মাওলিদ-উন-নবী (ﷺ)
বিষয়ঃ মাওলিদ-উন-নবী (ﷺ) পরিচিতি, আল-কুরআন ও তফসীরের আলোকে।
____________________
বিষয়ঃ মাওলিদ-উন-নবী (ﷺ) পরিচিতি, আল-কুরআন ও তফসীরের আলোকে।
🖋লেখক, সংকলকঃ মাসুম বিল্লাহ সানি
মিলাদুন্নবী (ﷺ) অর্থ পরিচিতিঃ
মূলত ঈদ অর্থ হচ্ছে খুশি বা আনন্দ প্রকাশ করা |
আর "মীলাদ ও " নবী" দুইটি শব্দ একত্রে মিলিয়ে হয় মীলাদুন্নবী | " মীলাদের" তিনটি শব্দ রয়েছে - ميلاد মীলাদ, مولد মাওলিদ, مولود মাওলূদ | মীলাদ শব্দের অর্থ হচ্ছে, জন্মবৃত্তান্ত (মানে হল বিস্তৃতভাবে বংশবৃত্তান্ত, স্থান-কালসহ আলোচনা করা)
অর্থাৎ, আভিধানিক বা শাব্দিক অর্থে ميلاد النبي বা " মীলাদুন্নবী" বলতে হুজুর পাক (ﷺ) উনার বিলাদত শরীফকেই বুঝায়।
আর পারিভাষিক বা ব্যাবহারিক অর্থে,মীলাদুন্নবী বলতে হুজুর পাক (ﷺ) উনার বিলাদত শরীফ উপলক্ষে উনার ছানা- সিফাত আলোচনা করা, উনার প্রতি সালাত সালাম পাঠ করা, এবং উনার পবিত্রতম জীবনী মুবারকের সামগ্রিক বিষয়ের আলোচনা বুঝানো হয় !
ওহাবী ও আহলে হাদিসগন একে বিদাত বলে আসুন দেখি রাসুল (ﷺ) এর জন্ম ও বংশবৃত্তান্ত আলোচনা কুরআন হাদিসে আছে কিনা।
আল-কুরআনের আলোকে মিলাদুন্নবী (ﷺ): এক নজরে কিছু আয়াত
● আল ইমরান 81,164।
● আন নিসা 59,175,164।
● আল মায়দায় 15।
● আত তাওবাতে 33,128।
● আস সাফ 6,8।
● আল জুমুআ 2।
● আল বালাদ ২-৩।
● আল ইব্রাহিম ২৮ (বুখারী শরিফের শানে নুযুল)
● আল ইব্রাহিম 34।
● আন নাহল 83।
● আল ইনশিরাহ 1-4।
● আল আম্বিয়া 107।
● আল ফাতহ 8,9, 28
● আল আহযাব 56।
● কাফ 2।
● আনফাল 33
● আদ দ্বোহা 11
● আল হিজর 72
● আল আরাফ 157
● ইব্রাহিম ৫ [হযরত মুসা (عليه السلام) এর মিলাদ সম্পর্কে]
● মায়িদা 20 [হযরত মূসা (عليه السلام) এর মিলাদ সম্পর্কে]
আল-কুরআন ও সর্বজন সমাদৃত বিখ্যাত (→) তফসীরগ্রন্থ থেকে মিলাদুন্নবী (ﷺ)
❏ আয়াত ১ :
আল্লাহ পাক ইরশাদ করেন,
اللهم ربنا انزل علينا ماءدة من السماء تكون لنا عيدا لاولنا واخرنا
অর্থ : হে আমাদের রব আল্লাহ! আমাদের জন্য আপনি আসমান হতে (বেহেশতী খাদ্যের) খাদ্যসহ একটি খাঞ্চা নাযিল করুন। খাঞ্চা নাযিলের উপলক্ষটি অর্থাৎ যেদিন খাঞ্চা নাজিল হবে সেদিনটি আমাদের জন্য, আমাদের পূর্ববর্তী ও পরবর্তী সকলের জন্য ঈদ স্বরূপ হবে !"
(সূরা মায়িদা ১১৪)
ব্যখ্যা :
হযরত ঈসা (عليه السلام) এর উম্মতের জন্য আসমান থেকে খাদ্য নাযিল হওয়ার দিনটি যদি ঈদের দিন হয়, তাহলে যার উসীলায় জগৎ সৃষ্টি, যিনি সমগ্র জগৎ এর নিয়মাত, সকল নিয়মতের মূল, যিনি আন নি'মাতুল কুবরা সেই রাসূল (ﷺ) এর আগমন কি ঈদের (আনন্দের) দিন নয়?
কারণ হুজুর পাক (ﷺ) এর আগমনের দিন হল শয়তানের কান্নার দিন আর ইমানদারদের জন্য খুশির দিনঃ
+ইমাম ইবনে কাসীর (رحمة الله) লিখেনঃ
حكى السهيلي عن تفسير بقي بن مخلد الحافظ : أن إبليس رن أربع رنات; حين لعن ، وحين أهبط ، وحين ولد رسول الله صلى الله عليه وسلم ، وحين أنزلت الفاتحة
“শয়তান চার বার উচ্চস্বরে কেঁদেছিল,
(১) যখন আল্লাহ তায়ালা তাকে অভিশপ্ত আখ্যা দেন;
(২) যখন তাকে বেহেস্ত থেকে বের করে দেয়া হয়।
(৩) যখন হুজুর (ﷺ) এর বিলাদত/মিলাদ হয়।
(৪) যখন সূরা ফাতেহা নাযেল হয়।”
(ইমাম ইবনে কাসীর: আল-বেদায়া ওয়ান নেহায়া-২য় খণ্ড ২৬৬, ২৬৭,পৃষ্ঠা, প্রকাশনা: মাকতাবাতুল মা’রেফা, বয়রুত লেবানন।)
❏ আয়াত ২ :
পবিত্র কুরআনে ইরশাদ হচ্ছে-
قُلْ بِفَضْلِ اللَّهِ وَبِرَحْمَتِهِ فَبِذَٰلِكَ فَلْيَفْرَحُوا هُوَ خَيْرٌ مِّمَّا يَجْمَعُونَ{يونس-٥٨}…
[হে হাবিব ﷺ]! আপনি বলে দিন, মহান আল্লাহর “ফযল” ও "রহমত" প্রাপ্তির কারণে তাদের উচিত খুশি প্রকাশ করা। এটি তাদের (সমুদয়) সঞ্চয় অপেক্ষা সর্বাপেক্ষা উত্তম। (সুরা ইউনুস ১০:৫৮)
❏ তফসীরঃ
❏ বিশিষ্ট তাবেয়ী হযরত কাতাদা (رضي الله عنه) ও তাবেয়ী ইমাম মুজাহিদ (رحمة الله) সহ আর ও অনেকে বর্ণনা করেন যে, আহলে বায়াতের অন্যতম সদস্য হযরত ইমাম আবু জাফর বাকের (رضي الله عنه) এ আয়াতের ব্যাখ্যায় বলেন-
عن قتادة رضى الله تعالى عنه ومجاهد وغيرهما قال ابو جعفر الباقر عليه السلام فضل الله رسول الله صلى الله تعالى عليه وسلم .
-“আল্লাহর (ফদ্বল) বা অনুগ্রহ দ্বারা ও রাসূল (ﷺ) কে বুঝানো হয়েছে।”
[ইমাম তিবরিসী, মাজমাউল বায়ান ৪/১৭৭-১৭৮ পৃ.।]
❏ বিশ্ব-বিখ্যাত মুহাদ্দিস ও তাফসিরকারক ইমাম যওজী (رحمة الله) [ওফাত.৫৯৭হি.) উক্ত আয়াতে সম্পর্কে লিখেন,
ফাদ্বল দ্বারা ইলম বা জ্ঞানকে এবং রহমত দ্বারা মুহাম্মদ (ﷺ) কে বুঝানো হয়েছে যেমনটি তাবেয়ী ইমাম দাহ্হাক (رحمة الله) তাঁর শায়খ হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (رضي الله عنه) থেকে বর্ণনা করেছেন।”
[ইমাম যওজী, যা’দুল মাসীর ফি উলূমূত তাফাসীর, ৪/৪০ পৃ.]
❏ ইমাম হাইয়্যান আন্দুলুসী (رحمة الله) [ওফাত. ৭৪৫হি.] বর্ণনা করেন-
وَقَالَ ابْنُ عَبَّاسٍ فِيمَا رَوَى الضَّحَّاكُ عَنْهُ: الْفَضْلُ الْعِلْمُ وَالرَّحْمَةُ مُحَمَّدٌ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ.
“তাবেয়ী ইমাম দাহ্হাক (رحمة الله) সাহাবী হযরত ইবনে আব্বাস (رضي الله عنه) হতে বর্ণনা করেন- উক্ত আয়াতে (ফদ্বল) দ্বারা ইলমকে এবং (রহমত) দ্বারা মুহাম্মদ (ﷺ) কে বুঝানো হয়েছে।”
[ইমাম হাইয়্যান, তাফসীরে বাহারুল মুহিত, ৫/১৭১ পৃ.]
❏ হাফিজুল হাদিস ইমাম জালালুদ্দীন সুয়ূতি (رحمة الله) [ওফাত. ৯১১হি.) লিখেন-
وَأخرج أَبُو الشَّيْخ عَن ابْن عَبَّاس رَضِي الله عَنْهُمَا فِي الْآيَة قَالَ: فضل الله الْعلم وَرَحمته مُحَمَّد صلى الله عَلَيْهِ وَسلم قَالَ الله تَعَالَى وَمَا أَرْسَلْنَاك إِلَّا رَحْمَة للْعَالمين.
(১০৭ الْأَنْبِيَاء الْآيَة )
-‘‘ইমাম আবু শায়খ ইস্পাহানী (رحمة الله) তার তাফসীরে উল্লেখ করেন, সাহাবি হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (رضي الله عنه) এ আয়াতের ব্যাখ্যায় বলেন, এখানে আল্লাহর (ফাদ্বল) বা অনুগ্রহ দ্বারা ইলম বা জ্ঞানকে এবং (রহমত) দ্বারা নবীজী (ﷺ) কে বুঝানো হয়েছে। যেমন মহান আল্লাহ ইরশাদ করেন- হে হাবিব আমি আপনাকে সমগ্র বিশ্ব-জগতের জন্য রহমত স্বরূপ প্ররেণ করেছি।(সুরা আম্বিয়া, আয়াত নং-১০৭)।’’
[ইমাম তিরমিযী-মাজমাউল বায়ান,৫/১৭৭-১৭৮পৃ, তাফসীরে দূররুল মানছুর - ১০ নং সূরা - ১১ পারা- সূরা ইউনূছ ৫৮]
❏ বিখ্যাত মুফাস্সির ইমাম সৈয়দ শিহাবুদ্দীন মাহমুদ আলূসী বাগদাদী (রহ.) [ওফাত. ১২৭০হি.] স্বীয় তাফসীরে উল্লেখ করেন-
وأخرج أبو الشيخ عن ابن عباس رضي الله تعالى عنهما أن الفضل العلم والرحمة محمد صلّى الله عليه وسلم.
“হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (رضي الله عنه) এ আয়াতের তাফসীরে বলেন নিশ্চয়ই (ফাদ্বলুল্লাহ্) বা অনুগ্রহ হল ইলমে দ্বীন এবং রহমত হলো নবী করিম (ﷺ)।’’[আল্লাম শিহাব উদ্দিন সৈয়দ মাহদুদ আলুসী-রুহুল মা'আনী,৬/১৩৩পৃ]
❏ ইমাম সৈয়দ মাহমুদ আলূসী (رحمة الله) আরও উল্লেখ করেন-
وأخرج الخطيب، وابن عساكر عنه تفسير الفضل بالنبي عليه الصلاة والسلام.
-‘‘হযরত খতিবে বাগদাদী (رحمة الله) এবং ইমাম ইবনে আসাকীর (رحمة الله) সাহাবী হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (رضي الله عنه) হতে বর্ণনা করেন, ফাদ্বল (অনুগ্রহ) দ্বারাও নবী করীম (ﷺ) কে বুঝানো হয়েছে।”
[আল্লামা শিহাব উদ্দিন মাহমুদ আলুসী-রুহুল মা'আনী,৬/১৩৩পৃ]
❏ আয়াত ৩ :
সে রহমত সম্পর্কে অনত্র আল্লাহ পাক বলেন,
وماارسلناك الا رحمة للعالمين
অর্থ : হে আমার হাবীব (ﷺ)! আমি আপনাকে সমস্ত কায়িনাতের জন্য রহমত হিসাবে পাঠিয়েছি !"'
(সূরা আম্বিয়া ১০৭)
রহমতাল্লিল আল-আমিনের আগমনে খুশি হব নাকি শোক প্রকাশ করব আপনারাই বলুন।
❏ তফসীরঃ
❏ ইমাম জালালউদ্দীন সৈয়ুতী (رحمة الله) বলেন, “আবু শায়খ হযরত ইবনে আব্বাস (رضي الله عنه) থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন: আল্লাহর ফযল বলতে জ্ঞানকে, আর রহমত বলতে রাসূলুল্লাহ (ﷺ) -কে বোঝানো হয়েছে। আল্লাহ বলেন, (হে রাসূল) আমি আপনাকে প্রেরণ করেছি জগতসমূহের জন্যে আমার রহমত (করুণা) করে (সূরা আম্বিয়া, ১০৭ আয়াত)।” [আস্ সৈয়ুতী প্রণীত দুররে মনসূর, ৪:৩৩০]
আল্লাহর নিয়ামতকে স্মরণ করার হুকুমঃ
❏ আয়াত ৪ :
মূসা (عليه السلام) ও তাঁর ক্বওম এর ব্যাপারে আল্লাহ পাক বলেন,
وذكرهم بايام الله ان في ذلك لايات لكل صبار شكور
আল্লাহর দিবসসমূহ তাদের স্মরণ করিয়ে দিন’। নিশ্চয় এতে প্রতিটি ধৈর্যশীল, কৃতজ্ঞ ব্যক্তির জন্য রয়েছে অসংখ্য নিদর্শন। (সূরা ইব্রাহীম ৫)
❏ আয়াত ৫ :
আল্লাহ পাক বলেন,
اذكروا نعمة الله عليكم
অর্থ : তোমাদেরকে যে নিয়ামত দেয়া হয়েছে, তোমরা সে নিয়ামতকে স্মরন করো!" (সূরা আল ইমরান ১০৩)
❏ আয়াত ৬ :
وأما بنعمة ربك فحدت
অর্থ : আপনার রবের নিয়ামতের কথা প্রকাশ করুন। (সূরা আদ-দ্বোহা ১১)
রাসূলুল্লাহ (ﷺ) হলেন দুনিয়ার সর্বশ্রেষ্ঠ নিয়ামতঃ
❏ আয়াত ৭ :
মহান রব ইরশাদ করেন-
‘‘যারা আল্লাহর নেয়ামতকে কুফুরী বশতঃ পরিবর্তন করেছে।’’ [সূরা ইব্রাহিম, আয়াত নং- ২৮]
রাসূল (ﷺ) কে আল্লাহ এ আয়াতে নিয়ামত বলেছেন।
আর নিয়ামতকে অস্বীকার করেছেন কারা সে সম্পর্কে
❏ হাদিসঃ ইমাম বুখারী (رحمة الله) উল্লেখ করেছেন-
هم كفار أهل مكة
-‘‘হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (رضي الله عنه) বলেন, যারা আল্লাহর নেয়ামত [রাসূলুল্লাহ (ﷺ) কে] কুফুরী বশতঃ পরিবর্তন করেছে তারা হলেন মক্কার কুরাইশ গোত্রের কাফের গণ।’’
[বুখারী, আস্-সহিহ, ৬/৮০পৃ. হাদিস নং. ৪৭০০]
আদেশ সূচক বাক্য দ্বারা ফরজ এবং ওয়াজিব সাব্যস্ত হওয়াঃ
❏ ফিক্বাহের কিতাবে আছে-
الامر للوجوب
অর্থাৎ, আদেশ সূচক বাক্য দ্বারা ফরজ ওয়াজিব সাব্যস্ত হয় ! (বাদায়েউস সানায়ে)
তদ্রুপ সূরা ইউনূছের ৫৮ আয়াতের فليفرحوا বা খুশি প্রকাশ করো এটা আদেশ সূচক বাক্য।
রসূলুল্লাহ (ﷺ) এর শান-সিফাত ও মাহাত্ম্য বর্ণনার নির্দেশঃ
❏ আয়াত ৮ :
إنا أرسلناك شاهدا ومبشر ونذير لتؤمنوا بالله و رسوله و تعزروه وتوقروه وتسبحوه بكرة وأصيلا
৪৮:৮ - নিশ্চয় আমি আপনাকে প্রেরণ করেছি হাযির (উপস্থিত) নাযির (প্রত্যক্ষ সাক্ষীস্বরূপ), সুসংবাদদাতা ও সতর্ককারী করে;
৪৮:৯ - যাতে হে লোকেরা! তোমরা আল্লাহ্ ও তার রসূলের উপর ঈমান আনো এবং রসূলের মহত্ব বর্ণনা ও (তাঁর প্রতি) সম্মান প্রদর্শন করো আর সকাল-সন্ধ্যা আল্লাহ্র পবিত্রতা ঘোষণা করো। (সূরা ফাতাহ ৮,৯)
❏ আয়াত ৯ :
পৃথিবী সৃষ্টির পূর্বে নবীগণের মজলিশে সর্বপ্রথম মিলাদুন্নবীর (ﷺ)-এর আলোচনা (শানে নুযুল দেখতে পারেন)
وإذ أخذ الله ميثاق النبيين لما اتيتكم من كتاب و حكمة ثم جاءكم رسول مصدق لما معكم لتؤمنن به ولتنصرنه قال أأقررتم وأخذتم علي ذلكك إصري قالوا أقررنا قال فاشهدوا وأنا معكم من الشاهدين
অর্থ: স্মরণ করুণ! যখন আল্লাহ পাক নবীগণের নিকট থেকে অঙ্গীকার নিয়েছিলেন, আমি আপনাদেরকে যে কিতাব ও হিকমত প্রদান করবো। অতঃপর তশরীফ আনবেন একজন রসূল [মুহাম্মদ (ﷺ)] ! তিনি আপনাদের প্রদত্ত কিতাবগুলোর সত্যায়ন করবেন। তখন আপনারা নিশ্চই উনার প্রতি ঈমান আনবেন এবং উনাকে (পেলে) সহযোগিতা করবেন ! মহান আল্লাহ বললেন, আপনারা কি এ অঙ্গীকার স্বীকার ও গ্রহণ করলেন? উনারা বললেন, হ্যাঁ, আমরা স্বীকার করে নিলাম। তখন আল্লাহ পাক বললেন, তাহলে আপনারা সাক্ষী থাকুন এবং আমিও আপনাদের সাথে সাক্ষী রইলাম !"
(সূরা আল ইমরান ৮১)
❏ আয়াত ১০ :
আল্লাহ বলেন,
قال عيسي ابن مريم يبني اسراءيا اني رسول الله اليكم مصدقا لما بين يدي من التورة و مبشرا برسول ياتي من بعدي اسمه احمد
অর্থ :হযরত ঈসা (عليه السلام) বলেন, হে বনী ইসরাঈল ! নিশ্চয়ই আমি তোমাদের নিকট মহান আল্লাহ পাক উনার রসূল হিসাবে প্রেরিত হয়েছি ! আমার পূর্ববর্তী তাওরাত শরীফের আমি সত্যায়নকারী এবং আমি এমন একজন রসূলের সুসংবাদ দানকারী। যিনি আমার পরে আগমন করবেন, উনার নাম মুবারক হচ্ছে আহমদ (ﷺ) !"
(সূরা আস সাফ ৬)
❏ তফসীরঃ
উক্ত আয়াতের পরিপ্রেক্ষিতে স্বয়ং রাসূলুল্লাহ (ﷺ) নিজেই নিজের মীলদ শরীফ বর্ননা করেন।
ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল, ইমাম হাকিম, ইমাম আত-তাবারানী, ইমাম আল-বাজ্জার, ইমাম আল-বায়হাকী (রহিমাহুল্লাহ) বর্ননা করেন, হযরত ইরবায ইবনে সারিয়া (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) ইরশাদ করেন,
"আমি আল্লাহর বান্দা ও শেষ নবী। আমি তখনো নবী ছিলাম যখন আদম (عليه السلام) মাটির অন্তর্গত ছিলেন। খুব শীঘ্রই আমি তোমাদেরকে এসব বিষয়ে অবগত করব।
আমি আমার পিতা হযরত ইব্রাহীম (عليه السلام) এর দোয়া,
হযরত ঈসা (عليه السلام) এর [তার জাতিকে দেয়া ভবিষ্যৎবানী] সুসংবাদ এবং "আমার আন্মাজানের (স্বপ্নে) দেখা সেই নূর যা ওনার দেহ থেকে বের হয়ে শাম দেশের প্রাসাদ সমুহকে আলোকিত করেছিল।"
তথ্যসূত্রঃ
১.ইমাম তাবারী : তফসীরে তাবারী : খ ১ : প ৫৫৬
২.ইমাম তাবারী : তারিখুল উমাম ওয়াল মুলুক : খ ১ : প ৪৫৮
৩.ইমাম কুরতুবী : তফসীরে কুরতুবী : খ ২ : প ১৩১
৪.ইমাম ইবনে কাসীর : তফসীরে ইবনে কাসীর : খ ৪ : প ৩৬০
৫.ইমাম আবু লাইস সমরকানী : তফসীরে সমরকানী : খ ৩ : প ৪২১
৬.ইমাম সূয়ূতী : তফসীরে দুররে মনসূর : খ ১ : প ৩৩৪
৭.ইমাম আহমদ : মুসনাদে আহমদ খ ৪ : প ১২৭ : হাদিস ১৬৭০১
৮.ইমাম বায়হাকী : দালায়েলুন নবুওয়াত : খন্ড ১ : পৃ ৮৩, প ১১০
৯.ইমাম ইবনে ইসহাক : সিরাতুন নবী : খ ১ : প ২৮
১০.ইমাম ইবনে হিশাম : সিরাতুন নবী : খ ১ : প ১৫৬
১১.ইমাম ইবনে সা'দ : তাবাকাত আল কুবরা : খ ১ : প ১৫০
১২.ইমাম ইবনে হিব্বান : সহীহ ইবনে হিব্বান : খ ৯ : প ১০৬
১৩.ইমাম বাগবী : মিশকাতুল মাসাবিহ : প ৫১৩
১৪.ইমাম হাকিম : মুস্তাদরেক আল হাকিম : খন্ড ২ : পৃ ৬০০ : হাদিস ৪১৭৫
১৫.ইমাম ইবনে জাওজী : আল ওয়াফা : প ৯১
১৬.ইমাম ইবনে হাজর হায়সামী : মাজমাউল যাওয়াইদ : (৮:২২১/৪০৯)
১৭.ইমাম ইমাম হিন্দি : কাঞ্জুল উম্মাল : খ ১১ : প ১৭৩
১৮.ইমাম হালাভী : সিরাতে হালাভিয়্যাহ : খ ১ : প ৭৭
এই হাদিসটির বিভিন্ন রেওয়াতে বর্ণিত সুত্রঃ
১. হযরত কা'ব আল আহবার (رضي الله عنه)
২. হযরত আব্দুর রহমান বিন আউফ (رضي الله عنه) এর মাতা শিফা বিনতে আমর ইবনে আউফ (رضي الله عنه)
৩. হযরত ইরবাদ ইবনে সারিয়া (رضي الله عنه)
৪. হযরত মু'য়াজ বিন জাবাল (رضي الله عنه)
৫. হযরত আবু উমামা (رضي الله عنه)
৬. হযরত উসমান ইবনে আবিল আস (رضي الله عنه)
৭. হযরত ইবনে আব্বাস (رضي الله عنه)
৮. হযরত আব্বাস ইবনে আব্দুল মুত্তালিব (رضي الله عنه) [ইমাম হাকিম : আল-মুস্তাদরাক : পৃ ৩৬৯, হাদিস ৫৪১৭; মুহাদ্দিসে দেহলভী : মা সাবাতা বিস সুন্নাহ : রবিউল আওয়াল অধ্যায় : ১১৪ পৃ]
৯. হযরত ইকরামা (رضي الله عنه)
❏ রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর তশরীফ আনা সম্পর্কে আরও কিছু আয়াত (যেগুলোর তফসীর থেকে মিলাদুন্নবীর প্রমাণ মিলে)
❏ আয়াত ১১ :
لقد جاءكم رسول من انفسكم عزيز عليه ماعنتم حريص عليكم بالمؤمنين رءوف رحيم
অর্থ : তোমাদের কাছে তোমাদের জন্য একজন রসূল (ﷺ) এসেছেন, তোমাদের দুঃখ-কষ্ট উনার কাছে বেদনাদায়ক, তিনি তোমাদের ভালাই চান,মু'মিনদের প্রতি স্নেহশীল এবং দয়ালু !" (সূরা তাওবা ১২৮)
❏ আয়াত ১২ :
لقد من الله علي المؤمنين إذ بعث فيهم رسولا من أنفسهم يتلوعليهم اياته ويزكيهم ويعلمهم الكتاب وااحكمة
অর্থ : নিশ্চয়ই আল্লাহ পাক মু'মিনদের প্রতি ইহসান করেছেন যে, তিনি তাদের মাঝে হাবীবুল্লাহ (ﷺ) উনাকে পাঠিয়েছেন, যিনি তাদেরকে আল্লাহ পাক উনার আয়াত শরীফ সমূহ তিলাওয়াত করে শোনান এবং তাদের অন্তর সমূহকে পরিশুদ্ধ করেন এবং তাদের কিতাব ও হিকমত শিক্ষা দেন !" (সূরা আল ইমরান ১৬৪)
❏ আয়াত ১৩ :
ذَٰلِكَ فَضْلُ اللَّـهِ يُؤْتِيهِ مَن يَشَاءُ ۚ وَاللَّـهُ ذُو الْفَضْلِ الْعَظِيمِ ﴿٤﴾
”এটি আল্লাহর অনুগ্রহ; যাকে চান দান করেন; এবং আল্লাহ বড় অনুগ্রহশীল।” (সূরা জুমু’আহ্, ৪ আয়াত)
❏ তফসীরঃ
আয়াতের শেষাংশে ‘আল্লাহ বড় (অশেষ) অনুগ্রহশীল’ বাক্যটিকে হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (رضي الله عنه) ব্যাখ্যা করেন এভাবে:
আল্লাহর অনুগ্রহ অফুরন্ত, যেহেতু তিনি মহানবী(সাﷺ) -কে ইসলাম ও নবুয়্যত দান করেছেন; এও বলা হয়েছে যে এর মানে ঈমানদারদের প্রতি তিনি ইসলামের নেয়ামত বর্ষণ করেছেন। আর এ কথাও বলা হয়েছে যে এর অর্থ তাঁর সৃষ্টিজগতের প্রতি তিনি অনুগ্রহ করেছেন মহানবী (ﷺ) এবং কেতাব (কুরআন) প্রেরণ করে।
[তানবির আল-মিকবাস মিন তাফসীর ইবনে আব্বাস]
❏ আয়াত ১৪ :
ياايها النبي انا ارسلناك شاهدا و مبشر و نذيرا وداعيا الي الله باذنه وسراجا منيرا
অর্থ : হে আমার হবীব (ﷺ)! নিশ্চয়ই আমি আপনাকে সাক্ষীদাতা, সুসংবাদ দাতা, ভয় প্রদর্শনকারী এবং আমার নির্দেশে আমার দিকে আহ্বানকারী ও নূরানী প্রদীপ রুপে প্রেরন করেছি !" (সূরা আহযাব ৪৬)
❏ আয়াত ১৫ :
قد جاعكم من الله نور
অর্থ : নিশ্চয়ই তোমাদের নিকট মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে এক মহান নূর [হুজুর পাক (ﷺ)] ও কিতাব এসেছে!" (সূরা মায়েদা ১৫)
সহিহ হাদিসে মিলাদুন্নবী (ﷺ) : হাদিসে সুয়াইবাহ (رضي الله عنه) ও আবু লাহাবের ঘটনা
____________________
সহিহ হাদিসে মিলাদুন্নবী (ﷺ) : হাদিসে সুয়াইবাহ (رضي الله عنه) ও আবু লাহাবের ঘটনা
সহিহ হাদিসে মিলাদুন্নবী (ﷺ)
🖋মাসুম বিল্লাহ সানি
এখানে জেনে রাখা ভাল যেঃ
(I) শরীয়তের হুকুম এই যে,
ইমানহীন ব্যক্তির কঠোর সাধনার ইবাদতও জাহান্নামে দগ্ধ হবে অর্থাৎ ইমান ছাড়া আমলের কোন মূল্য হয় না।
(II) এই স্বপ্নের সত্যতা নিয়ে সমস্ত ইমামগণ ঐক্যমত পোষণ করেছেন।
(III) ইমামগণের বক্তব্যের সারাংশ এই যেঃ
মীলাদুন্নবী (ﷺ) উপলক্ষে খুশি হওয়ায় কাফির লাহাবও যদি ১টা দিন (সোমবার) আজাব লাঘব হয়ে থাকে, যার বিরোদ্ধে কিনা স্বয়ং আল্লাহ সুরা লাহাব নাজিল করেছেন, যে কাফিরদের কোন আমলই গ্রহণযোগ্য হয়না। তাহলে চিন্তার বিষয় ইমানদারদের জন্য মিলাদুন্নবী (ﷺ) পালন করলে বড় পুরষ্কার থাকতে পারে তা আল্লাহই ভাল জানেন ।
হাদিসটি হলঃ
হযরত উরওয়া ইবনে জুবায়ের (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত,
ﻗﺎﻝ ﻋﺮﻭﺓ ﻭﺛﻮﻳﺒﺔ ﻣﻮﻻﺓ ﻻﺑﻰ ﻟﻬﺐ ﻛﺎﻥ ﺍﺑﻮﻟﻬﺐ ﺍﻋﺘﻘﻬﺎ ﻓﺎﺭﺿﻌﺖ ﺍﻟﻨﺒﻰ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ﻓﻠﻤﺎ ﻣﺎﺕﺍﺑﻮﻟﻬﺐ ﺍﺭﻳﻪ ﺑﻌﺾ ﺍﻫﻠﻪ ﺑﺸﺮ ﺣﻴﺒﺔ ﻗﺎﻝ ﻟﻪ ﻣﺎﺫﺍ ﻟﻘﻴﺖ ﻗﺎﻝ ﺍﺑﻮﻟﻬﺐ ﻟﻢ ﺍﻟﻖ ﺑﻌﺪﻛﻢ ﻏﻴﺮ ﺍﻧﻰ ﺳﻘﻴﺖ ﻓﻰ ﻫﺬﻩ ﺑﻌﺘﺎﻗﺘﻰ ﺛﻮﻳﺒﺔ ০
হযরত সুহাইবাহ (رضي الله عنه) আবু লাহাবের দাসী ছিল। আবু লাহাব ওনার কাছে থেকে [রাসুল ﷺ] এর বেলাদাতের সুসংবাদ প্রাপ্ত হয়ে কৃতদাসী সুহাইবাহ (رضي الله عنه) কে আযাদ করে দিয়েছিল।
যখন আবু লাহাব মৃত্যুবরণ করেছিল তখন (এক বছর পর) তার ঘনিষ্ঠদের কেউ [হযরত আব্বাস রা.] তাকে স্বপ্নে শোচনীয় অবস্থায় দেখে তার উদ্দেশ্যে বলেন,
“তোমার অবস্থা কেমন?”
- আবু লাহাব উত্তরে বলল, “তোমাদের নিকট থেকে আসার পর আমি কোন প্রকার শান্তি পাইনি, কেবল যে দিন [রাসুলুল্লাহ (ﷺ) বেলাদতের খুশিতে] দাসী সুহাইবাকে আযাদ করে দিয়েছিলাম, ঐ কারনে প্রতি সোমবার আংগুল দুটির মধ্যে কিছু পানি জমে আমি ঐ পানি পান করে থাকি ঐদিন (জাহান্নামের কঠিন) আযাবকে হাল্কাবোধ করে থাকি।”
সূত্রঃ
● সহিহ বুখারী : ২৬৪৪, ২৬৪৫, ২৬৪৬, ৩১০৫, ৪৭৯৬, ৫০৯৯, ৫১০০, ৫১০১, ৫১০৩, ৫১০৬, ৫১০৭, ৫১২৪, ৫১৩৩, ৫২৩৯, ৫৩৭২, ৬১৫৬
●ইমাম আহমদ : মুসনাদে আহমদ : হাদিস ২৫৯৫৩ উক্ত শিরোনামে لو كانت تحل لي لما تزوجتها قد أرضعتني وأباها ثويبة مولاة بني هاشم فلا تعرضن علي أخواتكن ولا بناتكن পুনরায় হাদিস ২৬৮৬৫, মতন :
ابنة أخي من الرضاعة وأرضعتني وأبا سلمة ثويبة فلا تعرضن علي بناتكن ولا أخواتكن
●ইমাম নাসাঈ : আস সুনানুল কুবরা : হাদিস ৫৩৯৪, ৫৩৯৫
●ইমাম নাসাঈ : আস সুনান আস-সুগরা : হাদিস ৩২৮৪, ৩২৮৫, ৩২৮৬, ৩২৮৭
●ইবনে মাজাহ : হাদিস ১৯৩৯ শিরোনাম ( ابنة أخي من الرضاعة أرضعتني وأباها ثويبة فلا تعرضن علي أخواتكن ولا بناتكن)
● মুসলিম : হাদিস ২৬৩৪, ২৬৩৫
● সহিহ ইবনে হিব্বান : ৪১১০, ৪১১১ হাদিসের মতন :
إن زينب تحرم علي وإنها في حجري وأرضعتني وإياها ثويبة فلا تعرضن علي بناتكن ولا أخواتكن ولا عماتكن ولا خالاتكن ولا أمهاتكن
اطراف الحدیث
●ইমাম বায়হাকী : সুনান আল কুবরা : বিবাহ অধ্যায়
●জামেউল হাদিস : মাসানিদুস সাহাবা : হাদিস ৪৩৫৪৫
●ইমাম বাগবি : শরহুস সুন্নাহ : ৯ম খন্ড : ৭৫ পৃ
●ইমাম হিন্দি : কাঞ্জুল উম্মাল : ৬ খন্ড, হাদিস ১৫৭২৫
●মুসান্নাফে আব্দুর রাজ্জাক, ৭ম খন্ড, হাদিস ১৩৫৪৬
●ইমাম আঈনী : উমদাতুল কারী শরহে বুখারী : ১৪ খন্ড, পৃ ৪৫
●ইমাম ইবনে কাসীর : সিরাত আন নববিয়্যাহ : ১ম খন্ড , পৃ ২২৪
●শরহে যুরকানী, ১ম খন্ড, ২৬১ পৃ
●সুবলুল হুয়া ওয়ার রশদ : ১ম খন্ড, ৩৬৭ পৃ
●ইবনে হাজর আসকালানী : ফতহুল বারী : ৭ম জিলদের ১২৫
●ইবনুল কাইয়্যুম : তোহফাতুল মাওদুদ বি আহকাম আল মাওলুদ, ১৯ পৃ
●ইবনে আব্দুল ওহাব, মুখতাসার সিরাতুর রাসূল, মাওলিদুন্নবী।
উক্ত হাদিস শরীফের আলোকে অগনিত মুহাদ্দিস ও ইমামগণ তাদের বিভিন্ন কিতাবে ঘটনাটির সত্যতা সম্পর্কে বর্ননা করেছেন।
যেমন উক্ত ঘটনাটি বর্ননা করেছেনঃ
👉 ইমাম শামসুদ্দিন দিমিস্কি (رحمة الله)
👉 বিখ্যাত ঐতিহাসিক আল্লামা ইয়াকুব (رحمة الله)
👉 ইমাম ইবনে জাওযী (رحمة الله)
👉 ইমাম ইবনে দাহইয়া (رحمة الله)
👉 ইমাম সুহাইলী (رحمة الله)
👉 ইমাম ইবনে কাছির (رحمة الله)
👉 ইমাম ইবনে হজর আসকালানী (رحمة الله)
👉 ইমাম কুস্তালানী (رحمة الله)
👉 ইমাম জালালুদ্দিন মুয়ূতী (رحمة الله)
👉 ইমাম জামাল উদ্দিন আব্দুর রহমান ইবনে আব্দুল মালিক আল কাতানী (رحمة الله)
👉 ইমাম আব্দুল হক মুহাদ্দিসে দেহলভী (رحمة الله)
সহ আরো অনেকে বর্ণনা করেছেন।
মিলাদুন্নবী (ﷺ) উপলক্ষে আবু লাহাবের আযাব লাঘব :
👉 ইমাম শামসুদ্দিন দিমিস্কি (রঃ) বলেনঃ
قد صح أن أبا لهب يخفف عنه عذاب النار في مثل يوم الاثنين لإعتاقه ثويبة سرورا بميلاد النبي صلى الله عليه وسلم ثم أنشد:إذا كان هذا كافرا جاء ذمه - وتبت يداه في الجحيم مخلدا أتى أنه في يوم الاثنين دائما - يخفف عنه للسرور بأحمدا فما الظن بالعبد الذي طول عمره - بأحمد مسرورا ومات موحدا
এটি প্রমাণিত যে আবু লাহাবের (পারলৌকিক) অনলে জ্বলবার শাস্তি প্রতি সোমবার লাঘব করা হয়, কেননা সে মহানবী (ﷺ)-এর বেলাদতে খুশি হয়েছিল এবং তার দাসী সোয়াইবিয়াকে মুক্ত করে দিয়েছিল (সুসংবাদ দেয়ার জন্যে)। আবু লাহাবের মতো অবিশ্বাসী, যার চিরস্থায়ী আবাস দোযখ এবং যার জন্যে সূরা লাহাব অবতীর্ণ হয়েছে, সে যদি আযাব থেকে তাখফিফ (নিষ্কৃতি) পায় প্রতি সোমবার, তাহলে ভাবুন সেই মো’মেন ব্যক্তির কী শান যিনি সারা জীবন রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর বেলাদতে খুশি প্রকাশ করেছিলেন এবং আল্লাহর একত্বে বিশ্বাস নিয়ে ইন্তেকাল করেছেন।
● ইমাম দামেশকী কৃত ‘মওরিদ আস-সাফা ফী মওলিদ আল-হাদী’
● ইমাম সৈয়ুতী প্রণীত ‘হুসনুল মাকসাদ ফী আমলিল মওলিদ’, ৬৬ পৃষ্ঠা।
বিখ্যাত ঐতিহাসিক আল্লামা ইয়াকুব (رحمة الله) উনার কিতাবে লিখেন-
قال النبي صلي الله عليه و سلم رايت ابا لهب في النار يصيح العطش العطش فيسقي من الماء في نقر ابهامه فقلت بم هذا فقال بعتقي ثويبة لانها ارضعتك
অর্থ : হাবীবুল্লাহ, হুজুর পাক (ﷺ) তিনি বলেন, আমি আবু লাহাবকে দেখেছি জাহান্নামের আগুনে নিমজ্জিত অবস্থায় চিৎকার করে বলছে, পানি দাও ! পানি দাও !
অতঃপর তার বৃদ্ধাঙুলীর গিরা দিয়ে পানি পান করানো হচ্ছে | আমি বললাম, কি কারনে এ পানি দেয়া পাচ্ছো ? আবু লাহাব বললো, আপনার বিলাদত শরীফ উপলক্ষে খুশি প্রকাশ করে হযরত সুয়াইবা (রদ্বিয়াল্লাহু আনহা) উনাকে মুক্ত করার কারনে এই ফায়দা পাচ্ছি ! কেননা তিনি আপনাকে দুগ্ধ মুবারক পান করিয়েছেন !"
[তারীখে ইয়াকুবী ১ম খন্ড ৩৬২ পৃষ্ঠা]
ইমাম সুহাইলী (رحمة الله) লিখেন :
وذكر السهيلي ان العباس قال لما مات ابو لهب رايته في منامي بعد حول في شر حال فقال ما لقيت بعد كم راحة الا ان العذاب يخفف عني في كل يوم اثنين وذلك ان النبي صلي الله عليه و سلم ولد يوم الاثنين وكانت ثويبة بشرت ابا لهب بمولده فاعتقها
অর্থ: হযরত ইমাম সুহাইলী (رحمة الله) উল্লেখ করেন যে, হযরত আব্বাস (রদ্বিয়াল্লাহু আনহু) বলেন, আবু লাহাবের মৃত্যুর এক বছর পর তাকে আমি স্বপ্নে দেখি যে, সে অত্যন্ত দুরবস্থায় রয়েছে ! সে বললো, (হে ভাই হযরত আব্বস রা.) আপনাদের কাছ থেকে বিদায় নেয়ার পর আমি কোন শান্তির মুখ দেখি নাই।
তবে হ্যাঁ, প্রতি সোমবার যখন আগমন করে তখন আমার থেকে সমস্ত আযাব লাঘব করা হয়, আমি শান্তিতে থাকি। হযরত আব্বাস (রদ্বিয়াল্লাহু আনহু) তিনি বলেন,আবু লাহাবের এ আযাব লাঘব হয়ে শান্তিতে থাকার কারন হচ্ছে, হাবীবুল্লাহ হুজুর পাক (ﷺ) এর বিলাদত শরীফ এর দিন ছিলো সোমবার ! সেই সোমবারে হাবীবুল্লাহ (ﷺ) এর বিলাদতের সুসংবাদ নিয়ে আবু লাহাবের বাঁদী সুয়াইবা (রা) তিনি আবু লাহাবকে খবরটি জানালেন তখন আবু লাহাব মিলাদুন্নবীর সংবাদ শুনে খুশি হয়ে হযরত সুয়াইবা (রদ্বিয়াল্লাহু আনহা) উনাকে তৎক্ষণাৎ আযাদ করে দেয় !"
● ইমাম ইবনে হাজর আসকালানী : ফতহুল বারী শরহে বুখারী ৯ম খন্ড ১১৮ পৃষ্ঠা
● ইমাম বদরুদ্দিন আঈনীঃ ওমদাতুল কারী শরহে বুখারীঃ ২য় খন্ডের ২৯৯ পৃষ্ঠা।
● ইমাম কাস্তালানী : মাওয়াহেবুল লাদুননিয়াহ ১ম খন্ড !
● ইমাম জুরকারীঃ জুরকানী শরহে মাওয়াহেব : ১ম খন্ড ২৬০ পৃষ্ঠা
ইমাম ইবনুজ জাওযী (رحمة الله) বলেন-
ﻗﺎﻝ ﺍﺑﻦ ﺍﻟﺠﺰﺭﻯ ﻓﺎﺫﺍ ﻛﺎﻥ ﻫﺬﺍ ﺍﺑﻮﺍﻟﻬﺐ ﺍﻟﻜﺎﻓﺮ ﺍﻟﺬﻯ ﻧﺰﻝ ﺍﻟﻘﺮﺍﻥ ﺑﺬﻣﻪ ﺟﻮﺯﻯ ﻓﻰ ﺍﻟﻨﺎﺭ ﺑﻔﺮﺣﻪ ﻟﻴﻠﺔ ﻣﻮﻟﺪ
ﺍﻟﻨﺒﻰ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ﺑﻪ ﻓﻤﺎ ﺣﺎﻝ ﺍﻟﻤﺴﻠﻢ ﺍﻟﻤﺆﺣﺪ ﻣﻦ ﺍﻣﺘﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﺍﻟﺴﻼﻡ ﺍﻟﺬﻯ ﻳﺴﺮ ﺑﻤﻮﻟﺪﻩﻭﻳﺒﺬﻝﻣﺎﺗﺼﻞ ﺍﻟﻴﻪ ﻗﺪﺭﺗﻪ ﻓﻰ ﻣﺤﺒﺘﻪ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ﻟﻌﻤﺮﻯ ﺍﻧﻤﺎ ﻳﻜﻮﻥ ﺟﺰﺍﺅﻩ ﻣﻦ ﺍﻟﻠﻪ ﺍﻟﻜﺮﻳﻢ ﺍﻥ ﻳﺪﺧﻠﻪﺑﻔﻀﻠﻪ ﺍﻟﻌﻤﻴﻢ ﺟﻨﺎﺕ ﺍﻟﻨﻌﻴﻢ ০ ( ﻣﻮﺍﻫﺐ ﺍﻟﻠﺪﻧﻴﻪ ﺝ ১ ০ ﺹ২৭ ﺯﺭﻗﺎﻧﻰ ﺝ ০১ ﺹ১৩৯ )
"যে কাফের আবু লাহাবের বিরোদ্ধে আল-কুরআন নাজিল হয়েছে এবং যার জন্য জাহান্নাম নির্ধারিত, সে আবু লাহাবও যদি হুজুর (ﷺ) এর মিলাদুন্নবী উপলক্ষে খুশি হওয়াতে সুফল পায়, তাহলে তাঁর উম্মতের মধ্যে যে একত্ববাদী মুসলমান এবং তাঁর মিলাদুন্নবীতে (ﷺ) আনন্দিত হয় তাঁর মহব্বতে যথাসাধ্য দান করে,
তার অবস্থা কী হবে? আমি কসম করে বলছি যে, নিশ্চয়ই আল্লাহ তা’য়ালার পক্ষ হতে তার বিনিময় এ হবে যে, তিনি সর্বব্যাপী অনুগ্রহ দ্বারা তাকে জান্নাতুন নাঈমে প্রবেশ করাবেন।’
● ইবনে জাওজীঃ বয়ানুল মিলাদুন্নবী
● ইমাম কুস্তালানীঃ মাওয়াহিবে লাদুনিয়া ১ম জিল্দ ২৭ পৃঃ,
● ইমাম জুরকানীঃ জুরকানী ১ম জিল্দ ১৩৭ পৃঃ
ইমাম ইবনে দাহইয়া (رحمة الله) বর্ননা করেন,
عن ابن عباس رضي الله عنه ،كان يحدث ذات يوم في بيته وقائع و لاد ته بقوم فيبشرون ويحمدون إذا جاء النبي صلي الله عليه و سلم و قال حلت لكم شفاعتي
͏হযরত ইবনে আব্বাস (رضي الله عنه) হইতে বর্ণিত, একদিন হযরত আব্বাস রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু কিছু লোক নিয়ে নিজ গৃহে নবী পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর জন্মকালীন ঘটনাবলী বর্ণনা করছিলেন এবং তাঁর প্রশংসাবলী আলোচনা করে দুরুদ ও সালাম পেশ করছিলেন। ইত্যবসরে প্রিয়নবী হাজির হয়ে এ আবস্তা দেখে বললেন, তোমাদের জন্য আমার শাফায়াত আবশ্যক হয়ে গেল ।
● ইমাম ইবনে দাহইয়াঃ আত-তানবীর কিতাব
ইমাম ইবনে কাছির (رحمة الله) উপরোক্ত হাদিসের আলোকে ব্যাখ্যা করতে গিয়ে বলেন,
"এমন জঘন্য কাফের যার দোষ বর্ণনায় (আল-কুরআনে) এসেছে যে, তার হাত ধ্বংস হয়েছে, তার স্থায়ী নিবাস চির জাহান্নাম। আহমদ (ﷺ) এর আবির্ভাবে খুশী হয়ে সর্বদা সোমবার আসলে তার (মত কাফির) থেকে (যদি) আজাব হালকা করা হয়, তবে কিরূপ ধারণা হতে পারে সে ব্যক্তির ব্যাপারে, যার জীবন আহমদ (ﷺ) বিষয়ে আনন্দিত ছিল এবং তাওহীদবাদী হয়ে ইন্তেকাল করেছেন?
ইমাম শিহাব উদ্দিন আহমদ কুস্তালানী (رحمة الله) বর্ননা করেন,
আবু লাহাবের আযাদকৃত দাসী সুয়াইবাহ তাকে (হুযুর ﷺ)-কে দুধ পান করিয়েছেন। যাকে আবু লাহাব তখনই আযাদ করেছিলো তখন তিনি তাকে হুযুর (ﷺ) এর বেলাদত শরীফের শুভ সংবাদ শুনিয়েছিলেন। উল্লেখ্য যে, একদা আবু লাহাবকে তার মৃত্যুর পর স্বপ্নে দেখা গিয়েছিলো। (হযরত আব্বাস রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু এক বছর পর স্বপ্ন দেখেছিলেন) তখন তাকে বলা হলো “তোমার কি অবস্থা?” সে বলল, দোজখেই আছি। তবে প্রতি সোমবার রাতে আমার শাস্তি কিছুটা শিথিল করা হয়; আর আমি আমার এ আঙ্গুল দুটির মধ্যে চুষে পানি পানের সুযোগ পাই। আর তখন সে তার আঙ্গুলের মাথা দিয়ে ইশারা করলো। আর বলল, আমার শাস্তির শিথিলতা এ জন্য যে, সুয়াইবা (رضي الله عنه) যখন আমাকে নবী (ﷺ) এর বেলাদতের সুসংবাদ দিয়েছিলো, তখন তাকে আমি আযাদ করে দিয়েছিলাম এবং তিনি হুযুর (ﷺ) কে দুগ্ধপান করিয়েছেন।
তিনি আরো বলেন-
এতদভিত্তিতে, আল্লামা মুহাদ্দিস ইমাম ইবনে জাযরী (رحمة الله) বলেন, যখন ঐ আবু লাহাব কাফির, যার তিরস্কারে কোরআনের সূরা নাযিল হয়েছে। মিলাদুন্নবী (ﷺ) এ আনন্দ প্রকাশের কারণে জাহান্নামে পুরস্কৃত হয়েছে। এখন উম্মতে মুহাম্মদী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর ঐ একত্ববাদী মুসলমানের কি অবস্থা? যে নবী করীম (ﷺ) এর বেলাদতে খুশি হয় এবং হুযুর (ﷺ) এর ভালবাসায় তার সাধ্যনুযায়ী খরচ করে। তিনি জবাবে বলেন- আমার জীবনের শপথ! নিশ্চয়ই পরম করুণাময় আল্লাহ তাকে আপন ব্যাপক করুণায় নিয়ামতপূর্ণ জান্নাতে প্রবেশ করাবেন।
● ইমাম কুস্তালানীঃ মাওয়াহিবে লাদুন্নিয়াঃ হুযুর (ﷺ) এর "দুগ্ধপান শীর্ষক অধ্যায়"।
● জুরকানী শরীফ ১ম খন্ড, পৃষ্ঠা নং- ২৫৮-২৬২
ইমাম আব্দুল হক মুহাদ্দিসে দেহলভী (رحمة الله) বলেন,
ﺟﻨﺎﻧﺠﻪ ﺩﺭ ﺣﺪﻳﺚ ﺍﻣﺪﻩ ﺍﺳﺖ ﻭﺩﺭﻳﻨﺠﺎ ﺳﻨﺪﺍﺳﺖ ﻣﺮﺍﻫﻞ ﻣﻮﺍﻟﻴﺪ ﺭﺍﻛﻪ ﺩﺭﺷﺐ ﻣﻴﻼﺩ ﺍﻧﺤﻀﺮﺕ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪﻭﺳﻠﻢ ﺳﺮﻭﺭ ﻛﻨﻨﺪ ﻭﺑﺬﻝ ﺍﻣﻮﺍﻝ ﻧﻤﺎﻳﻨﺪ ﻳﻌﻨﻰ ﺍﺑﻮﻟﻬﺐ ﻛﻪ ﻛﺎﻓﺮ ﺑﻮﺩ ﻭﻗﺮﺍﻥ ﺑﻤﺬﻣﺖ ﻭﻯ ﻧﺎﺯﻝ ﺷﺪﻩ ﺟﻮﻥﺑﺴﺮﻭﺭ ﺑﻤﻴﻼﺩ ﺍﻧﺤﻀﺮﺕ ﻭ ﺑﺬﻝ ﺷﻴﺮ ﺟﺎﺭﻳﻪ
ﻭﻯ ﺑﺠﻬﺔ ﺍﻧﺤﻀﺮﺕ ﺟﺰﺍ ﺩﺍﺩﻩ ﺷﺪ ﺗﺎﺣﺎﻝ ﻣﺴﻠﻤﺎﻥ ﻛﻪ ﻣﻤﻠﻮﺳﺖ ﺑﻤﺤﺒﺖ ﻭﺳﺮﻭﺭ ﻭﺑﺬﻝ ﻣﺎﻝ ﺩﺭ ﻃﺮﻳﻖﻭﻯﺟﻪ ﺑﺎﺷﺪ ﻭﻟﻴﻜﻦ ﺑﺎﻳﺪﻛﻪ ﺍﺯ ﺑﺪﻋﺘﻬﺎ ﻛﻪ ﻋﻮﺍﻡ ﺍﺣﺪﺍﺙ ﻛﺮﺩﻩ ﺍﻧﺪﺍﺯ ﺗﻐﻨﻰ ﻭﺍﻻﺕ ﻣﺤﺮﻣﻪ ﻭ ﻣﻨﻜﺮﺍﺕ ﺧﺎﻟﻰﺑﺎﺷﺪ ০ ( ﻣﺪﺍﺭﺝ ﺍﻟﻨﺒﻮﺕ ﺝ ২ ০ ﺹ২৬ )
"উক্ত ঘটনা মিলাদ শরীফ পাঠকারীদের জন্য একটি বৃহত্তম দলিল, যারা মিলাদুন্নবীর রাতে আনন্দ উৎসব ও দান খয়ারাত করে থাকেন। আবু লাহাব কাফের এবং তার বিরোদ্ধে কোরআন নাজিল হওয়া সত্বেও নবী পাক (ﷺ) জন্মের সুসংবাদে আনন্দিত হয়ে নূরবীকে দুধপান করানোর নিমিত্তে বাদী [হযরত সুয়াইবাহ (رضي الله عنه) কে] আজাদ করে দেয়, সে কারণে তাকে পুরস্কার স্বরূপ প্রতি সোমবারে তার আজাব নিরসন করা হল। এখন যারা ঈমানদার নবীপ্রেমিক আনন্দ উৎসব ও দান খয়রাত করেন তাঁদের পুরস্কার কীরূপ হবে? অবশ্য সে মিলাদকে শরীফে গান ও হারাম বাদ্যযন্ত্র হতে পবিত্র রাখতে হবে।
[ইমাম আব্দুল হক দেহলভী (رحمة الله) : মাদারিজুন নবুয়ত ২য় খণ্ড ২৬ পৃঃ]
ইমাম জামাল উদ্দিন আব্দুর রহমান ইবনে আব্দুল মালিক আল কাতানী (رحمة الله) পবিত্র মিলাদ সম্পর্কে লিখেন,
রাসূল (ﷺ) এর জন্ম দিন উপলক্ষে (প্রভুর শুকর আদায় স্বরূপ) যারা আনন্দ ও খুশী প্রকাশ করে তাদের পরকালে শাস্তি হালকা ও কম হওয়ার কারণে পরিণত হয়।
[সুবুলুল হুদা ওয়ার রাসাদ ফী সীরাতি খাইরিল ইবাদ-১ম খন্ড-পৃস্ঠা নং-৩৬৪]
ইমাম ইবনে হজর আসকালানী (رحمة الله) ফতহুল বারী শরহে বুখারী শরীফের মধ্যে এ মাসআলা নিয়ে বিশদ আলোচনা করে বলেনঃ
ﻓﻴﺤﺘﻤﻞ ﺍﻥ ﻳﻜﻮﻥ ﻣﺎﻳﺘﻌﻠﻖ ﺑﺎﻟﻨﺒﻰ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ﻣﺨﺼﻮﺻﺎ ﻣﻦ ﺫﺍﻟﻚ ﺑﺪﻟﻴﻞ ﻗﺼﺔ ﺍﺑﻰ ﻃﺎﻟﺐ ﻛﻤﺎﺗﻘﺪﻡ ﺍﻧﻪ ﺧﻔﻒ ﻋﻨﻪ ০
"যদিও কোন স্বপ্ন শরিয়তের দলিলরূপে গণ্য হয় না, কিন্তু এখানে হযরত আব্বাস (رضي الله عنه) এর স্বপ্ন আবু লাহাবের আজাব লাঘব হওয়ার ব্যাপারে কেবলমাত্র নবী করিম (ﷺ) সঙ্গে সম্পর্কিত হওয়ার দরুণ দলিলরূপে গণ্য হতে পারে। অন্য কারো স্বপ্ন শরিয়তের দলিলরূপে গণ্য হবে না। তারপর আবু তালেবের আজাব কম হওয়ার প্রসঙ্গ দলিলরূপে উল্লেখ করেছেন।"
[ইমাম আসকালানী: ফাতহুল বারী শরহে বুখারী, ৯ম খন্ড, ১৫৪ পৃ:]
👉 যেমন উল্লেখ আছে"আবু তালিব কাফের, আজীবন নূরনবী (ﷺ) লালন-পালন ও সাহায্য করার দরুণ স্বয়ং আল্লাহর হাবিব (ﷺ) তার আজাব খুব কম হচ্ছে এবং হবে এ বলে সুসংবাদ প্রদান করেছেন।"
[মুসলিম শরীফের ১ম জিল্দের ১১৫ পৃষ্ঠায়]
যদিও আবু তালেবের এই ব্যাপারে আহলুস সুন্নাহর কতিপয় আলেমদের মত বিরোধ আছে। কেউ কেউ দলিল দিয়ে বলেছেন যে,
[ওনাকে মৃত্যুর পর পুনরায় জীবিত করা হয়েছে এবং তিনি রাসুলুল্লাহ (ﷺ) এর উপর বিদায় হজ্জ্বের সময় দোয়া করলে রাসুল (ﷺ) এর পিতা, মাতা, আবু তালেব, আব্দুল মোত্তালেব ওনারা সবাই জীবিত হয়ে ইমান আনিয়া পুনরায় মৃত্যুবরণ করেন]
এমন বিশাল বিশাল বর্ননা রয়েছে। এতকিছু লিখা সম্ভব হল না বিধায় সংক্ষেপে তুলে ধরলাম। [নবী করিম (ﷺ) এর চাচা আবু তালেবের নাযাত সম্পর্কে বর্ণনা : লেখক - মুহাম্মদ আজিজুল হক আল-কাদেরী (মা.জি.আ) ওনার লিখিত নিচের সবগুলো রেফারেন্স এ আছে এগুলো। যেমনঃ
● তফসীরে সাবী : ৩য় খন্ড ১৩৮ পৃ
● ইমাম কুরতুবী : তফসিরে মাওয়াহিবুর রহমান : ১১ পারা : সূরা তওবার তফসীর : ৪১ পৃ
● তফসীরুল খাতের
● মুফতি আমীমুল ইহসান বারাকাতী (رحمة الله) : সিরাতে হাবিবে ইলার হাশিয়ায় : ৩৭ পৃ তে-
এ বিষয়ে অর্থাৎ কুফর ও ইমানের বিষয়ে মতবিরোধ আছে জানিয়েছেন।
● ইবনে ইসহাক (رحمة الله) এর বর্ননা অনুযায়ী সিরাতে ইবনে হিশাম : ১৪৬ পৃ : ইমানের সহিত মৃত্যুবরণ করেছেন বলে মত দিয়েছেন।
● তফসীরে রুহুল বয়ান : ২য় খন্ড : ৯৪২ পৃ
● তফসীরে রুহুল বয়ান : ১ম খন্ড : ১৪৭ পৃ
● তফসীরে রুহুল বয়ান : ১ম খন্ড : ৯৭১ পৃ (সূরা তওবার তফসীরে)
● তফসীরে রুহুল বয়ান : ১ম খন্ড : ৯৬২ পৃ
● হযরত সৈয়দ গীসুদারাজ (رحمة الله) (কেল্লা শাহ রহ.) "আখবারুল আখয়ার বা আনুয়ারে ছুফিয়া" গ্রন্থে ২৮৭ পৃ :
● মাহবুবে ইলাহী হযরত খাজা নিজামুদ্দীন আউলিয়া (رحمة الله) : রাহাতুল মুহিব্বীন : ১১৬ পৃ
● আশরাফ আলী থানভী : তফসীরে বয়ানুল কুরআন : ৮ম খন্ড, ১১৪ পৃ (ইন্নাকা লা তাহদি আল-আখের) আয়াতে।
আব্দুল ওহাব শারানী (رحمة الله) এর "কাশফুল গুম্মাহ" ২য় খন্ডের ২৫৬ পৃষ্টায় লিখেছেন,
হুজুর (ﷺ) যখন শেষকালে হেদায়াত করিলেন তখন আবু তালেব তাহার উষ্ঠদ্বয় আন্দোলিত করিলেন। সে সময় হযরত আব্বাস (رضي الله عنه) তাহার মুখের নিকটে কর্ণ লাগাইলেন। অতঃপর বলিলেন, হে আমার ভাইপো হুজুর (ﷺ)! আমি খোদার শপথ করিয়া বলিতেসি যে, আপনি আমার ভাই আবু তালেবের পক্ষ হইতে যেই কালিমা ছাহিয়াছিলেন সে তাহা বলিয়াছে। হুজুর (ﷺ) ফরমালেন, হে চাচা যে খোদা আপনাকে পথ প্রদর্শন করিয়াছেন আমি সেই খোদার প্রশংসা করিতেসি। এতদ্যতীত অধিকাংশ জ্ঞানীগণ তাহার মুখ থেকে কালিমা বাহির হওয়ার ব্যাপারে মত দিয়েছেন।"
প্রশ্নঃ ইসলামে দুই ঈদ ছাড়া আর কোন ঈদ নাই। তৃতীয় ঈদ হিসেবে মিলাদুন্নবী (ﷺ) কোথায় পেলেন?
____________________
প্রশ্নঃ ইসলামে দুই ঈদ ছাড়া আর কোন ঈদ নাই। তৃতীয় ঈদ হিসেবে মিলাদুন্নবী (ﷺ) কোথায় পেলেন?
জবাব:-
দুই ঈদ সহ বছরে প্রায় ৫৮টি ঈদ রয়েছে,যা নিম্নে উপস্হাপন করা হলো।
১.জুমার দিন ঈদের দিন
🕋 রাসুলূল্লাহ (ﷺ) বলেছেন,
إِنَّ هَذَا يَومٌ جَعَلَهُ اللَّهُ عِيدًا لِلْمُسْلِمِينَ فَاغْتَسِلُوا , وَمَنْ كَانَ عِنْدَهُ طِيبٌ فَلا يَضُرَّهُ أَنْ يَمَسَّ مِنْهُ , وَعَلَيْكُمْ بِالسِّوَاكِ
"নিশ্চয়ই জুমার দিন মুসলমানদের জন্য ঈদের দিন। অত:পর এই দিনে তোমরা গোসল করো এবং যার কাছে সুগন্ধি আছে সে যেন সুগন্ধি লাগায় এবং সে যেন মেসওয়াক করে।"
📌[সুনান ইবনে মাজাহ- কিতাবু ইকামাতিস সালাত,বাবু মাজাআ ফিয যিনাতি ইয়াউমিল জুমআ,হাদীস নং ১১৫২]
২.আরাফার দিন, ইয়াউমে নহর,আইয়্যামে তাশরীক ঈদের দিনঃ
قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «يَوْمُ عَرَفَةَ، وَيَوْمُ النَّحْرِ، وَأَيَّامُ التَّشْرِيقِ عِيدُنَا أَهْلَ الْإِسْلَامِ، وَهِيَ أَيَّامُ أَكْلٍ وَشُرْبٍ»
🕋 রাসুলূল্লাহ (ﷺ) বলেছেন, আরাফার দিন, কুরবানীর দিন এবং আইয়্যামে তাশরীক তথা জিলহজ্বের ১১,১২,১৩ তারিখ আমাদের ইসলামের অনুসারীদের জন্য ঈদের দিন এবং সে দিনগুলো খাওয়া ও পান করার দিন।
📌
১.আবু দাউদ -কিতাবুস সাওম, বাবু সিয়ামি আইয়্যামিত তাশরীক, হাদীস নং ২৪২০;
২.তিরমিযি-কিতাবুস সাওম, বাবু মাজাআ ফি কারাহিয়াতিস সাওমে ফি আইয়্যামিত তাশরীক, হাদীস নং ৭৭৮;
৩.আয়াত নাজিলের দিন ঈদের দিনঃ
عَنْ عَمَّارِ بْنِ أَبِي عَمَّارٍ قَالَ قَرَأَ ابْنُ عَبَّاسٍ: {الْيَوْمَ أَكْمَلْتُ لَكُمْ دِينَكُمْ وَأَتْمَمْتُ عَلَيْكُمْ نِعْمَتِي وَرَضِيتُ لَكُمُ الإِسْلاَمَ دِينًا} وَعِنْدَهُ يَهُودِيٌّ فَقَالَ لَوْ أُنْزِلَتْ هَذِهِ عَلَيْنَا لاَتَّخَذْنَا يَوْمَهَا عِيدًا. قَالَ ابْنُ عَبَّاسٍ فَإِنَّهَا نَزَلَتْ فِي يَوْمِ عِيدٍ فِي يَوْمِ جُمُعَةٍ وَيَوْمِ عَرَفَةَ.
🕋 হযরত ইবনে আব্বাস (رضي الله عنه) তিনি একবার সুরা মায়েদার ৩নং আয়াত –”আজ আমি তোমাদের জন্য তোমাদের দ্বীনকে পূর্ন করে দিলাম” এ আয়াত শরীফ খানা শেষ পর্যন্ত পাঠ করলেন। তখন উনার নিকট এক ইহুদী ছিল সে বলে উঠলো, যদি এমন আয়াত শরীফ আমাদের ইহুদী সম্প্রদায়ের প্রতি নাযিল হতো, আমরা আয়াত শরীফ নাযিলের দিনটিকে ঈদের দিন হিসেবে ঘোষণা করতাম !’ এটা শুনে হযরত ইবনে আব্বাস (رضي الله عنه) বললেন, এ আয়াত শরীফ সেই দিন নাযিল হয়েছে যেদিন একসাথে দুই ঈদ ছিলো (১) জুমুয়ার দিন এবং (২) আরাফার দিন।
📌[তিরমিযি-কিতাবু তাফসীরুল কোরআন,বাবু ওয়ামিন সুরাতি মায়েদা,হাদীস নং ৩৩১৮]
عن طارق بن شهاب قال قالت اليهود لعمر لو علينا معشر يهود نزلت هذه الآية اليوم أكملت لكم دينكم وأتممت عليكم نعمتي ورضيت لكم الإسلام دينا نعلم اليوم الذي أنزلت فيه لاتخذنا ذلك اليوم عيدا قال فقال عمر فقد علمت اليوم الذي أنزلت فيه والساعة وأين رسول الله صلى الله عليه وسلم حين نزلت نزلت ليلة جمع ونحن مع رسول الله صلى الله عليه وسلم بعرفات.
🕋 তারিক ইবনু শিহাব (رحمة الله) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, ইয়াহুদী লোকেরা হযরত উমার (رضي الله عنه)কে বললো, আপনারা এমন একটি আয়াত পাঠ করে থাকেন তা যদি আমাদের সম্পর্কে নাযিল হতো, তবে এ দিনটিকে আমরা ঈদের দিন হিসাবে গ্রহণ করতাম। হযরত উমার (رضي الله عنه) বললেন, আমি জানি, ঐ আয়াতটি কখন (কোথায়) ও কোন দিন নাযিল হয়েছিল। আর যখন তা নাযিল হয়েছিল তখন রাসুলুল্লাহ (ﷺ) কোথায় কোথায় অবস্থান করছিলেন (তাও জানি)। আয়াতটি আরাফার দিন নাযিল হয়েছিল; রাসুলুল্লাহ (ﷺ) তখন আরাফাতেই অবস্থান করছিলেন।”
📌[মুসলিম শরীফ – কিতাবুত তাফসীর, বাবু বাবুত তাফসীর হাদীস নং ৭২১০]
🕋 একটু ভিন্ন শব্দে সহীহ সনদে ইমাম তিরমিযিও হাদীসখানা বর্ণনা করেছেন-
عَنْ طَارِقِ بْنِ شِهَابٍ قَالَ: قَالَ رَجُلٌ مِنَ الْيَهُودِ لِعُمَرَ بْنِ الْخَطَّابِ يَا أَمِيرَ الْمُؤْمِنِينَ لَوْ عَلَيْنَا أُنْزِلَتْ هَذِهِ الآيَةُ: {الْيَوْمَ أَكْمَلْتُ لَكُمْ دِينَكُمْ وَأَتْمَمْتُ عَلَيْكُمْ نِعْمَتِي وَرَضِيتُ لَكُمُ الإِسْلاَمَ دِينًا} لاَتَّخَذْنَا ذَلِكَ الْيَوْمَ عِيدًا. فَقَالَ لَهُ عُمَرُ بْنُ الْخَطَّابِ إِنِّي أَعْلَمُ أَيَّ يَوْمٍ أُنْزِلَتْ هَذِهِ الآيَةُ أُنْزِلَتْ يَوْمَ عَرَفَةَ فِي يَوْمِ جُمُعَةٍ.
قَالَ أَبُو عِيسَى: هَذَا حَدِيثٌ حَسَنٌ صَحِيحٌ.
📌[তিরমিযি-কিতাবু তাফসীরুল কোরআন,বাবু ওয়ামিন সুরাতি মায়েদা,হাদীস নং ৩৩১৭]
আসুন আমরা এখানে মোট ঈদ সংখ্যা হিসাব করি —
বছরে ৫২ টি শুক্রবার +ঈদুল ফিতর ১দিন আরাফার ১দিন +কোরবানীর ১দিন+ আইয়্যামে তাশরীক ৩ দিন। (৫২+১+১+১+৩=৫৮)
আমরা পেয়ে গেলাম বছরে শুধু দুইটা ঈদ নয় বরং সর্বমোট প্রায় ৫৮টি ঈদ রয়েছে।তাই যারা ঈদে মিলাদুন্নাবীকে অস্বীকার করতে গিয়ে বলে থাকে দুইটা ঈদ ছাডা আর কোন ঈদ নাই, তারা মুলত ইসলামের শত্রু।
৪.এমনকি কোরআনে আরো একটা ঈদ পাওয়া যায়
قَالَ عِيسَى ابْنُ مَرْيَمَ اللَّهُمَّ رَبَّنَا أَنزِلْ عَلَيْنَا مَائِدَةً مِّنَ السَّمَاءِ تَكُونُ لَنَا عِيدًا لِّأَوَّلِنَا وَآخِرِنَا وَآيَةً مِّنكَ ۖ
🕋 মরিয়ম তনয় ঈসা (عليه السلام) আরয করলেন, ‘হে আমাদের রব! আমাদের উপর আকাশ থেকে একটা ‘খাদ্য-ভর্তি খাঞ্চা’ অবতারণ করুন, যা আমাদের জন্য ঈদ হবে-আমাদের পূর্ববর্তী ও পরবর্তীদের জন্য এবং তা হবে আপনার নিকট থেকে নিদর্শন।
📌[কেরআন-সুরা মায়েদা, আয়াত নং ১১৪]
প্রশ্নঃ একই দিনে নবিজীর আগমন ও ইন্তেকাল আমরা কি আনন্দিত হব নাকি ব্যথিত হব?
____________________
প্রশ্নঃ একই দিনে নবিজীর আগমন ও ইন্তেকাল আমরা কি আনন্দিত হব নাকি ব্যথিত হব?
১.আমরা জানলাম জুমার দিন ঈদের দিন। এখন এই দিনটি এত ঈদের ও মর্যাদাবান হওয়ার মৌলিক কারন হলো পাঁচটি-
قَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: إِنَّ يَوْمَ الْجُمُعَةِ سَيِّدُ الأَيَّامِ وَأَعْظَمُهَا عِنْدَ اللَّهِ وَهُوَ أَعْظَمُ عِنْدَ اللَّهِ مِنْ يَوْمِ الأَضْحَى وَيَوْمِ الْفِطْرِ فِيهِ خَمْسُ خِلاَلٍ خَلَقَ اللَّهُ فِيهِ آدَمَ وَأَهْبَطَ اللَّهُ فِيهِ آدَمَ إِلَى الأَرْضِ وَفِيهِ تَوَفَّى اللَّهُ آدَمَ وَفِيهِ سَاعَةٌ لاَ يَسْأَلُ اللَّهَ فِيهَا الْعَبْدُ شَيْئًا إِلاَّ أَعْطَاهُ مَا لَمْ يَسْأَلْ حَرَامًا وَفِيهِ تَقُومُ السَّاعَةُ مَا مِنْ مَلَكٍ مُقَرَّبٍ وَلاَ سَمَاءٍ وَلاَ أَرْضٍ وَلاَرِيَاحٍ وَلاَ جِبَالٍ وَلاَبَحْرٍ إِلاَّ وَهُنَّ يُشْفِقْنَ مِنْ يَوْمِ الْجُمُعَة
🕋 নবিজী (ﷺ) বলেছেন, নিশ্চয়ই জুমআর দিন, দিন সমুহের মধ্যে আল্লাহর নিকট শ্রেষ্ট দিন এবং আল্লাহর নিকট তা ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আজহা থেকেও অধিক মর্যাদাবান এজন্য যে, তাতে পাঁচটি বৈশিষ্ট আছে-
১.এই দিনে আদম (عليه السلام) কে সৃষ্টি করা হয়েছে।
২.এবং আদম (عليه السلام) কে দুনিয়াতে প্রেরন করা হয়েছে তথা এই দিনে ওনার আগমন হয়েছে।
৩.এই দিনে ওনার ইন্তেকাল হয়েছে।
৪.এমনকি এই দিনে এমন একটি সময় আছে যে মুহুর্তে বান্দা কোন হারাম বস্তু ছাডা যা কিছু আল্লাহ কাছে যা চাইবে আল্লাহ তা দিবেন।
৫.এবং এই দিনে কিয়ামত হবে।
বাকী হাদীস......................................।
📌[সুনান ইবনে মাজাহ-কিতাবু ইকামাতিস সালাতি ওয়াস সুন্নাতি,বাবু ফাদলিল জুমআ,হাদীস নং ১১৩৭;
আলবানী (নামদারী আহলে হাদীস)-সহীহ জামেউস সাগীর,হাদীস নং ২২৭৯]
🕋 ভিন্ন শব্দে হাদিসটি সুনান ইবনে মাজার একই পরিচ্ছেদে এসেছে।
قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: ((إِنَّ مِنْ أَفْضَلِ أَيَّامِكُمْ يَوْمَ الْجُمُعَةِ فِيهِ خُلِقَ آدَمُ وَفِيهِ النَّفْخَةُ وَفِيهِ الصَّعْقَةُ فَأَكْثِرُوا عَلَيَّ مِنَ الصَّلاَةِ فِيهِ فَإِنَّ صَلاَتَكُمْ مَعْرُوضَةٌ عَلَيَّ)). فَقَالَ رَجُلٌ يَا رَسُولَ اللَّهِ كَيْفَ تُعْرَضُ صَلاَتُنَا عَلَيْكَ وَقَدْ أَرَمْتَ- يَعْنِي بَلِيتَ-. فَقَالَ: ((إِنَّ اللَّهَ قَدْ حَرَّمَ عَلَى الأَرْضِ أَنْ تَأْكُلَ أَجْسَادَ الأَنْبِيَاءِ)).
📌[সুনান ইবনে মাজাহ-কিতাবু ইকামাতিস সালাতি ওয়াস সুন্নাতি,বাবু ফাদলিল জুমআ,হাদীস নং ১১৩৮]
এবার লক্ষ করুন আদম (عليه السلام) এর একই দিনে সৃষ্টি ও আগমন এবং ইন্তেকাল সম্পর্কে নবিজীর জানা সত্তেও তিনি জুমার দিনকে ঈদের দিন হিসেবে পালন করার জন্য বলেছেন। তাই নবিজীর এই বানী থেকে বুঝা গেলো নবীদের একই দিনে আগমন ও ইন্তেকাল হলে এক্ষেত্রে আগমনটাই পালন করতে হবে তথা ঈদ পালন করতে হবে।
এবার চিন্তা করে দেখুন আদম (عليه السلام) এর আগমনের দিন যদি ঈদের দিন হতে পারে তাহলে আমাদের নবিজীর আগমনের দিন কত বড ঈদের দিন হতে পারে একটু ভেবে দেখুন।তাই বলা হয় সকল ঈদের সেরা ঈদ, ঈদে মিলাদুন্নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ।
🕋 তাই আল্লাহ তাআলা বলেন-
قُلْ بِفَضْلِ اللَّهِ وَبِرَحْمَتِهِ فَبِذَلِكَ فَلْيَفْرَحُوا هُوَ خَيْرٌ مِمَّا يَجْمَعُونَ
হাবিব,আপনি বলে দিন আল্লাহর অনুগ্রহ ও তার রহমত [রাসুল (ﷺ)] কে উপলক্ষ করে তারা যেন খুশি উদযাপন করে এবং সেটা হবে তাদের সমস্ত জমাকৃত অর্জন থেকে উত্তম।
[সুরা ইউনুস -আয়াত নং ৫৮]
🕋 এ আয়াতের আয়াতের তাফসীরে ইমাম সৈয়দ মাহমুদ আলুসী বর্ণনা করেন,ইবনে আব্বাস (رضي الله عنه) বলেন আলোচ্য আয়াতে রহমত হলো নবিজী (ﷺ)।
সুত্র:-মাহমুদ আলুসী-রুহুল মাআনী ৬/১৩৩ পৃ:;
🕋 আল্লামা আলুসী (رحمة الله) আরো বর্ণনা করেন-
খতিবে বাগদাদী (رحمة الله) ইবনে আসাকীর (رحمة الله) সাহাবী ইবনে আব্বাস রাঃ থেকে বর্ণনা করেছেন,ফদ্বল (অনুগ্রহ) দ্বারা নবিজীকে বুঝানো হয়েছে।
সুত্র:-তাফসীরে রুহুল মাআনী ৬/১৩৩ পৃ;
🕋 আহলে বায়তের অন্যতম সদস্য ইমাম আবু জাফর বাকের (رضي الله عنه) বলেন-
এখানে ফদ্বল দ্বারা নবিজীকে বুঝানো হয়েছে।
সুত্র:-ইমাম তিবরিযি-মাজমাউল বায়ান ৪/১৭৭-১৭৮;
🕋 বিশ্ব বিখ্যাত মুহাদ্দীস ও তাফসীরকারক ইমাম যওজী (رحمة الله) বর্ণনা করেন-
আলোচ্য আয়াতে রহমত দ্বারা নবিজীকে বুঝানো হয়েছে, যেমনটি তাবেয়ী দাহ্হাক (رحمة الله) তার শায়েখ সাহাবী আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (رضي الله عنه) থেকে বর্ণনা করেছেন।
সুত্র:-ইমাম যওজী-যা'দুল মাসীর ফি উলুমুত তাফাসীর ৪/৪০পৃষ্টা;
সম্মানীত পাঠকগন, অত্র আয়াতের একটা তাফসীর আমরা সাহাবীয়ে রাসুল থেকে পেয়ে গেলাম যে ফদ্বল আর রহমত দ্বারা নবিজীকেও বুঝানে হয়েছে।আর এটা মনে রাখতে হবে সাহাবীদের তাফসীর হলো মারফু হাদীসের ন্যায়।
🕋 ইমাম হাকেম নিশাপুরী বর্ণনা করেন -وتفسيرُ الصحابي عندهما مُسْنَدٌ ইমাম বোখারী ও মুসলিমের নিকট সাহাবীদের তাফসীর মারফু হাদীসের ন্যায়।
সুত্র:-মুসতাদরাক-কিতাবুল ইলম ১/২১১,হাদীস নং ৪২২;
অতএব, আল্লাহ তাআলা যেহেতু বলে দিয়েছেন নবিজীকে উপলক্ষ করে খুশি তথা ঈদ উদযাপন করার জন্য তাই আমাদের উচিৎ ঈদে মিলাদুন্নাবী সাল্লাল্লাহ আলাইহী ওয়াসাল্লাম পালন করা কারন এই আয়াতে ফদ্বল ও রহমত দ্বারা নবিজীকে বুঝানো হয়েছে, যা সাহাবী ইবনে আব্বাস (رضي الله عنه) বানী থেকে সুস্পষ্ট।
🕋 এজন্য বিশ্ব বিখ্যাত ফকীহ ইমাম তাহাবী (رحمة الله) ইমাম শাওয়াফে (رحمة الله) এর কওল নকল করে লিখেন-
ان افضل الليالي ليلة مولده صلى اللّٰه عليه وسلم ثم ليلة القدر
নিশ্চয়ই ইবাদতের মধ্যে সবচেয়ে উত্তম রাত হলো মিলাদুন্নাবী (ﷺ) এর রাত এরপর লাইলাতুল কদর।
সুত্র:-ইউসুফ নাবহানী-যাওয়াহিরু বিহার ৩/৪২৬,মারকাযে আহলে সুন্নাহ বি বারকাতে রেযা,গুজরাট হতে প্রকাশিত।
🕋 এমনকি শায়েখ ইউসুফ নাবহানী (رحمة الله) লিখেন-
"শবে কদর হতে মিলাদুন্নাবী (ﷺ) এর রাত উত্তম।"
সুত্র:-ইউসুফ নাবহানী-আনোওয়ারে মুহাম্মাদীয়া ২৮ পৃঃ,দারুল কুতুব ইলমিয়্যা,বয়রুত লেবানন।
🕋 বোখারীর ব্যখ্যাকার ইমাম কস্তুলানী (رحمة الله) তিনিও বলেছেন,
"শবে কদর হতে মিলাদুন্নাবী (ﷺ) এর রাত উত্তম।"
এবং এর পিছনে তিনটি কারনও তিনি উল্লেখ করেছেন।
ইমাম কস্তুলানী-মাওয়াহেবে লাদুনীয়া ২৮/১৪৫,মাকতুবাতুত তাওফীকিয়া, কায়রো, মিশর।
এমনকি ঈসা (عليه السلام) এর জন্য আসমান থেকে আল্লাহর নেয়ামত খাদ্য পাঠানোর দিন যদি ঈদের দিন হতে পারে যা সুরা মায়েদার ১১৪ নং আয়াতে বলা হয়েছে, তাহলে আমাদের নবিজীতো সকল নেয়ামতের মধ্য শ্রেষ্ট নেয়ামত।এমনকি নবিজীকে আল্লাহ তাআলা আসমান ও জমীনের সমস্হ ধনভান্ডারের চাবি সমুহও দান করে দিয়েছেন তাহলে ওনার আগমনের দিন কেন ঈদের দিন হতে পারবেনা! বরং নবিজীর আগমনের দিন সকল ঈদের চাইতেও শ্রেষ্ট ঈদের দিন এবং তা পালন করা আমাদের অর্জিত সমস্ত কিছু চাইতে উত্তম হবে।
অতএব, প্রমানীত হলো সকল ঈদে সেরা ঈদ ঈদে মিলাদুন্নাবী সাল্লাল্লাহ আলাইহী ওয়াসাল্লাম।
মিলাদুন্নবী (ﷺ) এর রজনীতে সংঘটিত অলৌকিক ঘটনাসমূহ
____________________
মিলাদুন্নবী (ﷺ) এর রজনীতে সংঘটিত অলৌকিক ঘটনাসমূহ
🖋কৃতঃ মাসুম বিল্লাহ সানি
👉 সৃষ্টির সেরা শুভ রজনী যে রজনীতে রত্নাগর্ভা মা আমিনা (রাঃ) ধারন করলেন রাসূলাল্লাহ (ﷺ) এর নূর মুবারককে পবিত্র নূরানী গর্ভে :
- এ রজনীতে শয়তানদের বনী আদমকে বিভ্রান্ত করার সকল কৌশল বন্ধ হয়ে গেল।
- ফেরশতাকুল শয়তানের সিংহাসন উল্টিয়ে সমুদ্রে ফেলে দিল।
- জৈনক ফেরেশতা এটাকে সমুদ্রে চল্লিশ দিন পর্যন্ত ডুবাতে থাকল।
- ফেরশতাকুল শয়তানকে ভীষন প্রহার করল, ফলে সে আবূ কোবাইস নামক পাহাড়ে আত্নগোপন করতে বাধ্য হলো।
- শয়তান সেখানে ভীষন চিত্কার করতে থাকল। চিৎকার শুনে তার দল লশকর সকলে এসে উপস্থিত হলো।
তারা বলল, হে দলপতি! আপনি ক্রন্দন করছেন কেন?সে বলল মহাবিপদ উপস্থিত।অত্র রাত্রিতে নূরে মুহাম্মদী (ﷺ) মাতৃগর্ভে স্থিতি লাভ করেছে।
- তার দরুনই দুনিয়া ও আখিরাতের ইজ্জত,
- সে নগ্ন তলোয়ার নিয়ে আবির্ভূত হবে।
- ফলে আমার বেঁচে থাকা মুশকিল হয়ে পড়বে,
- সে পূর্ববতী ধর্মগুলো রহিত (মূলোচ্ছেদ) করে দিবে;
- মূর্তিসমূহ ধ্বংস করে দিবে;
- ব্যভিচার, শারাবখোরী ও জুয়া হারাম করে দিবে;
- জৌতিষ্কের বিদ্যা বিলুপ্ত করবে;
- হক কথা বলবে;
- ইনসাফে শ্রীবৃদ্ধী সাধন করবে;
- আসমানের তারকামালার ন্যায় মসজিদসমূহ মিটমিট করে জ্বলতে থাকবে;
- প্রতি স্থানে আল্লাহর নাম নিবে;
উক্ত উত্তম কাজগুলো তার জামায়াতকে আকড়িয়ে থাকবে, এগুলোতে আমার কোন ফন্দী চলবেনা।
[সূত্র- রাওজাতুল আহবাব]
হাদিস-০১
👉ইমাম আল-বায়হাকী (রহ) ও ইমাম আবু নুআইম (আল-আসবাহানী রহ.) বর্ণনা করেন,
‘ওই সময়টায় এক ইহুদি ব্যবসার কাজে মক্কায় অবস্থান করছিলেন। যখন হযরত রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর শুভ-আবির্ভাবের রাতটি ঘনিয়ে এলাে তখন তিনি বললেন, ওহে ইহুদি জাতি! মহামানব আহমদ (ﷺ) এর তারকা উদিত হয়েছে, আজ রাতেই তিনি জন্মলাভ করবেন।
(ক) আল-বায়হাকী, দালায়িলুন নুবুওয়াত, খ. ১, পৃ. ১০৯-১১০, হাদীস: ৪৬;
(খ) আবু নুআইম আল-আসবাহানী, দালায়িলুন নুবুওয়াত, খ, ১, পৃ. ৭৫, হাদীস: ৫, হযরত হাসান ইবনে সাবিত (রা) থেকে বর্ণিত
(গ) মুহাদ্দিসে দেহলভী : মা সাবাতা বিস সুন্নাহ ১১৬
হাদিস-০২
হযরত আয়িশা (রাঃ) বলেন,
সে সময় এক ইহুদি মক্কায় অবস্থান করছিলেন। যখন হযরত রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর শুভ-আবির্ভাবের রাতটি ঘনিয়ে এলাে তখন তিনি বললেন, হে কুরাইশ সম্প্রদায়! আজ কি তােমাদের বংশে কোনাে নবজাতকের জন্ম হয়েছে? তারা বলল, না। তিনি বললেন, দেখো দেখো! নিশ্চয় আজ রাতে জন্ম নেবেন এ জাতির নবী (ﷺ) তাঁর দুই কাঁধের মধ্যবর্তী স্থানে এর নিদর্শন রয়েছে। একথা শুনে কুরাইশের লােকেরা চারিদিকে ছড়িয়ে পড়লাে এবং খবরাখবর নিতে লাগলাে। অতঃপর খবর পাওয়া গেল, হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আবদুল মুত্তালিবের ঘরে এক নবজাতক জন্ম নিয়েছে। কুরাইশের লােকজনকে সাথে নিয়ে ইহুদি তাঁর মায়ের কাছে হাজির হলেন। মাতা আমিনা তাঁর সদ্যোজাত শিশুটিকে দেখাতে সম্মত হন। ইহুদি নবুওয়াতের নিদর্শন দেখে চমকে গেলেন এবং বলে ওঠলেন, ইসরাইলের বংশে নুবুওয়তের ধারা শেষ হয়ে গেছে। হে কুরাইশ সম্প্রদায়! খােদার কসম! এই শিশুটির মাধ্যমে গােটা পৃথিবীতে তােমরা সুউচ্চ মর্যাদায় অভিষিক্ত হবে। তাঁর জীবনাদর্শ সমগ্র দুনিয়ায় বিস্তার লাভ করবে।
- এটি ইমাম ইয়াকুব ইবনে সুফয়ান (রহ) হাসান স্তরের সনদে বর্ণনা করেছেন। ফতহুল বারীতে এমনটিই বর্ণিত হয়েছে।
ইবনে হাজর আল-আসকলানী, ফতহুল বারী, খ, ৬, পৃ. ৫৮৩,
মুহাদ্দিসে দেহলভী : মা সাবাতা বিস সুন্নাহ ১১৬
হাদিস-০৩
নবী করীম -এর জন্ম মুহূর্তে কিসরার রাজপ্রাসাদে প্রবল কম্পনের সৃষ্টি, এর চৌদ্দটা ইট খসে পড়া, রাজকীয় লেক শুকিয়ে যাওয়া এবং পারস্য অগ্নিশিখা নিভে যাওয়া—যে-অগ্নিশিখা হাজার বছর থেকে কেউ নেভায়নি। এ-ধরনের ঘটনাবলিও বেশ বিষ্ময়কর। এ-প্রসঙ্গে আরও অনেকে বর্ণনা করেছেন, এটি একটি প্রসিদ্ধ বর্ণনা।
(ক) আল-বায়হাকী, দালায়িলুন নুবুওয়াত, খ. ১, পৃ. ১২৬-১২৭, হাদীস: ৬১।
(খ) আবু নুআইম আল-আসবাহানী, দালায়িলুন নুবুওয়াত, খ. ১, পৃ. ১৩৮, হাদীস: ৮২।
(গ) আল-খারায়িতী, ওয়াতিফুল জিনান, পৃ. ৫৭, হাদীস: ১৪।
(ঘ) মুহাদ্দিসে দেহলভী : মা সাবাতা বিস সুন্নাহ ১১৭।
(ঙ) ইবনে আসাকির, তারিখুল দামিস্ক, খ, ৩৭, পৃ. ৬১, হাদীস: ৪৪০৪;
হাদিস-০৪
হানি ইবন হুরায়রা (রাঃ) বলেন,
এ রাতটিতে আল্লাহর রাসুল (ﷺ) জন্মলাভ করেন ওই রাতে কিসরার রাজপ্রাসাদে প্রবল কম্পনের হয়, এর চৌদ্দটি ইট খসে পড়ে, পারস্য অগ্নিশিখা নিভে যায়- যে অগ্নিশিখা হাজার বছর কেউ নেভায় নি এবং রাজকীয় লেক শুকিয়ে যাওয়া।'
[ইবনে আসাকির, তারিখুল দামিস্ক, খ, ৩৭, পৃ. ৬১, হাদীস: ৪৪০৪]
হাদিস-০৫
চৌদ্দটা ইট খসে পড়ার মধ্যে খসে পড়া ইটের সমপরিমাণ তারা এ সাম্রাজ্যে রাজত্ব করতে পারবে—এমন ইঙ্গিত নিহিত ছিলাে। বাস্তবত (নবী করীম ﷺ- এর জীবদ্দশায়) চার বছরে তাদের দশজন সম্রাট রাজত্ব করে এবং অন্যরা হযরত ওসমান (ইবনে আফফান গ্রাঙ্গ)-এর খিলাফত পর্যন্ত সময়ে ক্ষমতায় ছিলাে।
(১) ইবনে সাইয়িদুন নাস, উরুন অল-আসর ফি চুনুন আল-মাযি ওয়া আশ-শামায়িল ওয়া আস সিয়ার : ১, পৃ: ৩৬
(২) ইমাম কাস্তালানী : আল-মাওয়াহিবুল লুদুনিয়ায়ও উল্লেখ আছে।
(৩) মুহাদ্দিসে দেহলভী : মা সাবাতা বিস সুন্নাহ ১১৭
হাদিস-০৬
এছাড়া আকাশের নিরাপত্তার জন্য শিহাব নামক অগ্নিগােলক মােতায়েন, শয়তানের আনাগােনার পথ রুদ্ধ করে দেওয়া এবং ওঁৎপেতে ঊর্ধ্বজগতের বার্তা শােনার ক্ষেত্রে শয়তানের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরােপের ঘটনাও বেশ তাৎপর্যপূর্ণ।
[ইমাম কাসতালানী : আল-মাওয়াহেব, খ, ১, পৃ. ৮০-৮১]
নবী করীম ﷺ খতনাকৃত এবং নাভিকর্তিত অবস্থায় জন্মগ্রহণ করেন।
👉 হযরত আনাস ইবনে মালিক (রা) থেকে বর্ণিত আছে,
عن أنس به، أن النبي صلى الله عليه وسلم قال: «من كرامتي على بي آي ويذ مختونا، وكم ير أحد وعي».
নবী করীম ﷺ ইরশাদ করেন,
খতনাকৃত অবস্থায় আমি জন্মলাভ করেছি এটি আমার প্রভুর পক্ষ থেকে আমাকে প্রদত্ত বিশেষ সম্মান ও মর্যাদার একটি এবং কেউ আমার লজ্জাস্থান দেখেনি।"
(১) আত-তাবারানী, আল-মু'জামুল আওসাত, খ, ৬, পৃ. ১৮৮, হাদীস: ৬১৪।
(২) আবু নুআইম আল-আসবাহানী, দালায়িলুন নুবুওয়াত, খ. ১, পৃ. ১৫৪, হাদীস: ৯১।
(৩) আল-খতীবুল বাগদাদী, তারিখে বগদাদ, খ. ২, পৃ. ১৭৯, হাদীস: ২৩২।
(৪) ইবনে আসাকির, তারিখ দামিস্ক, খ, ৩, পৃ. ৪১৩, হাদীস: ৭৬২ ।
(৫) যিয়াউদ্দিন আল-মাকদিসী, আল-আহাদীসুল মুখতারা, খ, ৫, পৃ. ২৩, হাদীস: ১৮৬৪
(৬) মুহাদ্দিসে দেহলভী : মা সাবাতা বিস সুন্নাহ : ১১৮
আবু হুরায়রা (রা) থেকে বর্ণিত,
নবীজি ﷺ খতনাকৃত অবস্থায় জন্মলাভ করেন।
[ইবনে আসাকির, তারিখুল দামিস্ক, খ, ৩, পৃ. ৪১২, হাদীস: ৭৬১]
👉 আব্দুল্লাহ ইবন ওমর (রা) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আল্লাহর রাসূল ﷺ ইরশাদ করেছেন, 'আমি খতনাকৃত ও নাভিকর্তিত অবস্থায় জন্মলাভ করেছি।
[ইবনে আসাকির, তারিখুল দামিস্ক, খ. ৩, পৃ. ৪১৪, হাদীস: ৭৬৫]
👉 আল-মুখতারা গ্রন্থে গ্রন্থগার এটিকে বিশুদ্ধ বলে উল্লেখ করেছেন। | ইমাম আল-হাকিম একা আল-মুস্তাদরিক গ্রন্থে বলেছেন,
নবী করীম ﷺ খতনাকৃত অবস্থায় জন্ম নেওয়ার বিষয়ক বর্ণনাসমূহ ধারাবাহিক সূত্ৰ পরম্পরা স্তরের।
[আল-হাকিম, মুস্তাদরাক খ. ২, পৃ. ৬৫৭, হাদীস: ৪১৭৭]
👉 ইমাম ইবনে দুরায়দ (রহ) এর আল-বিশাহ গ্রন্থে এসেছে,
“হযরত ইবনুল কলবী (রহ) বলেছেন, আমরা জনতে পেরেছি যে, হযরত আদম (আ) কে সৃষ্টি করা হয়েছে খতনাকৃত অবস্থায়। তার পরবর্তীতে আরও ১২জন নবী (আ) কে খতনাকৃত অবস্থায় সৃষ্টি করা হয়েছে আর হযরত মুহাম্মদ রাসূলুল্লাহ (ﷺ) ছিলেন সেই ধারাবাহিকতার সর্বশেষ জন।
[ইমাম কাসতালানী, আল মাওয়াহেব, খ. ১, পৃ. ৮২
মিলাদুন্নবী (ﷺ) উদযাপনের ফজিলত
____________________
মিলাদুন্নবী (ﷺ) উদযাপনের ফজিলত
🖋কৃতঃ মাসুম বিল্লাহ সানি
ইমাম হযরত হাসান বছরী (রহঃ)
[বিশিষ্ট তাবিয়ী, যিনি শতাধিক সাহাবায়ে কিরাম (রা) গণের সাক্ষাত লাভ করেছিলেন] তিনি বলেন-
قال الحسن البصرى رحمة الله عليه وَدِدْتُّ لَوْ كَانَ لِىْ مِثْلُ جَبَلِ اُحُدٍ ذَهْبًا فَاَنْفَقْتُهٗ عَلٰى قِرَاءَةِ مَوْلِدِ النَّبِىِّ صَلّٰى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ.
অর্থ: ‘আমার একান্ত ইচ্ছা হয় যে, আমার যদি উহুদ পাহাড় পরিমাণ স্বর্ণ থাকতো তাহলে তা পবিত্র মীলাদুন্নবী (ﷺ) উপলক্ষে ব্যয় করতাম।’সুবহানাল্লাহ!
[আন নি'মাতুল কুবরা আলাল আলাম ৮ পৃষ্ঠা]
ইমাম হযরত ইমাম শাফিয়ী (রহ) বলেন-
قَالَ اَلاِمَامُ الشَّافِعِىُّ رَحِمَهُ اللهُ مَنْ جَمَعَ لِمَوْلِدِ النَّبِىِّ صَلّٰى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلّمَ اِخْوَانًا وَهَيَّاَ طَعَامًا وَاَخْلٰى مَكَانًا وَعَمَلَ اِحْسَانًا وَصَارَ سَبَبًا لِقِرَائَتِهٖ بَعَثَهُ اللهُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ مَعَ الصِّدِّيْقِيْنَ وَالشُّهَدَاءِ وَالصَّالِحِيْنَ وَيَكُوْنُ فِىْ جَنَّاتِ النَّعِيْمِ.
অর্থ: ‘যে ব্যক্তি পবিত্র মীলাদুন্নবী (ﷺ) উদযাপন উপলক্ষে :
- লোকজন একত্রিত করলো,
- খানাপিনার ব্যবস্থা করলো,
- জায়গা নির্দিষ্ট করলো এবং
- এ জন্য উত্তমভাবে তথা সুন্নাহ ভিত্তিক আমল করলো
- তাহলে উক্ত ব্যক্তিকে আল্লাহ পাক হাশরের দিন ছিদ্দীক্ব, শহীদ ছলিহীনগণের সাথে উঠাবেন এবং উনার ঠিকানা হবে জান্নাতে নায়ীমে।’ সুবহানাল্লাহ!
[আন নি'মাতুল কুবরা আলাল আলাম ১০ পৃষ্ঠা]
হযরত জুনাইদ বাগদাদী (রহ) বলেন-
قال جنيد البغدادى رحمة الله عليه مَنْ حَضَرَ مَوْلِدَ النَّبِىِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَعَظَّمَ قَدَرَهٗ فَقَدْ فَازَ بِالاِيْمَانِ.
অর্থ: “যে ব্যক্তি পবিত্র মীলাদুন্নবী (ﷺ) এর আয়োজনে উপস্থিত হবে এবং উপযুক্ত সম্মান প্রদর্শন করবে সে বেহেশ্তী হবে।” সুবহানাল্লাহ!
[আন নি'মাতুল কুবরা আলাল আলাম ৮ পৃষ্ঠা]
বিখ্যাত ইমাম হযরত ইমাম মারূফ কারখী (রহ) বলেন-
قال المعروف الكرخى رحمة الله عليه مَنْ هَيَّأَ طَعَامًا لاَجْلِ قِرَائَةِ مَوْلِدِ النَّبِىِّ صَلّٰى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَجَمَعَ اِخْوَانًا وَاَوْقَدَ سِرَاجًا وَلبِسَ جَدِيْدًا وَتَبَخَّرَ وَتَعَطَّرَ تَعْظِيْمًا لِمَوْلِدِ النَّبِىِّ صَلّٰى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ حَشَرَهُ اللهُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ مَعَ الْفِرْقَةِ الاُوْلٰى مِنَ النَّبِيّنَ وَكَانَ فِىْ اَعْلٰى عِلِّيِّيْن.
অর্থ: “যে ব্যক্তি পবিত্র ঈদে মীলাদুন্নবী (ﷺ) উপলক্ষে খাদ্যের আয়োজন করে, অতঃপর লোকজনকে জমা করে, মজলিসে আলোর ব্যবস্থা করে, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন নতুন পোশাক পরিধান করে, সুঘ্রাণ ও সুগন্ধি ব্যবহার করে, আল্লাহ পাক তাকে নবী আলাইহিমুস সালামগণের প্রথম কাতারে হাশর করাবেন এবং সে জান্নাতের সুউচ্চ মাক্বামে অধিষ্ঠিত হবেন।” সুবহানাল্লাহ্!
[আন নি'মাতুল কুবরা আলাল আলাম ৮ পৃষ্ঠা]
ইমাম ফখরুদ্দিন রাজি (রহ) বলেন-
مَا مِنْ شَخْصٍ قَرَاَ مَوْلِدَ النَّبِىِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَلٰى مِلْحٍ اَوْ بُرٍّ اَوْشَىء اٰخَرَ مِنَ الْمَأكُوْلاتِ اِلا ظَهَرَتْ فِيْهِ الْبَركَةُ فِىْ كُلِّ شَىء. وَصَلَ اِِلَيْهِ مِنْ ذٰلِكَ الْمَأكُوْلِ فَاِنَّهٗ يَضْطَرِبُ وَلا يَسْتَقِرُّ حَتى يَغْفِرَ اللهُ لاٰكِلِهٖ.
অর্থ: যে ব্যক্তি পবিত্র মীলাদুন নবী (ﷺ) উদযাপন করে লবণ, গম বা অন্য কোন খাদ্য দ্রব্যের উপর ফুঁক দেয়, তাহলে এই খাদ্য দ্রব্যে অবশ্যই বরকত প্রকাশ পাবে। এভাবে যে কোন কিছুর উপরই পাঠ করুক না কেন, তাতে বরকত হবেই। উক্ত খাদ্য-দ্রব্য মীলাদুন্নবী (ﷺ) উদযাপনকারীর জন্য আল্লাহ পাকের নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করে, এমনকি তাকে ক্ষমা না করা পর্যন্ত সে ক্ষান্ত হয় না।” সুবহানাল্লাহ!
[আন নি'মাতুল কুবরা আলাল আলাম ৯ পৃষ্ঠা]
হযরত ইমাম সাররী সাকতী (রহ) বলেন-
قال السر سقتى رحمة الله عليه مَنْ قَصَدَ مَوْضعًا يُقْرَأُ فِيْهِ مَوْلِِدُ النَّبِىِّ صَلّٰى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَقَدْ قَصَدَ رَوْضَةً مِنْ رِيَاضِ الْجَنَّةِ لاَنَّهٗ مَا قَصَدَ ذٰلِكَ الْمَوْضعَ اِلا لِمُحَبَّةِ النَّبِىِّ صَلّٰى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ.
অর্থ: “যে ব্যক্তি পবিত্র মীলাদুন্নবী (ﷺ) উদযাপন করার জন্য স্থান নির্দিষ্ট করলো সে যেন নিজের জন্য জান্নাতে একটি বাগান নির্দিষ্ট করলো। কেননা সে তা হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক (ﷺ) উনার মুহব্বতের জন্যই করেছে। আর রাসুলুল্লাহ (ﷺ) বলেন, যে ব্যক্তি আমাকে ভালবাসবে সে আমার সাথেই জান্নাতে থাকবে।” সুবহানাল্লাহ্!
[আন নি'মাতুল কুবরা আলাল আলাম ১০ পৃষ্ঠা]
ইমাম ইবন কাসির (রহঃ) তার বিখ্যাত সীরাত গ্রন্থে লিখেন :
ইবলিশ শয়তান জীবনে ঠিক এই সময়টাতেই খুব বেশি কেঁদেছে বা আফসোস করেছে।
أن إبليس رن أربع رنات حين لعن وحين أهبط وحين ولد رسول الله صلى الله عليه وسلم وحين أنزلت الفاتحة
১. আল্লাহ যখন তাকে অভিশপ্ত হিসেবে ঘোষণা দিলেন,
২. যখন তাকে বেহেস্ত থেকে বিতাড়িত করা হল,
৩. নূর নবীজীর (ﷺ) দুনিয়াতে আগমনের সময় এবং
৪. সূরা ফাতিহা নাযিল হবার সময়
[সূত্রঃ ইবন কাসির, আল আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া, ২য় খন্ড, পৃষ্ঠা - ১৬৬]
হযরত ইমাম জালালুদ্দীন সুয়ূতী (রহ) তিনি বলেন-
قَالَ سُلْطَانُ الْعَارِفِيْنَ الْاِمَامُ جَلالُ الدِّيْنِ السُّيُوْطِىُّ قَدَّسَ اللهُ سِرَّهٗ وَنَوَّرَ ضَرِيْحَهُ فِىْ كِتَابِهِ الُمُسَمّٰى الْوَسَائِلِ فِىْ شَرْحِ الشَّمَائِلِ" مَا مِنْ بَيْتٍ اَوْ مَسْجِدٍ اَوْ مَحَلَّةٍ قُرِئَ فِيْهِ مَوْلِدُ النَّبِىِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ اِلا حَفَّتِ الْمَلٰئِكَةُ ذٰلِكَ الْبَيْتَ اَوِ الْمَسْجِدَ اَوِ الْمَحَلًّةَ صَلَّتِ الْمَلٰئِكَةُ عَلٰى اَهْلِ ذٰلِكَ الْمَكَانِ وَعَمَّهُمُ اللهُ تَعَالٰى بِالرَّحْمَةِ وَالرِّضْوَانِ واَمَّا الْمُطَوَقُّوْنَ بِالنُّوْرِ يَعْنِىْ جِبْرَائيلَ وَمِيْكَائِيْلَ وَاِسْرَافِيْلَ وَعَزْرَائِيْلَ عَلَيْهِمُ السَّلامُ فَاِنَّهُمْ يُصَلُّوْنَ عَلٰى مَنْ كَانَ سَبَبًا لِقَرَائَةِ مَوْلِدِ النَّبِىِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَاِذَا مَاتَ هَوَّنَ اللهُ عَلَيْهِ جَوَابَ مُنْكِرٍ وَنَكِيْرٍ وَيَكُوْنُ فِىْ مَقْعَدِ صِدْقٍ عِنْدَ مَلِيْكٍ مُّقْتَدِرٍ.
অর্থ: “যে কোন ঘরে অথবা মসজিদে অথবা মহল্লায় পবিত্র মীলাদুন নবী (ﷺ) উদযাপন করা হয় সেখানে অবশ্যই আল্লাহ পাকের ফেরেশতাগণ বেষ্টন করে নেন। আর তারা সে স্থানের অধিবাসীগণের উপর ছলাত-সালাম পাঠ করতে থাকেন। আর আল্লাহ পাক তাদেরকে [উক্ত লোকসকলকে] স্বীয় রহমত ও সন্তুষ্টির আওতাভুক্ত করে নেন। আর নূর দ্বারা সজ্জিত প্রধান ৪ ফেরেশতা অর্থাৎ হযরত জিবরায়ীল, মীকায়ীল, ইসরাফীল ও আযরায়ীল আলাইহিমুস সালামগণ মীলাদুন্নবী (ﷺ) উদযাপনকারীগণের উপর ছলাত-সালাম পাঠ করেন। যখন তারা [উদযাপনকারীগণ] ইনতিকাল করেন তখন আল্লাহ পাক তাদের জন্য মুনকার-নাকীরের সুওয়াল-জাওয়াব সহজ করে দেন। আর তাদের অবস্থান হয় আল্লাহ পাকের সন্নিধ্যে সিদ্দিকীনদের মাক্বামে।” সুবহানাল্লাহ্!
[ওয়াসিল ফি শরহে শামায়িল, আন নিয়ামাতুল কুবরা আলাল আলাম ১০ পৃষ্ঠা]
ইমাম কসতলানী (রহ) আরও বলেন: ”যাদের অন্তর রোগ-ব্যাধি দ্বারা পূর্ণ, তাদের কষ্ট লাঘবের জন্যে রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর মীলাদের মাস (রবিউল আউয়ালের) প্রতিটি রাতকে যাঁরা উদযাপন করেন তাঁদের প্রতি আল্লাহতা’লা দয়াপরবশ হোন!”
[আল-মাওয়া আল-লাদুন্নিয়া, ১ম খন্ড]
ইমাম সুলতান মোল্লা আলী কারী (রহ)
[মুহাদ্দিস ও হানাফী ফেকাহবিদ] তিনি বলেন:
আল্লাহতা’লা এরশাদ ফরমান,
আত-তাওবাহ ৯:১২৮
لَقَدْ جَآءَكُمْ رَسُولٌ مِّنْ أَنفُسِكُمْ عَزِيزٌ عَلَيْهِ مَا عَنِتُّمْ حَرِيصٌ عَلَيْكُم بِٱلْمُؤْمِنِينَ رَءُوفٌ رَّحِيمٌ
তোমাদের কাছে তোমাদের মধ্য থেকেই একজন রসূল এসেছে। তোমরা যাতে কষ্ট পাও তা তার জন্যও কষ্টদায়ক। সে তোমাদের কল্যাণকামী এবং মুমিনদের প্রতি স্নেহশীল ও দয়ালু।
মিলাদুন্নবীর (ﷺ) সম্মিলিতরূপ দানকারী বাদশাহ মুজাফফর (রহঃ) কেমন ছিলেন?
____________________
মিলাদুন্নবীর (ﷺ) সম্মিলিতরূপ দানকারী বাদশাহ মুজাফফর (রহঃ) কেমন ছিলেন?
ইমাম ইবনে কাসীর (রহ) লিখেন :
أحد الاجواد والسادات الكبراء والملوك الامجاد له آثار حسنة وقد عمر الجامع المظفري بسفح قاسيون وكان قدهم بسياقه الماء إليه من ماء بذيرة فمنعه المعظم من ذلك واعتل بأنه قد يمر على مقابر المسلمين بالسفوح وكان يعمل المولد الشريف في ربيع الاول ويحتفل به احتفالا هائلا وكان مع ذلك شهما شجاعا فاتكا بطلا عاقلا عالما عادلا رحمه الله وأكرم مثواه وقد صنف الشيخ أبو الخطاب ابن دحية له مجلدا في المولد النبوي سماه التنوير في مولد البشير النذير فأجازه على ذلك بألف دينار وقد طالت مدته في الملك في زمان الدولة الصلاحية وقد كان محاصر عكا وإلى هذه السنة محمودالسيرة والسريرة قال السبط حكى بعض من حضر سماط المظفر في بعض الموالد كان يمد في ذلك السماط خمسة آلاف راس مشوى وعشرة آلاف دجاجة ومائة ألف زبدية وثلاثين ألف صحن حلوى
অর্থঃ “ বাদশাহ মুযাফফর (রহ) ছিলেন একজন উদার/সহৃদয় ও প্রতাপশালী এবং মহিমান্বিত শাসক, যাঁর সকল কাজ ছিল অতি উত্তম। তিনি কাসিইউন-এর কাছে জামেয়া আল-মুযাফফরী নির্মাণ করেন।
(প্রতি) রবিউল আউয়াল মাসে তিনি জাঁকজমকের সাথে মীলাদুন্নবী (ﷺ) উদযাপন করতেন। উপরন্তু, তিনি ছিলেন দয়ালু, সাহসী, জ্ঞানী, বিদ্বান ও ন্যায়পরায়ণ শাসক - রাহিমুহুল্লাহ ওয়া একরাম - শায়খ আবুল খাত্তাব (রহ) সুলতানের জন্যে মওলিদুন্ নববী (ﷺ) সম্পর্কে একখানি বই লিখেন এবং নাম দেন ‘আত্ তানভির ফী মওলিদ আল-বাশির আন্ নাযীর’। এ কাজের পুরস্কারস্বরূপ সুলতান তাঁকে ১০০০ দিনার দান করেন। সালাহিয়া আমল পর্যন্ত তাঁর শাসন স্থায়ী হয় এবং তিনি ’আকা’ জয় করেন। তিনি সবার শ্রদ্ধার পাত্র থেকে যান।
”আস্ সাবত্ এক ব্যক্তির কথা উদ্ধৃত করেন যিনি সুলতানের আয়োজিত মওলিদ অনুষ্ঠানে যোগ দিয়েছিলেন; ওই ব্যক্তি বলেন: ‘অনুষ্ঠানে সুলতান ভালভাবে রান্নাকৃত ৫০০০ ছাগল, ১০,০০০ মোরগ, ১ লক্ষ বৌল-ভর্তি দুধ এবং ৩০,০০০ ট্রে মিষ্টির আয়োজন করতেন’।”
★ তারিখে ইবনে কাসীর : আল-বেদায়াহ ওয়ান নেহায়া’ ১৩তম খণ্ড, ১৭৪ পৃষ্ঠা
★ ইমাম ইবনে খাল্লিক্বান : তারীখে ইবনে খাল্লিক্বান-৪/১১৭-১১৯]
★ ইমাম জালালুদ্দীন সুয়ুতী : তফসীরে জালালাইন]
হাফিজে হাদীস ইমাম যাহাবী (রহ) উনার কিতাবে লিখেন
ﻛﺎﻥ ﻣﺘﻮﺍﺿﻌﺎ ﺧﻴﺮﺍ ﺳﻨﻴﺎ ﻳﺤﺐ ﺍﻟﻔﻘﻬﺎﺀ
ﻭﺍﻟﻤﺤﺪﺛﻴﻦ
অর্থ: বাদশা মুজাফফরুদ্দীন (রহ)
- তিনি নম্র, ভদ্র ও
- উত্তম স্বভাবের অধিকারী ছিলেন।
- তিনি আহলে সুন্নাত ওয়াল জামায়াতের আক্বীদায় বিশ্বাসী ছিলেন।
- তিনি ফক্বীহ ও মুহাদ্দিসগনকে অত্যন্ত ভালবাসতেন।"
[সিয়ারু আলামীন নবালা, ২২ তম খন্ড, ৩৩৬ পৃষ্ঠা]
এ মহান বাদশার প্রশংসায় উনার সমকালীন বিখ্যাত ইতিহাসবিদ আল্লামা ক্বাযী ইবনে খল্লিক্বান (রহ) উনার কিতাবে লিখেন-
ﻭﻛﺮﻡ ﺍﻻﺧﻼﻕ ﻛﺜﻴﺮ ﺍﻟﺘﻮﺍﺿﻊ ﺣﺴﻦ
ﺍﻟﻌﻘﻴﺪﺓ ﺳﺎﻟﻢ ﺍﻟﻄﺎﻗﺔ ﺷﺪﻳﺪ ﺍﻟﻤﻴﻞ ﺍﻟﻲ
ﺍﻫﻞ ﺍﻟﺴﻨﺔ ﻭ ﺍﻟﺠﻤﺎﻋﺔ ﻻ ﻳﻨﻔﻖ ﻋﻨﺪ ﻣﻦ
ﺍﺭﺑﺎﺏ ﺍﻟﻌﻠﻮﻡ ﺳﻮﻱ ﺍﻟﻔﻘﻬﺎﺀ ﻭﺍﻟﻤﺤﺪﺛﻴﻦ
ﻭﻣﻦ ﻋﺪﺍﻫﻤﺎ ﻻ ﻳﻌﻄﻴﻪ ﺷﻴﺎ ﺍﻻ ﺗﻜﻠﻔﺎ
অর্থ: বাদশা হযরত মুজাফফরুদ্দিন ইবনে যাইনুদ্দীন (রহ) :
- তিনি প্রসংসনীয় চরিত্রের অধিকারী,
- অত্যধিক বিনয়ী ছিলেন।
- উনার আক্বীদা ও বিশ্বাস ছিল সম্পূর্ণ বিশুদ্ধ।
- তিনি আহলে সুন্নত ওয়াল জামাতের একনিষ্ঠ অনুসারী ছিলেন।
- তিনি আলিম উলামা, ফক্বীহ ও মুহাদ্দিসগন উনাদের পিছনে ব্যয় করা ব্যতীত সকল ক্ষেত্রে ব্যয় করার ব্যাপারে মিতব্যয়ী ছিলেন।"
[ইমাম ইবনে খল্লিক্বান (রহ) : ওয়াফইয়াতুল আ'ইয়ান, ৪র্থ খন্ড, ১১৯ পৃষ্ঠা]
শায়খ মোহাম্মদ ইলিয়াশ (রহঃ) (ওফাত: ১২৯৯ হি) [মালেকী মযহাবের আলেম] তার কিতাবে বলেন,
- ঈদে মীলাদুন্নবী (ﷺ) আনুষ্ঠানিকভাবে সর্বপ্রথম পালন করা হয় হিজরী ৬ষ্ঠ শতকে।
- এটি প্রবর্তন করেন ইরবিলের ন্যায়পরায়ণ সুলতান মোযাফফর শাহ (রহ)।
- ওই সব অনুষ্ঠানে তিনি উচ্চ মর্যাদাসম্পন্ন আলেম-উলেমা ও মহান সূফীবৃন্দসহ সকলকে আমন্ত্রণ জানাতেন।
- সে মেজবান যা খাওয়ানো হতো তাতে অন্তর্ভুক্ত থাকতো ৫০০০ দুম্বার রোস্ট, ১০০০০ মোরগ ও ৩০০০০ প্লেট মিষ্টি।
- সেই সময় থেকে অদ্যাবধি মুসলমান সমাজ রবিউল আউয়াল মাসে মীলাদুন্নবী (ﷺ) উদযাপন করে আসছেন।
- এর আয়োজনে তাঁরা মানুষকে খাওয়ানো, গরিব-দুঃস্থদের মাঝে দান-সদকাহ এবং অন্যান্য প্রশংসনীয় (মোস্তাহাব) আমল পালন করেন।
- এই আমল (ইসলামী আচার) তাঁদেরকে বিগত বছরগুলোতে মহা রহমত-বরকত অর্জনে সহায়ক ভূমিকা রেখেছে।
[শায়খ মোহাম্মদ ‘ইলিয়াস : তাঁর ’আল-কওল আল-মুনজিয়ী’]
মিলাদুন্নবী (ﷺ) উপলক্ষে আনন্দ/ঈদ পালন করা কি বৈধ নাকি হারাম?
____________________
মিলাদুন্নবী (ﷺ) উপলক্ষে আনন্দ/ঈদ পালন করা কি বৈধ নাকি হারাম?
আল্লামা শায়খ মুহাম্মদ বিন উমর বাহরুক (রহ) ও খাজরামী শাফী (রহ) [মৃ:৮৬৯-৯৩০ হি:]
ওনারা পবিত্র মিলাদুন্নবী (ﷺ) সম্পর্কে লিখেন-
এদিনের প্রকৃত অবস্থান হলো,যেহেতু এদিনে রাসূল (ﷺ) এর পবিত্র বেলাদত শরীফ সেহেতু এদিনে আনন্দ (ঈদ) উদযাপন করাই হচ্ছে প্রকৃত দাবী।
[হাদাইকুল আনোয়ার ওয়া মাতালিউল আসরার ফি সিরাতিন নাবিইয়িল মুখতার গ্রন্থের ৫৩-৫৮ পৃ:]
বিশ্ব বরণ্য ফকিহ্ ও শারিহে বােখারী, ইমাম কাস্তাল্লানী (রহঃ) তদীয় কিতাবে বলেন :
“মহান আল্লাহ ঐ ব্যক্তিকে রহমত দান করুক যিনি রাসূল (ﷺ) মিলাদের মােবারক রজনীকে ঈদ হিসেবে গ্রহণ করেছেন।”
[ইমাম কাস্তাল্লানী: মাওয়াহেবুল্লাদুন্নিয়া, ১ম খন্ড, ১৪৮ পৃঃ]
বুখারী শরীফের ব্যাখাকার বিশ্ববিখ্যাত মোহাদ্দিস আল্লামা কুস্তোলানী রহমাতুল্লাহে আলাইহি (মৃত্যুঃ ৯২৩ হিজরী) বলেন-
যে ব্যক্তি নবী করীম ﷺ-এর শুভাগমনের মোবারক মাসের রাতসমূহকে ঈদ হিসেবে গ্রহণ করে, আল্লাহ তার উপরে রহমত বর্ষণ করেন। আর উক্ত রাত্রকে ঈদ হিসেবে উদযাপন করবে এ জন্য যে, যাদের অন্তরে (নবী বিদ্বেষী) রোগ রয়েছে। তাদের ঐ রোগ যেন আরো শক্ত আকার ধারণ করে এবং যন্ত্রণায় অন্তর জ্বলে পুড়ে যায়। — শরহে জুরকানী আলাল মাওয়াহেব, ১ম খন্ড, পৃষ্ঠা নং- ২৬২
ভারতীয় উপমহাদেশের সর্বপ্রথম মোহাদ্দিস হযরত শায়খ আবদুল হক মোহাদ্দেসে দেহলভী রহমাতুল্লাহে আলাইহি বলেন-
যে ব্যক্তি মীলাদুন্নবী ﷺ এর রাত্রকে ঈদ হিসেবে পালন করে, তার উপর আল্লাহ তায়ালা রহমত নাযিল করেন। আর যার মনে হিংসা এবং [নবী ﷺ এর দুশমনির] রোগ রয়েছে, তার ঐ (নবী বিদ্বেষী) রোগ আরও শক্ত আকার ধারণ করে। — মা সাবাতা বিসসুন্নাহ (উর্দু) পৃষ্ঠা নং-৮৬
রাসুলুল্লাহ (ﷺ) এর শুভআগমণ ও ওফাত একি দিবসে। আনন্দিত হব নাকি শোক প্রকাশ করব?
____________________
রাসুলুল্লাহ (ﷺ) এর শুভআগমণ ও ওফাত একি দিবসে। আনন্দিত হব নাকি শোক প্রকাশ করব?
ইমাম সৈয়ুতী (রহঃ) স্বীয় কিতাবে বলেন,
أن ولادته صلى الله عليه وسلم أعظم النعم علينا ووفاته أعظم المصائب لنا والشريعة حثت على إظهار شكر النعم والصبر والسلوان والكتم عند المصائب وقد أمر الشرع بالعقيقة عند الولادة وهي إظهار شكر وفرح بالمولود و لم يأمر عند الموت بذبح ولا غيره بل نهى عن النياحة وإظهار الجزع فدلت قواعد الشريعة على أنه يحسن في هذا الشهر إظهار الفرح بولادته صلى الله عليه وسلم دون إظهار الحزن فيه بوفاته
বিশ্বনবী (ﷺ)-এর বেলাদত হলো (আল্লাহর) সর্ববৃহৎ নেয়ামত (আশীর্বাদ); আর তাঁর বেসাল মহা দুর্যোগ। ধর্মীয় বিধান আমাদের প্রতি তাকিদ দেয় যেন আমরা আল্লাহর নেয়ামতের শোকর গুজারি (কৃতজ্ঞতা প্রকাশ) করি এবং দুর্যোগের মুহূর্তে ধৈর্য ধরি ও শান্ত থাকি। শরীয়তের আইনে আমাদের আদেশ দেয়া হয়েছে কোনো শিশুর জন্মে পশু কোরবানি দিতে (এবং ওর গোস্ত গরিবদের মাঝে বিতরণ করতে)। এটা ওই শিশুর জন্মোপলক্ষে কৃতজ্ঞতা ও খুশি প্রকাশের নিদর্শন। পক্ষান্তরে, মৃত্যুর সময় পশু কোরবানি দিতে শরীয়ত আমাদের আদেশ দেয় নি। উপরন্তু, শোক প্রকাশ বা মাতম করতে শরীয়তে মানা করা হয়েছে। অতএব, মীলাদুন্নবী (ﷺ)-এর পুরো মাসব্যাপী খুশি প্রকাশ করার পক্ষে ইসলামী বিধানের রায় পরিদৃষ্ট হয়; আর তাঁর বেসাল উপলক্ষে শোক প্রকাশ না করার পক্ষে মত দেয়া হয়।
★ইমাম সৈয়ুতীঃ হুসনুল মাকসাদ ফী আমলিল মওলিদ, ৫৪-৫৫ পৃষ্ঠা;
★ইমাম সৈয়ুতী প্রণীত ’আল-হাওয়ী লিল্ ফাতাওয়ী’, ১ম খণ্ড, ২৯৮ পৃষ্ঠা, মাকতাবা আল-আসরিয়া, বৈরুত, লেবানন হতে প্রকাশিত।
ইমামগণের মতে মিলাদুন্নবী (ﷺ) উপলক্ষ্যে যেসব আমল উত্তম
____________________
ইমামগণের মতে মিলাদুন্নবী (ﷺ) উপলক্ষ্যে যেসব আমল উত্তম
ইমামুল আল্লামাহ নাসিরুদ্দীন মোবারক ইবনে বাতাহ (রহ) :
৪র্থ যুগের প্রখ্যাত মুহাদ্দিস ইমামুল আল্লামাহ নাসিরুদ্দীন মোবারক ইবনে বাতাহ (রহঃ) পবিত্র মিলাদ সম্পর্কে নিজ ফতোয়ায় লিখেন,
মহানবী (ﷺ) ওনার মিলাদুন্নবীর রাতে কোন ব্যক্তি কিছু অর্থকরি ব্যয় করলে এবং জনগনকে সমবেত করে তাদেরকে পানাহার করালে বা রাসূল (ﷺ) ওনার জন্ম সম্পর্কে বর্ণিত হাদীস সমূহ এবং অলোকিক ঘটনা শুনালে তা যদি সব রাসূল (ﷺ) ওনার জন্মের প্রতি আনন্দ ও খুশি প্রকাশ করার জন্য হয়ে থাকে তাহলে শরীয়ত মতে তা জায়েজ আর এসব কাজের জন্য সংশ্লীষ্ঠ কর্তাকে ছওয়াব প্রদান করা হয়,যদি তার উদ্দেশ্য ভাল হয়।
[আদ-দুররুল মুনাজ্জম ফী আমলে ওয়া হুকমে মাওলিদুন নাবীয়্যিল আযম-পৃষ্ঠা-নং-১৯৭-১৯৮]
ইমাম জামাল উদ্দিন আব্দুর রহমান (রহঃ)
ইমাম জামাল উদ্দিন আব্দুর রহমান ইবনে আব্দুল মালিক আল কাতানী (রহঃ) পবিত্র মিলাদ সম্পর্কে লিখেন,
রাসূল (ﷺ) এর জন্ম দিনে বা অন্য কোন সময়ে ওনার জন্ম কাহিনী ও ঘটনাবলী আলোচনা করা সম্মান, বুযুর্গী ও মাহাত্ব্য লাভের জন্য নাযাত লাভের কারণ এবং তার জন্ম দিনে যারা আনন্দ ও খুশী প্রকাশ করে তাদের পরকালে শাস্তি হালকা ও কম হওয়ার কারণে পরিণত হয়।
[সুবুলুল হুদা ওয়ার রাসাদ ফী সীরাতি খাইরিল ইবাদ-১ম খন্ড-পৃস্ঠা নং-৩৬৪]
ইমামুল আল্লামা জহীর উদ্দিন ইবনে জাফর (রহঃ)
ইমামুল আল্লামা জহীর উদ্দিন ইবনে জাফর (রহঃ) পবিত্র মিলাদ শরীফ সম্পর্কে লিখেন,
শরীয়াতে মিলাদুন্নবী অনুষ্ঠান করা হচ্ছে বিদাতে হাসানা। অনুষ্ঠানকারী লোকদের সমবেত করে অনুষ্টান করতে চাইলে সকলে হুযুর পাক (ﷺ) ওনার প্রতি দুরুদ পাঠ করতে এবং গরীব মিছকিনদের পানাহার করাতে ইচ্ছা করলে, এ নিয়মে ও এ শর্তে মিলদুন্নবী অনুষ্টান করলে এজন্য তখন তাকে (আল্লাহ) ছ্ওয়াবও প্রদান করেন।
[সুবুলুল হুদা ওয়ার রাসাদ ফী সীরাতি খাইরিল ইবাদ-১ম খন্ড-পৃস্ঠা নং-৩৬৪.]
সালাফীদের ইমাম ইবনে কাইয়্যুম (মৃ:-৭৫১ হি:)
ইবনে কাইয়্যুম তার কিতাবে বলেন যে,
নবী করীম (ﷺ) ওনার মিলাদ মাহফিলে সুললিত কন্ঠস্বর শ্রবণ করা কিংবা ধর্মীয় বিষয় শ্রবণ করার মাধ্যমে অন্তরে প্রশান্তি লাভ হয়। কারণ নবী করীম (ﷺ) থেকে শ্রোতাকে নূর দেওয়া হয়ে থাকে।
[মাদারেকুছ ছালিকিন-৪৯৮ পৃ:]
বুখারী শারীফের আরেক অন্যতম নির্ভরযোগ্য ব্যাখ্যাগ্রন্থ ‘ফাতহুল বারী’ এর লেখক ইমাম ইবন হাজর আসকলানী (রঃ) বলেন-
মহান
বী (ﷺ)-এর মীলাদ দিবস উদযাপন সম্পর্কে হযরত ইমামকে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি লিখিতভাবে যে উত্তর দেন তা নিম্নরূপ
: মীলাদুন্নবী (ﷺ) উদযাপনের উৎস বলতে এটি এমন এক বেদআত (উদ্ভাবন) যা প্রথম তিন শতকের সালাফ আস্ সালেহীন (পুণ্যাত্মাবৃন্দ) কর্তৃক আমাদেরকে জ্ঞাত করানো হয় নি, যদিও এতে প্রশংসনীয় ও প্রশংসনীয় নয় উভয় দিকই বিদ্যমান। কেউ প্রশংসনীয় দিকগুলো গ্রহণ করে প্রশংসনীয় নয় এমন দিকগুলো বর্জন করায় যত্নবান হলে তা বেদআতে হাসানা তথা কল্যাণময় নতুন প্রথা হবে। আর তা না হলে এর উল্টো হবে। এ বিষয়ের বৈধতা প্রতীয়মানকারী একটি নির্ভরযোগ্য শরীয়তের দলিল আমার সামনে এসেছে, আর তা হলো বুখারী ও মুসলিম শরীফে উদ্ধৃত সহীহ হাদীস যা’তে বর্ণিত হয়েছে যে মহানবী (ﷺ) মদীনা মোনাওয়ারায় হিজরত করে দেখতে পান সেখানকার ইহুদীরা ১০ই মহররম (আশুরা) তারিখে রোযা রাখেন।
— হুসনুল মাকসাদ ফী আমলিল মওলিদ, ৬৩ পৃষ্ঠা
শায়খুল ইসলাম ও ৩ লক্ষ হাদিসের হাফেজ ইমাম ইবনে হাজর আসকালানী (রহঃ) বলেন-
এমতাবস্থায় তিনি তাদেরকে [এর কারণ জিজ্ঞেস করলে তারা উত্তর দেন, ‘এই দিনে আল্লাহতা’লা ফেরাউনকে পানিতে ডুবিয়ে মূসা (আ)-কে রক্ষা করেন। তাই আমরা মহান প্রভুর দরবারে এর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশের উদ্দেশ্যে রোযা রেখে থাকি।’ এই ঘটনা পরিস্ফুট করে যে আল্লাহতা’লার রহমত অবতরণের কিংবা বালা-মসীবত দূর হওয়ার কোনো বিশেষ দিনের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা, সেই উদ্দেশ্যে বার্ষিকী হিসেবে তা উদযাপনের সময় :
- নামায,
- রোযা,
- দান-সদকাহ বা
- কুরআন তেলাওয়াতের মতো বিভিন্ন এবাদত-বন্দেগী পালন করা শরীয়তে জায়েয। আর রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর মীলাদের (ধরণীতে শুভাগমন দিবসের) চেয়ে আল্লাহর বড় রহমত কী-ই বা হতে পারে? এরই আলোকে প্রত্যেকের উচিত হযরত মূসা (আ) ও ১০ই মহররমের ঘটনার (দালিলিক ভিত্তির) সাথে সঙ্গতি রেখে মীলাদুন্নবী (ﷺ) দিবস উদযাপন করা; তবে যাঁরা এটি বিবেচনায় নেন না, তাঁরা (রবিউল আউয়াল) মাসের যে কোনো দিন তা উদযাপনে আপত্তি করেন না; অপর দিকে কেউ কেউ বছরের যে কোনো সময় নির্দিষ্ট ক করা ব্যতীত সারা বছর উদযাপনকে কোনো প্রকার ব্যতিক্রম ছাড়াই বৈধ জেনেছেন।
[হুসনুল মাকসাদ ফী আমলিল মওলিদ’, ৬৪ পৃষ্ঠা]।
👉 তিনি আরো বলেন :
”আমি মওলিদের বৈধতার দলিল সুন্নাহ’র আরেকটি উৎস থেকে পেয়েছি (আশুরার হাদীস থেকে বের করা সিদ্ধান্তের বাইরে)। এই হাদীস ইমাম বায়হাকী (রহ) হযরত আনাস (রা) থেকে বর্ণনা করেন: ‘হুযূর পাক (ﷺ) নবুয়্যত প্রাপ্তির পর নিজের নামে আকিকাহ করেন; অথচ তাঁর দাদা আবদুল মোত্তালিব তাঁরই বেলাদতের সপ্তম দিবসে তাঁর নামে আকিকাহ করেছিলেন, আর আকিকাহ দু’বার করা যায় না। অতএব, রাসূলে খোদা (ﷺ) বিশ্বজগতে আল্লাহর রহমত হিসেবে প্রেরিত হওয়ায় মহান প্রভুর দরবারে কৃতজ্ঞতা প্রকাশের জন্যে এটি করেছিলেন, তাঁর উম্মতকে সম্মানিত করার জন্যেও, যেমনিভাবে তিনি নিজের ওসীলা দিয়ে দোয়া করতেন। তাই আমাদের জন্যেও এটি করা উত্তম হবে যে আমরা মীলাদুন্নবী (ﷺ) দিবসে কৃতজ্ঞতাসূচক খুশি প্রকাশার্থে
- আমাদের দ্বীনী ভাইদের সাথে সমবেত হই,
- মানুষদেরকে খাবার পরিবেশন করি এবং
- অন্যান্য সওয়াবদায়ক আমল পালন করি।’ এই হাদীস পূর্বোক্ত মহানবী (ﷺ) -এর দ্বারা মীলাদ ও নবুয়্যত-প্রাপ্তির দিবস পালনার্থে সোমবার রোযা রাখার হাদীসকে সমর্থন দেয়।”
[হুসনুল মাকসাদ ফী আমলিল মওলিদ, ৬৪-৬৫ পৃষ্ঠা]
ইমাম ইবনে হাজর আসকালানী (রহঃ) বলেন,
ঈদে মীলাদুন্নবী (ﷺ) উদযাপনে যে সব নেক বা পুণ্যময় কাজ করা যায় তাতে অন্তর্ভুক্ত রয়েছে :
– মহানবী (ﷺ)-এর আগমনের প্রতি (শোকরিয়াসূচক) খুশি উদযাপন ও আনুগত্য প্রদর্শন;
– পুণ্যবান ও গরিব মানুষকে সমবেত করে তাঁদেরকে খাওয়ানো;
– নেক আমল পালন ও মন্দ আমল বর্জনে উদ্বুদ্ধ করে এমন ইসলামী নাশিদ/না’ত/সেমা/কাওয়ালী/পদ্য আবৃত্তি বা পরিবেশন;
– রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর প্রশংসাসূচক (এ ধরনের) শে’র-পদ্য-সেমা আবৃত্তিকে সে সকল শ্রেষ্ঠ মাধ্যমের অন্তর্গত বলে বিবেচনা করা হয় যা দ্বারা কারো অন্তর তাঁর প্রতি মহব্বতের দিকে আকৃষ্ট হয়।
[হুসনুল মাকসাদ ফী আমলিল মওলিদ, ৬৪-৬৫ পৃষ্ঠা]
হাফেয ইমাম সাখাভী (ওফাত: ৯০২ হিজরী) বলেন,
তাঁর ’ফাতাওয়া’ গ্রন্থে বলেন, মওলিদুন্নবী (ﷺ) উদযাপন হিজরী ৩য় শতকের পরে আরম্ভ হয়।
- অতঃপর মুসলিম উম্মাহ সকল শহর ও নগরে দান-সদকা,
- মহানবী (ﷺ) এর মীলাদ বর্ণনার মতো নানা সওয়াবপূর্ণ বরকতময় আমল পালন করে এর উদযাপন করে আসছেন।
হাফিজুল হাদিস ইমাম জালালউদ্দীন সৈয়ুতী (রহঃ) (বিসাল: ৯১১ হিজরী) বলেন,
- মীলাদুন্নবী (ﷺ) উদযাপনের উদ্দেশ্যে মানুষজনকে সমবেত করা,
- কুরআন মজীদের আয়াতে করীমা তিলাওয়াত করা,
- মহানবী (ﷺ)-এর জন্মবৃত্তান্ত আলোচনা,
- তাঁর বেলাদতের (ধরণীতে শুভাগমনের) সাথে সম্পর্কিত বিস্ময়কর অলৌকিক ঘটনাবলীর উল্লেখ করা, এবং
- এই উপলক্ষে মানুষকে খাবার পরিবেশন করা সেই সকল বিদআতে হাসানা (নতুন প্রবর্তিত কল্যাণকর ও সওয়াবের আমল) এর শ্রেণীভুক্ত যা মহানবী (ﷺ)-এর প্রতি আনুগত্য ও যথাযথ সম্মান প্রতিফলন করে।
[ইমাম জালালউদ্দীন সৈয়ুতী : তাঁর লিখিত ‘হুসনুল মাকসিদ ফী ‘আমালিল মাওলিদ কিতাবে]
৯ম শতাব্দীর মুজাদ্দিদ আল্লামা জালালুদ্দিন সুয়ুতি (রঃ) বলেন
ইমাম সৈয়ুতী কৃত ‘আল-হাওয়ী লিল্ ফাতাওয়ী’ কিতাবের প্রচ্ছদ
আল-হাওয়ী লিল্ ফাতাওয়ী কিতাবে মিলাদুন্নবী (সঃ) এর স্বপক্ষে ইমাম জালালুদ্দিন আস সৈয়ুতী (রহঃ) এর বক্তব্য
أن أصل عمل المولد الذي هو اجتماع الناس وقراءة ما تيسر من القرآن ورواية الأخبار الواردة في مبدأ أمر النبي صلى الله عليه وسلم وما وقع في مولده من الآيات ثم يمد لهم سماط يأكلونه وينصرفون من غير زيادة على ذلك هو من البدع الحسنة التي يثاب عليها صاحبها لما فيه من تعظيم قدر النبي صلى الله عليه وسلم وإظهار الفرح والاستبشار بمولده الشريف
মীলাদুন্নবী (ﷺ)উদযাপন যা মূলতঃ মানুষদের সমবেত করা, কুরআনের অংশ-বিশেষ তেলাওয়াত, মহানবী (ﷺ)-এর ধরাধামে শুভাগমন (বেলাদত) সংক্রান্ত ঘটনা ও লক্ষ্মণগুলোর বর্ণনা পেশ, অতঃপর তবাররুক (খাবার) বিতরণ এবং সবশেষে সমাবেশ ত্যাগ, তা উত্তম বেদআত (উদ্ভাবন); আর যে ব্যক্তি এর অনুশীলন করেন তিনি সওয়াব অর্জন করেন, কেননা এতে জড়িত রয়েছে রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর মহান মর্যাদার প্রতি গভীর শ্রদ্ধা প্রদর্শন এবং তাঁর সম্মানিত বেলাদতের প্রতি খুশি প্রকাশ।
— ইমাম সৈয়ুতী কৃত ‘আল-হাওয়ী লিল্ ফাতাওয়ী’, ১ম খণ্ড, ২৯২ পৃষ্ঠা, মাকতাবা আল-আসরিয়া, বৈরুত, লেবানন হতে প্রকাশিত
তিনি তার স্ব-রচিত “আল উয়াছায়েল ফী শরহিশ শামাইল” গ্রন্থে উল্লেখ আরও করেন,
যে গৃহে বা মসজিদে কিংবা মহল্লায় মীলাদুন্নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উপলক্ষ্যে হুযুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর মীলাদ মাহফিলের আয়োজন করা হয়। তখন অবশ্যই সে গৃহ বা মসজিদ বা মহল্লা অসংখ্য ফেরেশতা দ্বারা পরিবেষ্টিত থাকে এবং উক্ত স্থান সমূহে যারা অবস্থান করে তাদের জন্য তারা সালাত পাঠ করে। (অর্থাৎ তাদের গুণাহর জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করে) এবং আল্লাহ তায়ালা তাদের সবাইকে সাধারণভাবে রহমত ও সন্তুষ্টি দ্বারা ভূষিত করেন। অতঃপর নূরের মালা পরিহিত ফেরেশতাকুল বিশেষতঃ হযরত জিব্রাঈল, মীকাঈল, ঈস্রাফীল ও আজরাঈল আলাইহিস সালাম মিলাদুন্নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উপলক্ষ্যে মাহফিল আয়োজনকারীর গুণাহ মাফের জন্য আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করতে থাকেন।
তিনি আরো বলেন,
যে মুসলমানের গৃহে হুযুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর মীলাদ পাঠ করা হয়, সে গৃহ ও গৃহে বসবাসকারী ব্যক্তি দুর্ভিক্ষ, মহামারী, অগ্নি, পানি, পরনিন্দা, কুদৃষ্টি ও চুরি ইত্যাদির আক্রমণ থেকে মুক্ত থাকবে। সে ঘরে যার মৃত্যু হবে সে মৃত ব্যক্তি কবরে মুনকার নকীরের প্রশ্নের উত্তর অতি সহজে দিতে পারবে। যে ব্যক্তি রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর মীলাদ কে সম্মান করতে চায়, তার জন্য ইহাই যথেষ্ট। পক্ষান্তরে যে ব্যক্তির নিকট নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর মীলাদের কোন মর্যাদা নেই, তার অন্তর এত নিকৃষ্ট হয়ে পড়বে যে, তার সামনে হুযুরপুর নূর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর বিশ্বজোড়া প্রশংসাগীতি উচ্চারিত হলেও তার অন্তরে হুযুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর জন্য বিন্দুমাত্র মুহাব্বতের উদ্রেক হবে না।
— আন নেয়মাতুল কুবরা আলাল আলাম, পৃষ্ঠা নং- ১৩ ও ১৪
আল্লামা কুস্তোলানী রহমাতুল্লাহে আলাইহি স্বীয় মাওয়াহিব গ্রন্থে আরো বলেন-
প্রতিটি যুগে মুসলমানগণ নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর বেলাদত শরীফের মাসে মাহফিলের আয়োজন করে আসছেন। উন্নত মানের খাবারের আয়োজন করেন, এর রাতগুলোতে বিভিন্ন ধরণের সাদক্বাহ- খায়রাত করেন, আনন্দ প্রকাশ করতে থাকেন, পুন্যময় কাজ বেশি পরিমাণে করেন এবং নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর বেলাদত শরীফের আলোচনার প্রতি গুরুত্ব দিয়ে আসেন। ফলে আল্লাহর অসংখ্য বরকত ও ব্যাপক অনুগ্রহ প্রকাশ পায়। এর বিশেষত্বের এটাও পরীক্ষিত যে, নিঃসন্দেহে গোটা বছরই তারা নিরাপদে থাকে এবং তাদের উদ্দেশ্য দ্রুত সফল হয়ে থাকে।
(ইমাম কুস্তোলানী রহমাতুল্লাহে আলাইহি দো’আ করে বলেন) অতএব, ঐ ব্যক্তিকে আল্লাহ দয়া করুন, যে মীলাদুন্নবী মোবারক মাসের রাতগুলোকে ঈদ হিসেবে উদযাপন করে- এ লক্ষ্যে যেন মুনাফিকদের অন্তরে অসহনীয় জ্বালা সৃষ্টি হয়।
— শরহে জুলকানী, ১ম খন্ড, পৃষ্ঠা নং- ২৬১-২৬৩
৯ম শতাব্দীর মুজাদ্দিদ আলফে সানী (রহ) মিলাদুন্নবী (ﷺ) উদযাপন করেছেন :
তিনি মির্জা হুসামুদ্দিন আহমেদ এর মিলাদ বিষয়ক এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন,
نفس قرآں خواندن بصوتِ حسن و در قصائد نعت و منقبت خواندن چہ مضائقہ است؟ ممنوع تحریف و تغییر حروفِ قرآن است، والتزام رعایۃ مقامات نغمہ و تردید صوت بآں، بہ طریق الحان با تصفیق مناسب آن کہ در شعر نیز غیر مباح است. اگر بہ نہجے خوانند کہ تحریفِ کلمات قرآنی نشود. . . چہ مانع است؟-
অর্থঃ
- সুন্দর কন্ঠে কুর’আন তিলাওয়াত,
- নাত শারীফ পাঠে এবং
- মানকাবাত (ওলী-আল্লাহ এর প্রশংসামূলক কবিতা) পাঠে ভুল কি?
- নিষেথাজ্ঞা কেবল তখন প্রযোজ্য হবে যদি কুর’আন শারীফের শব্দ পরিবর্তন করা হবে, কুর’আন শারীফ এমনভাবে পাঠ করা যেন মনে হচ্ছে কেউ গান শুনে তালি দিয়া হচ্ছে যার অনুমতি নেই।
- যদি মিলাদ এভাবে পাঠ করা হয় যেন কুর’আন শারীফ সঠিকভাবে পাঠ করা হয়, কাসিদা গুরুত্বের সহিত সঠিকভাবে পাঠ করা হয় তাহলে এখানে ক্ষতি কি?
[সূত্রঃ মাকতুবাত শারীফ (উর্দু) ভলি ০৩, চিঠি নং ৭২, পারসিয়ান দাফতার সোম, হিসসা হাশতাম]
ইমাম হাফেয আবদুর রহমান ইবনে ইসমাইল (রহঃ) (ওফাত: ৯৬৫ হিজরী)
[যিনি আবু শামাহ নামে সমধিক প্রসিদ্ধ] তিনি বলেন,
বিদআতে হাসানা বা নব প্রবর্তিত উত্তম ও কল্যাণকর প্রথাগুলোর অন্যতম হলো মীলাদুন্নবী (ﷺ) এর দিন উদযাপনের জন্যে যা যা করা হয়। যেমন :
– দান-সদকাহ করা,
– অন্যান্য সওয়াবদায়ক আমল পালন এবং খুশি প্রকাশ করা।
– গরিবদের প্রতি দয়াশীল হওয়ার পাশাপাশি
– এমন একটি আমল যা মহানবী (ﷺ) এর প্রতি কারো মহব্বত, প্রশংসা ও গভীর শ্রদ্ধার ইঙ্গিত বহন করে এবং
– তাঁকে নেয়ামতস্বরূপ (আমাদের মাঝে) প্রেরণের জন্যে তা আল্লাহর প্রতিও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে থাকে।
[ইমাম হাফেয আবদুর রহমান ইবনে ইসমাইল : আল-বা’য়েস আ’লা ইনকার আল-বেদআ’ ওয়াল হাওয়াদিস’]
ইমাম ইবনে আবেদীন শামী (রহ)
[1198–1252 AH / 1783–1836 AD]
আল্লামা ইমাম ইবনে আবেদীন শামী (রহ) মাওলিদ উন নবী উদযাপনকে তিনি আল্লাহর নৈকট্য লাভের মহান কর্ম বলে অভিহিত করে আল্লামা ইবনে হাজর আসকালানী (রহঃ) এর মাওলিদ গ্রন্থের ব্যখ্যায় বলেন,
জেনে রেখো, রাসূল (ﷺ) যে মাসে শুভ আগমণ করেছেন, সে মাসে মীলাদুন্নবী (ﷺ) উপলক্ষে অনুষ্টান করা একটি উত্তম বিদাত (বিদআতে হাসানা)। তিনি আরো বলেন- রাসূল (ﷺ) ওনার জন্ম কাহিনী ও জীবনী শোনার এবং দুরুদ- সালামের মাহফিল অনুষ্ঠান করা আল্লাহর নৈকট্য লাভের অন্যতম মাধ্যম, এতে সন্দেহের কোন অবকাশ নেই।
[আল কাওলুল মুতামাদ ফিল মাযহাবিল হানাফী, আল আদিল্লাতু ফি জাওয়াজিল ইহিফায়ি ওয়াল ইহতেফালু বি মাওলিদি সাইয্যিদাল বাসির (ﷺ).]
ইমাম আব্দুল হক্ব মুহাদ্দিছ দেহলভী (রহ) তিনি বলেন-
مَنْ عَظَّمَ لَيْلَةَ مَوْلِدِهٖ بِمَاۤ اَمْكَنَهٗ مِنَ التَّعْظِيْمِ وَالاِكْرَامِ كَانَ مِنَ الْفَائزِيْنَ بِدَارِ السَّلامِ.
অর্থ: “যে ব্যক্তি তার সাধ্য ও সামর্থ্য অনুযায়ী পবিত্র ঈদে মীলাদুন্নবী (ﷺ) উদযাপন করবে, সে জান্নাতে বিরাট সফলতা লাভ করবে।” সুবহানাল্লাহ্!
[মাছাবাতা বিস সুন্নাহ ১ম খন্ড]
ইমাম শাহ আবদুল আযীয মুহাদ্দীসে দেহেলভী (রহ) বলেন:
রবিউল আউয়াল মাসের বরকত (আশীর্বাদ) রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর বেলাদত তথা ধরণীতে শুভাগমনের কারণেই হয়েছে। এই মাসে উম্মতে মোহাম্মদী যতো বেশি দরুদ-সালাম প্রেরণ করবেন এবং গরিবদের দান-সদকাহ করবেন, ততোই তাঁরা মঙ্গল লাভ করবেন। [ফতোয়ায়ে আযীযিয়্যা, ১:১২৩]
বিরোধীবাদীরা বলে থাকে এটি মহানবী (ﷺ) এর ওফাত দিবস। তাই এটি পালন করা উচিত নয়। এর জবাবও ৯ম শতাব্দীর মুজাদ্দিদ দিয়ে গেছেন খুব সুন্দরভাবে।
أن ولادته صلى الله عليه وسلم أعظم النعم علينا ووفاته أعظم المصائب لنا والشريعة حثت على إظهار شكر النعم والصبر والسلوان والكتم عند المصائب وقد أمر الشرع بالعقيقة عند الولادة وهي إظهار شكر وفرح بالمولود و لم يأمر عند الموت بذبح ولا غيره بل نهى عن النياحة وإظهار الجزع فدلت قواعد الشريعة على أنه يحسن في هذا الشهر إظهار الفرح بولادته صلى الله عليه وسلم دون إظهار الحزن فيه بوفاته
বিশ্বনবী (ﷺ)-এর বেলাদত হলো (আল্লাহর) সর্ববৃহৎ নেয়ামত (আশীর্বাদ); আর তাঁর বেসাল মহা দুর্যোগ। ধর্মীয় বিধান আমাদের প্রতি তাকিদ দেয় যেন আমরা আল্লাহর নেয়ামতের শোকরগুজারি (কৃতজ্ঞতা প্রকাশ) করি এবং দুর্যোগের মুহূর্তে ধৈর্য ধরি ও শান্ত থাকি। শরীয়তের আইনে আমাদের আদেশ দেয়া হয়েছে কোনো শিশুর জন্মে পশু কোরবানি দিতে (এবং ওর গোস্ত গরিবদের মাঝে বিতরণ করতে)। এটা ওই শিশুর জন্মোপলক্ষে কৃতজ্ঞতা ও খুশি প্রকাশের নিদর্শন। পক্ষান্তরে, মৃত্যুর সময় পশু কোরবানি দিতে শরীয়ত আমাদের আদেশ দেয় নি। উপরন্তু, শোক প্রকাশ বা মাতম করতে শরীয়তে মানা করা হয়েছে। অতএব, মীলাদুন্নবী (ﷺ)-এর পুরো মাসব্যাপী খুশি প্রকাশ করার পক্ষে ইসলামী বিধানের রায় পরিদৃষ্ট হয়; আর তাঁর বেসাল উপলক্ষে শোক প্রকাশ না করার পক্ষে মত দেয়া হয়।
— হুসনুল মাকসাদ ফী আমলিল মওলিদ, ৫৪-৫৫ পৃষ্ঠা; ইমাম সৈয়ুতী প্রণীত ’আল-হাওয়ী লিল্ ফাতাওয়ী’, ১ম খণ্ড, ২৯৮ পৃষ্ঠা, মাকতাবা আল-আসরিয়া, বৈরুত, লেবানন হতে প্রকাশিত
হযরত শাহ ওয়ালী উল্লাহ মোহাদ্দিসে দেহলভী রহমাতুল্লাহে আলাইহি তার রচিত “আদ দুররুস সামীন ফী মুবাশশারাতিন নবীয়্যিল আমীন” কিতাবের ৯ম পৃষ্ঠায় লিখেছেনঃ
আমার শ্রদ্ধেয় আব্বাজান আমাকে অবহিত করে বলেন, আমি প্রতি বছরই নবীকুল সর্দার (ﷺ) এর মীলাদ উপলক্ষ্যে বিরাট খাবার আয়োজন করে আসছিলাম। অতঃপর এক বছর খাবারের আয়োজন করা আমার পক্ষে সম্ভব হয়নি। সুতরাং অল্প ভাজ্যকৃত চনা ব্যতীত আর কিছুই আমি জোগাড় করতে পারিনি। কাজেই সেগুলো উপস্থিত লোকদের মাঝে বন্টন করে দিলাম। অতঃপর আমি স্বপ্নে হুযুর ﷺ এর সাক্ষাত লাভ করে ধন্য হলাম। দেখলাম, হুযুর (ﷺ) এর সামনে ঐ চনাগুলো মওজুদ আছে। তখন হুযুর (ﷺ) ছিলেন অত্যন্ত আনন্দিত ও হাস্যোজ্জল।
— তথ্যসূত্রঃ ইসলামী শরীয়তের দৃষ্টিতে ঈদে মীলাদুন্নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উদযাপন, পৃষ্ঠা নং-৮১, ফতুয়ায়ে রশীদিয়া, পৃষ্ঠা নং- ১৩৭, হাকিকতে মীলাদ, পৃষ্ঠা নং-২৮
মিলাদুন্নবী (ﷺ) খোদার করুণা লাভের মাধ্যম
____________________
মিলাদুন্নবী (ﷺ) খোদার করুণা লাভের মাধ্যমঃ
👉 ইমাম সুয়ুতী (রহঃ) বলেন-
"যে গৃহে বা মসজিদে কিংবা মহল্লায় মিলাদুন্নবী (ﷺ) উপলক্ষ্যে হুযুর (ﷺ)-এর মীলাদ মাহফিলের আয়োজন করা হয়। তখন অবশ্যই সে গৃহ বা মসজিদ বা মহল্লা অসংখ্য ফেরেশতা দ্বারা পরিবেষ্টিত থাকে এবং উক্ত স্থান সমূহে যারা অবস্থান করে তাদের জন্য তারা সালাত পাঠ করে। (অর্থাৎ তাদের গুণাহর জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করে) এবং আল্লাহ তায়ালা তাদের সবাইকে সাধারণভাবে রহমত ও সন্তুষ্টি দ্বারা ভূষিত করেন। অতঃপর নূরের মালা পরিহিত ফেরেশতাকুল বিশেষতঃ হযরত জিব্রাঈল, মীকাঈল, ঈস্রাফীল ও আজরাঈল (আঃ) মিলাদুন্নবী (ﷺ) উপলক্ষ্যে মাহফিল আয়োজনকারীর গুণাহ মাফের জন্য আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করতে থাকেন।
[ইমাম সুয়ুতীঃ“আল উয়াছায়েল ফী শরহিশ শামাইল”]
ইমাম শাহ ওয়ালী উল্লাহ মোহাদ্দিসে দেহলভী (রহঃ) লিখেছেনঃ
আমার শ্রদ্ধেয় আব্বাজান আমাকে অবহিত করে বলেন, আমি প্রতি বছরই নবীকুল সর্দার (ﷺ) এর মীলাদ উপলক্ষ্যে বিরাট খাবার আয়োজন করে আসছিলাম। অতঃপর এক বছর খাবারের আয়োজন করা আমার পক্ষে সম্ভব হয়নি। সুতরাং অল্প ভাজ্যকৃত চনা ব্যতীত আর কিছুই আমি জোগাড় করতে পারিনি। কাজেই সেগুলো উপস্থিত লোকদের মাঝে বন্টন করে দিলাম। অতঃপর আমি স্বপ্নে হুযুর (ﷺ) এর সাক্ষাত লাভ করে ধন্য হলাম। দেখলাম, হুযুর (ﷺ) এর সামনে ঐ চনাগুলো মওজুদ আছে। তখন হুযুর (ﷺ) ছিলেন অত্যন্ত আনন্দিত ও হাস্যোজ্জল।
★ ইমাম শাহ ওয়ালী উল্লাহ মুহাদ্দিসে দেহলভীঃ“আদ দুররুস সামীন ফী মুবাশশারাতিন নবীয়্যিল আমীন” ৯ম পৃষ্ঠা
★ ইসলামী শরীয়তের দৃষ্টিতে ঈদে মীলাদুন্নবী (ﷺ) উদযাপন, পৃষ্ঠা নং-৮১,
★ ফতুয়ায়ে রশীদিয়া, পৃষ্ঠা নং- ১৩৭,
★ হাকিকতে মীলাদ, পৃষ্ঠা নং-২৮
👉 ইমাম শাহ ওয়ালী উল্লাহ মোহাদ্দিসে দেহলভী (রহঃ) বলেন,
আমি একদা মক্কা মু’আযযামায় বেলাদত শরীফের বরকতময় ঘরে উপস্থিত হয়েছিলাম। আর সেখানে লোকজন সমবেত হয়ে হুযুর (ﷺ) এর উপর একত্রে দরুদ শরীফ পাঠ করছিলেন। তার (হুযুরের) শুভাগমনের সময় সংঘটিত অলৌকিক ঘটনাবলী ও তার নবুয়ত প্রকাশের পূর্বে সংঘটিত ঘটনাবলী আলোচনা করছিলেন। তারপর আমি সেখানে এক মিশ্র নূরের ঝলক প্রত্যক্ষ করলাম। আমি বলতে পারিনি যে, এ নূরগুলো চর্মচক্ষে দেখেছিলাম নাকি অন্তরচক্ষু দ্বারা দেখেছিলাম। এ দুটোর মধ্যে প্রকৃত ব্যাপার কি ছিল, তা আল্লাহ পাকই ভাল জানেন। অতঃপর আমি গভীরভাবে চিন্তা করলাম এবং উপলব্ধি করতে পারলাম যে, এই নূর বা জ্যোতি ঐ সব ফিরিশতার, যারা এ ধরণের মজলিস ও উল্লেখযোগ্য (ধর্মীয়) স্থানসমূহে (জ্যোতি বিকিরণের জন্য) নিয়োজিত থাকেন। আমার অভিমত হল সেখানে ফিরিশতাদের নূর ও রহমতের নূরের সংমিশ্রণ ঘটেছে।
★ ইমাম শাহ ওয়ালী উল্লাহ মোহাদ্দিসে দেহলভীঃ ফয়ূযুল হারামাইন (আরবী-উর্দু), পৃষ্ঠা নং- ৮০-৮১
👉 ইমাম আব্দুল হক্ব মুহাদ্দিছ দেহলভী (রহ) তিনি বলেন-
مَنْ عَظَّمَ لَيْلَةَ مَوْلِدِهٖ بِمَاۤ اَمْكَنَهٗ مِنَ التَّعْظِيْمِ وَالاِكْرَامِ كَانَ مِنَ الْفَائزِيْنَ بِدَارِ السَّلامِ.
অর্থ: “যে ব্যক্তি তার সাধ্য ও সামর্থ্য অনুযায়ী পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী (ﷺ) উদযাপন করবে, সে জান্নাতে বিরাট সফলতা লাভ করবে।”
[মুহাদ্দিসে দেহলভীঃ মাছাবাতা বিস সুন্নাহ ১ম খন্ড]
তৎকালীন মক্কা-মদীনায় কি মিলাদুন্নবী (ﷺ) উদযাপিত হত?
____________________
তৎকালীন মক্কা-মদীনায় কি মিলাদুন্নবী (ﷺ) উদযাপিত হত?
প্রখ্যাত মুহাদ্দীস ইবন যাওজী (রহঃ) বলেন,
“সর্বদা মক্কা ও মদিনাবাসী, মিসর, ইয়ামেন, সিরিয়াবাসী এবং আরবের পূর্ব-পশ্চিমের সকলেই মিলাদুন্নবী (ﷺ) অনুষ্ঠান করে থাকেন। রবিউল আউয়াল মাসের নব চন্দ্রের আগমনে আনন্দ উৎসব করেন এবং তারা সকলেই এ সমস্ত অনুষ্ঠানাদি দ্বারা মহান পুরষ্কার ও সফলতা লাভ করেন”
[ইমাম যাওজী : বয়ানুল মিলাদুন্নবী, পৃঃ ৫৮]
👉 ইমাম মুফাসসির আল নাক্কাস (রহঃ) (২৬৬-৩৫১ হি) বলেন-
রাসূলুল্লাহ (ﷺ) যে বরকতময় ঘরে জন্মগ্রহণ করেছেন সেটা হল (মক্কার) এমন জায়গা যেখানে সোমবার দোয়া করলে দোয়া কবুল হয়। (যেহেতু সোমবার মিলাদুন্নবী ﷺ)
[ইমাম মুফাসসির আল নাক্কাস : শিফা আল-ঘারাম ১:১৯৯]
👉 ইমাম আল-আযকারী (রহঃ) [৩য় শতাব্দীর ইমাম] মিলাদুন্নবী (ﷺ) এর আলোচনা করতে গিয়ে বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) যে বরকতময় ঘরে জন্মগ্রহণ করেছেন, (অধিক তাবাররুক) অনুগ্রহ পাওয়ার উদ্দেশ্যে সে ঘরে নামাজ পড়াকে আলেমেদ্বীনগণ মুস্তাহাব বলেছেন।
[ইমাম আল-আযকারী : আখবার মক্কা ২ : ১৬০]
👉 ইমাম ইবনে জুবাইর (রহঃ) [৫৪০-৬৪০ হি]
তার নিজের কিতাবে লিখেন-
প্রতি বছর মক্কায় মুসলমানগণ মাওলিদুন্নবী (ﷺ) উদযাপন উপলক্ষে রবিউল আওয়াল মাসের প্রত্যেক সোমবার, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর জন্মস্থানে সবাই একত্রিত হন।
[ইবনে জুবাইর : কিতাবুর রিহাল : ১১৪-১১৫]
👉 ৭ম শতাব্দীর বিখ্যাত ইতিহাসবিদ আবু আল আব্বাস আল আযাফী (রহঃ) এবং তার পুত্র আবুল কাশিম আল আযাফী (রহঃ) তাদের বিখ্যাত [আদ-দুরুরুল মুনাজ্জাম] কিতাবে লিখেন,
ধার্মিক ইতিহাসবিদ ও বিখ্যাত পর্যটকগণ এই তথ্য সঠিকভাবে জানিয়েছেন যে, মক্কায় মিলাদুন্নবী (ﷺ) এর দিন -
- কোন কাজ নেয়া হত না (সকল কাজ বন্ধ করে) লোকজন শুধুমাত্র রাসুলুল্লাহ (ﷺ) এর পবিত্র জন্মস্থান জিয়ারত করতে ব্যস্ত থাকত।
- উক্ত দিন কাবা শরীফের দরজা খুলে দেয়া হত এবং সবাই সেখানে একত্রিত হত।
[আবু আব্বাস আল-আযাফী : আদ-দুরুরুল মুনাজ্জাম]
👉 ৮ম শতাব্দীর বিখ্যাত পর্যটক ও ইতিহাসবিদ ইবনে বতুতা (রহঃ) তার কিতাবে বর্ননা করেন,
বনু শায়বা গোত্রের প্রধান এবং কাবা শরীফের দরজার দায়িত্বরত প্রহরীর মাধ্যমে প্রতি শুক্রবার, জুমুয়ার নামাজের শেষে এবং রাসুলুল্লাহ (ﷺ) এর মিলাদুন্নবী (ﷺ) এর দিন কাবা শরীফের দরজা খুলে দেয়া হত।
মিলাদুন্নবী (ﷺ) এর দিন শাফেয়ী মাযহাবের কাজী (মক্কার সুপ্রিম বিচারক) নাজমুদ্দিন মুহাম্মদ ইবনে আল ইমাম মহিউদ্দীন আত তাবারী (রহঃ) তিনি আওলাদে রাসুল (ﷺ) এবং মক্কার অন্যান্য সাধারণ জনগণ এর মধ্যে খাদ্যদ্রব্য বিতরণ করতেন।
[ইতিহাস বীদ ইবনে বতুতা : তার রিহলায় : খন্ড ১ : ৩০৯ এবং ৩৪৭ পৃ]
👉 ইমাম শাহ ওয়ালী উল্লাহ মোহাদ্দিসে দেহলভী (রহঃ) বলেন,
আমি একদা মক্কা মু’আযযামায় বেলাদত শরীফের বরকতময় ঘরে উপস্থিত হয়েছিলাম। আর সেখানে লোকজন সমবেত হয়ে হুযুর (ﷺ) এর উপর একত্রে দরুদ শরীফ পাঠ করছিলেন। তার (হুযুরের) শুভাগমনের সময় সংঘটিত অলৌকিক ঘটনাবলী ও তার নবুয়ত প্রকাশের পূর্বে সংঘটিত ঘটনাবলী আলোচনা করছিলেন। তারপর আমি সেখানে এক মিশ্র নূরের ঝলক প্রত্যক্ষ করলাম। আমি বলতে পারিনি যে, এ নূরগুলো কি চর্মচক্ষে দেখেছিলাম নাকি অন্তরচক্ষু দ্বারা দেখেছিলাম।
★ ইমাম শাহ ওয়ালী উল্লাহ মোহাদ্দিসে দেহলভীঃ ফয়ূযুল হারামাইন (আরবী-উর্দু), পৃষ্ঠা নং- ৮০-৮১
👉 মুফতি এনায়েত আহমদ (রহঃ) বলেন-
“মক্কা ও মদীনা শারীফ এবং অধিকাংশ ইসলামি রাষ্ট্রে এ কথা প্রচলিত আছে যেপবিত্র রবিউল আউয়াল মাসে মিলাদুন্নবী (ﷺ) এর মাহফিল অনুষ্ঠিত করে মুসলমানদেরকে একত্রিত করে মিলাদ মাহফিল শারীফ পাঠ করা হত। ইহা একটি বিরাট বরকতময় কাজ এবং রাসূল (ﷺ) এর প্রতি ভালবাসা বৃদ্ধির একটি মাধ্যম। রবিউল আউয়াল মাসের ১২ তারিখ মদীনা ঘুনাওয়ারায় মসজিদে নববীতে এবং মক্কা শারীফে রাসূল (ﷺ) এর জন্মস্থানে এ মাহফিল অনুষ্ঠিত হত।”
তিনি উক্ত কিতাবে আরও বর্ণনা করেন
“সুতরাং মুসলমানদের রাসূল (ﷺ) এর মহব্বত ভালবাসায় এ মাহফিল করা ও তাতে শরীক হওয়া উচিত।”
[তাওয়ারিখে হাবীবে ইলাহ, পৃঃ ১২]
কোন রাত সবচেয়ে শ্রেষ্ঠ? মিলাদুন্নবী (ﷺ) এর রাত নাকি ক্বদরের রাত?
____________________
কোন রাত সবচেয়ে শ্রেষ্ঠ? মিলাদুন্নবী (ﷺ) এর রাত নাকি ক্বদরের রাত?
হানাফী মাযহাবের বিখ্যাত ইমাম হযরত ইমাম তাহাবী রহমতুল্লাহি আলাইহি (২২৯- ৩২১ হিজরী) তিনি বলেছেন,
ونقل الطحاوي عليه الرحمة في حواشي المختار عن بعض الشافعية أن أفضل الليالي ليلة مولده عليه الصلاة والسلام ثم ليلة القدر ثم ليلة الإسراء والمعراج ثم ليلة عرفة ثم ليلة الجمعة ثم ليلة النصف من شعبان ثم ليلة العيد
অর্থ: রাত সমূহের মধ্যে উত্তম রাত হচ্ছেঃ
- পবিত্র মীলাদুন্নবী (ﷺ) এর রাত,
- অতঃপর লাইলাতুল কদরের রাত,
- অতঃপর মিরাজ শরীফের রাত,
- অতঃপর আরাফার রাত,
- অতঃপর জুমুয়ার রাত,
- অতঃপর ১৫ শাবানের রাত,
- অতঃপর ঈদের রাত।”
[তাফসীরে রুহুল মায়ানী ১৯/ ১৯৪, সূরা ক্বদরের তাফসীরে]
ইমাম ইউসূফ নাবহানী (রহঃ) উল্লেখ করেন,
বিশ্ব বিখ্যাত ফকীহ আল্লামা তাহাবী (রহঃ) ইমাম শাফেঈ (রহঃ) এর কওল নকল করে বলেন,
“নিশ্চয়ই ইবাদতের মধ্যে সবচেয়ে উত্তম রাত হলােঃ
১) রাসূল (ﷺ) এর জন্মদিনের রাত্র অর্থাৎ মিলাদুন্নবী (ﷺ) এর রাত্র (১২ই রবিউল আউয়াল)
২) তারপর হলাে শবে-ই-কদরের রাত্র।
৩) তারপর হলাে মিরাজের রাত্র (২৭ শে রযব)
৪) তারপর উত্তম রাত্র হলাে লাইলাতুল আরাফা (৯ই জিলহজ্জ)
৫) তারপর হলাে জুমার রাত্র
৬) তারপর হলাে ১৫ই শাবানের রাত্র (শবে বরাত) এবং
৭) তারপর দুই ঈদের রাত্র।
[শায়খ ইউসুফ নাবহানীঃ জাওয়াহিরুল বিহারঃ ৩/৪২৬ পৃ]
ইমাম ইবনে আবেদীন শামী (রহঃ) [১১৯৮-১২৫২ হিঃ] বর্ননা করেন,
أَنَّ أَفْضَلَ اللَّيَالِي لَيْلَةُ مَوْلِدِهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ ثُمَّ لَيْلَةُ الْقَدْرِ ، ثُمَّ لَيْلَةُ الْإِسْرَاءِ وَالْمِعْرَاجِ ، ثُمَّ لَيْلَةُ عَرَفَةَ ، ثُمَّ لَيْلَةُ الْجُمُعَةِ ، ثُمَّ لَيْلَةُ النِّصْفِ مِنْ شَعْبَانَ ، ثُمَّ لَيْلَةُ الْعِيدِ
অর্থ: রাত সমূহের মধ্যে উত্তম রাত হচ্ছেঃ
- পবিত্র মীলাদুন্নবী (ﷺ) এর রাত,
- অতঃপর লাইলাতুল কদরের রাত,
- অতঃপর মিরাজ শরীফের রাত,
- অতঃপর আরাফার রাত,
- অতঃপর জুমুয়ার রাত,
- অতঃপর ১৫ শাবানের রাত,
- অতঃপর ঈদের রাত।”
[ইমাম ইবনে আবেদীন শামী (রহঃ) : রদ্দুল মুহতার আলা আল দুররুল মুখতার (হানাফী মাযহাবের বিখ্যাত ফতোয়ার কিতাব) : ৮/২৮৫ (শামেলা) , পুরাতন ছাপা ৫০৫ পৃষ্ঠা]
ইমাম শিহাবউদ্দীন কাসতলানী (রহঃ) বলেন :
احدها ان ليلة المولود ليلة ظهو ره صلى الله عليه وسلم وليلة القدر معطاة له وما شرف بظهور ذات المشرف من اجله اشرف مما شرف بسبب ما اعطيه ولا نزاع فى ذلك فكانت ليلة المولودبهذا الاعتبار افضل০
الثانى ان ليلة القدر شرفت بنزول الملائكة فيها وليلة المولود شرفت بظهوره صلى الله عليه وسلم فيها ومن شرفت به ليلة المولود افضل ممن شرفت بهم ليلة القدر على الاصح المرتضى فتكون ليلة المولود افضل০
الثالث ان ليلة القدر وقع التفضل فيها على امة محمد صلى الله عليه وسلم وليلة المولود الشريف وقع التفضل فيها على سائر الموجودات فهو الذى بعثه الله عز وجل رحمة للعالمين فعمت به النعمة على جميع الخلائق০
”রাসুলুল্লাহ (ﷺ)-এর বেলাদত তথা এ ধরণীতে শুভাগমন রাতে হয়েছে বলা হলে প্রশ্ন দাঁড়ায় যে দুটো রাতের মধ্যে কোনটি বেশি মর্যাদাসম্পন্ন - কদরের রাত (যা’তে কুরআন অবতীর্ণ হয়), নাকি রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর ধরাধামে শুভাগমনের রাত?
রাসুলুল্লাহ (ﷺ)-এর বেলাদতের রাত এ ক্ষেত্রে শ্রেষ্ঠতর ৩টি কারণে তা হলঃ
১) নবী করীম (ﷺ) এ পৃথিবীতে আবির্ভূত হন মওলিদের রাতে, অথচ কদরের রাত (পরবর্তীকালে) তাঁকে মন্ঞ্জুর করা হয়। অতএব, মহানবী (ﷺ)-এর আবির্ভাব, তাঁকে যা মন্ঞ্জুর করা হয়েছে তার চেয়েও শ্রেয়তর। তাই মওলিদের রাত অধিকতর মর্যাদাসম্পন্ন।
২) কদরের রাত যদি ফেরেশতাদের অবতীর্ণ হবার কারণে মর্যাদাসম্পন্ন হয়, তাহলে মওলিদের রাত মহানবী (ﷺ) এ ধরণীতে প্রেরিত হবার বৈশিষ্ট্যমণ্ডিত। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) ফেরেশতাদের চেয়েও উচ্চ মর্যাদাসম্পন্ন, আর তাই মওলিদের রাতও শ্রেষ্ঠতর।
৩) কদরের রাতের বদৌলতে উম্মতে মোহাম্মদীকে বিশিষ্টতা দেয়া হয়েছে; অথচ মওলিদের রাতের মাধ্যমে সকল সৃষ্টিকে ফযিলাহ দেয়া হয়েছে। কেননা, মহানবী (ﷺ)-কে সমগ্র সৃষ্টিজগতের জন্যে রহমত করে পাঠানো হয়েছে (আল-কুরআন ২১:১০৭)। অতএব, এই রহমত সমগ্র সৃষ্টিকুলের জন্যে সার্বিক।”
★ ইমাম কুস্তালানী : ‘আল-মাওয়াহিব আল-লাদুন্নিয়া’, ১ম খণ্ড, ১৪৫ পৃষ্ঠা,
★ ইমাম যুরকানী মালেকী : শরহে মাওয়াহিবে লাদুন্নিয়া’, ১ম খণ্ড, ২৫৫-২৫৬ পৃষ্ঠা।
উস্তাদুল মুহাদ্দিসিন ইমাম আব্দুল হক মুহাদ্দিসে দেহলভী (রহঃ) বলেন,
اذا قلنا انه ولد ليلا فتلك الليلة افضل من ليلة القدر بلاشبهة لان ليلة المولودة ليلة ظهوره صلى الله عليه وسلم وليلة القدر معطاةله০
অর্থাৎ মিলাদুন্নবী (ﷺ) এর রাত্রি শবে কদর হতে যে উত্তম তাতে সন্দেহের অবকাশ মাত্র নেই। কেননা মিলাদুন্নবী (ﷺ) এর রাত হল আল্লাহর হাবিব (ﷺ) এর দুনিয়াতে আবির্ভূত হওয়ার রাত্রি আর শবে ক্বদর হুজুর (ﷺ) কে আল্লাহ তা’য়ালা দান করেছেন।
★ ইমাম আব্দুল হক মুহাদ্দিসে দেহলভীঃ মাসাবাতা বিস সুন্নাহঃ ৭৭/৭৮ পৃষ্ঠা।
আশরাফ আলী থানভীর [শরীয়তের দৃষ্টিতে ঈদে মিলাদুন্নবী (ﷺ)]
____________________
আশরাফ আলী থানভীর [শরীয়তের দৃষ্টিতে ঈদে মিলাদুন্নবী (ﷺ)] কিতাব
বহুরূপী আশরাফ আলী থানভীঃ
যার পরিচয়ে বহিঃপ্রকাশ পায় কখনো সুন্নী কখনো ওহাবী, যুক্তিবাদী, পাগল, বেয়াদব, বিচিত্র মনগড়া ফতোয়াবাজ।
|
আশরাফ আলী থানভী এর একটি কিতাবের নাম হল : শরীয়তের দৃষ্টিতে ঈদে মিলাদুন্নবী (ﷺ)
উক্ত কিতাবটি পড়ে আপনার কি কি ধারণা হবে তা সংক্ষেপে বলে দিচ্ছি।
উক্ত কিতাবের সারাংশ :
১) প্রথম থেকে পড়া শুরু করলে মনে হবে পাক্কা সুন্নী। শুরুতেই উসীলা, কালিমা, শানে রিসালাত নিয়ে বয়ান করেছে। এমনকি জাবের (রাঃ) এর নূর সম্পর্কিত হাদিস ও মিলাদুন্নবী (ﷺ) এর সময় মাতা আমেনা (রাঃ) গর্ভ থেকে নূর বিচ্ছুরিত হয়ে শ্যাম দেশের অট্টালিকাগুলোকে আলোকিত করেছে এ মর্মেও হাদিস বর্ননা করেছে।
২) এর পর প্রতি পৃষ্ঠা পড়বেন আর তার যুক্তিগুলো দেখবেন। এক পর্যায়ে মনে হবে সে বিশাল যুক্তিবিদ ছিল।
৩) শানে রিসালাতের উপর খুব সুন্দর সুন্দর কথা বলেছে। যেমন ধরুনঃ
- আমরা নির্দিষ্ট এক দিন নয় ৩৬৫ দিনই মিলাদুন্নবী (ﷺ) পালন করি।
- এই দিন রোজা রাখা সুন্নত।
- এই নিয়ামত পেয়ে খুশি হওয়া অত্যাবশ্যক।এটা আল্লাহর হুকুম। এটা অমান্য করার সাধ্য কার আছে?
- রাসুলের চেয়েও বড় নিয়ামত আর কি হতে পারে?
- আল্লাহ তাআলা রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর একটি অস্তিত্ব সবকিছুর পূর্বে সৃষ্টি করেছেন।
তা হলাে তার নূরের অস্তিত্ব। তিনি তাঁর নূরের অস্তিত্বের দিক থেকে সর্বপ্রথম সৃষ্টি হয়েছেন।
- যারা বলে আমরা পালন করি না তাদের এই দাবী অবান্তর।
- রওজা মুবারকের যে অংশটুকু রাসূলের দেহ মোবারকের সাথে লেগে আছে তা আরশে আজিম থেকেও শ্রেষ্ঠ।
- রাসুলকে কোন মাখলুকের সমতুল্য মনে করা কুফরী।
- রাসুলকে কোন মানুষের সাথে তুলনা করে খাটো করার চেষ্টা করাও কুফরী।
- তাঁর ইলমের সাথে কোন মাখলুকের ইলমকে যে তুলনা করবে কিংবা অভিশপ্ত শয়তানকে (নাউজুবিল্লাহ) (যদি) রাসুল (ﷺ) এর থেকে বড় আলেম বলে এ ধরনের ব্যক্তি কাফির ও অভিশপ্ত।
৪) এমন ব্যক্তিই আবার এক পৃষ্ঠায় মানি বলে, অপর পৃষ্ঠায় তার সেই মতবাদের বিরোদ্ধে শত শত যুক্তির বুলেট ছুঁড়ে দিয়েছে।
৫) বারবার একি কথা এতবার পুনরাবৃত্তি করেছে যে, আপনে অতিষ্ট হয়ে যাবেন।
৬) যুক্তি দেখাতে অনেক বেয়াদবীও করেছেঃ
- ঈদে মিলাদুন্নবী (ﷺ) উপলক্ষে মসজিদকে হিন্দুদের প্রথার ন্যায় সুসজ্জিত করা হয়। এমনভাবে সাজানো হয়, যেমন হিন্দুদের বিবাহোত্তর বাসরঘর সাজিয়ে থাকে (নাউজুবিল্লাহ)
- সকলে সম্মিলিত ভাবে দোয়ার জন্য এই দিনকে নির্ধারণের কোন যৌক্তিকতা আছে কি?
- এটা জনৈক বাদশার আবিষ্কার, তিনি খ্রিষ্টানদের বিপরীতে চিন্তা করলেন, তারা যেমন বড়দিনে উৎসব পালন করে, আলোকসজ্জা করে।
- ঈদে মিলাদুন্নবী (ﷺ) নবুওয়াতে অংশীদারিত্বের শামিল।
৭) অবশেষে, তার যুক্তির ভান্ডার আর বেয়াদবীর ইতিহাস গুলো নিয়ে হতাশ হয়ে যাবেন, তখন একটা কথাই মনে হবে শয়তান তাকে বেয়াদবীমূলক যুক্তিগুলো লিখতে সাহায্য করেছিল।
ঈদে মীলাদুন্নবী (ﷺ) এর পক্ষে বিস্তারিতঃ
আশরাফ আলী থানভী রচিত "শরীয়তের দৃষ্টিতে ঈদে মীলাদুন্নবী (ﷺ) কিতাবের ভাষ্য মিলাদুন্নবীর পক্ষে অভিমত সমূহঃ
-----------------
পৃষ্ঠা নং ৩৬ :
-----------------
ইলাহী— যার মাধ্যমে পরকালীন মুক্তি পাওয়া যাবে, জান্নাত লাভ হবে, দুনিয়া ও আখিরাতের সফলতা অর্জিত হবে এবং যা রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর মাধ্যমে আমরা অর্জন করতে পেরেছি, তা আজ আলােচনার বিষয়বস্তুই থাকে না। মানুষ তা সম্পূর্ণই ছেড়ে দেয়। অথচ এ বিষয়গুলাে
আলােচনা করা বেশি প্রয়ােজন। কারণ, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর আবির্ভাবের বরকত ও কল্যাণ তাে সুস্পষ্ট। তাঁর "নূরের" ওসীলাতেই সমগ্র বিশ্বজগত অস্তিত্ব লাভ করেছে। পক্ষান্তরে ঈমান ও আমলে সালেহ্-এর কল্যাণ কিয়ামত দিবসে এবং জান্নাতে প্রকাশিত হবে। আর দুনিয়ায় এতদুভয়ের প্রতি মানুষ চরম উদাসীন। তাই এ বিষয়গুলাে আলােচনা করাই অধিক যুক্তিযুক্ত। রাসূলুল্লাহ ﷺ এর আবির্ভাবের নিদর্শন তাে এই যে, তাঁর ওসীয়লায় আমরা দুনিয়ায় অস্তিত্ব লাভ করেছি।
শিরোনামঃ রাসূলুল্লাহ (ﷺ)এর আগমন অনেক বিরাট নিয়ামতঃ
সন্দেহ নেই যে, আল্লাহ তা'আলার প্রতিটি নি'আমত শােকর ও কৃতজ্ঞতার দাবি রাখে।
বিশেষতঃ যদি তা বড় কোন নি'আমত হয়। উপরন্তু যদি তা দ্বীনী নি'আমত হয়, আবার দ্বীনী নি'আমতসমূহের মধ্যেও সর্বশ্রেষ্ঠ নি'আমত। তন্মধ্যেও যদি এমন বিশেষ নি'আমত হয়, যা সমস্ত দ্বীনী ও দুনিয়াবী নি'আমতের উৎস। এ নিআমত হলাে, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর শুভ আগমন। কারণ, জাগতিক সকল নিআমতের উৎসও তিনিই। শুধু মুসলমানদেরই জন্য নয়; বরং সমগ্র বিশ্বজগতের জন্য। যেমন আল্লাহ তা'আলা ইরশাদ করেন,
“হে মুহাম্মাদ (ﷺ)! আমি আপনাকে সমগ্র বিশ্বজগতের জন্য রহমতস্বরূপ প্রেরণ করেছি।” (সূরা আম্বিয়া ১০৭)
এর থেকে সুস্পষ্ট হয়ে গেলাে যে, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর আগমন প্রতিটি বস্তুর জন্য রহমতস্বরূপ; চাই তা রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর যুগের পূর্বের হােক বা পরের হােক। কারণ, আল্লাহ তাআলা রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর একটি অস্তিত্ব সবকিছুর পূর্বে সৃষ্টি করেছেন।
তা হলাে তার নূরের অস্তিত্ব।
-----------------
পৃষ্ঠা নং ৩৭ঃ
-----------------
তিনি তাঁর নূরের অস্তিত্বের দিক থেকে সর্বপ্রথম সৃষ্টি হয়েছেন।
এ উম্মতের জন্য সৌভাগ্য যে, উক্ত নূর দৈহিক তিতে রূপান্তরিত হয়ে গােটা বিশ্বজাহানকে আলােকিত করে দিয়েছে।
সুতরাং, রাসলুল্লাহ (ﷺ) সমগ্র বিশ্বজগতের জন্য রহমত এবং তার আগমন সর্বশ্রেষ্ঠ নি'আমত হওয়া প্রমাণ ও যুক্তির নিরিখে সুপ্রমাণিত। যখন রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর অস্তিত্ব সকল নি'য়ামতের উৎস। আর যে কোন নি'আমতের ওপর কৃতজ্ঞতা আদায় ও আনন্দ প্রকাশের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। যেমন,
আল্লাহ তা'আলা ইরশাদ করেছেনঃ
অর্থাৎ, (হে রাসূল ﷺ !) আপনি বলে দিন, তারা যেন শুধু আল্লাহর অনুগ্রহ ও দয়ার ওপর আনন্দিত হয়। কারণ, তা দুনিয়া ও দুনিয়ার সবকিছুর চেয়ে উত্তম।
এ আয়াতে আদেশসূচক ক্রিয়াপদ বিদ্যমান। তাতে আনন্দ প্রকাশের নির্দেশ রয়েছে। সুতরাং এ আনন্দ প্রকাশের ওপর কে নিষেধাজ্ঞা আরােপ করতে পারে? এমন কোন মুসলমান আছে, যে রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর আগমণের ওপর আনন্দিত হবে না কিংবা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করবে না?”
আয়াতের পূর্বাপর অবস্থার আলােকে যদিও প্রতীয়মান হয় যে, তাতে বিদ্যমান "রহমত" ও "ফজল" শব্দদ্বয়ের অর্থ হলাে কুরআনুল কারীম'। কিন্তু যদি এমন ব্যাপক অর্থ উদ্দেশ্য করা হয় যে ব্যাপক অর্থের একটি অংশ কুরআনুল কারীম, তাহলে তা অধিক সমীচীন হবে। উক্ত ব্যাপক অর্থ হলাে, "ফজল" ও "রহমত" দ্বারা রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর আগমন উদ্দেশ্য।
এ ব্যাখ্যা অনুযায়ী দ্বীনী ও দুনিয়াবী সমস্ত নি'আমত এর অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাবে। (কারণ, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর স্বত্ত্বা সর্বপ্রকার নি'আমত, অনুগ্রহ ও রহমতের মূল উৎস । আয়াতের এ ব্যাখ্যাটি অন্য সব ব্যাখ্যাকে অন্তর্ভুক্ত করবে। এ ব্যাখ্যার ভিত্তিতে আয়াতের সারকথা এই যে, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর সত্তার ওপর, চাই তা তার নূরের সত্তা হােক কিংবা বাহ্যিক অবয়বগত হােক, আনন্দিত হওয়া আবশ্যক। কারণ, 'রাসুলুল্লাহ (ﷺ) আমাদের জন্য সমস্ত নি‘আমতের মাধ্যম। আমরা যে দু'বেলা আহার লাভ করছি, সুস্থ-সবল থাকছি এবং আমাদের যাবতীয় ইলম ও জ্ঞান সবই রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর উসীলায়। সকল অনুগ্রহ ও রহমতের আঁধার হলেন হুযূর পাক (ﷺ) এর সত্তা। সুতরাং এমন বরকতপূর্ণ সত্তার আগমনে যতই আনন্দ প্রকাশ করা হোক না কেন, তা যথেষ্ট নয়। মোটকথা, উল্লেখিত আয়াত দ্বারা প্রমাণিত হয়ে গেল যে, এ মহান নি'য়ামতের উপর আনন্দিত হওয়া অতি আবশ্যক।
[পৃষ্ঠা নং ৩৬,৩৭,৩৮ এর ভাষ্য সমাপ্ত]
-----------------
পৃষ্ঠা নং ৪০ :
-----------------
"আমাদের বুযুর্গানে দ্বীন সম্পর্কে এমন ধারণা করা যে, তারা রাসূলুল্লাহ (ﷺ) জন্মবৃত্তান্ত আলােচনা কিংবা তার আগমনে আনন্দ প্রকাশ করতে বাধা দেন, এটা সম্পূর্ণ অপবাদ ও মিথ্যা আরােপ ব্যতীত কিছুই নয়। আল্লাহ মাফ করুন। আমরা কিছুতেই বাধা প্রদান করি না। বরং বলি যে, প্রতিটি কাজের একটি সুনির্দিষ্ট নিয়ম রয়েছে। যদি তা উক্ত নিয়ম অনুযায়ী করা হয়, তবেই গ্রহণযােগ্য হবে। অন্যথা তা অগ্রহণযােগ্য ও নিষিদ্ধ গণ্য হবে।
------------------
রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর পবিত্র জন্মবৃত্তান্ত আলােচনা অবশ্যই ইবাদত। কিন্তু দেখতে হবে যে, ইসলামী আইনজ্ঞগণ- অর্থাৎ, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) ও সাহাবায়ে কেরাম, যাদের অনুসরণ করা আমাদের ওপর আবশ্যক, তারা এ ইবাদত কিভাবে করেছেন। যদি তারা প্রচলিত পদ্ধতিতে করে থাকেন, তাহলে তা থেকে নিষেধ করার সাধ্য কার আছে? আর যদি এ পদ্ধতিতে না করে থাকেন, তাহলে অবশ্যই তা নিষিদ্ধ হওয়ার যােগ্য।
এবার বলুন, আমরা কিভাবে রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর জীবন ও জন্মবৃত্তান্ত আলােচনায় বাধা দানকারী হলাম?
শিরোনামঃ রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর শুভাগমনে আমরা অধিক আনন্দ প্রকাশ করিঃ
সূক্ষ্ম দৃষ্টিতে লক্ষ্য করলে দেখা যাবে, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর নবুওয়াতের ওপর আনন্দ প্রকাশের নির্দেশ আমরা অধিক পালন করি। কারণ, প্রচলিত ঈদে মীলাদুন্নবী পালনকারীগণ গােটা বছরে একবারই শুধু আনন্দ প্রকাশ করে। অন্য সময় তাদের আনন্দ শেষ হয়ে যায়। আর আমরা সদা আনন্দিত থাকি।"
[আশরাফ আলী থানভী রচিত "শরীয়তের দৃষ্টিতে ঈদে মীলাদুন্নবী (ﷺ) " পৃষ্টা নং ৪০ সমাপ্ত হল]
-----------------
পৃষ্ঠা নং ৮০ :
-----------------
শিরোনামঃ বারই রবিউল আউয়াল সােমবার রােযা রাখাঃ
রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর পক্ষ থেকে যে সব কাজের অনুমতি রয়েছে, তা অবশ্যই করা উচিত। যেমন, তিনি তাঁর জন্মগ্রহণের দিন রােযা রেখেছেন এবং বলেছেন—
"এটি এমন দিন, যে দিন আমি জন্মগ্রহণ করেছি।"
সুতরাং আমাদের জন্যও উক্ত দিন (সােমবার) রােযা রাখা সুন্নাত। তা ছাড়া সােমবার দিবসে আল্লাহ তা'আলার সামনে বান্দার আমলনামা পেশ করা হয়। ফলে এ উভয়ের সমষ্টি রােযা রাখার কারণ হতে পারে। আর যদি শুধু এককভাবে রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর জন্মগ্রহণকেই কারণ বলা হয়, তাহলেও দোষের কিছু নেই। তবে শুধু ততটুকু করারই অনুমতি থাকবে, যা রাসূলুল্লাহ (ﷺ) থেকে প্রমাণিত রয়েছে।
আবু লাহাব-এর ঘটনা দ্বারা যুক্তি পেশ ও তার জবাব :
বিদ্আতপন্থীরা আরেকটি যুক্তি পেশ করতে পারে যে, আবু লাহাব রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর জন্মগ্রহণের সংবাদ শুনে আনন্দের অতিশয্যে একটি কৃতদাসী মুক্ত করে দিয়েছিলাে । এ কারণে তার ওপর শাস্তি লাঘব করে দেয়া হয়েছিল। এর দ্বারা প্রমাণিত হয়, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর জন্মগ্রহণের ওপর আনন্দ প্রকাশ জায়েয ও বরকত লাভের উপায়। তার কথাগুলাে পড়ে এ যুক্তির জবাবও সুস্পষ্ট। আমরা নিছক আনন্দিত হতে নিষেধ করি না। আনন্দ তাে আমরা প্রতি মুহূর্তেই বােধ করি। আমাদের বক্তব্য তাে সেই বিশেষ পদ্ধতি সম্পর্কে, যা নিজেরা আবিষ্কার করে রেখেছে।
-----------------
পৃষ্ঠা নং ৮৮ :
-----------------
রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর রওযা শরীফ আরশে ইলাহী থেকে শ্রেষ্ঠ |
বিদগ্ধ আলিমগণ সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ করেছেন যে, পৃথিবীর সেই ভূখণ্ড, যেখানে রাসূলুল্লাহ (ﷺ) শায়িত রয়েছেন আরশ থেকেও শ্রেষ্ঠ। কারণ, আরশের ওপর আল্লাহ তা'আলা (নাউযুবিল্লাহ) উপবিষ্ট নন। যদি উপবিষ্ট থাকতেন, তাহলে নিঃসন্দেহে উক্ত স্থান সর্বাধিক শ্রেষ্ঠ হতাে। কিন্তু আল্লাহ তাআলা নিরাকার। স্থানের সীমাবদ্ধতা থেকে তিনি পবিত্র ।
-----------------
পৃষ্ঠা নং ৮৯ :
-----------------
আমাদের আক্বীদা বা বিশ্বাসঃ
আমাদের ও আমাদের মহান পূর্বসূরীগণের আক্বীদা বা বিশ্বাস এই যে, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) কে কোন মাখলুকের সমতুল্য মনে করা সুস্পষ্ট কুফরী। নিঃসন্দেহে দু’জাহানের সরদার মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ (ﷺ) সমস্ত সৃষ্টির মধ্যে সর্বাধিক শ্রেষ্ঠত্বের অধিকারী এবং সর্বশ্রেষ্ঠ জ্ঞানী। যে ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর ইলমের সাথে কোন মাখলুকের ইলমকে তুলনা করবে কিংবা বলবে, (নাউযুবিল্লাহ) অভিশপ্ত ইবলীস, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) থেকে বড় আলিম, তাহলে এ ধরনের ব্যক্তি কাফির ও অভিশপ্ত এমন ব্যক্তির ওপর আল্লাহ তা'আলার অভিসম্পাত বর্ষিত হােক।
-----------------
৯০ নং পৃষ্ঠাঃ
-----------------
শিরোনামঃ রাসূলুল্লাহ (ﷺ) কে কোন মানুষের সাথে তুলনা করাঃ
রাসূলুল্লাহ (ﷺ) কে কোন মানুষের সাথে তুলনা করে খাটো করার চেষ্টা করা যেমন কুফরী তেমনি তাঁকে শানে রিসালাত ও আবদিয়াতের চেয়ে ঊর্ধ্বের মনে করাও কুফরী।............।
রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর আগমন প্রতিটি বস্তুর জন্য রহমতস্বরূপ, চাই তা মানুষ হােক বা অন্য প্রাণী হােক, মুসলিম হােক বা অমুসলিম হােক। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) সমগ্র বিশ্বজাহানের জন্য রহমতস্বরূপ। এমন কোন্ মুসলমান আছে, যে রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর শুভাগমনে আনন্দিত নয় কিংবা কৃতজ্ঞ নয়? এটা আমাদের ওপর নিছক অপবাদ ও মিথ্যা অভিযােগ ব্যতীত কিছুই নয়।
রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর জীবন চরিত আলােচনা ও তার আগমনে আনন্দিত হওয়া থেকে যারা নিষেধ করে, তাদের থেকে আল্লাহ আমাদেরকে হেফাজত করুন। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর জীবনবৃত্তান্ত। আলােচনা তাে আমাদের ঈমানের অংশ |
-----------------
পৃষ্ঠা নং ৭০ :
-----------------
শিরোনামঃ রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর জন্মদিবস পালন তাঁর প্রতি অবমাননাঃ
কেউ বলতে পারে, আমরা রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর জন্মদিবস হিসেবে উৎসব পালন করি। আমি বলবাে, এরূপ যারা করে, তারা বস্তুত রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর শানে চরম বে-আদবী করে। সম্মান ও মর্যাদার সর্বোচ্চ শিখরে সমাসীন রাসূলুল্লাহ (ﷺ) কে কি দুনিয়ার রাজা-বাদশাহদের সাথে, যাদের তার সাথে কোন তুলনাই হয় না, এভাবে তুলনা করা যায় যে, তাঁর জন্মদিনের আনন্দের জন্য দুনিয়ার অতি নগণ্য পন্থা অবলম্বন করা হবে, যা রাজা-বাদশাহদের জন্য করা হয়?
[নিজেই বিরোদ্ধে দিল ফতোয়া। দেখুন সে একথা বলেছে যে, জন্মদিন উপলক্ষে তারা সারা বছর আনন্দিত হয় এবং তা অত্যাবশ্যক। পূর্বে এর যথেষ্ঠ প্রমাণ দিয়েছি। আবার নিজেই বলছে অবমাননা। রাসূল (ﷺ) এর অবমাননা হল কুফরী, তাহলে কি তার খুশির নমুনা এই ছিল? নাকি অবমাননা মনে করে বলে মিলাদুন্নবী পালন করে না? কিন্তু সে বারবার বলেছে যারা বলে আমরা পালন করি না তারা অপবাদ দিল। তারা কেমন পালন করে তারা নিজেরাই জানে। এর প্রমাণ দেখাই যায় তাদের শিষ্য ও অনুসারীগণ তাকেও মানে না। সুষ্পষ্টভাবে মিলাদুন্নবীর (ﷺ) বিরোধীতা করে যায়। উক্ত বইয়ে থানভী সাহেব যে এমন শত শত যুক্ত দিয়েছেন যা তার নিজের বিরুদ্ধেই যায়]
শয়তান চারবার উচ্চস্বরে কেঁদেছিল
____________________
শয়তান চারবার উচ্চস্বরে কেঁদেছিল
হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বিলাদত শরীফে সব চাইতে বেশি কষ্ট পেয়েছিলো কে জানেন? সব চাইতে বেশি কষ্ট পেয়েছিলো ইবলিশ শয়তান । সে এতোটাই কষ্ট পেয়েছিল যে, কষ্টে সে রীতিমত কান্না করছে।
حكى السهيلي عن تفسير بقي بن مخلد الحافظ : أن إبليس رن أربع رنات; حين لعن ، وحين أهبط ، وحين ولد رسول الله صلى الله عليه وسلم ، وحين أنزلت الفاتحة
“শয়তান চার বার উচ্চস্বরে কেঁদেছিল ,প্রথম বার যখন আল্লাহ তায়ালা তাকে অভিশপ্ত আখ্যা দেন; দ্বিতীয়বার যখন তাকে বেহেস্ত থেকে বের করে দেয়া হয়। তৃতীয়বার, যখন হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বেলাদত শরীফ হয়। এবং চতুর্থবার যখন সূরা ফাতেহা নাযেল হয়।”
(দলীল: আল-বেদায়া ওয়ান নেহায়া-২য় খণ্ড ২৬৬, ২৬৭,পৃষ্ঠা
লেখক: আবুল ফিদা হাফিজ ইবনে কাছির আদ দামেষ্কী রহমতুল্লাহি আলাইহি।
প্রকাশনা: মাকতাবাতুল মা’রেফা, বয়রুত লেবানন।)
মীলাদুন্নবী (ﷺ) খুশিতে স্বীয় বাদীকে মুক্ত করায় আবু লাহাবের আযাব লাঘব
____________________
মীলাদুন্নবী (ﷺ) খুশিতে স্বীয় বাদীকে মুক্ত করায় আবু লাহাবের আযাব লাঘবঃ
সহিহ হাদিসে মিলাদুন্নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) :
আমি মনে করি মিলাদুন্নবী এর সর্বোৎকৃষ্ট প্রমান এই হাদিস।
এখানে জেনে রাখা ভাল যেঃ
১.
শরীয়তের হুকুম এই যে,
ইমানহীন ব্যক্তির কঠোর সাধনার ইবাদতও জাহান্নামে দগ্ধ হবে অর্থাৎ ইমান ছাড়া আমলের কোন মূল্য হয় না।
২.
এই স্বপ্নের সত্যতা নিয়ে সমস্ত ইমামগণ ঐক্যমত পোষণ করেছেন।
৩.
ইমামগণের বক্তব্যের সারাংশ এই যেঃ
মীলাদুন্নবী (সা) উপলক্ষে খুশি হওয়ায় কাফির লাহাবও যদি ১টা দিন (সোমবার) আজাব লাঘব হয়ে থাকে, যার বিরোদ্ধে কিনা স্বয়ং আল্লাহ সুরা লাহাব নাজিল করেছেন। তাহলে চিন্তার বিষয় ইমানদারদের জন্য কত বড় পুরষ্কার থাকতে পারে তা আল্লাহই ভাল জানেন । - #SubhanAllah
♥ বুখারী শরীফে উল্লেখিত ঘটনাটি না বললেই নয়,
হযরত উরওয়া ইবনে জুবায়ের (রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু) বলেন,
সুহাইবাহ আবু লাহাবের দাসী ছিল। আবু লাহাব ওনার কাছে থেকে (রাসুল সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়াসাল্লাম) এর বেলাদাতের (অর্থাৎ মিলাদুন্নবীর ) সুসংবাদ প্রাপ্ত হয়ে (মিলাদুন্নবীর খুশিতে) কৃতদাসী সুহাইবাহ কে আযাদ করে দিয়েছিল।
যখন আবু লাহাব মৃত্যুবরণ করেছিল তখন (এক বছর পর) তার ঘনিষ্ঠদের কেউ (হযরত আব্বাস রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু) তাকে স্বপ্নে শোচনীয় অবস্থায় দেখে তার উদ্দেশ্যে বলেন,
“তোমার অবস্থা কেমন?”
- আবু লাহাব উত্তরে বলল, “তোমাদের নিকট থেকে আসার পর আমি কোন প্রকার শান্তি পাইনি, কেবল যে দিন (রাসুলুল্লাহ (দ.) জন্ম হওয়ার খুশিতে অর্থাৎ মিলাদুন্নবীর খুশিতে ) দাসী সুহাইবাকে (তর্জনী ও মধ্যমা দু’টি আঙ্গুলের ইশারায়) আযাদ করে দিয়েছিলাম, ঐ কারনে (প্রতি সোমবার) আংগুল দুটির মধ্যে কিছু পানি জমে আমি ঐ পানি পান করে থাকি ও প্রতি সোমবার (জাহান্নামের কঠিন) আযাবকে হাল্কাবোধ করে থাকি।”
Reference :-
♦Masnad Ahmed : Hadith 25953 under the heading of لو كانت تحل لي لما تزوجتها قد أرضعتني وأباها ثويبة مولاة بني هاشم فلا تعرضن علي أخواتكن ولا بناتكن and again in Hadith 26865 with matan of
ابنة أخي من الرضاعة وأرضعتني وأبا سلمة ثويبة فلا تعرضن علي بناتكن ولا أخواتكن
♦Al-Sunnan Al Kubra (li Nisai): Hadith 5394/5395
♦Al Nisai’ al-Sughra : Hadith Nob 3287/3284/3285/3286
♦Sunnan Ibne Majah: Hadith 1939 Under the heading of ( ابنة أخي من الرضاعة أرضعتني وأباها ثويبة فلا تعرضن علي أخواتكن ولا بناتكن)
♦Sahih Muslim: Hadith Nob.1451(2634), 1451(2635) under the same matan
♦Sahih ibne Hibban: Hadith Nob, 4110 (4199), 4111(4200), the matan of hadith is إن زينب تحرم علي وإنها في حجري وأرضعتني وإياها ثويبة فلا تعرضن علي بناتكن ولا أخواتكن ولا عماتكن ولا خالاتكن ولا أمهاتكن
اطراف الحدیث
♦Sahih al Bukhari Sharif : 2644/2645/2646/3105/4796/5099/5100/5101/5103/5106/5107/5124/5133/5239/5372/6156/
♦Sunan Kubra by Imam Baihaqi, The Book of Nikah.
♦Jame Ul Ahadith Wal Maraseel, Masaneed us Sahabah, Hadith no. 43545
♦Kanzul 'Ummal Vol 6, Hadith no. 15725
♦Musannaf Abdul Razzaq, Vol 7, Hadith no. 13546.
♦Imam A’aini (ra) in his book “Umdatul Qari, Vol: 14,Page. No. 45;
♦Imam Ibn Kathir in “Seerat un Nabawiyyah” (vol. 1 pg 224)
♦Sharh Zurqani, Vol 1, Pg. no. 261
♦Subul ul Huda war Rashad Vol 1 Pg. no. 367.
♦Imam Ibn Asqalani in "Fath al bari"
♦ibn al-Qayyim : [Tuhfat al-Mawdud bi Ahkam al-Mawlud, p.19]
♦Ibn 'Abd al-Wahhab, M., Mukhtasar Sirat ar-Rasul, 'Milad an-Nabi'
সহিহ বুখারী শরীফের ২য় জিলদের ৭৬৪ পৃষ্ঠায় লিখিত আছে-
ﻗﺎﻝ ﻋﺮﻭﺓ ﻭﺛﻮﻳﺒﺔ ﻣﻮﻻﺓ ﻻﺑﻰ ﻟﻬﺐ ﻛﺎﻥ ﺍﺑﻮﻟﻬﺐ ﺍﻋﺘﻘﻬﺎ ﻓﺎﺭﺿﻌﺖ ﺍﻟﻨﺒﻰ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ﻓﻠﻤﺎ ﻣﺎﺕ
ﺍﺑﻮﻟﻬﺐ ﺍﺭﻳﻪ ﺑﻌﺾ ﺍﻫﻠﻪ ﺑﺸﺮ ﺣﻴﺒﺔ ﻗﺎﻝ ﻟﻪ ﻣﺎﺫﺍ ﻟﻘﻴﺖ ﻗﺎﻝ ﺍﺑﻮﻟﻬﺐ ﻟﻢ ﺍﻟﻖ ﺑﻌﺪﻛﻢ ﻏﻴﺮ ﺍﻧﻰ ﺳﻘﻴﺖ ﻓﻰ ﻫﺬﻩ
ﺑﻌﺘﺎﻗﺘﻰ ﺛﻮﻳﺒﺔ ০
অর্থাৎ হযরত উরওয়া (রাঃ) বলেন, ছোয়াইয়াবা আবু লাহাবের বাদী ছিলেন। আবু লাহাব (হুজুর সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লামের মিলাদ শরীফের খুশিতে) তার
বাদীকে আজাদ করে দিয়েছিল। তিনি আল্লাহর
হাবিবকে দুধ পান করিয়েছিলেন। আবু লাহাবের মৃত্যুর (এক বৎসর) পর, তার কোন আহল (হযরত আব্বাস (রাঃ) স্বপ্নে দেখেছিলেন, তার অবস্থা খুবই শোচনীয়।
তিনি তাকে জিজ্ঞেস করলেন, মৃত্যুর পর তোমার
অবস্থা কেমন? আবু লাহাব উত্তরে বলল, আপনাদের নিকট থেকে আসার পর আমি কোন শান্তি পাই নাই, শুধুমাত্র আমি যে (আল্লাহর হাবিবের জন্মসংবাদ বা মিলাদ শরীফের খুশিতে) ছোয়াইবাকে (তর্জ্জনী ও
মধ্যমা অঙ্গুলি দ্বারা ঈশারা করত) আজাদ করে দিয়েছিলাম, সে কারণে (প্রতি সোমবারে অঙ্গুলিদ্বয়ের অভ্যন্তরে কিছু পানি জমে থাকে) আামি পানি চুষে প্রতি সোমবারে আজাব নিরসন করে থাকি।
উল্লেখ্য যে, আল্লামা ইবনে হজর আসকালানী (রাঃ) এর
লিখিত ‘ফতহুল বারী শরহে বুখারী’ ৭ম জিলদের ১২৫
পৃষ্ঠা অনুকরণে উপরোক্ত হাদিস শরীফের সারাংশ
লেখা হয়েছে।
উক্ত হাদিস শরীফের আলোকে ইমাম ইবনুজ জাওযী (রাঃ)বলেন-
ﻗﺎﻝ ﺍﺑﻦ ﺍﻟﺠﺰﺭﻯ ﻓﺎﺫﺍ ﻛﺎﻥ ﻫﺬﺍ ﺍﺑﻮﺍﻟﻬﺐ ﺍﻟﻜﺎﻓﺮ ﺍﻟﺬﻯ ﻧﺰﻝ ﺍﻟﻘﺮﺍﻥ ﺑﺬﻣﻪ ﺟﻮﺯﻯ ﻓﻰ ﺍﻟﻨﺎﺭ ﺑﻔﺮﺣﻪ ﻟﻴﻠﺔ ﻣﻮﻟﺪ
ﺍﻟﻨﺒﻰ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ﺑﻪ ﻓﻤﺎ ﺣﺎﻝ ﺍﻟﻤﺴﻠﻢ ﺍﻟﻤﺆﺣﺪ ﻣﻦ ﺍﻣﺘﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﺍﻟﺴﻼﻡ ﺍﻟﺬﻯ ﻳﺴﺮ ﺑﻤﻮﻟﺪﻩ ﻭﻳﺒﺬﻝ
ﻣﺎﺗﺼﻞ ﺍﻟﻴﻪ ﻗﺪﺭﺗﻪ ﻓﻰ ﻣﺤﺒﺘﻪ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ﻟﻌﻤﺮﻯ ﺍﻧﻤﺎ ﻳﻜﻮﻥ ﺟﺰﺍﺅﻩ ﻣﻦ ﺍﻟﻠﻪ ﺍﻟﻜﺮﻳﻢ ﺍﻥ ﻳﺪﺧﻠﻪ
ﺑﻔﻀﻠﻪ ﺍﻟﻌﻤﻴﻢ ﺟﻨﺎﺕ ﺍﻟﻨﻌﻴﻢ ০ ( ﻣﻮﺍﻫﺐ ﺍﻟﻠﺪﻧﻴﻪ ﺝ ১ ০ ﺹ২৭ ﺯﺭﻗﺎﻧﻰ ﺝ ০১ ﺹ১৩৯ )
‘ইমাম ইবনে জাওযী (রাঃ) বলেন যে কাফের আবু লাহাবের দুর্নামে কোরআন নাজিল হয়েছে এবং যার জন্য জাহান্নাম নির্ধারিত, সে আবু লাহাবও যদি হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের মিলাদুন্নবীর উপর
খুশি হওয়াতে সুফল পেল, তাহলে তাঁর উম্মতের
মধ্যে যে একত্ববাদী মুসলমান এবং তাঁর মিলাদুন্নবীতে আনন্দিত হয় তাঁর মহব্বতে যথাসাধ্য দান করে,
তার অবস্থা কী হবে? আমি কসম করে বলছি যে, নিশ্চয়ই আল্লাহ তা’য়ালার পক্ষ হতে তার বিনিময় এ হবে, তিনি সর্বব্যাপী অনুগ্রহ দ্বারা তাকে জান্নাতুন
নাঈমে প্রবেশ করাবেন।’ (মাওয়াহিবে লাদুনিয়া ১ম জিল্দ ২৭ পৃঃ জুরকানী ১ম জিল্দ ১৩৭ পৃঃ)
উপরোক্ত বর্ণিত হাদিস প্রসঙ্গে আল্লামা শেখ আব্দুল হক মুহাদ্দিসে দেহলভী (রাঃ) তদীয় ‘মাদারিজুন নবুয়ত’ নামক কিতাবে বলেন-
ﺟﻨﺎﻧﺠﻪ ﺩﺭ ﺣﺪﻳﺚ ﺍﻣﺪﻩ ﺍﺳﺖ ﻭﺩﺭﻳﻨﺠﺎ ﺳﻨﺪﺍﺳﺖ ﻣﺮﺍﻫﻞ ﻣﻮﺍﻟﻴﺪ ﺭﺍﻛﻪ ﺩﺭﺷﺐ ﻣﻴﻼﺩ ﺍﻧﺤﻀﺮﺕ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ
ﻭﺳﻠﻢ ﺳﺮﻭﺭ ﻛﻨﻨﺪ ﻭﺑﺬﻝ ﺍﻣﻮﺍﻝ ﻧﻤﺎﻳﻨﺪ ﻳﻌﻨﻰ ﺍﺑﻮﻟﻬﺐ ﻛﻪ ﻛﺎﻓﺮ ﺑﻮﺩ ﻭﻗﺮﺍﻥ ﺑﻤﺬﻣﺖ ﻭﻯ ﻧﺎﺯﻝ ﺷﺪﻩ ﺟﻮﻥ
ﺑﺴﺮﻭﺭ ﺑﻤﻴﻼﺩ ﺍﻧﺤﻀﺮﺕ ﻭ ﺑﺬﻝ ﺷﻴﺮ ﺟﺎﺭﻳﻪ
ﻭﻯ ﺑﺠﻬﺔ ﺍﻧﺤﻀﺮﺕ ﺟﺰﺍ ﺩﺍﺩﻩ ﺷﺪ ﺗﺎﺣﺎﻝ ﻣﺴﻠﻤﺎﻥ ﻛﻪ ﻣﻤﻠﻮﺳﺖ ﺑﻤﺤﺒﺖ ﻭﺳﺮﻭﺭ ﻭﺑﺬﻝ ﻣﺎﻝ ﺩﺭ ﻃﺮﻳﻖ ﻭﻯ
ﺟﻪ ﺑﺎﺷﺪ ﻭﻟﻴﻜﻦ ﺑﺎﻳﺪﻛﻪ ﺍﺯ ﺑﺪﻋﺘﻬﺎ ﻛﻪ ﻋﻮﺍﻡ ﺍﺣﺪﺍﺙ ﻛﺮﺩﻩ ﺍﻧﺪﺍﺯ ﺗﻐﻨﻰ ﻭﺍﻻﺕ ﻣﺤﺮﻣﻪ ﻭ ﻣﻨﻜﺮﺍﺕ ﺧﺎﻟﻰ
ﺑﺎﺷﺪ ০ ( ﻣﺪﺍﺭﺝ ﺍﻟﻨﺒﻮﺕ ﺝ ২ ০ ﺹ২৬ )
অর্থাৎ উস্তাযুল মুহাদ্দিসিন আল্লামা শেখ আব্দুল হক
মেহাদ্দিসে দেহলভী (রাঃ) বলেন- উক্ত ঘটনা মিলাদ শরীফ পাঠকারীদের জন্য একটি বৃহত্তম দলিল, যারা মিলাদুন্নবীর রাতে আনন্দ উৎসব ও দান খয়ারাত করে থাকেন। অর্থাৎ আবু লাহাব কাফের এবং তার দুর্নামে কোরআন নাজিল হওয়া সত্বেও নবী পাক সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লামের জন্মের (মিলাদ শরীফের
সংবাদে আনন্দিত হয়ে নূরবীকে দুধপান করানোর
নিমিত্তে বাদী আজাদ করে দেয়, সে কারণে তাকে পুরস্কার দেয়া হল প্রতি সোমবারে আজাব নিরসন করা হল এখন যার ঈমানদার নবীপ্রেমিক (মিলাদুন্নবীর রাতে) আনন্দ উৎসব ও দান খয়রাত করেন তাঁদের পুরস্কার কীরূপ হবে? অবশ্য সে মিলাদকে শরীফে গান ও হারাম বাদ্যযন্ত্র হতে পবিত্র রাখতে হবে। (মাদারিজুন নবুয়ত ২য় খণ্ড ২৬ পৃঃ)
উল্লেখ্য যে, স্বপ্ন শরিয়তের দৃষ্টিতে দলিলরূপে গণ্য
হতে পারে না, এমনকি কাফেরদের কোন আমলই আল্লাহর দরবারে গৃহীত হয় না, ইহা অতীব সত্য। কিন্তু এখানে একমাত্র রাসূলে পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সঙ্গে সম্পর্ক হওয়ার দরুণ দলিলরূপে গণ্য হল। তা শুধুমাত্র নবীরজন্য খাস।
যেমন ফতহুল বারী শরহে বুখারী ৯ম জিল্দের ১৫৪ পৃষ্ঠায় বর্ণিত রয়েছে-
ﻓﻴﺤﺘﻤﻞ ﺍﻥ ﻳﻜﻮﻥ ﻣﺎﻳﺘﻌﻠﻖ ﺑﺎﻟﻨﺒﻰ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ﻣﺨﺼﻮﺻﺎ ﻣﻦ ﺫﺍﻟﻚ ﺑﺪﻟﻴﻞ ﻗﺼﺔ ﺍﺑﻰ ﻃﺎﻟﺐ ﻛﻤﺎ
ﺗﻘﺪﻡ ﺍﻧﻪ ﺧﻔﻒ ﻋﻨﻪ ০
ভাবার্থ- আল্লামা ইবনে হজর আসকালানী (রাঃ) ফতহুল
বারী শরহে বুখারী শরীফের মধ্যে এ মাসআলা নিয়ে বিশদ আলোচনা করে বলেন যদিও কোন স্বপ্ন শরিয়তেরদলিলরূপে গণ্য হয় না, কিন্তু এখানে হযরত আব্বাস (রাঃ) এর স্বপ্ন আবু লাহাবের আজাব লাঘব হওয়ার ব্যাপারে কেবলমাত্র নবী করিম সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লামের সঙ্গে সম্পর্কিত হওয়ার দরুণ
দলিলরূপে গণ্য হতে পারে। অন্য কারো স্বপ্ন শরিয়তের
দলিলরূপে গণ্য হবে না। তারপর আবু তালেবের আজাব কম হওয়ার প্রসঙ্গ দলিলরূপে উল্লেখ করেছেন।
মুসলিম শরীফের ১ম জিল্দের ১১৫ পৃষ্ঠায় বর্ণিত আছে- আবু তালিব কাফের, আজীবন নূরনবী সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লামের লালন-পালন ও সাহায্য করার দরুণ স্বয়ং আল্লাহর হাবিব তার আজাব খুব কম
হচ্ছে এবং হবে বলে সুসংবাদ প্রদান করেছেন।
হানাফী মাযহাবের বিখ্যাত ফতোয়ার কিতাব ‘রদ্দুল মুহতার আলা দুররুল মুখতার’ কিতাবে বর্ণিত আছে
____________________
হানাফী মাযহাবের বিখ্যাত ফতোয়ার কিতাব ‘রদ্দুল মুহতার আলা দুররুল মুখতার’ কিতাবে বর্ণিত আছে,
أَنَّ أَفْضَلَ اللَّيَالِي لَيْلَةُ مَوْلِدِهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ ثُمَّ لَيْلَةُ الْقَدْرِ ، ثُمَّ لَيْلَةُ الْإِسْرَاءِ وَالْمِعْرَاجِ ، ثُمَّ لَيْلَةُ عَرَفَةَ ، ثُمَّ لَيْلَةُ الْجُمُعَةِ ، ثُمَّ لَيْلَةُ النِّصْفِ مِنْ شَعْبَانَ ، ثُمَّ لَيْلَةُ الْعِيدِ
অর্থ: রাত সমূহের মধ্যে উত্তম রাত হচ্ছে পবিত্র মীলাদুন্নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের রাত, অতপর লাইলাতুল কদরের রাত, অতপর মিরাজ শরীফের রাত, অতপর আরাফার রাত, অতপর জুমুয়ার রাত, অতপর ১৫ শাবানের রাত, অতপর ঈদের রাত।”
[দলীল: রদ্দুল মুহতার আলা দুররুল মুখতার ৮/২৮৫ (শামেলা) , পুরাতন ছাপা ৫০৫ পৃষ্ঠা]
উপরোক্ত ফতোয়া থেকে যা বোঝা গেলো,
১) সকল রাতের মধ্যে শ্রেষ্ঠ রাত হচ্ছে পবিত্র মীলাদুন্নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের রাত।
২) অন্য সকল রাতের মর্যদা এই রাতে পরে।
৩) যারা বলে দুই ঈদা ছাড়া ঈদ নাই তাদের জ্ঞাতার্থে -ঈদের রাতের চাইতেও এ রাতের মর্যাদা বেশি।
সূতরাং আমাদের উচিত এ রাতের যথাযথ সম্মান দেয়া, এবং অত্যান্ত মর্যাদার সাথে পালন করা।
ইমাম তাহাবীর মতে ঈদে মিলাদুন্নবীর রাত সকল রাতের সেরা
____________________
ইমাম তাহাবীর মতে ঈদে মিলাদুন্নবীর রাত সকল রাতের সেরা
হানাফী মাযহাবের বিখ্যাত ইমাম হযরত ইমাম তাহাবী রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন পবিত্র মীলাদুন্নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের রাতের মর্যাদা সকল রাতের চাইতে বেশি।
-----------------------------------------------------------------------
হানাফী মাযহাবের বিখ্যাত ইমাম হযরত ইমাম তাহাবী রহমতুল্লাহি আলাইহি (২২৯- ৩২১ হিজরী) তিনি বলেছেন,
ونقل الطحاوي عليه الرحمة في حواشي المختار عن بعض الشافعية أن أفضل الليالي ليلة مولده عليه الصلاة والسلام ثم ليلة القدر ثم ليلة الإسراء والمعراج ثم ليلة عرفة ثم ليلة الجمعة ثم ليلة النصف من شعبان ثم ليلة العيد
অর্থ: রাত সমূহের মধ্যে উত্তম রাত হচ্ছে পবিত্র মীলাদুন্নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের রাত, অতপর লাইলাতুল কদরের রাত, অতপর মিরাজ শরীফের রাত, অতপর আরাফার রাত, অতপর জুমুয়ার রাত, অতপর ১৫ শাবানের রাত, অতপর ঈদের রাত।”
(দলীল: স্ক্যান ক্যাপশন - তাফসীরে রুহুল মায়ানী ১৯/ ১৯৪, সূরা ক্বদরের তাফসীরে)
লক্ষ্যনীয় যে ইমাম তাহাবী রহমতুল্লাহি ১২০০ বছর আগের একজন জগৎবিখ্যাত ইমাম। সেই ইমাম তাহাবী রহতুল্লাহি আলাইহি তিনিও পবিত্র মীলাদুন্নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের ফযিলত সকল রাতের চাইতে বেশি সেটা বলে গেছেন। উক্ত কওল হানাফী মাযহাবের অন্যতম কিতাব “রদ্দুল মুহতার” কিতাবেও আছে। এতে যা বোঝা গেলো,
প্রথমত, হযরত ইমাম তাহাবী একজন মুজতাহিদ শ্রেনীর আলেম।
দ্বিতীয়ত, এটা একটা মাযহাবের মুস্তাহিদের বক্তব্য।
তৃতীয়ত, এটা ফিকাহের কিতাবেও আছে।
সূতরাং পবিত্র ঈদে মীলাদে হাবীবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের রাতের গুরুত্ব কতবেশি সেটা এখান থেকেই স্পষ্ট হলো। এরপরও যারা বিরোধীতা করবে আল্লাহ পাকের কাছে তাদের জন্য হিদায়েত কামনা করা ছাড়া আর কিছু করার নাই।
আমি আমার আন্মাজানের স্বপ্নে দেখা সেই নূর যা ওনার দেহ থেকে বের হয়ে শাম দেশের প্রাসাদসমুহকে আলোকিত করেছিল
____________________
আমি আমার আন্মাজানের স্বপ্নে দেখা সেই নূর যা ওনার দেহ থেকে বের হয়ে শাম দেশের প্রাসাদসমুহকে আলোকিত করেছিল।
🖋কৃতঃ মাসুম বিল্লাহ সানি
আল্লাহ পাক বলেন,
قال عيسي ابن مريم يبني اسراءيا اني رسول الله اليكم مصدقا لما بين يدي من التورة و مبشرا برسول ياتي من بعدي اسمه احمد
অর্থ :হযরত ঈসা আলাইহিস সালাম তিনি বলেন, হে বনী ইসরাঈল ! নিশ্চয়ই আমি তোমাদের নিকট মহান আল্লাহ পাক উনার রসূল হিসাবে প্রেরিত হয়েছি ! আমার পূর্ববর্তী তাওরাত শরীফের আমি সত্যায়নকারী এবং আমি এমন একজন রসূলের সুসংবাদ দানকারী। যিনি আমার পরে আগমন করবেন, উনার নাম মুবারক হচ্ছে আহমদ (ﷺ) !" (সূরা ছফ ৬)
সূরা ছাফ ৬ এর তফসীর :
উক্ত আয়াতের পরিপ্রেক্ষিতে স্বয়ং রাসূলুল্লাহ (ﷺ) নিজেই নিজের মীলদ শরীফ বর্ননা করেন।
🕋 ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল, ইমাম হাকিম, ইমাম আত-তাবারানী, ইমাম আল-বাজ্জার, ইমাম আল-বায়হাকী (رحمة الله) বর্ননা করেন,
হযরত ইরবায ইবনে সারিয়া (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত,
রাসূলুল্লাহ (ﷺ) ইরশাদ করেন,
"আমি আল্লাহর বান্দা ও শেষ নবী।আমি তখনো নবী ছিলাম যখন আদম (عليه السلام) মাটির অন্তর্গত ছিলেন। খুব শীঘ্রই আমি তোমাদেরকে এসব বিষয়ে অবগত করব।
- আমি আমার পিতা হযরত ইব্রাহীম (عليه السلام) এর দোয়া,
- হযরত ঈসা (عليه السلام) এর [তার জাতিকে দেয়া ভবিষ্যৎবানী] সুসংবাদ এবং
- "আমার আন্মাজানের (স্বপ্নে) দেখা সেই নূর যা ওনার দেহ থেকে বের হয়ে শাম দেশের প্রাসাদ সমুহকে আলোকিত করেছিল।"
তথ্যসূত্রঃ
১.ইমাম আহমদ : মুসনাদে আহমদ খ ৪ : প ১২৭ : হাদিস ১৬৭০১।
২.আল-বায়হাকী, শু'য়াবুল ঈমান, খ. ২, পৃ. ৫১০, হাদীস: ১৩২২।
৩.ইমাম বায়হাকী : দালায়েলুন নবুওয়াত : খন্ড ১ : পৃ ৮৩, প ১১০।
৪.ইমাম বাজ্জার : আল বাহরুয যাখরার : খ ১০, পৃ ১৫৩, হাদিস ৪১৯৯ ।
৫.ইমাম ইবনে ইসহাক : সিরাতুন নবী : খ ১ : প ২৮।
৬.ইমাম ইবনে হিশাম : সিরাতুন নবী : খ ১ : প ১৫৬। কিতাবের ছবিঃ http://sunni-encyclopedia.blogspot.com/2015/09/blog-post_95.html?m=1
৭.ইমাম ইবনে সা'দ : তাবাকাত আল কুবরা : খ ১ : প ১৫০।
৮.ইমাম তাবারী : তফসীরে তাবারী : খ ১ : প ৫৫৬।
৯.ইমাম তাবারী : তারিখুল উমাম ওয়াল মুলুক : খ ১ : প ৪৫৮।
১০.ইমাম ইবনে আসাকির : তারিখে মদিনাত দামিস্ক : ১ম খন্ড : ১৭০ পৃ & ৩য় খন্ড ৩৯৩ পৃ।
১১.ইমাম কুরতুবী : তফসীরে কুরতুবী : খ ২ : প ১৩১।
১২.ইমাম আবু লাইস সমরকানী : তফসীরে সমরকানী : খ ৩ : প ৪২১।
১৩.আত-তাবারানী, আল-মু'জামুল কবীর, খ. ১৮, পৃ. ২৫২, হাদীস: ২২৯ ও ২৩০।
১৪.ইমাম ইবনে হিব্বান : সহীহ ইবনে হিব্বান : খ ৯ : প ১০৬।
১৫.মুসনাদে আফযার : হাদিস ২৩৬৫।
১৬.খতিব তাবরিজী : মিশকাতুল মাসাবিহ : প ৫১৩।
১৭.ইমাম ইবনে জাওজী : আল ওয়াফা : প ৯১।
১৮.ইমাম হাকিম : মুস্তাদরেক আল হাকিম : খন্ড ২. পৃ. ৪৫৩, হাদীস: ৩৫৬৬ ও পৃ. ৬৫৬, হাদীস: ৪১৭৫।
১৯.ইমাম ইবনে কাসীর : তফসীরে ইবনে কাসীর : খ ৪ : প ৩৬০।
২০.ইমাম ইবনে কাসীর : আল বিদায়া ওয়ান নেহায়া : খ ২ : প ৩২১।
২১.ইমাম ইবনে হাজর হায়সামী : মাজমাউল যাওয়াইদ : (৮:২২১/৪০৯)
২২.ইমাম সূয়ূতী : তফসীরে দুররে মনসূর : খ ১ : প ৩৩৪।
২৩.ইমাম ইমাম হিন্দি : কাঞ্জুল উম্মাল : খ ১১ : প ১৭৩।
২৪.ইমাম হালাভী : সিরাতে হালাভিয়্যাহ : খ ১ : প ৭৭।
২৫.মাওয়ারেদুল জামান : ১ম খন্ড : পৃ ৫১২।
২৬.ইমাম ইমাম হিন্দি : কাঞ্জুল উম্মাল : খ ১১ : প ১৭৩।
২৭.ইমাম হালাভী : সিরাতে হালাভিয়্যাহ : খ ১ : প ৭৭।
২৮.সীরাত বিশ্বকোষঃ হযরত মুহাম্মদ (ﷺ) : ৪খন্ডঃ পৃ ২১৮ : ইসলামিক ফাউন্ডেশন প্রকাশনী। কিতাবের ছবিঃ www.sunni-encyclopedia.blogspot.com/2015/09/blog-post_78.html?m=1
এই হাদিসটির বিভিন্ন রেওয়াতে বর্ণিত সুত্রঃ
১. হযরত কা'ব আল আহবার (رضي الله عنه)
২. হযরত আব্দুর রহমান বিন আউফ (رضي الله عنه) এর মাতা শিফা বিনতে আমর ইবনে আউফ (رضي الله عنه)
৩. হযরত ইরবাদ ইবনে সারিয়া (رضي الله عنه)
৪. হযরত মু'য়াজ বিন জাবাল (رضي الله عنه)
৫. হযরত আবু উমামা (رضي الله عنه)
৬. হযরত উসমান ইবনে আবিল আস (رضي الله عنه)
৭. হযরত ইবনে আব্বাস (رضي الله عنه)
৮. হযরত আব্বাস ইবনে আব্দুল মুত্তালিব (رضي الله عنه) [ইমাম হাকিম : আল-মুস্তাদরাক : পৃ ৩৬৯, হাদিস ৫৪১৭; মুহাদ্দিসে দেহলভী : মা সাবাতা বিস সুন্নাহ : রবিউল আওয়াল অধ্যায় : ১১৪ পৃ]
৯. হযরত ইকরামা (رضي الله عنه)
মিলাদুন্নবী صلى الله عليه و آله وسلم কুরআন ও হাদিসের আলোকে
____________________
মিলাদুন্নবী صلى الله عليه و آله وسلم কুরআন ও হাদিসের আলোকে-
Lecture : Milad-Un-Nabi or Mawlid-Un-Nabi صلى الله عليه و آله وسلم
- Masum Billah Sunny
এখানে যা যা বলা হয়েছে :-
১) মিলাদুন্নবী (সা) কুরআনের আলোকে
২) মিলাদুন্নবী (সা) হাদিসের আলোকে
৩) মিলাদুন্নবী (সা) উদযাপনে জগত বিখ্যাত ইমাম, মুহাদ্দিসিন, মুফাসসিরিন, মুজাদ্দিদিনগনের আকিদা
মিলাদ-উন-নবী বা মাওলিদ-উন-নবী صلى الله عليه و آله وسلم এর অর্থ (Meaning) :-
মিলাদ অর্থ জন্মবৃত্তান্ত আর আন-নবী মানে আমাদের নবী صلى الله عليه و آله وسلم
বিস্তৃত ভাবে বলতে গেলে:-
Meaning:-
আসুন আমরা ঈদে মীলাদুন্নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বিষয়টা কি সেটা বুঝার চেষ্টা করি |
মূলত ঈদ অর্থ হচ্ছে খুশি বা আনন্দ প্রকাশ করা |
আর "মীলাদ ও " নবী" দুইটি শব্দ একত্রে মিলিয়ে হয় মীলাদুন্নবী | " মীলাদের" তিনটি শব্দ রয়েছে - ميلاد মীলাদ, مولد মাওলিদ, مولود মাওলূদ | মীলাদ শব্দের অর্থ হচ্ছে, জন্মবৃত্তান্ত (মানে হল বিস্তৃতভাবে বংশবৃত্তান্ত, স্থান-কালসহ আলোচনা করা)
অর্থাৎ, আভিধানিক বা শাব্দিক অর্থে ميلاد النبي বা " মীলাদুন্নবী" বলতে হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বিলাদত শরীফকেই বুঝায় |
আর পারিভাষিক বা ব্যাবহারিক অর্থে,মীলাদুন্নবী বলতে হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বিলাদত শরীফ উপলক্ষে উনার ছানা- সিফাত আলোচনা করা, উনার প্রতি সালাত সালাম পাঠ করা, এবং উনার পবিত্রতম জীবনী মুবারকের সামগ্রিক বিষয়ের আলোচনা বুঝানো হয় !
ওহাবী ও আহলে হাদিসগন একে বিদাত বলে আসুন দেখি রাসুল (সা) এর জন্ম ও বংশবৃত্তান্ত আলোচনা কুরআন হাদিসে আছে কিনা।
♦♦এক নজরে আল-কুরআনে মিলাদুন্নবী صلى الله عليه و آله وسلم ♦♦
:::::::~~Al imran 81,164.
:::::::~~An nisa 59,175,164.
:::::::~~Mayedah 15
:::::::~~At taowba 33,128.
:::::::~~Saffh 6,8.
:::::::~~Jomoah 2.
:::::::~~Balad 1-2.
:::::::~~Al Ibrahim 28 (বুখারী শরিফের শানে নুযুল)
:::::::~~Al Ibrahim 34.
:::::::~~Nahol 83.
:::::::~~Insira h 1~4.
:::::::~~Ambia 107.
:::::::~~Fath 8,9.
:::::::~~Ahjab 56.
:::::::~~Ka'f 2.
:::::::~~Anfal 33
:::::::~~Doha 11
:::::::~~Fath 28
:::::::~~Hijor 72
:::::::~~Ara'f 157
:::::::~~Ibrahim 5 [About Milad of Musa(AS) ]
:::::::~~Mayyidah 20 [About milad of Musa(AS) ]
আল-কুরআনের আলোকে মিলাদুন্নবী (সা) :-
Al-Quran ও তফসীর থেকে কিছু আয়াতের ব্যাখ্যা:-
♦আল্লাহ পাক ইরশাদ করেন,
اللهم ربنا انزل علينا ماءدة من السماء تكون لنا عيدا لاولنا واخرنا
অর্থ : আয় আমাদের রব আল্লাহ পাক ! আমাদের জন্য আপনি আসমান হতে ( বেহেশতী খাদ্যের) খাদ্যসহ একটি খাঞ্চা নাযিল করুন | খাঞ্চা নাযিলের উপলক্ষটি অর্থাৎ যেদিন খাঞ্চা নাজিল হবে সেদিনটি আমাদের জন্য, আমাদের পূর্ববর্তী ও পরবর্তী সকলের জন্য ঈদ স্বরূপ হবে !"
( সূরা মায়িদা ১১৪)
উক্ত আয়াত শরীফে কি বুঝা গেল ? হযরত ঈসা আলাইহিস সালাম উনার উম্মতের জন্য আসমান থেকে একটি খাঞ্চা ভর্তি খাবার চাইলেন, এবং এই নিয়মত পূর্ন খাবার নাযিল হওয়ার দিনটা উনার পূর্ববর্তী ও পরবর্তী সকলের জন্য ঈদ হবে বললেন |
এই খাদ্য সহ খাঞ্চা নাযিল হওয়ার দিন যদি ঈদের দিন হয় ,, তাহলে সমগ্র জগৎ এর নিয়মাত, সকল নিয়মতের মূল , নি'মাতুল কুবরা হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার আগমনের দিন মুবারক কি ঈদ হবে না ?
খুশি করা যাবে না ??
অবশ্যই হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার আগমনের দিন ঈদ হবে, শুধুমাত্র ঈদ ই হবেনা বরং কুল কায়িনাতের সর্বশ্রেষ্ঠ ঈদ হবে !
♦কতিপয় আয়াত শরীফ উল্লেখ করা হলো-
★ إنا أرسلناك شاهدا ومبشر ونذير لتؤمنوا بالله و رسوله و تعزروه وتوقروه وتسبحوه بكرة وأصيلا
অর্থ : (হে আমার হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) নিশ্চয়ই আমি আপনাকে সাক্ষ্যদাতা,সুসংবাদদানকারী এবং সতর্ককারী স্বরূপ প্রেরণ করেছি , যেন তোমরা (বান্দারা) মহান আল্লাহ পাক উনার উপর এবং উনার রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার উপর ঈমান আনো এবং তোমরা উনার সম্মান করো ! এবং ছানা-সিফত প্রসংশা করো সকাল-সন্ধ্যা !""
( সূরা ফাতাহ ৮,৯)
★ لقد جاءكم رسول من انفسكم عزيز عليه ماعنتم حريص عليكم بالمؤمنين رءوف رحيم
অর্থ : তোমাদের কাছে তোমাদের জন্য একজন রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এসেছেন, তোমাদের দুঃখ-কষ্ট উনার কাছে বেদনাদায়ক, তিনি তোমাদের ভালাই চান,মু'মিনদের প্রতি স্নেহশীল এবং দয়ালু !"
( সূরা তাওবা ১২৮)
★وماارسلناك الا رحمة للعالمين
অর্থ : হে আমার হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আমি আপনাকে সমস্ত কায়িনাতের জন্য রহমত হিসাবে পাঠিয়েছি !"'
( সূরা আম্বিয়া ১০৭)
★ لقد من الله علي المؤمنين إذ بعث فيهم رسولا من أنفسهم يتلوعليهم اياته ويزكيهم ويعلمهم الكتاب وااحكمة
অর্থ : নিশ্চয়ই আল্লাহ পাক মু'মিনদের প্রতি ইহসান করেছেন যে, তিনি তাদের মাঝে হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে পাঠিয়েছেন, যিনি তাদেরকে আল্লাহ পাক উনার আয়াত শরীফ সমূহ তিলাওয়াত করে শোনান এবং তাদের অন্তর সমূহকে পরিশুদ্ধ করেন এবং তাদের কিতাব ও হিকমত শিক্ষা দেন !""
( সূরা আল ইমরান ১৬৪)
♦আল্লাহ পাক ইরশাদ করেন-
قال بفضل الله و برحمته فبذالك فليفرحوا هو خيرمما يجمعون
অর্থ : হে আমার হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ! আপনি উম্মাহকে বলে দিন , মহান আল্লাহ পাক অনুগ্রহ ও রহমত( হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) প্রেরন করেছেন , সেজন্য তারা যেন খুশি প্রকাশ করে | এ খুশি প্রকাশ করাটা সবচাইতে উত্তম, যা তারা সঞ্চয় করে রাখে !"
√ সূরা ইউনূছ ৫৮
♦উক্ত আয়াত শরীফে তাফসিরে বিখ্যাত মুফাসসির, সমগ্র মাদ্রাসায় যাঁর তাফসীর পড়ানো হয়, হাফিযে হাদীস, আল্লামা জালালুদ্দীন সূয়ূতী রহমাতুল্লাহি আলাইহি বলেন--
عن ابن عباس رضي الله تعال عنهما قال في الاية فضل الله العلم و رحمته محمد صلي الله عليه و سلم قال الله تعالي وما ارسلناك الا رحمة للعلمين
অর্থ : হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু আনহুমা বলেন, এ আয়াত শরীফের তাফসিরে এখানে আল্লাহ পাক উনার অনুগ্রহ বলতে " ইলিম" বুঝানো হয়েছে | আর রহমত দ্বারা বুঝানো হয়েছে " হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম" উনাকে | যেমন, আল্লাহ পাক বলেন, আমিতো আপনাকে তামাম আলমের জন্য রহমত স্বরূপ প্রেরন করেছি |"
দলীল-
√ তাফসীরে দূররুল মানছুর - ১০ নং সূরা - ১১ পারা- সূরা ইউনূছ ৫৮
√ তাফসীরে রুহুল মায়ানী !
আদেশ সূচক বাক্য দ্বারা ফরজ এবং ওয়াজিব সাব্যস্ত হয় |
যেমন সকল ফিক্বাহের কিতাবে আছে-
الامر للوجوب
অর্থাৎ, আদেশ সূচক বাক্য দ্বারা ফরজ ওয়াজিব সাব্যস্ত হয় !
দলীল-
√ বাদায়েউস সানায়ে
দেখুন, আল্লাহ পাক এরশাদ করেন-
اقيموا الصلوة
অর্থ : তোমরা নামাজ আদায় করো | "
কুরআন শরীফের এই নির্দেশ সূচক বাক্য দ্বারা নামাজ ফরজ হয়েছে |
তদ্রুপ সূরা ইউনূছের ৫৮ আয়াতের فليفرحوا বা খুশি প্রকাশ করো (ঈদ পালন করো) এটা আদেশ সূচক বাক্য |
তাহলে এই দিকে খেয়াল করলে, এ আদেশের দ্বারা রাসুলের আগমনে কৃতজ্ঞ হয়ে আল্লাহর প্রতি খুশি প্রকাশ করা উত্তম বলে প্রমানিত হয় !
মূলত কুরআন শরীফে অনেক জায়গায় আল্লাহ পাক
উনার প্রদত্ত নিয়ামতকে স্মরন করতে বলেছেন:-
♦আল্লাহ পাক বলেন:-
اذكروا نعمة الله عليكم
অর্থ : তোমাদের যে নিয়ামত দেয়া হয়েছে, তোমরা সে নিয়ামতকে স্মরন করো !"
( সূরা আল ইমরান ১০৩)
প্রশ্ন হচ্ছে, আল্লাহ পাক উনার সবচাইতে বড় নিয়ামত কি ?
এ ব্যাপারে সমস্ত জগৎবাসী একমত যে, আল্লাহ পাক উনার সবচাইতে বড় নিয়মত হচ্ছেন " হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম " !
শুধু তাই নয় সমস্ত জাহানের সকল নিয়মাত হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকেই হাদীয়া করা হয়েছে |
আর হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি হচ্ছেন " আন নি'মাতিল কুবরা আলাল আলাম" !
অর্থাৎ, সমস্ত কায়িনাতের সবচাইতে বড় নিয়ামত !
♦ইমাম ইবনুল জাওযী নিজ ‘তাফসীর’গ্রন্থে সূরা ইউনূসের উক্ত ৫৮ নং আয়াতের ব্যাখ্যায় বলেন, “আদ্ দাহাক হযরত ইবনে আব্বাস (رضي الله عنه) থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন: এই আয়াতে ‘ফযল’ বলতে জ্ঞান (অর্থাৎ, আল-কুরআন ও তাওহীদ)-কে বুঝিয়েছে; আর ‘রহমত’ বলতে মহানবী(ﷺসা) -কে বোঝানো হয়েছে।” [ইবনে জাওযী কৃত ‘যা’দ আল-মাসীর ফী এলম আত্ তাফসীর’, ৪:৪০]
♦ইমাম আবু হাইয়ান আন্দালুসী এ সম্পর্কে বলেন, “ফযল বলতে জ্ঞানকে, আর রহমত বলতে রাসূলুল্লাহ (ﷺসা) -কে উদ্দেশ্য করা হয়েছে।” [তাফসীর আল-বাহর আল-মুহীত, ৫:১৭১]
♦ইমাম জালালউদ্দীন সৈয়ুতী (رحمة الله) বলেন, “আবু শায়খ হযরত ইবনে আব্বাস (رضي الله عنه) থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন: আল্লাহর ফযল বলতে জ্ঞানকে, আর রহমত বলতে রাসূলুল্লাহ(ﷺসা) -কে বোঝানো হয়েছে। আল্লাহ বলেন, (হে রাসূল) আমি আপনাকে প্রেরণ করেছি জগতসমূহের জন্যে আমার রহমত (করুণা) করে (সূরা আম্বিয়া, ১০৭ আয়াত)।” [আস্ সৈয়ুতী প্রণীত দুররে মনসূর, ৪:৩৩০]
♦আল্লামা আলূসী ব্যাখ্যা করেন যে এমন কি ‘ফযল’ (অনুগ্রহ) বলতেও হযূর পাক (ﷺ)-কে উদ্দেশ্য করা হয়েছে, যেমনিভাবে বর্ণিত হয়েছে আল-খতীব ও ইবনে আসাকির থেকে যে আয়াতোক্ত ‘ফযল’ হলেন মহানবী(ﷺসা) । [আলূসী রচিত রূহুল মাআনী, ১১:১৪১]
ذَٰلِكَ فَضْلُ اللَّـهِ يُؤْتِيهِ مَن يَشَاءُ ۚ وَاللَّـهُ ذُو الْفَضْلِ الْعَظِيمِ ﴿٤﴾
”এটি আল্লাহর অনুগ্রহ; যাকে চান দান করেন; এবং আল্লাহ বড় অনুগ্রহশীল।” (সূরা জুমু’আহ্, ৪ আয়াত)
♦আয়াতের শেষাংশে ‘আল্লাহ বড় (অশেষ) অনুগ্রহশীল’ বাক্যটিকে হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (رضي الله عنه) ব্যাখ্যা করেন এভাবে:
আল্লাহর অনুগ্রহ অফুরন্ত, যেহেতু তিনি মহানবী(সাﷺ) -কে ইসলাম ও নবুয়্যত দান করেছেন; এও বলা হয়েছে যে এর মানে ঈমানদারদের প্রতি তিনি ইসলামের নেয়ামত বর্ষণ করেছেন। আর এ কথাও বলা হয়েছে যে এর অর্থ তাঁর সৃষ্টিজগতের প্রতি তিনি অনুগ্রহ করেছেন মহানবী (ﷺসা) এবং কেতাব (কুরআন) প্রেরণ করে। [তানবির আল-মিকবাস মিন তাফসীর ইবনে আব্বাস]
★ ياايها النبي انا ارسلناك شاهدا و مبشر و نذيرا وداعيا الي الله باذنه وسراجا منيرا
অর্থ : হে আমার হবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! নিশ্চয়ই আমি আপনাকে সাক্ষীদাতা, সুসংবাদ দাতা, ভয় প্রদর্শনকারী এবং আমার নির্দেশে আমার দিকে আহ্বানকারী ও নূরানী প্রদীপ রুপে প্রেরন করেছি !""
( সূরা আহযাব ৪৬)
★ قد جاعكم من الله نور
অর্থ : নিশ্চয়ই তোমাদের নিকট মহান আল্লাহ পাক উনার পক্ষ থেকে এক মহান নূর ( হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এসেছেন !""
( সূরা মায়েদা ১৫)
সর্বপ্রথম মিলাদুন্নবীর আলোচনা (শানে নুযুল দেখলে পাবেন):-
★ وإذ أخذ الله ميثاق النبيين لما اتيتكم من كتاب و حكمة ثم جاءكم رسول مصدق لما معكم لتؤمنن به ولتنصرنه قال أأقررتم وأخذتم علي ذلكك إصري قالوا أقررنا قال فاشهدوا وأنا معكم من الشاهدين
অর্থ: মহান আল্লাহ পাক তিনি হযরত নবী- রসূল আলাইহিমুস সালামগন উনাদের থেকে এ মর্মে ওয়াদা নিলেন যে, আমি আপনাদের কিতাব ও হিকমত হাদিয়া করবো | অতঃপর আপনাদের প্রদত্ত কিতাবের সত্য প্রতিপাদনকারী হিসাবে একজন রসূল (হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আগমন করবেন ! আপনারা অবশ্যই উনার প্রতি ঈমান আনবেন এবং উনাকে পেলে খিদমত করবেন ! মহান আল্লাহ পাক বললেন, আপনারা কি আমার এ ওয়াদা স্বীকার ও গ্রহণ করলেন ? উনারা বললেন, হ্যাঁ, আমরা স্বীকার করে নিলাম | তখন আল্লাহ পাক বললেন, তাহলে আপনারা সাক্ষী থাকুন এবং আমিও আপনাদের সাথে সাক্ষী রইলাম!"
( সূরা আল ইমরান ৮১)
♦নিয়ামতের শোকার আদায় করতে আল্লাহ পাক বলেন-
وأما بنعمة ربك فحدت
অর্থ : আপনার রব উনার নিয়ামতের কথা প্রকাশ করুন !"
( সূরা আদ্ব দ্বুহা ১১)
♦উক্ত নিয়ামত সমূহের ব্যাখ্যায় হাদীস শরীফে আছে --
قال والله هم كفار قريش و محمد نعمة الله تعالي
অর্থ : আল্লাহ পাক উনার কসম ! তারা ( যারা নবীজী উনার বিরোধীতা করেছিলো) কুরায়িশ কাফির আর হযরত সাইয়্যিদুনা মুহম্মদ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হলেন আল্লাহ পাক উনার নিয়ামত !"
দলীল-
√ বুখারী শরীফ ১/২২১
♦আর নিয়ামত পূর্ন দিন সমূহ স্বরন করা বা আলোচনা করার কথা কুরআন শরীফে ইরশদ হয়েছে--
وذكرهم بايام الله ان في ذلك لايات لكل صبار شكور
অর্থ : আল্লাহ পাক উনার বিশেষ দিন সমূহ স্বরন করান ! নিশ্চয়ই এতে প্রত্যেক ধৈর্যশীল শোকরগুযার বান্দাদের জন্য নিদর্শনাবলী রয়েছে !"
( সূরা ইব্রাহীম ৫)
♦আল্লাহ পাক বলেন:-
قال عيسي ابن مريم يبني اسراءيا اني رسول الله اليكم مصدقا لما بين يدي من التورة و مبشرا برسول ياتي من بعدي اسمه احمد
অর্থ :হযরত ঈসা আলাইহিস সালাম তিনি বলেন, হে বনী ইসরাঈল ! নিশ্চয়ই আমি তোমাদের নিকট মহান আল্লাহ পাক উনার রসূল হিসাবে প্রেরিত হয়েছি ! আমার পূর্ববর্তী তাওরাত শরীফের আমি সত্যায়নকারী এবং আমি এমন একজন রসূল উনার সুসংবাদ দানকারী যিনি আমার পরে আগমন করবেন, উনার নাম মুবারক হচ্ছে আহমদ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম !""
( সূরা ছফ ৬)
♦এ আয়াত শরীফ উনার পরিপ্রেক্ষিতে স্বয়ং হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি নিজের মীলদ শরীফ সম্পর্কে বলেন--
"আমি তোমাদের আমার পূর্বের কিছু কথা জানাবো! তা হলো- আমি হযরত ইব্রাহীম আলাইহিস সালাম উনার দোয়া আমি হযরত ঈসা আলাইহিস সালাম উনার সুসংবাদ ও আমার মাতার সুস্বপ্ন ! আমার বিলাদতের সময় আমার মাতা দেখতে পান যে, একখানা নূর মোবারক বের হয়ে শাম দেশের রাজ প্রসাদ সমূহ আলোকিত করে ফেলেছে !""
দলীল-
√ মুসনাদে আহমদ ৪র্থ খন্ড ২৭ পৃষ্ঠা !
√ মুস্তদরেকে হাকিম ২য় খন্ড ৬০১ পৃ।
♦♦♦হাদিসের আলোকে মিলাদুন্নবী (সা) ♦♦♦
এর চাইতে উতকৃষ্ট প্রমান কোন হাদিসে আর নেই।এখানে স্পষ্ট যে মীলাদুন্নবী (সা) এ খুশি হলে কাফিরও আজাব থেকে কিছু হলেও মুক্তি পায় আর মীলাদুন্নবীর দান বৃথা যায় না।
কোন কাফির কে আল্লাহ শাস্তি মাফ করেন নি করবেন ও না কিন্তু যেই আবু লাহাবের বিরোদ্ধে কুরআন নাজিল হয়েছে সেই আবু লাহাবও মীলাদুন্নবীর খুশিতে পুরষ্কার পাওয়ার হাদিসটি:-
বুখারী শরীফে উল্লেখিত ঘটনাটি না বললেই নয়,
হযরত অরওয়া ইবনে জুবায়ের (রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু) বলেন,
সুহাইবাহ আবু লাহাবের দাসী ছিল। আবু লাহাব ওনার কাছে থেকে (রাসুল সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়াসাল্লাম) এর বেলাদাতের (অর্থাৎ মিলাদুন্নবীর ) সুসংবাদ প্রাপ্ত হয়ে (মিলাদুন্নবীর খুশিতে) সুহাইবাহ কে আযাদ করে দিয়েছিল।যখন আবু লাহাব মৃত্যুবরণ করেছিল তখন (এক বছর পর) তার ঘনিষ্ঠদের কেউ (হযরত আব্বাস রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু) তাকে স্বপ্নে শোচনীয় অবস্থায় দেখে তার উদ্দেশে বলেন, “তোমার অবস্থা কেমন?” আবু লাহাব উত্তরে বলল, “তোমাদের নিকট থেকে আসার পর আমি কোন প্রকার শান্তি পাইনি,কেবল যে দিন (রাসুলুল্লাহ (দ.) জন্ম হওয়ার খুশিতে অর্থাৎ মিলাদুন্নবীর খুশিতে ) সুহাইবাকে (তর্জনী ও মধ্যমা দু’টি আঙ্গুলের ইশারায়) আযাদ করে দিয়েছিলাম, ঐ কারনে (প্রতি সোমবার) আংগুল দুটির মধ্যে কিছু পানি জমে আমি ঐ পানি (চুষে) পান করে থাকি ও প্রতি সোমবার (জাহান্নামের কঠিন) আযাবকে হাল্কাবোধ করে থাকি।”
Reference :-
♦This hadith is also recorded in these :-
♦Masnad Ahmed : Hadith 25953 under the heading of لو كانت تحل لي لما تزوجتها قد أرضعتني وأباها ثويبة مولاة بني هاشم فلا تعرضن علي أخواتكن ولا بناتكن and again in Hadith 26865 with matan of
ابنة أخي من الرضاعة وأرضعتني وأبا سلمة ثويبة فلا تعرضن علي بناتكن ولا أخواتكن
♦Al-Sunnan Al Kubra (li Nisai): Hadith 5394/5395
♦Al Nisai’ al-Sughra : Hadith Nob 3287/3284/3285/3286
♦Sunnan Ibne Majah: Hadith 1939 Under the heading of ( ابنة أخي من الرضاعة أرضعتني وأباها ثويبة فلا تعرضن علي أخواتكن ولا بناتكن)
♦Sahih Muslim: Hadith Nob.1451(2634), 1451(2635) under the same matan
♦Sahih ibne Hibban: Hadith Nob, 4110 (4199), 4111(4200), the matan of hadith is إن زينب تحرم علي وإنها في حجري وأرضعتني وإياها ثويبة فلا تعرضن علي بناتكن ولا أخواتكن ولا عماتكن ولا خالاتكن ولا أمهاتكن
اطراف الحدیث
♦Sahih al Bukhari Sharif : 2644/2645/2646/3105/4796/5099/5100/5101/5103/5106/5107/5124/5133/5239/5372/6156/
♦Sunan Kubra by Imam Baihaqi, The Book of Nikah.
♦Jame Ul Ahadith Wal Maraseel, Masaneed us Sahabah, Hadith no. 43545
♦Kanzul 'Ummal Vol 6, Hadith no. 15725
♦Musannaf Abdul Razzaq, Vol 7, Hadith no. 13546.
♦Imam A’aini (ra) in his book “Umdatul Qari, Vol: 14,Page. No. 45;
♦Imam Ibn Kathir in “Seerat un Nabawiyyah” (vol. 1 pg 224)
♦Sharh Zurqani, Vol 1, Pg. no. 261
♦Subul ul Huda war Rashad Vol 1 Pg. no. 367.
♦Imam Ibn Asqalani in "Fath al bari"
♦ibn al-Qayyim : [Tuhfat al-Mawdud bi Ahkam al-Mawlud, p.19]
♦Ibn 'Abd al-Wahhab, M., Mukhtasar Sirat ar-Rasul, 'Milad an-Nabi'
বুখারী শরীফে উক্ত হাদীসের পৃষ্ঠায় শেষের দিকে এ হাদীসের পাদটীকায় বর্ণিত আছে,সুহাইবাহ আবু লাহাবকে রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়াসাল্লাম) এর জন্মের সুসংবাদ দেয়ার কারনে আবু লাহাব তাকে আযাদ করে দিয়েছিল। অতঃপর এ আযাদ করাটা (পরকালে) আবু লাহাবের উপকার এসেছে। এ কাজ তার উপকারে আসার অর্থ হল তার এ করম প্রিয়নবী (সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়াসাল্লাম) এর বরকতে অবশিষ্ট ছিল। অন্যান্য কাজের নেয় বিনষ্ট হয়ে যায়নি।
হাফেয ইবনে হাজর আসকালানী (رحمة الله)- বলেন, "
সম্ভবতঃ উল্লেখিত বর্ণনাটি হযরত আব্বাস (رضي الله عنه)-এর দেখা স্বপ্নের, যা’তে তিনি মৃত আবূ লাহাবকে সোমবার দিন আযাব থেকে রেহাই পেতে দেখেছিলেন। মহানবী (ﷺ)-এর বেলাদাতের সময় সে তার দাসী (সোয়াইবিয়া)-কে ওই খোশ-খবরী নিয়ে আসার জন্যে মুক্ত করে দিয়েছিল।
Reference :-
♦Musanaf Abdur Razzaq Vol 7 Page 478
♦Shoib Ul Iman lil baihaqi Vol 1 Page 261
♦Dalil Un Nabuwah Vol 1 page 150
♦Allama Abul Qasim Suhaili ne Al Rauz ul Unf Vol 192
♦Hafiz Ibne Kathir Ne Serat Nabwiya Vol 1 Page 224
♦Al Bidaya Wan nihaya Vol 2 page 332
♦Imam Bagwi Ne Sharah Sunnah Vol 9 page 95
♦Madari jun Nabuwah Vol 2 page 19
♦Muwahibul Laduniya Vol 1 Page 27
♦Hafiz Nasiruddin Damishqi Ne Maurd ul Sawdi Fee Mauldul Hadi Al Hadi Vol 1 Page 197
♦Deobandiyoun ke Peshwaa Anwar Shah Kashmiri ne Faizul Bari Vol 4 Page 278
♦Gair Muqalid aur Deobandiyoun ke peshwa Abdullah Bin Muhammed bin Abdul Wahab Najdi Ne Mukhtasar Seerat e Rasul Page 13 par Bhee Darj Kiyaa hai
♦Aur Dounou ke Peshwa
Ibne Qayim ne Tahfatul Maulood Ba hukaamul Maulood Page 19
♦Ibrahim Sialkotvi Ne Seerat e Mustafa page 153 (Hashiya).
♦তারীখে ইয়াকুবী ১ম খন্ড ৩৬২ পৃষ্ঠা !
♦ফতহুল বারী শরহে বুখারী ৯ম খন্ড ১১৮ পৃষ্ঠা !
ইবনে জাওজী বলেন, “যখন ঐ আবু লাহাব কাফির,যার তিরস্কারে কোরআনে সূরা নাজিল হয়েছে। মিলদুন্নাবী (দ.) এ আনন্দ প্রকাশের কারনে জাহান্নামে পুরস্কৃত হয়েছে। এখন উম্মতে মুহাম্মাদী (সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়াসাল্লাম) এর ঐ একত্ববাদী মুসলমানের কি অবস্থা,যে নবী কারীম (সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়াসাল্লাম) এর বেলাদাতে খুশি হয় এবং রাসুল (দ.) এর ভালবাসায় তার সাধ্যনুযায়ী খরচ করে!(আল্লাহ মহাপুরষ্কারদাতা)
মিলাদুন্নবী صلى الله عليه و آله وسلم সুন্নতে রাসুল :-
বিশুদ্ধ হাদীস শরীফে বর্নিত আছে,
ﺱﺀﻝ ﺭﺳﻮﻝ ﺻﻠﻲ ﻋﻠﻴﻪ ﻭ ﺳﻠﻢ ﻋﻦ ﺻﻮﻡ ﺍﻻﺛﻨﻴﻦ ﻓﻘﺎﻝ
ﻓﻴﻪ ﻭﻟﺪﺕ ﻭﻓﻴﻪ ﺍﻧﺰﻝ ﻋﻠﻲ ﻭﺣﻲ
অর্থ: হযরত আবু কাতাদা আনসারী রাদ্বিয়াল্লাহু
থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন,
একদা হুযূরপাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম
উনাকে সোমবারে রোযা রাখার ব্যাপারে জিজ্ঞেস করা হলো, তখন হুযূরপাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম
বলেন যে, এদিন আমি জন্মগ্রহন করেছি (অর্থাৎ আমার মিলাদ) , আর এদিনই আমার উপর
ওহী বা কুরআন শরীফ নাজিল হয়েছে।"
Reference :-
√সহীহ মুসলিম,হাদীছ শরীফ নং-২৮০৭
√সুনানে আবু দাউদ, হাদীছ শরীফ
নং-২৪২৮
√ সুনানে ইমাম বায়হাকী তাঁর ‘সুনান আল-কুবরা’ (৪র্থ খণ্ড, পৃষ্ঠা ৩০০, হাদীস নং ৮১৮২, ৮২৫৯)
√ সহীহ ইবনে খুজাইমা, হাদীছ শরীফ
নং-২১১৭
√ মুসনাদে আবি আওয়ানা, হাদীছ শরীফ
নং-২৯২৬
√ মুসনাদে আহমাদ, হাদীছ শরীফ
নং-২২৫৫০ !
√ইমাম নাসাঈ নিজ ‘সুনান নাসাঈ
√ মুসান্নাফে আব্দুর রাজ্জাক ৪র্থ খন্ড ২৯৬পৃ:
√ হিলিয়াতুল আউলিয়া ৯ম খন্ড ৫২ পৃ:
হাদিস হতে প্রমাণিত স্বয়ং হুযুর নিজের
বিলাদত শরীফের (মিলাদুন্নবীর) খুশিতে (আল্লাহর শুকরিয়া জ্ঞাপনের) উদ্দেশ্যে ছাগল
যবেহ করেছিলেন ।"
Reference :-
√ ৯ম শতাব্দীর মুজাদ্দিদ ইমাম সুয়ুতী আল হাবিলুল ফাতোয়া ১ম
খন্ড ১৯৬ পৃষ্ঠা।
√ ইমাম সুয়ুতী হুসনুন মাকাসিদ ফি আমালিল মওলিদ
৬৫ পৃষ্ঠা
√ ইমাম নাবহানী (রহ) হুজ্জাতুল্লাহে আলাল আলামীন ২৩৭
পৃষ্ঠা।
অপর হাদীস শরীফে বর্নিত আছে, হযরত
আব্দুল মুত্তালিব আলাইহিস হুজুর পাক
ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম
উনার বিলাদত শরীফের সপ্তম দিনে পশু
জবাই করে আক্বীকা করেছেন !'"
Reference :-
√ খাসায়েছুল কুবরা ১ম খন্ড ৮৫ পৃষ্ঠ।
♦হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (رضي الله عنه) বর্ণনা করেন: রাসূলুল্লাহ (ﷺ) মদীনায় এসে দেখেন যে সেখানকার ইহুদীরা ১০ই মুহররম তারিখে রোযা রাখছেন। এ ব্যাপারে তাদের জিজ্ঞেস করা হলে তারা উত্তরে বলেন, ‘এই দিনটিতেই মূসা (আ:) ও বনী ইসরাইল বংশ ফেরাউনের ওপর বিজয় লাভ করেন। তাই আমরা এর মহিমা সমুন্নত রাখতে রোযা পালন করে থাকি।’ অতঃপর মহানবী (ﷺ) বলেন, ‘মূসা (আ:)-এর ওপর তোমাদের চেয়ে আমরা বেশি হক্কদার।’ এমতাবস্থায় তিনি মুসলমানদেরকে রোযা রাখার আদেশ করেন।
Reference :-
খণ্ড-২, পৃষ্ঠা-১৪৭, হাদীস নম্বর-১১৩০ (সহীহ মুসলিম, দারুল কুতাব আল-ইলমিয়্যাহ)
ইসা (আ) এর মিলাদ বর্ননা:-
♦হযরত আনাস বিন মালিক (رضي الله عنه) বর্ণনা করেন যে মহানবী (ﷺ) তাঁর মে’রাজে গমন সম্পর্কে ব্যাখ্যাকালে বলেন, জিবরীল আমীন (আ:) বেথলেহেমে আমাকে বোরাক থেকে নেমে দোয়া করতে অনুরোধ করেন, যা করা হলে তিনি বলেন: ’এয়া রাসূলাল্লাহ (ﷺ) আপনি কোথায় দোয়া করেছেন তা জানেন কি? আপনি বেথলেহেমে দোয়া করেছেন, যেখানে ঈসা (আ:)-এর জন্ম হয়েছিল।’
ইমাম বায়হাকী (رحمة الله) এই হাদীসটি অপর এক সাহাবী হযরত শাদ্দাদ বিন আওস (رضي الله عنه) থেকে ভিন্ন এসনাদে বর্ণনা করেন। বর্ণনাশেষে তিনি বলেন, ‘এর এসনাদ (সনদ) সহীহ।’
Reference :-
[আল-বায়হাকী কৃত ’দালাইল আন্ নবুওয়াহ’, (২/৩৫৫-৩৫৬)]
খণ্ড-১, পৃষ্ঠা নম্বর-২৪১, হাদীস নম্বর-৪৪৮ (সুনান আন্ নাসাঈ)
রাসুল (সা) এর নিজ ভাষায় মিলাদুন্নবী ( বংশ পরিচয়) বর্ননা :-
قال العباس بلغه صلى الله عليه وسلم بعض ما يقول الناس قال فصعد المنبر فقال من أنا قالوا أنت رسول الله فقال أنا محمد بن عبد الله بن عبد المطلب إن الله خلق الخلق فجعلني في خير خلقه وجعلهم فرقتين فجعلني في خير فرقة وخلق القبائل فجعلني في خير قبيلة وجعلهم بيوتا فجعلني في خيرهم بيتا فأنا خيركم بيتا وخيركم نفسا-1/169، رقم الحديث-3532
অনুবাদ-হযরত আব্বাস বিন আব্দুল মুত্তালিব রাঃ বলেন-রাসূল সাঃ [একবার কোন কারণে] মিম্বরে দাঁড়িয়ে [সমবেত লোকদেরকে] জিজ্ঞেস করলেন-আমি কে? সাহাবীগণ বললেন-আপনি আল্লাহর রাসূল, আপনার উপর শান্তি বর্ষিত হোক। তখন তিনি বললেন-আমি আব্দুল্লাহ বিন আব্দুল মুত্তালিবের ছেলে মুহাম্মদ। আল্লাহ তাআলা তামাম মাখলূক সৃষ্টি করে আমাকে সর্বোত্তম সৃষ্টির অন্তর্ভূক্ত করেছেন [অর্থাৎ মানুষ বানিয়েছেন]। এরপর তাদেরকে দু’ভাগে [আরব ও অনারব] বিভক্ত করে আমাকে উত্তম ভাগে [আরবে] রেখেছেন এবং আমাকে তাদের মধ্যে সর্বোত্তম গোত্রে পাঠিয়েছেন। এরপর সে গোত্রকে বিভিন্ন পরিবারে বিভক্ত করেছেন এবং আমাকে সর্বোত্তম পরিবারে প্রেরণ করেছেন। সুতরাং আমি ব্যক্তি ও বংশ সর্বদিক থেকে তোমাদের মধ্যে সর্বোত্তম।
Reference :-
♦সুনানে তিরমিযী, হাদীস নং-৩৫৩২,
♦মুসনাদে আহমাদ, হাদীস নং-১৭৮৮,
♦আল মু’জামুল কাবীর, হাদীস নং-৬৭৫,
♦মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা, হাদীস নং-৩২২৯৬
♦মেশকাত শরীফ, পৃষ্ঠা নং-৫১৩]
♦দালায়েলুল নবুওত বায়হাকী ১ম খন্ড ১৬৯ পৃ,
♦কানযুল উম্মাল ২য় খন্ড ১৭৫ পৃঃ]
অপর হাদিসে আছে:-
" নিশ্চয়ই আল্লাহ পাক হযরত ইসমাঈল আলাইহিস সালামের বংশধর হতে হযরত কিনানা আলাইহিস সালামকে মনোনীত করেছেন,
এরপর কিনানা আলাইহিস সালামের
বংশধর হতে কুরাইশকে মনোনীত করেছেন।
কুরাইশের বংশধর হতে বনী হাশিমকে মনোনীত করেছেন,
আর বনী হাশিম থেকে আমাকে (হুজুর
পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মনোনীত করেছেন ।"
Reference :-
√ মুসলিম শরীফ ২য় খন্ড ২৪৫ পৃষ্ঠা- হাদীস
২২৭৬
√ তিরমীযি শরীফ ২য় খন্ড ২০১ পৃষ্ঠা-
হাদীস ৩৬০৫ ।
হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি নিজের
মীলদ শরীফ বর্ননা সম্পর্কে বলেন :-
"আমি তোমাদের আমার পূর্বের কিছু
কথা জানাবো! তা হলো-
আমি হযরত ইব্রাহীম আলাইহিস সালামের
দোয়া আর হযরত ঈসা আলাইহিস সালামের ওনার জাতিকে দেয়া সুসংবাদ ও আমার আন্মাজানের (স্বপ্নে) দেখা সেই নূর যা ওনার দেহ থেকে বেরিয়ে শাম দেশের প্রাসাদ সমুহকে আলোকিত করেছিল.. "
Reference :-
Book: Miskatul Masabih
page: 513
Book: Kanjul Ummal
Part: 11
Page: 173
From: Ibne Hibban
Book: Shahih ibne hibban
Volume: 9
Page: 106
From: Ibn al-Jawzi
Book: al-Wafa'
Page: 91,
chapter: 21 of Bidayat nabiyyina sallallahu `alayhi wa sallam
From: Imam Haythami
Book: Majma` al-zawa'id (8:221/409)
From: Al Haakim,
Book: Al mustadrak,
Volume :002,
Page No. 615-616/ 705/724
References of Hadith number 4233
or V:3 page: 27
From: Imam Ahamad
Book: Musnade Ahamad
volume: 4
page: 127
Hadith: 16701
From : Ibn e Sa'd
Book : Tabqaat Al Kubra
Volume : 1
Page : 150
From : Bayhaqi
Book : Dalaeel un Nubuwwah
Volume : 1
Page : 83
again 1:110 & 2:8
From : Ibn e 'Asakir
Book : Tareekh Madeenat Damishq
Volume/page : 1:170 and 3:393
From : Qurtabi
Book : Jami' Al Ahkaam Al quran
Volume : 2
Page : 131
From : Tabari
Book : jami' Al Bayan
Volume : 1
Page : 556
From : Ibn e Katheer
Book : Tafseer Al Quran Al Azeem
Volume : 4
Page : 360-361
From : Samarqani
Book : Tafseer
Volume : 3
Page : 421
From : Tabarai
Book : Tareekh Al Umam wal Mulook
Volume : 1
Page : 458
From : Ibn e Ishaaq
Book : Seerat An Nabwiyyah
Volume : 1
Page : 28
From : Ibn e Hisham
Book : Seerat An Nabwiyyah
Volume : 1
Page : 302
Book: Al-Bidaya wan Nehaya
Volume : 2
page: 321
Book: Musnade Afzar
Hadith: 2365
Book: Tafsire Dor're Monsor
volume : 1
page: 334
Book: Maoware dul
zamman
volume:1
pagepage:512
From : Halabi
Book : Seerat Al Halabiyyah
Volume : 1
Page : 77
উম্মুল মুমেনিন হযরত আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা বণর্না করেছেন যে,
রসুল পাক সাল্লাল্লাহু আলায়হে ওয়া সাল্লাম এবং আবুবকর সিদ্দিক রাদিয়াল্লাহু আনহু আমার নিকট নিজ নিজ মিলাদ শরীফের বণর্না করেছেন।
Reference :
♦ইমাম বায়হাকী এই বণর্না কে হাসান বলেছেন
♦আল যামুল কাবীর লিত তাবরাণী ১ম খন্ড ৫৮ পৃঃ,
♦মযমাঊল যাওয়াঈদ ৯ম খন্ড ৬৩ পৃঃ
ইমাম বায়হাকী (রহ) তার সুনানে বায়হাকী (এটা সহীহ হাদিস এর অন্যান্য প্রসিদ্ধ কিতাবের মধ্যে উল্লেখ্য যোগ্য একটা কিতাব) মীলাদুন্নবীর অনেক বর্ননা করেছেন তা থেকে এবং আরো কিছু কিতাব থেকে এ সম্পর্কে কিছু হাদিস দেয়া হল।এইগুলো সব মীলাদুন্নবীর উত্তম নিদর্শন:-
♦ মা আমেনা বলেন তার জন্মলগ্নের পরমুর্হূতেই এতটা নূর
প্রকাশিত হল যার আলোতে র্পুব ও পশ্চিম প্রান্তের সব কিছু
আলোকিত হয় । যার আলোতে সিরিয়ার শাহী মহল
মা আমেনা দেখতে পান ।
(বায়হাকি, ১ম থন্ড,পৃঃ৮০ , মুসনাদে আহমদ , ৪/১২৭পৃঃ)
♦ফাতিমা বিন সুলায়মান বর্ননা করেন যে, প্রিয় নবী (সাﷺ) এর
বিলাদাতের সময় আমি দেখতে পেলাম যে, বায়তুল্লাহ নূরের
জ্যোতিতে জ্যোর্তিময় হয়ে উঠল এবং তারকারাজি জমীনের এত
নিকটর্বতী হয়ে এল যে , আমার ধারনা হতে লাগল এগুলো আমার
উপর এসে পড়বে,
(বায়হাকি, নেহায়াতুল আরব, ১/৭৬ পৃঃ)
♦পারস্য সম্রাট কিসরার রাজ প্রসাদের ১৪টি গম্বুজ ভেঙ্গে পড়ে,
এবং পারস্যের অর্ণিবান শিখা যা এক হাজার বছর পর্যন্ত এক
মুহূর্তের জন্যও নিভেনি , রাসূলে করিম সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম - এর বিলাদাতের মুর্হুতে তা নিভে যায় ।
(বায়হাকি , ১২৬ পৃঃ)
♦হযরত আনাস রাদ্বিয়াল্লাহু হতে বর্ণিত। নিশ্চয়ই রাসুলে করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এরশাদ করেন- মহান আল্লাহর পক্ষ হতে আমার জন্য একটি বিশেষ মর্যাদা হলো, আমি খতনাকৃত অবস্থায় জন্মগ্রহণ করেছি। তাই আমার লজ্জাস্থান অন্য কেউ দেখেনি।
(মাওয়াহিবে লাদুন্নিয়া, শরহে জুরকানী ১ম খন্ড, পৃষ্ঠা নং-২৩২)
♦হযরত আব্বাস (রাঃ) বর্ণনা করেন , রাসূলে খোদা সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম খতনা অবস্থায় দুনিয়ায় তাশরিফ আনেন ।
( নেহায়াতুল আরব ১/৭৭ পৃঃ)
মিলাদুন্নবী صلى الله عليه و آله وسلم বর্ননা সুন্নতে সাহাবা :-
♦মিলাদুন্নবী (দ.) আলোচনা করা সাহাবী (রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহুম)'দের সুন্নাত।
যেমন,ইমাম আবু ঈসা মুহাম্মদ তিরমিযী (রাহমাতুল্লাহি আলায়হি) তাঁর “সুনানে তিরমিযী” শরীফে ‘মীলাদুন্নবী(দ.) শিরোনামে একটি অধ্যায় প্রণয়ন করেছেন যেখানে রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওসাল্লাম) এর জন্ম তারিখ নিয়ে আলোচনা সম্বলিত হাদীস বর্ণনা করেছেন,হাদীস্তি হল-
হযরত মত্তালিব বিন আবদুল্লাহ আপন দাদা কয়েছ বিন মোখরামা হতে বর্ণনা করেছেন,তিনি বলেছেন-আমি ও নবী (সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়াসাল্লাম) ‘আমুল ফীল’ অর্থাৎ-বাদশাহ আব্রাহার হস্তি বাহিনীর উপর আল্লাহর গযব নাজিল হওয়ার বছর জন্মগ্রহন করেছি। হযরত ওসমান বিন আফফান (রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু)বনি ইয়ামর ইবনে লাইস’এর ভাই কুবাছ ইবনে আশইয়াম কে বললেন, “আপনি বড় না রাসুল (দ.)?” তখন তিনি বললেন, “রাসুল আমার চেয়ে অনেক বড় সম্মান ও মর্যাদার দিক থেকে আর আমি জন্ম সুত্রে রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়াসাল্লাম) থেকে আগে মাত্র।” (তিরমিযী,২য় খণ্ড পৃষ্ঠা নং-২০৩)
♦রাসূলে খোদা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দুনিয়ায় আগমনের
সময় কোন প্রকার অপবিত্র বস্তু শরীরে ছিল না । পূতপবিত্র
অবস্থায় দুনিয়ায় এসেছেন ।
( নেহায়াতুল আরব ১/৭৬ পৃঃ)
♦নূরে খোদা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মায়ের পেট থেকেই
নাভি কাটা অবস্থায় দুনিয়ায় এসেছেন
(সূরাবাদী ৪১৫ পৃঃ)
♦হযরত সুফিয়া (রাঃ) বলেন , তিনি দুনিয়ায় আগমন করার পর
ছেলে না মেয়ে এটা দেথতে চাইলাম হঠাৎ একটি নূর ওনার নীচের অংশ
ঢেকে ফেলে , তাতে আমরা কেউ ওনার লজ্জা স্থান দেখতে পাইনি ।
তিনি আরও বলেন তখনও ভোর হয়নি হঠাৎ দেখি পুরো ঘর আলোকিত
হয়ে আছে,
বাহিরে এসে দেখি সমগ্র জাহান নূরনবী সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম- এর নূরে আলোকিত হয়ে আছে ।
(বায়হাকি)
হযরত আল্লামা জালাল উদ্দীন সূয়ুতী রাহমাতুল্লাহি আলাইহি।
♦উনার সম্পর্কে বলা আছে --
رايت رسول الله صلي الله عليه و سلم في اليقظة بضعا و سبعين مرة
অর্থ : হযরত জালালুদ্দীন সূয়ুতী রহমাতুল্লাহি আলাইহি বলেন, আমি আখেরী রসূল হাবীবুল্লাহ হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে জাগ্রত অবস্থায় সত্তর বারের বেশি দেখেছি !"
দলীল-
√ আল ইয়াকীতু ওয়াল জাওয়াহের ১ম খন্ড ১৩২ পৃষ্ঠা !
√ দালায়িলুছ ছুলুক
♦ তিনি এই দুই খানা হাদীস শরীফ বর্ণনা করেছেন:-
ﻋَﻦْ ﺍَﺑِﻰ ﺍﻟﺪَّﺭْﺩَﺍﺀِ ﺭَﺿِﻰَ ﺍﻟﻠﻪُ ﺗَﻌَﺎﻟٰﻰ ﻋَﻨْﻪُ ﺍَﻧَّﻪﻣَﺮَّ ﻣَﻊَ ﺍﻟﻨَّﺒِﻰِّ ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺳَﻠَّﻢَ ﺍِﻟٰﻰﺑَﻴْﺖِ ﻋَﺎﻣِﺮِ ﺍﻻَﻧْﺼَﺎﺭِﻯِّ ﻭَﻛَﺎﻥَ ﻳُﻌَﻠِّﻢُ ﻭَﻗَﺎﺋِﻊَﻭِﻻﺩَﺗِﻪ ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺳَﻠَّﻢَ ﻻَﺑْﻨَﺎﺋِﻪﻭَﻋَﺸِﻴْﺮَﺗِﻪ ﻭَﻳَﻘُﻮْﻝُ ﻫٰﺬَﺍ ﺍﻟْﻴَﻮْﻡَ ﻫٰﺬَﺍ ﺍﻟْﻴَﻮْﻡَﻓَﻘَﺎﻝَ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﺍﻟﺼَّﻠٰﻮﺓُ ﻭَﺍﻟﺴَّﻼﻡُ ﺍِﻥَّ ﺍﻟﻠﻪَ ﻓَﺘَﺢَﻟَﻚَ ﺍَﺑْﻮَﺍﺏَ ﺍﻟﺮَّﺣْﻤَﺔِ ﻭَﺍﻟْﻤَﻼﺋِﻜَﺔُ ﻛُﻠُّﻬُﻢْﻳَﺴْﺘَﻐْﻔِﺮُﻭْﻥَ ﻟَﻚَ ﻣَﻦْ ﻓَﻌَﻞَ ﻓِﻌْﻠَﻚَ ﻧَﺠٰﻰﻧَﺠٰﺘَﻚَ
অর্থ: হযরত আবু দারদা রদ্বিয়াল্লাহুতায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিতআছে যে, একদা তিনি রসূলে পাকছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামউনার সাথে হযরত আমিরআনছারী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুউনার গৃহে উপস্থিত হয়ে দেখতে পেলেনযে, তিনি বিলাদত শরীফ উপলক্ষে খুশি প্রকাশ করে উনার সন্তানাদি এবং আত্মীয়-স্বজন,জ্ঞাতি-গোষ্ঠী, পাড়া-প্রতিবেশীদেরকে নিয়ে আখিরী রসূল হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বিলাদত শরীফ-এর ঘটনাসমূহ শুনাচ্ছেন এবং বলছেন, এই দিবস; এই দিবস (অর্থাৎ এই দিবসে রসূলুল্লাহছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামতিনি যমীনে তাশরীফ এনেছেন এবং ইত্যাদি ইত্যাদি ঘটেছে)। বিলাদত শরীফ-এর ঘটনাবলী শ্রবণ করে হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি অত্যন্ত খুশি হয়ে বললেন, “নিশ্চয়ই আল্লাহতায়ালা তিনি উনার রহমতের দরজা আপনার জন্য উন্মুক্ত করেছেন এবং সমস্ত ফেরেশতাগণ উনারা আপনারজন্য ক্ষমা প্রার্থনা করছেন এবং যে কেউ আপনার মতো এরূপ কাজকরবে, সেও আপনার মতো নাজাত(ফযীলত) লাভ করবে।”
সুবহানাল্লাহ!
ﻋَﻦْ ﺍِﺑْﻦِ ﻋَﺒَّﺎﺱٍ ﺭَﺿِﻰَ ﺍﻟﻠﻪُ ﺗَﻌَﺎﻟٰﻰ ﻋَﻨْﻬُﻤَﺎ ﺍَﻧَّﻪٗﻛَﺎﻥَ ﻳُﺤَﺪِّﺙُ ﺫَﺍﺕَ ﻳَﻮْﻡٍ ﻓِﻰْ ﺑَﻴْﺘِﻪٖ ﻭَﻗَﺎﺋِﻊَﻭِﻻﺩَﺗِﻪٖ ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺳَﻠَّﻢَ ﻟِﻘَﻮْﻡٍ ،ﻓَﻴَﺴْﺘَﺒْﺸِﺮُﻭَﻥْ ﻭَﻳُﺤَﻤِّﺪُﻭْﻥَ ﺍﻟﻠﻪَ ﻭَﻳُﺼَﻠُّﻮْﻥَﻋَﻠَﻴْﻪِ ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺳَﻠَّﻢَ ﻓَﺎِﺫَﺍ ﺟَﺎﺀَﺍﻟﻨَّﺒِﻰُّ ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺳَﻠَّﻢَ ﻗَﺎﻝَ ﺣَﻠَّﺖْﻟَﻜُﻢْ ﺷَﻔَﺎﻋَﺘِﻰْ
অর্থ: হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হতে বর্ণিত আছে যে, তিনি একদা বিলাদত শরীফ উপলক্ষে খুশি প্রকাশ করে উনার নিজ গৃহে ছাহাবীগণকে সমবেত করে আল্লাহ পাক উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বিলাদত শরীফ-এর ঘটনাসমূহ শুনাচ্ছিলেন। এতে শ্রবণকারীগণ আনন্দও খুশি প্রকাশ করছিলেন এবং আল্লাহপাক উনার প্রশংসা তথা তাসবীহ-তাহলীল পাঠ করছিলেন এবং আল্লাহপাক উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার উপর (ছলাত-সালাম) দুরূদ শরীফ পাঠকরছিলেন। এমন সময় রসূলে পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তথায় উপস্থিত হয়ে বিলাদত শরীফ উপলক্ষে খুশি প্রকাশ করতে দেখে বললেন: “আপনাদের জন্য আমার শাফায়াত ওয়াজিব হয়ে গেলো।”
সুবহানাল্লাহ! ! !
দলীল---
♦সুবুলুলহুদা ফী মাওলিদিল মুস্তফা ছল্লাল্লাহুআলাইহি ওয়া সাল্লাম- হযরত ইমামজালালুদ্দীন সুয়ূতী রহমাতুল্লাহি আলাইহি
♦মাওলুদুল কবীর - হাফিযে হাদীস, ইমাম ইবনে হাযর মক্কী রহমাতুল্লাহি আলাইহি
♦ আত তানভীর ফী মাওলিদিল বাশীর ওয়ান নাযার - শায়খ হাফিযে হাদীস আবিল খত্তাব ইবনে দাহিয়্যা রহমাতুল্লাহি আলাইহি
♦ দুররুল মুনাযযাম - সপ্তম অধ্যায় - প্রথম পরিচ্ছেদ
♦ইশবাউল কালাম
♦হাক্বীকতে মুহম্মদী মীলাদে আহমদী ৩৫৫ পৃষ্ঠা
♦মক্কা শরীফের প্রখ্যাত মুহাদ্দিস ,ইমামুল মুহাদ্দেসিন আল্লামা শিহাব উদ্দিন আহমদ ইবনে হাজার আল হায়তামী আশশাফেয়ী রহমাতুল্লাহি আলাইহি আলাইহি (যার জন্ম ৮৯৯ হিজরী, ইনতিকাল ৯৭৪ হিজরী) তার লিখিত “আন নেয়মাতুল কুবরা আলাল আলাম” কিতাবের মধ্যে নিম্নোক্ত হাদীস গুলো তিনি বর্ণনা করেন-
♦ সর্বশ্রেষ্ট সাহবী ও ইসলামের প্রথম খলিফা হযরত আবু বকর সিদ্দিক (রা) বলেন-
مَنْ اَنْفَقَ دِرْهَمًا عَلَى قِرا ةَ مَوْ لِدِ النَّبىُ صلي اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ كَان رفيقي فىِ الجَنّةِ
অর্থাৎ- “যে ব্যক্তি মীলাদুন্নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উপলক্ষ্যে এক দিরহাম খরচ করবে সে জান্নাতে আমার সঙ্গী হবে”।
দলীল-
√ আন নেয়মাতুল কুবরা আলাল আলাম, পৃষ্ঠা নং-৭
♦ দ্বিতীয় খলিফা হযরত ওমর ফারুক (রা) বলেন-
مَنْ عَظَّمَ مَوْلِدِ النَّبِىُ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَقَدْ َاحيا الاسْالاَمُ
অর্থাৎ- “যে ব্যক্তি মীলাদুন্নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-কে সম্মান করলো, সে অবশ্যই ইসলামকে জীবিত করলো”।
দলীল-
√আন নেয়মাতুল কুবরা আলাল আলাম, পৃষ্ঠা নং-৭
♦তৃতীয় খলিফা হযরত উসমান বিন আফফান (রা) বলেন -
مَنْ اَنْفَقَ دِرْهَمًا عَلَى قرأة مَوْلِدِ النَّبِىُ صَلّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمْ فَكَا نَّمَا ثَهِيد غَزُوَةِ بَدَر َوحُنَيْنُ
অর্থাৎ- “যে ব্যক্তি মীলাদুন্নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পাঠ করার জন্য এক দিরহাম খরচ করল- সে যেন বদর ও হুনাইন জিহাদে শরীক হলো”।
দলীল-
√আন নেয়মাতুল কুবরা আলাল আলাম, পৃষ্ঠা নং-৮
♦চুতর্থ খলিফা হযরত আলি (রা) বলেন :-
مَنْ عَظَّمَ مَوْ لِدِ النَّبِى صَلّى اللهُ عَلَيْهِ وَ سَلَّمَ وَكَانَ سَبَبَا لِقرا ته لا يَخرج مِنَ الدُّنْيَا اِلا َّبِالاِ يْمَانِ وَيَدْخُلُ الجَنَّهَ بِغَيْرِ حِسَاب
অর্থাৎ- “যে ব্যক্তি মীলাদুন্নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-উনাকে সম্মান করবে হবে সে ঈমানের সাথে মৃত্যুবরণ করবে এবং বিনা হিসাবে জান্নাতে প্রবেশ করবে”।
দলীল-
√আন নেয়মাতুল কুবরা আলাল আলাম, পৃষ্ঠা নং-৮
♦আল্লামা ইউসুফ নাবহানী রহমাতুল্লাহি আলাইহি তাঁর ‘জাওয়াহেরুল বিহার’ এর গ্রন্থে ৩য় খন্ডের ৩৫০ পৃষ্ঠায় উপরে উল্লিখিত বর্ণনা উপস্থাপন করে বলেছেন যে, আমার উপরোক্ত হাদীস সমূহের সনদ জানা রয়েছে। কিন্তু
কিতাব বড় হয়ে যাবার আশংকায় আমি সেগুলো অত্র কিতাবে উল্লেখ করিনি।
♦আল্লামা ইবন হাজর হায়তামী রহমাতুল্লাহি আলাইহি উনার নির্ভরতা প্রশ্নাতীত। তাঁর উক্ত কিতাবের উপর বহু শরাহ লিখা হয়েছে। তন্মধ্যে আল্লামা দাউদী রহমাতুল্লাহি আলাইহি ও আল্লামা সাইয়িদ আহমদ আবেদীন দামেস্কি রহমাতুল্লাহি আলাইহি অন্যতম। উনার রিওয়াতকৃত উপরোক্ত বর্ণনা দ্বারা প্রমাণীত হল যে, খোলাফায়ে রাশেদীনের যুগেও মিলাদুন্নাবী চালু ছিল এবং তারাও এর জন্য অন্যকে তাগীদ করেছেন।
♦হযরত খুরাইম বিন আউস রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, তাবুক থেকে ফেরার পর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের নিকট আমি গমন করলাম অতঃপর তাঁর নিকট ইসলাম গ্রহণ করলাম। তখন আমি হযরত আব্বাস বিন আব্দিল মুত্তালিব রাদিয়াল্লাহু আনহুকে বলতে শুনলাম,
ইয়া রাসুলাল্লাহ, আমি আপনার প্রশংসা করতে চাই।
রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন,
বলুন। আল্লাহ যেন আপনার মুখকে দন্তহীন না করেন।
অর্থাৎ আল্লাহ আপনাকে সে তাওফিক দান করুন।
তখন আব্বাস বিন আব্দিল মুত্তালিব রাদিয়াল্লাহু আনহু বলতে শুরু করলেন,
ওয়া আনতা লাম্মা উলিদতা আশরাক্বাতিল আরদ্বু
ওয়া দ্বা--আত বিনূ---রিকাল উফুক্বু’।
গদ্যানুবাদঃ
(ইয়া রাসুলাল্লাহ)
আপনি যখন দুনিয়াতে তাশরিফ এনেছিলেন (জন্ম লাভ করলেন),
পৃথিবী তখন আলোকিত হয়ে উঠেছিল।
আর আপনার নূরের ঝলকে উদভাসিত হয়ে গিয়েছিল দিগন্ত।
আর আমরা সেই নুর আর সেই আলোয় সঠিক পথেই পথ চলছি।
উল্লেখ্য,
হাফিযুল হাদীস ইমাম ইবনু হাজার আসকালানী রাহিমাহুল্লাহ বলেন, এই হাদীসটি হাসান।
সুতরাং, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের চাচাজান হযরত আব্বাস বিন আব্দিল মুত্তালিব রাদিয়াল্লাহু আনহু নবীজীর শানে না’ত পরিবেশনের মাধ্যমে মীলাদুন্নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উদযাপন করলেন। সুবহান আল্লাহ।
Reference :
♦ আল বিদায়াহ ওয়ান নিহায়াহ, খন্ডঃ৩,
♦ইমাম ইবনু কাসির (রাহ);
♦আল-আমালী,
♦ইবনু হাজার আসকাকালানী
♦হাফিজে হাদীস হযরত আবু বকর
ইবনে আবী শায়বা রহমাতুল্লাহি আলাইহি যেটা বিশুদ্ধ
সনদে হাদীস শরীফে বর্ননা করেন-
ﻋﻦ ﻋﻔﺎﻥ ﻋﻦ ﺳﻌﻴﺪ ﺑﻦ ﻣﻴﻦ ﻋﻦ ﺟﺎﺑﺮ ﻭﺍﺑﻦ ﻋﺒﺎﺱ ﺭﺿﻲ
ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻨﻬﻤﺎ ﻗﺎﻝ ﻭﻟﺪ ﺭﺳﻮﻝ ﺻﻠﻲ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭ ﺳﻠﻢ ﻋﺎﻡ
ﺍﻟﻔﻴﻞ ﻳﻮﻡ ﺍﻻﺛﻨﻴﻦ ﺍﻟﺜﺎﻧﻲ ﻋﺸﺮ ﻣﻦ ﺷﻬﺮ ﺭﺑﻴﻊ ﺍﻻﻭﻝ
অর্থ : হযরত আফফান
রহমাতুল্লাহি আলাইহি হতে বর্নিত,তিনি হযরত
সাঈদ
ইবনে মীনা রহমাতুল্লাহি আলাইহি থেকে বর্ননা করেছেন
যে, হযরত জাবির ও হযরত ইবনে আব্বাস
রদ্বিয়াল্লাহু আনহুমা বলেন, হুজুর পাক
ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম
উনার বিলাদত শরীফ
হস্তি বাহীনি বর্ষের ১২ই রবীউল
আউয়াল সোমবার শরীফ হয়েছিল। "
Reference :-
√ মুছান্নাফ ইবনে আবী শায়বা
√ বুলুগুল আমানী শরহিল ফতহুর রব্বানী
√ আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া ।
সাহাবী হাসান বিন সাবিত (রা) এর মীলাদুন্নবী (সা) বর্ননা:-
সাহাবী কবি হযরত হাসসান বিন সাবেত (রাঃ) দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়াসাল্লাম এর উপস্থিতিতে তাঁর গৌরবগাঁথা পেশ করতেন এবং অন্যান্য সাহাবীগন সমবেত হয়ে শ্রবণ করতেন। হজরত হাসসানবিন সাবেত (রাঃ) মিলাদুন্নবী (সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়াসাল্লাম) বর্ণনা প্রসঙ্গে একখানি কবিতাগ্রন্থ লিখেছিলেন এবং হুজুর সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়াসাল্লাম কে শুনিয়েছিলেন পরবর্তীতে যার নামকরণ করা হয়েছিল “""""দিওয়ানে হাসসান বিন সাবেত”""""। তিনি লিখেনঃ
হে প্রিয় রাসুল। আপনি সর্ব প্রকার ত্রুতিমুক্ত হয়েই মাসুম নবী হিসেবে জন্মগ্রহণ করেছেন। মনে হয় যেন আপনার ইচ্ছা অনুযায়ীই আপনার বর্তমান সুরত পয়দা করা হয়েছে। মহান আল্লাহ্ আজানের মধ্যে আপন নামের সাথে নবীর নাম সংজজন করেছেন যখন মুয়াজ্জিন পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের আজানে উচ্চারণ করেন আশহাদু আল লাইলাহা ইল্লাল্লাহ; আশহাদুয়ান্না মুহাম্মাদা রাসুলুল্লাহ(সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়াসাল্লাম) ।“আর আল্লাহ্ আপন নামের অংশ দিয়ে তাঁর প্রিয় হাবীবের নাম রেখেছেন। আরশের অধিপতি হলেন “মাহমুদ’ এবং ইনে হলেন ‘মুহাম্মদ’।
♦হাদীস শরীফে ইরশাদ মুবারক হয়েছে--
ﻋﻦ ﺍﻟﻌﺮﺑﺎﺽ ﺑﻦ ﺳﺎﺭﻳﺔ ﺭﺿﻲ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻨﻪ ﻗﺎﻝ ﻗﺎﻝ ﺭﺳﻮﻝ ﺻﻠﻲ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭ ﺳﻠﻢ ﻋﻠﻴﻜﻢ ﺑﺴﻨﺘﻲ ﻭ ﺳﻨﺔ ﺍﻟﺨﻠﻔﺎﺀ ﺍﻟﺮﺍﺷﺪﻳﻦ ﺍﻟﻤﻬﺪﻳﻦ ﺗﻤﺴﻜﻮﺍ ﺑﻬﺎ ﻭ ﻋﻀﻮﺍ ﻋﻠﻴﻬﺎ ﺑﺎﻟﻨﻮﺍﺟﺬ
অর্থ : হযরত ইরবায ইবনে সারিয়া রদ্বিয়াল্লাহু আনহুহতে বর্নিত, হুজুরপাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ মুবারক করেন, তোমাদের জন্য আমার সুন্নত এবং আমার খুলাফায়ে রাশেদীন রদ্বিয়াল্লাহু আনহুন উনাদের সুন্নত অবশ্যই পালনীয় ! তোমরা তা মাড়ির দাঁত দিয়ে শক্তভাবে আঁকড়ে ধরো !""
দলীল--
√ সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদীস শরীফ নং ৪২
√ তিরমিযী শরীফ, হাদীস শরীফ নং ২৬৭৬
√ আবু দাউদ শরীফ, হাদীস শরীফ নং ৪৬০৭
√ মুসনাদে আহমাদ শরীফ ৪/১২৬
♦হাফিজে হাদীস হযরত আবু বকর
ইবনে আবী শায়বা রহমাতুল্লাহি আলাইহি যেটা বিশুদ্ধ
সনদে হাদীস শরীফে বর্ননা করেন-
ﻋﻦ ﻋﻔﺎﻥ ﻋﻦ ﺳﻌﻴﺪ ﺑﻦ ﻣﻴﻦ ﻋﻦ ﺟﺎﺑﺮ ﻭﺍﺑﻦ ﻋﺒﺎﺱ ﺭﺿﻲ
ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻨﻬﻤﺎ ﻗﺎﻝ ﻭﻟﺪ ﺭﺳﻮﻝ ﺻﻠﻲ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭ ﺳﻠﻢ ﻋﺎﻡ
ﺍﻟﻔﻴﻞ ﻳﻮﻡ ﺍﻻﺛﻨﻴﻦ ﺍﻟﺜﺎﻧﻲ ﻋﺸﺮ ﻣﻦ ﺷﻬﺮ ﺭﺑﻴﻊ ﺍﻻﻭﻝ
অর্থ : হযরত আফফান
রহমাতুল্লাহি আলাইহি হতে বর্নিত,তিনি হযরত
সাঈদ
ইবনে মীনা রহমাতুল্লাহি আলাইহি থেকে বর্ননা করেছেন
যে, হযরত জাবির ও হযরত ইবনে আব্বাস
রদ্বিয়াল্লাহু আনহুমা বলেন, হুজুর পাক
ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম
উনার বিলাদত শরীফ
হস্তি বাহীনি বর্ষের ১২ই রবীউল
আউয়াল সোমবার শরীফ হয়েছিল। "
দলীল-
√ মুছান্নাফ ইবনে আবী শায়বা
√ বুলুগুল আমানী শরহিল ফতহুর রব্বানী
√ আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া ।
♦মুস্তাহিদ এক
বাক্যে ইজমা করেছেন-
ﺍﻥ ﺍﻟﺘﺮﺑﺔ ﺍﻟﺘﻲ ﺍﺗﺼﻠﺖ ﺍﻟﻲ ﺍﻋﻈﻢ ﺍﻟﻨﺒﻲ ﺻﻠﻲ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ
ﻭ ﺳﻠﻢ ﺍﻓﻀﻞ ﻣﻦ ﺍﻻﺭﺽ ﻭﺍﻟﺴﻤﺎﺀ ﺣﺘﻲ ﺍﻟﻌﺮﺵ ﺍﻟﻌﻈﻴﻢ
অর্থ: হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার শরীর
মুবারক উনার সাথে যে মাটি স্পর্শ
করেছে তা আসমান-জমিন, আরশ-কুরসির
চাইতেও শ্রেষ্ঠ।"
দলীল-
√ ফতোয়ায়ে শামী ৩য় খন্ড- কিতাবুল
যিয়ারত।
♦আরো উল্লেখ আছে-
ﻓﺎﻧﻪ ﺍﻓﻀﻞ ﻣﻄﻠﻖ ﺣﺘﻲ ﻣﻦ ﺍﻟﻜﻌﺒﺔ ﻭﺍﻋﺮﺵ ﻭﺍﻟﻜﺮﺳﻲ
অর্থ: হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি সবকিছুর
চাইতে শ্রেষ্ঠ, এমনকি কা'বা শরীফ,
আরশে আযীম ও কুরসী হতেও!"
দলীল-
√ দূররুল মুখতার ১ম খন্ড ১৮৪পৃষ্ঠা।
প্রখ্যাত আলেমগণের মতে ঈদে মিলাদুন্নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)
____________________
প্রখ্যাত আলেমগণের মতে ঈদে মিলাদুন্নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)
প্রসিদ্ধ তাবেঈ হযরত হাসান বসরী (রঃ) বলেন
قال حسن البصري رضي الله تعالی عنه وددت لو کان لی مثل جبل احد ذھبا فانفقته علی قراءة مولد النبي صلی الله علیه وسلم
অর্থাৎ- যদি আমার উহুদপাহাড় পরিমাণ স্বর্ণথাকত তাহলে আমিতা রাসূলে পাকসাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর ঈদ–ই–মিলাদুন্নাবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহিওয়া সাল্লাম) মাহফিলে খরচকরতাম।
— আন নেয়মাতুল কুবরাআলাল আলাম, পৃষ্ঠানং–১১
হযরত জুনাইদ বাগদাদী (রঃ) বলেন
যেব্যক্তি ঈদ–ই–মিলাদুন্নাবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহিওয়া সাল্লাম) এউপস্থিত হয়ে তাঁকেসম্মান প্রদর্শন করেছে, সে ঈমানের সফলতালাভ করেছে।
— আন নেয়মাতুল কুবরাআলাল আলাম, পৃষ্ঠানং–১১
হযরত মারুফ কারখী (রঃ) বলেন
যেব্যক্তি ঈদ–ই–মিলাদুন্নাবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহিওয়া সাল্লাম) উপলক্ষে পানাহারের আয়োজনকরে মুসলিমদের ভাইদেরএকত্রিত করে, আলোকসজ্জা করে, নতুন পোষাক পরিধানকরে এবং খুশবো, আতোর, গোলাপ ওলোবান প্রয়োগে নিজেকেসুগন্ধিযুক্ত করে; রোজকিয়ামতে প্রতম শ্রেণীর নবীদেরসাথে তার হাশরহবে এবং ইল্লীঈনের সর্বোচ্চ স্থানেসে অবস্থান করবে।
— আন নেয়মাতুল কুবরাআলাল আলাম, পৃষ্ঠানং–১১
শাফেঈ মাযহাবের প্রবর্তক ইমাম শাফেঈ (রঃ) বলেন
যদিকোন ব্যক্তি ঈদ–ই–মিলাদুন্নাবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহিওয়া সাল্লাম) উপলক্ষে মুসলিমভাইদেরকে খাবার তৈরীকরে মজলিসে আপ্যায়ন করেও ইবাদাত সম্পন্ন করে, রোজ কিয়ামতে সিদ্দীকিন, শাহাদাও সালেহীনদের সাথেতার হাশর হবেএবং জান্নাতুন নাঈমেসে অবস্থান করবে।
— আন নেয়মাতুল কুবরাআলাল আলাম, পৃষ্ঠানং–১৩
৯ম শতাব্দীর মুজাদ্দিদ আল্লামা জালালুদ্দিন সুয়ুতি (রঃ) বলেন
ইমাম সৈয়ুতী কৃত‘আল–হাওয়ী লিল্ফাতাওয়ী’ কিতাবের প্রচ্ছদ
http://www.sunnipediabd.com/mediawiki/images/thumb/7/74/Imam_suyuti_rah_on_mawlid.jpg/250px-Imam_suyuti_rah_on_mawlid.jpg
আল–হাওয়ী লিল্ফাতাওয়ী কিতাবে মিলাদুন্নবী (সঃ) এর স্বপক্ষে ইমামজালালুদ্দিন আস সৈয়ুতী (রহঃ) এর বক্তব্য
أن أصل عمل المولد الذي هو اجتماع الناس وقراءة ما تيسر من القرآن ورواية الأخبار الواردة في مبدأ أمر النبي صلى الله عليه وسلم وما وقع في مولده من الآيات ثم يمد لهم سماط يأكلونه وينصرفون من غير زيادة على ذلك هو من البدع الحسنة التي يثاب عليها صاحبها لما فيه من تعظيم قدر النبي صلى الله عليه وسلم وإظهار الفرح والاستبشار بمولده الشريف
মীলাদুন্নবী (ﷺ)উদযাপন যামূলতঃ মানুষদের সমবেতকরা, কুরআনের অংশ–বিশেষ তেলাওয়াত, মহানবী(ﷺ)-এর ধরাধামে শুভাগমন (বেলাদত) সংক্রান্ত ঘটনা ওলক্ষ্মণগুলোর বর্ণনা পেশ, অতঃপর তবাররুক (খাবার) বিতরণ এবং সবশেষেসমাবেশ ত্যাগ, তাউত্তম বেদআত (উদ্ভাবন); আরযে ব্যক্তি এরঅনুশীলন করেন তিনিসওয়াব অর্জন করেন, কেননা এতে জড়িতরয়েছে রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর মহানমর্যাদার প্রতি গভীরশ্রদ্ধা প্রদর্শন এবংতাঁর সম্মানিত বেলাদতের প্রতিখুশি প্রকাশ।
— ইমাম সৈয়ুতী কৃত‘আল–হাওয়ী লিল্ফাতাওয়ী’, ১ম খণ্ড, ২৯২ পৃষ্ঠা, মাকতাবা আল–আসরিয়া, বৈরুত, লেবানন হতে প্রকাশিত
তিনিতার স্ব–রচিত“আল উয়াছায়েল ফীশরহিশ শামাইল” গ্রন্থে উল্লেখআরও করেন,
যেগৃহে বা মসজিদেকিংবা মহল্লায় মীলাদুন্নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহিওয়া সাল্লাম উপলক্ষ্যে হুযুরসাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম–এর মীলাদমাহফিলের আয়োজন করাহয়। তখন অবশ্যইসে গৃহ বামসজিদ বা মহল্লাঅসংখ্য ফেরেশতা দ্বারাপরিবেষ্টিত থাকে এবংউক্ত স্থান সমূহেযারা অবস্থান করেতাদের জন্য তারাসালাত পাঠ করে।(অর্থাৎ তাদের গুণাহরজন্য ক্ষমা প্রার্থনা করে) এবং আল্লাহ তায়ালা তাদেরসবাইকে সাধারণভাবে রহমতও সন্তুষ্টি দ্বারাভূষিত করেন। অতঃপরনূরের মালা পরিহিতফেরেশতাকুল বিশেষতঃ হযরতজিব্রাঈল, মীকাঈল, ঈস্রাফীল ওআজরাঈল আলাইহিস সালামমিলাদুন্নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহিওয়া সাল্লাম উপলক্ষ্যে মাহফিলআয়োজনকারীর গুণাহ মাফেরজন্য আল্লাহর কাছেপ্রার্থনা করতে থাকেন।
তিনিআরো বলেন,
যেমুসলমানের গৃহে হুযুরসাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম–এর মীলাদপাঠ করা হয়, সে গৃহ ওগৃহে বসবাসকারী ব্যক্তি দুর্ভিক্ষ, মহামারী, অগ্নি, পানি, পরনিন্দা, কুদৃষ্টি ওচুরি ইত্যাদির আক্রমণথেকে মুক্ত থাকবে।সে ঘরে যারমৃত্যু হবে সেমৃত ব্যক্তি কবরেমুনকার নকীরের প্রশ্নের উত্তরঅতি সহজে দিতেপারবে। যে ব্যক্তি রাসুলসাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম–এর মীলাদকে সম্মান করতেচায়, তার জন্যইহাই যথেষ্ট। পক্ষান্তরে যেব্যক্তির নিকট নবীকরীম সাল্লাল্লাহু আলাইহিওয়া সাল্লাম–এরমীলাদের কোন মর্যাদা নেই, তার অন্তর এতনিকৃষ্ট হয়ে পড়বেযে, তার সামনেহুযুরপুর নূর সাল্লাল্লাহু আলাইহিওয়া সাল্লাম–এরবিশ্বজোড়া প্রশংসাগীতি উচ্চারিত হলেওতার অন্তরে হুযুরসাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম–এর জন্যবিন্দুমাত্র মুহাব্বতের উদ্রেকহবে না।
— আন নেয়মাতুল কুবরাআলাল আলাম, পৃষ্ঠানং– ১৩ ও১৪
ইমাম ইবন কাসীর (রঃ) বলেন
আল বিদায়া ওয়াননিহায়া উর্দু কিতাবের প্রচ্ছদ
http://www.sunnipediabd.com/mediawiki/images/thumb/f/f0/Milad-shareef.jpg/250px-Milad-shareef.jpg
আল বিদায়া ওয়াননিহায়া উর্দু কিতাবের যেঅংশে ইবনে কাসির(রহঃ) মিলাদ শরীফেরপক্ষে লিখেছেন
ইবনেকাসীর, যাকে সালাফী/ওহাবীরা তাফসীরও ইতিহাস শাস্ত্রে সবচেয়ে বেশিশ্রদ্ধা করে থাকে, তিনি সর্বজন শ্রদ্ধেয় ইসলামের মুজাহিদ সুলতানগাযী সালাহউদ্দীন আইয়ুবীর ভগ্নিপতি শাহমালিক আল–মুযাফফর সম্পর্কে উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করেন।অথচ সালাফীরাই ইবনেকাসীরের কথাকে বিকৃতকরে এই মর্মেমিথ্যে ছড়িয়েছে যেমুযাফফর শাহ একজনফাসেক, নিষ্ঠুর ওবেদআতী শাসক ছিলেন(নাউযু বিল্লাহ)।প্রকৃতপক্ষে ইবনে কাসীরলিখেন:
أحد الاجواد والسادات الكبراء والملوك الامجاد له آثار حسنة وقد عمر الجامع المظفري بسفح قاسيون وكان قدهم بسياقه الماء إليه من ماء بذيرة فمنعه المعظم من ذلك واعتل بأنه قد يمر على مقابر المسلمين بالسفوح وكان يعمل المولد الشريف في ربيع الاول ويحتفل به احتفالا هائلا وكان مع ذلك شهما شجاعا فاتكا بطلا عاقلا عالما عادلا رحمه الله وأكرم مثواه وقد صنف الشيخ أبو الخطاب ابن دحية له مجلدا في المولد النبوي سماه التنوير في مولد البشير النذير فأجازه على ذلك بألف دينار وقد طالت مدته في الملك في زمان الدولة الصلاحية وقد كان محاصر عكا وإلى هذه السنة محمودالسيرة والسريرة قال السبط حكى بعض من حضر سماط المظفر في بعض الموالد كان يمد في ذلك السماط خمسة آلاف راس مشوى وعشرة آلاف دجاجة ومائة ألف زبدية وثلاثين ألف صحن حلوى
(মুযাফফর শাহ) ছিলেন একজন উদার/সহৃদয় ওপ্রতাপশালী এবং মহিমান্বিত শাসক, যাঁর সকল কাজছিল অতি উত্তম।তিনি কাসিইউন–এরকাছে জামেয়া আল–মুযাফফরী নির্মাণ করেন…..(প্রতি) রবিউলআউয়াল মাসে তিনিজাঁকজমকের সাথে মীলাদশরীফ (মীলাদুন্নবী) উদযাপনকরতেন। উপরন্তু, তিনিছিলেন দয়ালু, সাহসী, জ্ঞানী, বিদ্বান ওন্যায়পরায়ণ শাসক – রাহিমুহুল্লাহ ওয়াএকরাম – শায়খ আবুলখাত্তাব (রহ) সুলতানের জন্যেমওলিদুন্ নববী সম্পর্কে একখানিবই লিখেন এবংনাম দেন ‘আত্তানভির ফী মওলিদআল–বাশির আন্নাযীর’। একাজের পুরস্কারস্বরূপ সুলতানতাঁকে ১০০০ দিনারদান করেন। সালাহিয়া আমলপর্যন্ত তাঁর শাসনস্থায়ী হয় এবংতিনি ’আকা’ জয়করেন। তিনি সবারশ্রদ্ধার পাত্র থেকেযান। আস্ সাবত্এক ব্যক্তির কথাউদ্ধৃত করেন যিনিসুলতানের আয়োজিত মওলিদঅনুষ্ঠানে যোগ দিয়েছিলেন; ওইব্যক্তি বলেন: ‘অনুষ্ঠানে সুলতানভালভাবে রান্নাকৃত ৫০০০ছাগল, ১০,০০০মোরগ, ১ লক্ষবৌল–ভর্তি দুধএবং ৩০,০০০ট্রে মিষ্টির আয়োজনকরতেন’।
— তারিখে ইবনে কাসীর, ‘আল–বেদায়াহ ওয়ান্নেহায়া’ ১৩তম খণ্ড, ১৭৪ পৃষ্ঠা
বুখারী শরীফের ব্যাখাকার বিশ্ববিখ্যাত মোহাদ্দিস আল্লামা কুস্তোলানী রহমাতুল্লাহে আলাইহি (মৃত্যুঃ ৯২৩ হিজরী) বলেন–
যেব্যক্তি নবী করীমসাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম–এর শুভাগমনের মোবারকমাসের রাতসমূহকে ঈদহিসেবে গ্রহণ করে, আল্লাহ তার উপরেরহমত বর্ষণ করেন।আর উক্ত রাত্রকে ঈদহিসেবে উদযাপন করবেএ জন্য যে, যাদের অন্তরে (নবীবিদ্বেষী) রোগ রয়েছে। তাদেরঐ রোগ যেনআরো শক্ত আকারধারণ করে এবংযন্ত্রণায় অন্তর জ্বলেপুড়ে যায়।
— শরহে জুরকানী আলালমাওয়াহেব, ১ম খন্ড, পৃষ্ঠা নং– ২৬২
বুখারী শারীফের আরেক অন্যতম নির্ভরযোগ্য ব্যাখ্যাগ্রন্থ ‘ফাতহুল বারী’ এর লেখক ইমাম ইবন হাজর আসকলানী (রঃ) বলেন–
ইমাম জালালুদ্দিন আসসুয়ুতী (রহঃ) কৃতহুসনুল মাকসাদ ফীআমলিল মওলিদ কিতাবের প্রচ্ছদ
http://www.sunnipediabd.com/mediawiki/images/thumb/4/4a/Husnul_makasid_page63.jpg/250px-Husnul_makasid_page63.jpg
হুসনুল মাকসাদ ফীআমলিল মওলিদ কিতাবের পৃষ্ঠানং ৬৩
http://www.sunnipediabd.com/mediawiki/images/thumb/7/74/Husnul_makasid_page64.jpg/250px-Husnul_makasid_page64.jpg
হুসনুল মাকসাদ ফীআমলিল মওলিদ কিতাবের পৃষ্ঠানং ৬৪
http://www.sunnipediabd.com/mediawiki/images/thumb/9/95/Husnul_makasid_page65.jpg/250px-Husnul_makasid_page65.jpg
হুসনুল মাকসাদ ফীআমলিল মওলিদ কিতাবের পৃষ্ঠানং ৬৫
মহানবীসাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর মীলাদদিবস উদযাপন সম্পর্কে হযরতইমামকে জিজ্ঞেস করাহলে তিনি লিখিতভাবে যেউত্তর দেন তানিম্নরূপ: মীলাদুন্নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উদযাপনের উৎসবলতে এটি এমনএক বেদআত (উদ্ভাবন) যাপ্রথম তিন শতকেরসালাফ আস্ সালেহীন (পুণ্যাত্মাবৃন্দ) কর্তৃকআমাদেরকে জ্ঞাত করানোহয় নি, যদিওএতে প্রশংসনীয় ওপ্রশংসনীয় নয় উভয়দিকই বিদ্যমান। কেউপ্রশংসনীয় দিকগুলো গ্রহণকরে প্রশংসনীয় নয়এমন দিকগুলো বর্জনকরায় যত্নবান হলেতা বেদআতে হাসানাতথা কল্যাণময় নতুনপ্রথা হবে। আরতা না হলেএর উল্টো হবে।এ বিষয়ের বৈধতাপ্রতীয়মানকারীএকটি নির্ভরযোগ্য শরীয়তের দলিলআমার সামনে এসেছে, আর তা হলোবুখারী ও মুসলিমশরীফে উদ্ধৃত সহীহহাদীস যা’তেবর্ণিত হয়েছে যেমহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মদীনামোনাওয়ারায় হিজরত করেদেখতে পান সেখানকার ইহুদীরা ১০ইমহররম (আশুরা) তারিখেরোযা রাখেন।
— হুসনুল মাকসাদ ফীআমলিল মওলিদ, ৬৩ পৃষ্ঠা
এমতাবস্থায় তিনিতাদেরকে এর কারণজিজ্ঞেস করলে তারাউত্তর দেন, ‘এইদিনে আল্লাহতা’লাফেরাউনকে পানিতে ডুবিয়ে মূসা(আ:)-কে রক্ষাকরেন। তাই আমরামহান প্রভুর দরবারেএর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশের উদ্দেশ্যে রোযারেখে থাকি।’ এইঘটনা পরিস্ফুট করেযে আল্লাহতা’লাররহমত অবতরণের কিংবাবালা–মসীবত দূরহওয়ার কোনো বিশেষদিনের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশকরা, সেই উদ্দেশ্যে বার্ষিকী হিসেবেতা উদযাপনের সময়নামায, রোযা, দান–সদকাহ বাকুরআন তেলাওয়াতের মতোবিভিন্ন এবাদত–বন্দেগী পালনকরা শরীয়তে জায়েয। আররাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এরমীলাদের (ধরণীতে শুভাগমন দিবসের) চেয়ে আল্লাহর বড়রহমত কী–ইবা হতে পারে? এরই আলোকে প্রত্যেকের উচিতহযরত মূসা (আ) ও ১০ই মহররমের ঘটনার(দালিলিক ভিত্তির) সাথেসঙ্গতি রেখে মীলাদুন্নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দিবস উদযাপন করা; তবে যাঁরা এটিবিবেচনায় নেন না, তাঁরা (রবিউল আউয়াল) মাসের যে কোনোদিন তা উদযাপনে আপত্তিকরেন না; অপরদিকে কেউ কেউসারা বছরের যেকোনো সময় (দিন/ক্ষণ) তাউদযাপনকে কোনো ব্যতিক্রম ছাড়াইবৈধ জেনেছেন।
— হুসনুল মাকসাদ ফীআমলিল মওলিদ, ৬৪ পৃষ্ঠা
আমিমওলিদের বৈধতার দলিলসুন্নাহ’র আরেকটিউৎস থেকেপেয়েছি (আশুরার হাদীসথেকে বের করাসিদ্ধান্তের বাইরে)।এই হাদীস ইমামবায়হাকী (রহ) হযরতআনাস (রা) থেকেবর্ণনা করেন: ‘হুযূরপাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নবুয়্যত প্রাপ্তির পরনিজের নামে আকিকাহকরেন; অথচ তাঁরদাদা আবদুল মোত্তালিব তাঁরইবেলাদতের সপ্তম দিবসেতাঁর নামে আকিকাহকরেছিলেন, আর আকিকাহদু’বার করাযায় না। অতএব, রাসূলে খোদা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বিশ্বজগতে আল্লাহর রহমতহিসেবে প্রেরিত হওয়ায় মহানপ্রভুর দরবারে কৃতজ্ঞতা প্রকাশের জন্যেএটি করেছিলেন, তাঁরউম্মতকে সম্মানিত করারজন্যেও, যেমনিভাবে তিনিনিজের ওসীলা দিয়েদোয়া করতেন। তাইআমাদের জন্যেও এটিকরা উত্তম হবেযে আমরা মীলাদুন্নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দিবসে কৃতজ্ঞতাসূচক খুশিপ্রকাশার্থে আমাদের দ্বীনীভাইদের সাথে সমবেতহই, মানুষদেরকে খাবারপরিবেশন করি এবংঅন্যান্য সওয়াবদায়ক আমলপালন করি।’ এইহাদীস পূর্বোক্ত মহানবীসাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর দ্বারামীলাদ ও নবুয়্যত–প্রাপ্তির দিবসপালনার্থে সোমবার রোযারাখার হাদীসকে সমর্থনদেয়।
— হুসনুল মাকসাদ ফীআমলিল মওলিদ, ৬৪–৬৫ পৃষ্ঠা
হযরত সাররী সাক্বত্বী (রঃ) বলেন
যেব্যক্তি মিলাদ শারীফপাঠ বা মিলাদুন্নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উদযাপন করার জন্যস্থান নির্দিষ্ট করল, সে যেন তারজন্য জান্নাতে রওজাবা বাগান নির্দিষ্ট করল।কেননা সে তাহুজুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর মহব্বতের জন্যইকরেছে।
— আন নেয়মাতুল কুবরাআলাল আলাম, পৃষ্ঠানং– ১৩
১১’শ শতাব্দীর বা সহস্রাব্দের মুজাদ্দিদ আলফে সানী (রঃ) বলেনঃ
دیگر درباب مولود خوانی اندراج یا فتہ بود در نفس قران خواندن بصوت حسن وقصائد نعت ومنقبت خواندن چہ مضائقہ است؟ ممنوع تحریف وتغیر حروف قران است والتزام رعایت مقامات نغمہ وتبرید صوت باں طریق الحان باتصفیق منا سب انکہ در شعر نیز غیر مبارح است. اگر ہر نہجے خوانند کہ تحریفے در کلمات قران واقع نشود و در قصائد خواندن شروط مذکورہ متحقق نگردد رواں ہم بغرض صحیح تجویز نما یند چہ مانع است؟
অর্থাৎ সুমিষ্ট আওয়াজে পবিত্রকুরআন শরীফ পাঠএবং নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূরপাক ছল্লাল্লাহু আলাইহিওয়া সাল্লাম উনারশানে সুন্দর ক্বাছীদাবলী আবৃত্তি করতেকি বাধা আছে? নিষিদ্ধ হচ্ছে পবিত্রকুরআন শরীফ উনারহরফ বা অক্ষরসমূহের মধ্যে পরিবর্তন বাগানের তাল বাছন্দ অবলম্বন স্বরেরউত্থান–পতন যাসাধারণ কবিতার মধ্যেওজায়িয নেই। যদিপবিত্র মীলাদ শরীফএমনভাবে পড়া হয়যে, পবিত্র কুরআনশরীফের মধ্যে কোনরূপপরিবর্তন আপতিত নাহয় এবং পবিত্রক্বাছীদা শরীফ আবৃত্তির মধ্যেউপরোক্ত গানের ছন্দবা তালের অনুসরণকরা না হয়, তাহলে এরূপ পবিত্রমীলাদ শরীফ পাঠেকি বাধা আছে?
— মাকতুবাতে ইমাম রব্বানী, ৩য়খন্ড, মাকতুব নং৭২
ভারতীয় উপমহাদেশের সর্বপ্রথম মোহাদ্দিস হযরত শায়খ আবদুল হক মোহাদ্দেসে দেহলভী রহমাতুল্লাহে আলাইহি বলেন–
যেব্যক্তি মীলাদুন্নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহিওয়া সাল্লাম–এররাত্রকে ঈদ হিসেবেপালন করে, তারউপর আল্লাহ তায়ালা রহমতনাযিল করেন। আরযার মনে হিংসাএবং [নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহিওয়া সাল্লাম–এরদুশমনির] রোগ রয়েছে, তার ঐ (নবীবিদ্বেষী) রোগ আরওশক্ত আকার ধারণকরে।
— মা সাবাতা বিসসুন্নাহ (উর্দু) পৃষ্ঠা নং–৮৬
উল্লেখ্য যেউপরিল্লিখিত মুহাদ্দিসগণের উছিলায় আজআমরা হাদীস শাস্ত্র এইউপমহাদেশে পেয়েছি ।অন্যথায় বর্তমানের কোনআলেমদের অস্তিত্বই পাওয়াযেত না ।এজন্য তাঁদের এলেমেরকাছেই বর্তমান আমরাসকল মুসলমানগণ চিরঋনী।
আল্লামা ইমাম শিহাব উদ্দিন আহমদ কুস্তোলানী রহমাতুল্লাহে আলাইহি “মাওয়াহিবে লাদুন্নিয়া” নামক কিতাবে হুযুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম–এর দুগ্ধপান শীর্ষক অধ্যায়ে আলোচনা করতে গিয়ে বলেন–
আবুলাহাবের আযাদকৃত দাসীসুয়াইবাহ তাকে (হুযুরসাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-কে দুধপান করিয়েছেন। যাকেআবু লাহাব তখনইআযাদ করেছিলো তখনতিনি তাকে হুযুরসাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম–এর বেলাদতশরীফের শুভ সংবাদশুনিয়েছিলেন।উল্লেখ্য যে, একদাআবু লাহাবকে তারমৃত্যুর পর স্বপ্নে দেখাগিয়েছিলো। (হযরত আব্বাসরাদ্বিয়াল্লাহুআনহু এক বছরপর স্বপ্ন দেখেছিলেন) তখনতাকে বলা হলো“তোমার কি অবস্থা?” সে বলল, দোজখেইআছি। তবে প্রতিসোমবার রাতে আমারশাস্তি কিছুটা শিথিলকরা হয়; আরআমি আমার এআঙ্গুল দুটির মধ্যখানে চুষেপানি পানের সুযোগপাই। আর তখনসে তার আঙ্গুলের মাথাদিয়ে ইশারা করলো।আর বলল, আমারশাস্তির শিথিলতা এজন্য যে, সুয়াইবা যখনআমাকে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহিওয়া সাল্লাম–এরবেলাদতের সুসংবাদ দিয়েছিলো, তখনতাকে আমি আযাদকরে দিয়েছিলাম এবংসে হুযুরকে দুগ্ধপান করিয়েছে।
তিনিআরো বলেন–
এতদভিত্তিতে, আল্লামা মোহাদ্দিস ইবনেজাযরী রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুবলেন, যখন ঐআবু লাহাব কাফির, যার তিরস্কারে কোরআনের সূরানাযিল হয়েছে। মীলাদুন্নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহিওয়া সাল্লাম–এআনন্দ প্রকাশের কারণেজাহান্নামে পুরস্কৃত হয়েছে। এখনউম্মতে মুহাম্মদী সাল্লাল্লাহু আলাইহিওয়া সাল্লাম–এরঐ একত্ববাদী মুসলমানের কিঅবস্থা? যে নবীকরীম সাল্লাল্লাহু আলাইহিওয়া সাল্লাম–এরবেলাদতে খুশি হয়এবং হুযুর সাল্লাল্লাহু আলাইহিওয়া সাল্লাম–এরভালবাসায় তার সাধ্যনুযায়ী খরচকরে। তিনি জবাবেবলেন– আমার জীবনেরশপথ! নিশ্চয়ই পরমকরুণাময় আল্লাহ তাকেআপন ব্যাপক করুণায় নিয়ামতপূর্ণ জান্নাতে প্রবেশকরাবেন।
— শরহে জুরকানী, ১মখন্ড, পৃষ্ঠা নং– ২৫৮–২৬২
আবু লাহাবের উক্ত ঘটনা সর্বশ্রেষ্ঠ হাদীস গ্রন্থ পবিত্র বোখারী শরীফেও বর্ণিত হয়েছে। হাদীসটি নিম্নরুপ
হযরতওরওয়া ইবনে যোবাইয়ের রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুবলেন, সুয়াইবাহ আবুলাহাবের দাসী ছিলেন।আবু লাহাব হুযুরসাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম–এর বেলাদতের সুসংবাদে দেওয়ার কারণে(আনন্দিত হয়ে) সুয়াইবাহকে আযাদকরে দিয়েছিলো। অতঃপরসুয়াইবাহ হুযুর সাল্লাল্লাহু আলাইহিওয়া সাল্লাম–কেদুধ পান করিয়েছিলেন। এরপরযখন আবু লাহাবমৃত্যুবরণ করল, তকন(এক বছর পর) তার ঘনিষ্টদের কেউ[হযরত আব্বাস রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু] তাকে স্বপ্নে শোচনীয় অবস্থায় দেখেতার উদ্দেশ্যে বলেন, “তোমার অবস্থা কেমন?” আবু লাহাব তদুত্তরে বললো, “তোমাদের নিকট থেকেআসার পর আমিকোন প্রকার শান্তিপাইনি, কেবল আমিযে (আল্লাহর হাবীবের জন্মসংবাদ বা মীলাদশরীফের খুশিতে) সুয়াইবাহকে (তর্জনীও মধ্যমা দুটিআঙ্গুলের ইশারায়) আযাদকরেছিলাম, ঐ কারণে(প্রতি সোমবার আঙ্গুলদু’টির মধ্যেকিছু পানি জমেথাকে) আমি ওইপানি চুষে থাকিও প্রতি সোমবারআযাবকে হাল্কা বোধকরে থাকি।
— বুখারী শরীফ, ২য়খন্ড, পৃষ্ঠা নং–৭৬৪
বোখারীশরীফে উক্ত পৃষ্ঠায়ই শেষেরদিকে এ হাদীসের পাদটিকায় বর্ণিতআছে :
সুয়াইবাহ আবুলাহাবকে হুযুর সাল্লাল্লাহু আলাইহিওয়া সাল্লাম–এরজন্মের সুসংবাদ দেওয়ার কারণেআবু লাহাব তাকেআযাদ করে দিয়েছিলো। অতঃপরএ আযাদ করাটা(পরকালে) আবু লাহাবের উপকারেএসেছে। এ কাজতার উপকারে আসারঅর্থ হলো– তারএ কর্ম হুযুরসাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম–এর বরকতেঅবশিষ্ট ছিল। অন্যান্য কাজেরন্যায় বিনষ্ট হয়েযায়নি।
আল্লামা কুস্তোলানী রহমাতুল্লাহে আলাইহি স্বীয় মাওয়াহিব গ্রন্থে আরো বলেন–
প্রতিটি যুগেমুসলমানগণ নবী করীমসাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম–এর বেলাদতশরীফের মাসে মাহফিলের আয়োজনকরে আসছেন। উন্নতমানের খাবারের আয়োজনকরেন, এর রাতগুলোতে বিভিন্ন ধরণেরসাদক্বাহ– খায়রাত করেন, আনন্দ প্রকাশ করতেথাকেন, পুন্যময় কাজবেশি পরিমাণে করেনএবং নবী করীমসাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম–এর বেলাদতশরীফের আলোচনার প্রতিগুরুত্ব দিয়ে আসেন।ফলে আল্লাহর অসংখ্যবরকত ও ব্যাপকঅনুগ্রহ প্রকাশ পায়।এর বিশেষত্বের এটাওপরীক্ষিত যে, নিঃসন্দেহে গোটাবছরই তারা নিরাপদে থাকেএবং তাদের উদ্দেশ্য দ্রুতসফল হয়ে থাকে।
(ইমাম কুস্তোলানী রহমাতুল্লাহে আলাইহিদো’আ করেবলেন) অতএব, ঐব্যক্তিকে আল্লাহ দয়াকরুন, যে মীলাদুন্নবী মোবারকমাসের রাতগুলোকে ঈদহিসেবে উদযাপন করে– এ লক্ষ্যে যেনমুনাফিকদের অন্তরে অসহনীয় জ্বালাসৃষ্টি হয়।
— শরহে জুলকানী, ১মখন্ড, পৃষ্ঠা নং– ২৬১–২৬৩
ইমাম শামসুদ্দিন দিমিস্কি (রঃ) বলেনঃ
http://www.sunnipediabd.com/mediawiki/images/thumb/b/ba/Husnul_makasid_page66.jpg/250px-Husnul_makasid_page66.jpg
হুসনুল মাকসাদ ফীআমলিল মওলিদ কিতাবের পৃষ্ঠানং ৬৬
قد صح أن أبا لهب يخفف عنه عذاب النار في مثل يوم الاثنين لإعتاقه ثويبة سرورا بميلاد النبي صلى الله عليه وسلم ثم أنشد:
إذا كان هذا كافرا جاء ذمه – وتبت يداه في الجحيم مخلدا أتى أنه في يوم الاثنين دائما – يخفف عنه للسرور بأحمدا فما الظن بالعبد الذي طول عمره – بأحمد مسرورا ومات موحدا
এটিপ্রমাণিত যে আবুলাহাবের (পারলৌকিক) অনলেজ্বলবার শাস্তি প্রতিসোমবার লাঘব করাহয়, কেননা সেমহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এরবেলাদতে খুশি হয়েছিল এবংতার দাসী সোয়াইবিয়াকে মুক্তকরে দিয়েছিল (সুসংবাদ দেয়ারজন্যে)। আবুলাহাবের মতো অবিশ্বাসী, যারচিরস্থায়ী আবাস দোযখএবং যার জন্যেসূরা লাহাব অবতীর্ণ হয়েছে, সে যদি আযাবথেকে তাখফিফ (নিষ্কৃতি) পায়প্রতি সোমবার, তাহলেভাবুন সেই মো’মেন ব্যক্তির কীশান যিনি সারাজীবন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর বেলাদতে খুশিপ্রকাশ করেছিলেন এবংআল্লাহর একত্বে বিশ্বাস নিয়েইন্তেকাল করেছেন।
— ইমাম দামেশকী কৃত‘মওরিদ আস্ সাফাফী মওলিদ আল–হাদী’ এবংইমাম সৈয়ুতী প্রণীত‘হুসনুল মাকসাদ ফীআমলিল মওলিদ’, ৬৬পৃষ্ঠা
বিরোধীবাদীরা বলে থাকে এটি মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর ওফাত দিবস। তাই এটি পালন করা উচিত নয়। এর জবাবও ৯ম শতাব্দীর মুজাদ্দিদ দিয়ে গেছেন খুব সুন্দরভাবে।
أن ولادته صلى الله عليه وسلم أعظم النعم علينا ووفاته أعظم المصائب لنا والشريعة حثت على إظهار شكر النعم والصبر والسلوان والكتم عند المصائب وقد أمر الشرع بالعقيقة عند الولادة وهي إظهار شكر وفرح بالمولود و لم يأمر عند الموت بذبح ولا غيره بل نهى عن النياحة وإظهار الجزع فدلت قواعد الشريعة على أنه يحسن في هذا الشهر إظهار الفرح بولادته صلى الله عليه وسلم دون إظهار الحزن فيه بوفاته
বিশ্বনবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর বেলাদতহলো (আল্লাহর) সর্ববৃহৎ নেয়ামত (আশীর্বাদ); আরতাঁর বেসাল মহাদুর্যোগ। ধর্মীয় বিধানআমাদের প্রতি তাকিদদেয় যেন আমরাআল্লাহর নেয়ামতের শোকরগুজারি (কৃতজ্ঞতা প্রকাশ) করি এবং দুর্যোগের মুহূর্তে ধৈর্যধরি ও শান্তথাকি। শরীয়তের আইনেআমাদের আদেশ দেয়াহয়েছে কোনো শিশুরজন্মে পশু কোরবানি দিতে(এবং ওর গোস্তগরিবদের মাঝে বিতরণকরতে)। এটাওই শিশুর জন্মোপলক্ষে কৃতজ্ঞতা ওখুশি প্রকাশের নিদর্শন। পক্ষান্তরে, মৃত্যুর সময়পশু কোরবানি দিতেশরীয়ত আমাদের আদেশদেয় নি। উপরন্তু, শোকপ্রকাশ বা মাতমকরতে শরীয়তে মানাকরা হয়েছে। অতএব, মীলাদুন্নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এরপুরো মাসব্যাপী খুশিপ্রকাশ করার পক্ষেইসলামী বিধানের রায়পরিদৃষ্ট হয়; আরতাঁর বেসাল উপলক্ষে শোকপ্রকাশ না করারপক্ষে মত দেয়াহয়।
— হুসনুল মাকসাদ ফীআমলিল মওলিদ, ৫৪–৫৫ পৃষ্ঠা; ইমাম সৈয়ুতী প্রণীত’আল–হাওয়ী লিল্ফাতাওয়ী’, ১ম খণ্ড, ২৯৮ পৃষ্ঠা, মাকতাবা আল–আসরিয়া, বৈরুত, লেবানন হতে প্রকাশিত
হযরত শাহ ওয়ালী উল্লাহ মোহাদ্দিসে দেহলভী রহমাতুল্লাহে আলাইহি তার রচিত “আদ দুররুস সামীন ফী মুবাশশারাতিন নবীয়্যিল আমীন” কিতাবের ৯ম পৃষ্ঠায় লিখেছেনঃ
আমারশ্রদ্ধেয় আব্বাজান আমাকেঅবহিত করে বলেন, আমি প্রতি বছরইনবীকুল সর্দার সাল্লাল্লাহু আলাইহিওয়া সাল্লাম–এরমীলাদ উপলক্ষ্যে বিরাটখাবার আয়োজন করেআসছিলাম। অতঃপর একবছর খাবারের আয়োজনকরা আমার পক্ষেসম্ভব হয়নি। সুতরাংঅল্প ভাজ্যকৃত চনাব্যতীত আর কিছুইআমি জোগাড় করতেপারিনি। কাজেই সেগুলোউপস্থিত লোকদের মাঝেবন্টন করে দিলাম।অতঃপর আমি স্বপ্নে হুযুরসাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম–এর সাক্ষাত লাভকরে ধন্য হলাম।দেখলাম, হুযুর সাল্লাল্লাহু আলাইহিওয়া সাল্লাম–এরসামনে ঐ চনাগুলো মওজুদআছে। তখন হুযুরসাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ছিলেন অত্যন্ত আনন্দিত ওহাস্যোজ্জল।
— তথ্যসূত্রঃ ইসলামী শরীয়তের দৃষ্টিতে ঈদেমীলাদুন্নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহিওয়া সাল্লাম উদযাপন, পৃষ্ঠা নং–৮১, ফতুয়ায়ে রশীদিয়া, পৃষ্ঠানং– ১৩৭, হাকিকতে মীলাদ, পৃষ্ঠা নং–২৮
“ফয়ূযুল হারামাইন” কিতাবে শাহ ওয়ালী উল্লাহ মোহাদ্দিসে দেহলভী রহমাতুল্লাহে আলাইহি আরো বলেনঃ
আমিএর পূর্বে মক্কামু’আযযামায় বেলাদতশরীফের বরকতময় ঘরেউপস্থিত ছিলাম। আরসেখানে লোকজন সমবেতহয়ে হুযুর সাল্লাল্লাহু আলাইহিওয়া সাল্লাম–এরউপর একত্রে দরুদশরীফ পাঠা করছিলেন। তার(হুযুরের) শুভাগমনের সময়সংঘটিত অলৌকিক ঘটনাবলী ওতার নবুয়ত প্রকাশের পূর্বেসংঘটিত ঘটনাবলী আলোচনাকরছিলেন। তারপর আমিসেখানে এক মিশ্রনূরের ঝলক প্রত্যক্ষ করলাম।আমি বলতে পারিনিযে, এ নূরগুলো চর্মচক্ষে দেখেছিলাম এবংএটাও বলতে পারিনা যে, এগুলোকেবল মাত্র অন্তরচক্ষুতে দেখেছিলাম। এদুটোর মধ্যে প্রকৃতব্যাপার কি ছিল, তা আল্লাহ পাকইভাল জানেন। অতঃপরআমি গভীরভাবে চিন্তাকরলাম এবং উপলব্ধি করতেপারলাম যে, এইনূর বা জ্যোতিঐ সব ফিরিশতার, যারাএ ধরণের মজলিসও উল্লেখযোগ্য (ধর্মীয়) স্থানসমূহে (জ্যোতিবিকিরণের জন্য) নিয়োজিত থাকেন।আমার অভিমত হলসেখানে ফিরিশতাদের নূরও রহমতের নূরেরসংমিশ্রণ ঘটেছে।
— ফয়ূযুল হারামাইন (আরবী–উর্দু), পৃষ্ঠানং– ৮০–৮১
মিলাদুন্নবী (ﷺ) সম্পর্কে প্রশ্নোত্তর
প্রশ্নোত্তর
____________________
মিলাদুন্নবী (ﷺ) সম্পর্কে প্রশ্নোত্তর
প্রশ্নোত্তরঃ
→ Q 1 : ইসলামে জন্মদিন পালন করা কি জায়েজ?
♦ ♦ ♦ ANS 1 : ইসলামে জন্মদিন পালন শরীয়ত সম্মত হলে জায়েজঃ
আমাদের সমাজে অনেক মুসলমান এর ভুল ধারনা রয়েছে তাই প্রশ্ন তুলে যে জন্মদিন পালন করা তো বিদআত। কেন বিদআত?
কারণ ইহুদি নাসারাদের বিপরীত করার হুকুম রয়েছে হাদিসে।
উত্তরঃ এর Ans 2টা দিচ্ছিঃ
না জন্মদিন পালন করা বিদআত কথাটা ভুল বলতে হবে ইহুদী নাসারাদের মত জন্মদিন পালন করা ঠিক না।
বুঝিয়ে বলছিঃ
Ans 1) আল-কুরআন থেকে
Ans 2) হাদিস অনুযায়ী যুক্তি
(1) আল্লাহ পাক জন্মদিন পালন করেছেনঃ
Ayah 1:-
হযরত ইয়াহিয়া (আ) এর জন্মদিন আল্লাহ পাক পালন করেছেনঃ
♦→ তার (অর্থাৎ ইয়াহিয়া আ. এর) প্রতি শান্তি-যেদিন সে জন্মগ্রহণ করে এবং যেদিন মৃত্যুবরণ করবে এবং যেদিন জীবিতাবস্থায় পুনরুত্থিত হবে।
★ সুরা মারইয়ম ১৫
Ayah 2:-
হযরত ইসা (আঃ) ওনার নিজের জন্মদিন পালনকে আল্লাহ পাক কুরআনে বর্ননা করেছেন এই ভাবেঃ
♦→ আমার প্রতি সালাম যেদিন আমি জন্মগ্রহণ করেছি, যেদিন মৃত্যুবরণ করব এবং যেদিন পুনরুজ্জীবিত হয়ে উত্থিত হব।
★ সুরা মারইয়ম ৩৩
যা কুরআন হাদিসে থাকে তাকে বিদআত বলা মানে মুর্খতা। সুতরাং System টাকে বিদআত বলা যেতে পারে তখন এটা-
A) ভাল System হলে বিদআতে হাসানাহ।
B) খারাপ System হলে বিদআতে সাইয়্যা।
তাই বলে জন্মদিন পালনকে বিদআত বলা যায় না। বলতে হবে ইহুদীদের মত পালন করলে বিদআত।
(2) হাদিস থেকে যুক্তিঃ
তাহলে আপনারা জন্মের পর আকিদা কেন করেন? আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য নয় কি? প্রত্যেক মুসলমান জীবনে একবার আকিকা করে থাকে কিন্তু রাসুল (সা) ২ বার করেছিলেন। যাই হোক এটা গেল একবার জন্মদিন পালন (যা হাদিস সম্মত)
তারপর ধরুন আপনি নিজের জন্মদিনে আল্লাহর শুক্রিয়া আদায় করে রোজা রাখলেন (এটা রাসুল করেছেন তাই এটাও সুন্নাহ) অথবা নফল নামাজ পড়ে আল্লাহর কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করলেন এটা কি গুনাহ হবে? অবশ্যই না।
↓
→ Q 2 :- কুরআনে মিলাদুন্নবী (ﷺ) পালনের কোন প্রমান আছে কি?
♦ ♦ ♦ ANS 2 : আল-কুরআনে মিলাদুন্নবী (ﷺ) এর বৈধ্যতার প্রমানঃ
→ ``তোমরা রসূল (ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর উপর ঈমান আনো, রাসুলকে সম্মান করো ও রাসুলের মাহাত্ম্য বর্ননা করো এবং সকাল সন্ধ্যা আল্লাহর পবিত্রতা ঘোষনা করো !""
★ আলা হযরত আহমদ রেজা খান বেরলভী (রহ) প্রনীত তফসীরে কাঞ্জুল ইমানঃ সূরা ফাতহ ৯
→ হে হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ! আমি আপনাকে সমগ্র বিশ্ববাসীর জন্যে রহমত স্বরূপই প্রেরণ করেছি।
★ সুরা আম্বিয়া: ১০৭
→ আপনার রব এর অনুগ্রহের কথা আপনে প্রকাশ করুন !"
★ সূরা আদ্ব দোহা ১১
→ [হে রাসুল (সা) আপনি] বলে দিন , মহান আল্লাহ পাক যে ফজল (অনুগ্রহ) ও রহমত প্রেরণ করেছেন , সেজন্য তারা যেন সন্তুষ্টি প্রকাশ করে আর এটা সবচাইতে উত্তম যা তারা সঞ্চয় করে রাখে !"
★ সূরা ইউনূছ ৫৮
→ Q 3 :- এই সব আয়াতে মিলাদুন্নবী (ﷺ) কথা কোথায় আছে?
ANS 3 :-
কোন মুসলমানকে যদি প্রশ্ন করা হয় যে আপনার জন্য সবচেয়ে বেশি খুশির দিন কোনটি?
সবচেয়ে বড় নিয়ামতের দিন কোনটি?
তার জন্য এর চেয়ে উত্তম জবাব আর কি যেদিন রহমতাল্লিল আল-আমিন দুনিয়ায় তশরিফ নিয়েছেন। উপরোক্ত আয়াত গুলোতে ওহাবীরা কিছু বুঝে না কিন্তু তাই বলে কি ইমামগন, মুফাসসির গনও কিছু বুঝবেন না? সেজন্যই দেখুন তারা শ্রেষ্ট নিয়ামত হিসেবে কি ব্যাক্ষ্যা দিয়েছেন?
↓
TAFSIR - তফসির
♦ইমাম ইবনুল জাওযী নিজ ‘তাফসীর’গ্রন্থে সূরা ইউনূসের উক্ত ৫৮ নং আয়াতের ব্যাখ্যায় বলেন, “আদ্ দাহাক হযরত ইবনে আব্বাস (رضي الله عنه) থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন: এই আয়াতে ‘ফযল’ বলতে জ্ঞান (অর্থাৎ, আল-কুরআন ও তাওহীদ)-কে বুঝিয়েছে; আর ‘রহমত’ বলতে মহানবী(ﷺ) -কে বোঝানো হয়েছে।” [ইবনে জাওযী কৃত ‘যা’দ আল-মাসীর ফী এলম আত্ তাফসীর’, ৪:৪০]
♦ইমাম আবু হাইয়ান আন্দালুসী এ সম্পর্কে বলেন, “ফযল বলতে জ্ঞানকে, আর রহমত বলতে রাসূলুল্লাহ (ﷺ) -কে উদ্দেশ্য করা হয়েছে।” [তাফসীর আল-বাহর আল-মুহীত, ৫:১৭১]
♦ইমাম জালালউদ্দীন সৈয়ুতী (رحمة الله) বলেন, “আবু শায়খ হযরত ইবনে আব্বাস (رضي الله عنه) থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন: আল্লাহর ফযল বলতে জ্ঞানকে, আর রহমত বলতে রাসূলুল্লাহ(ﷺ) -কে বোঝানো হয়েছে। আল্লাহ বলেন, (হে রাসূল) আমি আপনাকে প্রেরণ করেছি জগতসমূহের জন্যে আমার রহমত (করুণা) করে (সূরা আম্বিয়া, ১০৭ আয়াত)।” [আস্ সৈয়ুতী প্রণীত দুররে মনসূর, ৪:৩৩০]
♦আল্লামা আলূসী ব্যাখ্যা করেন যে এমন কি ‘ফযল’ (অনুগ্রহ) বলতেও হযূর পাক (ﷺ)-কে উদ্দেশ্য করা হয়েছে, যেমনিভাবে বর্ণিত হয়েছে আল-খতীব ও ইবনে আসাকির থেকে যে আয়াতোক্ত ‘ফযল’ হলেন মহানবী(ﷺ) । [আলূসী রচিত রূহুল মাআনী, ১১:১৪১]
Q 4:- হাদিসে মিলাদুন্নবী (ﷺ) এর কোন প্রমান আছে কি?
ANS 4:-
মিলাদুন্নবী (সা) এর উতকৃষ্ট প্রমান সম্পর্কে এর চাইতে উত্তম আর কোন হাদিসে নেই। এখানে স্পষ্ট যে মীলাদুন্নবী (সা) উপলক্ষে খুশি হলে কাফির লাহাবও যদি ১টা দিন (সোমবার) আজাব থেকে মুক্তি পেয়ে থাকে যার বিরোদ্ধে কিনা স্বয়ং সুরা লাহাব নাজিল হয়েছে তাহলে চিন্তার বিষয় ইমানদারদের জন্য কত বড় পুরষ্কার থাকতে পারে আল্লাহই ভাল জানেন । যদিও কাফিরদের সমস্ত কাজ বৃথা যায় (যদি সে নামাজও পড়ে সেটাও) কিন্তু এই কাজটি বৃথা যায় নি। - সুবাহানাল্লাহ
বুখারী শরীফে উল্লেখিত ঘটনাটি না বললেই নয়,
হযরত অরওয়া ইবনে জুবায়ের (রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু) বলেন,
সুহাইবাহ আবু লাহাবের দাসী ছিল। আবু লাহাব ওনার কাছে থেকে (রাসুল সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়াসাল্লাম) এর বেলাদাতের (অর্থাৎ মিলাদুন্নবীর ) সুসংবাদ প্রাপ্ত হয়ে (মিলাদুন্নবীর খুশিতে) সুহাইবাহ কে আযাদ করে দিয়েছিল।যখন আবু লাহাব মৃত্যুবরণ করেছিল তখন (এক বছর পর) তার ঘনিষ্ঠদের কেউ (হযরত আব্বাস রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু) তাকে স্বপ্নে শোচনীয় অবস্থায় দেখে তার উদ্দেশে বলেন, “তোমার অবস্থা কেমন?” আবু লাহাব উত্তরে বলল, “তোমাদের নিকট থেকে আসার পর আমি কোন প্রকার শান্তি পাইনি,কেবল যে দিন (রাসুলুল্লাহ (দ.) জন্ম হওয়ার খুশিতে অর্থাৎ মিলাদুন্নবীর খুশিতে ) সুহাইবাকে (তর্জনী ও মধ্যমা দু’টি আঙ্গুলের ইশারায়) আযাদ করে দিয়েছিলাম, ঐ কারনে (প্রতি সোমবার) আংগুল দুটির মধ্যে কিছু পানি জমে আমি ঐ পানি (চুষে) পান করে থাকি ও প্রতি সোমবার (জাহান্নামের কঠিন) আযাবকে হাল্কাবোধ করে থাকি।”
Reference :-
♦Masnad Ahmed : Hadith 25953 under the heading of لو كانت تحل لي لما تزوجتها قد أرضعتني وأباها ثويبة مولاة بني هاشم فلا تعرضن علي أخواتكن ولا بناتكن and again in Hadith 26865 with matan of
ابنة أخي من الرضاعة وأرضعتني وأبا سلمة ثويبة فلا تعرضن علي بناتكن ولا أخواتكن
♦Al-Sunnan Al Kubra (li Nisai): Hadith 5394/5395
♦Al Nisai’ al-Sughra : Hadith Nob 3287/3284/3285/3286
♦Sunnan Ibne Majah: Hadith 1939 Under the heading of ( ابنة أخي من الرضاعة أرضعتني وأباها ثويبة فلا تعرضن علي أخواتكن ولا بناتكن)
♦Sahih Muslim: Hadith Nob.1451(2634), 1451(2635) under the same matan
♦Sahih ibne Hibban: Hadith Nob, 4110 (4199), 4111(4200), the matan of hadith is إن زينب تحرم علي وإنها في حجري وأرضعتني وإياها ثويبة فلا تعرضن علي بناتكن ولا أخواتكن ولا عماتكن ولا خالاتكن ولا أمهاتكن
اطراف الحدیث
♦Sahih al Bukhari Sharif : kitabun nikah : 2644/2645/2646/3105/4796/5099/5100/5101/5103/5106/5107/5124/5133/5239/5372/6156/
♦Sunan Kubra by Imam Baihaqi, The Book of Nikah.
♦Jame Ul Ahadith Wal Maraseel, Masaneed us Sahabah, Hadith no. 43545
♦Kanzul 'Ummal Vol 6, Hadith no. 15725
♦Musannaf Abdul Razzaq, Vol 7, Hadith no. 13546.
♦Imam A’aini (ra) in his book “Umdatul Qari, Vol: 14,Page. No. 45;
♦Imam Ibn Kathir in “Seerat un Nabawiyyah” (vol. 1 pg 224)
♦Sharh Zurqani, Vol 1, Pg. no. 261
♦Subul ul Huda war Rashad Vol 1 Pg. no. 367.
♦Imam Ibn Asqalani in "Fath al bari"
♦ibn al-Qayyim : [Tuhfat al-Mawdud bi Ahkam al-Mawlud, p.19]
♦Ibn 'Abd al-Wahhab, M., Mukhtasar Sirat ar-Rasul, 'Milad an-Nabi'
Q 5 : ইমামগন কি মিলাদুন্নবী (ﷺ) পালন করেছেন?
ANS: সমস্ত ইমামগনই কোন না কোন ভাবে মিলাদুন্নবী (ﷺ) পালন করেছেন। যেমনঃ
মিলাদুন্নবী (ﷺ) সম্পর্কে ৩ লক্ষ হাদিসের হাফিজ ইমাম ইবনে হাজর আসকালানীর ভাষ্যঃ
সাবধান!যারা মিলাদুন্নবী (ﷺ) কে মন্দ বিদআত বলে তারাই আসলে প্রকৃত বিদআতী। দেখুন ইমামগন কি বলে আর ওহাবী সালাফীরা কি বলে?
↓
♥ হুজ্জাতুল ইসলাম, শায়খুল ইসলাম ও বিখ্যাত মুহাদ্দীস ইমাম ইবনে হাজর আসকালানী (رحمة الله):-
এমতাবস্থায় তিনি তাদেরকে এর কারণ জিজ্ঞেস করলে তারা উত্তর দেন, ‘এই দিনে আল্লাহতা’লা ফেরাউনকে পানিতে ডুবিয়ে মূসা (আ:)-কে রক্ষা করেন। তাই আমরা মহান প্রভুর দরবারে এর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশের উদ্দেশ্যে রোযা রেখে থাকি।’ এই ঘটনা পরিস্ফুট করে যে আল্লাহতা’লার রহমত অবতরণের কিংবা বালা-মসীবত দূর হওয়ার কোনো বিশেষ দিনের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা, সেই উদ্দেশ্যে বার্ষিকী হিসেবে তা উদযাপনের সময় নামায, রোযা, দান-সদকাহ বা কুরআন তেলাওয়াতের মতো বিভিন্ন এবাদত-বন্দেগী পালন করা শরীয়তে জায়েয। আর রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর মীলাদের (ধরণীতে শুভাগমন দিবসের) চেয়ে আল্লাহর বড় রহমত কী-ই বা হতে পারে? এরই আলোকে প্রত্যেকের উচিত হযরত মূসা (আ:) ও ১০ই মহররমের ঘটনার (দালিলিক ভিত্তির) সাথে সঙ্গতি রেখে মীলাদুন্নবী (ﷺ) দিবস উদযাপন করা; তবে যাঁরা এটি বিবেচনায় নেন না, তাঁরা (রবিউল আউয়াল) মাসের যে কোনো দিন তা উদযাপনে আপত্তি করেন না; অপর দিকে কেউ কেউ সারা বছরের যে কোনো সময় (দিন/ক্ষণ) তা উদযাপনকে কোনো ব্যতিক্রম ছাড়াই বৈধ জেনেছেন।[প্রাগুক্ত ‘হুসনুল মাকসাদ ফী আমলিল মওলিদ’, ৬৪ পৃষ্ঠা]।
♥ তিনি আরো বলেন:-
”আমি মওলিদের বৈধতার দলিল সুন্নাহ’র আরেকটি উৎস থেকে পেয়েছি (আশুরার হাদীস থেকে বের করা সিদ্ধান্তের বাইরে)। এই হাদীস ইমাম বায়হাকী (رحمة الله) হযরত আনাস (رضي الله عنه) থেকে বর্ণনা করেন: ‘হুযূর পাক (ﷺ)নবুয়্যত প্রাপ্তির পর নিজের নামে আকিকাহ করেন; অথচ তাঁর দাদা আবদুল মোত্তালিব তাঁরই বেলাদতের সপ্তম দিবসে তাঁর নামে আকিকাহ করেছিলেন, আর আকিকাহ দু’বার করা যায় না। অতএব, রাসূলে খোদা (ﷺ) বিশ্বজগতে আল্লাহর রহমত হিসেবে প্রেরিত হওয়ায় মহান প্রভুর দরবারে কৃতজ্ঞতা প্রকাশের জন্যে এটি করেছিলেন, তাঁর উম্মতকে সম্মানিত করার জন্যেও, যেমনিভাবে তিনি নিজের ওসীলা দিয়ে দোয়া করতেন। তাই আমাদের জন্যেও এটি করা উত্তম হবে যে আমরা মীলাদুন্নবী (ﷺ) দিবসে কৃতজ্ঞতাসূচক খুশি প্রকাশার্থে আমাদের দ্বীনী ভাইদের সাথে সমবেত হই, মানুষদেরকে খাবার পরিবেশন করি এবং অন্যান্য সওয়াবদায়ক আমল পালন করি।’ এই হাদীস পূর্বোক্ত মহানবী (ﷺ) -এর দ্বারা মীলাদ ও নবুয়্যত-প্রাপ্তির দিবস পালনার্থে সোমবার রোযা রাখার হাদীসকে সমর্থন দেয়।” [প্রাগুক্ত ‘হুসনুল মাকসাদ ফী আমলিল মওলিদ, ৬৪-৬৫ পৃষ্ঠা]
মিলাদুন্নবী[ﷺ] উৎসব যুগে যুগে
____________________
মিলাদুন্নবী[ﷺ] উৎসব যুগে যুগেঃ
===========
নবী করিম [ﷺ] নবুয়ত পরবর্তীকালে নিজেই সাহাবীদেরকে নিয়ে নিজের মিলাদ পড়েছেন এবং নিজ জীবনী আলোচনা করেছেন। যেমন- হযরত ইরবায ইবনে ছারিয়া (رضي الله عنه) একদিন নবী করিম [ﷺ]-কে তাঁর আদি বৃত্তান্ত বর্ণনা করার জন্য আরয করলে নবী করিম [ﷺ]-এঁরশাদ করেন- “আমি তখনই নবী ছিলাম- যখন আদম (عليه السلام)-এঁর দেহের উপাদান - মাটি ও পানি পৃথক পৃথক অবস্থায় ছিল। অর্থাৎ আদম সৃষ্টির পূর্বেই আমি নবী হিসেবে মনোনীত ছিলাম। আমাকে হযরত ইবরাহীম (عليه السلام) দোয়া করে তাঁর বংশে এনেছেন- সুতরাং আমি তাঁর দোয়ার ফসল। হযরত ঈছা (عليه السلام) তাঁর উম্মতের নিকট আমার আগমনের সুসংবাদ দিয়েছিলেন। তাঁরা উভয়েই আমার সম্পর্কে পূর্ণ অবহিত ছিলেন। আমার আম্মা বিবি আমেনা আমার প্রসবকালীন সময়ে যে নূর তাঁর গর্ভ হতে প্রকাশ পেয়ে সুদূর সিরিয়ার প্রাসাদসমূহ আলোকিত করতে দেখেছিলেন, আমিই সেই নূর” (মিশকাত)।
এভাবে হযরত আবু বকর (رضي الله عنه), হযরত ওমর (رضي الله عنه), হযরত ওসমান (رضي الله عنه), হযরত আলী (رضي الله عنه) খলিফা চতুষ্টয় নিজ নিজ খেলাফতযুগেও পবিত্র বেলাদত শরীফ উপলক্ষে মিলাদ মাহফিল করতেন এবং মিলাদের ফযিলত বর্ণনা করতেন বলে মক্কা শরীফের তৎকালীন (৯৭৪) বিজ্ঞ মুজতাহিদ আলেম আল্লামা ইবনে হাজার হায়তামী (رحمة الله عليه) স্বীয় রচিত “আন-নি’মাতুল কোবরা আলাল আলম” গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন।
এছাড়াও অন্যান্য সাহাবীগণ নবীজীর জীবদ্দশায় মিলাদুন্নী মাহফিল করতেন। উদাহরণ স্বরূপ -
১) হযরত আবু আমের আনসারীর মিলাদ মাহফিলঃ
হযরত আবু দারদা (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত আছে- তিনি বলেন, আমি একদিন নবী করিম [ﷺ]-এঁর সাথে মদিনাবাসী আবু আমেরের (رضي الله عنه) গৃহে গমন করে দেখতে পেলাম- তিনি তাঁর সন্তানাদি ও আত্মীয়স্বজনকে একত্রিত করে নবী করিম [ﷺ]-এঁর পবিত্র বেলাদত সম্পর্কীত জন্ম বিবরণী শিক্ষা দিচ্ছেন এবং বলছেন যে, “আজই সেই পবিত্র জন্ম তারিখ।” এই মাহফিল দেখে নবী-করিম [ﷺ] খুশী হয়ে তাঁকে সুসংবাদ দিলেন- “নিশ্চয়ই আল্লাহ তায়ালা তোমার জন্য (মিলাদের কারণে) রহমতের অসংখ্য দরজা খুলে দিয়েছেন এবং ফেরেশতাগণ তোমাদের সকলের জন্য মাগফিরাত কামনা করছেন” (আল্লামা জালালুদ্দীন সায়ুতির সাবিলূল হুদা ও আল্লামা ইবনে দাহ্ইয়ার আত-তানভীর-৬০৪ হিঃ)। আরবী হাদীসখানা প্রমাণ স্বরূপ হুবহু নিম্নে পেশ করা হলো-
عن أبى الدرداء قال مررت مع رسول الله صلى الله عليه وسلم الى بيت عامر الانصارى وهو يعلم وقائع ولادته لأبنائه وعشيرته ويقول هذا اليوم فقال النبي صلى الله عليه وسلم أن الله فتح عليك أبواب الرحمة وملائكته يستغفرون لكم (سبيل الهدى لجلال الدين سيوطى _ التنوير)
(মীলাদের উপর প্রথম গ্রন্থ রচনাকারী আল্লামা আবুল খাত্তাব ইবনে দেহিয়া (৬৩৩ হি:) ঈদে মীলাদুন্নবীর উপর লিখিত ‘‘আত-তানবীর ফী মাওলিদিল বাশির আন নাযীর’’ গ্রন্থে এই মতটিকেই গ্রহণ করেছেন। কিতাবুত তানবীর ফী মাওলিদিল বাশীর ওয়ান নাযীর, সুবুলুল হুদা ফী মাওলিদে মুস্তফা ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, হাক্বীক্বতে মুহম্মদী ও মীলাদে আহমদী পৃষ্ঠা- ৩৫৫)
২। হযরত ইবনে আব্বাছ (رضي الله عنه) কর্তৃক মিলাদ মাহফিলঃ
একদিন হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (رضي الله عنه) নিজগৃহে মিলাদ মাহফিল অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখছিলেন। তিনি উপস্থিত সাহাবীগণের নিকট নবী করিম [ﷺ]-এঁর পবিত্র বেলাদত সম্পর্কিত ঘটনাবলী বয়ান করছিলেন। শ্রোতামন্ডলী শুনতে শুনতে মিলাদুন্নবীর আনন্দ উপভোগ করছিলেন এবং আল্লাহর প্রশংসা ও নবীজীর দরূদ পড়ছিলেন। এমন সময় নবী করিম [ﷺ] সেখানে উপস্থিত হয়ে এরশাদ করলেন, “তোমাদের সকলের প্রতি আমার সুপারিশ ও শাফাআত অবধারিত হয়ে গেল।” (আদ দোররুল মুনাযযাম) সোবহানাল্লাহ! হাদীস শরীফখানা নিম্নে দেওয়া হলো।
عن ابن عباس رضي الله عنهما كان يحدث ذات يوم فى بيته وقائع ولادته صلى الله عليه وسلم فيبشرون ويحمدون ويصلون إذا جاء النبى صلى الله عليه وسلم وقال حلت لكم شفاعتى (الدر المنظم)
{আল্লামা জালাল উদ্দীন সূয়ুতী (রাহ) এর বিখ্যাত কিতাব "সুবলুল হুদা ফি মাওলেদে মুস্তাফা (ﷺ)“ এ শেষের হাদিস দুটি উল্লেখিত হয়েছে। # দুররুল মুনাযযাম - সপ্তম অধ্যায় - প্রথম পরিচ্ছেদ # ইশবাউল কালাম # হাক্বীকতে মুহম্মদী মীলাদে আহমদী ৩৫৫ পৃষ্ঠা}
৩। হযরত হাসসান (رضي الله عنه) -এঁর কিয়ামসহ মিলাদঃ
সাহাবী কবি হযরত হাসসান বিন সাবিত (رضي الله عنه) দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে নবী করিম [ﷺ]-এঁর উপস্থিতিতে তাঁর গৌরবগাঁথা পেশ করতেন এবং অন্যান্য সাহাবীগণ সমবেত হয়ে তা শ্রবন করতেন। (সপ্তম অধ্যায়ে দেখুন)।
কিয়াম করে মিলাদ মাহফিলে নবী করিম [ﷺ]-এঁর প্রশংসামূলক কবিতা ও না’ত পাঠ করা এবং সালাম পেশ করার এটাই বড় দলীল। এরূপ করা সুন্নাত এবং উত্তম বলে মক্কা-মদিনার ৯০ জন উলামাগণ ১২৮৬ হিজরীতে নিম্নোক্ত ফতোয়া দিয়ে বিভিন্ন রাষ্ট্রে প্রেরণ করেছেন।
أعلم أن ذكر مولد النبى صلى الله عليه وسلم وجميع مناقبه وحضور سماعه سنة روى أن حسانا يفاخر قياما من رسول الله صلى الله عليه وسلم بحضرته والناس يجتمعون لسماعه -
অর্থ- “হে মুসলমানগণ! আপনারা জেনে রাখুন যে, মিলাদুন্নবী [ﷺ]-এঁর আলোচনা ও তাঁর সমস্ত শান মান বর্ণনা করা এবং ঐ মাহফিলে উপস্থিত হওয়া সবই সুন্নাত। বর্ণিত আছে যে, হযরত হাসসান বিন সাবিত (رضي الله عنه) কিয়াম অবস্থায় রাসুলুল্লাহ [ﷺ]-এঁর পক্ষে হুযুরের উপস্থিতিতে হুযুর [ﷺ]-এঁর গৌরবগাথা পেশ করতেন, আর সাহাবীগণ তা শুনার জন্য একত্রিত হতেন।” (ফতোয়ায়ে হারামাঈন) একজনের কিয়ামই সকলের জন্য দলীল স্বরূপ।
হযরত হাসসান বিন সাবিত (رضي الله عنه)-এঁর কিয়ামের কাছিদার অংশবিশেষ ইতিপূর্বে উল্লেখ করা হয়েছে। ঐ কাছিদায় তিনি রাসূল করীম [ﷺ]-এঁর আজন্ম নির্দোষ ও নিষ্পাপ হওয়া এবং হুযুরের ইচ্ছানুযায়ী তাঁর আকৃতি বা সুরতে মোহাম্মাদী সৃষ্টির তত্ত্ব পেশ করেছেন। নবী করিম [ﷺ] তাঁর এই কাছিদা শুনে দোয়া করতেন- “হে আল্লাহ! তুমি জিব্রাইলের মাধ্যমে হাসসানকে সাহায্য কর।” অর্থাৎ আমার পক্ষে আমার প্রশংসা বাক্য সুন্দরভাবে ফুটিয়ে তোলার তৌফিক দাও। এতে আমার দুশমনগণ ভালভাবে জব্দ হবে।
৪। সুদূর অতীতে মিলাদুন্নবীর চিত্রঃ মাওয়াহিবের বর্ণনা
সুদূর অতীতকালে কিভাবে মুসলমানগণ ঈদে মিলাদুন্নবী পালন করতেন- তাঁর একটি বিস্তারিত বর্ণনা আল্লামা শাহাবুদ্দীন কাস্তুলানী (رحمة الله عليه) মাওয়াহেবে লাদুন্নিয়া কিতাবে বিধৃত করেছেন। মিলাদুন্নবী [ﷺ] সমর্থক বিজ্ঞ মোহাক্বেক ওলামায়ে কেরাম এবং ফকিহগণ নিজ নিজ গ্রন্থে দলীল স্বরূপ আল্লামা কাস্তুলানীর (رحمة الله عليه) এই দুর্লভ প্রমানাদি লিপিবদ্ধ করেছেন। ঈদে মিলাদুন্নবী [ﷺ] পালনকারী এবং সমর্থক ওলামা ও নবীপ্রেমিক মুসলমানদের অবগতির জন্য উক্ত মন্তব্য কোটেশন আকারে অনুবাদসহ নিম্নে পেশ করা হলো।
ولا زال أهل الإسلام يحتفلون بشهر مولده عليه السّلام، ويعملون الولائم، ويتصدقون في لياليه بأنواع الصدقات، ويظهرون السرور، ويزيدون في المبرات، ويعتنون بقراءة مولده الكريم، ويظهر عليهم من بركاته كل فضل عميم ومما جرب من جواصه أنه امان فى ذلك العام وبشرى عاجلة بنيل البغية والمرام فرحم الله امرأ اتخذ ليالى شهر مولده المباركة اعيادا (المواهب اللدنية والأنوار المحمدية صفحة ١٩).
অর্থঃ “সমগ্র মুসলিম উম্মাহ সুদূর অতীতকাল থেকে নবী করিম [ﷺ]-এঁর পবিত্র বেলাদত উপলক্ষে মাসব্যাপী সর্বদা মিলাদ-মাহফিল উদযাপন করতেন। যিয়াফত প্রস্তুত করে তারা লোকদের খাওয়াতেন। মাসব্যাপী দিনগুলোতে বিভিন্ন রকমের সদকা-খয়রাত করতেন এবং শরীয়তসম্মত আনন্দ উৎসব করতেন। উত্তম কাজ প্রতিনিয়তই বৃদ্ধি করতেন। তাঁরা পূর্ণমাস শান শওকতের সাথে বিশেষ আয়োজনের মাধ্যমে মিলাদ মাহফিল অনুষ্ঠিত করতেন- যার বরকতে বরাবরই তাদের উপর আল্লাহর অপার অনুগ্রহ প্রকাশ পেতো। মিলাদ মাহফিলের বৈশিষ্ট সমূহের মধ্যে এটা পরীক্ষিত বিষয় যে, মিলাদ মাহফিল অনুষ্ঠানের বরকতে ঐ বৎসর আল্লাহর পক্ষ হতে নিরাপত্তা কায়েম থাকে এবং তড়িৎগতিতে তা মনোবাঞ্ছা পূরনের শুভ সংবাদ বহন করে নিয়ে আসে। অতএব- যিনি বা যারা মিলাদুন্নবী মাসের প্রতিটি রাত্রকে ঈদের রাত্রে পরিণত করে রাখবে- তাঁদের উপর আল্লাহর খাস রহমত বর্ষিত হবে।”
(মাওয়াহেবে লাদুন্নিয়া, মা ছাবাতা বিছছুন্নাহ্)
মিলাদ ও কিয়ামের বিস্তারিত আলোচনা এবং দলীল সমূহ সংশ্লিষ্ট প্রামানিক কিতাবসমূহে অনুসন্ধান করে নিবেন। এছাড়াও মিলাদ কিয়ামের ১৮টি দলীল আরবী এবারতা সহ “মাসিক সুন্নীবার্তা-৯৩” সংখ্যায় প্রকাশ করা হয়েছে মার্চ ’০৭-এ। বিজ্ঞ আলেমগণ সুন্নীবার্তাটি সংগ্রহ করে দলীলগুলো সংরক্ষণ করতে পারেন।
বিঃ দ্রঃ উপরের আলোচনায় প্রমানিত হলো যে, যুগে যুগে মিলাদুন্নবীর চর্চা চলে আসছে- সীরাতুন্নবীর চর্চা কেহই করেননি। কারণ, সীরাত শব্দের আভিধানিক অর্থ- ভালমন্দ চরিত্র। আর শরিয়তে সীরাতুন্নবীর অর্থ- কাফির ও মুশরিকদের বিরূদ্ধে নবীজীর ৮ বছরের যুদ্ধজীবন। সুতরাং সীরাতুন্নবীতে শাব্দিক ও পারিভাষিক উভয় অর্থেই নবীজীর পুতঃপবিত্র চরিত্র ও সার্বিক জীবনী আলোচনা প্রমাণিত হয় না। ঈদে মিলাদুন্নবীতে নূরে মুহাম্মদী তথা সৃষ্টির আদি থেকে ৬৩ বৎসর পর্যন্ত নবীজীর সার্বিক জীবনের আলোচনা স্থান পায়। সেজন্যই নবী, ওলী, গাউস-কুতুব - সবাই মিলাদুন্নবীর চর্চা করতেন, করছেন এবং করতে থাকবেন। মিলাদের মধ্যেই সীরাত অংশ আছে। যারা শুধু সীরাতুন্নবীর চর্চা করেন, তারা খন্ডিত ৮ বছরের যুদ্ধ জীবন ও নবীজীর ভালমন্দ জীবন আলোচনা করে থাকেন মাত্র। শুধু যুদ্ধ জীবন আলোচনা করতে করতে তারা বর্তমানে জেএমবি হয়ে গেছেন অথবা হরকাতুল জেহাদ করে মুফতী হান্নানের মত বোমাবাজ হয়ে গেছেন। মিলাদুন্নবী পালনকারীরা শান্তিকামী। মিলাদুন্নবী ও সীরাতুন্নবীর পার্থক্য সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে আমার লিখিত ঈদে মিলাদুন্নবী ও না’ত লহরী এবং মিলাদ-কিয়ামের বিধান গ্রন্থদ্বয়ে।
(মুফতী আমিমুল ইহছান লিখিত কাওয়া-ঈদুল ফিক্হ ৩৩১ পৃষ্ঠায় সীরাতুন্নবীর সংজ্ঞা দেখুন। তাতে বিভিন্ন গ্রন্থের হাওয়ালা দিয়ে লিখা হয়েছে – সীরাতুন্নবী বলতে নবীজীর ৮ বৎসরের যুদ্ধজীবন বুঝায় এবং ভাল ও মন্দ উভয় চরিত্র বুঝায়। হাবীবে খোদার মধ্যে মন্দ চরিত্র থাকতে পারে না। তাই সীরাতুন্নবী শব্দ ব্যবহার করা উচিৎ নয়। তদুপরি সীরাতুন্নবী মাহফিল নামে কোন অনুষ্ঠান অতীত যুগে ছিল না। তাই এটা নতুন বিদ’আত।
ঈদে মিলাদুন্নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উদযাপন ও মিলাদ শরীফের মাহফিল
____________________
ঈদে মিলাদুন্নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উদযাপন ও মিলাদ শরীফের মাহফিল সম্বন্ধে হামিদী সাহেব যে বক্তব্য প্রদান করেছেন তা এত জঘন্য যে, একজন নাস্তিককেও হার মানায়। তিনি মিলাদুন্নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে নাজায়েজ ও মন্দ বিদআত প্রমাণ করার ব্যর্থ চেষ্টা করতে গিয়ে অশালীন কটুক্তি করেছেন। এমনকি মিথ্যাচার ও প্রতারণার মাধ্যমে সরলপ্রাণ মুসলমানদেরকে ধোকা দেয়ার চেষ্টা করেছেন।
এবার তার বিকৃত মস্তকপ্রসূত দুর্গন্ধময় উক্তিটি ল্য করুন; তিনি লিখেছেন-
‘যে মজলিসে ৯৯% বাংগালীদের উপস্থিতি, যাদের ৯৫% আরবী ভাষা জানে না তাদের সামনে আরবী বা ফারসী ভাষায় ‘ওয়ালাম্মা তাম্মা মিন হামলিহী’বলে রাসূলের মিলাদ পাঠ করা হিন্দু বাবনের মন্ত্র পড়ার সাদৃশ্য। ’ (নাউজুবিল্লাহ)
(এখানে বাবন শব্দটি অভিধান বহির্ভুত। প্রকৃত শব্দটি ব্রাহ্মণ হওয়া উচিত ছিল। )
পর্যালোচনা
আরবি ভাষা না বুঝার কারণে যদি রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর মিলাদ শরীফ পাঠ করা হিন্দু ব্রাহ্মণের মন্ত্র পড়ার সাদৃশ্য হয়ে যায়, তাহলে আমি বলব আমাদের ইবাদত বন্দেগি যেগুলো অবশ্যই আরবীতে পড়তে হয়, হামিদী সাহেব কি সেগুলোকেও ব্রাহ্মণের মন্ত্র পড়ার সাথে তুলনা করবেন? যেমন নামাযের কিরাত, কোরআন তিলাওয়াত, আযান-ইকামত, দরূদশরীফ, জুমুয়ার খুৎবাহ ইত্যাদি। কারণ এগুলোর অর্থ অধিকাংশ লোক বুঝতে অম। আসলে ইহা তার মিলাদশরীফের প্রতি বিদ্বেষেরই বহি:প্রকাশ।
অথচ ولما تم من حمله সংক্রান্ত মিলাদশরীফের রেওয়ায়েত বর্ণনা যিনি করেছেন তিনি হলেন জগৎবিখ্যাত আলিম সৈয়দ জাফর ইবনে হাসান ইবনে আব্দুল করীম আল বরযিঞ্জি। ওফাত ১১৮৪ হিজরি। তিনি মদিনাশরীফে শাফেয়ী মাযহাবের মুফতি ছিলেন এবং মসজিদে নববীতে দরস দিতেন। তাঁর রচিত ‘আল ইকদুল জাওহার ফি মাওলিদি নাবিয়্যিল আযহার’ সংেেপ মওলুদে বরযিঞ্জি নামে সারা বিশ্বে সুপরিচিত।
উক্ত কিতাবে তিনি মিলাদ শরীফের কিয়াম সম্পর্কে হাদিস ও ফিকাহ বিশারদগণের ফতোয়ার উদ্ধৃতি দিয়ে এভাবে উল্লেখ করেছেন-
واستحسن القيام عند ذكر مولده الشريف ائمة ذو رواية ودراية فطوبى لمن كان تعظيمه صلى الله عليه وسلم غاية مرامه ومرماه-
অর্থ: নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর বেলাদত শরীফ বর্ণনাকালে দাঁড়িয়ে সম্মান প্রদর্শন করাকে হাদিস ও ফিকাহ বিশারদ ইমামগণ মুস্তাহসান বা উত্তম বলেছেন। অতএব তাদের জন্য শুভ সংবাদ নবীজীর প্রতি তা’জিম প্রদর্শন যাদের চূড়ান্ত ল্য ও উদ্দেশ্য। (সুন্নী বার্তা- ৫৬ সংখ্যা)
তাছাড়া হামিদী সাহেবের পূর্বসূরী দেওবন্দীদের নেতা মাওলানা রশিদ আহমদ গাঙুহী তদীয় ‘ফতোয়ায়ে মিলাদ শরীফ ওয়া গায়রা’ নামক পুস্তকেও এ রকম বেআদবিমূলক উক্তি করে গেছেন- তিনি লিখেছেন-
پس یہ ہر روز اعادہ ولادت مثل ھنود کے سانکہ کنھیا کی ولادت کا ہر سال کرتے ہیں-
অর্থ: প্রতি বৎসর হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর মিলাদশরীফের আয়োজন করা হিন্দুদের ছাং কানাইয়ার জন্মানুষ্ঠানের মতো। নাউজুবিল্লাহ (হাকিকতে মিলাদ)
ঈদে মিলাদুন্নবী ও জন্মবার্ষিকী পালন
____________________
ঈদে মিলাদুন্নবী ও জন্মবার্ষিকী পালন
===========
১) হযরত আব্বাস (رضي الله عنه) নূর নবী [ﷺ]-এঁর জন্ম প্রসঙ্গে ৯ম হিজরীতে একটি কবিতায় বলেছেনঃ-
- وانت لما ولدت اشرقت الأرض - وضاءت بنورك الأفق
অর্থঃ "হে প্রিয় রাসূল, আপনি যখন ভূমিষ্ঠ হন, তখন পৃথিবী উদ্ভাসিত হয়ে উঠেছিল এবং আপনার নূরের ছটায় চতুর্দিক আলোময় হয়ে গিয়েছিল।" (নশরুত ত্বীব, মাওয়াহিব, বেদায়া ও নেহায়া)
২) বিশিষ্ট সাহাবী হযরত হাসসান বিন সাবিত (রাদ্বিয়াল্লাহ আনহু) মিলাদুন্নবী নবী [ﷺ] বর্ণনা প্রসঙ্গে একখানি কবিতাগ্রন্থ লিখেছিলেন এবং হুযুর নবী [ﷺ]-কে শুনিয়েছিলেন। পরবর্তীতে যার নাম রাখা হয়েছিল 'দিওয়ানে হাসসান বিন সাবিত'। তিনি লিখেন,
أنك ولدت مبرا من كل عيب -كأنك خلقت كما تشاء -
وضم الاله اسمه الي اسمه -إذا قال في الخمس المؤذن اشهد -
وشق له من اسمه ليجله فذو العرش محمود ومذا محمد -
অর্থঃ ”হে প্রিয় রাসূল নবী [ﷺ], আপনি সর্বপ্রকার ত্রুটিমুক্ত হয়েই মাসুম নবী হিসেবে জন্মগ্রহণ করেছেন। মনে হয়, যেন আপনার ইচ্ছা অনুযায়ীই আপনার বর্তমান সুরত পয়দা করা হয়েছে। মহান আল্লাহ আযানের মধ্যে আপন নামের সাথে নবীর নাম সংযোজন করেছেন, যখন মুয়াযযিন পাঁচ ওয়াক্ত নামাযের আযানে উচ্চারণ করেন, 'আশহাদু আন্না মুহাম্মাদার রাসূলাল্লাহ নবী [ﷺ]'। আর আল্লাহ আপন নামের অংশ দিয়ে তাঁর প্রিয় হাবীবের নাম রেখেছেন। আরশের অধিপতি হলেন 'মাহমুদ' এবং ইনি হলেন 'মুহাম্মদ নবী [ﷺ]'।"
মাহমুদ থেকে মুহাম্মদ নামের সৃষ্টি হয়েছে এবং আহাদ থেকে আহমদ নামের সৃষ্টি হয়েছে (আল হাদীস)। মাহমুদ থেকে মুহাম্মদ গঠনে একটি 'ওয়াও' অক্ষর বাদ দিতে হয় এবং আহাদ থেকে আহমদ গঠনে একটি ”মীম” অক্ষর যোগ করতে হয়। যোগ বিয়োগের এই প্রক্রিয়াটি সুফী-সাধকগণের নিকট অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। অর্থাৎ মাহমুদ ও মুহাম্মদ এবং আহাদ ও আহমদ অতি ঘনিষ্ঠ। আল্লাহ নামটি চার অক্ষরবিশিষ্ট এবং মুহাম্মদ ও আহমদ নামটিও চার অক্ষরবিশিষ্ট। প্রধান ফেরেশতা, প্রধান আসমানী কিতাব, প্রধান সাহাবী, প্রধান মাযহাব ও প্রধান তরীকার সংখ্যা চার চার এবং সৃষ্টির প্রধান উপাদানও চারটি।
যথাঃ আব, আতিশ, খাক, বাদ (আগুন, পানি, মাটি, বায়ু)। কালেমা তাইয়েবার তাওহীদ অংশ বারো অক্ষরবিশিষ্ট এবং রিসালাতের অংশও বারো অক্ষরবিশিষ্ট। নবী করিম [ﷺ]-এঁর নামকরণ এবং কালেমাতে আল্লাহর সাথে মুহাম্মদ নাম সংযোজন, সবই আল্লাহ কর্তৃক নির্ধারিত। এতে মানুষের কোন হাত নেই। সুতরাং এই পরিকল্পনার তাৎপর্য পূর্ণভাবে উপলব্ধি করাও মানুষের সাধ্যাতীত ব্যাপার।
এখানে উপরোল্লিখিত হযরত আব্বাস ও হযরত হাসসান ((رضي الله عنه)মা) সাহাবীদ্বয়ের কাব্য রচনার ঘটনাটি ঈদে মিলাদুন্নবী [ﷺ] উপলক্ষ্যে বিভিন্ন অনুষ্ঠান পালন ও স্মরণিকা প্রকাশের একটি উত্তম দলীল ও প্রকৃষ্ট প্রমাণ। আল্লাহ তায়ালা কোরআন মাজীদে সূরা ইউনুসের ৫৮ নং আয়াতে মীলাদুন্নবী উপলক্ষ্যে প্রতি বৎসর ঈদ ও পবিত্র আনন্দানুষ্ঠান পালনের কথা উল্লেখ করেছেন। সূরা বাক্বারাতে মূসা (عليه السلام) ও বনী ঈসরাইলগণের নীলনদ পার হওয়া এবং প্রতি বৎসর এ উপলক্ষ্যে আশুরার রোযা ও ঈদ পালন করা এবং সূরা মায়েদায় ঈসা (عليه السلام) ও বনী ঈসরাইলের হাওয়ারীগণের জন্য আকাশ থেকে আল্লাহ কর্তৃক যিয়াফত হিসেবে মায়েদা অবতীর্ণ হওয়া উপলক্ষ্যে প্রতি বৎসর ঐ দিনকে ঈদের দিন হিসেবে পালন করার কথা কোরআনে উল্লেখ আছে।
বনী ইসরাইলের উপর আল্লাহর রহমত নাযিলের স্মরণে যদি প্রতি বৎসর ঐ দিনে ঈদ পালন করা যায়, তাহলে আল্লাহর শ্রেষ্ঠতম নেয়ামত রাহমাতুল্লিল ‘আলামীন [ﷺ]-এঁর আগমন দিবস উপলক্ষ্যে প্রতি বৎসর ঈদে মিলাদুন্নবী [ﷺ] পালন করা যাবে না কেন? হুযুর করিম [ﷺ]-কে এক সাহাবী জিজ্ঞাসা করেছিলেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ [ﷺ]! প্রতি সোমবার আপনার রোযা রাখার কারণ কী? হুযুর [ﷺ] বললেনঃ এই দিনে আমি জন্মগ্রহণ করেছি এবং এই দিনেই (সোমবার) ২৭ শে রমযান আমার উপর কোরআন অবতীর্ণ হয়েছে।" উক্ত প্রমাণাদিই ঈদে মিলাদুন্নবী [ﷺ] পালনের স্বপক্ষে জোরালো দলীল।
উল্লেখ্য, ঈদ মোট ৯টি। যথাঃ- (১) ঈদে রামাদ্বান, (২) ঈদে কোরবান, (৩) ঈদে আরাফা, (৪) ঈদে জুমা, (৫) ঈদে শবে বারাআত, (৬) ঈদে শবে ক্বাদর, (৭) ঈদে আশুরা, (৮) ঈদে নুযুলে মায়েদা এবং (৯) ঈদে মিলাদুন্নবী। সবগুলোই কোরআনে, হাদীসে ও বিভিন্ন গ্রন্থে উল্লেখ আছে।
ইন্তেকাল দিবস পালন হয় না কেন?
আরেকটি বিষয় প্রশ্ন সাপেক্ষ! তা হচ্ছে, নবী করিম [ﷺ]-এঁর শুধু জন্মতারিখ পালন করা হয় কেন, ইন্তেকাল তো একই তারিখে এবং একই দিনে হয়েছিল? সুতরাং একসাথে জন্ম ও মৃত্যু দিবস পালন করাইতো যুক্তিযুক্ত। যেমন অন্যান্য মহামানব ও ওলী-গাউসদের বেলায় মৃত্যু দিবসে ওরস পালন করা হয়ে থাকে।
প্রথম উত্তর হলো, আল্লাহ পাক কোরআন মাজীদে নির্দেশ করেছেন নিয়ামত পেয়ে খুশী ও আনন্দ করার জন্য। নিয়ামত পাওয়া জন্ম উপলক্ষ্যেই হয়। যেমন কোরআনে আছেঃ- قُلْ بِفَضْلِ اللّهِ وَبِرَحْمَتِهِ فَبِذَلِكَ فَلْيَفْرَحُواْ هُوَ خَيْرٌ مِّمَّا يَجْمَعُونَ
অর্থঃ "হে নবী! আপনি এ কথা ঘোষনা করে দিন, মুসলমানগণ খোদার ফযল ও রহমত পাওয়ার কারণে যেন নির্মল খুশি ও আনন্দোৎসব করে। এটা তাদের যাবতীয় সঞ্চিত সম্পদ থেকে উত্তম।"
তাফসীরে রুহুল মায়ানী উক্ত আয়াতে 'ফযল' ও 'রহমত' অর্থে হযরত মুহাম্মদ [ﷺ]-এঁর নাম উল্লেখ করেছেন। এটা হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস ((رضي الله عنه)মা)'র ব্যাখ্যা। রাসূল [ﷺ]-এঁর একহাজার চারশত নামের মধ্যে 'ফযল', 'রহমত', বরকত', 'নেয়ামত' ও 'নূর' প্রভৃতি অন্যতম গুণবাচক নাম, যা গ্রন্থের শুরুতেই উল্লেখ করা হয়েছে। সুতরাং নেয়ামতপ্রাপ্তি উপলক্ষ্যে শুকরিয়া আদায়ের জন্য বিভিন্ন অনুষ্ঠান করাই কোরআনের নির্দেশ। সূরা ইউনুসের ৫৮ নং আয়াতে নবীজী'র জন্মোৎসব পালন করার স্পষ্ট নির্দেশ রয়েছে। সুতরাং ঈদে মিলাদুন্নবী [ﷺ] ও জশনে জুলুস কোরআনের আলোকেই প্রমাণিত।
দেখুন তাফসীরে রুহুল মায়ানী সূরা ইউনুসের ৫৮ নং আয়াতের ব্যাখ্যা।)
মোদ্দাকথা, আল্লাহ পাক হুযুর [ﷺ]-এঁর আবির্ভাব উপলক্ষ্যে আনন্দোৎসব করার নির্দেশ করেছেন। কিন্তু ইন্তেকাল উপলক্ষ্যে শোক পালন করতে বলেন নি। তাই আমরা আল্লাহর নির্দেশ মানি।
দ্বিতীয় উত্তর- নবী করিম [ﷺ] নিজে সোমবারের রোযা রাখার কারণ হিসেবে তাঁর পবিত্র বেলাদাত ও প্রথম ওহী নাযিলের কথা উল্লেখ করেছেন। কিন্তু দুনিয়া থেকে বিদায় গ্রহণ বা ইন্তেকাল উপলক্ষ্যে শোক পালন করার কথা উল্লেখ করেন নি। যদি করতেন, তাহলে আমরা তা পালন করতাম। সুতরাং একই দিনে ও একই তারিখে নবী করিম [ﷺ]-এঁর জন্ম এবং ইন্তেকাল হলেও মৃত্যুদিবস পালন করা যাবে না। এটাই কোরআন-হাদীসের শিক্ষা।
তৃতীয় উত্তর- নবী করিম [ﷺ] তো স্বশরীরে হায়াত্ননবী। হায়াতুন্নবীর আবার মৃত্যুদিবস হয় কী করে? কেউ কি জীবিত পিতার মৃত্যুদিবস পালন করে? আসলে ওরা কোনটাই পালনের পক্ষে নয়। শুধু ঈদে মীলাদুন্নবী [ﷺ] পালনকারীদেরকে ঘায়েল করার লক্ষ্যেই এইসব শয়তানী কূটতর্কের অবতারণা করে থাকে। ওরা শয়তানের প্রতিনিধি। আমরা কোরআন নাযিলের আনন্দোৎসব করি শবে ক্বদরে এবং নবীজী'র আগমনের আনন্দোৎসব পালন করি ১২ ই রবিউল আউয়ালে। ওরা কোনটাই পালনের পক্ষপাতী নয়। আমরা সূরা ইউনুসের ৫৮ নং আয়াতের নির্দেশ পালন করি
ঈদে মিলাদুন্নবী [ﷺ] উদযাপন উপলক্ষ্যে জুলুস বা মিছিল বের করা
____________________
ঈদে মিলাদুন্নবী [ﷺ] উদযাপন উপলক্ষ্যে জুলুস বা মিছিল বের করা
=========
নবী করিম [ﷺ] যখন ভূমিষ্ঠ হন, তখন এমন কতিপয় আশ্চর্যজনক ঘটনা ঘটেছিল, যা সচরাচর দেখা যায় না। প্রথম ঘটনাটি স্বয়ং বিবি আমেনা ((رضي الله عنه) আনহা) বর্ণনা করেছেন এভাবে-
"যখন আমার প্রসব ব্যথা শুরু হয়, তখন ঘরে আমি প্রায় একা ছিলাম এবং আমার শশুর আব্দুল মুত্তালিব ছিলেন কা'বা ঘরের তাওয়াফরত। আমি দেখতে পেলাম, একটি সাদা পাখির ডানা আমার কলিজায় কী যেন মালিশ করে দিচ্ছে। এতে আমার ভয়ভীতি ও ব্যথা-বেদনা দূরীভূত হয়ে গেল। এরপর দেখতে পেলাম একগ্লাস শ্বেতশুভ্র শরবত আমার সামনে। আমি ঐ শরবতটুকু পান করে ফেললাম। অতঃপর একটি উর্ধগামী নূর আমাকে আচ্ছাদিত করে ফেললো। এ অবস্থায় দেখতে পেলাম, আব্দে মনাফ (কুরাইশ) বংশের মহিলাদের চেহারাবিশিষ্ট এবং খেজুর বৃক্ষের ন্যায় দীর্ঘাঙ্গিনী অনেক মহিলা আমাকে বেষ্টন করে বসে আছেন। আমি সাহায্যের জন্য 'ওয়া গাওয়াছা' বলে তাঁদের উদ্দেশ্যে বললাম, আপনারা কোথা হতে আমার বিষয়ে অবগত হলেন? উত্তরে তাঁদের একজন বললেনঃ আমি ফেরাউনের স্ত্রী বিবি আছিয়া। আরেকজন বললেনঃ আমি ইমরান তনয়া বিবি মরিয়ম এবং আমাদের সঙ্গিনীগণ হচ্ছেন বেহেশতী হুর। আমি আরো দেখতে পেলাম, অনেক পুরুষবেশী লোক শূন্যে দণ্ডায়মান রয়েছেন। তাঁদের প্রত্যেকের হাতে রয়েছে রূপার পাত্র। আরো দেখতে পেলাম, একদল পাখি আমার ঘরের কোঠা ঢেকে ফেলেছে। আল্লাহ তায়ালা আমার চোখের সামনের সকল পর্দা অপসারণ করে দিলেন এবং আমি পৃথিবীর পূর্ব-পশ্চিম সব দেখতে পেলাম। আরো দেখতে পেলাম, তিনটি পতাকা। একটি পৃথিবীর পূর্বপ্রান্তে স্থাপিত, দ্বিতীয়টি পশ্চিমপ্রান্তে এবং তৃতীয়টি স্থাপিত কা'বাঘরের ছাদে। এমতাবস্থায় প্রসব বেদনার চূড়ান্ত পর্যায়ে আমার প্রিয় সন্তান হযরত মুহাম্মদ [ﷺ] ভূমিষ্ঠ হলেন।"
(হযরত ইবনে আব্বাস সুত্রে মাওয়াহেবে লাদুন্নিয়া)।
খাছায়েছে কুবরা ও তারীখুল খামীস গ্রন্থদ্বয়ে যথাক্রমে আল্লামা জালালুদ্দীন সুয়ূতী ও আল্লামা আবু বিকর দিয়ারবিকরী ((رحمة الله عليه)মা) বিবি আমেনা ((رضي الله عنه) আনহা)'র একটি বর্ণনা এভাবে লিপিবদ্ধ করেছেনঃ
বিবি আমেনা বলেনঃ "যখন আমার প্রিয় পুত্র ভূমিষ্ঠ হলেন, তখন আমি দেখতে পেলাম, তিনি সেজদায় পড়ে আছেন। তারপর মাথা উর্ধগামী করে শাহাদাৎ অঙ্গুলি দ্বারা ইশারা করে বিশুদ্ধ আরবি ভাষায় পাঠ করছেন, 'আশহাদু আল্লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়া আন্নী রাসূলুল্লাহ'।" (যিকরে জামীল সুত্রে)।
উপরোক্ত বর্ণনায় কয়েকটি বিষয় প্রমাণিত হলোঃ
(১) নবী করিম [ﷺ]-এঁর পবিত্র বেলাদত উপলক্ষ্যে বেহেশত ও আকাশ হতে পবিত্র নারী ও হুর ফেরেশতাগণ জুলুস করে বিবি আমেনা (رضي الله عنها) কুটিরে আগমন করেছিলেন এবং নবীজী'র সম্মানার্থে দণ্ডায়মান হয়ে কিয়াম করেছিলেন। আর ফেরেশতাদের হয়ে এই জুলুস ছিল আকাশ ছোঁয়া জুলুস। তাই আমরাও নবীজী'র সম্মানে কিয়াম করি ও জুলুস করি।
(২) নবী করিম [ﷺ]-এঁর নূরের আলোতে বিবি আমেনা ((رضي الله عنه) আনহা) পৃথিবীর পূর্ব-পশ্চিম প্রান্ত পর্যন্ত অবলোকন করেছিলেন। যাদের অন্তরে নবীজী'র নূর বিদ্যমান, সেসব অলোগণেরও দিব্যদৃষ্টি খুলে যায়। তাঁরা লাওহে মাহফুযও দেখতে পান। (মসনবী শরীফ)।
(৩) নবী করিম [ﷺ]-এঁর জন্ম উপলক্ষ্যে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থান, আলো ও পতাকা দ্বারা সুসজ্জিত করা উত্তম। এটা আল্লাহ ও ফেরেশতাদের সুন্নত।
(৪) কোরআন নাযিলের ৪০ বৎসর পূর্বেই নবী করিম [ﷺ] কোরআনের গুরুত্বপূর্ণ দুটি আদর্শ 'কালেমা' ও 'নামায' বাস্তবায়ন করেছিলেন। মূলতঃ থিওরেটিকাল কোরআন নাযিলের পূর্বেই প্র্যাক্টিকাল কোরআন (নবী) নাযিল হয়েছিলেন। কোরআন হলো হাদিয়া। আর নবী হলেন সেই হাদিয়ার মালিক। হাদিয়া ও তার মালিকের মধ্যে যে সম্পর্ক, তা সর্বজনবিদিত।
(৫) পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী [ﷺ] উপলক্ষে জুলুছ এবং শুকরিয়ার আনন্দমিছিল বের করা ফেরেশতাদেরই অনুকরণ (আনওয়ারে আফতাবে সাদাকাত)। মাওয়াহেব গ্রন্থের বর্ণনায় আকাশ হতে জমীন পর্যন্ত ফেরেশতাদের জুলুছ বা মিছিল পরিষ্কারভাবে প্রমাণিত হয়েছে। আল্লাহপাক বলেন- “তোমরা আল্লাহর ফযল ও রহমত স্বরূপ নবীকে পেয়ে আনন্দ-উল্লাস করো।” (সূরা ইউনুছ ৫৮ আয়াতের তাফসীর দেখুন- রুহুল মাআণীতে)। জালাল্দ্দুীন সুয়ুতি তাঁর আল হাভীলিল কাতাওয়া গ্রন্থে ঈদে মিলাদ্ন্নুবীর দিনে আল্লাহ’র নির্দেশে সব রকমের বৈধ আনন্দ-উল্লাসকে বৈধ বলে উল্লেখ করেছেন।
পূর্ব যুগের জুলুছঃ
প্রাচীনকালে ১০৯৫-১১২১ খৃষ্টাব্দে মিশরে ঈদে মিলাদুন্নবী [ﷺ] উপলক্ষে ধর্মীয় জুলুছ বের করা হতো। গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ এতে অংশ নিতেন। উযির আফযলের যুগে এ আনন্দমিছিল বের করা হতো। এ সময় রাজপথসমূহ লোকে লোকারণ্য হয়ে যেতো। পরবর্তীতে এ উৎসবের প্রসার ঘটে আফ্রিকার অন্যান্য শহরে, ইউরোপের স্পেনে এবং ভারতবর্ষে। (মাকরিজী, ইবনে খাল্লেকান)।
সুতরাং যারা জশনে জুলুছকে নূতন প্রথা, শিরক ও বিদআত বলে- তারা অতীত ইতিহাস সম্পর্কে সম্পূর্ণ অজ্ঞ এবং ইসলামী জ্ঞানের ক্ষেত্রে মুর্খ। নবীবিদ্বেষ তাদেরকে অন্ধ করে রেখেছে।
(বিস্তারিত ইতিহাস জানার জন্যে দৈনিক জনকণ্ঠ ৩০শে আগস্ট ’৯৬ ‘মিলাদের ইতিকথা পড়ুন)। জশনে জুলুছ বের করা কোরআনী আয়াত দ্বারাই প্রমাণিত।
১২ রবিউল আউয়াল শোক দিবস না আনন্দ দিবস
____________________
১২ রবিউল আউয়াল শোক দিবস না আনন্দ দিবস
হামিদী সাহেব লিখেছেন-
‘সমস্ত ঐতিহাসিক একমত ১২ই রবিউল আউয়াল আমাদের প্রিয় রাসূলের হিজরতের ও ইন্তেকালের তারিখ ছিল। তাই নবীর ইন্তেকালের দিন আমরা সুখ প্রকাশ করব না আনন্দ প্রকাশ করব?’ (এখানে সুখ শব্দটি শোক হওয়া উচিত ছিল)
হামিদী সাহেব এখানে প্রশ্নবোধক বাক্য ব্যবহার করে এর উত্তর জানতে চেয়েছেন। ইতোপূর্বে এ ধরনের প্রশ্ন তাজ উদ্দিন ফাকেহানীও উত্থাপন করেছিলেন। যার উত্তর আল্লামা সুয়ুতি নিজেই প্রদান করে গেছেন। তাই এ প্রশ্নের জবাব সরাসরি আল্লামা সুয়ুতির ফতোয়া থেকে প্রদান
করা হলো-
جوابه ان ولادته صلى الله عليه وسلم اعظم النعم علينا- ووفاته اعظم المصائب لنا- والشريعة حثت على اظهار شكر النعم والصبر السكون والكتم عند المصائب- وقد امر الشرع بالعقيقة عند الولادة وهى اظهار شكر وفرح بالمولود ولم يأمر عند الموت بذبح ولابغيره بل نهى عن النياحة واظهار الجزع فدلت قواعد الشريعة على انه يحسن فى هذا الشهر اظهار الفرح بولادته صلى الله عليه وسلم دون اظهار الحزن فيه بوفاته- (الحاوى للفتاوى)
অর্থ: জবাব, রাসূলেপাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর বেলাদত শরীফ আমাদের জন্য সবচেয়ে বড় নিয়ামত এবং তাঁর ওফাত শরীফ আমাদের জন্য সবচেয়ে বড় মুসিবত। আর শরিয়ত উৎসাহিত করেছে নিয়ামতের শুকরিয়া প্রকাশের জন্য এবং বিপদ মুসিবতের সময় ধৈর্যধারণের মাধ্যমে নীরব থাকার জন্য। অতএব নবজাতকের জন্ম উপলে আক্বিকা করার শরয়ি হুকুম প্রকৃতপক্ষে শুকরিয়া ও আনন্দ প্রকাশের নামান্তর। অথচ কারো মৃত্যুতে পশু জবাই করে আনন্দ-উল্লাসের হুকুম শরিয়ত দেয়নি (এখানে ইসলে সওয়াবের উদ্দেশ্যে অন্যকে খাওয়ানোর জন্য কুরবানী নিষেধ বলা হয় নি)। বরং মর্সিয়া ও আহাজারি করতে নিষেধ করেছে। অতএব শরিয়তের বিধান অনুযায়ী ইহাই প্রমাণিত হলো যে, উক্ত রবিউল আউয়াল মাসে রাসূলেপাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর ওফাত উপলে চিন্তা পেরেশানী না করে তাঁর বেলাদত শরীফ উপলে আনন্দ ও খুশি প্রকাশ করা উত্তম কাজ। (আল হাবী লিল ফাতাওয়া)
রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কত তারিখ জন্ম গ্রহণ করেছিলেন
____________________
রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কত তারিখ জন্ম গ্রহণ করেছিলেন এ বিষয়টি ইতিহাস সংক্রান্ত, তাই ঐতিহাসিকগণের মতামতের দিক বিচারে প্রমাণ করতে হবে ১২ই রবীউল আউয়াল শরীফ নবী করিম ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের বিলাদত (জন্ম) শরীফ-এর দিন। এটাই সবচেয়ে ছহীহ ও মশহূর মত।
যেমন, এ প্রসঙ্গে হাফিয আবূ বকর ইবনে আবী শায়বাহ (২৩৫হি.) ছহীহ সনদ সহকারে বর্ণনা করেছেন-
عن عفان عن سعيد بن مينا عن جابر وابن عباس رضى الله تعالى عنهما قالا ولد رسول الله صلى الله عليه وسلم عام الفيل يوم الاثنين الثانى عشر من شهر ربيع الاول
অর্থ: “হযরত আফফান রহমতুল্লাহি আলাইহি হতে বর্ণিত। তিনি হযরত সাঈদ ইবনে মীনা রহমতুল্লাহি আলাইহি থেকে, তিনি হযরত জাবির ও হযরত ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমা থেকে বর্ণনা করেছেন, হযরত জাবির ও হযরত ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমা বলেন, রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের বিলাদত শরীফ ‘হস্তি বাহিনী বর্ষের ১২ই রবীউল আউয়াল সোমবার শরীফ হয়েছিল। এ দিনেই তিনি নুবূয়্যাতেরর দায়িত্ব পেয়েছেন, এ দিনেই তিনি হিজরত করেছেন এবং মুবারাক ওফাতও এদিনেই লাভ করেছেন।”
আল্লামা ইবনে কাসীর র. বলেন, ইহাই প্রসিদ্ধ-মাশহুর মত।
গ্রন্থ সূত্র :
*_* হাফেজ ইবনে কাসীর র., "আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া"; খন্ড ২, পৃ., ২৬০ বৈরুতে মুদ্রিত।
*_* মুসান্নাফ ইবনে আবী শায়বা দ্রষ্টব্য।
*_* বুলূগুল আমানী ফী শরহিল ফাততিহর রব্বানী’; খণ্ড ২, পৃ.,১৮৯ বৈরুতে মুদ্রিত।
ঐতিহাসিকগনের অভিমত সমূহ :
❇১/মুহাম্মাদ বিন ইসহাক (রাহ) এর মতঃ
মুহাম্মাদ বিন ইসহাক কে?
তাঁর পুরো নাম হচ্ছে আবু বাকার মুহাম্মাদ বিন ইসহাক। তিনি ৮৫ হিজরীতে মদীনা মুনাওওয়ারায় জন্ম গ্রহণ করেন। তিনি তাঁর জীবনের অধিকাংশ সময় মদীনা শরীফে কাটিয়েছেন। তিনিই হচ্ছেন প্রথম মুসলিম ঐতিহাসিক যিনি মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের মহান জীবনের উপর গ্রন্থ লিখেছিলেন। তাঁর সীরাত গ্রন্থটির নাম হচ্ছে “সীরাতু রাসুলিল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম”।
মুহাম্মাদ বিন ইসহাক সম্পর্কে বিশ্ববিখ্যাত উলামাদের মন্তব্যঃ
ক/ ইমাম সুফিয়ান ছাওরী বলেন,
আমি ইমাম মুহাম্মাদ বিন ইসহাকের মজলিসে ৭০ বছরের চেয়েও বেশীদিন বসেছিলাম। আমি কাউকে কোনদিন তাঁর বিরুদ্ধে কোন অভিযোগ করতে দেখিনি।
গ্রন্থ সূত্র :
তারীখে বাগদাদ-১/২১৮।
খ/ইমাম শু’বাহ বলেন,
ইমাম ইবনে ইসহাককে হাদিস শাস্ত্রে ব্যুৎপত্তির কারণে ইমামুল মুহাদ্দিসীন তথা মুহাদ্দিসগণের ইমাম বলা উচিৎ ।
গ্রন্থ সূত্র :
তারীখে বাগদাদ-১/২১৮।
গ/ইয়াহিয়া বিন মুয়ীন বলেন,
হাদীস বর্ণনার ক্ষেত্রে সিকাহ তথা নির্ভরযোগ্য।
গ্রন্থ সূত্র :
তারিখে বাগদাদ-১/২১৮।
নোটঃ
ইমাম যাহাবীর লিখিত কিতাব ‘সিয়ারু আ’লামিন নুবালা’ পড়লে উপরোক্ত তথ্যগুলো পাবেন। কেউ কেউ ইমাম ইবনে ইসহাক সম্পর্কে সমালোচনা করার চেষ্টা করেছেন। ইমাম যাহাবী তাঁর এই কিতাবে প্রমাণ করেছেন যে, ইমাম মুহাম্মাদ বিন ইসহাক সম্পর্কে সকল অভিযোগ মিথ্যা।
রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের জন্ম তারিখ সম্পর্কে ইমাম ইবনু ইসহাকের মতঃ
বিশ্বনন্দিত মুসলিম ঐতিহাসিক ইবনু হিশাম বলেন,
ইমাম ইবনু ইসহাক বলেন, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম রবিউল আউয়াল মাসের ১২ তারিখ আমুল ফীলে ( ঐ বছর, যে বছরে আবরাহা তার হস্তি বাহিনী নিয়ে মক্কা মুকাররামাহ আক্রমণ করেছিল) জন্মগ্রহণ করেছিলেন।
গ্রন্থ সূত্র :
আস-সীরাতুন নাবাওয়িয়্যাহ - পৃ., ২০৮।
❇২/ ইতিহাস গ্রন্থের নামঃ তারীখুল ইসলাম
গ্রন্থকারঃ ইমাম যাহাবী (রাহ)
অধ্যায়ঃ মাওলিদুহুল মুবারাকু সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম।
এই গ্রন্থে ইমাম যাহাবী (রা) ১২ই রবিউল আউয়াল সম্পর্কিত কয়েকটি হাদীস উল্লেখ করেছেন। তাঁর উল্লেখকৃত প্রথম হাদীস সম্পর্কে তিইনি বলেছেন, এটি সহীহ নয়। উল্লেখকৃত বাকী হাদীসগুলোর ব্যাপারে তিনি কোন কমেন্ট করেন নি, যা প্রমাণ করে যে ঐ হাদীস গুলো সহীহ। অন্যথায় প্রথম হাদীসের ন্যায় এগুলোর ব্যাপারেও একই কমেন্ট করতেন।
এখানে দুর্বল সনদের হাদীসটি উল্লেখ করছিনা। বরং যে সহীহ হাদীসগুলো ইমাম যাহাবী উল্লেখ করেছেন, তা উল্লেখ করছিঃ
*-ক- ইমাম যুহরী বলেন, সাঈদ বিন মুসাইয়াব বলেন, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ১২ ই রবিউল আউয়াল মাসে জন্মগ্রহণ করেছেন।
*-খ- মা’রুফ বিন খাররাবুয (রা) বলেন, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ১২ই রবিউল আউয়াল মাসে জন্মগ্রহণ করেছেন।
❇৩/ গ্রন্থের নামঃ আস সীরাতুন নাবাওয়িয়্যাহ
গ্রন্থকারঃ ইমাম ইবনু কাছীর, খন্ড ১, পৃষ্ঠা ১৯৯।
ইমাম ইবনু কাছীর (রাহ) রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের জন্মতারিখ সম্পর্কে বিভিন্ন মতামত উল্লেখ করেছেন, যেমন,
কেউ কেউ বলেছেন, ৮ই রবিউল আউয়াল
কেউ কেউ বলেছেন, ১০ ই রবিউল আউয়াল
কেউ কেউ বলেছেন, রামাদান মাসে
কেউ কেউ বলেছেন, সফর মাসে
তারপর ইমাম ইবনু কাছীর (রাহ) বলেন,
কিছু উলামায়ে কেরাম বলেছেন, ১২ই রবিউল আউয়াল। ইমাম ইবনু ইসহাক এই মতকে গ্রহণ করেছেন। তাছাড়া ১২ই রবিউল আউয়ালের ব্যাপারে হাদীস ও পাওয়া যায়। হযরত জাবির ও ইবনু আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহুমা বলেন, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমুল ফীলে ১২ ই রবিউল আউয়াল মাসে সোমবার দিন জন্ম গ্রহণ করেছেন। এইদিন তিনি নবুওওয়াত লাভ করেন। এইদিন তিনি মিরাজে যান, এবং এইদিন তিইনি ইন্তেকাল করেন।
এরপর ইমাম ইবনু কাছীর (রাহ) বলেন,
এটাই (১২ই রবিউল আউয়াল) বেশীরভাগ উলামাগণ বলেছেন এবং এটাই সুপ্রসিদ্ধ মত।
❇৪/ গ্রন্থের নামঃ আস সীরাতুন নাবাওয়িয়্যাতু ওয়া আখবারুল খুলাফা
গ্রন্থকারঃ আল- হাফিযুল কাবীর আবু হাতিম মুহাম্মাদ বিন হিব্বান - পৃষ্ঠা ৭।
ইমাম আবু হাতিম বলেন, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমুল ফীলে ১২ই রবিউল আউয়ালে জন্মগ্রহণ করেন।
❇৫/ গ্রন্থের নামঃ উয়ূনুল আছারি ফী ফুনূনিল মাগাযী ওয়াশ শামাইলি ওয়াস সিয়ারি।
গ্রন্থকারঃ ইমাম, হাফিয ইবনু সায়্যিদিন নাস; খন্ড ১, পৃষ্ঠা ৩৮।
তিনি বলেন, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমু ফীলের ঘটনার ৫০ দিন পর ১২ই রবিউল আউয়াল সোমবার দিন জন্মগ্রহণ করেন।
❇৬/ গ্রন্থের নামঃ আর রাউদুল উনফ।
গ্রন্থকারঃ ইমাম সুহাইলী; খন্ড ১, পৃষ্ঠা ৩০০।
ইমাম সুহাইলী ইমাম ইবনু ইসহাকের মতকে প্রাধান্য দিয়েছেন এবং বলেছেন, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমুল ফীলে ১২ই রবিউল আউয়াল মাসে সোমবার দিন জন্মগ্রহণ করেছেন।
❇৭/ গ্রন্থের নামঃ সুবুলুল হুদা ওয়ার রাশাদি ফী সীরাতি খাইরিল ইবাদি।
গ্রন্থকারঃ ইমাম মুহাম্মাদ বিন ইউসুফ আস সালিহী; খন্ড ১, পৃষ্ঠা ৩৩৪-৩৩৬।
এই গ্রন্থে তিনি ইমাম ইবনু ইসহাকের মতকে প্রাধান্য দিয়ে বলেন, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমুল ফীলে ১২ই রবিউল আউয়াল মাসে জন্মগ্রহণ করেন।
শুধু তাই বলেই তিনি শেষ করেননি, তিনি এটাও বলেছেন,
‘আমাদেরকে এটা অনুসরণ করতে হবে’।
❇৮/ গ্রন্থের নামঃ বাহজাতুল মাহাফিলি ওয়া বাগিয়্যাতুল আমাছিলি ফী তালখীসিল মু’জিযাতি ওয়াস সিয়ারি ওয়াশ শামা ইলি।
গ্রন্থকারঃ ইমাম আবু যাকারিয়া ইমাদুদ্দীন আল আমিরী; খন্ড ১, পৃষ্ঠা ৫১।
তিনি বলেন, সকল উলামা একমত হয়েছেন, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সোমবার দিন জন্মগ্রহণ করেছেন। বেশীর ভাগ উলামা একমত হয়েছেন, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ১২ই রবিউল আউয়াল তারিখে জন্মগ্রহণ করেছেন, আর এটাই বিশুদ্ধ মত।
❇৯/ গ্রন্থের নামঃ আস সীরাতুল হালাবিয়্যাহ ফী সীরাতিল আমীনিল মা’মূন।
(অন্য নাম হচ্ছে, ইনসানুল উয়ূন)
গ্রন্থকারঃ ইমাম আলী বিন বুরহানুদ্দীন আল হালাবি; খন্ড ১, পৃষ্ঠা ৯৩।
তিনি বলেন, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের জন্মদিন ছিল ১২ই রবিউল আউয়াল। তিনি আরো বলেন, আমাদেরকে এটাই অনুসরণ করতে হবে।
❇১০/ গ্রন্থের নামঃ তারীখু তাবারী
গ্রন্থকারঃ ইমাম, ফকীহ, মুফাসসির, মু’আররিখ আবু জা’ফার মুহাম্মাদ বিন জারীর আত তাবারী। অধ্যায়ঃ যিকরু মাওলিদি রাসূলিল্লাহ; খন্ড ১, পৃষ্ঠা ২৬২।
তিনি ইমাম ইবনু ইসহাকের মতটি উল্লেখ পূর্বক সহমত পোষণ করে বলেন, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ১২ই রবিউল আউয়াল মাসের সোমবার দিন জন্মগ্রহণ করেন।
❇১১/ গ্রন্থের নামঃ আল কামিলু ফিত তারীখ।
গ্রন্থকারঃ ইমাম ইবনুল আছীর, অধ্যায়ঃ যিকরু মাওলিদি রাসূলিল্লাহ; খন্ড ১, পৃষ্ঠা ৩৫৫।
ইমাম ইবনুল আছীর ও একইভাবে ইমাম ইবনু ইসহাকের মতটি প্রাধান্য দিয়ে বলেন, ১২ই রবিউল আউয়াল সোমবার দিন রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম জন্মগ্রহণ করেছেন।
❇১২/ গ্রন্থের নামঃ দিওয়ানুল মুবতাদা ই ওয়াল খাবারি ফী তারীখিল আরাবি ওয়াল বারারি।
(গ্রন্থটি তারীখু ইবন খালদুন নামে পরিচিত)
গ্রন্থকারঃ আব্দুর রাহমান ইবনু খালদুন; খন্ড ২, পৃষ্ঠা ৪০৭।
বিশ্ববিখ্যাত ঐতিহাসিক ইবনু খালদুন রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের জন্মতারিখ সম্পর্কে বলেন, এটা ছিল আমুল ফীলের ১২ ই রবিউল আউয়াল।
❇১৩/ গ্রন্থের নামঃ আল ওয়াফা
গ্রন্থকারঃ ইবনূ জাওযী, পৃ., ৮৭।
তিনি বলেন, ইবনূ আসাকীর থেকে উম্মাহর প্রসিদ্ধ গ্রহনযোগ্য মতস্বরুপ আমাদর কাছে যে মতটি পোঁছেছে তা হলো রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের জন্মতারিখ ছিল আমুল ফীলের ১২ ই রবিউল আউয়াল।
❇১৪/ গ্রন্থের নামঃ ফতোয়ায়ে রেজভীয়া
গ্রন্থকারঃ ইমামে আহলুস সূন্নাহ্ শায়খুল ইসলাম আ'লা হযরত আহমদ রেজা খান বেরেলী রহ.; খণ্ড ২৬, পৃষ্ঠা ৪১১।
তিনি-ও অনুরুপ উল্লেখ করেছেন।
❇১৫/ গ্রন্থের নামঃ আশ শুমামাতুল আনবারিয়া ফী মওলিদী খায়রিল বারিয়া
গ্রন্থকারঃ উপমহাদেশে ফির্কায়ে আহলে হাদিস প্রতিষ্ঠার রুপকার নবাব সিদ্দিক হাসান খান ভূপালী, পৃ., ৭।
তিনি ইবনূ জাওযীর অনূরুপ উদ্ধৃতি পেশ করে বলেন, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের জন্মতারিখ ছিল আমুল ফীলের ১২ ই রবিউল আউয়াল।
❇১৬/ গ্রন্থের নামঃ ফাতহুল বারী
গ্রন্থকারঃ ইবনূ হাজর আল আসকালানী, খণ্ড ৮, পৃষ্ঠা ১৩০।
তিনিও অনূরুপ মত ব্যক্ত করেছেন।
|| প্রসিদ্ধ মুহাদ্দিস, বুখারী শরীফের ব্যাখ্যাকার ইমাম কাস্তালানী র. তদীয় জগৎ বিখ্যাত কিতাব "মাওয়াহিবুল লাদুন্নিয়া" কিতাবে বলেছেন,
"প্রসিদ্ধ মতানুযায়ী নিশ্চয় নাবী কারিম সল্লাল্লহু আ'লাইহি ওয়া আলিহী ওয়া সাল্লাম ১২ই রবিউল আউয়াল, সোমবার সুবহে সাদিক-এর সময় দুনিয়াতে জন্ম বা শুভাগমন করেছেন এবং এ মত হল প্রসিদ্ধ ঐতিহাসিক ইমামুল মাগাযী ইবনে ইসহাক র. ও অন্যান্য সকল ইমামগণের"।
দেখুন, উক্ত কিতাবের শরাহ্
*_* শারহে আল্লামাতুল জুরকানী আলাল মাওয়াহেব; খণ্ড ১, পৃ., ১৪৮।
উক্ত কিতাবে আরো বলেন,
"এবং ১২ই রবিউল আউয়াল তারিখেই পবিত্র মক্কা নগরীর অধিবাসীদের মাঝে নাবী কারিম সল্লাল্লহু আ'লাইহি ওয়া আলিহী ওয়া সাল্লাম-এর পবিত্র জন্মস্থান যিয়ারত করার আ'মাল বর্তমান সময় পর্যন্ত বহাল রয়েছে"।
দেখুন,
*_* শারহে আল্লামাতুল জুরকানী আলাল মাওয়াহেব; খণ্ড ১, পৃ., ১৪৮।
আল্লামা জুরকানী র. তদীয় "শরহে আল্লামাতুল জুরকানী" কিতাবে বলেন,
"প্রখ্যাত ঐতিহাসিক আল্লামা ইবনে কাসীর র. বলেন, ১২ই রবিউল আউয়াল তারিখই দুনিয়ায় নাবী কারিম সল্লাল্লহু আ'লাইহি ওয়া আলিহী ওয়া সাল্লাম-এর পবিত্র জন্ম তারিখ/শুভাগমন তারিখ হিসেবে জামহুর উলামায়ে ক্বিরামের নিকট প্রসিদ্ধ"।
*_* ইমাম জুরকানী র., শারহে আল্লামাতুল জুরকানী আলাল মাওয়াহেব; খণ্ড ১, পৃ., ২৪৮।
উক্ত পৃষ্ঠায় তিনি আরো বলেন,
"উক্ত ১২ই রবিউল আউয়াল তারিখই নাবী কারিম সল্লাল্লহু আ'লাইহি ওয়া আলিহী ওয়া সাল্লাম-এর পবিত্র জন্ম তারিখ/শুভাগমন তারিখ হিসেবে পালিত হয়ে আসছে"।
*_* ইমাম জুরকানী র., শারহে আল্লামাতুল জুরকানী আলাল মাওয়াহেব; খণ্ড ১, পৃ., ২৪৮।
এখন দেখুন,
|| ভারতীয় উপমহাদেশের প্রথম ও অন্যতম মুহাদ্দিস শায়খ আব্দুল হক মুহাদ্দিস দেহলাভী র. বলেন,
"নাবী কারিম সল্লাল্লহু আ'লাইহি ওয়া আলিহী ওয়া সাল্লাম-এর পবিত্র জন্ম তারিখ/শুভাগমন তারিখ হিসেবে ১২ই রবিউল আউয়াল তারিখই প্রসিদ্ধ। এবং মক্কাবাসীদের আ'মাল হল তাঁরা উক্ত তারিখে নাবী কারিম সল্লাল্লহু আ'লাইহি ওয়া আলিহী ওয়া সাল্লাম-এর পবিত্র জন্ম স্থান/শুভাগমন স্থান যিয়ারত করতেন; যা বর্তমান সময় পর্যন্ত (মুহাদ্দিস র.-র সময়কাল ১০৫১হি.) প্রচলিত রয়েছে"।
*_* শায়খ আব্দুল হক মুহাদ্দিস দেহলাভী র., "মা সাবাতা বিস সূন্নাহ্" উর্দু গ্রন্থ, পৃ., ৮১।
তিনি উক্ত কিতাবে আরো বলেন,
"আল্লামা ইমাম ত্বীবী র. বলেন- সমস্ত মুসলিম উম্মাহ্ এ বিষয়ের উপর একমত যে, নাবী কারিম সল্লাল্লহু আ'লাইহি ওয়া আলিহী ওয়া সাল্লাম ১২ই রবিউল আউয়াল তারিখে এ দুনিয়ায় শুভাগমন করেছেন"।
*_* শায়খ আব্দুল হক মুহাদ্দিস দেহলাভী র., "মা সাবাতা বিস সূন্নাহ্" উর্দু গ্রন্থ, পৃ., ৮২।
আরো দেখুন,
|| মাওলানা মুফতি এনায়েত আহমদ র. তদীয় প্রসিদ্ধ কিতাব "তাওয়ারিখে হাবীবে ইলাহ্"-তে বলেন,
"যে বছর আবরাহার হস্তী বাহিনী ধ্বংস হয়েছিল ঐ বছর ১২ই রবিউল আউয়াল সোমবার, সুবহে সাদিক-এর সময় নাবী কারিম সল্লাল্লহু আ'লাইহি ওয়া আলিহী ওয়া সাল্লাম দুনিয়ায় শুভাগমন করেছেন"।
*_* মাওলানা মুফতি এনায়েত আহমদ র.; "তাওয়ারিখে হাবীবে ইলাহ্", পৃ., ১১।
তিনি অপর পৃষ্ঠায় বলেন,
"মক্কা ও মদিনা শরীফ এবং অধিকাংশ ইসলামী রাষ্ট্রে এ প্রথা প্রচলিত আছে যে, পবিত্র রবিউল আউয়াল মাসে মীলাদুন্নাবী সল্লাল্লহু আ'লাইহি ওয়া আলিহী ওয়া সাল্লাম-এর মাহফিল অায়োজন করে মুসলমানদের একত্র করে মীলাদ শরীফ পাঠ করা হতো। এবং নাবী কারিম সল্লাল্লহু আ'লাইহি ওয়া আলিহী ওয়া সাল্লাম-এর প্রতি বেশী বেশী দরুদ শরীফ পড়ে লোকদেরকে দাওয়াত দিয়ে খানা খাওয়ানো এবং নেওয়াজ বিতরণ করা হতো। ইহা একটি বিরাট বারকাতময় কাজ এবং নাবী কারিম সল্লাল্লহু আ'লাইহি ওয়া আলিহী ওয়া সাল্লাম-এর সাথে ভালবাসা বৃদ্ধির একটি মাধ্যম। রবিউল আউয়াল মাসের ১২ তারিখ মদিনা মুনাওয়ারায় মাসজিদে নাববীতে এবং মক্কা শরীফে নাবী কারিম সল্লাল্লহু আ'লাইহি ওয়া আলিহী ওয়া সাল্লাম-এর জন্মস্থলে মীলাদুন্নাবী সল্লাল্লহু আ'লাইহি ওয়া আলিহী ওয়া সাল্লাম-এর এ বারকাতময় মাহফিল অনুষ্ঠিত হতো"।
*_* মাওলানা মুফতি এনায়েত আহমদ র.; "তাওয়ারিখে হাবীবে ইলাহ্", পৃ., ১২।
নবীজির বিলাদত দিবস (জন্মদিবস) কে বিকৃতকারী মিশরীয় জ্যোতির্বিদ মাহমুদ পাশা আসলে কেমন ছিলো?
সহিহ হাদীসের বর্ণিত আছে নবীজির বিলাদত দিবস হচ্ছে ১২ই রবিউল আউয়াল শরীফ।
কিন্তু এরপরও কিছু লোক মিশরীয় জ্যোতির্বিদ মাহমুদ পাশা’র রেফারেন্স দিয়ে দাবি করে নবীজির বিলাদত নাকি ৯ই রবিউল আউয়াল।
এক্ষেত্রে বেশি ভূমিকা রেখেছে দুটি বই-
১) ব্রিটিশদের থেকে ডিলিট উপাধি প্রাপ্ত সুলাইমান নদভীর লেখা ‘সীরাতুন্নবী’ নামক গ্রন্থ।
২) কট্টর আহলে হাদীস সাফিউর রহমান মুবারকপুরীর লেখা ‘আর-রাহীকুল মাকতুম’, ইংরেজী বইটির নাম The Sealed Nectar।
উভয় বইয়ে মিশরীয় জ্যোতির্বিদ মাহমুদ পাশার রেফারেন্স দিয়ে সহিহ হাদীসকে অস্বীকার করা হয়েছে। বলা হয়েছে ১২ তারিখ নয় নবীজির বিলাদত ৯ তারিখ।
এখন কথা হচ্ছে মিশরীয় জ্যোতির্বিদ মাহমুদ পাশা আসলে কেমন ছিলো? সে কি ঈমানদার ছিলো, নাকি নাস্তিক ছিলো? আসুন জেনে নেই-
উইকিতে কথিত জোতির্বিজ্ঞানী মাহমুদ পাশা সম্পর্কে রয়েছে, মাহমুদ পাশা আল ফালাকি (1815-1885) ছিল উনবিংশ শতাব্দীর একজন মিশরীয় জ্যোতির্বিদ। সে ছিল Egyptian Renaissance বা মিশরীয় রেনেসার একজন মূল ব্যক্তি। সে ফ্রান্সের বৃত্তি নিয়ে গবেষণা ও পড়াশোনা চালিয়েছিল।
http://en.wikipedia.org/wiki/User:Dave_Light/Al-Faliki
এই মিশরীয় রেনেসাঁকে আরবীতে বলা হয় ‘আল-নাহদা’। ১৮০০-১৯০০ সালের মাঝামাঝি সময়টিতে এই কথিত ‘মিশরীয় রেনেসা’ সংঘটিত হয়। উইকিতে আল নাহদার মূল ব্যক্তি বলা হয়েছে ‘রিফা আল তাহতাবী’ (Rifa'a el-Tahtawi) নামক ব্যক্তিকে। তার সম্পর্কে উইকিতে রয়েছে যে, তাকেও ফ্রান্সে পাঠানো হয়েছিল। সে মিশরে এসে প্রচার চালায় যে, মুসলমানদেরকে অবশ্যই পাশ্চাত্য সংস্কৃতি থেকে শিক্ষা গ্রহণ করতে হবে।
রিফা আল তাহতাবী ছাড়াও এই ‘আল-নাহদা’র আরেক মূল ব্যক্তি ছিল ‘বুরতুস আল বুসতানী’। সে মুসলমানও ছিল না, ছিল এক লেবানিজ ম্যারেনাইট খ্রিস্টান।
এই প্রত্যেকটি দলিল পাবেন উইকির এই লিঙ্কে : http://en.wikipedia.org/wiki/Al-Nahda
অর্থাৎ মিশরীয় রেনেসাঁ সংশ্লিষ্টরা ফ্রান্সপন্থী ছিল। ফ্রান্সের বৃত্তি পেয়ে পড়াশোনা করে তারা মুসলিম মূল্যবোধ মুছে দিয়ে পাশ্চাত্য সংস্কৃতি চালু করতে উঠেপড়ে লেগেছিল। তাদের মধ্যে অনেকেই ছিল খ্রিস্টান, এমনকি উইকির উপরোক্ত লিঙ্ক অনুযায়ী শিয়ারাও তাদের মধ্যে ছিল।
আরেকটি বিষয় বলতে হয়। তা হলো, তারা ছিল প্রাচীন মিশরের ফেরাউনদের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। মিশরীয় রেনেসার সাথে জড়িত এক ভাস্কর্যশিল্পী মাহমূদ মোখতার বানিয়েছিল Egypt's Renaissance বা ‘মিশরের নবজাগরণ’ নামক এক মূর্তি, যা ছিল ফেরাউন ও স্ফিংসের জোড়া ভাস্কর্য। অর্থাৎ মিশরীয় রেনেসা ছিল ফেরাউনের যুগে ফিরে যাওয়ার চেতনা ধারী।
http://en.wikipedia.org/wiki/Mahmoud_Mokhtar
বিষয়টি আমাদের দেশের তথাকথিত ‘সুশীল সমাজে’র সাথে তুলনীয়। এরা বিদেশে কাফিরের দেশে বৃত্তি পেয়ে সেদেশে পড়াশোনা করে। পড়াশোনা শেষে এদেশে ফিরে তারা কাফিরদের এজেন্ট হিসেবে কাফিরদের সংস্কৃতির পক্ষে প্রচার চালায়। উল্লেখ্য, বর্তমানে মধ্যপ্রাচ্যে মেয়েদের মধ্যে ইউরোপীয় স্টাইলে পোষাক পরার খুব চল দেখা যায়। আর কামাল আতাতুর্কের ব্যাপারে তো সবাই জানে। এ সবেরই সূচনা হয়েছিল উনবিংশ শতাব্দীর ‘আল-নাহদা’ থেকেই।
অর্থাৎ উনবিংশ শতাব্দীর মিশরের এক নাস্তিক ‘জ্যোতির্বিদ’ নবীজি (صلى الله عليه و آله و سلم) এঁর বিলাদত দিবসকে বিকৃত করে বই রচনা করেছে।
কিন্তু বর্তমান জামানায় সহীহ হাদীস শরীফ তো রয়েছেই, পাশাপাশি ইসলামী ভাবাপন্ন জোতির্বিদরাও প্রমাণ করেছেন নবীজি (صلى الله عليه و آله و سلم) এঁর বিলাদত দিবস হচ্ছে ১২ই রবিউল আউয়াল শরীফ।
কিন্তু এরপরও সেগুলো বাদ দিয়ে ফেরাউনপন্থী এক ইসলামবিরোধী গোষ্ঠীর বক্তব্য চৌক্কা (^) মৌলভীদের কাছে দলিল হয়ে গেল !! আশ্চর্য !!!
সন্দেহের অপনোদন
____________________
সন্দেহের অপনোদন
ইনতিকালের তারিখ সম্পর্কে ভুল ধারণার অপনোদন
============
আহলে হাদীস বা লা-মাযহাবীদের নেতা মাওলানা আকরাম খাঁ, ওহাবী ও মউদূদী পন্থীসহ ঈদে মিলাদুন্নবী বিরোধীরা নবী করিম [ﷺ]-এঁর ইনতিকালের তারিখ নিয়ে মানুষের মনে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করার চেষ্টা করে প্রতি বৎসর পেপার পত্রিকায় প্রচারণা চালাচ্ছে। তাদের অবশ্যই জানা থাকার কথা যে, কোন একটি বিষয়ে বিভিন্ন বর্ণনা ও মতামত থাকলেও নির্ভরযোগ্য এবং গ্রহণযোগ্য একটি সিদ্ধান্ত অবশ্যই আছে। অনুসন্ধান করে সেটা বের করা এবং সে অনুযায়ী আমল করাই ঈমানদারের কাজ এবং মানুষকেও ঐ সত্যটি অবগত করানো উচিত। কিন্তু তারা ইচ্ছাকৃতভাবেই সন্দেহের সৃষ্টি করে রাখে - কিতাবের বর্ণনা অনুযায়ী সঠিক ফয়সালাটি তারা বলেনা। তাদের কেউ বলে, রবিউল আউয়াল মাসের ২ তারিখে নবী করিম [ﷺ] ইনতিকাল করেছেন। কেউ কেউ বলেন, ৮ তারিখ। কেউ বলে, ৯ তারিখ। কেউ বলে, ১০ তারিখ। কিন্তু ১২ই রবিউল আউয়ালের বর্ণনাটি যে সঠিক এবং অধিকাংশের মত, এ কথাটা তারা গোপন রাখে।
তাই আমি পাঠকদের খেদমতে ইবনে কাছির প্রণীত আল-বিদায়া ওয়ান-নেহায়া গ্রন্থের ৫ম খন্ড পৃষ্ঠা ২৫৪-২৫৬ হতে প্রয়োজনীয় উদ্ধৃতি পেশ করলাম- যেন তারা আপন গুরুর কথা মানে। ইমাম আহমত রেযা (رحمة الله عليه) এর ফতোয়াও এতদসঙ্গে উল্লেখ করা হলো।
ইবনে কাছির (মৃত্যু ৭৭৪ হিজরী) বলেন - “ইবনে ইসহাক ও ওয়াকেদীর বিশুদ্ধ বর্ণনামতে নবী করিম [ﷺ] ১২ই রবিউল আউয়াল তারিখ সোমবার দিন ইনতেকাল করেছেন।” উক্তিটি নিম্নরূপঃ
توفى رسول الله صلى الله عليه وسلم لاتنتي عشرة ليلة خلت من شهر ربيع الاول فى اليوم الذي قدم فيه المد ينة مها جرا ـ
অর্থ- ”নবী করিম [ﷺ] ১২ই রবিউল আউয়াল তারিখে সোমবার দিনে ইনতেকাল করেন- যে দিনে তিনি হিজরত করে মদিনায় প্রবেশ করেছিলেন” (বেদায়া-নেহায়া ৫ম খন্ড ২৫৫ পৃষ্ঠা)। এরপর ইবনে কাসির মন্তব্য করেনঃ-
والمشهور قول ابن اسحاق والوا قدى ورواه الواقدى عن ابن عباس عن عاإشة رضي الله عنها وعن عروة عن عاإشة قالا توفى رسول الله صلى الله عليه وسلم يوم الا ثنين لثنتى عشرة ليلة خلت من ربيع الا ول ورواه ابن اسحاق عن عبد الله بن ابى بكر بن حزم عن ابيه مثله ـ وزاد ودفن ليلة الاربعاء ـ
অর্থ- “নবী করিম [ﷺ]-এঁর ইনতেকালের তারিখের বিভিন্ন বর্ণনার মধ্যে ইবনে ইসহাক ও ওয়াকিদীর বর্ণনাই প্রসিদ্ধ ও মশহুর। ওয়াকেদী হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (رضي الله عنه) এবং ওরওয়া ইবনে যুবাইর (رضي الله عنه)-এঁর সূত্রে হযরত আয়েশা সিদ্দিকা (رضي الله عنها) থেকে রেওয়ায়াত করেন- তাঁরা উভয়ে বলেন- “রাসূল কারিম [ﷺ] ১২ই রবিউল আউয়াল তারিখে বেছালপ্রাপ্ত হন। ইবনে ইসহাক আবদুল্লাহ ইবনে আবু বকর ইবনে হজম সূত্রে উপরোক্ত রেওয়ায়াত বর্ণনা করেছেন। তাঁর বর্ণনায় অতিরিক্ত এই কথাটি ছিল- “এবং মঙ্গলবার দিবাগত বুধবার রাত্রে নবী করিম [ﷺ]-কে দাফন করা হয়” (বেদায়া নেহায়া ৫ম খন্ড ২৫৫-২৫৬ পৃষ্ঠা)।
ইনতিকাল তারিখ নির্ধারণে মতভেদের প্রকৃত কারণঃ
ইবনে কাছির বলেন- নবী করিম [ﷺ]-এঁর ইনতেকালের তারিখ নিয়ে বিভিন্ন মতের কারণ হলো - চন্দ্র দর্শনের হিসাব নিয়ে গোলমাল। কেননা, প্রথম চন্দ্র দর্শনের তারিখটি বিভিন্ন অঞ্চলে বিভিন্ন রকম হয়। মক্কা শরীফ ও মদিনা শরীফেও কোন কোন সময় ১ দিনের ব্যবধান হয়ে যায়। পূর্বাঞ্চলে ২ দিনের ব্যবধানও লক্ষ্য করা যায়। সুতরাং মদিনা শরীফের চাঁদের হিসাবটিই এই ক্ষেত্রে মানদন্ড ধরে নিলে কোন সমস্যা থাকে না। সব হিসাব মিলে যাবে। সে মতে ১০ম হিজরীর শেষ মাস যিলহজ্ব চাঁদের ১লা তারিখ মদিনাবাসীগণ শুক্রবার থেকে গণনা করেন। কিন্তু মক্কাবাসীগণ আগের দিন বৃহস্পতিবার থেকে গণনা করে ৯ তারিখ শুক্রবার হজ্বের দিন ধার্য্য করেন - অথচ সেদিন মদিনা শরীফে ছিল, চাঁদের ৮ তারিখ। মক্কা মদিনার দূরত্ব ৫০০ কিঃ মিঃ। সুতারং চন্দ্র দর্শন বেশকম হতে পারে।
সে মতে এ মাস থেকে পূর্ববর্তী ৩ মাস মদিনায় একাধারে ৩০ দিনে পূর্ণ হয়। সে হিসেবে মহররম মাসের ১লা তারিখ মদিনা শরীফে ছিল রবিবার। পরবর্তী সফর মাসের ১লা তারিখ ছিল মঙ্গলবার। তার পরবর্তী মাস রবিউল আউয়ালের ১লা তারিখ ছিল বৃহস্পতিবার এবং ১২ তারিখ ছিল সোমবার। সুতরাং নবী করিম [ﷺ]-এঁর ইনতেকাল তারিখটি ছিল ১২ই রবিউল আউয়াল সোমবার। (বেদায়া নেহায়া ৫ম খন্ড পৃষ্ঠা ২৫৬) ওয়াকেদীর ব্যাপারে কারো আপত্তি থাকলেও ইবনে ইছহাকের ব্যাপারে কারো কোন আপত্তি নেই। সুতরাং উপরের রেওয়াতটি বিশুদ্ধ।
আর একটি সহীহ বর্ণনা দেখুনঃ
عن عفان عن سعيد بن مينا عن جابر وابن عباس أنهما قالا : ولد رسول الله صلى الله عليه وسلم عام الفيل يوم الاثنين الثاني عشر من شهر ربيع الأول ـ وفيه بعث ـ وفيه حاجرـ وفيه مات . وهذا هوا لمشهور (البد اية والنهايةج ٢ صفحة ٢٦)
অর্থ- “হযরত জাবের (رضي الله عنه) ও হযরত ইবনে আব্বাস (رضي الله عنه) থেকে সায়ীদ ইবনে মীনা সূত্রে আফফান বর্ণনা করেছেন-জাবের ও ইবনে আব্বাস (رضي الله عنه) বলেনঃ ”নবী করিম [ﷺ] হস্তীসনের ১২ই রবিউল আউয়াল সোমবার দিন ভূমিষ্ট হয়েছেন। ঐ ১২ তারিখে এবং ঐ সোমবার দিনেই তিনি নবুয়তের দায়িত্ব লাভ করেছেন, হিজরত করেছেন ও ইনতেকাল করেছেন। এটাই প্রসিদ্ধ বর্ণনা।” (বেদায়া ২য় খন্ড ২৬০ পৃষ্ঠা)।
৭৭৪ হিজরী সনের পূর্বেই ইবনে কাছির তাঁর গ্রন্থে নবী করিম [ﷺ]-এঁর জন্ম ও ইনতিকালের তারিখ এবং দিনক্ষণের সুষ্ঠু সমাধান দেয়ার পর বর্তমানকালের স্বঘোষিত পন্ডিতগণ বিভ্রান্তি সৃষ্টির পাঁয়তারা করায় তাদের আসল উদ্দেশ্য বুঝতে কারো কষ্ট হবার কথা নয়। আল্লাহ বিভ্রান্তি সৃষ্টিকারীদের সুমতি দান করুন। তাদের মতেই ইবনে ইসহাক ও মীনা নির্ভরযোগ্য রাবী। সেজন্যই তাঁদের উদ্ধৃতি পেশ করলাম।
ইমাম আহমদ রেযা (رحمة الله عليه)-এঁর ফতোয়াঃ
ইমাম আহমদ রেযা (رحمة الله عليه) তাঁর (নুৎকুল হিলাল) গ্রন্থে ১২ই রবিউল আউয়াল সোমবার হুযুর [ﷺ]-এঁর বেছাল শরীফের তারিখটি আটটি দলিল দ্বারা প্রমাণ করেছেন। তার মধ্যে তাবাকাতে ইবনে সা’আদ সূত্রে হযরত আলী (رضي الله عنه) এর রেওয়ায়াত, যারকানী শরীফ সূত্রে ইবনে ইসহাক এর রেওয়াআত, আল্লামা দিয়ার বিকরীর তারিখুল খামিছ সূত্রে দুইটি রেওয়ায়াত, যারকানী শরীফে জমহুর উলামা সূত্রে অন্য একটি রেওয়াআত, ইমাম আবু হাতেম রাযী, ইমাম রাযীন আবদারী ও ইমাম ইবনে যাওজীর কিতাবুল ওয়াফী সূত্রে, ইমাম ইবনে জাযরীর কামিল গ্রন্থ সূত্রে, মাজমাউল বিহারিল আনওয়ার সূত্রে এবং ফাযেল মুহাম্মদ সাব্বাব কৃত আছআফুর রাগিবীন গ্রন্থ সূত্রে - সর্বমোট আটটি রেওয়ায়াত অতি প্রসিদ্ধি লাভ করেছে। রাবীগণের মধ্যে হযরত আলী, হযরত আয়েশা, ছাআদ, উরওয়া, ইবনে মুসাইয়িব, ইবনে শিহাব, আফফান, ছায়ীদ, ইবনে মিনা, জাবের, ইবনে আব্বাস, ইবনে ইসহাক-প্রমুখ রাবীগণ একবাক্যে বলেছেন- ১২ তারিখ সোমবার হুযুর [ﷺ]-এঁর ওফাত তারিখ।
হুযুরের পরিবারবর্গের রেওয়ায়াতকে পাশ কাটিয়ে অন্যের দুর্বল রেওয়ায়াত গ্রহণ করে একটি প্রতিষ্ঠিত বিষয় বিতর্ক সৃষ্টি করা কোন মতেই গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। আ’লা হযরত ইমাম আহম্মদ রেযা (رحمة الله عليه) এর গবেষণামূলক ফতোয়া আমার মাসিক পত্রিকা সুন্নীবার্তা ৫৯ নম্বরে ছাপা হয়েছে। সেখানে বিস্তারিত দলীল ও হিসাব বর্ণনা করা হয়েছে। গবেষকগণের জন্য এটি অতি মূল্যবান তথ্য।
১২ রবিউল আউয়াল ঈদে মিলাদুন্নবী (ﷺ)
____________________
১২ রবিউল আউয়াল ঈদে মিলাদুন্নবী (ﷺ)
আমাদের প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ৫৭০ খ্রিস্টাব্দে ১২ই রবিউল আউয়াল রোজ সোমবার সোবহে সাদিকের সময় এ পৃথিবীতে আগমন করেছেন। ইহাই প্রসিদ্ধ ও গ্রহণযোগ্য অভিমত। অথচ হামিদী সাহেব ইহা মানতে নারাজ। তিনি বলেছেন রাসূলেপাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর শুভাগমন ১২ই রবিউল আউয়াল ছিল না। বরং ৮ই রবিউল আউয়াল ছিল। যেমন তিনি লিখেছেন-
‘চন্দ্র বছরের ক্যালেন্ডার অনুযায়ী হিসাব করে দেখুন আজ থেকে ১৪৩১ হি: সন পূর্বের ১২ই রবিউল আউয়াল কখনো সোমবার হয় না বরং শুক্রবার হয়। তাই বিশুদ্ধ ঐতিহাসিকগণের সিদ্ধান্ত ৮ই রবিউল আউয়াল ছিল রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর জন্ম তারিখ। ’
অন্য জায়গায় লিখেছেন-
‘মিলাদুন্নবীর আলোচনার জন্য ১২ই রবিউল আউয়াল তারিখ নির্দিষ্ট করা এবং রাস্তায় রাস্তায় মিছিল বাহির করা বিদআত। কারণ ইহার কোন প্রমাণ কোরআন হাদিসে নেই। ’
আমি বলব, ইহা একটি ঐতিহাসিক ব্যাপার। তাই তারিখ নিয়ে ঐতিহাসিকদের মধ্যে মতানৈক্য থাকাটা স্বাভাবিক। তবে অধিকাংশ ঐতিহাসিকদের মত অনুযায়ী রাসূলেপাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর বেলাদতশরীফ ১২ই রবিউল আউয়ালেই হয়েছিল। কিন্তু হামিদী সাহেব যে ভাবে চ্যালেঞ্জ করে বললেন হিসেব করে দেখার জন্য ইহা তার গলাবাজি বৈ কিছুই নয়।
এবার আসুন ঐতিহাসিকদের সীরাত গ্রন্থ থেকে দেখা যাক নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর বেলাদত শরীফ কোন তারিখে হয়েছিল।
ইবনে হিশাম কর্তৃক রচিত জগৎবিখ্যাত সীরাত গ্রন্থ السيرة النبوية কিতাবে বর্ণিত হয়েছে-
قال ابن اسحاق ولد رسول الله صلى الله عليه وسلم يوم الاثنين لاثنتى عشرة ليلة خلت من شهر ربيع الاول عام الفيل-
ইবনে ইসহাক বলেছেন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হস্তি বর্ষে রবিউল আউয়াল মাসের ১২ই তারিখ সোমবার দিনে জন্মগ্রহণ করেছেন। (সীরাতে ইবনে হিশাম)
আল্লামা ইবনে কাছির তাঁর বেদায়া ও নেহায়া গ্রন্থে বর্ণনা করেছেন-
عن عفان عن سعيد بن مينا عن جابر وابن عباس انهما قالا ولد رسول الله صلى الله عليه وسلم عام الفيل يوم الاثنين الثانى عشر من شهر ربيع الاول وفيه بعث وفيه هاجر وفيه مات وهذا هو المشهور- (البداية والنهاية)
অর্থ: হযরত আফফান থেকে বর্ণিত- তিনি হযরত সায়ীদ ইবনে মীনা থেকে বর্ণনা করেছেন। তিনি হযরত জাবের রাদিয়াল্লাহু আনহু ও হযরত ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণনা করেছেন। তাঁরা উভয়ে বলেন- নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হস্তিবাহিনী বর্ষে সোমবার দিনে ১২ই রবিউল আউয়াল তারিখে জন্মগ্রহণ করেছেন। এই দিনেই তিনি নবুয়তের দায়িত্ব পেয়েছেন, এই দিনেই তিনি হিজরত করেছেন এবং এই দিনেই তিনি ওফাত পেয়েছেন। ইবনে কাছির বলেন- ইহাই প্রসিদ্ধ ও মশহুর অভিমত। (নূরনবী)
অতএব এ ব্যাপারে ঐকমত্য হয়েছে যে, রাসূলেপাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ১২ই রবিউল আউয়াল রোজ সোমবার এই ধরনীতে আগমন করেছেন। অথচ হামিদী সাহেব বললেন- মিলাদুন্নবীর জন্য ১২ই রবিউল আউয়াল তারিখ নির্দিষ্ট করা বিদআত।
আমি বলতে চাই ১২ই রবিউল আউয়াল তারিখ নিয়ে যদি আপনাদের এ সমস্যা তাহলে আপনাদের কথা অনুযায়ী ৮ রবিউল আউয়াল ঈদে মিলাদুন্নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উদযাপন করুন। তাহলে তো আর কোন সমস্যা থাকে না।
আসল কথা হলো ৮ তারিখ বা ১২ তারিখ কোন বিষয় নয়। বিষয় হচ্ছে মিলাদশরীফ পড়া বা মিলাদুন্নবী পালন করা নিয়ে। তারিখ সংক্রান্ত গোলকধাধাঁ দিয়ে শুধুমাত্র সরলপ্রাণ মুসলমানদেরকে ধোকা দেয়া হচ্ছে। তাইতো হামিদী সাহেব মিলাদশরীফ পাঠ করাকে জোর গলায় হিন্দু ব্রাহ্মণের মন্ত্র পড়ার সাদৃশ্য বলেছেন।
মৃতুবার্ষিকী পালন ও তারিখ নির্ধারণ
____________________
মৃতুবার্ষিকী পালন ও তারিখ নির্ধারণ
নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রতি বছর শহীদদের কবরের পাশে যেতেন এবং দোয়া করতেন। এই আমল নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর প্রাণপ্রিয় সাহাবীদের মধ্যেও ছিল। মুসান্নেফে আব্দুর রাজ্জাকের মধ্যে একটি বর্ণনা আছে-
عن محمد بن ابراهيم التيمى قال كان النبى صلى الله عليه وسلم يأتى قبور الشهداء عند رأس الحول فيقول السلام عليكم بما صبرتم فنعم عقبى الدار قال وكان ابو بكر وعمر وعثمان يفعلون ذلك-
অর্থাৎ হযরত মুহাম্মদ বিন ইবরাহীম তাইমী বর্ণনা করেন যে, হুজুর নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর আমল ছিল যে, নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রতি বছরের শুরুতে শহীদদের কবরের পাশে তাশরীফ আনতেন। অতঃপর বলতেন, তোমাদের উপর শান্তি নাজিল হোক। ঐ জিনিসের বিনিময়ে, যে জিনিসের উপর তোমরা ধৈর্যধারণ করেছ। অতএব তোমাদের জন্য পরকালে উত্তম ঠিকানা আছে রাবী বর্ণনা করেছেন যে, হযরত আবু বকর রাদিয়াল্লাহু আনহু, হযরত ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু এবং উসমান রাদিয়াল্লাহু আনহু এর এই আমলই ছিল।
ফতোয়ায়ে শামী- কবর জিয়ারত অধ্যায়ে বর্ণিত হয়েছে-
روى عن ابن ابى شيبة ان النبى صلى الله عليه وسلم كان يأتى قبور الشهداء باحد على رأس كل حول
অর্থ: হযরত ইবনে আবি শায়বা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রতি বৎসর ওহুদ যুদ্ধে শাহাদতপ্রাপ্ত সাহাবীদের কবরে তাশরীফ নিতেন। (জাআল হক্ব)
এ ব্যাপারে তাফসিরে কবির ও তাফসিরে দুররে মনসুর কিতাবদ্বয়ে বর্ণিত হয়েছে-
عن رسول الله عليه السلام انه كان يأتى قبور الشهداء على رأس كل حول فيقول سلام عليكم بماصبرتم فنعم عقبى الدار
অর্থ: রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণিত তিনি প্রতি বৎসর শহীদানদের কবরে তাশরিফ নিতেন এবং বলতেন- ‘তোমাদের সবরের কারণে তোমাদের উপর শান্তি বর্ষিত হোক। আর তোমাদের এ পরিণাম গৃহ কতই না চমৎকার। (জা-আল হক্ব)।
উপরোক্ত হাদিসশরীফ দ্বারা প্রমাণিত হলো যে, মৃত ব্যক্তির ঈসালে সওয়াবের উদ্দেশ্যে প্রতি বছর দোয়া দরূদ কোরআন তিলাওয়াত, কবর জিয়ারত ইত্যাদির মাধ্যমে মৃত্যুবার্ষিকী পালন করা নবীজী ও সাহাবায়ে কেরামের অনুসৃত আমল।
__________ সমাপ্ত __________
Comments
Post a Comment