শিয়া সম্প্রদায়

শিয়া সম্প্রদায়

রচনা, সংকলন ও সম্পাদনা

মোহাম্মদ আনোয়ার মাহমুদ
ইশরাত জাহান

প্রকাশকঃ বাংলাদেশ মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ড কর্তৃক প্রণীত এবং জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড, ৬৯-৭০, মতিঝিল, বাণিজ্যিক এলাকা, ঢাকা কর্তৃক প্রকাশিত

প্রকাশকাল
প্রথম মুদ্রণ : জানুয়ারি, ২০০৩
পরিমার্জিত সংস্করণ : নভেম্বর, ২০০৯
পুনর্মুদ্রণ : আগস্ট, ২০১৮

টেক্সট রেডীঃ মুহাম্মদ আব্দুল খালেক

উৎপত্তিঃ
'শিয়া' শব্দটির অর্থ দল। ইতিহাসে হযরত আলী (রাদ্বিআল্লাহু তা'য়ালা আনহু) এর দল সাধারণত শিয়া নামে পরিচিত। শিয়া মাজহাব প্রথমে রাজনৈতিক দল হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। কিন্তু পরে ধর্মীয় মাযহাবে পরিণত হয়। খলিফা হিসাবে হযরত আবু বকর (রাদ্বিয়াল্লাহু তা'য়ালা আনহু) এর নির্বাচনের সময় হতে শিয়া আন্দোলনের বীজ বপন করা হয়। মহানবী (সাল্লাল্লাহু তা'য়ালা আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর ওফাতের সময় তাঁর জামাতা হযরত আলী (রাদ্বিআল্লাহু তা'য়ালা আনহু) খলিফা হবেন বলে আশা করা হয়েছিল। কিন্তু তাঁর দাবি উপেক্ষিত হলে আলীর সমর্থকগণ নিরুৎসাহিত হয়ে পড়ে। অতঃপর হযরত উমর (রাদিআল্লাহু তা'য়ালা আনহু) ও হযরত উসমান (রাদ্বিআল্লাহু তা'য়ালা আনহু) যখন খলিফা পদ লাভ করেন, তখনও আলীর সমর্থকগণ তাঁকে খলিফা হিসেবে পাবার আশা পোষণ করেছিল। এভাবে আলীর (রাদ্বিআল্লাহু তা'য়ালা আনহু) সমর্থকগণ তাঁকে না জানিয়ে তাঁর দাবির স্বপক্ষে গোপন আন্দোলন শুরু করে।

সিফফিনের যুদ্ধে হযরত আলী (রাদ্বিআল্লাহু তা'য়ালা আনহু) এর পরাজয় এবং পরবর্তীকালের খারিজীদের হাতে তাঁর মৃত্যু ইসলামে দলীয় বিরোধের ক্ষেত্র আরও প্রসারিত করল এবং তাঁর সমর্থকদের যে দলটি রাজনৈতিক দল হিসেবে গড়ে ওঠেছিল, তাদের উদ্দেশ্যকে আরও বলিষ্ঠ করে তুলল। মুয়াবিয়া সার্বভৌম ক্ষমতার অধিকারী হলে এ দলটি 'শিয়া' নাম গ্রহণ করল। কারবালার বিয়োগান্তক ঘটনা শিয়াদের ইতিহাসে যুগান্তর সৃষ্টি করে। অধ্যাপক পি. কে. হিট্টির মতে, "হুসাইনের রক্ত শিয়া মাজহাবের বীজ বলে প্রমাণিত হয় এবং ১০ মুহররম তারিখে শিয়া মতবাদ জন্মলাভ করে।" এভাবে হযরত-হুসাইনের হত্যার ফলে ধর্মীয় রাজনৈতিক সম্প্রদায় হিসেবে শিয়া মতবাদের জন্ম হয়।

উমাইয়া ও আব্বাসীয় আমলেঃ
শিয়া মতবাদ পারস্যে যথেষ্ট প্রতিপত্তি লাভ করে। উমাইয়া শাসনে অসন্তুষ্ট হয়ে পারসিকগণ শিয়াদের উদ্দেশ্য সমর্থ করে। তারা এই মতবাদকে স্বীকৃতি দান করে। হযরত আলীর বংশের খিলাফতের অধিকার পুনরুদ্ধারের উদ্দেশ্য তারা উমাইয়া বিরোধী অভিযান পরিচালনা করে। উমাইয়া বংশকে খিলাফতের অধিকার হতে বিতাড়িত করার উদ্দেশ্যে শিয়া সম্প্রদায় আব্বাসীয় প্রচারণায় যোগদান করে। আব্বাসীয় আমলে তাদের দাবি পূরণ না হলে তারা বিদ্রোহের চেষ্টা করে। কিন্তু তাদের সে চেষ্টা ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয়। আব্বাসীয়দের হাতে তাদের পরাজয়ের পর কিছু বিদ্রোহী উত্তর আফ্রিকায় পলায়ন করে এবং ইমাম হুসাইনের অন্যতম বংশধর ইদ্রিসের নেতৃত্বে সেখানে একটি রাষ্ট্র গঠন করে।

শিয়া মতবাদঃ
১. মহানবী (সাল্লাল্লাহু তা'য়ালা আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর পর হযরত আলী (রাদ্বিআল্লাহু তা'য়ালা আনহু) এর খিলাফতের স্বীকৃতি এবং আলী (রাদ্বিআল্লাহু তা'য়ালা আনহু) ও হযরত ফাতিমার বংশধরদের মধ্যে পুরুষাণুক্রমিক খিলাফতের অধিকার নিয়ে শিয়া মতবাদের সূচনা হয়। শিয়াদের মতে, ইমামত বা নেতৃত্বে হযরত মুহাম্মদ (সাল্লাল্লাহু তা'য়ালা আলাইহি ওয়াসাল্লাম)– এর বংশধরদের বংশগত অধিকার এবং সে কারণে তা হযরত আলী (রাদ্বিআল্লাহু তা'য়ালা আনহু) ও তাঁর পত্নী নবী-নন্দিনী হযরত ফাতিমার বংশধরদের মধ্য সীমাবদ্ধ। ইমামতের মতবাদ শিয়াদের নিকট ঈমানের অন্যতম স্তম্ভ হিসেবে বিবেচিত হয়।

২. হযরত আলী (রাদ্বিআল্লাহু তা'য়ালা আনহু) এর ইমামতের সংগতি রক্ষার জন্য শিয়ারা প্রথম তিন খলিফা এবং উমাইয়া ও আব্বাসীয় খলিফাগণকে খিলাফতের অবৈধ দাবিদার মনে করে।

৩. শিয়ারা কালিমায়ে তাইয়িব "লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রসুলুল্লাহ (আল্লাহ ব্যতীত অন্য কোন ইলাহ নেই এবং মুহাম্মদ (সাল্লাল্লাহু তা'য়ালা আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আল্লাহর রাসুল)-এর সঙ্গে 'আলী খলিফাতুল্লাহ' (আলী আল্লাহর প্রতিনিধি) কথাটি সংযোজন করে থাকে।"

৪. শিয়াদের মতে, ইমাম মুসলিম একচ্ছত্র নেতা। তিনি আল্লাহ কর্তৃক নিযুক্ত এবং তাঁর নির্বাচনের ব্যাপারে মানুষের কোনো অধিকার নেই। কারণ মানুষের নির্বাচন কখনও কখনও ত্রুটিপূর্ণ হয়।

৫. শিয়ারা ধারণা পোষণ করে যে, দ্বাদশ ইমাম মুহাম্মদ আল-মুনতাজার 'মাহদী' হয়ে সত্যিকার ইসলামের পুনরুদ্ধার, সমগ্র বিশ্বজয় ও কিয়ামতের পূর্ববর্তী সহস্রাব্দের সূচনা করার জন্য আবির্ভূত হবেন।

৬. শিয়াদের বিশ্বাস হযরত আলী (রাদ্বিআল্লাহু তা'য়ালা আনহু) হযরত মুহাম্মদ (সাল্লাল্লাহু তা'য়ালা আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর নিকট হতে আধ্যাত্মিক শক্তির আলোক প্রাপ্ত হয়েছিলেন এবং তাঁর দেহে আল্লাহর পবিত্র গৌরবের রোশনী প্রতিফলিত হয়েছিল। শিয়াদের মতে ইমাম বা আধ্যাত্মিক নেতার মধ্যে অভ্রান্ততা ও নিষ্পাপতার দুটি গুণ যুগপৎ বিদ্যমান থাকে।

*বাংলাদেশ মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ড, ঢাকা কর্তৃক ২০০৯ শিক্ষাবর্ষ থেকে প্রবর্তিত ও প্রকাশিত "ইসলামের ইতিহাস" দাখিল নবম-দশম শ্রেণীর পাঠ্যপুস্তকরূপে নির্ধারিত হতে সংগৃহীত হয়েছে।


--------------- সমাপ্ত ---------------


Comments

Popular posts from this blog

বালাকোট আন্দোলনের হাকীকত

সৈয়দ আহমদ বেরলভীর জম্ম ও পরিচয়

মওদুদীর ভ্রান্ত আক্বিদা ও ইসলামী আক্বিদা