কালামুল আউলিয়া ফি শানে ইমামিল আউলিয়া

কালামুল আউলিয়া ফি শানে ইমামিল আউলিয়া
____________________
كَـلَامُ الْاَوْلِيَاء فِىْ شَانِ اِمَامِ الْاَوْلِيَاء

কালামুল আউলিয়া ফি শানে ইমামিল আউলিয়া

রহমাতুল্লাহে তায়ালা আলাইহিম আজমাঈন

প্রকাশনায়ঃ

আন্জুমানে কাদেরীয়া চিশ্তীয়া আজিজিয়া, বাংলাদেশ

রচনায়:

মুহাম্মদ আজিজুল হক আল্-কাদেরী

টেক্সট রেডীঃ

মাসুম বিল্লাহ সানি

অনুবাদ:

অধ্যক্ষ আল্লামা মুহাম্মদ নুরুল আলম খাঁন

সংশোধন:

উপাধ্যক্ষ মুহাম্মদ আবদুল অদুদ

সার্বিক তত্ত্বাবধান:

অধ্যক্ষ আল্লামা শাহজাদা আবুল ফরাহ্ মুহাম্মদ ফরিদ উদ্দীন

সহযোগিতায়:

এম এম মহিউদ্দীন

প্রকাশনায়:

আন্জুমানে কাদেরীয়া চিশ্তীয়া আজিজিয়া, বাংলাদেশ।

[লেখক কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত]

প্রকাশকাল:

প্রথম প্রকাশ: জুলাই-২০০৬ ইং

দ্বিতীয় প্রকাশ: মার্চ- ২০১৪ ইং

হাদিয়া:

৬৫ (পয়ঁষট্টি) টাকা মাত্র।

ভূমিকা
____________________
ভূমিকা

بِسْمِ اللهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيْمِ

اَلْـحَمْدُلِلّٰهِ رَبِّ الْعَلَمِيْن . وَلْعَاقِبَةُ لِلْمُتَّقِيْن . وَلصَّلوةُ وَالسَّلَامُ عَلٰى سَيِّدِنَا اِمَامُ الْمُرْسَلِيْن . وَعَلٰى اٰلِه وَاَصْحَابِه وَعِتْرَتِه وَاَهْلِ بَيْتِه وَعُلَمَاءِ دِيْنِه وَاَوْلِيَاءِ اُمَّتِه وَنَائِبِه غَوْثُ الثّقَلَيْن الشَّيْخ عَبْدُ الْقَادِر اِمَامِ الْاَوْلِيَاء الْكَامِلِيْن صَلَوَاتُ اللهِ تَعَالٰى وَسَلَامه عَلَيْهِمْ اَجْمَعِيْن .

সরকারে দোআলম নূরে মুজাস্সাম হুজুর পূরনূর (ﷺ) এর শান হচ্ছে, তিনি আল্লাহ্ তায়ালার সমগ্র সৃষ্টিজগতে সর্বশ্রেষ্ঠ মর্যাদার অধিকারী নবী এবং রাসূল। যা অমুসলম ঐতিহাসিকগণও লিখিতভাবে প্রকাশ করতে কুণ্ঠিত হয়নি। অথচ কিছু আলেম নামধারী ভ্রান্ত মতবাদী উম্মতে মুহাম্মাদী (ﷺ) দাবী করে নবীজির শানে মানহানিকর কথা লিখতে ও বলতে দ্বিধাবোধ করছে না। সাথে সাথে আউলিয়া কেরামের শানেও মর্যাদাহানিকর আক্বীদা পোষণ করে সরলমনা মুসলিম মিল্লাতকে পথভ্রষ্ট করার হীন চক্রান্তে লিপ্ত রয়েছে। বিশেষতঃ ইমামুল আউলিয়া হযরত গাউছুল আজম ছৈয়দ আব্দুল কাদের জিলানী (رحمة الله) এর কুতুবিয়াত ও গাউছিয়াতের মর্যাদা নিয়েও সমালোচনা করার দুঃসাহস দেখাচ্ছে। এমতাবস্থায় আমি অধম জগদ্বিখ্যাত মুসলিম মিল্লাতের পরম শ্রদ্ধেয় আউলিয়ায়ে কেরাম, মুহাদ্দিসীন, ত্বরীকতের ইমাম ও মাশায়েখে কেরামগণের সুস্পষ্ট মতামত প্রমাণ হিসেবে উপস্থাপন করার মানসে “কালামুল আউলিয়া ফি শানে ইমামিল আউলিয়া” নামকরণ করে এ ক্ষুদ্র কিতাবটি রচনাপূর্বক ফেত্নায় জর্জরিত মুসলিম মিল্লাতের ঈমান, আক্বীদা শীসাঢালা প্রাচীরের ন্যায় মজবুত ও সুদৃঢ় করার ক্ষুদ্র প্রয়াস চালিয়েছি মাত্র। আসন্ন ইমামুল আউলিয়া গাউছুল আজম কন্ফারেন্স এবং ভবিষ্যত প্রজন্মদেরকে উৎসাহ-উদ্দীপনা দেয়ার লক্ষ্যে সংক্ষিপ্ত এ গ্রন্থখানা গাউছুল আজম কন্ফারেন্স এবং চট্টগ্রামের সকল আউলিয়া কেরামের প্রতি উৎসর্গ করার মর্যাদা অর্জন করাই একমাত্র উদ্দেশ্য।

আর বিশেষত: কাতার প্রবাসী মুহাম্মদ দিদারুল আলমসহ যারা অত্র গ্রন্থখানা প্রকাশে আর্থিক ও বিভিন্নভাবে সার্বিক সহযোগিতা করেছেন, তাদেরকে আল্লাহ্ পাক এর যথার্থ বদলা দান করুক এবং অত্র গ্রন্থখানাতে কোন প্রকার ভুল-ত্রুটি দৃষ্টিগোচর হলে প্রকাশনা সংস্থাকে অবহিত করলে পরবর্তী সংস্করণে তা সংশোধনের ব্যবস্থা করা হবে।

এ গ্রন্থখানা পাঠ করে কোন সম্মানিত হযরত আমার উপর অসন্তুষ্ট ও ক্ষীপ্ত না হওয়ার অনুরোধ জানাচ্ছি। কেননা, আমি তো গাউছে পাকের একজন ক্ষুদ্র গোলাম হিসাবে “কালামুল আউলিয়া ফি শানে ইমামিল আউলিয়া” এর সংকলক মাত্র। এতে আমার কি দোষ! যে সমস্ত আউলিয়া কেরাম গাউছে পাকের প্রশংসা ও বিভিন্ন ঘটনা বর্ণনা করেছেন তাঁরাই এর জন্য জবাবদিহী করতে পারেন, আমি নই। আল্লাহ্ তায়ালা প্রত্যেককে অনুধাবন করার তৌফিক দিন। আমীন। বেহুরমতে সায়্যিদিল মুরসালীন।

নিবেদক

মুহাম্মদ আজিজুল হক আল্-কাদেরী


‘আমার কদম সকল ওলীগণের গর্দানের উপর’
____________________

بِسْمِ اللهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيْمِ

হযরত গাউছে পাকের বাণী

‘আমার কদম সকল ওলীগণের গর্দানের উপর’

এর মর্মার্থ এবং কুতুবিয়াত পদমর্যাদার আলোচনা

প্রশ্ন: হুজুর সাইয়্যেদেনা গাউছে পাক (رحمة الله) এর বাণী-

قَدْمِىْ هَذِه عَلٰى رَقَـبَةِ كُلِّ وَلِـىّ اللهِ .

অর্থাৎ আমার এ কদম প্রত্যেক র্আলাহর ওলীগণের গর্দানের উপর রয়েছে। তাঁর এ বাণী গাউছে পাক এর যুগের সাথে কি নির্দিষ্ট? তাঁর যুগের পরের আউলিয়ায়ে কেরামের ক্ষেত্রেও কি প্রযোজ্য?

বর্তমানে তিনি কুতুবিয়াত এর পদ মর্যাদায় অভিষিক্ত আছেন কি না? আর এ পদ মর্যাদায় কখন থেকে অভিষিক্ত? এবং কখন পর্যন্ত থাকবেন? সবিস্তারে দলীলসহ বর্ণনা করার জন্য একান্তভাবে অনুরোধ রইলো।

নিবেদক

ছালেহ আহমদ

উত্তর: আল্লাহ্ তায়ালার দরবারে সাহায্য প্রার্থনা করছি। গাউছে পাক বলেছেন:

اَفَلَتْ شُمُوْسُ الْاَوَّلِيْنَ وَشَمْسُنَا

                اَبَدًا عَلٰى اُفُقِ الْعُلٰى لَا تَغْرُبُ

অর্থ: আমাদের পূর্বের লোকদের সূর্য ডুবে গেছে। আর আমাদের সূর্য সর্বদা সুইচ্চ মর্যাদার আকাশে উদীয়মান থাকবে। আর তা কখনও অস্তমিত হবে না।

এখানে اَبَدًا শব্দটি ব্যবহার করেছেন। اِلٰى يَوْمِ الْقِيٰمَةِ বলেননি। অর্থাৎ আমাদের সূর্যের রৌশনী হক্ব পথের অনুসন্ধানীদেরকে সদা সর্বদা সুপথ দেখাতে থাকবে। বাস্তবিক পক্ষে কোন আল্লাহর ওলি হুজুর গাউছে পাকের উসিলা এবং মাধ্যম ব্যতিত وِلَايَتْ এর মর্তবা লাভ করতে পারে না।

জানা দরকার: বেলায়তে মুহাম্মদী, বেলায়তে মুস্তফরী আলাইহিস্ সালামু ওয়াস্ সালাম এর মহা গুরুদায়িত্বভার বহনকারী হচ্ছেন ইমামুল মাশারিক ওয়াল মাগারিব হযরত আলী রাদ্বিআল্লাহু আনহু। এ জন্যে সকল আকতাব, আবদাল ও আওতাদগণের (যারা নির্জন অবস্থানকারী আউলিয়াগণের অন্তর্ভূক্ত এবং ولايــت এর সমস্ত পরিপূর্ণতার দিকটিই তাদের মধ্যে প্রবল) مقام এর পৃষ্ঠপোষকতার দায়িত্ব কুতবুল কাওনাইন মুস্তফা (ﷺ) এর সাহায্য সহযোগিতার উপরই নির্ভরশীল।

আর আউলিয়া মাশায়েখগণের অধিকাংশ সিল্সিলা তাঁর সাথে সম্পৃক্ত। এ কারণেই মুহাম্মদী বেলায়েত এর বাহক হচ্ছেন একমাত্র হুজুর সাইয়্যেদেনা মাওলা আলী (رضي الله عنه) (আল্লাহ্ তাঁর চেহারাকে সম্মানিত করুন)।

কুতুবুল আকতাব: অর্থাৎ কুত্বে মদার এর মাথা মুবারক সাইয়্যেদুল কাওনাইন এর পবিত্র কদমের নিচে অবস্থিত। আর কুত্বে মদার তাঁরই সাহায্য ও সহানুভূতির মাধ্যমে প্রয়োজনীয় সকল কর্মকাণ্ড আঞ্জাম দিয়ে থাকেন। মাদারিয়াত এটি একটি বিশাল পদবী। হযরত ফাতেমাতুয্ যাহরা ও ইমামাইনে কারিমাইন অর্থাৎ হযরত ইমাম হাসান ও হযরত ইমাম হুসাইন (রাদ্বিআল্লাহু আনহুমা)ও এ মকামে অধিষ্ঠিত। (মকতুবাতে ইমাম রাব্বানী, দফতরে আউয়াল)

হযরত ক্বাযী সানাউল্লাহ্ পানিপতি (رحمة الله) স্বরচিত তাফসীরে

وَاَنْتُمْ تَتْلٰى عَلَيْكُمْ اٰيٰت اللهِ وَفِيْكُمْ رَسُوْله الخ

এ আয়াতের অধীনে উল্লে­খ করেছেন।

অনুবাদ: তোমাদের নিকট আল্লাহর আয়াতসমূহ পাঠ করা হচ্ছে। আর তোমাদের মধ্যে আল্লাহর রাসূল (ﷺ) উপস্থিত রয়েছেন। (কুরআন মজীদ)

তিরমিযী শরীফে হযরত জাবের (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত, বিদায় হজ্জে হুজুর (ﷺ) স্বীয় ক্বছওয়া নামক উষ্ট্রির উপর সওয়ার হয়ে সমবেত সমস্ত সাহাবায়ে কেরামের উদ্দেশ্যে খুত্বা দিতে গিয়ে ইরশাদ করেন, হে সকল মানুষ! নিশ্চয় আমি তোমাদের মধ্যে এমন কিছু রেখে যাচ্ছি তা যদি তোমরা দৃঢ়ভাবে আঁকড়িয়ে ধর তাহলে তোমরা কখনো পথভ্রষ্ট হবে না। একটি হলো আল্লাহর কিতাব আর দ্বিতীয়টি হলো আমার আহলে বায়ত। উপরোক্ত আয়াত ও হাদীসের ব্যাখ্যা করতে গিয়ে হযরত সানাউল্লাহ্ পানিপতি (رحمة الله) বলেন, আমার বক্তব্য হলো-

قُلْتُ اَشَارَ النَّبِىُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَّلَام اِلٰ اَهْلِ الْبَيْتِ لِاَنَّهُمْ اَقْطَابُ الْاِرْشَادٍ فِى الْوَلَاَيَةِ اَوَّلُه عَلِىُّ عَلَيْهِ السَّلَامُ ثُمَّ اَبْنَائه اِلٰى الْحَسَنِ الْعَسْكَرِىِّ وَاٰخِرُهُمْ غَوْثُ الثَّقلَيْنِ مُحِىُّ الدِّيْنِ عَبْدُالْقَادِر الْجِيْلٰنِىْ رَحْمَه الله عَلَيْهِ. لَا يَصِلُ اَحَدْ مِنْ الْاَوَّلِيْنَ وَالْاٰخِرِيْنَ اِلٰى دَرْجَةِ الْوِلَايَةِ اِلَّا بِتَوَسُّطِهِمْ كَذَا قَالَ الْمُجَدِّدُ رَحْمَه اللهُ عَلَيْهِ

অনুবাদ: সরকার দো আলম (ﷺ) আহলে বাইতে কেরামের প্রতি ইঙ্গিত করেছেন। কেননা, আহলে বাইতে কেরামই اَقْطَابُ الْاِشَادِ فِى الْوِلَايَاتِ এর মর্যাদায় অধিষ্ঠিত। তাঁদের মধ্যে সর্বপ্রথম হচ্ছেন হযরত আলী (رضي الله عنه)। এরপর তাঁর সন্তানগণ হতে হযরত ইমাম হাসান আসকারী পর্যন্ত। আর তাঁদের সর্বশেষ হচ্ছেন হযরত গাউছে সাক্বালাইন মুহীউদ্দীন আবদুল কাদের জিলান (رحمة الله) এ মর্যাদায় অধিষ্ঠিত

পূর্বের এবং পরের কেউ তাঁদের মাধ্যম ছাড়া বেলায়তের মর্যাদায় পৌঁছতে পারেন না। তেমনিভাবে হযরত মুজাদ্দিদে আলফে সানী (رحمة الله) মতামত ব্যক্ত করেছেন। (তাফসীরে মাজহারী: ১০৩)

سيف المسلول থেকে فتوى مسعوديه এর মধ্যে ফকীহুল হিন্দ হযরত মাসঊদ শাহ্ মুহাদ্দিস দেহলভী লিখেছেন,

অনুবাদ: এ মহা পদমর্যাদা হযরত সাইয়্যেদেনা আদম (عليه السلام) এর আবির্ভাবের সময় হতে হযরত আলী মুরতাজা এর রূহে নির্ধারিত হলো। হযরত আলী (رضي الله عنه) পার্থিব জগতে আগমনের পূর্বে আগেকার উম্মতগণের মধ্যে যারা ولايت এর মর্যাদা লাভ করতেন তারা হযরত আলী মুরতাজা (رضي الله عنه)) এর রূহে পাকের মাধ্যমে তা লাভ করেছেন। আর তাঁর সৃষ্টি হওয়ার পর থেকে পরলোক গমন পর্যন্ত সকল সাহাবায়ে কেরাম ও তাবেয়ীনগণ এ মহা দৌলত তাঁরই মাধ্যমে অর্জন করেছেন। আর তাঁর পরলোক গমনের পর এ মর্যাদা যথাক্রমে হযরত হাসান মুজতবা, হযরত হুসাইন শহীদে কারবালা, ইমাম যয়নুল আবেদীন, ইমাম মুহাম্মদ বাকের, হযরত ইমাম জাফর সাদেক, ইমাম মুসা কাজেম, ইমাম আলী রজা, ইমাম মুহাম্মদ নক্বী, ইমাম আলী নক্বী ও ইমাম হাসান আসকারী (রাদ্বিআল্লাহু আনহুম)কে এ মহা পদমর্যাদা সোপর্দ করা হয়। হযরত ইমাম আসকরির ওফাতের পর হতে সাইয়্যেদুশ শুরাফা, গাউসুছ ছাক্বালাইন, মুহীউদ্দীন আবদুল কাদের জিলানী (رحمة الله) এর আবির্ভাবের সময় পর্যন্ত। যখন তিনি জন্মগ্রহণ করেন, এ বরকতময় পদমর্যাদা তাঁকে ন্যস্তপূর্বক হযরত ইমাম মুহাম্মদ মাহদী এর আবির্ভাব পর্যন্ত মানব ও দানবের গাউছের বরকতময় রূহে সমর্পিত হয়। এ জন্য হযরত গাউছে পাক ঘোষণা করেছেন যে,

قَدَمِىْ هَذِه عَلٰى رَقَبَةِ كُلِّ وَلِىّ اللهِ

অর্থাৎ: আমার এ কদম সকল আল্লাহর ওলীগণের গর্দানের উপর রয়েছে।

আর যখন ইমাম মাহদী আত্মপ্রকাশ করবেন এ ‘মহা পদমর্যাদা’ তাঁকেই সোপর্দ করা হবে। سيف المسلول কিতাবের শেষাংশ:

رِجَالُ هٰذِه الْاُمَّةِ اَكْثَرُ اِرْشَادًا وَاَقْوٰى تَاثِيْرًا فِى النَّاسِ بِالْجَذْبِ اِلٰى اللهِ تَعَالٰى مِنْ رِجَالِ الْاُمَمِ السَّابِقَةِ . وَكَانَ قُطْبِ اِرْشَادِ كَمَالَاتِ الْوَلَايَةِ عَلِىّ عَلَيْهِ السَّلَامُ مَا بَلَغَ اَحَدٌ مِنَ الْاُمَمِ السَّابِقَةِ دَرْجَةَ الْاَوْلِيَاءِ اِلَّا بِتَوَسُّطِ رُوْحِه . ثمَّ كَانَ بِتِلْكَ الْمَنْصَبِ الْاَئِمَّةُ الْكِرَامُ اَبْنَائَه اِلٰى الْحَسَنِ الْعَسْكَرِىْ وَعَبْدِ الْقَادِرِ الْجِيْلِىْ وَ مِنْ لَّمْ قَالَ : ’’وَوَقْتِىْ قَبْلَ قَلْبِىْ قَدْ صَفَالِى‘‘ وَهُوَ عَلٰى ذَالِكَ الْمَنْصَبِ اِلٰى يَوْمَ الْقِيَمَةِ وَ مِنْ ثُمَّ قَالَ: اَفَلَتْ شُمُوْسُ الْاَوَّلِيْنَ وَشَمْسُنَا . اَبَدًا عَلٰى اُفُقِ الْعُلٰى لَاتَغْرُبُ . (مظهرى, صـ১২০)

অর্থ: পূর্ব যুগের উম্মতগণের আউলিয়ায়ে কেরামগণের তুলনায় উম্মতে মুহাম্মদী (ﷺ) এর উম্মতগণের আউলিয়ায়ে কেরামগণ মানুষের মধ্যে সঠিক পথপ্রদর্শক এবং শক্তিশালী প্রভাব বিস্তারে আল্লাহ্ তায়ালার দিকে আকৃষ্টকারী এরাই অধিক। হযরত আলী (رضي الله عنه) বেলায়তি পরিপূর্ণতায় কুতুবে ইরশাদের মর্যাদায় অধিষ্ঠিত। পূর্বের উম্মতগণের কেউ হযরত আলী (رضي الله عنه) এর মাধ্যম ছাড়া আউলিয়া এর মর্যাদায় পৌঁছতে পারেননি।

অতঃপর এ পদমর্যাদা আইম্মায়ে কেরাম তথা তাঁর আওলাদগণ হযরত ইমাম হাসান আসকারী ও আবদুল কাদের জিলানী লাভ করেন। তৎপ্রতি ইঙ্গিত করতে গিয়ে গাউছে পাক (رضي الله عنه) বলেছেন-

وَوَقْتِىْ قَبْلَ قَلْبِىْ قَدْ صَفَالِىْ -. وَهُوَ عَلٰى ذَالِكَ الْمَنْصَبِ اِلٰى يَوْمِ الْقِيَمَةِ وَ مِنْ ثُمَّ قَالَ :  

اَفَلَتْ شُمُوْسُ الْاَوَّلِيْنَ وَشَمْسُنَا

اَبَدًا عَلٰى اُفُقِ الْعُلٰى لَاتَغْرُبُ . (مظهرى, صـ১২০)১১

অনুবাদ: আর তিনি (গাউছে পাক) কিয়ামত পর্যন্ত এ পদমর্যাদায় অধিষ্ঠিত থাকবেন। এর উপর ভিত্তি করে তিনি বলেছেন- পূর্বেকার সকলের সূর্যগুলো অস্তমিত হয়ে গেছে। আমাদের সূর্য সুউচ্চ মর্যাদার আকাশে উদীয়মান থাকবে। কখনও অস্তমিত হবে না। (মাজহারী: ১২০)

হাফেজ যাহাবী (رحمة الله) বলেন, হযরত শায়খ আবদুল কাদের জিলানী (رحمة الله) এর বুযুর্গ পিতার নাম হযরত আবু ছালেহ জঙ্গী দোস্ত। হাফেজ যয়নুদ্দীন ইবনে রজব (رحمة الله) স্বরচিত কিতাব طبقات এর মধ্যে বর্ণনা করেন যে, হযরত শায়খ আবদুল কাদের ইব্নে আবু ছালেহ আবদুল্লাহ্ জঙ্গী দোস্ত ইব্নে আবু আবদুল্লাহ্ আল্জিলী বাগদাদী তিনি যাহেদ যমানার শায়খ এবং আল্লামা, আরেফীনদের শীরমনি, সুলতানুল মাশায়েখ এবং ত্বরীকতপন্থীদের সর্দার ছিলেন। আল্লাহর সৃষ্টি জগতে সকলের নিকট সমাদৃত ছিলেন। তাঁর বরকতময় সত্তার দ্বারা আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাত বিরাট শক্তি লাভ করেছে। বেদআতী ও কামরিপুর অনুসারীরা লাঞ্ছিত হয়েছে। দূর ও নিকটের বিভিন্ন দেশ ও শহর থেকে তাঁর নিকট বিভিন্ন ফতোয়া আসত।

কাযিউল কোযাত (প্রধান বিচারপতি) মুহিব্বুদ্দীন আল্-আলিমী স্বরচিত “তারীখ” এ বর্ণনা করেছেন যে, সাইয়্যেদেনা শায়খ আবদুল কাদের জিলানী হাম্বলী মতাবলম্বীদের ইমাম ছিলেন।

ইমাম হাফেজ আবু আবদুল্লাহ্ মুহাম্মদ ইবনে ইউসুফ ইব্নে মুহাম্মদ আল্ বারযালী আল্ আশ্বাণী স্বরচিত কিতাব المشيخة البغدادية এর মধ্যে বর্ণনা করেন, হযরত শায়খ আবদুল কাদের (رحمة الله) বাগদাদে হাম্বলী ও শাফেয়ী মাজহাবদ্বয়ের ফকীহ, মুফতী এবং উভয় মাজহাবের অনুসারীগণের শায়খ ছিলেন। তৎকালীন সর্বস্তরের ফোকাহা ও সকল জনসাধারণের নিকট সমাদৃত ছিলেন। অত্যন্ত মিষ্টভাষী ও দানশীল ছিলেন। তাঁর শরীর মুবারকের ঘাম সুগন্ধ ছিল। স্বাধীনচেতা ও দৃঢ়পদ এর অধিকারী ছিলেন।

হযরত সুহাইল ইবনে আবদুল্লাহ্ তস্তরী বর্ণনা করেন, হযরত শায়খ সৈয়দ আবদুল কাদের জিলানী একদা এক বিশেষ সময়ে নামাজ আদায়ের পর রাব্বুল আলামীন এর দরবারে মুনাজাত করতে গিয়ে বলেন:

اَللّٰهُمَّ اِنِّىْ اَسْئَلُكَ بِحَقِّ مُحَمَّدٍ حَبِيْبِكَ وَ خَيْرِ خَلْقِكَ وَاٰبَائِىْ اِنَّكَ لَا تَقْبِضْ رُوْحَ مُرِيْدٍ اَوْ مُرِيْدَةٍ لَاذُوْابى اِلَّا تَوْبَةٍ .

অনুবাদ: হে আল্লাহ্! আমি তোমার দরবারে তোমার হাবীব এবং তোমার সর্বোত্তম সৃষ্টি হযরত মুহাম্মদ মুস্তফা (ﷺ)কে উসীলা বানিয়ে প্রার্থনা করছি। আমার সকল মুরীদ ও মুরীদগণের মুরীদান যারা আমার সাথে সম্পৃক্ত তাদের কাউকে তওবা ছাড়া মৃত্যু দিওনা।

শায়খুল ইসলাম হাফেজুদ্দুনিয়া শেহাবুদ্দীন আহমদ ইব্নে হাজার আসক্বালানী (رحمة الله)কে গাউছে পাকের বাণী قَدَمِىْ هٰذِه عَلٰى رَقَبَةِ كُلِّ وَلِىّ اللهِ এর মর্মার্থ জিজ্ঞেস করা হলে তিনি তার জবাবে বলেন, গাউছে পাকের বাণীর অর্থ হচ্ছে যে, তাঁর কারামত এত বেশী প্রকাশ হবে অন্যায়ের পক্ষের ব্যক্তি ছাড়া তাঁর কারামতগুলো আর কেউ অস্বীকার করতে পারবে না। তাঁর আবির্ভাবের যুগে এমন উচ্চ মর্যাদা ও কারামতের অধিকারী কেউ ছিল না।

শায়খুল ইসলাম হাফেজ ইয্যুদ্দীন ইবনে আবদুচ্ছালাম বর্ণনা করেন, গাউছে পারেক কারামতগুলো এত অধিক বর্ণনা দ্বারা সুপ্রমাণিত, এ রকম কারো কারামত প্রমাণিত নয়।

এত অধিকহারে তাঁর অলৌকিক কারামত প্রকাশিত হওয়া সত্বেও তিনি উপস্থিত মহা অনুভূতি, প্রখর বুদ্ধিমত্তা এবং শরীয়তের বিধান পরিপূর্ণভাবে পালন করতেন এবং অন্যকেও তৎপ্রতি দাওয়াত দিয়ে গেছেন। শরীয়ত পরিপন্থীদের তিনি মনে প্রাণে ঘৃণা করতেন। দানশীল, সুন্দর আচরণকারী ও অনেক সন্তানেরও জনক ছিলেন। ইবাদত ও মুজাহেদার মধ্যে সদা সর্বদা লিপ্ত থাকতেন। তাছাড়া তার মধ্যে আরও অনেক প্রশংসনীয় গুণাবলীর সমাহার।

সুতরাং যার মধ্যে এত গুণাবলী বিদ্যমান তিনি পরিপূর্ণ কামেল বুযুর্গ হওয়ার ব্যাপারে আদৌ কোন সন্দেহ থাকতে পারে? হযরত গাউছে পাকের অসংখ্য অলৌকিক ক্ষমতা বা কারামতের প্রকাশ হওয়া বস্তুত এটি শরীয়তপ্রণেতা হযরত নবীয়ে করীম (ﷺ) এরই মহান ছিফত বা গুণ। তাই তো গাউছে পাক ঘোষণা করেছেন; قَدَمِىْ هٰذِه عَلٰى رَقَبَةِ كُلِّ وَلِىّ اللهِ হযরত খলীফা ইবনে মুসা মুলকী (رحمة الله) বলেন, আমি একদা দো’জাহানের সর্দার (ﷺ)কে স্বপ্নযোগে তাঁর দীদার লাভ করে প্রশ্ন করলাম, ইয়া রাসূলাল্লাহ্! শায়খ আবদুল কাদের জিলানী বলে থাকেন, قَدَمِىْ هٰذِه عَلٰى رَقَبَةِ كُلِّ وَلِىّ اللهِ আমার এ কদম আল্লাহর সমস্ত ওলীগণের স্কন্ধে রয়েছে। জবাবে নবীজি বললেন:

صَدَقَ الشَّيْخُ عَبْدُ الْقَادِرْ كَيْفَ وَهُوَ الْقُطْبُ وَ اَنَا اَرْعَاهُ .

অনুবাদ: শায়খ আবদুল কাদের সত্য বলেছেন। আর তিনি কেন সত্য বলবেন না। কেননা তিনি স্বয়ং কুতুব। আমিই তাঁর দেখাশুনা করি। এ জন্য গাউছে পাক বলেছেন:

وَسِرِّىْ فِى الْـعُـلْيَا بِـنُـوْرِ مُـحَمَّدٍ ۞ فَـكُـنَّـا بِـسِـرِّ اللهِ قَـبْـلَ الـنَّـبُـوَة


وَلِىْ نَشَأةٌ فِى الْحُبِّ مِنْ قَـبْلِ اٰدَمَ ۞ وَسِرِّى سَرٰى فِى الْكَوْنِ مِنْ قَبْلِ نَشْأَتِىْ


كُلُّ قُطْبٍ يَـطُوْفُ بِالْبَـيْتِ سَـبْـعًا ۞ وَاِنَّ الْـبَـيْـتَ طَائِـفٌ بِـخِـيَـامِـىْ


اَنَا كُنْتُ قَبْلَ الْقَبْلِ قُطْبًا مُبَجَّلًا ۞ وَطَافَتْ بِى الْاَمْلَاكُ وَالرَّبُّ سَمَّانِـىْ


فَــمَنْ فِىْ رِجَـالِ اللهِ نَالَ مَكَانَـتِىْ ۞ وَجَدِّىْ رَسُوْلُ اللهِ فِى الْاَصْـلِ رَبَّانِىْ


اَنَا قَادِرُى الْـوَقْـت عَبْدُ الْـقَـادِر ۞ اُكَنّٰى بِمُحِـىٍّ الدِّيْنِ وَالْاَصْلُ كِيْلَانِىْ


وَشَاهَدْتُ مَافَوْقَ السَّمٰوٰتِ كُـلِّهَا ۞ كَذَا الْعَرْشُ وَالْكُرْسِىْ فِىْ طَـىِّ قَبْضَتِىْ


اَنَا قُطْبُ اَقْطَابِ الْوَجُوْدِ حَقِيْقَةً ۞ عَلٰى سَائِرِ الْاَقْـطَابِ عِـزِّىْ وَحُرْمَـتِـىْ


وَجَدِّىْ رَسُوْلُ اللهِ اَعْنِىْ مُحَمَّدًا ۞ اَنَا عَـبْـدُ قَـادِرٍ دَامَ عِــزِّىْ وَرِفْعَـتِـىْ

= الفيوضات الربانية

অনুবাদ: ১. এবং হযরত মুহাম্মদ (ﷺ) এর নূরের মাধ্যমে ঊর্ধ্বজগতে আমার গোপন রহস্য প্রমাণিত হয়েছে। অতঃপর নবুওয়াতের প্রকাশের পূর্বে আমি আল্লাহর রহস্য ভাণ্ডারে গোপন ছিলাম।

২. সাইয়্যেদেনা আদম (عليه السلام) এর সৃষ্টির পূর্ব থেকে আমার লালন-পালন আল্লাহ্ তায়ালার প্রেমের জগতে হয়েছিল এবং আমার জন্মের পূর্ব থেকে সৃষ্টিজগতে আমার গোপন রহস্য বিস্তার লাভ করেছে।

৩. প্রত্যেক কুতুব বায়তুল্লাহ্ শরীফের চতুর্দিকে সাতবার করে প্রদক্ষিণ করে থাকেন, আর বায়তুল্লাহ্ শরীফ আমার ঘরের চতুর্দিকে প্রদক্ষিণ করে।

ইমাম আ’লা হযরত শাহ্ আহমদ রজা (رحمة الله) বলেছেন:

দলীল: যেমন গাউছে পাক (رحمة الله) স্বয়ং ইরশাদ করেছেন:

وَلَيْسَ يَصِحُّ فِى الْاَعْيَانِ شَيْـئٌ

اِذَا اِحْتَاجَ النَّهَارُ اِلٰى دَلِيْلِ . (جواهر المضيئة)

যদি দিনের বেলা প্রমাণ ও দলীলের মুখাপেক্ষী হয় তাহলে হাক্কায়েক হতে কোন হাক্বীক্বত প্রতিষ্ঠিত হবে না।

৪. আমি সময়ের সূচনা হওয়ার পূর্ব থেকেই সম্মানিত কুতুবুল আকতাব ছিলাম। আর রূহানী জগতের সম্রাট তথা আউলিয়া কেরাম আমার চতুর্দিকে প্রদক্ষিণ করেছিলেন এবং মহান রাব্বুল আলামীন স্বয়ং আমার নাম রেখেছেন।

৫. অতঃপর আল্লাহর ওলীগণের মধ্যে কে আমার মর্যাদা লাভ করেছে? আর আমার নানাজান আল্লাহর প্রিয় রাসূল (ﷺ) মূলত: আমাকে লালন-পালন করেছেন।

৬. আমি সময়ের উপর ক্ষমতাবান এবং মহান ক্ষমতাবান প্রভুর বান্দা হই। আমার ডাক নাম মুহীউদ্দীন রাখা হয়েছে। অথচ আমি জিলানী বা গিলানী বংশোদ্ভুত।

৭. আমি আসমান সমূহের ঊর্ধ্বে যা কিছু আছে তা স্বচক্ষে অবলোকন করেছি। তেমনিভাবে আরশ ও কুরছি আমার মুষ্ঠির ভাজের মধ্যে বিদ্যমান রয়েছে।

৮. আমি বাস্তবিক পক্ষে অস্তিত্বশীল জগতের কুতুবগণের কুতুব হই। আর আমার সম্মান ও মর্যাদা সমস্ত কুতুবগণের উপর সৃষ্টিগতভাবে প্রতিষ্ঠিত।

৯. আর আল্লাহর রাসূল অর্থাৎ মুহাম্মদ (ﷺ) হলেন আমার নানাজান। আমি মহান ক্ষমতাশালী প্রভুর বান্দা হই। আমার সম্মান ও উঁচু মর্যাদা স্থায়ীভাবে রয়েছে।

হযরত গাউছে পাকের কুতুবিয়াতের ব্যাপকতার বর্ণনা
____________________
হযরত গাউছে পাকের কুতুবিয়াতের ব্যাপকতার বর্ণনা

প্রশ্ন: قَدَمِىْ هَذِه عَلٰى رَقَبَةِ كُلِّ وَلِىّ اللهِ এর মর্মানুযায়ী গাউছে পাকের এ মর্যাদা তাঁর আবির্ভাবকালের মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল। তাঁর পূর্বের এবং পরের আউলিয়া কেরাম এর বাইরে। ইমাম রাব্বানী কাইয়্যেমে দাওরানী, কুতবে যমানি হযরত শায়খ মুজাদ্দিদে আল্ফেসানী সিরহিন্দী (رحمة الله) স্বরচিত مكتوبات شىريف এর ১ম খণ্ড ২৯৩ পৃষ্ঠায় উল্লে­খ করা হয়েছে যে, যদি গাউছে পাকের পূর্বের এবং পরের আউলিয়াগণকে এ ঘোষণার অন্তর্ভূক্ত করা হয়, তাহলে সাহাবায়ে কেরাম ও তাবেয়ীনগণের উপরেও তাঁর ফযীলত অধিক হওয়া অপরিহার্য হয়ে যায়। অনেক হাদীস দ্বারা সুসংবাদপ্রাপ্ত হযরত ইমাম মাহদী এর উপরও তাঁর মর্যাদা অধিক হওয়া আবশ্যক হয়ে যায়।

বাহ্জাতুল আসরার কিতাবে উল্লে­খ করা হয়েছে:

فِىْ وَقْتِهَا عَلٰى رَقَابِ الْاَوْلِيَاءِ فِىْ ذَالِكَ الْوَقْتِ .

অর্থাৎ: এ হুকুম গাউছে পারেক সময়কাল পর্যন্ত সীমিত ছিল।

উত্তর: মুহাক্কেকীন কেরাম বলেছেন, ইমামে রাব্বানী মুজাদ্দিদে আলফেসানী এ মর্যাদায় হযরত গাউছে পাকের স্থলাভিষিক্ত ছিলেন। হযরত গাউছে পাকের প্রতিনিধিত্বের দ্বারা এ মুয়ামালাটি মুজাদ্দিদে আল্ফেসানীর সাথে এমনভাবে সম্পৃক্ত ছিলেন যেমন- نور القمر مستفاد من نور الشمس অর্থাৎ চাঁদের নিজস্ব কোন আলো নেই। সে সূর্যের আলো দ্বারা আলোকিত মাত্র। হযরত মুজাদ্দিদে আলফেসানী (رحمة الله) এর মূল রহস্যকে সংক্ষিপ্তভাবে مكاشفات غيبيه নামক কিতাবে উল্লে­খ করেছেন-

অর্থাৎ: বড় বড় আউলিয়া কেরামদের মধ্যে কুতুব, গাউছুস সাক্বালাইন, কুতুবে রব্বানী মুহীউদ্দীন শায়খ আবদুল কাদের জিলানী এ মহান দৌলত দ্বারা সম্মানিত হয়েছেন। এ খাছ মর্যাদা খুব কম আউলিয়াগণেরই নছীব হয়ে থাকে।

সিলসিলায়ে আলিয়া নকশ্বন্দিয়া মুজাদ্দেদিয়ার সম্মানিত বুযুর্গ হযরত শাহ্ ফকীরুল্লাহ্ আলভী (رحمة الله) বলেন:

অর্থ: অতএব, অখণ্ডনীয় কাশ্ফ দ্বারা প্রমাণিত হলো, গাউছে পাকের কদম মুবারক পূর্বের ও পরের সকল আউলিয়া কেরামের স্কন্ধে বিদ্যমান। কাদ্দাসাল্লাহু আসরারাহু) এবং এ সম্পর্কে যা কিছু আলোচনা করা হলো তা তুমি ভাল করে জেনে রাখবে। -

(মাকতুবাত শাহ্ ফকীরুল্লাহ্ মাকতুব নং-৪৯)

হযরত শাহ্ হাবীবুল্লাহ (رحمة الله) বলেন, ইমাম মুজাদ্দিদে আলফেসানীর বক্তব্য:

অর্থাৎ: এ বিধানটি তাঁর যুগের আউলিয়া কেরামের ব্যাপারে প্রযোজ্য, তাঁর অর্থাৎ গাউছে পাকের পূর্বের ও পরের আউলিয়াগণের ব্যাপারে প্রযোজ্য নয়।

ইমাম রবব্বনী তাঁর শেষ সময়ে এ সম্পর্কে যা বলে গেছেন তা প্রাথমিক সময়ে তাঁর পূর্বের বক্তব্যকে রহিতকারী। হযরত শায়খ মুজাদ্দিদ তাঁর জীবনের শেষ পর্যায়ে হযরত গাউছে পাকের শ্রেষ্ঠ মর্যাদার কথা বর্ণনা করেছেন। -দফতরের সুয়াম, মাকতুব নং ১২৩

উল্লে­খ রয়েছে যে, যারা নবুয়তি নিকট যামানার সাথে সম্পর্ক রাখেন বস্তুত তাঁরা মূলের মূল পর্যন্ত পৌঁছতে পারেন। এ পথে যারা পৌঁছতে পারেন তাঁরা আম্বিয়া আলাইহিমুস্ সালাম এবং তাঁদের আছহাব তথা সাথীর মর্যাদায় বিভূষিত। তাঁরা উম্মতের মধ্যে যাকে ইচ্ছা করেন এ মহান দৌলত দানে ধন্য করে থাকেন। কিন্তু এরা সংখ্যার দিক দিয়ে অনেক কম। এ পথে কোন মাধ্যম ও প্রতিবন্ধকতা নেই। এ পথে সম্পৃক্তগণ যা ফয়েজ হাসিল করে থাকেন কারো মাধ্যম ছাড়াই সরাসরি মূল থেকে অর্জন করেন। তাদের মধ্যে কেউ কারো জন্য প্রতিবন্ধক হন না।

দ্বিতীয় এমন পথ রয়েছে যারা قرب ولايت এর সাথে সম্পর্ক রাখে। সকল আওতাদ, আবদাল, নুজাবা এবং সমস্ত আল্লাহর ওলীগণ এ পথে পৌঁছে থাকেন। এ পথের অর্থ হচ্ছে ত্বরীকতের বিশেষ পথ, বরং প্রচলিত جـذبه এর আওতাধীন রয়েছে। এ পথের واسطه বা মাধ্যম সাবেত রয়েছে। এ পথের সন্ধানপ্রাপ্তদের পেশওয়া এবং দিশারী এবং তাঁদের ফয়েজ লাভের মূলকেন্দ্র হচ্ছেন হযরত আলী কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহু। এ স্তরে স্বয়ং হুজুর সাইয়্যেদে আলম (ﷺ) এর উভয় নূরানী কদম মুবারক হযরত আলী (رضي الله عنه) এর বরকতময় মাথার উপর রয়েছে।

হযরত ফাতেমাতুয্ যাহরা (رضي الله عنه) এবং হাসানাইন করীমাইন তথা ইমাম হাসান (رضي الله عنه) ও ইমাম হুসাইন (رضي الله عنه)ও এ স্তরে তাঁর শরীক রয়েছেন। হযরত মুজাদ্দিদে আলফে সানী (رحمة الله) বলেন, আমার বদ্ধমূল ধারণা হচ্ছে যে, হযরত আলী (رضي الله عنه) তাঁর জন্মের পূর্বেও তিনি এ মহাস্তরের আশ্রয়ে ছিলেন। যেমনিভাবে জন্মের পরেও আছেন। এ পথে যার কাছে ফয়েজ ও হেদায়েত পৌঁছে থাকে তা তাঁর উসিলায় পৌঁছে থাকে। কেননা এ পথের সর্বশেষ নোকতা বা বিন্দু এটিই। আর এ সএরর কেন্দ্রস্থল তাঁর সাথে সম্পর্ক রেখে চলে। যখন হযরত আলী (رضي الله عنه) এর পালা পূর্ণ হলো এ আজিমুশ্শান মর্যাদা ধারাবাহিকভাবে হযরত ইমাম হাসান ও হযরত ইমাম হুসাইন (رضي الله عنه) এর উপর ন্যস্ত করা হয়। তাঁদের পরে বারজন ইমামের মধ্যে হতে প্রত্যেকের সাথে এ ধারাবাহিকতা ঠিক থাকে।

উল্লে­খিত বুজুর্গগণের যুগে তেমনিভাবে তাঁদের ইন্তিকালের পর যারাই ফয়েজ ও হেদায়েত লাভ করছিলেন, ঐ বুজুর্গদের মাধ্যমই লাভ করেছিলেন। তাঁদের যুগের আকতাব ও নুজাবা যেই হোক না কেন, তাঁদের সকলের লক্ষ্যস্থল এবং আশ্রয়স্থল তাঁরাই। কেননা সকল দিক বা প্রান্ত মূলকেন্দ্রের সাথে একত্রিত না হয়ে উপায় নেই। এ ধারাবাহিকতায় হযরত শায়খ আবদুল কাদের জিলানী (رحمة الله) এর পালা এসে পড়লো। উল্লে­খিত মহা পদমর্যাদা এ বুজুর্গের উপরই ন্যস্ত হলো।

উপরে উল্লে­খিত সকল ইমাম ও শায়খ জিলানী ব্যতীত কোন ব্যক্তি এ কেন্দ্রের উপর বিদ্যমান নয়। এ পথে সকল আকতাব ও নুজাবা যে ফয়েজ ও বারাকাত প্রাপ্ত হয়ে থাকেন তা শায়খ (গাউছে পাক) এর উছিলায় লাভ করে থাকেন। কেননা এ কেন্দ্র শায়খ ব্যতীত আর কেউ লাভ করেননি। তাই শায়খ জিলানী (رحمة الله) বলেন-

اَفَلَتْ شُمُوْسُ الْاَوَّلِيْنَ وَشَمْسُنَا

                       اَبَدًا عَلٰى اُفُقِ الْعُلٰى لَا تَغْرُبُ

অর্থাৎ: পূর্বের (ওলীগণের) সূর্য অস্তমিত হয়েছে। আর আমার সূর্য অস্ত যায়নি বরং সর্বদা উদীয়মান রয়েছে।

কছিদাংশে উল্লে­খিত ‘সূর্য’ দ্বারা হেদায়েতের ফয়জের সূর্য বুঝানো হয়েছে। আর ‘সূর্য’ অস্ত যাওয়া মানে উল্লে­খিত হেদায়েত ও ফয়েজ জারী না হওয়া। যেহেতু হযরত শায়খ জিলানী এর অস্তিত্বের দ্বারা যে মুয়ামালা পূর্বের কুতুবগণের সাথে সম্পৃক্ত ছিল তা হযরত শায়খ জিলানীর উপর ন্যস্ত করা হয়। এতে তিনি সঠিক পথ ও হেদায়েত পৌঁছানোর মাধ্যমেও উছিলায় পরিণত হলেন। যেমনিভাবে তাঁর পূর্বের বুজুর্গগণ হয়েছিলেন। যখন পর্যন্ত ফয়েজ এর উছিলায় মুয়ামালা স্থায়ী থাকবে তা তো শায়খ এর উছিলা এবং মাধ্যমেই থাকবে। এ কারণেই গাউছে পাক যথার্থই বলেছেন-

اَفَلَتْ شُمُوْسُ الْاَوَّلِيْنَ وَشَمْسُنَا

                       اَبَدًا عَلٰى اُفُقِ الْعُلٰى لَا تَغْرُبُ

“তরজুমা” হযরত মাওলানা আলেমুদ্দীন (رحمة الله) নক্শবন্দী, মুজাদ্দিদী যিনি সর্বজন গৃহীত (দফতরে ছুয়াম, মাকতুব নং: ১২৩ তরজুমা ৬৭৯ পৃষ্ঠা)। মাকতুবাতে ইমাম রব্বানী। এ মাকতুব শরীফ অধ্যয়ন না করার কারণে কতক লোক এমন বিরুপ ধারণা পোষণ করছেন যে, হযরত মুজাদ্দিদে আলফে সানী (رحمة الله) হযরত গাউছে আজমের শ্রেষ্ঠত্বকে তাঁর যুগের ওলীগণের উপর দেওয়াকে কখনও মেনে নেননি।

অত্যন্ত আক্ষেপের বিষয় এই যে, এ মাকতুবাত গ্রন্থটি উলামা ও ফুজালাগণের দৃষ্টিগোচর কেন হয়নি?

গাউছে পাক বলেছেন,

بِلَادُ اللهِ مُلْكِىْ تَحْتَ حُكْمِىْ

                          وَوَقْتِىْ قَبْلَ قَلْبِىْ قَدْ صَـفَالِىْ

অর্থাৎ: আল্লাহ্ তায়ালার সকল রাজ্য আমার নিয়ন্ত্রণাধীনে। আমার রূহানী অবস্থা আমার দেহ সৃষ্টি হওয়ার পূর্বে পরিচ্ছন্ন ছিল। এ পদ্যাংশে হুজুর গাউছে পাক (رحمة الله) বলেন, যত কামালিয়াত ও বুজুর্গী মানবের মধ্যে আল্লাহ্ তায়ালা দান করেছেন, তা সে মানবের রূহ সৃষ্টির সময় দান করেছেন। বর্তমানে আমার যে বুজুর্গী ও পরিপূর্ণতা রয়েছে, তা (বুজুর্গী) আমার রূহ সৃষ্টির সময় দান করা হয়েছিল। অর্থাৎ পৃথিবীর আধ্যাত্মিক রাজত্ব তাঁরই নিয়ন্ত্রণে দেয়া হয়েছে। হুজুর (ﷺ)কে যে নবুয়ত দান করা হয়েছে তা পার্থিব জীবনের চলি­শ বছর পরে দান করা হয়নি বরং ঐ সময়ের পূর্বেই নবীজির নবুয়ত দান করা হয়েছে যখন সাইয়্যেদেনা আবুল বশর আদম (عليه السلام) পানি এবং মাটির মাঝে অবস্থান করেছিলেন অর্থাৎ তখনও তাঁকে সৃষ্টি করা হয়নি।

হাদীসে পাকে নবীজী (ﷺ) ইরশাদ করেছেন:

كُنْتُ نَبِيًّا وَاٰدَمُ بَيْنَ الْمَاءِ وَالـتُّـرَابِ .

আমি ঐ সময় নবী ছিলাম যখন আদম (عليه السلام) পানি এবং মাটির মাঝে অবস্থান করছিলেন। হুজুর গাউছে পাক বলেন:

وَوَلَّانِىْ عَلٰى الْاَقْطَابِ جَمْعًا

                    فَحُكْمِـىْ نَافِـذٌ فِىْ كُلِّ حَالِىْ

অনুবাদ: আল্লাহ্ জাল্লা শানুহু আমাকে সমস্ত ‘আকতাব’ গণের উপর হাকিম বানিয়েছেন। অতএব, আমার হুকুমত সর্বাবস্থায় জারী রয়েছে।

যখন কোন ওলী এমন স্তরে উন্নীত হন, তখন তাঁর মাধ্যমে কুফুরী ও গোমরাহীর অন্ধকার এমনভাবে দূরিভূত হয়ে যায় যেমনিভাবে সূর্য ও চন্দ্রের আলো দ্বারা রাতের অন্ধকার দূর হয়ে যায়।

কতেক মুহাক্কেকীন এর মতে কুতুব এবং গাউছ এক ব্যক্তিই হয়ে থাকেন। আবার কখনো কুতুব বাদশাহী পদেও উন্নীত হয়ে থাকেন। যখন কোন কুতুব পরলোকগমন করেন, তখন ‘আওতাদ’ থেকে একজনকে ঐ পদে আসীন করা হয়।

গোটা পৃথিবীতে ‘আবদাল জামাত’ চলি­শজন আউলিয়া নিয়েই গঠিত হয়। নবী করীম (ﷺ) এর খাঁটি ইশ্ক ও মুহাব্বত যাঁদের অন্তরে থাকে এ স্তরের আউলিয়াগণকে আল্লাহ্ পাক কামালিয়াত এর মর্যাদায় উন্নীত করে তাদের স্তরকে পরিবর্তন করতে থাকেন। আর এ স্তরটি হচ্ছে نـجباء গণের সর্বশেষ স্তর। এ স্তরের আউলিয়া কেরামের উছিলা নিয়ে আল্লাহ্ তায়ালার দরবারে রহমতের বৃষ্টির জন্য প্রার্থনা করা হয়।

হযরত মাহবুবে সোবহানী (رحمة الله) বলেন, আল্লাহ্ তায়ালা মুহাব্বত করে আমাকে সকল কুতুবগণের উপর হাকিম করেছেন। আমার হুকুম সর্বাবস্থায় অর্থাৎ আমার পার্থিব হায়াত ও পরলোক গমনের পরেও পার্থিব দিন হোক বা রাতে, সকালে অথবা সন্ধ্যায় সদা সর্বদা জারী রয়েছে।

تصوف এর কিতাবসমূহে আউলিয়াল্লাহ্গণের বিভিন্ন স্তর ও মর্যাদা বর্ণিত হয়েছে। যেমন-কুতুবুল আকতাব, আফরাদ, আওতাদ, আবদাল, নুজাবা, নুকাবা, আরেফ, সালেক, ছালেহ ছুফী, ছাহেবে ঈমান।

আল্লাহ্ তায়ালার ইবাদত ও রিয়াজত এবং ইশ্কে রাসূল (ﷺ) এর মাধ্যমে এ মর্যাদাসমূহ লাভ হয়। ওলীউল্লাহর স্তর হলো تصوف এর আলোকে আল্লাহ্ পাকের দোস্ত।

হুজুর গাউছে পাক তাঁর বাণী যা বিশ্বে ‘কছিদায়ে গাউছিয়া’ নামে খ্যাত, এ কছিদার একাংশে গাউছে পাক বলেন:

مَقَامُكُمُ الْعُلٰى جَمْعًا وَلَكِنْ

                     مَقَامِىْ فَوْقَكُمْ مَازَالَ عَالِىْ

হে আউলিয়া, আকতাব ও আবদালগণ! আপনাদের সকলের মর্যাদা অনেক ঊর্ধ্বে। কিন্তু আমার মর্যাদা আপনাদের মর্যাদা থেকে অনেক ঊর্ধ্বে। আর এ মর্যাদা সদা সর্বদা ঊর্ধ্বে থাকবে।

সাইয়্যেদেনা গাউছে আজম (رحمة الله) এ কছিদাংশে সকল আকতাবকে উৎসাহ দান করতে গিয়ে মর্যাদার উন্নতির পন্থা বাতলিয়ে দিচ্ছেন যে, যদি তাঁরা ঐ বর্তমান মর্যাদাকে চূড়ান্ত মর্যাদা বুঝে থাকেন, তাহলে তা প্রকাশ না করা বাঞ্চনীয়। যদি তাঁরা নিজ ধারণা অনুযায়ী নিজেদেরকে কামেল বলে মনে করেন, এ মর্যাদার উপরে আর কোন মর্যাদা অবশিষ্ট নেই। তাহলে এ ধরনের ধারণা তাঁদের সঠিক হবে না। কেননা, নৈকট্যের জন্য অশেষ মর্যাদা রয়েছে। হে আল্লাহর ওলীগণ! আপনারা সবাই আমার মর্যাদা থেকে অনেক নিম্নে অবস্থান করছেন। অতএব, আমাকে অনুসরণ করার প্রচেষ্টা চালানো উচিত। যদ্বারা আপনাদের মর্যাদা বৃদ্ধি পাবে।

هُوَ بَاطِنٌ نَبُوَّةِ مُحَمَّدٍ صَلَّى الله عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَـلَايَكُوْنُ اِلَّا لِورَاثِتِه لِاِخْتِصَاصِه بِالْاَكْمَلِيَّةِ فَـلَا يَكُوْنُ خَاتم الْوِلَايَةِ وَقُطْبُ الْاَقْطَابِ اِلَّا عَلٰى بَاطِنِ خَاتَمِ النَّبُوَّةِ .

অর্থাৎ: কুতুবিয়াত পদ মর্যাদা নবুয়তে মুহাম্মদী (ﷺ) এর আধ্যাত্মিক অবস্থা। আর এ পদটি তার উত্তরাধিকারী ছাড়া কেউ লাভ করতে পারেন না। কেননা প্রকৃত কামালিয়াত লাভে ধন্য হওয়া তাঁদেরই বৈশিষ্ট্য। সুতরাং خاتم الولايت এবং قطب الاقطاب বাতেন خاتم النبوة ছাড়া হতে পারে না।

افـراد : ঐ واصلين جماعت এর নাম, যারা কুতুবের আওতার বাইরে অবস্থান করেন। কেননা আফরাদগণ ফেরেশতাগণের আশ্রয়াধীন হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তাঁরা যমীনে দায়িত্বশীল ফেরেশতাদের ঊর্ধ্বে থাকেন।

قطب : বলা হয় যারা সমগ্র সৃষ্টির অস্তিত্ব ও গুঢ়তত্ত্বাসমূহের প্রত্যক্ষকারী হয়ে থাকেন। যেমন জ্যোতিবিদ্যা জগতের বিভিন্ন কর্মকাণ্ডের সম্পাদনের জন্য মেরুকেন্দ্র নির্বাচন করা হয়। যেমন: আসমান, যমীন, বিশ্বজগত, ইহকাল ও পরকাল তথা সমগ্র অস্তিত্বশীল সৃষ্টি এবং যা ভবিষ্যতে সৃষ্টি হবে সবগুলোর ব্যবস্থাপক ও তদবীরকার হচ্ছেন মুস্তফা (ﷺ) যিনি قُطب الْكَوْنَيْنِ পদে আসীন রয়েছেন। আউলিয়া কেরামগণের ‘‘কুতুব’’ পদ মর্যাদাটির বিভিন্ন স্তর রয়েছে।

(১) قُطب الاقْطَابِ : ‘কুতুব’ কুতুবুল আকতাব এর অধীনস্ত একটি স্তর।

(২) قُطْبُ الْارشَادِ : ইনি হেদায়েত এর কেন্দ্রস্থল হন। যাঁর মাধ্যমে সমূহ গোমরাহী ও কুফুরী বিদূরিত হয়।

(৩) قُطب الْاَوْتَادِ : এ স্তর ‘নুজাবা’ গণের সর্বশেষ ধাপ হতে আরম্ভ হয়।

হুজুরে গাউছে পাক (رحمة الله) যেমনিভাবে তিনি قُطْبُ الْاَقْطَابِ তেমনিভাবে তিনি قطب الاوتاد , কুতুবুল এরশাদ এবং فردও বটে।

‘কছিদায়ে গাউছিয়া’ গাউছে পাকের স্বরচিত কছিদা কি-না?
____________________
‘কছিদায়ে গাউছিয়া’ গাউছে পাকের স্বরচিত কছিদা কি-না?

সে সম্পর্কে বর্ণনা

প্রশ্ন: কতেক লোক গাউছে পাক (رحمة الله) এর স্বরচিত কছিদা বা شعار গুলো সম্পর্কে সন্দেহ পোষণ করে থাকে এ মর্মে যে, এগুলো গাউছে পাকের কি না?

এ প্রশ্নের জবাব হলো: জানা আবশ্যক যে, কোন ব্যক্তি যখন কোন كلام এর অর্থ বা প্রকৃত মর্ম বা রহস্য বা মর্মনিহিত অবস্থা বুঝতে পারে না, তখন এটা তাঁর كلام নয় বলার চেষ্টা চালিয়ে থাকে এবং ওটার প্রমাণ তালাশ করে। এমন লোকদের ব্যাপারে কিছু করার বা বলার কি থাকতে পারে?

জানা আবশ্যক যে, ثبوت বা প্রমাণ দুই প্রকার হতে পারে। একটি হলো ثبوت كسبى অর্থাৎ কোন কথা বা বক্তব্য নিজের বলে দাবী করা। দ্বিতীয় হলো এমন কথা, বক্তব্য বা বাণী শত শত বছর পূর্ব হতে ইলম বিশারদ ও সত্যবাদী হযরতগণের কোন মতবিরোধ ছাড়াই কোন সম্মানিত বুযুর্গের বাণী বলে প্রচারিত ও প্রসিদ্ধি লাভ করা।

লক্ষ্য করুন, فقه اكبر নামক কিতাবটি হানাফী মাজহাবের একটি বিশ্ববিখ্যাত আক্বায়েদগ্রন্থ। এই কিতাবখানা একদিক দিয়ে ইমাম আবু হানিফা (رحمة الله) এর কিতাব হিসেবে প্রমাণিত নয়। অবশ্য এককালে এই কিতাবখানা তাঁর দিকে সম্পৃক্ত হতে থাকে। যদিও কতেক মুহাক্কেকীন এ বিষয়ে বিরুদ্ধাচরণ করে থাকেন।

তেমনিভাবে جامع محمد بن اسماعيل بخارى প্রখ্যাত হাদীসের বিশুদ্ধ কিতাব ইমাম মুহাম্মদ ইবনে ইসমাঈল (رحمة الله) এর সহীহ বুখারী শরীফ ব্যাপকভাবে প্রসিদ্ধি লাভ করায় কোন মতবিরোধ ছাড়াই তাঁর রচিত কিতাব বলে মেনে নেয়া হয়। কিন্তু এটা যে তাঁরই কিতাব উল্লে­খিত প্রমাণ ছাড়া আর কোন প্রমাণ নেই। এ কারণে যে, অন্যান্য সকল গ্রন্থকার এর মত ইমাম বুখারী (رحمة الله) الفت আমি সংকলন করেছি অথবা صنفت আমি গ্রন্থখানা লিখেছি এমন কোন কিছুই তিনি বলেননি। এ جامع এর কোন কোন পাণ্ডুলিপির প্রারম্ভে قال الامام অর্থ ইমাম বলেছেন, এ কথাটি লেখা আছে। সুতরাং এর দ্বারা বুঝা যায় এ বক্তব্যটি তাঁর কোন ছাত্রই লিখে থাকতে পারেন। তাই বলে, কোন আলেমই এ ব্যাপারে কোন রকম সন্দেহ পোষণ করেনি এবং করছে না।

কিন্তু গাউছে পাক (رحمة الله) এর কছিদাগুলো তাঁরই বাণী হওয়ার ব্যাপারে দুটি কারণে প্রমাণিত। আর এ সম্পর্কটা কোন আচমকা নয়। হুজুর গাউছে পাক (رحمة الله) বলেন: اَنَا الْجِيْلِىْ مُحِىُّ الدِّيْنِ اِسْمِىْ আমি জিলান এর অধিবাসী আমার নাম মুহীউদ্দীন অর্থাৎ আমি দ্বীন ইসলামকে পুনর্জীবন দানকারী। وَعَبْدُ الْقَادِرِ الْمَشْهُوْرُ আর আমার প্রসিদ্ধ নাম হচ্ছে আবদুল কাদের। এ বক্তব্যগুলো দ্বারা সুস্পষ্টভাবে বুঝা যাচ্ছে যে, কথাগুলো স্বয়ং গাউছে পাকই বলেছেন এবং কথাগুলো দ্বারা বরং গাউছে পাকের প্রতি সম্পৃক্ত হওয়াটা বিশ্বে এমন সুপ্রসিদ্ধি লাভ করেছে বরং تواتر এর সীমা হতে আরও এগিয়ে আছে।

অতএব, কোন মতবিরোধ ছাড়াই উপরোলি­খিত বহুল প্রচারিত দাবীর ব্যাপারেও যদি সন্দেহ পোষণ করা হয় তাহলে তো বহু ধর্মীয় কিতাব যেগুলোর সম্পর্ক গ্রন্থকারগণের প্রতি করা হয়েছে তাও বাতিল হয়ে যাবে।

কছিদায়ে গাউছিয়া পাঠের গুরুত্ব
____________________
কছিদায়ে গাউছিয়া পাঠের গুরুত্ব

আল্লাহ্ জাল্লা শানুহু হযরত গাউছে পাকের উছিলায় যদি তৌফিক দেন তাহলে এ অধম কছিদায়ে গাউছিয়া আলিয়ার ব্যাখ্যাগ্রন্থ লেখার সাথে সাথে প্রত্যেকটি شعر এর خاصيت এবং কোন شعر কোন মকছুদ পূরণের জন্য কতবার পড়তে হবে এবং ফয়েজে পরিপূর্ণ এ কছিদাগুলো পাঠের উপকারিতা বর্ণনা করা হবে انشاء الله । উদাহরণ স্বরূপ কয়েকটি شعر পাঠের নিয়মাবলী ও উপকার বর্ণনা করা হচ্ছে।

مَقَامُكُمُ الْعُلىٰ جَمْعًا وَّلَكِنْ
                                                                 مَقَامِىْ فَـوْقَـكُمْ مَازَالَ عَالِىْ

এ شعر খানা উচ্চ মর্যাদা লাভের উদ্দেশ্যে এগার শত বার যদি নির্জনে বসে পাঠ করে তাহলে তা ইনশাআল্লাহ্ অর্জন করবে।

وَوَلَّانِىْ عَلٰى الْاَقْطَابِ جَمْعًا

                       فَحُكْمِىْ نَافِذٌ فِىْ كُلِّ حَالِى

এ شعر খানা (১) প্রথমত এগার দিন এক হাজার বার করে এবং এরপর ১০০ বার করে একাধারে তিনদিন পাঠ করলে সকল সৃষ্টি তার অনুগত হয়ে যাবে।

(২) সন্তান লাভের উদ্দেশ্যে এ ‘শের’ এর আবজাদ সংখ্যাগুলোর নকশা গোলাপ নির্জাস অথবা জাফরান দ্বারা লিখে ঐ বন্ধ্যা মহিলা হায়েজ হতে পবিত্র হওয়ার পর তার নাভির উপর বেঁধে দিলে তার গর্ভ নষ্ট হবে না। সন্তান লাভ করবে ইনশাআল্লাহ্। তবে এ ‘শের’খানার নীচে গাউছে পাকের এগার নাম লিখতে হবে।

(৩) শত্রু ধ্বংশের জন্য ১১দিন এগার শত বার পরিত্যক্ত কূপের মাটির উপর পড়ে দম করে এ মাটি শত্রুর ঘরে অথবা ঘরের দিকে নিক্ষেপ করবে।

এভাবে প্রত্যেকটি শের এর পৃথক পৃথক خاصيت এবং সেগুলোর পরিপূর্ণ ব্যাখ্যাগ্রন্থ আগ্রহী জনগণের সামনে পেশ করার প্রত্যাশা রাখি انشاء الله العزيز।

গাউছে পাকের খেদমতে বিশ্বের খ্যাতনামা মনীষীগণের শ্রদ্ধা নিবেদন
____________________
গাউছে পাকের খেদমতে বিশ্বের খ্যাতনামা মনীষীগণের শ্রদ্ধা নিবেদন

এখন আমি ঐ সকল اشعار উল্লে­খ করবো যেগুলো বিশ্বের খ্যাতনামা আউলিয়া কেরামগণ, মাহবুবে সোবাহানী, কুত্বে রাব্বানী, শাহ্ সাওয়ারে লা মকানী মুহীউদ্দিন আবদুল কাদের জিলানী এর খেদমতে তাদের আন্তরিক ভক্তি শ্রদ্ধা নিবেদন করেছেন।

হযরত শায়খ আবুল কাসেম উমর বায্যায বাগদাদী (رحمة الله) এর নিবেদন যা ‘বাহ্জাতুল আসরার’ নামক কিতাব হতে সংগৃহীত।

اَلْحَمْدُ لِلّٰهِ اِنِّىْ فِىْ جَوَارِ فَـتٰى

                     حَامِى الْحَقِيْقَةِ نَفَّاعٍ وَضَرَّارٍ

অনুবাদ: প্রশংসা আল্লাহ্ জাল্লা শানুহু এর জন্য- এ জন্য যে, আমি এমন একজন সুপুরুষ এর সহযোগিতায় নিয়োজিত, যিনি حقيقت এর সাহায্যকারী। কল্যাণ ও অকল্যাণ করতে সক্ষম।

এ ধরনের আরবী ভাষায় অগণিত কছিদা রয়েছে যেগুলো আউলিয়া কেরাম ও বুজুর্গানে দ্বীন গাউছে পাকের শানে লিখেছেন। এ সংক্ষিপ্ত গ্রন্থে বর্ণনা করা দুস্কর। তাই এ সকল اشعار হতে যেগুলো প্রসিদ্ধ কয়েকজন আউলিয়া কেরাম এর اشعار উল্লে­খ করছি, যেন জনসাধারণ তা বুঝতে পেরে সরকারে গাউছে পাকের মুহাব্বত, ভক্তি ও শ্রদ্ধা অন্তরে পোষণ করতে পারে।

সুলতানুল আরেফীন হযরত বাহু (رحمة الله) বলেন:

অনুবাদ: সকল আমীরগণের বাদশাহ্ হযরত গাউছে পাক হলেন হযরত আমীরুল মু’মিনীন সাইয়্যেদেনা আলী মুরতাজা (رضي الله عنه) এর দ্বিতীয় আমীর। যিনি মা’রেফাতের ময়দানের ঘোড়সওয়ার এবং যার কল্ব মুবারক সদা দেদীপ্যমান।

অনুবাদ: যার বুজুর্গ নানা হুজুর (ﷺ) হলেন, মা’রেফাতের মাকামের মালিক। তাঁকে ولايت এর সুক্ষ্ম রাস্তার সর্দার হিসেবে কেন গ্রহণ করা যাবে না?

অনুবাদ: সরকারে গাউছে জিলানী এর মর্যাদাসমূহের মূল হচ্ছেন সরকারে দো’আলম (ﷺ) এর পবিত্র বাতেন হতে উৎকলিত। এ কাদেরী মর্যাদা আল্লাহ্ তায়ালারই কুদরতের বহিঃপ্রকাশ।

অনুবাদ: হযরত বাহু (رحمة الله) নিজকে সম্বোধন করে বলেন: হে বাহু! দ্বীন ইসলামের সরদার হযরত আমীরগণের বাদশাহ্ মুহীউদ্দিন এর মনে প্রাণে মুরীদ এবং তাঁর পদধূলীতে পরিণত হয়ে যাও। (কানজুল আসরার)

হযরত শাহ্ আবুল মা’আলী (رحمة الله) যাঁর পবিত্র মাযার পাঞ্জাব প্রদেশের লাহোরের গুজর সিং কিল্লায় অবস্থিত। এ নগন্যের উক্ত মাযার শরীফে উপস্থিত ও যেয়ারত নছীব হয়েছে। তিনি বলেন,

অনুবাদ: আল্লাহর শপথ করে বলছি, এ পৃথিবীতে কারো যদি معرفت الهيه এর শরাব পান করার সৌভাগ্য লাভ হয়েছে তা একমাত্র বাদশাহ্ শায়খ সৈয়দ আবদুল কাদের জিলানী (رحمة الله) এর উছিলায় অর্জিত হয়েছে।

অনুবাদ: জগদ্বিখ্যাত ওলী, হযরত শায়খ আবুল হাসান খেরকানী (رحمة الله) এর উপাধী খেরকানী হিসেবে জনসাধরণের মধ্যে প্রসিদ্ধি লাভ করেছেন এ জন্য যে, যাঁদেরকে হযরত গাউছে পাক (رحمة الله) স্বয়ং নিজে ولايت এর খেরকা পরিধান করিয়েছিলেন, তিনি তাদেরই অন্যতম ছিলেন।

অনুবাদ: হযরত শায়খ শেহাবুদ্দীন সোহ্রাওয়ার্দী (رحمة الله) এবং খাজা বাহাউদ্দীন যাকারিয়া মুলতানী (رحمة الله) হুজুর সরকারে গাউছ পাকের দরবারে সামান্য গোলামের মর্তবা রাখেন। তাঁদের মত গাউছে পাকের লাখো লাখো গোলাম পৃথিবীতে ছড়িয়ে আছে।

অনুবাদ: হযরতে গাউছে পাকের পবিত্র চেহারায় সব সময় ইমামে আলী মকাম হযরত ইমাম হাসান (رضي الله عنه) এর সৌন্দর্য্য দীপ্যমান রয়েছে।

এ জন্য আপনার মায়াবী সৌন্দর্য্য হুজুর (ﷺ) এর পবিত্র সত্তার জন্য পরম আনন্দ ও খুশীর বিষয়। অর্থাৎ তাঁর পবিত্র দেহ মুবারক থেকে হযরত ইমাম হাসান (رضي الله عنه) এর সুগন্ধি আসে। আর হাদীসে পাকে উভয় ইমাম অর্থাৎ ইমাম হাসান ও ইমাম হুসাইন (رضي الله عنه) সম্পর্কে হুজুর (ﷺ) ইরশাদ করেছেন,

اِنَّ الْحَسَنَ وَالْحُسَيْنَ هُمَا رَيْحَانِىْ مِنَ الدُّنْيَا

অর্থাৎ, ইমাম হাসানাইন করীমাইন (رضي الله عنه) পৃথিবীতে আমার দু’টি ফুল।

অনুবাদ: হে জিলানী বাদশাহ্! আপনি মেহেরবানীপূর্বক আবু মা’আলীকে আপনার কাছে ডেকে নিন। সে হয়রান ও পেরেশানীর কারণে পেছনে পড়ে আছে।

অনুবাদ: হে জিলানী বাদশাহ্! আপনার পবিত্র অস্তিত্ব রহমতুল লিল আলামীন অর্থাৎ বিশ্বের সকলের জন্য দয়ার ভাণ্ডার হিসেবে আপনি প্রেরিত হয়েছেন।

অনুবাদ: যে হযরত গাউছে পাকের হয়ে গেছে, সে আল্লাহর কাছে মকবুল হয়েছে। যদিও সে ব্যক্তি অসুন্দর ও অবাঞ্চিত কাজ অর্থাৎ গুনাহের কাজ করেছে। অর্থাৎ হযরত শাহ্ ছাহেব কেবলা (رحمة الله) বলেন, যে ব্যক্তি হযরত গাউছে পারেক দরবারে মকবুল হয়েছে, সে আল্লাহ্ তায়ালার দরবারেও মকবুল হয়েছে। যদিও সে ব্যক্তি পাপিষ্ঠ হোক না কেন। যেমন হাদীসে পাকে ইরশাদ হয়েছে,

اَلسَّخِـىُّ حَبِيْبُ اللهِ وَلَوْ كَانَ فَاسِـقًا

অর্থাৎ: দানশীল ব্যক্তি আল্লাহর বন্ধু। যদিও সে ফাসেক, তবুও সে আল্লাহর বন্ধু হয়ে যায়। তেমনিভাবে সে গুনাহগার ব্যক্তি যদি গাউছে পাকের কাছে মকবুল হয় সে আল্লাহর দরবারেও মকবুল হয়ে যায়।

-(তোহফায়ে কাদেরিয়া, কালামুল আউলিয়া ফি শানে ইমামিল আউলিয়া)

মাওলানা জমীল কাদেরী গাউছে পাকের শান সম্পর্কে বলেন,

অর্থাৎ: ফাসেক তথা পাপিষ্ট ব্যক্তিদেরকে ডেকে তিনি ‘আবদাল’ এর মর্যাদা দান করে থাকেন। গাউছে আজমের ফয়েজের সমুদ্র সর্বদা গতিময় থাকে।

অনুবাদ: দীদার লাভের পিপাসু কান্নাকাটি ও আহাজারী করতে করতে স্বীয় অশ্র“জলের প্রবাহের মত মা’রেফাতের সমুদ্রের দিকে আমি ধাবিত হচ্ছি।

অনুবাদ: আমি বাগদাদ শরীফ এবং গিলানের হাজী হই। হুজুরে গাউছে পাকের প্রতি প্রেমাসক্ত আমার অন্তরকে বিচলিত ও অস্থির করে ফেলেছে। তাই তো কখনো আমি পবিত্র বাগদাদের দিকে আবার কখনো পবিত্র জিলান নগরের দিকে পাড়ি দিচ্ছি।

অনুবাদ: হে আজম তথা অনারবদের মাহ্বুব! আরব-আজমের সকল মানুষ আপনার শিকারে পরিণত হয়েছে। আপনার এ বন্দীদের প্রতি একটু করুণা প্রদর্শন করুন। কেননা আমি বিচলিত হয়ে ছুটে বেড়াচ্ছি।

অনুবাদ: আমি হুজুরের প্রেমের পথে এমন আনন্দ আহলাদের সাথে পাড়ি জমিয়েছি, আপনি অর্থাৎ অবলোকনকারী যেন বলে দেয় যে, কোন ব্যক্তি ফুলের বাগানের দিকে গমন করছে।

অনুবাদ: আপনার পবিত্র অলি-গলির কুকুরদের সাথে এমনিভাবে প্রেমের সম্পর্ক মজবুত ও দৃঢ় করেছি। আর একজন ওফাদার প্রেমিকের মত সদা স্বীয় মাহ্বুবগণের দিকেই প্রস্থান করছি।

অনুবাদ: হে আবুল মা’য়ালী! আপাদমস্তক এবং বরকতময় কদমওয়ালা খিজির কোথায় আছেন। আল্লাহ্ তায়ালা তাঁকে মিলিয়ে দিন যেন তিনি আমাকে গন্তব্য পথের সন্ধান দান করেন। কেননা, আমি আবে হায়াত অর্থাৎ আমি আবুল মা’য়ালী এমন এক কূপের দিকে পাড়ি জমিয়েছি, যে কূপের পানি পান করলে মানুষ অমরত্ব লাভ করতে পারে।

অনুবাদ: আমি (আবুল মা’য়ালী) ফকীরি ও ফানা এর সিলসিলায় যখন থেকে মনে প্রাণে শাহেন শাহে বাগদাদের গোলাম বনে গেছি। তাই বুঝে নিলাম যে, জল ও স্থলের বাদশাহী আমি লাভ করতে পেরেছি।

অনুবাদ: হুজুরের দয়া ও করুণার সামনে আবুল মা’আলীর গুনাহ্ ও অপরাধের কোন হাক্বীক্বত নেই। হে গাউছে আজম! আপনি স্বীয় রহমত দ্বারা আমার প্রতি দয়া ও করুণা প্রদর্শন করুন।

অর্থাৎ সততা ও সুস্থতার পথে চলা এটিই আমার জন্য হজ্বে আকবর। (তোহফায়ে কাদেরিয়া কৃত আবুল মা’আলী)

গাউছে পাকের খেদমতে খাজা গরীবে নেওয়াজের আন্তরিক শ্রদ্ধা নিবেদন
____________________
গাউছে পাকের খেদমতে খাজা গরীবে নেওয়াজের আন্তরিক শ্রদ্ধা নিবেদন

হুজুর সাইয়্যেদেনা সুলতানুল হিন্দ খাজায়ে খাজেগান নায়েবে মুস্তফা আতাউর রসূল মুঈনুদ্দীন হাসান সানজিরী চিশ্তী (رحمة الله) হুজুরে গাউছে পাক (رحمة الله) এর প্রতি তাঁর আন্তরিক ভক্তি শ্রদ্ধা নিবেদন করতে গিয়ে বলেন:

অনুবাদ: হে সরকারে গাউছে পাক! আপনার পবিত্র সত্তা হেদায়েতের আলোক বর্তিকা। আর আপনি হচ্ছেন হুজুরে মুস্তফা (ﷺ) এবং আল্লাহ্ জাল্লা শানুহুর নির্বাচিত এবং উভয় জগতের বাদ্শাহ ও কুত্বুল আকতাব হলেন আপনি। আপনার শান্ মর্যাদা দেখে আসমান এবং যমীন স্তম্বিত হয়েছে।

অনুবাদ: আপনার পবিত্র সত্তা সততার মধ্যে হযরত আবু বকর ছিদ্দীক এর গুণে গুণান্বিত। ন্যায়-ইনসাফ প্রতিষ্ঠায় আপনি হযরত ওমর (رضي الله عنه) এর ন্যায়। আপনি হযরত উসমান গণী (رضي الله عنه) এর ন্যায় লজ্জার খনি। বদান্যতা ও দানশীলতায় আপনি হযরত আলী (رضي الله عنه) এর সাদৃশ্য।

অনুবাদ: হুজুর গাউছে পাক (رحمة الله) শরীয়তের আমলের ব্যাপারে পরিপূর্ণ ক্ষমতা অর্জন করেছিলেন। তিনি হযরত জা’ফর ত্বাইয়ার (رضي الله عنه) এর মত অত্যন্ত হুশিয়ার ছিলেন। আরশে মুয়াল্লায় উড়ে বেড়াতেন। قَابَ قَوْسَيْنِ اَوْ اَدْنٰى এর গুঢ় রহস্য সম্পর্কে ওয়াকিফহাল অর্থাৎ মে’রাজ শরীফের রাতে হাবীবে খোদা (ﷺ) এবং আল্লাহ্ তা’য়ালার মাঝে নৈকট্য এর গোপন রহস্যের আলাপচারিতা সংঘটিত হয়েছিল সে সম্পর্কে তিনি ওয়াকিফহাল ছিলেন।

অনুবাদ: হুজুর আলাইহিস্ সালাতু ওয়াস্সালাম এর পবিত্র দরবারে তাঁর শান-মান ছিল অনেক শীর্ষে। তিনি তাঁর গোলামদের দোষ-ত্রুটি গোপনকারী। সমস্ত আউলিয়াগণের বাদশাহ্ এবং দয়া, করুণা, দান-বখশিশের ছিলেন অতুলনীয় ভাণ্ডার।

অনুবাদ: যেহেতু হুজুর (ﷺ) এর পবিত্র কদম তাঁর (গাউছে পাকের) মাথা মুবারকের তাজ। সেহেতু তাঁর পবিত্র কদম সারা জগতের সকলেরই মাথার তাজ। জগতের সকল কুতুব তাঁর পবিত্র দরবারে এমনভাবে পড়ে আছেন যেমনিভাবে ভিখারীরা বাদশাহর দরবারে পড়ে থাকে।

অনুবাদ: যদিও হযরত ঈসা (عليه السلام) মৃতকে জীবিত করেছেন তা তো কোন বড় কিছু করেননি। আপনি তো হুজুর (ﷺ) এর মৃত দ্বীন ইসলামের প্রাণের সঞ্চার করেছেন। সমগ্র জগত আপনাকে দ্বীনের পুনর্জীবন দানকারী উপাধি দ্বারা ডেকে থাকে এবং আপনার সৌন্দয্যের মোহে জগতবাসী কুরবান হয়েছে।

অনুবাদ: আমার নফ্স আমার উপর বিজয় লাভ করে আমাকে মেরে ফেলেছে। আমি রুগ্ন, লজ্জিত এবং চেহারায়ও রয়েছে মলিনতা। আমার একান্ত প্রত্যাশা যে, হুজুর (গাউছে পাকের) দয়া ও করুণায় আমার এ দুঃখ নিবারণের ঔষধ আমি পেয়ে যাব।

অনুবাদ: হযরত খাজা গরীব নাওয়াজ (رحمة الله) পরিশেষে গাউছে পাকের দরবারে নিজের দীনতা ও হীনতা প্রকাশ করতে গিয়ে বলেন, আমি ‘মুঈনুদ্দীন’ হুজুরের পবিত্র নামের গোলাম মাত্র। আমি আপনার দয়া ও করুণার ভিখারী। আপনার গোলামীর মর্যাদা অর্জনের কারণে আমি খাজা হতে পেরেছি। আপনার সন্তুষ্টি অর্জনই আমার কাম্য। (দিওয়ানে মুঈনুদ্দীন, কালামুল আউলিয়া)

হযরত গরীব নেওয়াজ (رحمة الله) গাউছে পাকের শানে

 غوث معظم، مختارنبى، مختار خدا، نور هدى

গাউছে মুয়াজ্জম, মুখতারে নবী, মুখতারে খোদা, নূরে হুদা ইত্যাদি উপাধি দ্বারা সম্বোধন করেছেন। বর্তমান যামানায় মানুষ নিজ পীরকে মনগড়া উপাধি যেমন কুতুব, গাউছে আজম, গাউছ, কুতুবুল আকতাব উপাধি দ্বারা স্মরণ করে থাকে, যদিও তারা ঐ পদ মর্যাদার যোগ্য নন। সরকারে গরীব নেওয়াজ যে সমস্ত উপাধি দ্বারা গাউছে পাককে স্মরণ করেছেন, অথচ তিনি না ছিলেন মুরীদ এবং ছিলেন না তাঁর সিল্সিলার সাথে সম্পৃক্ত। এতদসত্ত্বেও কত সরল অন্তরে, ফয়েজে পরিপূর্ণ বক্তব্য পেশ করেছেন এবং আন্তরিক শ্রদ্ধা প্রদর্শন করেছেন। আর এ ভক্তি শ্রদ্ধাই মূলতঃ প্রত্যেক মানুষের নিকট সমাদৃত। সরকারে গরীব নেওয়াজ বলেছেন, আমি তো গাউছে পাকের নামের গোলাম মাত্র। যার কারণে জগতে খাজা উপাধি দ্বারা খ্যাতি লাভ করেছি। শত্রু-মিত্র সকলের মুখেই জারী রয়েছে খাজা এর আলোচনা। গরীব নেওয়াজের বুজুর্গী ও মর্যাদা সম্পর্কে জানে না, এমন কোন ব্যক্তি পৃথিবীতে নেই। যিনি লাখ লাখ অমুসলিমকে আহলে তাওহীদ বানিয়েছেন। তিনিই হিন্দুস্তানে তৌহিদের ঝাণ্ডা উড়িয়েছেন। স্বজাতির মধ্যে তৌহিদের ঝাণ্ডা উড়ানো বড় কথা নয়। হিন্দুস্তানের একে তো সবাই ছিল মুশরিক, রাজত্বও চলছিলো তাদের। আর এ মুশরিকদের ভেতরে থেকে তৌহিদের ঝাণ্ডা উড়ানোই বড় কথা। সাথে সাথে রাসূলে পাকের দেয়া মহান আদর্শ প্রতিষ্ঠা করাই বিশাল কৃতিত্ব।

গাউছে পাকের মর্যাদা সম্পর্কে হযরত কুতুবুদ্দীন বখতিয়ার কাকীর বর্ণনা
____________________
গাউছে পাকের মর্যাদা সম্পর্কে হযরত কুতুবুদ্দীন বখতিয়ার কাকীর বর্ণনা

হযরত সাইয়্যেদেনা কুতুবল আকতাব খাজা কুতুবুদ্দিন বখতিয়ার কাকী (رحمة الله) যাকে প্রত্যেক মান শ্রদ্ধা করে থাকে। তিনি গাউছে পাকের মর্যাদা সম্পর্কে বলেছেন:

অনুবাদ: হযরত গাউছুস্ সাক্বালাইন (মানব-দানবের প্রার্থনা গ্রহণপূর্বক সাহায্যকারী) হলেন সকল আউলিয়া কেরামের কেবলা। আর তিনি নিজ মুরীদগণকে ইহকালে ও পরকালে সাহায্য করে থাকেন।

বিশেষ দ্রষ্টব্য: ‘গাউছুস্ সাক্বালাইন’ এর অর্থ হচ্ছে দু’জগতের গাউছ অথবা সকল মানব-দানবের গাউছ। অর্থাৎ সকল মানব ও দানবের ফরিয়াদ শ্রবণপূর্বক সাহায্যকারী।

অনুবাদ: হে গাউছে পাক! আপনার একটি শুভদৃষ্টি উভয় জগতে আমাদের জন্য যথেষ্ট। সুতরাং আমাদের প্রতি একটু সুদৃষ্টি দান করুন।

অনুবাদ: আমি অস্থির ব্যক্তির সকল কাজ অনেক দূর পর্যন্ত বন্ধ হয়ে গেছে। আপনি পুনরায় দয়া প্রদর্শনপূর্বক আমার মুশকিল আসান করে দিন।

অনুবাদ: হে গাউছুস্ সাক্বালাইন! হুজুরের পদধূলি, অন্তরদৃষ্টি সম্পন্ন ব্যক্তিদের জন্য আলোক বর্তিকা। আপনার পদধূলি দ্বারা আমার চক্ষুকেও রৌশন করুন।

অনুবাদ: হে গাউছে পাক! আমি বেদনাকাতর বান্দা, এমন এক রোগী যা থেকে আরোগ্য লাভ করার কোন উপায় আমি দেখছিনা। শুধু আপনার করুণাই আমার রোগের মহৌষধ বলে আমি বিশ্বাস রাখি।

অনুবাদ: আপনার দরবার সকল সৃষ্টির যাবতীয় প্রয়োজন পূরণের কা’বা স্বরূপ। মেহেরবানী পূর্বক আমার হাজতও পূরণ করুন।

অনুবাদ: হে দো’জাহানের সাহায্যকারী! আমার অন্তর মরে গেছে। হুজুর! আর আপনার পবিত্র নাম মুহীউদ্দিন। এ মৃত ব্যক্তির অন্তরে একটু প্রাণের সঞ্চার করুন।

অনুবাদ: হে গাউছ! মিস্কিন কুতুবুদ্দিনের ভাগ্যে আপনার গোলামীর সম্মান অর্জিত হয়েছে। তাঁর মুহাব্বাতকে আরো বৃদ্ধি করে দিন।

(কালামুল আউলিয়া ফি শানে ইমামিল আউলিয়া)

হযরত খাজা কুতুবুদ্দীন বখতিয়ার কাকী (رحمة الله) এর মর্যাদা সম্পর্কে কে না জানে। হযরত উলামায়ে দেওবন্দ এবং শাহ্ আব্দুর রহীম মুহাদ্দিসে দেহলভী এর সুযোগ্য পুত্র হযরত শাহ্ অলিউল্লাহ্ মুহাদ্দিসে দেহলভী (رحمة الله) স্বয়ং এবং অন্যান্য সকল হযরাতগণ গাউছে পাকের প্রশংসায় তাঁদের যবান ছিল সিক্ত। হযরত অলিউল্লাহ্ মুহাদ্দিসে দেহলভী (رحمة الله) তাঁর রচিত انتباه এবং القول الجميل সহ অন্যান্য গ্রন্থে সরকারে গাউছে পাক (رحمة الله)কে غوث الثقلين উপাধি দ্বারা স্মরণ করেছেন এবং غوث الاعظم বলেছেন।

আল্লামা আব্দুর রহমান জামী নকশবন্দী (رحمة الله) গাউছে পাককে গাউছুস্ সাক্বালাইন (সকল মানব ও দানব অথবা দো’ জাহানের ফরিয়াদরস) উপাধি বলে সম্বোধন করেছেন। হযরত শাহ্ আব্দুল হক মুহাদ্দিসে দেহলভী স্বরচিত ‘আখবারুল আখইয়ার’ নামক কিতাবে গাউছুল আজমকে কুতুবুল আকতাব অর্থ সমস্ত কুতুবগণের সর্দার, সুলতানুস্ সালাতীন অর্থ রাজাধিরাজ, গাউছুস্ সাক্বালাইন অর্থ দো’জাহানের ফরিয়াদরস অথবা মানব ও দানবের ফরিয়াদ শ্রবণপূর্বক সাহায্যকারী, মুহীউদ্দিন অর্থ দ্বীনকে পুনর্জীবন দানকারী, শায়খে দারাইন অর্থ দো’জাহানের পেশওয়া, হাদিউস সাক্বালাইন অর্থ জীন এবং ইন্সানের হেদায়েত দাতা ইত্যাদি উপাধি দ্বারা স্মরণ করেছেন।

হযরত খাজা কুতুবুদ্দিন বখতিয়ার কাকী (رحمة الله) নিজ গ্রন্থ তোহফায়ে হানাফিয়ায় এক দীর্ঘ প্রশংসা হযরত গাউছে পাক শায়খ মুহীউদ্দিন আবদুল কাদের জিলানী (رحمة الله) এর পবিত্র শানে লিখেছেন। ইনশাআল্লাহ্ আল্লাহ্ তায়ালা গাউছে পাকের তোফায়েলে আমাকে তৌফিক দান করলে ঐ সমস্ত কছিদা ও اشعار গুলো এক জায়গায় একত্রিত করে পাঠকবৃন্দের খেদমতে পেশ করবো। এ সংক্ষিপ্ত গ্রন্থে তা লেখার সুযোগ হলো না।

হযরত শায়খুল মাশায়েখ হযরত শায়খ খাজা বাহাউদ্দিন নক্শবন্দী (رحمة الله) গাউছে পাকের প্রতি তার ভক্তি ও শ্রদ্ধা নিবেদন করতে গিয়ে বলেন:

অনুবাদ: শায়খ আবদুল কাদের দো’ জাহানের বাদশাহ্। আর বাদশাহ্ আবদুল কাদের আদম সন্তানগণের সর্দার।

অনুবাদ: চন্দ্র, সূর্য, আরশ, কুরছি, লোওহ, কলম, কলবের নূর শাহেনশাহ বাগদাদ সাইয়্যেদেনা মুহীউদ্দিন মাহবুবে সোবহানী শায়খ সাইয়্যেদ আবদুল কাদের (رحمة الله) এর মহা নূর হতে প্রকাশিত হয়েছে।

(ফতহুল মুবীন ও কালামুল আউলিয়অ ইত্যাদি দ্রষ্টব্য)

এমনিভাবে কাদেরিয়া, চিশ্তিয়া, নক্শবন্দিয়া, মুজাদ্দেদিয়া তরিকার বুজুর্গগণ হযরত গাউছে পাকের দরবারে প্রার্থনা নিবেদন করেছেন।

হযরত খাজা কুত্বুদ্দিন বখতিয়ার কাকী (رحمة الله) বলেন:

অনুবাদ: হে গাউছে পাক! আপনি তো সকল বাদশাহর বাদশাহ্। আর সকল বাদশাহগণ আপনার করুণা ভিখারী। আপনার দান ও বদান্যতা এত বিশাল, দুনিয়ার ভিক্ষুকরাও আপনার বদান্যতায় বাদশাহী লাভ করে থাকে।

অনুবাদ: হে বাদশাহ্ সালামত! কুতবুদ্দীন বখতিয়ার কাকী যে আপনার শাহী দরবারে একজন ক্ষুদ্র ভিখারীর মত, আপনার খেদমতে হাজির হয়েছে। আল্লাহ্ তায়ালাকে জানা-চেনার পদ্ধতি এবং তাঁর মা’রেফাতের সকল রহস্যগুলো অবহিতপূর্বক এ অধমকে ধন্য করুন। অর্থাৎ তাঁর মর্যাদা বুলন্দ করুন।

অনুবাদ: হে জিলানের বাদশাহ্! কুতুবে রব্বানী, মানব ও দানবের ফরিয়াদ গ্রহণকারী, আমাকে সাহায্য করুন। যেন আমি আপনার গুণকীর্তন আকর্ষণীয় পদ্ধতিতে বর্ণনা করতে পারি।

হযরত শায়খ নূরুদ্দীন আবুল হাসান আলী ইবনে ইউসুফ (رحمة الله) গাউছে পাকের শানে বলেন:

وَلَـه الْحَقَائِقُ وَالطَّرَائِقُ وَالطَّرَائِقُ فِى الْهُدٰى

                   وَلَـه الْمَعَارِفُ كَالْكَوَاكِبِ تَـزْهَرُ

অনুবাদ: তিনি হাক্বীক্বত এবং তরীকতের পথপ্রদর্শক। আল্লাহ্ তায়ালার মা’রেফতের ইলম তাঁর নিকট আকাশের তারকারাজির মত উজ্জ্বল।

হযরত ইমাম মুহাম্মদ ইবনে সাঈদ ইবনে আহমদ ইবনে সাঈদ (رحمة الله) বলেন:

شَهِدَتْ بِرُتْبَتِه جَمِيْعُ مَشَائِخٍ

                  فِىْ عَصْرِه كَانُوْا بِغَيْرِ تَنَاكُرٍ

অনুবাদ: সমস্ত মাশায়েখগণ হুজুর গাউছে পাকের উঁচু মর্যাদার সাক্ষ্য দিয়েছেন। আর এ সম্পর্কে কেউ অস্বীকার করেনি।

مَا مِنْ رَئِيْسٍ كَانَ صَـدْرُ زَمَانِـه

                     اِلَّا وَمُبَشِّرُهُمْ بِاكَرَمِ طَائِـرٍ

অনুবাদ: প্রত্যেক আউলিয়ার সরদারগণ অর্থাৎ কুতুবগণ নিজ নিজ যুগের লোকদের কাছে হুজুরে গাউছে পাকের শুভাগমনের শুভ সংবাদ দিয়ে গেছেন।

وَالْكُلُّ كَانُوْا قَبْلَـه حُـجَّابُـه

                     فَتَقَدَّمُوْه وَكَانُوْا كُلُّ عَسَاكِرٍ

অনুবাদ: শাহেনশাহের আগমনের সুসংবাদ দেয়ার জন্য সেনাবাহিনীর মত তাঁরা তাঁর পূর্বে আগমন করেছিলেন।

وَاَتٰى كَسُلْطَانٍ تَقَدَّمَ جَـيْشُـه

                      شَـمْسًا تَغِيْبُ كُلّ نَـجْمٍ زَاهِـرُ

অনুবাদ: তিনি এক মর্যাদাবান বাদশাহর মত শুভাগমন করেছেন। যার সম্মুখভাগে তাঁর সৈন্য সামন্তগণ গমন করে থাকে। অর্থাৎ আউলিয়া কেরাম যাঁরা হুজুর গাউছে পাকের বাহিনী। তাঁরা তাঁর পূর্বে আগমন করে মানুষকে সুসংবাদ দেন যে, বাদশাহ্ সালামত আসছেন। যেভাবে সূর্যের সম্মুখে সমস্ত উজ্জ্বল তারকারাজি অদৃশ্য হয়ে যায় তেমনিভাবে বেলায়েতের আকাশের সকল উজ্জ্বল নক্ষত্রগুলো একদম অদৃশ্য হয়ে গেল।

এমন অনেক اشعار ও কছীদা রয়েছে তার মধ্য হতে সংক্ষিপ্তভাবে কিছু কছীদা ও شعر এ গ্রন্থে পেশ করলাম।

হযরত গাউছে পাক (رحمة الله) এর কারামত ও বুজুর্গীর বর্ণনা
____________________
হযরত গাউছে পাক (رحمة الله) এর কারামত ও বুজুর্গীর বর্ণনা

হুজুরে গাউছে পাক (رحمة الله) বলেছেন, ইসলাম ধর্মের সত্যতা মুহাম্মদ মুস্তফা (ﷺ) এর জীবন ব্যবস্থার সত্যায়নের নিমিত্তে আল্লাহ্ তায়ালা দলীল হিসাবে আমাকে প্রেরণ করেছেন। হুজুরে গাউছে পাক জগদ্বিখ্যাত মুহাদ্দিস, মুফাস্সির এবং মুফ্তীও ছিলেন এবং নিজে জগদ্বিখ্যাত মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা করেছেন। তিনি মাদ্রাসার প্রতিষ্ঠাতা ও মহাপরিচালক ছিলেন। জাহেরী শিক্ষাদানের সাথে সাথে বাতেনী বা আধ্যাত্মিক শিক্ষাদানের নিমিত্তে খানকাহ্ শরীফও প্রতিষ্ঠা করেছেন। তিনি অসাধারণ গ্রন্থকার ছিলেন। বাস্তবিক পক্ষে তিনি পীরানে পীর ও শায়খুল মাশায়েখ ছিলেন।

অত্যন্ত প্রসিদ্ধ ও সর্বজন গৃহীত ‘বাহ্জাতুল আসরার’ কিতাবে উল্লে­খ রয়েছে:

اَخْبرنَا الشّيْخ العَارِف اَبُو مُحَمَّد عَلى بِن اِدْرِيْس اليَعْقُوْبِى بِهَا سنة سبع عَشَرَة وسِتَّمائة قَالَ سَمِعت الشّيخ عَبْدُ الْقَادِر يَقُوْلُ الْاِنْس لَهُمْ مَشَائِخ والجن لَهُمْ مشائخ وَالْمَلَئِكَة لَهُمْ مَشَائِخ وَ اَنَا سَيْخ الكل.

(صـ২৩ صبع مصر)

অনুবাদ: আমাকে সংবাদ প্রদান করেছেন শায়খ আরেফ আবু মুহাম্মদ আলী ইবনে ইদ্রিস ইয়াকুবী ৬১৭ হিজরী সালে বলেছেন, আমি শায়খ আবদুল কাদের (رحمة الله)কে বলতে শুনেছি- মানুষের মধ্যে মাশায়েখ হয়ে থাকেন, জীনদের মধ্যে মাশায়েখ হয়ে থাকেন এবং ফেরেশতাদের মধ্যেও মাশায়েখ হয়ে থাকেন। আর আমি হচ্ছি তাদের সকলের শায়খ।

وَكَانَ رَضِىَ اللهُ عَنْه يَقُوْلُ اِنَّمَا اِمْرِئٍ مُّسْلِمٍ عَبَرَ عَلٰى بَابِ مَدْرَسَتِىْ خَفَّفَ اللهُ عَنْه الْعَذَابَ يَوْمَ الْقِيٰمَةِ . (نور الابصار، صـ ২৫৭ )

অনুবাদ: যে কোন মুসলমান ব্যক্তি আমার মাদ্রাসার দরজায় অর্থাৎ আমার মাদ্রাসার আশেপাশে এবং আমার খানকাহের আশেপাশে খালেছ মুহাব্বত নিয়ে ঘুরাফেরা করবে আল্লাহ্ তায়ালা তাকে শাস্তি থেকে মুক্ত দিবেন এবং কিয়ামত পর্যন্ত সে শান্তিতে অবস্থান করবে।

হযরত আহমদ আলমারদিনী বর্ণনা করেছেন, আমার কাছে আমার শ্রদ্ধেয় পিতা, তাঁর থেকে আমার দাদাজান বর্ণনা করেছেন, তিনি অর্থাৎ গাউছে পাক অধিকাংশ সময়ে রসূলে মকবুল (ﷺ) এর সাথে দীদার লাভ করতেন। তিনি দোয়া করার সাথে সাথে রসূলে মকবুল (ﷺ) দর্শন দান করতেন।

বর্ণিত আছে যে, যখন গাউছে পাককে কবরস্থ করা হয় তখন তিনি উঠে দাঁড়িয়ে নামাজ পড়া আরম্ভ করলেন এবং তাঁর কবর মুবারক চতুর্দিকে সুপ্রশস্ত হয়ে গেল। যারা তাঁর কবর মুবারকের ভিতরে দণ্ডায়মান ছিলেন এ আশ্চর্য দৃশ্য দেখে সাথে সাথে বেহুশ হয়ে যায়। (আল্লাহ্ তাঁর প্রতি এবং আমাদের প্রতি সন্তুষ্ট থাকুন।)

গাউছে পাক (رحمة الله) মুহাক্বেকীন ওলামাগণের অন্যতম ছিলেন। তাঁর উপাধি ছিল ‘মুফতিয়িল ইরাকিয়্যিন’ বাগদাদের বিশ্ববিখ্যাত নেজামিয়া মাদ্রাসায় বহুকাল যাবত অধ্যাপনার দায়িত্ব পালন করেছেন।

হুজুর গাউছে পাক (رحمة الله) বলেন, যে কোন ব্যক্তি প্রত্যেক বুধবার এভাবে চলি­শ বুধবার পর্যন্ত আমার মাযার যেয়ারত করবে যেয়ারতের শেষ দিবসে আল্লাহ্ তায়ালা তাকে দোযখের আগুন থেকে মুক্তি দিবেন। তিনি আরও বলেন যে, আমি আল্লাহ্ তায়ালা থেকে প্রতিশ্র“তি নিয়েছি।

قَالَ اَخَـذْتُ مِنْ رَّبِّـىْ عَـزَّوَجَلَّ عَهْدًا اَنَّ النَّارَ لَا تَحْرِقُ جَسَدًا دَخَلَ حَرَمِىْ هٰذا

অনুবাদ: যে দেহ অর্থাৎ ব্যক্তি আমার মাযারে প্রবেশ করবে তাকে আগুন জ্বালাতে পারবে না। যেমন বর্ণিত আছে মাছ বা অন্য কোন জীবিত বস্তু তাঁর মাযারে পাকে আনা হয়েছিল।

انَّـه مَا دَخَلَ حَرَمَـه يعنى تُرْبَتَـه سَمَك وَلَا لَحْمَّ اِلَّا وَلَمْ يَنْضَج بِالنَّارِ لَا طَبْخًا وَلَاشَيْئًا .

অতঃপর আগুনে রান্না করার জন্য দেয়া হলে রান্না বা ভুনা কিছুই হয়নি।

অনেক মাশায়েখে কেরাম যেমন শায়খ মুহাম্মদ আশ্ শাম্বকী প্রমুখগণ তাঁর বরকতময় সাহচর্যে থেকে উপকৃত হয়েছেন। হযরত মুজাদ্দিদে আলফেসানী (رحمة الله) বলেন, হযরত শায়খ আবদুল কাদের জিলানী বলেছেন, তক্দীরে মুবরাম অর্থাৎ অখণ্ডনীয় তাকদীর পরিবর্তন করার ক্ষমতা কারো নেই। কিন্তু যদি আমি খণ্ডন করার ইচ্ছা করি াহলে তাও খণ্ড করতে পারি। অতঃপর মুজাদ্দিদ (رحمة الله) আল্লাহ্ তায়ালার দরবারে আরজ করেন, হে পরওয়ার দিগারে আলম আপনি আপনার এক বান্দাকে যে দানে ধন্য করেছেন আপনার একান্ত করুণায় এ দুর্বল বান্দাকেও ঐ দৌলত দানের মাধ্যমে ধন্য করুন।

মাকামাতে রাব্বানী
____________________
মাকামাতে রাব্বানী

ইমামে রাব্বানীর অভিমত দ্বারা জানা যায় যে, قضاء مبرم অর্থাৎ আল্লাহর এক বান্দা যাঁর নাম মুহীউদ্দিন আবদুল কাদের জিলানী তিনি ছাড়া অন্য কেউ অখণ্ডনীয় তাকদীরকে পরিবর্তন করতে সক্ষম নয়। এ দৌলত লাভ করার জন্যই ইমাম রাব্বানী আল্লাহর দরবারে কামনা করেছেন।

وَكَانَ رَجُل يَصْرُخُ فِـىْ قَبْرِه وَيصيح حَتّٰى اَذَى النَّاس فاخبروه به فَقَالَ اِنّـه رَأنِـى مَرَّةً وَلَا بد اِنّ الله تَعالٰى يَرْحَمُه لِاَجْلِ ذَالِكَ فمن ذَالِكَ الْوَقْتِ مَا سَمِـعَ اَحَد صراخًا . (نور الابصار مناقب اٰل بيت النبى المختار، صـ ২৫৭ )

অনুবাদ: জনৈক ব্যক্তি নিজ কবরে চিৎকার করে আহাজারী করছিল। যদ্বারা আশেপাশের কবরবাসীর কষ্ট হচ্ছিল। এ সংবাদটি কয়েকজন ছাহেবে কাশ্ফ আউলিয়াগণ হযরত গাউছে পাক (رحمة الله) এর দরবারে পৌঁছালে তিনি বলেন, সে কবরবাসী মৃত ব্যক্তি আমাকে মাত্র একবার দেখেছিল। এ জন্য আল্লাহ্ তায়ালা অবশ্যই তাকে দয়া করবেন। এরপর থেকে আর কেউ এ মৃত কবরবাসীর চিৎকার শোনেনি।

(নূরুল আবছার ফি মানাকেবে আলে বায়তিন নবীয়্যিল মুখতার: ২৫৭)

চারজন ‘আকতাব’ এর নাম
____________________
চারজন ‘আকতাব’ এর নাম

سادات اشراف চারজন যথা:

১. সাইয়্যেদি আহমদ ইবনে রেফায়ী

২. সাইয়্যেদি আব্দুল কাদের জিলানী

৩. সাইয়্যেদি আহমদ আলবাদভী।

৪. সাইয়্যেদি ইব্রাহীম আল উসূফী আল কোরাইশী আল হাশেমী। এ চারজন হলেন ‘আকতাব’। তাঁরা এ চারজন سادات كرام এবং আহলে বায়তে মুস্তফা (ﷺ) এর অন্তর্ভূক্ত। উলামায়ে কেরাম বর্ণনা করেছেন, এ হযরতগণ জীবদ্দশায় এবং ইন্তিকালের পরেও তাঁদের উপর অর্পিত দায়িত্ব পালন করে থাকেন।

নুকাবা, নুজাবা, আবদাল ও গাউছ ইত্যাদি পদবীর সংখ্যা ও বাসস্থান
____________________
নুকাবা, নুজাবা, আবদাল ও গাউছ ইত্যাদি পদবীর সংখ্যা ও বাসস্থান

মাসয়ালা:

قَالَ اِبْنُ الْعَرَبِـى قَدَّسَ اللهُ سِرَّه الْعَزِيْزَ مِنْ رِجَالِ اللهِ تَعَالٰى رَجُلٌ وَاحِدُ وَإِمْرَأَةٌ قَدْ يَكُوْنُ فِـىْ كُلِّ زَمَانٍ وَهُوَ الْقَاهِرُ فَوْقَ عِبَادِه لَه الْإِسْتِطَاعَةَ عَلٰى كُلِّ شَىٍْ قَالَ وَكَانَ صَاحِبُ هٰذَا الْمَقَامِ عَبْدُ الْقَادِرِ أَلْجِيْلَانِى بِبَغْدَادَ .

অনুবাদ: হযরত সাইয়্যেদেনা ইবনুল আরবী (رحمة الله) বলেন, আল্লাহ্ তায়ালার খাছ আউলিয়াগণ হতে একজন মহাপুরুষ এবং কখনো একজন মহিয়সী নারী প্রত্যেক যুগে আবির্ভাব হয়ে থাকে যে, যিনি আল্লাহর প্রত্যেক বান্দাগণের উপর অসাধারণ ক্ষমতা রাখেন এবং প্রত্যেক কিছুর উপর তার সক্ষমতা রয়েছে। তিনি বলেন, আর এ مقام এর অধিকারী হচ্ছেন বাগদাদের হযরত সাইয়্যেদেনা আবদুল কাদের জিলানী (رحمة الله)।

قَالَ سِرَاجُ الحِرَمِ اَبُوْ بَكَرِ الْكَتَّانِـىُّ قَدَّسَ سِرَّه النُّقْبَاءُ ৩০০ أَلنُّجْبَاءُ ৭০ أَبْدَالُ ৪০ أَلْاَخْيَارُ ৭ الْعَمَدُ ৪ أَلْغَوْثُ ১. مَسْكَنُ النُّقْبَاءِ الْمَغْرِبُ وَمَسْكَنُ النُّجْبَاءِ مِصْرُ وَمَسْكَنُ الْأَبْدَالِ أَلشَّامُ وَالْأَخْيَارُ سَيَّاحُوْنَ وَالْعَمَدُ فِـىْ زَوَايَا الْأَرْضِ وَمَسْكَنُ الْغَوْثِ مَكَّةُ كَمَا قَالَه الشَّيْخُ مُؤْمِنُ بْنُ حَسَنِ الشَّلَنْجِىْ مِنْ عُلَمَاءَ الْقَرَنِ الثَّالِثِ عَشَرَ الْهِجْرِى ১৩০০

অনুবাদ: সিরাজুল হেরেম হযরত আবু বকর কাত্তানী (رحمة الله) বলেন, নুকাবাগণের সংখ্যা হলো তিনশতজন। নুজাবাগণের সংখ্যা হলো সত্তরজন। আবদালগণের সংখ্যা হলো চলি­শজন। আখইয়ার-গণের সংখ্যা হলো সাতজন। আল্ আমাদগণের সংখ্যা হচ্ছে চারজন। আর গাউছ হলেন একজন।

১৩০০ শতাব্দীর উলামাগণের অন্যতম বুজুর্গ হযরত শায়খ মোমেন ইবনে হাসান আশ শলঞ্জী (رحمة الله) বলেন, নুকাবাগণের বাসস্থান পৃথিবীর পশ্চিম প্রান্তে। নুজাবাগণের বাসস্থান মিশরে। আবদালগণের বাসস্থান সিরিয়ায়। আর আখইয়ারগণ সারা পৃথিবীতে বিচরণ করে থাকেন। আর আল আমাদগণ সমগ্র পৃথিবীর সকল স্থানে তারা অবস্থিত। আর গাউছ এর বাসস্থান মক্কায়ে মুর্কারমায়।

হুজুর গাউছে পাক (رحمة الله) বলেন:

اِنَّ الْاَشْقِيَاءَ وَالسُّعَدَاءَ يُعْرَضُوْنَ عَلَـىَّ وَاَنَّ عَيْنِىْ فِـىْ اللَّوْحِ الْمَحْفُوْظِ .

অর্থ: নিশ্চয় প্রত্যেক গুনাহগার ও নেক্কার বান্দাদেরকে আমার সামনে পেশ করা হয়। আর নিশ্চয় লওহে মাহফুজে আমার দৃষ্টি নিবন্ধ রয়েছে।

পূতঃপবিত্র রূহের অধিকারী আউলিয়ায়ে কেরামগণের বিচরণস্থল ও তারিখ
____________________
পূতঃপবিত্র রূহের অধিকারী আউলিয়ায়ে কেরামগণের বিচরণস্থল ও তারিখ

হযরত গাউছে পাক বলেন:

اِعْلَمْ اَنَّ رِجَالَ الْاَرْوَاحِ الْمُقَدَّسَةِ قُدِّسَتْ اَسْرَارُهُمْ وَاَرْوَا حُهُمْ فِى الْيَوْمِ السَّابِعِ وَالرَّابِعِ عَشَرَ وَالثَّانِىْ وَعِشْرِيْنَ وَالتَّاسِعِ وَعِشْرِيْنَ مُتَوَجِّهِيْنَ اِلٰى الْمَشْرِقِ وَيَوْمِ السَّادِسِ وَيَوْمِ الْوَاحِدِ وَعِشْرِيْنَ وَالثَّامِن وَعِشْرِيْنَ بَيْنَ الْمَشْرِقِ وَالشِّمَالِ . وَيَوْمِ الثَّالِثِ وَخَامِسِ عَشَرَ وَالثَّالِثِ وَعِشْرِيْنَ وَثَلَاثِيْنَ مِنْه مُتَوَجِّهِيْنَ اِلٰى طَرْفِ الشِّمَالِ وَيَوْمِ الْخَامِسِ وَالثَّالِثِ عَشَرَ وَتِسْعَةٍ وَالسَّابِع وَعِشْرِيْنَ مِنْه مُتَوَ جِّهِيْنَ اِلٰى الْمَغْرِب . وَيَوْم الثَّانِى وَالْعَاشِرِ وَالسَّابِـعِ عَشَرَ وَالْخَامِسِ وَعِشْرِيْنَ مِنْه مُتَوَجِّهِيْنَ بَيْنَ الْمَغْرِبِ وَالْقِيْلَةِ . فَيَا اَخِىْ اِذَا عَلِمْتَ جِهَاتَ سَيْرِهِمْ وَطَرِيْقَتِهِمْ يَنْبَغِىْ اَنْ تَلْتَجِئَ اِلٰى اللهِ وَاِلَيْهِمُ الْوَسِيْلَةَ .

হযরত গাউছে পাক (رحمة الله) বলেন: পূত:পবিত্র রূহের অধিকারী আউলিয়ায়ে কেরাম ও তাঁদের রূহসমূহ ৭,১৪,২২,২৯ তারিখগুলোতে তাঁরা পৃথিবীর পূর্ব প্রান্তের দিকে ধ্যান করে থাকেন। ৬, ২১, ২৮ তারিখগুলোতে তাঁর পৃথিবীর পূর্ব ও উত্তর প্রান্তের মাঝখানের দিকে ধ্যান করে থাকেন। ৩, ১৫, ২৩ ও ৩০ তারিখগুলোতে তাঁরা পৃথিবীর উত্তর প্রান্তের দিকে আওয়াজ্জুহ্ দিয়ে থাকেন। ৫, ১৩, ৯ ও ২৭ তারিখে তারা পৃথিবীর পশ্চিম প্রান্তের প্রতি তাওয়াজ্জুহ্ দিয়ে থাকেন। ২, ১০, ১৭ ও ২৫ তারিখগুলোতে তাঁরা পশ্চিম প্রান্ত ও কেবলার মধ্যবর্তী স্থানের প্রতি ধ্যান দিয়ে থাকেন।

হে প্রিয় ভাই! যখন তুমি তাঁদের বিচরণস্থল ও পথগুলো সম্পর্কে অবহিত হয়েছ তোমার উচিত হবে আল্লাহ্ তায়ালার নিকট তাঁদের উছিলা কামনা করা। (আল ফয়ুজাতুর রাব্বানিয়্যাহ্)

রূহে ইলাহী ও রূহে মুহাম্মদীর বর্ণনা
____________________
রূহে ইলাহী ও রূহে মুহাম্মদীর বর্ণনা

ফতোয়ায়ে নঈমিয়ার ১৯৫ পৃষ্ঠায় তাফসীরে রুহুল বয়ান এর সূত্রে উল্লে­খ রয়েছে যে, মুহাক্কেকীন সূফীয়ায়ে কেরাম বলেন, যেমনিভাবে হযরত ঈসা (عليه السلام) রূহে ইলাহী প্রাপ্ত হয়েছেন তেমনিভাবে গাউছে পাক (رحمة الله) রূহে মুহাম্মদী (ﷺ) প্রাপ্ত হয়েছেন। যখন হযরত ঈসা (عليه السلام) এর উপর রূহে ইলাহী এর প্রভাব অধিক হতো তখন তাঁর পবিত্র যবান দিয়ে انـى اخلق لكم অর্থাৎ নিশ্চয় আমি তোমাদের জন্য সৃষ্টি করতে সক্ষম এর শ্লোগান নিঃসৃত হতো। তা বাস্তবে প্রকাশও হয়ে যেত। তেমনিভাবে শায়খ আব্দুল কাদের জিলানী (رحمة الله) এর উপর যখন রূহে মুহাম্মদী (ﷺ) এর প্রভাব অধিক হতো, তখন পবিত্র যবান থেকে এমন বাণী বের হতো যে, আমি হযরত নূহ (عليه السلام)কে সাহায্য করেছি এবং আমি হযরত ইব্রাহীম (عليه السلام)কে নমরূদের আগুন থেকে রক্ষা করেছি। যে বাণীগুলোকে জনৈক বুজুর্গ ‘কছীদায়ে রূহী’ اشعار এর মধ্যে একত্রিত করেছেন। যেমন তিনি বলেন:

اَنَا كُنْتُ مَعَ نُوْحٍ بِفُلْكٍ اِذَا جَرَتْ وَطُوْفَانٍ حَفَظْتُـه عَلٰى كَفِّ رَاحَتِىْ

اَنَا كُنْتُ مَعَ اِبْرَاهِيْمَ فِى النَّارِ مُلْقِيًا وَمَا اُطْفِئَتِ النَّارُ اِلَّا بَفَتْلَتِىْ

اَنَا كُنْتُ مَعَ رُؤْيَا الذَّبِيْحِ مُشَاهِدًا وَمَا اُنْزِلَ الْكَبْشُ اِلَّا بَفَتَواتِى

অর্থ: ১) মহা প্লাবনের সময় আমি হযরত নূহ আলাইহিস্ সালাম এর সাথে তাঁর নৌকায় ছিলাম। আর আমি তাঁকে আমার শান্তির হাতে এ মহা প্লাবন থেকে রক্ষা করেছি।

২) হযরত ইব্রাহীম (عليه السلام)কে (নমরূদের) আগুনে নিক্ষেপ করার সময় আমি তাঁর সাথে ছিলাম। আমার হস্তক্ষেপের মাধ্যমেই ঐ প্রজ্বলিত আগুন নিভে গিয়েছিল এবং ঐ অগ্নিকুণ্ডলী শান্তি নিকেতনে পরিণত হয়েছিল।

৩) আমি সাইয়্যেদেনা ইসমাঈল যবীহুল্লাহ্ (عليه السلام)কে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের নিমিত্তে কুরবান দানের জন্য হযরত ইব্রাহীম (عليه السلام) স্বপ্নযোগে যখন আদিষ্ট হয়েছিলেন তখন আমি তাঁর সাথে উপস্থিত ছিলাম। বেহেশতের দুম্বাটি আমিই তথা হতে নামিয়ে এনেছি।

اِنِّـىْ اَخْلُقُ لَكُمْ হযরত ঈসা (عليه السلام) তাঁর কওমকে লক্ষ্য করে ঘোষণা করেছিলেন অর্থ: নিশ্চয় আমি তোমাদের জন্য সৃষ্টি করতে পারি এ ঘোষণার ধ্বনি হযরত ঈসা (عليه السلام) এর ছিল না এবং হযরত গাউছে পাকেরও নয়। বরং এ ধ্বনিটি ছিল রূহে এলাহীর, আর হযরত গাউছে পাকের ধ্বনি ছিল রূহে মুহাম্মদীর। হযরত ঈসা (عليه السلام) اِنِّـىْ اَخْلُقُ لَكُمْ বলা সত্ত্বেও তাঁকে خالق বা স্রষ্টা বলা যাবে না এবং সকল নবীগণ থেকে তিনি শ্রেষ্ঠ এটাও বলা যাবে না। তেমনিভাবে গাউছে পাককে যেমন নবী বলা যাবে না। সাহাবায়ে কেরাম ও তাবেয়ীন থেকে তাঁর মর্যাদা বেশীও বলা যাবে না।

সুতরাং হযরত ঈসা (عليه السلام) এর মর্যাদা দু’টি। একটি হলো রুহুল্লাহ্ অর্থাৎ আল্লাহর রূহ। দ্বিতীয় মর্যাদা হলো نبى الله অর্থাৎ আল্লাহর নবী। তেমনিভাবে হযরত গাউছে পাকের মর্যাদাও দু’প্রকার। একটি হলো কুতবিয়াতের মর্যাদা যা আদিকাল থেকে রসূলে পাকের মাধ্যমে তিনি অর্জন করেছিলেন। যা মুহাম্মদী দরবার হতে ইলমে লাদুন্নিয়া অর্জন করার পর হাসিল হয়েছিল। যে দিকে স্বয়ং কছীদায়ে গাউছিয়ায় ইঙ্গিত করা হয়েছে।

دَرَسْتُ الْعِلْمَ حَتَّـى صِرْتُ قْطْبًا

                       وَنِلْتَ السَّعْدَ مِنْ مَـوْلٰى الْمَـوَالِـىْ

অর্থাৎ: “আমি সঠিক ইলম শিখে কুতুব মর্যাদায় উন্নীত হয়েছি। আর এ সৌভাগ্য আমি আল্লাহ্ তায়ালার সাহায্যেই অর্জন করেছি। অর্থাৎ গাউছে পাকের বাণী হচ্ছে- প্রকৃত معرفت অর্জন করার জন্য কুরআনী সকল জ্ঞানে পূর্ণ দক্ষতা অর্জন করা আবশ্যক। ফিক্বহ, হাদীস এবং তাফসীর বিষয়ে পূর্ণ দক্ষতা যখন অর্জিত হবে তখন صالح বান্দা হওয়ার জন্য علم অর্জন করার সাথে আমল করাও জরুরী। এর সাথে আল্লাহ্ তায়ালার অনুগ্রহও সম্পৃক্ত থাকা আবশ্যক। আল্লাহ্ তায়ালার অনুগ্রহে দ্বীন সম্পর্কীয় যাবতীয় ইলম, জাহেরী ইলম ও বাতেনী যাবতীয় জ্ঞান আমি অর্জন করেছি। অতঃপর সৌভাগ্যের সকল স্তর অতিক্রম করে কুতুবে এরফান এবং হাক্বীক্বত এর আসনে আসীন হয়েছি। দ্বিতীয় মাকাম হচ্ছে, গাউছিয়াতের মাকাম। কছিদায়ে রূহীর মধ্যে شعر গুলোতে মাকামে কুতবিয়াত এর ধ্বনি ছিল। সে হিসেবে তিনি পূর্বাপর সকল আউলিয়াগণের সর্দার। যে ওলী তাঁর পূর্বে ছিল অথবা তার পরে হয়েছে এবং হতে থাকবে সবাই তাঁকে আদব করে থাকেন।

পূর্বেকার আউলিয়া বলতে বনী ইসরাঈল এর আউলিয়াগণকে বুঝানো হয়েছে। সাহাবায়ে কেরাম ও তাবেয়ীনগণ নন। হযরত মুজাদ্দিদে আলফে সানী (رحمة الله) বলেছেন, হযরত আবদুল কাদের জিলানী (رحمة الله) এর মর্যাদা শুধু তাঁর পরের আউলিয়াগণের উপর রয়েছে এটাই তার (مقام غوثيت) গাউছিয়াতের মাকাম। (মিরআত ইত্যাদি)

হুজুর গাউছে পাকের মাকাম, মাকামে কুতবিয়াতই হচ্ছে রূহে মুহাম্মদী। কেননা মুহাম্মদী কুতবিয়াতই হচ্ছে সবার সেরা। তাইতো হযরত মুহীউদ্দীন ইবনে আরবী (رحمة الله) ফতুহাতে মক্কীয়ার ২৪ ও ৬৬ পৃষ্ঠায় বলেছেন, জগতের প্রথম কুতুব সকল সৃষ্টিজীব হতে চার কোটি বছর আগে সৃষ্টি হয়েছেন। আর এ কুতুবই সকল আম্বিয়া (عليه السلام)কে সহায়তা করতে থাকেন। এ قطب اوّل দ্বারাই সকল সৃষ্টিজীবকে সৃষ্টি করা হয়েছে। আর ঐ قطب اوّل এর নামই হলো রূহে মুহাম্মদী (ﷺ)। হযরত ইবনে আরবী (رحمة الله) এর বাণী দ্বারা ঐ সকল রেওয়ায়েতের সত্যায়ন হয়েছে যা হুজুর (ﷺ) তার নিজ সৃষ্টি সম্পর্কে বিভিন্ন শব্দ দ্বারা বর্ণনা করেছেন। সুতরাং ইহা ঐ রূহে মুহাম্মদী হুজুরে গাউছে পাকের মধ্যে কোন মাধ্যম ছাড়াই আমানত রাখা হয়েছে। যেভাবে হযরত ঈসা (عليه السلام) এর মধ্যে রুহুল্লাহ্ কে আমানত রাখা হয়েছিল।

হুজুর (ﷺ) ইরশাদ করেছেন,

اَوَّلُ مَا خَلَقَ اللهُ نُوْرِىْ . اَوَّلُ مَا خَلَقَ اللهُ رُوْحِىْ وَغَيْره .

অর্থাৎ: আল্লাহ্ তায়ালা আমার নূর সর্বপ্রথম সৃষ্টি করেছেন। আল্লাহ্ তায়ালা সর্বপ্রথম আমার রূহকে সৃষ্টি করেছেন ইত্যাদি। মোদ্দাকথা হচ্ছে রূহ এবং নূর বিশেষ বীর্যের মাধ্যমে স্থানান্তরিত হয় না। বরং কখনো কখনো মাধ্যমসহ পিতার ললাট হতে স্থানাস্তরিত হয়ে থাকে। যেমন সকল নবীগণ (আলাইহিমুস্ সালাম) বিশেস করে হুজুর (ﷺ) এর নূর হযরত আব্দুল্লাহ (رضي الله عنه) এর ললাট হতে স্থানান্তরিত হয়েছিলেন।

আল্লামা ইউসুফ নাব্হানী (رحمة الله) বলেছেন:

يَنْتَقِلُ نُـوْرُ النَّـبِـىِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّم مِنَ الْجَبِيْنَةِ اِلٰى الْجَبِيْنَةِ .

অর্থাৎ নবী করীম (ﷺ) এর নূর এক ললাট হতে অন্য ললাটে স্থানান্তরিত হয়েছিলেন। সর্বপ্রথম এ পবিত্র নূর হযরত আদম (عليه السلام) এর ললাট মুবারকে স্থানান্তরিত হয়। আবার কখনো এ নূর কোন মাধ্যম ছাড়াই স্থানান্তরিত হয়। যেমন আল্লাহর রূহ হযরত ঈসা (عليه السلام) এর মধ্যে স্থানান্তরিত হয়েছিল।

এমনিভাবে গাউছে পাক আবদুল কাদের জিলানীর মধ্যে রূহে মুহাম্মদীও স্থানান্তরিত হয়েছে। উল্লে­খিত কছীদায়ে গাউছিয়ার شعر টি সে দিকেই ইঙ্গিত করেছে। সুতরাং এখানে قطب বলতে রূহে মুহাম্মাদীকেই বুঝানো হয়েছে। (ফতোয়ায়ে নঈমিয়া: ২৯৭)

সরকারে গাউছে পাক বলেছেন:

اَلْاَنْبِيَاءُ وَالْاَوْلِيَاءُ يُصَلُّوْنَ فِىْ قُبُوْرِهِمْ كَمَا يُصَلُّوْنَ فِىْ بُيُوْتِهِمْ .

অর্থ: আম্বিয়ায়ে কেরাম এবং আউলিয়াগণ তাঁদের কবরের মধ্যে এমনভাবে নামায পড়ে থাকেন যেমন তারা নিজ ঘরে নামাজ পড়তেন।

হযরত আল্লামা মুহাম্মদ ইবনে ইয়াহ্ইয়া আন্নাযেফী আল হালবী (رحمة الله) (ওফাত ৯৬৩ হিজরী) বলেন:

اَقُوْلُ وَقَدْ اِنْعَقَدَ الْاِجْمَاعُ مِنْ جَمَاهِيْرِ الْاَشْيَاخِ مِنَ الْفُقَهَاءِ وَالْفُقْرَاءِ وَتَضَمَّنَتِ الْكُتُبُ الْمُدَوَّنَـةُ انّ اَصْحَاب التَّصرِيْف التَّام مِنَ السَّادَةَ القَادَة الْاَوْلِيَاءِ فِىْ حَيَاتِهِمْ وَفِى قُبُوْرِهِمْ بَعْدَ وَفَاتِهِمْ كَتَصْرِيف الْاَحْيَاءِ اِلٰى يَوْمِ القِيمٰةِ بِتَخْيصٍ مِنَ اللهِ تَعَالٰى لَهُمْ . (قلائد صـ৩৭ )

وَهُمُ الشَّيْخ عَبْدُ الْقَادِرِ الْجِيْلِى وَالشَّيْخُ مَعْرُوْف الكرْخِىْ وَالشَّيْخِ عقِيْلُ مَنْبَجِىْ وَالشَّيْخ حَيَاةُ بْنُ قَيْس الحَرَّانِى رَضِىَ اللهُ عَنْهُمْ وَ اِنَّ السَّادة الْبَرَرَة اَرْبَعَةٌ .

অনুবাদ: আমি বলছি, আউলিয়ায়ে কেরাম জীবদ্বশায় ও ওয়াফাতের পর তাঁদের কর্মতৎপরতার বিষয়ে জমহুর উলামা ও মাশায়েখগণ এ কথার উপর ঐক্যমত পোষণ করেছেন।

মুসলিম মিল্লাতের প্রসিদ্ধ কিতাবগুলোতে এ প্রসঙ্গে অনেক প্রমাণ রয়েছে যে, আল্লাহর অলীগণ পরিপূর্ণ প্রভাব বিস্তারের ক্ষমতা রাখেন- যাদেরকে আল্লাহ্ তায়ালা বাছাই করে এ ধরনের খাছ বান্দাগণের অন্তর্ভূক্ত করে থাকেন। পার্থিব জীবনে যেমনি করে তাঁদের থেকে বিভিন্ন কর্মতৎপরতা ও অসাধারণ কারামত প্রকাশ হয়ে থাকে তেমনিভাবে তাঁদের ইন্তেকালের পরেও কবরের জিন্দেগীতেও প্রকাশ হয়ে থাকে। তাঁদের অন্যতম হলেন, হুজুর সাইয়্যেদেনা গাউছুল আজম আবদুল কাদের জিলানী, শায়খ মা’রুফ কারখী, শায়খ আকীল আল মনজবী ও শায়খ ইবনে কায়েস আল হাররানী যারা সমস্ত আউলিয়া কেরামগণের সর্দার হয়ে থাকেন। আর চারজন হলেন سادات صلحاء গণের অন্যতম।

اَيْضًا اَلَّذِيْنَ يُبْرِئُوْنَ الْاَكْمَهَ وَالْاَبْرَصَ وَيُحْيُوْنَ الْمَوْتٰى بِاِذْنِ اللهِ تَعَالٰى وَهُمْ اَلْقُطْبُ الْغَوْثُ الشَّيْخُ مُحِىُّ الدِّيْنِ عَبْدُ الْقَادِرْ جِيْلَانِى .

অর্থ: যাঁরা জন্মান্ধ, শ্বেতরোগীদের আরোগ্য করতে পারেন। আল্লাহর অনুমতি নিয়ে তাঁরা মৃতকে জীবিত করতে সক্ষম। আর তাঁদের মধ্যে অন্যতম কুতুবুল আকতাব হযরত গাউছ পাক শায়খ সাইয়্যেদ মুহীউদ্দীন আবদুল কাদের জিলানী (رحمة الله)। (কালায়েদ: ৩৭)

হযরত গাউছে পাকের নাম মুবারক শ্রবণ করলে চোখে চুমু দেয়ার মা
____________________
হযরত গাউছে পাকের নাম মুবারক শ্রবণ করলে চোখে চুমু দেয়ার মাসয়ালা

মাসয়ালা: হযরত সাইয়্যেদেনা শায়খ আব্দুল কাদের জিলানী (কুদ্দিসা র্সিরুহুল আজীজ) এর নাম মুবারক শুনে বৃদ্ধাঙ্গুলে চুমু দিয়ে দু’ চোখে লাগানো শরীয়তে বৈধ কি না?

উত্তর: হুজুর সরকারে দো আলম (ﷺ) এর নাম মুবারক নিজে উচ্চারণ করলে অথবা কেউ তা উচ্চারণ করতে শুনলে দরূদ পাক পাঠপূর্বক বৃদ্ধাঙ্গুলে চুমু খেয়ে দু’ চোখে লাগানো শরীয়তের আলোকে তা মুস্তাহাব হিসেবে সুপ্রমাণিত। আর হুজুর সাইয়্যেদেনা গাউছে পাক (رحمة الله) হুজুর (ﷺ) এর পরিপূর্ণ উত্তরাধিকারী ও নায়েব এবং তাঁর পবিত্র আয়নাসম। হুজুর সাইয়্যেদুল কাওনাইন (ﷺ) নিজ সমস্ত গুণাবলী, সৌন্দর্য্য, মহত্ব ও পূর্ণাঙ্গসহ তার মধ্যে দেদিপ্যমান রয়েছেন, যেভাবে ذات احديت এর ইজ্জত তাঁর সকল গৌরবময় প্রশংসা মুহাম্মদী আয়নায় প্রস্ফুটিত রয়েছে। তাই নবীজি (ﷺ) ঘোষণা করেছেন:

مَنْ رَأنِىْ فَـقَدْ رَأَى الْـحَقَّ

অর্থ: যে আমাকে দেখতে পেয়েছে সে অবশ্যই হক্ব তায়ালাকে দেখতে পেয়েছে। এ ধারাবাহিকতায় গাউছিয়াতের তা’যীম তথা সম্মান করা বাস্তবিক পক্ষে রেসালাতেরই তা’যীম বা সম্মান করা। আর সরকারে রেসালাতের তা’যীম করা মানে স্বয়ং একক আল্লাহ্ তায়ালাকেই সম্মান ও ইজ্জত করার শামিল।

[ফতোয়ায়ে আফ্রিকা: ১০১, কৃত ইমাম আহমদ রেজা খাঁ।]

وَصَلَّى اللهُ تَعَالٰى عَلٰى سَيِّدِنَا وَمَوْلَانَا وَشَفِيْعِنَا جَدِّ عَبْدِ الْقَادِرْ جِيْلَانِىْ مُحَمَّدَنِ الْمُصْطَفٰى وَعَلٰى اٰلِـه وَاَصْحَابِـه وَ اَزْوَاجِه وَذُرِّيَاتِـه وَعِتْرَتِـه وَاَهْلِ بَيْتِه وَعَلٰى الشَّيْخ مُحِىّ الدِّيْنِ عَبْدٍ الْقَادِرْ اَلْمَكِيْنِ الْاَمِيْنِ الْغَوْثِ الْاَعْظَمِ صَلَوَاتُ اللهِ تَعَالٰى وَسَلَامُـه عَلَيْهِمْ اَجْمَعِيْن .


تمت بالخير


___________ সমাপ্ত __________



Comments

Popular posts from this blog

বালাকোট আন্দোলনের হাকীকত

সৈয়দ আহমদ বেরলভীর জম্ম ও পরিচয়

মওদুদীর ভ্রান্ত আক্বিদা ও ইসলামী আক্বিদা