পবিত্র মিলাদুন্নবী(ﷺ) এর ইতিহাস অতি প্রাচীন
পবিত্র মিলাদুন্নবী(ﷺ) এর ইতিহাস অতি প্রাচীন।
______________________
মিলাদুন্নবী(ﷺ)'র সূচনা করেছেন স্বয়ং আল্লাহ রাব্বুল আলামীন | রোজে আজলে সমস্ত আম্বিয়ায়ে কেরামকে নিয়ে আল্লাহ এই মিলাদের আয়োজন করেছিলেন | নবীগণের মহাসম্মেলন ডেকে মিলাদুন্নবী(ﷺ) আয়োজক স্বয়ং আল্লাহ|
তিনি নিজে ছিলেন মীরে মাজলিস বা সভাপতি | সকল নবীগণ ছিলেন শ্রোতা | ঐ মজলিসের উদ্দেশ্য ছিল হযরত মুহাম্মদ মোস্তফা(ﷺ) এর বিলাদত, শান ও মান অন্যান্য নবীগণের
সামনে তুলে ধরা এবং তাঁদের থেকে তাঁর উপর ঈমান আনয়ন ও সাহায্য সমর্থনের প্রতিশ্রুতি আদায় করা |
কোরআন মজিদের ৩য় পারা সুরা আলে এমরানে ৮১-৮২ নং আয়াতে মধ্যে আল্লাহতায়ালা ঐ মিলাদুন্নবী(ﷺ) মাহফিলের কথা উল্লেখ করেছেন | নবীজীর সম্মানে এটাই ছিল প্রথম মিলাদ মাহফিল এবং মিলাদ মাহফিলের উদ্যোক্তা ছিলেন স্বয়ং আল্লাহ তায়ালা |
সুতরাং মিলাদে মাহফিল আনুষ্ঠান হচ্ছে আল্লাহর সুন্নত বা তরিকা |
ঐ মজলিসে সমস্ত আম্বিয়ায়ে কেরামও উপস্থিত ছিলেন | ঐ মজলিসে স্বয়ং আল্লাহ
নবীজীর শুধু আবির্ভাব বা মিলাদের উপরই
গুরুত্ব আরোপ করেছিলেন | সিরাতুন্নবীর উপর
কোন আলোচনা সে দিন হয়নি | সমস্ত নবীগণ
খোদার দরবারে দন্ডায় মান থেকে মিলাদ
শুনেছেন এবং কিয়াম করেছেন |
কেননা খোদার দরবারে বসার কোন অবকাশ
নেই ,পরিবেশটি ছিল আদবের | মিলাদ
পাঠকারী ছিলেন স্বয়ং আল্লাহ এবং কিয়ামকারীগণ ছিলেন আমবিয়ায়ে কেরাম |
এই মিলাদ ও কিয়াম কোরআনের
"ইকতেদো উন নস" দ্বারা প্রমাণিত হলো :
উল্লেখ্য
যে কোরআনে মজীদের "নস" চার প্রকার যথা :
১/ইবারত , ২/দালালত , ৩/ ইশারা ও ৪/ইক্কতিজা |
উক্ত চার প্রকার দ্বারাই দলিল সাবেত হয় |
(নুরূল আনওয়ার দেখুন) নিম্নে উল্লেখিত আয়াতের মধ্যে ইবারতের দ্বারা প্রমাণিত
হয়েছে অঙ্গীকার / দালালাতের দ্বারা নবীগণের মাহফিল, ইশারার দ্বারা মিলাদের বা আবির্ভাবের
এবং ইকতিজার দ্বারা কিয়ামের প্রমাণিত
হয়েছে | সুতরাং মিলাদুন্নবী(ﷺ) মাহফিল কেয়াম
নবীগণের সম্মিলিত সুন্নাত ও ইজামায়ে আম্বিয়া দ্বারা প্রতিষ্ঠিত |
কোরআন মজিদে আলে এমরানের আয়াত ৮১-৮২ উল্লেখ করা হলো :
আল্লাহ বলেন (৮১) "হে প্রিয় রাসুল(ﷺ) ! আপনি স্মরণ করুন ঐ দিনের কথা, যখন আল্লাহ তায়ালা সমস্ত নবীগণ থেকে প্রতিশ্রুতি নিয়েছিলেন এ কথার উপর যে, যখন আমি তোমাদেরকে কিতাব ও হিকমত দিয়ে দুনিয়ায় প্রেরণ করবো; তারপর তোমাদের কাছে আমার মহান রাসুল যাবেন এবং তোমাদের নবুয়্যাত ও কিতাবের সত্যতার সাক্ষ্য প্রদান করবেন, তখন
তোমরা অবশ্য অবশ্যই তাঁর উপর ঈমান
আনবে এবং অবশ্যই তাঁকে সাহায্য করবে"
আল্লাহ বলেন : "তোমরা কি এ সব কথার উপর
অঙ্গীকার করছো এবং এই শর্তে আমার ওয়াদা গ্রহণ করে নিয়েছো (তখন) তাঁরা সকলেই সমস্বরে বলেছিলেন, ---
আমরা অঙ্গিকার করছি | আল্লাহ বলেন : "তাহলে তোমরা পরস্পর সাক্ষী থাক | আর
আমি ও তোমাদের সাথে মহাসাক্ষী রইলাম "|
(৮২) "অত:পর যে কোন লোক এই অঙ্গীকার
থেকে ফিরে যাবে- সেই নাফরমান" (কাফের) | (আলে এমরান আয়াত ৮১/৮২) |
উক্ত দুটি আয়াতের মধ্যে নবী করিম(ﷺ) -এর
ব্যাপারে ১০ টি বিষয়ে গুরুত্ব আরোপ
করা হয়েছে । যথা :
১ । এই ঐতিহসিক মিলাদ সম্মেলনের
ঘটনাবলীর প্রতি রাসুলে করিম(ﷺ) -এর দৃষ্টি আকর্ষণ |
যেহেতু নবী করিম(ﷺ) ঐ সময়ে সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন |
২। আল্লাহ কর্তৃক অন্যান্য আম্বিয়ায়ে কেরামের নিকট থেকে নবীজীর শানে অঙ্গীকার আদায় |
৩। নবীগণের রমরমা রাজত্বকালে এই মহান
নবীর আগমন হলে তাঁর উপর ঈমান আনতে হবে|
৪। তাঁর আগমন হবে অন্যান্য নবীগণের সত্যতার
দলীল স্বরূপ |
৫। ঐ সময়ে নবীগণের নবুয়্যত স্থগিত রেখে-
নবীজীর উপর ঈমান আনয়ন করতে হবে |
৬। নবীজীকে সর্বাবস্থায় পূর্ণ সাহায্য সহযোগিতা প্রদানের অঙ্গীকার আদায় | জীবনের বিনিময়ে এই সাহায্য হতে হবে নি:শর্তভাবে |
৭। নবীগণের স্বীকৃতি প্রদান |
৮। পরস্পর সাক্ষী হওয়া |
৯। সকলের উপরে আল্লাহ মহাসাক্ষী |
১০। ওয়াদা ভঙ্গের পরিণাম - নাফরমান ও
কাফের |
বর্তমানে আমাদের সমাজে একদল রাসুল (ﷺ) বিদ্বেষী একদল মুনাফেক মুসলমানের আবির্ভাব ঘটেছে।কোরআন হাদিসের জ্ঞানশুন্য মুর্খ থেকে শুরু করে লেবাসধারী আলেম উলামা পীর
মাসায়াখেরা পর্যন্ত বলে এবং বেদাতের ফতুয়াবাজি করে যে, মহাপবিত্র ঈদুল আজম "ঈদে মিলাদুন্নবী(ﷺ)" নাকি কোরআন হাদিসে নাই ?
পবিত্র কালামুল্লাহ শরীফ থেকেই পবিত্র মিলাদুন্নবী (ﷺ) এর দলিল উপস্থাপন করছি |
পবিত্র কুরআনুল কারীমের সুরা আলে ইমরানের ১০৩ নং আয়াতে আল্লাহ রাব্বুল আলামিন এরশাদ করেন,
" ﺍﺫﻛﺮﻭﺍ ﻧﻌﻤﺔ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻜم"
অর্থাৎ তোমাদেরকে যে নিয়ামত দেওয়া হয়েছে তার জিকির কর এবং খুশি কর|
আল্লাহ পাক পবিত্র কালামুল্লাহ শরীফের সুরা ইউনুসের ৫৮ নং আয়াতে এরশাদ করেন,
" ﻗﺎﻝ ﺑﻔﻀﻞ ﺍﻟﻠﻪ ﻭ ﺑﺮﺣﻤﺘﻪ ﻓﺒﺬﺍﻟﻚ
ﻓﻠﻴﻔﺮﺣﻮﺍ ﻫﻮ ﺧﻴﺮﻣﻤﺎ ﻳﺠﻤﻌﻮﻥ
অর্থাৎ হে রাসুল আপনি বলুন আল্লাহর দয়া ও রহমতকে কেন্দ্র করে তারা যেন আনন্দ করে এবং এটা হবে তাদের অর্জিত সকল কর্মফলের চেয়েওঅধিক শ্রেষ্ঠ |
এ পৃথিবীতে যত নেয়ামত রয়েছে বা এসেছে এর
চেয়ে সবচেয়ে বড় নেয়ামত হচ্ছে হাবিবুল্লাহ হুজুর পাক(ﷺ) | আল্লাহর এই নেয়ামত ও অনুগ্রহকে কেন্দ্র করে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা ও আনন্দ উদযাপন করার নির্দেশ স্বয়ং রাব্বুল আলামিন দিয়েছেন যার প্রমান উপরোক্ত পবিত্র কোরআনের আয়াত |
অতএব নবীজির শুভাগমনের চেয়ে শ্রেষ্ঠ নেয়ামত আর কি হতে পারে ?
আবার আল্লাহ রাব্বুল আলামিন পবিত্র কোরআনের সুরা আম্বিয়ার ১০৭ নং আয়াতে দয়াল নবীজির শ্রেষ্টত্ব প্রকাশ করার জন্য ঘোষণা করেন,
" ﻭﻣﺎ ﺍﺭﺳﻠﻨﻚ ﺇﻻ ﺭﺣﻤﺔ ﻟﻠﻌﺎﻟﻤﻴﻦ "
অর্থাৎ নিশ্চয় আমি আপনাকে জগতসমূহের রহমত করেই প্রেরণ করেছি |
আল্লাহ রাব্বুল আলামীন পবিত্র কোরআনের ১১৪ নং আয়াতে এরশাদ করেন ,
ﺍﻟﻠﻬﻢ ﺭﺑﻨﺎ ﺍﻧﺰﻝ ﻋﻠﻴﻨﺎ ﻣﺎﺀﺩﺓ ﻣﻦ ﺍﻟﺴﻤﺎﺀ ﺗﻜﻮﻥ ﻟﻨﺎ ﻋﻴﺪﺍ ﻻﻭﻟﻨﺎﻭﺍﺧﺮﻧﺎ
অর্থাৎ ঈসা ইবনে মারিয়াম (আলাইহিস্ সালাম) দুয়া করলেন, হে আল্লাহ ! হে আমাদের প্রভু আমাদের প্রতি আকাশ হতে খাদ্য অবতীর্ণ করুন যেন সেটা আমাদের জন্য অর্থাৎ আমাদের মধ্যে যারা প্রথমে (বর্তমানে আছে) এবং যারা পরে, সকলের জন্য আনন্দের বিষয় হয় এবং আপনার পক্ষ হতে এক নিদর্শন হয় (ঈদের দিন) | আর আপনি আমাদেরকে রিজিক প্রদান করুন
বস্তুত আপনিই সর্বোত্তম রিজিক প্রদানকারী |
মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে খাদ্য ভর্তি পেলে তা যদি ঈসা (আলাইহিস্ সালাম) এর ভাষায় সৃষ্ঠির আদি থেকে অন্ত পর্যন্ত আনন্দ উৎসবের কারণ হয় তবে রাহমাতুল্লিল আলামিন নবীজির মত মহান নেয়ামতের শুভাগমনের দিনটি কতই না গুরুত্বপূর্ণ, মর্যাদাপূর্ণ ও আনন্দের তা সহজেই অনুমান করা যায় |
তাছাড়া সুরা আজহাবের ৫৬ নং আয়াতে আল্লাহ পাক এরশাদ করেন ,
"তোমরা আমার হাবিবের প্রতি দুরুদ সালাম
প্রেরণ কর" |
অর্থাৎ আল্লাহ আমাদেরকে স্পষ্ট এখানে নির্দেশ করেছেন উনার হাবিবের প্রতি দুরুদ সালাম
জানানোর জন্য |
আল্লাহর নির্দেশ বিবেচনায় যা প্রত্যেক মুমিন মুসলমানের জন্য ফরজ (অর্থাৎ নবীজিকে তাজিম করা, সম্মান করা, নবীজিকে দিয়ে ভালো মনোভাব পোষণ করা) |
এখন যারা মিলাদুন্নবী(ﷺ) এর বিপক্ষে কথা বলে, পাইকারী ফতুয়াবাজি করে এবং কোরআনে নেই বলে মিথ্যা অপপ্রচার চালায় তারা মূলত পবিত্র কুরআনকে অস্বীকার করার মাধ্যমে যে কাফেরে পরিণত হয়ে যাচ্ছে সেই খবর কি ওদের আছে?
অতএব পবিত্র কালামুল্লাহ শরীফের উক্ত আয়াতগুলো থেকে সুস্পষ্ট প্রমান হয়ে যায় ঈদে মিলাদুন্নবী(ﷺ) খুশি মনে পালন করা প্রত্যেক মুমিন মুসলমানের জন্য ঈমানী দায়িত্ব এবং এই দিনের চেয়ে নিয়ামতপূর্ণ দিন আর হতেই পারেনা !
মিলাদুন্নবী(ﷺ) -এঁর পক্ষে শত শত সহি হাদিস শরীফ থেকে কিছু হাদিস শরীফ আপনাদের খেদমতে উপস্থাপন করছি |
রাহমাতুল্লিল আলামিন হুজুর পুর নূর(ﷺ) তিনি নিজেই নিজের মিলাদ পালন করেছেন |
এই প্রসঙ্গে পবিত্র হাদিস শরীফে এরশাদ
হয়েছে,
" ﻋَﻦْ ﺍَﺑِﻰ ﻗَﺘَﺪَﺓَ ﺍﻻَﻧْﺼﺎَﺭِﻯ ﺭَﺿِﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋَﻨﻪُ ﺍَﻥَّ ﺭَﺳُﻮﻝَ
ﺍﻟﻠﻪِ ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺳَﻠَّﻢَ ﺱﺀﻝ ﻋَﻦْ ﺻَﻮْﻡِ ﻳَﻮْﻡ ﺍﻻِﺛْﻨَﻴْﻦِ ﻗَﻞَ ﺫَﺍﻙَ ﻳَﻮْﻡٌ ﻭُﻟِﺪْﺕُ ﻓِﻴْﻪِ ﺑُﻌِﺜْﺖُ ﺍَﻭْﺍُﻧْﺰِﻝَ ﻋَﻠَﻰَّ ﻓِﻴْﻪِ -
অর্থাৎ হজরত আবু কাতাদা (রাদিয়াল্লাহু আনহু) হতে বর্ণিত ,
একজন সাহাবী হুজুর পাক(ﷺ) এঁর খেদমতে আরজ করলেন ই রাসুলাল্লাহ, ইয়া হাবিবাল্লাহ
আমার মাতা পিতা আপনার নূরের পাক
কদমে কুরবান হোক | আপনি প্রতি সোমবার
রোজা পালন করেন কেন?
জবাবে সরকারে দুজাহান নূরে মুজাস্সাম
হাবিবুল্লাহ হুজুর পাক(ﷺ) বলেন, এই
দিনে আমার জন্ম হয়েছে, এই দিনে আমি প্রেরিত হয়েছি এবং পবিত্র কালামুল্লাহ শরীফ এই দিনেই আমার উপর নাজিল হয়েছে |
(সহীহ মুসলিম শরীফ ২য় খন্ড, ৮১৯ পৃষ্ঠা,
বায়হাকী: আহসানুল কুবরা, ৪র্থ খন্ড ২৮৬ পৃ:
মুসনাদে আহমদ ইবনে হাম্বল ৫ম খন্ড ২৯৭ পৃ:
মুসান্নাফে আব্দুর রাজ্জাক ৪র্থ খন্ড ২৯৬পৃ:
হিলিয়াতুল আউলিয়া ৯ম খন্ড ৫২ পৃ:)
বুখারী শরীফের বিখ্যাত ব্যাখ্যাকারী আল্লামা ইবনে হাজার আসকালানী, ইমাম বদরুদ্দিন
আইনি বুখারী শরীফের ব্যাখ্যায় লিখেন,
ﻭﺫﻛﺮ ﺍﻟﺴﻬﻴﻠﻲ ﺍﻥ ﺍﻟﻌﺒﺎﺱ ﻗﺎﻝ ﻟﻤﺎ ﻣﺎﺕ ﺍﺑﻮ ﻟﻬﺐ ﺭﺍﻳﺘﻪ ﻓﻲ
ﻣﻨﺎﻣﻲ ﺑﻌﺪ ﺣﻮﻝ ﻓﻲ ﺷﺮ ﺣﺎﻝ ﻓﻘﺎﻝ ﻣﺎ ﻟﻘﻴﺖ ﺑﻌﺪ
ﻛﻢ ﺭﺍﺣﺔ ﺍﻻ ﺍﻥ ﺍﻟﻌﺬﺍﺏ ﻳﺨﻔﻒ ﻋﻨﻲ ﻓﻲ ﻛﻞ ﻳﻮﻡ ﺍﺛﻨﻴﻦ ﻭﺫﻟﻚ ﺍﻥ
ﺍﻟﻨﺒﻲ ﺻﻠﻲ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭ ﺳﻠﻢ ﻭﻟﺪ ﻳﻮﻡ ﺍﻻﺛﻨﻴﻦ ﻭﻛﺎﻧﺖ ﺛﻮﻳﺒﺔ
ﺑﺸﺮﺕ ﺍﺑﺎ ﻟﻬﺐ ﺑﻤﻮﻟﺪﻩ ﻓﺎﻋﺘﻘﻬﺎ
অর্থাৎ হজরত আব্বাস (রাদিয়াল্লাহু আনহু) বর্ণনা করেন, "আবু লাহাবের মৃত্যুর এক বছর পর আমি তাকে স্বপ্নে দেখি | সে আমাকে বলে, ভাই আব্বাস আমার মৃত্যুর পর
থেকে কবরের জিন্দেগীতে আমি শান্তিতে নেই | কিন্তু প্রতি সোমবার এলেই আমার শাস্তি লাগব
করে দেওয়া হয় | এই ঘটনা বর্ণনা করতে গিয়ে হজরত আব্বাস (রাদিয়াল্লাহু আনহু) বলেন আবু লাহাবের এই সোমবারের শাস্তি লাগবের কারণ হুজুর পাক(ﷺ) এঁর বিলাদত শরীফ
উপলক্ষে হুজুর যেদিন জন্ম গ্রহণ করেছিলেন
নবীজির শুভাগমনে খুশি হয়ে হজরত
সুয়াইবা (রাদিয়াল্লাহু তাআলা আনহা)কে আজাদ করে ছিলেন |
(ফাতহুল বারি সরহে সহীহুল বুখারী, অম্দাতুল
কারী শরহে সহীহুল বুখারী )|
এখন কথা হলো আবু লাহাবের মত কাট্টোর কাফের যদি নবীজির একদিনের বেলাদত শরীফে খুশি হয়ে প্রতি সপ্তাহে প্রতি সোমবার
তার জাহান্নামের আজাব লাগব হয়ে যায়, আমরা যারা মুমিন মুসলমান তারা জীবনে হুজুর পাক(ﷺ) এঁর কতগুলি বেলাদত শরীফ খুশি মনে পালন করে তার বিনিময়ে কি জান্নাত পেতে পারিনা?
এই প্রসঙ্গে উপমহাদেশের প্রখ্যাত হাদিস
বিশারদ অলিয়ে কামেল শায়খ আব্দুল হক
মহাদ্দেসে দেহলভী (রাহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেন,
ﻣﻦ ﻋﻈﻢ ﻟﻴﻠﺔ ﻣﻮﻟﺪﻩ ﺑﻤﺎ ﺍﻣﻜﻨﻪ ﻣﻦ ﺍﻟﺘﻌﻈﻴﻢ ﻭﺍﻻﻛﺮﺍﻡ ﻛﺎﻥ ﻣﻦ
ﺍﻟﻔﺎﺀﺯﻳﻦ ﺑﺪﺍﺭ ﺍﻟﺴﻼﻡ
অর্থাৎ যারা হাবিবুল্লাহ হুজুর পাক(ﷺ) এঁর বিলাদত শরীফকে সম্মান ও তাজিম করবে এবং খুশি মনে পালন করবে সে চির শান্তির জায়গা জান্নাতের অধিকারী হবে |
(মাছাবাতা বিস সুন্নাহ ১ম খন্ড,
খুত্বায়ে ইবনে নাবাতা) |
অতএব হাদিস শরিফ থেকে মহাপবিত্র ঈদ উল
আজম ঈদ ই মিলাদুন্নবী(ﷺ) এঁর বৈধতা স্পষ্টভাবে প্রমাণিত হলো, এরপরও যদি কেউ পবিত্র মিলাদুন্নবী(ﷺ) এঁর বিপক্ষে কথা বলে, বেদাতের ফতুয়া দেয় বুঝতে হবে সে হয়তো অন্ধ, মুর্খ নতুবা মুনাফেক রাসুলে পাক(ﷺ) এঁর জাত শত্রু | কেননা অন্ধ আর মূর্খের পক্ষে হাদিস পড়া সম্ভব না আর মুনাফেক ছাড়া কেউ রাসুল পাক(ﷺ) এঁর শান-মান তথাপি উনার পবিত্র জন্মদিনকে অস্বীকার করতে পারেনা !
হযরত আল্লামা জালাল উদ্দীন
সূয়ুতী (রাহিমামুল্লাহ আলাইহি) যার সনদসহ
প্রায় ২ লক্ষ হাদিস শরীফ মুখস্থ ছিল সেই
তাজুল মুফাস্সিরীন মোহাদ্দেস মুসান্নিফ সুয়ুতি (রাহিমামুল্লাহ আলাইহি) তিনি উনার বিখ্যাত কিতাব "সুবুলুল হুদা ফি মাওলেদে মুস্তাফা(ﷺ)
""এ দুই খানা সহিহ হাদিস শরীফ বর্ণনা করেছেন|
পবিত্র হাদিস শরীফে এরশাদ হয়েছে,
ﻋَﻦْ ﺍَﺑِﻰ ﺍﻟﺪَّﺭْﺩَﺍﺀِ ﺭَﺿِﻰَ ﺍﻟﻠﻪُ ﺗَﻌَﺎﻟٰﻰ ﻋَﻨْﻪُ ﺍَﻧَّﻪﻣَﺮَّ ﻣَﻊَ ﺍﻟﻨَّﺒِﻰِّ ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠﻪُ
ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺳَﻠَّﻢَ ﺍِﻟٰﻰﺑَﻴْﺖِ ﻋَﺎﻣِﺮِ ﺍﻻَﻧْﺼَﺎﺭِﻯِّ ﻭَﻛَﺎﻥَ ﻳُﻌَﻠِّﻢُ ﻭَﻗَﺎﺋِﻊَﻭِﻻﺩَﺗﻪِ ﺻَﻠَّﻰ
ﺍﻟﻠﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺳَﻠَّﻢَ ﻻَﺑْﻨَﺎﺋِﻪﻭَﻋَﺸﻪِﺗَﺮْﻴِ ﻭَﻳَﻘُﻮْﻝُ ﻫٰﺬَﺍ ﺍﻟْﻴَﻮْﻡَ ﻫٰﺬَﺍ ﺍﻟْﻴَﻮْﻡَﻓَﻘَﺎﻝَ
ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﺍﻟﺼَّﻠٰﻮﺓُ ﻭَﺍﻟﺴَّﻼﻡُ ﺍِﻥَّ ﺍﻟﻠﻪَ ﻓَﺘَﺢَﻟَﻚَ ﺍَﺑْﻮَﺍﺏَ ﺍﻟﺮَّﺣْﻤَﺔِ ﻭَﺍﻟْﻤَﻼﺋِﻜَﺔُ
ﻛُﻠُّﻬُﻢْﻳَﺴْﺘَﻐْﻔِﺮُﻭْﻥَ ﻟَﻚَ ﻣَﻦْ ﻓَﻌَﻞَ
ﻓِﻌْﻠَﻚَ ﻧَﺠٰﻰﻧَﺠٰﺘَﻚ
অর্থাৎ হজরত আবু দ্বারদা ( রাদিয়াল্লাহু তাআলা আনহু) হতে বর্ণিত,
হাবিবুল্লাহ হুজুর পাক(ﷺ) একদিন হজরত আমির আনসারী (রাদিয়াল্লাহু তা'আলা) এর গৃহে গেলেন এবং হুজুর দেখতে পেলেন আমির আনসারী (রাদিয়াল্লাহু তাআলা আনহু) উনার
পরিবার পরিজন ও আত্বীয় স্বজনদের নিয়ে একত্রিত হয়ে খুশি মনে রাসুল পুর(ﷺ) এঁর বিলাদত শরীফ পাঠ করছেন | অর্থাৎ নবীজি এই দিনে পৃথিবীতে আসছেন, পৃথিবীতে প্রত্যেকটা মাখলুক আনন্দিত হয়ে ইত্যাদি | এই ঘটনা শ্রবণ করে হুজুর পাক(ﷺ) অত্যন্ত আনন্দিত হয়ে হজরত আমির আনসারীকে বললেন, আল্লাহ পাক আপনার জন্য উনার রহমতের দরজা প্রশস্থ করেছেন এবং সমস্ত ফেরেস্তাগণ আপনার জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করছেন |
যে আপনার জন্য এইরূপ কাজ করবে সেও আপনার মত নাজাত (ফজিলত) লাভ করবে | (সুবহানআল্লাহ)
পবিত্র হাদিস শরীফে আরো এরশাদ হয়েছে,
ﻋَﻦْ ﺍِﺑْﻦِ ﻋَﺒَّﺎﺱٍ ﺭَﺿِﻰَ ﺍﻟﻠﻪُ ﺗَﻌَﺎﻟٰﻰ ﻋَﻨْﻬُﻤَﺎ ﺍَﻧَّﻪٗﻛَﺎﻥَ ﻳُﺤَﺪِّﺙُ ﺫَﺍﺕَ ﻳَﻮْﻡٍ
ﻓِﻰْ ﺑَﻴْﺘِﻪٖ ﻭَﻗَﺎﺋِﻊَﻭِﻻﺩَﺗٖﻪِ ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺳَﻠَّﻢَ ﻟِﻘَﻮْﻡٍ ، ﻓَﻴَﺴْﺘَﺒْﺸِﺮُﻭْﻥَ
ﻭَﻳُﺤَﻤِّﺪُﻭْﻥَ ﺍﻟﻠﻪَ ﻭَﻳُﺼَﻠُّﻮْﻥَﻋَﻠَﻴْﻪِ ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺳَﻠَّﻢَ ﻓَﺎِﺫَﺍ ﺟَﺎﺀَﺍﻟﻨَّﺒِﻰُّ
ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺳَﻠَّﻢَ ﻗَﺎﻝَ ﺣَﻠَّﺖْﻟَﻜُﻢْ ﺷَﻔَﺎﻋَﺘِﻰْ
অর্থাৎ হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রাদিয়াল্লাহু তাআলা আনহু) নিজেই বর্ণনা করেন, একদা তিনি উনার গৃহে সাহাবায়ে কেরামদের নিয়ে একত্রিত হয়ে হুজুর পুর নূর(ﷺ) এঁর বিলাদত শরীফ
পাঠ করছিলেন | (এই দিনে হুজুর পৃথিবীতে আসছেন, স্বয়ং আল্লাহ উনার হাবিবের উপর দুরুদ সালাম দিয়েছেন) শ্রবণকারীরাও তা শুনে আনন্দ পাচ্ছিলেন |
ঠিক ওই সময় নবীজি(ﷺ) সেখানে উপস্থিত হয়ে বললেন, তোমাদের জন্য আমার শাফায়াত ওয়াজিব হয়ে গেছে"|
এই হাদিসটি বিভিন্ন হাদিসগ্রন্থে এসেছে যেমন : মাওলুদুল কবীর, আত তানভীর ফী মাওলিদিল বাশীর ওয়ান নাযার, হকিকতে মোহাম্মদী (মিলাদ অধ্যায়), দুররুল মুনাজ্জাম, ইশবাউল কালাম |
অতএব উপরোক্ত সহি হাদিসের মাধ্যমে মিলাদুন্নবী (ﷺ) এঁর বৈধতা প্রমাণিত হলো, এরপরও যদি কেউ পবিত্র মিলাদুন্নবী(ﷺ) এঁর
বিপক্ষে কথা বলে, বেদাতের ফতুয়া দেয়
বুঝতে হবে সে হয়তো অন্ধ, মুর্খ নতুবা মুনাফেক
রাসুল পাক(ﷺ) এঁর জাত শত্রু |
কেননা অন্ধ আর মূর্খের পক্ষে হাদিস পড়া সম্ভব
না আর মুনাফেক ছাড়া কেউ রাসুল পাক(ﷺ)
এঁর শান-মান তথাপি উনার পবিত্র জন্মদিনকে অস্বীকার করতে পারেনা !
হুজুর পাক(ﷺ) নিজের মিলাদ নিজেই পাঠ করেছেন |
একদিন হুজুর পাক(ﷺ) মিম্বারে দড়িয়ে সমবেত সাহাবীগণকে লক্ষ্য করে বললেন :
তোমরা বল - আমি কে ? সাহাবায়ে কেরাম বললেন আপনি আল্লাহর রাসুল (ﷺ) | হুজুর পাক(ﷺ) বললেন :
আমি আব্দুল্লাহর পুত্র মুহাম্মদ, আব্দুল মোত্তালিবের নাতী, হাশেমের প্রপৌত্র এবং মানাফের পুত্রের প্রপৌত্র | এই হাদিসের গুরুত্ব মতেই ইমামগন চার কুরছিকে ফরজ বলেছেন |
হুজুরে আকরাম হুজুর পাক(ﷺ) আরও এরশাদ করেন:
আল্লাহ তায়ালার পক্ষ হতে আমার একটি বিশেষ মর্যাদা এই যে, "আমি খতনা অবস্থায় ভুমিষ্ট হয়েছি এবং আমার লজ্জাস্থান কেউ দেখেনি" | [তাবরানী, জুরকানী ]
অন্যান্য রেওয়ায়াতে পা পবিত্র, নাভি কর্তিত ,
সুরমা পরিহিত, বেহেস্তী লেবাস পরিহিত অবস্থায় ভুমিষ্ট হওয়ার বর্ণনা এসেছে |
[মাদারেঝুন্নবুয়াত]
এছাড়া ও জঙ্গে হোনায়নের যুদ্ধে যখন হাওয়াজিনের তীর নিক্ষেপে মুসলিম
সৈন্যগণ ছত্রভঙ্গ হয়ে পরেছিলেন, তখনও হুজুর
পাক(ﷺ) একা যুদ্ধ ময়দানে দাঁড়িয়ে বলেছিলেন"
আনা নাবিয়ু লা কাযেব + আনা ইবনে আব্দুল
মুত্তালিব
"অর্থাৎ, আমি আল্লাহর নবী, আমি মিথ্যাবাদী নই, আমি আব্দুল মোত্তালিবের বংশধর |
উপরোক্ত প্রথম ঘটনাটি দাঁড়িয়ে বলা এবং বর্ণনা করার নামই মিলাদ ও কেয়াম । সুতরাং মিলাদ ও
কেয়াম স্বয়ং রাসুলে পাকে(ﷺ) এঁর সুন্নত ।
দ্বিতীয় বর্ণনায় "ওয়ালাদাত" শব্দটি এসেছে | এর অর্থ হলো আমি জন্ম গ্রহণ করেছি - ভুমিষ্ট হয়েছি -আবির্ভুত হয়েছি | সব বর্ণনাই নবী করীম হুজুর পাক(ﷺ) কেয়াম অবস্থায় ছিলেন | তিনি নিজেই কেয়াম করেছেন।
সুতরাং বেলাদতের বর্ণনাকালে কিয়াম করা হুজুর পাক(ﷺ) এঁরই সুন্নত |
সাহাবা যুগে মিলাদুন্নবীﷺ মাহফিলের প্রমান হুজুর পাক(ﷺ) এঁর উপস্থিতিতে সাহাবায়ে কেরাম মিলাদ মাহফিল অনুষ্ঠান করেছেন |
নিম্নে কয়েকটি প্রমান :
১। হযরত দারদা (রাদ্বিয়াল্লাহু তা'আলা আল্লাহু) আনহু হতে বর্ণিত আছে - তিনি বলেন,
আমি নবী করিম হুজুর পাক(ﷺ) এঁর সাথে মদিনার আবু আমের আনসারীর গৃহে গমন করে দেখি-
তিনি তাঁর সন্তানাদি এবং আত্বীয়-
স্বজনকে হুজুর পাক(ﷺ) -এর জন্মবৃত্তান্ত
শিক্ষা দিচ্ছিলেন এবং বলছিলেন আজই সেই
দিন |
ইহা দেখে হুজুর পাক(ﷺ) এরশাদ করলেন :
নিঃসন্দেহে আল্লাহ তায়ালা তোমার উপর
রহমতের দরজা খুলে দিয়েছেন এবং আল্লাহর
ফেরেস্তাগণও তোমাদের সকলের জন্য মাগফিরাত কামনা করছেন |
[ দুররে মুনাজ্জাম আব্দুল হক এলাহাবাদি ]
২। ইবনে আব্বাস (রাদ্বিয়াল্লাহু তাআলা আনহু) থেকে বর্ণিত আছে একদিন তিনি (ইবনে আব্বাস) কিছু লোক নিয়ে নিজগৃহে হুজুর পাক (ﷺ) এঁর জন্মবৃত্তান্ত আলোচনা করে আনন্দ উৎসব করছিলেন এবং তাঁর প্রসংশাবলী আলোচনা সহ দুরুদ ও সালাম পেশ করেছিলেন| এমন সময় হুজুর পাক(ﷺ)
সেখানে উপস্থিত হয়ে এ অবস্থা দেখে বললেন : তোমাদের সকলের জন্য আমার সাফায়াত অবধারিত হয়ে গেল " |
[ ইবনে দাহইয়ার আত-তানভির ৬০৪ হিজরি ]
সুতরাং প্রমাণিত হলো যে, নবী পাক (ﷺ) এঁর মিলাদ শরীফ পাঠে রাসুলে পাক(ﷺ) শাফায়াত নসীব হবে।
৩| হযরত হাসসান বিন সাবিত (রাদ্বিআল্লাহু
তাআলা আনহু) মিম্বরে দাঁড়িয়ে কবিতার
মাধ্যমে মিলাদুন্নবী(ﷺ) পাঠ করেছেন, দীর্ঘ
কবিতার একাংশ নিম্নে উদ্ধৃত করা হলো;
অর্থাৎ, ইয়া রাসুলুল্লাহ(ﷺ) ! আপনি সর্ব দোষ-ত্রুটি হতে মুক্ত হয়ে জন্ম হয়েই জন্ম গ্রহণ
করেছেন | আপনার এই বর্তমান সুরত মনে হয়
আপনার ইচ্ছা অনুযাযী সৃষ্টি হয়েছে | আল্লাহ
তার প্রিয় নবীর নামে আযানে নিজের
নামের সাথে সংযুক্ত করেছেন।
৫| আজানের মত গুরুত্ব পূর্ন ইবাদতে আল্লাহর
নামের পাশে নবীজীর নামে আল্লাহ কর্তৃক সংযোজন |
৬| হুজুর পাক(ﷺ) মুহাম্মদ নামের উৎস
হচ্ছে আল্লাহর সিফতী নাম মাহমুদ |
হযরত হাসসান বিন সাবিত (রাদ্বিআল্লাহু
তাআলা আনহু) এঁর কন্ঠে মিলাদ পাঠ শুনে হুজুর পাক(ﷺ) বলতেন " আল্লাহুম্মা আইয়িদ বি রূহিল কুদ্দুস"
অর্থাৎ, "হে আল্লাহ ! তুমি তাকে জিবরাঈল
মারফত সাহায্য করো"
তাফসীরে খাজাইনুল ইরফান এ উল্লেখ আছে যারা হুজুর পাক(ﷺ) এঁর প্রশংসাগীতি করে, তাদের পিছনে জিবরাঈল (আলাইহিস সালাম) এঁর গায়েবী মদদ থাকে। [সুরা মূজাদালাহ]
নবীগণের যুগে মিলাদুন্নবী(ﷺ) :
১। হযরত আদম (আলাইহিস সালাম) এঁর যুগে মিলাদ প্রত্যেক নবী নিজ নিজ যুগে আমাদের প্রিয়নবী ও আল্লাহর প্রিয় হাবিব(ﷺ) এঁর আবির্ভাবের সুসংবাদ দিয়ে গেছেন | হযরত আদম (আলাইহিস সালাম) তাঁর প্রিয় পুত্র ও প্রতিনিধি হযরত শীস (আলাইহিস সালাম) কে নুরে মুহাম্মদী(ﷺ) এর তাজিম করার জন্য
নিম্নে অসিয়ত করে গেছেন |
অনুবাদ অংশটি নিম্নে বর্ণনা করা হলোঃ
["আদম (আলাইহিস সালাম) আপন পুত্র হযরত শীস (আলাইহিস সালাম) কে লক্ষ্য করে বললেন : হে প্রিয় বৎস, আমার পরে তুমি আমার খলিফা | সুতরাং এই খেলাফতকে তাকওয়ার তাজ ও দৃঢ় একিনের দ্বারা মজবুত করে ধরে রেখো | আর যখনই আল্লাহর নাম ঝিকির (উল্লেখ) করবে তাঁর সাথেই মুহাম্মদ(ﷺ) এঁর নামও উল্লেখ করবে |
তাঁর কারন এই : আমি রূহ ও মাটির মধ্যবর্তী থাকা অবস্থায়ই তাঁর পবিত্র নাম আরশের পায়ায় (আল্লাহর নামের সাথে) লিখিত দেখেছি | এরপর আমি সমস্ত আকাশ ভ্রমন করেছি | আকাশের এমন কোন স্থান ছিলনা যেখানে মুহাম্মদ(ﷺ) এর নাম অঙ্কিত পাইনি? আমার রব আমাকে বেহেস্তে বসবাস করতে দিলেন | বেহেস্তের এমন কোন প্রাসাদ ও কামরা পাইনাই যেখানে মুহাম্মদ(ﷺ) এঁর নাম ছিলনা? আমি মুহাম্মদ(ﷺ) এঁর নাম আরোও লিখিত দেখেছি সমস্ত হুরদের স্কন্ধদেশে, বেহেস্তের সমস্ত বৃক্ষের পাতায়, বিশেষ করে তুলা বৃক্ষের পাতায় পাতায়, পর্দার কিনারায় এবং ফেরেস্তাগণের চোখের
মনিতে ঐ নাম অঙ্কিত দেখেছি | সুতরাং হে শীস ! তুমি এই নাম বেশী বেশী করে জপতে থাক |
কেননা, "ফেরেস্তাগণ পূর্ব হতেই এই নাম জপনে মশগুল রয়েছেন।" [জুরকানি শরীফ] |
উল্লেখ্য যে, সর্বপ্রথম দুনিয়াতে ইহাই ছিল জিকরে মিলাদুন্নবী (ﷺ) |
হযরত ইব্রাহীম (আলাইহিস সালাম) এর মিলাদ
পাঠ ও কেয়াম :
হযরত ইব্রাহীম (আলাইহিস সালাম) এবং হযরত
ইসমাইল (আলাইহিস সালাম) যখন আল্লাহর ঘর
তৈরী করছিলেন, তখন ইব্রাহীম (আলাইহিস
সালাম) উক্ত ঘরের নির্মাণ কাজ কবুল করার
জন্য নিজের ভবিষ্যৎ সন্তানাদিদের মুসলমান
হয়ে থাকার জন্য আল্লাহর দরবারে ফরিয়াদ
করার পর দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে বা কেয়াম
করে নবী(ﷺ) এঁর আবির্ভাব আরবে ও হযরত ইসমাইলের বংশে হওয়ার জন্য এভাবে দোয়া করেছেন |
অর্থাৎ, হে আমার রব ! তুমি এই আরব
ভুমিতে আমার ইসমাঈলের বংশের
মধ্যে তাদের মধ্যে হতেই সেই মহান
রাসুল(ﷺ) কে প্রেরণ করো- যিনি তোমার আয়াতসমুহ তাদের কাছে পাঠ করে শুনাবেন,
তাদেরকে কোরআন সুন্নাহর বিশুদ্ধ জ্ঞান
শিক্ষা দেবেন এবং বাহ্যিক ও আত্বিক
অপবিত্রতা থেকে তাদের পবিত্র করবেন |
[সুরাহ আল বাকারা ১২৯ আয়াত]
এখানে দেখা যায় হযরত ইব্রাহীম (আলাইহিস
সালাম) রাসুলুল্লাহ(ﷺ) ৪০০০ বৎসর পূর্বেই
মুনাজাত আকারে তাঁর আবির্ভাব, তাঁর
সারা জিন্দেগীর কর্ম চাঞ্চল্য ও মানুষের
আত্মার পরিশুদ্ধির ক্ষমতা বর্ণনা করে হুজুর (ﷺ) আর মিলাদের সারাংশ পাঠ করেছেন এবং এই মুনাজাত বা মিলাদ দন্ডায়মান অবস্থাই
করেছেন যা পূর্বের দুটি আয়াতের মর্মে বুঝা যায়|
ইবনে কাছির তাঁর বেদায়া ও নেহায়া গ্রন্থে ২য় খন্ডে ২৬১ পৃষ্ঠায় লিখেছেন" দোয়া ইব্রাহিমু (আলাইহিস্ সালাম) ওয়াহুয়া কায়েমুন "অর্থাৎ উক্ত দোয়া করার সময় ইব্রাহীম (আলাইহিস সালাম) দন্ডায়মান ছিলেন |
নবী করিম(ﷺ) বলেন "আনা দুয়াওতু ইব্রাহীমা" আমি হযরত ইব্রাহিম (আলাইহিস সালাম) এঁর দোয়ার ফসল | "হযরত ইব্রাহীম
(আলাইহিস সালাম) আল্লাহর নিকট
থেকে চেয়ে আমাদের প্রিয়
নবী(ﷺ) কে আরবের ইসমাঈল (আলাইহিস সালাম) এঁর বংশে নিয়ে এসেছেন | এটা উপলব্ধির বিষয় |
আশেক ছাড়া এ মর্ম অন্য কেউ বুঝবে না । বর্তমান মিলাদ শরীফে রাসুলেপাকে(ﷺ) এঁর
আবির্ভাবের যে বর্ণনা দেয়া হয় তা হযরত ইব্রাহিম (আলাইহিস সালাম) এঁর দোয়ার তুলনায় সামান্যতম অংশ মাত্র |
সুতরাং আমাদের মিলাদ শরিফ পাঠ ও কেয়াম হযরত ইব্রাহীম (আলাহিস সালাম) এঁরই
সুন্নাত। [বেদায়া ও নেহায়া ২য় খন্ড ২৬১পৃষ্ঠ]
হযরত ঈসা (আলাইহিস সালাম) নবী করীম(ﷺ) এঁর মিলাদ পাঠ ও কেয়াম:
নবী করিম(ﷺ) এঁর ৫৭০ বৎসর পুর্বে হযরত ঈসা (আলাইহিস সালাম) আবির্ভাব | তিনি তাঁর উম্মত হাওয়ারী (বনি ইসরাইল) কে নিয়ে নবী করিম(ﷺ) এঁর মিলাদ শরীফ পাঠ করেছেন |
উম্মতের কাছে তিনি আখেরী জামানার পয়গম্বর(ﷺ) এঁর নাম ও সানা সিফাত এবং আগমনবার্তা এভাবে বর্ণনা করেছেন : অর্থাৎ, "হে আমার প্রিয় রাসুল(ﷺ) ! আপনি স্বরণ করে দেখুন ঐ সময়ের কথা যখন মরিয়ম
তনয়া ঈসা (আলাইহিস সালাম) বলেছেন :
হে বনী ইসরাইল, আমি তোমাদের কাছে নবী হয়ে প্রেরিত হয়েছি |
আমি আমার পূর্ববর্তী তওরাত কিতাবের সত্যতার সাক্ষ্য দিচ্ছি এবং এমন এক মহান
রাসুলের সুসংবাদ দিচ্ছি যিনি আমার
পরে আগমন করবেন এবং তাঁর নাম হবে আহমদ(ﷺ)
[সুরা আছ- ছফ ৬ আয়াত]
হযরত ঈসা (আলাইহিস্ সালাম) এঁর ভাষন সাধারণত দন্ডায়মান হতো আর এটাই ভাষণের সাধারন রীতি ও বটে |
ইবনে কাছির বেদায়া ও নেহায়া গ্রন্থের ২য়
খন্ডে ২৬১ পৃষ্ঠয় উক্ত আয়াতের ব্যাখ্যায়
লিখেছেন :
"আখাতোবা ঈসা (আলাইহিস্ সালাম) উম্মাতাহুল হাওয়ারিইনা কায়েমা"
"অর্থৎ, হযরত ঈসা (আলাইহিস সালাম) দন্ডায়মান (কেয়াম) অবস্থায় তাঁর উম্মৎ
হাওয়ারীদেরকে নবীজীর আগমনের সুসংবাদ
দিয়ে বক্তৃতা করেছেন" | সুতরাং মিলাদ ও
কিয়াম হযরত ঈসা (আলাইহিস সালাম) এঁর
সুন্নাত এবং নবীযুগের ৫৭০ বৎসর পূর্ব হতেই |
[বেদায়া ও নেহায়া]
সাহাবায়ে কেরাম হলেন সত্যের মাপকাঠি, ঈমানের মানদন্ড |
উম্মতে মুহাম্মদী (ﷺ) এঁর মধ্যে সবচেয়ে বেশি মর্যাদার অধিকারী হলেন সাহাবায়ে কেরামগণ |
তারা আল্লাহকে রাজি করিয়েছেন
এবং আল্লাহও তাদের প্রতি খুশি হয়েছেন
তাইতো তাদের পদবী 'রাদিআল্লাহু
তাআলা আনহু' | দয়াল নবীজি বলেছেন আমার
একেকজন সাহাবী আকাশের উজ্জল নক্ষত্রের
মত | সাহাবায়ে কেরামদেরকে অবশ্যই অনুসরণ
করা আমাদের জন্য ওয়াজিব |
আমাদের মধ্যে বাতিলপন্থী মুসলমানেরা বলে থাকে সাহাবায়ে কেরামরা নাকি মিলাদুন্নবী(ﷺ) পালন করেন নি !
এটা তাদের সম্পূর্ণ মিথ্যা কথা |
পূর্বে আমরা হজরত আব্বাস (রাদিয়াল্লাহু তাআলা আনহু) ও হজরত দ্বারদা (রাদ্বিআল্লাহু
তাআলা আনহু) হতে বর্ণিত হাদিসে মিলাদুন্নবী(ﷺ) পালন ও এর ফজিলত দেখেছি | এবার সাহাবায়ে কেরামদের
মধ্যে সবচেয়ে মর্যাদাপূর্ণ ৪ সাহাবী অর্থাৎ
খোলাফায়ে রাশেদীনের পবিত্র জবান
থেকে মিলাদুন্নবী(ﷺ) পালনের ফজিলত শুনবো|
*ইসলামের প্রথম খলিফা, সাহাবায়ে কেরামদের মধ্যে সর্বোচ্চ মর্যাদা লাভকারী সাহাবী হজরত আবু বকর (রাদ্বিআল্লাহু তাআলা আনহু) বলেন,
ﻣَﻦْ ﺍَﻧْﻔَﻖَ ﺩِﺭْﻫَﻤًﺎ ﻋَﻠَﻰ ﻗِﺮﺍ ﺓَ ﻣَﻮْ ﻟِﺪِ ﺍﻟﻨَّﺒﻰُ ﺻﻠﻲ ﺍﻟﻠﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺳَﻠَّﻢَ
ﻛَﺎﻥ ﺭﻓﻴﻘﻲ ﻓﻰِ ﺍﻟﺠَﻨّﺔِ
অর্থাৎ- “যে ব্যক্তি মিলাদুন্নবী(ﷺ) উপলক্ষ্যে এক দিরহাম খরচ করবে সে জান্নাতে আমার সঙ্গী হবে |
[আন নেয়মাতুল কুবরা আলাল আলাম, পৃষ্ঠা নং-৭]
*ইসলামের দ্বিতীয় খলিফা হজরত উমর
(রাদ্বিআল্লাহু তাআলা আনহু) বর্ণনা করেন,
ﻣَﻦْ ﻋَﻈَّﻢَ ﻣَﻮْﻟِﺪِ ﺍﻟﻨَّﺒِﻰُ ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺳَﻠَّﻢَ ﻓَﻘَﺪْ َﺍﺣﻴﺎ ﺍﻻﺳْﺎﻻَﻡُ
অর্থাৎ- “যে ব্যক্তি মিলাদুন্নবী(ﷺ) ছল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম-কে সম্মান করলো,
সে অবশ্যই ইসলামকে জীবিত করলো |
[আন নেয়মাতুল কুবরা আলাল আলাম,পৃষ্ঠা নং-৭]
*ইসলামের তৃতীয় খলিফা হজরত উসমান
গনি (রাদ্বিআল্লাহু তাআলা আনহু) বলেন,
ﻣَﻦْ ﺍَﻧْﻔَﻖَ ﺩِﺭْﻫَﻤًﺎ ﻋَﻠَﻰ ﻗﺮﺃﺓ ﻣَﻮْﻟِﺪِ ﺍﻟﻨَّﺒِﻰُ ﺻَﻠّﻰ ﺍﻟﻠﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺳَﻠَّﻢْ ﻓَﻜَﺎ
ﻧَّﻤَﺎ ﺛَﻬِﻴﺪ ﻏَﺰُﻭَﺓِ ﺑَﺪَﺭ َﻭﺣُﻨَﻴْﻦُ
অর্থাৎ- “যে ব্যক্তি মিলাদুন্নবী(ﷺ) পাঠ করার জন্য এক দিরহাম খরচ করল- সে যেন বদর ও হুনাইন জিহাদে শরীক হলো |
[আন নেয়মাতুল কুবরা আলাল আলাম, পৃষ্ঠা নং-৮]
*ইসলামের চতুর্থ খলিফা হজরত আলী (রাদ্বিআল্লাহু তাআলা আনহু) বলেন,
ﻣَﻦْ ﻋَﻈَّﻢَ ﻣَﻮْ ﻟِﺪِ ﺍﻟﻨَّﺒِﻰ ﺻَﻠّﻰ ﺍﻟﻠﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَ ﺳَﻠَّﻢَ ﻭَﻛَﺎﻥَ ﺳَﺒَﺒَﺎ ﻟِﻘﺮﺍ ﺗﻪ ﻻ
ﻳَﺨﺮﺝ ﻣِﻦَ ﺍﻟﺪُّﻧْﻴَﺎ ﺍِﻻ َّﺑِﺎﻻِ ﻳْﻤَﺎﻥِ ﻭَﻳَﺪْﺧُﻞُ ﺍﻟﺠَﻨَّﻪَ ﺑِﻐَﻴْﺮِ ﺣِﺴَﺎﺏ
অর্থাৎ- “যে ব্যক্তি মিলাদুন্নবী(ﷺ) কে সম্মান
করবে সে ঈমানের সাথে মৃত্যুবরণ করবে এবং বিনা হিসাবে জান্নাতে প্রবেশ করবে |
[আন নেয়মাতুল কুবরা আলাল আলাম, পৃষ্ঠা নং- ৮]
অতএব, উপরোক্ত হাদিস শরীফগুলো থেকে এটা স্পষ্ট প্রমাণিত হয় যে সাহাবায়ে কেরাম তথা খোলাফায়ে রাশেদীন উনারা মিলাদুন্নবী(ﷺ) উদযাপন করেছেন বিধায় এর ফজিলত বর্ণনা করেছেন, যদি উনারা মিলাদুন্নবী(ﷺ) পালন না করতেন, তাহলে এর ফজিলত বর্ণনার কোন প্রশ্নই আসেনা !
সুতরাং, যারা বলে সাহাবায়ে কেরাম মিলাদুন্নবী (ﷺ) পালন করেন নি; তাদের চেয়ে বড় মিথ্যুক আর হতেই পারেনা।
পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী(ﷺ) পালনের মধ্যে যে কত ফজিলত রয়েছে তা যদি কোন মুসলমান জানতো তাহলে জীবন দিয়ে হলেও এই পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী(ﷺ) কে পালন করতো।
যারা পবিত্র মিলাদুন্নবী(ﷺ) খুশি মনে উদযাপন
করবে তাদের জন্য আমার নূর নবীজি(ﷺ) আজ থেকে ১৫০০ বছর পূর্বে এমন এক সুসংবাদ দান করেছেন যা শুনলে প্রত্যেক মুসলমানের হৃদয়ে প্রশান্তি চলে আসবে, আনন্দে উদ্বেলিত হয়ে যাবে | আর এই সুসংবাদটি হলো যারা এই দিনকে উদযাপন করবে তারা হাশরের ময়দানে নাজাত পেয়ে যাবে, এই দিনটি তাদের নাজাতের উসিলা।
---------- সমাপ্ত ----------
Comments
Post a Comment