ফুরফুরাপন্থীদের হাক্বীক্বত
ফুরফুরাপন্থীদের হাক্বীক্বত
লেখক
আযীযে মিল্লাত
মুফতী মুহাম্মাদ আব্দুল আযীয কালিমী
বড় বাগান, মানিকচক, মালদহ।
Mob: 9734135362
–ঃঃ শাইখুল হাদীসঃঃ–
মাদ্রাসা গাওসিয়া ফাসিহীয়া মাদীনাতুল উলূম
সাং— খালতিপুর, থানা—কালিয়াচক , জেলা — মালদা।
—ঃঃপরিমার্জনায়ঃঃ—।
ডাঃ মোহা জাহাঙ্গীর আলাম
সাং— কাহালা, উত্তর লক্ষীপুর, কালিয়াচক, মালদহ।
প্রথম প্রকাশঃ– এপ্রিল, ২০১৭
–ঃঃঅক্ষরবিন্যাসঃঃ–
আশরাফিয়া কম্পিউটার প্রইন্ট
প্রোঃ মওহআঃ সামিম আখতার
স্থানঃ মোথাবাড়ী (লাবু মোড়), মালদা।
মোবাইলঃ– ৯৮৫১৭৮৪৫৭৭/৮৭৫৯১৪৯৯৯০
প্রকাশকঃ সেরাজিয়া দারুল ইশায়াত।
বড় বাগান, মানিকচক, মালদহ।
টেক্সট রেডীঃ মুহাম্মদ আব্দুল খালেক
অভিমত
বাংলার গৌরব শেরে রাযা মুনাযিরে আহলে সুন্নাত ফাক্বীহে বাঙ্গাল হযরত আল্লামা মাওলানা মুফতি মোঃ আলিমুদ্দিন রেজবী (আতালাল্লাহু তা-আলা উমরাহু অ-ফাযলাহু) এফ. ডি. এন., এম. এম., এম. এ., বি. এড.।
শিক্ষকঃ নাইত শামসেরিয়া হাই মাদ্রাসা
রঘুনাথগঞ্জ, জঙ্গীপুর, মুর্শিদাবাদ।
______________________________
بسم الله الرحمن الرحيم
مبسملا وحامدا ومصليا و مسلما
পশ্চিম বাংলার তরুণ সু-লেখক ও ইসলামী গবেষক আযীযে মিল্লাত হযরতুল আল্লামা মুফতী মুহাম্মদ আব্দুল আজিজ কালিমী (হাফিযাহুল্লাহু তালা) বর্তমান শাইখুল হাদীস জামিয়া, গওসিয়া, ফাসিহিয়া, মাদীনাতুল উলূম (খালতীপুর, কালিয়াচক, মালদা, পঃবঃ) বিরচিত
"ফুরফুরা পন্থীদের হ্যক্বীক্বত"
নামক বইটির পান্ডুলিপিখানা পাঠ করে, আমি খুব আনন্দিত হলাম। পশ্চিম বঙ্গের বুকে এই ধরনের বই নাই বললে-ই চলে। বইটির নাম শুনে-ই পাঠক মহল টের পেয়ে যাবেন যে, বইটির মূল আলোচ্য বিষয় বস্তু কী? সরল প্রাণ সাধারণ মুসলমানদের হাতে, এই জাতীয় বই-পুস্তক অনেক আগে-ই আসা উচিৎ ছিল বলে আমি মনে করি। কিন্তু কবির ভাষায় –
اے رضا ہر کام کا ایک وقت ہے
دل کو بھی آرام ہوہی جائے گا
ইংরেজী ভাষায় একটি প্রবাদ বাক্য আছে "ALL THAT GLITTERS IS NOT GOLD" যার ভাবার্থ হল চকচক করলেই সোনা হয় না। মনে রাখা ভাল যে, হাতির খাওয়ার দাঁত আলাদা এবং দেখানোর দাঁত আলাদা।
ফুরফুরাপন্থীদের বাহ্যিক কিছু আমল, সুন্নীদের মতই। যার কারণে সাধারণ সুধী মুসলমান যথেষ্ট অন্ধকারে রয়েছেন। ফুরফুরাপন্থীদের আক্বীদা কিরূপ মূলত ! তার-ই সদ্দওর দিয়েছেন লেখক তাঁর এই বই-এ।
বিরোধী হলে-ই বাড়াবাড়ী আর সুন্নী হলে-ই সাত খুন মাফ এমন পন্থা মোটে-ই অবলম্বন করেননি লেখক। ফুরফুরাপন্থীদের গুরুজনদের লিখা বই পুস্তক জোগাড় করে তাদের বই পত্রের নাম খঃ ও পূঃ উল্লেখ করে মূল এবারতের উদ্ধৃতি দিয়ে, অতি দৃঢ়তার সহিত ফুরফুরাপন্থীদেরকে যেভাবে অ-সুন্নী প্রমাণ করা হয়েছে, তাতে আর কারো কোন অসুবিধা হবেনা তাদেরকে চিনতে। ইনশা আল্লাহ। বইটি ক্রয় করে নিরপেক্ষভাবে পাঠ করে, আসলে কে সুন্নী? আর কে সুন্নী নয়। তার সঠিক বিচার বিবেচনা করার অনুরোধ রইল পাঠক মহলের খিদমাতে।
পরিশেষে লেখকের সর্বাঙ্গীন মঙ্গল ও বইটির বহুল প্রচার কামনা করছি আল্লাহ পাকের দরবারে।
তাং– ১১/০৩/২০১৭
ইতি –
খাদিমে মাসলাকে আ'লা হযরাত
মোহাঃ আলীমুদ্দিন রেজবী
রঘুনাথগঞ্জ, জঙ্গীপুর,
মুর্শিদাবাদ।
সূচীপত্র
ভূমিকা
দেওবন্দী বলতে কাদের বুঝানো হয়।
ফুরফুরাপন্থীরা আসলে দেওবন্দী।
ফুরফুরা ফাতেহীয়া সিনিয়র মাদ্রাসার ফতওয়া।
ফুরফুরাপন্থীরা সুন্নী নয়।
যারা বড় দল থেকে পৃথক তারা পথভ্রষ্ট।
ফুরফুরা সিলসিলা ওহাবীয়াতের একটি শাখা
সায়্যেদ আহমাদ শুধু ওহাবী নয় ! তার প্রবর্তনকারীও।
ফুরফুরা সিলসিলা, বাতিল সিলসিলা।
নবী (ﷺ) এর হাযির-নাযির সম্পর্কে ফুরফুরাপন্থীদের অবস্থান।
নবী (ﷺ) এর নূর সম্পর্কে ফুরফুরাপন্থীদের অবস্থান।
নবী (ﷺ) ওলীগণের নিকট সাহায্য প্রার্থনা সম্পর্কে ফুরফুরাপন্থীদের অবস্থান।
নবী (ﷺ) এর ইলমে গায়েব সম্পর্কে ফুরফুরাপন্থীদের অবস্থান।
"নারায়ে রিসালাত, ইয়া রাসূলাল্লাহ" সম্পর্কে ফুরফুরাপন্থীদের অবস্থান।
ফুরফুরাপন্থী, ওহাবী ও দেওবন্দী সকলের আক্বীদা মূলত এক।
দেওবন্দীদের আক্বীদা (বিশ্বাস)
ওহাবীদের আক্বীদা (বিশ্বাস)
দেওবন্দীদের মতে ফুরফুরাপন্থীরা মুশরিক।
সায়্যেদ আহমাদ ইংরেজদের পালিত গোলাম ছিলেন।
সায়্যেদ আহমাদ যোগ্যতাহীন ব্যক্তি ছিলেন।
মুজাদ্দিদগণের লিস্টে সায়্যেদ আহমাদ ও দাদাহুযুরের নাম পাওয়া যায় না।
সায়্যেদ আহমাদ ও ইসমাঈল দেহলবী শহীদ নয়।
সায়্যেদ আহমাদের সিলসিলার মুরীদ হওয়া যাবে না।
ভূমিকা
বিগত বহু বছর যাবৎ ফুরফুরাপন্থী ও সুন্নী হানাফীপন্থীদের মধ্যে একটি অন্তর্দ্বন্দ প্রকাশ পেয়েছে। কিন্তু সাধারণ মানুষ ছাড়া কিছু সংখ্যক আলেমও এই ব্যাপারটা নিয়ে ধোঁয়াশায় রয়েছে। লোকেদের নিকট "কারণ" স্পষ্ট না থাকায় সঠিক পথে কারা ও বাতিল পথে কারা তা বুঝে উঠতে পারছে না। তাই হক্ব ও বাতিলের চিহ্নিত করে দেওয়া প্রয়োজনবোধ করে কলম ধরলাম। কারণ আল্লাহপাক যেমন হক্ব (সত্য) কে প্রকাশ করেছেন সেই রূপ বাতিলকেও চিহ্নিত করেছেন। এই জন্য যে, দ্বীনে ইসলামের মূল চেতনাই হল তাওহীদের শিক্ষা ও বিরোধীদের দূরীভূতকরণ, বাতিলের পরিচয় ও করা করা বাতিল তা চিহ্নিত করে দেওয়া। শুধু পজেটিভ তথা 'হ্যাঁ' বাচকই বলে দেওয়া, সাথে সাথে নেগেটিভ 'না' বাচক জানিয়ে না দেওয়া দ্বীনের মূল চেতনার পরিপন্থী। সূরা ফাতেহায় আছে–
اِهۡدِنَا الصِّرَاطَ الۡمُسۡتَقِيۡمَ صِرَاطَ الَّذيۡنَ اَنۡعَمۡتَ عَلَيۡهِمۡ
অর্থাৎঃ– আমাদেরকে সোজা পথে পরিচালিত করো ! তাঁদেরই পথে যাদের উপর তুমি অনুগ্রহ করেছো।"
এই আয়াতে"হ্যাঁ" বাচক বলে দেওয়া হয়েছে। আর –
غَيۡرِ الۡمَغۡضُوۡبِ عَلَيۡهِمۡ وَلَا الضَّالِّيۡنَ
অর্থাৎঃ– তাদের পথে নয়, যাদের উপর গযব (বিপদ) নিপাতিত হয়েছে এবং পথভ্রষ্টদের পথেও নয়।"
এই আয়াতে 'না' বাচকও বলে দেওয়া হয়েছে। সুতরাং হক্কানী আলেমদের দায়িত্ব হল কারা হক্ব তা যেমন সাধারণ মুসলমানদের সামনে তুলে ধরা একই সাথে কারা বাতিল তা নাম উল্লেখপূর্বক চিহ্নিত করে দেওয়া। শুধু আমরা হক্বের উপর আছি বলে দিলে হবে না। কারা কারা না হক্ব (বাতিল) তা চিহ্নিত করে জানিয়ে না দেওয়া দ্বীনের (ধর্মের) মূল চেতনার পরিপন্থী। যেমন আল্লাহপাক বলেছেন –
يَااَيُّهَا النَّبِی اتَّقِ اللّٰهَ وَلَاتُطِعِ الۡكَافِرِيۡنَ وَ الۡمُنَافِقِيۡنَ
অর্থাৎঃ– "হে নবী ! (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আল্লাহর ভয় করো এবং কাফের ও মুনাফিকদের আনুগত্য করিও না।" (সূরা আহযাব ১ আয়াত)।
আল্লাহপাক উক্ত আয়াতে যেমন নিজের ভয় করতে বলেছেন তেমনি কাফের ও মুনাফিকদের আনুগত্য করতেও নিষেধ করেছেন। সুতরাং হক্বও বাতিল উভয়ই প্রকাশ করেছেন। সবাই সরল প্রাণ মুসলমান বেশী বিভ্রান্তে পড়ে যাচ্ছে, কারণ দেখতে তো সবাই একই মত। প্রকাশ্যে তারাও পাঞ্জাবী টুপি পরিধান করে মুসলমান সেজে থাকে। যেমন আজকাল মাটির কলা, আপেল, আম, লিচু ইত্যাদি বাজারে বিক্রি হয়। দেখতে অবিকল আসলের ন্যায়, প্রকাশ্যে কোন পার্থক্য বুঝা যায় না, তা দেখে মানুষ ধোঁকা খেয়ে যায়। কিন্তু তা আদৌ আসল নয়। সেই রকমই উপস্থিত সময়ে কিছু নামধারী মুসলমান বেরিয়েছে যাদের দেখতে অবিকল মুসলমানের ন্যায় কিন্তু তারা বাস্তবে মুসলমান নয়। যেমন দেওবন্দী ওহাবী, কাদিয়ানী ইত্যাদি। তাই মুসলমান ! খুব সাবধান।
ইতি –
মুহাম্মাদ আব্দুল আযীয কালিমী
بسم الله الرحمن الرحيم
لك الحمد يا الله و الصلوة و السلام عليك يا رسول الله وعلى الك و اصحابك يا شفيعنا يوم الجزا
দেওবন্দী বলতে কাদের বুঝানো হয়
দেওবন্দ মাদ্রাসার প্রতিষ্ঠাতা জনাব কাসিম নানূতবী, রশিদ আহমদ গাঙ্গুহী, আশরাফ আলী থানবী, খলিল আহমদ আম্বেঠবী এবং তাদের অনুসারীগণকে দেওবন্দী বলে আখ্যায়িত করা হয়। উল্লেখিত ওলামা নিজ নিজ গ্রন্থে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সম্পর্কে কুৎসা ও ভ্রান্ত মতবাদ ব্যক্ত করেছেন। যথা কাসিম নানূতবী লিখেছেন।
بلکہ اگر بالفرض بعد زمانہ نبوی ﷺکوئی نبی پیدا ہوتو پھربھی خاتمیت محمدی میں کچھ فرق نہ آئےگا
অর্থাৎঃ– যদি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের যামানার পরেও কোন নবীর আবির্ভাব হয় তা হলেও হুযুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাল্লামের শেষ নবী হওয়ার মধ্যে কোন পার্থক্য ঘটবে না। (তাহযীরুন নাস ২৫ পৃষ্ঠা)
পাঠক বৃন্দ! নানূতবী সাহেব নবী পাকের শেষ নবী হওয়া অস্বীকার করেছেন, কিন্তু আল্লাহপাক বলেন –
مَا كَانَ مُحَمَّدٌ اَبَا اَحَدٍ مِّنۡ رِّجَالِكُمۡ وَلَكِنۡ رَّسُوۡلَ اللّٰهِ وَخَاتَمَ النَّبِيِّيۡنَ
অর্থাৎঃ– মুহাম্মদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তোমাদের কোন ব্যক্তির পিতা নন; বরং তিনি আল্লাহর রাসূল এবং শেষ নবী।
২। রশিদ আহমদ গাঙ্গুহী সাহেব "ফাতাওয়ায়ে রশিদিয়ার" দ্বিতীয় খন্ডে লিখেছেন –
یہ عقیدہ رکھنا کہ آپ کو علم غیب تھا صریح شرک ہے
অর্থাৎঃ– তাঁকে (হুযুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে) ইলমে গায়েব (অদৃশ্যের জ্ঞান) ছিল এইরূপ বিশ্বাস করা স্পষ্টভাবে শির্ক।
৩। খলিল আহমদ আম্বেঠবী নিজ গ্রন্থ "বারাহীনে ক্বাতেয়া" ৫১ পৃষ্ঠায় লিখেছেন –
شیطان و ملک الموت کا حال دیکھ کر عالم محیط زمین کا فخر عالم کو خلاف نصوص قطعیہ کے بلادلیل محض قیاس فاسدہ سے ثابت کرنا شرک نہیں تو کونسا ایمان کا حصہ ہے شیطان و ملک الموت کو یہ علم نص سے ثابت ہوئی فخر عالم کی وسعت علم کی کونسی نص قطعی ہے کہ جس سے تمام نصوص کو ردکر کے ایک شرک ثابت کرتاہے
অর্থাৎঃ– শয়তান ও মালাকুল মাওতের অবস্থা দেখে ফাখরে আলামের জন্য বিশ্বে পরিবেষ্টনকারী বিদ্যার অকাট্য প্রমাণের বিনা দলিলে শুধুমাত্র দূষিত মতামত দ্বারা সাব্যস্ত করা শির্ক নয়তো কোন প্রকারের ঈমানের অঙ্গ, অশয়তান এবং মালাকুল মাওত এর জন্য বিদ্যার প্রশস্ততা অকাট্য দলিলের দ্বারা সাব্যস্ত হয়েছে কিন্তু হুযূর সাল্লাল্লাহু আলাইহি অ সাল্লাম এর বিদ্যার প্রশস্ততার সাব্যস্তের জন্য কোন প্রকারের অকাট্য দলিল রয়েছে, যার দ্বারা সমস্ত দলিলকে বাতিল করে এক মাত্র শির্কই সাব্যস্ত করছে?"
উপরোক্ত এবারতের ফলাফল এটাই হল যে, মালাকুল মাওত তথা হযরত ইজরাঈল এবং ইবলিস (শয়তান) এর বিদ্যার প্রশস্ততাকে তিনি কুরআন ও হাদীস হতে সাব্যস্ত করলেন কিন্তু হযূর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের বিদ্যার প্রশস্ততার মান্যকারীকে বললেন মুশরিক অর্থাৎ যার মধ্যে ঈমানের কোন অংশ নেই। এই দ্বারা তিনটি কথা সাব্যস্ত হচ্ছে। ১) হুযূর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের বিদ্যা মালাকুল মাওত এবং শয়তান হতে কম। ২) শয়তান এবং মালাকুল মাওত হতে হুযূর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে অধিকতর বিদ্বান মনে করা শির্ক। ৩) শয়তান এবং মালাকুল মাওত উভয়েই বিদ্যার প্রশস্ততায় আল্লাহপাকের শরিক। কেননা শির্ক হচ্ছে আল্লাহপাকের সহিত কাউকেও শরীক মান্য করা।
সুতরাং রশীদ আহমদ গাঙ্গুহী ও খলিল আহমদ আম্বেঠবী উভয়ই নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ইলমে গায়েব (অদৃশ্যের বিদ্যা) কে অস্বীকার করেছেন।
কিন্তু মহান রব্বুল আলামীন পবিত্র কুরআনে বলেন –
وَمَا كَانَ اللّٰهُ لِيُطۡلِعَكُمۡ عَلٰی الۡغَيۡبِ وَلٰكِنَّ اللّٰهَ يَجۡتَبِیۡ مِنۡ رُّسُلِهٖ مِنۡ يَّشَاءُ
অর্থাৎঃ– আর আল্লাহপাকের এ শান নয় যে, হে সর্ব সাধারণ ! তোমাদেরকে অদৃশ্যের জ্ঞান দিয়ে দেবেন। হ্যাঁ আল্লাহ নির্বাচিত করে নেন তাঁর রসূলগণের মধ্যে থেকে যাঁকে চান। (সূরা আল-ইমরান, আয়াত নং ১৭৯)
عٰلِمُ الۡغَيۡبِ فَلَايُظۡهِرُ عَلٰی غَيۡبِهٖ اَحَدًا اِلَّا مَنِ ارۡتضٰی مِنۡ رَّسُوۡلٍ
অর্থাৎঃ– অদৃশ্যের জ্ঞাতা, সুতরাং আপন অদৃশ্যের উপর কাউকেও ক্ষমতাবান করেন না আপন মনোনীত রসূলগণ ব্যতীত। (পারা ২৯, সূরা জ্বীন, আয়াত ২৬-২৭)
وَمَا هُوَ عَلٰی الۡغَيۡبِ بِضَنِيۡنٍ
অর্থাৎঃ– এবং এ নবী অদৃশ্য বিষয় বর্ণনা করার ব্যাপারে কৃপণ নন। (পারা ৩০ সূরা তাকবীর, আয়াত ২৪)
৪। দেওবন্দীদের মহান পেশওয়া মৌলভী আশরাফ আলী থানবী, নবী পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ইলমে গায়েব (অদৃশ্যের জ্ঞান) সম্পর্কে কুরুচিকর অভিমত ব্যক্ত করে নিম্নরূপ গোস্তাখী করেছেন।
آپ کی ذات مقدسہ پر علم غیب کا حکم کیا جانا آگ بقول زید صحیح ہو تو دریافت طلب یہ امر ہے کہ اس غیب سے مراد بعض غیب ہے یا کل غیب اگر بعض علوم غیبیہ مراد ہیں تو اس میں حضور کی ہی کیا تخصیص ہے ، ایسا علم غیب تو زید و عمر و بلکہ ہر صبی و مجنون بلکہ جمیع حیوانات و بہائم کے لئے بھی حاصل ہے
অর্থাৎঃ– "নবী পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর পবিত্র জাতের জন্য ইলমে গায়েব সাব্যস্ত করা যদি যায়েদের কথা অনুযায়ী সঠিক হয় তবে জিজ্ঞাস্য বিষয় এই যে এই গায়েবের (গুপ্ত তথ্যের) উদ্দেশ্য কী কতিপয় গায়েব অথবা সম্পূর্ণ গায়েব? যদি 'বায উলুমে গায়বীয়া' (কতিপয় গুপ্ত বিদ্যাই) উদ্দেশ্য হয় তাহলে এতে হুযূরেরই বাকি বিশেষত্ব? এইরূপ ইলমে গায়েব (গুপ্ত বিদ্যা) তো যায়েদ, আমর বরং বালক, পাগল এমনকি পশুপক্ষীকুল ও জন্তুদিগের জন্যও সাব্যস্ত রয়েছে। (হিফযুল ঈমান ৮ পৃঃ)
থানবী সাহেব যদিও নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জন্য 'বায' (কতিপয়) ইলমে গায়েব স্বীকার করেছেন কিন্তু আবার সাধারণ মানুষ, বালক, পাগল, পশুপক্ষী ও চতুষ্পদ জন্তুর (অর্থাৎ গাধা, কুকুর, শুকুর ইত্যাদির) সমতূল্য করে হুযূর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর মর্যাদাহানী করতঃ নিজ ধৃষ্টতার প্রমাণ দিয়েছেন।
হানাফী মাযহাবের ইমাম হযরত ইমাম আবূ ইউসুফ রাদিয়াল্লাহু আনহু "কেতাবুল খারাজ" এর মধ্যে লিখেছেন –
اَيُّمَا رَجُلٌ مُسۡلِمٌ سَبَّ رَسُوۡلَ اللّٰهِ ﷺ اَوۡ عَبَّهُ اَوۡ تَنَقَّصَهُ فَقَدۡ كَفَرَ بِاللّٰهِ تَعَالٰی وَبَانَتۡ مِنۡهُ اِمۡرَاتُهُ
অর্থাৎঃ– যে ব্যক্তি মুসলমান হয়ে হুযূর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের শানের (মর্যাদার) প্রতি অকথ্য ভাষা প্রয়োগ করে অথবা হুযূরের দিকে মিথ্যার সম্বোধন করে অথবা হুযূরের প্রতি কোন প্রকারের কলঙ্ক আরোপ করে অথবা যে কোন প্রকারেই হউক হুযূরের মর্যাদাকে খর্ব করে সে অবশ্যই কাফির, খোদা পাকের অস্বীকারকারী হয়ে গেল এবং তার স্ত্রী তার বিবাহ থেকে বহির্ভূত হল।" শেফা শরীফ, বাযাযীয়া এবং ফাতাওয়া খায়রীয়া ইত্যাদি কেতাবের মধ্যে আছে –
اَجۡمَعَ الۡمُسۡلِمُوۡنَ اَنَّ شَاتِمَهُ ﷺ كَافِرٌ وَ مَنۡ شَكَّ فِیۡ عَذَابِهٖ وَ كُفۡرِهٖ كَفَرَ
অর্থাৎঃ– সমগ্র মুসলমানগণের এই কথার উপর ইজমা (একমত) রয়েছে যে, যে ব্যক্তি নবী আলাইহিস্ সালামের পবিত্র শান (মর্যাদার) প্রতি গোস্তাখী (অসভ্য আচরণ) করে সে কাফির এবং যে ব্যক্তি ঐ অসভ্য আচরণকারীর দোযখবাসী ও কাফির হওয়ার সম্বন্ধে সন্দেহ করবে সেও কাফির হবে।"
উপরোল্লেখিত দেওবন্দের শীর্ষস্থানী আলেমগণ তথা দেওবন্দীদের কেন্দ্রীয় আলেম সমাজের মাত্র কয়েকটি ভ্রান্ত মতবাদ ও উক্তির সংক্ষিপ্ত আকারে আলোচনা ও পর্যালোচনা করা হল, এতেই আমার মনে হয় যে, একথা প্রকাশ পেয়েছে যে, তারা নবী প্রেমিক নয়, নবী দ্রোহী, বাস্তবে হাদীস ও কুরআন অনুসারী, না নিজ স্বার্থে মনগড়া মত ও পথের প্রচারকারী।
এখানে শুধুমাত্র বিশিষ্ট চারজন আলেমেরই একটা করে উক্তি উপস্থাপন করলাম এছাড়া আরও অন্যান্য দেওবন্দী আলেমদের কিতাবগুলি নবী পাক তো নবী পাক আল্লাহপাকের ও গোস্তাখী কুৎসা ও ভ্রান্ত মন্তব্যে ভরে পড়ে রয়েছে। যার কারণে দেওবন্দী আলেমদের প্রতি আহলে সুন্নাত তথা হানাফী শাফেঈ, মালেকী ও হাম্বলী চারও মাযহাবের শীর্ষস্থানীয় মুফতীগণ; মক্কা মদীনা এবং অন্যান্য দেশের মুফতীগণও কাফির ও জিন্দিকের ফতোয়া দিয়েছেন। এবং এটাও বলেছেন যে, যারা তাদের কাফের ও দোযখী হওয়ার সম্বন্ধে সন্দেহ প্রকাশ করবে তারাও কাফির বলে গণ্য হবে। দেখুন (হুসামুল হারামাইন শেফা শরীফ ১১৫, ১১৬ পৃষ্ঠা)
ফুরফুরাপন্থীরা আসলে দেওবন্দী
প্রমাণ নং – ১
ফুরফুরাদের প্রাণ মাওলানা রূহুল আমীন সাহেবের যোগ্য ও মনোনীত খলিফা আয়নুদ্দীন গোবিন্দপুরী "তরদিদে এয়াদাতে হাফাওয়াতে কাছেমী" কিতাবে লিখেছেন – "যে সময় দেওবন্দী কতিপয় আলেমকে ওহাবী কাফের ইত্যাদি ফতোয়া প্রচার করিয়া বাংলা আসামে মহা হৈচৈ হইতেছিল। জমিয়াতে ওলামায়ে হিন্দ বাংলা আসামে প্রসার লাভ করিতে পারিতেছিল না। ফুরফুরার মহামান্য পীর সাহেব কেবলা জমিয়াতে ওলামায়ে সমর্থন করায় আল্লামা রুহুল আমীন ছাহেবেরে প্রাণপণ চেষ্টা ও প্রচারের ফলে বাংলা আসামে জমিয়াতে ওলামায়ে হিন্দের প্রসার প্রতিপত্তি পূর্ণ মাত্রায় বিরাজ করিয়াছিল এবং ফতোয়া করিলেন যে, "দেওবন্দী আলেমগণ ওহাবী কাফের নয়" তখন তাহাদের উপর হইতে উক্ত কলঙ্ক দুরীভূত হইয়াছিল। (পৃষ্ঠা নং ১২৭)
উপরোক্ত আলোচনায় সুস্পষ্ট প্রকাশ পায় যে বাংলা আসামে দেওবন্দী মতবাদ প্রচার-প্রসার হওয়াতে ফুরফুরাবাদীদের বিরাট অবদান রয়েছে এবং শুধু তাই নয় আবূ বকর সিদ্দীক ও রুহুল আমীন সাহেব দেওবন্দী আলেমগণ ওহাবী, কাফের নয় বলে প্রাণপণ প্রচার চালিয়ে তাদের কলঙ্ক মুছেছিলেন। যেই দেওবন্দী আলেমগণের প্রতি তাদের ভ্রান্ত ধারণা ও কুফরী আকীদাহ পোষণ করার কারণে ওলামায়ে ইসলাম তথা ২৬৮ জন ভারতের মুফতী ও মক্কা, মদীনার ৩৩ জন প্রসিদ্ধ মুফতীগণ কাফের ও জিন্দীক বলে ফতোয়া প্রদান করেছেন।
প্রমাণ নং– ২
এবার জনাব রুহুল আমীন সাহেবের নিজস্ব মত দেখুন দেওবন্দী আলেমদের সম্বন্ধে কি বলেছেন "দেওবন্দী মাওলানাগণের সহিত আমাদের কয়েকটি ফরুয়াত মাসআলা লইয়া মতভেদ রহিয়াছে। (ফতোয়ায়ে আমিনিয়া পঞ্চম ভাগ ৭৪ পৃষ্ঠা, বশিরহাঠ নবনূর কম্পিউটার হতে প্রকাশিত)।
প্রিয় পাঠক! রুহুল আমীন সাহেব বলছেন যে, দেওবন্দী ওলামাদের সাথে আমাদের কয়েকটি ফরুয়াত (ছোট ছোট) মাসআলা নিয়ে মতভেদ রয়েছে, যাতে প্রকাশ্য বুঝা যায় যে, আক্বীদাহ (ধর্মীয় মূল বিশ্বাস) গত ব্যাপারে কোন পার্থক্য নেই; উভয়ই এক।
প্রমাণ নং– ৩
ফুরফুরার প্রাণ রুহুল আমীন সাহেব লিখেছেন। "এইরূপ আরও কতিপয় মাসআলাতে তাঁহারা (দেওবন্দী আলেমগণ) দুনিয়ার বিরাট সুন্নী আলেমদের বিপরীত মত ধারণ করিয়াছেন, এজন্য হয়তো হিন্দুস্থানের একদল আলেম তাহাদের উপর কাফেরী ফতোয়া দিতে কুণ্ঠাবোধ করেন নাই। আমরা বলি, মানুষ মাত্রেই ভুল ভ্রান্তি আছে, তাঁহাদের ভ্রান্তিমূলক মাসআলাগুলির উপর আমরা আমল করিব না কিন্তু তাহাদিগকে কাফের ওহাবী ইত্যাদি বলিয়া নিজের রসনাকে কলুষিত করা উচিত নহে।" (ফাতাওয়া আমিনিয়া ৫ খন্ড ৭৫ পৃষ্ঠা)
প্রিয় পাঠক! উপরের উক্তিটিকে বার বার মন দিয়ে পড়ুন তবে বুঝতে পারবেন রুহুল আমীন সাহেবের চালাকি, কিভাবে তাদের সাফাই পেশ করেছেন। দেওবন্দী আলেমদের শুধুমাত্র ভ্রান্তিমূলক মাসআলাগুলির উপর আমল করে না তাছাড়া সমস্ত দেওবন্দী মতের মাসআলার উপর আমল করেন। এতেই বুঝা যায় যে, ফুরফুরাপন্থীরা দেওবন্দী, কারণ তাদের প্রতি দুনিয়ার বিরাট সুন্নী আলেমগণ কাফেরের ফতোয়া দিলেন আর রুহুল আমীন সাহেব অবৈধভাবে তাদের সাফাই পেশ করে নিজ হৃদয়ে স্থান দিলেন। দুনিয়ার বিরাট সুন্নী আলেমগণ ও তো বলতে পারতেন যে, আমরা দেওবন্দী আলেমদের ভ্রান্তগুলিকে মানি না এটা তাদের ইজতেহাদী ভ্রমের তুল্য, তারা খাঁটি সুন্নী। কিন্তু তা না বলে সুন্নী আলেমগণ তাদের উপর কুফর ও জিন্দীক হওয়ার ফতোয়া প্রদান করেছেন। প্রিয় পাঠক! এখানে রুহুল আমীন সাহেব সরল প্রাণ মুসলমানদেরকে কত বড় প্রতারণায় ফেলে নিজের পীর সাহেবদের পীরত্ব ও স্বীয় খেলাফতীকে বাঁচিয়েছেন।
প্রমাণ নং– ৪
দাদা হুযূরের পৌত্রগণের মধ্যে সর্ববয়োজ্যেষ্ঠ ও বংশের মুরুব্বী পীর সাইফুদ্দীন সিদ্দীকী "আদ দাওয়াহ" গ্রন্থের ১০২ নাম্বার পৃষ্ঠায় লেখেন "তবে আমরা ফুরফুরা সিলসিলার অনুসারীগণ মাওলানা আহমদ রেজা খান (আ'লা হযরত) কর্তৃক প্রদত্ত উক্ত কাফের ফতোয়ার কারণে ব্যথিত হয়েছি। আর তাঁর ফতোয়ার সাথে আমরা একমত নই।"
প্রিয় পাঠক! দেখুন দেওবন্দীদের প্রতি কুফুরের ফতোয়া পতিত হওয়ার কারণে ফুরফুরাবাদীদের মনোনীত পীর শাইখুল হাদীস সাইফুদ্দীন সিদ্দীকী চরম ব্যথিত এবং সেই ফতোয়ার সাথে একমত নন। যে ফতোয়া সম্পর্কে রুহুল আমীন সাহেব বলেছেন, "দুনিয়ার বিরাট সুন্নী আলেমগণ ফতোয়া প্রদান করেছেন" তাহলে বুঝা যায় যে, ফুরফুরাবীরা দুনিয়ার বিরাট আলেমদের অন্তর্ভূক্ত নয়, তারা সামান্য এবং দেওবন্দীদেরকে ফতোয়া দেওয়াতে সাইফুদ্দীন সাহেবের ব্যথিত হওয়াই; প্রমাণ করে যে তারা দেওবন্দী অনুসারী।
প্রমাণ নং– ৫
সাইফুদ্দীন সাহেব আরও লিখেছেন, দেওবন্দীগণের সাথে আমরা সর্বকালেই এক মঞ্চে কাজ করেছি এবং এখনও করে চলেছি। তাদের সাথে আমাদের সিলসিলার আকাবিরগণের সুসম্পর্ক আগাগোড়াই ছিল, এখনও যারা যোগ্য ও সত্যিকারে দেওবন্দী তাদের সাথে আমাদের সুসম্পর্ক আছে, বরাবরই আমাদের আকাবিরগণ দেওবন্দীদের কিতাব-পত্র থেকে বিভিন্নভাবে বরাত দিয়ে থাকেন।" (আদ দাওয়াহ ১০৩ পৃষ্ঠা)
প্রিয় পাঠক! আরও কি প্রমাণ লাগবে? দেখুন সাইফুদ্দীন সাহেবের বয়স এখন প্রায় ৮০ বৎসর আর তিনি বলছেন যে, আমরা সর্বকালেই একমঞ্চে কাজ করেছি এবং এখনও করে চলেছি। এবং যারা দেওবন্দীদের যোগ্য তাদের সাথে এখনও সুসম্পর্ক আছে, তাদেরই কিতাব-পত্র পড়ি। তাহলে বুঝা যায় যে, ফুরফুরাবীদের সম্পর্ক দেওবন্দীদের সাথে ৮০ বৎসর আগে কি তারও পূর্বকাল থেকেই আছে। আর কেনই বা থাকবে না জলটা তো সেখানকার।
প্রমাণ নং– ৬
সাইফুদ্দীন সাহেব "আদ দাওয়াহ" গ্রন্থের ১০৩ পৃষ্ঠায় আরও সুস্পষ্টভাবে বুঝিয়ে দিয়েছেন যে আমাদের অর্থাৎ ফুরফুরা সিলসিলার মূলই হচ্ছে দেওবন্দী ও ওহাবী দেখুন তিনি লিখেছেন, "শীর্ষস্থানীয় উলামায়ে দেওবন্দ ও ফুরফুরা সিলসিলার মাঝে মিল (আগে লিখেছেন) সৈয়দ আহমদ বেরলভী শহীদ হয়ে উপমহাদেশে যে তিনটি প্রসিদ্ধ সিলসিলা ও হক্ব মাশরাব বের হয়েছে তা হল – (১) জৈনপুরের মাওঃ কারামাত আলী জৈনপুরী – এর সিলসিলা (২) ফুরফুরা শরীফের মুজাদ্দিদে যামান আবু বকর সিদ্দিকী এর সিলসিলা (৩) দারুল উলূম দেওবন্দ মাদ্রাসার প্রতিষ্ঠাতাগণও মাদ্রাসা থেকে বের হওয়া শীর্ষস্থানীয় আলিমগণ।" (আদ দাওয়াহ ১০৩ পৃষ্ঠা)
প্রমাণ নং– ৭
ফুরফুরা ফাতেহীয়া সিনিয়র মাদ্রাসার ফতওয়া
ওলামায়ে কেরাম কি বলিতেছেন এই নিম্নলিখিত মাসআলা সম্বন্ধেঃ–
আশরাফ আলী থানবী, রশিদ আহমদ গাঙ্গুহী এবং কাসিম নানূতবী তাহারা কি রূপ আলেম? তাঁদের অনুসারীদের পিছনে নামাজ হবে কিনা? দয়া করিয়া দলিলসহ উত্তর দিবেন।
ইতি –
আব্দুশ শুকুর
গ্রাম – বামন গ্রাম, কামাত পাড়া,
কালিয়াচক, মালদা।
উত্তরঃ–
বর্ণিত ওলামায়ে কেরামগণ আহলে সুন্নাতুল জামাতের হক্ব ওলামা এবং হানাফিয়াগণের জন্য খুঁটি স্বরূপ, তাঁহাদের অনুসরণকারীদের পিছনে অবশ্যই নামাজ হইবে।
ইতি –
আহকার
আব্দুল মান্নান
মুফতীঃ ফুরফুরা ফাতেহীয়্যা সিনিয়র মাদ্রাসা
প্রোঃ ফুরফুরা, জেলা- হুগলী। তাং– ০৫/০১/১৯৮৬
প্রমাণ নং– ৮
কি বলিতেছেন ওলামায়ে কেরামগণ এই মাসআলা সম্বন্ধে ওলামায়ে দেওবন্দের আক্বীদা কেমন এবং উনাদের অনুসরণকারীদের পিছনে আমাদের অর্থাৎ ফুরফুরাপন্থীদের নামাজ হইবে কিনা? এবং তাহাদের অনুসরণ করা ঠিক কিনা? দয়া করিয়া দলিলসহ উত্তর দিবেন।
প্রশ্নকারীঃ–
১) মুহাম্মদ আব্দুস শুকুর
২) মুহাম্মদ হুমায়ুন সিদ্দিকী
সাং+প্রোঃ বামন গ্রাম
কালিয়াচক, মালদা।
তাং– ১৯/০৫/১৯৮৮
উত্তরঃ– :الجواب
হক্কানী দেওবন্দী ওলামায়ে কেরামদের পিছনে নামাজ দোরস্ত আছে তাঁদের আক্বীদা ভাল ও তাঁহাদের অনুসরণ জায়েজ আছে।
আহকার
আব্দুল মান্নান
মুফতী– ফুরফুরা ফাতেহীয়্যা সিনিয়র মাদ্রাসা।
প্রোঃ ফুরফুরা, জেলা হুগলী।
তাং– ২৮/০৫/১৯৮৮
প্রমাণ নং– ৯
সাইফুদ্দীন সিদ্দিকী লিখেছেন, "যারা আকাবিরে ওলামায়ে দেওবন্দকে কাফের বলবে তারা যেন কেউ নিজেদেরকে ফুরফুরা সিলসিলার অনুসারী বলে দাবি না করে।" (আদ দাওয়াহ ৯৬ পৃষ্ঠা)
ফুরফুরাপন্থীরা সুন্নী নয়
১। ফুরফুরাবীদের প্রাণ রুহুল আমীন সাহেব লিখেছেন, কতিপয় মাসআলাতে তাঁহারা (দেওবন্দীরা) দুনিয়ার বিরাট সুন্নী আলেমদের বিপরীত মত ধারণ করিয়াছেন।" (ফাতাওয়া আমিনিয়া ৫ খন্ড ৭৫ পৃষ্ঠা)
এবার দেখুন দুনিয়ার বিরাট সুন্নী আলেমগণ কারা?
রুহুল আমীন সাহেব এক প্রশ্নের উত্তর দিতে গিয়ে লিখেন, "তিনি (আলা হযরত ইমাম আহমদ রেজা খান) অদ্বিতীয় আলেম ছিলেন, ... তাঁহার শাগরেদগণের মধ্যে বড় বড় প্রসিদ্ধ আলেম ছিলেন। তাঁহারা খাঁটি সুন্নী ছিলেন, দেওবন্দীদের কতেক আলেমকে তিনি কাফের হওয়ার ফতোয়া দিয়েছেন"। (ফতোয়ায়ে আমিনিয়া ৫ খন্ড ৭৬ পৃষ্ঠা)।
সুতরাং সেই যুগে আ'লা হযরত ছিলেন অদ্বিতীয় আলেম, ও তাঁর শাগরেদগণও ছিলেন বড় বড় আলেম আর তারাই খাঁটি সুন্নী ছিলেন। তাহলে বুঝা যায় যে ভারত ও পাকিস্তান জুড়ে ইহারাই ছিলেন বড় জমাত (বড় দল) এর শীর্ষস্থানী আলেম ও খাঁটি সুন্নী, আর এই দল কর্তৃক মক্কা ও মদীনার শীর্ষস্থানীয় ৩৩ জন প্রসিদ্ধ আলেম (হানাফী, শাফেঈ, মালেকী ও হাম্বলী মতের) এবং ভারত, পাকিস্তান ও বাংলাদেশের মহামান্য প্রসিদ্ধ আলেম ও মুফতীগণ, দেওবন্দের বিশিষ্ট আলেমগণ ও তাদের অনুসারীগণকে কাফের ও জিন্দিক বলে ফতোয়া প্রদান করেছেন এবং এটাও বলেছেন যে, তাদের কাফের ও জাহান্নামী হওয়াতে যে ব্যক্তি সন্দেহ করবে সেও কাফের হয়ে যাবে। তাহলে সুস্পষ্টভাবে প্রমাণ হল যে দুনিয়ার বিরাট আলেম, বড় দল খাঁটি সুন্নী, দেওবন্দীদের প্রতি ফতোয়া প্রদানকারীগণ। আর যারা উক্ত ফতোয়ার প্রতি সহমত নয় তারা "বড় দল" থেকে বিচ্ছিন্ন; আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতের অন্তর্ভূক্ত নয়।
রুহুল আমীন সাহেব বলছেন, উক্ত ফতোয়া সম্পর্কে "তাঁহাদের ভ্রান্তিমূলক মছলাগুলির উপর আমরা আমল করিব না, কিন্তু তাহাদিগকে কাফের ওহাবী ইত্যাদি বলিয়া নিজের রসনাকে কলুষিত করা উচিত নহে।" (ফতোয়া আমিনিয়া ৫ খন্ড ৭৫ পৃষ্ঠা)
রুহুল আমীন সাহেবের ভাষা থেকে স্পষ্ট বুঝা গেল যে, ফুরফুরাপন্থীরা 'বড় দল (আহলে সুন্নাত) এর অনুসারী নয়, কারণ অনুসারী হলে অবশ্যই তারাও দেওবন্দীদের প্রতি ফতোয়া প্রদান করতেন, সুতরাং প্রমাণ হল যে, ফুরফুরাবীরা খাঁটি সুন্নী নয়, তারা দেওবন্দী অনুসারী।
যারা বড় দল থেকে পৃথক তারা পথভ্রষ্ট।
১। আল্লাহ পাক ইরশাদ করেন –
اَطِيۡعُوا اللّٰهَ وَاَطِيۡعُوا الرَّسُوۡلَ وَاُولِی الۡاَمۡرِمِنۡكُمۡ
অর্থাৎঃ– তোমরা নির্দেশ মান্য করো আল্লাহর এবং নির্দেশ মান্য করো রাসূলের এবং তাদেরই যারা তোমাদের মধ্যে ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত। (সূরা নিসা, ৫৯ আয়াত)।
হযরত ইমাম ফখরুদ্দীন রাযী রাহমাতুল্লাহি আলাইহি লিখেছেন –
اَلۡمُرَادُ مِنۡ اُوۡلِیۡ الۡاَمۡرِ الۡعُلَمَاءُ فِی اَصَحِّ الۡاَقۡوَالِ لِاَنَّ الۡمُلُوۡكَ يَجِبُ عَلَيۡهِم طَاعَةُ الۡعُلَمَاءِ وَلَايَنۡعَكِسُ
অর্থাৎঃ– (ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত) থেকে বুঝানো হয়েছে আলেম সম্প্রদায়কে বিশুদ্ধ মতে, কারণ বাদশাহগণের প্রতি আলেম সম্প্রদায়ের আনুগত্য করা ওয়াজিব, কিন্তু তার উল্টো নয়। (ইলম এবং আলেম সম্প্রদায় ৪১ পৃষ্ঠা)
২। আরো বলেছেন,
Comments
Post a Comment