মুনীয়াতুল মুছ্লেমীন (মাসআলা-মাসায়েল) [২য় খণ্ড]
মুনীয়াতুল মুছ্লেমীন (মাসআলা-মাসায়েল) [২য় খণ্ড]
____________________
মুনীয়াতুল মুছ্লেমীন (মাসআলা-মাসায়েল) [২য় খণ্ড]
মূলঃ মুহাম্মদ আজিজুল হক আল্-কাদেরী (রহঃ)
প্রকাশনায়ঃ আন্জুমানে কাদেরীয়া চিশতীয়া আজিজিয়া বাংলাদেশ
গ্রন্থ স্বত্বঃ লেখক কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
সার্বিক তত্তাবধান
শাহজাদা আল্লামা আবুল ফরাহ্ মুহাম্মদ ফরিদ উদ্দীন
অধ্যক্ষ: ছিপাতলী জামেয়া গাউছিয়া মুঈনীয়া কামিল মাদ্রাসা
টেক্সট রেডীঃ মাসুম বিল্লাহ সানি
প্রকাশকালঃ ডিসেম্বর ২০১৮ ঈসায়ী
অনুবাদঃ এম. এম. মহিউদ্দীন
শিক্ষক: ছিপাতলী জামেয়া গাউছিয়া মুঈনীয়া কামিল মাদ্রাসা
নির্বাহী সম্পাদক: মাসিক আল-মুবীন
অর্থায়নে
আলহাজ্ব মুহাম্মদ ইকবাল চৌধুরী
পিতা: মরহুম আলহাজ্ব রাজা মিয়া চৌধুরী
উত্তর সত্তা, রাউজান।
মোহাম্মদ আমান উল্লাহ
ছিপাতলী, হাটহাজারী, চট্টগ্রাম।
তাদের ব্যবসা-বাণিজ্যের উন্নতি এবং মুরব্বী যারা
ইন্তিকাল করেছেন তাদের মাগফিরাত কামনায়...
হাদীয়া
১৭০ [একশত সত্তর] টাকা মাত্র।
উৎসর্গ
শায়খুল মুহাদ্দিসীন ওয়াল মুফাস্সিরীন, মুহাদ্দিসে আযম, গায্যালিয়ে যমান, রাযীয়ে ওয়াক্ত, সুলতানুল আরেফীন শাহসূফী সৈয়দ আহমদ সাঈদ আল্-কাযিমী
রাহ্মাতুল্লাহি আলাইহি’র প্রতি...
লিখকের কথা
____________________
লিখকের কথা
نحمده حمدًا كثيرًا ونصلّى ونسلّم على رسوله الكَريم وآله واصحابه أجمعين .
হামদ, সালাত ও সালাম নিবেদনের পর ফক্বীর, হাক্বীর ও মীস্কীন দ্বীনি ভাইদের খেদমতে নিবেদন করছি যে, সহায় সম্বল এবং উপায় উপকরণের অভাবের কারণে লেখক সমাজের মধ্যে গণ্য হবার ইচ্ছা ও সামর্থ নেই। অধম বান্দাহ কেবল নিজ পরকালীন নাজাতের উপায় মনে করে বন্ধু-বান্ধবের চাহিদা অনুযায়ী এ কতিপয় প্রয়োজনীয় মাসায়েল হানাফী মাযহাবের উল্লেখযোগ্য কিতাব থেকে চয়ন করে এক স্থানে একত্রিত করেছি। যাতে স্বল্প যোগ্যতা সম্পন্ন ব্যক্তিদেরও মাসআলা বুঝতে কষ্ট না হয়। এ কিতাবখানার নাম হচ্ছে “মুনীয়াতুল মুছলেমীন”। যা দুই খণ্ড বিশিষ্ট কিতাব। এর প্রথম খণ্ড পূর্বে প্রকাশিত হয়েছে।
হে আল্লাহ্! তোমার হাবীবে পাক হযরত মুহাম্মদ (ﷺ) এর উসীলায় এই কিতাবের পাঠক ও শ্রোতা মন্ডলীকে জ্ঞান অর্জনের তাওফীক দান করুন। আর তাদের আমলের সদক্বা হিসেবে এই অধমকে মাফ করুন। আমিন চুম্মা আমিন!
মুহাম্মদ আজিজুল হক আল্-কাদেরী
অনুবাদকের কথা
____________________
অনুবাদকের কথা
বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম
নাহমাদুহু ওয়া নুসাল্লী ওয়া নুসালিমু আলা রাসুলিহিল কারীম। আম্মা বা’দ!
এশিয়াখ্যাত আলেমেদ্বীন, শাইখুল হাদিস, তাফসীর, ফিকহ ও আদিব, আলেমকুল শিরমণি, বহু মসজিদ, মাদ্রাসা ও খানকার প্রতিষ্ঠাতা, বিভিন্ন বিষয়ে বিভিন্ন ভাষায় শতাধিক গ্রন্থ প্রণেতা, পেশ্ওয়ায়ে আহলে সুন্নাত, শাইখে তরিকত, হযরতুলহাজ্ব আল্লামা মাওলানা মুহাম্মদ আজিজুল হক আল্-কাদেরী (মা.জি.আ.)’র লিখিত ‘মাসআলা-মাসায়েল’ সম্বলিত দুই খণ্ড বিশিষ্ট কিতাব “মুনীয়াতুল মুছলেমীন”।
মূলত হুযূর কেবলা কিতাবটি উর্দু ভাষায় রচনা করেন। আমি অধম আল্লাহর দয়া-মেহেরবাণীতে, প্রিয় নবী (ﷺ) এর উসিলায় সর্বোপরি হুযূর কেবলার শুভ দৃষ্টিকে সম্বল করে প্রথম খণ্ড পূর্বে বাংলায় অনুবাদ করে প্রকাশ করেছি। এখন ২য় খণ্ডও অনুবাদ আকারে প্রকাশিত হয়েছে।
এ গ্রন্থ পাঠে পাঠকবৃন্দ উপকৃত হলে আমি অধমের শ্রম সার্থক হবে। অনিচ্ছা স্বত্ত্বেও যান্ত্রিক বিভ্রাট ও ভুল-ত্রুটি হয়ে থাকলে পরামর্শ পেলে কাজে লাগাবার প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
অত্র কিতাবখানা প্রকাশের ক্ষেত্রে যারা বিভিন্নভাবে সহযোগিতা করেছেন তাদেরকে আল্লাহপাক রাব্বুল আলামীন যথাযথ বদলা দান করুন। আমিন! বিশেষতঃ আলহাজ্ব মোহাম্মদ ইকবাল চৌধুরী, পিতা: মরহুম আলহাজ্ব রাজা মিয়া চৌধুরী, উত্তর সত্তা, রাউজান এবং মুহাম্মদ আমান উল্লাহ, ছিপাতলী, হাটহাজারী তাদের আর্থিক সহায়তায় অত্র কিতাবটি প্রকাশিত হয়েছে। আল্লাহ্পাকের দরবারে তাদের মরহুম মুরব্বীদের মাগফেরাত কামনা করছি।
মহান আল্লাহ্ ও ক্ষুদ্র প্রয়াসকে কবুল করে দুনিয়া- আখিরাতে কামিয়াবী দান করুন। আমিন! বেহুরমাতি সায়্যিদিল মুরসালীন।
বিনীত
এম.এম. মহিউদ্দীন
শিক্ষক: ছিপাতলী জামেয়া গাউছিয়া মূঈনীয়া কামিল মাদ্রাসা
নির্বাহী সম্পাদক, মাসিক আল-মুবীন।
শরীয়তের আদিষ্ট বিষয়াবলীর বর্ণনা
____________________
শরীয়তের আদিষ্ট বিষয়াবলীর বর্ণনা
মাসআলাঃ শরীয়তের আদিষ্ট বিষয়াবলী চার প্রকার। যথা- ফরয, ওয়াজিব, সুন্নাত ও মুস্তাহাব।
ফরয তাকেই বলে, যা অকাট্য দলিল দ্বারা আবশ্যিক হিসেবে প্রমাণিত। ওয়াজিব তাকেই বলে, যা অকাট্য দলিল থেকে অপেক্ষাকৃত দূর্বল দলিল তথা দলিলে যান্নী দ্বারা আবশ্যিক হিসেবে প্রমাণিত।
সুন্নাত দু’প্রকার। (১) সুন্নাতে মুআক্কাদাহ- যা নবী করীম (ﷺ) সদা সর্বদা পালন করেছেন এবং যা পালন না করলে গোনাহ অবধারিত। (২) সুন্নাতে গায়রে মুআক্কাদাহ- যা বর্জন করা অপছন্দনীয় হলেও অপরাধযোগ্য নয় বিধায় গোনাহ লাযিম হবে না।
আর মুস্তাহাব তাকেই বলে যা নবী করিম (ﷺ) কোন সময় পালন করেছেন। আবার কোন সময় বর্জনও করেছেন। তবে সলফে সালিহীন তা পছন্দ করেছেন।
এগুলোর হুকুম এই যে, ফরয পালনকারী সওয়াব পাবে এবং বর্জনকারী শাস্তি পাবে। আর অস্বীকারকারী কাফির হবে। ওয়াজিব পালনকারী সওয়াব পাবে এবং বর্জনকারী শাস্তি পাবে। তবে তা অস্বীকারকারী কাফির হবে না।
সুন্নাতে মুআক্কাদাহ পালনকারী সওয়াব পাবে এবং বর্জনকারী তিরস্কারের যোগ্য হবে। তবে বর্জনে অভ্যস্থ ব্যক্তি শাস্তির যোগ্য হবে। কিন্তু যে ব্যক্তি তাকে হালকা তথা গুরুত্বহীন মনে করবে সে কাফির হবে। আর সুন্নাতে গায়রে মুআক্কাদাহ পালনকারী সওয়াব পাবে এবং তা না করলে শাস্তির যোগ্য হবেনা। মুস্তাহাব পালনকারী ফজিলত অর্জনকারী হবে। অর্থাৎ সাওয়াব পাবে। কিন্তু বর্জনকারী তিরস্কার ও শাস্তির যোগ্য হবে না। ১
➥১. দুররে মুখতার, শামী ইত্যাদি।
মাসআলাঃ মান্হিয়াত তথা নিষিদ্ধ বিষয়াবলী সমূহ হচ্ছে- হারাম, মাকরূহে তাহরীমী, এসাআত, মাকরূহ ও মাকরূহে তানযিহী।
হারাম তাকেই বলে- যার নিষিদ্ধতা অকাট্য দলিল দ্বারা আবশ্যিক ভাবে প্রমাণিত।
মাকরূহে তাহরীমী তাকে বলে, যার নিষিদ্ধতা দলিলে যান্নী তথা খবরে ওয়াহেদ দ্বারা আবশ্যিকভাবে প্রমাণিত।
এসাআত তাকেই বলে, যার নিষিদ্ধতার আবশ্যিকতা হারাম ও মাকরূহে তাহরীমীর মত হয় না।
মাকরূহে তানযীহি তাকে বলে, যার নিষিদ্ধকরণ স্নেহ ও শিষ্টাচারের আলোকে করা হয়েছে। এগুলোর হুকুম এই যে, হারাম কাজ বর্জনকারী সওয়াব পাবে এবং সম্পাদনকারী শাস্তি পাবে। আর অবৈধতা অস্বীকারকারী কাফির হবে।
মাকরূহে তাহরীমী বর্জনকারী সওয়াব পাবে এবং পালনকারী শাস্তি পাবে। এসাআত জাতীয় কাজ সম্পাদনকারী তিরস্কারের যোগ্য হবে। আর অভ্যাসে পরিণত করে নিলে শাস্তির যোগ্য হবে। মাকরূহে তান্যীহী বর্জনকারী ফজিলত লাভ করবে। কিন্তু সম্পাদনকারী শাস্তি বা তিরস্কারের যোগ্য হবেনা।
মাসআলাঃ ফরয ও হারাম দু’প্রকার। যথা-(১) এ’তেক্বাদী (২) আমলী।
এ’তেক্বাদী ঐ ফরয ও হারামকে বলে, যা পালন করা ফরয ও হারাম হওয়ার সাথে সাথে ঐ ফরয ও হারামের উপর বিশ্বাস স্থাপন করাও ফরয।
যেমন সাধারণ মাথা মাসেহ। এটা চার ইমামের ঐক্যমতে ফরয। যদি কেউ সাধারণ মাথা মাসেহকে অস্বীকার করে তবে সবার ঐক্যমতে সে কাফির হবে। সুতরাং যে ফরয ও হারামের অস্বীকৃতির উপর কুফরীর হুকুম দেয়া হয়েছে তথায় এ’তেক্বাদী বুঝানো হয়েছে। আর আমলী ফরয তাকেই বলে যা কেবল পালন করাই ফরয। তার সাথে এ’তেক্বাদের কোন সম্পর্ক নেই।
যেমন মাথা মাসেহের পরিমানের মধ্যে ইমামগণের মতবিরোধ। হানাফী মাযহাবে এক চতুর্থাংশ মাসেহ করা ফরয। সুতরাং এর চেয়ে কম হলে অযু হবেনা। হাম্বলী মাযহাব অনুসারে সমস্ত মাথা মাসেহ করা ফরয। এর চেয়ে কম করলে অযু শুদ্ধ হবে না। এখন যদি কোন হানাফী মাযহাবের লোক হাম্বলী মতবাদ কিংবা কোন হাম্বলী হানফী মতবাদ অস্বীকার করে তবে কাফির হবেনা। হাঁ কেউ সাধারণ মাথা মাসেহকে অস্বীকার করলে কাফির হয়ে যাবে।
মাসআলাঃ এমন কাজও আছে যার ব্যাপারে আদেশ নিষেধ কিছুই নেই। এগুলো মুবাহ নামে পরিচিত।
জানাবতের বর্ণনা
____________________
জানাবতের বর্ণনা
মাসআলাঃ শুধুমাত্র বীর্য বের হওয়া গোসল ফরয হওয়ার জন্য যথেষ্ট নয়। বরং লাফালাফি করে ও উত্তেজনার সাথে মনী বা বীর্য বাহির হওয়া গোসল ফরয হওয়ার জন্য শর্ত। এ বীর্য বের হওয়া স্পর্শ করার কারণে হোক অথবা দেখার কারণে হোক অথবা হাতের আমল অর্থাৎ হস্ত-মৈথুনের কারণে। নিদ্রাবস্থায় হোক অথবা জাগ্রত অবস্থায়। পুরুষ থেকে হোক অথবা মহিলা থেকে। যদি উপরোক্ত শর্ত ছাড়া বীর্য বের হয় তাহলে জানাবাত প্রমাণিত হবেনা এবং গোসলও ফরয হবেনা। যেমন কোন ব্যক্তি বোঝা তথা ভারী কোন বস্তু উঠাল অথবা রোগের কারণে অথবা উপরে বর্ণিত কারণ ব্যতিত অন্য কোন কারণে বীর্য বের হল তাহলে গোসল ফরয হবেনা এবং তাকে অপবিত্রও বলা যাবে না। ২
➥২. ফতোয়ায়ে আলমগীরী।
মাসআলাঃ যদি কোন ব্যক্তি ঘুম থেকে জাগ্রত হয়ে বিছানায় কিংবা রানে অথবা লিঙ্গের ছিদ্র মুখে ভেজার চিহ্ন পায় এমতাবস্থায় যদি তার স্বপ্নদোষের কথা স্মরণ হয় এবং তার মজী অথবা মনী বা বীর্য বের হওয়ার ক্ষেত্রে দৃঢ় বিশ্বাস থাকে অথবা সন্দেহ হয়। সর্বাবস্থায় তার উপর গোসল ওয়াজিব হবে। আর যদি ওদী হওয়ার মধ্যে তার নিশ্চিত ধারণা হয়, তবে তার উপর গোসল ওয়াজিব হবেনা। ৩
➥৩. রদ্দুল মুহ্তার পৃষ্ঠা-১১, আলমগীরী।
মাসআলাঃ যদি কোন মহিলা সহবাসের পরে গোসল করে নামায আদায় করল। তারপর তার লজ্জাস্থান দিয়ে তার স্বামীর বীর্য বের হয়ে আসল, এমতাবস্থায় তার গোসল ও নামায কোনটাই পুনরায় করতে হবেনা। ৪
➥৪. রদ্দুল মুহতার, পৃষ্ঠা- ১০৮।
মাসআলাঃ যদি কারো পেশাব করা অবস্থায় উত্তেজনার সাথে বীর্য বের হয়ে আসে তাহলে গোসল ফরয হবে। নতুবা নয়। ৫
➥৫. ফতোয়ায়ে আলমগীরী।
মাসআলাঃ স্বামী-স্ত্রী উভয়ে এক বিছানায় বিশ্রাম নিল এবং সহবাস না করেই শুয়ে পড়ল। ঘুম থেকে জেগে বিছানায় দাগ পেল। অথচ স্বপ্নদোষের কথা কারো স্মরণ নেই এক্ষেত্রে এই দাগটি যদি লম্বা আদা বর্ণের ও গাড় হয়, তবে স্বামীর উপর গোসল ওয়াজিব। আর যদি দাগটি গোল, হালকা ও হলুদ বর্ণের হয়, তবে স্ত্রীর উপর গোসল ওয়াজিব। তবে সতর্কতা হিসেবে উভয়েই গোসল করে নেবে। ৬
➥৬. ছগীরী, পৃষ্ঠা-২৩।
মাসআলাঃ মনী গাঢ় এবং সাদা বর্ণের হয়, যা উত্তেজনার সাথে বেগে বের হয়ে লিঙ্গকে নিস্তেজ করে দেয়। মঝী ঐ সাদা হলুদে মিশ্রিত পাতলা পিছলে পানিকে বলা হয় যা স্ত্রীর সাথে খেলা করার সময় অথবা স্ত্রীর প্রতি গভীর মনযোগী হওয়ার সময় লিঙ্গের উত্থান অবস্থায় বের হয়। ওদী ঐ গাঢ় সাদা পানিকে বলা হয়, যা পেশাবের পর বের হয়। ৭
➥৭. শামী, হেদায়া।
মাসআলাঃ মনী (বীর্য) বের হলে গোসল ফরয হয়। মঝী ও ওদী বের হলে গোসল ফরয হয় না। ৮
➥৮. তানভীর, দুররে মুখতার।
হায়েজের বর্ণনা
____________________
হায়েজের বর্ণনা
মাসআলাঃ যে রক্ত সন্তান প্রসব ছাড়া স্ত্রীলোকদের জরায়ু থেকে আসে তাকে হায়েজ বলে। হায়েজ শব্দের আভিধানিক অর্থ প্রবাহিত হওয়া। শরীয়তের পরিভাষায় প্রতিমাসে বালেগা মেয়েদের জরায়ু থেকে যোনিপথে যে রক্ত প্রবাহিত হয় তাকে হায়েজ তথা ঋতুস্রাব বলে। কুরআন ও হাদীসে এই রক্তকে অপবিত্র বলা হয়েছে, যা গলীজ তথা গাঢ় নাজাসাতের অন্তর্ভুক্ত। কাপড়ে লাগলে কাপড় ধুয়ে পাক করে নিতে হবে। আর হায়েজের রক্তের রং লাল, কালো, হলুদ, সবুজ, ঘোলা ও মেঠো হয়। ৯
➥৯. আলমগীরী।
উল্লেখ্য যে, হায়েজের মেয়াদ সর্বনিম্ন তিন দিন তিন রাত আর ঊর্ধ্বে দশ দিন দশ রাত। তাই তিন দিন তিন রাত থেকে কম এবং দশ দিন দশ রাত থেকে বেশী হয়েজের খুন তথা রক্ত হয়না। যদি এ নির্দিষ্ট মেয়াদ থেকে কম বা বেশী হয়, তাহলে এ ধরনের রক্তকে ইস্তেহাজা বলা হবে। ১০
➥১০. তান্বিরুল আবছার, দুররে মুখতার, শামী, পৃষ্ঠা-১৯৮।
মাসআলাঃ যদি কোন মহিলা পবিত্রাবস্থায় নামায অথবা রোযা আরম্ভ করল, অতঃপর নামায রোযার ভিতরে স্রাব আরম্ভ হয়ে গেল এক্ষেত্রে যদি নামায অথবা রোযা নফল হয় তবে উভয়ের ক্বাজা ওয়াজিব হবে। আর যদি ফরয হয় তবে শুধুমাত্র ফরয রোযার ক্বাজা ওয়াজিব হবে। নামাযের নয়। ১১
➥১১. দুররে মুখতার, শামী, পৃষ্ঠা- ১৯৩।
মাসআলাঃ ঋতুবতী ও প্রসুতি তথা হায়েজ ও নেফাসদারী মহিলার জন্য নামায পড়া, রোযা রাখা, কাবা ঘরের তাওয়াফ করা, কোরআন শরীফ পড়া, কোরআন শরীফ স্পর্শ করা ও সঙ্গম করা হারাম। ১২
➥১২. আলমগীরী, দুররে মুখতার।
মাসআলাঃ ঋতুবতী মহিলার হাত দ্বারা খাবার পাক করানো ও তৈরীকৃত খাবার খাওয়া এবং তার ব্যবহৃত দ্রব্য ব্যবহার করা সব জায়েয আছে। আর ঋতুবতী মহিলাকে নিজ বিছানা থেকে পৃথক করা উচিত নয়। এ ধরনের কাজ হিন্দু ও ইহুদীদের কাজের অনুরূপ। ১৩
➥১৩. ফতোয়ায়ে শামী।
মাসআলাঃ ইস্তেহাজা একটি রোগ বিশেষের নাম। ইস্তেহাজার খুন জরায়ু থেকে নির্গত হয় না। বরং যোনি পথের অভ্যন্তরের সাথে সম্পৃক্ত কোন রগ ফেটে গিয়ে যে রক্ত নির্গত হয় তাকে ইস্তেহাজা বলে। এ সময় সহবাস ও নামায ইত্যাদি জায়েয আছে। তবে ঐ মহিলা মাযুর তথা অপারগ ব্যক্তির মত প্রত্যেক নামাযের জন্য নতুন অযু করবে।
মাসআলাঃ যদি কোন মহিলা শিক্ষিকা হয়, তবে হায়েজ ও নেফাজের অবস্থায় কোরআন শরীফ শিক্ষা দেয়ার ক্ষেত্রে একটি শব্দ করে শিখাবে এবং দুই শব্দের মধ্যখানে থামবে। অর্থাৎ থেমে থেমে উচ্চারণ করবে। কোরআন শরীফ বানান করানো তার জন্য জায়েয আছে। তবে কোরআন শরীফ পড়া এবং স্পর্শ করা হারাম।
নেফাসের বর্ণনা
____________________
নেফাসের বর্ণনা
মাসআলাঃ ফরয গোসলের এক প্রকার, নেফাস বন্ধ হওয়ার পরে যে গোসল করা হয়।
প্রকাশ থাকে নেফাস ঐ রক্তকে বলা হয়, যা সন্তান প্রসবের পর জরায়ু তথা বাচ্চাদানী থেকে যে রক্ত বের হয়ে থাকে। ১৪
➥১৪. তানবীরুল আবছার, দুররে মুখতার।
মাসআলাঃ নেফাসের নিম্নতম কোন সময় নেই। তবে সর্বোচ্চ সময়সীমা হচ্ছে চলিশ দিন। এর চেয়ে বেশী নেফাসের সময়সীমা নেই। ১৫
➥১৫. তানবীরুল আবছার।
মাসআলাঃ যদি কোন মহিলার সন্তান অপারেশনের মাধ্যমে বের করা হয় এক্ষেত্রে যদি খুন তথা স্রাব প্রবাহিত হয়, তবে তার উপর নেফাসের হুকুম আরোপিত হবে। নতুবা আহত বলে গণ্য হবে এবং নামায রোযা সব আদায় করবে।
মাসআলাঃ অপারগ ঐ ব্যক্তিকে বলা হয় যার অপারগতা এক নামাজের পূর্ণ ওয়াক্তের সমান বিদ্যমান থাকে এবং তা নিজে দূর করার ক্ষমতা না হয়। যেমন নাক দিয়ে রক্ত চালু থাকে অথবা ইস্তেহাজা কিংবা বায়ু কিংবা পেশাব নির্গমণ (বের হওয়া) অথবা শরীরের কোন স্থান হতে পুঁজ কিংবা পানি বের হওয়া।
তার হুকুম এই যে, সে প্রত্যেক নামাজের জন্য নতুন ওজু করবে এবং এ অযু দ্বারা এ ওয়াক্তের মধ্যে যা চাইবে ফরয ও নফল আদায় করতে পারবে। যখন ওয়াক্ত শেষ হয়ে যাবে অথবা অন্য কোন অযু ভঙ্গের কারণ পাওয়া যাবে তখনই অপারগের অযু ভঙ্গ হয়ে যাবে। যেমন: এক মুস্তাহাজা মহিলা জোহরের অযু করল। এখন সে ইমাম আবু হানীফা ও ইমাম মুহাম্মদ (رضي الله عنه) এর মতানুযায়ী ঐ অযু দ্বারা জোহরের ওয়াক্ত শেষ হওয়া পর্যন্ত নামাজ, যা ইচ্ছা করবে তা পড়তে পারবে। যখন জোহরের ওয়াক্ত শেষ হয়ে যাবে তখন অযু ভঙ্গ হয়ে যাবে। আর যদি ঐ মহিলার অযু ভঙ্গের অন্য কোন কারণ ওয়াক্তের ভিতর পাওয়া যায়। যেমন- নাক থেকে রক্ত জারী হওয়া, তাহলে ঐ দ্বিতীয় হদছ পাওয়া যাওয়ার কারণে অযু ভঙ্গ হবে। প্রথম অর্থাৎ ইস্তেহাজার কারণে নয়। ১৬
➥১৬. আলমগীরী, দুররে মুখ্তার।
মাসআলাঃ যদি কারো অপারগতা পূর্ণ ওয়াক্ত ব্যাপী না থাকে বরং কোন কোন সময় কিছুক্ষণ বিদ্যামান থাকার পর তা দূর হয়ে যায়। এ ক্ষেত্রে যার অপারগতা মাঝে মধ্যে কিছু সময়ের জন্য দূর হয়ে যায়, এ দূর হওয়াটা দূর না হওয়ার মতই অর্থাৎ তাকে অপারগই মনে করতে হবে। ১৭
➥১৭. দুররে মুখ্তার।
মাসআলাঃ মাঝে মধ্যে ওজর কিছু সময়ের জন্য দূর হলে তা দূর না হওয়ার মত অর্থাৎ তাকে অপারগই ধরতে হয়। এ সামান্য সময় বলতে ঐ পরিমাণ সময়কে বুঝানো হয়েছে, যে সময়ের ভিতরে অপারগ ব্যক্তি অপারগতা হতে খালী থেকে পূর্ণ এক ওয়াক্তের নামাজ আদায় করতে পারে। ১৮
➥১৮. ফতোওয়ায়ে শামী।
গোসলের বর্ণনা
____________________
গোসলের বর্ণনা
মাসআলাঃ গোসল করার প্রারম্ভে যদি প্রয়োজন হয় তবে প্রথমে ইস্তিঞ্জা করে নিবে। অতঃপর শরীরে যে অপবিত্র লেগেছে তা ধুয়ে নিবে। তারপর সমস্ত শরীর ঘষা-মাজা করে তিনবার পানি প্রবাহিত করবে, যদি ঘষা-মাজা করা না হয় তাহলে হয়তো বা শরীরের কোন অংশ কিংবা চুল পানিতে ভিজবে না। স্মরণ রাখতে হবে ওযুর মধ্যে নাকের ভিতর পানি দেয়া এবং কুলি করা সুন্নাত। কিন্তু গোসলের মধ্যে তা ফরয, যদি গোসল ফরয হয়।
মাসআলাঃ গোসল চার প্রকার। যথা- (১) ফরয (২) ওয়াজিব (৩) সুন্নাত (৪) মুস্তাহাব। ১৯
➥১৯. ফতোয়ায়ে আলমগীরী
মাসআলাঃ ফরয গোসল সমূহ হচ্ছে- যথা: (১) সহবাসের পরের গোসল। (২) ঋতুস্রাব বন্ধ হওয়ার পরের গোসল, (৩) নেফাসের রক্ত বন্ধ হওয়ার পরের গোসল।
মাসআলাঃ ওয়াজিব গোসল-যথা: (১) জীবিতদের উপর মৃত ব্যক্তিকে গোসল করানো ওয়াজিব। কিতাবে জীবিতদের উপর মৃত ব্যক্তিকে গোসল করানো ওয়াজিব বলেছেন। কিন্তু আসলে এ গোসল আমলী ফরযে কেফায়া এটা নিম্ন স্তরের হওয়ার কারণে ফিকাহ বিশেষজ্ঞগণ ওয়াজিব শব্দটি প্রয়োগ করেছেন। ২০
➥২০. ফতোয়ায়ে শামী
(২) সমস্ত শরীরে নাপাকী লেগেছে অথবা শরীরের অংশ বিশেষে নাফাকী লেগেছে কিন্তু নাফাকীর স্থান লুকায়িত অর্থাৎ নাজাসাতে হাকীকী নির্দিষ্ট কোন স্থানে লেগেছে তা জানা নেই। এমতাবস্থায় সমস্ত শরীর ধৌত করা ওয়াজিব।২১
➥২১. ফতোয়ায়ে আলমগীরী, দুররে মুখতার।
দুররে মুখতার কিতাবে উপরোলেখিত অবস্থায় সমস্ত শরীর ধৌত করা অর্থাৎ গোসল করাকে ওয়াজিবই লিখেছেন। কিন্তু গ্রহণযোগ্য মত হল এই যে, এর এক অংশকে ধুয়ে নেয়াই যথেষ্ট। তবে গোসল করে নেয়া মুস্তাহাব।
মাসআলাঃ সুন্নাত গোসল। যথা: (১) জুমআর নামাজের জন্য গোসল করা। (২) উভয় ঈদের নামাজের জন্য গোসল করা। (৩) এহরামের আগে গোসল করা। (৪) হজ্ব অথবা উমরাহের জন্য গোসল করা। (৫) আরাফার মাঠে অবস্থানের জন্য গোসল করা। ২২
➥২২. আলমগীরী, দুররে মুখতার, শামী।
মাসআলাঃ মুস্তাহাব গোসল ২৫টি। যা নিম্নে প্রদত্ত হল।
(১) মস্তিষ্ক বিকৃতি ও বেহুশী দূর হওয়ার পর গোসল করা।
(২) সিংগা লাগানোর পর গোসল করা।
(৩) শবে বরাতে গোসল করা অর্থাৎ শা’বান মাসের ১৫ তারিখের রাতে গোসল করা। (উল্লেখ্য যে, ইসলামের দৃষ্টিতে রাত আগে আসে, দিন পরে আসে)।
(৪) আরফার রাতে অর্থাৎ জিলহজ্ব মাসের নবম তারিখের রাতে।
(৫) ক্বদরের রাতে গোসল করা।
(৬) মুযদালিফায় অবস্থানের পূর্ববর্তী সময়ে গোসল করা।
(৭) কোরবানীর দিন সকালে গোসল করা।
(৮) মিনায় প্রবেশের পূর্ববর্তী সময়ে গোসল করা।
(৯) মিনায় পাথর নিক্ষেপের পূর্বে গোসল করা।
(১০) তাওয়াফে জিয়ারতের উদ্দেশ্যে পবিত্র মক্কায় প্রবেশের পূর্ববর্তী সময়ে গোসল করা।
(১১) সূর্যগ্রহণের সময় নামায পড়ার জন্য গোসল করা।
(১২) চন্দ্রগ্রহণ ধরলে নামায পড়ার জন্য গোসল করা।
(১৩) ভয়ের সময় নামাজের জন্য গোসল করা।
(১৪) বিপদ থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য নামায, তাস্বীহ, তাহলীল ইত্যাদির পূর্বে গোসল করা।
(১৫) রাসূলে করীম (ﷺ)-এর সম্মানার্থে মদীনা শরীফে প্রবেশ করার সময় গোসল করা।
(১৬) নতুন কাপড় পরিধান করার সময় গোসল করা।
(১৭) মৃত ব্যক্তিকে গোসল করানোর পর গোসল করা।
(১৮) হত্যা করার সময় হত্যাকৃত ব্যক্তির উপর গোসল করা। এ হত্যা, যে কোন রকমেরই হোক না কেন।
(১৯) সফর থেকে ফিরে আসার পর গোসল করা।
(২০) মহিলাদের ইস্তেহাজার খুন বন্ধ হওয়ার পর গোসল করা।
(২১) অপ্রাপ্ত বয়স্ক ছেলের উপর গোসল করা। যখন সে বয়সের দিক দিয়ে বালেগ হবে।
(২২) ইসলাম ধর্ম গ্রহণের সময় গোসল করা।
(২৩) মানুষের মাহফিলে উপস্থিত হওয়ার জন্য গোসল করা।
(২৪) গোনাহ থেকে তাওবা করার পূর্বে গোসল করা।
(২৫) স্বপ্নদোষের পর স্ত্রীর নিকট গমনের ইচ্ছা করলে প্রথমে গোসল করা। ২৩
➥২৩. তান্বীরুল আবছার, দুররে মুখতার, পৃষ্ঠা-১১৪, শামী, পৃষ্ঠা-১১৫।
মাসআলাঃ নাকের ভিতরের শুষ্ক ময়লা-আবর্জনার পরত তথা ছিলকা নিঃসন্দেহে পবিত্রতা অর্জনে প্রতিবন্ধক। এভাবে খামিকৃত আটা নখে লেগে থাকাও পবিত্রতা অর্জনে প্রতিবন্ধক। প্রথমে নাকের ভিতরের ময়লা-আবর্জনার শুষ্ক পরত ও আটাকে দূর করে পরে গোসল করবে। নতুবা গোসল হবে না। ২৪
➥২৪. দুররে মুখতার, ফতোয়ায়ে শামী।
মাসআলাঃ যদি কারো শরীর অথবা চুলের মধ্যে মেহেদী কিংবা তৈল লাগানো হয় তবে এই মেহদী কিংবা তৈল পবিত্রতা অর্জনে প্রতিবন্ধক নয়। টিক তেমনিভাবে নখের ভিতরে মাটি জাতীয় ময়লা যদি পাক হয় তা প্রতিবন্ধক নয়। ২৫
➥২৫. তানবীরুল আবছার, দুররে মুখতার।
মাসআলাঃ দাঁতের ফাঁকে গোশতের ছোট টুকরা অথবা অন্য কোন খাবার আটকে থেকে গেলে গোসল আদায় শুদ্ধ হয়ে যাবে। তবে যদি কোন শক্ত বস্তু হয়, যার কারণে পানি পৌঁছতে বাধা সৃষ্টি করে তাহলে গোসল শুদ্ধ হবেনা।২৬
➥২৬. দুররে মুখতার।
মাসআলাঃ আংটি অথবা কানের বালী বা দুল যদি এমন শক্ত ভাবে আটকে থাকে যে তার ভিতর পানি পৌঁছানে সম্ভব নয় তাহলে গোসলের সময় তা খুলে নেয়া ওয়াজিব হবে। নতুবা নাড়াচাড়া করাই যথেষ্ট। ২৭
➥২৭. তানবীরুল আবছার।
মাসআলাঃ এক সময়ে কয়েকজন স্ত্রীর সাথে কিংবা একই স্ত্রীর সাথে একাধিকবার সহবাস করলে একবার গোসলই ওয়াজিব।
মাসআলাঃ গোসল করার সময় একটি চুলও যদি শুকনা থেকে যায় তাহলে পূনরায় গোসল করতে হবে। হ্যাঁ যদি কিছু শরীর শুকনা থেকে যায় এবং নামাযের পূর্বে স্বীয় ভিজা হাত উহার উপর দিয়ে ফিরিয়ে নেয় তাহলে এ গোসল যথেষ্ট হবে।
মাসআলাঃ মহিলা ফরয গোসলের জন্য চুলের খোঁপা খোলা জরুরী নয়, শুধু চুলের গোড়া ভিজানো যথেষ্ট।
মাসআলাঃ উন্মুক্ত ময়দানে যেখানে আবাদী থাকবে সেখানে উলঙ্গ গোসল করা হারাম। তবে গোসলখানাতে বা কোন আড়ালে বা বাউন্ডারীতে উলঙ্গ গোসল করাতে ক্ষতি নেই। গোসলের মধ্যে চার, পাঁচ সেরের অধিক পানি খরচ করবে না।
মাসআলাঃ গোসলের মধ্যে মালিশ করা শর্ত নয়, যদি এক চুলের পরিমাণও কোন জায়গা শুকনা থেকে যায় তাহলে গোসল হবে না।
মাসআলাঃ কুফরী থেকে ইসলামে প্রবেশ করার সময় গোসল করা ওয়াজিব।
মাসআলাঃ মানুষের শরীর হুকমী নাপাকের দরুণ নাপাক হয়েছে, তখন চুলের গোড়ায় পানি পৌঁছানো শরীয়তের বিধান মতে ফরয। যেমন- গোসল ফরয হওয়া অবস্থায়, বা হায়েয (মাসিক) বা নিফাসের (সন্তান প্রসবের পর যে রক্ত বের হয়) রক্ত বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর।
মাসআলাঃ নাকে পানি দেয়া ও কুলি করা যানাবাতের গোসল (ফরয গোসল) ইত্যাদিতে ফরয। কিন্তু অযুতে সুন্নাত।
মাসআলাঃ ফরয গোসলের মধ্যে মাথার চুলসমূহ খিলাল করা ওয়াজিব, অযুর মধ্যে ওয়াজিব নয়। ২৮
➥২৮. তাফহীম, পৃষ্ঠা-৫৫৯।
অযুর বর্ণনা
____________________
অযুর বর্ণনা
মাসআলাঃ ওযু করার পূর্বে যদি প্রস্রাবের হাজত হয় তাহলে প্রথমে প্রস্রাব করে নিবে। তারপর কিবলার দিকে মুখ করে বসে বিছমিল্লাহ পড়া, তারপর উভয় হাত কব্জি পর্যন্ত ৩ বার ধৌত করা, মিসওয়াক দ্বারা দাঁত পরিস্কার করা। যদি মিস্ওয়াক না থাকে তাহলে শাহাদাত আঙ্গুল দ্বারা দাঁত ঘষে নেয়া, তারপর ৩ বার কুলি করা, কুলি করার পর নাকে ৩ বার পানি দিয়ে বাম হাত দ্বারা নাকের ছিদ্র পরিষ্কার করা, ৩ বার পানি দিয়ে মুখ ধোয়া, মুখ ধোয়ার সীমা হচ্ছে কপালের উপরিভাগের চুলের উৎপত্তির স্থান হতে নীচের থুতনী এবং এক কানের লতি হতে অপর কানের লতি পর্যন্ত সমস্ত মুখমন্ডল ধোয়া। যাতে করে চুল পরিমাণ অংশ যেন শুকনা না থাকে। যদি চুল পরিমাণ অংশ শুকনা থাকে তাহলে অযু হবে না। অতঃপর উভয় হাত কনু পর্যন্ত ৩ বার ধোয়া। প্রথমে ডান হাত তারপর বাম হাত। এরপর নতুন পানি নিয়ে মাথার চারিভাগের একভাগ ভিজা হাতে মসেহ করা এবং কান ও ঘাড় (গরদান) মাসেহ করা। সর্বশেষ উভয় পায়ের গিরা পর্যন্ত প্রথমে ডান পা তারপর বাম পা ধোয়া। ওযু করার সময় কথা-বার্তা না বলা আবশ্যক। বরং প্রত্যেক অঙ্গ ধোয়ার সময় কালেমা শাহাদাত পাঠ করা অবস্থায় অযু সমাপ্ত করা।
মাসআলাঃ যদি শিশু পানির মধ্যে হাত প্রবেশ করিয়ে দেয় এ ক্ষেত্রে যদি অবগত হওয়া যায় যে, শিশুর হাত নিশ্চিতভাবে পবিত্র ছিল তাহলে নিঃসন্দেহে অযু জায়েয। আর যদি নাপাক হওয়াটা নিশ্চিত হয় তাহলে কোন অবস্থায় জায়েয নেই। আর যদি সন্দেহ হয় তাহলেও সতর্কতা অবলম্বন পূর্বক উক্ত পানি দ্বারা অযু করবেনা। যদি অযু করে নেয় তাহলে জায়েয হয়ে যাবে। ফতওয়ায়ে কাজীখানিয়াতে উল্লেখ রয়েছে যে, অনুরূপভাবে যদি শিশু তার হাতকে কূপ বা পাত্রে প্রবেশ করিয়ে দেয় তাহলে ইসতিহসানের ভিত্তিতে উহা দ্বারা অযু করবেনা। আর যদি নাপাক না হয় এবং অযু করে তাহলে তা জায়েয। ২৯
➥২৯. খানিয়া, ২য় খণ্ড, পৃষ্ঠা-৫।
মাসআলাঃ পা ধৌত করার সময় পায়ের তলা দেখা জরুরী নয়। সাধারণত যেহেতু তলাতে এরূপ বস্তু লেগে থাকেনা কেননা জুতার দরুণ হিফাজতে থাকে, এজন্য প্রত্যেক অযুর সময় তলা দেখা জরুরী হবে না এবং এর উপরেই আমল চলমান। তবে এমন ব্যক্তি যিনি জুতা পরিধান করেন না এবং এমন জায়গায় কাজ করেন যেখানে এমন বস্তু লেগে যায় তাহলে তার জন্য সতর্কতা হল দেখে নিবেন। (আল্লাহ ও তাঁর রাসূলই অধিক জ্ঞাত)
মাসআলাঃ যদি উলঙ্গ হয়ে গোসল করা হয় তাহলে গোসল আদায় হয়ে যায় কি-না? আর যদি ঐ অবস্থায় অযুও করে নেয় তাহলে অযু আদায় হয়ে যাবে কি-না? উল্লেখিত অবস্থায় গোসল শুদ্ধ আছে। এভাবে অযুও শুদ্ধ আছে, অতএব নামায পড়ার জন্য পূণরায় অযু করা জরুরী নয়। উম্মুল মু’মিনীন হযরত আয়েশা সিদ্দীকা (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত আছে তিনি বলেন- নবী করীম (ﷺ) গোসলের পর অযু করতেন না।” ৩০
➥৩০. তিরমিযী শরীফ, ১ম খণ্ড।
মাসআলাঃ অযুতে নাকে পানি দেয়া ও কুলি করা সুন্নাত।
মাসআলাঃ অযুর মধ্যে অন্যের সাহায্য চাওয়া উত্তম নয়। অন্যের থেকে সাহায্য নেয়ার চেয়ে নিজে অযু করা উত্তম।
মাসআলাঃ অযু বিহীন নামায আদায়কারী নিঃসন্দেহে পাপী ও অন্যায়চারণকারী তথা ফাসেক ও ফাজের। আর যদি অযু বিহীন নামায আদায় করাকে হালাল মনে করে ইচ্ছাকৃতভাবে অযু না করে নামায আদায় করে নিঃসন্দেহে সেই ব্যক্তি কাফির হয়ে ইসলাম ধর্মের সীমারেখা থেকে বাহির হয়ে যাবে। অর্থাৎ সে আর মুসলমান থাকবে না।
হযরত মোল্লা আলী ক্বারী হানাফী আলাইহি রাহমাহ্ বলেন-
من صل غير القبلة متعمدًا هو كافركا لمستخف وكذا اذا صل بغير طهارة .
অর্থাৎ- যে ব্যক্তি ইচ্ছাকৃত কিবলা ভিন্ন অন্যমুখী হয়ে সালাত আদায় করে সে কাফির। অনুরূপভাবে যদি কেউ পবিত্রতা ব্যতিরেকে সালাত আদায় করে সেও কাফির।৩১
➥৩১. দুররে মুখতার।
মাসআলাঃ যদি কারো হাতে বা পায়ে পাটল থাকে তখন সে অযুর সময় পানি এ স্থানের উপর ভাসিয়ে দিতে কষ্ট হয়, তাহলে এর উপর মাসেহ করবে। আর যদি মাসেহ করতে পারেনা তাহলে আশে পাশের জায়গা ধৌত করবে এবং ঐ স্থান ছেড়ে দেবে। ৩২
➥৩২. শরহে ফিকহে আকবর, ফজলু ফিল ক্বিরাআতে ওয়াস সালাত, পৃষ্ঠা-১৭৩।
মাসআলাঃ যদি কোন স্ত্রীলোকের পায়খানা ও পেসাবের রাস্তা ফেটে এক হয়ে যায় এবং হাওয়া বাহির হয় আর তার এটা জানা না থাকে যে হাওয়া পায়খানার রাস্তা দিয়ে বাহির হলো, না পেসাবের রাস্তা দিয়ে, এমতাবস্থায় যদি ঐ মহিলার নির্গত বায়ুতে দুর্গন্ধ থাকে তবে ঐ স্ত্রীলোকের অযু ভঙ্গ হয়ে যাবে। কেননা দুর্গন্ধ ঐ হাওয়া ও বায়ুতে হয়, যা পায়খানার রাস্তা দিয়ে বাহির হয়। আর তা তো অযু ভঙ্গকারী। আর যদি দুর্গন্ধ না থাকে তাহলে এ বায়ু পেসাবের স্থান দিয়ে বাহির হয়েছে, যা শারীরিক ব্যতিক্রমের কারণেই হয়। আর তা অযু ভঙ্গকারী নয়। তবে সতর্কতা হিসেবে অযু করে নেবে। ৩৩
➥৩৩. দুররে মুখতার, শামী।
মাসআলাঃ জোঁকের রক্ত শোষণে অযু ভঙ্গ হয়ে যাবে। মশা এবং ছারপোকা বা উড়াশ ইত্যাদির রক্ত শোষণে অযু ভঙ্গ হবেনা। আর চিচড়ী তথা রক্ত খেকো কীট বা আঠালী (যা গরু, ছাগল, মহিষ ইত্যাদির গায়ে বসে রক্ত খায়) যদি বড় হয় তাহলে জোঁকের হুকুমের অন্তর্ভুক্ত। আর যদি ছোট হয় তাহলে মশার হুকুমের অন্তর্ভ্ক্তু। ৩৪
➥৩৪. আলমগীরী।
মাসআলাঃ অশ্রু ও ঘাম অযু ভঙ্গকারী নয়। ৩৫
➥৩৫. দুররে মুখতার।
মাসআলাঃ যদি কারো থুথুর সাথে রক্ত মিশ্রিত হয়ে বের হয় এবং রক্তের প্রাধান্য থাকে, অর্থাৎ থুথু ফেললে রক্ত বর্ণ প্রকাশিত হয় তাহলে অযু ভঙ্গ হয়ে গেল। আর যদি হলুদ বর্ণ প্রকাশিত হয়, তাহলে অযু ভঙ্গ হবে না। ৩৬
➥৩৬. শামী।
মাসআলাঃ যদি ক্ষতস্থানে বেন্ডিজ করা হয় এবং বেন্ডিজের উপর রক্ত ইত্যাদির ভিজে লালচে চিহ্ন পরিলক্ষিত হলে অযু ভঙ্গ হয়ে যাবে। কেননা এটা (রক্ত ইত্যাদির ছড়িয়ে পড়া লালচে চিহ্ন) গড়িয়ে পড়ার হুকুমের অন্তর্ভুক্ত। অর্থাৎ ক্ষতস্থান থেকে রক্ত বের হয়ে আরেক পবিত্র স্থানে গড়িয়ে গেলে তার যে হুকুম হবে, উপরোলিখিত অবস্থায়ও একই হুকুম হবে। কেননা যদি বেন্ডিজ না হত তাহলে রক্ত গড়িয়ে পড়ত। ৩৭
➥৩৭. দুররে মুখতার, পৃষ্ঠা-৯৪।
মাসআলাঃ নিজ অথবা কারো লজ্জাস্থান দেখলে অযু ভঙ্গ হবেনা। যদি (কাপড়ের উপর দিয়ে) নিজ অথবা অন্য কারো লজ্জাস্থান স্পর্শও করে ফেলে তবুও অযু ভঙ্গ হবেনা। ৩৮
➥৩৮. আলমগীরী।
তবে হাত ধুয়ে নেয়া মুস্তাহাব। ৩৯
➥৩৯. দুররে মুখতার।
মাসআলাঃ স্ত্রীলোককে স্পর্শ করলে অযু ভঙ্গ হবেনা। যতক্ষণ পর্যন্ত মজী ইত্যাদি বের না হয়। তবে অযু করে নেয়া মুস্তাহাব। ৪০
➥৪০. দুররে মুখতার, পৃষ্ঠা-৯৯।
মাসআলাঃ যদি কোন ব্যক্তি বসা অবস্থায় এমনভাবে ঘুমিয়ে পড়ল যে, ঝুঁকে ঝুঁকে মাটির নিকটবর্তী হতে লাগল এমতাবস্থায় যতক্ষণ পর্যন্ত মাটিতে পড়ে না যাবে ততক্ষণ পর্যন্ত অযু থাকবে। আর যদি মাটিতে পড়তেই সজাগ হয়ে যায় তবেও অযু থাকবে, নতুবা নয়। ঠিক তেমনি ভাবে যদি ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে নিকটস্থ ব্যক্তির কথা-বার্তা শুনতে পায় তবেও অযু ভঙ্গ হবেনা। ৪১
➥৪১. দুররে মুখতার, পৃষ্ঠা-৯৬।
মাসআলাঃ আমাদের হানাফীদের মাযহাব অনুযায়ী মেসওয়াক করা অযুর সুন্নাত। আর শাফেয়ীদের মাযহাব মতে নামাযের সুন্নাত।
তায়াম্মুমের বর্ণনা
____________________
তায়াম্মুমের বর্ণনা
মাসআলাঃ আল্লামা ইব্রাহিম হালবী হানাফী (رحمة الله) বলেন- যদি কোন ব্যক্তি অসুস্থতার কারণে কিংবা রোগ বেড়ে যাওয়ার ভয়ে পানি ব্যবহার করতে অপরাগ। এক্ষেত্রে পানি থাকা স্বত্ত্বেও তায়াম্মুম দ্বারা পবিত্রতা অর্জন করে নামায ইত্যাদি আদায় করতে পারবে। ৪২
➥৪২. দুররে মুখতার, গায়াতুল আওতার।
মাসআলাঃ রোগ, মুসাফির, দুশমনের ভয় ও পানি না পাওয়া অবস্থায় তায়াম্মুম করার বিধান আছে।
মাসআলাঃ তায়াম্মুম করার পদ্ধতি এ যে, পবিত্র মাটি বা এমন বস্তু যাতে পবিত্র মাটি পড়েছে, তাতে উভয় হাত মেরে একবার স্বীয় চেহরায় ফিরিয়ে নিবে অতঃপর দ্বিতীয়বার পবিত্র মাটিতে হাত মেরে উভয় কনুই সহ মালিশ করবে।
মাসআলাঃ তায়াম্মুম দ্বারা কোন্ কোন নামায পড়া যায়?
ইবনে আব্বাস (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন- সুন্নাত ত্বরীকা হল- কোন ব্যক্তি এক তায়াম্মুম দ্বারা শুধুমাত্র এক ওয়াক্তের নামায আদায় করবে। অতঃপর পুণরায় তায়াম্মুম করবে অন্য ওয়াক্তের নামাযের জন্য। দারু কুত্বনী দূর্বল সনদে ইহা বর্ণনা করেছেন।
আযানের বর্ণনা
____________________
আযানের বর্ণনা
মাসআলাঃ আযানের মধ্যে ‘আল্লাহ’ শব্দের ‘আলিফ’কে লম্বা করে পড়লে ‘হামযায়ে ইসতিফহাম’ (প্রশ্নবোধক হামযা) হওয়ার ভয় থাকে যা অর্থ পরিবর্তন হওয়ার (একটি) কারণ, এজন্য সম্মানিত ফকীহগণ ‘আল্লাহ্ ও আকবর’ শব্দের ‘আলিফ’কে আযানের মধ্যে লম্বা করে পড়তে নিষেধ করেছেন, এ জন্য উভয় স্থানে আলিফের উপর ‘মদ্দ’ (লম্বা করে পড়া) করা যাবে না।
الله اكبر (আল্লাহু আকবর) এর মধ্যে ‘আলিফ’কে মুয়াজ্জিন মদ্দ সহকারে বলতে পারবেনা কেননা নিশ্চয় উহা (হামযায়ে) ইসতিফহাম (এর অন্তর্ভূক্ত), এবং নিশ্চয় উহা শরীয়তের দৃষ্টিতে লাহন (ভুল) এর অন্তর্ভূক্ত। ৪৩
➥৪৩. আস সিয়ায়াহ্, পৃষ্ঠা-১৫, খণ্ড- ২য়; বাবুল আযান, ফতওয়ায়ে হিন্দিয়া, পৃষ্ঠা-৫৬, খণ্ড-১ম, আল ফাসলুচ্ছানী ফীল আযান।
মাসআলাঃ আযান ঘোষণা হওয়া কোন স্থানের সাথে নির্দিষ্ট নয়, ইমামের ডানে-বামে আযান দেয়া জায়েয আছে। কিন্তু খুতবার পূর্বে আযানের জন্য ফকীহগণ বর্ণনা করেছেন যে, মসজিদের ভিতরে খতীবের সামনে হতে হবে। অর্থাৎ- “দ্বিতীয় আযান খতীবের নিকটে দিবে।”
নামাযের বর্ণনা
____________________
নামাযের বর্ণনা
মাসআলাঃ নামাযরত অবস্থায় দৃষ্টি রাখার বর্ণনা- জানা আবশ্যক যে, নামাযি ব্যক্তি কিয়াম তথা দাঁড়ানো অবস্থায় তার দৃষ্টি রাখবে সিজদার স্থানে। রুকু অবস্থায় পায়ের পাঞ্জা তথা পায়ের পিঠের উপর। আর সিজদার মধ্যে নাকের মাথার দিকে, তাশাহুদের বৈঠকের সময় নিজ ঝোলী তথা দুই রানের মধ্যবর্তী স্থানে দৃষ্টি রাখবে। প্রথম সালামের সময় ডান কাঁধের দিকে আর দ্বিতীয় সালামের সময় বাম কাঁধের দিকে দৃষ্টি রাখবে।
মাসআলাঃ নামাযের মধ্যে পুরুষ ও মহিলাদের করণীয়- উল্লেখ থাকে যে, মেয়েদের নামাযের সঙ্গে পুরুষের নামাযের কিছুটা পার্থক্য রয়েছে। এ সম্পর্কে নীচে বর্ণনা করা হলো-
তাকবীরে তাহরীমা
পুরুষ: হাত চাদরের ভেতরে থাকলে বের করে নিতে হবে। প্রথম তাকবীর উচ্চারণের সময় পুরুষেরা দুই হাত কান বরাবর তুলে নাভির নীচে হাত বাঁধবে। নামায বিশেষ জোরে বা চুপে চুপে তাকবীর উচ্চারণ করতে পারে। অর্থাৎ যে নামাযে চুপে চুপে তাকবীর বলতে হয় তাতে চুপে চুপে তাকবীর বলবে। আর যে নামাযে উচ্চস্বরে তাকবীর বলতে হয় তাতে উচ্চস্বরে তাকবীর বলবে।
মহিলা: প্রথম তাকবীর উচ্চারণের সময় মেয়েরা দুই হাত কাঁধ বরাবর তুলবে। কাপড়ের ভিতর থেকে হাত বের করবে না। তাকবীরে তাহরীমার পর বাম হাত বুকের উপর রেখে তার উপর ডান হাত আলতো করে রেখে নামায শুরু করবে দু‘আ ও সূরা ইত্যাদি পুরুষের মতই পড়বে। কিন্তু কোন কিছুই শব্দ করে পড়তে পারবে না।
পোশাক
পুরুষ: যাতে সতর ঢাকা থাকে এবং শালীনতা বজায় থাকে এরকম পরিচ্ছন্ন পোশাকে পুরুষেরা নামায পড়বে।
মহিলা: মেয়েদের সমস্ত শরীরই সতর মুখমন্ডল এবং উভয় হাত ও পায়ের পাতা ব্যতীত সমস্ত শরীর এমনকি মাথার চুলও নামায পড়ার সময় ঢাকা থাকতে হবে। শাড়ী দিয়ে যদি সমস্ত শরীর ঢাকা না যায় তবে চাদর দিয়ে ঢেকে নিতে হবে। গলা, হাত ও চুলসহ সমস্ত শরীরই ঢেকে রাখতে হবে।
ক্বেরাত
পুরুষ: পুরুষের নামায বিশেষ উচ্চস্বরে বা নিম্নস্বরে সূরা-ক্বেরাত পড়তে পারবে।
মহিলা: মহিলারা নামাযে কোনো অবস্থাতেই শব্দ করে সূরা, ক্বেরাত পড়তে পারবে না। নামাযে উঠা-বসার সময় তাদের আল্লাহু আকবরও নিম্নস্বরে পড়তে হবে। উচ্চস্বরে পড়তে পারবে না।
ক্বিয়াম
পুরুষ: ক্বিয়ামের সময় পুরুষেরা দুই পা কমপক্ষে চার আঙ্গুল, বেশীপক্ষে বার আঙ্গুল পরিমাণ ফাঁক রেখে দাঁড়াবে। অথবা শারীরিক গঠন অনুযায়ী উভয় পা ফাঁক করে দাঁড়াবে।
মহিলা: মহিলারা পা ফাঁক রেখে দাঁড়াতে পারবে না। দুই পায়ের পাতা মিলিয়ে দাঁড়াতে হবে। অথবা শারীরিক গঠন অনুযায়ী উভয় পা ফাঁক করে দাঁড়াবে। পুরুষ-মহিলা নির্বিশেষে সকলেই সব ওয়াক্তের ফরয নামায দাঁড়িয়ে পড়তে হবে।
রুকু
পুরুষ: রুকুর সময় পুরুষেরা হাত, পা ফাঁক রেখে দুই হাত দিয়ে হাঁটু চেপে ধরে রুকু করবে। মাথা, পিঠ ও নিতম্ব সমান্তরাল রাখতে হবে।
মহিলা: মহিলারা রুকুর সময় দুই হাত শরীরের সঙ্গে লাগিয়ে ঝুঁকে পড়ে হাতের আঙ্গুলের অগ্রভাগ দিয়ে হাঁটু স্পর্শ করে রুকু করতে হবে। রুকুতে পুরুষদের মত তাদেরও তাসবিহ পড়তে হবে। রুকুতে পুরুষদের মত অত মাথা ঝুকতে হবে না।
সিজদা
পুরুষ: সিজদার সময় পুরুষেরা সোজাসুজি সিজদায় যাবে এবং সিজদায় সব অঙ্গ পরস্পর থেকে আলাদা রাখবে। শুধু পা দুটো মিলিত থাকবে। হাতের কব্জির উপরের অংশও মাটি থেকে উপরে উঠিয়ে রাখবে।
মহিলা: মহিলারা শরীরের সব অঙ্গ একসাথে মিলিয়ে রেখেই সিজদায় যাবে এবং সিজদা অবস্থাতেও সব অঙ্গ একত্রে মিলিয়ে হাত কনুই পর্যন্ত মাটিতে বিছিয়ে দিয়ে সিজদা করবে।
বৈঠক
পুরুষ: পুরুষ বসার সময় ডান পায়ের পাতা খাড়া রেখে আঙ্গুলগুলো ভাঁজ করে কেবলামুখী রাখতে হবে।
মহিলা: মহিলারা বসার সময় দুই পা ডান দিকে বের করে দিয়ে নিতম্বরের উপর বসতে হবে। সামান্য ঘাড় ঘুরিয়ে সালাম ফিরিয়ে নামায শেষ করতে হবে।
মাসআলাঃ ঘরকে মসজিদ তথা ঘরের মধ্যে কোন স্থানকে সিজদার জন্য নির্দিষ্ট করা কেবলমাত্র নফল ও সুন্নাতের জন্য জায়েয ও দুরস্ত। ফরয সমূহের জন্য নির্দিষ্ট করা শরয়ীভাবে প্রমাণ নাই। ৪৪
➥৪৪. দারুকুতনী ও ফতোয়ায়ে সত্তারীয়া।
মাসআলাঃ তাশাহুদের মধ্যে আঙ্গুল দিয়ে ইশারা করা সুন্নাত। কিছু সংখ্যক আলেম উহাকে হারাম বলে থাকেন অথচ রিওয়ায়াত (হাদীস শরীফের বর্ণনা সমূহ) উহা (আঙ্গুল দিয়ে ইশারা করা) সাব্যস্ত, মুস্তাহাব ও সুন্নাত হওয়ার প্রতি দিক-নির্দেশনা করে।
‘আশ্হাদু আল্ লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ বলার সময় তর্জনী আঙ্গুল দ্বারা ইশারা করা হাদীস সমূহের বর্ণনা ও ফিকহ এর উপমা সমূহ দ্বারা প্রমাণিত, এজন্য নামাযের মধ্যে ‘আশহাদু আল্ লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ বলার সময় তর্জনী আঙ্গুল দ্বারা ইশারা করা সুন্নাত। যে সব আলেমরা উহাকে বিদআত বলে থাকেন তাদের অভিমত বা ধারণা সুস্পষ্ট হাদীস সমূহের পরিপন্থী। উল্লেখ্য যে, তর্জনী আঙ্গুল হচ্ছে যাকে আমরা শাহাদাত আঙ্গুল বলে থাকি।
হযরত আবদুল্লাহ ইবনে যুবায়র (رضي الله عنه) তাঁর পিতা থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন- যখন তিনি নামাযের প্রথম বা শেষ বৈঠকে বসতেন তখন তিনি ডান হাতের তালু ডান পায়ের উরুর উপর এবং বাম হাতের তালু বাম-পায়ের উরুর উপর রেখে তর্জনী আঙ্গুল দ্বারা ইশারা করতেন এবং বৃদ্ধা আঙ্গুলকে মধ্যমা আঙ্গুলের উপর রাখতেন, এবং বাম হাতের তালুকে হাঁটুর উপর রাখতেন।৪৫
➥৪৫. সহীহ মুসলিম, খণ্ড-১ম, পৃষ্ঠা-২১৬, বাবু সিফাতিল জুলূস ফিস্সালাত, সুনানু আবু দাউদ, বাবু রফয়িল ইয়াদাইন, খণ্ড-১ম, পৃষ্ঠা-১০৫।
মাসআলাঃ নামাযের মধ্যে দীর্ঘক্ষণ চুপ থাকা, অতঃপর ক্বিরাত শুরু করা অর্থাৎ নামাযে ওজর ব্যতীত এতটুকু দীর্ঘ সময় চুপ থাকা, যে সময়ের মধ্যে তিনবার ‘সুবহানাল্লাহ’ পড়া যায়, তা সিজদায়ে সাহুকে ওয়াজিব করে।
আল্লামা হাসকাফী বলেন- জেনে রাখ! যদি ঐ সন্দেহ তাকে মশগুল রাখে অতঃপর সে এক রুকন আদায়ের পরিমাণ চিন্তা-ভাবনা করে এবং সে সন্দেহ অবস্থায় ক্বিরাতে মশগুল না হয় এবং তাসবীহ এর মধ্যে নয়, যাখারা গ্রন্থে ইহা উল্লেখ রয়েছে, তার উপর সিজদায়ে সাহু ওয়াজিব হবে। ৪৬
➥৪৬. রদ্দুল মুহতার, বাবু সুজুদিস্ সাহো, পৃষ্ঠা-৫০৬, ফতওয়ায়ে হিন্দিয়া, পৃষ্ঠা-১৩১, খণ্ড-১ম
অতঃপর উহার মধ্যে চিন্তা-ভাবনা দীর্ঘ হয় এবং চিন্তা-ভাবনার দরুণ অবস্থা পরিবর্তন হয়ে যায় তাহলে তার উপর ইসতিহসান-এর ভিত্তিতে সিজদায়ে সাহু আবশ্যক হবে। ৪৭
➥৪৭. ফতওয়ায়ে হক্কানিয়া, খণ্ড- ৩য়, পৃষ্ঠা-৩৩১।
মাসআলাঃ নামাযের মধ্যে পা নাড়ানো যতক্ষণ পর্যন্ত আমলে কাছীর এর পর্যায়ে না হয় তাহলে উহা দ্বারা নামায ভঙ্গ হয় না। হ্যাঁ! বিনা প্রয়োজনে পা নাড়াচড়া থেকে বিরত থাকা উচিত, তবে উভয় পা নাড়ানো আমলে কাছীর এর পর্যায়ভূক্ত।
যদি মুসল্লী অনবরত এক পা নাড়াচাড়া করে তাহলে তার নামায ভঙ্গ হবে না। আর যদি উভয় পা নাড়াচাড়া করে তাহলে নামায ভঙ্গ হবে এবং মুসল্লী যদি তার উভয় পা অল্প পরিমাণ নাড়াচাড়া করে তাহলে তার নামায ভঙ্গ হবে না। মুহীত গ্রন্থে এরূপ উল্লেখ রয়েছে এবং এ অভিমত সবচেয়ে নিখুঁত এরূপ আল বাহর্রু রায়িক গ্রন্থে উল্লেখ রয়েছে। ৪৮
➥৪৮. আল হিন্দিয়া, পৃষ্ঠা-১০৩, খণ্ড-১ম, বাবু মা-ইয়াফসুদুস্ সালাত।
মাসআলাঃ যে গালিচার উপর ক্রশ দন্ডের ছবি থাকে, কাফেরদের সাথে সাদৃশ্য হওয়ার কারণে উহার উপর নামায পড়া মাকরূহ, এজন্য এরূপ গালিচা বা বড় কার্পেটে নামায পড়া থেকে বিরত থাকা আবশ্যক এবং অমুসলিমদের ধর্মীয় নিদর্শনসমূহের সাথে সাদৃশ্য রাখা মাকরূহ হিসেবে গণ্য। এ জন্য ক্রশদন্ড যেহেতু খৃস্টানদের ধর্মীয় নিদর্শন সেহেতু ক্রশদন্ডের চিহ্ন সম্বলিত গালিচা বা বড় কার্পেটের উপর নামায পড়া কাফেরদের সাথে সাদৃশ্য হওয়ার কারণে মাকরূহ। হাদীস শরীফে এসেছে- রাসূল (ﷺ) এরশাদ করেছেন- “যে ব্যক্তি যে সম্প্রদায়ের সাথে সাদৃশ্য রাখবে সে তাদের অন্তর্ভূক্ত।” ৪৯
➥৪৯. আবু দাউদ, খণ্ড-২য়, পৃষ্ঠা-৫৫৯, কিতাবুল্ লিবাস, বারুফী লবসিশ শুহরাত।
মাসআলাঃ টাই পরিধান করে নামায পড়া মাকরূহ, টাই (হচ্ছে) ক্রশদন্ডের চিহ্ন যা খৃস্টানদের ধর্মীয় নিদর্শন সমূহের সমর্থন হয় সেহেতু কাফেরদের সাথে সাদৃশ্য হওয়ার কারণে উহার সাথে (টাই সহকারে) নামায পড়া মাকরূহ। রাসূল (ﷺ) ইরশাদ করেন- ‘যে ব্যক্তি যে সম্প্রদায়ের সাথে সাদৃশ্য রাখে সে তাদের অন্তর্ভূক্ত। ত্বীবী (رحمة الله) বলেন- রাসূল (ﷺ) এর বাণীঃ ‘যে ব্যক্তি যে সম্প্রদায়ের সাথে সাদৃশ্য রাখে’ এটা সৃষ্টি চরিত্র ও নিদর্শনের ক্ষেত্রে ব্যাপক। যদি কোন বস্তু নিদর্শনের অন্তর্ভূক্ত হয় তাহলে তা সাদৃশ্য হওয়ার ক্ষেত্রে অধিক স্পষ্ট হয়। ৫০
➥৫০. যিক্রুন ফী হাজাললুবাব, পৃষ্ঠা-২১৯, খণ্ড-৮, কিতাবুল লিবাস, আল ফসলুচ্ছানী।
আল্লামা মুল্লা আলী ক্বারী (رحمة الله) বলেন- ‘যে ব্যক্তি যে সম্প্রদায়ের সাথে সাদৃশ্য রাখে’ অর্থাৎ- যে ব্যক্তি নিজকে সাদৃশ্যনীয় করে রাখে কাফেরদের সাথে উদাহরণ স্বরূপ পোশাক ও অন্যান্য ক্ষেত্রে অথবা ফাসিক বা বদকার বা সূফী বা নেক্কার-সৎব্যক্তিদের সাথে সে ব্যক্তি তাদের অন্তর্ভূক্ত অর্থাৎ- দলভূক্ত ও কল্যাণের অন্তর্ভূক্ত। ৫১
➥৫১. মিরকাত, আলাল মিশকাত, পৃষ্ঠা-২৫৫, খণ্ড-৮ম
মাসআলাঃ ইফতারের কারণে মাগরিবের নামাযে দেরী করা জায়েয আছে কি-না?
মাগরিবের নামাযে দু’রাকাত নামাযের পরিমাণ দেরী করা তো সকলের ঐক্যমতে জায়েয আছে, উহা থেকে বেশী দেরী করা মাকরূহে তানযীহ, তবে রমযানুল মুবারকে যখন খিদে বেশী হবে তখন কিছু সময় দেরী করা জায়েয আছে তবে এ শর্তের ভিত্তিতে যে, এ দেরী করাটা যেন অধিক সংখ্যক তারকা উদ্ভাসিত হওয়া পর্যন্ত না পৌঁছে, এ জন্য যে, খিদে অবস্থায় নামায পড়া মাকরূহ। ৫২
➥৫২. র্দুরুল মুখতার, পৃষ্ঠা-৩৬৯, খণ্ড-১ম, আওক্বাতুস্ সালাত।
আল্লামা আলিম বিন আল্লাদ আনসারী বলেন, লালিমা অদৃশ্য হয়ে যাওয়া পর্যন্ত মাগরিবের নামায দেরী করা মাকরূহ এবং সিরাজিয়া গ্রন্থে উল্লেখ আছে- তবে সফর কিংবা খাবার পরিবেশিত দস্তরখানাতে সে থাকলে ওজর বশত নামায মাকরূহ হবে না। ৫৩
➥৫৩. ফতাওয়ায়ে তাতারখানীয়া, পৃষ্ঠা-৪০৬, খণ্ড-১ম, কিতাবুস্ সালাতিল মাওয়াক্বিত।
আল্লাহ্ ও তাঁর রাসূলই বেশী অবগত।
মাসআলাঃ মসজিদের ভিতরে জায়গা না হওয়ার দরুন একাকী বা জামাত সহকারে ছাদে নামায পড়া জায়েয আছে। কিন্তু ওজর ব্যতীত এরূপ করা মাকরূহ থেকে খালি নয়, ইমামের অবস্থা তার উপর সন্দেহযুক্ত না হওয়া এবং ইমাম থেকে অগ্রবর্তী না হওয়ার শর্তে ছাদে নামায পড়া জায়েয আছে। ৫৪
➥৫৪. ফতওয়ায়ে শামী, পৃষ্ঠা-৬৫৬, ১ম খণ্ড, আহকামুল মসজিদ।
ফতাওয়ায়ে কাজীখানে উল্লেখ রয়েছে- যদি মসজিদের ছাদে দাঁড়ায় এবং মসজিদের ভিতরে অবস্থানরত ইমামের ইকতিদা করে যদি মসজিদের ভিতরে ছাদের জন্য দরজা থাকে এবং ইমামের অবস্থা তার উপর সন্দেহযুক্ত না হয় তাহলে ইকতিদা শুদ্ধ হবে। আর যদি তার উপর ইমামের অবস্থা সন্দেহযুক্ত হয় তাহলে ইকতিদা শুদ্ধ হবে না। ৫৫
➥৫৫. বাবুল ইমামত, ফতাওয়ায়ে কাজীখান।
মাসআলাঃ
প্রশ্নঃ এক ব্যক্তি নামায পড়ছেন, তার সামনে অন্য ব্যক্তি আছে, নিজ ওয়াজীফাসমূহ শেষ করে ঐ নামাজীর আগে বসেছেন যিনি নামায পড়ছেন, এখন যদি এ ব্যক্তি যিনি সামনে বসেছেন উঠে চলে যান তাহলে ইহা জায়েয হবে কি-না? আর ইহা নামাজীর সামনে দিয়ে অতিক্রম এর অন্তর্ভূক্ত হবে কি-না? তার উপর কোন গুনাহ হবে কি-না?
উত্তরঃ ফুকাহায়ে কিরামের আনুষঙ্গিক বা খুঁটিনাটি মাসয়ালা থেকে উহা জায়েয হওয়া বুঝা যায় যে, এরূপ করা জায়েয আছে। কিন্তু সতর্কতার দিক হল এরূপ কাজ না করা এবং এরূপ আমলকারীকে তিরিস্কারও করা যাবে না। ৫৬
➥৫৬. খায়রুল ফতাওয়া, ২য় খণ্ড, পৃষ্ঠা-২৬২।
মাসআলাঃ ফতাওয়ায়ে কাজীখানে উল্লেখ রয়েছে যে, মুসল্লীর সামনে বা মাথার উপরে বা ডানে বা বামে বা তার কাপড়ে ছবিসমূহ থাকে তাহলে এমতাবস্থায় নামায পড়া মাকরূহ। যদি বিছানায় ছবিসমূহ থাকে এবং তা যদি সিজদার স্থানে না হয় তাহলে বিশুদ্ধ বর্ণনানুযায়ী মাকরূহ নয়। আর এ বিধান ঐ ক্ষেত্রে প্রযোজ্য যে, ছবি এ পরিমাণ বড় হবে যে, দর্শনকারী তাকালুফ ব্যতীত (বিনা কষ্টে বা কোন কিছুর আশ্রয় বা উপায় ব্যতীত) উহা দেখতে পারবেন। তবে যদি ছবি ছোট হয় বা উহার মাথা কর্তিত হয় তাহলে অসুবিধা নেই।
মাসআলাঃ দুয়ায়ে কুনূত যা বিতির নামাযে পড়া হয়, নামাযে বিতির ছাড়া অন্য কোন নামাযে দুয়ায়ে কুনূত পড়া হানাফীদের মতে জায়েয নয়- তবে ইমাম শাফেয়ী (رحمة الله) এর মতে ফজরের শেষ রাকাতে রুকু এর পরেও কুনূত পড়তে হবে কিন্তু হানাফীদের বক্তব্য হল- শরীয়ত প্রবর্তক হুজুর (ﷺ) এক মাস ফজরের নামাযে কুনূত পড়েছেন কেননা তিনি সে সময় একটি মুশরিক গোত্রের জন্য বদ দোয়া করতেন। এ বিষয়ে ফকীরের (গ্রন্থকারের) একটি স্বতন্ত্র পুস্তিকা “বয়ানাতে আদিলা” তথা কুনুতে নাযেলা পাঠের র্শয়ী বিধান নামক একটি পুস্তিকা প্রকাশিত আছে আগ্রহীদের উচিত উহা পাঠ করা।
মাসআলাঃ ইসলাম ধর্মে সমস্ত বিষয়ের মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হল নামায। ৫৭
➥৫৭. তাফহীম, পৃষ্ঠা-৮১৯।
মাসআলাঃ ফজর আবির্ভূত হওয়ার পর ফজরের সুন্নাত সমূহ ব্যতীত নফল পড়া হারাম।
হযরত ইবনে আব্বাস (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন- রাসূল (ﷺ) ইরশাদ করেন- ‘‘ফজর দুই ভাগে বিভক্ত, একটি ফজর খাবার হারাম করে দেয় এবং সে সময়ে নামায হালাল করে দেয় এবং অপর ফজর নামাযকে হারাম করে দেয়।”
রাসূল (ﷺ) ইরশাদ করেন, ফজর দু’টি, একটি ফজর রয়েছে যার মধ্যে খাওয়া হারাম হয় এবং ফজরের নামায হালাল হয়। ২য় ফজর যার মধ্যে নামায হারাম হয় এবং খাওয়া হালাল হয়। ইবনে খুযাইমা ও হাকিম (এ হাদিসটি) বর্ণনা করেছেন। এ হাদীসকে উভয়ে সহী বলেছেন। অর্থাৎ সুবহে সাদিকে ফজরের নামায হালাল হয় এবং সেহরী খাওয়া হারাম হয়ে যায় এবং সুবহে কাযিবে সেহরী খাওয়া হালাল হয়, ফজরের নামায হারাম হয়। (আল্লাহ অধিক জ্ঞাত)
মাসআলাঃ ইমামের সাথে প্রথম বৈঠকে মিলিত হওয়ার ক্ষেত্রে তাশাহুদ পূর্ণ করা ছাড়াও যদি “মাসবোক” ইমামের অনুসরণের দরুণ দাঁড়িয়ে যায় তাহলে মাকরূহ সহকারে নামায আদায় হয়ে যায়। তবে উত্তম হল- তাশাহুদ সম্পূর্ণ পাঠ করে উঠবে। কেননা প্রথম বৈঠকে তাশাহুদ পড়া ওয়াজিব, এ জন্য এক ওয়াজিবের দরুণ অন্য ওয়াজিব বাদ দেয়া অনুচিত, এমন কি “মুদরিক” ও তাশাহুদ পরিপূর্ণ পাঠ করা ব্যতীত উঠবেনা বরং তাশাহুদ পূর্ণ করার পর উঠে ইমামের অনুসরণ করবে যেন উভয় ওয়াজিবের অনুসরণ হয়ে যায়। ৫৮
➥৫৮. ফাতওয়ায়ে হিন্দিয়া, পৃষ্ঠা-৯০, বাবু বিতাবিয়িল ইমাম, ১ম খণ্ড, শামী, পৃষ্ঠা-৪৭০, ১ম খণ্ড, মাতলুব ফী তাহক্বীকি মুতাবিয়াতিল ইমাম।
মাসআলাঃ ইমাম সাহেব আস্সালামু আলাইকুম বলে সালাম ফিরানোর পর ইমামের ইকতিদা সহীহ নয় এ অবস্থায় কোন ব্যক্তি জুমা পড়বেনা। সালাম ফিরানোর পর ইমামের ইকতিদা সহীহ হবে না, নামাযের হুকুম শেষ হওয়ার কারণে। ৫৯
➥৫৯. শামী, ১ম খণ্ড, পৃষ্ঠা-৪৯০।
মাসআলাঃ কোন ব্যক্তির নিকট কাযা নামায আছে এবং সে ব্যক্তি যদি সাহেবে তারতীবের অন্তর্ভূক্ত হয় তাহলে সে প্রথমে কাযা নামায আদায় করবে অতঃপর জুমা পেলে জুমা পড়বে নতুবা যোহর আদায় করবে। ৬০
➥৬০. মারাকিউল ফালাহ।
মাসআলাঃ কুষ্ঠরোগীর ইমামত মাকরূহ। ৬১
➥৬১. দুররে মখতার, শামী, ১ম খণ্ড, পৃষ্ঠা-৮২।
মাসআলাঃ ফজরের নামায বেশি আলোকিত অবস্থায় পড়া উত্তম। রাফি বিন খাদীজ (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন- রাসূল (ﷺ) ইরশাদ করেন- “তোমরা ফজরের নামাযকে ফর্সা করে পড় কেননা তা তোমাদের পূণ্যকে অধিক বাড়াবে।” এ হাদীস শরীফকে সিহা-সিত্তার অন্তর্ভূক্ত পাঁচটি হাদীস গ্রন্থে বর্ণনা করেছেন এবং ইমাম তিরমিযী ও ইবনে হাব্বান উহাকে সহীহ বলেছেন।
হযরত রাফি বিন খাদীজ (رضي الله عنه) বলেছেন- ফজরের নামায বেশি আলোতে পড় তাতে তোমরা অধিক সাওয়াব পাবে। ইমাম তিরমিযী (رحمة الله) এ হাদীসকে সহীহ বলেছেন।
মাসআলাঃ “নামায প্রথম ওয়াক্তে আদায় করা সর্বোত্তম আমল।” হযরত সায়্যিদিনা ইবনে মাসউদ (رضي الله عنه) বলেছেন- রাসূল (ﷺ) ইরশাদ করেছেন- “নামায প্রথম ওয়াক্তে আদায় করে নেয়া সর্বোত্তম আমল” ইমাম তিরমিযী ও হাকিম উভয়ে এ হাদীসকে সহীহ বলেছেন। এ হাদীসের আসল (ভিত্তি) বুখারী ও মুসলিমে বিদ্যমান আছে।
হযরত আবু মাহযূরা (رضي الله عنه) বলেন, রহমতে আলম (ﷺ) ইরশাদ করেছেন “প্রথম ওয়াক্তে নামায আদায় করা আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের উপায় এবং মধ্যবর্তী সময়ে নামায আদায় করা রহমত অবতীর্ণ হওয়ার উপলক্ষ, শেষভাগে নামায আদায় করা আল্লাহর আযাব থেকে নাজাত পাওয়ার উপায়।” দূর্বল সনদে দারুকুত্বনী বর্ণনা করেছেন, তিরমিযী শরীফে এ হাদীসটি ইবনে ওমর (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত আছে, উহাতে মধ্যবর্তী সময়ের কথা উল্লেখ নেই, এটাও দূর্বল।
মাসআলাঃ সাত জায়গা ব্যতীত সমস্ত জমীনে নামায পড়া যায় অর্থাৎ সাত জায়গা ব্যতীত সমস্ত জমীন মসজিদ। হযরত সায়্যিদিনা ওমর (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত, নিশ্চয় রাসূল (ﷺ) সাত জায়গায় নামায পড়তে নিষেধ করেছেন। দূর্গন্ধ স্থানে, প্রাণী জবেহ করার স্থানে, কবরস্থানে, রাস্তার মধ্যখানে, গোসলখানায়, উট বাধার স্থানে ও বায়তুল্লাহ এর ছাদে।
রাসূল (ﷺ) ইরশাদ করেন- কবরের দিকে নামায আদায় করিওনা এবং কবরের উপর বসিও না। ৬২
➥৬২. তিরমিযী ও মুসলিম।
হযরত ইবনে ওমর (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত, নিশ্চয় রাসূল (ﷺ) দূরগন্ধ স্থানে, প্রাণী যবেহ করার স্থানে, কবরস্থানে, রাস্তার মধ্যখানে, গোসলখানায়, উট বাধার স্থানে ও বায়তুল্লাহর ছাদে নামায পড়তে নিষেধ করেছেন।৬৩
➥৬৩. তিরমিযী শরীফ।
তোমরা কবরের দিকে নামায পড়িও না এবং কবরের উপর বসিও না। ৬৪
➥৬৪. মুসলিম শরীফ।
মাসআলাঃ যে ব্যক্তি ইমাম হবেন সে সংক্ষিপ্তভাবে নামায পড়াবেন। হযরত জাবির বিন আবদুল্লাহ (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন- মুয়াজ তার সঙ্গীদেরকে ইশা এর নামায পড়ালেন এবং দীর্ঘ করে ফেললেন তখন নবী করীম (ﷺ) বললেন- হে মুয়াজ তুমি কি ফিতনা সৃষ্টি করতে চাও- যখন তুমি মানুষের ইমামতি করবে তখন তুমি ‘ওয়াস্ শামসী ওয়া দোয়াহাহা’ এবং ‘ওয়া-সাব্বিহিসমা রব্বিকাল আ’লা’ পাঠ করবে এবং ইক্রা বিস্মি রাব্বিকাল আ’লা’ ও ‘ওয়াল লায়লি ইজা ইয়াগ্সা’ পাঠ করবে। ৬৫
➥৬৫. মুসলিম, পৃষ্ঠা ১০৪।
মাসআলাঃ যদি নামাযী ব্যক্তির সামনে দিয়ে গাধা, বা কাল কুকুর বা মাসিক ঋতু সমপন্ন মহিলা অতিক্রম করে যায় তাহলে তার নামায ভঙ্গ হয়ে যায়।
হযরত আবু জর গিফারী (رضي الله عنه) বর্ণনা করেন, রাসূল (ﷺ) ইরশাদ করেন- মুসলমানের নামায যখন তার সামনে উটের পিছনের অংশের সমান সুতরা না হয়, মহিলা, গাধা ও কাল কুকুর নামায নষ্ট করে দেয়, উক্ত হাদীসে মুসলিমের বর্ণনায় শয়তান শব্দ উল্লেখ আছে, হযরত আবু হুরায়রা (رضي الله عنه) থেকে অপর বর্ণনায় শতয়তান শব্দ উল্লেখ নেই।
মাসআলাঃ অন্ধ ব্যক্তির ইমামত সহী, হযরত আনাস (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত, নিশ্চয় রাসূল (ﷺ) অন্ধ উম্মে মাকতুম (رضي الله عنه)কে লোকের ইমামতি করার জন্য (তাঁর) প্রতিনিধি বানিয়েছেন। ৬৬
➥৬৬. আহমদ, আবু দাউদ।
মাসআলাঃ তাহাজ্জুদের জন্য প্রথমে শয়ন করা শর্ত। তাহাজ্জুদের পরেও শয়ন করা সুন্নাত।
মাসআলাঃ কতিপয় ওলামা আযান ও ইক্বামত ব্যতীত তাহাজ্জুদের নামায জামাতে পড়েন। কিন্তু উহার উপর গুরুত্ব না দেয়া চাই, তাহাজ্জুদ একা একা উত্তম এবং জামাতও।
অধিকাংশ ক্ষেত্রে ইহা হজ্বের সময়ে হাজ্বীদের জন্য হয়ে থাকে।
মাসআলাঃ নামাযে এক হাতের আঙ্গুল সমূহ অন্য হাতের আঙ্গুল সমূহে প্রবেশ করানো মাকরূহে তাহরীমী। ৬৭
➥৬৭. দুররে মুখতার ইত্যাদি।
মাসআলাঃ নামাযে যাওয়ার সময় এবং নামাযের অপেক্ষার সময়েও এটি মাকরূহ। ৬৮
➥৬৮. কানোনে শরীয়ত।
মাসআলাঃ কোমরে হাত রাখা মাকরূহে তাহরীমী, নামায ছাড়াও কোমরে হাত রাখা উচিত নয়। ৬৯
➥৬৯. দুররে মুখতার।
মাসআলাঃ নামাযে এদিক-সেদিক মুখ ফিরে দেখা মাকরূহে তাহরীমী, অল্প মুখ ফিরালেও।
মাসআলাঃ দখলকৃত যমীন বা পুরানো ক্ষেতে যাতে ফসল রয়েছে- এরূপ ক্ষেতে নামায পড়া মাকরূহে তাহরীমী। ৭০
➥৭০. দুররে মুখতার, আলমগীরী।
মাসআলাঃ কাঁধে এভাবে রুমাল ঢালা যে, এক প্রান্ত পেটের উপর অপর প্রান্ত পিটের উপর এরূপ মাকরূহে তাহরীমী। ৭১
➥৭১. কানুনে শরীয়ত।
মাসআলাঃ চাদর বা সালের প্রান্ত উভয় ঘাড়ের উপর লটকিয়া রাখা, এটা নিষেধ, মাকরূহে তাহরীমী। হ্যাঁ যদি এক প্রান্ত অপর ঘাড়ের উপর হয় এবং আরেক প্রান্ত লটকিয়ে থাকে তাহলে অসুবিধা নেই। ৭২
➥৭২. কানুনে শরীয়ত, দুররে মুখতার ইত্যাদি গ্রন্থের বরাতে।
মাসআলাঃ যে কাপড়ে প্রাণীর ছবি থাকে, উহা পরিধান করে নামায পড়া মাকরূহে তাহরীমী, নামায ছাড়াও এরূপ কাপড় পরিধান করা নাজায়েয।
মাসআলাঃ সিজদা বা রুকুতে তিন তাসবীহ এর কম বলা মাকরূহে তান্যী তবে যদি সময় সংকীর্ণ হয় বা কোন আরোহী চলে যাওয়ার ভয় থাকে, বা অন্য কোন সমস্যা হয় তাহলে অসুবিধা নেই।
মাসআলাঃ কাজ কর্মের কাপড় পরিধান করে নামায পড়া মাকরূহে তানযী, যদি অন্য কোন কাপড় থাকে নতুবা মাকরূহও নয়।
মাসআলাঃ যদি থলে বা পকেটে ছবি আবৃত থাকে তাহলে নামায মাকরূহ হবেনা। ৭৩
➥৭৩. দুররে মুখতার।
মাসআলাঃ ছবি যুক্ত কাপড় পরিধান করেছে এবং উহার উপর অপর একটি কাপড় পরিধান করেছে যে, ছবি আবৃত হয়ে গেছে, তাহলে নামায মাকরূহ হবেনা। ৭৪
➥৭৪. রদ্দে মুহতার।
মাসআলাঃ উল্টো কাপড় পরিধান করে বা উঠিয়ে নামায পড়া মাকরূহে তাহরীমী।
মাসআলাঃ শিরওয়ানী ইত্যাদির বোতাম-বটন না লাগানো এবং উহার নীচে কাপড় ইত্যাদি পরিধান না করে খোলা থাকে তাহলে মাকরূহে তাহরীমী। যদি কাপড় ইত্যাদি থাকে তাহলে মাকরূহে তানযী। ৭৫
➥৭৫. কানোনে শরীয়ত, পৃষ্ঠা-১৩৪ ও বাহরে শরীয়ত।
মাসআলাঃ জামে মসজিদে নামায পড়ার চেয়ে মহল্লার মসজিদে নামায পড়া উত্তম যদিও জামাত ছোট হয়।
মাসআলাঃ যদি মহল্লার মসজিদে জামাত না হয় তাহলে একা গিয়ে আযান ও ইক্বামত দিয়ে নামায পড়বে, ইহা জামে মসজিদের জামাতের চেয়ে উত্তম। ৭৬
➥৭৬. সাগীরী ইত্যাদি; কানুনে শরীয়ত, পৃষ্ঠা-১৪০।
মাসআলাঃ ফরয, বিতির ও তারাবীর ক্ষেত্রেও মহিলাদের জামাত মাকরূহ। আল্লাহ্ তায়ালা অধিক জ্ঞাত।
মাসআলাঃ ইনায়া শরহে হিদায়া ফাতহুল ক্বদীরের পার্শ্বটিকা ১ম খণ্ড, ২৫০ পৃষ্ঠা-এর মধ্যে মহিলাদের জামাত সুন্নাতকে মানসূখ (রহিত) লিখেছেন। তার কাছাকাছি তাবয়ীনুল হাক্বায়িক নাসবুর রায়া, তাহত্বাভী ইত্যাদি গ্রন্থে উল্লেখ আছে। মাকরূহ হওয়ার কারণ বাহার, কাবীরী বাদাইতে উল্লেখ করা হয়েছে। হাদীস সমূহে উল্লেখ আছে- হযরত আয়িশা সিদ্দীকা (رضي الله عنه) মহিলাদের ইমামতি করতেন। আর উম্মে ওয়ারকা (رضي الله عنه)কে হুজুর রহমতে আলম (ﷺ) ইমামতির অনুমতি দিয়েছিলেন। এজন্য মাকরূহে তাহরীমী বলা তাহক্বীক এর বিপরীত। ইমাম মুহাম্মদ (رحمة الله) কিতাবুল আছারে লিখেছেন- মহিলা ইমামতি করা আমাদের ভাল মনে হয়না। হানাফীদের নিকট মহিলাদের জামায়াত মুস্তাহাব নয়, মাকরূহও নয়।
মাসআলাঃ নামাজের সম্মুখভাগে কুকুর এবং মহিলা অতিক্রম হওয়াতে নামাজ ফাসেদ হবে না। ৭৭
➥৭৭. ফতোয়ায়ে শামী।
প্রশ্নোত্তর
____________________
প্রশ্নঃ ইমাম সাহেব নামাজ অবস্থায় সম্পূর্ণভাবে মেহরাবের মধ্যে নামাজের জন্য দন্ডয়মান হওয়া, যাতে ইমামের অবস্থা সম্পর্কে অর্থাৎ ইমামের নিয়ত বাধা, রুকু করা, সিজদা করা ইত্যাদি কর্ম ও আমল সম্পর্কে মুক্তাদীগণের নিকট সম্পূর্ণভাবে লুকায়িত থাকে, মুক্তাদীগণের দৃষ্টিগোচর না হয় এমতাবস্থায় নামাজের কি হুকুম?
উত্তরঃ ইমাম সাহেব মেহরাবের ভিতরে এমনভাবে দন্ডয়মান হওয়া, যাতে ইমাম সাহেবের রুকু, সিজদা ইত্যাদি কর্ম সম্পর্কে মুক্তাদীগণের দৃষ্টিগোচর হয় না, এমতাবস্থায় মাক্রূহ। হ্যাঁ যদি ইমাম এমন অবস্থায় দন্ডায়মান হয় যাতে ইমামের অবস্থা সম্পর্কে মুক্তাদীগণ সম্পূর্ণরূপে জ্ঞাত, তাহলে তা মাকরূহ নয়।
যদি ইমাম সাহেব নির্দিষ্ট জায়গায় ইমামতি করতেছেন, আর মুক্তাদীগণ বারান্দা কিংবা মসজিদের মাঠে, যদিওবা মুক্তাদীগণ ইমামের অবস্থা সম্পর্কে সম্পূর্ণ অজ্ঞাত, এক্ষেত্রে মাকরূহ ব্যতীত নামাজ জায়েয।৭৮
➥৭৮. দুররুল মুখতার আলা রদ্দুল মুহতার, ১ম খণ্ড, পৃষ্ঠা-৬৪৫, অধ্যায়-বাবু মা’বাদুস্ সালাত।
প্রশ্নঃ নামাজের মধ্যে হুজুর নবীউল আন্বিয়া বোরহানুত্ তৌহীদ মুহাম্মদুর রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর খেয়াল আসাতে নামাজ ফাসেদ হবে? কিংবা কোন প্রকার দোষনীয় হবে কিনা? কোন কোন অনুপযুক্ত ও অজ্ঞ লোকের ধারণা এর দ্বারা নামাজ ফাসেদ হয়ে যাবে।
উত্তরঃ নামাজের মধ্যে শাহাদাতে তৌহিদ (একত্ববাদে স্বাক্ষী) মুহাম্মদ মোস্তফা (ﷺ) এর খেয়াল ধারণা আসা এটি একটি রূহানী তথা আত্মা ও ঈমানী খোরাক দ্বারা সম্মানিত হয়ে থাকে। কাজেই কিভাবে নামাজ ফাসেদ হবে? হুজুর আলাইহিস্সালামের খেয়াল মোবারক নামাজে আসাতে নামাজ ফাসেদ হবে না, বরং হুজুর (ﷺ) এর ধ্যান নামাজে আসাটা হচ্ছে নামাজ কবুল ও পরিপূর্ণতার স্তরে পৌঁছা।
কেননা আত্তাহিয়াতু ও দরূদ শরীফের মধ্যে মানুষের অন্তরে হুজুর রাহমাতুল্লিল আলামিনের খেয়াল অবশ্যই আসবে, আর এটিই হচ্ছে ঈমানের চাহিদা, যা সম্মান হিসেবে, ইবাদত হিসেবে নয়। কাজেই রাসূলের খেয়াল আসাতে নামাজ ফাসেদ হবে না। ৭৯
➥৭৯. সহীহ মুসলিম শরীফ, পৃষ্ঠা-৭৮।
মাসআলাঃ মসজিদের ভিতরে জায়গা থাকা সত্ব্ওে মসজিদের ছাদের উপর এককভাবে হউক কিংবা জামাতে হউক নামাজ পড়া জায়েয। তবে ওজর তথা কারণ ব্যতীত এরকম করা মাকরূহ হতে খালি নয়। তবে শর্ত হচ্ছে ইমামের বরাবর কিংবা ইমামের আগে দাঁড়ানো যেন না হয়। ৮০
➥৮০. ফতোয়ায়ে শামী, ১ম খণ্ড, ৬৫৬পৃষ্ঠা, আহকামুল মসজিদ ও ফতোয়ায়ে কাযীখান।
মাসআলাঃ ওলামায়ে আহনাফ ও অধিকাংশ ইমামদের মতে সুন্নাতে মুয়াক্কাদাহ নামায পাঁচটি।
প্রথমত, ফযরের দুই রাকাত সুন্নাত, দ্বিতীয়- মাগরীবের ফরয নামাযের পর দুই রাকাত সুন্নাত, তৃতীয়- যোহরের ফরযের নামাযের পর দুই রাকাত সুন্নাত, চতুর্থ- এশার ফরয নামাযের পর দুই রাকাত সুন্নাত, পঞ্চম- যোহরের ফরয নামাযের পূর্বে চার রাকাত সুন্নাত। এই পাঁচটি সুন্নাতে মুয়াক্কাদাহ। ৮১
➥৮১. শরহে মুসনাদে ইমাম আযম, পৃষ্ঠা-১৫৮।
মাসআলাঃ ফজর ও যোহরের ফরয নামাযের পূর্ব ব্যতীত অন্য কোন ওয়াক্তের ফরজের পূর্বে সুন্নাত পড়া আবশ্যক নয়।
মাসআলাঃ যদি জামাত শুরু তথা আরম্ভ হয়ে গেছে কিংবা জামাত শুরু হচ্ছে এমতাবস্থায় কোন সুন্নাত কিংবা নফল নামায শুরু না করা আবশ্যক। ৮২
➥৮২. ইসলামী ফিকহ্, পৃষ্ঠা-২৪৭।
মাসআলাঃ যেখানে ফরয নামায আদায় করা হয় সেখানে নফল নামায না পড়া উত্তম। হুযূর (ﷺ) এরশাদ ফরমায়েছেন- ইমাম সে স্থানে নফল নামায না পড়বে যেখানে ফরয নামায আদায় করেছে। অর্থাৎ ফরয নামায পড়ার স্থান হতে একটু নড়ে-চড়ে নফল নামায পড়বে।
মাসআলাঃ ফরয ও বিতির নামায ব্যতিত অন্য কোন নামাযের কাযা ওয়াজিব নয়।
মাসআলাঃ সুন্নাত নামায সমূহের কাযা ওয়াজিব নয়। কেবলমাত্র ফজরের সুন্নাত নামায ব্যতিত, ফজরের সুন্নাতের ব্যাপারে হাদিস শরীফে গুরুত্বারোপ করা হয়েছে।
মাসআলাঃ জানা আবশ্যক যে- বিশুদ্ধ বর্ণনা মতে সুন্নাত নামায সমূহ ফরয নামাযকে পরিপূর্ণকারী। ৮৩
➥৮৩. দুররে মুখতার।
মাসআলাঃ অসুস্থ ব্যক্তি যদি নামাযে কেরাত পড়ার শক্তি না থাকে এ ক্ষেত্রে কেরাত ব্যতীত নামায পড়া জায়েয। ৮৪
➥৮৪. ছেরাজিয়া হাশিয়ায়ে ক্বাজী খান, ১ম খণ্ড, পৃষ্ঠা-১১১।
مريض لم يقدر على القرأة فصلى بلا قرأةٍ جازت
মাসআলাঃ জুমার দিন নাবালেগ ছেলে খুতবা দেয়া জায়েয নাই। ৮৫
➥৮৫. ছেরাজিয়া, হাশিয়ায়ে ক্বাজী খাঁন, ১ম খণ্ড, পৃষ্ঠা-১০০।
মাসআলাঃ তারাহবীর নামায ওযর ব্যতিত বসে পড়া জায়েয। যদিওবা ইমাম বসা অবস্থায় আর মুক্তাদী দন্ডায়মান তাও জায়েয। ৮৬
➥৮৬. ছেরাজিয়া হাশিয়ায়ে ক্বাজী খাঁন, ১ম খণ্ড, পৃষ্ঠা-১১৯।
التراويح قاعدا بغير عذرجائز لو صلى الامام قاعدا والقوم قائمًا جاز .
মহিলাদের ক্ষেত্রে স্বতন্ত্রভাবে জামাতের হুকুম
____________________
মহিলাদের ক্ষেত্রে স্বতন্ত্রভাবে জামাতের হুকুম
মাসআলাঃ কেবলমাত্র মহিলাদের ক্ষেত্রে স্বতন্ত্রভাবে জামাতে নামাজ আদায় করা মাকরূহে তাহরীমি। ৮৭
➥৮৭. দুররে মুখতার, পৃষ্ঠা-৫৬৫
ويكره تحريما جماعت النساء ، عنديہ ميں ہے ، ويكره امامة المرأة للنساء فى الصلوة كلها من الفرائض والنوافل الافى صلوة الجنازة، كذا فى النهايه .
যদিওবা মহিলারা জামাতে নামাজ আদায় করতে চায়, তাহলে ইমামতির ক্ষেত্রে মহিলা ইমাম কাতারের মধ্যে দাঁড়াবে, পুরুষদের ন্যায় কাতারের সামনে দাঁড়াবে না। আর যদি পুরুষদের ন্যায় মহিলা ইমাম কাতারের সামনে দন্ডায়মান হয়, তা গুনাহ হবে।
হ্যাঁ, আল্লামা আইনী, ইমাম ইবনে হাম্মাম ও মাওলানা আব্দুল হাই লক্ষ্মৌভী (رحمة الله) এর গবেষণা মোতাবেক মহিলাদের ক্ষেত্রে জামাত উত্তমতার বিপরীত।
পুরুষদের জামাতের মধ্যে মহিলারা পর্দা করবে এবং সাবধানতার সাথে পৃথক কামড়ায় নামাজ পড়বে। আর ইচ্ছা করলে জামাতে অংশ হতে পারবে। এককভাবে জামাতে না পড়াটাই উত্তম ও আফজল।
জুমার বর্ণনা
____________________
জুমার বর্ণনা
فان فعلن وقعت الامام وسطهن وبقيامها وسطهن لاتزول الكرهة، وان تقدمت عليهن اما مهن لم تفسد صلاتهن، هكذا فى الجوهره اليزه ،
وصلاتهن فرادى افضل هكذا فى الخلاصه ، جلد اوّل، صفحة ৮৫، باب الامامة فقد والله ورسوله اعلم .
মাসআলাঃ জুমাবার সূর্য্য স্থীরের সময় নফল নামায আদায় করা জায়েয, তবে অন্য কোন দিনে নয়।
মাসআলাঃ খুতবা ও ইক্বামতের মাঝে ফাসিলা (ব্যবধান বা বিরতি বা দেরী) করা মাকরূহ।
মাসআলাঃ শহরবাসীদের জুমার নামায না পেলে তখন ঐ সময় আযান ও জামাত ব্যতীত যোহরের নামায পড়বেন।
মাসআলাঃ যে সমস্ত লোকদের উপর জুমার নামায ফরয নয় তারা যোহরের নামাযের জন্য এতটুকু বিলম্ব করবে যাতে জুমার নামায থেকে লোকেরা অবসর হয়ে যায়।
মাসআলাঃ যে ব্যক্তি জুমার নামাযে শামিল হয় চাই সিজদায়ে সাহুতে এসে শরীক হোক সে জুমার নামাযের নিয়ত করে দ্বিতীয়বার পড়বে।
মাসআলাঃ খুতবার মধ্যে ওয়াজ-নসীহতকে ফকীহগণ (র.) খেলাফে সুন্নাত বলেছেন, যদি উক্ত খেলাফে সুন্নাতকে বিদআত বলা হয় তখন বুঝতে হবে বিদআতে হাসানা তথা মুস্তাহাব।
মাসআলাঃ জুমার খুতবা শুনা ওয়াজিব, খুবই গুরুত্বপূর্ণ ও ছাওয়াব লাভের মাধ্যম। ইহা স্বত্ত্বেও ইহা না শুনলেও নামায আদায় হয়ে যাবে।
মাসআলাঃ খুতবা ব্যতীত জুমার নামায আদায় করলে জুমা আদায় হবে না। খুতবা জুমার শর্ত সমূহের অন্তর্ভূক্ত। উহা ব্যতীত জুমা আদায় হবে না। ৮৮
➥৮৮. মারাকিউল ফালাহ, আলমগীরী, ১ম খণ্ড, পৃষ্ঠা-৭৫।
মাসআলাঃ খুতবার সময়ে তাশাহুদের ন্যায় বসা প্রায় কিতাবে উত্তম লেখা আছে, কিন্তু রিওয়ায়াত এর দৃষ্টি উক্ত পদ্ধতি ব্যতীত স্বাভাবজাত পদ্ধতিতে বসাও নিষিদ্ধ নয়।
মাসআলাঃ মাখুর ব্যক্তির উপর জুমা ফরয নয়। শামী গ্রন্থে উল্লেখ আছে- ঘটনাক্রমে জুমা পেয়ে গেলেও মাখুর ব্যক্তির উপর জুমা ফরয হবেনা। খানিয়া, কেননা মৌলিক ভাবে জুমার দিকে রওয়ানা দিতে অক্ষম। ৮৯
➥৮৯. ফতোয়া শামী, ২য় খণ্ড, ১৫৪পৃষ্ঠা।
প্রশ্নঃ খুতবার আযান খতীবের সামনে দেয়ার বিধানঃ ইমামের ডানে বামে আযান দেয়া জায়েয কিনা? এ আযান কি ইমামের সামনে সামনে দিতে হবে?
উত্তরঃ আযান ই’লান (ঘোষণা বা সম্প্রচার) হওয়ার দৃষ্টিতে ইমামের ডানে বামে দিতে পারবে। কিন্তু খুতবার পূর্বের আযানের বিধান সম্পর্কে ফুকহায়ে কিরামগণ বর্ণনা করেছেন যে, মসজিদের ভিতরে খতীবের সামনে দিতে হবে। শামী গ্রন্থে উল্লেখ আছে দ্বিতীয় আযান তার সামনে দিতে হবে অর্থাৎ যখন খতীব মিম্বারের উপর বসবেন তখন তার সামনে আযান দিবেন। ৯০
➥৯০. ফতোয়া শামী, ২য় খণ্ড, ১৬১ পৃষ্ঠা
প্রশ্নঃ যদি কোন খতীব দুই খুতবার স্থলে এক খুতবা দেন তাহলে খুতবা আদায় হয়ে যাবে কিনা? এমতাবস্থায় নামাযের হুকুম কি?
উত্তরঃ একটি খুতবা পাঠ করলে যদিওবা খুতবার শর্ত পূর্ণ হয়ে যায় তবুও দুইটি খুতবা পাঠ করা সুন্নাত। এজন্য একটি খুতবা পাঠ করা খেলাফে সুন্নাত। আর যেহেতু নামাযের উপর কোন প্রভাব পড়েনা।
মুহাম্মদ বিন আব্দুল্লাহ আত্তামারতাশী বলেন- দুইটি খুতবা দেয়া সুন্নাত, উভয় খুতবার মধ্যখানে বসবে। ৯১
➥৯১. হিদায়া, ১ম খণ্ড, ১৪৮পৃষ্ঠা।
এবং দুইটি খুতবা দিবে উভয় খুতবার মধ্যখানে বসার মাধ্যমে বিরতি দিবে, ধারাবাহিকভাবে এরূপ প্রচলিত রয়েছে।
মাসআলাঃ খুতবা শুনার জন্য বসার পদ্ধতি কিরূপ হওয়া উচিত, প্রায় কিতাবে তাশাহুদের ন্যায় পদ্ধতি গ্রহণ করাকে উত্তম লেখা হয়েছে।
মাসআলাঃ রিওয়ায়াতের দৃষ্টিতে উক্ত পদ্ধতি ব্যতীত স্বভাবিগত পদ্ধতিতে বসাও জায়েয আছে, নিষেধ নয়। ৯২
➥৯২. হক্কানিয়া ৩য় খণ্ড, ৩৮৫ পৃষ্ঠা।
আল্লাহ্ তায়ালাই অধিক জ্ঞাত।
মাসআলাঃ জুমার প্রথম আযানের পর ক্রয়-বিক্রয় করা জায়েয নাই। আল্লাহ্ তা’আলা বলেন-
إِذَا نُودِيَ لِلصَّلَاةِ مِنْ يَوْمِ الْجُمُعَةِ فَاسْعَوْا إِلَى ذِكْرِ اللهِ وَذَرُوا الْبَيْعَ ذَلِكُمْ خَيْرٌ لَكُمْ إِنْ كُنْتُمْ تَعْلَمُونَ .
অর্থ: মুমিনগণ! জুমআর দিনে যখন নামাযের আযান দেয়া হয়, তখন তোমরা আল্লাহর স্মরণের পানে ত্বরা কর এবং বেঁচাকেনা বন্ধ কর। এটা তোমাদের জন্যে উত্তম যদি তোমরা বুঝ। ৯৩
➥৯৩. সূরা আল্-জুমুআহ, আয়াত-৯।
প্রশ্নঃ যদি কোন কারণবশতঃ কোন মুসলমানের জুমার নামায অনাদায়ী তথা ফাওত হয়ে যায় এমতাবস্থায় জুমার ফজিলত ও সাওয়াব পাওয়ার কোন সূরত আছে কিনা?
উত্তরঃ উল্লেখ্য যে, যদি কোন ব্যক্তির কারণবশতঃ পবিত্র জুমার নামায অনাদায়ী তথা ফাওত হয়ে যায় এমতাবস্থায় জুমার নামাযের পরিবর্তে যোহরের নামায আদায় করতে হবে এবং কিছু দিনার বা দেরহাম তথা বাংলার টাকা কমপক্ষে ৫ (পাঁচ) টাকা সদকা করে দিলে আল্লাহর রহমতে জুমার ফজিলত ও সাওয়াব ঐ ব্যক্তি পাবেন। ৯৪
➥৯৪. মোজাহেরে হক ও ফতোয়ায়ে সত্তারীয়া ইত্যাদি।
মুসাফিরের বর্ণনা
____________________
মুসাফিরের বর্ণনা
মাসআলাঃ মুসাফিরের উপর কসর (ফরযের ক্ষেত্রে চার রাকাতের দু’রাকাত পড়া) পড়ার তাকীদ (গুরুত্ব) রয়েছে, পূর্ণ নামায পড়া গুনাহ।
মাসআলাঃ যে মুসাফির ব্যক্তি ভুলে চার রাকাত পড়ে নেয় তার উচিত পূণরায় কসর পড়ে। রেলগাড়ী বা নৌকা যদি চলন্ত অবস্থায় থাকে তাহলে বসে বসে নামায পড়া জায়েয আছে।
মাসআলাঃ নৌকা বা রেলগাড়ীতে নামায শুরু করার সময় ক্বিবলার দিকে মুখ করে নিতে হবে। অতঃপর যেদিকে মুখ ফিরে যাক, ক্বিবলার দিকে মুখ ফিরানো ফরয নয়। ৯৫
➥৯৫. কুতুবে ফিকহি হানাফী।
মাসআলাঃ মুসাফিরদের জন্য সুন্নাত সমূহের হুকুম এ যে, যদি তাড়াহুড়া হয় তাহলে ফজরের সুন্নাত ব্যতীত অন্যান্য সুন্নাত সমূহ ছেড়ে দেয়া জায়েয আছে, উহা ছেড়ে দেয়ার দরুণ কোন গুনাহ হবে না।
মাসআলাঃ যদি মুসাফিরের তাড়া না থাকে এবং সাথীদের থেকে পিছনে পড়ে যাওয়ার ভয় না থাকে তাহলে সুন্নাতসমূহ ছেড়ে দেবে না।
মাসআলাঃ সুন্নাতসমূহ সফরে পরিপূর্ণ ভাবে পড়বে, তাতে কম নেই (অর্থাৎ কসর নেই)।
মাসআলাঃ ফজর, মাগরিব ও বিতিরের নামাযেও কসর অর্থাৎ কম নেই।
মাসআলাঃ সফরের দূরত্ব আনুমানিক ইংরেজি ৪৮ মাইল।
মাসআলাঃ হানাফী ফিক্হ এর দৃষ্টিতে সাধারণ সফরের দরুণ নামায কসর করা যাবেনা বরং কমপক্ষে তিন দিনের পরিমাণ সফর করা জরুরী, বর্তমান সময়ে ওলামায়ে কিরাম ৪৮ মাইল অথবা ৭২ কিলো মিটার পরিমাণ নির্ধারণ করেছেন।
মাসআলাঃ কসর ফরয নামায সমূহের জন্য নির্ধারিত, যদি সুন্নাত সমূহ পড়ার সুযোগ না হয় তাহলে পড়ার প্রয়োজন নেই তবে সময় পেলে সুন্নাত নামায পরিপূর্ণ ভাবে আদায় করতে হবে। র্দুরে মুখতার গ্রন্থে উল্লেখ আছে- সুন্নাত পরিপূর্ণভাবে আদায় করবে। যদি মুসাফির নিরাপদ ও আরামে অবস্থান করতে পারে নতুবা নয়, অনুরূপ ভাবে সুন্নাত ও নফল সমূহের মধ্যে কসর নেই।৯৬
➥৯৬. বাদায়িয়ুস্ সানায়ি, ১ম খণ্ড, পৃষ্ঠা ৯২।
মাসআলাঃ যদি কোন মুসাফির কসরের পরিবর্তে পূর্ণ নামায আদায় করে তাহলে জিম্মাদারী থেকে নিষ্কৃতি লাভ করবে কিনা?
যদি দ্বিতীয় রাকাতের পর বৈঠক করে থাকে তাহলে নামায শুদ্ধহয়ে জিম্মাদারী থেকে নিষ্কৃতি লাভের জন্য যথেষ্ট অবশ্য সালাম দেরীতে করার কারণে গুনাহগার হবে। কিন্তু প্রথম বৈঠক ব্যতীত দাঁড়িয়ে মুসাফির চার রাকাত পড়ে নেয় তাহলে তার নামায বাতিল হয়ে পূণরায় নামায পড়তে হবে। “অতপর যদি মুসাফির পূর্ণ নামায আদায় করে এবং সে যদি প্রথম বৈঠকে বসে থাকে তাহলে তার ফরয আদায় হয়ে যাবে কিন্তু উহা নিন্দনীয়।” ৯৭
➥৯৭. দুররে মুখতার সালাতুল মুসাফির।
ফতওয়ায়ে হিন্দিয়া, বাবুন ফী সালাতিল মুসাফির, ১ম খণ্ড, ১৩৯ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে- যদি মুসাফির চার রাকাত আদায় করে এবং দ্বিতীয় রাকাতের পর তাশাহুদের পরিমাণ বসে তাহলে জিম্মাদারী আদায় হয়ে যাবে এবং শেষ দুই রাকাত নফল হিসেবে গণ্য হবে সালাম দেরী করার কারণে গুনাহগার হবে আর যদি দ্বিতীয় রাকাতের পর তাশাহুদ পরিমাণ না বসে তা হলে নামায বাতিল হয়ে যাবে, এরূপ হিদায়া গ্রন্থে উল্লেখ আছে।
মাসআলাঃ কসর নামাযের জন্য কষ্ট হওয়া জরুরী নয়, বিনা কষ্টে গন্তব্যস্থলে পৌঁছে যায়। সফরের মধ্যে রুখসত এর বিধান কোন কষ্টের প্রতি দৃষ্টি রেখে করা হয়নি, বরং মূল সফরের জন্য রুখসত দেয়া হয়েছে, স্বয়ং সফর কষ্টের কারণ হওয়ার দরুণ বিধি-বিধান জারী হয়ে সফরের মধ্যে কসর করতে হবে।
মাসআলাঃ মুসাফির যে রাস্তা দিয়ে যাচ্ছে উহার দূরত্ব ধর্তব্য হবে যেমন হিন্দিয়া গ্রন্থে উল্লেখ আছে- যখন মুসাফির স্বীয় শহর থেকে সফরের ইচ্ছা করে এবং স্বীয় গন্তব্য স্থলের দিকে দুইটি রাস্তা থাকে তৎমধ্যে একটি তিন দিন তিন রাতের দূরত্বে। ৯৮
➥৯৮. হিন্দিয়া, ১ম খণ্ড, পৃষ্ঠা ১৩৮।
মাসআলাঃ অনাবাদী জায়গার মধ্যে ইক্বামতের নিয়তের জন্য স্থান উপযুক্ত হওয়া জরুরী, এমন অনাবাদী জায়গায় ইক্বামতের নিয়ত গ্রহণযোগ্য নয় এজন্য নিয়ত করার সত্বেও নামায কসর পড়তে হবে, “এমনকি মুসাফির স্থলভাগ বা জলভাগ এর মধ্যে ইক্বামতের নিয়ত করলে তা শুদ্ধ হবেনা।” ৯৯
➥৯৯. ফতওয়ায়ে হিন্দিয়া, সালাতুল মুসাফির।
মাসআলাঃ ইক্বামতের নিয়ত ব্যতীত কসর করা ওয়াজিব, অর্থাৎ কোন স্থানে পনের দিনের ইক্বামতের নিয়ত ব্যতীত এ ব্যক্তি মুসাফিরের হুকুমে থাকবে যার উপর নামায কসর করা ওয়াজিব, ইক্বামতের নিয়ত ব্যতীত সফরের হুকুমে থাকবে। ১০০
➥১০০. হিদায়া, ১ম খণ্ড, ১৪৯পৃষ্ঠা।
মাসআলাঃ মুসাফির ইমামের ইক্বতিদার মধ্যে মুক্বীমের নামাযের জন্য অবশিষ্ট নামাযে ক্বিরাত নেই। অর্থাৎ- ইমাম অবসর হওয়ার পর মুক্বীম মুকতাদীর জন্য অবশিষ্ট নামায পড়া জরুরী কিন্তু যেহেতু এটা ইমামের পিছনে গণ্য এ জন্য মুকতাদীর যিম্মায় পরবর্তী রাকাতে ক্বিরাত জরুরী নয়, বরং সূরা ফাতিহার সমপরিমাণ নিশ্চুপ দাঁড়িয়ে থেকে রুকু করবে। “মুসাফিরের পিছনে মুক্বীমের ইক্বতিদা শুদ্ধ হবে ওয়াক্তিয়া ও কাযা উভয় ক্ষেত্রে, সুতরাং মুক্বীম যখন অবশিষ্ট নামায পূর্ণ করার জন্য দাঁড়াবে সে ক্বিরাত পড়বেনা।” ১০১
➥১০১. দুররে মুখতার, বাবু সালাতিল মুসাফির।
মাসআলাঃ মুসাফির ইমামের ক্ষেত্রে পরবর্তী দুই রাকাত নফল হিসেবে গণ্য হবে পক্ষান্তরে মুক্বীম মুকতাদীর সম্পূর্ণ নামায ফরয, এজন্য ফরয আদায়কারীর ইক্বতিদা নফল আদায়কারীর পিছনে আবশ্যক হয়ে মুকতাদীদের নামায ভঙ্গ করে দেয়। এজন্য উহা পূণরায় পড়া জরুরী। ১০২
➥১০২. ফতওয়ায়ে শামী, ২য় খণ্ড; বাবুস্ সালাতিল মুসাফির।
মাসআলাঃ ইমামের অবস্থা অবগত হওয়া জরুরী অর্থাৎ- কোন ইমামের সফর কিংবা ইক্বামতের ব্যাপারে যখন মুকতাদী জানবেনা তখন মুকতাদীকে সন্দেহের শিকার হতে হবে। এজন্য ইমামের অবস্থা অবগত হওয়া মুকতাদীর জন্য জরুরী। তাই মুকতাদী ইমামের সফর ও ইকামতের অবস্থা জেনে নেয়া উচিত, যাতে তার ইকতিদা শুদ্ধ হয়। নতুবা অজ্ঞতাবস্থায় ইক্বতিদা শুদ্ধ হবেনা। ফতওয়ায়ে শামীতে উল্লেখ আছে- ইমামের অবস্থা অবগত হওয়া শর্ত, তবে তার সারমর্ম হল ইমামের অবস্থা অবগত হওয়া শর্ত হিসেবে গণ্য হবে। ১০৩
➥১০৩. বাবুস্ সালাতিল মুসাফির, ২য় খণ্ড, ৫৩১পৃষ্ঠা।
আল বাহর্রু রায়িক, ২য় খণ্ড, ৩৫পৃষ্ঠা বাবুল মুসাফির এর মধ্যে উল্লেখ আছে- ফাতওয়া গ্রন্থে যা উল্লেখ আছে তা প্রযোজ্য হবে যখন সে ইকতিদা করে ইমামের পিছনে সে জানেনা- ইমাম মুসাফির নাকি মুক্বীম তা হলে ইকতিদা শুদ্ধ হবেনা কেননা জামাতে নামায আদায়ের জন্য শর্ত হল- ইমামের অবস্থা অবগত হওয়া।
মাসআলাঃ সুন্নাতে মুয়াক্কাদা এর রাকাত সমূহে সমস্ত ফক্বীহ একমত, ফরয নামায ব্যতীত অন্যান্য নামাযে কসর নেই তবে উত্তম হল যদি সুযোগ হয় তাহলে পড়বে। মুহীতে সারখসী গ্রন্থে উল্লেখ আছে সুন্নাত সমূহে কসর নেই, কতিপয় আলেম মুসাফিরের জন্য সুন্নাত সমূহ তরক করাকে জায়েয বলেছেন।
পাগড়ীর বর্ণনা
____________________
পাগড়ীর বর্ণনা
মাসআলাঃ পাগড়ী বাঁধার মধ্যে যদি মধ্যস্থিত অংশ খালি থেকে যায় তাহলে উহার সাথে নামায পড়া মাকরূহ। রাসূল (ﷺ) এভাবে পাগড়ী বাঁধতে নিষেধ করেছেন। নবী করীম (ﷺ) উহা নিষেধ করেছেন এবং উহা হল- মাথা বাঁধা বা মাথায় পাগড়ী এমনভাবে ঘুরিয়ে আনা যে, মধ্যস্থিত অংশকে খোলা রেখে দেয়। ১০৪
➥১০৪. রদ্দুল মুহতার, পৃষ্ঠা-৬৫২, ১ম খণ্ড, বাবু মা-ইয়াফসুদুস্ সালাত ওয়ামা ইয়াক্রাহু।
আল্লামা হাসান শরনবুলালী বলেন, ই’তিজার (পাগড়ী বাধা) মাকরূহ হবে, আর উহা হল রুমাল দিয়ে মাথা বাঁধা কিংবা মাথার চতুর্দিকে পাগড়ী বাঁধা মধ্যস্থিতা অংশ খালি রাখা। ১০৫
➥১০৫. মারাকিল ফালাহ, ফসলুল মাকরূহাতিস্ সালাত, পৃষ্ঠা-২৮৪, ফতওয়ায়ে হক্কানীয়া, ৩য় খণ্ড, পৃষ্ঠা- ১৯৭।
মাসআলাঃ ‘আমামা’ পাগড়ীকে বলা হয়। পাগড়ী বাধার মধ্যে সুন্নাত হল- সাদা হওয়া যার মধ্যে অন্য রঙ্গের মিশ্রণ না হওয়া। হুজুর মুস্তফা (ﷺ)-এর পাগড়ী মুবারক অধিকাংশ সময় সাদা থাকত।
কতিপয় আলেমগণ বলেছেন- যুদ্ধের সময় নবীজীর মাথা মুবারকে কাল পাগড়ী থাকত।
কতিপয় আলেমগণ বলেছেন- শিরস্ত্রাণের দরুণ যা তিনি যুদ্ধে পরিধান করতেন, পাগড়ীর রং কাল ও ময়লা হয়ে যেত নতুবা মূলত উক্ত পাগড়ী সাদা থাকত। কিন্তু এটাই প্রমাণিত যে, মুস্তফা (ﷺ) কখনো কাল রঙ্গের পাগড়ী পরিধান করতেন।
রাসূল (ﷺ) এর ঘরে পরিধান করার পাগড়ী সাত বা আট গজ বর্ণিত হয়েছে। পাঁচ ওয়াক্ত নামাযের পাগড়ী বার গজ এবং ঈদ ও জুমার দিনের পাগড়ী চৌদ্দ গজ, যুদ্ধের সময়ের পাগড়ী পনের গজ। ওলামায়ে মুতাআখ্খীরিন অনুমোদন দিয়েছেন যে, বাদশা, কাজী, মুফতী, ফকীহ-মাশায়েখ ও গাজী স্বীয় মাহাত্ম্য, গাম্ভীর্য, সম্মান ও মর্যাদা বজায় রাখার জন্য একত্রিশ গজ পর্যন্ত লম্বা পাগড়ী পরিধান করা জায়েয আছে।
পাগড়ীর সুন্নাত ত্বরীকা হল- পাগড়ী লম্বা হওয়া অধিক ছোট না হওয়া। পাগড়ীর প্রস্থ আধা গজ হওয়া উচিত, উহা থেকে কিছু কম বেশ হলে ক্ষতি নেই এবং উহার দৈর্ঘ্য কমপক্ষে সাত গজ হবে। ঐ গজের হিসাব অনুযায়ী চব্বিশ আঙ্গুল হয়।
সুন্নাত হল- পাগড়ী পবিত্র অবস্থায় বাঁধা, কিবলামুখী হয়ে দাঁড়িয়ে বাধবে, আর যখন খুলীবে তখন প্যাচে-প্যাচে খুলবে একবারে নামিয়ে ফেলবে না। বাঁধার সময় যখন প্যাচে-প্যাচে বাঁধা হয়েছে তাই খুলার ক্ষেত্রেও এ তারতীব রক্ষা করা উচিত। পাগড়ী বাঁধার পর আয়না বা পানি কিংবা অন্য কোন প্রতিবিম্বিত বস্তু দেখে উহা ঠিক করে নিবে এবং পাগড়ীর প্রান্তস্থিতকারু রেখে পাগড়ী বাঁধবে।
ফকীহ আলেমগণের মাঝে পাগড়ীর প্রান্তস্থিত কারু এর ব্যাপারে মতবিরোধ রয়েছে। অধিকাংশ সময় হুজুর মুস্তফা (ﷺ) এর পিছনে থাকত, কখনো কখনো ডান হাতের দিকে এবং বাম হাতের দিকে পাগড়ীর প্রান্থস্থিতকারু রাখা বিদআত।
পাগড়ীর প্রান্তস্থিত কারুর দৈর্ঘ্য কমপক্ষে চার আঙ্গুল, বেশীর মধ্যে এক হাত, পিঠের দিকে অধিক লম্বা করা বিদআত। পাগড়ীর প্রান্তস্থিত কারুকে নামাযের সময়ের সাথে নির্দিষ্ট মনে করা ও সুন্নাত নয়, পাগড়ীর প্রান্তস্থিত কারু লটকানো মুস্তাহাব, রাসূল (ﷺ) কখনো পাগড়ীর প্রান্তস্থিত কারু লটকাতেন আর কখনো লটকাতেন না।
ফুকাহায়ে কিরামের নিকট কারু লটকানোর কিয়াসী অনেক দলীল রয়েছে।
কতিপয় আলেমের মতে কারু লটকানো সুন্নাতে মুয়াক্কাদা নয়। কতিপয় আলেম বাম পাশে লটকানোকে উপযোগী মনে করেন। কিন্তু উহার সনদ তথা প্রমাণ শক্তিশালী ও নির্ভরযোগ্য নয়।
মুতায়াখ্খিরীন আলেমগণ জাহেল লোকদের ঠাট্টা-বিদ্রুপের দরুণ পাঁচ ওয়াক্ত নামায ব্যতীত অন্য সময়ে কারু লটকানো আবশ্যক মনে করতেন না।
ফতাওয়ায়ে হুজ্জত ও জামিউর রুমুজ গ্রন্থে লেখা আছে- কারু না রাখা গুনাহ এবং কারু সহকারে দুই রাকাত নামায পড়া কারু ব্যতীত সত্তর রাকাত থেকে উত্তম।
কারু এর প্রকারঃ কাজী (জজ) এর জন্য পঁয়ত্রিশ আঙ্গুল কারু, খতীবদের জন্য একুশ আঙ্গুল, ছাত্রদের জন্য সতের আঙ্গুল আর সর্ব-সাধারণের জন্য চার আঙ্গুল।
মাসআলাঃ পাগড়ীকে বসে না বাঁধা। হাদীস শরীফে এসেছে- যে ব্যক্তি বসে পাগড়ী বাঁধবে কিংবা দাঁড়িয়ে পায়জামা পরিধান করবে আল্লাহ তা’আলা তাকে এমন বলা-মসীবতে লিপ্ত করে দিবেন যা দূর হবে না।
অপারগ ব্যক্তির হুকুম- “জরুরত অবৈধ কাজ সমূহকে বৈধ করে দেয়” এর ভিত্তিতে জায়েয। হুজুর মুস্তফা (ﷺ) টুপির উপর পাগড়ী বাঁধতেন কখনো টুপি ছাড়া পাগড়ী বেঁধে নিতেন। পাগড়ীর আকৃতি গম্বুজের ন্যায় গোলাকার হত। যেমন- ওলামা ও আরবের ভদ্র লোকেরা এ পদ্ধতিতে পাগড়ী বেঁধে থাকেন।
হযরত শায়খ আবদুল হক্ব মুহাদ্দিস দেহলভী (رحمة الله)’র পুস্তিকা ‘‘কাশফুল ইলতিবাস ফী শাকলিল্ লিবাস” থেকে সংগৃহিত।
মাসআলাঃ পাগড়ী বেঁধে নামায পড়া উত্তম, টুপি ছাড়া বা খালি মাথায় নামায পড়াকে কতিপয় ফকীহ মাকরূহ বলেছেন। কিন্তু যদি বিনয় ও নম্রতার উদ্দেশ্যে হয় তাহলে অসুবিধা নেই। আজকাল শিক্ষিত মুসলমানরা খালি মাথায় নামায পড়ে, এরূপ করা খৃস্টানদের সাথে এক প্রকারের সাদৃশ্য যারা গীর্জায় গিয়ে খালি মাথায় পড়ে।
আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেছেন- خُذُوا زِينَتَكُمْ عِنْدَ كُلِّ مَسْجِدٍ “মসজিদে যাওয়ার সময় তোমরা সুন্দর কাপড় পরিধান কর এজন্য ভালমানের কাপড় ও পাগড়ী বেঁধে নামায পড়া উত্তম।” ১০৬
➥১০৬. ইসলামী পয়টিয়া, পৃষ্ঠা-৫১৪, মাহবুবুল আলম।
মাসআলাঃ পাগড়ী বাঁধার মধ্যে যদি মাথার উপরিভাগ খালি থেকে যায়, আর সেই অবস্থায় নামাজ আদায় করলে মাকরূহ হবে। রাসূলে আকরাম (ﷺ) এধরণের পাগড়ী বাঁধতে নিষেধ করেছেন। ১০৭
➥১০৭. মারাকিউল ফালাহ, ফছলুল মাকরুহাতিস্ সালাত, পৃষ্ঠা-২৮৪ ও ফতোয়ায়ে হক্কানীয়া, ৩য় খণ্ড, পৃষ্ঠা-১৯৭
نهىٰ النبى صلّى الله عليه وسلّم عنه وهو شد الراس او تكوير عمامة على راسه ترك وسطه مكشوخا، (ردالمحتار، جلد-১، صفحة ৬৫২، باب مايفسد الصلوة ومايكره)
قال العلامة حسن الشرنبلالى ويكره الاعتحار وهو شد الراس بالمنديل اوتكوير عمامة على راسه (مراقى الفلاح، فصل المكروهات الصلوة، صفحة ২৮৪، فتوى حقانيه، صفحة ১৯৭، جلد-৩)
মাসআলাঃ কুরআন মাজীদ খুব দ্রুত গতিতে পাঠ করা- অর্থাৎ উচ্চারণ শুদ্ধ ও বর্ণসমূহের মধ্যে কম না হওয়ার শর্তে যদি দ্রুতবেগে পাঠ করা হয় তাহলে নামায ভঙ্গ হয় না। তবে এত দ্রুত পাঠ করা, যাতে উচ্চারণে ভুল অথবা কম-বেশী হয়ে গেলে জায়েয নেই। ১০৮
➥১০৮. ফতওয়ায়ে শামী, খণ্ড-২য়, পৃষ্ঠা-৪৭।
এ উম্মত ক্বিরাতের মন্দ বিষয়সমূহ থেকে বিরত থাকবে। ইবনে আবেদীন (শামী রহ.) বলেন, অর্থাৎ অর্থবোধক বাক্য ও ক্বিরাতে তাড়াতাড়ি করা, ক্বিরাত ও রুকনসমূহ আদায়ে তাড়াতাড়ি করা মাকরূহ হবে। সিরাজিয়া গ্রন্থে এরূপ উল্লেখ রয়েছে।
মাসআলাঃ ফতোয়া শামী ও তাহতাবী শরীফে আছে, ‘ইমাম আযম আবু হানিফা (رحمة الله) ও ইমাম আবু ইউসুফ (رحمة الله) এর মতে, সূরা ফাতিহার পরে জন্মে সূরার পূর্বে অর্থাৎ সূরা ফাতিহা পাঠ শেষে অপর সূরা পাঠের পূর্বে বিসমিল্লাহ পাঠ করা সুন্নাত নয়। ইমাম মোহাম্মদ (رحمة الله) বলেছেন যে, চুপে চুপে ক্বিরাত পড়ার সময় বিসমিল্লাহ পড়া সুন্নাত, জেহ্রী বা উচ্চু আওয়াজে পড়ার সময় নয়। বাদায়েউস সানায়ে‘ কিতাবে প্রথম মতকে বিশুদ্ধ বলা হয়েছে। ১০৯
➥১০৯. ফতোয়া শামী, খণ্ড-১, পৃষ্ঠা-৩২৬, দেওবন্দের ছাপা; তাহতাবী, মিশরী ছাপা; বাহারুর রায়েক্ব, খণ্ড-১, পৃষ্ঠা-৩১২, ফতোয়া মাহমুদিয়া, খণ্ড-১, পৃষ্ঠা-১২৪।
তিলাওয়াতে সিজদার বর্ণনা
____________________
তিলাওয়াতে সিজদার বর্ণনা
মাসআলাঃ পবিত্র কোরআন শরীফে সেজদার আয়াত ১৪টি। যে ব্যক্তি কোরআন শরীফের এ ১৪টি সেজদার আয়াত একই বৈঠকে পড়বে এবং সবগুলো সেজদাহ ঐ বৈঠকেই আদায় করবে। ১১০
➥১১০. আলমগীরী, তানবীর, দুররে মুখ্তার।
মাসআলাঃ প্রত্যেক মুসলমান, সুস্থ মস্তিস্কধারী এবং প্রাপ্ত বয়স্ক লোকের উপর সেজদার আয়াত পড়লে ও শুনলে সেজদাহ ওয়াজিব হয়। ১১১
➥১১১. কবীরী, আলমগীরী।
মাসআলাঃ যদি কোনো হানাফী মাযহাবের লোক অন্য মাযহাব যেমন- শাফেয়ী, মালেকী বা হাম্বলী মাযহাবের ইমামের পিছনে ইক্তেদা করলে তখন যেখানে হানাফী মাযহাবে সেজদাহ রয়েছে সেখানে ঐ ইমাম সেজদাহ না করলে মুক্তাদিও সেজদা করবে না। ১১২
➥১১২. গায়াতুল আওত্বার।
মাসআলাঃ নামাযের মধ্যে মুসল্লী ব্যতীত অন্য কারো থেকে সিজদার আয়াত শ্রবণ করলে নামাযের পর সিজদা আদায় করবে, নামাযরত অবস্থায় তিলাওয়াতের সিজদা করবেনা, কেননা তা মুসল্লী ব্যতীত অন্য ব্যক্তি শ্রবণ করেছে। দুররে মুখতার গ্রন্থে উল্লেখ রয়েছে- যদি মুসল্লী অন্য কোন ব্যক্তি থেকে সিজদার আয়াত শ্রবণ করে তাহলে নামাযরত অবস্থায় তিলাওয়াতে সিজদা করবেনা কেননা উহা স্বীয় নামাযের অন্তর্ভূক্ত নয় বরং নামাযের পরে তিলাওয়াতে সিজদা করবে। ১১৩
➥১১৩. দুররে মুখতার, ২য় খণ্ড, ১১২পৃষ্ঠা।
মাসআলাঃ নামাযের মধ্যে আয়াতে সিজদার দরুণ তিলাওয়াতে সিজদা বিলম্ব না করে তাড়াতাড়ি আদায় করা জরুরী। সিজদার আয়াত পড়ার বা শ্রবণ করার পর দ্রুত তিলাওয়াতের সিজদা আদায় করা ওয়াজিব হয়ে যায়। ১১৪
➥১১৪. ত্বাহত্বাভী আলা মারাকিয়িল ফালাহ।
মাসআলাঃ শুধুমাত্র সিজদার আয়াতের অনুবাদের দ্বারাও তিলাওয়াতে সিজদা আবশ্যক। কুরআন যেহেতু শব্দাবলী ও অর্থ সমূহের সমষ্টির নাম সেহেতু যদি কোন ব্যক্তি পূর্ণ আয়াতে সিজদার অনুবাদ পড়ে তাহলে তার উপর তিলাওয়াতে সিজদা ওয়াজিব হয়ে যাবে, ‘‘কেননা উহা সিজদার আয়াত, সে বুঝতে সক্ষম হোক বা নাহোক যদিও ফার্সী ভাষায় তিলাওয়াত করে।” ১১৫
➥১১৫. দুররে মুখতার।
“তিলাওয়াতকারী ও শ্রোতা উভয়ের উপর তিলাওয়াতে সিজদা ওয়াজিব হবে শ্রোতা বুঝুক বা নাবুঝুক।” ১১৬
➥১১৬. ফতওয়ায়ে কাজী খান, ১ম খণ্ড, ১৫৬ পৃষ্ঠা; ফতাওয়ায়ে হক্কানীয়া, ২য় খণ্ড, ৩৪৪পৃষ্ঠা।
মাসআলাঃ শুধুমাত্র সিজদার আয়াত লিখলে তিলাওয়াতে সিজদা ওয়াজিব হয় না। গ্রন্থকার যদি সিজদার আয়াত লিখে বা উহা বানান করে তাহলে তার উপর তিলাওয়াতে সিজদা ওয়াজিব হবে না। ১১৭
➥১১৭. শামী, বাবু সুজোদিত্ তিলাওয়াত, ২য় খণ্ড, ১০৩পৃষ্ঠা; কবীরী, পৃষ্ঠা-৪৬৪।
“অনুরূপভাবে লিখা বা উচ্চারণ ব্যতীত দৃষ্টিপাতের দরুণ তিলাওয়াতে সিজদা ওয়াজিব হবেনা।”
মাসআলাঃ পাগল থেকে সিজদার আয়াত শ্রবণ করলে তিলাওয়াতে সিজদা ওয়াজিব হয় না, যেহেতু তিলাওয়াতে সিজদা ওয়াজিব হওয়ার জন্য তিলাওয়াতকারী আহল (যোগ্য) ও মুকাল্লাফ (যার উপর শরীয়তের বিধান প্রযোজ্য) হওয়া জরুরী। আর পাগল যেহেতু তিলাওয়াতের মুকাল্লাফ ও আহল নয় সেহেতু পাগল থেকে সিজদার আয়াত শ্রবণ করলে তিলাওয়াতে সিজদা ওয়াজিব হয়না, অবশ্যই ঘুমন্ত ব্যক্তি ঘুমিয়ে থাকলে হাক্বীক্বতের দৃষ্টিতে মুকাল্লাফ, এজন্য ঘুমন্ত ব্যক্তি থেকে সিজদার আয়াত শ্রবণ করলে গ্রহণযোগ্য অভিমত অনুযায়ী তিলাওয়াতে সিজদা আবশ্যক। কিন্তু না জানার দরুণ স্বয়ং ঘুমন্ত ব্যক্তির উপর তিলাওয়াতে সিজদা আবশ্যক নয়। ১১৮
➥১১৮. আল আশবা ওয়ান্ নাযাযির, আলক্বায়িদা তুচ্ছানিয়া।
মাসআলাঃ আসর ও ফজরের সময় তিলাওয়াতে সিজদা জায়েয, যদিও উক্ত সময়ে নফল নামায সমূহ নিষিদ্ধ, কিন্তু কাযা নামায সমূহের ন্যায় উক্ত সময়ে তিলাওয়াতে সিজদা আদায় করা জায়েয।
মাসআলাঃ যে তিলাওয়াতে সিজদা নামাযে ওয়াজিব হয় তা নামাযেই আদায় করতে হবে স্বতন্ত্র সিজদা করে অবশিষ্ট নামায জারী রাখবে।
মাসআলাঃ রুকুতে যাওয়ার সময় তিলাওয়াতে সিজদার জন্য অন্তরে ইচ্ছা করাও শরীয়ত অনুমদিত তবে রুকুতে নামাযের সিজদা নিয়ত ব্যতীত আদায় হবেনা, কিন্তু রুকুতে তিলাওয়াতে সিজদার নিয়তের জন্য শর্ত হল-সিজদার আয়াত পড়ার পর রুকু করতে তিন আয়াতের অতিরিক্ত বিরতি হতে পারবে না নতুবা রুকুতে নিয়ত শুদ্ধ নয়। ১১৯
➥১১৯. ত্বাহত্বাভী আলা মারাকিয়িল ফালাহ্, বাবু সুজোদিত্ তিলাওয়াত, পৃষ্ঠা-২৬৪।
“নামাযের রুকুতে তিলাওয়াতের সিজদা যখন উহার নিয়ত করবে অর্থাৎ সে তিলাওয়াতের সিজদা আদায়ের নিয়ত করে উহাতে, সিজদার আয়াতের পর তিন আয়াতের অতিরিক্ত পাঠ করলে তা বাদ হয়ে যাবে ইজমা এর ভিত্তিতে।” বাদায়িয়ুস্ সানায়ি গ্রন্থে উল্লেখ রয়েছে- “যদি সূরার মধ্যভাগে সিজদার আয়াত থাকে তাহলে উহা সমাপ্ত করা উচিত।” ১২০
➥১২০. ফাসলুন ফী কাইফিয়তে আদায়িহা।
মাসআলাঃ ঘুমন্ত ব্যক্তি থেকে সিজদার আয়াত শ্রবণ করা অর্থাৎ- তিলাওয়াতের সিজদা প্রত্যেক ঐ সিজদার আয়াত শ্রবণে ওয়াজিব হয়ে যায় যা মুকাল্লাফ (যার উপর শরীয়তের বিধান প্রযোজ্য) ব্যক্তি থেকে শুনা হয় চাই সে ব্যক্তি জাগ্রত হোক বা ঘুমন্ত হোক। তিলাওয়াতের সিজদা করা আবশ্যক। আল বাহর্রু রায়িক গ্রন্থে উল্লেখ আছে- “কোন ব্যক্তি ঘুমন্ত অবস্থায় সিজদার আয়াত তিলাওয়াত করল অতঃপর তা অপর ব্যক্তি শ্রবণ করল তাহলে তার উপর সিজদা করা আবশ্যক হবে।” ১২১
➥১২১. আল বার্হ্রুরায়িক, বাবু সিজদাতিত্ তিলাওয়াত, ১ম খণ্ড, ১১১পৃষ্ঠা; খুলাসাতুল ফতওয়া, ১ম খণ্ড, ১৮৪পৃষ্ঠা।
ফাউজূবিস্ সিজদাতিত্ তিলাওয়াত, ফতওয়ায়ে তাতারখানীয়া, ১ম খণ্ড, ৭৭৩পৃষ্ঠা “অথবা সুস্থ্য মস্তিষ্কের অধিকারী ঘুমন্ত ব্যক্তি থেকে নিশ্চয় সিজদা ওয়াজিব হবে যদি সিজদার আয়াত তার থেকে শ্রবণ করে।”
মাসআলাঃ যদি কোন ব্যক্তি তিলাওয়াতের সময় তিলাওয়াতে সিজদা থেকে বাঁচার উদ্দেশ্যে সিজদার আয়াতকে বাদ দেয় তাহলে তা মাকরূহ হবে। ১২২
➥১২২. কবীরী, ৪৭০ পৃষ্ঠা।
মাসআলাঃ নামাযের বাইরের ব্যক্তি সিজদার আয়াত পাঠ করা এবং নামাযী শ্রবণ করা অর্থাৎ কোন ব্যক্তি নামাযে লিপ্ত হয়ে হঠাৎ নামাযের বাইরের ব্যক্তি সিজদার আয়াত তিলাওয়াত করল এবং নামাযী নামাযের মধ্যে শ্রবণ করল। তাহলে নামাযী অথবা মুসল্লী তথা শ্রোতা তিলাওয়াতে সিজদা নামাযের পরে আদায় করবে।
মাসআলাঃ সিজদার আয়াত তিলাওয়াতের পর পাঁচ, ছয় আয়াত পড়ে সিজদা করা:- সিজদার আয়াত তিলাওয়াতের পর দ্রুত সিজদা করে নেয়া উচিত, যদি নামাযে কোন কারণে দেরী হয়ে যায় এবং স্মরণ আসার পর সিজদা করে নেয় তাহলে নামায হয়ে যাবে। কিন্তু দেরী হওয়ার কারণে সাহু সিজদা করা আবশ্যক হবে। এজন্য যে, তিলাওয়াতের সিজদা করা ওয়াজিব হয়েছে। আর সাহু সিজদা না করলে নামায পূণরায় পড়া ওয়াজিব হবে।
মাসআলাঃ তিলাওয়াতে সিজদার ক্ষেত্রে আসরের পর যতক্ষণ পর্যন্ত সূর্য্য লাল বর্ণ না হবে ততক্ষণ পর্যন্ত জায়েয। এরপর মাকরূহ।
রোযার বর্ণনা
____________________
রোযার বর্ণনা
মাসআলাঃ রমযান শরীফ ব্যতীত বিতিরের নামায জামাতে মাকরূহ। ১২৩
➥১২৩. হিদায়া।
মাসআলাঃ নিয়তের অর্থ কি? যেভাবে অন্যান্য ইবাদতে বলা হয়েছে যে, নিয়ত অন্তরের ইচ্ছার নাম, মুখে বলা কোন জরুরী নয়, রোযার ক্ষেত্রেও উহাই উদ্দেশ্য তবে মুখে বলা মুস্তাহাব।
মাসআলাঃ যদি রাতে নিয়ত করে তাহলে এভাবে নিয়ত করবে “আমি আল্লাহ্ তায়ালার জন্য এ রমযানের ফরয রোযা রাখব।” আর যদি দিনে নিয়ত করে তাহলে এ বলে নিয়ত করবে- “আমি আল্লাহর জন্য আজ দিনের রমযানের ফরয রোযা রাখব।” ১২৪
➥১২৪. জাওহারাতুন নায়্যিরা।
মাসআলাঃ দিনে নিয়ত করলে জরুরী হল- এভাবে নিয়ত করবে আমি আজ সুবহে সাদিক থেকে রোযাদার। আর যদি এ নিয়ত হয় যে, এখন থেকে রোযাদার সুবহে সাদিক থেকে নয় তাহলে রোযা হবেনা। ১২৫
➥১২৫. ফতোয়ায়ে শামী।
প্রশ্নঃ ওলামায়ে শরীয়তের অভিমত কি? দীর্ঘ দিন বিশিষ্ট রাষ্ট্র সমূহের অধিবাসীদের রোযা রাখার পদ্ধতি কিরূপ হয় বর্ণনা করুন।
উত্তরঃ আল্লাহর নিকট সাহায্য প্রার্থী। যে সমস্ত দেশে চব্বিশ ঘন্টার চেয়ে দিন বড় হয় তাহলে ঐ সমস্ত দেশে বসবাসকারী মুসলমানদেরকে নিকটবর্তী দেশ ও এলাকার সময় অনুযায়ী রোযা রাখতে হবে। সাধারণ ভাবে মানুষ চব্বিশ ঘন্টা রোযা রাখা সহ্য করতে পারে না। তবে যদি চব্বিশ ঘন্টার দিন এ পরিমাণ ছোট হয় যে, সেহেরী ও ইফতারীর সময় পাওয়া যায়, এবং সূর্যোদয় ও সূর্যাস্তও হয় তাহলে এদেশের সময় অনুযায়ী রোযা রাখতে হবে। অবশ্য শরীয়তে প্রত্যেক সময়ের প্রতি দৃষ্টি পাওয়া যায়। ১২৬
➥১২৬. শামী, ১ম খণ্ড, ২৩৯পৃষ্ঠা, তাহত্বাভী আলা মারাকিয়িল ফালাহ, ১ম খণ্ড, ৫৫৮পৃষ্ঠা; বাদায়ি উস্ সানায়ি, ৩য় খণ্ড, ১০২পৃষ্ঠা।
এটা এ জন্য যে, নিকটবর্তী লোক সাধারণত এত বড় দিন সহ্য করে থাকে এজন্য ঐ স্থানে নিজের দিন হিসেবে ধর্তব্য হবে। অন্য কোন হিসাবের প্রয়োজন নেই। যেভাবে মাজমুয়ায়ে ফাতওয়ায়ে আবদুল হাই এ উল্লেখ আছে, ১ম খণ্ড, ৬৯৬ পৃষ্ঠায়।
প্রশ্নঃ তোমরা চাঁদ দেখে রোযা রাখ এ হাদীসের দলীলের ভিত্তিতে রমযানের রোযার সবব তথা কারণ চন্দ্র দর্শন নাকি ‘‘তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তি রমযান মাস পাবে সে যেন রোযা রাখে” এ আয়াতের দলীলের ভিত্তিতে রমযান মাস উপস্থিত হওয়া রোযার সবব তথা কারণ? এ ব্যাপারে ওলামায়ে দ্বীনের মন্তব্য কি? এবং চন্দ্র উদয়ের ভিন্নতা বিস্তারিত বর্ণনা করুন।
উত্তরঃ আল্লাহর নিকট সাহায্য প্রার্থী এবং আল্লাহা তাওফীকদাতা: “তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তি এ মাসটি পাবে সে যেন অবশ্য রোযা রাখে,” এ আয়াতের ভিত্তিতে রমযান মাস উপস্থিত হওয়ার উপর রোযা ফরয হওয়া নির্ভরশীল, এতে কোন সন্দেহ নেই। কিন্তু হাদীসে কুরাইব যা আবু দাউদ শরীফে উল্লেখ আছে- তোমরা চাঁদ দেখে রোযা রাখ” এ হাদীসের ভিত্তিতে বুঝা যায় যে, চন্দ্র দেখার উপর নির্ভরশীল। এ জন্য উভয়ের মাঝে সামাঞ্জস্য এর দিক হল- মাস উপস্থিত হওয়া চন্দ্র দর্শনের উপর নির্ভরশীল। আর চন্দ্র দেখা দুইভাবে হতে পারে-
১ম হল- প্রত্যেক ব্যক্তি নিজে চাঁদ দেখা ধর্তব্য হবে অন্য কারো দেখা যথেষ্ট ও ধর্তব্য হবেনা। এমতাবস্থায় অন্ধ, ক্ষীণ দৃষ্টিসম্পন্ন ব্যক্তি, আর এমন ব্যক্তি যিনি এমন স্থানে অবস্থান করে যে স্থানে প্রথম রাতে চাঁদ দেখতে পারে না। মেঘাচ্ছন্ন, ধূলাবালি ও ধোয়া সম্পন্ন জায়গায় অবস্থান করার কারণে। এ সমস্ত লোকেরা রোযা রাখার হুকুম থেকে বাদ পড়ে যাবে। আর এটা বাতিল হওয়া সুস্পষ্ট বিষয় ও ঐক্যমতের বিষয়। আর দ্বিতীয় অবস্থা হল- কতিপয় লোকের চাঁদ দেখা সকলের ক্ষেত্রে ধর্তব্য ও যথেষ্ট হবে শরীয়ত নির্ধারিত পদ্ধতি ও মূলনীতি গ্রহণযোগ্য ও সাক্ষ্য হাসিল হয়ে যায়। এ শর্তের ভিত্তিতে, আর এটাই সঠিক। অতএব যে ব্যক্তি শরয়ী সাক্ষ্যের মাধ্যমে চাঁদ দেখার সংবাদ অবগত হয়েছে তার ক্ষেত্রেও মাস উপস্থিত হয়ে গেছে তাই এরূপ বলা যে, বিশ্বের পূর্ব প্রান্তের চাঁদ দেখা বিশ্বের পশ্চিম প্রান্তের মাস উপস্থিত হয় না, এটা ভুল। যেভাবে নিকটবর্তী স্থানের সাক্ষ্যের ভিত্তিতে শরীয়তের বিধান জারী হয়, দূর নিকটের পার্থক্যের দরুণ জারী হয়না। এর দৃষ্টান্ত পাওয়া খুবই কঠিন। অতএব, হানাফী মাযহাব অকাট্য নস ও হাদীসের সাথে সামাঞ্জস্যশীল। তাফসীরে সাভীতে উল্লেখ আছে- “তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তি এ মাসটি পাবে” যদি তা দ্বারা দিন সমূহ উদ্দেশ্য হয় তখন অর্থ হবে উহার কিছু অংশ উপস্থিত হওয়া আর যদি তা দ্বারা নতুন চাঁদ উদ্দেশ্য হয় তখন অর্থ হবে হয়তো সে চাঁদ দেখবে অথবা তার নিকট সাব্যস্থ হবে। এ মাসয়ালাতে গাইরে মুকালিদ এর ইমাম শাওকানী ও হানাফীদের মত অভিমত দিয়েছেন। তিনি হাদীসে কুরাইবের প্রতি উত্তর দিয়েছেন। আওজাযুল সমসালিক শরহে মুয়াত্তায়ে মালিক, ৩য় খণ্ড, দ্র:।
ইমাম ইয়াহ্ইয়া বিন সাঈদ আল কাত্বতান- যিনি জরাহ ও তা’দীলের ইমাম ছিলেন- তিনি বলেছেন- আল্লাহর শপথ এ উম্মতের মধ্যে কুরআন ও হাদীসের জ্ঞানের সবচেয়ে বড় আলেম ছিলেন আবু হানীফা।
ইমামে আযম (رحمة الله) হাদীস সংকলনে যাচাই-বাচাই ও ব্যাখ্যা বিশ্লেষণের পরে কিতাবুল আছার চলিশ হাজার হাদীস থেকে নির্বাচন করে লিখেছেন। তাঁর থেকে তার ছাত্র ইমাম যুফর, ইমাম আবু ইউচুফ, ইমাম মুহাম্মদ ইমাম হাসান বিন যিয়াদ ইত্যাদি মুহাদ্দিস ও ফকিহ্গণ উহা রিওয়ায়াত করেছেন। ইমাম ইয়াহইয়া বিন সাঈদ আল ক্বাত্বতান বড় মুহাদ্দিস ছিলেন, রাবী পরিচিতি বিষয়ে সুদক্ষ ছিলেন, ইমাম আহমদ, আলী বিন আল মাদীন ইত্যাদি আদব সহকারে দাঁড়িয়ে তাঁর থেকে হাদীস শিখতেন, আসরের নামাযের পর থেকে মাগরিব পর্যন্ত যা তার শিক্ষা দেয়ার সময় ছিল বরাবর দাঁড়িয়ে থাকতেন, ইমাম সাহেবের শিক্ষার মজলিসে অংশগ্রহণ করতেন এবং ইমাম সাহেবের ছাত্র হওয়ার কারণে গর্ব করতেন। সমস্ত সহীহ গ্রন্থে তাঁর থেকে হাদীস বর্ণিত আছে। হযরত আবদুল্লাহ বিন মুবারক (رضي الله عنه) হাদীস শাস্ত্রের বড় রুকুন, বুখারী ও মুসলিমে তাঁর থেকে হাজারো হাদীস বর্ণিত আছে। ১২৭
➥১২৭. তাযকিরাতুন নুমান, ১ম খণ্ড, ৯৫ পৃষ্ঠা।
ই’তিকাফের বর্ণনা
____________________
ই’তিকাফের বর্ণনা
মাসআলাঃ ওযর ব্যতিত ই’তিকাফের স্থান হতে বের হওয়া হারাম।
মাসআলাঃ পুরুষের ক্ষেত্রে সম্পূর্ণ মসজিদ ই’তিকাফের স্থান। আর মহিলার ক্ষেত্রে নিজ ঘরের সেই স্থান বা জায়গা যেখানে সে ই’তিকাফ রয়েছে।
মাসআলাঃ দু’ প্রকারের জরুরী অবস্থা ব্যতিত ই’তিকাফের স্থান হতে বের হওয়া যাবে না। (১) খাবারের জন্য। যদি ই’তিকাফের স্থানে খাবার আনার ব্যবস্থা না থাকে। পায়খানা-প্রস্রাবের জন্য। (২) জানাবাতের গোসলের জন্য। অর্থাৎ গোসল ওয়াজিব হলে গোসল করার জন্য ই’তিকাফের স্থান হতে বের হওয়া যাবে।
মাসআলাঃ ই’তিকাফের জন্য কয়েকটি জিনিস আবশ্যক। (১) পুরুষের ক্ষেত্রে মসজিদ আর মহিলাদের জন্য ঘরে দশ দিন ই’তিকাফ থাকা। (২) ই’তিকাফের নিয়ত করা। কেননা ই’তিকাফের নিয়ত করা ব্যতিত দশ দিন কেউ মসজিদ কিংবা ঘরে অবস্থান করলে ই’তিকাফ হবে না। ই’তিকাফের জন্য নিয়ত শর্ত।
মাসআলাঃ রমযান শরীফ ব্যতিত অন্য যে কোন সময় নফল ই’তিকাফের অনুমতি রয়েছে।
মাসআলাঃ মুস্তাহাব তথা নফল ই’তিকাফের জন্য রোযা রাখা শর্ত নয়। তবে সুন্নাত ই’তিকাফ যা রমযান শরীফের শেষের দশ দিন রাখা হয়। উক্ত ই’তিকাফ যদি নষ্ট হয়ে যায় (ভঙ্গ হয়ে যায়) তাহলে ভঙ্গ হওয়া দিনগুলোর ই’তিকাফের কাযা আদায় করতে হলে রোযা সহকারে আদায় করতে হবে। আর নযর তথা মান্নতকৃত ই’তিকাফের ক্ষেত্রে যেরকম নিয়ত করা হয় সেইভাবে পুরো করতে হবে। অর্থাৎ যদি মান্নাতের ই’তিকাফের ক্ষেত্রে রোযা সহকারে রাখার নিয়ত করে তাহলে রোযা রাখা আর অন্যথায় রোযা ছাড়া আদায় করবে। ১২৮
➥১২৮. ফতোয়ায়ে শামী।
মাসআলাঃ ই’তিকাফ তিন প্রকার। যথা- (১) মুস্তাহাব (২) সুন্নাত (৩) ওয়াজিব।
মুস্তাহাব ই’তিকাফ যে কোন সময়ে করা যাবে। সুন্নাতে মুয়াক্কাদাহ্ কেফায়া, যা রমযান শরীফের শেষ দশ দিন আদায় করা হয়ে থাকে। আর ওয়াজিব ই’তিকাফ হচ্ছে মান্নাতকৃত ই’তিকাফ। যা নিয়ত অনুযায়ী করতে হবে।
মাসআলাঃ যদি কোন কারণ বশতঃ যেমন- ২০১৮ সালে পবিত্র রমজান মাসে বন্যার পানি উঠাতে অনেক মসজিদে পানি উঠার কারণে কিংবা অন্য কোন প্রাকৃতিক অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে ই’তিকাফ ভঙ্গ হলে কিংবা ই’তিকাফ থাকতে না পারলে এমতাবস্থায় পরবর্তীতে ই’তিকাফ কাযা করা উত্তম। কাযা না করলেও কোন ধর্তব্য হবে না।
মাসআলাঃ মহিলাদের ক্ষেত্রে মসজিদে ই’তিকাফ করা মাকরূহে তাহরীমি। বরং তাদের জন্য উত্তম স্থান হচ্ছে যেখানে সে পাঁচ ওয়াক্ত নামায আদায় করে থাকে সে স্থান। আর যদি কোন স্থান নির্ধারিত না থাকে, সেক্ষেত্রে ঘরের যে কোন একটি স্থান পবিত্র ও পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন করে ঐ স্থানে ই’তিকাফ থাকবে।
যাকাতের বর্ণনা
____________________
যাকাতের বর্ণনা
মাসআলাঃ যে সমস্ত ধন-সম্পদ মানুষের মৌলিক প্রয়োজনের অন্তর্ভূক্ত তা-যতই মূল্যবান হোক না কেন তা যাকাত থেকে পৃথক (অর্থাৎ উক্ত ধন-সম্পদের উপর যাকাত ফরয হবে না)।
এ জন্য সে ব্যক্তি শুধুমাত্র মৌলিক প্রয়োজনের অতিরিক্ত সম্পদের যাকাত দিবেন, গাড়ীর মূল্যের উপর যাকাত ওয়াজিব (ফরয) নয়।
ফতওয়ায়ে শামীর মধ্যে উল্লেখ রয়েছেঃ বসবাসের ঘরসমূহ, পরিধানের কাপড়সমূহ, ঘরের আসবাব পত্র, আরোহনের জন্তু সমূহ, সেবার দাস-দাসী ও ব্যবহারের হাতিয়ার বা সমরাস্ত্র এর মধ্যে যাকাত নেই। ১২৯
➥১২৯. ফতওয়ায়ে শামী, পৃষ্ঠা-২৬৬, খণ্ড-২য়, কিতাবুয্ যাকাত, হিদায়া, পৃষ্ঠা-১৬৬, খণ্ড-১ম, কিতাবুয্ যাকাত।
মাসআলাঃ এক ব্যক্তির কাছে আমি কর্জ পাব কিন্তু সে ব্যক্তি তা অস্বীকার করছে, আমার কাছে লিখিত কোন প্রমাণ নেই এবং আমার কাছে কোন সাক্ষীও নেই। এমতাবস্থায় উক্ত কর্জের যাকাত দেয়া আমার উপর ওয়াজিব (ফরয) হবে কি-না?
যখন কর্জ উদ্ধারের জাহেরীভাবে কোন সম্ভাবনা না থাকে তখন এ সম্পদ ‘যিমার’ (যা ফেরত পাওয়ার সম্ভাবনা নেই) এর অন্তর্ভূক্ত। যেহেতু মালে যিমার (যে সম্পদ উদ্ধার হওয়ার সম্ভাবনা নেই) এর মধ্যে যাকাত ওয়াজিব (ফরয) নয় সেহেতু প্রশ্নের ধরণ অনুযায়ী আপনার উপরও যাকাত ওয়াজিব (ফরয) নয়। শরীয়তের মধ্যে ঐ কর্জের উপর যাকাত ওয়াজিব যা দাইনে ক্বাভী (শক্তিশালী কর্জ) অথবা দাইনে মুতাওয়াচ্ছিত (মধ্যম পর্যায়ের কর্জ) হয় অর্থাৎ কর্জদাতার কাছে সাক্ষী অথবা লিখিত প্রমাণ থাকে। অতঃপর কর্জ গৃহিত- কর্ম স্বীকার করে এবং কর্জদাতা কর্জ উদ্ধারে সক্ষমতাও রাখে তাহলে যাকাত ওয়াজিব হবে। নতুবা এ কর্জ মালে যিমারের হুকুমের অন্তর্ভূক্ত। যার উপর যাকাত ওয়াজিব নয়। ১৩০
➥১৩০. তাহত্বাভী আলাদ্দুররিল মুখতার, কিতাবুয্ যাকাত, পৃষ্ঠা-৩৯৩, আল বাহ্রুর রায়িক, পৃষ্ঠা-২০৭, কিতাবুয্ যাকাত।
প্রশ্নঃ এ নতুন মাসয়ালার ক্ষেত্রে ওলামায়ে দ্বীন কি বলেন- এ নতুন যুগে বা সময়ে যৌথ ব্যবসা অগ্রগামী, যার মধ্যে যৌথ সম্পদ যাকাতের নিসাব থেকে কয়েক গুণ বেশী হয়। কিন্তু যদি বন্টন করা হয় তাহলে কতিপয় অংশিদার এর অংশ নিসাব পর্যন্ত পৌঁছে। আর কতিপয় অংশিদারের অংশ নিসাব পর্যন্ত পৌঁছেনা। তাহলে এ ক্ষেত্রে যাকাতের হুকুম কি? যে বস্তুর যতক্ষণ পর্যন্ত পূর্ণ মালিকানা ও নিসাবের মালিক অর্জিত না হয় ঐ সময় পর্যন্ত উহার উপর কি যাকাত নেই?
উত্তরঃ আল্লাহর উপর ভরসাঃ যাকাতের ক্ষেত্রে যেরূপ সম্পদ নিসাব পর্যন্ত পৌঁছা জরুরী অনুরূপভাবে যাকাত দাতারও নিসাবের মালিক হওয়া জরুরী। এমনকি যদিও যৌথ সম্পদ যাকাতের নিসাব থেকে বেশী কিন্তু বন্টনের পর কতিপয় অংশিদারদের অংশ যাকাতের নিসাব পর্যন্ত পৌঁছে। আর কতিপয় অংশিদারদের অংশ পৌঁছেনা এজন্য অংশিদারী কাজে যৌথ সম্পদের উপর যাকাত নেই। বরং প্রত্যেক অংশিদারের অংশের উপর যাকাত ফরয এ শর্তের ভিত্তিতে যে, অংশিদার নিসাবের মালিক বনতে পারে।
শামী ২য় খণ্ড, ৩০৪ পৃষ্ঠায় রয়েছে- সায়িমা (জমিনে বিচরণশীল প্রাণী) ও ব্যবসার সম্পদে যৌথ নিসাবে আমাদের হানাফী মযহাব মতে যাকাত ফরয হবেনা যদিও উহাতে সংমিশ্রণ সহী হয় আর যদি একাধিক নিসাব হয় তাহলে সব নিসাবের উপর যাকাত ফরয হবে।
প্রশ্নঃ লিমিটেড কোম্পানীদের উপর যাকাতের বিধানঃ
কতিপয় লোক যৌথ ব্যবসা করে এবং যার সম্পদ যাকাতের নিসাব থেকেও বেশী কিন্তু যদি উহাকে বন্টন করা হয় তাহলে প্রত্যেকের অংশের সম্পদ যাকাতের নিসাব থেকে কম এমতাবস্থায় উহার উপর যাকাত আদায় করা ফরয হবে কিনা?
উত্তরঃ যাকাতের জন্য যেভাবে সম্পদ নিসাব পর্যন্ত পৌঁছা জরুরী অনুরূপভাবে যাকাতদাতা নিসাবের মালিক হওয়াও জরুরী। প্রশ্নে উল্লেখিত সূরতে যদিও যৌথ সম্পদ যাকাতের নিসাব থেকে বেশী কিন্তু বন্টনের পর প্রত্যেকের অংশ নিসাব পর্যন্ত না পৌঁছলে তাহলে যৌথ সম্পদে যাকাত নেই কিন্তু সম্পদ যদি এ পরিমাণ হয় যে, যদি উহাকে বন্টন করা হয় এবং প্রত্যেকের অংশ বা যার অংশ নিসাব পর্যন্ত পৌঁছে তাহলে তার উপর যাকাত ফরয।
ইমাম আবু বকর কাসানী (رحمة الله) বলেছেন- অতএব যদি উহা দুই ব্যক্তির মাঝে অংশিদারিত্ব হয়।
মাসআলাঃ যাকাত ও ফিতরার টাকা মসজিদ বানানোর মধ্যে খরচ করবেনা কেননা উহা গরীবদের অধিকার।
[আল্লাহ্ অধিক জ্ঞাত]
যাকাত দেয়ার ক্ষেত্রে কাকে অগ্রাধিকার দেবেঃ
মাসআলাঃ যাকাত ইত্যাদি সাদকা এর ক্ষেত্রে উত্তম হল- প্রথমে আপন ভাই বোনদের দিবে, অতঃপর তাদের সন্তানদেরকে দিবে, অতঃপর চাচা ও ফুফুদেরকে, অতঃপর তাদের সন্তানদেরকে, অতঃপর মামু ও খালাকে, অতঃপর তাদের সন্তানদেরকে, অতঃপর নিজ গ্রাম বা শহরের অধিবাসীদেরকে। ১৩১
➥১৩১. জাওহারী, আলমগীরী।
মাসআলাঃ ঐ ধর্ম ত্যাগীদেরকে দিলেও যাকাত আদায় হবেনা। যিনি মুখে ইসলামের দাবী করেন কিন্তু আল্লাহ্ ও রসূলের মর্যাদা ক্ষুন্ন করে বা অন্য কোন ধর্মীয় আবশ্যক বিষয়কে অস্বীকার করে। ১৩২
➥১৩২. বাহারে শরীয়ত, কানোনে শরীয়ত ইত্যাদি।
সদকার বর্ণনা
____________________
সদকার বর্ণনা
মাসআলাঃ হাদীস শরীফে রয়েছে- আল্লাহ্ তায়ালা ঐ ব্যক্তির সাদকা কবুল করেন না, যার আত্মীয় তার সদাচরণের মুখাপেক্ষী এবং সে অন্যকে দান করে।
মাসআলাঃ সাদকায়ে ফিতরে প্রত্যেক প্রকার শষ্য, গম, যব, চনাবোট, ধান, বাজরা, চাউল, নগদ টাকা-পয়সা দেয়া জায়েয আছে। তরকারী ইত্যাদি সাদকায়ে ফিতরে দেয়া যাবে না।
মাসআলাঃ সাদকায়ে ফিতর ঐ সমস্ত লোকদেরকে দেয়া যায় যাদের উপর সাদকায়ে ফিতর ওয়াজিব নয় বা যাদের যাকাত দেয়া জায়েয আছে।
মাসআলাঃ অমুসলিমকে সাদকায়ে ফিতর দেয়া যায়, যাকাত ও সাদক্বায়ে ফিতরের মধ্যে পার্থক্য হল- যাকাত অমুসলিমকে দেয়া যায়না। আর সাদক্বায়ে ফিতর অমুসলিম গরীবকেও দেয়া যায়। ১৩৩
➥১৩৩. শরহুত্তানভীর, ২য় খণ্ড, পৃষ্ঠা ৭৯, ইসলামী ফিক্বহ, ১ম খণ্ড, পৃষ্ঠা ৪২৩।
সাদক্বায়ে ফিতরের সবচেয়ে বেশী হক্বদার হল- আপন গরীব আত্মীয়-স্বজন, অতপর বন্ধু ও প্রতিবেশী মুসলমান হোক বা অমুসলিম।
হজ্বের বর্ণনা
____________________
হজ্বের বর্ণনা
মাসআলাঃ মুহরিম ব্যক্তি হালাল হওয়ার জন্য অর্থাৎ নিজ ইহরাম খুলার জন্য মাথা মুন্ডানো বা ছোট করা নিজে করতে পারবে কিনা? কতিপয় লোক বলেন, ইহরাম থেকে বাইর হওয়ার জন্য জরুরী হল- স্বীয় মাথা মুন্ডানো বা ছোট করা মুহরিম ব্যতীত অন্য ব্যক্তি দ্বারা সম্পাদন করবে, কিংবা মুন্ডানো বা ছাটানো নিজেও করতে পারবেন।১৩৪
➥১৩৪. ফতওয়ায়ে মাহমোদিয়া, ১৭তম খণ্ড, ১৯২পৃষ্ঠা।
মাসআলাঃ বৃদ্ধ দূর্বল ব্যক্তির উপরও সক্ষম অবস্থায় হজ্ব ফরয। ১৩৫
➥১৩৫. ফতওয়ায়ে মাহমোদিয়া, ১৭তম খণ্ড, ১৯২ পৃষ্ঠা।
মাসআলাঃ ‘বদায়িউস্ সানায়ে’ গ্রন্থে আছে যে, ‘তাওয়াফ করার জন্য অপবিত্রতা, হাদস, জানাবত, হায়েজ-নিফাস থেকে পাক হওয়া শর্ত নয় এবং পাক হওয়া আমাদের হানাফি মযহাবে ফরয নয়, বরং ওয়াজিব। সুতরাং পবিত্রতা বিহীন তাওয়াফ করা জায়েয। তবে ইমাম শাফেঈ (رحمة الله)’র মতে, পবিত্রতা তাওয়াফের জন্য ফরয। সুতরাং তাঁর মতে, পবিত্রতা বিহীন তাওয়াফ করা বৈধ নয়। হানাফিদের দলিল হলো যে, আল্লাহ্ তা‘আলার বাণী ‘বাইতুল আতিক আল্লাহর ঘরের তারা যেনো তাওয়াফ করে’। উক্ত আয়তে সাধারণভাবে তাওয়াফের হুকুম দেয়া হয়েছে, পবিত্রতার সাথে শর্তায়িত নয়। সুতরাং সাধারণ হুকুমকে খবরে ওয়াহেদ দ্বারা শর্তায়ন করা বৈধ নয়। ১৩৬
➥১৩৬. বদায়েউস সানায়ে, খণ্ড-২, পৃষ্ঠা-১২৯।
কোরবানীর বর্ণনা
____________________
কোরবানীর বর্ণনা
মাসআলাঃ اِضحية ও اُضحية (উদ্ হিয়্যাতুন ও ইদ্হিয়্যাতুন) হামযা এর মধ্যে পেশ ও যের সহকারে উহার বহুবচন اَضَاحى (আদ্বাহী) আসে এবং উহাকে ضحية (দ্বাহিয়্যাতুন)ও বলা হয় যার বহুবচন ضحايا (দ্বাহায়া) আসে, আর উহাকে اَضْحاةٌ (আদ্বহাতুন)ও বলা হয়। হামযাতে যবরের সাথে উহার বহুবচন اضحٰى (আদ্বহা) عيد الاضحٰى (ঈদুল আদ্বহা) শব্দটি উহা থেকে সংগৃহীত। اضحية (উদ্বহিয়্যা) মূলত ঐ সমস্ত প্রাণীকে বলা হয় যা দ্বিপ্রহরের সময় যবেহ করা হয়, অতপর এ শব্দটি এত অধিক ব্যবহার হয় যে, ঐ সমস্ত প্রাণীদের নাম হয়ে গেছে যা কোরবানীর দিন সমূহের মধ্যে যে কোন সময়ে যবেহ করা হয়।
শরীয়তের পরিভাষায় ঐ নির্দিষ্ট প্রাণী যা নৈকট্য লাভের নিয়তে বিশেষ সময়ে যবেহ করা হয়। আর চতুষ্পদ প্রাণীর মধ্য থেকে ঐ প্রাণীগুলো হল- উট, গরু, মহিষ, ভেড়া, ছাগল ইত্যাদি। আল ওয়াক্বিয়াত গ্রন্থে উল্লেখ আছে- দশ টাকা দিয়ে কোরবানীর জন্তু ক্রয় করা হাজার টাকা সাদক্বা, খায়রাত করা থেকে অধিক উত্তম। কেননা ঐ নৈকট্য যা রক্ত প্রবাহিত করে অর্জিত হয় তা সাদক্বা খায়রাত দ্বারা অর্জন করা যায়না। ১৩৭
➥১৩৭. ফিকহে হানাফী, ৩য় খণ্ড, ১৮৯ পৃষ্ঠা।
মাসআলাঃ اِضحية ও اُضحية (উদ্ হিয়্যাতুন ও ইদ্হিয়্যাতুন) হামযা এর মধ্যে পেশ ও যের সহকারে উহার বহুবচন اَضَاحى (আদ্বাহী) আসে এবং উহাকে ضحية (দ্বাহিয়্যাতুন)ও বলা হয় যার বহুবচন ضحايا (দ্বাহায়া) আসে, আর উহাকে اَضْحاةٌ (আদ্বহাতুন)ও বলা হয়। হামযাতে যবরের সাথে উহার বহুবচন اضحٰى (আদ্বহা) عيد الاضحٰى (ঈদুল আদ্বহা) শব্দটি উহা থেকে সংগৃহীত। اضحية (উদ্বহিয়্যা) মূলত ঐ সমস্ত প্রাণীকে বলা হয় যা দ্বিপ্রহরের সময় যবেহ করা হয়, অতপর এ শব্দটি এত অধিক ব্যবহার হয় যে, ঐ সমস্ত প্রাণীদের নাম হয়ে গেছে যা কোরবানীর দিন সমূহের মধ্যে যে কোন সময়ে যবেহ করা হয়।
শরীয়তের পরিভাষায় ঐ নির্দিষ্ট প্রাণী যা নৈকট্য লাভের নিয়তে বিশেষ সময়ে যবেহ করা হয়। আর চতুষ্পদ প্রাণীর মধ্য থেকে ঐ প্রাণীগুলো হল- উট, গরু, মহিষ, ভেড়া, ছাগল ইত্যাদি। আল ওয়াক্বিয়াত গ্রন্থে উল্লেখ আছে- দশ টাকা দিয়ে কোরবানীর জন্তু ক্রয় করা হাজার টাকা সাদক্বা, খায়রাত করা থেকে অধিক উত্তম। কেননা ঐ নৈকট্য যা রক্ত প্রবাহিত করে অর্জিত হয় তা সাদক্বা খায়রাত দ্বারা অর্জন করা যায়না। ১৩৭
➥১৩৭. ফিকহে হানাফী, ৩য় খণ্ড, ১৮৯ পৃষ্ঠা।
কোরবানীর হুকুম
____________________
কোরবানীর হুকুম
মাসআলাঃ কোরবানী প্রত্যেক মুক্বীম সম্পদশালী মুসলমানের উপর কোরবানীর দিন সমূহের মধ্যে ওয়াজিব। এটা ইমাম আবু হানীফা, ইমাম মুহাম্মদ, হযরত হাসান ও ইমাম এর অভিমত অনুযায়ী এবং ইমাম আবু ইউসুফ এর দুইটি রিওয়ায়াতের একটি অনুযায়ী। উহার দলীল এ যে, হুজুর (ﷺ) ইরশাদ করেছেন যার কাছে সম্পদ থাকা স্বত্ত্বেও কোরবানী না করে সে যেন আমাদের ঈদগাহে কখনো না আসে। ১৩৮
➥১৩৮. আল মুসতাদরাক, ৪র্থ খণ্ড, পৃষ্ঠা ২৩২।
উক্ত হাদীস দ্বারা বুঝা গেল যে, যারা কোরবানী করেন না তাদের উপর ধমকির কথা উল্লেখ আছে, আর ধমকির কথা আসে ওয়াজিব তরক করলে। ইমাম আবু ইউসুফ ও শাফী (رحمة الله) বলেন- কোরবানী সুন্নাতে মুয়াক্কাদা কেননা হুজুর (ﷺ) ইরশাদ করেছেন- যখন তোমরা জিলহজ্বের চাঁদ দেখ এবং তোমাদের মধ্য থেকে কারো কোরবানী করার ইচ্ছা হয় তাহলে সে নিজ চুল ও নখ না কাটে। ১৩৯
➥১৩৯. সহীহ মুসলিম, ২য় খণ্ড, পৃষ্ঠা ১৫৬০।
উক্ত হাদীসে ইচ্ছা এর সাথে হুকুমকে মুতলাক (সাধারণ) রাখা হয়েছে। আর ইচ্ছা এর সাথে মুতলাক করা ওয়াজিব এর বিপরীত। জাহিরুর রিওয়ায়াতে আছে যে, কোরবানী প্রত্যেক ব্যক্তির উপর নিজের পক্ষ থেকে ওয়াজিব এবং এর উপর ফতওয়া, সাদক্বায়ে ফিতরের মাসয়ালা- উহার বিপরীত, সাদক্বায়ে ফিতর তাঁর উপরও ওয়াজিব এবং তার অধিনস্থ পরিবার ও সন্তানের পক্ষ থেকেও ওয়াজিব।
ইমাম তিরমিযী হযরত আতা বিন ইয়াসার এর রিওয়ায়াত উল্লেখ করেছেন যে, হযরত আবু আইয়ুব (رضي الله عنه) বলেন, আমরা রাসূল (ﷺ) এর যুগে প্রত্যেক ব্যক্তি, নিজের পক্ষ থেকে ও পরিবারের সদস্যদের পক্ষ থেকে ছাগল দিয়ে কোরবানী করতাম। আমরা নিজেরাও খেতাম এবং অন্যদেরকেও আহার করাইতাম। ১৪০
➥১৪০. সুনানে তিরমিযী, ৩য় খণ্ড, পৃষ্ঠা ৩১।
ইমামে আযম (رحمة الله) থেকে হাসান বিন যিয়াদের বর্ণনা এ যে, কোরবানী নিজের পক্ষ থেকেও এবং নিজ ছোট সন্তানের পক্ষ থেকেও ওয়াজিব। ছোট বাচ্চাদের প্রত্যেকের পক্ষ থেকে একটি ছাগল বা সাত জনের পক্ষ থেকে উট কিংবা গরু যবেহ করবে।
মাসআলাঃ গাভী (গরু) ও উটের মধ্যে শরীক জায়েয হওয়ার দলীল হচ্ছে ঐ হাদীস শরীফ যা ইমাম মুসলিম বর্ণনা করেছেন, হযরত জাবির বিন আবদুল্লাহ আনসারী (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন- আমরা হজ্বের ইহরাম বেঁধে রাসূল (ﷺ) এর সাথে বের হয়েছি, তখন রাসূল (ﷺ) আমাদেরকে নির্দেশ দিলেন যে, আমরা উট ও গাভীর মধ্যে শরীক হয়ে যাব। আমাদের মধ্য থেকে সাত ব্যক্তি বুদনা তথা উটের মধ্যে শরীক হব। ১৪১
➥১৪১. সহীহ মুসলিম, ২য় খণ্ড, পৃষ্ঠা- ৯৫৫।
আর সাত ব্যক্তি থেকে কম হলে উত্তমের ভিত্তিতে জায়েয হবে অবশ্য সাতের অধিক ব্যক্তি শরীক হওয়া জায়েয নেই।
মাসআলাঃ যদি ছোট বাচ্চার সম্পদ থাকে তাহলে অধিক বিশুদ্ধ অভিমত অনুযায়ী ঐক্যমতের ভিত্তিতে তার সম্পদে কোরবানী ওয়াজিব নয় কেননা কোরবান একটি নৈকট্য লাভের ওয়াছিলা সে উহার সম্বোধীত ব্যক্তি হবেনা। ১৪২
➥১৪২. (ফিকহে হানীফী, ৩য় খণ্ড, পৃষ্ঠা-১৯০ ।
মাসআলাঃ ফকীর ও মুসাফিরের উপর কোরবানী ওয়াজিব নয়, ফকীরের উপর কোরবানী ওয়াজিব না হওয়ার কারণ স্পষ্ট, মুসাফিরের উপর এ জন্য ওয়াজিব নয় যে, কোরবানী আদায় করা এমন আসবাব (কারণ সমূহ) এর সাথে নির্দিষ্ট যে আসবাব (কারণসমূহ) মুসাফিরের জন্য খুবই কষ্ট হবে, আর কোরবানীর সময় অতিবাহিত হলে আর কোরবানী দেয়া যায় না। হযরত সায়্যিদুনা আলী মারতুজা (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত আছে যে, মুসাফিরের উপর জুমা ও কোরবানী ওয়াজিব নয়। ১৪৩
➥১৪৩. নাসর্রু রায়া, পৃষ্ঠা ২১১।
কোরবানীর সময়
____________________
কোরবানীর সময়
মাসআলাঃ কোরবানীর সময় কোরবানীর দিবসের সুবহে সাদিক থেকে শুরু হয়ে যায় কিন্তু শহরের অধিবাসীদের জন্য কোরবানী করা অর্থাৎ যবেহ করা জায়েয নেই- যতক্ষণ পর্যন্ত ইমাম ঈদের নামায না পড়াবে। অবশ্য গ্রামের অধিবাসীরা সুবহে সাদিকের পর কোরবানী করতে পারবে। হুজুর (ﷺ) ইরশাদ করেছেন- যে ব্যক্তি আমাদের ন্যায় নামায পড়ে এবং আমাদের কিবলার দিকে মুখ করে নামায পড়ে এবং আমাদের ন্যায় কোরবানী করে তাহলে সে যেন ঈদের নামায আদায় না করা পর্যন্ত কোরবানীর জন্তু যবেহ না করে। ১৪৪
➥১৪৪. সহীহ মুসলিম, ৩য় খণ্ড, পৃষ্ঠা-১৫৫৩।
হুজুর (ﷺ) ইরশাদ করেন- যে ব্যক্তি নামাযের পূর্বে কোরবানী করে তাহলে সে নিজের জন্য যবেহ করেছে, আর যে ব্যক্তি নামাযের পর যবেহ করেছে তাহলে তার কোরবানী পরিপূর্ণ হয়ে গেছে। আর সে মুসলমানদের ত্বরীকা প্রাপ্ত হয়েছে। ১৪৫
➥১৪৫. মুসলিম শরীফ।
অতপর এ ব্যাপারে কোরবানী জায়গা ধর্তব্য হয়েছে। এজন্য যদি কোরবানীর জন্তু গ্রামে থাকে আর কোরবানী দাতা শহরে থাকে তাহলে সোবহে সাদিকের পর কোরবানী করা জায়েয আছে। আর যদি উহার বিপরীত হয় তাহলে নামাযের পরেই জায়েয হবে। তিন দিন পর্যন্ত কোরবানী করা জায়েয আছে। কোরবানীর দিবসে একদিন আর দুই দিন তার পরে। উহার দলীল- হযরত আবদুল্লাহ্ বিন ওমর (رضي الله عنه) বলেছেন- ‘কোরবানী’ কোরবানী দিবসের পর দুই দিন। ১৪৬
➥১৪৬. আল-মুয়াত্তা ইমাম মালেক।
হযরত আনাস (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত আছে যে, তিনি বলেন- ‘কোরবানী’ কোরবানী দিবসের পর দুইদিন।১৪৭
➥১৪৭. সুনানে বায়হাক্বী, ৯ম খণ্ড, পৃষ্ঠা- ২৯৭ ।
হযরত আলী (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন- ‘কোরবানী’ কোরবানী দিবসের পর দুইদিন, (বায়হাক্বী)। প্রথম দিন কোরবানী করা উত্তম।
মাসআলাঃ কোরবানীর দিবস অতিবাহিত হওয়ার পর ফকীর ব্যক্তি কোরবানীর জন্তু ক্রয় করলে উহাকে জীবিত সদকা করতে হবে। আর যদি ধনী ব্যক্তি এরূপ করে তাহলে ছাগলের মূল্য সদকা করবে সে ক্রয় করুক বা ক্রয় না করুক।
কোরবানীর জন্তুর বৈশিষ্ট্য
____________________
কোরবানীর জন্তুর বৈশিষ্ট্য
মাসআলাঃ কোরবানীর জন্তু প্রত্যেক দোষ-ত্রুটি থেকে মুক্ত হওয়া জরুরী। এ জন্য যে জন্তু অন্ধ হবে এবং উহার অন্ধ হওয়া প্রকাশ পায় বা লেংড়া হওয়া প্রকাশ পায় বা রুগ্ন হয় এবং উহার রুগ্ন হওয়া প্রকাশ পায় বা ক্ষীণ ও র্দূবল হয় তাহলে উহা দ্বারা কোরবানী জায়েয নয়। অনুরূপ ভাবে এমন জন্তু দিয়ে কোরবানী হবেনা যার কান ও লেজ কাটা হয় এবং ঐ জন্তুর কোরবানী জায়েয নয় যার অধিকাংশ কান বা লেজ কাটা। আর যদি অধিকাংশ কান বা লেজ অবশিষ্ট থাকে তাহলে জায়েয হবে। সুনানে আবু দাউদ এর মধ্যে রয়েছে- হুজুর (ﷺ) ইরশাদ করেছেন- চার ধরণের জন্তু দ্বারা কোরবানী জায়েয নয়। এমন অন্ধ যা প্রকাশ পায়, এমন রুগ্ন যা প্রকাশ পায়, এমন লেংড়া যা প্রকাশ পায়। আর এমন ক্ষীণ ও দূর্বল যা হাড়ে মাংস না থাকে। হুজুর (ﷺ) শিং বিশিষ্ট কাল ও সাদা রঙের দুইটি ভেড়া কোরবানী করেছেন। ১৪৮
➥১৪৮. মুসলিম শরীফ।
অপর বর্ণনায় এসেছে হুজুর (ﷺ) শিং বিশিষ্ট শক্তিশালী ভেড়া কোরবানীর মধ্যে যবেহ করেছেন। ১৪৯
➥১৪৯. তিরমিযী।
যে জন্তুর কান জন্মগত ভাবে না থাকে উহার কোরবানী জায়েয নেই।
উক্ত দোষ বিশিষ্ট জন্তুদের কোরবানী ঐ সময় না জায়েয যখন এ দোষ ক্রয় করার সময় বিদ্যমান থাকে, কিন্তু যদি ক্রয় করার সময় উক্ত প্রাণী উলেখিত দোষ থেকে মুক্ত ছিল পরবর্তীতে কোন প্রতিবন্ধক দোষ উক্ত জন্তুর মধ্যে এসে গেছে তাহলে যদি কোরবানী দাতা সম্পদশালী হয়- তাহলে তার উপর দ্বিতীয় কোরবানী ওয়াজিব হবে। আর যদি কোরবানী দাতা ফকীর হয় তাহলে এটাই যথেষ্ট হবে কেননা ধনীর উপর কোরবানী ওয়াজিব হওয়া প্রথম থেকেই শরীয়তের বিধানের আলোকে হয়েছে, ক্রয় করার কারণে ওয়াজিব হয়নি। এজন্য তার কোরবানী নির্দিষ্ট হয়ে যাবেনা আর ফকীরের উপর কোরবানীর নিয়তে জন্তু ক্রয় করার কারণে ওয়াজিব হয়েছে। এ জন্য তার কোরবানী নির্দিষ্ট হয়ে গেছে, অতএব, যখন কোরবানীর জন্তু মরে যায় তাহলে ফকীর থেকে তো কোরবানী বাদ পড়ে যাবে। কিন্তু ধনী থেকে কোরবানী রহিত হবেনা।
কোরবানীর জন্তুর বয়স
____________________
কোরবানীর জন্তুর বয়স
মাসআলাঃ পাঁচ বছরের উট, দুই বছরের গাভী, ষাড়, মহিষ, এক বছরের ভেড়া, ছাগলের কোরবানী জায়েয আছে। অবশ্য ছয় মাসের ভেড়া ও দুম্বার কোরবানীও জায়েয আছে। এ শর্তের ভিত্তিতে যে, শারীরিকভাবে এমন রিষ্ট-পুষ্ট হয় যে, যদি এক বছরের জন্তুদের মধ্যে ছেড়ে দেয়া হয় তাহলে পার্থক্য করা যাবেনা।
হযরত সায়্যিদুনা আনাস (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেছেন- হুজুর (ﷺ) শিং বিশিষ্ট কাল, সাদা রঙের দুইটি ভেড়া কোরবানী করেছেন। ১৫০
➥১৫০. সহীহ মুসলিম, ২য় খণ্ড।
হযরত সায়্যিদুনা আবু সাঈদ কুদরী (رضي الله عنه) বলেছেন- রাসূল (ﷺ) শিং বিশিষ্ট রিষ্টপুষ্ট (শক্তিশালী) ভেড়া কোরবানীর মধ্যে যবেহ করেছেন। ১৫১
➥১৫১. তিরমিযী, ২য় খণ্ড, পৃষ্ঠা ২৭।
মাসআলাঃ যে জন্তুকে খাসী করে দেয়া হয়েছে উহা দিয়েও কোরবানী করা জায়েয আছে। আর খাসী ঐ জন্তুকে বলা হয় যার উভয় অন্ডকোষ বের করে দেয়া হয়েছে। উহার দলীল এ যে, হযরত আয়েশা (رضي الله عنه) বা হযরত সায়্যিদিনা আবু হুরায়রা (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত আছে যে, রাসূল (ﷺ) কোরবানী করার জন্য এমন ভেড়া সংগ্রহ করতেন যা খুব মোটা-তাজা হত, যার অন্ডকোষ বের করে দেয়া হয়েছে। আর উহা কাল সাদা রঙের শিং বিশিষ্ট হত, তৎমধ্য থেকে একটি ভেড়া নিজ উম্মতের পক্ষ থেকে যারা আল্লাহ্ তায়ালার একত্ববাদ ও রাসূল (ﷺ) এর রিসালত এর সাক্ষ্য দেয়। আর দ্বিতীয় ভেড়াটি মুহাম্মদ (ﷺ) ও তাঁর পরিবারের পক্ষ থেকে করতেন। ১৫২
➥১৫২. সুনানে বায়হাক্বী, ৯ম খণ্ড, ২৭৩ পৃষ্ঠা; ফিকহে হানাফী, ৩য় খণ্ড, ১৯৩ পৃষ্ঠা।
মাসআলাঃ যে পাগল জন্তু ঘাস খায় উহার কোরবানীও জায়েয, কেননা উহা মকসদের ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধক নয়। আর যদি ঘাস না খায় তাহলে জায়েয হবেনা। খুজলী জন্তু যদি মোটা-তাজা হয় তাহলে উহার কোরবানী জায়েয আছে। আর যদি ক্ষীণ ও দূর্বল হয় তাহলে নাজায়েয। যে জন্তুর দাত না থাকে উহার কোরবানীও জায়েয আছে।
হযরত ইমাম আবু ইউসুফ (رحمة الله) থেকে বর্ণিত আছে যে, তিনি উহার মধ্যে বেশী ও কম ধর্তব্য করেছেন, অতএব, যদি এ পরিমাণ দাত অবশিষ্ট থাকে যা দ্বারা ঘাস খাওয়া উক্ত প্রাণীর জন্য সম্ভব হয় তাহলে জায়েয আছে। ছোট কান বিশিষ্ট জন্তুর কোরবানী জায়েয আছে। উহার দলীল হল- ইবনে আব্বাস (رضي الله عنه) এর বর্ণনায় রয়েছে যে, ইবনে আব্বাস (رضي الله عنه) ছোট কান বিশিষ্ট জন্তুর কোরবানীতে কোন অসুবিধা মনে করতেন না। ১৫৩
➥১৫৩. সুনানে বায়হাক্বী, ৯ম খণ্ড, ২৭৫ পৃষ্ঠা।
কোরবানীর গোস্তের বিধান
____________________
কোরবানীর গোস্তের বিধান
মাসআলাঃ কোরবানীর জন্তুর গোস্ত নিজে খাবে ধনীদেরকে খাওয়াবে এবং জমা করবে, সবই জায়েয আছে, কেননা হযরত জাবির (رضي الله عنه) বর্ণনা করেছেন যে, রাসূল (ﷺ) প্রথমে কোরবানীর গোস্ত তিন দিনের পরে খেতে নিষেধ করেছেন। অতপর পরবর্তীতে বলেছেন- তোমরা আহার কর, জিনিষ পত্র তৈরী কর ও জমা করে রাখ। ১৫৪
➥১৫৪. মুসলিম শরীফ, ৩য় খণ্ড, ১৫৬২পৃষ্ঠা।
রাসূল (ﷺ) লোকদেরকে তিন দিনের বেশী গোস্ত জমা রাখতে নিষেধ করেছিলেন এবং অবশিষ্ট গোস্ত সদকা করার জন্য নির্দেশ দিয়েছেন যে, যাতে অভাবী বেদুইনদের সাথে সমবেদনা জানানো যায়। অতপর এ বলে অনুমতি দিলেন যে, আমি তোমাদেরকে তিন দিনের অতিরিক্ত কোরবানীর গোস্ত জমা রাখতে নিষেধ করেছিলাম, এখন তোমরা যে পরিমাণ চাও জমা করতে পারবে। ১৫৫
➥১৫৫. সহীহ মুসলিম, ৩য় খণ্ড, ১৫৬৪পৃষ্ঠা।
মাসআলাঃ ধনী হয়েও নিজে খাওয়া জায়েয হয়েছে তাহলে অন্য ধনীদের আহার করানোও জায়েয হবে।
মাসআলাঃ মুস্তাহাব হল- তিন ভাগে ভাগ করবে। এক ভাগ খাওয়ার জন্য, দ্বিতীয় ভাগ জমা রাখার জন্য এবং তৃতীয় ভাগ অন্যকে আহার করানোর জন্য।
কোরবানী সম্পর্কে আরো কতিপয় মাসআলা
____________________
কোরবানী সম্পর্কে আরো কতিপয় মাসআলা
মাসআলাঃ কোরবানীর জন্তুর চামড়া সদকা করে দেবে। কেননা চামড়াও উহার অংশ। অথবা চামড়া সংশোধন করে ঘরে ব্যবহার করবে এ জন্য যে, চামড়া থেকে ফায়িদা হাসিল করা হারাম নয়। চামড়া বিক্রি করা যদিও জায়েয কিন্তু তা মাকরুহ কেননা মালিকানা বিদ্যমান আছে এবং দিয়ে দেয়ার উপরও ক্ষমতা রাখে কেননা হুজুর (ﷺ) বলেছেন- যে ব্যক্তি কোরবানীর চামড়া বিক্রি করেছে তার কোন কোরবানী হয়নি। ১৫৬
➥১৫৬. সুনানে বায়হাক্বী, ৯ম খণ্ড, ২৯৪পৃষ্ঠা।
মাসআলাঃ কসাই এর পারিশ্রমিক কোরবানীর জন্তু থেকে দিতে পারবে না। কেননা হযরত সায়্যিদুনা মাওলা আলী (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত আছে যে, তিনি বলেন রাসূল (ﷺ) আমাকে জন্তু দেখা-শুনা এবং উহার চামড়া ও কাপড় সমূহ বন্টন করার জন্য আমাকে দায়িত্ব দিয়েছেন এবং আমাকে নির্দেশ দিয়েছেন যে, আমি যেন কসাইকে উহার মধ্য থেকে কিছু না দিয়ে থাকি এবং বলেছেন আমরা যেন কসাইকে নিজের পক্ষ থেকে দিয়ে থাকি। ১৫৭
➥১৫৭. সুনানে বায়হাক্বী, ৯ম খণ্ড, ২৯৪পৃষ্ঠা।
অতএব, যদি সে ফকীর হয়ে থাকে তাহলে আমরা উহার মধ্য থেকে তাকে দিব এবং তাকে তার পারিশ্রমিক দেয়া হয়েছে।
মাসআলাঃ লোম বিশিষ্ট জন্তুর লোম যবেহ করার পূর্বে কাটা এবং উহা দ্বারা উপকৃত হওয়া মাকরূহ।
মাসআলাঃ উত্তম হল- কোরবানীর জন্তু নিজের হাতে যবেহ করা যদি যবেহ করার নিয়ম ভালভাবে জানা থাকে। কেননা হযরত আনাস (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত আছে যে, তিনি বলেছেন- রাসূল (ﷺ) দুই শিং বিশিষ্ট ভেড়া কাল সাদা রঙের কোরবানী করেছেন উহাকে নিজ হাত দ্বারা যবেহ করেছেন ‘বিসমিল্লাহি আল্লাহু আকবর’ বলে নিজ পা উহার ঘাড়ের উপর রাখলেন।১৫৮
➥১৫৮. সহীহ মুসলিম শরীফ, ৩য় খণ্ড, ৫৫৬পৃষ্ঠা।
মাসআলাঃ যদি ভালভাবে যবেহ করতে না জানে তাহলে উত্তম হল অন্যের সাহায্য-সহযোগীতা নেয়া এমতাবস্থায় নিজে উপস্থিত থাকা উচিত। কেননা হুজুর (ﷺ) বলেছেন- হে ফাতিমা তুমি নিজ কোরবানীর জন্তুর দিকে অগ্রসর হও এবং উহার সামনে উপস্থিত থাক, তাহলে রক্তের প্রথম ফোটার সময়ে তোমার সমস্ত গুনাহ ক্ষমা করে দেয়া হবে। আর তুমি এরূপ বল আমার নামায ও আমার কোরবানী আমার জীবন ও মরণ সমগ্র বিশ্বের প্রতিপালকের জন্য তাঁর কোন শরীক নেই এবং ঐ ব্যাপারে আমাকে আদেশ দেয়া হয়েছে এবং প্রথম মুসলমানদের অন্তর্ভূক্ত।
হযরত ইমরান বিন হোসাইন (رضي الله عنه) বলেছেন- আমি আরয করলাম হে আল্লাহর রাসূল (ﷺ) এটা কি আপনার ও আপনার পরিবারের জন্য? উহার আহাল আপনি নাকি সমস্ত মুসলমান?
হুজুর (ﷺ) বলেছেন নয়, বরং এ হুকুম সমস্ত মুসলমানদের জন্য। ১৫৯
➥১৫৯. আল মুসতাদরক, ৪র্থ খণ্ড, ২৩৩পৃষ্ঠা।
মাসআলাঃ আহলে কিতাব দ্বারা কোরবানীর জন্তু যবেহ করা মাকরূহ। কেননা কোরবানী নৈকট্য লাভের একটি আমল। আর আহলে কিতাব উহার যোগ্য নয়। ১৬০
➥১৬০. ফিক্বহে হানাফী, ৩য় খণ্ড, ১৯৬পৃষ্ঠা।
মাসআলাঃ যে ব্যক্তি অন্যের কোরবানীর জন্তু ছাগল ডাকাতি করেছে অতপর উহা কোরবানী দিয়ে দিয়েছেন তাহলে সে উহার জরিমানা দিতে হবে এবং তার কোরবানী জায়েয হবে।
মাসআলাঃ যদি কোরবানীর জন্তু আমানত রেখে দিয়েছে, অতএব, আমানতদার ব্যক্তি উক্ত জন্তু কোরবানী করে দিয়েছে, তাহলে জরিমানা দিতে হবে এবং তার কোরবানী জায়েয হবেনা। কেননা যবেহ করার পরেই তার মালিকানা সাব্যস্থ হবে।
মাসআলাঃ যদি ভুলক্রমে একে অন্যের জন্তু যবেহ করে দেয় তাহলে উভয়ের পক্ষ থেকে যথেষ্ট হবে এবং উভয়ের উপর জরিমানা হবে না। কেননা প্রত্যেকটি জন্তু কোরবানীর জন্য নির্ধারিত ছিল। আর প্রত্যেকের উপর ওয়াজিব ছিল যে, সে কোরবানীর দিবস সমূহের মধ্যে উক্ত জন্তুরই কোরবানী করবে। আর অন্যের সাথে পরিবর্তন করা মাকরূহ। অতএব উক্ত মাসয়ালাতে প্রত্যেক ব্যক্তি যবেহ করানোর ক্ষেত্রে অপরের সাহায্য প্রার্থী হয়ে গেল। ১৬১
➥১৬১. ফিকহে হানাফী, ৩য় খণ্ড, ১৯৬পৃষ্ঠা।
[আল্লাহ্ ও তাঁর রাসূলই অধিক জ্ঞাত]
মাসআলাঃ যদি কোন ব্যক্তি বিছমিল্লাহ্ বলার ইচ্ছায় ‘আলহামদু লিল্লাহ’ বা ‘সুবহানাল্লাহ’ বলে যবেহ করে তাহলে যবেহকৃত প্রাণী হালাল হবে। যদি কোন ব্যক্তি যবেহ করার সময় ‘আল্লাহুম্মা তাক্বাব্বাল মিন ফুলানিন’ বলে তাহলে এটা খেলাফে সুন্নাত কেননা এটা কোরবানীর সময় সুন্নাত।
মাসআলাঃ নাবালেগ শিশুর মাল-সম্পদ থেকে সর্ব-সম্মতিক্রমে তথা ঐকমত্যের ভিত্তিতে কোরবানি করা ওয়াজিব নয়। কেননা কোরবানি হচ্ছে আল্লাহর নৈকট্য লাভ করা, কাজেই নাবালেগ ছেলের সম্পদ তার সাথে সম্পৃক্ত করা হবে না। ১৬২
➥১৬২. ফিকহে হানাফী, ৩য় খণ্ড, ১৯ পৃষ্ঠা।
মাসআলাঃ ফকির ও মোসাফিরের উপর কোরবানী ওয়াজিব নয়। ফকিরের উপর কোরবানী না হওয়াটার কারণ সুস্পষ্ট। আর মোসাফিরের উপর কোরবানী এজন্যই ওয়াজিন নয় যে, কোরবানী আদায় করাটা এমন কিছু সুনির্দিষ্ট বস্তুর সাথে সংশ্লিষ্ট, যা মোসাফিরের ক্ষেত্রে কষ্টকর ও দুসাধ্য। আর যেহেতু কোরবান নির্দিষ্ট তারিখে আদায় করতে হয়, নির্দিষ্ট তারিখ অতিবাহিত হওয়ার পর কোরবানী করা রহিত হয়ে যায়।
মাসআলাঃ হযরত সৈয়্যদুনা শেরে খোদা আলী মর্তুজা রাদ্বিআল্লাহু তাআলা আনহু হতে বর্ণিত আছে যে, মোসাফিরের উপর জুমার নামাজ ওয়াজিব নয় এবং কোরবানী করাও ওয়াজিব নয়। ১৬৩
➥১৬৩. নসবুর রেআয়া ২১১পৃষ্ঠা।
মাসআলাঃ যদি কেউ বন্যপ্রাণী যেমন- হরিণ অথবা নীল তথা লাল গাভী (যা জঙ্গলে থাকে) দ্বারা কোরবানী করে, তা জায়েয হবে না। হ্যাঁ যদিওবা তা পালিত হউক না কেন।
মাসআলাঃ কোরবানী করার নিয়ম হচ্ছে- কোরবানীর পশু এমন ভাবে শোয়াবে যাতে করে পশুর মুখ কেবলার দিকে হয়। অতঃপর নিম্নের দোয়াটি পাঠ করবে।
إِنِّي وَجَّهْتُ وَجْهِيَ لِلَّذِي فَطَرَ السَّمَوَاتِ وَالْأَرْضَ حَنِيفًا مُسْلِمًا وَمَا أَنَا مِنْ الْمُشْرِكِينَ إِنَّ صَلَاتِي وَنُسُكِي وَمَحْيَايَ وَمَمَاتِي لِلهِ رَبِّ الْعَالَمِينَ لَاشَرِيكَ لَهُ وَبِذَلِكَ أُمِرْتُ وَأَنَا أَوَّلُ الْمُسْلِمِينَ، اللَّهُمَّ مِنْكَ وَلَكَ .
অতপর بسم الله الله اكبر বলে ছুরি গলার উপর দিয়ে চালিয়ে যবেহ করবে। ১৬৪
➥১৬৪. ইসলামী ফিক্বহ, পৃষ্ঠা-৫২৫।
মাসআলাঃ কোরবানী করাটা একমাত্র আল্লাহর নৈকট্য লাভের উদ্দেশ্যে হওয়া আবশ্যক। অর্থাৎ সাওয়াব অর্জন এবং আল্লাহর সন্তুষ্টি হাসিল করা। কেবলমাত্র কোরবানী করাটা তো মাংস খাওয়ার উদ্দেশ্যে যেন না হয়।
আক্বীকার বর্ণনা
____________________
আক্বীকার বর্ণনা
মাসআলাঃ সন্তান জন্মের সাত দিন অথবা তার পরবর্তী যে কোন দিন সন্তানের নামে আল্লাহর ওয়াস্তে যে পশু যবেহ করা হয় তাকে আক্বীক্বাহ বলা হয়। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) আক্বীক্বাহ করার প্রতি গুরুত্বারোপ করেছেন। রাসূল (ﷺ) নিজেই হযরত হাসান ও হযরত হোসাইন রাদ্বিআল্লাহু আনহুমার আক্বীক্বাহ করেছেন। আক্বীক্বাহ দ্বারা সন্তান বলা-মুসীবত ও বিভিন্ন রকমের কষ্ট এবং রোগ-ব্যাধী থেকে মুক্ত থাকে। ১৬৫
➥১৬৫. বুখারী শরীফ, ২য় খণ্ড, পৃষ্ঠা-৮২২।
মাসআলাঃ আক্বীক্বাহ করার উত্তম নিয়ম হচ্ছে- যখন কোন ছেলে কিংবা মেয়ে জন্মগ্রহণ করবে তখন সপ্তম দিবসের মধ্যে তার নাম রাখবে এবং সপ্তম দিবসে উক্ত ছেলে-মেয়ের নামে আল্লাহর ওয়াস্তে দুই-কিংবা একটি জন্তু কোরবানী করে দেবে। আর জন্ম গ্রহণকারী ছেলে ও মেয়ের মাথার চুল ফেলে দিয়ে ঐ চুল সমপরিমাণ চান্দী কিংবা স্বর্ণ সদকা করে দেবে।
মাসআলাঃ যদি ছেলে হয় তাহলে দুইটি ছাগল কিংবা দুইটি ছাগী অথবা ভেড়া যবেহ করা। আর যদি মেয়ে হয় তাহলে একটি দিয়ে আক্বীক্বাহ করা।
মাসআলাঃ অপারগ অবস্থায় ছেলের জন্য একটি জন্তু আক্বীক্বাহ করাই যথেষ্ট। ذبح رسول الله صلى الله عليه وسلّم عن الحسن بشاة অর্থাৎ হুযুর (ﷺ) হযরত হাসান (رضي الله عنه)’র পক্ষ হতে একটি ছাগল যবেহ করে আক্বীক্বাহ করেছেন।১৬৬
➥১৬৬. তিরমিযী শরীফ, পৃষ্ঠা-১৮৩।
মাসআলাঃ আক্বীক্বার মাংস প্রত্যেকই খাওয়া জায়েয। কতেক লোকদের মধ্যে এটি প্রচলিত রয়েছে যে, নানা-নানি, দাদা-দাদী, মা-বাপ আক্বীক্বার মাংস খাওয়া নিষিদ্ধ। এটি ভুল এবং মূর্খদের কথা। তাদের এহেন ভ্রান্ত কথার উপর আমল না করা আবশ্যক। তবে উত্তম হচ্ছে-কোরবানীর মাংসের ন্যায় আক্বীক্বার মাংসকেও সকলের মধ্যে বন্টন করে খাওয়া।
মাসআলাঃ যেভাবে কোরবানীর পশু যবেহ করা হয়, ঠিক সে পদ্ধতিতে আক্বীক্বাহর পশুও যবেহ করা আবশ্যক।
মাসআলাঃ যদি কোরবানীর পশুর মধ্যে আক্বীক্বার নিয়তে অংশ তথা হিচ্ছা তা এক অংশ হউক কিংবা দুই অংশ হউক আক্বীক্বার নামে দেয়া জায়েয আছে। ১৬৭
➥১৬৭. ইসলামী ফিক্হ, ২য় খণ্ড, পৃষ্ঠা-৫২৪ ও ৫৪৭।
মাসআলাঃ আক্বীক্বাহকারী কোরবানীর জন্তুর মধ্যে শরীক হওয়া যাবে। আক্বীক্বাহ করাটা আল্লাহর নৈকট্য অর্জনের অন্যতম একটি সুরত তথা পন্থা। ১৬৮
➥১৬৮. রদ্দুল মোখতার, শামী, কানুনে শরীয়ত শাশীর উদ্ধৃত, পৃষ্ঠা-২৩৬।
মাসআলাঃ যার উপর সন্তান লালন-পালনের জিম্মাদার সেই তার আক্বীক্বাহ করা আবশ্যক।
মাসআলাঃ সন্তান ভূমিষ্ট হওয়ার পর আক্বীক্বাহ করা মুস্তাহাব। এটি কেবলমাত্র জীবিত সন্তানের ক্ষেত্রে সীমাবদ্ধ। কেননা মৃত সন্তান ভূমিষ্ট হলে তার ক্ষেত্রে আক্বীক্বাহ্ করতে হবে না। ১৬৯
➥১৬৯. ফতোয়ায়ে রহিমীয়া, ২য় খণ্ড, পৃষ্ঠা-৯৬।
যবেহ করার বর্ণনা
____________________
যবেহ করার বর্ণনা
মাসআলাঃ মাছ ব্যতীত যত প্রাণী খাওয়া যায় উহা হালাল হওয়ার জন্য যবেহ শর্ত। যবেহ দু’ধরনের, একটি হল- ইখতিয়ারী (ইচ্ছাধীন বা আয়ত্বধীন) অপরটি ইদত্বিরারী (অক্ষমতা)।
অতএব যবহে ইদত্বিবারী বলা হয়- যবেহ করার স্থানে কোন ওযরের দরুণ যবেহ করতে সক্ষম না হওয়া যেমন- কোন প্রাণী দেয়াল বা মাটির নীচে এমনভাবে নিপতিত হয়েছে যে, উহার ঘাড় ও কন্ঠনালী মাটির নীচে। অথবা কোন বন্যপ্রাণী যেগুলি মানুষ দেখলে পালায় যেমন হরিণ ইত্যাদি- তাহলে ঐ অবস্থায় প্রাণীর শরীরে কোন স্থানে আঘাত করতে পারে তাহলে উহা খাওয়া হালাল হবে।
মাসআলাঃ যবহে ইখতিয়ারী বলা হয়: যবেহ এর স্থানে যবেহ করতে সক্ষম হওয়া। সুতরাং যবেহ এর স্থান হল- চিবুকের নীচে যে হাড্ডি বাইরে বের হয়েছে, উহার নীচে। আর যা থেকে সীনা শুরু হয়েছে উহার উপরে। হিদায়া, জামিউর রুমোয এবং জামে সগীর গ্রন্থে লেখা আছে যে, সমস্ত কন্ঠনালী যবেহ এর স্থান, উপরে হোক বা নীচে হোক বা মধ্যখানে হোক।
মাসআলাঃ যবেহ করার সময় যে সমস্ত রগ কাটা জরুরী উহা চারটি রগ-
(১) হলকূম: উহা থেকে শ্বাস বের হয়।
(২) মুররী: উহা এমন একটি রগ যা পাকস্থলীর মাথা থেকে কন্ঠণালীর সাথে সংযুক্ত, এ রগ দিয়ে ঘাস ও পানি পেটে প্রবেশ করে।
(৩ ও ৪) ওয়াদজান: উহা হল দু’টি রগ যা কন্ঠনালীর দু’পাশে অবস্থিত, উক্ত রগ দিয়ে রক্ত আসা-যাওয়া করে।
মাসআলাঃ হলকূম, মুররী ও একটি ওয়াদজান রগ কাটালে প্রাণী খাওয়া হালাল হয়।
মাসআলাঃ যবেহ করার দরুণ যদি রক্ত বের না হয় এবং নাড়াচড়াও না করে কিন্তু যবেহ এর সময় এতটুকু অনুভব হয়েছে যে, উক্ত প্রাণী জীবিত তা হলে উহা খাওয়া জায়েয আছে। আর যদি যবেহ এর সময় উক্ত প্রাণী জীবিত থাকা অনুভব না হয়, তাহলে রক্ত বের হওয়া কিংবা নাড়াচড়া করা হালাল হওয়ার জন্য শর্ত। আর কতিপয় ওলামার মতে সর্বাবস্থায় রক্ত বের হওয়া শর্ত অর্থাৎ- যবেহ করার সময় উক্ত প্রাণী জীবিত থাকা অনুভব হোক বা না হোক যবেহ করার সময় কিন্তু রক্ত বের হতে হবে। ১৭০
➥১৭০. জামিউর রুমূয।
মাসআলাঃ চিবুকের নীচে যে বিত্ত বের হয়েছে উহার উপরে যবেহ করা শুদ্ধ নয়- এটা অধিকাংশ ওলামায়ে কিরামের অভিমত।
মাসআলাঃ আল্লাহ তায়ালার নামের সাথে অন্য কারো নাম যুক্ত করে যবেহ করা হারাম।
মাসআলাঃ যদি কেউ যবেহ এর সময় বিসমিল্লাহি আল্লাহু আকবর আল্লাহুম্মা তাক্বাব্বাল মিন ফুলানিন (ফুলানিন এর স্থানে) কোরবানীর ক্ষেত্রে অংশীদারগণের নাম নেয়া সুন্নাত।
যবেহ সম্পর্কিত মুস্তাহাব বিষয় সমূহের বর্ণনা
____________________
যবেহ সম্পর্কিত মুস্তাহাব বিষয় সমূহের বর্ণনা
মাসআলাঃ যবেহকারী ব্যক্তির জন্য মুস্তাহাব হল- প্রাণীকে শায়িত করার পূর্বে ছুরি ধারালো করে নেয়া। উহার দলীল হল-সাদ্দাদ বিন আউস থেকে বর্ণিত যা ইমাম মুসলিম বর্ণনা করেছেন- রাসূল (ﷺ) ইরশাদ করেন- নিশ্চয় আল্লাহ তায়ালা প্রত্যেক বস্তুর উপর ইহসান (দয়া) অর্থাৎ- উত্তম পদ্ধতিতে সম্পাদন করা ফরয করেছেন। সুতরাং যখন তোমরা হত্যা করবে তখন উত্তম পদ্ধতিতে হত্যা কর, যখন যবেহ করবে তখন উত্তম পদ্ধতিতে যবেহ কর এবং ছুরি ধারালো করে নিবে এবং যবেহকৃত প্রাণীকে শান্তি দাও।১৭১
➥১৭১. সহীহ মুসলিম, ৩য় খণ্ড, ১৫৪৮পৃষ্ঠা।
হযরত ইবনে আব্বাস (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত, যে হাদীসকে হাকীম মুসতাদরক এর মধ্যে বর্ণনা করেছেন যে, এক ব্যক্তি যবেহ করার উদ্দেশ্যে ছাগলকে শায়িত করলেন এবং ছুরিকে ধার দিতে লাগলেন, তখন রহমতে আলম (ﷺ) ইরশাদ করলেন- তুমি কি ঐ ছাগলকে কয়েকবার হত্যা করতে চাও। তুমি উহাকে শায়িত করার পূর্বে ছুরি ধার দিয়ে রাখনি কেন? ১৭২
➥১৭২. আল মুসতাদরাক, ৪র্থ খণ্ড, ২৩১পৃষ্ঠা।
মাসআলাঃ যবেহ করার জন্য মুস্তাহাব হল তার ছুরি যখন نخاع গলার হাড়ের পর্যন্ত পৌঁছে তখন জন্তু ঠান্ডা না হওয়ার পূর্বে উহার মাথা কর্তন করবে না।
মাসআলাঃ হযরত ইবনে আব্বাস (رضي الله عنه) থেকে এমন এক ব্যক্তি সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হল- যিনি প্রাণী যবেহ করেছেন এবং বিসমিল্লাহ্ বলতে ভুলে গেছেন- উত্তর দিলেন- তার যবেহকৃত প্রাণী খাওয়া যাবে এবং অগ্নিপূজক সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হল সে যবেহ করলেও বিসমিল্লাহ বলতে ভুলে গেলে উত্তর দিলেন- আহার করিওনা। ১৭৩
➥১৭৩. আল মুসতাদরাক, ৪র্থ খণ্ড, ২৩৩পৃষ্ঠা।
মাসআলাঃ হজ্ব বা ওমরা এর মুহরিম (ইহরাম সম্পন্ন ব্যক্তি) এর যবেহ ও হালাল নয় অর্থাৎ যখন সে হেরমের কোন প্রাণী শিকার করে উহা মৃত্যু হিসাবে গণ্য এবং হেরমে মুতলাক (সাধারণ) যবেহ করার ব্যাপারে হালাল ও হারাম এক বরাবর। ১৭৪
➥১৭৪. ফিকহে হানাফী, মুফতী আবদুল আজীম তিরমিযী সাহেব, ৩য় খণ্ড, ১৮২ পৃষ্ঠা।
মাসআলাঃ যবেহ সহীহ হওয়ার শর্ত সমূহঃ-(১) আল্লাহর নামে যবেহ করা। (২) যবেহকারী মুসলমান বা আহলে কিতাব হওয়া।
আল্লাহর নামে যবেহ করার দলীল হল এ আয়াত: তোমরা দাড়ানো অবস্থায় যবেহ করার সময় আল্লাহর নাম স্মরণ কর। সূরা হজ্ব, যবেহ করার সময় আল্লাহর নামে যবেহ করা শর্ত, উহার দলীল এ আয়াত শরীফঃ “যখন ওরা কাত হয়ে পড়ে।” অর্থাৎ যবেহ এর পর যখন প্রাণী পতিত হয়।১৭৫
➥১৭৫. সূরা হজ্ব, আয়াত: ৩৬।
মাসআলাঃ হযরত আবু ছা’লাবা (رضي الله عنه)কে হুজুর (ﷺ) বলেছেন- যখন তোমরা স্বীয় শিক্ষিত কুকুরের সাথে শিকার কর এবং আল্লাহর নাম নিয়ে থাক তাহলে উহা আহার কর। ১৭৬
➥১৭৬. সহীহ বুখারী, ১১৮পৃষ্ঠা।
হুযুর (ﷺ) হযরত আজর বিন হাতিম (رضي الله عنه)কে এটাও বলেছেন যে, যখন তোমরা স্বীয় প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত কুকুরকে শিকারের উপর ছেড়ে দাও এবং আল্লাহর নাম নিয়ে থাক এবং কুকুর তোমাদের জন্য বিরত থাকে (কুকুর নিজে না খায়) উহা আহার কর। ১৭৭
➥১৭৭. সহীহ বুখারী, ১১৮৬পৃষ্ঠা।
যবেহের সময় ইচ্ছাকৃতভাবে আল্লাহর নাম বাদ দেয়ার বর্ণনা
____________________
যবেহের সময় ইচ্ছাকৃতভাবে আল্লাহর নাম বাদ দেয়ার বর্ণনা
মাসআলাঃ যদি ইচ্ছাকৃত ভাবে আল্লাহর নাম বাদ দেয় তাহলে উহা আহার করা হালাল হবেনা। উহার দলীল আল্লাহর এ বাণীঃ যে প্রাণী যবেহ করার সময় আল্লাহ্ তায়ালার নাম নেয়া হয়নি উহা আহার করিওনা। উহা পাপ। ১৭৮
➥১৭৮. সূরা আনয়াম, আয়াত-১১২।
এ ব্যাপারে প্রথম শতাব্দী থেকে কোন মতবিরোধ বর্ণিত নেই। হ্যাঁ অবশ্য ভুলক্রমে আল্লাহর নাম বাদ দেয়ার ব্যাপারে মতবিরোধ রয়েছে। হযরত আবদুল্লাহ বিন ওমর (رضي الله عنه) এর মাযহাব হল- উহা খাওয়া হারাম। হযরত আলী মরতুজা ও ইবনে আব্বাস (رضي الله عنه) থেকে উহা হালাল হওয়া বর্ণিত আছে। ইমাম আবু ইউসুফ ও অন্যান্য মাশায়েখ (رحمة الله) বলেছেন, ইচ্ছাকৃত ভাবে আল্লাহর নাম বাদ দেয়ার ব্যাপারে তো ইজতিহাদের সুযোগ নেই। যদি কাজীও উহা বিক্রয় করা জায়েয হওয়ার সিদ্ধান্ত দেন তাহলেও তা আমল করা যাবেনা। কেননা এটা ইজমা এর পরিপন্থী, এ জন্য যে, উহা মৃত, উহা যবেহ করার সময় ইচ্ছাকৃত ভাবে আল্লাহর নাম নেয়া হয়নি। অবশ্য আমাদের হানাফী আলেম গণের মতে ভুলক্রমে আল্লাহর নাম বাদ পড়লে- যবেহকৃত প্রাণী হালাল হবে। কেননা উহাকে হারাম আখ্যায়িত করলে বড় ধরণের অসুবিধা আবশ্যক হয়ে পড়ে, অসুবিধা সম্পন্ন বস্তুকে দূর করতে হবে।
ভুলে যাওয়ার ক্ষেত্রে কলমকে উঠিয়ে নেয়া হয়েছে, যেমন শরীয়ত প্রবর্তক (ﷺ) ইরশাদ করেন- আমার উম্মত থেকে ভুলক্রমে ও ভুলে যাওয়া ও ঐ সমস্ত কাজ যে কাজে তাকে বাধ্য করা হয়েছে- এ সমস্ত ব্যাপারে কলম উঠিয়ে নেয়া হয়েছে। ১৭৯
➥১৭৯. জামিউল আহাদিস, ৪র্থ খণ্ড, ২৩৩ পৃষ্ঠা।
এতে বুঝা গেল যে, ভুল করে যিনি যবেহ করার সময় আল্লাহর নাম উল্লেখ করেনি তিনি কোন ফরয বাদ দেননি তবে ইচ্ছাকৃত ভাবে আল্লাহর নাম উল্লেখ না করা এর বিপরীত।
হযরত আয়েশা সিদ্দীকা (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত আছে যে, একটি সম্প্রদায় হুজুর (ﷺ) এর নিকট আরজ করলেন- কিছু লোক আমাদের নিকট গোস্ত নিয়ে আসেন, আমরা জানিনা তারা উহা যবেহ করার সময় আল্লাহর নাম নিয়েছেন, নাকি নেন নি? এ অবস্থায় আমরা কি করব? হুজুর (ﷺ) ইরশাদ করেন- তোমরা বিসমিল্লাহ্ পাঠ করে খেয়ে নাও। ১৮০
➥১৮০. সহীহ বুখারী, ১১৯১পৃষ্ঠা।
মাসআলাঃ যবেহ ইখতিয়ারী (আয়াত্ত্বধীন যবেহ) এর মধ্যে প্রাণী যবেহ করার সময় আল্লাহর নামে যবেহ করা শর্ত, তাই যদি কেউ ছাগলকে যমীনে শায়িত করে এবং উহার উপর বিসমিল্লাহ্ পাঠ করে অতপর তার অন্য কাজ এসে যাওয়ার দরুণ উহাকে যবেহ করল না অতপর অপর একটি ছাগলকে উক্ত বিসমিল্লাহ্ এর ভিত্তিতে যবেহ করল তাহলে উহা খাওয়া জায়েয নয়, আর যদি ছাগলকে নিচে শায়িত করলেন এবং বিসমিল্লাহ্ পাঠ করে এবং এক ছুরি দিয়ে জখমী করলেন এবং অপর একটি ছুরি দিয়ে যবেহ করলেন, তাহলে উহা খাওয়া হালাল হবে কেননা এ বিসমিল্লাহ্ প্রাণীর উপর হয়েছে। আর শিকারের ক্ষেত্রে বিসমিল্লাহ্ শিকারী জন্তু ছেড়ে দেয়ার সময় ও তীর চালানোর সময় বলা শর্ত। অতএব, যদি কেউ শিকারকে তীর নিক্ষেপ করল এবং সে বিসমিল্লাহ্ও পাঠ করল এবং ঐ তীর অন্য আরেকটি প্রাণীকে জখমী করে তাহলে ঐ শিকার হালাল হবে। আর যদি একটি তীর নিক্ষেপের সময় বিসমিল্লাহ্ পাঠ করে অতপর অপর একটি তীর শিকারের দিকে নিক্ষেপ করে তাহলে উহা খাওয়া যাবেনা। আর যদি স্বীয় প্রশিক্ষিত কুকুরকে ছাড়ার সময় বিসমিল্লাহ্ পাঠ করে অতপর অপর একটি কুকুর ছেড়ে দেয় এবং সে কুকুরটি শিকার নিয়ে আসে তাহলে উক্ত শিকার হালাল হবে না। কেননা শিকারের ক্ষেত্রে বিসমিল্লাহ্ তীর নিক্ষেপের সময় শর্ত। অতএব যদি যবেহ করার সময় আল্লাহর নিকট দোয়া করে তাহলে উহা খাওয়া হালাল হবে না।
মাসআলাঃ যবেহকারী মুসলমান বা আহলে কিতাব হওয়া। উহার দলীল হল এ আহলে কিতাবের যবেহকৃত প্রাণী খাওয়া তোমাদের জন্য হালাল। (সূরা মায়িদা) যাদেরকে কিতাব দেয়া হয়েছে তাদের খাবার তোমাদের জন্য হালাল।
মাসআলাঃ জন্তুর মধ্যে সাতটি জিনিষ হারাম-
(১) প্রবাহিত রক্ত অর্থাৎ যবেহ করার সময় যে রক্ত তীব্র বেগে বের হয়।
(২) পেশাবের নালী
(৩) উভয় অন্ডকোষ
(৪) পায়খানার জায়গা
(৫) শরীরের ঘাঁট
(৬) পেশাবের থলি
(৭) পিত্ত। (হিদায়া) আর কান্য গ্রন্থে মজ্জাকে হারাম লেখেছেন।
মাসআলাঃ সোনা, রূপা ও পিতল (তামা) যদি ধারলো হয় তাহলে উহা দ্বারা যবেহ করলে হালাল হয়। অনুরূপভাবে পাথর দিয়ে যবেহ করলে হালাল হয়ে যাবে এবং ধারালো লাকড়ী দিয়ে যবেহ করলেও হালাল হয়।
মাসআলাঃ যদি কোন জন্তু পানিতে পতিত হয় এবং দ্রুত উহাকে ধরতে সক্ষম না হয় এবং মরে যাওয়ার ভয় থাকে তাহলে উহাকে আঘাত করলে খাওয়া হালাল হয়।
মাসআলাঃ যে জন্তু মানুষকে মারতে আসছে, এবং উহাকে পাকড়াও করা সম্ভব না হয় তাহলে ধারালো হাতিয়ার এর উপর বিসমিল্লাহ্ বলে উহাকে মেরে আঘাত করলে খাওয়া হালাল হয়।
মাসআলাঃ উটের ক্ষেত্রে নাহর অর্থাৎ- নেজা (বর্শা) ইত্যাদি মেরে রগ সমূহ কাটা মুস্তাহাব। আর যবেহ করা মাকরূহ এবং গাভী, ষাড় ও ছাগলকে যবেহ করা মুস্তাহাব। আর নাহর মাকরূহ।
মাসআলাঃ জন্তুকে যবেহ করার পর উহার পেট থেকে মৃত বাচ্চা বের হল তাহলে ইমাম আযম আবু হানীফা, যুফর ও হাসান বিন যিয়াদ এর মতে উক্ত বাচ্চা খাওয়া জায়েয হবেনা। উহার উপরই ফতওয়া, হিদায়া ইত্যাদি।
মাসআলাঃ যবেহ করার সময় যদি মাথা কেটে পৃথক হয়ে যায় তাহলে উক্ত মাথা যবেহকৃত প্রাণী খাওয়া হালাল হবে। ইহা হিদায়া গ্রন্থে সারমর্ম। (আল্লাহ্ তায়ালা অধিক জ্ঞাত সঠিক সম্পর্কে)
মাসআলাঃ যদি কোন ব্যক্তি জন্তুকে শায়িত করে বিছমিল্লাহ্ বলার পূর্বে “আল্লাহুম্মা তাক্বাব্বাল মিন ফুলানিন” (হে আল্লাহ্! আপনি অমুক ব্যক্তির পক্ষ থেকে কবুল করুন)। বা অন্য কোন দোয়া পাঠ করার পর বিছমিল্লাহ্ বলে যবেহ করে তাহলে যবেহকৃত প্রাণী হালাল হবে।
মাসআলাঃ নাখাহ্ মাকরূহে তাহরীমী। আর নাখাহ্ জন্তুর ঘাড়ের হাড়ের মধ্যে সাদা রগ রয়েছে, উহা কেটে দেয়াকে নাখাহ্ বলে। আর যবেহ করার সময় মাথাকে টেনে ধরা যাতে যবেহ এর স্থান ভালভাবে প্রকাশ পায়।
যে ধরণের প্রাণী খাওয়া জায়েয আর না-জায়েয
____________________
যে ধরণের প্রাণী খাওয়া জায়েয আর না-জায়েয
মাসআলাঃ কুকুর ও ছাগলের মিলনের ফলে ছাগলের পেট থেকে বাচ্চা এরূপ হলে বাচ্চার মাথা কুকুরের আকৃতি আর সমস্ত অঙ্গ ছাগলের আকৃতির ন্যায় হয় তাহলে এমতাবস্থায় বাচ্চার সামনে ঘাস ও গোস্ত রেখে দিতে হবে। অতএব যদি বাচ্চা গোস্ত খায় তা হলে উক্ত বাচ্চা খাওয়া জায়েয হবেনা। আর যদি উক্ত বাচ্চা ঘাস খায় তাহলে উক্ত বাচ্চাকে যবেহ করে মাথা ফেলে দিতে হবে এবং অবশিষ্ট অঙ্গসমূহ খাওয়া জায়েয আছে। আর যদি গোস্ত ও ঘাস উভয়টি খায় তাহলে উক্ত বাচ্চা খাওয়া জায়েয নেই। তবে যদি ছাগলের আওয়াজের ন্যায় আওয়াজ করে তাহলে মাথা ফেলে দিয়ে অবশিষ্ট অঙ্গসমূহ খাওয়া জায়েয আছে। আর যদি কুকুর ও ছাগল উভয়ের আওয়াজের ন্যায় আওয়াজ দেয় তাহলে দেখতে হবে পেটের মধ্যে শুধু আতঁড়ী বা পাকস্থলী, যদি শুধু আতঁড়ী হয় তাহলে উহা খাওয়া জায়েয হবেনা। আর যদি পাকস্থলী হয় তাহলে উহার মাথা ফেলে দিয়ে অবশিষ্ট অঙ্গসমূহ খাওয়া জায়েয আছে। ১৮১
➥১৮১. ফতোয়ায়ে কাযীখান।
মাসআলাঃ হরিণ খাওয়া জায়েয আছে। ১৮২
➥১৮২. সিরাজুল ওয়াহ্হাজ।
মাসআলাঃ বুলবুলি ও লাল এবং মেটে রঙ্গের পাখি খাওয়া জায়েয আছে। ১৮৩
➥১৮৩. হায়াতুল হায়ওয়ান, আলমগীরী।
মাসআলাঃ তোতা পাখি খাওয়া জায়েয নেই।
মাসআলাঃ হিংস্র প্রাণী অর্থাৎ বাজ পাখি, উহা খাওয়া হারাম। ১৮৪
➥১৮৪. ফতওয়ায়ে তাতারখানিয়া।
মাসআলাঃ হুদহুদ পাখি খাওয়া জায়েয আছে। ইহা আলমগীরীতে উল্লেখ আছে। কিন্তু বায্যাযিয়া গ্রন্থে উহাকে মাকরূহ লিখেছেন।
মাসআলাঃ বাদুড় খাওয়া জায়েয নেই। ১৮৫
➥১৮৫. খোলাসা, তাতারখানিয়া।
মাসআলাঃ পিঁপড়া খাওয়া জায়েয নেই। ১৮৬
➥১৮৬. বাহর্রুরায়িক।
মাসআলাঃ উট পাখি খাওয়া হালাল। ১৮৭
➥১৮৭. জামেউর রুমূয।
মাসআলাঃ যত প্রকারের পোকা রয়েছে সবই হারাম। কেননা পোকা নাপাক। আর প্রত্যেক নাপাক হারাম।
মাসআলাঃ ঘুন (যে পোকা কাঠ কেটে দেয়) যাকে বাংলা ভাষায় সামদক বলে উহা খাওয়া হারাম।
জানাযার বর্ণনা
____________________
জানাযার বর্ণনা
মাসআলাঃ মহল্লার ইমাম জানাযার নামায পড়ানোর ক্ষেত্রে মৃত ব্যক্তির সন্তান বা নিকটআত্মীয় ও অভিভাবক থেকে অগ্রগামী। যদি মহল্লার ইমাম নেক্কার ও পরহেজগার হয় এবং মৃত ব্যক্তি জীবত অবস্থায় তার পিছনে নামাযের ইকতিদা করাকে পছন্দ করে থাকে তাহলে জানাযার নামায পড়ানোর জন্য অভিভাবক থেকে অগ্রবর্তী হবে, তাকে রসমী অনুমতি নেয়ার প্রয়োজন নেই, নতুবা ওয়ালি (অভিভাবক) হক্বদার, তিনি নিজে পড়াবেন কিংবা অন্য কোন ব্যক্তি দিয়ে পড়াবেন।
ফতওয়ায়ে শামীতে উল্লেখ রয়েছে- মহল্লার মসজিদের নির্ধারিত ইমামই জানাযা পড়ানোর জন্য সর্বোত্তম, কেননা মৃত ব্যক্তি জীবিত থাকা অবস্থায় তার পিছনে নামায পড়তে রাজি ছিল, অতএব তিনি তার ওফাতের পর তার জানাযার নামায পড়ানো উচিত হবে। ১৮৮
➥১৮৮. ফতওয়ায়ে শামী, খণ্ড-১ম, পৃষ্ঠা-৫৯০।
মাসআলাঃ মৃত্যুর সময় বা জান বের হওয়ার সময় যদি কোন ব্যক্তি আপন গুনাহ সমূহ থেকে তাওবা করে তা গ্রহণযোগ্য হবে কি-না এ ক্ষেত্রে বলা যায়- নিঃসন্দেহে গুনাহ সমূহের তাওবা গ্রহণযোগ্য কিন্তু কুফরীর তাওবা গ্রহণযোগ্য নয়। ঐ সময়ে কাফির মুসলমান হতে পারে না।১৮৯
➥১৮৯. শামী, বাবুল জানায়িজ, পৃষ্ঠা-১৯৯।
মাসআলাঃ মৃত ব্যক্তির কান, নাক, মুখ ইত্যাদি ছিদ্র সমূহে রুই রাখা কোন অসুবিধা নেই, তবে পায়খানা ও পেশাবের স্থানে রাখবে না। ১৯০
➥১৯০. ফতোয়ায়ে শামী।
মাসআলাঃ কবরস্থানের লাকড়ী ও ঘাস শুকনা হলে তা কাটা কোন অসুবিধা নেই তবে সবুজ অর্থাৎ তাজা লাকড়ী ও ঘাস কাটা মাকরূহ। ১৯১
➥১৯১. আলমগীরী।
মাসআলাঃ জানাযার নামাযে রুকন দুইটি- প্রথমটি হল- চার তাকবীর যা চার রাকাতের স্থলাভিষিক্ত আর দ্বিতীয়টি হল- দাঁড়ানো। যদি কেউ ওজর ব্যতীত জানাযার নামায বসে পড়ে তা শুদ্ধ হবে না। ১৯২
➥১৯২. শামী ইত্যাদি, দুররে মুখতার এর বরাতে।
মাসআলাঃ জানাযার মধ্যে ওয়াজিব হচ্ছে- মৃত ব্যক্তির জন্য দোয়া করা। ১৯৩
➥১৯৩. রুকনে দ্বীন, পৃষ্ঠা-২০৮, দুররে মুখতার এর বরাতে।
মাসআলাঃ জানাযার নামাযে সুন্নাত হচ্ছে- ছানা ও দরূদ শরীফ পাঠ করা। ১৯৪
➥১৯৪. রুকনে দ্বীন, পৃষ্ঠা-২০৮, দুররে মুখতার এর বরাতে, শামী।
মাসআলাঃ জানাযার নামায তখনই পড়তে হয়, যখন জানাযা উপস্থিত হয়ে যাবে। ১৯৫
➥১৯৫. ত্বাহত্বাবী।
মাসআলাঃ জানাযার নামাযের শর্তসমূহ হচ্ছে- প্রথমত: ঐ সমস্ত শর্ত যা অন্যান্য নামাযে রয়েছে, অর্থাৎ- মুসলমান হওয়া, হাক্বীক্বী ও হুকমী নাপাক থেকে পবিত্র হওয়া, সতর ঢাকা, কিবলামুখী হওয়া, নিয়ত করা কিন্তু নির্দিষ্ট শর্ত সমূহ যা এ নামাযের সাথে নির্ধারিত তা হল এ ময়্যিত (মৃত ব্যক্তি) সামনে বিদ্যমান হওয়া- ময়্যিত জমিনের উপর হওয়া। যদি জানাযা অনুপস্থিত হয় বা বাহনের উপর হয় বা হাতের উপর বা নিচে হয় তাহলে নামায শুদ্ধ হবে না।১৯৬
➥১৯৬. রুকনে দ্বীন, পৃষ্ঠা-২০৮, দুররে মুখতার এর বরাতে, আলমগীরী।
মাসআলাঃ অন্যান্য নামায সমূহের যা নামায ভঙ্গকারী বিষয় তা জানাযার নামাযের ও ভঙ্গকারী বিষয় মহিলা পুরুষের সাথে এক বরাবর দাঁড়ানো ব্যতীত, জানাযার নামাযে মহিলার সাথে এক বরাবর দাঁড়ানো শুদ্ধ আছে।১৯৭
➥১৯৭. রুকনে দ্বীন, আলমগীরী এর বরাতে।
মাসআলাঃ জানাযার নামায হচ্ছে- ফরযে কিফায়া এবং এটি জামাতে পড়াও শর্ত নয়। এমনকি একজন মানুষ পড়লেও ফরয জিম্মা থেকে বিলুপ্ত হয়ে যাবে। ১৯৮
➥১৯৮. আলমগীরী এর বরাতে।
মাসআলাঃ কবরস্থানে জানাযা জমিনে রাখার পূর্বে মানুষ বসে যাওয়া মাকরূহ, রাখার পর জায়েয আছে। আর উত্তম হল- যতক্ষণ পর্যন্ত উহার উপর মাটি ঢালবেনা ততক্ষণ পর্যন্ত বসবেনা। ১৯৯
➥১৯৯. আলমগীরী।
মাসআলাঃ যদি কোন ব্যক্তি থেকে জানাযার তাকবীর ছুটে বা চলে যাচ্ছে ঐ সময় ইমাম এক তাকবীর বলে ফেলেছে এমতাবস্থায় এ ব্যক্তি যদি পূর্ব থেকেই তাহরীমার সময় উপস্থিত ছিল এবং সে কোন কারণে তাকবীরে তাহরীমাতে শরীক হয়নি তাহলে সে দ্বিতীয় তাকবীরের অপেক্ষা না করে জামাতে শরীক হয়ে যাবেন।
মাসআলাঃ ইমাম যদি দ্বিতীয় বা তৃতীয় তাকবীরের পরে ভুলক্রমে সালাম ফিরিয়ে দেন তাহলে কিছুই করবে না, এভাবে পড়তে থাকবে এ সালামটি এরূপ যে, কেউ নামাযের বৈঠকের মধ্যখানে ভুলক্রমে সালাম ফিরিয়ে দিলেন। ২০০
➥২০০. আলমগীরী।
মাসআলাঃ অধিকাংশ লোক জানাযার মধ্যে জুতা খুলে না, এ ক্ষেত্রে যদি ঐ সমস্ত লোকদের আপন জুতা সমূহের ব্যাপারে পবিত্র হওয়ার দৃঢ় বিশ্বাস থাকে তাহলে অসুবিধা নেই। নতুবা জুতা খুলে পড়তে হবে। ২০১
➥২০১. রুকনে দ্বীন, পৃষ্ঠা-২১০, বাবুল জানায়িয।
মাসআলাঃ লাশ দাফন হওয়ার পর ওয়াসিতের উপর আমল করার উদ্দেশ্যে কবর খুলা কখনোও জায়েয নয়। যেমন- কোন ময়্যতকে গোসল ও নামায ব্যতীত দাফন করা হয়েছে তাহলে কবর খনন করা জায়েয নেই।
যেমন- যদি গোসল বা নামায ব্যতীত দাফন করা হয় বা ডান পাশে না রেখে অন্য পাশে রাখে বা কিবলা ব্যতীত অন্য দিকে রাখে তাহলে মাটি দেয়ার পর কবর খনন করা যাবেনা। ২০২
➥২০২. শামী, ১ম খণ্ড, পৃষ্ঠা-৮২।
মাসআলাঃ তাকবীর সমূহ শেষ হওয়ার পর সালামের পূর্বে হাত ছেড়ে দিবে। চতুর্থ তাকবীরের পর কোন উদ্দেশ্য অবশিষ্ট নেই কেননা চতুর্থ তাকবীরের পর আর কোন সুন্নাত যিকির অবশিষ্ট থাকে না তাই সহীহ হল উভয় হাত ছেড়ে দিবে অতঃপর ডানে ও বামে দুইটি সালাম ফিরাবে।২০৩
➥২০৩. ফতওয়ায়ে শামী, ১ম খণ্ড, পৃষ্ঠা-২০০।
মাসআলাঃ জানাযার ব্যাপারে অন্যান্য মসজিদ সমূহকে মসজিদুল হারাম ও মসজিদে নববীর উপর কিয়াস করা যাবেনা। সম্মানিত ফকীহগণ (আল্লাহ তায়ালা তাদের মর্যাদা ও সম্মানকে বৃদ্ধি করুক) বলেছেন। অতএব মসজিদুল হারাম, তা অন্যান্য মসজিদের হুকুম থেকে ভিন্ন যেমন ইবনে জিয়া বিস্তারিত বর্ণনা করেছেন। কেননা উহা ফরয নামায সমূহ, জুমা, উভয় ঈদ, সূর্যগ্রহণ, চন্দ্র গ্রহণ, জানাযার নামায ইত্যাদির জন্য বানানো হয়েছে। ২০৪
➥২০৪. শরহে নিক্বায়া, ১ম খণ্ড, পৃষ্ঠা-১৩৭, খাইরুল ফতোওয়া, ৩য় খণ্ড, পৃষ্ঠা-২৮৫।
মাসআলাঃ মৃত ব্যক্তিকে গোসল দেয়ার পর নিজে গোসল করে নেয়া মুস্তাহাব। মারাকিউল ফালাহ গ্রন্থে উল্লেখ রয়েছে: হাজামাত- ক্ষোরকর্ম বা সিঙ্গার সাহায্যে দূষিত রক্ত নির্গত করা ও মৃত ব্যক্তিকে গোসল দেয়ার পর গোসল করা মুস্তাহাব হবে, উভয় ক্ষেত্রে গোসল আবশ্যক হওয়ার মতবিরোধ থেকে রেহাই পাওয়ার বা বেঁচে থাকার উদ্দেশ্যে।
মাসআলাঃ হুযূর (ﷺ) নাজ্জাশী বাদশহের গায়েবানা জানাযার নামায পড়ানো এটি হুযূর (ﷺ)-এর একটি বিশেষত্ব। অন্যের ক্ষেত্রে এমন করা জায়েয নয়। ২০৫
➥২০৫. দুররে মুখতার, শামী।
মাসআলাঃ মায়ের জানাযার নামায পড়ানোর ক্ষেত্রে ছেলে ওলী। তবে ছেলের জন্য তার পিতাকে নিজের উপর প্রাধান্য দেয়া উচিত। কেননা পিতা যদি ইমাম হওয়ার যোগ্য হন, তবে পিতার উপস্থিতিতে পুত্রের প্রাধান্য পাওয়া মাকরূহ। ২০৬
➥২০৬. ফতোয়ায়ে আলমগীরী।
মাসআলাঃ যে ব্যক্তি মৃত ব্যক্তিকে গোসল করাবে তার জন্য গোসল করা আর যে ব্যক্তি তাকে বহন করবে তার জন্য উযু করা মুস্তাহাব। বসরি বিনতে সাফওয়ান (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত, পাঁচ সহীহ গ্রন্থে উহা বর্ণনা করেছেন, তিরমিযী উহা সহী বলেছেন এবং ইবনে আব্বাস ইমাম বুখারী বলেন- এ অধ্যায়ে এটাই সবচেয়ে সহীহ হাদীস।
মাসআলাঃ দাফনের পর মৃত ব্যক্তির চেহারা দেখা জায়েয আছে।
মাসআলাঃ মৃত্যুর পূর্বে নিজের জন্য সিন্ধুক বানানো মাকরূহ। ২০৭
➥২০৭. ফতোয়ায়ে ক্বেনিয়া।
হযরত আবু বকর সিদ্দীক (رضي الله عنه) নিজের জন্য কবর খনন করতে নিষেধ করেছেন।
মাসআলাঃ যদি পুরুষ, মহিলা ও হিজড়ার জানাযার নামায একত্রে পড়ানোর প্রয়োজন হয় তাহলে এমতাবস্থায় সবার আগে পুরুষের লাশ রাখতে হবে, তার পিছনে হিজড়ার লাশ, তার পিছনে মহিলার লাশ রাখতে হবে। আর যদি পুরুষ ও হিজড়াকে কোন ওজর বশত এক কবরে দাফন করতে হয় তাহলে হিজড়াকে পুরুষের পিছনে রাখতে হবে এবং উভয়ের মধ্যখানে মাটি দ্বারা আলাদা রাখবে।
মাসআলাঃ আর যদি হিজড়া ও মহিলাকে একই কবরে দাফন করতে হয় তাহলে মহিলাকে হিজড়ার পিছনে রাখবে।
মাসআলাঃ হিজড়ার কবরকে দাফনের সময় কাপড় দিয়ে পর্দা করা মুস্তাহাব। ২০৮
➥২০৮. হিদায়া, জামিউর রুমুয, দুররে মুখতার ইত্যাদি, খুলাসাতুল মাসায়িল, পৃষ্ঠা-১৪০।
মাসআলাঃ ছেলে কিংবা মেয়ে জীবিত অবস্থায় ভূমিষ্ঠ হওয়ার পর মৃত্যুবরণ করলে, তার জানাযার নামায পড়া আবশ্যক। তার নাম রাখতে হবে।
মাসআলাঃ কবরস্থানে হাত উঠিয়ে দোয়া করাতে কোন খারাবী নাই, বরং মৃতের মাগফিরাতের জন্য হাত উঠিয়ে দোয়া করা উত্তম ও ভাল কাজ। হুযূর মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ (ﷺ) থেকে কবরস্থানে হাত উঠিয়ে দোয়া করার প্রমাণ রয়েছে। অর্থাৎ রাসূল (ﷺ) কবরস্থানে কবরবাসীর মাগফিরাতের জন্য হাত উঠিয়ে দোয়া করেছেন।
মুসলিম শরীফের ৩১৩ পৃষ্ঠার মধ্যে বর্ণিত রয়েছে,
حَتَّى جَاءَ الْبَقِيعَ فَقَامَ فَأَطَالَ الْقِيَامَ ثُمَّ رَفَعَ يَدَيْهِ ثَلَاثَ مَرَّاتٍ .
মাসআলাঃ জানাযার নামাযে ছানা পাঠের পর সূরা ফাতেহা শরীফ পাঠ করার কথাও কোন কোন সাহাবীর নিকট হতে প্রমাণিত রয়েছে। কাজেই দোয়ার নিয়তে ছানার পর সূরা ফাতেহা শরীফ পাঠ করাতে অসুবিধা কিছু নাই। ২০৯
➥২০৯. আইনী, শরহে বুখারী ও হযরত শাহ ওয়ালী উল্লাহ মুহাদ্দিস দেহলভী (রহ.) হতেও বর্ণিত রয়েছে।
মাসআলাঃ জানাযার নামায মসজিদের ভিতর কিংবা কবর সামনে রেখে আদায় করা মাকরূহ। মসজিদের ভিতরে জানাযার নামায আদায় করা এ জন্য মাকরূহ- যেহেতু মসজিদ হচ্ছে জীবিতদের নামায আদায় করার স্থান। আর কবরকে সামনে রেখে জানাযার নামায আদায় করা এ জন্যই নিষেধ, যাতে সাধারণ লোকদের অন্তরে কবরের উচ্চ মর্যাদা ও তা‘জীমের খেয়াল সৃষ্টি না হয়। কেননা এটি জাহেলী যুগের রসম ও প্রথা। যা মুসলমানদের মধ্যে আসার সম্ভাবনা রয়েছে।
فقط والله ورسوله اعلم
মাসআলাঃ মৃতকে দাফন করার পর কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে মৃতের জন্য দোয়া করা সুন্নাত।
মাসআলাঃ কবরস্থানে অহেতুক কথা-বার্তা এবং দুনিয়াবী গল্প-গুজব না করে বরং মৃত্যুর কথা স্মরণ করা বাঞ্চনীয়।
মাসআলাঃ জানাযার সাথে অর্থাৎ জানাযা নিয়ে যাওয়ার সময় মহিলা সাথে যাওয়া মাকরূহে তাহরীমি।
মাসআলাঃ জানাযা নামাযে বিলম্ব করা যাতে লোক সমাগম বেশী হয়, এরকম করা মাকরূহ। ২১০
➥২১০. শরহে তানভীর, ১ম খণ্ড, পৃষ্ঠা-১২৪।
وكره تاخير صلوته ودفنه ليصل عليه جمع عظيم بعد صلوة الجمعة .
মাসআলাঃ জানাযার আগে আগে গাড়ী ও কিংবা অন্য কোন বাহনের উপর আরোহন হয়ে চলা মাকরূহ।
মাসআলাঃ কবর বেশী উঁচু না করা আবশ্যক। বরং উঠের পিঠের ন্যায় করতে হবে।
মাসআলাঃ যদি একই সময়ে একই স্থানে কয়েকটি জানাযা হয় এমতাবস্থায় প্রত্যেক জানাযার জন্য আলাদা আলাদা জানাযার নামায পড়া আবশ্যক। আর যদি একই সাথে পড়ে তাও জায়েয আছে। ২১১
➥২১১. নুরুল ইযাহ, পৃঃ ৩৫।
নুরুল ইযাহ কিতাবে বর্ণিত রয়েছে-
اذا اجتمعت الجنائزة فالا فراد لكل منها اولى .
মাসআলাঃ জানাযার নামাযে ইমাম কিংবা মুক্তাদী ভুলবশতঃ তাকবীর বলার সময় হাত উত্তোলন করলে নামায হয়ে যাবে। দ্বিতীয়বার তথা পুনরায় নামায পড়া আবশ্যক নয়।
মাসআলাঃ যদি কোন ব্যক্তি সাগরের মধ্যে পানির জাহাজে মৃত্যুবরণ করে এবং শুকনা জমিন তথা স্থল ঐখান থেকে এমন দূরে হয় যে- ঐখানে লাশ পৌঁছাতে হলে লাশ খারাব ও নষ্ট হয়ে যাওয়ার সন্দেহ হয়, এমতাবস্থায় মৃতকে গোসল ও কাফন দিয়ে জানাযার নামায আদায় করে জানাযার সাথে ভারী বস্তু তথা মাটি ও পাথর বেধে সাগরের মধ্যে ফেলে দিবে।
মাসআলাঃ মৃতকে দাফন তথা কবরাস্থ করার পর পুনরায় কবর খনন করে মৃতকে বের করা জায়েয নাই। হ্যাঁ তবে কোন কারণ বশতঃ অবস্থার পরিপেক্ষিতে করা যাবে।
মাসআলাঃ মৃতকে যেখানে ইন্তেকাল হয়েছে সেখানে দাফন করা আবশ্যক। কিন্তু তার বাড়ী কিংবা আত্মীয়-স্বজন অতীব নিকটবর্তী, এক মাইল বা দুই মাইলের মধ্যে হলে ঐখানে নিয়ে যেতে পারবে। বেশী দূরে হলে নিয়ে যাওয়া জায়েয নাই। অর্থাৎ কোন ব্যক্তি বিদেশে কিংবা অন্য কোন দূরবর্তী স্থানে কর্মরত অবস্থায় মারা গেলে তাকে নিজ এলাকায় আনার সুযোগ থাকলে নিয়ে আসবে। অন্যথায় ঐখানে দাফন করবে।
মাসআলাঃ জীবিত অবস্থায় কাফন তথা কাফনের কাপড় তৈরী করে রাখা জায়েয। তবে কবর তৈরী করে রাখা মাকরূহ। এ জন্যই মাকরূহ যে- সে জানেনা তার মৃত্যু কোন জায়গায় হয়।
মাসআলাঃ আসর নামাযের পর সূর্য্য যতক্ষণ পর্যন্ত পরিপূর্ণভাবে লাল বর্ণ হয়ে না যাবে ততক্ষণ পর্যন্ত জানাযার নামায পড়া যাবে।
মাসআলাঃ কোন ব্যক্তি জানাযার নামাযে এমন সময়ে শরীক হয়েছে, যখন প্রথম তাকবীর হয়ে গেছে অর্থাৎ প্রথম তাকবীরের পর শরীক হয়েছে, এমতাবস্থায় নামায শেষ হওয়ার পর সালাম ফেরার পূর্বে ছুটে যাওয়া তাকবীর বলে তারপর সালাম ফেরাবে। তবে কোন দোয়া পাঠ করা আবশ্যক নয়। এজন্য যে তাকবীর বলা ফরয আর দোয়া পড়া সুন্নাত।
মাসআলাঃ প্রকাশ থাকে যে- জানাযার নামাযের ইমামতির হকদার হচ্ছে সর্বপ্রথম হুকুমতের বাদশাহ, এরপর কাযী তথা বাদশাহর প্রতিনিধি, অতঃপর জামে মসজিদের ইমাম, তারপর মহল্লা মসজিদের ইমাম, সর্বশেষ অলী তথা মৃত্যের ওয়ারিশ। ২১২
➥২১২. নুরুল ইযাহ।
السلطان حق لصلوته ثم القاضى ثم امام الحى ثم الولى .
মাসআলাঃ মুসলমান নারী-পুরুষ মারা যাওয়ার পর তার আলোচনা খারাপ তথা মন্দ ও দোষনীয় বাক্য দ্বারা যেন করা না হয়। যদিওবা তার চরিত্রে দোষণীয় কিছু থেকেই থাকে তবে তার সম্পর্কে ভাল-মন্দ কোনো কিছুই না বলা বাঞ্চনীয়। কেননা হাদিস শরীফে রাসূলে করিম (ﷺ) ইরশাদ ফরমায়েছেন- তোমরা মৃতদের ভাল ও উত্তম গুণের দিকটি আলোচনা কর। খারাপ তথা মন্দের দিক আলোচনা কর না।
মাসআলাঃ যে ঘরের লোক মৃত্যুবরণ করেছে ঐ ঘরের লোকজন ও বাসিন্দা সে ঘরে থাকা আবশ্যক। বরং এটি সুন্নাত।
মাসআলাঃ মৃতের জন্য তিন দিনের বেশী শোক পালন করা এবং শোক পালনের উদ্দেশ্যে যাওয়া মাকরূহ।
মাসআলাঃ কতক মহিলাদের মধ্যে এহেন অভ্যাস রয়েছে যে, মৃতের ঘরে তিন দিন পর্যন্ত চুলা জ্বালানো যাবে না। এটি ভুল ও খারাপ ধারণা। বরং তা জাহেলী তথা অজ্ঞদের খেয়াল। এহেন খেয়াল পোষণ করতঃ তিন দিন পর্যন্ত চুলায় আগুন না জ্বালানো গুনাহ।
মাসআলাঃ জানাযার নামায চার তাকবীর। আর প্রত্যেক তাকবীর এক রাকাতের স্থলাভিষিক্ত। ২১৩
➥২১৩. দুররে মোখতার।
মাসআলাঃ যদি জানাযার নামাযের ইমামতি মহিলা কিংবা বাদী করে থাকে এক্ষেত্রে নামায পুনরায় আদায় করতে হবে না। কেননা এক ব্যক্তি জানাযার নামায আদায় করার কারণে ফরয আদায় হয়ে যাবে। ২১৪
➥২১৪. দুররে মোখতার।
শহীদদের বর্ণনা
____________________
শহীদদের বর্ণনা
মাসআলাঃ যে প্রাপ্ত বয়স্ক, সুস্থ মস্তিষ্কধারী, মুসলমান ও পবিত্র ব্যক্তি, কোন শত্রু, কাফির অথবা ডাকাতের সাথে মোকাবেলা করার সময় কিংবা মোকাবেলা ছাড়াই ধারালো অস্ত্র দ্বারা অথবা অন্য কোন ভাবে, যেমন তার উপর দেয়াল ভেঙ্গে দিয়ে অথবা পানিতে ডুবিয়ে দিয়ে বা অন্যান্য ভাবে যাকে নিহত করা হয়েছে, তাকে পূর্ণ শহীদ বলে। ২১৫
➥২১৫. আলমগীরী।
মাসআলাঃ পিতা তার পুত্রকে হত্যা করলে ক্বেছাছ ওয়াজিব হয় না। তবে তাকে শহীদ বলা হবে। কারণ এই যে, এক্ষেত্রেও ক্বেছাছ ওয়াজিব ছিল। কিন্তু পিতার সম্মানার্থে ক্বেছাছ রহিত হয়েছে। শাহাদত রহিত হয়নি।২১৬
➥২১৬. দুররে মুখতার, ফতোয়ায়ে শামী।
মাসআলাঃ একসীডেন্টে (দুর্ঘটনায়) নিহত লোক পরকালে শহীদ বিবেচিত, দুনিয়াবী বিধানের ক্ষেত্রে ধর্তব্য নয়। কেননা যে শহীদের জন্য দুনিয়াবী বিধান পরিবর্তন হয়, উহার সংজ্ঞা তার উপর প্রযোজ্য হয় না।
মাসআলাঃ শরয়ী শহীদকে গোসল দেয়া যাবে না।
মাসআলাঃ ভীড়ে নিপতিত হয়ে মৃত্যুবরণকারী ব্যক্তি হুকমান (হুকুমের দৃষ্টিতে) শহীদ, তবে তাকে গোসল, কাফন ইত্যাদি দিতে হবে।
বিবাহের বর্ণনা
____________________
বিবাহের বর্ণনা
মাসআলাঃ স্ত্রীর ভরণ-পোষণ ও পোষাক দিতে অক্ষম হলে বিয়ে করা মাকরূহ। ২১৭
➥২১৭. কিফায়া, আয়নী, জামিউর রুমুয।
মাসআলাঃ বিয়ের মধ্যে রুকন দুইটি আর শর্ত তিনটি।
মাসআলাঃ যা না হলে বিয়ে হয়না- উহাকে বিয়ের রুকুন বলা হয়, আর রুকন বিয়ের মধ্যে হয়।
মাসআলাঃ যা নাহলে বিয়ে শুদ্ধ হয়না উহাকে বিয়ের শর্ত বলে।
মাসআলাঃ শত বিয়ের বাইরে হয়।
মাসআলাঃ বিয়ের রুকন হল- ইজাব ও কবুল।
মাসআলাঃ আকদ এর ক্ষেত্রে প্রথম বাণীকে ইজাব বলা হয়। তা ছেলের পক্ষ থেকে হোক বা মেয়ের পক্ষ থেকে হোক। পরবর্তী বাণীকে কবুল বলা হয় তা ছেলের পক্ষ থেকে হোক বা মেয়ের পক্ষ থেকে হোক।
প্রশ্নঃ বিয়ের শর্ত কয়টি ও কি কি? এ মাসয়ালার ক্ষেত্রে ওলামায়ে দ্বীনের মন্তব্য কি?
উত্তরঃ বিয়ের শর্ত দশটি, আর উহা হল- প্রথম শর্ত হল- আকদ সমপাদনকারী উভয়, জ্ঞানবান, প্রাপ্ত বয়স্ক হওয়া ও স্বাধীন হওয়া কেননা জ্ঞান ও প্রাপ্ত বয়স্ক হওয়া ব্যতীত ইজাব ও কবুলে নিক্বাহ শুদ্ধ হয়না। আর স্বাধীন হওয়া এজন্য যে, মুনীবের অনুমতি ছাড়া দাসী ও দাসের বিয়ে করার অধিকার নেই। দ্বিতীয়ত শর্ত হল- স্থান উপযুক্ত হওয়া, অর্থাৎ- দুই জনের একজন মহিলা হওয়া যাতে বিয়ের দরুণ তার সাথে সহবাস করা হালাল হয়।
তৃতীয় শর্ত হল- বর ও কনে ইজাব ও কবুল শ্রবণ করা অর্থাৎ যখন পুরুষ ইজাব তথা প্রস্তাব দিবে তখন মহিলা তার ইজাব শ্রবণ করা, আর যদি মহিলা ইজাব করে তাহলে পুরুষ তার ইজাব শ্রবণ করা, অনুরূপভাবে যখন পুরুষ কবুল করবে তখন মহিলা তার কবুল শ্রবণ করা আর যদি মহিলা কবুল করে তাহলে পুরুষ তার কবুল শ্রবণ করা। এটা ঐ অবস্থার মধ্যে যখন আকদ সম্পাদনকারী উভয়ে নিজে নিজে ইজাব ও কবুল সম্পাদন করে এবং অভিভাবক ও উকিলের মাধ্যমে হলে আকদ সম্পাদনকারী পুরুষ ও মহিলা শুনা জরুরী নয়।
চতুর্থ শর্ত হল- দুইজন পুরুষ সাক্ষী হওয়া, উভয় সাক্ষী স্বাধীন হওয়া, গোলাম না হওয়া এবং জ্ঞানবান হওয়া, পাগল না হওয়া, প্রাপ্তবয়স্ক মুসলমান হওয়া, অপ্রাপ্ত বয়স্ক ও কাফের না হওয়া। আর যদি উভয় সাক্ষী ফাসিক হয় বা গালি দেয়ার দরুণ র্দুরা মারা হয়েছে বা উভয় বা বর ও কনের আগের পক্ষের ছেলে হওয়া তাহলে উভয়ের সামনে বিয়ে করা শুদ্ধ।
পঞ্চম শর্ত হল- মহিলা রাজি হওয়া যদি মহিলা প্রাপ্ত বয়স্ক হয় বাকিরা না হয় ছায়্যিবা হয়।
ছায়্যিবা ঐ মহিলাকে বলে যে, বিয়ের সহিত তার স্বামী তার সাথে মিলন করেছে আর বাকিরা ঐ মহিলাকে বলে যে, বিয়ের সহিত তার স্বামী তার সাথে মিলন করেনি।
৬ষ্ঠ শর্ত হল- ইজাব ও কবুল একই মজলিসে হওয়া।
৭ম শর্ত হল- ইজাব কবুলের বিপরীত না হওয়া অর্থাৎ- যদি মহিলা বলে আমি তোমাকে এক হাজার টাকার বিনিময়ে তোমাকে বিয়ে করলাম, অতএব যদি পুরুষ বলে- আমি এক হাজার টাকার বিনিময়ে তোমাকে স্বীয় বিয়েতে কবুল করলাম, তাহলে শুদ্ধ হবে। আর যদি পুরুষ বলে আমি বিয়ে কবুল করলাম, আর মোহর কবুল করলাম না। তাহলে এমতাবস্থায় বিয়ে শুদ্ধ হবেনা। কেননা এ কবুল ইজাবের বিপরীত। আর যদি বিয়ে কবুল করে এবং মোহরের বিষয়ে চুপ থাকে অর্থাৎ মোহর কবুল করেছে কিনা সে ব্যাপারে কিছু না বলে। তাহলে বিয়ে শুদ্ধ হবে।
৮ম শর্ত হল- সাক্ষীগণ আক্দ সম্পাদনকারী দ্বয়ের ইজাব ও কবুলকে শুনা, অর্থাৎ যখন আক্দ সম্পাদনকারী দ্বয় ইজাব ও কবুল করে তখন উভয় সাক্ষী একসাথে শুনা আর যদি পৃথক পৃথক ভাবে শুনে তাহলে বিয়ে শুদ্ধ হবে না।
৯ম শর্ত হল- বিয়েকে সম্পর্কিত করবে মহিলার সমস্ত অঙ্গের প্রতি অর্থাৎ বর বলবে আমি তোমাকে বিয়ে করলাম বা বিয়েকে সম্পর্কিত করবে এমন অঙ্গের প্রতি যা দ্বারা পূর্ণ শরীর উদ্দেশ্য করা যায় যেমন মাথা, ঘাড়, অর্থাৎ পুরুষ বলবে আমি তোমার মাথা বা ঘাড়কে বিয়ে করলাম।
১০ম শর্ত হল- সাক্ষীদ্বয়কে জানতে হবে বর ও কনে কে, কে কাকে বিয়ে করছে। ২১৮
➥২১৮. ফাতাওয়ায়ে আলমগীরী।
মাসআলাঃ একজন পুরুষ ও দুইজন মহিলা সাক্ষীর সামনে বিয়ে করা জায়েয আছে। ২১৯
➥২১৯. হিদায়া।
মাসআলাঃ আরবী শব্দ দ্বারা বিয়ে সহী হয় অর্থাৎ ইজাব ও কবুল, অনুরূপভাবে হিন্দি, ফার্সি, বাংলা ইত্যাদি শব্দ দ্বারাও বিয়ে শুদ্ধ হয়, যদি আক্দ সম্পাদনকারীদ্বয় উহার অর্থ নাও বুঝে। ২২০
➥২২০. শরহে বিকায়া।
মাসআলাঃ যদি বর ও কনে উভয় অপ্রাপ্ত বয়স্ক হয় বা একজন প্রাপ্ত বয়স্ক অন্যজন অপ্রাপ্ত বয়স্ক হয় বা উভয় পাগল হয় বা একজন পাগল হয় তাহলে উক্ত বর্ণিত প্রত্যেক অবস্থায় অভিভাবক ব্যতীত বিয়ে শুদ্ধ হবেনা।২২১
➥২২১. শরহে বিকায়া, হিদায়া, খুলাসাতুল মাসায়িল।
মাসআলাঃ শরীয়তের দৃষ্টিতে বংশ প্রমাণ করার জন্য কমপক্ষে ছয় মাস আর বেশীর মধ্য দুই বছর নির্ধারণ করা হয়েছে। অর্থাৎ যদি বিবাহের পর কোন স্ত্রীর ছয় মাসের পর ছেলে সন্তান জন্ম গ্রহণ করে তাহলে ঐ ছেলে সন্তান তার বংশধর হিসাবে প্রমাণিত হবে অর্থাৎ উক্ত সন্তানকে তার স্বামীর ছেলে হিসাবে প্রমাণিত হবে, যে ছয় মাস পূর্বে শাদী করেছে।
মাসআলাঃ কাযী সাহেব মোহর নির্ধারণ করতে পারবে, কাযী সাহেবের উপর ইখতিয়ার তথা অধিকার রয়েছে যে, যদি স্বামী-স্ত্রী উভয়ই কারো মোহরের উপর সন্তুষ্ট না হয়, তাহলে এক্ষেত্রে কাযী তার পক্ষ হতে মোহর নির্ধারণ করে দেবে। ২২২
➥২২২. বাহরুর রায়েক, ৩য় খণ্ড, পৃষ্ঠা-১৫৯।
মাসআলাঃ বংশ জারী থাকার জন্য সন্তান হওয়া এটা আল্লাহ তায়ালার সবচেয়ে বড় নিয়ামত।
মাসআলাঃ যেহেতু মানুষের বংশ অবশিষ্ট থাকা বিয়ের উপর নির্ভরশীল এবং মানুষের স্বভাবগত ইচ্ছাও এজন্য আল্লাহ্ তায়ালা বিয়ে করার নির্দেশ দিয়েছেন।
মাসআলাঃ বোবা ব্যক্তি বলে দেয়া ও ইশারা করা মাথা বা চোখ বা হাত দ্বারা, সে বিয়ে, তালাক, বেচা-কেনা জায়েয হবে।
মাসআলাঃ মুবাহ কথাও মসজিদে অনুমতি নেই। আওয়াজ উচ্চ করাও জায়েয নেই। ২২৩
➥২২৩. দুররে মুখতার, সাগীরী।
মাসআলাঃ কোন্ কোন্ ব্যক্তির উচ্ছিষ্ট পবিত্রঃ জুনুবী ব্যক্তি যার উপর গোসল ফরয হয়েছে হায়েজ মাসিক ঋতুস্রাব ও নিফাস সন্তান ভূমিষ্ঠ হওয়ার পর যে রক্ত বের হয়, বিশিষ্ট মহিলার উচ্ছিষ্ট পবিত্র। (কাজী খান) কাফিরের উচ্ছিষ্টও পবিত্র তবে উহা থেকে বিরত থাকা উচিত। কেননা লোকজন উহা ঘৃণা করে। এজন্য উহা থেকে বিরত থাকবে।
মাসআলাঃ জেনে রাখা উচিত বা দরকার যে, কামভাব দমন করতে পারলে বিয়ে করা সুন্নাতে মুয়াক্কাদা।
মাসআলাঃ যদি ব্যভিচারে লিপ্ত হওয়ার আশংকা হয় তাহলে বিয়ে করা ওয়াজিব।
মাসআলাঃ যদি কেউ নিজের স্ত্রীকে বলে ‘আগামী কাল তুমি তালাক’ তাহলে আগামী কাল সোবহে সাদিক হওয়ার সাথে সাথে সে স্ত্রী তালাকপ্রাপ্ত হয়ে যাবে। ২২৪
➥২২৪. খোলাসাতুল মাসায়িল, ২৩ পৃষ্ঠা।
প্রশ্নঃ অবাধ্য স্ত্রীর খরচা দেয়া জরুরী কিনা? বর্ণনা করুন প্রতিদান পাবেন। অর্থাৎ তিনি মহা জ্ঞানী ও অধিক খবর রাখেন এবং তাঁরই নিকট সাহায্য প্রার্থী। মুছাম্মৎ হিন্দা নিজ স্বামীর ঘর থেকে স্বয়ং নিজেই বের হয়ে অন্য জায়গায় চলে গেছে এবং স্বামীর কাছে থাকতে অস্বীকার করছে, স্বামীর ঘরে না আসা অবস্থায় খরচার হক্বদার হবে কিনা?
উত্তরঃ যদি স্ত্রীর পক্ষ থেকে সীমালঙ্গন হয় তাহলে শরীয়তের বিধান মতে স্বামীর জিম্মায় খরচা দেয়া ওয়াজিব নয়। হিদায়া গ্রন্থে উল্লেখ আছে যে, যদি মহিলা অবাধ্য হয় তাহলে স্বামীর ঘরে ফিরে না আসা পর্যন্ত তার জন্য খরচা নেই। ২২৫
➥২২৫. হিদায়া, ২য় খণ্ড, ৪১ পৃষ্ঠা; আলমগীরী, ১ম খণ্ড, ৫৪৫ পৃষ্ঠা; বাবুন্ নাফকাত।
মাছের বর্ণনা
____________________
মাছের বর্ণনা
মাসআলাঃ পানিতে যত প্রাণী থাকে সবই হারাম তবে মাছ যত ধরণের হোক সবই হালাল।
মাসআলাঃ যে মাছ পানিতে নিজে মরে ভেসে উঠে উহা খাওয়া জায়েয নেই। আর যদি কোন বিপদের দরুণ মারা যায় যেমন- স্থান সংকীর্ণ হওয়া বা সাপের দর্শন (কামড়) বা আঘাতে মরে যাওয়া, ঔষুধ দেয়ার দরুণ মারা যায় তাহলে উহা খাওয়া জায়েয আছে।
মাসআলাঃ মাছ যদি পানিতে নিজে নিজে মরে ভেসে উঠে, অতএব, যদি চিৎ হয়ে (মুখ উপরের দিকে থাকে) ভেসে উঠে, তাহলে উহা খাওয়া জায়েয নেই। আর যদি উপুড় (মুখ নীচের দিকে থাকে) হয়ে ভেসে উঠে তাহলে উহা খাওয়া জায়েয আছে।
মাসআলাঃ যদি কোন মাছ এমনভাবে মরে যে, উহার মাথা স্থল ভাগে এবং লেজ পানিতে হয় তাহলে ইমাম মুহাম্মদ (رحمة الله) এর মতে উহা খাওয়া জায়েয আছে। আর যদি মাথা পানিতে হয় আর লেজ স্থল ভাগে হয় তাহলে এমতাবস্থায় যদি স্থল ভাগে অর্ধেক বা অর্ধেক থেকে কম হয় তাহলে খাওয়া জায়েয নেই। আর যদি স্থল ভাগে অর্ধেকের চেয়ে বেশী থাকে তাহলে খাওয়া জায়েয আছে।
মাসআলাঃ মাছের পেটে যদি কোন মৃত মাছ পাওয়া যায় তাহলে উহা খাওয়া জায়েয আছে। কেননা স্থান সংকীর্ণ হওয়ার কারণে উহার মৃত্যু হয়েছে।
মাসআলাঃ আবাবিল (পাখি) খাওয়া জায়েয আছে। ইহা তা-তারকানিয়া গ্রন্থে উল্লেখ আছে। ২২৬
➥২২৬. ফতোয়ায়ে তাতরখানীয়া।
মাসআলাঃ কেঁচু যাকে আরবী ভাষায় খারাত্বীন বলা হয়, উহা খাওয়া হারাম।
মাসআলাঃ মাছ বড় হোক বা ছোট হোক প্রত্যেক প্রকার মাছ হালাল তবে ছোট মাছের বিষ্টা যে পরিমাণ দূর করা যায়, তা দূর করা উচিত। উহার মধ্যে সামর্থের বাইরে কষ্ট দেয়া জায়েয নেই। ইহা সিরাজুল ওয়াহ্হাজ গ্রন্থে উল্লেখ আছে। ২২৭
➥২২৭. সিরাজুল ওয়াহহায্।
মাসআলাঃ যত প্রকার পোকা রয়েছে সবই হারাম। কেননা পোকা খাবীছ (নোংরা বা অপবিত্র) আর সব প্রকারের নোংরা বা অপবিত্র হারাম। ২২৮
➥২২৮. হায়াতুল হাইওয়ান।
মাসআলাঃ মধু পোকা খাওয়া হারাম, ইহা ফতওয়ায়ে বাজ্জাজিয়া গ্রন্থে উল্লেখ আছে। ২২৯
➥২২৯. ফতোয়ায়ে বাজ্জাযীয়া
মাসআলাঃ এক ব্যক্তি মাছকে নাপাক পানিতে ছেড়ে দিয়েছে এবং উহাতে বড় হয়েছে অতএব এমতাবস্থায় উক্ত মাছকে খাওয়া জায়েয আছে। ইহা আল আশবাহ্ ওয়ান্ নাযায়ির গ্রন্থে উল্লেখ আছে।
মাসআলাঃ চিংড়ি যাকে ফার্সি ভাষায় মালখে দরয়ায়ী এবং আরবী ভাষায় জরাদুল বাহার এবং বাংলা ভাষায় চিংড়ী ও ইছামাছ বলে, উহা খাওয়া হালাল এবং উহার উপর ফতওয়া, কতিপয় ওলামা মাকরূহ মনে করেন। কেননা ইহা যমীনের পোকার মধ্যে গণ্য। আল্লাহ অধিক জ্ঞাত। ২৩০
➥২৩০. হায়াতুল হাইওয়ান।
মাসআলাঃ হারীছ ও মারমাহী হালাল। আর জারীছ হল একটি কাল রঙের মাছ। আর মারমাহী এমন একটি মাছ যা সাপের সাথে কিছু সাদৃশ্য রাখে। যাকে বাংলাতে বাইন মাছ বলে ও সালীস বলে। আর চট্টগ্রামের কিছু লোক কুইচ্ছাকে সালীস বলে কুইচ্ছা খাওয়া জায়েয নেই। ২৩১
➥২৩১. হিদায়া ও কাজীখান।
নোটঃ আর সাধারণ লোকেরা কুইচ্ছাকে মারমাহী বলে- এটা ভুল। কেননা উহা সাধারণভাবে মাছের আকৃতিতে নয় বরং দেখতে হুবহু সাপের ন্যায় নাপাক ও অপবিত্র মনে হয় ইহা ছাড়াও স্বভাবও উহা অপছন্দ করে। আর যে বস্তু সঠিক স্বভাবের নিকট নাপাক বলে বিবেচিত হয় তা নাপাকের অন্তর্ভূক্ত। আর নাপাক বস্তু খাওয়া শরীয়তের দৃষ্টিতে জায়েয নয়। আল্লাহ্ তায়ালা অধিক জ্ঞাত।
মাসআলাঃ লইট্টা মাছ খাওয়া জায়েয। ২৩২
➥২৩২. হায়াতুল হাইওয়ান।
ভিক্ষা করার বর্ণনা
____________________
ভিক্ষা করার বর্ণনা
মাসআলাঃ যার কাছে আজকের খাবার আছে বা সুস্থ উপার্জন করতে সক্ষম তার জন্য আহার করার জন্য ভিক্ষা করা হালাল নয়। চাওয়া ব্যতীত কেউ নিজের পক্ষ থেকে দিলে নেয়া জায়েয আছে। আর তার কাছে খাবার আছে কিন্তু কাপড় নেই তাহলে কাপড়ের জন্য ভিক্ষা করতে পারবে। তবে যদি জিহাদ বা শিক্ষার্থী, ধর্মীয় জ্ঞান অর্জনে লিপ্ত থাকে তাহলে সুস্থ ও উপার্জনে সক্ষম হলেও ভিক্ষার অনুমতি আছে।
মাসআলাঃ যে ব্যক্তির ভিক্ষা করা জায়েয নেই, তার চাওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে দেয়াও নাজায়েয, দানকারীও গুনাহগার। ২৩৩
➥২৩৩. দুররে মুখতার, বাহারে শরীয়ত, ক্বানোনে শরীয়ত।
ভিক্ষা করা নিন্দনীয়
____________________
ভিক্ষা করা নিন্দনীয়ঃ
মাসআলাঃ ভিক্ষা করা খুবই অপমানজনক বিষয়, বিনা প্রয়োজনে ভিক্ষা করবেনা। হাদীস সমূহ দ্বারা প্রমাণিত আছে যে, বিনা প্রয়োজনে ভিক্ষা করা হারাম। ভিক্ষুক হারাম খায়। মুসলিম, আবু দাউদ, নাসাঈ ইত্যাদি হাদীস গ্রন্থে উল্লেখ আছে যে, রসূল (ﷺ) ইরশাদ করেছেন- যে ব্যক্তি ভিক্ষা করা থেকে বাঁচতে চাইবে আল্লাহ্ তায়ালা তাকে রক্ষা করবেন।
হাদীস শরীফে আরো বলেছেন- যে বান্দা ভিক্ষা করার দরজা খুলবে, আল্লাহ্ তায়ালা তার জন্য অভাবের দরজা খুলে দিবেন।
হিজড়ার বর্ণনা
____________________
হিজড়ার বর্ণনা
মাসআলাঃ হিজড়ার ক্ষেত্রে নারী-পুরুষ নির্ণয় করা জটিল হলে তাকে গোসল দেয়া যাবেনা বরং তায়াম্মুম করাতে হবে। ২৩৪
➥২৩৪. ফতোয়ায়ে শামী, ১ম খণ্ড, পৃষ্ঠা-৮০৭।
মাসআলাঃ হিজড়া নামাযে ইমামের পিছনে পুরুষ ও মহিলাদের মধ্যখানে দাঁড়াবে।
মাসআলাঃ খুনসায়ে মুশকল যদি মহিলার কাতারে দাঁড়িয়ে নামায পড়ে তাহলে উক্ত হিজড়ার উচিত- স্বীয় নামায পুণরায় পড়ে নেয়া। আর যদি পুরুষের কাতারে দাঁড়িয়ে নামায পড়ে তাহলে যত পুরুষ উক্ত হিজড়ার ডানে, বামে, পিছনে ও এক বরাবর দাঁড়িয়েছে তারা স্বীয় নামায পুণরায় পড়ে দিবে। আর হিজড়ার নামায শুদ্ধ হয়েছে।২৩৫
➥২৩৫. খুলাসাতুল মাসায়িল, পৃষ্ঠা-১৩৯।
মাসআলাঃ হিজড়া যদি প্রাপ্ত বয়স্ক হওয়ার নিকটবর্তী হয় তাহলে সে কোন পুরুষ ও মহিলা গোসল করার সময় উপস্থিত হওয়া জায়েয নেই।
মাসআলাঃ হিজড়া ও পুরুষত্বহীন লোকের হুকুম এক।
মাসআলাঃ জেনে নেয়া উচিত যে, খুনসা এর শাব্দিক অর্থ হিজড়া, বহুবচন খুনাস, ইন্নান অর্থ পুরুষত্বহীন যিনি মহিলার প্রতি ধাবিত হয়না। ২৩৬
➥২৩৬. মিফতাহুল লুগাত।
ইন্নানা ঐ মহিলাকে বলে যার কাছে পুরুষের চাহিদা থাকেনা। ইন্নান অর্থ পুরুষত্বহীন। যে পুরুষ মহিলার কাজের উপযুক্ত না হয় অর্থাৎ সহবাস করতে অক্ষম হয়। ২৩৭
➥২৩৭. লুগাতে কিছওয়ারী।
খুনসা ঐ ব্যক্তিকে বলে যার পুঃলিঙ্গ ও স্ত্রী লিঙ্গ উভয়টি হয় বা উভয়টি না হয়। হিজড়া যদি পুঃলিঙ্গ দিয়ে পেশাব করে তাহলে সে পুরুষ হিসেবে গণ্য হবে। নতুবা মহিলা হিসেবে ধর্তব্য হবে। আর যদি উভয় রাস্তা দিয়ে পেশাব করে তাহলে যে রাস্তা দিয়ে প্রথমে পেশাব আসে উহা ধর্তব্য হবে। যদি উহার মধ্যেও সমান হয় তাহলে ইমাম আবু হানীফা (رحمة الله) উহাকে পুরুষ বা মহিলা বলতে অক্ষমতা প্রকাশ করেছেন। ইমাম আবু ইউসুফ ও ইমাম মুহাম্মদ (رحمة الله) বলেছেন- যে রাস্তা দিয়ে পেশাব বেশী আসে সে অনুযায়ী পুরুষ বা মহিলার হুকুম দেয়া হবে। যদি হিজড়া বা প্রাপ্ত বয়স্ক হওয়ার পর দাড়ি উঠে তাহলে সে পুরুষ। আর মহিলাদের ন্যায় স্তন প্রকাশ পায় বা স্তনে দুধ চলে আসে বা গর্ভবর্তী হয়ে যায় তাহলে মহিলা। উক্ত চিহ্ন সমূহ থেকে কোন চিহ্ন প্রকাশ না পায় তাহলে উক্ত হিজড়া খুনসায়ে মুশকল এর অন্তর্ভূক্ত।
মাসআলাঃ ইমাম আবু হানীফা (رحمة الله) এর মতে ‘হিজড়া’ মহিলাদের ন্যায় অংশ পাবে। ইমাম আবু ইউসুফ ও মুহাম্মদ (رحمة الله) এর মতে পুরুষ ও মহিলা উভয়ের অংশের অর্ধেক পাবে। এর চেয়ে আরো অধিক বিধি-বিধান জানার জন্য ফাতাওয়ায়ে আলমগীরী ইত্যাদি দেখুন। ২৩৮
➥২৩৮. আলমগীরী, ১০ম খণ্ড, পৃষ্ঠা-৪০০; কিতাবুল খুনসা, ফসলে দুওয়াম।
ইমাম আবু হানীফা (رحمة الله) হচ্ছেন শাহানশাহে হাদীস
____________________
ইমাম আবু হানীফা (رحمة الله) হচ্ছেন শাহানশাহে হাদীস
হ্যাঁ মুহাদ্দিস গণের মধ্যে উচ্চ মর্যাদা সম্পন্ন শায়খুল ইসলাম ইমামুল হাদীস আবদুল্লাহ বিন ইয়াজিদ কুফী যখন ইমাম আযম আবু হানীফা (رحمة الله) থেকে কোন হাদীস বর্ণনা করতেন, তখন বলতেন আমার নিকট হাদীস বর্ণনা করেছেন- শাহানশাহে হাদীস, উহা খতীব বাগদাদী ও উল্লেখ করেছেন। যেমন ইমামে মিসর হাফেজ মিসর বিখ্যাত হাফেজে হাদীস যার ব্যাপারে ইমাম আল মুহাদ্দিসুল ফায়িল এ উল্লেখ আছে- যখন কখনো ইমাম শু’বা ও ইমাম সুফিয়ান এর মধ্যে কোন বিষয়ে মতবিরোধ হলে তখন উভয়ে বলতেন, চলুন মিযানুল আদল মিসরের নিকট গিয়ে তার মাধ্যমে ফায়সালা করাব। অথচ উভয় ইমামকে আমীরুল মু’মিনীন ফীল হাদীস বলা হত, এ মিসর বলতেন আমি ইমাম আবু হানীফা-এর সাথে হাদীস নিয়ে আলোচনা শুরু করলাম তখন তিনি আমার উপর বিজয়ী হলেন যুহদ ও তাক্বওয়া বিষয়ে আলোচনা শুরু করলাম- তখন সে বিষয়েও আমার উপর বিজয়ী হলেন, ফিকহ নিয়ে তার সাথে আলোচনা করলাম সে অবস্থা তো তোমরা নিজেরাও দেখেছ যে, সকলের উপর তার অবস্থান তা সুস্পষ্ট। ২৩৯
➥২৩৯. তাজকিরায়ে মুহাদ্দিসীন, ১ম খণ্ড, মাওলানা আহমদ রেযা।
রুহুল আযম ও রুহে ইনসানীর বর্ণনা
____________________
রুহুল আযম ও রুহে ইনসানীর বর্ণনা
হাক্বীক্বতে আসমা, সর্বপ্রথম উহাকে সৃষ্টি করেছেন। রুহুল আযম, রুহে ইনসানীর একটি প্রকার যা রবুবিয়্যাতের দৃষ্টিতে আল্লাহর জাতের বিকাশ স্থল। এ দৃষ্টিতে উহার হাক্বীক্বত আল্লাহ্ তায়ালা ব্যতীত কেউ জানতে পারবেনা। “হুজ্জাতুল হক্ব আলাল খালক্ব” এটা ইনসানে কামেলের জন্য ব্যবহার হয়। আর এটাই খলীফায়ে আকবর ও নূরানী জাওহার, যার জাওহারিয়ত জাতে ইলাহী এবং উহার নূরানীয়ত এবং উহার জ্ঞানের বিকাশ স্থল। আর এ রুহ জাওহারিয়ত এর দৃষ্টিতে নাফসে ওয়াহিদা এবং নূরানীয়তের দৃষ্টিতে আক্বল বলা হয় এবং যেভাবে বড় পৃথিবীতে উহার বিকাশস্থল ও নাম রয়েছে। যেমন- আক্বলে আউয়াল, ক্বলমে আ’লা, নফসে কুলী, লাউহে মাহফুজ, এ ছোট পৃথিবীতে এটাই উহার বিকাশস্থল ও নাম, যেমন- ছির, খফী, রুহ, ক্বলব, রাও, ফুয়াদ, সদরে আক্বল, নফস।
রুহে ইনসানী: একটি এমন সু² জাওহার যার নাম রুহে ইনসানী, যা আল্লাহ্ তায়ালা মানুষের মধ্যে আমানত রেখেছেন, এটাই প্রত্যেক বস্তু সম্পর্কে জ্ঞান রাখেন। এ রুহ রুহে হাইওয়ানীর উপর পরিপূর্ণভাবে প্রভাব বিস্তার করে। ইহা একটি আল্লাহর রহস্য যার হাক্বীক্বত জানা মানুষের আক্বল অক্ষম। এরুহ কখনো শরীর থেকে পৃথক হয় এবং কখনো উহার সাথে থাকে উহার মধ্যে ক্ষমতা প্রয়োগ করে। ইহা রুহে ইনসানীর সাথে নির্দিষ্ট এবং মানুষদের মধ্যেও বড়দের সাথে নতুবা ছোটদের সাথে এবং প্রাণীদের মধ্যে হয়না।
রুহে হায়ওয়ানী: ইহা একটি সু² শরীর- যার স্বভাব, অন্তর এবং রগ সমূহের মাধ্যমে সমস্ত অঙ্গসমূহের মধ্যে ছড়িয়ে আছে। ২৪০
➥২৪০. ইসলামী মা’লুমাত, পৃষ্ঠা-৩৫৯।
পুরুষ পুরুষকে দেখার বর্ণনা
____________________
পুরুষ পুরুষকে দেখার বর্ণনা
মাসআলাঃ একজন পুরুষ আরেকজন পুরুষের সমস্ত শরীর দেখতে পারবে, শুধু নাভী থেকে হাটু পর্যন্ত অংশ সতরের অন্তর্ভূক্ত। উহা দেখা জায়েয নেই। দাড়ি বিহীন সুন্দর বালকেরও এ হুকুম যখন উত্তেজনা থেকে নিরাপদ থাকবে। নাভী সতরের অন্তর্ভূক্ত নয় তবে হাটু সতরের অন্তর্ভূক্ত। কেননা পুরুষ ইহরাম অবস্থায় ব্যতীত একই তহবন্দে রাস্তায় চলে। এতে বুঝা গেল যে, পুরুষের শরীর দেখা জায়েয আছে।
মহিলা পুরুষের এতটুকু অংশ দেখা জায়েয যা অপর পুরুষ দেখতে পারবে। যদি মন্দ খেয়াল থেকে নিরাপদ থাকে। এ জন্য যে, যে অংশ সতরের অন্তর্ভূক্ত নয় তা জায়েয হওয়ার ক্ষেত্রে এক বরাবরে। ২৪১
➥২৪১. ফিকহে হানাফী, ৩য় খণ্ড, ৩৭৮পৃষ্ঠা।
মহিলাদের সাথে মুসাফাহা করার বর্ণনা
____________________
মহিলাদের সাথে মুসাফাহা করার বর্ণনা
মাসআলাঃ রাসূল (ﷺ) মহিলাদের সাথে মুসাফাহা করতেন না। উসায়মা বিনতে রক্বীক্বা বলেন- আমি আরজ করলাম- হে আল্লাহর রাসূল! আপনি কেন আমাদের সাথে মুসাফাহা করেন না? উত্তরে হুজুর (ﷺ) ইরশাদ করেছেন- আমি মহিলাদের সাথে মুসাফাহা করিনা। আমি এক মহিলার সাথে কথা বলা শত মহিলার সাথে কথা বলার সমান। ২৪২
➥২৪২. মসনদে ইমাম আহমদ, ৩৫০ পৃষ্ঠা।
পুরুষের মুখে চুমু দেয়া ও মুয়ানাকা (গলাগলি করা) করা
____________________
পুরুষের মুখে চুমু দেয়া ও মুয়ানাকা (গলাগলি করা) করা
মাসআলাঃ একজন পুরুষ আরেকজনকে চুমু দেয়া বা তার কোন অংশকে চুমু দেয়া বা মুয়ানাকা (গলাগলি) করা উত্তেজনা বিদ্যমান থাকাবস্থায় মাকরূহ। যথা: হযরত আনাস (رضي الله عنه) বলেছেন যে, একজন লোক জিজ্ঞেস করলেন হে আল্লাহর রাসূল (ﷺ) এক ব্যক্তি সাক্ষাতের সময় বন্ধুর সামনে ঝুকতে পারবে কিনা? তিনি উত্তরে ইরশাদ করলেন- না, তিনি জিজ্ঞেস করলেন স্পর্শ করে চুমু দিতে পারবে কিনা? হুজুর (ﷺ) উত্তরে ইরশাদ করলেন ‘না’ তিনি জিজ্ঞেস করলেন- হাতে স্পর্শ করে মুসাফাহা করতে পারবে কিনা? উত্তরে ইরশাদ করলেন- হ্যাঁ। তবে যদি উত্তেজনার ভয় না থাকে তাহলে উহাতে কোন অসুবিধা নেই। ২৪৩
➥২৪৩. সুনানে তিরমিযী, ৩য় খণ্ড, ১৭৩ পৃষ্ঠা।
হাদীস শরীফে এসেছে- হুজুর (ﷺ) হযরত জাফর বিন আবু তালিবের হাবশা থেকে প্রত্যাবর্তনে তার সাথে মুয়ানাকা (গলাগলি) করেছেন এবং তার উভয় চোখের মধ্যখানে কপালকে চুমু দিলেন আর এটা খায়বর বিজয়ের সময়ের ঘটনা এবং হুজুর (ﷺ) ইরশাদ করেছেন- দুই বিষয়ের মধ্য থেকে কোন বিষয়ে আমার অধিক আনন্দ হচ্ছে তা আমার জানা নেই। খায়বর বিজয় থেকে নাকি জাফরের আগমণে। হ্যাঁ মুসাফাহা করা জায়েয আছে, যেমন- হযরত কাতাদা (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত আছে যে, আমি হযরত আনাস (رضي الله عنه)কে জিজ্ঞেস করলাম- রাসূল (ﷺ) এর সম্মানিত সাহাবাদের মাঝে মুসাফাহার প্রচলন ছিল কিনা? উত্তরে তিনি বললেন হ্যাঁ।২৪৪
➥২৪৪. সহীহ বুখারী, ৭৩ পৃষ্ঠা।
আলেমেদ্বীন ও ন্যায় বিচারক রাজা-বাদশাহদের হাতে চুমু দেয়া জায়েয আছে। কেননা সাহাবায়ে কিরাম (رضي الله عنه) হুজুর (ﷺ) এর পবিত্র খিদমতে পা তে চুমু দিতেন। যেমন- “হাদীসে ওয়াফদে আবদিল কায়স-এ উল্লেখ আছে- তারা হুজুর (ﷺ) এর খিদমতে উপস্থিত হলেন এবং সফরের কাপড়ে এসেছে এবং দ্রুত হুজুর (ﷺ) এর হাত-পাকে চুমু দিলেন। ২৪৫
➥২৪৫. মুসনাদে আহমদ
সুফিয়ান বিন আয়নিয়া (رضي الله عنه) বলেছেন- আলেমেদ্বীন ও ন্যায় পরায়ন রাজা-বাদশার হাতে চুমু দেয়া সুন্নাত অনুরূপভাবে বুযুর্গানে দ্বীনেরও। এটা বলে উঠে দাঁড়ালেন এবং হযরত আবদুল্লাহ বিন মুবারকের মাথায় চুমু দিলেন।
মাসআলাঃ গাইরে মাহরাম মহিলাদেরকে দেখা, স্পর্শ করা এবং তাদের কাছে আসা ও তাদের সাথে একাকীত্ব সময় কাটার ব্যাপারে মুতলাকান (সাধারণত ভাবে) নিষিদ্ধ। চাইতো সে ব্যক্তি সুস্থ্য হোক বা হিজড়া হোক কেননা আয়াতে কারীমা সবাই অন্তর্ভূক্ত করে।
মাসআলাঃ তবে ছোট শিশু নস্সে কুরআনের ভিত্তিতে এ হুকুম থেকে বাদ যাবে।
রেশমের পোষাক পরিধান করার বর্ণনা
____________________
রেশমের পোষাক পরিধান করার বর্ণনা
মাসআলাঃ পুরুষদের জন্য রেশমের (সিল্ক) পোষাক পরিধান করা জায়েয নেই। যেমন- হযরত ওমর (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত আছে যে, রাসূল (ﷺ) বলেছেন- দুনিয়ার মধ্যে রেশমী পোষাক এ ব্যক্তি পরিধান করে যার জন্য পরকালে কোন অংশ থাকে না। ২৪৬
➥২৪৬. ফতহুলবারী, ২৪৪ পৃষ্ঠা।
মাসআলাঃ রেশমের পোষাক মহিলাদের জন্য হালাল যেমন- হযরত আলী (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত আছে।
মাসআলাঃ বরকাত নামক কিতাবে বর্ণিত আছে, রেশম দ্বারা তৈরীকৃত পোষাক কিংবা রুমাল মহিলাদের জন্য নিঃসন্দেহে জায়েয ও বৈধ। যেমন- তাদের জন্যে রেশমী কাপড় ইত্যাদি জায়েয। পুরুষদের জন্য রেশমী রুমাল ব্যবহার করা, হাতে রাখা, পকেটে রাখা মুখমন্ডল মোছন করাও জায়েয বরং সায়্যিদুনা ইমাম আযম (رحمة الله)’র তাহক্বীক্ব মোতাবিক শুধু পরিধান করা অবৈধ বা নিষিদ্ধ, এছাড়া অন্য সব ব্যবহার পদ্ধতি বৈধ ও জায়েয। তবে রেশমী রুমাল কাঁধের উপর রাখা সম্পর্কে বৈধ, অবৈধ হওয়ার ব্যাপারে ইতস্তত হতে পারে। অর্থাৎ যদি রুমাল কাঁধের উপর রাখা প্রথাগত নিয়মানুসারে পরিধান করা বুঝা যায়, তাহলে নিষিদ্ধ বুঝা যাবে। আর যদি পরিধান করা প্রমাণিত না হয়, তা হলে জায়েয বা বৈধ হবে। তবে এ বিষয়ে নিশ্চিতরূপে হুকুম প্রদান করা দুষ্কর বিষয়। প্রকাশ্যভাবে কাঁধের উপর রুমাল রাখা পরিধান নয়, তাই জায়েয হওয়া উচিত। ২৪৭
➥২৪৭. বরকাত, পৃষ্ঠা-৬৮।
দোয়া করার বর্ণনা
____________________
দোয়া করার বর্ণনা
মাসআলাঃ দোয়া করা মানুষের জন্য আল্লাহর দরবারে অন্যতম একটি ফরিয়াদ ও আবেদন।
মাসআলাঃ ইবাদতের ন্যায় আল্লাহর দরবারে দোয়া করা ও মানুষের স্বভাবজাত অভ্যাস ও চাহিদা।
মাসআলাঃ যখন মানুষ কোন মুসিবত ও বিপদগ্রস্থের সম্মুখিন হন তখন সে শুয়ে, বসে কিংবা দাঁড়িয়ে সর্ববস্থায় নিজ প্রভূকে ডেকে থাকে। আল্লাহ্পাক রাব্বুল আলামিন পবিত্র কোরআন শরীফে এরশাদ করেছেন-
وَإِذَا مَسَّ الْإِنْسَانَ الضُّرُّ دَعَانَا لِجَنْبِهِ أَوْ قَاعِدًا أَوْ قَائِمًا .
অর্থ: আর যখন মানুষ কষ্টের সম্মুখীন হয়, শুয়ে, বসে, দাঁড়িয়ে আমাকে ডাকতে থাকে। ২৪৮
➥২৪৮. সূরা ইউনুস, আয়াত-১২।
মাসআলাঃ হযরত ইমাম মোল্লা আলী ক্বারী (رحمة الله) স্বীয় কিতাব ‘আওজন্দী’ গ্রন্থে বলেন, রাসূলে পাক (ﷺ)’র শাহজাদা হযরত ইব্রাহীম (عليه السلام) ইন্তিকাল করেন, তাঁর (عليه السلام) ইন্তিকালের তিন দিন পর হযরত আবু যর (رضي الله عنه) শুকনো খেজুর, উটের দুধ, যাউয়ের রুটি নিয়ে আসেন এবং হুযূর (ﷺ)’র সামনে রাখেন। তখন হুযূর (ﷺ) উক্ত খাবারের উপর একবার সূরা ফাতিহা ও তিনবার সূরা ইখলাস পাঠ করেন এবং দরুদ শরীফ পাঠ করে দু‘আর জন্য হাত উঠান। হযরত আবু যর (رضي الله عنه)কে বন্টন করার নির্দেশ দেন এবং বলেন, এগুলোর সাওয়াব আমার সন্তান ইব্রাহীম (عليه السلام) পাবেন। ২৪৯
➥২৪৯. আনোয়ারুর রহমান, পৃষ্ঠা-৩৬০, মেহ্কুল আকায়িদ, পৃষ্ঠা-১১৮
আল্লামা কুসতলানী ‘মাওয়াহিবুল লাদুনীয়া’তে বলেছেন যে, ইমাম বোখারী স্বীয় ‘তারীখে’ বলেছেন যে, ‘যে কেহ খাবার সামনে রেখে بسم الله الخ শেষ পর্যন্ত পাঠ করবে, এতে আল্লাহর রহমত ও শিফা বা আরোগ্য লাভ করবে এবং খাবারে অনিষ্টকারী যা কিছু থাকে তা থেকে রক্ষা পাবে’। ২৫০
➥২৫০. মাওয়াহিবুল লাদুনীয়া, পৃষ্ঠা-১১৯
মাসআলাঃ আল্লাহর দরবারে দোয়া করার সময় প্রথমে নিজের জন্য ইস্তিগফার তথা ক্ষমা প্রার্থনা দ্বারা আরম্ভ করবে অতঃপর অপরাপরের নাম নিয়ে ক্ষমা প্রার্থনা করবে।
মাসআলাঃ ঈমানদার মুসলমান নর-নারীর জন্য ক্ষমা চাওয়া বিশেষতঃ শোহাদায়ে কেরাম, ছিদ্দিকীন ও ছালেহীনদের উচ্চ মর্তবা কামনা করা আবশ্যক।
মাসআলাঃ কবর জিয়ারত করা এবং মৃত তথা কবরবাসীদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করা জায়েয। ২৫১
➥২৫১. তাফসীরে ফুয়ুজুর রহমান, পারা-২৬, পৃষ্ঠা-১৫৩।
রদ্দে শামসের মূল ঘটনা
____________________
রদ্দে শামসের মূল ঘটনা
হযরত আলী (رضي الله عنه) এর আছরের নামাজের জন্য সূর্য প্রত্যাবর্তন এর উপর হাফেজ ইবনে তাইমিয়াহ’র অস্বীকারের মূল কারণ আর ردشمس এর মূল ঘটনার বর্ণনা।
প্রকাশ থাকে যে, ردشمس এর মূল ঘটনা সম্পর্কে মুহাদ্দিছ আনোয়ার শাহ কাশ্মিরি বলেন- হুজুর নবীয়ে দো-জাহান (ﷺ) হযরত আলী র্কারামাল্লাহু ওয়াজহাহুকে কোন একটি কাজে আছরের নামাজের পূর্বে পাঠিয়েছিলেন। তিনি উক্ত কাজে তাশরীফ নিয়ে গেলেন এবং এমন অবস্থায় ফিরে আসলেন যখন তিনি আছরের নামাজ আদায় করেন নি। আর এদিকে সূর্য অস্তমিত হয়ে গেছে।
হুজুর সৈয়্যদে আলম (ﷺ) যখন এটি অবগত হলেন, তখন তিনি দোয়া করলেন, যার পরিপেক্ষিতে আল্লাহ তাআলা সূর্য ফিরিয়ে দিলেন। উল্লেখ্য যে, অত্র বর্ণনা ছাড়া, বিরোধীতার খাতিরে যে সকল বর্ণনা কম-বেশী নকল করা হয়েছে, তা মূল ঘটনার সাথে সম্পৃক্ত নয়।
হযরত আলী (رضي الله عنه) আছরের নামাজ কেন আদায় করেননি?
____________________
হযরত আলী (رضي الله عنه) আছরের নামাজ কেন আদায় করেননি?
মুহাদ্দিস আনোয়ার শাহ ছাহেব বলেন- আমার মতে এর কারণ হচ্ছে- সেই সময় দুইটি হুকুম বা নির্দেশ একত্রিত হয়েছে, তন্মধ্যে একটি হচ্ছে সাধারণ হুকুম; যা আল্লাহর পক্ষ হতে যথা সময়ে নামাজ আদায় করা। আর দ্বিতীয়টি হচ্ছে খাস তথা নির্দিষ্ট হুকুম, যা নবীয়ে করীম রাউফুর রাহীম (ﷺ) এর পক্ষ হতে নির্দেশ। তিনি যে কাজের জন্য হুকুম ফরমায়েছেন, তা সন্ধ্যার পূর্বেই সম্পন্ন করার জন্য বলেছেন।
যেমন বুখারী শরীফের قصه بنى قريضه এর মধ্যে বর্ণিত আছে- হুজুর আলাইহিস্সালাম সাহাবায়ে কেরাম রাদ্বিআল্লাহু আনহুমকে হুকুম দিয়েছিলেন- আছরের নামাজ বনী কুরাইজায় পৌঁছে আদায় করার জন্য, অথচ আছরের নামাজের সময় পথের মধ্যেই হয়ে গেছে, তখন তাদের মধ্যে কিছু সংখ্যক সাহাবী হুকুমে আম তথা আল্লাহ তাআলার হুকুমের প্রতি খেয়াল করে ওয়াক্ত অনুযায়ী নামাজ আদায় করেন। আর কতেক সাহাবী নামাজ আদায় না করে বরং হুকমে খাস তথা রাসূল (ﷺ) এর হুকুমকে প্রধান্য দিলেন। এর থেকে প্রকাশ্য ভাবে এটিই প্রতিয়মান হয় যে, ঐখানে কতেক সাহাবীর হুকুমে আ’ম তথা আল্লাহ তাআলার হুকুম ফওত হয়েছে আর কতেক সাহাবীর হুকুমে খাস তথা রাসূল (ﷺ) এর হুকুম ফওত তথা বাদ পড়েছে। যখন হুযুর (ﷺ) এটি জানতে পারেন তখন কোন পক্ষকেই দোষারূপ করেননি। ২৫২
➥২৫২. বুখারী শরীফ, পৃষ্ঠা ৫৯১, باب مرجع النبى صلى الله عليه وسلم من الاحزاب ।
অতঃপর শাহ ছাহেব বলেন- এটি কঠিন ইজতেহাদী মাসআলার মধ্যে অন্যতম একটি মাসআলা। এটির ফয়সালা দেওয়া খুবই কঠিন ব্যাপার। কেননা যদি হুকুমে খাসকে অগ্রাধিকার দেওয়া হয় তাহলে হুকুমে আ’ম তথা আল্লাহর হুকুম বাদ পড়বে। আর যদি হুকুমে আ’মের উপর আমল করা হয় তাহলে হুকুমে খাস বাদ পড়বে, কাজেই এটির উপর চিন্তা ভাবনা করা আবশ্যক।
তিনি আরো বলেন ردّ شمس এর ঘটনাটি খায়বর যুদ্ধের সময়ে অনুষ্ঠিত হয়। আবার অনেকে এটিকে ভুল বশত খন্দকের যুদ্ধের সময়কার ঘটনা বলেছেন। অথচ এখানে ردّشمس হয়েছিল। আর ঐখানে غروب شمس হয়েছিল। যখন হুজুর (ﷺ) এবং ওমর (رضي الله عنه) সূর্য অস্ত যাওয়ার পর আছরের নামাজ আদায় করেছিলেন। ২৫৩
➥২৫৩. বুখারী শরীফ, পৃষ্ঠা-৮৪ ও ৫৯০।
ইমাম তাহাবী (রহ.) এর ছহীহ হাদীস ردشمس যার উপর হাফেজ ইবনে তাইমিয়্যাহ এর কটাক্ষ ও বিরোধীতার কারণ কি?
উল্লেখ্য যে- হযরত ওলামায়ে আহলে ইলম হতে একথা অস্পষ্ট নয় যে, ردشمس এর ঘটনাটি প্রসিদ্ধ ও মাশহুর। অর্থাৎ ردشمس এর ঘটনাটি হচ্ছে একটি উল্লেখযোগ্য ঘটনা।
ردشمس সম্পর্কে মুহাক্কেকে দাওরান হযরত আল্লামা মুহাদ্দিস কাউছারী এর কিতাব “সিরাতুল হাবী এবং আল্লামা সৈয়্যদ আহমদ রেজা ব-জুনুরী নক্শেবন্দী (رحمة الله) এর “আনোয়ারুল বারী” হতে কিছু জবাব উপস্থাপন করছি। হাফেজ ইবনে তাইমিয়াহ ইমাম তাহাবীর উপর ردشمس হাদীসটি বিশুদ্ধ হওয়ার উপর কটাক্ষ করেছে এবং এমন পর্যন্ত বলে দিয়েছে যে, ইমাম তাহাবী অধিক হাদীস বর্ণনাকারী, ফকীহ ও আলেম হওয়া সত্ত্বেও অপরাপর আহলে হাদীস ও আহলে ইলমের ন্যায় সনদের ক্ষেত্রে যথাযথ অভিজ্ঞতা সম্পন্ন ছিলেন না।
হযরত মাওলানা আনোয়ার শাহ ছাহেব ইমাম তাহাবীর বিশুদ্ধ হাদীসের বিশ্বাস রেখে মূল ঘটনা ঐরকমই বলেছেন। যাহা ইমাম তাহাবী বলেছেন। এর চেয়ে অতিরিক্ত আর কিছু বলেননি। আর হাফেজ ইবনে তাইমিয়াহ এর কটাক্ত যা বিভিন্ন ভাবে হতে পারে।
তবে কতেক আলেম বলেন- ইবনে তাইমিয়াহর বিরোধীতার একটি অন্যতম কারণ এটিও হতে পারে যে, ইমাম তাহাবীর উপর হাফেজ ইবনে তাইমিয়াহর কটাক্ষ অযৌক্তিক ও অগ্রহণযোগ্য খেয়ালে বলেছে। যদিওবা হাফেজ ইবনে তাইমিয়াহ নিঃসন্দেহে একজন বড় আলেম ও হাফেজে হাদীস এবং তার ইলম ও জ্ঞান-গরীমার কথা তার সময়কালের আলেম ওলামারা স্বীকার করেছেন। স্বয়ং মাওলানা আনোয়ার শাহ ছাহেব ও তার প্রশংসা করেছেন।
তবে ইমাম তাহাবী (رحمة الله) এধরণের উঁচু স্তরের মুহাদ্দিস ও আলেমের সামনে এমন ছিল যে, যেমন আল্লামা শওকানী ও ইমাম বুখারী (رحمة الله) এর মধ্যে ছিল।
মুহাদ্দিস আল্লামা কাউছারী (رحمة الله), যিনি যুগের স্বল্প জ্ঞানী লোকদের জ্ঞান দানের জন্য তারিখ ও বেজালের মাধ্যমে বহু সংখ্যক ভুল ও সন্দেহের অবসান করার চেষ্টা করেছেন।
সুপ্রসিদ্ধ মুহাদ্দিস আল্লামা কাউছারী (رحمة الله) তাঁর লিখিত কিতাব سيرت طحاوى এর মধ্যে বর্ণনা করেছেন যে, ইমাম তাহাবী (رحمة الله) সম্পর্কে হাফেজ ইবনে তাইমিয়াহর ঘোর বিরোধীতা ও অপপ্রচার এই জন্য যে, তিনি ردشمس হাদীসকে বিশুদ্ধ করেছেন, যার কারণে হযরত আলী মোরতুজা (رضي الله عنه) বুজুর্গী, কারামাত ও শরাফতের প্রকাশ পেয়েছে। এতে ইবনে তাইমিয়াহর থিউরীর উপর আঘাত হয়েছে। যা তিনি হযরত আলী সম্পর্কে মন্তব্য করেছে। কেননা তাদের উদ্দেশ্য হচ্ছে খারেজী সম্প্রদায়কে প্রভাবিত করা। কারণ মুসলমানদের মধ্যে ফেরকাবন্দী বা দলাদলি খারেজী সম্প্রদায় হতে শুরু হয়েছে এবং মুসলমানদেরকে কাফির, মুশরিক ও বেদাতী তৈরীর ফ্যাক্টরী ও কারখানা তাদের সময়কাল হতে আরম্ভ হয়ে বর্তমান পর্যন্ত কঠিন রূপ ধারণ করে প্রসিদ্ধি লাভ করেছে। এই ফ্যাক্টরী হতে শিরক, বেদাত তৈরী হয়ে ক্রমশঃ মুসলমানদের মধ্যে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হয়ে পড়েছে।
হাদীস শরীফে বর্ণিত রয়েছে- كل اناء يترشح بمافيه অর্থাৎ প্রত্যেক পাত্রে, কিংবা ফ্যাক্টরী ও কারখানা হতে ঐ জিনিস বা বস্তুই বের হয় যা ঐখানে থাকে। অর্থাৎ যেটি ঐখানে তৈরী হয়। পরবর্তীতে ঐ ফ্যাক্টরীর ম্যানেজার ইবনে হাজম হতে ইবনে তাইমিয়াহ এবং ইবনে কাইয়ুম পরবর্তীতে জেনারেল ম্যানেজার আবদুল ওহাব যাকে ওহাবী বলা হয়ে থাকে। সে হেজাজ শরীফের নাম পরিবর্তন করে তার নামে নামকরণ করে। এমনিভাবেই প্রতিটি জিনিসের নাম পরিবর্তন হতে লাগল। অথচ ভাল কাজ সর্বদা ভাল হয়ে থাকে। আর খারাপ কাজ সর্বদা খারাপ হয়ে থাকে। অর্থাৎ খারাপ খারাপই আর ভাল ভালই হয়ে থাকে।
হাফেজ ইবনে তাইমিয়াহ তার ব্যক্তিগত আক্বিদা ও বিভিন্ন মাসআলা যা নিয়ে মুসলমানদের মধ্যে মত পার্থক্যের সৃষ্টি হয়; কাজেই ইবনে তাইমিয়া কি ধরণের মুসলমান?
যেখানে সম্প্রদায়ের মধ্যে আক্বিদার মাসআলা নিয়ে মত-পার্থক্য হয়ে থাকে। আল্লাহর নিয়ম মোতাবেক সেখানে নবী প্রেরণ করে থাকেন, যাতে করে সে সম্প্রদায়ের লোকেরা সঠিক পথের সন্ধান লাভ করতে পারে। সম্ভবত সে খেয়াল মোতাবেক ইবনে তাইমিয়াহ অন্তরালে নবী দাবী করেছে।
যিকিরের বর্ণনা
____________________
যিকিরের বর্ণনা
মাসআলাঃ কেবলমাত্র الله، الله(আল্লাহ্, আল্লাহ্) যিকির করার চেয়ে لَا اِلٰـهَ اِلَّا اللهُ (লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ্) যিকির করা উত্তম। এমনকি هُوْ ، هُوَ ، هِـىَ (হু, হুয়া, হিয়া) থেকেও উত্তম। কেননা لَا اِلٰـهَ اِلَّا اللهُ ইহা নফী ও ইচ্বাত তথা না ও হাঁ এর সমষ্টি এবং অধিক জ্ঞান তথা ইলম ও মারেফাতের ধারক ও পরিপূর্ণতা।
জ্ঞাতব্য যে, لَا اِلٰـهَ اِلَّا اللهُ এর যিকিরের উপর অধ্যবসায়ী ও স্থায়ী হওয়া আবশ্যক।
প্রকৃতপক্ষে কালেমায়ে তাওহীদ ওজন যোগ্য নয় অর্থাৎ যা মাপা যাবেনা। কেননা প্রকৃত কালেমায়ে তাওহীদ ওজন দেয়ার অনুরূপ কোন বাটকারা (তথা সমপরিমাণ কোন বস্তু) নাই। ليس كمثله شئ অর্থাৎ কোন কিছুই তাঁর অনুরূপ নয়। ২৫৪
➥২৫৪. সূরা আশ্শূরা, আয়াত-১১।
যদি তাওহীদে রস্মী তথা প্রথা উদ্দেশ্য হয় তাহলে এটি ওজনযোগ্য হবে, এ জন্যই যে ইহার জিদ্ তথা বিপরীত পাওয়া যায়। ২৫৫
➥২৫৫. তাফসীরে ফুয়ুজুর রহমান, পারা-২৬, পৃষ্ঠা-১৪৪-১৪৫।
উস্তাদ ও পীর-মুর্শিদের আলোচনায় আপত্তি না করার বর্ণ
____________________
উস্তাদ ও পীর-মুর্শিদের আলোচনায় আপত্তি না করার বর্ণনা
মাসআলাঃ আলেম, উস্তাদ, শাইখ কিংবা পীরের আলোচনার মধ্যে ই’তেরাজ তথা আপত্তি না করা আবশ্যক।
হযরত খিযির আলাইহিস্ সালাম ও হযরত মুসা আলাইহিস্সালামের মধ্যকার সফরকালীন সময়ে ঘটমান কিশ্তির তখ্তা খুলে ফেলা এবং একটি বালককে কতল করা বাহ্যিক দৃষ্টিতে কাজগুলো খারাপ, ফাসেদ ও অন্যায় ছিল। কিন্তু এ কাজগুলো বাস্তবিক পক্ষে ছহীহ ও শুদ্ধ ছিল। পরবর্তীতে এই কাজগুলোর হেকমত জানানো হয়েছিল। এ জন্যই হযরত খিজির আলাইহিস্সালাম বলেছেন- وما فعلته عن امرى অর্থাৎ আমি নিজ মতে এটা করিনি। ২৫৬
➥২৫৬. সূরা আল্-কাহাফ, আয়াত-৮২।
মাসআলাঃ হযরত খিজির আলাইহিস্ সালাম নবী এবং রাসূল ছিলেন। একজন নবী অপর নবীর নিকট হতে ইলম তথা জ্ঞান অর্জন করা জায়েয ও দুরস্ত। এটি ছাড়া বাকী অন্য সকল আক্বীদা বাতেল। অপরাপর নাস্তিক ও পদচ্যুতদের যে আক্বীদা তা সবই বাতেল।
আসহাবে আয়কাহ এর বর্ণনা
____________________
আসহাবে আয়কাহ এর বর্ণনা
মাসআলাঃ
وَإِنْ كَانَ أَصْحَابُ الْأَيْكَةِ لَظَالِمِينَ . فَانْتَقَمْنَا مِنْهُمْ وَإِنَّهُمَا لَبِإِمَامٍ مُبِينٍ (سورة الحجر،৭৮-৭৯)
অর্থ: এবং নিশ্চয় গহীন বনের অধিবাসীরা অত্যাচারী ও পাপী ছিল। অতঃপর আমি তাদের কাছ থেকে প্রতিশোধ নিয়েছি এবং নিশ্চয় উভয় (ধ্বংস হওয়া বস্তি) বস্তি প্রকাশ্য রাস্তার উপর অবস্থিত। ২৫৭
➥২৫৭. সূরা আল্-হিজর, আয়াত: ৭৮-৮৯।
আসহাবে আয়কাহ্ হযরত শোয়াইব আলাহিস্ সালাম’র বংশধর ও গোত্র। আল্লাহ্ তাআলা তাদেরকে আল্-আয়কাহ’র সাথে সম্পৃক্ত করেছে। আর আল্-আয়কাহ দ্বারা উদ্দেশ্য হচ্ছে ঐ বাগান যাতে প্রচুর পরিমান গাছ হয়ে থাকে। আল্লাহ্ তাআলা তাদেরকে নেয়ামত দানের কথা উল্লেখ করেছেন। কিন্তু তারা আল্লাহ তাআলার প্রদত্ত নেয়ামতের শুকরিয়া ও কৃতজ্ঞতা আদায় করেনা। যখন হযরত শোয়াইব (عليه السلام) তাদের নিকট এসে তাওহীদের দাওয়াত দিলেন তারা তা গ্রহণ না করে বিপরীত পন্থা গ্রহণ করে।
পরিমাপের (ওজনের) মধ্যে মানুষের উপর জুলুম প্রত্যাহার করার জন্য তাদেরকে উপদেশ তথা তাগীদ দেন এবং উক্ত অন্যায় ও জুলুম থেকে ফিরে আসার জন্য কঠোরভাবে নিষেধ করেন। কিন্তু তারা حقوق الله، حقوق العباد (আল্লাহ্ ও বান্দার হক) প্রসঙ্গে নিজ অন্যায়ের উপর স্থির থাকার কারণে আল্লাহ তাআলা এখানে তাদেরকে ظالمين (অত্যাচারী) শব্দ দ্বারা উল্লেখ করেছেন।
মাসআলাঃ
وَإِنْ كَانَ أَصْحَابُ الْأَيْكَةِ لَظَالِمِينَ . فَانْتَقَمْنَا مِنْهُمْ وَإِنَّهُمَا لَبِإِمَامٍ مُبِينٍ (سورة الحجر،৭৮-৭৯)
এখানে “আসহাবে আয়কা” বলতে কাদেরকে বুঝানো হয়েছে?
উল্লেখ্য যে, اصحاب الايكة বলতে জঙ্গল তথা বনাঞ্চলবাসী, যারা জঙ্গলে বসবাস করে। অর্থাৎ এমন কাউম তথা গোত্র যারা গাছের স্তুপ তথা গাছের ঢালের নিকট অবস্থান করত। আর এই জায়গাটি মাদায়েনে অবস্থিত।
উক্ত সম্প্রদায়ের নিকটও মহান আল্লাহ তাআলা হযরত শোয়াইব আলাইহিস্সালামকে প্রেরণ করেছেন। কতক লোক বলে থাকে যে- আসহাবে মাদায়েন ও আসহাবে আয়কা পৃথক পৃথক সম্প্রদায় ছিল। আবার কারো মতে তারা উভয়ই একই সম্প্রদায় ভুক্ত ছিল। তাদের র্শিক জনিত অপরাধ ছাড়াও ব্যবসায়-দূর্নীতি ও কারচুপি, ওজনে কম-বেশী করা ইত্যাদি বদ অভ্যাস সমূহ তাদের মধ্যে বিদ্যমান ছিল।
আহলে মাদায়েন ও মাদায়েন অঞ্চলঃ হিজাজ হতে শাম এবং ফিলিস্তিন ও ইরাক হতে মিসর পর্যন্ত যে ব্যবসায়ী রাস্তা ছিল যেটি লুত সম্প্রদায়ের ধ্বংস্তুপ অঞ্চলে ঐ রাস্তা বিদ্যমান ছিল। ঐ স্থানের কিছু নিম্নে হযরত শোয়াইব (عليه السلام) এর সম্প্রদায়ের বাসস্থান ছিল। উভয় সম্প্রদায়ের লোকেরা রাস্তায় চলাচলের সময় আসহাবে আয়কা সম্প্রদায়কে দৃষ্টিগোচর হয়।
মাসআলাঃ ওয়াদীয়ে হাজর লোক বলতে কাউমে ছামুদ উদ্দেশ্য। যাদের নিকট হযরত ছালেহ (عليه السلام)কে প্রেরণ করা হয়েছিল। আর এখানে একজন রাসূলের স্থানে কয়েকজন রাসূলের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। ইহা এই জন্য বলা হয়েছে যে, সকল রাসূলের মূল শিক্ষা পদ্ধতি ও নিয়ম-নীতি অভিন্ন। অতএব একজন রাসূলকে মিথ্যারোপ করা হচ্ছে সকল রাসূলকে অমান্য ও মিথ্যারোপ করার সমতুল্য।
আসহাবে আয়কা درخت گنجان তথা বৃক্ষ স্তুপকে বলা হয়। আল্লাহ্ তাআলার একত্ববাদে শিরক করা এবং অংশীদারিত্বের দিকে আকৃষ্ট করা এবং ওজনে কম করা এবং হযরত শোয়াইব (عليه السلام)কে মিথ্যারোপ করা। অর্থাৎ اصحاب الايكة যেমন আমাদের এখানে বান্দরবান, সুন্দরবন, রাঙ্গামাটি ইত্যাদি সমতুল্য এলাকাসমূহ।
কিয়ামতের সর্বশেষ আলামত
____________________
কিয়ামতের সর্বশেষ আলামত
বর্ণিত আছে যে, মানব জাতির সর্বশেষ সন্তান যার পরে আর কোন সন্তান ভূমিষ্ঠ হবে না। সে সন্তানটি চীন দেশে জন্মগ্রহণ করবে। অর্থাৎ সর্বশেষ সন্তান চীন দেশে ভূমিষ্ঠ হবে। আর যখন সন্তান ভূমিষ্ঠ হওয়ার (জন্মগ্রহণের) ছিলছিলা বন্ধ হয়ে যাবে অর্থাৎ যখন সকল পুরুষ-মহিলা বাঁঝা (বন্ধ্যা) হয়ে যাবে এমতাবস্থায় তাদেরকে ইসলামের দাওয়াত দিলে তারা সে দিকে কর্ণপাত না করে ইসলামের দাওয়াত কবুল করবে না। আর সন্তান ভূমিষ্ঠ বন্ধ হওয়ার ছিলছিলা সারা বিশ্বে বিস্তৃতি হয়ে যাবে। অর্থাৎ বিশ্বব্যাপী সকল পুরুষ-মহিলা বাঁঝা হওয়ার দরুন সন্তান ভূমিষ্ঠ বন্ধ হয়ে যাবে। সে সময় আল্লাহ্ তা’আলা মুমিন নর-নারীদের মৃত্যুবরণ করাবেন। এক কথায় সকল মুসলমান পুরুষ ও মহিলা আল্লাহর হুকুমে মারা যাবে। এর পরবর্তী লোকগণ জানোয়ার তথা পশুর ন্যায় হয়ে যাবে। যাদের মধ্যে হালাল-হারাম পার্থক্য থাকবে না, অতঃপর কিয়ামত কায়েম হবে এবং পৃথিবী ধ্বংস ও নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে। তারপর সমস্ত কিছু পরকালের দিকে পরিবর্তিত হয়ে যাবে।
জনৈক কবি বলেন-
(ا) مدارنظم امورجهاں انسانست * جميع اهل جهاں جسم وجان انسانست .
(২) فنائے عالم صورت برحلتش مربوط * مقام بودسما اوت كرد بارض هبوط .
অর্থাৎ (১) সকল বিষয় সমূহের নিয়ম-নীতির কেন্দ্র ও ভিত্তি হচ্ছে মানব, সারা বিশ্বের বাসিন্দা মানব জাতির শরীর ও রূহ।
(২) দৃশ্যমান পৃথিবী ধ্বংস হওয়াটা তার কোচ তথা স্থানান্তরের সাথে সম্পৃক্ত। আসমান স্থীর থাকাটা জমিনের সাথে সম্পৃক্ত। কাজেই যখন ঐটা না হবে, এটাও হবে না। কেননা একটার সাথে অপরটা অতোপ্রতো ভাবে জড়িত।
মাসআলাঃ ফতোয়া দেওয়া এটি কোন ছেলে খেলা নয়, যে কোন ব্যক্তিকে ফতোয়া প্রদানের উপযুক্ত মনে করা এবং যাকে-তাকে ফতোয়া প্রদানের অনুমতি দেওয়া।
মাসআলাঃ চোরিকৃত মাল তথা জিনিস-পত্র ক্রয় করা জায়েয নাই। কেননা এর মাধ্যমে জালেম তথা চোরকে সাহায্য ও উৎসাহিত করার শামিল হবে।
আউলিয়ায়ে কেরামদের তোফায়েলে পৃথিবী স্থায়ী থাকা
____________________
আউলিয়ায়ে কেরামদের তোফায়েলে পৃথিবী স্থায়ী থাকা
সুপ্রসিদ্ধ ধর্মীয় গ্রন্থ ‘ফতুহাতে মক্কীয়া’র মধ্যে বর্ণিত রয়েছে যে, প্রতিটি দেশ, শহর কিংবা গ্রাম তথা অঞ্চলে কোন একজন আল্লাহর অলি হওয়া আবশ্যক। যাদের বদৌলতে আল্লাহ্ তা’আলা উক্ত দেশ, শহর, কিংবা গ্রাম হেফাজত ও নিরাপদ রাখেন। তথাকার বাসিন্দা মুমিন হোক অথবা কাফির হোক। ২৫৮
➥২৫৮. তাফসীরে রুহুল বায়ান, সূরা ফাতির, আয়াত-৪১, পারা-২২, পৃঃ ৫৪৯।
হযরত নূহ (আ:)’র সন্তানগণের নাম
____________________
হযরত নূহ (আ:)’র সন্তানগণের নাম
মাসআলাঃ হযরত নূহ (عليه السلام)’র সাহেবজাদা হচ্ছে- তিন জন। তারা হলেন- (১) সাম (২) হাম (৩) এয়াফস। এই তিন জনের মধ্যেই তার সাতটি রাজ্য বন্টন করেন।
সামকে হেজাজ, ইয়ামন এবং শাম শহর কন্টন করেন। এ জন্যই তাকে আবুল আরব বলা হয়।
ইহামকে- সুদান তথা আফ্রিকা শহর দান করে। এজন্যই তাকে আবুস্ সুদান বলা হয়।
এয়াফস্কে পূর্বাঞ্চল তথা এশিয়া শহর দান করেন। এজন্য তাকে আবুর্তুক বলা হয়।
ঈমান, আক্বীদা ও রূহানী ফিতনা থেকে হেফাজতের বর্ণনা
____________________
ঈমান, আক্বীদা ও রূহানী ফিতনা থেকে হেফাজতের বর্ণনা
মাসআলাঃ ফিতনা-ফাসাদ হতে দূরে সরে থাকা এটি দ্বীনের অন্তর্ভূক্ত এবং আম্বিয়া আলাইহিস্সালামের সুন্নাত। যদিওবা এক বিঘত পরিমাণ হউক। যেখানে ঈমান, আক্বীদা, নির্ভেজাল রূহানিয়াত ও বুজুর্গানে দ্বীনের মূল ভিত্তির পরিপন্থী পরিলক্ষিত হবে ঐখান থেকে সঠিক ঈমান-আক্বীদার হেফাজতের লক্ষে দূরে সরে যাওয়া আবশ্যক।
আল্লাহপাক সকলের ঈমান-আক্বীদা হিফাজত করুন।
বুখারী শরীফ ১ম খণ্ডে বর্ণিত রয়েছে- অর্থাৎ- অতিসত্ত্বর মুসলমানগণের সর্বোত্তম সম্পদ ছাগল হবে, যা নিয়ে তারা পাহাড়ের চুড়ায় অথবা পাহাড়ের কলবে গিয়ে জীবন যাপন করবে, যাতে করে সঠিক দ্বীন ঐ সময়ের ফিতনা-ফাসাদ থেকে হিফাজত থাকে।
সার্বজনীন ভাবে দ্বীনের উপকার ও লাভের দিকে খেয়াল করে সামাজিক জীবন-যাপন করা ইসলামের মধ্যে সর্বোচ্চ পছন্দনীয়। আর এটিই হচ্ছে হযরাত আন্বিয়া আলাইহিস্সালামের ত্বরিকা ও নিয়ম যাতে সংশোধিত ভাবে জীবন-কাল অতিবাহিত করতে পারে। ২৫৯
➥২৫৯. বুখারী শরীফ, ১ম খণ্ড।
টাই বাঁধার বর্ণনা
____________________
টাই বাঁধার বর্ণনা
মাসআলাঃ টাই এক সময় খৃষ্টানের নিদর্শন ছিল, সে সময় উহার হুকুমও কঠোর ছিল। এখন খৃষ্টান ছাড়া অন্যরাও অনেক ব্যবহার করে, নামায, রোযার পাবন্দ লোকেরাও ব্যবহার করে এখন উহার হুকুম হালকা হওয়া উচিত, যুগের পরিবর্তনের দরুণ হুকুমও পরিবর্তন হয়ে যায়, অতএব, উহা মাকরূহ সহকারে জায়েয, মাকরূহ কঠোর নয় বরং হালকা। যে স্থানে উহার ব্যবহার ব্যাপক হয়ে যায়- ঐ স্থানে নিষেধের উপর জোর দেয়া যাবে না।
কাককে বদ্দোয়া এবং কবুতরকে পুরস্কৃত করার বর্ণনা
____________________
কাককে বদ্দোয়া এবং কবুতরকে পুরস্কৃত করার বর্ণনা
মাসআলাঃ তাফসীর গ্রন্থে বর্ণিত রয়েছে যে, হযরত নূহ আলাইহিস্সালাম এর আমলে তুফানের সময় কিশ্তিতে আরোহণ করার পর যখন কিশ্তি যুদি পাহাড়ের উপর স্থীর হলো, তখন তিনি কিশতির সে কক্ষটি খুলল, যে কক্ষে পাখীসমূহ রয়েছিল। তিনি কাককে বললেন- তুমি জমিনে গিয়ে দেখে আস পানি কি পরিমাণ অবশিষ্ট আছে। (অর্থাৎ বন্যার পানি কতটুকু কমছে, তা দেখে আস) অথবা শহরের অবস্থা কেমন বা শহর কি পরিমাণ ধ্বংস হয়েছে। কাক নির্দেশ প্রাপ্তি হয়ে জমিনে যাওয়ার পর একটি মৃত জন্তু পেল, কাক সে মৃত জন্তু খেতে আরম্ভ করল, এমনকি নূহ (عليه السلام)’র নির্দেশের কথা পর্যন্ত ভুলে গেল। কাক আর ফিরে গেল না। ২৬০
➥২৬০. তাফসীরে আবিল লাইচ ও হায়াতুল হাইওয়ান।
এ জন্যই আরবে একটি প্রবাদ বাক্য রয়েছে- ابطاء من غراب অর্থাৎ- অমূক ব্যক্তি কাকের চেয়েও বেশী দেরী করছে। যেহেতু নূহ (عليه السلام) জমিন কি পরিমাণ শুষ্ক ও শক্ত হয়েছে তা জানার জন্য কাককে পাঠিয়েছে, কাক আসতে দেরী করায় তিনি কবুতরকে পাঠালেন পানি কতটুকু কমেছে তা দেখার জন্য। কবুতর গিয়ে জমিনের কোন অংশ তার নজরে পড়ল না। অর্থাৎ কবুতর গিয়ে দেখল জমিন এখনো পানির নিচে। তাই কবুতর যয়তুন গাছের একটি পাতা নিয়ে নূহ (عليه السلام)’র নিকট উপস্থিত হলো। তা দেখে তিনি বুঝতে পারলেন যে- পানি কমে গেছে, যদ্দরুন গাছ-গাছালি দেখা যাচ্ছে। তবে পানি সম্পূর্ণ ভাবে এখনো কমেনি।
শুধুমাত্র গাছের আগা দেখা যাচ্ছে। কিছুদিন পর পূনরায় কবুতরকে পাঠালেন জমিনে পানি কমেছে কিনা আর পানি কমলেও মাটি শুষ্ক হয়েছে কিনা তা দেখার জন্য। কবুতর জমিনে বসল তাতে তার পা কাদার মধ্যে ঢুকে গেল। ঐ অবস্থায় নূহ (عليه السلام)-এর দরবারে কবুতর উপস্থিত হলে কবুতরের পায়ে কাদা মাটির চিহ্ন দেখে তিনি বুঝতে পারলেন, জমিনে পানি নাই, তবে মাটি এখনো শুকনো হয়নি। কবুতরের আসা-যাওয়াতে নূহ (عليه السلام) খুব বেশী খুশি হয়ে দোয়া করলেন, কবুতরের গলায় সবুজ রঙের মালা পরিধান করালেন, তাঁর দোয়ার বদৌলতে কবুতরের গলা সুন্দর ও তার কন্ঠও সুমধুর। আর কবুতরের নিরাপত্তা ও শান্তির জন্য দোয়া করেন, যার কারণে কবুতরকে লোকেরা খুব পছন্দ করে ও লালন-পালন করে। আর অপর দিকে কাককে বদ্দোয়া করার কারণে লোকেরা কাককে ঘৃণা ও হিংসা করে এবং মনহুচ মনে করে। ২৬১
➥২৬১. তাফসীরে রূহুল বায়ান।
বিবিধ
____________________
বিবিধ
মাসআলাঃ হযরত সৈয়্যদা ফাতেমা বিনতে রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর পবিত্র শান ও মান-মর্যাদা সম্পর্কে স্বয়ং হুযূর মোস্তফা (ﷺ) ইরশাদ করেন,
‘আমার সাহেবজাদী ফাতেমা (رضي الله عنه) হচ্ছেন, মানব হুর। সাধারণ মহিলারা রক্তস্রাবের কারণে যে অপবিত্র হয়ে থাকে, তিনি তা হতে পাক-পবিত্র। আল্লাহপাক তাঁর নাম ফাতেমা এ জন্য রেখেছেন যে, আল্লাহ্ তা‘আলা তাঁর সাথে ভালবাসা ও মুহাব্বত স্থাপনকারীদেরকে দোযখের আগুন থেকে মুক্তি দান করেছেন।’ ২৬২
➥২৬২. আল-আমান ওয়াল ‘উলা।
উক্ত হাদীসখানা খতীবে বাগদাদী (رحمة الله) হযরত ইবনে আব্বাস (رضي الله عنه) হতে বর্ণনা করেছেন। উক্ত বর্ণনা হতে একথা প্রতীয়মান হয় যে, সৈয়্যদা হযরত ফাতেমা (رضي الله عنه) মানবীয় হুর। ২৬৩
➥২৬৩. সীরাতে মোস্তফা জানে রহমত, খণ্ড-৩, পৃষ্ঠা-২১৪।
মাসআলাঃ হযরত সৈয়্যদাতুনা বতুল ফাতিমাতুয যাহরা (رضي الله عنه)-এর পবিত্র আওলাদগণ হচ্ছেন ‘আহলে বাইত’। অতঃপর হযরত আলী (رضي الله عنه), হযরত আকীল (رضي الله عنه) এবং হযরত জাফর সাদেক (رضي الله عنه) ও হযরত আব্বাস (رضي الله عنه)-এর বংশধরেরা ‘আহলে বাইত’। উম্মুহাতুল মু’মিনীন রিদওয়ানুল্লাহি তা‘আলা আজমাইনরা হচ্ছেন আহলে বাইত। ২৬৪
➥২৬৪. ইরফানে শরীয়ত, খণ্ড-১; সীরাতে মুস্তফা জানে রহমত, খণ্ড-৩, পৃষ্ঠা-২১৬।
মাসআলাঃ পৃথিবীতে অধিক খাদ্য ভক্ষণকারী জন্তু। হাদিস শরীফের মধ্যে বর্ণিত আছে- আল্লাহ্ তা’আলার সৃষ্টি জগতে এমন একটি জন্তুও রয়েছে। যেটি সমগ্র সৃষ্টি জগতের খাদ্য একাই প্রতিদিন খেয়ে থাকেন। অর্থাৎ অপরার সৃষ্টি যেমন- জ্বীন, ইনসান, পশু-পাখি, তথা যমিনে বিচরণকারী সৃষ্টি ইত্যাদি যে পরিমাণ খাদ্য প্রতিদিন খেয়ে থাকে ঐ জন্তুটি একাই একদিন সে খাদ্য খেয়ে থাকে।
মাসআলাঃ মৃত্যু কামনা করা মাকরূহ। ২৬৫
➥২৬৫. দুররে মুখতার।
মাসআলাঃ ময়্যত তথা মৃতের পাশে শেষ অবস্থায় সূরা ইয়াসিন ও সূরা ওয়াদ শরীফ পাঠ করা মুস্তাহাব।
মাসআলাঃ দশই মুহররম পবিত্র আশুরা দিবসে নিজ পরিবার-পরিজনকে নিয়ে সন্তোষজনক সহকারে খানা-পানিতে ব্যাপকতা করলে আল্লাহ্ তা’আলা তার পরিবারে পুরো বছর রিযিকের মধ্যে প্রশস্ততা দান করবে।২৬৬
➥২৬৬. আল আস্রারুল মুহাম্মদীয়া।
মাসআলাঃ পবিত্র আশুরা দিবসে ভাল কাজ করা মুস্তাহাব। যেমন- সদকা-খায়রাত, নফল রোযা, যিকির ইত্যাদি।
প্রশ্নঃ খতমে খাজাগান কী বিদআত? বর্ণনা করুন।
মাসআলাঃ
উত্তরঃ খতমে খাজাগান সকল বুযূর্গদের মা’মুল (রীতি)। আশরাফ আলী থানভী এর দরবারেও এ আমল জারী ছিল। এ জন্য উহাকে বিদআত বলাই বিদআত। ২৬৭
➥২৬৭. মুফতী ওয়ালী হাসান বনূরী টাউন করাচী।
খতমে খাজাগান বিদআত নয়, উহাকে বিদআত হিসেবে গণ্য করা বিদআতের হাক্বীক্বত সম্পর্কে জ্ঞানহীনতার দলীল। উহা পাঠকরা না প্রত্যেক ব্যক্তির জন্য আবশ্যক মনে করা হয়, না পরিত্যাগকারীকে তিরিস্কার করা হয়।
অতএব, ইহা একটি বরকতময় ওয়াজীফা হিসেবে পড়া হয়, এজন্য উহাকে বিদআত বলা সহী নয়। এ ওয়াজীফা বন্ধ করা অপ্রয়োজনীয় ও অনুচিত কাজ। ২৬৮
➥২৬৮. বন্দা আবদুস্ সত্তার, মুফতী জামে খায়রুল মাদারিস মুলতান, খায়রুল ফতাওয়া, ২য় খণ্ড, পৃষ্ঠা-২৬৪।
প্রশ্নঃ জ্বীনদের উপর যখন মৃত্যু আসে তখন তাদের অস্তিত্ব বা দেহ কোথায় দাফন করা হয়?
মাসআলাঃ
উত্তরঃ মাওলানা আনওয়ার শাহ কাশমীরী এর মালফুজাতের মধ্যে রয়েছে জ্বীন শূন্য স্থানে বা খালি ময়দানে দাফন হয়। (আল্লাহ ও তাঁর রাসূল অধিকজ্ঞাত)
মাসআলাঃ
প্রশ্নঃ শিশুদের বা বালকদের ইসলাম গ্রহনীয় কি-না? শিশুদের বা বালকদের মুরতাদ বা ধর্ম ত্যাগী হওয়া সহী কি-না?
উত্তরঃ তাঁর নিকট সাহায্য প্রার্থনাকারি। যে শিশু বা বালক জ্ঞানবান হয় তার ইসলাম সহী ও গ্রহণীয় এবং তার মুরতাদ হওয়াও সহী, যেভাবে তার ইসলাম সহী। আর এমন শিশু বা বালক এর উপর মুসলমান হয়ে যাওয়ার জন্য বাধ্য করা হবে, হত্যা করা যাবেনা। মুরতাদের স্ত্রীকে ছাড়িয়ে নেয়া হবে যাতে সে ইসলামের উপর প্রতিষ্ঠিত থাকতে পারে। (আল্লাহ ও তাঁর রাসূল অধিক জ্ঞাত)
মাসআলাঃ ফাসিকদের দাওয়াত কবুল করতে হুজুর (ﷺ) নিষেধ করেছেন। যথা: হযরত ইমরান বিন হোসাইন (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত আছে, রাসূল (ﷺ) ফাসিকের দাওয়াত কবুল করতে নিষেধ করেছেন। ২৬৯
➥২৬৯. মিশকাত শরীফ।
মাসআলাঃ ফাসিকের সাক্ষ্যও গ্রহণযোগ্য নয়।
মাসআলাঃ ফাসিকের পিছনে নামায পড়া জায়েয আছে (মাকরূহে তাহরীমী সহকারে) হাদীস শরীফে এসেছে- প্রত্যেক নেক্কার ও বদকারের পিছনে নামায পড়া জায়েয হবে।
মাসআলাঃ ওয়াজকারীর খুতবা বসে পড়া জায়েয আছে, কেননা উহা ওয়াজিব খুতবা নয়।
মাসআলাঃ কবরের আযাব থেকে নিরাপদ থাকার সুসংবাদ জুমার রাত বা দিনে মৃত্যুবরণকারীর জন্য, দাফন হওয়া ব্যক্তির জন্য নয়, হাদীস শরীফে রয়েছে “যে মুসলিম ব্যক্তি জুমার দিনে বা রাতে মৃত্যুবরণ করবে আল্লাহ তায়ালা তাকে কবরের ফিতনা থেকে রক্ষা করবেন।” মুল্লা আলী ক্বারী (رحمة الله) বলেন- কবরের ফিতনা দ্বারা উদ্দেশ্য হল- কবরের আযাব ও প্রশ্ন। ২৭০
➥২৭০. মিরকাত শরহে মিশকাত, বাবু আযাবিল কবর, ২য় খণ্ড, পৃষ্ঠা-১১২।
মাসআলাঃ সামুদ্রিক জাহাজে জাহাজের কর্মচারী ক্যাপ্টেনের তা’বি (অনুসারী)।
মাসআলাঃ হুজুর মুস্তফা (ﷺ) এর নিকট প্রত্যেক উম্মতের অবস্থা পেশ করা হয়। হযরত আনাস (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন- রাসূল (ﷺ) ইরশাদ করেন আমাকে আমার উম্মতের ঐ সমস্ত আমল দেখানো হয়েছে যা আল্লাহর নিকট সাওয়াব হিসেবে গণ্য। এমন কি মসজিদ থেকে বের করে নিক্ষেপ করাও আমি ঐ আমল সমূহের মধ্যে দেখেছি, আবু দাউদ, তিরমিযী আর ইবনে খুজাইমা এ হাদীসকে সহী বলেছেন। অপর এক হাদীসে এসেছে- হুজুর (ﷺ) ইরশাদ করেছেন- আল্লাহ তায়ালার যে সমস্ত ফেরেশতা কার্যাবলী পরিচালনার দায়িত্বে নিয়োজিত থাকে তারা উম্মতে মুহাম্মদীর সমস্ত অবস্থা গোপন ও প্রকাশ্য সমস্ত অবস্থা হুজুর মুস্তফা (ﷺ)কে জানিয়ে দিতেন। ২৭১
➥২৭১. আবু দাউদ ও তিরমিযী।
মাসআলাঃ “কাবা শরীফের সম্মানের চেয়ে মু’মিনের সম্মান উত্তম” এ বাণীটি শুদ্ধ কিনা?
এটা হাদীস শরীফ ইবনে ওমর এর সনদে, কাবা শরীফ থেকে মু’মিন অধিক সম্মানের পাত্র, ইবনে ওমর (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত, নিশ্চয় রাসূল (ﷺ) ইরশাদ করেন- মক্কা শরীফের সম্মানের চেয়ে আল্লাহর নিকট মু’মিনের সম্মান অধিক। নিশ্চয় আল্লাহ্ তায়ালা মু’মিনের রক্ত (জীবন) সম্পদ, সম্মান ও মন্দ ধারণা হারাম করেছেন। ২৭২
➥২৭২. তাময়ীজুত্বতায়্যিব, পৃষ্ঠা ১৮০।
“নেক বান্দাগণের নিকট যা সৎকর্ম তা নৈকট্য প্রাপ্ত বান্দা গণের নিকট মন্দ কর্ম হিসেবে বিবেচিত” এটা হাদীস? যদি হাদীস হয় তাহলে কোন কিতাবে উল্লেখ আছে কিংবা কার বাণী?
এটা আবু সাঈদ র্খারাজ (رضي الله عنه) এর বাণী, এটা হাদীস নয়। ২৭৩
➥২৭৩. তাময়ীজুত্বতায়্যিব, পৃষ্ঠা ৭০।
মাসআলাঃ হাজরে আসওয়াদ আল্লাহর ডান হাত, ইবনে আব্বাস (رضي الله عنه) থেকে তাবরানী এ হাদীসটি বর্ণনা করেছেন।
মাসআলাঃ হাজরে আসওয়াদ জান্নাত থেকে আগত, ইবনে আব্বাস (رضي الله عنه) থেকে সহী হাদীসটি ইমাম নাসায়ী (رضي الله عنه) বর্ণনা করেছেন।
মাসআলাঃ ‘রিয়া শিরকে আসগর’- সাদ্দাদ বিন আউস (رضي الله عنه) থেকে তাবরানী এ হাদীসটি বর্ণনা করেছেন।
মাসআলাঃ রজব আল্লাহর মাস, শা’বান আমার মাস, আর রমযান হল আমার উম্মতের মাস, হযরত আনাস (رضي الله عنه) থেকে মারফু হিসেবে দায়লমী এ হাদীসটি বর্ণনা করেছেন।
মাসআলাঃ যে ব্যক্তি প্রসিদ্ধ লাভের জন্য পোশাক পরিধান করবে- কিয়ামতের ময়দানে আল্লাহ্ তায়ালা তাকে অপমানের পোশাক পরিধান করাবেন। আহমদ আবু দাউদ এবং ইবনে মাযা হাসান সনদে ইবনে ওমর (رضي الله عنه) মারফু হিসেবে বর্ণনা করেছেন।
মাসআলাঃ তোমরা মু’মিনের তীক্ষ্ম দৃষ্টিকে ভয় কর কেননা সে আল্লাহর নূর দিয়ে দেখেন। তিরমিযী ও অন্যান্য হাদীস বিশারদগণ আবু সাঈদ খুদরী (رضي الله عنه) থেকে মারফু ত্বরীকায় বর্ণনা করেছেন। ২৭৪
➥২৭৪. তাময়ীজুত্বতায়্যিব, পৃষ্ঠা ৯।
আকাঈদ ও আ’মালের ক্ষেত্রে মুরতাদ এর হুকুম
____________________
আকাঈদ ও আ’মালের ক্ষেত্রে মুরতাদ এর হুকুম
মাসআলাঃ মুরতাদ এর যবেহকৃত প্রাণীর মাংস আহার করা হালাল নয়। কেননা মুরতাদের কোন মযহাব নেই। মুসলমান যদি কুফরী শব্দ বলে দ্বীন ও মিল্লাতকে গালি দেয় এবং বাজারী ভাষা (অসভ্য) ব্যবহার করে হারামকে হালাল মনে করে তখন সেও মুরতাদ হয়ে যায়। “বরং তাদের অধিকাংশ লোক গাফেল।”
মাসআলাঃ হযরত সায়্যিদুনা আবু মূসা আশয়ারী (رضي الله عنه) বর্ণনা করেন যে, রাসূল (ﷺ) বলেছেন- ক্ষুধার্তকে আহার করাও রোগীর সেবা কর এবং বন্দিকে মুক্তি দাও।২৭৫
➥২৭৫. সহীহ বুখারী।
মাসআলাঃ হযরত ইমরান বিন হোসাইন (رضي الله عنه) এর বর্ণনা, আমি ও রাসূল (ﷺ) এর অন্য সাহাবা হুজুর (ﷺ) এর সাথে সফরে ছিলাম। আমাদেরকে অধিক পিপাসায় কাতর করে দিয়েছে, হযরত রাসূলে করীম (ﷺ) ঐ মহিলাকে ডেকে পাঠালেন- যার কাছে ঐ উট ছিল যে উটে দুই তোষক পানি ছিল। উক্ত মহিলাকে আনা হয়েছে। রাসূলের সাহাবারা উহা থেকে পানি নিয়েছে, উক্ত তোষকে যে পানি ছিল উহা বেড়ে যাচ্ছে, অতপর হুজুর (ﷺ) সাহাবায়ে কেরামদেরকে নির্দেশ দিলেন তাদের তোষক আনার জন্য হুজুর (ﷺ) তাদের তোষকও ভরে দিলেন।২৭৬
➥২৭৬. সুনানে বায়হাকী, ১০ম খণ্ড, ৩ পৃষ্ঠা।
মাসআলাঃ যদি স্ত্রী অসুস্থ হয় তাহলে স্ত্রীর চিকিৎসা করানো স্বামীর উপর আবশ্যক কিনা, এ মাসয়ালার ব্যাপারে ওলামায়ে দ্বীনের বক্তব্য কি?
(উত্তর) আল্লাহর কাছেই সাহায্য প্রার্থী, স্ত্রীর চিকিৎসা করানো কোন অবস্থাতেই ওয়াজিব নয় হ্যাঁ, অবশ্য ভদ্রতা বা মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে চিকিৎসা করানো উচিত, ফাতহুল ক্বদীর, ৪র্থ খণ্ড, পৃষ্ঠা-২০০, কিতাবুন্ নিক্বাহ বাবুন্ নাফক্বা এর মধ্যে উল্লেখ আছে- বক্তার বক্তব্য তার উপর ডাক্তারের ফিস, আল বাহরুর রায়িক, ৪র্থ খণ্ড, পৃষ্ঠা-১৮২ এর মধ্যে আল্লামা ইবনে নুজাইম বলেন- গ্রন্থকার “খরচা” এর শর্তারোপ করেছেন- কেননা স্ত্রীর চিকিৎসা করানো স্বামীর উপর ওয়াজিব হবেনা। অনুরূপভাবে হিন্দিয়া, কিতাবুন্ নিকাহ, বাবুন্ নাফক্বা এর মধ্যেও উল্লেখ আছে।
মাসআলাঃ তাওবা করার দরুণ যিনার শাস্তি রহিত হয় না।২৭৭
➥২৭৭. ফতওয়ায়ে ক্বেনিয়া।
মাসআলাঃ তাওবার দরুণ শাস্তি রহিত হয়না।
মাসআলাঃ সালামের উত্তর ফরযে আমলী অর্থাৎ ওয়াজিব।
মাসআলাঃ মাথা ঢেকে পায়খানায় যাওয়া সুন্নাত, খুলা মাথায় পায়খানায় গেলে সুন্নাতের উপর আমল হবেনা।২৭৮
➥২৭৮. মি’রাত, ১ম খণ্ড, পৃষ্ঠা-১৭৮।
মাসআলাঃ যে সমস্ত লোকদের নাম আবদুর রহমান, আবদুর রহীম, আবদুল কুদ্দুস, আবদুল ক্বাদির ইত্যাদি সিফাতে ইলাহীর নামের সাথে নাম রাখা হয়েছে তাকে শুধু কুদ্দুস, ক্বাদীর, রহমান, রহীম ইত্যাদি বলে ডাকা, আহবান করা গুনাহ ও নাজায়েয।
শরহে ফিকহে আকবরে রয়েছে- যে ব্যক্তি কোন সৃষ্টিকে হে কুদ্দুস বলে- এতে নাজায়েয বুঝা যায়। ২৩৮ পৃষ্ঠায়- হ্যাঁ কাউকে সম্মান করে বলা হারাম ও কুফর।
তাবলীগ জামাতের সাথে ঈদের সালাতে কি সাত লাখ নামাজের সওয়াব?
____________________
তাবলীগ জামাতের সাথে ঈদের সালাতে কি সাত লাখ নামাজের সওয়াব?
মাসআলাঃ তাবলীগ জামাতের লোকেরা বলে থাকেন যদি ঈদের নামায নিজের গ্রাম ও এলাকা থেকে বাইরে জামাতের সাথে অন্য জায়গায় ঈদগাহে পড়ে তাহলে উহার সাওয়াব সাত লাখ ঈদের সাওয়াব প্রাপ্ত হবে। ইহা সহীহ হাদীস সমূহ দ্বারা প্রমাণিত আছে কিনা? যদি প্রমাণিত থাকে তাহলে কিতাবের বরাত লিখে দিবেন।
উত্তরঃ আত্তারগীব ওয়াত্তারহীব গ্রন্থে হাফিজ আবদুল আজীম মনজুরী (رحمة الله) হাদীস উল্লেখ করেছেন যে, আল্লাহর রাস্তায় বের হয়ে এক ভাল কাজের সাওয়াব সাত লাখ হয়ে যায়, যখন মানুষ আল্লাহর রাস্তায় বের হয় তখন আল্লাহ তায়ালা যে পরিমাণ সাওয়াব দান করুক তার ভান্ডারে কমতি হবেনা। [আল্লাহ্ তায়ালা অধিক জ্ঞাত]
অমুসলিম থেকে মসজিদের জন্য চাঁদা নেয়া জায়েয আছে কিনা?
____________________
অমুসলিম থেকে মসজিদের জন্য চাঁদা নেয়া জায়েয আছে কিনা?
মাসআলাঃ
উত্তরঃ মুসলিমের মসজিদ বানানোর জন্য হিন্দুদের থেকে চাঁদা চাওয়া বড়ই লজ্জাহীনতা, তাই চাঁদা না চাওয়া উচিত।
মাসআলাঃ রাফেজীদের সভা-সমাবেশে মুসলমানগণ যাওয়া এবং মার্সিয়া তথা শোকগাথা শ্রবণ করা, তাদের পক্ষ হতে নজর-নিয়তের বস্তু গ্রহণ করা হারাম। তাদের নজর-নিয়াজ না নেয়া আবশ্যক। ২৭৯
➥২৭৯. আহকামে শরীয়ত, ১ম খণ্ড।
মাসআলাঃ হাঁচির উত্তরে اَلْحَمْدُلِلهِ رَبِّ العَالَمِيْن (আল্-হাম্দু লিল্লাহি রাব্বিল আ’লামিন) বলা জায়েয নাই। কেবলমাত্র اَلْحَمْدُلِلهِ (আল-হামদু লিল্লাহ) বলবে।
ولو عطش فقال الحمدلله رب العالمين لم يجز . ২৮০
➥২৮০. ছেরাজিয়া, হাশিয়ায়ে ক্বাজী খাঁন, ১ম খণ্ড, পৃষ্ঠা-১০১।
মাসআলাঃ প্রকাশ থাকে যে, মোটা লুঙ্গি পায়ের গোড়ালির উপরে পরিধান করা এটি কোনো হাদীস শরীফের অংশ নয়, বরং সে তথাকথিত রাসূল (ﷺ)-এর সঙ্গে বেআদবীকারী যুল-খুওয়াইছারা যিনি হুযূর নূরে মুজাস্সাম মুস্তফা (ﷺ)’র কার্যক্রমে অসন্তুষ্ট হয়ে রাগান্বিত অবস্থায় চলে গিয়েছিল। তার পরনে ছিল মোটা চাদর বা লুঙ্গি পায়ের গোড়ালি বরাবর। তখন হুযূর (ﷺ) ইরশাদ করেন যে, তার ভবিষ্যৎ বংশধর ও প্রজন্ম থেকে এ ধরনের গোস্তাখ বা বেআদবের জন্ম হবে। তাই বাস্তবিক পক্ষে খারেজী, ওহাবিদের গোস্তাখি ও বেআদবি সে যুল-খুওয়াইছারা থেকে উত্তরাধিকারী সূত্রে পেয়েছে এবং তাদের আকৃতি-প্রকৃতি চাল-চলন, আচার-আচরণ সবই সে রকমই হয়েছে বা ভাগ্যে জোটেছে যে রকম ছিল যুল-খওয়াইছারা বেআদবের। ২৮১
➥২৮১. হযরতুল আল্লামা মুফতি ফয়েয আহমদ ওয়াইসি (রহঃ)’র রচিত- ‘আল-আহাদিসুন নববীয়্যাহ ফি আলামাতিল ওহাবিয়া’ নামক কিতাব হতে।
মাসআলাঃ নামায এমন গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত যে, এতে আল্লাহ্ ও বান্দার মাঝে কোনো পর্দা থাকে না, বরং বান্দা তার মুনিবের দরবারে সরাসরি উপস্থিত হয়ে থাকে। তাই নামাযীর জন্য উত্তম যে, উন্নতমানের পোষাক পরিধান করে যাওয়া অথবা কমপক্ষে এমন পোশাক পরা, যা পরে অন্যান্য সভা-সমাবেশে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে গিয়ে থাকে। তাই তো ফক্বীহগণ বলেছেন যে, পুরানো, অপরিষ্কার পোশাক পরিধান করে নামায পড়া মাকরূহ, নামাযী টুপি রুমাল সঙ্গে নিয়ে মসজিদে যাওয়া উচিৎ। মসজিদে পরিত্যক্ত টুপি পরা মাকরূহ থেকে খালি নয়। শুধুমাত্র গামছা বা রুমাল পরে নামায পড়া মাকরূহ।
মাসআলাঃ লুঙ্গি বা পায়জামা অহংকারের বশীভূত হয়ে গোড়ালির নীচে পরিধান করা মাক্রূহে তাহরীমি। সে কারণে এমতাবস্থায় নামায আদায় করা মাকরূহ, তবে নামায ফাসিদ হবে না। বোখারী শরীফে আছে, ‘লুঙ্গি বা পায়জামার যে অংশ গোড়ালির নীচে ঝুলিয়ে থাকলে পায়ের সে অংশটুকু জাহান্নামের আগুনে দগ্ধ হবে’। (এখানে অংশ বলে পুরো দেহ উদ্দেশ্য এবং তাকাব্বুর বা অহংকার জনিত কারণে মাকরূহ। অহংকার ব্যতীত অন্য কারণে গোড়ালির নীচে ঝুলে পড়লে মাকরূহ হবে না।)২৮২
➥২৮২. সহীহ বুখারী, পোষাক অধ্যায়।
মাসআলাঃ মোহরে ফাতেমী আমাদের দেশে প্রচলিত পরিমাপ অনুসারে একশত বিশ তোলা রোপ্য হয়ে থাকে। যা গ্রামের হিসাব অনুপাতে প্রায় ১৩৮০ গ্রাম হয়। ২৮৩
➥২৮৩. ফতোয়া মাহমুদিয়া, কিতাবুল নিকাহ, খণ্ড-৩, পৃষ্ঠা-২২৬।
মাসআলাঃ উল্লেখ্য যে, শূকর ছাড়া অন্যান্য সকল মৃত প্রাণীর চামড়া দাবাগত করার পূর্বে বিক্রি করা জায়েয নেই। তবে হাড্ডি, চুল, পশম, শিং, লোম ইত্যাদি বিক্রি করার ক্ষেত্রে শরীয়তে অনুমতি রয়েছে।
হেদায়া গ্রন্থে আছে, ‘মৃত প্রাণীর হাড্ডি, পশম, শিরা, শিং, লোম এগুলো বিক্রি করা এবং এগুলো দ্বারা উপকার হাসিল করা বৈধ। কারণ এগুলোতে জীবন না থাকাতে মৃত্যু প্রবেশ করেনা।’
‘তাবইনুল হাক্বাইক্ব’ গ্রন্থে ইমাম যাইলঈ (رحمة الله) বলেছেন যে, ‘তাব্ইনুল হক্বায়েক্ব গ্রন্থে ইমাম যাইলাঈ (رحمة الله) বলেছেন যে, (হাড্ডি, পশম, শিং, লোম, রগ বিক্রি করা ও এগুলো দ্বারা উপকার লাভ করা বৈধ। যেহেতু এগুলোতে জীবন না থাকাতে মৃত্যু প্রবেশ করে না।) মৃত প্রাণীর চামড়া দাবাগতের পূর্বে বিক্রি করা জায়েয নেই। তবে দাবাগতের পরে বিক্রি ও এ দ্বারা উপকার হাসিল করা জায়েয। বাইয়ুল ফাসেদ অধ্যায়ে রয়েছে যে, মৃত্যু প্রাণীর চামড়া দাবাগতের পূর্বে বিক্রি করা জায়েয নেই, তবে পরে জায়েয়। যেমন- হাড্ডি, পশম, শিং ইত্যাদি বৈধ এবং কাযিখান গ্রন্থেও ‘বাইয়ুল বাতিল’ অধ্যায়ে অনুরূপ রয়েছে। ২৮৪
➥২৮৪. তাব্ইনুল হক্বায়েক্ব।
মাসআলাঃ এমন বস্তু যা কোনো প্রকারের পরিবর্তন-পরিবর্ধন ছাড়া বেদ্বীনি বা ধর্মহীনতা এবং পাপাচারের উপকরণ হয়ে থাকে কিংবা অমুসলিমদের জাতীয় নিদর্শন ও পরিচিতি হয়, তা বেঁচা-কেনা করা থেকে বেঁচে থাকা প্রয়োজন ও আবশ্যক। কেননা, ব্যবহারের নিষিদ্ধকরণ ক্রয়-বিক্রয়ের নিষিদ্ধকরণকে আবশ্যক করে, যাতে পাপাচারে সাহায্যকারীদের অন্তর্ভুক্ত না হয়।
আল্লামা শামী (رحمة الله) বলেছেন, ‘যেসব বস্তু স্বয়ং পাপ, তা বিক্রি করা মাকরূহে তাহরিমী, তা না হলে (স্বয়ং পাপ) তানযিহী- পুরুষের জন্য বিক্ষিপ্ত নক্সা বিশিষ্ট পোশাক বিক্রি করা মাকরূহে তানযিহী। কারণ এটি হারাম পরিধানের জন্য সহযোগী, দর্জিকে হুকুম করা চাই, অশ্লীল, ফাসেকী, আকারের সেলাই ত্যাগ করার জন্য, কারণ এটি তার জন্য মাকরূহ। যেহেতু এটি ফিস্ক, ফাসেকী ও মাজুসীদের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ। ২৮৫
➥২৮৫. ফতোয়া শামী, বেচাকেনা অধ্যায়, মাকরূহ পরিচ্ছেদ, খণ্ড-৬, পৃষ্ঠা-৩৯৩।
মাসআলাঃ যদি কোনো মহিলা গর্ভপাত করার জন্য চিকিৎসা করে থাকে, তাতে গর্ভ পরিপূর্ণ আকৃতি বা গঠন হয়ে থাকলে তখন বৈধ হবে না। আর যদি পূর্ণ গঠন না হয়ে থাকে তা হলে বৈধ হবে। তবে আমাদের বর্তমান সময়ে যে কোনো অবস্থায় বৈধ হবে, পূর্ণ গঠনের নমুনা ও নিশানা প্রকাশ হোক বা না হোক। এটার উপর ফতোয়া। যেমন- ‘তাজনীসুল মুলতাক্বাত’ গ্রন্থে বর্ণিত আছে।
ফতোয়া কোবরায় আছে, ‘যতক্ষণ না গর্ভ সম্পূর্ণ হওয়ার নমুনা প্রকাশ না হয়, ততক্ষণ বৈধ হবে। কারণ তখন উক্ত গর্ভকে সন্তান বলা হবে না। গর্ভ পূর্ণ হওয়ার জন্য একশত বিশ দিনের প্রয়োজন।’ ২৮৬
➥২৮৬. দস্তুরুল কুযাত, পৃষ্ঠা-১৭৮।
মাসআলাঃ যদি জমিন মসজিদের জন্য ওয়াক্ফকৃত হয় এবং দোকান মসজিদের অধীনে হয়ে থাকে তা হলে এটি শরয়ী মসজিদ হবে, তা জায়েয। ২৮৭
➥২৮৭. হেদায়া, আলমগীরি, খণ্ড-২, পৃষ্ঠা-৪৫৫, ফতোয়া শামী, খণ্ড-৩, পৃষ্ঠা-৫৭৩; ফতোয়া মাহমুদীয়া, খণ্ড-১, পৃষ্ঠা-৪৯৬।
ফতোয়া শামীতে আছে, ‘ফতোয়া শামীতে আছে যে, ‘বাহারুর রায়েক্ব’ গ্রন্থকার বলেছেন, যার সারমর্ম হলো যে, মসজিদ হওয়ার জন্য উপরের ও নীচের উভয় অংশ মসজিদের হওয়া চায়, যাতে মসজিদের সাথে বান্দার হক্ব সংযুক্ত না থাকে। কুরআনের আয়াতের মর্মানুপাতে إنّ المساجد لله ‘মসজিদসমূহ আল্লাহ্ তা‘আলার জন্যেই’ তবে যদি স্থানটি এমন হয় যে, মসজিদের নীচে ভূ-গর্ভস্থ বা আন্ডারগ্রাউনে দোকান হয়ে থাকে। নামায শুদ্ধ হওয়া মসজিদের স্থিরতার উপর নির্ভর। অতএব এটি এমন হলো যেমন- বাইতুল মুকাদ্দিসের ভূ-গর্ভস্থ তলার মত বা কামরার ন্যায়।
মাসআলাঃ চুলে লাল মেহেদির কলপ লাগানো কোনো প্রকারের মাকরূহ ছাড়া শুদ্ধ ও বৈধ। তবে কালো খিযাব যা চুলের মৌলিক কালোর ন্যায় বুঝা যায় এমন খিযাব মাকরূহে তাহরিমী, তবে মুজাহিদগণের জন্য দুশমন বা শত্রুদেরকে ভীতি প্রদর্শনার্থে জিহাদের অবস্থায় বৈধ। হযরত ইমাম আবু ইউসুফ (رحمة الله)’র মতানুসারে স্ত্রীর সামনে সৌন্দর্য প্রদর্শনের উদ্দেশ্যেও ব্যবহার করার অবকাশ রয়েছে। সম্ভবত কালো খিযাব ব্যবহারকারীরা বর্ণিত উক্তির আশ্রয় নিয়ে থাকেন।
‘যখিরা’ গ্রন্থকার বলেছেন যে, কালো খিযাব জিহাদের সময় মুজাহিদের জন্য শত্রুদের দৃষ্টিতে ভয়ানক প্রদর্শনের জন্য মাহমুদ বা প্রশংসনীয় সকল ইমামের ঐক্যমতে।
স্বীয় স্ত্রীর নিকট সৌন্দর্য্য দেখানোর জন্য কালো হিযাব ব্যবহার করা অধিকাংশ মাশায়েখে কিরামের মতে মাকরূহ। তবে কিছু কিছু ইমামের মতে মাকরূহ ছাড়াই বৈধ। যেমন- হযরত ইমাম আবু ইউসুফ (رحمة الله) হতে বর্ণিত।
তিনি বলেন, তাদের সৌন্দর্য্য বা সাজ-সজ্জা যেমন আমাদের আশ্চর্যান্বিত করে, তেমনি আমাদের সাজ-সজ্জা এবং সৌন্দর্য্যও তাদেরকে আশ্চর্যান্বিত ও আকর্ষণ করে।২৮৮
➥২৮৮. ফতোয়া শামী, খণ্ড-৫; ফতোয়া মাহমুদিয়া, খণ্ড-৫, পৃষ্ঠা-১২৩।
ইমাম আ‘লা হযরত শাহ আহমদ রেযা (رحمة الله) বলেছেন, লাল ও হলদে খিযাব ভাল এবং হলদে উত্তম। কাল হিযাবকে হাদীস শরীফে কাফিরদের খিযাব বলা হয়েছে।
অপর এক হাদীসে আছে যে, কিয়ামত দিবসে আল্লাহ্ তা‘আলা কালো খিযাব ব্যবহারকারীর মুখমন্ডল কৃষ্ণবর্ণের করে দিবেন। সুতরাং এটি হারাম। অতএব জায়েযের ফতোয়া বাতিল ও প্রত্যাখ্যাত। ২৮৯
➥২৮৯. আহকামে শরীয়াত, খণ্ড-১, পৃষ্ঠা-১২৩; রচয়িতা ইমাম আ‘লা হযরত শাহ আহমদ রেযা খান (রহঃ)।
মাসআলাঃ ধুমপান করা মাকরূহ। ধুমপান করে মুখ পরিষ্কার না করে মসজিদে যাওয়া নিষেধ। যাতে এর দুর্গন্ধে অন্যান্য লোকজনের কষ্ট না হয়। ২৯০
➥২৯০. ফতোয়া মাহমুদিয়া, খণ্ড-৫, পৃষ্ঠা-১২২; ফতোয়া শামী, খণ্ড-১, পৃষ্ঠা-৪৪৪।
মাসআলাঃ যে সকল বস্তু চলমান অবস্থায় পানাহার করা প্রথাগতভাবে মন্দ ও গর্হিত স্বভাব বুঝায় না, সে সকল বস্তু উক্ত অবস্থায় পানাহার করাতে শরীয়তে তার শাহাদত বা সাক্ষ্য অগ্রাহ্য হবে না। যেমন- উল্লেখ আছে যে, ‘তবে যদি কেউ পানি, ফল-ফ্রুটস্ রাস্তায় পানাহার করলে তার আদালত বা সততায় কোনো ক্ষতি বা ত্রুটি আসবে না। কারণ লোকজন পানাহারকে মন্দ স্বভাব ও খারাপ আচরণ মনে করে না। ২৯১
➥২৯১. ফতোয়া শামী, খণ্ড-৪, পৃষ্ঠা ৩৭৩, ফতোয়া মাহমুদিয়া, খণ্ড-৫, পৃষ্ঠা- ১২৫।
মাসআলাঃ কুরআন মাজিদ তেলাওয়াতকারী এবং পানাহারে লিপ্ত ব্যক্তিকে সালাম দেয়া মাকরূহ এবং এমন সালামের জবাব দেয়াও ওয়াজিব নয়।
ফতোয়া শামী গ্রন্থে আছে, ‘জওয়াব প্রদানে অপারগ ব্যক্তিকে সালাম দেয়া মাকরূহ। যেমন- খাওয়াতে ব্যস্ত ব্যক্তিকে অথবা শরীয়ত পালনে মগ্ন ব্যক্তিকে যেমন- নামাযীকে কিংবা কুরআন তিলাওয়াতকারীকে সালাম দেয়া মাকরূহ। এহেন অবস্থায় যদি সালাম দিয়ে থাকলে উক্ত সালামের জবাব দেয়া ওয়াজিব নয়। ২৯২
➥২৯২. ফতোয়ায়ে শামী।
কিছু উপাধীর বর্ণনা
____________________
কিছু উপাধীর বর্ণনাঃ
মাসআলাঃ ঐতিহাসিক ও ভাষাবিদগণ বলেছেন, ‘ফেরাউন’ শব্দটি ‘তাফরাউন’ শব্দ থেকে নির্গত। অর্থ-অহংকারী, দাম্ভিক। মূলতঃ শব্দটি ‘ফুরওয়াআতুন’ থেকে উৎকলিত। মিসরীয় পুরাতন অভিধানে যার অর্থ- শাহান্শাহ বা মহান সম্রাট। আরবরা এটা আরবী ভাষার অন্তর্ভুক্ত করতে গিয়ে ফেরাউন করেছেন।
ফেরাউনঃ
ফেরাউন কোন বাদশাহর নাম ছিল না। বরং মিসরীয় বাদশাহগণের উপাধি ছিল। তারা মিশর বিন হা-ম ইবনে নুহ-এর বংশধর ছিল। যেমন হিন্দুস্তানের বাদশাহকে ‘রাজা’ এবং প্রাচীন রোমের বাদশাহগণকে ‘কায়সার’ বলা হতো। ২৯৩
➥২৯৩. হক্কানী মাখ্যনে ইলুম, পৃষ্ঠা- ৫৭০
হামানঃ
ফেরাউনের উজির বা মন্ত্রীর নাম। যাকে ফেরাউন আল্লাহকে দেখার জন্য উঁচুস্থান নির্মাণ করার নির্দেশ দিয়েছিলেন। এ প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ তা‘আলা ইরশাদ করেন, ‘ফেরাউন বলল, হে পরিষদবর্গ! আমি ছাড়া তোমাদের অন্য কোন খোদা আছে বলে আমার জানা নেই। অথচ মুসা (عليه السلام) এক খোদা প্রমাণ দিচ্ছে। ফেরাউন তার উজিরকে লক্ষ্য করে বলল, হে হামান! তুমি মাটির ইট পোড়াও, অতঃপর আমার জন্য একটি প্রাসাদ নির্মাণ কর, যাতে আমি মুসার (عليه السلام) খোদাকে উঁকি মেরে দেখতে পারি।’ ২৯৪
➥২৯৪. সূরা আল-কাসাস, আয়াত: ৩৮
নামরুদঃ
নামরুদ এক কাফির বাদশাহর নাম। সে হযরত ইব্রাহীম (عليه السلام)-এর সময়কার বাদশাহ ছিল এবং নিজেকে খোদা বলে দাবী করত। যে কেউ তার দরবারে গেলে, তাকে সিজদা করতে হতো। সে হযরত ইব্রাহীম (عليه السلام)কে তার নিকট ডেকে পাঠাল কিন্তু তিনি এসে সিজদা করতে অস্বীকৃতি জানালেন এবং সিজদা সংক্রান্ত বিষয়ে নামরুদকে স্তব্ধ করে দেন। ফলে নমরুদ তাঁর শত্রু হয়ে গেল এবং তাঁকে আগুনে নিক্ষেপ করল কিন্তু আল্লাহ তা‘আলা তাঁকে অত্যন্ত নিরাপদে রাখেন।
মাসআলাঃ জ্ঞাতব্য যে, চন্দ্র বর্ষ এটি তিনশত চুয়ান্ন দিন। সে হিসেব অনুযায়ী সূর্য বৎসর চন্দ্র বৎসরের চেয়ে এগার দিন এবং দিনের একুশাংশের একভাগের সমপরিমাণ বেশি। উক্ত বর্ষ গণনা আরম্ভ হয় হুযূর সৈয়্যদুল মুরসালীন (ﷺ)-এর হিজরতের তারিখ থেকে।
‘সানাতুন’ এটি আরবি শব্দ, অর্থ-বছর, অন্ধকার যুগেও বছরের হিসেব চন্দ্র হিসেবে বার মাস গণনা করা হতো। যেমনিভাবে ইসলামেও নির্ধারণ করা হয়েছে। সম্ভবতঃ ইসলামের দু’শো বছর পূর্বে কোন শহরে এ নিয়ম প্রচলিত ছিল এবং প্রত্যেক তৃতীয় বছরে এক মাস বর্ধিত করা হতো, যেমন- হিন্দী লোকদের মাস হয়ে থাকে। যাতে সূর্যের হিসেবের সাথে চন্দ্রের হিসেব মিলে যায়। সে কারণে তাদের হজ্ব প্রত্যেক বছর একই সময়ে হয়ে থাকে এবং তাদের রীতি-নীতি ও আধুনিকতায় কোন পার্থক্য সৃষ্টি হয় না।
উক্ত হিসেবের নিয়ম পদ্ধতি হচ্ছে, কতেক দিন মাসের খুচরা হিসাবের ওপর বাড়িয়ে দেয়া। যার ফলে তিন বছরে পূর্ণ একমাস বেরিয়ে আসে। এ হিসাব বর্তমানেও মিশরীয় আরবদের মধ্যে প্রচলিত আছে। কিন্তু ইসলাম এটাকে অনর্থক বলেছে, শুধুমাত্র চাঁদ দেখানুপাতে চন্দ্র হিসেব চালু রেখেছেন। ইসলামের সকল দল সাধারণত শরয়ী বিধানসমূহের হিসাব-নিকাশ চাঁদ দেখানুপাতে সম্পাদন করে থাকেন। যেমন কোরআন মজিদে আল্লাহ্ তা‘আলা ইরশাদ করেছেন, ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ তা‘আলা যেদিন আসমান-যমিন সৃষ্টি করেছেন সেদিন থেকে আল্লাহর কিতাব অর্থাৎ লওহে মাহফুযে ও গণনায় মাস বারটি লিখে আসছে। তন্মধ্যে সম্মানিত মাস চারটি। এটিই দ্বীন-ধর্মের সঠিক পথ। হে মুসলমানেরা! এর মধ্যে তোমরা নিজেদের সত্তার প্রতি যুলুম-অত্যাচার করো না। আর তোমরা মুশরিকদের সাথে যুদ্ধ করো সমবেতভাবে, যেমন তারাও তোমাদের সাথে যুদ্ধ করে যাচ্ছে সমবেতভাবে।’ ২৯৫
➥২৯৫. সূরা তাওবা, আয়াত: ৩৬
ইসলামী বর্ষ মুহররম মাস থেকে শুরু হয় এবং পূর্ণ সংখ্যা বার মাস হয়। এটাই পবিত্র কোরআন ও হাদীস শরীফ দ্বারাও প্রমাণিত।
হাদীস শরীফে বর্ণিত আছে, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) কুরবানীর দিন খুৎবা প্রদানকালে ইরশাদ করেন যে, যামানা বা বছর তার মূল ভিত্তির ওপর এসে পৌঁছেছে। যেমনি আল্লাহ তা‘আলা আসমান-যমিন সৃষ্টি করার দিন ছিল। অর্থাৎ বছর, বার মাসের গণনা হয়েছিল। তন্মধ্যে চার মাস হচ্ছে সম্মানিত।
এর মধ্যে তিন মাস হচ্ছে লাগাতার ও মিলানো যিলকদ, যিলহজ্জ ও মুহর্রম এবং রজব মাস হচ্ছে জমাদিউস সানি ও শাবান মাসের মাঝখানে। ২৯৬
➥২৯৬. ইসলামী মালুমাত কা মাখ্যান, খণ্ড-১, পৃষ্ঠা-৪১৫।
সমাপ্ত
-----------------------------------------------------------------
বি:দ্র:- তাওহীদ, রিসালাত, ঈমান, আক্বীদা, অযু, গোসল, নামায, রোযা, হজ্ব ও যাকাত ইত্যাদি শরীয়তের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ও যুগোপযোগী মাসআলা-মাসায়েল সম্পর্কে আরো বিস্তারিতভাবে জানার জন্য এশিয়াখ্যাত আলেমেদ্বীন, শাইখুল হাদিস, তাফসীর, ফিকহ ও আদিব, আলেমকুল শিরমণি, বহু মসজিদ, মাদ্রাসা ও খানকার প্রতিষ্ঠাতা, বিভিন্ন বিষয়ে বিভিন্ন ভাষায় শতাধিক গ্রন্থ প্রণেতা, পেশ্ওয়ায়ে আহলে সুন্নাত, শাইখে তরিকত, হযরতুলহাজ্ব আল্লামা মাওলানা মুহাম্মদ আজিজুল হক আল্-কাদেরী (মা.জি.আ.)’র লিখিত কিতাবসমূহ পাঠ করার অনুরোধ রইল। বিশেষ করে ফতোয়া আজিজি আয্ ফুয়ূযে কাযেমী ১ম, ২য়, ৩য়, ৪র্থ ও ৫ম খণ্ড, মুনিয়াতুল মুসলেমীন ১ম ও ২য় খণ্ড, গাউছিয়া আজিজিয়া নামায শিক্ষা, র্কুরাতুল উয়ুন লিমানিল মু’মিনুনাল মুখলিসুন, তরিকুস সালাত ‘আলা ছাবিলিল ইজাজ বিল-মাযহাবিল হানাফী ইত্যাদি কিতাবসমূহ পাঠ করুন। (অনুবাদক)
Comments
Post a Comment