নজদী খারেজী ওহাবীদের ফতোয়াবাজীর প্রতিবাদ

নজদী-খারেজী-ওহাবীদের ফতুয়াবাজীর প্রতিবাদ

প্রণেতাঃ
মাওলানা আকবর আলী রেজভী ছুন্নী আল ক্বাদেরী
রেজভীয়া দরবার শরীফ সতরশ্রী
পোঃ— ঠাকুরাকোণা,
জিলা— ময়মনসিংহ।

টেক্সট্ রেডীঃ মুহাম্মদ আব্দুল খালেক

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম
"নাহমাদুহু ওয়ানুছাল্লি আলা-রাছুলিহিল কারিম"

বেরাদরানে-ই-ইসলাম!
বিগত ১৪০৩ হিজরী সনের ১লা রমজান কিশোরগঞ্জ হইতে 'ভক্তদের ক্রিয়াকাণ্ড' নামে ওহাবী খারেজী লা মাজহাবী রচিত (পদ্যাকারে) একটি ক্ষুদ্র পুস্তিকা আমার হস্তগত হয়। কতিপয় অজ্ঞাত পরিচয় (ঠিকানা বিহীন) ব্যক্তি উহা প্রকাশ করে। উহাতে আটরশীর পীর সাহেবকে উদ্দেশ্য করিয়া লিখিতে গিয়া বড় পীর দাস্তগীর হজরত মাহবুবে ছোবহানী আব্দুল কাদের জিলানী রাদিয়াল্লাহু আনহু হইতে শুরু করিয়া হজরত শাহ্জালাল ইয়ামানী সিলহেটী রাদিয়াল্লাহু আনহু পর্যন্ত পাক-ভারতের বহু আওলিয়ায়ে কেরামকে পারিলাম না। সরলপ্রাণ নিরীহ মুসলমানের ঈমান রক্ষার্থে প্রতিবাদ লিখিতে বাধ্য হইলাম।

(১) নজদী অনুচর ওহাবী লা-মজহাবী প্রথমেই লিখিয়াছে—পীর-পূজা, কবর পূজা শিরিক, যেমন— দুর্গাপূজা। এক্ষণে আমি (মাওঃ রেজভী সুন্নী আল ক্বাদেরী) জিজ্ঞাসা করি বিশ্ব-জগতের কোথায় মুসলমানগণ পীর আউলিয়াগণের দরবারে মাজার শরীফে মুত্তি রাখিয়া, ঘণ্টা বাজাইয়া ও শিঙ্গা ফুঁকিয়া ফুল-পাতা ইত্যাদি রাখিয়া, পীরসাহেব অথবা কবরে দেবতা ধারণা করিয়া ভক্তি করিয়াছে, এমন প্রমাণ দিতে পারিবে কি? অন্যথায় মুসলমানকে মুশরেক বানাইয়া হে খারেজীর গোষ্ঠী, তোমরাই মুশরেক হইয়া গিয়াছে। ইহাতে কোন সন্দেহ নাই। হে ওহাবী কাট-মোল্লার দল। তোমাদের অন্তরে যদি আল্লাহ ও রাসূলের(সাল্লাল্লাহু তায়ালা আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বিশ্বাস ও ভয় থাকে তবে আব্দুল ওহাব নজদীর ভ্রান্ত মতবাদ ছাড়িয়ে জলদি তওবা করতঃ মুসলমান হও এবং মৃত্যুর জন্যে প্রস্তুত থাক। বেঈমান ও মোরতাদ আব্দুল ওহাব নজদীর দালাল পাঞ্জাবের মওদুদী এবং তারই অনুচর এদেশের জামাতে ইসলামী নামধারী ও শিবিরের গোষ্ঠী। তাদের পুস্তকাদিতেও আম্বিয়া ও আওলিয়াগণের প্রতি অবমাননাকর জঘন্য উক্তি এবং তাঁহাদের তাজিম তাকরিম ও মাজার জিয়ারতকে করব পূজা ও পীর পূজা বলিয়া মন্তব্য করিতে দেখা যায়। আল্লাহপাকের মাহবুব বান্দাগণের অর্থাৎ খাঁটি পীর ও আওলিয়াগণের মাজার শরীফ (যাহা কোরআনের ভাষায় 'শাআয়েরিল্লাহ'— আল্লাহর নিদর্শন) ঘৃণা করতঃ জঘন্য উক্তি ফতুয়াবাজির দ্বারা এরা ঈমান হারা হইয়াছে। নাউজুবিল্লাহ ! নাউজুবিল্লাহ ! মুসলমানদের জন্যে ওহাবী বেঈমানদিগের বই পড়া হারাম, ঈমান বরবাদ হইয়া যাইবে। হে প্রিয় মুসলমান ! জানিয়া রাখুন, আওলিয়ায়ে কেরামের মাজার শরীফ জিয়ারত এবং সাধারণ মুসলমানের কবর জিয়ারত করা সুন্নত। রাসুলে মকবুল সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াছাল্লাম প্রতি বৎসর ছাহাবাগণকে নিয়া শহীদানে বদর ও শহীদানে ওহুদের করব জিয়ারত করিতেন। একটি সুন্নতকে এনকার বা অমান্য করিলে কাফের হইতে হয়। ফতুয়ার কিতাবে আছে— সাধারণ মুসলমানদের কবর জিয়ারত করিতে হইলে জুতা খুলিয়া কাবা শরীফকে পিছনে রাখিয়া এবং কবরকে সামনে রাখিয়া জিয়ারত করিতে হয় (ফতুয়ায়ে আলমগীরী দ্রষ্টব্য)। সাধারণ মুসলমান ও তার কবরের যদি এতদূর সম্মান হইয়া থাকে তবে আল্লাহ পাকের মাহবুব বান্দা আওলিয়ায়ে কেরাম এবং তাঁহাদের মাজার শরীফের সম্মান কি পরিমাণ হইতে পারে সেই মানদণ্ড ওহাবী কাট-মোল্লাদের নিকট আছে কি? যেই অলিদের সম্পর্কে আল্লাহ পাক ঘোষণা করেছেন— 'আমার অলিকে যে কষ্ট দেয় আমি (আল্লাহ তার সঙ্গে যুদ্ধ ঘোষণা করি) অর্থাৎ মৃত্যুর সময় ঐ ব্যক্তি বেঈমান ও কাফের হইয়া মৃত্যু বরণ করে।

পক্ষান্তরে আল্লাহ পাক তাঁহার প্রিয় বান্দা অলিকে বলেন—"বন্ধু তুমি, তুমি নও; তুমি আমি। আমি সূর্য্য আর তুমি আমার কিরণ।" আল্লাহ পাক আরও বলেন—খবরদার ! নিশ্চয়ই আল্লাহর অলিদের কোন ভয় নাই, এবং কোন চিন্তাভাবনাও নাই তাহাদের—ইহকাল ও পরকাল। 'আল্লাহর অলিগণ মরেন নাই, তাঁহারা জীবিত এক ঘর হইতে অপর ঘরে চলিয়া গিয়াছেন মাত্র। অলিগণের পায়ে পড়িয়া চুম্বন করা জায়েজ অলীর মাজারের পায়ের দিকে চুম্বন করাও জায়েজ। অলীর মাজারে গিলাফ দেওয়া, ফুলের মালা দেওয়া এবং বাতি জ্বালানও জায়েজ আছে। ইহার প্রমাণার্থে বহু দলিলাদির ফতুয়ার কিতাবে মওজুদ রহিয়াছে। পুস্তকের কলেবর বৃদ্ধির আশঙ্কায় উল্লেখ করিলাম না। হ্যাঁ, বাংলার রাজধানী ঢাকায় সরকারী পারমিশনে শান্তি-শৃঙ্খলার মাধ্যমে সরকারী উচ্চ পদস্থ কর্মচারীর সভাপতিত্বে বাহাস করিবার সৎসাহস থাকে তো আস, আমি (মাওঃ রেজভী) সর্বক্ষণ প্রস্তুত আছি। যদি তোমাদেরকে ওহাবী বেঈমান কাফের প্রমাণ করিতে না পারি তবে রাষ্ট্রীয় আইন অনুযায়ী দণ্ডনীয় হইব। আরও জানিয়া রাখ বাহাস করা সুন্নত, ফাছাদ বলিয়া এনকার করিলে কাফের হইবে। সৎসাহস থাকিলে দলীলাদিল্ল নিয়া সামনা-সামনি মোকাবেলা করাই উত্তম। হিংসা-বিদ্বেষ নিয়া পিছনে ঘেউ ঘেউ করা কি কুকুরের স্বভাব নয়? তোমাদের ঈমান নাশক পুস্তিকায় নাম রহিয়াছে, কিন্তু ঠিকানা নাই কেন? তোমাদের মোরুব্বীদের মতে আল্লাহ ছাড়া অন্যকে ভয় করিলে শিরিক হয়। বল এক্ষণে মুশরিক হইলে কিনা?
(১) তথাকথিত পুস্তিকার খারেজী অনুচর লিখিয়াছে— মুসলমানদের উরস নাই, উরস করে ভণ্ডের দলে ধর্মের নামে দেয় দোহাই।
প্রতিবাদঃ– মূর্খ পণ্ডিত খারেজীর গোষ্ঠী শোন!

উরস শরীফ উৎযাপন শরীয়ত মতে জায়েজ ও মোস্তাহাব বরং সুন্নত।

এনকার করিলে কাফের হইবে। তোমরা যাদেরকে ভণ্ড বলিতেছ তারা কি কাফের? সারা বিশ্বে আওলিয়ায়ে কেরামের মাজার শরীফে উরস পালিত হইতেছে। তোমাদের মতে সবাই কি কাফের? আস্তাগফিরুল্লাহ। আস্তাগফিরুল্লাহ। তোমরা যাদের ভণ্ড বলিতেছ তাদের মধ্যে ঈমান মওজুদ রহিয়াছে যদিওবা আমলে ত্রুটি রহিয়াছে। যারা রীতিমত নামাজ পড়ে না, গাঁজা-মদ খায়, লম্বা জুব্বা পড়ে না টুপী দাড়ি রাখে না—এই কারণে এরা কাফের নহে, গোনাহগার। গোনার কারণে কাহাকেও কাফের বলা যায় না। পক্ষান্তরে, ঈমান না থাকিলে তাহাকে আর মুসলমান বলা যায় না। অপরদিকে হে খারেজী ওহাবী। শুন তোমরা যে বাতেল আকিদার কারণে ঈমান হারাইয়া বসিয়াছ সে খবর রাখ কি? তোমাদের বাহ্যিক বেশ-ভূষা, নামাজ রোজা কুরআন তেলাওয়াত ইত্যাদি সবই বৃথা। তোমরা তো কোন ছারা তোমাদের নজদীগুরু আব্দুল ওহাব, হিন্দুস্থানী নেতা ইসমাইল গাঙ্গুহী থানবী মেওয়াতি প্রভৃতি নেতারা শত শত কুফুরী করিয়া কাফের মোরতাজ সাজিয়াছে তাহা অস্বীকার করিতে পারিবে কি? আমি সমস্ত প্রমাণ করিতে সর্বক্ষণ তৈয়ার আছি।

আবার বলিতেছি—বাহ্যিক বেশ ভূষা, নামাজ রোজা, কলমা কোরান ধর্ম নহে, ধর্মের অলংকার। ধর্ম হইল ঈমান। বেনামাজীকে কাফের জানিলে নিজেই কাফের হইবে। নামাজ পড়া অবশ্যই ফরজ, না পড়িলে শক্ত গুনাহ হইবে।

(৩) তথাকথিত খারেজী লা মাজহাবী লিখিয়াছে—মদিনা শরীফে ওরশ হয়না কেন? গরু, ছাগল, বলদ ও উটের কাফেলা মদিনা শরীফ যায় না কেন? ইহার উত্তরে বলি—রাসুলে পাক (সাল্লাল্লাহু তায়ালা আলাইহি ওয়াসাল্লাম) কাহারও উম্মত হইলেন না কেন? তিনি মাজহাবী ছিলেন না কেন? বাংলাদেশে তাঁহার রওজা শরীফ হইল না কেন? আরে মূর্খ পণ্ডিত। উরস শরীফের অর্থ জান কি? তাহাই বা কেন হয় জান? আদার ব্যাপারী আবার জাহাজের খবর থাকে নাকি?

(৪) খারেজী অনুচর আরও লিখেছে— 'কেউ গয়াকাশী, কেউ চলে যায় বাগেরহাট কেউবা আটরশী' ইহার উত্তর—সেই কমবখত বাগেরহাট ও আটরশীর সঙ্গে গয়া-কাশীর তুলনা দিয়া ঈমান হারা কাফের হইয়াছে। পাকে-নাপাকে, হালাল-হারামে কি এক সমান? ঈমান ও কুফরের তুলনা চলে?

(৫) খারেজী অনুচর আরও লিখিয়াছে—
খোদা ছাড়া পীরের কাছে পুত্র যেজন চায়
ঈমান তাহার হইল বরবাদ শিরিক করার দায়।

ইহার উত্তর এই —পুত্রের জান বাঁচিয়া থাকে বা খাইয়া তাহা কি খোদা ছাড়া অন্যের কাছে চাওয়া যায়? খারেজীরা জাকাত ফেৎরা চামড়া খোদার কাছে চাইতে পারে না। অন্যের কাছে চাহিয়া ঈমান বরবাদ কর নাই কি? হ্যাঁ, তাহা না হইলে ধোঁকাবাজী অচল, পেট-পূজা বন্ধ হইয়া যায়। সাবধান! পীর-ফকিরকে ডিল মারিয়া ঘরে আগুন জ্বালাইও না। এক্ষণে শুন, পীরের দরবারে খোদা পাওয়া যায়।

(৬) ওহাবী খারেজী আরও লিখিয়াছে—'ব্লেক মার্কেটার কালোবাজারী শরাব খায় পীর-ফকিরে ভক্ত তারা হয় অতিমাত্রায়।

প্রতিবাদঃ— নজদী ওহাবী খারেজী ইত্যাদির পরিচয়ের দাগ-খতিয়ান প্রভৃতি আমার সবই জানা আছে।থানাভুনের হুজুরজী হইতে পবিত্র আলী (দ.) পর্যন্ত কে কতদূর পীর-পুজক ছিল তাহা সবই তো রেকর্ডভুক্ত রহিয়াছে। দেখ তাজ কেরাতুশ রশীদ খুলিয়া রশীদ গাঙ্গুহীরে তো খোদা-ই বানাইয়া দিয়াছে। পীরপুজা আর কারে কয়? তোমাদের কালোবাজারীর কাহিনী আরও শুনিবে কি? থাক আর নয়।

(৭) মূর্খের দল আরও লিখিয়াছে—

'শিরিক-বিদাতের অনেক ডিজাইন লিখব কতক্ষণ
বোগদাদেরই গিলাফ চুমে পাইল কত ধন।'

আফসুস ! শত আফসুস ! কমবখত ওহাবীদের আস্পর্ধা দেখিয়া সত্যই অবাক হইতে হয়। আমি জিজ্ঞাসা করি তোমরা শিরীক বিদাতের তারিফ (সংজ্ঞা) জান কি? বিদাত কাহাকে বলে জান কি? বলতো মাদ্রাসা বেদাত নয় কি?

বর্তমানের নকশার কোরান শরীফ কি বেদাত নহে? জের, জবর, পেশ আয়াত নং, রুকু, মঞ্জিল ইত্যাদি বেদাত নহে? মাদ্রাসার পাঠ্য পুস্তকাদি সবই তো বেদাত—অস্বীকার করিতে পারিবে কি? নুহুছরফ উছুলাবালাগাত ইত্যাদি বিষয়সমূহ সবই তো বেদাত। রেলগাড়ী, মটর, বাস, সাইকেল, উড়োজাহাজ ইত্যাদি যানবাহন বেদাত। বর্তমানে কলের শিলাই করা জামা-কাপড়, লুঙ্গি, টুপি, জায়নামায প্রভৃতি বেদাত। তারাবীর নামাজ বেদাত, এমন কি পাঞ্জেগানা নামাজের নিয়ত সমূহ বেদাত। আসমান-জমিনও বেদাত। বলি মূর্খ ওহাবীর দল বেদাত ব্যতীত আসমানের নীচে এবং জমিনের উপরে এক মূহুর্ত চলিতে পারিবে কি? মোটকথা, এরা বেদাত কাহাকে বলে এবং উহা কত প্রকার তাহাই জানে না। মূর্খ পণ্ডিতের দল আবার ফতোয়াবাজী করে। হ্যাঁ, বোগদাদ শরীফের গিলাফ চুম্বন করতঃ ঈমানদার মুসলমানের যা হাছিল হয়, ওহাবী খারেজী, লা-মজহাবী বেঈমানদিগের জীবনে তাহা কখনো হাছিল হইবার নয়।

(৮) ওহাবীরা তাদের বই-পুস্তকে 'পীর-পূজা' ও 'কবর পূজা' শব্দ খুব বেশী বেশী ব্যবহার করতঃ তাদের অন্তরের কালিমা প্রদর্শন করিয়া থাকে। অথচ পীরের নিকট বয়াত গ্রহণ করা কোরান মতে সুন্নত, এবং আল্লাহওয়ালাগণের মাঝার শরীফের তাজিম ও সম্মান করা কোরান মতেই ওয়াজিব (কেননা তাহা শাআয়েরুল্লাহ আল্লাহর নিদর্শন এবং তাহা ওয়াজিবুত তাজিম) মূর্খের দল তাহা বুঝিতেছে না। অজ্ঞতার অভিশাপ ইহাই। আল্লাহ হেদায়ত করুন।

উপসংহার—হে ওহাবী খারেজী লা-মজহাবী ! তোমরা সুন্নী-হানাফীর মুখোশ পড়িয়া এদেশের সরল ও নিরীহ মুসলমানের ঈমান হরণ করিয়া চলিয়াছ। ঈমান চুরির অপকৌশল অবলম্বন করতঃ মিথ্যা ধোঁকায় ফেলিয়া তোমাদের বাতিল দলকে ভারী করিতে এবং নজদী মতবাদ চালু করিতে সুযোগ খুঁজিতেছ। সেই সুযোগ আর মিলিবে না। এদেশের সুন্নী মুসলমান এখন সজাগ হইয়াছে। জায়গায় জায়গায় ঈমান চোরদের দফা রফা হইতেছে। খবর রাখ নাকি?

পুনরায় বলিতেছি—'মিলাদ শরীফ' বেদাত হারাম, 'কিয়াম করা' মরা শিরিক—ইহা কি ওহাবী শুকনা মোল্লাদের ফতোয়া নয়। আযানের পর হাত উঠাইয়া মোনাজাত, পাঞ্জেগানা নামাজের পর মোনাজাত, জানাজা নামাজের পর মোনাজাত সবই নাযায়েজ একমাত্র এস্তেস্কার মোনাজাত ব্যতীত কোন মোনাজাতই জায়েজ নাই। এই সমস্ত জঘন্য ফতোয়া তোমাদের নয় কি? আলীয়া মাদ্রাসার পড়া জায়েজ নয়, খারেজী দেওবন্দী মাদ্রাসায় ভাল লেখা-পড়া হয়—এসব মিথ্যা কথা তোমরা কও নাই? আল্লাহ পাক মিথ্যা বলিতে পারেন। রাসুলুল্লাহ শেষ নবী নহেন। তিনি আমাদের মতই সাধারণ মানুষ। তিনি মরিয়া মাটির সঙ্গে মিশিয়া গিয়াছেন।

'নামাজে জিনা-সহবাসের ধারণা ভাল কিন্তু রাসুলুল্লাহ ধারণা ঐ নামাজে আসিলে গরু গাধার ধারণা অপেক্ষা খারাপ বরং শিরিক।' নাউজুবিল্লাহ মিনহা।

ওহাবীগণ ! এই সমস্ত জঘন্য ও ঘৃণা কুফুরী আকীদা তোমাদের ও তোমাদের মুরুব্বীয়ান বুজুর্গদের মধ্যে রহিয়াছে অস্বীকার করিবার কোন যো আছে কি? এই সব ঘৃণিত আকিদার ফলে তোমরা তোমাদের বুজুর্গ ও মুরুব্বীয়ানসহ কাফের, মোরতাদ ও মালাউন এবং জাহান্নামী সাজিয়া বসিয়াছ,—বলিতে পারি কি?

বেরাদরান-ই-ইসলাম ! এই ধরণের বহু বহু জঘন্য আকীদা তথাকথিত লা-মজহাবী, ওহাবী খারেজীদের রহিয়াছে। সংক্ষেপে সমাপ্ত করিলাম। অধিকতর জানিতে চাহিলে আমার লিখিত 'ঈমান ভাণ্ডার সিরিজের কিতাব সমূহ পাঠ করিবেন। অত্র পুস্তিকার প্রতিবাদের ভাষা একটু কড়া হইয়াছে বৈ কি। কি করিয়া সহ্য করা যায় বলুন? বেয়াদবরা আটরশীর পীর সাহেবকে আক্রমণ করিতে যাইয়া গাউছুছ ছাকা লাইন হযরত বড়পীর দাস্তগীর রাদ্বিআল্লাহু তা'য়ালা আনহু) কে পর্যন্ত ছাড়ে নাই। এদের কি সহজে ছাড়িয়া দেওয়া যায়?

আবার ঘোষণা করিতেছি—যদি কোন খারেজী ওহাবী লা-মজহাবীর বাহাস করিবার সাধ ও সৎ সাহস থাকে তবে সরকারী অনুমোদন ও বাহাসের শর্তাবলী সাপেক্ষে রাজধানী ঢাকার যে কোন ময়দানে প্রকাশ্যে জনসমক্ষে আমি (মাওঃ আকবর আলী রেজভী) বাহাস করিতে প্রস্তুত আছি।

সারকথা:— ভ্রাতৃগণ ! বর্তমানে দুনিয়ার মানবমণ্ডলী দুই দলে বিভক্ত। একদল মুসলমান, অপরদল কাফের। মুসলমান আবার ৭৩ (তিহাত্তর) দলে বিভক্ত—তম্মধ্যে ৭২ (বাহাত্তর) দল জাহান্নামী এবং একদল বেহেশতী। আর এই বেহেশতী দল হইতেছে 'আহলে সুন্নত ওয়াল জমআত'। সংক্ষেপে সুন্নী জমাত। আর বেহেশতী দলের পরিচয় অবগত হইয়া সুন্নী জমাতে অবস্থান করা, এই জমাতের অনুসরণ ও মৃত্যু পর্যন্ত এই জমাতে অটল ও অনড় থাকা ওয়াজিব।

বড়ই পরিতাপের বিষয় এই যে, মুসলিম সমাজ আজ, নিজের অবস্থা নিজের পরিচয় সম্পর্কে উদাসীন। স্কুল, কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ে পরীক্ষা ও ভর্তির 'ফরম' পূরণ করিতে বর্ণের ঘরে 'সুন্নী' লিখিয়া থাকে। সরকারী চাকুরী 'ফরম' পূরণ করিতে এবং হাজীদের হজের 'ফরম পূরণ করিতেও অনুরূপ 'সুন্নী, লিখিয়া নিজের পরিচয় দিয়া থাকে। অথচ সুন্নী কাহাকে বলে সুন্নি জমাতী কি ও কেন - এ সম্পর্কে কিছুই জানে না। কিন্তু সাবধান, সুন্নী জমাতের সঠিক পরিচয় জানিয়া সুন্নী জামাতে অবস্থান করা প্রত্যেক মুসলমানের জন্যেই ওয়াজিব।

ভ্রাতৃগণ ! ক্ষণস্থায়ী দুনিয়ার মোহ একদিন অবশ্যই কাটিয়া যাইবে। পরকালের চিরস্থায়ী জিন্দেগীর প্রস্তুতি ইহকালেই গ্রহণ করিতে হইবে। সময় থাকিতে সেই পথের সন্ধান লওয়া একান্ত কর্তব্য। শুষ্ক পাতা কিংবা কাগজের টুকরা পাথর চাপা দিয়া রাখিতে হয়। যে কোন দিকের বাতাস আসিয়া উহা উড়াইয়া নিয়া যায়। তদ্রুপ, মানুষের ঈমানকে আল্লাহর অলী পীরে কামেলের দরবারে বয়াত গ্রহণ পূর্বক উহাকে চাপ দিয়া রাখিতে হয় যাহাতে কোন প্রকার বাতেল হাওয়ায় উড়াইয়া না দিতে পারে। ফেৎনা ফাসাদের ঘূর্ণি হাওয়া বিপর্যস্ত করিতে না পারে। নিরাপদ আশ্রয়ে থাকিয়া নাযাতের পথকে সুগম করিতে পারে। এই জন্যেই তো মানুষ আল্লাহর অলীর দরবারে পতঙ্গের মত ভীড় জমায়। আওলিয়ায়ে কেরামের দুশমন যতই জ্বলিতে থাকিবে যতই ঘেউ ঘেউ করিতে থাকিবে আওলিয়াগণের শান ততই বৃদ্ধি পাইবে, মাজার সমূহের রওনক ততই বাড়ীতে থাকিবে।

আয় আল্লাহ। তোমার হাবীবের উম্মতকে নাযাতের পথ দেখাও ! দুষমনদিগকে হেদায়াত নসীব কর ! আমীন।

সমাপ্ত

আহ্কার
মাওলানা আকবর আলী রেজভী সুন্নী আল-ক্বাদেরী।

তারিখঃ—১০ই রমজান,
১৪০৩ হিজরী
সতরশ্রী দরবার শরীফ।

__________✓✓✓__________




Comments

Popular posts from this blog

বালাকোট আন্দোলনের হাকীকত

সৈয়দ আহমদ বেরলভীর জম্ম ও পরিচয়

মওদুদীর ভ্রান্ত আক্বিদা ও ইসলামী আক্বিদা