ওহাবীরা ইংরেজদের দালাল
ওহাবীরা ইংরেজদের বেতনভুক্ত দালাল
(একটি চাঞ্চল্যকর তথ্য)
মূল
মুহাম্মদ নওশাদ আলম চিশতী
অনুবাদক
অধ্যক্ষ হাফেজ এম.এ. জলিল (রহঃ)
টেক্সট্ রেডীঃ মুহাম্মদ আব্দুল খালেক
প্রকাশকাল
১ম প্রকাশ: ১২ জুন ১৯৯৯ইং মোতাবেক ২৭ সফর ১৪২০ হিজরী
২য় প্রকাশ: ০৫ অক্টোবর ২০১৬ইং মোতাবেক ০৩ মহররম ১৪৩৮ হিজরী
প্রকাশকের কথা
----------------------
নাহমাদুহু ওয়া নুছাল্লী আলা রাসূলিহিল কারীম, খোদার খোদায়ীত্বকে ধুলায় দোষরীতে করার জন্য তাঁরই রাজত্বে বহু নরাধম জন্মে ছিল আজ তারা নেই; নাম আছে কিন্তু সৃষ্টিকুল নাক সিটকানো ভঙ্গিমায় স্মরণ করে। রাসূলে মকবুল নূরে মোজাচ্ছাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম'র আগমন তথা ইসলাম আসার পর থেকে এই শান্তির ধর্মকে অনেক বিষধর ধ্বংসের সাথে মোকাবেলা করতে হয়েছে। কিন্তু খোদার লাখো শুকরিয়া যে, এ বাগান এখনো পূর্ববৎ সজীব ও প্রাণবন্ত রয়েছে। এ ধর্ম কখনো কুখ্যাত ইয়াজিদ দ্বারা মেঘাচ্ছন্ন হয়েছে। কখনো হাজ্জাজের আমলের নির্যাতনে মানুষ দিশেহারা ছিল। কখনো খলিফা মামুনের আমলে বাতিল পন্থীদের আক্রমনের শিকার হয়েছে। আবার খারেজী-রাফেজী, শিয়া, মোতাজেলা, সালাফী আহলে হাদীস তাদের সাথে যোগ হয়েছে দেওবন্দী ওহাবী সম্প্রদায়। বাদশা আকবর দ্বীনে এলাহী প্রতিষ্ঠার জন্য যা ইচ্ছা তাই করেছে। তারাও সে রকম অপপ্রয়াস চালাচ্ছে। সম্রাজ্যবাদী ইংরেজদের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ সাহায্য সহ সহযোগীতায় ইসলামের বাতিল ফের্কাগুলো আরবে ও আজমে সর্বত্র ইসলামের প্রতিষ্ঠিত আকিদা সমূহের উপর কঠোর আঘাত হানা শুরু করে। আরবের অভিশপ্ত নজদ প্রদেশে মুহাম্মদ ইবনে আব্দুল ওহাব নজদীর অনুসারীরা ওহাবী আন্দোলনের মাধ্যমে মানুষের ঈমান আকিদা বিনষ্ট করেছিল। পাক ভারত উপমহাদেশেও ওহাবী আন্দোলনের ঢেউ এসে একের পর এক আঘাত হেনেছিল। ইংরেজদের সহায়তায় তারা বিরাট ধরনের ওহাবী মাদ্রাসা তৈরি করে ওহাবী মতবাদ প্রচারে লিপ্ত হয়েছিল।
অত্র গ্রন্থে ঐ সকল বাতিলদের মুখোশ উন্মোচন করার কল্পে তারা যে ইংরেজদের বেতনভুক্ত দালাল তার একটি চাঞ্চল্যকর তথ্য প্রদান করা হল। কাল গহ্বরে থাকা এ তথ্যটি প্রত্যেক সুক্ষ্ম জ্ঞানের অধিকারী ঈমানদার মুসলমানের জানা অতিব জরুরী। প্রিয় পাঠক মহল! কচি হাতে পাথর ভাঙ্গার ন্যায় এই তথ্যটি। যা আপনাদের অন্তরের চক্ষু খুলে দেয়া ও বহুল প্রচারের উদ্দেশ্যে, আমার দাদা ওস্তাদ মোনাজেরে আযম অধ্যক্ষ হাফেজ এম. এ. জলিল (রহঃ) এর স্মৃতি বিজড়িত আ'লা হযরত স্মরনিকা অবলম্বনে রচিত। নাতিদীর্ঘ এই গ্রন্থটি পুরোপুরি পাঠ করে বিবেকের আদালতে মুখোমুখি হবেন। এতে আপনার হৃদয়ের দাগা খুলে যাবে আমি আশা করি, ইনশাআল্লাহ।
বিনীত
এম. এ. কাদের
মোবাইল: ০১৭২০-৯৯৭০০৫
একটি চাঞ্চল্যকর তথ্য
নজদের কুখ্যাত ইবনে আব্দুল ওহাব নজদী ওহাবী মতবাদের প্রতিষ্ঠাতা। ১৭৪৫ খ্রীষ্টাব্দে উক্ত বাতিল মতবাদ প্রতিষ্ঠায় মুহাম্মদ ইবনে আব্দুল ওহাব নজদীকে ইংরেজ গুপ্তচর বিভাগের অফিসার মিঃ হামফ্রে ডাইরী থেকে বাংলায় অনুবাদ করেছেন ঢাকা রেসিডেন্সিয়াল মডেল স্কুল ও কলেজের ধর্মীয় শিক্ষক মাওলানা লোকমান আমিমী সাহেব। সুফিয়া ও আমেনা ছদ্ম নামের দুই খ্রীষ্টান মহিলার দ্বারা মিঃ হামফ্রে মুহাম্মদ ইবনে আব্দুল ওহাব নজদীর চরিত্র হনন করে তাকে মাদকাসক্ত করে নিজের আয়ত্বে নিয়ে আসে। তাকে দিয়ে ইসলাম বহির্ভূত ওহাবী মতবাদ তৈরি করে কিতাবুত তাওহীদ ও কাশফুশ্ শুবহাত প্রভৃতি ঈমান বিধ্বংসী কিতাব রচনা করিয়ে ব্রিটিশ সরকারের অর্থানুকূল্যে তা ছাপিয়ে বিনামূল্যে বিতরণের ব্যবস্থা করা হয়। তুরস্কের ওসমানীয় খিলাফতের সাথে ইংরেজদের দুশমনি ছিল। ইংরেজ সরকার আরব দেশকে তুরস্কের খিলাফত থেকে মুক্ত করে স্বাধীনতা প্রদানের প্রলোভন দেখিয়ে মক্কার গভর্নর শরীফ হোসাইন, নজদের আমির মুহাম্মদ ইবনে সউদ এবং মুহাম্মদ ইবনে আব্দুল ওহাব নজদীকে নিজেদের বেতনভুক্ত দালাল বানিয়ে নেয়। দীর্ঘ পথ পরিক্রমা করে আরব দেশের এসব গাদ্দায় ও তাদের বংশধরেরা অবশেষে প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় ১৯১৪-১৯১৮ সালে ইংরেজদের পক্ষ হয়ে যুদ্ধ করে তুরস্ককে পরাজিত করে। এই দালালীর পুরস্কার স্বরূপ সউদী বাদশাহ্ আব্দুল আজিজকে নজদ ও হিজায দান করা হয় এবং শরীফ হোসাইনের দুই পুত্র ফয়সাল ও আব্দুল্লাহ্কে বাদশাহ বানানো হয়-যথাক্রমে ইরাক ও জর্দানের। ইবনে ওহাব নজদীর শাগরিদ ও জামাত নজদের আমির ইবনে সউদের অধঃস্তন বংশধর বাদশাহ আব্দুল আজিজ ইংরেজ সরকারের সাথে ৮ দফায় একটি গোপন চুক্তি স্বাক্ষর করে। এতে সউদী আরবের পররাষ্ট্রনীতিতে ইংরেজদের অনুসরণের কথা উল্লেখ আছে। কলম সম্রাট আল্লামা আরশাদুল কাদেরী সাহেব তাঁর লিখি 'তাবলীগী জামাত' বইতে এই সৌদি ইংরেজ গোপন চুক্তির ৮ দফা বিস্তারিতভাবে উল্লেখ করেছেন। মক্কার শরীফ হোসাইন ও নজদের আব্দুল আজিজের সাথে ইংরেজরা গোপন চুক্তি করে তাদের স্বাধীনতা এনে দেয়ার প্রতিশ্রুতি ও অস্ত্রশস্ত্র প্রদানের অঙ্গীকার করে কূটকৌশলের মাধ্যমে মূলতঃ ফিলিস্তিনে একটি ইয়াহুদী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার প্রচ্ছন্ন ব্যবস্থা করে রাখে। প্রথম মহাযুদ্ধের পর ১৯১৯ সালে ভার্সাই চুক্তিতে আরব ভূখন্ডে একটি ইয়াহুদী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার ঘোষণা দেয়া হয়। উক্ত ঘোষণাকে বেলফোর ঘোষণা বলা হয়। বেলফোর ছিলেন তৎকালীন বৃটিশ প্রধানমন্ত্রী ও পররাষ্ট্র সেক্রেটারী। এই সংক্ষিপ্ত ভূমিকায় প্রমাণিত হলো-ওহাবীরা জন্মলগ্ন থেকেই ইংরেজদের দালালী করে আসছে।
ভারতবর্ষের ওহাবীদের ইংরেজ প্রীতি ও দালালী
ওহাবী বাতিল মতবাদ নজদে জন্মগ্রহণ করলেও পরবর্তীতে বিদেশেও ইহাকে চালান দেয়া হয়। সউদী বাদশা ফয়সাল কর্তৃক রাজকীয় প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে মুদ্রিত ও সমর্থিত "শেখ মুহাম্মদ ইবনে আব্দুল ওহাব" নামক আরবী বইয়ে ওহাবী মতবাদ বিদেশে প্রচারকদের একটি তালিকা পেশ করা হয়েছে। উক্ত তালিকায় ভারতীয় ওহাবী খলিফা ও এজেন্ট হিসেবে সেখানে হয়েছে "আওর মুহাম্মদীয়া" তরিকার প্রতিষ্ঠাতা সৈয়দ আহমদ বেরলভীকে। তিনি ইসমাঈল দেহলভী সহ অন্যান্য দলবল নিয়ে ১৮১৬-১৮২০ খ্রীস্টাব্দে হজ্বের নামে আরব দেশে ৪ বছর অবস্থান করে ওহাবী মতবাদে দীক্ষিত হয়ে দেশে প্রত্যাবর্তন করেন এবং মুহাম্মদ ইবনে আব্দুল ওহাব নজদীর নামানুসারে "আওর মুহাম্মদীয়া" নামের একটি নতুন ওহাবী তরিকা চালু করে এর মাধ্যমে ওহাবী মতবাদ প্রচার করেন। মকসুদুল মোমিনীন গ্রন্থের লেখক মাওলানা কাজী গোলাম রহমান সাহেব কৃত "হযরত শাহজালাল" গ্রন্থে "আওর মুহাম্মদীয়া" তরিকার উৎপত্তি বিস্তারিতভাবে আলোচিত হয়েছে। উল্লেখ্য, তিনি ছিলেন ফুরফুরার একজন খলিফা। কিন্তু সত্য গোপন না করেই সৈয়দ আহমদ বেরেলভীর ওহাবী তরিকার উৎপত্তির কথা তিনি অকপটে স্বীকার করেছেন। তিনি লিখেছেন-তরিকায়ে মুহাম্মদীয়ার মূল হোতা ছিলেন মুহাম্মদ ইবনে আব্দুল ওহাব নজদী। ১৭৪৫ খৃষ্টাব্দে নজদে ইহা প্রথম চালু হয়। পরবর্তীতে ভারতে এই তরিকা আসে।
ইসমাঈল দেহলভী ও সৈয়দ আহমদ বেরলভীর আন্দোলনকে অনেকেই ভুল করে ইংরেজ বিরোধী ও আজাদী আন্দোলন বলে উল্লেখ করে থাকেন। তাঁদের এই অভিমত সঠিক নয়। ইসমাঈল দেহলভীর সমসাময়িক ঐতিহাসিক জাফর থানেশ্বরী তার লিখিত "তাওয়ারিখে আজীবা" গ্রন্থের ৭৩ পৃষ্ঠায় ইসমাঈল দেহলভীর একটি উক্তির উল্লেখ করেছেন। কলকাতায় ইসমাঈল দেহলভী ও সৈয়দ আহমদ বেরলভী শিখ নেতা রণজিৎসিংহের বিরুদ্ধে জিহাদ করার আহ্বান জানিয়ে মুসলমানদেরকে উত্তেজিত করতে ছিলেন। তখন সভার মধ্য হতে প্রশ্ন করা হলো-আপনারা শিখদের বিরুদ্ধে জিহাদের কথা বলেন, কিন্তু ইংরেজদের বিরুদ্ধে জিহাদের কথা বলেন না কেন? তখন ইসমাঈল দেহলভী এই উক্তি করেছিল "এমন সৎ ও নিরপেক্ষ (ইংরেজ) সরকারের বিরুদ্ধে কোন প্রকারের জেহাদই দুরস্ত নয়" (তাওয়ারিখে আজীবা পৃষ্ঠা ৭৩ জাফর থানেশ্বরী)। এতেই দিবালোকের মত স্পষ্ট হয়ে যায় যে, ইসমাঈল দেহলভী ও সৈয়দ আহমদ বেরলভীর আন্দোলন ইংরেজ বিরোধী ছিল না। বরং বাস্তবে দেখা গেছে যে, ১৮২৮ খ্রীস্টাব্দ হতে ১৮৩১ খ্রীস্টাব্দ পর্যন্ত সৈয়দ আহমদ বেরলভী ও ইসমাঈল দেহলভী দীর্ঘ ৫ বছর পেশোয়ারের পাঠান সুন্নী মুসলমানদের বিরুদ্ধেই যুদ্ধে লিপ্ত ছিল। সৈয়দ আহমদ বেরলভী ও ইসমাঈল দেহলভী কর্তৃক কিছু নারী ঘটিত কেলেঙ্কারীর কারণে পাঠান মুসলমানরা সৈয়দ আহমদ বেরলভী ও ইসমাঈল দেহলভীর বিরুদ্ধে সর্বাত্মক যুদ্ধ ঘোষণা করে। সৈয়দ আহমদ বেরেলভীর নারী কেলেঙ্কারী ও মাজহাবী ঝগড়ার কারণে তার সাথীরা একে একে তাকে ত্যাগ করতে থাকে। অবশেষে মাত্র ৯ শত সঙ্গী নিয়ে কাশ্মীরের পথে পলায়নের সময় তিনি বালাকোট ময়দানে শিখদের দ্বারা বাধা প্রাপ্ত হন। পিছন দিক থেকে পাঠান সুন্নী মুসলমানরা এসে এই পীর ও মুরিদগণকে হত্যা করে ফেলে। নারী কেলেঙ্কারীর ঘটনায় মুসলমান পাঠানদের হাতে নিহত পীর ও মুরিদকে "শহীদে বালাকোট" উপাধি দিয়ে ইংরেজ বিরোধী ও স্বাধীনতা আন্দোলনের নায়করুপে মিথ্যা প্রচার করে প্রকৃত ইতিহাসকে বিকৃত করা হয়েছে। (দেখুন শাহওয়ালিউল্লাহর রাজনৈতিক চিন্তাধারা-সৈয়দ আহমদ প্রসঙ্গ)।
দ্বিজাতিতত্ত্ব সম্পর্কে ড. ইকবালকে অনুপ্রাণিত করে তুলেন। ড. ইকবাল ১৯৩০ ইং সালে এলাহাবাদ মুসলিম লীগ অধিবেশনে বলিষ্ঠভাবে আ'লা হযরতের উদ্ভাবিত দ্বিজাতিতত্ত্ব দর্শনকে উপস্থাপন করেন। ফলশ্রুতিতে ১৯৪০ সালে কায়েদে আযম মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ উক্ত দ্বিজাতিতত্ত্বকে রাজনৈতিক রূপ দিয়ে ভারতে মুসলমানদের জন্য পৃথক বাসভূমি তথা পাকিস্তান প্রতিষ্ঠা করেন।
দেওবন্দ মাদ্রাসার মাধ্যমে ইংরেজ সরকার যে বিষবৃক্ষ রোপণ করে গেছে, তার কুফল পরবর্তীকালে ভালভাবেই ফলতে শুরু করেছে। ১৮৭৪ সালে কাছেম নানুতুবী সাহেব "তাহযীরুন্নাছ" কিতাব লিখে কাদিয়ানী মতবাদ প্রচারের পথ সুগম করে গেছেন। অর্থাৎ নানুতুবী সাহেব লিখেছেন "খাতামুন্নাবিয়্যীন" অর্থ- "শেষ নবী" নয়। গোলাম আহমদ কাদিয়ানী এই সুযোগ গ্রহণ করে ১৯০৫ ইং সালে নবুয়্যত দাবী করে বসে এবং তার মাহযার নামায় নানুতুবী সাহেবের মন্তব্যকে আত্মরক্ষামূলক ও ঢালস্বরূপ ব্যবহার করে। এর ১০ বছর পর ১৮৮৪ খ্রীস্টাব্দে রশিদ আহমদ গাঙ্গুহী সাহেব ফতোয়া রশিদিয়া লিখে বিরাট ফেৎনার সৃষ্টি করেছেন। "আল্লাহ্ মিথ্যা বলতে পারেন, যে কেউ রাহমাতুল্লিল আলামীন হতে পারেন, মিলাদ কিয়াম কানাইয়ার কীর্তনস্বরূপ" -এইগুলো হলো ফতোয়া রশিদিয়ার আলোচ্য বিষয়। এর ৪ বছর পর ১৮৮৭ খ্রীস্টাব্দে খলিল আহমদ আম্বেটী বারাহীনে কাতেয়া নামক বই লিখে নবী করীম (সাল্লাল্লাহু তায়ালা আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর এলেম সম্পর্কে নিম্নোক্ত মন্তব্য করেছে- "নবী করীম (সাল্লাল্লাহু তায়ালা আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর চেয়ে শয়তানের এলেম বেশী", নবী করীম (সাল্লাল্লাহু তায়ালা আলাইহি ওয়াসাল্লাম) দেওবন্দ ওলামাদের কাছে উর্দু শিখেছেন" ইত্যাদি। এর ১৪ বছর পর ১৯০১ সালে আশ্রাফ আলী থানবী দেওবন্দী সাহেব "হিফজুল ঈমান" রিসালার ৭ম পৃষ্ঠায় লিখেছেন "নবী করীম (সাল্লাল্লাহু তায়ালা আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর ন্যায় ইলমে গায়েব চতুষ্পদ জন্তুরও আছে'। মিঃ পামর "কানাকড়ি খরচ করে দেওবন্দ মাদ্রাসার নিকট থেকে ইংরেজ সরকার যে কাজ (বিভেদ সৃষ্টি) পেয়েছে" বলে মন্তব্য করেছে-তা উক্ত ৪ খানা কিতাবের বিশেষ অবদানের (অনৈক্য) দিকেই ইঙ্গিত বহন করে।
এবার আসুন! দেওবন্দ মাদ্রাসার ওলামারা কিভাবে ইংরেজদের বেতনভুক্ত দালাল ছিলো-তার প্রমাণ ও ডকুমেন্ট সম্পর্কে কিছু সাক্ষ্য প্রমাণ পেশ করা যাক।
তাবলীগ জামাতের প্রতিষ্ঠাতা মৌলভী ইলিয়াছ মেওয়াতী ইংরেজদের বেতনভুক্ত দালাল ছিল
মুহাম্মদ জকি দেওবন্দী লিখিত "মুকালামাতুস্ সদরাঈন" বইয়ের ৮ পৃষ্ঠায় মাওলানা হিফজুর রহমান দেওবন্দীর মন্তব্য এভাবে উল্লেখ করা হয়েছে "মাওলানা ইলিয়াছ (রহঃ)-এর তাবলীগী আন্দোলনকেও প্রথম দিকে ইংরেজ সরকারের পক্ষ হতে হাজী রশিদ আহমদের মাধ্যমে কিছু আর্থিক সাহায্য দেয়া হতো। কিন্তু পরে তা বন্ধ হয়ে যায়।" (মুকালামাতুস্ সদরাঈন লেখক মুহাম্মদ জকি দেওবন্দী-প্রকাশক দারুল ইশাআত দেওবন্দ পৃষ্ঠা-৮)।
আশরাফ আলী থানবী ৬০০ টাকা বেতনের বিনিময়ে ইংরেজদের দালালী করতেন
মাওলানা শাব্বির আহমদ ওসমানী দেওবন্দী-যিনি জমিয়তে ওলামায়ে ইসলামের তৎকালীন সভাপতি ছিলেন-তিনি মাওলানা হিফজুর রহমান দেওবন্দীর কাছে থানবী সাহেব সম্বন্ধে বলেছিলেন: "দেখুন! মাওলানা আশরাফ আলী থানবী (রহঃ) সাহেব আমাদের এবং আপনাদের স্বীকৃত বুজুর্গ ও নেতৃত্বস্থানীয় ব্যক্তি ছিলেন। উনার সম্পর্কেও কিছু কিছু লোককে বলতে শুনেছি যে, তিনি (থানবী) ইংরেজ সরকারের নিকট থেকে মাসিক ৬০০ টাকা বেতন গ্রহণ করতেন।" (মুকালামাতুস্ সদরাঈন কৃত মুহাম্মদ জকি পৃষ্ঠা-৯, প্রকাশক দারুল ইশাআত দেওবন্দ)।
এখানে লক্ষ্য করার বিষয় হচ্ছে তাবলীগের প্রতিষ্ঠাতা মৌলভী ইলিয়াছের তাবলীগ জামাতের জন্য ইংরেজদের সাহায্যের কথা ফাঁস করেছেন দেওবন্দের শিক্ষক মাওলানা হিফজুর রহমান এবং আশরাফ আলী থানবীর টাকা গ্রহণের সাক্ষ্য দিচ্ছেন মাওলানা শাব্বির আহমদ ওসমানী সাহেব। তাঁদের দু'জনের সাক্ষ্য লিপিবদ্ধ করেছেন আরেক দেওবন্দী আলেম মুহাম্মদ জকি। কিতাবের নাম রেখেছেন মুকালামাতুস্ সদরাঈন। প্রকাশক হচ্ছে দারুল ইশাআত দেওবন্দ। সুতরাং দেওবন্দী দুই নেতার ইংরেজদের দালালী করা এবং তার বিনিময়ে মাসিক বেতন ও ভাতা গ্রহণ করার স্বীকারোক্তি দেওবন্দী ওলামাদের মুখ দিয়েই বেরিয়ে এসেছে। তখনকার ৬০০ টাকা বর্তমানের ছয় লাখ টাকা বা তার চেয়েও বেশী মূল্যবান হবে। যিনি ইংরেজ সরকারের পক্ষ হতে এত বিরাট অংকের ভাতা পেতেন-তার পক্ষে কিতাব লিখা ও ছাপানো কোন কঠিন ব্যাপারই নয়। এবার দেখা যাক-মাওলানা শাব্বির আহমদ ওসমানীর বক্তব্য ছাড়াও এ ব্যাপারে অন্য কারো চাক্ষুস সাক্ষ্য পাওয়া যায় কি-না? যিনি নিজ হাতে প্রতি মাসে আশরাফ আলী থানবী সাহেবকে ইংরেজদের পক্ষ থেকে গোপনে বেতন দিয়ে স্বাক্ষর নিয়ে আসতেন-তাঁর মুখেই থানবী সাহেবের বেতন গ্রহণের ঘটনাটি শুনা যাক।
রাজস্থান প্রদেশের নাগোর জিলার তহ্সীল ডাকানা, গ্রাম-ছিত্তানা-এর অধিবাসী মুকাররম আলী খান- যিনি নিজের হাতে আশরাফ আলী থানবী সাহেবকে ৬০০ টাকা মাসিক বেতন ইংরেজদের পক্ষ হতে গোপনে দিতেন এবং রেজিস্টারে স্বাক্ষর নিতেন-তিনি রাজস্থানের নাগোর জিলার মিটার তাসটির কাজী হেকিম মাওলানা খুরশিদ আহমদ ওসমানীর নিকট নিম্ন বর্ণিত বিবৃতি প্রদান করেনঃ
ব্রিটিশ আর্মির ক্যাপ্টেন মুকাররম আলী খানের বিবৃতি
"যখন আমি রিসালদার পদে উন্নীত হয়ে লাহোরে বদলী হই-তখন আমাকে ক্যাপ্টেন মুহাম্মদ আলী খান নূন-এর সাথে দেরাদুন প্রেরণ করা হয়। দেরাদুনে কাঠের তৈরি দোতলা একটি ঘরে আমাদের থাকার ব্যবস্থা করা হয়। ক্যাপ্টেন মুহাম্মদ আলী খান নূনকে যদি প্রশ্ন করা হতো "আমাদেরকে দেরাদুনে প্রেরণের কারণ কি? জবাবে তিনি শুধু এতটুকুই বলতেন যে, আমরা ডিউটিতে আছি। আমাদের বর্তমান ডিউটি খাস খাস লোক দ্বারাই করানো হয়। এভাবে এক মাস চলে যাওয়ার পর মাসের ১ তারিখে সরকারী ট্রেজারার আসলেন-কি দিয়ে আবার চলে গেলেন। মাসের দ্বিতীয় দিনে ক্যাপ্টেন মুহাম্মদ আলী খান নূন সাহেব আমাকে নিয়ে দেওবন্দ মাদ্রাসায় গেলেন। আমি এতে খুবই আনন্দিত হলাম। কেননা বাল্যকালে আমি দেওবন্দ মাদ্রাসায় লেখাপড়া করেছি। কিছু উর্দু কিতাব এবং ফার্সী কারিমা পর্যন্ত লেখাপড়া এখানে সমাপ্ত করেছি। আমার পিতা মোশাররফ আলী খান সাহেব আমার লেখাপড়ার সময় আর্মিতে ক্যাপ্টেন পদে চাকুরী করতেন। আমি পিতার সাথেই থাকতাম। দেওবন্দ মাদ্রাসায় পড়াকালে মাদ্রাসার আলেমদেরকে খুবই শ্রদ্ধা করতাম। এমন কি-আমি মনে মনে ইচ্ছা পোষণ করতাম যে, মৌলভী আশরাফ আলী সাহেবের নিকট মুরীদ হয়ে যাব। কিন্তু তখন সময় পাইনি। বর্তমানে আমি একটি ভাল পদে চাকুরী করছি। সে সুবাদে যখন এখানে এসেছি- তখন মুরীদ হওয়ার পূর্ব ইচ্ছা প্রবল আকার ধারণ করলো। আমি মনে করলাম-আমার সাথী ক্যাপ্টেন মুহাম্মদ আলী খান নূন সাহেবও আমার মতই দেওবন্দ মাদ্রাসার হুজুরদের ভক্ত। কিন্তু যখন দেখলাম-আশরাফ আলী থানবী সাহেব, মুনাওয়ার আলী সাহেব এবং দেওবন্দ মাদ্রাসার অন্যান্য কর্মকর্তা ও কর্মচারীদেরকে নূন সাহেব সরকারী কর্মচারীদের ন্যায় বেতন দিচ্ছেন-তখন আমার মনের অবস্থা ছিল অবর্ণনীয়। চিন্তা করতে লাগলাম এই লোকগুলোকে এতদিন আমরা দ্বীনের সাচ্ছা খাদেম বলে মনে করতাম। কিন্তু এখন দেখছি এরা পাক্কা দুনিয়াদার। শুধু দুনিয়াদার নয়-বরং মুসলিম জাতির বিরুদ্ধে বিশ্বাসঘাতকও বটে।
এ সময়েই মাদ্রাসা থানাভোঁকেও প্রতি মাসে ১২০০ (বারশ) টাকা এবং আশরাফ আলী থানবী সাহেবকে ৬০০ (ছয় শ) টাকা এবং মৌলভী মুনাওয়ার আলীকে ৪০০ টাকা বেতন দেয়া হতো। আমি (মুকাররম আলী) হয়রান, পেরেশান ও হতবাক হয়ে এ দৃশ্য দেখতে লাগলাম। কারো সাথে কোন কথাই সে সময় বলিনি। দেরাদুনে ফিরে এসে যখন মুহাম্মদ আলী খান নূনকে এ ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করলাম, তখন তিনি বললেন- এই মাদ্রাসাকে এবং মাওলানা সাহেব ও অন্যান্য কর্মচারীগণকে ইংরেজ সরকারের পক্ষ হতে ভাতা দেয়া হয়ে থাকে। এখানকার কর্মচারীরা ইংরেজ সরকারের নিমকখোর ও পক্ষের লোক। তিনি আরও বললেন-শুধু দেওবন্দ মাদ্রাসা এবং উহার সংশ্লিষ্ট ওলামাগণই নন- বরং গোলাম আহমদ কাদিয়ানী ও তার মাদ্রাসাকেও ইংরেজ সরকার অনুরূপ আর্থিক সাহায্য দিয়ে থাকে। গোলাম আহমদ কাদিয়ানীকেও ২৫০০ টাকা এবং তার মাদ্রাসাকে মাসিক ২৫০০ টাকা সাহায্য দেয়া হয়। ইনিও ইংরেজ সরকারের খয়েরখা ও সমব্যথী। আমরা এই খাস ডিউটি করতেই ওখানে গিয়েছিলাম"। (মুহাম্মদ আলী খান নুন সাহেবের বিবৃতি শেষ)। কাদিয়ানী ও দেওবন্দীরা ইংরেজ সরকারের খাস লোক ও খাস প্রতিষ্ঠান। এদের মূল কাজ হলো ভারতের মুসলমানদের মধ্যে ধর্মীয় অনৈক্য ও ইখতিলাফ সৃষ্টি করে পৃথক পৃথক সম্প্রদায় তৈরী করা। মুসলমানরা যেন কোন দিন ঐক্যবদ্ধ হতে না পারে। কেননা ইংরেজ সরকারের জন্য মুসলমানী ঐক্য খুবই খতরনাক ও বিপদজনক। (মুকাররম আলী খানের কথা)।
মুকাররম আলী খান কাজী হেকিম মাওলানা খুরশীদ আহমদ ওসমানীর নিকট জবানবন্দী দিতে গিয়ে পুনরায় বলেঃ
"কর্নেল চোপড়া-যিনি দেরাদুনের একজন বাসিন্দা ছিলেন, তাঁর মাধ্যমে ইংরেজ সরকার ঐ সব অমুসলিম সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠীকে আর্থিক সাহায্য প্রেরণ করতো-যাদের কাজ ছিলো সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা-হাঙ্গামা সৃষ্টি করা ও ধর্মের দোহাই দিয়ে মানুষকে উত্তেজিত করা। যখন আমি এসব বিষয়ের গোপন রহস্য সম্পর্কে অবহিত হলাম-তখন আমার আফসোস ও পেরেশানীর সীমা পরিসীমা ছিল না। এরপর আমি মায়ের পরামর্শ ও অনুমতিক্রমে ফতেহপুরের পীর সাহেব হযরত নূরুল হাসান সাহেবের হাতে বায়আত গ্রহণ করলাম। সেদিন থেকে অদ্যাবধি বিশুদ্ধ আকিদার উপর প্রতিষ্ঠিত রয়েছি এবং ভবিষ্যতেও থাকবো- ইনশাআল্লাহ্।
মুকাররম আলী খান আরও বলেনঃ "মীর্জা গোলাম আহমদ কাদিয়ানীর কোন সুপারিশনামা কোন ইংরেজ অফিসারের কাছে পৌঁছলে সে মতেই আদেশ দেয়া হতো। কিছু লোক মীর্জার সুপারিশক্রমে আর্মিতে সরাসরি কমিশন পেয়ে যেতো। যে কোন ইংরেজ অফিসারের নিকট মীর্জা গোলাম আহমদ কাদিয়ানী এবং তার মৃত্যুর পর তার পুত্র মীর্জা বশির আহমদের কোন সুপারিশপত্র নিয়ে গেলে সে মোতাবেকই কাজ হয়ে যেতো। দেওবন্দী আলেমরা ব্রিটিশ রাজত্বকালে কাদিয়ানীদের কোন বিষয়েই বিরোধিতা করতো না। কেননা, তারা ভাল করেই জানত যে, ইংরেজদের উপর কাদিয়ানীদের প্রভাব খুবই বেশী"। (ক্যাপ্টেন মুকাররম আলী খানের বিবৃতি এখানেই সমাপ্ত)।
পট ভূমিকাঃ মুকাররম আলী খান সাহেবের উক্ত বিবৃতিটি ধারণ করেছেন রাজস্থানের নাগোর জিলার কাজী হেকিম মাওলানা খুরশীদ আহমদ ওসমানী। তিনি ১৪০৫ হিজরী মোতাবেক ১৯৮৫ ইং ২০ আগষ্ট তারিখে এক পত্রের মাধ্যমে উক্ত বিবৃতিটি খতীবে মাশরিক আল্লামা মুশতাক আহমদ নিজামী (রহঃ)- কে প্রেরণ করেন। আল্লামা মুশতাক নিজামী মুকাররম আলী খানের বিবৃতিটি তাঁর লিখিত "দেওবন্দ কি খানা তালাশী" নামক গ্রন্থের ভূমিকায় তুলে ধরেছেন। মুকাররম আলী খান ছিলেন কাজী খুরশীদ আহমদ ওসমানীর ঘনিষ্ঠ বন্ধু এবং একই জিলার অধিবাসী (নাগোর)। তাই তিনি বন্ধুর নিকট হতে দেওবন্দ মাদ্রাসা ও থানাভো মাদ্রাসা এবং আশরাফ আলী থানবী ও অন্যান্য কর্মচারীদেরকে ইংরেজ সরকার কর্তৃক বিরাট অংকের ভাতা দালালীর উজরত স্বরূপ প্রদানের বিষয়টি জেনে নিয়েছেন এবং বর্ণনার সত্যতার ব্যাপারে গ্যারান্টি দিয়েছেন। এই ঘটনার দ্বারা বুঝা যাচ্ছে-ওহাবীরা এবং কাদিয়ানীরা শুরুতে একই প্রভুর গৃহপালিত ছিল এবং তাদের পরস্পরের মধ্যে তখন কোন মতভেদও ছিল না। বর্তমানে তাদের খতমে নবুয়্যত আন্দোলন সম্পর্কে স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন জাগে-এতদিন পর কেন মতভেদ হলো?- (অনুবাদক)।
সংক্ষেপে আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাআতের আক্বিদা
১। আল্লাহ্ তায়ালার পবিত্র স্বত্ত্বা নূর-যা সৃষ্ট নূর হতে ভিন্ন প্রকৃতির।
২। আল্লাহ তায়ালা আকৃতিহীন বা নিরাকার।
৩। তিনি আরশে বা অন্য কোন স্থানে উপবিষ্ট নন-বরং সর্বত্র বিরাজমান।
৪। তিনি মিথ্যা বলা বা যে কোন দোষত্রুটি হতে মুক্ত ও পবিত্র।
৫। তাঁর যাবতীয় ইলম ও জ্ঞান যাতী বা মৌলিক এবং অনন্ত ও অসীম। নবীগণের যাবতীয় ইলম ও জ্ঞান আতায়ী বা দানকৃত এবং সসীম।
৬। নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যাতী নূরের জ্যোতি হতে পয়দা।
৭। নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আপাদমস্তক নূর বা নূরে মুজাচ্ছম।
৮। তিনি দৃশ্যমান ও অদৃশ্যমান যাবতীয় নূরের মূল।
৯। স্বয়ং আল্লাহ্ তায়ালাই তাঁকে ইলমে গায়েব শিক্ষা দিয়েছেন।
১০। তিনি হায়াতুন্নবী বা স্বশরীরে রওযা মোবারকে জীবিত।
১১। তিনি উম্মতের যাবতীয় ভালমন্দ আমল প্রত্যক্ষ করছেন।
১২। তিনি মহব্বতের সালাত ও সালাম নিজ কানে শুনে থাকেন।
১৩। তাঁর সুপারিশে সত্তর হাজার এবং প্রত্যেকের সাথে সত্তর হাজার করে সর্বমোট চারশ নব্বই কোটি লোক বিনা হিসাবে জান্নাতে যাবে।
১৪। তাঁর সুপারিশে জান্নাতীদের প্রমোশন হবে এবং সুন্নী দোযখবাসীরা নাজাত পাবে।
১৫। তাঁর সুপারিশ হবে গুনাহ্গারদের জন্য-বদ আক্বিদাধারীদের জন্য নয়।
১৬। আল্লাহর পরেই তিনি সর্বোচ্চ সম্মানের অধিকারী। তিনি সৃষ্টির মধ্যে তুলনাহীন ও বে-মিছাল।
১৭। সাহাবায়ে কেরাম সর্বপ্রকার সমালোচনার উর্ধ্বে। সকল সাহাবীকে মহব্বত করা ফরয।
১৮। সাহাবাগণের মধ্যে হযরত আবু বক্কর সিদ্দীক (রাঃ) সর্বশ্রেষ্ঠ ও খালিফাতুর রাসূল।
১৯। আউলিয়ায়ে কেরাম বা হাক্কানী ওলামাগণ আল্লাহর বন্ধু। তাঁদের প্রার্থনা অবশ্যই আল্লাহ্ কবুল করেন।
২০। আউলিয়ায়ে কেরামের কারামত কুরআন সুন্নাহ্ দ্বারা প্রমাণিত। ৩৫৬ জন আউলিয়া হযরত আদম, হযরত মুছা, হযরত ইব্রাহীম, হযরত জিব্রাঈল, হযরত মিকাঈল ও হযরত ইসরাফীল আলাইহিমুস সালামগণের সিফাত প্রাপ্ত। হযরত বড়পীর আব্দুল কাদের জ্বিলানী (রাঃ) নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সিফাত প্রাপ্ত।
২১। আউলিয়ায়ে কেরামের পদবীসমূহের মধ্যে সর্বোচ্চ পদবী হলো গাউসুল আ'যম। বড়পীর সাহেব এই পদবীর অধিকারী।
২২। মাযহাব মানা ওয়াজিব। লা-মাযহাবীরা গোমরাহ্।
২৩। উম্মতে মোহাম্মদী ৭৩ ফের্কায় বিভক্ত। ৭২ ফের্কাই জাহান্নামী। মূল দলটি হবে জান্নাতী। উক্ত নাজাত প্রাপ্ত দলের নাম "আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাআত"। বর্তমানে নজদীপন্থী ওহাবী, মউদূদী, আহলে হাদীস ও তাবলীগীরা ৭২ গোমরাহ ফের্কার অন্তর্ভুক্ত। কাদিয়ানীরা বিনা বিতর্কে সর্বসম্মতভাবে কাফের।
২৪। শবে বরাত, শবে মেরাজ, শবে ক্বদর কুরআন সুন্নাহর দ্বারা প্রমাণিত। ঐ রাত্রিসমূহের ইবাদত বন্দেগী কুরআন সুন্নাহ, ইজমা কেয়াছের দ্বারা এবং বুযুর্গানে দ্বীনের আমল দ্বারা প্রমাণিত।
২৫। মাযার সমূহের যিয়ারতের উদ্দেশ্যে সফর করা এবং যিয়ারত করা উভয়ই সুন্নাত। নবীজীর রওযা মোবারক যিয়ারতের নিয়তে সফর করা হাদীসের দ্বারা সুন্নাত ও ওয়াজিব প্রমাণিত।
২৬। দলীয় মতবাদ প্রচারের উদ্দেশ্যে মসজিদে মসজিদে সফর করা ও রাত্রিযাপন করা নাজায়েয। তিন মসজিদ ব্যতীত ইবাদতের নিয়তে অন্য কোন মসজিদে সফর করা জায়েয নয়।
২৭। মিলাদ কিয়াম করা মোস্তহাব। উক্ত মোস্তাহাব অস্বীকার করা শাস্তিযোগ্য অপরাধ।
২৮। ঈদের নামাযে অতিরিক্ত তাকবীর ৬টি- ১২টি নয়। তারাবীহ্ নামায ২০ রাকআত প্রত্যেক নর-নারীর জন্য সুন্নাতে মোয়াক্বাদাহ্-৮ রাকআত নয়। আযানের পূর্বে দরুদ ও সালাম পাঠ করা মোস্তাহাব। জানাযা নামাযের পর লাইন ভক্ত করে খাস দোয়া করা রাসুল ও সাহাবীগণের সুন্নাত। আযানের দোয়ায় হাত উঠানো সুন্নাত। কুলখানী, ফাতেহা, চেহলাম, ওরছ ইত্যাদি নিঃসন্দেহে জায়েয ও উত্তম।
২৯। আউলিয়ায়ে কেরামের সম্মানার্থে মাযার পাকা করা, গিলাফ চড়ানো, মোমবাতি জ্বালানো জায়েয।
৩০। খতমে বোখারী, খতমে খাজেগান, খতমে গাউছিয়া ও গেয়ারভী শরীফ পাঠ করা নিঃসন্দেহে জায়েয ও উত্তম কাজ।
৩১। বিপদে আপদে রুহানী সাহায্যার্থে ইয়া রাসুলাল্লাহ্, ইয়া আলী ইয়া শেখ আব্দুল কাদের জ্বিলানী বলে ডাকা শরিয়ত সম্মত উত্তম কাজ।
--------------- সমাপ্ত ---------------
Comments
Post a Comment