কথিত আহলে হাদিস থেকে ফিরে আসা জনৈক ব্যক্তির চেপে রাখা ক্ষোভের বিস্ফোরণ


কথিত আহলে হাদিস থেকে ফিরে আসা জনৈক ব্যক্তির চেপে রাখা ক্ষোভের বিস্ফোরণ :

---আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ।

কথিত আহলে হাদিস থেকে ফিরে আসা জনৈক ব্যক্তি বলতে লাগলেন, আমি জানতাম আমরা হানাফী মাজহাবেরই অনুসারী। বেশ ওই পর্যন্তই। এর বেশী কিছু নয়। হানাফী মাজহাব কী, তা আমাদের নিকট ভাল করে জানা ছিলনা।~আজ থেকে দশ বছর আগে একটি পুস্তক পড়লাম। পড়ে আমি খুব মুগ্ধ হলাম। তাতে লিখা ছিল রাসুলের কোনো মাজহাব ছিলনা, সাহাবাগণ কোনো মাজহাব অনুসরণ করেন নি। রাসুল ছাড়া আর কারো তাকলীদ বা অন্ধ অনুসরণ করা যাবে না। যেখানে কুরআন ও সহীহ হাদিস মওজুদ আছে সেখানে আবার মাজহাব তাজহাব মানতে হবে কেন ?

~মাজহাব নাকি ধর্মকে খন্ডবিখন্ডিত করে ফেলেছে। আমি মনে মনে ভেবে দেখলাম কথাগুলো তো বাস্তব সত্য। এমন অবাক করার মতো তথ্যগুলো তো আগে কখনো শুনি নাই! মাজহাব নিয়ে মানুষ পড়ে আছে কেন! সেটাই আমাকে ভাবিয়ে তুলেছিল।~এক সময় মনে মনে আমি নিজেকে লামাজহাবী ভাবতে শুরু করলাম। ইহার পর ফেইসবুকে মতিউর রহমান মাদানী, আব্দুর রাজ্জাক বিন ইউসুফ, আমানুল্লাহ মাদানী, আকারামুজ্জামান, মুরাদ বিন আমজাদ, মুজাফ্ফর বিন মহসিন প্রমুখের চ্যালেঞ্জিং বক্তব্যগুলো শুনে আমি আরও আশাবাদী হলাম।

এক সময় আমি আমার প্রিয় শায়খদের বক্তব্যগুলোকে অন্ধের মতো বিশ্বাস করতে লাগলাম, সেই সাথে আমার অন্তরে এমন এক ধারনার সৃষ্টি হলো যে, আমরা সালাফী তথা আহলে হাদিসরা ব্যতীত বাকীরা সবাই বিদআতী ও বাতিল ফিরকা। আমরাই শুধুমাত্র হকপন্থী, বাকী সব বিদআতী। তাদের জন্য অনেক আফসোস করতাম।
~
গত বছর থেকে ফেইসবুকে ভিন্ন টাইপের কিছু নতুন হুজুরের আবির্ভাব হতে দেখে চমকে উঠলাম। সেই সাথে কিছু ব্লগারেরও সন্ধান পেলাম। আমাদের বিখ্যাত শায়খদের প্রদত্ত বক্তব্যগুলোকে তারা খন্ডন করে পাল্টা বক্তব্য দিতে থাকলেন।
আমি উভয় পক্ষের বক্তব্যগুলোকে নিরপেক্ষভাবে একত্র করে হিসাব মিলাতে থাকলাম।
আমি বুঝতে সক্ষম হলাম যে, ইবাদতের মধ্যে যে সমস্ত বিষয় নিয়ে শায়খরা বিষোদগার করে যাচ্ছেন এগুলো কোনো মৌলিক বিষয় নয়।
১২ থেকে ১৩ শত বছর পূর্বে মাজহাবের ইমামগণ সাংঘর্ষিক তথা ইখতেলাফী হাদিস থেকে মাসআলা বের করে যেসব বিষয়ে সমাধান দিয়ে গেছেন, আমাদের শায়খরা সেইগুলো নিয়েই নতুন করে বিতর্ক সৃষ্টি করে যাচ্ছেন। অথচ এগুলো নিয়ে আগে কেউ কোনো বিতর্ক সৃষ্টি করেননি।
~
আমি আরো লক্ষ করলাম যে, ইদানিংকাল শায়েখগণ নিজেরাই দিশেহারা হয়ে আত্মঘাতী বক্তব্য দিয়ে চলেছেন।
রমজানের বাইরে তাদের নিকট বিতর নামাজ এক রাকাত সহীহ্ থাকে, কিন্তু রমজান আসলে এক রাকাত বিতর নামাজের বদলে সঙ্গে সঙ্গে তিন রাকাত সহীহ্ হয়ে যায়!
ঈদের নামাজ তাদের কারো নিকট ১২ তাকবীর সহীহ্ আবার কারো কারো নিকট ৬ তাকবীর আর ১২ তাকবীর উভয়ই সহীহ্। কিন্তু তারা আমল করছেন ১২ তাকবীরের উপর।
এছাড়া রাফউল ইয়াদাইন করা আর না করা, আমিন জোরে বা আস্তে বলা, কালেমায়ে তায়্যিবা শিরক, তারাবিহ আট রাকাতই, তারাবিতে কোরআন খতম বিদাআত ইত্যাদি আরো অন্যান্য বিষয়ে বাহ্যত বিরোধপূর্ণ হাদিস থাকা সত্ত্বেও শায়খরা হানাফীদের বিপরীত হাদিসগুলোর উপর জোর দিয়ে চরম ফিতনার জন্ম দিয়ে চলেছেন। অথচ এগুলো নামাজের মূখ্য বিষয় নয়।
~
শুধু তাই নয়, মির্জা গালিব ও মুজাফ্ফর বিন মহসিন সাহেবের কিতাবসমূহে ইদানিং তাদের জালিয়াতি ও মিথ্যাচার সম্পর্কীত যেসব তথ্য এখন পাওয়া যাচ্ছে তা তো রীতিমত গা শিউরে উঠার মতো কাজ। শায়েখ হয়ে এহেন গর্হিত কর্ম তাদের দ্বারা সংগঠিত হলো তা ভাবতেও অবাক লাগে।~
আমি দেখেছি শায়েখদের প্ররোচনায় আহলে হাদিসের অনুসারীরা বলে থাকেন রাসুল (সাল্লাল্লাহু তা'আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম) ছাড়া আর কারো তাকলীদ করা যাবেনা। অথচ তারাই আবার শায়খ আলবানী, জাকির নায়েক স্যার, মতিউর রহমান, আব্দুর রাজ্জাক বিন ইউসুফ, মুজাফ্ফর বিন মহসিন উনাদের কথার বাইরে একচুলও নড়েন না।~তারা বলেন, মাজহাব মানা যাবে না। অথচ তারাই উপরোক্ত শায়েখদের মতামত (মাজহাব)-কে নিজেদের আদর্শ বানিয়ে নিয়েছেন।~তারা আরো বলেন, মাজহাবের মাধ্যমে নাকি ইসলামকে খন্ডবিখন্ড করা হয়েছে। অথচ তারা নিজেরাই দলে দলে বিভক্ত।~তারা আরো বলেন, তাদের পরিচয় শুধুমাত্র মুসলিম। অথচ তারাই আহলে হাদিস, সালাফী, মুওয়াহহীদ বা মুহাম্মদী সহ ১৬৮ দলে বিভক্ত।

~লামাজহাবীগণ মাজহাবীদেরকে বিদআতী বলে ক্ষান্ত হয় নি। অথচ নিজেরাই ইদানিংকাল নিজেদেরকে বিদআতী, কাফের ইত্যাদি ফতোয়া দিয়ে আলোড়ন সৃষ্টি করে চলেছেন।~তারা আরো বলেন, সাহাবাদের সময়ে কোনো মাজহাব ছিল না। তাহলে মাজহাব মানতে হবে কেন? কিন্তু উনাদের এ যুক্তি দ্বারা আমার মনে হল, সাহাবাদের যুগে তো বুখারী, মুসলিম, সহীহ্ হাদিস, জয়ীফ হাদিস, আহলে হাদিস এ সমস্ত কিছুই ছিল না। তাহলে এসব মানতে হবে কেন??~আমি আরো লক্ষ্য করলাম, কুরআন ও হাদিসের ব্যাখ্যা নিয়ে আমাদের মধ্যে আক্বিদাগত কিছু মতপার্থক্য ছিল। কিন্তু ইবাদত নিয়ে আমাদের মধ্যে বিন্দুমাত্র দ্বন্দ্ব ছিল না। ইবাদত তথা নামাজ ছিল আমাদের ঐক্যের প্রতীক। আগে আমরা শান্তি মনে নামাজ পড়তাম, বেশি আমল করতাম, যেই আহলে হাদিস হলাম অমনি আমার আমলের স্প্রিহা কমতে শুরু করল। সেই নামাজের মধ্যে ছোটখাটো বিষয়কে বড় করে তুলেধরে আহলে হাদিসেরা এক চরম ফিতনার সৃষ্টি করে গোটা মুসলিম উম্মাহকে খন্ডবিখন্ডিত করার প্রয়াস পাচ্ছে।
~দেশের ৮০% মুসলিমের মধ্যে ২০% মুসলিমও নামাজ পড়েনা, বেনামাজিদেরকে নামাজি বানাবার কোনো মিশন আহলে হাদিস-সালফীদের নিকট নেই।
কিন্তু যারা নামাজ পড়েন তাদেরকে নিয়েই তারা টানাহ্যাঁচড়া শুরু করেন এবং তাদের মনে সন্দেহ ঢুকিয়ে দেবার চেষ্টা করেন। হাত বাঁধা নিয়ে নাভির নিচে বাঁধলে হবে না অথচ ইমাম বুখারির উস্তাদ বলেছেন এটাই সর্বোত্তম।

তাছাড়া আমি মক্কার নামাজের ভিডিও দেখেছি ইমাম মালেক (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) এর মাযহাবের অনুসারী ভাইয়া হাত বাঁধেই না। তারা হাত ছেড়ে দাঁড়ায়। তারা হাত ছেড়ে দাঁড়ালে কোন সমস্যা নেই, সমস্যা হানাফিদের বেলায়।কারণ তারা নাভির নিচে বাঁধে। এই দেখলাম আহলে হাদিসদের মধ্যে উস্কানি
তাছাড়া আরো একটি বিষয় লক্ষ করলাম শায়েখদের মধ্যেই হাত নিয়ে কত মতপার্থক্য।
আল্লাহই একমাত্র হিদায়াত দাতা।

(আমি কপি করেছি)
শেয়ার কপি করে প্রচার করুন


Comments

Popular posts from this blog

বালাকোট আন্দোলনের হাকীকত

সৈয়দ আহমদ বেরলভীর জম্ম ও পরিচয়

মওদুদীর ভ্রান্ত আক্বিদা ও ইসলামী আক্বিদা