তাজীমে মোস্তফা
নবী করিম ﷺ'র সম্মান ক্ষমার মাধ্যম হয়ে গেল
____________________
নবী করিম ﷺ'র সম্মান ক্ষমার মাধ্যম হয়ে গেল
▶হযরত সায়্যিদুনা ওয়াহাব বিন মুনাব্বিহ رضي الله عنه থেকে বর্ণিত,
বনী ইসরাঈলে এমন এক ব্যক্তি ছিলো, যে তাঁর জীবনের দুইশত (২০০) বছর আল্লাহ্ তা'আলার নাফরমানিতে অতিবাহিত করেছে। আর এ নাফরমানি করা অবস্থায় তাঁর মৃতু হলো, বনী ইসরাঈলেরা তার মৃত দেহকে পা ধরে টেনে নোংড়া আবর্জনার স্তুপে ফেলে দিলো। আল্লাহ্ তা'আলা তাঁর নবী হযরত সায়্যিদুনা মুসা কলিমুল্লাহ عليه السلام এর নিকট ওহী প্রেরণ করলেন যে, ঐ ব্যক্তি সেখান আবর্জনার স্তুপ) থেকে তুলো এবং তাঁর কাফন-দাফনের ব্যবস্থা করে নামাযে জানাযা পড়ুন। হযরত সায়্যিদুনা মুসা عليه السلام লোকদের কাছে তাঁর সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলে লোকেরা তার খারাপ চরিত্রের সাক্ষী দিল। হযরত মুসা عليه السلام আল্লাহ্ তা'আলার নিকট আরয করলেন: হে আমার প্রতিপালক! বনী ইসরাঈলেরা তো তাঁর খারাপ চরিত্রের সাক্ষী দিচ্ছে যে, সে তার জীবনের দুইশত (২০০) বছর তোমার নাফরমানী করে কাটিয়েছে? আল্লাহ্ তা'আলা হযরত সায়্যিদুনা মুসা عليه السلام এর নিকট ওহী প্রেরণ করলেন যে, হ্যাঁ সে এই ধরণের বদকার লোক ছিলো, কিন্তু তার এ অভ্যাস ছিলো যে, সে যখনি তাওরাত শরীফ পাঠ করার জন্য খুলতো এবং মুহম্মদ ﷺ এর মোবারক নাম দেখতো তখন সে এটাকে চুমু খেয়ে নিজের চোখে লাগাতো। আর তাঁর উপর দরূদ পড়তো, আমি তার এই আমলের জন্য মূল্যায়ন করলাম এবং তার গুনাহ সমূহ ক্ষমা করে দিয়ে তার বিবাহ সত্তর (৭০) জন হুরের সাথে করিয়ে দিলাম।
[হিলইয়াতুল আউলিয়া,হাদিস নং-৪৬৯৫]
কিন্তু শুধুমাত্র নামে মুস্তাফা ﷺ এর সম্মান করার কারণে এই নেয়ামত অর্জিত হয়েছে যে, হযরত মুসা কলিমুল্লাহ عليه السلام আল্লাহ্ তা'আলার আদেশে তার কাফন-দাফনের ব্যবস্থা করলেন। তার পূর্বের সকল গুনাহ ক্ষমা করে দিলেন এবং আল্লাহ্ তা'আলার রহমতের হকদার হলেন। একটু ভেবে দেখুন ! যখন হযরত সায়্যিদুনা মুসা عليه السلام এর উম্মত নামে মুস্তাফা ﷺ'র সম্মান করার কারণে ক্ষমার অধিকারী হতে পারে তবে উম্মতে মুহাম্মদীয়ার ঐ ব্যক্তি যে আপন প্রিয় হাবীব ﷺ এর না শুধু নাম মোবারকের সম্মান করে বরং তাঁর সত্ত্বা এবং তাঁর সাথে সম্পর্ককীত সকল বস্তুর সম্মানকে অত্যাবশক মনে করে তার উপর আল্লাহ্ তাআলার রহমতের বর্ষন কীরূপ হতে পারে? তাছাড়া এই বর্ণনা দ্বারা এটাও জানা গেল যে, হুযুর ﷺ এর নাম মোবারককে সম্মানের নিয়তে চুমু খাওয়া শুধু জায়িয নয়, বরং তা আল্লাহ্ তা'আলার সন্তুটি অর্জনের মাধ্যম ও বটে। মনে রাখবেন, ঈমান আনয়নের পর তাজীমে মুস্তাফা ﷺ হলো কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্য ̈ ও উদ্দেশ্য। হুযুর ﷺ এর মহত্ব ও ভালবাসার উপরই ঈমান নির্ভরশীল। ঈমানের দাবীর জন্য মুস্তাফা ﷺ'র মর্যাদার গুরুত্ব এবং প্রয়োজনীয়তার উপর অনেক আয়াতে মোবারকা প্রমাণ বহন করে।
যেমন-
▶আল্লাহ্ তাআলা পারা ২৬, সুরাতুল ফাতাহ, আয়াত নং ৮ এবং ৯ ইরশাদ করেন: ۙ
▪কানযুল ঈমান থেকে অনুবাদ: নিশ্চয় আমি আপনাকে প্রেরণ করছি উপস্থিত প্রত্যক্ষকারী (হাযির- নাযির) করে এবং সুসংবাদ দাতা ও সতর্ককারী করে যাতে হে লোকেরা, তোমরা আল্লাহ্ ও তার রাসূল ﷺ উপর ঈমান আনো এবং রাসূলের মহত্ব বর্ণনা ও (তাঁর প্রতি) সম্মান প্রদর্শন করে আর সকাল সন্ধ্যা আল্লাহর পবিত্রতা ঘোষনা করো।
(পারা- ২৬, সুরা- আল ফাতাহ, আয়াত- ৮,৯)
▶আলা হযরত ইমাম আহলে সুন্নাত, ইমাম আহমদ রেযা رضي الله عنه এই আয়াতে করীমার প্রসঙ্গে যা বলেছেন তার সারমর্ম হলো,"মুসলমানেরা দেখো আল্লাহ তা'আলা দ্বীনে ইসলাম প্রেরণ করেছেন কোরআন মজীদ নাজিলের উদ্দেশ্য স্বরূপ তিনটি কথা ইরশাদ করেন,
▶প্রথমত: আল্লাহ্ ও রাসূলের প্রতি ঈমান আনয়ন করা। ▶দ্বিতীয়ত: রাসূল ﷺএর সম্মান করা।
▶তৃতীয়ত আল্লাহ্ তাআলার ইবাদত করা।
এই তিনটি কথার সুন্দর ধারাবাহিকতা তো দেখুন, সর্বপ্রথম ঈমানের আলোচনা করলেন এবং সর্বশেষে তাঁর ইবাদতের কথা আর মাঝখানে তাঁর প্রিয় হাবীব ﷺ এর সম্মান করার আদেশ ইরশাদ করলেন। কেননা ঈমান ছাড়া হুযুর ﷺ'র সম্মান কোন উপকারে আসবে না। অনেক অমুসলিম এমনও রয়েছে যে, তারা নবী করিম ﷺ এর ইজ্জত ও সম্মান এবং হুযুর ﷺ সম্পর্কে অমুসলিমদের সমালোচনার উত্তর ও দিয়ে কিতাব লিখেন এবং বক্তৃতা দেন কিন্তু যেহেতু ঈমান নাই সেহেতু এই সমালোচনার উত্তর দেয়ার কোন উপকারীতা অর্জিত হবে না। কেননা এটা প্রকাশ্য সম্মান করা হলো যদি অন্তরে হুযুর ﷺ এর সত্যিকার মুহাব্বত থাকতো তবে অবশ্যই ঈমান আনয়ন করতো। কেননা যতক্ষন পর্যন্ত নবী করিম ﷺ এর সত্যিকার সম্মান করা হবে না, তবে যদিও সারা জীবন ইবাদত বান্দেগীতে কাটিয়ে দেননা কেন, সব নিস্ফল হবে এবং আল্লাহর দরবারে তা প্রকৃতপক্ষে কবুলের উপযুক্ত নয়
▶ আল্লাহ্ তাআলা এদের সম্পর্কে ইরশাদ করেন:
▪কানযুল ঈমান থেকে অনুবাদ: এবং যা কিছু তারা কাজ করেছিলো আমি ইচ্ছা করে সেগুলোকে ক্ষুদ্রক্ষুদ্র ধুলিকণার বিক্ষিপ্ত অনুপরমানু করে দিয়েছি যা দিনের তীব্র রোদের মধ্যে ̈ দৃষ্টি গোছর হয়।
▶পারা- ১৯, সরা- ফোরকান, আয়াত-২৩ আরো ইরশাদ করেন:
▪কানযুল ঈমান থেকে অনুবাদ: "কাজ করো, কঠোর পরিশ্রম সহ্য করো, আর গমন করো প্রজ্জলিত আগুনে"
(পারা- ৩০, সূরা গাশিয়া আয়াত- ৩,৪)
▶অর্থাৎ আমল করো, কঠোর কষ্ট সহ ̈ করো এবং বিনিময় কি হবে? এটাই যে, প্রজ্জলিত আগুনে যেতে হবে। (ফতোওয়ায়ে রযবীয়া, ৩০/৩০৭)
বর্ণনাকৃত আয়াতে মোবারাকা এবং আলা হযরত رضي الله عنه এর বাণী সমূহ দ্বারা পরিষ্কার হয়ে গেল যে, মাদানী আক্বা, প্রিয় মুস্তাফা ﷺ'র সম্মান করাই হলো ঈমানের মুল। যদি কোন ব্যক্তি মুস্তাফা ﷺ'র মযার্দা করা ছেড়ে অন্যান্য ̈ নেক আমলের চেষ্টা করতে থাকে, তবে তার কোন আমল কবুল করার উপযুক্ত হবে না।
রাসূলুল্লাহ (ﷺ) ডাকার আদব
____________________
রাসূলুল্লাহ (ﷺ) ডাকার আদব
মুস্তাফা ﷺ'র সম্মানে সামান্যতম ত্রুটি সকল নেক আমলকে নষ্ট করে দেয়ার কারণ হতে পারে। যেমন-
▶পারা ২৬ সুরা হুজরাত এবং ২ নং আয়াতে আল্লাহ্ তাআলা ٰইরশাদ করেন: কানযুল ঈমান থেকে অনুবাদ: হে ঈমানদারগণ। নিজেদের কণ্ঠস্বর কে উঁচু করো না ঐ অদৃশ্যের সংবাদদাতা (নবী) এর কণ্ঠস্বরের উপর এবং তাঁর সামনে চিৎকার করে কথা বলো না যেভাবে পরষ্পরের মধ্যে একে অপরের সামনে চিৎকার করো যেন কখনো তোমাদের কর্মসমূহ নিষ্ফল না হয়ে যায় আর তোমাদের খবরই থাকবে না।
(পারা- ২৬, সূরা- হুজরাত, আয়াত- ২)
▶প্রসিদ্ধ মুফাসসির, হাকিমুল উম্মত মুফতি আহমদ ইয়ার খাঁন এই আয়াতে করীমার ব্যাখায় বলেন: জানা গেল, হুযুর ﷺ'র এর সামান্যতম বে-আদবীও কুফর। কেননা কুফরের কারণেই নেক আমল নষ্ট হয়। সেখানে তাঁর দরবারে উচ্চস্বরে আওয়াজ করাতে নেকী নষ্ট হয়ে যায়, সেখানে বে- আদবীরই বা আলোচনা কেন? আয়াত দ্বারা উদ্দেশ্য ̈ হচ্ছে, তাঁর সামনে চিৎকার করো না। না তাকে সাধারণ উপাধী দ্বারা ডাকো, যা দিয়ে একে অপরকে ডাকো চাচা, আব্বু, ভাই, বশর (মানুষ) বলো না, রাসূলুল্লাহ ﷺ, শফিউল মুযনিবীন বলো।
(নুরূল ইরফান, ৮২৩ পৃষ্ঠা)
আপনারা দেখলেন তো! আল্লাহ্ তা'আলার পাক কালামও সায়্যিদুল আম্বিয়া ﷺ'র শান ও মহত্বের প্রশংসা করলো এবং আমাদের তাঁর দরবারে উপস্থিতির আদব শিখাচ্ছেন যে, দরবারে রিসালত ﷺ এ আওয়াজ উঁচু হয়ে যাওয়া এতই বড় অপরাধ যে, এর কারণে সকল নেকী নষ্ট হয়ে যায়।
▶হাকিমুল উম্মত মুফতি আহমদ ইয়ার খাঁন رضي الله عنه বলেন: দুনিয়াবী বাদশাহদের দরবারের আদব মানুষের বানানো। কিন্তু হুযুর পুরনুর ﷺ'র দরজা শরীফের আদব স্বয়ং আল্লাহ্ তা'আলা তৈরী করেছেন এবং আল্লাহ্ তা'আলায় শিখাচ্ছেন। তা ছাড়া এই আদব শুধুই মানুষের মাঝেই নয় বরং জ্বীন, মানুষ, ফিরিশতা সবার জন্যই। ফিরিশতারাও অনুমতি নিয়েই পবিত্র দরবারে উপস্থিত হবেন। আর এই আদব সব সময়ের জন্যই প্রযোজ্য।
(নুরুল ইরফান, ৮২৩ পৃষ্ঠা)
▶তেরে রূতবা মে জিস নে চুন ও চেরা কি, না সমঝা ওহ বদ বখত রূতবা খোদা কা।
(যওকে নাত, ৩৮ পৃঃ)
সকল আম্বিয়ায়ে কিরামদেরকে সম্মান করা ওয়াজিব এবং সকলেই সম্মানের উপযুক্ত
____________________
সকল আম্বিয়ায়ে কিরামদেরকে সম্মান করা ওয়াজিব এবং সকলেই সম্মানের উপযুক্ত
কোরআনে করীমে আল্লাহ্ তা'আলা বিভিন্ন জায়গার আম্বিয়ায়ে কিরামদের عليه السلام সম্মান করার আদেশ দিয়েছেন এবং এই আদেশ পালন কারীদের উপহার ও মর্যাদা দ্বারা ধন্য করা ওয়াদাও করেছেন।যেমন-
▶পারা ৬, সূরা মায়েদা,আয়াত নং ১২তে ইরশাদ করেন:
▪কানযুল ঈমান থেকে অনুবাদ: আমার রাসূলগণের উপর ঈমান আনো, তাঁদের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করো এবং আল্লাহকে উত্তম ঋণ প্রদান করো, তবে আমি অবশ্যই তোমাদের পাপ মোচন করবো এবং তোমাদেরকে অবশ্যই বেহেশত সমূহে নিয়ে যাবো। যেগুলোর পাদদেশে নদীসমূহ প্রবাহিত।
(পারা- ৬, সরা- মায়েদা, আয়ত- ১২)
বিশেষ করে হুযুর ﷺ'র উপর ঈমান আনায়নের পর তাঁর সম্মান প্রদর্শন কারীদের কল্যাণ ও সফলতার সুসংবাদ প্রদান করা হয়েছে। যেমন-
▶পারা ৯ সুরা আয়াত এর ۡ ১৫৭ ٰ নং আয়াতে ইরশাদ হচ্ছে:
ۤ ▪কানযুল ঈমান থেকে অনুবাদ: সুতরাং ঐসব লোক যারা তাঁর উপর ঈমান এনেছে তাঁকে সম্মান করেছে, তাঁকে সাহায্য করেছে এবং ঐ নূরের অনুসরণ করেছে। যা তাঁর সাথে অবতীর্ণ হয়েছে তারাই সফলকাম হয়েছে।
(পারা-৯, সুরা- আথরাফ আয়াত- ১৫৭)
মনে রাখবেন! এই কল্যান তখনি অর্জিত হবে যখন আমরা সর্বাবস্থায় সকল আম্বিয়া বিশেষ করে সায়্যিদুল আম্বিয়া মুহাম্মদ মুস্তাফা ﷺ'র সম্মান ও মযার্দাকে নিজের ঈমানের অংশ মনে করবে এবং তাঁর সামান্য ̈ থেকে সামান্যতম মানহানী থেকে বাঁচার চেষ্টা করবে। আল্লাহ্ তাআলা নবীর আদব শিখাতে গিয়ে যেখানে বারগাহে রিসালাতে আওয়াজ উঁচু করতে নিষেধ করেছেন,সেখানে তাঁকে সাধারণ ভাবে ডাকতেও নিষেধ করেছেন। যেমন-
▶পারা ১৮, সূরা নুর, ৬৩নং আয়াতে ইরশাদ করেন,
কানযুল ঈমান থেকে অনুবাদ: রাসূলের আহবানকে তোমাদের পরষ্পরের মধ্যে ̈ তেমনই স্থির করোনা যেমন- তোমরা একে অপরকে ডেকে থাকো। (পারা- ১৮, সুরা- নর, আয়াত- ৬৩) সদরুল আফাযিল হযরত আল্লামা মাওলানা সয়ি ̈দ মুফ তি মুহাম্মদ নঈম উদ্দীন মুরাদাবা رضي الله عنه (এই আয়াতের একটি অর্থ মুফাসসিররা এটাও বর্ণনা করেন, (যখন কেউ) রাসলুল্লাহ্ ﷺ' কে ডাকে তখন আদব ও সম্মানের সাথে তাঁকে সম্মানীত উপাধী সহকারে মৃদু আওয়াজে নম্র ভাষায় ইয়া নবীয়াল্লাহ! ইয়া ! ইয়া হাবীবাল্লাহ্! বলুন।
(তাফসীয়ে খাযায়িনুল্ ইয়ফান, পারা- ১৮, সুরা- নুর, আয়াত- ৬৩)
▶▪ইমামুল মুফাসসিরিন, হযরত সায়্যিদুনা আব্দুল্লাহ বিন আব্বাস رضي الله عنه বলেন: প্রথম প্রথম হুযুর ﷺ কে ইয়া মুহাম্মদ! ইয়া আবাল কাসেম! বলা হতো, যখন আল্লাহ্ তাআলা তাঁর নবীর সম্মানে এরূপ শব্দের নিষেধ করলেন, তখন সাহাবায়ে কিরামগণ رضي الله عنه ইয়া নবীয়াল্লাহ! ইয়া রাসূলাল্লাহ! বলতেন।
(দালাইলুন নবুয়াত লি আবুনুয়াঈম, ১ম অধ্যায়, ১ম পরিচ্ছদ, ১৯ পৃষ্ঠা)
প্রিয় ইসলামী ভাইয়েরা! একটুভেবে দেখুন! হুযুর পাক, সাহিবে লাওলাক ﷺ এর সম্মানের বিষয়টি কতই গুরূত্বপূর্ণ যে, আল্লাহ্ তাআলার কাছে এই বিষয়টি অপছন্দনীয় যে, কেউ তাঁর হাবীব ﷺ কে নাম ধরে ডাকবে।
▶ওলামারা ̄স্পষ্ট করে বলেন: হুযুর ﷺ কে নাম ধরে ডাকা হারাম। (ফতোওয়ায়ে রযবীয়া(৩০/১৫৭)
মনে রাখবেন! হুযুর ﷺ এর সম্মান করা শুধুমাত্র হায়াতে যাহেরীতেই সীমাবদ্ধ নয় বরং দুনিয়ায় থাকাবস্থায় আগত সকল মুসলমানের উপর তাঁর শান ও মহত্বকে ̄স্বীকার করা আবশ্যক।
▶▪হযরত আল্লামা ইসমাইল হক্কী رضي الله عنه বলেন: হুযুর ﷺ এর যাহেরী হায়াত এবং যাহেরী ওফাতের পরও সর্বাবস্থায় হুযুর ﷺ এর মযার্দা ও সম্মান করা উম্মতের উপর আবশ্যক এবং প্রয়োজন। কেননা অন্তরে যতই হুযুর ﷺ'র প্রতি সম্মান বাড়বে ততই নুরে ঈমানে বৃদ্ধি পেতে থাকবে।
(তাফসীরে রুহুল বয়ান, ৭ম খন্ড, ২১৬ পৃষ্ঠা)
▶খাক হোকর ইশ্ক মে আথরাম ছে সোনা মিলা,
জান কি ইকসির হে উলফত রাসূলুল্লাহ কি।
(হাদায়িকে বখশিশ, ১৫৩ পৃষ্ঠা)
ইশকে মুস্তাফা ﷺ'র কয়েকটি ঘটনা
____________________
ইশকে মুস্তাফা ﷺ'র কয়েকটি ঘটনা
প্রিয় ইসলামী ভাইয়েরা! জানা গেল, হুযুরে আকদাস ﷺ এর ইশ্ক ও মুহাব্বতের বিষয়ে তাঁর প্রতি অত্যাধিক আদব রক্ষা করা, ঈমান বৃদ্ধির উপায় এবং ঈমানের মুল। এটাকে এভাবে বুঝুন যে, যদি কোন গাছের শিকড় কেটে যায় তবে ঐ গাছটি শুকিয়ে যায়। আর এর ফল ও ফুলগুলো পচে গলে ঝড়ে যায়। ঠিক তেমনি তাযিমে মুস্তাফা ﷺ , ঈমান নামের বৃক্ষের শিকড়ের (মূল) ভূমিকা পালন করে। এটা ছাড়া ঈমান নামক বৃক্ষ ও সবুজ শ্যামল থাকতে পারেনা এবং নেক আমল রূপে এর ফুল ও ফল নষ্ট হয়ে যায়। সুতরাং নিজের নেকী সমূহ সুরক্ষিত রাখার জন্য এবং বৃক্ষ রূপী ঈমানকে বাড়ানোর জন্য রাসূল ﷺ'র আদবকে অত্যাবশ্যাকীয় করে নিন। সাহাবায়ে কিরাম رضي الله عنه এর তাযিমে রাসূল ﷺ'র এমন এমন কাহিনী লিখেছেন, যার উদাহরণ পাওয়া অসম্ভব।
আসুন! শানে রিসালাতের এই মুর্ত প্রতিকদের ইশ্কে মুস্তাফা ﷺ'র কয়েকটি ঘটনা শ্রবন করি:
▶১. বর্ণিত আছে; হুযুর ﷺ'র এর সাহাবীরা অত্যাধিক আদব ও সম্মানের কারণে তাঁর দরজায় নখ নিয়ে করাঘাত করতেন।
(শরহে শাদ্ধা নি মালা আলী ক্বারী, ৭ম খন্ড ৭১ পৃষ্ঠা)
▶২. এরূপ হুদাইরিয়া সন্ধির বৎসর কুরাইশরা হযরত সায়্যিদুনা ওরওয়া বিন মাসঊদ رضي الله عنه কে (তখনও ঈমান আনয়ন করেননি) শাহানশাহে দো'আলম, নূরে মুজাসসাম ﷺ এর কাছে প্রের ণ করলেন। তখন তিনি দেখলেন যে, হুযুর ﷺ যখন অযু করতেন তখন সাহাবারে কিরামগণ رضي الله عنه ওজুর পানি নেওয়ার জন্য ̈ এতই দ্রুত যেতেন যেন মনে হতো যে তারা একে অপরের সাথে ঝগড়া করছেন। যখন থুথু মোবারক ফেলতেন বা নাক পরিষ্কার করতেন তখন সাহাবারে কিরামগণ رضي الله عنه তা হাতে নিয়ে (তাবাররূক স্বরূপ ) নিজের চেহারায় এবং শরীরে মালিশ করে নিতেন। তিনি তাঁদের কোন আদেশ করলে তা তৎক্ষণাৎ পালন করতেন এবং যখন তিনি ﷺ কথা বলতেন তখন তাঁর সামনে নিশ্চুপ থাকতেন এবং সম্মানার্থে হুযুর ﷺ এর দিকে চোখ তুলে তাকাতেন না। যখন হযরত সায়্যিদুনা ওরওয়াহ বিন মাসউদ رضي الله عنه মক্কাবাসীদের নিকট ফিরে গেলেন তখন তিনি বললেন: হে কুরাইশ গ্রোত্র! আমি কাইসার ও কিসরা এবং নাজ্জাশীর দরবারেও গিয়েছি কিন্তু আল্লাহ তায়ালার কসম! আমি কোন বাদশাহকে তার গোত্রের মাঝে এরূপ শান ও শওকত আর সম্মান ও মযার্দা দেখিনি,যেমন শান (হযরত) মুহাম্মদ মুস্তাফা ﷺ এর তাঁর সাহাবী رضي الله عنه'র মাঝে দেখেছি।
(শিফা, কদ্বল, ফি আদাতিস সাহাবা ফি তাযেমীহে,২/৩৮)
▶৩. একবার হুযুর ﷺ হযরত সায়্যিদুনা আব্বাস رضي الله عنه থেকে জিজ্ঞাসা করা হলো; আপনি বড় না রাসলুল্লাহ ﷺ বড়? তখন তিনি উত্তরে বললেন: অর্থাৎ বড়তো তিনিই, কিন্তু আমি তাঁর আগে জন্মগ্রহণ করেছি। (কানযুল উম্মাল, ১৩/২২৪, হাদীস- ৩৭৩৪৪)
প্রিয় ইসলামী ভাইয়েরা! আপনারা দেখলেন তো! সাহাবায়ে কিরাম رضي الله عنه হুযুর ﷺ এর প্রতি কিরূপ ভালবাসা ও সম্মান করতেন, বয়সে বড় হওয়া সত্বেও বড়ত্বের ইঙ্গিত রাসলুল্লাহ্ ﷺ এর প্রতিই করতেন। আমাদের ও উচিৎ যে, আমরা ও ইশ্কে মুস্তাফা ﷺ 'র প্রদীপ না শুধু নিজের অন্তরে প্রজ্জলিত করবো বরং নিজের সন্তান সন্তুতিদেরও পূর্ব পুরুষদের ইশ্কে রাসূলের সুন্দর সুন্দর কাহিনী শুনিয়ে শৈশব থেকেই তাদের অন্তর কে রাসূল ﷺ'র ভালবাসায় মজবুত করবো। এর জন্য দাওয়াতে ইসলামীর প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান মাকতাবাতুল মদীনা কতৃক প্রকাশিত ২৭৪ পৃষ্ঠ সম্বলিত কিতাব “সাহাবায়ে কিরাম কা ইশ্কে রাসূল ﷺ এর অধ্যয়ন অত্যন্ত উপকারী হবে। তাছাড়াও দাওয়াতে ইসলামীর সুবাসিত মাদানী পরিবেশের সাথে সম্পৃক্ত হয়ে প্রতি মাসে কমপক্ষে তিন দিনের মাদানী কাফেলায় সফর মাদানী ইনআমাতের উপর আমল, মাদানী মুযাকারা এবং সাপ্তাহিক সুন্নাতে ভরা ইজতিমায় অংশগ্রহণ করার বরকতে ইশ্কে রাসূল ﷺ'র মহাসম্পদ অর্জিত হবে। প্রিয় ইসলামী ভাইয়েরা! জানা গেল, একজন মুসলমানের জন্য তাযিমে মুস্তাফা (মুস্তাফার সম্মান) এতই গুরুত্ব বহন করে যে, এটা ছাড়া ঈমানের দাবী করা অহেতুক (বেকার)।
ঈদে মিলাদুন্নবী ﷺ উদযাপন করা তাযীমে মুস্তাফা ﷺ'র একটি রূপ
____________________
ঈদে মিলাদুন্নবী ﷺ উদযাপন করা তাযীমে মুস্তাফা ﷺ'র একটি রূপ
মনে রাখবেন! যেমনি ভাবে স্বয়ং তাজেদারে আম্বিয়া, হুযুর পুরনর ﷺ এর পবিত্র সত্ত্বার প্রতি সম্মান করা আবশ্যক তেমনিভাবে তাঁর সাথে সর্ম্পকীত সাহাবাগণ, পবিত্র আওলাদগণ,বিবিগণ,সন্তান এবং তাবাররূকের সাথে সাথে হুযুর ﷺ এর পবিত্র আলোচনা ও সম্মান করা আবশ্যক।এমনিতো সকল দ্বীনি মাহফিলে মুস্তাফা ﷺ'র আলোচনা করা হয়। কিন্তু বিশেষ করে ইজতিমায়ে মিলাদে হুযুর ﷺ এর উত্তম আলোচনা করা হয়। তাঁর শান ও মহত্বের বর্ণনা করা হয়। তাঁর পবিত্র জীবনের প্রিয় ঘটনা সমূহ শুনানো হয়।
▶▪সুতরাং জশনে ঈদে মিলাদুন্নবী ﷺ উদযাপন করাও তাযীমে মুস্তাফা ﷺ'র একটি রূপ।
(রুহুল বয়ান, ৯ম খন্ড, ৫৬ পৃষ্ঠা)
▶▪ইমাম জালালুদ্দীন সুয়ূতী শাফেয়ী رضي الله عنه বলেন: মিলাদে মুস্তাফা ﷺ উদযাপন করাই হচ্ছে তাঁর মর্যাদার সম্মান করা।
(আল হাবি লিল ফতোয়া, ১ম খন্ড, ২২২ পৃষ্ঠা)
▶▪এরূপ মুহাম্মদ বিন ইউসুফ সালেহী رضي الله عنه বলেন: মিলাদ উদযাপন করাতে হুযুর ﷺ'র ভালবাসা এবং সম্মান প্রকাশ পায়।
(সুবুলুল হুদা ওয়ার রাশদাদ, ১ম খন্ড, ৩৬৫ পৃষ্ঠা)
আমাদের সৌভাগ্য যে অতি শীঘ্রই রবিউল আউয়ালের মোবারক মাস আমাদের মাঝে উপস্থিত হতে চলেছে। এই রহমতের মাস আসতেই আশিকানে রাসূল ﷺ 'র অন্তরে খুশির বার্তা বয়ে যায় এবং তারা জশনে ঈদে মীলাদুন্নবী ﷺ'র উৎযাপনের প্রস্তুতিতে ব্যস্ত হয়ে যায় এবং কেনই বা হবে না যে, হুযুর ﷺ এর আগমনে তো পুরো কায়েনাত(জগত) আনন্দীত। আরশ খুশীতে আন্দোলিত। কুরসী ও খুশীতে গর্বিত।
মিলাদুন্নবী ﷺ'এর সময় ঘটে যাওয়া অলৌকিক ঘটনাসমূহ
____________________
মিলাদুন্নবী ﷺ'এর সময় ঘটে যাওয়া অলৌকিক ঘটনাসমূহ
জ্বিনদেরকে আসমানে যাওয়ার থেকে বাধা প্রদান করা হয় এবং তখন তারা একে অপরকে বলতে লাগলো: নিঃসন্দেহে আমাদের নিজেদের রাস্তায় কঠোর পরিশ্রম করতে হয়েছে। আর ফিরিশতারা অত্যন্ত খুশি ও ভক্তি সহকারে তাসবীহ পাঠে ব্যস্ত হয়ে গেল, বাতাস আন্দোলিত হতে-হতে সামনে বাড়তে লাগলো এবং মেঘমালা প্রকাশ করে দেয়া হলো। বাগানে গাছের ঢাল সমূহ ঝুঁকতে থাকে এবং জগতের সকল পার্শ্ব থেকে “আহলান সাহলান মারহাবা এর আওয়াজ আসতে থাকে।মোটকথা,
▶ হুযুর পুরনূর ﷺ'র শুভাগমন পুরোপুরি রহমত এবং বরকতের উৎস,সুতরাং আসহাবে ফিলের ধ্বংসের ঘটনা, ইরানের যে অগ্নিকুন্ড ১০০০ বছর ধরে জ্বলছিল তা মূহুর্তেই নিভে যাওয়া,"কিসরার" প্রসাদে ভূমিকম্প এবং এর ১৪টি গম্বুজ ধ্বংস হওয়া।
"হামাদান"ও “কুম"এর মাঝে ছয় মাইল লম্বা ও ছয় মাইল প্রস্থ “সাবা" নদী সম্পূর্ণ শুকিয়ে যাওয়া। হুযুর ﷺ এর আম্মাজানের শরীর মোবারক থেকে এমন এক নূর বের হওয়া, যার কারনে “বসরার প্রাসাদ আলোকিত হয়ে যায়।
(আল মাওয়াহিবুল লাদুন্নিয়া ওয়া শরহে যুরকানি বিলাদাতিহী, ১/১৬৭,২২১,২২৭,২২৮)
এই সকল ঘটনাই তারই আগমনের অংশ বিশেষ। যা হুযুর ﷺ এর আগমনের পূর্বেই “সূসংবাদ দানকারী” হয়েই সমগ্র জগৎকে সুসংবাদ দিতে লাগলো যে;
মোবারক হো ওহ্ শাহ পরদে সে বাহার আনে ওয়ালাহে,
আদাঈ কো যামানা জিস কে দর পর আনে ওয়ালা হে
প্রিয় ইসলামী ভাইয়েরা! মনে রাখবেন! জশনে ঈদে মীলাদুন্নবী ﷺ উদযাপন করা কল্যানময় একান্ত কাজ। এটি উদযাপন কারীদের আল্লাহ্ তাআলার পক্ষ থেকে অসংখ্য ̈ দ্বীনি ও দুনিয়াবী দয়া ও অনুগ্রহ অর্জিত হয়। যেমন-
▶তাফসিরে রূহুল বয়ানে বর্ণিত রয়েছে যে, মাহফিলে মীলাদ শরীফের বরকত সারা বছর ধরে বিরাজমান থাকে। (রূহুল বায়ান, ৯/৫৭)
▶▪এরূপ হযরত সায়্যিদুল ইমাম কাসতালানী رضي الله عنه বলেন: সৌভাগ্য মন্ডিত জম্মের দিন গুলোতে মাহফিলে মীলাদ উদযাপনের বিশেষ ভাবে পরীক্ষিত বিষয় হচ্ছে যে, সেই বছর নিরাপত্তাই- নিরাপত্তা বিরাজ করে, আল্লাহ্ তাআলা সেই ব্যক্তির উপর রহমত বর্ষণ করুন যে বিলাদতের মাসের রাত সমূহে ঈদ উদযাপন করে। (মাওয়াহেবুলিদ দুনিয়া, ১ম খন্ড, ১৪৮ পৃষ্ঠা)
জশনে ঈদে মীলাদুন্নবী উদযাপনকারীদের দুনিয়াবী বরকতের পাশাপাশি জান্নাতের সুসংবাদ
____________________
জশনে ঈদে মীলাদুন্নবী উদযাপনকারীদের দুনিয়াবী বরকতের পাশাপাশী জান্নাতের সুসংবাদ
জশনে ঈদে মীলাদুন্নবী উদযাপনকারীদের দুনিয়াবী বরকতের পাশাপাশী জান্নাতের সুসংবাদও রয়েছে,
▶▪শায়খ আব্দল হক মুহাদ্দীস দেহলভী رضي الله عنه বর্ণনা করেছেন: নবী করিম ﷺ এর সুভাগমনের রাতে আনন্দ উদযাপন কারীদের প্রতিদান এই যে, আল্লাহ্ তাআলা তাঁর দয়া আর মেহেরবাণীতে তাদেরকে ‘জান্নাতুন নাঈম" দান করবেন , মুসলমানগন সর্বদা মীলাদে মুস্তাফা ﷺ উদযাপন করে আসছেন। বিলাদতে মুস্তাফায় আনন্দিত হয়ে মানুষকে দাওয়াত দিচ্ছেন। খাবারের আয়োজন করছেন, বেশী পরিমানে দান খয়রাত করে আসছেন, খুবই আনন্দ প্রকাশ করছেন এবং মন খুলে খরচ করেন। তাছাড়া হুযুর ﷺ এর সৌভাগ্যময় বিলাদতের আলোচনার ব্যবস্থা করেন এবং নিজেদের ঘর-বাড়ী সজ্জিত করে থাকেন, আর এই সম্মানিত ভাল কাজের বরকতে তাদের উপর আল্লাহ্ তাআলার রহমত বর্ষিত হয়।
(মা সাবাতা বিস্সুন্নাহ, ৭৪ পৃষ্ঠা। বসন্তের প্রভাত, ১৩ পৃষ্ঠা)
প্রিয় ইসলামী ভাইয়েরা! আপনারা দেখলেন তো! প্রিয় আক্বা, মাদানী মুস্তাফা ﷺ'র মীলাদ উদযাপনকারীদের উপর আল্লাহ্ তাআলা কিরূপ খুশি হন এবং তাদের কিরূপ উপহার ও নেয়ামত দান করেন। তাই জশনে মীলাদের খুশিতে মসজিদ সমূহ ঘর, দোকান এবং বাহন সমূহ তাছাড়া নিজের মহল্লায়ও সুবজ পতাকা লাগান। লাইটিং করুন বা কমপক্ষে ১২টি লাইট অবশ্যই লাগান। রবিউল আউয়ালের ১২ তারিখে রাতে সাওয়াবের নিয়তে ইজতিমায়ে যিকির ও নাতে অংশগ্রহণ করুন এবং সুবাহে সাদিকের সময় সবুজ পতাকা হাতে দরূদ সালাম পড়তে পড়তে অশ্রু সজল নয়নে বসন্তের প্রভাতের শুভাগমন জানান। ১২ রবিউল আউয়ালের দিন সম্ভব হলে রোযা ও রাখুন।
▶▪আমাদের প্রিয় আক্বা ﷺ থেকে প্রতি সোমবার রোযা রেখে নিজের বিলাদত উদযাপন করতেন। যেমন- হযরত সায়্যিদুল কাতাদাহ رضي الله عنه থেকে বর্ণিত ; বারগাহে রিসালাত ﷺ এ সোমবারের রোযা সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলে, ইরশাদ করেন: “এই দিন আমার জন্ম হয়েছে এবং এই দিনই আমার প্রতি ওহী নাযিল হয়েছে।
(সহীহ মুসলিম ৫৯১ পৃষ্ঠা, হাদীস- ১১৬২)
মনে রাখবেন! নবী করীম ﷺ এর বিলাদতে খুশী উদযাপন করার আদেশ কুরআনে করীম থেকেই প্রমাণীত। যেমন-
▶পারা ১১, সুরা ইউনুস এর ৫৮ নং আয়াতে ইরশাদ হচ্ছে;
▪কানযুল ঈমান থেকে অনুবাদ: আপনি বলুন আল্লাহরই অনুগ্রহ ও তাঁর দয়া, এবং সেটারই উপর তাদের আনন্দ প্রকাশ করা উচিৎ। তা তাদের সমস্ত ধন-সম্পদ অপেক্ষা শ্রেয়। (পারা- ১১, সরা- ইউনুস, আয়াত- ৫৮)
▶▪প্রখ্যাত মুফাস্সীর হাকিমুল উম্মত মুফতি আহমদ ইয়ার খাঁন رضي الله عنه এই আয়াতে মোবারাকা সর্ম্পকে বলেন: হে মাহবুব! লোকদের এই সুসংবাদ দিয়ে তাদের এই আদেশ দিন যে, আল্লাহ্ তাআলার অনুগ্রহ এবং তাঁর দয়া অর্জন করে খুশী উদযাপন করো। সাধারণ খুশী তো সবসময় উদযাপন করো। আর বিশেষ বিশেষ খুশী বিশেষ তারিখে উদযাপন করো যেই তারিখ নেয়ামত প্রাপ্ত হয়েছে অর্থাৎ রমযানে বিশেষ করে শবে কদর এবং রবিউল আউয়াল বিশেষ করে ১২ তম তারিখ কেননা রমযানে আল্লাহ্ তাআলার অনুগ্রহে কুরআন অবতীর্ন হয়েছে আর রবিউল আউয়ালে রহমাতুল্লিল আলামীন অর্থাৎ মুহাম্মদ মুস্তাফা ﷺ শুভাগমণ করেন। এই অনুগ্রহ দয়া বা খুশি উদযাপন তোমাদের দুনিয়ায় জমানো ধন-সম্পদ টাকা, জায়গা জমি, পশু ক্ষেত খামার বরং সন্তান সন্ততি সবকিছুর চাইতেও উত্তম কেননা এই খুশির উপকারীতা ব্যক্তিগত নয় বরং জাতীয়, সাময়িক নয় বরং দীর্ঘস্থায়ী। শুধুমাত্র দুনিয়ার নয় বরং দ্বীন ও দুনিয়া দুইটিতেই। শারীরিক নয় বরং অন্তরের এবং রূহানী নষ্ট হয় না বরং এতে সাওয়াব রয়েছে।
(তাফসীরে রুহুল বয়ান, ১১/৩৬৯)
▶ধুম মাচাতে রাহে, আউর মানাতে রাহে, ঈদে মীলাদ হাম, তাজেদারে হারাম।
ঈদে মীলাদ মে, গাড়ে ইয়াদ মে, সবুজ পেয়ারা আলাম, তাজেদারে হারাম।
(ওয়াসায়িলে বখশিশ)
আহলে সুন্নাতের বিশ্বাস
____________________
আহলে সুন্নাতের বিশ্বাস
প্রিয় ইসলামী ভাইয়েরা!
▶আহলে সুন্নাতের কাছে মজলিশে মীলাদে পাক অতি উত্তম মুস্তাহাব কাজ এবং উচ্চ মর্যাদা সম্পন্ন নেক কাজ। (আল হাক্কুল মুবিন, ১০০ পৃষ্ঠা)
▶▪সদরুশ শরীয়া, বদরুত তরীকা হযরত আল্লামা মাওলানা মুফতি মুহাম্মদ আমজাদ আলী আযমী رضي الله عنه বলেন: মীলাদ শরীফ অর্থাৎ হুযুরে আকদাস ﷺ এর সম্মানিত বিলাদতের বয়ান করা জায়িয।
এ প্রসঙ্গের এই পবিত্র মজলিশে হুযুর ﷺ এর ফযিলত ও মুজিযা জীবনী ও চরিত্র লালন-পালন ও নবুয়তের ঘটনাও বর্ণনা করা হয়। এই সকল কিছুর আলোচনা হাদীস শরীফে ও রয়েছে এবং কুরআন মজীদেও রয়েছে।
▶যদি মুসলমান নিজেদের মাহফিলে এসব বয়ান করে বরং বিশেষ করে এসব বিষয় বর্ণনা করার জন্য ̈ মাহফিলের আয়োজন করে তবে তা নাজায়েয হওয়ার কোন কারণ নেই। এই মজলিশের জন্য ̈ মানুষদের দাওয়াত দেয়া এবং অংশগ্রহণ করা নেকীর দিকে ডাকো হলো, যেমনি ভাবে ওয়াজ এবং জলসার জন্য আহবান করা হয়। লিফলেট ছাপিয়ে বন্টন করা হয়, পত্র-পত্রিকার এ বিষয়ে কলাম ছাপা হয় এবং এসবের কারণে সেই ওয়াজ ও জলসা নাজায়িয হয়ে যায় না। ঠিক তেমনিভাবে পবিত্র আলোচনার জন্য ডাকাও এই মজলিশকে নাজায়িয ও বিদআত বলা যাবে না।
(বাহারে শরীয়াত, ৩য় খন্ড, ৬৪৪-৬৪৫ পৃষ্ঠা)
▶রবিয়ে পাক তুঝ পর আহলে সুন্নাত কিউ না কুরবান হো,
কে তেরী বারভি তারিখ ওহ জানে ক্বম র আয়া। (কাবালায়ে বখশিশ, ৩৭ পৃষ্ঠা)
বয়ানের সারমর্ম
____________________
বয়ানের সারমর্ম
প্রিয় ইসলামী ভাইয়েরা! আজকের বয়ানে আমরা শুনলাম:
❖ রাসূলে আকরাম ﷺ এর সম্মান, ঈমানের অংশ। বনী ইসরাইলের ২০০ বছরের ̧গুনাহগার ও বদকার ব্যক্তির ক্ষমার ছিলো তাযিমে মুস্তাফা ﷺ
❖ সাহাবায়ে কিরামদের رضي الله عنه তাযিমে মুস্তাফা ﷺ র অনেক বেশী উৎসাহ
ছিলো।
❖ তাযিমে মুস্তাফা ﷺ শুধুমাত্র মোবারক জীবনে নয় বরং যতদিন দুনিয়া থাকবে
আর সকল মুসলমানের উপর আবশ্যক।
❖মুস্তাফা জানে রহমত ﷺ এর প্রতি ইশ্ক ও মুহাব্বত এবং সকল বিষয়ে তাঁর আদব রক্ষা করা, ঈমানের পরিপক্ষতার কারণ এবং ঈমানের মুল ।
❖ কোন বাদশার প্রতি তার গোত্রের এরূপ শান ও শওকত এবং মান সম্মান দেখা যায়নি। যেমন শান মাহবুবে রহমান (হযরত) মুহাম্মদ ﷺ এর তাঁর সাহাবীদের رضي الله عنه মাঝে দেখা গেছে।
❖ হুযুর ﷺ এর সাথে সম্পর্কিত সাহাবীগণ পবিত্র বিবিগণ, সন্তান সন্ততি তারাবরূক এবং তার পবিত্র আলোচনা সম্মান করা আবশ্যক।
❖ তাযিমে মুস্তাফা ﷺ এর দাবী এটা যে, তাঁর সাথে সম্পর্কিত সকল কিছুরই সম্মান করা।
❖ আশিকানে রাসূল ﷺ জশ্নে মীলাদুন্নবী অত্য̈ন্ত ধুমধাম সহকারে উদযাপন করে কেননা এই দিনটি হুযুর ﷺ এর সাথে সম্পর্কীত হওয়ার কারণে মর্যাদাবান।
❖ আমাদের ও উচিৎ যে, হুযুর পুরনর ﷺ এর জশনে মীলাদ উদযাপন করে আল্লাহ্ তাআলার সন্তুষ্টি অর্জন করা এর অসংখ্য ̈ রহমত এবং অনেক বরকত অর্জিত হবে।
মজলিশে তারাজিম (তরজুমা মজলিশ)
____________________
মজলিশে তারাজিম (তরজুমা মজলিশ)
তবলীগে কুরআন ও সুন্নাতের বিশ্বব্যাপী অরাজনৈতিক সংগঠন দাওয়াতে ইসলামী সারা দুনিয়ায় ইশকে রাসূলের প্রদীপ প্রজ্জলন করার এবং নেকীর দাওয়াত প্রসার করার জন্য ̈ বিভিন্ন বিভাগের মাধ্যমে দ্বীনে ইসলামের খেদমতে সদা ব্যস্ত। এই বিভাগগুলোর মধ্যে ̈ একটি বিভাগ হলো; “অনুবাদ মজলিশ আমীরে আহলে সুন্নাত এবং মাকতাবাতুল মদীনার কিতাব ও রিসালা বিভিন্ন ভাষায় অনুবাদ করার খেদমত করে যাচ্ছে। যাতে উর্দু ভাষাভাষীর সাথে সাথে পৃথিবীর অন্যান্য ̈ ভাষার কোটি কোটি লোকেরাও উপকৃত হতে পারে এবং তাদের যেন এই মাদানী মনমানসিকতা হয়ে যায় যে, আমাকে নিজের এবং সারা দুনিয়ার মানুষের সংশোধনের চেষ্টা করতে হবে। অত্যন্ত ̄স্বল্প সময়ের ব্যবধানে এই পর্যন্ত এই মজলিশের মাধ্যমে বিভিন্ন ভাষায় শায়খে তরীকত আমীরে আহলে সুন্নাত এর অনেক কিতাব এবং মাকতাবাতুল মদীনার কিতাব ও রিসালা অনুবাদ হয়ে গেছে। যেমন- আরবী, বাংলা, ইংরেজী, চাইনিজ, ড্যানিশ, জামার্ন, স্প্যানিশ, ফারসী, ফ্রান্চ , গ্রীক, হিন্দি, পুশতু, সিন্ধি, সুহালী ইত্যাদি আমাদেরও উচিৎ যে, মাকতাবাতুল মাদীনার কিতাব ও রিসালা নিজে অধ্যায়ন করা এবং নিজে বন্ধুবান্ধবদের পড়ার প্রেরণা জোগানো। বন্টন ও করুন এবং যদি সম্ভব হয় নেকীর দাওয়াত প্রসার করার নিয়̈তে উপহার স্বরূপ কিতাব ও রিসালা দিতে থাকুন।
আল্লাহ্ করম এয়ছা করে তুঝ পে জাহা মে,
এ দাওয়াতে ইসলামী তেরী ধুম মাচী হো! !
---------- সমাপ্ত ----------
Comments
Post a Comment