ক্বুরআন-হাদীসের আলোকে মহানবী (ﷺ)-এর অদৃশ্য জ্ঞান
পরিচিতি ও উৎর্স
____________________
কিতাবঃ ক্বুরআন-হাদীসের আলোকে মহানবী (ﷺ)-এর অদৃশ্য জ্ঞান
[Dr G F Haddad’s “80 hadiths on the Prophet’s Knowledge of the Unseen”]
[ইমাম কাজী ইউসুফ নাবহানী (رحمة الله)র ৯০০ পৃষ্ঠাব্যাপী গ্রন্থ ‘হুজ্জাতুল্লাহি আ’লাল আ’লামীন ফী মো’জেযাতে সাইয়্যেদিল মুরসালীন ১৩১৭ হিজরী/১৮৯৯ খৃষ্টাব্দ) হতে সংগৃহীত]
মূল: শায়খ ড: জিবরীল ফুয়াদ হাদ্দাদ দামেশকী
অনুবাদ: কাজী সাইফুদ্দীন হোসেন
আরবী ও অনলাইন সেট-আপ: মুহাম্মদ রুবাইয়েৎ বিন মূসা
উৎসর্গ
আমার পীর ও মুরশীদ আউলিয়াকুল শিরোমণি হযরত মওলানা শাহ সূফী আলহাজ্জ্ব সৈয়দ আবু জাফর মোহাম্মদ সেহাবউদ্দীন খালেদ আল-কাদেরী আল-চিশ্তী সাহেব কেবলা (رحمة الله)র পুণ্য স্মৃতিতে উৎসর্গিত।
আল কুরআনের আলোকে
❏ আয়াত ০১-০৩
____________________
আয়াত ১:
যা কুরআন মজীদে সুস্পষ্টভাবে ব্যক্ত হয়েছে নিচে:
عَالِمُ الْغَيْبِ فَلَا يُظْهِرُ عَلَى غَيْبِهِ أَحَدًا إِلَّا مَنِ ارْتَضَى مِنْ رَسُولٍ.
অদৃশ্যের জ্ঞাতা, সুতরাং আপন অদৃশ্যের ওপর কাউকে ক্ষমতাবান করেন না আপন মনোনীত রাসূলগণ ছাড়া ।[২]
২. আল কুর‘আন : আল জ্বিন, ৭২/২৬।
ইমাম নাবহানী (رحمة الله) বলেন:
মো’জেযাগুলোর অধিক সংখ্যার কারণে এই অধ্যায়ে সবগুলো তালিকাবদ্ধ করা অসম্ভব; আর বাস্তবতা হলো এই যে এগুলোর সবই তাঁর মোবারক হাতে সংঘটিত হয়েছে, তাঁর অধিকাংশ হালতে (অবস্থায়), কেউ তাঁকে প্রশ্ন করুক বা না-ই করুক, (কিংবা) পরিস্থিতি যা-ই দাবি করেছিল (তার পরিপ্রেক্ষিতে)। এগুলো তাঁর হতবাক করা সর্বাধিক সংখ্যক মো’জেযা (অলৌকিকত্ব)।
ইমাম কাজী আয়ায (رحمة الله) নিজ ‘আশ-শেফা’ গ্রন্থে বলেন:
وَهَذِهِ الْمُعْجِزَةُ مِنْ جُمْلَةِ مُعْجِزَاتِهِ الْمَعْلُومَةِ عَلَى الْقَطْعِ. الْوَاصِلِ إِلَيْنَا خَبَرُهَا عَلَى التَّوَاتُرِ لِكَثْرَةِ رُوَاتِهَا وَاِتِّفَاقِ مَعَانِيْهَا..
মহানবী (ﷺ)-এর এলমে গায়ব (অদৃশ্য জ্ঞান) এই সকল মো’জেযার অন্তর্ভুক্ত যা স্পষ্ট ও নিশ্চিতভাবে আমাদের জ্ঞাত হয়েছে বিপুল সংখ্যক বর্ণনাকারীর সাদৃশ্যপূর্ণ অসংখ্য বর্ণনার মানে দ্বারা। [৩]
৩. [নোট-২: ইমাম কাজী আয়ায কৃত ‘শেফা শরীফ’(৪১৩-৪১৪ পৃষ্ঠা): “ গায়বের সাথে তাঁর পরিচয়ের প্রতি নির্দেশক সাদৃশ্যপূর্ণ মানে’সমূহ।”]
আয়াত ২:
হুযূর পাক (ﷺ) এর ওই মেয়েকে নিষেধ করার মানে এই নয় যে তিনি গায়ব জানতেন না, বরং এ বিষয়টি সাবেত বা প্রমাণিত যে আল্লাহ
عَالِمُ الْغَيْبِ فَلَا يُظْهِرُ عَلَى غَيْبِهِ أَحَدًا۞ إِلَّا مَنِ ارْتَضَى مِنْ رَسُولٍ.
অদৃশ্যের জ্ঞাতা, সুতরাং আপন অদৃশ্যের ওপর কাউকে ক্ষমতাবান করেন না আপন মনোনীত রাসূলগণ ছাড়া”।[১০]
১০. আল কুর‘আন : আল জ্বিন, ৭২/২৬।
এবং তিনি রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর কাছে শেষ বিচার দিবস অবধি এবং তারও পরের ঘটনাগুলোর ভবিষ্যত জ্ঞান প্রকাশ করেছেন। আসলে নবী পাক (ﷺ) ওই মেয়েকে এ কখা বলাতে বাদ সেধেছিলেন এই কারণে যে এলমে গায়ব তাঁর প্রতি স্বকীয় পর্যায়ে আরোপ করা হয়েছিল, আর এই স্বকীয়তা একমাত্র আল্লাহরই।[১১]
১১. [নোট-৯: ইমাম ইবনে হাজর (رحمة الله)-এর ‘ফাতহুল বারী’ গ্রন্থে উদ্ধৃত তাঁর ব্যাখ্যা দ্রষ্টব্য]
ওই মেয়ে এমনই ছোট ছিল যে তার নামায পড়ার বয়সও হয় নি।[১২]
১২. [নোট-১০: আবু দাউদের ‘সুনান’-এর ওপর ইবনুল কাইয়েমের হাশিয়া বা টীকা দ্রষ্টব্য]
তার কাছ থেকে এ রকম দাবি করাটা (ওই সময়কার) জনপ্রিয় বিশ্বাসের ইঙ্গিতবহ ছিল, যা নবী (ﷺ) এর জন্যে বেমানান হলেও দৈবজ্ঞ, জ্যোতিষী, গণক গংদের এ মর্মে মিথ্যা দাবির প্রতিনিধিত্বকারী ছিল যে তারা নিজেদের ক্ষমতাবলে ভবিষ্যত জানতে পারতো; এরই পরিপ্রেক্ষিতে
আয়াত ৩:
আল্লাহতা’লা ঘোষণা করেছেন:
وَمَا تَدْرِي نَفْسٌ مَاذَا تَكْسِبُ غَدًا.
“কোনো আত্মা জানে না যে কাল কী উপার্জন করবে”।[১৩]
১৩. আল কুর‘আন : সূরা লুকমান, ৩১/৩৪।
❏ হাদিস ০১-১০
____________________
সহিহ হাদিসের আলোকে
❏ হাদিস ১:
ইমাম কাজী ইউসুফ নাবহানী (رحمة الله) (رحمة الله) বলেন:
প্রথমত আপনাদের জানতে হবে যে এলমে গায়ব তথা অদৃশ্য জ্ঞান মহান আল্লাহর অধিকারে; আর মহানবী (ﷺ) বা অন্যান্যদের মোবারক জিহ্বায় এর আবির্ভাব ঘটে থাকে তাঁরই তরফ থেকে হয় ওহী (ঐশী বাণী) মারফত, নয়তো এলহাম (ঐশী প্রত্যাদেশ) দ্বারা।
"হুযূর পূর নূর (ﷺ) একটি হাদীসে এরশাদ ফরমান, “আমি আল্লাহর নামে কসম করছি, নিশ্চয় আমি কিছুই জানি না কেবল আমার প্রভু যা আমাকে শিক্ষা দিয়েছেন তা ছাড়া।[১]
১. [নোট ১: তাবুকের যুদ্ধের সময় যখন রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর উট হারিয়ে গিয়েছিল, তখন তিনি মানুষদের কাছে ওর খোঁজ জানতে চান, যার প্রেক্ষিতে জনৈক মোনাফেক (যায়দ ইবনে আল-লাসিত আল-কায়নুকাঈ) বলেছিল, “এই হলেন মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যাঁর কাছে ওহী এসেছে আসমান থেকে, অথচ তিনি জানেন না তাঁর উট কোথায়।” এ কথার পরিপ্রেক্ষিতে নূরনবী (ﷺ) আল্লাহর প্রশংসা করে বলেন, ‘‘অমুক লোক (মোনাফেক) এ কথা বলেছে। নিশ্চয় আমি কিছুই জানি না শুধু আমার প্রভু খোদাতা’লা যা আমাকে শিক্ষা দিয়েছেন তা ছাড়া। আর তিনি আমাকে জানিয়েছেন যে ওই উট অমুক উপত্যকায় একটি গাছের সাথে লাগাম জড়িয়ে গিয়ে আটকে আছে।” মানুষেরা তখনি ওখানে দৌড়ে গিয়ে (ওই অবস্থায়) উটটিকে পায়। এই বর্ণনা দু’জন সাহাবী হযরত মাহমুদ ইবনে লাবিদ (رضي الله عنه) ও হযরত উমারা ইবনে হাযেম (رضي الله عنه) কর্তৃক প্রদত্ত এবং ‘আল-মাগাযী’ পুস্তকে ইবনে ইসহাক কর্তৃক লিপিবদ্ধ বলে ইবনে হিশাম তাঁর ’সীরাহ’ (৫:২০৩) ও আত-তাবারী তাঁর ‘তারিখ’ (২:১৮৪) গ্রন্থগুলোতে বিবৃত করেছেন; এ ছাড়া ইবনে হাযম নিজ ‘আল-মুহাল্লা’ (১১:২২২) কেতাবে এবং ইবনে হাজর তাঁর ‘ফাতহুল বারী’ :৩৬৪, ১৯৫৯ সংস্করণ) ও ‘আল-ইসাবা’ (২:৬১৯) গ্রন্থগুলোতে, আর ইবনে হিব্বান সনদ ছাড়া স্বরচিত ‘আল-সিকাত‘ (২: ৯৩) পুস্তকে বর্ণনাটি উদ্ধৃত করেন। উপরন্তু, ইবনে কুতায়বা (رضي الله عنه)কে উদ্ধৃত করে ‘দালাইল আন্ নবুওয়াহ’ (১৩৭পৃষ্ঠা) কেতাবে আল-তায়মী এটি বর্ণনা করেন। ইমাম নাবহানীর উদ্ধৃত অংশটি হযরত উকবা ইবনে আমির (رضي الله عنه) হতে আবু আল-শায়খ তাঁর ‘আল-আ’যামা’ (৪:১৪৬৮-১৪৬৯#৯৬৭১৪) পুস্তকে বর্ণনা করেন, যা একটি দীর্ঘতর বর্ণনার অংশ এবং যা’তে অন্তর্ভুক্ত রয়েছে নিম্নের কথাগুলো: “তুমি এখানে আমাকে কী জিজ্ঞেস করতে এসেছ তা তোমার বলার আগেই আমি বলতে পারি; আর যদি তুমি চাও, তবে তুমি আগে জিজ্ঞেস করতে পারো, আমি এরপর উত্তর দেবো,তুমি এখানে এসেছ আমাকে যুলকারনাইন সম্পর্কে জিজ্ঞেস করতে।” মহানবী (ﷺ) এর উট একইভাবে হোদায়বিয়ার অভিযানেও হারিয়েছিল এবং পাওয়া গিয়েছিল]
অতএব, আমাদের কাছে তাঁর কাছ থেকে যা কিছু অদৃশ্য জ্ঞান হিসেবে এসেছে, তার সবই হলো ঐশী প্রত্যাদেশ যা তাঁর নবুয়্যতের সত্যতার একটি প্রামাণ্য দলিল।
আরেক কথায়, ইমাম আহমদ রেযা খানের বিস্তারিত ব্যাখ্যা অনুযায়ী, মহানবী (ﷺ) এর এলমে গায়ব হচ্ছে আংশিক (‘জুয’ই), অসম্পূর্ণ (গায়র এহাতী), মন্ঞ্জুরীকৃত (আতায়ী), এবং স্বকীয় নয় (গায়র এসতেকলালী),
❏ হাদিস ২:
ঈমানদার ও অবিশ্বাসীদের মাঝে গায়েবি এলমের সাথে রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর পরিচিতি ও তা জানার বিষয়টি এমনই সর্বজনবিদিত এবং সাধারণভাবে স্বীকৃত ছিল যে তাঁরা একে অপরকে বলতেন, “চুপ! আল্লাহর শপথ, তাঁকে জানানোর জন্যে যদি আমাদের মধ্যে কেউ না-ও থাকে, তবুও পাথর ও নুড়ি-ই তাঁকে তা জানিয়ে দেবে।”[৪]
৪. [নোট-৩: মক্কা বিজয়ের সময় নবী পাক (ﷺ) ও হযরত বেলাল (رضي الله عنه) কাবা শরীফের অভ্যন্তরে প্রবেশ করার পর ‘আত্তাব ইবনে উসায়দ এবং হারিস ইবনে হিশামকে আবু সুফিয়ান ইবনে হারব এ কথা বলেন। এই বর্ণনা আল-কিলাঈ নিজ ‘একতেফা’ (২:২৩০) পুস্তকে উদ্ধৃত করেন। আল-মাওয়ার্দী তাঁর ‘আলম আল-নবুওয়া’ (১৬৫ পৃষ্ঠা) কেতাবেও এটি বর্ণনা করেছেন।]
❏ হাদিস ৩:
আল-বুখারী (رحمة الله) হযরত ইবনে উমর (رضي الله عنه) হতে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন:
كُنَّا نَتَّقِي الكَلاَمَ وَالِانْبِسَاطَ إِلَى نِسَائِنَا عَلَى عَهْدِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، هَيْبَةَ أَنْ يَنْزِلَ فِينَا شَيْءٌ، فَلَمَّا تُوُفِّيَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ تَكَلَّمْنَا وَانْبَسَطْنَا..
আমরা আমাদের স্ত্রীদের সাথে কথাবার্তা ও অবকাশকালীন আলাপ থেকে দূরে থাকতাম পাছে আমাদের ব্যাপারে কোনো ওহী নাযেল না হয়ে যায় (এই আশংকায়)। হুযূর পাক (ﷺ) বেসাল (খোদার সাথে পরলোকে মিলন)-প্রাপ্ত হবার পর আমরা আরও খোলাখুলি আলাপ করতাম।[৫]
৫. [নোট-৪: হযরত ইবনে উমর (رضي الله عنه) হতে গ্রহণ করে আল-বুখারী (رحمة الله), ইবনে মাজাহ (رحمة الله) ও ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল (رحمة الله) এটি বর্ণনা করেন।]
❏ হাদিস ৪:
সাহল ইবনে সায়াদ আল-সাঈদী থেকে আল-বায়হাকী বর্ণনা করেন,
تَالَلَّهِ لَقَدْ كَانَ أَحَدُنَا يَكُفُّ عَنِ الشَّيْءِ مِنَ امْرَأَتِهِ وَهُوَ وَإِيَّاهَا فِي ثَوْبٍ وَاحِدٍ تَخَوُّفًا أَنْ يَنْزِلَ فِيهِ شَيْءٌ مِنَ الْقُرْآَنِ..
তিনি বলেন: আল্লাহর নামে শপথ করে বলছি যে আমাদের মধ্যে কেউ কেউ নিজের স্ত্রীর সাথে একই চাদরের নিচে শুয়ে থাকা সত্ত্বেও কোনো কিছু করা থেকে বিরত ছিলেন এই ভয়ে যে তাঁদের সম্পর্কে কুরআনের আয়াত অবতীর্ণ হতে পারে।[৬]
৬. [নোট-৫: তাবারানী নিজ ‘আল-কবীর’ গ্রন্থে (৬:১৯৬#৫৯৮৫) এটা বর্ণনা করেন; সহীহ সনদে ইমাম হায়তামীও বর্ণনা করেন(১০:২৮৪)]
❏ হাদিস ৫:
হযরত আবদুল্লাহ ইবনে রাওয়াহা (رضي الله عنه) বলেন:
وَفِينَا رَسُولُ اللَّهِ يَتْلُو كِتَابَهُ إِذَا انْشَقَّ مَعْرُوفٌ مِنَ الفَجْرِ سَاطِعُ
أَرَانَا الهُدَى بَعْدَ العَمَى فَقُلُوبُنَا بِهِ مُوقِنَاتٌ أَنَّ مَا قَالَ وَاقِعُ
আমাদের মাঝে আছেন আল্লাহর নবী, যিনি কেতাব তেলাওয়াতরত, যেমন উজ্জ্বল প্রভা ভোরের আকাশকে করে থাকে আলোকিত, তিনি আমাদের পথপ্রদর্শন করেছেন অন্ধত্ব থেকে করে মুক্ত, আর তাই আমাদের অন্তর নিশ্চিত জানে তিনি যা বলেন তা ঘটবে সত্য ।।[৭]
৭. [নোট-৬: হযরত আবু হুরায়রা (رضي الله عنه) হতে ইমাম বুখারী (رحمة الله) এটি বর্ণনা করেন তাঁর ‘আল-তারিখ আল-সগীর’ (১:২৩) কেতাবে এবং আত-তাবারানী নিজ ‘আল-আহাদ আল-মাসানী’ (৪:৩৮) গ্রন্থে। আল-কুরতুবী (১৪:১০০) ও ইবনে কাসির (৩:৪৬০) তাঁদের তাফসীর কেতাবগুলোতে এই বর্ণনা লিপিবদ্ধ করেছেন।]
❏ হাদিস ৬:
আর হযরত হাসান ইবনে সাবেত (رضي الله عنه) বলেন:
نَبِيٌّ يَرى ما لا يَرى الناسُ حَولَهُ وَيَتلو كِتابَ اللَهِ في كُلِّ مَشهَدِ
وَإِن قالَ في يَومٍ مَقالَةَ غائِبٍ فَتَصديقُهُ في اليَومِ أَو في ضُحى الغَدِ
এক নবী যিনি তাঁর চারপাশে প্রত্যক্ষ করেন যা অন্যরা দেখতে পায় না, প্রতিটি সমাবেশে যিনি আল্লাহর কেতাব করেন বর্ণনা, তিনি যদি আগাম বলেন অনাগত কোনো দিনের ঘটনা, তবে তা সত্য হবে পরদিন নয়তো তারও পরের দিন, সন্দেহ বিনা ।।[৮]
৮. [নোট-৭: হিশাম ইবনে হুবাইশ থেকে গ্রহণ করে এটি বর্ণনা করেছেন আত-তাবারানী নিজ ‘আল-কবীর’ (৪:৪৮-৫০) গ্রন্থে; নিজের সনদকে সহীহ ঘোষণা করে আল-হাকিম (৩:৯-১০); ইবনে আবদ আল-বারর তাঁর ‘আল-এসতিয়াব’ (৪:১৯৫৮-১৯৬২) কেতাবে; আল-তায়মী নিজ ‘দালাইল আল-নবুওয়াহ’ (পৃষ্ঠা (৩:৫৯-৬০) গ্রন্থে; এবং আল-লালিকাঈ তাঁর শরাহ-এ। এছাড়া, এটি লিপিবদ্ধ আছে ‘উসূলে এ’তেকাদে আহলে সুন্নাহ’ (৪:৭৮০)পুস্তকে। আত-তাবারীর ‘তাফসীর’ (১:৪৪৭-৪৪৮), ইবনে হিব্বানের ‘আল-সিকাত’ (১:১২৮), ও আল-কিলাঈ-এর ‘আল-একতেফা’ (১:৩৪৩) গ্রন্থগুলোতেও এটি বর্ণিত হয়েছে। আবু মা’আদ আল-খুযযা হতে ইবনে সায়াদ (১:২৩০-২৩২)-ও এটি বর্ণনা করেন, তবে এটি মুরসাল এবং আবু মা’আদ একজন তাবেয়ী, যা ইমাম ইবনে হাজর স্বরচিত ’আল-এসাবা’ (১০৫৪৫) গ্রন্থে ব্যক্ত করেছেন।]
তাকভিয়াতুল ঈমান’ বইটির লেখক দাবি করেছিল মহানবী (ﷺ) পরের দিন কী ঘটবে তা জানতেন না, কেননা তিনি এক মেয়েকে থামিয়ে দিয়েছিলেন এ কথা বলে “এই বিষয়টি বাদ দাও” যখনই সে আবৃত্তি করেছিল “আমাদের মাঝে এক নবী (ﷺ) আছেন যিনি আগামীকাল কী হবে তা জানেন”; ওই লেখকের এই অদ্ভূত দাবিকে ওপরে উল্লেখিত ৪ লাইনের পদ্য দুটো নাকচ করে দিয়েছে।[৯]
৯. [নোট-৮: রুবাইয়্যে বিনতে মুওয়াব্বেয রাদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা হতে আল-বুখারী; এবং সুনান ও ইমাম আহমদ বর্ণিত।]
❏ হাদিস ৭:
তাই মহানবী (ﷺ) একটি বর্ণনায় আরও ব্যাখ্যা করে বলেন, “শুধু আল্লাহই জানেন আগামীকাল কী ঘটবে।”[১৪]
১৪. [নোট-১১: ইবনে মাজাহ বিশুদ্ধ সনদে]
অর্থাৎ, তিনি স্বকীয় এবং পরিপূর্ণভাবে জানেন।
❏ হাদিস ৮:
ইমাম আহমদ (رحمة الله) ও আত্ তাবারানী (رحمة الله) হযরত আবু যর গিফারী (رضي الله عنه) হতে বর্ণনা করেন,
لَقَدْ تَرَكَنَا مُحَمَّدٌ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ ، وَمَا يُحَرِّكُ طَائِرٌ جَنَاحَيْهِ فِي السَّمَاءِ إِلاَّ أَذْكَرَنَا مِنْهُ عِلْمًا.
তিনি বলেন: মহানবী (ﷺ) যখন আমাদের ছেড়ে যান (পরলোক গমন করেন), তখন উড়তে সক্ষম এমন কোনো পাখি ছিল না যার সম্পর্কে তিনি আমাদের জানান নি। [১৫]
১৫.[নোট-১: এটি বর্ণনা করেছেন নির্ভরযোগ্য বর্ণনাকারী হতে আত্ তাবারানী নিজ আল-কবীর (২:১৫৫ #১৬৪৭) কেতাবে, যার বরাত ইমাম ইবনে হাজর হায়তামী (৮:২৬৩-২৬৪); এছাড়াও ইমাম আহমদ (رحمة الله), আবু দাউদ (رحمة الله), আত্ তায়ালিসী, ইবনে সা’আদ তাঁর ‘তাবাকাত’ (২:৩৫৪) পুস্তকে, আল-বাযযার নিজ ‘মুসনাদ’ (৯:৩৪১ #৩৮৯৭) গ্রন্থে’, আত্ তাবারী স্বরচিত তাফসীর কেতাবে (৭:১৮৯), ইবনে আবদ আল-বারর তাঁর ‘আল-এসতিয়াব’ পুস্তকে (৪:১৬৫৫), ইবনে হিব্বান (১:২৬৭ #৬৫ এসনাদ সহীহ), এবং আদ্ দার“ কুতনী নিজ ‘এলাল’ কেতাবে (৬:২৯০ #১১৪৮)। এর উদ্ধৃতি আছে আল্ হায়তামী (رحمة الله), ‘মাওয়ারিদ আল-যামান’ (৪৭ পৃষ্ঠা) গ্রন্থে’। এটি হযরত আবু আল-দারদা (رضي الله عنه) হতে বর্ণনা করেছেন আবু এয়ালা তাঁর ‘মুসনাদ’ পুস্তকে (৯:৪৬ #৫১০৯ এসনাদ সহীহ)।]
❏ হাদিস ৯:
ইমাম মুসলিম (رحمة الله) হযরত ‘আমর ইবনে আখতাব (আবু যায়দ) আল-আনসারী (رضي الله عنه) হতে বর্ণনা করেন,
صَلَّى بِنَا رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ الْفَجْرَ، وَصَعِدَ الْمِنْبَرَ فَخَطَبَنَا حَتَّى حَضَرَتِ الظُّهْرُ، فَنَزَلَ فَصَلَّى، ثُمَّ صَعِدَ الْمِنْبَرَ، فَخَطَبَنَا حَتَّى حَضَرَتِ الْعَصْرُ، ثُمَّ نَزَلَ فَصَلَّى، ثُمَّ صَعِدَ الْمِنْبَرَ، فَخَطَبَنَا حَتَّى غَرَبَتِ الشَّمْسُ، فَأَخْبَرَنَا بِمَا كَانَ وَبِمَا هُوَ كَائِنٌ فَأَعْلَمُنَا أَحْفَظُنَا..
তিনি বলেন: “মহানবী (ﷺ) আমাদের সাথে ফজরের নামায আদায় করেন; অতঃপর তিনি মিম্বরে আরোহণ করেন এবং আমাদের উদ্দেশ্যে বক্তব্য রাখেন, যতোক্ষণ না যোহরের নামাযের সময় হয়; তিনি মিম্বর হতে অবতরণ করে নামায আদায় করেন এবং নামাযশেষে আবার তাতে উঠে আমাদের উদ্দেশ্যে বলতে থাকেন। ইতোমধ্যে আসরের নামাযের সময় হয় এবং তিনি মিম্বর হতে অবতরণ করে নামায আদায় করেন; অতঃপর তিনি নামাযশেষে আবারও মিম্বরে আরোহণ করেন এবং সূর্যাস্ত পর্যন্ত তাঁর বয়ান রাখেন। পুনরুত্থান দিবস পর্যন্ত যা যা ঘটবে, তার সবই তিনি আমাদের বলেন। আমাদের মধ্যে সে ব্যক্তি-ই সবচেয়ে জ্ঞানী যিনি এর অধিকাংশ মনে রাখতে পেরেছিলেন।”[১৬]
১৬. [নোট-২: ইমাম মুসলিম ও ইমাম আহমদ বর্ণিত]
❏ হাদিস ১০:
আল-বুখারী ও মুসলিম হযরত হুযায়ফা ইবনে ইয়ামান (رضي الله عنه) হতে রওয়ায়াত করেন,
قَامَ فِينَا رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مَقَامًا، مَا تَرَكَ شَيْئًا يَكُونُ فِي مَقَامِهِ ذَلِكَ إِلَى قِيَامِ السَّاعَةِ، إِلَّا حَدَّثَ بِهِ، حَفِظَهُ مَنْ حَفِظَهُ وَنَسِيَهُ مَنْ نَسِيَهُ، قَدْ عَلِمَهُ أَصْحَابِي هَؤُلَاءِ، وَإِنَّهُ لَيَكُونُ مِنْهُ الشَّيْءُ قَدْ نَسِيتُهُ فَأَرَاهُ فَأَذْكُرُهُ، كَمَا يَذْكُرُ الرَّجُلُ وَجْهَ الرَّجُلِ إِذَا غَابَ عَنْهُ، ثُمَّ إِذَا رَآهُ عَرَفَهُ..
তিনি বলেন: “রাসূলুল্লাহ (ﷺ) আমদের মাঝে দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়ে (কথা বল)-ছিলেন; আর তিনি ওই সময় থেকে (পৃথিবীর) শেষ সময় পর্যন্ত যা যা ঘটবে তার কোনোটাই বাদ দেন নি, সবই আমাদের বলেছেন। যাঁরা তা মনে রাখতে পেরেছেন, মনে রেখেছেন এবং যাঁরা ভুলে গিয়েছেন, তাঁরা ভুলেই গিয়েছেন। যাঁরা ওখানে উপস্থিত ছিলেন, তাঁরা সবাই এটা জানেন। আমি হয়তো ওর কিছু কিছু ভুলে গিয়ে থাকতে পারি; কিন্তু যখনই তা ঘটে তখনই আমার মনে পড়ে যায়, যেমনিভাবে কেউ এমন কোনো ব্যক্তিকে মনে রাখেন যিনি দূরে কোথাও ছিলেন, অথচ তিনি ফিরে আসার পরপরই তাঁকে চেনতে পারেন।”[১৭]
১৭. [নোট-৩: হযরত হুযায়ফা (رضي الله عنه) হতে ইমাম আল-বুখারী, ইমাম মুসলিম, ইমাম আবু দাউদ ও ইমাম আহমদ বর্ণিত; হযরত আবু সাঈদ খুদরী (رضي الله عنه) হতে ইমাম তিরমিযী ও ইমাম আহমদও বর্ণনা করেছেন এটি। আল-বুখারী হযরত উমর (رضي الله عنه) হতেও অনুরূপ একটি বর্ণনা লিপিবদ্ধ করেছেন।]
❏ হাদিস ১১-১৫
____________________
❏ হাদিস ১১:
ইমাম মুসলিম হযরত হুযায়ফা (رضي الله عنه)-এর কথা উদ্ধৃত করেন, যিনি বলেন:
أَخْبَرَنِي رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بِمَا هُوَ كَائِنٌ إِلَى أَنْ تَقُومَ السَّاعَةُ فَمَا مِنْهُ شَيْءٌ إِلَّا قَدْ سَأَلْتُهُ، إِلَّا أَنِّي لَمْ أَسْأَلْهُ: مَا يُخْرِجُ أَهْلَ الْمَدِينَةِ مِنَ الْمَدِينَةِ؟.
– “রাসূলে খোদা (ﷺ) আমাকে কেয়ামত দিবস পর্যন্ত যা যা ঘটবে, তার সবই বলেছেন এবং এমন কোনো কিছু বাকি ছিল না যে সম্পর্কে আমি তাঁকে জিজ্ঞেস করি নি; শুধু আমি এ বিষয়ে জিজ্ঞেস করি নি মদীনাবাসীর মদীনা থেকে বের হবার কারণ কী হবে?”[১৮]
১৮. [নোট-৪: হযরত হুযায়ফা (رضي الله عنه) হতে ইমাম মুসলিম ও ইমাম আহমদ বর্ণিত যা’তে নিম্নের বাক্যটি সংযুক্ত – “শেষ মুহূর্ত অবধি”।]
❏ হাদিস ১২:
আবু দাউদ (رحمة الله) হযরত হুযায়ফা (رضي الله عنه) থেকে আরও বর্ণনা করেন যে তিনি বলেন:
وَاللَّهِ مَا أَدْرِي أَنَسِيَ أَصْحَابِي، أَمْ تَنَاسَوْا؟وَاللَّهِ مَا تَرَكَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مِنْ قَائِدِ فِتْنَةٍ، إِلَى أَنْ تَنْقَضِيَ الدُّنْيَا، يَبْلُغُ مَنْ مَعَهُ ثَلَاثَ مِائَةٍ فَصَاعِدًا، إِلَّا قَدْ سَمَّاهُ لَنَا بِاسْمِهِ، وَاسْمِ أَبِيهِ، وَاسْمِ قَبِيلَتِهِ..
আল্লাহর শপথ! আমি জানি না আমার সাথীবৃন্দ (অন্যান্য সাহাবী) ভুলে গিয়েছেন না ভুলে যাওয়ার ভান করছেন [১৯],
১৯. [নোট-৫: ফিতনা প্রতিরোধের বিষয়টি; মোল্লা কারী নিজ ‘শরহে শেফা’ পুস্তকে বলেন: ‘আরও গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে নজর দেয়ার ব্যাপারটি]
❏ হাদিস ১৩:
কিন্তু রাসূলুল্লাহ (ﷺ) দুনিয়ার শেষ সময় অবধি যতো ফিতনা সংঘটনকারীর আবির্ভাব হবে তাদের কারোর নামই বাদ দেন নি; এদের প্রত্যেকেরই ন্যূনতম তিন’শ অনুসারী হবে। মহানবী (ﷺ) তাদের প্রত্যেকের নাম, তাদের বাবার নাম ও গোত্রের নাম আমাদের জানিয়েছেন।”[২০]
২০. [নোট-৬: হযরত হুযায়ফা হতে আবু দাউদ বর্ণিত।]
❏ হাদিস ১৪:
হযরত আনাস (رضي الله عنه) হতে আবু এয়ালা সহীহ সনদে রওয়ায়াত করেন যে তিনি বলেন:
خَرَجَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَهُوَ غَضْبَانُ، فَخَطَبَ النَّاسَ فَقَالَ: لَا تَسْأَلُونِي عَنْ شَيْءٍ الْيَوْمَ إِلَّا أَخْبَرْتُكُمْ بِهِ ، وَنَحْنُ نَرَى أَنَّ جِبْرِيلَ مَعَهُ، فَقَامَ إِلَيْهِ رَجُلٌ فَقَالَ: يَا رَسُولَ اللَّهِ، إِنَّا كُنَّا حَدِيثِي عَهْدٍ بِجَاهِلِيَّةٍ، مَنْ أَبِي؟ قَالَ: أَبُوكَ حُذَافَةُ لِأَبِيهِ الَّذِي كَانَ يُدْعَى، فَسَأَلَهُ عَنْ أَشْيَاءَ، فَقَامَ إِلَيْهِ عُمَرُ بْنُ الْخَطَّابِ قَالَ: يَا رَسُولَ اللَّهِ، إِنَّا كُنَّا حَدِيثِي عَهْدٍ بِجَاهِلِيَّةٍ، فَلَا تُبْدِ عَلَيْنَا سَوْآتِنَا قَالَ: أَتَفْضَحُنَا بِسَرَائِرِنَا فَاعْفُ عَنَّا، عَفَا اللَّهُ عَنْكَ..
মহানবী (ﷺ) না-রাজি হালতে বের হয়ে এলেন এবং সবার উদ্দেশ্যে বলেন, ‘আজ তোমরা আমাকে কোনো বিষয়ে জিজ্ঞেস করবে না, শুধু আমি তোমাদের এই ব্যাপারে বলবো;’ আর আমরা দৃঢ় প্রত্যয় পোষণ করছিলাম যে জিবরীল (আ:) তাঁর সাথেই ছিলেন। এমতাবস্থায় হযরত উমর (رضي الله عنه) বললেন, ‘এয়া রাসূলুল্লাহ (ﷺ)! এই কিছু দিন আগেও আমরা অজ্ঞতার যুগে বসবাস করতাম। আপনার কাছে মাফ চাই, আপনি আমাদের (অজ্ঞতা প্রকাশ করে) বে-ইজ্জতীতে ফেলবেন না। আমাদের ক্ষমা করুন, আর আল্লাহতা’লাও আপনাকে ক্ষমা করুন’।[২১]”
২১. [নোট-৭: হযরত আনাস (رضي الله عنه) হতে আবু এয়ালা নিজ ‘মুসনাদ’ গ্রন্থে (৬:৩৬০ #৩৬৮৯) বর্ণনা করেছেন। আর ইমাম হায়তামীর (৭:১৮৮) মতে, এর বর্ণনাকারীরা আল-বুখারী ও মুসলিমেরই বর্ণনাকারী। এই দুই ইমামের ’সহিহাইনে’ একটি দীর্ঘতর বর্ণনা সংযুক্ত রয়েছে। ‘আর আল্লাহতা’লাও আপনাকে মাফ করুন’, হযরত উমর (رضي الله عنه)-এর এই বাক্যটি কৃতজ্ঞতা ও শুভেচ্ছা ব্যক্ত করে।]
❏ হাদিস ১৫:
হযরত উমর (رضي الله عنه) থেকে আবু এয়ালা গ্রহণযোগ্য সনদে রওয়ায়াত করেন; তিনি বলেন:
لَا يَزَالُ هَذَا الْحَيُّ مِنْ قُرَيْشٍ آمِنَيْنِ حَتَّى تَرُدُّوهُمْ، عَنْ دِينِهِمْ كِفَاءَ رَحِمِنَا قَالَ: فَقَامَ إِلَيْهِ رَجُلٌ فَقَالَ: يَا رَسُولَ اللَّهِ أَفِي الْجَنَّةِ أَنَا أَمْ فِي النَّارِ؟ قَالَ: فِي الْجَنَّةِ ثُمَّ قَامَ إِلَيْهِ آخَرُ فَقَالَ: أَفِي الْجَنَّةِ أَمْ فِي النَّارِ؟ قَالَ: فِي النَّارِ ثُمَّ قَالَ: اسْكُتُوا عَنِّي مَا سَكَتُّ عَنْكُمْ فَلَوْلَا أَنْ لَا تَدَافَنُوا لَأَخْبَرْتُكُمْ بِمَلَئِكُمْ مِنْ أَهْلِ النَّارِ حَتَّى تُفَرِّقُوهُمْ، عِنْدَ الْمَوْتِ، وَلَوْ أُمِرْتُ أَنْ أَفْعَلَ لَفَعَلْتُ..
আমি রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-কে বলতে শুনেছি, ‘কুরাইশের এই গোত্র (হাই্য) ততোক্ষণ নিরাপদ থাকবে যতোক্ষণ না তারা ধর্ম থেকে সরে মুরতাদ হয়ে যাবে।’ এক ব্যক্তি উঠে দাঁড়িয়ে বলে, ‘এয়া রাসূলাল্লাহ (ﷺ)! আমি কি জান্নাতে যাবো, না জাহান্নামে?’ হুযূর পূর নূর (ﷺ) বলেন, ‘বেহেশ্তে।’ আরেক ব্যক্তি উঠে একই প্রশ্ন করলে তিনি উত্তর দেন, ‘দোযখে।’ অতঃপর তিনি এরশাদ ফরমান, ‘আমি তোমাদের কিছু না বলা পর্যন্ত তোমরা আমাকে কিছু বলো না। ভয়-ভীতির কারণ না হলে তোমরা একে অপরের দাফন বন্ধ করে দিতে (লাওলা আন লা তাদাফানূ); আমার অবশ্যই তোমাদেরকে বলা উচিত যে বিপুল সংখ্যক লোক জাহান্নামে যাবে এবং তারা কারা তা তোমরা জানবে। আমাকে যদি এ ব্যাপারে আদেশ দেয়া হয়, তবে আমি তা নিশ্চয় পালন করবো’।”[২২]
২২. [নোট-৮: হযরত ইবনে উমর (رضي الله عنه) হতে আবু এয়ালা এটা বর্ণনা করেছেন তাঁর ‘মুসনাদ’ গ্রন্থে (১০:৬৬ #৫৭০২); এবং দীর্ঘতর বর্ণনায় লিপিবদ্ধ করেছেন ইবনে আবি হাতিম নিজ ‘এলাল’ পুস্তকে (২:২৫৬ #২২৬২)।]
❏ হাদিস ১৬-১৯
____________________
মহানবী (ﷺ)-এর কতিপয় সাহাবীর ব্যাপারে তাঁর ব্যক্ত এলমে গায়ব
হযরত আবু বকর (رضي الله عنه)
❏ হাদিস ১৬:
আল-বুখারী (رحمة الله) ও মুসলিম (رحمة الله) হযরত আয়েশা রাদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা থেকে বর্ণনা করেন যে হুযূর পূর নূর (ﷺ) তাঁকে বলেন:
ادْعِي لِي أَبَاكِ وَأَخَاكِ , حَتَّى أَكْتُبَ لِأَبِي بَكْرٍ كِتَابًا , فَإِنِّي أَخَافُ أَنْ يَتَمَنَّى مُتَمَنٍّ , وَيَقُولُ قَائِلٌ , وَيَأْبَى اللهُ وَالْمُؤْمِنُونَ إِلَّا أَبَا بَكْرٍ..
– “তোমার বাবা ও ভাই (আবদুর রহমান)-কে এখানে ডাকো যাতে আমি কিছু একটা লিখে দিতে পারি, কেননা, আমি আশংকা করি যে কেউ হয়তো কোনো দাবি উত্থাপন অথবা কোনো উচ্চাভিলাষ পোষণ করতে পারে; আর যাতে (ওই লেখার দরুণ) আল্লাহ ও ঈমানদাররা আবু বকর (رضي الله عنه) ছাড়া অন্য কাউকে প্রত্যাখ্যান করতে পারেন।” [২৩]
২৩. [নোট-১: মহানবী (ﷺ) এর পবিত্র হায়াতে জিন্দেগীর শেষ দিনগুলোতে ব্যক্ত হাদীস। এটি হযরত আয়েশা রাদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহার কাছ থেকে ইমাম মুসলিম (رحمة الله), ইমাম আবু দাউদ (رحمة الله) ও ইমাম আহমদ (رحمة الله) বর্ণনা করেছেন।]
❏ হাদিস ১৭:
আল-হাকিম সহীহ হিসেবে ঘোষণা দিয়ে হযরত ইবনে মাসউদ (رضي الله عنه) থেকে বর্ণনা করেন যে রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এরশাদ ফরমান:
يَطْلُعُ عَلَيْكُمْ رَجُلٌ مِنْ أَهْلِ الْجَنَّةِ فَأَطْلَعَ أَبُو بَكْرٍ ، فَسَلَّمَ ثُمَّ جَلَسَ..
জান্নাতের বাসিন্দা এক ব্যক্তি এখনি তোমাদের সামনে দৃশ্যমান হতে যাচ্ছেন।” অতঃপর হযরত আবু বকর (رضي الله عنه) আগমন করেন এবং তাঁদের মাঝে বসেন।[২৪]
২৪. [নোট-২: হযরত ইবনে মাসউদ (رضي الله عنه) থেকে ইমাম তিরমিযী (গরিব হিসেবে) এবং আল-হাকিম (৩:১৩৬=১৯৯০ সংস্করণ ৩:১৪৬) এটাকে সহীহ সনদ ঘোষণা করে বর্ণনা করেছেন। অনুরূপ বর্ণনায় এর সমর্থন পাওয়া যায় – (১) হযরত জাবের (رضي الله عنه) হতে চারটি সহীহ সনদে ইমাম আহমদ (رحمة الله); ইমাম তাবারানী – দেখুন আল-হায়তামী (৯:৫৭-৫৮; ৯:১১৬-১১৭); বেশ কয়েকটি সনদে ‘আল-আওসাত’ পুস্তকে (৭:১১০ #৭০০২; ৮:৪১ #৭৮৯৭); ‘মুসনাদ আল-শামিয়্যীন’ (১:৩৭৫ #৬৫১); ‘আল-মু’জাম আল-কবীর’ (১০:১৬৭ #১০৩৪৩); আল-হারিস নিজ ‘মুসনাদ’ গ্রন্থে’ (২:৮৮৯ #৯৬১); আল-তায়ালিসী তাঁর ‘মুসনাদ’ কেতাবে (পৃষ্ঠা ২৩৪ #১৬৭৪); ইবনে আবি আসিম নিজ ‘আল-সুন্নাহ’ পুস্তকে (২:৬২৪ #১৪৫৩); ইমাম আহমদ (رحمة الله) স্বরচিত ‘ফাযাইলুস্ সাহাবা’ বইয়ে (১:২০৯ #২৩৩; ২:৫৭৭ #৯৭৭) এবং আল-মুহিব্বুল তাবারী তাঁর ’আল-রিয়াদুন্ নাদিরা’ গ্রন্থে’ (১:৩০১ #১৪৬); (২) হযরত আবু মাসউদ (رضي الله عنه) হতে ইমাম তাবারানী আপন ‘আল-মু’জামুল কবীর’ কেতাবে (১৭:২৫০ #৬৯৫); এবং (৩) হযরত ইবনে মাসউদ (رضي الله عنه) থেকে ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল (رحمة الله) তাঁর ‘ফযাইলুস্ সাহাবা’ গ্রন্থে’ (১:১০৪ #৭৬)। শেষোক্ত বই ও তিরমিযীতে আরও বর্ণিত আছে, “অতঃপর মহানবী (ﷺ) ওই একই কথা আবার বলেন এবং হযরত উমর (رضي الله عنه) আগমন করেন; সকল বর্ণনাকারী এই ক্রমানুসারে হযরত আলী (رضي الله عنه)কে তৃতীয় আগমনকারী বলে ও ইমাম তাবারানী একটি বর্ণনায় হযরত উসমান (رضي الله عنه)র নাম উল্লেখ করেছেন, যদিও তাঁর অন্যান্য সব বর্ণনায় শুধু হযরত আলী (رضي الله عنه)র নামই এসেছে; দেখুন – হযরত ইবনে মাসউদ (رضي الله عنه)-এর সূত্রে ‘আল-মু’জামুল কবীর’ (১০:১৬৬-১৬৭ #১০৩৪২, #১০৩৪৪), উম্মে মারসাদ হতে ‘আল-আহাদ ওয়াল মাসানী (৬:২৩৪ #৩৪৬৭) এবং ‘আল-কবীর’ (২৪:৩০১ #৭৬৪); দেখুন – ইবনে আব্দিল বারর, ‘আল-এস্তিয়াব’ (৪:১৯৫৭ #৪২০৯), এবং হযরত জাবের (رضي الله عنه) থেকে ইমাম আহমদ (رحمة الله)-এর ‘ফযাইলে সাহাবা’ (২:৬০৮ #১০৩৮); শেষোক্ত বইয়ে (১:৪৫৪ #৭৩২) হযরত ইবনে আব্বাস (رضي الله عنه) থেকে একটি বর্ণনায় শুধু হযরত উসমান (رضي الله عنه)র নাম উল্লেখিত হয়েছে, দেখুন-‘কানযুল উম্মাল’ (#৩৬২১১)। নবী পাক (ﷺ) বেহেশতী হিসেবে আরও যাঁদের নাম উল্লেখ করেছেন তাঁরা হলেন, দশ জন বেহেশতী সাহাবী; হযরত আবদুল্লাহ ইবনে সালাম (رضي الله عنه); বদরের যুদ্ধে অংশগ্রহণকারী সাহাবাবৃন্দ; সুনির্দিষ্ট কয়েকজন যেমন হযরত আম্মার ইবনে ইয়াসের (رضي الله عنه); হুদায়বিয়াতে প্রতিশ্রুতি প্রদানকারীগণ; হযরত জাফর ইবনে তাইয়ার (رضي الله عنه); হযরত বেলাল ইবনে রাবাহ (رضي الله عنه); ইসলামের পাঁচ স্তম্ভে কোনো কিছু যোগ না করার বা তা থেকে কোনো কিছু বাদ না দেয়ার অঙ্গীকারকারী এক বেদুঈন; হিংসা থেকে মুক্ত আনসার সাহাবী; ইমাম হুসাইন ইবনে আলী (رضي الله عنه) ও তাঁর ভাই ইমাম হাসান (رضي الله عنه); হযরত সাবেত ইবনে কায়েস (رضي الله عنه); হযরত মালেক (رضي الله عنه); হযরত আবু সাঈদ খুদরী (رحمة الله)র সম্মানিত পিতা; হযরত মুআবিয়া (‘আল-ফেরদৌস’ ৫:৪৮২ #৮৮৩০ এবং ‘মিযানুল এ’তেদাল’ ২:২৪৩, ৪:৩৫৯); হযরত হেলাল হাবাশী (মওলা আল-মুগিরাহ ইবনে শু’বা হতে ‘আল-এসাবা’ ৬:৫৫০ #৮৯৯৬, দেখুন – ‘নওয়াদিরুল উসূল’ #১২৩ এবং ‘হিলইয়াত আল-আউলিয়া’ ১৯৮৫ সংস্করণ ২:৮১, শেষোক্ত বইয়ে হযরত উয়াইস করনীর নামও উল্লেখিত হয়েছে); হযরত জারির (’নওয়াদির’ #১২৮); হযরত শারিক ইবনে খুবাশা আল-নুমাইরী (এসাবা ৩:৩৮৪ #৩৯৮৭); এবং আল-দাহহাক ইবনে খলীফা আল-আনসারী (প্রাগুক্ত ‘নওয়াদির’ ৩:৪৭৫ #৪১৬৬)।]
❏ হাদিস ১৮:
এ ঘটনার আগে মহানবী (ﷺ) ইতোমধ্যেই হযরত আবু বকর (رضي الله عنه)কে বেহেশতী হবার সুসংবাদ দিয়েছিলেন যখন তিনি এরশাদ করেছিলেন: “আবু বকর জান্নাতী, উমরও তাই, উসমানও, আলীও; তালহা, যুবাইর (ইবনে আওয়াম), আবদুর রহমান ইবনে আউফ, সা’আদ (ইবনে আবি ওয়াক্কাস), সাঈদ (ইবনে যায়দ ইবনে আমর) এবং আবু উবায়দা ইবনে জাররাহ সবাই জান্নাতী।”[২৫]
২৫. [নোট-৩: হযরত আবদুর রহমান ইবনে আউফ (رحمة الله) ও হযরত সাঈদ ইবনে যায়দ (رضي الله عنه) হতে ‘সুনান’ ও ইমাম আহমদে বর্ণিত।
❏ হাদিস ১৯:
হযরত আবু বকর (رضي الله عنه) ও হযরত উমর (رضي الله عنه) হযরত হুযায়ফা ইবনে ইয়ামান (رضي الله عنه) থেকে ইমাম ইবনে মাজাহ (رحمة الله) ও আল-হাকিম বর্ণনা করেন যে রাসূলে খোদা (ﷺ) এরশাদ ফরমান:
اقْتَدُوا بِاللَّذَيْنِ مِنْ بَعْدِي : أَبِي بَكْرٍ ، وَعُمَرَ..
আমার (প্রকাশ্য জিন্দেগীর) পরে আসা দু’জন – আবু বকর ও উমরকে তোমরা তোমাদের খলীফা হিসেবে মান্য করবে। [২৬]
২৬. [নোট-৪: এটা একটা দীর্ঘতর হাদীসের অংশ যা হযরত হুযায়ফা (رضي الله عنه) থেকে ইমাম তিরমিযী বর্ণনা করেছেন (হাসান গরিব হিসেবে); ইমাম আহমদ তাঁর কৃত ‘মুসনাদ’ কেতাবে যা আল-যাইনের মতে সহীহ সনদে (১৬:৬১১ #২৩২৭৯), এবং ইমাম আহমদের ‘ফযাইলে সাহাবা’ গ্রন্থে’ও (১:১৮৭); বেশ কয়েকটি সহীহ ও নির্ভরযোগ্য সনদে ইমাম তাহাভী এটা বর্ণনা করেছেন যা উদ্ধৃত হয়েছে আল-আরনা’ওত-এর ‘শরহে মুশকিল আল-আসার’ পুস্তকে (৩:২৫৬-২৫৭ #১২২৪-১২২৬, ৩:২৫৯ #১২৩৩); ইবনে আবি শায়বা (১২:১১); আল-হাকিম (৩:৭৫-৭৬=১১৯০ সংস্করণ ৩:৭৯-৮০) তিনটি সহীহ সনদে বর্ণনা করেছেন যা তাঁর দ্বারা এবং আল-যাহাবী কর্তৃক নির্ভরযোগ্য বলে সমর্থিত; আর ওই তিনটি রওয়ায়াতের সমর্থন রয়েছে আল-বায়হাকীর ‘সুনানে কুবরা’ (৮:১৫৩ #১৬৩৫২), ‘আল-মাদখাল’ (১২২ পৃষ্ঠা) এবং ‘আল-এ’তেকাদ’ (৩৪০-৩৪১) গ্রন্থগুলোতে। ইমাম ইবনে হাজর নিজ ‘তালখিস আল-হাবির’ পুস্তকে (৪:১৯০) এই হাদীসের সনদগুলোকে নির্ভুল ও নির্ভরযোগ্য হিসেবে স্বীকৃত বলে জানিয়েছেন।]
❏ হাদিস ২০-২৬
____________________
হযরত আবু বকর (رضي الله عنه), হযরত উমর (رضي الله عنه) ও হযরত উসমান (رضي الله عنه)
❏ হাদিস ২০:
আবু নুয়াইম, আল-বাযযার, আবু ইয়ালা ও ইবনে আবি খায়সামা হযরত আনাস (رضي الله عنه) থেকে বর্ণনা করেন, যিনি বলেন:
يَا أَنَسُ، قُمْ فَافْتَحْ لَهُ، وَبَشِّرْهُ بِالجَنَّةِ، وَبَشِّرْهُ بِالخِلاَفَةِ مِنْ بَعْدِي، قُلْتُ: يَا رَسُولَ اللهِ، أُعْلِمُهُ؟ قَالَ: أَعْلِمْهُ، فَإِذَا أَبُو بَكْرٍ، قُلْتُ: أَبْشِرْ بِالجَنَّةِ، وَأَبْشِرْ بِالخِلاَفَةِ مِنْ بَعْدِ رَسُولِ اللهِ صَلَّىَ اَللهُ عَلَيهِ وسَلَّمَ، ثُمَّ جَاءَ آتٍ فَدَقَّ فَجَاءَ آتٍ فَدَقَّ البَابَ، فَقَالَ:فَقَالَ: يَا أَنَسُ قُمْ فَافْتَحْ لَهُ، وَبَشِّرْهُ بِالجَنَّةِ، وَبَشِّرْهُ بِالخِلاَفَةِ مِنْ بَعْدِ أَبِي بَكْرٍ، قَالَ: قُلْتُ يَا رَسُولَ اللهِ أُعْلِمُهُ؟ قَالَ: أَعْلِمْهُ، قَالَ: فَخَرَجْتُ فَإِذَا عُمَرُ، قَالَ: قُلْتُ لَهُ: أَبْشِرْ بِالجَنَّةِ، وَأَبْشِرْ بِالخِلاَفَةِ مِنْ بَعْدِ أَبِي بَكْرٍ، قَالَ: ثُمَّ جَاءَ آتٍ فَدَقَّ البَابَ، فَقَالَ: يَا أَنَسُ، قُمْ فَافْتَحْ لَهُ، وَبَشِّرْهُ بِالجَنَّةِ، وَبَشِّرْهُ بِالخِلاَفَةِ مِنْ بَعْدِ عُمَرَ، وَأَنَّهُ مَقْتُولٌ، قَالَ: فَخَرَجْتُ فَإِذَا عُثْمَانُ، قَالَ: قُلْتُ لَهُ: أَبْشِرْ بِالجَنَّةِ، وَبِالخِلاَفَةِ مِنْ بَعْدِ عُمَرَ، وَأَنَّكَ مَقْتُولٌ..
আমি এক ঘের দেয়া বাগানে মহানবী (ﷺ) এর সাহচর্যে ছিলাম। এমন সময় কেউ একজন এসে ফটকে টোকা দেন। হুযূর পাক (ﷺ) বললেন, ‘আনাস, ওনাকে প্রবেশ করতে দাও; তাঁকে বেহেশতের সুসংবাদ দাও এবং বলো যে তিনি আমার উত্তরাধিকারী হবেন।’ আর দেখো, ইনি হযরত আবু বকর (رضي الله عنه)। অতঃপর আরেক ব্যক্তি এসে দরজায় টোকা দিলে রাসূলে আকরাম (ﷺ) বলেন, ’এনাকেও প্রবেশ করতে দাও; তাঁকে বেহেশতের সুসংবাদ দাও এবং বলো যে আবু বকরের পরে তিনি-ই হবেন আমার উত্তরাধিকারী।’ আর দেখো, ইনি হযরত উমর (رضي الله عنه)। এর পর আরও একজন এসে দরজায় কড়া নাড়েন। এবার নবী করীম (ﷺ) বল্লেন, ‘একেও প্রবেশ করতে দাও; তাকে বেহেশতের সুসংবাদ দাও এবং বলো যে সে উমরের পরে আমার উত্তরাধিকারী হবে; তাকে আরও জানাবে যে সে শহীদ হবে।’ আর দেখো, ইনি হযরত উসমান (رضي الله عنه)।”[২৭]
২৭. [নোট-৫: হযরত আনাস (رضي الله عنه) থেকে আবু এয়ালা তাঁর মু’জাম’ কেতাবে (১:১৭৮), ইবনে আবি আসিম স্বরচিত ‘আস-সুন্নাহ’ পুস্তকে (২:৫৫৭), ইবনে আদি নিজ ‘আল-কামিল’ গ্রন্থে’ (৪:৯১); আর আল-খতীব তাঁর ‘তারিখে বাগদাদ’ বইয়ে (৯:৩৩৯), আল-বাযযার ও ইবনে আসাকির খুব দুর্বল সনদে এটি বর্ণনা করেছেন, কেননা, ইবনে হাজর হায়তামী (رحمة الله) এর এক রাবী বা বর্ণনাকারীকে ‘মিথ্যাবাদী’ বলেছেন। তবে এই রওয়ায়াত স্বতন্ত্রভাবে সমর্থিত হয়েছে।]
❏ হাদিস ২১:
হযরত সাফিনা (رضي الله عنه) থেকে আল-হাকিম সহীহ হিসেবে ঘোষণা করে বর্ণনা করেন, এবং আল-বায়হাকীও তা রওয়ায়াত করেন যে তিনি (সাফিনা) বলেন:
لَمَّا بَنَى رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ الْمَسْجِدَ جَاءُ أَبُو بَكْرٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ بِحَجَرٍ فَوَضَعَهُ ، ثُمَّ جَاءَ عُمَرُ بِحَجَرٍ فَوَضَعَهُ ، ثُمَّ جَاءَ عُثْمَانُ بِحَجَرٍ فَوَضَعَهُ ، فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: ” هَؤُلَاءِ وُلَاةُ الْأَمْرِ مِنْ بَعْدِي هَذَا “.
মহানবী (ﷺ) কর্তৃক {মদীনার} মসজিদ নির্মাণকালে হযরত আবু বকর (رضي الله عنه) একটি পাথর এনে সেখানে নামিয়ে রাখেন; অতঃপর হযরত উমর (رضي الله عنه)রও একটি পাথর এনে রাখেন; এরপর হযরত উসমান (رضي الله عنه) আরেকটি পাথর এনে সেখানে নামিয়ে রাখেন। এমতাবস্থায় রাসূলে পাক (ﷺ) এরশাদ ফরমান: ‘এঁরাই আমার (বেসালের) পরে শাসন করবেন’।”[২৮]
২৮. [নোট-৬: হযরত সাফিনা (رضي الله عنه) থেকে আল-হাকিম (৩:১৩=১৯৯০ সংস্করণের ৩:১৪), নুয়াইম ইবনে হাম্মাদের ‘ফিতান’ পুস্তকে, আল-বায়হাকী নিজ ‘দালাইল’ গ্রন্থে’ এবং ইবনে আসাকিরও এটি বর্ণনা করেছেন; হযরত আয়েশা (رضي الله عنه) থেকেও বর্ণনা করেন আল-হাকিম (৩:৯৬-৯৭=১৯৯০ সংস্করণের ৩:১০৩)।]
এই বর্ণনাতে তিনজন খলীফার উত্তরাধিকারের ক্রমের প্রতি ইশারা আছে আল্লাহ তাঁদের প্রতি রাজি হোন! বাস্তবিকই অন্যান্য কয়েকটি বর্ণনায় স্পষ্টভাবে রাসূলুল্লাহ (ﷺ)কে এ ব্যাপারে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল এবং তিনি উত্তর দিয়েছিলেন, “এঁরাই হলেন আমার (বেসালের) পরে উত্তরাধিকারী।” আরেকটি রওয়ায়াতে এসেছে এভাবে, “আমার (বেসালের) পরে এঁরাই হবেন শাসক।” ইমাম আবু যুরা’য়া (আল-ইরাকী) বলেন, “এর সনদ ক্ষতি থেকে মুক্ত, আর আল-হাকিম তাঁর ‘মুস্তাদরাক’ কেতাবে এটি বর্ণনা করেছেন এবং এটিকে সহীহ বলেছেন।”
[নোট-৪: তবে আল-বুখারী এই বর্ণনাকে ‘মুনকার’ (ব্যবহারের অযোগ্য) বলেছেন; দেখুন – ইবনে আদি কৃত ‘আল-কামিল’ (২:৪৪০); এ ছাড়াও ‘মুস্তাদরাক’ কেতাবের হাশিয়া (টীকা)-এ আল-যাহাবী এটিকে জাল হিসেবে বিবেচনা করেন; ইবনে কাসির এটিকে ‘গরিব জিদ্দান’ (ভীষণ দুর্বল) হিসেবে চিহ্নিত করেন নিজ ‘বেদায়া’ পুস্তকে। আহলে সুন্নাত তথা সুন্নীদের দৃষ্টিভঙ্গি হলো, মহানবী (ﷺ) হযরত আবু বকর (رضي الله عنه)-কে উত্তরাধিকারী নিয়োগ করেন নি সত্য, তবে তিনি তাঁকে নামাযে ইমামতী করার নির্দেশ দিয়ে এদিকে ইঙ্গিত করেছেন।]
❏ হাদিস ২২:
আল-বায়হাকী ও আবু নুয়াইম হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আমর ইবনে আল-’আস (رضي الله عنه) থেকে বর্ণনা করেন, যিনি বলেন:
سَمِعْتُ عَبْدَ اللهِ بْنَ عَمْرٍو يَقُولُ: سَمِعْتُ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُولُ: سَيَكُونُ فِيكُمُ اثْنَا عَشَرَ خَلِيفَةً: أَبُو بَكْرٍ الصِّدِّيقُ لَا يَلْبَثُ خَلْفِي إِلَّا قَلِيلًا وَصَاحِبُ رَحَى دَارِ الْعَرَبِ يَعِيشُ حَمِيدًا وَيَمُوتُ شَهِيدًا فقال رجل: يارَسُولَ اللهِ! وَمَنْ هُوَ؟ قَالَ: عُمَرُ بْنُ الْخَطَّابِ! ثُمَّ الْتَفَتَ إِلَى عُثْمَانَ فَقَالَ: وَأَنْتَ يَسْأَلُكَ النَّاسُ أَنْ تَخْلَعَ قَمِيصًا كَسَاكَهُ اللهُ- عَزَّ وَجَلَّ. وَالَّذِي بَعَثَنِي بِالْحَقِّ لَئِنْ خَلَعْتَهُ لَا تَدْخُلُ الْجَنَّةَ حَتَّى يَدْخُلَ الْجَمَلُ فِي سَمِّ الْخَيَّاطِ.
আমি রাসূলুল্লাহ (ﷺ)কে বলতে শুনেছি – ‘তোমাদের মধ্যে বারো জন খলীফা হবেন। আবু বকর সিদ্দিক আমার (বেসালের) পরে বেশি দিন (শাসনে) থাকবেন না, অল্প সময় থাকবেন; কিন্তু আরবদের গুরু নিষ্কলুষ জীবন যাপন করবেন এবং শাহাদাত বরণ করবেন।’ এমতাবস্থায় কেউ একজন জিজ্ঞেস করেন, ‘এয়া রাসূলাল্লাহ (ﷺ)! তিনি কে?’ মহানবী (ﷺ) জবাব দেন, ‘উমর ইবনে খাত্তাব।’ অতঃপর তিনি হযরত উসমান (رضي الله عنه)র দিকে ফিরে বলেন, ‘আর তোমার ক্ষেত্রে, তারা (মোনাফেকরা) বলবে তোমার ওই জামাটি ছুড়ে ফেলে দিতে যেটা আল্লাহ তা’লা তোমার কাছে আমানত রেখেছেন। সেই মহান সত্তার শপথ যিনি আমাকে সত্যসহ পাঠিয়েছেন! অবশ্যঅবশ্যই তুমি তা ছুড়ে ফেল্লে বেহেশতে প্রবেশ করতে পারবে না, যতোক্ষণ না সূঁচের ছিদ্র দিয়ে উট পার হতে পারে’।”[২৯]
২৯.[নোট-৮: এটা বর্ণনা করেছেন হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আমর ইবনে আস (رضي الله عنه) হতে আল-বায়হাকী এবং আত্ তাবারানী নিজ ‘আল-আওসাত’ (৮:৩১৯ #৮৭৪৯) ও ‘আল-কবীর’ (১:৫৪ #১২, ১:৯০ #১৪২) কেতাবগুলোতে। দেখুন – আল-হায়তামী (৫:১৭৮); এ ছাড়া ভিন্ন এসনাদে (বর্ণনানুক্রমে) লিপিবদ্ধ হয়েছে ‘আল-আহাদ ওয়াল মাসানী’ পুস্তকে (১:৯৬ #৬৭) যা’তে হযরত উসমান (رضي الله عنه)র উল্লেখ নেই; একই ভাবে লেখা আছে ইবনে আবি আ’সিমের ‘আল-সুন্নাহ’ গ্রন্থে’ (২:৫৫৮); ‘আবু বকর সিদ্দিক আমার (বেসালের) পরে বেশি দিন (শাসনে) থাকবেন না, অল্প সময় থাকবেন’, এই অংশটিসহ ‘আল-আহাদ ওয়াল মাসানী’ পুস্তকে (১:৭৩-৭৪ #১৩), দেখুন – ইবনে আবি আসিম (২:৫৪৮), ইবনে আল-জাওযী নিজ ‘সিফাতুস্ সাফওয়া’ গ্রন্থে’ (১:২৩৫-২৩৬), আর তাঁর কাছ থেকে আল-মুহিব্বু আত্ তাবারী ইমাম আয্ যুহরীর বরাতে মুরসাল হিসেবে তাঁর ‘আল-রিয়াদ আল-নাদিরা’ কেতাবে (১:৪০৮ #৩২৯)। আয্ যাহাবী এটাকে ‘সম্পূর্ণ ত্রুটিযুক্ত’ (ওয়াহিন) বলেছেন তাঁর ’সিয়ার’ গ্রন্থে’ (৯:১৩৩=আল্ আরনাওত সংস্করণের ১০:৪১১) এবং ‘বাতিল’ (শূন্য) বলেছেন নিজ ‘মিযান’ পুস্তকে (৪:৪৪৩), দেখুন – ইবনে আদি কৃত ‘কামিল’ (৪:২০৭), ইবনে হিব্বান প্রণীত ‘আল-মাজরুহিন’ (২:৪২), এবং ইবনে আল-কায়সারানী রচিত ‘তাযকিরাত আল-মাওদু’আত’ (#১০৩২)। শুধু নিচের বর্ণনাটি সহীহ যা’তে বলা হয়েছে: “ওহে উসমান! আল্লাহ তা’লা হয়তো তোমাকে একটি জামা আমানতস্বরূপ দিতে পারেন। মোনাফেকরা সেটা অপসারণ করতে বল্লে তা সরাবে না।” হযূর পাক (ﷺ) তিনবার এ কথা বলেছিলেন। বিশুদ্ধ রওয়ায়াতে হযরত আয়েশা রাদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা থেকে এই হাদীস লিপিবদ্ধ করেছেন আত্ তিরমিযী (হাসান গরিব), ইবনে হিব্বান, ইমাম আহমদ, ইবনে মাজাহ ও আল-হাকিম।]
❏ হাদিস ২৩:
ইবনে আসাকির হযরত আনাস (رضي الله عنه) থেকে বর্ণনা করেন, যিনি বলেন:
عَنْ أَنَسٍ بْنُ مَالِكٍ قَالَ وَجَّهْنِيْ وَفْدَ بَنِيْ الْمُصْطَلِقِ إِلَىَ رَسُوْلِ اللهِ صَلَّىَ اَللهُ عَلَيهِ وسَلَّمَ فَقَالُوْا سَلْهُ إِنْ جِئْنَا فِيْ الْعَامِ الْمُقْبِلِ فَلَمْ نَجِدْكَ إلى من ندفع صدقاتنا قال فقلت له فقال قل لهم يدفعوها إلى أبي بكر قال فقلت لهم فقالوا قل له فإن لم نجد أبا بكر قال فقلت له فقال قل لهم ليدفعوها إلى عمر قال فقلت لهم قال قل له فإن لم نجد عمر قال فقلت له قال قل لهم ادفعوها إلى عثمان وتبا لكم يوم يقتل عثمان..
বনু মোস্তালিক গোত্রের প্রতিনিধিবর্গ আমাকে অনুরোধ করে যেন আমি মহানবী (ﷺ)-এর খেদমতে এই মর্মে আর্জি পেশ করি যে আগামী বছর তারা হুযূর (ﷺ)-এর সান্নিধ্যে এসে যদি তাঁকে না পায়, তবে তারা বাধ্যতামূলক যে সদকাহ দিতে হয় তা কার কাছে পেশ করবে। আমি তাদের এই সওয়াল রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর কাছে উপস্থাপন করি। তিনি প্রত্যুত্তর দেন, ‘আবু বকরের কাছে তা জমা দিতে বলবে।’ আমি এ কথা ওই গোত্রের প্রতিনিধিদের কাছে জানালে তারা বলে, ‘যদি আবু বকর (رضي الله عنه)কেও না পাই?’ এমতাবস্থায় আমি আবারও বিশ্বনবী (ﷺ)-এর খেদমতে এই প্রশ্নটি উত্থাপন করি। তিনি এবার বলেন, ‘তাহলে উমরের কাছে তা জমা দিতে বলো।’ গোত্র প্রতিনিধিদল আবার প্রশ্ন করে, ‘যদি তাঁকেও আমরা না পাই?’ অতঃপর রাসূলে আকরাম (ﷺ) এরশাদ ফরমান, ‘উসমানের কাছে তা জমা দিতে বলো; আর তাকে তারা যেদিন শহীদ করবে, সেদিন যেন তারা ধ্বংস হয়ে যায়’!” [৩০]
৩০. [নোট-৯: এটি বর্ণনা করেন হযরত আনাস (رضي الله عنه) থেকে আবু নুয়াইম নিজ ‘হিলইয়াত আল-আউলিয়া’ পুস্তকে (১৯৮৫ সালের সংস্করণের ৮:৩৫৮) এবং ইবনে আসাকির স্বরচিত ‘তারিখে দামেশ্ক’ কেতাবে (৩৯:১৭৭)। দেখুন – ‘কানযুল উম্মাল’ (#৩৬৩৩৩)।]
❏ হাদিস ২৪:
বিশুদ্ধ বর্ণনায় আবু এয়ালা হযরত সাহল (رضي الله عنه) থেকে লিপিবদ্ধ করেন
أَنَّ أُحُدًا ارْتَجَّ وَعَلَيْهِ رَسُولُ اللهِ صَلى الله عَلَيه وسَلمَ وَأَبُو بَكْرٍ وَعُمَرُ وَعُثْمَانُ، فَقَالَ رَسُولُ اللهِ صَلى الله عَلَيه وسَلمَ: اثْبُتْ أُحُدُ، فَمَا عَلَيْكَ إِلاَّ نَبِيٌّ، أَوْ صِدِّيقٌ، أَوْ شَهِيدَانِ..
যে উহুদ পাহাড়ে যখন রাসূলে খোদা (ﷺ), হযরত আবু বকর (رضي الله عنه), হযরত উমর (رضي الله عنه) ও হযরত উসমান (رضي الله عنه) চড়েছিলেন, তখন তা কেঁপে উঠেছিল, যার পরিপ্রেক্ষিতে মহানবী (ﷺ) এরশাদ ফরমান: “সুদৃঢ় থাকো, ওহে ওহুদ পাহাড়! তোমাতে আর কেউই চড়ে নি শুধু একজন নবী (ﷺ), একজন সিদ্দিক ও দুইজন শহীদ ছাড়া!” এ ঘটনার পরে হযরত উমর (رضي الله عنه) ও হযরত উসমান (رضي الله عنه) শহীদ হন এবং হযরত আবু বকর সিদ্দিক (رضي الله عنه) স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় বেসালপ্রাপ্ত হন।[৩১]
৩১. [নোট-১০: হযরত আনাস (رضي الله عنه) হতে আল-বুখারী, আত্ তিরমিযী (হাসান সহীহ), আবু দাউদ, আন্ নাসায়ী ও ইমাম আহমদ।]
❏ হাদিস ২৫:
ইমাম বুখারী ও মুসলিম হযরত আবু মূসা আশ’আরী (رضي الله عنه) থেকে বর্ণনা করেন
فَإِذَا هُوَ قَدْ جَلَسَ عَلَى بِئْرِ أَرِيسٍ وَتَوَسَّطَ قُفَّهَا، وَكَشَفَ عَنْ سَاقَيْهِ، وَدَلَّاهُمَا فِي الْبِئْرِ، قَالَ: فَسَلَّمْتُ عَلَيْهِ، ثُمَّ انْصَرَفْتُ فَجَلَسْتُ عِنْدَ الْبَابِ، فَقُلْتُ: لَأَكُونَنَّ بَوَّابَ رَسُولِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ الْيَوْمَ، فَجَاءَ أَبُو بَكْرٍ فَدَفَعَ الْبَابَ، فَقُلْتُ: مَنْ هَذَا؟ فَقَالَ أَبُو بَكْرٍ: فَقُلْتُ: عَلَى رِسْلِكَ، قَالَ: ثُمَّ ذَهَبْتُ فَقُلْتُ: يَا رَسُولَ اللهِ هَذَا أَبُو بَكْرٍ يَسْتَأْذِنُ، فَقَالَ: ائْذَنْ لَهُ، وَبَشِّرْهُ بِالْجَنَّةِ قَالَ فَأَقْبَلْتُ حَتَّى قُلْتُ: لِأَبِي بَكْرٍ ادْخُلْ، وَرَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يُبَشِّرُكَ بِالْجَنَّةِ، قَالَ: فَدَخَلَ أَبُو بَكْرٍ، فَجَلَسَ عَنْ يَمِينِ رَسُولِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، مَعَهُ فِي الْقُفِّ، وَدَلَّى رِجْلَيْهِ فِي الْبِئْرِ، كَمَا صَنَعَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، وَكَشَفَ عَنْ سَاقَيْهِ، ثُمَّ رَجَعْتُ فَجَلَسْتُ، وَقَدْ تَرَكْتُ أَخِي يَتَوَضَّأُ وَيَلْحَقُنِي، فَقُلْتُ: إِنْ يُرِدِ اللهُ بِفُلَانٍ – يُرِيدُ أَخَاهُ – خَيْرًا يَأْتِ بِهِ، فَإِذَا إِنْسَانٌ يُحَرِّكُ الْبَابَ، فَقُلْتُ: مَنْ هَذَا؟ فَقَالَ: عُمَرُ بْنُ الْخَطَّابِ فَقُلْتُ: عَلَى رِسْلِكَ، ثُمَّ جِئْتُ إِلَى رَسُولِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَسَلَّمْتُ عَلَيْهِ وَقُلْتُ: هَذَا عُمَرُ يَسْتَأْذِنُ، فَقَالَ: ্রائْذَنْ لَهُ وَبَشِّرْهُ بِالْجَنَّةِগ্ধ فَجِئْتُ عُمَرَ فَقُلْتُ: أَذِنَ وَيُبَشِّرُكَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، بِالْجَنَّةِ، قَالَ فَدَخَلَ فَجَلَسَ مَعَ رَسُولِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فِي الْقُفِّ، عَنْ يَسَارِهِ، وَدَلَّى رِجْلَيْهِ فِي الْبِئْرِ، ثُمَّ رَجَعْتُ فَجَلَسْتُ فَقُلْتُ: إِنْ يُرِدِ اللهُ بِفُلَانٍ خَيْرًا – يَعْنِي أَخَاهُ – يَأْتِ بِهِ، فَجَاءَ إِنْسَانٌ فَحَرَّكَ الْبَابَ، فَقُلْتُ: مَنْ هَذَا؟ فَقَالَ: عُثْمَانُ بْنُ عَفَّانَ فَقُلْتُ: عَلَى رِسْلِكَ، قَالَ وَجِئْتُ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَأَخْبَرْتُهُ، فَقَالَ: ্রائْذَنْ لَهُ وَبَشِّرْهُ بِالْجَنَّةِ، مَعَ بَلْوَى تُصِيبُهُগ্ধ قَالَ فَجِئْتُ فَقُلْتُ: ادْخُلْ، وَيُبَشِّرُكَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بِالْجَنَّةِ مَعَ بَلْوَى تُصِيبُكَ، قَالَ فَدَخَلَ فَوَجَدَ الْقُفَّ قَدْ مُلِئَ، فَجَلَسَ وِجَاهَهُمْ مِنَ الشِّقِّ الْآخَرِ. قَالَ شَرِيكٌ: فَقَالَ سَعِيدُ بْنُ الْمُسَيِّبِ: فَأَوَّلْتُهَا قُبُورَهُمْ.
যে নবী করীম (ﷺ) আরিস কুয়োর (বাগানের) অভ্যন্তরে অবস্থান করছিলেন এবং কুয়োর প্রস্তরনির্মিত সীমায় বসেছিলেন; তাঁর পরণের জামা পায়ের গোড়ালির ওপরে ওঠানো ছিল। “আমি (মূসা আশআরী) নিজ মনে বললাম, আজ আমি-ই হবো মহানবী (ﷺ) এর দরজা রক্ষক। এমতাবস্থায় হযরত আবু বকর (رضي الله عنه) ওখানে উপস্থিত হলে আমি তাঁকে ‘অপেক্ষা করুন’ বলে হুযূর পূর নূর (ﷺ)কে জানালাম, ‘হযরত আবু বকর (رضي الله عنه) প্রবেশের অনুমতি চাইছেন।’ তিনি উত্তরে বললেন, ‘তাঁকে (প্রবেশের) অনুমতি ও বেহেশতের সুসংবাদ দাও।’ অতঃপর হযরত আবু বকর (رضي الله عنه) (বাগানে) প্রবেশ করলেন এবং রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর পাশে গিয়ে কুয়োর ধারে বসে পা দুটো ঝুলিয়ে দিলেন। এরপর হযরত উমর (رضي الله عنه) ওইখানে এলেন এবং আমি আবারো আরয করলাম, ‘এবার হযরত উমর (رضي الله عنه) প্রবেশের অনুমতি চাচ্ছেন।’ রাসূলে খোদা (ﷺ) বলেন, ‘তাঁকেও অনুমতি ও বেহেশতের খোশ-খবরী দাও।’ ফলে তিনিও প্রবেশ করে মহানবী (ﷺ) ও হযরত আবু বকর (رضي الله عنه)র পাশে কুয়োর ধারে গিয়ে বসলেন এবং পা ঝুলিয়ে দিলেন। এবার এলেন হযরত উসমান (رضي الله عنه) যার পরিপ্রেক্ষিতে আমি আবার আরয করলাম, ‘হযরত উসমান (رضي الله عنه) (প্রবেশের) অনুমতি চাইছেন।’ মহানবী (ﷺ) উত্তর দিলেন, ‘তাকে অনুমতি দাও এবং বলো যে একটি পরীক্ষাশেষে তার জন্যে বেহেশতের সুসংবাদ রয়েছে।’ হযরত উসমান প্রবেশ করে কুয়োর ধারে তাঁদের পাশে বসার কোনো জায়গা না পেয়ে ওই কুয়োর বিপরীত কিনারে গিয়ে বসলেন এবং পা ঝুলিয়ে দিলেন।” সাঈদ ইবনে মুসাইয়েব (رحمة الله) বলেন, “আমি এই ঘটনায় তাঁদের রওযা শরীফগুলোর একটি ইশারা পাই।” [৩২]
৩২. [নোট-১২: ইমাম বুখারী ও মুসলিম রওয়ায়াতকৃত এবং (ইবনে মুসাইয়েবের মন্তব্য ছাড়া) আত্ তিরমিযী ও ইমাম আহমদও এটি বর্ণনা করেছেন। ইমাম আহমদ (رحمة الله)-এর ভাষ্যগুলোর একটিতে বিবৃত হয়েছে যে হযরত উসমান (رضي الله عنه) তাঁর আসনের দিকে হেঁটে যাবার সময় পড়ছিলেন আল্লাহুম্মা সাবরান।]
❏ হাদিস ২৬:
আত্ তাবারানী ও আল-বায়হাকী হযরত যায়দ ইবনে আরকাম (رضي الله عنه) থেকে বর্ণনা করেন, যিনি বলেন:
بَعَثَنِي رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَقَالَ: ” انْطَلِقْ حَتَّى تَأْتِيَ أَبَا بَكْرٍ فَتَجِدَهُ فِي دَارِهِ جَالِسًا مُحْتَبِيًا فَقُلْ: إِنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقْرَأُ عَلَيْكَ السَّلَامَ , وَيَقُولُ أَبْشِرْ بِالْجَنَّةِ , ثُمَّ انْطَلِقْ حَتَّى تَأْتِيَ الثَّنِيَّةَ، فَتَلْقَى عُمَرَ رَاكِبًا عَلَى حِمَارٍ تَلُوحُ صَلْعَتُهُ فَقُلِ: إِنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقْرَأُ عَلَيْكَ السَّلَامَ وَيَقُولُ أَبْشِرْ بِالْجَنَّةِ , ثُمَّ انْصَرِفْ حَتَّى تَأْتِيَ عُثْمَانَ فَتَجِدَهُ فِي السُّوقِ يَبِيعُ وَيَبْتَاعُ فَقُلْ: إِنَّ النَّبِيَّ يَقْرَأُ عَلَيْكَ السَّلَامَ وَيَقُولُ أَبْشِرْ بِالْجَنَّةِ بَعْدَ بَلَاءٍ شَدِيدٍ ” , قَالَ: انْطَلَقْتُ حَتَّى أَتَيْتُ أَبَا بَكْرٍ فَوَجَدْتُهُ فِي دَارِهِ جَالِسًا مُحْتَبِيًا كَمَا قَالَ لِي رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ..
নবী পাক (ﷺ) আমাকে বাইরে পাঠালেন এ কথা বলে, ‘আবু বকর (رضي الله عنه)র সাথে গিয়ে সাক্ষাৎ করো। তুমি তাকে পাবে নিজ ঘরে কাপড় মুড়িয়ে পা গুটিয়ে (মোহতাবইয়ান) বসে থাকতে। তাঁকে বেহেশতের সুসংবাদ দেবে। এরপর পাহাড়ে যাবে যতোক্ষণ না তুমি উমর (رضي الله عنه)কে খুঁজে পাও খচ্চরের পিঠে এবং তাঁর দীর্ঘকায় শরীর দূর থেকে দেখা না যায়। তাঁকেও বেহেশতের সুসংবাদ দেবে। অতঃপর উসমানের কাছে যাবে, যাকে তুমি পাবে বাজারে কেনা-বেচা করতে; তাকেও বেহেশতের খোশ-খবরী দেবে যা একটি মহা ক্লেশের পরে অর্জিত হবে।’ আমি মহানবী (ﷺ) যেভাবে বলেছিলেন ঠিক সেই অবস্থাতে তাঁদের সবাইকে পাই এবং সংবাদ পৌঁছে দেই।”[৩৩]
৩৩. [নোট-১৩: আরেকটি বিশদ বর্ণনার অংশ হিসেবে হযরত যায়দ ইবনে আরকাম থেকে আত্ তাবারানী রওয়ায়াত করেছেন নিজ ‘আল-আওসাত’ পুস্তকে (১:২৬৬-২৬৭ #৮৬৮); বায়হাকী তাঁর ‘দালাইল’ কেতাবে এবং আয-যাহাবী নিজ ‘সিয়ার’ বইয়ে এর দুর্বলতা উল্লেখ করেন। যদি এটা সত্য হয়, তবে এই ঘটনা সম্ভবত হযরত আবু মূসা আশআরী (رحمة الله)-এর বর্ণিত ঘটনার আগের। এর জন্যে দেখুন আল-হায়তামী (৯:৫৫-৫৬) এবং ইবনে কাসীর, আল-বেদায়া গ্রন্থের দালাইলুন্ নবুওয়ত অনুচ্ছেদ, ‘মহানবী (ﷺ)-এর অদৃশ্য ভবিষ্যত জ্ঞান’ শীর্ষক অধ্যায়’।]
❏ হাদিস ২৭
____________________
হযরত আবু বকর (رضي الله عنه), হযরত উমর (رضي الله عنه) ও হযরত আলী (رضي الله عنه)
❏ হাদিস ২৭:
আল-হাকিম সহীহ হিসেবে ঘোষণা করে হযরত জাবের (رضي الله عنه) থেকে বর্ণনা করেন, যিনি বলেন:
مَشَيْتُ مَعَ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِلَى امْرَأَةٍ فَذَبَحَتْ لَنَا شَاةً، فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «لَيَدْخُلَنَّ رَجُلٌ مِنْ أَهْلِ الْجَنَّةِ» فَدَخَلَ أَبُو بَكْرٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ ثُمَّ قَالَ: «لَيَدْخُلَنَّ رَجُلٌ مِنْ أَهْلِ الْجَنَّةِ» فَدَخَلَ عُمَرُ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ، ثُمَّ قَالَ: «لَيَدْخُلَنَّ رَجُلٌ مِنْ أَهْلِ الْجَنَّةِ، اللَّهُمَّ إِنْ شِئْتَ فَاجْعَلْهُ عَلِيًّا» ، قَالَ: فَدَخَلَ عَلِيُّ بْنُ أَبِي طَالِبٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ.
আমি মহানবী (ﷺ)-এর সাথে হেঁটে এক মহিলার বাড়িতে যাই যিনি আমাদের জন্যে একটি ভেড়া জবাই করেন। ওই সময় হুযূর পাক (ﷺ) বলেন, ‘দেখো, বেহেশতীদের মধ্য হতে এক ব্যক্তি এখন প্রবেশ করবেন।’ এমতাবস্থায় হযরত আবু বকর (رضي الله عنه) সেখানে প্রবেশ করেন। অতঃপর রাসূলুল্লাহ (ﷺ) আবার এরশাদ ফরমান, ‘দেখো, বেহেশতীদের মধ্য হতে এক ব্যক্তি এখন প্রবেশ করবেন।’ এবার হযরত উমর (رضي الله عنه) প্রবেশ করেন। নবী পাক (ﷺ) আবারও বলেন, ‘দেখো, বেহেশতীদের মধ্য হতে এক ব্যক্তি এখন প্রবেশ করবেন। এয়া আল্লাহ, আপনি যদি চান, তবে এ যেন আলী হয়।’ অতঃপর হযরত আলী (رضي الله عنه) প্রবেশ করেন।”[৩৪]
৩৪. [নোট-১৪: ওপরে ২ নং নোট দেখুন]
❏ হাদিস ২৮-২৯
____________________
হযরত আবু বকর, হযরত উমর, হযরত উসমান ও হযরত আলী রাদিয়াল্লাহু আনহুম
❏ হাদিস ২৮:
ইমাম আহমদ, আল-বাযযার ও আত্ তাবারানী নিজ ‘আল-আওসাত’ কেতাবে হযরত জাবের (رضي الله عنه) থেকে বর্ণনা করেন, যিনি বলেন:
عَنْ جَابِرِ بْنِ عَبْدِ اللَّهِ، قَالَ: كُنَّا مَعَ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَقَالَ: ” يَطْلُعُ عَلَيْكُمْ رَجُلٌ – أَوْ قَالَ: يَدْخُلُ عَلَيْكُمْ رَجُلٌ – ” يُرِيدُ رَجُلٌ مِنْ أَهْلِ الْجَنَّةِ، فَجَاءَ أَبُو بَكْرٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ، ثُمَّ قَالَ: «يَطْلُعُ عَلَيْكُمْ – أَوْ يَدْخُلُ عَلَيْكُمْ شَابٌّ -» يُرِيدُ رَجُلٌ مِنْ أَهْلِ الْجَنَّةِ قَالَ: فَجَاءَ عُمَرُ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ، ثُمَّ قَالَ: «يَطْلُعُ عَلَيْكُمْ رَجُلٌ مِنْ أَهْلِ الْجَنَّةِ، اللَّهُمَّ اجْعَلْهُ عَلِيًّا، اللَّهُمَّ اجْعَلْهُ عَلِيًّا» قَالَ: فَجَاءَ عَلِيٌّ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ.
রাসূলে পাক (ﷺ) হযরত সা’আদ ইবনে আল-রাবী’ (رضي الله عنه)কে দেখতে বের হন। (সেখানে) তিনি বসেন এবং আমরাও বসে পড়ি। অতঃপর তিনি বলেন, ‘বেহেশতে বসবাসকারীদের মধ্য হতে এক ব্যক্তি এখন তোমাদের দৃষ্টিগোচর হবেন।’ এমতাবস্থায় হযরত আবু বকর (رضي الله عنه) তাশরীফ আনেন। এরপর মহানবী (ﷺ) বলেন, ‘বেহেশতে বসবাসকারীদের মধ্য হতে এক ব্যক্তি এখন তোমাদের দৃষ্টিগোচর হবেন।’ এবার হযরত উমর ফারুক (رضي الله عنه) এলেন। তিনি আবার বললেন, ‘বেহেশতে বসবাসকারীদের মধ্য হতে এক ব্যক্তি এখন তোমাদের দৃষ্টিগোচর হবে।’ অতঃপর হযরত উসমান (رضي الله عنه) এলেন। মহানবী (ﷺ) আবারও বললেন, ‘বেহেশতে বসবাসকারীদের মধ্য হতে এক ব্যক্তি এখন তোমাদের দৃষ্টিগোচর হবে। এয়া আল্লাহ, আপনি চাইলে সে যেন আলী হয়।’ এমতাবস্থায় হযরত আলী (رضي الله عنه) সেখানে এলেন।”[৩৫]
৩৫. [নোট-১৫: হযরত জাবের (رضي الله عنه) থেকে আত্ তাবারানী নিজ ‘আল-আওসাত’ গ্রন্থে (৭:১১০ #৭০০২) যা’তে হযরত আলী (رضي الله عنه)র উল্লেখ নেই; আল-হায়তামী (৯:৫৭); হযরত উসমান (رضي الله عنه)-এর উল্লেখ ছাড়া ‘মুসনাদ আল-শামিয়্যীন’ পুস্তকে (১:৩৭৫ #৬৫১)। দেখুন-২ নং নোট।]
❏ হাদিস ২৯:
হযরত আবু বকর, উমর, উসমান, আলী, তালহা, যুবায়র রাদিয়াল্লাহু আনহুম
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، أَنَّ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، كَانَ عَلَى حِرَاءٍ هُوَ وَأَبُو بَكْرٍ، وَعُمَرُ، وَعُثْمَانُ، وَعَلِيٌّ، وَطَلْحَةُ، وَالزُّبَيْرُ، فَتَحَرَّكَتِ الصَّخْرَةُ، فَقَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «اهْدَأْ فَمَا عَلَيْكَ إِلَّا نَبِيٌّ، أَوْ صِدِّيقٌ، أَوْ شَهِيدٌ».
ইমাম মুসলিম হযরত আবু হুরায়রা (رضي الله عنه) থেকে বর্ণনা করেন যে রাসূলুল্লাহ (ﷺ) হেরা পর্বতে সর্ব-হযরত আবু বকর, উমর, উসমান, আলী, তালহা ও যুবায়র রাদিয়াল্লাহু আনহুমের সাথে অবস্থান করছিলেন যখন পাথর নড়ে ওঠে। এমতাবস্থায় হুযূর পাক (ﷺ) ওর উদ্দেশ্যে বলেন, “স্থির হও! তোমার ওপরে আর কেউই নেই একজন পয়গম্বর, একজন সিদ্দিক, কিংবা শহীদান ছাড়া।”[৩৬]
৩৬. [নোট-১৬: হযরত আবু হুরায়রা (رضي الله عنه) থেকে মুসলিম, আত্ তিরমিযী (সহীহ) ও ইমাম আহমদ বর্ণিত।]
বাস্তবিকই হযরত আবু বকর (رضي الله عنه) ছাড়া বাকি সবাই শাহাদাত বরণ করেন আল্লাহ তাঁদের সবার প্রতি রাজি হোন। পাহাড়ের কম্পন আবারও (অন্য সময়ে) হয়েছিল যখন নবী পাক (ﷺ) অন্য কয়েকজন সাহাবীসহ সেখানে গিয়েছিলেন।
❏ হাদিস ৩০-৩৫
____________________
হযরত উমর (رضي الله عنه)
❏ হাদিস ৩০:
ইবনে সা’আদ ও ইবনে আবি শায়বা হযরত আবু আল-আশহাব (رضي الله عنه) থেকে বর্ণনা করেন, যিনি (মদীনার সন্নিকটে) মুযায়না অঞ্চলের এক ব্যক্তি হতে বর্ণনা করেন যে রাসূলুল্লাহ (ﷺ) হযরত উমর (رضي الله عنه)কে কোনো নির্দিষ্ট জামা পরতে দেখে তাঁকে জিজ্ঞেস করেন:
أَجَدِيدٌ ثَوْبُكَ قَالَ: غَسِيلٌ يَا رَسُولَ اللَّهِ، فَقَالَ لَهُ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «الْبَسْ جَدِيدًا، وَعِشْ حُمَيْدًا، وَتَوَفَّ شَهِيدًا، يُعْطِيكَ اللَّهُ قُرَّةَ عَيْنَيْنِ فِي الدُّنْيَا وَالْآخِرَةِ»..
এটা কি নতুন, না ইতোমধ্যেই ধোয়া হয়েছে?” হযরত উমর (رضي الله عنه) উত্তর দেন: “এটা ইতোমধ্যেই ধোয়া হয়েছে।” এমতাবস্থায় মহানবী (ﷺ) বলেন, “ওহে উমর! নতুন কাপড়-চোপড় পরো, অনিন্দনীয় জীবন যাপন করো, আর শাহাদাত বরণ করো!” এটি মুরসাল হাদীস।[৩৭]
৩৭. [নোট-১: ইবনে আবি শায়বা (৮:৪৫৩, ১০:৪০২) ও ইবনে সা’আদ (৩:৩২৯) কর্তৃক দুর্বল মুরসাল সনদে বর্ণিত, কেননা হযরত আবু আল-আশহাব জা’ফর ইবনে হায়্যান আল-উতারিদী (رضي الله عنه) ওই সাহাবীর সাক্ষাত পান নি; তবে আল-দুলাবী (১:১০৯) আল-বুসিরী (رحمة الله)-এর ‘মিসবাহ আল-যুজাজা’ (৪:৮২) বইয়ের ভাষ্যমতে আল-যুহরীর সূত্রে নির্ভরযোগ্য বর্ণনাকারীদের মুত্তাসিল সনদে এটি বর্ণনা করেছেন; এঁদের সবগুলোই আল-বুখারী ও মুসলিম ব্যবহার করেছেন যা আল-হায়তামী (৯:৭৩-৭৪)-এর ভাষ্য দ্বারা সমর্থিত; এই হাদীস বর্ণনা করেছেন হযরত ইবনে উমর (رضي الله عنه) থেকে ইমাম আহমদ তাঁর ‘মুসনাদ’ (আরনাওত সংস্করণের ৯:৪৪০-৪৪২ #৫৬২০) এবং ফযায়েলে সাহাবা (১:২৫৫ #৩২২-৩২৩) গ্রন্থ’গুলোতে, ইবনে মাজাহ, ইবনে হিব্বান (আরনাওত সংস্করণের ১৫:৩২০-৩২২ #৬৮৯৭), আল-বাযযার (যাওয়াইদ #২৫০৪), আবু এয়ালা তাঁর ‘মুসনাদ’ পুস্তকে (#৫৫৪৫), আত্ তাবারানী নিজ ‘আল-কবীর’ (১২:২৮৩ #১৩১২৭) এবং আদ্ দু’আ (পৃষ্ঠা ১৪৩ #৩৯৯) কেতাব দুটোতে, ইবনে আল-সুন্নী ও আল-নাসাঈ নিজেদের ‘আমল আল-এয়াওম ওয়াল-লাইলা’ বইগুলোতে (যথাক্রমে #২৬৯ এবং ১:২৭৫ #৩১১), আবু নুয়াইম তাঁর ‘আখবার আসবাহান’ (১:১৩৯), আল-আযদী নিজ জামে’ পুস্তকে (১১:২২৩), আবদ্ ইবনে হুমায়দ স্বরচিত ‘মুসনাদ’ গ্রন্থে’ (পৃষ্ঠা ২৩৮ #৭২৩), ইবনে আবদ্ আল-বারর নিজ ‘আল-এস্তিয়াব’ কেতাবে (৩:১১৫৭) আল-বাগাবী তাঁর ‘শরহে সুন্নাহ’ পুস্তকে (১২:৫০ #৩১১২), এবং আল-বায়হাকী নিজ ‘শুয়াব’ গ্রন্থে’; এঁদের সবাই বর্ণনা করেছেন হযরত আবদুর রাযযাকের (#২০৩৮২) মাধ্যমে যাঁর সম্পর্কে কোনো কোনো ইমাম বলেছেন যে আল-যুহরীর মাধ্যমে এই হাদীস বর্ণনায় তাঁর ভ্রান্তি ছিল, যা ইবনে রাজাব নিজ ‘শরহে এলাল আল-তিরমিযী’ পুস্তকে (২:৫৮৫) ব্যাখ্যা করেছেন। এর ফলশ্রুতিতে আল-বুখারী এটাকে আত্ তিরমিযীর ‘এলাল’ (পৃষ্ঠা ৩৭৩) পুস্তকে ‘লা শাইয়’ তথা অনির্ভরযোগ্য বলেন; ইবনে আদি নিজ ‘আল-কামিল’ কেতাবে (৫:১৯৪৮) ‘মুনকার’ বলেন; আল-নাসাঈ স্বরচিত ‘আমল আল-এয়াওম ওয়াল-লায়লা’ যেখানে এয়াহইয়া ইবনে সাঈদ আল-কাত্তান (رحمة الله)-এর উদ্ধৃতি রয়েছে। দেখুন আল-বায়হাকী প্রণীত ‘আল-সুনান আল-কুবরা’ (৬:৮৫ #১০১৪৩) এবং ইবনে আবি হাতিম (যিনি ‘বাতিল’ বলেছেন) কৃত ‘আল-এলাল’ (১:৪৯০)। আত্ তাবারানী (رحمة الله) আল-যুহরীর পরিবর্তে আল-সাওরীর সূত্রে আরেকটি সনদে এই হাদীস বর্ণনা করেন নিজ ‘আল-দোয়া’ পুস্তকে (#৪০০)। দেখুন — আল-হায়তামী, মাওয়ারিদ আল-যামান (১:৫৩৬ #২৩৮১) এবং হযরত জাবের (رضي الله عنه)-এর সূত্রে একটি দুর্বল সনদে আল-বাযযার এটি বর্ণনা করেন নিজ ‘মুসনাদ’ বইয়ে (যাওয়াইদ #২৫০৩)। সংক্ষেপে, ইবনে হিব্বান এটাকে মৌলিক তথা নির্ভরযোগ্য বিবেচনা করেন; আর ইবনে হাজর তাঁর ‘নাতাইজ আল-আফকার’ (১:১৩৭-১৩৮) গ্রন্থে’ সিদ্ধান্ত নেন যে এটা কমপক্ষে ‘হাসান’ (বিশুদ্ধ), যেমনিভাবে ইবনে হিব্বানের ’আল-আরনাওত’ সংস্করণও তাই মনে করে।]
❏ হাদিস ৩১:
ইমাম বুখারী ও মুসলিম রওয়ায়াত করেন যে,
হযরত উমর ইবনে আল-খাত্তাব (رضي الله عنه) একদিন জিজ্ঞেস করেন:
أَيُّكُمْ يَحْفَظُ حَدِيثَ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَنِ الفِتْنَةِ؟ قَالَ: قُلْتُ: أَنَا أَحْفَظُهُ كَمَا قَالَ، قَالَ: إِنَّكَ عَلَيْهِ لَجَرِيءٌ، فَكَيْفَ؟ قَالَ: قُلْتُ: ” فِتْنَةُ الرَّجُلِ فِي أَهْلِهِ، وَوَلَدِهِ، وَجَارِهِ، تُكَفِّرُهَا الصَّلاَةُ، وَالصَّدَقَةُ وَالمَعْرُوفُ – قَالَ سُلَيْمَانُ: قَدْ كَانَ يَقُولُ: الصَّلاَةُ وَالصَّدَقَةُ وَالأَمْرُ بِالْمَعْرُوفِ – وَالنَّهْيُ عَنِ المُنْكَرِ “، قَالَ: لَيْسَ هَذِهِ أُرِيدُ، وَلَكِنِّي أُرِيدُ الَّتِي تَمُوجُ كَمَوْجِ البَحْرِ، قَالَ: قُلْتُ: لَيْسَ عَلَيْكَ بِهَا يَا أَمِيرَ المُؤْمِنِينَ بَأْسٌ بَيْنَكَ وَبَيْنَهَا بَابٌ مُغْلَقٌ، قَالَ: فَيُكْسَرُ البَابُ أَوْ يُفْتَحُ، قَالَ: قُلْتُ: لاَ بَلْ يُكْسَرُ، قَالَ: فَإِنَّهُ إِذَا كُسِرَ لَمْ يُغْلَقْ أَبَدًا، قَالَ: قُلْتُ: أَجَلْ، فَهِبْنَا أَنْ نَسْأَلَهُ مَنِ البَابُ فَقُلْنَا لِمَسْرُوقٍ: سَلْهُ، قَالَ: فَسَأَلَهُ، فَقَالَ: عُمَرُ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ، قَالَ: قُلْنَا، فَعَلِمَ عُمَرُ مَنْ تَعْنِي؟ قَالَ: نَعَمْ، كَمَا أَنَّ دُونَ غَدٍ لَيْلَةً وَذَلِكَ أَنِّي حَدَّثْتُهُ حَدِيثًا لَيْسَ بِالأَغَالِيطِ..
তোমাদের মধ্যে কে কে স্মরণ করতে পারো রাসূলে পাক (ﷺ) সেই ফিতনা সম্পর্কে কী বলেছিলেন যা সাগরের ঢেউয়ের মতো উত্তাল হবে?” হযরত হুযায়ফা (رضي الله عنه) বলেন, “এয়া আমিরাল মোমেনীন, আপনার এ সম্পর্কে চিন্তা করা লাগবে না। কেননা, আপনার এবং ওই ফিতনার মাঝে একটি দরজা আছে যা বন্ধ।” আতঃপর হযরত উমর (رضي الله عنه) বলেন, “ওই দরজা কি খোলা হবে, না ভেঙ্গে ফেলা হবে?” হযরত হুযায়ফা (رضي الله عنه) উত্তর দেন: “ভাঙ্গা হবে।” এমতাবস্থায় হযরত উমর (رضي الله عنه) জবাব দেন: “দরজা খুলে দেয়ার চেয়ে ওটাই বেশি যথাযথ।” পরবর্তীকালে হযরত হুযায়ফা (رضي الله عنه)কে জিজ্ঞেস করা হয় ওই দরজা বা ফটক কে, আর তিনি উত্তর দেন, “ওই ফটক-ই হযরত উমর (رضي الله عنه)।” তাঁকে মানুষেরা আবারো জিজ্ঞেস করে, “তিনি কি এটা জানতেন?” উত্তরে হযরত হুযায়ফা (رضي الله عنه) বলেন, “হাঁ, অবশ্যঅবশ্যই দিনের আগে যেমন রাত অতিক্রান্ত হয়, (তেমনি) আমিও তাঁর সাথে দ্ব্যর্থহীন ভাষায় কথা বলছিলাম।”[৩৮]
৩৮. [নোট-২: হযরত আবু ওয়াইল শাকীক ইবনে সালামা থেকে ইমাম বুখারী ও মুসলিম বর্ণনা করেন এটি।]
❏ হাদিস ৩২:
আত্ তাবারানী হযরত ইবনে উমর (رضي الله عنه) থেকে বর্ণনা করেন যে রাসূলুল্লাহ (ﷺ) একটি প্রাচীর ঘেরা বাগানে অবস্থান করছিলেন, যখন হযরত আবু বকর (رضي الله عنه) তাতে প্রবেশের অনুমতি প্রার্থনা করেন। হুযূর পাক (ﷺ) এরশাদ করেন,
“তাকে প্রবেশের অনুমতি দাও এবং বেহেশতপ্রাপ্তির সুসংবাদও প্রদান করো।” এরপর হযরত উমর ফারুক (رضي الله عنه) ওই বাগানে প্রবেশের অনুমতি চাইলে তিনি বলেন, “তাকে প্রবেশের অনুমতি দিয়ে বেহেশত ও শাহাদাতের সুসংবাদ প্রদান করো।” অতঃপর হযরত উসমান (رضي الله عنه) অনুরূপ অনুমতি চাওয়ার পর তিনি আবার এরশাদ ফরমান, “তাকেও প্রবেশের অনুমতি দিয়ে বেহেশত ও শাহাদাতের সুসংবাদ প্রদান করো।”[৩৯]
৩৯.[নোট-১১: হযরত ইবনে উমর (رضي الله عنه) থেকে দুর্বল সনদে আত্ তাবারানী নিজ ‘আল-কবীর’ গ্রন্থে (১২:৩২৭); আল-হায়তামী (৯:৭৩)।]
❏ হাদিস ৩৩:
আল-বাযযার, আত্ তাবারানী ও আবু নুয়াইম হযরত উসমান ইবনে মাযউন (رضي الله عنه) থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন: “আমি রাসূলুল্লাহ (ﷺ)কে হযরত উমর (رضي الله عنه) প্রসঙ্গে বলতে শুনেছি,
هَذَا غَلْقُ الْفِتْنَةِ – وَأَشَارَ بِيَدِهِ – لاَ يَزَالُ بَيْنَكُمْ وَبَيْنَ الْفِتْنَةِ بَابٌ شَدِيدُ الْغَلْقِ مَا عَاشَ هَذَا بَيْنَ ظَهْرَانَيْكُمْ..
এটা গালক্কু আল-ফিতনা (বিবাদ-বিসম্বাদের বজ্র)। এই ব্যক্তি (অর্থাৎ, হযরত উমর) যতোক্ষণ তোমাদের মাঝে জীবিত থাকবেন, ততোক্ষণ তোমাদের এবং ফিতনার মাঝখানে একটি দরজা শক্তভাবে বন্ধ থাকবে’।”[৪০]
৪০.[নোট-৩: এই হাদীস বর্ণনা করেছেন আত্ তাবারানী তাঁর ‘আল-কবীর’ গ্রন্থে (৯:৩৮ #৮৩২১), আল-বাযযার, আল-ওয়াসিতী নিজ ‘তারিখে ওয়াসিত’ বইয়ে (পৃষ্ঠা ২৪৪-৪৫), এবং দুর্বল সনদে ইবনে কানী’ তাঁর ‘মু’জাম আল-সাহাবা’ কেতাবে (২:২৫৮ #৭৭৪); দেখুন – আল-হায়তামী (৯:৭২); তবে এই রওয়ায়াতের বিশুদ্ধতা সমর্থিত হয়েছে আত্ তাবারানীর ‘আল-আওসাত’ পুস্তকে বিধৃত বর্ণনায়, যেখানে ইবনে হাজর (رحمة الله)-এর ‘ফাতহুল বারী’ গ্রন্থে (১৯৫৯ সংস্করণের ৬:৬০৬) উদ্ধৃত তাঁরই মতানুযায়ী নির্ভরযোগ্য বর্ণনাকারীদের সূত্রে হযরত আবু যর গিফারী (رضي الله عنه) হযরত উমর (رضي الله عنه)কে ‘ক্কুফল আল-ফিতনা’ তথা ’বিবাদের জন্যে তালা’ বলেছেন; আল-হায়তামী (৯:৭৩) অবশ্য এর ব্যতিক্রমস্বরূপ সন্দেহ করেন যে হযরত হাসান বসরী (رضي الله عنه) ও হযরত আবু যর (رضي الله عنه)-এর মধ্যে কোনো বর্ণনাকারীর ছেদ পড়েছে। একই বর্ণনা হযরত ইবনে আব্বাস (رضي الله عنه) হতে আদ্ দায়লামী নিজ ’আল-ফেরদৌস’ কেতাবে (১:৪৩৮ #১৭৮৫) উদ্ধৃত করেছেন।]
❏ হাদিস ৩৪:
আত্ তাবারানী হযরত আবু যর (رضي الله عنه) হতে আরও বর্ণনা করেন যে নবী পাক (ﷺ) বলেন:
لا تصيبنكم فتنة ما دام هذا فيكم يعني عمر.
তোমাদেরকে কোনো ফিতনা-ই ছুঁতে পারবে না যতোক্ষণ এই ব্যক্তি (উমর ফারুক) তোমাদের মাঝে আছেন।”[৪১]
৪১.[নোট-৪: কুফল বর্ণনার একই সনদে আত্ তাবারানী এটি বর্ণনা করেছেন তাঁর ‘আল-আওসাত’ পুস্তকে (২:২৬৭-২৬৮ #১৯৪৫)।]
❏ হাদিস ৩৫:
একদিন হযরত খালেদ বিন ওয়ালিদ (رضي الله عنه) শাম (সিরিয়া) দেশে মানুষের উদ্দেশ্যে বক্তব্য রাখছিলেন; এমতাবস্থায় এক লোক তাঁকে বলে,
اصبر أيها الأمير فإن الفتن قد ظهرت قال خالد وابن الخطاب حي إنما ذلك بعده..
“ফিতনা আবির্ভূত হয়েছে!” হযরত খালেদ (رضي الله عنه) উত্তর দেন, “যতোদিন ইবনে আল-খাত্তাব জীবিত আছেন, ততোদিন নয়। তা শুধু তাঁর সময়ের পরেই হবে।” [৪২]
৪২.[নোট-৫: ইমাম আহমদ, আত্ তাবারানী নিজ ‘আল-কবীর’ কেতাবে (৪:১১৬ #৩৮৪১), নুয়াইম ইবনে হাম্মাদ তাঁর ‘আল-ফিতান’ গ্রন্থে’ (১:৪৫, ১:২৮১ #৮১৯) বর্ণনা করেছেন; এঁদের সবাই সনদের মধ্যে কায়স ইবনে খালেদ আল-বাজালী নামের এক অপরিচিত তাবেঈর সূত্রে এটি বর্ণনা করেন। তবে এই নিষ্কলুষ তাবেঈ গ্রহণযোগ্য বিধায় ইবনে হাজর তাঁর ‘ফাতহুল বারী’ বইয়ে (১৯৫৯ সংস্করণের ১৩:১৫) এই এসনাদকে ‘হাসান’ (নির্ভরযোগ্য) হিসেবে চিহ্নিত করেন। দেখুন আল-হায়তামী (৭:৩০৭-৩০৮) এবং আল-মোবারকপুরী প্রণীত ‘তোহফাত আল-আহওয়াযী’ (৬:৩৬৮)।]
হযরত খালেদ বিন ওয়ালিদ (رضي الله عنه) নিজ মতামত এভাবে ব্যক্ত করার কথা না; অতএব, দৃশ্যতঃ তিনি মহানবী (ﷺ) থেকে এটা শুনেছিলেন, নতুবা এমন কারো কাছ থেকে শুনেছিলেন যিনি স্বয়ং মহানবী (ﷺ) থেকে শুনেছিলেন।
❏ হাদিস ৩৬-৪৪
____________________
হযরত উসমান (رضي الله عنه)
❏ হাদিস ৩৬:
আত্ তাবারানী হযরত যায়দ ইবনে সাবেত (رضي الله عنه) থেকে বর্ণনা করেন, যিনি বলেন যে মহানবী (ﷺ)-কে তিনি বলতে শুনেছেন:
مَرَّ بِي عُثْمَانُ وعِنْدِي مَلَكٌ مِنَ الْمَلاَئِكَةِ ، فَقَالَ : شَهِيدٌ يَقْتُلُهُ قَوْمُهُ ، إِنَّا لَنَسْتَحْيِي مِنْهُ.
উসমান আমার পাশ দিয়ে যাচ্ছিল যখন একজন ফেরেশতা আমার সাথে ছিল। ওই ফেরেশতা বললেন, ‘ইনি একজন শহীদ; তাঁর লোকেরা তাঁকে হত্যা করবে। সত্যি, তিনি (মহত্ত্বে) আমাদেরকে (অর্থাৎ, ফেরেশতাকুলকে) লজ্জায় ফেলে দিয়েছেন’।”[৪৩]
৪৩. [নোট-৬: হযরত যায়দ (رضي الله عنه) থেকে আত্ তাবারানী তাঁর ‘আল-কবীর’ পুস্তকে (৫:১৫৯) বর্ণনা করেছেন; তবে যে সনদ তিনি পেশ করেছেন, আল-হায়তামী (৯:৮২) এর ভাষ্যানুযায়ী তাতে রাবী (বর্ণনাকারী) মোহাম্মদ ইবনে ইসমাঈল আল-ওয়াসাউইসী একজন জাল হাদীস পরিবেশক।]
❏ হাদিস ৩৭:
আল-বায়হাকী হযরত আবু হুরায়রা (رضي الله عنه) থেকে একটি বর্ণনা, যেটিকে আল-হাকিম বিশুদ্ধ বলেছেন, তা রওয়ায়াত করেন, যা’তে হযরত উসমান (رضي الله عنه) যখন তাঁর ঘরে অবরুদ্ধ ছিলেন তখন হযরত আবু হুরায়রা (رضي الله عنه) বলেন:
إِنَّهَا سَتَكُونُ فِتْنَةٌ، وَاخْتِلَافٌ – أَوِ اخْتِلَافٌ – وَفِتْنَةٌ» ، قَالَ: قُلْنَا: يَا رَسُولَ اللَّهِ، فَمَا تَأْمُرُنَا؟ قَالَ: «عَلَيْكُمْ بِالْأَمِيرِ وَأَصْحَابِهِ» وَأَشَارَ إِلَى عُثْمَانَ.
আমি মহানবী (ﷺ)-কে বলতে শুনেছি: ‘একটি ফিতনা-ফাসাদ (ভবিষ্যতে) হবে।’ আমরা বললাম, ‘এয়া রাসূলাল্লাহ (ﷺ)! আমরা তখন কী করবো বলে আপনি হুকুম দেন?’ তিনি হযরত উসমান (رضي الله عنه)-এর দিকে ইঙ্গিত করে উত্তর দিলেন, ‘(তোমাদের) খলীফা ও তার বন্ধুদের সাথে থাকবে’।”[৪৪]
৪৪. [নোট-৭: হযরত আবু হুরায়রা (رضي الله عنه) থেকে এটি বর্ণনা করেছেন আল-হাকিম (৩:৯৯=১৯৯০ সংস্করণের ৩:১০৫; ৪:৪৩৪=৪:৪৮০) এবং আয্ যাহাবী একে বিশুদ্ধ বলেছেন; এটি আরও বর্ণনা করেন ইবনে আবি শায়বা (১০:৩৬৩ #৩২০৪৯), আত্ তাবারানী নিজ ‘আল-আওসাত’গ্রন্থে’ (৯:১৭৫ #৯৪৫৭), ইবনে আবি আসিম তাঁর ‘আস্ সুন্নাহ’ বইয়ে (২:৫৮৭ #১২৭৮) এবং বায়হাকী স্বরচিত ‘আল-এ’তেকাদ’ কেতাবে (পৃষ্ঠা ৩৬৮)।]
❏ হাদিস ৩৮:
ইবনে মাজাহ, আল-হাকিম বিশুদ্ধ হিসেবে, আল-বায়হাকী ও আবু নুয়াইম হযরত আয়েশা (رضي الله عنه) থেকে বর্ণনা করেন,
قَالَ: فَجَعَلَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يُسِرُّ إِلَى عُثْمَانَ، وَلَوْنُ عُثْمَانَ يَتَغَيَّرُ، قَالَ: فَلَمَّا كَانَ يَوْمُ الدَّارِ قُلْنَا: أَلَا تُقَاتِلُ؟ قَالَ: لَا، إِنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَهِدَ إِلَيَّ أَمْرًا، فَأَنَا صَابِرٌ نَفْسِي عَلَيْهِ.
তিনি বলেন: “রাসূলুল্লাহ (ﷺ) হযরত উসমান (رضي الله عنه)-কে ডেকে একান্তে আলাপ করেন, যার দরুণ তাঁর চেহারায় পরিবর্তন আসে। (পরবর্তীকালে) ঘরে অবরুদ্ধ হবার দিন আমরা তাঁকে জিজ্ঞেস করি, ‘আপনি কি এর বিরুদ্ধে লড়বেন না?’ খলীফা বললেন, ‘না! রাসূলে পাক (ﷺ) আমার কাছ থেকে ওয়াদা নিয়েছেন (যেন আমার শাহাদাতের সময় আমি না লড়ি); আমি ওয়াদা প্রতিশ্রুতি) ওয়াফা (পূরণ) করবো’।”[৪৫]
৪৫. [নোট-৮: হযরত উসমান (رضي الله عنه)র মুক্ত করে দেয়া গোলাম হযরত আবু সাহলা (رضي الله عنه) থেকে বর্ণনা করেন আত্ তিরমিযী (হাসান সহীহ গরিব), ইমাম আহমদ তাঁর ‘মুসনাদ’ ও ‘ফযাইলে সাহাবা’ পুস্তকে (১:৪৯৪), ইবনে মাজাহ, ইবনে হিব্বান, আল-হাকিম (১৯৯০ সংস্করণের ৩:১০৬), ইবনে সা’আদ (৩:৬৬), আবু এয়ালা নিজ ‘মুসনাদ’ গ্রন্থে (৮:২৩৪), এবং সহীহ সনদে আল-বাযযার (২:৬০)।]
❏ হাদিস ৩৯:
ইবনে আদি ও ইবনে আসাকির হযরত আনাস (رضي الله عنه) থেকে বর্ণনা করেন, যিনি বলেন:
يا عثمان ! إنك ستؤتى الخلافة من بعدي وسيريدك المنافقون على خلعها فلا تخلعها وصم في ذلك اليوم تفطر عندي…
মহানবী (ﷺ) বলেন, ‘ওহে উসমান! আমার (বেসালের) পরে তোমার কাছে খেলাফতের ভার ন্যস্ত করা হবে, কিন্তু মোনাফেকরা চাইবে যেন তুমি তা ত্যাগ করো। তুমি ত্যাগ করো না, বরং রোযা রেখো যাতে তুমি আমার সাথে (ওই রোযা) ভাঙ্গতে পারো’।”[৪৬]
৪৬. [নোট-৯: হযরত আনাস (رضي الله عنه) থেকে ইবনে আসাকির নিজ ‘তারিখে দামেশক’ (৩৯:২৯০), ইবনে আদি তাঁর ‘আল-কামিল’ (৩:২৭); এবং আয্ যাহাবী স্বরচিত ’মিযান’ গ্রন্থে’ (২:৪২৪) যা’তে দুর্বল সনদ আবু আল-রাহহাল খালেদ ইবনে মোহাম্মদ আল-আনসারী, যিনি এর একমাত্র বর্ণনাকারীও।]
❏ হাদিস ৪০:
আল-হাকিম বিশুদ্ধ হিসেবে ঘোষণা করে হযরত মুররাহ ইবনে কাআব (رضي الله عنه) থেকে বর্ণনা করেন এবং ইবনে মাজাহ-ও তাঁর থেকে রওয়ায়াত করেন, তিনি বলেন:
سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَذْكُرُ فِتْنَةً فَقَرَّ بِهَا، فَمَرَّ بِهِ رَجُلٌ مُقَنَّعٌ فِي ثَوْبٍ، فَقَالَ: «هَذَا يَوْمَئِذٍ عَلَى الْهُدَى» فَقُمْتُ إِلَيْهِ، فَإِذَا هُوَ عُثْمَانُ بْنُ عَفَّانَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ.
আমি রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-কে একটি পরীক্ষার কথা বলতে শুনেছি যখন এক ব্যক্তি তাঁর জুব্বা পরে পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন। তিনি এরশাদ করেন, ‘এই ব্যক্তি ওই সময় সঠিক পথ অনুসরণ করবে।’ আমি ওই ব্যক্তিকে দেখতে গেলাম এবং দেখলাম তিনি হযরত উসমান (رضي الله عنه)।” [৪৭]
৪৭. [নোট-১০: হযরত কা‘আব ইবনে মুররা আল-বাহযী (رضي الله عنه) থেকে আত্ তাবারানী (হাসান সহীহ), দুর্বল সনদে ইবনে মাজাহ, বেশ কিছু বিশুদ্ধ সনদে ইমাম আহমদ তাঁর ‘মুসনাদ’ ও ‘ফযায়েলে সাহাবা’ কেতাবে (১:৪৫০), আল-হাকিম (১৯৯০ সংস্করণের ৩:১০৯, ৪:৪৭৯ সহীহ), তিনটি সনদে ইবনে আবি শায়বা (৬:৩৬০ #৩২০২৫-৩২০২৬, ৭:৪৪২ #৩৭০৯০), আত্ তাবারানী নিজ ‘আল-কবীর’ গ্রন্থে’ (১৯:১৬১-১৬২ #৩৫৯, #৩৬২, ২০:৩১৫ #৭৫০), এবং নুয়াইম ইবনে হাম্মাদ স্বরচিত ‘আল-ফিতান’ পুস্তকে (১:১৭৪ #৪৬১)।]
❏ হাদিস ৪১:
আল-হাকিম হযরত আব্বাস (رضي الله عنه) থেকে বর্ণনা করেন, যিনি বলেন যে মহানবী (ﷺ) তাঁদেরকে বলেছিলেন হযরত উসমান (رضي الله عنه)র রক্তের ফোঁটা কুরআন মজীদের
فَسَيَكْفِيكَهُمُ اللَّهُ وَهُوَ السَّمِيعُ الْعَلِيمُ..
হে মাহবুব! অদূর ভবিষ্যতে আল্লাহই তাদের দিক থেকে আপনার জন্যে যথেষ্ট হবেন”[৪৮]
আয়াতটির ওপর পড়বে; আর তাই ঘটেছিল।[৪৯]
৪৮. আল কুর‘আন : আল বাকারা, ২/৩৭।
৪৯. [নোট-১১: হযরত ইবনে আব্বাস (رضي الله عنه) থেকে আল-হাকিম বর্ণিত (৩:১০৩=১৯৯০ সংস্করণের ৩:১১০), আল-যুবায়র ইবনে আবদিল্লাহর দাদী হতে আত্ তাবারী নিজ ‘তারিখ’ কেতাবে (২:৬৭১), ‘উমরা বিনতে আবদ্ আল-রহমান হতে ইবনে আবি হাতিম তাঁর ‘আল-জারহ ওয়াল তা’দিল’ পুস্তকে (৪:১৭৯ #৭৮০), এবং ওয়াসসাব হতে ইবনে সাআদ (৩:৭২)।]
❏ হাদিস ৪২:
মুহাদ্দীস আল-সিলাফী হযরত হুযায়ফা (رضي الله عنه) থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন: “ফিতনার আরম্ভ হযরত উসমান (رضي الله عنه)-কে শহীদ করার মাধ্যমে এবং শেষ হবে মসীহ-বিরোধী (অর্থাৎ, দাজ্জাল)-এর আবির্ভাব দ্বারা।[৫০]
৫০. [নোট-১২: হযরত হুযায়ফা (رضي الله عنه) থেকে দু’টি বর্ণনানুক্রমে ইবনে আবি শায়বা (৭:২৬৪ #৩৫৯১৯-৩৫৯২০)।]
সেই মহান সত্তার শপথ, যাঁর হাতে আমার প্রাণ! হযরত উসমান (رضي الله عنه)-এর হত্যাকারীদের প্রতি কেউই এক সরষে দানা পরিমাণ মহব্বত অন্তরে লালন করে মৃত্যুবরণ করবে না; তবে হ্যাঁ, সে দাজ্জালের দেখা যদি তার জীবনে পায়, তাহলে সে তাকে অনুসরণ করবে, নতুবা সে তার কবরে দাজ্জালকে বিশ্বাস করবে।” এটা স্পষ্ট যে হযরত হুযায়ফা (رضي الله عنه) মহানবী (ﷺ) এর কাছ থেকে এ কথা শুনেছিলেন, কেননা এ ধরনের কথা মতামতের ভিত্তিতে বলা যায় না।
❏ হাদিস ৪৩:
আত্ তাবারানী সহীহ সনদে হযরত (আবু) মাসউদ (رضي الله عنه) থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন:
قَالَ أَبُو مَسْعُودٍ : كُنَّا مَعَ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فِي غَزَاةٍ ، فَأَصَابَ النَّاسَ جَهْدٌ حَتَّى رَأَيْتُ الْكَآبَةَ فِي وَجْهِ الْمُسْلِمِينَ وَالْفَرَحَ فِي وُجُوهِ الْمُنَافِقِينَ ، فَلَمَّا رَأَى ذَلِكَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ : وَاللَّهِ لاَ تَغِيبُ الشَّمْسُ حَتَّى يَأْتِيَكُمُ اللَّهُ بِرِزْقٍ فَعَلِمَ عُثْمَانُ أنَّ اللَّهَ وَرَسُولَهُ سَيَصْدُقَانِ ، فَاشْتَرَى عُثْمَانُ أَرْبَعِينَ رَاحِلَةً بِمَا عَلَيْهَا مِنَ الطَّعَامِ ، فَوَجَّهَ إِلَى النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ تِسْعَةً مِنْهَا ، فَلَمَّا رَأَى ذَلِكَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَقَالَ : مَا هَذَا ؟ فَقَالُوا : أَهْدَى إِلَيْكَ عُثْمَانُ ، فَعُرِفَ الْفَرَحُ فِي وَجْهِ رَسُولِ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَالْكَآبَةُ فِي وُجُوهِ الْمُنَافِقِينَ ، وَرَأَيْتُ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَدْ رَفَعَ يَدَيْهِ حَتَّى رُؤِيَ بَيَاضُ إِبْطَيْهِ يَدْعُو لِعُثْمَانَ دُعَاءً مَا سَمِعْتُهُ دَعَا لأَحَدٍ قَبْلَهُ.
আমরা কোনো জ্বেহাদে মহানবী (ﷺ) এর সাথে ছিলাম যখন মুসলমানদের খাদ্য সংকট দেখা দেয়। আমি তাঁদের মুখমন্ডলে হতাশার ছাপ দেখতে পাই, আর এর বিপরীতে মোনাফেকদের চেহারায় দেখি আনন্দ। এই পরিস্থিতি দেখে রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেন, ‘আমি আল্লাহর নামে কসম করে বলছি, আল্লাহ তোমাদের জন্যে খাবার ব্যবস্থা না করা পর্যন্ত সূর্য অস্তমিত হবে না।’ হযরত উসমান (رضي الله عنه) আল্লাহ ও তাঁর রাসূল (ﷺ) এর ইচ্ছা নিশ্চিত জেনে চৌদ্দটি সওয়ার-ভর্তি খাবার এনে ওর মধ্যে নয়টি মহানবী (ﷺ) এর খেদমতে পেশ করেন। মুসলমানদের চেহারায় খুশির ভাব ফুটে ওঠে, পক্ষান্তরে মোনাফেকদের মুখ ভার হয়ে যায়। আমি দেখতে পাই মহানবী (ﷺ) (দোয়ায়) হাত তোলেন যতোক্ষণ না তাঁর বগলের সাদা অংশ দেখা যায়; তিনি হযরত উসমান (رضي الله عنه)-এর জন্যে এমন দোয়া করেন, যা আমি ইতিপূর্বে আর কারো জন্যেই তাঁকে করতে দেখি নি।” [৫১]
৫১. [নোট-১৩: হযরত ইবনে মাসউদ (رضي الله عنه) থেকে নয়, বরং হযরত আবু মাসউদ (رضي الله عنه) থেকে ইমাম আহমদ তাঁর ‘ফযায়েলে সাহাবা’ কেতাবে (১:২৩৪ #২৮৭), এবং আত্ তাবারানী দুর্বল সনদে সাঈদ ইবনে মোহাম্মদ আল-ওয়াররাক হতে নিজ ‘আল-কবীর’(১৭:২৪৯-২৫০ #৬৯৪) ও ‘আল-আওসাত’ (৭:১৯৫-১৯৬ #৭২৫৫) গ্রন্থগুলোতে বর্ণিত; যদিও আল-হায়তামী (৯:৮৫-৯৬=৯:১১৩-১১৫ #১৪৫২৩, #১৪৫৬০) ইমাম তাবারানী (رحمة الله)-এর সনদকে নির্ভরযোগ্য বলেছেন।]
❏ হাদিস ৪৪:
আল-বায়হাকী হযরত উরওয়া (رضي الله عنه) থেকে রওয়ায়াত করেন যে মহানবী (ﷺ) যখন হুদায়বিয়ায় উপস্থিত হন, তখন তিনি হযরত উসমান (رضي الله عنه)কে কুরাইশদের কাছে পাঠান এ কথা বলে,
أخبرهم أنا لم نأت لقتال ، وإنما جئنا عماراً ، وادعهم إلى الإسلام ، وأَمَرَه أن يأتي رجالاً بمكة مؤمنين ونساء مؤمنات ، فيبشرهم بالفتح ، وأن الله عز وجل مظهر دينه بمكة ، حتى لا يستخفى فيها بالإيمان . فانطلق عثمان ، فمر على قريش ، فقالوا : إلى أين ؟ فقال : بعثني رسول الله صلى الله عليه وسلم أدعوكم إلى الله وإلى الإسلام ، ويخبركم : أنه لم يأت لقتال ، وإنما جئنا عماراً . قالوا : قد سمعنا ما تقول ، فانفذ إلى حاجتك. .
তাদেরকে বলো, আমরা যুদ্ধ করতে আসি নি, শুধু ওমরাহ হজ্জ্ব ও ইসলামের দিকে দাওয়াত দিতে এসেছি।” তিনি আরও আদেশ করেন যেন হযরত উসমান (رضي الله عنه) মক্কাবাসী ঈমানদার নর-নারীদেরকে আসন্ন বিজয়ের খোশ-খবরী দেন এবং আল্লাহর ইচ্ছায় সেখানে ইসলাম প্রতিষ্ঠিত হলে তাঁদের ধর্ম-বিশ্বাস যে আর উপহাসের বিষয় হবে না, তাও জানাতে। হযরত উসমান (رضي الله عنه) কুরাইশদের কাছে হুযূর পাক (ﷺ) এর বার্তা পৌঁছে দেন, কিন্তু তারা তা প্রত্যাখ্যান করে এবং যুদ্ধ করার ঘোষণা দেয়। এমতাবস্থায় রাসূলে খোদা (ﷺ) সকল মুসলমানকে সমবেত করেন এবং আনুগত্যের শপথ নেন। এই সময় কেউ একজন উচ্চস্বরে বলেন,
ونادى منادي رسول الله (صلى الله عليه وسلم) ألا إن روح القدس قد نزل على رسول الله (صلى الله عليه وسلم)
দেখো, নিশ্চয় জিবরীল আমীন এখানে মহানবী (ﷺ)-এর কাছে অবতীর্ণ হয়েছেন।” মুসলমানগণও তখন নবী পাক (ﷺ)-কে ছেড়ে না যাবার অঙ্গীকার করেন। আল্লাহর মহিমায় এতে মূর্তি পূজারীরা ভয় পেয়ে যায় এবং এর দরুণ তারা ইতোপূর্বে যতো মুসলমানকে বন্দি করেছিল, তাঁদের সবাইকে ছেড়ে দেয়, আর সন্ধি স্থাপনের প্রস্তাব দেয়। হযরত উসমান (رضي الله عنه)র প্রত্যাবর্তনের আগে হোদায়বিয়ায় অবস্থানকালে মুসলমানগণ বলাবলি করতে থাকেন যে তিনি কাবায় পৌঁছে তওয়াফ করেছেন; এমতাবস্থায় হুযূর পূর নূর (ﷺ) বলেন,
فقال رسول الله صلى الله عليه وسلم ما أظنه طاف بالبيت ونحن محصورون.
“আমরা অবরুদ্ধ থাকাকালীন আমি মনে করি না উসমান (কাবাকে) তওয়াফ করবে।” তিনি ফিরে এলে পরে মানুষেরা তাঁকে বলেন,
فقال المسلمون اشتفيت يا أبا عبد الله من الطواف بالبيت فقال عثمان بئس ما ظننتم بي فوالذي نفسي بيده لو مكثت بها مقيما سنة ورسول الله (صلى الله عليه وسلم) مقيم بالحديبية ما طفت بها حتى يطوف بها رسول الله (صلى الله عليه وسلم) ولقد دعتني قريش إلى الطواف بالبيت فأبيت فقال المسلمون رسول الله (صلى الله عليه وسلم) كان أعلمنا بالله وأحسننا (২) ظنا.
আপনি কাবার তাওয়াফ করেছেন।” হযরত উসমান (رضي الله عنه) উত্তর দেন: “এই চিন্তা মাথা থেকে দূর করে দাও! সেই মহান সত্তার শপথ, যাঁর হাতে আমার প্রাণ! মহানবী (ﷺ)-কে হুদায়বিয়ায় রেখে আমি ওখানে এক বছরের জন্যে বসতি স্থাপন করলেও মহানবী (ﷺ) এর আগে আমি কাবাকে তাওয়াফ করতাম না। কুরাইশ গোত্র আমাকে তা করতে আমন্ত্রণ জানিয়েছিল, কিন্তু আমি তা ফিরিয়ে দেই।” অতঃপর মুসলমানগণ বলেন, “রাসূলুল্লাহ (ﷺ)ই আমাদের মাঝে আল্লাহকে সবচেয়ে ভাল জানেন এবং তিনি-ই সর্বোত্তম মতের অধিকারী।”[৫২]
৫২. [নোট-১৪: হযরত ‘উরওয়া (رضي الله عنه) থেকে এটি বর্ণনা করেন ইবনে আসাকির নিজ ‘তারিখে দিমাশ্ক’ গ্রন্থে (৩৯:৭৬-৭৮), আল-বায়হাকী তাঁর ‘আস্ সুনান আল-কুবরা’ পুস্তকে (৯:২১৮-২২১), এবং ইবনে আবি শায়বা; এ ছাড়া আংশিকভাবে ইবনে সা’আদ (২:৯৭)। দেখুন – ইবনে কাসীরের তাফসীর (৪:১৮৭), কানয (#৩০১৫২), এবং ‘আওন আল-মা’বুদ (৭:২৮৯)।]
❏ হাদিস ৪৫-৫০
____________________
হযরত আলী (رضي الله عنه)
❏ হাদিস ৪৫:
হযরত আবু রাফি’ (رضي الله عنه)র স্ত্রী হযরত সালমা রাদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা থেকে আত্ তাবারানী বর্ণনা করেন, যিনি বলেন:
إِنِّي لَمَعَ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بِالْأَسْوَاقِ فَقَالَ: «لَيَطْلُعَنَّ عَلَيْكُمْ رَجُلٌ مِنْ أَهْلِ الْجَنَّةِ» إِذْ سَمِعْتُ الْخَشْفَةَ، فَإِذَا عَلِيُّ بْنُ أَبِي طَالِبٍ رَضِيَ اللهُ عَنْه.ُ
আমি (এখনো) নিজেকে মহানবী (ﷺ) এর হুযূরে (উপস্থিতিতে) দেখতে পাচ্ছি যখন তিনি বলেন, ‘বেহেশতী এক ব্যক্তি এক্ষণে তোমাদের সামনে উপস্থিত হবে।’ আর দেখো! আমি কারো পদশব্দ শুনতে পাই, অতঃপর হযরত আলী (رضي الله عنه) (মজলিশে) হাজির হন।” [৫৩]
৫৩. [নোট-১৫: হযরত রাফি’ (رضي الله عنه)র স্ত্রী হযরত সালমা (رضي الله عنه) থেকে আত্ তাবারানী নিজ ‘আল-কবীর’পুস্তক (২৪:৩০১)। দেখুন আল-হায়তামী (৯:১৫৬-১৫৭ #১৪৬৯৩)।]
❏ হাদিস ৪৬:
হযরত আবু সাঈদ খুদরী (رضي الله عنه) থেকে আল-হাকিম ও আল-বায়হাকী বর্ণনা করেন, তিনি বলেন:
كُنَّا مَعَ رَسُولِ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ ، فَانْقَطَعَتْ نَعْلُهُ فَتَخَلَّفَ عَلِيٌّ يَخْصِفُهَا فَمَشَى قَلِيلاً ثُمَّ قَالَ : إِنَّ مِنْكُمْ مَنْ يُقَاتِلُ عَلَى تَأْوِيلِ الْقُرْآنِ كَمَا قَاتَلْتُ عَلَى تَنْزِيلِهِ فَاسْتَشْرَفَ لَهَا الْقَوْمُ ، وَفِيهِمْ أَبُو بَكْرٍ وَعُمَرُ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمَا ، قَالَ أَبُو بَكْرٍ : أَنَا هُوَ ، قَالَ : لاَ قَالَ عُمَرُ : أَنَا هُوَ ، قَالَ : لاَ ، وَلَكِنْ خَاصِفُ النَّعْلِ يَعْنِي عَلِيًّا فَأَتَيْنَاهُ فَبَشَّرْنَاهُ..
আমরা একবার রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর সাথে ছিলাম; এমন সময় তাঁর স্যান্ডেলের ফিতা ছিঁড়ে যায়। হযরত আলী (رضي الله عنه) তা সারাতে পেছনে পড়ে থাকেন। এমতাবস্থায় নবী পাক (ﷺ) কিছু দূর হাঁটার পর এরশাদ ফরমান, ‘সত্য হলো, তোমাদের মাঝে কেউ একজন কুরআন মজীদের ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ (তাফসীর) নিয়ে জেহাদ (কঠিন সাধনা, সংগ্রাম) করবে, যেমনিভাবে আমি সংগ্রাম করেছি এর নাযেল (অবতীর্ণ) হওয়া নিয়ে।’ হযরত আবু বকর (رضي الله عنه) জিজ্ঞেস করেন, ‘সেই ব্যক্তি কি আমি?’ হুযূর পূর নূর (ﷺ) উত্তরে ‘না’ বলেন। অতঃপর হযরত উমর (رضي الله عنه) জিজ্ঞেস করেন, ‘তাহলে কি আমি?’ রাসূলে করীম (ﷺ) এরশাদ ফরমান, ‘না, ওই স্যান্ডেল মেরামতকারী (খাসিফ আন-না’আল)।’ [৫৪]
৫৪. [নোট-১৬: হযরত আবু সাঈদ আল-খুদরী (رضي الله عنه) হতে সহীহ সনদে ইমাম আহমদ বর্ণিত, যা বিবৃত করেছেন আল-হায়তামী (৯:১৩৩); ‘আল-আরনাওত’ (১৫:৩৮৫ #৬৯৩৭)-এর বর্ণনানুযায়ী সহীহ সনদে ইবনে হিব্বান-ও; এটাকে সহীহ বলেছেন আল-হাকিম (৩:১২২), আর আয্ যাহাবী নিজ ‘তালখিস আল-’এলাল আল-মুতানাহিয়া কেতাবে (পৃষ্ঠা ১৮) বলেন: “এই হাদীসের সনদ ভাল।” এই হাদীস আরও বর্ণনা করেছেন আল-বাগাবী তাঁর ‘শারহ আল-সুন্নাহ’ গ্রন্থে’ (১০:২৩৩), আবু এয়ালা স্বরচিত ‘মুসনাদ’ বইয়ে (#১০৮৬), সাঈদ ইবনে মনসুর তাঁর ‘সুনান’ পুস্তকে, ইবনে আবি শায়বা (১২:৬৪), আবু নুয়াইম নিজ ‘হিলইয়া’ কেতাবে, এবং আল-বায়হাকী তাঁর ‘দালাইল আন্ নুবুওয়া’ গ্রন্থে’ (৬:৪৩৫) ও ‘শুয়াবুল ঈমান’ পুস্তকে।]
❏ হাদিস ৪৭:
আবু ইয়ালা ও আল-হাকিম নির্ভরযোগ্য রওয়ায়াত হিসেবে শ্রেণীভুক্ত করে হযরত ইবনে আব্বাস (رضي الله عنه)মা থেকে বর্ণনা করেন যে মহানবী (ﷺ) হযরত আলী (رضي الله عنه)কে বলেন:
قَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لِعَلِيٍّ : أَمَا إِنَّكَ سَتَلْقَى بَعْدِي جَهْدًا قَالَ : فِي سَلاَمَةٍ مِنْ دِينِي ؟ قَالَ : فِي سَلاَمَةٍ مِنْ دِينِكَ.
বাস্তবিকই তুমি আমার (বেসালের) পরে কঠিন সংগ্রাম/সাধনায় লিপ্ত হবে।” তিনি জিজ্ঞেস করেন, “আমার ধর্মকে নিরাপদে রেখে?” বিশ্বনবী (ﷺ) এরশাদ করেন, “হ্যাঁ।”[৫৫]
৫৫. [নোট-১৭: হযরত ইবনে আব্বাস (رضي الله عنه) থেকে আল-হাকিম (৩:১৪০=৩:১৫১) এবং ‘মুরসাল’ হিসেবে ইবনে আবি শায়বা (৬:৩৭২ #৩২১১৭)।]
❏ হাদিস ৪৮:
হযরত আলী (رضي الله عنه) থেকে আত্ তাবারানী বর্ণনা করেন, তিনি বলেন:
أُمِرْتُ بِقِتَالِ النَّاكِثِينَ، وَالْقَاسِطِينَ، وَالْمَارِقِينَ.
হযূর পূর নূর (ﷺ) আমার কাছ থেকে ওয়াদা নিয়েছেন যে আমাকে বিশ্বাসঘাতক, প্রতারক/ধোকাবাজ ও ধর্মচ্যুত (আল-নাকিসীন ওয়াল-ক্কাসিতীন ওয়াল-মারিক্কীন)-দের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে হবে। [৫৬]
৫৬. [নোট-১৮: হযরত আলী (رضي الله عنه) হতে হযরত আলী ইবনে রাবেয়া (رضي الله عنه) এবং তাঁর কাছ থেকে আল-বাযযার, আর আবু ইয়ালা (১:৩৯৭ #৫১৯)-এর সনদে রয়েছেন আল-রাবী’ ইবনে সাহল যিনি দুর্বল। দেখুন – ইবনে হাজর রচিত ‘লিসান আল-মিযান’ (২:৪৪৬ #১৮২৭); তবে ইবনে হাজর এর অর্থকে সত্য হিসেবে বিবেচনা করেন। একে হযরত আম্মার ইবনে এয়াসের (رضي الله عنه)-এর বর্ণিত বলেও উদ্ধৃত করেন আবু এয়ালা (৩:১৯৪ #১৬২৩)।]
❏ হাদিস ৪৯:
আল-হুমায়দী, আল-হাকিম এবং অন্যান্য হাদীসবেত্তা হযরত আবুল আসওয়াদ (আল-দুয়ালী) রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন:
عَنْ عَلِيٍّ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ ، قَالَ : أَتَانِي عَبْدُ اللهِ بْنُ سَلاَمٍ ، وَقَدْ وَضَعْتُ رِجْلِي فِي الْغَرْزِ ، وَأَنَا أُرِيدُ الْعِرَاقَ ، فَقَالَ : لاَ تَأْتِ الْعِرَاقَ ، فَإِنَّكَ إِنْ أَتَيْتَهُ أَصَابَكَ بِهِ ذُبَابُ السَّيْفِ ، قَالَ عَلِيٌّ : وَايْمُ اللهِ لَقَدْ قَالَهَا لِي رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَبْلَكَ.
হযরত আলী (رضي الله عنه) রেকাবে (অশ্বে পা রাখার স্থানে) পা রাখামাত্র হযরত আবদুল্লাহ ইবনে সালাম (رضي الله عنه) এসে তাঁকে বলেন, ‘ইরাকবাসীদের কাছে যাবেন না! যদি যান, তাহলে তরবারির আঘাতসমূহ আপনার ওপর পড়বে।’ হযরত আলী (رضي الله عنه) উত্তর দেন, ‘আল্লাহর নামে শপথ করে বলছি, আপনার এ কথা বলার আগে মহানবী (ﷺ)ও একই কথা বলেছেন’।”[৫৭]
৫৭. [নোট-১৯: হযরত আলী (رضي الله عنه) হতে হযরত আবুল আসওয়াদ (رضي الله عنه) হতে আল-হুমায়দী তাঁর ‘মুসনাদ’ গ্রন্থে (১:৩০ #৫৩), আল-বাযযার (২:২৯৫-২৯৬ #৭১৮), আবু ইয়ালা (১:৩৮১ #৪৯১), আত্ তাবারানী নিজ ‘আল-আহাদ’ পুস্তকে (১:১৪৪ #১৭২), ইবনে হিব্বান (১৫:১২৭ #৬৭৩৩), এবং আল-হাকিম (৩:১৪০=১৯৯০ সংস্করণের ৩:১৫১); এঁদের সবার এসনাদে শিয়াপন্থী আবদুল মালিক ইবনে আ’য়ান থাকায় আয্ যাহাবী এটাকে দুর্বল বলেছেন, তবে একে শক্তিশালী বিবেচনা করেছেন আল-হায়তামী (৯:১৩৮) এবং ’হাসান’ (নির্ভরযোগ্য) বলেছেন আল-আরনাওত; অপর দিকে জিয়া আল-মাকদেসী একে বিশুদ্ধ রওয়ায়াত বলে মত প্রকাশ করেন তাঁর প্রণীত ‘আল-মুখতারা’ গ্রন্থে’ (২:১২৮-১২৯ #৪৯৮)।]
❏ হাদিস ৫০:
আবু নুয়াইম হযরত আলী (رضي الله عنه) থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন:
قَالَ لِيَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «يَا عَلِيُّ إِنَّهَا سَتَكُونُ فِتْنَةٌ، وَسَتَحَاجُّ قَوْمَكَ» قُلْتُ: يَا رَسُولَ اللَّهِ، فَمَا تَأْمُرُنِي؟ فَقَالَ: «احْكُمْ بِالْكِتَابِ.
রাসূলুল্লাহ (ﷺ) আমাকে বললেন, ‘(ভবিষ্যতে) অনেক ফিতনা-ফাসাদ হবে এবং তোমার লোকেরা তোমার সাথে দ্বিমত পোষণ করবে।’ আমি জিজ্ঞেস করলাম, ‘আপনি আমাকে (ওই সময়) কী করার নির্দেশ দেন?’ তিনি উত্তর দিলেন, ‘কেতাব (কুরআন মজীদ) অনুযায়ী শাসন করো’।”[৫৮]
৫৮. [নোট-২০: হযরত আলী (رضي الله عنه) হতে দুর্বল বর্ণনাকারী শিয়াপন্থী আল-হারিস ইবনে আব্দিল্লাহ আল-আ’ওয়ার বর্ণিত এবং আত্ তাবারানী কৃত ‘আল-আওসাত’ গ্রন্থে (২:২৯-৩০ #১১৩২) ও আল-সগীর পুস্তকে (২:১৭৪ #৯৭৮) উদ্ধৃত যার মধ্যে শেষোক্ত কেতাবের এসনাদে রয়েছেন আতা’ ইবনে মুসলিম আল-খাফফাফ যিনি আল-উকায়লী প্রণীত আল-দু’আফা বইয়ের (৩:৪০৫ #১১৪৩) ভাষ্যানুযায়ী দুর্বল রাবী।]
❏ হাদিস ৫১-৫৫
____________________
❏ হাদিস ৫০-৫৫
❏ হাদিস ৫১:
আল-বায়হাকী হযরত আলী (رضي الله عنه) থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন:
خُطِبَتْ فَاطِمَةُ إِلَى رَسُولِ اللَّه صَلَّى اللَّه عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، فَقَالَتْ لِي مَوْلَاةٌ لِي: هَلْ عَلِمْتَ أَنَّ فَاطِمَةَ قَدْ خُطِبَتْ إِلَى رَسُولِ اللَّه صَلَّى اللَّه عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قُلْتُ لَا. قَالَتْ فَقَدْ خُطِبَتْ فَمَا يَمْنَعُكَ أَنْ تَأْتِيَ رَسُولَ اللَّه صَلَّى اللَّه عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَيُزَوِّجَكَ فَقُلْتُ وَعِنْدِي شَيْءٌ أَتَزَوَّجُ بِهِ؟ فَقَالَتْ إِنِّكَ إِنْ جِئْتَ رَسُولَ اللَّه صَلَّى اللَّه عليه وسلم زوجك فو اللَّه مَا زَالَتْ تُرَجِّينِي حَتَّى دَخَلْتُ عَلَى رَسُولِ اللَّه صَلَّى اللَّه عَلَيْهِ وسلم وَكَانَ لِرَسُولِ اللَّه صَلَّى اللَّه عَلَيْهِ وَسَلَّمَ جَلَالَةٌ وَهَيْبَةٌ فَلَمَّا قَعَدْتُ بَيْنَ يديه أفحمت فو اللَّه مَا اسْتَطَعْتُ أَنْ أَتَكَلَّمَ. فَقَالَ رَسُولُ اللَّه صَلَّى اللَّه عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مَا جَاءَ بِكَ أَلَكَ حَاجَةٌ؟ فَسَكَتُّ، فَقَالَ: مَا جَاءَ بِكَ. أَلَكَ حَاجَةٌ؟ فَسَكَتُّ، فَقَالَ: لَعَلَّكَ جِئْتَ تَخْطُبُ فَاطِمَةَ، فَقُلْتُ: نَعَمْ.
(হযরত) ফাতেমা রাদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহার পাণি গ্রহণের প্রস্তাব দেয়া হয় মহানবী (ﷺ) এর কাছে (কিন্তু তিনি তা নাকচ করেন); এমতাবস্থায় আমার এক দাসী (যাকে পরবর্তীকালে মুক্ত করা হয়) আমাকে বলে, ‘আপনি কি শুনেছেন হযরত ফাতেমা রাদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহার বিয়ের প্রস্তাব দেয়া হয়েছিল? তাহলে এ ব্যাপারে (পাণি গ্রহণের প্রস্তাব নিয়ে) মহানবী (ﷺ) এর সাথে দেখা করায় আপনাকে বাধা দিচ্ছে কী?’ আমি নবী পাক (ﷺ) এর সাথে দেখা করতে গেলাম, আর তাঁর চেহারা মোবারক ওই সময় সৌম্য ভাবময় ছিল। আমি তাঁর সামনে দাঁড়াতেই ভয়ে স্থির হয়ে গেলাম। আল্লাহর শপথ, আমি একটি কথাও বলতে পারলাম না। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) ফরমালেন, ‘কী কারণে তোমার এখানে আসা, বলো?’ আমি চুপ রইলাম। অতঃপর তিনি বললেন, ‘হয়তো তুমি ফাতেমার পাণি গ্রহণের প্রস্তাব নিয়ে এসেছ?’ আমি বললাম, জ্বি।”[৫৯]
৫৯. [নোট-২১: হযরত আলী (رضي الله عنه) থেকে বর্ণনা করেছেন আল-বায়হাকী তাঁর ‘আল-সুনান আল-কুবরা’ কেতাবে ৭:২৩৪ #১৪১২৯) এবং আল-দুলাবী নিজ ‘আল-যুররিয়্যা আল-তাহেরা’ পুস্তকে (পৃষ্ঠা ৬৪), যা ‘কানয’ গ্রন্থে’ (#৩৭৭৫৪) বিবৃত হয়েছে।]
❏ হাদিস ৫২:
আল-হাকিম নির্ভরযোগ্য রওয়ায়াত হিসেবে এবং আবু নুয়াইম হযরত আম্মার ইবনে ইয়াসের (رضي الله عنه) থেকে বর্ণনা করেন যে রাসূলে করীম (ﷺ) হযরত আলী (رضي الله عنه)কে বলেন:
الَّذِي يَضْرِبُكَ عَلَى هَذِهِ ، ( يعني قرن علي ) حتى تبتل هذه من الدم يعني لحيته
মানুষের মধ্যে সবচেয়ে বড় অপরাধী হলো সে-ই, যে ব্যক্তি তোমার এখানে (কপালের পাশে দেখিয়ে বলেন) আঘাত করবে, যতোক্ষণ না রক্তে এটা (দাড়ি দেখিয়ে বলেন) ভিজে যায়।” [৬০]
৬০. [নোট-২২: এই রওয়ায়াত এসেছে – (১) হযরত আম্মার ইবনে ইয়াসের (رضي الله عنه) হতে বিশুদ্ধ সনদে, যা বিবৃত হয়েছে ইমাম সৈয়ুতী কৃত ‘তারিখ আল-খুলাফা’ গ্রন্থে’ (পৃষ্ঠা ১৭৩), ইমাম আহমদ প্রণীত ‘মুসনাদ’ কেতাবে, আন-নাসাঈ লিখিত ‘আল-সুনান আল-কুবরা’ পুস্তকে (৫:১৫৩ #৮৫৩৮), আবু নুয়াইমের রচিত ‘দালাইল আন-নুবুওয়া’ বইয়ে (পৃষ্ঠা ৫৫২-৫৫৩ #৪৯০), এবং আল-হাকিম (৩:১৪০-১৪১), আর এ ছাড়াও সনদের মধ্যে একজন বর্ণনাকারীর অনুপস্থিতিতে হযরত আম্মার (رضي الله عنه) হতে তাবেঈ আল-বাযযার (৪:২৫৪ #১৪২৪); (২) হযরত জাবের ইবনে সামুরা (رضي الله عنه) হতে আবু নুয়াইম নিজ ‘দালাইল’ পুস্তকে (পৃষ্ঠা ৫৫৩ #৪৯১) – দেখুন আস-সৈয়ুতীর ‘খাসাইসুল কুবরা’ (২:৪২০); (৩) হযরত আলী (رضي الله عنه) হতে শিয়াপন্থী সালাবা ইবনে ইয়াযিদ আল-হিম্মানী রওয়ায়াতকৃত এবং লিপিবদ্ধ রয়েছে ইবনে সা’আদ (৩:৩৪), ইবনে আবি হাতিম, আবু নুয়াইম কৃত ‘দালাইল’ (পৃষ্ঠা ৫৫২ #৪৮৯), ইবনে আবদিল বারর প্রণীত ‘আল-এস্তিয়াব’ (৩:৬০), এবং আল-নুয়াইরী লিখিত ‘নিহায়াত আল-আরব’ (২০:২১১); (৪) হযরত আলী (رضي الله عنه) হতে সুহাইব, যা লিপিবদ্ধ আছে আত্ তাবারানীর ‘আল-কবীর’ গ্রন্থে’ (৮:৩৮-৩৯ #৭৩১১), ইবনে আবদিল বারর-এর ‘আল-এস্তিয়াব’ পুস্তকে (৩:১১২৫), ইবনে আসাকির, আল-র“য়ানী, ইবনে মারদুইয়াহ, এবং আবু ইয়ালা (১:৩৭৭ #৪৮৫)। দেখুন – ‘কানয’ (#৩৬৫৬৩, #৩৬৫৭৭-৮, #৩৬৫৮৭), ইবনুল জাওযীর ‘সিফাতুস্ সাফওয়া’ (১:৩৩২), এবং আল-হায়তামী (৯:১৩৬); (৫) হযরত আলী (رضي الله عنه) হতে হাইয়ান আল-আসাদী, যা লিপিবদ্ধ আছে আল-হাকিমে (৩:১৪২); এবং (৬) মওকুফ বর্ণনা – হযরত আলী (رضي الله عنه) হতে যায়দ ইবনে ওয়াহব, যা লিপিবদ্ধ করেছেন আল-হাকিম (৩:১৪৩) ও ইবনে আবি আসিম নিজ ‘আল-যুহদ’ কেতাবে (পৃষ্ঠা ১৩২)। আল-তালিদী এই বর্ণনা তাঁর ‘তাহযিব আল-খাসাইস’ পুস্তকে অন্তর্ভুক্ত করেন নি ।]
❏ হাদিস ৫৩:
আবু নুয়াইম অনুরূপ বর্ণনা করেছেন জাবের ইবনে সামুরা ও সুহাইব থেকে।
আল-হাকিম রওয়ায়াত করেন হযরত আনাস (رضي الله عنه)র কথা, তিনি বলেন:
دَخَلْتُ مَعَ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَلَى عَلِيِّ بْنِ أَبِي طَالِبٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ يَعُودُهُ وَهُوَ مَرِيضٌ، وَعِنْدَهُ أَبُو بَكْرٍ وَعُمَرُ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمَا، فَتَحَوَّلَا حَتَّى جَلَسَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، فَقَالَ أَحَدُهُمَا لِصَاحِبِهِ: مَا أُرَاهُ إِلَّا هَالِكٌ، فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: ্রإِنَّهُ لَنْ يَمُوتَ إِلَّا مَقْتُولًا، وَلَنْ يَمُوتَ حَتَّى يَمْلَأَ غَيْظًا.
আমি রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর সাথে অসুস্থ হযরত আলী (رضي الله عنه)কে দেখতে যাই, যিনি শয্যাশায়ী ছিলেন; এই সময় হযরত আবু বকর (رضي الله عنه) ও হযরত উমর (رضي الله عنه)-ও তাঁকে দেখতে সেখানে উপস্থিত ছিলেন। তাঁদের একজন অপরজনকে বলছিলেন, “আমার মনে হয় না তিনি বাঁচবেন।” এমতাবস্থায় রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এরশাদ ফরমান: “নিশ্চয় সে শাহাদাত ছাড়া মারা যাবে না এবং তার অন্তর যতোক্ষণ না তিক্ত হবে ততোক্ষণ সে মৃত্যুবরণ করবে না।”[৬১]
৬১. [নোট-২৩: আল-হাকিম (৩:১৩৯=১৯৯০ সংস্করণের ৩:১৫৫); অবশ্য এই বর্ণনাকে আয্ যাহাবী ‘সম্পূর্ণ ত্রুটিযুক্ত (ওয়াহিন) বলেছেন।]
❏ হাদিস ৫৪:
আল-হাকিম বর্ণনা করেন হযরত সাওর ইবনে মিজযা’আ (رضي الله عنه) থেকে, তিনি বলেন:
عَنْ ثَوْرِ بْنِ مَجْزَأَةَ، قَالَ: مَرَرْتُ بِطَلْحَةَ بْنِ عُبَيْدِ اللَّهِ يَوْمَ الْجَمَلِ وَهُوَ صَرِيعٌ فِي آخِرِ رَمَقٍ، فَوَقَفْتُ عَلَيْهِ فَرَفَعَ رَأْسَهُ، فَقَالَ: إِنِّي لَأَرَى وَجْهَ رَجُلٍ كَأَنَّهُ الْقَمَرُ، مِمَّنْ أَنْتَ؟ فَقُلْتُ: مِنْ أَصْحَابِ أَمِيرِ الْمُؤْمِنِينَ عَلِيٍّ، فَقَالَ: ابْسُطْ يَدَكَ أُبَايِعُكَ، فَبَسَطْتُ يَدِي وَبَايَعَنِي، فَفَاضَتْ نَفْسُهُ، فَأَتَيْتُ عَلِيًّا فَأَخْبَرْتُهُ بِقَوْلِ طَلْحَةَ، فَقَالَ: «اللَّهُ أَكْبَرُ اللَّهُ أَكْبَرُ صَدَقَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَبَى اللَّهُ أَنْ يَدْخُلَ طَلْحَةَ الْجَنَّةَ إِلَّا وَبَيْعَتِي فِي عُنُقِهِ.
উটের (যুদ্ধের) দিবসে আমি হযরত তালহা (رضي الله عنه)র পাশ দিয়ে যাচ্ছিলাম, আর ওই সময় তিনি (মাটিতে শায়িত অবস্থায়) প্রায় ইন্তেকাল করার পর্যায়ে ছিলেন। তিনি আমাকে বললেন, ‘তুমি কোন্ পক্ষ?’ আমি উত্তর দিলাম, ‘ঈমানদারদের খলীফার বন্ধুদের দলে।’ তিনি বললেন, ‘তোমার হাত বাড়িয়ে দাও যাতে আমি তোমার কাছে আনুগত্যের শপথ নিতে পারি।’ আমি আমার হাত বাড়িয়ে দিলাম এবং তিনি আমার প্রতি আনুগত্যের শপথ নিলেন। এর পরপরই তিনি ইন্তেকাল করলেন, আর আমিও হযরত আলী (رضي الله عنه)র কাছে ফেরত গিয়ে সমস্ত ঘটনা খুলে বললাম। তিনি বললেন, ‘আল্লাহ সর্বশ্রেষ্ঠ! রাসূলুল্লাহ (ﷺ) সত্য বলেছিলেন এই মর্মে যে আল্লাহতা’লা তালহাকে আমার প্রতি দৃঢ় আনুগত্যের শপথ গ্রহণ ছাড়া বেহেশতে নেবেন না’।” [৬২]
৬২. [নোট-২৪: আল-হাকিম (১৯৯০ সংস্করণের ৩:৪২১); তবে ইবনে হাজর তাঁর ’আল-আতরাফ’ (এতরাফ আল-মুসনাদ আল-মু’তালী বি আতরাফ আল-মুসনাদ আল-হাম্বলী) পুস্তকে এটাকে ‘অত্যন্ত দুর্বল সনদ’ বলেছেন যা বিবৃত হয়েছে ‘কানয’ পুস্তকে (#৩১৬৪৬)।]
❏ হাদিস ৫৫:
আল-বায়হাকী রওয়ায়াত করেন ইবনে এসহাকের মাধ্যমে, তিনি বলেন:
قَالَ: حَدَّثَنَا بُرَيْدَةُ بْنُ سُفْيَانَ، عَنْ مُحَمَّدِ بْنِ كَعْبٍ، أَنَّ كَاتِبَ رَسُولِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لِهَذَا الصُّلْحِ، كَانَ عَلِيَّ بْنَ أَبِي طَالِبٍ فَقَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى الله عليه وَسَلَّمَ: «اكْتُبْ هَذَا مَا صَالَحَ عَلَيْهِ مُحَمَّدُ بْنُ عَبْدِ اللهِ سُهَيْلَ بْنَ عَمْرٍو» ، فَجَعَلَ عَلِيٌّ يَتَلَكَأُ وَيَأْبَى أَنْ يَكْتُبَ إِلَّا مُحَمَّدٌ رَسُولَ اللهِ. فَقَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «اكْتُبْ فَإِنَّ لَكَ مِثْلَهَا تُعْطِيهَا وَأَنْتَ مُضْطَهَدٌ» ، فَكَتَبَ هَذَا مَا صَالَحَ عَلَيْهِ مُحَمَّدُ بْنُ عَبْدِ اللهِ سُهَيْلَ بْنِ عَمْرٍو .
এয়াযিদ ইবনে সুফিয়ান আমার কাছে বর্ণনা করেন মোহাম্মদ ইবনে কাআব হতে এই মর্মে যে, হুদায়বিয়ার সন্ধিতে রাসূলে করীম (ﷺ)-এর কাতেব বা লেখক ছিলেন হযরত আলী (رضي الله عنه); হুযূর পাক (ﷺ) তাঁকে বলেন, ‘লেখো, এগুলো মোহাম্মদ ইবনে আবদিল্লাহ (ﷺ) ও সোহায়ল ইবনে উমরের মধ্যকার সন্ধির শর্তাবলী।’ হযরত আলী এটা লিখতে রাজি হলেন না। তিনি ‘আল্লাহর প্রেরিত রাসূল’ বাক্যটি ছাড়া এই সন্ধিপত্র লিখতে সম্মত ছিলেন না। এমতাবস্থায় নবী পাক (ﷺ) তাঁকে বলেন, ‘এটা লেখো, কেননা নিশ্চয় তুমি অনুরূপ কিছু ভোগ করবে এবং অন্যায় আচরণের শিকার হবে’।”[৬৩]
৬৩. [নোট-২৫: আল-বায়হাকীর ‘দালাইল’ গ্রন্থে উদ্ধৃত যা ‘মাগাযী’ পুস্তকে ইবনে এসহাকের বর্ণনার অনুসরণে লিপিবদ্ধ; দেখুন – আস্ সৈয়ুতী কৃত ‘খাসাইসে কুবরা’ (১:১৮৮), ‘সীরাতে হালাবিয়্যা’ (২:৭০৭), এবং আল-খুযাঈ প্রণীত ‘তাখরিজাত আল-দেলালাত’ (১৯৯৫ সংস্করণের ১৭৮ পৃষ্ঠা=১৯৮৫ সংস্করণের ১৮৮ পৃষ্ঠা)।]
আর এটাই ঘটেছিল সিফফিন যুদ্ধের পরে হযরত আলী (رضي الله عنه) ও হযরত মোআবিয়া (رضي الله عنه)র মধ্যকার সন্ধির সময়।
❏ হাদিস ৫৬-৬৫
____________________
❏ হাদিস ৫৬:
ইমাম আবদুল্লাহ ইবনে আহমদ তাঁর ‘মুসনাদ’ গ্রন্থের পরিশিষ্টে এবং এর পাশাপাশি আল-বাযযার, আবু এয়ালা ও আল-হাকিম হযরত আলী (رضي الله عنه) থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন:
قَالَ : قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فِيكَ مَثَلٌ مِنْ عِيسَى عَلَيْهِ السَّلامُ أَبْغَضَتْهُ يَهُودُ حَتَّى بَهَتُوا أُمَّهُ ، وَأَحَبَّتْهُ النَّصَارَى حَتَّى أَنْزَلُوهُ بِالْمَنْزِلَةِ الَّتِي لَيْسَ بِهِ ” . ثُمَّ قَالَ : يَهْلِكُ فِيَّ رَجُلانِ , مُحِبٌّ مُفْرِطٌ يُقَرِّظُنِي بِمَا لَيْسَ فِيَّ ، وَمُبْغِضٌ يَحْمِلُهُ شَنَآنِي عَلَى أَنْ يَبْهَتَنِي.. ” .
মহানবী (ﷺ) আমাকে বলেন, ‘তোমার সাথে হযরত ঈসা আলাইহিস সালামের এক সাদৃশ্য আছে; ইহুদীরা তাঁকে এতো ঘৃণা করেছিল যে তারা তাঁর মাকে অপবাদ দিয়েছিল; আর খৃষ্টানরা এতো ভালোবেসেছে যে তারা তাঁকে এমন মর্যাদার আসনে আসীন করেছে যা তাঁর নয়’।[৬৪]”
৬৪. [নোট-২৬: আবু মরইয়াম এবং আবু আল-বখতারী কিংবা আবদুল্লাহ ইবনে সালামা – এই দু’জনের কোনো একজন থেকে আবদুল্লাহ ইবনে আহমদ নিজ ‘আল-সুন্নাহ’ গ্রন্থে (পৃষ্ঠা ২৩৩-২৩৪ #১২৬৬-১২৬৮), আল-হারিস ইবনে আব্দিল্লাহ হতে ইবনে আব্দিল বারর তাঁর ‘আল-এস্তিয়াব’ কেতাবে (৩:৩৭), আল-নুওয়াইরী স্বরচিত ‘নিহায়াত আল-আরব’ পুস্তকে (২০:৫) এবং আবু আল-হাদিদ কৃত ‘শরহে নাজহ আল-বালাগা’ (১:৩৭২)।]
❏ হাদিস ৫৭:
হযরত আলী (رضي الله عنه) বলেন: “আমার ব্যাপারে (আকিদাগত কারণে) দুই ধরনের লোক ধ্বংসপ্রাপ্ত হবে – আমার প্রতি বিদ্বেষভাব পোষণকারী যারা আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা রটায়; দ্বিতীয়ত যারা অতি ভক্তিসহ আমার মাত্রাতিরিক্তি প্রশংসা করে।”[৬৫]
৬৫. [নোট-২৭: এটা বর্ণনা করেছেন হযরত আলী (رضي الله عنه) হতে আবু এয়ালা তাঁর ‘মুসনাদ’ গ্রন্থে (১:৪০৬ #৫৩৪) এবং ইমাম আহমদও দুইটি দুর্বল সনদে নিজ ‘মুসনাদ’ কেতাবে – যাকে চিরাচরিত উদারতায় ‘হাসান’ বলেছেন শায়খ আহমদ শাকির (২:১৬৭-১৬৮ #১৩৭৭-১৩৭৮); আল-হাকিম (৩:১২৩)-ও এর সনদকে সহীহ বলেছেন, তবে আয্ যাহাবী এর দুর্বলতার প্রতি ইঙ্গিত করেন এতে আল-হাকাম ইবনে আব্দিল মালিক থাকার কারণে; একই মত পোষণ করেন ইবনুল জাওযী নিজ ‘আল-এলাল আল-মুতানাহিয়া’ পুস্তকে (১:২২৭ #৩৫৭)। আল-হায়তামী স্বরচিত ‘মজমাউল যাওয়াইদ’ গ্রন্থে’ (৯:১৩৩) একই কারণে ওপরের সকল এসনাদের দুর্বলতার প্রতি ইঙ্গিত করেন, তবে তিনি উল্লেখ করেন যে আল-বাযযার এটা বর্ণনা করেছেন তাঁর ‘মুসনাদ’ গ্রন্থে’। অনুরূপ দুর্বল সনদে এটা বর্ণনা করেন আল-বায়হাকী নিজ ‘আল-সুনান আল-কুবরা’ পুস্তকে (৫:১৩৭ #৮৪৮৮) এবং ইমাম আহমদ তাঁর ‘ফযাইলে সাহাবা’ কেতাবে (২:৬৩৯ #১০৮৭, ২:৭১৩ #১২২১, ২:৭১৩ #১২২২)।]
❏ হাদিস ৫৮:
আত্ তাবারানী ও আবু নুয়াইম হযরত জাবের ইবনে সামুরা (رضي الله عنه) থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন: “রাসূলুল্লাহ (ﷺ) হযরত আলী (رضي الله عنه)কে বলেন,
إِنَّكَ مُؤَمَّرٌ مُسْتَخْلَفٌ، وَإِنَّكَ مَقْتُولٌ، وَهَذِهِ مَخْضُوبَةٌ مِنْ هَذَا» لِحْيَتُهُ مِنْ رَأْسِهِ.
তোমাকে নেতৃত্ব ও খেলাফতের দায়িত্ব অর্পণ করা হবে; আর নিশ্চয় এটা (হযরত আলী (رضي الله عنه)র দাঁড়ি মোবারক) ওর (সে’র মোবারকের) দ্বারা লাল রংয়ে রঙ্গীন হবে’।”[৬৬]
৬৬. [নোট-২৮: হযরত জাবের ইবনে সামুরা (رضي الله عنه) থেকে বর্ণনা করেছেন আত্ তাবারানী নিজ ‘আল-কবীর’ (২:২৪৭ #২০৩৮) ও ‘আল-আওসাত’ (৭:২১৮ #৭৩১৮) গ্রন্থগুলোতে; তবে আল-হায়তামী (৯:১৩৬) অভিমত পোষণ করেন যে উভয়ের সনদ খুবই দুর্বল। শেষাংশের জন্যে ‘নোট-২২’ দেখুন।]
❏ হাদিস ৫৯:
আল-বুখারী ও মুসলিম হযরত সালামা (ইবনে আমির) ইবনে আল-আকওয়া (رحمة الله)-এর কথা উদ্ধৃত করেন, যিনি বলেন:
كَانَ عَلِيُّ بْنُ أَبِي طَالِبٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ، تَخَلَّفَ عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فِي خَيْبَرَ، وَكَانَ رَمِدًا، فَقَالَ: أَنَا أَتَخَلَّفُ عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، فَلَحِقَ بِهِ، فَلَمَّا بِتْنَا اللَّيْلَةَ الَّتِي فُتِحَتْ قَالَ: «لَأُعْطِيَنَّ الرَّايَةَ غَدًا أَوْ لَيَأْخُذَنَّ الرَّايَةَ غَدًا رَجُلٌ يُحِبُّهُ اللَّهُ وَرَسُولُهُ، يُفْتَحُ عَلَيْهِ» فَنَحْنُ نَرْجُوهَا، فَقِيلَ: هَذَا عَلِيٌّ فَأَعْطَاهُ، فَفُتِحَ عَلَيْهِ.
রাসূলুল্লাহ (ﷺ) খায়বারে অবস্থানকালে হযরত আলী (رضي الله عنه) চোখের পীড়ার কারণে সেখানে তাঁর সাথে যেতে পারেন নি। তিনি বলেন, ‘আমি কীভাবে পেছনে পড়ে থাকি এবং হুযূর পাক (ﷺ) এর সাথে না যাই?’ তাই তিনি বেরিয়ে পড়েন এবং মহানবী (ﷺ) এর সাথে গিয়ে যোগ দেন। খায়বারের যুদ্ধের আগের রাতে রাসূলে খোদা (ﷺ) বলেন, ‘আমি শপথ করে বলছি যে আল্লাহ ও তাঁর রাসূল (ﷺ) ভালোবাসেন এমন কাউকে আগামীকাল আমি পতাকা প্রদান করবো, যার ওসীলায় আল্লাহ বিজয় দান করবেন।’ আর দেখো! অপ্রত্যাশিতভাবে হযরত আলী (رضي الله عنه) আমাদের মাঝে আগমন করেন। সবাই বলেন, ‘এই তো আলী!’ এমতাবস্থায় রাসূলুল্লাহ (ﷺ) তাঁকে পতাকা হস্তান্তর করেন এবং আল্লাহ তাঁর মাধ্যমে বিজয় মন্ঞ্জুর করেন।”[৬৭]
৬৭. [নোট-২৯: সর্ব-হযরত সালামা ইবনে আল-আকওয়া’ (رضي الله عنه), সাহল ইবনে সা’আদ (رضي الله عنه) ও আবু হুরায়রা (رضي الله عنه) থেকে আল-বুখারী, মুসলিম ও ইমাম আহমদ]
❏ হাদিস ৬০:
(আল-বুখারী এবং) মুসলিম এটা হযরত সালামা ইবনে আল-আকওয়া’ [৬৮] হতে ভিন্ন শব্দ চয়নে বর্ণনা করেন, যা ওপরের বিবরণের সাথে যুক্ত:
فَبَصَقَ فِي عَيْنَيْهِ فَبَرَأَ.
অতঃপর রাসূলে খোদা (ﷺ) হযরত আলী (رضي الله عنه)র চোখে তাঁর পবিত্র থুথু মোবারক নিক্ষেপ করেন এবং তিনি সুস্থ হয়ে ওঠেন।”
৬৮. [নোট-৩০: প্রকৃতপক্ষে সাহল ইবনে সা’আদ
❏ হাদিস ৬১:
আল-হারিস ও আবু নুয়াইম আরেকটি ভিন্ন বর্ণনায় হযরত সালামা (رضي الله عنه)কে উদ্ধৃত করেন:
قَالَ سَلَمَةُ: فَخَرَجَ بِهَا وَاللهِ يُهَرْوِلُ هَرْوَلَةً وَإِنَّا خَلْفُهُ نَتَّبِعُ أَثَرَهُ حَتَّى رَكَزَ رَايَتَهُ فِي رَضَمٍ مِنَ الْحِجَارَةِ تَحْتَ الْحِصْنِ، فَاطَّلَعَ إِلَيْهِ يَهُوَدِيُّ مِنْ رَأْسِ الْحِصْنِ فَقَالَ: مَنْ أَنْتَ؟ فَقَالَ: عَلِيُّ بْنُ أَبِي طَالِبٍ، قَالَ: يَقُولُ الْيَهُوَدِيُّ: غُلِبْتُمْ وَلَمَا نَزَلَ عَلَى مُوسَى – أَوْ كَمَا قَالَ – فَمَا رَجَعَ حَتَّى فَتَحَ اللهُ عَلَى يَدَيْهِ فَبَصَقَ فِي عَيْنَيْهِ فَبَرَأَ..
এমতাবস্থায় হযরত আলী (رضي الله عنه) পতাকা নিয়ে দুর্গের ঠিক নিচে (মাটিতে) পুঁতে দেন, যা দেখে জনৈক ইহুদী দুর্গের সর্বোচ্চ স্থান থেকে নিচে তাঁর দিকে তাকিয়ে বলে, ‘আপনি কে?’ তিনি উত্তর দেন, ‘আলী।’ ইহুদী বলে, ‘মূসা আলাইহিস সালমের প্রতি অবতীর্ণ ঐশী গ্রন্থের শপথ, আপনারা বিজয়ী হবেন (‘উলুতুম)।’ আল্লাহতা’লা বিজয় দান না করা পর্যন হযরত আলী (رضي الله عنه) আর পিছু হটেন নি।”[৬৯]
৬৯. [নোট-৩১: হযরত সালামা হতে ইবনে হিশাম কৃত ‘সীরাহ’ (৪:৩০৫-৩০৬) এবং ইবনে হিব্বান প্রণীত ‘আল-সিক্কাত’ (২:১৩)।]
❏ হাদিস ৬২:
আবু নুয়াইম বলেন, “এতে ইশারা রয়েছে যে ইহুদীরা তাদের (ঐশী) কেতাবের বদৌলতে আগাম জানে কাকে তাদের বিরুদ্ধে লড়াই করতে পাঠানো হবে এবং বিজয় মন্ঞ্জুর করা হবে।” এই বর্ণনা সর্ব-হযরত ইবনে উমর, ইবনে আব্বাস, সা’আদ ইবনে আবি ওয়াক্কাস, আবু হুরায়রা, আবু সাঈদ আল-খুদরী, এমরান ইবনে হুসাইন, জাবের এবং আবু লায়লা আল-আনসারী (رضي الله عنه)মের কাছ থেকেও এসেছে। সবগুলোই আবু নুয়াইম রওয়ায়াত করেছেন, আর তাতে মহানবী (ﷺ) কর্তৃক হযরত আলী (رضي الله عنه)র চোখ মোবারকে পবিত্র থুথু নিক্ষেপ ও চোখ ভাল হয়ে যাওয়ার ঘটনা বিবৃত হয়েছে। [৭০]
৭০. [নোট-৩২: সম্ভবত আবু নুয়াইমের ‘মা’রেফাত আল-সাহাবা ওয়া ফাদলিহিম’ শীর্ষক পুস্তকে।]
❏ হাদিস ৬৩:
হযরত বুরায়দা (رضي الله عنه) থেকে আল-বায়হাকী ও আবু নুয়াইম বর্ণনা করেন যে মহানবী (ﷺ) বলেন:
لَأُعْطِيَنَّهَا غَدًا رَجُلًا يُحِبُّ اللهَ وَرَسُولَهُ، وَيُحِبُّهُ اللهُ وَرَسُولُهُ يَأْخُذُهَا عَنْوَةًগ্ধ ، وَلَيْسَ ثَمَّ عَلِيٌّ، فَتَطَاوَلَتْ لَهَا قُرَيْشٌ وَرَجَا كُلُّ رَجُلٍ مِنْهُمْ أَنْ يَكُونَ صَاحِبَ ذَلِكَ، فَأَصْبَحَ وَجَاءَ عَلِيٌّ عَلَى بَعِيرٍ لَهُ حَتَّى أَنَاخَ قَرِيبًا وَهُوَ أَرْمَدُ قَدْ عَصَبَ عَيْنَهُ بِشَقَّةِ بُرْدٍ قَطَرِيٍّ، فَقَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى الله عليه وسلّم مالك؟ قَالَ: رَمِدْتُ بَعْدَكَ، قَالَ ادْنُ مِنِّي، فَتَفَلَ فِي عَيْنِهِ فَمَا وَجِعَهَا حَتَّى مَضَى لِسَبِيلِهِ، ثُمَّ أَعْطَاهُ الرَّايَةَ..
আমি শপথ করে বলছি, কাল আমি যার হাতে পতাকা দেবো সে আল্লাহকে ভালোবাসে এবং তাঁর রাসূল (ﷺ)কেও, আর সে তা (নিজ) ক্ষমতাবলে নেবে।” এ কথা তিনি এমন সময় বলেন, যখন হযরত আলী (رضي الله عنه) সেখানে ছিলেন না। কুরাইশ গোত্র পতাকার জন্যে প্রতিযোগিতা আরম্ভ করে; ঠিক তখনি হযরত আলী (رضي الله عنه) চোখের পীড়া নিয়ে উটের পিঠে চড়ে সেখানে উপস্থিত হন। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) তাঁকে বলেন, “কাছে এসো।” তিনি এলে তাঁর পবিত্র চোখে হুযূর পাক (ﷺ) নিজ থুথু মোবারক নিক্ষেপ করেন এবং তাঁর হাতে পতাকা দেন। হযরত আলী (رضي الله عنه) বেসাল হওয়া অবধি আর কখনোই তাঁর পবিত্র চোখ পীড়িত হয় নি।[৭১]
৭১. [নোট-৩৩: এই বর্ণনা আত্ তাবারীর নিজ ‘তারিখ’ গ্রন্থে (২:১৩৭)।]
❏ হাদিস ৬৪:
ইমাম আহমদ, আবু এয়ালা, আল-বায়হাকী ও আবু নুয়াইম বর্ণনা করেন হযরত আলী (رضي الله عنه) হতে, যিনি বলেন:
مَا رَمِدْتُ وَلَا صُدِعْتُ مُنْذُ مَسَحَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَجْهِي، وَتَفَلَ فِي عَيْنَيَّ يَوْمَ خَيْبَرَ.
রাসূলুল্লাহ (ﷺ) আমার দু’চোখে যে দিন খাইবারে থুথু নিক্ষেপ করেন, সে সময় থেকে আজ পর্যন্ত ওতে আর কোনো রকম পীড়া বা জ্বালা-পোড়া অনুভব করি নি।”[৭২]
৭২. [নোট-৩৪: আত্ তাবারানী, সাঈদ ইবনে মানসুর, ইবনে আবি শায়বা এবং আত্ তাবারী যিনি এটাকে বিশুদ্ধ বলেছেন তিনিও বর্ণনা করেন; ইমাম আহমদ ও আবু এয়ালার বর্ণনায় শক্তিশালী ‘রাবী’দের এসনাদ বিদ্যমান বলে মত দিয়েছেন আল-হায়তামী ও ইবনে কাসীর নিজ ‘আল-বেদায়া’ পুস্তকে, এবং আল-বায়হাকী তাঁর ‘দালাইল’ কেতাবে; দেখুন – কানয (#৩৫৪৬৭-৩৫৪৬৮)। অপর এক বর্ণনায় হযরত আবু লায়লা (رضي الله عنه) হযরত আলী (رضي الله عنه)কে জিজ্ঞেস করেন কেন তিনি গ্রীষ্মের বস্ত্র শীতে এবং শীতের বস্ত্র গ্রীষ্মে পরেন। তিনি উত্তরে বলেন, “খায়বরের দিবসে আমার চোখ দুটো যখন পীড়াগ্রস্ত ছিল, তখন হুযূর পাক (ﷺ) আমাকে তলব করেন। আমি তাঁকে বলি, ‘এয়া রাসূলাল্লাহ (ﷺ)! আমার চক্ষু পীড়া দেখা দিয়েছে।’ তিনি আমার চোখে ফুঁ দিয়ে দোয়া করেন, ‘এয়া আল্লাহ! তার (আলীর) কাছ থেকে ঠান্ডা ও গরম অপসারণ করুন।’ ওই দিন থেকে আমি আর শীত বা গরম অনুভব করি নি।” হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আবি লায়লা (رضي الله عنه) হতে দুর্বল সনদে ইমাম আহমদ ও ইবনে মাজাহ এটা বর্ণনা করেছেন।]
❏ হাদিস ৬৫:
ইবনে এসহাক বর্ণনা করেন হযরত আম্মার ইবনে এয়াসের (رضي الله عنه) হতে, যিনি বলেন:
كُنْتُ أَنَا وَعَلِيُّ بْنُ أَبِي طَالِبٍ رَفِيقَيْنِ فِي غَزْوَةِ الْعُشَيْرَةِ مِنْ بَطْنِ يَنْبُعَ، فَلَمَّا نَزَلَهَا رَسُولُ اللهِ صلى اللَّه عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَقَامَ بِهَا شَهْرًا، فَصَالَحَ بِهَا بَنِي مُدْلِجٍ وَحُلَفَاءَهُمْ مِنْ بَنِي ضَمْرَةَ، فَوَادَعَهُمْ، فَقَالَ لِي عَلِيُّ بْنُ أَبِي طَالِبٍ: هَلْ لَكَ يَا أَبَا الْيَقْظَانِ أَنْ نَأْتِيَ هَؤُلَاءِ- نَفَرٌ مِنْ بَنِي مُدْلِجٍ يَعْمَلُونَ فِي عَيْنٍ لَهُمْ- نَنْظُرَ كَيْفَ يَعْمَلُونَ؟ فَأَتَيْنَاهُمْ، فَنَظَرْنَا إِلَيْهِمْ سَاعَةً، ثُمَّ غَشِيَنَا النَّوْمُ، فَعَمَدْنَا إِلَى صَوْرٍ [ (১৯) ] مِنَ النَّخْلِ فِي دَقْعَاءَ [ (২০) ] مِنَ الأرض فنمنا فيه فو الله مَا أَهَبَّنَا [ (২১) ] إِلَّا رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللَّه عليه وَسَلَّمَ بِقَدَمِهِ، فَجَلَسْنَا وَقَدْ تَتَرَّبْنَا مِنْ تِلْكَ الدَّقْعَاءِ، فَيَوْمَئِذٍ قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللَّه عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لِعَلِيٍّ: يَا أَبَا تُرَابٍ- لِمَا عَلَيْهِ مِنَ التُّرَابِ-[ (২২) ] ، فَأَخْبَرْنَاهُ بِمَا كَانَ مِنْ أَمْرِنَا، فَقَالَ: ألا أُخْبِرُكُمْ بِأَشْقَى النَّاسِ رَجُلَيْنِ؟ قُلْنَا: بَلَى يَا رَسُولَ اللهِ، فَقَالَ أُحَيْمِرُ [ (২৩) ] ثَمُودَ الَّذِي عَقَرَ النَّاقَةَ، وَالَّذِي يَضْرِبُكَ يَا عَلِيُّ عَلَى هَذِهِ، وَوَضَعَ رَسُولُ اللهِ صلى اللَّه عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَدَهُ عَلَى رَأْسِهِ، حَتَّى يَبُلَّ مِنْهَا هَذِهِ، وَوَضَعَ يَدَهُ عَلَى لِحْيَتِهِ [ (২৪) ] .
আল-’উশায়রা সফরে আমি ও হযরত আলী (رضي الله عنه) এক সাথে ছিলাম। যখন নবী পাক (ﷺ) সওয়ার থেকে অবতরণ করেন, তখন আমরা বনূ মিদলাজ গোত্রের মানুষদেরকে দেখি তাদের একটি ঝর্ণা ও খেজুর বাগানে (খামারের) কাজে ব্যস্ত। হযরত আলী ইবনে আবি তালেব (رضي الله عنه) আমাকে বলেন, ‘ওহে আবু আল-এয়াকযান! আমরা এই লোকদেরকে তাদের কাজে দেখতে গেলে কেমন হয়?’ আমি তাঁকে বলি, ‘আপনার যা মর্জি হয়।’ এমতাবস্থায় আমরা তাদের কাজ দেখতে যাই এবং বেশ কিছু সময় সেখানে অতিবাহিত করি। এরপর আমাদের (সম্ভবত সফরজনিত ক্লান্তির কারণে) ঘুম পায় এবং আমরা দু’জন কিছু দূরে নিম্নভূমিতে অবস্থিত একটি বালিয়াড়ি পেয়ে সেখানে ঘুমিয়ে পড়ি। আল্লাহর শপথ! আমাদের আর কেউ ঘুম থেকে ওঠান নি স্বয়ং মহানবী (ﷺ) ছাড়া, যিনি তাঁর কদম মোবারক দ্বারা আমাদের (স্পর্শ করে) জাগান। আমরা বালি দ্বারা আবৃত হয়ে গিয়েছিলাম। ওই দিন মহানবী (ﷺ) হযরত আলী ইবনে আবি তালেব (رضي الله عنه)-কে বালি দ্বারা আবৃত দেখে বলেন, ‘ওহে আবু তোরাব (বালির মানুষ)! আমি কি তোমাকে সবচেয়ে বদমায়েশ দু’জন ব্যক্তি সম্পর্কে বলবো না?’ আমরা বললাম, ‘এয়া রাসূলাল্লাহ (ﷺ)! অনুগ্রহ করে আমাদের বলুন।’ তিনি উত্তর দেন, ‘সামুদ গোত্রের সেই ফর্সা লোকটি যার দ্বারা মাদী উটের হাঁটুর পেছনের দিকের পেশিতন্তু কাটা পড়ে সেটা খোঁড়া হয়ে গিয়েছিল; আর ওহে আলী, দ্বিতীয় লোকটি হবে তোমার এখানে আঘাতকারী।’ এ কথা বলার সময় তিনি হযরত আলী (رضي الله عنه)র কপালের এক পাশে তাঁর পবিত্র হাত রাখেন এবং এরপর হযরত আলী (رضي الله عنه)র দাড়ি মোবারকে হাত রেখে আরও বলেন, ‘যতোক্ষণ না এটা (রক্তে) ভিজে যায়’।” [৭৩]
৭৩. [নোট-৩৫: হযরত আম্মার (رضي الله عنه) থেকে এটা বর্ণনা করেন ইবনে হিশাম (৩:১৪৪), ইমাম আহমদ নিজ ‘মুসনাদ’ (৩০:২৫৬-২৬৭ #১৮৩২১, #১৮৩২৬ হাসান লি-গায়রিহ) ও ‘ফযায়েলে সাহাবা’ পুস্তকে (২:৬৮৭), আল-বাযযার (#১৪১৭), আল-বুখারী তাঁর ‘আল-তারিখ আল-সগীর’ কেতাবে (১:৭১), আত্ তাহাবী স্বরচিত ‘শরহ মুশকিল আল-আসার’ (#৮১১), আদ্ দুলাবী তাঁর ‘আল-আসমা’ওয়াল কুনা’ গ্রন্থে’ (২:১৬৩), আত্ তাবারী নিজ ‘তারিখ’ কেতাবে (২:১৪), আবু নুয়াইম তাঁর ‘হিলইয়া’ (১:১৪১) ও ‘মা’আরিফাত আস্ সাহাবা’ পুস্তকে (#৬৭৫), আল-হাকিম (৩:১৪১=১৯৯০ সংস্করণের ৩:১৫১), আল-বায়হাকী স্বরচিত ‘দালাইল আন্ নুবুওয়া’ গ্রন্থে’ (৩:১২-১৩), এবং অন্যান্যরা; দেখুন – আল-হায়তামী ৯:১৩৬)।]
পরবর্তীকালে রাসূলুল্লাহ (ﷺ) যেভাবে বর্ণনা করেছিলেন, ঠিক সেভাবেই আল্লাহতা’লার ইচ্ছায় হযরত আলী (رضي الله عنه)র শাহাদাত হয় শেষ জমানার সবচেয়ে বদমায়েশ লোক আবদুর রহমান ইবনে মুলজাম আল-মুরাদীর দ্বারা।
❏ হাদিস ৬৬-৬৯
____________________
❏ হাদিস ৬৬:
আল-বায়হাকী হযরত আলী (رضي الله عنه) হতে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন: “ হুযূর পূর নূর (ﷺ) আমাকে বলেন,
سَيُولَدُ لَكَ بَعْدِي غُلَامٌ قَدْ نَحَلْتَهُ اسْمِي وَكُنْيَتِي..
আমার (বেসালের) পরে তোমার ঔরসে এক পুত্র সন্তান জন্মগ্রহণ করবে যাকে আমি আমার নাম ও কুনইয়া (বংশীয় ধারার নাম) প্রদান করলাম’।” এটা তিনি মোহাম্মদ ইবনে আল-হানাফিয়্যার দিকে ইঙ্গিত করে বলেছিলেন।[৭৪]
৭৪. [নোট-৩৬: অর্থাৎ, মোহাম্মদ ইবনে আলী ইবনে আবি তালেব। এটা বর্ণনা করেছেন ইবনে সা’আদ (৫:৯২), ইবনে আসাকির, এবং আল-বায়হাকী নিজ ‘দালাইল’ পুস্তকে; তবে ইবনে আল-জওযীর মতে এর সনদ দুর্বল; দেখুন – ‘কানযুল ‘উম্মাল’ (#৩৪৩৩০, #৩৭৮৫৪, #৩৭৮৫৮)।]
❏ হাদিস ৬৭:
হযরত ফাতেমা রাদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা
মহানবী (ﷺ) এর সীরাতে হযরত ইবনে আব্বাস (رضي الله عنه)মাকে উদ্ধৃত করা হয়েছে, তিনি বলেন:
عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ قَالَ: لَمَّا نَزَلَتْ: إِذَا جَاءَ نَصْرُ اللَّهِ وَالْفَتْحُ دَعَا رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَاطِمَةَ، فَقَالَ: «إِنَّهُ قَدْ نُعِيَتْ إِلَيَّ نَفْسِي» فَبَكَتْ، فَقَالَ: «لَا تَبْكِينَ، فَإِنَّكِ لَأَوَّلُ أَهْلِي لَاحِقٌ بِي» ، فَضَحِكَتْ. فَرَآهَا بَعْضُ أَزْوَاجِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، فَقَالَتْ لَهَا: رأَيْنَاكِ بَكَيْتِ، ثُمَّ ضَحِكْتِ. فَقَالَتْ: إِنَّهُ قَالَ لِي: «نُعِيَتْ إِلَيَّ نَفْسِي» فَبَكَيْتُ، فَقَالَ: «لَا تَبْكِي، فَإِنَّكِ أَوَّلُ أَهْلِي لَاحِقٌ بِي» ، فَضَحِكْتُ.
সূরা নসরের ’যখন আল্লাহর সাহায্য ও বিজয় আসবে’ – আয়াতটি নাযেল হলো, তখন রাসূলুল্লাহ (ﷺ) হযরত মা ফাতেমা রাদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহাকে তলব করেন এবং তাঁকে বলেন, ‘আমার জানাযা এইমাত্র ঘোষিত হয়েছে।’ এ কথা শুনে মা ফাতেমা (رضي الله عنه) কান্নাকাটি করেন। এমতাবস্থায় হুযূর পূর নূর (ﷺ) তাঁকে বলেন, ‘কেঁদো না, কেননা তুমিই সর্বপ্রথম আমাকে অনুসরণ করবে (পরলোকে)।’ এ কথা শুনে মা ফাতেমা রাদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা হাসেন। নবী পাক (ﷺ) এর কতিপয় স্ত্রী তাঁকে এ অবস্থায় দেখে জিজ্ঞেস করেন, ‘ওহে ফাতেমা রাদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা! আমরা তোমাকে প্রথমে কাঁদতে তার পর হাসতে দেখলাম কেন?’ তিনি উত্তর দেন, ‘মহানবী (ﷺ) আমাকে বলেছিলেন যে তাঁর জানাযা এইমাত্র ঘোষিত হয়েছে, তাই আমি কেঁদেছিলাম। অতঃপর তিনি আমাকে বলেন যে আমিই তাঁকে সর্বপ্রথম অনুসরণ করবো (পরলোকে); এ কারণে আমি হেসেছি’।”[৭৫]
৭৫. [নোট-৩৭: বিশুদ্ধ সনদে হযরত আব্বাস (رضي الله عنه) থেকে এটা বর্ণনা করেছেন আদ্ দারিমী, আত্ তাবারানী নিজ ‘আল-আওসাত’ কেতাবে (১:২৭১ #৮৮৩), এবং আংশিকভাবে আল-বুখারী ও ইমাম আহমদ; হযরত ইবনে উমর (رضي الله عنه) থেকেও অনুরূপ বর্ণনা লিপিবদ্ধ করেছেন আল-বাযযার ও আল-বায়হাকী; দেখুন – ইবনে কাসীর কৃত তাফসীর (৪:৫৬২)।]
নির্ভরযোগ্য রওয়ায়াতসমূহ অনুযায়ী মা ফাতেমা (رضي الله عنه) এই ঘটনার ছয় মাস পরই বেসালপ্রাপ্ত হন।
❏ হাদিস ৬৮:
ইমাম হাসান (رضي الله عنه) হযরত আবু বাকরাহ (رضي الله عنه) থেকে আল-বুখারী বর্ণনা করেন, তিনি বলেন:
إِنَّ ابْنِي هَذَا سَيِّدٌ وَلَعَلَّ اللَّهَ أَنْ يُصْلِحَ بِهِ بَيْنَ فِئَتَيْنِ عَظِيمَتَيْنِ مِنَ المُسْلِمِينَ..
মহানবী (ﷺ) হযরত হাসান (رضي الله عنه) সম্পর্কে বলেছেন, ‘আমার এই পুত্র (নাতি) মানুষদের সাইয়্যেদ (সরদার) এবং আল্লাহতা’লা হয়তো তার মাধ্যমে মুসলমানদের দুটো বড় দলকে আবার একতাবদ্ধ করবেন’।”[৭৬]
৭৬.[নোট-৩৮: হযরত আবু বাকরাহ (رضي الله عنه) থেকে চারটি সনদে ইমাম বুখারী এটা বর্ণনা করেছেন; এছাড়া আত্ তিরমিযী (হাসান সহীহ), আন্ নাসাঈ, আবু দাউদের রওয়ায়াতের পাশাপাশি ইমাম আহমদও তাঁর নিজস্ব চারটি সনদে এটা বর্ণনা করেন।]
❏ হাদিস ৬৯:
হুযূর করীম (ﷺ) যেভাবে বলেছিলেন ঠিক হুবহু সেভাবেই ঘটনাটি ঘটে। হযরত আলী (رضي الله عنه)কে যখন শহীদ করা হয়, তখন মানুষেরা হযরত হাসান (رضي الله عنه)র প্রতি আমৃত্যু আনুগত্যের শপথ গ্রহণ করেন। তাঁদের সংখ্যা চল্লিশ হাজারেরও বেশি ছিল এবং তাঁরা তাঁর পিতা হযরত আলী (رضي الله عنه)র চেয়েও তাঁর প্রতি বেশি অনুগত ছিলেন। তিনি সাত মাস যাবত ইরাক, খুরাসান ও ট্রান্সঅক্সিয়ানা অঞ্চলের খলীফা ছিলেন; এরপর হযরত মুয়াবিয়া (رضي الله عنه) তাঁর বিরুদ্ধে সৈন্য সমাবেশ করেন। আল-আম্বরে উভয় পক্ষ মুখোমুখি হলে ইমাম হাসান (رضي الله عنه) এবং হযরত মুয়াবিয়াও উপলব্ধি করেন যে রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ মুসলমানদের ব্যাপক প্রাণহানি ঘটাবে। উভয় দলের মধ্যস্থতাকারীরা একটি শান্তি-চুক্তির পক্ষে কাজ করেন এবং তাতে উপণীত হন। এরই ফলে আল্লাহর ইচ্ছায় মুসলমানগণ ভ্রাতিঘাতী যুদ্ধ এড়াতে সক্ষম হন এবং আল্লাহতা’লা তাঁর প্রিয়নবী (ﷺ) এর বাণী সত্যে পরিণত করেন –
“আমার এই নাতি মানুষদের সাইয়্যেদ এবং তার মাধ্যমে হয়তো আল্লাহতা’লা মুসলমানদের দুটো বড় দলকে আবার একতাবদ্ধ করবেন।” [মহানবী (ﷺ) সেজদারত অবস্থায় শিশু হযরত হাসান (رضي الله عنه) তাঁর পিঠে লাফিয়ে ওঠার বিশুদ্ধ রওয়ায়াতের অংশ এটা, যা আবু বাকরাহ (رضي الله عنه) থেকে ইমাম আহমদ বর্ণিত (৩৪:৯৮-৯৯ #২০৪৪৮ হাদীস সহীহ); আর অন্যান্যদের বর্ণনায় হযরত হাসান বসরী (رضي الله عنه)র কথা যুক্ত হয়েছে, তিনি বলেন: আল্লাহর শপথ, আল্লাহর শপথ, তাঁর শাসনের সময় এক শিস্তির বা আঙ্গুল পরিমাণ রক্তও ঝরে নি।”
অপর এক বর্ণনার শব্দচয়ন ছিল: “এবং আল্লাহতা’লা হয়তো মুসলমানদের দুটো বড় দলকে একতাবদ্ধ করার ক্ষেত্রে তাকে ব্যবহার করতে পারেন।”[৭৭]
৭৭.[নোট-৪০: কিছু মানুষ যখন হযরত হাসান (رضي الله عنه)কে শান্তি স্থাপনের কারণে কটাক্ষ করে বলেছিল ‘ওহে ঈমানদারদের জন্যে অপমানের পাত্র’, তখন তিনি তাদেরকে উত্তরে বলেন: “আগুনের চেয়ে অপমান শ্রেয়”; তিনি আরও বলেন, “আমি তাদেরকে অপমানিত করি নি, বরং রাজ্য বিস্তারের অভিপ্রায়ে তাদের রক্ত ঝরানোকে ঘৃণা করেছি।” এটা বর্ণনা করেছেন ইবনে আব্দিল বারর তাঁর ‘আল-এস্তিয়াব’ গ্রন্থে।]
❏ হাদিস ৭০-৭৫
____________________
ইমাম হুসাইন (رضي الله عنه)
❏ হাদিস ৭০:
আল-হাকিম ও আল-বায়হাকী বর্ণনা করেন হযরত উম্মে আল-ফযল বিনতে আল-হারিস রাদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা হতে, তিনি বলেন:
فَدَخَلْتُ يَوْمًا إِلَى رَسُولِ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَوَضَعْتُهُ فِي حِجْرِهِ ، ثُمَّ حَانَتْ مِنِّي الْتِفَاتَةٌ ، فَإِذَا عَيْنَا رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ تُهْرِيقَانِ مِنَ الدُّمُوعِ ، قَالَتْ : فَقُلْتُ : يَا نَبِيَّ اللهِ ، بِأَبِي أَنْتَ وَأُمِّي مَا لَكَ ؟ قَالَ : أَتَانِي جِبْرِيلُ عَلَيْهِ الصَّلاَةُ وَالسَّلاَمُ ، فَأَخْبَرَنِي أَنَّ أُمَّتِي سَتَقْتُلُ ابْنِي هَذَا فَقُلْتُ : هَذَا ؟ فَقَالَ : نَعَمْ ، وَأَتَانِي بِتُرْبَةٍ مِنْ تُرْبَتِهِ حَمْرَاءَ.
একদিন আমি হযরত রাসূলে আকরাম (ﷺ)কে দেখতে গেলাম, আমার কোলে ছিলেন ইমাম হুসাইন (رضي الله عنه)। আমি মহানবী (ﷺ) এর দিকে আবার ফিরে তাকাতেই দেখি তাঁর চোখ অশ্রু সজল। তিনি বললেন, ‘জিবরাইল আমীন এসে আমাকে বলেছেন যে আমার উম্মতের (কিছু লোক) আমার এই নাতিকে শহীদ করবে, আর তিনি ওর সমাধিস্থলের এক মুঠোভর্তি লাল মাটি নিয়ে এসেছেন’।”[৭৮]
৭৮.[নোট-৪১: হযরত উম্মে আল-ফযল থেকে বর্ণনা করেন আল-হাকিম (৩:১৭৬-১৭৭=১৯৯০ সংস্করণের ৩:১৯৪), যিনি আল-বুখারী ও মুসলিমের মানদন্ডে একে বিশুদ্ধ বলেছেন; তবে আয্ যাহাবী বলেন: “বরঞ্চ এটা যয়ীফ মুনক্কাতী, (কেননা) শাদ্দাদ হযরত উম্মে আল-ফযলের সাক্ষাৎ পাননি; অপর দিকে মোহাম্মদ ইবনে মুস’আব (আল-কিরকিসানী) দুর্বল (বর্ণনাকারী)।” তবে আয্ যাহাবী ‘সিয়্যার’ পুস্তকে (আরনাওত সংস্করণের ৩:২৮৯) অনুরূপ একটি বর্ণনা উদ্ধৃত করে বলেন যে ওর এসনাদ ’হাসান’ (নির্ভরযোগ্য/বিশুদ্ধ)।]
❏ হাদিস ৭১:
ইবনে রাওয়াহা, আল-বায়হাকী ও আবু নুয়াইম হযরত উম্মে সালামা রাদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা থেকে বর্ণনা করেন
عَنْ أُمِّ سَلَمَةَ أَنَّ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ اضْطَجَعَ ذَاتَ يَوْمٍ، فَاسْتَيْقَظَ وَهُوَ خَاثِرُ النَّفْسِ، وَفِي يَدِهِ تُرْبَةٌ حَمْرَاءُ يُقَلِّبُهَا، فَقُلْتُ: مَا هَذِهِ التُّرْبَةُ يَا رَسُولَ اللهِ؟ فَقَالَ: ” أَخْبَرَنِي جِبْرِيلُ عَلَيْهِ السَّلَامُ أَنَّ هَذَا يُقْتَلُ بِأَرْضِ الْعِرَاقِ – لِلْحُسَيْنِ – فَقُلْتُ لِجِبْرِيلَ عَلَيْهِ السَّلَامُ: أَرِنِي تُرْبَةَ الْأَرْضِ الَّتِي يُقْتَلُ بِهَا، فَهَذِهِ تُرْبَتُهَا “.
যে রাসূলুল্লাহ (ﷺ) একদিন ঘুমিয়ে পড়েন এবং ঘুম থেকে জেগে ওঠেন নিষ্ক্রিয় ভাব নিয়ে; তাঁর হাত ভর্তি ছিল এক মুঠো লাল মাটি দ্বারা যা তিনি এদিক-ওদিক নাড়াচাড়া করছিলেন। তিনি তাঁকে জিজ্ঞেস করেন, ‘এয়া রাসূলাল্লাহ (ﷺ)! এই মাটি কিসের?’ মহানবী (ﷺ) উত্তর দেন, ‘জিবরাইল আমীন আমাকে জানিয়েছেন যে এই বাচ্চা (ইমাম হুসাইন) ইরাক রাজ্যে শহীদ হবে, আর এই মাটি তার সমাধিস্থলের।’ [৭৯]
৭৯. [নোট-৪২: হযরত উম্মে সালামা (رضي الله عنه) থেকে এটা বর্ণনা করেন ইবনে আবি আসিম তাঁর ‘আল-আহাদ ওয়াল মাসানী’ কেতাবে (১:৩১০ #৪২৯), আত্ তাবারানী নিজ ‘আল-কবীর’ পুস্তকে (৩:১০৯, ২৩:৩০৮), এবং আল-হাকিম (১৯৯০ সংস্করণের ৪:৪৪০) মূসা ইবনে ইয়াকুব আল-জামি’র সূত্রে নির্ভরযোগ্য সনদে; অপর বর্ণনা এসেছে হযরত আয়েশা (رضي الله عنه) হতে আত্ তাবারানী কৃত ’আল-কবীর’ গ্রন্থে’ (৩:১০৭ #২৮১৫)। হযরত আয়েশা রাদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা বা উম্মে সালামা রাদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা থেকে আরও বর্ণনা করেন ইমাম আহমদ তাঁর ‘মুসনাদ’ ও ‘ফযায়েলে সাহাবা’ বইগুলোতে, তবে এক্ষেত্রে সনদ খুব দুর্বল।]
❏ হাদিস ৭২:
আবু নুয়াইম বর্ণনা করেন হযরত উম্মে সালামা থেকে, যিনি বলেন:
كَانَ الْحَسَنُ وَالْحُسَيْنُ رَضِيَ اللهُ عَنْهُمَا يَلْعَبَانِ بَيْنَ يَدَيِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فِي بَيْتِي، فَنَزَلَ جِبْرِيلُ عَلَيْهِ السَّلَامُ، فَقَالَ: يَا مُحَمَّدُ، إِنَّ أُمَّتَكَ تَقْتُلُ ابْنَكَ هَذَا مِنْ بَعْدِكَ. فَأَوْمأَ بِيَدِهِ إِلَى الْحُسَيْنِ. وَضَمَّهُ إِلَى صَدْرِهِ وَدِيعَةٌ عِنْدَكِ هَذِهِ التُّرْبَةُ فَشَمَّهَا رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَقَالَ: «وَيْحَ كَرْبٍ وَبَلَاءٍ» . قَالَتْ: وَقَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «يَا أُمَّ سَلَمَةَ إِذَا تَحَوَّلَتْ هَذِهِ التُّرْبَةُ دَمًا فَاعْلَمِي أَنَّ ابْنِي قَدْ قُتِلَ» قَالَ: فَجَعَلَتْهَا أُمُّ سَلَمَةَ فِي قَارُورَةٍ.
ইমাম হাসান ও ইমাম হুসাইন আমার ঘরে খেলছিলেন, এমন সময় জিবরাইল আমীন অবতীর্ণ হন এবং বলেন, ‘এয়া রাসূলাল্লাহ (ﷺ)! নিশ্চয় আপনার উম্মতের (কতিপয় লোক) আপনার এই নাতিকে (ইমাম হুসাইনের দিকে দেখিয়ে) শহীদ করবে।’ তিনি ইমামের সমাধিস্থলের কিছু মাটিও এনে দেন। হুযূর পাক (ﷺ) তা শুঁকেন এবং বলেন, ‘এতে কষ্ট ও ক্লেশ-যন্ত্রণার গন্ধ রয়েছে।’ অতঃপর আরও বলেন, ‘এই মাটি যখন রক্তে পরিণত হবে, তখন বুঝবে আমার নাতি শহীদ হয়েছে।’ অতএব আমি ওই মাটি একটি বয়ামে রেখে দেই।”[৮০]
৮০. [নোট-৪৩: এটা বর্ণনা করেন আত্ তাবারানী নিজ ‘আল-কবীর’ পুস্তকে (৩:১০৮ #২৮১৭), আল-মিযযী তাঁর ‘তাহযিব আল-কামাল’ কেতাবে (৬:৪০৯), এবং ইবনে হাজর স্বরচিত ‘তাহযিব আত্ তাহযিব’ গ্রন্থে’ (২:৩০০-৩০১) যাঁর এসনাদে দুর্বল বা প্রত্যাখ্যাত রাফেযী শিয়া ’আমর ইবনে সাবিত ইবনে হুরমুয আল-বাকরী বিদ্যমান। দেখুন – আল-হায়তামী (৯:১৮৯)।]
❏ হাদিস ৭৩:
ইবনে আসাকির বর্ণনা করেন মোহাম্মদ ইবনে ’আমর [৮১] ইবনে হাসান (رضي الله عنه) হতে, তিনি বলেন:
قال كنا مع الحسين رضي الله عنهـ بنهري كربلاء فنظر إلى شمر بن ذي الجوشن فقال صدق الله ورسوله قال رسول الله (صلى الله عليه وسلم) كأني أنظر إلى كلب أبقع (৫) يلغ في دماء أهل بيتي (৬) فكان شمر أبرص
আমরা ইমাম হুসাইন (رضي الله عنه)-এর সাথে কারবালার (পাশে) নদীতে ছিলাম [৮২] যখন তিনি শিমার ইবনে যি আল-জাওশানের দিকে তাকান এবং বলেন, ‘আল্লাহ ও তাঁর রাসূল (ﷺ) সঠিক বলেছেন! রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেন, “আমি দেখতে পাচ্ছি একটা ফোটা ফোটা দাগবিশিষ্ট কুকুর আমার ঘরের মানুষদের রক্তের ওপর লালা ঝরাচ্ছে”।’ শিমার কুষ্ঠরোগী ছিল।”[৮৩]
৮১. [নোট-৪৪: ইমাম নাবহানীর বইয়ে ‘উমর’ লেখা হয়েছে, যা ‘তারিখে দিমাশ্ক’ ও ‘কানযুল উম্মাল’ কেতাবগুলো থেকে সংশোধিত]
৮২. [নোট-৪৫: কুফা নগরীর চব্বিশ মাইল উত্তর পশ্চিমে]
৮৩.[নোট-৪৬: এটা বর্ণনা করেন ইবনে আসাকির ‘তারিখে দিমাশ্ক’ গ্রন্থে’ (২৩:১৯০); দেখুন – ‘কানয’ (#৩৭৭১৭) এবং আল-বেদায়া।]
❏ হাদিস ৭৪:
ইবনে আল-সাকান, আল-বাগাবী ও আবু নুয়াইম বর্ণনা করেন হযরত আনাস ইবনে আল-হারিস (رضي الله عنه) থেকে, তিনি বলেন:
عَنْ أَنَسِ بْنِ الْحَارِثِ قَالَ : قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لِلْحُسَيْنِ بْنِ عَلِيٍّ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ ” إِنَّ ابْنِي هَذَا يُقْتَلُ بِأَرْضٍ يُقَالُ لَهَا : كَرْبَلاءُ ، فَمَنْ شَهِدَ ذَلِكَ مِنْكُمْ فَلْيَنْصُرْهُ ” فَخَرَجَ أَنَسُ بْنُ الْحَارِثِ إِلَى كَرْبَلاءَ ، فَقُتِلَ مَعَ الْحُسَيْنِ بْنِ عَلِيٍّ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمَا. .
আমি মহানবী (ﷺ)কে বলতে শুনেছি, ‘নিশ্চয় আমার এই নাতি (হুসাইনকে ইশারা করে) কারবালা নামের এক জায়গায় শহীদ হবে। তোমাদের কেউ ওখানে তখন উপস্থিত থাকলে তাকে সাহায্য করো।’ অতঃপর হযরত আনাস ইবনে আল-হারিস (رضي الله عنه) কারবালা যান এবং ইমাম হুসাইন (رضي الله عنه)র সাথে শাহাদাত বরণ করেন।”[৮৪]
৮৪. [নোট-৪৭: হযরত সোহায়ম থেকে বর্ণিত, হযরত আনাস ইবনে মালিক (رضي الله عنه) থেকেও বর্ণিত আবু নুয়াইমের ‘দালাইল’ গ্রন্থে’ (পৃষ্ঠা ৫৫৪ #৪৯৩) এবং আল-বাগাবী ও ইবনে আল-সাকান তাঁদের সাহাবা-এ-কেরাম সংকলনে। দেখুন – ইবনে হাজর কৃত ’এসাবা’ (১:১২১), আল-বুখারী প্রণীত ‘আল-তারিখ আল-কবীর’ (২:৩০ #১৫৮৩); ‘আল-এস্তিয়াব’ (১:১১২); ‘আল-খাসাইস আল-কুবরা’ (২:৪৫১)।]
❏ হাদিস ৭৫:
আত্ তাবারানী বর্ণনা করেন হযরত আয়েশা রাদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা থেকে এই মর্মে যে হযরত রাসূলে করীম (ﷺ) এরশাদ ফরমান:
أَخْبَرَنِي جِبْرِيلُ أَنَّ ابْنِي الْحُسَيْنَ يُقْتَلُ بَعْدِي بِأَرْضِ الطَّفِّ، وَجَاءَنِي بِهَذِهِ التُّرْبَةِ، وَأَخْبَرَنِي أَنَّ فِيهَا مَضْجَعَهُ.
জিবরাইল আমীন আমাকে বলেছেন আমার নাতি হুসাইন আমার (বেসালের) পরে আল-তাফফ রাজ্যে (সিরিয়া ও ইরাকের মাঝে) শহীদ হবে, আর তিনি আমাকে এই মাটি এনে দিয়ে বলেছেন যে এতে হুসাইনের সমাধিস্থল হবে।”[৮৫]
৮৫. [নোট-৪৮: হযরত আয়েশা (رضي الله عنه) থেকে এটা বর্ণনা করেন আত্ তাবারানী তাঁর ‘আল-কবীর’ (৩:১০৭ #২৮১৪) ও ‘আল-আওসাত’ (৬:২৪৯ #৬৩১৬) গ্রন্থগুলোতে, যার এসনাদ দুর্বল বলেছেন আল-হায়তামী (৮:২৮৮, ৯:১৮৮); দেখুন – আস্ সৈয়ুতী রচিত ‘যেয়াদাত আল-জামে’ আস্ সগীর’ (#১৪৭) এবং কানয (#৩৪২৯৯)। সামগ্রিকভাবে এটা হাসান (বিশুদ্ধ), কেননা এই বর্ণনা ও উম্মে সালামা (رضي الله عنه)-এর বর্ণনা একে অপরকে সমর্থন দেয়।]
❏ হাদিস ৭৬-৭৮
____________________
❏ হাদিস ৭৬:
ইমাম আহমদ ও ইবনে সা’আদ এটা হযরত আলী (رضي الله عنه) থেকে বর্ণনা করেন নিম্নের প্রকাশভঙ্গিতে: “আমি অনুভব করি হুসাইন ফোরাত নদীর তীরে শহীদ হবে।”[৮৬]
৮৬. [নোট-৪৯: হযরত আলী রাদ্বিয়াল্লাহ আনহু থেকে এটা বর্ণনা করেছেন ইমাম আহমদ, আবু ইয়ালা (#৩৬৩), ইবনে আবি আসিম নিজ ‘আল-আহাদ ওয়াল মাসানী’ পুস্তকে (১:৩০৮ #৪২৭), ইবনে আবি শায়বা (৭:৪৮৭ #৩৭৩৬৭), আল-বাযযার (৩:১০১ #৮৮৪), আত্ তাবারানী তাঁর ‘আল-কবীর’ কেতাবে (৩:১০৫ #২৮১১), আল-মিযযী নিজ ‘’তাহযিব আল-কামাল’ গ্রন্থে’ (৬:৪০৭), এবং ইবনে হাজর স্বরচিত ’তাহযিব আল-তাহযিব’ বইয়ে (২:৩০০); আল-আরনাওত কৃত ‘মুসনাদ’ (২:৭৭-৭৮ #৬৪৮) ও আল-মুনাওয়ী (১:২০৪-২০৫)-এর ভাষ্যানুযায়ী ওপরের সবার এসনাদ দুর্বল, তবে আল-হায়তামী (৯:১৮৭) ও আল-মাকদেসীর প্রণীত ‘আল-মুখতারা’ কেতাবে প্রদত্ত ভাষ্য এর বিপরীত। পক্ষান্তরে আয্ যাহাবী দ্বিতীয় আরেকটি সনদ পেশ করেছেন যা প্রথমটিকে সমর্থন যোগায়। এই বর্ণনায় আছে ইমাম হুসাইন (رضي الله عنه)-এর অনুপস্থিতিতে তাঁকে হযরত আলী রাদ্বিয়াল্লাহ আনহুর সম্ভাষণ: “সাবরান আবা আবদ-আল্লাহ!” দেখুন – ইবনে তাইমিয়া রচিত ‘মিনহাজ’ (কুরতুবা সংস্করণে ৩:৩৬৭/৩৬৮ এবং আয্ যাহাবী প্রণীত ‘সিয়্যার’ (রেসালা সংস্করণের ৩:২৮৮=ফিকর সংস্করণের ৪:৪০৭-৪০৮)।]
❏ হাদিস ৭৭:
আল-বাগাবী তাঁর ‘মু’জাম’ পুস্তকে হযরত আনাস ইবনে মালিক (رضي الله عنه) থেকে রওয়ায়াত করেন, তিনি বলেন:
فَقَالَ: «يَا أُمَّ سَلَمَةَ احْفَظِي عَلَيْنَا الْبَابَ، لَا يَدْخُلْ عَلَيْنَا أَحَدٌ» . فَبَيْنَمَا هُمْ عَلَى الْبَابِ إِذْ جَاءَ الْحُسَيْنُ فَفَتَحَ الْبَابَ، فَجَعَلَ يَتَقَفَّزُ عَلَى ظَهْرِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، وَالنَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَلْتَئِمُهُ وَيُقَبِّلُهُ، فَقَالَ لَهُ الْمَلَكُ: تُحِبُّهُ يَا مُحَمَّدُ؟ قَالَ: «نَعَمْ» . قَالَ: أَمَا إِنَّ أُمَّتَكَ سَتَقْتُلُهُ، وَإِنْ شِئْتَ أَنْ أُرِيَكَ مِنْ تُرْبَةِ الْمَكَانِ الَّذِي يُقْتَلُ فِيهَا. قَالَ: فَقَبَضَ قَبْضَةً مِنَ الْمَكَانِ الَّذِي يُقْتَلُ فِيهِ، فَأَتَاهُ بِسَهْلَةٍ حَمْرَاءَ، فَأَخَذَتْهُ أُمُّ سَلَمَةَ فَجَعَلَتْهُ فِي ثَوْبِهَا. قَالَ ثَابِتٌ: «كُنَّا نَقُولُ إِنَّهَا كَرْبَلَاءُ».
বৃষ্টির ফেরেশতা (মিকাইল) মহানবী (ﷺ)-এর সাথে দেখা করার জন্যে মহান প্রভুর দরবারে আরয করেন এবং অনুমতি পান। তিনি দিনের এমন সময়ে রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর ঘরে আসেন যখন তিনি সাধারণতঃ মা উম্মে সালামা (رضي الله عنه)-এর সাথে থাকেন। হুযূর পূর নূর (ﷺ) বলেন, ‘উম্মে সালামা, দরজা বন্ধ রাখো এবং কাউকেই ঢুকতে দেবে না।’ তিনি দরজা বন্ধ করার জন্যে ওর কাছে যাওয়ামাত্র ইমাম হুসাইন (رضي الله عنه) ছুটে এসে ঘরে প্রবেশ করেন এবং মহানবী (ﷺ)-এর কাছে যান, যিনি নাতিকে জড়িয়ে ধরে চুমু খান। এমতাবস্থায় ফেরেশতা তাঁকে জিজ্ঞেস করেন, ‘আপনি কি তাঁকে খুব আদর করেন?’ রাসূলে পাক (ﷺ) জবাবে ’হ্যাঁ’ বলেন। ফেরেশতা বলেন, ‘নিশ্চয় আপনার উম্মতের কতিপয় লোক তাঁকে শহীদ করবে; আর আপনি যদি চান, তবে আমি আপনাকে দেখাতে পারি তাঁকে কোথায় শহীদ করা হবে।’ তিনি মহানবী (ﷺ)কে সেই জায়গা প্রদর্শন করেন এবং সেখান থেকে কিছু লালচে মাটি এনে তাঁকে দেন। এই মাটি উম্মে সালামা (رضي الله عنه) তাঁর চাদরের মধ্যে রাখেন।” সাবিত আল-বনানী (رحمة الله) যিনি এটা হযরত আনাস (رضي الله عنه) থেকে বর্ণনা করেছিলেন, তিনি বলেন, “আমাদের বিবেচনায় এই জায়গাটি ছিল কারবালা।”[৮৭]
৮৭. [নোট- ৫০: হযরত আনাস (رضي الله عنه) থেকে এটা বর্ণনা করেন ইমাম আহমদ, আবু এয়ালা (৬:১২৯ #৩৪০২), আল-বাযযার (#২৬৪২), আত্ তাবারানী নিজ ‘আল-কবীর’ গ্রন্থে (৩:১০৬ #২৮১৩), ইবনে হিব্বান (১৫:১৪২ #৬৭৪২ হাদীস হাসান), আবু নুয়াইম তাঁর ‘দালাইল’ কেতাবে (পৃষ্ঠা ৫৫৩ #৪৯২) আল-বায়হাকী স্বরচিত ‘দালাইল’ পুস্তকে (৬:৪৬৯), এবং আল-মিযযী নিজ ‘তাহযিব আল-কামাল’ গ্রন্থে (৬:৪০৮)। দেখুন – কানয (#৩৭৬৭২), আল-হায়তামী (৯:১৮৭-১৯০), আয্ যাহাবী নিজ ‘সিয়্যার’ কেতাবে (৩:২৮৮-২৮৯=ফিকর সংস্করণের ৪:৪০৮), এবং আস্ সৈয়ুতী কৃত ‘খাসাইস আল-কুবরা’ (২:৪৫০)।]
❏ হাদিস ৭৮:
মোল্লা আল-মওসিলীর বর্ণনায় হযরত উম্মে সালামা (رضي الله عنه) বলেন:
ثم ناولني كفا من تراب أحمر، وقال: “إن هذا من تربة الأرض التي يقتل فيها فمتى صار دما فاعلمي أنه قد قتل.
মহানবী (ﷺ) আমার কাছে এক মুঠো লাল মাটি হস্তান্তর করে বলেন, ‘সে (হুসাইন) যেখানে শহীদ হবে এটা সেই জায়গার মাটি। এটা যখন রক্তে পরিণত হবে, তখন জানবে যে তাকে শহীদ করা হয়েছে’।” হযরত উম্মে সালামা (رضي الله عنه) বলেন, “. قالت أم سلمة: فوضعته في قارورة عندي وكنت أقول: إن يوما يتحول فيه دما ليوم عظيم
ওই মাটি আমার কাছে থাকা একটি বয়ামে আমি রাখি, আর সেই ভয়াবহ দিনের আশংকায় থাকি যেদিন তা রক্তে পরিণত হবে।”[৮৮]
৮৮.[নোট- ৫১: এই রওয়ায়াত করেছেন আত্ তাবারানী নিজ ‘আল-কবীর’ গ্রন্থে (৩:১০৮ হাদীস নং ২৮১৭), আল-মিযযী তাঁর ‘তাহযিব আল-কামাল’ পুস্তকে ৬:৪০৯, এবং ইবনে হাজর স্বরচিত ‘তাহযিব আত্ তাহযিব’ কেতাবে ২:৩০০-৩০১ যা’তে রাফেযী শিয়া ‘আমর ইবনে সাবিত ইবনে হুরমুয আল-বাকরী সনদের মধ্যে আছে; এই লোক দুর্বল বা বর্জনীয়। দেখুন – আল-হায়তামী ৯:১৮৯।]
মহানবী (ﷺ) যেভাবে বলেছিলেন, ঠিক সেভাবেই ইমাম হুসাইন (رضي الله عنه)র শাহাদাত হয় কুফা নগরীর কাছে ইরাকের কারবালায়, যে জায়গাটি আত্ তাফফ নামেও পরিচিত। এই হাদীসে তাঁর আরেকটি বিস্ময়কর মো’জেযা হলো এই যে, হযরত উম্মে সালামা (رضي الله عنه) ইমাম হুসাইন (رضي الله عنه)র শাহাদাতের পরও জীবিত থাকবেন তা এতে প্রকাশিত হয়েছিল; আর বাস্তবে তাই ঘটেছিল।
সংশ্লিষ্ট প্রশ্নসমূহের উত্তর [অজ্ঞাত ভিন্ন মতাবলম্বীর প্রতি শায়খের জবাব]
____________________
“যে ব্যক্তি পাহাড়ে (মাথা দিয়ে) সজোরে ঢুঁ মারে (পাহাড় ধ্বংসের উদ্দেশ্যে)”
ওয়া আলাইকুম আস্ সালাম, ভাই এইচ তথা হাদ্দাদ।
(ভাই হানীর বক্তব্য) আমি ভেবেছিলাম মহানবী (ﷺ)-এর (গায়েবী) সব বিষয়ে না জানার ব্যাপারে কিছু সংখ্যক হাদীস সংকলন করবো (যেমন, ‘তা’বির আল-নাখল’ সংক্রান্ত বিখ্যাত হাদীসটি)। কিন্তু বিষয়টি পুনর্বিবেচনা করে এই চিন্তা বাদ দিয়েছি; কেননা এতে মহানবী (ﷺ)-এর ভাবমূর্তির প্রতি নেতিবাচক একটি ধারণার জন্ম হতে পারে।
(ড: হাদ্দাদের জবাব) বাহ্যিকভাবে আপনি সঠিক, খেজুর গাছের কলম সংক্রান্ত হাদীসটি এরকম ধারণা দেয় যে রাসূলুল্লাহ (ﷺ) সব কিছু জানতেন না। তবে আমি ভাবছি আপনি এই রওয়ায়াত (ও অনুরূপ অর্থের অন্যান্য দলিল) সম্পর্কে ইমামবৃন্দ কী ব্যাখ্যা দিয়েছেন তা জানতে আগ্রহী কি না? নাকি আমরা দু’জন স্রেফ বাহ্যিক (যাহেরী/আক্ষরিক) ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণের মধ্যেই আমাদের আলোচনাকে সীমাবদ্ধ রাখবো?
আর যদি আপনি শেষোক্ত পন্থাটি পছন্দ করে থাকেন (মানে যাহেরী অর্থ গ্রহণের পন্থা), তাহলে আপনি কেন নিম্নবর্ণিত হাদীসের বাহ্যিক অর্থ অবিরাম অস্বীকার করে চলেছেন:
أُوتِيتُ مَفَاتِيحَ كُلِّ شَيْءٍ إِلَّا الْخَمْسَ
আমি সকল বিষয়ের জ্ঞান প্রাপ্ত হয়েছি, উলূমে খামসা বা পাঁচটি ঐশী জ্ঞান ব্যতিরেকে? [৮৯]
[৮৯] আহমদ : আল মুসনাদ, ২:৮৫ হাদীস নং ৫৫৮৯।
(ক) তাবারানী : আল মু‘জামুল কাবীর, ১২:৩৬০ হাদীস নং ১৩৩৪৪।
আপনি যদি মনে করে থাকেন যে গাছে কলম করার হাদীসটি ওপরে উল্লেখিত হাদীসটির খেলাফ (কোনো কিছু প্রতিষ্ঠা করেছে), তাহলে তা প্রকাশ্যে বলছেন না কেন?
জ্ঞান দুই ধরনের। এগুলোর একটি দুনিয়ার সাথেই কেবল ওতপ্রোতভাবে যুক্ত। উদাহরণস্বরূপ, এমন জ্ঞান লাভ যা যুদ্ধ ক্ষেত্রে শত্রুর ওপর কৌশলগত আধিপত্য এনে দিতে পারে; যেমন শত্রুদের সৈন্য-সংখ্যা সম্পর্কে জানা। আল্লাহতা’লা (বাহ্যিকভাবে) তাঁর পছন্দের বান্দা ও অপছন্দের লোক নির্বিশেষে সবাইকেই এই জ্ঞান দান করতে পারেন। এটি ঘটেছিল যখন বদর যুদ্ধের আগে মক্কার কুফফার বাহিনীর সংখ্যা জানতে রাসূলুল্লাহ (ﷺ) কিছু বন্দিকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছিলেন। এভাবে তিনি নিজ এজতেহাদ (গবেষণালব্ধ সিদ্ধান্ত) দ্বারা নির্ধারণ করেন যে শত্রুদের সংখ্যা ৯০০ কী ১০০০ হবে। জ্ঞানের দ্বিতীয় কিসিম হলো, আল্লাহর তরফ থেকে জেনে যাওয়া যে তিনি বিজয় নিশ্চিত করবেনই। বদর যুদ্ধের আগে এটিও ঘটেছিল, যা’তে অন্তর্ভুক্ত ছিল কোন্ কুফফার কোথায় নিহত হবে সেসব স্থানের নির্ভুল জ্ঞান লাভ। (মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম কর্তৃক গৃহীত) পূর্ববর্তী (জ্ঞানের) প্রক্রিয়াটি কি শেষোক্ত জ্ঞানের সাথে অসামঞ্জস্যপূর্ণ?
গাছে কলম দেয়ার হাদীসটি প্রসঙ্গে সিদ্ধান্ত হলো, এক্ষেত্রে মহানবী (ﷺ)-এর কাছে একেবারেই একটি বৈষয়িক বা দুনিয়াবী ব্যাপারে পরামর্শ চাওয়া হয়েছিল, আর তিনি এতে ‘অ-বিশেষজ্ঞের মতামত’ বলতে যা বোঝায় তা-ই দিয়েছিলেন; ঠিক যেমনটি ঘটেছিল খন্দকের যুদ্ধের আগে প্রদত্ত তাঁর অভিমতের বেলায়ও। এটিকে তিনি ‘তোমাদের দুনিয়া’ বলে অভিহিত করেছিলেন। তবে এমন কিছু বিষয় আছে যা আমাদের দুনিয়া ধারণ করতে অক্ষম; যথা –
মহানবী (ﷺ)-এর সেই (অদৃশ্য) জ্ঞানের অংশ যা আল্লাহতা’লা তাঁর কাছে উন্মোচিত করেছেন এই উদ্দেশ্যের সূত্র ধরে যে, তিনি ‘তাঁরই প্রিয় বান্দাদের হাতে’ তা বাস্তবায়ন করবেন। সফল বাগান পরিচর্যা হয়তো সে (অদৃশ্য) জ্ঞানের অন্তর্ভুক্ত নয়। [৯০]
[৯০] বঙ্গানুবাদকের নোট: মহানবী (ﷺ) ‘সফল বাগান পরিচর্যা’ জানতেন না-ই বা বলি কীভাবে? জনৈক সাহাবী রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু-এর খেজুর বাগানে তিনি মো’জেযা প্রদর্শন করে বাম্পার ফলন এনে দেন। আসল ব্যাপার হলো, সর্ব ক্ষেত্রে তিনি ঐশী/আধ্যাত্মিক ক্ষমতা প্রয়োগ করতেন না। গাছে কলম করার ঘটনাটি ওই রকমই কিছু হবে।
(ভাই হানী বলেন) যাহোক, আমি এ ই-মেইল প্রেরণ করছি আপনাকে এ মর্মে জানাতে যে, ড: মুহাম্মদ সাঈদ রমাদান আল-বুতী সাহেব যিনি একজন কর্তৃত্বসম্পন্ন ইসলামী বিদ্বান হওয়ার ব্যাপারে আমরা দুজন-ই মনে হয় একমত, তাঁর কাছে আমি একটি প্রশ্ন উত্থাপন করেছিলাম। আর তিনি অনলাইনে আমাকে উত্তর দিয়েছেন।
(ড: হাদ্দাদের জবাব) আপনি ড: বুতী সাহেবকে জিজ্ঞেস করেছেন ভালো কথা, কিন্তু যে পদ্ধতিতে করেছেন তা সঠিক হয়নি!
হ্যাঁ, ড: বুতী – আল্লাহ তাঁকে আশীর্বাদ করুন – একজন প্রথম সারির কর্তৃত্বশীল সুন্নী আলেম। কিন্তু তবু এটা একটা বাস্তবতা যে তিনি কখনো কখনো এমন দৃষ্টিভঙ্গি গ্রহণ করেন যা একান্ত-ই তাঁর নিজস্ব বৈশিষ্ট্যমণ্ডিত, কখনো মৌলিক প্রামাণ্য দলিলের সাথে সম্পৃক্ত, আবার কখনো বা পদ্ধতি ও পরিভাষার সাথে সম্পর্কিত। তাঁর সমস্যাগুলোর মধ্যে একটি হলো, তিনি আল্লাহ পাকের সিফাত সম্পর্কে আলোচনা করার সময় আধুনিক বা দার্শনিক পরিভাষা ব্যবহার করেন, যার দরুন তাঁকে যারা অপছন্দ করেন এটা তাদেরকে নির্দ্বিধায় তাঁর প্রতি তাকফিরী ফতোয়া আরোপের অনুমতি প্রদান করে [ড: বুতীর উচ্চতর শিক্ষা ছিল দর্শনশাস্ত্রে]। আরেকটি সমস্যা হলো, তাঁর পিতার (মোল্লা রমাদান কুদ্দেসা সিররূহ’র) একমাত্র শিশু হিসেবে তাঁরই দ্বারা মূলতঃ শিক্ষাপ্রাপ্ত হয়ে তিনি এমন এক পর্যায়ের ব্যক্তিতান্ত্রিক বা আত্মকেন্দ্রিক মানুষ যে যাদেরকে তিনি খণ্ডন করেন, তাদের মতো হুবহু একই ভাষায় কথা বলেন: “হে ভ্রাতা, ক্বুরআন ও সুন্নাহ’কে আপনার মুর্শীদ (পথপ্রদর্শক) হতে দিন।” আর তিনি উত্থাপিত আপত্তির প্রতি অতিমাত্রায় অসহিষ্ণু-ও। তিনি কখনোই নিজের মত পরিবর্তন করেন না, এমন কি যদি অকাট্য পাল্টা দলিলও পেশ করা হয়; উপরন্তু, সেটা তাওয়াতুরের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য, যদি তাঁর মনে না ধরে। জনৈক উদ্ভববিজ্ঞানী/পরিবার-বিশেষজ্ঞ আমাকে জানান, ড: আল-বুতী তাঁকে একবার বলেন, “আমাদের যুগে আহলে বায়ত আছে? হে ভ্রাতা, আপনার লজ্জা করা উচিত। এখন কি আর এমন কোনো কিছু আছে?” তিনি এরকম বিশ্বাস অন্তরে লালন করেন, মরক্কোর উলামাবৃন্দ এ কথা জানলে তিনি আর সেখানে মুখ দেখাতে পারবেন কি না সন্দেহ। এগুলো হচ্ছে কিছু কিছু বিষয় যা ঘনঘন যোগাযোগের মাধ্যমে কেউ জানতে পারেন, আর এগুলোকে অবহেলাও করা যায় না; যদিও কোনো শায়খের ভুল-ভ্রান্তির হিসেব করা সম্ভব হওয়াটাও তাঁর জন্যে যথেষ্ট এক সম্মান। আর আল্লাহরই প্রতি হবে আমাদের প্রত্যাবর্তন।
একবার পরপর দুই সপ্তাহ ধরে (প্রভাষণে) ড: বুতীকে ‘রিয়াদ আস্ সালেহীন’ পুস্তকের ‘পারস্পরিক চুম্বন’ অধ্যায় সম্পর্কে আমি বলতে শুনেছি: “(বুযূর্গানে দ্বীনের) হস্ত মোবারক চুম্বন সালাফ-বৃন্দের আদব (শিষ্টাচার) নয়, সুন্নাহ (রীতি)-ও নয়; আর তাঁদের কেউই এরকম দাবিও করেননি।” কতিপয় দ্বীনী ভাই জানতেন আমার কাছে এর পরিপন্থী দলিল-প্রমাণ বিদ্যমান, তাই তাঁরা তা ড: বুতীকে প্রদর্শন করতে এবং তাঁর মন্তব্য জানতে আমায় অনুরোধ করেন। আমি চার পৃষ্ঠাসম্বলিত ছাপানো প্রামাণিক দলিল তাঁকে প্রদান করি: এতে ছিল নবী (ﷺ)-এর সুন্নাহ-জ্ঞাপক অসংখ্য হাদীস, সাহাবায়ে কেরাম রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুম -এর বাণী (আসার) ও রওয়ায়াত (বর্ণনা), তাবেঈনবৃন্দেরও বাণী ও বর্ণনা, ইমাম আল-আওযাঈ (رحمة الله)-এর যুগ হতে ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল (رحمة الله)-এর জমানার মুজতাহিদ ইমামবৃন্দের সমস্ত ফতোয়া। অতঃপর এই বিষয়ে আমার সংগৃহীত চার মাযহাবের ফতোয়াগুলোও আমি যুক্ত করি। তৃতীয় সপ্তাহে তিনি এরকম কিছু একটা বলেন: “জনৈক (দ্বীনী) ভাই আমার কাছে এ বিষয়ে কিছু আপত্তি উত্থাপন করেছেন, কিন্তু তবু আমি এটাকে বিশ্বাসযোগ্য মনে করি না এবং এখনো বলি: *আমি* হস্ত চুম্বন পছন্দ করি না এবং এটা যে সুন্নাহের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ তাতে বিশ্বাসও করি না।” আরেক কথায়, তিনি তাঁর সার্বিকীকরণকে প্রত্যাহার করে আপন বক্তব্যকে ব্যক্তিগত ফতোয়ায় সীমাবদ্ধ করেছেন, যার প্রতি কোনো প্রকারেরই আপত্তি (আমার) নেই। তবে তাঁর এই কথা প্রত্যাহার করার সময় তিনি তা স্বীকার করেননি, আর এ কথাও কাউকে জানান নি যে তিনি ইতিপূর্বে যা বলেছিলেন তা হতে সত্য একেবারেই ভিন্ন কিছু। এটাই হচ্ছে তাঁর রীতিনীতি। আল্লাহ পাক আমাকে ও তাঁকে মাফ করুন।
(ভাই হানী বলেন) ড: শায়খ বুতীকে আমার প্রেরিত প্রশ্নগুলোর ও তাঁর প্রদত্ত উত্তরের ভাষান্তর নিচে উপস্থাপন করা হলো:
(ড: হাদ্দাদের জবাব) আপনাকে ধন্যবাদ সেসব প্রশ্নোত্তর পোস্ট করার জন্যে। আমি এগুলোকে আলাদাভাবে প্রশ্ন ও উত্তর শিরোনামযুক্ত করেছি এবং এস্টেরিক্স যোগ করেছি যাতে বোঝা যায় ড: বুতী আসলে কী জবাব দিয়েছেন এবং কী কী উত্তর দেননি…
প্রশ্ন: এলমে গায়ব তথা খোদায়ী অদৃশ্য জ্ঞানের কতোখানি মহানবী (ﷺ)-এর জানা?
উত্তর: অদৃশ্য জ্ঞানের বিষয়গুলোর মধ্যে যা কিছু আল্লাহ পাক তাঁর রাসূল (ﷺ)-কে জানানোর জন্যে বেছে নিয়েছেন, তা-ই তিনি তাঁকে দান করেছেন। শুধু আল্লাহ পাকই সেগুলো সম্পর্কে ভালো জানেন। (তবে) তিনি আপনাদেরকে সেগুলো গণনা করতে বা মুখস্থ করতে আদেশ করেননি।
(ড: হাদ্দাদের নোট) চমৎকার গা বাঁচানো উত্তর প্রদান, যদিও এটা আংশিক এবং এতে প্রশ্নের মূল বিষয়কে এড়ানো হয়েছে।
প্রশ্ন: ‘উলূমে খামসা’ তথা আল্লাহতা’লার খাস্ পাঁচটি জ্ঞান ছাড়া বাকি সব বিষয়ের জ্ঞান কি তিনি হুযূর পাক (ﷺ)-কে দান করেছেন?
উত্তর: (নিরুত্তর)
প্রশ্ন: কতিপয় ‘ভণ্ড সূফী’র পক্ষে কি এ দাবি করার অনুমতি আছে যে উলূমে খামসা সম্পর্কে *তিনি জানতেন*?
উত্তর: আল্লাহতা’লার পাঁচটি (খাস্) অদৃশ্য জ্ঞান *জানার দাবি করাটা কারোরই জন্যে অনুমতিপ্রাপ্ত নয়*। সূফী দাবিদার যে কেউ এরকম বলে থাকলে সে একজন মিথ্যুক ও ভণ্ড।
(ড: হাদ্দাদ বলেন) এখানে (দুর্বল বাক্যে সাজানো) প্রশ্নের বিচ্যুতি ঘটেছে এই মর্মে যে, এতে মহানবী (ﷺ)-কে ছেড়ে অন্যদেরকে উদ্দেশ্য করা হয়েছে; আর তাঁকেই বাদ দেয়া হয়েছে। ’ভণ্ড সূফী’দের অপ্রয়োজনীয় উল্লেখ দ্বারা কিছু কষ্টকল্পিত মতবাদের ভূতকেও টেনে আনা হয়েছে, যার দরুন ড: বুতী হয়তো অনুভব করেছেন এসবকে শক্ত হাতে নিয়ন্ত্রণ করা উচিত, আর আমরাও এমন একটি সম্ভাব্য কৌতূহলোদ্দীপক উত্তর পাওয়ার সুযোগ হারিয়েছি যেটা ভাই হানী নিচের সহজ প্রশ্নটি করলেই পাওয়া যেতো: “রাসূলুল্লাহ (ﷺ) উলূমে খামসা জানেন বলার অনুমতি আছে কি?”
অতএব, আমি সিদ্ধান্ত নিচ্ছি যে আপনার (ভাই হানী) অনুবাদ অনুযায়ী ড: বুতী প্রকৃতপক্ষে আপনার প্রশ্নের উত্তর দেননি, বরং তিনি সেগুলোকে নিরাপদ দূরত্বে রেখেছেন, আর সময়ের দাবি বলে নিজে যা বিবেচনা করেছেন সে মোতাবেক সেগুলোকে পরিবর্তন করেছেন, আল্লাহ তাঁকে বাঁচান। যেমন তিনি বলেছেন, ‘কারোর অনুমতি নেই’, ‘যে কেউ দাবি করলে’ ইত্যাদি। কিন্তু আমরা তো ‘কারো’ বা ‘যে কেউ’ সম্পর্কে কথা বলছি না! তাই নয় কি (মানে মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম সম্পর্কেই কি বলছি না)?
একবার তিনি (ড: বুতী) আমাদের বলেন, “কেউ একজন আমায় একটি সৃষ্টি সম্পর্কে প্রশ্ন করেন, যেটা জগতের শেষ প্রান্তগুলো পর্যন্ত পৌঁছুতে সক্ষম, আর কা’বা শরীফের তওয়াফ-ও করে থাকে, উপরন্তু আরশের আশপাশে বসবাস করে; অথচ আমি যখন তাদেরকে (প্রশ্নকারীদেরকে) ওযূ’র স্তম্ভগুলো সম্পর্কে প্রশ্ন করি, তখন তারা উত্তর দিতে পারেনি। হে ভ্রাতা, এটা কী ধরনের অর্থহীন বিদ্যা?”
যাহোক (হানী ভাই), ‘কতিপয় ভণ্ড সূফীর দাবি কি অনুমতিপ্রাপ্ত’ মর্মে আপনার প্রশ্নের ধরনে আমি বিস্ময়কর উদ্ভাবনপটুতা খুঁজে পাই। আল্লাহতা’লা বর্তমানকালের মুফতীদের প্রতি অনুগ্রহ করুন, আর সেসব মানুষকেও হেদায়াত দিন যারা মনে করে যে তারা মুফতীদের নাকে দড়ি লাগিয়ে নিজেদের ইচ্ছানুযায়ী কাজ আদায় করে নিতে পারবে!
(ভাই হানী বলেন) আপনি আপনার ‘পাহাড়ের’ পক্ষ সমর্থন করতে যতোটুকু মাত্রা পর্যন্ত গিয়েছেন, তাতে আমি মোটেও বিস্মিত হইনি। আমি (ভণ্ড) সূফী তরীক্বার অসংখ্য সদস্যকে তাদের (ভণ্ড) শায়খদের প্রতি এরকম উগ্র ও অন্ধ আনুগত্য করতে দেখেছি। এটা অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক যে এই উগ্রতা স্রেফ কতিপয় ব্যক্তির পক্ষ সমর্থন করতে গিয়ে ধর্মীয় জ্ঞান ও তথ্য-উপাত্তের বিকৃতি সাধনে পর্যবসিত হয়ে থাকে।
(ড: হাদ্দাদের জবাব) ভাই, সর্বাত্মক চেষ্টা করুন প্রামাণ্য দলিলকে আঁকড়ে ধরতে এবং ধর্মোপদেশ হতে অন্যদেরকে নিষ্কৃতি দিতে। এ কথা বোঝা কি এতোই কঠিন যে এখানে (মূল) বিষয় শায়খ ও তরীক্বা-সংক্রান্ত নয়, বরং প্রকৃত দালিলিক প্রমাণাদি শিক্ষা ও সুন্নী নীতিমালা অনুযায়ী তা অধ্যয়ন-সংক্রান্ত? আপনি যদি এই মূল লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যের প্রতি আপত্তি উত্থাপন করেন, তাহলে হয়তো শুধু দৈনিক খবারখবর পোস্ট করাই আপনার উচিত হবে এবং নিজেকে ‘বুহতান’ (মন্দ দোষারোপ) কিংবা আরো মন্দ কিছু হতে নিষ্কৃতি দেয়া উচিত হবে; কেননা অবশ্যঅবশ্য নুবুওয়্যতের কোনো মুতাওয়াতির (জনশ্রুত/প্রসার লাভকৃত) বিষয়কে *অস্বীকার করা* কুফর। কিন্তু যদি আপনি সেগুলো স্বীকার করেন, তাহলে (ইমাম আহমদ রেযা খাঁন সাহেবের রচিত) ‘আদ-দৌলাতুল মক্কীয়া’ বইটি কিংবা এতদসংক্রান্ত আমার সাম্প্রতিক প্রত্যুত্তরের মতো লেখাগুলো পড়া আরম্ভ করতে পারেন। আমাদেরকে অনেক পথ পাড়ি দিতে হবে, যেহেতু নিম্নের দুটি বিষয়ের ওপর আমাদের আলোকপাত করতে হবে:
১/- খেজুর গাছে কলম, সামরিক কৌশল, পবিত্র বিবি সাহেবা রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুম-বৃন্দের মনের অবস্থা এবং ’আসমত’ তথা নিষ্পাপ হওয়ার অন্যান্য কিছু নির্দিষ্ট বিষয় সম্পর্কে মহানবী (ﷺ)-এর বাহ্যতঃ না জানাকে সমর্থনকারী প্রামাণ্য দলিলাদি; এবং
২/ – উম্মতের সমষ্টিগত ও ব্যক্তিগত চূড়ান্ত কল্যাণের যাবতীয় বিষয় সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর বাহ্যতঃ জানার পক্ষে দালিলিক প্রমাণাদি।
(ভা্ই হানী বলেন) অনুগ্রহ করে লক্ষ্য করুন, আমার ইতিপূর্বেকার ইমেইল-বার্তায় একই (আক্রমণাত্মক) বিষয়বস্তুর ওপর যেমনটি আমি জোর দিয়েছি, এখানেও সেরকম হেয় প্রতিপন্ন করার উদ্দেশ্য নিহিত নেই; স্রেফ ধর্মীয় বিষয়াদি খোলাসা করাই উদ্দেশ্য, অন্য কিছু নয়।
(ড: হাদ্দাদের জবাব) অবশ্যই, আর আপনি হয়তো এই বিষয়বস্তুকে কম আক্রমণাত্মক পেতে পারেন, এখন যখন আপনি ড: বুতীকে এতে আপনার সাথে শরীক হতে উৎসাহিত করেছেন।
– ড: জি, এফ, হাদ্দাদ
(ভাই হানী হতে) আরো প্রশ্ন
____________________
(ভাই হানী হতে) আরো প্রশ্ন
সালামুন আলাইকুম।
প্রশ্ন: এসব লক্ষ্যবহির্ভূত দাবির সমর্থনে একজন আলেমকেও উদ্ধৃত করা হয়নি। বরঞ্চ সকল উত্তরদাতাই হয়: (ক) ক্বুরআনের আয়াতের ও রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর হাদীসের নিজস্ব ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণের ভিত্তিতেই উপলব্ধি করেছেন (যে পদ্ধতি ব্যবহারের জন্যে ওহাবীদেরকে এই একই মানুষেরা দোষারোপ করে থাকেন), নতুবা (খ) কোনো রেফারেন্স ছাড়াই ইসলামে কিছু (এতদসংক্রান্ত) অভিমতের অস্তিত্ব থাকার কথা দাবি করেছেন।
(ড: হাদ্দাদের জবাব): উলূমে খামসা তথা আল্লাহর খাস্ পাঁচটি জ্ঞান ব্যতিরেকে মহানবী (ﷺ)-এর এলমে গায়ব (অদৃশ্যের জ্ঞান)-সম্পর্কিত মো’জেযা বা অলৌকিকত্বকে ‘লক্ষ্যবহির্ভূত দাবি’ আখ্যা দেয়া কুফর, কেননা মো’জেযা হচ্ছে মুতাওয়াতির, যেমনটি সাবেত/প্রমাণ করেছেন
হাফেয আল-কাত্তানী নিজ ‘নাযম আল-মুতানাতির’ পুস্তকে (#২৪৯)। তিনি তাতে ইমাম কাজী আয়াজ (رحمة الله)-এর ‘শেফা শরীফ’ গ্রন্থ হতে তাঁর কথা উদ্ধৃত করেন, যেখানে ইমাম সাহেব ব্যক্ত করেন যে মহানবী (ﷺ)-এর এলমে গায়ব জানা থাকার ব্যাপারে জ্ঞান অর্জন করা বাধ্যতামূলক ইসলামী জ্ঞানের অংশ, আর যে ব্যক্তি তা অবহেলা বা অবজ্ঞা করে সে এর দায় থেকে মুক্ত নয়। [৯১]
[৯১] আল কাত্তানী : নাজমুল মুতানাতির, ২৪৯।
ইমাম ইবনে হাজরের (رحمة الله) কৃত ‘ফাতহুল বারী’ গ্রন্থটিও দেখুন সেসব পৃষ্ঠায়, যা আমি এতদসংক্রান্ত মূল পোস্টে উদ্ধৃত করেছি। লক্ষ্য করুন যে, নস্ তথা শরঈ দলিল হতে কোনো হুকুম *দ্ব্যর্থহীন*ভাবে প্রতিষ্ঠিত হয়ে গেলে সে সম্পর্কে উলামাদের মতামত দাবি করাও ফিসক্ব (পাপ) বা কুফর। রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর স্পষ্ট হাদীস সম্পর্কে জানানোর পরও উলামাদের মতামত যে ব্যক্তি জানতে পীড়াপীড়ি করেন, ইমাম শাফেঈ (رحمة الله)-এর দৃষ্টিতে তিনি খৃষ্টান বা ইহুদীদের মতোই।
আমার ২০০০ সালের ১লা মে তারিখের ‘নিউজ-উইকে প্রকাশিত অলৌকিকত্ব মানে কী’ সংক্রান্ত পোস্টেও আমি দেখিয়েছি যে উলূমে খামসা বিষয়ে মহানবী (ﷺ)-এর জ্ঞানকে সমর্থনকারী নির্ভরযোগ্য দলিলাদি বিদ্যমান।
এ বিষয়ে আরো বিস্তারিত ব্যাখ্যা ও প্রমাণাদির জন্যে ইমাম কাজী আয়াজ (رحمة الله)র-এর ‘শেফা শরীফ’, খাফফাজী ও আলী আল-ক্বারীর শরাহগুলো, আল-বায়হাক্বী ও আবূ নুয়াইমের ‘দালায়েল আল-নুবুওয়া’, আল-সৈয়ূতীর ‘খাসাইসে কুবরা’, আল-নাবাহানীর ‘হজ্জাতুল্লাহি আলাল আলামীন’ ইত্যাদি পুস্তকের সংশ্লিষ্ট অধ্যায়গুলো দেখুন। তবে সবচেয়ে পূর্ণাঙ্গ আলোচনা সম্ভবতঃ বিদ্যমান ইমাম আহমদ রেযা খাঁন সাহেবের পার্শ্বটীকাসম্বলিত তাঁরই রচিত ‘আদ্ দৌলাতুল মক্কীয়া বিল মাদ্দাতিল গায়বীয়্যা’ পুস্তকে (তুরস্কভিত্তিক ওয়াক্বফ এখলাস সংস্থায় আরবী পুস্তিকাটি পাওয়া যায়)। [বাংলা http://www.mediafire.com/file/p6lx36pc6a83qo3/]
– জি, এফ, হাদ্দাদ
❏ হাদিস ৭৯-৮৪
____________________
আমাকে পাঁচটি জ্ঞান ছাড়া সমস্ত কিছুর (জ্ঞানের) চাবি দান করা হয়েছেঃ
সংশ্লিষ্ট প্রশ্নাবলী (নিম্ন বর্ণিত বিষয়ে):
❏ হাদিস ৭৯:
ইমাম ইঊসুফ নাবহানী (رحمة الله) বর্ণনা করেন মহানবী (ﷺ)-এর কথা, যিনি বলেন:
أُوتيت مَفَاتِيح كل شَيْء إِلَّا الْخمس
আমাকে (আল্লাহর খাস্) পাঁচটি জ্ঞান ছাড়া সমস্ত কিছুর (জ্ঞানের) চাবি দান করা হয়েছে।” [৯২]
[৯২] হুজ্জাতু্ল্লাহি আলাল আলামীন, ৩য় খণ্ড, ১০৯ পৃষ্ঠা।
এ হাদীস রওয়ায়াত করেন -
● হযরত ইবনে উমর রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু হতে ইমাম আহমদ (২:৮৫);
● তাবারানী নিজ ‘কবীর’ গ্রন্থে (১২:৩৬১);
● হায়তামী আপন ‘মজমাউল যাওয়াঈদ’ পুস্তকে (৮:২৬৩);
● ইবনে কাসীর স্বরচিত ‘তাফসীর’গ্রন্থে (৬:৩৫৫) এবং
● ইমাম সৈয়ূতী নিজ ‘তাফসীরে দুর্রে মানসূর’ বইয়ে (৫:১৬৯)।
● ইমাম হায়তামী বলেন, “ইমাম আহমদ (رحمة الله)-এর এসনাদে রাবী বা বর্ণনাকারীবৃন্দ সবাই সিক্বা (নির্ভরযোগ্য)।”
● ইমাম নাবহানী (رحمة الله)-এর ওই বিশ্বকোষের একই পৃষ্ঠায় (৩:১০৯) আরো লিপিবদ্ধ আছে:
❏ হাদিস ৮০:
১/- হযরত ইবনে মাসউদ রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু অনুরূপভাবে বর্ণনা করেন,
أُوتِيَ نَبِيكُم صلى الله عَلَيْهِ وَسلم مَفَاتِيح كل شَيْء غير الْخمس
তিনি (অদৃশ্যের) সমস্ত কিছুর চাবি প্রাপ্ত হয়েছেন, শুধু (আল্লাহর জানা) পাঁচটি জ্ঞান ব্যতিরেকে।’ ]৯৩]
[৯৩] আহমদ : আল মুসনাদ, ১:৪৩৮।
এটা হযরত ইবনে মাসউদ রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণনা করেন ইমাম আহমদ (رحمة الله) ও ইবনে ‘আদী। ইমাম হায়তামী বলেন, “উভয় এসনাদের রাবীবৃন্দ সিক্বা।”
❏ হাদিস ৮১:
২/ ইমাম ইবনে হাজর আসক্বালানী (رحمة الله) -ও নিজ ‘ফাতহুল বারী’ পুস্তকে আরো দুটি একদম অনুরূপ নির্ভরযোগ্য হাদীস বর্ণনা করেন (দারুল ফিকর সংস্করণ, ১:১২৪ ও ৮:৫১৪), যা’তে বিবৃত হয়,
أُوتِيَ نَبِيُّكُمْ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عِلْمَ كُلِّ شَيْءٍ سِوَى هَذِهِ الْخَمْسِ
‘তোমাদের রাসূল (ﷺ) এই পাঁচটি (জ্ঞান) ছাড়া সমস্ত কিছু প্রাপ্ত হয়েছেন।[৯৪]”
[৯৪] ইবনে হাজর : ফাতহুল বারী শরহু বুখারী, ৪১৬:৭০।
“আমি গায়ব তথা অদৃশ্যের চাবি প্রাপ্ত হয়েছি।”
ওই গ্রন্থের পরবর্তী পৃষ্ঠায় (৩:১১০) লিপিবদ্ধ আছে:
❏ হাদিস ৮২:
৩/ বনূ ’আমির গোত্রের এক ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর কাছে নির্দিষ্ট কিছু প্রশ্ন করার পর জিজ্ঞেস করেন,
حَدثنِي رجل من بني عَامر أَنه قَالَ: يَا رَسُول الله هَل بَقِي من الْعلم شَيْء لَا تعلمه فَقَالَ: لقد عَلمنِي الله خيرا وَإِن من الْعلم مَا لَا يُعلمهُ إِلَّا الله
الْخمس { إِنَّ اللَّهَ عِنْدَهُ عِلْمُ السَّاعَةِ وَيُنَزِّلُ الْغَيْثَ وَيَعْلَمُ مَا فِي الْأَرْحَامِ وَمَا تَدْرِي نَفْسٌ مَاذَا تَكْسِبُ غَدًا وَمَا تَدْرِي نَفْسٌ بِأَيِّ أَرْضٍ تَمُوتُ إِنَّ اللَّهَ عَلِيمٌ خَبِيرٌ }
আপনি জানেন না এমন কোনো জ্ঞান আছে কি?” এর উত্তরে মহানবী (ﷺ) বলেন, “আল্লাহ এর চেয়ে ভালো জানেন; অধিকন্তু এমন এক ধরনের অদৃশ্য জ্ঞান আছে যা একমাত্র আল্লাহই জানেন:
(ক) তাঁর জানা রয়েছে প্রলয়-দিবস কখন;
(খ) বৃষ্টি বর্ষণের জ্ঞান;
(গ) কোন্ মাতৃগর্ভে কী রয়েছে;
(ঘ) আগামীকাল কোন্ রূহ কী আয় করবে না জানা, (কিন্তু আল্লাহর তা জানা) এবং
(ঙ) কোন্ দেশে কোন্ রূহ/আত্মা পরলোক গমন করবে তা না জানা (কিন্তু আল্লাহর সে সম্পর্কে জানা)।” [৯৫]
[৯৫] আহমদ : আল মুসনাদ, ৩৮:২০৭ হাদীস নং ২৩১২৭।
ইমাম আহমদ (رحمة الله) এ হাদীসটি বর্ণনা করেন এবং ইবনে কাসীর নিজ তাফসীর গ্রন্থের সূরা লুক্বমানে এটা উদ্ধৃত করেন। আল-হায়তামী (رحمة الله) তাঁর ‘মজমাউল যাওয়াঈদ’ পুস্তকে (#১১৬) বলেন,
“ইমাম আবূ দাউদ (رحمة الله) এটার অংশ-বিশেষ বর্ণনা করেছেন। আর ইমাম আহমদ (رحمة الله) -এর এসনাদে সকল বর্ণনাকারী-ই আস্থাভাজন (সিক্বা) এবং তাঁরা সবাই ইমাম।”
❏ হাদিস ৮৩:
উপরন্তু,
৪/ হযরত আলী রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু হতে ইবনে মারদাওয়াঈ’র বর্ণনায় এটা সমর্থিত হয়েছে, যেটা ‘কানযুল উম্মাল’ শীর্ষক তাফসীর-গ্রন্থের সূরা লুক্বমানের ব্যাখ্যায় উদ্ধৃত হয়েছে সূরা আল-ক্বাসাস এর তাফসীর হিসেবেই, যা’তে বিবৃত হয়:
فَعَمِيَتْ عَلَيْهِمُ الْأَنْبَاءُ يَوْمَئِذٍ
অতঃপর সেদিন তাদের ওপর (খোশ)-খবরসমূহ অন্ধকার হয়ে যাবে” ।[৯৬]
[৯৬] আল-ক্বুরআন, আল কাসাস, ২৮:৬৬।
এমতাবস্থায় হযরত আলী রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু বলেন,
“لم يعم1 على نبيكم صلى الله عليه وسلم شيء إلا خمس من سرائر الغيب، هذه الآية في آخر لقمان: {إِنَّ اللَّهَ عِنْدَهُ عِلْمُ السَّاعَةِ} إلى آخر السورة”.
তোমাদের রাসূল রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু হতে অদৃশ্য জ্ঞানের পাঁচটি বিষয় ছাড়া কিছুই অন্ধকার (আড়াল) করা হয়নি। [৯৭]
[৯৭] কানযুল উম্মাল : ২:৪৭৯ হাদীস নং ৪৫৪৯।
❏ হাদিস ৮৪:
অধিকন্তু,
৫/ –
أَتَانِي اللَّيْلَةَ رَبِّي تَبَارَكَ وَتَعَالَى فِي أَحْسَنِ صُورَةٍ،، قَالَ أَحْسَبُهُ فِي الْمَنَامِ، فَقَالَ: يَا مُحَمَّدُ هَلْ تَدْرِي فِيمَ يَخْتَصِمُ الْمَلَأُ الأَعْلَى؟ قَالَ: قُلْتُ: لاَ،قَالَ: فَوَضَعَ يَدَهُ بَيْنَ كَتِفَيَّ حَتَّى وَجَدْتُ بَرْدَهَا بَيْنَ ثَدْيَيَّ أَوْ قَالَ: فِي نَحْرِي، فَعَلِمْتُ مَا فِي السَّمَاوَاتِ وَمَا فِي الأَرْضِ،
“আমার প্রভু আমার কাছে আসেন সেরা সুরতে।” এ হাদীসের বর্ণনাকারী বলেন, “আমার মনে হয় তিনি বলেছিলেন: ‘আমার ঘুমে’।” ”এবং (তিনি) আমাকে জিজ্ঞেস করেন, ‘আল-মালা’উল আ’লা তথা উচ্চস্তরের ফেরেশতামণ্ডলী কিসের জন্যে প্রতিযোগিতা করেন (আপনি জানেন কি)?’ আমি উত্তরে না জানার কথা বলি। এমতাবস্থায় তিনি তাঁর হাত মোবারক আমার দুই কাঁধের মাঝখানে রাখেন, আর আমি এর শীতল স্পর্শ আমার (আত্মার) গভীরে অনুভব করি। এরই ফলশ্রুতিতে পূর্ব হতে পশ্চিমে অবস্থিত সমস্ত জ্ঞান আমার কাছে আগমন করে।[৯৮]
[৯৮] তিরমিযী : আস সুনান, ৫:২২০।
(ক) ইবনে শায়বা : আল মুসান্নাফ, ৫:৩১৩ হাদীস নং ৩১৭০৬।
(খ) আহমদ : আল মুসনাদ, ১:৩৬৮ হাদীস নং ৩৪৮৪।
(গ) ত্ববরানী : আল মু‘জামুল কাবীর, ২০ : ১০৯।
অর্থাৎ, মহানবী (ﷺ) স্বয়ং জোর দিয়ে বলেছেন তিনি সব জ্ঞান প্রাপ্ত হয়েছেন শুধু (আল্লাহর খাস্) পাঁচটি জ্ঞান ব্যতিরেকে। আর এটা উম্মতের উপকারার্থে অধিকাংশ সাহাবা রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুম-বৃন্দ কর্তৃক সমর্থিত হয়েছে। এটাই হচ্ছে নস (শরঈ দলিল), যা অস্বীকার করার কোনো অনুমতি-ই নেই।
ক্বেয়ামত দিবস প্রসঙ্গে
____________________
ক্বেয়ামত দিবস প্রসঙ্গে:
(ভাই হানী বলেন) শায়খ নাযিমউদ্দীন হাক্কানী সাহেব হতে প্রলয় দিনটির কোনো *প্রত্যক্ষ* বিবরণ না পাওয়াতে আমি এখনো তাঁর সহযোগীদের কাছ থেকে এরকম তথ্য পাবার ব্যাপারে আগ্রহী।
(ড: হাদ্দাদ জবাবে বলেন) আয়াতে করীমায় যদি বিবৃত হয়,
لَا تَأْتِيكُمْ إِلَّا بَغْتَةً
তা তোমাদের ওপর আসবে না, কিন্তু আকস্মিকভাবে। [৯৯]
[৯৯] আল কুরআন : আল আ‘রাফ, ৭:১৮৭।
তাহলে ক্বুরআনের এই নস্-কে বাতিলকরণে এ আগ্রহ কেন? এতে অনির্দিষ্টভাবে প্রকাশিত শেষ দিনটি ও সুনির্দিষ্টভাবে প্রকাশিত একের পর এক আলামতের ভবিষ্যদ্বাণীর মাঝে বিভ্রান্তি বিদ্যমান।
এমন কি তাঁর আশীর্বাদপূর্ণ হায়াতে জিন্দেগীতেও তিনি (এ ব্যাপারে) বলতেন, চুপ থাকতেন; অতঃপর উপস্থিত কিছু মানুষ অন্যদের জিজ্ঞেস করতেন, “তিনি এই মাত্র কী বল্লেন?” আর ‘রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপূর্ণ’ খোঁচা যেগুলোর কিছু কিছু সন্দেহ, সেগুলো পাপ-ও।
“মাথা দিয়ে যে পাহাড়কে ঢুঁ মারছো তার জন্যে শঙ্কিত হয়ো না, বরং তোমার মাথার জন্যে শঙ্কিত হও।”
ওয়াস্ সালাম।
– আলহাজ্জ জি, এফ, হাদ্দাদ
*সমাপ্ত*
ওয়া সাল্লাল্লাহু আ’লা সাইয়্যিদিনা মুহাম্মাদিন ওয়া আলিহী ওয়া সাল্লামা তাসলিমা।
-----------------------------------------
Comments
Post a Comment