القطان مما ذكره ابن مرزوق عن على بن الحسين عن أبيه عن جده ان النبي صلى الله عليه وسلم قال كنت نورا بين يدي ربي قبل خلق ادم باربعة عشر الف عام وفى الخبر لما خلق الله ادم جعل ذلك النور في ظهره فكان يلمع فى جبينه فيغلب على سائر نوره ثم رفعه على سرير مملكته وحمله على أكناف ملائكته وأمر هم فطافوا به في السموات ليرى عجائب ملوكوته قال جعفر بن محمد مكثب الروح فى رأس ادم مائة عام ثم علمه الله تعالى أسماء جميع المخلوقات ثم أمر الملائكة بالسجود لادم سجود تعظيم وتحية لا سجود عبادة الخ.............

অর্থাৎ - ইবনুল ক্বাত্তানের আহকাম এ বর্ণিত, যা ইবনে মারযুক্ব হযরত আলী ইবনে হোসাইন হতে, তিনি তাঁর পিতা হতে, তিনি তাঁর দাদা হতে, (অর্থাৎ হযরত আলী রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু থেকে) বর্ণনা করেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এরশাদ ফরমান, হযরত আদম (عليه السلام ) কে সৃষ্টি করার ১৪ হাজার বছর পূর্বে আমি আমার রবের নিকট ‘নূর’ হিসেবে ছিলাম। হাদীস শরীফে আছে যে, আল্লাহ যখন হযরত আদম (عليه السلام ) কে সৃষ্টি করলেন, তখন এ ‘নূর’কে তাঁর পৃষ্ঠদেশে রাখলেন। তা তাঁর কপাল মুবারকে চমকাতো। তা তাঁর সকল নূরের মধ্যে বেশী দেখা যেতো। অত:পর সেটাকে তাঁর রাজ্যের সিংহাসনে সমুন্নত করেন এবং তা ফিরিশতাদের কাধের উপর বহন করিয়ে তাদেরকে তওয়াফের নির্দেশ দিলেন। অত:পর তাঁরা সেটা নিয়ে আসমানসমূহে তওয়াফ করেন- সেটাকে ফিরিশতা জগতের আশ্চর্য বিষয়াদি দেখানোর জন্য। হযরত জাফর ইবনে মুহাম্মদ (رضي الله عنه) বলেন, রূহ আদম (عليه السلام ) এর শীর মুবারকে একশ বছর স্থির ছিলো। তাঁর বুক মুবারকে একশ বছর, তাঁর বরকতময় গোছাযুগল ও বরকতময় পদযুগলে একশ বছর ছিলো। অত:পর আল্লাহ তাকে সমস্ত সৃষ্টির নাম শিক্ষা দিলেন। তাঁরপর ফিরিশতাদেরকে আদম (عليه السلام ) কে সিজদা করার আদেশ দেন, যা ছিলো সম্মানসূচক ও অভিবাদন জ্ঞাপক সিজদা, ইবাদতের সিজদা নয়।  

উক্ত হাদীসটি ইমাম হাফিজ আবুল হাসান আলী বিন মুহাম্মাদ ইবনে ক্বাত্তান স্বীয় আহকামে ইবনে ক্বাত্তান স্বীয় নুক্বাদুর হাদীস আল মারুক্বীন গ্রন্থে আলোচনা করেন।

নিন্মোক্ত আয়াতে পাক দ্বারাও নূরে মুহাম্মাদী প্রমাণিত
____________________
নিন্মোক্ত আয়াতে পাক দ্বারাও নূরে মুহাম্মাদী প্রমাণিত।

মহান আল্লাহর বাণী -

قَدْ جَاءكُم مِّنَ اللّهِ نُورٌ وَكِتَابٌ مُّبِينٌ.

অর্থাৎ: তোমাদের কাছে আল্লাহর পক্ষ হতে অবশ্যই একজন এবং স্পষ্ট কিতাব এসেছে। বহু সংখ্যাক উলামা মুহাদ্দেসীনগণ ঐক্যমত পোষণ করেছেন যে, আয়াতে বর্ণিত নূর দ্বারা নূরে মুহাম্মাদী সাল্লাল্লাহু আলাহি ওয়া সাল্লাম এই উদ্দেশ্য। অনূরূপ বর্ণনা পাওয়া যায়, তাফসীরে তাবার্বী, ইবনে আবী হাতীম ও তাফসীরে কুরতুবীতে।

হযরত কাতাদাহ (رضي الله عنه ) ফরমান:

আয়াতে বর্ণিত নূর সন্দেহাতীত ভাবে নূরে মুহাম্মাদীকে বুঝানো হয়েছে।

 তাছাড়া অন্যান্য হাদীসসমুহ দ্বারা বিশুদ্ধ পন্থায় নূরে মুহাম্মাদী এ ভাবে সাব্যস্ত হয়েছে যে, হুযূর পাক সাল্লাল্লাহু আলাহি ওয়া সাল্লাম বলেন: لماولد رأت امه نورا وخرج منه نور اضاءت له قصور الشام অর্থাৎ: তিনি যখন জন্ম লাভ করেন, তখন তাঁর মা জননী একটি নূর দেখতে পান এবং উক্ত নূর পাক থেকে একটি নূর বের হওয়া মাত্রই সমস্ত শাম প্রদেশ পর্যন্ত আলোকিত করে ফেলে। ইমাম ইবনে হাজার (رضي الله عنه ) বলেন: এ হাদীসকে বিশুদ্ধ বলেছেন ইবনে হাব্বান ও হাকীম নিশাপুরী (رضي الله عنه ) দ্বয়।

নূরে মুহাম্মাদী সাল্লাল্লাহু আলাহি ওয়া সাল্লাম প্রমাণিত হওয়ার জন্য ইমাম তাবারানী (رضي الله عنه ) কর্তৃক বর্ণিত একখানা হাদীস রয়েছে। আর তা হচ্ছে এই, ورأيت كأن النور يخرج من فيه অর্থাৎ: আমরা হুযূর সাল্লাল্লাহু আলাহি ওয়া সাল্লাম মুখ মোবারক হতে নূর বের হতে দেখেছি।

হযরত ইবনে আব্বাস (رضي الله عنه ) হতে বর্ণিত: তিনি বলেন: اذا تكلم رئى كالنور يخرج من بين ثناياه অর্থাৎ: হুযূর সাল্লাল্লাহু আলাহি ওয়া সাল্লাম যখন কথা বলতেন, তখন তাঁর ছানায়া নামক দাঁতের ফাক হতে নূর বের হতো। ইমাম যুরক্বানী (رضي الله عنه ) ইমাম মুসলিম ও দারেমী দ্বয়ের(رضي الله عنه ) বর্ণিত হাদীসকে সমর্থন করেন।

ইমাম তিরমীযী (رضي الله عنه ) স্বীয় শামায়েলে হযরত ইবনে আবী হালাহ কর্তৃক নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাহি ওয়া সাল্লাম এর ছিফত বর্ণনা প্রসঙ্গে একখানা হাদীস উল্লেখ করে বলেন له نور يعلوه অর্থাৎ: তাঁর নূর সকল নুরের উর্ধ্বে। সাইয়্যিদিনা হযরত আয়েশা (রা.) হতে বর্ণিত: তিনি বলেন: একদা আমি ঘরে বসা ছিলাম এমন সময় হুযূর পাক সাল্লাল্লাহু আলাহি ওয়া সাল্লাম ঘরে প্রবেশ করে স্বীয় জুতো মোবারক খুলতেছিলেন, তখন তাঁর পেশানী মোবারক হতে অবিরত ঘাম নির্গত হলো এবং একেকটি ঘামে একেকটি নূর বিচ্ছুরীত হচ্ছিল। তা দেখে আমি বললাম আমি বুঝতে পারছি। হুযূর পাক সাল্লাল্লাহু আলাহি ওয়া সাল্লাম আমাকে বললেন তুমি বুঝেছো? আমি বললাম হে রাসুল আপনার ললাট হতে অবিরত ঘাম পড়ছে এবং একেকটি ঘামে এককটি নূর তৈরী হচ্ছে। আমার মনে হয় এই মুহুর্তে যদি আবু কবীর হুযালী আপনার এ অবস্থা দর্শন করতো, তবে অবশ্যই যে আপনাকে শ্রেষ্ট বলে জানতো।

 যেমন: সে কবিতা আবৃত্তি করেছিল আপনার শানে এ ভাবে:

ومبرأ من كل غبر حيضة — وفساد مرضعة وداء مغيل

وإذا نظرت إلى أسره وجهه — برقت بروق العارض المتهلل

অর্থাৎ:- সর্ব প্রথম নূরে মুহাম্মাদী সাল্লাল্লাহু আলাহি ওয়া সাল্লাম এর সৃষ্টি বিষয়ক দলীল পাওয়া যায় হযরত আব্দুল্লাহ বিন আমর ইবনুল আস রা.এর হাদীস থেকে। তিনি বলেন, হুযূর পাক সাল্লাল্লাহু আলাহি ওয়া সাল্লাম এরশাদ ফরমান:

ان الله عزوجل كتب مقادير الخلق قبل ان يخلق السموات والارض بخمسين الف سنة وكان عرشه على الماء ومن جملة ما كتب فى الذكر وهو ام الكتاب ان محمدا خاتم النبيين-

অর্থাৎ: নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ পাক সাত আসমান ও সাত জমীন সৃজনের প্রায় ৫০ হাজার বছর পূর্বে সৃষ্টি জীবের তাকদীর লিপিবদ্ধ করেন। এ সময় তাঁর আরশ ছিল পানির উপর স্থীরকৃত কিতাবে বর্ণিত ছিল (মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাহি ওয়া সাল্লাম হচ্ছেন সর্বশেষ নবী।) ইমাম মুসলিম (رضي الله عنه ) এ হাদীস বর্ণনা করেন।

অন্য বর্ণনা এ ভাবে এসেছে: انى عبد الله خاتم النبيين وان ادم لمنبحدل فى طينته অর্থাৎ: আমি অবশ্যই তখন হতে আল্লাহর বান্দাহ, সর্বশেষ নবী, যখন আদম (عليه السلام ) কাঁদা মাটির সংমিশ্রনে ছিলেন।

হুযূর পাক সাল্লাল্লাহু আলাহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: كنت نبيا ولا ادم ولاماء ولاطين (আমি তখন ও নবী ছিলাম, যখন আদম (عليه السلام ) সহ মাটি ও পানির কোন অস্তিত্ব ছিলনা। ইবনে হাজার (رضي الله عنه ) এই বর্ণনাকে জঈফ বলেছেন তিনি পুর্বোক্ত হাদীসকে শক্তিশালী সনদ বলে মত দিয়েছেন।

ইমাম ইবনে সুদ্দী (رضي الله عنه ) বহু সনদ সহকারে বর্ণনা করেন যে, মহান আল্লাহ পাক পানি সৃষ্টির পূর্বে কোন কিছু সৃষ্টি করেননি। অতএব, প্রতীয়মান হলো যে, সাধারন ভাবে সর্ব প্রথম মহান আল্লাহ পাক নূরে মুহাম্মাদী সাল্লাল্লাহু আলাহি ওয়া সাল্লামকে সৃষ্টি করেন, তারপর পানি, তারপর সুবিশাল আরশে আযীম এবং সর্ব শেষ ক্বলম সৃষ্টি করেন। সুতরাং নূরে মুহাম্মদী সাল্লাল্লাহু আলাহি ওয়া সাল্লাম ছাড়াও সর্ব প্রথম পানি, তারপর আরশ, তারপর ক্বলমের আলোচনা মুলত: আনুষঙ্গিক কথা মাত্র।

যেমন: হাদীসে এসেছে اول ما خلق الله للعرش সর্ব প্রথম আল্লাহ পাক আরশকে সৃষ্টি করেছেন একথা যেমন সত্য তেমনি সর্বপ্রথম পানি সৃষ্টি করেছেন একথাও মিথ্যা নয়। তবে তাহলে উভয়ের মধ্যকার সমাধান হবে এ ভাবে, মহান আল্লাহ পাক আরশকে প্রথমে সৃষ্টি করেছেন ঠিকই কিন্তু আরশকে পানির উপরে স্থীর রেখেছেন একথা ও ধু্রব সত্য । তাই আরশকে সেথায় স্থাপন করার প্রয়োজন যে স্থান পূর্বে সৃষ্টি করার অতি প্রয়োজন বিধায় আরশের পূর্বে পানিকে সৃষ্টি করা হয়েছে। এ জন্য পানি সৃষ্টি হচ্ছে আরশ সৃষ্টি সবব বা মুল কারন এবং আরশ হচ্ছে মুছাব্বাব বা যাকে কেন্দ্র করা হয়েছে। তাই বলে একথা বলা যাবেনা যে, আরশের চেয়ে পানি অতি দামী।

যাই হোক মহান আল্লাহ পাক নূরে মুহাম্মদী সাল্লাল্লাহু আলাহি ওয়া সাল্লামকে সৃষ্টি করে সেই নূরে পাককে হযরত আদম (عليه السلام ) এর পিষ্ট মোবারকে স্থাপন করে রাখেন, ফলে তাঁর ললাট মোবারক ঐ নূরে আলোকে চকচক করতে থাকে। অত:পর উক্ত নূরে মুহাম্মদী সাল্লাল্লাহু আলাহি ওয়া সাল্লামকে মহান আল্লাহ পাক তাঁর সুবিশাল সাম্রাজ্যের বিশাল সিংহাসনে উঠিয়ে ফেরেস্তাকুলের স্কন্ধে বহন করত: সমগ্র পৃথিবীতে তাঁকে নিয়ে প্রদক্ষিণ করানোর জন্য ফেরেস্তাকুলকে নির্দেশ প্রদান করেন ফলে তাঁরা তাঁকে নিয়ে ৮০ হাজার জগত প্রদক্ষিণ করেন আল্লাহ পাকের সুবিশাল সাম্রাজের অদ্ভুদ বিষয় অবলোকন করার জন্যে।

ইমাম জাফর ইবনে মুহাম্মদ (رضي الله عنه ) বলেন: আল্লাহ পাক হযরত আদম (عليه السلام ) এর রূহ মোবারক সৃষ্টি করার পর উক্ত রূহে পাক তাঁর মাথা মোবারকে একশত বছর অবস্থান করে, তারপর স্বীয় বক্ষে একশত বছর, স্বীয় পাদুকাদ্বয়ের নলায় একশত বছর, তার পর স্বীয় পাদুকাদ্বয়ে আরও একশত বছর অবস্থান করে।

এরপর মহান আল্লাহ পাক তাঁকে সমগ্র সৃষ্টি জীবের নাম সমূহ শিক্ষা দেন। এর পর তিনি হযরত আদম (عليه السلام ) কে তাযীমী ও অভিবাদানের সেজদাহ করার জন্য সকল ফেরেস্তাগণকে আদেশ দেন। উল্লেখ্য যে, সকল ফেরেস্তাগন কর্তৃক আদম (عليه السلام ) কে সেজদাহ করা মুলত: ইবাদতের মানসে করা হয়নি, যে ভাবে হযরত ইউসুফ (عليه السلام ) এর ভ্রাতাগণ কর্তৃক তাঁকে সেজদাহ করেছিল বরং এ সেজদাহ ছিল তা,যীমী সেজদাহ। বাস্তবে সেজদাহ করা হয়েছেল মহান আল্লাহ পাককে : যেহেতু তিনি হচ্ছেন মাসজুদ বা সেজদা পাওয়ার অধিকারী আর আদম (عليه السلام ) ছিলেন আল্লাহকে সেজদাহ করার ক্বিবলাহ মাত্র।

সাইয়্যিদিনা হযরত ইবনে আব্বাস (رضي الله عنه ) হতে বর্ণিত: তিনি বলেন: ফেরেস্তা কর্তৃক হযরত আদম (عليه السلام ) কে সেজদাহ করনের সময় ছিল সুর্য পশ্চিম আকাশে হেলে পড়ার সময় হতে আছর পর্যন্ত।

এরপর মহান আল্লাহ পাক হযরত আদম (عليه السلام ) কে ঘুমন্ত অবস্থায় তাঁর জীবন সঙ্গীনী হিসেবে হযরত হাওয়া (عليه السلام ) কে তাঁর বাম পাজরের হাড্ডি থেকে সৃষ্টি করেন এবং তাঁর নাম করন করেন হাওয়া (عليه السلام )। হাওয়া হিসেবে নাম করনের কারন যেহেতু তাঁকে প্রাণ শক্তি দিয়ে একেবারে বিনম্র ও লজ্জাশীলা করে সৃষ্টি করা হয়েছে।

হযরত আদম (عليه السلام ) ঘুম থেকে জাগ্রত হয়ে বিবি হাওয়াকে দেখা মাত্রই তাঁর পাশের্ব যেয়ে অবস্থান করেন এবং অবশেষে তাঁর দিকে হাত বাড়িয়ে দেয়ার চেষ্টা করা মাত্রই ফেরেস্তারা তাঁকে সম্বোধন করে বললেন: ও হে আদম থাম! তিনি বললেন: কেন? ওকে তো আমারই জন্যে সৃষ্টি করা হয়েছে। তাঁরা বললেন! ওর মহরানা আদায় না করা পর্যন্ত ওকে স্পর্শ করতে পারবে না। এবার তিনি বললেন: তাহলে বলুনতো ওর মহরানা হিসেবে কি দিতে পারি? ফেরেস্তারা বললেন: ওহে আদম (عليه السلام ) আপনি সর্বশেষ ও সর্বশ্রেষ্ট নবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাহি ওয়া সাল্লাম এর প্রতি তিন বার দুরুদ পাঠ করুন, তবেই তাঁর মহরানা আদায় হয়ে যাবে।

ইমাম ইবনুল কাইয়্যুম জাওযী (رضي الله عنه ) এর মতে হযরত আদম (আ.) মা হাওয়া (عليه السلام ) এর নিকটবর্তী হতে চাইলে মা হাওয়া বললেন: আপনি মহর আদায় করুন। একথা শ্রবনে তিনি ফরিয়াদ করেন ওহে মাওলা! আমি হাওয়ার মহর হিসেবে কি দিতে পারি?

মহান আল্লাহ পাক বললেন: ওহে আদম! তুমি আমার প্রিয় হাবীব হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাহি ওয়া সাল্লাম এর প্রতি বিশ বার দরুদ পাঠ কর, তবেই তাঁর মহর আদায় হয়ে যাবে। আল্লাহ পাকের নিদের্শ মোতাবেক তিনি বিশ মরতবা দরুদ শরীফ পাঠ করেন।

আমি (মুল্লা আলী ক্বারী) বলবো আদম (عليه السلام ) কর্তৃক হুযূর পাক সাল্লাল্লাহু আলাহি ওয়া সাল্লাম এর প্রতি তিন বার দরু শরীফ পাঠ করা ছিল মহরে মুরাজ্জাল বা তাৎক্ষনিক মহর এবং বিশ বার পাঠ করা ছিল মহরে মুহাজ্জাল বা বিলম্ব মহর।

সাইয়্যিদিনা হযরত ওমর ফারুক (رضي الله عنه ) বলেন: হুযূর পাক সাল্লাল্লাহু আলাহি ওয়া সাল্লাম এরশাদ ফরমান: হযরত আদম (عليه السلام ) কর্তৃক একটি ক্রটি প্রকাশ পাওয়ায় তিনি সুদীর্ঘ তিন শত বছর ক্রন্দন করে একদা হযরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাহি ওয়া সাল্লাম এর উসিলা নিয়ে এই বলে প্রার্থনা জানালেন:

عبد الرحمن بن زيد بن أسلم عن أبيه عن جده عن عمر بن الخطاب قال قال رسول الله لما اقترف آدم الخطيئة قال يا رب اسألك بحق محمد لما غفرت لي فقال الله عز وجل يا آدم وكيف عرفت محمداً ولم أخلقه ? قال لأنك يارب لما خلقتني بيدك ونفخت في من روحك رفعت رأسي فرأيت على قوائم العرش مكتوباً لا إله إلا الله محمد رسول الله فعلمت أنك لم تضف إلى إسمك إلا أحب الخلق إليك فقال الله عز وجل صدقت يا آدم إنه لأحب الخلق إليّ وإذ سألتني يحقه فقد غفرت لك ولولا محمد ما خلقتك تفرد به عبد الرحمن بن زيد بن أسلم من هذا الوجه عنه وهو ضعيف والله أعلم.

অর্থাৎ: হে রব! আমি আপনার দরগাহে হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাহি ওয়া সাল্লাম এর উসিলা নিয়ে প্রার্থনা করছি অতএব আপনি আমাকে ক্ষমা করুন আল্লাহ পাক বললেন: ওহে আদম! কিভাবে তুমি মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাহি ওয়া সাল্লামকে পরিচয় করলে অথচ আমি তো তাঁকে এখন ও সৃষ্টি করিনি। তিনি বললেন: হে রব! যেহেতু আপনি আমাকে স্বীয় কুদরতী হাতে সৃষ্টি করে আমার ভেতরে রূহ প্রবেশ করানোর পর আমি আমার মাথা মোবারক আকাশের দিকে উত্তলন করে দেখি আরশের প্রতিটি পায়াতে লিখিত রয়েচে لا له الا الله محمد رسول الله এই পবিত্র কালেমাটুকু।

তা দর্শনে আমি জানতে পরি যে, আপনি স্বীয় নামের সঙ্গে যে নাম মোবারক সংযুক্ত করে রেখেছেন তিনি হচ্ছেন আপনার নিকট সৃষ্টির শ্রেষ্ট ও প্রিয় মানব। এবার মহান আল্লাহ পাক তাঁকে বললেন: ওহে আদম! তুমি যা বললে সব কিছুই সত্য। কেননা বাস্তবিকই তিনি আমার নিকট সর্বশ্রেষ্ট ও মহাপ্রিয় ব্যক্তিত্ব। তাই তুমি যখন আমার দরবারে তাঁর উসিলা নিয়ে প্রার্থনা করেছ, তখন আমি তোমাকে ক্ষমা করে দিয়েছি। জেনে রাখ! মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাহি ওয়া সাল্লাম যদি না হতেন, তবে আমি তোমাকেও সৃষ্টি করতামনা।

ইমাম বায়হাক্বী (رضي الله عنه ) উক্ত হাদীসটি স্বীয় দালায়েলুন নুবুওয়তে হযরত আব্দুর রহমান বিন যায়েদ বিন আসলাম (رضي الله عنه ) এর হাদীস হতে বর্ণনা করেন। ইমাম আবু আব্দুল্লাহ হাকীম নিশাপুরী রা.উক্ত হাদীসকে বর্ণনা করত: তাকে সহীহ বলে অভিমত পেশ করেছেন। ইমাম তাবারানী (رضي الله عنه ) ও এ হাদীসটি বর্ণনা করেন। তবে তিনি হাদীসে وهو اخر الانبياء من ذريتك (তিনি আপনার বংশধরদের মধ্যকার সর্বশেষ নবী) কথাটি বর্ধিত করেন।

ইবনে আসাকীরের মতে সালমান ফারসী রা.এর হাদীসে এসেছে, তিনি বলেন: হযরত জিব্রাঈল (عليه السلام ) হুযূর পাক সাল্লাল্লাহু আলাহি ওয়া সাল্লাম এর নিকট এসে নিবেদন করেন হে আল্লাহর রাসুল! আপনার প্রতিপালক বলেছেন-

ان كنت اتخذت ابراهيم خليلا فقد اتخذتك حبيبا

অর্থাৎ: যদিও আমি ইব্রাহীমকে খলীল হিসেবে গ্রহন করেছি, তবুও আপনাকে হাবীব হিসেবে গ্রহন করেছি। আর আমি আপনার চেয়ে অত্যাধিক সম্মানীত ওশ্রেষ্ট জীব আর কাউকেও সৃষ্টি করিনি। আমি এই ভূমন্ডল ও নব মন্ডল সৃষ্টি করেছি এই উদ্দেশ্যে যে, যাতে করে তারা চিন্তে ও বুঝাতে পারে যে, আমার নিকট আপনার সম্মান ও মর্যাদা কতটুকু! আর যদি আপনি এ ধরাধামে না আসতেন তবে এই বিশ্বভ্রুান্ডের কিছুই সৃষ্টি করা হতোনা।

যেমন: এ প্রসঙ্গে আমার সাইয়্যিদ আলী আল ওয়াফেদী চমৎকার একটি কবিতাবৃত্তি করেছেন।

سكى وافؤاد فمش هنيئا ياحبسد هذا النعيم هو النعيم الى الأبد

روح الوجود خيال من هو واحد - لولاه ماتم الوجود لمن وجد

عيسى وادم والصدور جميعهم - هم أعين هو نورها لما ورد-

১। অর্থাৎ : যদি ইবলিশ শয়তান আদমের চেহারায় তাঁর নুরের আভা উদিত দেখতে পেতো, তবে সে হতো প্রথম সেজদাহকারীর অন্তর্ভুক্ত ।

২। অথবা যদি পাষান্ড নমরুদ তাঁর সৌন্দর্যের নূর দেখতে পেতো, তবে খলীলের সঙ্গে জলীলের উপাসনা করতো, না হতো অবাধ্য।

৩। কিন্তু আল্লাহর সৌন্দর্য উম্মোচিত, তা দেখা যায় না। কেবল মাত্র তাঁর বিশেষ ব্যক্তিবর্গ ব্যতিত।

উল্লেখ্য যে, মহান আল্লাহ পাক বিবি হাওয়াকে (عليه السلام ) সৃষ্টি করেছেন কেবল আদম (عليه السلام ) এর সঙ্গে বসবাসের জন্য এবং আদম বিবি হাওয়ার নিকট গমনাগমনের জন্য। সুতরাং তিনি যখন হাওয়া (عليه السلام ) এর সাথে মিশ্রিত হলেন ক্রমান্বয়ে তাঁর সমস্ত ফয়েজ ও বরকত বিবি হাওয়ার ভেতরে এসে উদগিত হলো। ফলে গর্বে বিশ জোড়ায় মোট চল্লিশ জন নারী পুরুষ জন্ম লাভ করে।

তন্মধ্যে তাঁর সন্তানদের মধ্যকার হযরত শীষ (عليه السلام ) কে নবুওয়াতী আলো দিয়ে সম্মানীত করেন। আদম (عليه السلام ) এর সন্তানদের মধ্যকার শীষ (عليه السلام ) থেকে প্রথম নবুওয়তের সূর্য উদিত হয় এবং নূরে মুহাম্মদী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ক্রমান্বয়ে আগমন শুরু হয়। সুতরাং হযরত আদম (عليه السلام ) এর ইন্তেকাল মুহুর্ত স্বীয় সন্তান হযরত শীষকে (عليه السلام ) নূরে মুহাম্মাদী সংরক্ষণের অসীয়ত প্রদান করেন এবং শীষ (عليه السلام ) ও স্বীয় পিতার অসীয়ত পুরন করেন। তাঁর তীরোধানের পূর্ব মুহুর্তে তিনি ও পিতার মতো পরবর্তী বংশধরকে নূরে মুহাম্মদী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে হেফাজত করত: উক্ত নূর মোবারককে পবিত্রা রমনীদের গর্বে ধারনের অসীয়ত করে যান।

এভাবে ধারাবাহিক ও বিরতীহীন ভাবে উক্ত অসয়ীত মোবারক প্রবাহমান হয়ে এক যুগ হতে আরেক যুগ পর্যন্ত আসতে আসতে এক পর্যায়ে মহান আল্লাহ পাক উক্ত নূরে মুহাম্মদী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে তাঁর দাদা খাজা আব্দুল মোত্তালেব (رضي الله عنه) হয়ে পিতা আব্দুল্লাহ (رضي الله عنه) এর ঔরসে স্থানান্তরিত করেন আনেন।

আর মহান আল্লাহ পাক নবী বংশকে যুগে যুগে জাহিলিয়্যাতের নির্বোদ্ধিতা হতে পবিত্র রাখেন। যেমন : এ প্রসঙ্গে হুযূর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ফরমান:

 هذا النسبالشريف من سفح والجاهلية شى مولدنى الانكا الاسلام

অর্থাৎ: জাহিলিয়্যাতের নির্বুদ্ধিতায় আমার জন্ম হয়নি বরং যুগে যুগে ইসলামী ধারার বিবাহ প্রথার মাধ্যমেই আমার আগমন ঘটেছে।

ইমাম ক্বাস্তালানী (رضي الله عنه ) বলেন: আরবী ভাষায় سفح শব্দটি সীনের নীচে যের যুগে অর্থ হবে যিনা বা ব্যভিচার। আর আক্ত আলোচনায় সিফাহ দ্বারা উদ্দেশ্য হচ্ছে যে, কোন কোন মহিলা পুরুষের সাথে অবৈধ যৌন সঙ্গমে লিপ্ত হয় দীর্ঘ সময় এর পর চিহিৃত হওয়ার পর সে ঐ মহিলাকে বিয়ে করে।

ঐতিহাসিক ইবেন সা’দ - ইবনে আসাকীয় হিসাম বিন মুহাম্মদ বিন সায়েব আল কালবী হতে তিনি স্বীয় দাদা হতে বর্ণনা করেন, তাঁর দাদা বলেন: আমি একেক করে হুযূর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পূর্ববর্তী (মা আমেনা (رضي الله عنه) সহ প্রায় একশ জন মায়ের কথা লিপিবদ্ধ করেছি কিন্তু তাঁদের কারও মধ্যে পবিত্রতা ছাড়া জাহিলিয়্যাতের অবৈধ ও নিবুর্দ্ধিতার চিহৃ দেখতে পাইনি এমনকি জাহিলিয়্যাতের কোন নিকৃষ্ট কর্মকান্ড ও দেখতে পাইনি।

সাইয়্যিদিনা হযরত আলী (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত: তিনি বলেন: হুযূর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এরশাদ ফরমান: আমি যুগে যুগে যাদের গর্বে স্থানান্তরীত হয়ে এসেছি, তাঁদের সবাই ছিলেন বিবাহিতা। এমনকি আমি বাবা আদম (عليه السلام ) থেকে নিয়ে আমার পবিত্রা পিতা ও পবিত্রা মাতা পর্যন্ত জাহিলিয়্যাতের অবৈধ পন্থায় বের হয়ে আসিনি এবং জাহিলিয়্যাতের কোন নিবুর্দ্ধিতা ও আমাকে স্পর্শ করেনি। এ হাদীসটি ইমাম তাবারানী স্বীয় আওসাত গ্রন্থে এবং আবু নাঈম ও ইবনে আসাকীর স্বীয় গ্রন্থদ্বয়ে বর্ণনা করেন।

হযরত আবু নাঈম رضي الله عنه ইবনে আব্বাস (رضي الله عنه) হতে মারফু সূত্রে একখানা হাদীস বর্ণনা করেন, হুযূর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এরশাদ করেন: لم يلتق ابواى قط على سفحঅর্থাৎ : আমার মাতা-পিতাকে কখনও জাহিলিয়্যাতের নির্বুদ্ধিতা ও অভৈধতায় লিপ্ত হননি বরং ধারাবাহিকভাবে তিনি আমাকে পুত: পবিত্র পুরুষদের মেরুদন্ড হতে পুত: পবিত্রা রমনীদের রেহেম শরীফে স্থানান্তরীত করে স্বচ্ছ ধারায় আনেন ।

এর সমর্থনে পবিত্র কুরআনে পাকে আছে : وتقلبك فى الساجدين.যুগে যুগে আমি আপনাকে সেজদা দানকারীর মধ্যে স্থানান্তরীত করে এনেছি।

ইবনে আব্বাস (رضي الله عنه) বলেন : আয়াতের যথার্থ হচ্ছে : এক নবী হতে অন্য নবী পর্যন্ত আমাকে স্থানান্তরীত করা হয়েছে এমনকি হে রাসুল! আমি আপনাকে শেষ নবী হিসেবে বের করে এনেছি।

ইমাম বাযযার ও আবু নাঈম অনূরূপ বর্ণনা করেছেন। এ ব্যাপারে জাতির সতর্কতার উদ্দেশ্যে বলা যায় যে, হুযুরে পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সমস্ত জাতীগণের মেরুদন্ড হতে স্থানান্তরীত হয়ে আসেন। তবে একথা বুঝানো হয়নি যে, তাঁর পূর্বপুরুষ সকলই নবী ছিলেন। কেননা এ কথা ইজমায়ে উম্মতের সম্পূর্ণ বিপরীত কথা। আর একথাও বলা যায় না যে, তাঁর পূর্ব পুরুষ সকলই মুসলমান ছিলেন বরং অধিকাংশরাই হানিফ তথা আহলে ফিৎরাতের অন্তর্ভূক্ত ছিলেন। তন্মধ্যে খাজা আব্দুল মোত্তালেব (رضي الله عنه) হযরত ইব্রাহীম (عليه السلام ) এবং তাঁর মাতা পিতা প্রমুখরা।

তাদের বিধানে সম্পর্কে আমি মুল্লা আলী (رضي الله عنه) স্বতন্ত্র একটি রেসালাত পণয়ন করেছি এবং হুযূরে পাকের মাতা-পিতা সহ সকল আহলে ফিৎরাতের আলোচনা সম্বলিত ইমাম জালালুদ্দিন সুয়ুতী (رضي الله عنه ) কর্তৃক প্রণীত “রেসালায়ে ছালাছা” গ্রন্থের আলোকে বিস্তারিত দলীল সমূহ দ্বারা উপস্থাপন করছি।

টিকা (শেষ):_________০_____________

তৃতীয় ভাগ দ্বারা মুমিনের উনসের ‘নূর- لا اله الا الله محمدرسول الله এর নূর আমি (মুল্লা আলী কারী) বলবো উপরোক্ত নূরে মুহাম্মাদী সাল্লাল্লাহু আলাহি ওয়া সাল্লাম এর নূরের প্রমাণ মিলে নিন্মোক্ত বাণীতে মহান আল্লাহ পাক এরশাদ ফরমান:

 اللَّهُ نُورُ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ مَثَلُ نُورِهِ فِيهَا مِصْبَاحٌ

অর্থাৎ: আল্লাহ পাকই হচ্ছেন আসমান ও জমীনের নূর। আর তাঁর নূরের দৃষ্টান্ত হচ্ছে كَمِشْكَاةٍ فِيهَا مِصْبَاحٌ যেমন : একটি বাতী যেথায় আছে প্রদীপ। বর্ণিত আয়াতে مثل نوره দ্বারা নূরে মুহাম্মাদীকে বুঝানো হয়েছে। নূরে মুহাম্মাদী সাল্লাল্লাহু আলাহি ওয়া সাল্লাম এর পর সর্ব প্রথম কোন জিনিস সৃষ্টি করা হয়েছে? এ ব্যাপারে উলামায়ে কেরামগণের মধ্যে কিছু মতানৈক্য আছে। কেহ কেহ বলেন: সর্বপ্রথম আরশ সৃষ্টি করা হয়েছে। যার বিশুদ্ধ কথা হুযূরে পাকের নিন্মোক্ত বাণী দ্বারা প্রতীয়মান হয়।

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাহি ওয়া সাল্লাম এরশাদ ফরমান:

قدراللَّهُ مَقَادِيرَ الْخَلائِقِ كُلِّهَا قَبْلَ أَنْ يَخْلُقَ السَّمَوَاتِ وَالأَرْضَ بِخَمْسِينَ أَلْفَ سَنَةٍ-، وكان عَرْشُهُ عَلَى الْمَاءِ

অর্থাৎ: মহান আল্লাহ পাক আসমান-জমীন সৃষ্টির প্রায় ৫০ হাজার বছর পূর্বে সৃষ্টি জীবের তাক্বদীর নির্ধারণ করেন এবং ঐ সময় তাঁর আরশ ছিল পানির উপর বিদ্যমান। বর্ণিত বাণী হতে প্রতীয়মান হলো যে, আরশ সৃষ্টির পরবর্তীকালে তাকদীর সৃষ্টি করা হয়েছে। আর তাকদীর সৃষ্টি হয় ক্বলম সৃজনের পর। যেহেতু মহান আল্লাহ পাক ক্বলম সৃজনের পর আদেশ দিলেন, হে ক্বলম! তুমি লিখ।

আমি কি লিখবো? আল্লাহ পাক বললেন: اكتب مقادير كل شى (সকল বস্তর তাক্বদীর লিপিবদ্ধ কর) হাদীসটি হযরত উবাদা ইবনে সামিত (رضي الله عنه ) মারফ সুত্রে বর্ণনা করেন। হাদীসটি হচ্ছে أَوَّلَ مَا خَلَقَ اللَّهُ الْقَلَمَ (সর্ব প্রথম আল্লাহ পাক ক্বলম সৃজন করেন)। এ হাদীসটি ইমাম আহমদ বিন হাম্বল (رضي الله عنه ) ইমাম মুসলিম (رضي الله عنه ) বর্ণনা করেন। উভয়ে হাদীসটি বিশুদ্ধ বলে মত পোষন করেন। তবে ইমাম আহমদ বিন হাম্বল ও মুসলিম (رضي الله عنه ) দ্বয় কর্তৃক ইবনে রাযীন উকাইলী হতে মারফু সুত্রে একখানা হাদীস বর্ণিত আছে ان الماء خلق قبل العرش অর্থাৎ: আরশ সৃষ্টির পূর্বে অবশ্যই পানি সৃষ্টি করা হয়েছে। আর মহান আল্লাহর বাণী : وَكَانَ عَرْشُهُ عَلَى الْمَاءِ আয়াত দ্বারা ও এদিকে ইঙ্গিত করা হয়েছে।

ইমাম ইবনে সুদ্দী (رضي الله عنه ) বহু সনদ সহকারে বর্ণনা করেন যে, মহান আল্লাহ পাক পানি সৃষ্টির পূর্বে কোন কিছু সৃষ্টি করেননি। অতএব, প্রতীয়মান হলো যে, সাধারনভাবে সর্ব প্রথম মহান আল্লাহ পাক নূরে মুহাম্মাদী সাল্লাল্লাহু আলাহি ওয়া সাল্লামকে সৃষ্টি করেন, তারপর পানি, তারপর সুবিশাল আরশে আযীম এবং সর্ব শেষ ক্বলম সৃষ্টি করেন। সুতরাং নূরে মুহাম্মদী সাল্লাল্লাহু আলাহি ওয়া সাল্লাম ছাড়াও সর্ব প্রথম পানি, তারপর আরশ, তারপর ক্বলমের আলোচনা মূলত: আনুষাঙ্গিক কথা মাত্র।

যেমন: হাদীসে এসেছে اول ما خلق الله للعرش

সর্ব প্রথম আল্লাহ পাক আরশকে সৃষ্টি করেছেন একথা যেমন সত্য তেমনি সর্বপ্রথম পানি সৃষ্টি করেছেন একথাও মিথ্যা নয়। তাহলে উভয়ের মধ্যকার সমাধান হবে এ ভাবে, মহান আল্লাহ পাক আরশকে প্রথমে সৃষ্টি করেছেন ঠিকই কিন্তু আরশকে পানির উপরে স্থীর রেখেছেন একথাও ধু্রব সত্য। তাই আরশকে সেথায় স্থাপন করার প্রয়োজন যে স্থান পূর্বে সৃষ্টি করার অতি প্রয়োজন বিধায় আরশের পূর্বে পানিকে সৃষ্টি করা হয়েছে। এ জন্য পানি সৃষ্টি হচ্ছে আরশ সৃষ্টির সবব বা মূল কারন এবং আরশ হচ্ছে মুছাব্বাব বা যাকে কেন্দ্র করা হয়েছে। তাই বলে একথা বলা যাবেনা যে, আরশের চেয়ে পানি অতি দামী।

যা হোক মহান আল্লাহ পাক নূরে মুহাম্মদী সাল্লাল্লাহু আলাহি ওয়া সাল্লামকে সৃষ্টি করে সে নূরে পাককে হযরত আদম (عليه السلام ) এর পৃষ্ট মোবারকে স্থাপন করে রাখেন, ফলে তাঁর ললাট মোবারক ঐ নূরের আলোকে চকমক করতে থাকে। অত:পর উক্ত নূরে মুহাম্মদী সাল্লাল্লাহু আলাহি ওয়া সাল্লামকে মহান আল্লাহ পাক তাঁর সুবিশাল সাম্রাজ্যের বিশাল সিংহাসনে উঠিয়ে ফেরেস্তাকুলের স্কন্ধে বহন করত: সমগ্র পৃথিবীতে তাঁকে নিয়ে প্রদক্ষিণ করানোর জন্য ফেরেস্তাকুলকে নির্দেশ প্রদান করেন ফলে তাঁরা তাঁকে নিয়ে ৮০ হাজার জগত প্রদক্ষিণ করেন আল্লাহ পাকের সুবিশাল সাম্রাজের অদ্ভুদ বিষয় অবলোকন করার জন্যে।

ইমাম জাফর ইবনে মুহাম্মদ (رضي الله عنه ) বলেন: আল্লাহ পাক হযরত আদম (عليه السلام ) এর রূহ মোবারক সৃষ্টি করার পর উক্ত রূহে পাক তাঁর মাথা মোবারকে একশত বছর অবস্থান করে, তারপর স্বীয় বক্ষে একশত বছর, স্বীয় পাদুকাদ্বয়ের নলায় একশত বছর, তার পর স্বীয় পাদুকাদ্বয়ে আরও একশত বছর অবস্থান করে।

এরপর মহান আল্লাহ পাক তাঁকে সমগ্র সৃষ্টি জীবের নাম সমূহ শিক্ষা দেন। এর পর তিনি হযরত আদম (عليه السلام ) কে তাযীমী ও অভিবাদনের সেজদাহ করার জন্য সকল ফেরেস্তাগণকে আদেশ দেন। উল্লেখ্য যে, সকল ফেরেস্তাগন কর্তৃক আদম (عليه السلام ) কে সেজদাহ করা মূলত: ইবাদতের মানসে করা হয়নি, যেভাবে হযরত ইউসুফ (عليه السلام ) এর ভ্রাতাগণ কর্তৃক তাঁকে সেজদাহ করেছিল বরং এ সেজদাহ ছিল তা’যীমী সেজদাহ। বাস্তবে সেজদাহ করা হয়েছিল মহান আল্লাহ পাককে : যেহেতু তিনি হচ্ছেন মাসজুদ বা সেজদা পাওয়ার অধিকারী আর আদম (عليه السلام ) ছিলেন আল্লাহকে সেজদাহ করার ক্বিবলাহ মাত্র।

সাইয়্যিাদিনা হযরত ইবনে আব্বাস (رضي الله عنه ) হতে বর্ণিত: তিনি বলেন: ফেরেস্তা কর্তৃক হযরত আদম (عليه السلام ) কে সেজদাহ করনের সময় ছিল সুর্য পশ্চিম আকাশে হেলে পড়ার সময় হতে আছর পর্যন্ত।

দুরুদ শরীফের উছিলায় মহরানা আদায়
____________________
দুরুদ শরীফের উছিলায় মহরানা আদায়

এরপর মহান আল্লাহ পাক হযরত আদম (عليه السلام ) কে ঘুমন্ত অবস্থায় তাঁর জীবন সঙ্গীনী হিসেবে হযরত হাওয়া (عليه السلام ) কে তাঁর বাম পাজরের হাড্ডি থেকে সৃষ্টি করেন এবং তাঁর নাম করণ করেন হাওয়া (عليه السلام )। হাওয়া হিসেবে নাম করণের কারণ যেহেতু তাঁকে প্রাণ শক্তি দিয়ে একেবারে বিনম্র ও লজ্জাশীলা করে সৃষ্টি করা হয়েছে।

হযরত আদম (عليه السلام ) ঘুম থেকে জাগ্রত হয়ে বিবি হাওয়াকে দেখা মাত্রই তাঁর পার্শ্বে যেয়ে অবস্থান করেন এবং অবশেষে তাঁর দিকে হাত বাড়িয়ে দেয়ার চেষ্টা করা মাত্রই ফেরেস্তারা তাঁকে সম্বোধন করে বললেন: ও হে আদম থাম! তিনি বললেন: কেন? ওকে তো আমারই জন্যে সৃষ্টি করা হয়েছে। তাঁরা বললেন! ওর মহরানা আদায় না করা পর্যন্ত ওকে স্পর্শ করতে পারবে না। এবার তিনি বললেন: তাহলে বলুনতো ওর মহরানা হিসেবে কি দিতে পারি? ফেরেস্তারা বললেন: ওহে আদম (عليه السلام ) ! আপনি সর্বশেষ ও সর্বশ্রেষ্ট নবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাহি ওয়া সাল্লাম এর প্রতি তিন বার দুরুদ পাঠ করুন, তবেই তাঁর মহরানা আদায় হয়ে যাবে।

ইমাম ইবনুল কাইয়্যুম জাওযী (رضي الله عنه ) এর মতে হযরত আদম (আ.) মা হাওয়া (عليه السلام ) এর নিকটবর্তী হতে চাইলে মা হাওয়া বললেন: আপনি মহর আদায় করুন। একথা শ্রবনে তিনি ফরিয়াদ করেন ওহে মাওলা! আমি হাওয়ার মহর হিসেবে কি দিতে পারি?

মহান আল্লাহ পাক বললেন: ওহে আদম! তুমি আমার প্রিয় হাবীব হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাহি ওয়া সাল্লাম এর প্রতি বিশবার দরুদ পাঠ কর, তবেই তাঁর মহর আদায় হয়ে যাবে। আল্লাহ পাকের নিদের্শ মোতাবেক তিনি বিশমরতবা দরুদ শরীফ পাঠ করেন।

আমি (মুল্লা আলী ক্বারী) বলবো আদম (عليه السلام ) কর্তৃক রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাহি ওয়া সাল্লাম এর প্রতি তিন বার দরুদ শরীফ পাঠ করা ছিল মহরে মুয়াজ্জাল বা তাৎক্ষনিক মহর এবং বিশবার পাঠ করা ছিল মহরে মুয়াজ্জাল বা বিলম্ব মহর।

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর উছিলায় ক্ষমা লাভ
____________________
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর উছিলায় ক্ষমা লাভ

সাইয়্যিদিনা হযরত ওমর ফারুক (রা.) বলেন: রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাহি ওয়া সাল্লাম এরশাদ ফরমান: হযরত আদম (عليه السلام ) কর্তৃক একটি ক্রটি প্রকাশ পাওয়া তিনি সুদীর্ঘ তিন শত বছর ক্রন্দন করে একদা হযরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাহি ওয়া সাল্লাম এর উসিলা নিয়ে এ বলে প্রার্থনা জানালেন: -

يا رب اسألك بحق محمد الا غفرت لي فقال الله تعالى يا آدم وكيف عرفت محمداً ولم أخلقه ? قال لأنك يارب لما خلقتني بيدك ونفخت في من روحك رفعت رأسي فرأيت على قوائم العرش -لا إله إلا الله محمد رسول الله فعلمت أنك لم تضف إلى إسمك إلا أحب الخلق إليك فقال الله تعالى صدقت يا آدم إنه لأحب الخلق إليّ -وإذ سألتني يحقه فقد غفرت لك ولولا محمد ما خلقتك- رواه البيهقى في دلائله .

অর্থাৎ: হে রব! আমি আপনার দরগাহে হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাহি ওয়া সাল্লাম এর উসিলা নিয়ে প্রার্থনা করছি অতএব আপনি আমাকে ক্ষমা করুন আল্লাহ পাক বললেন: ওহে আদম! কিভাবে তুমি মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাহি ওয়া সাল্লামকে পরিচয় করলে অথচ আমি তো তাঁকে এখন ও সৃষ্টি করিনি। তিনি বললেন: হে রব! যেহেতু আপনি আমাকে স্বীয় কুদরতী হাতে সৃষ্টি করে আমার ভেতরে রূহ প্রবেশ করানোর পর আমি আমার মাথা মোবারক আকাশের দিকে উত্তলন করে দেখি আরশের প্রতিটি পায়াতে লিখিত রয়েছে لا اله الا الله محمد رسول الله এ পবিত্র কালেমা টুকু। তা দর্শনে আমি জানতে পারি যে, আপনি স্বীয় নামের সঙ্গে যে নাম মোবারক সংযুক্ত করে রেখেছেন তিনি হচ্ছেন আপনার নিকট সৃষ্টির শ্রেষ্ট ও প্রিয় মানব। এবার মহান আল্লাহ পাক তাঁকে বললেন: ওহে আদম! তুমি যা বললে সবই সত্য। কেননা বাস্তবিকই তিনি আমার নিকট সর্বশ্রেষ্ট ও মহাপ্রিয় ব্যক্তিত্ব। তাই তুমি যখন আমার দরবারে তাঁর উসিলা নিয়ে প্রার্থনা করেছ, তখন আমি তোমাকে ক্ষমা করে দিয়েছি। জেনে রাখ! মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাহি ওয়া সাল্লাম এর বিকাশ সাধন করার ইচ্ছা না হলে তবে আমি তোমাকেও সৃষ্টি করতামনা।

ইমাম বায়হাক্বী (رضي الله عنه ) উক্ত হাদীসটি স্বীয় দালায়েলুন নুবুওয়তে হযরত আব্দুর রহমান বিন যায়েদ বিন আসলাম (رضي الله عنه ) এর হাদীস হতে বর্ণনা করেন। ইমাম আবু আব্দুল্লাহ হাকীম নিশাপুরী (রা.) উক্ত হাদীসকে বর্ণনা করত: তাকে সহীহ বলে অভিমত পেশ করেছেন। ইমাম তাবারানী (رضي الله عنه ) ও এ হাদীসটি বর্ণনা করেন। তবে তিনি হাদীসে وهو اخر الانبياء من ذريتك (তিনি আপনার বংশধরদের মধ্যকার সর্বশেষ নবী) কথাটি বর্ধিত করেন।

ইবনে আসাকীরের মতে সালমান ফারসী (রা.) এর হাদীসে এসেছে, তিনি বলেন: হযরত জিব্রাঈল (عليه السلام ) রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাহি ওয়া সাল্লাম এর নিকট এসে নিবেদন করেন হে আল্লাহর রাসূল ! আপনার প্রতিপালক বলেছেন- وان كنت اتحذت ابرا هيم خليلا فقد اتخذتك حبيبا অর্থাৎ: যদিও আমি ইব্রাহীমকে খলীল হিসেবে গ্রহন করেছি, তবুও আপনাকে হাবীব হিসেবে গ্রহন করেছি। আর আমার নিকট আপনার চেয়ে অত্যধিক সম্মানীত ও শ্রেষ্ট জীব আর কাউকেও আমি সৃষ্টি করিনি। আমি এ ভূমন্ডল ও নবমন্ডল সৃষ্টি করেছি এ উদ্দেশ্যে যে, যাতে করে তারা চিন্তে ও বুঝতে পারে, আমার নিকট আপনার সম্মান ও মর্যাদা যে কতটুকু! আর যদি আপনি এ ধরাধামে না আসতেন তবে এ জগতের কিছুই সৃষ্টি করা হতোনা।

যেমন: এ প্রসঙ্গে আমার সাইয়্যিদ আলী আল ওয়াফেদী চমৎকার একটি কবিতাবৃত্তি করেছেন।

سكن افؤاد فمش هنيئا ياجسد - هذا النعيم هو النعيم الى الأبد-

روح الوجود خيال من هو واحد - لولاه ماتم الوجود لمن وجد-

عيسى وآدم والصدور جميعهم - هم أعين هو نورها لما ورد-

لو ابصر الشيطان طلعة نوره - فى وجه آدم كان اول من سيد-

أو لو رأى النمرود نور جماله - عبد الجليل مع الخليل ولا عند-

لكن جمال الله جل - فلا يرى ألا يتخصيص من الله الصمد

১। হে মহাতন্ন! সৃষ্টি লগ্ন থেকেই আপনি হৃদয় সিক্ত অবয়বে সাচ্ছন্দে চলাচল করতেছিলেন বলেই তো এ আগমন, কেয়ামত অবধি সকল জাতির জন্য বিশাল নেয়ামত।

২। আপনার আত্বার অন্থিত্ব যুগে যুগে কল্পনা প্রবনতা বোধগম্যতা ও ধ্যান মগ্নতায় বিরাজমান ছিল। এমতাবস্থায় তাঁর বিকাশ সাধন না হলে কেউই অস্তিত্বের র্পূণতায় পৌছতনা।

৩। ঈসা আদম (عليه السلام ) সহ সমগ্র মহাত্নাগন তাঁর নয়ন বিশেষ এবং তিনি মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ই বর্ণনানুযায়ি তাঁদের নয়ন জ্যোতি।

 ৪। অর্থাৎ: যদি ইবলিশ শয়তান আদমের চেহারায় তাঁর নূরের আভা উদিত দেখতে পেতো, তবে সে হতো প্রথম সেজদাহকারীর অন্তর্ভুক্ত।

৫। অথবা যদি পাষান্ড নমরুদ তাঁর সৌন্দর্যের নূর দেখতে পেতো, তবে খলীলের সঙ্গে জলীলের উপাসনা করতো, না হতো অবাধ্য।

৬। কিন্তু আল্লাহর সৌন্দর্য্য উম্মোচিত, তা দেখা যায় না। কেবল মাত্র তাঁর বিশেষ ব্যক্তিবর্গ ব্যতিত।

উল্লেখ্য যে, মহান আল্লাহ পাক বিবি হাওয়াকে (عليه السلام ) সৃষ্টি করেছেন কেবল আদম (عليه السلام ) এর সঙ্গে বসবাসের জন্য এবং আদম বিবি হাওয়ার নিকট গমনাগমনের জন্য। সুতরাং তিনি যখন হাওয়া (عليه السلام ) এর সাথে মিশ্রিত হলেন ক্রমান্বয়ে তাঁর সমস্ত ফয়েজ ও বরকত বিবি হাওয়ার ভেতরে এসে স্থীর হলো। ফলে গর্ভে বিশজোড়ায় মোট চল্লিশ জন নারী পুরুষ জন্ম লাভ করে।

তন্মধ্যে তাঁর সন্তানদের মধ্যকার হযরত শীষ (عليه السلام ) কে নবুওয়াতী আলো দিয়ে সম্মানীত করেন। আদম (عليه السلام ) এর সন্তানদের মধ্যকার শীষ (عليه السلام ) থেকে প্রথম নবুওয়তের সূর্য উদিত হয় এবং নূরে মুহাম্মদী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ক্রমান্বয়ে আগমন শুরু হয়। সুতরাং হযরত আদম (عليه السلام ) এর ইন্তেকাল মুহুর্তে স্বীয় সন্তান হযরত শীষকে (عليه السلام ) নূরে মুহাম্মাদী সংরক্ষণের অসীয়ত প্রদান করেন এবং শীষ (عليه السلام ) ও স্বীয় পিতার অসীয়ত পুরন করেন। তাঁর তীরোধানের পূর্ব মুহুর্তে তিনি ও পিতার মতো পরবর্তী বংশধরকে নূরে মুহাম্মদী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে হেফাজত করত: উক্ত নূর মোবারককে পবিত্রা রমনীদের গর্ভে ধারনের অসীয়ত করে যান।

যুগে যুগে সচ্ছ ও নির্মল ধারায় আমার আগমন
____________________
যুগে যুগে সচ্ছ ও নির্মল ধারায় আমার আগমন

এভাবে ধারাবাহিক ও বিরতীহীনভাবে উক্ত অসয়ীত মোবারক প্রবাহমান হয়ে এক যুগ হতে আরেক যুগ পর্যন্ত আসতে আসতে এক পর্যায়ে মহান আল্লাহ পাক উক্ত নূরে মুহাম্মদী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে তাঁর দাদা খাজা আব্দুল মোত্তালেব (رضي الله عنه) হয়ে পিতা আব্দুল্লাহ (رضي الله عنه) এর ঔরসে স্থানান্তরিত করে আনেন।

আর মহান আল্লাহ পাক নবী বংশকে যুগে যুগে জাহিলিয়্যাতের নির্বোদ্ধিতা হতে পবিত্র রাখেন। যেমন : এ প্রসঙ্গে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ফরমান :

مَا ولدني من سفاح الْجَاهِلِيَّة شَيْء وَمَا ولدني إِلَّا نِكَاح كَنِكَاح الْإِسْلَام

অর্থাৎ : জাহিলিয়্যাতের নির্বুদ্ধিতায় আমার জন্ম হয়নি বরং যুগে যুগে ইসলামী ধারার বিবাহ প্রথার মাধ্যমে আমার আগমন ঘটেছে।

ইমাম ক্বাস্তালানী (رضي الله عنه ) বলেন : আরবী ভাষায় سفح শব্দটি সীনের নীচে যের যুগে অর্থ হবে যিনা বা ব্যভিচার। আর উক্ত আলোচনায় সিফাহ দ্বারা উদ্দেশ্য হচ্ছে যে, কোন কোন মহিলা পুরুষের সাথে অবৈধ যৌন সঙ্গমে লিপ্ত হয় দীর্ঘ সময় এর পর চিহিৃত হওয়ার পর সে ঐ মহিলাকে বিয়ে করে।

ঐতিহাসিক ইবেন সা’দ -ইবনে আসাকীর হিসাম বিন মুহাম্মদ বিন সায়েব আল কালবী হতে তিনি স্বীয় দাদা হতে বর্ণনা করেন, তাঁর দাদা বলেন: আমি একেক করে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পূর্ববর্তী মা আমেনা (رضي الله عنه) সহ প্রায় একশ জন মায়ের কথা লিপিবদ্ধ করেছি কিন্তু তাঁদের কারও মধ্যে পবিত্রতা ছাড়া জাহিলিয়্যাতের অবৈধ ও নিবুর্দ্ধিতার চিহৃ দেখতে পাইনি এমনকি জাহিলিয়্যাতের কোন নিকৃষ্ট কর্মকান্ড ও দেখতে পাইনি।

সাইয়্যিদিনা হযরত আলী (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত : তিনি বলেন : রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এরশাদ ফরমান : আমি যুগে যুগে যাদের গর্ভে স্থানান্তরীত হয়ে এসেছি, তাঁদের সবাই ছিলেন বিবাহিতা। এমনকি আমি বাবা আদম (عليه السلام ) থেকে নিয়ে আমার পবিত্র পিতা ও পবিত্রা মাতা পর্যন্ত জাহিলিয়্যাতের অবৈধ পন্থায় বের হয়ে আসিনি এবং জাহিলিয়্যাতের কোন নিবুর্দ্ধিতা ও আমাকে স্পর্শ করেনি। এ হাদীসটি ইমাম তাবারানী স্বীয় আওসাত গ্রন্থে এবং আবু নাঈম ও ইবনে আসাকীর স্বীয় গ্রন্থদ্বয়ে বর্ণনা করেন।

হযরত আবু নাঈম رضي الله عنه ইবনে আব্বাস (رضي الله عنه) হতে মারফু সূত্রে একখানা হাদীস বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এরশাদ করেন :

 لم يلتق ابواى قط على سفح

অর্থাৎ : আমার মাতা-পিতা কখনও জাহিলিয়্যাতের নির্বুদ্ধিতা ও অবৈধতায় লিপ্ত হননি বরং ধারাবাহিকভাবে তিনি আমাকে পুত: পবিত্র পুরুষদের মেরুদন্ড হতে পুত: পবিত্রা রমনীদের রেহেম শরীফে স্থানান্তরীত করে স্বচ্ছ ধারায় আনেন ।

এর সমর্থনে পবিত্র কুরআনে পাকে আছে :

وتقلبك فى الساجدين

যুগে যুগে আমি আপনাকে সেজদাকারীর মধ্যে স্থানান্তরীত করে এনেছি।

ইবনে আব্বাস (رضي الله عنه) বলেন : আয়াতের যথার্থ হচ্ছে : এক নবী হতে অন্য নবী পর্যন্ত আমাকে স্থানান্তরীত করা হয়েছে এমনকি হে রাসূল ! আমি আপনাকে শেষ নবী হিসেবে বের করে এনেছি।

ইমাম বাযযার ও আবু নাঈম অনূরূপ বর্ণনা করেছেন। এ ব্যাপারে জাতির সতর্কতার উদ্দেশ্যে বলা যায় যে, হুযুরে পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সমস্ত জাতীগণের মেরুদন্ড হতে স্থানান্তরীত হয়ে আসেন। তবে একথা বুঝানো হয়নি যে, তাঁর পূর্বপুরুষ সকলই নবী ছিলেন। কেননা এ কথা ইজমায়ে উম্মতের সম্পূর্ণ বিপরীত কথা। আর একথাও বলা যায় না যে, তাঁর পূর্ব পুরুষ সকলই মুসলমান ছিলেন বরং অধিকাংশরাই হানিফ তথা আহলে ফিৎরাতের অন্তর্ভূক্ত ছিলেন। তন্মধ্যে খাজা আব্দুল মোত্তালেব (رضي الله عنه) হযরত ইব্রাহীম (عليه السلام ) এর মাতা পিতা এবং তাঁর মাতা পিতা প্রমুখরা। (টিকা ২)

তাদের বিধান সম্পর্কে আমি (মুল্লা আলী কারী (رضي الله عنه ) ) স্বতন্ত্র একটি রেসালাত প্রণয়ন করেছি এবং হুযূরে পাকের মাতা-পিতা সহ সকল আহলে ফিৎরাতের আলোচনা সম্বলিত ইমাম জালালুদ্দিন সুয়ুতী (رضي الله عنه) কর্তৃক প্রণীত “রেসালায়ে ছালাছা” (টিকা ৩) গ্রন্থের আলোকে বিস্তারিত দলীল সমূহ দ্বারা উপস্থাপন করছি।

(টিকা ২: আরম্ভ)____________________

হুযূরে পাক (رضي الله عنه) এর মাতা-পিতা ও আহলে ফিৎরাতের হুকুম : মূল গ্রন্থের ৫১নং পৃষ্টায় হুযূর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর মাতা-পিতা জান্নাতী হওয়া প্রসঙ্গে ১নং হাশিয়াতে বিস্তারিত বর্ণনা করা হয়েছে। প্রথমে আসা যাক হুযূর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর পিতামহ খাজা আব্দুল মোত্তালেব (رضي الله عنه) প্রসঙ্গে, তিনি কি আহলে ফিৎরাতের অন্তর্ভূক্ত নাকি জাহান্নামী? সুপ্রসিদ্ধ অভিমত হচ্ছে যে, হুযূর (رضي الله عنه) এর পিতামহ আব্দুল মোত্তালেব (رضي الله عنه) ছিলেন সন্দেহাতীতভাবে আহলে ফিৎরাতের অন্তর্ভূক্ত। এ ব্যাপারে ইজমায়ে উম্মতের শতস্ফুর্ত সমর্থন রয়েছে। তাছাড়া স্বয়ং রহমতে আলম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ও স্বীয় দাদাকে নিয়ে গৌরববোধ করতেন এভাবে : .انا النبى انا لاكذب انا ابن عبد المطلب (আমি নি:সন্দেহে নবী, আমি কোন মিথ্যুক নই, আমি হচ্ছি আব্দুল মোত্তালেবের আওলাদ।

তবে কাফের পুরুষদের নিয়ে গৌরব করতে নিষেধ করা হয়েছে। তাতে প্রমাণিত হলো যে, খাজা আব্দুল মোত্তালেব (رضي الله عنه) কাফের ছিলেন না বরং নি:সন্দেহে একজন আহলে ফিতরাতের পর্যায়ভূক্ত ছিলেন।

আর কুরআনে পাকে বর্ণিত ইব্রাহীম (عليه السلام ) এর পিতার কথা যেখানে বলা হয়েছে, সেখানে আবু দ্বারা মুলত: চাচাকেই বোঝানো হয়েছে।

যেভাবে ইমাম সুয়ুতী رضي الله عنه চাচাকে বাবা বলে বুঝিয়েছেন স্বীয় রাসায়েলে ছালাছা, নামক গ্রন্থে।

তাছাড়া পবিত্র কুরআনে পাকেও ابا. দ্বারা চাচাকে বুঝানো হয়েছে।

যেমন আল্লাহ পাকের বাণী :

أَمْ كُنتُمْ شُهَدَاء إِذْ حَضَرَ يَعْقُوبَ الْمَوْتُ إِذْ قَالَ لِبَنِيهِ مَا تَعْبُدُونَ مِن بَعْدِي قَالُواْ نَعْبُدُ إِلَـهَكَ وَإِلَـهَ آبَائِكَ إِبْرَاهِيمَ وَإِسْمَاعِيلَ وَإِسْحَاقَ.

অর্থাৎ : অথবা তোমরা কি উপস্থিত ছিলে যখন ইয়াকুব (عليه السلام ) এর মওত হাযীর হয়েছিল? যখন তিনি স্বীয় সন্তানদেরকে বলেছিলেন বলতো আমার তীরোধানের পরে তোমরা কার উপাসনা করবে? তারা বলেছিল আমরা কেবল আপনার ইলাহ্, আপনার পূর্বপুরুষ ইব্রাহীম, ইসমাঈল ও ইসহাক (عليه السلام )গণের ইলাহের উপাসনা করবো।

আয়াতে বর্ণিত ইসমাইল (عليه السلام ) আবু তথা পিতা না হয়ে عم (আম) তথা চাচার অন্তর্ভূক্ত হয়েছে। আর হাদীস শরীফে এসেছে- عم الرجل صو ابيه অর্থাৎ : কোন ব্যক্তির চাচা হচ্ছেন তার পিতার সহোদরা ভাই।

কুরআনে পাকে ইব্রাহীম (عليه السلام ) এর ক্ষেত্রে যে অর্থকে বুঝানো হয়েছে সে হচ্ছে ইব্রাহীম (عليه السلام ) এর চাচা আজর বিধায় প্রথম বারে তার জন্য দোয়া করতে নিষেধ করা হয়েছে নিন্মোক্ত বাণী দ্বারা:-

  مَا كَانَ لِلنَّبِيِّ وَالَّذِينَ آمَنُواْ أَن يَسْتَغْفِرُواْ لِلْمُشْرِكِينَ

এবং শেষ জীবনে তিনি যে, দোয়া করেছিলেন সেটা সত্য এবং প্রকৃত পিতার জন্যই দোয়া করেছিলেন। যেমন কুরানে পাকে বর্ণিত আছে :

رَبِّ اغْفِرْ لِي وَلِوَالِدَيَّ وَلِمَن دَخَلَ بَيْتِيَ مُؤْمِناً وَلِلْمُؤْمِنِينَ وَالْمُؤْمِنَاتِ وَلَا تَزِدِ الظَّالِمِينَ إِلَّا تَبَاراً .

হে আল্লাহ পাক, তুমি আমাকে এবং আমার মাতা পিতাকে ক্ষমা করে দাও। ক্ষমা করে দাও আমার পরিবার ভুক্ত মুমিনগনকে (যারা মুমিন রূপেপ্রবেশ করে ) সবোর্পরী সকল মুমিন মুমিনাত নরনারীদেরকে।

(টিকা ২)________সমাপ্ত_____________

(টিকা ৩ আরম্ভ)

_____________________

একটি সন্দেহের দূরীকরন
____________________
একটি সন্দেহের দূরীকরন

মুলগ্রন্থের ৫২নং পৃ: ১নং ব্যাখ্যায় বলা হয়েছে, রাসূলে পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর মাতা পিতা আহলে ফিতরাতের অন্তর্ভুক্ত নহে এ সংক্রান্ত অভিমত যা ইমাম মুল্লা আলী ক্বারী (رضي الله عنه ) করেছিলেন এ অভিমত মূলত অগ্রহনযোগ্য। তিনি উক্ত মন্তব্য করলেও পরবতর্ীতে ”শরহে শিফা, নামক গ্রন্থে রাসূলে পাকের মাতা পিতা আহলে ফিতরাত বিধায় উভয়ে জান্নাতী, কথাটির অভিমত ব্যক্ত করার মাধ্যমে পুর্বোক্ত মত থেকে ফিরে আসেন।

তিনি রাসূলে পাকের মাতা পিতা জান্নাতী হওয়া প্রসঙ্গে, শরহে শিফা গ্রন্থের দুই স্থানে বিস্তারীত আলোচনা করেছেন। প্রথম স্থানে গ্রন্থের ৬০১ পৃষ্টায় এবং দ্বিতীয় স্থানে ৬৪৮ পৃষ্টায় উল্লেখ করেন যা ১৩১৬ হিজরীতে ইস্তাম্বুলে প্রকাশিত হয়।

প্রথম স্থানে যা আলোচনা হয়েছ তা হচ্ছে যে, ইমাম কাজী আয়াজ رضي الله عنه স্বীয় শিফা গ্রন্থে উল্লেখ করেন : একদা খাজা আবু তালেবের সঙ্গে হুযূর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যিল মাজায নামক স্থানে অবস্থান করেন। এ সময়ে খাজা আবু তালেবের খুবই পিপাসা লেগে যায়। ফলে তিনি বললেন : মুহাম্মদ! আমিতো প্রচন্ড পিপাসীত হয়ে পড়েছি আমার নিকট তো পানি নেই।

তা শ্রবণে হুযূর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম স্বীয় পাদুকা মোবারক দ্বারা স্বজোরে মাটিতে আঘাত মারতেই পানি বেরিয়ে আসে। এবার বললেন চাচা আপনি তা পান করুন।

ইমাম মুল্লা আলী رضي الله عنه বলেন, আল্লামা দালাজী বলেন : হুযূর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কর্তৃক মাটি থেকে পানি বের হওয়ার ঘটনাটি ঘটেছিল নবুওয়্যাতের অনেক পূর্বে শিশু বয়সে। তা ছিল তাঁর বিশাল মু’জেযার পরিচয়।

হুযূর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর পাদুকার আঘাতে নির্গত পানি দ্বারা প্রতীয়মান হলো যে, তাঁর পাদুকার আঘাতের বরকতের কারামত শেষ যুগে প্রায় এক হাজার বছর পরে আরাফাতে ময়দানে একটি ঝরণা প্রবাহিত হবে। আর বাস্তবিকই তাই হয়েছে।

রাসূলে পাকের বরকতের প্রভাব মক্কা ও তৎপার্শ্ববর্তী এলাকা পর্যন্ত পৌছে যাবে। এ হচ্ছে আবু তালেবের সম্মুখে হুযূর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর প্রকাশিত মু’জেযা। অথচ আবু তালেব ইসলাম গ্রহণ করতে পারেননি। আর হুযূর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর পবিত্র মাতা-পিতার ইসলাম গ্রহণ নিয়ে বিভিন্ন কথা থাকলেও সুপ্রসিদ্ধ ও নির্ভরযোগ্য বর্ণনায় রয়েছে যে, উভয়েই জান্নাতী। একথার সমর্থন করেছেন বড় বড় মোহাদ্দেসীনে কেরাম ও আইম্মামে কেরামগণ। বিশেষত : হাদীস বিশেষজ্ঞ ত্রয়োদশ শতাব্দীর শ্রেষ্ঠ মুজতাহিদ ইমাম শায়খুস সুন্নাহ জালালুদ্দিন সুয়ুতী رضي الله عنه স্বীয় সংকলিত “রাসায়েলে ছালাছা” নামক গ্রন্থে এ বিষয়ে স্ববিস্তারে আলোচনা করেছেন।

দ্বিতীয় স্থানে যে আলোচনা এসেছে, তা হচ্ছে শায়েখ মুল্লা আলী ক্বারী رضي الله عنه বলেছেন যে, হুযূর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর মাতা-পিতাকে জীবিত করে হুযূর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁদেরকে ঈমান গ্রহণ করিয়েছিলেন। এ মন্তব্য সঠিক ও নির্ভরযোগ্য জমহুর উলামায়ে কেরামগণের অভিমত। একথার সমর্থন দিয়েছেন ইমাম সুয়ুতী رضي الله عنه স্বীয় গ্রন্থে।

এ সুদীর্ঘ আলোচনা থেকে আমরা সঠিক সিদ্ধান্তে পৌছতে পারি যে, ইমাম মুল্লা আলী কারী رضي الله عنه প্রণীত শরহে শিফা গ্রন্থটি নির্ভরযোগ্য এবং তিনি সত্য ও সঠিক পথে ফিরে আসেন। তাঁর মতো আরও বহু নির্ভরযোগ্য উলামায়ে কেরামগণ ইজতেহাদী ত্রুটি বিচ্ছুতি করার পরও সঠিক সিদ্ধান্তে পৌছেন। যেহেতু অপরাধ করার পরও এর পবিত্র নিয়ন্ত্রণের মালিক কেবল আল্লাহ পাক।

(ইমাম মুল্লা আলী رضي الله عنه বলেন) রাসূলে করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর মাতা-পিতা জান্নাতী হওয়া বিষয়ক বর্ণিত আলোচনাই কেবল যথেষ্ঠ নয় বরং এর স্বপক্ষে আরও বহু যুক্তি নির্ভর দলীলও রয়েছে।

তাঁদের নাজাতের ব্যাপারে আরও কথা হচ্ছে যে, তাঁরা উভয়েই আহলে ফিতরাতের উপর ইন্তেকাল করেছেন। কেননা তখনকার সময় তাঁদেরকে ভীতি প্রদর্শনের জন্য কোন নবীও ছিলেন না এমনকি তাঁদের উপর অর্পিত আবশ্যকীয় দায়িত্ব পালনের পথ নির্দেশনার জন্য আল্লাহর পক্ষ থেকে অন্য কোন পথ প্রদর্শকও ছিলেন না। বরং ঐ হালতে দীর্ঘ যুগ অতিবাহিত হয়। তাছাড়া তারা ব্যতীত ও আরও এমন বহু লোকেরা ছিল যারা ইব্রাহীম (عليه السلام ) এর যুগ হতে রাসূলেকারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর আগমন পর্যন্ত নবীগণের তীরোধানের পরবর্তী বিরতী সময়ে কোন নবী ছিলেন না বা তাদেরকে ভয় প্রদর্শন ও করেননি।

যেমন সমস্ত একত্ববাদে বিশ্বাসী আরববাসী। তারা আহলে ফিতরাতের অন্তর্ভূক্ত ছিল।

নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর মাতা-পিতা জান্নাতী হওয়ার আরেক প্রমাণ হচ্ছে নিন্মোক্ত আয়াত শরীফ। মহান আল্লাহ পাক হযরত মরইয়ম সম্প্রদায় সম্পর্কে বলছেন, যখন মরইয়ম সম্প্রদায়রা তাদের কাছে সত্য প্রকাশিত হওয়ার পরও বলেছিল :

يَا أُخْتَ هَارُونَ مَا كَانَ أَبُوكِ امْرَأَ سَوْءٍ وَمَا كَانَتْ أُمُّكِ بَغِيّاً

 অর্থাৎ : হে হারুনের বোন মারইয়ম! তোমার পিতা তো নিকৃষ্ট কোন কাজ করেননি এবং তোমার মাতা তো তোমার মতো নিকৃষ্ট কাজে লিপ্ত হননি। অর্থাৎ তোমার পিতা-মাতা এ নিকৃষ্ট কাজের অধিবাসী নয়।

একথাটি তারা অপবাদ স্বরূপ বলেছিল। আর পূর্বোক্ত আহলে ফিতরাত বাসী আরবের কাউকেও আজাব দিয়ে ধ্বংস করা হবে না মর্মে নিন্মোক্ত আয়াত শরীফ প্রমাণিত আছে। মহান আল্লাহর বাণী:

وَمَا كُنَّا مُعَذِّبِينَ حَتَّى نَبْعَثَ رَسُولاً

 অর্থাৎ : আমি রাসূল প্রেরণ ব্যতীত কাউকেই শাস্তি দিবনা।

অর্থাৎ : রহিত শরীয়ত ও রাসূল প্রেরণ ব্যতীত কোন জাতি তার মুল বা যে কোন প্রশাখা পরিত্যাগের দুরুন আমি আমার কোন বান্দাহকে শাস্তি দিবনা। রাসূলগণ এসে তাদেরকে আল্লাহর বিধান দেখিয়ে ভয় প্রদর্শন করবেন এ সুযোগও ছিলনা যেহেতু। সেহেতু তিনি কাউকেও অন্যায়ভাবে শাস্তি দিবেননা। যেহেতু মহান আল্লাহ পাক হচ্ছেন ন্যায় পরায়ন ও বিধান প্রবর্তনশীল বিধায় কাউকেও অন্যায়ভাবে শাস্তি দেয়া তাঁর শান নয়।

আর নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর মাতা-পিতা আহলে ফিতরাত হওয়ার কারণ যেহেতু তাঁরা পূর্ব যুগে ছিলেন, তখন কোন নবী ছিলেন না। বরং তাঁদের তীরোধানের অনেক পরে মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম দীর্ঘ মেয়াদী শরীয়ত নিয়ে আগমন করেন এবং মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যখন স্বীয় মাতার রেহেম শরীফে অবস্থান করেন তখন তাঁর পিতা খাজা আব্দুল্লাহ (رضي الله عنه) ইন্তেকাল করেন এবং তাঁর বয়স যখন ছয় বছর(৫৭৬খৃ:) তখন স্বীয় মাতাও ইন্তেকাল করেন। এজন্য এ সময়কার ভেতরে তাঁরা কোন নবী বা কিতাব পাননি বরং কেবল আল্লাহ বিশ্বাসীই ছিলেন বিধায় তাঁরাও অন্যান্য আহলে ফিতরাতের ন্যায় বিনা হিসেবে জান্নাতী। এজন্য আল্লাহ পাক অন্যান্য আহলে ফিতরাতের মতো কখনো তাদের শাস্তি দিবেননা। অধিকাংশ নির্ভরযোগ্য উলামায়ে কেরাম এর উপর একমত পোষন করেন।

এখন তুমি বলতে পার যে, হাদীস শরীফে বর্ণিত আছে যে, ঐ সমস্ত আহলে ফিতরাতের কেউ কেউ শাস্তির উপযোগী। আমি বলবো বর্ণিত হাদীসসমূহ হাদীসে আহাদের সমপর্যায়েরই নয়। তাহলে তুমি কি কিতাবুল্লাহর দলীলের মোকাবেলায় হাদীসে আহাদের উপর নির্ভর করবে?

তুমি বলবে কশ্মিন কালেও না। তাহলে কুরানী দলীলের মোকাবেলায় কিভাবে কিয়াস গ্রহণযোগ্যতা পাবে? অতএব নির্দ্বিধায় বলা যায় যে, হুযূরে পাকের মাতা-পিতা অবশ্যই জান্নাতী, যা কুরআনে পাকের অকাট্য দলীলের ভিত্তিতে সাব্যস্থ।

আর ইমাম সুয়ুতী এর স্বপক্ষে যে তিনখানা রিসালাহ প্রণয়ন করেছেন ইমাম মুল্লা আলী কারী رضي الله عنه তা মেনে নিয়েছেন। আর ইমাম মুল্লা আলী رضي الله عنه প্রথম পর্যায়ে হুযূরে পাকের মাতা-পিতা জান্নাতী না হওয়াসম্পর্কে যে মন্তব্য করেছিলেন ; পরবর্তীতে তিনি তা হতে ফিরে আসেন।

যদিও উক্ত মন্তব্য তার ছিল তবুও ইমাম আবু হানিফা (رضي الله عنه) এর বাণী :

ان الولدين ماتا على الفطرة اى الاسلام

(নিশ্চই হুযূর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর মাতা-পিতা ইসলামের উপর মৃত্যুবরণ করেছেন) বক্তব্য দ্বারা তাঁর বক্তব্য প্রত্যাখ্যান করা হয়। এজন্য ইমাম (رضي الله عنه) এর বর্ণিত বক্তব্যকে শতর্স্ফুতভাবে স্বীকার করে নেন।আল্লাম আলুসী رضي الله عنه (যিনি নির্ভরযোগ্য সলফে সালেহীনদের অন্তর্ভূক্ত) স্বীয় তাফসীরে নিন্মোক্ত বাণী:

وَتَقَلُّبَكَ فِي السَّاجِدِينَ

অর্থাৎ : আমি আপনাকে সর্বদাই সেজদাহকারীদের সঙ্গে স্থানান্তরীত করে এনেছি। এ বক্তব্য দ্বারা বুঝিয়েছেন যে, উক্ত আয়াতের আলোকে আহলে সুন্নাতের সকল আলেমগণ হুযূর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর মাতা পিতাকে জান্নাতী হওয়া অস্বীকারকারীকে কাফের বলেও মন্তব্য করেছেন। যেমন :

 وانا اخش الكفر على من يقول فيهما

মাতা-পিতা জান্নাতী হওয়ার ব্যাপারে যে ব্যক্তি বিরূপ মন্তব্য করবে, আমি তার থেকে কুফরীর আশংকা করছি।

হুযূর পাক (সাল্লাল্লাহু তায়ালা আলাইহি ওয়াসাল্লাম) ছিলেন আবু তালেব ও আবু লাহাবের জন্য বিশেষ রহমত। মহান আল্লাহ পাক তাঁর নবী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে সমগ্র বিশ্ববাসীর জন্য রহমত স্বরূপ প্রেরণ করেছেন। আর আল্লাহর কসম বাস্তবেতো আবু তালেব ও আবু লাহাব দ্বয়ের জন্য তিনি রহমত স্বরূপ ছিলেন। অথচ তারা উভয়ে নিজ চোখে তাঁকে দেখেছে, নিজ কর্ণে তাঁর দাওয়াতের কথা শ্রবণ করেছে তবুও কুফরীর উপর অটল অবিচল থেকে মৃত্যুবরণ করেন।

উল্লেখ্য যে, খাজা আবু তালেব ও আবু লাহাব দুজনই ছিলেন হুযূর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর নিকটাত্মীয় (আপন চাচা)। তাদের ব্যাপারে হাদীস শরীফে এসেছে যে, প্রথম ব্যক্তির (আবু তালেব) থেকে স্থায়ীভাবে আজাবকে হালকা করা হয়েছে। কেবলমাত্র এক জোড়া দোযখের জুতো পরিধান করানো হচ্ছে আর দ্বিতীয় ব্যক্তি কুখ্যাত আবু লাহাবের জন্য সাময়িক কিছু হালকা করা হয়ে থাকে। অর্থাৎ : প্রতি সোমবার আসলে কিছুটা হালকা করা হয়ে থাকে।

তা হচ্ছে রাসূলের পক্ষ থেকে তাদের জন্য এক বিশাল রহমত স্বরূপ। শুধু তাই নয় বরং একদিক থেকে ব্যাপকভাবে সকল আরবীয় কাফেরদের জন্যও তিনি রহমত স্বরূপ, যারা সারাটি জীবন হুযূর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে কষ্ট দিয়েছে. দেশ ত্যাগ করতে বাধ্য করেছে।

وَمَا كَانَ اللّهُ لِيُعَذِّبَهُمْ وَأَنتَ فِيهِمْ

 অর্থাৎ : হে রাসূল ! আপনি তাদের মধ্যে বিধ্যমান থাকা সত্ত্বেও আল্লাহ এমন নন যে, তিনি তাদেরকে শাস্তি দিবেন।

কাফেরের বেলায় যদি হুযূর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম রহমত স্বরূপ হন, তবে হুযূর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর মাতা-পিতা আহলে ফিতরাত তথা একমাত্র তাওহীদে এলাহী বিশ্বাসী হওয়া সত্ত্বেও কেন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁদের জন্য রহমত হবেন না অথচ আহলে ফিতরাত বাসী এমনিতেই জান্নাতী।

অতএব, এ ব্যাপারে আমাদেরকে কোরআন-হাদীস সহ ইমাম আবু হানিফা (رضي الله عنه) ও সকল নির্ভরযোগ্য উলামায়ে কেরামগণের মতও পথে ফিরে আসা বাঞ্চনীয়।

(টিকা ৩: সমাপ্ত)____________________

অনুবাদ : আয়াতে বর্ণিত انفسكم শব্দের অর্থ হচ্ছে .من جنسكم তবে তিনি অর্থাৎ : তোমাদের জাত থেকে তোমাদের মত একজন মানব এসেছেন। তবে তিনি তোমাদের নিকট রাসূল ও মুবাল্লিাদা হিসেবে আগমন করেছন। যেমন মহান আল্লাহর বাণী :

قُلْ إِنَّمَا أَنَا بَشَرٌ مِّثْلُكُمْ يُوحَى إِلَيَّ أَنَّمَا إِلَهُكُمْ إِلَهٌ وَاحِدٌ

অর্থাৎ আপনি বলুন! আমি অবশ্যই তোমাদের মত একজন মানব। আমার নিকট ওহী এসেছে এ মর্মে যে, তোমাদের ইলাহ কেবলমাত্র একজনই।

ব্যাখ্যা : আয়াতে বর্ণিত من انفسكم শব্দকে من جنسكم তথা জাত, শব্দ দ্বারা উদ্দেশ্য নেয়ার হেকমত হচ্ছে যেহেতু জাত একীভূত হওয়ার কারণ। যদ্বারা পরিপূর্ণ নিয়ম শৃংখল অর্জিত হয়। অনূরূপভাবে একইজন দ্বারা পরিপূর্ণভাবে অনুস্মরণ ও অনুকরণ করা সহজসাধ্য হয়।

কেননা যদি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে মানব জাতীর অন্তর্ভুক্ত না করে বরং ফেরেস্তা জাতীর অন্তর্ভূক্ত করা হতো তবে অবশ্যই বলা হতো যে, তার ফেরেস্তা শক্তি রয়েছে এবং ঐ বৈশিষ্ঠ্যের দ্বরুন তাঁর অনুস্মরণ করা মানবিক দুর্বলতার কারণে আমাদের পক্ষে আদ্দৌ সম্ভব হতোনা।

আর হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মানবীয় আকৃতিতে আগমন করাটা ফেরেস্তা জাতির সম্পূর্ণ বিপরীত। যেহেতু কথায়, কাজে অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে এবং নিদর্শনগুলোর দ্বারা সহজে তাঁর অনুসরণ করা সম্ভব বিধায় মানবীয় গুণাবলী দ্বারা তাঁকে সৃষ্টি করা হয়েছে। কেননা মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হচ্ছেন আল্লাহর পক্ষ হতে প্রেরীত এক মাধ্যম। যা আল্লাহর পক্ষ হতে অনবরত তাঁর নিকট ফয়েজে রাব্বানী তথা খোদাপ্রদত্ত ফয়েজ আসতে থাকে এবং তিনি তা জাতীর নিকট পৌছিয়ে দেন। তার মর্মার্থ কেউ উপলব্ধি করতে পারেনা। বিশেষত: কাফেরদের নিকট তা বোধগম্য না হওয়ায় তাদের একদল মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে সম্পূর্ণভাবে অস্বীকার করত: বলেছে ابعث الله بشرا رسولا অর্থাৎ : আল্লাহ পাক কি একজন মানুষ (মোহাম্মদ) কে রাসূল বানিয়ে প্রেরণ করেছেন? অথবা তাদের একথা সম্পূর্ণভাবে তাদের নির্বোদ্ধিতা ও বোকামীর প্রমাণ বহন করে। আর এ নির্বোদ্ধিতাও বোকামীর দ্বরুন তারা এ বিশ্বাস করতো যে, আল্লাহ পাথরও হতে পারেন। এজন্য তাদের ধারণা হচ্ছে যে, রাসূল কখনো মানবের পক্ষ হতে আসতে পারেন না, তা আদৌ সম্ভব নয়।

 মোট কথা হচ্ছে মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাদের কাছে একজন রাসূল রূপে আগমন করেছেন তা আমাদের জন্য বিশাল এক নেয়ামত বৈই আর কিছুই নয়। তাঁর রাসূল রূপে আগমন আমাদের জন্য যেভাবে বিশাল এক নেয়ামত, তেমনি মানবীয় সুরতে, মানব জাতি হতে আগমন টাও আমাদের জন্য এক বিশাল নেয়ামত ও উপহারস্বরূপ।

কোন কোন উলামায়ে কেরাম من انفسكم বাক্যের ব্যাখ্যা من جنس العرب তথা, আরব জাতীর মধ্য হতে, শব্দে ব্যাখ্যা করেছেন যা পুর্বোক্ত আলোচনার বিপরীত নয়। এর সমর্থনে মহান আল্লাহর নিন্মোক্ত আয়াতে করীমা রয়েছে। মহান আল্লাহ পাক এরশাদ ফরমান :

وَمَا أَرْسَلْنَا مِن رَّسُولٍ إِلاَّ بِلِسَانِ قَوْمِهِ

অর্থাৎ : আমরা এমন কোন নবী প্রেরণ করিনি যে, স্বীয় সম্প্রদায়ের ভাষা দিয়ে প্রেরণ করিনি। সাইয়্যিদিনা হযরত ইবনে আব্বাস (رضي الله عنه) হতে বিশুদ্ধ একখানা হাদীস শরীফ বর্ণিত হয়েছে যে, আরবের বনু মুদ্বার বনু রাবীআ ও ইয়ামানীর মধ্যকার এমন কোন গোত্র নেই যে, মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর ন্যায় উত্তম পুরুষ জন্মদান করেছে।

এর স্বপক্ষ মহান আল্লাহ পাক বলেন :

قُل لَّا أَسْأَلُكُمْ عَلَيْهِ أَجْراً إِلَّا الْمَوَدَّةَ فِي الْقُرْبَى

অর্থাৎ : বলুন হে নবী! আমি তার বিনিময়ে তোমাদের নিকট হতে আত্মীয়ের সৌহার্দ্য ব্যতীত অন্য কোন প্রতিদান চাই না।

(সূরা : শুরা - আয়াত :-২৩)

হযরত ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল (رضي الله عنه) স্বীয় মসনদে হযরত ইবনে আব্বাস (رضي الله عنه) হতে বর্ণনা করেন : হযরত ইবনে আব্বাস (رضي الله عنه) বলেন :

لم يكن بطن من قريش الا ولرسول الله فيهم قرابة

অর্থাৎ : কুরাইশদের সকল শাখাগোত্রের মধ্যে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর সৌহার্দ্য বিরাজমান ছিল। তার সমর্থনে পুর্বোক্ত আয়াতে কারীমা অবতীর্ণ হয়।

আয়াতে বর্ণিত من انفسكم বাক্যের ف হরফে যবর যোগে পাঠ করলে অর্থ হবে من اعظمكم قدو. তথা-তোমাদের শ্রেষ্ঠজন হতে উত্তমাদর্শ হিসেবে আগমন করেছেন।

হুযূর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর ভাষায়ই পিতৃ পরিচয়
____________________
হুযূর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর ভাষায়ই পিতৃ পরিচয়

ইমাম হাকীম নিশাপুরী رضي الله عنه ইবনে আব্বাস (رضي الله عنه) হতে এবং ইবনে মারদুবীয়্যাত হযরত আনাস বিন মালেক (رضي الله عنه) হতে বর্ণনা করেন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম একবার لقد جاءكم رسول من انفسكم আয়াতটি পাঠ করলে হযরত আলী ইবনে আবী তালেব (رضي الله عنه) নিবেদন করেন- হে আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ! আয়াতে বর্ণিত انفسكم শব্দের অর্থ কি? তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন :

انا انفسكم نسباوصهرا و حسبا ليس فى ولافى ابائى من لدن ادم سفح كانا نكاح

অর্থাৎ : আমি আভিজাত্যে-বৈবাহিক সূত্রেও বংশীয় সূত্রে তোমাদের মধ্যে শ্রেষ্টতম। আমার পূর্ব পুরুষ তথা হযরত আদম (عليه السلام ) থেকে নিয়ে আমার মাতা-পিতা পর্যন্ত কেউই ব্যবিচারের পর্যায়ভূক্ত নন বরং প্রত্যেকেই বৈবাহিক সূত্রে আবদ্ধ ছিলেন। ইমাম বায়হাক্বী (رضي الله عنه ) স্বীয় দালায়েলে হযরত আনাস (رضي الله عنه) হতে অন্য একটি বর্ণনা করেন, হযরত আনাস (رضي الله عنه) বলেন : একবার রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ভাষণ দান করত: স্বীয় বংশ পরিচয় দিতে যেয়ে বলেন :

انا مُحَمَّدُ بْنُ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ عَبْدِ الْمُطَّلِبِ بْنِ هَاشِمِ بْنِ عَبْدِ مَنَافِ بْنِ قُصَىِّ بْنِ كِلاَبِ بْنِ مُرَّةَ بْنِ كَعْبِ بْنِ لُؤَىِّ بْنِ غَالِبِ بْنِ فِهْرِ بْنِ مَالِكِ بْنِ النَّضْرِ بْنِ كِنَانَةَ بْنِ خُزَيْمَةَ بْنِ مُدْرِكَةَ بْنِ إِلْيَاسَ بْنِ مُضَرَ بْنِ نِزَارِ

অর্থাৎ : আমার পরিচয় হচ্ছে যে, আমি হচ্ছি মুহাম্মদ বিন আব্দুল্লাহ বিন আব্দুল মুত্তালিব বিন হাশীম বিন আব্দুল মনাফ বিন কুছাই বিন কিলাব বিন মুররাহ বিন কা’ব বিন লুআই বিন গালিব বিন ফিহির বিন মালেক বিন নাদ্বার বিন কেনানাহ বিন হুযায়মাহ বিন মুদরেকাহ বিন ইলিয়াস বিন মুদ্বার ইবনে নাযার।

যুগে যুগে বিচ্ছিন্ন দুটি জাতির মধ্যকার আমি যথেষ্ট। আমি আমার মাতা-পিতার ঘরে পবিত্র স্বচ্ছ ও নির্মলাবস্থায় বেরিয়ে এসেছি, তাতে জাহিলী যুগের কোন বর্বরতা আমাকে স্র্পশ করতে পারেনি। আমি বিবাহ পন্থায় বৈধভাবে আগমন করেছি। এভাবে হযরত আদম (عليه السلام ) থেকে নিয়ে আমার পিতা-মাতা পর্যন্ত নির্বোদ্ধিতা ও অবৈধ পন্থার মাধ্যমে আগমন করিনি।

অতএব, আমি ব্যক্তি সত্ত্বার দিক থেকেও তোমাদের চেয়ে উত্তম এবং পিতৃসূত্রে ও সর্বোত্তম।

ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল (رضي الله عنه) ও তিরমিযী (رضي الله عنه) বলেন: সাইয়্যিদিনা হযরত আব্বাস বিন আব্দুল মোত্তালেব (رضي الله عنه) বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এরশাদ ফরমান :

ان الله حين خلق الخلق جعلنى فى خير خلقه ثم حين فى قهم جعلنى فى خير الفريقين ثم حين خلق القبائل جعلنى من خيرهم قبيلة- وحين خلق الانفس جعلنى من خير انفسهم ثم حين خلق البيوت جعلنى من خير بيوتهم – فانا خيرهم بيتا وخيرهم نفسا-

অর্থাৎ : নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ পাক যখন জাতি সৃষ্টি করেন, তখন আমাকে তন্মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ করে সৃষ্টি করেন অত:পর যখন তাদেরকে বিচ্ছিন্ন করেন, তখন আমাকে প্রত্যেক দুটি গোত্রের শ্রেষ্ঠ করে বানিয়েছেন। অত:পর যখন তিনি গোত্র সৃষ্টি করেন, তখন আমাকে তাদের শ্রেষ্ঠ জাতে রাখেন। পরিবার সৃষ্টি করে তন্মধ্যে আমাকে শ্রেষ্ঠ পরিবার রাখেন। অতএব, আমি পরিবার তথা বংশীয় মুল, জাত ও আভিজাত্যের ক্ষেত্রে সর্বশ্রেষ্ঠ।

ইমাম হাকীম তিরমিযী তাবারানী, আবু নাঈম, বায়হাক্বী, ইবনে মারদুবা প্রমুখগণ ইবনে ওমর (رضي الله عنه) হতে বর্ণনা করেন- তিনি বলেন! রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এরশাদ ফরমান :

وأخرج البيهقي والطبراني وأبو نعيم عن ابن عمر قال قال رسول الله صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: " إِنَّ اللهَ تَعَالَى خَلَقَ الْخَلْقَ فَاخْتَارَ مِنْ خَلْقِهِ بَنِي آدَمَ، وَاخْتَارَ مِنْ بَنِي آدَمَ الْعَرَبَ، وَاخْتَارَ مِنَ الْعَرَبِ مُضَرَ، وَاخْتَارَ مِنْ مُضَرَ قُرَيْشًا، وَاخْتَارَ مِنْ قُرَيْشٍ بَنِي هَاشِمٍ، وَاخْتَارَنِي مِنْ بَنِي هَاشِمٍ، فَأَنَا مِنْ خِيَارٍ إِلَى خِيَارٍ.

অর্থাৎ : নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ পাক সমগ্র সৃষ্টি জীবকে সৃষ্টি করে তন্মধ্যে বনী আদমকে নির্বাচন করেন তন্মধ্যে আরব জাতিকে আরব জাতি থেকে বনি মুদ্বার গোত্রকে, বনি মুদ্বার থেকে কুরাইশ গোত্রকে কুরাইশ থেকে বনী হাশীমকে এবং বনী হাশীম থেকে আমাকে নির্বাচন করেন। সুতরাং যুগে যুগে সকল গোত্রে আমি শ্রেষ্ঠ ছিলাম। অথার্ৎ এজন্য আমি সর্বোত্তমের মধ্যে সবোর্ত্তম।

আদম (عليه السلام ) সৃষ্টির চৌদ্ধ হাজার বছর পূর্বে আমি নূর হিসাবে ছিলাম
____________________
আদম (عليه السلام ) সৃষ্টির চৌদ্ধ হাজার বছর পূর্বে আমি নূর হিসাবে ছিলাম

ঐতিহাসিক হযরত ইবনে সাদ কাতাদা (رضي الله عنه) হতে একখানা হাদীস বর্ণনা করেন হযরত কাতাদাহ (رضي الله عنه) বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এরশাদ ফরমান : মহান আল্লাহ পাকের যখন ইচ্ছা হলো নবী সৃষ্টি করতে; তখন পৃথিবীর সর্বশ্রেষ্ঠ কাবীলাহ বা গোত্রের প্রতি তিনি দৃষ্টি দেন এবং উক্ত শ্রেষ্ঠ গোত্র হতে একজন লোককে নির্বাচন করে প্রেরণ করেন। হযরত যয়নুল আবেদীন আলী ইবনে হুসাইন رضي الله عنه হতে বর্ণিত : তিনি স্বীয় দাদা হযরত আলী ইবনে আবী তালেব (رضي الله عنه) হতে মারফু সূত্রে বর্ণনা করেন : হযরত আলী (رضي الله عنه) বলেন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এরশাদ ফরমান :

كنت نورا بين يدى الله تعالى عز و جل قبل ان يخلق ادم باربعة عشر الف عام-

অর্থাৎ : হযরত আদম (عليه السلام ) কে সৃষ্টির চৌদ্ধ হাজার বছর পূর্বে আমি মহান আল্লাহ পাকের সম্মুখে নূর হিসেবে বিদ্যমান ছিলাম। এরপর আদম (عليه السلام ) কে সৃষ্টির পর উক্ত নূরে মোহাম্মদী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে তাঁর পৃষ্ট মোবারকে আমান্নত রাখেন। এভাবে এক পৃষ্ট হতে আরেক পবিত্র পৃষ্টে ধারাবাহিকভাবে স্থানান্তরীত হয়ে এক পর্যায়ে উক্ত নূরে মোহাম্মাদী হযরত খাজা আব্দুল মুত্তালিব (رضي الله عنه) এর পৃষ্ট মোবারক পর্যন্ত এসে স্থির হয়।

ইমাম কাজী আয়াজ رضي الله عنه প্রণীত, শিফা, গ্রন্থে হযরত ইবনে আব্বাস (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত সনদবিহীন একখানা হাদীস অনূরুপ এসেছে। হাদীসটি হচ্ছে:

ان قريشا كانت نورا بين يدي الله تعالى قبل ان يخلق آدم بألفي عام يسبح ذلك النور وتسبح الملائكة بتسبيحه فلما خلق الله آدم ألقى ذلك النور في صلبه .

অর্থাৎ : নিশ্চয়ই হযরত আদম (عليه السلام ) কে সৃষ্টির দু হাজার বছর পূর্বে কুরাইশ বংশীয় (পবিত্রজনেরা) আল্লাহর সম্মুখে নূর হিসেবে বিরাজমান ছিল।

ঐ অবস্থায় উক্ত নূর আল্লাহর তাসবীহ পাঠে রত থাকে এবং উক্ত নূরের সঙ্গে ফেরেস্তাকুলও তাসবীহ পাঠ করতে থাকে। সুতরাং হযরত আদম (عليه السلام ) কে সৃষ্টির পর উক্ত মোবারক নূর তাঁর পৃষ্টে রাখা হয়।

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এরশাদ ফরমান :

فأهبطني الله إلى الأرض في صلب آدم وجعلني في صلب نوح وقذف بي في صلب إبراهيم ثم لم يزل الله ينقلني من الأصلاب الكريمة والأرحام الطاهرة حتى أخرجني من بين أبوي لم يلتقيا على سفاح قط.

অর্থাৎ : এরপর মহান আল্লাহ পাক হযরত আদম (عليه السلام ) এর পৃষ্টে ধারণ করে আমাকে জমীনে অবতরণ করেন। এরপর পর্যায়ক্রমে আমাকে হযরত নুহ (عليه السلام ) এর পৃষ্টে আমানত রাখেন, তারপর হযরত ইব্রাহীম (عليه السلام ) এর পৃষ্টে। এরপর হতে অবিরাম ধারায় আমাকে পুত: পবিত্র পৃষ্ট মোবারক ও পুত : পবিত্রা রমনীদের রেহেম শরীফে স্থানান্তরীত করে এনে এক পর্যায়ে আমাকে আমার মাতা-পিতার পবিত্র পৃষ্টে ও পবিত্রা রেহেমে বের করে আনেন। এতে আমার মাতা-পিতা কখনো অবৈধ পন্থায় মিলিত হননি। (টিকা ৪)

(টিকা ৪)____________________

১নং হাশিয়া : তা স্বয়ং হুযূর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর মুখ নিশ্রিত বাণী। এ হাদীসটি ইমাম মুসলিম (رضي الله عنه) এর স্বীয় মসনদে, ইমাম ইবনুল জাওযী رضي الله عنه স্বীয় ওয়াফাউল ওয়াফা গ্রন্থে ১/৩৫ পৃ: ইমাম সুয়ুতী প্রণীত আল- লাআলীউল মাসনুআহ গ্রন্থে ১/২৬৫ পৃ: কাজী আয়াজ প্রণীত শিফা গ্রন্থের ১/৭৮ পৃষ্টায় বর্ণনা রয়েছে। কাজী আয়াজ رضي الله عنه বলেন উপরোক্ত বর্ণনার সত্যতা পাওয়া যায় হযরত আব্বাস رضي الله عنه এর প্রসিদ্ধ নিন্মোক্ত কবিতার মাধ্যমে। তিনি হুযূরে পাকের প্রশংসায় নিন্মোক্ত কবিতা আবৃত্তি করেন-

من قبلها طبت فى الظلال وفى مستودع حيث يخصف الورق

ثم هبطت البلاد لا بشر أنت ولا مضغة ولا علق

بل نطفة تركب السفين وقد الجم نسرا واهله الغراق

تنقل من صالب الى رحم اذا مضى عالم بدا طبق

ووردت نارا لخليل مستترا فى صلبه انت كيف يحترق

حتى احتوى بيتك المهيمن من خندق علياء تحتها النطق

وانت لما ولدت اشرقت الـرض وضاءت بنورك الافق

فنحن فى ذالك الضياء وفى والنور وسبل الرشاد تخترق

অর্থাৎ:

(১) এর আগে আপনি ছায়ায় দিনাতিপাত করতেন এবং এমন স্থানে (জান্নাতে) থাকতেন, যেখানে পাতা মিলিত হয়। (আদমের প্রতি ইঙ্গিত)।

(২) অত:পর আপনি দুনিয়াতে (আদমের উরসে) এলেন। তখন আপনি না মানুষ্য ছিলেন না মাংসপিন্ড না জমাট রক্ত।

(৩) বরং আপনি সে বীর্য যা নৌকায় সওয়ার হয়েছে এবং নসর (প্রতিমা ও নসর পুজারীদেরকে পানি গ্রাস করেছে। (নুহ (عليه السلام ) এর ঘটনার প্রতি ইঙ্গিত)

(৪) আপনি এমনিভাবে ঔরস থেকে স্থানান্তরিত হতে থাকেন এবং শতাব্দীর পর শতাব্দী অতিবাহিত হয়েছে। যখন ইব্রাহীম (عليه السلام ) অগ্নিতে ঝঁাপ দেন, তখন আপনি তাঁর ঔরসে ছিলেন। এমতাবস্থায় অগ্নির কি সাধ্য ছিল যে, ইব্রাহীমকে স্পর্শ করে?

(৫) অবশেষে আপনার শ্রেষ্ঠত্বের প্রমাণ আপনার মাহাত্ম খন্দকের উচ্চস্থানকে ঘিরে নিল, যার নীচে অন্যান্য পাহাড়ের মধ্যবর্তী অংশ রয়েছে।

(৬) আপনি যখন ভূমিষ্ট হলেন তখন জগতবাসী আলোকময় হয়ে গেল। এবং আপনার নূরালোকে দিগন্ত উদ্ভাসিত হয়ে গেল।

(৭) এখন আমরা এ নূর ও নুরালোতে বিদ্যমান আছি আমাদের সম্মোখে হেদায়াতের পত উম্মুক্ত।

তথ্য : ( সুয়ূতী রচিত খাছায়েছুল কুবরা-১/৯৭নং)

ইমাম ইবনে আব্দুল বার رضي الله عنه উক্ত কবিতাটি খারীয ইবনে আওস رضي الله عنه এর জীবনী আলোচনায় উল্লেখ করেন। হযরত খারীয رضي الله عنه বলেন : আমি রাসূলে পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর সঙ্গে হিজরত করি। তাবুক হতে প্রাপ্ত তাঁর মানছারিফ তথা তাঁর সম্মুখে উপস্থাপন করি। এ সময় আমি স্বীয় চাচা হযরত আব্বাস رضي الله عنه কে বলতে শুনেছি, তিনি বলেন : হে আল্লাহর রাসূল ! আমি আপনার প্রশংসা করতে চাই। হুযূর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, প্রশংসা কর! তাতে আল্লাহ পাক তোমার মুখের প্রশস্থতা বাড়িয়ে দিবেন। এর পর হতে তিনি কবিতাবৃত্তি করতে আরম্ভ করেন। হাফিজ ইবনে আব্দুল বার رضي الله عنه বলেন, তাঁর ন্যায় স্বীয় ভাই জারীর ইবনে আওম ও উক্ত কবিতাবৃত্তি করেন।

সূত্র : আল ইস্তিয়াব ২/৪৪৭ পৃ:

আল্লামা মাক্বীদাহ বলেন : জারীর স্বীয় ভ্রাতা খারীযের সঙ্গে হুযূরে পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর দরবারে আসেন। আল্লাম ইবনে আব্দুল বার বলেন : জারীর ইবনে আওস আততায়ী رضي الله عنه কর্তৃক রাসূলে পাকের শানে লিখিত প্রশংসীত কবিতাটি আবৃত্তি করেন। এরপর উভয়ে একসাথে হুযূর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর খেদমতে এসে উক্ত কবিতা আবৃত্তি করেন।

(আল-ইস্তিয়াব- ২/২৪০)

আল্লামা মাক্বীদাহ বলেন ইমাম হাফেজ ইবনে হাজার আসক্বালানী رضي الله عنه স্বীয় এছাবা গ্রন্থে হযরত খারীয رضي الله عنه এর জীবনী অধ্যায়ে উল্লেখ করেন।

তাঁর মতে উক্ত কবিতা ইবনে হায়াসামাহ, কায়যার এবং ইবনে শাহীন প্রমুখরাও উল্লেখ করেন।

ইমাম হাকীম নিশাপুরী رضي الله عنه স্বীয় মুস্তাদরাকে উল্লেখ করেন এবং ইমামা যাহাবী رضي الله عنه তাকে সমর্থন করেন।

(আল মুস্তাদরাক ৩/৩২৭ পৃ:)

ইমাম হাফেজ ইমাদ উদ্দিন ইবনে কাছীর رضي الله عنه স্বীয় সীরাতে ইবনে কাছীরের ১/১৯৫ পৃ: নিন্মোক্ত সনদে উল্লেখ করেন। হযরত আবু সাকীন হতে বর্ণিত: তিনি যাখার বিন হাসীন হতে, তিনি স্বীয় দাদা সুমাইদ বিন মিতাব হতে। তিনি বলেন : আমার দাদা হযরত খারীয ইবনে আওস رضي الله عنه বলেন : আমি রাসূলে পাকের সঙ্গে হিজরত কালে সাইয়্যিদিনা হযরত আব্বাস رضي الله عنه কে বলতে শুনেছি, তিনি বলেছেন, হে আল্লাহর রাসূল ! আমি আপনার প্রশংসা করতে চাই। হুযূর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, প্রশংসা করুন! মহান আল্লাহ পাক আপনার মুখের প্রসস্থতা ও সালামতি বৃদ্ধি করে দিবেন।

তিনি বলেন : উক্ত কবিতাটি হযরত হাসসান ইবনে ছাবিত رضي الله عنه হতেও বর্ণিত আছে। তবে মুলত : কবিতাটি হযরত আব্বাস (رضي الله عنه) এর তাতে সন্দেহ নেই। হযরত আব্বাস (رضي الله عنه) উক্ত রেওয়ায়েতকে স্বীয় তাফসীরে সুরায়ে শুআরায় বর্ণনা করত: বলেন, মহান আল্লাহর বাণী : وَتَقَلُّبَكَ فِي السَّاجِدِينَ অর্থাৎ : তিনি (মহান আল্লাহ পাক) আপনাকে সর্বদাই সিজদা কারীগনের মধ্যে স্থানান্তরীত করে আনেন।

হযরত আব্বাস رضي الله عنه বলেন : আয়াতে কারীমার ব্যাখ্যা হচ্ছে যে, মহান আল্লাহ পাক তাঁকে নবীগণের পৃষ্টদেশে স্থানান্তরীত করে একপর্যায়ে তাঁর মা আমেনা رضي الله عنه তাঁকে জন্মদান করেন। ইমাম ইবনে আবীহাতীম, ইবনে মারদুভীয়্যা এবং আবু নুআঈম স্বীয় দালায়েলে উক্ত হাদীস বর্ণনা করেন।

(আদদুররুল মানছুর ৫/৯৮ পৃ: দ্رضي الله عنه )

ইমাম ইবনে কাছীর رضي الله عنه স্বীয় তাফসীরে ইবনে কাছীরে, ইবনে আবী হাতীম, ইবনে জাওযী সহ প্রত্যেকই সুরা শুআরায় বর্ণিত وَتَقَلُّبَكَ فِي السَّاجِدِينَ. আয়াত তা বর্ণনা করেছেন সুফিয়ান বিন উআয়না, ফিরআভী, হুমায়দী, সাইয়্যিদ ইবনে মনছুর, ইবনে মারদুভীয়্যা, বায়হাকী, প্রমুখগণ। তাদের মতে আয়াতে বর্ণিত وَتَقَلُّبَكَ فِي السَّاجِدِينَ. দ্বারা উদ্দেশ্য হচ্ছে হুযূরে পাকের বাণী : অর্থাৎ আমাকে এক নবী হতে পর্যায়ক্রমে আরেক নবীর পৃষ্টদেশে স্থানান্তরীত করে আনা হয়। শেষ পর্যায়ে আমাকে নবী হিসেবে বের করে আনা হয়।

(দুররুল মানছুর)

পূর্বোক্ত আলোচনা দ্বারা স্পষ্ট হয়ে হয়ে গেছে যে, যুগে যুগে পূর্ব পুরুষদের মাধ্যমে হুযূর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম স্থানান্তরীত হয়ে আসাটা একটি প্রমাণিত বিষয়, যা সাব্যস্ত হয়েছে হযরত আব্বাস رضي الله عنه কর্তৃক হুযূর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর সম্মুখে আবৃত্তি করা কবিতা দ্বারা এবং হুযূর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম শতস্ফুত:ভাবে তার স্বীকৃতি প্রদান করেছেন। এ আলোচনাকে আরও ষ্পষ্ট ও সুদৃঢ়ভাবে প্রতীয়মান করে ইবনে আব্বাস رضي الله عنه কর্তৃক নিন্মোক্ত وَتَقَلُّبَكَ فِي السَّاجِدِينَ. আয়াতে কারীমার ব্যাখ্যা দ্বারা। আর বর্ণিত আয়াতে কারীমা দ্বারা হুযূর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর স্থানান্তরীত হওয়ার ব্যাপারটি আরেক যুক্তিগত ও প্রমাণিত বিষয়।

তবে কোন কোন সময় কোন কোন সংকীর্ণমনা ও মন্দাকৃতির লোকেরা এ ধারণা পোষণ করে থাকে যে, হুযূর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর স্থানান্তরীত হওয়াটা মুলত: জাতীগত বা সত্ত্বাগত ব্যাপার বিধায় তা জাতে মুহাম্মদীর সাথে বিশেষিত। এজন্য তিনি এক পৃষ্ট হতে অন্য পৃষ্টে এবং এক রেহেম থেকে আরেক রেহেমে স্থানান্তরীত হয়ে এসেছেন। একথাগুলো মুলত : কোন মুর্খ ও পাগলের কথা বৈই আর কিছু নয়।

মূলত : রাসূলে করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর স্থানান্থরিত হওয়াটা সত্ত্বাগতও ছিলনা আবার কেবল মাত্র তাঁর জন্য খঁাছও ছিলনা বরং তা বংশধরদের জন্য ও ব্যাপক ছিল যা তামাম আম্বিয়ায়ে কেরামগণের পৃষ্টদেশ দিয়ে স্তানান্তরীত হয়ে এসেছিল। তবে যুগে যুগে রাসূলগণের পৃষ্ট মোবারক হয়ে হুযূরে পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর স্থানান্তর হওয়াটা ছিল সুস্থ্য বিবেক ও পরিপূর্ণ অস্থিত্ব সহকারে। সেখানে কোন অবস্থায়ই তাঁর মস্তিষ্কের অবনতি ঘটেনি বা জ্ঞান হারা হননি। আর ঐ সুস্থ্য বিবেক ও পরিপূর্ণ জ্ঞান পার্থিব জগতে আসার পূর্ব মুহুর্ত পর্যন্ত বিরাজমান ছিল।

যেহেতু আম্বিয়ায়ে কেরামগণের পৃষ্টদেশ হয়ে যুগে যুগে নবী পাকের স্থানান্তর হওয়ার দ্বারা তাই বুঝানো হয়েছে যে, হযরত মোহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মুলত তাঁর বংশধরগনের জিম্মায় এসেছেন।

আর মহান আল্লাহ পাক তা কেবল মোহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর জন্য খাছ করে রেখেছেন।

তবে রাসূলে পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর মতো অন্যান্য বংশধরদের এভাবে অবগতি জ্ঞান ছিলনা বরং রূহ জগতে সকলের কাছ থেকে অঈীকার গ্রহনের সময়কার ব্যতীত।

মোট কথা হচ্ছে মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যুগে যুগে আম্বিয়ায়ে কেরামগণ দ্বারা স্বীয় বংশগণের মাধ্যমে বিশাল নূর চমকিয়ে উঠেছিল।

যেমন : এ ব্যাপরে ইমাম হাফেজ মুহাদ্দেস শামসুদ্দিন ইবনে নাছির দিমাসাকী (رضي الله عنه ) কতই না চমৎকার কথা কাব্যাকারে বলেছেন-

تنقل أحمد نورا عظيما * تلألأ في جباه الساجدينا

تقلب فيهم قرنا فقرنا * إلى أن جاء خير المرسلينا

এলেন নবী এ ধরাতে বিশাল নূরী হয়ে

সেজদাকারীর কপাল দিয়ে এলেন চমকিয়ে

তাদের দ্বারা স্থানান্তর হলেন যুগে যুগে

অবশেষে এলেন তিনি শ্রেষ্ট রাসূল রূপে

সুতরাং ইমাম সুয়তী (رضي الله عنه ) প্রণীত মাসালিকুল হুনাফা ইমাম আহমদ বিন হাম্বল স্বীয় সনদে সাইয়্যিদিনা হযরত আব্বাস (رضي الله عنه ) হতে বর্ণিত একখানা হাদীস উল্ল্যেখ করত বলেন যে, হুযূরে পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম স্বীয় প্রশংসায় বলেন-

قَالَ أَنَا مُحَمَّدُ بْنُ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ عَبْدِ الْمُطَّلِبِ إِنَّ اللَّهَ خَلَقَ الْخَلْقَ فَجَعَلَنِي فِي خَيْرِ خَلْقِهِ وَجَعَلَهُمْ فِرْقَتَيْنِ فَجَعَلَنِي فِي خَيْرِ فِرْقَةٍ وَخَلَقَ الْقَبَائِلَ فَجَعَلَنِي فِي خَيْرِ قَبِيلَةٍ وَجَعَلَهُمْ بُيُوتًا فَجَعَلَنِي فِي خَيْرِهِمْ بَيْتًا فَأَنَا خَيْرُكُمْ بَيْتًا وَخَيْرُكُمْ نَفْسًا

অর্থাৎ : হুযূর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এরশাদ ফরমান : আমি মুহাম্মদ ইবনে আব্দুল্লাহ ইবনে আব্দুল মোত্তালেব হিসেবে বলছি যে, মহান আল্লাহ পাক সর্বপ্রথম সৃষ্টি জীবকে সৃষ্টি করে আমাকে শ্রেষ্ঠ জীব হিসেবে নির্বাচন করেন। এরপর উক্ত সৃষ্ট জীবকে দুটি ভাগে বিভক্ত করে আমাকে উত্তম ভাগে রাখেন। এপর বিভিন্ন ক্বাবীলাহ (গোত্র সমূহ) সৃষ্টি করে এরপর তাদেরকে বিভিন্ন পরিবারে বিভক্ত করে তন্মধ্যে আমাকে শ্রেষ্ঠ পরিবারে তথা কুরাইশ পরিবারে নির্বাচন করেন।

অতএব, হে আরববাসী! জেনে রাখ যে, আমি পারিবারিক ক্ষেত্রেও যেমন তোমাদের মধ্যে শ্রেষ্ঠ, তেমনি ব্যক্তিত্বের ক্ষেত্রেও তোমাদের মধ্যে শ্রেষ্ঠ। ইমাম হাকীম, নিশাপুরী স্বীয় গ্রন্থে এবং বায়হাক্বী (رضي الله عنه ) স্বীয় বায়হাকীতে অনূরূপ বর্ণনা করেছন।

বহু নির্ভরযোগ্য সনদ মাধ্যমে বর্ণিত হাদীস দ্বারা প্রমাণিত আছে যে, হুযূর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এরশাদ করেছেন

خرجت من نكاح خير سفح

 অর্থাৎ : আমি যুগে যুগে অবৈধ যৌন কর্ম ব্যতিরেকে বরং বিবাহ প্রথার মাধ্যমে বেরিয়ে এসেছি। অন্য এক বর্ণনায় এসেছে হুযূর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এরশাদ ফরমান :

ما ولدنى من سفح الجاهلية شى وما ولدنى الانكاح كنكاح الاسلام

অর্থাৎ : জাহিলী যুগের কোন অবৈধ যৌনকর্মে আমার জন্ম হয়নি বরং ইসলামী পন্থায় বৈধ বিবাহ প্রথার মাধ্যমে আমার জন্ম হয়েছে।

অন্য এক বর্ণনায় এসেছে হুযূর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর বাণী-

لم اخرج الا من طهرة

অর্থাৎ : সর্বদাই পুত:পবিত্র পন্থায় আমার আগমন হয়েছে। এ হাদীসটি ঐতিহাসিক ইবনে সা’দ ইবনে আসাকীর, তাবারানী এবং ইবনে আবী শায়রা বর্ণনা করেছেন এবং ইমাম জালাল উদ্দিন সুয়ূতী رضي الله عنه খাছায়েছুল কুবরাতে, ইমাম হাফিজ ইমাদ উদ্দিন ইবনে কাছীর رضي الله عنه স্বীয় বেদায়া গ্রন্থে উক্ত হাদীসটি নকল করেন।

ইমাম আবু নুআঈম কর্তৃক বর্ণিত একখানা হাদীসে এসেছে

لم يلتق ابواي قط على سفاح لم يزل الله ينقلني من الأصلاب الطيبة إلى الأرحام الطاهرة مصفى مهذبا لا تتشعب شعبتان إلا كنت في خيرهما.

আমার পবিত্র মাতা পিতা কশ্নিনকালেও অবৈধ যৌন কর্মে লিপ্ত হননি। মহান আল্লাহ পাক সর্বদাই আমাকে পুত: পবিত্র পুরুষদের পৃষ্ঠদেশ হতে পুত : পবিত্র রমনীদের পবিত্র রেহেমে স্বচ্ছ নির্মল ও সুসভ্য-মার্জিত স্বভাব দিয়ে স্থানান্তরীত করে আনেন। এমন দুটি দল নেই যে, আমি তদোভয়ের মধ্যে শ্রেষ্ঠ নই।

ইমাম তাবারানী رضي الله عنه স্বীয় আওসাতে এবং বায়হাক্বী رضي الله عنه স্বীয় দালায়েলুন নবুওয়তে হযরত আয়েশা সিদ্দীকা رضي الله عنه হতে এক খানা হাদীস বর্ণনা করেন, হুযূর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এরশাদ ফরমান :

قال لي جبرئيل قلبت الأرض مشارقها ومغاربها فلم أجد رجلا أفضل من محمد ولم اجد بني أب افضل من بني هاشم.

অর্থাৎ : আমাকে হযরত জিব্রাঈল (عليه السلام ) সম্বোধন করে বললেন : আমি পৃথিবীর প্রাচ্য হতে পাশ্চাত্য পর্যন্ত ভ্রমণ করি কিন্তু মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর চেয়ে অত্যাধিক মর্যাদাশীল কোন লোককে দেখতে পাইনি, এমনকি বনু হাশিম গোত্রের চেয়ে অত্যাধিক মর্যাদাশীল কোন পিতার সন্তানকে দেখতে পাইনি। অর্থাৎ হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামই বংশগত ও মর্যাদাগত দিক বিবেচনায় সর্বশ্রেষ্ঠ।

(মাছালিকুল হুনাফা ৬৩পৃষ্টা)

উল্লেখ্য যে, রহমাতুল্লিল আলামীন হুযূর পুরনূর (ﷺ) বলেন আমার মান মর্যাদাকে যুগে যুগে মহান আল্লাহ পাক হেফাজত করেছেন এবং তাঁর নামের উসিলায় তাঁর পূর্ব পুরুষগণ বহু সংকট হতে রক্ষা পেয়েছেন এমনকি তাঁর পূর্ব পুরুষ তথা আদম (عليه السلام ) থেকে নিয়ে স্বীয় মাতা পিতা পর্যন্ত কেউই অবৈধ যৌন কর্মে লিপ্ত হননি। যেমন : এ প্রসঙ্গে একজন জনৈক কবি কাব্যাকারে বলেছেন :

حفظ الآله كرامة لمحمد * آباءه الأمجاد صونا لاسمه

تركوا السفاح فلم يصبهم عاره * من آدم وإلى أبيه وأمه

মহান আল্লাহ পাক মোহাম্মদ (ﷺ) এর সম্মানের উসিলায় তাঁর সম্মানীত পূর্ব পুরুষদেরকে হেফাজত করেন। সকলের ললাটে তাঁর মোবারক নাম অংকিত থাকায় তাঁরা ভয়াল সংকট হতে নিরাপত্তা লাভ করেন। তাদের সকলেই অবৈধ যৌনাচার পরিহার করে চলেছিল, তাতে কোন নগ্নতা, ও বিবস্ত্রতায় তাদেরকে স্পর্শ করতে পারেনি। তা হযরত আদম (عليه السلام) হতে শুরু করে পরিশেষে তাঁর সম্মানীত মাতা পিতা পর্যন্ত পবিত্র থেকে পবিত্রতায় এসে পৌছে।

সহীহ বোখারী শরীফে হযরত আবু হুরায়রা (رضي الله عنه) হতে একখানা হাদীস বর্ণিত আছে, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এরশাদ ফরমান :

قال بُعِثْتُ مِنْ خَيْرِ قُرُونِ بَنِي آدَمَ قَرْنٍ فَقَرْنٍ حَتَّى بُعِثْتُ مِنَ الْقَرْنِ الَّذِي كُنْتُ مِنْهُ.

মানব সমাজ যে যুগে যুগে ক্রমান্নয়ে ধাপে ধাপে মানবীয় প্রতিভা ও গুনাবলীর ক্ষেত্রে উন্নতির দিকে অগ্রসর হয়েছে। যুগের পর যুগ অতিবাহিত হয়েছে অতপর যখন আমার আর্বিভাবের যুগ এসেছে তখনই আমার আর্বিভাব হয়েছে।

ইমাম ছাখাভী رحمة الله عليه বলেন : হুযূর পুর নূর (ﷺ) হচ্ছেন সৃষ্টির প্রথম মুক্বারাবীন ফেরেস্তাকুলের সরদার। তিনি সমস্ত সৃষ্টি জীবের মুক্তি সনদ, বিশ্বপ্রতিপালক আল্লাহ পাকের প্রিয় হাবীব, যিনি শাফাআতে কুবরা দ্বারা বিশেষিত। বিশ্ববাসীর নিকট তিনি মাওলানা আবুল কাছিম মোহাম্মদ বিন আব্দুল মুত্তালিব হিসেবে পরিচিত ও সমাদৃত।

রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর পূর্ব পুরুষগণের পরিচয় ও বিশেষণ
____________________
রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর পূর্ব পুরুষগণের পরিচয় ও বিশেষণ

খাজা আব্দুল মুত্তালেবের পরিচয় খাজা আব্দুল মুত্তালিব (رضي الله عنه ) কে এ নামে আখ্যায়িত করার একটি হেকমত আছে। তাঁর আসল নাম হচ্ছে শায়বাতুল হামদ। তাঁকে এ নামে নামকরণ করার কয়েকটি অভিমত পাওয়া যায়।

কেউ কেউ বলেন, আব্দুল মোত্তালেব পিতা খাজা আব্দুল হাশিম رضي الله عنه এর মৃত্যুর সময় তাঁর চাচা মুত্তালেবকে লক্ষ্য করে বলেছিলেন ادك عبدك بيثرب. অর্থাৎ : ইয়াসরিবে তোমার দাসের সন্ধান মিলেছে। এ থেকেই তাঁকে আব্দুল মুত্তালিব বলা হতো। কেউ কেউ বলেন : একবার তাঁর চাচা মুত্তালিব তাঁকে সঙ্গে নিয়ে মক্কায় আসেন, এ সময় তিনি জরাজীর্ণ আকৃতিতে ছিলেন অর্থাৎ : ময়লা কাপড় পরিহিত ছিলেন। তাই কেউ তাকে এ ব্যক্তি সম্পর্কে জানতে চাইলে লজ্জাবশত: নিজের ভাতিজা পরিচয় না দিয়ে বরং আমার দাস বলে সম্বোধন করতেন। আবার ঘরের ভেতর ডুকিয়ে বা ভাল কাপড় পরিধান করলেও নিজের ভাতিজা বলে পরিচয় দিতেন। খাজা আব্দুল মুত্তালিব (رضي الله عنه ) সম্পর্কে আরেকটি কথা আছে যে, সমগ্র আরববাসীর মধ্যে সর্বপ্রথম তিনি কালো হেজাব ব্যবহৃত করেন। তিনি মোট ১৪০ বছর জীবিত ছিলেন। তাঁর পিতার নাম ছিল আব্দুল হাশিম। আব্দুল হাশিমের আসল নাম ছিল আমর। তাঁকে হাশিম বলা হত এজন্য যে, তিনি স্বীয় সম্প্রদায়কে দুর্ভিক্ষের বছর শুষ্ক রুটি চুর্ণ করে ঝুলে মিশ্রিত করে খাওয়ান। তার পিতার নাম ছিল আব্দে মনাফ ইবনে কুছাই। কুছাই শব্দটি ক্বাছা শব্দে তাছগীর। যার অর্থ হচ্ছে (বায়ীদ) তথা দুরে থাকা। তিনি স্বীয় মাতা ফাতেমার গর্ভে থাকাবস্থায় তাঁর পিতা কুছাই দীর্ঘদিন পরিবার পরিবর্গ থেকে সূদূর মুদ্বাআ শহরে যেয়ে বসবাস করেন। কুছাইর পিতার নাম ছিল কিলাব। কিলাব শব্দটি হয়তো মুকা-লাহাব হতে গৃহীত। যেমন : আরবীয় ভাষায় كالبت العدو مشادة ومضائقة অর্থাৎ : শত্রুরা গিরীসংকটে গৃহীত তা কালবুন শব্দে বহুবচন। তাকে কিলাব বলে ডাকা হতো এজন্যে যে, কিলাব বংশের লোকেরা কোন কোন বিষয়ে বার বার ব্যবহার করতো অথবা কোন বিষয় একাধিকবার ব্যবহার করতো। যেমন : একবারে সাত শব্দে উচ্চরণ করা। তা তোমরা কেন তোমাদের সন্তান-সন্ততিদেরকে নিকৃষ্ট নামে ডাকো? যেমন كلب (কালবুন) ذئب (জিবুন) عبيدكم (আবীদুকুম) ইত্যাদি। অথচ এর পরিবর্তে مرزوق (মারযুক) مرباح (মিরবাহ) ইত্যাদি সুন্দর নাম সমূহ রয়েছে। সে বলল, আমরা সন্তানদের এ নামে ডাকি কেবল শত্রুদের কারণে এবং দাসদেরকে ডাকি কেবল নিজেদের স্বার্থে। তারা ছেলেদেরকে শত্রুদের মোকাবেলায় প্রস্তুত করতো এবং তাদের কুরবাণীর তীর হিসেবে ইচ্ছা করতো বিধায় তারা এ সব নাম সমূহ নির্বাচন করতো। কিলাবের নাম ইবনে মুররা। মীম হরফে পেশ এবং رضي الله عنه হরফে তাশদীদ যোগে ইবনে মুররার পিতার নাম ইবনে কা’ব। তিনি এমনই এক ব্যক্তি যিনি সর্বপ্রথম ইয়াউমূল জুমআকে ইয়াউমূল উরুবা তথা আরবীয় দিন বলে নামকরণ করেন।

তিনি প্রতি জুমআর দিন আসলে খুতবা প্রদান করতেন এবং তা শ্রবণের নিমিত্তে কুরাইশদেরকে জড়ো করতেন এবং এমনই এক ব্যক্তি যিনি সর্বপ্রথম اما بعد (আম্মা বাদ) শব্দের প্রচলন করেন।

তিনি খুতবার প্রাক্ষালে امابعد বলে প্রথমে স্বীয় কওমকে হুযূরে পাক (ﷺ) এর আগমনের বার্তা বাণী শুনিয়ে তাদের জানিয়ে দিতেন যে, মোহাম্মদ (ﷺ) তাঁরই সন্তানদের অন্তর্ভূক্ত হবেন। এ হিসাবে তিনি তাদেরকে তাঁর (নবীর) অনুস্মরণের নির্দেশ দিতেন। তিনি রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর আগমনের আকাংক্ষায় নিন্মোক্ত কবিতাবৃত্তি করেন।

يا ليتنى شاهد فحواء دعوته * حين العشيرة تنفى الحق خذلانا

অর্থাৎ- কাবের পিতার নাম হচ্ছে ইবনে লুআই। লু“ই শব্দটি (আল-লা, ইউন) শব্দে তাছগীর। তাঁর পিতার নাম গালেব। ফিহরের ছেলে। ফা হরফে যের। তার পিতার নাম গালেব। তিনি ফিহরের উপনাম হচ্ছে কুরাইশ এবং ফিহর হচেছ মূল নাম। ফিহর পর্যন্ত কুরাইশ বংশ সমাপ্ত হয়। তারপর থেকে কেনানী বংশ শুরু। তা ই নির্ভরযোগ্য কথা। ফিহরের পিতা হচ্ছেন মালেক। তার পিতার নাম নদ্বর। তাঁকে নদ্বর বলা হতো এজন্যে যে, তাঁর চেহারার ঔজ্জল্যতা ছিল অত্যন্ত বেশী। তার মূল নাম ক্বায়েস। অধিকাংশের নিকট নজর ইবনে কেনানাহ ছিলেন সমগ্র কুরাইশদের সংমিশ্রন স্থল। কেনানাহ শব্দে, ক্বাফ, হরফ যের যোগে। তিনি আবু কাবলা নামে প্রসিদ্ধ। তিনি ইবনে খুযায়মা এর পুত্র। খুযায়মা শব্দটি তাছগীর। خزمة (খাযমাহ) শব্দ থেকে গৃহীত। খুযায়মা শব্দটি ছেলে مدركة (মুদরিকা) শব্দটি ইসমে ফায়েল তথা কর্তা কারক বিশেষ্য অর্থে ব্যবহৃত। তাঁর পিতার নাম হচ্ছে ইলিয়াস। ইমাম আম্বারীর মতেالياس শব্দের হামযা যের যোগে এসেছে। কেউ কেউ যবর যোগে তথা الياس (আলয়াস) পড়েছেন। তা কাছিম বিন ছাবিতের অভিমত। হযরত মুদরেকা বিন ইলিয়াস (رضي الله عنه ) বলেন আমি হজ্জ করা কালীন সময়ে আমার মেরুদন্ড হতে মোহাম্মদ (ﷺ) এর তালবীয়া পাঠের আওয়াজ শুনতাম। তিনি আরো উল্লেখ করেন হযরত মোহাম্মদ (ﷺ) আমার মেরুদন্ডে অবস্থানকালে তাকে স্পষ্টভাবে একথা বলতে শুনেছি, তিনি বলেছেন : لاتسبوا الياس فانه كان مؤمنا অর্থাৎ : ওহে আরববাসী! তোমরা কখনো ইলিয়াসকে গালি দিওনা। যেহেতু তিনি একজন খাঁটি মুমিন।

ঐতিহাসিক ইমাম সুহাইলী (رحمة الله عليه ) স্বীয় রাওদ্বা গ্রন্থে বর্ণনা করেন যে, হযরত জাবের رضي الله عنه বর্ণনা করেন, সাইয়্যিদিনা হযরত ইলিয়াস (رضي الله عنه ) বনু ইসমাঈলী গোত্রের আকীদাহ অস্বীকার করতেন। কেননা তারা তাদের পূর্ব পুরুষদের রীতি নীতি পরিবর্তন করে ফেলেছিল। তিনি তাদের বোধগম্যতার জন্য দৃঢ়ভাবে দাঁড়িয়ে তাদের যুক্তিসম্মত তত্ত্ব উপাত্ব্য দ্বারা নসীহত করত স্বীয় রায়ের প্রতি তাদেরকে জড়ো করতেন, ফলে তাঁর সুন্দর ও চমৎকার যুক্তি শ্রবণে যার পর নেই সকলেই সন্তুষ্ট হতো।

তিনি এমনই এক মহান ব্যক্তিত্ব, যিনি সর্বপ্রথম খানায়ে কা’বার উদ্দেশ্যে স্বীয় দেহকে উৎসর্গ করেছিলেন। ফলে অব্যাহত ধারায় আরবীয়গণ তৎকালীন সকল জ্ঞানী-গুণী ও পন্ডিতদের উর্ধ্বে তাঁকে সম্মান দান করতো।

ইবনে মুদ্বার : মুদ্বার শব্দটি عمر (উমার) শব্দের ওযনে এসছে। তাঁকে মুদ্বার বলা হতো এজন্য যে, তৎকালীন যুগে যারা সুন্দর ও উত্তম দৃষ্টিতে তাঁর দিকে তাকাতো তিনি তাদের হৃদয়ের অবস্থার গতি পরিবর্তন করে দিতেন অর্থাৎ : তাঁর নেক দৃষ্টিতে জনগণের অন্তরের অবস্থার পরিবর্তন এসে যেতো। তিনি ছিলেন উত্তম, মাধুর্য্যপূর্ণ ও সুললীত কণ্ঠের অধিকারী। সাইয়্যিদিনা হযরত ইবনে আব্বাস رضي الله عنه হতে একখানা হাদীস বর্ণিত আছে, হুযূর (ﷺ) বনী মুদ্বার ও বনী রাবীআ গোত্র সম্পর্কে বলেছেন

 لاتسبوا مضروربيعة - فانهما كانا مسلمين على ملة ابراهيم

অর্থাৎ : হে আরবেরা! তোমরা কখনো মুদ্বার ও স্বীয় ভ্রাতা রাবীয়াকে গালি দিওনা। কেননা তাঁরা উভয়ই হযরত ইব্রাহীম (عليه السلام ) এর ধর্মের উপর মুসলমান ছিলেন। শুধু তাই নয় বরং হযরত ইবনে আব্বাস رضي الله عنه তদুভয়ের সঙ্গে বনী খুযায়মা, মা’আদ, আদনান, আদাদ, ক্বায়েস, তামীম, আসাদ ও সন্বাহ গোত্রকে ও শামিল করতে বলেন যে, তাঁদের সকলেই মিল্লাতে ইব্রাহীমী ধর্মের উপর মুসলমান হয়ে মৃত্যুবরণ করেন।

এজন্য তাঁদের সমালোচনা না করার জন্য রাসূলুল্লাহ (ﷺ) নিন্মোক্ত বাণী ফরমায়েছেন : فلا تذكرو هم الابما يذكربه المسلمون অর্থাৎ : মুসলমানগণ যে উত্তম সমালোচনা করে থাকেন তা ব্যতীরেকে কোন অবস্থায়ই তাঁদের মন্দালোচনা তোমরা করোনা।

ইবনে নযর:- প্রকাশ থাকে যে, নযর শব্দটি (নুন) যের যোগে এবং زا হরফটি তাশদীদ বিহীন এসেছে। অর্থাৎ- نزار (নিযার) শব্দটি نزر নযর হতে এসেছে। যার অর্থ হচ্ছে ক্বালীল তথা অল্প। অর্থাৎ- তিনি ছিলেন সে যুগের একমাত্র ব্যক্তিত্ব, যার নামে অন্য কার ও নাম পাওয়া যায়নি। কেউ কেউ বলেছেন, তাঁকে নযর এজন্য বলা হয় যে, তিনি যখন জন্ম গ্রহণ করেন, তখন তাঁর সম্মানীত পিতা মা’আদ رضي الله عنه তাঁর উভয় চোখের মধ্যখানে নূরে মোহাম্মাদী (ﷺ) দেখতে পান এবং তাতে তিনি সীমাহীন আনন্দ প্রকাশ করত: কৃতজ্ঞতা স্বরূপ লোকের সমাগম করে বিশাল আপ্যায়নের ব্যবস্থা করেন এবং দীর্ঘ দিন যাবত এ মহা ব্যবস্থা অব্যাহত রাখেন।

আপ্যায়নের প্রাক্ষালে বলতেন আমার এ যথসামান্য আপ্যায়ন কেবল মাত্র এ নবজাতক সন্তানের আগমনের কৃতজ্ঞতা স্বরূপ ব্যবস্থা করেছি, যেহেতু তাঁর পেশানী মোবারকে নূরের স্পষ্টত রুহে মোহাম্মাদী (ﷺ) বিদ্যমান রয়েছে।

ইবনে মা, আদ:- মীম ও আইন হরফদ্বয়ে যবর যোগে এবং দাল হরফে তাশদীদ যোগে এসেছে। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর পুর্বপুরুষ হযরত মা’আদ ইবনে আদনান (رضي الله عنه ) যখন আরব প্রদেশে যুদ্ধের প্রস্তুতি গ্রহণ করেন, তখন মহান আল্লাহ পাক সুদূর আরমেনিয়া শহরের অধিবাসী বনী ইস্রাইলের একজন নবীর প্রতি এমর্মে প্রত্যাদেশ জারী করেন যে, হে নবী তুমি মা’আদের কাছে যাও এবং তাঁকে স্বীয় শহর থেকে বের করে, সুদূর শাম তথা সিরিয়া প্রদেশে নিয়ে যাও এবং সর্বদাই তাঁর নির্দেশের অনুস্মরণ কর কেননা তাঁর সন্তানদের মধ্য হতে আমার প্রিয় আখেরী নবী হযরত মোহাম্মদ (ﷺ) সর্বশ্রেষ্ট ও সর্বশেষ নবী হিসেবে আবির্ভূত হবেন।

সাইয়্যিদিনা হযরত ইবনে আব্বাস (رضي الله عنه ) বলেন : মহান আল্লাহ পাক যদি চাইতেন, তাহলে অবশ্যই তাঁর নবীকে উর্ধ্বতম পূর্ব পুরুষ সম্পর্কে জ্ঞাত করতেন এবং রাসূলুল্লাহ (ﷺ) অবশ্যই এ জ্ঞান রাখতেন।

ইমাম ইবনে দাহিয়্যা (رضي الله عنه ) বলেন: সমস্ত উলামায়ে কেরামগণ এ ব্যাপারে একমত পোষন করেছেন এমনকি এ ব্যাপারে স্বয়ং ইজমা ও দলীল হিসেবে সাব্যস্থ হয়েছে যে, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) তাঁর উর্ধ্বতন পুর্ব পুরুষের তথা মা’আদ ইবনে আদনান পর্যন্ত পৌছে এ পর্যন্ত নিরব থাকতেন।

মুসনাদে ফেরদৌসে ইবনে আব্বাস (رضي الله عنه ) হতে আরেক খানা হাদীস বর্ণিত আছে, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) স্বীয় পূর্ব পুরুষগনের নছব নামা বর্ণনা করতে যেয়ে মা’আদ ইবনে আদনান পর্যন্ত পৌছে নিরব হয়ে যেতেন। এরূপ বলতেন: كذب النسابون অর্থাৎ এর অতিরিক্ত নছব বর্ণনাকারী বা বংশ মিথ্যায় জর্জরীত।

ঐতিহাসিক সুহাইলী (رضي الله عنه ) বলেন বর্ণিত হাদীস বিষয়ে বিশুদ্ধ কথা হচ্ছে হযরত ইবনে মাসউদ (رضي الله عنه ) এর কথা। কেউ কেউ বলেন: হযরত ইবনে মাসউদ (رضي الله عنه ) যখন মহান আল্লাহর নিন্মোক্ত বাণী পাঠ করেন:

أَلَمْ يَأْتِكُمْ نَبَأُ الَّذِينَ مِن قَبْلِكُمْ قَوْمِ نُوحٍ وَعَادٍ وَثَمُودَ وَالَّذِينَ مِن بَعْدِهِمْ لاَ يَعْلَمُهُمْ إِلاَّ اللّهُ .

 অর্থ:- তোমাদের নিকট কি তোমাদের পূর্ববর্তী সম্প্রদায় তথা কওমে নুহ, কওমে আদ, কওমে সামুদ সহ পরবর্তী সম্প্রদায়ের সংবাদ আসেনি তবে তা কেবল মহান আল্লাহ পাক ব্যতীত অন্য কেউই জানেনা।

তখন ইবনে মাসউদ বলেন যে, এরপর যারা বংশীয় জ্ঞানের দাবী তুলে তাদেরকে তিনি রাসূলুল্লাহ (ﷺ) كذب النسابون বলে প্রত্যাখ্যান করতেন। যেহেতু মহান আল্লাহ পাক স্বীয় গ্রন্থে তাঁর বান্দাহগণকে এর উর্ধ্বতম পুর্ব পুরুষ তথা মা, আদ ইবনে আদনানের উর্ধ্বে জানার প্রচেষ্টা কে নিষেধ করেছেন।

সাইয়্যিদিনা হযরত ওমর ফারুক (رضي الله عنه ) হতে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) যখন স্বীয় নছব নামা বর্ণনা করতেন, তখন মা, আদ ইবনে আদনান পর্যন্ত পৌছে এর উর্ধ্ব পুরুষ সম্পর্কে “আমি অবহিত নই” বলে মন্তব্য করতেন।

সাইয়্যিদিনা হযরত ইবনে আব্বাস (رضي الله عنه ) বলেন:

بين عدنان واسماعيل ثلاثون ابا لايعرفون

অর্থ:- হুযূর (ﷺ) এর পূর্ব পুরুষ হযরত আদনান (رضي الله عنه ) হযরত ইসমাঈল (عليه السلام ) এর মধ্যখানে প্রায় ৩০ (ত্রিশ) জন পুর্ব পুরুষ রয়েছেন, যাদের পুরোপুরী তথ্য কেবল আল্লাহ পাক ছাড়া অন্য কেউই জ্ঞাত নয়।

সাইয়্যিদিনা হযরত উরওয়া ইবনে যুবায়ের (رضي الله عنه ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন:

ما وجد نا احدا يعرف بعد معدبن عدنان

অর্থ:- মা, আদ ইবনে আদনান (رضي الله عنه ) উর্ধ্বতন পুর্ব পুরুষ সম্বন্ধে জ্ঞান রাখে এমন কোন ব্যক্তি আছে বলে আমরা পাইনি। তাঁর কাছে কোন এক ব্যক্তি সম্পর্কে বলা হলো যে, হযরত আদম (عليه السلام ) পর্যন্ত তাঁর বংশ পরিচয় দিয়েছে, তা কি সঠিক? তিনি (যুবায়ের) তা অস্বীকার করত: এমন সংবাদ প্রদানকারী ব্যক্তির কঠোর সমালোচনা করেন।

খাজা আব্দুল মুত্তালিব (رضي الله عنه ) এর কৃতিত্বের মধ্যকার প্রথম একটি হচ্ছে যে, যখন হাবশা অধিবাসী আবরাহা আল আছরাম এর বাহিনী আসহাবে ফীলরা পবিত্র কাবা ঘর ধ্বংসের পায়তারা করে, তখন সমস্ত কুরাইশগন নিরাপত্তাহীনতার ভয়ে হেরেম শরীফ হতে বের হয়ে অন্যাত্র চলে গিয়েছিল কিন্তু তিনি বহাল থাকেন এবং বলেছিলেন, আল্লাহর ক্বসম, আমি কখনো হারাম শরীফের ভেতর থেকে বের হবোনা বরং এক্ষেত্রে মহান আল্লাহর সন্তুষ্টি কামনা ব্যতীত বিকল্প উদ্দেশ্য আমার নেই। এ বলে তিনি পবিত্র হেরেমে আবস্থান করেন।

আল্লাহ পাকের অপার কৃপা যে, তিনি আবরাহা বাহিনীকে মুহুর্তের্ই ধ্বংস করেন এবং তাঁদেরকে স্বীয় ঘর হতে তাড়িয়ে দেন। খাজা আব্দুল মুত্তালিব (رضي الله عنه ) স্বীয় চাচা মুত্তালিবের তীরোধানের পর হতে হজ্জ মৌসুমে হজ্জ পালনকারী গনের জন্য পানীয় সামগ্রী ও সাহায্য সহযোগীতার কাজে নিয়োজিত ছিলেন। তিনি এ কাজে স্বীয় সম্প্রদায়কে নিয়ে দীর্ঘ দিন যাবত প্রতিষ্ঠিত ছিলেন। তাঁর মতো কেউই একাজে দীর্ঘ দিন নিয়োজিত ছিলেন না। বিধায় একমাত্র তিনিই উচ্ছ মর্যাদার অধিকারী হন। তাঁর এ স্তরে কেউই পৌছতে সক্ষম হননি। তিনি স্বীয় সম্প্রদায়ের নিকট অত্যন্ত শ্রদ্ধা ও ভালবাসার পাত্র ছিলেন। এমনকি তাদের নিকট যথেষ্ট খা্যতি বিধায় তাদের পথ নির্দেশনা ও সর্তকবাণীর ক্ষেত্রে একমাত্র তাঁর উপরই তাঁরা নির্ভর করতো।

রাসূলুল্লাহ (ﷺ) নিজেই নিজের প্রশংসা করতে যেয়ে বলেন: انا ابن الذبيحين অর্থাৎ- আমি দু যবেহকৃত ব্যক্তিদ্বয় তথা দাদা ইসমাঈল (عليه السلام ) ও পিতা খাজা আব্দুল্লাহ (رضي الله عنه ) দ্বয়ের সন্তান।

আব্দুল মুত্তালিব কর্তৃক খাজা আব্দুল্লাহ (رضي الله عنه ) কে কোরবানি ও জমজম কুপ খনন
____________________
আব্দুল মুত্তালিব কর্তৃক খাজা আব্দুল্লাহ (رضي الله عنه ) কে কোরবানি ও জমজম কুপ খনন

ইমাম তাবারানী (رحمة الله عليه ) ইবনে ওয়াহাবের সুত্রে তিনি উসামা বিন যায়েদ হতে, তিনি কাবিছা যুআইব হতে, তিনি বলেন সাইয়িদিনা হযরত ইবনে আব্বাস (رضي الله عنه ) এরশাদ ফরমান সাইয়্যিদিনা খাজা আব্দুল মুত্তালিব (رضي الله عنه ) মান্নত করেন যে, যদি মহান আল্লাহ পাক আমাকে দশটি সন্তান দান করেন, তবে আমি তাদের একজন কে তাঁর রাস্তায় কুরবানী করে দিব।

মহান আল্লাহ পাক তাঁর মান্নত পূর্ণ করত দশটি সন্তান দান করেন ফলে এবার তিনি কাকে কুরবানি দিবেন এ বিষয়ে লটারী করেন। লটারীতে প্রথম সন্তান হযরত আব্দুল্লাহ (رضي الله عنه ) এর নাম উঠে। অথচ খাজা আব্দুল্লাহ ছিলেন পিতার সবচেয়ে প্রিয়তম সন্তান।

যা হোক পাদ্রীর পরামর্শ মতে তিনি দশটি উঠ দিয়ত করেন এর পরও আব্দুল্লাহর নাম উঠে। এভাবে প্রতিবার আব্দুল্লাহর পরিবর্তে দশটি করে মোট একশত উঠ দিয়ত করেন। অবশেষে আব্দুল্লাহর পরিবর্তে খাজা আব্দুল মুত্তালিব (رضي الله عنه ) একশত উঠ কুরবাণী করেন। হযরত যুবায়ের ইবনে বাক্কার (رضي الله عنه ) বলেন খাজা আব্দুল মুত্তালিব (رضي الله عنه ) একশত উঠ কুরবাণী করে তা লোকের মধ্যে বন্টন করলে পর লোকেরা তা ভক্ষন করে নেয়।

ইমাম ছাখাবির মতে উক্ত ঘটনার পর হতেই মানুষের জীবন বিনিময় হিসাবে একশত উট প্রদানের প্রচলন হয়ে হয়ে পড়ে। এমনকি ইসলামী শরীয়তের বিধানেও যে ক্ষেত্রে “কেসাস” তথা খুনের বদলা খুন হয়না - যেমন অনিচ্ছা কৃত খুন কিংবা খুনের বিনিময়ে বাদীপক্ষ যদি জীবন বিনিময় গ্রহনে সম্মত হয় তবে সে ক্ষেত্রেও একশত উট দেয়ার বিধান রয়েছে। ফেকাহ শাস্ত্রে তাকে “দিয়ত” বলে।

পিতা কর্তৃক পুত্রকে কুরবাণী করার কারন সম্পর্কে ইমাম কাস্তালানী (رضي الله عنه ) বলেন খাজা আব্দুল মুত্তালিব (رضي الله عنه ) এর মান্নত ছিল যে, মহান আল্লাহ পাক আমার মাধ্যমে যদি যম যম কুপকে পুন:রায় খনন করত: তা উদ্ধার করার ক্ষমতা দান করেন, তবে আমি আমার পুত্রকে তাঁর সন্তুষ্টির মানসে কুরবাণী করবো। আব্দুল মুত্তালিবের জীবনের উল্লোখযোগ্য খেদমত হলো যমযম কুপের পুন; খনন এবং আবাদ করণ। জোরহাম গোত্র খাজা গোত্রের নিকট পরাজিত হয়ে কাবার অভিবাকত্ব ত্যাগ করে যাওয়ার প্রাক্ষালে অনেক ঐতিহাসিক নিদর্শন এবং হাতিয়ার সামাগ্রী ঐ কুপের মধ্যে ফেলে দিয়েছিল। কালের আর্বতে ঐসব চিহ্ন টুকুও মুছে গিয়েছিল। খাজা আব্দুল মুত্তালিব স্বপ্নে আদিষ্ট হয়ে ঐ কুপের চিহ্ন অবগত হন। এবং একে খনন করে পরিস্কার পরিচন্ন করার জন্যও আদিষ্ট হন। সে মতে আব্দুল মুত্তালিব একমাত্র সন্তান হারিছকে নিয়ে এ স্থানের খনন কাজ আরম্ভ করেন। কুরাইশদের শত বাধা উপেক্ষা করে হারেসকে বাধার মোকাবেলায় দাঁড় করিয়ে শেষ পর্য়ন্ত মাটি খনন আরম্ভ করেন। তিনি তার সঠিক স্থান বের করে তা খনন করত: পুনরায় সচল করেন। এ ঘটনার পর থেকে তাঁর মর্যাদা ও সুখ্যাতি আর অধিক বেঢ়ে যায়।

আমেনা رضي الله عنها এর বিবাহের ঘটনা
____________________
আমেনা رضي الله عنها এর বিবাহের ঘটনা

ইমাম বারাক্কী (رضي الله عنه ) বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর মহিয়সী মাতা হযরত আমেনা (رضي الله عنه ) কে স্বীয় পিতা খাজা আব্দুল্লাহ (رضي الله عنه ) কর্তৃক বিবাহের কারন হচ্ছে যে, এক বার খাজা আব্দুল্লাহ (رضي الله عنه ) এর পিতা হযরত সাইয়্যিদিনা খাজা আব্দুল মুত্তালিব (رضي الله عنه ) ইয়ামনে আগমন করেন এবং সেখানকার নেতৃস্থানীয় এক ব্যক্তির নিকট আগমন করেন। এ সময় তাঁর দরবারে মুরবা নম্নীয় একব্যক্তি আসেন. এবং হযরত কাবুল আহবার (رضي الله عنه ) বলেন: হযরত খাজা আব্দুল্লাহ (رضي الله عنه ) মা আমেনা (رضي الله عنه ) কে বিবাহ করার পরক্ষনেই মহান আল্লাহ পাক তাঁকে নূর, সম্মান, মর্যাদা, জামালত ও কামালত দান করে সম্মানের উচ্ছাসনে আসীন করেন। যদ্বরুন তিনি স্বীয় কওমের মধ্যে নিজেকে শ্রেষ্টত্ব ও মযার্দাবান বলে দাবী করতেন। নূরে মোহাম্মদী (ﷺ) খাজা আব্দুল্লাহ (رضي الله عنه ) এর দুচোখের মধ্যখানে স্থায়ীত্ব লাভ করে। পরে মহান আল্লাহ পাকের নির্দেশ ক্রমে ঐ নূরে মোহাম্মদী (ﷺ) স্বীয় মাতা আমেনা (رضي الله عنه ) এর রেহেম শরীফে এসে স্থান লাভ করে।

ইমাম বায়হাক্বী (رضي الله عنه ) স্বীয় দালায়েলে মামার এর সুত্রে, তিনি যুহরী থেকে বর্ণনা করে বলেন: সাইয়্যিদিনা হযরত খাজা আব্দুল্লাহ (رضي الله عنه ) ছিলেন কুরাইশ বংশের অত্যন্ত সৌন্দর্য্যময় যুবক। একবার তিনি একদল মহিলা জামাতের পার্শ্ব দিয়ে অতিক্রম করেন। এমন সময় তন্মধ্যকার এক মহিলা বলে উঠল হে কুরাইশ মহিলাগণ! তোমাদের মধ্যকার যে কেউ এ কুরাইশ বংশীয় সুদর্শন যুবকটিকে বিবাহ করবে, সে অবশ্যই তাঁর দুচোখের মধ্যখানের নূর নাুীয় বিশাল নেয়ামত শিকার করার সৌভাগ্য অর্জন করবে।

মাতৃগর্ভে থাকাকালীন মোজেজা
____________________
মাতৃগর্ভে থাকাকালীন মোজেজা

ইমাম যুহরী (رضي الله عنه ) বলেন, পরবর্তীতে হযরত আমেনা (رضي الله عنه ) এর সাথে খাজা আব্দুল্লাহ (رضي الله عنه ) এর প্রনয় হলে সকল জল্পনা কল্পনার অবসান ঘটে এবং রাসূলে করীম (ﷺ)কে তিনি গর্ভে ধারন করতে লাগলেন। ঐতিহাসিক ইবনে আব্দুল বার বলেন: খাজা আব্দুল্লাহ কর্তৃক আমেনা (رضي الله عنه ) কে বিবাহ কালীন সময়ে তাঁর বয়স ছিল মাত্র ত্রিশ বছর। কেউ কেউ বলেন, ২৫ বছর আবার কেউ কেউ বলেন ১৮ বছর। ইমাম ছাখাবী (رضي الله عنه ) এর মতে শেষোক্ত অভিমতটি গ্রহনযোগ্য। ইমাম সাহল বিন আব্দুল্লাহ তাসতারী (رضي الله عنه ) (যিনি তৎকালীন যুগের আইম্মায়ে কিবার গনের বড় ইমাম ছিলেন। তাঁর থেকে অগনীত হাদীস বর্ণিত আছে।) বলেন: ইমাম খতীব বাগদাদী (رضي الله عنه ) এর মতে মহান আল্লাহ পাক নূরে মোহাম্মাদী (ﷺ)কে যখন স্বীয় মাতা আমেনার রেহেম শরীফে স্থানান্তর করানোর ইচ্ছা পোষন করেন, তখন ছিল রজব মাসের কোন এক রজনীতে। ঐ রাত্রে তিনি জান্নাতের প্রধান কর্মকর্তা রেদ্বওয়ান ফেরেস্তাকে নির্দেশ দিলেন ওহে রেদ্বওয়ান! জান্নাতুল ফেরদৌসের সকল দরজা গুলো খুলে দাও এবং আসমান ও জমীন বাসীকে জানিয়ে দাও যে, আজ রাত্রে নূরে মোহাম্মাদী (ﷺ) স্বীয় মাতার রেহেমে অবস্থান করবেন এবং সে রেহেমে তাঁর দেহায়বয়ব পরিপূর্ণতা লাভ করবে এবং সেখান থেকেই সমগ্র বিশ্ববাসীর ভীতি প্রদর্শনকারী রূপে জমীনে তাশরীফ আনবেন।

হযরত যুবাইর ইবনে বাক্কার বলেন: তিনি আইয়্যামে তাশরীকের দিনে জামরায়ে উম্মতায় শিআবে আবু তালেব নামক স্থানে ছিলেন। ঐতিহাসিক ওয়াকেদী ওয়াহাব বিন যামআর সুত্রে তিনি স্বীয় ফুফু হতে বর্ণনা করেন। তাঁর ফুফু বলেন: আমরা রাসূলে পাক (ﷺ) এর মাতা আমেনা (رضي الله عنه ) এর মুখ নিসৃত বাণী শ্রবন করেছি যে, তিনি যখন স্বীয় পুত্রকে গর্ভে ধারন করেন, তখন বলেছিলেন, আমি স্বীয় সন্তানকে গর্ভে ধারন করাবস্থায় কোন কষ্ট পাইনি এমনকি দুনিয়ার সমস্ত গর্ভ ধারীনী নারীদের ন্যায় আমি কোন ভারীত্ব ও কস্ট অনুভব করিনি।

আবার কখনো কখনো একথাও বলতেন: আমি যখন পুরো পুরী ঘুমেও নয় আবার জাগ্রতও নয় এমতাবস্থায় একজন আগন্তুক এসে আমাকে এ বলে সংবাদ দেন ওহে আমেনা তুমি কি অনুভব করেছ যে, তুমি গর্ভবর্তী? আমি বললাম, না তো, আমি অনুভব করতে পারিনি। আগন্তুক বললেন, উম্মতের নবী ও সরদারকে গর্ভে ধারন করেছ। ওহে আমেনা তুমি গর্ভের সন্তানের নাম রেখে দাও মোহাম্মদ। কথিত আছে যে, এ ঘোষনা পত্রটি এসেছিল সোমবার দিনে।

ইমাম ইবনে হিব্বান স্বীয় সহীহ হিব্বানে সাইয়্যিদিনা আব্দুল্লাহ বিন জাফর (رضي الله عنه ) কর্তৃক বর্ণিত হাদীস হতে বর্ণনা করেন: রাসূলে পাক (ﷺ) এর ধাত্রী মাতা হযরত হালিমাতুসাদিয়া (رضي الله عنه ) বলেন: হযরত আমেনা (رضي الله عنه ) আমাকে সম্বোধন করে বললেন:

ان لا بنى هذا شانا انى حملت حملا فلم احمل حملا قط كان اخف على ولا اعظم بركة منه- ثم رأيت نورا كأنه كأنه شهاب خرج منى حين وضعته اضاءت له اعناف الإبد بيصرى من ارض الشام- ثم وضعته فما وقع كما يقع للصبيان وقع واضعا با الارض رافعا رأسه الى السماء-

অর্থ: হে হালেমা! জেনে রাখ! আমার এ সন্তান বিশাল শানদার। নিশ্চয়ই আমি ইতিপূর্বে এমনই কোন সন্তান গর্ভে ধারন করিনি, যে আমার কাছে অত্যধিক হালকাদায়ক মনে হয়েছে। আবার তাঁর চেয়ে এমন বিশাল বরকতময় সন্তান ও আমি ধারন করিনি। অত:পর আমি এমনই এক তারকা বিশিষ্ট নূর দেখতে পেলাম আমার থেকে বের হয়ে যাচ্ছে। সন্তান প্রসব কালে আমার দৃষ্টি শক্তি পতিত হওয়ায় শাম প্রদেশের সমস্ত উট গুলোর ঘাঁড় আলোকিত হয়ে যায়। যাই হোক আমি এমনই এক সন্তান প্রসব দান করলাম যে, কোন শিশুর বেলায় এধরনের কোন আজব ঘটনা ঘটেনি। জমীনে হস্ত ধারন অবস্থায় এবং মস্তক আকাশে উত্তলন অবস্তায় তিনি আগমন করেন।

ইবনে হিব্বান প্রণীত সহীহ গ্রন্থে, হাকীম নিশাপুরীর মুস্তাদরাকে, মুসনদে আহমদ সহ অন্যান্য নির্ভর যোগ্য গ্রন্থে সাইয়্যিদিনা হযরত ইরবাদ বিন সারিয়া সালমী (رضي الله عنه ) হতে বর্ণিত হাদীসে পাওয়া যায় তিনি বলেন: রাসূলুল্লাহ (ﷺ) স্বীয় মর্যাদা বর্ণনা করত: বলেন:

إِنِّي عَبْدُ اللَّهِ فِي أُمِّ الْكِتَابِ لَخَاتَمُ النَّبِيِّينَ وَإِنَّ آدَمَ لَمُنْجَدِلٌ فِي طِينَتِهِ وَسَأُنَبِّئُكُمْ بِتَأْوِيلِ ذَلِكَ دَعْوَةِ أَبِي إِبْرَاهِيمَ وَبِشَارَةِ عِيسَى قَوْمَهُ وَرُؤْيَا أُمِّي الَّتِي رَأَتْ أَنَّهُ خَرَجَ مِنْهَا نُورٌ أَضَاءَتْ لَهُ قُصُورُ الشَّامِ.

অর্থ:- আমি আল্লাহর নিকট উম্মুল কিতাব তথা কুরআন মজীদে অবশ্যই সর্বশেষ নবী হিসেবে বিবেচিত এবং হযরত আদম (عليه السلام ) তখনও মাটির মধ্যে মিশ্রিত ছিলেন। আমি শ্রীগ্রই তোমাদেরকে এ শুভ সংবাদ জানাচ্ছি যে, আমি হচ্ছি পিতা ইব্রাহীম (عليه السلام ) এর দোয়ার নির্যাশ, ভাই ইসা (عليه السلام ) কর্তৃক স্বীয় সম্প্রদায়ের কাছে শুভ সংবাদীত এবং আমার মহিয়সী মাজননীর স্বপ্ন বৃত্তান্ত, যা তিনি দেখেছেন যে, তাঁর গর্ভের সন্তান গর্ভ থেকে খালাস পাওয়ার পর তাঁর থেকে একটি নূর বেরিয়ে গেল যদ্বরুন শামের রাজ প্রসাদ গুলো আলোকিত করে ছিল। উল্লেখ্য যে, ইমাম ছাখাভী (رضي الله عنه ) বলেন আমাদের শায়খ (رضي الله عنه ) এর মতে পুবোর্ক্ত বাণী ببصرى শব্দের ب ও ص হরফদ্বয়ে যবর যোগে অর্থ দাড়ায় মা আমেনা (رضي الله عنه ) স্বচক্ষে উটগুলোর ঘাঁড় আলোকিত হওয়ার কান্ড দেখেছিলেন।

ইমাম ছাখাভী (رضي الله عنه ) বলেন, শাম দামেস্কের পূর্বে অবস্থিত একটি প্রশিদ্ধ নগরী, যা হাওরান প্রদেশের পাশা-পাশি। হাওরান হেজাজ প্রদেশের এক বিশাল জনপদ। উভয়ের মধ্যকার প্রায় দু মঞ্জিল দুরত্ব রয়েছে। উলামায়ে কেরাম গবেষকরা বলেন: শাম দেশকে রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর দিকে খঁাছ করার কারণ হচ্ছে যেহেতু শামদেশ থেকে নবুওয়তের নূর (আলো) সমগ্র বিশ্বের প্রত্যন্ত অঞ্চলে বিস্তৃত হবে। কেননা শাম দেশই হবে তাঁর সাম্রাজ্যের মূল কেন্দ্র বিন্দু। যেমন : এ প্রসঙ্গে পূর্ববর্তী সমস্ত আসমানী গ্রন্থে এর বর্ণনা ছিল এভাবে:

محمد رسول الله- مولده بمكة ومهاجره بيثرب وملكه با الشام- فمن مكة بدأت نبوة محمد صلى الله عليه وسلم و الى الشام ينتهى

অর্থাৎ- মোহাম্মাদ (ﷺ) হচ্ছেন আল্লাহ পাকের রাসূল, জন্ম স্থান হবে পবিত্র মক্কায়, হিজরত করবেন ইয়াসরিব তথা মদীনায় এবং সিরিয়ায় তাঁর নবূওয়তী রাজত্ব কায়েম হবে।

সর্বোপরি পবিত্র মক্কা হতে মোহাম্মদ (ﷺ) এর নবুওয়তী সুচনা হয়ে সিরিয়ায় যেয়ে সমাপ্ত হবে।

আর এ যৌক্তিক কারনে হুযূরে পাক (ﷺ)কে প্রথমে বায়তুল মুকাদ্দাস পর্যন্ত মেরাজ রজনীত ভ্রমন করানো হয়। অথচ বায়তুল মুকাদ্দাস শাম তথা সিরিয়ার অন্তর্গত। এরস্বপক্ষে আরও প্রমাণ রয়েছে। যেমন : সাইয়্যিদিনা হযরত ইব্রাহীম (عليه السلام ) ও স্বদেশ ত্যাগ করে অবশেষে শাম দেশে হিজরত করেন। সলফে সালেহীনদের কোন কোন ইমামদের মতে মহান আল্লাহ পাক এমন কোন নবীও রাসূল প্রেরন করেননি যে তাঁরা কোন না কোনভাবে শামে আসেননি। এমন কি যদি কেউ তথায়, প্রেরীত নাও হন তবুও দ্বীনে এলাহীর সাথে তথায় অবশ্যই আসতে হয়েছে।

শেষ যুগে ইলম ও ঈমান কেবল শামে স্থির হবে। যেহেতু শাম ছিল কেবল সকল ইলম, আমল ও ইমামের কেন্দ্রস্থল। (কাশফুল লিয়াম ফি ফদ্বলে বিলাদিশ শাম) এবং তথায় নূরে নবুওয়তের দীপ্ত মান সুর্য উদীত হয়ে সমগ্র বিশ্বের আনাচে কানাচে আলো চড়িয়ে পড়বে।

প্রকাশ থাকে যে, হুযূরে পাক (ﷺ) এর নূর মোবারক বের হয়ে সমগ্র জগতবাসীকে আলোকিত করেছে একথা সন্দেহাতীতভাবে সত্য। তবে তাঁর নূর বের হওয়াটা মহীয়সী মাতার রেহেমে থাকাবস্থায় না প্রশব কালীন সময়ে এ বিষয়ে কিছু মতভেদ রয়েছে। তবে সর্বোপরি কথা হচ্ছে, দু”সময়ের যে কোন সময়ে প্রকাশ পাওয়াটা অসম্ভব কিছু নয়। তবে প্রসব কালীন সময়ে প্রকাশ পাওয়ার বর্ণনাটা অধিক গ্রহণ যোগ্য ও যুক্তি নির্ভর।

উলামায়ে কেরামগনের সর্ব সম্মতি ক্রমে রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর আগমন কালে যে মোবারক নূর প্রকাশ পেয়েছিল সে অবিকল নূর পরবর্তীতে স্থায়ীত্ব লাভ করে, যার দ্বরুন সমগ্র বিশ্ববাসী তাদেঁর হেদায়েতের রাস্তা পেয়েছে, স্বীয় উন্মতের সাম্রাজের সম্প্রসারণ ঘটেছে, সমগ্র বিশ্বের প্রত্যন্ত অঞ্চলে তাঁর হেদায়েতের নূর পৌছে এমনই ভাবে বিস্তৃতি লাভ করে যে, তাঁর আগমনে সমগ্র শিরক বেদআত ও গোমরাহীর মুলোৎপাটন ঘটে।

নূরে মুহাম্মাদী (ﷺ) দ্বিতীয় প্রমাণ
____________________
নূরে মুহাম্মাদী (ﷺ) দ্বিতীয় প্রমাণ

তিনি যে মহান আল্লাহর এক বিশাল নূর ছিলেন, তার প্রকৃত প্রমাণ মিলে নিন্মোক্ত আয়াতে কারীমাতে। মহান আল্লাহ পাক এরশাদ ফরমান:

قَدْ جَاءكُم مِّنَ اللّهِ نُورٌ وَكِتَابٌ مُّبِينٌ - يَهْدِي بِهِ اللّهُ مَنِ اتَّبَعَ رِضْوَانَهُ سُبُلَ السَّلاَمِ وَيُخْرِجُهُم مِّنِ الظُّلُمَاتِ إِلَى النُّورِ بِإِذْنِهِ وَيَهْدِيهِمْ إِلَى صِرَاطٍ مُّسْتَقِيمٍ

অর্থাৎ: তোমাদের মধ্যে মহান আল্লাহর পক্ষ হতে অবশ্যই এক বিশাল নূর এবং স্পষ্ট কিতাব এসেছে এ নূর দ্বারা আল্লাহ পাক তাদেরকেই শান্তির পথে হেদায়েত দান করবেন, যারা তাঁর সন্তুষ্টির অভিলাষী এবং তাদেরকে যুলুমের গভীর অন্ধকার থেকে আলোর পথে বের করে আনবেন এবং সরল সঠিক পথের সন্ধান দান করবেন র্নিদিধায়।

(পারা-৬, রুকু-৭)

নূরে মোহাম্মাদী (ﷺ) এর দ্বিতীয় প্রকৃষ্ট প্রমাণ নিন্মোক্ত আয়াত শরীফ ও যথেষ্ট। মহান আল্লাহর বাণী :

ط فَالَّذِينَ آمَنُواْ بِهِ وَعَزَّرُوهُ وَنَصَرُوهُ وَاتَّبَعُواْ النُّورَ الَّذِيَ أُنزِلَ مَعَهُ أُوْلَـئِكَ هُمُ الْمُفْلِحُونَ

অর্থ:- অতএব, যারা তাঁর (মোহাম্মাদ (ﷺ)) এর প্রতি ঈমান আনয়ন করে, তাকেঁ সর্বোচ্ছ সম্মান (কিয়াম) প্রদর্শন করে, তাঁকে সাহায্য করে এবং তাঁর সঙ্গে আগত নূর তথা নূরে মুহাম্মদীকে অনুস্বরণ করে তারাই সফলকামী লোক।

বর্ণিত আয়াতদ্বয়ে নূর দ্বারা মুফাসসিরীনে কেরামগণ নূরে মোহাম্মদীকে প্রমাণ করেছেন।

সহীহ মুসলিম শরীফ সহ অন্যান্য গ্রন্থে হযরত ছাওবান (رضي الله عنه ) হতে বর্ণিত একখানা হাদীস বর্ণিত আছে, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এরশাদ করেন-

زويت اى جمعت لى مشارق الارض ومغاربها- وسيبلغ ملك امتى ما زوى منها-

অর্থাৎ- মহান আল্লাহ পাক আমার জন্য পৃথিবীর প্রাচ্য ও পাশ্চাত্যকে একত্রিত করে দিয়েছেন। এবং অচিরেই ঐ স্থান পর্যন্ত আমার উম্মতের রাজত্ব পৌছে যাবে।

সাইয়্যিদিনা হযরত আমেনা (رضي الله عنه ) এর মুখ নিসৃত বাণী : فلم احمل حملا كان اخف على منه দ্বারা প্রতীয়মান হয় যে, তিনি মুহাম্মাদ (ﷺ) ছাড়া ও অন্যান্য সন্তানাধি জন্ম দান করেছেন। যেমন : তাঁর নিন্মোক্ত বাণী : قد حملت الاولادمما حملت অর্থাৎ- ইতিপূর্বে আরও সন্তানাধি গর্ভে ধারন করেছি তবে এভাবে নয়। ) এ বর্ণনা ইসহাক বিন আব্দুল্লাহর। তবে ঐতিহাসিক ইবনে সা, দ বলেন, এ বক্তব্যের সুষ্টু সমাধানে ঐতিহাসিক ওয়াকেদী (رضي الله عنه ) বলেন: এ ধরনের কোন হাদীস আছে বলে যেমন আমাদের জানা নেই, তেমনি অন্যান্য আহলে ইলিমগনের ও জানা নেই। বরং সকল মুহাদ্দেসীনগনের দৃষ্টিতে রাসূলুল্লাহ (ﷺ) সম্মানীতা মাতা হযরত আমেনা (رضي الله عنه ) ও পিতা খাজা আব্দুল্লাহ (رضي الله عنه ) কেবল মোহাম্মাদ (ﷺ) ব্যতীত অন্য কোন সন্তান জন্মদান করেননি ইহাই সর্বসম্মত কথা। হাফেজ ইবনুল কাইয়ুম জাওযী (رضي الله عنه ) বলেন: এবিষয়ে সমস্ত হাদীস বিশেষজ্ঞগন ঐক্যমত পোষন করেছেন যে, হযরত আমেনা (رضي الله عنه ) কেবল মোহাম্মদ (ﷺ) ব্যতীত অন্য কোন সন্তান জন্ম দান করেননি।

ইব্রাহীম (عليه السلام ) এর দোয়ার নির্যাস ঈসা (عليه السلام ) এর সুসংবাদ ও মা জননীর স্বপ্ন কথা গুলোর ব্যাখ্যা
____________________
ইব্রাহীম (عليه السلام ) এর দোয়ার নির্যাস ঈসা (عليه السلام ) এর সুসংবাদ ও মা জননীর স্বপ্ন কথা গুলোর ব্যাখ্যা

(এক) রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর বাণী : انى دعوة ابراهيم (আমি পিতা ইব্রাহীম (عليه السلام ) এর দোয়ার নির্যাস) কথাটির ব্যাখ্যা হচ্ছে যে, সাইয়্যিদিনা হযরত ইব্রাহীম (عليه السلام ) যখন পবিত্র কাবা ঘর তৈরী করেন, তখন মহান আল্লাহ পাকের দরবারে প্রার্থনা জানালেন যেন এ শহরটিকে তিনি নিরাপদ রাখেন, মানবের হৃদয়কে এরদিকে মুগ্ধ করে দেন এবং বহু প্রকার ফলমূল তাদেরকে দান করেন। যেমন, এ প্রসঙ্গে কোরআনে পাকে এরশাদ হচ্ছে:

رَبَّنَا وَابْعَثْ فِيهِمْ رَسُولاً مِّنْهُمْ يَتْلُو عَلَيْهِمْ آيَاتِكَ وَيُعَلِّمُهُمُ الْكِتَابَ وَالْحِكْمَةَ وَيُزَكِّيهِمْ إِنَّكَ أَنتَ العَزِيزُ الحَكِيمُ .

অর্থাৎ:- হে আমাদের প্রতি পালক! আপনি তাদের মধ্যে এমন এক রাসূল প্রেরন করুন, যিনি তাদের (স্বীয় কওমের) কাছে আপনার পবিত্র আয়াতসমুহ পাঠ করে শুনাবে, তাদেরকে কিতাব ও হেকমত শিক্ষাদান করত: পবিত্র তথা আত্মশুদ্ধির প্রশিক্ষণ দান করবেন।

আপনি অবশ্যই মহাপরাক্রমশালী সুক্ষকৌশলী। এ মোবারক আকুতীর সঙ্গে মহান আল্লাহ পাক তাঁর দোয়া মঞ্জুর করে নিলেন। ফলে তাঁরই দোয়ার ফসলস্বরুপ মহান আল্লাহ পাক রাসূলুল্লাহ (ﷺ)কে সর্বশ্রেষ্ট ও সর্বশেষ নবী হিসেবে জগতবাসীর কাছে প্রেরণ করেন।

পিতা ইব্রাহীম (عليه السلام ) কর্তৃক মোহাম্মদ (ﷺ) পবিত্র ভূমি মক্কাতে প্রেরণের দোয়া ও করেছিলেন বিধায় তিনি মক্কাতেই জন্ম গ্রহণ করেন।

হযরত ইব্রাহীম (عليه السلام ) মোহাম্মদ (ﷺ) এর জন্য দোয়া করত: স্বীয় আওলাদ ভূক্ত করার জন্য এবং শ্রেষ্ট নবী হিসেবে জগতবাসীর কাছে পাঠানোর কাহিনী আল্লাহ পূর্ব থেকেই জ্ঞাত ছিলেন বিধায় মহান আল্লাহ পাক তাঁকে স্বীয় আযলীতে শ্রেষ্ট রাসূল, সর্বশেষ নবী। রূপে সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করেন, যাতে করে ইব্রাহীম (عليه السلام ) এর ভাগ্য অতি সুপ্রসন্ন এবং আলোচনা বুলন্দ হয়। আর এজন্যই হযরত ইব্রাহীম (عليه السلام ) এর দোয়ার প্রেক্ষিতে হযরত মোহাম্মদ (ﷺ) স্বীয় বংশে আর্বিভূত হন। (তাঁর পৃষ্ট ধরে স্থানান্তরীত হয়ে)

(দুই) হুযূর (ﷺ) এর বাণী :

واما بشراى عيس عليه الصلاة والسلام-

অর্থাৎ- আমি হযরত ঈসা (عليه السلام ) কর্তৃক ভবিষ্যত সুসংবাদের বিকাশ। এ হাদীসের মর্মার্থ হচ্ছে যে, মহান আল্লাহ পাক হযরত ঈসা (عليه السلام ) কে এ মর্মে ফরমান জারী করেন যে, হে ঈসা! আপনি স্বীয় সম্প্রদায়ের কাছে হযরত মোহাম্মাদ (ﷺ) এর আগমনের শুভ বার্তা জানিয়ে দাও, যাতে করে তারা (বনী ইস্রাঈলরা) তাঁর আগমনের পূর্বেকার সমস্ত গুনাবলী ও শ্রেষ্টত্বের পরিচয় জেনে তাঁর প্রতি ঈমান গ্রহণ করতে পারে। যেমন : তাঁর গুনকীর্তণ প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ পাক স্বয়ং এরশাদ ফরমান:

وَمُبَشِّراً بِرَسُولٍ يَأْتِي مِن بَعْدِي اسْمُهُ أَحْمَدُ

অর্থাৎ- ওহে সম্প্রদায়গণ! জেনে রাখ! আমি একজন রাসূলের আগমনের শুভসংবাদ জানাচ্ছি, যিনি আমার পরেই আগমন করবেন এবং তাঁর নাম হবে আহমদ। আয়াতে কারীমাতে হযরত ঈসা (عليه السلام ) কর্তৃক মহানবী (ﷺ) এর আগমনের সুসংবাদ প্রমাণিত হয়।

রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর জন্ম কালীন অলৌকিক ঘটনাবলী

আরবের নবী করুনার ছবি জগতবাসীর হেদায়েতের উজ্জল প্রদীপ মহানবী (ﷺ) এর আগমনের বছরটি সমগ্র আরবে শুস্কতা, অনুর্বরতা দুর্ভিক্ষতার কঠোর বন্যার ফলে তা কুরাইশদের জন্য অত্যন্ত দুর্ভিসহ হয়ে উঠে। পরবর্তীতে বিশ্ব মানবতার মুক্তির সনদ রহমতে আলম (ﷺ) এর শুভাগমনে সেখানকার মাটি তার উর্বরতা শক্তি ফিরে পায়, সমস্ত বৃক্ষলতা ফল মূল ও বীজ উৎপাদনের উপযোগী হয় এবং সমগ্র মক্কা উৎপাদন শক্তি সম্পন্ন হয়। যার পরিপ্রেক্ষিতে আরবের এ বছরকে সানাতুল ফাতহে ওয়াল ইবতেহাজ, তথা আনন্দ, প্রফুল্লতা ও বিজয়ের বছর বলে নাম করন করে।

 খাজা আব্দুল মুত্তালিব (رضي الله عنه ) ছিলেন তখনকার যুগে সমগ্র আরব ও কুরাইশদের বিধাতা। তিনি প্রত্যেহ সজ্জিত হয়ে বের হয়ে পবিত্র কাবা প্রদক্ষিণ করতেন এবং লোকদের উদ্দেশ্যে এ বলে ভাষন দিতেন, ওহে কুরাশগন! জেনে রাখ যে, আমি আমার উভয় চোখের মধ্যখানে মানবাকৃতি বিশিষ্ট কিছু দেখি, যা আমার কাছে একটি পুর্ণ নূরের টুকরা হিসেবে মনে হয়। কিন্তু কুরাইশরা তাঁর এ সংবাদ হিংসা পরায়ন হয়ে অথবা অন্ধ বিশ্বাসের দ্বরুন অস্বীকার করে বসে।

 যে মহানবী, অগনীত নবীগণের পরিক্রমা শেষ করে সকল যোগাড় আয়োজন সমাপ্তে বিশ্ব সভার মহা সমাবেশকে অলংকৃত করবেন, যে মহিমান্বিত রাসূল। আজ সে মহামহিমের আগমন ঘটবে বিশ্ব ভূবনে এ সংবাদ-বার্তা জানালো চতুস্পদ জন্তুরা এভাবে হযরত ইবনে আব্বাস (رضي الله عنه ) বলেন:

ان كل دابة كانت لقريش نطقت تلك الليلة وقبلت حمل برسول الله {صلى الله عليه وسلم} ورب الكعبة وهو امان الدنيا وسراج اهلها.

অর্থাৎ- মহানবী (ﷺ) এর মহাগমনের রাত্রে কুরাইশদের সমস্ত জন্তুরা পরস্পর কথোপকথন করেছিল এবং এ বলে বার্তা জানিয়েছিল যে, মহানবী (ﷺ) জগতে ভুমিষ্ট হয়েছেন। কাবার মালিকের কসম, ইনি হচ্ছেন সমগ্র দুনিয়াবাসীর ইমাম এবং তার অধিবাসীর জন্য দ্বীপ্তমান বিশাল সুর্য। তাঁর মহাগমনের রাত্রে আরবের সমগ্র যাদুগীর ও সমগ্র গোত্রের লোকেরা নিজ নিজ সহর্ধমিনী থেকে বিচ্ছিন্ন ছিল, তাদের যাদু মন্ত্র উপড়ানো হয়েছিল। তাঁর মহাগমনে দুনিয়ার সমস্ত রাজ সিংহাসন উপোড় হয়ে গিয়েছিল এবং সকল ক্ষমতাশীল সম্রাটদের বাকশক্তি বিলুপ্ত হয়ে গিয়েছিল। সেদিন কথা বলার সাধ্য কারও ছিলনা।

তাঁর মহাগমনের শুভ বার্তা নিয়ে প্রাচ্যের হিংস্র প্রাণীরা পাশ্চাত্যদেশের হিংস্র প্রাণীদের কাছে চলাচল করেছিল। এমনিভাবে সমুদ্রের প্রাণীকুল ও পরস্প-পরস্পরকে এ শুভ বার্তা জানিয়েছিল। মাতৃগর্ভে থাকাকালীন প্রতিমাসে আসমান জমীন তথা ৮০ হাজার জগতের মধ্যকার ৫০ হাজার প্রাণীকে এ বলে অবিসংবাদ জানানো হতো যে, হে বিশ্ববাসীরা! তোমরা শুভ সংবাদ গ্রহণ করো যে, হযরত আবুল কাসেম মোহাম্মাদ (ﷺ) জমীনে আগমনের সময় হয়ে গেছে। তিনি পৃথিবীর ধরাধামে অতি সৌভাগ্যবান ও মোবারাক হয়ে আগমন করছেন।

সকল বর্ণনাকারীদের মতে রাসূলুল্লাহ (ﷺ) স্বীয় জননীর রেহেমে পূর্ণদশ মাস অবস্থান করেন। এ দশ মাসের মধ্যে স্বীয় জননী কোন প্রকার ক্ষুধার জ্বালা অনুভব করেন নি এমনকি প্রসব কালীন সময়কার অন্যান্য মহিলাদের বেলায় যে সমস্ত প্রয়োজনীয় বিষয় দরকার ছিল তাও প্রয়োজন হয়নি।

মাতৃগর্ভে থাকাকালীন সময়ে পিতার ইন্তেক্বাল
____________________
মাতৃগর্ভে থাকাকালীন সময়ে পিতার ইন্তেক্বাল

ঐতিহাসিক আল্লামা ওয়াকেদীর মতে রাসূলুল্লাহ (ﷺ) মাতৃগর্ভে থাকাবস্থায়ই স্বীয় পিতা হযরত খাজা আব্দুল্লাহ (رضي الله عنه ) ইন্তেকাল করেন। এ সম্র্পকে দুটি অভিমত পাওয়া যায়। যথা:

(১) দাদা খাজা আব্দুল মুত্তালিব (رضي الله عنه ) পিতা আবদুল্লাহ (رضي الله عنه ) কে কুরাইশ ব্যবসায়ীদের সঙ্গে ব্যবসার উদ্দেশ্যে সিরিয়ায় প্রেরণ করেছিলেন। সিরিয়ার বানিজ্য হতে প্রত্যাবর্তনের সময় মধ্যপথে অসুস্থ হওয়ার দ্বরুন স্বীয় পিতার মাতুল দেশ বনী আদী ইবনে নাজ্জার গোত্রে প্রায় একমাস অবস্থান করেন। পরবর্তীতে সে অসুস্থতায়ই তথায় তাঁর ইন্তেক্বাল হয় এবং তথায়ই তাঁকে সমাহিত করা হয়।

(২) ঐতিহাসিক ইবনে ওয়াহাবের সুত্রে বর্ণিত: তিনি ইউনুসের সুত্রে এবং তিনি ইবনে শিহাবের সুত্রে বর্ণনা করে বলেন যে, মক্কায় খাদ্যের অভাব দেখা দেয়ায় আব্দুল মুত্তালিব (رضي الله عنه ) স্বীয় মাতুল দেশ খেজুরের এলাকা মদীনায় খাজা আব্দুল্লাহ (رضي الله عنه ) কে পাঠিয়ে ছিলেন খেজুরের জন্য। তথায় তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন এবং সে অসুস্থতাই তথায় তাঁর ইন্তেকাল হয়।

(তারীখে তাবারী, ২-৮)

এ অভিমতকে ইবনে ইসহাক প্রাধান্য দেন। ইমাম ইবনে সা’দ অনূরূপই বর্ণনা করেছেন।

ইমাম ইবনুল জাওযী (رضي الله عنه ) এর মতে উক্ত মতেরই উপর আহলে সিয়রদের এক বৃহৎদল সমর্থন করেন।

 কোন কোন ঐতিহাসিকদের মতে রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর জন্মের পর স্বীয় পিতা ইন্তেকাল করেন। এ সংক্রান্ত হাদীস বর্ণনা করেন ইমাম ইয়াহইয়া বিন সায়ীদ আল উমায়ী (رضي الله عنه )। তিনি মাগাজী অধ্যায়ে উসমান বিন আব্দুর রহমান আল ওয়াক্কাসী সুত্রে, তিনি ঐতিহাসিক ইবনে শিহাব যুহরীর সুত্রে বর্ণনা করেন, তিনি সাঈদ ইবনুল মুসাইয়্যিব (رضي الله عنه ) সুত্রে। হযরত সাইয়্যিদ ইবনুল মুসাইয়্যিব (رضي الله عنه ) বলেন: সাইয়্যিদিনা হযরত আমেনা (رضي الله عنه ) স্বীয় পুত্রকে প্রসবের পর খাজা আব্দুল্লাহ (رضي الله عنه ) কে স্বীয় পিতা খাজা আব্দু মুত্তালিব (رضي الله عنه ) নির্দেশ দিলেন সন্তানকে তাঁর কাছে অর্পনের জন্য। তিনি স্বীয় আদরের দৌহিত্রকে নিয়ে আরবের সম্ভ্রান্ত লোকদের নিকট চলে গেলেন তাঁর লালন পালণের জন্য। পরিশেষে বাচ্ছাকে দুধপান করানোর জন্য হযরত হালিমাকে নিয়োগ করলেন।

বর্ণিত আছে যে, তিনি পূর্ণ ছয় বছর হালিমার তত্তাবধানে ছিলেন। এক পর্যায়ে মোহাম্মদ (ﷺ) এর বক্ষ বির্দীন হলে পরবর্তীতে শিশুকে তিনি তাঁর মায়ের কোলে হস্তান্তর করেন।

হালিমা (رضي الله عنه ) কর্তৃক শিশু মোহাম্মদ (ﷺ)কে স্বীয় মায়ের কোলে হস্তান্তরের প্রাক্ষালে মোহাম্মাদ (ﷺ) এর বয়স কতছিল? এ বিষয়ে কিছু মতভেদ পাওয়া যায়। ঐতিহাসিক ইবনে সাদের মতে এ সময় তাঁর বয়স ছিল দু বছর চার মাস মাত্র। ঐতিহাসিক ইবনে সাদের বর্ণনা মতে তাঁর বয়স ছিল মাত্র সাত মাস।

কথিত আছে যে, ঐ বয়সে থাকাবস্থায় খাজা আব্দুল্লাহ (رضي الله عنه ) স্বীয় পিতার মাতুল দেশ মদীনায় যাওয়ার পর অসুস্থ্য হয়ে পড়লে পর পরবর্তীতে ঐ অবস্থায়ই তিনি তথায় ইন্তেকাল করেন।

উল্লেখ্য যে, ফেরেস্তাকুল আল্লাহর কাছে এ বলে নিবেদন করেন:

إلهنا وسيدنا بقي نبيك هذا يتيما فقال الله انا له ولي وحافظ ونصير .

অর্থাৎ- হে আমাদের মাওলা! আজ থেকে আপনার নবী মোহাম্মদ (ﷺ) চির এতীম হয়ে গেলেন। মহান আল্লাহ পাক বলেন (জেনে রাখ) আমি তাঁর (বিপদ সংকটের) বন্ধু, সংরক্ষনকারী এবং সাহায্যকারী। রাসূলুল্লাহ (ﷺ)কে ইয়াতীম বানানোর কারণ সম্র্পকে ইমাম জাফর সাদিক (رضي الله عنه ) কে জিজ্ঞাসাবাদ করা হলে তিনি বললেন لئلا يكون عليه حق لمخلوق যাতে করে কার উপর অন্যান্য মাখলুকাতের কোন অধিকার না থাকে। আবু হাইয়্যান এ হাদীসকে স্বীয় বাহার, গ্রন্থে বর্ণনা করেন।

ইমাম ছাখাভী (رضي الله عنه ) বলেন: মৃতুকালে রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর সম্মানীত পিতা খাজা আব্দুল্লাহ (رضي الله عنه ) দাসী উম্মে আয়মন পঁাচটি উট ও কিছু বকরীর পাল রেখে যান। পরবর্তীতে উত্তরাধিকার সুত্রে রাসূলুল্লাহ (ﷺ)ই এ গুলোর মালেক হন।

হযরত উম্মে আয়মন (رضي الله عنه ) রাসূলুল্লাহ (ﷺ)কে দুধপান করাতেন বিধায় তিনি রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর এক অন্যতম ধাত্রীমাতা হিসেবে বিশ্বে খ্যাতি লাভের সৌভাগ্য অর্জন করেন। খাজা আব্দুল মুত্তালেবের সুযোগ্য পিতা হযরত খাজা আব্দুল হাশিম বিন আব্দুল মনাফ (رضي الله عنه ) বনু আদী বিন নাজ্জার গোত্রীয় এক মহান ব্যক্তি আমরের স্নেহশীল কণ্যা হযরত সালমাকে বিবাহ করেন ফলে তাঁরই ঔরসে খাজা আব্দুল মুত্তালিব (رضي الله عنه ) এর জন্ম হয়। আর এ জন্যইতো মহানবী (ﷺ) গর্ব সহকারে বলেন: انى انزل على احوال عبد المطلب الى مهم بذالك- অর্থাৎ- আমি অবশ্যই খাজা আব্দুল মুত্তালিব (رضي الله عنه ) এর গোত্রে অবতীর্ন হয়েছি বিধায় সম্মানীত। এ হাদীসটি বিশুদ্ধ গ্রন্থে হিজরত সংক্রান্ত হাদীসে বর্ণিত হয়েছে।

ইমাম বায়হাক্বী, তাবারানী, আবু নাঈম প্রমুখগন মুহাম্মাদ বিন আবু সাঈদ-সাক্কাফীর সুত্রে তিনি উসমান বিন আবীল আস-সাক্কাফী (رضي الله عنه ) এর সুত্রে বর্ণনা করত: বলেন : হযরত উসমান বিন আবীল আস-সাক্কাফীর (رضي الله عنه ) বলেন: আমার মহীয়াসী মাতা ফাতেমা বিনতে আব্দুল্লাহ সাক্কাফী رضي الله عنه (যিনি একজন অন্যতমা মহিলা সাহাবী) আমার কাছে বর্ণনা করেন যে, সাইয়্যিদিনা হযরত মা আমেনা বিনতে ওয়াহাব যুহরী (رضي الله عنه ) যে রজনীতে স্নেহের দুলালী সাইয়্যিদুল কাওনাইন রাসূলুল্লাহ (ﷺ) জন্মদান করেছিলেন, সে রাত্রে তিনি মা আমেনার পাশের্ব উপস্থিত ছিলেন। তিনি নিজেই বলেন:

قالت فجعلت انظر الى النجوم قدلى وتدنو حتى قلت ليقعن على فلما ولدت خرج منها نور اضاء له البيت والدار-

অর্থাৎ- তিনি বলেন: আমি ঘরের ভেতরে যত কিছই দেখেছি সবই ছিল নূর এবং আমি আকাশের সমস্ত তারকারাজীকে দেখেছি, ওরা এতই নিকটে চলে এসেছিল যে, আমার মনে হচ্ছিল এক্ষণেই বুঝি আমার উপর পড়ে যাবে। অত:পর নূরে মোহাম্মাদী (ﷺ) জন্ম কালে তাঁর থেকে এমনই এক নূর বের হয়ে আসে যে, যদ্বরুন সমস্ত বাড়ী ঘর নূরে আলোকিত হয়ে যায়।

ইবনে সা’দ বলেন, আমাদের কাছে হায়ছাম বিন খারেজা বর্ণনা করেন তিনি ইয়াহইয়া ইবনে হামযা হতে, তিনি ইমাম আওযায়ী হতে তিনি হাসমান বিন আতিয়্যা হতে, তিনি বর্ণনা করেন যে, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) জন্মকালীন সময়ে উভয় জানূর উপর ভর দিয়ে আকাশ পানে চোখ তুলে দৃষ্টি নিবদ্ধাবস্থায় মহান নবী ও রাসূল রূপে আগমন করেন।

ইমাম ইসহাক বিন আবু তালহা হতে মুরসাল সুত্রে প্রমাণিত যে, হযরত আমেনা (رضي الله عنه ) বলেন:

وضعته نظيفا ما ولدنه كما يولد السغل اى المولود الحب الى اهله مايه قذر

অর্থাৎ- আমি তাঁকে মোহাম্মাদ (ﷺ) পুত: পবিত্রাবস্থায় জন্মদান করেছি, অন্যান্য নবজাত শিশুর ন্যায় তাঁকে জন্মদান করিনি যে, তাঁর কোন দোষত্রুটি রয়েছে।

তিনি আরও বলেন : وهو جالس على الارض بيده অর্থাৎ- বাচ্ছা মোহাম্মাদ (ﷺ) জমীনে হস্ত ধারণ করে বসাবস্থায় আগমন করেন।

হযরত আবু হুসাইন ইবনে বুশরান হতে বর্ণিত: তিনি ইবনে সাম্মাক হতে, তিনি বলেন, আমাদের কাছে আবুল হুসাইন ইবনে বারা বণর্না করেন যে, সাইয়্যিদিনা হযরত মা আমেনা (رضي الله عنه ) বলেন:

ولدته جاثيا على ركبتيه ينظر الى الماء ثم قبض قبغة من الارض وأهوى مساجدا- وقالت وكبيت عليه اناء فوجدته قد انفلق الاناء عنه وهو يمص اجهامه يشحب لبنها

অর্থাৎ- প্রসব ব্যথার সঙ্গে সঙ্গে আমি মোহাম্মদ (ﷺ)কে ধরনীর বুকে দেখতে পাই: উভয় জানূর উপর হস্তধারণ অবস্থায় জন্ম দান করি। তিনি আকাশ পানে দৃষ্টি নিবদ্ধবস্থায় আগমন করেন। অত:পর ভূমি হতে এক মুষ্টি মাটি নিলেন এবং সেজদাবনত অবস্থায় প্রার্থনা জানান। তিনি আরও বলেন: আরবীয় প্রথানুযায়ী বাচ্ছা মোহাম্মাদ (ﷺ) এর উপর মা জননী হাড়ি রেখে দেন। সকাল বেলা দেখা গেল যে, হাড়িটি ভেঙ্গে খন্ডবিখন্ড হয়ে যায়।

ইমাম ছাখাভী (رضي الله عنه ) বলেন: হযরত আমেনা رضي الله عنه বাচ্ছা প্রসব দানের পর কোলের শিশুকে স্বীয় দাদা আব্দুল মুত্তালিব (رضي الله عنه ) এর কাছে পাঠিয়ে দেন এবং এ বলে সংবাদ জানান যে, আজ রাত্রে আপনার এক দৌহিত্র জন্ম নিয়েছেন। আপনি তাঁর প্রতি দৃষ্টি নিবদ্ধ করুন। আমেনা ঘটনা প্রবাহে খাজা আব্দুল মুত্তালিব (رضي الله عنه ) শিশু মোহাম্মদ (ﷺ) কুলে নেয়ার পরই মহান আল্লাহ পাকের কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করতে লাগলেন এবং এ প্রসঙ্গে নিন্মোক্ত কবিতাবৃত্তি করেন-

الحمد الله الذى العطانى هذا الغلام الطيب الأر دان قد ساد فى المهد على الغلمان اعيذه باالبيت ذى الأركان-

আবু লাহাব কর্তৃক সুআইবিয়াকে মুক্তিদান এবং আবু লাহাবের মুক্তি লাভ
____________________
আবু লাহাব কর্তৃক সুআইবিয়াকে মুক্তিদান এবং আবু লাহাবের মুক্তি লাভ

রাহমাতুললিল আলামীন ছাক্কীয়ে কাওছার, বিশ্বনবী (ﷺ) এর আগমন বার্তা দাসী সুআইবিয়া (رضي الله عنه ) চাচা আবু লাহাবকে পরিবেশন করায় তৎক্ষণাতই অত্যান্ত খুশী হয়ে তাঁকে মুক্তি দান করে। ইমাম কাস্তলানী (رحمة الله عليه ) এর মতে দাসী সুআইবিয়া ছিলেন রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর অন্যান্য ধাত্রী “মা”দের অন্যতম একজন। ইমাম কাস্তলানী (رحمة الله عليه ) বলেন: আবু লাহাবের মৃত্যু পরবর্তী স্বপ্ন যোগে তাকে দেখে জিজ্ঞাসা করা হয় তোমার অবস্থা কি? সে বলল-

فى النار الا انه خفف عنى كل ليلة الا ثنين

অর্থাৎ- আমাকে জাহান্নামে রাখা হয়েছে। তবে প্রতি সোমবার রাত্রে আযাব কিছুটা শীতিল করা হয় এবং আমার অঙ্গুলীর অগ্রভাগে কিছু নহরের পানি দান করা হয়, ফলে আমি তা পান করে রিহাই পাই। তাকে বলা হলো এটা কিসের দ্বরুন?

সে বলল-

ان لذا لك با عتاق ثو

অর্থাৎ- তা এ কারনে যে, দাসী সুআইবিয়া যখন আমাকে ভাতিজা মোহাম্মাদ (ﷺ) এর আগমনের শুভ বার্তা শুনিয়েছিল এবং এরদ্বরুন আমি তাকে মুক্তিদান করেছিলাম এ জন্য।

ইমাম ইবনুল কাইয়্যুম জাওযী (رضي الله عنه ) বলেন: কুখ্যাত কাফের আবু লাহাব চিরজাহান্নামী সত্বে ও কেবল রহমতে আলম (ﷺ) এর আগমনের খুশী জাহির করত: সুআইবিয়াকে আযাদ করার দ্বরুন যদি তার প্রতি এতটুকু সহনশীলতার ভাব প্রদর্শন করা হল, তবে যারা মুসলমান, আল্লাহর একত্ববাদে বিশ্বাসী উম্মত, নবী পাকের শুভাগমনে খুশী যাহের করত: সাধ্যানুযায়ী রাসূলে পাকের ভালবাসার মানসে কিছু ব্যয় করতে পারে তাদেরই বা অবস্থা কি হতে পারে, তা অনুমেয়। আমার জীবনের কসম খেয়ে বলছি, অবশ্য তাদের প্রতিদান মহান আল্লাহর কাছে ন্যাস্ত আছে যে, তিনি এর বিনিময়ে নিজ দয়ার গুনে স্বীয় বান্দাহকে জান্নাতুন নাঈমে প্রবেশ করাবেন।

হাফেজ নাছিরুদ্দিন দিমাশকীর এ প্রসঙ্গে ইমাম জাওযী (رضي الله عنه ) নিন্মোক্ত কবিতাবৃত্তি উল্লেখ করেন:

إذا كان هذا الكافر جاء ذمه بتبت يداه في الجحيم مخلدا أتى أنه في يوم الاثنين دائماً يخفف عنه للسرور بأحمدا فما الظن بالعبد الذي كان عمره بأحمد مسرورا ومات موحدا.

অর্থাৎ- আবু লাহাবের শানে সুরা লাহাব অবর্তীণ হয়ে তাকে চিরজাহান্নামী ঘোষনা করা হয়েছিল কিন্তু তার ব্যাপারে একটি অত্যাশ্চর্য্য ঘটনা হল যে, প্রতি সোমবার রাত্রে তার থেকে শাস্তি হালকা করা হয়ে থাকে কেবল মাত্র আহমদী নূরের শুভাগমনে খুশী প্রকাশের কারনে। তাহলে ঐ ব্যক্তির প্রতি কি কোন সন্দেহ থাকতে পারে যে ব্যক্তি তার সুদীর্ঘ জীবনে আহমদী নূরের শুভাগমনে খুশী যাহের করত: আল্লাহর একত্ববাদের উপর মৃত্যু বরণ করেছে।

মহরে নবুওত দর্শনে এক ইয়াহুদীর অচেতন হওয়া
____________________
মহরে নবুওত দর্শনে এক ইয়াহুদীর অচেতন হওয়া

ইমাম হাকীম নিশাপুরী (رضي الله عنه ) স্বীয় মুস্তাদরেকে হাকীমে হযরত আয়েশা সিদ্দেকা (رضي الله عنه ) হতে একখানা হাদীস বনর্ণা করে বলেন: মক্কায় এক ইয়াহুদী ব্যবসায়ী ছিল। রাসূলে পাক (ﷺ) এর শুভাগমনের রাত্রে সে কুরাইশদের সম্বোধন করে বলল :

يا معشر قريش هل و لد فيكم الليلة مولود فقال القوم والله ما نعلمه قال احفظوا ما اقول لكم و لد هذه الليلة نبي هذه الأمة الأخيرة بين كتفيه علامة فيها شعرات متواترات كأنهم عرف فرس لا يرضع ليلتين وذلك ان عفريتا من الجن أدخل اصبعه في فمه فمنعه الرضاع فتصدع القوم من مجلسهم وهم يتعجبون من قوله فلما صاروا إلى منازلهم اخبر كل انسان منهم أهله فقالوا قد ولد لعبد الله بن عبدالمطلب غلام سموه محمدا فالتقى القوم حتى جاءوا اليهودي فأخبروه الخبر قال فاذهبوا معي حتى انظر اليه فخرجوا به حتى أدخلوه على آمنة فقال اخرجي إلينا ابنك فاخرجته وكشفوا له عن ظهره فرأى تلك الشامة فوقع اليهودي مغشيا عليه فلما أفاق قالوا ويلك ما لك قال والله ذهبت النبوة من بني اسرائيل أفرحتم به يا معشر قريش أما والله ليسطون بكم سطوة يخرج خبرها من المشرق إلى المغرب.

অর্থাৎ- হে কুরইশগন! আজ রাত্রে তোমাদের কারো ঘরে কি কোন নবজাত শিশু জন্ম নিয়েছে?

সকল কুরাইশগন সমস্বরে বলে উঠল আমরা এ বিষয়ে জানিনা। সে বলল, তবে সন্ধান করে দেখ। কেননা আজ রাত্রে এ সর্বশেষ যুগের উম্মতের নবীর শুভ জন্ম হয়েছে। তাঁর উভয় স্কন্ধের মধ্য খানে ক্রমাগত চুল বিদ্যমান রয়েছে, দেখতে মনে হয় যেন ঘোড়ার প্রচলিত চুলের মত। আবার তাঁর ঘাঢ়ের চুল গুলো ও পরস্পর সংযুক্ত। তিনি ক্রমাগত দু রাত্র পর্যন্ত দুধ পান করবেন না। কেননা আফরীত নামক বিশাল জ্বিন স্বীয় হস্ত তাঁর মুখের উপর রেখে দিয়েছে। অত:এব তোমরা যেয়ে অনুসন্ধান করে দেখ। এর সত্যতা প্রমানিত হবেই।

তার কথামতো কুরাইশরা মক্কায় যেয়ে একে একে এর সত্যতা প্রমাণের উদ্দেশ্যে পরস্পর জিজ্ঞাসা করতে লাগলো। সেখানকার লোকেরা তাদেরকে বলল, আজ রাত্রে আব্দুল্লাহ বিন আব্দুল মুত্তালেবের পুত্র সন্তান হয়েছে। তারা তাঁর নাম রেখেছে মোহাম্মদ। অত:পর কোরায়শরা ইহুদীর কাছে পৌছে সুসংবাদ জানিয়ে দিল। সে বলল : আমাকে নিয়ে চল। আমি এ শিশুকে দেখতে চাই।

এক পর্যায়ে তারা ইয়াহুদীকে নিয়ে আমেনার ঘরে প্রবেশ করে আমেনাকে বলল, তোমার কোলের এ সন্তানটি আমাদের নিকট বের করে দাও। ফলে তিনি স্বীয় সন্তানটিকে তাদের সামনে বের করে দিলে পর তারা বাচ্ছার পিঠ মোবারকের কাপড় সরিয়ে দিল ফলে তারা ইয়াহুদীর কথা মতো বাচ্ছার পৃষ্টের ঐ সৌন্দর্য তিলক তথা মোহরে নবুওয়ত দেখতে পেল। ইহুদী লোক তা দর্শনে বেহুশ হয়ে অচেতন অবস্থায় পড়ে রইল।

জ্ঞান ফিরে আসার পর লোকের তাকে বলল, তোমার সর্বনাশ হোক, তোমার কি হয়েছে যে, এ অবস্থা হলো? সে বলল, আল্লাহর কসম, ওহে কুরাইশগন! আজ থেকে চিরতরে বনী ইস্রাইল থেকে মোহাম্মাদী নবুওয়তী চলে গেল। আল্লাহর কসম, আজ থেকে তোমাদের মধ্য থেকে ক্ষমতার কর্তৃত্ব চলে গেল, সে তোমাদের জন্য এমন বিজয় অজর্ন করবে যে, সংবাদ প্রাচ্য হতে পাশ্চাত্য পর্যন্ত চড়িয়ে পড়বে।

ইমাম ছাখাবীর মতে উপরোক্ত বর্ণনা দ্বারা প্রমানিত হল যে, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর স্কন্ধদ্বয়ের মধ্যখানে নবুওয়তী মোহরাংকিত হয়ে জন্ম লাভ করেছিলেন। ইমাম সাখাভীর মতে মোহরে নবুওয়ত ছিল। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর এমন গুরুত্ব পূর্ণ নিদর্শন যে, পূর্ব যুগীয় আহলে কিতাবী ইহুদীরাও তা জানতো এবং পরস্পর জিজ্ঞাসা করতো এমনকি এ আশা ও পোষন করতো যে, ঐ মোহরে নবুওয়ুত তাদের মধ্যেই আসবে। কিন্তু কুরাইশ বংশে আহমদী নূরের শুভাগমনে সকল ঝলপনা কলপনার আবসান ঘটলো। সম্রাট হিরাক্লিয়াস একদল বাহিনী রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর দরবারে এ উদ্দেশ্য পাঠিয়েছিলেন যে, তারা যেন খতমে নবুওয়ত দেখে আসে। যেমন : তাঁর বক্তব্য من ينظرله خاتم النبوة ومن يخبره عنه অর্থাৎ- কে আছ যে তাঁর মোহরে নবুওত দেখে এসে এর সংবাদ আমার কাছে উপস্থাপন করবে? যেহেতু ইতিপূর্বে তাঁর নিকট দুজন ফেরেস্তা এসে তাঁর বক্ষ বির্দীন করত: কলবকে হেকমত তথা জ্ঞান বিজ্ঞানে পরিপূর্ণ করেদেন। ফেরেস্তাদ্বয় নবুওয়তের সীল মোহর অষ্কিত করে যান। তা বিশুদ্ধ বর্ণনা উল্লেখ্য যে:-

হুযূরে পাকের ইন্তেকাল পরবর্তীতে তাঁর মোহরে নবুওয়তের সীল মোহর উঠিয়ে নেয়া হয়েছিল, এ সংক্রান্ত হাদীসের সনদ দুর্বল।

মক্কায় ইহুদী পন্ডিতের সুসংবাদ ও মুসলমান হওয়ার কাহিনী 
____________________
মক্কায় ইহুদী পন্ডিতের সুসংবাদ ও মুসলমান হওয়ার কাহিনী 

ইমাম খতীব বাগদাদী (رضي الله عنه ) মুহাম্মদ বিন আব্দুল্লাহ বিন আমর বিন উসমানের একখানা হাদীস বর্ণনা করেন, তিনি স্বীয় মাতা ফাতেমা বিনতে হুসাইন বিন আলী হতে, তিনি স্বিয় পিতা হতে। তার পিতা বলেন: মক্কায় এক জনৈক পন্ডিত বাস করতো।

রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর জন্ম কালীন রাত্রে সে বলল, আজরাত্র তোমাদের শহরে তৌরাত ইঞ্জিলে বর্ণিত সে নবী আগমন করছেন। যিনি হযরত মুসা ও হারুন (عليه السلام ) দ্বয়ের চেয়েও শ্রেষ্টত্বের অধিকারী তিনি উভয়ের সম্প্রদায়কে হত্যা করবেন। বর্ণনাকারী আলীর পিতা বলেন: মহানবী (ﷺ) যখন ঐ রাত্রে জন্মগ্রহণ করেন, তখন পন্ডিত বেরিয়ে এসে হিজরে প্রবেশ করে অত:পর বলল

اشهد ان لااله الا الله وان موس حق ان محمد حق

অর্থাৎ- আমি নিদির্ধায় সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ ভিন্ন দ্বিতীয় কেউ নেই এবং আরও সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, মোহাম্মদ (ﷺ) ও মুসা (عليه السلام ) উভয়েই সত্য নবী। বর্ণনাকারী বলেন, এর পর হতে ঐ পন্ডিতকে আর খোজে পাওয়া যায়নি।

সিরীয় সন্নাসী ঈসার সুসংবাদ প্রদান
____________________
সিরীয় সন্নাসী ঈসার সুসংবাদ প্রদান

ইমাম আবু নায়ীম স্বীয় দালায়েলে, শুয়াইব বিন শুয়াইব ইবনে মুহাম্মাদ বিন আব্দুল্লাহ বিন আমর ইবনুল আস এর সুত্রে, তিনি স্বীয় পিতা হতে, তিনি স্বীয় দাদা হতে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন: মাররুয-যাহরানে ঈসা নান্মীয় এক সিরীয় সন্নাসী বসবাস করতো। সে ছিল এক বিজ্ঞ আলেম। অধিকাংশ সময়ে সে গির্জার ভেতরেই অবস্থান করতো। মাঝে মধ্যে মক্কায় আসলে লোকেরা তার সঙ্গে সাক্ষাতের জন্য আসতো। তখন সে বলতো তোমাদের মধ্যে এক শিশু জন্ম গ্রহণ করবে, তার সম্মুখে সমগ্র আরববাসী মাথানত করবে। এমনকি সে সমগ্র অনারবেরও মালিক হবে। এ সময়ই তার আগমনের সময়।

অতএব, যে তার সময় কাল পেয়ে তাঁকে অনুস্মরণ করবে সে অবশ্যই সফল হবে, আর যে বিরোধিতা করবে, সে ধ্বংশ হবে। আল্লাহর কসম আমি রুটি ও শারাবের দেশ এবং শান্তির স্থান ছেড়ে এ অভাব অনটন ও ভয়ভীতির স্থানে তাঁরই অনুসন্ধানে এসেছি। (বিস্তারিত আলোচনা খাছায়েছ গ্রন্থ দ্র:)

মুবিজানের স্বপ্ন ও পারস্য সম্রাটের প্রাসাদ কম্পিত
____________________
মুবিজানের স্বপ্ন ও পারস্য সম্রাটের প্রাসাদ কম্পিত

ইমাম নিশাপুরীর একলীলে আবু সাঈদ নিশাপুরীর শরফুল মোস্তাফা আবু নাঈম ও বায়হাকীর দালায়েল গ্রন্থে, শিফা গ্রন্থকারের শিফা, গ্রন্থে, ইবনে সুবকী স্বীয় গ্রন্থে সাহাবা পরিচিতি অধ্যায়ে মাখযুম বিন হানী (যার বয়স ছিল ১৫০ বছর) সুত্রে, তিনি স্বীয় পিতা থেকে বর্ণনা করেন, রাসূলে পাকের জন্মের রাত্রে (পারস্য সম্রাট) কিসরার রাজ প্রাসাদ কম্পিত হয়েছিল, প্রাসাদের ১৪টি প্রহরা চৌকি ভেঙ্গে তছনছ হয়ে পড়েছিল।

শাইখুল মাশায়েখ ইমাম ইবনুল জাযরী (رضي الله عنه ) এর মতে এ ধ্বংসের শেষ স্থানটি এখনো বিদ্যমান আছে। মাদায়েনের প্রত্যক্ষদর্শকরী বলেন: রাজপ্রাসাদের উপর হতে ১৪টি গম্বুজ ভূমিস্বাত হয়ে যায়। পারস্যের সে প্রজ্জলিত অগ্নিশিখা নির্বাপিত হয়ে গিয়েছিল, যুগ যুগ ধরে যে অগ্নির পুজা করা হতো। যা প্রায় এক হাজার বছর পর্যন্ত অনির্বাণ ছিল। কারও পক্ষে তা নির্বাপিত করার শক্তি সাধ্য ছিলনা। বুহাইরায়ে মাওয়া হেরানের অন্তর্গত সাওয়া নামক ঝিল শুকিয়ে গিয়েছিল। মুবিজান স্বপ্ন দেখল (যিনি অগ্নি পুজারিদের বড় কাজী) একটি নর উঠ একপাল আরবী গোড়াকে তাড়িয়ে নিয়ে যাচ্ছে দজলা নদী অতিক্রম করে তারা সেদেশে ছড়িয়ে পড়েছে। প্রকাশ থাকে যে, রাসূলে পাকের আগমনের রাত্রিতে সকল শয়তানগুলোর আকাশের সমস্ত খবরা খবর জ্ঞাত হওয়ার ষড়যন্ত্র প্রজ্জলিত অগ্নি স্ফুলিং ধারা নস্যাৎ করা হয়েছিল।

এর পূর্ব হতে শয়তান আকাশের গোপন তথ্য গুলো জানার আপ্রাণ চেষ্টা করেছিল। অগ্নি স্ফুলিং নিক্ষেপের প্রাক্ষালে পাপীষ্ট ইবলিস আকাশের এক কোনায় আত্মগোপন করেছিল।

৪টি স্থানে ইবলিস বিলাপ করেছিল
____________________
৪টি স্থানে ইবলিস বিলাপ করেছিল

ইমাম বাক্বী বিন মাখলাদ (সনদ গ্রন্থকার) স্বীয় তাফসীর গ্রন্থে বর্ণনা করেন, ইমাম মুজাহীদ যিনি আকাবিরীন তাবেঈদের অন্তভূর্ক্ত তিনি বলেন:

انه رن اربع رنات حين لعن وحين اهبط وحين اهبط وحين ولد النبى صلى الله عليه وسلم و فى لفظ حين بعث – وحين انزلت فاتحة الكتاب.

অর্থাৎ- চারটি স্থানে ইবলিশ রোধন করেছিল। তন্মধ্যে (১) যখন তাকে লানত দেয়া হয়েছিল। (২) যখন তাকে জান্নাত থেকে পৃথিবীতে অবতরণ করা হয়েছিল। (৩) যখন রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর জন্ম হয়েছিল। অন্য বর্ণনায় এসেছে যখন মোহাম্মদ (ﷺ)কে জমীনে নবী ও রাসূল রূপে প্রেরণ করা হয়েছিল। (৪) যখন সুরা ফাতেহা অবতীর্ণ হয়েছিল।

হযরত আয়েশা সিদ্দিকা رضي الله عنه এর রেওয়ায়েত মতে- যখন রাসূলুল্লাহ (ﷺ) মাতৃগর্ভে ছিলেন অথবা ফেরেস্তাদ্বয়ের মধ্যকার একজন নবুওয়ুতের সীল মোহরাষ্কিত করার সময়ে ধাত্রীমাতার কোলে থাকাবস্থায়। বক্ষ বিদীর্ণ করার প্রাক্ষালে ইবলিস রোদন করেছিল। এ কথার সমর্থন করেন ইবনে সাইয়্যিদু নাস, ইয়াহ ইয়া বিন আবেদ প্রমুখগণ।

আবু নাঈম প্রণীত দালায়েলে আবু নাঈমে, বর্ণিত রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এরশাদ ফরমান:

ختم جبريل فى ظهرى حتى وجدت مس الخاتم فى قلبى

অর্থাৎ- ফেরেস্তা জিব্রাঈল (عليه السلام ) আমার পৃষ্টে মোহরে নবুওয়ত অঙ্কিত করে দেন অথচ ঐ মোহরের চাপ আমার অন্তরে আমি অনুভব করেছি।

ইমাম আহমদ বিন হাম্বল (رضي الله عنه) বায়হাকীর মতে মোহরাষ্কিত করার ঘটনা আবু যর গিফারী (رضي الله عنه ) বর্ণিত হাদীসেও পাওয়া যায়।

খতনাকৃত অবস্থায় জন্ম গ্রহণ করেছেন 
____________________
খতনাকৃত অবস্থায় জন্ম গ্রহণ করেছেন

রাসূলুল্লাহ (ﷺ) কি খতনা কৃত অবস্থায় জন্ম গ্রহণ করেছেন না পরে খতনা করা হয়েছে? এ বিষয়ে মুহাদ্দেসীনে কেরামগনের মধ্যে কিছু মতভেদ রয়েছে।

তাবরানী আবু নাঈম, হাসানের সূত্রে, তিনি হযরত আনাস বিন মালেকের সূত্রে বর্ণনা করেন, হযরত আনাস (رضي الله عنه ) বলেন: রাসূলুল্লাহ (ﷺ) খতনা কৃত অবস্থায় জন্ম গ্রহণ করেছেন যেমন : (তিনি নিজেই এ বিষয়ে এরশাদ ফরমান:

من كرامتى على الله انى ولدت مختونا ولم ير احد سوأقى

অর্থাৎ- মহান আল্লাহর নিকট আমার এমনই এক মহা সম্মান রয়েছে যে, আমি খতনা অবস্থায়ই ভুমিষ্ট হয়েছি। কেউ আমার গুপ্তাঙ্গ দেখেনি।

ইবনে সা’দ আতা আল খোরাসানী হতে, তিনি ইকরামা হতে, তিনি ইবনে আব্বাস হতে, তিনি স্বীয় পিতা হযরত আব্বাস বিন আব্দুল মুত্তালিব (رضي الله عنه ) হতে বর্ণনা করেন যে

عن ابن عباس عن أبيه العباس بن عبد المطلب قال ولد النبي {صلى الله عليه وسلم} مختونا مسرورا واعجب ذلك عبد المطلب وحظي عنده وقال ليكونن لابني هذا شأن فكان له شأن.

হুযূর পাক (ﷺ) নালকাটা ও খতনা কৃত অবস্থাই জন্ম গ্রহণ করেন। আব্দুল মুত্তালেবের কাছে বিষয়টি অভিনব মনে হয়। ফলে তাঁর দৃষ্টিতে নবী করীম (ﷺ) এর সুবিশাল মর্যাদা বেড়ে যায়। তিনি বলেন: ليكونن لابنى هذا شان অর্থাৎ- আমার এ বৎসের অবশ্যই বিরাট শান হবে। শেষ পর্যন্ত তাই হয়েছে।

ইমাম আবু জা’ফর তাবারী স্বীয় তাবারী গ্রন্থে, হাকীম আবু আব্দুল্লাহ তিরমীযী স্বীয় গ্রন্থে বর্ণনা করেন যে, ولد النبى صلى الله عليه وسلم محنتونا معذورا অর্থাৎ- রাসূলুল্লাহ (ﷺ) খতনাকৃতও নাল কাটা অবস্থায়ই ভূমিষ্ট হন।

ইমাম ইবনে আব্দুল বার ‘তামহীদ, গ্রন্থে বলেন: রাসূলে পাকের জন্মের সপ্তম দিনে দাদা খাজা আব্দুল মুত্তালিব (رضي الله عنه ) তাঁর খতনা করে ঐ দিনে মেষ জবাই করে সমস্ত কুরাইশ নেতৃবৃন্ধকে দাওয়াত করে আপ্যায়নের মাধ্যমে দৌহিত্রের কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। কুরাইশরা আপ্যায়নের পর বলল: ওহে আব্দুল মুত্তালেব! নবজাতকের নাম কি রেখেছেন? তিনি বললেন: নাম রেখেছি মোহাম্মদ। কুরাইশরা বলল: আপনি কি নবজাতকের পারিবারিক নাম সমূহ অপছন্দ করলেন? আব্দুল মুত্তালিব জাবাবে বললেন:

اردت ان يحمده الله عذ وجل فى السماء وخلقه فى الارض

অর্থ:- আমি চেয়েছি মহান আল্লাহ পাক তাঁর প্রশংসা করবেন সুদুর আকাশে এবং তাঁর সৃষ্টি জমীনে। যারা বলে স্বয়ং জিব্রাঈল (عليه السلام) তাঁর খতনা করেছেন তাদের এ অভিমত অত্যন্ত দুর্বল। ইমাম ইরাকী বলেন: এ সমস্ত বিষয়ে স্পষ্ট কোন দলীল প্রমাণিত হয়নি। তবে দাদা কর্তৃত নবজাতকের খতনা বিষয়ক ঘটনার ব্যাপারে ইমাম আহমদ (رضي الله عنه) নিরবতা অবলম্বন করেন। ইমাম মুযযীকে বলা হয়েছিল তিনি বলেন: এ ব্যাপারে মহান আল্লাহ পাকই বেশি জ্ঞাত।

হাম্বলী মাযহাবের এক অন্যতম ইমাম আবু বকর আব্দুল আযীয বিন জা’ফর বলেন: রাসূলুল্লাহ (ﷺ) নালকাটা খতনাকৃত অবস্থায় ভূমিষ্ট হন। তবে ইমাম আহমদ বিন হাম্বল (رضي الله عنه) এর অন্য বর্ণনা মতে তিনি এ হাদীস বিশুদ্ধ হওয়ার ব্যাপারে নিরবতা অবলম্বন করেন।

ইমাম আবু আব্দুল্লাহ হাকীম নিশাপুরী বলেন: ان الاول قد توا ترت به الرواية অর্থাৎ- প্রথম অভিমত তথা ‘রাসূলুল্লাহ (ﷺ) নালকাটা ও খতনাকৃত অবস্থায় ভূমিষ্ট হন, এ হাদীসটি মুতাওয়াতীর পর্যায়ে পৌছে গেছে। ইমাম ছাখাভীর (رضي الله عنه) এর মতে উপরোক্ত বাণীর সত্যতা প্রমাণিত হয় রাসূলে পাকের জননী মা আমেনা (رضي الله عنه) এর বাণী : نظيفا শব্দের মাধ্যমে।

মুহাম্মদ নামকরণের কারণ 
____________________
মুহাম্মদ নামকরণের কারণ 

হুযূরে পাকের নাম মুহাম্মদ রাখার কয়েকটি কারন রয়েছে। তন্মধ্যে মায়ের স্বপ্নযুগে আদিষ্ট হওয়া অন্যতম। যেমন : এ প্রসঙ্গে বর্ণিত আছে:

وقال بعضى العلماء مقد الهم الله عذ وجل ان يسمعوه محمدا لما فيه من الصفات المحمودة يطابقالاسم المسمى وقد قيل الاسماء تنزل من السماء-

অর্থাৎ- কোন কোন উলামায়ে কেরামগনের মতে মহান আল্লাহ পাক তাঁদের (নবী পরিবারে) অন্তরে ইলহাম করেছিলেন, যাতে তারা নবজাতকের নাম রাখেন মোহাম্মদ। যেহেতু তাঁর মধ্যে বিদ্যমান রয়েছে হাজারও প্রশংসনীয় গুনাবলীর ভান্ডার যাতে নাম ও বাস্তবের সাথে সামঞ্জশ্য থাকে। আবার কেউ কেউ বলেন: হুযূরে পাকের পবিত্র নামসমুহ আকাশ হতে অবতারীত। যার বাস্তব প্রমাণ মিলে হাসসান বিন সাবেত (رضي الله عنه ) এর চমৎকার কাব্য মালায়। তিনি বলেছেন:

وضم الاله اسم النبى الى اسمه اذقال قى الخمس المؤذن اشهد

وشق له من اسمه ليجله فذ والعرش محمود وهذا محمد-

নিজ নামেতে যোগ করিলেন মোহাম্মদী নূর,

ঐ শুনাযায় মোআযযীনের কন্ঠে সুমধুর

তাঁর নামের অংশ দিলেন সম্মান দিবেন বলে।

আরশপতি মাহমুদ তাই, মোহাম্মদ ভূমন্ডলে।

ইমাম সাখাবী (رضي الله عنه ) বলেন: খাজা আব্দুল মুত্তালিব কর্তৃক নাতীর নাম মোহাম্মদ রাখার কারন মূলত: মহান আল্লাহর ইঙ্গিত অথবা তিনি জানতেন যে, তাঁর এ হের দৌহিত্র আল্লাহর কাছে এক বিশাল শানওয়ালা হবে।

মুহাম্মদ নাম করনে দ্বিতীয় কারন 
____________________
মুহাম্মদ নাম করনে দ্বিতীয় কারন 

ইমাম আবু রাবে বিন সালিম আল কালায়ী (رضي الله عنه ) বলেন: রাসূলে পাকের নাম ‘মোহাম্মদ’ রাখার দ্বিতীয় কারন সম্পর্কে উলামাযে কেরামগণ নিন্মোক্ত বর্ণনাটি উল্লেখ করেন :

زعموا انه رأى فى منا مه كان سلسلة من فضة خرجت من ظهره - بها طرف فى الماء وطرف فى الارض- وطرف فى المشرق وطرف فى المغرب- ثم عادة كانها ثجرة على كل ورقة منها نور- واذا اهل المشرق والمغرب يتعلقون بها- فقصها فعبرت له بمولود يكون من صلبه يتبعه اهل المشرق والمغرب ويحمده اهل السماء والارض فلذا ل سماءه به مع ما حدثته به امنة-

অর্থাৎ- উলামায়ে কেরামগনের মতে এক বার খাজা আব্দুল মুত্তালিব (رضي الله عنه ) স্বপ্নে দেখলেন যে, রৌপ্য নির্মিত বিশাল একটি সিড়ি তাঁর পৃষ্ট হতে বের হয়ে এক অংশ আকাশে এক অংশ জমীনে, একাংশ প্রাচ্যে এবং আরেকাংশ পাশ্চাত্যে বিস্তৃত হয়ে পুন:রায় তা একত্র হয়ে একটি বিশাল বৃক্ষে পরিনত হয়ে গেছে যায়। বৃক্ষের প্রতিটি পাতায় পাতায় নূর বিদ্যমান রয়েছে। আর প্রাচ্য ও পাশ্চাত্য অধিবাসীরা বৃক্ষের প্রতিটি পাতায় লটকিয়ে আছে।

ঘটনাটি তিনি একগণক পাদী্রর কাছে ব্যক্ত করলে তিনি স্বপ্নের তাবীর করলেন এভাবে যে, একজন শানওয়ালা বাচ্ছা তাঁর পৃষ্ট হয়ে বেরিয়ে আসবে, ফলে সমগ্র প্রাচ্য ও প্রতিচ্ছ্যের অধিবাবাসীরা তাঁর প্রশংসায় পঞ্চমুখ হবে।

আর একারনেই হয়তো তিনি নবজাতকের নাম মোহাম্মদ হিসেবে নাম করন করেন।

উল্লেখ্য যে, মা আমেনা (رضي الله عنه ) এর স্বপ্নের সাথে খাজা আব্দুল মুত্তালিব (رضي الله عنه ) এর স্বপ্নের হুবহু সামঞ্জশ্যতা পাওয়া যায়।

অতএব, মোহাম্মদ ও আহমদ এ দুটো মহা পবিত্র নামদ্বয় কেবল রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর, অন্য কারও নয়। যেমন এ সম্র্পকে পবিত্র কোরানে পাকের বাণী-

وَمُبَشِّراً بِرَسُولٍ يَأْتِي مِن بَعْدِي اسْمُهُ أَحْمَدُ - مُّحَمَّدٌ رَّسُولُ اللَّهِ وَالَّذِينَ مَعَهُ أَشِدَّاء عَلَى الْكُفَّارِ رُحَمَاء بَيْنَهُمْ.

আয়াদ্বয় তাঁর বাস্তবতা প্রমাণ করে। ইমাম আবু আব্দুল্লাহ হাকীম নিশাপুরী (رضي الله عنه ) স্বীয় মুস্তাদরাকে হাকীমে বর্ণনা করেন, হযরত আদম (عليه السلام ) আরশের ছায়ায় মোহাম্মদ (ﷺ) এর নামাঙ্কিত দেখে তাঁরই উসিলা নিয়ে প্রার্থনা জানালে মহান আল্লাহ পাক তাঁকে ক্ষমা করে দেন এবং আদম (عليه السلام ) কে সম্বোধন করে বলেন: لو لامحمد لما خلقتك (যদি মোহাম্মদ (ﷺ) না আসতেন তবে আমি আপনাকেও সৃষ্টি করতামনা। তাছাড়া হাদীসে কুদসীতে বর্ণিত لولاك لما خلقت الافلاك অর্থাৎ:- হে নবী! যদি আপনি না আসতেন তবে সমগ্র সৃষ্টজীবকে এ নিখীল ধরনীর বুকে সৃষ্টি করতামনা। উক্ত হাদীসটি নি:সন্দেহে বিশুদ্ধ।

শায়খুল মাশায়েখ শায়েখ মোহাম্মদ আলী আল মালিকী (رضي الله عنه) এ হাদীসের সত্যতায় বিশেষ একটি রেসালাহ প্রনয়ন করেন। (১নং হাশিয়া দ্র:)

যদিও ছানাআনী এককভাবে এ হাদীসকে মাওজু বলে মন্তব্য করেন তবুও সকল মোহাদ্দেসীনে কেরামগণ তাকে সহীহ বলে মতপোষন করেন।

কাজী আয়াজ (رضي الله عنه ) বলেন- احمد শব্দটি افعل এর ওযনে ইসমে তাফদ্বীলের সীগা, যা হামদের বৈশিষ্ট হতে অত্যধিক বেশিষ্ট পূর্ণ। محمد শব্দটি مفعل এর ওযনে এসেছে, যা হামদের চেয়ে ও সীমাহীন প্রশংসনীয়। অতএব মোহাম্মদ শব্দটি হামদের চেয়ে ও আরও অর্থপূর্ণ।

তাই নিখীল দুনিয়ার সমস্ত মানব ইহকাল ও পর কালে অত্যধিক প্রশংসা করবে। এ এক্ষেত্রে তিনি হবেন সকল প্রশাংসাকারীগনের উর্ধ্বে সীমাহীন প্রশংসা জ্ঞাপনকারী। আর কেয়ামতের মহা সংকটে লেওয়ায়ে হামদের পতাকা কেবল মোহাম্মদ (ﷺ) এর হাতেই থাকবে, যাতে হামদের পরিপুর্ণতা অজির্ত হয়। এবং মোহাম্মদ (ﷺ) সেদিন ছাহেবে হামদ হিসেবে প্রশিদ্ধি লাভ করবেন। তাঁকে কৃত অঙ্গীকার অনুযায়ী মাকামে মাহমুদে পৌছানো হবে এবং তথায় প্রথম থেকে নিয়ে শেষ পর্যন্ত তথা সমগ্র মাখলুকাতরা তাঁর প্রশংসায় পঞ্চমুখ হবে। আর মোহাম্মদ (ﷺ) এর সম্মানার্থে সে দিন প্রশংসার সমস্ত দ্বার উম্মোক্ত করে দেয়া হবে। যেমন : সহীহ বোখারী ও মুসলিম শরীফদ্বয়ে এসেছে- لم يعطى غيره অর্থাৎ:- সর্বগুনে গুনান্বিত মোহাম্মদ (ﷺ) ব্যতীত অন্য কাউকেও এগুনে গুনান্নিত করেননি।

প্রকাশ থাকে যে, হযরত মোহাম্মদ (ﷺ) এর উম্মতগণকে পুর্ববর্তী সমস্ত আসমানী গ্রন্থে হাম্মদীন বলে আখ্যায়ীত করা হয়েছে।

এ বিশে­ষিত ধারায় মোহাম্মদ (ﷺ)কে পবিত্র কোরানে পাকে মোহাম্মদ ও আহমদ, নামে অভিহিত করা হয়েছে আর এ দুটি পবিত্র ইসমে জাতি নামের মধ্যে লুকায়ীত আছে আহমদী গুনাবলীর সীমাহীন অদ্ভুদ কৌশল ও নিদর্শনসমুহ।

কথিত আছে যে, হুযূরে পাকের জীবদ্দশায় উক্ত দুটি নামে অন্য কেউই ছিলনা বরং তা থেকে অন্যকে দুরে রাখেন। আহমদ নামটি পূববতর্ীর্ সকল গ্রন্থে বিদ্যামান ছিল বিধায় সমগ্র নবীগণ স্বীয় জাতীর কাছে এ নামেরই সুসংবাদ দান ও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন।

এবং এ কৌশল অবলম্বনে হয়তো কারও নাম এনামে রাখা হয়নি বা কেউ রাখার স্পর্ধা দেখায়নি। যাতে করে মোহাম্মদী নামের সীমাহীন গুনাবলীর সাথে অন্যের গুনাবলী মিশ্রিত না হয়। আর আহমদী নামের অনূরূপ মোহাম্মদী নামের সাথে ও তাল মিলিয়ে সমগ্র আরবও অনারবের কেউই রাখেনি এমনকি তাঁর অস্তিত্ব প্রকাশ পাওয়ার পুর্ব মুর্হুত পর্যন্তও না।

তাঁর আবির্ভাবের পূর্ব মুহুর্তে আরবের অতিন্দ্রিয়বাদীরা তাঁর আগমনের বার্তা এভাবে পরিবেশন করেছেন যে, অতিশীঘ্রই আরবের কুরাইশ বংশে মোহাম্মদ নামে এক নবজাতকের শুভাগমন ঘটবে। এ সুবাদে আরবের কোন কোন সম্প্রদায়রা তাদের ছেলেদের ঐ নামে নাম করন করে। তাদের প্রত্যাশা ছিল যে, সে হবে একমাত্র মুহাম্মদ।

রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর নাম সংক্রান্ত পর্যালোচনা
____________________
রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর নাম সংক্রান্ত পর্যালোচনা

ইমাম ছাখাভী (رضي الله عنه ) বলেন: রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর বহু সংখ্যক মোবারক নাম সমূহ রয়েছে। এ বিষয়ে কিছু মতানৈক্য আছে। কেউ কেউ বলেন: তাঁর ছিফতী নামের সংখ্যা প্রায় এক হাজারে যেয়ে পৌছেছে। তবে অধিকাংশ নাম তাঁর কার্য ক্রিয়ার উপর ভিত্তি করে রাখা হয়েছে। যেমন : “হাদী” হেদায়েতকারী “শাফী” সুপারিশকারী যেহেতু কেয়ামতের ভয়াল মাঠে তিনিই একমাত্র মহান ব্যক্তিত্ব, যিনি সকলের জন্য সুপারিশ করবেন। ইত্যাদি আরও অধিক সংখ্যক নাম মোহাম্মদ (ﷺ) এর সীমাহীন জালালীয়তের প্রমাণ বহন করে। তাঁকে স্বীয় নাম সমূহ আসমাউল হুসনা হতে কিছু অংশ দান করেছেন। এমনকি তাঁকে মহান আল্লাহর দেয়া সকল সর্বোচ্ছ গুনে গুনাম্বিত করেছেন।

ইমাম কাজী আয়াজ (رضي الله عنه ) শিফা গ্রন্থে উল্লেখ করেন যে, ইমাম জালালুদ্দিন সুয়ূতী (رضي الله عنه ) বলেন: রাসূলে পাকের নাম বিষয়ক নির্দেশনা ইতিপূর্বে চলে গেছে। সুয়ুতী তার গ্রন্থে প্রায় পঁাচশত ছিফতী নাম সংগ্রহ করেন। পরবর্তীতে শীতিল হতে হতে ৯৯ নিরান্নব্বই নামে এসে সিমাবদ্ধতা লাভ করে।

রাসূলের প্রশংসায় ইমাম সুয়ূতী নিন্মোক্ত কবিতা আবৃত্তি করেন

هذا الحبيب الذى فمثله لايوجد * والنور من وحبناته يتوقد

حبريل نادى فى منصة حسة * هذا مليح الكون هذا احمد-

هذا مليح الوجه هذا المصطفى* هذا جميل الوصف هذا المستد

هذا جليل النعت هذا المرتضى * هذا كحيل الطرف هذا الامجد-

هذا الذى خلعت عليه ملابس * ونقائس فنظيره لايوجد-

অর্থাৎ: ইনি এমন হাবীব, যার দৃষ্টান্ত কোথায় ও খোজে পাওয়া যাবেনা। অথচ তাঁর ললাট হতে অবিরাম ধারায় নূর প্রজ্জলিত হচ্ছে।

জিব্রাঈল (عليه السلام ) গুণগান এভাবে করেছেন। তিনি সৃষ্টি কুলের মধ্যে লাবণ্যময়ী ছিলেন। তিনি হচ্ছেন আহমদ। তিনি লাবণ্যময়ী চেহারার অধিকারী, তিনি মোস্তফা, তিনিই সকল সৌন্দর্যের আকর এবং তিনিই মদদগার: তিনি সীমাহীন গুণাবলীর আকর, তিনি মুরতাদ্বা তিনিই কালো চক্ষু বিশিষ্ট, তিনিই সীমাহীন মর্যাদার অধিকারী তিনি এমন এক মহান ব্যক্তিত্ব, যিনি সম্র্পকের আধার, সকল শৈল্পিক সৌন্দর্যের মালিক। সুতরাং তাঁর দৃষ্টান্ত কোথায় ও খোজে পাওয়া যাবেনা।

রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর জন্ম সাল, জন্ম মাস, জন্মদিন ও জন্মকালীন সময়ের পর্যালোচনা
____________________
রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর জন্ম সাল, জন্ম মাস, জন্মদিন ও জন্মকালীন সময়ের পর্যালোচনা

জন্ম সালের আলোচনা : নবীকুল সম্রাট মা আমেনার স্নেহের দুলালী, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) জগতগুরু সেজে “আমূল ফীল” তথা হস্তি—বাহিনীর ঘটনার বছর জন্মগ্রহন করেন।

এ হাদীসটি ইমাম তিরমীযী (رضي الله عنه ) স্বীয় তিরমীযীতে ক্বায়েস বিন মাখরামা ও ইবনে আছীমদ্বয়ের হাদীস থেকে বণর্না করেন। ইমাম বায়হাকী স্বীয় “দালায়েলে”সুআইদ বিন গাফলাহ (যিনি মুখদ্বারামীদের অন্যতম) এর হাদীস থেকে বর্ণনা করেন।

ইমাম বায়হাক্বী ও স্বীয় উস্তাদ হাকীম নিশাপুরী একত্রে হাজ্জাজ বিন মোহাম্মাদ এর হাদীস থেকে, তিনি ইউনুস বিন আবু ইসহাক্ব হতে, তিনি স্বীয় পিতা হতে, তিনি সাঈদ বিন যুবায়ের (رضي الله عنه ) হতে, তিনি সাইয়্যিদিনা হযরত আব্দুল্লাহ বিন আব্বাস (رضي الله عنه ) হতে বণর্না করেন।

ঐতিহাসিক ইবনে সা’দ (আমূল ফীলের) পরিবর্তে (ইয়াওমূল ফীল) উল্লেখ করেন। আর ইমাম হাকীম নিশাপুরী (رضي الله عنه ) অনূরুপই একখানা হাদীস হামীদ বিন রাবী ৈ সুত্রে, তিনি হাজ্জাজের সূত্রে বর্ণনা করেন।

হাকীম নিশাপুরী رحمة الله عليه বলেন: হামীদ এককভাবে “ইয়াওমূল ফীল” ব্যবহার করেন। তবে এক্ষেত্রে তিনি ইবনে মুয়ীনের বর্ণনাকে প্রাধন্য দেন। তবে বিশুদ্ধ কথা হচ্ছে বাক্যটি “আমূল ফিল” হওয়াই যুক্তি সংগত ও সর্ব সম্মত।

 عام الفيل (আমূল ফীল) ও يوم الفيل (ইয়াওমূল ফীল) শব্দদ্বয় দ্বারা মূলত: হস্তিবাইনীর বছরকেই বুঝানো হয়েছে।

যেহেতু ঐ বছরই মহান আল্লাহ পাক আবরাহা আল আশরমের বিশাল হস্তিবাহিনীকে পরাস্থ করেন এবং কাবা নিধনের আশায় যারা এসেছিল তিনি সবাইকেই ধ্বংশ করেন। ইমাম ছাখাভী বলেন: এ বিষয়ে আমাদের মুহতারাম শায়েখ (رضي الله عنه ) প্রথম অভিমতের সমর্থন করেন ফলে কখনো কখনো ইয়াত্তম শব্দ ব্যবহার করে এর দ্বারা (মুতলাক্বোল ওয়াকত) তথা সাধারন সময়কে বুঝানো হয়ে থাকে। যেমন : يوم الفتح (বিজয়ের দিন) يم البدر (বদরের দিন) দ্বারা কখনো বছর ও মাস বুঝানো হয়ে থাকে। এক্ষেত্রে তিনটাই মূল উদ্দেশ্য। ইমাম ইবনে হিববানে স্বীয়, তারীখে, (আমূল ফীল) দ্বারা যে বছর হস্তিবাইনীর উপর মহান আল্লাহ পাক আবাবীল ফৌজ প্রেরন করেন সে বছরকেই বুঝানো হয়েছে। ইমাম বায়হাকী رحمة الله عليه মোহাম্মাদ বিন যুবায়ের বিন মুত্বঈম এর মুরসাল হাদীস দ্বারা (আমূল ফীল) শব্দ উল্লেখ করেছেন। হস্তিবাহিনীর ঘটনাটি যারা প্রত্যক্ষ করেছিলেন তন্মধ্যে হাকাম বিন হাযাম, হুআইত্বিব বিন আব্দুল উযযা এবং হাসসান বিন সাবেত প্রমুখগণ। তাঁরা عام الفيل এর বছর রাসূলুল্লাহ (ﷺ) জন্ম হওয়ার ব্যাপারে সমস্ত উলামায়ে কেরামগণ একমত পোষন করেছেন। পুর্বোক্ত বর্ণনার আলোকে আরও কিছু বক্তব্যের উদৃত রয়েছে। আর তাহচ্ছে যে রাসূলুল্লাহ (ﷺ) হস্তিবাহিনীর ৪০ বছর পর জন্মগ্রহন করেন।

ইবনে আসাকীর শুআইব বিন শুআইব সুত্রে বলেন: ১৫ বছর পর, ইবনে কালভী স্বিয় পিতা হতে, তিনি ছালেহ হতে, তিনি ইবনে আব্বাস (رضي الله عنه) হতে বণর্না করেন। তবে ইবনে আব্বাস (رضي الله عنه) এর পুর্বোক্ত হাদীসটি অত্যধিক নির্ভর যোগ্য।

 কেউ বলেন: এক মাস পর, তা ইবনে আব্দুল বারের অভিমত। অথবা দশ বছর পর, এ অভিমত ইবনে আসাকীর আব্দুর রহমান বিন আসাকীর সুত্রে ব্যক্ত করেন। অথবা ৩০ দিন পর জন্ম গ্রহন করেন। অথবা ৪০ দিন পর। সর্বোপরী কথা হচ্ছে যে, তিনি উক্ত ঘটনার ৪০/৫০ দিন পর জন্ম গ্রহণ করেন। ইমাম ছাখাভী رحمة الله عليه বলেন ولدت فى زمان الملك العادل অর্থ: আমি (মোহা্ম্মদ (সা: ) ন্যায় পরায়ন বাদশাহার আমলে জন্ম গ্রহন করেছি।) হাদীসের কোন ভিত্তি নেই। যেহেতু তাদের কেউ কেউ এর দ্বারা প্রতারীত হয়েছেন। তবে মূল কথা হচ্ছে যে, উলামায়ে কেরামগনের সর্বসম্মতিক্রমে রাসূলুল্লাহ (ﷺ) পবিত্র মক্কানগরীতে ন্যায় পরায়ন বাদশা নওশের ওয়ামের আমলে জন্ম গ্রহন করেন। ছাখাভী বলেন: ইমাম যামারাকশীর মতে এ হাদীসটি ভ্রান্ত ও মিথ্যায় জর্জরিত।

ইমাম জালালউদ্দিন সুয়ূতী رحمة الله عليه বলেন: আমাদের শায়েখ হাফিজ হাকীম আবু আব্দুল্লাহ নিশাপুরীর মতে কোন কোন মুর্খ পন্ডিতগণ নিন্মোক্ত বাণী : ولدت فى زمان الملك العادل বাক্যকে রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর বাণী বলে প্রচার করত: বলে যে, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) নাকি বাদশা নওশের ওয়ানের আমলে জন্মগ্রহণ করেছেন অথচ তাদের এহেন ও অযৌক্তিক মন্তব্য মূলত বাতিল বলে গণ্য।

আর হাকীম নিশাপুরীর এ মন্তব্যের সত্যতা মিলে নিন্মোক্ত স্বপ্নেপ্রাপ্ত ঘটনা প্রবাহদ্বারা। যেমন : কোন এক জনৈক বুযুর্গ স্বপ্ন যুগে রাসূলে পাক (ﷺ) এর সাথে মুলাক্বাত হলে পর তাঁর সমীপে ইমাম হাকীম নিশাপুরী (رضي الله عنه ) বর্ণিত মন্তব্যের সত্যায়ন কতটুকু সে বিষয়ে নিবেদন করলে রাসূলুল্লাহ (ﷺ) হাকীম নিশাপুরীর মন্তব্যের সত্যতা জ্ঞাপন করেন। অর্থাৎ: বাদশা নওশেরওয়ান আমলে আমার জন্ম হওয়া সংক্রান্ত হাদীস মিথ্যা ও বাতিল।

একটি সুক্ষ্ম আলোচনা
____________________
একটি সুক্ষ্ম আলোচনা

ইমাম ছাখাভী (رضي الله عنه ) বলেন: একটি অতি সুক্ষ্ম বিষয়ে পর্যালোচনা প্রয়োজন যে, যদি বলা হয় যে, প্রত্যেক মানব তার কবরস্থ মাটিদ্বারা সৃষ্টি করা হয়েছে বিধায় তাকে ঐ স্থানেই দাফন করা হয়, তাবে এ কথাও বলা, যুক্তিসঙ্গত হওয়ার কথা যে, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর জন্ম হয়েছে পবিত্র মক্কাতে সে হিসেবে মক্কাতেই তাঁকে দাফন করা উচিত ছিল। এ বিষয়ে আওয়ারিফ গ্রন্থকার একটি অতি চমৎকার জাওয়াব প্রদান করেছেন এভাবে যে, হযরত নুহ (عليه السلام ) এর মহাপ­াবনের সময় যখন সমুন্দ্রে তরঙ্গায়ীত হয়েছিল, তখন বিশাল তরঙ্গের সীমাহীন ফেনা চতুর্দিকে চরিয়ে ছিটিয়ে পড়েছিল, ফলে মহানবী (ﷺ) এর মূল বস্ত ঐ মনি মুক্তা পবিত্র সমাধিস্থল মদীনায় যেয়ে নিপতীত হয়। এজন্য বিশ্বনবী (ﷺ)কে একত্রে মক্কী ও মাদানী বলে অভিহিত করা হয়। যেহেতু তাঁর শুভাগমন মক্কায় এবং সমাধিস্থ হন মদীনায় যেমন : নিন্মে তাঁর বর্ণনা দেওয়া হলো:

جاء فيه ان الماء لماتموج رمى الزيد الى النواحى فوقعت جوهرة النبى صلى الله تعالى عليه وسلم- الى مايحاذى تربتوه فى المدينة فكان صلى الله عليه وسلم مكيامدنيا- حنينه الى مكة وتربته فى المدينة-

যে মাসে হুযূর (ﷺ) এর আগমন
____________________
যে মাসে হুযূর (ﷺ) এর আগমন

হুযূরে পাক (ﷺ) কোন মাসে জন্ম গ্রহণ করেছেন, এ বিষয়ে ঐতিহাসিক গনের মধ্যে কিছু মতভেদ আছে। সুপ্রসিদ্ধ বর্ণনা মতে তিনি রবীউল আউয়াল মাসে ১২ তারিখ জন্মগ্রহন করেন। জমহুর উলামাগন এ অভিমতের প্রবক্তা। ইবনে জাওজীর মতে সকল উলামা, মোহাদ্দেসীন ও ঐতিহাসিকগন এমতের উপর এক্যমত পোষন করেন। তবে কিছু মতভেদ পরিলক্ষিত হয়। আর তা হচ্ছে কারও কারও মতে তিনি সফর মাসে জন্মগ্রহণ করেন। কারও মতে রবিউস সানী মাসে, কারও মতে রজব মাসে। অথচ কারও কথা বিশুদ্ধ নয়। আবার কারও মতে রামাদ্বান মাসে। এ মতের প্রবক্তাগন ইবনে ওমর কর্তৃক বর্ণিত সনদ মাধ্যমে প্রমাণ করেছেন অথচ এ বর্ণনাও বিশুদ্ধ নয়।

তবে যারা বলেন যে, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) মা জননী আইয়্যামে তাশরীক্বের দিনগুলোর মধ্যে স্বীয় নবজাতক শিশুকে প্রসব দান করেন, তাদের অভিমত সামঞ্জশ্যপূর্ণ। আার “আশুরার দিন জন্ম দিয়েছেন” প্রবক্তাদের কথা অযেীক্তিক ও দুর্বল।

যে তারিখে জন্ম গ্রহন করেছেন
____________________
যে তারিখে জন্ম গ্রহন করেছেন

সকল ঐতিহাসিক ও উলামায়ে কেরামগনের ঐক্যমতের ভিত্তিতে প্রমানিত হয়েছে যে, হুযূর (ﷺ) পবিত্র রবিউল আওয়াল মাসের ১২ তারিখই জন্মগ্রহন করেন। এবার আরেকটি প্রশ্নের উদয় হয় যে, তিনি ঐ মাসে কোন দিবসে জন্মগ্রহন করেন। এবিষয়েও বেশ কিছু মত প্রার্থক্য দেখা যায়।

যেমন : কারও মতে এ বিষয়ে নির্দিষ্ট কোন দিন ধার্য্য নেই বরং তিনি রবিউল আওয়াল মাসের সোমবারে জন্ম গ্রহন করেন। আর জমহুর উলামায়ে কেরামগনের মতে দিন নির্দিষ্ট কৃত। আবার কেউ কেউ বলেন: রবিউল আওয়াল মাসের মাত্র দু রজনী বাকী থাকতে কারও মতে ৮দিন বাকী থাকতে, শায়েখ কুতবুদ্দিন কাস্তালনীর মতে তা অধিকাশং হাদীস বিশেষজ্ঞদের নির্বাচিত অভিমত ইবনে আব্বাস ও যুবায়ের ইবনে মুত্বয়ীম (رضي الله عنه ) দ্বয় হতে বর্ণিত এ অভিমত তাঁদের ব্যবহৃত অভিমত, যারা হাদীস বিষয়ে অগাধ পরিচয়ের ক্ষমতা রাখেন।

ইমাম হুমায়দীও স্বীয় সায়েখ ইবনে হাযম এ অভিমতকে পছন্দ করেছেন। কারও মতে ১০ম দিনে আর এর উপর সমগ্র আরবগণ ঐক্যমত পোষন করেছেন, যারা ঐ সময় তাঁর জন্মস্থান পরিদর্শন করেছেন।

কারও মতে তিনি ১৭ই রবিউল আওয়ালে জন্মগ্রহন করেন। কার মতে ৮ দিন বাকী থাকতে এরই মধ্যে যে কোন দিবসে। তবে সর্বোপরী কথা হচ্ছে যে, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) রবিউল আওয়াল মাসের ১২ তারিখ সোমবার শুভাগমন করেন। তা ইবনে ইসহাক ও অন্যান্যের অভিমত। অথচ ইবনে ইসহাক্বের সীরাত গ্রন্থই হচ্ছে সকল সীরাত শাস্ত্রের মূল।

যে সময়ে জন্ম গ্রহন করেছেন
____________________
যে সময়ে জন্ম গ্রহন করেছেন

এ আলোচনায় রয়েছে হুযূরে পাক (ﷺ) এর বেলাদত শরীফের বিরোধ পুর্ণ পর্যালোচনা। তাঁর জন্ম কালীন সময় নিয়ে বহু মত প্রার্থক্য থাকলেও তিনি যে, সোমবার সুবহে সাদিকের সময় সুভাগমন করেছেন তাতে কোন সংশয় নেই। যেমন : এর সত্যতা প্রমাণে স্বয়ং রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর হাদীস যথেষ্ট। হযরত আবু কাতাদা (رضي الله عنه ) এর বানি-

سُئِلَ رَسُولُ الله صَلَّى الله عَلَيه وسَلَّم عَن صَوْمُ يَوْمِ الاِثْنَيْنِ ؟ قَالَ : ذَاكَ يَوْمٌ وُلِدْتُ فِيهِ وَأُنْزِلَ عَلَيَّ فِيهِ النُّبُوَّةُ

অর্থাৎ: রাসূলুল্লাহ (ﷺ)কে সোমবার দিনের রোযা রাখা সম্র্পকে নিবেদন করা হলে তিনি বললেন: এটি এমন দিন, যে দিনে আমি জন্মগ্রহন করেছি এবং এ দিনেই আমার প্রতি নবুওয়তের গুরুদায়ীত্ব প্রদানকরা হয়। এ হাদীসটি ইমাম মুসলিম رحمة الله عليه বর্ণনা করেন।

বর্ণিত হাদীসে নববী দ্বারা প্রমানিত হয় যে রাসূলুল্লাহ (ﷺ) সোমবার দিনে জন্মগ্রহন করেন। মুসনাদে ইমাম আহমদে ইবনে আব্বাস (رضي الله عنه ) হতে একখানা হাদীস বর্ণিত আছে, তিনি বলেন:

عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ قَالَ وُلِدَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَوْمَ الِاثْنَيْنِ وَاسْتُنْبِئَ يَوْمَ الِاثْنَيْنِ وَتُوُفِّيَ يَوْمَ الِاثْنَيْنِ وَخَرَجَ مُهَاجِرًا مِنْ مَكَّةَ إِلَى الْمَدِينَةِ يَوْمَ الِاثْنَيْنِ وَقَدِمَ الْمَدِينَةَ يَوْمَ الِاثْنَيْنِ وَرَفَعَ الْحَجَرَ الْأَسْوَدَ يَوْمَ الِاثْنَيْنِ.

অর্থাৎ- রাসূলুল্লাহ (ﷺ) সোমবার দিনে জন্ম গ্রহন করেন, ঐদিনে তাঁর কাছে উম্মতের আমল পেশ করা হয়, ঐ দিনে তিনি মক্কা থেকে মদীনায় হিজরত করেন, ঐ দিনে সুদুর মদীনায় প্রবেশ করেন, সর্বোপরী ঐদিনে তিনি হাজারে আসওয়াদকে স্বস্থানে স্থাপন করে সমগ্র কুরাইশদের বিরোধ মিটিয়ে দেন।

ইমাম কাস্তালানী رحمة الله عليه এর মতে ঐদিনে মক্কা বিজয় হয়েছিল, ঐ দিনে সুরা মায়েদা অবর্তীন হয়েছিল, অর্থাৎ- আল্লাহর সমস্ত নেয়ামতের ভান্ডার সম্বলিত নিন্মোক্ত আয়াতে কারীমা অবর্তীন হয়। মহান আল্লাহর বাণী :

الْيَوْمَ أَكْمَلْتُ لَكُمْ دِينَكُمْ وَأَتْمَمْتُ عَلَيْكُمْ نِعْمَتِي وَرَضِيتُ لَكُمُ الإِسْلاَمَ دِيناً.

অর্থাৎ- আজ আমি তোমাদের জন্য তোমাদের ধর্মকে পরিপূর্ণ করে দিলাম তোমাদের উপর আমার সমস্ত নেয়ামত গুলোও সম্পন্ন করলাম এবং তোমাদের জন্য ইসলামকে মনোনীত ধর্ম হিসেবে আমি সন্তুষ্ট হলাম। তা সর্বশেষ অবতারীত আয়াত।

বিখ্যাত মোহাদ্দেস ইমাম ইবনে আবু শায়খ ও আবু নাঈম স্বীয় দালায়েলে বর্ণনা করেন যে, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) সোমবার সুবহে সাদিক লগ্নে শুভাগমন করেন। আবার কারও মতে সোমবার রজনীতে। ইমাম যারকাশী বলেন: বিশুদ্ধ মতে রাসূলুল্লাহ (ﷺ) দিনের বেলায় জন্ম গ্রহণ করেন। তবে সকলের ঐক্যমতের ভিত্তিতে ও নির্ভরযোগ্য বর্ণনার আলোকে বলা যায় যে, তিনি সোমবার সুবহে সাদিক সংলগ্নে ভূমিষ্ট হয়েছেন। তাই যুক্তি নির্ভর কথা এবং এর উপরই ফতওয়া।

বেলাদত রজনী ক্বদর রজনীর চেয়েও শ্রেষ্টতম
____________________
বেলাদত রজনী ক্বদর রজনীর চেয়েও শ্রেষ্টতম

ইমাম কাস্তালানী (رضي الله عنه ) বলেন: তিনটি কারনে রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর বেলাদত শরীফের রজনী শবে ক্বদরের চেয়েও হাজার গুনে বেশি। যেমন : তাঁর ভাষায়-

وقال ليلة مولده عليه سلم افضل من ليلة القدر من وجوه ثلاثة- ذكرها حيث لايفيد ألاطلاق- مع ان الافضلية ليست ألالكون العبادة فيها- افضل بتهادة النص القرانى-

 لَيْلَةُ الْقَدْرِ خَيْرٌ مِّنْ أَلْفِ شَهْرٍ حنة ولاتعرف هذه الفضيلة لليلة مولده صلى الله عليه وسلم ومن الكتاب ولامن السنة ولا من احر من علما الآئمة-

অর্থাৎ- তিনি বলেন তিনটি বিশেষ কারনে শবে বেলাদত শবে ক্বদরের চেয়েও হাজ্জারগুনে বেশি। অথচ একথা স্পষ্ট যে, ইবাদত বিহীন আমল শ্রেষ্টত্ব লাভ করতে পারেনা যার চাক্ষুসিক প্রমাণ কোরানে পাকের আয়াত لَيْلَةُ الْقَدْرِ خَيْرٌ مِّنْ أَلْفِ شَهْرٍ দ্বারা সাব্যস্ত যে, ক্বদরের রজনী হাজার মাসের ইবাদতের চেয়ে ও উত্তম। অথচ হুযূরে পাকের বেলাদত রজনীর ফযিলত সীমাহীন, অনির্দিষ্ট, যার সত্যতা কোরানেও নেই, হাদীসে ও নেই, আবার উলামায়ে কেরামগনের বক্তব্য দ্বারা পাওয়া যায়নি। উক্ত গ্রন্থের ১নং হাসিয়াতে এসেছে, হুযূরে পাকের বেলাদতের রজনী সহস্র ক্বদরের রজনীর চেয়েও শ্রেষ্টতম। কেননা লাইলাতুল ক্বদরের মর্যাদা বৃদ্ধি পেয়েছে কেবল কোরানে পাকের অবতরন হওয়ার দ্বরুন এবং শবে বেলাদতের মর্যাদা বৃদ্ধি পেয়েছে স্বয়ং রাহমাতুললিল আলামীনের আগমনের কারনে। এজন্য শবে বেলাদত শবে ক্বদরের চেয়ে সহশ্রগুনে বৃদ্ধি পেয়েছে।

মাতৃগর্ভে অবস্থান
____________________
মাতৃগর্ভে অবস্থান

এ পরিসরে হুযূরে পাকের মাতৃগর্ভে থাকা কালীন সময়ের পরিমান নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। মাতৃগর্ভে তিনি কতদিন অবস্থান করেছেন? সে বিষয়ে উলামায়ে কেরামগনের মধ্যে কিছু মতবিরোধ পরিলক্ষিত হয়।

কোন কোন ঐতিহাসিকের মতে তিনি মা আমেনার গর্ভে দীর্ঘ ৯ মাস অবস্থান করেন। কারও মতে ১০ মাস, কারও মতে ৮ মাস, কারও মতে ৭ মাস, আবার কারও মতে ৬ মাস। ইমাম কাস্তালানী বলেন: রাসূলুল্লাহ (ﷺ) হাজ্জাজের ভাই মোহাম্মদ বিন ইউসুফের বাড়ীতে জন্মগ্রহণ করেন, কেউ বলেন, বনী কালবের বাড়ীতে কারও মতে কোন শক্ত প্রাচীরে কারও মতে বনু আসফানের বাড়ীতে। তবে শায়েখ ইবনে হাজার আসকালানীর সুপ্রশিদ্ধ মতে তিনি পবিত্র মক্কাতেই জন্মগ্রহন করেন।

উলামায়ে কেরামগনের মতে হুযূর পাকের শুভজন্ম মুহাররাম মাসে নয়, রজব মাসেও নয়, রমজানেও নয়। একারনে নয় যে, যাতে করে বর্ণিত মাসগুলো ছাড়াও অন্য একটি সময় মর্যাদা শীল হয়। আর তাঁর আগমনে যেমনি: একটি সময় মর্যাদাশীল হয়েছে তেমনি স্থান মর্যাদাশীল হয়েছে। যেমন : তাঁর আরামস্থল পবিত্র রাওদ্বা মোবারকের সমাধিস্থল আরশে আজীমের চেয়েও শ্রেষ্ট।

হালিমা ( رضي الله عنها ) এর গৃহে রাসূল পাক (ﷺ) এর যে সমস্ত মোজেযা প্রকাশ পেয়েছিল
____________________
হালিমা ( رضي الله عنها ) এর গৃহে রাসূল পাক (ﷺ) এর যে সমস্ত মোজেযা প্রকাশ পেয়েছিল

انه لما ولد صلى الله عليه وسلم قيل من يكفله هذه الدرة اليتيمة التى لايوجد لمثلها قيمة- فقالت الطيور نحن نكفله ونغتتم خدمته العظيمة- وقال الوحوش نحن اولى بذلك ننال شرفه وتعظيمه- فنادى لسان القدرة ان ياجميع المخلوقات ان الله تعالى قدكتب فى سايق حكمته القدسية ان نبيه الكريم يكون رضيعالحليمة الحليمة- قالت حليمة فيما رواه ابن اسحاق وابن راهويه وابويعلى والطبرانى والبيهقى وابونعيم-

রাসূলে পাক (ﷺ) ভূমিষ্ট হওয়ার পর বলা হলো কে আছ যেমন রত্ম মোহাম্মাদের প্রতিপালন করবে? যে শিশুর মত মহা মুল্যবান মহারত্ম দৃষ্টান্তহীন। কথা শ্রবনে সমস্ত পশু পাখিরা বলে উঠল, আমরাই এ এতীম শিশুর প্রতি পালনের দায়ীত্বভার গ্রহন করবো এবং তাঁর বিশাল সেবায় আমরা নিজেদেরকে গণীমত মনে করবো।

এতদশ্রবনে সমস্ত হিংস্র প্রাণীরা বলে উঠলো আমরাই তাঁর প্রতিপালন ও সেবাযত্ম করার অত্যধিক হকদার। তাঁর একচ্ছ সম্মান ও মর্যাদার যথার্ত মুল্যায়ন করত: নিজেদেরকে সৌভাগ্যবান মনে করবো। পরিশেষে কুদরতী ঘোষনা পত্র আসলো এভাবে যে হে সৃষ্টিকুল: জেনে রাখ যে, মহান আল্লাহ পাক স্বীয় সিদ্ধান্তে শিশু মোহাম্মদের লালন পালন ও দুগ্ধপান করানোর গুরুদায়ীত্ব কেবল হালীমার ভাগ্যেই নির্ধারন করে রেখেছেন।

এবারে ইবনে ইসহাক, ইবনে রাহভীয়া, আবু ইয়ালা, বায়হাকী, তাবারানী ও আবু নাঈমের বর্ণনা মতে হালীমার ভাষ্যে বণর্না দেয়া হলো।

قدمت مكة فى نسوة من بنى سعد بن بكر يلتمس الرضعاء فى سنة شهباء- فقدمت على اتان لى ومعى صبى لنا وشارف لنا- أى ناقة مسنة مهرمه -والله ما تبضى بقطرة وما ننام ليلناذالك اجمع مع صبينا ذلك- لايحيد فى ثديى ما يغنيه ولا فى شارف ما يفذيه- فقد منامكة فالله ما علمت منا امرأة الا وقد عرض عليها رسول الله صلى الله عليه وسلم- فتاباه اذا قيل يتيم- فو الله ما بتى من صواحى امرأة الا اخذت رضيعا غيرى- فلما لم اجد غيره قلت لزوجى والله انى لآكره ان ارجع من بين صواحى ليس معى رضيع لانطلقن الى ذالك اليتيم فلآ خذنه فذهبت فاذا هومدرج فى ثوب صوف ابيض من اللبن يفوح منه المسك وتحته حرية خضراء رافد على قفاه يغط- فاشفقت ان اوقظه من نومه لحسنه وجمالة قدلوت منه رويدآ فوضعت يدى على صدره فتبسم صاحكا- وفتح عيليه ينظر الى- فخرج من عينيه نود حتى دخل خلال السماء وانا انظر فقبلته بين عينيه واعطيته ثدى الآيمن فاقبل عليه بما شاء من لبن- فحو لته الى الآيسر فأنى وكانت تلك حاله بعد-

আমি দুর্ভিক্ষের বছর সাদ বিন বকর গোত্রের কয়েকজন মহিলার সঙ্গে মক্কায় পৌছলাম। আমার গাধায় সওয়ার হয়ে আসলাম। এসময় আমার সঙ্গে আমার স্বামী ও একটি শিশু ছিল। আর ছিল একটি বৃদ্ধা উষ্ট্রী। সেটি এক কাতরা দুধ দিতনা। শিশুকে সাথে নিয়ে সে রাতে আমার মোটেই ঘুম হলনা। যেহেতু আমার বুকে সন্তান পান করার মতো একফোটা দুধ ও ছিলনা, উষ্ট্রীও দুধ দিচ্ছিলনা যে, সে তা থেকে দুধ পান করবে।

আল্লাহর কসম মক্কায় পৌছার পর আমার সঙ্গীয় সকল মহিলাকেই সে মহান শিশুটি দুধ পান করানোর জন্য প্রস্তাব পেশ করা হয় কিন্তু তিনি যে, এক এতীম সন্তান, তা শ্রবনে আর কেউই তাঁকে বরন করে নিতে রাজী হলনা। আমি ব্যতিত আর সঙ্গীয় সকল মহিলাই দুধপান করানোর জন্য কোন না কোন শিশু পেয়ে গেল। কিন্তু আমার বেলায় কেবল শিশু মোহাম্মদ ব্যতীত আর কেউই বাকী রইলনা। সে ব্যতীত অন্য কোন শিশু না পাওয়াতে আমি আমার স্বামীকে বললাম, আল্লাহর কসম, আমি কোন শিশু ছাড়া শুন্যহাতে বাড়ীতে ফিরে যেতে পছন্দ করিনা বিধায় এ শিশুকেই আমি নিয়ে নিব।

আল্লাহর শুকরিয়া যে, শিশুকে বাড়ীতে নেয়ার পর দেখি বাচ্ছা মোহাম্মদ (ﷺ) দুধের চেয়ে ও শুভ্র সচ্ছ একটি কাপড়ের ভেতর আচ্ছাদিত তাঁর থেকে যে মেশকের সুঘ্রান নির্গত হচ্ছে এবং তাঁর নীচে সবুজ রেশমী কাপড়, যা কোমর বেষ্টনী দিয়ে আছে। চঁাদের ন্যায় সুন্দর ও চাকচিক্যতার দ্বরুন আমার মনে তাঁকে জাগিয়ে তুলার প্রবল আগ্রহ জন্মিল। ফলে আমি তাঁর নিকটে যেয়ে স্বীয় হস্ত তাঁর বুকে ধারন করার সঙ্গে সঙ্গেই বাচ্ছা মোহাম্মদ মুচকি হাসতে শুরু করেন এবং তাঁর উভয় চোখ খুলে আমার দিকে অপলক দৃষ্টিতে চেয়ে থাকেন। দৃষ্টির প্রাক্ষালে দেখতে পাই যে তাঁর দুচোখের মধ্যখান থেকে একটি সুউজ্জল নূর বেরিয়ে মধ্যাকাশ পর্যন্ত যেয়ে স্থীর হয়। এবং যারপর নেই নির্বাক দৃষ্টিতে বিষয়টি অবলোকন করি এবং মহববতের আতিশয্যে তাঁর দু'চোখের মধ্যখানে চুম্বন দেই, আমি দুধ পানের জন্য আমার ডান স্তনটি তাঁকে দান করি ফলে বাচ্ছার দুধপানের জন্য যত ইচ্ছা দুধ বেরিয়ে আসে। এরপর বাম স্থনটি তাঁর দিকে বাড়িয়ে দিলে তিনি তা ভক্ষন থেকে বিরত থাকেন।

قال اهل العلم اعلمه الله تعالى ان له شريك- فالهمه العدل- فقالت فر وى وروى اخوه- ثم اخذته فيما هو الى ان جبئت به رحلى وقام صاحبى الى ستارفنا تلك- فاذا انها لحافل فحلب ماشرب وشربت حتى روينا وبتنا جنحير ليلة- فقال صاحبى يا حليمة والله إنى الآر اك قه اخذت نمة مباركة الم تر المترى ما بتنابه الليلة من الخير والبركة حين اخذناه فلم يزل الله يزيد نا خيرا-

সমস্ত আহলে ইলমগনের মতে মহান আল্লাহ পাক এ সময় শিশু মোহাম্মদ (ﷺ)কে একথাই জানিয়ে দিয়েছিলেন যে, দুধপানের ক্ষেত্রে তাঁর আরেক শরীক ভাই আছে বিধায় ইলহামের মাধ্যমে তাঁকে ঐ ন্যায় নিষ্টতা শিক্ষাদেন। হালিমা বলেন: এরপর থেকে শিশু ও তাঁর ভাই উভয়ে তৃপ্ত সহকারে দুধপান করে। এরপর আমার স্বামী বৃদ্ধা উষ্ট্রীর পাশের্ব যেয়ে দুধে উলান পরিপূর্ণ দেখতে পান। ফলে নিজে ও দুধ পান করেন এবং আমি ও তৃপ্ত সহ কারে দুধপান করি। আমরা সকলেই তৃপ্ত হয়ে সুনিদ্রায় মধ্যে রাত্রি কাটালাম। আমার প্রিয় স্বামী আনন্দে গদগদ চিত্বে আমাকে বলতে লাগলেন, হালিমা গো, তোমার ভাগ্য অতি সুপ্রসন্ন যে, আজ তুমি এক বরকতময় শিশু গ্রহন করেছ।

তুমি দেখ, আজিকার রাত্রি কতইনা বরকত ও কল্যানে অতিবাহিত হয়েছে। হালিমা বলেন, বাচ্ছাকে বাড়ীতে নিয়ে আসারপর থেকে মহান আল্লাহ পাক আমাদের ঘরে অব্যাহত ধারায় বরকত বৃদ্ধি করতে থাকেন।

قالت حليمة فودعت الناس بعضهم بعضا- وودعت انا ام النبيى صلى الله عليه وسلم- ثم ركبت أتا نى واخذت محمد اصلى الله عليه وسمل بين يدى- قالت فنظرت الى الاتان وقد سبحدت نحو الكعبة تلات مجدات ورفعت رأسهى الى الماء- ثم متت حتى سبقت دواب الناس الذين كانوا معى وصار الناس يتعجبون منى ويقلى لى الناء- وهى ودائى يابنت ابى ذويب اهذه اتانك التى كنت عليها- ونت جائية معنا تخفضك طورا- وترفعك اخرى- فاقول تاالله انها هى فيتعجبن منها ويقلت ان لها عظيما- قالت فكنت اممع اتانى تنطق وتقول ان لى سأنا ثم مأنا - بعتنى الله بعد موتى ورد سمنى بعد هزلى-

হযরত হালিমা (رضي الله عنه ) বলেন: সকল লোক তাদের বাহন নিয়ে চলে গেল এবং আমিও মহানবী (ﷺ) এর মায়ের কাছে স্বীয় উষ্টির উপর সওয়ার হয়ে যাই। এবং মোহাম্মাদকে কোলে টেনে নেই। হালিমা বলেন: যাওয়ার পথে আমার উষ্ট্রির দিকে থাকিয়ে দেখি সে কাবামুখী হয়ে তিনটি সেজদা করল, এরপর স্বীয় মস্তক আকাশ পানে উত্তলন করে অত:পর হাটতে শুরু করল। এক পর্যায়ে সে আমার সঙ্গীয় লোকদের সকল বাহনের অগ্রে চলে গেল। ফলে সকলে আমার এ অবস্থা দৃষ্টে যার পর নেই হতবাক হয়ে গেল। সকল মহিলার বলতে লাগল, হে বিনতে যুআইব! এটি কি ঐ গাধী, যেটিতে তুমি সওয়ার হয়ে এসেছিলে? অথচ তুমি তো তোমার ক্ষীণকার উষ্ট্রি নিয়ে আমাদের সঙ্গে এসেছিলে। সে একবার নুয়ে পড়ে, অন্যবার তোমাকে নিয়ে চলতো। আমি (হালিমা) বলাম, আল্লাহর, কসম হে মহিলারা! এটাতো ঐ বাহন, যার উপর সওয়ার হয়ে তোমাদের সঙ্গে গিয়েছিলাম। এতদশ্রবনে তারা অত্যার্শ্চয হয়ে বলতে লাগল, নিশ্চয়ই এ গর্ধভীর বিশাল শান রয়েছে। হালিমা বলেন, এরপর আমি অকস্মাত আমার গাধীর জবান থেকে বলতে শুনেছিলাম, সে বলতে লাগল, হে হালিমা! নিশ্চয়ই আমার একের পর এক শান রয়েছে যে, মহান আল্লাহ পাক আমাকে আমার মৃত্যুরপর পুন:রায় জীবিত করবেন এবং পুন:রায় মোটা তাজা করে ক্ষীনকার থেকে ফিরিয়ে দিবেন। সে আরও উদ্দেশ্য করে যা বলেছিল, তা নিম্নরূপ:

ويحكن يا نساء بنى سعد انكن لفى غفلة وهل تدرين من على ظهرى- خير النبيين وسيد المرسلين وافضل الاولين والاخرين وحبيب رب العالمين-

হে বনু সা’দ সম্প্রদায়! তোমাদের জন্য আফসোস করি এজন্য যে, তোমরা তো বিশাল অমনোযোগীতায় নিমগ্ন আছ। তোমরা কি জান যে, কে আমার পৃষ্টে অবস্থান করছেন? তিনি হলেন নবীকুল শ্রেষ্ট, সৃষ্টির প্রথম হতে শেষ অবধি তথা সকলের মধ্যকার শ্রেষ্ট মহান ব্যক্তিত্ব, যিনি সমগ্র বিশ্বপ্রতিপালকের প্রিয়ারা হাবীব।

ঐতিহাসিক ইবনে ইসহাক ও অন্যান্যদের মতে হযরত হালিমা (رضي الله عنه ) বলেন: অবশেষে আমরা বনু সা’দ গোত্রের জনপদে এসে পৌছলাম। আল্লাহর জমীনে বনু সা’দ গোত্রের জনপদ থেকে অধিক খড়া পীড়িত কোন স্থান আছে বলে আমার জানা ছিলনা। আমার ছাগলটি ভরাপেটে বাড়ীতে ফিরতো, আমরা আমাদের প্রয়োজন মত দুধ দোহন করতাম। অথচ নিজেদের আশে-পাশে এমন কেউ ছিলনা যে, যার ছাগল এক কাতরা দুধ দিত, বরং সেক্ষেত্রে তাদের ছাগলগুলো খালি পেটে বাড়ীতে ফিরতো। এমনকি তারা তাদের রাখাল বালকদেরকে বলতো, তোমাদের সর্বনাশ হউক, দেখতো বিনতে আবী যুআইবের ছাগলগুলো কেমন মোটা তাজা হচ্ছে, তাই ওদের সঙ্গে তোমরা ও মাঠে ছাগল চড়াবে।

ওরা আমার ছাগলের সাথে সাথে তাদের ছাগলগুলো চরাত কিন্তু তাদের ছাগলগুলো খালি পেটে বাড়ীতে ফিরে আসতো, তাতে এক ক্বাতরা দুধ ও পাওয়া যেতনা, অথচ আমার ছাগলগুলি ভরা পেটে বাড়ীতে ফিরতো, আমরা প্রয়োজন মতো দুধ দোহন করতাম। বাচ্ছা মোহাম্মদ ﷺকে ঘরে নেয়ার পর হতে অধ্যাবদি হালিমার সম্মান ও মর্যাদা বৃদ্ধি পেতে লাগল এমনকি বাচ্ছার খাতিরে নিজ স্তনের দুধ ও বৃদ্ধি পেতে লাগল। যেমন: এ প্রসঙ্গে হালিমার কবিতাটি উল্লেখ যোগ্য।

قد بلغت بالهاشهى حليمة * مقاما علا فى ذروة العز والمجد وزادت مواقيها واخصب ربعها وقد عم هذا السعد كل بنى سعد-

অর্থাৎ: বনী হাশিমের (নবজাতকের) উসিলায় তিনি (হাশিম) সম্মান ও মর্যাদার উচ্ছাসনে পৌছে যান। এর উসিলায় স্বীয় বাহনের দুধ বৃদ্ধি এমনকি নিজ বাসস্থান ও উর্বরাযুক্ত হয়। আর এ মর্যাদা প্রত্যেক বনী সা’দ পর্যন্ত ব্যাপকতা লাভ করে।

ইমাম আবু আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ বিন মুআল্লা আল আযাদী প্রনীত কিতাবুত তারকীছ গ্রন্থে এসেছে যে, মা হালিমার নিন্মোক্ত কবিতাংশটি রাসূল ﷺকে বারং বার পুলকিয়ে তুলতো।

يارب اذا أعطيته فا بقه * واعله الى اعلا وأرقة وادحقى اباطيل العدى بحقه* وزدت انا بحقه بحقه بحقه

অর্থাৎ: হে প্রতিপালক! যখন তুমি তাঁকে দান করেছ, তখন তাঁর স্থায়ীত্ব দান কর। তাঁকে সর্বোচ্ছ আসনে আসীন কর, তাঁর উন্নতী দান কর। তাঁর উসিলায় সকল ভ্রান্ত ও চরম শক্রুদেরকে পরাস্থ কর। মাওলা হে! তুমি তাঁর উছিলায়, আমার সকল সম্মান মর্যাদা বৃদ্ধি করে দাও। ইমাম বায়হাক্বী, খতীব বাগদাদী ও ইবনে আসাকীর হযরত আব্বাস رضي الله عنه এর একখানা হাদীস বর্ণনা করেন যে, হযরত আব্বাস বিন আব্দুল মুত্তালিব رضي الله عنه বলেন: আমি আল্লাহর রাসূল ﷺকে সম্বোধন করে বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! আপনার নবুওয়তের প্রতীক (নিদর্শন) দেখে আমাকে আপনার ধর্মে দীক্ষিত হবার প্রবল আকাংক্ষা জাগালো। আমি আপনাকে মায়ের কোলে দুলনাবস্থায় এমনভাবে দেখতে পেলাম যে, আপনার আঙ্গুলীর ইশারার সাথে পুণির্মার চন্দ্র ও হেলা ধুলা করছে। এতদশ্রবনে রাসূলুল্লাহ ﷺ বললেনঃ

انى كنت احدثه ويحد ثنى ويلهينى عن البكاء

অর্থাৎ: চাচাজান, আমি তার (চন্দ্রের) সঙ্গে কথা বলতাম এবং সেও আমার সঙ্গে কথা বলতো। এবং আমাকে ক্রন্দনে শান্তনা দিত। তিনি আরও বলেন واسمع وجبته يسجد تحت অর্থাৎ: এমনকি সে যখন আরশের নীচে মহান খোদার কুদরতী কদমে সেজদারত অবস্থায় ক্রন্দন করত, সে আওয়াজও আমি শুনন্তে পেতাম। ফাতহুল বারী গ্রন্থে সীরাতে ওয়াকেদী সুত্রে একখানা হাদীস বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ ﷺ জন্মের প্রথম থেকে কথা বলতে আরম্ব করেন।

ইবনে সাবা এর খাছায়েছ গ্রন্থে বর্ণিত: ফেরেস্তাকুলের সঞ্চালনের সাথে হুযূর পাকের ধুলনাবস্থায় স্বীয় হাত পা আন্দোলিত হতো। ইমাম বায়হাক্বী ও ইবনে আসাকীর হযরত ইবনে আব্বাস رضي الله عنه সুত্রে বর্ণনা করেন ইবনে আব্বাস رضي الله عنه বলেন: হযরত হালিমাতুস-সাদীয়া رضي الله عنها বলেন: নবীজী ﷺকে দুধ ছাড়াবার পর সর্বপ্রথম তাঁর মুখে এ পবিত্র বাণী ফুটে উঠেছিল-

الله اكبر كيرا والحمد الله كثيرا وسبحان الله بكرة واصيلا

অর্থাৎ- আল্লাহ মহান সর্বমহান। আল্লাহ পাকের সীমাহীন প্রশংসা। সকাল বিকাল সর্বদা আমরা আল্লাহ পাকের পবিত্রতা বর্ণনা করে থাকি। বালক মোহাম্মদ ﷺ যখন ধীরে ধীরে বড় হতে লাগলেন তখন ছেলেদের সঙ্গে খেলার মাঠে যেতেন, লোকেরা খেলতো কিন্তু তিনি তা হতে সম্পুর্ণ বিরত থাকতেন। ঐতিহাসিক ইবনে সা’দ আবু নাঈম ও ইবনে আসাকীর হযরত ইবনে আব্বাস رضي الله عنه এর সুত্রে বর্ণনা করেন যে, হযরত হালিমা সাদীয়া رضي الله عنها বালক মোহাম্মদ ﷺকে কোথায় ও দুরে যেতে দিতেন না। একদিন বিবি হালিমার অজ্ঞাতে হযরত তাঁর দুধ ভগ্নী শায়মার সঙ্গে দ্বিপ্রহরের সময় পশু পালের চারন ক্ষেত্রে চলে গেলেন। বিবি হালিমা তাঁর সন্ধানে বের হলেন এবং শায়মার সাথে তাঁকে দেখতে পেয়ে বিবি হালিমা সায়মার উপর খুবই রাগান্বিত হলেন এবং বললেন, তুমি এ প্রখর রৌদ্রে এবং উত্তাপের সময়ে কেন তাঁকে বাহিরে নিয়ে এসেছ? শায়মা বলল, আমার দুধ ভাই উত্তাপ ভোগ করেনি, বরং আমি দেখেছি একটি মেঘখন্ড সর্বদাই তাঁকে ছায়া দিয়ে চলছে। ভাই যখন চলতো, তখন মেঘখন্ড ও তাঁর সঙ্গে চলতো, সে যখন থেমে পড়তো, তখন ঐ মেঘখন্ড ও থেমে যেতো।

হযরত হালিম رضي الله عنها বলেন: অতঃপর আমরা তাঁকে তাঁর মা জননীর কাছে নিয়ে আসলাম। তাঁর মধ্যে সীমাহীন কল্যান ও বরকত দৃষ্টে আমরা তাকেঁ আমাদের মধ্যে রাখতে প্রবল আগ্রহী ছিলাম। তাই আমরা তারঁ মা জননীকে নিবেদন করলাম যে, আপনি আপনার কোলের এ শিশুকে আরও এক বছরের জন্য আমাদের প্রতি পালনে ফিরিয়ে দিন। আমরা মক্কায় বর্তমানে তাঁর অসুখ বিসুখের প্রবল আশংকা করছি। অতঃপর খুবই পীড়া পীড়ি করলাম। অবশেষে তিনি হ্যাঁ বলে আমাদের কাছে ফিরিয়ে দিলেন।

মা হালিমার ভাষ্য: বাচ্ছা মোহাম্মাদ এর প্রতি পালনের ২/৩ মাস অবস্থানের পর একবার তিনি আমাদের বাড়ীর পীছনে গবাদিপশু বাঁধার জায়গায় তাঁর দুধ ভাইদের সঙ্গে খেলা ধুলা করতে চলে গেলেন। অতক্ষণে দুধ ভাইয়ের ভাষায় বর্ণনা করা হলেঃ-

فقال خاك اخى القرشى قد جاءه رجلان عليهما ثياب بيضى فاضجعاه وسقا بطنه فخرجت انا وابوه نثتد نحوه فجده قائما منتقعا لونه فاعتنقه اجوه- وقال يا بنى ما ئأنك؟

কিছুক্ষণ পর তাঁর দুধ ভাই ফিরে এসে বলল, আমার এ কোরেশী ভাইয়ের কাছে সাদা পোষাক পরিহিত দুজন লোক এসে তাঁকে মাটিতে শুইয়ে তাঁর পেট চিরে ফেলল। একথা শ্রবনে আমি ও তাঁর পিতা (হালিমার স্বামী) দৌড়ে আসলাম। দেখলাম যে, তিনি দঁাড়িয়ে আছেন, কিন্ত তাঁর মোবারক চন্দ্রদ্বীপ্ত চেহারা বিবর্ণ। এ অবস্থাদৃষ্টে স্বীয় দুধ পিতা তাঁকে জড়িয়ে ধরলেন এবং বললেন: বাছা! তোমার কি হয়েছে? জাবাবে তিনি যা বললেন, তা নিন্মোক্তি হলো।

قال جاءنى رجلان عليهما ثياب بيض فأضجعانى فشقابطنى ثم التخرج منه شيأفطرحاه- ثم رداه كما كان-

অর্থ:- তিনি বললেন- আমার নিকট দুজন সাদা পোষাক পরিহিত ব্যক্তি এসে আমাকে মাটিতে শুইয়ে পর আমার পেট চিরে সেখান থেকে কিছু বের করে ফেলে দেয়। অতঃপর পেট পূর্বের ন্যায় যেভাবে ছিল হুবহু করে দেয়।

তাঁর দুধ মাতা হালিমা বলেন অতঃপর আমরা সেখান থেকে মোহাম্মাদকে নিয়ে আসলাম।

অতঃপর তাঁর দুধ পিতা আমাকে সম্বোধন করে বললেন: হালিমা আমার প্রবল আশংকা হয় যে, না জানি আমার এ ছেলের উপর কোন কিছুর আছর পড়ে যায়। কাজেই এ মুহুর্তে আমাদের জন্য উচিত হবে কোন অপ্রতিকর ঘটনা ঘটার পূর্বেই তাঁকে তাঁর মায়ের কোলে সমঝিয়ে দেই।

হালিমা বলেন: সে মতে আমরা তাঁকে নিয়ে স্বীয় মাতার কাছে গেলাম। আমাদেরকে দেখে তাঁর মাতা আমেনা যা বললেন: তা নিন্মরূপ:

فقالت ما ردكمابه فقد كنتما حريصين عليه؟

অর্থাৎ- মা আমেনা বললেন: ব্যাপারটি কি, তোমরা কি তাঁর জন্যে প্রবল আকাংখি ছিলেনা? তখন আমরা বললাম, আমরাতো তাঁর প্রাণ নাশের অথবা বড় কোন দুর্ঘটনার আশংকা করছি। তিনি (আমেনা) বললেন:

ماذاك بكما فأصدقانى جشأ نكما فلم تدعا حتى اخبرنا خبره قالت أخشيتما عليه الشيطان- فلا والله ماللشيطان عليه حبيل وانه لكائن لابنى هذا اشأن فدعاه عنكما هذا-

অর্থ:- মা আমেনা رضي الله عنها বললেন: না, এটা কখনো হতে পারেনা। সত্যকথা বল প্রকৃত ঘটনা কি? তাঁর পীড়া পীড়িতে আমরা সমস্ত ঘটনা জানিয়ে দিলাম। আমেনা বললেন: তোমরা তাঁর উপর শয়তানী আক্রমনের আশংকা করছো? তবে জেনে রাখ যে, আল্লহর কসম খেয়ে বলছি, শয়তান তাঁর বিরোদ্ধে কোন পথ পেতে পারেনা। যেহেতু আমার স্নেহাস্পদ দুলালী মোহাম্মদের শানই হবে ভিন্ন। অতএব, তোমরা তাঁকে রেখে যাও।

হুযূর (ﷺ) বক্ষ বির্দীন হওয়ার ঘটনা
____________________
হুযূর (ﷺ) বক্ষ বির্দীন হওয়ার ঘটনা

প্রকাশ থাকে যে, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর বক্ষবির্দীন হয়েছিল মোট চার বার। তন্মধ্যে (১) তাঁর বয়স যখন চার বছর, কারও মতে, পাচ বছর, কারও মতে ছয় বছর, কারও মতে সাত বছর, কার মতে নয় বছর, কারও মতে ১২ বছর একমাস দশ দিন। (২) হেরা পর্বতের গুহায় জিব্রাঈল عليه السلام কর্তৃক তাঁর নিকটে ওহী নিয়ে আসার প্রাক্ষালে। (৩) মেরাজ রজনীতে। (৪) কারও মতে দুধ মাতা হালিমার গৃহে মাঠে ছাগল চড়ানোর প্রাক্ষালে।

মাতৃ বিয়োগ ও মাতুলালয়ে প্রকাশিত মোজেজা
____________________
মাতৃ বিয়োগ ও মাতুলালয়ে প্রকাশিত মোজেজা

হুযূরে পাকের মাতা আমেনা (رضي الله عنه)ا মক্কা ও মদীনার মধ্যবর্তী স্থান “আবওয়া” নামক স্থানে ইন্তেকাল করেন। কারও মতে শিআবে আবী রবে, তবে কামুস গ্রন্থের বর্ণনানুযায়ী রাসূলুল্লাহ (ﷺ) মা জননী মক্কার নাবেগা গৃহে ইন্তেকাল করেন এবং তথায়ই তাঁর সমাধিস্থ স্থান বিদ্যমান।

ঐতিহাসিক ইবনে সাদ ইবনে আব্বাস (رضي الله عنه) এর সুত্রে ইমাম যুহরী ও আছেম ইবনে আমর হযরত ইবনে কাতাদাহ হতে বর্ণনা করেন যে, মহানবী (ﷺ) এর বয়স যখন ছয় বছর, তখন তাঁর মা জননী তাঁকে নিয়ে মদীনায় বনি আদী ইবনে নাজ্জারে চলে যান। তাঁর সঙ্গে ছিলেন দুধমাতা ও পরিচারিকা উম্মে আয়মন (رضي الله عنه)ا। আমেনা শিশুকে নিয়ে নাবেগার গৃহে পৌছেন এবং সেখানে দীর্ঘ একমাস অবস্থান করেন। রাসূলে পাক (ﷺ) এ সময়কার বহু ঘটনাবলী স্মরণ রেখেছিলেন। তিনি এ গৃহের দিকে তাকিয়ে বলতেনঃ

فقال ههنا نزلت بى امى واحسنت القوم فى بئر بنى عدى بن النجار وكان قومه من اليهود يختلفون ينظرون إلى-

অর্থাৎ- আমার মা জননী আমাকে এ স্থানে নিয়ে এসেছিলেন। আমি বনী আদী ইবনে নাজ্জার গোত্রের ক্ষদ্র জলাশয়টিতে সাতাঁর কাটতাম। ইহুদীরা তখন আমার দিকে গভীর দৃষ্টিতে থাকাতো।

হযরত উম্মে আয়মন বলেনঃ

فسمعت احدهم يقول هونبى هذه الامة وهذه دارهجرته فو عيت ذالك كله من كلامهم ثم رجعت به امه الى مكة فلما كانت با الابواء تو فيت-

অর্থ:- আমি এক ইহুদীকে তাঁর ব্যাপারে বলতে শুনলাম সে বলল, ইনি এ উম্মতের নবী এবং এটা তাঁর হিজরত ভূমি।

আমি একথাটি স্মৃতির আয়নায় সংরক্ষিত করে রাখি। অতঃপর স্বীয় মাতা আমেনা (رضي الله عنه) তাঁকে মক্কায় নিয়ে আসেন। পথিমধ্যে আবওয়া নামক স্থানে তিনি ইন্তেকাল করেন।

হাফিজে হাদীস ইমাম জালালুদ্দিন সূয়ুতী (رضي الله عنه) এর মতে রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর মাতা-পিতা নিঃসন্দেহে তথা জান্নাতবাসী। তবে জমহুর উলামায়ে কেরামগনের মধ্যে ইমাম মোল্লা আলী ক্বারী (رضي الله عنه) প্রাথমিক যুগে এর বিরোধিতা করলে ও পরবর্তীতে ইমাম আবু হানিফা (رضي الله عنه) এর মাসআলার উপর একমত হয়ে অতীত ভূলের উপর অনুশোচনা করে জান্নাতী হওয়ার স্বপক্ষে দলীল সাব্যস্ত করেন।

ইমাম সূয়ুতীর মতে আমি হুযূরে পাকের মাতা-পিতা জান্নাতী হওয়া প্রসঙ্গে স্বতন্ত্র একটি রেসালাহ প্রণয়ন করেছি।

হযরতের মাতৃ বিয়োগের পরে স্বীয় দুধ মাতা হযরত উম্মে আয়মন (رضي الله عنه) সার্বীক পরিচারিকার কাজে আত্ম নিয়োগ করেন। এজন্য রাসূলুল্লাহ (ﷺ) তাঁর মর্যাদা দিতে যেয়ে বললেন: انت امى بعد امى অর্থাৎ- আপনি আমার মায়ের অবর্তমানে আরেক (দ্বিতীয়া জননী)। নবী (ﷺ) এর রক্ষনাবেক্ষণকারী দাদা আব্দুল মুত্তালিব (رضي الله عنه) এর ইন্তেকালের সময় রাসূলে পাকের বয়স ছিল ৮ বছর, কারও মতে ৯ বছর, কারও মতে ১০ বছর, কারও মতে ৬ বছর, এবং দাদার বয়স ছিল ১১০ বছর, কারও মতে ১৪০ বছর। তাঁর ইন্তেকাল পরবর্তীতে স্বীয় চাচা খাজা আবু তালেব তাঁর লালন পালনের গুরু দায়ীত্বভার গ্রহন করেন। আবু তালেবের অপর নাম আব্দে মনাফ ছিল। খাজা আব্দুল মুত্তালিব (رضي الله عنه) ইন্তেকাল পূর্ব মুহুর্তে আবু তালেবকে এ অছিয়ত করে যান যে, তিনি যেন তাঁর নাতি মোহাম্মাদের দেখা শুনা করেন।

উল্লেখ্য যে, খাজা আব্দুল্লাহ (رضي الله عنه) ছিলেন খাজা আবু তালেবের একই মায়ের গর্ভজাত ভ্রাতা। নবীজী (ﷺ) দীর্ঘ দিন খাজা আবু তালেবের ছত্রচ্ছায়ায় ছিলেন। হযরতের নবুওয়তী দায়ীত্ব পাওয়ার সাত বছর পর আবু তালেব মৃত্যু বরণ করেন।

আবু তালেবের সঙ্গে সিরিয়া সফর
____________________
আবু তালেবের সঙ্গে সিরিয়া সফর

বুহায়রা পাদ্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎঃ- রাসূলে পাক (ﷺ) এর বয়স যখন ১২ বছর, তখন চাচা, আবু তালেবের সঙ্গে সিরিয়ায় বের হন। এক পর্যায়ে কাফেলা সুদুর বসরায় যেয়ে যাত্রা বিরতী করল। নিকটবতর্ী একটি গিজার্য় বুহাইরা না্িল একজন পাদ্রি (যিনি জিরজীস নামে পরিচিত) বসবাস করত। সে খৃষ্টানদের মধ্যকার এক বড় পন্ডিত ছিল। কাফেলাটি তার পার্শে দিয়ে যাত্রা কালে সে রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর বিভিন্ন বৈশিষ্টাবলী দেখে তাঁকে চিনে ফেলল।ফলে সে তাঁর হস্ত ধারণ করে বলতে লাগল।

 هذا سيد العالمين هذا يبعثه الله رحمة للعالمين

অর্থ:- ইনি সাইয়্যিদুল আলমীন, ইনি সমগ্র জাহানের জন্য আল্লাহর প্রেরীত মহান রহমত। তখন তাকে তথাকার কাফেররা বলল হে বুহায়রা! তোমাকে এ পরিচয় কে জানিয়ে দিল? এভাবে সে যা বলল, তা তাঁর ভাষ্যে বর্ণনা করা হলোঃ

فقال انكم حين اشرفتم به من العقبة فلم يبق شجر ولاحجر الاخرسا جدا ولايسجد الا لنبى- وانى أعرفه بخاتم النبوة فى السفل من غضروف كتضه مثل التقاحة وانا نجده فى كتبنا وسأل اباطالب ان يرده خوفا عليه من اليهود-

অর্থাৎ- বুহায়রা বলল, যখন তোমরা গিরিপথ দিয়ে আসছিলে, তখন যে কোন বৃক্ষ ও পাথরের নিকট দিয়ে এসেছ, সকলেই তাঁকে সেজদাহ করেছে। কেননা বৃক্ষ ও পাথর কেবল নবীদেরকেই সেজদাহ করে থাকে। আমি তাঁকে সে মোহরে নবুওয়তের সাহায্যে শনাক্ত করতে পেরেছি, যা তাঁর কাধের নারম হাড্ডির নীচে একটি আপেলের আকারে রয়েছে। তাঁর বিস্তারীত বৈশিষ্টাবলী আমি পূর্ববর্তী কিতাব গুলোতে পেয়েছি। এ মর্মে সে খাজা আবু তালেবকে সতর্ক বাণী দিল, তিনি ইহুদীরা হিংসায় তাঁকে হত্যা করতে পারে এ ভয়ে বাড়ীতে ফিরিয়ে নেন। এ সুদীর্ঘ হাদীসটি ইবনে আবু শায়খ বর্ণনা করেন। এ গ্রন্থে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) যে দিকে যেতেন, একটি বিশাল মেঘমালা এসে তাঁকে ছায়া দান করতো। যেমনঃ এ প্রসঙ্গে একজন জনৈক কবি কাব্যাকারে বলেছেনঃ

إن قال يوما ظلمتة غمامة هى فى الحقيقة تحت ظل القائل

অর্থাৎ- তাঁকে যে মেঘমালা ছায়া প্রদান করতো, তা মেঘমালা নয় বরং প্রকৃত প্রস্তাবে তা ছিল এক প্রবক্তা তথা মহান আল্লাহর কুদরতী ছায়ার অধীনে।

হুযূর (ﷺ) এর সঙ্গে আবু বকরের সিরিয়া সফর এবং বহিরা পাদ্রীর সাক্ষাৎ লাভ
____________________
হুযূর (ﷺ) এর সঙ্গে আবু বকরের সিরিয়া সফর এবং বহিরা পাদ্রীর সাক্ষাৎ লাভ

বিখ্যাত মুহাদ্দিস ইবনে মানদা ইবনে আব্বাস (رضي الله عنه) হতে জঈফ সনদে বর্ণনা করেন যে, সাইয়্যিদিনা আমীরুল মোমিনীন হযরত আবুবকর সিদ্দীক (رضي الله عنه) এর বয়স যখন ১৮ বছর এবং রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর বয়স তখন ২০ বছর, তখন উভয়ে ব্যবসার উদ্দেশ্য সুদুর সিরিয়ায় যাওয়ার সংকল্প করেন। সিরিয়ায় যেয়ে সেখানকার একটি বাজারের এক বৃক্ষের ছায়ায় অবস্থান করেন। একবার আবু বকর (رضي الله عنه) বহিরা নাুীয় এক পাদ্রীর নিকট দিয়ে যাচ্ছিলেন পথে সাক্ষাৎ ঘটলো বহিরার। তাঁকে কিছু প্রশ্ন করল।

সে তাঁকে বলল, এ বৃক্ষের ছায়ায় আশ্রয় গ্রহণকারী লোকটি কে? তিনি বললেনঃ ইনি হচ্ছেন মোহাম্মাদ বিন আব্দুল্লাহ বিন আব্দুল মুত্তালেব। তখন পাদ্রী বলল,

هذا والله نبى ما استظل تحتها بعد عيسى عليه السلام الامحمد صلى الله عليه وسلم-

অর্থাৎ- আল্লাহর কসম ইনিতো শেষ নবী, (আমাদের জানা মতে) হযরত ঈসা عليه السلام এর তীরোধানের পর এ বৃক্ষের ছায়ায় কেবল মোহাম্মদ (ﷺ)‘ই ছায়া গ্রহণ করবেন। পাদ্রীর একথা হযরত সিদ্দীকে আকবর (رضي الله عنه) এর হৃদয় পটে দৃঢ়ভাবে বদ্ধমূল হয়ে গেল। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) নবুওয়তীর গুরুদায়ীত্ব গ্রহণের পর আবু বকর (رضي الله عنه) ইসলাম গ্রহণ করেন। ইমাম জালাল উদ্দিন সূয়ুতী رحمة الله عليه স্বীয়, এসাবা, গ্রন্থে লিখেন যে, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) কর্তৃক খাজা আবু তালেবের সাথে সিরিয়া সফরের পরবর্তী দ্বিতীয় সফর ছিল এটি।

সিরিয়ায় তৃতীয় সফরে নাসতোর পাদ্রীর সাক্ষাৎ লাভ
____________________
সিরিয়ায় তৃতীয় সফরে নাসতোর পাদ্রীর সাক্ষাৎ লাভ

রাসূলে করীম (ﷺ) কর্তৃক মক্কা থেকে সুদুর সিরিয়ায় সফরটি ছিল তৃতীয় পর্যায়ের। তখন তাঁর বয়স ছিল ২৫ বছর। এসময় তাঁর সাথে সফর সঙ্গীনী হিসেবে ছিলেন হযরত খাদীজাতুল কুবরা (رضي الله عنه) এর দাসী হযরত মাইসারা (رضي الله عنه) ব্যবসার উদ্দেশ্যে সিরিয়ায় গমন করে সেখানকার বসরার একটি বাজারে যেয়ে পৌছলেন। অতপর সেখানকার একটি বৃক্ষের ছায়ায় আশ্রয় গ্রহণ করেন।এক পর্যায়ে নাস্তোর পাদ্রির সাক্ষাত ঘটলে সে বলল-

 ما نزل تحت ظل هذه الثجرة الانبى

অর্থৎ- এ বৃক্ষের ছায়ায় তো কেবল নবীরা ব্যতীত অন্য কেউ অবস্থান করেনা। অন্য বর্ণনায় এসেছে, ঈসা عليه السلام এর পরবর্তীতে কেবল মোহাম্মদ (ﷺ) অবস্থান করবেন। অন্য বর্ণনায় এসেছে যে, এ বলে নাসতোর পাদ্রী রাসূলুল্লাহ (ﷺ)কে কদমবুছিও করল, হযরতের মোহরে নবুওয়তের দৃষ্টি করতঃ চুম্বন করলেন এবং বললেনঃ আমি স্বাক্ষ্য দিচ্ছি যে, নিঃসন্দেহে আপনি আল্লাহর পয়গম্বর হবেন, যার সম্র্পকে হযরত ঈসা عليه السلام ভবিষ্যধানী করে গেছেন। পাদ্রী হযরত মাইসারকে উদ্দেশ্য করে বললেনঃ আফসোস। কতইনা সৌভাগ্যবান হতাম, যদি তাঁর আবির্ভাব কাল পেতাম। এতদভিন্ন হযরতে মাইসারা (رضي الله عنه) এ সফরের মধ্যে সবর্দাই লক্ষ্য করেছেন যে, প্রখর রৌদ্রের মধ্যে ও চলাকালে দুজন ফেরেস্তা হযরতের মাথার উপর ছায়া প্রদান করতো। এমনকি রাসূলুল্লাহ (ﷺ) যখন এসুদীর্ঘ সফর হতে ফিরে আসলেন, তখন দুপুর বেলা মক্কা নগরীতে পৌছলেন। ঐ সময় বিবি খাদিজা (رضي الله عنه) স্বীয় বাস ভবনের দ্বিতলের বারান্দা হতে তাঁর আগমনের অবস্থা উপলদ্ধি করতে ছিলেন।

যখন মাইসারা বিবি খাদিজার ঘরে উপস্থিত হলেন, তখন তাঁর কাছে সংঘটিত বর্ণনা দিলেন। মাইসারা বললেনঃ আমিতো আগাগোড়া সম্পুর্ণ সফরেই এ অবস্থা বিরাজমান দেখেছি। এ বলে পাদ্রীর সমস্ত ঘটনা খুলে বললেন।

খাদিজা (رضي الله عنه)ا এর বিবাহ
____________________
খাদিজা (رضي الله عنه)ا এর বিবাহ

আবু নাইমের বর্ণনায় এসেছে, এ ঘটনার দু”মাস ২৫ দিন পর পরই হযরত খাদিজা (رضي الله عنه)ا হুযূর পাকের সঙ্গে প্রনয় সুত্রে আবদ্ধ হন। কারও মতে এ সময় রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর বয়স ছিল ২১ বছর, কার ও মতে ৩০ বছর (৫৯১/৬০০খৃঃ)। জাহেলী যুগে বিবি খাদীজা (رضي الله عنه) তাহেরা নামে পরিচিত ছিলেন। যেহেতু এ মহিয়সী মহিলা পবিত্র জীবন যাপনে অতুলনীয় ইতিহাস প্রতিষ্টা করেছিলেন। অন্তরের শুচিতা শুভ্রতায় এবং চরিত্রের পবিত্রতায় তিনি এতই সুনাম অর্জন করেছিলেন যে, লোকেরা তাঁকে এখন থেকে আর খাদীজা না বলে ‘তাহেরা’ (সতী সাধ্বী পবিত্রা) বলে ডাকতো। (যোরকানী-১) প্রথমে তিনি আবু হালাহ বিন যারাদাহ তামীমী এর সাথে পরিনয় সুত্রে আবদ্ধ হন এবং সে স্বামীর ঔরসে হিন্দু ও হালাহ নামে দুসন্তান জন্ম গ্রহণ করে। প্রথম স্বামীর মৃত্যুর পর আতীক বিন আয়েজ এর সঙ্গে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন এবং তার ঔরসে পরবর্তীতে হিন্দা, নামে আরেক কন্যা সন্তান জন্ম গ্রহণ করে। দ্বিতীয় স্বামী ও মৃত্যুবরণ করার পর হযরত খাদীজাতুল কুবরা (رضي الله عنه)ا নবীজী (ﷺ) এর গুন গরিমা এবং তাঁর অসাধারন দীপ্ত ভবিষ্যতের কিরন মালায় সৃষ্ট আকর্ষনের দুরুনই ঐ অবেলায় তাঁর জীবনতরী এক ভিন্ন স্রোতে ভাসাতে উদ্যতই নন বরং উদগ্রীব হয়ে উঠেন।

সেমতে খাদীজা (رضي الله عنه)ا রাসূলে পাকের কাছে দ্বিগুণ সাহসে বিবাহের স্পষ্ট প্রস্তাব পাঠালেন। খাদীজা (رضي الله عنه)ا এর স্পষ্ট প্রস্তাব পেয়ে তিনি ও স্বীয় মুরব্বী চাচাগনের নিকট তা পাঠিয়ে দিলেন। সকলেই আনন্দের সাথে সম্মত হলেন এবং বিবাহের দিন ধার্য্য করা হল। নির্ধারিত তারিখে হযরতের চাচা আবু তালেব, হামযা, আবু বকরসহ আরও কুরাইশ বংশের গন্যমান্য ব্যক্তিবর্গ বর যাত্রায় যোগদান করলেন। বিবাহ মজলিসে খাজা আবু তালেব হযরতের পক্ষে ভাষন বা নিন্মের খোতবা পরিবেশন করলেন।

الحمد لله الحمد لله الذي جعلنا من ذرية إبراهيم وزرع إسماعيل وضئضئ معد مضر، وجعلنا حضنة بيته وسواس حرمه وجعل لنا بيتا محجوجا وحرما آمنا وجعلنا حكام الناس ثم إن ابن أخي هذا محمد بن عبد الله - لايوزن يرجل الارجعه فان كان فى المال قل- فان المال ظل زائل وامر حائل- ومحمد قدعرفتم قرابه وقدخطب خديجة بنت خويلد- وبذل لها الصداق ما اجله وعاجله من مالى كذا-

আর্থাৎ- প্রশংসা সে আল্লাহ পাকের যিনি আমাদেরকে হযরত ইব্রাহীম عليه السلام এর কুলে এবং ইসমাঈল عليه السلام এর বংশে জন্ম দিয়েছেন। তিনি আমাদেরকে তাঁর পবিত্র ঘরের সেবক এবং জনসাধারনের নেতা-তথা নায়করূপে মনোনীত করেছেন। তিনি আমাদের জন্য কাবা ঘরকে অতিনিরাপদ ও হজ্জ সম্পাদন কেন্দ্র বানিয়েছেন। অতঃপর আমার ভ্রাতুষ্পুত্র আব্দুল্লাহ তনয় সমগ্র কুরাইশ গোত্রে জ্ঞানে গুণে অতুলনীয় সকলেই মোহাম্মাদের নিকট হার মানতে বাধ্য। যদিও ধন-সম্পদ তাঁর অল্প। কিন্তু মাল ও দৌলত ক্ষনস্থায়ী ছায়া এবং হাত বদলের সাময়িক বস্তু মাত্র। মোহাম্মদের স্বজনদের গৌরব সর্ববিদিত।

মোহাম্মাদ খোওয়ালেদ তনয়া খাদীজার বিবাহ পয়গাম বরণ করেছেন। নগদ ও দেন মোহরানার দায়ীত্ব আমি গ্রহণ করলাম। বিবি খাদীজার পক্ষে তাঁর আত্মীয় বিশিষ্ট আলেম সৎ-সাধু ওয়ারাকা বিন নওফল ভাষণ পাঠ করলেন। তিনি আল্লাহর প্রশংসা জ্ঞাপনের পর কুরাইশ গোত্রের গৌরব এবং আবু তালেব বংশের (বনী হাশেম) প্রাধান্যের স্বীকৃতি উল্লেখ পূর্বক বললেন: আমরা আপনাদের সাথে মিলন লাভের আকাঙ্খা রাখি এবং তাতে আনন্দবোধ করি। সকলে স্বাক্ষী থাকুন- খোওয়ালেদ তনয়া খাদীজাকে আব্দুল্লাহ তনয় মোহাম্মদের বিবাহে প্রদান করলাম। সর্ব সম্মত মতে বিবাহের সময় খোওয়ালেদ তনয়া খাদীজার বয়স ৪০ বছর এবং আব্দুল্লাহ তনয় মোহাম্মদের বয়স ২৫ বছর ছিল।

৩৫ বছর বয়সে কাবা মেরামতের কাহিনী
____________________
৩৫ বছর বয়সে কাবা মেরামতের কাহিনী

রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর বয়স যখন ৩৫বছর, তখন কুরাইশরা কাবা ভেঙ্গে যাওয়ার আশংকা করলো ফলে সাদ বিন আস এর কৃত দাসকে তা পুনঃর্নিমানের আদেশ দিল। এ সময় রাসূলুল্লাহ (ﷺ) সেখানে উপস্থিত ছিলেন। তিনিও তাদের সঙ্গে কাবা মেরামতের কাজে পাথর স্থানান্তর করতে লাগলেন। তৎকালিন কুরাইশদের রীতি ছিল যে তারা পাথর স্থান্নান্তর করার সময় ঘাড়ের উপর তাদের লুঙ্গি বেধে রাখতো। তা দৃষ্টে রাসূলুল্লাহ (ﷺ) ও স্বীয় পরিদের কাপড় উত্তোলন করা মাত্র দাড়ানো থেকে পড়ে যান। কামুস গ্রন্থের বর্ণনানুযায়ি তৎক্ষনাত তাঁকে এ বলে ঘোষনা দেয়া হয় যে وعورتك হে মোহাম্মদ! আপনার লজ্জাস্থানের সংরক্ষন করুন। তা ছিল মোহাম্মদ (ﷺ) এর প্রতি নবূওত পূর্ববর্তী প্রথম ঘোষনা। এতদ্বদৃষ্টে খাজা আবু তালেব অথবা আব্বাস (رضي الله عنه) তাঁকে সম্বোধন করে বল্লেন, ভাতিজা আমাদের মত তুমিও স্বীয় পরিধেয় বস্ত্তু মস্তক র্পযন্ত উত্তোলন কর। তখন রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বললেন كمااصابنى ما اصابنى الا من لتعرى আমাকে জাহেলিয়াতের কোন বিবস্রতাও নগ্নতা স্পর্শ করতে পারেনি।

হস্তিবাহিনীর ৪০ বছরের মাথায় নবুওয়ত লাভ
____________________
হস্তিবাহিনীর ৪০ বছরের মাথায় নবুওয়ত লাভ

রাহমাতুল্লিল আলামীন রাসূলুল্লাহ (ﷺ) ৪০ বছরের মাথায় নবুওয়তী গুরুদায়িত্ব নিয়ে আগমন করলেও এর অতিরিক্ত কিছু দিন নিয়ে ঐতিহাসিকদের মধ্যে কিছু মতভেদ আছে। যেমনঃ কেউ বলেছেন ৪০ বছর ৪০ দিন পূর্তিতে, আবার কারও মতে ১০দিন অতিরিক্ত, কারও মতে ৪০ বছর দু মাস ১৩ই রামজান সোমবারে নবুওয়ত প্রাপ্ত হন। কারও মতে ৭দিন, কারওমতে ১৩দিন। ঐতিহাসিক ইবনে আব্দুল বার (رضي الله عنه) এর মতে হস্তি—বাহিনীর ঘটনার ৪১ বছর অন্তর্বতী ৮ই রবিউল আওয়াল সোমবারে সমগ্র বিশ্ববাসীদের কাছে রাহমতে আলম ও রাসূল হিসেবে মনোনীত হয়ে আবিভূর্ত হন।

সর্বশেষ অবতারীত আয়াতের ব্যাখ্যা
____________________
সর্বশেষ অবতারীত আয়াতের ব্যাখ্যা

ইবনে জারীর, ইবনে মুনযীর দ্বয় رحمة الله عليه হযরত কাতাদাহ (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত নিন্মোক্ত আয়াতে কারীমার বিশদ ব্যাখ্যা নিরোপন করেছেন। মহান আল্লাহর বাণী-

ت لَقَدْ جَاءكُمْ رَسُولٌ مِّنْ أَنفُسِكُمْ عَزِيزٌ عَلَيْهِ مَا عَنِتُّمْ حَرِيصٌ عَلَيْكُم بِالْمُؤْمِنِينَ رَؤُوفٌ رَّحِيمٌ. فَإِن تَوَلَّوْاْ فَقُلْ حَسْبِيَ اللّهُ لا إِلَـهَ إِلاَّ هُوَ عَلَيْهِ تَوَكَّلْتُ وَهُوَ رَبُّ الْعَرْشِ الْعَظِيمِ

অর্থ:- অবশ্যই তোমাদের মধ্য হতেই তোমাদের নিকট একজন রাসূল আগমন করেছেন। তোমাদের কে যা বিপন্ন করে, তা তাঁর জন্য অত্যন্ত কষ্টদায়ক। তিনি তোমাদের জন্য মঙ্গলকামী মু’মিনদের প্রতি দয়াদ্রশীল ও পরম দয়ালু।

অতএব, তারা যদি মুখ ফিরিয়ে নেয়, তবে আপনি বলে দিন, আমার জন্য কেবল আল্লাহ পাকই যথেষ্ট। তিনি ব্যতীত অন্য কোন উপাস্য নেই। আমি তাঁরই উপর আস্থা রাখি এবং তিনি সুবিশাল আরশের অধিপতি।

আয়াতে বর্ণিত لقد جاء كم من انفسكم বাক্যের অর্থ সম্র্পকে হযরত কাতাদাহ (رضي الله عنه) বলেন (তোমাদের নিকট তোমাদেরই মধ্য হতে একজন রাসূল এসেছেন) অর্থাৎ

جعله الله من انفسكم فلا تحسدوه على ما اعطاه الله من النبوة والكر امة .

অর্থ:- মহান আল্লাহ পাক তোমাদের নিজেদের মধ্য হতেই একজন নবী প্রেরণ করেছেন বিধায় আল্লাহ পাক কর্তৃক তাঁকে নবুওয়ত ও সম্মানের বিশাল নেয়ামত দান করার দ্বরুন মোটে ও তোমরা তাঁর প্রতি হিংসা বিন্মেষ রেখনা।

আয়াতে বর্ণিত عزيزعليه ما عنتم এর অর্থ হচ্ছে- عزيز عليه ما عنت مؤمنهم অর্থ:- তাদের মধ্যকার মুমিনদের বিপন্ন কালে তিনি যন্ত্রনাক্লিষ্ট হন। আয়াতে বর্ণিত حريص عليكم এর ব্যাখ্যা হচ্ছে حريص على ضالكم ان يهديه الله অর্থ:- তিনি তোমাদের মধ্য কার বিপথগামীদের মঙ্গল কামনার প্রত্যাশী যে, মহান আল্লাহ পাক তাকে হেদায়াতের পথ দেখিয়ে দেন। ইবনে আবু হাতীম ও আবু শায়েখ কর্তৃক ইবনে আব্বাস (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত আয়াতের ব্যাখ্যা এভাবে করেছেন- عزيز عليه ما عنتم দ্বারা উদ্দেশ্য হচ্ছে-

عد عليه ما شق عليكم حريصى عليكم ان يؤمن كفاركم

অর্থ:- তোমাদের জন্য যা বেদনাদায়ক তাঁর জন্য তা সীমাহীন কষ্টদায়ক। তিনি তোমাদের প্রতি এমনই মঙ্গল কামী যে, যাতে করে তোমাদের মধ্যকার কাফেরগণ ঈমান গ্রহণ করে। তবে মোট কথা হচ্ছে عزيز عليه ما عنتم حريص عليكم এর ব্যাখ্যা হচ্ছে اعا شاق عليه وصعب لديه عنتكم وتعبكم অর্থ:- তোমাদের বেদনায় তিনি ব্যথাতুর, তোমাদের ব্যথা বেদনা ও ক্লান্ত-শ্রান্ততায়। তিনি চরমভাবে বেদনাহত ও যন্ত্রনাক্লিষ্ট হন।

আর সেমতে তাঁর বিশাল বরকতে মহান আল্লাহ পাক তোমাদের থেকে সকল ভুল ত্রুটি ও অন্যায় অপরাধের প্রায়শচিত্ব্ব শীতিল করেদেন। যেহেতু তিনি আগমন করেছেন উদারতাপূর্ণ হানিফ ধর্ম এবং আলোকদ্বীপ্ত সন্তুষ্ট জনক তরীকা নিয়ে। মুহাদ্দেসীনে কেরামগনের মতে عزيز শব্দটি রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর এক অন্যতম ছিফতী নাম ও হতে পারে। তখন এর অর্থ হবে-

هو عزيز الوجود وكا مل الجود وبديع الجمال عديم المثال اوعزيز مكرم لدينا- فاعزوه وأكر موه وانصروه وعظموه-

অর্থ:- তিনি পূর্ণ অস্থিত্বশীলবা সর্বদা দৃশ্যবান পূর্ণদানশীল, অপূর্ব সৌন্দয্যের আকর তুলনাহীন ব্যক্তিত্ব, অথবা তিনি আমাদের নিকট অতি সম্মানীত ও প্রিয়জন। অতএব, তোমরা তাঁর তাযীম-তাকরীম করবে, তাঁকে সাহায্য করবে। অথবা عزيز শব্দের এ অর্থ ও হতে পারে.

هوغالب على جميع المرسلين لكونه خاتم النبيين اولكو نه دينه غالباعلى الاديان شاملا لكل زمان ومكان-

وهو منتقم باعدائه كماهو رحيم باحبائه عليه ما منتم اى ضرر عليه ضرركم وشاق عليه محنكم لكونه رحمة للعالمين ورأفة للمؤمنين-

অর্থ:- তিনি সর্বশেষ নবী ও রাসূল হওয়ার দ্বরুণ সর্বকালে, সর্বযুগে, সর্বস্থানে তাঁর আনীত ইসলাম ধর্ম সকল ধর্ম ও মতবাদের উপর ক্ষমতা সমপন্ন হওয়ার দ্বরুনই সকল নবী ও রাসূলগণের মধ্যে সর্বোচ্ছ ক্ষমতা সম্পন্ন। অথবা তিনি স্বীয় প্রিয়শীল উম্মতদের বেদনায় কঠোর হস্তে প্রতিশোধগ্রহনকারী। অর্থাৎ- তোমাদের অনিষ্টে তিনিও অনিষ্টবোধ করেন।

তিনি তোমাদের রহমত হওয়ার দ্বরুন তোমাদের ভীষন যন্ত্রনাক্লিষ্টে তিনি কষ্ট ভোগ করেন এমনকি মুমিনদের প্রতি তিনি সীমাহীন দয়াদ্রশীল।

আয়াতে বর্ণিতঃ حريص عليكم আরেক অর্থ হচ্ছে حريص عليكم على ايمانكم وايقانكم واحسانكم باالمؤمنين অর্থাৎ- তিনি তোমাদের ঈমান, তোমাদের নিশ্চিত বিশ্বাস, তোমাদের দয়াও অনুগ্রহতার প্রতি মঙ্গল কামী।

আয়াতে বর্ণিত باالمؤمنين رؤف رحيم এর অর্থ হচ্ছে فى غاية من الرأفة والشغة ونها ية من اللطف والرحمة অর্থ:- তিনি মুমিনদের প্রতি সীমাহীন দয়াদ্রশীল, সহানুভুতশীল, অসীম দয়া ও কোমল প্রাণ।

হুযূর (ﷺ) সাথে জিব্রাঈল ও পাহাড়ীয় ফেরেস্তাদ্বয়ের কথোপকথন
____________________
হুযূর (ﷺ) সাথে জিব্রাঈল ও পাহাড়ীয় ফেরেস্তাদ্বয়ের কথোপকথন

ইবনে আবু হাতীম ইকরামার সুত্রে বর্ণনা করেন, হুযূর (ﷺ) এরশাদ করেন।-

جاء حبر ائيل فقال لى يا محمد: ان ربك يقرئك السلام وهذا ملك الجبال- قدارمله اليك- وامره ان لايفعل ميئا الابامرك- أن شئت هدمت عليهم الجبال وان شئت رميتهم بالحعباء- وان شئت خسفت بهم الارض قال يا ملك الجبال فانى الات بهم- لعله ان يخزح منهم زرية يقو لون لااله الاالله- فقال ملك ربك رؤف رحيم-

অর্থাৎ- হযরত জিব্রাঈল عليه السلام আমার নিকট এসে বললেনঃ হে মোহাম্মদ (ﷺ) ! নিশ্চয়ই আপনার প্রতিপালক আপনার প্রতি সালাম জানিয়েছেন এবং আমার সঙ্গে ইনি হচ্ছেন পাহাড়ীয় ফেরেস্তা। মহান আল্লাহ পাক তাঁকে আপনার নিকট পাঠিয়েছেন, যাতে আপনার নির্দেশ ব্যতীত বিন্দু পরিমান কোন কাজ না করেন। এবারে পাহাড়ীয় ফেরেস্তা বললেনঃ হে রাসূল! আপনি চাইলে নিমিষেই আমি তাদের উপর পাহাড়কে বিধ্বস্ত করে দিবো, চাইলে কঙ্কর নিক্ষেপ করে ধ্বংশ করে দিবো, আবার চাইলে নিমিষেই ভূমি নীচদিকে ধাবিয়ে দিয়ে তাদেরকে অপমান করে ফেলবো। এতদশ্রবনে রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বললেন ওহে পাহাড়ীয় ফেরেস্তা! একাজ করোনা, যেহেতু এখনো আমি স্বশরীরে তাদের মধ্যে বিদ্যমান আছি। আশা করা যায় যে, তন্মধ্যে এমন কিছু বংশ বের হবে যারা لاله الاالله এর স্বাক্ষ্য গ্রহণ করবে।

এতক্ষণে ফিরিস্তা (পাহাড়ীয়া ফেরেস্তা) বললেনঃ হে আল্লাহর রাসূল ! সত্যিই আপনি এমনই এক নবী, যার সাথে সামঞ্জশ্য রেখে আপনার রব আপনাকে رؤف رحيم তথা (সীমাহীন দয়াদ্রশীল ও অতিশয় দয়ালু) হিসেবে নাম করণ করেছেন।

ইবনে মারদুবীয়্যা আবু সালেহ আল হানাফীর সুত্রে বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এরশাদ ফরমানঃ

ان الله رحيم ولا يضع رحمته الاعلى رحيم قلنا يارسول الله كلنا نرحم امر النا واولادنا قالليس بذالك ولكن كماقال الله تعالى- لقد جاءكم رسول من انفسكم عزيز عليه ما عنتم حريص عليكم با المؤمنين رؤف رحيم-

অর্থাৎ- আল্লাহ পাক অবশ্যই পরম দয়ালু। আর তাঁর এ পরম দয়া আরেক পরম দয়ালু ব্যততী অন্য কোথায় রাখেন না। এতদশ্রবনে আমরা (আব্দুল্লাহ) নিবেদন করি, হে আল্লাহর রাসূল ! আমরাতো সকলেই আমাদের সম্পদও সন্তান সন্ততীর প্রতি দয়াদ্রশীল। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বললেনঃ বিষয়টি এরূপ নয় বরং মহান আল্লাহ পাক (আমার শানে) এরশাদ করেছেন- তোমাদের নিকট তোমাদের মধ্য হতেই অবশ্যই একজন রাসূল এসেছেন।

যিনি তোমাদের জন্য যা বিপন্ন করে, তা তাঁর জন্য অত্যন্ত কষ্টদায়ক। তিনি তোমাদের জন্য মঙ্গলকামী। মুমিনদের প্রতি সীমাহীন দয়াদ্রশীল এবং অতি দয়ালু। হাদীস শরীফের ভাষ্যে প্রতীয়মান হয় যে, রাহমাত শব্দটি বিশেষ ও সর্বসাধারনের জন্য প্রয়োজ নয়। যেমনঃ এ ব্যাপারে বিশুদ্ধ হাদীসে এসেছে রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর বাণীঃ

لا يُؤْمِنُ أَحَدُكُمْ حَتّى أَكُونَ أَحَبَّ إِلَيْهِ مِنْ والِدِهِ وَوَلَدِهِ وَالنَّاسِ أَجْمَعينَ

তোমরা ততক্ষন যাবত পূর্ণ মুমিন বলে দাবী করতে পারবেনা যতক্ষন যাবত না আমি তার ব্যক্তিসত্তা, পিতা-মাতা সন্তান সন্ততি এমনকি সমগ্রহ মানব চেয়েও অপরিসীম প্রিয় না হই।

لَا يُؤْمِنُ أَحَدُكُمْ حَتَّى يُحِبَّ لِأَخِيهِ مَا يُحِبُّ لِنَفْسِهِ

অর্থাৎ- ততক্ষণ যাবত তোমাদের কেউই পরিপূর্ণ মুমিন হতে পারবেনা, যতক্ষন না সে নিজের প্রতি যতটুকু ভাল বাসে, তা অন্যের প্রতি ও রাখে।

বিশুদ্ধ হাদীসে আরও বর্ণিত আছেঃ

الرَّاحِمُونَ يَرْحَمُهُمَ الرَّحْمَان ، ارْحَمُوا من في الأَرْضِ يَرْحَمْكُمْ

অর্থাৎ- অতিশয় দয়ালু ব্যক্তিবর্গকে দয়ালু আল্লাহ পাক ও দয়া করেন। অতএব, তোমরা যমীন বাসীকে দয়া করো, তবেই আকাশবাসীরা তোমাদেরকে দয়া করবে। আয়াতে বর্ণিত فان تولوا বাক্যের অর্থ হচ্ছেঃ

فان اعرضوا يعنى الكفار عن الايمان بك اوجميع الخلق عنك وعن متابعتك فقل حسبى الله اى كافى جميع امورى-

অর্থাৎ- কাফেরেরা যদি আপনার প্রতি ঈমান গ্রহণ থেকে বিরতও থাকে অথবা সমস্ত সৃষ্টজীব ও যদি আপনার প্রতি ঈমান গ্রহণ ও আপনার অনুস্মরণ ও অনুকরণ থেকে সমপূর্ণ বিরত থাকে, তবে আপনি একথা বলুন যে, এ ব্যাপারে কেবল আমার আল্লাহ পাকই যথেষ্ট। অর্থাৎ- আমার সর্ববিষয়ে কেবল তিনিই যথেষ্ট।

আয়াতে বর্ণিত لا اله الاهو বাক্যের অর্থ হচ্ছে لي رب مواه فلا اعبد الا اياه অর্থৎ- তিনি ব্যতীত দ্বিতীয় কোন রব নেই। সুতরাং আমি কেবল তিনি ব্যতীত দ্বিতীয় কারও ইবাদত করবোনা।

আয়াতে বর্ণিত عليه توكلت বাক্যের অর্থ হচ্ছে اى اعتمدت واليه استندت অর্থাৎ- আমি কেবল তাঁরই উপর আস্থা ও নির্ভর করি। আয়াতে বর্ণিত وهو رب العرش العظيم বাক্যের অর্থ হচ্ছে

با الجر انه صفة العرش وقرئ با الرفع انه صفة الرب اى الهيكل الحبيم المحيط بجميع المخلو قات-

অর্থাৎ- যের যোগে হলে তা মহান আরশের ছিফত হবে। কেউ কেউ পেশ যোগে ও পড়েছেন। তখন তা আল্লাহর ছিফত হবে। অর্থাৎ- তিনি মহান আল্লাহ পাক সমগ্র মাখলুকাত বেষ্টনকারী বিশাল অবকাঠামো পূর্ণ আরশপতি। যেমনঃ এ ব্যাপারে বর্ণিত আছে।

ان الارضين السبع فى جنب السماء الدنيا كهلقة فى فلاة

অর্থাৎ- প্রথমাকাশের পাশের্ব সপ্তজমীনের দুরত্ব এমন, যেমনঃ বিশাল মরুপ্রা­ন্তরে একটি ক্ষুদ্র অংশ।

وكذ الك كل سماء باالنسبة الى اخر اى অর্থাৎ- অনূরূপভাবে সপ্তমাকাশের মধ্যকার একটির তুলনায় অন্যটির দুরত্ব ও বিশালত্ব।

ثُمَّ جَمِيْعُ الارضين اسلبع السموات الالى يجنب العَرْشِ كحلفة فى فلاة .

অর্থাৎ- আর সপ্তমাকাশ ও সপ্তজমীনের বিশালত্ব ও দুরত্ব আরশের পাশের্ব এমন, যেমন: বিশাল মরুপ্রান্তরে ক্ষুদ্র এক আংটি। কিন্তু মু’মিনের ক্বলবের বিশালত্ব সম্পর্কে হাদীসে কুদসীতে এসেছে, তার বর্ণনা নিুরূপ। আল্লাহর বাণী -

لا يسعتى ارضى ولا سمائ ولكن يسعنى قلب عبدى المؤمن

অর্থাৎ- আমার নিকট সপ্তমাকাশ ও সপ্তজমীনের প্রসস্থত ও বিশালত্বের তুলনায় আমার মু’মিন বান্দাহর ক্বলবের প্রসস্থতা ও বিশালত্ব বহুগুনে বেশী।

সকাল- সন্ধায় আমল

ইমাম আবু দাউদ হযরত আবু দারদা (رضي الله عنه) হতে মাওকুফ সুত্রে, ইবনে সুন্নী উক্ত সাহাবী থেকে মারফু সুত্রে বর্ণনা করেন, হযরত আবু দারদা (رضي الله عنه) বলেন। যে ব্যক্তি প্রতি সকাল-সন্ধায় নিন্মোক্ত আয়াত সাত বার পাঠ করবে, মহান আল্লাহ পাকই বান্দাহর ইহকাল পরকালের সমস্ত বিষয় পুরনের জন্য যথেষ্ট হবেন।

আয়াতটি হচ্ছে-

لَقَدْ جَاءكُمْ رَسُولٌ مِّنْ أَنفُسِكُمْ عَزِيزٌ عَلَيْهِ مَا عَنِتُّمْ حَرِيصٌ عَلَيْكُم بِالْمُؤْمِنِينَ رَؤُوفٌ رَّحِيمٌ . فَإِن تَوَلَّوْاْ فَقُلْ حَسْبِيَ اللّهُ لا إِلَـهَ إِلاَّ هُوَ عَلَيْهِ تَوَكَّلْتُ وَهُوَ رَبُّ الْعَرْشِ الْعَظِيمِ .

সর্বশেষ অবতারীত আয়াত
____________________
সর্বশেষ অবতারীত আয়াত

ইবনে আবী শায়বা সহ অন্যান্যরা ইবনে আববাস (رضي الله عنه) হতে, তিনি সাইয়্যিদিনা উবাই বিন কাব হতে, তিনি বলেনঃ সর্বশেষ অবতারীত আয়াত হচ্ছে নিন্মোক্ত আয়াত।

لَقَدْ جَاءكُمْ رَسُولٌ مِّنْ أَنفُسِكُمْ عَزِيزٌ عَلَيْهِ مَا عَنِتُّمْ حَرِيصٌ عَلَيْكُم بِالْمُؤْمِنِينَ رَؤُوفٌ رَّحِيمٌ . فَإِن تَوَلَّوْاْ فَقُلْ حَسْبِيَ اللّهُ لا إِلَـهَ إِلاَّ هُوَ عَلَيْهِ تَوَكَّلْتُ وَهُوَ رَبُّ الْعَرْشِ الْعَظِيمِ .

বর্ণনাকারী বলেনঃ আয়াতটি যেহেতু সর্বশেষ অবতারী আয়াত সেহেতু তা দ্বারা কার্যাবলী সমাপ্ত করা হয়েছে। আর সৃষ্টি কুলের প্রারম্বিকা হচ্ছে لا اله الاهو কালেমাটি। যেমনঃ এ বিষয়ে প্রমাণ মেলে নিন্মোক্ত আয়াতে আল্লাহর বাণী -

وَمَا أَرْسَلْنَا مِن قَبْلِكَ مِن رَّسُولٍ إِلَّا نُوحِي إِلَيْهِ أَنَّهُ لَا إِلَهَ إِلَّا أَنَا فَاعْبُدُونِ .

অর্থৎ- আমি আপনার পূর্বেকার এমন কোন রাসূলকে প্রেরন করিনি যে, তাঁর কাছে এমর্মে প্রত্যাদেশ পাঠিয়েছি যে, আমি ভিন্ন অন্য কেউই নেই বিধায় সকলেই কেবল আমারই ইবাদত কর।

অতএব, মহান আল্লাহ পাক তাঁর খাতামুন নবাীয়্যীন (সর্বশেষ নবী) র উপর তাঁর সুস্পষ্ট গ্রন্থ আল কোরআন যে সর্বশেষ আয়াত দ্বারা অবতারন সমাপ্ত করেছেন, সে আয়াত দ্বারাই আমাদের সমাপ্ত করা উচিত। যাতে এর উসিলায় মহান আল্লাহ পাক আমাদেরকে খাতেমা বিল খায়ের দান করেন এবং এর উসিলায় তিনি আমাদেরকে স্বীয় অনুগ্রহের মাকামে পৌছেদেন। আরও প্রত্যাশা করি, যাতে করে তিনি স্বীয় অনুগ্রহে আমাদেরকে নবী, সিদ্দিক্বীন, শুহাদা ও সালেহীন গনের সঙ্গে উত্তম বন্ধু রূপে গ্রহন করেন।

وكفى بالله عليها- الحمد لله ولا واخرا وظاهرا وباطنا وحديثا وقديما

আল্লাহ পাকই সর্ববিধ জ্ঞান গরীমায় যতেষ্ট আওয়ালে আখের যাহির বাতিন এবং স্থায়ী ও ক্ষণস্থায়ী সর্বাবস্থায়ই কেবল আল্লাহর প্রশংসা।

وصلى الله على سيدنا محمد وعلى اله وصحبه وسلم تسلما.

মহান আল্লাহ পাক সাইয়্যিদিনা মোহাম্মাদ (ﷺ) তাঁর স্নেহধন্য আহলে বায়েত, এবং সাহবাদের প্রতি অগনীত দরুদ ও সালাম পাঠ করুন।

(আমীন ছুম্মা আমীন)

টিকাঃ মীলাদে রাসূল (ﷺ) এর আলোকে প্রণীত গ্রন্থটি যথা সাধ্য সমাপ্ত হলো। গ্রন্থটি ১৩৯৯ হিজরীর শাবান মাসের প্রথম দিকে মদীনা শরীফে রাওদ্বায়ে আত্বহারের পাশের্ব থেকে গ্রন্থ প্রণয়নের কাজ সমাপ্ত করা হয়। সাইয়্যিদ আলাবী আল মালেকী রহ.

আল মাওরিদুর রাভী সমাপ্ত

সংক্ষিপ্ত মীলাদ শরীফ
____________________
সংক্ষিপ্ত মীলাদ শরীফ-

اَعُوْذُ بِاللهِ مِنَ الشَّيْطَانِ الرَّجِيْمِ

بِسْمِ اللهِ الرَّحْمَنِ الرَّحِيْمِ

* قلْ هُوَ اللَّهُ أَحَدٌ . اللَّهُ الصَّمَدُ . لَمْ يَلِدْ وَلَمْ يُولَدْ . وَلَمْ يَكُن لَّهُ كُفُواً أَحَدٌ .. لااله الا الله والله اكير,- ৩ বার

بِسْمِ اللهِ الرَّحْمَنِ الرَّحِيْمِ

قُلْ أَعُوذُ بِرَبِّ الْفَلَقِ . مِن شَرِّ مَا خَلَقَ . وَمِن شَرِّ غَاسِقٍ إِذَا وَقَبَ. وَمِن شَرِّ النَّفَّاثَاتِ فِي الْعُقَدِ . وَمِن شَرِّ حَاسِدٍ إِذَا حَسَدَ,-

بِسْمِ اللهِ الرَّحْمَنِ الرَّحِيْمِ

* قُلْ أَعُوذُ بِرَبِّ النَّاسِ . مَلِكِ النَّاسِ . إِلَهِ النَّاسِ . مِن شَرِّ الْوَسْوَاسِ الْخَنَّاسِ . الَّذِي يُوَسْوِسُ فِي صُدُورِ النَّاسِ . مِنَ الْجِنَّةِ وَ النَّاسِ .

بِسْمِ اللهِ الرَّحْمَنِ الرَّحِيْمِ

الْحَمْدُ للّهِ رَبِّ الْعَالَمِينَ . الرَّحْمنِ الرَّحِيمِ . مَالِكِ يَوْمِ الدِّينِ . إِيَّاكَ نَعْبُدُ وإِيَّاكَ نَسْتَعِينُ . اهدِنَا الصِّرَاطَ المُستَقِيمَ . صِرَاطَ الَّذِينَ أَنعَمتَ عَلَيهِمْ غَيرِ المَغضُوبِ عَلَيهِمْ وَلاَ الضَّالِّينَ . امين.

بِسْمِ اللهِ الرَّحْمَنِ الرَّحِيْمِ

الم . ذَلِكَ الْكِتَابُ لاَ رَيْبَ فِيهِ هُدًى لِّلْمُتَّقِينَ . الَّذِينَ يُؤْمِنُونَ بِالْغَيْبِ وَيُقِيمُونَ الصَّلاةَ وَمِمَّا رَزَقْنَاهُمْ يُنفِقُونَ . والَّذِينَ يُؤْمِنُونَ بِمَا أُنزِلَ إِلَيْكَ وَمَا أُنزِلَ مِن قَبْلِكَ وَبِالآخِرَةِ هُمْ يُوقِنُونَ . أُوْلَئِكَ عَلَى هُدًى مِّن رَّبِّهِمْ وَأُوْلَئِكَ هُمُ الْمُفْلِحُونَ.

وَإِلَهُكُمْ إِلَهٌ وَاحِدٌ لاَّ إِلَهَ إِلاَّ هُوَ الرَّحْمَنُ الرَّحِيمُ .

إِنَّ رَحْمَتَ اللّهِ قَرِيبٌ مِّنَ الْمُحْسِنِينَ. وَمَا أَرْسَلْنَاكَ إِلَّا رَحْمَةً لِّلْعَالَمِينَ,- مَّا كَانَ مُحَمَّدٌ أَبَا أَحَدٍ مِّن رِّجَالِكُمْ وَلَكِن رَّسُولَ اللَّهِ وَخَاتَمَ النَّبِيِّينَ وَكَانَ اللَّهُ بِكُلِّ شَيْءٍ عَلِيماً,- إِنَّ اللَّهَ وَمَلَائِكَتَهُ يُصَلُّونَ عَلَى النَّبِيِّ يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا صَلُّوا عَلَيْهِ وَسَلِّمُوا تَسْلِيماً.


بِسْمِ اللهِ وَالْحَمْدُ لِلَّهِ الصَّلَوةُ وَالسَّلَامُ عَلَيْكَ يَارَسُوْلَ الله,-

মোহাম্মদ ইয়া রাসূলাল্লাহ

* জরা চেহরে ছে পরদেকো উঠহাও ইয়া রাসূলাল্লাহ

 মুজহে দীদার ঠুক আপনা দেকহাও ইয়া রাসূলাল্লাহ

* করো রুয়ে মনুওরছে মেরী আঁকহ উকো নূরানী

 মুজহে ফিরক্বত কি জুলমতছে বঁাচাও ইয়া রাসূলাল্লাহ।

* উঠহাকর যুলফে আকদ্দছকো যরা চেহরা মোবারকছে

 মুজহে দীওয়ানা আওর অহশি বানাও ইয়া রাসূলাল্লাহ । ঐ

* শাফি’য়ে আ’ছিয়া হোতুম ওছিলা বেকছা হো তুম,-

 তুমহে চুড় আব কাহা জাওঁ বাতাও ইয়া রাসূলাল্লাহ । ঐ

* পিয়াছা হায় তুমারে শরবতে দীদারকা আ’লম

 করমকা আপনা এক পিয়ালা পিলাও ইয়া রাসূলাল্লাহ । ঐ

* খোদা আ’শিক্ব তুমহারা আওর হো মাহবুব তুম উছকে

 হায় এছা মরতুবাহ কিছকা ছুনা ও ইয়া রাসূলাল্লাহ ।ঐ

* আগরচে নেক ইয়া বদহ তুমহারা চোকা হো ময়

 তুম আব চাহ হো হাছাও ইয়া, রুলাও ইয়া রাসূলাল্লাহ । ঐ

* বড়ি নদী ক্বিয়ামত কি উমেদ হামকো সালামত কি

 দেকাও কিস্তি শাফায়াত কি মোহাম্মদ ইয়া রাসুলাল্লাহ। ঐ

* সালামে বে আদদ তুম পর দুরূদে কামিলা বরতর

 খোদা বেঝে ছাদা তুম পর মোহাম্মদ ইয়া রাসুলাল্লাহ। ঐ

اَلصَّلَوةُ عَلى النَّبِى,- وَالسَّلَامُ عَلى الرَّسُوْل

 اَلشَّفِيْعُ الْاَبْطَحِى,- وَامُحَمَّدْ عَرَبِى

 خَيْرُ مِنْ وَطَىَ الثَّرَاى,- اَلْمُشَفَّعُ فِى الْوَرَاى

 مَنْ بِهِ حُلَّتْ عُرَاى - كُلَّ عَبْدٍ مُذْنِبِ,-

 مَالَهُ مِنْ مُشْبِهٍ,- فَازَ اُمَّتُهُ بِهِ

 مَنْ يَمُتْ فِى حُبِّهِ,- نَالَ كُلَّ الْمَطْلَبِ,-

 اَنَا مَفْتُوْنٌ بِهِ,- طَامِعُ فِى قُرْبِهِ

 رَبِّ عَجِّل لِى بِهِ,- عَلَىَّ يَصْفو مَشْرَبِى,-

 كَمْ شَفَا مِنْ اَسْقُمٍ,- كَمْ جَلَا مِنْ اَظْلُمٍ

 كَمْ لَهُ مِنْ اَنْعُمٍ,- لِلْفَطِيْنِ وَالْغَبِى,-

 كَمْ لَهُ مِنْ مُكْرَمَاتٍ,- كَمْ عَطَايَا وَافِرَاتٍ

 كَمْ رَوَتْ عَنْهُ اَلثِّقَاتُ,- كُلُّ عِلْمٍ وَاجِبِ,-

 نِعْمَ ذَاكَ الْمُصْطَفَى,- ذُو الْمَرُوَّةِ وَالْوَفَا

 فَضْلُ اَحْمَدَ مَاخَفَى,- شَرْقَهَا وَالْمَغْرِبِ,-

 كَمْ بِهِ مِنْ مُوْلِعِ,- غِارِقٌ فِى الْاَدْمُعِ

 عَقْلُهُ لَمَّا دُعِىَ,- فِى مَحَبَّتِهِ سُبِى,-

 يَا رَسُوْلَ الله,- يَاخَيْرَ كُلِّ الْاَنْبِيَّاء

 نَجِّنَا مِنْ هَاوِيَه,- يَازَكِىَّ الْمَنْصَبِ,-

حُبُّهُ يَجْلُوالصَّدَاي – وَيَدُلُّ عَلَي الْهُدَي

فَلَهُ رُوْحِى فِدَا,- ثُمَّ اُمِّى وَاَبِى

وَعَلَي عَلَمِ الْهُدَى – اَحْمَدُ مُفْنِي الْعِدَى

جُدْ بِتَسْلِيْمٍ بَدَا – لِلنَّبِىِّ الْيَثْرَبِى,-

قصيده

بَلَغَ الْعُلى بِكَمَالِهِ * كَشَفَ الدُّجَا بِجَمَا لِهِ,-

حَسُنَتْ جَمِيْعُ خِصَالِهِ * صَلُّوا عَلَيْهِ وَاَلِهِ,-

خَسَفَ الْقَمَرُ بِجَمَا لِهِ * عَجِزَ الْبَشَرُ بِكَمَا لِهِ,-

نَطَقَ الحَجَرُ بِجَلَالِهِ * صَلُّوا عَلَيْهِ وَاَلِهِ,-

مُلِىَ الْخَلَاءُ بِخَيْرِهِ * خُرِقَ السَّمَاءُ بِسَيْرِهِ,-

مَا سَاغَ ذَالِكَ لِغَيْرِهِ * صَلُّوا عَلَيْهِ وَاَلِهِ,-

شَرَقَ الْمُكَانُ بِنُوْرِهِ * سَرَّ الزَّمَانُ لِسُوْرِهِ –

نُسِخَ الْمِلَلُ بِظُهُوْرِهِ * صَلُّوا عَلَيْهِ وَاَلِهِ,-

كَشَفَ الشِبُهُ بِبَيَانِهِ * رَفَعَ الْعُلَي بِمَكَانِهِ –

اَكْرِمْ بِرَفْعَةِ شَانِهِ * صَلُّوا عَلَيْهِ وَاَلِهِ,-

فَلْتَهْتَدُوُا بِشَرِيْعَتِهِ * ثُمَّ اقْتَدُوْا بِطَرِيْقَتِهِ –

فَتَحَقَّقُوا بِحَقِيْقَتِهِ * صَلُّوا عَلَيْهِ وَاَلِهِ,-

দুরূদ শরীফের শে’র

* বিশ্ব নবীর আগমনে জগত হইল উজ্বালা

 মধুর নামটি জপন কর ওহে মুমিন নিরালা ...ঐ

* উম্মতি উম্মতি বলে ক্বদম রাখেন দুনিয়ায়

 এখনো কঁাদেন নবীজী শুয়ে সোনার মদিনায়...ঐ

* গাছে চিনলো মাছে চিনলো চিনলো বনের হরিণে

 আবু জাহেল চাচা হয়ে চিনলো না মোর নবীজী কে..ঐ

* ধন্য গো আমিনা বিবি ধন্য আপনার জিন্দেগী

 আপনার কোলে জন্ম নিলেন মোদের দয়াল নবীজী ..ঐ

* পশু পাখি সবাই বলে আজকে মোদের খুশির দিন

 এ জমিনে তাশরীফ আনলেন রাহমাতুল্লিল আলামীন .... ঐ

* নিরশ ভূমি সরশ হলো শুকনো গাছে ফুল ফুটিল

 শুকনো স্তনে দুধ আসিল নূর নবীজীর উছিলায়..ঐ

* তায়েফেতে গেলেন নবীজী ইসলাম প্রচার করিতে

 দুষ্ট কাফির মারল পাথর নূর নবীজীর বদনে...ঐ

* দুরূদ পড় সবাই মিলে ওহে মুমিন মুসলমান

 দুরূদেতে আল্লাহ রাজি খুশি নবী দু’জাহান।

* কে আছে গো এই জগতে বুঝবে মোদের বেদনা

 বুঝবে যে জন শুইয়া আছেন ঐ যে সোনার মদীনা।

* দিবা নিশি কঁাদিরে মন আর দিও না যন্ত্রনা

 ধনে যদি হইতাম ধনী যাইতাম সোনার মদীনা।

* আল্লাহ তুমি দয়া কর নছীব কর মদীনা

 নবীজীকে না দেখাইয়া কবরেতে নিও না।

* লক্ষ কোটি সালাম জানাই নূর নবীজীর ক্বদমে

 দয়া করে পার করিবেন রোজ হাশরের ময়দানে।

* অজ্ঞতারই অন্ধকারে ছিল যখন এই ধরা

 আসলেন তখন নিয়ে কোরআন নূর নবীজী মোস্তাফা

* আরশের নীচে সেজদায় পড়ে কাঁদবেন নবীজী যারেযার

 মাফ করে দাও ওগো প্রভু উম্মত আমার গোনাগার।

* ৬৩ বৎসর ছিলেন নবী এই যে বিশাল দূনিয়ায়

 কাঁন্দিতেন উম্মতের লাগি আজ ও কাঁন্দেন মদিনায়।

* তোমার তুলনা নবী সৃষ্টি কুলে মিলেনা

 উম্মত হয়ে ধন্য মোরা সালাম জানাই মদিনা।

আল্লাহ, আল্লাহ, আল্লাহু, লা ইলাহা ইল্লাহু

* গোনাহগারের বন্ধু তুমি উম্মতের কান্ডার

 রোজ হাশরে পার করিবেন উম্মত গোনাহগার, নবীজী। ঐ

* আসমান জমিন চঁাদ ছিতারা জিন্নাত ও ইনসান

 তোমার নূরে হইল পয়দা এ ছারে জাহান নবীজী। ঐ

* যার ইশারায় চন্দ্র সূর্য দুই ভাগ হইয়া যায়

 হাজার সালাম জানাই মোরা ঐ নবীজীর পায়, নবীজী। ঐ

* শান্তি দাতা মুক্তি দাতা হাবীব ও আল্লার

 যাহা উপর পরেন দূরূদ ফেরেস্তা খোদার, নবীজী। ঐ

* দুজাহানের বাদশা নবী এলেনরে দূনিয়ায়

 জিন, পরী, ফিরিস্তা, সালাম জানায় নবী পায়, নবীজী। ঐ

* গোনাহগারের গোনাহ ঝরে দূরূদে আপনার

 রোজ হাশরে তরাইবেন উম্মত গোনাহগার, নবীজী। ঐ

* সাত সাগরের কালি বানাইয়া লিখিলে বয়ান

 শেষ করিবে এমন নাহি আপনার গুনগান, নবীজী। ঐ

* মউতের তুফান আসবে যখন নবীগো আমার

 তখন যেন দেখিতে পাই চেহরায়ে আনওয়ার, নবীজী। ঐ

* শান্তি দাতা মুক্তি দাতা এলেনরে দুনিয়ায়

 আসেন সবাই দঁাড়াইয়া সালাম ও জানাই, নবীজী। ঐ

بِسْمِ اللهِ الرَّحْمَنِ الرَّحِيْمِ

نَحْمَدُهُ وَنُصَلَّى عَلىَ رَسُوْلِه الكَرِيْم,-

اَبْتَدِءُ الْاِمْلَاءَ بِاسْمِ الذَّاتِ العَلِيَّة,-مُسْتَدِرًّا فَيْضَ الْبَرَكَاتِ عَلَى مَا اَنَا لَهُ وَاَوْلَاهُ,-وَاُثْنِىَ بِحَمْدِ مَوَارِدُهُ سَائِغَةُ هَنِية,-مُمْتَطَاءً مِنَ الْشُكْرِ الْجَمِيْلِ مَطَايَاهُ,-وَاُصَلِّى وَاُسَلِّمُ عَلَى النُّوْرُ الْمَوْصُوْفِ بِالتَّقَدُّمِ وَالْاَوَّلِيَّةِ,-اَلْمُنْتَقِلِ فِى الْغُرَرِ الْكَرِيْمَةِ وَالْجِبَاه,-وَاَسْتَمْنِحُ اللهَ تَعَالَى رِضْوَانَا يَخُصُّ الْعِتْرَةِ الطَاهِرَةَ النَّبَوِيَّةُ,-وَيَعُمُّ اَلْصَّحَابَةَ وَالْاَتْبَاعَ وَمَنْ وَّالَاه,-وَاَسْتَجْدِيْهِ هِدَايَةً لِسُلُوْكِ السُّبُلِ الْوَاضِحَةِ الْجَلِيَّةِ,-وَحِفْظَا مِّنَ الْغَوَايَةِ فِى خُطَطِ الْخَطَاءِ وَخُطَاهُ,-وَاَنْشُرُ مِنْ قِصَّةِ الْمَوْلِدِ الشَّرِيْفِ النَّبَوِىِّ بُرُوْدًا حِسَانًا عَبْقَرِيَّة,- نَاظِمًا مِنَ النَّسَبِ الشَّرِيْفِ عِقْدًا تَحَلَّى الْمَسَامِعُ بِحُلَاه,-وَاسْتَعِيْنُ بِحَوْلِ اللهِ تَعَالَى وَقُوَّتِهِ اَلْقَوِيَّةِ,-فَاِنَّهُ لَاحَوْلَ وَلَاقُوَّةَ اِلَّا بِاللهِ,-

عَطِّرِ اللهم قَبْرَهُ الْكَرِيْمَ,-بِعَرْفٍ شَذِىٍّ مِنْ صَلَواةٍ وَتَسْلِيْمٍ,- اللهم صَلِّ وَسَلِّمْ وَبَارِكْ عَلَيْهِ -
মহান আল্লাহ পাকের নামে শুরুকরছি, আল্লাহ পাক আমাকে যে নিয়ামত ও দৌলত দান করেছেন তাঁর ফয়েজ ও কল্যাণ লাভের আশায়। আমি উত্তম কৃতজ্ঞতা পাশে আবদ্ধ হয়ে তাঁর এমন প্রশংসা করছি যা সবাইকে সন্তুষ্ট ও আনন্দিত করতে সক্ষম। এবং দরুদ ও সালাম সেই মহান নূরে মুহাম্মদীর খেদমতে যিনি হচ্ছেন সৃষ্ঠির আদি ও প্রথম, যে মহান নূর পর্যায়ক্রমে উজ্জল পবিত্র ললাট দেশ সমূহ বহিয়া এসেছেন। আমি বিশেষভাবে হুজুরে পাক (ﷺ)ের পবিত্র খান্দানের জন্য এবং সাধারণভাবে ছাহাবায়ে কেরাম এবং তাঁদের অনুসারী ও আপনজনদের জন্য মহান আল্লাহর সন্তুষ্টি কামনা করছি। আমি সরল সঠিক পথে চলার জন্য এবং শয়তান ও প্রবৃত্তির কুমন্ত্রণা হতে পরিত্রাণের জন্য তাওফীক কামনা করছি। আমি মহানবী (ﷺ)ের পবিত্র জন্ম বৃত্তান্ত বর্ণনার মাধ্যমে এমন মনোরম, সুসজ্জিত গালিচা বিছিয়ে দিচ্ছি; তাঁর মহান নসব নামা দিয়ে এমন মুক্তামালা রচনা করছি যা আশেকানদের কানে অনুপম শোভা ছড়াবে। আমি আল্লাহপাকের কাছে তাওফীক কামনা করছি কারণ আল্লাহ পাকের সাহায্য ও শক্তি ব্যতীত আর কোন সাহায্য ও শক্তি নাই।

ذكر اسماء اجداده الكرام صلى الله عليه وسلم,-

فَاقَوْلُ هُوَ سَيِّدُنَا مُحَمَّدُ بْنُ عَبْدُ اللهِ بْنُ عَبْدِ الْمُطَّلِبِ وَاسْمُهُ شَيْبَةُ الْحَمْدِ بْنُ هَاشِمٍ وَاسْمُهُ عَمْرُو بْنُ عَبْدِ مَنَافِ وَاسْمُهُ المُغِيْرَةُ بْنُ قُصَىٍ وَاسْمُهُ مُجَمِّعٌ سُمِّىَ بِقُصَىٍّ لِتَقَاصِيْهِ فِى بِلَادِ قُضَاعَةِ الْقَصِيِّه,-اِلَى اَنْ اَعَادَهُ اللهُ تَعَالَى اِلَى الْحَرَمِ اَلْمُحْتَرَمِ فَحَمَا حِمَاهُ,-اِبْنُ كِلَابٍ وَاسْمُهُ حَكِيْمٌ بْنِ مُرَّةَ بْنِ كَعْبٍ بْنِ لُوَىِّ بْنِ غَالِبِ بْنِ فِهْرٍ وَاسْمُهُ قُرَيْشٌ وَاِلَيْهِ

تُنْسَبُ الْبُطُوْنُ الْقُرَ شِيَّة,-وَمَا فَوْقَهُ كِنَانِيَّةٌ كَمَا جَنَحَ اِلَيْهِ الْكَثِيْرُ, وَارْتَضَاهُ,-اِبْنُ مَالِكِ بْنِ النَّضَرِ بْنِ كِنَانَةَ بْنِ خُزَيْمَةَ بْنِ مُدْرِكَةَ بْنِ اِلْيَاس,-وَهُوَ اَوَّلُ مَنْ اَهْدَى الْبُدْنَ اِلَى الرِّحَابِ الْحَرَمِيَّة وَسُمِعَ فِى صُلْبِهِ النَّبِيِّ الْاَكْرِم صَلَّ اللهُ عَلَيْهِ وَ سَلَّمَ ذَكَرَ اللهُ تَعَالَى وَلَبَّاهُ,-اِبْنُ مُضَرِ بْنِ نِزَارِ بْنِ مَعْدِ بْنُ عَدْنَان,-وَهَذَا سِلْكٌ نَظَمَتَ فَرَائِدَهُ بَنَانُ السُّنَّةِ السَّنِيَّةُ,-وَرَفْعُهُ اِلَى الْخَلِيْلِ اِبْرَاهِيْمَ عَلَيْهِ السَّلَام اَمْسَكَ عَنْهُ الشَّارِعُ وَاَبَاهُ,-وَعَدْنَانُ بِلَا رَيْبٍ عِنْدَ ذَوِىْ العُلُوْمِ النَّسَبِيَّةِ اِلَى الذَّبِيْح اِسْمَاعِيْلَ عَلَيْهِ السَّلاَمِ نِسْبَتُهُ وَمُنْتَهَاهُ,-فَاَعْظِمْ بِهِ مِنْ عِقْدٍ تَاَلَّقَتْ كَوَاكِبُهُ الدُّرِّيَّةُ وَكَيْفَ لَا وَالسَّيِّدُ الْاَكْرَمُ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَاسِطَتُهُ الْمُنْتَقَاهُ,-

 عَطِّرِ اللهم قَبْرَهُ الْكَرِيْمَ,-بِعَرْفٍ شَذِىٍّ مِنْ صَلَواةٍ وَتَسْلِيْمٍ,- اللهم صَلِّ وَسَلِّمْ وَبَارِكْ عَلَيْهِ .

(অতএব আমি বলছি) তিনি হচ্ছেন মুহাম্মাদ ইবনে আব্দুল্লাহ ইবনে আব্দুল মুত্তালিব, তাঁর আসল নাম শায়বাতুল হামদ, ইবনে হাশিম, তাঁর আসল নাম আমর, ইবনে আবদে মানাফ, তাঁর আসল নাম মুগিরা, ইবনে কুসাই, তাঁর আসল নাম মুজাম্মা, তাঁর নাম কুসাই রাখা হয় যেহেতু ক্বুদাআহ গোত্রের দূর দূরান্তের শহরগুলিতে তিনি ভ্রমণ করেছিলেন, অবশেষে আল্লাহ পাক তাঁকে পবিত্র হারাম শরীফে ফিরিয়ে আনেন এবং তিনি হরম শরীফের যথাযথ রক্ষণাব্বেণ করেন। কুসাই ছিলেন কিলাবের পুত্র, তাঁর আসল নাম হাকীম, ইবনে মুররাহ, ইবনে কাব, ইবনে লুওয়াই, ইবনে গালিব, ইবনে ফিহর, তাঁর আসল নাম কুরাইশ, কুরাইশ গোত্রের বিভিন্ন শাখাগুলিকে এই কুরাইশ উপাধির দিকেই সম্বন্ধ করা হয়েছে। তাঁর উধর্ক্ষতন গোত্র কেনানিয়্যাহ নামে অভিহিত, এটাই হচ্ছে অধিকাংশ আলিমগণের পছন্দনীয় মত, ফিহর হচ্ছেন ইবনে মারিক, ইবনে নাদ্বর, ইবনে কেনানাহ, ইবনে খুজাইমাহ, ইবনে মুদরিকাহ, ইবনে ইলিয়াছ, ইনিই হরম শরীফে সর্বপ্রথম কুরবানী দিয়েছিলেন এবং তাঁর পৃষ্টদেশ হতে মহানবী (ﷺ)ের জিকর এবং তালবিয়া বা লাব্বাইকা ধক্ষনি শুনা যেত। ইলিয়াছ হচ্ছেন ইবনে মুদার, ইবনে নাজার, ইবনে মাদ, ইবনে আদনান। মহানবী (ﷺ) তাঁর বংশষূত্র হযরত ইবরাহীম আলাইহিস সালাম পর্যন্ত বর্ণনা করে ক্ষান্ত হয়েছেন। ইলমুল আনসাবে অভিজ্ঞদের মতে আদনান ছিলেন ইসমাঈল আলাইহিস সালাম এর বংশের অন্তর্গত। এই বংশ কতইনা উত্তম যারা তারাকারাজির ন্যায় দেদিপ্যমান, আর কেনই বা হবে না এই বংশেই তো রয়েছেন আমাদের মহানবী মুহাম্মদ (ﷺ)।

نَسَبٌ تَحْسِبُ الْعُلَا بحُلَاهُ,

- قَلَّدَتْهَا نُجُوْمُهَا الْجَوْزَاءُ-

حَبَّذَا عِقْدُ سُوْدَدٍ وَفَخَارٍ،

اَنْتَ فِيْهِ الْيَتِيْمَةُ الْعَصْمَاءُ،

وَاَكْرِمْ بِهِ مِنْ نَسَبٍ طَهَّرَهُ اللهُ تَعَالَى مِنْ سِفَاحِ الْجَاهِلِيَّةِ,-

اَوْرَدَ الزَّيْنُ وَارَدةَُ الْعِرَاقِىُّ فِى مَوْرِدِ الْهَنِىِّ وَرَوَاهُ,

حَفِظَ الْاِلَهُ كَرَامَةً لِّمُحَمَّدُ اَبَائَهُ الْاَمْجَادَ صَوْنًا لِاسْمِهِ,-

تَرَكُوْا السِّفَاحَ فَلَمْ يُصِبْهُمْ عَارُهُ,-

مِنْ اَدَمَ اِلَى اَبِيْهِ وَاُمِّهِ,-

سَرَاةُ سَرَاى نُورُ النَّبُوَّةِ فِى اَسَارِيْرِ غُرَرِهِمُ الْبَهِيَّة,-

وَبَدَرَبَدْرُهُ فِى جَبِيْنِ,-

عَبْدِ الْمُطَّلِبِ وَابْنهِ عَبْدِ اللهِ,-

عَطِّرِ اللهم قَبْرَهُ الْكَرِيْمَ,-بِ

عَرْفٍ شَذِىٍّ مِنْ صَلَواةٍ وَتَسْلِيْمٍ,-

اللهم صَلِّ وَسَلِّمْ وَبَارِكْ عَلَيْهِ

মহানবী (ﷺ)'র বংশ নিজ মহিমায় উচ্চ মর্যাদা লাভ করেছে। যে উচ্চ মর্যাদার মহান মালা পরিধান করেছেন ঐ বংশের স্বনামধন্য তারকাগণ। কতইনা উত্তম নেতৃত্ব ও গৌরবের সে মালা। (ইয়া রাসূলাল্লাহ) আপনি সেই বংশের পুত:পবিত্র একমাত্র দুর্রে ইয়াতীম।

কতইনা মহান সেই বংশ, আল্লাহ যে বংশকে জাহিলিয়াতের সমস্ত পঙ্খিলতা ও ব্যভিচার থেকে পাক রেখেছেন। হযরত জাইনুদ্দীন জাকারিয়া ইরাক্বী (রাহ.) তাঁর রচিত (মীলাদ শরীফের) আল-মাওরিদুল হানি নামক কিতাবে এ বিষয়ে বিষদ আলোচনা করেছেন।

আল্লাহ রাব্বুল আলামীন হযরত মুহাম্মদ (ﷺ) এঁর সম্মানে, তাঁর নামের ওসিলা ও বরকতে তাঁর পূর্ব পূরুষ (দাদা,-দাদী ও নানা,-নানী) দেরকে (শিরক সহ যাবতীয় পাপাচার থেকে) হেফাজত করেছে। জাহিলিয়াতের জিনা ব্যভিচার ত্যাগ করার কারণে হযরত আদম আলাইহিসসালাম থেকে নিয়ে তাঁর বাবা হযরত আব্দুল্লাহ (রাদ্বি:) এবং তাঁর মা জননী হযরত আমিনা (রাদ্বি:) পর্যন্ত কাউকে জিনা ব্যভিচারের দুর্নাম স্পর্শ করতে পারেনি।

মহানবী (ﷺ)'র পূর্বপুরুষগণ নিজ নিজ জামানার নেতৃস্থানীয় এবং পুত,-পবিত্র ব্যক্তিত্ব ছিলেন, তাঁদের ললাটের চি‎ে‎হ্ন ছিল নূরে নবুওয়তের আমানত বিদ্যমান। যে আমানতের পূর্ণিমাশশীর কিরণে আলেময় ছিল খাজা আব্দুল মুত্তালিব এবং তদীয় পুত্র হযরত আব্দুল্লাহ (রাদ্বি:) র মুবারক পেশ।

ذكر ار هاصات قبل الولادة الشريفة,-

وَلَمَّا اَرَادَ الله تَبَارَكَ وَتَعَالَى اِبْرَازَ حَقِيْقَتِهِ الْمُحَمَّدِيِّةِ,-وَاِظْهَارَهُ جِسْمً وَرُوْحًا بِصُوْرَتِهِ وَمَعْنَاهُ,- نَقَلَهُ اِلَى مَقَرَّهِ مِنَ صَّدَفَةِ اَمِنَةَ الزُّهْرِيَّة,- وَخَصَّهَا القَرِيْبُ المُجِيْبُ بِاَنْ تَكُوْنَ اُمًّا لِّمُصْطَفَاهُ,-وَنُوْدِىَ فِى السَّمَوَاتِ وَالْاَرْضِ بِحَمْلِهَا لِاَنْوَارِهِ الذَّاتِيَّةِ,-وَصَبَا كُلُّ صَبٍّ لِهُبُوْبِ نَسِيْمِ صَبَاهُ,- وَكُسِيَتِ الْاَرْضُ بَعْدَ طُوْلِ جَدْبِهَا مِنَ النَّبَاتِ حُلَلًا سُنْدُسِيَّة وَاَيْنَعَتِ الثِّمَارُ وَاَدْنَى الشَّجَرَ لِلْجَانِى جَنَاهُ,- وَنَطَقَتْ بِحَمْلِهِ كُلُّ دَابَّةٍ لِقُرَيْشٍ بِفِصَاحِ الْاَلْسُنِ العَرَبِيَّةِ,- وَخَرَّتِ الْاَسِرَّةُ, - وَالْاَصْنَامُ عَلَى الْوَجُوْهِ وَالْاَفْوَاهُ,- وَتَبَاشَرَتْ وَحُوْشُ الْمَشَارِقِ وَالْمَغَارِبِ وَدَوَابُّهَا الْبَحْرِيَّةُ,- وَاحْتَسَّتِ العَوَالِمُ مِنَ السُّرُوْرِ كَأسَ حُمَيَّاهُ,-وَبَشَّرَتِ الْجِنُّ بِاظِلَالِ زَمَنِهِ وَانْتَهَكَتِ الْكَهَانَةُ وَرُهِبَتِ الرُّهْبَانِيَّةُ,- وَلَهِجَ بِخَبرِهِ كُلُّ حِبْرٍ خَبِيْرٍ وَفِى حُلَا حُسْنِهِ تَاهُ,- وَاُوْتِيَتْ اُمُّهُ فِى الْمَنَامِ فَقِيْلَ لَهَا اِنَّكِ قَدْ حُمَلَتِ بِسَيِّدِ الْعَالَمِيْنَ وَخَيْرِ الْبَرِيَّةِ,- فَسَمِّيْهِ اِذَا وَضَعْتِهِ مُحَمَّدًا فَاِنَّهُ سَتُحْمَدُ عُقْبَاهُ,-

عَطِّرِ اللهم قَبْرَهُ الْكَرِيْمَ,-بِعَرْفٍ شَذِىٍّ مِنْ صَلَواةٍ وَتَسْلِيْمٍ,- اللهم صَلِّ وَسَلِّمْ وَبَارِكْ عَلَيْهِ,-

যখন আল্লাহ রাব্বুল আলামীন তাঁর হাকীকতে মুহাম্মাদী উন্মুক্ত করতে এবং তাঁকে দেহ ও আত্মার সমন্বয়ে, স্বআকৃতিতে বিশ্ববাসীর সামনে প্রকাশ করতে মনস্থ করলেন তখন সেই নূরে মুহাম্মদীকে (হযরত আব্দুল্লাহর ললাট দেশ হতে) হযরত আমিনার রেহেমে (আমানত) স্থানান্তর করলেন এবং তাঁকে (হযরত আমিনা) নবী মুস্তাফার মা জননী হিসেবে মনোনীত করলেন। আসমান জমিনে এই সংবাদ জানিয়ে দেয়া হল যে, নূরে মুহাম্মদী হযরত আমিনার কাছে স্থানান্তর করা হয়েছে। দীঘৃ দুর্ভিক্ষপীড়িত আরব দেশে মঙ্গল সমীরণ প্রবাহিত হতে লাগল, বৃক্ষলতার মুকুল অঙ্কুরিত হল, ফলে ফুলে জমিন ভরপুর হয়ে গেল, বৃক্ষ সমূহ ফল সম্ভারে নুয়ে পড়ল। কুরাইশদের চতুষ্পদ জন্তগুলী পরস্পর বিশুদ্ধ আরবী ভাষায় বিবি আমেনার গর্ভের সংবাদ বলাবলি করতে লাগল, বিভিন্ন রাজা,-বাদশাহর সিংহাসন উল্টে পড়ে গেল এবং মূর্তিগুলী উপুড় হয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়ল। তামাম দুনিয়ার সমস্ত জীব,-জন্তু এমনকি জলচর প্রাণীগুলো পর্যন্ত নবী মুস্তাফার শুভাগমণের বিষয় পরস্পর আলাপ আলোচনা করতে লাগল। সমগ্র বিশ্ববাসী আনন্দ শরবত পানে মত্ত হল, জ্বিন জাতিও সুসংবাদ প্রচার করতে লাগল যে, মুহাম্মদ (ﷺ)ের জন্মের শুভ লগ্ন সমাগত হয়েছে। জ্যোতিষীগণের গণনা এবং বৈরাগীদের যপতপ ব্যর্থ হল, জ্ঞানী (বুযুর্গ ব্যক্তি) গণ নবীজীর শুভাগমনের সংবাদে আপ­ুত হলেন এবং তাঁর পবিত্র অবয়বের আলৌকিক প্রভা দর্শন করে বিস্ময়ে বিমুগ্ধ হলেন। তাঁর মা জননী (হযরত আমিনা) কে স্বপ্নযোগে সুসংবাদ দেয়া হল যে, জগৎবরেণ্য, সৃষ্টির সেরা সন্তান আপনি গর্ভে ধারণ করেছে, তিনি যখন ভূমিষ্ট হবেন তখন নাম রাখবেন মুহাম্মদ ((ﷺ) ), কারণ শীঘ্রই তিনি প্রশংসিত হবেন।

وذكر وفات عبد الله والد رسول الله صلى الله عليه وسلم

وَلَمَّا تَمَّ مِنْ حَمْلِهِ صَلىَّ الله عَلَيْهِ وَسَلَّمَ شَهْرَانِ عَلى اَشْهَرِ الْاَقْوَال الْمَرْوِيَةُ,-تُوُفِىَ بِالمَدِينَةِ الشَّرِيفَةِ المُنَوَّرَةِ اَبُوْهُ عَبْدُ الله وَكَانَ قَدِاجْتَازَ بِاَخْوَالِهِ بَنِى عَدَىٍّ مِنَ الطَّائِفَةِ النَّجَّارِيَةِ,-وَمَكَثَ فِيْهِمْ شَهْرًا سَقِيْمًا يُعَانُوْنَ سُقْمَهُ وَشَكْوَاهُ,-وَلَمَّا تَمَّ مِنْ حَمْلِهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَلَى الرَّاجْحِ تِسْعَةُ اَشْهُرِ قَمَرِيَّةُ,- وَاَنَ للِزَّمَانَ اَنْ يَّنْجَلِى عَنْهُ صَدَاهُ,-حَضَرَتْ اُمَّهُ لَيْلَةَ مَوْلُدِهِ اَسِيَّةُ وَمَرْيَمُ فِى نِسْوَةٍ مِن الحَظِيْرَةِ الْقُدْسِيَّةُ,-وَاَخَذَهَا الْمَخَاضُ فَوَلَدَتْهُ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ نُوْرَا يَتَلَأ لَاُ سِنَاهُ,-

যখন নবী পাক (ﷺ)'র মাতৃগর্ভে মাত্র দুই মাস পূর্ণ হয়েছে তখন তাঁর পিতা (হযরত আব্দুল্লাহ) মদীনা শরীফে ইন্তেকাল করেন। ব্যবসায়িক একটি কাফেলার সাথে থাকা অবস্থায় তিনি অসুস্থ হয়ে পড়লে তাঁর মাতুলালয় বনী আদি গোত্রে এক মাস অবস্থানের পর তিনি সেখানে ইন্তেকাল করেন।

যখন নয়টি চন্দ্র মাস পূর্ণ হয়ে গেল এবং নবী পাকের জন্মলগ্ন নিকটবর্তী হয়ে গেল তখন হযরত আমিনার সেবা যত্নের উদ্দেশ্যে হযরত আছিয়া এবং হযরত মারিয়াম (عليه الصلاة والسلام) হাজিরায়ে কুদসিয়া (বেহেশতের একটি জায়গা) থেকে আরো কতিপয় মহিলা সহযোগে হযরত আমিনার খেদমতে হাজির হলেন। সময় মত তাঁর প্রসব ব্যথা আরম্ভ হল এবং নূর নবী মুহাম্মদ (ﷺ) দুনিয়ার বুকে শুভাগমন করলেন।

صلى الله على محمد,- صلى الله عليه وسلم

طَلَعَ الْبَدْرُ عَلَيْنَا,- مِنْ ثَنِيَاتِ الْوَدَاعِ,-.

وَجَبَ الشُّكْرُ عَلَيْنَا – مَا دَعَا لِلّهَِ دَاعِ,-

اَيُّهَا الْمَبْعُوْثُ فِيْنَا,- جِئْتَ بِالْاَمْرِ الْمُطَاعِ,-

وَقَدْ لَبِسْنَا ثَوْبَ عِزٍّ,- بَعْدَ تَلْفِيْقِ الرَّقَاعِ –

وَرَضَعْنَا ثَدْيَى وَصْلٍ- قَبْلَ اَيَّامِ الرَّضَاعِ

كُنْ شَفِيْعِى يَا حَبِيْبِى – يَوْمَ حَشْرٍ وَاِجْتِمَاعِ

رَبَّنَا صَلِّ عَلَى مَنْ,- حَلَّ فِى خَيْرِ الْبِقَاعِ,-

وَاسْبُلِ السِّتْرَ عَلَيْنَا – يَا مُجِيْبَ كُلِّ دَاعِ,-

وَعَلَى عِشْقِ الْجَمَالِ,- طَبَّعَ اللهُ الطِّبَاعِ,-

وَصَلَوَةُ اللهِ عَلَى اَحْمَدِ,- مَا سَعَى اللهِ سَاعِ,-

আরবী ক্বিয়াম-

 يَا نَبِى سَلَامُ عَلَيْكَ,- يَا رَسُولْ سَلَامُ عَلَيْكَ

 يَاحَبِيْب سَلَامُ عَلَيْكَ,- صَلَوَاتُ الله عَلَيْكَ

 اَشْرَقَ الْبَدْرُ عَلَيْنَا,- وَاخْتَفَتْ مِنْهُ الْبُدُوْرِ

 مِثْلَ حُسْنِكْ مَا رَاَيْنَا,- قَطُّ يَا وَجْهَ السُّرُوْرِ

 اَنْتَ شَمْسٌ اَنْتَ بَدْرٌ,- اَنْتَ نُوْرٌ فَوْقَ نُوْرِ

 اَنْتَ اِكْسِيْرُ وَغَالِى,- اَنْتَ مِصْبَاحُ الصُّدُوْرِ

 يَا حَبِيْبِى يَامُحَمَّد,- يَاعَرُوْسَ الخَافِقَيْنِ

 يَامُؤَيَّدْ يَامُمَجَّدْ,- يَا اِمَامَ الْقِبْلَتَينِ

 مَن يَّرَى وَجْهَكَ يَسْعَد,- يَاكَرِيْمَ الْوَالِدَيْنِ

 حَوْضُكَ الصَّافِى المُبَرَّدْ,- وِرْدُنَا يَوْمَ النُّشُوْرِ

 مَا رَايْنَا الْعِيْسَ حَنَّتْ,- بِالسُّرَاى اِلاَّ اِلَيْكَ

 وَالْغَمَامَةُ لَكَ اَظَلَّتْ,- وَالْمَلَا صَلُّو عَلَيْكَ

 وَاَتَاكَ الْعُوْدُ يَبْكِى,- وَتَذَلَّلْ بَيْنَ يَدَيْكَ

 وَاسْتَجَارَتْ يَا حَبِيْبِى,- عِنْدَكَ الظَّبْىُ النُّفُوْرِ

 عِندَ مَا شَدُّوا الْمَحَامِلَ,- وَتَنَادَوْا لِلرَّحِيْلِ

 جِئْتُهُمْ وَالدَّمْعُ سَائِلٌ,- قُلْتُ قِفْ لِى يَادَلِيْل

 وَصَلَوَتُ اللهِ عَلَى اَحْمَدْ,- عِدَّةَ اَحْرُفِ السُطُوْرِ

 اَحْمَدُ الْهَادِىْ مُحَمًّدُ,- صَاحِبُ الْوَجْهِ الْمُنِيْرِ

 يَا رَبِّ صَلِّ وَسَلِّمْ دَائِمًا اَبَدَا,- عَلى حَبِيْبِكَ خَيرِ الخَلْقِ كُلِّهِم,-


بَلَغَ العلى بكماله كشف الدجى بجماله

حَسُنَتْ جَمِيْعُ خِصَالِهِ صَلُّوا عَلَيْهِ وَاَلِهِ

اِنْ نِلْتَ يَارِيْحَ الصَّبَا يَوْمًا اِلَى اَرْضِ الْحَرَامِ

بَلِّغْ سَلاَمِى رَوْضَةً فِيْهَا النَّبِىُّ الْمُحْتَرَمِ

مَنْ وَجْهُهُ شَمْسُ الضُّحَى مَنْ خَدُّهُ بَدْرُ الدَّجَى

مَنْ ذَاتَهُ نُوْرُ الْهُدَاى مَنْ كَفُّهُ بَحْرُ الْهِمَمِ

يَا رَحْمَةَ لِّلْعَالَمِيْنَ اَنْتَ شَفِيْعُ الْمُذْنِبِيْنَ

اَكْرِمْ لَنَا يَوْمَ الْحَزِيْنَ فَضْلَا وًّجُوْدً اوًّ الْكَرَمِ

يَا مُصْطَفَى وَالْمُجْتَبَى : اِرْحَمْ عَلَى عِصْيَانِنَا

مَجْبُوْرَةٌ اَعْمَالُنَا:طَمْعًا وَذَنْبًا وَالظُّلَمِ

------------------------------------------------------

মিলাদুন্নবী (ﷺ) উপলক্ষে যারা গ্রন্থ লিখেছেন
____________________
মিলাদুন্নবী (ﷺ) উপলক্ষে যারা গ্রন্থ লিখেছেন

১. তাকয়ীদাতু আলা মাওলিদিন নাবী লিআহমদ দারিরী - মুহাম্মদ বিন

২. আমির আল মালাকী ১২৩২হিজরী।

৩. তুহফাতুল বাশির আলা মাওলিদে বিন হাযর ইব্রাহীম বিজয়ূরী মীলাদুন্নবী১২৭৭

৪. হিজরী।

৫. হাছাবী, আবি ওফা ফি মাওলিদিল মুস্তফা ইব্রাহীম বিন আলী বিন ইব্রাহীম বিন ওফা আল ইরাকী ৮৭৭ হিজরী।

৬. দুরাজুদ দুরুর ফি মীলাদি সাইয়্যিদিল বাশির- আছিলুদ্দিন আব্দুল্লাহ বিন আব্দুর রহমান শিরাজী ৮৮৪ হিজরী।

৭. আদ্দুরূল মানাজ্জাম ফি মাওলিদিন নাবীয়িল আয়জাম- মুহাম্মদ বিন উছমান লুওলুয়ী দামেশকী ৮৬৭ হিজরী।

৮. আদদুররাতুছ ছানীয়া ফি মাওলিদি খাইরিল বারীয়্যা - হাফীজ সালাউদ্দীন খলিল বিন কাইকালদী আলাভী ৭৬১ হিজরী।

৯. জিকরে মাওলিদু রাসূলুল্লাহ- হাফিজ ইবনে কাছীর ৭৭৪ হিজরী।

১০. আর রাদ্দু আলা ইনকারিল কিয়াম ইন্দা ওলাদাতিহ - মাগলুতাবী বিন কালিজ ৭৬২ হিজরী।

১১. মাওরিদুস সাদী ফি মাওলিদিল হাদী ইবনে নাছির উদ্দীন দিমাসকী ৮৪২ হিজরী।

১২. মাওলিদুন নববী ফি ছালাছাতি আছফার

১৩. মাওলিদুন নবী -কামালুদ্দীন আবি মুয়াল্লি মুহাম্মদ বিন আলী বিন আব্দুল ওয়াহিদ আজ্জামলাকানী ৭২৭ হিজরী।

১৪. আল মুৃনতাকী ফি মাওলিদিন নাবীয়্যিল মুস্তফা - কাজারনী সায়িদ উদ্দীন মুহাম্মাদ বিন মাসউদ বিন মুহাম্মদ ৭৫৮ হিজরী।

১৫. মাওলিদুন নাবী (ﷺ) - ফকিহ আন্নাহুবী হুসাইন বাহরূবী ৯৯৪ হিজরী।

১৬. ইরতেশাফুত তারিব ফি সাইয়্যিদিল আজামী ওয়াল আরব- মুহাম্মদ বি ইবনে জাবির। ৭৮০ হিজরী।

১৭. আরফুত তারিফ ফি মাওলিদিশ শরীফ মুহাম্মদ বিন মুহাম্মদ বিন জাজরী ৮৩৩ হিজরী।

১৮. আল মাওলিদ -মুহাম্মদ বিন আহমদ বিন জাবির আন্দালুছী ৭৮০ হিজরী।

১৯. মাওলিদুন্নাবী-কামালুদ্দীন আবিল মুয়াল্লি মুহাম্মদ বিন আলী বিন আব্দুল ওয়াহিদ জামলাকানী৭২৭ হিজরী।

২০. আল আখবার বিওয়াফাতিল মুখতার, ইবনে নাছির উদ্দীন দিমাস্কী ৮৪২ হিজরী।

২১. আল উনজার বি ওয়াফাতিন নাবীয়্যিল মুস্তফা আল মুখতার - জইনুদ্দিন আব্দুর রহমান বিন আবি বকর দাউদ সালেহী আদ দিমাসকি। ৮৫৬ হিজরী

২২. তুহফাতুল আবরার লি ওয়াফাতিল মুখতার - মুহাম্মদ বিন উছমান লুওলুয়ী আদ দিমাসকী। ৮৬৭ হিজরী

২৩. ছালাওয়াতিল কাইয়্যিব বি ওয়াফাতিল হাবিব- আবি বকর বিন মুহাম্মদ আল হুসানী। ৮২৯ হিজরী।

২৪. ছালাওয়াতিল কাইয়্যিব বি ওয়াফাতিল হাবিব আবি ইবনে নাসির উদ্দিন মুহাম্মদ বিন আব্দুল্লাহ বিন মুহাম্মাদ আল কাইছি আদ দিমাসকি ৮৪২ হিজরী।

২৫. আল কাওয়াকিবুদ দুররিয়্যাতু ফি ওয়াফাতি খাইরিল বারিয়্যাহ - আবি বকর আব্দুর রহমান বিন মুহাম্মদ আল বাসতামী ৮৫৮ হিজরী।

২৬. মাওলিদিন নাবিয়্যি (ﷺ) - সুলাইমান বিন আউদ বাশা বিন মাহমুদ বারুছী।৭৮০ হিজরী

২৭. আছনিল মুস্তফা ফি মাওলিদিল মুস্তফা - ইউসুফ জাদা রুমী। ১১৬৭ হিজরী

মাওলিদুন্নবী (ﷺ) -বাদায়ী কাশগরী নকশবন্দী ১১৭৪ হিজরী

২৮. মাওলিদুন নাবী (ﷺ) মানজুমাতু তারকিয়া - শাইখ আব্দুল কারিম আদরানতুবী আল খালুতী ১১৭৪ হিজরী।

২৯. মাওলিদুল হাদীয়্যিল বাশিরুন নাজির (ﷺ) ৮৮৫১১৭৪ হিজরী।

৩০. শরহে আলা মাওলিদুন নজম আল খাইতি আলী বিন আব্দুল কাদির নাবতানী। ১০৬১ হিজরী

৩১. তানিছু আরবাবুস সাফা ফি মাওলিদিল মুস্তফা- ইবনে সালেহ আমির সানআনী। ১১৭১ হিজরী

৩২. মাওলিদুন্নবী (ﷺ) -হাবিব উমর আব্দুর রহমান বালাবী। ৮৮৯ হিজরী

৩৩. নাজমুদ দরুর ফি মাদহি সাইয়্যিদিল বাশির (ﷺ) আব্দুল্লাহ আতারী ৭০৭ হিজরী

৩৪. মানাছিকুল হুজ্জাযিল মুনতাকি মিন সিরুমাওলিদুন্নাবীয়্যিল মুসতফা (ﷺ) - মুহাম্মদ বিন মাসউদ কাজারনী৭৫৮ ১১৭৪ হিজরী

৩৫. আন নাফহাতুল আম্বারিয়াতু ফি মাওলিদি খাইরিল বারিয়্যাতু (ﷺ) - ফিরূজ আবাদী ।৮১৭ হিজরী

৩৬. আল রাফজুল জামিল ফি মাওলিদিন নাবীয়্যিল জালিল মুহাম্মদ বিন ফখরুদ্দীন উসমান লুওলুবী ৮৬৭ হিজরী

৩৭. আল জামিউল আযহারিল মুনির ফি জিকরি মাওলিদিল বাশিরুন নাজির - নুসুহী আররুমী। ১১৩০ হিজরী

৩৮. মাওলিদুন্নবী (ﷺ) সাইয়্যিদ, মুহাম্মদ বিন হাসানী জাফরী।১১৮৬ হিজরী

৩৯. ওয়াল হাদী হাদীয়ি মুহাম্মাদ বিন উবাদাতা আদুবী ১১৯৩ হিজরী

৪০. আল জাওয়াহিরিছ ছানিয়াতি ফি মাওলিদি খাইরিল বারিয়্যাতি সাল্লাল্লাহু ্আলাইহি ওয়া সাল্লাম, মুহাম্মদ বিন আলী আল মিছরী সানুয়ানী।১২৩৩ হিজরী

৪১. তানবীরুল উকুল ফি আহাদিসু মাওলিদুর রাসূল- আরিফ বিল্লাহ মুহাম্মদ বিন মুস্তফা আল বারজিঞ্জি। ১২৫৪ হিজরী

৪২. মাওলিদুন্নবী (ﷺ) -

৪৩. ইসবাতিল মুহাসিনাতি ফি তিলাওয়াতি মাওলিদু সাইয়্যিদি সাদাতি -ফাওজি বিন আব্দুল্লাহ রুমী আশ শাহিরূ বি মুফতি আদরানি ১৩১৮ হিজরী।

৪৪. হাসুলুল ফারজ ওয়া হালুলুল ফারজ ফি মাওলিদিমিন আনজিল আলাইহি আলামনাশরাহ - সাইয়্যিদ বি ইবনুল মাওয়াকিয় আল হুসাইনি আল কাদরী ১৩২১হিজরী।

৪৫. মানজুমাতু ফি মাওলিদুন নাবী (ﷺ) মুস্তফা বিন ইসমাইল শারেহ আল আজমীরী।১২২৮হিজরী।

৪৬. আদ দুরুরল মুনাজ্জাম ফি মাওলিদিন নাবিয়্যিল আ“জম- আবুল আব্বাস আহমদ আকলাসী আনদালুসী ৫৫০হিজরী।

৪৭. আল ইলমুল আহমদী ফি মাওলিদিল মুহাম্মদি -- শিহাবুদ্দীন আহমদ আল হালুয়ানী।১৩০৪হিজরী।

৪৮. মাওলিদুল মুস্তফা আদনানী আতাইয়্যা বিন ইব্রাহিম শাইবানী ১৩১১ হিজরী।

৪৯. আদ দুরুল মুনাজ্জাম ফি মাওলিদুন নাবীয়িল মুয়াজ্জাম-- আবিল কাসিম- মুহাম্মদ বিন উছমান লুওলুবী ৮৬৭ হিজরী

৫০. সিরাজুম মুনির। মুফতী আমীমুল ইহসান মুজাদ্দেদে বরকতী হানাফীرحمة الله عليه (১৩৯৪,-সন)

৫১. আল মিহনাজুল মুবিনুল কাউয়ী লিমাওলিদিন নাবাবী- আবুল হাছান আল বিকরী।

৫২. ইরতিসাফুত তারিব ফি মাওলিদি সাইয়্যিদিল আজামি ওয়াল আরব - মুহাম্মদ ইবনে জাবির।

৫৩. মাওলিদি সাইয়্যিদি- আব্দুর রহমান আল খাইতি।

৫৪. ফতহুস সামাদুল আলাম আলা মাওলিদুস শাইখ আহমদ বিন কাসিম- শাইখ জায়ী।

৫৫. আল ইবরুজুদ্দুনিয়া ফি মাওলিদি সাইয়্যিনা মুহাম্মদ সাইয়্যিদ আদানী- শাইখ জায়ী।

৫৬. বাখিয়াতুল আওয়াম ফি শরহে মাওলিদিল আনাম শরহে আলা মাওলিদি ইবনে জাওজী- শাইখ জায়ী।

৫৭. তারগীবুল মুশতাকীন লিবায়ানি মানজুমাতু সাইয়্যিদ বারজনজী ফি মাওলিদি সাইয়িদিল আওয়ালীন ওয়াল আখীরীন- শাইখ জায়ী।

৫৮. মাওলিদিস সাইয়িদ জাফর বিন হুছাইন বরজিনজী।

৫৯. মাওলিদে শাইখ ইবনে দিবা হান্বলী।

৬০. মাওলিদে মানজুম -আরিফ বিল্লাহ হামাদী জালাবী।

৬১. আল মুকামাতুল আলিয়া ফিন্নাশাওতুল ফাখিমাতুন নবুওয়াহ- ইমাম মাহমুদ মুহাম্মাদ খতিব আস সুবুকী।

৬২. মীলাদির রাসূল - হাছান বাহরুয়ারী।

৬৩. মাওলিদে শাইখ আব্দুর রাজ্জাক আলকানাবী।

৬৪. সাইফুল ইসলাম আলা মানিয়িল মাওলিদে ওয়াল কিয়াম- আব্দুল কাদির বদায়ূনী।

৬৫. ইজাকাতুল আছাম লিমানিয়িল মাওলিদে ওয়াল কিয়াম- নকী আলী বেরলবী।

৬৬. কিস্সাতু মাওলিদ- শাইখ আলী আল হিন্দী।

৬৭. মাওলিদে নাসির জৈনপুরী।

৬৮. মাওলিদে আমির মিনায়ী আল হিন্দী।

৬৯. আনওয়ারুল আহমদী ফি মাওলিদুন নাবাবী -আনওয়ার উল্লাহ হায়দরী আবাদী।

৭০. তুহফাতুল মুহিব্বিন বি মাওলিদিল হাবীবি রাব্বিল আলামীন -আব্দুল্লাহ মাদরাছী আল হিন্দী।

৭১. ওয়াজীফাতুল কাবুল ফি তায়ীনি মাওলিদুর রাসুল- আলী কাবীর ইলাহী আবাদী।

৭২. ইশবায়ূল কালাম ফি ইসবাতিল মাওলিদি ওয়াল কিয়াম- ছালামাতুল্লাহ কানপুরী।

৭৩. রিসালাতাইনি ফি কিস্সাতুল মাওলিদ - ছালামাতুল্লাহ কানপুরী।

৭৪. আল মুনতাখাবুল মুসতফা ফি আখবারী মাওলিদিল মুস্তফা- হাবিব আব্দুল কাদীর হাদরামী

৭৫. মাওলিদুন নাবী (ﷺ) - ফকিহ নহবী হাছান বাহরুবী।

৭৬. মাওলিদে শাইখ হাছান মুহাম্মাদুল আজিব।

৭৭. মাওলিদে সালেহ উদ্দীন সাফাদী খলিল বিন আইবেক।

৭৮. মাওলিদুন্নবী (ﷺ) - ফকিহ আনিছ তালুবী ১৯০৯ ইসাঈ।

৭৯. মাওলিদে শাইখ আলী হাবশী।

৮০. আল ইবরিজুদ্দানী ফি মাওলিদে সাইয়্যিদুনা মুহাম্মাদ আল আদানী - মুহাম্মদ নুরী জায়ী।

৮১. মাওয়াইদুল কিরাম লিমাওলিদুন নাবী আলাইহিস সালাতু ওয়া সাল্লাম, - ইব্রাহীম হা’বারী আল খলিল সাফি। ইবনে সিরাজ

৮২. মাওলিদে শরফুল আনাম।

৮৩. মাওলিদে হুছনুল খাতাম - শরীফ হিন্দী।

৮৪. তাফদিলি লাইলাতিল মাওলিদু আলা লাইলাতুল কাদরি আহমদ বিন মুহাম্মদ বিন আলহাজ সালামী।

৮৫. হাদীয়াতুল মুহিব্বিন ফি মীলাদী সাইয়্যিদিল মুরসালীন -তাহামী কানুনী।

৮৬. মাওলিদে শাইখ আব্দুল কাদির বিন সাওদাত।

৮৭. আনওয়ারুল আয়িহ বিমাওলিদুর রাসূলুল খাতিমুল ফাত্তাহ - মাওলাবী কাবির ইবনে যাইদানী ।

৮৮. রেসালাতু ফি মাছআলাতিল কিয়ামি ফি মাওলিদি- আহমদ ইবনে মাওয়াজী।

৮৯. ইছআফুর রাগিবীন বিমাওলিদি সাইয়্যিদিল মুরসালিন- আব্দুস সামাদ কানুনী।

৯০. মাওলিদে শাইখ মুহাম্মদ আল মাগরিবী ওয়া হুয়া মাওলিদে সুফী ।

৯১. শারুকীল আনওয়ার ফি মাওলিদিল মুখতার (ﷺ) - আব্দুল ফাত্তাহ বিন মুহাম্মদ খতিব আল হাছানী।

৯২. আত তা’য়রীফু বিল মাওলিদিশ শরীফ- মুহাম্মদ বিন মুহাম্মদ বিন জাযরী ৮৩৩ হিজরী।

৯৩. আরফুত তারীফ ফি মাওলিদিশ শারীফ- লিছ ছাবিক।

৯৪. জামিয়ূল আছার ফি মাওলিদিল মুখতার ইবনে নাছির উদ্দিন দিমাসকী ৮৪২ হিজরী।

৯৫. আনওয়ারুছ ছাতেয়া ফি মাওলিদুন নাবয়্যিল জামি’ -মুহাম্মদ মাজযুব বিন কামারূদ্দীন।

৯৬. মাওলিদুল আলী আয যাহিরাতি ওয়াল ফসূসালফায়িকাতি- মুহাম্মদ মাজযুব বিন কামারূদ্দীন।

৯৭. আন নাফহাতুল লাইলাতি ফি জিকরি মাওলিদিল খাইরিল বারিয়্যাহ - মুহাম্মদ মাজযুব বিন কামারূদ্দীন।

৯৮. আল আকিদাতুল মুনাজ্জাম ফি জিকরি মাওলিদির রাসূলুল মুকাররাম - মুহাম্মদ মাজযুব বিন কামারূদ্দীন।

৯৯. কানজুর রাগিবীনিল আফাতি ফির রামাযি ইলাল মাওলিদিল মুহাম্মাদী ওয়াল ওয়াফাতি - বুরহানুদ্দিন ইব্রাহিম বিন মুহাম্মদ আন নাজি আদদামিস্কী ৯০০ হিজরী ।

১০০. আল ফাইদ্বুর রাব্বানী ফি মাওলিদুত তাহিরুল আদানী- শাইখ আব্দুল্লাহ বিন মুহাম্মদ বা আব্বাদি ।

১০১. কিতাবু মাওলিদিল কাবির - আরিফ বিল্লাহ শরীফ ইউসুফ বিন মুহাম্মদ আমিন হিন্দী ।

১০২. কিতাবুল মাওলিদিস সাগির আরিফ বিল্লাহ শরীফ ইউসুফ বিন মুহাম্মদ আমিন হিন্দী।

১০৩. মাওরিদুল বাদাবী ফি মাওলিদিন নবাবী- সাইয়্যিদ আহমদ বিন আহমদ বাদাবী ইবনে সালেহ বিন আলাবী জামালুল লাইল।

১০৪. মাওলিদুন নাবী (ﷺ) - ফকিহ আনিছ তালুবী ১৯০৯ হিজরী ।

১০৫. মানজুমাতুল হামীদিয়াতু ফি কিস্সাতু খাইরিল বারিয়্যাহ - আব্দুল হামিদ ।

১০৬. শুরুকুল আনওয়ার ফি মাওলিদিল মুখতার (ﷺ) - আব্দুল ফাত্তাহ বিন মোহাম্মাদ খতিব হাছানী ।

১০৭. বাশায়িরূল আখইয়ার ফী মাওলিদিল মুখতার - শাইখ মুহাম্মদ মাজি আবুল আজাইম।

১০৮. আল বিজয়ুরী আলা মাওলিদিদ দরদির ।

১০৯. ইকদুল জাওহার ফি মাওলিদিন নাবিয়্যীল আজহার- সাইয়্যিদ জাফর বিন হুসাইন আলবারজিঞ্জি আল হুসাইনি।

১১০. ইফহামুল মায়ানী মিন কালাশিল আউয়ালূ ফি বায়ানি মা ওয়াকায়া ফি শাহরী রাবিউল আউয়াল - লেখক ওজ্ঞাত।

১১১. মাজমাউল লতিফ উনসী ফি সাইগুল মাওলিদুন্নবীয়ীল কুদসী -ড.আসিম কাইয়ালী।

১১২. ফি রিহাবুজ ঝিকরী মাওলিদির রাসূলিল আয়জাম - শাইখ তাহির বাদুবী।

১১৩. ফাতহুল রাতিফ শরহে নজমুল মাওলিদিশ শরীফ ওয়াহুয়া শরহে আলা মাওলিদে বারজিঞ্জি - মুস্তফা বিন মুহাম্মদ আফিফ শাফি।

১১৪. মাওলিদুন্নবী (ﷺ) - আব্দুল্লাহ কাশগরী

১১৫. মাওলিদে কানজুল আফা -বাজী

১১৬. ফতহুল্লাহি ফি মাওলিদি খাইরি খালকিল্লাহ - আবুল ফজল ফাতহুল্লাহ বিন আবি বকর বানানী

১১৭. তাফরিজুল আশিকিন ফি মীলাদি সায়্যিদিল মুরসালিন,হাছান কাকুরবী

১১৮. কিরাছাহ ইবনে ইবাদ ফি মাওলিদ।

১১৯. মাওলিদি খাইরিল আনাম সাল্লাল্লাহু আলাইহিস ওয়া সাল্লাম ইব্রাহিম বিন আব্দুল কাদির রাইয়াহী।

১২০. মাওরিদুজ জামান শরহে মাওলিদি সাইয়্যিদি ওয়ালিদু আদনান (ﷺ) - ইবনে কুদুরী আবাদী ।

১২১. আল ফায়ূজাতিল ওয়াহাবিতু ফি মাওলিদি খাইরিল বারিয়্যাহ (ﷺ) - আব্দুল কাদির বিন সাওদাত

১২২. রাবিয়ূল কুলূব ফি মাওলিদি সাইয়্যিদুনা আননাবীয়িল মাহবুব (ﷺ) - আল আরাবি ওয়াজানী

১২৩. আদ দুররুল মুনাজ্জাম ফী মাওলিদি সাইয়্যিদিনা আন নাবীয়্যিল মুয়াজ্জাম (ﷺ) - মুহাম্মদ আল লাখমী আস সুবুতী

১২৪. সায়াদাতিল উম্মাতি বি মাওলিদি খাইরিল উম্মাতি (ﷺ) -মুহাম্মাদ বিন কাসিম আল হাসিমী

১২৫. বুলুগুল মাকসুদ ওয়াল মারাম বি কিরাআতি মাওলিদি খাইরিল আনাম (ﷺ) - মুহাম্মাদ আল হাজুজী।

১২৬. মানজুমাতু ফি মাওলিদুন নাবী (ﷺ) - আল হাদিবুত তারাবলুছী ।

১২৭. তাহরিরুল কালাম ফিল কিয়ামি ইনদা জিকরি মাওলিদি ছাইয়্যিদিল আনাম – আলী বিন হাজার হাইতামী

১২৮. মাওলিদুন নাবী (ﷺ) - আহমদ বিন মুহাম্মাদ বিন আরিফ আছ-ছায়ূয়াছী।

১২৯. মাওলিদুন নাবী (ﷺ) - আহমদ বিন উছমান আদ দিয়ারে বিকরী ।

১৩০. বুলুগুল মারাম লি বায়ানিল ফাজ্জু মাওলিদু সাইয়্যিদিল আনাম ফী শরহে মাওলিদে আহমদ আল বুখারী - সাইয়্যিদ আহমদ আল মারজুকী আবুল ফাওজি।

১৩১. আল কাওয়াকিবুদ দুররীয়াতু ফি মাওলিদি খাইরিল বারিয়্যাহ -আবু বকর বিন মুহাম্মদ হাবশী।

১৩২. মাওলিদুন্নবী (ﷺ) মানজুমাতু তরকী -সুলাইমান বিন আব্দুর রহমান বিন সালেহ রুমী

১৩৩. ।

১৩৪. মুতালিউল আনওয়ার ফি মাওলিদিল মুখতার (ﷺ) - আব্দুল্লাহ দামলাজী

১৩৫. হাশিয়ায়ে আলা মাওলিদিন নাবী - মাদাবিগী আব্দুর রহমান বিন মাহমুদ নাহরাবী মিসরী।

১৩৬. সুরুরুল আবরার ফি মাওলিদিন নাবীয়্যিল মুখতার (ﷺ) ।

১৩৭. আল মুনতাখাবুল মুস্তফা ফি আখবারে মাওলিদুল মুস্তফা - মুহি উদ্দীন আব্দুল কাদির বিন শাইখ।

১৩৮. মাওলিদুন্নবী (ﷺ) মানজুমাতু তারকি - আশরাফ জাদা বারুছী ।

১৩৯. আল মাওরিদুল আজাবিল মাইন ফিমাওলিদি সাইয়্যিদিল খালকিল আজমাইন - মুহাম্মদ বিন আব্দুল্লাহ আতারী জাজারী।

১৪০. মাওলিদুন্নবী (ﷺ) -আরিফ বিল্লাহ ইবনে ইবাদ রানদী।

১৪১. মাওলিদুন্নবী সালা­ল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম - মুহাম্মদ বিন সাইয়্যিদ মুহাম্মদ আব্দুল্লাহ হুসাইনি আত তাবরীজী।

১৪২. মাওলিদুন্নবী (ﷺ) - মুল্লা আরব ওয়ায়িজি ৯৩৮ হিজরী

১৪৩. মাওরিদুস সাফা ফি মাওলিদিল মুস্তফা (ﷺ) - ইবনে ইলান মক্কি।

১৪৪. মাওলিদুন্নবী (ﷺ) -ইবনে আকিল আজজাহির।

১৪৫. ইকতিনাসুশ শাওয়ারিদ মিন মাওরিদুল মাওরিদ ফি শরহে মাওলিদে ইবনে হাজার হাইতামী।

১৪৬. হাশিয়ায়ে আলা মাওলিদিন নাবী (ﷺ), ইবনে হাজার গাইতী ।

১৪৭. মুহাম্মাদ বিন খলিল বিন ইবা্রহিম বিন মুহাম্মদ আলী বিন মুহাম্মদ তারাবলুসী।

১৪৮. মাওলিদুন্নবী (ﷺ) ।

১৪৯. বাঘীয়াতিল আওয়াম ফি শরহে মাওলিদি সাইয়্যিদিল আনাম আলাইহিস সালাতু ওয়া সাল্লাম -- ইবনে জাওজি মুহাম্মদ রওরী আল জায়ী ।১৩১৫হিজরী

১৫০. তুহফাতুল আশেকীন ওয়া হাদিয়াতুল মায়শুকীন ফি শরহে তুহফাতুল মুওমিনীন ফি মাওলিদিন নাবিয়্যিল আমিন (ﷺ) - মুহাম্মদ রাছিমুল মুল্লা তীবি

১৫১. আল জামিউল আজহারুল মুনির ফি মাওলিদিল বাশিরুন নাজির- জয়নুল আবেদিন মুহাম্মদ আব্বাসী।

১৫২. আদ দুররুল মুনাজ্জাম শরহে কানজুল মুতালসিম ফি মাওলিদিন নাবিয়্যিল মুয়াজ্জাম - আবি শাকের আব্দুল্লাহ শালাবী

১৫৩. আদ দুররুল মুনাজ্জাম ফি মাওলিদিন নাবীয়্যিল কারিম - ইমাম সাইফুদ্দীন ইবনে তগরবীক.।

১৫৪. মাওলিদিন নাবী উনওয়ান ইহরাযুল মাযিইয়্যাতু ফি মাওলিদিন নাবী খাইরিল বারিয়্যাহ (ﷺ) --- আবি হাসিম মুহাম্মদ শরীফ নববী।

১৫৫. আল মুনতাখাবুল মুস্তফা ফি আখবারি মাওলিদিল মুস্তফা (ﷺ) - শাইখ আব্দুল কাদির আদরাছী।

১৫৬. মাওলিদুননাবী -- হাশিম কাদরী আল হাছানী।

১৫৭. আল আতিয়াতুল মুহাম্মাদিয়্যা ফি কিস্সাতু খাইরিল বারিয়্যাহ - আহমদ বিন নাজ্জারী দিমইয়াতি।

১৫৮. খুলাছাতুল কালাম ফি মাওলিদিল মুস্তফা (ﷺ) -- রেদওয়ানুল আদিল বাইবারছী।

১৫৯. আল মুনজিরুল বাহী ফি মুতালিয়ু মাওলিদুন্নাবী --শাইখ মুহাম্মদ আল হাজরাছী।

১৬০. বুলুগুল মারাম লি বায়ানিল ফাজ্জু মাওলিদু সাইয়্যিদিল আনাম - আবুল ফাওজি আহমদ আল মারজুকী ওয়া হুয়া শরহে আলা মাওলিদু শাইখ আহমদ বিন কাসিম মালাকী ।

১৬১. আল আনওয়ার ওয়া মিফতাহুস সুরুরি ওয়াল আফকারি ফি মাওলিদিল মুখতার -আবিল হাছান আহমদ বিন আব্দুল্লাহ আল বিকরী।

১৬২. তিল্লুল গামামাতি ফি মাওলিদু সাইয়্যিদু তাহামাতী - আহমদ বিন আলী বিন সাইদ ।

১৬৩. আল কাওয়াকিবুদ দুররীয়াতু ফি মাওলিদি খাইরিল বারিয়্যাতু ---আবি বকর মুহাম্মদ হাবসী আল বাসতামী ।

১৬৪. মাওলিদিন নাবাবী শরীফ - শাইখ মুহাম্মদ নাজা মুফতি বৈরুত।

১৬৫. মাওলিদিন নাবাবী- মুসা জানাতী আজ জামুরী।

১৬৬. আল মাদখালুল মুফিদ ফি হুকমি মাওলিদিল হাকিম - ইয়াহইয়া বিন মুহাম্মদ আল কুরতুবী আল মাগরিবী।

১৬৭. আল মাওলিদিল কারিম - ইবা্রহিম বিন আবি বকর তিলমিছানী।

১৬৮. মাওলিদিদ দুররুননাফিছ - আরিফ বিল্লাহ ইয়াহইয়া বাসতানজী।

১৬৯. তারিখুল ইহতেফালু বি মাওলিদিন নাবাবী মিন আছরিল ইসলামী আউয়ালু ইলা আছরী ফারুকিল উলা--- হাছান ছান্দুবী।

১৭০. ওয়ারুদু মিন রিয়াদি আকরামি মাওলিদু (ﷺ) --- শাইখ রিদওয়ান বিন ফদলুর রহমান।

১৭১. খুলাছাতুল কালাম ফি ইহতেফালু বি মাওলিদি খাইরিল আনাম (ﷺ) ।

১৭২. আনওয়ারে ছাতিয়া ফি মাওলিদিন নাবীয়িশ শাফি - ইবনে আতাউল্লাহ গাইছী।

১৭৩. বাহজাতুছ ছামিয়িন ওয়ান নাজিরিন লি মাওলিদি সাইয়্যিদিল মুরছারিন- নাজমুল গাইতি।

১৭৪. আল মাওরিদুদ দানী ফি মাওলিদিন নাবাবী-- মুস্তফা বিন কামালুদ্দীন বিকরী।

১৭৫. ইনতেছারুল মাওলিদিশ শরীফ--- হাছান বিন আলী আশ শাফি আল আজহারী।

১৭৬. আল মাওলীদুল বাদাবী ফি মাওলিদিন নাবাবী -- আহমদ জামিল আল লাইল ।

১৭৭. আল মুনতাখাবুল মুস্তফা ফি আখবারিল মুস্তফা সাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম - আব্দুল কাদীর আল আদরাছী।

১৭৮. আলমিনহালুল আজাবিল কারির ফি মাওলিদিল হাদিয়্যিল বাশিরুন নাজির। আবুল হাছান আল মারদুবী।

১৭৯. নাছুরুদ দার আলা মাওলিদু ইবনে হজর আব্দুল গনী আদ দামেস্কী।

১৮০. নাতিকুল হিলাল বি তারিখুল ওয়ালাদাতি --- হাবিব ওয়াসালী

১৮১. ইসতাহাব্বুল কিয়াম ইনদা জিকরি ওয়ালাদাতিহি আলাইহি ওয়া সাল্লাম - মাহমুদ আতারী আদ দামেস্কী।

১৮২. মাওলিদিল কাওছারী - ইমাম মাহমুদ জাহিদ কাওছারী

১৮৩. আল কাওয়া কিবুল আজহার বি মাওলিদি সাইয়্যিদিল আউয়ালি ওয়াল আখির - নাজিম আহমদ আল জাহিরী আল খালুতী। .

১৮৪. আল কালাদাতুছ ছানিয়াতু ফি মাওলিদিশ শরীফ ওয়াল ইমদাদুল মুহাম্মদী - আব্দুর রহমান আবইয়ারী। .

১৮৫. নাজমু নুরুস সাফা ফি মাওলিদি ওয়া মিরাজি তাহাল মুস্তফা লাম যূয়াল্লিমু মুয়াল্লিফ..

১৮৬. মানজুমাতু ফি কিস্সাতুল মাওলিদিন নাবাবী -.......

১৮৭. মাওলিদুন নাবাবী (ﷺ) -নাজমু হাছান কালবী আদাবী মালাকী।

১৮৮. মাওলিদুন নাবাবী

১৮৯. রাওয়ায়িহুজ জাকিইয়া ফি মাওলিদি খাইরিল বারিয়্যাহ - আব্দুল্লাহ বারুরী।

১৯০. জিকরে মাওলিদি ওয়া খুলাছাতুছ ছীরাত - মুহাম্মাদ রশিদ রেজা ।

১৯১. ইয়লাম বি ফাতওয়ায়ী আয়িম্মাতুল ইসলাম হাওলি মাওলিদুহু আলাইহিস সালাতু ওয়া সাল্লাম - সাইয়্যিদ আলাবী আল মালেকী।

১৯২. বাগিয়াতুল মুস্তফা ফি মাওলিদিল মুস্তফা - আব্দুল আজিজ বিন আহমদ

১৯৩. বাগিয়িয়াতুল আওয়াম ফি শরহে মাওলিদি ইবনে জাজরী ইবনে আরাবী আন নাবাবী।

১৯৪. বাশায়িরুল আখইয়ার ফি মাওলিদিল মুখতার - মুহাম্মদ মাজী আবুল আজাইম ।

১৯৫. আল আনওয়ার ফি মাওলিদিল মুখতার - আবুল হাছান বিকরী

১৯৬. মাওলিদিন নাবাবী,- আব্দুল্লাহ আফিফি।

১৯৭. আল ইব্রিজুদ দুনিয়া ফি মাওলিদি,-সাইয়িদ মুহাম্মদ আল আদানী,-মুহাম্মদ নুরী আশ শাফী

১৯৮. বাখিয়াতুল আওয়াম ফি শরহে মাওলিদি সাইয়্যিদিল আনাম।

১৯৯. তা”য়রিবিল মুত্তাকি ফি সিরাতি মাওলিদিন নাবীয়্যিল মুকতাফী,- সাইয়্যিদ কাজারনী।

২০০. আল জামিউল জাহিরিল মুনির ফি জিকরে মাওলিদিল কাশিরিন নাজির,- জয়নুল আবেদিন আল আব্বাসি।

২০১. আদ দুররুল মুনাজ্জাম শরহে আল কানজুল মুতালছাম ফি মাওলিদিন নাবীয়্যিল মুয়াজ্জাম,- আবু শাকের সালাবী।

২০২. আদ দুররুল মুনাজ্জাম ফি মাওলিদিন নাবিয়্যিল কারিম,- সাইফুদ্দিন আল হামইয়ারী।

২০৩. আদ দুররুল মুনাজ্জাম ফি মাওলিদিন নাবিয়্যিল আয়জাম,- আহমদ আকলাশি।

২০৪. আল মাওলিদুল আজাবিল মায়িন ফি মাওলিদিল খালকি আজমায়িন,- আল আতারী আল জাযায়িরী।

২০৫. মানাছিকুল হুজ্জাজিল মুনতাকি মিন ছিরাতি মাওলিদিল মুস্তফা,- সায়িদ উদ্দীন কাজারনী।

২০৬. আদ্দুররাতুছ ছানিয়াতু ফি মাওলিদি খাইরিল বারিয়্যাহ,- খলিল বিন কাই কালদি।

২০৭. মাওলিদে আল বারিয়ী,-আব্দুর রহিম বারিয়ী।

২০৮. আল মাওরিদুল হানী ফি মাওলিদিছ ছানী,- জাইয়িনুদ্দীন ইরাকী।

২০৯. মাওলিদে বারছুনী,- সুলাইমান বারছুনী।

২১০. জামিউল আনার ফি মাওলিদ্দিন নাবিউল মুখতার ।

২১১. মাওরিদুস সাদি ফি মাওলিদিল হাদী,-,- সামছুদ্দীন সাখাবী।

২১২. মাওলিদিন নাবী (ﷺ) । আফিফুদ্দীন তাবরিজী।

২১৩. আদ দুরুরুফি মাওলিদি সাইয়্যিদিল বাশির,- আছিলুদ্দীন বারবী।

২১৪. দারাজুদ দুরার ফি মীলাদি সাইয়্যিদিল বাশির,- আব্দুল্লাহ আল হুসাইনি আশ,-শিরাজী।

২১৫. লিমিনহালুল আজাবিল কারির ফি মাওলিদিল হাদিয়্যিল বাশিরিন নাজির,- আল আলাউল মারবাবী।

২১৬. ফতহুল্লাহি ওয়া কাফি ফি মাওলিদিল মুস্তফা,- বুরহানুদ্দীন আবু সাফা

২১৭. মাওলিদিন নাবী (ﷺ) আল হাবিব উমর বিন আব্দুর রহমান বায়লাবী।

২১৮. আল ফখরূল আলাবী ফি মাওলিদিন নাবাবী,- হাফিজ সাখাবী

২১৯. আল মাওরিদুল হানী ফি মাওলিদি খাইরিল বারিয়্যাহ,- নুরূদ্দীন ছামহুদী।

২২০. হুসনুল মাকসিদ ফি আমালিল মাওলিদ,- ইমাম জালালুদ্দীন সুয়ূতী

২২১. ফতহুল আলিমুল মুনাজ্জি আলা মাওলিদিল বারজাঞ্জি,- আব্দুল্লাহ আল ফারছী।

২২২. মাওলিদুন্নবী (ﷺ),- আয়েশা বায়ুনী ।

২২৩. আল কাওয়াকিবুদ দুররিয়াতু ফি মাওলিদি খাইরিল বারিয়্যাতু,- আবু বকর হালবী।

২২৪. মাওলিদুন্নবী (ﷺ),- মুল্লা আরব ওয়ায়িজী।

২২৫. তাহরিরুল কালাম ফিল কিয়ামি ইন্দা জিকরী মাওলিদি সাইয়্যিদিল আনাম,- ইমাম ইবনে হাজার হাইতামী

২২৬. তুহফাতুল আখইয়ার ফি মাওলিদিল মুখতার ইমাম ইবনে হাজার হাইতামী

২২৭. ইতমামু আন নিয়অমাতুল আলাল আলামিন বি মাওলিদি সাইয়্যিদি উলদে আদম

২২৮. মাওলিদুন্নবী (ﷺ),- ইমাম ইবনে হাজার হাইতামী

২২৯. কানজুর রাগিবীনিল আফা ফির রামাজিল মাওলিদিল ওয়াফা,- হাফিজ ইসহাক নাজ্জা

২৩০. মাওলিদুন নাবী সাইয়্যিদ মুস্তফা নাজ্জা বইরুতী

২৩১. শরহে ইবনে আবিদীন আলা মাওলিদে ইবনে হাজার আসকালানী

২৩২. মাওলিদুর রাসূল,-আব্দুল হামিদ যাওদাতি

২৩৩. আনওয়ারে ছাতিয়া ফি মাওলিদিন নাবীয়িশ শাফি,- আবি আতা উল্লাহ আল গাইছি শাফী

২৩৪. মাওলিদিল জিসমানিল মাওরিদির রুহানী,- সামছুদ্দীন আহমদ আহমদুল্লাহ

২৩৫. আর রাওদুর রাহিব ফি মাওলিদি সাইয়্যিদুনাল হাবিব (ﷺ),-মুহাম্মদ ইবনে আকিল মিসরী

২৩৬. মাওলিদুন নাবী,- আহমদ দরদির

২৩৭. মাওলিদুন্নবী (ﷺ)

২৩৮. হাকিকতে মুহাম্মদী ও মীলাদে আহমদী। মাওঃ বশারাতুল্লা মোদিনি পুরী হানাফী (রহঃ ।

২৩৯. কিশোরগঞ্জের বহস। আল্লামা রুহুল আমীন বশির হাটি হানাফী رحمة الله عليه (১৯৪৫,-ইং) ।

২৪০. তানজিমুল বাদিয় ফি মাওলিদিন নাবাবী। ইমাম ইউসুফ বিন ইসমাইল নাবেহানী رحمة الله عليه

২৪১. আদ,-দুররুল মুনাজ্জাম। আব্দুল হক এলাহাবাদী হানাফী رحمة الله عليه  

২৪২. ফয়সালায়ে হাফত মাসায়েল হাজী ইমদাদুল্লাহ মুহাজেরী মক্কী হানাফী رحمة الله عليه ।

২৪৩. মছলকে আরবাবে হক। শাহ ওয়াজী উদ্দীন রামপুরী رحمة الله عليه হানাফী ।

২৪৪. আল ইহতেফাল বি মাওলিদি আম্বিয়া ওয়াল আউলিয়া। আল্লামা সাইয়্যিদ মাযী আবুল আযায়েম আল মিসরী رحمة الله عليه ।

২৪৫. মুসতাযুল মুবতাদা। আল্লামা আব্দুর রহমান সিরাজ হানাফী মক্কী رحمة الله عليه ।

২৪৬. মুলাখ্খাস আল্লামা শাহ কারামত আলী জৈনপুরী رحمة الله عليه ১২৯০,-হিঃ।

২৪৭. কারামাতে হারমাইন। আল্লামা শাহ কারামত আলী জৈনপুরী رحمة الله عليه (১২৯০,-হিঃ।

২৪৮. নুফহাতুল আম্বারিয়া লি ইসবাতিল কিয়াম ফী মাওলিদি খাইরিল বারিয়্যা। (মিলাদ বিষয়ক সর্বোত্তম গ্রন্থ) আল্লামা শাহ আব্দুল আউয়াল জৈনপুরী হানাফী رحمة الله عليه (১৩৩৯,-হিঃ)

২৪৯. আল কাউলুল মাকবুল ফি মীলাদির রাসূল,-আল্লামা হবিবুর রহমান,- মুহাদ্দিসে রারাই।

২৫০. মীলাদে বেনজীর,- মুজাহিদ উদ্দীন চৌধুরী ।

২৫১. মীলাদ ও কিয়াম,- মুস্তফা হামিদী

২৫২. মীলাদ ও কিয়ামের ফতোয়া,- জসিম উদ্দীন আল আজহারী

২৫৩. আকওয়ালুল আখইয়ার ফি মাওলিদিন নাবিয়্যিল মুখতার,- মো. আবুল খায়ের ইবনে মাহতাবুল হক


__________ সমাপ্ত __________



Comments

Popular posts from this blog

বালাকোট আন্দোলনের হাকীকত

সৈয়দ আহমদ বেরলভীর জম্ম ও পরিচয়

মওদুদীর ভ্রান্ত আক্বিদা ও ইসলামী আক্বিদা